Tuesday, August 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2350



খেলাঘর পর্ব-৪

0
খেলাঘর পর্ব-৪
খেলাঘর পর্ব-৪

খেলাঘর পর্ব-৪
লেখা-সুলতানা ইতি

অরনি আর কিছু বল্লো না
ইহান ছাড়া বাকিরা সব বেরিয়ে গেছে
মিথিলা ইহানের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন, তোর ও তো রাগ করে চলে যাওয়ার কথা

ইহান শান্ত কন্ঠে বল্লো
– সবাই কি এক রকম,কেউ কেউ তো বন্ধুর সাথে অভিমান করে থাকতে পারে ,আর কেউ পারে না,ধরে নে আমি সেই না পারার দলেরই একজন

মিথিলা- ওহ আচ্ছা,
ইহান- একটা কথা বলবো

মিথিলা -জানতাম তুই প্রশ্ন করার জন্য ই রয়ে গেছিস কি বলবি হল

ইহান অনেক টা ইতস্তত ভাবেই জিজ্ঞাস করলো
– তুই কি আমার সামনে শাড়ি পরতে চাস না

মিথিলা ভ্রুকুচকে তাকালো ইহানের দিকে,তার পর স্বাভাবিক হয়ে বল্লো
– তোর এমন মনে হওয়ার কারন কি

ইহান- না এমনি মনে হলো
মিথিলা- তোর ধারনা ভুল আমি এমনি শাড়ি পরতে চাই না

ইহান আর কিছু বল্লো না
নির্বাক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে মিথিলার দিকে
ভাবছে মনে মনে
– এই মেয়ে এমন কেনো, কোন কিছুতেই ওর আগ্রহ নেই,মেয়েরা এমন হতে পারে? সাধারণত মেয়েরা শাড়ি পরা সাজগোজ নিয়ে বেশি এক্সাইটেড থাকে, আর এতো পুরো ভিন্ন

মিথিলা- দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেবে লাভ নেই ইহান,আমি শাড়ি পরবো না

ভাবতে ভাবতে ইহান অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো, মিথিলার কথায় চমকে উঠে বল্লো,তুই কি করে জানিস যে আমি এই কথা ভাবছি

মিথিলা- আমি বুঝতে পারি
এমন সময়,অরনি,সাম্মি রাহি, ওরা এসে যায় সবার পরনে শাড়ি অপরুপ লাগছে ওদের কে

মিথিলা-তোদের তিনজন কে ই অনেক সুন্দর লাগছে,,খোলা চুল, চোখে মোটা করে কাজল,সত্যি ই ধারুন

অরনি- হুম সুন্দর তো দেখাতেই হবে তাই না,এই সাম্মি তুই যা নির্ঝর কে খুজে নিয়ে আয়,একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে
সাম্মি বেরিয়ে গেলো

রাহি- চল মিথিলা প্যান্ডেলে গিয়ে বসি
মিথিলা- হুম চল

অরনি এক মিনিট দাড়া
এই ইহান মিথিলা তো আমাদের অনেক প্রশংসা করলো, কিন্তু তুই তো কিছুই বললি না,বলতো কেমন লাগছে আমাকে

ইহান – ভালো

অরনি- শুধু ভালো?

ইহান – তুই যেমন তোকে তেমনি লাগছে, আর কি বলবো,চল চল বেরয়ে পড়ি

অরনি মন খারাপ করে হাটতে শুরু করলো,
মিথিলা আর ইহান ওদের পিছনে

ইহান ফিসফিস করে বল্লো
– মিথিলা একটা কথা বলবো

মিথিলা- আবার কি

ইহান-শুসসস,আস্তে বল,ওরা শুনবে তো,,

মিথিলা-তো

ইহান- আমার কথা টা শুন, তোকে না খুব সুন্দর লাগছে জানিনা তোকে শাড়িতে কেমন লাগতো,কিন্তু ন্যাচারাল ভাবে তুই অনেক সুন্দর

মিথিলা- বেশি বেশি বলছিস চুপ থাক
মিথিলা ইহান কে পিছনে পেলে আগে আগে হাটতে শুরু করলো

সবাই গিয়ে প্যান্ডেলে বসলো, এস এস সি পরিক্ষার্তিরা সামনের সারিতে,বাকিরা সবাই পিছনে যে যার আসনে বসলো

প্রথমে বক্তিতা নিয়ে গেলো ইহান, ইহানের বক্তিতা শেষে ,,

সাম্মি এনাউন্স করলো
– এখন আপনাদের সামনে কবিতা নিয়ে আসছে আপনাদের সবার প্রিয়ো বইপোকা মিথিলা,,মিথিলাকে স্টেজে আসতে অনুরোধ করছি

নির্ঝরিণী – আপি তুই কবিতা বলবি আর ভালো কিছু পাসনি নাকি

মিথিলা- চুপ থাক

অরনি- থাক নির্ঝরী কিছু বলো না,অনেক কষ্ট
করে কবিতার জন্য রাজি করিয়েছে ইহান

নির্ঝরিণী – কি বলছো আপু,মিথিলা আপু ইহান ভাইয়ার কথায় রাজি হয়েছে,আই কান্ট ভিলিব ইট

অরনি- হুম,সেটাই,,আমরা ও প্রথমে একটু অবাক হয়েছি

রাহি- এই চুপ করতো তোরা মিথিলার কবিতা আবৃতি অনেক সুন্দর হয় শুনতে দে,সবাই চুপ হয়ে গেলো

মিথিলা বলতে শুরু করলো
প্রথমে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সালাম জানাই,তার পর উপস্থিত ভাই বোনদের জানাই স্নেহ ও ভালোবাসা,,
আমার কবিতার নাম
‘ ভালোবাসা’
ভালোবাসি তোমায়
ওগো তুমি কেনো বুঝো না
মধুচন্দ্রিমাতে তোমায় নিয়ে,
জোনাক পোকার আলো দেখতে চাই
ভালোবাসি তোমায় কেনো বুঝো না
মনের মাধুরিতে তোমারি ছবি
তুমি তো দেখতে পাওনা
ভালোবাসি কেনো বুঝো না
চোখের ভাষা কি তুমি বুঝো না
মনের না বলা কাকুতি
তুমি শুনতে পাওনা
কান পেতে দেখো এই মন
বলছে ভালোবাসি তোমায় হৃদয়ে হৃদয়”

মিথিলার কবিতা আবৃতি শেষ হতেই, করতালিতে চারিদিকে মুখর হয়ে উঠলো

ইহান তনয় হয়ে মিথিলার কবিতা আবৃতি শুনছিলো,করতালি দিতে ভুলে গেছে সে,মনে হচ্ছে কবিতার প্রত্যেক লাইন আমাকে নিয়ে লিখা, সত্যি মিথিলা তুই সাধারনের মধ্যে অসাধারণ,

অরনি কনুই দিয়ে ইহান কে ধাক্কা দিয়ে বল্লো,কিরে কোথায় হারালি

ইহান সম্বিত ফিরে পেয়ে বল্লো
– না ভাবছিলাম,,মিথিলা সাধারনের মধ্যে অসাধারণ

অরনি- তুই শুধু মিথিলার মাঝে মুগ্ধতা খুঁজে পাস,আর কাউকে দেখিস না, নাকি মিথিলার মতো তুই ও কানা

ইহান হেসে বল্লো- তুই ও না অরু,মিথিলা বুঝি কানা,,আর তুই ভালো করেই জানিস সে ছোট্ট থেকে মিথিলার প্রতি আমার দূর্বলতা আছে,, যদি আর কাউকে দেখার হতো অনেক আগেই দেখতাম

ইহানের কথা শেষ না হতেই মিথিলা ফিরে এলো
মিথিলা- কিরে তোরা কি নিয়ে আলাপ করছিলি

অরনি- না এমনি

মিথিলা- কবিতা টা একদম ভালো হয়নিরে, তোদের মনের মতো হয়নি নিশ্চয়ই

ইহান- থাক যে সব সময় ভালো করে তার মুখে এমন কথাই শুনা যায়

অরনি- এই তো সার্টিফিকেট পেয়ে গেছিস আর কি

এহান উঠে গেলো ওদের মাঝে থেকে

ইহান- হ্যালো ভাই ও বোনেরা এখন আপনাদের মাঝে নাচ নিয়ে আসছে অরনি চৌধুরি
অরনি চলে গেলো
নাচ শুরু হলো, সবাই নাচ মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করলো, এ ভাবে একে একে সবাই অংশ নিলো

ইহান এবার বিদায় নিতে এনান্স করতে এলো
ইহান- দেখতে দেখতে আমরা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায় চলে এসেছি, কিন্তু আমার আরেকটি কথা থেকে যায়,, শুধু যে আমার তা নয় আমাদের এখানে প্রায় অর্ধেক ভাই বোনদের কথা এটা, আমি সবার পক্ষ থেকে বলছি
মিথিলা প্লিজ তুমি সবার জন্য একটি গান ধরো

কথাটা শুনেই মিথিলা লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো,রাগের গজ গজ করতে করতে বল্লো
– মানে কি এই সবের আমি গান গাইবো? নো য়ে,আমি গান একেবারেই পারি না,

অরনি- মিথিলা কথা টা শুধু আমাদের নয় স্কুলের অন্য ভাই বোনদের ও, তুই সবাইকে এ ভাবে চুপ করাতে পারবি না

মিথিলা- দেখ অরু আমি গান পারি না কোখনো গাইনি,তা ছাড়া আগে বললে প্রস্তুতি নিয়ে আসতাম,এখন?

