Thursday, August 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2369



হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া part:12

0
হারিয়ে যাওয়া,পথ খুজে পাওয়া part:12 writer : সুলাতানা ইতি

হারিয়ে যাওয়া,পথ খুজে পাওয়া

part:12

লেখা –সুলতানা ইতি

পরদিন সকালে আনুশা খুব তাড়া হুড়া করছে কলেজ এ যাওয়ার জন্য,,কই মা হলো তোমার এতো কিসের কাজ করো বলো তো

আনুশার আম্মু: এই তো হলো, আর একটু অপেক্ষা কর

আনুশা: তুমি জানো এর মাঝে প্রিন্সিপাল স্যার। কতো বার কল দিয়েছে

আনুশার আম্মু: হুম চল এবার


এদিকে তানভীরের ঘুম থেকে উঠতে আজ দেরি হয়ে গেছে রাতে আম্মুর সাথে কথা বলতে বলতে ওর মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে আজকে যে আনুশাকে বাসা থেকে নিয়ে আসার দায়িত্ব স্যার। তাকে দিয়েছিলো

তানভীর : আম্মুউউউউউউ

তানভীরের আম্মু: কিরে সকাল সকাল এই রকম ছিৎকার করছিস কেনো

তানভীর : করবো না, তুমি জানো কাল স্যার আমাকে আনুশাকে বাসা থেকে নিয়ে আসতে বলেছে, এখন কতো লেইট হয়েছে তুমি জানো

তানভীরের আম্মু: তুই ঘুমাচ্ছিস দেখে ডাকিনি,আর আনুশা কে নিয়ে আসতে হবে কেনো,ও কি কলেজ চিনে না নাকি,

তানভীর : ওহ আম্মু তোমার সাথে কথা বলে টাইম নস্ট করতে চাই না, আমি গেলাম

তানভীরের আম্মু: কিরে ফ্রেশ তো হবি,নাস্তা খাবি, তার পর তো যাবি

তানভীর : ও তো কিছু করার সময় নেই

তানভীরের আম্মু: আজ কলেজ এ আমি ও যাবো তোর সাথে

তানভীর : তুমি যাবে মানে?
তানভীর আম্মু: কেনো আজ তো কোন ক্লাস হবে না অনুষঠানে কি আমার যেতে মানা( আমার ছেলে সারা দিন আনুশা আনুশা করে মরছে এই আনুশাকে না দেখে তো আমি শান্তি পাবো না)

তানভীর : ঠিক আছে আম্মু তুমি আসো,আমাকে আগে যেতে হবে কাজ আছে বললাম না
এই বলে তানভীর বেরিয়ে পড়লো

★আনুশা ওর মাকে নিয়ে গলির মড়ে আসতেই তানভীরকে দেখে চমকে উঠলো

তানভীর : আনুশার অবস্থা বুঝতে পেরে,, বল্লো আসলে স্যার আমাকে পাঠিয়েছে তোমাকে নিয়ে যেতে

আনুশা: মনে মনে স্যার কি আর লোক পায়নি,ওকেই পাঠাতে হলো,আর কাউকে পাঠানোর কি দরকার ছিলো আমরা নিজেরাই চলে যেতে পারতাম
তানভীর : আনুশা কে চুপ করে থাকতে দেখে বল্লো কি হলো গাড়িতে উঠো

আনুশার আম্মু: কিরে এতো কি ভাবছিস, ছেলেটা কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে
আনুশা: কিছু না বলে চুপ চাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো
প্রায় ঘন্টা খানেক পর ওরা পৌছে গেলো

প্রিন্সিপাল স্যার: ছেলে টাকে আনুশাকে নিয়ে আসার দায়িত্ব দিয়েছিলাম ছেলেটা এখন ও নিয়ে আসলো না কেনো,এ দিকে সবাই ওর সাথে কথা বলার জন্য পাগল করে দিচ্ছে আমাকে

আনুশা: তার মাকে নিয়ে প্রথমে অফিস রুমে গেলো প্রিন্সিপাল স্যার এর সাথে দেখা করতে

প্রিন্সিপাল স্যারর: কিরে তোর আসতে এতো দেরি হলো কেনো আজকের দিনে তো তোর সবার আগে আসার কথা

আনুশা: সরি স্যারর
প্রিন্সিপাল স্যার:ঠিক আছে ঠিক আছে,আর দুঃখ প্রকাশ করতে হবে না,সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে আপনি ওদের সাথে দেখা করে আমাকে উদ্ধার করুন

আনুশা: হেসে উঠে ঠিক আছে স্যারর এখনি যাচ্ছি

স্যারর:দাড়া আমি ও যাবো সবাইকে বলতে হবে না তা ছাড়া অনেক গন্য মান্য লোক আছে সেখানে,জানিস আমি তোর কথা জেলা মন্ত্রী সাহেব এর কাছে বলেছি, উনি তো তোর সাথে কথা বলার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছে
আনুশা: ঠিক আছে স্যারর চলুন,সবার সাথে দেখা করে কথা বলে আনুশার খুব ভালো লাগলো,কিন্তু স্যারর আমার কাছে থেকে দূরে গিয়ে জেলা মন্ত্রীর সাথে কি বলছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না দূর যা ইচ্ছে তাই বলুক আমার কি,আমি গিয়ে দেখে আসি মা কি করছে

প্রিন্সিপাল স্যারর: আনুশার সব কথা মন্ত্রী সাহেব কে খুলে বল্লো

মন্ত্রী সাহেব: শুনে কিছুক্ষন দুঃখ প্রকাশ করলেন,তার পর একটু ভেবে বল্লো আমি আপনার স্টুডেন্ট, মানে আমার জেলার এতো ভালো একটা স্টুডেন্ট এর জন্য কিছু করতে চাই

প্রিন্সিপাল স্যারর: খুশি খুশি মনে মন্ত্রি সাহেব দিকে তাকালো

মন্ত্রী:আমি আনুশা কে দেশের বাইরে পড়তে পাঠাবো সম্পূর্ণ ফ্রি তে ওর কোন খরচ দিতে হবে না সব দায়িত্ব আমার
প্রিন্সিপাল স্যার:খুশি হয়ে বলল তা হলে আমি গিয়ে আনুশা কে খবর টা দিয়ে আসি,
মন্ত্রী সাহেব: না,না,আপনি এখন ওকে কিছু বলবেন্না অনুষঠান শুরু হওয়ার পর অফার টা আমি ওকে দিবো


তানভীর : ওহ নো আনুশা এতো ব্যাস্ত যে ওর সাথে একটু কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না কি যে করি,ঠিক আছে ওর সাথে পরে কথা বলবো আগে
দেখে আসি তো আম্মু কি করছে, নিষেধ করলাম আম্মু তুমি এসো না,কে শুনে কার কথা উনি আসবেই

তানভীরের আম্মু: এতক্ষন বসে বসে আনুশার মায়ের সাথে কথা বলছিলো,
আপনার মেয়ে তো খুব ভালো পড়াশুনায় তাই না,নিশ্চয় আপনি ওকে এই অনুপেরনা দিয়েছেন

আনুশার আম্মু:আসলে ঠিক তা নয়,আমি কখন ও ওকে পড়া শুনা করতে হবে বা করিস না এই সব কিছু বলিনি,ও সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছে তে চলা ফেরা করেছে আমি কখনই ওকে কিছুতে বাধা দিতাম না,আর পরিস্থিতি এমন ভাবে তৈরী হলো যে চাইলে ও পিছু হাটতে পারেনি,ওকে এগিয়ে যেতেই হয়েছে

তানভীরের আম্মু: কি এমন হয়েছে জানতে পারি আমি

আনুশার আম্মু: ওসব কথা থাক সেগুলা এখন না বলি

এমন সময় তানভীর এলো, আরে আম্মু তুমি এখানে আমি তোমায় কখন থেকে খুজছি,যাই হোক অনেক হয়েছে এবার তুমি বাসায় যাও আর এখানে থাকতে হবে না

তানভীরের আম্মু: সে কিরে যাকে নিয়ে এতো আয়োজন আমি তো এখন ও তাকেই দেখিনি, আর আমি তোর এই আন্টির সাথে কথা বলছি তুই যা তো

তানভীর : তুমি কি ভুলে গেছো আজকে আব্বুর দেশে আসার কথা, আর তাকে আনতে এয়ারপোর্ট তুমি যাচ্ছো

তানভীরের আম্মু: আমি তোর আব্বু কে ফোনে বলে দিয়েছি উনি নিজেই চলে আসবে
তুই বরং আনুশা কে একটু ডেকে দে আমি ওর সাথে একটু কথা বলবো

তানভীর আনুশার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো উনি কিছু বলবেন এই আশায়
আনুশার আম্মু: যাও বাবা আনুশা কে ডেকে দাও তোমার মা ওর সাথে দেখা করতে চায়

তানভীর : মায়ের কথা মতো আনুশাকে খুজতে বের হলাম কই পাই ওকে,উনি তো এখন একজন সেলিব্রেটি হয়ে গেছে উনাকে পাওয়া কি এতো সহজ

অবশেষ এ আনুশা কে খুজে পেলাম,স্যার এর সাথে কথা বলতেছে,এই মেয়েটার পিছনে সারা দিন স্যার লেগে থাকে কেনো সেটাই বুঝি না,আমি ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম

স্যার : তানভীর তুমি কি কিছু বলবে,

তানভীর : স্যার আনুশাকে ওর মা ডাকছে(মিথ্যা করে বললাম,আমার মায়ের কথা শুনলে হয়তো আনুশা না যেতে পারে)

আনুশা: ও মা আমায় ডাকছে, নিশ্চয় মায়ের শরির খারাফ লাগছে আমি গিয়ে দেখে আসি মাকে,

স্যার: হুম যা, তানভীর তুমি আমার সাথে এসো কিছু কাজ আছে

আনুশা: মা আমায় ডেকেছো কেনো তোমার শরির ঠিক আছে তো

আনুশার আম্মু: আমি ঠিক আছি,তোর এই আন্টি টা তোকে দেখতে চাইলো তাই ডাকলাম

তানভীরের আম্মু: ( আনুশা কে দেখে মনে মনে বলছে স্বাদে কি আমার ছেলে আনুশার জন্য পাগল হয়েছে,এই রকম একটা মিষ্টি মেয়ের প্রেম এ যে কেউ পড়ে যাবে)

আনুশা: আন্টি মানে, মা তুমি কি উনাকে ছিনো

আনুশার আম্মু: উনি হচ্ছে যে ছেলেটা আজ বাসা থেকে আমাদের নিয়ে এসেছে তানভীর, ওর আম্মুন

আনুশা:(ওও তা হলে আজ পুরো গুষ্টি সহ কলেজ এ এসেছে মতলব টা কি এদের)মুখে সালাম। করলো,মনের কথা গুলো মনেই রেখে

তানভীরের আম্মু: বাহ কি লক্ষি মেয়ে তুমি বস মা বস, আমার পাশে এসে বস,তোমাকে ভালো করে দেখি,

আনুশা: মনে মনে উফফ আদিক্ষেতা দেখে আর বাচি না

তানভীর এর আম্মু: জানো মা আমার না সব সময় একটা মেয়ের সখ ছিলো, আজ তোমাকে দেখে আমার সে ইচ্ছে টা পুরোন হবে মনে হচ্ছে

আনুশা: কিছু বললাম না শুধু মুচকি একটা হাসি দিলাম, আন্টি আমি তা হলে আসি এখন আপনি মায়ের সাথে কথা বলুন

উফফফ বাছলাম, মা ছেলে দুজনেই একরকম,একটু বেশি কথা বলে,।

তানভীর : যাক আনুশাকে এখন একটু একা পেলাম একটু কথা বলে আসি,এই আনুশা

আনুশা: মায়ের থেকে উদ্ধার হলাম, এখন ছেলে শুরু করছে,না দাঁড়িয়ে কোন উপায় নেই

তানভীর : আনুশা তোমাকে না আজকে,,,,,,,,,,,,,,

আনুশা: আমাকে আজকে কি?

তানভীর : না মানে তোমাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে

আনুশা:?????????

তানভীর : এই প্লিজ প্লিজ তুমি রেগে যেওনা কি করবো বলো সত্যি কথা
মুখ পসকে বেরিয়ে গেছে আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না এই কান ধরেছি

আনুশা: তানভীরের অবস্থা দেখে না হেসে পারলাম না,একটা হাসি দিয়ে
ওখান থেকে চলে আসলাম

তানভীর : তুমি নিজে ও জানো না হাসলে তোমাকে কতো সুন্দর লাগে,এই প্রথম তোমাকে হাসতে দেখলাম আর আমি যে তোমার প্রেম এ আবার পড়ে গেলাম।

আনুশা: ওখান থেকে চলে আসাতে ভালো হয়েছে,আমি কারো উপর দূর্বল হতে চাই না, ছেলেরা ভালোবাসার ফাদে পেলে,পরে ভালোবাসার সম্মান। রাখতে জানে না এরা ভালোবাসার যোগ্য নয়

continue

হারিয়ে যাওয়া, পথ খুঁজে পাওয়া part: 11

0
হারিয়ে যাওয়া, পথ খুঁজে পাওয়া

হারিয়ে যাওয়া, পথ খুঁজে পাওয়া

part: 11

লেখা –সুলতানা ইতি

অন্নি: তা তো রাখবি,তবুও,, মানে তোর জীবনে কিছু হওয়ার ইচ্ছে নেই,এই ধর ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ইটস ইটস,আর কি

আনুশা: উফফ অন্নি এই সব ফালতু কথা বলা বন্ধ করবি

অন্নি: ফালতু হতে যাবে কেনো রে, কথা গুলো মোটেও ফালতু নয়

আনুশা: তুই মনে হয় জানিস না অন্নি, স্বপ্ন দেখা আমি কবেই ছেড়ে দিয়েছি,স্বপ্ন শুধু মানুষকে নিস্বঃ শব্দ ভাবে আঘাত করতে জানে, কখনো পূরন হয় না

অন্নি: সত্যি আনু তুই অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস,আমার তো এখন ডাউট হচ্ছে তুই আনুশা তো, নাকি অন্য কেউ,তুই তো আমাকে বলতি অনু স্বপ্ন তো মধ্যভিত্ত ফ্যামেলির মানুষেরা দেখে যা তাদেরকে বাচতে শিখায়

আনুশা: পুরনো সব কিছু মনে করতে চাই না আসলে তখন বুঝতাম না, জীবন কি?,স্বপ্ন কি?এখন বুঝি জীবন মানে যুদ্ধ করা,আর স্বপ্ন দেখা হচ্ছে জীবনের সব ছেয়ে বড় ভুল

অন্নি:(আজকের দিনে তো আমি আনুশার মনটা আর ও খারাফ করে দিলাম,ইসস অতিত নিয়ে কথা বলা একদম উচিত হয়নি আমার) ওকে আনু এগুলা বাদ দে তো তোকে একটা খবর দেয়ার ছিলো

আনুশা:কি বল
অন্নি: আমরা ঢাকাতে শিপ্ট হচ্ছি

আনুশা: ও তাই, কবে আসছিস,

অন্নি: তুই খুশি হসনি,আমি তো ভাবলাম শুনে তুই খুশিতে লাফিয়ে উঠবি

আনুশা: এখন আর কোন কিছুতেই খুশি হইনা,জীবনকে জীবনের মতো করে চলতে দিই।

অন্নি: তোকে তো আমি এই প্রথম দেখছি না সেই ছোট বেলা থেকেই আমরা এক সাথে পড়ছি,শুধু তাই নয় আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড সেই ক্লাস ওয়ান থেকে,তোর মনে আছে, স্যার রা আমাদের কতো বকা দিতো, আমরা কেনো এক সাথে বসি,আর কথা বলি সারা ক্লাস,এ

