Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2357



স্মৃতির পাতা 

0

স্মৃতির পাতা 

লেখা –সুলতানা ইতি

আমাকে আপনার কেমন লেগেছে?
– মানুষকে যেমন লাগে আপনাকে ও ঠিক তেমনি লেগেছে
– নাহ মানে এই যে আমার আর আপনার বিয়ের কথা চলছে, লাইফ পার্টনার হিসেবে কেমন লেগেছে

ইতি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি কি বা দিবে, বলবে যে আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি এই তো, এই নিয়ে বারোজন পাত্র পক্ষ এসে দেখে গেলো ইতি কে
সব গুলোর কোন না কোন খুঁত বের করে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে ইতি আজ তের নাম্বার পাত্রে সামনে দাঁড়িয়ে

এই তেরো নাম্বার পাত্রের নাম তন্ময়, সরকারের উচ্ছপদস্থ কর্ম কর্তা সে

ইতি কে চুপপ করে থাকতে দেখে তন্ময় বল্লো
– কি হলো চুপ করে আছেন যে

ইতি- আমার কিছু বলার নেই

তন্ময়- তা হলে কি বুঝে নিবো আপনি আমায় পছন্দ করেন নি

ইতি- আপনার যা ইচ্ছে বুঝতে পারেন আমার কিছু করার নেই

তন্ময় চলে যাচ্ছিলো কি ভেবে থেমে গিয়ে ইতিকে বল্লো
– আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে
নাহ আপনি এতো সিরিয়েসলি নেবেন না, মেয়ে দেখতে আসলে পছন্দ হবেই তাই বলে সে পছন্দ বিয়ে অব্দি যায় না, আপনার ইচ্ছে না থাকলে বিয়ে হবে না

পাত্র পক্ষ চলে গেছে অনেক্ষন
আকাশ ঘোমরা হয়ে আছে যে কোন মুহুর্তেই কান্না শুরু করে দিতে পারে
ইতি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে

কিছুক্ষন পর ইতির মা এসে ইতির পাশে দাড়ালো
মেয়ে কে তিনি বললেন
– কি রে মন খারাপ কেনো তোর

ইতি মায়ের দিকে না তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– মা মনে হয় বৃষ্টি আসবে তাই না চারিদিকের পরিবেশ টা কেমন ঘুমোট বেধে আছে

ইতির আম্মু বল্লো আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি

ইতি আকাশের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে মায়ের দিকে তাকালো
মা বলো তো এতো তাড়া কেনো তোমাদের আমার বিয়ে নিয়ে সবে মাত্র কলেজে উঠলাম এখন বিয়ে না দিলে ই নয়

ইতির আম্মু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বল্লো
– এখন বিয়ে হলে সমস্যা কি মা,তন্ময় ছেলেটা খুব ভালো, তোকে ওর খুব পছন্দ হয়েছে,এবার আর না করিস না মা বিয়েটা করে নে,আমরা তোর ভালো চাই

ইতি- মা তোমার সাথে কথা টা না বললেই ভালো হতো এই বলে ইতি রাগ দেখিয়ে চলে যায় ব্যালকেনি থেকে

রুমের সব দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে রুম টা কে অন্ধকার করে খাটের মাঝ খানে বসে আছে ইতি
ভাবছে ছোট বেলার কথা কি সুন্দর ছিলো জীবন টা তখন সারা দিন ক্লাস করে ফেরার পথে হৃদয়ের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে বাড়ি ফেরা তার পর বাড়িতে এসে ও বিকেল হৃদয়ের সাথে খেলতে বের হওয়া, কি যে ভালো লাগতো, ঝগড়া বাধতো তখন যখন হৃদয় অন্য ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতে যেত,

তখন ইতির খুব কষ্ট হতো, কান্না চলে আসতো কিন্তু ইতি চোখের পানি কাউকে দেখতে দিতো না,লজ্জা করতো ইতির কারো সামনে কাঁদতে গেলে

এই সময় ছোট নিহা দরজা ধাক্কা তে শুরু করলো
ইতি কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলো
দরজা খুলে দিলো

ইতি- নিহু এতো জোরে দরজা ধাক্কালি কেনো

নিহু- আপি বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে চলো ভিজি

ইতি- আমার ভালো লাগছে না তুই যা
নিহু মুখ কালো করে চলে যায়

ইতি আবার ভাবনাতে ডুবে গেলো ইদানীং খুব বেশি হৃদয়ের কথা মনে পড়ে জানতে ইচ্ছে করে হৃদয় এখন দেখতে কেমন হয়েছে, ও কি আমার কথা মনে রেখেছে
ভাবনার মধ্যে ইতির সময় কেটে গেলো

পরদিন সকালে স্নেহার ফোন, স্নেহা ইতির বান্ধুবী ক্লাস সিক্স থেকে তাদের এই বন্ধুত্ব,এখন কলেজ অব্দি টিকিয়ে রেখেছে স্নেহা

স্নেহা ফোন করে বল্লো
– কিরে ইতি আজ তিন দিন কলেজে আসিস না, আজ ও কি আসবি না নাকি

ইতি-কলেজে যেতে ইচ্ছে করছে না

স্নেহা- আজ কলেজে না গেলে বিরাট কিছু মিস করবি

ইতি- কেনো কলেজে কি হয়েছে?

স্নেহা- আজ হৃদয়, সায়নি কে প্রপোজ করবে তা ও ক্যাম্পাসে সবার সামনে

ইতি- ঠিক আছে আমি আসছি

ইতি কল অফ করে দেয়
হৃদয় নাম টার প্রতিই তার একটা মায়া জমে গেছে হৃদয় নামের কেউ যদি কোন মেয়ে কে ভালোবাসে এটা শুনতে ও ইতির ভালো লাগে

তার উপর কলেজ সুন্দরী সায়নি কে প্রপোজ করবে তার থেকে বয়সে দু বছরের ছোট হৃদয় ব্যাপার টা সত্যি মিস করা যায় না
ইতি কলজের জন্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো

কলেজে গিয়ে ইতি ক্যাম্পাসে বসে আছে পাশে স্নেহা, কখন শুরু হবে সায়নিদের প্রপোজ পর্ব কে জানে

স্নেহা অনেক্ষন চুপ করে থেকে ইতি কে বল্লো
– কিরে শুনলাম তোকে নাকি আবার ও কালকে পাত্র পক্ষ দেখে এসেছে

ইতি একটা নিশ্বাস ফেলে বল্লো এ আর নতুন কি

স্নেহা- হুম সেটাই,কিন্তু সব সময় শুনতাম ছেলেরা মেয়েদের রিজেক্ট করে আর তোর বেলায় পুরো ভিন্ন তুই সব ছেলে কে রিজেক্ট করিস তা ও ছেলেদের কোন ক্রুটি না থাকলে ও তুই ঠিক খুজে বের করে বিয়ে ভেংগে দিস, কিন্তু কেনো এমন করিস তুই আজ ও বললি না

ইতি- এমনি, এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই তাই

স্নেহা- আন্টি আংকল আসলেই বোকা এতো ভালো প্রপোজাল গুলো আসে তবু ও তারা তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে না গিয়ে বিয়ে ভেংগে দেয়,আর আমার বাবা মা হলে আমাকে জিজ্ঞাস ও করতো না নিজেরাই বিয়ে দিয়ে দিতো

ইতি- হয়তো আমার মা বাবা বেশি ভালো
স্নেহা- হয় তো,কিন্তু তুই আমার কাছে সত্যি কথা বলছিস না

ইতি- তোকে আমি মিথ্যা বলবো কেনো

স্নেহা- মিথ্যা ই তো বলছিস, তোকে কখনো ক্লাসের ছেলেদের সাথে কথা বলতে দেখিনি, কোন প্রপোজাল একসেপ্ট করিসনি তুই, সব সময় ছেলেদের এড়িয়ে গেছিস, কিন্তু কেনো এই সব জানতে ইচ্ছে করে প্লিজ বলনা

ইতি – যে কথা আমি জীবনে ও কাউকে বলিনি আজ তোকে সে কথা বলবো কিন্তু তুই হাসতে পারবি না আমার কথা শুনে

স্নেহা- আরেহ আগে তো বল তার পর না হয় ঠিক করবো

ইতি বলতে শুরু করলো
আমি তখন ক্লাস ফোর থেকে ফাইভে উঠবো হঠ্যাৎ ই বাবা কে টান্সফার করে ফেনি নেয়া হয়,বুঝিস ই তো সরকারি চাকরি করলে যা হয় আর কি

নতুন স্কুল নতুন সব কাউকে ই চিনতাম না
ক্লাসের প্রথম দিন ই আমি একে বারে পিছনে গিয়ে বসি, টিপিনের সময় সবাই যখন খেলতে গেলো তখন আমি একা একা বসে আছি

এমন সময় একটা ছেলে আমাকে বল্লো,এই মনি খেলবি আমার সাথে

আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম
আমার নাম মনি নয় ‘ইতি’

ছেলেটি বল্লো ঠিক আছে আমার নাম হৃদয়, চল আমরা খেলবো

তখন আমি সহ হৃদয় আর তিন চার টা মেয়ে মিলে ‘বউ সি’ খেলি
তার পর ছুটির পর হৃদয় আমাকে ডেকে বল্লো এই মনি তোর বাসা কোথায় রে

আমি আমার বাসার এড্রেস দিলাম
হৃদয়- আরেহ সেখানে তো আমার ও বাসা, তোকে তো আগে দেখিনি

ইতি- আমরা এই কয়েকদিন আগেই এসেছি

হৃদয়- তা হলে চল দুজনে মিলে বাসায় যাই

ইতি- নাহহ আমার আম্মু আমাকে নিতে আসবে

হৃদয়- দুজনের বাসা তো এক ই জায়গাতে চল আমরা যাই, হৃদয়ের সাথে কথা বলতে বলতে চলে এলাম বাসায়

আম্মু বল্লো কিরে একা একা কি করে এলি
আমি বললাম আম্মু উপরের প্লাটে থাকে না হৃদয় সে আর আমি এক ই ক্লাসে পড়ি তার সাথে এলাম

এভাবেই হৃদয়ের হয়ে উঠে আমার খেলার সাথি একি সাথে অন্যতম একজন বন্ধু ক্লাসে ও হৃদয়ের সাথে বসতাম, অন্য মেয়েরা আমাকে খেফাতো বলতো ইতি হৃদয় জামাই বৌ,
শুনে আমি খুব কান্না করতাম আর হৃদয় লজ্জা পেতো ও আমার সাথে বসতে চাইতো না

বাসায় ও আমার এক সাথে ই খেলতাম হৃদয় পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতে গেলে আমি দাঁড়িয়ে দেখতাম মাঝে মাঝে প্লেয়ার কম হলে আমি বলতাম হৃদয় আমি ও খেলবো নে না
আমাকে সাথে,
একদিন তো প্রথম বলে আমি ছক্কা মারি, তার পর সে ম্যাচে হৃদয় কে হারিয়ে দিই হৃদয় সেদিন কি রাগ না ই করেছে

হৃদয় আমাকে কেনো জানি মনি নামেই বেশি ডাকতো কিন্তু আমি মনি নাম টা পছন্দ করতাম না
একদিন হৃদয় বল্লো তোকে মনি বললে তুই রেগে যাস কেনো

আমি বললাম
-মনি তো কালো মেয়েদের নাম হয়,আর আমি তো সুন্দর

হৃদয় অনেক হাসে
আর আমার খুব রাগ লাগছিলো তখন।
হৃদয় বল্লো কে বল্লো তুই সুন্দর আমি তো দেখি তুই ফেত্নি” মনি ফেত্নি”
সেদিন আর হৃদয়ের সাথে খেলতে বের হইনি

ইতির কথা গুলো স্নেহা গ্রোগ্রাসে গিলছিলো ইতি থামতেই স্নেহা বল্লো
– আহ থামলি কেনো বলনা তোর ছোট বেলার প্রেম কাহিনি একটু শুনি

ইতি- একদম ফাজলামি করবি না স্নেহা, নইলে বলবো না আর

স্নেহা- ঠিক আছে করলাম না বলতো এবার

ইতি – একদিন আমরা ঠিক করলাম পাশের বাসার সানিয়াদের পেয়ারা চুরি করবো কিন্তু কি করে পেয়ারা পাড়বো জানিই না হৃদয় তো গাছে উঠতে পারে না
আমি ও পারি না
হৃদয় বল্লো
– ইতি তুই গাছে উঠ আমি তোকে পিছন থেকে ঠেলে ধরবো
হলো ও তাই, তবুও পেয়ারা পাড়তে পারিনি বরং পড়ে হাতে ব্যাথা পেয়েছি

ফাইভের বছরের পরেই বাবা আবার এখানে চলে আসে তার পর তুই আমার বন্ধু এই তো

স্নেহা- সেকি মজনুর সাথে আর কখনো কথা হয়নি

ইতি- স্নেহায়ায়ায়া

স্নেহা- ওকে ফাইন আর মজা করবো না এই জন্য ই তো বলি ফেজবুকে তোর ফ্রেন্ডলিস্টে হৃদয় নামের এতো ছেলে কেনো

ইতি- হুম বলতে পারিস হৃদয় নামটা ই এখন আমার অনেক প্রিয়ো,হৃদয় নামের সব ছেলের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আমি একসেপ্ট করি আর তাদের ব্যাক গ্রাউন্ড চেক করি, কিন্তু কাউকে আমার হারানো হৃদয়ের মতো লাগে না

স্নেহা- আচ্ছা একটা কথা বল,তুই যখন কার কথা বলছিস তখন তুই ভালোবাসার ‘ভ’ টা ও বুঝতি না তা হলে এখন ও তাকে ভুলতে পারিসনি কেনো

ইতি- জানি না কেনো ভুলতে পারিনি যতো ই বড় হতে লাগলাম ততই হৃদয় কে এক নজর দেখার লোভ হতে শুরু করে, আজ ও মনটা হা হাকার করে হৃদয় কে একটু দেখতে,শুধু দেখবো বড় হওয়ার পর এখন ও দেখতে কেমন হয়েছে,ও কি অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করে নাকি, আমার মতো একা থাকে

স্নেহা- হৃদয় তোর মতো পাগল হয়তো নয় বুঝলি,ছোট বেলার কথা কেউ মনে রাখে নাকি

ইতি- আচ্ছা চল বাসায় যাই

স্নেহা- হুম চল,আচ্ছা মনি নামের মেয়েরা কালো তোর এই ধারনা কি এখন ও আছে

ইতি- তুই কি পাগল,তখন আমাদের কাজের মেয়েটার নাম মনি ছিলো আর সে ছিলো কুচকুচে কালো,তাই আমি ভাবতাম বুঝি মনি নামের মেয়েরা ই কালো,এখন আর সে ধারনা নেই

ইতি বাসায় চলে আসলো বাসায় এসেই শুনে
এবার বাবা অতিস্ট হয়েগেছে আমার উপরে আর তাই তিনি নিজেই তন্ময়ের সাথে বিয়ের কথা ফাইনাল করে

ইতি কথা শুনেই অনেক রেগে যায় তার পর কাদতে কাঁদতে স্নেহাকে ফোন করে সব বলে

স্নেহা বল্লো- ইতি পাগলামি ছাড়,তন্ময় কে বিয়ে করে নে,দেখবি হৃদয়ের কথা আর মনে হবে না,আর দেখ তুই তাকে মনে রেখেছিস সে তোকে মনে না ও রাখতে পারে,ঐ বয়সের কথা অনেক ই বড় হলে আর মনে রাখে না

ইতি- তুই ও বলছিস

স্নেহা- হুম বলছি কারন আমরা সবাই তোর ভালো চাই,এবার স্মৃতির পাতা বন্ধ কর বাস্তবতার পাতা উলটা দেখবি সব ঠিক আছে

ইতি কল অফ করে দেয় স্নেহার কথা গুলো শুনতে ভালো না লাগলে ও কথা গুলো যুক্তিযুক্ত, ইতি মেনে নেয় তার ভাগ্যকে তৈরী হয় তন্ময়ের বউ হওয়ার জন্য

কিন্তু সত্যি কি ইতি স্মৃতির পাতা বন্ধ করতে ফেরেছে
হয়তো পারেনি,কোন এক ক্লান্ত দুপুরে হয়তো স্মৃতির পাতায় খুজবে তার প্রিয়ো নাম টা, হৃদয়ে হৃদয়

সমাপ্ত

অভেলায় ভালোবাসা অন্তিম পর্ব

0
অভেলায় ভালোবাসা অন্তিম পর্ব
অভেলায় ভালোবাসা অন্তিম পর্ব

অভেলায় ভালোবাসা অন্তিম পর্ব

লেখা –সুলতানা ইতি

 

তখন আদনান আর নিহার ড্রইং রুমে বসে গল্প করছিলো
গাইথির চিৎকার শুনে দুজনেই দৌড়ে আসে,
চুহেস কে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে
দুজনেই ভয় পেয়ে যায়

নিহার আর আদনান চুহেস কে ধরে বেডে নিয়ে শোয়ায়

নিহার গাইথি কে উদ্দেশ্য করে বলে ম্যাডাম স্যার সেন্সলেস হলো কি করে

গাইথি তখন কাঁদছিল, কান্নার জন্য কথা ই বলতে পারছে না

আদনান নিহার কে বল্লো
– চুহেস কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে তুমি ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলো

নিহার হুম বলছি, কিন্তু স্যারের জ্ঞান ফিরছে না কেনো
নিহার গাড়ি রেডি করে ফিরে আসে

আদনান আর নিহার চুহেস কে ধরে গাড়িতে উঠায়
গাইথি চুহেসের মাথার পাশে বসে অঝরধারায় কাঁদছে সে