রাহি- আগে বললে তুই কিছুতেই রাজি হতি না

ইহান আবার মিথিলার নাম এনাউন্স করলো
– আফরিনা মিথিলাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করছি,প্লিজ কাম মিথিলা

সাম্মি- দেখ সবাই চায় তুই একটা গান করবি এভাবে সবার আনন্দ মাটি করতে পারিস না

অরনি- দেখ আজকে আমাদের স্কুল জীবনের এই শেষ অনুষ্ঠান, এই অনুষ্ঠানে তুই যদি বেসুরে গান করিস,সেটা ও আমাদের জন্য স্মৃতি হয়ে থাকবে প্লিজ

নির্ঝরিণী – আপি কিছু মনে করো না,এ ভাবে সবার কথা উপেক্ষা করা তোমার ঠিক হবে না, একটা গান ই তো বেশি কিছুতো নয়

মিথিলা- ওকে ফাইন যাচ্ছি

ইহান- এখন আপনাদের মাঝে গান নিয়ে আসছে আফরিনা মিথিলা

মিথিলা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বল্লো
– হ্যালো বন্ধুরা আমি সত্যি কোন দিন গান করিনি তবু ও তোমরা শুনতে চাইছো,আমি অবশ্যই গাইবো,কিন্তু খারাপ হলে কেউ হাসবে না ওকে

মিথিলা একটুক্ষণ চুপ করলো
কি গাইবো বুঝতেই পারছি না, তার পর চোখ বন্ধ করে কিছু একটা মনে করে, চোখ বন্ধ রেখে গেয়ে উঠলো

“কথা হবে ফোনে ফোনে, হ্যাংগ আউট টা ফুডজোনে
সময়ের খেয়াল টা আর রবে না
সব নতুন বন্ধু হবে স্মৃতি সব পড়ে রবে মনে করতে কেউ তো আর চাইবে না
সব কিছু হবে রংগিন সামলানোটা বেশ কঠিন,কেউ তো আর পিছনে ফিরে চাইবে না
হুট করে কলেজ এসে লুট করে নিয়ে গেলো বেস্ট ফ্রেন্ড নাম সেই যন্ত্রনা
পুরোনো সেই স্মৃতি গুলো আর ফিরে পাবো না,পুরোনো লাস্ট ব্যাঞ্চ টা তেও আর বসা হবে না

আধুনিকা মেয়ে হবো সারাদিন ক্রাশ খাবো,পুরোনো গুলোর খোজ নিবো না
বয়ফ্রেন্ডের নাম্বার পেয়ে শুধু শুধু কল দিয়ে বিরক্ত করতে ভুল হবে না
যা ছিলো সবই ফাকি দিন শেষে এসে দেখি পড়া শুনা কিছু আর হলো না
দূর কিছু হলো নাকি জীবন আরও দেখা বাকি আগামি কাল পড়তে ভুল হবে না
এ জীবনে আগামিকাল কখনোই এলো না

যেই গেম খেলতে আসি আম্মু এলে পড়তে বসি,হোমওয়ার্ক টা আজ ও করা হলো না
যখন আমি স্কুলে ছিলাম ছেলেটিকে দেখেছিলাম
ভালোবাসি বলা আর হলো না
সেদিন ও দেখেছি তাকে অন্যকে কাছে ডাকে আমাকে সে যে আর চিনে না,,
তবু তাকে ভালোবাসি ডাকলে সে যে চলে আসি কিন্তু সে ডাকা আর হলো না
স্কুলের সে দিন গুলো ফিরে তো পাবো না
পুরোনো সে স্মৃতি গুলো আর দেখা হবে না”

মিথিলার গান গাওয়া শেষ কিন্তু চারি দিকে নিরাবতা,কারো মুখে কোন কথা নেই মনে হয় কেউ এ জগতে নেই,ইহান স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টি মিথিলার দিকে,

ঠিক সে সময় শিক্ষক সারির মধ্যে থেকে একজন শিক্ষক উঠে এলো মিথিলার কাছে,,
মিথিলা পুরো সময় চোখ বন্ধ করেই ছিলো,গান শেষ হতেই চোখ খুল্লো কিন্তু সবার এমন নিরাবতা দেখে ও ভড়কে গেছে হয়তো গান ভালো হয়নি তাই সবাই এমন বসে আছে,
রহিম স্যার কে উঠে আসতে দেখে মিথিলা আর ও ভয় পেয়ে গেছে পুরো স্কুল জীবনে রহিম স্যারকে ভয় করে আসছে মিথিলা কি যে রাশ ভারি স্যারের কি বলবো,

রহিম স্যার মিথিলার কাছে এসে বল্লো
– মা আজ এই স্কুল থেকে তোদের বিদায় বেলা,তবে আজকের এই মুহুর্তটা সব সময় মনে থাকবে,,

স্যারের এমন মিষ্টি কথা শুনে মিথিলার গলা শুকিয়ে গেলো,স্যার এই সব কি বলছে এই প্রথম স্যারকে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখলাম

রহিম স্যারর- এই ইহান মাইক্রো ফোনটা দিয়ে যাও

স্যাররের ডাকে ইহানে তনয়তা ভাংলো,ইহান মাইক্রোফোন স্যার কে দিলো

রহিম স্যার-দর্শক সারিতে বসে থাকা ছাত্র ছাত্রী দের বলছি,তোমরা এতো নিরব কেনো,,আমাদে প্রিয়ো ছাত্রী, এন্ড তোমাদের প্রিয়ো বোন, সবার প্রিয়ো আফরিনা মিথিলা এতো সুন্দর একটা গান গেয়ে আজকের দিন টা কে স্বরনিয় করেছে,তার জন্য একটা হাত তালি তো চাই,কি হলো সবাই ঝোরে হাত তালি দাও

করতালিতে চারিদিকে মুখর হয়ে উঠলো,মিথিলা গিয়ে তার সিটে বসলো

নির্ঝরিণী -আপু দেখলে তো আমার গান একটু ধৈর্য্য ধরে শুনাতে আজ তোমার কতো লাভ হয়েছে

মিথিলা- হুম সেটাই,কোন গান মনে আসছিলো না,তার পর তোর কাছে থেকে শুনা এই গান টা মনে এসে গেলো

অরণি – হুম এই গান টা আমি ও আগে শুনেছি, কিন্তু তোর মতো করে এতো ভেবে গানের লাইন চেঞ্জ করার কথা মাথায় আসেনি

রাহি- হা মিথিলা খুব ভালো চেঞ্জ এনেছিস তুই গান টা তে,,

সাম্মি- তোর গান টা সবার মনে গেঁথে গেছে

মিথিলা- গান টা আমার নয়,তবে আমি যেহেতু গান টা নির্ঝরিণীর কাছে শুনেছি সেহেতু বলতে পারছি না গানটার লেখক এন্ড কণ্ঠশিল্পী কে,

ওদের কথার মাঝে যোগ দিলো ইহান
– আমি তো বাংলা গান শুনি না কিন্তু বাংলা গান যে এতো টা হৃদয় ছুঁয়ে যায় তা এই কিছুক্ষন আগে বুঝলাম

মিথিলা- ওকে এবার তা হলে বাড়ি যেতে হয়,

ইহান- আর একটু দাড়া একটা গ্রুপ ছবি তুলবো

নির্ঝরিণী – ছবি টা আমি শুট করবো,আমি
কিন্তু আপনাদের মাঝের নই
ইহান- ওকে

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

.খেলাঘর পর্ব-৩

0
.খেলাঘর পর্ব-৩
.খেলাঘর পর্ব-৩

.খেলাঘর পর্ব-৩
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা বই নিয়ে শুয়ে পড়লো
শুয়ে শুয়ে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে
নির্ঝরিণী এমন সময় মিথিলার রুমে এলো হাতে মোবাইল

নির্ঝরিণী – আপি তোমার ফোন

মিথিলা- কে কল করেছে?

নির্ঝরিণী – ইহান নামের কেউ একজন

মিথিলা- ওহ, দে হ্যালো ইহান বল,কেনো কল করেছিস,,(মিথিলা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো)

ইহান- মিথি তুই মোবাইলে কথা বলতে জানিস না?

মিথিলা- কেনো আমার কথা গুলো কি কথা নয়?

