Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2356



মন ফড়িং ♥ ৩.

0
মন ফড়িং ♥ ৩.
মন ফড়িং ♥ ৩.
মন ফড়িং ♥
৩.
সেই সকাল থেকে খালি পেটে থাকায় অদ্রির টক ঢেকুর তুলছে। পেটও কেমন কেমন ফোলা ফোলা মনে হচ্ছে। ঢেকুর কয়েক প্রকারের আছে। কিছু প্রকার ঢেকুর মানুষের খুব পছন্দ। আবার কিছু ঢেকুর মানুষকে বেশ বিরক্ত করে। মিষ্টি ঢেকুর, টক ঢেকুর, ঝাল ঢেকুর, রসুনের ঢেকুর, মুলার ঢেকুর, বিরিয়ানির ঢেকুর…. আর মনে পড়ছে না অদ্রির। মিষ্টি ঢেকুর মিষ্টি যারা পছন্দ করে তাদের ভালো লাগে। সবথেকে বাজে ঢেকুর মুলার ঢেকুর। বেশ বাজে, এই কারণে মুলা তার অপছন্দের তালিকার শীর্ষে। বিরিয়ানীর পাগলদের আবার বিরিয়ানির ঢেকুর খুব পছন্দ করে। নিদ্রের মনে হয় এই ঢেকুর খুব পছন্দ করে। খাওয়ার পরও বিরিয়ানীর রেশ টা রয়ে যায়। তবে ঢেকুর সম্পর্কিত তার এই মতামত সঠিক কিনা তা জানা নেই তার। নিদ্রকে বা রশীদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করতে হবে। কাথা সেলাই করা বন্ধ করে অদ্রি বালিশে হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলো। রীতাকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?
রীতা হচ্ছে গল্পদারী মানুষ। এই ধরণের মানুষ গল্প করতে খুব পছন্দ করে। একটু সুযোগ পেলে রাজ্যের গল্প নিয়ে বসবে। এদের গল্পের ভাণ্ডার কখনও শূন্য হয়না। রীতা বলাটা ঠিক না অদ্রি নিজেকে শুধরানোর সুরে বলল। সে বয়সে অনেক বড়, মায়ের সমতুল্য। তাই তাকে রীতা খালা বা খালাম্মা বলাটাই ঠিক।
চায়ের কাপ নিয়ে খুব সাবধানে দোতলায় উঠে আসলেন রীতা।
দরজায় টোকা দিতেই অদ্রি বলল
– খোলা আছে।
চায়ের কাপ অদ্রির হাতে দিয়ে রীতা লিলির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। কী রান্না করতে হবে না জেনে তার মতো করে রান্না করলে লিলি বেশ ঝামেলা করবে।
টক ঢেকুর এখনও বন্ধ হয়নি। এই অবস্থায় চা খেলে সমস্যা বাড়বে? নাকি চায়ের স্বাদ আর টক ঢেকুর এর স্বাদ মিক্সড হয়ে নতুন কোনো স্বাদের ঢেকুর উঠবে?
বেশ ভাববার বিষয়!
সবকিছু ভুলে এরকম উদ্ভট চিন্তা করতেও শান্তি পাওয়া যায়। অন্ততপক্ষে তাজা ঘায়ের ব্যথা গুলোকে তখন ভুলে থাকা যায়।
নাজমুল সাহেব ছেলের রুমের দরজার সামনে ১৫ মিনিট যাবত দাঁড়িয়ে আছেন। দরজা অল্প একটু খোলা, সেই খোলা জায়গা দিয়ে নিদ্রকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ১৫ মিনিট ধরে ছেলে মোবাইল হাতে নিয়ে স্থির হয়ে বসেই আছে। শুধু নিশ্বাস আর চোখের পলক পরছে তাছাড়া আর কোনো মুভমেন্ট নেই। ১৬ মিনিটের মাথায় নাজমুল সাহেব নিদ্রের রুমে ঢুলে পরলো। নক না করেই। নিদ্র প্রায়ই লাফিয়ে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে মোবাইল বিছানার উপর করে রেখে দিয়ে বলল
– তুমি??
নাজমুল সাহেব ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখার উদ্দেশ্যে গলা ভারী করে বলল
– কেনো আমি তোমার রুমে আসতে পারিনা?
– না, বাবা পারো কিন্তু তুমি তো এই সময় মানে ইয়ে তুমি তো কখনও আসোনা। আর নক না করেই?
– নিজের ছেলের রুমেও কি নক করে আমাকে ঢুকতে হবে? আমি তোর রুমে যখন ইচ্ছা আসতে পারি এটা আমার অধিকার। আজকে থেকে আমি তোর রুমেই থাকবো। ওকে?
নিদ্র বলল
– থাকবা।
নাজমুল সাহেব চেয়ার টেনে হেলান দিয়ে বসে বলল
– মোবাইলে কী দেখছিলি?
নিদ্র ভাবেনি তাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে!
– আমি কিন্তু তোর রুমের বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখেছি। আমাকে খুলে বল।
– না বাবা তেমন কিছু না। ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলাম।
– তোকে বিষন্ন দেখছি? কী হয়েছে বলবি?
বুঝেছি আমার মতো হয়েছো।
নিদ্র মুচকি হাসি ছাড়া এই কথা বিপরীতে কী বলা যায় তার জানা নেই।
নাজমুল সাহেব পায়ের উপর পা রেখে নাচাতে নাচাতে বলল
– ছেলেদের বিষন্নতা ভোলার সবথেকে ভালো উপায় সিগারেটে টান দেয়া। নিকোটিনের ধোয়ায় মনের ধোয়াশা কেটে যায়। বাপ হয়ে ছেলেকে সিগারেট খেতে বলছি বলে আমাকে খারাপ ভাবিস না। আসলে তুই তো খোলামেলা ভাবে বলবিনা। তাহলে নির্দিষ্ট করে সমাধান দিতাম। মন খুলে তুই বলবিও না কারণ আমার ফটোকপি তুই।
তোর মা আমাকে রেখে চলে গেলো তখনও আমি আমার মনের কষ্ট, বেদনা সব লুকিয়ে রেখেছিলাম। কাউকে বলিনি। সব মানুষ স্বার্থপর, মন দিয়ে কষ্টের কথা শুনবে। পরে কোনো কারণে ঝগড়া লাগলে পিছনের কথা বলে খোটা দিবেই।
এই দুনিয়াতে কেউই কারো না। দ্যাখ না আমি শেষ মেশ একা।
নিদ্র কিছু একটা বলতে যাবে তখন নাজমুল সাহেব থামিয়ে দিয়ে বলল
– তুই এখন বলবি তুই আছিস সাথে? না রে বাপ তুইও থাকবি না। বিয়ে করবি বউকে পাবি। তারপর পোলাপান হবে। এই বুড়ো বাপকে একসময় ভুলে যাবি।
শোন বাপ, মন খারাপের কারণ টাকে ধ্বংস করে দে। দেখবি ভালো থাকতে পারবি।
তোর মাকে ছাড়া দ্যাখ আমি কিন্তু ভালোই আছি। তোর দাদী আসমা খাতুন বা বেগম তার স্বামীকে মানে আমার বাপকে ছাড়া থাকতেই পারতো না। দুই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এতো মিল মহব্বত ভাবত্রি অবাক লাগতো। বাবা হঠাৎ করে স্ট্রোক করে মারা গেলেন। মা কিন্তু এখন ভালোই আছেন। মানুষ আসলে ভাবে যে সে ভালো থাকতে পারবেনা। সময় কাটবে কীভাবে? কিন্তু বাস্তবতা হলো শেষ মেশ ভালো থাকতে পারে। শুধু ভালো না বেশ ভালো।
কী বলতে চাচ্ছি তুমি বুঝতে পেরেছো? My dear son?
নিদ্র বলল
– ভাবতে হবে।
নাজমুল সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে বলল
– ওকে ভাবতে থাকো। উত্তর টা দিও। আর আপনার দাদীকে একটু বুঝাবেন যে, এই বয়সে এরকম ছেলেমি যেন বাদ দেয়।
আর ভালো লাগেনা।
নাজমুল সাহেব খুব দ্রুত তার রুমের দিকে পা বাড়ালো। অনেকক্ষণ যাবত তার বিছানায় শুয়ে মান্নাদের গান শোনা হয়নি।
একটু শান্তি না খুঁজে উপায় নেই, বাঁচতে হবে তাকে অনেকদিন, অনেক অনেক দিন।
এই পৃথিবীতে কেইবা মরতে চায়।
চলবে…….!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ২.

