Monday, June 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2390



মাতৃত্ব পার্ট:২

0

মাতৃত্ব

পার্ট:২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান প্রাপ্তির কথা গুলো সহ্য করতে না পেরে প্রাপ্তির গালে এক থাপ্পড় দিলো।প্রাপ্তি কিছু বলছেনা শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।

আয়ান -নিজের কাছে টেনে এনে। তোমাকে ছাড়া সুখে থাকার কথা আমি কখনোই কল্পনা করিনি।যেদিন তোমাকে বিয়ে করে এই বাড়িতে এনেছি সেইদিন নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমার সব দুঃখ গুলোকে নিজের করে নিয়েছি,তোমার চাওয়া পাওয়া গুলোকে নিজের করে নিয়েছি।ভেবেছি যদি বাঁচতে হয় তোমাকে নিয়েই বাঁচবো।আর সেই তুমি আমায় বাদ দিয়ে এতো কিছু ভেবে পেলেছো?

প্রাপ্তি -(চোখের পানি মুছে)এই বিয়ে তোমাকে করতেই হবে।আমি তোমার আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।চলো মায়ের রুমে চলো।
প্রাপ্তি আয়ানের হাত ধরে টেনে আছমা বেগমের রুমে নিয়ে গেলো।

আছমা বেগম -আমাকে কথা শুনানো জন্য এইবার আমার ছেলেকে নিয়ে এসেছো? কিরে আয়ান বউয়ের হয়ে কি বলবি বল?

প্রাপ্তি -আপনার ছেলে আমার হয়ে কিছু বলতে আসিনি।শুধু বলতে এসেছে এই বিয়েতে সে রাজি।

আছমা বেগম-(আয়ানের দিকে তাকিয়ে)প্রাপ্তি যা বলছে তা কি সত্যি?

আয়ান প্রাপ্তির দিকে অনেকক্ষণ ছলছল চোখ নিয়ে তাকিয়ে হ্যাঁ বললো।
আয়ান মনে মনে ভাবছে,তুমি যখন তোমার স্বামীকে বিয়ে দেওয়ার এতো শখ জেগেছে দেখি এইবার সহ্য করো কিভাবে।আমি যতোটা না কষ্ট পাচ্ছি তার ছেয়েও দ্বিগুণ কষ্ট আমি তোমাকে দিবো।

প্রাপ্তি -মা! এইবার তো খেতে চলুন।আপনার ছেলেও কিছু খায়নি।

আছমা বেগম -ঠিক আছে চলো।

আছমা বেগমের খুশির শেষ নেই।ছেলেকে আবার নতুন করে বিয়ে দিবে। আত্মীয় স্বজন অনেককেই ফোন দিয়ে জানিয়েছে ছেলের বিয়ের কথা।কতো দিন পর মনে হচ্ছে এই ঘরে শান্তি পিরে এসেছে।
প্রাপ্তি ভাবছে আমি একজন কষ্ট পেয়েও যদি এই ঘরে শান্তি ফিরে আসে তাহলে এই কষ্ট আমি সারাজীবন পেতে রাজি।আয়ানের ও হয়তো বিয়ের পর পুরোনো সব ভুলে নতুন করে শুরু করবে।তখন হয়তো আয়ানের সুখটা নিজের চোখে দেখতে পাবোনা।কিন্তু এইটা তো জানোবো আমি চলে যাওয়াতে অনেকেই সুখে আছে।কথা গুলো ভাবতেই চোখের কোনে পানি চলে আসছে প্রাপ্তির।আয়ান দেখেও না দেখার ভাণ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

প্রাপ্তি রুমে এসে আয়ানকে আর কিছু না বলে নিজেও শুয়ে পড়লো।কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না প্রাপ্তির। বার বার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।আর মাএ কয়টা দিন।হয়তো আর কখনো রাত জেগে এই মুখটা আর দেখা হবে না।মন কেন জানি বার বার বলছে প্রাপ্তি তুই ঠিক করিস নাই।এই মানুষটা তোকে অনেক ভালোবাসে।কিভাবে ছেড়ে থাকবি তাকে।
গভীর রাতে আয়ান উঠে দেখে প্রাপ্তি নিচে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

আয়ান -কি ব্যাপার ঘুমাওনি এখনো?
(কথাটা বলতে বলতে আয়ানও প্রাপ্তির পাশে এসে নিচে বসলো।)
এইভাবে নিচে বসে আছো কেন? নাকি আমার সাথে এখন এক সাথে ঘুমাতেও ইচ্ছা করেনা।

(প্রাপ্তি কিছু বলছে না চুপ করে বসেই আছে)
যখন এতোই ভালোবাসো আমাকে তাহলে চলে যেতে চাইছো কেন?

প্রাপ্তি -(কথা ঘুরানোর জন্য) এখনে বসে আছো কেন?যাও ঘুমাও।সকালে তোমার অফিস আছেতো।রাত জাগলে সকালে উঠতে পারবেনা।

আয়ান বুজেছে প্রাপ্তি কথা ঘুরাচ্ছে।প্রাপ্তিকে কিছু বলেও লাভ নাই।আয়ানের কথা প্রাপ্তি কিছুতেই শুনবে না।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে।বাড়িতে অনেক গেস্ট চলে এসেছে।আছমা বেগম এমন ভাবে সব সাজ্জাচ্ছে মনে হয় ছেলের এই প্রথম বিয়ে। আগের যে একটা বউ আছে এইটা তার মাথাতেও আসেনা।
সব কাজ নিখুঁত ভাবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করছেন।মেয়ে পক্ষের লোকেরা আছমা বেগমকে বলেছে আপনাদের ছেলের হয়তো দ্বিতীয় বিয়ে কিন্তু আমাদের মেয়ের তো এই প্রথম তাই সবকিছুর যেন কমতি না থাকে।আছমা বেগম তাদের কথা মতো সব করছেন।
এইদিকে প্রাপ্তির বাবা মাকেও আসতে বলেছেন।প্রাপ্তি আগেই তার বাবা মা কে বলে দিয়েছে যদি মেয়েকে সুখি দেখতে চায় তাহলে এখানে এসে যেন কোনো ঝামেলা না করে।মেয়ের অনুরধে তারা এসেছেন ঠিকি কিন্তু আগেই বলেছে যাওয়ার সময় প্রাপ্তিকে নিয়ে যাবে।
সকাল থেকে প্রাপ্তি রান্না করেই যাচ্ছে গেস্টদের জন্য।তার স্বামীর আজ গাঁয়ে হলুদ বলে কথা কিছু কম হলে তো চলবেনা।কার এমন ভাগ্যে আছে যে নিজের স্বামী কে বিয়ে দিচ্ছে অন্য মেয়ের সঙ্গে। কাজের চাপে আয়ানকে একবার ও দেখা হলো না আজ।সকাল থেকে সেও অভিমান করে আমার সামনে আসছে না।এতো অভিমান আমার উপর? ও জানেনা! আমি ওকে না দেখে থাকতে পারিনা।এই যাহঃ আমি এই গুলো কি ভাবছি আজ থেকেতো আমায় অভ্যাস করতে হবে।
আয়ান ভালো করেই জানে প্রাপ্তি তাকে না দেখে থাকতে পারবেনা।কিন্তু রাগ করেই সকাল থেকে তার সামনে যাচ্ছে না।দেখি কতো সহ্য করতে পারে।রুমে বসে বসে আয়ান পুরোনো এলবাম গুলো দেখতেছে।কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে প্রাপ্তির সাথে তার।এর কিছুই আমি ভুলতে পারবোনা।প্রাপ্তির মা এসে দেখে আয়ান এলবামের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

প্রাপ্তির মা-বাবা কেঁদে কি লাভ। তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাসো আমরা সবাই জানি।আমার মেয়েটাও তোমাকে ভালোবাসে।হয়তো ওকে এইখান থেকে নিয়ে গেলে বাঁচবে কি না আল্লাহ ভালো জানে।

আয়ান -মা! আপনি ভালো করেই জানেন আমি এই বিয়ে করতে চাইনি।কিন্তু কি করবো বলেন? প্রাপ্তি আর মার চাপাচাপিতে বিয়েটা করতে হচ্ছে।প্রাপ্তি হয়তো আমার সুখের জন্য সব কিছু ছেড়ে যেতে ছাইছে কিন্তু বিশ্বাস করুন এই বিয়েতে আমি কখনোই সুখি হতে পারবো না।

রাতে সব কিছু শেষ করেই সবাই যেই যার মতো ঘুমাতে চলে গেলো ।আর আয়ান আছে প্রাপ্তি কখন তার রুমে আসবে।সন্ধ্যার পর থেকে দেখা হলেও তেমন কথা হয়নি প্রাপ্তির সাথে।অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর প্রাপ্তিকে না আসতে দেখে আয়ান নিজেই খুঁজতে গেলো।গিয়ে দেখে সে তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। প্রাপ্তির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর শাড়ীর আঁচল দিয়ে বার বার মুছছে। আয়ান অনেকক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছে।
আয়ানের দিকে হঠাৎ চোখ পড়াতেই তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।
কি ব্যাপার আয়ান তুমি এইখানে? ঘুমাওনি এখনো?

আয়ান এসে প্রাপ্তির পাশে বসলো।বিয়ের পর একটা রাতের জন্যও আমি তোমাকে রেখে ঘুমাইনি।চলো রুমে চলো।

প্রাপ্তি- আয়ান ! ওই রুমের প্রতি কাল থেকে আমার কোনো অধিকার থাকবেনা।তাই আজ থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিলাম।আর আমাকে ছেড়ে থাকা আস্তে আস্তে তোমারও অভ্যাস হয়ে যাবে।আয়ান প্রাপ্তির কথায় কান না দিয়ে প্রাপ্তিকে কোলে উঠিয়ে নিলো।আয়ান প্রাপ্তির মায়ের দিকে তাকিয়ে মা আপনি কিছু মনে করবেন না।কি করবো বলেন? ভালো কথা ওর শুনতে ইচ্ছে করে না। তাই এইছাড়া আর কোনো উপায় দেখছিনা।

প্রাপ্তির মা -না বাবা আমি কিছু মনে করিনি।

প্রাপ্তি -আয়ান ভালো হচ্ছে না কিন্তু। নামাও আমাকে।
আয়ান প্রাপ্তির কোনো কথা না শুনেই প্রাপ্তিকে নিয়ে রুমে চলে এলো।
প্রাপ্তিকে দাঁড় করিয়ে কি বলবে এইবার বলো।সারাদিন তো দূরে দূরে ছিলে। এখন কথায় পালাবে?প্রাপ্তির! পালানো জায়গা এই আয়ানের বুকে আর কোথাও না।

প্রাপ্তি কিছু বলছে না।শুধু আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।মন কেন জানি বলছে প্রাপ্তি এখোনো সময় আছে।আয়ানকে হারিয়ে যেতে দিওনা।

আয়ান – কি হলো কি ভাবছো?

প্রাপ্তি -কিছুনা।

আয়ান -কিছুনা হলে মুগ্ধ হয়ে আমাকে এইভাবে দেখছো কেন?

প্রাপ্তি -আজ শেষ বারের মতো তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে দিবে? রাত প্রায় শেষ হয়ে এলো।একটু পর মা আবার ডাকাডাকি শুরু করবে।এই কিছুক্ষন না হয় তোমার কোলেই মাথা রেখে ঘুমালাম।

আয়ান ও কথা না বাড়ায়ে আচ্ছা চলো।

প্রাপ্তি আয়ানের কোলে মাথা রেখে চুপ করে করে শুয়ে আছে।সেই আর এই জগতে নেই।কোনো এক ভালোবাসায় সে হারিয়ে গেছে।
আয়ান প্রাপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে,

আয়ান -প্রাপ্তি ! এই প্রাপ্তি ! ঘুমিয়ে গেছো?

প্রাপ্তি কোনো কথা বলছেনা।চুপ করে আয়ানকে আরও কাছে টেনে এনে আয়ানের ভালোবাসা অনুভব করছে।কথা বললেই কি যেন মিস হয়ে যাবে।কাল থেকে আয়ানকে তো আর এতোটা কাছে সে আর পাবেনা।
সকাল বেলা আয়ানকে ঘুমে রেখেই প্রাপ্তি উঠে চলে গেলো।বিয়ে বাড়ি বলে কথা বসে থাকলে চলবে না সব কিছু আমাকেই সামলাতে হবে।আজ এই জাগায় আমি আছি কাল থেকে অন্য কেউ এসে আমার নিজের হাতে সাজানো সংসারটা অন্য কারো হাতে থাকবে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই প্রাপ্তি সবার জন্য চা বানাতে গেলো ।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখে আছমা বেগম নিজেই চা বানিয়ে পেলেছে।

প্রাপ্তি -আমি নিজেই এসে চা করতাম আপনি আমায় ডাকেননি কেন? শুধু শুধু আপনি কষ্ট করতে গেলেন।

আছমা বেগম-এতো কথা না বলে সবাইকে চা টা দিয়ে আসো।সবাইকে চা দিয়ে আয়ান কে উঠিয়ে দাও।

প্রাপ্তি সবাইকে চা দিয়ে আসার সময় দেখে আয়ানের ২ টা ফ্রেন্ড ড্রইংরুমে বসে আছে।
আরে ভাইয়া কখন এলেন আপনারা।কাল গাঁয়ে হলুদে আসেননি কেন?আয়ান কতো কষ্ট পেয়েছে বলুনতো।দেখেছেন? যার বিয়ে সে এখনো ঘুম থেকেই উঠিনি।কথায় আছে না যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই।আমার হয়েছে সে এক জ্বালা।সব কিছু ওকে বলে বলে করাতে হয়।আর কাল থেকেতো আমি থাকবো না।হয়তো তার নতুন বউ এসে করবে।কথা গুলো অনবরতে বলে গেলো প্রাপ্তি ।
প্রাপ্তির এইরকম আচরণ দেখে আয়ানের ফ্রেন্ডেরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
রিমন -(আয়ানের ফ্রেন্ড) ভাবী! আপনি কিভাবে পারলেন নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের হাতে তুলে দিতে।আমার জীবনে এই রকম মেয়ে আমি ফাস্ট টাইম দেখেছি।

নিহাদ-(আয়ানের ফ্রেন্ড) ভাবী এখনো সময় আছে।

প্রাপ্তি -না ভাইয়া! ওর সুখের জন্য আমাকে এইটুকু করতেই হবে।আচ্ছা এইগুলো বাদ দিন।আমি নাস্তা নিয়ে আসছি,আয়ান রুমেই আছে আপনারা ওর কাছেই যান।আবার ওই বাড়িতে যেতে হবে।দেরি হলে মা আবার বকাবকি করবে।

আয়ান ! আয়ান ! নিহাদ আর রিমনের ডাকে আয়ানে ঘুম থেকে উঠে বসলো।

আরে তোরা কখন এলি?

নিহাদ-অনেকক্ষণ। আচ্ছা তুই সত্যি এই বিয়েটা করছিস?