ইহান- মোবাইলে কথা বলার শুরুতে কিছু ফর্মালিটি আছে সেগুলা মনে হয় তুই জানিস না

মিথিলা- দেখ ইহান শুধু শুধু কথা প্যাচিয়ে লাভ নেই কেন ফোন করেছিস বল

ইহান- ওকে তোর তো আবার পড়ার ডিস্টার্ব হচ্ছে, বাই দ্যা য়ে, কাল আসছিস তো

মিথিলা শান্ত আর কঠোর কন্ঠে বল্লো
– আমি তো সেদিন বলে এসেছি যাবো তা হলে আজ আবার কল কেনো

ইহান- স্যরি দোস্ত রাগ করিস না এমনি মনে করিয়ে দিলাম তোকে আচ্ছা রাখছি বাই

ইহান কল কেটে দিয়ে অনেক্ষন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলো

নিজে নিজেই মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন ইহান
– মিস চশমিশ কেনো বুঝো না ভালোবাসি তোমায়, তাই তো শুধু বাহানা খুঁজি তোমার পাশে থাকার
ইসস যদি বই হতে পারতাম তা হলে সারাক্ষন তুমি আমার উপর চোখ রেখে বসে থাকতে
উফফ ভাবতেই মন টা আনন্দে নেচে উঠছে কিন্তু আফসোস তুমি……

ইহান কথা শেষ করতে পারলো না কেউ তার কান টেনে ধরলো

ইহান- উফফ মা লাগছে তো

রাইমা চৌধুরী- লাগুক, মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কি ভিড় ভিড় করছিলি বলতো

ইহান- নাহ মানে এই আর কি,তোমার ভবিষ্যৎ বৌমার সাথে কল্পনায় কথা বলছিলাম

রাইমা চৌধুরি- ওহ তাই!বল নারে আমার বৌমা দেখতে কেমন?

ইহান- নো মাই ডিয়ার মোম তোমাকে এখনি কিছু বলতে পারবো না,তার আগে তোমার ভবিষ্যৎ বৌমার মন জিততে দাও

রাইমা চৌধুরি- সে কিরে এখন ও সে জানে না তাই তো বলি হাদারাম ছেলেটা মোবাইলকে কেনো বলছে

ইহান – মা তুমি আমাকে হাদারাম বললে(অভিমান মেশানো কন্ঠ ইহানের)

রাইমা চৌধুরি- ঠিক আছে হাদারাম কে আর হাদারাম বলবো না,এক শর্তে

ইহান খুশি হয়ে বল্লো
-কি শর্ত

রাইমা চৌধুরি- এস,এস,সি,এন্ড এইচ, এস, সি, দুটোতেই ভালো রেজাল্ট এন্ড অস্ট্রিয়া থেকে এম বি এ কমপ্লিট করতে পারলেই আর হাদারাম বলবো না, আর হা তার সাথে আমার বৌ মাকে ও পটাতে হবে

ইহান মুখ টা কালো করে বল্লো,এতো কঠিন শর্ত তুমি দিতে পারলে মা, আমি না তোমার একটা মাত্র ছেলে

রাইমা চৌধুরি- হাহ হাহ তা ঠিক, কিন্তু আমার একটা মাত্র ছেলের বোন আজ অস্ট্রিয়া থেকে ফিরছে তাকে তো এয়ারপোর্টে আনতে যাওয়ার কথা তার ভাইয়ের তাই না

ইহান- ওহ তাই সত্যি ভুলেই গিয়ে ছিলাম,কিন্তু আব্বু তো আপুর সাথেই আসবে মা, আমার যেয়ে কাজ নেই

রাইমা চৌধুরি- তোর আব্বু আসছে না, জরুরী মিটিং এ এটেন্ড করতে হয়েছে তাকে,তাই নায়া চলে এসেছে

রাইমা চৌধুরি, আর রায়হান চৌধুরির দুই সন্তান, ইহান চৌধুরি এন্ড নায়া চৌধুরি, নায়া অস্ট্রিয়া থেকে পড়াশুনা কমপ্লিট করে পাঁচ বছর পর আজ দেশে ফিরছে, আর তাই নায়াকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে যাচ্ছে ইহান

ইহান- ওকে মা দু মিনিট সময় দাও আমি রেডি হয়ে আসছি
ইহান তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লো

রাইমা চৌধুরী ছেলের যাওয়ার পথে চেয়ে আছে, ছেলেটা হয়েছে ঠিক বাবার মতো,

হারিয়ে গেলো রাইমা চৌধুরি অতিতের মাঝে যেখানে তাদের প্রথম দেখা হয়, তখন রায়হান চৌধুরি ইন্টার এক্সাম দিচ্ছে আর সেই সময় রাইমা চৌধুরি সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে ,, প্রথম দেখা, প্রথম ভালো লাগা,তার পর প্রকাশ করা অনুভূতি গুলো কোন কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না,অনেক প্রতিকুলতা ফেরিয়ে তাদের এক হওয়া,আর তাদের ভালোবাসার সম্পদ,নায়া আর ইহান,

রাইমা চৌধুরি বাস্তবে ফিরে এলো সত্যি সময় গুলো কেমন স্বপ্নের মতো ফেরিয়ে গেলো,
রাইমা চৌধুরি মোবাইল হাতে নিলেন, একটু খানি কথা বলে নিই রায়হানের সাথে,তাকে জিজ্ঞাস করবে আজ ও কি সেই প্রথম দিনের কথা মনে রেখেছে

মিথিলা অনেক রাত অবদি পড়েছে কাল আবার পড়তে পারবে না পুরো দিন অনুষ্ঠানে থাকতে হবে,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ও আবার পড়তে বসলো স্কুলে যাওয়ার আগে এই সময় টা কিছুতেই নষ্ট করতে চায় না মিথিলা,

আয়ান আর নির্ঝরিণী দুজনেই মিথিলার রুমে ডুকেছে

আয়ান- আপি জানিস নির্ঝরিণী অনেক সুন্দর একটা গান শিখেছে,

নির্ঝরিণী – আপু গান শুনবি তুই, আমি গাইবো?

মিথিলা বিরক্তি নিয়ে দুজনের দিকে তাকায়
– তোরা দুজন কি কখনো আমার পিছু ছাড়বি না, দেখছিস তো পড়ছি

নির্ঝরিণী হাসি মুখটা মলিন করেন বল্লো
– আপু তুমি খুব খারাপ কখনো আমাদের সাথে ভালো করে কথা বলো না

সত্যি আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করতে আসিনি একটা গান শুনিয়ে চলে যেতাম

আয়ান- নির্ঝর ঠিক বলেছো আপু কি হয় আমাদের সাথে একটু ভালো করে কথা বললে,বলতে বলতে কেঁদে ফেল্লো আয়ান

মিথিলা -ওকে,ওকে কি গান শুনাবি তাড়া তাড়ি শুনা

নির্ঝরিণী খুশি হয়ে বল্লো ওকে শুন তা হলে

‘এই মন যা বলে বলুক
আমি তোমারি হবো,
চোখ যা দেখে দেখুক
আমি তোমাকেই দেখবো ‘

নির্ঝরিণী গান গেয়ে শেষ করে বল্লো কেমন হয়েছে আপু

মিথিলা- ভালো

নির্ঝরিণী – আরেকটা বলি

মিথিলা- হুম বল

নির্ঝরিণীর গান শেষ হওয়ার আগেই মিথিলা বল্লো এবার থাম স্কুলের সময় হয়ে গেছে, আজ স্কুলে অনুষ্ঠান আছে একটু তাড়া তাড়ি যেতে হবে

নির্ঝরিণী – ওহ আপু তা হলে তো তোর আজ ক্লাস হবে না তাই তো

মিথিলা চুল আছড়াতে আছড়াতে বল্লো
-হুম, কেনো

নির্ঝরিণী – আপু আমাকে নে না সাথে

মিথিলা- মানে তোর ক্লাস আছে না,

নির্ঝরিণী – আপি মাত্র ক্লাস সিক্সে উঠেছি এখনি তোমরা সারা দিন পড়া পড়া বলে আটকে ধরে রাখো কেমন লাগে বলো তো

মিথিলা- ঠিক আছে আয়,তবে খবর দার করে দিলাম,একদম চুপ করে আমার সাথে বসে থাকবি চালাকি করে কারো সাথে বক বক করবি না ওকে

নির্ঝরিণী – ওকে সুইট আপি

আয়ান এতোক্ষন চুপ করে কথা শুনছিলো, এবার সে প্রতিবাদ করলো
– শুধু নিজের বোনকে সাথে নিলে হবে না আমি কি নদিতে ভেসে আসছি নাকি হা, আমি ও যাবো

মিথিলা- আয়ায়ায়ানন

আয়ান- চোখ রাংগিয়ে তাকালে ও লাব নেই আমি যাবো ই

মিথিলা- বললাম না তুই যাবি না, যা স্কুলে যা, পড়া শুনা কিছুই করে না, সারাক্ষন পাকনামি

আয়ান- আপু তুমি আমায় একটু ও আদর করো না (গাল ফুলিয়ে বল্লো কথা টা)

মিথিলা- তোরা দুজন কিরে? সারাক্ষন আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করবি আর আমি তা মেনে নিবো,মা,মা

ফাতেমা বেগম ছুটে এলো
– কিরে মিথি এতো ডাকছিস কেনো

মিথিলা- মা তুমি আয়ান কে স্কুলে যেতে বলো,কোন এক্সকিউজ যেন না দেখায়

ফাতেমা বেগম- আয়ান দেরি হয়ে যাচ্ছে না,যা স্কুলের জন্য রেডি হও

আয়ান মুখ ভার করে চলে গেলো
মিথিলা আর নির্ঝরিণী বেরিয়ে পড়লো,

ইহান অনেক আগেই চলে এসছে স্কুলে,আজকের অনুষ্ঠান হোস্ট করবে ইহান
তাই ওর দায়িত্ব অনেক