0
মন ফড়িং ♥ ২.
মন ফড়িং ♥ ২.
মন ফড়িং ♥
২.
সাদামাটা অদ্রির চোখের নেশা তাকে অনেক আগেই পেয়েছে। নেশাগ্রস্ত মন নেশায় ডুব দেয়ার ইচ্ছে আজও পূর্ণ হয়নি তার। প্রায় ৬-৭ মাস কেটে গেছে সে ফিরেছে দেশ থেকে। একটা মূহুর্তে সে অদ্রিকে স্মরণ না করে থাকতে পারেনি। কোনো না কোনোভাবেই মনে পড়বে। এমনও হয়েছে ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়েছে। ঘুমে’র ঘোরেও সেই সাদামাটা অদ্রির অস্পষ্ট ছবি।
নিদ্রের মাঝেমাঝেই মনে হয়, ফিরে গিয়ে তাকে চুরি করে নিয়ে আসতে। পরক্ষণেই মনে হয়, সে কি আসবে তার সাথে?
চিঠির অর্থ তো আরেকটিও হতে পারে। এমনও হতে পারে তার উপকারের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্বরূপ চিঠিটা পাঠিয়েছে।
এমনও হতে পারে চিঠিটা অদ্রির নাও হতে পারে।
এতো অস্থিরতা যে তার মাঝে জন্ম নিবে জানা ছিলোনা। জানা থাকলে সেই মানুষকে না নিয়ে ফিরতেন না।
বাবা তাকে কোনোভাবেই বাংলাদেশে যেতে দিবেন না। তারও চালচলনে পরিবর্তন আসছে। নিদ্রের কেনো যেন মনে হচ্ছে আশেপাশের সবাই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি সেও পরিবর্তন হচ্ছে। আগে কয়েকটা ডলার বেশির জন্য বেশি সময় কাজ করতো৷ দেশ থেকে ফেরার পর সেই সত্ত্বাটা হারিয়ে গেছে। আজকেও সে বেশ মোটা ডলারের কাজ পেয়েছিলো।  কাজটা ছিলো নতুন দম্পতির ফ্ল্যাট ডেকোরেশান করে দেয়া। ডেকোরেশানও না ফুল, নকশা,রোমান্টিক মূহুর্তের ছবি দিয়ে, আসবাপত্র দিয়ে সাজিয়ে দেয়া।
অন্য কোনো কাজ হলে সে করতো কিন্তু নতুন দম্পতির রোমান্টিক মূহুর্তের ছবি….
রোমান্টিক মূহুর্ত তার আর অদ্রির মাঝে আসছিলো একবার  তাও খুব অল্প সময়ের!
অদ্রির কাছে না যাওয়ার পেছনে আরও একটি কারণ আছে। নিদ্রের মনে হয় অদ্রি তাকে পছন্দই করে না। মনের টান তো দূরে থাক। হয়তোবা তার উপস্থিতি বিরক্ত জাগায় তার মনে। অদ্রির মনে তার স্বামীর স্থান এখনও আছে। সেই স্থানে অন্য কাউকে সে ঠাই দিবে না। আবার মনে হয় চিঠির অর্থ হচ্ছে, তীব্র কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা। যেমনটা তার আছে। মরুভূমিতে হেঁটে চলা পথিকের পানির প্রতি যে তীব্র তৃষ্ণা জাগে, ঠিক তার থেকেও বেশি।
তার এই অবস্থার কথা শুনে পিটার হাসতে হাসতে বলেছিলো
– নিড্র ফ্রেন্ড, তুমি শেষ।
হ্যাঁ আমি শেষ, তবে আমার শুরুটা করতে হবে তার কাছে গিয়ে যার কাছে আমার শেষ টা হয়েছে।
হারিয়ে ফেলার ভয়টা ঝেড়ে ফেলতে হবে তাছাড়া নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়বে।
নিদ্র চেয়ারে হেলান দিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো
অদ্রি…. অদ্রি….. অদ্রি….
লিলি বসার ঘরে বেশ আয়েস করে বসে বসে মুড়ি খাচ্ছিলো। রান্নাঘরের চিন্তা এখন আর তার করার প্রয়োজন হয়না।আপামনি রান্নার জন্য লোক রেখেছেন। একজন মধ্যবয়সী মহিলা। বয়স কতো হবে? ৪২ – ৪৭? যাইহোক,তার নাম রীতা এবং তিনি সাজগোজে করতে পছন্দ করেন। রান্নাবান্নার কাজ বাদে যেটুকু সময় থাকে সেটুকু সময় তিনি রূপচর্চায় ব্যস্ত থাকেন।আপামনি তাকে কিছুই বলেন না। রীতার রান্না তেমন একটা ভালো না। তবে চা দারুণ বানান। একমাত্র চায়ের কারণেই তাকে রাখা। অদ্রি অবশ্য বলেনি, লিলি নিজেই বুঝতে পেরেছে। রঙিন ভাইজান যে চা পছন্দ করে।
মানুষটা সেই মজার মানুষ ছিলেন। কতো হাসি ঠাট্টা করতেন আর অদ্রি আপা পুরাই নিরামিষ।
রীতা কী রান্না করবে? প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য অদ্রির রুমের দিকে যাচ্ছিলো। যাওয়ার সময় খেয়াল করলেন, লিলি শুধু মুড়ি চাবাচ্ছে। লিলিকে জিজ্ঞেস করলেন
– একটু ডাল এনে দিবো?
লিলি বলল
– না।
রীতা কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে তার কাজে পা বাড়ালেন। লিলি মনে মনে বলল
– যে বাজে ডাল রান্না করে মুখেই নেয়া যায়না।
অদ্রি বিছানায় বসে কাথা শেলাই করছিলো। দরজায় টোকা পরাতে জিজ্ঞেস করল
– কে?
রীতা বললেন
– আমি ম্যাডাম।
– দরজা খোলা আছে।
রীতা ভেতরে এসে বললেন
– আজ কী রান্না করবো দুপুরের জন্য?
অদ্রি কাথায় ফুল তুলতে তুলতে বলল
– লিলিকে জিজ্ঞেস করো। খাবার নিয়ে ও বেশ খুতখুতে স্বভাবের। আমার তো কিছু একটা হলেও চলবে। কিন্তু ওর তো…
– আমার রান্না ওর পছন্দ না।
অদ্রি একটু হেসে বলল
– একজন রাঁধুনি আরেক রাঁধুনির রান্না কখনোই পছন্দ করেনা।
বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিলের দিকে তাকিয়ে রীতা দেখলো, সকালের চা ওভাবেই পরে আছে। ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি। ম্যাডাম প্রায়ই এমন করেন।
রীতা বললেন
– ম্যাডাম গরম এক কাপ চা দিয়ে যাবো?
– হ্যাঁ, যান।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে রীতা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো।
ম্যাডাম এমন কেনো? এর উত্তর তিনি আজও পান নি। লিলিকে জিজ্ঞেস করলে তো কোনো তথ্য জানাই যায়না উল্টো ঝামেলার সৃষ্টি করে।
নাজমুল সাহেব তার মায়ের বিছানার পাশে টুল নিয়ে বসে আছেন। আর তার মা আসমা উল্টো দিকে মুখ দিয়ে আছেন। সে তার ছেলের মুখই দেখতে চান না।
নাজমুল সাহেব বললেন
– আম্মা, আমার দিকে তাকান একটু।
– আমাকে আম্মা বলবিনা। আমি তোর আম্মা না।
– আম্মা প্লিজ প্লিজ
– এই স্টুপিড ইংরেজি ঝাড়িস কেনো কথায় কথায়?
নাজমুল সাহেব মন খারাপ করে বললেন
– আপনি নিজেও তো কেবল ইংলিশ বললেন।
– দেখ আমার সাথে তর্ক করতে আসবিনা।
– আমি সত্যিটা জানালাম।
– না তুই এখনো তর্ক করছিস।
দুই হাত উপরে তুলে মোনাজাতের মতো করে বলল
– ও নাজমুলের বাপ, দেখছো তোমার ছেলে আমার লগে তর্ক করে। আমারই পেটের ছাও আমারে কয় ম্যাও। ও নাজমুলের বাপ।
নাজমুল সাহেব অধৈর্য্য হয়ে বললেন
– আম্মা আপনি এসব কী শুরু করেছেন?
– দেখছো নাজমুলের বাপ, পোলা আমাকে ঝাড়িও দেয়।
নাজমুল সাহেব বিরক্ত হয়ে ওঠে গেলেন।
নিদ্রের কাছে যাওয়া দরকার। এই ছেলেকে দিয়ে আম্মাকে পটাতে হবে।
আচ্ছা একজন সাইকোর ডাক্তার দেখালে কেমন হয়? আম্মার মাথার ভূত তাড়াবে। নাকি তার আম্মার ছেলেমিটাকে মেনে নিবে?
তার চেনা একজন সাইকোর ডাক্তার আছেন কিন্তু আম্মাকে তার কাছে নিয়ে গেলে আম্মা তাকে ঝাটা পেটা করবে। আর তার আবদার পূরণ করতে পারলে আম্মা আনন্দিত হবেন।
কী করবেন? টস করবেন? না, কিন্তু টস করাটা খুব বাজে। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আসলেও তাকে মানতে হবে।
নিদ্রকেই জিজ্ঞেস করা যাক। ছেলেকে এই সময়ে বিরক্ত করবে? নাকি একটু একা থাকতে দিবে? ধুর ছোটোবেলা থেকেই তো সে একাই কাটিয়েছে বেশি সময়। এখন না হয় বাপ তারে একটু জ্বালাক….!
অদ্রি বিরবির করে বলছে
– আচ্ছা নিদ্র, বর্ষাও তো চলে যাচ্ছে আপনি আসবেন না? অপেক্ষার প্রহর গুনে শেষ করতে পারছিনা কিন্তু সময় তো শেষ হয়ে যাচ্ছে…. নিদ্র….
চলবে……!
© Maria Kabir

