মন ফড়িং ♥ ৩.
মন ফড়িং ♥ ২.
মন ফড়িং ♥ ১
প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৯)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
পরদিন মলিন মুখে বাবা আমার রুমে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। বিছানা থেকে ওঠে বসলাম আমি। উৎকন্ঠার সহিত প্রশ্ন করলাম, বাবা কিছু বলবে? পাশে বসে বাবা। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বলেন, তোর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে নরসিংদী। তৈরি হো। আমাদের এখনই একবার নরসিংদী যেতে হবে। বাবার কথা শুনে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে যায়। ওলট-পালট হয়ে যায় সবকিছু। ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। সেটা রেখে দ্রুত ওঠে দাঁড়াই। বাবা তুমি কি বলছো এসব? মা অসুস্থ? আমি তো একটু আগেও মায়ের সাথে কথা বলেছি। তখন তো…. ‘শুভ্র! কথা না বাড়িয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নে। আমি আসছি।’ আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাবা রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ফ্রেশ হয়ে দ্রুত ছুটলাম আলমারির দিকে। হাতের নাগালে পেলাম একটা পাঞ্জাবি। পরে নিলাম সেটাই। বাবা আমায় দেখে বিষম খায়। টিপ্পনী কাটে। ‘বাব্বাহ! একেবারে দেখছি নতুন জামাই সেজেছে আমার বাবা’টা!’
মেজাজ এমনিতেই চরমে। ঝাঁঝালো কন্ঠে জবাব দিলাম, বাবা! এটাও তোমার টিপ্পনী কাটার সময়? মা না অসুস্থ…. অসুস্থ….. ক্ষাণেক থেমে বাবা বলল, চল, চল। ওদেরকে নিয়ে আসি। বাবার পিছুপিছু বাবাকে অনুসরণ করে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। কিন্তু একি! চাচা-চাচী, ফুপ্পি, দাদা আর কাজিনরা কি করছে এখানে? আমার কিছু বুঝে ওঠার আগেই লিমা, সুমন, রুবেল, আতিক চেপে বসলো আমার পাশে, আমার গাড়িতে। মিলিত স্বরে ওদের উচ্ছ্বাস, আমরাও যাচ্ছি প্রাণের নরসিংদী প্রাণের মানুষদের আনতে। ভেতরে ছ্যাৎ করে ওঠে আমার। তবে কি মা খুব বেশীই অসুস্থ? হে আল্লাহ!
একি হলো? কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম গাড়িতে বসেই।
গাড়ি স্টার্ট দেয় আতিক। এদিকে লিমা, সুমন, রুবেল আমায় বুঝাতে ব্যর্থ। সন্ধ্যার দিকে ও বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলাম আমরা৷ কিন্তু একি!
এ বাড়িতে এত সাজসাজ আয়োজন কেন? অবশেষে মা’কে দেখেই কলিজা জুড়ালো আমার৷ কাজিনরা আমার মা’কে এমন আনন্দের সহিত এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেন ওরা অসুস্থ রোগী দেখতে নন, কোনো উৎসবে বেড়াতে এসেছে। চোখের জল মুছে মায়ের কাছে গেলাম আমি। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলাম।
কেমন আছো মা? কপালে চুমুর পরশ এঁকে দিয়ে হাসোজ্জল মুখে জানান দেয় মা, একটু আগেও ভালো ছিলাম না বাবা। আলহামদুলিল্লাহ! এখন খুব ভালো আছি। তোর বাবা আসেনি? আর ভাইয়া-ভাবি ওনারা আসেনি? পেছন থেকে বাবার জবাব- এইতো! আমরা এখানে, শুভ্র’র মা৷ পরে মায়ের থেকে জানতে পারলাম, বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। ওদের সেই মানসিক অবস্থা থেকে উত্তরণে সাহায্য করে আমার মা৷ মা তাঁর উপস্থিত বুদ্ধির জুড়ে ওনার