আনুশা: সে গুলো ভুলার মতো নয়,আবার যে মনে রাখতে হবে তেমন ও কোন কথা নেই,আচ্ছা অনেক কথা বললি আজ এইবার রাখিরে আমার এখন ভালো লাগছে না,

অন্নি: ইসস মেয়েটার মন খারাফ করে দিলাম এখন তো আর কল ও রিসিভ করবে না নিশ্চয় খুব কাঁদবে এখন

আনুশা:(মনে মনে) অন্নি কেনো তুই আমার পিছনের স্মৃতি মনে করিয়ে দিলি,
আমি তো এই সব কিছু ভুলে থাকতে চাই,কেনো মনে করিয়ে দিলি,খুব সিম্পল একটা স্বপ্ন ছিলো সংসার করবো,নিজের বরকে খুব ভালোবাসবো,আর বিনিময়ে তার থেকে অনেক ভালোবাসা আদায় করে নিবো,আমাদের ছোট্ট একটা সুখের সংসার থাকবে,আর একটা লিটল প্রিন্সেস, যে সারা ঘরময় আলোকিত করে গুরে বেড়াবে,এই এতো সব নাম কামানো তো আমার স্বপ্ন ছিলো না, নিহাল, নিহাল কেনো তুমি আমার সাথে এমন করলে, একটা সুযোগ দিয়েই দেখতে তোমাকে কতোটা নিস্বঃ সার্থ ভাবে ভালোবাসতাম,ভালোবাসায় তোমাকে কানায় কানায় ভরিয়ে দিতাম,
না না না তোমরা পুরুষজাতি কখন ও কারো ভালোবাসার যোগ্য ই না , তোমরা কারো জীবন সুন্দর করে ঘড়তে পারো না,বরং জীবনের সব গুলো রঙিন রঙ গুলো কে সরিয়ে, সাদা কালো করে দিতে পারো, জীবন সাগরের,মাঝখানে পেলে চলে যেতে পারো একবার ও পিছনে তাকিয়ে দেখনা , যাকে সাগরে পেলে এসেছ সে মরে গেছে নাকি, ডুবে ডুবে ভেসে আছে,,আনুশা ভিড় ভিড় করে এগুলা বলছে আর কাঁদছে,হঠাৎ কারো স্পর্সে আনুশা কান্না থামিয়ে দিলো,বুঝতে পারলো মা ছাড়া কেউ নয়,মায়ের সামনে ভেঙে পড়লে চলবে না,আনুশা আস্তে করে চোখের পানি মুছে নিলো

আনুশার আম্মু:কিরে মা কাঁদছিস কেনো খুব মন খারাফ তাই না, আসলে এমন টা তো হওয়ার ই কথা, তোর বাবা যে আমার সাথে তোদের সাথে বেঈমানি করেছে,মানুষ টা কি করে পারলো তার মেয়েদের পেলে চলে যেতে,তুই জানিস তুই তখন ছোট ছিলি,বাবা ছাড়া কিছু বুঝতিই না তুই,সারাদিন বাবার কাছে যাবো বলে পাগল করে দিতি,আর তোর বাবার একটু সময় ছিলো না তোর জন্য,শিলা সুমি তখন বুঝতে শিখেছে,ওরা তোর বাবার এই আচরণ কে খুব। ভয় করতো একদিন তোর বাবা ঘুমাচ্ছিলো,তুই যেয়ে ঘুম থেকে জাগালি আর বললি তুই আইসক্রিম খাবি,উনি সেদিন তোকে ও মেরেছে আর আমাকে ও,যখন আমাকে মারছিলো, তোর বাবা,। তখন শিলা সুমি এক কোনায় বসে কান্না করে,আর তুই তোর বাবার কাছে কান্না কর‍তে করতে বলছিস বাবা তুমি মাকে মেরো না,আমি কোন দিন তোমার কাছে কিচ্ছু চাইবো,না

আনুশা:আচ্ছা মা বাবারা তো অনেক ভালো হয় আমার বাবা এমন ছিলো কেনো
আনুশার আম্মু: তোর বাবা এমন ছিলো না যখনই পর মহিলার নেশা মনে ডুকে যায় তখন থেলে পালটে যায় তোর বাবা

আনুশা: থামো মা আর বলতে হবে না শুনতে চাই না এই সব কথা,,ভুলে থাকতে চাই সব কিছু,ভুলে থাকতে চাই অতিত কে, মা মেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, (কাঁদুক কাদতে দিন ওদের কাঁদলে কষ্ট টা কিছু হলে হালকা মনে হয়)

তানভীর : যাক বাবা স্যার। যে ভাবে যে ভাবে বলেছে,সব ঠিক ঠাক মতো করতে পেরেছি এই অনেক,আনুশার এমন একটা দিনে কোন কিছুর ঘাপলা থাক এই টা আমি চাই না,এখন বাসায় ফেরা যাক

তানভীরের আম্মু: অনেক রাত হলো ছেলেটা এখন ও ফিরছে না কেনো,একটু চিন্তা মুক্ত হলাম তানভীরের আব্বু সব কিছু মেনে নিয়েছে বরং এই সময় ছেলের পাশে বন্ধুর মতো থাকতে বলেছে বার বার করে বলেছে কোন মেণ্টাল প্রেশার যেন না দিই,উনি যখন মেনে নিয়েছে তখন আমি আর কি বলবো, আর ঐ মেয়েটার ভুত ওর মাথা থেকে নামাবো কি করে, দরজায় টোকা পড়েছে মনে হয় তানভীর এসেছে যাই দরজা টা খুলে দিই
তানভীর :তুমি ঘুমাওনি আম্মু,

তানভীরের আম্মু: তুই দুপুর থেকে না খেয়ে আছিস আমি ঘুমাই কি করে বল
তানভীর :ওহ আম্মু তুমি আমাকে নিয়ে এতো ভেবো না ত আমি এমনিতেই ঠিক আছি

তানভীরের আম্মু: কতো টা ঠিক আছিস সে তো দেখতেই পাচ্ছি,চল খাবি,, আজ নিজের হাতে তোকে খাইয়ে দিবো

তানভীর : আম্মু আমি তোমাদের স্বপ্ন টা পূরন করতে পারিনি,প্লিজ তোমরা আমার উপর রেগে থেকো না

তানভীরের আম্মু:দূর পাগল ছেলে,, এই বার পারিসনি তো কি হইছে,পরের বার পারবি,আমরা সব সময় তোর পাশে আছি

তানভীর : আম্মু তুমি আব্বুকে কথা টা বুঝিয়ে বলো,উনি যেন রাগ না করে

তানভীরের আম্মু,,উনাকে আমি বলেছি উনি সব স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছে তুই এখন এগুলা নিয়ে ভাবিস না,,খাওয়া শেষ তানভীর ঘুমাতে গেলো,তানভীরের আম্মু তানভীরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে

to be continue

একটি পানকৌড়ির গল্প ৭

0
একটি পানকৌড়ির গল্প....  ৭

 

একটি পানকৌড়ির গল্প

৭.

রশীদ আলমের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে আফতাব হোসেনের দারুণ হয়রানি হয়েছে! এই লোক তো তার চেয়েও কিপটে মনে হচ্ছে। এতো ভিতরে কেউ বাড়ি করে! সে অবশ্য নিজেও তো বেশ ভিতরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। কিন্তু রশীদ আলম সাহেব তাকেও হার মানিয়েছেন বটে! তবে মধ্যবিত্তরা ইচ্ছাকৃত ভাবে কিপটে হয়না। হাজারটা কারণ থাকে। কলিং বেলে চাপ দিয়ে বুঝতে পারলেন, কলিং বেল নষ্ট বা নেই। সুইচ আছে, এতে বোঝা যায় পূর্বে কলিং বেল ছিলো। রশীদ আলম সাহেব সত্যিই আর্থিক সংকটে থাকেন।

দরজায় টোকা দিলেন। তিন চার বার দেয়ার পরে দাঁড়িয়ে রইলেন। ভিতরে মানুষ থাকে কোনো হেলিকপ্টার না, যে উড়ে উড়ে আসবে। নিজেকেই বোঝাতে লাগলেন। কেনো যেন সবকিছুতেই অস্থিরতা কাজ করছে তার৷ কারণ টা খুঁজে পাচ্ছেন না।

১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরে আবার টোকা দিলেন।
বাড়ির লোকজন কি ঘুমায় নাকি? আজব ব্যাপার তো! একজন মানুষ আসবে সেটা তো খেয়াল রাখতে পারে।
আফতাব হোসেন চলে যাবেন ভেবে পা বাড়ালেন তখনই দরজা খুললেন রশীদ আলম সাহেব।
তিনি লজ্জিত হয়ে বললেন
– কিছু মনে করবেন না, দরজা খুলতে দেরি হয়ে গেলো।
আফতাব হোসেন বললেন
– আজকে সব বিষয়ে আমার অস্থিরতা লাগছে। তাই কিছু মনে করতে বাধ্য হচ্ছি। ভেতরে আসা যাবে কি?
রশীদ আলম সাহেব দরজা ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললেন
– অবশ্যই। আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছি!
– তাই নাকি? অপেক্ষা করছিলেন তাই দরজা খুলতে এতো দেরি। আর অপেক্ষা না করলে কী হতো কে জানে!
– আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
– মেনে নিলাম।ফারিয়াকে ডেকে আনুন আর তার মাকেও।
রশীদ আলম ভেতরের ঘরে চলে গেলেন। গেলেন তো গেলেনই আর খোঁজ নেই।
আফতাব হোসেন নিজেকেই গালি দিলেন। তার আসা যে ঠিক হয়নি বুঝতে পারছেন।
না এসেও উপায় ছিলো না। এইটুকুন একটা মেয়েকে এভাবে ফেলা যায়না।
প্রায় ১০ মিনিট পরে রশীদ আলম চা, বিস্কুট, চানাচুর নিয়ে এলেন। পিছনে গুটি গুটি পায়ে ফারিয়া এসে বাবার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো।
আফতাব হোসেন বললেন
– এসবের প্রয়োজন ছিলো না। বেশি করে ফেলছেন।
– আপাতত নাস্তা করেন। রাতে খেয়ে যাবেন। ফারিয়ার আবদার!
ফারিয়া নিচু স্বরে বলল
– আপনি না খেয়ে যাবেন না।
বাসার ভেতর থেকে বৃদ্ধা নারী চেঁচিয়ে বললেন
– ঔ মাইয়ার কথায় মন গলতে দিয়েন না ডাক্তার সাহেব। ওর ঘাড়ে জ্বীন আছে জ্বীন। গঞ্জু ফকীর রে দেখাইছিলাম হে কইছে ঘাড়ে জ্বীনের মন্ত্রী বসেছেন। এই মেয়েকে ছাড়বেনা। আপনি ডাক্তার মানুষ আপনি জ্বীন-ভূত ছাড়াবেন ক্যামনে বলেন?
রশীদ আলম লজ্জায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেন না। তার মা যে এসব বাজে কথা বলে বসবেন বুঝতে পারেননি।
রশীদ আলম আমতা আমতা করে বললেন
– ওসব কথায় কান দিবেন না। মা তো বয়স হয়েছে তাই আরকি…..
বৃদ্ধা চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন। আফতাব হোসেন একটি কথাও বুঝতে পারছেন না। এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথা বললে, সেই কথার আগাগোড়া বোঝা মুশকিল। আফতাব হোসেন ব্যাপারটাকে অগ্রাহ্য করে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।
– আপনার নাকে চিল্লাতে দিন। একাই থেমে যাবে। আর আমাকে নিয়ে ভাববেন না। আমি আপনাদের পারিবারিক বিষয় টাকে অগ্রাহ্য করতে পারবো।
রশীদ আলম নীরবে কোনো প্রতিউত্তর না দিয়েই বসার ঘর ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন।
ফারিয়া, আফতাব হোসেনের সামনে চেয়ার নিয়ে বসলো।
– চা খাবে মামনী?
ফারিয়া মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালো।
– আজকে মনে হচ্ছে বেশ সুস্থ আছো?
– জি, আজকে গন্ধটা নাকে কম আসছে। ব্যথাও কিছুটা কমেছে।
আফতাব হোসেনের মনে হলো মেয়েটি পুরোপুরি সুস্থ না। ভান করছে সুস্থ হওয়ার। যেমনটা মধ্যবিত্তরা সুখী হওয়ার ভান করে। মেয়েটার চোখ তীব্র কষ্ট ধরে আছে। গলার স্বরটাও সুস্থ দের মতো না। মেয়েটি এখন তাকে মিথ্যা বলেছে।
– স্বপ্নটা আবার বলোতো।
– অন্যদিন বলি? আজকে আমার কিছুটা সুস্থ লাগছে।
– তুমি মোটেও সুস্থ না। তোমার চোখ আর গলার স্বর প্রমাণ করে তুমি অসুস্থ। গন্ধটা কম লাগছে বিধায় নিজেকে সুস্থ মনে হচ্ছে।
– সুস্থ তো হতে পারছিনা।
– স্বপ্নটা আজ বলবা না বুঝলাম তবে আগামীকাল বলতেই হবে। আমি তোমার বাবাকে ফোন করবো তখন বলতে হবে।
– আচ্ছা।
– কিছু প্রশ্ন করবো সঠিক উত্তর দিবে। মিথ্যা হলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবোনা।
– আমি যদি মিথ্যা বলি আপনি ধরতে পারবেন?
– মামনী, একটু আগেও তো ধরলাম!
ফারিয়া খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো।
ভেতরের ঘরে বসে রশীদ আলমের মা ফারিয়ার এরকম হাসি শুনে বেশ বিরক্ত হলেন। কিছু বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু বললেন না। কারণ ডাক্তার তাকে একেবারেই পাত্তা দেননি।
– তোমার স্কুলে যেতে ইচ্ছা করেনা?
– করে।
– খেলতে?
– করে। আমাদের বাড়ির উত্তর পাশে একটা মাঠ আছে। এই এলাকার সবাই ওখানেই খেলে।
– তোমার বন্ধু বান্ধবী নেই? তোমাকে দেখতে আসেনা?
– স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেবার পরে ওরা আসতো। কিন্তু দাদী তাদের কে আসতে নিষেধ করেছেন। আমার ঘাড়ে নাকি জ্বীন  আছে। সেই জ্বীন ওদের ক্ষতি করবে।
– তুমি এইসব কথা বিশ্বাস করো?
– না, মোটেও না। আমার দাদী আমাকে পছন্দ করেন না।
বিস্কুটের বাটি এগিয়ে দিয়ে আফতাব হোসেন বললেন
– নাও, বিস্কুটা খাও। একা একা খেতে নিজেকে ছোঁচা মনে হয়।
লিমা দেশি মুরগীর ঝোলের লবণ স্বাদমতো হয়েছে কিনা দেখছিলেন। স্বামীকে লজ্জিত অবস্থায় রান্নাঘরে আসতে দেখে খুব একটা অবাক হলেন না। লিমা জানতেন তার শ্বাশুড়ি আম্মা আজকে বড় কিছু ঘটনা ঘটাবেন। বড় কিছুর তুলনায় এই ঘটনাটি খুব ছোট্ট। স্বামীকে বললেন
– শুকুর করুন যে অল্পের উপর দিয়েই গেছে। এর চেয়ে বাজে কিছু ঘটতে পারতো।
– রান্না হয়েছে?
– প্রায়ই শেষ। কেনো?
– ডাক্তার সাহেব তোমার সাথে কথা বলবেন।
– আমার সাথে আবার কীসের কথা!
– তোমার মেয়ের সম্পর্কেই জানতে চাইবে।
লিমা গুছিয়ে নিচ্ছে কী কী বলবে। আর কীভাবে কথা বলবে। একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলবে সে। ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে।
ডাক্তার সাহেবের সামনে লিমা একা বসে আছেন। ডাক্তার সাহেব তাকে ২০ মিনিট যাবত বসিয়ে রেখেছেন কিন্তু একটা প্রশ্ন পর্যন্ত করেননি। সে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতেও পারছেন না।
আফতাব হোসেন লিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
– আমি দুঃখিত আপনাকে এভাবে বসিয়ে রাখার জন্য।
লিমা বললেন
– সমস্যা নেই।
– কী যে বলেন গৃহিণী দের আবার সমস্যা নেই। ৫ মিনিটও আপনাদের বসে থাকার উপায় নাই। সেখানে ২০ মিনিট, যাইহোক।আসল কথায় আসি।
– ফারিয়া তো আপনার সৎ মেয়ে, তাই না?
প্রশ্নটা করে আফতাব হোসেন লিমার দিকে তাকালেন। কষ্টের ছায়া পুরো চোখ মুখ জুড়ে খেলা করছে। মনে হচ্ছে একটু পরেই কেঁদে ফেলবে। ঠিক তাই হলো, চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু হলো।
আফতাব হোসেন বললেন
– প্রথম যেদিন স্বপ্ন দেখেছিলো সেদিনের ঘটনা মানে স্বপ্ন দেখার আগে বা পরে কী কী করেছিলো ফারিয়া একটু বলবেন? আপনি তো ওর মা আপনি ভালো জানবেন।
চোখের পানি না মুছেই লিমা বলতে শুরু করলেন
– স্বাভাবিক কাজই তো করেছে। স্কুলে গিয়েছিল। তারপর এসে খেয়ে ঘুমালো। ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পড়তে বসলো। বিকালে খেলতে গেলো। প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যায় ফিরে আসলো। সন্ধ্যায় নাস্তা করে আবার পড়তে বসলো। তারপর রাতে খেয়ে ঘুম। কিন্তু ভোরের দিকে ওর বিকট চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙে। প্রায় দৌঁড়ে আমি ওর ঘরে গেলাম। ফারিয়া ওর বিছানার উপর বসে ভয়ে কাঁপ ছিলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও চিৎকার দিয়ে বললো
– মা ব্যথা লাগে। মা পুরো শরীরে আমার ব্যথা।
আমার মেয়েটার কথা কেউ বিশ্বাস করলো না। সবাই ওকে মিথ্যাবাদী বলতে শুরু করলো। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন অবস্থা খুব খারাপ হতে লাগলো তখন ওর বাবা বিশ্বাস করতে শুরু করলেন।
লিমা চুপ করে গেলেন।
আফতাব হোসেন কিছুক্ষণ ভেবে বললেন
– স্কুলে খারাপ কিছু হয়েছিল?
– না। ও আমাকে সবকিছু শেয়ার করতো। ভালো লাগা, খারাপ লাগা সব। স্কুলে কিছু হলে অবশ্যই আমাকে বলতো।
– বাসায় কিছু বা খেলতে গিয়ে?
– নাহ।
– আপনি ওকে জিজ্ঞেস করবেন অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে কিনা ওর সাথে। আমার জানা টা খুব দরকার। আচ্ছা ওর দাদীর কাছে গল্পটল্প শুনতো বা আপনার কাছে না কারো কাছে?
– ও ছোটো বেলা থেকেই দাদীর কাছ থেকে দূরে থাকতো। আসলেই আমিই দূরে রাখতাম। ওর দাদী ওকে ঠিক পছন্দ করেন না। আমি গল্প বলতাম।
– কীরকম গল্প? ভূতের?
– নাহ, রাজা রাণীর গল্প বা টোনাটুনির গল্প এসব। আমার বাবা নিষেধ করে দিয়েছিলেন বাচ্চাদের যেন ভূতের গল্প না শোনাই।
– কোনোদিন ওর মাঝে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছেন বা অস্বাভাবিক কিছু করেছে?
– না।
– আমার ধারণা আপনি ওর সবচেয়ে কাছের, খুব কাছের। আপনাকে আমি ২ দিন সময় দিলাম, খুঁজে বের করুন পূর্ব স্মৃতি থেকে।
আমি আজ উঠি।
– না না খেয়ে যাবেন। যাই রান্না করেছি তাই খেয়ে যাবেন।
চলবে……..!
© Maria Kabir