মন ফড়িং ♥ ১

0
মন ফড়িং ♥ ১
মন ফড়িং ♥ ১
মন ফড়িং ♥
১.
সকাল থেকেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।এই মনে হয় থেমে যাবে কিন্তু থামেনা।এরকম শেষ হবে হবে করেও শেষ হচ্ছেনা খেলাটা অদ্রির কাছে কেমন খাপছাড়া লাগে। প্রকৃতির এই খেলা যেন প্রতিনিয়তই ঘটছে। তার জীবন তার হিসেব মতো চলছে না। আর কবেই বা তার হিসেব মতো চলেছে?
অদ্রির হাসি পেলো নিজের উপরই। আজকাল প্রকৃতির প্রত্যেকটি খেলা তার মনে দাগ কাটে।
এইযে হঠাৎ রোদ ওঠে, আবার হঠাৎ কোথা থেকে কালো মেঘ গুলো উড়ে এসে ভিড় জমায় রোদেলা আকাশে। আবার খুব গরম সকাল থেকে কিন্তু বিকালের দিকে হুট করে ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো।
কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই কুয়াশা উধাও। এটাই প্রকৃতি এবং এরকমই মানুষের জীবন।
ক্ষণে ক্ষণে ক্ষয়ে পরে সময় শুধুমাত্র মানুষ গুলোর রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো ক্ষয়ে যায়না।
অদ্রির এই বৃষ্টিতে বড়সড় ঘুম দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তার ভেতরের কেউ একজন বলছে জানালার ধারটাতে দাঁড়িয়ে থাকতে। হয়তোবা হুট করে সেই মানুষটা এসে দাঁড়াবে বাগান টাতে। জানালার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলবে
– চলুন আজ ভিজি একসাথে…
অদ্রি এই আবদার অপূর্ণ রাখতে পারবেনা। লোক লজ্জা তখন আর তাকে ছুঁয়ে যাবেনা।
শত বছরের অপেক্ষার পর সেই মানুষের ভেজা হাতে শুকনো হাতটি লুকাতে পারবে, সেটা কি কেউ জানে?
কেউ কি জানে, সেই অনুভূতি কেমন?
কেউ কি জানতে পারবে, অদ্রি কতটা সুখে জড়িয়েছে?
না, সেই কেউ শুধুই একজন বিধবার নতুন করে প্রেমে পড়ার রঙিন গল্প আটবে।
বিধবার চরিত্রের ওপর কালোর ছাপ দেয়ার প্রচেষ্টায় থাকবে।
সেই কেউই কখনও তাকে নতুন সুখে সুখী হতে দেখতে চাইবেনা।
থাকুক তাদের কথা, তাতে কী?
নিজের ভেতরে পুড়ে মরার থেকে, একবারেই মরা ভালো।
অদ্রির রুমের দরজা খোলা ছিলো। লিলি তাড়াহুড়ো করে ঢুকে বলল
– আপা, দেখোতো কোন নামটা সুন্দর?
অদ্রি পেছন ফিরে দেখলো লিলি  ডান হাতে একটা কাগজ তার দিকে এগিয়ে দিয়েছে।
অদ্রি কাগজ টা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দেখে বুঝতে পারলো। মেয়েদের নাম লেখা, বেশ মডার্ন নাম। লিলি আজকাল তার নাম পরিবর্তন করার চেষ্টায় আছে। কয়েক দিন পরপর কোথা থেকে যেন নামের লিস্ট নিয়ে আসে। সারাদিন সেই নাম বাছাই নিয়ে হইহল্লা। তারপর কোনো নাম পছন্দ না হওয়ায় নামের লিস্ট পাশের ডোবায় ফেলে দেয়।
প্রতিবারের মতো অদ্রি নাম গুলো মনযোগ দিয়ে পড়ে একটা নাম বাছাই করে বলল
– তুই লামিয়া রাখতে পারিস।
লিলি কী যেন একটা ভেবে বলল
– না, বেশ বড় নাম। এমন নাম হবে যা ২ সেকেন্ডের মধ্যে উচ্চারণ করা যাবে।
অদ্রি কাগজ টা ফেরত দিয়ে বলল
– তুই নিজেই পছন্দ কর।
নাজমুল সাহেব বেশ চিন্তিত। তার মা কয়েকদিন যাবত কিছুই খাচ্ছেন না। তবে এটা তার সামনে বলছেন। বাস্তবে সে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার খাচ্ছেন। তারপরও তার মা বিষন্নতায় ভুগছেন। মাকে সে এই জীবনে অনেকভাবেই কষ্ট দিয়েছেন। নিদ্রকে সে প্রায় আধা ঘণ্টা হয়েছে ডেকে পাঠিয়েছেন কিন্তু এখনও তার খোঁজ নেই।
নিদ্র কফির মগ হাতে নিয়েই বাবার সামনে এসে দাঁড়ালো। নিদ্র কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল
– বাবা আমাকে ডেকেছো?
নাজমুল সাহেব বললেন
– হ্যাঁ, আম্মার খবর কী?
– আগের মতোই। সে তার বিষন্নতা কাটাবেন না।
ভ্রুকুঞ্চন করে নাজমুল সাহেব বললেন
– এই বয়সেও কেউ বাচ্চাদের মতো আবদার করে?
নিদ্র বলল
– age is just a number বাবা।
ধমকের সুরে নাজমুল সাহেব বললেন
– রাখো তোমার নীতি বাক্য। দাদীর সাথে সেও যেন রুখে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের কোন এক ভুইতা গ্রামে তার বাপের বাড়ি, সেখানে যাবেন। তিনি জানেন ভালোভাবেই যে, ওই পরিবার থেকে তাকে ত্যাজ্য করা হয়েছে। তারপরও সে এরকম আবদার কেনো করলেন?
কথাটা মনে পড়াতে নাজমুল সাহেবের নিজেরই উপর রাগ হতে লাগলো। একমাত্র তার কারণেই তার মাকে ত্যাজ্য করা হয়েছে। খ্রিস্টান মেয়ে বিয়ে করেছিলেন। সেই এক ভুলে তার জীবন টা আজ….. থাক।
বুড়ো মায়ের আবদার টা তার না মেনে উপায় নেই।