পরিচিত এক যুবকের সহিত লাবন্যর অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করে রাতেই৷ আমাদের সে বিয়ে খাওয়ার জন্যই এভাবে নিয়ে আসা। মায়ের প্রতি প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল আমার। মানলাম স্বাভাবিক ভাবে বললে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে আসতে চাইতাম না৷ তাই বলে এভাবে…..! বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সাথে আমার মা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ওদের সাথে এমনভাবে দৌঁড়ে দৌঁড়ে কাজ করছে যেন তিনি এ বাড়ির’ই পুরনো সদস্য। লক্ষ্য করলাম, বোন আমার লাবণ্যর কাজিনদের সাথে হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেছে। আরো লক্ষ্যনীয় যে, ওদের সমস্ত আনন্দ আর উল্লাস সবই যেন আমাকে ঘিরে। কতেক মেয়েরা তো আড়চোখে আমাকে দেখছে আর হাসছে। আমার কাজিনদের অবস্থা তো আরো খারাপ৷ হাসতে হাসতে লাবণ্যর কাজিনদের ওপর পড়ে যাওয়ার অবস্থা। বাড়ির বয়স্ক মহিলাদের খাতিরের অন্ত নেই আমাকে ঘিরে। লাবণ্যদের সদ্য নির্মিত বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। কোথা থেকে যেন একটা মহিলা এসে আমার গালে হলুদ মাখিয়ে দৌঁড় দেয়। মহিলাকে অনুসরণ করে পেছনের দিকে তাকাতেই আমার চোখ স্থির হয়ে যায় একদিকে। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলি নিজের বোধ শক্তিকে…… চলবে…
প্রত্যাখান_পর্ব(০৮)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৮)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
লাবণ্যর সাথে আমার সমস্ত বাঁধন ছিন্ন হয়ে যায়। ভেবেছিলাম ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ! ঘটনার ওপর ঘটনা থাকে৷ থাকে নাটকের ওপর নাটকীয়তা। লাবণ্যর বিয়ে ঠিক হয় জনৈক ভদ্রলোক তথা ঐ দুই সন্তানের জনকের সাথে। বিয়ের দাওয়াত দিতে আসে স্বয়ং লাবণ্যর বাবা। লাবণ্যকে ভিষণ ভালোবাসতো মা। তারউপর মায়ের দূরসম্পর্কের বোন ছিলো লাবণ্যর মা। আর সে টানেই হয়তো বা বিয়ের দাওয়াতটা সানন্দে গ্রহন করে নেন তিনি। লাবণ্যকে পুত্রবধূ করে আনার প্রবল ইচ্ছেটা ভেতরে ধামাচাপা দিয়ে আশা বোনটিকে সাথে নিয়ে নির্ধারিত দিনের দু’দিন আগেই মা নরসিংদী পৌঁছে। ঘনিয়ে আসে কাঙ্খিত দিন। নির্ধারিত দিনের চেয়ে একটু দেরীতে বরপক্ষ আসে। যেখানে মেহমান আসার কথা ছিল একশো, সেখানে হাতা গুনা মাত্র ১৫,২০জন লোক নিয়ে ওরা হাজির হয়। পাত্রের মুখখানা অমাবস্যার অন্ধকারের ন্যায় কালো ছিল। দেখে মনে হচ্ছিলো, কেউ যেন তাকে বন্দুকের মুখে বিয়ে পরানোর জন্য নিয়ে এসেছে। বিয়ে পরানোর তাড়াটা ওদের এতটাই জরুরী ছিলো যে, প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে, মুখে কিছু না দিয়ে বিয়ে পরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে ওরা। এ নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয় এলাকার মানুষজনদের মধ্যে। সেটা দেখে স্বয়ং লাবণ্যর চাচা ঘোষনা দেন, আপনারা আগে কিছু মুখে দিবেন তারপর বিয়ে। ওরা সে বুঝ মানতে নারাজ। ভাবখানা এমন যেন পারলে মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। কনে পক্ষের মেয়েদের তীব্র প্রতিবাদ, আমাদের মেয়েদের