Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2378



Love At 1st Sight Season 3 Part – 55

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 55

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা : সাস..সামান্য একটুই, কেটে গেছে হয়তো কোথাও, খেয়াল নেই! [ বলেই হাত আচলের ওড়নায় বটে রাখলো, আর রাহুল নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিক ]

স্নেহা : এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো! বব..বললাম তো সামান্য একটু…

রাহুল : স্টপ ইট! স্নেহা! [ বলেই স্নেহার হাত টেনে নিয়ে দেখে, হাত ক্ষত হয়ে রক্তশুকিয়ে লাল হয়ে আছে ]

– স্নেহা! এসব কিভাবে হয়েছে? আর তুমি আমাকে কিছু বলোনি কেনো?

স্নেহা : আরে! আপনি এতো চিন্তা করছেন কেনো! এটা তেমন কিছুই হয়নি, জাষ্ট সামান্য একটুই কেটে গেছে! [ বলেই হাত টেনে নিয়ে নেয় ]

রাহুল : কিভাবে কেটেছে?

স্নেহা : [ চোখ নামিয়ে ] কোক…কোথায় কিভাবে কেটেছে অতোকিছু মনে নেই!

রাহুল : [ ধমক দিয়ে ] শাট-আপ স্নেহা! কেনো মিথ্যে বলছো!

স্নেহা : [ চমকে উঠে ] সস..সত্যি রাহুল!

রাহুল : [ হাত দিয়ে স্নেহার মাথা তুলে ধরে ] তাহলে আমার চোখে চোখ রেখে বলো! [ স্নেহা চোখ নামিয়ে ফেললো ]

– পারবানা বলতে, তাই তো? [ চুপ হয়ে থাকে স্নেহা, রাহুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে এদিক ওদিক একবার তাকিয়ে আবার মাথায় হাত দিয়ে নিজের চুল মুঠোয় ভরে রাগ কমাতে লাগলো ]

স্নেহা : [ রাহুলের কাধে হাত রেখে ] রা..রাহুল!

রাহুল : [ হঠাৎ ভোর কুচকে স্নেহার দিক তাকিয়ে ] এক সেকেন্ড স্নেহা! এটা কোনো তখন নেহা… [ বলেই কিছুক্ষণ চিন্তা করে ]

– ওহ শিট! ডেম ইট! এটা নেহাই করেছে রাইট? [ স্নেহা চুপ করে চেয়ে থাকে ]

রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] ইয়াহ! আই আন্ডারস্ট্যান্ড! তারমানে ও হ্যান্ডশেক করার সময় মনে মনে যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হয়েছে!

– [ দাঁড়িয়ে গিয়ে ] ইডিয়ট! তাই তো তোমাকে ওর সাথে হ্যান্ডশেক করতে বাধা দিয়েছিলাম! [ স্নেহা অবাক হয়ে তাকালো ]

রাহুল : ওর মিডল ফিংগারে একটি রিং আছে! যেটা দ্বারা আমার সাথে কোনো মেয়ে দেখলে,হাত মেলানোর বাহানা করে সবার হাতেই,আঘাত করে বসে,

– আর তোমাকে তো ও পারছেনা যে…

– [ জোড়ে নিশ্বাস ফেলে খাটে পা দিয়ে বারি মেরে ] আমারই মিস্টেক ছিলো, ঐদিন পেট্রোল গুলো ঢেলে কেনো যে ওকে জ্বালিয়ে দিলাম না,

– [ চেচিয়ে ] আর তুমি! ইডিয়ট বাধা দেওয়ার পরে ও, ওর এক্টিং গুলো বিশ্বাস করে হাত মিলিয়ে নিলে!

স্নেহা : আ..আমার,মনে হয়েছিলো ও সস…সত্যি..সত্যিই…

রাহুল : ইউ ডোন্ট নোও স্নেহা! ও কতোটা নিচু নামতে পারে! শি ইজ আ ছিপ গার্ল! এসব ছিপ আইডিয়াগুলো শুধু ওর মাথায়ই আসতে পারে!

– আচ্ছা দেখি হাত দেখাও [ বলেই স্নেহার হাত টেনে নিয়ে ] কি হয়েছে হাতটার? আর তুমি যখন ও করেছিলো তখন আমায় কিছু বলোনি কেনো?

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] আপ..আপনি রেগে যাবেন তাই!

রাহুল : তুমি! [ বিরক্তি হয়ে ] তুমি আসলেই একটা বোকা! ইডিয়ট! [ বলেই পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন দিতে লাগলো ]

স্নেহা : কাকে ফোন দিচ্ছেন?

রাহুল : ডক্টর!

স্নেহা : ডক্টর কেনো?

রাহুল : আমরা তিনজনে মিলে হাইড এন্ড সিক খেলবো বলে!

স্নেহা : [ মুখ গোমড়া করে ] না মানে… সামান্য একটুই কেটেছে এটার জন্য ডক্টরকে ফোন দেওয়ার কি প্রয়োজন?

রাহুল : তুমি যদি কোনটা প্রয়োজন অপ্রয়োজন বুঝতে তাহলে আর এই ঘটনাটা ঘটাতে না!

– [ কান থেকে ফোন নামিয়ে ] এই ইডিয়ট ডক্টরটা ও ফোন রিসিভ করছে না, এসব ডক্টরকে ভাদ্র মাসে পাগলা কুকুরের সামনে ছেড়ে দৌড়াতে দেওয়া উচিৎ,

– এতো রাতে অন্য ডক্টর পাবো কিনা ও কে জানে!

– [ হঠাৎ ] আরে হ্যা! নেহাল আছে তো!

স্নেহা : নেহাল?

রাহুল : হিমেটোলোজি স্টুডেন্ট!

স্নেহা : ওহ! [ রাহুল আর কিছু বললো না নেহালকেই ফোন দিলো ]

নেহাল : হ্যালো!

রাহুল : নেহাল! একটু আয়তো আমার রুমে!

নেহাল : ওহোহো ব্রাদার! আমার এসবের এক্সপেরিয়েন্স নেই! আমি কিছুই বলতে পারবো না!

রাহুল : শাট-আপ! তাড়াতাড়ি আয়!

নেহাল : এনি প্রবলেম ব্রো?

রাহুল : ইডিয়ট! আই সে্ কাম ফাষ্ট রাইট নাও!

নেহাল : ও..ওখে! ওখে কুল ব্রো কুল! আম কামিং! [ রাহুল ফোন রেখে তাকালো স্নেহার দিক, চোখাচোখি হোওয়ায় স্নেহা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে এপাশ-ওপাশ চোখ নাড়াতে লাগলো ]

রাহুল : ম্যাথমেটিকস নিয়ে পড়ছো, মাথায় বুদ্ধিতে ভরপুর থাকার কথা,কিন্তু তুমি দেখছি পুরো উল্টো,পুরো মাথাটায় বোকামির ভান্ডার!

স্নেহা : কিছু হতে না হতেই আমার সাবজেক্টকে টেনে নিয়ে আসেন কেনো?

রাহুল : অহ রিয়েলি? কারণ এটা পড়তে পড়তেই তোমার মাথা আউট হয়ে গেছে!

স্নেহা : মো..মোটেও না!

রাহুল : নেক্সট টাইম থেকে উইদাউট মাই পারমিশন, ফ্যামিলি মেমবাররা ছাড়া কারো সাথে হ্যান্ডশেক, অথবা কেউ এসে যদি বলে ঐ মানুষটা সেন্সলেস হয়ে আছে অর ও মরে যাচ্ছে,

– দুনিয়া উল্টে গেলে ও তোমার যাওয়ার প্রয়োজন নেই!

স্নেহা : হোহ! কেউ বিপদে পড়েছে বললেও যাবো না এটা কেমন কথা?

রাহুল : হোহ! তাই না? [ বলেই স্নেহার হা করে থাকা মুখটা লাগিয়ে দিয়ে ] গিয়েছিলে তো ঐদিন ভার্সেটিতে,উল্টো নিজেই সেন্সলেস হয়ে কিডন্যাপ হয়ে বসেছিলে! [ স্নেহা ঢোগ গিলে চুপ হয়ে গেলো ]

রাহুল : স্নেহা! আমি তোমাকে বাধা দেওয়ায়, তুমি আমাকে এসবের জন্য বেড হাজবেন্ড মনে করলে ও আই ডোন্ট কেয়ার!

– কজ তোমার সেফটির জন্য আমি বেড কেনো? ভেরি বেড হাজবেন্ড হতেও রাজি! [ মনে মনে হাসতে লাগলো স্নেহা, কিছুক্ষণ পরেই দরজায় নক পড়লো, রাহুল উঠে গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুললো ]

নেহাল : অলরাইট ব্রো?

রাহুল : কাম! [ নেহাল রাহুলের পেছন পেছন ভেতরে এগিয়ে এলো, খাটের দিক তাকাতেই দেখে স্নেহা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে ]

নেহাল : [ হাত নাড়িয়ে ] হ্যালো ভাবী!

রাহুল : সি্ হার হ্যান্ড!

নেহাল : হ্যান্ড? কি হয়েছে ভাবীর হাতে?

রাহুল : চেক ইট!

নেহাল : [ তাড়াতাড়ি স্নেহার পাশে বসে হাত এগিয়ে নিয়ে ] অহ মাই গড ভাবী! কিভাবে হলো এটা? হাওওওও?

রাহুল : নেহা করেছে ওর ফিংগার রিং দিয়ে, তুই জাষ্ট চেক কর যে,উল্টোপালটা কিছু এড করে দেইনি তো?

নেহাল : ইয়া..ইয়াহ! আই উইল চেক ইট! বাট এট! ফাষ্ট গিভ মি সা্ম কটোন এন্ড হ্যান্ড-রাব! [ রাহুল ড্রয়ার থেকে পুরো ফাষ্ট এইড বক্সটায় এনে দিলো নেহালকে, নেহাল কটোনে হ্যান্ড-রাব লাগিয়ে স্নেহার হাতের ব্লাড ক্লিন করে নিলো ]

রাহুল : [ অস্থির হয়ে ] টেল মি! না ইডিয়ট! হোয়াস্ দ্যা প্রবলেম?

নেহাল : ডোন্ট ওয়ারি ব্রো! জাষ্ট পিন প্রেস্ করেছে নাথিং এলস্!

রাহুল : ভালো করে চেক করে দেখ কোনো…

নেহাল : লুক! ভাবীস্ ব্লাড ইজ সো্ স্মুথ! যদি কিছু ডেঞ্জার হতো তাহলে ব্লাড কনজিয়েল্ড থাকতো!

স্নেহা : [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] দে..দেখেছেন! ডেঞ্জার কিছুই না আপনি শুধু শুধুই টেনশন করছিলেন! আর ওনাকে ও এতোরাতে ডিষ্টার্ব করলেন!

রাহুল : [ নাক ফুলিয়ে ] তাই?

নেহাল : [ হেসে স্নেহার হাত ব্যান্ডেজ করতে করতে ] নো নো ভাবী টেনশন করে চেকড করাটাও ইম্পর্ট্যান্ট! থেংক গড যে ডেঞ্জার কিছু ছিলো না, বাট হতেও তো পারতো!

– ফর এক্সাম্পল যে পিন দ্বারা হিট করা হয়েছে তাতে, এরসেনিক, বেল্লেডোনা, একোনেট, এই জাতীয় নামের কিছু পয়জন মিশিয়ে ও বডিতে পুশ করা যায়! এই পয়জন গুলো ব্লাডে মিশে গেলে ব্লাড প্লায়িং করা বন্ধ হয়ে যায় আই মিন ব্লাড কনজিয়েল্ড হয়ে যায়, প্লাস যে স্থানে পুশ করা হয় ঐ স্থানে ব্লাকপ্যাচ দেখা দেই! [ স্নেহা তাড়াতাড়ি হাতের দিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো কোনো ব্লাকপ্যাচ আছে কিনা ]

নেহাল : [ হেসে ] ব্লোওজবস্ ভাবী! কিছু হয়নি! তবে হ্যা! আম শিয়র আপনার হাত প্রচুর পেইন করছে রাইট? আর এটা পিন পুশ করার পর থেকেই করছে, ইয়েস্ অর নো? [ স্নেহা আড়চোখে রাহুলের দিক তাকিয়ে দেখে রাহুল তার জবাব শোনার জন্য অনেক কৌতুহলি ভাবে তাকিয়ে আছে, হ্যা বলার সাথে সাথেই আরো কিছু স্পিচ দেওয়া শুরু করে দিবে, তাই ভেবেচিন্তে জবাব দেওয়া টাই ব্যাটার মনে করলো ]

স্নেহা : [ হেসে ] হ্যা! কক..করেছিলো কিন্তু এখন আর করছেনা!

রাহুল : লায়ার!

স্নেহা : সস..সত্যি!

নেহাল : না করলে তো ভালোই! বাট মোষ্ট অফ অল! পেইন করে, যার কারণ হলো রিং পিন গুলো সামুদ্রিক মাছের পয়জোনেস্ থিত দ্বারা তৈরী করা হয়! বাট পেইনটা ফিউ আওয়ারস্ এর জন্যই থাকে! এতে ফেয়ার থাকার কিছু নেই!

রাহুল : বাট পেইন কমবে কিভাবে?

নেহাল : ন্যাচারাল মেডিসিন! আই মিন রাইট নাও হট মিল্ক!

রাহুল : ওহ..ওখে!

নেহাল : ওখে! নাও আই শুড গো! গুড নাইট এন্ড টেক কেয়ার ভাবী!

স্নেহা : গুড নাইট! [ বেড়িয়ে গেলো নেহাল ]

রাহুল : তুমি বসো আমি আসছি!

স্নেহা : আ..আমি ঠিকাছি রাহুল..

রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুম! তোমার চোখ ও তাই বলছে! [ বলেই দরজা লাগিয়ে বেড়িয়ে গেলো ]

স্নেহা : একটা মিথ্যেও বলে থাকা যায় না,সবই ধরে ফেলে এই মিষ্টার তেডি স্মাইল! [ বলেই পাশফিরতে হঠাৎ চোখ পড়লো ফাষ্ট এইড বক্সের উপর, মুচকি হেসে বক্সটা গুছিয়ে নিয়ে ড্রয়ারে ভরে রাখলো, সাজানো রুমটির চারদিক চোখ বুলিয়ে দেখে আবারো হেটে খাটের ধারে এগিয়ে এসে বসলো,বিছানায় ছিটে থাকা ফুলের কিছু পাপড়ি হাতে তুলে নিয়ে ব্লাশিং হয়ে তাকিয়ে রইলো,কিছুক্ষণ আগেই রাহুলের গান গাওয়া ওড়না কেড়ে নিয়ে মাথায় দেওয়া মোমেন্ট গুলো ভাবছে আর হাসছে,

হঠাৎ, কিছুসময় পরই দরজা খোলার শব্দ এলো,পাশফিরে তাকাতেই দেখে, রাহুলই এসেছে হাতে গ্লাস ভরা দুধ নিয়ে ]

রাহুল : [ স্নেহার পাশে বসে ] নাও এটা ফিনিশ করো!

স্নেহা : [ ঢোগ গিলে ] এতো গুলো?

রাহুল : আবার বলো?

স্নেহা : নাহ! মানে, হাফ গ্লাস খেলেই আমার পেট ফুল হয়ে যায়! আর এইখানে তো…

রাহুল : পুরোটা ফিনিশ করবা! [ স্নেহা কিছু বলতে যাবে তখনি ]

রাহুল : নট ওয়ান মোর ওয়ার্ড! জাষ্ট ফিনিশ ইট! [ স্নেহা আর কিছু বললো না মুখ গোমড়া করে গ্লাস হাতে নিয়ে নিলো,জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে গ্লাসে মুখ দিতেই সাথেসাথেই গরমের আচ লাগায় তাড়াতাড়ি চোখ-মুখ বটে রোবোট হয়ে যায় ]

রাহুল : [ চেচিয়ে ] কেয়ারফুল ডেম ইট! এটা গরম তো! [ বলেই স্নেহার হাত থেকে গ্লাস এগিয়ে নিয়ে নিলো,স্নেহা চোখ বটে মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখলো ]

রাহুল : [ তাড়াতাড়ি স্নেহার মুখ থেকে হাত সরিয়ে ঠোটে স্লাইড করে ] বেশি লেগেছে? [ স্নেহা ধীরেধীরে চোখ খুলে মাথা নাড়ালো ]

রাহুল : এত্তো কেয়ারলেস্ কেনো তুমি? [ স্নেহা চুপ করে রইলো ]

– ওখে ওয়েট! [ বলেই রাহুল টেবিল থেকে পানির গ্লাস এনে স্নেহাকে খাইয়ে দিলো ]

স্নেহা : [ পানি খেয়ে ] আমি ঠিকাছি রাহুল!আমার হাত সত্যিই ব্যাথা করছে না,

রাহুল : আমি ঠান্ডা করে দিচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নাও আর কোনো কথা নেই!

স্নেহা : কিন্তু! [ বলতেই রাহুল স্নেহার মুখে আংগুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো,আরেক হাতে দুধের গ্লাস তুলে নিয়ে ফু দিয়ে ঠান্ডা করতে লাগলো, এবং কিছুক্ষণ পরপরই স্নেহার মুখের সামনে এগিয়ে দিচ্ছিলো,স্নেহার ও কি আর করার বাধ্য মেয়ের মতো পুরো গ্লাসের দুধ ফিনিশ করতে হলো ]

স্নেহা : [ মনে মনে ] আমি দোষ করেছি বলে আমাকে ইচ্ছে মতো খাওয়াচ্ছে! একবার আপনার দোষ খুজে পাই তারপর দেখবেন কিভাবে খাওয়ায়!

রাহুল : কি ভাবছো?

স্নেহা : কক..কই কিছুই তো না!

রাহুল : রিয়েলি? [ with tedi smile ]

স্নেহা : হুম!

রাহুল : সরি!

স্নেহা : সরি? কে…কেনো?

রাহুল : বকেছি তাই!

স্নেহা : [ সোজা তাকিয়ে ] তো কি হয়েছে! হক আছে আপনার, বউ হইতো!

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] তাই? [ মাথা নাড়ালো স্নেহা ]

রাহুল : [ স্নেহার হাত কাছে টেনে নিয়ে ] ব্যথা করছে অনেক তাই না?

স্নেহা : [ রাহুলের গাল টেনে দিয়ে ] হুম অনেক!

রাহুল : কামঅন স্নেহা! কতোবার বলেছি আমি বাচ্চা না!

স্নেহা : [ হেসে রাহুলের মুখের সামনে চুরি বাজিয়ে ] নিন! খুলে দিন! [ রাহুল স্নেহার হাত এগিয়ে নিয়ে দু-হাতের চুরি গুলো খুলে দিলো, সাথে সাথেই আবার স্নেহা খাটে পা তুলে পেছন হয়ে বসে পড়লো, রাহুল বুঝতে পেরে হেসে ধীরেধীরে স্নেহার গলার নেকলেস, কানের-দুল, মাথায় লাগানো টায়রা, সবই খুলে দিলো ]

স্নেহা : [ রাহুলের দিক ফিরে ] থেংক ইউউ! [ বলেই আবারো গাল টেনে দিয়ে ] ওহ! সরি,আপনি তো বাচ্চা না! [ রাহুল হেসে তাকালো স্নেহার দিক,স্নেহা ও বুঝতে পেরে হেসে খাট থেকে অর্নামেন্টস্ সব কুড়িয়ে নিয়ে ড্রেসিং এ রাখতে চলে গেলো ]

রাহুল : [ হাতে মাথা ভর দিয়ে শুয়ে উপরের দিক তাকিয়ে তাকিয়ে ] স্নেহা! তুমি আমার রিপ্লাই দাওনি কিন্তু এখনো!

স্নেহা : কিসের রিপ্লাই? আমার তো কিছু মনে নেই!

রাহুল : তোমার একটা চুড়ি রয়েগেছে এইদিকে! নিয়ে যাও!

স্নেহা : [ বুঝতে পেরে হেসে ] হ্যা ওটা আপনিই রেখে দিন! [ বলতেই রাহুল হেসে উঠে বসে দেখে, স্নেহা ড্রেসিং এর মিরর দেখে দেখে মাথার খোপা খুলছে, রাহুল মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো স্নেহার দিক, পেছন থেকে ধীরেধীরে স্নেহার ওড়না সরিয়ে কোমোড়ে হাত রেখে দাড়ালো, স্নেহা ও মাথা থেকে হাত নামিয়ে স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে, হাত আর চলছিলো না খালি কোমোড়ে রাহুলের স্পর্শ পেয়ে ]

রাহুল : [ স্নেহার ঘাড়ে নাক দিয়ে স্লাইড করে ] আম সো্ হ্যাপি স্নেহা! ইউ নোও হোয়াই?

স্নেহা : [ রাহুলের দিক ফিরে কাধে হাত রেখে জড়িয়ে ] ইয়েস্ আই নোও! বিকজ নাও আম অনলি ইয়র!

রাহুল : এক্সকিউজ মি! নাও মানে? আগে ছিলানা?

স্নেহা : আরে নাহ! আমি তো আগেও আপনার ছিলাম…

রাহুল : তাই? [ with tedi smile ]

[ স্নেহা লজ্জা পেয়ে হেসে রাহুলের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে, রাহুল ও হেসে কিছুক্ষণ জড়িয়ে রেখে আস্তে করে কোলে তুলে নেয় স্নেহাকে, খাটের দিক এগিয়ে এসে বিছানার মাঝে শুয়ে দিলো,আর স্নেহা অপলক চোখে তাকিয়ে আছে রাহুলের দিক, রাহুল আলতো করে স্নেহার নাকে একটি চুমু খেয়ে উঠে যাচ্ছিলো তখনিই হঠাৎ স্নেহা রাহুলের হাত ধরে কাছে টান মারে, আর রাহুল ও আনব্যালেন্স থাকায় স্নেহার গায়ের উপর এসে পড়ে, দুজনেরই কপালের সাথে কপাল লেগে বাড়ি খেয়ে আঘাত হানি করে ]

স্নেহা : [ চেচিয়ে ] আআহহ!

রাহুল : শিট! সরি সরি সরি! [ বলেই স্নেহার কপাল ঘষে দিতে লাগলো, আর স্নেহা কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো ]

রাহুল : [ অবাক হয়ে হেসে ] হোয়াই আর ইউ লাফিং?

স্নেহা : [ হাসতে হাসতে ] আপনি ও তো হাসছেন!

রাহুল : [ হেসে ] হ্যা! কিন্তু তুমি কেনো হাসছো?

স্নেহা : বলছি! [ বলেই বসার জন্য মাথা উঠাচ্ছিলো তখনিই আবার রাহুলের মুখের সাথে বাড়ি খেয়ে নাক চেপে হেসে শুয়ে পড়লো ]

রাহুল : কেয়ারফুল ডেম ইট! [ বলেই স্নেহার নাকে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ] হোয়াট আর ইউ ডোয়িং হ্যা? কি হয়ে গেছে তোমার? ব্যথা পাচ্ছো আবার নিজে নিজে হাসছো!

স্নেহা : [ হেসে হেসে ] আই ডোন্ট নোও কি হচ্ছে!

রাহুল : [ হেসে স্নেহার পাশে মাথা রেখে শুয়ে ] পাগল হয়ে গেছো!

স্নেহা : আই থিংক! [ বলেই রাহুলের বুকে মাথা রেখে হাসতে হাসতে ] আই থিংক ইউ আর রাইট!

রাহুল : অহ রিয়েলি! তার মানে তুমি মেনে নিয়েছো তুমি পাগল!

– [ হেসে ] তাহলে আমি তখন যেটা বলেছিলাম ম্যাথমেটিকস্ পড়তে পড়তে তোমার মাথা আউট হয়েগেছে ওটাও রাইট বলেছি! [ স্নেহা তার জড়িয়ে রাখা হাত দিয়ে,দিলো একটা চিমটি রাহুলের পেটে ]

রাহুল : আআওও! [ বলেই আবার হেসে হেসে টাইট করে জড়িয়ে রাখলো স্নেহাকে, দুজনেই চুপচাপ হয়ে শুয়ে আছে, কিছু সময় পেড়িয়ে যাওয়ার পর স্নেহা মাথা তুলে তাকালো রাহুলের চেহেরার দিক, চোখ বন্ধ রাহুলের ]

স্নেহা : [ মনে মনে ] গতকাল রাতের না ঘুমানো ঘুম গুলো এক্ষুণিই দিচ্ছে! আর আমি সকালে ঘুমুতে বলায় কি বলে! ডোন্ট ওয়ারি স্নেহা! আমার না ঘুমিয়ে থাকার এক্সপেরিয়েন্স আছে! [ বলেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রাহুলের চেহেরার দিক, মুচকি হেসে সামনের চুল গুলোর উপর হাত বুলিয়ে দিলো,ঠোটের দিক চোখ পড়াতে ব্লাশিং হয়ে হেসে হাত দিয়ে স্লাইড করে দিতে লাগলো দাড়ির উপর, হঠাৎ মনে পড়লো যদি তার হাতের স্পর্শে রাহুলের ঘুম ভেংগে যায়, তাই তাড়াহুড়ো করে সরিয়ে নিলো হাত, আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে, আবারো আস্তে করে রাহুলের বুকে মাথা রেখে চোখ বটে শুয়ে পড়লো ]

রাহুল : গুড নাইট স্নেহা! [ বলতেই স্নেহা অবাক হয়ে চোখ খুললো, মাথা উঠিয়ে রাহুলের চেহেরার দিক তাকাতেই দেখে,চোখ বন্ধ অবস্থায় ও হাসছে রাহুল, বুঝতে পারলো স্নেহা তার মানে রাহুল জেগে আছে ]

স্নেহা : [ মুচকি হেসে রাহুলের গালটা টেনে দিয়ে ] গুড নাইট! [ বলেই রাহুলকে জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো, রাহুল ও হেসে স্নেহাকে আগলে নিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো, এভাবেই দুজনে ঘুমিয়ে পড়লো ]

পরদিন সকাল ৯টা বেজে ১০ মিনিট,

আলসেমি কেটে কম্বল থেকে হাত বের করে ধীরেধীরে চোখ খুললো রাহুল, বুকে স্নেহাকে না পেয়ে অবাক হলো, পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো স্নেহা নেই! রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে ওয়াসরুমের সুইচের দিকও তাকিয়ে দেখলো সুইচ অফ!

রাহুল : [ মনে মনে ] তারমানে স্নেহা নিচে চলে গেছে, কিন্তু সবাইকে গুডমর্নিং বলার আগে আমাকে বলে যাওয়া উচিৎ ছিলো তো! বিয়ের পরের ফাষ্ট মর্নিং বলে কথা! [ হঠাৎ গায়ের কম্বল এর দিক চোখ পড়ায় কিছুক্ষণ চিন্তা করে মুচকি হেসে ] বাহ! বউ এর কেয়ার পাওয়া তাহলে শুরু!

– কিন্তু এই মেয়েটা নিজের ক্ষেত্রে পুরোই উল্টো! কেয়ারলেস্ গার্ল কোথাকার! হাতের পেইন কমেছে কিনা ও কে জানে! [ বলেই কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আলসেমি কেটে, আলমীরার দিক এগিয়ে গিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো,

ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে, টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিং এর দিক এগুচ্ছিলো, হঠাৎ রাহুলের এমন মনে হলো যেনো পেছন দিয়ে কেউ তাড়াহুড়ো করে আলমিরার কর্ণারে লুকে পড়েছে, পাশ ফিরে তাকালো রাহুল কিন্তু কাউকেই দেখা যাচ্ছে না, তবে কারো গোলাপী রঙের শাড়ীর আচলটা মাটিতে ঝুলে আছে! অবাক হয়ে মুচকি হাসলো রাহুল,কারণ সে বুঝতে পেরেছে এটা স্নেহারই কান্ড!

রাহুল : [ মনে মনে ] পাগলী একটা! ও কি তখনও এইদিকটা লুকে ছিলো নাকি?

– [ অবাক হয়ে ] কিন্তু এই স্নেহা আমার কাছ থেকে লুকছে কেনো?

[ টাওয়েলটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে ধীরেধীরে এগিয়ে গেলো আলমীরার কর্ণারের দিক, আর স্নেহা রাহুলকে দেখতেই তাড়াহুড়ো করে উল্টোপাশ ফিরে গেলো, রাহুল ও অবাক হলো স্নেহার কান্ডে ]

রাহুল : হেইই দেয়ার! আই কেন সি্ ইউ! [ স্নেহা তাও ফিরে তাকালো না,বরং শাড়ীটা আরো টেনেটুনে নিয়ে গায়ে পেচিয়ে রাখলো,

রাহুল ও মুচকি হেসে স্নেহার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত তাকিয়ে, আধপেচানো শাড়ী পড়া দেখে বুঝতে পারলো, তারমানে স্নেহা নিচে যায়নি তখন ও এইদিকটা লুকিয়ে ছিলো তাকে দেখে,আর এই শাড়ী পড়ার মহানচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এতোক্ষণ ধরে ]

রাহুল : কামঅন! স্নেহা নাও আম ইয়র হায়বেন্ড! সো্ আমাকে লজ্জা পেয়ে লুকানোর কি আছে?

– কাম! [ স্নেহা তাও এলো না,লজ্জায় গুটি মেরে দাঁড়িয়েই আছে ঐ জায়গায় ]

রাহুল : [ স্নেহার হাত ধরে টেনে বের করে এনে ] হোয়াট স্নেহা?এতো লজ্জা? [ স্নেহা নিচের দিক তাকিয়ে চুপ হয়ে আছে ]

– আচ্ছা! শাড়ী পড়ছিলে?

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুম!

রাহুল : সো্ পড়া শেষ!

স্নেহা : [ মুখ গোমড়া করে মাথা নাড়িয়ে ] নাহ!

– এক্সুলি! গতকাল রাতে দাদী বলে রেখেছিলো যাতে সকালে এই শাড়ীটাই পড়ি!

– বাট আ..আমি শাড়ী পড়তে জানিনা!

রাহুল : [ হেসে ] হুমম! তা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে!

স্নেহা : হাসছেন কেনো? আমি শাড়ী পড়িনা তাই জানিনা, এর আগে ভার্সেটি প্রোগ্রামে একবার পড়েছিলাম, তাও মার্জান পড়িয়ে দিয়েছিলো, [ রাহুলের ও মনে পড়লো সেই মোমেন্টটির কথা, যখন সে এন্ট্রি লাইট ঠিক করে অন করেছিলো, তখনি নীল রঙের একটি শাড়ী পড়ে স্নেহা গেইট দিয়ে ঢুকছিলো ]

রাহুল : আর কি না লেগেছিলো তোমাকে ঐদিন! ইচ্ছে করেছিলো…[ বলতেই স্নেহা অবাক হয়ে তাকালো ]

রাহুল : আব.. ও..ওকে ডোন্ট ওয়ারি! টেনশন করছো কেনো, আজ আমি পড়িয়ে দেবো!

স্নেহা : আপনি?

রাহুল : হ্যা! আমি! তাতে অবাক হোওয়ার কি আছে? ছেলেরাও কি শাড়ী পড়ানো জানতে পারে না?

স্নেহা : হ্যা! পা..পারে! বাট আপনি?

– মানে কিভাবে?

রাহুল : শাট-আপ স্নেহা! এখন আবার কিভাবে জানি ওটার ডিটেইল ও বলতে হবে নাকি!

– এসো পড়িয়েদি [ বলেই স্নেহার হাত ধরে একদম কাছে টেনে নিলো,স্নেহা ও শকড হয়ে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে গেছে, আর রাহুল মনে মনে হেসে স্নেহার ঘাড় থেকে ভেজা ভেজা পানি চুপসানো চুল গুলো সব একপাশ করে এনে রাখে, হাত দিয়ে ঘাড়ে স্লাইড করে আচল টেনে নিয়ে নেয়, ধীরেধীরে স্নেহাকে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে চারদিকের পেচানো শাড়ীটা খুলে নিলো, আর এইদিকে স্নেহা লজ্জায় কোন দিকে না কোন দিকে ঢেকে রাখবে বুঝতে পারছিলো না, হাতদিয়ে কিচ্ছুক্ষণ পেট ঢাকছে তো কিছুক্ষণ ঘাড়ে হাত রেখে বুক ঢাকছে, আর রাহুল শাড়ী পড়ানোর বাহানা নিয়ে স্নেহার, পেটে, ঘাড়ে, হাতে স্লাইড করে ধরে ধরে স্নেহার নার্ভাসনেস্ এর মজা নিচ্ছে সাথে স্নেহার কান্ড দেখে মনে মনে হাসি ও পাচ্ছিলো প্রচুর ]

রাহুল : [ স্নেহার কানে ফিসফিসিয়ে ] স্নেহা! তুমি এতো সফট! কেনো? একদম মালাই কুলফির মতো! [ বলেই স্নেহার পেটে স্লাইড করে শাড়ী খুচে দিতে লাগলো আর এইদিকে স্নেহার রাহুলের হাতের স্পর্শে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো, চোখ বন্ধ করে, জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে লাগলো স্নেহা ]

রাহুল : [ দাড়ি দিয়ে স্নেহার ঘাড়ে স্লাইড করে ] ইউ ওকে স্নেহা!

স্নেহা : [ ঢোগ গিলে ] তা..তাড়াতাড়ি! পড়ান.. লে..লেইট হচ্ছে তো!

রাহুল : [ হেসে ] ই..ইয়াহ শিয়র! [ বলেই হাতের পাঁচ আংগুলে পাঁচ বটা দিয়ে একটি কুচি বানিয়ে খুচে দিলো স্নেহার পেটিকোটে, তারপর ধীরেধীরে আচলটা টেনে নিয়ে স্নেহার কোমোড় থেকে ঘুড়িয়ে ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিলো ]

রাহুল : ডান! [ বলেই কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে এক্সাইটেড হয়ে ] বাহ! স্নেহা আমি শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছি! আর তোমাকে তো এমন লাগছে যেনো রেড কার্পেটে ওয়াক দিতে যাচ্ছো! সো্ সেক্সি!

স্নেহা : কিহ?

রাহুল : কিক..কিছুনা! তুমি এসো এইদিকে মিররে এসে দেখো! [ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে হেসে এক পা সামনে এগুতেই, ঝরঝর করে শাড়ীর সামনের কুচি সব খুলে পড়লো, শকড হয়ে স্নেহা রাহুলের দিক একবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি কুচি ধরার জন্য নিচে ঝুকতেই ঘাড় থেকে শাড়ীর আচলটা ও খুলে পড়ে গেলো, রাহুল ও অবাক হয়ে চোখ বড় করে করে তাকিয়ে আছে, স্নেহা আড়চোখে রাহুলের দিক তাকিয়ে তাড়াতাড়ি শাড়ী কুড়িয়ে নিয়ে গায়ে পেচিয়ে উঠে দাড়ালো ]

রাহুল : [ লজ্জা পেয়ে ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে ] স্নেহা! তুমি এখনো ভালো করে হাটতেও শেখোনি! [ বিরবির করে ] দু-বার হয়েছে ভাগ্যিস দুনোবারই আমার সামনে হয়েছে!

স্নেহা : আর আপনি যে বললেন আপনি শাড়ী পড়াতে পারেন?

– এক পা বাড়াতেই শাড়ী খুলে গেলো!

রাহুল : [ জিহবায় কামড় খেয়ে ] এ..এক্সুলি! আই কান্ট!

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] আচ্ছা? তারমানে আপনি এতোক্ষণ…

– এতোক্ষণ এডভান্টেজ নিচ্ছিলেন?

[ রাহুল পকেটে হাত রেখে তেডি স্মাইল দিয়ে স্নেহার কাছে এসে দাঁড়ায়,স্নেহা ঢোগ গিলে পা পিছিয়ে নেই ]

রাহুল : [ স্নেহার নাকে নাক ঘষে ] নট এডভান্টেজ স্নেহা! নাও আম ইয়র হাজবেন্ড ছুতেই তো পারি!

চলবে….

Love At 1st Sight Season 3 Part – 54

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 54

writer-Jubaida Sobti

মার্জান : [ নেহাকে পাশ মুড়িয়ে দিয়ে ] আরে দেখ না..

নেহা : [ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মার্জানের দিক তাকিয়ে ] হ্যা! দেখেছি! সুন্দর লাগছে..

মার্জান : [ হেসে ] তাইইই! ভেরি গুড! [ নেহা আর কিছু না বলে সামনের দিক এগিয়ে যাচ্ছিলো তখনিই ]

শায়লা : [ নেহাকে আটকে ধরে ] ড্রেস তো অনেক সুন্দরই পড়ে এসেছো! আচ্ছা কোথায় থেকে কিনেছো? এই ওকেশন এর জন্যই কেনা হয়েছে নাকি? আচ্ছা প্রাইজ কতো হবে এটার? গোল্ডেন কালার! উমমম নাইস্ কালার!

নেহা : লুক! এতো রিয়েক্ট করার কি আছে? তোমাদের কি মনে হচ্ছে আমি ওদের দেখে জ্যালেস হচ্ছি বা ওদের বিয়ে ভাংগতে এসেছি এমনটাই?

শায়লা : দেখে তো তাই মনে হচ্ছে! তুমি যে কিছু করতে আসোনি মিস্! তার ওতো কোনো গ্যারান্টি নেই! হিহি,

নেহা : জ্যালেস্ হলে আমি এইখানে আসতামই না, আর যদি বিয়ে ভাংগার ইন্টেনশন থাকতো তাহলে এটা সিনেমা নাটক নয় যে আমি বিয়ের দিনই এসে বিয়ে ভেংগে দিয়ে চলে যাবো [ মুখ গোমড়া করে ] ইনফ্যাক্ট আমি তো এসেছি রাহুল আর স্নেহা দুজনকেই সরি বলতে,

মার্জান : শায়লা! আমি যা শুনেছি তুই ও কি তাই শুনছিস?

শায়লা : তুই ও শুনেছিস তার মানে সত্যিই ও এমনটা বলেছে!

নেহা : এক্সুলি! আমি জানি আমি যা করেছি সবটাই রোং ছিলো! জোড় করে চাইলেও কারো ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব নয়, ভালো তো মন থেকে বাসতে হয়,যেটা রাহুল আর স্নেহার মতো কাপলদের দেখেই বুঝা যায় [ মুচকি হেসে ] আর আমি কিনা পাগলের মতোই রাহুলকে জোড় করে যাচ্ছিলাম [ মার্জান আর শায়লা অবাক হয়ে ঘুরঘুর চোখে তাকিয়ে আছে নেহার দিক ]

নেহা : আসলে আমি এসবে অনেক শেইম ফিল করছি! [ হঠাৎ স্টেজের দিক থেকে উল্লাসিত চিৎকার আর তালির আওয়াজ ভেসে আসলো ]

শায়লা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] আরে বিয়ে তো হয়েই গেছে মার্জান!

মার্জান : [ এক্সাইটেড হয়ে নেহার কাধে হাত রেখে ] অওও! তার মানে বলে ফেলেছে কবুলল! [ নেহার দিক তাকিয়ে ] ওহ সরি সরি! [ বলেই নেহার কাধ থেকে হাত সরিয়ে নেয় ]

শায়লা : এক হয়ে গেলো, রাহুল এবং স্নেহা,আই মিন ” রাস্নেহা ” এখন হ্যাপি ম্যারেড কাপল!

– আরে মালা পড়াচ্ছে, আমি যায়! [ বলেই দৌড়ে চলে গেলো স্টেজের দিক ]

মার্জান : [ হেসে ] আমিও দেখে আসি,বাইইই! মিস্ নেহা! ও হ্যা! এইবার আপনার যা খুশি তাই করতে পারেন,এতে আপনার আর কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না, কজ! বলে ফেলেছে “কবুল” [ বলেই হেসে পাশ ফিরতে যাবে তখনিই কানের ধারে ]

আসিফ : [ মাথা এগিয়ে দিয়ে ] আমারও, কবুল! [ কথাটি শুনতেই চোখ বড় করে ফেললো মার্জান, ধীরেধীরে পাশফিরে আসিফের দিক তাকিয়ে ঢোগ গিলতে লাগলো ]

আসিফ : [ হেসে মার্জানকে চোখ টিপ মেরে আবার নেহার দিক তাকিয়ে ] আরে নেহা? তুই কবে এলি?

নেহা : এইতো কিছুক্ষণ হলো এলাম! [ মার্জান আর কিছু না বলে লেহেংগা হাতে ধরে হুড়হুড় করে এগিয়ে চলে গেলো, আসিফ বুঝতে পেরে হাসতে লাগলো ]

মার্জান : [ হাটতে হাটতে ] কি আজিব! আমি কি ওকে বললাম নাকি কবুল! আমি তো রাহুল স্নেহা, উফফফ! দিন দিন এই ইডিয়ট টা মাথায় চড়ে বেড়াচ্ছে! [ হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ওয়াসরুমে আসিফের জোড় করে কিস করার সিনটা ]

– ছিঃ অসভ্য একটা [ বলেই হাত দিয়ে ঠোট মুছতে যাবে হঠাৎ তখনি মনে পড়লো সে তো লিপিস্টিক লাগিয়েছে তাই আবার থেমে গিয়ে, দু-পাশে একবার চোখ বুলিয়ে স্টেজের দিকই হাটা ধরলো, স্টেজের কাছাকাছি আসতেই অবাক হলো মার্জান, রাহুল আর স্নেহার মালা পড়ানো এখনো হলো না, সাথে জারিফা, শায়লা এবং রাহুলের ফ্রেন্ডস আর কাজিনদের চেচামেচিতে মেতে উঠছে আশেপাশের আরো অনেকের হাসি ]

জারিফা : আরে জিজু! আপনি আপনার জায়গা থেকে নড়তে পারবেন না,লাষ্ট ওয়ার্নিং!

রাহুল : আরে তোমরা বার বার স্নেহাকে তোমাদের দিক টেনে নিয়ে নিচ্ছো, তাহলে না নড়ে কিভাবে পড়াবো?