নিদ্র তার দাদীর পাশে বসে বলল
– দাদী, আপনি কেমন আছেন?
নিদ্রের দাদী আসমা জামান বিরক্ত হয়ে বললেন
– খুব আয়েসে আছি। ফরেইনার বউ আমার সুন্দর যুবক রেখে গেছেন। তার জ্বালায় মরছি।
নিদ্র হাসতে হাসতে বলল
– কেনো আমি আবার কী করলাম?
নিদ্রের দাদী নিদ্রের গাল ধরে টেনে বলল
– পীরিতের জ্বালা উঠেছে তার।
– আহা! এক মাত্র নাতীর জন্য এটুকু অভিনয় তো করতেই পারো।
– আমার কইলজার টুকরা ছেলের সাথে কথা না বলে থাকা কতো কষ্ট তুই জানিস?
– জানবো ক্যামনে? আমি তো কোনোদিন কোনোভাবেই মা হতে পারবো না।
নিদ্র হা হা হা করে হেসে উঠলো।
আসমা জামান আরো বেশি বিরক্ত হয়ে বললেন
– বাবা তো হবি?
– যদি তাহাকে পাই।
– কেনো না পেলে দেবদাস হবি?
– না, আমি দেবদাসের মতো সেই বিশাল ভুলটা ভুলেও করবোনা।
কথাটা বলে নিদ্র দাদীর রুম থেকে নিজের রুমে দিকে পা বাড়ালো। হঠাৎ করেই তার মন খারাপ হয়ে গেলো। কারণ হয়তোবা সেই বিধবা।
নাজমুল সাহেব কী যেন ভাবছিলেন, সেই ভাবনার মধ্যে উদ্ভট ভাবনা উঁকি দিলো। নিদ্র আজকাল তাকে তুমি করে বলে। আগে তো আপনি করে বলতো। নাকি আগেও তুমি বলতো এখনও তুমি বলে। নাকি আগেই তুমি বলতো এখন আপনি বলে। তুমি না আপনি সম্বোধন করে বলে? কোনটা? সমস্যার সমাধান তার চাই। কিন্তু  কিছুতেই মনে করতে পারছেন না।
নিদ্রকে কি সে ডেকে জিজ্ঞেস করবে? নাকি সে নিজেই নিদ্রের রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে?
কোনটা? নাকি সে টস করবে? নাকি করবেনা?
তার মন আর মাথায় আজকাল শুধু হ্যাঁ, না এর প্রশ্নের প্যাচ পাকে।
এই প্যাচ আর কোনোভাবেই খুলতে সে পারেনা। একটা সময় বিরক্ত হয়ে ঘুমের মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে থাকেন।
এই একটা সমাধান।
নিদ্রের মোবাইলের স্ক্রিনে সাদামাটা অদ্রির ছবিটা স্থির হয়ে আছে। আসলে স্থির ছবি তো স্থিরই থাকবে।
তার খুব ভয় হয় অদ্রির কাছে আসতে। দূর থেকে কেউ বলে, হারিয়ে ফেলবি খুব কাছে তার নিশ্বাসে নিশ্বাস জমাতে গিয়ে।
হারিয়ে ফেলবি, খুব কাছে থেকে পেয়েও!
চলবে……..!
© Maria Kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

পরদিন মলিন মুখে বাবা আমার রুমে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। বিছানা থেকে ওঠে বসলাম আমি। উৎকন্ঠার সহিত প্রশ্ন করলাম, বাবা কিছু বলবে? পাশে বসে বাবা। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বলেন, তোর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে নরসিংদী। তৈরি হো। আমাদের এখনই একবার নরসিংদী যেতে হবে। বাবার কথা শুনে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে যায়। ওলট-পালট হয়ে যায় সবকিছু। ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। সেটা রেখে দ্রুত ওঠে দাঁড়াই। বাবা তুমি কি বলছো এসব? মা অসুস্থ? আমি তো একটু আগেও মায়ের সাথে কথা বলেছি। তখন তো…. ‘শুভ্র! কথা না বাড়িয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নে। আমি আসছি।’ আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাবা রুম থেকে বের হয়ে যায়।

ফ্রেশ হয়ে দ্রুত ছুটলাম আলমারির দিকে। হাতের নাগালে পেলাম একটা পাঞ্জাবি। পরে নিলাম সেটাই। বাবা আমায় দেখে বিষম খায়। টিপ্পনী কাটে। ‘বাব্বাহ! একেবারে দেখছি নতুন জামাই সেজেছে আমার বাবা’টা!’
মেজাজ এমনিতেই চরমে। ঝাঁঝালো কন্ঠে জবাব দিলাম, বাবা! এটাও তোমার টিপ্পনী কাটার সময়? মা না অসুস্থ…. অসুস্থ….. ক্ষাণেক থেমে বাবা বলল, চল, চল। ওদেরকে নিয়ে আসি। বাবার পিছুপিছু বাবাকে অনুসরণ করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। কিন্তু একি! চাচা-চাচী, ফুপ্পি, দাদা আর কাজিনরা কি করছে এখানে? আমার কিছু বুঝে ওঠার আগেই লিমা, সুমন, রুবেল, আতিক চেপে বসলো আমার পাশে, আমার গাড়িতে। মিলিত স্বরে ওদের উচ্ছ্বাস, আমরাও যাচ্ছি প্রাণের নরসিংদী প্রাণের মানুষদের আনতে। ভেতরে ছ্যাৎ করে ওঠে আমার। তবে কি মা খুব বেশীই অসুস্থ? হে আল্লাহ!

একি হলো? কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম গাড়িতে বসেই।





গাড়ি স্টার্ট দেয় আতিক। এদিকে লিমা, সুমন, রুবেল আমায় বুঝাতে ব্যর্থ। সন্ধ্যার দিকে ও বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলাম আমরা৷ কিন্তু একি!