সাজ এখনো কমপ্লিট হয়নি। আর সে সাজ কমপ্লিট হওয়ার আগে কোন বিয়ে নয়। দাঁতে দাঁত চেপে মিনিট ত্রিশেক অপেক্ষা করে বরপক্ষ। রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে বসে থাকা স্বয়ং বর মশাই এবার ওঠে দাঁড়ায় চরম উত্তেজিত অবস্থায়। সু্যোগের আশায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা লাবণ্যর ভাবি পর্দার আড়াল থেকে মুখ বের করে জানান দেয়, কোথায় এরকম নয়তো ওনারা ফেসে যাচ্ছেন কোথাও? হেনার কথায় গর্জে ওঠে বর। উত্তেজিত গলায় জানায়, হ্যাঁ, ফেসে গেছি আমরা। প্রথম বিয়ে ছাড়াও আমি আরো একটা বিয়ে করেছিলাম। ডিভোর্স হয়নি আমাদের। ঐ পক্ষেরও ২মেয়ে আছে আমার। বিয়ে করার আগে প্রথমা স্ত্রীর যে অনুমতিটা নিতে হয় সেটা নেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি আমি। আমার নামে তাই থানায় মামলা দায়ের করেছে আমার স্ত্রী। বিষয়টা এখানে আসার মিনিট ত্রিশেক আগেই আমরা পাই। তা সত্ত্বেও আপনাদের মেয়ের কথা ভেবে আমি বিয়ে করতে এসেছি। তবে আর নয়৷ এই মুহূর্তে আমার নিজের জীবন বাঁচানোটাই শ্রেয়। কেননা, আমরা খবর পেয়েছি যেকোন মুহূর্তে আইনের লোক এখানে চলে আসতে পারে। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে যায় সবাই। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায় আগত মুরুব্বীয়ান। হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায় এলাকায়। অফিসে বসে বোর হচ্ছিলাম আমি। ভালো লাগছিলো না একদম৷ অস্থির অস্থির লাগছিলো ভেতরে। কল দিলাম বোন আশাকে। জানি না বোন আমার সে কল সজ্ঞানে রিসিভ করেছে কি না। করলেও কথা কেন বলছিলো না। লাউডস্পিকার বাড়াতে গিয়ে টের পাই ওপাশে বিশাল হট্টগোল চলছে। মিনিট খানেকের জন্য সাক্ষী হই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির। পরে কলটা কেটে যায়। এদিকে অস্থিরতায় আমার পুরো শরীর ঘামছিল। কলের ওপর কল দিতে থাকি। ঘন্টা খানেক পর বোন আমার কল রিসিভ করে জানায়, লাবণ্যর বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। বিয়ের আসর থেকে পুলিশ পাত্র এবং তার তিন বাবা চাচাকে সাথে ঐ জনৈকা ভদ্রমহিলা তথা ফুপ্পিকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। কিছু সময়ের ব্যাপারে প্রাণচঞ্চল বাড়িটা নিরব, নিস্তব্ধ পরিবেশে রূপ নেয়। লাবণ্যর মা ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছিল। অসুস্থ ভাই আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবা করে স্ট্রোক। চলবে….
প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৭)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
কৌতূহলী মন বারংবার জানতে চাচ্ছিলো ভদ্রমহিলা কোন সে বিয়ের ইঙ্গিত দিলো? সত্যিই কি তাহলে আগে লাবণ্যর বিয়ে হয়েছিলো? কিংবা বিয়েটা যদি হয়েও থাকে তাহলে সেটা তো আমাদের জানার কথা। বিশেষ করে আমার মায়ের তো এ বিষয়ে জানাটা জরুরী ছিল। তবে কি ওরা বিষয়টাকে ধামাচাপা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলো? উফ, নাহ! আর ভাবতে পারছি না৷ এরকমভাবে ওরা আমাদের ঠকাতে চাইবে এটা যে কল্পনারও অতীত। মনের অদম্য কৌতূহল মেটাতে লাবণ্যদের সদ্য নির্মিত রুমটাতে ঢুকলাম। লাবণ্য