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part: 10

2

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া

part: 10

লেখা –সুলতানা ইতি

প্রিন্সিপাল : তা বললে কি আর হয়রে মামুনি,তুই তো এখন আমাদের সবার গৌরব, আচ্ছা অনেক কথা হলো আজ তা হলে আসি,

আনুশার আম্মু: আপনারা এতো দূরর কষ্ট করে এলেন, আপনাদের কে ভালো করে,,

প্রিন্সিপাল : না না আপনি এতো ব্যাস্ত হবেন্না,আমরা এমনিতে ই অনেক খুশি,(আনুশার মায়ের কথা টা প্রিন্সিপাল স্যারর বুঝতে পেরে থামিয়ে দিলেন)আচ্ছা কাল আপনি ও আপনার মেয়ের সাথে যাবেন আপনি ও কিন্তু ইনভাইটেড

আনুশা আম্মু: কিচ্ছু বললেন না,(মনে মনে আল্লাহর কাছে শত কুটি শুকরিয়ে আদায় করলাম)

আনুশা: স্যার রা চলে গেছে,এখন আপুদের এই খবর টা জানাই কি করে,মোবাইলে যে ব্যালেন্স শূন্য, (মন খারাফ করে বসে আছে আনুশা,আজকের এই দিনে ও টাকা নেই হাতে, এই ভেবে মন টা খুব খারাফ)

#
তানভীর : এতো কিছু ভিতরে আনুশার সাথে একটু ও কথা বলতে পারলাম না,,ঠিক আছে কোন ব্যাপার না,আজকের, আর কালকের এক সাথে দুই দিনের কথা ওর সাথে বলবো কাল,, এখন বাসায় যাই

তানভীরের আম্মু: ছেলেটার যে কি হলো ফোনটা ও রিসিভ করছে না, কি এলো রেজাল্ট এ কিছুই জানালো না কি যে করি

তানভীর : খুশি খুশি মনে বাসায় ডুকলাম

তানভীরের আম্মু: কিরে এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো তোকে, বলনা রেজাল্ট কেমন হলো নিশ্চয় অনেক ভালো তাই না

তানভীর : ওহ আম্মু আমার কথা বাধ দাও তো তুমি জানো আজ কি হয়েছে।

তানভীরের আম্মু: তুই না বললে জানবো কি করে

তানভীর : আনুশা সবার প্রথম হয়েছে শুধু তাই নয় পুরো জেলা দিয়ে প্রথম স্থান আনুশা পেয়েছে

তানভীরে আম্মু:সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু তোর রেজাল্ট কি, সেটা তো বলবি,(তানভীর যেনো ওর মায়ের। কথা শুনতেই পাচ্ছে না)

তানভীর : দাড়া আম্মু এতক্ষনে তো টিভি তে খবর টা দেয়ার কথা,টিভি টা অন করি আগে

তানভীরের আম্মু:ছেলেটার যে কি হলো, কি জানতে চাইছি, আর ছেলেটা কি করছে, ওর মাথা ঠিক আছে তো
হ্যারে তানভীর আমি তোর কথা জানতে চাই আনুশার কথা নয়,বল আম্মুকে কি রেজাল্ট আসলো তোর

তানভীর : কিছু বলতে যাবে অমনি বাসার দরজাতে টোকা পড়লো, আম্মু যাই দেখে আসি কে আসছে

তানভীর দরজা খুলে দেখলো তানিম আসছে

তানভীর : কিরে তুই কি মনে করে এলি,

তানিম: এলাম আর কি, না এলে তো আর তোর পাগলামি দেখতে পারতাম না,রেজাল্ট পূরো এফ। তাতে ও তোর মধ্যে কোন এফেক্ট পড়েনি তুই আনুশার জন্য পাগল হয়ে আছিস

তানভীরের আম্মু:কিইইই তানিম তুমি কি বললে

তানিম: কেনো আন্টি তানভীর আপনাকে কিছু বলেনি, ওর তো রেজাল্ট ই আসেনি
তানভীরের আম্মু: স্তব্ধ হয়ে গেলাম ছেলের রেজাল্ট এর কথা শুনে,কিছু বলার ভাষা নেই

তানভীর : ওসব কথা ছাড় তুই কেনো এসেছিস সেটা বল

তানিম: প্রিন্সিপাল স্যারর তোকে ফোনে পাচ্ছে না তা আমাকে বল্লো তোকে বলতে কালকের অনুষঠানের কিছু আয়োজনে তোকে থাকতে বলেছে, তোকে আমি একটা মেসেজ সেন্ট করছি,সেখানে কি কি আনতে হবে সব লিখা আছে,অই গুলা স্যারর কে এনে দিবি

তানভীর : খুশি হয়ে,, ওও তাই দাড়া তো দেখি মোবাইল টা কোথায়,ইসসস চার্জ ই তো নাই দাড়া চার্জ দিচ্ছি

তানিম: আমি তা হলে যাই
তানভীর : মোবাইল টা চার্জে দিয়ে অন করে এক নজর দেখে নিলো লিস্টে কি কি আনতে হবে,তার পর মোবাইল রেখে বের হয়ে গেলো

তানভীরের আম্মু: কি বলবো আমি তানভীরের আব্বুকে কতো স্বপ্ন ওর ছেলেকে নিয়ে এখন,এখন কি হবে

আনুশা: রাত আটটা বাজলো এখন ও আমি কাউকে খবর টা জানাতে পারিনি,
আনুশার আম্মু: আল্লাহর খুশি সব মা, আজকের এমন একটা খুশির দিনে আমরা কাউকে খবর টা দিতে পারছি না,সবই আল্লাহর ইচ্ছে,আয় এশার নামায পড়ে নে

আনুশা: তুমি যাও মা আমি আসছি
রুমের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, রাতের শহরটা খুব ভালো লাগছে বিশেষ করে এই মন খারাফ এর রাতে, আজ তো খুব খুশি হওয়ার কথা আমার,তবু ও কেনো যেনো খুশি হতে পারছি না,মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই, (আনুশার ভাবনায় পাটল পড়লো, কেন না মোবাইল টা বেজে উঠলো)
আনুশা: স্কিন এ তাকিয়ে দেখলাম অন্নি,কলটা রিসিভ করলাম

অন্নি:ঐ বান্দুরনি আজকের এমন একটা খুশির খবর আমাকে সবার আগে জানালি না কেনো,আমি একটু আগে খবর টা টিভি তে দেখলাম,তাই আমি এখন তোর উপর রেগে আছি

আনুশা:রাগ করিস না, ইচ্ছে থাকা সত্তেও তোকে জানাতে পারিনি,শুধু তুই কেনো,শিলা আপু, সুমি আপু, কাউকে বলতে পারিনি

অন্নি: যা আন্দাজ করেছি তা ই তো হলো তোর মোবাইলে ব্যালেন্স নাই,ওয়েট এ মিনিট,

আনুশা: যাহ লাইন কেটে দিলো কিছুক্ষন পর আনুশার মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠলো,আনুশা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিশ্চয় পাগলি টা মোবাইলে টাকা রিসার্চ করছে
এই বার কলটা আমি করি, সে কি কল টা কেটে দিলো,

অন্নি: আনুশা আমাকে কল করেছে কল কেটে দিয়ে নিজে কল করলাম,ঐতোকে কি আমাকে কল করার জন্য রিসার্চ করে দিয়েছি,তুই এই গুলা দিয়ে সুমি এন্ড শিলা আপুর সাথে কথা বলবি

আনুশা: কিন্তু ওদের সাথে কথা বলতে তো এতো টাকা লাগবে না

অন্নি: তো না লাগলে ওগুলা মোবাইলে থাক পরে দরকার হতে পারে, আচ্ছা বাদ দে এগুলা,বল আজ তোর কেমন লাগছে

আনুশা: কেমন লাগবে আবার,অন্যদিন যেমন লাগছে আজ ও তেমন লাগছে
অন্নি: বুদ্ধ অন্য দিন আর আজ এক হলো, তোর এই সাকসেস এ আমি কিন্তু খুব খুশি, কতটা খুশি তোকে বলে বুঝাতে পারবো না
নেক্সট প্ল্যান কি বল

আনুশা: কি আবার হবে কিছুই না,একটা জব খুজবো পেলে ভালো, না পেলে আর কি করার বল

অন্নি: কি যে বলিসনা তুই অনায়াসে যে কোন ভার্সিটিতে সান্স পাবি

আনুশা: এগুলা নিয়ে আমি ভাবি না রে, আমার ভাবনা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যেন মাকে ভালো রাখতে পারি

to be continue

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া

 হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া part:8

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

part:8

লেখা –সুলতানা ইতি

মায়ের সে কি আনন্দ, অনেক দিন পর মাকে এতো খুশি হতে দেখলাম

আম্মু: কিরে শিলা এতো শুকিয়ে গেলি কেনো

শিলা: কই মা আমি তো ঠিকই আছি

আনুশা: আপু বুঝিস না,তুই যদি হাতি ও হয়ে যাস তার পরে মা বলবে না তুই এখন ও চিকন, আরেকটু মোটা হতে হবে,আনুশার কথা শুনে সবাই এক সংগে হেসে উঠলো

তানভীর : যাক বাবা এতো দিনে আনুশা কোথায় থাকে সেটা জানতে পারলাম
তানিম: এবার খুশি তো চল এবার বাসায় যাই

তানভীর : আর একটু থাকি না এখানে

তানিম: থেকে কি করবি,দেখ এখন সন্ধ্যা হতে চল্লো আনুশা এখন আর বের হবে না সো এখানে থেকে ও তোর কোন কাজ হবে না তার ছেয়ে ভালো বাসায় যাই

তানভীর : কি আর করা চল তা হলে, বাসার দিকে ফিরে গেলাম

#আনুশা: আপু তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়,আমি খাবার দিচ্ছি,

শিলা:বাবা আনুশা তুই কবে থেকে কাজ করিস কি সুন্দর করে আমাকে ভাত বেড়ে খাওয়াচ্ছিস,আগে তো এক গ্লাস পানি ডেলে ও খাইতিস না

আনুশা: আপু আগে যেমন ছিলাম এখন ও কি তেমন থাকতে হবে, সব কিছুই পরিবর্তন শিল,আমি ও এর ব্যাতীর্কম নই

শিলা: তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো আনুশা আমি তো যাস্ট এমনি বললাম
আনুশা: কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু কর,
#
তানভীর : বাসায় এসে পৌছলাম
আম্মু: কিরে কই গেলি, এতো তাড়া তাড়ি চলে আসলি,বলে তো গেলি ফিরতে রাত হবে

তানভীর : আম্মু এতো কথা বলছো কেনো আমি বাসায় আসাতে কি তোমার প্রব্লেম হইছে,তা হলে বলো আমি আবার চলে যাই

আম্মু: যাক বাবা তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো,

তানভীর : তুমি রাগ করার মতো, কথা বললে আমি রাগবো না তো হাসবো,দেখো আম্মু এখন একটু চুপ থাকো, কোন প্রশ্ন করো না
এই বলে চলে এলাম রুমে দরজা লাগিয়ে দিলাম

তানভীরের আম্মু: ছেলেটার যে কি হয়েছে আজকাল কথায় কথায় রাগ দেখায়,সারা দিন কি এতো ভাবে,জিজ্ঞাস করলে ও বলে না ওর বাবাকে ব্যাপার টা জানাতেই হবে,আজকেই ফোন করলে বলবো

*
খাওয়া শেষ করার পর আনুশা বল্লো আপু তুই একটু রেস্ট নে আমি এগুলা পরিষ্কার করে আসছি কেমন

শিলা: বোন টা কে যতো দেখছি ততই যেন অভাক হচ্ছি,এ কি সেই বোন যে কি না কাজ করতে চাইতো না হাত ময়লা হয়ে যাবে সেই ভয়ে

আনুশার আম্মু: কিরে শিলা কি ভাবছিস

শিলা: মা আনুশা?