এ বাড়িতে এত সাজসাজ আয়োজন কেন? অবশেষে মা’কে দেখেই কলিজা জুড়ালো আমার৷ কাজিনরা আমার মা’কে এমন আনন্দের সহিত এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেন ওরা অসুস্থ রোগী দেখতে নন, কোনো উৎসবে বেড়াতে এসেছে। চোখের জল মুছে মায়ের কাছে গেলাম আমি। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলাম।

কেমন আছো মা? কপালে চুমুর পরশ এঁকে দিয়ে হাসোজ্জল মুখে জানান দেয় মা, একটু আগেও ভালো ছিলাম না বাবা। আলহামদুলিল্লাহ! এখন খুব ভালো আছি। তোর বাবা আসেনি? আর ভাইয়া-ভাবি ওনারা আসেনি? পেছন থেকে বাবার জবাব- এইতো! আমরা এখানে, শুভ্র’র মা৷ পরে মায়ের থেকে জানতে পারলাম, বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। ওদের সেই মানসিক অবস্থা থেকে উত্তরণে সাহায্য করে আমার মা৷ মা তাঁর উপস্থিত বুদ্ধির জুড়ে ওনার পরিচিত এক যুবকের সহিত লাবন্যর অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করে রাতেই৷ আমাদের সে বিয়ে খাওয়ার জন্যই এভাবে নিয়ে আসা। মায়ের প্রতি প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল আমার। মানলাম স্বাভাবিক ভাবে বললে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে আসতে চাইতাম না৷ তাই বলে এভাবে…..! বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সাথে আমার মা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ওদের সাথে এমনভাবে দৌঁড়ে দৌঁড়ে কাজ করছে যেন তিনি এ বাড়ির’ই পুরনো সদস্য। লক্ষ্য করলাম, বোন আমার লাবণ্যর কাজিনদের সাথে হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেছে। আরো লক্ষ্যনীয় যে, ওদের সমস্ত আনন্দ আর উল্লাস সবই যেন আমাকে ঘিরে। কতেক মেয়েরা তো আড়চোখে আমাকে দেখছে আর হাসছে। আমার কাজিনদের অবস্থা তো আরো খারাপ৷ হাসতে হাসতে লাবণ্যর কাজিনদের ওপর পড়ে যাওয়ার অবস্থা। বাড়ির বয়স্ক মহিলাদের খাতিরের অন্ত নেই আমাকে ঘিরে। লাবণ্যদের সদ্য নির্মিত বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। কোথা থেকে যেন একটা মহিলা এসে আমার গালে হলুদ মাখিয়ে দৌঁড় দেয়। মহিলাকে অনুসরণ করে পেছনের দিকে তাকাতেই আমার চোখ স্থির হয়ে যায় একদিকে। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলি নিজের বোধ শক্তিকে…… চলবে…

প্রত্যাখান_পর্ব(০৮)

0

প্রত্যাখান_পর্ব(০৮)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

লাবণ্যর সাথে আমার সমস্ত বাঁধন ছিন্ন হয়ে যায়। ভেবেছিলাম ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ! ঘটনার ওপর ঘটনা থাকে৷ থাকে নাটকের ওপর নাটকীয়তা। লাবণ্যর বিয়ে ঠিক হয় জনৈক ভদ্রলোক তথা ঐ দুই সন্তানের জনকের সাথে। বিয়ের দাওয়াত দিতে আসে স্বয়ং লাবণ্যর বাবা। লাবণ্যকে ভিষণ ভালোবাসতো মা। তারউপর মায়ের দূরসম্পর্কের বোন ছিলো লাবণ্যর মা। আর সে টানেই হয়তো বা বিয়ের দাওয়াতটা সানন্দে গ্রহন করে নেন তিনি। লাবণ্যকে পুত্রবধূ করে আনার প্রবল ইচ্ছেটা ভেতরে ধামাচাপা দিয়ে আশা বোনটিকে সাথে নিয়ে নির্ধারিত দিনের দু’দিন আগেই মা নরসিংদী পৌঁছে। ঘনিয়ে আসে কাঙ্খিত দিন। নির্ধারিত দিনের চেয়ে একটু দেরীতে বরপক্ষ আসে। যেখানে মেহমান আসার কথা ছিল একশো, সেখানে হাতা গুনা মাত্র ১৫,২০জন লোক নিয়ে ওরা হাজির হয়। পাত্রের মুখখানা অমাবস্যার অন্ধকারের ন্যায় কালো ছিল। দেখে মনে হচ্ছিলো, কেউ যেন তাকে বন্দুকের মুখে বিয়ে পরানোর জন্য নিয়ে এসেছে। বিয়ে পরানোর তাড়াটা ওদের এতটাই জরুরী ছিলো যে, প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে, মুখে কিছু না দিয়ে বিয়ে পরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে ওরা। এ নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয় এলাকার মানুষজনদের মধ্যে। সেটা দেখে স্বয়ং লাবণ্যর চাচা ঘোষনা দেন, আপনারা আগে কিছু মুখে দিবেন তারপর বিয়ে। ওরা সে বুঝ মানতে নারাজ। ভাবখানা এমন যেন পারলে মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। কনে পক্ষের মেয়েদের তীব্র প্রতিবাদ, আমাদের মেয়েদের সাজ এখনো কমপ্লিট হয়নি। আর সে সাজ কমপ্লিট হওয়ার আগে কোন বিয়ে নয়। দাঁতে দাঁত চেপে মিনিট ত্রিশেক অপেক্ষা করে বরপক্ষ। রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে বসে থাকা স্বয়ং বর মশাই এবার ওঠে দাঁড়ায় চরম উত্তেজিত অবস্থায়। সু্যোগের আশায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা লাবণ্যর ভাবি পর্দার আড়াল থেকে মুখ বের করে জানান দেয়, কোথায় এরকম নয়তো ওনারা ফেসে যাচ্ছেন কোথাও? হেনার কথায় গর্জে ওঠে বর। উত্তেজিত গলায় জানায়, হ্যাঁ, ফেসে গেছি আমরা। প্রথম বিয়ে ছাড়াও আমি আরো একটা বিয়ে করেছিলাম। ডিভোর্স হয়নি আমাদের। ঐ পক্ষেরও ২মেয়ে আছে আমার। বিয়ে করার আগে প্রথমা স্ত্রীর যে অনুমতিটা নিতে হয় সেটা নেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি আমি। আমার নামে তাই থানায় মামলা দায়ের করেছে আমার স্ত্রী। বিষয়টা এখানে আসার মিনিট ত্রিশেক আগেই আমরা পাই। তা সত্ত্বেও আপনাদের মেয়ের কথা ভেবে আমি বিয়ে করতে এসেছি। তবে আর নয়৷ এই মুহূর্তে আমার নিজের জীবন বাঁচানোটাই শ্রেয়। কেননা, আমরা খবর পেয়েছি যেকোন মুহূর্তে আইনের লোক এখানে চলে আসতে পারে। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে যায় সবাই। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায় আগত মুরুব্বীয়ান। হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায় এলাকায়। অফিসে বসে বোর হচ্ছিলাম আমি। ভালো লাগছিলো না একদম৷ অস্থির অস্থির লাগছিলো ভেতরে। কল দিলাম বোন আশাকে। জানি না বোন আমার সে কল সজ্ঞানে রিসিভ করেছে কি না। করলেও কথা কেন বলছিলো না। লাউডস্পিকার বাড়াতে গিয়ে টের পাই ওপাশে বিশাল হট্টগোল চলছে। মিনিট খানেকের জন্য সাক্ষী হই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির। পরে কলটা কেটে যায়। এদিকে অস্থিরতায় আমার পুরো শরীর ঘামছিল। কলের ওপর কল দিতে থাকি। ঘন্টা খানেক পর বোন আমার কল রিসিভ করে জানায়, লাবণ্যর বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। বিয়ের আসর থেকে পুলিশ পাত্র এবং তার তিন বাবা চাচাকে সাথে ঐ জনৈকা ভদ্রমহিলা তথা ফুপ্পিকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। কিছু সময়ের ব্যাপারে প্রাণচঞ্চল বাড়িটা নিরব, নিস্তব্ধ পরিবেশে রূপ নেয়। লাবণ্যর মা ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছিল। অসুস্থ ভাই আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবা করে স্ট্রোক। চলবে….