শায়লা : [ চোখ টিপ মেরে ] এটাই তো আপনার এক্সাম জিজু! হিহি!

হঠাৎ,

রিদোয়ান : [ নিচের দিক ইশারা করে চেচিয়ে ] ককরোচচচ! [ বলতেই, মেয়েরা সব চমকে উঠে নিচের দিক তাকালো, মুহূর্তেই আর দেরি না করে রাহুল হেসে স্নেহার গলায় মালা পড়িয়ে দিলো, স্নেহা ও চমকে গিয়ে হেসে উঠলো ]

জারিফা : [ চেচিয়ে ] ওহহহ! নো নো! হবে না এটা চিটিং! আপনারা চিটিং করেছেন!

নেহাল : আরে ভাবী! আপনার শালীদের বলুননা! যে গেইম ইজ গেইম!

শায়লা : [ বিড়বিড় করে ] এই অষ্ট্রেলিয়ান শালীর বাচ্চা শালীকে তো আমি!

রিদোয়ান : আরে গাধা ভাবীর শালী না! রাহুলের শালী!

নেহাল : আচ্ছা? হলোই তো এক! ভাবী মানে রাহুল, রাহুল মানে ভাবী! [ হাসতে লাগলো স্নেহা আর রাহুল ]

জারিফা : ও হ্যালো মিষ্টার অষ্ট্রেলিয়া! গেইম ইজ গেইম হলে, রুলস ইজ রুলস! ওকে? নো চিটিং!

মার্জান : [ এগিয়ে এসে ] ওকে ওকে গাইস্! গেইম ইজ গেইম, রুলস ইজ রুলস, চিটিং ইজ চিটিং! সো্ আপনারা যখন চিটিং করেছেন তাহলে আপনাদের ও সেক্রিফাইজ করতে হবে, আর কোনো তালবাহানা না করে জিজু! ডিরেক্ট দাড়িয়ে থাকবেন আর স্নেহা মালা পড়িয়ে দিবে! ব্যাস!

জারিফা : হ্যা! ক্যারেক্ট!

রিদোয়ান : ওখেই! [ পেছন ফিরে ] গাইস্ আর ইউ রেডি? [ বলতেই ইয়েসসস্ বলে চিৎকার করা জবাব এলো ]

জারিফা : [ হেসে ] আরে! সবাই রেডি হোওয়ার কি আছে মালা সবাইকে পড়াবে নাকি স্নেহা! ওতো শুধু রাহুলকে পড়াবে!

নেহাল : নো ইটস্ এক্সুলি পিপারেশন এলার্ট! হিহি! ওখে ওখে! ভাবী, রাহুল ইজ রেডি!

শায়লা : [ স্নেহাকে নাড়িয়ে ] পড়িয়ে দে স্নেহা! [ স্নেহা মাথা নেড়ে হাত এগিয়ে পড়াতেই যাচ্ছিলো, হঠাৎ তখনিই রাহুলের ফ্রেন্ডসরা মিলে রাহুলকে আলকে উপরে তুলে ধরে ]

জারিফা : [ চেচিয়ে ] আরে আরেহহ! [ আশেপাশের মেহেমান সবাই আবারো হেসে উঠলো রাহুলের ফ্রেন্ডসদের কান্ড দেখে,স্নেহার ও মারাত্মক হাসি পাচ্ছিলো এসব কমিডিয়ান কান্ড দেখে, মাথা তুলে রাহুলের দিক তাকাতেই রাহুল ও হেসে চোখ টিপ মারলো ]

মার্জান : এটা তো ডাবল চিটিং!

নেহাল : [ হেসে ] গেইম ইজ গেইম! গার্লস্!

শায়লা : কিন্তু আমাদের সাইডে তো কোনো ছেলে নেই! যে স্নেহাকে উঠাবে!

রাশু : [ লাফাতে লাফাতে ] আমি আছি, আমি আছি! চলো আপু তোমাকে আমি উঠিয়েদি [ বলেই স্নেহার কোমোড় জড়িয়ে ধরে শক্তি ব্যয় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, হাসতে লাগলো স্নেহা সাথে বাকি সবাই ও হাসতে হাসতে কাতচিৎ হোওয়ার অবস্থা ]

রাশু : ওরে বাবা! পারছিনা তো! আরো শক্তিশালী হতে হবে!

– রাহুল ভাইয়া! তোমার বডি স্ক্যানারটা দিও আমিও বডি বানাবো তোমার মতো,তারপর আপুকে উঠাবো!

জারিফা : দুইকড়ির ডিব্বা! তুই বডি বানিয়ে উঠাতে আসতে আসতে,ওরা এইখানে দাঁড়িয়ে কংকাল হয়ে থাকবে,

রাহুল : [ রিদোয়ানের দিক তাকিয়ে ] আরে দোস্ত হয়েছে, এইবার নামিয়ে দে,

রিদোয়ান : বিয়ে তো হয়েই গেছে তোর, এখন আবার কিসের তাড়া?

মার্জান : তাড়া থাকতে হয় নাকি? ওনি ওনার বউ এর কষ্ট বুঝতে পারছে, কখন থেকে মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেচারি, তাই বলছে আরকি নামিয়ে দিতে, নামিয়ে দিন!

নেহাল : আরে ভাবী আপনার মালা ধরতে কষ্ট হচ্ছে? ভারী নাকি? মে আই?

শায়লা : [ বিড়বিড় করে ] এই অষ্ট্রেলিয়ান গাধাটাকে তো কোরবানীর সময় হাটে নিয়ে গরু বলে বিক্রি করে দেওয়া উচিৎ! [ জারিফা, মার্জান, স্নেহা তিনজনই হেসে উঠলো মুখ চেপে ]

নেহাল : ওহোহো ভাবী, লজ্জা পেয়েছে, লজ্জা পেয়েছে, রাইট? [ জারিফা আর মার্জান আরো জোড়ে হেসে উঠলো ]

হঠাৎ পেছন থেকে,

রাহুলের বাবা : [ স্নেহার কাছে এসে ] আরে ডোন্ট বি আপসে্ট মাই চাইল্ড! আমরা আছি না? তোমার সাইড থেকে আমরা উঠাবো!

স্নেহার বাবা : [ এগিয়ে এসে ] আমাদের বয়স হয়েছে বলে কি শক্তিও কমে গেছে নাকি? চল আমরা উঠাচ্ছি! [ স্নেহা তো চমকের উপর চমক পেলো একদিকে খুশি লাগছে তারউপর আবার লজ্জা ও লাগছে ]

রাশু : [ চেচিয়ে ] ইয়েএএএ! [ বলতেই স্নেহার বাবা এবং রাহুলের বাবা আলগে তুলে ধরলো স্নেহাকে, রাহুল হেসে মাথা ঝুকে দিলো, স্নেহা ও মুচকি হেসে মালা পড়িয়ে দিলো রাহুলকে, বাকিরা ও খুশিতে চেচিয়ে হাত তালি দিতে লাগলো, দু-জনকেই আস্তে করে নামিয়ে রাখলো, রাহুল হেসে স্নেহার পাশে দাঁড়িয়ে হাত ধরে রাখলো ]

মার্জান : আরে আংকেল আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? ছবি তুলতে হবে তো!

নেহাল : এক সেকেন্ড আমি আন্টিদের ও নিয়ে আসছি! [ বলেই একলাফে নেমে স্নেহার মা এবং রাহুলের মা কে ও টেনে তুললো স্টেজে, মাঝামাঝি এক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাহুল স্নেহা এবং স্নেহার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রাহুলে বাবা তারপর স্নেহার বাবা, রাহুলের পাশে এসে দাড়ালো রাহুলের মা তারপর স্নেহার মা, ক্যামেরা মেন ছবি তুলছে আর এইদিকে স্নেহা কিছু বলার জন্য রাহুলের হাতে চিমটাতে আছে, রাহুল মাথা ঝুকে দিলে ]

স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] আপনি এবার এইদিকে দাড়ান ওদিকে দাঁড়িয়ে তো অনেক ছবিই তুলেছেন, [ বলতেই রাহুল আড়চোখে স্নেহার পাশে তাকিয়ে, তার বাবাকে দেখে বুঝতে পারলো স্নেহা মাথায় আসা বাহানা, যেটা পূরণ করা রাহুলের পক্ষে ইম্পসিবল ]

স্নেহা : কি হলো আসেন না?

রাহুল : শাট-আপ স্নেহা! স্টেজে উঠার পর তুমিই তো বললে যে তুমি আমার বাম পাশে দাড়াবা এটাই নিয়ম! সো্ মেইনটেইন করো [ বলেই আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়, স্নেহা আবারো চিমটাতে লাগলো রাহুলের হাত, আর না পেরে রাহুল আবারো মাথা ঝুকিয়ে কান পেতে দিলো ]

স্নেহা : আরে এমন কেনো করছেন আপনি! আমার আপনার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা হয়নি! [ রাহুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়,এইবার স্নেহা আর রাহুলের হাতে চিমটালো না, এক্কেবারে রাহুলের হাত ধরে টেনে তার জায়গায় দাড় করিয়ে দিয়ে সে গিয়ে রাহুলের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে, রাহুল অবাক হয়ে স্নেহার দিক তাকাতেই স্নেহা আর তাকালো না, মুচকি হেসে রাহুলের হাত শক্ত করে মুঠি বেধে ধরে রাখলো, এইদিকে রাহুলের তার বাবার এতোটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অকোয়ার্ড ফিল,নার্ভাসনেস সবই একত্রে কাজ করছে, ছবি তোলা শেষে একে একে সবাই নেমে পড়লো ]

স্নেহা : [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] আ..আপনি এইবার আপনার জায়গায় আসতে পারবেন!

রাহুল : [ আড়চোখে তাকিয়ে ] তোমার আসল ইন্টেনশন আমাকে বাবার পাশে দাড় করানোটাই ছিলো তাই তো?

স্নেহা : আরে! মো..মোটেও না! আচ্ছা বাদ দেন! তখন সবাই দেখলে বলবে বরটা ঝগড়াটে, আর আমার কাছে এখন কোনো চুইংগাম নেই যে আপনার মুখে ঢুকিয়ে দেবো [ হাসি চলে এলো রাহুলের স্নেহার কথা শুনে ]

স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] গুডবয়! [ হেসে ] এইদিকে আসেন এইদিকে [ বলেই রাহুলকে তার আগের জায়গায় দাড় করিয়ে স্নেহা স্নেহার জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো ]

রাহুল : [ হেসে ] তুমি আসলেই..

স্নেহা : আমি আসলেই যেটাই হই, যেমনি হই! আপনারই তো [ বলেই চোখ টিপ মারলো, রাহুল মুচকি হাসলো, এবং সাথেসাথেই সেই দিন রাতে গাড়ীতে রাহুল স্নেহাকে বলা কথাটি মনে পড়লো…
______________________________________

স্নেহা : [ রেগে মিউজিক বন্ধ করে দিয়ে ] আপনি আসলেই একটা [ বলেই চুপ হয়ে যায় ]

রাহুল : [ তেডি স্মাইল দিয়ে স্নেহার দিক তাকিয়ে ] বলো আমি আসলে একটা? ইডিয়ট?.. রাব্বিশ? ইউজলেস্? [ কিটকিটিয়ে হেসে সোজা তাকিয়ে ] স্নেহা ইউ নোও আমি যেটাই হই যেমনি হই, তোমারি তো!
_______________________________________

ভাবতেই ব্লাশিং হয়ে হেসে উঠলো রাহুল, হঠাৎ পাশ ফিরতেই অবাক হলো ]

নেহা : [ হেসে হাত নাড়িয়ে ] হ্যালো গাইস্! কনগ্রেচুলেশনস্ [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] তুই তো ইনভাইট করলি না,তাই আমি নিজ দায়িত্বেই চলে এলাম!

রাহুল : [ নরমালি হেসে ] ইনভাইট করিনি, কারণ আমি জানতাম! উইদাউট ইনভাইটেশনে ও তুই চলে আসবি!

নেহা : ইয়াহহ! আসার তো ছিলোই! কজ তোদের সরি বলাটাও যে বাকি ছিলো!

রাহুল : নো নিড ইয়র সরি!

নেহা : নো রাহুল! আই এম এক্সট্রেমলি সরি ফর মাই অল মিস্টেকস্!

রাহুল : এক্সুলি উই ডোন্ট ডিজার্ব ইয়র সরি!

নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] আই নোও তুই আমার উপর অনেক রেগে আছিস! বাট,তাও সরি বলছি যদি পারিস ক্ষমা করে দিস! [ রাহুল তেডি স্মাইল দিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো ]

নেহা : [ স্নেহার কাছে এসে ] আই থিংক তোমার সাথে এতোটা অন্যায় করার পর,আমি তোমার সামনে চেহেরা দেখানোটাও আসলে ডিজার্ব করিনা,

স্নেহা : নো নো ইটস্ ওকে! এখন তো সবই ঠিকঠাক, ভুল সবারই হ…[ বলতেই দেখে রাহুল স্নেহার দিক রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে, স্নেহা ও ঢোগ গিলে চুপ হয়ে যায় ]

নেহা : [ হেসে ] ওখে,সো্! অল দ্যা বেষ্ট! বোথ অফ ইউ! হ্যাপি ম্যারেড লাইফ! [ বলেই স্নেহার সাথে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালো, কিন্তু স্নেহা হাত এগিয়ে দেওয়ার আগেই ]

রাহুল : [ নেহার হাতে হ্যান্ডশেক করে ] থেংক ইউ! বাইই!

নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] বাইই!

স্নেহা : [ মনে মনে ] আজিব! রাহুল এমন কেনো করছে? ও তো ওর ভুল বুঝতে পেরে সরিই বলতে এসেছে! [ নেহা চলে যাচ্ছিলো তখনিই ]

স্নেহা : [ চেচিয়ে ] বাইই নেহা! [ নেহা পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে স্নেহা হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে আছে, রাহুল জোড়ে নিশ্বাস ফেলে অন্যপাশ তাকিয়ে ফেলে, ]

নেহা : [ মুচকি হেসে হাতের মিডল ফিংগার রিং ঠিক করে, স্নেহার কাছে এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করে ] থেংক ইউউ! [ বলতেই হঠাৎ স্নেহা খেয়াল করলো তার হাতে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে,ব্যথা অনুভব করায় চিৎকার করতে চেয়ে ও আর করলো না, চোখ বটে নিস্তব্ধ হয়ে পড়লো স্নেহা, হাতছুটিয়ে চলে গেলো নেহা, রাহুল ও আর রেগে তাকালো না স্নেহার দিক, চুপ করে অন্যপাশ ফিরে আছে! নিজেকে কন্ট্রোল করে চোখ খুলে স্বাভাবিক হয়ে সোজা তাকিয়ে রইলো স্নেহা! ]

___________ এইদিকে,

শায়লা : এভাবে বুফে খেতে থাকলে তো আমার ওয়াইট ফিফটি ফাইভ থেকে হান্ড্রেট ক্রস করবে,

নেহাল : [ ছবি তুলতে তুলতে ] ইয়া..ইয়াহ

শায়লা : [ খাবার বারতে বারতে ] আচ্ছা আপনার ছবি তুলা ছাড়া কি, আর কোনো কাজ নেই?

নেহাল : [ ছবি তুলতে তুলতে ] ইয়া..ইয়াহ! আছে আছে!

শায়লা : হ্যা তা কি শুনি?

নেহাল : তার আগে তুমি আমার একটা কুয়েশ্চন এর আন্স দাও! তুমি কি সিংগেল নাকি.. আব..আ..আই মিন কেউ আছে?

শায়লা : [ নেহালের দিক তাকিয়ে ] যদি বলি কেউ আছে, তো? আর যদি বলি কেউ নেই, তো?

নেহাল : ওখে ওখে! [ বলেই শায়লার প্লেটে আরো কিছু তুলে দিয়ে ] কুল কুল!

শায়লা : হোয়াটেভার! [ বলেই আবার খাবার চয়েস করে করে বারতে লাগলো ]

__________ অন্যদিকে,

মার্জান : [ হাটতে হাটতে ] ক্ষিধে তো এবার আমারো পেয়ে গেছে, তখন শায়লার সাথেই খেতে চলে যাওয়া উচিৎ ছিলো! আর এই জারিফার তো খবরই নেই! [ বলতেই হঠাৎ ধাক্ষা খেলো কারো সাথে,পাশফিরতেই দেখে নেহা পা চেপে ধরে পাশে একটি চেয়ারে বসে পড়লো ]

মার্জান : ও হ্যালো! আর ইউ ওকে?

নেহা : [ পা ঘষতে ঘষতে ] হ্যা! জাষ্ট, পা একটু মোচর খেয়েছে!

মার্জান : ওহ!

নেহা : [ মুচকি হেসে ] ওকে! বাই! [ বলেই উঠে দাড়াতে যাচ্ছিলো তখনি আবার ] আহহহ! [ বলেই চেয়ারে বসে পড়লো ]

মার্জান : কি হলো?

নেহা : পায়ে ভর দিয়ে হাটতে পারছি না, কে্ন ইউ হেল্প মি প্লিজ! [ মার্জান অবাক হয়ে তাকালে ]

নেহা : জাষ্ট পার্কিং পর্যন্ত পৌছে দিলেই হবে!

মার্জান : [ মনে মনে ] ঢং করছে নাকি সত্যি সত্যিই হয়েছে কে জানে! [ চিন্তা করতে করতে ] এমনিতে আজ খারাপ কিছু করতে তো দেখলাম না এই পেত্নীকে, হয়তো শুধুরে গেছে কি জানি! এনিওয়ে তাতে আমার কি..

নেহা : কি চিন্তা করছো?

মার্জান : ও..ওখে! [ বলেই হাত বাড়ালো ]

নেহা : [ মার্জানের হাতে হাত রেখে উঠে দাঁড়িয়ে, ধীরেধীরে হেটে পার্কিং পর্যন্তই গেলো ]

মার্জান : গাড়ী কোথায়?

নেহা : লাষ্ট স্টেপে! প্লেস খালি ছিলো না তাই ঐদিকটাই রাখতে হয়েছে,

মার্জান : [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ] ওকে! [ বলেই আবার হেটে নেহাকে তার গাড়ী পর্যন্ত পৌছে দিলো ]

নেহা : আসোলে থেংক ইউ বললেও কম হবে,আমি তোমাদের সাথে এতোটাও মিসবিহেভ করেছি, তাও তোমরা…

মার্জান : ইটস্ ওকে!

নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] গুড নাইট!

মার্জান : গুড নাইট [ বলেই হাটা ধরলো, নেহা ও গাড়ীতে উঠে স্টার্ট দিলো ]

মার্জান : [ মনে মনে হেসে ] ফাইনালি,তাহলে এই পেত্নীর মাথায় বুঝ এলো, আফসোস! যদি আরো কিছুদিন আগেই চলে আসতো বুঝগুলো, তাহলে আর রাহুল, স্নেহার এতো কষ্ট পেতে হতো না, [ এসব ভেবে ভেবেই কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর খেয়াল করলো, পেছন থেকে গাড়ীর লাইটের ফ্লাশ আসছে, তাই আবার সাইড হয়েই ওড়নার আচল নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাটতে লাগলো, হঠাৎ মনে বাড়ি খেলো কেমন যেনো গাড়ীটা তার খুব নিকটেই আসছে,পেছন ফিরতেই যাবে ঠিক ঐ মুহুর্তে আর ফেরা হলো না,পাশ থেকে আসিফ হাত ধরে টেনে বুকে মুড়িয়ে নিলো, চোখ পড়লো নেহার গাড়ীটির উপর, কর্কট এক শব্দ নিয়ে আরেকটি গাড়ীর সামনের বনাট ভেংগে চুরমার করে দিলো, তা দেখে মার্জান সাথে সাথেই চোখ বটে কুকরে গেছে আসিফের বুকে, ভয়ে বুকটা ধুপধুপ করছে, জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলছে দুজনেই ]

নেহা : [ গাড়ী বেক দিয়ে এসে,জানালার গ্লাস নামিয়ে ] এইবার বেচে গেছো! নেক্সট টাইম!

আসিফ : [ রাগান্বিত ভাবে ] ইয়াহ! অল দ্যা বেষ্ট! [ বলতেই নেহা নাক ফুলিয়ে জানালার গ্লাস তুলে গাড়ী টান দিয়ে চলে যায়, আশেপাশে থেকে কয়েকজন লোক ও এগিয়ে এলো ]

আসিফ : [ মার্জানের মাথায় হাত রেখে ] ইউ ওকে? [ মার্জান ধীরেধীরে আসিফের বুক থেকে মাথা তুলে তাকালো,চোখ পানিতে টলমল করছিলো, যা এই মুহুর্তেই গড়িয়ে পড়লো, চেহেরায় ভয়ের ছাপ ]

আসিফ : [ আংগুল দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে ] অলরাইট! কান্না করার দরকার নেই!

মার্জান : আপনি এইখানে কখন…

আসিফ : তোমাকে ওর হেল্প করতে দেখে ফলো করতে করতে এলাম, আর এই নেহাকে দেখে আমার মনে যা ভেবেছিলাম তাই হলো,

মার্জান : [ আসিফ থেকে সরে দাঁড়িয়ে ] থে..থেংক ইউ!

আসিফ : [ মুচকি হেসে পকেটে হাত রেখে ] ব্যাস? জাষ্ট থেংক ইউ? [ মার্জান কৌতুহলি ভাবে তাকালো ]

আসিফ : আজকের লিপিষ্টিকটা দারুণ মানিয়েছে! [ মার্জান আর কিছু বললো না আশেপাশে একবার তাকিয়ে লেহেংগা ধরে দৌড় দিলো সোজা ভেতরে, হাসতে লাগলো আসিফ, ভেতরে ঢুকে ব্লাশিং হয়ে হয়ে হাসতে লাগলো মার্জান ও হঠাৎ ]

জারিফা : [ এগিয়ে এসে ] হেইইই মার্জান কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?

মার্জান : আ..আমি?

জারিফা : ওহো এমন লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে আছিস কেনো কি বেপ্পার?

মার্জান : কিছুনা! আমার অনেক ক্ষিধে পেয়েছে চল খাবো [ বলেই জারিফার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায় ]
___________এইদিকে স্টেজে,

স্নেহা : রাহুল!

রাহুল : হুম

স্নেহা : আপনি রেগে আছেন আমার উপর?

রাহুল : নাহ! [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ] বাট এটাই তো সমস্যা! আমার এখন তোমার উপর রাগ দেখানো উচিৎ,কিন্তু আমি পারিনা তোমার উপর রেগে থাকতে [ স্নেহা ও আর কিছু বললো না মুখ গোমড়া করে সোজা তাকিয়ে চুপ করে থাকলো ]

রাহুল : কি হলো? আবার মন খারাপ করে আছো কেনো? আমি কি বললাম রেগে আছি?

স্নেহা : নাহ!

রাহুল : তাহলে?

স্নেহা : কিছুনা!

রাহুল : লিসেন্ট! বিয়ে পাঁচ মিনিটে করে শেষ করা যায়, এসব এতোক্ষণ ধরে স্টেজে রোবোটের মতো হয়ে বসে থেকে, ফুল ফ্যামিলি নিয়ে বিয়ের নীতি-টীতি পালন করে বিয়ে করার আমার মোটেও ইচ্ছে ছিলো না, এসব আমি সবই তোমার খুশির জন্য করছি ওকে?

– কিন্তু তুমিই দেখছি মন খারাপ করে বসে আছো!

স্নেহা : [ রাহুলের দিক ফিরে ] করবো না? আপনিও তো এতোক্ষণ ধরে মন খারাপ করেছিলেন!

রাহুল : হ্যাঁ! আমি করেছিলাম তাই বলে তোমার ও মন খারাপ করতে হবে নাকি?

স্নেহা : আপনার মন খারাপ থাকলে আমার মন ভালো থাকবে কেমনি? [ মুচকি হাসলো রাহুল ]

স্নেহা : হাসবেন না!

রাহুল : [ হেসে ] তাইই?

স্নেহা : [ সোজা তাকিয়ে ] হুম!

রাহুল : আই লাভ ইউ! [ স্নেহা ও হেসে দিলো ব্লাশিং হয়ে ]

[ এভাবেই সময় পেরিয়ে, রাত ঘনিয়ে,আনন্দে ভরে,প্রোগ্রাম শেষ পর্যায়ে পৌছে যায়, কাদলো স্নেহা তার ফ্যামিলিকে জড়িয়ে, তার ফ্রেন্ডসদের জড়িয়ে,বিদায়ের পালা শেষ করে,নতুন জীবনের পাড়ায় রাহুল এবং তার পরিবারের সাথেই বেড়িয়ে যায় স্নেহা ]

রিদোয়ান : [ জারিফাকে টেনে এক কোণে নিয়ে গিয়ে ] কি হলো এভাবে আপসেট হয়ে আছো কেনো?

জারিফা : [ রিদোয়ানকে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে ] স্নেহাকে মিস্ করছি, এতোদিন ধরে তো যেখান থেকেই হোক বাসায় আমাদের সাথেই ফিরেছে, রাতে আমাদের আড্ডায় আর থাকবে না,গায়ের কম্বল সরে গেলে টেনে দেবে না, ঝগড়া না করার জন্য সকালে সবার আগে উঠে ব্রেকফাষ্ট আমি বানাবো বলবে না, [ বলেই ফুফিয়ে কেদে উঠলো ]

রিদোয়ান : আরে এতে কান্না করার কি আছে! তোমার যখনি স্নেহার সাথে মিট করতে মন চাইবে,জাষ্ট আমাকে একটা কল দিবা!

– আর এমনিতেও আমার ভাবীকে দিয়ে অনেক ব্রেকফাস্ট বানিয়ে খেয়েছো এবার নিজেরাও বানিয়ে খাও! ওকে?

জারিফা : [ হেসে উঠে ] অনেক খুশিও লাগছে আজ! স্নেহার ভালোবাসা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে,

রিদোয়ান : হ্যা! কতো ঝড়-তুফানই না গেলো দু-জনের উপর!

হঠাৎ,

শায়লা : [ এগিয়ে এসে ] জারিফা?

জারিফা : [ রিদোয়ান থেকে সরে দাঁড়িয়ে ] হ্যাঁ?

শায়লা : চল! যাবি না?

জারিফা : হ্যা! [ বলেই রিদোয়ানের দিক তাকিয়ে ] ওকে আসি!

রিদোয়ান : [ জারিফার কপালে একটি চুমু খেয়ে ] বাই! [ চলে গেলো জারিফা শায়লাকে নিয়ে ]

______ রাহুলের গাড়ী এসে ঢুকলো গেইটের ভেতর,পেছনে লাইন ধরা সব গাড়ী ও এক এক করে ঢুকছে গেইট দিয়ে,

বাড়ীতে ঢুকে দীর্ঘক্ষণ ড্রইং রুমে বসে আছে স্নেহা! রাহুলের কাজিনদের সাথে কথা বলছে, আর রাহুল তার দাদীর সাথেই কথা বলছে,স্নেহার ও বোঝার বাকি রইলো না রাহুল তার দাদীর সাথে কি নিয়ে ঝগড়া করছে, কারণ সে তো এই বাড়ীতে থাকতে রাজি নয়, পাশের গেষ্ট হাউজটাই নিজের বাড়ী করে রেখেছে,তবে এখন বিয়ে হয়েছে বউকে কি গেষ্ট হাউজে রাখা যায়, দাদীর জবাব ও ঠিক এমনটাই হবে, ভাবতেই মুচকি হাসলো স্নেহা! তবে রাহুলের সাথে গেষ্ট হাউজ কেনো সে গাছতলায় থাকতেও রাজী আছে, কিন্তু রাহুলকে তার বাবার কাছে আনতে এই বাড়ীতে একসাথে থাকাটাও অনেক জরুরি!

রোহানী : ভাবী চলেন আপনাকে আপনার রুমে দিয়ে আসি! অনেক টায়ার্ড ও লাগছে হয়তো! আসেন রেষ্ট করবেন! [ বলেই স্নেহাকে রাহুলের কাজিনরা রাহুলের রুমে বসিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ হাসাহাসি শয়তানি করে চলে গেলো,স্নেহা ও পা গুটে খাটের উপর বসে আছে চুপচাপ,চোখ বুলিয়ে দেখছে চারদিক, অর্কিড ফুলের বাগিচার মতোই ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে,মিটিমিটি করে জ্বলছে ক্যান্ডেল লাইট গুলো ও ]

হঠাৎ কিছুক্ষণ পর, দরজা খোলার আওয়াজে পাশফিরে তাকালো স্নেহা, পাগড়ীটা হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে হেটে খাটের সামনে এগিয়ে এলো রাহুল! ঘুরঘুর করে তাকিয়ে আছে স্নেহা! রাহুল একটা তেডি স্মাইল দিলো স্নেহার চাহনিতে,স্নেহা ও লজ্জা পেয়ে হেসে মাথা নুয়ে ফেললো,

রাহুল : [ হেসে ] ইশশ! কি লজ্জা! [ বলেই হুট করে স্নেহার পাশে বসে স্নেহার কোল থেকে হাত সরিয়ে নিজের মাথা রেখে শুয়ে পড়লো, অবাক হয়ে তাকালো স্নেহা ]

রাহুল : আই লাভ ইউ! [ চুপ করে তাকিয়ে আছে স্নেহা ]

– তোমার রিপ্লাই দু-বার বাকি রয়ে গেছে কিন্তু! [ মুচকি হাসলো স্নেহা, রাহুলের চোখে তাকিয়ে রিপ্লাই করতে ও হঠাৎ লজ্জা লাগছে ]

রাহুল : [ স্নেহার গালে স্লাইড করে ] স্নেহা!

স্নেহা : হুম!

রাহুল : তোমাকে দেখে এখন একটা গান মনে পড়ে গেলো!

স্নেহা : কি গান?

রাহুল : ♪♪ চান্দ ছুপা, বাদাল মে ♪♪
♪♪ শারমাকে মেরি জানা ♪♪

♪♪ আজা্ রে আজা্ চান্দা কি জা্বতাক তু না আয়েগা ♪♪
♪♪ সা্জনা কি চেহেরে কো দেখনে ইয়ে মাংগাল সা্জায়েগা ♪♪

♪♪ না নাহ চান্দা তু নেহি আনা তু জো্ আয়া তো ♪♪
♪♪ সা্নাম শারমাকে কাহি চালা জা্য়েগা ♪♪

[ ব্লাশিং হয়ে হাসতে লাগলো স্নেহা ]

রাহুল : [ স্নেহার মাথার ঘোমটা নিজের মুখ পর্যন্ত টেনে নিয়ে ]

♪♪ আচালমে তু ছুপ জানে দে ♪♪
♪♪ জুলফোমে তু খো জানে দে ♪♪

[ কোল থেকে মাথা তুলে স্নেহার গলায় কিস্ দিতেই স্নেহা লজ্জা পেয়ে অন্যপাশ ফিরে যায়, তখনিই রাহুল হেসে স্নেহার ঘোমটা খুলে নিয়ে নিজের মাথায় পড়ে, স্নেহার গায়ে ধাক্ষা দিয়ে নেচে নেচে]

♪♪ হেইই রেহেনেভি দো ♪♪
♪♪ জা~নেভি দো ♪♪
♪♪ আব ছোড়ো না ♪♪
♪♪ মু মোড়ো না♪♪
♪♪ ইয়ে সামা হা ইয়ে সামা কুচ অর হে ♪♪

[ কিটকিটিয়ে হাসতে লাগলো স্নেহা রাহুলের কান্ডে, রাহুল ও হাসতে হাসতে খাটে মাথা রেখে, স্নেহার হাত কাছে টেনে নিলো চুমু দেওয়ার জন্য, হঠাৎ ঐ মুহুর্তে স্নেহার হাতের দিক চোখ পড়তেই রাহুল অবাক হলো,স্নেহা তাড়াতাড়ি হাত টেনে নিয়ে নিলো ]

রাহুল : [ উঠে বসে ] স্নেহা? কিভাবে হয়েছে এটা?

স্নেহা : সাস..সামান্য একটুই, কেটে গেছে হয়তো কোথাও, খেয়াল নেই! [ বলেই হাত আচলের ওড়নায় বটে রাখলো, আর রাহুল নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিক ]

চলবে..

Love At 1st Sight Season 3 Part – 53

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 53

writer-Jubaida Sobti

শায়লা ক্যামেরার সামনে এসেই দাত দেখানো একটা হাসি দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো, নেহাল হঠাৎ ভয় পেয়ে চমকে উঠে ক্যামেরা হাত থেকে ফেলে দিতেই যাচ্ছিলো আবার তাড়াহুড়ো করে ধরে ফেলে মুচকি হেসে তাকিয়ে রইলো,

জারিফা : [ দৌড়ে এসে হাপিয়ে উঠে ] এই রাশুর বাচ্চাটা আজ একদিনেই আমায় শুকিয়ে ছাড়বে [ বলেই নেহালের দিক চোখ পড়তে ] হ্যালো মিষ্টার অষ্ট্রেলিয়া, আপনার ভাবী তো ঢুকেই যাচ্ছে, আপনার এন্ট্রি ভিডিও করা শেষ? [ কথাটি শুনতেই নেহালের হঠাৎ মনে পড়লো আরে সে তো রাহুলকে কথা দিয়েছে, ভাবীর এন্ট্রি ভিডিও সেন্ড করে রাখবে হোয়াটস্ অ্যাপ এ]

নেহাল : নো নোহ..!

জারিফা : সো্ লেটস্ গো! [ বলেই হাটা ধরলো ]

চারদিক সাজানো হচ্ছে, স্নেহা এবং তার ফ্রেন্ডসরা কনফিউজড হয়ে পড়েছে কোনদিক যাবে,

নেহাল : [ দৌড়ে এসে ] ওয়েট ওয়েট লেডিস! কনফিউজড হোওয়ার কিছু নেই! কাম উইথ মি, কাম উইথ মি, [ বলেই ক্যামেরা ধরে ভিডিও করতে করতে শিরি দিয়ে উঠতে লাগলো, স্নেহা এবং তার ফ্রেন্ডসরা ও হেসে হেসে উঠে পড়লো নেহালের সাথে, নেহাল গিয়ে বড় একটি রুমের দরজা খুলে এগিয়ে আসতে ইশারা করলো, রুমে ঢুকতেই যাবে হঠাৎ তখনি থমকে দাঁড়িয়ে যায় স্নেহা, সাথে তার ফ্রেন্ডসরা ও, রুম থেকে এক ঝাক মেয়ের দল ]

– ইয়েএএএ ব্রাইড ইজ কামিং [ বলেই চেচিয়ে ছুটে এলো তাদের দিক, হরেক রকমের চুলের কালার দেখেই স্নেহা বুঝে গেলো নিশ্চয় এরাই হবে রাহুলের বিদেশী কাজিন গুলো, এদের মাঝে মধ্যবয়সী দু-জন মহিলা ও রয়েছে হয়তো রাহুলের খালা-ফুফুরা কেউ হবে ]

রাহুলের মা : [ এগিয়ে এসে ] রিলেক্স গার্লস রিলেক্স!

– স্নেহা! এসো আমার সাথে [ স্নেহার ফ্রেন্ডসদের উদ্দেশ্যে করে ] আরে তোমরা আবার দাঁড়িয়ে আছো কেনো এসো এসো ভেতরে এসো [ বলেই সবার মাঝ থেকে স্নেহাকে কাধে ধরে ভেতরে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ] দেখো স্নেহা তোমাকে দেখার অপেক্ষায় এরা কখন থেকে এক্সাইটেড হয়ে বসে আছে, [ স্নেহা মাথা ঘুরিয়ে সবার দিক একবার তাকাতেই, একত্রে সবাই হ্যালোওও বলে চেচিয়ে উঠলো, স্নেহা ও মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো ]

রাহুলের মা : নেহালের সাথে তো তোমার নিচে পরিচয় হয়েছে নিশ্চয়!

নেহাল : [ চেচিয়ে ক্যামেরা ধরে রেখে ] ইয়া..ইয়াহ! মামী আমার সাথেই এট ফাষ্ট ইন্ট্রোডাক হয়েছে, ভাবীর সাথেও এবং ভাবীর শালীদের সাথে ও!

রাহুলের মা : [ হেসে ] ভাবীর শালী না পাগল, রাহুলের শালী!

নেহাল : [ জিহবায় কামড় খেয়ে ] উহ! সরি,রাহুলের শালী! [ বাকিরা হেসে উঠলো ]

রাহুলের মা : এসো স্নেহা! তোমায় পরিচয় করিয়েদি বাকিদের সাথে, ইনি হচ্ছেন রাহুলের বড় ফুফি,নেহালের মা, রাহুল নাফিসা ফুফি বলেই ডাকে সো্ তুমি ও তাই বলে ডাকতে পারবে!

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] জ্বি! [ বলেই সালাম করলো স্নেহা,মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো রাহুলের ফুফি ]

রাহুলের মা : আর ইনি হচ্ছেন লিনিসা,রাহুলের ছোট ফুফি, [ স্নেহা পা ধরে সালাম করার আগেই রাহুলের ছোট ফুফি জড়িয়ে ধরলো স্নেহাকে, স্নেহা ও হেসে জড়িয়ে ধরলো ]

লিনিসা ফুফি : সো্ সুইট ডিয়ার! আল্লাহ ব্লেস্ ইউ!

স্নেহা : [ ধীরো ভাবেই বলে উঠলো ] থেংক ইউ!

রাহুলের মা : আর এগুলো হচ্ছে সব রাহুলের কাজিন, ওর নাম সাইফা, জাফসিন, রোহানী, লুমিসা, ইয়ানা, আলিসা, সুজানা, নেন্সি [ এক এক করেই রাহুলের মা রাহুলের কাজিনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো স্নেহাকে, কেউ হ্যালো কিউটি, কেউ হাই ভাবী, কেউ হ্যালো ডিয়ার, বলে বলেই হাত নাড়িয়ে ইন্ট্রোডাক হতে লাগলো, স্নেহার ও ভালোই লাগছিলো সবার সাথে পরিচয় হতে, কারণ তাদের মাঝে কোনো এটিটিউডই দেখতে পাচ্ছে না, তাদের বিহেইভিয়ারে স্নেহার মনে হচ্ছিলো যেনো কতো আগে থেকেই তাদের সাথে পরিচয় ]

রাহুলের মা : আর গার্লস্ এরা হচ্ছে স্নেহার ফ্রেন্ডস! জারিফা,মার্জান,শায়লা! [ স্নেহা ও মুচকি হেসে তার ফ্রেন্ডসদের দিক ফিরে তাকালো, সাথে সাথেই শকড হয়ে চোখ উঠলো কপালে, জারিফা আর শায়লা, রাহুলের ছোট ফুফির সাথে হেসে হেসে কি কি যেনো গল্প করে ফেলছে, যেনো তিনি তাদের বাল্যকালের সাথী, দৃশ্যটি দেখেই হেসে উঠলো স্নেহা, তার ফ্রেন্ডস বলে কথা, এরা আবার চুপ থাকবে? তা হতেই পারেনা, যেখানেই যাবে হৈ হুল্লোড় করতেই থাকবে, পাশ ফিরতেই চোখ পড়লো নেহালের দিক, সবার মুখের সামনে গিয়ে গিয়ে ক্যামেরা ধরে ভিডিও তুলছে ]

রাহুলের মা : [ নেহালের মাথায় বাড়ি দিয়ে ] হয়েছে! ভিডিও অনেক করেছিস বাকি গুলো ইভিনিং এ করেনিস এবার চল আমাদের বেরুতে হবে,

নেহাল : ইয়া..ইয়াহ! শিয়র শিয়র! কাম [ ক্যামেরা বটে ] বাই গাইস্! সি্ ইউ সুন ভাবী! [ বলেই বেড়িয়ে যায় ]

রাহুলের মা : [ বাকি সবাইকে উদ্দেশ্য করে ] আর গার্লস তোমরা কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়েই তৈরী হওয়া স্টার্ট করে দাও! ইভিনিং হতেও আর বেশীক্ষণ নেই কিন্তু! [ স্নেহার দিক এগিয়ে এসে ] স্নেহা! কিছু প্রয়োজন হলে ওদের বলবা,একদম লজ্জা পাবা না, দরকার পড়লে আমায় ফোন করে বলবা,

– আর আমি সারভেন্ট দিয়ে এইখানে সব কিছুই ঠিকঠাক করে রেখেছি, সবার নাম ও লিখা আছে প্যাকেটে! সো্ তৈরী হয়ে নিও কেমন?

জারিফা : [ এগিয়ে এসে ] ডোন্ট ওয়ারি আন্টি! ব্রাইডের চিন্তা করতে হবে না,আপনি বিনা টেনশনে যান! এইদিকের সব আমরা হ্যান্ডেল করে নিবো! আপনি তো জাষ্ট গ্রুমকে তৈরী করে নিয়ে আসুন!

রাহুলের মা : [ হেসে ] পাগলী! [ বলেই জারিফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, রাহুলের ফুফিদের নিয়ে বেড়িয়ে যায়,

তারপরই শুরু হলো সবার একত্রে বসে আড্ডা দেওয়া, পার্সোনাল ইন্ট্রোডাক হোওয়া, স্নেহাকে যেনো রাহুলের কাজিনরা সাজিয়ে রাখা পুতুলই পেয়েছে,কতোক্ষণ এই এসে জড়িয়ে রাখছে তো কতোক্ষণ ও এসে জড়িয়ে রাখছে, তবে ভালোই লাগছিলো এসব স্নেহার ]

___________ বিকেল ৫ বেজে ৩০মিনিট..

সূর্য ডুবতে চলছে,

রেসোর্টের চারদিকের সাজিয়ে রাখা লাইটিং গুলো মিটমিট করে জ্বলছে, সাদা পর্দার আড়ালের ঝারবাতি গুলো ও জ্বলে উঠা শুরু করছে, গেষ্টদের জন্য চেয়ার টেবিল, ফুলদানি,খাবারদাবার এর সব আয়োজন ও কমপ্লিট!