আনুশার আম্মু: আমার মেয়েটা আর আগের মতো নেই রে শিলা,অনেক পালটে গেছে কতোটা পাল্টেছে তা কেউ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না, মেয়েটা আমার বিতরে বিতরে গুমরে গুমরে মরছে,আর আমি মা হয়ে তা দেখছি

শিলা: মা কেদো না তো সব ঠিক হয়ে যাবে
আনুশা: হঠ্যাৎ এসে দেখি মার চোখে পানি,একি মা তুমি কাদছো কেনো

শিলা: মা আসলে ভাবছে উনার দুই মেয়ে উনার কাছে সুমি টা আসলে ভালো হতো ( কথা গুরানোর জন্য বললাম)

আনুশা: মা তুমি কেদো না তো যখন আমার একটা চাকরি হবে তখন বড় একটা বাসা নিবো, তখন তিন মেয়ে কে এক সাথে দেখবে,

আনুশার আম্মু: সুমি কে একটু ফোন কর তো,

আনুশা: আচ্ছা করছি,এই নাও রিং হচ্ছে রিসিভ হলে কথা বলবে

শিলা: চল আনু আমরা একটু কথা বলি দুই বোনের অনেক দিন পর দেখা হলো,
আনুশা: হুম তা যা বলেছো আপু তোমাকে পেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি,আর ও খুশি হতাম যদি সুমি আপু ও একসাথে থাকতো।

এই ভাবে গেলো আর ও কিছু দিন

আজ আনুশাদের রেজাল্ট বের হবে আনুশা তো সকাল থেকে টেনশন এ শেষ গতো কাল শিলা আপু ও চলে গেছে, কতো করে বললাম থেকে যেতে থাকলো না দুলা ভাইয়ের খাওয়া দাওয়ার নাকি প্রব্লেম হচ্ছে,এখন যে কি করি রেজাল্ট জানি কেমন হয় উফফ আর ভাবতে পারছি না কান্না পাচ্ছে যদি রেজাল্ট ভালো না হয় তা হলে আমি কি করবো

আনুশার আম্মু: চিন্তা করিস না মা আমি জানি তোর রেজাল্ট ভালো হবে

আনুশা: মা তুমি বলছো ভালো হবে,আল্লাহ তুমি আমার মায়ের কথা টা কবুল করো এই ভাবে হতাসার মধ্যে আনুশার সময় যাচ্ছে,
#
তানভীর :: রেজাল্ট নিয়ে আমার কোন চিন্তা নাই,হয় তো রেজাল্ট আসবে না,নয় তো টেনে টুনে পাশ করা রেজল্ট আসবে,আমি জানি এক্সাম ভালো হয়নি,

তানভীর এর আম্মু: তানভীর জানিস তোর বাবা কাল দেশে আসছে

তানভীর : জানতাম না তো আম্মু তা আব্বু হঠ্যাৎ করে দেশে ফিরছে কেনো
আম্মু: হঠ্যাৎ করে আসতে যাবে কেনো অনেক দিন থেকেই আসার কথা চলছে,তোকে নাকি তোর আব্বু কয়েক দিন কল দিয়েছে,তুই নাকি তোর আব্বুর কল রিসিভ করিস নি,

তানভীর : হুম আম্মু আসলে কথা বলতে ভালো লাগেনি তাই

আম্মু: তুই জানিস তোর পরিক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তোর আব্বুর কতো সপ্ন,ওনি আজই আসতে ছেয়ে ছিলো টিকেট পায়নি তাই কাল আসছে

তানভীর : মন খারাফ হয়ে গেলো কেননা আমি আব্বুর সপ্ন পুরন করতে পারবো না,

আম্মু: ভাবিস না বাবা রেজাল্ট ভালোই হবে আল্লার রহমতে
দুপুর ২ টার দিকে রেজাল্ট বের হলো

আনুশা: মা এবার তা হলে একবার কলেজ থেকে ঘুরে আসি,এতোক্ষনে রেজাল্ট বের হয়ে গেছে মনে হয়
আনুশার আম্মু: তা হলে যা,

এইদিকে তানভীর সকাল থেকেই কলেজ এ ওয়েট করতেছে রেজাল্ট এর জন্য,(কি ভাবছেন তানভীর নিজের রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করছে,না ও আনুশার রেজাল্ট দেখবে বলে অপেক্ষা করে বসে আছে)

তানভীর : যখন এ শুনলাম,নোটিশ বোর্ড এ রেজাল্ট শিট দিয়ে দিয়েছে তখনই ভোঁ দৌড় লাগালাম,
রেজাল্ট শিট দেখে তো আমি বলার ভাষা হারিয়ে পেলেছি,স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি

তানিম: কিরে এই ভেবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তোর তো রেজাল্টই আসেনি

তানভীর : তানিমের কথায় আমার ঘোর কাটলো, ওওও আমার টা আসেনি তা হলে, কোন ব্যাপার না তুই আনুশার রেজাল্ট টা দেখ তো

তানিম: আনুশার রেজাল্ট দেখে আমার কি হবে

তানভীর : ভ্রূ কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে, তুই বুঝবি না সর তো প্রিন্সিপাল স্যার এর কাছে যাবো এই বলে হাটা ধরলাম অফিস রুমের দিকে
তানভীর : মে আই কামিন

প্রিন্সিপাল স্যারর:ইয়েস

তানভীর : স্যারর আনুশার রেজাল্ট দেখেছেন

স্যার: হুম দেখেছি আমরা কয়েকজন স্যারর মিলে এখন আনুশা দের বাড়িতে যাবো

তানভীর : (খুশি হয়ে) ও তাই নাকি

স্যার: কিন্তু আনুশার রেজাল্ট দেখে তুমি এতো খুশি কেনো তোমার তো রেজাল্ট ই আসেনি

তানভীর : কি যে বলেন স্যার সবাইকে আর ভালো রেজাল্ট করতে পারে,এর মধ্যে ইংলিশ স্যার মানে আমাদের রবিন স্যারর আসলো,
রবিন স্যারর প্রিন্সিপাল স্যারর কে বলছে স্যার গাড়ি রেডী চলুন আনুশাদের বাড়িতে যাওয়া যাক

প্রিন্সিপাল : হুম চলুন,

প্রিন্সিপাল স্যারর কি ভেবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তুমি যাবে আমাদের সাথে

তানভীর : স্যারর এর কথা শুনে তো আমার খুশি তে লাফাতে ইচ্ছে করছে, হুম স্যার। যাবো

এর মধ্যে:মেহেদী স্যারর আমাদের বাংলা শিক্ষক উনি এসে প্রিন্সিপাল স্যারর কে বললেন স্যারর একটা কান্ড ঘটে গেছে

প্রিন্সিপাল : আবার কি ঘটলো

মেহেদী স্যার:জার্নালিস্টি রা কি করে যেনো খবর পেয়ে গেছে ওরা আনুশার ইন্টার্ভিউ নিতে যায়

প্রিন্সিপাল : ও তাই চলো ওদের কে নিয়ে আনুশার বাড়িতে যাবো

তানভীর : আমার তো খুশির সিমা নেই আমাকে এতো খুশি হতে দেখে
তানিম বল্লো s,s,c te তোর রেজাল্ট অনেক ভালো ছিলো তখন তো তুই এতো খুশি হসনি

তানভীর : তানিম তুই বুঝবি না প্রিয়ো মানুষটার ভালো কাজে, কতো টা আনন্দ পাওয়া যায় এটা তুই বুঝবি না

তানিম: রাগ দেখিয়ে আমার বুঝার দরকার নেই আমি গেলাম তুই তো আনুশার বাড়িতে যাবি

তানভীর : হুম যাচ্ছি কেনো তুই যাবি না

তানিম: তোর ইচ্ছে হইছে তুই যা আমাকে এর মধ্যে টানছিস কেনো

তানভীর : ওকে আমি যাচ্ছি,সবাই এক সাথে মাইক্রোবাস করেছে আনুশাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য,আমি এ তাদের সাথে উঠে বসলাম

to bee continue
[09:04, 3/15/2019] sultana eity: হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া

writer : সুলতানা ইতি
part:9

গাড়ি চলছে নিজের গতিতে,আর তানভীর এর হার্টবিট যেনো তার থেকে দশগুন বেশি গতি নিয়ে চলছে

আনুশার আম্মু: কিরে তোর হলো, যাবি কখন

আনুশা: এই তো মা আর একটু,আসলে মা টেনশন লাগছে খুব,যদি খারাফ কিছু শুনি তা হলে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না মা

আনুশার আম্মু: দেখো মেয়ের কান্ড এমন অলক্ষনে কথা কেউ বলে,তুই আল্লাহর নাম করে যা তো

আনুশা: ঠিক আছে মা দোয়া করো এই বলে আনুশা বের হলো
গলির মোড়ে এসেই আনুশা থেমে গেলো ওর কলেজ এর স্যার প্রিন্সিপাল স্যার সবাই আসছে তানভীর কে দেখে তো ওর আর ও ভয় লাগতে শুরু করলো, কি জানি ছেলেটা কোন মতলবে এসেছে তা ও আবার স্যার দের নিয়ে
তানভীর : আনুশা এ ভাবে ছেয়ে আছে কেনো ও কি কিছু বুঝতে পারেনি নাকি,উফফ ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে খুশির খবর টা দিতে, কিন্তু তা সম্ভব না এখানে শিক্ষকরা আছেন উনারাই বলবে

আনুশা: কি জানি কি হয় আজ আমার সাথে তবু ও স্যারর দের কে সালাম করি আগে ( আসসালামু আলাইকুম) স্যার। আপনারা

প্রিন্সিপাল স্যার: কেনো আমাদের আশা করিসনি বুঝি,

আনুশা: ইয়ে মানে, না মানে

স্যারর:তুই এতো নার্বাস হচ্ছিস কেনো

প্রিন্সিপাল স্যার: তা আমাদের কে তোর বাসায় নিবি না

আনুশা:হ্যা স্যার আসুন,( স্যার দের কে বসতে দিবো কোথায় একটাই রুম,যেখানে থাকি ও খানেই, খাই ও,পড়ি ও ইসস কি লজ্জা)
ভাবতে ভাবতেই চলে আসলাম বাসার ভিতরে,

আনুশার আম্মু: কিরে আনু তুই না কলেজ এ গেলি ফিরে আসলি কেন

আনুশা: মা আমার কলেজ থেকে প্রিন্সিপাল স্যারর সহ আসছে

আনুশার আম্মু: কলেজ থেকে কেনো,অভাক হয়ে উনি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন
আনুশার মায়ের কথা উত্তর না দিয়ে স্যারর দের বসতে বল্লো,আর আমতা আমতা করে বল্লো আসলে স্যার আমি আর মা থাকি তো তাই বাড়তি রুম নিই নাই,

স্যার: আনুশা কে থামিয়ে না না, মা তোর এতো ব্যাস্ত হতে হবে না আমরা কয়েকটা কথা বলেই চলে যাবো,তোর আম্মুকে ডাক

আনুশা: জি স্যারর ডাকছি( মনে মনে আল্লাহ জানে মা কে কি বলবে স্যারর, উফফ কি যে টেনশন হচ্ছে)মা তোমাকে স্যারর ডাকছেন

আনুশার আম্মু: স্যার দের সালাম দিয়ে পর্দার আড়ালে দাড়ালেন

স্যার: আসলে আমরা আপনাকে একটা কথা বলতে এসেছি

আনুশার আম্মু: জি স্যার বলুন আমার মেয়ে কি কোন ভুল করেছে

স্যারর:না না ভুল করবে কেনো বরং ও যা করেছে তার জন্য আমরা গর্ভিত,আমাদের কলেজের সবাই অহংকার করে

আনুশার আম্মু: আমাকে কি বুঝিয়ে বলবেন কি হয়েছে

স্যারর: হুম কেনো নয় আপনার মেয়ে এই কয় দিন আগে আমাদের কলেজ ভর্তি হয়েছে,আর এই কয়দিনে সে আমাদের কলেজ এর সবাইকে পিছনে পেলে কলেজ স্টপার হয়েছে ( স্যারর অনেক খুশি মনে কথা টা বললেন)

আনুশা: এতক্ষন মায়ের সাথে দাঁড়ানো ছিলো কথা টা শুনে সে ভিতরে গেলো, চোখে চল চল পানি স্যার আপনি সত্যি বলছেন তো, কেনো জানি না আমার কান কে বিশ্বাস করাতে পারছি না

প্রিন্সিপাল স্যারর:হ্যারে মা দেখ আমরা সবাই এসেছি,তোকে খুশি খবর টা দিতে
আনুশার আম্মু: খুশিতে কেদেই দিয়েছেন,আল্লাহ তারকথা শুনেছেন,এর থেকে বেশি আর কি চাই

আনুশা: স্যার আমি কি নিজের চোখে দেখতে পারি,রেজাল্ট টা,

প্রিন্সিপাল স্যারর:কেনো নয় একশোবার দেখবি, আগে দাড়া আমাদের সাথে আর ও কিছু গেস্ট এসেছে তাদের সাথে কথা বলে নে

আনুশা: অভাক হয়ে গেস্ট?

স্যারর:কই আপনারা এবার ভিতরে আসুন, স্যার বলার সাথে সাথে কয়েকজন লোক ভিতরে ডুকে গেলো তাদেত হাতে ক্যামেরা সহ আর ও অনেক কিছু আছে
আনুশা: এরা কারা

স্যার:আনুশা এরা জার্নালিস্ট তোর ইন্টার্ভিউ নিতে এসেছে

আনুশা: আমি তো অভাক হলাম,এতো খুশি আল্লাহ আমার কপালে লিখে রেখেছেন আনুশার ঘোর কাটলো জার্নালিস্ট দেত কথায়

জার্নালিস্ট: ম্যাম আপনার এতো টা সাকসেস এর পিছনে কারন টা জানতে পারি, যে খানে এখন কার ছেলে মেয়েরা পড়া শুনা বাদ দিয়ে খারাফ নেশায় আসক্ত হচ্ছে সেখানে আপনি সব কিছু কে এড়িয়ে চলে এতো ভালো রেজাল্ট করেছেন এর পিছনে কারন টা জানতে পারি

আনুশা: খুভ স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দিলো

আমি আমার লাইফে অন্য। কিছুর দিকে খেয়াল করিনি,আমার লখ্য । একটাই ছিলো, লাইফে সাকসেস হওয়া,

জার্নালিস্ট: ম্যাম আপনি এখন কি করবেন বলে আশা করেন,বা আপনি আপনার লাইফে কি হতে চান, কি হওয়ার স্বপ্ন,মানে আমাদের কে যদি একটু বলতেন?

আনুশা:আমি এখন কোন কিছু নিয়ে ভাবছিনা,আর আমি কোন কিছু নিয়েই আশা রাখি না,যে আমি লাইফে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবো এমন কোন স্বপ্ন আমার নেই,আমার স্বপ্ন আমার মাকে ভালো রাখা জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত তার পাশে যেন আমি থাকতে পারি,

জার্নালিস্ট: তার মানে আপনি এখন পড়া লিখা বা অন্য কিছু নিয়ে ভাবছেননা?