প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

কৌতূহলী মন বারংবার জানতে চাচ্ছিলো ভদ্রমহিলা কোন সে বিয়ের ইঙ্গিত দিলো? সত্যিই কি তাহলে আগে লাবণ্যর বিয়ে হয়েছিলো? কিংবা বিয়েটা যদি হয়েও থাকে তাহলে সেটা তো আমাদের জানার কথা। বিশেষ করে আমার মায়ের তো এ বিষয়ে জানাটা জরুরী ছিল। তবে কি ওরা বিষয়টাকে ধামাচাপা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলো? উফ, নাহ! আর ভাবতে পারছি না৷ এরকমভাবে ওরা আমাদের ঠকাতে চাইবে এটা যে কল্পনারও অতীত। মনের অদম্য কৌতূহল মেটাতে লাবণ্যদের সদ্য নির্মিত রুমটাতে ঢুকলাম। লাবণ্য তখন চুপটি করে জানালার গ্রিল ধরে বাহিরের পানে তাকিয়ে। আমার আওয়াজে ওর সে দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটে৷ পিছু ফিরে তাকায় লাবণ্য। অতঃপর পুনঃবার দৃষ্টি নিয়ে যায় বাহিরে। নিঃশব্দে লাবন্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। প্রশ্নটা করার কথা ভাবতেই ভেতরে কম্পনের সৃষ্টি হয় আমার। তথাপি মিটিয়েই ফেললাম অদম্য সে কৌতূহল। প্রশ্ন করলাম, লাবণ্য তুমি বিবাহিতা? লাবণ্যর ছোট্ট জবাব, হ্যাঁ! ডিভোর্সি। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম৷ উলট-পালট হয়ে যায় ভেতরে। দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে। চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করি। চোখ থেকে অনবরত অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে থাকে নিচে। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এলে জীবনের রঙ জলের মতোই হয় বুঝি? জানি না এরপর লাবণ্য আর কোন কথা বলেছিলো কি না! আর বললেও ঠিক কি বলেছিলো?! শুধু এটুকু জানি- ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে আমি তখনই সেখান থেকে বেরিয়ে আসি। লাবণ্যর বাবা-মা, ভাই-ভাবির থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় নিজ বাসায় চলে আসি। রাতে ঘুম হচ্ছিলো না। অচেনা এক কষ্ট ভেতরটাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো। আমি সইতেও পারছিলাম না, কারো সাথে শেয়ার করতেও পারছিলাম না। সেদিনের পর থেকে কেন জানি না নিজেকে, নিজের অনুভূতিগুলোকে অসুস্থ মনে হতে লাগলো। ঘৃণা হচ্ছিলো, বড্ড ঘৃণা হচ্ছিলো নিজের প্রতি। প্রতিবারই মানুষ চিনতে ভুল করি আমি। মিতুর থেকে ঠক-প্রবঞ্চনায় কোন অংশে কম ছিল না লাবণ্য। বরং একটু বেশীই এগিয়ে ছিলো সে। এমনভাবে কেউ কাউকে ঠকাতে পারে সেটা লাবণ্যর সাথে পরিচয় না হলে আমি বোধ হয় জানতেই পারতাম না। দিন দিন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। প্রথম প্রেমের দুঃখজনক পরিণতির পরও ভালোবেসেছিলাম লাবণ্যকে। কষ্ট হচ্ছিল যার মায়ায় জড়িয়ে নিজেকে পুনঃবার গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলাম সেই লাবণ্য আমায় চরমভাবে ফাঁকি দিলো! হে বিধাতা! বলে দাও তুমি। আমি কাকে বিশ্বাস করবো? চার দেয়ালের ভেতরের ঐ চিৎকার আমার কাছেই ফিরে আসে প্রতিধ্বনিত হয়ে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছিলো। এরকমই মুহূর্তে এক বিকেলে কল করে লাবণ্য। নাম্বারটা খেয়াল না করেই রিসিভ করি কল। ওপাশ থেকে ভেসে আসে সুমিষ্ট কন্ঠস্বর, আসসালামু আলাইকুম। শরীরে আগুন ধরে যায় আমার। প্রচন্ড এক অভিমানে সালাম না দিয়েই কলটা কেটে দেই। শুরু হয় লাবণ্যর একের পর এক কল দেয়া৷ এক সন্ধ্যায় বিরক্ত হয়ে লাবণ্যর কলটা রিসিভ করেই বসি। সালাম দেয় লাবণ্য। জবাব না দিয়ে অনর্গল কথা বলা শুরু করি। এক নিশ্বাসে অনেকগুলো তিক্ত কথা শুনিয়ে দেই লাবণ্যকে। কথাগুলো শুনার পরও ফোনের ওপাশে মিনিট পাঁচেক চুপ করে ছিলো লাবণ্য। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কলটা কেটে দেয়। চলবে…