হোসপিটালে ইমারজেন্সিতে চুহেস কে রাখা হয়
খবর পেয়ে ঐশী নিধিপা চলে আসে হোসপিটালে

ঐশী- কিন্ত হঠ্যাৎ কি হলো চুহেসের

নিহার- রিপোর্ট দেখার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না ভাবি

এই সময় ডাক্তার এসে বল্লো
-চুহেস মেহেরার বাড়ি লোক কে আছে,তারা আমার সাথে আসুন

গাইথি উঠে দাড়িয়েছে যাওয়ার জন্য
নিহার আর আদনান গাইথি কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো,আমরা যাচ্ছি
আদনান ঐশী কে বল্লো তুমি ওর দিকে খেয়াল রেখো,

নিহার আর আদনান ডাক্তারের ক্যাবিনে যায়,
ডাক্তার ওদের কে দেখে বসতে বলে
নিহার না বসেই অনেক টা ব্যাস্ত কন্ঠে বল্লো
– স্যারের কি হয়েছে বলুন

ডাক্তার – বসুন, বলছি

নিহার বসার পর ডাক্তার বল্লো
– রোগীর কি আর কখনো এমন হয়েছে

নিহার- নাহ আমি সব সময় স্যারের সাথে থাকতাম আমি কখনো স্যারের এমন কিছু দেখিনি

ডাক্তার- কিন্তু মিঃ মেহেরার দুটো কিডনিই ড্যামেজ হয়ে গেছে,

ডাক্তারের কথা শুনে আদনান আর নিহার এক ই সাথে বলে উঠলো
– কি বলছেন আপনি, মানে এটা কি করে সম্ভব

ডাক্তার- দেখুন রিপোর্ট এ যা আছে তাই বল্লাম

আদনান- এখন কি করা যায় বলুন ডাক্তার

ডাক্তার- দেখুন আল্লাহ কে ডাকুন, উনার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না

নিহার- ডক্টর যতো টাকা লাগে দিবো স্যার কে সুস্থ করে দিন

ডাক্তার- দেখুন একটা কিডনি দিয়ে ও মানুষ বাছে,কথা হচ্ছে উনার জ্ঞান না ফিরলে কিছু বলা যাচ্ছে না যেহেতু উনার দুটি কিডনি খারাপ হয়ে গেছে
সো আল্লাহ কে ডাকুন

ডাক্তারের ক্যাবিন থেকে নিহার আর আদনান বের হলেই গাইথি আদনান কে ঝড়িয়ে ধরে বলে
– ভাইয়া কি হয়েছে ওর সত্যি করে বলো

আদনান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো গাইথি চুহেসের জ্ঞান ফিরলেই বলা যাবে, এতো ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি, চল আমরা বসি

কেনো জানি গাইথি আদনানের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না,বার বার মনে হয় ভাই কিছু লুকাচ্ছে

কেটে গেলো কয়েক ঘন্টা চুহেসের এখনো জ্ঞান ফেরেনি
গাইথির হতাশা আর আতংক আর ও বেড়ে গেলো
এমন সময় নার্স এসে বল্লো
মিঃ মেহেরার সেন্স ফিরেছে, উনি নিহার কে ডাকছে

নার্সের কথা শুনে গাইথি অবাক হলো চুহেস আমাকে না ডেকে নিহার কে ডাকলো কেনো

নিহার চুহেসের কাছে যায়
– স্যার ডেকেছিলেন
চুহেস নিহারের দিকে তাকিয়ে বল্লো একটা কথা বলার ছিলো তোকে

নিহার- বলুন স্যার
চুহেস নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে নাম টা উচ্ছারন করলো
– সাইমুম কে একটু ডেকে আনো,বলবে যে একজন মৃত্যু পত যাত্রি ভাই তাকে ডাকছে

নিহার- স্যার আপনি কি বলছেন আপনি ভালো হয়ে যাবেন

চুহেস হালকা হেসে বল্লো যাও দেরি করো না
আর সবাইকে আসতে বলো

নিহার বেরিয়ে যায় গাইথির দিকে তাকিয়ে বল্লো
– ভাবি সবাইকে ডাকছে স্যার

আদনান ঐশী, আহমদ মেহেরা সবাই চুহেসের ক্যাবিনে যায়

চুহেস চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো
গাইথি চুহেস কে বল্লো
– আপনি একদম কথা বলবেন না,ডাক্তার রা অপারেশনের ব্যাবস্থা করছে আপনি ভালো হয়ে যাবেন

চুহেস ম্লান হেসে গাইথির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আহমদ মেহেরার দিকে তাকালো বল্লো
– বাবা আপনার উপর আমার কোন অভিমান নেই ভুল বুঝবেন না আমাকে,
আমার বাবুই পাখি টার অভিযোগ ছিলো আমি কেনো আপনাকে বাবা বলে ডাকি না, এই শেষ বারের মতো ডাকলাম
বাবুই আর কোন অভিযোগ আছে তোমার

আহমদ মেহেরা কিছু বলার আগে গাইথি ডুকরে কেদে উঠলো
– আপনি এমন কথা বলছেন কেনো প্লিজ আপনি এসব কথা বলবেন না

চুহেস গাইথির কথার কোন উত্তর করলো
আদনানের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– ভাইয়া জীবনের অন্তিম লগ্নে এসে তোমাদের এতো কাছে পেয়েছি যে খুব কষ্ট হচ্ছে স্রষ্টার ডাকে সাড়া দিতে তোমাদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে ই করছে না

ঐশী ভেজা গলায় বল্লো
– চুহেস চুপ করো তুমি, তুমি ভালো হয়ে যাবে,তুমি না থাকলে তোমার বাবুই কে, কে দেখবে

চুহেস দরজার দিকে তাকিয়ে আছে কিছুক্ষন পর নিহার সাইমুম কে নিয়ে চুহেসের ক্যাবেনি আসলো

সাইমুম কে দেখে গাইথি রেগে যায়
– উনি এখানে কেনো? একে কে ডেকেছে

চুহেস হালকা স্বরে বল্লো
– আমি ডেকেছি বাবুইপাখি টা

গাইথি- তুমি? তুমি কেনো ডেকেছো ওকে

গাইথি এই প্রথমবার চুহেস কে তুমি বল্লো, চুহেস কিছুক্ষন অপলক চাহনিতে গাইথির দিকে তাকিয়ে থাকলো
তারপর সাইমুম কে বল্লো
– ভাই মনে আছে তোমার গাইথি কে যখন নিহার বিয়ের আসর থেকে নিয়ে আসে তখন আমি তোমায় একটা চিরকুট লিখে দিলাম,”গাইথি তোমার,সে তোমার আছে,তোমারি থাকবে” আজ ও বলছি গাইথি তোমার,মাঝখানের এই দিন গুলো কে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যেয়েও

সাইমুম- ভাইয়া আমি ছেয়েছিলাম গাইথি আমার হোক,এখন ও চাই,কিন্তু আপনার এই অবস্থা হোক তা আমি কখনো চাইনি,আপনি ভালো
হয়ে যাবেন ভাইয়া

চুহেস ম্লান হাসলো বল্লো
– আমি ভালো হয়ে গেলে গাইথি তোমার হবে না

সাইমুম- না হোক তাতে কি,ভালোবাসলেই যে তাকে নিজের করে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই,কথা টা আমি আগে না বুঝলে ও এখন বুঝি

চুহেস- রাইট, ভালোবাসলেই যে নিজের করে পায় না এটা সত্যি,

এই বলে চুহেস গাইথির দিকে তাকায়
– বাবুই ভালোবেসেছি তোমায় সে ছোট্ট বেলা থেকে, কিন্তু তার প্রকাশ হয়েছে অবেলায়,তাই বেলা থাকতে তোমায় পাইনি,তবে এই নিয়ে আমার কোন দুঃখ নেই কারন জীবনের অন্তিম লগ্নে এসে তোমার এতো ভালোবাসা পেয়েছি যে, সব না পাওয়ার বেদনা দূর হয়ে গেছে

গাইথি স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে চুহেসের কথা গুলো তার কান অব্দি পৌছায় নি

চুহেস কিছুক্ষন চুপ করলো হয়তো কিছু একটা গোপন করার চেষ্টা করলো তার পর নিহার কে বল্লো
– ভাই তুই আমার ছোট হয়ে ও বড় ভাইয়ের মতো আমাকে আগলে রেখেছিস তোর জন্য আমি কিছুই করিনি,আমার বিজনেস এর ফিফটি পার্সেন্ট সেয়ার তোর নামে আছে,কাজ টা আমি অনেক আগেই করেছি কিন্তু তোকে বলা হয়নি,তোর আর নিধিপার জন্য আমার শুভ কামনা রইলো,

তার পর আদনান কে বল্লো
– ভাইয়া আমার অনেক প্রোপার্টি আছে সেগুলা এই মুহুর্ত থেকে আমার কাজে আসবে না,,, সেগুলা কে এমন ব্যাবস্থা করবেন যেন মৃত্যুরর পর আমার কাজে আসে

উপস্থিত সবার চোখে পানি
কারো মুখে কোন কথা

চুহেস আবা বল্লো
– এখন সবাই যেতে পারো আমার কথা শেষ

গাইথি চুহেসের হাত ধরে বসে পড়লো পাশে,
– আমি যাবো না তোমায় ছেড়ে,

এই বলে নিহারের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– ভাইয়া আপনি গিয়ে খোজ নিন অপারেশনের সব কিছু রেডি হয়েছে কি না

নিহার বেরিয়ে গেলো গাইথির কথা মতো
বাকিরা ও বেরিয়ে গেলো

শুধু সাইমুম আর গাইথি থেকে গেলো
চুহেস কথা বলতে গেলে গাইথি বাধা দিয়ে বল্লো আর কোন কথা নয় বেশি কথা বলে ফেলেছেন এবার চুপ করুন

চুহেস- এই তো একেবারে ই চুপ হয়ে যাবো আর কখনো কথা বলতে আসবো না, যাবার আগে দু একটা কথা বলে যেতে চাই
– বাবুই, ফ্রান্সে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি রাবেয়া খালা আমায় সেখানে ডাক্তার দেখায়, সেখান কার ডাক্তার রা বলেছে আমার দুটো কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে,অবশ্য যদি নতুন করে একটা কিডনি দেয়া যায় তা হলে বাচার সম্ভবনা আছে
কিন্তু আমি নিষেধ করি,একদিন স্বপ্নে দেখলাম বাবা মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে তাই আমি তাদের অপেক্ষার অবসান করাতে চাই

গাইথি- তুমি আমাকে আগে বলোনি কেনো

চুহেস- পাগলি আগে বলি আর তুমি কাঁদতে কাঁদতে আমাকে পাগল করে দাও এটা আমি চাইনি

সাইমুমের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– সাইমুম আমার বাবুইপাখিটাকে কখনো ই কষ্ট দিবে না,আজ সে কাদবে আমার বিয়োগ তাকে কাদাবে কিন্তু এর পর থেকে আর তাকে কাঁদতে দিও না,বাবুইপাখির চোখে যে কান্না মানায় না

সাইমুম- ভাইয়া আপনি ভালো হয়ে যাবেন আপনার বাবুই পাখিকে আপনার ছেয়ে বেশি ভালো আর কেউ বাসতে পারবে না

চুহেস- অবুঝ হয়ওনা সাইমুম, বাবুই কে বুঝিয়ে রেখো

তার পর গাইথির দিকে তাকিয়ে বল্লো
– বাবুই তোমার প্রিয়ো নেইজিনের নীড় তোমারি থাকবে,

গাইথি- আমার এই সব কিছু চাইনা, এমন সময় ক্যাবেনি কয়েক জন নার্স ডুকলো ট্রলি ঠেলে
গাইথি চুহেস কে বল্লো
– তুমি ভালো হয়ে যাবে, অপারেশন টা হয়ে যাক তার পর দেখবে

চুহেস কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো
সাইমুম এসে গাইথির পাশে দাঁড়ায়

গাইথি- চুহেস অসুস্থ সে,সজ্ঞানে কথা গুলো বলেনি বুঝলেন

সাইমুম কিছু বলেনি
চার ঘন্টা পর ডক্টর বের হয় অপারেশ থিয়েটার থেকে

গাইথি ডাক্তার বের হতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার কে জিজ্ঞাস করে চুহেস কেমন আছে

ডাক্তার মলিন মুখে গাইথির দিকে তাকিয়ে বলল স্যরি অপারেশন সাকসেস হয়নি,আমরা অনেক চেষ্টা করেছি

গাইথির গলাতে কথা আটকে আসছে তবুও অনেক কষ্টে বল্লো
– সাকসেস হয়নি মানে চুহেস কোথায় ডক্টর

কিছুক্ষন পর নার্সরা স্টেচারে করে চুহেস কে নিয়ে আসে গাইথি সে দিকে তাকিয়ে দেখে চুহেস ঘুমিয়ে আছে
সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে
চুহেসের দাফন হয় নেইজিনের নীড়ে গাইথির ইচ্ছেতেই হয়,

গাইথি রোজ এসে নেইজেনের নীড়ে সময় কাটায়, দিনের অর্ধেক সময় গাইথি এখানেই থাকে কারো সাথে কথা বলে না নিজের মতো চুপ থাকে আর নিজে নিজে কথা বলে,

গাইথির এই অবস্থা দেখে আদনান সহ সবাই সিদ্ধান্ত নেয় সাইমুমের সাথে গাইথির বিয়ে দিয়ে দিবে এতে যদি গাইথি একটু সহজ হতে পারে

তাড়া হুড়া করেই সাইমুমের সাথে গাইথির বিয়ে সম্পূর্ন হলো

আজ তাদের বাসর রাত
গাইথি চুহেসের ছবি হাতে বসে আছে আর চুহেস কে বলছে
– কোথায় তুমি, তোমার ইচ্ছে মতো আমি বউ সেজে বসে আছি, তুমি না বলেছিলে নেইজিনের নীড়ে আমাদের বাসর হবে, আমি তো সেখানেই বসে আছি কিন্তু তুমি আসছো না কেনো

কিছুক্ষন পর সাইমুম রুমে প্রবেশ করে গাইথিকে চুহেসের ছবির সাথে কথা বলতে দেখে নিঃশব্দে গাইথির পাশে গিয়ে বসে

নিচু স্বরে গাইথি কে ডাকে
– বাবুই
ডাকটা শুনে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে সাইমুম পাশে বসে আছে

গাইথি- একি আপনি,আপনি এখানে কেনো

সাইমুম- বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে চলো ব্যালকনিতে বসি

গাইথি- আপনি যান আমি যাবো না আপনার সাথে

সাইমুম গাইথি কে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যায়
বাইরে অঝরধারায় বৃষ্টি হচ্ছে বাতাসের কারনে বৃষ্টির চাট এসে ওদের ভিজিয়ে দিচ্ছে

সাইমুম- গান শুনবে বাবুই

গাইথি- আপনি আমায় এই নাম ধরে ডাকবেন না

সাইমুম- আমি তো ডাকবো ই,তুমি দেখো চুহেস ঐখানে শুয়ে শুয়ে আমাদের দেখছে, আর তোমাকে বাবুই বলে ডাকাতে সে খুশি হয়েছে

গাইথি- মোটেই না,ও কখনো চাইতো না এই নাম টা বলে আমায় অন্য কেউ ডাকুক

সাইমুম-বাবুই চুহেস আমাদের মাঝে বেছে থাকবে তাই আমি চাইনা ওর সাথে ওর দেয়া নাম টা হারিয়ে যাক

গাইথির আর কিছু বল্লো না সাইমুম আর ও ক্লোজ হয়ে দাড়ালো গাইথির পাশে

গাইথি- আপনি গান গাইতে চেয়েছেন না, গাইতে থাকুন

সাইমুম গাইথির দিকে এক পলক তাকিয়ে গান ধরলো

“যদি মন কাদে তুমি চলে এসো,চলে এসো
এক ভরসায়

এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে
জ্বলোভরা দৃষ্টি তে
এসো কমলো শ্যামলো ছায়া
চলে এসো তুমি চলে এসো
এক ভরসায়
যদি মন কাদে তুমি চলে এসো এক ভরসায়

যদি ও তখন আকাশ থাকবে বৈরী
কদম ও গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী

উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলি আলো

তুমি চলে এসো চলে এসো
এক ভরসায়
যদি মন কাদে তুমি চলে এসো
এক ভরসায়

নামিবে আধার বেলা পুরাবার ফলে
মেঘ মুল্য বৃষ্টির ও মনে মনে ”

সাইমুমের গান শেষ হতেই
গাইথি কান্না আর ও বেড়ে গেলো
সাইমুম গাইথি কে বুকে ঝড়িয়ে নিলো
গাইথি কাঁদুক সাইমুম বাধা দিলো না,আজকের পরে আর কাঁদতে দিবো না আমি আমার বাবুই কে,

সাইমুম আর শক্ত করে গাইথিকে ঝড়িয়ে ধরলো
গাইথির কান্নার আওয়াজ কমে আসছে
হয়তো গাইথি ভরসা পাওয়ার স্থান টা খুজে পেয়েছে তাই

সমাপ্ত

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২২

0
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২২
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২২

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২২

 

লেখা –সুলতানা ইতি

 

গাইথি মাথার ঘোমটা টা আরেকটু টেনে দেয় যেন নিহার তার চোখের পানি না দেখতে পায়

নিহার- ম্যাডাম কোন বাসায় যাবেন আপনি
গাইথি- বনশ্রী তে চলুন
নিহার- কিন্তু ভাই, ভাবি, আংকেল, রা তো ঐ বাসায়
গাইথি- এতোক্ষনে এসে পড়ার কথা আপনি যান

গাইথি বাসায় এসে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে বিতরে ডুকে আদনান রা এখন ও আসেনি
গাইথি ঐশী কে ফোন করে
– ভাবি তোমরা আসছোনা কেনো এখনো

ঐশী- তুই কোথায়
গাইথি- আমাদের বাসায়
ঐশী- ওহ আমরা তো তোর জন্য ই অপেক্ষা করছিলাম, আচ্ছা তুই থাক আমরা আসতেছি
গাইথি কল অফ করে দেয়