জানালার পাশে রাখা টেবিলের উপর বেজে চলছে স্নেহার ফোনটা, তবে তা এখন থেকে নয়,সে কবে থেকেই! স্ক্রিনে মিষ্টার তেডি স্মাইল নামটাই ভেসে উঠছে বারবার, মনটা স্নেহার ছটফট করছে ফোন রিসিভ করার জন্য,কিন্তু কি করার তার এই ফাজিল ফ্রেন্ড গুলোর কান্ডে ঐ দিকে রাহুলের ছটফট করতে হচ্ছে, আর এইদিকে স্নেহার!

জারিফা : [ মোবাইল হাতে নিয়ে কিটকিটিয়ে হেসে ] কেটে গেছে!

মার্জান : আরে জারিফা! আর কতোক্ষণ ওয়েট করাবি বেচারাকে! দিয়ে দে নাহয় একটু কথা বলেনিক!

জারিফা : আরে দেখছিস না! ব্রাইডকে সাজাচ্ছে! ওর সাজের ডিষ্টার্ব হবে তো [ বলতেই আবারো বেজে উঠলো ফোন ]

জারিফা : আর এমনিতেই আজ সারারাত ধরেই তো অনেক কথা হবে! [ চোখ টিপ মেরে ] এখন না হয় একটু ছটফট করুক!

রোহানী : [ রাহুলের কাজিন ] আমার তো মনে হচ্ছে আমাদের ব্রাইডের ও মনটা ছটফট করছে অনেক [ স্নেহার গলায় নেকলেস পড়িয়ে দিতে দিতে ] তাই না ভাবী!

জারিফা : উহহ! তাই নাকি স্নেহা? আচ্ছা ওকে ওয়েট একমিনিট! [ বলেই ফোনটা রিসিভ করে ] হ্যালো জিজু!

রাহুল : থেংক গড! ফোনটা রিসিভ হয়েছে! স্নেহা কোথায় বলোতো?

জারিফা : ডুবে গেছে!

রাহুল : হোয়াট?

জারিফা : না মানে কাপড় আর অর্নামেন্টস এর ওজনে ও কাপড়ের মাঝেই ডুবে গেছে! হিহি,তাই হয়তো হেটে এসে ফোনটাও রিসিভ করতে পারছিলো না…

– আ..আচ্ছা আপনি বলুন না কিক..কিছু বলবেন ওকে?

রাহুল : ফোনটা দাও ওর কানে! [ জারিফা ফোন দিতেই যাচ্ছিলো স্নেহার কানে তখনিই ]

শায়লা : [ ফিসফিসিয়ে ] লিসেন্ট! লাউড করে দে!

জাফসিন : ওয়াও! দ্যাটস আ গ্রেট আইডিয়া! [ বলতেই জারিফা মাথা নাড়িয়ে ফোন স্পিকার লাউডে রেখে স্নেহার মুখের সামনে এনে ধরলো ]

স্নেহা : হ্যালো!

রাহুল : [ চেচিয়ে ] হোয়াটস্ রোং উইথ ইউ স্নেহা! কখন থেকে করছি আমি ফোন?

জারিফা : [ ফিসফিসিয়ে ] অওও! স্নেহা আমার জিজু বেচারাটাকে এতোক্ষণ ওয়েট করাচ্ছিলি কেনো বলতো! [ বাকিরা হেসে উঠলো মুখে চেপে ]

রাহুল : আরে কি হলো আবার চুপ হয়ে আছো কেনো?

স্নেহা : শু..শুনছি আমি বলেন কিক..কি বলবেন?

রাহুল : আমি তোমার ড্রেস দেখিনি!

স্নেহা : হ্যা! তো?

রাহুল : হ্যা! তো মানে? আমি তোমার ড্রেস দেখিনি! আমি কিভাবে বুঝবো তোমার ড্রেসে কি কি কালার আছে?

– আ..আই মিন আম কনফিউজড! কি কালারের শেরোয়ানী পড়বো?এইখানে অনেক দেখাচ্ছে বাট,আমি ডিসাইড করতে পারছিনা!

– তাই তুমিই বলো না কি কালার পড়বো?

স্নেহা : আপনি আসিফ,রিদোয়ান ওদের কাউকেই বলুন.. ওরা আপনাকে..

রাহুল : বউ তুমি হচ্ছো ওরা না! [ বলতেই বাকিরা মুখ লুকিয়ে লুকিয়ে হেসে উঠলো, আর এইদিকে স্নেহার লজ্জায় জান বেড়িয়ে যাচ্ছে, আর না পেরে,চেয়ার থেকে উঠে, জারিফার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে জানালার পাশে চলে যায় ]

স্নেহা : আগেই দেখা উচিৎ ছিলো তো তাই না?

রাহুল : আরে এভাবে বলছো কেনো? আমি রেসোর্টে যায়নি তাই আর দেখা হয়নি! কোথায় আদর করে বলবা সুইটহার্ট তুমি এই কালার শেরোয়ানীটা না, ঐ কালার শেরোয়ানীটা পড়বা, তা না বলে উল্টা চেচাচ্ছো..

স্নেহা : এক্সকিউজ মি! আমি কবে চেচালাম?

রাহুল : আচ্ছা যেটাই করেছো বাদ দাও, এবার বলো আমি কি কালার পড়বো?

স্নেহা : যেটা আপনার মন চাই সেটাই পড়ুন!

রাহুল : এখন আমি পাশে থাকলে না দেখতা তোমায় কি করতাম!

স্নেহা : [ হেসে ] আরে এই লেহেংগায় তো অনেক কালার কম্বিনেশন করা আমি কোন কালারের কথা বলবো, আপনি তো আমাকেই কনফিউজড করে দিচ্ছেন!

রাহুল : এক এক করে সব কালার বলে যাও!

স্নেহা : আচ্ছা?

রাহুল : লিসেন্ট স্নেহা! কথা আর পেচাবা না কিন্তু, ক্যারেক্টালি অ্যান্সার দাও!

স্নেহা : [ হেসে ] লোওয়ার পার্ট হোয়াইট কালার, আচলের ওড়না ব্লু কালার, আর ঘোমটার ওড়না রেড কালার,

রাহুল : হেইই! টপসে্র কালার বলতে ভুলে গেছো কিন্তু!

স্নেহা : [ জোড়ে একটি নিশ্বাস ছেড়ে ] ব্লু কালার!

রাহুল : বাহহ! স্নেহা আমি ইমেজিন করছি তোমায় কেমন লাগবে উফফ!

স্নেহা : আচ্ছা শুনেন!

রাহুল : ইয়েস্!

স্নেহা : আমি বলি আপনাকে কি কালার পড়বেন?

রাহুল : তোমরা মেয়েরা না আসলেই কথা পেচানো ছাড়া ডিরেক্টলি কথা বলতে পারো না,আমি তো ফাষ্ট থেকেই বললাম যে তুমিই বলো কি কালার পড়বো?

স্নেহা : তার মানে আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন যে আমি পেচি? বুঝেছি আসলে ছেলেরা এমনিই হয়, নতুন নতুন প্রেম করার সময় ভেজা বেড়ালের মতো কথা আর যখন পেয়ে যায় তখন…

রাহুল : আরে আরে! আমি তেমনটা বোঝায়নি! রাগ করছো কেনো! ওকে আম সরি! প্লিজ এইবার সুইট করে বলে দাও..

স্নেহা : এইবার সুইট করে বলবো! মানে আগে সুইট ছিলাম না?

রাহুল : আরে না নাহ! তা হবে কেনো? তুমি তো আগেও সুইট,স্পাইসি,বিটার সবই ছিলে ইনফ্যাক্ট এখনো আছো!

স্নেহা : হোহ! আমি বিটার ও?

রাহুল : ওহ নো স্নেহা! রহোম করো একটু! মুখ পিছলে বেড়িয়ে গেছে হয়তো!

স্নেহা : [ হাসি চেপে ] রাখছি আমি বাই! এখন তো আপনার আমাকে এমনিতেও তিক্ত লাগবে!

রাহুল : লিসেন্ট স্নেহা! সরি তো বাবা..ভুল হয়েছে আর হবে না,

স্নেহা : বাই!

রাহুল : আই লাভ ইউ!

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] হোয়াইট কালার পড়বেন!

রাহুল : ওকে! থেংক ইউ!

স্নেহা : আর শুনেন! পাগড়ীটা ব্লু কালারের পড়বেন ওকে?

রাহুল : ওকে বেবী!

স্নেহা : আচ্ছা শুনেন!

রাহুল : হ্যা বলো?

স্নেহা : [ হেসে ] আমি অপেক্ষা করছি!

রাহুল : ওহো ডার্লিং আর বেশি অপেক্ষা করতে হবে না, আই এম কামিং!

স্নেহা : বাইই!

রাহুল : আচ্ছা রিপ্লাইটা করোনি তো! [ স্নেহা হেসে কেটে দিলো ফোন ]

_______ সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো! সবারই তৈরী হোওয়া শেষ,স্নেহার বাবা-মা এবং আরো অনেক গেষ্ট ও এসে পড়েছে নিচে!

স্নেহা বসে আছে রুমের সোফার মধ্যে আর ঘুরঘুর করে তাকাচ্ছে তার ফ্রেন্ডস এবং রাহুলের কাজিনদের কান্ড, কারো চুলের বাহার, কারো রঙ-বেরঙের কাপড়ের বাহার, কারো পার্ফিউমের স্মেল তো কারো চুড়ির ঝংকার, সব মিলিয়েই স্নেহার মনে হচ্ছিলো যেনো তারা সবাই মিলেই কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে যাচ্ছে,মনে মনেই হেসে উঠলো স্নেহা, না আসলে কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নয়, সবই তো তার বিয়ের উপলক্ষে করা হচ্ছে,

রোহানী : লিসেন্ট! আমরা নিচে যাচ্ছি! [ হেসে ] এখন কিন্তু আমরা আবার গ্রুম সাইড হয়ে গেলাম! সো্ নিচে এসে আমাদের ভালো করে সার্ব করবা! ওকে?

জারিফা : হি-হি বহোদ খুব! উমহুম! অনেক ভালো জোকস্ ছিলো! এই জোকসে্র কারণে আপনাদের আরো এক্সট্রা খাতিরযত্ন নেওয়া হবে! [ জারিফার কথা শুনে রাহুলের কাজিনরা হাসতে হাসতেই এক এক করে বেড়িয়ে নিচে নেমে গেলো প্রোগ্রামে ]

আর এইদিকে স্নেহা রাহুল আসার অপেক্ষায় রুমেই বসে আছে তার ফ্রেন্ডসদের নিয়ে, শায়লা দাঁড়িয়ে আছে জানালার ধারে,জারিফা পার্ফিউম লাগাচ্ছে! মার্জান লিপিষ্টিক গ্লস করছে, মানে আয়নার সামনে থাকলে এদের সাজ কখনোই শেষ হবে না!

হঠাৎ,

শায়লা : [ জানালার ধার থেকে চোখ বন্ধ করে নাকে স্মেল নিতে নিতে স্নেহার পাশে এসে বসে ] বাহ! বাহ! খাবারের ঘ্রাণটা খিদে পাইয়ে দিচ্ছে!

মার্জান : তুই রুমে বসে খাবারের স্মেল নিলি কিভাবে?

শায়লা : উইন্ডোতে দাঁড়িয়ে দেখ কুয়াশার সাথে সাথে ভেসে আসছে! উমমম! কি টেষ্টি হবে!

জারিফা : [ শায়লার পাশে এসে বসে ] আরে! খাবারের স্মেল না, একবার আমার পার্ফিউমের স্মেল নিয়ে দেখ! কেমন স্মেলটা!

শায়লা : [ জারিফার শোল্ডারে নাক লাগিয়ে ] উমমম! বেলি ফুল! দেখ রিদোয়ান এই স্মেল পেলে কোনো ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে না তো? আই মিন রাহুল স্নেহার জায়গায় কোনো তোদের না বাসর রাত হয়ে যায়!

জারিফা : হোয়াট ননসেন্স! [ বাকিরা হেসে উঠলো খিলখিল করে ]

খানিক্ষণ পরেই হঠাৎ, হৈ-হুল্লোড় ভাবে আওয়াজ ভেসে এলো! সাথে, ডাক-ঢোল, শানাইয়ের আওয়াজ! কারোই বুঝার বাকি রইলো না কে এসেছে!

শায়লা : [ এক্সাইটেড হয়ে চেচিয়ে ] গাইস্ আমার মনে হয় রাহুল এসে গেছে! [ বলতেই শানাইয়ের আওয়াজ আরো নিকটে ভেসে এলো ]

জারিফা : আরে তো ওয়েট করছিস কেনো চল চল চল চলনা! তখন দেখা মিস্ হয়ে যাবে! [ বলেই এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো,জারিফার পেছন পেছন শায়লা ও দৌড় দিলো ]

মার্জান : [ অবাক হয়ে ] আশ্চর্য ব্যাপার! এরা গ্রুম সাইড নাকি ব্রাইড সাইড?

[ স্নেহা ও আর কিছু বললো না মুচকি হেসে সোফা থেকে উঠে, দু-হাতে লেহেংগার দু-পাশ ধরে জানালার দিক এগিয়ে গেলো, মার্জান এর ও কি আর করার দৌড়ে এসে সে ও স্নেহার পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো, পর্দা সরাতেই দেখতে পেলো রাহুল আর তার ফ্রেন্ডসদের কান্ডনামা, কান ফেটে যাওয়ার অবস্থা মিউজিকের আওয়াজে আর ঐদিকে বরের ঘোড়ার গাড়ী ভাংগার অবস্থা সবার উরাধুরা ডান্সে ]

_____গান চলছে~~

♪♪ হিরিয়ে সে্হরা বান্দকার মে তো আয়ারে ♪♪
♪♪ ডোলি বারাত ভি সাথ মে তোহ লায়ারে ♪♪

♪♪ আব তো না হতা হে এক রোজ্ ইন্তেজা্র ♪♪
♪♪ সনি আজ নেহি কাল হে তুজ কো তো ♪♪ ♪♪ বাস মেরি হনিরে ♪♪

♪♪ তেনু লে~কে মে জাভাংগা ♪♪
♪♪ দিল দে~কে মে জাভাংগা ♪♪

স্নেহা খেয়াল করছে রাহুলের জামার দিক যেমনটা বলেছে হোয়াইট শেরোয়ানী ব্লু পাগড়ী তেমনটাই পড়ে এসেছে মিষ্টার তেডি স্মাইল!

হঠাৎ একত্রে চমকে উঠলো স্নেহা এবং মার্জান, জারিফা আর শায়লা ও গিয়ে জয়েন হয়ে গেলো রাহুলের কাজিন আর ফ্রেন্ডসদের সাথে,ওহো শুধু রাহুলের কাজিন আর ফ্রেন্ডস কোথায়, ডান্সে রাহুলের সাথে সাথে রাহুলের বাবার ফ্রেন্ড, এবং আংকেলরা ও বাদ নেই, বাচ্চাদের মতোই নেচে যাচ্ছে, সবাই মেইন ডোরের সামনাসামনি আসতেই

মার্জান : [ স্নেহার হাত ধরে ] চল স্নেহা!

স্নেহা : মার্জান! আমার না অনেক লজ্জা লাগছে!

মার্জান : [ হেসে ] ওরে বাবা কিসের লজ্জা? অর্ধেকের বেশিই তো পরিচিত মানুষ! চল চল,

– [ চোখ টিপ মেরে ] তোর রাহুল দাঁড়িয়ে আছে তো… [ বলেই স্নেহার হাত ধরে নিয়ে শিরি দিয়ে নামাতে লাগলো, স্নেহাকে দেখতেই সবার একত্রে চিৎকার,রাহুল মুগ্ধকর অবস্থায় মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিক,চোখ বলছে সর্গের পরি নেমে আসছে, আর হার্ট বলছে তার বিট ফিরে পাচ্ছে ]

নেহাল : [ স্পিকার নিয়ে ] লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান মে আই প্লিজ
হেভ ইউর এটেনশন এজ ওয়েলকাম দ্যা ব্রাইড এন্ড গ্রুম!

[ স্নেহা শিরি থেকে নামতেই রাহুল এগিয়ে আসছে স্নেহার কাছে, তখনিই বড় একটি রঙিন ফিতার বাধা পড়লো রাহুলের পথে,

পাশ মুড়তেই দেখলো শায়লা আর জারিফারই কান্ড,মুচকি হাসলো রাহুল ]

রিদোয়ান : হেই হোয়াট আর ইউ ডোয়িং হ্যাঁ?

জারিফা : কেনো চোখে দেখছেন না? কি করছি?

শায়লা : জিজু! আমাদের জিনিষ আমাদের দিয়ে দেন! তারপর আপনি আপনার স্নেহার কাছে চলে যান! এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই!

আসিফ : জিনিষ কি শুধু তোমাদের দু-জনকে দিলেই হবে? নাকি, বাকি আর কাউকে ও দিতে হবে? [ বলতেই মার্জানের চোখ পড়লো আসিফের দিক, সাথে সাথেই চোখ দু-টো বড় হয়ে গেলো, ওয়াসরুমে আসিফের হুট করে কিস দিয়ে দেওয়া সিনটাও ভেসে উঠলো চোখের সামনে, কি আজিব! বুকটাও দ্রুত কাপছে আসিফের কন্ঠে শুনে, মনে মনে ভাবতে লাগলো ]

– একি আমার ওকে দেখে লজ্জা লাগছে কেনো? [ বলেই ধীরে ধীরে স্নেহার পিছে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো, মার্জানের কান্ড দেখে হেসে উঠলো আসিফ ]

রিদোয়ান : এই লিসেন্ট! কি এসব পুরানা জবানাই পড়ে আছো বলোতো? চলো চলো ভেতরে চলো [ বলেই ফিতাটা বটে নিতেই ছিলো তখনি ]

জারিফা : [ চেচিয়ে ] আইই! খবরদার! হাত লাগাবেন না বলে দিলাম!

নেহাল : [ চেচিয়ে ] আরে ভাবী আপনার শালীদের বলুন না আমাদের ভেতরে আসতে দিতে! [ কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো সবাই ]

শায়লা : এক্সকিউজ মি! আমরা ভাবীর শালী না রাহুলের শালী!

নেহাল : উফফ! সরিইইই! রাহুলের শালী, মিস্টেক মিস্টেক!

রোহানী : আরে আমার তো এটার কথা মোটেও মনে ছিলো না, এমন জানলে তো আমি ব্রাইড সাইডেই থেকে যেতাম!

রাহুল : [ রিদোয়ানের কানে ফিসফিসিয়ে ] দোস্ত! কতো অপেক্ষার পর দিনটা আসলো, আর অপেক্ষা করাস না আমায়!

– দিয়ে দে না!

রিদোয়ান : আরে দোস্ত বিয়ের এতো তাড়া কিসের? সবুর করনা আরেকটু!

রাহুল : [ রিদোয়ানের কানে ] আচ্ছা যা,তোকে ডাবল এমাউন্ট দিবো!

রিদোয়ান : রিয়েলি দোস্ত? বাট আমার এমাউন্ট না! প্যাক চাই! চলবে তো!

রাহুল : [ দীর্ঘ একটি নিশ্বাস ফেলে ] ওখে!

রিদোয়ান : এই না হলো আমার দোস্ত! [ বলেই পকেট থেকে বের করে জারিফার হাতেই দিয়ে দিলো তাদের জিনিস ]

জারিফা : [ আর চোখে প্যাকেট চেক করে মনে মনে ] ওয়াও একদম নতুন নতুন নোট! মনে তো হচ্ছে সোজা ব্যাংক থেকে এইখানেই এসেছে!

রিদোয়ান : আরে কি হলো দিলাম তো এইবার তো অন্তত ঢুকতে দাও! [ জারিফা মাথা নাড়িয়ে রাহুলের হাতেই কাচিটা এগিয়ে দিলো, রাহুল ফিতা কেটে স্নেহার সামনে গিয়ে হাত বাড়ালো, স্নেহা ও রাহুলের হাতের উপর হাত এগিয়ে দিলো, দুজনেই একসাথে এগিয়ে গেলো স্টেজের দিক ]

মার্জান ও ঐদিকটা এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখনিই কেউ এসে হাত চেপে ধরে রাখলো! পাশ ফিরে তাকাতেই চমকে উঠলো!

আসিফ : [ হেসে সোজা তাকিয়ে থেকে ] একটা কিস্ করতেই এতো লজ্জা পাচ্ছো? ভাবছি যদি…আরেকটু কিছু বাড়িয়ে করতাম তাহলে?

মার্জান : হাত ছাড়ুন! [ বলেই হাত ছুটানোর চেষ্টা করতে লাগলো ]

আসিফ : দেখো ছুটাছুটি করো না! তখন চুড়ি ভেংগে হাতে ঢুকবে!

মার্জান : আরে মানুষ দেখছে তো! কি মনে করবে! ছাড়ুন! [ বলতেই আসিফ মার্জানকে আরো কাছে টেনে নিজের পাশেই লাগিয়ে দাড় করাই, ওড়নার আচলে, ধরে রাখা হাতটাও ঢেকে যায় ]

আসিফ : রিলেক্স হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো, নড়াচড়া না করলে কেউই কিছু মনে করবে না!

– আর এমনিতেও এভাবে দেখলে কি মনে করার কি আছে, হয়তো ভেবে নিবে আমরা গার্ল্ফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড অর হাজবেন্ড ওয়াইফ!

মার্জান : দেখেন আমি কিন্তু চিৎকার করবো এইবার!

আসিফ : ওকে করো!

মার্জান : [ বিরক্তি হয়ে ] আপনি!..উফফ!

আসিফ : [ হেসে ] গতকাল না বলে চলে গেছো! একটা বাই ও বললে না!

মার্জান : আপনাকে কেনো বাই বলবো?

আসিফ : হুমম! সেটাও ঠিক!

মার্জান : আহহ! ব্যাথা লাগছে আমার! প্লিজ ছাড়ুন! [ বলতেই আসিফ হাত লুজ করে ধরলো, অমনিই ঝাড়ি দিয়ে হাত ছুটিয়ে দৌড় দিলো মার্জান, আসিফ ও ব্লাশিং হয়ে হেসে উঠলো ]

এইদিকে, শায়লা মার্জানকে খোজার জন্য চারদিক উকি দিয়ে দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো হঠাৎ কারো পিঠের ধাক্ষা খেয়ে থেমে গেলো,

নেহাল : [ ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে তুলতে ] সরি সরিইইইই!

শায়লা : ইটস্ ওকে!

নেহাল : ইটস্ ওকে? ওহ! ওয়াওও থেংক ইউউ! [ বলেই শায়লার মুখের সামনে ক্যামেরা ধরে ] স্মাইলল! [ বলতেই হঠাৎ আবার সকালের শায়লার দাত দেখানো ভয়ংকর হাসিটির কথা মনে পড়লো নেহালের, সাথে সাথেই ক্যামেরা সরিয়ে ] নো..নোহ নট স্মাইল! নট স্মাইল! [ শায়লা ও নেহালের নট স্মাইল বলার কারণ বুঝতে পেরে ভোর কুচকে মুচকি একটা হাসি দিলো, যে হাসি দেখে নেহাল এইবার আর ভয় পেলো না মুগ্ধ হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো, শায়লা হাসতে হাসতেই চলে গেলো ]

নেহাল : প্লিজ ডোন্ট স্টপ ইউর স্মাইল!

হঠাৎ,

আসিফ : [ নেহালের কাধে হাত রেখে ] আরে নিজে কার সাথে কথা বলছিস?

নেহাল : [ চমকে উঠে ] নো..নোহ! নাথিং!

এইদিকে,

শায়লা : [ মার্জানকে নাড়িয়ে ] কোথায় ছিলি?[ বলতেই চমকে উঠলো মার্জান ]

শায়লা : আরে! কি হলো এইভাবে ভয় পেয়ে আছিস কেনো?

মার্জান : [ হেসে ] কক..কই নাতো! আমি তো তোদেরই খুজছিলাম!

শায়লা : ঐ দিকে চল! [ চোখ মেরে ] স্নেহা আর রাহুলের কবুল বলাও তো শুনতে হবে তাই না!

– তোকে খোজার চক্রে পড়ে সব নাকি মিস্ করে দিচ্ছি কে জানে! চল তাড়াতাড়ি!

মার্জান : ওকে! চল! [ বলেই পেছন ফিরতেই দুজন শকড হয়ে গেলো, কিছুক্ষণের জন্য চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছিলো না আদৌ কি তারা যাকে দেখছে সেই এইখানে এসেছে ]

শায়লা : মার্জান! আমি যাকে দেখছি তুই ও কি তাকে দেখছিস?

মার্জান : [ নাক ফুলিয়ে ] তুই ও দেখছিস, তার মানে এই পেত্নী এইখানে সত্যি সত্যিই এসেছে [ বলেই হনহন করে এগিয়ে গেলো নেহার কাছে, নেহা ও মার্জানকে দেখে হাতে হাত বটে দাড়ালো ]

মার্জান : উফফ! মানে আল্লাহ কি তোকে এক ফুটাও লাজ-লজ্জা দেইনি? বিনা ইনভাইটেশনে এই নির্লজ্য চেহেরাটা নিয়ে আবার হাজির হয়ে গেলি!

– [ একটু হেসে ] বাই দ্যা ওয়ে এমনিতে এসে ভালোই করেছিস! একবার স্টেজের দিক ও তাকিয়ে দেখ! কি কিউট লাগছে জুটিটা তাই না?
[ নেহাকে পাশ মুড়িয়ে দিয়ে ] আরে দেখ না!

চলবে….

Love At 1st Sight♥ Season 3 Part – 52

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 52

writer-Jubaida Sobti

রাহুল : এক্সুলি আমি নিষেধ করেছি আন্টিকে তাও ডেকে দিয়েছে! এনিওয়ে ঘুমাও তুমি আমি পরে কল দিবো!

স্নেহা : [ কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ] না নাহ! সমস্যা নেই বব..বলেন!

রাহুল : আই লাভ ইউ! [ কথাটা শুনতেই স্নেহার বুকটা কেপে উঠলো, অজানা এক ভালো লাগা কাজ করছে মনের মধ্যে, বিবাহের সকালটা অতিমধুর করতে শুধু তার মিষ্টার তেডি স্মাইল এর মতো একজন জীবন সাথীই যথেষ্ট মনে হলো, ব্লাশিং হতে চলছে স্নেহা, ধীরো পায়ে হেটে এসে বারান্দার দরজার চৌকাটে হেলান দিয়ে দাড়ালো ]

রাহুল : এক্সকিউজ মি! আমি কিছু বলেছি?

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] কই? আমি তো কিছু শুনিনি!

রাহুল : আচ্ছা? তাহলে ব্লাশিং হচ্ছো কেনো?

স্নেহা : [ গালে হাত রেখে ] কক..কই নাতো!

রাহুল : আমি তো দেখছি তুমি এখন মালাই আর স্ট্রোভেরি মিস্রিত আইস্ক্রীম ফ্লেভার হয়ে যাচ্ছো! [ স্নেহা আর কিছু বললো না হেসে দিলো, বারান্দায় এগিয়ে গিয়ে রিলিং এ হাত রেখে দাড়ালো,শীতল বাতাস এসে গা ছুয়ে দিচ্ছে! ]

রাহুল : বাই দ্যা ওয়ে! ওড়না ছাড়া দেখতে কিন্তু তোমাকে আরো হট লাগে!

[ স্নেহা অবাক হয়ে গলায় হাত রেখে তাকালো,মনে মনে ভাবতে লাগলো, হ্যাঁ সত্যিই ওড়না ছাড়ায় তো সে, কিন্তু রাহুল কিভাবে জানলো বলেই পাশ ফিরে নিচের দিক তাকাতেই রাহুলকে দেখে চমকে উঠলো, চোখে ব্লাক সানগ্লাস, মুখে হাজারো খুশীর দাত দেখানো একটি হাসি, ডার্ক ব্লু-শার্ট, ব্লাক জিন্স,কানে ফোন রেখে,গাড়ীর সামনের বনাটের উপর দু-পা তুলে বসে স্নেহার দিকই তাকিয়ে আছে, স্নেহা ও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রাহুলের দিক, আশ্চর্য ব্যাপার রাহুলকে তো সে আজ নতুন দেখছে না,তবে কি আজ একটু বেশীই হ্যান্ডসাম লাগছে? তা না হলে চোখই সরছে না কেনো রাহুলের দিক থেকে, ডার্ক ব্লু কালারের শার্টটা গায়ের রঙের সাথে ফুটে উঠেছে রাহুলের, ভাবতেই অদ্ভুত লাগছে স্নেহার এমন একটা হ্যান্ডসাম ডেসিং বয়ের লাইফ পার্টনার হতে চলছে সে, গ্রামে স্নেহার কাজিনরা ফরমাল ড্রেসের কোনো ছেলে দেখলেই পাগল হয়ে যেতো, যদিও বা ছেলের মাথার মাঝে চুল না থাকুক, ফিগার থেকে পেটের সাইজ একটু বাড়তি থাকলে ও সে তাদের ক্রাশে পরিণত হয়ে যেতো, এইবার স্নেহা ভাবছে যদি এই স্পাইক চুল ওয়ালা মিষ্টার তেডি স্মাইলকে একবার তাদের গ্রামে এন্ট্রি করা যায় তাহলে তো আর এই হ্যান্ডসামের রেহায় নেই,

মনে মনেই হেসে উঠলো স্নেহা! ]

রাহুল : [ হেসে হাত নাড়িয়ে ] হেইইই! আর ইউ দেয়ার?

স্নেহা : [ চমকে উঠে ] আ..আপনি? এইখানে? কক..কখন এলেন?

রাহুল : এই কথাটা বলতে এতোক্ষণ চিন্তা করতে হলো?

স্নেহা : নাহ আমি তো, এ..এমনিই…

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] এসেই ফোন করেছি তোমাকে!

স্নেহা : ওহ!

রাহুল : আমার কথাটার রিপ্লাই দাওনি কিন্তু এখনো, [ লজ্জা পেয়ে পেছন ফিরে নিচের দিক তাকিয়ে ফেললো স্নেহা ]

রাহুল : বাহহ! আমার লজ্জাবতীটা, [ বলেই হাসতে লাগলো, স্নেহা ও মিটিমিটি হাসছে ]

রাহুল : কথা ছিলো, নিচে এসো!

স্নেহা : এখন আবার এতো কিসের কথা, সন্ধ্যায় তো দেখা হচ্ছেই!

রাহুল : শোনো আমার দাদীজানের মতো কথা বলবা না বুঝেছো? কোথায় বলবা আমার নম্র সম্র হাজবেন্ডটা কতদূর থেকে সব ছেড়ে কষ্ট করে এসেছে, তা দেখে দৌড়ে দৌড়ে আসবা তা না, উল্টো দাদীর মতো,[ মুখ ভংগি করে ] সন্ধ্যায় তো দেখবি এখন আবার দেখার কি দরকার, [ হাসতে লাগলো স্নেহা রাহুলের কান্ডে ]

রাহুল : হেই..হেইই আম নট জোকার ওকে? ওয়েট করছি, তাড়াতাড়ি এসো!

স্নেহা : আচ্ছা! বাবা, আসছি! [ বলেই ফোন কান থেকে সরিয়ে, মুচকি হেসে রাহুলের দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভেতরে ঢুকে গেলো,

ভেতরে ঢুকতেই দেখে বাকিরা যেভাবেই ছিলো ঐভাবে কাতচিৎ হয়ে ঘুমাচ্ছে, স্নেহা তাড়াহুড়ো করে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে, বালিশের পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে গায়ে মুড়িয়ে, টেবিল থেকে চশমাটা চোখে লাগিয়ে নিচে নেমে এলো, গেইট পেড়ুতেই স্নেহাকে দেখে রাহুল গাড়ীর বনাটের উপর থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়লো, স্নেহা ও মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো ]

রাহুল : [ সানগ্লাস খুলে ] বাহ! ভোর হলো তো বেরুলো চাশমিস! [ চোখ মেরে ] আচ্ছা আমাকে চশমা ছাড়া দেখতে পাও তো স্নেহা?

স্নেহা : [ চশমা ঠিক করে ] শাট-আপ রাহুল! আমি আগেও বলেছি এটা হ্যাডেক এর জন্য!

রাহুল : [ স্নেহার কপাল টিপে ] অহ শিট! মাথা ব্যাথা করছে এখন?

স্নেহা : [ হেসে রাহুলের হাত সরিয়ে দিয়ে ] আরে নাহ! এক্সুলি তাড়াহুড়ো করে এসেছি, চোখে গতকালকে দেওয়া কাজলের কালি-টালি লেপ্টে আছে তাই পড়ে এসেছি,

রাহুল : [ হুট করেই স্নেহার চোখের চশমা টেনে নিয়ে ] আচ্ছা আমিও তো দেখি লেপ্টে থাকা কাজল গুলো!

– বাহ! স্নেহা বাহ! কাজলে কালো মায়াবীনি চোখ, লাল লাল গাল,গোলাপী গোলাপী ঠোট! নেশা ছড়ানো ওয়েদার! আমাকে পাগল করার ইন্টেনশন নিয়ে আসোনি তো?

স্নেহা : আপনি তো অলরেডিই পাগল আমি আর কি পাগল করবো! [ বলেই হাত থেকে টেনে নিয়ে চশমাটা পড়ে নেই ]

রাহুল : নো নো স্নেহা! নো! তোমার এই পাগল প্রেমীর প্রতি তুমি এতোটাও অবিচার করতে পারো না,

– আচ্ছা! আজকাল একটু বেশীই কিউট হয়ে যাচ্ছো না? হি-হি হোওয়ারি কথা বিয়ের ফুল ফুটলে নাকি মেয়েরা অতিমাত্রায় সুন্দর হতে থাকে,

স্নেহা : আচ্ছা? আপনি এতোকিছু কি করে জানেন?

রাহুল : [ চোখ টিপ মেরে ] শুনেছি আজ সকালে দাদী থেকে,যখন দাদীকে এক্সপ্লেইন করছিলাম কাল তোমায় কেমন লেগেছিলো উফফ!

স্নেহা : হুমম! আর কি কি বললেন দাদীকে?

রাহুল : সে অনেক কিছু! সব তোমায় বলা যাবে নাকি! [ স্নেহা অবাক হয়ে তাকালে ]

রাহুল : [ হেসে ] আচ্ছা বাদ দাও এইদিকে এসো, [ বলেই স্নেহার হাত ধরে গাড়ীর পেছনের দরজা খুলে, টেনে নিয়ে ভেতরে বসে পড়লো ]

– আরে, স্নেহা! তোমার শরীর তো ঠান্ডা হয়ে আছে! তোমার শীত লাগছে না? সুয়েটার পড়োনি কেনো?

স্নেহা : হ্যা! তা তো লাগছে, তাড়াহুড়োতে ভুলে গিয়েছি! আচ্ছা বাদ দেন! কি যেনো কথা আছে বললেন?

রাহুল : [ স্নেহার শোল্ডারে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে ] আচ্ছা চলো এই মুহূর্তের জন্য আমাকে তোমার সুয়েটার মনে করে নাও!

স্নেহা : [ হেসে ছুটার চেষ্টা করতে করতে ] আরে! রাহুল..কি করছেন কেউ দেখবে তো!

রাহুল : [ আরো শক্ত করে চেপে ধরে ] আবারো একই কথা? [ হাসতে লাগলো স্নেহা ]
– আচ্ছা তুমি ব্রেকফাস্ট করেছো?

স্নেহা : উমহুহ!

রাহুল : আচ্ছা চলো ব্রেকফাস্ট করতে! [ বলেই রাহুল গাড়ীর দরজা খুলতে যাবে তখনিই ]

স্নেহা : [ রাহুলের হাত ধরে ] নাহ! রাহুল..প্লিজ! আমি এখন কোথাও যাবো না! [ রাহুল মুখ ভেংগিয়ে কি কি যেনো বলে ফেললো, মুচকি হাসলো স্নেহা ]

রাহুল : [ স্নেহার কাছে মুখ এনে ] আচ্ছা ঠিকাছে চলো তোমায় একটু সুইট টেষ্ট করিয়েদি! [ বলেই স্নেহার ঠোটে কিস করতে যাবে তখনি ]

স্নেহা : [ রাহুলের মুখ সরিয়ে দিয়ে ] নাহ! আমাকে সুইট টেষ্ট করাতে হবে না! তখন ডায়াবেটিস হয়ে যাবে!

রাহুল : [ হঠাৎ নিজের লেফট চোখ চেপে ধরে ] আহহ!

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] রাহুল! কি হয়েছে? দেখি? [ বলেই রাহুলের হাত সরিয়ে চোখ চেক করতে লাগলো ]

রাহুল : আই থিংক কিছু ঢুকেছে স্নেহা! দেখো তো! [ স্নেহা রাহুলের মাথা কাছে টেনে চোখে ফু দিতে লাগলো, রাইট চোখে নটি ইন্টেনশন নিয়ে স্নেহার ফু দেওয়া ঠোটের দিক লোভনীয় ভাবে তাকিয়ে আছে রাহুল, এতোটাও অপেক্ষার করার মতো পাত্র নয়, মুহূর্তেই স্নেহার কোমোড়ে হাত রেখে নিজের ঠোট স্নেহার ঠোটে মিশিয়ে দিলো,শকিং হয়ে রাহুলের শার্ট হাতে মুঠি বেদে মুচড়ে ধরলো স্নেহা, হাসি পাচ্ছিলো রাহুলের তাই কিছুক্ষণ চেপে ধরে চুমু দিয়ে রেখে ছেড়েই দিলো স্নেহাকে, স্নেহা চোখ নামিয়ে সোজা হয়ে বসে পড়লো চুপচাপ, কিসব হয়ে গেলো মুহূর্তে কিছুই বুঝতে পারলো না সে ]

রাহুল : জানো স্নেহা! ফ্রিজ থেকে যখন সকাল সকাল লাল টকটকে ফ্রেশ আপেলটা কামড় দিয়ে খায় না তখন ও ঐটা এমন মিষ্টি লাগে না যখন তোমার পিংক পিংক…

স্নেহা : [ রাহুলের মুখে হাত রেখে ] ব্যাসসস! রাহুল…ওকে! স্টপ ইট! [ রাহুল মাথা নাড়ালো, স্নেহা ও আর কিছু না বলে হাত নামিয়ে চুপ হয়ে বসে রইলো সাথে মিটিমিটি হাসছে আর ব্লাশ হচ্ছে, হঠাৎ রাহুল ও হেসে স্নেহার শোল্ডারে হাত রেখে, কানে একটি চুমু খেয়ে শক্ত করে চেপে জড়িয়ে ধরে রাখলো ]

স্নেহা : [ হেসে ] আপনি যে বললেন কি কথা আছে?

রাহুল : হুমমমম! মা বলেছে তোমাদের সবাইকে রেসো্র্টে নিয়ে আসতে,বিয়ের জিনিষপত্র সব ওখানেই রেখেছে,

– এক্সুলি দাদী! ড্রাইভারকেই পাঠাচ্ছিলো তোমাদের পিক করতে, সো্ ঐ সুযোগে আমিও চান্স নিলাম ড্রাইভারের কি দরকার? আমি আছিনা! আমার বউকে আমিই পিক করে দিবো!

স্নেহা : আপনার ঘুম ভাংগলো কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি?

রাহুল : আব..ভেংগেছে আরকি! আচ্ছা বাদ দাও! এবার শুনো উপরে যাও..আর ঐ নটি কোম্পানির দলদের ও বলে দাও যে ওদের জিজু! নিচে অপেক্ষা করছে ওদের জন্য! তাড়াতাড়ি চলে আসতে! আচ্ছা শুনো এখন যেও না আরেকটু জড়িয়ে ধরে রাখি!

স্নেহা : সত্যি করে বলেন তো আপনি ঘুমিয়েছেন?

রাহুল : মিথ্যে করে বলছি,আমি ঘুমুইনি!

স্নেহা : [ রাহুলকে সরিয়ে দিয়ে ] ঘুমুননি কেনো? কি করেছেন আপনি ?

রাহুল : হ্যা..হ্যাপি..হ্যাপিনেস্! বিয়ে হচ্ছে আমার স্নেহা! কতো হ্যাপি লাগছে জানো? তাই খুশিতে ঘুম আসছিলো না! আর…

স্নেহা : আর কথা বানাতে হবে না! এবার বলুন সত্যি সত্যি কি করেছিলেন?

রাহুল : তোমার ভাই! আরে বাচ্চা একটা আমার শালা! বোরিং হচ্ছিলো বাসায় বসে,ইনফ্যাক্ট আমার ও বোর লাগছিলো,আর ওকে এভাবে বোর হতে দিতে পারি তুমিই বলো? তাই আমরা…

স্নেহা : থেমে গেলেন কেনো বলেন?আপনারা?

রাহুল : আমরা এমনিতে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম! [ চোখ টিপ মেরে ] উইদাউট সানরুফ গাড়ী নিয়ে,

[ বুঝতে পারলো স্নেহা! রাহুল এখনো কথাটি মনে রেখে দিয়েছে, যখন ঐদিন গাড়ীতে বসে স্নেহা বলেছিলো, জানেন রাহুল! আমার না অনেক ইচ্ছে ছিলো! এমন…উইদাউট সা্নরুফ গাড়ীতে চড়ার, ইনফেক্ট! ছোটবেলায় যখন স্কুলে যেতাম তখন এমন গাড়ী দেখলে না, হা করে তাকিয়ে থাকতাম! (একটু মুচকি হেসে) আর রাশু, আমার ছোট ভাই, টিভিতে এমন গাড়ী দেখলে বাবাকে বলতো বাবা আমার ও এমন গাড়ী চাই ]

রাহুল : কি ভাবছো?

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] কিছু না! [ বলেই দীর্ঘ একটি নিশ্বাস ছেড়ে, রাহুলের বুকে মাথা হেলে দেই,চোখে পানি টলমল করছে স্নেহার ]

রাহুল : [ স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে ] তুমি কাদছো স্নেহা? কিন্তু কেনো?