তখন চুপটি করে জানালার গ্রিল ধরে বাহিরের পানে তাকিয়ে। আমার আওয়াজে ওর সে দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটে৷ পিছু ফিরে তাকায় লাবণ্য। অতঃপর পুনঃবার দৃষ্টি নিয়ে যায় বাহিরে। নিঃশব্দে লাবন্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। প্রশ্নটা করার কথা ভাবতেই ভেতরে কম্পনের সৃষ্টি হয় আমার। তথাপি মিটিয়েই ফেললাম অদম্য সে কৌতূহল। প্রশ্ন করলাম, লাবণ্য তুমি বিবাহিতা? লাবণ্যর ছোট্ট জবাব, হ্যাঁ! ডিভোর্সি। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম৷ উলট-পালট হয়ে যায় ভেতরে। দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে। চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করি। চোখ থেকে অনবরত অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে থাকে নিচে। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এলে জীবনের রঙ জলের মতোই হয় বুঝি? জানি না এরপর লাবণ্য আর কোন কথা বলেছিলো কি না! আর বললেও ঠিক কি বলেছিলো?! শুধু এটুকু জানি- ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে আমি তখনই সেখান থেকে বেরিয়ে আসি। লাবণ্যর বাবা-মা, ভাই-ভাবির থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় নিজ বাসায় চলে আসি। রাতে ঘুম হচ্ছিলো না। অচেনা এক কষ্ট ভেতরটাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো। আমি সইতেও পারছিলাম না, কারো সাথে শেয়ার করতেও পারছিলাম না। সেদিনের পর থেকে কেন জানি না নিজেকে, নিজের অনুভূতিগুলোকে অসুস্থ মনে হতে লাগলো। ঘৃণা হচ্ছিলো, বড্ড ঘৃণা হচ্ছিলো নিজের প্রতি। প্রতিবারই মানুষ চিনতে ভুল করি আমি। মিতুর থেকে ঠক-প্রবঞ্চনায় কোন অংশে কম ছিল না লাবণ্য। বরং একটু বেশীই এগিয়ে ছিলো সে। এমনভাবে কেউ কাউকে ঠকাতে পারে সেটা লাবণ্যর সাথে পরিচয় না হলে আমি বোধ হয় জানতেই পারতাম না। দিন দিন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। প্রথম প্রেমের দুঃখজনক পরিণতির পরও ভালোবেসেছিলাম লাবণ্যকে। কষ্ট হচ্ছিল যার মায়ায় জড়িয়ে নিজেকে পুনঃবার গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলাম সেই লাবণ্য আমায় চরমভাবে ফাঁকি দিলো! হে বিধাতা! বলে দাও তুমি। আমি কাকে বিশ্বাস করবো? চার দেয়ালের ভেতরের ঐ চিৎকার আমার কাছেই ফিরে আসে প্রতিধ্বনিত হয়ে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছিলো। এরকমই মুহূর্তে এক বিকেলে কল করে লাবণ্য। নাম্বারটা খেয়াল না করেই রিসিভ করি কল। ওপাশ থেকে ভেসে আসে সুমিষ্ট কন্ঠস্বর, আসসালামু আলাইকুম। শরীরে আগুন ধরে যায় আমার। প্রচন্ড এক অভিমানে সালাম না দিয়েই কলটা কেটে দেই। শুরু হয় লাবণ্যর একের পর এক কল দেয়া৷ এক সন্ধ্যায় বিরক্ত হয়ে লাবণ্যর কলটা রিসিভ করেই বসি। সালাম দেয় লাবণ্য। জবাব না দিয়ে অনর্গল কথা বলা শুরু করি। এক নিশ্বাসে অনেকগুলো তিক্ত কথা শুনিয়ে দেই লাবণ্যকে। কথাগুলো শুনার পরও ফোনের ওপাশে মিনিট পাঁচেক চুপ করে ছিলো লাবণ্য। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কলটা কেটে দেয়। চলবে…
প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৬)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