কিছু ই ভালো লাগছে না গাইথি মনকে শান্ত করার জন্য একটা গল্পের বই নিয়ে বসে
এমন সময় গাইথির মোবাইলে কল আসে
মোবাইলে স্কিনে তাকিয়ে দেখে সাইমুমের নাম্বার

গাইথির বুকের বিতর কেমন যেন করে উঠলো, ভয় কাজ করছে গাইথির মাঝে কল রিসিভ করবে কি করবে না এই নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলো
কল কেটে যায় আবার কল আসে
দুবার রিং হয়ে যাওয়ার পর গাইথি কল রিসিভ করে

গাইথি হ্যালো বলার আগেই ওপাড় থেকে ব্যাস্ত কন্ঠে সাইমুম বলে
– কি করছিলে এতোক্ষনে কল রিসিভ করছিলে না কেনো, আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম জানো, কেমন আছো তুমি, এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে সাইমুম থামলো

গাইথি- ভালো আছি,,অনেক টা বিরক্ত কন্ঠে বলে
সাইমুম- কি করছিলে তুমি

গাইথি সাইমুমের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে সাইমুম কে
– আপনি ভয় পেয়ে ছিলেন কেনো

সাইমুম- ভেবেছি তুমি আমার কল রিসিভ করবে না, এই জন্য

গাইথি- কল রিসিভ না করাটা ই স্বাভাবিক নয়,
(শান্ত আর কঠোর কন্ঠে গাইথি কথা টা বলে)

সাইমুম- ওহ তাই তো আসলে ই কল রিসিভ করার কথা না,তবু ও রিসিভ করেছো তার জন্য তোমাকে অন্তর থেকে ভালোবাসা জানাই,
যদিও আমার ভালোবাসা না বাসা দিয়ে তোমার কিছু যায় আসে না,
তো যাই হোক শুনলাম নতুন করে বিয়ের পিড়িতে বসছো, কথা টা কি সত্যি

গাইথি গম্ভীর কন্ঠে বলে
– হ্যা সত্যি,আপনি যে ভাবে বলছেন নতুন করে বিয়ের পিড়িতে বসছি,মনে হয় এর আগে আমি হাজার বার বিয়ে করেছি

সাইমুম – বিয়ের পিড়িতে না বসো,কারো সাথে বিয়ের আসরে বসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে,

গাইথি- ভুল বলছেন আমক কাউকে নিজের মুখে এই প্রতিশ্রুতি দিই নি

সাইমুম- হুম নিজের মুখে দাওনি বলে ই বিয়েটা ভাংগতে ফেরেছো কংগ্রাচুলেশনস, নতুন মানুষ টা কে নিশ্চয়ই এই পতিশ্রুতি নিজে দিয়েছো

গাইথি- এটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার, আমি এই নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চাই না

সাইমুম- চমৎকার কথা বলতে শিখেছো,আগে এমন কথা বলতে জানতে না,নিশ্চয়ই এই ক্রেডিট টা ও নতুন মানুষ টার

গাইথি- প্লিজ আপনি ফোন রাখুন নইলে আমি লাইন কেটে দিবো

সাইমুম- বিরক্ত হচ্ছো? আচ্ছা আর বেশি বলবো না মাত্র কয়েকটা কথা বলেই লাইন কেটে দিবো,,শ্রুতি ভাবির সাথে কথা হলো উনি বল্লো তোমার সে কাজিন চুহেসের সাথে ই নাকি এখন তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে

গাইথি- হুম আপু ঠিক বলেছে

সাইমুম- তুমি নিশ্চই ওর মাঝে এখন মুগ্ধতা খুঁজে পাও যা তুমি আমার মাঝে পাওনি

গাইথি……

সাইমুম- কিন্তু ঐ লোকটার সাথে তোমার বয়সের ফাক অনেক, সেটা ভেবে দেখেছো তো,

গাইথি- আপনি চুহেস কে নিয়ে কথা না বললে আমি খুশি হবো

সাইমুম- দেখো না একটা সময় আসবে তুমি বাচ্ছা ই থেকে যাবে আর তোমার বরের চুল পেকে যাবে দাত পড়ে যাবে হা হা হা হা কেমন লাগবে তোমাদের ঝুটিটা কে দেখতে আমি সেটা ই ভাবছি,একটা বার ভাবো তোমার লাইফ টা একদম নষ্ট হয়ে যাবে চুহেস কে বিয়ে করলে

গাইথি- ধন্যবাদ আমার জন্য এতো টা ভেবেছেন তাই”নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো আপনা সবাব”বুঝতে ফেরেছি আমি কিন্তু স্যরি আমি এখন কল অফ করে দিবো আপনার একটা কথা শুনার ধৈর্য্য। আর আমার নেই

এই বলে গাইথি কল অফ করে দেয়
গাইথি মোবাইল হাত থেকে রাখার পর ই আবার কল আসে

এবার চুহেস কল দিয়েছে
গাইথি- কোথায় আপনি পৌছে গেছেন সেখানে, মিঃ চিকি কি আপনাকে এয়ারপোর্ট এ রিসিভ করতে এসেছে

চুহেস- বাবাহ গাইথি তুমি এক সাথে এক নিশ্বাস এ এতো কথা বলতে পারো, ভালো ই লাগলো শুনতে,হুম আমি পৌছেছি, এখন একটু রেষ্ট নিচ্ছি,

গাইথি- ওহ আন্টি কেমন আছে

চুহেস- আছে তেমন ভালো নেই তোমার কথা বলেছি আন্টি কে, শুনে খুব খুশি হয়েছে তোমাকে দেখতে ছেয়েছে, বলেছি আপনি সুস্থ হোন তার পর আপনাকে নিয়ে সোজা দেশে চলে যাবো আপনার বউমার কাছে

চুহেসের কথা শুনে গাইথি লজ্জা পেয়ে যায়
কোন কথা ই বলতে পারেনি

চুহেস- কি হলো তুমি চুপ করে আছো কেনো

গাইথি- ফিরছেন কখন?

চুহেস- কেনো খুব মিস করছো বুঝি

গাইথি- দূর আপনি কি যে বলেন, এমনি আসতে বলতে পারি না নাকি

চুহেস- পারো তবে আমি আজ ই এসেছি আর আজ ই তুমি আসতে বলতে পারো না

গাইথি মন খারাপ করে বল্লো
– ওহ তাই তো

চুহেস হেসে বল্লো
– সুইট হার্ট মন খারাপ করো না এখানে একটু কাজ আছে কাজ টা সেরে খুব শিগ্রই আসছি তোমার কাছে

গাইথি- ঠিক আছে আসুন, এখন রাখছি বাই
গাইথি কল অফ করে দিয়ে মোবাইল সুইচস্টপ করে দেয় যদি আবার সাইমুম কল করে বসে এই ভয়ে

এভাবে আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে কেটে গেলো অনেক দিন, দুপুরে চুহেস কল দিয়ে জানায় সে আগামি কাল আসছে

অনেক দিন পর গাইথির নিজেকে হালকা লাগছে
আর নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যায়
এমন সময় গাইথির মোবাইল বেজে উঠলো
স্কিনে নামটা দেখে নিলো গাইথি আমেরিকা থেকে শ্রুতি ফোন করেছে

গাইথি ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো শ্রুতি কে

ওপার থেকে শ্রুতি সালামের উত্তর নিয়ে বল্লো
– কেমন আছিস,অবশ্য এখন তো ভালো থাকার ই কথা তোর

গাইথি- খোঁচা মেরে কথা বলছো কেনো আফা

শ্রুতি – খোঁচা মারবো কেনো তোকে, অবশ্য এখন তোকে আমার খোঁচা মেরে কথা বলা ও সাজে না,বিরাট বড় লোকের বউ হতে যাচ্ছিস

গাইথি- আফা তুমি কেনো আমার সাথে এমন করে কথা বলছো,শুধু সাইমুমের জন্য ই তো,এই রকম অনেক হয় আফা কতো মানুষের তো বিয়ের আসর থেকে ও বিয়ে ভেঙে যায়

শ্রুতি কর্কশ কন্ঠে বলে
– সেই রকম এক্সিডেন্ট হলে আমি মেনে নিতাম গাইথি, কিন্তু যেটা তুই ইচ্ছে করে করেছিস সেটা আমি কি করে মেনে নিই,সাইমুম তোর জন্য কতো টা কষ্ট পাচ্ছে তুই জানিস

গাইথি- আফা সাইমুম কষ্ট টা তুমি বুঝো, একটা বার তুমি চুহেসের কষ্ট টা বুঝতে চাইলে না,আল্লাহ কাকা, কাকি কে নিয়ে গেছে আমরা তার আপন হয়ে তার প্রতি কতোটা ন্যায় কাজ করেছি বলতে পারো,পারো না,যখন চুহেস নিজের প্রচেষ্টায় আজকের জায়গায় এসেছে,তখন ও তুমি তার বিরুদ্ধতা করছো,

সাইমুম আমাকে ভালোবাসে এটা তুমি বুঝেছো,কিন্তু সাইমুমের অনেক আগে থেকে চুহেস আমাকে ভালোবাসে সেটা তুমি বুঝলে না,তোমার ও সাইমুমের মতো নিজের খেয়ে বনে মহিষ তাড়ানোর অভ্যাস

শ্রুতি রেগে গিয়ে অনেক টা চিৎকার করে বলে গাইথি
তুই কার সাথে এমন করে কথা বলছি,তুই ভুলে যাচ্ছিস

গাইথি- ভুলিনি আফা তুমি আমার বড় বোন তুমি আমার কাছে থেকে সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখো, কিন্তু বড়দের ছোটদের প্রতি কিছু দায়িত্ব থাকে,যখন কেউ নিজের ইগোর কারনে দায়িত্ব এড়িয়ে যায় তখন সেখানে, দায়িত্ব আর অধিকার দুটো ই হারিয়ে যায়

শ্রুতি- খুব বড় বড় কথা বলতে শিখেছিস,দেখবো তোর বড় কথা কয়দিন থাকে,এই বলে শ্রুতি কল অফ করে দেয়

গাইথি বড় বোনের সাথে এই আচরন করতে চায়নি কিন্তু কেউ যদি চুহেস কে ছোট করে কথা বলে সেটা সহ্য করা যায় না

এভাবেই গাইথির রাত টা কেটে যায় ঘুম আর হয়নি
পরদিন সকালে আদনান গাইথি নিহার এয়ারপোর্টে যায় চুহেস কে আনতে

দুপুর বারোটায় প্লেন ল্যান্ড করে চুহেস এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে সবার সাথে সাক্ষাত করে কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি অন্যকাউকে খুজছে

আদনান- তুমি কি কিছু খুজছো?

চুহেস মৃদু হেসে বল্লো
– না তো

নিহার- স্যার আপনি যাকে খুজছেন তিনি গাড়িতে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য
আপনি আরর ম্যাডাম আলাদা গাড়িতে যান আমি আর আদনান ভাই আসছি অন্য গাড়িতে

চুহেস আর কথা না বলে গাড়ির দিকে হাটা ধরলো,মাঝখানে একটু থেমে বল্লো
– নিহার ড্রাইভার কে আমাদের গাড়িতে পাঠিয়ে দাও আমি এখন ড্রাইভ করতে পারবো না

নিহার একটু অবাক হলো চুহেসের কথায়,কোথায় এতোদিন পর ম্যাডামের সাথে দেখা হবে দুজন একা কথা বলবে তা না,ড্রাইভার কে নিচ্ছে সাথে,
নিহার ড্রাউভার কে পাঠিয়ে দিলো

চুহেস এসে গাইথির পাশের সিটে বসলো
ড্রাইভার গাড়ি স্ট্রাট দিয়েছে

দুজনেই নিরব কারো মুখে কোন কথা নেই, গাইথি নিরাবতা ভাংলো প্রথমে

গাইথি- কিছু বলছেন না যে

চুহেস- তুমি চুপ করে আছো তাই কথা বলিনি,

গাইথি হালকা হেসে বল্লো
– ওকে বলুন,আন্টি কেমন আছে উনাকে নিয়ে আসেন নি কেনো

চুহেস- আগের থেকে ভালো, আসতে ছেয়ে ছিলেন আমি আনিনি

গাইথি- কেনো আপনি ই তো বলেছেন আমাদের বিয়েতে আন্টি কে নিয়ে আসবেন

চুহেস- বলে ছিলাম নাকি

গাইথি সংকোচ দূর করে অনেক্ষন থেকে চুহেসের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, চুহেস কেমন যেন হয়ে গেছে এই কয়দিনে,শুকিয়ে গেছে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে কি রকম রোগা দেখাচ্ছে

চুহেস- কি দেখছো

গাইথি- আপনি ঠিক আছেন তো

চুহেস- কেনো আমাকে দেখে কি তোমার বেঠিক মনে হয় নাকি

গাইথি- তা নয়,আচ্ছা থাক এখন এই সব কথা
গাইথি মনকে বুঝালো হয়তো লং জার্নি করাতে এমন লাগছে

বাকি পথ কেউ কারো সাথে কথা বলেনি বাসায় পৌছে
গাইথি চুহেস কে বল্লো
– আপনি যান ফ্রেশ হয়ে আসুন খুব গরম পড়ছে আমি আপনার জন্য ঠান্ডা কিছু ব্যাবস্থা করছি

চুহেস- কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না বাবুই তুমি শুধু ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে রাখো

চুহেস ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসলো
চুহেস- এখানে ই খাবে নাকি

গাইথি- আপনার ইচ্ছে, ব্যালকনিতে নিয়ে আসবো নাকি

চুহেস- হুম তাই নিয়ে এসো

ব্যালকেনিতে দাঁড়িয়ে দুজনেই আইসক্রিম খাচ্ছে
হঠ্যাৎ চুহেস বল্লো
– গাইথি আমার মাথা ঘুরাচ্ছে মনে হয় বমি আসবে

গাইথি ব্যাস্ত হয়ে বল্লো
– আসুন মাথায় পানি দিই,, আপনি রেষ্ট নিন আমি ডাক্তার কে কল করছি

চুহেস কিছু না বলে ওয়াশরুমে ডুকে গেলো
অনেক্ষন পরে গাইথিইই বলে একটা ডাক দিলো

গাইথি হন্তদন্ত হয়ে ওয়াশ রুমের দরজা নক করে না দরজা খোলা আছে লক করেনি গাইথি ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখে চুহেস চেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে
গাইথি ভাইয়া বলে এক চিৎকার দিলো

ড্রইং রুমে বসে নিহার আরর আদনান গল্প করছিলো

to be continue

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২১

0
লেখা –সুলতানা ইতি
লেখা –সুলতানা ইতি

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২১

লেখা –সুলতানা ইতি

 

চুহেস গাইথির রুমের দরজায় নক করে
গাইথি- এই সময় আবার কে এলো,
গাইথি দরজা খুলে চুহেস কে দেখে বল্লো
– আরেহ আপনি আসুন

চুহেস বিতরে গিয়ে বসে
গাইথি পাশে আরেক টা সোফায় বসে বলে কিছু বলবেন

চুহেস- নাহ তেমন কিছু বলবো না এমনি দেখতে এলাম, তুমি কি করছিলে এতোক্ষন?

গাইথি- ভাবছিলাম
চুহেস- কি ভাবছিলে
গাইথি- বলবো না

চুহেসের ঠোটের কোনে মিষ্টি একটা হাসি ফুটে উঠলো
পরক্ষনেই হাসিটা মিলিয়ে গেলো চুহেস গম্ভীর হয়ে উঠলো, গাইথির একটা হাত টেনে নিজের হাতের উপর রাখলো
– জানো বাবুই যেদিন থেকে তোমার চোখের আড়াল হয়েছি সেদিন থেকেই তোমার শূন্যতা একটু একটু করে উপলব্ধি করেছি তখন ও তোমায় ভালোবাসি কি না বুঝি নি,
কিন্তু তোমার কথা ভাবতে আমার ভালো লাগতো, কি ভাবে যেন কতো গুলো বছর পার হয়ে গেলো টেরই পাইনি,

গাইথি চুহেস কে থামিয়ে বল্লো।
– আপনার কি কখন বউ সংসার এগুলার কথা মনে হয়নি

চুহেস- সব সময় ব্যাস্ত রাখতাম নিজেকে যদি একটু অবসর পেতাম তোমার ছোট্ট মায়াবী মুখটা ভেসে উঠতো চোখের সামনে, তোমাকে দেখার কৌতূহল জাগতো মনে
কিন্তু আমি মনকে প্রশ্রয় দিতাম না আর ও অনেক বেশি ব্যাস্ততার মাঝে ডুবিয়ে ফেলতাম নিজেকে
তার পর এমনি একদিন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে আর না ফেরে ছুটে যাই গ্রামে তোমাকে একটু দেখবো বলে,

কিন্তু মনে আশংকা ছিলো তুমি আমাকে ছিনবে না, আর সেটা আমি কি করে মেনে নিবো…..

গাইথি- আমার তো মনে হয় প্রথম দেখে আপনি নিজেই আমাকে চিনতে পারেননি

চুহেস- মিথ্যা বলবো না,কিন্তু পরে তোমাকে ঠিকই চিনেছি, কিন্তু তুমি আমাকে ছিনতে অনেক সময় নিয়েছো

গাইথি চুহেসের ঠোঁটে আংগুল ছেপে বলে
-সে কথা বলবেন না,আমার নিজের ই মনে হলে খারাপ লাগে,আমার মন যাকে খুজছিলো তাকে এতো কাছে পেয়ে ও ছিনতে আমার অনেক দেরি হলো

চুহেস গাইথি কে থামিয়ে বল্লো
– সে সব কথা মনে করে কষ্ট পেয়ে ও না বাবুই, পরিস্থিতি টা ই তখন এমন ছিলো, এতে তোমার,আমার কারো ই কোন দোষ নেই

আচ্ছা বাদ দাও যখন আমি গ্রামে তোমাকে দেখি ঠিক তখন থেকে ই তোমাকে বউ করার স্বপ্ন টা মনে জেগে উঠে,আর সেটা সত্যি ও হতে চলছে

গাইথি- হাম তাই, আমার কেমন যেন সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে,মনে হচ্ছে এই বুঝি ঘুম ভেংগে যাবে আর….