আয়ান -না করে আর উপায় কি।তোদের কে তো সব আগেই বলেছি।

চলবে,,,,,

মাতৃত্ব পার্ট:১

0

মাতৃত্ব

পার্ট:১

#Rabeya Sultana Nipa

 

_নিজেকে কি মনে করো তুমি।এতো দেরিতে নাস্তা বানালে সবাই খাবেটা কখন।ঘুম থেকে একটু তাড়াতাড়ি উঠেই তো নাস্তাটা বানাতে পারো।অনেক সহ্য করেছি আর না।এইভাবে আর কতো দিন তোমাকে আমরা সহ্য করবো।এতোটা বছর তোমাকে সময় দেওয়া হয়েছে।এখনো নাতিনাতনির মুখ দেখলাম না।আমার ছেলেটার জীবন তো আমি এইভাবে শেষ হয়ে যেতে দিতে পারি না।আমি আমার ছেলের বিয়ে ঠিক করেছি।সামনের সাপ্তাহে বিয়ে।মেয়ে পক্ষকে সব কিছু বলেই আমি বিয়েটা ঠিক করেছি।এইবার তুমি এইবাড়ী থেকে কবে যাবে সেটা চিন্তা করো। আমি চাইনা তুমি এই বাড়ীতে থাকো।তুমি এইবাড়ীতে থাকলে আমার ছেলে কখনোই সুখী হবেনা। তোমার এই অলক্ষুণে চেহারাটা আর দেখতে ভালো লাগছে আমাদের। কথা গুলো বলে আছমা বেগম তার নিজের রুমে চলে গেলো।
কথা গুলো এই কয়েক বছর থেকে শুনতে শুনতে হজম হয়ে গেছে। এখন হাজার বললেও গাঁয়ে মাখি না।কিছু করার নেই শুনতে আমাকে হবেই।
— আপনাদের তো আমার পরিচয়টা দেওয়া হলো না।আমি প্রাপ্তি।যিনি এতক্ষন আমায় কথা শুনাচ্ছিলেন তিনি আমার শাশুড়ি মা আছমা বেগম।ওনার একমাত্র সন্তান আমার স্বামী আয়ান।ওনি এতোটা খারাপ ছিলেন না।হয়তো এখন নিজের বংশের কথা চিন্তা করেই এখন আর আমাকে সহ্য হচ্ছে না।
এইবার আসল কথায় আসি।

__ড্রইংরুমে বসে আয়ান এতক্ষন তার মায়ের সবকথাই শুনছিলো।মাকে সে কিছু বলতে পারেনা কারণ মা যা বলছে সব সত্যি।প্রাপ্তিকে এই বাড়িতে বিয়ে করে এনেছে ১৪ টা বছর।৩ বছর ভালোবাসার পর অনেক কাঠখড় পুড়ে প্রাপ্তিকে বিয়ে করেছে সে।কিন্তু তাদের ঘরে এখনো কোনো সন্তান নেই।কথা গুলো ভাবতে ভাতেই প্রাপ্তি এসে বললো,,,

প্রাপ্তি -কি ব্যাপার আয়ান ! তুমি এইখানে বসে আছো? অফিসে যাবে না? যাও তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে যাও।

আছমা বেগম প্রাপ্তির কথা শুনে পাশের রুম থেকে ভাবতেছে এই মেয়ে কোণ ধাতু দিয়ে তৈরী এতো কথা বলে আসলাম তারপরেও হাঁসি মুখে কথা বলছে।আল্লাহ ভালো জানে।তবে যাই হোকনা কেন ওর প্রতি আমাকে দুর্বল হলে চলবেনা।

আয়ান -যাবো!তবে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
কথাটা বলেই প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে খাটের উপর বসালো।

প্রাপ্তি -কি হয়েছে বলবে তো? এইভাবে টেনে নিয়ে আসছো কেন?

আয়ান প্রাপ্তির কোলে মাথা রেখে

প্রাপ্তি ! চলোনা আমরা কোথাও পালিয়ে যাই।এইভাবে আমি আর থাকেতে পারছিনা।না পারছি মাকে কিছু বলতে।না পারছি তোমার হয়ে কিছু বলতে।

প্রাপ্তি -কি বলছো তুমি এইসব? মাকে রেখে আমরা কোথায় যাবো?তুমি মায়ের একমাত্র সন্তান আমরা চলে গেলে মা কার কাছে থাকবে?

আয়ান -প্রাপ্তি! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি চাইনা তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাও।আমার কোনো সন্তান লাগবে না। শুধু তোমার ভালোবাসা হলেই হবে।জীবনে সবাই সব কিছু পায়না।আমি না হয় সন্তান পেলাম না।তাতে আমার কোনো আপসোস নেই।তুমি আমার পাশে থাকললেই হবে।প্লিজ চলো না।

প্রাপ্তি -অনেক হয়েছে এইবার রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে যাও।

আয়ান -আমি যা বলছি মেনে নাও, পরে এমন যেন না হয়।সারাজীবনের জন্য তোমাকে প্রস্তাতে হয়
কথাটা বলেই আয়ান রেডি হতে চলে গেলো।

প্রাপ্তিও রুম থেকে আসতেই আছমা বেগম বললেন

আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়ে বুজানো হচ্ছে।যতোই কিছু করোনা কেন বিয়ে আমি আমার ছেলেকে দিবোই।তোমার মতো একটা অলক্ষ্মী মেয়েকে এই সংসারে আমি রাখতে চাইনা।

প্রাপ্তি -মা আমি আপনার ছেলেকে বুজাতে যায়ইনি। ওই আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে।

আছমা বেগম-একদম মিথ্যা বলবেনা।কি মনে করেছো আমি কিছু বুজিনা।যতো কিছু তুমি করোনা কেন আমি সমানের সাপ্তাহে আমার ছেলেকে বিয়ে দিবোই।মেয়েটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।শুধু আমার ছেলেটা রাজি হলেই হবে।

আয়ান তার মা আর প্রাপ্তির কথা গুলো শুনতে পেয়ে নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলো।রোজ রোজ এই গুলো তার আর ভালো লাগেনা। প্রাপ্তি এসে দেখে রাহাত নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলো।প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে এসে খাটের এক কোণায় বসে বসে ভাবছে সেইদিনের কথা যেই দিন মেঘলা এইবাড়ি বউ হয়ে এসেছিলো সবাই কতো আদর করতো।তার শাশুড়ি তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতো।যখন বিয়ের ৫/৬ বছর হয়ে গেলো কোনো সন্তান হচ্ছিলোনা তখন আস্তে আস্তে তার শাশুড়িও পাল্টে গেলো।অনেক ডাক্তার দিখিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।হয়তো আয়ানের ভালোবাসায় আজও টিকে আছে এই বাড়ীতে।না হলে আরো আগে কোথায় হারিয়ে যেতো সে।না এইভাবে আর চলা যায়না।আয়ানেরও একটা ভবিষ্যৎ আছে।কিন্তু আমি কি করবো আমি যে তাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসি। আর আয়ান ! সেওতো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা।মা কি সত্যি আয়ানকে বিয়ে করাবে? আমি ছাড়া আয়ানের জীবনে অন্য কোনো মেয়ে! এইটা আমি ভাবতেই পারবো না।
আর না ভেবেই উপায় কি! আমার জন্য তো আর ওর জীবনটা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।
প্রাপ্তি ! প্রাপ্তি ! শাশুড়ি মায়ের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে বললো মা! আমায় ডেকেছেন?

শাশুড়ি মা -রান্নাটা কখন করবে শুনি? এমনি তে তো সারাদিন শুয়ে বসে কাটাও।
তাড়াতাড়ি রান্নাটা করে আমায় উদ্ধার করো।

প্রাপ্তি – মা! সারাদিন তো আমিই সব কাজ করি।হয়তো আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেননা। তাই বলে মিথ্যা বলবেন কেন?

শাশুড়ি মা -তোমার এতো বড় সাহস আমি মিথ্যা বলছি? আজ আয়ান আসুক। হয়তো এই বাড়ীতে তুমি থাকবে নয়তো আমি।ও যদি এর কোনো বিহেত না করে আমি খাবার তো দূরের কথা একটু পানিও খাবোনা।

প্রাপ্তি -মা! আমি আপনাকে এইভাবে বলতে চাইনি।আপনি আমায় ভুল বুজতেছেন।

শাশুড়ি মা -তুমি আর একটা কথাও বলবেনা।
কথাটা বলেই রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রাপ্তিও আর কিছু বললো না।সেই ভালো করেই জানে এখন কিছু বললে আরো বাড়াবাড়ি হবে।এর ছেয়ে ভালো আয়ান আসুক সে সামলিয়ে নিবে।

সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনো আছমা বেগম দরজা খুলেনি।প্রাপ্তি এর মাঝে অনেক বার ডেকেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রাপ্তি এসে ড্রইংরুমে বসে আছে।কি করবে বুজতে পারছেনা।আয়ান এসে দেখে প্রাপ্তি চুপচাপ চিন্তিত হয়ে বসে আছে।

আয়ান-কি হয়েছে প্রাপ্তি ? এইভাবে বসে আছো কেন?

প্রাপ্তি -আয়ান! মা সকাল থেকে কিছু খায়নি।দরজা বন্ধ করে বসে আছে।তুমি আসতে আজ এতো দেরি করলে কেন? এইভাবে না খেয়ে থাকলে মার শরীর খারাপ করবে।তুমি বললেই দরজাটা খুলবে।

আয়ান-তোমরা শুরু করেছো কি?আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবেনা? এখন চলো দেখি দরজা খুলে কিনা।

আয়ান কথাটা বলতে বলতে তার মায়ের রুমের দজার সামনে গিয়ে বললো।
মা! মা! দরজাটা খুলো! মা তুমি কি শুনতে পাচ্ছো। দরজাটা খুলো প্লিজ।

আছমা বেগম দরজাটা খুলে চুপহয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আয়ান -মা কি হয়েছে বলোতো? তোমরা দুজনে কি আমায় শান্তিতে থাকতে দিবেনা? সারা দিন অফিস করে আসছি।এসে যদি তোমাদের ঝগড়াঝাটী দেখি তাহলে ভালো লাগে বলো?

আছমা বেগম দরজা খুলেছে দেখে প্রাপ্তি নিজের রুমে চলে গেছে।এখন এইখানে থাকলে তাকে আরো কথা শুনতে হবে।

আছমা বেগম -আয়ান রুমে আয় তোর সাথে আমার কথা আছে।

আয়ান -মা আমি ফ্রেশ হয়ে এসেই তোমার সাথে কথা বলবো।আর তুমিও খেয়ে নাও।

আছমা বেগম -না! যা বলার এখনোই বলবো।আর তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে আমার এই জীবন রেখে লাভ কি।নেজের ছেলেই যখন পর হয়ে যায় তাহলে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়না।

আয়ান-(দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে) আচ্ছা এখানে এসে বসো কি বলবে বলো?

আছমা বেগম -আমি আবার তোকে বিয়ে দিবো।আমি মেয়েও ঠিক করে এসেছি।তুই শুধু বিয়েতে রাজি হলেই হবে।

আয়ান -মা! তোমার কি মাথা ঠিক আছে? আমি প্রাপ্তিকে ছাড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।এই কথা তোমাকে আর কত বুজাবো?

আছমা বেগম-ঠিকিতো ওই মেয়েকে তুই ছাড়বি কেন। জানিস! আজ তোর বউ আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে।কয়েদিন পর তো আমাকেই এই বাড়ী থেকে তাড়াবে।আমি এতো কথা বুজিনা,এই মেয়ে থাকুক আর না থাকুক তোকে বিয়ে করতেই হবে।

আয়ান -প্রাপ্তি এইরকম মেয়েই নয়। ঠিক আছে তুমি আমাদের সন্তান চাওতো আমরা একটা ছেলে বা মেয়ে দত্তক নিবো।

আছমা বেগম-না! আমি বাহিরের কারো সন্তান এই বাড়ীতে চাইনা।ঠিক আছে তুই যদি বিয়ে না করিস তোর চোখের সামনে দিনের পর দিন আমি না খেয়ে থাকবো দেখি তোর সহ্য হয় কি করে।যখনি বলবি তুই বিয়েতে রাজি তখন আমি খাবো এর আগে নয়।
আয়ান মায়ের মুখ থেকে এইরকম কথা শুনে উঠে চলে গেলো।রুমে গিয়ে প্রাপ্তির সাথে কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রাপ্তি আড়াল থেকে তাদের সব কথাই শুনেছে।প্রাপ্তি ভাবছে যেই করেই হোক আয়ানকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে হবে।ওর বিয়েটা দিয়েই আমি বাবার বাড়ী চলে যাবো।শুধু শুধু এইখানে থাকলে আয়ানও কষ্ট পাবে। আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে প্রাপ্তি কপালে হাত দিয়ে খাটের এক কোণায় হেলান দিয়ে বসে আছে।

আয়ান -এইভাবে বসে আছো কেন? খেতে দাও ক্ষিদে পেয়েছে।

প্রাপ্তি – হ্যাঁ! খেতে দিবো।তবে তোমাকে একা নয় মা সহ এক সাথে বসে খাবে।চলো আমার সাথে।

আয়ান -কোথায়?

প্রাপ্তি -মায়ের রুমে।আমি সব শুনেছি মা তোমাকে কি বলেছে।তুমি এখন মাকে গিয়ে বলবে তুমি বিয়ে করবে।

আয়ান-(প্রাপ্তিকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে)তুমি কি বলছো তুমি জানো?পাগলের মতো মুখে যা আসে তাই বলো।একবার নিজের কথা ভেবে দেখেছো? আমি বিয়ে করলে এই বাড়ীতে যে আসবে সে তোমাকে টিকতে দিবে? কেন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছো।

প্রাপ্তি -কে বলেছে আমি তোমার বিয়ের পর এই বাড়ীতে থাকবো?আমি কথা দিচ্ছি তোমার বিয়ের পর এই বাড়ী ছেড়ে আমি চলে যাবো।আর কখনো তোমাদের কাছে আসবোনা। কোনো অধিকার চাইবোনা।শুধু তুমি সুখে থাকবে আমি এটাই চাই।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব

5

ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব

#Rabeya Sultana Nipa

__প্রাপ্তি আয়ানের বুকের সাথে মিশতেই বুজে গেছে এই আর কেউ নয়,তার পরী তার বুকে এসে পড়েছে।প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে আছে।এইযে সেই শান্তি যা আমার আয়ানের বুকে মাথা রাখলে পেতাম।এ মানুষটা তো আর কেউ নয় এই যে আমার আয়ান।আয়ানের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। আয়ান নিজের দুই হাত দিয়ে প্রাপ্তির গাল দুটো ধরে,পরী একটা ভুলের শাস্তি যে ২৬ টা বছর পেতে হবে আমি ভাবিনি।পরী তোমার একবারো মনে হয়নি তোমার আয়ান কখনো তোমায় ঠকাতে পারেনা।

(আদর আর আশফির দুই জোড়া চোখ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে মাকে দেখছে,)
প্রাপ্তি হঠাৎ তানিয়ার কথা মনে পড়তেই গাল থেকে আয়ানের হাত নামিয়ে, মিস্টার আয়ান আপনি কোথাও ভুল করছেন। আমি আপনার পরী নয়।আপনার পরী তো সেই মেয়ে যাকে কাছে পাবার জন্য আপনি আমায় মিথ্যা বলেছিলেন।
(আয়ান আর প্রাপ্তি ভুলেই গিয়েছিলো তাদের ছেলেমেয়ে তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
প্রাপ্তিকে নিজের কাছে হেঁচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে, প্রাপ্তি সেইদিন রাতে তুমি আমার সাথে চিট করছো,সেই রাতে তো আমি তোমাকে সবকিছু বলতেই এসেছিলাম কিন্তু তুমি সেইদিন রাতে নিজের ভালোবাসায় আমাকে ফাঁশিয়ে দিয়েছিলে।তোমার ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।পরে যখন তোমাকে বলতে ছেয়েছি তুমি আবোলতাবোল বকে আমাকে বলার সুযোগ না দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছো।পরী আজ আমি সেই সুযোগ হাত ছাড়া করবোনা।
আদর আর আশফির বুজতে বাকি নেই ইনিই তাদের বাবা।তবুও তারা চুপ করে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে।
প্রাপ্তি নিজেকে আয়ানের কাছ থেকে ছাড়ার চেষ্টা করছে আয়ান প্রাপ্তিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,পরী তুমি যতোই চেষ্টা করো আয়ান তোমায় ছাড়ছেনা।পরী ওই তানিয়া নামের কেউ আমার মনের আসনে ছিলোনা।তানিয়া শুধুই আমার ফ্রেন্ড ছিলো।আয়ান প্রাপ্তি কে তানিয়ার ব্যাপারে এক নিশ্বাসে বলতে লাগলো।পরী তুমি আসার কয়েকদিন পরেই তানিয়া মারা গেছে।আয়ানের মুখে সব শুনে প্রাপ্তি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।সেই ভালো করেই জানে আয়ান তাকে কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা।প্রাপ্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আয়ানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাষা তার নেই।আজ নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছে প্রাপ্তির। কি ভাবে পারলো তার আয়ানকে এতো কষ্ট দিতে।আয়ান আর প্রাপ্তির সাথে সাথে আশফি আর আদরও কান্না করে যাচ্ছে। খানিকক্ষণ পরে আয়ান চোখ মুছে প্রাপ্তিকে বুক থেকে সরিয়ে দাঁড় করিয়ে,প্রাপ্তি আমার আশফি কই? প্রাপ্তি চোখ দিয়ে ইশারায় আশফিকে দেখাতে আয়ান আশফির দিকে তাকিয়ে হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে, ভাগ্যের কি পরিহাস নিজের মেয়েকে কাছে পেয়েও চিনতে পারলামনা।আয়ান হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আশফির দিকে, আশফি প্রাপ্তির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তি মাথা নাড়াতেই আশফি দৌড়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ান কাঁদতে কাঁদতে আমার মেয়ে আমার সামনে ছিলো তবু্ও বাবা তোকে চিনতে পারিনি।