স্নেহা : আমি কতোটা লাকি! সেটা বুঝতে পেরে, [ মুচকি হেসে ] আই লাভ ইউ টু রাহুল!

রাহুল : [ দু-হাত দিয়ে স্নেহার মাথা তুলে ধরে, কপালে একটি চুমু দিয়ে ] এতো ইমোশনাল হলে চলবে? হুমম? [ বলেই স্নেহার চশমা টেনে খুলে চোখ মুছে দিয়ে ] স্নেহা! রেসোর্টে আমার অনেক কাজিনরা তোমাকে দেখার জন্য এক্সাইটেড হয়ে বসে আছে!

স্নেহা : কিন্তু গতকাল তো আপনার কোনো কাজিনকেই পরিচয় করিয়ে দিলেন না!

রাহুল : আসলেই তো করাবো! সবই তাড়াহুড়োতে হয়েছে! গতকাল ওরা কেউই ছিলো না দেশে! সবাই বিয়ের খবর পেয়ে দু-তিন দিনের জন্য আর্জেন্ট মিডনাইটের ফ্লাইট নিয়ে আজ সকালেই এসে পৌছেছে!

– সবশেষে আবারো ফ্লাই হয়ে যাবে!

স্নেহা : বাংগালী তো ওরা তাই না?

রাহুল : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] ইয়াহ আফকর্স বাংগালী!

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] আচ্ছা আমি তাহলে রেডি হয়ে আসি! [ বলেই দরজা খুলতে যাবে তখনিই আবার রাহুলের দিক ফিরে ] বাট রাহুল!

রাহুল : হুমম!

স্নেহা : ওদের এখন ঘুম থেকে উঠানো তো অনেক মুশকিল! কমপক্ষে আট-নয় ঘন্টা ওদের ফুলফিল ঘুমাতে হয়! আর যদিও উঠে ওরা এতোটাই অলস যে সব ধীরেধীরে আলসেমি কেটে কেটে করবে, আপনি এতোক্ষণ গাড়ীতে বসে থাকবেন? এক কাজ করুন ভেতরে আসুন!

রাহুল : নো নো দ্যাটস্ ওকে! ঘুমালে ঘুমুতে দাও! এখন ডেকো না! ততোক্ষণে তুমিও বাসায় গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে আরো কিছুক্ষণ রেষ্ট নাও!

– ব্যাস! তোমরা সবাই রেডি হলে আমাকে কল দিবা আমি নিতে চলে আসবো!

স্নেহা : বাট! আপনার ওতো রেষ্টের দরকার! আপনি তো একটু ও ঘুমাননি!

রাহুল : ওহো আমার চিন্তা করোনা, আই এম ওকে!

স্নেহা : [ রাহুলের গাল টেনে দিয়ে ] চিন্তা করবো না মানে? আপনার আর আমাদের নিতে আসতে হবে না! এখন বাসায় গিয়ে ডিরেক্ট ঘুমাবেন,আপনি রেসোর্টের এড্রেস বলেদিন আমরা পৌছে যাবো!

রাহুল : পাগল নাকি? পৌছে যাবো বললেই হলো? তাই না?

স্নেহা : দেখেন জেদ করবেননা যা বলছি তাই শুনুন! আপনার শরীর খারাপ হবে এভাবে না ঘুমিয়ে থাকলে!

রাহুল : আরে স্নেহা! এভাবে অনেক রাত না ঘুমিয়ে থাকার এক্সপেরিয়েন্স আছে আমার কাছে!

স্নেহা : হ্যা! তা আপনার ব্যাচেলার লাইফে চলেছিলো এখন আর চলবে না সো্ এখন আমি যা বলছি তাই!

রাহুল : বাট স্নেহা…

স্নেহা : দেখেন রাহুল আপনি কিন্তু আমার কথা রাখছেন না!

রাহুল : [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ] ওখে!

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] থেংক ইউ

রাহুল : তবে একটা শর্তে! [ অবাক হয়ে তাকালো স্নেহা ] আমি ড্রাইভার পাঠাবো ওর সাথেই আসবে! [ স্নেহা কিছু বলতে যাবে তখনিই ]

রাহুল : নট ওয়ান মোর ওয়ার্ড!

স্নেহা : আচ্ছা! [ বলেই স্নেহা দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো ]

রাহুল : [ বেড়িয়ে এসে চেচিয়ে ] আরে স্নেহা! বাই বলো?

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] বাইই!

রাহুল : বাই! [ With tedi smile ]

[ যতোক্ষণ না পর্যন্ত স্নেহা গেইটের ভেতর ঢুকে পড়লো না ততোক্ষণ চেয়ে রইলো রাহুল! স্নেহা চলে যাওয়ার পরই চোখে সানগ্লাসটা লাগিয়ে মুচকি হেসে গাড়ীতে উঠে বেড়িয়ে পড়লো ]

____________ এইদিকে,

স্নেহা রুমে ঢুকেই বাকীদের ডাকতে লাগলো, হঠাৎ আলমীরার দিক চোখ পড়তেই দেখে স্নেহার মা স্নেহার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে! দৃশ্যটা দেখতেই স্নেহার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো! সবেই বুঝি স্নেহার বিদায়ের পালা শুরু! না তবে ভেংগে পড়লে চলবে না,তাই কন্ট্রোল হয়ে নিলো!

স্নেহার মা : আরে স্নেহা! শোন না, এই জ্যাকেটটা কার বুঝছি না? আর বাকি সবকিছুই তোর ব্যাগে ভাজে ভাজে রেখে দিয়েছি!

স্নেহা : মা! জ্যাকেটটা রাহুলের!

স্নেহার মা : আচ্ছা? তাহলে তো এটাও ভরে দিতে হবে! [ বলেই ভাজ করে ব্যাগে ভরতে লাগলো জ্যাকেটটা ]

জারিফা : [ ঘুম কন্ঠে ] আন্টি! রাহুলের জ্যাকেট স্নেহার কাছে কিভাবে এলো জিজ্ঞেস করেন না..

স্নেহার মা : [ হেসে ] আরে জিজ্ঞেস করার কি আছে, হয়তো ও ফেলেটেলে গিয়েছে!

স্নেহা : [ এগিয়ে গিয়ে সবার কাছে থেকে কম্বল ছিনিয়ে নিয়ে ] সবাই উঠবি নাকি পানি ঢালবো?

স্নেহার মা : আরে ঠিক মনে করেছিস তো! কখন থেকে ডাকছি এরা উঠছেই না এইবার এটাই কাজে লাগাতে হবে বুঝছি! [ বলেই ওয়াসরুমের দিক এগিয়ে যেতে না যেতেই ]

জারিফা : [ লাফিয়ে উঠে ] আরে আন্টি নাহহহ! আমি তো কতো আগেই উঠে গিয়েছি! এমনিতেই শুয়ে ছিলাম! [ শায়লা আলসেমি কেটে চোখ কচলে কচলে উঠে বসলো, আর মার্জান মাথার উপর কম্বল দিয়ে গায়ে মুড়িয়ে ধীরেধীরে হেটে বারান্দায় এগিয়ে চলে গেলো ]

স্নেহা : সবাই তৈরী হয়ে নে,কারণ..

জারিফা : [ চেচিয়ে ] কারণ চিকনি-চ্যামেলী আন্টি বলেছে সবাইকে রেসোর্টে চলে আসতে! বিয়ের জোড়া, কাপড় -চোপড়, সবই রেসোর্টে রাখা হয়েছে তাই তো?

স্নেহা : তুই কিভাবে জানিস?

জারিফা : ওহো বস্ আমার সব জানা আছে বুঝলি!

শায়লা : হ্যা! সব জানা আছে! রিদোয়ান বলেছে এটা বলনা হুহ!

স্নেহার মা : আরে জানা যখন আছে তাহলে ঘুমাচ্ছিলি কেনো? যাহ উঠ, সব গুলো ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নাশতা করে তৈরী হয়ে নে! [ বলেই পাশের রুমে চলে গেলো ]

জারিফা : [ বুকে হাত রেখে মাথা ঝুকিয়ে ] আজ্ঞে আন্টি! যাহা আপনার আদেশ! [ স্নেহা আর শায়লা হেসে উঠলো ]

_________ দুপুর ২টা বেজে ৪৫ মিনিট,

গাড়ী রেসোর্টের গেইট দিয়েই ঢুকছে,

শায়লা : [ গাড়ীর জানালা দিয়ে মাথা বের করে ] আরে বাহ! জারিফা দেখ! ঐ দিকের মাঠেই লাইটিং করা হচ্ছে, ওয়াও বোর্ড ঐদিকটা লাগাচ্ছে নিশ্চয় স্টেজ ও ঐ দিকটাই হবে,

জারিফা : ইয়ার! শায়লা, রেসোর্টটা দেখ, কি লাইটিং করছে!

শায়লা : হ্যা! যাতে রাত হলে ঝাকানাকা ঝাকানাকা করে!

মার্জান : [ শায়লার মাথায় বাড়িয়ে দিয়ে ড্রাইভারের দিক আংগুল দেখিয়ে ইশারা করে ] কমনসেন্স নেই? ওনি মনে মনে কি বলবে বলতো?

জারিফা : [ হেসে ] বলবে নিশ্চয় জীবনে দেখেনি! মূর্খ্য গুলো!

শায়লা : কিন্তু ঠিকই তো বাস্তবে কি জীবনে দেখেছি নাকি? আমি তো জন্মের পর সব বিয়ে ক্লাবেই খেয়েছি!

মার্জান : শিসসস! নাম এইবার! [ দরজা খুলে একে একে সবাই নেমে পড়লো, রিদোয়ান রাশু, এবং একজন সারভেন্ট এগিয়ে এলো ]

রিদোয়ান : [ সারভেন্টকে উদ্দ্যেশ্য করে ] বেক বনাটে জিনিষপত্র থাকলে উপরের রুমে রেখে আয়!

রাশু : [ দাত দিয়ে চকলেটের প্যাকেট ছিড়তে ছিড়তে ] ওহো এসেছো তাহলে তোমরা? একটাও কাজের না ১২টার থেকে আমরা এইদিকে বসে আছি তোমাদের রিসিভ করার জন্য! [ রিদোয়ানের দিক তাকিয়ে ] এখন কটা বাজছে?

রিদোয়ান : টু-ফিফটি ওয়ান!

রাশু : বাহহ! দেখো আরেকটু পরই ৩টা বাজবে, আসোলেই এদের দ্বারা কোনো কিছু হবে না!

জারিফা : আইই! দুই কড়ির ডিব্বা কি বললি?আমাদের দ্বারা কিছু হবে না তাই না? আমরা কি তোর মতো সুবিধা পার্টি নাকি? যে যেইদিকে সুযোগ ঐদিকে দৌড়ে চলে যাবো,আমরা কনে পক্ষ আস্তে ধীরে আসবো, বরপক্ষ আমাদের খাতিরযত্ন করবে! আরো কতো কি আপ্যায়ন বাহহ! ভাবতেই শান্তি লাগছে,

রিদোয়ান : এক্সকিউজ মি! বরপক্ষ খাতিরযত্ন
করবে না, কনে পক্ষ বর পক্ষকে করবে!

জারিফা : হু কেয়ারস্! দুনিয়ে বদলে গেছে! দেখছেনই তো কারা কাদের খাতিরযত্ন করছে, হুহ [ শায়লার দিক তাকিয়ে ] তাই না?

শায়লা : ইয়েস্ বিশ্বাস না হলে ভেবে দেখুন আপনারায় তো বললেন ১২টা থেকে আমাদের রিসি্ভ করার অপেক্ষায় বসে আছেন!

জারিফা : [ হেসে ] ইয়াহ! কামঅন গার্লস্! [ বলেই কাধ থেকে চুলটা ঝাড়ি মেরে সরিয়ে হাটা শুরু করলো, রিদোয়ান পকেটে হাত রেখে হেসে তাকিয়ে আছে ]

শায়লা : [ রাশুর দিক তাকিয়ে হাটতে হাটতে ] তুই ডিব্বাকে তো বাসায় আয়! ডাব্বা বানিয়ে ছাড়বো! [ বলতেই হঠাৎ সজোড়ে বাড়ি খেলো কারো মাথার সাথে ] আওওও [ বলেই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সামনের দিক তাকাতেই চমকে উঠে ]

রাশু : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] হ্যা! এটাই হচ্ছে হাতেনাতে শাস্তি! নেহাল ভাইয়া ভালোই করেছো বাড়িটা মেরে!

নেহাল : ওওহহ! সরি সরি! খেয়াল করিনি! এক্সট্রেমলি সরি [ বলেই শায়লার মাথায় হাত দিতে যাবে তখনি শায়লা পিছিয়ে গেলো ]

নেহাল : [ কানে হাত রেখে ] সরি! এক্সুলি আমি ক্যামেরার দিক তাকিয়ে হাটছিলাম তাই খেলায় করিনি!

– [ হেসে বাকিদের দিক তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে ] আ..হেইই গাইস্ আমি আসলে ভাবীর এন্ট্রি শুট করতে আসছিলাম! তাই তাড়াহুড়োতে!

জারিফা : [ ভোর কুচকে ] কোন ভাবী?

নেহাল : [ মাথা চুলকিয়ে ] নামটা কি যেনো?

রিদোয়ান : স্নেহা! [ বলেই হেসে এগিয়ে এসে স্নেহার কাধে হাত রেখে ]

– স্নেহা ও হচ্ছে রাহুলের কাজিন! আজই এসেছে! অষ্ট্রেলিয়া থেকে,আর নেহাল এটাই তোর ভাবী! মিসেস রাহুল!

নেহাল : হ্যালো! [ বলেই হ্যান্ডশেক করে ]

স্নেহা : হ্যালো!

রিদোয়ান : আর এরা ভাবীর ফ্রেন্ডস্

নেহাল : ইউ মিন ভাবীর শালী! রাইট?

রিদোয়ান : [ হেসে ] ইয়াহ! শালী, বাট ভাবীর না রাহুলের!

নেহাল : ওহ সরি ইয়া! ইয়াহ!

রাশু : আরে ভাইয়া! শালী না এগুলো! সবই মা কালী! এক একটার আসল রুপ এখনো দেখেন নি আপনি…

জারিফা : তোকে তো আমি! [ বলেই দৌড়াতে লাগলো, রাশু ও হেসে হেসে দৌড়তে লাগলো ]

রিদোয়ান : [ চোখ মেরে জারিফার দিক দেখিয়ে ] নেহাল! তুই ইনাকে ও ভাবী ডাকতে পারবি!

নেহাল : ওনাকে ও?

শায়লা : [ হেসে ] আরে হ্যা! ও ওনার গার্ল্ফ্রেন্ড! সো্ আপনার ফিউচার ভাবী হয়ে গেলো না ব্যাস!

নেহাল : ও ইয়া! ইয়াহ!

মার্জান : আমরা কি এবার ভেতরে যেতে পারি?

নেহাল : শিয়র! লেটস্ কাম [ বলেই কিছুটা পেছন দৌড়ে গিয়ে ক্যামেরা অন করে ভিডিও করতে লাগলো ] কাম কাম! স্মাইল ভাবীইই! [ হাসতে লাগলো স্নেহা, এক এক করে সবাই ঢুকছে, শায়লা ক্যামেরার সামনে এসেই দাত দেখানো একটা হাসি দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো, নেহাল হঠাৎ ভয় পেয়ে চমকে উঠে ক্যামেরা হাত থেকে ফেলে দিতেই যাচ্ছিলো আবার তাড়াহুড়ো করে ধরে, মুচকি হেসে তাকিয়ে রইলো ]

চলবে…

Love At 1st Sight Season 3 Part – 51

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 51

writer-Jubaida Sobti

মার্জান : [ মনে মনে ] গেলো কই? উফফফ! ওভার করে ফেলেছি নিশ্চয়! [ বলেই বাহিরের দিক এগিয়ে এলো, রাত প্রায় গভীরে, কাউকেই চোখে পড়ছে না ছোট ছোট কয়েকজন বাচ্চা দৌড়াদৌড়ি করছে পার্কিং এর দিক ,হঠাৎ চোখে পড়লো রাশুকে,রাশুও মার্জানকে দেখে দৌড়ে এগিয়ে এলো ]

রাশু : [ হেসে হেসে ] কি হলো খাইয়েছো চিলি জুস?

মার্জান : হ্যা! খাইয়েছি, কিন্তু খাওয়ানোর পর আর খুজে পাচ্ছিনা কোথায় গেলো বলতো? তুই দেখেছিস?

রাশু : না আমি তো এইদিকটাই ছিলাম,এদিকেও আসলো না দেখিওনি, কিন্তু দেখার খুব ইচ্ছা! কেমন হাল হয়েছে, [ বলেই হাসতে লাগলো ]

মার্জান : [ মনে মনে ভাবতে লাগলো ] আজিব এইদিকেও এলো না ভেতরে ও নেই তাহলে গেলো কই?

রাশু : আচ্ছা বাকি মরিচ গুলো কি করবো? [ মার্জান আর রাশুর কথার প্রতি ধ্যান দিলো না পেছন মুড়ে ভেতরের দিক এগিয়ে যাচ্ছিলো তখনি আবার, ]

রাশু : আরে বাকি মরিচ গুলো কি করবো বললে না যে,

মার্জান : উফফ! [ বিরক্ত হয়ে ] এক কাজ কর ঐগুলো দিয়েও জুসওয়ালাকে বল আরেকগ্লাস বানিয়ে দিতে তারপর এনে আমাকে খাইয়ে দে,

রাশু : সত্যিইই! দাঁড়াও আমি এক্ষুণি বানিয়ে আনছি,

মার্জান : [ নাক ফুলিয়ে ] তোকে তো আমি…[ বলতেই রাশু হেসে হেসে দৌড় দিলো ]

দীর্ঘ একটি নিশ্বাস ছেড়ে ভেতরের দিকই হাটা ধরলো,চারদিকই তো খুজে দেখলো কোথাও নেই, মনে মনে ভাবতে লাগলো এতে তারই বা কেনো এতো টেনশন হচ্ছে, যাক গিয়ে যেখানে যাওয়ার, উফফফ! কিন্তু গেলো কই এটাও তো জানার বিষয়, এসব ভেবে হাটতে হাটতে হঠাৎ পাশে ওয়াসরুম চোখে পড়লো, মাথা এগিয়ে একবার ওয়ারুমে ও উকি দিলো, কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না, তাই আবার ও চারদিক চোখ বুলিয়ে হাটা ধরলো, হঠাৎ দু-তিন কদম এগিয়ে যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়, তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে আবারো ওয়াসরুমের দিক এগিয়ে এসে ধীরেধীরে লেডিস ওয়াসরুমের দিকই ঢুকলো,মিডলে সাদা একটি পর্দা লাগানো,পাশে জ্যামস ওয়াসরুম, বেসিনে পানি ছেড়ে রাখার আওয়াজ আসছে, মনে মনে ভাবছে, কি আজিব ব্যাপার পানির ট্যাংক খালি করে ছাড়বে নাকি, তবে সাদা পর্দার ছায়ার ওপারের মানুষটাকে কেনো যেন যাকে খুজছে এতোক্ষণ সেই মনে হচ্ছে, তাই শিয়র হওয়ার জন্য ধীরেধীরে পর্দাটা ফাক করতেই এক্সাইটেড হয়ে একচিৎকার করে উঠলো ]

মার্জান : আরে! এইতো দেখছি আপনিইই! [ বলেই পর্দা সরিয়ে আসিফের কাছাকাছিই এগিয়ে আসলো, আসিফ মাথা ঝুকিয়ে আছে বেসিনে, মার্জানের চেচানিতে মাথা তুলে মিররের দিক তাকালো ]

মার্জান : ও হ্যা! আপনার তো এমনিতেও এইখানেই থাকা উচিৎ! কিন্তু আপনি ওয়াসরুমে কেনো আপনার তো টয়লেটে হওয়া উচিৎ ছিলো! [ বলতেই হঠাৎ চোখ পড়লো বেসিনে,সাথেই হাসি উদাও হয়ে যায় মুখ থেকে, ধীরেধীরে আড়চোখে তাকালো আসিফের দিক, ভালো করে চোখের দিক তাকিয়ে খেয়াল করলো চোখ দুটো লাল হয়ে আছে ]

মার্জান : আপনি বব..বমি করেছেন? [ চুপচাপ চেয়ে রইলো আসিফ ]

মার্জান : [ আসিফের চোখের দিক তাকিয়ে ] কাক..কাদছেন নাকি আপনি? কি হয়েছে? [ আসিফ কোনো জবাব দিলো না চোখ নামিয়ে বেসিনের দিক তাকিয়ে, হাতে পানি নিয়ে আবার কুলি করে বেসিনে ফেললো ]

মার্জান : আরে কি হয়েছে কিছু বলছেননা কেনো? আচ্ছা ঠিকাছে আমি..

– সরি! [ বলতেই আসিফ অবাক হয়ে তাকালো, হঠাৎ একজন সারভেন্ট জুস হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো ]

সারভেন্ট : সরি! ভাইয়া আনতে একটু লেইট হয়ে গেছে, এটা খেয়ে দেখেন,হয়তো ভালো লাগবে!

মার্জান : [ অবাক হয়ে আসিফের দিক তাকিয়ে ] আপনার ঝাল লাগছে এখনো?

সারভেন্ট : হ্যা! কে যেনো স্পাইসি কি খাইয়ে দিয়েছে, ভাইয়ার নাকে মুখে স্মেলটা প্রবলেম করছে! তাই তো বমি হচ্ছে, [ বলেই আবার মিররের দিক তাকাতেই আসিফের চোখাচোখি হোওয়ায় জুসটা বেসিনের পাশে রেখে ]

– ভাইয়া আর কিছু লাগবে? [ আসিফ মাথা নাড়িয়ে কাছে আসতে ইশারা করলো, সারভেন্ট মাথা এগিয়ে দিলে আসিফ কানে কানে কি যেনো বলতে থাকে, মার্জান ও মাথা কিছুটা এগিয়ে কান পেতে রাখলো, কিন্তু কিছুই শুনতে পারলো না, সারভেন্ট মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো, কথা শেষে আসিফ মার্জানের দিক তাকাতেই ]

মার্জান : [ তাড়াহুড়ো করে ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে ] রিভেঞ্জ নিচ্ছেন আমার কাছ থেকে? আমি কিছু বুঝি না ভেবেছেন? কি শিখিয়ে দিয়েছেন ওনাকে হ্যা? [ আসিফ পাশমুড়ে মার্জানেরদিক এক পা এগিয়ে দিতেই পিছিয়ে গিয়ে পাশের বেসিনের সাথে লেগে দাড়ালো মার্জান ]

– দে..দেখেন তখন থেকেই আপনি আমার ইন্সাল্ট করে যাচ্ছিলেন সবার সামনে,তাই আমিও রিভেঞ্জ নিয়েছি আপনার কাছ থেকে.. হ্যা.. আ..আমারটা এ..একটু ওভার হয়েছে বুঝতে পারছি…কিন্তু এখন দুজনের বরাবর! মানে সে্ইম সে্ইম! এরপর ও যদি আপনি আপনার চামচা-টামচা দিয়ে কিছু করিয়ে ছাড়েন না..তাহলে দেখবেন আমি…[ বলতেই থমকে চুপ হয়ে যায়, আসিফ তার দু-হাত বেসিনে রেখে মার্জানের একদম কাছে মাথা নুয়ে দাড়ালো ]

আসিফ : থেমে গেলে কেনো? বলো তুমি! কি করবে?

মার্জান : কক..করবো! আগে জেনে তো নেই..আপনি কি করছেন!

আসিফ : এতো কেপে কেপে বলছো কেনো? ভয় লাগছে আমাকে?

মার্জান : না তো.. ভব..ভয় কেনো পাবো আপনাকে! নেভার কক..কখনোই না!

আসিফ : আমি ওকে জাষ্ট বলেছি! বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে,ভেতরে কেউ আসলে যেনো ইনফর্ম করে, কারণ…

মার্জান : [ শকড হয়ে ] কারণ?

আসিফ : [ মুচকি হেসে ] কারণ,তুমি জ্যামস ওয়াসরুমে, কেউ দেখলে তোমাকে খারাপ ভাববে!

মার্জান : দেখেন কে কি ভাববে সেটা জানার আমার বিন্দু পরিমাণ ও ইন্ট্রেষ্ট নেই! আমি তো জাষ্ট এসেছি আপনাকে…

আসিফ : হ্যা! বলো আমাকে?

মার্জান : দূ..দূরে সরে দাড়ান! আপনি..এতো কাছে এসে দাড়িয়েছেন কেনো? [ আসিফ মুচকি হেসে হাতেহাত বটে সোজা হয়ে দাড়ালো, মার্জান কিছুক্ষণ চুপ হয়ে একবার আসিফের দিক আরেকবার অন্যদিক তাকাতে লাগলো ]

– [ মনে মনে ] কি আজিব! এভাবে ঘুরঘুর করে তাকাচ্ছে কেনো! [ আর না ভেবে, সামনে চলে আসা চুল গুলো কানে বটে, বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য দু-পা বাড়াতেই, হঠাৎ হাত ধরে একটানে, একই জায়গায় আবারো দাড় করিয়ে নিলো আসিফ, মার্জান ভোর কুচকে শকড হয়ে তাকালো ]

আসিফ : এমনিতে মরিচ ছাড়া আর কিছু দিয়ে তো রিভেঞ্জ নিতে পারো না তুমি,ইউ নো! এর চেয়ে বড় রিভেঞ্জ নেওয়ার ক্যাপাসিটিই তোমার কাছে নেই! [ বলেই হুট করে নিজের ঠোট দিয়ে মার্জানের ঠোটে শক্ত করে চেপে চুমু দিয়ে রাখলো, চোখ দুনোটা বড় হয়ে গেছে মার্জানের, কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছে সে পৃথিবীতেই নেই ]

আসিফ : [ ধীরেধীরে ঠোট ছেড়ে মার্জানের চোখের দিক তাকিয়ে ] কখনো কখনো আমার মতো ও রিভেঞ্জ নিতে শেখো! মিস্ এংগ্রী বার্ড! [ বলেই মার্জানের ওড়নার আচলটা টেনে নিয়ে ঠোটে লেগে যাওয়া লিপিষ্টিক গুলো মুছে নেই, মার্জান এখনো শকিং এক্সপ্রেশন নিয়ে চেয়ে আছে আসিফের দিক, আসিফ ও চোখ টিপ মেরে দাত দিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে একটি হাসি দিয়ে বেড়িয়ে চলে গেলো, শকিং এখনো শেষ হলোনা মার্জানের, আকাশের সবচেয়ে বড় বাজটায় যেনো তার মাথায় পড়লো, মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে হুরহুর করে পাশের লেডিস ওয়াসরুমে চলে গেলো ]

মার্জান : [ মনেমনে ] ছিইইইইই! কি অসভ্য! আর আমিই বা কেমন? ও যখন কাছে এসেছিলো তখন ধাক্ষা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো তো তাই না?

– কিন্তু ও কাছে আসাতে আমি কিছু বললামই না, মুখ দিয়ে কিছু বেরুচ্ছিলোই না, এমন কেনো লাগছিলো যেনো হৃদস্পন্দন গুলো খোলা হাইওয়ে পেয়েছে, তীব্র গতিতেই চলছিলো তখন!

– ছিঃ ছিঃ ছিইইই! আমি এসব কি ভাবছি!

___________এইদিকে,
সবাই বাড়ি ফেরার জন্য রেডি,হলের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে সবাই, গাড়ী সব পার্কিং থেকে হলের সামনে এসে দাড়াচ্ছে,

স্নেহা : শায়লা! এই মার্জানটা কই গেলো বলতো! রিং পড়ানোর সময় ও ওকে কাছে দেখলাম না,

শায়লা : আরে হবে কোথাও! [ চোখ মেরে ] আই মিন আসিফের সাথেই হবে নিশ্চয়…

স্নেহা : কিন্তু আসিফ তো রাহুলের সাথে কথা বলছে ঐ দেখ!

শায়লা : আরে হ্যা!

স্নেহা : কোথায় গেছে মেয়েটা! আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, বেরুতে হবে তো তাই না,

শায়লা : আচ্ছা টেনশন নিস না! আমি খুজে আনছি তুই দাড়া! [ বলেই খুজতে চলে গেলো ]

হঠাৎ স্নেহার দিক এগিয়ে এলো,

রাহুলের মা : আরে স্নেহা! টেনশনে মনে হচ্ছে! কাউকে খুজছো নাকি?

স্নেহা : না..নাহ! তেমন কিছুই না, এক্সুলি মার্জানকে দেখা যাচ্ছে না, যাওয়ার ও সময় হয়ে গেছে,

রাহুলের মা : আরে ওকে তো দেখলামই কিছুক্ষণ আগে,আচ্ছা দাঁড়াও আমি কাউকে পাঠিয়ে খুজে আনছি,

স্নেহা : না না..অতোকিছুর দরকার নেই, শায়লা গিয়েছে! হয়তো এদিকে কোথাও হবে!

রাহুলের মা : [ হেসে ] আচ্ছা ঠিকাছে! [ বলতেই দেখে জারিফা এবং স্নেহার মা ও পাশে এসে দাড়ালো ]

জারিফা : সব রেডি স্নেহা! এবার চল!

স্নেহার মা : আরে এই শায়লা আর মার্জান কই গেলো আবার?

রাহুলের মা : [ হেসে ] শায়লা গিয়েছে মার্জানকে খুজতে! আর যাওয়ার এতো তাড়া কিসের? ধীরেসুস্থে যান!

জারিফা : ওহো আন্টি! তাড়া থাকবে না? একটু পড়ই সকাল হতে চলবে, আর আপনাদের বউমাকে ঘরে তোলার এতো তাড়া যে গায়ে হলুদের পরের একটা দিন যে রেষ্ট করবো সেটাও রাখলেন না,

রাহুলের মা : আরে এতে আমার কি দোষ! আমি তো চেয়েছিলাম সব সাজিয়ে-গুছিয়ে করবো কিন্তু [ বলতেই দেখে রাহুল এগিয়ে এসে হুট করেই মাঝ থেকে স্নেহার হাত ধরে টেনে এগিয়ে নিয়ে চলে যায় ]

রাহুলের মা : [ হেসে ] দেখলা? কার কতো তাড়া আছে তাতো জানিনা কিন্তু এর অনেক তাড়া!
– আমাকে তো বিকেলে অনেক ঝাড়িটাড়ি দিলো, ও যতোবারই নাকি স্নেহাকে একদম তার নিজের করতে চাই তখনি নাকি বারবার কেউ না কেউ বাধা প্রধান করে এবং ঐ লিষ্টে নাকি এখন আমিও যোগ হয়েছি, [ জারিফা আর স্নেহার মা হেসে উঠলো ]

রিদোয়ান : [ এগিয়ে এসে ] হ্যালো গাইস্! কি কথা হচ্ছে আমাকে ফেলে? আরে এই দুলা-দুলহান কই গেলো?

জারিফা : দুলা নিয়ে গেছে দুলহানকে! কোনো এক জায়গায়,লাষ্ট মুহুর্তের লাষ্ট রোমেন্স করতে!

রিদোয়ান : তো কোনো এক জায়গায় যাওয়ার কি দরকার এইখানে করলেও তো পারতো! [ সবাই অবাক হয়ে তাকালো রিদোয়ানের দিক ]

রিদোয়ান : [ হেসে ] আরে এভাবে কেনো দেখছো, রাহুলের জন্য নতুন কি সবার সামনে রোমেন্স করার [ স্নেহার মায়ের দিক তাকিয়ে ] তাই না আন্টি? আন্টিও অনেক দেখেছে তার মেয়ের বরের রোমেন্স! [ সবাই আবারো হেসে উঠলো ]

রাহুলের মা : আরে! আমার ছেলেটা একটু বউ পাগলা আরকি! তাতে কি হয়েছে? ছেলেদের এমনিতেও এমন হওয়া উচিৎ!

জারিফা : দ্যাটস্ রাইট আন্টি! কিন্তু এমন ছেলে আজকাল পাওয়া ও অনেক মুশকিল! [ বাকিরা বুঝতে পারলো কাকে ডেডিকেট করে বলছে, রিদোয়ান ও আর দেরী কিসের এক মিনিট ও অপেক্ষা করলো না, সাথেসাথেই জারিফার গালে একটি কিস করে বসলো, জারিফা অবাক হয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই রিদোয়ান হেসে দিলো দৌড়, বাকিরা হাসতেই রইলো ]

____________ এইদিকে নিরিবিলি এক কোণে,স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালের সাথে লেগে, রাহুল দেওয়ালে হাত রেখে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিক,

স্নেহা : এভাবে আনাটা ঠিক হয়নি আপনার!

রাহুল : আচ্ছা তাই?

স্নেহা : নয়তো কি? সবাই নাজানি কি কি ভাবছে এখন!

রাহুল : এক্সকিউজ মি! সবাই কি ভাবছে মানে? অন্য কাউকে টেনে আনিনি! আমার বউকে আমি টেনে এনেছি!

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] বউ এখনো হইনি!

রাহুল : তাতে কি হয়েছে? আমি মন থেকে মেনে নিয়েছি মানেই তুমি আমার বউ হয়ে গেছো! এসব প্রোগ্রাম টোগ্রাম তো মানুষ জাষ্ট সবই শো অফের জন্য করে!

স্নেহা : মোটেও না! সব ধর্মেরই আলাদা আলাদা একটা রীতি আছে বিয়ের, হ্যা! এসব প্রোগ্রাম করাটা জরুরি নয়,তবে রীতি অনুযায়ী বিয়ে করাটাও জরুরী, নাহলে হাজবেন্ড ওয়াইফ মানা যায় না, [ বলেই রাহুলের গাল টেনে দিয়ে ] বুঝেছেন?

রাহুল : [ বিরবির করে ] এক্সট্রা লজিক! [ বলেই হেসে অন্যপাশ ফিরে যায় ]

স্নেহা : কি বললেন বিরবির করে?

রাহুল : আরে স্নেহা! মন থেকে বড় রীতি আর কি হতে পারে বলো? কাগজে কলমে সই করে দিয়ে শুধু দুনিয়াকে দেখানো যায় যে তুমি আমার বউ, আসল তো আগে মন থেকে মেনে নিতে হবে তাই না?

স্নেহা : হুমম! সেটাও রাইট!

রাহুল : রাহুল অলোয়েজ রাইটই বলে! [ with tedi smile ] সো্ স্নেহা! এখন তো মানছো তাই না? তুমি! আমার বউ! [ মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো স্নেহা ]

রাহুল : [ ও মাথা নাড়িয়ে ] ওখেই! সো্ ইউ নো দ্যাট! হাজবেন্ড যা যা বলে তা নাকি বউদের সরাসরি মেনে নিতে হয়!

স্নেহা : [ হেসে ] হুম তারপর?

রাহুল : হাসছো কেনো? সত্যিই বলছি এর আগে শুনোনি তুমি? না শুনলে যার থেকেই ইচ্ছে তার থেকে জিজ্ঞেস করে নিও! হাজবেন্ড এর কথা না শুনলে নাকি গুনাহ হয়!

স্নেহা : হ্যা! হ্যা! তারপর…

রাহুল : [ হেসে ] সো্ বলছিলাম যে, যেহেতু গুনাহ হবে, তাই চুপচাপ মেনে নাও! আমি এখন কিস্ করবো! [ বলেই স্নেহার ঠোটের দিক নিজের ঠোট এগুচ্ছিলো তখনি ]

স্নেহা : [ রাহুলের মুখে হাত রেখে বাধা দিয়ে ] কি করছেন আপনি? কেউ এসে গেলে!

রাহুল : আরে কেউ আসবে না! এতো ভয় পাচ্ছো কেনো,দেখো তুমি হাজবেন্ড এর কথা রিফিউজড করছো গুনাহ হবে তো!

স্নেহা : [ হেসে,হাত তুলে দু-দিকের গাল টেনে দিয়ে ] গুনাহ! তখনি হবে যখন ব্যাপারটা লজিক্যাল হবে! এবার চলুন লেইট হচ্ছে সবাই আমাদের অপেক্ষা করছে! [ বলেই চলে যাচ্ছিলো তখনি ]

রাহুল : [ স্নেহার হাত ধরে ফেলে ] আরে স্নেহা! লজিক্যাল মানে? এটাও তো আমার হক! [ পেছন ফিরে তাকালো স্নেহা ]

রাহুল : [ হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ] না মানে বলছিলাম যে জাষ্ট কিসি্ই তো! [ স্নেহা ও মুচকি হেসে চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ আবার কি ভেবে দাড়িয়ে পড়লো কে জানে, তা দেখে রাহুল ও মুচকি হাসলো,পেছনে ফিরে আবার রাহুলের দিকই এগিয়ে এলো স্নেহা! তাকিয়ে আছে রাহুল স্নেহার চোখের দিক, ধীরেধীরে পা আলগে তুলে রাহুলের গালে আলতো করে চুমু খেলো! ]

রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] জানতাম তুমি হাজবেন্ডকে নিরাশ করবা না!

স্নেহা : হ্যা! সেটা তখনি, যখন হাজবেন্ডটা বউকে আপনার মতো এত্তোগুলা ভালোবাসে [ Rahul give e tedi smile ]

স্নেহা : এবার চলেন! [ বলেই হাটা ধরলো, রাহুল হেসে ঘাড়ে হাত রেখে চুলকাচ্ছে আর ব্লাশিং হচ্ছে ]

স্নেহা : [ কিছুদূর হেটে গিয়ে আবার পেছন ফিরে ] আরে কি হলো? চলেন!

রাহুল : ই..ইয়াহ! কাম ইন! [ বলেই দৌড়ে এসে দাড়ালো স্নেহার পাশে, দুজনেই একসাথে এগিয়ে গেলো বাকিদের কাছে ]

জারিফা : ওহো! আপনাদের রোমান্স তাহলে এবার শেষই হয়েছে তাই না!

রাহুল : [ হেসে জারিফার মাথায় বাড়ি দিয়ে ] শাট-আপ ইয়ার!

স্নেহা : [ মার্জানের দিক এগিয়ে গিয়ে ] কোথায় ছিলি মার্জান তুই?

মার্জান : এইতো এইদিকেই ছিলাম!

স্নেহা : এইদিকে?

মার্জান : আচ্ছা চল এবার! আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে! [ বলেই এগিয়ে গিয়ে গাড়ীর দরজা খুলে বসে যায়, স্নেহা ও আর কিছু বললো না, বাকিরা ও এক এক করে উঠতে লাগলো গাড়ীতে, স্নেহা গিয়ে রাহুলের বাবা-মা এবং বাকিদের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে উঠতে যাবে তখনিই রাহুল এসে গাড়ীর দরজা আরো পাশ করে খুলে দেই, মুচকি হেসে উঠে বসলো স্নেহা ]

রাহুল : [ স্নেহার শাড়ী এবং ওড়না ভালো করে গাড়ীর ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে জানালায় হাত রেখে উকি দিয়ে ] বাই গাইস্!

জারিফা : ওহো জিজু! এতো কেয়ারিং চলছে!কালকের জন্য ও কিছু বাচিয়ে রাখুননা!

রাহুল : বাচিয়ে রাখতে হবে না! [ With tedi smile ] ওর জন্য তো সবই অফুরন্ত!

জারিফা : ব্যাস ব্যাস জিজু! স্নেহা লাল হয়ে যাচ্ছে! [ বলতেই স্নেহা চিমটি দিলো জারিফাকে ]

রাহুল : [ স্নেহার দিক তাকিয়ে ] বাই!

স্নেহা : বাই! [ সরে দাড়ালো রাহুল, গাড়ী টান দিয়ে চলে গেলো ]

________ ভোর ৪টা বেজে ২০ মিনিট! বাড়ী এসে সবাই কাপড়-চোপড় জিনিষপত্র খুলছে!

স্নেহা : আরে! মা রাশু কোথায়? ওকে দেখছি না যে?

স্নেহার মা : ওর চিন্তা বাদ দে! ও আছে ওর মজাই!

স্নেহা : মানে?

জারিফা : একশয়তান আরেক শয়তানকে নিয়ে গেছে! ঐ যে কথায় আছে না শয়তান শয়তান ভাই ভাই

শায়লা : ওকে রিদোয়ান সাথে নিয়ে গেছে, আমরা তো অনেক বললাম, কিন্তু ও এলো না,

স্নেহার মা : উল্টো বলছে ও নাকি আজ থেকে কনে পক্ষ না, বর পক্ষ! [ বলেই হেসে কাপড়-চোপড় বিলিয়ে দিয়ে চলে যায় পাশের রুমে ]

স্নেহা : আচ্ছা?..কিন্তু তাও…

জারিফা : ডোন্ট ওয়ারি স্নেহা! আমার কথা হয়েছে রিদোয়ানের সাথে ওরা সবাই রাহুলের গেষ্ট হাউজেই আছে একসাথে! [ স্নেহা ও আর কিছু বললো না,তাওয়েল নিয়ে মুখ মুছে,খাটে শুয়ে পড়লো,কম্বল টেনে নিতেই হঠাৎ পাশে মার্জানের দিক চোখ পড়লো,একধ্যানে উপরের দিক তাকিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে আছে মার্জান ]

স্নেহা : মার্জান?

মার্জান : হুমম?

স্নেহা : তুই ঠিকাছিস?

শায়লা : [ পাশে এসে শুয়ে ] আরে আমার ওতো একই প্রশ্ন কখন থেকে এক ধ্যানে উপরের দিক তাকিয়ে আছে, গাড়ীতেও আমরা বকবক করে গিয়েছি আর ও রোবোট হয়ে বসে ছিলো!

জারিফা : [ লাইট বন্ধ করে এসে কম্বল টেনে শুয়ে ] আরে মার্জান কোনো আসিফের ধ্যানে মগ্ন হয়ে আছিস নাকি?