চুহেস- আর বলতে হবে না বাবুই, আমি নিজেই কেমন যেন ঘোরের মধ্যে আছি
আজকের দিনটা সত্যি ভুলে যাওয়ার মতো নয়, না চাইতে ই অনেক অধিকার আজকের এই অনুষ্ঠান শেষে আমি পেয়ে গেছি

গাইথি ঠোঁটে হাসি টেনে বল্লো
– কি অধিকার পেয়েছেন শুনি

চুহেস মুচকি হেসে বল্লো
– এই যে তুমি আমার হয়েছো

গাইথি – এখন ও হইনি মিঃ

চুহেস- পঞ্চাশ পার্সেন্ট অধিকার পেয়ে গেছি, কয়েকদিন পর বাকি টা ও পাবো তার পর

গাইথি- তার পর কি

চুহেস- তার পর “আদি, নীড়’ এর কথা ভাববো
চুহেসের কথা শুনে গাইথি লজ্জা পেয়ে যায়,দ্রুততার সাথে চুহেসের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়

চুহেস- বাহ লজ্জা ফেলে তো তুমি আর ও সুন্দর হয়ে যাও, আচ্ছা শুনো একটা কথা দিতে হবে তোমাকে

গাইথি চুহেসের দিকে মুখ না ফিরিয়ে বলে
– কি কথা বলুন

চুহেস- তুমি আমার দিকে তাকাও আর আমার হাতে হাত রেখে কথা দাও আমার কথা শুনে তুমি কষ্ট পাবে না

চুহেসের কথা শুনে গাইঠি হৃদয়টা কেপে উঠে,মুহুর্তেই লজ্জা রঙ টা মুখ থেকে উবে গেলো, আর সেখানে এসে জমা হলো ভয় আর আশংকা

চুহেস গাইথির দিকে তাকিয়ে বল্লো
– আমার কথা না শুনেই মুখের এই হাল করে ফেলেছো,থাক বলবো না

গাইথি নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আসলে ভয় হয়, এক রকম জোর করেই সাইমুমের সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছিলো, আমি সাইমুমের মাঝে কখনো ই কোন মুগ্ধতা খুঁজে পাইনি, কিন্তু আপনাকে একনজর দেখে ই আমার মাঝে কেমন যেন একটা পরিবর্তন এসে যায়, আর না চাইতে আমি আপনার মনের উজাড় করা ভালোবাসা পেয়ে যাই

গাইথির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে চুহেস বল্লো
– আমি ভেবেছি আমার অবেলায় ভালোবাসা মেঘেডাকা আকাশের অনাকাঙ্ক্ষিত সূর্যের মতো ডুবে থাকবে মেঘের আড়ালে, কিন্তু তুমি এসে তোমার ছোয়াতে মেঘ দূর করে সেখানে এক উদিয়মান সূর্যের আলো জ্বেলেছো, সত্যি বাবুই যা কিছুর যোগ্য আমি নই,তুমি এর থেকে ও অনেক বেশি ভালোবাসা নিয়ে আমার দরজায় এসেছো

গাইথি- এ ভাবে বলবেন না,নিজেকে বড় অপরাধি মনে হয়,
আপনি অনন্য ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখেন,আমার মনে হয় আমি তত টা দিতে পারছি না আপনাকে

চুহেস গাইথিকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– তোমার মনে হওয়ার মধ্যে ভুল আছে,

গাইথি- ঠিক আছে হার মানলাম, এবার বলুন কি কথা বলতে এসেছেন

চুহেস – কিন্তু তুমি আমাকে কথা দাওনি যে তুমি…..

গাইথি- অফসস, কোন রকম ভনিতা না করে মূল কথা বলুন

চুহেস- ওকে তা হলে শুনো,রাবেয়া খালা অসুস্থ,তিনি শেষ বার আমাকে দেখতে চেয়েছে, এখন কি করবো তুমি বলো

চুহেসের কথা শুনে গাইথির মুখের হাসি টা উবে যায়, তবু ও মুখের হাসি ধরে রাখার জন্য ম্লান হেসে বল্লো
– আপনার সেখানে অবিলম্বে যাওয়া উচিত,রাবেয়া খালা আপনার জন্য অনেক করেছে

চুহেস- আমি ও তাই ভাবছি, কিন্তু ব্যাপার টা তুমি কি ভাবে নিবে সেটা ভেবেই মন অস্থির হয়ে উঠছিলো আমার

গাইথি- ওতো অস্থির না হয়ে প্রথমে ব্যাপার টা আমার সাথে সেয়ার করা উচিত ছিলো নয়কি

চুহেস- এখন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে বুঝতে ভুল করেছি

গাইথি- ঠিক আছে আজকের পর থেকে তো আর ভুল হবে না,যাচ্ছেন কখন?

চুহেস- আগামি কাল সকাল দশটায় ফ্লাইট

চুহেসের কথা শুনে গাইথির মন টা আর ও খারাপ হয়ে যায়, মনের অজান্তেই মুখ থেকে একটি কথা বের হয়ে যায়
– কাল ই যাচ্ছেন

চুহেস- তুমি নিষেধ করলে কালকের টিকেট ক্যান্সেল করে দিবো

গাইথি- টিকেট ক্যান্সেল করার দরকার নেই, আপনি কাল ই যাচ্ছেন

চুহেস- কিন্তু আদনান,ভাবি,তোমার বাবা উনারা ব্যাপার টা কি ভাবে নিবে

গাইথি- আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না আমি ম্যানেজ করে নিবো

চুহেস- থ্যাংস বাবু টা. ঠিক আছে এখন একটু ঘুমাও তুমি, আমি যাই সব গুছিয়ে নিতে হবে

গাইথি- একটা কথা
চুহেস- কি?

গাইথি- আপনি এখন ও বাবা কে ক্ষমা করতে পারেন নি তাই না

চুহেস- আমি তো আগে ই বলেছি আমার উনার উপর কোন রাগ নেই

গাইথি- তা হলে আমার ভাইয়া আমার ভাবি যদি আপনার হয়,আমার বাবা কেনো আপনার বাবা হবে না

চুহেস একটু গম্ভীর হয়ে বল্লো
– গাইথি এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ তুমি কখনো, তোমার বাবা কে আমি বাবা বলে ডাকি না কেনো এ জন্য মন খারাপ করবে না, এটা ঠিক যে উনি আমার শ্বশুর হতে চলছে কিন্তু আমার বাবাকে ছাড়া অন্য কাউকে বাবা ডাকতে পারবো না, প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দিও

গাইথির চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে,এই উত্তর টা সে চুহেসের কাছে থেকে আশা করেনি,তবু ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
– ঠিক আছে আমি কখনো এই নিয়ে আপনাকে ঝোর করবো না,
তার পর গাইথির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বল্লো ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই

চলুন আপনাকে জামা কাপড় গুছাতে হেল্প করবো

চুহেস- আমার এই সব নিহার ই গুছিয়ে দিবে তোমার ব্যাস্ত হতে হবে না

গাইথি কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে বল্লো
– বিয়েটা কি আমাকে করছেন নাকি নিহার কে

চুহেস মিষ্টি হেসে বল্লো
– কি যে বলো না তুমি,আমার শুধু একটা ই বাবুই পাখি আছে বুঝলে

গাইথি- তা হলে চলুন, আমার দায়িত্ব আমাকে বুঝে নিতে দিন,
চুহেস গাইথিকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো

সকালে আদনান আর ঐশী কথা টা শুনেই ওরা খুব রিয়েক্ট করে

গাইথি সবাই কে বুঝিয়ে বলে, তার পর গাইথির যুক্তির কাছে সবাই হার মানে

নিহার আর গাইথি চুহেসের সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যায়

ড্রাইভিং সিটে নিহার বসেছে তার পিছনে গাইথি আর চুহেস

চুহেস- বাবুই একদম মন খারাপ করবে না কেমন আমি সেখানে পৌছেই তোমার সাথে কথা বলবো

গাইথি কিছু বল্লো না হয়তো কান্না ভেজা কন্ঠ টাকে আড়াল করার জন্য ই কিছু বলেনি

চুহেস গাইথির দিক থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে বল্লো
– তুমি এমন করছো মনে হয় আমি জীবনে ও আর ফিরবো না এটা ই যেন আমার শেষ যাওয়া

চুহেসের কথা শুনে গাইথি আঁতকে উঠে বলে
– এমন করে বলবেন না,শুনতে ভয় লাগে, আমি চাই আপনি ভালো ভাবে ফিরে আসুন

চুহেস- ওকে মাই ডিয়ার বাবুই,
গাড়ি গিয়ে এয়ারপোর্ট এ পৌছলো
চুহেস গাইথির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্লেনের দিকে অগ্রসর হয়

গাইথি চুহেসের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে যতক্ষন না চুহেস চোখের আড়ালে গেছে

নিহার গাইথিকে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বল্লো
– ম্যাডাম চলুন এবার ফেরা যাক

গাইথি- ওহ হা চলুন,গাইথি হাত দিয়ে মাথার ঘোমটা টা আরেকটু টেনে দেয় যেন নিহার তার চোখের পানি না দেখতে পায়

to be continue

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২০

0
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২০
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২০

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২০

লেখা –সুলতানা ইতি

গাইথি- ঠিক আছে আমি রাজি
চুহেস- আমি রাজি নয়

গাইথি- তুমি তো রাজি হবে সাথে তোমার গাড় ও রাজি হবে, এভাবে গল্পগুজবের মধ্যে সবাই গিয়ে পৌছলো,

আর একদিন পর অনুষ্ঠান দুই বাড়িতে সবাই ব্যাস্ত
চুহেস বল্লো অনুষ্ঠান টা তার বাড়িতেই হবে
এতে আহমদ মেহেরা প্রথমে রাজি না হলে ও পরে রাজি হয়

আমেরিকা থেকে শ্রুতিদের আসতে বলা হয়েছিলো
কিন্তু শ্রুতি সাইমুমের সাথে বিয়ে না দেয়ায় আসবে না বলে দিয়েছে
কথা টা শুনে গাইথির মন খারাপ হলে ও পরে নিজেকে মানিয়ে নেয়

চুহেস- তার রুমে বসে আছে এমন সময় নিহার আগমন
চুহেস- কিছু বলবে নিহার

নিহার- স্যার আপনার ফ্রান্সে যাওয়ার ডেইট টা আর ও এগিয়ে আনতে হয়েছে

চুহেস ভ্রু কুঁচকে বল্লো
– কেনো

নিহার- রাবেয়া খালা খুব বেশি অসুস্থ উনি আপনাকে শেষ বার দেখতে চাইছে

চুহেস- কি বলছো এখন কি হবে কাল তো আবার এংগেজমেন্ট

নিহার- তাতে কোন প্রব্লেম নেই স্যার পরশু আপনার ফ্লাইট

চুহেস- ওহ তা হলে ঠিক আছে কিন্তু গাইথি কে কথা টা বলতে হয়

নিহার- স্যার একটা বলতে চাই
চুহেস- বল

নিহার- গাইথিকে এখন কিছু বলার দরকার নেই কাল অনুষ্ঠান মিছামিছি মন খারাপ করে বসে থাকবে,অনুষ্ঠানের পরে বুঝিয়ে বলবেন

চুহেস- ঠিক বলেছে নিহার, তোমাকে ধন্যবাদ

নিহার- ওয়েলকাম স্যার, তা হলে আমি আসি

অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা পরে বিকেল থেকেই গেস্টরা আসা শুরু করেছে
চুহেসের বিজনেস পার্টনার দের ইনভাইট করা হয়েছে, সব মিলিয়ে দু শোর উপরে মেহমান ইনভাইট ফেল,

গাইথি আর নিধিপা পার্লারে চলে গেছে, অনেক আগেই
নিহার চুহেস কে রেডি করছে

নিহার- স্যার আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে আজকে, বিশেষ করে স্যুট টা আপনাকে অনেক মানিয়েছে

চুহেস- ধন্যবাদ, তোমাকে ও কম লাগছে না আজ

ঘন্টা খানেকের মধ্যে গাইথিরা চলে এসেছে
এই পুরো অনুষ্ঠান দেখা শুনা করবে নিধিপা

নিধিপা- ঘোষণা দিলো প্রথমে নাচ গান,
তার পর হবে আংটি পরানো
সবাই এক সাথে হাত তালি দিয়ে উঠলো

এবার ঐশী ঘোষনা দিলো এখন আপনাদের সামনে পরিবেশিত হবে একটা কাপল ডান্স,আর এতে পার্ফম করবে নিধিপা এন্ড নিহার
সবাই এক যোগে হাত তালি দিয়ে উঠলো

নিহার আর নিধিপা নাচে স্টেজে গেলো, কিন্তু দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে কি ভাবে কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না, এদিকে একটা হিন্দি গান বেজে উঠলো

নিধিপা নিহারের কানে কানে বল্লো
– হিন্দি গানের তালে নাচতে পারবো না আমি

নিহার- ওকে গান চেঞ্জ করতে বলি
গান শুরু হলো নিহার আর নিধিপা নাচ ও শুরু করলো
“আমার মনে ঘরে একটু একটু করে ভালোবাসার ঘর বুনেছি রঙিন স্বপ্ন দিয়ে

যেমন করে পাখি বাদে নিজের সুখের ঘর সুতো ছাড়া বুনে বুনা ভালোবাসার ঘর”

এই গানের সাথে তারা নাচ দিলো, নাচ শেষে সবাই হাত তালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানালো তাদের কে

এর পর নিধিপা, উপস্থিত সম্মানিত গেষ্ট দের উদ্দেশ্য ঘোষনা করলো,এবার পার্ফম করবে, ঐশী এন্ড আদনান

আদনান তো ঘোষনা শুনে চমকে উঠে বলে কি আমি নাচবো?

ঘোষনা শেষ করে নিধিপা আর নিহার এলো আদনানের কাছে

নিহার- ভাইয়া চলুন ভাবির সাথে ডান্স করবেন

আদনান- তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে আমি ডান্স করবো,আমি সকলের মুরুব্বী, ভুলে যাচ্ছো কেনো কন্যা পক্ষ থেকে আমি কন্যারর বড় ভাই

নিধিপা- এতো কিছু শুনছি না ভাইয়া,আপনি আমাদের মুরুব্বী নয়,আমাদের মুরুব্বী হচ্ছে চাচাজান,আমরা কিন্তু উনা কে বলিনি আপনাকে বলেছি,

নিহার- সো আসুন ডান্স ফ্লোরে
আদনান কে নিহার আর নিধিপা টেনে নিয়ে এলো মিউজিক শুরু হলো আদনান তো নাচতে পারেই না বরং নিহার আর নিধিপা আদনাকে নাচার চেষ্টা করে অনেক মজা করলো

এর পর একে সবার পার্ফম শেষ হলো অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায় চলে এলো এবার ঐশী ঘোষনা করলো
-এবার কাপল ডান্স নিয়ে আসছে আপনাদের মাঝে আজকের এই আয়োজন যাদের কে ঘিরে, চুহেস মেহেরা এন্ড গাইথি মেহেরা, এখন পার্ফম করবে আমাদের বিশেষ এই দুই ব্যাক্তি,সবাই জোরসে হাত তালি দাও ওদের জন্য

গাইথি যদি ও ঐদিন ঝোকের মাথায় ডান্স করতে হ্যা বলেছিলো কিন্তু এখন সত্যি তার মাঝে একটা ঝড়তা কাজ করছে, এতো মানুষের সামনে চুহেসের সাথে ডান্স করবে কি করে

নিধিপা টেনে নিয়ে এলো গাইথি কে
নিহার টেনে নিয়ে এলো চুহেস কে, ওদের কে স্টেজে রেখে ওরা সরে গেলো

গাইথি লাজরাংগা চাহনিতে চুহেসের দিকে তাকিয়েছে
চুহেসে ও গাইথির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিলো

মিউজিক শুরু হলো
নিধিপা গাইথি কে ইশারা করে ডান্স শুরু করতে বল্লো।
গাইথি সব ঝড়তা সংকোচ দূর করে ডান্স শুরু করলো, চুহেস ও তার সাথে যোগ দিলো
” দিলখোগায়া হোগায়া কিসিকা
আবরোসেতা মিলগায়া খুশিকা
আখোমে খাবেসা কিসিকা
আবরোসেতা মিলগায়া খুশিকা
ইশতানায়াহা রাফবা
দিলচুরায়াহা হে কিউজে মুঝে
কয়িডো,তেরিও,তেরিও,তেরিও,হায় রাফবা
তেরিও,তেরিও,তেরিও,

খুলকি বিধাঁয়ে খুলকি ঘাটায়ে
সারফেমে আয়ে আসমা
সারোদিশায়ে খাসকে বুলায়ে
তুসাবহে মেহেরবাও

হু হামিতোয়াহি রাফবা
কাসামসে ফাতায়ে
দিলহে নাহি কয়িজোর কয়িজো
তেরিও, তেরিও,তেরিও”

ডান্স শেষে দুজনেই ফিরে এলো স্টেজে থেকে গেষ্টরা সবাই এসে তাদের শুভেচ্ছা জানালো,
খুব ভালো পার্ফম করেছে গাইথি আর চুহেস

নিধিপা এসে গাইথি কে বল্লো
– দোস্ত হিন্দি গানের তালে ডান্স করে একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস,তুই যে এতো ভালো ডান্স জানিস এটা জানতাম না

নিহার চুহেস কে বল্লো
– স্যার আপনাদের পার্ফম পাটাপাটি হয়েছে
নিহার আর ও কিছু বলতে যাচ্ছিলো