আশফি -এতে তোমার কোনো দোষ নেই।তোমার ভালোবাসা আমাদের ভাগ্যে ছিলো না।
প্রাপ্তির আদরের দিকে চোখ পড়তেই, আদর তুই দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?কাছে আয়?
আয়ান আশফিকে ছেড়ে দিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, ওর সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক?
কথাটা শুনে আদর কাছে আসতে গিয়ে ও থেমে গেলো।বাবাকে পেয়ে খুশি হলেও বাবার মুখ থেকে এমন কথা আশা করেনি আদর।সব কষ্ট মনে লুকিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।প্রাপ্তি পিছন থেকে বার বার ডাকলেও কোনো সাড়া দেয়নি আদর।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে এইটা কি করলে তুমি? তোমার কথায় আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে।কিভাবে ওর অভিমান ভাঙাবো আমি?
আয়ান -এক মিনিট! তোমার ছেলে মানে?প্রাপ্তি তুমি কি,,,,,,
এমন সময় সাবিত সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে এসে, না! আদর তোমারই সন্তান।
কথাটা শুনে আয়ান অবাক হয়ে প্রশ্ন ভরা চোখ নিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকালো,
প্রাপ্তি -হ্যাঁ আদর তোমার সন্তান।আমি তোমায় ঠকায়নি সেইদিন আমিও জানতাম না আমি প্রেগন্যান্ট। (সাবিত সাহেবের দিকে তাকিয়ে) বাবার বাসায় যাওয়ার পর বুজলাম আমি আবারও তোমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।কথা গুলো বলেই প্রাপ্তি দৌড়ে আদরের রুমে দরজার সামনে দাঁড়ালো।আয়ানও পিছু পিছু আসলো।

প্রাপ্তি -আদর! এই আদর! তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস মা জানি।কিন্তু তোর বাবা তো জানে না।প্লিজ বাবা রাগ করিস না দরজাটা খোল।

আয়ান-আদর! তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।আদর আমি যে আমার ছেলেকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাই।আমার ছেলেটা যে কষ্ট পেয়েছে আমি এক নিমিষেই ভুলিয়ে দিবো।তুই শুধু একবার দরজা খোল।

প্রাপ্তি কাঁদতে কাঁদতে, আদর তুই মায়ের কথা শুনবিনা।কথাটা বলতেই দরজা খুলে দিলো আদর, প্রাপ্তি ছেলেকে জড়িয়ে ধরে এতো অভিমান কেউ করে?

আদর- নিজের জন্মদিনে কেউ কান্না করে?
আয়ান এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো।
আদর -সরি! আংকেল আপনাকে কি বাবা বলে ডাকতে পারি?
ছেলের কথা শুনে আয়ান আদরের পেটে হালকা ঘুসি দিয়ে, আংকেল বললে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।বাবা ছেলের কথা শুনে সবাই হাঁসতে লাগলো।
রাতে খাওয়াদাওয়া করে সারারাত বসে সবাই আড্ডা দিতে লাগলো।

সকাল ৯.০০ টা সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে। আকাশ আর আবিদ চৌধুরী পেপার পড়ছে, আয়েশা বেগম আর মুনিয়া কিছু একটা নিয়ে বসে গল্প করছে।সুমি রান্নাঘর থেকে এসে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে হা করে আছে।আয়ান আর প্রাপ্তি ভিতরে ঢুকছে এইটা তো চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।সে সপ্ন দেখছে নাতো।সুমির দিকে আকাশের চোখ পড়তেই নিজেও দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে,বাবা দেখো কে এসেছে?আবিদ চৌধুরী হাতের পেপারটা রেখে তাকাতেই উচ্ছ্বাসিত হয়ে আরে,,,,আরে,,, আয়েশা দেখো কে এসেছে, আমার ঘরের লক্ষ্মী ফিরে এসেছে।মুনিয়াও অবাক হয়ে ম্যাম!
প্রাপ্তি আবিদ চৌধুরী আর আয়েশা বেগমকে সালাম করে আশফি আর আদরকেও চোখ দিয়ে ইশারা করলো দাদা দাদীকে সালাম করতে।
আয়ান -বাবা! তোমার নাতিনাতনি।

আবিদ চৌধুরী -ডাক্তার আমার নাতনি ? (অট্র হাঁসি দিয়ে)কিন্তু নাতি?

আয়ান-বাবা আমি বুজেছি তুমি কি বলতে চাইছো। কিন্তু হ্যাঁ ও আমার সন্তান তারপর আয়ান সব বললো সবাইকে।তবে তোমাদের জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে শুধু আমার মেয়ে ডাক্তার নয় আমার ছেলেও ডাক্তার।
হঠাৎ প্রাপ্তির মুনিয়ার দিকে চোখ পড়তেই মুনিয়া তুমি এইখানে?
সুমি-প্রাপ্তি তুই মুনিয়াকে চিনিস? ও আমার মেয়ে!
প্রাপ্তি -এইজন্যই মুনিয়া আমায় ফাস্ট দিনিই বলেছে ম্যাম আপনাকে আমি আগে কোথাও দেখেছি।

মুনিয়া-এখন তো এইটা সত্যি আমি তোমায় ছবিতে দেখেছি।
আর কাকাই ম্যাম আমার কাকী মা! ভাবতে পারছো আমি কতোটা ভাগ্যবান। আর আমার একটা ভাইয়া একটা আপুও আছে।

আবিদ চৌধুরী -আয়ান আমার ঘরের লক্ষ্মী ফিরে এসেছে এখন আর আমার কোনো চিন্তা নেই। আমার লক্ষ্মী আজ থেকে আমার বাড়িতে থাকবে। আকাশ! আসিফকে ফোন দিয়ে খুশির খবরটা দাও।সুমি আমার নাতিনাতনি কে ওদের রুম দেখিয়ে দাও।আয়ান তুই প্রাপ্তিকে নিয়ে রুমে যা।
প্রাপ্তি -বাবা আপনি কিছু মনে করবেন না! আমি এই বাড়িতে থাকতে পারবোনা।
আবিদ চৌধুরী অবাক হয়ে, মানে?
প্রাপ্তি করুন গলায় বলতে লাগলো, বাবা বিপদের সময় আমি আমার আরেকজন বাবাকে পেয়েছি।সেই মানুষটাকে রেখে আমি থাকি কি করে?
আবিদ চৌধুরী অট্র হাঁসি দিয়ে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে, এই কথা! উনাকেও এইবাড়িতে নিয়ে আয়।আমরা সবাই এক সাথে থাকবো। এই বুড়ো বয়সে আর তোদের হারাতে চাইনা।এই বুড়ো দুটো মানুষের কথা তুই একবার ভাববিনা?
প্রাপ্তি আবিদ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে, বাবার কথা মেয়ে কি কখনো ফেলতে পারে?
মুনিয়া আশফিকে হাত ধরে, আপু চলো তোমার রুমে।আমরা দুই বোন জমিয়ে আড্ডা দিবো।
আদর চুপচাপ হয়ে সোফায় গিয়ে বসে পুরো বাড়ি টা কে দেখছে।আজ সে তার বাবার বাড়ি এসেছে।মনে শান্তি ও লাগছে।কিন্তু অনেক গুলো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে মাকে সব গুলো প্রশ্ন একসাথে করে ফেলি।না! প্রশ্ন আমি মাকে করবো না।এতে মা হয়তো কষ্ট পাবে।
ঘন্টা দুয়েক পরেই এক এক করে সবাই চলে আসতে লাগলো,নিলিমা বেগম আর আজাদ সাহেব তো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে একাকার। আসিফ প্রাপ্তির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে এইতো কিছু দিন হলো আমার সেই ছোট্ট প্রাপ্তি সব কিছু সবাইকে ছাড়া কতো নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে নিয়েছে।ছেলে মেয়েকে ডাক্তার বানিয়েছে।প্রাপ্তি আসিফের কাছে এগিয়ে এসে, কিরে ভাইয়া কি ভাবছিস?

আসিফ-আমার বোনটাকে দেখছি বলে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।
ঝিনুক রেশী অভ্র সবাই এসেছে।ঝিনুকের মেয়ের রুমকিও এসেছে তার দুই ছেলেকে নিয়ে।

প্রাপ্তি -রেশী তোর ছেলে মেয়ে আসেনি?

রেশী -ভাবী তোমরা তো হঠাৎ করেই এসেছো তাই আনতে পারিনি।ওরা ভার্সিটিতে আছে। ওদের ফোন দিয়ে বলে দিয়েছি এইখানেই আসতে।
আজ চৌধুরী বাড়ি আবার সবাই মিলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।আনন্দ দুঃখ সবকিছু সবাই ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই আড্ডা দিয়ে যেই যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।
আয়ান বারান্দায় এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।নিজেকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।প্রাপ্তি রুমে এসে আয়ানকে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে আয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে আয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে,তারা গুনছো না কি চাঁদ দেখছো?
প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে দুটোই।

প্রাপ্তি -আয়ান! তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো তো?
আয়ান মুচকি হেঁসে,পরী প্রিয় মানুষের অন্যায় গুলো কখনো অন্যায় ভাবতে নেই।তাই ক্ষমা করার প্রয়োজন পড়েনা।
প্রাপ্তি দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার মতো জীবন সাথী পাওয়া প্রতিটি মেয়ের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।
প্রাপ্তি কথা গুলো শেষ করে আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই, কি দেখছো এমন করে?

আয়ান – চাঁদ দেখছি।
প্রাপ্তি – চাঁদ তো আকাশে।কিন্তু তুমি তো আমার দিকে তাকিয়ে আছো।
আয়ান প্রাপ্তিকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে তোমার মনে আছে পরী? আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি যখন ওই দূর আকাশের চাঁদ
দেখবে তখন আমি আমার পাশে যে চাঁদ থাকবে সেটা দেখবো।
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে আয়ানের বুকে মাথা রেখে তোমার পাগলামি গুলো বাদ দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।
প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ান আর দেরি না করে সত্যিই প্রাপ্তিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।

সমাপ্ত

(শেষে একটা কথাই বলতে চাই মানুষ বুড়ো হতে পারে কিন্তু তাদের ভালোবাসা কখনো বুড়ো হতে পারেনা।)

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৮

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

_মুনিয়া বাসায় এসে সোজা আয়ানের রুমে গিয়ে প্রাপ্তির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। ম্যাম কি সত্যি বলেছেন? কাকীর সাথে উনাকে আমি গুলিয়ে ফেলেছি।কিন্তু এতটা মিল কি করে হতে পারে। আয়ান রুমে এসে মুনিয়াকে প্রাপ্তির ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে,মুনিয়া! এই সময় এইখানে?
মুনিয়া -কাকাই! কাকীর আর কোনো ছবি আছে তোমার কাছে?

সুমি মুনিয়াকে তার রুমে খুঁজে না পেয়ে আয়ানের রুমে এসে দেখে, কিরে এখনো ফ্রেশ না হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তোকে নিয়ে আমি আর পারিনা।
মুনিয়া -কাকা আমি তোমার সাথে পরে এসে কথা বলছি।

মুনিয়া কলেজে আসতেই প্রাপ্তির একটা ছবি নিয়ে আসলো কিন্তু প্রাপ্তিকে দেখানোর সাহস পাচ্ছেনা। ক্লাস শেষ করেই মুনিয়া আগে বেরিয়ে পড়লো।আদর গাড়ি থামিয়ে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই মুনিয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে,

আদর -এই মেয়ে চোখে দেখতে পাওনা? হাঁটো কি ভাবে?

মুনিয়া-সরি! আসলে আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তাই।আপনার লাগেনিতো?

আদর -না তেমন লাগেনি।
প্রাপ্তি এসে, কি হয়েছে?

আদর -না মা! কিছু হয়নি। তুমি চলো।
মুনিয়া অবাক হয়ে ম্যাম আপনার মা?

আদর -হ্যাঁ আমার মা! আমার শ্রেষ্ঠ মা!
মুনিয়া কিছু না বলে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে এগুতে লাগলো।কাকাই আজ আসতে পারবে না আমাকে নিজেই বাড়ি ফিরতে হবে।কিন্তু কাল থেকে আমি যা ভেবে আসছিলাম তার সাথে তো আমার ভাবনার কোনো মিলই নেই।আমি ভেবে ছিলাম আমরা হয়তো কাকীকে পেয়ে গেছি।কাকাইকে সারপ্রাইজ দিবো ম্যামকে সামনে দাঁড় করিয়ে। কিন্তু এখন দেখছি ম্যাম আমার কাকী নয়, কারণ আমার কোনো ভাই নেই।ছিলো শুধু আশফি আপু।আর কাকী তো আশফি আপুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।ম্যাম সত্যিই বলেছিলো, কাকীর সাথে আমি ম্যাম কে গুলিয়ে ফেলেছি।

আজ সকাল থেকেই আবিদ চৌধুরীর শরীরটা ভালো না।আয়ান নিজের রুমে বসে অফিসের ফাইল গুলো দেখছে, সুমি হঠাৎই এসে আয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে, আয়ান তাড়াতাড়ি নিচে আসো বাবার শরীর খুব খারাপ। তোমার ভাইয়া ওইখানেই আছে।।
আয়ান হাতের কাজ রেখে, কখন থেকে? তোমরা তো আমাকে কিছু বলোনি।কথা গুলো সুমিকে বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।

হসপিটালের করিডোরে সবাই বসে অপেক্ষা করছে।আবিদ চৌধুরীকে একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছেন।ডাক্তার যাওয়ার সময় বলে গেছে নতুন ম্যাডাম এসে দেখে যাবেন।
সন্ধ্যায় আশফি এসে আবিদ চৌধুরীর কেবিনে গিয়ে ভালো করে দেখে রিপোর্ট সব গুলোই চেক করে
মোটামুটি ভালোই। আবিদ চৌধুরীর মাথায় হাত রেখে কেমন লাগছে আপনার কাছে?আর এই বয়সে আপনার কিসের চিন্তা বলুন তো?

আবিদ চৌধুরী -সেটা তো তোমাকে বুজাতে পারবোনা।

আশফি – সিস্টার উনাকে মেডিসিন গুলো ঠিক মতো দিয়ে দিও।আমি আসছি।
আশফি কেবিন থেকে বেরিয়ে মনে মনে ভাবছে কাল মায়ের জন্মদিন রাত ১২.০০ টার আগেই বাসায় গিয়ে পৌঁছাতে হবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কারো গাঁয়ের ধাক্কা খেয়ে,, সরি

আয়ান -না মা মনি! সরি তো আমার বলা উচিৎ। আমি তাড়াহুড়ায় তোমাকে দেখতে পাইনি।
আশফি কিছু বলতে যাবে এর আগে আদর এসে, আপু তুই এইখানে সারা হসপিটাল তোকে খুঁজেছি। আয়ান পিছনে ফিরে আদরকে দেখে অবাক হয় আরে আদর তুমি এইখানে? অবশ্য তুমি তো ডাক্তার হসপিটালে থাকারই কথা।

আদর -আংকেল! আপনি এইখানে?

আয়ান -আমার বাবাকে নিয়ে এসেছি।

আদর -আংকেল এই হচ্ছে আমার বড় বোন আশফি যার কথা আপনাকে বলেছিলাম।

আশফি -আদর উনাকে তুই আগে থেকে চিনিস?