মার্জান : [ জোড়ে একটি নিশ্বাস ছেড়ে ] মোটেও না! [ বলেই মুখের উপর কম্বল টেনে দেই, বাকিরা ও হেসে শুয়ে পড়ে ]

হঠাৎ, কিছুক্ষণ পর,

মার্জান : [ মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে ] স্নেহা!

স্নেহা : হুমম!

মার্জান : তুই কি রাহুলের সাথে কিস্ করেছিস? [ জারিফা আর শায়লা কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো, স্নেহা ও অবাক হলো মার্জান হঠাৎ এমন প্রশ্ন করাই ]

জারিফা : আরে! মার্জান স্নেহা রোমেন্স কিং এর সাথে রিলেশন করেছে, মানে বুঝতে পারছিস কতোবার কিস্ করেছে!

– তুই বরং এটাই জিজ্ঞেস কর! স্নেহা রাহুলের সাথে রিলেশন হওয়ার পর তুই কোনদিন কিস্ করিসনি! [ বলেই আবার হাসতে লাগলো ]

স্নেহা : [ জারিফাকে চিমটিয়ে ] হ্যা! বলেছে তোকে শয়তান কোথাকার!

শায়লা : আরে মার্জান! কিন্তু এতো রাতে হঠাৎ! তোর কিসে্র কথা কেনো মনে পড়লো?

জারিফা : বলেছিলাম না আমি হান্ড্রেট পার্সেন্ট শিয়র ও আসিফকে নিয়েই ভাবছে তাই না! মার্জান?

মার্জান : আরে তেমন কিছুই না পাগল নাকি ওকে নিয়ে কেনো ভাববো? ব্যাস এমনিতেই জিজ্ঞেস করছি! রাহুল যখন ওকে ফাষ্ট কিস্ করেছিলো তখন ওর কেমন ফিল হয়েছে! ব্যাস এইটুকুই, কাল স্নেহার বিয়ে হয়ে যাবে এরপর কি আর জিজ্ঞেস করতে পারবো নাকি!

জারিফা : [ হেসে ] আরে আর দুটো দিন পর জিজ্ঞেস করলে, কিস্ কেনো স্নেহা তোকে আরো অনেক কিছুর এক্সপেরিয়েন্স জানিয়ে দিতো!

স্নেহা : জারিফাআআআআ!

জারিফা : [ হেসে ] ওকে সরি সরি!

শায়লা : বাই দ্যা! ওয়ে জারিফা নাহয় তুই বল! তোর কেমন ফিল হয়েছিলো ফাষ্ট কিসে্!

জারিফা : এহহ! আমি কেনো বলবো! আগে স্নেহা থেকে কুয়েশ্চন করেছে!

স্নেহা : [ মুখের উপর কম্বল টেনে ] আমার ঘুম পাচ্ছে গাইস্ গুড নাইট!

মার্জান : [ স্নেহাকে নাড়িয়ে দিয়ে ] আরে স্নেহা বলনা!

শায়লা : হ্যা! স্নেহা বলনা! আমরাও তো একটু শুনি আমাদের রাহুল এবং স্নেহার রিলেশনের কখন থেকেই রোমান্স স্টার্ট হয়েছে! হুমহম!

স্নেহা : রিলেশন তো দূরের কথা! ওকে দেখলেই তখন আমার ভয় হতো! তখনি একদিন হলরুমে! ও হঠাৎ করে কিস্ করেছিলো! ফুললি আনেক্সপেক্টেড!

শায়লা : কিস্ দিয়েই সব শুরু! তাইতো বলি তোদের প্রেম এতো মিষ্টি কেনো!

জারিফা : আরে আমি ভালোবেসেছি, তবে সময়ের অপেক্ষা কেনো করবো! তখনি রাহুলের মন বলছিলো, চুম্মা চুম্মা দে দে! [ বাকিরা হেসে উঠলো ]

শায়লা : আচ্ছা নেক্সট নেক্সট স্নেহা তারপর কি হয়েছে বল না!

স্নেহা : তারপর ঘোড়ার ডিম হয়েছে! এবার ঘুম যা [ বলেই শক্ত করে মাথায় কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো ]

শায়লা : এইই জারিফা এবার তুই বল?

জারিফা : ভাই আমাদের কিস্ তো রিলেশনের পরই হয়েছিলো! ব্যাস এটাই বলবো! বাকি ডিটেইল বলা যাবে না কেমন ফিল হয়েছে! ছিঃ তোদের লজ্জা করে না এসব শুনতে ছোট ছোট বাচ্চারা এগুলো কি শোনার জন্য বসে আছিস যা ঘুম যা [ বলেই কম্বল টেনে পাশ মুড়ে শুয়ে গেলো, স্নেহাও জারিফার কথা শুনে কম্বলের ভেতর হাসতে লাগলো ]

শায়লা : আচ্ছা আমরা ছোট বাচ্চা তাই না? বাই দ্যা ওয়ে মার্জান! তুই চিন্তা করিসনা! আসিফকে বললে ও তোকে ফিল করিয়ে দিবে! [ বলতেই আড়চোখে তাকালো মার্জান,শায়লা কিটকিটিয়ে হেসে মুখের উপর কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো ]

মার্জান : [ উপরের দিক তাকিয়ে মনে মনে কাদো ভাবে ] বলার দরকার হলো কই! আমার ভার্জীনিটাই শেষ করে দিলো,শয়তান একটা! [ এভাবেই ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে এলো সবার ]

_________ সকাল ১১ টা বেজে ৪৫ মিনিট! ফোন বেজে চলছে স্নেহার! কিন্তু খবরই নেই কারো, বেঘোরের মতোই ঘুমিয়ে আছে সবাই!

পাশের রুম থেকে,

স্নেহার মা : [ এগিয়ে এসে ] আরে ফোন বাজছে স্নেহা রিসিভ করছিস না কেনো? [ বলেই ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে ] হ্যালো! কে?

রাহুল : গুড মর্নিং আন্টি!

স্নেহার মা : আরে রাহুল! গুড মর্নিং!

-এক সেকেন্ড দাঁড়াও ও ঘুমাচ্ছে তো তাই!আমি এক্ষুনি ডেকে দিচ্ছি! [ বলেই মোবাইল কান থেকে সরিয়ে নেড়ে নেড়ে ডাকতে থাকে স্নেহাকে ]

রাহুল : [ গাড়ী একপাশে সাইড করে রেখে ] আরে আন্টি! দ্যাটস্ ওকে! ঘুমালে ঘুমুতে দিন! ডাকতে হবে না! আমি পড়ে কথা বলে নিবো!

স্নেহার মা : স্নেহা ওঠনা!

স্নেহা : ওহো! মা আরেকটু ঘুমুতে দাওনা!

স্নেহার মা : আরে রাহুল ফোন করেছে! নে ধর কথা বল, [ বলেই স্নেহার কানে লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো ]

স্নেহা : হ্যালো! [ বলতেই রাহুল মুচকি হেসে উঠলো, স্নেহার ঘুমন্ত কন্ঠটি যেনো তার আজকের সকালটি আরো মধুর করে দিয়েছে ]

রাহুল : নাইস্ [ বলতেই রাহুলের কন্ঠ শুনে স্নেহার মনে বাড়ি খেয়ে উঠলো,চোখ খুলে হুট করে উঠে বসলো ]

রাহুল : এক্সুলি আমি নিষেধ করেছি আন্টিকে তাও ডেকে দিয়েছে! এনিওয়ে ঘুমাও তুমি আমি পরে কল দিবো!

স্নেহা : [ কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ] না নাহ! সমস্যা নেই বব..বলেন!

চলবে….

Love At 1st Sight Season 3 Part – 50

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 50

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা খুশিতে তালি দিয়ে কখন যে রাহুলের হাত জড়িয়ে ধরে রাখলো খেয়ালই নেই! রাহুল বুঝতে পেরে হেসে তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিক, স্নেহা ও খেয়াল করতে পেরে চিমটি দিয়ে আড়চোখে তাকালো রাহুলের দিক,

রাহুল : আহহ! স্নেহা!

স্নেহা : আমার দিক নয় ডান্স ফ্লোরের দিক তাকান!

_________এইদিকে,

মার্জান : [ আসিফের দিক এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে ] শুনেন! ভোট নিবেন বললেন না? কোথায়?

আসিফ : [ কানে হাত রেখে মাথা এগিয়ে দিয়ে ] কি বলছো শুনছি না!

মার্জান : [ আরো জোড়ে চেচিয়ে ] ভোট কোথায়?

আসিফ : শুনছিনা মিউজিকের আওয়াজে!

মার্জান : আরে বলছি আপনি বললেন না ভোট নিবেন সবার কাছ থেকে!

আসিফ : নোট?

মার্জান : ভোট, ভোটটট!

আসিফ : [ পকেটে হাত রেখে ] আপাতত পকেটে দু-টাকার নোট আছে! চলবে?

মার্জান : ইউউ…ইডিয়ট!

আসিফ : [ ডান্স করে করে ] এক্সুলি মিউজিক চলছে তো তাই কন্ট্রোল করতে পারছি না নিজেকে!

মার্জান : [ মুখ ভেংগিয়ে ইচ্ছে করেই গায়ে লেগে ধাক্ষা দিয়ে ] উফফ! সরি! [ বলেই চোখ টিপ মেরে নেচে নেচে শায়লার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে, হাসতে থাকে আসিফ ]

শায়লা : [ তালি দিয়ে লাফিয়ে উঠে ] উফফ গাইস্! কি না ডান্স! ছিলো..কিন্তু সবাই ডান্স দিচ্ছে আমি বাদ যাবো কেনো?

রিদোয়ান : ওহ! নটি গার্ল হোয়াই আর ইউ ওয়েটিং?

জারিফা : আরে তো যা না… [ বলেই ডান্স ফ্লোরের দিক ধাক্ষা দিলো ]

মার্জান : হেইই! শায়লা ঐ গানটায় ওকে?

শায়লা : [ দৌড়ে চেচিয়ে ] ওকে!

___________ মিউজিক ~~~

♪♪ মুনডা থোডা অফবিট হে ♪♪
♪♪ পার কুরিয়া দেনাল বহোদ সুইট হে ♪♪

♪♪ ডোংগিসা্ ইয়ে বাডা ডিট হে ♪♪
♪♪ ভাইরাল হোগেয়া ইয়ে টুইট ♪♪

[ তাল সামলাতে না পেরে রিদোয়ান ও নেচে নেচে এগিয়ে গেলো ডান্স ফ্লোরে ]

♪♪ পার ফুল ভুল কারনে মে কুল ♪♪
♪♪ তু বাডি তেজ কিটারি হে ♪♪

♪♪ সাগান তেরি কি, লাগান তেরি কি ♪♪
♪♪ হামনে কারদি তায়ারি হে ♪♪

[ আসিফ ও পেছন থেকে এগিয়ে শোল্ডার দিয়ে মার্জানকে ধাক্ষা দিয়ে দৌড়ে জয়েন করে ডান্স ফ্লোরে ]

♪♪ নাচদে নে সা্রে রাল মিলকে ♪♪
♪♪ আজ হিল ডুল কে ♪♪
♪♪ লে সা্রে কে সা্রে নাজা্রে ♪♪

♪♪ নাচদে নে সা্রে রাল মিলকে ♪♪
♪♪ আজ হিল ডুল কে ♪♪
♪♪ লে সা্রে কে সা্রে নাজা্রে ♪♪

♪♪ খাস্ মানু খানে ♪♪

জারিফা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] ইয়ার মার্জান, চলনা আমরা ও যায়,

[ মার্জান কোনো জবাব দিলো না, রাগ চাপা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে আসিফের দিক, ঐ দিকে রাহুল ও সি্টে বসে হাত নাড়িয়ে, নেচে নেচে শিসস বাজাতে লাগলো, সাথে স্নেহাকে ও টিস্ করে করে ধাক্ষাতে লাগলো,জারিফার চোখ পড়তেই সে ও দৌড়ে গিয়ে রাহুল স্নেহা, দুজনকেই টানতে থাকে ডান্স ফ্লোরে আসার জন্য, স্নেহা তো হাত ছুটিয়ে আবারো বসে পড়লো সিটে, কিন্তু রাহুলকে আর কে থামায়, জারিফার হাত ধরে নিয়ে সে ও নেচে নেচে এগিয়ে চলে আসে ডান্স ফ্লোরে ]
_______ ♪♪

♪♪ জোর জোরসে্, সোর বোর কারে ♪♪
♪♪ ডিজে গানে বাজানে আ ♪♪
♪♪ রুঠডে রুঠডে জিজা, ফুফাদ ♪♪
♪♪ হামনে সা্রে মানানে হা ♪♪

রিদোয়ান : [ মার্জান এর দিক দৌড়ে এসে ] আরে ডার্লিং তুমি আবার এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো! [ বলেই টেনে নিয়ে চলে যায় ডান্স ফ্লোরে ]

♪♪ পার ফুল ভুল কারনে মে কুল ♪♪
♪♪ তু বাডি তেজ কিটারি হে ♪♪

♪♪ সাগান তেরি কি, লাগান তেরি কি ♪♪
♪♪ হামনে কারদি তায়ারি হে ♪♪

♪♪ নাচদে নে সা্রে রাল মিলকে ♪♪
♪♪ আজ হিল ডুল কে ♪♪
♪♪ লে সা্রে কে সা্রে নাজা্রে ♪♪

♪♪ নাচদে নে সা্রে রাল মিলকে ♪♪
♪♪ আজ হিল ডুল কে ♪♪
♪♪ লে সা্রে কে সা্রে নাজা্রে ♪♪

সবাই আনন্দে মেতে উঠে আরো অনেকেই জয়েন করে ডান্স ফ্লোরে একসাথেই উরাধুরা ডান্স করতে লাগলো একের পর এক গানে, রাহুল তার মা এবং স্নেহার মা কে ও টেনে নিয়ে চলে আসে ডান্স ফ্লোরে, অন্যদিকে রিদোয়ান, আসিফ এবং রাশু মিলে স্নেহার বাবা এবং রাহুলের বাবাকে না চাইতেও জোড় করে করে নাচাতে লাগলো, স্নেহা বসে বসে দেখছে আর হাত তালি দিচ্ছে, খুশিতে যেনো তার চোখ থেকে এক্ষুণিই পানি গড়িয়ে পড়বে,

একদুঘন্টা একনাগাড়ে নাচানাচি করে হাপিয়ে উঠে স্নেহার পাশে এসেই বসলো রাহুল,মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে স্নেহা, উইন্টার সিজন অথচ তাও ঘাম দিচ্ছে রাহুলের শরীরে, ওড়নার আচল তুলে ঘাম মুছে দিতে লাগলো স্নেহা,রাহুল ও চান্স পেয়ে এদিক আছে ওদিক আছে বলে বলে ইচ্ছে করেই স্নেহার দিয়ে আরো এক্সট্রা মুছাতে লাগলো, অতপর রাহুলের হাসিতে স্নেহা বুঝতে পেরে যা শক্তি ছিলো তা দিয়েই দিলো আবার চিমটি,

আসিফ : হেই গাইস্ কাম!

রাহুল : কোথায়?

আসিফ : ডিনার করতে!

রাহুল : অহ! শিয়র! শিয়র, আমার তো অলরেডি ক্ষিধেই পেটের মধ্যে ডান্স চলছে,কাম স্নেহা! [ বলেই স্নেহার হাত ধরে নামিয়ে নিলো ]

ডিনার টেবিলে আসতেই দেখে, বাকিরা আগে থেকেই বসে আছে,

জারিফা : মিসেস্ রাহুল, আপনি তো ডান্স মাষ্টার, আজ সবাই ডান্স করলো অথচ আপনি একটু ও ডান্স করলেননা!

স্নেহা : আমি তোদের বিয়েতে ডান্স করবো তাই!

জারিফা : হুমম! তাতো অবশ্যই বাট তাও নিজের বিয়ে বলে কথা,

হঠাৎ,

রাহুলের মা : [ এগিয়ে এসে ] আরে তোমরা এখনো শুরুই করোনি, ক্ষিধে পাইনি তোমাদের? না খেয়ে ডান্স করতে করতে তো আজ সবাই শুকিয়ে যাবা!

মার্জান : এক্সুলি আন্টি আমরা না আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম!

আসিফ : হ্যা! অলরেডি এক প্লেট খেয়ে!

মার্জান : [ নাক ফুলিয়ে ] আপনি কখন দেখলেন আমাকে খেতে?

রাহুলের মা : [ আসিফের মাথায় বাড়ি মেরে ] শয়তান! এমন করছিস কেনো ওদের, যা খেতে বয়!

আসিফ : [ মার্জানের বরাবর অপোজিটে বসে ] ওহো আন্টি! এই টেবিলে খাওয়ার পাবো বলে তো মনে হচ্ছে না,লিটল এলিফ্যান্ট বসেছে বলে কথা, [ বলেই চোখ টিপ মারলো মার্জানকে, বাকিরা হেসে উঠলো মুখে হাত দিয়ে ]

রাহুলের মা : কি বলছিস এসব এইখানে এলিফ্যান্ট আসবে কোথার থেকে, পাগল একটা! [ বলেই খাবার সার্ব করে দিতে লাগলো, নাকফুলিয়ে আসিফের দিক আড়চোখে তাকিয়ে রইলো মার্জান,যেনো এক্ষুণিই গিলে খেয়ে ফেলবে ]

রাহুলের মা : আচ্ছা তোমরা খাও! আমি আসি! [ এইদিকে, রাহুল ইচ্ছে মতো স্নেহার প্লেটে ঢালতে আছে ]

স্নেহা : আরেহ কি করছেন এসব? [ বলেই নিজের প্লেটটা রাহুলকে দিয়ে রাহুলেরটা নিয়ে নিলো, রাহুল ও কি করার তারটা পাশে বসা শায়লাকে দিয়ে শায়লার প্লেটটা নিয়ে নিলো ]

শায়লা : অহ মাই গড এত্তগুলা কে খাবে? [ বলেই পাশে বসা রিদোয়ানকে প্লেটটা দিয়ে রিদোয়ানের প্লেটটা নিয়ে নিলো, রিদোয়ানের আর খবর নেই পাশে বসা জারিফার দিক তাকিয়ে আছে ]

রিদোয়ান : [ জারিফাকে ফিসফিসিয়ে ] বেবী! খাইয়ে দাওনা!

জারিফা : কতো বছরের বাচ্চা আপনি?

রিদোয়ান : এইতো মাত্র! চব্বিশ হবে!

জারিফা : মাত্র?

রিদোয়ান : [ মাথা নাড়িয়ে ] ইয়েস্

জারিফা : [ ডেজার্ট থেকে চামচ কেটে নিয়ে রিদোয়ানের মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে ] তাহলে তো আপনাকে এভাবে সেরেলাক খাওয়ানো উচিৎ! রাইস্ না!

রিদোয়ান : [ মুখ থেকে চামচটা প্লেটে রেখে ] তুমি না আসলে অনেক সেল্ফিশ হয়ে গেছো, আগে থেকে! [ শায়লার দিক তাকিয়ে ] আরে শায়লা আস্তে খাওনা লিপ স্টিক চলে যাবে তো!

শায়লা : [ চমকে উঠে ] যাক বাবা এখনো মুখেও দিলাম না! [ হেসে উঠলো বাকিরা ]

আসিফ : আরে তাড়াতাড়ি মুখে দাও নাহয় পড়ে পাবা না, মানে বুঝছো তো কি হতে পারে,

শায়লা : [ মার্জানের দিক তাকিয়ে শান্তনা দিয়ে ] আরে তোর কথা বলছে না,লিটল এলিফ্যান্ট এর কথা বলছে! [ খাবার মুখে হাসতে গিয়ে কেশে উঠলো আসিফ, পানি এগিয়ে দিলো রাহুল ]

শায়লা : [ তাড়াতাড়ি জিহবায় কামড় দিয়ে মার্জানের দিক তাকিয়ে ] সরি! আমি ওটা মিন করিনি! [ রাগান্বিত চোখে আসিফের দিক তাকিয়ে আছে মার্জান, আসিফ বুঝতে পারছে রাগে ফুলছে, যে কোনো মুহূর্তেই তার সাথে অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে, কিন্তু কি করার মজাও লাগছে অনেক তার,যা হবার হবে তাও রাগিয়ে ছাড়বে ]

আসিফ : আরে শায়লা! সত্য গোপন থাকে না মুখ পিছলে ও বেড়িয়ে যায়!

রিদোয়ান : [ মার্জানকে আরো খাবার সার্ব করে দিয়ে ] আরে ডার্লিং খাচ্ছো না কেনো! তুমি খেতে থাকো,ওর কাজই পাপির মতো বক বক করা!

মার্জান : থেংক্স! এন্ড নাইস এক্সাম্পল! [ মুচকি হাসলো আসিফ ]

অতপর, ডিনার শেষে সবাই হ্যান্ড-ওয়াস করে ধীরেধীরে উঠতেই যাচ্ছে,

মার্জান : [ তার প্লেটে থাকা চিকেনের কিছু হাড্ডি সহ প্লেটটা হাতে তুলে ধরে ] সো্ পাপ্পিস্ ফেভরিট ফুড ইস রেডি! [ আসিফের দিক তাকিয়ে ] আপনার ও একবার ও টেষ্ট করা উচিৎ! সবার প্লেটে প্লেটে ও আছে লাগলে আরো নিতে পারেন!

আসিফ : এক্সুলি আই ডোন্ট লাইক পাপ্পি বাট! আই থিংক এলিফ্যান্ট হলে ভালো হতো! অহ সরি, লিটল এলিফ্যান্ট,[ বলতেই মার্জান সামনে থাকা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে, পানি সব ছুড়ে মারলো আসিফের মুখে ]

শায়লা : [ মুখে হাত দিয়ে ] অহ মাই গড! [ আসিফ, রাহুল,জারিফা তিনজনই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো আসিফের হাল দেখে, মার্জান দাত দেখানো একটা হাসি দিয়ে হনহন করে চলে যায় ]

স্নেহা : ওয়াও! দিস্ ইস্ সো্ মাচ ফানি! [ এক্সাইটেড হয়ে রাহুলের দিক তাকিয়ে ] কেন আই ট্রাই দিস রাহুল?

রাহুল : মানে?

স্নেহা : ওয়েট! [ বলেই টেবিল থেকে গ্লাসটা এগিয়ে নিয়ে,হুট করেই গ্লাসে থাকা পানি সব ছুড়ে মারলো রাহুলের মুখে, রাহুল তো হতভম্ব,চোখ কুচকে বন্ধ করে অতোটুকুতেই স্থির হয়ে গেছে, এক মুহুর্তের জন্য ও প্রস্তুত ছিলো না রাহুল ]

রিদোয়ান : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] বাহ বাহ! স্নেহা! গুড জব! দোস্ত তোকে এখনি লাগছে দুলার মতো! [ বলতেই হঠাৎ নিজের মাথায় ভেজা ভেজা কিছু অনুভব করতে লাগলো,মাথায় হাত দিয়ে উপরের দিক তাকাতেই, আর কিছু খেয়াল করতে পারলো না মুখের উপর আধা জাগ পানি ঢলে পড়লো শুধু এটাই বুঝতে পারলো ]

জারিফা : আমি ও বাদ যাবো কেনো,সবাই করেছে আমারও কি ইচ্ছে হয়না!

রিদোয়ান : [ ফু মেরে মুখ থেকে পানি ফেলে ] তাই বলে তুমি একধাপ এগিয়ে, গ্লাস থেকে ডিরেক্ট জাগ এ চলে গেলে,

স্নেহা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] আরে! রাহুল! জাগেরটা ও একবার ট্রাই করি!

রাহুল : না স্নেহা! জাগ কেনো? আমি কি পানির ট্রাংক এনে দেবো?

স্নেহা : আরে না! পাগল নাকি!

জারিফা : [ স্নেহাকে টেনে নিয়ে ] চল স্নেহা!

স্নেহা : কোথায়?

জারিফা : আরে আয় না! [ বলেই টেনে নিয়ে চলে যায় ]

[ ওয়েটার মুচকি হেসে টিসুর বাক্স টেবিলে এগিয়ে দিলো ]

রাহুল : ব্রো আজকে কি হলি?

ওয়েটার : [ মুচকি হেসে ] না স্যার!

শায়লা : আপনাদের তো বাসায় গিয়ে আর শাওয়ার নিতে হবে না, আজই করিয়ে দিলো! [ হেসে ] এবার আমিও যায়..

রিদোয়ান : [ শায়লার ওড়না টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ] তুমি আবার কই যাও! [ বলেই শায়লার ওড়নার আচল দিয়ে মাথা মুছতে লাগলো, রাহুলের ও কি আর করার শায়লার ওপাশের আচল ধরে সেও মুছা শুরু করে দিলো ]

শায়লা : [ মাথা ঘুরিয়ে দু-পাশে চোখ বুলিয়ে ] এক্সকিউজ মি! আপনারা আমার ওড়নাটাই পেলেন মুছতে!

রিদোয়ান : দেখো তোমার ফ্রেন্ডসরা আমাদের সাথে বেইমানী করেছে, পানিশমেন্ট তো শুধু আসিফের পাওয়ার উচিৎ ছিলো তাই না!

আসিফ : হ্যাঁ আমার পানিশমেন্টের খুশিতে নাচতে গিয়েই তো উল্টো নিজেই পড়ে গেলি সেই পানিশমেন্টে!

শায়লা : ভালোই করেছে আপনাকে পানি মেরে,আপনি কখন থেকেই ওকে রাগাচ্ছেন বলেন তো?

আসিফ : আসলে পানিসব রাহুলকেই মারা উচিত ছিলো!

রাহুল : এক্সকিউজ মি!

আসিফ : আজ সকাল থেকে পানি মারার শুরুটা তুই আগে শুরু করেছিস!

হঠাৎ,

রাহুলের মা : [ এগিয়ে এসে ] আরে তোরা ভিজে আছিস কেনো?

রাহুল : গগ..গরম লাগছিলো..মা তাই ভাবলাম একটু মাথায় পানি ঢালি!

রাহুলের মা : [ শাড়ীর আচল টেনে আরো মুছে দিতে দিতে ] কিসব আজেবাজে কান্ড করিস না তোরা! এটা মাথায় পানি ঢালার সময়? আর এই উইন্টার সিজনে তোদের একদম কোন গরমে জড়িয়ে রেখেছে!

শায়লা : হ্যা! আন্টি আ..আমিও এটাই বলছিলাম ওদের! [ বলেই মুচকি হেসে ধীরেধীরে হাটা ধরে ]

রাহুলের মা : মেয়েগুলো থেকে কিছু শিখ! কি সুন্দর খাবার-দাবার খেয়ে ঐখানে সবার সাথে ছবি তুলছে কথা বলছে, আর তোরা আছিস তোদের বদমাইশি নিয়ে!

রিদোয়ান : [ ফিসফিসিয়ে ] হ্যা আমাদের ব্যান্ড বাজিয়ে এখন ওরাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো!

রাহুলের মা : কি বলছিস ফিসফিস করে বড় করে বল!

রিদোয়ান : না আন্টি বলছি যে আসলেই কি নাজুক নাজুক মেয়েগুলো তাই না!

রাহুলের মা : তা তো বটেই! আর তুই তো পুরা শাওয়ারই নিয়ে নিয়েছিস মনে হচ্ছে! [ বলেই মাথা টেনে মুছে দিতে লাগলো, রাহুল আর আসিফ হেসে উঠলো ]

এইদিকে, স্নেহা রাহুলের অপেক্ষায় বসে আছে একা চেয়ারে, আর জারিফা আর শায়লা ডান্সে যোগ হয়ে গেলো আবার,মার্জানের তো খবরই নেই!
হঠাৎ পাশ মুড়তেই দেখে মিষ্টার তেডি স্মাইল চুল-টুল ঠিক করে আবারো সেই সানগ্লাস চোখে লাগিয়ে এইদিকটায় এগিয়ে আসছে,মুচকি হাসলো স্নেহা!

রাহুল : [ স্নেহার পাশে বসে ] কাজটা কি করে এসেছো তুমি?

স্নেহা : এটা আপনার পানিশমেন্ট ছিলো সকালের কান্ডের! এতো এক্টিং করেছিলেন কেনো তখন বলেন তো? জানেন আমি সারাদিন কতো টেনশনে ছিলাম? তারউপর মোবাইলটাও সুইচ-অফ করে রেখেছিলেন!

রাহুল : মোবাইলের ব্যাটারী লো ছিলো,

স্নেহা : আপনার মোবাইলের কখনোই চার্জ থাকে না, আচ্ছা চার্জার ও ছিলো না নাকি? যে চার্জ দিয়ে ও ফোন দিতে পারেননি,

রাহুল : তোমার সাথে দেখা করে আমি বাসায় গিয়েছিলাম বিকেলে,

স্নেহা : হোহ! এতো লেইট লাগলো কেনো পৌছাতে?

রাহুল : সামিরের কাছে গিয়েছিলাম তাই!

স্নেহা : আপনি আবার…

রাহুল : [ স্নেহার মুখে হাত রেখে ] স্টপ!

স্নেহা : আরে কিন্তু..

রাহুল : বললাম তো স্নেহা! স্টপ! [ মুখ ভেংগিয়ে অন্যপাশ ফিরে যায় স্নেহা ]

________ এইদিকে,

শায়লা : আরে মার্জান তুই কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস খুজতে খুজতে শেষ হয়ে যাচ্ছি,

মার্জান : একটা ইম্পর্টেন্ট মিশন কমপ্লিট করছিলাম, ব্যাস এখন শুধু কোনো ভাবে কাজটা চালাতে হবে,

শায়লা : কিসের মিশন?

মার্জান : তুই বুঝবি না!

শায়লা : [ কনফিউজড হয়ে ] আমি বুঝবো না? ওকেই! আচ্ছা হ্যা! শোন [ চোখ টিপ মেরে ] আসিফ ও খুজছিলো!

মার্জান : খুজবেই তো সময় খারাপ আসলে নাকি রাজা ও মাথা ঝুকিয়ে নেই! বাই দ্যা ওয়ে, এসব ইডিয়ট পার্সনদের জন্য আমার কাছে টাইম নেই! হুহ! [ বলেই পাশ ফিরে চলে যাবে তখনিই দেখে দু-তিন-হাতের দূরত্বেই একটা চেয়ারের দিক এসে বসেছে আসিফ ]

মার্জান : [ কিছুটা কাছে এগিয়ে গিয়ে ] এই লুজার চেহেরা নিয়ে উইনারের সামনে আসতে লজ্জা করে না আপনার ?

আসিফ : রেজাল্ট তো এখনো আমার হাতে,তুমি কিভাবে বুঝলে যে তুমিই উইনার! [ বলেই পাশের আরেকটি চেয়ার টেনে, একটি বক্স এগিয়ে নিয়ে ] এই বক্সের কাগজেই আছে রেজাল্ট, আমার ভোট আছে সেভেন্টি পার্সেন্ট, তোমার টুয়েন্টি.. আচ্ছা যাও আরও ফাইভ পার্সেন্ট বাড়িয়ে দিলাম, টুয়েন্টি ফাইভ পার্সেন্ট তোমার!

মার্জান : এসব ভোট কবে হয়েছে শুনি? আমি কি এতোক্ষণ উগান্ডায় ছিলাম?

আসিফ : তুমি উগান্ডায় ছিলা নাকি আফ্রিকায় ছিলা তাতো আমি জানিনা, বাট ভোট হয়ে গেছে এটাই জানি!

মার্জান : শুনেন আপনার এসব ফালতু চোরামির ভোটে না, আমার কোনো ইন্ট্রেষ্ট নেই! টুয়েন্টি ফাইভ পার্সেন্ট ভোট গুলো ও আপনার নামেই করিয়ে নিন, সব মিলিয়ে নাইন্টি ফাইভ পার্সেন্ট চোরা ভোট হয়ে যাবে আপনার!

– আর কান খুলে শুনে রাখুন আমার জন্য রেজাল্ট না, পাবলিকের তালিই ইনাফ! হুহহ! [ বলেই চলে যাচ্ছিলো, তখনিই ]

আসিফ : দেখলা শায়লা? লুজাররা কিভাবে ভয়ে চ্যালেঞ্জ এর রুলস ভংগো করে? বাট ডোন্ট ওয়ারি আমি এমনিও আগে জানতাম এমনটাই হবে,

মার্জান : ঠিকাছে যান, আমিই হেরেছি, আপনিই উইন হয়েছেন, বাট হু কেয়ারস্? এভ্রিওয়ান নোও দ্যাট, হু ইস বেট্যার ডান্সার! [ বলেই চলে যাচ্ছে তখনি আবার ]

আসিফ : [ হেসে ] বাট রুলস্ আরেকটা ভংগো করছো! যেহেতু আমি উইনার তাহলে.. রুলস অনুযায়ী উইনার যা বলবে লুজার তাই করবে!

মার্জান : [ দাঁত দেখানো একটা হাসি দিয়ে ] আচ্ছা তাইইই? তো বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য?

আসিফ : কঠিন কিছু না! সিম্পল একটা জিনিষ! আমার পেছন পেছনই থাকবা, যতোক্ষণ প্রোগ্রাম চলবে,

মার্জান : আপনার মাথা ঠিকাছে? আমি আপনার পেছন পেছন ঘুরবো?

শায়লা : আরে মার্জান সিম্পলই তো, শুকোর কর এর চেয়ে বেশি কঠিন কিছু দেইনি!

মার্জান : তুই চুপ কর!

আসিফ : [ হেসে ] আচ্ছা ঠিকাছে! তোমার জন্য নেক্সট অপশন! যেহেতু আমরা বরপক্ষ তাহলে তোমার এমনিতেও উচিৎ আমাদের এক্সট্রা আপ্যায়ন করা! সো তুমি এককাজ করো… [ আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে ] হ্যা! ঐখান থেকে দু-গ্লাস জুস আনবা, একটা তোমার জন্য একটা আমার জন্য! আমার অপোজিটে বসে খাবা আমার সাথে,[ মুখ কাছে এনে ] ও হ্যা! চোখে চোখ রেখে!

মার্জান : [ মনে মনে ] ওয়াও! নট বেড আইডিয়া! এই সুযোগে তো আমার মিশনটাও কমপ্লিট হয়ে যাবে! কিন্তু জুস না চেয়ে আইসক্রিম চাইলে কাজটা আরেকটু সহজ হতো, ঠিক এমনটাই আইস্ক্রীমের বরফ মুখে লাগিয়ে রস টেনে নিতেই মুখ জ্বলেপুরে ছায় হয়ে যাবে!

– বাট ডোন্ট ওয়ারি মিষ্টার! কাজটা নাহয় জুস দিয়েই চালিয়ে দিবো!

আসিফ : [ মুখের সামনে হাত নেড়ে ] ও হ্যালো! এক্ষুণিই চোখের মাঝে হারিয়ে গেলে! নট বেড কাজে তো অনেক ফাষ্ট বেড়িয়েছো তুমি আই লাইক ইট!

মার্জান : [ মুচকি হেসে ] জ্বি! স্যার এবার আপনি পার্মিশন দিলে আমি কি আপনার আপ্যায়ণের কাজে লেগে যেতে পারি?

আসিফ : শিয়র! [ মার্জান মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো জুস আনতে ]

শায়লা : আরে ওয়াহ! এতো সহজেই মেনে নিয়েছে! আপনার চোখের জাদু কাজে লেগে গেছে বোধ হয়, [ হাসতে লাগলো আসিফ ]

– আচ্ছা আমি আসি, আর আপনি আপনার কাজে লেগে পড়িয়েন, হিহি! [ বলেই হুরহুর করে চলে গেলো ]

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ওয়েট করলো আসিফ, মনে মনে ভাবছে, জুস আনতে গিয়ে নিজেই জুস হয়ে বসে আছে নাকি কি জানি! পাঁচ দশমিনিট পেড়িয়ে যাওয়ার পর চোখ পড়লো, আসছে এংগ্রি বার্ড,

মার্জান : [ মুচকি হেসে ] হ্যালোওও! আপনার জুস রেডিইই! একটা অরেঞ্জ ফ্লেভার আরেকটা গ্রেপ ফ্লেভার এনেছি, [ বলেই অরেঞ্জ জুসটাই নিজ হাতে এগিয়ে দিলো আসিফকে ]

আসিফ : [ মনে মনে ] ওয়াও নিজ হাতেই এতো সুন্দর করে এগিয়ে দিচ্ছে…উমম! এতো সহজে ট্রাষ্ট করা যায় না এই এংগ্রি বার্ডকে, ও যেটা এগিয়ে দিচ্ছে, আম শিয়র, নিশ্চয় কিছু না কিছু মিশিয়ে এনেছে এই জুসের সাথে!

মার্জান : আরে কি ভাবছেন? নিন! অরেঞ্জ জুস, হেলদ এর জন্য ও পুষ্টিকর!

আসিফ : না থাক, অরেঞ্জটা তুমিই খাও আমি গ্রেপটা খায়! [ বলেই গ্রেপ জুসের গ্লাসটায় এগিয়ে নিলো ]

মার্জান : আরে আরে! আপনি অরেঞ্জটা খান,এটা স্পেশাল ভাবে বানিয়ে এনেছি,আপনাকে যাতে স্পেশালভাবে আপ্যায়ন করতে পারি, গ্রেপ জুসটা ছোলা সহ বানিয়েছে নিশ্চয় তাই দেখছেন না ডার্ক গ্রীন!

আসিফ : [ জুসের গ্লাসের দিক তাকিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে ] নো থেংক্স স্পেশালটা তুমিই খাও, আমি এটাই খায়, [ চেয়ার টেনে দিয়ে ] কাম! সি্ট! [ মার্জানের ও কি আর করার বসে পড়লো চেয়ারে ]

আসিফ : [ মনে মনে হেসে ] হুমম! নিজেকে অতি চালাক মনে করলে এমনি হয়! এবার নিজেই ফাসো নিজের জ্বালে! [ বলেই তাকিয়ে রইলো মার্জানের চোখের দিক ]

মার্জান : [ মুখ গোমড়া করে আসিফের দিক তাকিয়ে মনে মনে ] আহা! এখন তো দেখছি, উট পাহাড়ের নিচে নয়,পাহাড়ই উটের নিচে চলে এলো, নিজেকে অতি চালাক মনে করলে এমনিই হয় মিষ্টার!

আসিফ : কি ভাবছো খাও!

মার্জান : হ্যা! আ..আপনিও খান! [ বলেই গ্লাস মুখের দিক এগিয়ে নিলো, সাথে আড়চোখে ও তাকাচ্ছে আসিফের দিক, আসিফ ও হেসে জুস মুখে দিতেই চোখ বড় করে ফেলে, মুখ থেকে ফেলতেই যাবে তখনি ]

মার্জান : [ চেচিয়ে ] আরে আরে কি করছেন ফ্লোর নষ্ট হবে তো, [ বলেই মুখ চেপে ধরে ] গিলে নিন,গিলে নিন! [ ততোক্ষণে গিলেই ফেললো আসিফ, জ্বালে জিহবা জ্বলে পুরে এক হয়ে যাচ্ছে,কান দিয়ে যেনো ধুয়া বেরুচ্ছে ]

মার্জান : কি করছিলেনটা কি আপনি? মানুষ দেখলে কি বলবে, এতো সুন্দর হ্যান্ডসাম একটা ছেলের মেন্যার নেই! সবার সামনেই বমি করছেন ভাবতো! হুহ… [ ভোর কুচকে গড়গড় চোখে তাকিয়ে রইলো আসিফ ]

মার্জান : [ মুচকি হেসে ] আচ্ছা অরেঞ্জ জুস খাবেন? থাক আপনি তো খাবেন না বলেছেন, এটা আমি স্পেশাল ভাবেই বানিয়েছিলাম, তাই আমিই খায়, [ বলেই গডগড করে পুরো অরেঞ্জ জুসটা খেয়েই নিলো ] আরে আরেহ! আপনি টমেটোর মতো লাল হয়ে যাচ্ছেন কেনো? বাহহ! কাউকে দেখে ব্লাশিং হচ্ছেন নাকি? আশেপাশে তো অনেক মেয়ে..কাকে বুঝবো! উমমম [ চোখ টিপ মেরে ] নাকি কোনো আমাকে দেখে! [ বলেই কিটকিটিয়ে হেসে, মুখ ভেংগিয়ে উঠে হনহন করে চলে আসে, ডান্স ফ্লোরের দিক ]
_______________ অন্যদিকে,

রাহুলের মা : [ স্নেহা আর রাহুলের দিক এগিয়ে এসে, দুটো রিং বক্স আগলে দিয়ে ] এই নাও, এবার দুজন দুজনকে, রিং দুটো পড়িয়ে দাও, হুটহাট করেই প্রোগ্রাম সব করতে হচ্ছে, তাই আলাদা করে এনগেজমেন্ট করার টাইমই পায়নি! [ রাহুল তেডি স্মাইল দিয়ে তাকালো স্নেহার দিক, স্নেহা চোখ সরিয়ে ফেললো, বুঝতে পারলো রাহুল আবারও রেগে আছে ]

জারিফা : ওহো আন্টি! যে প্রোগ্রাম দিলেন না, দুটো প্রোগ্রামের চেয়ে কম নাকি!

শায়লা : ওহ কামঅন! কামঅন! স্নেহা হাত এগিয়ে দে! [ রাহুল রিং এগিয়ে নিয়ে স্নেহার হাতে পড়াতেই যাবে হঠাৎ তখনি আবার থেমে গিয়ে, উঠে দাঁড়ায়, সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, রাহুল স্নেহার হাত ধরে টেনে নিয়ে ডান্স ফ্লোরের দিক এগিয়ে চলে গেলো ]

শায়লা : [ ফিসফিসিয়ে ] আরে জারিফা! এরা কই যাচ্ছে রিং না পড়িয়ে?