নিধিপা নিহার কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– আর কথা নয় চলো এখন ও আসল কাজ বাকি, এনাউন্স টা সেরে ফেলি আগে

নিধিপা এনাউন্স করলো গেস্টদের উদ্দেশ্য করে
চমৎকার একটা ডান্স করেছে আমাদের স্যারর এন্ড ম্যাডাম,এবার শুরু হতে যাচ্ছে অনুষ্ঠানে অন্তিম এন্ড স্বরনীয় অধ্যায়, সবাই এসে ঘিরে দাড়ালো চুহেস এন্ড গাইথি

চুহেস গাইথির অনামিকা আংগুলে আংটি পরিয়ে দিলো
গাইথি ও চুহেস কে আংটি পরয়ে দিলো

সবার হাত তালি ও ফুলের পাপড়ি ছোড়াছুড়ির মাঝে চমৎকার একটা সময় কেটে গেলো এন্ড অনুষ্ঠান সমাপ্তি হলো

খাওয়া দাওয়ার পরে গেস্টরা চলে গেলো
এই রাতে আদনান রা আর তাদের ফ্লাটে ফিরে যায়নি, চুহেস দের এখানে তাদের থাকার ব্যাবস্থা করেছে

গাইথি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরির টা এলিয়ে দিলো,আজ অনেক ধকল গেছে, তবু ও আজকের দিন টা ভুলে যাওয়ার মতো নয় চোখ বন্ধ করলেই যেন সব চোখের সামনে ভেসে উঠে

এদিকে সারাদিন ব্যাস্ত সময় পার করে চুহেস যখন রুমে এলো রেস্ট নেয়ার জন্য তখন তার মনে হলো দেশের বাইরে যাওয়ার কথা টা এখন ও গাইথি কে জানানো হয়নি

to be continue

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৯

0
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৯
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৯

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৯

লেখা –সুলতানা ইতি

 

মিথ্যা কথা বলবেন না আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন
চুহেস- তুমি ভুল বুঝতেছো আমাকে গাইথি

গাইথি- ভুল বুঝিনি আমি,আসল কথা হলো আপনি আমায় ভালো ই বাসেন না

চুহেস আর কোন কথা বল্লো না
একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে গাড়ি থামিয়ে চুহেস বল্লো
– নেমে এসো গাইথি

গাইথি- আমি নামবো না, আমি বাসায় যাবো

চুহেস গাড়ির দরজা খুলে হাত ধরে টেনে নামালো গাইথি কে, তার পর সবুজ ঘাসের উপর বসে পড়লো
গাইথিকে ও টেনে বসালো

তার পর গাইথির একটা হাত ধরে বল্লো
– কবিতা শুনবে

গাইথি মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বল্লো
– না শুনবো না

চুহেস- রাগ করে আছো

গাইথি- না রাগ করিনি

চুহেস- অভিমান করেছো

গাইথি- যখন রাগ করিনি,তখন অভিমান করতে যাবো কেনো

চুহেস গাইথির হাত ধরে বল্লো
– দেখো আমি তোমার সাথে কফিশপে যেতেই পারতাম, কিন্তু কোন লাভ হতো না, সাইমুম আনইজি ফিল করতো,যার ফলে সে তার কথা গুলো তোমায় বলতে পারতো না
আর তুমি ও ঠিক ভাবে তার কথার জবাব দিতে পারতে না,
যার অর্থ হলো, সাইমুম এটা বুঝতো না যে তুমি তাকে কেনো বিয়ে করতে চাও না

গাইথি চুহেসের দিকে মুখ ফিরিয়ে বল্লো
– সত্যি আমি এতো টা ভেবে দেখিনি
তা ছাড়া এখন সাইমুম জানে ওকে আমার পছন্দ নয়,তখন বুঝতো আমি আপনার কারনে, তাকে রিজেক্ট করেছি,ফলে তোমার প্রতি একটা ক্ষভ সৃষ্টি হতো

চুহেস- এই তো লক্ষিটি সব বুঝেছে,ওতো রেগে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবলে আর ও আগে পুরো ব্যাপার টা ক্লিয়ার হয়ে যেত

গাইথি কথা ঘুরিয়ে বল্লো
– আপনার সাথে বের হলে আপনি কখনো আমাকে কোন পার্কে ঘুরতে নিয়ে যান না,শুধু নিরিবিলি প্রাকৃতিক সুন্দর্য ভরা,এমন জায়গা বেছে নেন কেনো

চুহেস- এমন জায়গা ই কথা বলার জন্য উপযুক্ত, আর পার্ক আমার কাছে ভালো লাগে না

গাইথি- ভালো লাগে না কেনো

চুহেস- অনেক কারন আছে, এখন ওসব বলতে ভালো লাগছে না,,,জানো আমি তোমাকে নিয়ে দু লাইনের একটা কবিতা লিখেছি

গাইথি হেসে ফেল্লো
– দুই লাইনের কবিতা হয় নাকি,বিশেষ উক্তি গুলো হয় দুই লাইনের

চুহেস- আহ শুনো ই না আগে,শুনার পর যদি বিশেষ উক্তি মনে হয় তা হলে সেটা বিশেষ উক্তি

গাইথি -ঠিক আছে বলো
চুহেস-
‘তোমার রুপে মুগ্ধতায়
আমি যে হয়েছি সারা
কাজল কালো আখি তোমার
করেছে আমায় পাগল পারা
এলোকেশী তুমি
করেছো আমায় পাগল ‘

গাইথি- তার পর

চুহেস- এই টুকুই আর নাই

গাইথি- হুম, একেবারে ভালো হয়………….নি

চুহেস- হা কি বললে তুমি

গাইথি- ঠিক ই বলেছি

চুহেস আচ্ছা দেখাচ্ছি মজা এই বলে গাইথির মাথার চুল এলোমেলো করে দিলো

গাইথি- এটা কি হলো

চুহেস- এলোকেশী হলো,হা হা হা

গাইথি- হি হি হি, চলো অনেক হয়েছে এবার বাসায় যাই

চুহেস চলো
চুহেস গাইথি কে নামিয়ে দিয়ে গেলো

গাইথি বাসায় যেয়ে তো আনন্দের চিৎকার করে উঠলো
– আরেহ নিধি তুই,এখানে

নিধিপা-তোকে সার্প্রাইজ দিতে এলাম

গাইথি সত্যি- আমি সার্প্রাইজড,তবে তুই না এলে আমি তোকে ফোন করে নিয়ে আসতাম

নিধিপা- তাই,আমার কথা তোর মনে হতো

গাইথি- মনে না হওয়ার কি আছে

নিধিপা- নাহ মনে এখন তো অন্য কেউ গুর গুর করে তাই বললাম আর কি

গাইথি- চুপ কর ফাজিল একটা

নিধিপা- এংগেজমেন্টের শপিং করে ফেলেছিস নাকি

গাইথি- নাহ করিনি

নিধি- কখন করবি,সময় তো বেশি নেই

গাইথি- আচ্ছা দেখি উনাকে বলি

নিধিপা- উনি কে

গাইথি- ইসস এমন ভাব করছিস মনে হয় তুই কিচ্ছু জানিস না

এখন চলতো আমার সাথে
নিধি- কোথায়

গাইথি- আমার রুমে, অনেক কথা আছে তোর সাথে, সব বলবো

চুহেস বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট নিচ্ছিলো এমন সময় মোবাইল টা সংকেত দিয়ে উঠলো, হুম গাইথি কল করেছে
হ্যালো মাই ডিয়ার জানু

গাইথি- ডার্লিং আমরা কি শপিং করবো না

চুহেস- ইয়েস মাই ডিয়ার, কখন করতে চাও

গাইথি – আজ ই

চুহেস- তা হলে লিস্ট করতে হয়

গাইথি- হুম আমি আসছি,আচ্ছা নিহার কি বাসায়

চুহেস- না তো,সে অফিসে

গাইথি- ওকে, তা হলে চলে আসতে বলুন আমাদের সাথে সে ও যাবে

চুহেস- ওকে মাই ডিয়ার তুমি এসো
চুহেস মোবাইলের কল অফ করে দিয়ে নিহার কে কল দিয়ে আসতে বলে,নিহার শপিং এর কথা শুনে চলে আসে

চুহেস আর নিহার বসে বসে গল্প করছিলো,কলিংবেল বেজে উঠলো এমন সময়
চুহেস উঠতে যাচ্ছিলো নিহার চুহেস কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো স্যার আমি যাচ্ছি

চুহেস- আবার স্যার? তুমি তো দেখছি আমার বাড়ি টা কে অফিস বানিয়ে ছাড়বে নিহার

নিহার- অনেক দিনের অভ্যাস তো চেঞ্জ হতে সময় লাগবে,
নিহার যাচ্ছিলো দরজার দিকে আর ভাবছে, পরিস্থিতি মানুষকে কতো টা বদলে দেয়,তা স্যার কে না দেখলে বুঝা ই যেতো না
এক সময় অফিস বাড়ি এই দুয়ের মধ্যে স্যারের কাছে সবটা ই সমান ছিলো,
ভাবতে,ভাবতেই দরজা খুলে দিলো, নিহার

দরজা খুলেই সামনে নিধিপা কে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠে
নিহার- তু তুমি

নিহারের নার্ভাসনেস দেখে গাইথি আর নিধিপা দুজনের শব্দ করে হেসে উঠলো

নিধিপা- ভয় পেয়েছো নাকি নিহার

নিহার দরজার পাশ থেকে সরে দাড়াতে দাড়াতে বল্লো ভয় পায় নি আকস্মিক দেখতে পেয়ে এমন হয়েছে,,তুমি যে এখানে আসবে সেটা বলো নি কেনো

নিধিপা- বলে আসলে কি আর এই মজার দৃশ্য টা দেখতে পেতাম

গাইথি আর নিধিপা এসে বসলো ড্রইং রুমে
চুহেস গাইথির দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তো এই জন্য বুঝি নিহার কে অফিস থেকে এতো তাড়া দিয়ে আনালে

গাইথি- হুম ঠিক ধরেছেন,কিন্তু শপিং এ যাওয়ার ব্যাপার টা ও সত্ত, চলুন যাওয়া যাক

চুহেস- হুম, চলো
সবাই মিলে শপিং এ গেলো,গাইথির ড্রেস চুহেস পছন্দ করে দিয়েছে, চুহেসের ড্রেস গাইথি পছন্দ করেছে

পাক্কা চার ঘন্টা লাগিয়ে শপিং করলো গাইথি,চুহেস তো ক্লান্ত গাইথির পিছু পিছু হাটতে হাটতে

শপি শেষে সবাই বেরিয়ে এলো
চুহেস – শপিং করতে এতো টাইম লাগে তোমার

গাইথি- এতো টাইম কোথায় মাত্র তো চার ঘন্টা

চুহেস অবাক হয়ে বল্লো
– চার ঘন্টা আবার মাত্র
গাইথি – দেখুন আমার শপিং করতে খুব কম সময় লাগে,তার পরে ও যদি….
চুহেস গাইথিকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে,চলো গাড়িতে বসি

নিহার আর নিধিপা এসে গাড়িতে বসলো
কিছুক্ষন পর চুহেসরা ও এলো

নিধিপা- এই গাইথি এই অনুষ্ঠানে কি কি আয়োজন করবি

গাইথি- নাচ গান সব হবে

চুহেস – কি বলছো, এংগেজমেন্টে নাচ গান, হয় নাকি

গাইথি- হয় না তবে এবার হবে ,

চুহেস- নাচবে কে

গাইথি- কেনো আমার নিহার ভাইয়া আর মিসেস নিহার ভাবি

নিধিপা- গাইথি এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।

গাইথি-ওকে ফাইন, ফাজলামি বাদ,সিরিয়েস ভাবে বলছি তোরা নাচবি

নিহার- ঠিক আছে আমরা রাজি তবে একটা শর্তে

চুহেস- কি শর্ত

নিহার- আপনাদের ও নাচতে হবে

নিধিপা নিহারের সাথে এক যোগ হয়ে বলে,হুমম নিহার ঠিক বলেছে এটা আমার ও ইচ্ছে

চুহেস- এই প্রথম শুনলাম, নিজেদের এংগেজ মেন্ট অনুষ্ঠানে নিজেদের কে ই নাচতে হবে

গাইথি- আমি কিন্তু নাচতে পারি না
নিধিপা- তা বললে ও শুনছি না

to be continue

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৮

0

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৮

লেখা –সুলতানা ইতি

 

তুমি প্লিজ কেদো না
গাইথি- আপনি আমাকে কাঁদতে নিষেধ করছেন, আপনি জানেন আমি ঐ ছেলের সামনে যেতে কতোটা ভয় পাই

চুহেস- শুনো তুমি এখন যা কান্না করার করে নাও, বিয়ের পর একদম কাদবে না,নইলে আমার কাছে তোমার একটা ই নাম থাকবে’চিচকাদুনে’

গাইথি ওপাড় থেকে রেগে গিয়ে বলে
– কিহ আপনি আমার সাথে মজা করছেন, আপনি ও আমার কষ্ট টা বুঝলেন না,যান আপনাদের কারো সাথে আর কথা বলবোনা, গাইথি রাগ করে কল অফ অরে দেয়

চুহেস – যাক বাবা কি এমন বললাম যে এতো রেগে গেলো,

পরদিন চুহেস গাড়ি নিয়ে বসে আছে গাইথিদের বাসার সামনে কিন্তু গাইথির নিচে নামার কোন নাম গন্ধ ও নেই
চুহেস কল দিচ্ছে কল ও রিসিভ করছে না

চুহেস ঐশীর ফোনে কল দিয়ে বল্লো
– ভাবি গাইথি ফোন রিসিভ করছে না কেনো

ঐশী- নন্দিনী রেগে আছে,তুমি উপরে এসো রাগ ভাংগাও তার পর নিয়ে যাও

চুহেস আর কোন পথ খুজে না পেয়ে গাইথি কে আনতে গেলো

চুহেস ডোর বেল বাজাতেই ঐশী দরজা খুলে দিলো

ঐশী -ডাইনিং রুমে এসো সবাই ওখানে ই আছে

চুহেস ডাইনিং রুমে যেতেই
গাইথি স্বগত স্বরে বল্লো
গুড মর্নিং মিঃ

চুহেস দেখলো সেখানে আদনান, আহমদ মেহেরা সবাই নাস্তা সামনে নিয়ে বসে আছে
চুহেস- কি ব্যাপার সবাই বসে আছেন কেনো

আদনান- তোমার জন্য অপেক্ষা করছি

চুহেস- আপনারা জানতেন আমি আসবো

আদনান- গাইথি যেহেতু রাগ করেছে সেহেতু তুমি না এসে পারবে না তাই

চুহেস- ওহ আচ্ছা বুঝলাম.রাগ টাগ কিছুই না, নাস্তার দাওয়াত এটাই তো

ঐশী- একদম ঠিক ধরেছো চুহেস

চুহেস বসতে বসতে বল্লো,গাইথি এটা তুমি একদম ঠিক করনি

গাইথি- আমি যা করি তা সব সময় ঠিক

চুহেস- ঠিক হলো কি ভাবে শুনি

গাইথি- রোজ রোজ বুয়ার হাতের রান্না খেয়ে ক্যান্টিনের রান্না খেয়ে বৌর হয়ে যান না,তাই একদিন ভিন্ন হাতের রান্না খেয়ে মাইন্ড টা রিফ্রেশ করুন

চুহেস- এখন ভিন্ন হাতের রান্না না খেলে ও চলবে, কয়দিন পরে তো পার্মানেন্টলি ভিন্ন হাতের রান্না খাবো ই

গাইথি- আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য রান্না করতে

আদনান- আহ তোরা পরে ঝগড়া করিস আগে খেয়ে নে,ঝগড়া করতে হলে তো শক্তির প্রয়োজন তাই না, খেয়ে শক্তি করে নে

চুহেস আর কোন কথা না বলে খাওয়াতে মনযোগ দিলো

গাইথি- ভাইয়া ভাইয়া দেখো রাক্ষসেরর মতো খাচ্ছে দেখো

ঐশী- গাইথি মার খাবি,এতো কথা বলছিস কেনো তুই খেতে দে ওকে

চুহেস- ভাবি তুমি উনাকে বলে দাও আমি রাক্ষস হলে উনি রাক্ষসী হা হা হা

গাইথি-আবার দাঁত কেলিয়ে হাসছে দেখো
এবার আহমদ মেহেরা কথা বল্লো
– আহ গাইথি ছেলেটা কে এতো কথা বলছিস কেনো তুই,ছুপ ছাপ খা তো

গাইথি আর কথা বল্লো না
চুহেস খাওয়া শেষ করে বল্লো, চলো রেডী হয়ে নাও
গাইথি- আমি রেডী আপনি আসুন

গাইথি আর চুহেস গিয়ে গাড়িতে বসলো
গাইথি – আমার খুব টেনশন হচ্ছে,সাইমুম না জানি কি বলে বসে, আপনি কিন্তু ওর সাথে কথা বলার সময় আমার পাশে থাকবেন

চুহেস- এটা আমি পারবো না, আর এটা ভালো দেখাবে না আমি পার্কিং এ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো,

গাইথি- ঠিক আছে, কিন্তু আমি যদি আধা ঘন্টার মধ্যে গাড়িতে ফিরে না আসি, তা হলে আপনি কফিশপের বিতরে যাবেন , ঠিক আছে

চুহেস- ওকে ডান

কিছুক্ষন পর গাড়ি থেমে যায়
চুহেস- তুমি যাও আমি পার্কিং গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো

গাইথি গাড়ি থেকে নামতে নামতে বল্লো
– আমি যা বলেছি তা যেন আপনার মনে থাকে

চুহেস- আচ্ছা ঠিক আছে

গাইথি- ভুলবেন না যেন

চুহেস- ঠিক আছে ভুলবো না
গাইথি চলে যাওয়ার পর চুহেস আবার ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো,,বসে বসে ভাবছে গাইথির কথা, একদম বাচ্ছা ই রয়ে গেলো, একজন মানুষের সাথে দেখা করতে যাবে, এই জন্য এতো ভয়,আর যদি ব্যাতিক্রম কিছু হতো, তা হলে জানি কি করতো

গাইথি কফিশপের বিতরে যেতেই দেখে পাশে একটা টেবিলে সাইমুম বসে আছে
গাইথি গিতে সাইমুমের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসলো

সাইমুম যেন কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে ছিলো , গাইথির চেয়ার টানার শব্দে বাস্তবে ফিরে এলো
সাইমুম- ওহ তুমি এসেছো,বলো কি খাবে, কি অর্ডার দিবো

গাইথি- স্যরি আমি কিছু খাবো না, আপনি কি বলবেন তাড়া তাড়ি বলুন

সাইমুম গাথির মুখের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– মনে হয় তুমি এখানে অস্বস্তি ফিল করছো, তুমি কি আমাকে…….