আদর -আপু উনার সাথে আমার এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিলো আসার সময়।উনার মেয়ের নাম ও আশফি।

আশফি-ও আচ্ছা।তুই এখন হসপিটালে কি করছিস?

আদর -ভুলে গেছিস কাল মায়ের জন্মদিন। আর তুই এখনো হসপিটাল আছিস তাই নিতে আসলাম।
জন্মদিনের কথা শুনে আয়ানের মন খারাপ হয়ে গেলো।কারণ আজ তার পরীর ও জন্মদিন। প্রতি বছর এইদিনে সে একা একাই কাটায়।

আশফি -আংকেল আপনি কি কিছু ভাবছেন?

আয়ান-(ভাবনা থেকে ফিরে এসে)না কিছু না! তুমিই মনে হয় বাবা কে দেখেছো? এখন কেমন আছে উনি।

আশফি- অনেকটাই সুস্থ।ইচ্ছা করলে কালকেই বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।আর হ্যাঁ উনার বিশেষ যত্ন নিবেন।

আদর আশফির কথা শেষ হতেই, আংকেল কাল আপনি আমার মায়ের জন্মদিনে আসুন না।আমার মা আপনাকে দেখলে খুশি হবেন।

আয়ান-না আদর! অন্য একসময় যাবো।

আশফি -আংকেল চলুন না। আসলে আমরা এইখানে কাউকেই চিনিনা।আদর যখন আপনাকে আগে থেকেই চিনে তাহলে তো আর অসুবিধা নেই।

আশফির কথা শুনে তোমরা এইখানে নতুন নাকি?

আদর -জ্বি আংকেল।এখন কি! যাবেন তো?

আয়ান -এইখানে কোথায় এসেছো তোমরা?

আশফি বাড়ির ঠিকানা বলতেই আয়ান অবাক হয়ে, আরে ওই বাড়িটা তো আমার ছিলো।
আশফিও বিস্মিত হয়ে তার মানে বাশার আপনার কথা বলেছিলো?
আপনার ওয়াইফ,,,,আদর আশফিকে থামিয়ে, তাহলে তো আংকেল ভালোই হলো। কাল যেনো আমরা আপনাকে আমাদের বাসায় দেখি।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে, আচ্ছা চেষ্টা করবো।

আশফি -তাহলে আংকেল আমরা আসি!আর আপনার বাবার দিকে খেয়াল রাখবেন।

সাবিত সাহেবকে খাইয়ে প্রাপ্তি শুয়ে দিয়ে বাবা কালকের দিন তোমার মনে নেই তাই না?

সাবিত সাহেব -কেনোরে মা! কালকের দিন,,,, ওহঃ আমি তো ভুলেই গেছি।কাল তো তোর জন্মদিন।আমি ভুলেই গেছি।আমার নাতিনাতনিরা কাল যে ওদের মায়ের জন্মদিন তারা কি ভুলে গেছে?..
রাত ১২.০০ টা আশফি আর আদর একটা কেক নিয়ে এসে happy birthday to you আমাদের লক্ষ্মী মা।
প্রাপ্তি আর সাবিত সাহেব অবাক হয়ে,
সাবিত সাহেব -তোরা ভুলিসনি?

আদর-না নানা ভাই! মায়ের জন্মদিন আমরা ভুলতে পারি?
চলো মা! কেক কাটো।
ছেলেমেয়ের কান্ড দেখে চোখ দিয়ে গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। ২৬ বছর পর আবার এই শহরে তার জন্মদিন পালন করছে তার ছেলেমেয়েরা। আয়ানের হয়তো মনেই নেই আজকের দিনের কথা।তার পরীর জন্মদিনে সবসময় সেই সারপ্রাইজ দিতো।
মা! তুমি এতো কি ভাবছো?তাড়াতাড়ি কেক কাটো।আশফির কথা শুনে ভাবনা থেকে ফিরে এসে আমার ছেলেমেয়ে সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছে।
সাবিত সাহেব বসতে বসতে, হ্যাঁ প্রাপ্তি। সবচেয়ে বড় কথা হলো তোর মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে ।

আশফি -তুমি থাকতে আমার আর বিয়ের দরকার আছে?

আদর -আচ্ছা ঠিক আছে মা এইবার তুমি কেকটা কাটো।
প্রাপ্তি কেক কেটে সবাইকে এক এক করে খাইয়ে দিলো।

আদর কেক খেতে খেতে,মা! কাল আমাদের বাসায় একজন গেস্ট আসবে।আসলে এইখানে আসার আগে উনার সাথে আমার পরিচয় হয়।আজ আবার আপুর হসপিটালে দেখা হয়েছে।তাই আপু সহ উনাকে কাল আসার জন্য ইনভাইট করে আসলাম।

প্রাপ্তি -ভালো করেছিস।এখন যা রাত অনেক হয়েছে।বাবা তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি।

সকাল সকাল উঠে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেলো।বারান্দায় আসলে তার মন ভালো হয়ে যায়।বাড়িটা যে বিক্রি করেছে সেই লোকটার পছন্দ আছে।বারান্দায় বিভিন্ন রকমের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে।প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে, লোকটার সাথে আমার অনেকটাই মিল আছে ।আশফি এককাপ কফি নিয়ে প্রাপ্তির রুমে এসে প্রাপ্তিকে না দেখে বারান্দা গিয়ে, জানতাম তুমি এইখানেই আছো।এই নাও তোমার কফি।
প্রাপ্তি কফি হাতে নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতেই,
আশফি-আমি এইখানে কেনো এসেছি জানো?
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে, কেনো?

আশফি -আজ তুমি কলেজে যাবে না।আজকের এই বিশেষ দিনটি আমরা একসাথে থাকতে চাই।

প্রাপ্তি -ওকে মহারানী।
আশফি আর আদর বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে।মায়ের জন্মদিন বলে কথা।এই শহরের কাউকে তেমন চিনেনা।এসেছে মাত্র কয়েকদিন হলো ব্যস্ততায় কারো সাথে তেমন পরিচয় হয়ে উঠেনি।
বাশার এসে দেখে প্রাপ্তি নিজেই সব রান্না করেছে।সন্ধ্যা হয়ে এলো, সাবিত সাহেব বাশার কে দিয়ে প্রাপ্তিকে নিজে রুমে ডেকে পাঠালেন।
প্রাপ্তি সাবিত সাহেবের রুমে যাবার জন্য পা বাড়াতেই,মা! আগে তুমি রেডি হয়ে আসো তারপর নানা ভাইয়া ঘরে যাবে।আদর আবার ওই আংকেল কে এগিয়ে আনতে গেছে।আদর এসে যদি দেখে তুমি রেডি হওনি তাহলে তোমার খবর আছে।
প্রাপ্তি আশফিকে আর কিছু না বলে রেডি হয়ে সাবিত সাহেবের রুমে গেলো।
প্রাপ্তিকে দেখে সাবিত সাহেব বসে, আয় মা! আমার পাশে বস!
আজ তোর জন্মদিনে আমার দিবার মতো তেমন কিছু নেই।তবে একটা জিনিস আছে, কথাটা বলে বালিশের নিচ থেকে কিছু কাগজ পত্র বের করে, এই নে!
প্রাপ্তি কাগজ গুলো হাতে নিয়ে বাবা এই গুলো তো জায়গার দলিল।
সাবিত সাহেব -হুম,আমার যা কিছু আছে আজ থেকে সব তোর।আমার তো কেউ নেই এইগুলো দিয়ে আমি কি করবো।কিন্তু আমার মেয়ের জন্মদিনে এইগুলা আমার মেয়েকে আমি উপহার দিলাম।
প্রাপ্তি কান্না জড়িত কন্ঠে, বাবা আমার এইসব কিছুই চাইনা।এই অভাগী কে তুমি তোমার নিজের মেয়ে বলে সমজে স্বীকৃতি দিয়েছিলে এইটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার।
বাশার রুমে দরজায় দাঁড়িয়ে, খালাম্মা ভাইজান আর ওই মামা এসে ড্রইংরুমে বসে আছে, আপনাকে ভাইজান ডাকতেছে।

প্রাপ্তি -বাশার তুমি যাও আমি আসছি।

আয়ান ড্রইংরুমে বসে আছে,সব কিছু দেখে একটু অবাক হলো।বাড়িটা সে যে ভাবে সাজিয়েছে সেইভাবেই আছে।শুধু দেওয়ালের ছবি গুলো এরাই লাগিয়েছে, আয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে একটা ছবির দিকে চোখ পড়লো,এই সে কাকে দেখছে আশফি আর আদরের সাথে আমার প্রাপ্তি, আয়ান সোফা থেকে উঠে আস্তে আস্তে ছবির দিকে এগুতে লাগলো।এইদিকে প্রাপ্তি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুচতে মুচতে ড্রইংরুমে এসে আয়ানের সাথে ধাক্কা খেয়েই আয়ানের বুকের সাথে মিশে গেলো।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৭

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আদরের সাথে আশফি বকবক করতে করতে চোখ পড়লো প্রাপ্তির দিকে।আদর সামনে তাকা মা কোথায় দেখ! আদর তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে প্রাপ্তিকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো,মা!কোথায় যাচ্ছো তুমি ? দেখছো না ওইখানে অনেক ভিড়। চলো গাড়িতে বসবে। প্রাপ্তিকে গাড়িতে বসিয়ে, আপু মা কে দরে রাখ।
আয়ান এগিয়ে এসেও আবার দাঁড়িয়ে পড়ে ভাবছে না প্রাপ্তি এইখানে কেনো আসবে হয়তো এইটা আমার মনের ভুল।আয়ান আবার পিছিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো।মানুষের ভিড় আস্তে আস্তে কমতে থাকে।প্রাপ্তিদের গাড়ি আয়ানের পাশ দিয়ে চললো তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে এসে পৌঁছে সবাই এক এক করে গাড়ি থেকে নেমে,
আশফি -ওয়াও! বাড়িটা তো অনেক সুন্দর।
আদর আশফির মাথায় টোকা দিয়ে, ওয়াও বাড়িটা কতো সুন্দর এইসব ন্যাকামি রাখ।তোদের মেয়েদের একটাই অভ্যাস কোনো কিছু দেখলেই ন্যাকামি।

আশফি-মা দেখেছো তোমার ছেলে
সবসময়,,,,,,, তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি অন্যমনস্ক হয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকছে।মনে হচ্ছে এই বাড়িটা প্রাপ্তির অনেক চেনা।আদর পিছনদিক থেকে এসে, মা! তুমি কি আগে কখনো এই বাড়িতে এসেছো?

প্রাপ্তি -হুম? না,কিন্তু কেনো জানি মনে হচ্ছে এই বাড়িটা আমার অনেক চেনা।সবকিছু মনে হচ্ছে আমার মতো করে সাজানো। ঠিক যেমনটি আমি চাইতাম। আচ্ছা যাইহোক, তোর নানা ভাইকে নিয়ে আয়।
আদর- এক কাজ করলে কেমন হয়! এই বাড়িটা কে বিক্রি করেছে সেটা জানলে কেমন হয়?

আশফি -তুই এইসব কিভাবে জানবি?
আদর-আরে বোকা যিনি আমাদের ব্যাগ গুলো উপরে নিয়ে গেলেন ইনি হচ্ছেন এই বাড়ির পুরনো কাজের লোক।এবং উনি এই বাড়ির দেখা শুনা করেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে উনার সাথে কথা বলেছি।তোর মতো না যে সারাদিন সাজা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবো।
প্রাপ্তি -ওহঃ আদর ও তোর বড় বোন।সারাক্ষণ ওর পিছনে না লাগলে তোর হয়না। তোদের মতো থাকতে আমার ভাই আমাকে চোখের মনি করে রাখতো।

আদর-আমাদের মামা ও আছে? আপু জানিস এই জায়গা টা মনে হয় আমাদের জন্য শুভ। কেনো জানিস?এই জায়গার নাম নেওয়ার পর থেকেই মা তার পুরোনো স্মৃতি গুলো একটু একটু করে মনে করছে।

প্রাপ্তি – তোরা এখন বড় হয়েছিস। তোদের আস্তে আস্তে অনেক কিছু জানার প্রয়োজন আছে।
বাশার কে উপর থেকে নামতে দেখে(আদর যার কথা বলে ছিলো)
আশফি -সব কিছু ঠিকঠাক মতো আছে তো?

বাশার -জ্বী আপা মনি সব কিছু ঠিকঠাক করেই রেখে আসলাম।

প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে বাশারের দিকে তাকিয়ে আচ্ছা এই বাড়িটা আগে কার ছিলো দেখে তো মনে হচ্ছে উনারা এই বাড়িতে থাকতেন না।

বাশার মন খারাপ করে, জ্বী খালাম্মা এই বাড়িতে কেউ থাকতো না।মাঝে মাঝে একজন এসে থাকতো।ওনাকে আমি মামা বলে ডাকতাম।আর মামার মুখ থেকেই শুনেছিলাম মামা ওনার স্ত্রীর জন্যই এই বাড়ি বানিয়েছিলেন মামীকে উপহার দেওয়ার জইন্য।কিন্তু ওনার স্ত্রী ফিরে এলোনা বাড়িও দেওয়া হলোনা।কিছু দিন আগে কোনো একটা কারনে তিনি বাড়িটা বিক্রি করে দেন।আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম যদি মামী ফিরে আসে তখন? মামা কইলো মামী নাকি আর কখনোই ফিরা আইবো না।
কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে সাবিত সাহেব কে নিয়ে চলে গেলেন রুমে।

আশফি -দেখেছিস আদর লোকটা মনে হয় ওনার স্ত্রী কে খুব ভালোবাসতেন।আচ্ছা বাশার! ওনার স্ত্রী কোথায় থাকেন?

বাশার- কোনো কারণে ওনার স্ত্রী ভুল বুজে চলে গেছেন। আচ্ছা আপা মনি আপনারা কি খাবেন বলেন।আমি এখুনি নিয়ে আসছি।

আদর-আজ তোমার পছন্দের মতো কিছু নিয়ে আসো।(কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে)আমরা তো জানিনা তোমার মতো মজার একটা মানুষ এইখানে আছে।তাহলে আসার সময় কিছু নিয়ে আসতাম।এখন এই টাকা দিয়ে নিজের পছন্দের কিছু কিনে নিও।
বাশার খুশি হয়ে খাবার রেডি করতে বেরিয়ে গেলো।প্রাপ্তি এসে দেখে ভাইবোন এখনো দাঁড়িয়ে আছে।।
প্রাপ্তি -কিরে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।কে কোন রুমে থাকবি দেখে নে।প্রাপ্তি কথাটা বলেই উপরে চলে গেলো।

রাত ১০. ০০ টায় প্রাপ্তি সবাইকে খেতে ডাকলো।বাশার প্রাপ্তির সাথে হেল্প করছে।বাশারের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে প্লেট ঠিক করতে করতে প্রাপ্তি বললো,বাশার দুপুরে যে স্যারের কথা বলছিলে,ওই স্যার কি করেন?

বাশার-অনেক বড় ব্যবসা শুনেছি।এক ডাকে সবাই চিনেন।

প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে, নাম কি উনার?