লাবণ্যদের পরিবারে লাবণ্যর বাবা ছাড়াও ছিল ওর একমাত্র ভাই লাবিব। বয়সে লাবিব লাবণ্যর থেকে বছর সাতেকের বড়। একটা সময় এই লাবিবই ছিল লাবণ্যদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বছর চারেক আগে হুট করে লাবিব পঙ্গু হয়ে যায়। সেই থেকে সে বিছানায় পড়ে। লাবণ্যর বাবার অনুরোধে আমাকে তাই সেদিন থেকে যেতে হলো। বাজার সওদা থেকে শুরু করে পরদিন পাত্রপক্ষের সামনে খাবার উপস্থাপন। সমস্তই আমাকে করতে হয়েছে। অবশ্য আমাকে হাতে হাতে সাহায্য করার জন্য পাশে ছিল লাবণ্যর সমবয়সী ২কাজিন। পরদিন যথাসময়ে লাবণ্যর ডাক পড়ল। অতিকায় সাধারণ বেশভূষায় লাবণ্য হাজির হয় পাত্রপক্ষের সামনে। ঘোমটার আড়ালের ঐ মায়াবী মুখটা দেখে জানি না কেন সেদিন আমার ভেতরটা কেঁপে ওঠেছিল। নামাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করে, হেঁটে হাঁটিয়ে বিভিন্ন কায়দায় মুরুব্বীরা লাবণ্যকে দেখে নেয়। লাবণ্যও কিরকম বাধ্য বালিকার ন্যায় নিরবে ওদের সব প্রশ্নের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক উত্তর দিয়ে যায়। সবশেষে লাবণ্যকে পছন্দের কথা জানান দিয়ে ওরা বিদায় নেয়। পাত্রপক্ষ চলে গেলে উঠোনে পুরো বাড়ির মানুষজন জড়ো হয়। সবার মুখেই এক কথা। ‘ছেলে দেখতে শুনতে ভালো। অর্থ সম্পদও ঢেড় আছে। আর কি লাগে? দিয়ে দেন বিয়ে।’ বাধ সাধল লাবণ্যর ভাবি হেনা। ‘নাহ! একটা বিবাহিত পুরুষের কাছে আমরা আমাদের মেয়ে বিয়ে দেবো না। আর যায় হোক এত বড় অন্যায়টা আমরা ওর সাথে করতে পারি না। হেনা তথা লাবণ্যর ভাবির সাথে তাল মেলায় লাবণ্যর মা৷ হ্যাঁ, হেনা ঠিকই বলেছে। এ বিয়েতে আমারও মত নেই। লাবণ্যর ভাবির কথা শুনে চমকিত নয়নে ফিরে তাকালাম আমি লাবণ্যর বাবার দিকে। আমার শুনা যদি ভুল না হয় তবে ছেলে বিবাহিত। একটা বিবাহিত ছেলের সাথে জেনে শুনে ওরা কেন ওদের অবিবাহিতা মেয়ের বিয়ে দিবে! প্রশ্নটা করেছিলাম আমি। উত্তরটা পাইনি তার আগেই ভেসে আসে হেনা ভাবির উত্তেজিত গলা, শুধু বিবাহিত নন, দুই বাচ্চার বাবাও। ‘কিহ? দুই বাচ্চার বাবা?’ এবার আমি অবাকের চূড়ান্ত সীমায়। একটা অল্পবয়স্কা বাচ্চা মেয়ে, যাকে দেখলে সবাই নবম দশম শ্রেণীর ছাত্রী মনে করে ভুল করবে, তাকে কি না একটা বয়স্ক বিবাহিত পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়া হচ্ছে! তাও দু’সন্তানের জনকের সাথে!!! ব্যাপারটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার। সর্বসম্মুখেই তাই উঁচু গলায় বলে ওঠি, এ আপনারা কি করছেন? ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়ের জীবনটা আপনারা নিজ হাতে ধরে এভাবে শেষ করে…. পুরো কথা বলতে পারিনি আমি৷ তার আগেই অপরিচিত মহিলাটি তিরস্কারের ছলে বলে ওঠে, হাঃ হাঃ! বিয়ে দিবে না!! কি আমার দুধে ধুয়া তুলসি পাতা। পালঙ্কে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে তাকে লোকে!!! লাবণ্যর ভাবির মুখোমুখি প্রতিবাদ, আন্টি! পালঙ্কে নাকি সোফায় বসে খাওয়াবো সেটা একান্তই আমাদের ব্যাপার। আর কি যেন বলছেন? দুধে ধুয়া তুলসি পাতা৷ যেটা একবারও দাবি করিনি আমি যদিও আপনি কয়েক ঘন্টায় আপনার ভাইপোর শতেকটা সুনাম করে ফেলেছেন যেটা আদৌ ওনার পক্ষে