গাইথি সাইমুমের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বল্লো
– এতো ক্যাছাল না করে, সোজাসুজি বলুন কি বলতে চান

সাইমুম গাইথি গম্ভীর কন্ঠ শুনে একটু অবাক হয়,গাইথির এই রুপের সাথে সে একদম অপরিচিত, তার পর বল্লো
– শুনলাম তুমি নাকি বিয়েটা করতে চাইছো না, কেনো করতে চাইছো না আমি তোমাকে সেটা জিজ্ঞাস করবো না, শুধু বলবো এংগেজমেন্টের এতো দিন পর তোমার কাছে থেকে এই উত্তর আসা টা অবাঞ্ছিত

গাইথি শান্ত আর কঠোর কন্ঠে বল্লো
– অবাঞ্ছিত হলে এটা সত্যি
সেই প্রথম থেকে ই আপনাকে আমার পছন্দ নয়,শুধু ফ্যামেলীর উপরে কোন কথা বলিনি

সাইমুম- তখন ফ্যামেলির উপরে কথা বলোনি এখন বলছো কেনো

গাইথি- এখন বলছি তার কারন…

সাইমুম- কারন কি?

গাইথি- কারন, আমি ভেবেছি এই লম্বা সময়ের মধ্যে, আপনাকে মেনে নিতে পারবো,কিন্তু আমি দুঃখিত মিঃ সাইমুম আপনার সাথে সারা জীবন কাটানো সম্ভব নয়

সাইমুম হঠাৎ করে গাইথি কিছু বুঝার আগেই গাইথির পায়ের কাছে বসে পড়ে বলে
– প্লিজ গাইথি আমাকে একটু সময় দাও আমি তোমার মনের মতো হতে চাই প্লিজ এভাবে আমাকে ফিরিয়ে দিও না,আমি তোমাকে ভা….

গাইথি চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে
– কি করছেন কি আপনি হুম, লোকে কি বলবে তাড়া তাড়ি উঠে বসুন

সাইমুম- না আমি উঠবো না আগে তুমি বলো আমায় ছেড়ে যাবে না

গাইথি- প্লিজ মিঃ সাইমুম পাগলামি করবেন না, দেখুন আপনি এই রকম পাগলামি করলে আমি কিন্তু এখনি এখান থেকে চলে যাবো

সাইমুম এবার উঠে বসে মুখ নিচু করে বল্লো স্যরি গাইথি,আমি বুঝতে পারছি আমার কথা গুলো শুনতে তোমার ভালো লাগছে না, কিন্তু কি করবো তোমাকে ছাড়া যে আমি অচল

গাইথি- দেখুন, বাস্তববাদী হোন,বাস্তবতা কে মেনে নিন , আমার আর কিছু বলার নেই আপনাকে এই বলে গাইথি বেরিয়ে যায় কফিশপ থেকে
সাইমুম নির্বাক হয়ে গাইথির যাওয়ার পথে ছেয়ে আছে,

গাইথি গাড়ির কাছে এসে ধুম করে গাড়ির দরজা খুলে পিছনের সিটে বসে
চুহেস হেসে বল্লো
– কি ব্যাপার আমার পাশে বসতে কি লজ্জা করছে নাকি

গাইথি এতোক্ষন রাগে ফুলছিলো, চুহেসের কথা শুনে বোমা পাটানো কন্ঠে বল্লো
– একদম কথা বলবেন না আপনি চুপ করে থাকবেন

চুহেস- অমা বলে কি আমি তো বোবা না কথা বলতে জানি চুপ করে থাকবো কেনো

গাইথি- একদম ফাজলামি করবেন না, কি বলে গিয়েছিলাম আমি, আমি যাওয়ার আধা ঘন্টা পর বিতরে যাবেন,কিন্তু আপনি যাননি তো

চুহেস অবাক হয়ে বল্লো
– কি বলো আধা ঘন্টা হয়েছিলো বুঝি

গাইথি- চুপ করুন,আধা ঘন্টা ফেরিয়ে চল্লিস মিনিট হলো তখন ও আপনি যান নি

চুহেস- স্যরি স্যরি একদম খেয়াল করিনি

গাইথি- মিথ্যা বলবেন না আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন

to be continue

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৭

0

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৭

 

লেখা –সুলতানা ইতি

 

ভীতু বলছো কেনো নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিজে নিয়ে যাবো তা ও আবার দুজন মুরুব্বীর কাছে একজন হলে ভিন্ন ছিলো

গাইথি- হইছে হইছে আর সাফাই গাইতে হবে না

চুহেস- ঠিক আছে গাইলাম না, চলো,পাড়ে যাই,তুমি মূল ভবন দেখতে ছেয়েছে, সেটা না দেখিয়ে পারি

গাইথি- হুম চলো, দুজনে বাড়ির বিতর টা দেখতে আসে,

গাইথি – ঘরের সব আসবাবপত্র দেখে মনে হচ্ছে এগুলা সব আগের যুগের রাজাদের, যেমন মিউজিয়াম এ দেখেছিলাম

চুহেস- হুম ঠিক ধরেছো,এই পুরো ঘরে যে সব আসবাবপত্র আছে সব আধুনিক জিনিষের থেকে তিন গুন বেশি দাম দিয়ে কেনা

গাইথি- এতো দাম দিয়ে কেনার কি দরকার ছিলো, এর থেকে লেটেস্ট মডেলের গুলো অনেক ভালো

চুহেস- তোমার পছন্দ হয়নি তাই তো,ঠিক আছে চেঞ্জ করে দিবো

গাইথি- আমি কখন বললাম আমার পছন্দ হয়নি,খুব পছন্দ হয়েছে,
আচ্ছা আপনি যে বললেন এই বাড়ির নামের অর্থ টা করতে সেটা কি?

চুহেস- আমি তোমাকে বলেছি, তুমি বের করো

গাইথি- নাহ আমি পারবো না আপনি বলেন

চুহেস- নেইজিনের নীড়, মানে” আদি নিবাস”

গাইথি- খুব ই সুন্দর একটা অর্থ

গাইথি কে থামিয়ে দিয়ে চুহেস বল্লো – আমি কি ভাবছিলাম বলো তো

গাইথি- আমি তো মাইন্ড রিডিং করতে জানি না,আপনি বলুন আপনি কি ভাবছেন

চুহেস একটা দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে, আমাদের যখন সন্তান হবে তখন একটা ছেলে একটা মেয়ে হবে,আমি ছেলের নাম রাখবো’ আদি’ মেয়ের নাম রাখবো ‘নীড়’

গাইথি তো চুহেসের কথা শুনে লজ্জায় মুখ লাল করে ফেল্লো

চুহেস- লজ্জা ফেয়োনাতো,আমরা আমরাই তো,এখন বলো নাম দুটো কেমন

গাইথি মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে বল্লো – অদ্ভুত শুনতে হলে ও ভালো লাগলো আমার কাছে,কিন্তু যদি আমাদের দুটো ই মেয়ে হয়,কিংবা দুটো ই ছেলে তখন কি হবে

চুহেস- তাই তো,এমন টা তো আমি ভেবে দেখিনি, আচ্ছা পরে ভেবে দেখবো,তুমি ও কিন্তু এই ভাবনার জন্য আমাকে সাহায্য করবে কেমন

গাইথি সে দিকে কান না দিয়ে বল্লো,ঐরুম টা বন্ধ কেনো

চুহেস- ওটা একটা স্পেশাল রুম,শুধু স্পেশাল দিনেই খুলবো বলে বন্ধ করে রেখেছি

গাইথি- আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে

চুহেস- চলো চলো আর দেখতে হবে না

গাইথি- না আমি ঐ রুম টা না দেখে যাবো ই না

চুহেস- যাবে না?
গাইথি- না

চুহেস- ওকে ঠিক আছে শুনো ওটা আমাদের বাসর ঘর, মানে ঐ রুমে আমরা আমাদের স্পেশাল রাত টা কাটাবো,

গাইথি লজ্জা পেয়ে বল্লো
কি যে বলেন আপনার মুখে কিছুই আটকায় না

চুহেস- আমার কি দোষ তুমি তো দেখতে চেয়েছিলে,আমি তো শুনালাম মাত্র,শুনে এই অবস্থা,দেখলে তো উপায় নেই

গাইথি কথা ঘুরানোর জন্য বল্লো
– চলুন ফেরা যাক
গাইথি আর চুহেস মিলে গাড়িতে উঠলো
চুহেস সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বল্লো তুমি কি এমন ই থাকবে

গাইথি- কেমন
চুহেস- এই যে আপনি আপনি ছাড়া কথা ই বলছো না

গাইথি চুহেস কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
আপনি কি বলতে চাইছেন,তুমি করে না বললে বুঝি ভালোবাসা প্রকাশ পায় না,
তবে আমি আপনাকে বলছি ভালোবাসা তুমি আপনিতে নয়,ভালোবাসা সেখান থেকে ই হয় যেখানে সম্মান শ্রদ্ধা থাকে,সম্মান শ্রদ্ধা ছাড়া ছাড়া ভালোবাসা গুলো খুব অল্প সময়ে হারিয়ে যায়

চুহেস মুগ্ধ হয়ে গাইথির কথা গুলো শুনছিলো
তার পর কিছুক্ষন চুপ থেকে বল্লো
– ম্যাডাম আপনি যদি পড়া শুনা করে অধ্যাপক হোন তা হলে খুব ভালো মানাবে
গাইথি- থাক পাম্প দিতে হবে না
#
আয়েশা বেগম বাসায় এসেই সোপায় বসে পড়ে, মুখে তার কোন কথা নেই
জেরীন এসে আয়েশা বেগমের পাশে বসলো, জিজ্ঞাস করলো
– মা তুমি কোথায় গিয়েছিলে আর এমন করে বসে আছো কেনো

আয়েশা বেগম- সামুম কোথায়

জেরীন- রুমেই আছে

আয়েশা বেগম- ডাক ওকে

জেরীন- তোমাকে দেখে মনে হয় কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু কি হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি না, কি হয়েছে মা বলো আমাকে

আয়েশা বেগম- সাইমুম কে ডাক বলছি,

জেরীন উঠে গিয়ে সাইমুম কে ডেকে আনলো

সাইমুম মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে,
সাইমুম- কিছু বলবে আম্মু, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো

আয়েশা বেগম কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো হয়তো সব কথা গুছিয়ে নিচ্ছিলো
তার পর বল্লো
আদনান আমাকে ফোন করে যেতে বলেছে,ওখান থেকে আসলাম

সাইমুম- খুশি হয়ে বলে নিশ্চয়ই বিয়ের ডেইট ফাইনাল করেছো তাই না

আয়েশা বেগম- নাহ
সাইমুম – তা হলে

আয়েশা বেগম- আমি জানি গাইথির উপর তুই দূর্বল হয়ে পড়েছিস, কিন্তু সত্য এটা ই যে হয়তো গাইথি তোর ভাগ্যে নেই

সাইমুম মাকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– নেই মানে কি বলছো মা

আয়েশা বেগম- হুম আদনান আমাকে যেতে বলে, আর তার পর তারা আমাকে বলে মূলত গাইথি এই বিয়েতে রাজি নয়, তারা জানিয়ে দিয়েছে তাদের বোনের অমতে তারা কিছু করতে পারবে না

সাইমুম- মানেহ,বললেই হলো,এই বিয়ে সে মেনে নিতে পারবে না, এক বছর আগে আমাদের এংগেজমেন্ট হয়,তখন কিছু বলেনি,মাঝখানে এতো গুলো দিন গেলো তবু ও বলেনি,এখন হঠ্যাৎ করে বল্লো বিয়ে সে করবে না,তা হলে এতো আয়োজন কেনো ,
ঐ ফ্যামেলী আমাকে এই ভাবে ঠকাতে পারে না, আমি গাইথির সাথে কথা বলবো আমি এখনি ফোন করবো

আয়েশা বেগম- তুই তোর মতো করে চেষ্টা করে দেখতে পারিস কিন্তু আমার মনে হয় এতে কোন লাব হবে না

সাইমুম বিষন্ন মন নিয়ে উঠে যায়
জেরীন নিরব দর্শকের মতো কথা গুলো শুনছিলো সাইমুম চলে যাওয়ার পর এবার সে কথা বল্লো
– আম্মু মেহেরা পরিবার আমাদের সাথে সিটিং করেছে, এতো ধড়িবাজ ঐ ফ্যামেলি,দেখে বুঝা যায় না,ভদ্র মানুষের মুখোশ পরে আছে

আয়েশা বেগম- এমন করে বলছিস কেনো এখানে উনাদের কি দোষ, আজ কালকার মেয়েদের বুঝে উঠাই কষ্টকর
মায়ের কথা শুনে জেরীন চলে যায় সাইমুমের রুমে

*
চুহেস- গাইথি তুমি কি আমাদের বাসায় যাবে নাকি, তোমাদের বাসায় নেমে যাবে

গাইথি- বাসায় যাবো, বাবা ভাইয়া চিন্তা করবে,
গাইথি তাদের বাসার সামনে নেমে যায়

গাইথি- আপনি বিতরে আসুন

চুহেস- না বিতরে যাবো না এখন, তুমি যাও

গাইথি চুহেস কে বাই বলে বাসার বিতরে চলে যায়
কলিংবেল বাজাতেই ঐশী দরজা খুলে দেয়
ঐশী গাইথিকে দেখেই কৌতক করে বলে
– বাহ আজ সারাদিন তো বেশ কেটেছে একেবারে কাক ডাকা ভোরে বের হয়ে রাত আট টায় ফেরা,তা ননদী আজ সারাদিন কি কি কথা হলো উনার সাথে

গাইথি কৃতিম রাগ দেখিয়ে বল্লো
– ভাবি আগে তো বাসার বিতরে ডুকতে দিবে তাই না

ঐশী- ওহ তাই তো, আসুন আসুন মিসেস চুহেস মেহেরা,

গাইথি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়
ঐশী ও পিছন পিছন যায়,
– আরেহ ননদী আসল কথা ই তো বলা হয়নি

গাইথি- না ভাবি তুমি আর একটি কথা ও বলবে না

ঐশী- ঠিক আছে আমি মিসেস চুহেস মেহেরাকে কিছু বলবো না কিন্তু মিশমির ফুফু আম্মা কে একটা সুখবর দিতেই পারি,
এই খবর টা হলো মিশমির ফুফা চেঞ্জ হয়েছে,আগের টা ক্যান্সেল করে, নতুন জন কে স্বাগত জানিয়েছে,মিশমির আব্বু,মিশমির দাদা ভাই

গাইথি অবাক হয়ে বল্লো,
-ভাবি সত্যি বলছো, এই বলে ঐশীকে ঝড়িয়ে ধরলো

ঐশী – আরেহ আরেহ আমাকে কেনো,উনি তো এখানে নেই ডাকবো নাকি তাকে

গাইথি ঐশী কে ছেড়ে দিয়ে বল্লো তোমার মুখে কিছুই আটকায় না ভাবি, যাও তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই

ঐশী হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় গাইথির রুম থেকে

চুহেস বাসায় এসে দেখে নিহার টিভি দেখছে, চুহেস কে দেখে নিহার উঠে যায়

চুহেস- উঠতে হবে না,তুমি দেখো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি

চুহেস ফ্রেশ হয়ে এসে নিহারের পাশে বসে
নিহার চুহেসের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– স্যার একটা কথা বলবো
চুহেস- বলো

নিহার- আজ আপনাকে খুব ফ্রেশ দেখাচ্ছে

চুহেস মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, যে কাজ টা দিয়েছি সেটা হয়েছে,

নিহার মুচকি একটা হাসি দিয়ে বল্লো,
– শুধু হয়েছে বললে ভুল হবে, একদম দিন তারিখ সব পাকা করে এলাম

চুহেস- কি বলছো, তুমি তো দেখছি এদিকে দিয়ে একেবারে ফাস্ট

নিহার উচ্চাস ভরা কন্ঠে বল্লো,ফাস্ট হবোনা এই প্রথম আপনার জীবনে আনন্দের একটা মুহুর্ত আসতে চলছে, আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে সে কাজে দেরী করা কি আমার উচিত

চুহেস- তুমি শুধু আমার শুভাকাঙ্ক্ষী নও, আমার ভাই বটে,ব্যাপার টা আমি অনেকক দিন আগে ই ফিল করছি, কিন্তু বলতে দেরী হয়েছে

নিহার- তাতে কি স্যার, আমি অনেক আগেই আপনার স্নেহ মমতা বুঝে নিয়েছি
এখন সব ছেয়ে খুশির খবর টা হলো,আগামি ৭-৪-১৯, আপনার এংগেজমেন্ট,
দিন টা আমি ঠিক করিনি, আদনান ভাই নিজেই ই ঠিক করেছে

চুহেস নিহারকে ঝড়িয়ে ধরে বল্লো,তুমি একদম আমার বড় ভাইয়ের মতো কাজ করেছো নিহার
নিহার ও চুহেস কে ঝড়িয়ে ধরে বলে,
আপনার ছন্নছাড়া জীবন টা আমি দেখতে পারছিলাম না আর,স্যার

চুহেস- আর স্যারর নয় ভাইয়া বলো

নিহার- বলবো একটা শর্ত আমি আপনার ছোট আমাকে তুই করে বলতে হবে,অফিসের ব্যাপার টা ভিন্ন, তার বাইরে ছোট ভাইয়ের চোখে দেখলে আমি খুশি হবো

এমন সময় চুহেসের মোবাইলে কল আসে
নিহার মুচকি হাসি দিয়ে বল্লো,
ভাবি ফোন দিয়েছে হয়তো কথা বলুন, আমি আসছি

চুহেস কল রিসিভ করে
– বাবুই বলো
গাইথি- আপনি ঠিক ভাবে বাসায় উঠেছেন তো

চুহেস- হুম,তুমি নিশ্চয়ই শুধু এই কথা বলতে ফোন করোনি

গাইথি- হুম, ঠিক বলেছেন,সাইমুম ফোন করেছে,সে আমার সাথে দেখা করতে চায়,বলতে বলতে গাইথি কেদে দেয়

চুহেস- সাইমুম দেখা করতেই চাইবে,তাই বলে তুমি কাদছো কেনো

গাইথি কাঁদতে কাঁদত ই বলে
– ও আমার সাথে বাইরে কোথায় ও দেখা করতে চায়,

চুহেস- ঠিক আছেন আমি যাবো কাল তোমার সাথে, তুমি প্লিজ কেদো না

to be continue

একটি পানকৌড়ির গল্প…..  ৯. 