বাশার নাম বলার আগেই আশফি আর আদর উপর থেকে নামতে নামতে,
আদর -মা! এই বাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আশফি চেয়ারে বসতে বসতে, মা!আমার এক কলিং ফোন করেছে।
এইখানে আসার সময় একটা হসপিটালের সাথে কথা বলেছিলাম ওই হসপিটালে কাল থেকেই যেতে হবে।আদর! তুই আরও কয়েক দিন রেস্ট নে তারপর না হয় হসপিটালে জয়েন করিস।

প্রাপ্তি -আদর! আশফি কথাটা খারাপ বলেনি।কাল থেকে আমারও কলেজে যেতে হবে।তুই একা একা বাড়িতে বসে না থেকে শহরটা কে ভালো করে ঘুরে দেখ।

আদর মাথা নাড়িয়ে মায়ের কথায় সায় দিল।

সকাল থেকে সুমি নাস্তা বানাচ্ছে সবার জন্য। আয়ান ড্রইংরুমে বসে পেপার পড়ছে।মুনিয়া তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। মুনিয়াকে তাড়াহুড়ো করতে দেখে আয়ান পেপার থেকে মুখ সরিয়ে, কিরে তোর এতো তাড়া কিসের? কোথাও যাচ্ছিস নাকি?
মুনিয়া আয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে কাকাই আর বলোনা কলেজে আজ নতুন ম্যাডাম আসছে।আর উনি নাকি খুব রাগী।

আয়ান মুনিয়ার কথা শুনে হাঁসি দিয়ে, যার যত রাগ তার মনটাই অনেক সুন্দর।
মুনিয়া-একটু ভেবে,তা ঠিক বলেছো।আচ্ছা তাহলে আমি আসি।(চেঁচিয়ে সুমিকে বললো)মা! আমি আসছি।
সুমি রান্নাঘর থেকে এসে, এই মুনিয়া আসছি মানে? নাশতা করে যা?
মুনিয়া দরজা দিয়ে বেরুতে বেরুতে, মা! বাহিরে খেয়ে নিবো।
আয়ান মুনিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে, আচ্ছা ভাবী! আমার আশফিও আজ কতো বড় হয়ে গেছে তাই না?
সুমি-সেটা আর বলতে,,,প্রাপ্তি চলে যাওয়ার অনেক বছর পর মুনিয়া দুনিয়াতে এসেছে।আর আশফির তো এখন বিয়ে হওয়ার কথা।ওদের কথা ভেবে আর কি লাভ।প্রাপ্তি হয়তো তার সংসার অন্য কারো সাথে ঠিকি গুছিয়ে নিয়েছে।
আয়ান দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আমি আমার পরীকে খুব ভালো করেই চিনি।আমি ছাড়া অন্য কারো হতে পারে না আমার পরী।
আকাশ আয়েশা বেগমকে ধরে ধরে এনে আয়ানের সাথে বসিয়েছে।নিজের ছেলের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কতো করে তোকে বললাম বিয়েটা কর।কিন্তু না তুই প্রাপ্তি আশায় এখনো বিয়ে না করে আছিস।
আয়ান পেপার হাত থেকে রেখে দিয়ে, অন্য একটা মেয়েকে এই বাড়িতে এনে কি লাভ হতো,কারণ আয়ানের কাছ থেকে কখনোই ভালোবাসা পেতো না।আয়ানের যা কিছু ছিলো সব তার পরীকেই দিয়ে দিয়েছে। অন্য মেয়ে আসলে তাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই।
আয়েশা বেগম- তুই কেমন ছেলেরে বাবা! যে মেয়ে তোর ভালোবাসাই বুজলোনা আজও তুই তাকেই ভালোবাসিস।সেইদিন তোদের কি হয়েছিলো কেউ এখনো জানতে পারলোনা।

আকাশ-থাকনা মা! রোজ রোজ ওকে এইগুলো বলে লাভ কি?ওর অপেক্ষার একদিন অবসানও হতে পারে।
প্রাপ্তির নতুন কলেজের আজ ফাস্ট দিন।ক্লাস পড়েছে তাও মুনিয়াদের ক্লাসে।ক্লাসে ঢুকতেই সবাই সালাম দিলো।প্রাপ্তি সালামের আনসার নিয়ে, আজ তোমাদের সাথে আমার ফাস্ট ক্লাস। তাই আগে সবার সাথে পরিচয় হয়ে নি। আমি মিফতাহুল জান্নাত। তোমাদের ম্যাথ টিচার।
মুনিয়া প্রাপ্তি ক্লাসে আসার পর থেকেই হা করে তাকিয়ে আছে।মুনিয়াকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃষ্টি (মুনিয়ার ফ্রেন্ড) এই মুনিয়া তুই যে ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে তোর বয় ফ্রেন্ড আসছে। এইভাবে হা করে কি দেখছিস?

মুনিয়া-ফোটো কপি!

বৃষ্টি -মানে?

মুনিয়া থুতনির নিচ থেকে হাত সরিয়ে, আমার কাকাইয়ের রুমে উনার মতো দেখতে একজনের ছবি দেওয়ালে ঝুলানো আছে, মানে! ওইটা আমার কাকীর ছবি অনেক পুরোনো। অবশ্য ম্যাডামের বয়সের সাথে ওই ছবির কোনো মিল নেই।
মনে হচ্ছে ওইটা ম্যাডামের যৌবন কালের ছবি।

প্রাপ্তির মুনিয়ার দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হেঁসে, দাঁড়াও! কথা বলছিলে কেনো?

মুনিয়া- ইয়ে মানে!।
প্রাপ্তি -ঠিক আছে বসো! আমার ক্লাসে কেউ কথা বলবে না।
প্রাপ্তি ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
ম্যাম! ম্যাম! কারো ডাক শুনে প্রাপ্তি পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে ক্লাসের সেই মেয়েটা।
মুনিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে প্রাপ্তির সামনে এসে দাঁড়ালো।
প্রাপ্তি তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে,মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী, চেহারায় অদ্ভুত এক মায়া।
মেয়েটা একটু খানি দম নিয়ে, ম্যাম আমি মুনিয়া! আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

প্রাপ্তি -অবশ্যই করতে পারো।

মুনিয়া-আপনার সাথে আমার আগে কখনো দেখা হয়েছে?
মুনিয়ার এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে প্রাপ্তি না হেঁসে পারলো না।
কেনো তোমার এমন মনে হয় ?
মুনিয়া ছবির কথাটা বলবে কিনা বুজতে পারছেনা।না! আপনাকে মনে হচ্ছে আমি আগে কোথাও দেখেছি।

প্রাপ্তি -দেখো মুনিয়া! পৃথিবীতে আমার মতো দেখতে আরও অনেক জন আছে।হয়তো তুমি কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছো।তোমার আর কিছু বলার আছে?

আদর কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, প্রাপ্তিকে নিতে এসেছে সে।প্রাপ্তি ক্লাস শেষ করে আদর কে দেখে, দায়িত্ব শীল ছেলে।
কখন এসেছিস?

আদর -অনেকক্ষণ! প্রাপ্তিকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসতে গাড়ির দরজা খুলতেই আরেকটা গাড়ি এসে পাশে দাঁড়ালো।আদর একবার গাড়িটার দিকে তাকিয়ে নিজের গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আয়ান গাড়ি থেকে নেমে দেখে মুনিয়া আস্তে আস্তে বের হচ্ছে।
মুনিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে,আমার মা মনির কি মন খারাপ? নতুন ম্যাডামকে ভালোলাগেনি?
মুনিয়া কোনো কথা না বলেই গাড়িতে এসে বসলো।
আয়ান ও কথা না বাড়িয়ে মুনিয়াকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৬

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সাবিত সাহেবকে শুয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে খাটের কিনারায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো প্রাপ্তি । ভালো লাগছেনা দেখে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। আকাশের তারা গুলো ঝলমল করছে। চারদিকে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। আজ আয়ানের কথা খুব মনে পড়ছে।মনে হচ্ছে আয়ান আমার শিরা উপশিরায় মিশে আছে।হয়তো তানিয়াকে নিয়ে আয়ান সুখেই আছে।আয়ান! আমার কথা কি তোমার মনে পড়েনা?পৃথিবীতে কোনো কিছু থেমে থাকেনি।থেমে গিয়েছিল তোমার আর আমার সম্পর্ক। তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে রাতের আকাশের চাঁদ দেখবো।যখন আকাশ মেঘে ডেকে যাবে চারদিকে পাখিরা কিচিরমিচির ডাকবে তখন তুমি আমার কপালে চুমু দিয়ে বলবে, পরী আই লাভ ইউ। যখন বৃষ্টি হবে ছাদে গিয়ে তুমি আমি একসাথে ভিজবো। হ্যাঁ আরও অনেক কথাই দিয়েছিলে।আমি কিছুই ভুলিনি আয়ান।এখন সব কিছু সময় মতো ঠিকি হয়, শুধু হয়নি তোমার আমার সাথে চাঁদ দেখা,হয়নি কপালে চুমু খেয়ে আই লাভ ইউ বলা,হয়নি দুজনে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। কিন্তু হ্যাঁ সব কিছুর মাঝে একটা কথাই সত্যিই হয়েছে, তুমি আমাকে বলতে প্রাপ্তি আমি তোমাকে সামলানোর জন্য সারাজীবন থাকবোনা। তুমি ঠিকি বলেছো তুমি আমার পাশে নেই আছে শুধু তোমাকে নিয়ে আমার অনুভূতি গুলো। আছে শুধু তোমার অস্তিত্ব। তানিয়ার চিঠিতে লিখা গুলো আমাকে আজও অনেক কষ্ট দেয়।আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি ওই মেয়ের কতো টা কাছে গিয়েছিলে? অবশ্য এখন তো তুমি ওর কাছেই থাকো।সেইদিন রাতে তুমি যদি আমায় থাপ্পড় গুলো না দিয়ে সত্যি কথা গুলো বলতে আমি এক নিমিষেই তোমায় ক্ষমা করে দিতাম।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে আশফি।

প্রাপ্তি -তুই এখনো ঘুমাসনি?

আশফি -তুমিও তো ঘুমাও নি! অবশ্য তোমাকে আমি কখনো দিখিনি শান্তিতে একটা রাত ঘুমিয়েছো।

প্রাপ্তি মেয়ের কথা শুনে মুচকি হাঁসি দিয়ে,যা ঘুমিয়ে পড় সকালে অনেক কাজ।নতুন বাড়ি নতুন একটা জায়গা,নতুন পরিবেশ, বুজিস তো কতো কাজ।

আশফি-তোমার কলেজ থেকেও আর সময় পেলোনা ট্রান্সফার করানোর জন্য। আদরটা আসলো কয়েক দিন থেকে তার পর না যেতে পারতাম।কিন্তু না” আচ্ছা মা! যেখানে যাচ্ছো জায়গাটা কি তুমি আগে থেকে চিনো?কথাটা বলতেই প্রাপ্তি থমকে গেলো।কারণ শহর টা তার আগে থেকেই চেনা।তার সব অস্তিত্ব জুড়ে আছে এই শহর। তার প্রিয় মানুষটাই যে ওই শহরে থাকে।

আশফি -মা! আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।কারণ জানোই তো আমাকে ওইখানে গিয়ে হসপিটালে জয়েন করতে হবে।।

আশফির কথা শুনে মেয়ের মাথায় হাত রেখে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।ওই শরের মানুষ গুলো অনেক ভালো তবে কাছের মানুষ গুলো ভালো না।কথাটা বলেই প্রাপ্তি বারান্দা থেকে চলে এলো।
আশফি মায়ের কথা শুনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মায়ের কথা তো কিছুই মাথায় ঢুকলো না।মানুষ ভালো কিন্তু কাছের মানুষ গুলো ভালো না। ধ্যাৎ! মা মাঝে মাঝে এমন কথা বলে মাথায় ঢুকেনা।
রাত ২ টা সারাদিনের জার্নি করে আদর বেঘোরে ঘুমাছে।প্রাপ্তি রুমে এসে আদরকে দেখে মুচকি হেঁসে মাথাটা নাড়িয়ে কাছে গিয়ে কাঁথা গাঁয়ে দিয়ে লাইট অফ করে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে প্রাপ্তি। নতুন বাড়িতে যাবে আগে আগে পৌঁছানো টা ভালো।ওইখানেই গিয়েও কতো কাজ।বাড়িটা নিজের মনের মতো করে সাজাতে হবে।অবশ্য সাজানোর ব্যাপারে প্রাপ্তির এতো মাথা ব্যাথা নেই।এইসব এখন আশফিই করে।
আদর রেডি হয়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে মা! তোমরা গাড়িতে গিয়ে বসো আমি নানা ভাইকে নিয়ে আসছি।
আশফি -থাক তোকে আর কষ্ট করতে হবে না নানা ভাইকে আমি গাড়িতে বসিয়ে এসেছি।সকাল থেকে তো হনুমানের মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলি।এখন আসছে ওনি নানা ভাইকে নিয়ে যেতে।

আদর -দাঁড়া তোকে তাড়াতাড়ি করে এইবাড়ি থেকে বিদায় করতে হবে।না হলে সাতচুন্নির মতো আমার পিছনে পড়ে থাকবি।একটা প্রেম করেই তো বিদায় হতে পারিস তাহলে আমাদের খরচটা বেঁচে যেতো।
প্রাপ্তি কথাটা শুনে কোনো কিছু খেয়াল না করেই,আদর! আমার মেয়ে আয়ান চৌধুরী মেয়ে আর আয়ান চৌধুরী কখনো তার মেয়েকে পালিয়ে যেতে দিতো না।
সে যদি অন্যের মেয়েকে কুড়িয়ে এনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ে দিতে পারে আর নিজের মেয়ে কথা তো বাদই দিলাম।

আদর -আয়ান চৌধুরীর মেয়ে মানে? বাবার নাম তো ইকবাল মাহমুদ! আয়ান চৌধুরী নাম টা আমি কোথায় যেনো শুনেছি।
আদরের কথা শুনে প্রাপ্তি থতমত খেয়ে গম্ভীর গলায়, তুই বুজতে ভুল করেছিস চল এখন তোর নানা ভাই গাড়িতে একা বসে আছে।কথাটা বলেই প্রাপ্তি হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
আশফি দিকে আদর তাকিয়ে, আপু তুই ও কি ভুল শুনেছিস?তবে এই আয়ান চৌধুরী নাম টা খুব চেনা লাগছে তবে মনে করতে পারছিনা।
আশফি -চল তো! তুই বেশি কথা বলিস।

নতুন শহরে প্রাপ্তিদের গাড়ি আসতেই বুকের ভিতরটা কেমন জানি করছে প্রাপ্তির।নিজের কাছের মানুষ গুলো সবাই এই শহরে থাকে।২৬ টা বছর পর আবার এই শহরে। সব কিছুতেই এখন আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তার আয়ান হারিয়ে গেছে হয়তো। সংসার, ছেলেমেয়েদের নিয়ে হয়তো সুখেই আছে।সেই সংসারে হয়তো আমার কোনো স্থান ছিলোনা। ছেলের কথা তো আয়ান জানেই না।আশফির কথা হয়তো ভুলে গেছে ,কারণ তার নিজের সংসারে আমার মেয়ের কি কোনো স্থান থাকতে পারে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই প্রাপ্তিদের গাড়িয়ে এসে থামলো একটা ব্রিজের উপর।

প্রাপ্তি আদরকে উদ্যেশ্য করে, কি হয়েছে আদর গাড়ি থামালি কেনো।বাড়ি কি এসে গেছে নাকি।আমি তো বাড়ীটা সরাসরি দেখিনি।ড্রাইভার তো চিনে।

আদর -না মা! সামনে এক্সিডেন্ট হয়েছে হয়তো তাই অনেক ভিড়।(আয়ানের গাড়িটাও ব্রিজের উপর প্রান্তে এসে ভিড় দেখে থামলো।)
প্রাপ্তি -ওহ্ তাহলে তো অনেকক্ষণ ওয়েট করতে হবে।

আশফি -আমি গিয়ে দেখি!

আদর -রাস্তার মধ্যেও কি তুই ডাক্তারি শুরু করবি নাকি?