অরনি ইহান কে হ্যাল্প করছে

ইহান- অরু এই মিথি টা কখন আসবে রে

অরনি- জানি নারে ইহু,একটা কল দিয়ে দেখ বেরিয়েছে কি না

ইহান- নারে কল দিলে রেগে যাবে, অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই বুঝলি

অরনি- আচ্ছা ইহু তুই মিথি কে বলছিস না কেনো যে তুই ওকে পছন্দ করিস,শুধু কি পছন্দ একে বারে লাভ এট ফাস্ট সাইট,যাকে বলে

ইহান- অরু মিথিলাকে বলে কোন লাভ হবে না উলটো ভুল বুঝবে, ওর জগতে ওর বই আর চশমা ছাড়া আর কিছু নেই

এমন সময় রাহি এসে বল্লো কিরে ইহু, অরু তোরা এখানে ওদিকে কি হয়েছে জানিস
ইহান- কি হয়েছে

রাহি- মিথিলা এসেছে,ওর বোন কে নিয়ে

অরনি অবাক হলো বল্লো কি বলছিস মিথিলা নিয়ে এসেছে তার বোন কে বিশ্বাস হচ্ছে না,চলতো ইহু দেখে আসি

ইহান আর অরনি চল্লো মিথিলার কাছে

অরনি দৌড়ে গিয়ে মিথিলা কে বল্লো আরে মিথি তুই এসেছিস তোর জন্য ই অপেক্ষা করেছিলাম

মিথিলা- আমি তো বলেছি আসবো,আবার অপেক্ষা করার কি আছে অরু

সাম্মি- এই মিথি তুই কি আমাদের নতুন প্লানের কথা জানিস

মিথিলা- আবার কি প্লান

অরনি- আমরা সবাই আজ শাড়ি পরবো

মিথিলা কথা টা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো,
– প্লিজ অরু আমাকে তোরা শাড়ি পরতে বলিস না আমি পারবো না

রাহি- কি বলছিস আমরা পরবো আর তুই পরবি না

নির্ঝরিণী – আপু তোমাকে কোন দিন শাড়ি পরতে দেখিনি,শাড়ি পরলে কেমন লাগে জানি ও না প্লিজ আপু

মিথিলা- নির্ঝর, আর একবার পাকনামি করলে থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো,মিথিলার রাগে চোখ দিয়ে আগুন জ্বরছে

নির্ঝরিণী লজ্জায় অপমানে উঠে চলে গেলো
আপু তার বন্ধুদের সামনে আমাকে এই ভাবে বল্লো,ছোট বলে কি আমার মান সম্মান নেই নাকি,নির্ঝরিণী ছুপি ছুপি স্কুলের পিছনে এসে কাঁদছে, মিথিলার সামনে কিছুতেই কাঁদতে চায়নি সে

মিথিলার রাগ দেখে সবাই স্তম্ভিত কারো মুখে কোন কথা নেই
ইহান ভাবছে সামান্য শাড়ি পরতে বলাতে মিথিলা এই ভাবে রিয়েক্ট করলো কেনো

অরণি আর কিছু বল্লো না

to be continue

ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

খেলাঘর পর্ব-২

0
খেলাঘর পর্ব-২
খেলাঘর পর্ব-২

খেলাঘর পর্ব-২
লেখা-সুলতানা ইতি

মিথিলা আর অরনি বেরিয়ে পড়লো
যাওয়ার আগে মিথিলা আয়ান আর নির্ঝরিণী কে স্কুলে যেতে বল্লো, দুই টা পড়া চোর

অরনি- এই বয়সে একটু আধটু পড়া চোর হতে হয়, বুঝিস না এক সময় আমরা ও এমন ছিলাম

মিথিলা- তা ঠিক তবে আমরা ওদের মতো এমন ছিলাম না
কথা বলতে বলতে এরা স্কুলে এসে গেলো

সবাই মিলে বৈঠক বসলো অনুষ্ঠানে কে কি করবে
ইহান বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় মিথিলাদের উপর ইহানের চোখ পড়ে

ইহান- ঐ তো মিথিলা এসে গেছে,আয় বস তোদের জন্য ই অপেক্ষা করছিলাম

মিথিলা আর অরনি বসতে বসতে বল্লো কি নিয়ে আজকের বৈঠক

সাম্মি কিছু বলার আগেই ইহান বলে
– অনুষ্ঠানে কে কি করবে, সেটা নিয়ে

অরনি- কে কি করবে মানে?

সাম্মি- নাচ,গান,কবিতা আবৃতি,বক্তিতা,এগুলা আর কি কে কোন টা নিবি বল

অরনি- আমি তো নাচবো

ইহান- আমি বক্তিতা দিবো

সাম্মি- তা হলে তো হয়েই গেলো সবাই সবার টা বেছে নিলো কিন্তু মিথিলা কি নিবে সেটা তো বলেনি

মিথিলা সবার পাশে বসেই বইয়ের মাঝে ডুবে গেলো তার পাশে যে এতো আলোচনা হচ্ছে,তা মিথিলার কান অব্দি পৌছায়নি

অরনি মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– মিথিলা আর এই জগতে নেই বুঝলি রে ইহু

ইহান- এই জগতে নেই মানে কি?বল ও এখন পড়ার মাঝে ডুবে গেছে

অরনি টিপ্পনি কেটে বল্লো
– কেনো এই জগতে নেই বলতে তুই মরে যাওয়া বুঝেছিস নাকি,ভাভাহ ইহু তোর দেখি মিথিলার জন্য খুবইই….

অরনির কথার মাঝে রাহি বল্লো
– কিন্তু তোরা যাকে নিয়ে এতো তর্ক করছিস সে তো শুনছে ই না

এই বলে রাহি মিথিলার বইটা ছো মেরে নিয়ে নিলো

মিথিলা- রাহি ভালো হচ্ছে না বই দে বলছি

অরনি- মিথি আমরা এখানে আলোচনা করছি,আর তুই বই পড়ছিস,এটা কেমন লাগে বলতো

মিথিলা ওকে ফাইন বল কিসের আলোচনা আর আমাকে কি করতে হবে

সাম্মি- অনুষ্ঠানে তুই কিসে অংশ
নিবি,নাচ,গান,কবিতা আবৃতি,বক্তিতা,কোন টা বল

মিথিলা- কোন টা ই নিচ্ছি না

অরনি- তা বললে হয় নাকি সবাই নিয়েছে তোকে ও নিতে হবে

মিথিলা- সবাইকে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে এমন কোন কথা নেই বুঝলি

রাহি- প্লিজ মিথি এমন করিস না

অরনি- মিথি দোস্ত তুই কোন কিছুতে না থাকলে এতিম এতিম লাগে নিজেকে, আচ্ছা ঠিক আছে তুই বক্তিতা দিস কেমন

মিথিলা- নো য়ে আমি তোদের এই সবের মাঝে নেই

ইহান- মিথিলা আমার রিকুয়েস্ট তুই কবিতা আবৃতি করবি

মিথিলা কিছুক্ষন ইহানের দিকে তাকিয়ে থেকে রাজি হয়ে গেলো কেনো জানি ইহানের কথা সে ফেলতে পারেনি

মিথিলা ইহানের কথায় রাজি হওয়াতে সবাই মুখ টিপে হাসছে

মিথিলা সবার দিকে চোখ গুরিয়ে বল্লো
– তোরা হাসছিস কেনো

সাম্মি- এমনি আর কি

অরনি- ইহু তোর কি ভাগ্যরে, তোর এক কোথায় মিথিলা রাজি হয়ে গেলো

রাহি- ইহু আমার তো মনে হয় তোর এক কথায় মিথিলা ধরবে হাজার বাজি,হি হি হি

মিথিলা – তোরা এই সব কি শুরু করেছিস, যাহ আমি কোন কিছুর মধ্যে ই নেই হয়েছে শান্তি

মিথিলার কথা শুনে সবাই এক সাথে স্যরি বল্লো
ইহান- মিথিলা এভাবে রিয়েক্ট করার মতো কিছু হয়নি বুঝলি, ফ্রেন্ড এই রকম একটু মজা করতেই পারে এতে এতো টা সিরিয়েস না হলেই হয়

মিথিলা- আমি বাসায় যাবো

রাহি- সে কি ক্লাস করবি না

মিথিলা- নাহ তোরা কর
বলে মিথিলা হন হন করে হাটতে শুরু করলো

মিথিলা চলে যাওয়ার পরে ইহান বল্লো
– তোরা সব কিছুতেই একটু বেশি বুঝিস বুঝলি
তোরা তো জানিস মিথিলা একটু অন্যরকম,তবু ও তোরা…

অরনি- আমরা কি মিথ্যা বলেছি ইহান,এটা তো সত্যি তুই মিথি কে পছন্দ করিস

ইহান- প্লিজ তোদের কাছে হাত জোড় করছি এই কথা মিথিলার সামনে বলিস না

এই বলে ইহান ও চলে গেলে মিথিলার পিছু পিছু
মিথিলা রিক্সাসার জন্য দাঁড়িয়ে আছে

ইহান গিয়ে মিথিলার পাশে দাড়ালো
ইহান- মিথিলা তুই ওদের কথায় কিছু মনে করিস না

মিথিলা- নাহ কিছু মনে করিনি

ইহান- তা হলে চল আমরা ক্লাসে যাই

মিথিলা- নারে বাসায় যাবো

ইহান- ওকে পরশু আসছিস তো

মিথিলা- পরশু কি অনুষ্ঠান?
ইহান- হুম

মিথিলা- আচ্ছা দেখি

ইহান- প্লিজ দোস্ত আসিস কেমন, দেখ পরিক্ষার পর কে কোথায় যায় কোন ঠিক নেই, তাই শেষ বার সবাই মিলে একটু আনন্দ করি কি বলিস