জারিফা : [ চোখ মেরে ] আই থিংক কিছু আলাদা আন্দাজ দেখাতে! আচ্ছা চল [ বলেই এগিয়ে গেলো ]

[ রাহুল স্নেহার হাত ছেড়ে মিউজিশিয়ানদের কাছে এগিয়ে গিয়ে, কানে কানে কি যেনো বলে ওদের কাছ থেকে স্পিকারটা এগিয়ে নিলো ]

শায়লা : অও! এবার বুঝলাম! [ রিদোয়ান শিস! বাজিয়ে উঠলো রাহুল আর স্নেহাকে ডান্স ফ্লোরে দেখে, হঠাৎ মিউজিক টোন বেজে উঠলো ]

রিদোয়ান : [ দৌড়ে গিয়ে আরেকটি স্পিকার এগিয়ে নিয়ে ] লেডিস এন্ড জ্যান্টেলমেন উড ইউ হ্যান্ডস্ টুগেদার ফর আওয়ার দুলা এন্ড দুলহান, মিষ্টার এন্ড মিসেস রাহুলললল! [ এক্সাইটেড হয়ে তালি বাজিয়ে উঠলো সবাই, স্পিকার হাতে সরে দাড়ালো রিদোয়ান, চারদিক মিউজিকের ধুমধুম আওয়াজ, যেনো সবারই নাচের তাল উঠতে চলছে ]

_____রাহুল ♪♪

♪♪আরে কাবতাক জাওয়ানি ছুপা ওগি রাণী ♪♪
♪♪ খানওয়ারো কো কিতনা সা্থা ওগি রাণী ♪♪
♪♪ কাভী তো কিসি্ কি দুলহানিয়া বানোগি ♪♪

♪♪ মুঝসে্ শাদী কারোগি ♪♪
?
♪♪ মুঝসে্ শাদী কারোগি ♪♪

♪♪ মুঝসে্ শাদী কারোগি ♪♪
♪♪ মুঝসে্ শাদী কারোগি ♪♪

[ হেসে উঠলো স্নেহা, রাহুল রিং সহ হাত বাড়িয়ে রাখলো,স্নেহা হাত বাড়াতে যাবে তখনি রিদোয়ান এসে স্নেহার সামনে নেচে নেচে হাত বাড়ালো, স্নেহা ও সুযোগ পেয়ে রিদোয়ানের হাতে হাত ঢুকিয়ে রাহুলকে বাই দেখালো, রিদোয়ান কমোড় ধুলিয়ে নেচে নেচে স্নেহাকে নিয়ে একপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো, রাহুল ও কি আর করার হাসতে লাগলো ]

জারিফা : আরেহ! [ বলেই দৌড়ে গিয়ে স্নেহার হাত ধরে টেনে রাহুলের দিক নিয়ে যাচ্ছিলো, রিদোয়ান ও ছাড়ছে না অতো সহজে স্নেহার আরেক হাত টেনে ধরে রাখলো, জারিফা ও হাল ছাড়ার পাত্র নয়, টানতেই চলছে স্নেহাকে, এইদিকে বাকিরা হাসতে হাসতে লোড হয়ে যাচ্ছে, জারিফার পক্ষে শায়লা ও এসে যোগ দিলো ]

অবশেষে রিদোয়ান আস্তে আস্তে স্নেহাকে ছেড়ে দিলো, জারিফা আর শায়লা ইয়েএএ বলে চিৎকার করে স্নেহাকে রাহুলের দিক এনে দিলো,

রিদোয়ান : [ চেচিয়ে কাদো কন্ঠে ] নো স্নেহা নো ডোন্ট লিভ মি! [ সবাই আবারো হাসতে লাগলো, রাহুল ও হেসে রিং পড়াতে যাচ্ছিলো তখনি খেয়াল করলো স্নেহার ফিংগারে অলরেডি রিং পড়া! রাহুল খুলে নিতে চাইলো কিন্তু স্নেহা বাধা দিলো ]

রাহুল : কামঅন স্নেহা! দুটো এক ফিংগারে কিভাবে পড়াবো?

স্নেহা : এটা আমাদের ভালোবাসার প্রথম নিশান রাহুল! এটা এই আংগুলেই থাকবে, [ বলেই ডান হাত এগিয়ে দিলো ]

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] ওকেই! [ বলেই ডানহাতেই পড়িয়ে দিলো রিংটি, স্নেহা ও রাহুলকে পড়িয়ে দিলো, সবাই একত্রে তালি দিয়ে উঠলো আবারো, মার্জান ও এক্সাইটেড হয়ে তালি দিয়ে এপাশ,ওপাশ উকি দিতে লাগলো, সবাই আছে কিন্তু আসিফকে দেখতে পাচ্ছে না, এতোক্ষণ মজা করছিলো, কিন্তু এখন আবার কই গায়েব হয়ে গেলো, মরিচের জুসের জ্বালে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা ভেসে উঠলো চোখে, আশেপাশে ও দেখা যাচ্ছে না, কেমন যেনো মায়া লেগে উঠলো মার্জানের, পেছন ফিরে হাটা শুরু করলো, উকি দিয়ে দিয়ে চারদিক খুজতে লাগলো, ডান্স ফ্লোরের দিক আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিলো, রাহুল হেসে হেসে স্নেহাকে কি কি যেনো বলছে স্নেহা লজ্জায় হেসে রাহুলের হাত জড়িয়ে ধরে আছে, রিদোয়ান, জারিফা, শায়লা, রাহুলের মা, স্নেহার মা ও পাশে আছে, রাহুলের বাবা, স্নেহার বাবা,দাদী বাকি আরো অনেকেই চেয়ারে বসে আছে…কিন্তু আসিফই নেই!

মার্জান : [ মনে মনে ] গেলো কই? উফফফ! ওভার করে ফেলেছি নিশচয়!

চলবে….

বি.দ্র : [ আমি আমার ইচ্ছে মতো স্টোরি সাজাবো লাষ্ট দিকে এসে তাড়াহুড়ো করে ইন্ডিং দিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করার ইচ্ছে নেই আমার মেহনতের লিখা এগুলো,গল্প ভালো না লাগলে বা বোরিং লাগলে ইগনোর করবেন, সবাইকে মিন করছি না কিছু মানুষদের আমি জাষ্ট জানিয়ে রাখলাম, ]

Love At 1st Sight Season 3 Part – 49

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 49

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা : না..নাহ! ওকে! আ..আমি তো মজা করছিলাম! আপনার কিক..কিছু করতে হবে না [ বলেই জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে সোজা তাকিয়ে রইলো, হাসতে লাগলো রাহুল ]

আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছে স্নেহা, সচরাচর সবাইকেই দেখা যাচ্ছে..কিন্তু যারা পাশে থাকবে বলেছে তারাই উদাও!…গেলো কই এই তিনোটা?..

হঠাৎ রাহুলের ফ্রেন্ড শ্রেয়া এগিয়ে এলো,

রাহুল : হেই বেবী! [ বলেই জড়িয়ে ধরলো ]

শ্রেয়া : [ রাহুলকে সরিয়ে ] সর! তুই তোর সাথে কোনো কথা নেই! [ বলেই স্নেহাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ]

রাহুল : আরেহ!

শ্রেয়া : ইউ লুক! গরজিয়াস্ স্নেহা!

স্নেহা : থেংক ইউ!

রাহুল : হুমম! মাশাল্লাহ বল! নাহলে আমার সুন্দর বউটার নজর লেগে যাবে!

শ্রেয়া : তাইই?

রাহুল : হুমম.. আচ্ছা আর আমাকে কেমন লাগছে ?

শ্রেয়া : হুমম! নট বেড! [ হেসে উঠলো স্নেহা ]

রাহুল : এবার সত্যিই মার খাবি কিন্তু!

শ্রেয়া : রিভেঞ্জ ছিলো! হুহ!

রাহুল : দেখলা স্নেহা! জেল্যাস করে আমাকে! [ চুল ঠিক করে ] তুমি প্রাউড ফিল করো, রাহুলকে তুমিই পেয়েছো..

শ্রেয়া : লিসেন্ট স্নেহা! তুমি জানো না, ওরা অলোয়েজই আমাকে নট বেড বলে কমেন্ট করে, কখনোই বলেনি যে দোস্ত তোকে না আজ অনেক সুন্দর লাগছে, দারুণ লাগছে, প্রিটি লাগছে!

– আর আমার থেকে জিজ্ঞেস করলে আমি কি বলি, হ্যা? অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে, ডেসিং লাগছে!

রাহুল : আরে তোকে লাগলেই তো বলবো!

স্নেহা : আরে আপনি মিথ্যে বলছেন কেনো? [ শ্রেয়ার দিক তাকিয়ে ] সত্যিই তোমাকে অনেক…

রাহুল : ক্ষেত লাগছে! হিহি! এটাই বলতে ছিলো স্নেহা! তাই না!

স্নেহা : [ রাহুলকে চিমটিয়ে ] মোটেও না..

শ্রেয়া : লিভ ইট স্নেহা! ওদের কাজই অলোয়েজ আমার পিছে লেগে থাকা, [ স্নেহা হাসতে থাকে ]

শ্রেয়া : বাই দ্যা ওয়ে কনগ্রেটস্ বোথ অফ ইউ! খুব শিঘ্রই, ম্যারেড লাইফে পা দিতে যাচ্ছো! হুম হুম…

– আর তুই! এখন থেকেই তো স্নেহাকে পেয়ে আমাদের ভুলে গেছিস! বিয়ের পর দেখলে বলবি, হু আর ইউ? আই নো ইউ? হ্যা?

রাহুল : আরে কি করবো বল! স্নেহা এমন একটা জিনিষ যাকে দেখলেই আমার নেশা ধরে যায়..আশেপাশের খবরাখবর থাকেনা..[ বলেই স্নেহার মাথার সাথে মাথা লাগিয়ে রাখলো, স্নেহা লজ্জায় সরিয়ে দিলো রাহুলকে ]

শ্রেয়া : হুমম! লাভ বার্ডস্ তাই না!

রাহুল : আচ্ছা এইদিকে আয় ছবি তোল, [ বলেই কাছে টেনে নিলো ] আর তোকে কেমনি ভুলবো বল? তোকে ভুললে জ্বালাবো কাকে?

শ্রেয়া : এক মিনিট! তোর পাশে অনেক তুলেছি, এবার স্নেহার পাশে তুলবো! [ বলেই স্নেহার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পোজ দিতে লাগলো ]

রাহুল : হুমম! ধীরেধীরে এভাবেই বঞ্চিত হবো আমি! [ হাসতে লাগলো স্নেহা আর শ্রেয়া ]

___________এইদিকে পার্কিংএ____________

রিদোয়ান : [ ফিসফিসিয়ে ] ইউ নো জারিফা!তোমার পেট দেখা যাচ্ছে আজ! তাই এত্তো হট লাগছে..

জারিফা : [ কোমোড়ের ওড়না টেনে ] আপনার চোখগুলো না আজকাল বেশীই উড়ছে..

রিদোয়ান : [ হেসে ] তাই? দেখাই তো যাচ্ছিলো আর আমি বললেই দোষ?

জারিফা : হ্যা! দোষ.. আপনি দেখবেন কেনো?

রিদোয়ান : [ ধীরেধীরে ওড়না সরিয়ে জারিফার কোমোড়ে স্লাইড করে হাত রেখে ] দেখালে তো দেখবোই…

জারিফা : দেদ…দেখেন..ওড়না সরেগিয়েছিলো হয়তো…

রিদোয়ান : [ একটানে কাছে এগিয়ে নিয়ে ] হ্যা! তারপর…

জারিফা : তাত..তাই খেয়াল.. [ বলতেই দেখে রিদোয়ান চোখ বন্ধেই নিমিষেই জারিফার ঠোটের দিক তার ঠোট বাড়াচ্ছে, আশেপাশে আড়চোখে তাকিয়ে হুট করেই ধাক্ষা দিয়ে সরিয়ে দিলো রিদোয়ানকে ]

রিদোয়ান : [ অবাক হয়ে ] হোয়াট?

জারিফা : পাগল নাকি আপনি? কেউ চলে আসলে…

রিদোয়ান : সব সময়ের বাহানা [ বলেই আবার কাছে আসতে চাইলো, তখনিই জারিফা মুচকি হেসে ঘাগড়া হাতে ধরে দৌড়ে চলে গেলো ]

রিদোয়ান : [ চেচিয়ে ] আরে জারিফা! ওয়েট…

______________ অন্যদিকে _______________

মার্জান : একটা ছবি ও ঠিক করে তুলতে পারিসনি তুই…আমার কি সুন্দর সুন্দর পোজ সব নষ্ট করে দিলি…

শায়লা : আরে এতো আফসোস করছিস কেনো? আবার তুলে দিবো নাহয়!

মার্জান : ওহো! দরকার নেই! আর তুই কেমন ছবি তুলে দিবি তা আমার জানা হয়ে গেছে.. [ বলতেই হঠাৎ ধাক্ষা খেলো কারো সাথে, নিচের দিক তাকাতেই দেখে রাশু ]

– আরে রাশু এইভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস, আস্তে হাট, মানুষ পড়ে যাবে তোর ধাক্ষায় ?

রাশু : আরে আমি ঠিকই হাটছি, তুমিই তো চোখ নামিয়ে মোবাইল দেখে দেখে হাটছো!

মার্জান : আচ্ছা বাদ দে! এতো লেইট করলি কেনো আসতে? মামার বাড়ীতে কি মধুর হাড়ী ছিলো যে আমাদের বাসায় আসিস নি থাকতে!

রাশু : আরে সামনে এক্সাম বাবা আনলেই তো আসবো, খালি বলে পড় পড় পড়! আমাকে তো বললোই না কেউ এসব বিয়েশাদী হয়ে যাচ্ছে, নাহয় আমি পালিয়েই চলে আসতাম!

– আর স্নেহাকে তো আমি দেখেই নিবো!

মার্জান : কি বললি স্নেহা? ডিরেক্ট নাম ধরে?

রাশু : আরে ও জানে রাগ উঠলে আমি ওকে স্নেহা বলেই ডাকি!

মার্জান : হুমমম! ঠিক বলেছিস! একটা মাত্র ভাই.. আর ও তোকে একটু জানালোই না বিয়ে করছে!

শায়লা : বাই দ্যা ওয়ে রাশু! দেখা করেছিস স্নেহার সাথে!

রাশু : নাহ! ঐ দিকটা আইস্ক্রীম দিচ্ছে, আগে আইস্ক্রীম খেয়েনি বাকি সব পড়ে [ বলেই দৌড়ে চলে গেলো ]

শায়লা : আরে কথা তো শোন… [ মার্জান আর শায়লা হাসতে লাগলো, হঠাৎ স্টেজের দিক চোখ পড়তেই ]

শায়লা : ওহো! ঐদিকটা দেখ! কি দারুণ জুটি লাগছে! মাশাল্লাহ.. [ বলতেই মার্জান হেসে হাত নাড়ালো, রাহুল ও হেসে হাত নাড়িয়ে কাছে আসতে ইশারা করলো, এগিয়ে গেলো দু-জনই ]

মার্জান : আমার তো মনে হয়েছে আজ, স্নেহা তার শশুড়বাড়ির সবাইকে পেয়ে আমাদের ভুলেই গেছে..

আসিফ : ভুলে যাওয়ায় উচিৎ! তাই না স্নেহা! এখন তো এদের সাথেই থাকবা.. আলতু-ফালতু মানুষদের মনে রেখে আর কি হবে!

মার্জান : [ নাকফুলিয়ে ] কি বললেন? আলতু-ফালতু?

শায়লা : শিসসস! মার্জান আস্তে! সবাই দেখছে!

মার্জান : আপনাকে তো পরে দেখে নিবো!

আসিফ : আই নো আমাকে দেখার জন্য সবাই পাগল, সো্ তুমি আবার লিষ্ট থেকে বাদ যাবে কেনো?

মার্জান : ওওও…তাই বুঝি!

আসিফ : ইয়েএএসস! তাইই…

মার্জান : ইডিয়ট!

রাহুল : [ হেসে ] আবারো শুরু হয়ে গেছে টম এন্ড জেরীর?

শায়লা : আচ্ছা! কে টম কে জেরী?

মার্জান : তুই চুপ কর! [ বলেই স্নেহার পাশে গিয়ে বসে ] স্নেহা! কেমন লাগছে সব হুম হুম?

রাহুল : ফাইনালি তোমাদের পাওয়া গেছে.. এতোক্ষণ তো তোমাদের চিন্তায় চিন্তায় স্নেহা বুড়ি হয়ে যাচ্ছিলো!

স্নেহা : [ হেসে রাহুলকে চিমটি মেরে মার্জানের দিক তাকিয়ে ] কোথায় ছিলি তোরা? আর জারিফা কোথায় ?

মার্জান : কি জানি কোথায়! রিদোয়ানের সাথেই যেতে দেখেছি..হবে কোথাও!

শায়লা : ঐ যে আসছে দুজনই!

রিদোয়ান : [ এগিয়ে এসে ] কি অবস্থা সবার [ বলেই রাহুলের পাশে গিয়ে বসলো ]

রাহুল : আমাদের অবস্থা তো সবাই দেখছেই কিন্তু তোরা কোথায় ছিলি,

রিদোয়ান : দোস্ত! গিয়েছিলাম একটু প্রেম করতে কিন্তু সেটাও ব্যার্থ!

আসিফ : [ রিদোয়ানে কাধে হাত রেখে ] উফফ! সো সে্ড! মন খারাপ করিস না,দোস্ত! প্রেমসেম অনেক করতে পারবি, এখন ছবির জন্য পোজ দে!

রিদোয়ান : [ আসিফের পেটে ঘুষি মেরে ] তুই তো সেটাই বলবি!

[ সবাই পোজ দিয়ে দিয়ে ছবি উঠাতে ব্যস্ত, হঠাৎ মার্জান স্নেহার ভাইকে দেখে হাত নেড়ে ইশারা করলো আসতে, রাশু ও দৌড়ে এগিয়ে এলো ]

মার্জান : কি মিষ্টার আইস্ক্রীম খাওয়া হয়েছে?

রাশু : হুমম! দারুণ ছিলো! [ বলেই স্নেহার দিক তাকিয়ে কোমোড়ে হাত রেখে ] এই স্নেহা! আমাকে বললে না যে বিয়ে করছো? [ রাহুল আর তার ফ্রেন্ডসরা সবাই অবাক হয়ে তাকালো ]

স্নেহা : বব..বলেছিলাম তো বাবাকে তোর কথা! বাবা বললো তোর নাকি অনেক পড়া আছে তাই মামাদের সাথেই আসবি আজ…

রাশু : হ্যা? বাবা বললো তাই না? বাবা কোনদিন বলে না পড়ার কথা…? শোনো এসব বাবা-টাবা আমি বুঝিনা,

– বাবাকে তুমি বলবা আজ আমাকে মামার বাড়ি না পাঠাতে,সব প্রোগ্রাম কমপ্লিট করে যাবো বলে দিলাম! কিভাবে হবে এসব আমি বুঝিনা, সব দায়িত্ব তোমার!

রিদোয়ান : বাহ! ইন্ট্রেষ্টিং…তো!

রাহুল : [ রাশুকে কাছে টেনে নিয়ে ] আরে এইতো দেখি আমার মতো,

জারিফা : হবেই তো! জিজু আপনার শালা বলে কথা!…

মার্জান : আরে রাশু একটা কথা বল..ঐ যে তোর আপুর জন্য ঐদিন একটা ছেলে দেখলো না ঐটা সুন্দর নাকি এটা..হুমম?

রাশু : [ রাহুলের দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে ] উমমম..একটাও না..

মার্জান : আয়হায়! নিজের চেহেরাটা দেখেছিস একবার আয়নায়..

রাশু : আমারটা ছাড়ো আগে তোমারটা দেখো…

আসিফ : [ কিটকিটিয়ে হেসে রাশুর পাশে এসে হাটু গেরে বসে ] ভাই! সাইজে ছোট হলে কি হবে জবাবটা মাইন্ডব্লোয়িং দিলি, এবার শুধু বল তোর কি চাই… [ মার্জান আর কিছু বললো না রাগ চাপা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে, বুঝতে পারলো আসিফ, মাথায় কিছু না কিছু পাকাচ্ছে ]

রাশু : আরে বলো না তিনোটাই পেচি সারাক্ষণ পেকপেক করতে থাকে!

রিদোয়ান : বাট এরা তো চারজন!

রাশু : আমার আপু ছাড়া!

শায়লা : ওও..এতোক্ষণ স্নেহা! এখন আবার আপু!

জারিফা : আচ্ছা আমরা আংকেলকে লাগিয়ে দি বলে আমরা পেচি! আর তোর আপু বাচিয়ে নেই বলে ভালো!

– এখন থেকে আরো বেশী করে লাগাবো, কাল বিয়েতে আসবি তুই বিদায়ের মাত্র পাচ মিনিট আগে, দেখেনিস!

রাহুল : আরে না! তোমরা আমার একমাত্র পিচ্চি শালাটাকে এমন কেনো করছো বলো তো?

– কাল ও সবার আগে আসবে তাই না..?

রাশু : [ রাহুলের গালে একটি কিস করে ] ইয়েসস! [ বলেই স্নেহার দিক তাকিয়ে ] এই স্নেহা আরেকটু যাও তো.. [ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে আরেকটু সাইড হয়ে বসলো ]

রাশু : [ স্নেহা আর রাহুলের মধ্যে বসে ] এইইই! ক্যামেরা মেন! ফটো তুলুন!

জারিফা : আরে বাপরে! আসছে একদম নবাব! কিভাবে অর্ডার করে দেখো! [ বাকিরা হাসতে লাগলো, রাহুল আর স্নেহাও রাশুকে মধ্যে নিয়ে কাধে হাত রেখে জড়িয়ে ছবি তুলে নেই ]

রাশু : আচ্ছা আমার কাজ শেষ এখন ঘুরে আসি! [ জারিফার দিক মাথা এগিয়ে ] শুনো কোনো ছেলে ডিষ্টার্ব করলে আমায় বলবা!

জারিফা : জ্বী জ্বী বড় ভাই আপনাকেই বলবো! [ চলে গেলো রাশু ]

রাহুল : [ হেসে ] সিরিয়াসলি?

জারিফা : আসলে গ্রামে, স্নেহার এক কাজিনের বিয়ে ছিলো! ঐখানে একটা ছেলে আমাদের ডিস্টার্ব করছিলো, তখন, ও মার্জান, আর আমি মিলেই ছেলেটাকে উল্লু বানিয়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছিলাম!

– আর কাউকে উল্লু বানাতে ও ওর অনেক মজা লাগে! [ সবাই হেসে উঠলো ]

মার্জান : এক্সকিউজ মি! [ বলেই চলে যাচ্ছিলো ]

স্নেহা : কোথায় যাচ্ছিস?

মার্জান : ঐদিকটাই আছি!

শায়লা : আরে দাড়া আমিও আসছি [ বলেই দুজনে নেমে চলে যাচ্ছে আসিফ মার্জানকে চোখ টিপ মেরে তাকিয়ে আছে, মার্জান ও মুখ ভেংগিয়ে নেমে গেলো ]

জারিফা : আচ্ছা! আমি ও আসি! এবার…

রিদোয়ান : হ্যা আমার সাথে!

জারিফা : মোটেও না! [ বলেই দৌড়ে নেমে গেলো,রিদোয়ান ও হেসে পিছু পিছু নেমে পড়লো ]
________________ এইদিকে_______________

মার্জান : নিজেকে কি মনে করে এই ইডিয়ট! সবসময় আমার ইনসাল্ট করে!

শায়লা : তুই ও তো কোনো দিক থেকে ওর ইনসাল্ট করার পিছু ছারিস না,

মার্জান : তুই চুপ কর! তুই আছিসই ওর পক্ষে! ঘুষ খোর কোথাকার!

শায়লা : যাক বাবা ঘুষ খেলাম কবে! জাষ্ট অফারই তো করলো! [ বলতেই হঠাৎ খেয়াল করলো মার্জান এদিকওদিক উকি দিচ্ছে ]

শায়লা : আবার কাকে খুজছিস?

মার্জান : একমিনিট তুই এইদিকে দাড়া,আমি একটু আসছি, [ বলেই দৌড়ে গেলো রাশুর দিক, শায়লা তাকিয়ে আছে দূর থেকে, কি কি যেনো বুঝিয়ে দিচ্ছে রাশুকে, হঠাৎ পাশে আসিফ এসে দাড়ালো ]

শায়লা : আরে আপনি! ভালোই হয়েছে এসেছেন! শুনেন আপনি ওকে বারবার রাগান কেনো বলেন তো? রাগালে কি পটাতে পারবেন! অনেক ডেঞ্জার ও..অতো সহজে পটছে না!

আসিফ : আচ্ছা? তাহলে আমিও দেখি কতো ডেঞ্জার হতে পারে!

– এখন কই গেছে ও?

শায়লা : ঐ যে! আসছে! [ এগিয়ে এলো মার্জান আসিফকে দেখে দাত সব বের করে একটি হাসি দিলো ]

আসিফ : [ মুচকি হেসে অন্যপাশ ফিরে গিয়ে ] নাইস্ তিথ!

মার্জান : চিকচিক করছে তাই না?

আসিফ : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুমম!

মার্জান : ছায় দিয়ে মাজি তো তাই! [ শায়লা মুখ লুকিয়ে হেসে উঠলো ]

আসিফ : ওহ! তাই নাকি!

মার্জান : হ্যাঁ! একদম! আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন!

– বাই দ্যা ওয়ে, ফলো করছেন নাকি আমাকে?

আসিফ : লল! তোমাকে ফলো করবো? [ হেসে ] পিচ্চিটাই তো বলে গেলো আয়নায় আগে নিজের চেহেরা দেখতে!

– আমি তো শায়লার সাথে কথা বলতে এসেছি! ও কি গানে ডান্স করবে ঐটাই আস্ক করছি! তোমার দ্বারা তো ডান্স ইম্পসিবল! তাই জিজ্ঞেস করাটাও বেকার!

মার্জান : আচ্ছা! নিজে একদম কি ডান্স পেরে তরিয়ে ফেলেন ভালো জানি হুহু!

আসিফ : তোমার থেকে তো অন্তত বেটার জানি!

মার্জান : আচ্ছা? করে দেখান দেখি?

আসিফ : [ মার্জানের কাছে মুখ এনে ] চ্যালেঞ্জ করছো?

মার্জান : [ একটু পিছিয়ে গিয়ে ] ই..ইয়েস! চ্যালেঞ্জ করলাম!

আসিফ : ওকে! সে্ইম গানেই, দুজন পার্ফমেন্স করবো তারপর পাবলিক যার ডান্সে বেশি ভোট করবে সে উইনার!

– আর লুজার এর কি করতে হবে জানো তো?

মার্জান : জানার দরকার নেই! লুজার কে হবে তা চেহেরায় ভেসে উঠছে!

শায়লা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] আচ্ছা আপনারা কোন গানে ডান্স করবেন?

আসিফ : ওউ! শাট-আপ! আমি এতোটাও কঠোর নয়! যাও তোমার ফ্রেন্ড এর জন্য সহজ করে দিলাম! [ অবাক হয়ে তাকালো মার্জান ]

আসিফ : রিসেন্টলি তুমি তোমার ফেইসবুকে লিসেনিং সং স্ট্যাটাস দিয়ে তোমার ফেভারিট হিরোর একটা সং শেয়ার করেছো!

শায়লা : রিতিক রোশন?

আসিফ : ইয়াহ! [ মার্জানের কাছে এসে ] মুজসে্ দোস্তি কারোগি! [ অবাক হয়ে তাকালো মার্জান ]

– [ হেসে ] এই ফ্লিমের!

মার্জান : কখনোই না! এই গানে তো ইম্পসিবল!

আসিফ : জানতাম তুমি ভয় পাবা!

মার্জান : আজিব ভয় কেনো পাবো? আমিতো..

শায়লা : আরে মার্জান! গানে কি এসে যায়! বাদ দে না! তখন ভাববে তুই ডারপোক!

আসিফ : সো্ ডান?

শায়লা : হ্যা! হ্যা! ডান ডান!

মার্জান : এক সেকেন্ড! আপনার সাথে তো আমার ফেইসবুকে এড নেই! তাহলে আপনি কিভাবে জানলেন আমি কি শেয়ার করেছি না করেছি?

আসিফ : ওহ! শাট-আপ! আমার এতোটাও শক পড়েনি তোমার আইডি চেক করার!

– ঐটা তো ব্যাস! ঐদিন রাহুল তার মোবাইল আমার হাতে রেখে গিয়েছিলো তখন ওর মোবাইল এ ফেইসবুক দেখতে গিয়ে তোমারটাও চোখে পড়ে,

মার্জান : আপনার কাছে আর কি আশা করা যায়! অন্যজনের ফেইসবুক ঘাটাঘাটি করা ছাড়া!

আসিফ : এক্সকিউজ মি! রাহুল ইজ মাই ফ্রেন্ড! ওর কিছুই আমার কাছ থেকে হাইড থাকে না সো্ ফেইসবুক তো জাষ্ট সিম্পল ম্যাটার!

– আর আমরা ছেলেরা তোমাদের মেয়েদের মতো এতো কিপ্টে না, তোমরা তো ফেইসবুক নিয়েও কিপটামি করো!

মার্জান : কি বললেন?..মেয়েরা কিপটা?

শায়লা : উফফ গাইস্! আবারো শুরু ঝগড়া? এবার তো ডান্স শুরু করেন! পাবলিক কমে গেলে ভোট ও কমে আসবে মাইন্ড ইট!

আসিফ : ইয়াহ! আই থিংক আমাদের এখন শুরু করা উচিৎ!

– উমমম! ও হ্যা! ফাষ্ট লিরিক্স তো মেয়ের সো্ গো… [ মার্জান নাক ফুলিয়ে এগিয়ে গেলো ডান্স ফ্লোরে, আসিফ আর শায়লা ও হেসে হেসে পেছন পেছন এগিয়ে গেলো ]

শায়লা : বাহ! বাহ! বাহ! গানটাও বরাবর দিলেন! কিন্তু আপনি যদি না জিতেন?

আসিফ : ডোন্ট ওয়ারি না জিতলেও ভোট ওর চেয়ে আমার বেশি আসবে বুঝেছো! যে বক্সে ভোট নিবো ওখানে আমি আগে থেকেই আমার নাম দিয়ে অর্ধেক এক্সট্রা কাগজে ভরে রেখেছি!

শায়লা : আরে ওয়াহ! কি বুদ্ধি আপনার!

হঠাৎ, পেছন থেকে,

জারিফা : [ এগিয়ে এসে ] বাহহহ! ডান্স শুরু? ইয়েএএএ! এবার তো আমিও ডান্স করবো!

শায়লা : আরে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে! [ চোখ মেরে ] ঐ যে!

জারিফা : [ আসিফের কাধে হাত রেখে ] ওহহহ! বুঝেছি এবার! লাইন মারা হচ্ছে বুঝি! হ্যা হ্যা!

[ মার্জান ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়িয়ে হাত নেরে ইশারা করলো মিউজিক ছাড়ছে না কেনো ]

জারিফা : মিউজিক মিউজিক!

শায়লা : আরে মিউজিক ছাড়তে বলছে! তাড়াতাড়ি! আপনিও থাকেন ঐদিকটা ওর পর সাথে সাথে আপনার ও তো যেতে হবে তাই না! [ আসিফ হেসে এগিয়ে গিয়ে মোবাইল স্পিকারে কানেক্ট করে গান ছাড়লো ]

সবাই তালি দিয়ে চিৎকার করতে লাগলো, ঐদিক থেকে স্নেহা আর রাহুল ও এক্সাইটেড হয়ে তাকিয়ে রইলো..রিদোয়ান ও এগিয়ে এলো..

জারিফা : [ চেচিয়ে ] ইয়েএএএ…মার্জান মার্জান মার্জান!

_________মার্জান

♪♪ আজেকি লাডকে আই টেল ইউ ♪♪
♪♪ কিতনে লাল্লু হোয়াট টু ডু ♪♪

জারিফা : আরে ইয়ার! শায়লা আমার ও তো ডান্স করতে মন চাইছে..

♪♪আজেকি লাডকে আই টেল ইউ ♪♪
♪♪ কিতনে লাল্লু হোয়াট টু ডু ♪♪
♪♪ কই মুঝে পুছে হাউ আর ইউ ♪♪
♪♪ কই মুঝে বলে হাউ ডু ইউ ডু ♪♪
♪♪ কাভি্ কয়ি মুঝসে্ না কাহে ♪♪
♪♪ ওহ মাই ডার্লিং আই লাভ্ ইউ♪♪
♪♪ ওহ মাই ডার্লিং আই লাভ্ ইউ♪♪

_________আসিফ

♪♪ আজেকি লাডকি আই টেল ইউ ♪♪
♪♪ নাখড়ে ওয়ালি সুনলে তু ♪♪

রাহুল : ওহ মাই গড! স্নেহা! সব মজা তো এরাই করছে, আর আমাদের কখন থেকে দরবেশ বাবার মতো বসিয়ে রেখেছে!

স্নেহা : [ হেসে এক্সাইটেড হয়ে ] শাট-আপ রাহুল! ঐ দিকে দেখুন!

♪♪ আজেকি লাডকি আই টেল ইউ ♪♪
♪♪ নাখড়ে ওয়ালি সুনলে তু ♪♪
♪♪ না মে পুছু হাউ আর ইউ ♪♪
♪♪ না মে বলু হাউ ডু ইউ ডু ♪♪
♪♪ আভি্ ইয়েহি মে কেহেতা হু ♪♪
♪♪ ওহ মাই ডার্লিং আই লাভ্ ইউ ♪♪
♪♪ ওহ মাই ডার্লিং আই লাভ্ ইউ♪♪

[ সবাই তালি দিচ্ছে, হাসি পাচ্ছিলো মার্জানের, তাও আসিফকে মুখ ভেংগিয়ে দৌড়ে চলে এলো জারিফা আর শায়লার দিক ]

জারিফা : [ মার্জানকে জড়িয়ে ধরে ] ওহ! মাই ডার্লিং আই লাভ ইউউউউ [ বলতেই রিদোয়ান এসে হাত ধরে জারিফাকে টেনে নিয়ে চলে গেলো ডান্স ফ্লোরে, হাসতে লাগলো বাকিরা ]

রিদোয়ান : [ চেচিয়ে ] মিউজিক! [ জারিফা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, এতোক্ষণ তো ডান্সের জন্য লাফাচ্ছিলো তবে হঠাৎ লজ্জা কেনো লাগছে ]

♪♪ বান্নো কি সে্হেলি রেশামকি ডোরি ♪♪
♪♪ চুপ চুপকে শারমায়ে দেখে চরি চরি ♪♪

[ জারিফাকে ঘুরিয়ে নিয়ে ]

♪♪ বান্নো কি সে্হেলি রেশামকি ডোরি ♪♪
♪♪ চুপ চুপকে শারমায়ে দেখে চরি চরি ♪♪
♪♪ ইয়ে মানে ইয়া না মানে ♪♪
♪♪ মে তো ইস্ পে মারগায়া ♪♪
♪♪ ইয়ে লাডকি হায় আল্লাহ ♪♪
♪♪ হায় হায়রে আল্লাহ ♪♪
♪♪ ইয়ে লাডকি হায় আল্লাহ ♪♪
♪♪ হায় হায়রে আল্লাহ ♪♪

______ জারিফা

♪♪ বাবুল কি গালিয়া না ছাডকে জানা ♪♪
♪♪ পাগাল দিওয়ানা ইস্ কো সামজানা ♪♪

[ রাহুল এক্সাইটেড হয়ে শিস বাজিয়ে উঠলো ]

♪♪ বাবুল কি গালিয়া না ছাডকে জানা ♪♪
♪♪ পাগাল দিওয়ানা ইস্ কো সা্মজানা ♪♪
♪♪ দেখো জি দেখো ইয়ে তো মেরা ♪♪
♪♪ পিছে পারগায়া ♪♪
♪♪ ইয়ে লাডকা হায় আল্লাহ ♪♪
♪♪ হায় হায়রে আল্লাহ ♪♪
♪♪ ইয়ে লাডকা হাহ আল্লাহ ♪♪
♪♪ হায় হায়রে আল্লাহ ♪♪

[ কোলে তুলে নিলো রিদোয়ান জারিফাকে সবাই তালি দিয়ে উঠলো, জারিফা লজ্জায় হেসে মুখে হাত দিয়ে ঢেকে রাখলো ]
_______________এইদিকে________________

স্নেহা খুশিতে তালি দিয়ে কখন যে রাহুলের হাত জড়িয়ে ধরে রাখলো খেয়ালই নেই! রাহুল বুঝতে পেরে হেসে তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিক…

চলবে….

Love At 1st Sight Season 3 Part – 48

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 48

writer-Jubaida Sobti

হাসতে লাগলো রাহুল,স্নেহা ও মুচকি হেসে কেটে দিলো ফোন,

ভেতরের রুমে এসে খাটে বসে তার নাটকীয় ফ্রেন্ডগুলোর কান্ড দেখতে লাগলো, রাহুলের মায়ের দিয়ে যাওয়া হলুদের জিনিষপত্র গুলোর প্যাকিং খুলছে তারা,অবাক হচ্ছে সাথে আনন্দ ও নিচ্ছে… স্নেহার ও ভালোই লাগছে এসব দেখতে সাথে রাহুলের আসার অপেক্ষা করতে…

বেশিক্ষণ লাগলো না রাহুলের আসতে,বিশ-পচিশ মিনিটের মধ্যেই চলে এলো,দু-তিনবার নাগাতার গাড়ীর হর্ণ বাজতেই স্নেহার আর বোঝার বাকি রইলো না কে আসলো..

উঠে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তখনি,

শায়লা : স্নেহা! কোথায় যাচ্ছিস?

স্নেহা : রাহুল এসেছে ওর কাছে..

জারিফা : অহ মাই গড রাহুল! কেনো? কোনো রেগেমেগে আসলো না তো?

স্নেহা : আরে না আমিই বলেছি আসতে,[ এক্সাইটেড হয়ে ] আমি চাচ্ছিলাম ওকে এসব সামনাসামনিই বলবো..[ বলেই দৌড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে তখনি, ]

স্নেহার মা : আরে স্নেহা? আবার কোথায় যাচ্ছিস?

স্নেহা : এসে বলবো মা, আসি! [ বলেই বেড়িয়ে গেলো ]

স্নেহার মা : [ চেচিয়ে ] আরে কিন্তু কোথায় যাচ্ছিস সেটা তো বল?

মার্জান : ডোন্ট ওয়ারি আন্টি, নিচেই যাচ্ছে রাহুল এসেছে ওর সাথে দেখা করতে! তাই..

জারিফা : [ স্নেহার মা কে টেনে বসিয়ে ] আরে আন্টি আপনি কই যাচ্ছেন? এইদিকে বসুন দেখুন কতো শপিং করা হয়েছে আমাদের জন্য! আমার তো মনে হচ্ছে সব সপ্নই দেখছি.. [ হাসতে লাগলো স্নেহার মা ]

______________এইদিকে_________________

স্নেহা গেইট থেকে বেড়িয়ে রাহুলের গাড়ীর দিক এগিয়ে সামনের দরজা খুলতেই দেখে রাহুল নেই…

রাহুল : [ পেছনের সিটের গ্লাস নামিয়ে ] আম হেয়ার স্নেহা! [ বলেই চোখ টিপ মারলো, মুচকি হেসে স্নেহা ও পেছনের দরজা খুলে এগিয়ে বসলো ]

রাহুল : কি ব্যাপার অনেক খুশি খুশি লাগছে! আমি তো ভেবেছিলাম তুমি লজ্জা পাবা!

স্নেহা : লজ্জা কেনো পাবো? আপনার সাথে ফাষ্ট টাইম নাকি? বাই দ্যা ওয়ে ভালোই করেছেন পেছনে বসে!

রাহুল : [ এক্সাইটেড হয়ে ] তাই ? না? আমি ও এটাই ভেবে পেছনে বসেছি! করতে সুবিধা হবে!

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] হোয়াট?

রাহুল : [ হুট করেই স্নেহার একদম কাছে এসে ] কিস্!

স্নেহা : রাহুলল! [ বলেই ধাক্ষা দিয়ে সরিয়ে ] আমি কথা বলার জন্য বলেছি! মানে পেছনে বসে কথা বলতে সুবিধা হবে ওটা বুঝিয়েছি!

রাহুল : [ মুখ গোমড়া করে ] আচ্ছা!

স্নেহা : হুম!

রাহুল : কিন্তু তুমি কিস্ দেওয়ার কথা ছিলো তো…

স্নেহা : মজা করবেননা রাহুল! সিরিয়াসলি…আপনি কথাটা শুনুন…

রাহুল : [ আবারো স্নেহার কাছে এসে ] বাট! আমি বলেছিলাম কিস্ দিতে হবে সো্… [ বলেই তেডি স্মাইল দিয়ে স্নেহার ঠোটের দিক তাকিয়ে রইলো ]

স্নেহা : [ রাহুলের ঠোটের দিক তাকিয়ে ] কিক…কিন্তু রাহুল কেউ দে..দেখলে..

রাহুল : ব্লাক গ্লাস স্নেহা! কেউই দেখবে না…

স্নেহা : পুপ..পুলিশ আসলে…

রাহুল : পুলিশ কেনো আসবে স্নেহা!

স্নেহা : আপ..আপনি বলেছিলেন..পুলিশ ধরেছিলো কক…কয়েকবার ব্লাক গ্লা..গ্লাসের জন্য…

রাহুল : [ চেচিয়ে ] হোয়াট? [ চমকে উঠলো স্নেহা ] আর ইউ ক্রেজি? [ হেসে ] কামঅন স্নেহা! ওটার সাথে এটার কি সম্পর্ক?

স্নেহা : নাতো কি আপ..আপনিই তো বলেছিলেন ঐ দিন!

রাহুল : সামনের গ্লাস ব্লাক লাগালে! তখন পুলিশ ধরবে পেছনের না!

স্নেহা : আ..আচ্ছা?