আনুশা: আমি পড়া লিখা করবো না এই টা আপনাদের কে বলিনি,তবে কতটুকু পর্যন্ত করবো সেটা আমার ভাগ্যের উপরে নির্ভরশিল,

জার্নালিস্ট: ওকে ম্যাম আমরা, আপনার মাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই

আনুশা আম্মু: অদের সামনে গিয়ে দাড়ালেন

জার্নালিস্ট: আপনার মেয়ের এতো ভালো একটা রেজাল্ট করেছে এই নিয়ে আপনার কোন কিছু বলার আছে

আনুশার আম্মু: আমার আর কি বলার থাকবে আমার মেয়েকে নিয়ে গর্ব করি,সে যেন তার লাইফে ভালো একটা পর্যায়ে পৌছাতে পারে আমি সেই দোয়া করি

প্রিন্সিপাল স্যার:আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আপনারা আর অহেতুক প্রশ্ন করে উনাদের বির্বত করবেন্না,আপনারা তো আনুশার কথা শুনেছেন আর কি
জার্নালিস্ট:আসলে স্যার মেয়ের এতো বড় একটা সাফল্যে মায়ের,মনের অবস্তা টা কেমন সেটা ই জানার ছিলো

প্রিন্সিপাল স্যার: আপনারা প্রশ্ন করা বন্ধ করলে আমরা উনাদের কিছু বলার সুযোগ পেতাম
জার্নালিস্ট : ওকে স্যার তা হলে আমরা আসছি,(জার্নালিস্ট রা চলে গেলো)

প্রিন্সিপাল : আনুশা মা তোকে কিছু বলার ছিলো,একটু শুনবি

আনুশা: জি স্যার বলুন

প্রিন্সিপাল : আমরা সবাই মিলে কাল তোকে একটা সম্ভর্ধনা দেয়ার অনুষঠানের আয়োজন করেছি,আসলে আমরা বললে ভুল হবে শহরের অনেক নামি দামি মানুষেরা এখন তোর সাথে দেখা করতে চাইবে, সেখানে সবাই উপস্থিত থাকবে

আনুশা: স্যারর এই সব না করলেও পারতেন,এমনিতে ও আপনাদের দোয়া আর ভালোবাসা আমার সাথে ছিলো বলেই আজ আমি এখানে দাড়াতে পেরেছি

to be continue

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া part:8

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

part:8

লেখা –সুলতানা ইতি

মায়ের সে কি আনন্দ, অনেক দিন পর মাকে এতো খুশি হতে দেখলাম

আম্মু: কিরে শিলা এতো শুকিয়ে গেলি কেনো

শিলা: কই মা আমি তো ঠিকই আছি

আনুশা: আপু বুঝিস না,তুই যদি হাতি ও হয়ে যাস তার পরে মা বলবে না তুই এখন ও চিকন, আরেকটু মোটা হতে হবে,আনুশার কথা শুনে সবাই এক সংগে হেসে উঠলো

তানভীর : যাক বাবা এতো দিনে আনুশা কোথায় থাকে সেটা জানতে পারলাম
তানিম: এবার খুশি তো চল এবার বাসায় যাই

তানভীর : আর একটু থাকি না এখানে

তানিম: থেকে কি করবি,দেখ এখন সন্ধ্যা হতে চল্লো আনুশা এখন আর বের হবে না সো এখানে থেকে ও তোর কোন কাজ হবে না তার ছেয়ে ভালো বাসায় যাই

তানভীর : কি আর করা চল তা হলে, বাসার দিকে ফিরে গেলাম

#আনুশা: আপু তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়,আমি খাবার দিচ্ছি,

শিলা:বাবা আনুশা তুই কবে থেকে কাজ করিস কি সুন্দর করে আমাকে ভাত বেড়ে খাওয়াচ্ছিস,আগে তো এক গ্লাস পানি ডেলে ও খাইতিস না

আনুশা: আপু আগে যেমন ছিলাম এখন ও কি তেমন থাকতে হবে, সব কিছুই পরিবর্তন শিল,আমি ও এর ব্যাতীর্কম নই

শিলা: তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো আনুশা আমি তো যাস্ট এমনি বললাম
আনুশা: কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু কর,
#
তানভীর : বাসায় এসে পৌছলাম
আম্মু: কিরে কই গেলি, এতো তাড়া তাড়ি চলে আসলি,বলে তো গেলি ফিরতে রাত হবে

তানভীর : আম্মু এতো কথা বলছো কেনো আমি বাসায় আসাতে কি তোমার প্রব্লেম হইছে,তা হলে বলো আমি আবার চলে যাই

আম্মু: যাক বাবা তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো,

তানভীর : তুমি রাগ করার মতো, কথা বললে আমি রাগবো না তো হাসবো,দেখো আম্মু এখন একটু চুপ থাকো, কোন প্রশ্ন করো না
এই বলে চলে এলাম রুমে দরজা লাগিয়ে দিলাম

তানভীরের আম্মু: ছেলেটার যে কি হয়েছে আজকাল কথায় কথায় রাগ দেখায়,সারা দিন কি এতো ভাবে,জিজ্ঞাস করলে ও বলে না ওর বাবাকে ব্যাপার টা জানাতেই হবে,আজকেই ফোন করলে বলবো

*
খাওয়া শেষ করার পর আনুশা বল্লো আপু তুই একটু রেস্ট নে আমি এগুলা পরিষ্কার করে আসছি কেমন

শিলা: বোন টা কে যতো দেখছি ততই যেন অভাক হচ্ছি,এ কি সেই বোন যে কি না কাজ করতে চাইতো না হাত ময়লা হয়ে যাবে সেই ভয়ে

আনুশার আম্মু: কিরে শিলা কি ভাবছিস

শিলা: মা আনুশা?

আনুশার আম্মু: আমার মেয়েটা আর আগের মতো নেই রে শিলা,অনেক পালটে গেছে কতোটা পাল্টেছে তা কেউ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না, মেয়েটা আমার বিতরে বিতরে গুমরে গুমরে মরছে,আর আমি মা হয়ে তা দেখছি

শিলা: মা কেদো না তো সব ঠিক হয়ে যাবে
আনুশা: হঠ্যাৎ এসে দেখি মার চোখে পানি,একি মা তুমি কাদছো কেনো

শিলা: মা আসলে ভাবছে উনার দুই মেয়ে উনার কাছে সুমি টা আসলে ভালো হতো ( কথা গুরানোর জন্য বললাম)

আনুশা: মা তুমি কেদো না তো যখন আমার একটা চাকরি হবে তখন বড় একটা বাসা নিবো, তখন তিন মেয়ে কে এক সাথে দেখবে,

আনুশার আম্মু: সুমি কে একটু ফোন কর তো,

আনুশা: আচ্ছা করছি,এই নাও রিং হচ্ছে রিসিভ হলে কথা বলবে

শিলা: চল আনু আমরা একটু কথা বলি দুই বোনের অনেক দিন পর দেখা হলো,
আনুশা: হুম তা যা বলেছো আপু তোমাকে পেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি,আর ও খুশি হতাম যদি সুমি আপু ও একসাথে থাকতো।

এই ভাবে গেলো আর ও কিছু দিন

আজ আনুশাদের রেজাল্ট বের হবে আনুশা তো সকাল থেকে টেনশন এ শেষ গতো কাল শিলা আপু ও চলে গেছে, কতো করে বললাম থেকে যেতে থাকলো না দুলা ভাইয়ের খাওয়া দাওয়ার নাকি প্রব্লেম হচ্ছে,এখন যে কি করি রেজাল্ট জানি কেমন হয় উফফ আর ভাবতে পারছি না কান্না পাচ্ছে যদি রেজাল্ট ভালো না হয় তা হলে আমি কি করবো

আনুশার আম্মু: চিন্তা করিস না মা আমি জানি তোর রেজাল্ট ভালো হবে

আনুশা: মা তুমি বলছো ভালো হবে,আল্লাহ তুমি আমার মায়ের কথা টা কবুল করো এই ভাবে হতাসার মধ্যে আনুশার সময় যাচ্ছে,
#
তানভীর :: রেজাল্ট নিয়ে আমার কোন চিন্তা নাই,হয় তো রেজাল্ট আসবে না,নয় তো টেনে টুনে পাশ করা রেজল্ট আসবে,আমি জানি এক্সাম ভালো হয়নি,

তানভীর এর আম্মু: তানভীর জানিস তোর বাবা কাল দেশে আসছে

তানভীর : জানতাম না তো আম্মু তা আব্বু হঠ্যাৎ করে দেশে ফিরছে কেনো
আম্মু: হঠ্যাৎ করে আসতে যাবে কেনো অনেক দিন থেকেই আসার কথা চলছে,তোকে নাকি তোর আব্বু কয়েক দিন কল দিয়েছে,তুই নাকি তোর আব্বুর কল রিসিভ করিস নি,

তানভীর : হুম আম্মু আসলে কথা বলতে ভালো লাগেনি তাই

আম্মু: তুই জানিস তোর পরিক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তোর আব্বুর কতো সপ্ন,ওনি আজই আসতে ছেয়ে ছিলো টিকেট পায়নি তাই কাল আসছে

তানভীর : মন খারাফ হয়ে গেলো কেননা আমি আব্বুর সপ্ন পুরন করতে পারবো না,

আম্মু: ভাবিস না বাবা রেজাল্ট ভালোই হবে আল্লার রহমতে
দুপুর ২ টার দিকে রেজাল্ট বের হলো

আনুশা: মা এবার তা হলে একবার কলেজ থেকে ঘুরে আসি,এতোক্ষনে রেজাল্ট বের হয়ে গেছে মনে হয়
আনুশার আম্মু: তা হলে যা,

এইদিকে তানভীর সকাল থেকেই কলেজ এ ওয়েট করতেছে রেজাল্ট এর জন্য,(কি ভাবছেন তানভীর নিজের রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করছে,না ও আনুশার রেজাল্ট দেখবে বলে অপেক্ষা করে বসে আছে)

তানভীর : যখন এ শুনলাম,নোটিশ বোর্ড এ রেজাল্ট শিট দিয়ে দিয়েছে তখনই ভোঁ দৌড় লাগালাম,
রেজাল্ট শিট দেখে তো আমি বলার ভাষা হারিয়ে পেলেছি,স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি

তানিম: কিরে এই ভেবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তোর তো রেজাল্টই আসেনি

তানভীর : তানিমের কথায় আমার ঘোর কাটলো, ওওও আমার টা আসেনি তা হলে, কোন ব্যাপার না তুই আনুশার রেজাল্ট টা দেখ তো

তানিম: আনুশার রেজাল্ট দেখে আমার কি হবে

তানভীর : ভ্রূ কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে, তুই বুঝবি না সর তো প্রিন্সিপাল স্যার এর কাছে যাবো এই বলে হাটা ধরলাম অফিস রুমের দিকে
তানভীর : মে আই কামিন

প্রিন্সিপাল স্যারর:ইয়েস

তানভীর : স্যারর আনুশার রেজাল্ট দেখেছেন

স্যার: হুম দেখেছি আমরা কয়েকজন স্যারর মিলে এখন আনুশা দের বাড়িতে যাবো

তানভীর : (খুশি হয়ে) ও তাই নাকি

স্যার: কিন্তু আনুশার রেজাল্ট দেখে তুমি এতো খুশি কেনো তোমার তো রেজাল্ট ই আসেনি

তানভীর : কি যে বলেন স্যার সবাইকে আর ভালো রেজাল্ট করতে পারে,এর মধ্যে ইংলিশ স্যার মানে আমাদের রবিন স্যারর আসলো,
রবিন স্যারর প্রিন্সিপাল স্যারর কে বলছে স্যার গাড়ি রেডী চলুন আনুশাদের বাড়িতে যাওয়া যাক

প্রিন্সিপাল : হুম চলুন,

প্রিন্সিপাল স্যারর কি ভেবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তুমি যাবে আমাদের সাথে

তানভীর : স্যারর এর কথা শুনে তো আমার খুশি তে লাফাতে ইচ্ছে করছে, হুম স্যার। যাবো

এর মধ্যে:মেহেদী স্যারর আমাদের বাংলা শিক্ষক উনি এসে প্রিন্সিপাল স্যারর কে বললেন স্যারর একটা কান্ড ঘটে গেছে

প্রিন্সিপাল : আবার কি ঘটলো

মেহেদী স্যার:জার্নালিস্টি রা কি করে যেনো খবর পেয়ে গেছে ওরা আনুশার ইন্টার্ভিউ নিতে যায়

প্রিন্সিপাল : ও তাই চলো ওদের কে নিয়ে আনুশার বাড়িতে যাবো

তানভীর : আমার তো খুশির সিমা নেই আমাকে এতো খুশি হতে দেখে
তানিম বল্লো s,s,c te তোর রেজাল্ট অনেক ভালো ছিলো তখন তো তুই এতো খুশি হসনি

তানভীর : তানিম তুই বুঝবি না প্রিয়ো মানুষটার ভালো কাজে, কতো টা আনন্দ পাওয়া যায় এটা তুই বুঝবি না

তানিম: রাগ দেখিয়ে আমার বুঝার দরকার নেই আমি গেলাম তুই তো আনুশার বাড়িতে যাবি

তানভীর : হুম যাচ্ছি কেনো তুই যাবি না

তানিম: তোর ইচ্ছে হইছে তুই যা আমাকে এর মধ্যে টানছিস কেনো

তানভীর : ওকে আমি যাচ্ছি,সবাই এক সাথে মাইক্রোবাস করেছে আনুশাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য,আমি এ তাদের সাথে উঠে বসলাম

to bee continue

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া part: 7

0

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া part: 7

লেখা –সুলতানা ইতি

 

এই ভাবেই গেলো কিছু দিন,

আগামি কাল আনুশার এক্সাম তাই পড়া শুনা করছে,, টিউশনির স্টুডেন্টদের ও বলে দিয়েছি কয়েক দিন পড়াতে পারবে না, আনুশা চায় না তার পড়ার কোন।ক্ষতি হোক

আনুশার আম্মু: হ্যারে আনু শিলা চায় তোর পরিক্ষার পরে এসে কয়েক দিন থাকতে তুই কি বলিস

আনুশা: মা এটা তুমি কি বলছো বড় আপুর আসতে ইচ্ছে হয়েছে সে আসবে এতে এক্সাম এর সাথে সম্পর্ক কি,আপু কে তুমি কাল ই আসতে বলে দাও

আনুশার আম্মু: না মানে এখানে তো থাকার তেমন জায়গা নেই, একটা রুম আমরা মা মেয়ে থাকি,আর ওর ছেলে মেয়ে আসলে ওরা দুষ্টামি করবে তোর পড়া শুনার ডিস্টার্ব হবে ভেবে আমি নিষেধ করেছি

আনুশা: তা ঠিক বলেছো আমি ও তো কিছু ভেবে দেখিনি,টেনশন করো না মা এক্সাম টা ভালো ভাবে হয়ে গেলে যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারি তো একটা জব পেলে এই বাসা টা ছেড়ে দিবো

আনুশার আম্মু: আল্লাহহ যেন তোর মনের আশা পূর্ন করে
আনুশা রাত একটা পর্যন্ত পড়লো এক্সাম এর চিন্তায় ওর ঘুম আসতেই চাইছে না

তানভীর : কাল এক্সাম আর আজ ও ঠিক করে পড়তে পারছি না কি যে করি,আচ্ছা আনুশা কি আমার কথা এমন করে ভাবে, কি জানি হয়তো ভাবে না,
আচ্ছা আনুশা কি পড়তে পড়তে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,হবে হয় তো,
মেয়েটা যে গ্রন্থ কীট, পড়তে পড়তে হয় তো পড়ার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে, আচ্ছা আনুশা ঘুমালে কি ওর মুখে চুল এলো মেলো হয়ে এসে পড়ে,ইসস যদি ওর ঘুমন্ত মুখ টা একবার ছুঁয়ে দিতে পারতাম

তানভীর এর আম্মু: অনেক রাত হয়েছে দেখে আসি ছেলেটা ঘুমিয়েছে কি না,
সে কি ছেলেটা তো আমার পড়া শুনা বাদ দিয়ে ভাবনায় ডুবে আছে তানভীর এই তানভীর, কিরে পড়ছিস না কেনো

তানভীর ; আম্মু পড়ছি তো

আম্মু: আর পড়তে হবে না অনেক রাত হয়েছে এই বার ঘুমা,

তানভীর : ঠিক আছে আম্মু, তুমি আমাকে একটু তাড়া তাড়ি ডেকে দিও, এখন লাইট অফ করে দাও