মিথিলা- আচ্ছা যাহ আসবো ,
এই বলে মিথিলা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো রিক্সা চলছে

ইহান- ইয়েস,যাই অরনিকে খবর টা দিই

মিথিলা বাসায় চলে আসলো এসে দেখে বাসার পরিবেশ টা থম থমে, সবার মুখ ভার বড় আপু ও এসেছে তার মুখ ভার কি হয়েছে মিথিলা কিছু বুঝতে পারেনি

মিথিলা জানে এখন কাউকে জিজ্ঞাস করে ও উত্তর পাবে না তাই সে স্টাডি রুমের দিকে গেলো
ফাতেমা বেগম স্টাডি রুমে গিয়ে বল্লো
– কিরে এসে ই দেখি আবার বইয়ের মাঝে ডুবে গেলি

মিথিলা মায়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– কিছু বলবে মা

ফাতেমা বেগম- হুম, চুলায় রান্না বসিয়েছি,রান্না টা দেখিস,আমি আর তোর বাবা একটু বেরুবো
মিথিলা আর কিছু বল্লো না
বাবা, মা, দুজনেই যখন যাবে তখন নিশ্চই কোন ইমপ্রটেন্ট কাজ আছে

মিথিলা কিচেনের দিকে গেলো
কিচেনে আগে থেকে জিমি ছিলো

মিথিলা- কিরে আপু দুলা ভাই এলো না মেহের কে ও আনলি না কেনো

জিমি কিছু বল্লো না
প্রশ্ন পালটিয়ে করলো
– তোর পড়া শুনা কতো দূর মিথি

মিথিলা- এই তো পড়তে পারলাম আর কই, এক বার একজনে এসে ডিস্টার্ব করছে

জিমি- ওহ, ঠিক আছে, তুই যা পড়তে বস আমি এদিকা টা দেখছি

মিথিলা- না ঠিক আছে আমি তোমাকে হ্যাল্প করি
আপু বলো না কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেনো, মেহের কে ছাড়া তো তুমি কোথাও যাও না তা হলে

জিমি – সে অনেক কথা পরে শুনিস
দুপুর পার হয়ে যাচ্ছে
এমন সময় এলো মাসুম ফারুকি আর ফাতেমা বেগম

জিমি- মা,বাবা তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসো টেবিলে খাবার দিচ্ছি

ফাতেমা বেগম- আয়ান আর নির্ঝর এসেছে

জিমি- না ওরা আসেনি
মিথিলা জিমি সহ সবাই খেতে বসলো
খেতে খেতে মাসুম ফারুকি মিথিলা কে বল্লো
-মা তোর বিয়ের জন্য ব্যাংকে কিছু টাকা রেখেছিলাম, এখন জামাই জিমি কে পাঠিয়েছে টাকার জন্য তাই ওগুলা তুলে আনতে হলো,
তুই কিছু মনে করিস নি তো

মিথিলা অনেক্ষন চুপ থেকে বল্লো
– বাবা টাকা গুলো আমার বিয়ের জন্য রেখেছো বলে জানতে চাইছিনা,কৌতূহল থেকে বলছি, দুলাভাই এখন টাকা দিয়ে কি করবে

মাসুম ফারুকি- আগের ব্যাবসা টা তো ওর লস হয়েছে নতুন করে ব্যাবসা শুরু করবে তাই

মিথিলা শান্ত কন্ঠে বল্লো
– তো প্রতিবার কিছু না কিছুর বাহানা দিয়ে ও টাকা নেয় আমাদের থেকে, এ নিয়ে ওকে চার বার টাকা দেয়া হয়েছে এই টাকা গুলো নিয়ে উনি যে আর কখনো টাকার জন্য আপু কে পাঠাবে না সেটার কি গ্রান্টি আছে বল্লো

মাসুম ফারুকি কিছু বলার আগে জিমি বল্লো
– এবারে দেখিস ঠিক ভালো হবে,হয়তো আর আসতে হবে না আমাকে

মিথিলা- আপু তুমি প্রতিবার এই কথা বলেছো, শুনো বাবা টাকা আর আপু কোন টা ই ঐ লোকের কাছে পাঠানোর দরকার নেই বুঝলে

মিথিলার কথা শুনে জিমি খাবার বন্ধ করে উঠে দাড়ালো আতংকিত কন্ঠে বল্লো
-তুই কি বলতে চাইছিস মিথি, আমি ওর কাছে না গেলে ও টাকার জন্য আরেক টা বিয়ে করবে

মিথিলা- করুক না আরেক টা বিয়ে তার পর দেখা যাবে

জিমি- আমি আমার মেহের নিগারকে রেখে এসেছি আমি ওকে ছাড়া থাকবো কি করে বলতে বলতে কেদে দিলো জিমি

মিথিলা- দেখ মেহের ছোট দুলা ভাই ওকে রাখতে পারবে না, দুই একদিন রেখে ঠিক দিয়ে যাবে

জিমি চোখের পানি মুছে বাবা কে বল্লো
– বাবা তুমি এখনি আমাকে টাকা দাও আমি এখন ই যাবো

ফাতেমা বেগম- তুই এমন রেগে যাচ্ছিস কেনো জিমি মিথিলা তোর ছোট বোন, ছোট জ্ঞান নিয়ে ও একটা কথা বলেছে,ও বললে ই কি আমরা শুনবো নাকি,তুই বস খেয়ে নে তার পর যাবি

মিথিলা আর একটি কথা ও বলেনি জানে কথা বললে ও কোন লাভ হবে না
মিথিলা খাওয়া শেষ করে আবার স্টাডি রুমে গেলো
মাথা থেকে সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে পড়ায় মন দিলো

-আপি আবার পড়তে বসেছিস?

মিথিলা খুব বিরক্তি নিয়ে নির্ঝরিণীর দিকে তাকায়
– কিছু বলবি

নির্ঝরিণী – হুম,শুনলাম বড় আপু এসেছে, কিন্তু কোথাও দেখলাম না যে

মিথিলা- হয়তো চলে গেছে

নির্ঝরিণী ভ্রু কুঁচকে বল্লো
– হয়তো

মিথিলা এবার রেগে যায়
– নির্ঝরিণী তুই কি আমার পড়ার ডিস্টার্ব করতে আসছিস,যাহ এখান থেকে

নির্ঝরিণী – নাহ, তোমার চোখ কে একটু বিশ্রাম দিতে এসছি

মিথিলা- নির্ঝরিণীইইইইইই
– ওকে ওকে, মাই ডিয়ার চশমিশ আপি,তুমি পড়ো মন দিয়ে পড়ো আমি গেলাম

মিথিলা- উফফফ এই নির্ঝরিণী টা কোন দিন শুধরাবে না
মিথিলা আবার পড়াতে মন দিলো

মাসুম ফারুকি তার বৈঠক খানায় বসে আছেন চিন্তিত মুখে
ফাতেমা বেগম গিয়ে স্বামির পাশে বসলো
– কি ভাবছো তুমি

মাসুম ফারুকি- ভাবছি অনেক ধার ধেনা করে জিমি কে বিয়ে দিয়েছে, আফসোস একটা ভালো ছেলের হাতে দিতে পারিনি মেয়ে টা কে

ফাতেমা বেগম- কি করবে বলো চেষ্টা তো কম করোনি,আমাদের মেয়ের তকদিরে হয়তো এমন টা ই ছিলো, তুমি চিন্তা করে শরির খারাপ করো না,

মাসুম ফারুকি- হুম সামান্য একটা চাকরি দিয়েতো আর সন্তানদের সমান ভাবে সব দেয়া যায় না বলো,

-বাবা কে বল্লো তুমি আমাদের সমান ভাবে সব দিতে পারো নি,,আমরা কোন ভাই বোন কি কখনো তোমার কাছে নালিশ করেছি এই নিয়ে(বলতে বলতে বৈঠক খানায় প্রবেশ করলো নির্ঝরিণী)

মাসুম ফারুকি- হুম এই দিক থেকে আমি খুব লাকি,আমার তিন রাজকন্যা কোন দিন আমার কাছে কোন কিছুর অভিযোগ করেনি

নির্ঝরিণী – তাই তো বলি বাবা চিন্তা করো না,শরির খারাপ হবে,পরে আমাদের কি হবে বলতো

মাসুম ফারুকি, স্বস্নেহে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন

আয়ান এসে বল্লো
– বাবা আমি দেখেছি তুমি ঐ শাঁকচুন্নি কে আদর করেছো, আমি তোমার একটা মাত্র ছেলে বাবা কোথায় আমাকে বেশি আদর করবে তা না তুমি শাঁকচুন্নি দের বেশি আদর করো

মাসুম ফারুকি- আয় বাবার কাছে আয়
ফাতেমা বেগম ছেলে মেয়েদের পাগলামি দেখে বল্লো,দুইজন বাবা কে নিয়ে আহ্লাদ করতে এসেছে,আর একজন সারাদিন বইয়ের বিতর ডুবে থাকবে