যায় কি না সন্দেহ। আমি শুধু এটাই বলেছি, এটা হয় না। হতে পারে না। এ ঘোর অন্যায়। আর তুমি সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এসেছ, তাই না? হাঃ হাঃ। মেয়ে বিবাহিত সেটা জানা সত্ত্বেও আমি আমার ভাইপোকে নিয়ে আসছিলাম। কোথায় তোমরা নত হয়ে মেয়ে বিয়ে দিবে, তা নয়। তা না করে বিয়ে ভাঙার জন্য কোমড় বেধে লেগেছ। শুনো তবে! আজ যদি তোমরা বিয়ে হবে না বলে জানিয়ে দাও, আগামীকাল ঠিক এসময় আমি আমার ভাইপোর বউ নিয়ে বাড়ি যাবো। ‘কিহ! লাবণ্যর আগে বিয়ে হয়েছে?’ আনমনে নিজে নিজেকে প্রশ্নটা করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফিরে তাকালাম মধ্যবয়স্কা মহিলার দিকে। মহিলা তখনো হেনা ভাবির সাথে তর্কে লিপ্ত। ভিড় ঠেলে সেখানে উপস্থিত হয় স্বয়ং লাবণ্য। আন্টি! আপনি চুপ করুন। আর ভাবি?!!! তুমি এ শরীর নিয়ে এখানে কেন আসছো? যাও, রুমে যাও। মা! চিন্তা করো না। আমি ঠিক মানিয়ে নিতে পারবো। বাবা! আপনি ওদের জানিয়ে দিন আমি রাজি। কথাগুলো বলে দ্রুতপায়ে রুমে চলে যায় লাবণ্য। আলোচনা তখনকার মতো সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। সবাই যে যার মতো চলে যায়। নির্বাক আমি হা করে তখনো সে স্থানে দাঁড়িয়ে…. চলবে…
প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
সেদিনও প্রতিদিনকার নিয়মে অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিলাম। রুমে আসে মা। জানান দেয়, লাবণ্য’র কেনাকাটা করা দরকার। ওরে নিয়ে যেন একটু কেনাকাটা করে আসি। মাতৃআজ্ঞা! অবশ্য পালনীয়… ঘমার্ক্ত শরীরেই তাই বিছানায় ওঠে বসলাম। গেঞ্জি গায়ে দ্রুত ছুটলাম নিচে। খুব বেশী ক্লান্ত থাকার কারণে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারিনি। বাসা থেকে বের হয়েই তাই রিকশা ডাকি। রিকশা চলতে শুরু করল। লক্ষ্য করলাম, এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রতিবারই ওর চোখ আমার চোখে এসে আটকে যেত। একবার তো ও আমার একটা হাতও চেপে ধরেছিল। আমি তাকাতেই দ্রুত সে তার হাতটা সরিয়ে নেয়। গভীর ভাবনায় ডুবে যাই আমি। আচ্ছা! ও’কে এরকম দেখাচ্ছে কেন? চোখ মুখ এরকম অস্বাভাবিক লাগছে কেন ওর? তবে কি ও আমায়….. ধূর! এসব কি ভাবছি? ও’তো আমাকে বন্ধু বৈ বেশি কিছু ভাবেনি কখনো। আমিই মনে হয় একটু বেশীই ভাবছি…. এই যে আমার হাতে হাত রাখা, চোখে চোখ আটকে যাওয়া, লজ্জা পেয়ে আবার সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে সবগুলোই আমার মনের ভ্রম। ও আমাকে জাস্ট বন্ধু’ই ভাবে, এরচে’ বেশি কিছু নয়। ভাবতে ভাবতে কখন যে মার্কেটের সামনে এসে গেছি টের পাইনি। ঘোর কাটে লাবণ্যর ডাকে। ভাইয়া…. অনর্থক হাসি দিয়ে দ্রুত রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে ভাড়া মিটিয়ে নিয়েছে লাবণ্য। কেনাকাটা শেষে বাসায় ফেরার সময়ও একই ভঙ্গিতে আমার সাথে ওর চোখাচোখি হয়। হয় দৃষ্টির আলাপন। রাত্রি ২টা — বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। অজানা কারণে ভেতরটা হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে যেন খুব প্রিয় কোন জিনিস হারাতে বসেছি আমি। কিন্তু কিসের এত হাহাকার? কেন এমনটি অনুভূত হচ্ছে আমার? নিজের মন নিজেকে