আম্মু:হুম দিচ্ছি

তানভীর : আম্মু চলে গেছে, অন্ধকারে ও যেন আনুশা কে দেখতে পাচ্ছি অনেক দিন হলো ঠিক করে ঘুমাই না,ঘুম যে আনুশার ঐ মায়াবী চাহনিতে আটকে গেছে,

সকাল বেলা,আনুশা তাড়া তাড়ি ফ্রেশ হয়ে এক্সাম দিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে
আনুশার আম্মু: আনু সব কিছু মনে করে নিয়েছিস তো ভুলে কিছু পেলে রাখিসনি তো
আনুশা: না মা তুমি দেখো সব নিয়েছি আর তোমার মেয়ে এতো টা ও মন ভুলো নয় যে প্রয়োজনীয় জিনিশ পেলে যাবে
#
এদিকে তানভীর ভাবছে কিছুই তো পড়েনি কি লিখবো,আল্লাহ কপালে যা রাখছে তা ই হবে ভেবে লাব নাই,

তানভীর আম্মু:তানভীর এই নে তোর সব রেডি করে দিয়েছি এই বার আল্লাহর নাম করে বের হও
তানভীর মায়ের দোয়া নিয়ে বেরিয়ে গেলো,

এ ভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম এর পর আজ ওদের এক্সাম শেষ হলো,

আনুশা :মা বড্ড ক্লান্ত লাগছে,আজ আর কোথায় যাবো ণা, সারা দিন ঘুমাবো

আনুশার আম্মু: তুই ভুলে গেছিস আজকে যে শিলা আসবে আর তোকে কিন্তু স্টেশন এ আনতে যেতে হবে,আমার বড় মেয়েটা একদম বোকা, ও আসতে পারবে না এতো দূর

আনুশা: হুম তা যা বলেছো আপু এমন দেখেই দুলা ভাই ওর সাথে চালাকি করে পার পেয়ে যায়

আনুশার আম্মু: হুম তা ঠিক,আচ্ছা এখন আর কথা বলিস না ঘুমা,আমি বিকেল ও জাগিয়ে দিবো তোকে,
আনুশা কিছু না বলেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে

তানভীর : এক্সাম তেমন একটা ভালো হয়নি কোন ভাবে টেনে টুনে পাশ করবো,কিন্তু আমি এতো দিন থাকবো কি করে আনুশা কে না দেখে, আল্লাহ প্লিজ তুমি আনুশা কে খুঁজে দাও, এক্সাম এর জন্য ওর সাথে কথা বলতে পারিনি,সেদিন সবার আগে স্যার কে অনেক রিকুয়েস্ট করে সময়ের আগে কাগজ জমা দিয়ে হল থেকে বের হই, শুধু আনুশার সাথে একটু কথা বলবো এই ভেবে,

তানভীর : ঐ তো আনুশা হল থেকে বের হয়েছে এই আনুশা দাড়া ও প্লিজ যেও না
আনুশা: তানভীর আবার ডাকছে উফফ কি করলে যে এই ছেলেটা আমার পিছু ছাড়বে আমি নিজে ও জানি না,দাঁড়িয়ে পড়লাম

তানভীর : কেমন আছো আনুশা

আনুশা: আপনি আমি কেমন আছি এটা জানার জন্য আমাকে ডেকেছেন,
তানভীর : কেনো আমি জানতে পারি না

আনুশা: (এই ছেলের সাথে কথা না বাড়ানো ই ভালো) হুম ভাল আছি আর কিছু

তানভীর : আমি কেমন আছি জানতে চাইবে না
আনুশা: জানার প্র‍য়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না,, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে ভালোইই আছেন (অন্য দিকে ফিরে কথা টা বললাম,)

তানভীর : তুমি আমার চোখের দিকে একবার তাকাও আনুশা,দেখবে সে চোখে তোমার ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা কতো টা

আনুশা: অনেক কস্টে নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে বললাম,আপনার কথা শেষ হয়েছে এবার তা হলে আমি আসতে পারি, এই বলে তানভীর কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো

তানভীর : সেদিন যাওয়ার পথে চেয়ে রইলাম এই আশায় যদি আনুশা একবার পিছনে ফিরে তাকায়,কিন্তু ওর মনে যে অনেক ঘৃনা একটি বার ও তাকালো না
একা একা ভালো লাগছে না, যাই ফ্রেন্ডস দের সাথে একটু আড্ডা দিই,
তানিম কে একটা ফোন করি, তানিম হলো তানভীর এর বেষ্ট ফ্রেন্ড,

তানভীরের আম্মু: কিরে কোথায় ও যাচ্ছিস নাকি

তানভীর : হুম আম্মু তানিমের সাথে দেখা করতে, আমার ফিরতে রাত হবে তুমি খেয়ে শুয়ে পড়বে কেমন

আম্মু: বেশি রাত করিস না,

তানভীর : বললাম তো ফিরতে রাত হবে, এই বলে তানভীর বেরিয়ে পড়লো

আনুশা : বড় আপুর জন্য স্টেশন এ দাঁড়িয়ে আছি এখন বাস আসেনি

তানভীর : তানিমের সাথে কথা বলতে বলতে স্টেশন এ চলে আসলাম,(আসার কোন কারন ছিলো না,এমনি হাটতে হাটতে মনের অজান্তে চলে এলাম)
আরে এ আনুশা না, খুশিতে তানভীরের চোখ চক চক করে উঠলো ভাবতেই পারিনি ওকে এই ভাবে দেখবো

তানিম; আচ্ছা তানভীর তুই আনুশার মাঝে কি এমন খুজে পেলি বলতো শুধু দেখতে একটু সুন্দর আর কি,দেমাগে ভর পুর কারো সাথে কথা বলে না,
তানভীর : তুই এমন করে বলছিস কেনো ও এমনি তে কথা বলা পছন্দ করে না
তানিম: বুঝলাম ও ছেলেদের সাথে কথা বলা পছন্দ করে না,কিন্তু মেয়েরা কি দোষ করলো,কোন দিন আনুশাকে দেখেছিস কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে

তানভীর : তানিম তুই থামবি,( তানিমের মুখে আনুশা সম্পর্কে এগুলা শুনতে আমার মোটেই ভালো লাগছে না তাই ওকে থামিয়ে দিলাম) অনেক্ষন। আনুশাকে দূর থেকে দেখছি, ভাবলাম আজ আনুশা কে follow করে ওর বাড়ি পর্যন্ত যাবো, তাই ওর সামনে গেলাম না, সামনে গেলে হয় তো সে আমার চোখ পাকি দিতে পারে

আনুশা: উফফ আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো, পা ব্যাথা হয়ে গেলো তো
প্রায় ৩০ মিনিট পর শিলা বাস থেকে নামলো আনুশা তার ছোট্ট ভাগ্নি টাকে কলে নিয়ে আদর করতে থাকে,

আনুশা: আপু এবার কিন্তু অনেক দিন থাকবে তুমি এই বলে দিলাম

শিলা: আচ্ছা থাকবো এখন টেক্সি ডাক,আনুশা টেক্সি ডেকে উঠে পড়লো

তানভীর : আগেই C.N.G ঠিক করে রেখেছিল আনুশার টেক্সি তে উঠার সাথে সাথে অদের পিছু পিছু যেতে লাগলো,তানিমের মুখ দেখে মনে হচ্ছে আনুশাকে follow করাতে ও একদম খুশি নয়, তাতে তানভীর এর কিছু যায় আসে না ওর ভাবনা আনুশার বাসা অব্দি পৌছানো

আনুশা: আপু দুলা ভাই আসেনি কেনো

শিলা: ওর কাজ আছে তাই,আর বলে আসলে থাকবে কোথায় তাই আসেনি

আনুশা: কিচ্ছু বললাম না আপুকে,শুধু নিজের মনকে বললাম ধৈয্য ধরার শক্তি দিতে আপুকে নিয়ে বাসায় পৌছালাম

to be continue

অনুরাগ শেষ পর্ব

2

অনুরাগ
শেষ পর্ব
লেখিকাঃ #Israt_Jahan

কলারের থেকে হাত দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে পুলক পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ভিডিও প্লে করে দিলো।ভিডিও তে সেই মেয়েটি স্বীকারোক্তি দিচ্ছে।মেয়েটি কাঁদছে আর কথাগুলো বলছে।আর তার পাশেই ওই সর্দারনী।মাথায় ঘোমটা টেনে মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে সেও স্বীকারোক্তি দিচ্ছে।
বোঝাই যাচ্ছে বেঢপ মার দেওয়া হয়েছে তাদের।শ্রুতি বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।কাকে বিশ্বাস করবে সে? মন তো চাইছে পুলককে বিশ্বাস করতে।কিন্তু পুলক যদি নিরাপরাধ হয়ে থাকে তাহলে এই তিন বছরের মধ্যে কেনো ওকে জানালোনা? ও কিছু ভাবতে পারছেনা।

-‘ বোকা পেয়েছিস? তুই যে ওদের মারধোর করে স্বীকারোক্তি নিয়েছিস তা তো বোঝাই যাচ্ছে।’
-‘ ওয়েল।তাহলে প্রত্যক্ষদর্শী নিয়ে আসি।’ ঠান্ডা গলায় বললো পুলক।

পুলকের ফোন পেয়ে রিয়া আর ধ্রুব এসে হাজির হলো ওদের মাঝে।তারপর ধ্রুব বলতে শুরু করলো,-‘ এতকিছু তো পুলক একা করতে পারে নি।ওকে সাহায্য করেছি আমরা।ও তো মরেই যাচ্ছিলো শ্রুতি ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর।কতভাবে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে! তারপর ওর থেকে সবটা শুনে আমি আর রিয়া উদ্যোগ নিলাম সত্যিটা কী আর এর পেছনে আসল ঘটনাটা কী তা জানার জন্য।কিন্তু পুলক এতটায় ডিপ্রেশনে ভুগছিলো ওকে আগে সুস্থ করার প্রয়োজন বোধ করলাম।মাস ছয়েকের মধ্যে ওকে নিয়ে স্কটল্যান্ড চলে এলাম।আমার আর আমার বাবার সাথে ওকে শেয়ারে নিয়ে নিলাম আমাদের ব্যবসায়ে।শুধু ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য।তার ভেতর রিয়াকে শ্রুতির ব্যাপারে সব খোঁজ নিতে বললাম।পুলক অস্থির হয়ে থাকতো ওর খবর জানার জন্য।আস্তে আস্তে ডিসিশন নিলো ও আর কোনোদিনও শ্রুতির সামনে আসবেনা।ওকে বলবে না ও নির্দোষ।কিন্তু আমি বললাম,-‘ তোর জানা উচিত ওই মেয়েটা কেনো মিথ্যে বলেছিলো।শ্রুতির কাছে নিরাপরাধ সাজার জন্য নয়।সত্যটা জানা তোর প্রয়োজন।’ তার মধ্যেই রিয়া খবর জানালো ঈশাণ শ্রুতিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।ব্যাপারটা আমার কাছে খটকা লাগলেও পুলক নিশ্চিত হয়ে গেলো যে ওই ঘটনার সাথে ঈশাণ জড়িত কোনোভাবে।দেশে ফিরে এলাম ওকে নিয়ে।বহুকষ্টে ওই মেয়েটাকে খুঁজে বের করলাম। মেয়েটির সন্ধান পাওয়ার জন্য সর্দারনীকে কম ধোলাই খেতে হয়নি।আর যখন মেয়েটাকে খুঁজে পেলাম তখন তো সবটা রেকর্ড করেই রেখেছি।এরপরই পুলক আমি আর রিয়া প্ল্যান করলাম ইভেন্টের।নতুন করে আগমন ঘটালাম পুলকের। পুলক আমার ছোটবেলার বন্ধু।ওকে আমি চিনি ওর অতীতটা আমি জানি।তাই আমি বিশ্বাস রেখেছিলাম যে পুলক কখনো শ্রুতিকে ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্তোম সর্বশ্রেষ্ঠা সুন্দরী মেয়ের দিকেও তাকাবেনা।আমি ওর বন্ধু হয়ে ওর প্রতি এমন বিশ্বাস রেখেছিলাম।আর শ্রুতি তুই ওর ভালোবাসার মানুষটা হয়ে ওর প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারলিনা?মেরেই তো ফেলেছিলি ওকে।’

-‘ এই তোরা চুপ কর।সবগুলো গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসেছিস? নাটক করতে শিখে গেছিস না?’ চিৎকার করে বলছিলো ইশাণ।

হঠাৎ করেই ঈশাণের গালে শ্রুতির পাঁচ আঙুল বসে গেলো। ঈশাণ থম মেড়ে দাঁড়িয়ে রইলো ওর দিকে চেয়ে।

-‘ সবাই তোর শত্রু তাই না?সবাই তোর বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়েছে তাই না? কেনো এমনটা করলি তুই? কীভাবে পারলি আমাদের সাজানো সংসার টা ভেঙ্গে দিতে? কী ক্ষতি করেছিলাম আমরা তোর? বল?’

আরো কয়েকটা থাপ্পর পড়ল ঈশাণের গালে।হঠাৎ করে ঈশাণ শ্রুতিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।তারপর হুংকার দিয়ে উঠল।

-‘ ক্ষতি তুই করিসনি।ক্ষতি করেছে ও।’ পুলকের দিকে তাকিয়ে বললো।

আবার বলতে শুরু করলো,-‘ পুলক আমাদের বন্ধুমহলে আসার আগেই আমি তোকে পছন্দ করতাম। ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়েও কখনো বলতে পারি নি। হঠাৎ করেই পুলক কোথা থেকে উড়ে এসে তোর মনে জায়গা করে নিলো।আমি বলতে গিয়েও কিছু বলতে পারলাম না। দেখলাম তুই অনেক হ্যাপি তোদের রিলেশনশিপে।আস্তে আস্তে তোদের থেকে দূরে সরে গেলাম।সহ্য হতোনা তোদের একসঙ্গে দেখলে।ভেতরটা পুড়ে জ্বলে যেতো।তোদের বিবাহবার্ষিকী তে তোকে ওইভাবে নতুন বউয়ের সাজে দেখে আমার সেই পুরোনো ঘা টা আবার তাজা হয়ে গেলো।তাও বহুকষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি এই ভেবে তুই এখন অন্য কারো।তারপরও নিজেকে বেঁধে রাখতে পারি নি।তোকে আরো একবার দেখার লোভটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো। চলে এলাম অন্য একদিন তোর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু সেদিন পুলকের ব্যবহার আর আমাকে দেখিয়ে তোর সঙ্গে পুলকের ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে খাওয়া আমাকে একরকম পাগল করে দিচ্ছিলো।ভেতরে ভেতরে পুলককে খুন করে ফেলার একটা ঝোঁক কাজ করছিলো।কিন্তু সেই ঝোঁকটাও সামলে উঠলাম।নিজেকে একদম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে শুরু করলাম।ভুলে যেতে চাইলাম পুলকের সেদিনকার ব্যবহার। তারপর যেদিন তোর বাসায় এসে তোর কাছ থেকে পুলকের অবহেলার কথাগুলো জানলাম মনে মনে খুব খুশি হচ্ছিলাম। ভাবতে থাকলাম এভাবে যদি তোদের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায় তারপরই আমি তোকে আমার প্রতি কনভিন্স করার চেষ্টা করবো।আর রবিন যখন পুলকের ব্যাপারে ওই ঘটনাগুলো বললো প্রথমে আমার বিশ্বাস না হলেও আমি এতটায় খুশি হয়েছিলাম যে তখন আমি সব ভেবে নিলাম খুব বেশি সময় লাগবেনা তোদের সম্পর্কটা নষ্ট হতে।’

-‘ এরপরই তুই প্ল্যানগুলো করে ফেললি তাইনা?’ পুলক বললো।

-‘ তিনটা বছর নষ্ট করলি আমাদের জীবনের।কতোটুকু উপকার পেলি এগুলো করে?