আশফি -আদর! সবসময় ফাজলামো ভালো লাগেনা।এইটা আমার দায়িত্ব।

ভাইবোনের ঝগড়া দেখে প্রাপ্তি গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।
আয়ানের কেমন জানি লাগতে শুরু করলো।মনে হচ্ছে তার প্রাপ্তি আশেপাশে কোথাও আছে।আয়ান গাড়ি থেকে নেমে ভিড়ের দিকে আগাতে লাগলো । প্রাপ্তিরও খুব অস্থির লাগছে।কেনো মনে হচ্ছে আয়ান তার পাশেই আছে।হয়তো সারাটা রাস্তায় আয়ানের কথা ভাবতে ভাবতে আসছে তাই?কিন্তু না এই অস্থিরতা অনেক বিশাল। আয়ান হয়তো সত্যিই আমার পাশে আছে এই ভেবে প্রাপ্তিও ভিড়ের মধ্যে এগুতে লাগলো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৫

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

আমেরিকার এয়ারপোর্টে বসে আছে আয়ান! অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশে আসার জন্য।হঠাৎ করেই একটা ছেলে এসে আয়ানের পাশে বসলো।আয়ান পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে ছেলেটা নিজের ব্যাগ ঠিক করে রাখছে।ছেলেটার চেহারায় অনেক মায়া আছে ছেলেটা ব্যাগ রেখেই আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হেঁসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে, হাই! আমি ইশফিয়াক চৌধুরী আদর।
আয়ান ও হাত বাড়িয়ে আমি আয়ান চৌধুরী। আবার দুজনেই চুপ করে বসে আছে।খানিকক্ষণ পর আয়ান নিরবতা ভেঙে, তুমি আমার ছোটো তাই তুমিই করেই বলছি, দেখে তো বুজা যাচ্ছে দেশেই যাচ্ছো। আমেরিকায় কি কাজে আসছো?
আদর- it’s ok.আমি ডাক্তার।এইখানেই পড়াশুনা শেষ করেছি। কিন্তু মায়ের আদেশ বাংলাদেশে চলে যাওয়ার জন্য।

আয়ান-মা কে অনেক ভালোবাসো?
আদর -অনেক অনেক ভালোবাসি! কারণ আমার জীবনে মা আর আপুই সব।আচ্ছা আপনি কেনো আসলেন?
আয়ান -আমি বিজনেসের কাজে আসছি।
আদর -হুম,,আপনাকে আংকেল বলে ডাকতে পারি?

আয়ান – দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,, কেনো পারবেনা! হয়তো তোমার বয়সের আমার একটা ছেলে থাকতো।অবশ্য আমার একটা মেয়ে ছিলো।

আদর -ছিলো মানে? এখন কোথায়?
আয়ান -জানিনা।তবে আমার মেয়ে আশফি আমার মনে সারাক্ষণই বিরাজ করে।।

আদর-আশফি! আমার বড় আপুর নামও আশফি। দেখেছেন আংকেল আপনার সাথে কেমন যেনো মিলে গেলো ।

আয়ান -সব কিছু বিধাতা মিলায়না।যাইহোক, এই নাও আমার ভিজিটিং কার্ড যদি কখনো মনে পড়ে চলে এসো।আজকের মতো আবার দুজনে জমিয়ে আড্ডা দিবো। তোমার সাথে কথা বলে ২৬ বছর পর মনে শান্তি পেলাম।আদর মুচকি হেঁসে আংকেল আপনাকে আমারও খুব ভালো লেগেছে।অবশ্যই দেশে গেলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আদরের কথা শুনে আয়ানের চোখ গুলো কেমন টলমল করছে,আদরের থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো,আমার পরী আমার জীবন থেকে চলে গেছে ২৬ টা বছর হয়ে গেলো।এই ২৬ বছরে মনে হলো এই ছেলেটাই আমার কাছে অনেক আপন। বাংলাদেশে এসে দুইজন দুই দিকে পা বাড়ালো।আয়ান চললো চৌধুরী বাড়ির দিকে আর আদর চললো তার মায়ের কাছে।

মা! মা! কাকাই আসতে এতো দেরি করছে কেনো বলো তো।কাকা এইবার অনেক দিন পর দেশে আসছে।তুমি দেইখো কাকাই শুধু এইবার আমাকেই ভালোবাসবে।মেয়ের কথা শুনে সুমি খুব বিরক্তিকর ভাবে মেয়ের দিকে তাকিয়ে সকাল থেকে অনেক বকবক করেছিস তোর কাকাইকে নিয়ে এইবার উপরে যা। যখন তোর কাকাই আসবে তোর কাকাই তোকে ডেকে নিবে।সুমির কথা শেষ হতেই আয়ান সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে আমার মা মনিকে বকছো কেনো তুমি?মুনিয়া কাকাই এসে গেছি এখন আর তোমাকে কেউ বকা দিবেনা।মুনিয়া দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাকাই মাকে ভালো করে বকে দাওতো।
আয়ান -আচ্ছা একটু পর দিচ্ছি।করিম (নতুন কাজের লোক)গাড়ি থেকে আমার ব্যাগ গুলো নিয়ে আসো তো।
আবিদ চৌধুরী আর আয়েশা বেগম আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে এসে,,
আবিদ চৌধুরী -কখন এলি? আমি এতোক্ষণ এইখানে বসেই তোর অপেক্ষা করছিলাম।তোর দেরি দেখেই রুমে গেলাম।
আয়ান-এইতো আব্বু কিছুক্ষণ।

সুমি-বাবা! কাকা ভাতিজী এক সাথে হলে আর কারো কথা মনে থাকে?আয়ান আগে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।পরে কথা বলা যাবে।

মুনিয়া- কাকাই মা ঠিক বলেছে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।
আয়ান নিজের রুমে গিয়ে কোর্ট খুলে দেওয়ালের প্রাপ্তির ছবির দিকে নজর পড়তেই, কেমন আছো তুমি? আমাকে কষ্ট দিয়ে কি তুমি সত্যি ভালো থাকতে পারবে।না আমি অভিশাপ দিচ্ছি না।শুধু বলছি আমার প্রাপ্তিও তো আমায় ভালোবাসতো।আমার প্রাপ্তি তো আমায় ছাড়া ভালো থাকতে পারেনা।আচ্ছা প্রাপ্তি! আমার ভালোবাসায় কি কোনো খাদ ছিলো? কেনো চলে গেলে তুমি আমায় একা রেখে খুব কষ্ট হয় আমার।তোমাকে একটা মিথ্যা বলায় ২৬ টা বছর এর শাস্তি পেতে হবে আমি কল্পনায় করিনি।(আয়ান ছবি তে হাত রেখে)মিস করি তোমায় আর আমার মেয়েকে।আমার মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে তাইনা?

তোর মেয়ে শুধু বড় হয়নি হয়তো বিয়েও হয়েছে।কথাটা শুনে পিছনে ফিরে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান-ভাইয়া কখন এলি?

আকাশ-কিছু ক্ষণ! তুই এখনো ফ্রেশ না হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।

গাড়ি থেকে নেমেই আদর সদর দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকে মা! মা! কোথায় তুমি? আদরের মা রুম থেকে বেরিয়ে এসে, কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করতে ছিলাম।তোর দেরি দেখে ভাবলাম ফ্রেশ হয়ে আসি।আদর তার মাকে জড়িয়ে ধরে। I miss u মা! অনেক অনেক করেছি তোমায়?
আদরের মা আদরের কপালে চুমু দিয়ে পাগল ছেলে।আমি ও আমার ছেলেকে অনেক মিস করেছি।তুই ডাক্তার হয়ে ফিরে এসেছিস এতেই আমার সব অপেক্ষার অবসান হয়েছে।এখন আর কোনো কষ্ট নেই।

আদর -মা! আপু কোথায়? আমি আসবো জেনেও এখনো বাসা এলোনা?

ডাক্তার আদর আপনি ভুল বুজছেন। আদর পিছনে ফিরে নিজের বোন আশফিকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমার হসপিটালে ইমারজেন্সি রুগি ছিলো তাই না গিয়ে থাকতে পারলাম না। হসপিটালে যেদিন থেকে জয়েন করবি সেদিন থেকে বুজবি দায়িত্ব কাকে বলে।
আশফির কথা শুনে আদর আশফির নাক টেনে দিয়ে, জ্বি ডাক্তার আপু বুজেছি।।

আশফি আদরকে নিয়ে একটু এগিয়ে এসে দেখেছো মা!

মা-হুম দেখেছি।আদর! যার জন্য আজ তুই দুনিয়ায় আলো দেখেছিস তাকে বলবিনা?

আশফি- কি! তুই এখনো দেখা করিসনে? আদরের কান টেনে ধরে চল আমার সাথে।

আদর গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, মিঃ সাবিত সাহেব আসবো?
সাবিত সাহেব -কে? গলাটা কেমন চেনে লাগছে।
আশফি ধাক্কা দিয়ে আদরকে রুমে ঢুকিয়ে, নানা ভাই, আদর আসছে দেখো।সাবিত সাহেব খুব বুড়ো মানুষ তাই চোখে কম দেখেন।চশমা টা খুঁজে নিয়ে চোখে দিতে দিতে আদর এসেছে?কই আমার আদর নানা ভাই। কতো বছর তোকে দেখিনা।তোর মা কে কতো করে বললাম আমার নানা ভাই দেশে থেকেই পড়াশুনা করবে। কিন্তু না তোর মা জেদ ধরেছে তোকে বড় ডাক্তার বানাবে।তাই আমিও আর জোর করলাম না।
আদর সাবিত সাহেবের পাশে বসে আমিও তোমাদের অনেক মিস করেছি এখন চলো মা অপেক্ষা করছে খাবার নিয়ে, চলো এক সাথে খাবো।
আদর আর সাবিত সাহেব ড্রইংরুমে এসে কই তোর মা” প্রাপ্তি! প্রাপ্তি!
প্রাপ্তি এসে এইতো বাবা আমি রান্নাঘরে ছিলাম। খাবার আনতে গেছি।তুমি বসো না! নাতিনাতনিদের সাথে একসাথে বসে খেয়ে নাও।
সাবিত সাহেব বসতে বসতে, প্রাপ্তি মা” আজ তো আদর ডাক্তার হয়ে এসেছে, কথাটা ভেবেছিলাম বলবো না।কিন্তু না বলেও পারছি না।তাই বলছিলাম ওদের বাবা,,,,,, প্রাপ্তি সাবিত সাহেবকে থামিয়ে বাবা আপনি খেয়ে নিন।আর ওদের বাবা নেই।বাবা ছাড়া কি ছেলেমেয়ে মানুষ করা যায় না? হ্যাঁ হয়তো সেই দিন আপনি না থাকলে আমি অজানায় হারিয়ে যেতাম।হয়তো আমার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে না খেয়ে মরতে হতো। শুধু মেয়ে কেনো বলছি! আমার ছেলে যে কিনা আমার গর্ভে দুই মাসের বাচ্ছা। হয়তো সেইদিন জানতাম না আমি আরেক সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।আর সেইদিন যদি বাস স্টেশন থেকে আমাদের না নিয়ে আসতে হয়তো আমরা কোথায় হারিয়ে যেতাম। কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তি কান্নায় ভেঙে পড়লো।আশফি নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে, মা! প্লিজ তুমি কেঁদো না।আমাদের বাবার দরকার নেই। তুমি আমাদের কাছে বাবা মা সব।আদর উঠে এসে হ্যাঁ মা আপু ঠিক বলেছে তুমি আমাদের কাছে সব।আমার লক্ষ্মী মা! প্লিজ কাঁদেনা।

প্রাপ্তি চোখ মুছে তোদের একটা কথা বলা হয়নি। আমাদের কাল এই বাসা ছেড়ে যেতে হচ্ছে।আমার কলেজ থেকে বদলির অর্ডার আসছে।
কেউ আর কিছু বললো না সবাই চুপচাপ খেয়ে নিলো।

প্রাপ্তি -তোরা গিয়ে রেস্ট নে আমি বাবা কে নিয়ে তার রুমে যাচ্ছি।
প্রাপ্তি সাবিত সাহেব কে রুমে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে,আমার কথায় তোমার কষ্ট লেগেছে তাইনা।
সাবিত সাহেব -নারে,,,,মা! কষ্ট লাগে নাই।তবে এই ২৬ বছর তুই অনেক কষ্ট করেছিস।নিজেকে সুশিক্ষিত করে কলেজের শিক্ষক হয়েছিস।ছেলে মেয়ে দুজনকেই ডাক্তার বানিয়েছিস।তোর এই কষ্টের সাক্ষী যে আমি নিজে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৪

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান হসপিটালের ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করছে আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।রাত ১২.২০,প্রাপ্তি হয়তো আমার অপেক্ষায় বসে আছে।বিকেল থেকে ফোনেরও চার্জ নেই। হয়তো সবাই মিলে আমাকে বকাঝকাও করেছে।কথা গুলো ভাবছে আর হাত দিয়ে মুখটাকে মুছে নিচ্ছে।হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে তানিয়ার মা।
আয়ান-আন্টি! কিছু বলবেন?

তানিয়ার মা- আয়ান! তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। তোমাকে ফোন দিয়ে বলার পর তুমি যদি না আসতে তাহলে হয়তো আমার মেয়েটার খারাপ কিছু হয়ে যেতো।।

আয়ান -আন্টি আমি ওর বন্ধু আর বন্ধু হিসেবে আমি এইটুকু করতেই পারি।আর সময় মতো তানিয়াকে আপনি হসপিটালে নিয়ে এসে আপনি ভালোই করেছেন।

তানিয়ার মা- হ্যাঁ সকালে তোমার সাথে দেখা করে বাসায় ফিরে মেয়েটার যে কি হলো,, বলেই তানিয়ার মা হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো।।
আয়ান -প্লিজ আন্টি ভেঙে পড়বেন না।আমি আপনাদের পাশে সবমসময় আছি।
তানিয়ার মা আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো, জানি বাবা।তবে তুমি এখন বাসায় যাও। তোমার পরিবারের সবাই হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে আন্টি কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন।

আসিফ আর নীরাকে বিদায় দিয়ে প্রাপ্তি আশফিকে এনে ঘুম পাড়ালো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে আয়ান রুমে ঢুকছে,আয়ানকে দেখে প্রাপ্তি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। আয়ান প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে এসে আমার পরীটাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।আমি জানি পার্টিতে সবার চোখ আমার পরীর দিকে ছিলো। প্রাপ্তির রাগান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে,আয়ান নরম স্বরে বললো, সরি! আসলে পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আমি,,,,,, আয়ানকে বলার সুযোগ না দিয়ে প্রাপ্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের ঠোঁটে সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিলো। আয়ানও প্রাপ্তির ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলোনা। প্রাপ্তির ভালোবাসায় আস্তে আস্তে নিজেকে হারাতে লাগলো।
রাত ৩.০০ টায় আয়ানকে রেখে প্রাপ্তি ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।আয়ান পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে, তুমি ফ্রেশ হয়ে এলে যে? চলোনা তোমায় আরেকটু,,,, প্রাপ্তি আয়ানের মুখে আঙুল দিয়ে, আমার থেকে কি ওই মেয়েটা তোমায় ভালোবাসা বেশি দেয়? যার কারণে বার বার ওই মেয়ের কাছে ছুটে যাও।আমার শরীর তোমার কাছে ভালো লাগেনা তাইনা?ওই মেয়েটার ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে রাঙিয়ে আমার কাছে আসো তাইনা।এখন বলো তো সারারাত তোমাকে যে ভালোবাসা দিলাম ওই মেয়েটার থেকে কম পড়ছে? আর কতো ভালোবাসা দিলে তুমি ওই মেয়ের কাছে যাবেনা?
আয়ান কথা গুলো শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে প্রাপ্তির গালে থাপ্পড় দিয়ে, একদম চুপ!
কি বলছো আবল তাবল এই গুলো? মাথা ঠিক আছে তোমার?
বাড়ির সবাই শুনলে কি বলবে?
প্রাপ্তি চেঁচিয়ে, লজ্জা করছে তোমার? যখন ওই মেয়েটার কাছে যাও তখন লজ্জা লাগেনা?
তখন একবারো মনে হয়না বাড়ির কথা।আরে আমার কথা না হয় বাদেই দিলাম তোমার তো একটা মেয়ে আছে ওর কথা তো ভাবতে পারতে?