রাহুল : [ স্নেহার নাকে নাক ঘষে ] বাহানা কম বানাও স্নেহা! এর আগেও গাড়ীতে করেছি ইউ রিমেম্বার? [ মাথা নাড়ালো স্নেহা ]

রাহুল : সো্ ভয়ের কি আছে… [ বলেই স্নেহার হাতে হাত মুঠি বেধে ধরে ধীরেধীরে স্নেহার ঠোটের দিক এগুতেই দেখে স্নেহা কপাল কুচকে চোখ বটে কুড়েমুড়ে এক হয়ে গেছে ]

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] কামঅন স্নেহা এতো ঘাবড়াচ্ছো কেনো? [ স্নেহা চমকে গিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তাকালো, রাহুল ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিক, কেমন যেনো স্নেহার এই ভীতু মায়াবী চাহনিতে বারবার ডুবদিতে মন চাই রাহুলের ]

রাহুল : [ হেসে সিটে হেলান দিয়ে বসে ] আচ্ছা বলো কি বলতে ডেকেছিলে? [ স্নেহা চুপ করে রইলো, ওড়নার আচলের কোণা হাতের আংগুলে প্যাচাচ্ছে আর খুলছে ]

রাহুল : [ আবারো উঠে বসে স্নেহার সাইড ফিরে ] কি হলো বলো? [ তাকিয়ে রইলো স্নেহা রাহুলের দিক, দুজনের চোখই যেনো কথা বলে যাচ্ছে, ধীরেধীরে স্নেহা মুখ এগিয়ে রাহুলের গালে আলতো করে একটি চুমু খেলো ] [ Rahul give a tedi smile ]

[ সরে এসে পলক তুলে রাহুলের চোখেচোখ মিলালো স্নেহা, দুজনেই অজান্তে ব্লাশিং হতে চলছে, স্নেহার মাথা টেনে কপালে চুমু খেলো রাহুল, আলতো করে নাকের উপর ও একটি চুমু খেলো, মুখের উপর ফু দিতেই চোখ নামিয়ে ফেললো স্নেহা..

গলার চুল গুলো ও ফু দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে রাহুল…শুরশুরি লাগায় মুখ এপাশ-ওপাশ ফিরিয়ে নিচ্ছে স্নেহা, সাথে মুচকি হাসছে আর ব্লাশিং হচ্ছে রাহুলের কান্ডে, রাহুল কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তেডি স্মাইল দিয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়লো, দু-জনেই চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ, নিরবতা ভেংগে স্নেহাই বলে উঠলো ]

স্নেহা : রাহুল!

রাহুল : হুম!

স্নেহা : আপনার বাবা আর মা এসেছিলো কিছুক্ষণ আগে!

রাহুল : [ হেসে ] আমাকে মজা করতে নিষেধ করে এখন নিজেই মজা করছো!

স্নেহা : মজা করছি না সিরিয়াসলি রাহুল! [ এক্সাইটেড হয়ে ] এই নেকলেসটা দেখেন আমাকে আগে পড়তে দেখেছেন এটা? [ রাহুল স্নেহার গলার দিক তাকালো ]

স্নেহা : আপনার মা পড়িয়ে দিয়েছে দেখেন! আমি তো ওদের দেখে ফাষ্টে পুরাই অবাক,

– আপনার মতো আমিও নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না, নাও আই এম সো্ সো্ হ্যাপি! [ রাহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিক ]

স্নেহা : কি হলো বিশ্বাস হচ্ছে না? ঠিকাছে তাহলে আপনার দাদী থেকেই ফোন করে জিজ্ঞেস করেনিন! আচ্ছা আচ্ছা না হয় আপনার মায়ের কাছ থেকেই জিজ্ঞেস করেনিন!

রাহুল : লিসেন্ট! এটা কিভাবে সম্ভব?

স্নেহা : সম্ভব রাহুল! আপনার ফ্রেন্ডস আমার ফ্রেন্ডস আর দাদী মিলেই ওদের একসাথে আনার প্লানটা করেছে দারুণ না? সব বরাবরই হয়েছে!

– রাহুল! আমরা চেষ্টা করলেই ওদের আবার এক করতে পারবো!

রাহুল : কিন্তু স্নেহা!…

স্নেহা : কোনো কিন্তু না রাহুল! আমরা যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনটাই তো হচ্ছে তাই না? আপনার প্যারেন্টস আমার প্যারেন্টস এর সাথে কথা বলে গিয়েছে..সবাই কতো খুশি!

– আপনার মা তো এটাও বলে গিয়েছে যে বিয়ে আজ হচ্ছে না কাল হচ্ছে! আজ রাতে ওনি গায়ে হলুদের জন্য হল বুকিং করে রেখেছে! আই মিন আজ রাতে আমাদের গায়ে-হলুদ হবে!

রাহুল : হোয়াট? আর তুমি মেনে নিয়েছো?

স্নেহা : হ্যাঁ! কেনো কি হয়েছে?

রাহুল : আর আমি যেটা ফিক্সড করেছি ওটার কোনো ভেলু নেই তাই না? স্নেহা! তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো? ওরা বললো আজ বিয়ে হবে না তুমি ও সেটা মেনে নিয়েছো! কি হয়ে গেছে তোমার?

স্নেহা : রাহুল! ওরা সবাই অনেক খুশি! আমরা যে ডিশিসনটা নিয়েছি এটাই শুধু আমরা আমরাই থাকতাম, এখন আমাদের দু-পরিবার আত্মীয়স্বজন সকলেই থাকবে…

– আপনার বাবা-মায়ের ওতো কতো আশাছিলো আপনার বিয়ে নিয়ে তাই না?

রাহুল : তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছো আজকে বিয়ে করবে না!

স্নেহা : বিয়ে আজ হোক আর কাল হোক তাতে কি এসে যায় রাহুল?

রাহুল : [ দাত কিলিয়ে ] তোমার কিছু না হতে পারে স্নেহা! কিন্তু আমার অনেক কিছু এসে যায়,

– ভালোবাসি তোমাকে স্নেহা! নিজের থেকে দূরে রাখতে ভয় হয়! তোমাকে হারানোর অস্থিরতা কাজ করে প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা ঘন্টা, প্রতিটা মুহুর্ত!

স্নেহা : [ রাহুলের হাতের উপর হাত রেখে ] রাহুল! আই নো আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন! কিন্তু…একবার ওদের কথা ও ভাবুন! আর একটা দিনই তো… এরপর তো আপনার স্নেহা আপনার কাছেই থাকবে তারপর আপনার আর ভয় পেতেও হবে না.. [ রাহুল স্নেহার হাত সরিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে সামনের সিটে গিয়ে বসে পড়ে ]

স্নেহা : [ অবাক হয়ে তাকিয়ে ] আরে রাহুল! আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো?

রাহুল : [ সানগ্লাস চোখে লাগিয়ে গাড়ী স্টার্ট দিয়ে ] বাসায় যাও স্নেহা!

স্নেহা : [ পা তুলে পেছন থেকে সামনের সিটে এগিয়ে এসে বসে ] যাবো না!

রাহুল : জেদ করো না স্নেহা! বাসায় যাও!

স্নেহা : আর আপনি কি করছেন? [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ] দেখেন রাহুল! এখন তো সবই ঠিকঠাক! আমার পরিবার খুশি,আপনার পরিবার খুশি, ইনফ্যাক্ট আমি ও অনেক খুশি এসবে, আর কি চাই!

রাহুল : ব্যাস স্নেহা! বাসায় যাও আমার বেরুতে হবে,পরে কথা বলবো!

স্নেহা : [ নাক ফুলিয়ে ] আপনার ভেতরের এই এটিটিউডের কারণে কারো খুশিই আপনার চোখে দেখছেন না! প্রবলেম আপনার বাবাই এটা খুলে বললে প্রবলেম কি? [ জানালার উপর হাত রেখে বাইরের দিক তাকিয়ে রইলো রাহুল ]

– আপনি ঐ দিক ফিরে আছেন কেনো? আমি এইদিকে, এইদিক থেকে কথা বলছি! এইদিকে তাকান!

রাহুল : আচ্ছা বাবা হয়েছে! তোমরা আজ গায়ে-হলুদ করো! বিয়ে যখন কাল, আমি কালই আসবো বিয়ে করতে!

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] আরে এটা কেমন কথা?বিয়ে কি শুধু আমার নাকি? যে গায়ে হলুদ আমার একার হবে!

– দেখেন এখন থেকে আপনার কথায় চলবে না, আমার কথায় হবে, সো্ আপনার আজ ও আসতে হবে কাল ও আসতে হবে!

রাহুল : দেখা যাবে!

স্নেহা : [ বিরক্তি হয়ে ] আপনি? [ বলেই গাড়ীর চাবিটা মুচড়া-মুচড়ি করে টেনে খুলে ছুড়ে মারলো রাহুলের গায়ে ]

রাহুল : আরেহ? [ বলতেই রাহুলের চোখ থেকে সানগ্লাসটা টেনে নিয়ে নাক ফুলিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে, ধুপ করেই আবার দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো,

তাকিয়ে আছে রাহুল গ্লাস দিয়ে স্নেহার চলে যাওয়া, অপেক্ষায় আছে স্নেহা কখন ফিরে তাকাবে, তাকালোই না স্নেহা! ঢুকে গেলো গেইটের ভেতর, মনেমনে ভাবতে লাগলো রাহুল, আজিব একবার তাকালো ও না, বলেই চাবি লাগিয়ে গাড়ী স্টার্ট দিতেই দেখে গেইট থেকে মাথা বের করে আবার উকি দিচ্ছে স্নেহা, হনহনিয়ে এগিয়ে আসছে এইদিকটায়, রাহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ]

স্নেহা : [ জানালা দিয়ে সানগ্লাসটা ছুড়ে মেরে ] আমি আপনাকে বাই বলতে আসিনি! আপনার সানগ্লাসটা দিতে এসেছি! [ বলেই চলে যাচ্ছে, মনে মনে হাসতে লাগলো রাহুল গেইটের সামনে গিয়ে আবারো একবার ফিরে তাকিয়ে ঢুকে পড়লো স্নেহা, রাহুল ও তেডি স্মাইল দিয়ে সানগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে গাড়ী টান দিয়ে চলে গেলো ]

________________সন্ধ্যায়_________________

মার্জান : মাশাল্লাহ! স্নেহা! বললাম না তোকে আজ এইড্রেসে টিয়াপাখি লাগবে! [ মুচকি হাসলো স্নেহা ]

শায়লা : হোয়াট স্নেহা! সব ঠিকাছে তো? রাহুলের সাথে মিট করে আসার পর থেকে দেখছি মুখ গোমড়া করে রেখেছিস!

স্নেহা : [ হেসে ] আরে নাহ! তেমন কিছুই না সবই ঠিকাছে…ব্যাস একটু নার্ভাস লাগছে ওখানে সবার সামনে তাই…

জারিফা : আরে নার্ভাসের কি আছে! আমরা সবাই তো থাকবোই তুই একা নাকি?

মার্জান : আর বিশেষ করে রাহুল তো থাকবেই তোর পাশে! তাই না!

জারিফা : হ্যাঁ! রাহুল তো তোর পাশেই আঠার মতো লেগে থাকবে!

স্নেহা : [ মুচকি হেসে ] আচ্ছা! তোদের আর কি কি বাকি আছে পড়ে নে! আমি একটু রাহুলকে কল করে আসছি!

জারিফা : ওকে ওকে যাহ! বলে আয় যা বলার!

[ মোবাইল হাতে নিয়ে বারান্দায় এগিয়ে এলো স্নেহা, মনে অস্থিরতা কাজ করছে এক তো তার ফ্রেন্ডসদের মিথ্যে বললো রাহুল রাগ করেনি, আবার এটাও ভয় করছে রাহুল আসবে নাকি আসবে না, কি আজিব পাচ-ছয় ঘন্টা হয়ে গেলো অথচ একটা ফোন ও করলো না, তারউপর মোবাইলটা ও বন্ধ করে রেখেছে! ]

স্নেহা : [ মনে মনে ] হয়তো রেগে আছে, তাই কল দেইনি, না নাহ, এটাও তো হতে পারে যে রাগ করেনি আমি ব্যস্ত থাকবো মনে করে কল দেইনি!

– কিন্তু যাওয়ার সময় তো রেগেই গিয়েছিলো,উফফ এতোটা রাগার কি আছে, একটা কল তো করতে পারতো!

– আরে হ্যা! রাহুল তো আমার উপর বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারে না, তারমানে হয়তো ও বিজি, তাই কেউ ডিস্টার্ব না করার জন্য বন্ধ করে রেখেছে, হ্যা! এটাই হবে [ বলেই হেসে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিলো হঠাৎ আবার দাঁড়িয়ে গিয়ে ] কিন্তু যতো বিজিই থাকুক আমার সাথে কথা না বলে তো থাকতেই পারে না, তার মানে রেগেই আছে,

হঠাৎ,

জারিফা : [ এগিয়ে এসে ] স্নেহা! হয়েছে? গাড়ী বসে আছে কখন থেকে, তখন তোর চিকনিচ্যামেলি শ্বাশুরী বলবে নাজানি আমার ছেলের বউকে এরা কোন ভূত সাজাচ্ছে তাই এতো লেইট হচ্ছে!

স্নেহা : [ হেসে ] হ্যা..হ্যা! হয়েছে!

জারিফা : তাহলে চল! যাওয়া যাক! [ মাথা নাড়ালো স্নেহা, সবাই গিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলো, গাড়ী রওনা দিলো ]

আধঘন্টার মধ্যেই হলে এসে পৌছালো,

জারিফা : আরে ওয়াহ কি সুন্দর সাজিয়েছে!

মার্জান : হ্যা! তাতো আমরাও দেখছি! এবার নামবি?

জারিফা : হ্যা! নামছিই তো! [ বলেই এক এক করে সবাই এসে নামতে শুরু করলো, স্নেহা নামতে যাবে ঐ সময় ]

রাহুলের বাবা : [ এগিয়ে এসে ] স্নেহা! এক মিনিট ওয়েট করো এখন নেমো না! [ বাকিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, স্নেহা ও অবাক হলো ]

হঠাৎ

শায়লা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] আরে ওয়াহ! পালকি? স্নেহা দেখ!

রাহুলের বাবা : এইদিকে রাখো! এইদিকে [ স্নেহার দিক তাকিয়ে ] স্নেহা! এসো!

জারিফা : আংকেল! স্নেহা ভেতরে পালকি করে যাবে?

রাহুলের বাবা : হ্যা! পালকি করেই যাবে!

জারিফা : ওয়াও আংকেল! দারুণ তো আইডিয়াটা! আরে স্নেহা আয়..উঠনা!

[ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে নেমে এসে পালকিতে উঠে বসলো, মনে মনে ভাবছে স্নেহা, কি আজব ব্যাপার যা কখনো কল্পনাও করেনি সেসবি হতে চলছে.. এখন তো ব্যাস একটাই চিন্তা শুধু রাহুলটা ও যেনো রাগ না করে এসে যায়, পালকি উঠিয়ে হলের ভেতর প্রবেশ করানো হচ্ছে, বাকিরা ও পেছন পেছন এগিয়ে আসছে, ওয়াকিং ওয়ের রেড কার্পেটের শুরুতেই পালকি এসে থামলো,

পালকি নিচে রাখতেই, ধীরেধীরে স্নেহা পর্দা সরিয়ে এক পা মাঠিতে রেখে মাথা বের করতেই চারদিকের ঝলমলে বাতি সব বন্ধ হয়ে যায়,

বেড়িয়ে উঠে দাড়ালো স্নেহা, দু-পাশ থেকে আগুনের ঝলক ভেসে এলো, লাইন ধরেই সারিসারি রাহুলের ফ্রেন্ডস সব ক্যান্ডেল লাইট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কি অদ্ভুত দেখতে লাগছে চারদিক হলুদ রঙের ছায়া হয়ে আছে, ফুলের মালা দিয়ে তো কখন থেকে সেজে বসে ছিলো স্নেহা, কিন্তু সুভাষ ছড়াচ্ছিলো না, এখনি বুঝি ফুলগুলিও সুভাষ ছড়িয়ে দিচ্ছে, চুড়ি আর পায়েলের ঝংকার গুলিও এখন কানে ভাসছে,

হঠাৎ সামনে কারো ছায়া দেখতে পেলো, এক মুহুর্ত ও লাগেনি স্নেহার সেই ছায়াটি কার চেনার জন্য,ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো স্নেহার, উপর থেকে ছায়াটির উপর হলুদ বাতি জ্বলে উঠলো, বরাবরের মতোই চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে হোয়াইট পাঞ্জাবি ব্লাক চুরিদারী প্যান্ট সাথে তেডি স্মাইল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাহুল, স্নেহা থেকে যেনো সে চোখই সরাতে পারছিলো না, সাদা দেহের মাঝে সবুজ রঙ এর শাড়ীতে ডার্ক হয়ে আছে আজ স্নেহা, মাথায় লাগানো ফুটে থাকা সবুজ ফুল গুলোর মতো, লাল ঠোটের কোণে মুচকি হাসিটিও আজ অপরুপ লাগছে স্নেহার, আজ কারো নজর লাগুক না লাগুক রাহুলের নজর তো নিশ্চয় লাগবে স্নেহার,পাশ থেকে রিদোয়ান এসে রাহুলের হাতে স্পিকার ধরিয়ে দিলো,

স্নেহা : [ মনে মনে ] সব জায়গায় গান নিয়ে উপস্থিত থাকে আর নিজের বিয়েতে গান করবে না এটা কি হয় নাকি! তবে এতো ঢং করে এন্ট্রি নেওয়ারি যখন ছিলো তখনের ঢংটা না করলেই চলতো,শুধুশুধু সারাদিন টেনশনে ছিলাম! [ কানে মিউজিক টোন ভেসে আসলো সবার ]

জারিফা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] আরে ওয়াহ! জিজু! হারিয়াপ গাওনা আর তো ওয়েট হচ্ছে না শোনার!

মার্জান : শিসস! চুপ করবি! শুনতে দে না!

রাহুল : ♪♪ সুরাজ্ হুয়া্ মাধ্যাম ♪♪

♪♪ চাঁদে জ্বালনে লা্গা ♪♪

♪♪ আসে্মায়ে হায় ♪♪

♪♪ কিউ ভি্গালনে লা্গা ♪♪

[ মুচকি হাসলো স্নেহা, রাহুল ও একটু হেসে কিছুটা এগিয়ে এসে আবার থেমে গিয়ে ]

– ♪♪ মে ঠে্হরা রাহা যা্মি চালনে লাগি ♪♪

♪♪ ধা্রকায়ে দিল সা্সে্ থা্মনে লাগি ♪♪

♪♪ ওও কিয়া ইয়ে মেরা পে্হেলা পে্হেলা পি্য়ার হে ♪♪

[ স্নেহার কাছে এসে হাটু মাটিতে রেখে বসে ]

♪♪ সা্জনা~আ~ কিয়া ইয়ে মেরা পে্হেলা পে্হেলা পি্য়ার হে ♪♪

[ মাইকটা আসিফের হাতে ছুড়ে মেরে স্নেহার হাত ধরে একটি চুমু খেয়ে এগিয়ে, স্টেজের দিক নিয়ে যেতে লাগলো, সবাই একত্রে চিৎকার করে জোড়ে-সোরে তালি দিতে লাগলো, ক্যান্ডেল লাইট গুলো নিভাতেই চারদিক গ্রীন ঝলমলে ডোম লাইট গুলো ও জ্বলে উঠলো ]

মার্জান, জারিফা, শায়লা তিনজনই এক্সাইটেড হয়ে চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে, হঠাৎ রাহুলের মা কে দেখে,

জারিফা : আরে ওয়াহ আন্টি! মাশাল্লাহ!

রাহুলের মা : মাশাল্লাহ! তোমাদের ও ওয়াও লাগছে! আর তোমাকে দেখে তো রিদোয়ান আজ হা করে তাকিয়ে থাকবে! [ জারিফা লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে যায় ]

মার্জান : আন্টি! আপনি কিভাবে..

রাহুলের মা : হুমম! আজই শুনেছি রাহুল থেকে সব, [ হাসতে লাগলো সবাই ]

রাহুলের মা : আচ্ছা তোমরা এঞ্জয় করো আমি আসি! ওকে!

মার্জান : ওকে আন্টি! [ চলে গেলো রাহুলের মা ]

শায়লা : [ চারদিক চোখ বুলিয়ে ] গাইস্ হল তো মনে হচ্ছে না যেনো লাগছে তাজমহল?

মার্জান : এই প্লেসটা দেখ নিশ্চয় ডান্সের জন্য বানিয়েছে…উফফ! ডান্স কবে করবো! আমার তো এক্ষুণি নাচতে মন চাইছে!

জারিফা : [ হেসে ] শুরু হয়ে যা! তোকে কে নিষেধ করছে নাকি? [ বলতেই হঠাৎ পাশ থেকে রিদোয়ান এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে একপাশ নিয়ে গিয়ে দাড়করায়, শায়লা আর মার্জান হাসতে থাকে ]

রিদোয়ান : ওয়াও! হোয়াটে এ সেক্সি লুক!

জারিফা : আচ্ছা? থেংক ইউ! বাই! [ বলেই দৌড় দিচ্ছিলো ]

রিদোয়ান : [ টেনে ধরে ] বাই? তাই না?

জারিফা : দেখেন আসেপাশে সবাই দেখছে!

রিদোয়ান : সো্ হোয়াট? আমরা প্রেম করছি ওরাও একটু দেখুক!

________________এইদিকে_______________

মার্জান আর শায়লা সেল্ফি নিচ্ছিলো হঠাৎ,

মার্জান : আরে ওয়াহ! শায়লা তুই তো দারুণ শিস বাজাতে পারিস!

শায়লা : [ একটু কেসে ] শিস এপাশ থেকে নয় ওপাশ থেকে বেজেছে! [ বলতেই মার্জান পাশ ফিরে তাকিয়ে অবাক হলো ]

আসিফ : হুমম! থেংক্স ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট!

মার্জান : এত্তোটাই বাজে ছিলো না! কি বলবো? মরা মানুষ শুনলে ও জেগে উঠে বলতো এক্সকিউজ মি প্লিজ আপনার শিস বাজানোটা বন্ধ করবেন! আমি মরেও আপনার শিস বাজানো শুনে শান্তি পাচ্ছি না!

আসিফ : [ হেসে ] তাইই! [ শায়লাও কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো ]

মার্জান : জ্বি তাইই!

আসিফ : বাই দ্যা ওয়ে যতোটা সুন্দর লাগবে ভেবেছিলাম ততোটাও লাগছো না!

মার্জান : আচ্ছা? আপনি অন্তত আমার ব্যাপারে ভেবেছেন হলেও..বাট আফসোস আমি তো আপনার ব্যাপারে সেটাও ভাবিনি!

– আর হ্যা! আপনার ড্রেস লুকে মনে হচ্ছে ছোলা ছাড়া ডিমের কুসুম হুহ! [ বলেই মুখ ভেংগিয়ে শায়লার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায়, আসিফ হাসতে থাকে ]

____________অন্যদিকে স্টেজে____________

স্নেহা : [ ফিসফিসিয়ে ] বলেন না! তখন আমার সাথে এতো ঢং করলেন কেনো!

রাহুল : শাট-আপ স্নেহা!

স্নেহা : আমিতো শাট-আপই ছিলাম! আপনার কারণেই অর্ধেক বকবক করতে হয়েছে!

– এখন আবার আপনি চুপ করে আছেন কেনো? বলেন না, আপনি ইচ্ছে করেই তখন ঢং করেছিলেন তাই না! [ হাসি পাচ্ছিলো রাহুলের স্নেহার কান্ডে, পকেট থেকে চুইংগাম একটা বের করে প্যাকেট খুলে স্নেহার মুখে ঢুকিয়ে দিলো, শকড হয়ে গেছে স্নেহা ]

রাহুল : এবার চুপচাপ এটা চিবাতে থাকো,প্রশ্ন পরে করিও! [ with tedi smile ]

আড়চোখে তাকিয়ে মুখ ভেংগিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো স্নেহা,

রাহুল : [ হেসে ] ক্যামেরায় উঠবে মুখ ভেংগানো, তখন সবাই বলবে বউটা ঝগড়াটে,

স্নেহা : বাস্তবে তো হতে পারলাম না অন্তত ক্যামেরায় হতে সমস্যা কি?

রাহুল : তবে আজ বাস্তবেই একটু বেশি ঝগড়া করছো!

স্নেহা : আপনার বিহেভিয়ারে ঝগড়া করতে হচ্ছে, হুহ! [ মুচকি হেসে চুপ করে রইলো রাহুল ]

স্নেহার নিজেকে সেলেব্রেটিই মনে হচ্ছে আজ, সবাই যেভাবে তাদের ছবি নিতে ব্যাস্ত! দূর দিক তাকাতেই স্নেহার রাহুলের বাবার দিক চোখ পড়লো, তার বাবার সাথেই কথা বলছে,আসেপাশে আরো কয়েকজনও আছে কিন্তু স্নেহা চিনে না, মাথায় বুদ্ধি এলো রাহুলকে নাচানোর,

স্নেহা : [ রাহুলকে চিমটিয়ে ] শুনেন!

রাহুল : আহ! মুখে বললেই তো হয় বাচ্চাদের মতো চিমটানো আর গাল টেনে দেওয়া ছাড়া কিছু জানো না?

স্নেহা : আচ্ছা ঐদিকে দেখেন আপনার বাবা, আমার বাবা, [ রাহুল হেসে অন্যপাশ ফিরে গেলো ]

– আরে দেখেন না, কি হ্যান্ডসাম লাগছে আপনার বাবাকে তাই না, ও হ্যা! আমার বাবাকে ও!

রাহুল : আমি শুরু করলে কিন্তু লজ্জায় কোথায় লুকাবা জায়গা খুজে পাবানা স্নেহা?

– ইউ নো রোমান্স করতে আমার টাইমিং আর ক্যারেক্ট প্লেস লাগে না,

স্নেহা : না..নাহ! ওকে! আ..আমি তো মজা করছিলাম! আপনার কিক..কিছু করতে হবে না [ বলেই জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে সোজা তাকিয়ে রইলো, হাসতে লাগলো রাহুল ]

চলবে…

Love At 1st Sight Season 3 Part – 47

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 47

writer-Jubaida Sobti

স্নেহা : আমি সপ্ন দেখছি? নাকি সত্যি সত্যিই দেখছি ?

মার্জান : স্নেহা সপ্ন না সত্যিই দেখছিস! [ বলেই স্নেহাকে সামনেরদিক ধাক্ষা দিলো, স্নেহা তাতে ও শক্ত হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে ]

স্নেহার মা : [ পিছিয়ে এসে মার্জানের দিক তাকিয়ে ধীরো ভাবেই বলতে লাগলো ] এরা কারা?

জারিফা : আরে আন্টি এরা আপনার মেয়ের হবু শ্বশুর আর শ্বাশুরী! আই মিন রাহুলের বাবা-মা!

স্নেহার মা : কিন্তু আমিতো শুনলাম ওরা একসাথে থাকে না তাহলে…

মার্জান : ব্যাস! আন্টি আপনি ও এখনো ঐ সামিরের কথায় পড়ে আছেন! আগে বাড়ুন, আর ওদের আপ্যায়ন করুন! যান যান! [ বলেই এগিয়ে দিলো ]

স্নেহার মা : হ্যাঁ! হ্যাঁ! [ বলেই সোফা ঠিক করে দিয়ে ] আরে আসুন আসুন ভেতরে..এইখানে বসুন! [ রাহুলের বাবা-মা দুজনই ভেতরে এগিয়ে এসে দাড়ালো ]

রাহুলের মা : কেমন আছো স্নেহা ?

স্নেহা : আ..আন্টি..আং..আংকেল! আ..আপনারা একসাথে…মা..মানে…

রাহুলের বাবা : স্নেহা! শকড হয়ে আছো কেনো?

রাহুলের মা : [ চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ] নিশ্চয় স্নেহার কারো একজনের চেহেরা মোটেও পছন্দ হয়নি!

– [ মুচকি হেসে ] তুমি আমার সাথে এসো [ বলেই স্নেহার হাত ধরে নিয়ে এগুচ্ছিলো, হঠাৎ আবার পেছন ফিরে এসিস্ট্যান্ট এর দিক তাকিয়ে ] জিনিষপত্রগুলো এইখানে একপাশ করে রেখে দাও [ বলেই স্নেহাকে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো ]
_______________________________________

জারিফা : [ ফিসফিসিয়ে ] আরে গাইস্ কি স্টাইল ছিলো সানগ্লাস খোলার, আমি ছেলে হলে তো এতোক্ষণে লাইন মারা শুরু করে দিতাম,

শায়লা : তুই চুপ করবি! সিরিয়াসলি ম্যাটার চলছে আর তুই আছিস তোর নাটক নিয়ে!
_______________________________________
রাহুলের মা : তোমার ফ্রেন্ডসদের দেখছিনা? ওরা কোথায়?

জারিফা : [ পর্দার আড়াল থেকে চেচিয়ে ] হ্যালো আন্টি! উই আর হেয়ার!

রাহুলের মা : ঐখানে কি করছো এইখানে এসে বসো!

মার্জান : নো নো আন্টি! ইটস্ ওকে, আমরা এইখানেই ঠিক আছি! [ হঠাৎ স্নেহার বাবা ও এসে ঢুকলো, স্নেহার মা ইশারায় বুঝিয়ে দিলো এরা রাহুলের বাবা-মা, সাথেসাথেই কোলাকুলি আর হ্যান্ডশেক করে রাহুলের বাবার পাশেই বসলো স্নেহার বাবা ]

রাহুলের মা : হঠাৎ করে আপনাদের না জানিয়ে এভাবে চলে আসার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি!

স্নেহার মা : না না এতে কোনো সমস্যা নেই!

রাহুলের মা : আসলে আপনারা ও হয়তো জানেন ব্যাপারটা যে রাহুল আর স্নেহা,দুজন দুজনকে পছন্দ করে,এবং তারা চাইছে তাদের বাকি জীবনটা একসাথেই কাটিয়ে দিবে, সো্ আমিও তাদের সাথে একমত হয়ে বলতে চাচ্ছি যে ওদের ভালোবাসার রাস্তায় যেনো আমাদের মাঝ থেকে কেউ কাটা হয়ে না দাড়ায়,

– স্নেহাকে পাওয়ার পর আমার রাহুলের লাইফটাই বদলে গেছে, সে তার গম্ভীর দুনিয়া থেকে বেড়িয়ে এসেছে, আবার নতুন করে হাসতে শিখেছে, রাহুল অনেক খুশি স্নেহাকে পেয়ে, আর আমার মনে হয় না ওর জন্য স্নেহার চেয়ে বেটার লাইফ পার্টনার আর কেউ হতে পারে বলে,

– ছেলে তো আমার আছে, তবে একটা মেয়েরই কমতি ছিলো, আশা করি আপনারা চাইলে আমার সেই কমতিটাও স্নেহাকে দিয়ে পূরণ হয়ে যাবে,

রাহুলের বাবা : [ স্নেহার বাবার দিক তাকিয়ে ] কি বলেন ব্রাদার? শুনলাম আপনি নাকি রাহুলের জন্য একদমই রাজি না?

স্নেহার বাবা : [ মুচকি হেসে ] রাজি তো ছিলাম না, তবে গতকাল সন্ধ্যায় আমাকে যে ঠ্রেড দিয়ে গিয়েছিলো তখনি আমি বুঝে গিয়েছিলাম কিছু তো আছে এই ছেলের মধ্যে,

– হয়তো যেমনটা খুজছিলাম স্নেহার জন্য তেমনটা ও নিজেই খুজে নিয়েছে,

– তাই ডিশিসন নিয়েছিলাম আমার মেয়ে যেহেতু ওকেই চাইছে তাই কথাবার্তা বলে রাজি হয়েই যাবো,

– রাতে যখন বাসায় এসেছে রাহুল, ঐসময় ওর ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিলো আমি যদি এখন কিছু বলি তাহলে ও আমাকেই রিপিট জবাব দিবে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসে ও স্নেহাকে, আর আমি চাইছিলাম ও এমন একজন যে আমার চেয়ে বেশি আমার মেয়েকে ভালোবাসবে,

– আর তারপর কি করেছে? স্নেহাকে বিয়ে করলে আমি ওর শ্বশুর হবো তো তাই না?

– আমার সামনেই সে কি কান্ড, হ্যা আমি জানি ও স্নেহাকে অনেক ভালোবাসে তাই বলে আমার সামনেই…[ সবাই মিটিমিটি হাসতে লাগলো ]

– আচ্ছা রেসপেক্ট নামের একটা জিনিস আছে তো তাই না? আমাকে দেখলেই এমনভাব করে যেনো আমাকে ও চিনেই না, আমি স্নেহার কিছুই হই না, না কোনো সালাম, না হাই-হ্যালো কিছুই করে না খালি বলে সাইড প্লিজ, [ হঠাৎ কিটকিটিয়ে হেসে দিলো জারিফা, সবাই পাশফিরে তাকানোর আগেই জারিফার মুখ চেপে ধরে ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো মার্জান ]

রাহুলের বাবা : ভাই! আপনার সাথে হাই-হ্যালো কি করবে? আমি তো ওর বাবা তাই না? আমার সাথেই কখনো হাই-হ্যালো করেনি! কথা বলতে হলে আমার এসিস্ট্যান্ট মুরাদের দিক তাকিয়ে বলবে, মুরাদ ভাই বলে দাও এমন করতে হবে, বলে দাও ওমন করতে হবে, [ হেসে উঠলো স্নেহার বাবা, সাথে বাকিরাও ]

স্নেহার বাবা : রাহুলের প্রতি আমার সব ধারণাই ভুল ছিলো ওকে দেখার পর বুঝলাম ওর চেয়ে বেশি খুশি স্নেহাকে আর কেউই রাখতে পারবে না, হ্যা তবে একটু চঞ্চলতা বেশি,

রাহুলের মা : [ হেসে ] একটু না অনেক বেশি!তবে যাকে একবার ভালোবাসবে তারজন্য মনপ্রাণ উজাড় করে দিবে,

স্নেহার বাবা : হ্যা! তাতো দেখলামই গতকাল রাতে, আরো কতো কি উজাড় করতে পারে, [ স্নেহার মা ও হাসতে লাগলো ] আসলে আপনাদের দু-জনের প্রতি ও আমাদের অনেক ভুল ধারণা ছিলো, [ চুপ করে রইলো রাহুলের বাবা-মা ] কিন্তু এখন সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে,

রাহুলের বাবা : আচ্ছা এসব বাদ দেন, এবার বলুন স্নেহা আমাদের মেয়ে হচ্ছে তো?

স্নেহার বাবা : কথাটা তো আমারই বলার দরকার! আপনাদের মতো এতোবড় পরিবারে আমার স্নেহাকে নিতে চাইবেন এটা আমাদের ভাগ্যের ব্যাপার!

রাহুলের বাবা : আরে এসব কি বলছেন! স্নেহার মতো কাউকে নিজের মেয়ে হিসেবে পাওয়া এটা আমাদের সৌভাগ্য!

স্নেহার বাবা : [ হেসে ] রাহুল! কাল বলে গেলো আজই নাকি বিয়ে করছে, আমাদের তো দাওয়াত ও দিলো না, তাই আমিও আর কিছু বললাম না ভেবে রাখলাম বিনা দাওয়াতেই চলে যাবো!

রাহুলের মা : [ হেসে ] ভেবে রাখার আর দরকার নেই, এখন তো আমরা সবাই রাজি, সো্ তাই এখন আর ওদের কথায় চলবে না, আমরা যা বলি তাই হবে,

– বিয়ে আজ হচ্ছে না, [ অবাক হয়ে তাকালো স্নেহা, জারিফা, মার্জান, শায়লা ]

রাহুলের মা : [ মুচকি হেসে ] কাল হবে বরং আরো ধুমধাম করে, [ স্নেহার ফ্রেন্ডসরা এক্সাইটেড হয়ে তালি দিয়ে উঠলো ]

রাহুলের মা : [ মুখ গোমড়া করে ] আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা, কতো তৈরী সৈরী বাকি, আজকের মধ্যেই যদি বিয়ে হয় এতো কিছু আ্যরেঞ্জ করবো কিভাবে?

জারিফা : আরে আন্টি কতোদিন ধরে অপেক্ষা করছি এই বিয়ের, তারমানে আজ ও কেন্সেল, আমিতো ভেবেছি আজ রাতে সেজেগুজে রাহুল আর স্নেহার জন্য একটা ডান্স দিবো,

রাহুলের মা : আরে মন খারাপ করছো কেনো ডান্স ও হবে অবশ্যই, তাও আজ রাতেই!

জারিফা : [ কনফিউজড হয়ে ] কিক..কিভাবে?

রাহুলের মা : বিয়ের আগেরদিন কি হয়?

মার্জান : [এক্সাইটেড হয়ে ] গায়ে হলুদ!

রাহুলের মা : হ্যা! গায়ে হলুদ! আমি আসার সময় এসিস্ট্যান্টকে বলে কার্বন-হল বুক করে ফেলেছি, রাতে আপনারা আপনাদের রিলেটিভসদের সবাইকে সাথে নিয়ে চলে আসবেন, লেইট করবেন না কিন্তু বাকিদের ও এক্ষুণি বলেদেন নাহয় লেইট হয়েই যাবে,

রাহুলের বাবা : আর হ্যা! এসব অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে বলে সব অ্যারেঞ্জমেন্ট কিভাবে করবেন এটা নিয়ে মোটেও চিন্তা করবেন না,স্নেহা যেহেতু এখন আমাদের তাই ওর সব কিছুর দায়িত্ব ও আমাদের!

জারিফা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] ওয়াও! আন্টি তারমানে রাহুল আর স্নেহার বিয়ের সব প্রোগ্রাম হবে! ইয়েসস্!

[ রাহুলের মা হেসে ব্যাগ থেকে বক্স বের করে, একটি গোল্ড নেকলেস পড়িয়ে দেই স্নেহার গলায় ]

মার্জান : [ ফিসফিসিয়ে ] মাশাল্লাহ! কি না লাগছে আমাদের স্নেহাকে,

রাহুলের মা : [ স্নেহার দিক তাকিয়ে ] এদিকে এসো, [ বলেই শপিং করে আনা জিনিষপত্রগুলোর পাশে নিয়ে গিয়ে দাড় করিয়ে ] এগুলো আমিই পছন্দ করে কিনেছি, সো্ সব কিছু পড়ে তৈরী হয়ে থাকবা! আমি গাড়ী পাঠিয়ে দিবো চলে আসবা, [ স্নেহার ফ্রেন্ডসদের দিক তাকিয়ে ] আর তোমরা শুনো ওর সাজে যেনো কোনো কমতি না হয়, নাহলে রাহুলকে বলে তোমাদের গেইট ধরার টাকা কমিয়ে দিবো,

মার্জান : [ এগিয়ে এসে ] আরে না না আন্টি! এমন ভাবে সাজাবো ওকে, হলে পা রাখতেই দেখবেন সবাই পাচমিনিটের জন্য সেন্সলেস হয়ে গেছে, আর এই রঙের ড্রেসে তো ওকে পুরো টিয়াপাখি লাগবে!

শায়লা : আরে সবাইকে সেন্সলেস করতে হবে না শুধু রাহুলকে করতে পারলেই হবে,

রাহুলের মা : [ হেসে ] আচ্ছা! হ্যা তোমাদের ড্রেস গুলো ও দেখেনিও, আর সাথে তোমরা ও এমনভাবে সেজে এসো যাতে বাকি ছেলেদের তোমরাই সেন্সলেস করে দিতে পারো!

মার্জান : [ অবাক হয়ে ] আমাদের জন্য ও শপিং?

রাহুলের মা : হুমম! আরে রাহুলের শালী বলে কথা! তাই না স্নেহা? [ মুচকি হাসলো স্নেহা, বিশ্বাসই হচ্ছে না এসব তার ]

জারিফা : বাই দ্যা ওয়ে আন্টি, বাকিদের সেন্সলেস আমাদের করা লাগবে না আপনার এন্ট্রিতেই অর্ধেক ছেলে ফিদা হয়ে যাবে, একটু আগেই না কিভাবে সো্য়েগ দিয়ে চশমা খুললেন! আমি তো অলরেডিই ফিদা! ব্যাস আরেকবার সো্য়েগটা যদি দেখিয়ে দিতেন আন্টি! [ রাহুলের মা হেসে চশমায় ফু মেরে চোখে পড়ে নিলো ]

জারিফা : ওয়াহহ আন্টি ওয়াহহ!

রাহুলের মা : [ হেসে ] আচ্ছা এখন আসি! রাতে দেখা হচ্ছে!

স্নেহার মা : আরে এভাবে খালি মুখে?

রাহুলের মা : খুশিতেই পেট ভরে গেছে আর কি লাগে! আজ আসি অন্য একদিন নিশ্চয় খাবো!

[ তাকিয়ে রইলো স্নেহা, রাহুলের বাবা-মা সবাই হাসিখুশি ভাবে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো, স্নেহা দৌড়ে গেলো বারান্দায়, স্নেহার ফ্রেন্ডসরা ও পেছন পেছন এগিয়ে এলো ]

স্নেহা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] গাইস্ আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না রাহুলের বাবা-মা একসাথেই..ইটস্ আন-বিলিভেবল!

শায়লা : আরে তোর চোখে পানি কেনো? তোর তো খুশি হওয়ার কথা!

স্নেহা : খুশি আমি অনেক অনেক খুশি! [ বলে নিচে তাকাতেই দেখে তিনটি গাড়ীর মধ্যে একটাই রাহুলের মা উঠেছে, আরেকটাই আলাদাভাবে রাহুলের বাবা, আরেকটা গাড়ী খালিই যাচ্ছে, অবাক হলো স্নেহা! এরাতো মিল হয়ে গেলো তাহলে আলাদা আলাদা যাচ্ছে কেনো, মার্জান বুঝতে পেরে স্নেহাকে টেনে ভেতরের রুমে নিয়ে চলে গেলো, হঠাৎ স্নেহার বাবা ও রুমে ঢুকলো ]

স্নেহার বাবা : [ স্নেহার চোখে পানি দেখে ] আরে স্নেহা! আবার কাদছিস কেনো? এখন তো সব ঠিক হয়েগেছে,

জারিফা : খুশিতে কান্না করছে আংকেল!