আয়ান- মা বুক ওয়ার্ম এর কথা বলো না তো,বড় আপু বিয়ের আগে আমাদের নিয়ে গল্প করতো গুরতে যেত,আর ঐ বই ফেত্নি কোন দিন আমাদের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না ঠিক করে

মাসুম ফারুকি- আমার মিথি মা এমনি একটু শান্ত স্বভাবের

নির্ঝরিণী – বাবাহ আবার তুমি মেঝো আপু কে ভালো বললে,যাও তোমার সাথে কথা নেই,

ফাতেমা বেগম- আমি গিয়ে দেখি মিথিলা কি করছে,

আয়ান- দেখ গিয়ে পড়তে পড়তে বইয়ের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে

ফাতেমা বেগম বেরিয়ে এলেন, স্টাডি রুমে এসে দেখে সত্যি ঘুমিয়ে আছে মিথিলা,একটু অবাক হলেন ফাতেমা বেগম এই সময় তো মিথিলা ঘুমায় না তা হলে

মিথিলার গায়ে হাত দিয়ে ফাতেমা বেগম আতকে উঠেন মিথিলার জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে
জ্বর এতো বেশি যে মিথিলার হুস নেই
ফাতেমা বেগম সবাই কে ডেকে আনলেন
মাসুম ফারুকি ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন মিথিলা কে নিয়ে

মিথিলা কে শুইয়ে দিলো বিছানায় এনে
ডাক্তার এসে দেখে গেলো মিথিলা কে
সারা রাত সবাই মিথিলার পাশে জেগে ছিলো

রাতে মিথিলার জ্বর আর ও বেড়ে যায়, জ্বরের ঘোরে মিথিলা বকছে

নির্ঝরিণী হাসছে মিথিলার অবস্থা দেখে

ফাতেমা বেগম মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন
-এতে হাসির কি আছে

নির্ঝরিণী তবু ও হাসি মুখে আয়ান কে বল্লো
– ভাই কান পেতে শুন আপি জ্বরের ঘোরে পড়ছে

আয়ান- হা হা হা বলিস কি দেখি তো
হা হা হা আপি তো সন্ধিবিচ্ছেদ করছে
ফাতেমা বেগম ধমক দিয়ে আয়ান কে আর নির্ঝরিণী কে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলো

তার পর নিজে মেয়ের পাশে শুয়ে পড়লো
মাসুম ফারুকি- তুমি তা হলে আজ এখানেই ঘুমাও আমি বরং যাই
ফাতেমা বেগম – হুম ঠিক আছে

সকাল আট টায় মিথিলার ঘুম ভাংগে জ্বর এখন আর নেই
আয়ান হেসে হেসে জিজ্ঞাস করলো
– কিরে আপি এখন কেমন লাগছে,

মিথিলা- হাসছিস কেনো

নির্ঝরিণী – বারে হাসবে না,তুই জ্বরের মধ্যে থেকে ও পড়তে পারিস

আয়ান – তা ও কি এই সেই পড়া সন্ধিবিচ্ছেদ করছিলি

মিথিলা কিছু বল্লো না,মুখ ঘোমরা করে বসে আছে
ফাতেমা বেগম মিথিলার জন্য নাস্তা নিয়ে এসে দেখলো আয়ানরা মিথিলার রুমে

ফাতেমা বেগম- তোরা এখানে কি করছিস যা এখান থেকে

আয়ান- কিছু করছিনা মা,কিছু বলছিলাম আর কি হি হি হি

ফাতেমা বেগম- আবার হাসছিস যা তো
নির্ঝরী যা এখন,মেয়েটা কে ডিস্টার্ব করিস না তোরা
মুচকি হেসে নির্ঝরিণী আর আয়ান বেরিয়ে গেলো

ফাতেমা বেগম মিথিলা কে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বল্লো
– এখন আর বসে থাকিস না মা,শুয়ে থাক, পরিক্ষার আগে আগে সুস্থ হতে হবে তো

মিথিলা- মা ইংরেজি বই টা দিয়ে যাও তো

ফাতেমা বেগম- এখন পড়তে হবে না মা,একটু চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাক

মিথিলা- ঠিক আছে মা তা হলে বাংলা বই দাও একটু চোখ বুলিয়ে নিবো

ফাতেমা বেগম হেসে।বল্লো
– সত্যি তুই গ্রন্তকীট

মিথিলা- মা তুমি ও
ফাতেমা বেগম বই দিয়ে বল্লো,এই নে আমি যাই কিচেনে কাজ আছে
মিথিলা বই নিয়ে শুয়ে পড়লো

to be continue

খেলাঘর পর্ব-১

0

খেলাঘর পর্ব-১
লেখা- সুলতানা ইতি
ওহ হো মিথিলা খাবার টেবিলে ও বই নিয়ে এলি, প্লিজ খাওয়ার সময় অন্তত বইটা সাথে রাখিস না

মিথিলা- বাবা আর পঁচিশ দিন বাকি পরিক্ষার, বুঝো না কেনো সব পড়া বাকি রয়ে গেছে

কথা হচ্ছে মাসুম ফারুকি আর তার মেয়ে মিথিলার মাঝে,
এর মাঝে যোগ দিলো মিথিলার মা ফাতেমা বেগম
– তোমার মেয়ে সারা বছর গল্প উপন্যাস নিয়ে ব্যাস্ত থাকে এই পরিক্ষা আসলে হুস থাকে না বুঝেছো

মাসুম ফারুকি- আমার মিথিলা মা ই ভালো সব সময় কোন না কোন বই নিয়ে ব্যাস্ত থাকে এটা ভালো না, ভালো তো

ফাতেমা বেগম- তোমার মেয়েরা তোমার কাছে এমনি স্বর্গ, কই তোমার আদরের দুলালি ছোট নির্ঝরিণী এখনো নাস্তার টেবিলে আসেনি,কিছুক্ষন পর এসে বলবে আমার সময় নেই আমি যাই

মাসুম ফারুকি- তুমি তো শুধু আমার মেয়েদের কে ই দেখবা,তোমার রাজপুত্র আয়ান যে এখনো ঘুম থেকে উঠেনি সেটা কে দেখবে

মিথিলা- ওহ মা,বাবা তোমরা থামবে মনোযোগ দিয়ে পড়াটা দেখতে দাও তো

ফাতেমা বেগম-তোমার বিদুষীনি মেয়ের জন্য এখন কথা ও বলা যাবে না

এমন সময় আয়ানের এন্ট্রি
আয়ান- মা, বাবা প্রতিদিন নাস্তার টেবিলে তোমাদের ঝগড়া না হলে হয় না, না

ফাতেমা বেগম ছেলের প্লেটে নাস্তা তুলে দিতে দিতে বল্লো
তোর এক দার্শনিক বোন,আরেক গাইকা বোন তাদের নিয়ে কথা হচ্ছে দেখ আরেকজন খেতে বসেছে তবু ও তার সাথে বই

এবার মিথিলা বই বন্ধ করে দিলো
আর রাগি চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– প্রব্লেম কি তোদের এখন আমি পড়তে ও পারবো না তোদের জন্য

আয়ান – আমি আবার কি করলাম,যা বল্লো মা ই তো তোকে বল্লো,মাকে কিছু বলতে না ফেরে এখন আমাকে নিয়ে ছুটছে হুহ

আমি কিন্তু সবার কথা শুনেছি বিচার টা তা হলে আমিই করি, বলতে বলতে ডাইনিং এ আসলো নির্ঝরিণী

মিথিলা- তোকে এখানে দাদি সাঝতে হবে না, চুপ চাপ খেয়ে পড়তে বস,না পড়ে স্কুলে যেতে পারবি না

নির্ঝরিণী – তুই আর যা ই বলিস আপু আমি আর ভাই তো তোর মতো গ্রন্থকীট হতেই পারবো না

আয়ান- ঠিক বলেছিস নির্ঝরী দেখনা মাত্র এস এস সি পরিক্ষা দিবে, আর এই বয়সে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা উঠেছে

আয়ানের কথার মাঝখানে নির্ঝরিণী বল্লো
-ঠিক বলেছিস ভাই আমি ভাবছি আপু বুড়ো কালে কি করবো বুড়োকালে তো মনে হয় চশমা দিয়ে ও দেখতে পাবে না তখন বলবে আল্লাহ হস্তে আমাকে বই টা পড়ে শুনান না,

নির্ঝরিণীর কথা শেষ হতে ই নাস্থার টেবিলে হাসির ধুম পড়ে গেছে

মিথিলা রাগ করে উঠে গেছে
রুমে এসে মিথিলা ধুম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বালিশে মুখগুজে কান্না শুরু করে দিলো, মিথিলার এই এক অভ্যাস কেউ তাকে নিয়ে হাসা হাসি করে সে সহ্য করতে পারে না, সে আপন হোক আর পর,

মিথিলা চলে যাবার পর খাবার টেবিল একেবারে নিরব হয়ে গেছে নিরাবতা ভাংলো আয়ান
– মা অনেক দিন হয়েছে বড় আপুদের বাসায় যাই না,,,