আয়ান করুন গলায় বলতে লাগলো, প্রাপ্তি প্লিজ, আমার কথা ঠান্ডা মাথায় একবার শুনো,আমি তোমাকে সব বুজিয়ে বলছি।

প্রাপ্তি -থাপ্পড় দিয়ে বুজাতে আসছো। কি বুজাবে তুমি? সব মিথ্যে? হ্যাঁ আমি অন্ধের মতোই তোমাকে বিশ্বাস করেছি।কিন্তু তুমি আমার সেই বিশ্বাসের কি মূল্য দিয়েছো।তোমার থেকে তো সায়মন ও ভালো ছিলো।অপকর্মের কথা গুলো নিজের মুখে স্বীকার করে নিয়েছিলো। সায়মনের কথা শুনে আয়ানের মনে হচ্ছে তার শরীরের সব রক্ত তার মাথায় উঠে গেছে,প্রাপ্তিকে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে, কি ভেবেছো! তোমাকে ভালোবাসি বলে এইনা তোমার দেওয়া মিথ্যা অভিযোগ গুলো মাথা পেতে নিবো।
প্রাপ্তি গালে হাত দিয়ে বাহঃ বাহঃ মিঃ আয়ান আপানাকে আর আমার মিথ্যা অভিযোগ সহ্য করতে হবেনা।কথাটা বলে আশফিকে কোলে নিয়ে আমি এখুনি এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি।আপনার সুখের মাঝে আমি কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াবো না।থাকেন আপনি আপনার লুকানো ভালোবাসা নিয়ে।আমি চলে যাচ্ছি আর লুকাতে হবেনা আপনাকে।
প্রাপ্তি হঠাৎ এমন কথা বলবে আয়ান প্রস্তুত ছিলো না,বিস্ময় ভরা দুটো চোখ নিয়ে, মানে? কোথায় যাচ্ছো এতো রাতে তুমি।কথাটা বলে আয়ান প্রাপ্তির এদিকে এগুতেই, একদম আমার দিকে এগুবে না বলে আশফিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়ান পিছন পিছন প্রাপ্তিকে ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে এলো।আয়ানের এইভাবে ডাকাডাকি শুনে সবাই বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
আবিদ চৌধুরী অবাক হয়ে, আয়ান কখন এসেছিস? আর এতো রাতে তোদের কি হয়েছে?
আয়ান আবিদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে, আব্বু প্রাপ্তিকে আটকাও” প্লিজ আব্বু প্রাপ্তিকে যেতে দিও না।

আবিদ চৌধুরী -আমি তো কিছু বুজতেছিনা। প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমাদের?
প্রাপ্তি -বাবা যাই হয়ে যাকনা কেনো আপনি আমাকে আটকাতে পারেন না।তবে কি হয়েছে সেটাও আমার কাছ থেকে কেউ জানতে চাইও না।কারণ সবার কোনো প্রশ্নের উত্তর আমি দিবোনা।
প্রাপ্তির কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়ান এগিয়ে যেতেই, তুমি যদি আমার আর আমার মেয়েকে আটকানো বা ছোঁয়ার চেষ্টা করো তাহলে আমাদের মরা মুখ দেখবে।প্রাপ্তি কথা শুনে আয়ান নিস্তব্ধ হয়ে হাটু ভেঙে বসে পড়লো। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউ কিছু বুজতেছেনা।সুমি এগিয়ে কাছে যেতেই প্রাপ্তি মাথা ইশারা করলো আর এগোতে না।চার দিকে ফজরের আজান দিচ্ছে সেইসময় প্রাপ্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো । প্রাপ্তি চলে গেছে ঠিকি আয়ানের সব কিছু হারিয়ে গেছে।আকাশ আর অভ্র এসে আয়ানকে ধরতেই আয়ান ইশারা দিয়ে দেখাচ্ছে প্রাপ্তিকে আটকানোর জন্য।
পুরো টা বাড়ি যেনো থমথমে হয়ে আছে হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো।আয়ান চোখ মুখ মুছে উঠে আসিফকে ফোন দিলো।ভাইয়া! আপনি কোথায়?
আয়ানের কান্না জড়িত কন্ঠ শুনে আসিফ বিস্মিত হয়ে আয়ান কি হয়েছে সব কিছু ঠিক আছে?

আয়ান -কিচ্ছু ঠিক নেই।প্রাপ্তি আমাকে ভুল বুজে বাড়ি থেকে চলে গেছে।আপনাদের বাড়ি গেলে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেন!

আশফিকে নিয়ে বাস স্টেশনে বসে আছে প্রাপ্তি। কোথায় যাবে কি করবে সে জানেনা। বাপের বাড়িও যাবেনা। সেইখানে আয়ান গিয়ে ঠিকিই পৌঁছাবে। আমার জন্য কেনো লুকিয়ে লুকিয়ে ওই মেয়ের সাথে দেখা করবে। এর ছেয়ে ভালো ওকে সম্মান দিয়েই ঘরে নিয়ে আসুক।আমি হয়তো ভালোবাসা পরিপূর্ণ ভাবে দিতে পারি নাই। তাই অন্য মেয়ের ভালোবাসায় নিজেকে পরিপূর্ণ করতে চাইছে।
সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রাপ্তির খোঁজ এখনো কেউ পায়নি।আয়ান আসিফকে জড়িয়ে ধরে, ভাইয়া আমি কি এতোই খারাপ? নাকি আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো?
আসিফ আয়ানকে ছাড়িয়ে কাঁধে হাত দিয়ে, আয়ান আমি জানিনা তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে তবে এইটা জানি তুমি কখনো কোনো অন্যায় করতে পারোনা।আমার বোনটার যে হঠাৎ কি হলো আমিও বুজতেছিনা।এখন কোথায় গেছে কি করছে?

সুমি-আমি তো ভেবেছিলাম রাগ করে যখন বেরিয়ে গেছে হয়তো তোমাদের বাড়ি যাবে।কিন্তু এখন তো দেখছি ভয়ংকর রূপে দাঁড়িয়েছে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট: ৩

1

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট: ৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি রান্নাঘরে ঢুকতেই সুমি মুচকি হেঁসে বললো,কিরে আজ পরীর জন্মদিন আর তুই ঘুম থেকে উঠতে এতো লেট করলি? দুজনে কি সারারাত চোর পাহারা দিছিস নাকি?সুমি কথাটা বলতেই ঝিনুক আর রেশী অট্র হাঁসিতে লুটিয়ে পড়ছে।
প্রাপ্তি কথা না বাড়িয়ে, ভাবী! মিনু আপুকে ফোন করেছো? আশফির জন্মদিন জেনেও একটা ফোন দিলো না।
ঝিনুক -ঠিক বলছো। মিনু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর থেকে সবাইকে কেমন জানি ভুলে গেছে।অবশ্য রাহাত মাঝে মাঝে নিহাদের কাছে ফোন দেয়।

সুমি -মিনু দুইদিন আগে আমায় ফোন করেছিলো।বেশ ভালোই আছে।বার বার আশফির কথা জিজ্ঞেস করছিলো।

আয়েশা বেগম এসে দেখে সবাই রান্নাঘরে কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে।
কি ব্যাপার সবাইকে নাশতা দিবে কখন? আজ তো কেউ অফিসে যাবেনা তাই সবাই আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু তোমরা ওদের সকালের নাশতা না দিয়েই কথার ঝুড়ি খুলে বসেছো।

সুমি-এইতো মা! হয়ে গেছে।আসলে মিনুর কথা উঠলো তাই বলছিলাম।
সবাই নাশতা করতে বসেছে।সুমি আশফিকে কোলে নিয়ে, প্রাপ্তি! সবাইকে কফি ঢেলে দে।
প্রাপ্তি সবাইকে দিয়ে আয়ানকে দিতে যাবে তখনি আয়ান চোখ রাংগিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে কফিটা নিজেই ঢেলে নিলো।সকালে তুমি আমার সাথে যা করছো এইটার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।শুধু আশফির জন্মদিনের পার্টিটা মিটে যাক তারপর তোমাকে বুজাবো আয়ান কি জিনিস। আয়ান কথা গুলো ভাবছে আর প্রাপ্তির দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। প্রাপ্তি ভালো করেই জানে আয়ান কেনো তার হাতের কফিটা খেলো না।সকাল বেলা যখন আয়ান প্রাপ্তিকে ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে নিতে ছেয়েছিল প্রাপ্তি তখন ধাক্কা দিয়ে আয়ানকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।।
আয়ান নাশতা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। প্রাপ্তি আয়ানকে রুমে যেতে দেখে, কি ব্যাপার ও সবাইকে রেখে রুমে চলে গেলো কেনো?না আমাকে দেখতে হবে ও রুমে গিয়ে কি করছে।প্রাপ্তি রুমে এসে দেখে আয়ান রুমে নেই ফোনটা খাটের উপর রেখে ওয়াশ রুমে গেছে।প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে সরি আয়ান আমি কখনো ভাবিনি তোমার ফোন আমায় এইভাবে লুকিয়ে দেখতে হবে । তবে আমি এর শেষ দেখতে চাই।এতো কিছু জেনেও কেনো জানি তোমার উপর বিশ্বাস হারাতে ইচ্ছে করে না।আমাকে জানতেই হবে এই তানিয়া কে।ফোন টা খুলে দেখে অনেক গুলা মিসড কল আর এসএমএস।ফাস্ট এসএমএস এ লেখা ছিলো,

“আয়ান তুমি তোমার বউয়ের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো।কিন্তু আমি সারাটা রাত শুধু তোমার কথায় ভেবে কাটাচ্ছি। ”

প্রাপ্তি ভাবছে সব গুলো এসএমএস পড়লে হয়তো আমি ঠিক থাকতে পারবোনা।আচ্ছা লাস্ট এসএমএস টা দেখি,সেই এসএমএস এ লেখা,
“আয়ান আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি, তাড়াতাড়ি এসো।”

প্রাপ্তি ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে, ধুম করে বসে পড়লো খাটে।সুখের সময়টা হয়তো মানুষের জীবনে বেশি দিন টিকে না।আজ কি সেই জায়গায় আমিও এসে দাঁড়িয়েছি।আমি কি পারবো আমার আয়ান কে অন্যের হাতে তুলে দিতে?এর আগেতো আমার মরণ ভালো।কেনো করলে আমার সাথে এইরকম। আমাকে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে এখন আমায় ভালোবাসার কাংগাল বানাতে ছাইছো।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তি হু হু করে কাঁদতে লাগলো।
আয়ানকে ওয়াশ রুম থেকে বেরতে দেখে প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।আয়ানও কিছু না বলে রেডি হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরতে যাওয়ার সময় প্রাপ্তি হাত ধরে ফেললো। আয়ান পিছনে ফিরে দেখে প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে তার হাত টেনে ধরে আছে।

আয়ান -কিছু বলবে?

প্রাপ্তি -কোথায় যাচ্ছো?

আয়ান -তুমি জানোনা? প্রতিদিন সকাল বেলা আমি কোথায় যাই?
আমি অফিসে যাচ্ছি কিছু বলার থাকলে বলো?
আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, এই কোন আয়ানকে আমি দেখছি।কতো সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা গুলো বলে ফেললো?
একটা বার ভাবলেনা প্রাপ্তি যে তোমার মিথ্যা সহ্য করতে পারেনা।

আয়ান -কিছু বললে বলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ।

প্রাপ্তি -আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে? তোমার সব শক্তি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরো যেনো কেউ তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা না করতে পারে।

আয়ান- সকালে ন্যাকামি দেখিয়ে এখন কি প্রমাণ করতে চাও।কথাটা শুনে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে হাত ছেড়ে দিয়ে, যাও তুমি!আর আটকাবো না।যার সাথেই ঘুরতে যাও সাবধানে যেও।সন্ধ্যার আগে ফিরে এসো আজকের দিনে আমি কোনো ঝামেলা চাইনা।

প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ানের মুখে কেমন একটা ভয়ের চাপ দেখা যাচ্ছে। আমতা আমতা করে কোনো কারণে তুমি আমায় ভুল বুজছো?
প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে, প্রাপ্তির কাছে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে,সরি লক্ষ্মী। তোমার যতো কষ্ট জমা হয়েছে আমার উপর আমি ফিরে এসে সব দূর করে দিবো।
আয়ান চলে গেলো। প্রাপ্তি তাকিয়ে আছে আয়ানের যাওয়ার পথের দিকে।

তোমার আসতে এতো দেরি হলো কেনো? আমি কখন থেকে তোমার জন্য বসে আছি আয়ান।ভেবেছিলাম আজ সারাদিন তোমার সাথে ঘুরবো বেড়াবো তা না এসেছো লেট করে এখন মুখ গোমড়া করে বসে আছো।
তানিয়ার কথা গুলো আয়ানের খুব বিরক্তিকর লাগছে।তানিয়া হচ্ছে আয়ানের কলেজের ফ্রেন্ড। অবশ্য ফ্রেন্ডের ছেয়ে বেশি কিছু তানিয়া ভাবে।তানিয়া আয়ানকে ভালোবাসে সে কলেজের সময় থেকেই।কিন্তু আয়ান কখনো বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবিনি।তানিয়ার বিয়েও হয়ে গিয়েছিলো। তখন থেকে তানিয়া তার হ্যাজবেন্ডের সাথে দেশের বাহিরে থাকতো।কিছুদিন আগে তানিয়া খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার বলেছে তানিয়ার ক্যান্সার, বেশি দিন বাঁচবেনা।সেটা শুনেই তানিয়া দেশে চলে আসে তার পরিবারের কাছে। কিন্তু আয়ানকে সে এখনো ভুলতে পারিনি।তাই দেশে এসে আয়ানকে ফোন দেয় দেখা করার জন্য।আয়ানও সব শুনে কাল অফিস থেকেই তানিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।দেখা করার শেষে তানিয়া কখন যে তার পকেটে ওই চিঠিটা দিয়েছিল আয়ান নিজেই জানেনা।
তানিয়া -জানো আয়ান তোমাকে যখন দেখি মনে কেমন জানি শান্তি শান্তি লাগে। আচ্ছা কাল যে তোমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম পড়েছো?
আয়ান অবাক হয়ে, কিসের চিঠি?

তানিয়া- কাল তোমাকে না জানিয়ে আমার কিছু অনুভূতির কথা লিখেছিলাম ওই চিঠিতে।পড়ে ছিলে?
আয়ানের বুজতে আর বাকি রইলোনা কাল থেকে প্রাপ্তি ওই চিঠি পেয়েই আমার সাথে এইরকম করছে।তানিয়া আমি আসছি!

তানিয়া-কোথায় যাচ্ছো । এইমাত্র আসলে আর এখুনি চলে যাবে।

আয়ান – হ্যাঁ আমাকে যেতেই হবে।আমার প্রাপ্তি যে আমায় ভুল বুজেছে।আয়ান তানিয়াকে আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।

ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? রেশীর কথা শুনে অভ্র চমকে উঠলো। বলো কি দেখছিলে?

অভ্র -আমার বউটাকে দেখছিলাম।

রেশী -আমাকে তো সারাদিনই দেখো নতুন করে দেখার কি আছে।

অভ্র -তুমি যে আনরোমান্টিক সেটা আমি জানি।তাই বলে মুখে ফুটিয়ে জাগান দিতে হবে না।তোমার ভাই আর ভাবীকে দেখে তো কিছু শিখতে পারো।প্রাপ্তি আয়ানকে কতো ভালোবাসে।আর তুমি! তাকালেও কেনো তাকিয়ে আছি তার কৈফিয়ত ও তোমাকে দিতে হবে।অভ্রর কথা গুলো শুনে রেশী নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলতে লাগলো,আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি হয়তো আমি ভালো করে বুজাতে পারি না।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! কোথায় তুমি?
অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানের গলা না? প্রাপ্তিকে এইভাবে ডাকছে কেনো?
রেশী -চলো তো দেখি কি হয়েছে?

ঝিনুক আয়ানকে দেখে, কিরে কি হয়েছে? তুই এইভাবে ঘামছিস কেনো? মনে হচ্ছে কোথাও কি অঘটন ঘটিয়ে এসেছি।

আয়ান-তার থেকেও বড় কিছু হয়ে গেছে আপু।প্রাপ্তি কই?