0

একটি পানকৌড়ির গল্প…..

৯.
আফতাব হোসেন তার চেম্বারে বসে ঝিমুচ্ছিলেন। রশীদ আলমের আসার কথা ১০ টায় কিন্তু এখনো আসেননি। কোনো সমস্যা হলো নাকি? রোগী দেখাও শুরু করতে হয়। রোগী দেখা শুরু করলেন আর রশীদ আলম আসলেন তখন একটা ঝামেলা সৃষ্টি হবে। সিরিয়ালের ব্রেক কেউই করতে চাননা। এসিস্ট্যান্ট কে ডেকে বললেন
– রোগী পাঠাও।
রোগী দেখা শেষ করে বের হবেন এইসময় রশীদ আলম এসে হাজির। হায়েস্ট ১০ মিনিট লেট হতে পারে তাই বলে এতো সময় লেট?
ডাক্তারের বিরক্তির চাহনিতে বুঝতে পারলেন রশীদ আলম যে এতোটা দেরি করা ঠিক হয়নি তার। তার আসার ইচ্ছা ছিলোনা। এই মেয়ের জন্য তার অনেক অশান্তি সংসারে। এই মেয়েকে তার কেনো যেন হঠাৎ করেই অসহ্য মনে হচ্ছে।
আফতাব হোসেন তার সামনের চেয়ারে বসতে বললেন। আফতাব হোসেন অনিচ্ছাসত্ত্বেও বললেন
– আপনার প্রথম স্ত্রীকে আমার সামনাসামনি দেখা খুব দরকার।
রশীদ আলম অস্বস্তি নিয়ে বললেন
– সেটা সম্ভব না। আমি তাকে কীভাবে আপনার কাছে নিয়ে আসবো?
– আমি তো বলিনি আপনি নিয়ে আসবেন। আমি বলেছি আমার দেখা,কথা বলা খুব প্রয়োজন। আপনি ঠিকানা দিন আমি একটা ব্যবস্থা করে নিবো।
– সম্ভব না।
– দেখুন রশীদ সাহেব আপনার মেয়ের সমস্যার সমাধানের জন্য তার জন্মদাত্রী মায়ের সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন। বুঝতে পারছেন কী বলেছি?
– ঠিকানা আমি বলছি আপনি লিখুন।
ঠিকানা লিখে আফতাব হোসেন শান্তস্বরে বললেন
– আপনি সময়ের জ্ঞান কম রাখেন মনে হচ্ছে।
– বুঝলাম না ঠিক।
– আপনাকে বুঝতে হবেনা। এখন আসতে পারুন।
রশীদ আলম চলে যাচ্ছিলেন, আফতাব হোসেন বললেন
– আপনার প্রথম স্ত্রীর নাম কী?
রশীদ আলম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন
– রিনি।
নামের উচ্চারণে বুঝতে পারলেন, মানুষ কে ভুলে যাওয়া খুব কঠিন।
আফতাব হোসেনের নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ জাগলো, নামটা জিজ্ঞেস করা ঠিক হয়নি। কিন্তু না করেও তো উপায় ছিলোনা।
বিকালের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ওই ঠিকানায় পৌঁছে তো গেলেন কিন্তু দারোয়ান কি তাকে ঢুকতে দিবেন? বাড়ির মূল গেটের সামনে এভাবে একজন অপরিচিত কে হাঁটাহাঁটি করতে দেখে দারোয়ানের মনে সন্দেহ জাগলো। চোর, ডাকাত নাকি?
গেট না খুলেই ভেতর থেকে অচেনা লোকটাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন
– এই বাড়ির সামনে এতো ঘোরাঘুরি কীসের শুনি?
আফতাব হোসেন বিনয়ের সাথে বললেন
– আমি রিনি ম্যাডামের সাথে দেখা করতে এসেছি।
দারোয়ান সরু চোখে তাকিয়ে আফতাব হোসেন কে পা থেকে মাথা অবদি দেখে নিলেন।
– আপনি কে?
– আমি একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট।
শার্টের পকেট থেকে নিজের ভিজিটিং কার্ড দারোয়ানের হাতে দিয়ে বললেন
– বিশ্বাস না হলে দেখতে পারেন। কার্ডে আমার ছবিও দেয়া আছে।
দারোয়ান কার্ড নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন। আফতাব হোসেন একটু আশার আলো খুঁজে পেলেন। এবার যদি একটু কাজ হয়।
অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে থাকতে তার ভালো লাগছেনা কিন্তু ফিরে যেতেও ইচ্ছে করছেনা। প্রায় ১৫ মিনিট পর, আফতাব হোসেন ঘড়িতে সময়ের হিসাব রাখছিলেন, দারোয়ান ফিরে এসে মূল গেট খুলে দিলেন।
– সোজা গিয়ে হাতের ডানে দরজা খোলা আছে। ওই দরজা দিয়ে ঢুকলেই ড্রয়িংরুম। ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করতে হবে আপামনি আসবেন।
আফতাব হোসেন বিনয়ের সাথে বললেন
– আপনাকে ধন্যবাদ।
দারোয়ান বা এসব বাড়ির কেয়ার টেকার, কাজের লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার করে সম্পর্ক তৈরি করতে হয়। তাহলে অনেক ভেতরের খবর সহজেই পাওয়া যায়। আফতাব হোসেন এইজন্যই এতোটা বিনয়ী আচরণ করছেন। যদিও তিনি সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।
বেশ সুন্দর করে সাজানো ড্রয়িংরুম। এতো বড়লোকদের বাড়িঘর অবশ্য এভাবেই সাজানো থাকে। তার স্ত্রীরও এরকম বাড়ির খুব সখ। কখনো প্রকাশ করেনা কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন। বেশ কিছুক্ষণ পর ট্রে হাতে নিয়ে ৩০-৩২ বছর বয়সী একজন নারী এসে ড্রয়িংরুমে ঢুকলেন। বেশ সুন্দরী কিন্তু মুখে হাসি না থাকায় কেমন যেন লাগছে। আফতাব হোসেনের সামনে রাখা টি টেবিলে ট্রে রেখে ডান পাশের সোফায় বসে বললেন
– চা ঠান্ডা হচ্ছে।
আফতাব হোসেন খেয়ালই করেননি ট্রে তে চা আর কয়েক রকম মানে তিন রকমের বিস্কুট আছে। এই এক কাপ চা দিয়ে এতো রকমের বিস্কুট খাবেন কীভাবে? এই বিস্কুট গুলো খাওয়ার জন্য অন্ততপক্ষে ১ কেজি চায়ের মগ লাগবে।
আফতাব হোসেন চায়ের কাপ নিয়ে বললেন
– আমি ড. আফতাব হোসেন। আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা বলার আছে। আপনি রিনি ম্যাডাম তো?
হাসার চেষ্টা করে বললেন
– হ্যাঁ আমি রিনি।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আফতাব হোসেন তার প্রথম প্রশ্নটি করলেন
– আপনার প্রথম স্বামীর নাম রশীদ আলম?
– হ্যাঁ, প্রথম বলতে ওই লাস্ট। আর বিয়ে করিনি।
– আপনার একটা মেয়ে আছে ফারিয়া তাই না?
– আমার মেয়ে আছে তবে ফারিয়া না ওর নাম।
আফতাব হোসেন খেয়াল করলেন রিনি তেমন বিব্রতবোধ করছেন না। বেশ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের উত্তর গুলো দিচ্ছেন।
– তাহলে ওর নাম কী?
– আমি আর রশীদ ওর নাম রেখেছিলাম রাদিয়া। হয়তোবা ওর দাদী নাম চেঞ্জ করেছেন।
লাস্টের কথাটা বলার সময় রিনির চোখে ঘৃণা স্পষ্ট দেখতে পেলেন আফতাব হোসেন।
– সংসার ছেড়ে আসার কারণ?
রিনি বললেন
– চা টা শেষ করে কথা বলুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালো লাগবেনা।
আফতাব হোসেনের চা খাওয়া শেষ হবার পর রিনি বলতে শুরু করলেন
– রশীদের জুয়া খেলার অভ্যাস ছিলো। বিয়ের আগে থেকেই জানতাম। বিয়ের পর এবং আগে অনেক চেষ্টা করেছি ছাড়ানোর, ও ছাড়েনি। মেয়েটা যখন আমার পেটে তখন ওর জুয়া খেলার কারণে অনেক দেনা হয়েছে জানতে পারলাম। ওর মা বাবা অতোটা জানতেন না। মেয়েটা হবার পর দেনাদাররা বাসায় আসা শুরু করলেন। খুব খারাপ পরিস্থিতি। প্রায় না খেয়েই থাকতে হতো আমাকে। মেয়েটাও দুধ পাচ্ছিলো না। ওর মা সব দোষ আমার আর আমার মেয়ের ঘাড়ে দিলেন। আমি আসার পরে নাকি তার ছেলে জুয়া খেলায় মেতেছে। আর মেয়ে হচ্ছে অলক্ষী। তাই জন্ম নেবার সাথে সাথেই বাবার ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সারাদিন কানের কাছে এই এক কথা!
মেয়েটাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কী করবো বুঝে উঠতে না পেরে বাবাকে ফোন দিলাম। লজ্জাসংকোচ ছেড়ে বাবার কাছে টাকা চাইলাম। টাকার এমাউন্ট টা যদি কম হতো। রশীদ ১৫ লাখ টাকা দেনা ছিলো। বাবা এমনিতেই আমার উপর রাগ ছিলেন তার অমতে বিয়ে করেছি বলে।
টাকা দিতে রাজি হলেন কিন্তু শর্ত জুড়ে দিলেন।
– ওই সংসার ছেড়ে চলে আসতে হবে। মেয়েকেও রেখে আসতে হবে। অনেক কান্নাকাটি করে বোঝালাম মেয়েকে রেখে আসতে পারবোনা।
বাবা রাজি হলেন।
তাই করলাম মেয়েকে নিয়েই চলে এলাম। ওকে ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু আমার মেয়েটাকেও তো বাঁচাতে হবে।
রিনির গাল ভিজে উঠেছে চোখের জলে। মেয়েটা সুস্থ হয়ে উঠছিলো। ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। তখন ওর বয়স কতো মনে পড়ছেনা।
রশীদ আমার কাছ থেকে মেয়েটাকে জোর করে নিয়ে গেলো। আমি কিছুই করতে পারিনি।
আফতাব হোসেন বললেন
– আপনার বাবা তো পারতেন কোর্টে গিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে।
– বাবা রাজি হলেন না। সুইসাইড করতে গেলাম তাতেও না।
– আপনি রশীদ আলমের কাছে ফিরে যেতে পারতেন৷
– আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছিলাম।
– আপনি কি জানেন আপনার মেয়েটা অনেক দিন যাবত অসুস্থ?
– হ্যাঁ, জানি। লিমা আমাকে সব জানিয়েছে।
– তার সাথে আপনার কীভাবে পরিচয়?
– লিমা নিজেই ওদের বিয়ের ৩ মাস পরে এসেছিলো।
– ফারিয়াকে নিয়ে আসতো না?
– না, ও কখনোই আনতো না। আমি অনেক অনুরোধ করতাম। তবে ও রাদিয়াকে অনেক আদর করে এজন্য এখন আর বলিনা। আর রাদিয়া আমাকে ঘৃণা করে। আমিই লিমাকে সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর কাছে নেয়ার কথা বলেছিলাম।
– মেয়ের জন্য খারাপ লাগেনা?
রিনি মুচকি হেসে বললেন
– অভ্যস্ত হয়ে গেছি। দূর থেকে মেয়েটাকে দেখি। আমার মতোই নাকি হয়েছে।
আফতাব হোসেন নিজেও অবাক হলেন, সত্যিই তো মেয়ে তো পুরো মায়ের মতোই দেখতে।
– ড. আফতাব হোসেন আমার মেয়েটাকে যেমন করেই হোক বাঁচান। ওর মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। লিমা ওকে বেশ খেয়াল রাখে কিন্তু জন্ম তো আর দেয়নি।
– ঠিক বুঝলাম না।
রিনি বললেন
– মেয়েটাই আমার সব এখন। রশীদ তো আমাকে চিনতেই পারলোনা। মেয়েটা আমার কাছে থাকলে হয়তোবা এমন হতোনা। ওর মা খুব খারাপ মহিলা। আমার রাদিয়াকে বেশ আজেবাজে কথা শোনায়। আমি এখনো বেঁচে আছি ওই মেয়েটার জন্যই। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি ঠিক থাকতে পারবোনা।
– লিমার বাড়ি কোথায়?
– ও তো গ্রামের মেয়ে। গ্রামের নামটা মনে পড়ছেনা। আপনার নাম্বার টা দিয়ে যান আমি ফোনে জানিয়ে দিবো। আর কিছু মনে করবেন না আমার এখন একটু বের হতে হবে। আপনি রাতে খেয়ে যাবেন।
– নাহ, অন্য একদিন। আজ আমি উঠি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
– আপনাকেও ধন্যবাদ দিবো যদি রাদিয়া আগের মতো হাসিখুশি বাবু হয়ে যায়।
রিনি একিটু শব্দ করেই হাসলেন। আফতাব হোসেন খেয়াল করলেন
– এখন তাকে খুব নিখুঁত সুন্দরী মনে হচ্ছে।
সন্ধ্যার দিকে চেম্বারে রোগী দেখা শুরু করলেন আফতাব হোসেন। আজকাল মনে হচ্ছে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে বাড়ছে। বাড়ছেনা, আগেও ছিলো শুধু লোকে পাগল বলবে বা সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর অভাবেই কেউ প্রকাশ করতো না। এ দেশের প্রত্যেকটা পরিবারে অন্ততপক্ষে একজন অস্বাভাবিক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা প্রকাশ করবেনা। লোকে বলবে – ওই বাড়ির অমুক বদ্ধ পাগল। ওই বাড়ির ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়া যাবেনা বা ওই বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করা যাবেনা তাহলে বংশে পাগলের রক্ত চলে আসবে। মানুষ গুলো কী বাজে মানসিকতার! একজন অস্বাভাবিক মানুষকে সুস্থ তো হতে দিবেই না বরং আরো অসুস্থ বানিয়ে ছাড়বে।
রাতে বাসায় ফিরে বেশ আরামে  ঘুম দিলেন। রেহান টিয়াপাখি টা নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকে। টিয়াপাখিটা অবশ্য ওকে একদমই পছন্দ করেনা। একটু হাত দিয়ে রেহানা ধরতে গেলেই ঠোঁট দিয়ে হাতের চামড়ায় কামড় বসিয়ে দেয়। তারপরও রেহানা হাল ছাড়েনি। লেগেই আছে। আফতাব হোসেন বেশ হেসেছেন বিষয়টা নিয়ে। তার স্ত্রী এখনো আগের মতো হাসিখুশি আছে।
লিমার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নেয়া দরকার কিন্তু এতো সময় তার হাতে নেই। আবার যাওয়াটা খুব দরকার।
রেহানাকে জিজ্ঞেস করলেন
– বলোতো কী করি?
রেহানা ভাজি প্লেটে দিয়ে বললেন
– কোন বিষয়ে?
– ফারিয়ার দ্বিতীয় মা, লিমার সম্পর্কে পুরোটা জানা দরকার। কিন্তু ওর বাবার বাড়ি গ্রামে। আমার সময় হচ্ছেনা পুরো ১ দিনের জন্য।
– শুক্রবার যাও।
– অনেক দেরি হয়ে যাবে। এর মধ্যে মেয়েটার বড় কোনো ক্ষতি হলে?
– এক কাজ করো তোমার এসিস্ট্যান্ট কে পাঠিয়ে দেও। ও তো তোমার সাথে থাকতে থাকতে এসব বিষয়ে পটু হয়ে গেছে।
– তারপরও।
– আর মোবাইলের যুগ। যা জানার দরকার বা প্রশ্ন করা দরকার মোবাইলে বলে দিবা। আচ্ছা ওর যে আসল মা সে কেমন?
– ভালোই তো মনে হলো। সব বলবো তবে এখন না। এখন আমি নিজেই জানিনা কী কারণে ফারিয়ার এরকম সমস্যা হচ্ছে।
পরিবার, আশেপাশের পরিবেশ সবকিছুই একজন মানুষের উপর প্রভাব ফেলে। সেটা নেতিবাচক বা নীতিবাচক দুটোই হতে পারে।
আফতাব হোসেনের মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলো। আফতাব হোসেন মনে মনে ভাবলেন রিনি ম্যাডাম হবেন।
ফোন রিসিভ করে বললেন
– রিনি ম্যাডাম বলছেন নাকি?
– হ্যাঁ। লিমার বাবার বাসার ঠিকানা টা লিখুন।
ঠিকানা লিখে রাখার পর আফতাব হোসেন কিছু বলতে যাবেন তখন রিনি বললেন
– ঠিকানা যে আমি দিয়েছি এটা যেন ফাঁস না হয়। বুঝতে পারছেন?
– হ্যাঁ।
ফোন কেটে গেলো নাকি রিনি কেটে দিলেন আফতাব হোসেন ঠিক বুঝতে পারলেন না।
ফারিয়া আবারও সেই স্বপ্নটা দেখছে। বারবার চেষ্টা করছে স্বপ্নটা যেন না দেখে ঘুমের ঘোরে। রাজা রাণীর গল্পের কথা কিন্তু হচ্ছেই না। সেই একই স্বপ্ন, একই অনুভূতি!
অসহ্যকর ভীষণ অসহ্যকর!
চলবে…….!
© Maria Kabir