এরকম হাজারো প্রশ্ন করলেও কোনটার সঠিক জবাব পাইনি আমি। পরদিন মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ঘড়িতে সময় ৯টা বেজে ১১টা মিনিট। অফিসে যাবো না। তাই ঘুম থেকে উঠার সেরকম তাড়াও ছিল না কোন। বালিশটা খাটে সোজা করে রেখে আধশোয়া অবস্থায় হেলান দিয়ে বসলাম। সালাম দিয়ে প্রশ্ন করলাম মা’কে, কিছু বলবে মা? ধীর কন্ঠে মায়ের জবাব, জানি ভোরে নামাজটা পড়েই ঘুমিয়েছিলি। তা সত্ত্বেও জাগাতে হলো। আসলে লাবণ্যর গ্রামের বাড়ি থেকে কল এসেছে। ওদের জরুরী তলব, লাবণ্য যেন আজই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায়। এবার পুরোপুরি সোজা হয়ে বসলাম আমি। কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত মনে প্রশ্ন করলাম, কোন সমস্যা? চিন্তিত গলায় মায়ের জবাব, জানি না। যায় হোক, তুই বরং মেয়েটাকে একটু গ্রামের বাড়িতে দিয়ে আয়। মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। মা! আমি? আজ ছুটির দিন। কোথায় আমি একটু বিশ্রাম নেবো। তা না! তুমি আমাকে সুদূরের ঐ নরসিংদী…. পুরো কথা বলতে পারিনি। তার আগেই মায়ের প্রস্থান ঘটে। কি আর করার?! ঐ যে! মাতৃআজ্ঞা অবশ্য পালনীয়…. অগত্যা তাই লাবণ্যকে সাথে নিয়ে বের হতে হলো আমার। দুপুরের দিকে নরসিংদীতে পৌঁছি আমরা। ঐখানে পৌঁছেই আসল ঘটনা জানতে পারি৷ জানতে পারি হঠাৎ ওদের জরুরী তলবের কারণ। ‘লাবণ্যকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।’ চলবে….
প্রত্যাখান_পর্ব(০৪)
প্রত্যাখান_পর্ব(০৪)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। আসবো? কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম দরজায় লাবণ্য দাঁড়িয়ে। পেছনে না তাকিয়েই তাই জবাব দিলাম, আসো। নিঃশব্দে লাবণ্য আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। আয়নার ভেতর দিয়েই দৃষ্টি যায় ওর দিকে। চোখ মুখ স্বাভাবিক। কেউ দেখলে বলতেই পারবে না এখন, গতকাল রাতে এই মেয়েটি প্রচন্ড এক অভিমানে হো হো করে কেঁদেছে। গায়ে সুগন্ধি পারফিউম মাখা শেষে ওর দিকে ফিরে তাকালাম। তারপর? লেখাপড়া কেমন চলছে? ভালো। ছোট্ট করে ওর জবাব। ব্যাগটা হাতে নিতে নিতে অতি ব্যস্ততার সহিত প্রশ্ন করলাম, কিছু বলবে? নিচের দিকে তাকানো অবস্থায় ওর জবাব, আমার কিছু কেনাকাটা করতে হবে। আন্টি বলেছে আপনার সাথে… পুরো কথা বলতে পারেনি লাবণ্য। তার আগেই আমার ঝটপট জবাব, অফিসের কাজে দু’দিনের জন্য ঢাকার বাহিরে যেতে হবে। আমাকে তাই এখনই বের হতে হচ্ছে। আশা কোচিং থেকে ফিরলে তুমি বরং ও’কে নিয়ে যেও। জবাবে ‘ওহ, আচ্ছা’ বলে নিঃশব্দে রুম ত্যাগ করে লাবণ্য। ২দিন পর — অফিসের কাজ শেষে ঢাকায় নিজ বাসায় ফিরতেই দেখি ব্যলকনিতে কারো জন্য গভীর প্রতীক্ষায় মা দাঁড়িয়ে। ‘কি হলো মা! এভাবে দাঁড়িয়ে আছ যে? কারো জন্য অপেক্ষা করছো কি?’ চটজলদি মায়ের জবাব, ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে তোর বাবা গিয়েছিল মালিকের সাথে কথা বলতে। দেখ্, না! এতো রাত হয়ে গেছে। এখনো তো ফিরলো না…. পেছন থেকে জড়িয়ে ধরি মাকে। হাসোজ্জল মুখে বলে ওঠি, ওহ, মা! তোমাদের ভালোবাসা দেখলে না আমার বড্ড হিংসে হয়। এত বয়স হয়েছে, এখনো তোমাদের ভালোবাসা কমেনি! সামান্য চোখের আড়াল হতেই একজন আরেকজনের জন্য উতলা হয়ে….. পুরো কথা বলতে পারিনি। তার আগেই মা আমার কান টেনে ধরে। খুব হিংসে হয় না? দাঁড়া তোর বাবাকে বলে তাড়াতাড়ি বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি…… নতুন বউ! কথাটা বলতেই দরজার সম্মুখে এসে দাঁড়ায় লাবণ্য। আমাকে দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে। অন্য দিকে তাকিয়ে মা’কে জানান দেয়, টেবিলে খাবার দিয়েছি আন্টি, খেতে আসুন…. লাবণ্য চলে গেলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য মা এবং আমি দু’জনেই ড্রয়িংরুমের দিকে রওনা দিলাম। রাতের খাবার শেষে রুমে এসে বিছানায় গা’টা এলিয়ে দিয়েছিলাম। ভেতরে প্রবেশ করে পাশে এসে বসে মা। — কিরে! ঘুমাসনি? — এইতো, আয়োজন চলছে। — তারপর, বললি না তো কি করবো?! — কি করবে মানে? তোমাদের টাকা, থাকবেও তোমরা। এখানে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো এসব? — আমরা আর কতদিন থাকবো! তারপর তো তুই’ই…. — মা! খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু! একদম বাজে কথা বলবে না… — আচ্ছা, এটা বল তোর ফ্লাটটা পছন্দ হয়েছে কি না! — অনেক। — ভেবে বলছিস তো?! — এত ভাবাভাবির কি আছে মা? বিগত অনেকগুলো বছর যাবৎ আমরা তো এখানেই আছি, তাই না? স্বভাবতই মায়া জমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর সেই মায়ার টানেই হয়তো বা তোমরা বাকি জীবনটা এখানেই কাটাতে চাচ্ছো। ভালো কথা। অতি উত্তম সিদ্ধান্ত। কিনে ফেলো। — তারপরও তোর’ও তো একটা…. — মা, তোমাদের পছন্দ’ই আমার পছন্দ। — আলহামদুলিল্লাহ! — হুম। — আচ্ছা, ঘুমা তবে। চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহন করেছে বাবা। চাকরির শেষ টাকা দিয়ে বাবা এই ফ্ল্যাট কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমরাও সানন্দে তাই বাবার সিদ্ধান্তকে সাদুবাদ জানালাম। চলবে….
বাকি রয়ে গেছে শব্দকার
বাকি রয়ে গেছে শব্দকার
অনন্ত বিষাদময় করি, ভালোবাসা গেছে আমায় ছাড়ি। তুমি চলে যাওয়ার পরই বুঝলাম- আমাদের অনেককিছু’ই বাকি রয়ে গেছে। বাকি রয়ে গেছে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার আগে তোমার একটা চুমুর আবদার আমার কাছে। বাকি রয়ে গেছে বহু আয়োজন, বহু কাজ আর… আর তোমার মুখের ঐ মিষ্টি আবদার — লক্ষ্মী! বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে চলো না বৃষ্টিতে ভিঁজি আজ। বাকি রয়ে গেছে বিকেলে সমস্ত কাজ সেরে ক্লান্ত আমার ব্যলকনির হাতলওয়ালা বেতের চেয়ারে বসে চেম্বার থেকে তোমার ফেরার অপেক্ষায় থাকা গভীর ভালোবেসে। বাকি রয়ে গেছে নোটখাতা ভরে তোমার নামটি লিখা, তারপর প্রচন্ড এক অভিমানে নামগুলো কেটেকুটে ছিড়ে ফেলে দেয়া, বাকি রয়ে গেছে ‘ লক্ষ্মী ভালোবাসি তো’ বলতে বলতে কপালে তোমার দেয়া চুমুর উষ্ণ পরশ নেয়া। বাকি রয়ে গেছে ক্লান্ত বিকেলে একসাথে ঘুরতে যাওয়া, বাকি রয়ে গেছে রুপকথা’দের গল্প বলা, একসাথে পথচলা। হ্যাঁ, তুমি চলে যাওয়ার পর’ই বুঝলাম আমাদের অনেককিছুই বাকি রয়ে গেছে। বাকি রয়ে গেছে কাঁধে কাঁধ রেখে দুঃখ সুখের গল্প বলা। বাকি রয়ে গেছে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত একসাথে পথচলা।