প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

লাবণ্যদের পরিবারে লাবণ্যর বাবা ছাড়াও ছিল ওর একমাত্র ভাই লাবিব। বয়সে লাবিব লাবণ্যর থেকে বছর সাতেকের বড়। একটা সময় এই লাবিবই ছিল লাবণ্যদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বছর চারেক আগে হুট করে লাবিব পঙ্গু হয়ে যায়। সেই থেকে সে বিছানায় পড়ে। লাবণ্যর বাবার অনুরোধে আমাকে তাই সেদিন থেকে যেতে হলো। বাজার সওদা থেকে শুরু করে পরদিন পাত্রপক্ষের সামনে খাবার উপস্থাপন। সমস্তই আমাকে করতে হয়েছে। অবশ্য আমাকে হাতে হাতে সাহায্য করার জন্য পাশে ছিল লাবণ্যর সমবয়সী ২কাজিন। পরদিন যথাসময়ে লাবণ্যর ডাক পড়ল। অতিকায় সাধারণ বেশভূষায় লাবণ্য হাজির হয় পাত্রপক্ষের সামনে। ঘোমটার আড়ালের ঐ মায়াবী মুখটা দেখে জানি না কেন সেদিন আমার ভেতরটা কেঁপে ওঠেছিল। নামাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করে, হেঁটে হাঁটিয়ে বিভিন্ন কায়দায় মুরুব্বীরা লাবণ্যকে দেখে নেয়। লাবণ্যও কিরকম বাধ্য বালিকার ন্যায় নিরবে ওদের সব প্রশ্নের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক উত্তর দিয়ে যায়। সবশেষে লাবণ্যকে পছন্দের কথা জানান দিয়ে ওরা বিদায় নেয়। পাত্রপক্ষ চলে গেলে উঠোনে পুরো বাড়ির মানুষজন জড়ো হয়। সবার মুখেই এক কথা। ‘ছেলে দেখতে শুনতে ভালো। অর্থ সম্পদও ঢেড় আছে। আর কি লাগে? দিয়ে দেন বিয়ে।’ বাধ সাধল লাবণ্যর ভাবি হেনা। ‘নাহ! একটা বিবাহিত পুরুষের কাছে আমরা আমাদের মেয়ে বিয়ে দেবো না। আর যায় হোক এত বড় অন্যায়টা আমরা ওর সাথে করতে পারি না। হেনা তথা লাবণ্যর ভাবির সাথে তাল মেলায় লাবণ্যর মা৷ হ্যাঁ, হেনা ঠিকই বলেছে। এ বিয়েতে আমারও মত নেই। লাবণ্যর ভাবির কথা শুনে চমকিত নয়নে ফিরে তাকালাম আমি লাবণ্যর বাবার দিকে। আমার শুনা যদি ভুল না হয় তবে ছেলে বিবাহিত। একটা বিবাহিত ছেলের সাথে জেনে শুনে ওরা কেন ওদের অবিবাহিতা মেয়ের বিয়ে দিবে! প্রশ্নটা করেছিলাম আমি। উত্তরটা পাইনি তার আগেই ভেসে আসে হেনা ভাবির উত্তেজিত গলা, শুধু বিবাহিত নন, দুই বাচ্চার বাবাও। ‘কিহ? দুই বাচ্চার বাবা?’ এবার আমি অবাকের চূড়ান্ত সীমায়। একটা অল্পবয়স্কা বাচ্চা মেয়ে, যাকে দেখলে সবাই নবম দশম শ্রেণীর ছাত্রী মনে করে ভুল করবে, তাকে কি না একটা বয়স্ক বিবাহিত পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়া হচ্ছে! তাও দু’সন্তানের জনকের সাথে!!! ব্যাপারটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার। সর্বসম্মুখেই তাই উঁচু গলায় বলে ওঠি, এ আপনারা কি করছেন? ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়ের জীবনটা আপনারা নিজ হাতে ধরে এভাবে শেষ করে…. পুরো কথা বলতে পারিনি আমি৷ তার আগেই অপরিচিত মহিলাটি তিরস্কারের ছলে বলে ওঠে, হাঃ হাঃ! বিয়ে দিবে না!! কি আমার দুধে ধুয়া তুলসি পাতা। পালঙ্কে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে তাকে লোকে!!! লাবণ্যর ভাবির মুখোমুখি প্রতিবাদ, আন্টি! পালঙ্কে নাকি সোফায় বসে খাওয়াবো সেটা একান্তই আমাদের ব্যাপার। আর কি যেন বলছেন? দুধে ধুয়া তুলসি পাতা৷ যেটা একবারও দাবি করিনি আমি যদিও আপনি কয়েক ঘন্টায় আপনার ভাইপোর শতেকটা সুনাম করে ফেলেছেন যেটা আদৌ ওনার পক্ষে যায় কি না সন্দেহ। আমি শুধু এটাই বলেছি, এটা হয় না। হতে পারে না। এ ঘোর অন্যায়। আর তুমি সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এসেছ, তাই না? হাঃ হাঃ। মেয়ে বিবাহিত সেটা জানা সত্ত্বেও আমি আমার ভাইপোকে নিয়ে আসছিলাম। কোথায় তোমরা নত হয়ে মেয়ে বিয়ে দিবে, তা নয়। তা না করে বিয়ে ভাঙার জন্য কোমড় বেধে লেগেছ। শুনো তবে! আজ যদি তোমরা বিয়ে হবে না বলে জানিয়ে দাও, আগামীকাল ঠিক এসময় আমি আমার ভাইপোর বউ নিয়ে বাড়ি যাবো। ‘কিহ! লাবণ্যর আগে বিয়ে হয়েছে?’ আনমনে নিজে নিজেকে প্রশ্নটা করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফিরে তাকালাম মধ্যবয়স্কা মহিলার দিকে। মহিলা তখনো হেনা ভাবির সাথে তর্কে লিপ্ত। ভিড় ঠেলে সেখানে উপস্থিত হয় স্বয়ং লাবণ্য। আন্টি! আপনি চুপ করুন। আর ভাবি?!!! তুমি এ শরীর নিয়ে এখানে কেন আসছো? যাও, রুমে যাও। মা! চিন্তা করো না। আমি ঠিক মানিয়ে নিতে পারবো। বাবা! আপনি ওদের জানিয়ে দিন আমি রাজি। কথাগুলো বলে দ্রুতপায়ে রুমে চলে যায় লাবণ্য। আলোচনা তখনকার মতো সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। সবাই যে যার মতো চলে যায়। নির্বাক আমি হা করে তখনো সে স্থানে দাঁড়িয়ে…. চলবে…

প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

সেদিনও প্রতিদিনকার নিয়মে অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিলাম। রুমে আসে মা। জানান দেয়, লাবণ্য’র কেনাকাটা করা দরকার। ওরে নিয়ে যেন একটু কেনাকাটা করে আসি। মাতৃআজ্ঞা! অবশ্য পালনীয়… ঘমার্ক্ত শরীরেই তাই বিছানায় ওঠে বসলাম। গেঞ্জি গায়ে দ্রুত ছুটলাম নিচে। খুব বেশী ক্লান্ত থাকার কারণে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারিনি। বাসা থেকে বের হয়েই তাই রিকশা ডাকি। রিকশা চলতে শুরু করল। লক্ষ্য করলাম, এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রতিবারই ওর চোখ আমার চোখে এসে আটকে যেত। একবার তো ও আমার একটা হাতও চেপে ধরেছিল। আমি তাকাতেই দ্রুত সে তার হাতটা সরিয়ে নেয়। গভীর ভাবনায় ডুবে যাই আমি। আচ্ছা! ও’কে এরকম দেখাচ্ছে কেন? চোখ মুখ এরকম অস্বাভাবিক লাগছে কেন ওর? তবে কি ও আমায়….. ধূর! এসব কি ভাবছি? ও’তো আমাকে বন্ধু বৈ বেশি কিছু ভাবেনি কখনো। আমিই মনে হয় একটু বেশীই ভাবছি…. এই যে আমার হাতে হাত রাখা, চোখে চোখ আটকে যাওয়া, লজ্জা পেয়ে আবার সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে সবগুলোই আমার মনের ভ্রম। ও আমাকে জাস্ট বন্ধু’ই ভাবে, এরচে’ বেশি কিছু নয়। ভাবতে ভাবতে কখন যে মার্কেটের সামনে এসে গেছি টের পাইনি। ঘোর কাটে লাবণ্যর ডাকে। ভাইয়া…. অনর্থক হাসি দিয়ে দ্রুত রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে ভাড়া মিটিয়ে নিয়েছে লাবণ্য। কেনাকাটা শেষে বাসায় ফেরার সময়ও একই ভঙ্গিতে আমার সাথে ওর চোখাচোখি হয়। হয় দৃষ্টির আলাপন। রাত্রি ২টা — বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। অজানা কারণে ভেতরটা হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে যেন খুব প্রিয় কোন জিনিস হারাতে বসেছি আমি। কিন্তু কিসের এত হাহাকার? কেন এমনটি অনুভূত হচ্ছে আমার? নিজের মন নিজেকে এরকম হাজারো প্রশ্ন করলেও কোনটার সঠিক জবাব পাইনি আমি। পরদিন মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ঘড়িতে সময় ৯টা বেজে ১১টা মিনিট। অফিসে যাবো না। তাই ঘুম থেকে উঠার সেরকম তাড়াও ছিল না কোন। বালিশটা খাটে সোজা করে রেখে আধশোয়া অবস্থায় হেলান দিয়ে বসলাম। সালাম দিয়ে প্রশ্ন করলাম মা’কে, কিছু বলবে মা? ধীর কন্ঠে মায়ের জবাব, জানি ভোরে নামাজটা পড়েই ঘুমিয়েছিলি। তা সত্ত্বেও জাগাতে হলো। আসলে লাবণ্যর গ্রামের বাড়ি থেকে কল এসেছে। ওদের জরুরী তলব, লাবণ্য যেন আজই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায়। এবার পুরোপুরি সোজা হয়ে বসলাম আমি। কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত মনে প্রশ্ন করলাম, কোন সমস্যা? চিন্তিত গলায় মায়ের জবাব, জানি না। যায় হোক, তুই বরং মেয়েটাকে একটু গ্রামের বাড়িতে দিয়ে আয়। মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। মা! আমি? আজ ছুটির দিন। কোথায় আমি একটু বিশ্রাম নেবো। তা না! তুমি আমাকে সুদূরের ঐ নরসিংদী…. পুরো কথা বলতে পারিনি। তার আগেই মায়ের প্রস্থান ঘটে। কি আর করার?! ঐ যে! মাতৃআজ্ঞা অবশ্য পালনীয়…. অগত্যা তাই লাবণ্যকে সাথে নিয়ে বের হতে হলো আমার। দুপুরের দিকে নরসিংদীতে পৌঁছি আমরা। ঐখানে পৌঁছেই আসল ঘটনা জানতে পারি৷ জানতে পারি হঠাৎ ওদের জরুরী তলবের কারণ। ‘লাবণ্যকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।’ চলবে….