ঘুমন্ত রাজপরী_পর্ব(০৭)

0
ঘুমন্ত রাজপরী
ঘুমন্ত রাজপরী_

ঘুমন্ত রাজপরী_পর্ব(০৭)

নিশানাথবাবু রাতের বেলা খবর নিতে এলেন। এই মানুষটি সাধারণত খুব হাসিখুশি। কিন্তু আজ কেমন যেন গম্ভীর লাগছে। মুখে খুব চিন্তিত একটা ভঙ্গি। অপালা বলল, ‘ম্যানেজারকাকু, আপনার কি শরীর খারাপ?
‘না, শরীর ভালােই আছে। ‘বাবার কোনাে খবর পেয়েছেন?
‘না। ইংল্যাণ্ডে পৌছেছেন, সেই খবর জানি। তারপর আর কিছু জানি না। স্যার মাঝে-মাঝে এ-রকম ডুব মারেন, তখন সব সমস্যা একসঙ্গে শুরু হয়।
কোনাে সমস্যা হচ্ছে কি? ‘না, তেমন কিছু না।
নিশানাথবাবু এড়িয়ে গেলেন। অপালার মনে হল, বড় কোনাে সমস্যা হয়েছে। কারখানাসংক্রান্ত কোনাে সমস্যা, যা এরা অপালাকে বলবে না। অপালারও এ-সব শুনতে ইচ্ছে করে না। সমস্যা থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালাে।
ম্যানেজারকাকু! ‘কি মা?
‘ফিরােজ বলে যে-ছেলেটি আমাদের ঘর ঠিক করে দিল, তাকে একটি চিঠি দিতে বলেছিলাম, দেন নি কেন?
নিশানাথবাবু বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘দিয়েছি তাে! ‘ও, তাহলে উনি বােধহয় পান নি। রেজিস্ট্রি করে দেয়া দরকার ছিল।
‘রেজিস্ট্রি করেই তাে দিয়েছি। চিঠির সঙ্গে একটা রেভিনিউ স্ট্যাম্প-বসানাে রিসিট ছিল। উনি তাে সেখানে সই করে ফেরত পাঠিয়েছেন। কাজেই আমার চিঠি না পাওয়ার তাে কোনাে কারণ নেই। আমি বরং কাল তাঁকে জিজ্ঞেস করব।
‘না, জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। নিশানাথবাবু ইতস্তত করে বললেন, ‘ছেলেটি আজ এখানে এসেছিল, তাই না? ‘হা।।
এদের বেশি প্রশ্রয় দেয়া ঠিক না, মা। কাজ করেছে টাকা নিয়েছে, ব্যস, ফুরিয়ে গেল। আবার এসে এত কিসের চা খাওয়াখাওয়ি। * অপালা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। নিশানাথবাবুর হঠাৎ এখানে আসার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হচ্ছে। তিনি এমনি-এমনি আসেন নি। নিশ্চয়ই তাঁকে খবর দেয়া হয়েছে।
টেলিফোনে জানানাে হয়েছে।
‘মা অপালা।
‘তুমি একা-একা থাক, তােমার বােধহয় খারাপ লাগে। “না, আমার খারাপ লাগে না।
‘খারাপ না-লাগলেও লােনলি তাে নিশ্চয়ই লাগে। আমি তােমার কাকিমাকে বলেছি, সে এসে থাকবে।
‘কোনাে দরকার নেই। ‘না, দরকার আছে।
‘বেশ, দরকার থাকলে তাঁকে নিয়ে আসুন। তবে আপনি কিন্তু কাকু শুধু-শুধু ভয় পাচ্ছেন। ঐ ছেলে আর এখানে আসবে না।
নিশানাথবাবুকে কোনাে কথা বলার সুযােগ না দিয়ে অপালা উঠে গেল। তার প্রচণ্ড মাথা ধরেছে।
ফখরুদ্দিন সাহেব মৃদু স্বরে বললেন, ‘আমি একটা টেলিফোন করব। দয়া করে ব্যবস্থা করে দিন।
যে-নার্স তাঁর মুখের ওপর ঝুঁকে আছে, সে বলল, ‘আরাে একটু ভালাে হয়ে নাও, তারপর করবে।
‘আমি ভালাে আছি। ‘তুমি মােটেও ভালাে নও। খুবই অসুস্থ। ‘কতটা অসুস্থ? ‘অনেকটা। তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে—ঈশ্বরের অনুগ্রহে ফিরে এসেছ। ‘এখন ঈশ্বরের অনুগ্রহে আমাকে একটি টেলিফোন করতে দাও।’
‘নিশ্চয়ই করবে। আত্মীয়স্বজনকে খবর দিতে চাও তাে? সে-ব্যবস্থা আমরা করেছি। তােমাদের এম্বাসিকে জানানাে হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
আমাদের এ্যাসির কাজকর্ম সম্পর্কে তােমার কোনাে ধারণা নেই। ওরা কিছুই করে নি। যে-নােট তােমরা পাঠিয়েছ, সেই নােট ওরা এখনাে পড়ে নি। খাম খােলা হয় নি বলেই আমার ধারণা।
নার্স কোনাে কথা বলল না। ফখরুদ্দিন সাহেবের বাঁ হাতে একটি ইনজেকশন করল। ফখরুদ্দিন সাহেব আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম ভাঙল রাত নটায়। টেলিফোনে প্রথম কথা বললেন অপালার সঙ্গে।
‘বাবা, তুমি! সবাই চিন্তায় অস্থির। তােমার কোনাে খোঁজ নেই। মা’র সঙ্গে ঐ দিন কথা হল, মাও তােমার কোনাে খোঁজখবর জানে না। তুমি আছ কেমন?
খুব ভালাে আছি।
৪৪
গলার স্বর এমন লাগছে কেন? ‘সর্দি লেগেছে। কথাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এখন তাে তাও কথা বলতে পারছি।
তুমি কথা বলছ কোথেকে? ‘লণ্ডন থেকেই বলছি।
এতদিন ডুব মেরে ছিলে কেন?’ ‘দেখলাম ডুব মেরে থাকতে কেমন লাগে। এক দিন তাে ডুব মারতেই হবে। হা হা হা। তােমার খবর কি?’
| ‘আমার কোনাে খবর নেই। বসার ঘর ঠিক করা হয়েছে বাবা। এত সুন্দর করে সাজিয়েছে যে, দেখলে তােমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
তােমার কথা বুঝতে পারছি না মা। কিসের ঘর ? ও-মা, ভুলে গেছ! বসার ঘরের ডেকোরেশন বদলানাে হল না? ও, আচ্ছা। ‘তােমার তাে এটা ভুলে যাবার কথা নয় বাবা! তুমি তাে কিছুই ভােল না।
এখন মনে হয় কিছু-কিছু ভুলে যাচ্ছি। বয়স হয়ে যাচ্ছে। গেটিং ওল্ড। বসার ঘরটা খুব সুন্দর হয়েছে বুঝি?
‘খুব সুন্দর! এক বার বসার ঘরে ঢুকলে তােমার বেরুতে ইচ্ছা করবে না।’ ‘তাহলে তাে ডেকোরেশন ঠিক হয় নি। বসার ঘর এমন হবে, যেন কেউ বেশিক্ষণ বসে। যেন খুব অস্বস্তি বােধ করে। চট করে চলে যায়। হা হা হা।
‘বাবা।
কি মা? ‘তােমার হাসিটাও কেমন যেন অন্য রকম লাগছে।
কী-রকম লাগছে? ‘মনে হচ্ছে হাসির তেমন জোর নেই।’ “আচ্ছা, দেখ তাে এখন কেমন মনে হয় হা হা হা।
ফখরুদ্দিন সাহেব টেলিফোন নামিয়ে রেখে ক্লান্ত ভঙ্গিতে চোখ মুছলেন। তাঁর আরাে কয়েকটি কল করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সামর্থ্য ছিল না। মনে হচ্ছে শরীর একেবারেই গেছে। দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে। দেশের মাটিতে মরতে হবে, এ রকম কোনাে সেন্টিমেন্টাল চিন্তা-ভাবনা তাঁর নেই। এ-রকম চিন্তা-ভাবনা থাকবে। বড়-বড় কবি-সাহিত্যিকদের, দেশপ্রেমিক-রাজনীতিবিদদের। তিনি তাঁদের কেউ নন। নিতান্তই এলেবেলে ধরনের এক জন মানুষ। তাঁর কোনাে রােমান্টিক চিন্তা-ভাবনা থাকার কথা নয়। কিন্তু তবু রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তিনি বৃষ্টির শব্দ শুনলেন। ঝমঝম বৃষ্টি। আষাঢ় মাসের প্রবল বর্ষণ। তিনি বেল টিপে নার্সকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাইরে কি বৃষ্টি হচ্ছে নার্স?
নার্স অবাক হয়ে বলল, ‘কই, না তাে।
“হয়তাে হচ্ছে, তুমি বুঝতে পারছ না। দয়া করে একটু বারান্দায় দেখে আসবে? এ-রকম বৃষ্টি শুধু আমাদের দেশেই হয়। তুমি বােধহয় জান না, আমাদের দেশ হচ্ছে বৃষ্টির দেশ।
আমি তাে শুনেছিলাম তােমাদের দেশ হচ্ছে অভাবের দেশ।
৪৫
‘আমাকে দেখে কি খুব অভাবী লােক বলে মনে হচ্ছে? ‘তােমাদের দেশের সবাই তােমার মতাে? ‘হ্যা। এখন দয়া করে একটু দেখে এস বৃষ্টি হচ্ছে কি না।
বললাম তাে, হচ্ছে না।’ ‘আমি শুনতে পাচ্ছি, তুমি পাচ্ছ না? দয়া করে একটু দেখে এস না! বারান্দায় যেতে তােমার খুব কি কষ্ট হবে?
‘না, হবে না।’
নার্স বারান্দায় গেল না, এক জন ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে এল। ডাক্তার রুগীর প্রেসার মাপলেন, গায়ের তাপ দেখলেন এবং কড়া সিডেটিভ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।
লােকাটকে এই বসার ঘরে ঠিক মানাচ্ছে না। রােগা ধরনের অভাবী টাইপের এক জন মানুষ। চোখে মােটা কাচের চশমা। স্যাণ্ডেল ঘরের বাইরে খুলে রেখে এসেছে। সেই স্যাণ্ডেলগুলিরও জরাজীর্ণ অবস্থা। অন্য কেউ হলে ফেলে দিত। এই পােক ফেলতে পারছে না।
এই ঘরে যে লােকটিকে মানাচ্ছে না, তা সে নিজেও বুঝতে পারছে। বসে আছে জড়ােসড়াে হয়ে। হাত দু’টি অবসন্ন ভঙ্গিতে কোলের ওপর ফেলে রাখা। গায়ে হলুদ রঙের একটা চাদর। কড়া হলুদ। এই নীল-নীল বসার ঘরে হলুদ রঙ বড় চোখে লাগে। লােকটির বয়স পঞ্চাশের মতাে হবে কিংবা তার চেয়ে কমও হতে পারে। অভাবী লােকদের অল্প বয়সেই চেহারা নষ্ট হয়ে যায়।
| অপালা পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লােকটি এক বার শুধু তাকিয়েছে। তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিয়েছে। অথচ অপলা এমন একটি মেয়ে, যার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। অপালা বলল, আপনি কি বাবার কাছে এসেছেন?
| লোেকটি হা-সূচক মাথা নাড়ল। কিন্তু অপালার দিকে তাকাল না। মাথা ঘুরিয়ে জলরঙা ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইল।
‘বাবা তাে দেশে নেই। সপ্তাহখানেক পরে ফিরবেন। আপনি বরং এক সপ্তাহ পরে আসুন।
| ‘আচ্ছা।
লােকটি কিন্তু উঠে দাঁড়াল না, বসেই রইল। এইবার সে তাকিয়ে আছে জানালার পর্দার দিকে। যেন পৃথিবীর সমস্ত রহস্য ও সৌন্দর্য জানালার ঐ পর্দাটিতে। অপালা বলল, আপনি কি কিছু বলবেন?
‘তােমার মা আছেন?
অদ্ভুত ব্যাপার তাে, এই লােক তাকে তুমি করে বলছে। অপালাকে তুমি করে বলার মতাে বাচ্চা এখনাে নিশ্চয়ই দেখাচ্ছে না। তার বয়স একুশ। একুশ বছরের একটি মেয়েকে শাড়ি পরলে অনেকখানি বড় দেখায়। কিংবা কে জানে, লােকটি
৪৬
হয়তাে ভালাে করে তাকে লক্ষই করে নি।
‘আমার মাও দেশের বাইরে। চিকিৎসার জন্যে গিয়েছেন। লােকটি ঠিক আগের মতাে ভঙ্গিতে পর্দার দিকে তাকিয়ে বসে রইল।
আপনার যদি জরুরি কিছু বলার থাকে, আমাকে বলতে পারেন।
লােকটি হলুদ চাদরের ভেতর থেকে একটা কার্ড বের করল। বিড়বিড় করে বলল, আমার বড় মেয়ের বিয়ে ১৭ই পৌষ।
অপালা হাত বাড়িয়ে কার্ডটি নিল। ‘বাবা এলেই আমি তাঁকে দিয়ে দেব। তিনি কি আপনাকে চেনেন? ‘হ্যা। আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।
অপালা হাসিমুখে বলল, ‘বাবার মন ভালাে থাকলে তিনি সাহায্য-টাহায্য করেন। তাঁর কাছে যেতে হয় মুড বুঝে।
| লােকটি উঠে দাঁড়াল। ঘর থেকে বেরােবার সময় হঠাৎ বলে বসল, ছেলেটা ভালাে পেয়েছি। ব্যাঙ্কে কাজ করে। অগ্রণী ব্যাঙ্ক।
‘বাহ্, খুব ভালাে। ‘অফিসার্স গ্রেড। কোয়ার্টার পেয়েছে।
অপালার বড় মায়া লাগল। সে নিতান্তই অপরিচিত একটি মেয়ে। অথচ এই লােকটি কত আগ্রহ করে তার সৌভাগ্যের কথা বলছে। নিশ্চয়ই মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে কিছু সাহায্যের জন্যে এসেছিল। লােকটি নিচু গলায় বলল, “যাই।’
অপালা তার পিছনে-পিছনে বারান্দা পর্যন্ত এল। গেটের বাইরে বার-তের বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে। লােকটি গেট খুলে বেরােতেই এসে তার হাত ধরল। এই মেয়েটি নিশ্চয়ই লােকটির সঙ্গে এসেছে। ভেতরে ঢোকে নি। অপালা ছােট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলল। মেয়েটি এলেই পারত। বিশাল বাড়ি দেখে হয়তাে ভরসা পায় নি। আগ্রহ এবং কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করেছে বাইরে। ভারি মিষ্টি চেহারা মেয়েটির! লােকটি কেমন—মেয়েটিকে গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
‘অপা, এই অপা।।
অপালা বিরক্ত মুখে তাকাল। দোতলার গেট থেকে নিশানাথকাকুর স্ত্রী তাকে ডাকছেন। অপালা জবাব দিল না। এই মহিলা গত তিন দিন ধরে এ-বাড়িতে আছেন। প্রথম দিন থেকেই অপালাকে আদর করে অপা ডাকছেন। এই আদর তার সহ্য হচ্ছে
। এক বার ভেবেছির বলবে—আপনি আমাকে অপা ডাকবেন না। বলতে পারে নি। বয়স্ক এক জন মহিলাকে মুখের ওপর এমন কঠিন কথা বলা যায় না। তা ছাড়া ভদ্রমহিলা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন অপালাকে খুশি রাখতে। প্রথম রাতে অপালার ঘরে ঘুমুতে এলেন। অপালা বলল, ‘এই ঘরে আপনার ঘুমানাের দরকার নেই।
কেন, দু’টা খাট তাে আছে।’ থাকুক। আমার একা-একা থাকতে ভালাে লাগে।’
‘ও-মা, কেমন কথা! ঘুমুবার আগে খানিকক্ষণ গল্পগুজব করলে তােমার ভালােই লাগবে মা। আমি খুব মজার-মজার গল্প জানি মা।’
মজার মজার গল্প আমার শুনতে ভালাে লাগে না। না-শুনেই কী করে বলছ, শুনতে ভালাে লাগে না। আচ্ছা, এইটা শােন, তারপর
৪৭
দেখি না-হেসে থাকতে পার কি না। একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হল কোনটা বেশি দরকারি–চেহারা না ব্রেইন। মেয়েটি বলল, চেহারা। কারণ চেহারা দেখা যায়, ব্রেইন দেখা যায় না। কী, গল্পটা মজার না?
‘হ্যা, মজার।

চলবে….