ফাতেমা বেগম- তো এখন পড়া ফাকি দেয়ার জন্য বড় বোনের বাসায় বেড়ানো ধান্ধা, স্কুল বন্ধ হোক তার পর না হয় জিমির বাড়ি তে যাওয়া যাবে, এখন জিমি আসছে কয়দিন পরে

মায়ের কথা শুনে আয়ান মুখ কালো করে ফেল্লো,(সারাদিন পড়া আর পড়া,ভাবলাম একটু কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি তা না)

নির্ঝরিণী – মা জিমি আপু আসছে? কবে কখন

মাসুম ফারুকি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বল্লো
– কাল ই তো জিমির সাথে কথা বলেছি ও যে আসবে এটা তো বলেনি

ফাতেমা বেগম- আজ সকালেই ঠিক করেছে আসবে,
এভাবে টুকী টাকি আলোচনার মাঝে খাবার শেষ হয়

ফাতেমা বেগম খাবার নিয়ে মিথিলার রুমে যায়
গিয়ে দেখে মিথিলা বালিশে মুখ গুজে আছে
মেয়ে যে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে এটা ফাতেমা বেগম দেখেই বুঝতে ফেরেছে,
বাকি দুই মেয়ের থেকে এই মেয়ে একদম আলাদা তার খুব ছাপা স্বভাবের, তার জগত ঝুড়ে নানারকম বই ছাড়া আর কিছুই নেই
ফাতেমা বেগম আলতো করে মেয়ের পিঠে হাত রাখে

মিথিলা হাতের ছোয়া পেয়েই বুঝেছে হাত টা কার
মিথিলা- মা আমি খাবো না, তুমি যাও তো, বালিশ থেকে মুখ না তুলেই বলেছে মিথিলা

ফাতেমা বেগম- ভাই বোনের সাথে রাগ করতে নেই মা খেয়ে নে,,ছোট ভাই বোন থাকলে এই রকম হয়

মিথিলা এবার বালিশ থেকে মুখ তুল্লো
মিথিলা- মা ওরা আমার চশমা পরা নিয়ে হাসা হাসি করে কেনো, চশমা কি আমি সখ করে পরি নাকি, বিশ্বাস করো মা চশমা ছাড়া আমি বইয়ের অক্ষর চোখে দেখি না

ফাতেমা বেগম- আমি জানি মা,ওরা তো দুষ্টুমি করে,তুই তো বড় মা তোকে এই টুকু মানতে হবে,নে হা কর মা খাইয়ে দিচ্ছি তোকে

এমন সময় আয়ান এলো মিথিলার রুমে
আয়ান- মা তুমি আপুকে খাইয়ে দিচ্ছো কই আমাকে তো এই রকম খাইয়ে দাও না

ফাতেমা বেগম- যা তো মেয়েটার পিছনে সারা দিন তোরা দু ভাই বোন পড়ে থাকিস,

আয়ান- ঠিক আছে যাচ্ছি,তার পর মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো এই যে মেঝো আপ্পি মায়ের কলিজার টুকরা আপনার বান্ধুবী আসছে ড্রইং রুমে বসে আছে, রুমে আসতে বলবো

মিথিলা- কে অরনি? পাঠিয়ে দে তা হলে
আয়ান চলে যায়,কিচ্ছুক্ষন পর অরনি রুমে আসে

অরনি- কিরে তুই এখন ও নাস্তা করিসনি,স্কুলে যাবি না

মিথিলা- না পরিক্ষার আর অল্প বাকি,ভাবছি এখন বাসা থেকেই পড়া শুনা করবো

অরনি- তা বললে শুনছি না
এদিকে ইহানরা সবাই বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে ব্যাস্ত,আর তুই বই নিয়ে,তা হলে বিদায় অনুষ্ঠানে বাকি কাজ কে করবে

মিথিলা- কেনো তুই তো বললি ইহান রা সবাই করছে,তা হলে সেখানে আমার কি কাজ

অরনি- ইহান দের হ্যাল্পিং হ্যান্ড লাগবে না?

মিথিলা- আমি পারবো না

অরনি- ঠিক আছে কাজ না করিস সাথে তো থাকবি চল রেডি হয়ে নে

মিথিলা- দোস্ত দেখ এই কিছুদিন পরেই পরিক্ষা এখন বিদায় অনুষ্ঠানের পাল্লায় পড়ে যদি না পড়ি তা হলে এক্সাম দিবো কি করে,

অরনি- তুই যাবি কি না বল,তুই যদি এখন আমার সাথে না যাস তা হলে তোর সাথে আমার কোন কথা নেই,আর কোন দিন কথা হবে ও না

মিথিলা- এটা কিন্তু ঠিক নয় অরু তুই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস

অরনি হেসে বল্লো
– ব্ল্যাকমেইল থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তা হলে ব্ল্যাকমেইল ই ভালো

মিথিলা- ফাজি ব্ল্যাকমেইলার
মিথিলা আর অরনি বেরিয়ে পড়লো,

to be continue

তিনি এবং ও ! ৩৫ . (শেষ পর্ব)

0

তিনি এবং ও !

৩৫ .
(শেষ পর্ব)

বিছানার উপর ফেলে রাখা মোবাইল থেকে সুফি সাহেবের কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে । রেকর্ড করে রাখা প্রত্যেকটি কথা তার ভিতরে নতুন ভাবে আগুনের সৃষ্টি করছে।
২ বছর যাবত সে যে পাপের জন্য নিজেকে দোষী ভেবেছে ,দিনের পর দিন সে শুধু নিজেকে সব হাসি আনন্দ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে ; সে পাপ সে করেই নি।রেকর্ড গুলো সে বারবার শুনছে কোথাও যদি একটু মিথ্যে সে খুঁজে পায় ,তাহলে নিজের সাথে করা অন্যায়কে সে ক্ষমা করতে পারতো ।
না কোনো মিথ্যে সে খুঁজে পাচ্ছেনা।
অদ্রি চায়ের ট্রে নিয়ে যখন রুমে আসলো তখন নিদ্রকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল। কারণ টা অদ্রি কিছুটা অনুমান করতে পারছিলো কিন্তু কীভাবে কী শুরু করবে অথবা প্রশ্ন করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।
নিদ্র তার শব্দ গুলোকে একত্রিত করতে পারছিলো না।
একজন মেয়ে ৩ বছর ধরে জানে তার স্বামী একজন ফেরেস্তা সমতুল্য মানুষ। নিদ্র জানেনা অদ্রি আসলে জানে কি জানেনা। তারপরও এরকম তিতা সত্যি সরাসরি কাউকে বলে দেয়াটা সহজ না। মিথ্যে বলাটাই সহজ। সত্যি বলাটাই কঠিন।
কীভাবে কী বলবে ভাবতে ভাবতেই অদ্রি চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। ২২ বছরের যুবতীর মাঝে সে অন্য এক নতুন সত্ত্বা দেখতে পাচ্ছে। এতদিন যার অস্তিত্ব অদ্রির মধ্যে ছিলোনা! হয়তোবা ছিলো সুপ্ত অবস্থায়। বসন্তের হাওয়ায় সে তার সুপ্ত অবস্থার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে।
বসন্ত টা কি সে? এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। জানে অদ্রি, জানে তার নতুন সত্ত্বা। চায়ের মগে চুমুক দিয়ে নিদ্র বলল
– আপনি কোথাও বেড়াতে যান না?
– নাহ।
অদ্রি চায়ে চুমুক দিয়ে জানালার ধার ঘেঁষে দাঁড়াল। নিদ্র , অদ্রির বিপরীতে দাঁড়াল।
নিদ্র হাসিহাসি মুখে বলল
– চলুন দূরে কোথাও ঘুরে আসা যাক।
– আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি?
– কেনো? আপনার কি বাসার বাহিরে যাওয়া নিষেধ?
– বিধবা আমি। অনেক বড় পাপী আমি।পাপ আর এ জন্মে পিছু ছাড়বেনা।
নিদ্রের হঠাৎ করেই মেজাজ বিগড়ে গেলো। পাপী কী কারণে? ওরকম নরপিশাচ এর জন্য ?
নিদ্র বলল
– সুফি সাহেবের বাগান আসলেই সুন্দর।
অদ্রি কেমন যেন মুশরে গেলো। তারপরও সে ক্ষীণ স্বরে বলল
– হ্যা, তার পরম ভালবাসা।
– সুফি সাহেব বিয়ে করেছেন, ছোট্ট একটা ছেলেও আছে।আচ্ছা অদ্রি আপনার বাচ্চাকাচ্চা ভালো লাগেনা? ১ বছরের দম্পতি জীবনে একটা ছোট্ট প্রাণের ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করেনি?
অদ্রি গলা জড়ায় আসছে এই প্রশ্নের উত্তর সে কখনও দিতে পারবেনা। এর আগে নিদ্রকে পরোক্ষভাবে বলেছে কিন্তু ……
নিদ্র অদ্রির মুখের উপর তাকিয়ে বলতে শুরু করলো
– সে আপনাকে কখ‌নো ভালবাসেনি আর আপনাকে বিয়ে করেছিলেন সমাজের প্রশ্নোত্তর দেয়ার জন্য। হয়তোবা শেষ বয়সের ভরসার কারণে।
আপনাকে আমি বলে বুঝাতে পারবোনা। আমি রেকর্ড করে এনেছি।
প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে রেকর্ড অন করে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
এতদিন একটা বিশ্বাস নিয়ে সে ছিলো আর কিছু সময়ের ব্যবধানে সেটাও ভেঙে গেলো।
বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতেই হয়।
স্বামীর প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ ছিলো এখন সেটা আর নেই। কর্পূর এর মতো উড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত সে ঠকে এসেছে !
লিলিকে দিয়ে মোবাইল নিদ্রের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে সে দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিলো।
একা থাকার খুব প্রয়োজন তার।
রাতে নিদ্র আর লিলি খাবার খেলো। অদ্রিকে শত চেষ্টা করেও খাবার টেবিল পর্যন্ত আনতে পারলোনা।
অদ্রি সারারাত ধরে শুধু চিন্তাভাবনা করেই কাটালো। আফসোস করা ছাড়া উপায় নেই। সেদিন সুফি সাহেবকে যদি সে কথা বলতে দিতো তাহ‌লে এরকম বিশ্রী জীবন তাকে যাপন করতে হতোনা।
মা বাবা তাকে কতোটা ভুল বুঝেছে, কতোটা খারাপ ভেবে এসেছে।
তার স্বামী অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট ছিলো। ড্রাগ এডিক্টেড, নিষিদ্ধ পল্লী …….
আর তার জন্য সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, বাসার বাহিরে কখনো পা রাখেনি।
সে বেঁচে থাকতেও শান্তি দেয়নি এবং মরার পরও চায়নি আমি শান্তিতে থাকি।
লিলি সকাল ৯ টায় ঘুম থেকে উঠে চায়ের পানি চুলায় দিয়ে নিদ্রের ঘরের দিকে গেলো।
সকালে কী নাস্তা করবে না জানলে সে বানাবে কীভাবে? অদ্রিকে তো এখন কোনোভাবেই ডেকে পাওয়া যাবেনা।
নিদ্রের ঘরের সামনে এসে লিলি অবাক হয়ে গেলো। দরজা হা করে খোলা, ব্যাগপত্র কিছুই নেই। সে ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানার উপর পরে থাকা চিরকুট খুঁজে পেলো।
কয়েকটা লাইন লেখা আর নিচে বামপাশে ছোট্ট করে নিদ্র লেখা।