স্নেহার বাবা : [ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ] না জেনে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে, অনেক কঠোর কথা ও বলে ফেলেছি, যদি সম্ভব হয় মাফ করেদিস!

স্নেহা : আরে বাবা,তুমি কেনো মাফ চাইছো? আমি রাগ করিনি, ব্যাস একটু অভিমান করেছিলাম, কিন্তু এখন সেটাও চলে গেছে,
– [ মুচকি হেসে ] আর তুমি অন্তত অভিনয় না করলে পারতে,

স্নেহার বাবা : আরে তুই ওতো বললি না যে বাবা আমরা আজ বিয়ে করতে যাচ্ছি, তুমিও এসো দোয়া দিতে, তাই আমি ও ভাবলাম তোদের না বলে আমিও গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো, [ জড়িয়ে ধরলো স্নেহা তার বাবাকে ]

জারিফা : আরে আংকেল, স্নেহাকে আজই সব কান্না করিয়ে নিবেন নাকি? কালকের জন্য ওতো কিছুটা বাচিয়ে রাখতে দিন!

শায়লা : আংকেল! সবাইকে ইনভাইট করা ওতো বাকি রয়েগেছে তাই না?

স্নেহার বাবা : আরে হ্যা! আমিতো ভুলেই গেলাম!

শায়লা : আপনিই যদি ভুলে যান তাহলে কিভাবে হবে আংকেল?

স্নেহার বাবা : আচ্ছা আমি আসি তোরা কথা বল! [ চলে গেলো স্নেহার বাবা ]

মার্জান : [ স্নেহাকে টেনে খাটে বসিয়ে ] আরে স্নেহা, আবার কি ভাবছিস?

স্নেহা : তোরা আগে থেকেই জানতি রাহুলের বাবা-মা আসবে তাই না? কিন্তু কিভাবে?

মার্জান : সব বলছি স্নেহা! রিলেক্স!

জারিফা : [ হেসে ] ফ্লাশবেক!

মার্জান : তুই আর রাহুল বেরুনোর পরপর আমরাও বেড়িয়ে পড়েছিলাম..

স্নেহা : কোথায়?

মার্জান : আ..আমি, শায়লা, আর ঐ যে ইডিয়ট একটা আছেনা,

শায়লা : আসিফ!

মার্জান : হ্যা! হ্যা যেটাই ওর নাম, [ জারিফা আর শায়লা হাসতে লাগলো ] তোরা আবার হাসছিস কেনো? শয়তানদের নাম মুখে না আনায় ভালো, আর আজকের এই শুভ দিনে তো মোটেও না,

শায়লা : আচ্ছা? তাহলে আজ তো ওর গাড়ী করেই ঘুরে এলি,

মার্জান : এক্সকিউজ মি! তোর জন্য! তোর জন্যই আমার ওর গাড়ীতে উঠতে হয়েছে, আমিতো চেয়েছিলাম, জারিফা আর রিদোয়ানের সাথে উঠতে কিন্তু তুই…

শায়লা : আরে লাভ আছে দেখেই তো [ আড়চোখে তাকালো মার্জান ] না না..মানে তুই,জারিফা, তোরা দুজনই একসাথে চলে গেলে আমি অতো কিছু বুঝতাম নাকি?তখন উল্টোপালটা কিছু যদি বলে ফেলতাম

মার্জান : [ একলাফেই ঝাপিয়ে ধরলো শায়লাকে ] কথা ঘুরাবিনা, বল কি লাভ আছে? নাহলে তো জানিষ আমি ক্লাস ফাইভে ক্যারাটিতে মেডেল পেয়েছি,

শায়লা : আরে ছাড়, ব্যাথা পাচ্ছি!

মার্জান : না বললে ছাড়ছি না,

শায়লা : আচ্ছা ছাড় বলছি, [ ছেড়ে দিলো মার্জান ] আস..আসলে..ও বলেছে যদি তোকে ওর গাড়ীতে বসাতে পারি, [ এক্সাইটেড হয়ে ] তাহলে রাহুলের গেইট ধরার সময় তোদের দিবে পঁচিশ পার্সেন্ট করে, আর বাকি পঞ্চাশ পার্সেন্ট ফুল আমাকে ওয়াও!

মার্জান : তুই আমার ফ্রেন্ড নাকি ওর, ঐ শয়তানটার ঘুষ খাচ্ছিস?

শায়লা : আরে তাতে প্রবলেম কি, যাই হোক ও বললো আমার ফিউচার জিজ…

মার্জান : থামলি কেনো বল? বলনা!

শায়লা : [ একলাফে খাট থেকে নেমে ] আমার ফিউচার জিজু হবে,

জারিফা : [ অবাক হয়ে ] ওয়াআওও!

মার্জান : দাড়া তুই! পালাচ্ছিস কোথায় [ বলেই দৌড়াতে লাগলো ]

স্নেহা : তোদের মারামারি হলে এবার বলবি ঘটনা কি?

মার্জান : [ দীর্ঘ একটি নিশ্বাস ছেড়ে খাটে এসে বসে ] বলছি ওয়েট! [ শায়লার দিক তাকিয়ে ] কিন্তু তোকে পড়ে দেখে নিবো,

স্নেহা : হ্যাঁ বাবা পরে সব দেখেনিস এবার তো বল,

মার্জান : আমি, শায়লা, আর ঐ শয়তানটা, আমরা গিয়েছিলাম রাহুলের মায়ের কাছে, শয়তানটাকে নিতামই না, নিতে হয়েছে কারণ আমরা তো আর রাহুলের মায়ের বাসা চিনি না তাই! তারপর ওখানে গিয়ে বসলাম, [ হেসে ] আন্টি সামনে আসার পর হাই-হ্যালো বলে বসে রইলাম, কারণ আমি ওনাকে ভেবেছি, নিশ্চয় রাহুলের বড় কোনো কাজিন টাজিন হবে,পরে ঐ শয়তানটা যখন আন্টি বললো তখনিই বুঝলাম যে নাহ এটাই রাহুলের মা, ওনার সামনে তো আমাদের নিজেকে খালাম্মাই মনে হচ্ছিলো, ভেবেছি রাগি-টাগি হবে, কিন্তু কথা বলে বুঝলাম না একদম রসমালাইয়ের মতো মিষ্টি,

স্নেহা : কি কথা বললি, যে ওনারা একসাথে আসার জন্য রাজি হয়ে গেছে,

মার্জান : আরে আমরা তো প্লান করেছি আলাদায় আসুক সমস্যা নেই, কিন্তু এইখানে আসলেই হলো, একত্রে আনার ক্রেডিট টা আরেকজনের,

স্নেহা : কার ক্রেডিট?

মার্জান : আরে বলছি বলছি, এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো? সিরিয়ালি বলি,

স্নেহা : আচ্ছা!

মার্জান : তারপর রাহুলের মাকে বললাম, আন্টি আপনি কি রাহুলকে হারিয়ে ফেলতে চান? ওনি বলবে কখনোই না এটা আমার জানাই ছিলো,

– তারপর আমি বললাম রাহুল তো দেবদাস হয়ে গেছে আন্টি, ও কাল রাত থেকে ড্রিংক্স করছে তো করছে থামছেই না, আমাদের এটাও বলেদিয়েছে [ কাদোভাবে ] যদি ও স্নেহাকে না পায়, তাহলে সুইসাইড করবে, তখন আন্টির চোখগুলো রসগোল্লার মতোই হয়ে গেছে, ঐ চান্সে আমিও বললাম আপনি কি চান এটা ও করুক?

– আর ওনি বললো কখনোই না, কিন্তু স্নেহা আর ওর মাঝে তো সব ঠিকই চলছিলো হঠাৎ আবার কি হলো?

– তারপর আমি বললাম, না আন্টি নাহ, কিছুই ঠিক নেই, সব শেষ হয়ে যাচ্ছে, স্নেহার বাবা রাহুলকে বললো যেখানে তোমার বাবা-মা একসাথে সংসার করতে পারেনি সেইখানে তুমি আর আমার মেয়ের সাথে কি সংসার করবে, আমি তোমার সাথে স্নেহাকে বিয়ে দেবো না,

– তারপর আমি বললাম, আন্টি! রাহুল অনেক রিকোয়েষ্ট করলো কিন্তু স্নেহার বাবা মানলোই না, বরং স্নেহাকে আরো এটাও বলেদিয়েছে যদি ও রাহুলকে বিয়ে করে তাহলে চিরজীবনের জন্য ওর ঐ ঘরের দরজা বন্ধ থাকবে,

– তারপর আন্টি বললো এটা কেমন কথা ওরা দুজন-দুজনকে ভালোবাসে,

– তারপর আমি বললাম, কি করার আন্টি স্নেহা ও বাধ্য হয়ে তার বাবার কথা মেনে নিয়েছে, কিন্তু রাহুল বলছে সে স্নেহাকে ছাড়া…

স্নেহা : তারপর কি বলেছে বলনা?

মার্জান : তারপর আন্টি বলেছে, আমার রাহুল যা চাইনি তা সবকিছুই পেয়েছে, কিন্তু যেটা চাই সেটা থেকেই বঞ্চিত হয়েযায়, কিন্তু আমি বেচে থাকতে ওকে আর ওর চাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে দেবো না, আমিই বলবো স্নেহার বাবার সাথে কথা,

স্নেহা : কিন্তু রাহুলের বাবা?

মার্জান : সেটা জারিফা থেকেই শোন ও গিয়েছে,

জারিফা : আমিও আর কি তুই যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিস ঐভাবেই বললাম, রাহুল দেবদাস হয়ে গেছে, স্নেহাকে ছাড়া নাকি ও থাকতে পারবে না ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ, তারপর দাদী আর রিদোয়ান মিলেই কয়েকটা লাইন আরো বাড়িয়ে বলে দিয়েছে,

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] দাদী ও?

মার্জান : হ্যা! দাদী ও! দাদীকে রিদোয়ান আর ঐ শয়তান কি যেনো নাম ওর, যেটাই হবে, ওরা দুজন মিলে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারপর দেখলাম দাদী তো আমাদের চেয়ে ডেরিং বেশী,

স্নেহা : মানে?

মার্জান : মানে রাহুলের মা যখন রাজি হয়ে আমাদের সাথে রাহুলের বাসায় আসলো, দাদী বললো একসাথে বিয়ের জন্য শপিং করে রাখা জিনিষ গুলো ও নিয়ে যেতে,

– তারপর রাহুলের মা কি বললো জানিস?

শায়লা : আরে! ও কেমনি জানবে?

মার্জান : বললো এগুলো একটাও যাবে না স্নেহার বাসায়, আমার একমাত্র ছেলে, ওর বিয়ের শপিং আমি নিজ হাতেই নিজ চয়েসে করবো,

শায়লা : কিন্তু স্নেহা! সবচেয়ে মজার ব্যাপার তো তখনি হয়েছে যখন রাহুলের বাবা আর মা সামনাসামনি হয়েছে,

স্নেহা : [ এক্সাইটেড হয়ে ] কি হয়েছে বলনা!

মার্জান : আরে আংকেল তো ফিরে তাকালো হলেও আন্টির দিক, কিন্তু আন্টি কি না এটিটিউড, আড়চোখে ও তাকালো না, চোখে সানগ্লাস পড়ে মডার্ণ ওয়াক দিয়ে গাড়িতে চলে যাচ্ছিলো,

– কিন্তু তখনিই দাদী বলে উঠলো, আরে তোমরা আলাদা আলাদা গেলে তো স্নেহার বাবা-মা এমনিতেও বুঝে যাবে,একসাথে গেলে হয়তো ওরা বুঝবে যে ওদের ধারণাটা ভুল! তখন আবার রিজেক্ট করে দিলে কি হবে আমার রাহুলটার? কিছুই তো করতে পারলা না জীবনে ওর জন্য! আজ না হয় তোমরা এইটুকুটা করো!

শায়লা : বাহ! কি অভিনয় ছিলো দাদীর! মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ!

মার্জান : ইয়েস্! তখনি আন্টি থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,স্নেহার বাসায় একত্রে ঢুকলেই হলো, কিন্তু গাড়ী! আমি আমারটাই উঠবো, কারো হেল্প এর প্রয়োজন নেই!

– তারপর আমি দাদীকে বললাম, দাদী এইটুকুতেই চলবে! কিন্তু তাড়াতাড়ি করুন রাহুল আসার আগে,

স্নেহা : তারপর বল, কি হলো?

মার্জান : তারপর দাদী বললো, আচ্ছা ঠিকাছে কিন্তু বিয়ের জিনিষপত্র গুলো তো নিয়ে যাও,

– তারপর আন্টি বললো, যাওয়ার পথে আমিই শপিং করে নিবো,

– তারপর আর কি আন্টি শপিং করে আসতে আসতে, এর আগে আমরা বাসায় এসে হাজির!

স্নেহা : রাত থেকে মাথায় এসব পাকাচ্ছিলি? কিন্তু তোরা আমাকে এসব কিছুই জানাসনি কেনো?

জারিফা : তোকে জানালে কি হতো! তুই এটাই বলতি,

– না,নাহ এসব করা ঠিক হবে না, যদি উল্টোপালটা কিছু হয়ে যায়, আরো ব্লাহ ব্লাহ কতো কি, হুহ!

মার্জান : হ্যা! তারপর আমরা তোর গায়েহলুদ, বিয়ে, আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম খাওয়াটাও মিস করে দিতাম, [ হেসে ] সাথে তোর চিকনিচ্যামেলি শ্বাশুরীটাকে ও!

জারিফা : ওমা আমারতো তো ফাষ্টে দেখে বিলিভই হচ্ছিলো না, সিল্কি কুচি শাড়ী, চোখে কালো সানগ্লাস, কুড়ানো-কাড়ানো লম্বা ফিগার, সব মিলিয়ে পুরা কাট্রিনা কাইফই মনে হচ্ছিলো!

– [ উঠে দাঁড়িয়ে ] স্নেহা তুই আর তোর শ্বাশুরি মিলে না বিয়ের পর এই গানটায় ডান্স করতে পারবি ♪ মাই নেইম ইজ, শিলা~শিলা কি জাওয়ানি, আম টু সেক্সি ফর ইউ, মে তেরে হাতে না আনি ♪ [ হাসতে লাগলো সবাই ]

স্নেহা : থেংক ইউ! গাইস্ এসব আমি কখনো এক্সপেক্ট করিনি!

জারিফা : [ জড়িয়ে ধরে ] আরে স্নেহা! আমরা এসব করেছি যাতে, তোর বিয়েতে মন খারাপ না থাকে, হাসিখুশিতেই সব হয়, আর তুই কিনা কাদছিস!

স্নেহা : তোদের সাথে থেকে আমার বোন নেই এটা কখনোই ফিল হয়নি! আর আজ প্রুভ ও করেদিয়েছিস তোদের চেয়ে বেটার বোন, বেটার ফ্রেন্ড,আর কেউ হতেই পারবে না!

মার্জান : আরে আরে,দুলহান এখন থেকেই আমাদের ইমোশনাল করে দিচ্ছে,

শায়লা : বাই দ্যা! ওয়ে স্নেহা! এখন কাদলে রাতে ফেইস ফেকাসে দেখাবে, আর তোর চিকনিচ্যামেলি শ্বাশুরিই তো দেখলি কি বলে গেলো, সাজে যাতে কোনো কমতি না হয়, [ স্নেহা হেসে তিনজনকেই জড়িয়ে ধরলো ]

মার্জান : ব্যাস! স্নেহা! আমাদের শুধু এখন তোর মিষ্টার তেডি স্মাইলকেই নিয়ে ভয়, আমরা যে এসব মিথ্যে বলেছি…

স্নেহা : [ হেসে ] ওকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, ঐ ওতো চাইছিলো যে ওর বাবা-মা একসাথে হয়ে যাক,

শায়লা : কিন্তু একসাথে হলো কই?

স্নেহা : আচ্ছা আমি আসছি! রাহুলকে কল দিয়ে [ বলেই ফোন হাতে নিয়ে রাহুলকে কল দিয় বারান্দায় চলে গেলো ]

রাহুল : [ রিসিভ করে ] কি ব্যাপার! সুইটহার্ট মিস্ করছিলে আমায়! আমি জানতাম তুমি আমার সাথে রেগে থাকতে পারবে না!

স্নেহা : মোটেও মিস্ করছিলাম না আপনাকে!

রাহুল : আচ্ছা! তুমি তো এতোদিন শান্ত,নরম মনের তুলতুলে ছিলা,আজ হঠাৎ এতো কুড়কুড়ে স্পাইসি্ হয়ে গেলা কিভাবে বলো তো?

স্নেহা : আচ্ছা! শুনেন আমি না আপনার সাথে দেখা করবো! তাও এক্ষুণি! আপনি যেখানেই হোন আমি অতো কিছু বুঝি না কোনো বাহানাও চলবে না, ব্যাস এক্ষুণিই আসবেন!

রাহুল : হোয়াট? কিক..কিন্তু মাত্রই তো তোমাদের ঐখান থেকে এলাম!

– আচ্ছা বুঝেছি! ঐ যে কিস্ দাওনি ওটা দেওয়ার জন্য? [ হেসে ] রিলেক্স স্নেহা! আজ রাতে না হয় দিয়ে দিবা!

স্নেহা : আপনার কাছে নিগেটিভ কথাগুলো ছাড়া আর কিছু মাথায় আসে না?

রাহুল : কামঅন স্নেহা! এটা রোমান্টিক মোমেন্টের রোমান্টিক কথা ছিলো,

– আর এমনিতেও নিগেটিভ এর আমি এখনো কিছু বলিনি, [ হেসে ] আচ্ছা বলবো নাকি? তুমি চাইলেই আমি বলতে পারি, আমার কোনো প্রবলেম নেই!

স্নেহা : আমি মজা করছি না!

রাহুল : আরে! তো আমি কবে বললাম আমি মজা করছি!

স্নেহা : আপনি আসবেন কি আসবেন না?

রাহুল : সিরিয়াসলি?

স্নেহা : আরে হ্যা! তো বাবা, সিরিয়াসলি!

রাহুল : আম নট ইউর বাবা! ইউ কেন কল মি সুইটহার্ট!

স্নেহা : রাখছি আমি ফোন!

রাহুল : [ হেসে ] আরে আরে! রেগে যাচ্ছো কেনো! আসছি! আমি,

– আজ আমাকে তুমি তোমার বাসায় যাওয়ার রাস্তাগুলোর মধ্যে গাড়ী দিয়ে জগিং করিয়ে নিচ্ছো!

স্নেহা : হ্যা! এগুলো যাতে আপনার বিয়ের পরেও মনে থাকে,

রাহুল : হ্যা তাতো থাকবেই! আচ্ছা শুনো আমি তো আসছিই, আমার কিসটা ও কিন্তু দিতে হবে বলেদিলাম!

স্নেহা : বাইই! [ হাসতে লাগলো রাহুল, স্নেহা ও মুচকি হেসে কেটে দিলো ফোন ]

চলবে…

Love At 1st Sight Season 3 Part – 46

0

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 46

writer-Jubaida Sobti

মার্জান, শায়লা, জারিফা তিনজনই বেড়িয়ে পড়লো..
_________ এইদিকে,

রাহুল ড্রাইভ করছে, স্নেহা কোলের উপর লেপটপ রেখে কাপড় এর ডিজাইন দেখছে, গালে হাত দিয়ে হুটহাট একটার পর একটা খালি চেঞ্জ করতেই চলছে, মাথায় কনফিউজড এ ভরপুর হয়ে যাচ্ছে স্নেহার,ঠাস করেই লেপটপটা বন্ধ করে রেখেদিলো!

রাহুল : আরে কি হলো?

স্নেহা : দেখেন রাহুল! এসব আমার দ্বারা হবে না, আপনিই যে কোনো একটা চয়েস করে নিয়ে নিন ব্যাস!

রাহুল : কনফিউজড হওয়ার কি আছে? তুমি যেটাই পড়বে সেটাতেই তোমাকে এঞ্জেল লাগবে, [ চুপ করে জানালার পাশ ফিরে রইলো স্নেহা ]

রাহুল : কি হলো স্নেহা? তোমার মন খারাপ মনে হচ্ছে! একটু আগেই তো মেসেজে অনেক হুমকিটুমকি দিলা, আমি তো ভয়ে আমার ইম্পর্টেন্ট কাজটাজ সব ফেলে তাড়াহুড়ো করে চলে এলাম,

স্নেহা : মেসেজ গুলো আমি দিইনি!

রাহুল : [ অবাক হয়ে ] তাহলে?

স্নেহা : ওরা তিনজন মিলে দিয়েছে!

রাহুল : আচ্ছা ইউ মিন ঐ নটি কোম্পানির দল?

স্নেহা : হুমম!

রাহুল : হোয়াটট? হোয়াট, হোয়াট? আমাকে বোকা বানিয়েছে? [ হঠাৎ স্নেহার হাসি চলে এলো রাহুলের কথা শুনে ]

– হাসো তুমি ওরা আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছে, আমি ভাবলাম তুমি নিজেই আমার সাথে টাইম স্পেন্ড করতে চাচ্ছিলে, হয়তো আমাকে খুব মিস্ করছিলে তাই আদর করে বললে সুইটহার্ট তুমি কোথায়? এক্ষুনি আসো..[ কাদো ভাবে ] তার মানে সব বানানো ছিলো! ইডিয়ট কোথাকার ওদের তো আমি আজ রাতেই দেখে নিবো!

স্নেহা : [ হেসে ] নিজেকে অতিচালাক মনে করলে এমনই হয়! [ রাহুল ও আর কিছু বললো না, শার্ট থেকে সানগ্লাসটা ছুটিয়ে নিয়ে চোখে পড়ে নিলো, বুঝতে পারছে পাশ থেকে স্নেহা তাকিয়ে আছে হাসি পাচ্ছিলো রাহুলের, তাও হাসি চেপে রেখে শিস বাজিয়ে গান করতে করতে গাড়ী চালাতে লাগলো, হঠাৎ খেয়াল করলো কেউ টান মেরে সানগ্লাসটা খুলে নিয়ে নিলো, পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে সানগ্লাসটা স্নেহাই পড়ে নিচ্ছে, মনে মনে হারিয়ে যাচ্ছে রাহুল, স্নেহার সানগ্লাস পড়া রকিং স্টাইল দেখে, কিনা লাগছে উফফ! ইচ্ছে করছে গালটা টেনে একটা টাইট করে কিস দিবে, কিন্তু সবই ভাগ্যের খেলা এই সময় স্নেহা তার থেকে কমপক্ষে একহাত দূরে, তারউপর ড্রাইভিং ও করছে ]

হঠাৎ,

স্নেহা : [ চেচিয়ে ] রাহুলল! সামনে থাকান! [ রাহুল মাথাঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই সাথেসাথে গাড়ী জোড়ে একটা ব্রেক নিয়ে থেমে গেলো, ভয়ের সাথে দীর্ঘ একটি শ্বাস ও বেড়িয়ে এলো দু-জনের, আর একটুর জন্য এক্সিডেন্ট হতে হতে বেচে গেলো, স্নেহার দিক আর তাকালো না রাহুল, কারণ সে জানে এখন স্নেহা তাকে বড় একটা কম্পোজিশন শুনিয়ে দিবে, তাই ধীরেধীরে গাড়ীটা সাইড করে একপাশ করে দাড় করালো, এর আগেও অনেকবার এক্সিডেন্ট এর মুখোমুখি হয়েছে রাহুল, কিন্তু মনে ভয় ছিলো না বরং আরও ফ্রিডম কাজ করতো, কিন্তু আজ হঠাৎ কেনো যেনো বুকটাও কাপছে, কারণ তার সাথে আজ স্নেহা ও আছে, যদি কিছু হয়ে যেতো? ]

স্নেহা : আজিব! ধ্যান কোথায় ছিলো আপনার?

রাহুল : তোমার কাছে!

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে, সানগ্লাসটা খুলে রাহুলের কাছে ছুড়ে মেরে ] ঠিকাছে! [ বলেই হুটহাট গাড়ীর দরজা খুলে পেছনের সি্টে গিয়ে বসে পড়লো, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাহুল ]

রাহুল : আরে স্নেহা রাগ করছো কেনো?

স্নেহা : এখন থেকে আমি পেছনেই বসবো, তারপর আপনার ধ্যান শুধু ড্রাইভিং এ ফোকাস্ হবে,

রাহুল : [ গাড়ী থেকে নেমে, পেছনের সিটে এগিয়ে এসে বসে ] ওকে তো বাবা সরি আর হবে না,

– আচ্ছা নাও কান ধরলাম! [ চুপ করে রইলো স্নেহা ]

রাহুল : তুমি সানগ্লাস পড়েছিলে, কিনা লাগছিলো তোমায়,আমিতো পুরো… [ আড়চোখে তাকালো স্নেহা, চুপ হয়ে গেলো রাহুল, ধীরেধীরে স্নেহার হাতের উপর হাত রাখতেই হুট করে হাত সরিয়ে নিলো স্নেহা ]

রাহুল : [ ইমোশনাল হয়ে ] আ..আজকে আমার বিয়ে, কিছুটাতো রহোম করো স্নেহা! আর কখনো হবে না, ফোকাস্ অলোয়েজ ড্রাইভিং এ থাকবে, প্রমিস! [ জানালার পাশফিরে গেলো স্নেহা, হঠাৎ শুরশুরি লেগে উঠলো, কানের ধারে চুল সরিয়ে ফিসফিস করে কেউ বলতে লাগলো, আই লাভ ইউ! চোখ বন্ধ করে জোড়ে একটি শ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলো স্নেহা কেনো যেনো রাহুলের মুখ থেকে আই লাভ ইউ! কথাটি শুনতেই নিজেকে স্বর্গে আবিস্কার করছে এমনই মনে হয়, হালকা করে কানে একটি কিস্ করলো রাহুল, শিউরে উঠে মাথা সরিয়ে ধীরেধীরে রাহুলের পাশ ফিরে তাকালো স্নেহা, তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে আছে রাহুল, হঠাৎ লজ্জা লেগে উঠলো স্নেহার, ব্লাশিং হয়ে সেও হেসে উঠলো ]

রাহুল : [ স্নেহার গাল টেনে দিয়ে ] কামঅন স্নেহা! স্ট্রোভেরি ফ্লেভার হয়ে যাচ্ছো [ বলেই স্নেহার গালে কিস্ করতেই যাচ্ছিলো, হুট করেই স্নেহা পিছিয়ে গিয়ে,হেসে রাহুলের গালটাও টেনে দিলো ]

রাহুল : আও! স্নেহা! আগেই বলেছি আমি বাচ্চা না!

স্নেহা : তাহলে কি আমি বাচ্চা আমাকেও টানলেন কেনো?

রাহুল : তুমি বাচ্চা না তো কি? কথা নেই বার্তা নেই বাচ্চাদের মতো গালফুলিয়ে অপ করে পেছনে এসে বসে গেছো!

স্নেহা : [ আড়চোখে তাকিয়ে ] কথা নেই বার্তা নেই তাই না? একটু আগে এতোবড় ভূলটা কে করতে ছিলো শুনি? [ বলেই রাহুলের নাকটা টেনে চেপে ধরে রাখলো ]

রাহুল : [ হেসে নাক থেকে স্নেহার হাত ছুটিয়ে দিয়ে ] আচ্ছা ওকে সরি,এটা আর বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে না! [ বলেই স্নেহার মাথা টেনে কপালে একটি চুমু খেলো, মুচকি হেসে রাহুলের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রাখলো স্নেহা, এভাবেই গল্প করতে করতে এক ঘন্টা কাটিয়ে দিলো তারা ]

রাহুল : এখন তো অন্তত সামনে এসে বসবা! হুম?[ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে একবার না করে দিলো, রাহুলের মুখটা গোমড়া করে ফেলায় আবার মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ করে ফেললো স্নেহা, দু-জনেই একসাথে হেসে উঠলো, বরাবরের মতোই স্নেহা সামনে এসে বসে পড়লো আর রাহুল ড্রাইভিং সি্টে বসে ড্রাইভ করছে, কিছুক্ষণ পরই রাহুল স্নেহার দিক তাকিয়ে দেখলো, স্নেহা অনেক চিন্তিত ভাবে বসে আছে ]

রাহুল : স্নেহা!

স্নেহা : হুম?

রাহুল : কি চিন্তা করছো?

স্নেহা : কিছুই না! [ রাহুল বুঝতে পারলো স্নেহা মিথ্যে বলছে, তাই গাড়ী তাড়াতাড়ি মোড় ঘুড়িয়ে নিলো, গাড়ী এসে থামলো সেই জায়গায় যেখানে তারা রাতের শীতে দাঁড়িয়ে আইস্ক্রীম খেয়েছিলো ]

রাহুল : চলো আইস্ক্রীম খাবা!

স্নেহা : [ কনফিউজড হয়ে ] আমি কি বলেছি আইসক্রীম খাবো?

রাহুল : এমনিতে তো আইস্ক্রীমের গাড়ীটা দেখলেই লাফাতে থাকো আজ এতো কনফিউজড হচ্ছো কেনো? চলো নামো! [ রাহুলের কথা মতো স্নেহা ও নেমে দাড়ালো,আগের মতোই স্নেহার পছন্দের ম্যাংগো ফ্লেভার এর কুলফিটা নিলো, তাকিয়ে আছে রাহুল স্নেহার দিক, আইস্ক্রীম গলে পড়ে যাচ্ছে আর স্নেহার খবরই নেই! অন্যমনস্ক হয়ে আছে স্নেহা ]

রাহুল : [ স্নেহাকে নাড়িয়ে দিয়ে ] স্নেহা! কোথায় হারিয়ে গেলা?

স্নেহা : [ চমকে উঠে ] হ্যাঁ?.. নাহ কিছুনা [ বলেই অল্প একটু আইস্ক্রীম খেলো ]

রাহুল : স্নেহা তুমি ঠিকাছো তো? আজ তো তোমার সবচেয়ে বেশী খুশি হওয়ার কথা,আমি তো ভাবলাম খুশিতে তুমি চারপাচটা আইস্ক্রীম একসাথেই খেয়ে নিবা, কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি অনেক চিন্তিত!

স্নেহা : [ আইস্ক্রীমটা গ্লাসে ভরে রেখে ] আমার ইচ্ছে করছে না আইস্ক্রীম খেতে [ বলেই হুরহুর করে গাড়ীর পেছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো, রাহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, কি হলো স্নেহার এমন বিহেভ করছে কেনো,আইস্ক্রীমের টাকা পে করে স্নেহার দিক এসে দরজা খুলতে গেলো, কিন্তু দরজা খুলছে না,বুঝতে পারলো রাহুল স্নেহা ভেতর থেকে লক করে রেখেছে, কিন্তু হঠাৎ এমন করার মানে কি? ]

রাহুল : স্নেহা! হোয়াট হ্যাপেন টেল মি! [ চুপ করেই বসে রইলো স্নেহা ]

রাহুল : [ গ্লাসে টোকা মেরে ] লক খুলো! [ কোনো জবাবই দিচ্ছে না স্নেহা ]

রাহুল : কি সমস্যা এমন কেনো করছো? আমি কিছু ভুল করেছি? [ মাথা নাড়ালো স্নেহা ]
– তাহলে?

স্নেহা : [ আরো একটু গ্লাস নামিয়ে ] রাহুল! আমি বাসায় যাবো!

রাহুল : লক খুলো!

স্নেহা : দেখেন আমার মন এমনিতেই খারাপ,আপনি গিয়ে গাড়ী চালান,আমাকে একটু একা থাকতে দিন,

রাহুল : আচ্ছা! এককাজ করি আমি রোডের মাঝে গিয়েই দাঁড়ায়,গাড়ী সবাই আমার উপরই চালিয়ে দিক! [ বলেই হেটে চলে যাচ্ছে ]

স্নেহা : [ দরজা খুলে চেচিয়ে ] আরে আরে! কই যাচ্ছেন! [ পেছন ফিরে তাকালো রাহুল ]

স্নেহা : [ মুখ গোমড়া করে ] খু..খুলেছি!

রাহুল : [ এগিয়ে এসে ] আরেকটু ভেতরে ঢুকো! [ পিছিয়ে গেলো স্নেহা,রাহুল ও স্নেহার পাশে বসে দরজা লাগিয়ে দিলো ]

– এইবার বলো মন কেনো খারাপ? আর যদি চুপ করে থাকো তাহলে দেখবা কি করি!

স্নেহা : ব..বললে আপনার মন ও খারাপ হয়ে যাবে তাই আপনি না জানাটাই ব্যাটার!

রাহুল : লিসেন্ট আমি না জানলে তোমার মন ভালো করবো কিভাবে?

স্নেহা : বললাম তো! তখন আপনার নিজের মনই খারাপ হয়ে যাবে!

রাহুল : আচ্ছা সমস্যা নেই আমার মন খারাপ হোক! তোমার মন ভালো করতে পারলেই হলো!

স্নেহা : বলবো?

রাহুল : হ্যা বলো!

স্নেহা : রাগবেন না কিন্তু বলেদিলাম!

রাহুল : ওকেই ওকে, রাগবো না!

স্নেহা : ব..বলছিলাম যে বিয়েতে যদি আপনার বা..বাবাকেও.. [ স্নেহার মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো রাহুল, স্নেহা আবারো কিছু বলতে যাবে তখনি ]

রাহুল : শিসসস! আজকে আমি তোমাকে বিয়ে করছি, আমি আজ অনেক অনেক খুশি! সো্ আজ এসব কথা বলে মুডটা নষ্ট করতে চাই না! হ্যাপি থাকো, যে চিন্তাটা করতে ছিলা ওটা মাথা থেকে ফেলে দাও!

স্নেহা : [ নাকফুলিয়ে রাহুল হাতটা ঝাড়ি মেরে সরিয়ে ] আপনি আসলেই একটা..

রাহুল : হ্যা! আমি অনেক কিছু! তাও হ্যাপি থাকো! কিন্তু যেটা বলতে ছিলা ওটা আর মাথায়ও আনবা না! চলো সামনে এসে বসো

স্নেহা : কখনোই না!

রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] ওকে! [ বলেই স্নেহার হাত টেনে ধরে বের করে আনলো ]

স্নেহা : দেখেন আপনি জবরদস্তি করছেন!

রাহুল : জবরদস্তির এখনো কি দেখেছো! হেটে গিয়ে বসবা নাকি কোলে তুলে বসাবো? [ মুখ ভেংগিয়ে হনহন করে সামনে গিয়ে বসে ধুপ করেই দরজা লাগিয়ে দিলো স্নেহা, হাসতে লাগলো রাহুল স্নেহার কান্ডে, আর না ভেবে গাড়ীতে গিয়ে উঠে বসলো, স্নেহা জানালার পাশ ফিরে রইলো ]

রাহুল : মন এখন খারাপ থাকলে সমস্যা নেই! রাতে ঠিক করে দিবো! [ with tedi smile ] [ স্নেহা বিরবির করে কি কি যেনো বলে নাক ফুলিয়ে রাখলো ]

রাহুল : ওহ গড স্নেহা! আর কতো লাল হবা রেড স্পাইসি্ ডিশ হয়ে যাচ্ছো! [ চুপ করেই রইলো স্নেহা ]

রাহুল : মনে মনে ভাবছো বিয়েই করবে না আমাকে তাই তো! [ হেসে ] কিন্তু এখন আর আমি তোমার পার্মিশন এর অপেক্ষায় থাকছি না, বাচ্চা মেয়ে থেকে আবার কিসের পার্মিশন? [ স্নেহা আড়চোখে একবার তাকিয়ে আবারো জানালার পাশ ফিরে গেলো ]

রাহুল : কাধে তুলে উঠিয়ে নিয়ে আসবো, [ অভিমান করে চুপচাপই রয়ে গেলো স্নেহা,রাহুল বকবক করে স্নেহাকে আরো রাগ তুলে দিতে দিতে এসে পৌছালো স্নেহার বাসার সামনে, তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে নামতে গেলো স্নেহা, কিন্তু দরজা খোলা যাচ্ছিলো না পাশ ফিরে রাহুলের দিক তাকাতেই দেখে তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে আছে ]

রাহুল : রিলেক্স স্নেহা! এতো তাড়া কিসের?একটা কিস্ দাও লক খুলে যাবে [ জোড়ে একটি শ্বাস ফেললো স্নেহা ] আচ্ছা শুনো! সন্ধায় তোমার জন্য কাপড় পাঠিয়ে দিবো, তৈরী থাকবা, [ মুখ ভেংগিয়ে অন্যপাশ ফিরে গেলো স্নেহা ]

রাহুল : [ হেসে ] আচ্ছা ঠিকাছে না পড়লে সমস্যা নেই! আমি এসে নিজ হাতেই পড়িয়ে দিবো! [ স্নেহা তাকাতেই রাহুল চোখ টিপ মারলো, হঠাৎ খেয়াল করলো স্নেহা রাহুলের দিক এগুচ্ছে, একদম কাছে এগিয়ে আসতেই অবাক হয়ে স্নেহার চুলের স্মেল নিতে লাগলো রাহুল, হাতটা এগিয়ে সুইচড চেপে ডোর লক ওপেন করলো স্নেহা ]

রাহুল : অও! আমাকে বললেই পারতে! [ with tedi smile ]
নাকফুলিয়ে হনহন করে নেমে চলে যাচ্ছে স্নেহা,

রাহুল : [ হেসে চিৎকার করে ] আরে স্নেহা! একটা বাই তো বলো! [ উপরে উঠে গেলো স্নেহা, বাসায় গিয়ে বেল বাজাতেই দেখে জারিফা,মার্জান,শায়লা তিনজনই একত্রে মিলে তাড়াহুড়া করে দরজা খুললো ]

জারিফা : তুই?

মার্জান : দু-ঘন্টাতেই শেষ! আরেকটু লেইট করে আসলেই পারতি! [ স্নেহা কিছু বলতে যাবে তখনিই জারিফা স্নেহাকে সরিয়ে আশেপাশে উকি দিয়ে দিয়ে দেখতে লাগলো ]

স্নেহা : আরে কাকে খুজছিস?

জারিফা : [ কনফিউজড হয়ে ] আব..রার..রাহুল রাহুলকে! ও আসেনি!

স্নেহা : নাহ! কিক..কিন্তু তোদের ভাবসাব দেখে তো মনে হচ্ছে তোরা আর কারো অপেক্ষা করছিলি!

শায়লা : মোটেও না, আ..আমরা তো রাহুলের অপেক্ষা করছিলাম! রাহুলের!

মার্জান : আরে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি? আয় ভেতরে আয়! [ বলেই স্নেহাকে টেনে নিয়ে রুমে চলে যায় ]

স্নেহা : এ..এক মিনিট, তোরা তখন আমার মোবাইল থেকে রাহুলকে ঐ মেসেজ গুলো কেনো দিলি?

জারিফা : আরে স্নেহা! আমরা চাচ্ছিলাম যে তোরা কিছুক্ষণ একসাথে টাইম স্পেন্ড কর তাইই!

স্নেহা : [ তিনজনের দিক কিচ্ছুক্ষণ ঘুরঘুর করে তাকিয়ে ] মাথায় কি চলছে তোদের বলতো?

মার্জান : আব..দে..দেখ স্নেহা! [ আলমারি খুলে ] এই কাপড়টা আজ পড়বো ভাবছি! দারুণ না? হুমম?

জারিফা : আর আমি এটা! দেখ দেখ!

শায়লা : আরে এই জুয়েলারি গুলি দেখ! উফফ আমার তো ওয়েটই হচ্ছে না কখন রাত হবে!

স্নেহা : বাহানা বানিয়ে বারবার কথা ঘুরিয়ে দিচ্ছিস! আর এসব তো আমাকে গতকাল রাতেও দেখিয়েছিস!

জারিফা : [ হেসে ] আরে তখন তো রাত ছিলো তাই না? তাই এখন আবার দিনে দেখাচ্ছি! কেমন দেখতে বল? হুম হুম? [ হঠাৎ বেল বেজে উঠলো দরজায়, স্নেহা খেয়াল করলো বেল এর সাথে সাথে এই তিনজনের চোখ দু-টো ও বড় বড় হয়ে গেছে, দৌড়ে দরজা খুলতে যাচ্ছিলো তিনজন ঐ সময় স্নেহা রুমের দরজায় হাত রেখে পথ আটকিয়ে ধরলো ]

মার্জান : আরে স্নেহা সর বেল বাজছে!

স্নেহা : তাতো আমিও শুনতে পাচ্ছি! কিন্তু সকাল থেকে দেখছি, দরজা খুলতে তোদের অনেক তাড়া?

মার্জান : আরে সকালে তো রাহুলকে মেসেজ করেছিলাম তাই ওর জন্য তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলতে যেতেছিলাম!

স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুমম! তো এখন কিসের তাড়া?

জারিফা : আরে স্নেহা সর! [ বলেই স্নেহাকে সরিয়ে দরজা খুলতে যাবে তখনিই স্নেহার মা চেচিয়ে চেচিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো, বাকিরা উকি দিয়ে তাকাতেই স্নেহা ও উকি দিয়ে দেখলো কে, সাথে সাথেই স্নেহা থমকে গেলো, চোখ দু-টো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো স্নেহার, নড়াচড়া বন্ধ একদম স্টেচিউ! ]

মার্জান : [ স্নেহার কাধে হাত রেখে এক্সাইটেড হয়ে ] আরে এসে গেছে! ওয়াও!

জারিফা : [ স্নেহাকে ধাক্ষা দিয়ে ফিসফিসিয়ে ] আরে স্নেহা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা না!

স্নেহা : আমি সপ্ন দেখছি? নাকি সত্যি সত্যিই দেখছি ?

চলবে….