কথাটা বলেই পুলক এসে ঈশাণের চোয়ালে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো।মার খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে ঈশাণ টেবিলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল।রেগে উঠে দাঁড়িয়ে স্যুটের ভেতর পকেট থেকে পুলিশের লাইসেন্সকৃত পিস্তল পুলকের দিকে তাক করে ধরে বললো, -‘ এতকিছু করে যখন উপকার পাইনি তাহলে তোকে খুনই করি।’

শ্রুতি,রিয়া আর ধ্রুব তিনজনই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলো ভয়ে।পুলকের রাগ তখন আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো।পিস্তলকে তোয়াক্কা না করে ওর চোয়ালে আরো একটা ঘুষি মাড়ল।

-‘ আর কতো নিচে নামবি?আমাকে খুন করলে তুই নিজে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারবি?পুরো জীবনটায় তোর শেষ হয়ে যাবে।’

ঈশাণ টেবিলের ওপর হুমড়ি দিয়ে পরে রইলো।প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে ওর।এভাবে কারো ক্ষতি করে নিজে কোনোদিন সুখী হওয়া যায় না।আর ভালোবাসা এ তো ঈশ্বর কতৃক দান। এই জিনিস ঈশ্বর যাকে দিবেন শুধু সেই তার অধিকার পাবে। জোর করে তা বা মিথ্যা দিয়ে তা কোনোদিনও অর্জন করা সম্ভব না। কাঁদতে কাঁদতে সে উঠে দাঁড়ালো।কোনো দিকে না তাকিয়ে টলতে টলতে বেরিয়ে গেলো শ্রুতির বাড়ি থেকে।
_______________________

-‘ কিছু বলছোনা যে? ক্ষমা করবেনা আমাকে?’

-‘ তুমি কী অপরাধ করেছো যে তোমাকে ক্ষমা করবো?’

-‘ এতটা অনুরাগ চেঁপে রেখোনা আমার প্রতি।মারতে ইচ্ছা করলে মারো, হাত পা বেঁধে যেমন খুশি তেমন শাস্তি দাও। তবুও মুখ ফিরিয়ে থেকো না।’

-‘ কী চাইছো তুমি?’

-‘ তুমি বুঝতে পারছোনা?’

-‘ বোঝার ক্ষমতা আজ কাল খুব কম।’

-‘ নিয়ে যাবেনা আমাকে তোমার সঙ্গে?’

-‘ গিয়ে কী করবে?’

শ্রুতি এতসময় পুলকের পাশে বসে ওর বাহু জড়িয়ে ধরে কথা বলছিলো।হুট করে ওর পাশ থেকে উঠে এসে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসল।

-‘ আমাকে একা ফেলে চলে যাবে?আমার ভুলের শাস্তি আমাকে এভাবে দেবে?’

কান্নার বেগ বেড়ে গেছে শ্রুতির।পুলক ওর দিকে না তাকিয়ে বললো, -‘ ভুলের শাস্তি তুমি আর পেলে কই?পেলাম তো আমি।আর ভবীষ্যতে যাতে না পেতে হয় তাই…..’

-‘ তাই কী?’
পুলক নিশ্চুপ।
-‘ বলো তাই কী?

পুলক এবার ওর দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে তেজী গলায় বললো,-‘ এরপর যদি কেউ আবার এমন কোনো নাটক তৈরি করে আমার বিরুদ্ধে তখনও যে তোমার বিশ্বাস নড়বড়ে থাকবে না আমার প্রতি তার কী গ্যারান্টি? আমি পারবোনা এত বার বার ধাক্কা খেতে।আমার এত্ত এনার্জি নাই ধাক্কা সামলানোর।’

-‘ দিবোনা তো আর।’ কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো শ্রুতি।পুলক ধমকে প্রশ্ন করলো, -‘ কী দিবা না?’

-‘ ধাক্কা।’

-‘ আমার জায়গায় থাকলে তুমি কী করতে বলো তো?’

-‘ অনেস্টলি বলি?’

পুলক দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে তাকিয়ে আছে।

-‘ আনলিমিটেড থাপ্পড় লাগাতাম তোমার গালে।’

-‘ ব্যাস! আর কিছুই না?’

-‘ বাজে স্ল্যাং ইউজ করতাম।’

-‘ এটুকুই?’

-‘ অবশ্যি আরো একটা কাজ করতাম।কিন্তু সেটা বলবোনা।’

-‘ আমি তো শুনতে চাইছি।’

-‘ বলা রিস্ক।’

-‘ রাত ন’টা বাজে।আমাকে যেতে হবে।কাল সন্ধ্যে ফ্লাইট। অনেক গোছগাছ বাকি আছে।’ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে বললো।

-‘ না প্লিজ!’

-‘ না প্লিজ কী? আমাকে যেতে হবে না? তোমার রং তামাশা দেখবো বসে?’

-‘ আরে বললাম তো আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার দাও।যা খুশি বলো, যা খুশি করো।তাও আমাকে ছেড়ে যেওনা।’

-‘ আমার আইডিয়া নেই কী করে শাস্তি দেওয়া যায়।’

-‘ আমি তো কিছু আইডিয়া দিলাম।’

-‘ শেষ একটা আইডিয়া দাওনি।’

মুখটা কাচুমাচু করে বসে আছে শ্রুতি।কী করে এমন একটা শাস্তির কথা বলবে সেটাই ভাবছে।তবুও ও তো বলেছে ও অনেস্টলি বলবে।মুখটা নিচু করে বললো, -‘ তোমাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য সত্যি সত্যি কারো সাথে…..’

-‘ কারো সাথে কী? থেমে গেলে কেনো?’

পুলক বেশ এনজয় করছে শ্রুতির অবস্থাখানা।কথাটা ওর মুখ থেকে বের করে তবেই এখান থেকে যাবে ও।বললো, -‘ বলবে নাকি আমি উঠবো?’

-‘ না।সত্যি কারো সাথে প্রেম করে তোমার সামনে এসে দেখাতাম।’

-‘ তোমার আইডিয়া গুলো আমার পছন্দ হয়েছে।তার জন্য তোমাকে আমার সঙ্গে নিবো।তবে আমি শুধু প্রেম করবোনা। বিয়েও করবো তোমাকে চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য।’

তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, -‘ চলো এখন।’

-‘ বিয়ে করতে মানে? আমি কী বিয়ে করতাম?কখনোই না।’

-‘ আজকে কী করছিলে?’

-‘ এটা আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’

-‘ আর এটা আমার সঠিক সিদ্ধান্ত।’

-‘ আমার সামনে তুমি অন্য একটা মেয়ের সাথে…..’

-‘ শোবো, ঘুমাবো।’

-‘ যাবোনা।যাও তুমি।’ উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো।

-‘ যেতে তোমাকে হবেই।আইডিয়া দিয়েছো শাস্তির।আর শাস্তি খাবে না? চলো……’

টানতে টানতে শ্রুতিকে নিয়ে চলে গেলো পুলক।হয়তো কিছু সময় বাদেই অনুরাগের পালা শেষ করে ভালোবাসার শাস্তির পালা শুরু হবে তাদের মাঝে।

_

অনুরাগ 11 পর্ব

0

অনুরাগ 11 পর্ব

লেখিকাঃ #Israt_Jahan

-‘ কী হয়েছে শ্রুতি?কোনো সমস্যা?’

দু চোখ বেয়ে পানির সঙ্গে আগুন ঝরছে শ্রুতির চোখে।ঈশাণের দিকে ভয়াবহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও।ঈশাণ আবার ও প্রশ্ন করলো,-‘ কী হয়েছে? এভাবে দেখছিস কেনো? দেখি কাগজ টা দে তো আমার কাছে।’

শ্রুতির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ঈশাণ পড়তে আরম্ভ করলো।প্রথম অংশ পড়ে তেমন কিছুই মনে হলো না ওর কাছে।শেষের দিকে এসে যা পড়ল তা পড়ার পর ওর হাত কাঁপতে শুরু করলো।যে মেয়েটিকে পুলক ওর বোন ভেবে নিয়েসেছিল সে সত্যিই পুলকের বোন ছিল না ঠিকই। কিন্তু পুলকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছিল মেয়েটি তা সম্পূর্ণ সাজানো কথা ছিল।আর এই কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছিল ওই পতিতালয়ের সর্দারনী।কেনো এই কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছিল সেটাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ওখানে।সবকিছু পড়ার পর ঈশাণ জোর গলায় বললো,-‘ শ্রুতি তুই ওর এসব কথা বিশ্বাস করছিস?ও তোকে যে এসব মিথ্যা বলছেনা তার প্রমাণ কী? ওর কাছে শোন যে কথাগুলো এখানে লিখা আর তা যে সত্যিই ওই মেয়েটির আর তার সর্দারনীর জবানবন্দী তার সত্যতা কী?’

শ্রুতি এবার সত্যিই দ্বিধায় পড়ল।সত্যিই তো! পুলক যে সবটাই সত্যি বলছে তার প্রমাণ কী?ও যদি সত্যিই বলে থাকে তাহলে এই তিনটা বছর ও কেনো শ্রুতির সামনে এলো না?এই কথাগুলো এই তিন বছরের মধ্যে কেনো ওকে বললো না?
শ্রুতি প্রশ্নচোখে পুলকের দিকে তাকাতে পুলক একটু একপেশে হাসল।তারপর বললো,

-‘ মেয়েটাকে আমি ঢাকা নিয়ে আসার পূর্বেই ঈশাণ নিজে ভালোভাবে যাচাই করে দেখেছে।আমি যে মেয়েটির সঙ্গে ঘোরাফেরা করেছি তার পরিচয় আসলে কী?এবং অবশেষে জানতেও পারলো আমি তাকে নিজের বোন ভেবে ওই পতিতাবৃত্তি থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে নিজের বোনের পরিচয় দিতে যাচ্ছি।ঠিক তখনই ঈশাণ ওখানকার সর্দারনীর সাথে আলাপ করলো।পরিষ্কার হওয়ার জন্য জানতে চাইলো মেয়েটি সত্যিই আমার বোন কিনা।তখন সে তো আরো একটি সত্যি ঈশাণকে জানিয়ে দিলো যে সত্যটা আমি তখন জানতাম না।
আমার মামা আমার বোন কে যেখানে রেখে এসেছিল সেখান থেকে তারা কোথায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যে ওকে বিক্রি করে দিয়েছে তাও তাদের মনে নেই।শুধুমাত্র নিজের চিকিৎসার টাকার জন্য মামা এমন একটা নাটক করেছিলো।
অন্য একটা মেয়েকে আমার বোন বানিয়ে দিলো।আর ওই সর্দারনীকে শিখিয়েও দিলো আমি খোঁজ নিতে এলে যেনো সে এটাই বলে ওই মেয়েটিই আমার বোন। সে তাই ই করলো।এতগুলো মিথ্যা কথা সে এই আশাতেই বলেছিলো সে জানতো আমি টাকার মায়া না করে আমার বোনকে এখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবো।আর এই ব্যাপারটা সে এমনি এমনি ঈশাণকে বলে দেয়নি।ঈশাণ তাকে আমার চেয়েও টাকার পরিমাণ বেশি দিয়ে কথাগুলো জেনেছে।আর তারপর ও আরো কিছু টাকা দিয়ে একটা কাহিনী সাজিয়ে ফেললো আমি ওই মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে আসার আগেই। মেয়েটাকে শিখিয়ে দেওয়া হলো আমার বাসায় তাকে আনার পর সে যেনো বলে আমি তাকে বোনের পরিচয়ে নয় নিজের ভোগের বস্তু করে নিয়েসেছি।মেয়েটি তাই ই করলো।এবং শর্তমোতাবেক মেয়েটিকে ও আরো কিছু টাকা দিয়ে ঢাকার শহর থেকে ভাগিয়ে দিলো।’

-‘ এই একদম চুপ।একদম বাজে কথা বলবি না।এতদিন পর এসে একটা মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে এনে কী সুন্দর সাজিয়ে সাজিয়ে বলছিস।আর ভাবছিস খুব সহজেই তা শ্রুতি বিশ্বাস করে নিবে।আর কতো ক্ষতি করতে চাইছিস মেয়েটার? আর কত অমানুষ হবি?’ ঈশাণ পুলকের কলার চেপে ধরে হুংকার দিয়ে বললো।

অনুরাগ পর্ব ১০

0

অনুরাগ
পর্ব ১০
লেখিকাঃ #Israt_Jahan

-‘ কোথায় ঘাপটি মেরে ছিলি বল তো এই তিনটা বছর?’ (নিশাদ)
-‘ আমি কী আসামি নাকি যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকবো?’

গ্লাসে ড্রিংক ঢেলে নিতে নিতে কথা বলছে পুলক।ওর দিকে কয়েক জোড়া চোখ বিস্ময় আর প্রশ্ন ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। রিয়ার পাশে এসে বসলো পুলক।সবার দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শ্রুতির দৃষ্টিকে লক্ষ্য করে বললো, ‘ কী সমস্যা?এভাবে তাকিয়ে দেখছো কেনো আমাকে? এ্যাম আই লুকিং আগলি?’

শেষ প্রশ্নটা রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো পুলক।রিয়া ভ্রু জোড়া উঁচু করে একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘ নো।মোর দ্যান ড্যাস্যিং।’

শ্রুতি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।ঈশাণকে বললো, ‘ আমায় বাসায় ফিরতে হবে।আমি উঠছি।’
-‘ চল আমি তোকে নামিয়ে দিয়ে আসি।’
-‘ আরে আরে আজকে কে কখন ফিরবো তার ঠিক নেই। অনেক দিন বাদে সবাই একসাথে।কোনো উঠাউঠি নেই।আজ অনেক মজা হবে।’

ধ্রুবর কথার সঙ্গে পুলক একটা রহস্যভরা হাসি মেশালো। হাসিটা ঈশাণের চোখ এড়ালো না।এর মধ্যে অনেকেই পুলে নেমে পড়েছে।কেউ এখানে ডেট শুরু করে দিয়েছে, কেউ বা মিউজিকের তালে হেলছে-দুলছে।মোটামোটি যে যার মতো এনজয় করতে ব্যস্ত।শুধু একটা জায়গায় বসে আছে, পুলক,রিয়া, শ্রুতি,ঈশাণ,ধ্রুব,মেঘলা,তানিয়া,নিশাদ আর রবিন।রিয়া আর নিশাদ উঠে হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা দূরে চলে গেলো।পুলক ড্রিংকের গ্লাস টা নিচে নামিয়ে রাখলো। হঠাৎ করেই চোখ পড়লো ঈশাণের হাতের দিকে।শ্রুতির হাঁটুর কিছুটা উপরে ওর হাতটা।শ্রুতি ও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ওর হাতটা গ্রহণ করে বসে আছে।একটা গম্ভীর নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো পুলকের মাঝ থেকে।কিন্তু ওদের দুজনকেই খুব অপ্রস্তুত লাগছে।

-‘ তো?’

পুলকের আওয়াজ পেয়ে চমকে তাকালো শ্রুতি।চোখে মুখে উচ্ছন্ন ভরা হাসি মেখে আছে পুলকের।মনে হচ্ছে খুব চিন্তামুক্ত আর হাস্যজ্জল মানুষ একটা।তিন বছর আগে তার জীবনে যে কোনো একটা অপ্রিয় ঘটনা ঘটে গেছে সেটা তাকে দেখে মনেই হচ্ছেনা।চোখের পলক পড়ছে না শ্রুতির।এদিকে পুলকও চেয়ে আছে তার প্রাণখোলা হাসি মুখে মেখে নিয়ে।ঈশাণ শুধু তাকিয়ে দেখছে ওদের দৃষ্টি বিনিময়।এক মিনিট, দু মিনিট পার হয়ে যাচ্ছে শ্রুতি হাজারো প্রশ্নভরা চোখে তাকিয়ে দেখছে ওকে।ঈশাণ হঠাৎ করে একটু কেশে উঠল।ভাবনাগ্রস্ত শ্রুতি হুঁশে এলো তখন।পুলক খানিকটা হেসে ফেলল।

-‘ হাসছিস যে?’
-‘ হুম? আমাকে বলছিস?’