প্রত্যাখান_পর্ব(০৪)

0
প্রত্যাখান_পর্ব(০৪)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৪)

প্রত্যাখান_পর্ব(০৪)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। আসবো? কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম দরজায় লাবণ্য দাঁড়িয়ে। পেছনে না তাকিয়েই তাই জবাব দিলাম, আসো। নিঃশব্দে লাবণ্য আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। আয়নার ভেতর দিয়েই দৃষ্টি যায় ওর দিকে। চোখ মুখ স্বাভাবিক। কেউ দেখলে বলতেই পারবে না এখন, গতকাল রাতে এই মেয়েটি প্রচন্ড এক অভিমানে হো হো করে কেঁদেছে। গায়ে সুগন্ধি পারফিউম মাখা শেষে ওর দিকে ফিরে তাকালাম। তারপর? লেখাপড়া কেমন চলছে? ভালো। ছোট্ট করে ওর জবাব। ব্যাগটা হাতে নিতে নিতে অতি ব্যস্ততার সহিত প্রশ্ন করলাম, কিছু বলবে? নিচের দিকে তাকানো অবস্থায় ওর জবাব, আমার কিছু কেনাকাটা করতে হবে। আন্টি বলেছে আপনার সাথে… পুরো কথা বলতে পারেনি লাবণ্য। তার আগেই আমার ঝটপট জবাব, অফিসের কাজে দু’দিনের জন্য ঢাকার বাহিরে যেতে হবে। আমাকে তাই এখনই বের হতে হচ্ছে। আশা কোচিং থেকে ফিরলে তুমি বরং ও’কে নিয়ে যেও। জবাবে ‘ওহ, আচ্ছা’ বলে নিঃশব্দে রুম ত্যাগ করে লাবণ্য। ২দিন পর — অফিসের কাজ শেষে ঢাকায় নিজ বাসায় ফিরতেই দেখি ব্যলকনিতে কারো জন্য গভীর প্রতীক্ষায় মা দাঁড়িয়ে। ‘কি হলো মা! এভাবে দাঁড়িয়ে আছ যে? কারো জন্য অপেক্ষা করছো কি?’ চটজলদি মায়ের জবাব, ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে তোর বাবা গিয়েছিল মালিকের সাথে কথা বলতে। দেখ্, না! এতো রাত হয়ে গেছে। এখনো তো ফিরলো না…. পেছন থেকে জড়িয়ে ধরি মাকে। হাসোজ্জল মুখে বলে ওঠি, ওহ, মা! তোমাদের ভালোবাসা দেখলে না আমার বড্ড হিংসে হয়। এত বয়স হয়েছে, এখনো তোমাদের ভালোবাসা কমেনি! সামান্য চোখের আড়াল হতেই একজন আরেকজনের জন্য উতলা হয়ে….. পুরো কথা বলতে পারিনি। তার আগেই মা আমার কান টেনে ধরে। খুব হিংসে হয় না? দাঁড়া তোর বাবাকে বলে তাড়াতাড়ি বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি…… নতুন বউ! কথাটা বলতেই দরজার সম্মুখে এসে দাঁড়ায় লাবণ্য। আমাকে দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে। অন্য দিকে তাকিয়ে মা’কে জানান দেয়, টেবিলে খাবার দিয়েছি আন্টি, খেতে আসুন…. লাবণ্য চলে গেলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য মা এবং আমি দু’জনেই ড্রয়িংরুমের দিকে রওনা দিলাম। রাতের খাবার শেষে রুমে এসে বিছানায় গা’টা এলিয়ে দিয়েছিলাম। ভেতরে প্রবেশ করে পাশে এসে বসে মা। — কিরে! ঘুমাসনি? — এইতো, আয়োজন চলছে। — তারপর, বললি না তো কি করবো?! — কি করবে মানে? তোমাদের টাকা, থাকবেও তোমরা। এখানে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো এসব? — আমরা আর কতদিন থাকবো! তারপর তো তুই’ই…. — মা! খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু! একদম বাজে কথা বলবে না… — আচ্ছা, এটা বল তোর ফ্লাটটা পছন্দ হয়েছে কি না! — অনেক। — ভেবে বলছিস তো?! — এত ভাবাভাবির কি আছে মা? বিগত অনেকগুলো বছর যাবৎ আমরা তো এখানেই আছি, তাই না? স্বভাবতই মায়া জমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর সেই মায়ার টানেই হয়তো বা তোমরা বাকি জীবনটা এখানেই কাটাতে চাচ্ছো। ভালো কথা। অতি উত্তম সিদ্ধান্ত। কিনে ফেলো। — তারপরও তোর’ও তো একটা…. — মা, তোমাদের পছন্দ’ই আমার পছন্দ। — আলহামদুলিল্লাহ! — হুম। — আচ্ছা, ঘুমা তবে। চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহন করেছে বাবা। চাকরির শেষ টাকা দিয়ে বাবা এই ফ্ল্যাট কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমরাও সানন্দে তাই বাবার সিদ্ধান্তকে সাদুবাদ জানালাম। চলবে….

বাকি রয়ে গেছে শব্দকার

0

বাকি রয়ে গেছে শব্দকার

অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা

অনন্ত বিষাদময় করি, ভালোবাসা গেছে আমায় ছাড়ি। তুমি চলে যাওয়ার পরই বুঝলাম- আমাদের অনেককিছু’ই বাকি রয়ে গেছে। বাকি রয়ে গেছে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার আগে তোমার একটা চুমুর আবদার আমার কাছে। বাকি রয়ে গেছে বহু আয়োজন, বহু কাজ আর… আর তোমার মুখের ঐ মিষ্টি আবদার — লক্ষ্মী! বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে চলো না বৃষ্টিতে ভিঁজি আজ। বাকি রয়ে গেছে বিকেলে সমস্ত কাজ সেরে ক্লান্ত আমার ব্যলকনির হাতলওয়ালা বেতের চেয়ারে বসে চেম্বার থেকে তোমার ফেরার অপেক্ষায় থাকা গভীর ভালোবেসে। বাকি রয়ে গেছে নোটখাতা ভরে তোমার নামটি লিখা, তারপর প্রচন্ড এক অভিমানে নামগুলো কেটেকুটে ছিড়ে ফেলে দেয়া, বাকি রয়ে গেছে ‘ লক্ষ্মী ভালোবাসি তো’ বলতে বলতে কপালে তোমার দেয়া চুমুর উষ্ণ পরশ নেয়া। বাকি রয়ে গেছে ক্লান্ত বিকেলে একসাথে ঘুরতে যাওয়া, বাকি রয়ে গেছে রুপকথা’দের গল্প বলা, একসাথে পথচলা। হ্যাঁ, তুমি চলে যাওয়ার পর’ই বুঝলাম আমাদের অনেককিছুই বাকি রয়ে গেছে। বাকি রয়ে গেছে কাঁধে কাঁধ রেখে দুঃখ সুখের গল্প বলা। বাকি রয়ে গেছে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত একসাথে পথচলা।