ঝিনুক -ও তো আশফিকে নিয়ে রুমে গেলো দেখলাম।।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে রুমের দিকে গেলো।তাড়াহুড়ায় সিঁড়ি বেয়ে উঠাতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।প্রাপ্তি শোয়া থেকে উঠে এক গ্লাস পানি এনে আয়ানের সামনে ধরলো। আয়ান পানি খেয়ে প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে আয়ানের পাশে বসালো। প্রাপ্তিও চুপচাপ বসে পড়লো। প্রাপ্তি! আমি জানি কেনো তুমি আমার সাথে এইরকম করছো।প্রাপ্তি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকায়,,,,,,,কথাটা শেষ না করতেই আয়ানের ফোন বাজতে শুরু করলো।
ধ্যাৎ! এখন আবার কে ফোন দিলো? ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখে তানিয়ার নাম্বার। প্রাপ্তি আড় চোখে নাম্বারটা দেখে মনে হচ্ছে তার বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটা শুরু করলো। তবুও আয়ানকে কিছু না বলে আয়ানের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো লুকানোর চেষ্টা করছে।
আয়ান ফোন রিসিভ করে, ওপাশ থেকে কথা গুলো শুনে, আমি এখুনি আসছি।ফোন আবার পকেটে রেখে,প্রাপ্তি আমি সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো। আব্বু, ভাইয়া এরা সবাই পার্টির সব সামলে নিবে।
আয়ান চলে গেলো, প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে, চোখের পানি মুছে নিচে এলো।
সুমি – প্রাপ্তি! আজকাল আয়ানের কি হয়েছে? এখন আবার দেখলাম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো?

প্রাপ্তি -ও আসলে জিজ্ঞেস করে নিও।আমাকে বলে যায়নি।
আবিদ চৌধুরী সন্ধ্যা থেকে বার বার আয়ানের কথা জিজ্ঞেস করছিলো। এর ফাঁকে আসিফ আর নীরা এসেছে দেখে, আয়ানের কথা ভুলে গেছে।ওদের সাথে কথায় মগ্ন হয়ে আছে।প্রাপ্তি আশফিকে রেডি করে এনে আকাশের কোলে দিয়ে নিজে রেডি হতে গেলো।সবাই আশফিকে নিয়ে মেতে আছে। প্রাপ্তি রেডি হচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে আজ আমি এতটা সুন্দর করে সাজবো যেন আয়ান চোখ না ফেরাতে পারে।ওই মেয়ে কি আমার থেকেও বেশি সুন্দর যার কারণে আয়ান তার কাছে বার বার ছুটে যায়।প্রাপ্তি নীল রঙের শাড়ি পরেছে,চোখে গাড় কাজল,ঠোঁটে হালকা রঙের একটু খানি ছোঁয়া।সবমিলিয়ে এক অপরুপ সুন্দর লাগছে প্রাপ্তিকে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান ও শুরু হয়ে গেলো কিন্তু আয়ানের কোনো খবর নেই।অনেকক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করেছে,ফোন দিয়েছে শেষমেষ আবিদ চৌধুরীর কথায় অনুষ্ঠান শুরু করলো। সবকিছু হাঁসিখুশি ভাবেই শেষ করলো প্রাপ্তি। যেনো তার কিছুই হয়নি।আয়ানকে দেওয়া কথা সে রেখেছে। পরিস্থিতি যেমনই হোকনা কেনো তাল মিলিয়ে সে চলবে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:২

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:২

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আয়ান আশফিকে আয়েশা বেগমের কোলে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে,আরে আপু! রেশী! তোরা?

ঝিনুক আর রেশী ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে, হুম আমরা! আম্মু কাল যে ওর মেয়ের জন্মদিন একবার ফোন করে বলেছে?মেয়ের বাবা হওয়ার পরও যে তুই এতোটাই কান্ড জ্ঞানহীন থাকবি এইটা আমি কখনো ভাবিনি।
আয়ান মাথা চুলকাতে চুলকাতে আমি একটু পর তোদের ফোন দিতাম কাল আসার জন্য।
রেশী এগিয়ে এসে ভাইয়া কেমন আছো?
আয়ান-ভালো! অভ্র আসেনি?

ঝিনুক -নিহাদের সাথে রাতে আসবে।আশফিকে কোলে নিয়ে,প্রাপ্তি কোথায়। ভাইয়া আর ভাবী এরা কোথায়?
প্রাপ্তি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে কেমন আছো আপু?

ঝিনুক -এইতো ভালো।
রেশী এগিয়ে গিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কেমন আছো ভাবী?

প্রাপ্তি -তোদের এখন আসার সময় হলো বিকেল থেকে কি করেছিস?
আয়ান বার বার প্রাপ্তির দিকে তাকাচ্ছে, এই প্রাপ্তিকে কেমন জানি অচেনা লাগছে।সবার সাথে কথা বলছে ঠিকি কিন্তু কোনো মাধুর্যতা নেই।প্রাপ্তি যার সাথেই কথা বলুক না কেনো তার মুখে হাঁসি লেগেই থাকে। কিন্তু আজ যেন এক অন্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আয়ানের সামনে।
আয়ান কাছে যেতেই,আপু তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমাদের জন্য নাশতা নিয়ে আসছি বলেই রান্নাঘরে আবার চলে গেলো।আয়ান পিছন পিছন রান্নাঘরে গিয়ে প্রাপ্তির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রাপ্তি না দেখার ভাণ করে নিজের কাজ করেই যাচ্ছে।
আয়ান খানিকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে, কি হয়েছে তোমার?
প্রাপ্তি চুপ করেই আছে,
আয়ান আবারও জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে কথা বলছো না কেনো?
প্রাপ্তি কফি নেওয়ার জন্য কাপ নিতে হাতটা বাড়াতেই আয়ান হাত ধরে ফেললো।ধমকিয়ে,কি সমস্যা তোমার?তুমি যদি,,,, কথাটা বলতেই রফিক এসে, আয়ান বাবা তুমি এইখানে? আয়ান রফিকে কিছু না বলে প্রাপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
আয়ানকে গম্ভীর হয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে, কি হয়েছে মা! আয়ান বাবা রাগ করছে কেনো?
প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছড়ে দিয়ে কফি ঢালতে ঢালতে, কাকা এই বাড়িতে হয়তো আমার আয়ু গনিয়ে আসছে তাই।

রফিক প্রাপ্তির কথা শুনে, কি বলছো এইসব? মা! আয়ান একটু রাগী ঠিক আছে কিন্তু তুমি এই বাড়ি থেকে গেলে কি আয়ান বাবা এই বাড়িতে থাকবো?থাকবে না! সেইবার দেখলেনা তোমাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলো ।

প্রাপ্তি- সব সময় এক রকম যায়না।ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।আমি গিয়ে সবাইকে নাশতাটা দিয়ে আসি।
প্রাপ্তি এসে দেখে আকাশ আর সুমিও চলে এসেছে। আয়েশা বেগম আশফিকে প্রাপ্তির কোলে দিয়ে, প্রাপ্তি ওর ক্ষিধে লেগেছে মনে হয়।তুই ওকে খাইয়ে নিয়ে আয়।
প্রাপ্তি আশফিকে কোলে নিয়ে, ভাবী! ডাক্তার কি বলেছে?

সুমি – রিপোর্ট সব গুলোই ভালো আসছে।বাকীটা আল্লার হাতে।তুই যা পরীকে খাইয়ে আমার কাছে দে।অনেকক্ষণ হলো আমার পরীটাকে কোলে নিই না।
প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে আয়ান বসে বসে ফোনে কথা বলতেছে।প্রাপ্তি আয়ানের দিকে না তাকিয়ে আশফির জন্য খাবার রেডি করে খাওয়াচ্ছে।আয়ান বার বার প্রাপ্তিকে আড় চোখে দেখছে আর বুজার চেষ্টা করছে কেনো প্রাপ্তি হঠাৎ তার সাথে এমন আচরণ করছে। বাহিরের থেকে আসার পরও তো সব ঠিক ছিলো। ওয়াশ রুমে যাওয়া পর কি এমন ঘটলো যার কারণে ও এইরকম করছে।
প্রাপ্তির আসতে দেরী দেখে সুমি নিজেই এসে, কিরে তোর হলো?
আয়ান ফোনটা রেখে, ভাবী আশফিকে একটু নিয়ে গিয়ে তোমার কাছে রাখো।আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।
সুমি প্রাপ্তির কাছ থেকে আশফিকে কোলে তুলে নিতে নিতে আমি তো আমার পরীটাকেই নিতে আসছি।
প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।সুমি রুম থেকে যেতেই প্রাপ্তিও উঠে চল যাবার জন্য পা বাড়াতেই আয়ান হাত ধরে টেনে খাটের উপর বসিয়ে,(নরম স্বরে) রাগ করেছো কেনো আমার উপর? আমি কি আমার অজান্তেই তোমাকে কোনো কষ্ট দিয়ে ফেলেছি? কারণ আমার জানা অনুযায়ী আমি তোমাকে কোনো কষ্ট দিতে চাই না।
আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির মনে হচ্ছে তার বুকের মধ্যে তীর গুলো গুছিয়ে গুছিয়ে কেউ বসিয়ে দিচ্ছে।আমার আয়ান ঠিক সেই রকম গুছিয়ে মিথ্যা গুলো আমাকে শুনাচ্ছে।আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,আমাকে সত্যিটা বলতেই পারতে।আমি সরে যেতাম।কেন এখন গুছিয়ে গুছিয়ে এই মিথ্যা বাক্য গুলো আমায় শুনাচ্ছো।তোমার চোখে আমার প্রতি যে ভালোবাসা দেখেছি সবি কি মিথ্যা? আমার এখনো কেনো তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।তুমি অফিসে যাওনি যেনেও আমার মনে হয় আয়ান আমাকে ঠকাতে পারেনা।ওই চিঠিটা পড়ার পরও কেন তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।মেয়েটা লিখেছে তুমি ওর কাছে গেছো।কতোটা কাছে? যতটা তোমার আর আমার সম্পর্কে, ততটা? কথাটা ভাবতে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে চোখের পানি গুলো অঝোরে ঝরছে। আয়ান কিছুক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে, থুনিটা উঠিয়ে নিজের দিকে করে, প্রাপ্তি আমার চোখের দিকে তাকাও।(ধমকিয়ে)কি হলো তাকাতে বললাম তো?
প্রাপ্তি অনিচ্ছা সত্ত্বে তাকাতেই,
আমি জানিনা আমার উপর কেনো তোমার এতো রাগ অভিমান। শুধু এইটুকু বলবো,কাল আমাদের মেয়ের জন্মদিন। কতো গেস্ট আসবে। অলরেডি আপুরা চলেও এসেছে।তুমি যদি সবার সামনে এইভাবে গম্ভীর হয়ে থাকো এইটা কি সবার কাছে ভালো দেখাবে।এর ছেয়ে তুমি আমাকে বলো কি কারণে আমার উপর তোমার এতো রাগ! প্লিজ বলো!
প্রাপ্তি আয়ানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়য়ে আমার কিছু হয়নি।আর তোমার আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবেনা।আমি সবার সামনে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো।
অভ্র আর নিহাদ এসেছে,সবাই আড্ডা দিচ্ছে, আয়ান কিছু বলছেনা চুপচাপ সবার কথা গুলো শুনছে।প্রাপ্তি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবার সাথে তাল মিলাচ্ছে।রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যেই যার মতো করে ঘুমাতে গেলো।প্রাপ্তি আশফিকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে আছে।আয়ান আশফির পাশে শুয়ে প্রাপ্তি আসার অপেক্ষায় আছে। প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশটাকে মেঘ ঢেকে রেখেছে।মেঘে ঢেকে থাকায় চাঁদটাকে বুজা যাচ্ছেনা।চারপাশ কেমন যেন এক অজানা নিস্তব্ধতায় বর করেছে।আমার জীবনে যেই দিনই কোনো ঝড় আসুক সেইদিন আকাশেরও মন খারাপ থাকে।কথাটা ভেবেই প্রাপ্তি তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে।মানুষ না হয় ঠকে কিন্তু আকাশ! তার তো কোনো চাঞ্জ নেই।তাহলে কেনো তার মন খারাপ?আচ্ছা এই তানিয়াটা কে।হটাৎ কোথায় থেকে আসলো এই তানিয়া? নাকি আয়ানের জীবনে তানিয়া নামের কেউ আগেই ছিলো। কথা গুলো ভাবতেই কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনের দিকে না ফিরেই ঘুমাও নি এখনো?

আয়ান -তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না এইটা তুমি ভালো করেই জানো। তার পরেও কেনো এই কথা জিজ্ঞেস করলে?
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে ফিরে, আমাকে ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস করো।সারাজীবন তো আর আমি থাকবো না।আমার জাগায় অন্য কেউ আসবে তাকেও কি এই কথা বলবে? কথাটা বলেই প্রাপ্তি হনহন করে রুমে এসে শুয়ে পড়লো।
আয়ান প্রাপ্তির কথার আগামাথা কিছুই মাথায় ঢুকলো না।প্রাপ্তি এসে আশফিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
সকালের সোনালী রোদের আভা প্রাপ্তির রুমের দেওয়ালে এসে ঝিকঝিক করছে।প্রাপ্তি আড়মোড়া ভেঙে পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ান নেই।আয়ানকে না দেখে বুকের ভিতরটা কেমন যেন দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখে আয়ান বসে বসে ঘুমাচ্ছে।সুস্থির নিশ্বাস ফেলে পাশে বসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।এই মায়াময় চেহারা কি তার প্রাপ্তিকে ঠকাতে পারে? কতো নিস্পাপ লাগছে আমার আয়ানকে।আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় আয়ান প্রাপ্তির হাত টেনে ধরে ফেললো।

আয়ান – যখন এতটাই ভালোবাসো তাহলে কষ্ট দাও কেনো?

প্রাপ্তি -হাত ছাড়ো! আমার অনেক কাজ আছে।

আয়ান-আমার থেকে আজ তোমার কাজ বেশি হয়ে গেলো। আমি তো জানি আমার প্রাপ্তির যতই কাজ থাকুক তার আয়ানের সব কিছু ঠিক থাকে।প্রাপ্তি কিছু না বলে হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আয়ান অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রাপ্তিকে হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে, আয়ানের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া এতো সহজ নয় বলেই প্রাপ্তির ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট এক করে নিলো।

সকাল থেকেই জামাল সাহেব ড্রইংরুমে বসে আছে। আয়ানের সাথে কথা বলার জন্য। আবিদ চৌধুরীও পাশে বসে অনেক কথাই বুজালেন।কিন্তু জামিল সাহেব আয়ানের সাথে কথা না বলে যাবেননা।

জামিল – (আবিদ চৌধুরীর হাত টেনে নিয়ে) তুই আমার অনেক পুরনো বন্ধু, সেই বন্ধুত্বের আবদার নিয়ে রিকুয়েষ্ট করছি তোর ছেলেকে বল আমার ছেলেটার মামলাটা তুলে নিতে।সারাজীবন আমার ছেলে ওই অন্ধকারে পড়ে থাকবে?

আবিদ চৌধুরী -সরি এইখানে আমার কিছু বলার নেই।তোর ছেলে যে অন্যায় করেছে তার জন্য আয়ানের কাছে কোনো রিকুয়েষ্ট করলেও লাভ হবে না।
আয়ান আশফিকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে, আপনি এখানে কেনো এসেছেন আপনাকে যা বলার কাল তো আমি সব বলেই দিয়েছি।তাহলে আজ আবারও কেনো বাসায় আসলেন?
জামিল সাহেব কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে প্রাপ্তি নিচে নামছে। প্রাপ্তি আসতে জামিল সাহেব এগিয়ে গিয়ে, মা! আমি তোমার কাছে রিকুয়েষ্ট করছি প্রয়োজনে তোমার হাতে পায়ে ধরছি, আমার ছেলেটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।দরকার হলে আমার ছেলেকে নিয়ে বাহিরের দেশে চলে যাবো।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে, দেখুন! এইখানে আমার কিছু বলার নেই। আমার হ্যাজবেন্ড যা ভালো মনে করে সেই তাই করবে।এইখানে আমার কিছু বলার থাকতে পারেনা।কথা গুলো বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। আয়ান জামিল সাহেবের দিকে তাকিয়ে, এটাই আপনার ছেলের শাস্তি।এইটাও অনেক কম পড়ে গেছে। ওকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিত ছিলো। কিন্তু আমি সেটা করলামনা। কারণ কুকুরকে মেরে কখনো হাত নোংরা করতে নেই।এখন সারাজীবন জেলে চার দেওয়ালের ভিতরে থাকুক মজাটা একটু বুজক।আর হ্যাঁ আপনি আর কখনো আমাদের এইখানে আসবেনা। আয়ান সদর দরজাটা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে আপনি এখন আসতে পারেন।

চলবে,,,,,,,