পুলকের এমন উদাসীন ভাবটা নেওয়া ঈশাণের অসহ্যবোধ লাগলো খুব।চোখ মুখ শক্ত করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো ওর থেকে।পুলক বললো, ‘ বিয়েতে কী ইনভাইটেশন পাচ্ছি?’
-‘ লজ্জা করছে না তোর?কোন মুখে এই প্রশ্নগুলো করছিস?’
-‘ অ…! লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলেছি বোধহয়? এই ধ্রুব আমার প্রশ্নটা কী লজ্জা পাওয়ার মতো ছিল?’
-‘ আমি কী বলবো ভাই!’
-‘ তোরা বিয়ে করছিস এটা একটা ভালো কথা।আমি সেখানে দাওয়াত পাচ্ছি কিনা সেটা জানতে চাওয়া কী আমার অপরাধ?’
-‘ এতদিন কই ছিলি?’
-‘ স্কটল্যান্ড।’
-‘ মেয়েটাকে নিয়ে ওখানে পাড়ি জমিয়েছিস?’

রবিনের প্রশ্নে পুলকের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে আসার মতো অবস্থা।কিন্তু না, ও এখন এই মুহূর্তে কোনো সিনক্রিয়েট করবে না।রবিনের প্রশ্ন শুনে শ্রুতি চেয়ে আছে পুলকের দিকে।অবশ্যই পুলক কী উত্তর দেয় তা শোনার আশায়।ওর বুকের ভেতরটা যে তোলপার হয়ে যাচ্ছে।পারছেনা এভাবে চুপচাপ ওর সামনে বসে থাকতে। ইচ্ছে করছে ওর কলারটা চেঁপে ধরে ওর দু’গালে বিরতিহীন চড় বসাতে।জানতে ইচ্ছা করছে এমনটা কেনো করলো ওর সাথে।শ্রুতির চোখে চোখ পরতেই পুলক দেখতে পেলো শ্রুতির চোখের আগুন।শুধু একটু হাসলো।তারপর উঠে চলে গেলো পুল সাইডে অন্যসব ফ্রেন্ডদের মাঝে।প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলো পুলক।কিন্তু শ্রুতি যে খুব আগ্রহ নিয়ে বসে ছিল উত্তরটা শোনার আশায়।মনে মনে ভেবেই নিলো আজ ও সবকিছু পুলকের থেকে জেনে তারপর এখান থেকে যাবে।

-‘ শ্রুতি! চল আমরা ফিরি।’
-‘ না।’

অনেকটা গম্ভীর হয়ে বললো শ্রুতি।

-‘ একটু আগেই না বললি বাসায় ফিরবি?’
-‘ এখন যেতে ইচ্ছে করছে না।’

উঠে চলে এলো ঈশাণের পাশ থেকে।দূরে দাঁড়িয়ে শুধু পুলককে লক্ষ্য করছে শ্রুতি।কী সুন্দর না দেখাচ্ছে আজ পুলককে। শ্যামলা বর্ণ ছিলো গায়ের রং টা।তিন বছর পর দেখে মনে হচ্ছে গায়ের রং টা আরো পরিষ্কার হয়েছে।চশমার ফ্রেমটাও চেইঞ্জ করেছে,চুলগুলো স্টাইলিশ ব্রাশ করা।দু একটা চুল লম্বা হয়ে পরে আছে কপালে ওপর।রেড টি শার্টের ওপর ব্ল্যাক স্যুট। হাতা কনুই অবদি গুছিয়ে রাখা।এত পরিবর্তন! কে বলবে দেখে এই মানুষটার জীবনে কিছু ঘটে গেছে যা একটা মানুষের জীবন শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।এত ভালো থাকতে দেখে পুলকের প্রতি শ্রুতির ঘৃণাবোধ টা আরো বেড়ে গেলো।ও দেখতে চেয়েছিল পুলক যেদিন ওর সামনে আসবে সেদিন ওর চেহারা হবে অপরাধবোধ আর অনুশুচোনার আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া একটা মানুষের চেহারা।আজ ওর সামনে এসেছে ঠিকই তবে যা ভেবে রেখেছিল একদম তার বিপরীত কিছু হয়ে ওর সামনে এসেছে।পুলক কানে ফোন নিয়ে পুল সাইড থেকে একটু দূরে সরে এলো একটু ফাঁকা জায়গাতে।শ্রুতি সেখানে দ্রুত হেঁটে গেলো।ও অপেক্ষাতে ছিল কখন ফাঁকা স্পেসে পাবে পুলককে।

-‘ হ্যাঁ প্রজেক্টটা আমিই কমপ্লিট করবো সমস্যা নেই।এ মাসের সাতাশ তারিখেই আমি ব্যাক করছি।টেনশান নিতে হবে না আপনাকে।’

কথার মধ্যেই দেখল শ্রুতি ওর দিকে এগিয়ে আসছে।অনেকটা কাছে চলে এসেছে ওর।ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে বিদায় জানিয়ে ফোনটা পকেটে ভরে নিলো।ওর দিকে তাকিয়ে সুন্দর একটা প্রাণখোলা মুচকি হাসি দিলো।

-‘ হ্যালো।’

শ্রুতি নিশ্চুপ হয়ে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।চোখ দুটো উপচে পানি নেমে আসবে আসবে ভাব।পুলক বললো,
-‘ কী দেখছো এভাবে?’
-‘ একজন প্রতারক কে।’
-‘ কে প্রতারক এখানে?’
-‘ নামটা কী শুনতে ইচ্ছা করছে আমার মুখ থেকে?’
-‘ হ্যাঁ।’
-‘ কতোটা পাথর হৃদয়ের মানুষ হলে কেউ এত বড় অপরাধ করার পর ও….’
-‘ চুপ।’

ঠোঁটের ওপর অনামিকা আঙুল রেখে চোখে মুখে কঠোরতা এনে বললো পুলক।

-‘ এখনো যে আমার সামনে তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছো সেটাই তোমার কপাল।ধৈর্য ধরে বসে আছি শুধু।’
-‘ কী বোঝাতে চাইছো তুমি?’
-‘ কিছুনা।এখন বলো তো এঙ্গেজমেন্টের দিন ইনভাইটেশান পাচ্ছি কিনা?’
-‘ খুব শখ আসার?’
-‘ খুব।’
-‘ ঠিক আছে।চলে এসো।’
-‘ কী চায় তোমার আমার থেকে?’
-‘ অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে আমি।’
-‘ ওমা অবাক হওয়ার কী হলো?কিছু চায়না তোমার?ডিভোর্স? এটাও চায়না?’

আর পারলোনা আটকে রাখতে।অশ্রুর বাঁধ ভেঙ্গে পড়লো দু চোখ থেকে।আরো বেশি কান্না পাচ্ছে পুলকের এক্সপ্রেশন গুলো দেখে।শ্রুতি কান্না করলে পুলক সেই কান্না ভেজা চোখে আর মুখে হাজারো চুমুর প্লাবন বইয়ে দিতো।আজ সেই পুলক ওর কান্না দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেমন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে। এ কেমন পুলক?এই পুলককেই কী শ্রুতি সবটা উজার করে ভালোবেসেছিলো?এত বড় স্বার্থবাদী একটা প্রতারককে বিশ্বাস করে নিজের বাড়ি ছেড়েছিল?পুলক আজ শ্রুতির চোখের পানি নিয়ে যে খেলাটা খেলল তা শ্রুতি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবেনা। ওর কাছে এগিয়ে এসে গাল থেকে এক ফোটা পানি অনামিকা আঙুলের ডগার ওপর তুলে নিলো পুলক।তারপর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে সেটা ঝেড়ে ফেলল।টিস্যু পেপাড় দিয়ে সেই আঙুল দুটোও মুছে নিলো।সবশেষে শ্রুতির পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।মরে যেতে ইচ্ছে করছে শ্রুতির।এর থেকে তো সারাজীবনে দেখা না হলেও ভালো হতো।তক্ষণি শ্রুতি ছুটে চলে আসে হোটেলের বাহিরে।আর সে দেখতে চাই না এই বিশ্বাসঘাতক,প্রতারক মানুষটাকে।
_____________________

তিন বছর আগের সবকিছুকে দুঃস্বপ্ন ভেবে সামনের জীবনে এগিয়ে যাবে শ্রুতি।এমন কিছু ভেবেই সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে।ভাববে না সে আর ওই প্রতারকের কথা।

-‘ কিরে আজকের দিনে অনন্ত এভাবে মুখটা কালো করে রাখিস না।এমনিতেই তোদের নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই।তারউপর মুখটা এভাবে কালো করে রাখলে আরো বেশি বলার সুযোগ পাবে সবাই।’

মেঘলার কথাগুলো কানে আসতেই শ্রুতি ভাবলো, -‘ সত্যিই তো! কেনো আমি মনমরা হয়ে থাকবো? আমার তো আজ থেকে জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।আমি আজ থাকবো সবার থেকে খুশি হয়ে।’

কথাগুলো ভেবে নিজেকে একদম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো শ্রুতি।আজকে ঈশাণের সঙ্গে শ্রুতির এঙ্গেজমেন্ট।শ্রুতির বাড়িতেই পার্টিটা এ্যারেঞ্জ করা হয়েছে।শ্রুতি আর ঈশাণের আশপাশ দিয়ে ওদের সকল বন্ধু-বান্ধব গিজগিজ করছে। কেউ ই আসতে বাকি নেই।শুধু একজন বাদে।সে তো নিজে যেচে এসে দাওয়াতটা নিয়েছিল।আসবে কী সে? সবার সাথে হেসে হেসে গল্প করছে ঠিকই।কিন্তু মনের মধ্যে সেই মানুষটার ভাবনাও ভাবছে শ্রুতি।সবশেষে এঙ্গেজমেন্টটা হয়েই গেলো। প্রত্যেকেই খুব খুশি।কিন্তু খুশি হতে পারছে না শ্রুতি।এত ঘেন্নার পরও ইচ্ছা ছিল ওই মানুষটা আসবে এখানে, একটাবার দেখবে তাকে।কিন্তু কই?সে তো এলোনা।আর আসবেই বা কোন মুখ নিয়ে।আত্মসম্মানবোধ না থাকলে ঠিকই আসতো। নিচে গার্ডেন সাইডে বসে শ্রুতি আর ঈশাণ সব ফ্রেন্ডদের সঙ্গো আড্ডাই ব্যস্ত ছিলো।এরই মাঝে পুলক এসে উপস্থিত হলো।

-‘ আড্ডা তো বেশ জমেছে।আমি কী জয়েন করতে পারি?’

সবাই ফিরে তাকালো ওর দিকে।বাহ্ বেশ তো লাগছে আজ দেখতে পুলককে।পুলকের পরনে আজ শ্রুতির দেওয়া শেষ উপহারের হোয়াইট স্যুট এন্ড প্যান্ট।তার সঙ্গে স্যুটের নিচে হালকা পিংক কালার একটা শার্ট।পকেটে দু’হাত পুরে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে সে।নজরটা রয়েছে শ্রুতির দিকে।শ্রুতিও আজ হোয়াইট আর পিংক কালার মিক্সড একটা ল্যাহেঙ্গা পরেছে।যার জন্যই সবাই একবার শ্রুতিকে দেখছে আবার পুলককে দেখছে।পুলকের আগমন সবাইকে অবাক করে দিয়েছে শুধু ধ্রুব ছাড়া।সে এসে ওকে বললো,
-‘ আমি তো ভাবলাম তুই বোধহয় রুমে বসে কাঁদছিস আর টিসু পেপাড়ে চোখ মুছছিস।’
-‘ কী যে ভাবিস না আমাকে তোরা!’
-‘ তুই এখানে?’

ঈশাণ রাগে গম গমে ভাব নিয়ে প্রশ্নটা করলো পুলককে।ভদ্রতা বজায় রেখে পুলক উত্তর দিলো,-‘ তোর হবু বউয়ের কাছ থেকে সেদিন ইনভাইটেশান পেলাম।অবশ্য আমিই যেচে পড়ে নিয়েছিলাম।খুশি হোস নি বুঝি?’

শ্রুতির নজর মাটির দিকে।সে না পারছে পুলকের দিকে তাকাকে আর না পারছে ওর সঙ্গে কথা বলতে।চোখ ফেটে ভেতরে সব কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে।এতটা কষ্ট তো ওর হওয়া উচিত না।পুলক তো বেশ আছে।তাহলে ও কেনো এত কষ্ট পাবে?

-‘ আমি এসেছি তার কারণটা তুই না বুঝলেও তোর বউ বুঝে গেছে।’

পুলকের কথায় শ্রুতি এতক্ষণে টের পেলো।পুলক এসেছে ওকে ডিভোর্স পেপাড় টা দিতে।কাগজে কলমে সারাজীবনের জন্য আজই ওদের বিচ্ছেদ ঘটবে।পারবে কী শ্রুতি ওই কাগজে একটা সই করে সারাজীবনের জন্য ওকে ত্যাগ করতে?হুহ্ মনের বিচ্ছেদটা তো কবেই ঘটে গেছে।তাহলে কাগজে কলমে বিচ্ছেদটা মেনে নিতে আর সমস্যা কোথায়?নিজেকে সামলে একদম স্বাভাবিক করে উঠে এলো পুলকের সামনে।

-‘ কই? কাগজটা দাও।’

পুলক কাগজটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।শ্রুতির চোখের দিকে তাকিয়ে কাগজ ওর দিকে এগিয়ে ধরলো।
_________________

বাগানের ভেতরটায় যেখানে নিরিবিলি বসার জন্য একটা ছোট টেবিল আর দুটো চেয়ার সেখানে গেল ওরা দুজন।সাথো এলো ঈশাণও।কাগজটা হাতে নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে শ্রুতি যখন সই করতে গেলো তখন পুলক বললো,-‘ অন্ততপক্ষে একবার চোখটা বুলিয়ে নাও।পড়ে দেখো কাগজে কী লেখা আছে।এত তাড়া কিসের?বিয়েটা তো আর আটকে দিচ্ছি না।’

ঈশাণ এগিয়ে এসে বললো,-‘ শ্রুতি কাগজটা দে তো দেখি।’
-‘ ডিভোর্সটা আমার আর তোর শ্রুতির হচ্ছে।তোর ভূমিকা এখানে না থাকলেও চলবে।স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাক।’

ঈশাণ ক্রুদ্ধ চোখে চেয়ে আছে পুলকের দিকে।পুলকের চাহনি ও ঠিক একই রকম।শ্রুতি কাগজটা হাতে নিয়ে যখন পড়তে শুরু করলো তখন পুলক আবার বললো,-‘ চেয়ারটাতে বসো তারপর পড়ো।’

শ্রুতি একটু সময় ওর দিকে চেয়ে থেকে চেয়ারে বসল।তারপর পড়তে আরম্ভ করলো।শুরুর দিকে আইনীভাবে কাগজে যা লেখা থাকে সেগুলোই লেখা।তারপর নিচে নামতে নামতে যে লিখাগুলো ছিল তা পড়তে পড়তে শ্রুতির গলা শুকিয়ে আসছিলো।মনে হচ্ছিল ওর পায়ের নিচের জমিন কেঁপে উঠছে বার বার।এর জন্যই বোধহয় পুলক ওকে বসে পড়তে বলেছে।

_