সেই ভোরবেলা সে বের হয়েছে কিন্তু এখনো ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারলো না।
রশিদ সাহেবকে না জানিয়ে আসাটা ঠিক হয়নি।
১১ টায় প্লেন আকাশে উড়াল দিবে আর এখন ১০ টা বাজে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে তার এই অবস্থা।
বাংলাদেশের প্রথমদিনেও তাকে জ্যামে পরতে হয়েছিল।
নাজমুল সাহেব বেশ অবাক হচ্ছেন তার ছেলে এতো তাড়াতাড়ি ফিরে আসছে কেনো?
এদিকে রশিদ সাহেবের মোবাইল সুইচ অফ বলছে।
নিদ্রকে বিভিন্ন ভাবে আসার কারণ টা জানতে চেয়েছে। কিন্তু নিদ্র তার প্রত্যেকটি উত্তরে একই কথা বলেছে
– সে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়।

লিলি চায়ের পানি ফেলে দিলো। ফ্রীজে রাখা বাসি খাবার গরম করে খেয়ে নিলো। চিঠিটা সে যত্ন করেই রেখে দিয়েছে। আপামনি যখন বের হবেন তখন তাকে দিয়ে দিবে।

৪ মাস পর …….

নিদ্রের দাদী চিঠি হাতে বসে আছেন বিছানার উপর।তার পাশে নিদ্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
চিঠিটা নিদ্রের নামে এসেছে বাংলাদেশ থেকে। তাও একজন মেয়ের চিঠি। নামটাও নিদ্রের সাথে মিলে যায়। কিন্তুটা মেয়েটা সম্পর্কে না জেনে তার অস্থিরতা কমছেনা।
অনেক ডাকাডাকির পর নিদ্র ঘুম থেকে উঠে বসলো। কিছু বলার আগেই চিঠিটা তার হাতে দিয়ে বলল
– মেয়েটা কে রে? এরকম নিমন্ত্রণ করেছে তোকে।
চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো। মাত্র দুটো লাইন লিখা।
” বাসায় নতুন বাবুর্চি রেখেছি, চা টা দারুণ বানায় সে। একদিন আসবেন, চায়ের দাওয়াত রইলো। ”
ইতি
অদ্রি।
বিঃ দ্রঃ বর্ষাকাল চলে এসেছে তার কালো মেঘের ভেলা নিয়ে।

নিদ্র মুচকি হেসে চিঠিটা ভাজ করে বালিশের নিচে রেখে দিলো।
তার লিখা ছোট্ট চিরকুট লিখে রেখে এসেছিল। কয়টা লাইন তার জানা নেই কিন্তু শব্দগুলো তার স্পষ্টভাবে মনে আছে।

অদ্রি,
বৃষ্টির সেই রাতে আপনার স্পর্শ আমার ঠান্ডায় জমে যাওয়া মন টাকে উষ্ণ ভাবে ছুঁয়ে দিয়েছিল। মন বারংবার সেই উষ্ণ ছোঁয়ায় মেতে থাকতে চায়। প্রিয় সেই ……

নিদ্র, ভালো থাকবেন।

সমাপ্তি ???

© Maria Kabir

তিনি এবং ও ! ৩৪.

0
তিনি এবং ও ! ৩৪.
তিনি এবং ও ! ৩৪.

তিনি এবং ও !

৩৪.
হলুদ রঙের লুঙ্গি আর নীল রঙের হাফ হাতা গেঞ্জি পড়ে নিদ্র খাবার টেবিলে অধীর আগ্রহে বসে আছে। খুব খিদে পেয়েছে, সেই সকাল থেকে এই পর্যন্ত সে না খাওয়া। দুপুর ২ টা বেজে ২০ মিনিট।
সুফি সাহেবের বাসা থেকে রীতিমত সে পালিয়ে এসেছে। সুফি সাহেবের স্ত্রী তাকে খুব সাবধানে বাসা থেকে বের করেছেন। নিদ্র রাস্তায় পা দেয়ার পর সুফি সাহেবের স্ত্রী মাথা নিচু করে বললেন
– কিছু মনে করবেননা না খাইয়ে আপনাকে যেতে দিচ্ছি। মৌরি কোনোভাবে যদি জেনে যেত আপনি চলে যাচ্ছেন, তাহলে ও আপনাকে যেতে দিতো না। হয়তোবা আপনার সাথেই রওনা হতো।
নিদ্র কী বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছিলোনা।সুফি সাহেবের স্ত্রী বুঝতে পেরে বললেন
– আপনি এখনি যান। ও চলে আসলে বিপদে পড়বেন।
এতো সকালে এসব গ্রাম্য এলাকায় রিক্সা, ভ্যান কিছুই পাওয়া যায়না। শহরের বাড়ি বিক্রি করে এরকম স্থানে আসার কারণ কি অনুশোচনা?
হতেও পারে,আবার নাও পারে। নিদ্রকে এই মানুষ টাকেই বিশ্বাস করতে হবে। তাছাড়া কোনো উপায় নেই। অদ্রি আর ইখলাস সাহেব সম্পর্ক এ অনেকেই জানতে পারে কিন্তু অদ্রি তাকে সুফি সাহেব ছাড়া কাউকে চিনেন না। সুফি সাহেবও তাকে ঘটনা বলেছেন কিন্তু চরিত্রের নাম বলেননি। হয়তোবা সুফি সাহেব চাননা তাদের সাথে আমার দেখা হোক বা এমন কোনো সত্য যেন আমি জানতে পারি। ইখলাস সাহেব যে মানুষ টা সুবিধার ছিলেননা সেটা তো বাবার বন্ধুর কাছ থেকেই জেনেছি।
নিদ্র চিন্তার খেই খুঁজে পাচ্ছেনা। সে যা শুনেছে তা কি সত্যি?
অদ্রিকে জানাবে নাকি জানাবে না? এভাবে একটি মেয়েকে অন্ধকারে ডুবে যেতে দেয়া যায়না। কতোই বা বয়স এই মেয়ের। নিদ্রের ২-১ বছরের বড়। এই বয়সে তো আজকালকার মেয়েরা বিয়েই করেনা আর তো বিধবার জীবন!
লিলি রান্নাঘরের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
হলুদ রঙের লুঙ্গী?ভাগ্যিস তার গায়ের রঙ ফর্শা, তা না হলে খাটি খ্যাত লাগতো।
লিলি আজকাল একটা বিষয় খেয়াল করেছে, অদ্রি বেশ হাসিখুশি থাকে। আগের মতো গুমোট হয়ে থাকেনা। সাদা গোলাপ নিজ হাতে ছিঁড়ে এনে ঘর সাজায়। সাদারঙ টা সে পছন্দ করছেনা।
হালকা গোলাপি বা হলুদ বা সবুজ রঙটা তাকে টানছে।
সুফি সাহেব বারান্দায় একমনে কী যেন ভাবছেন।
সত্য বলতে ভাবতে হয়না বেশি বা পরিকল্পনাও করতে হয়না। আর মিথ্যে বলতে হলে আটঘাট বেধে নামতে হয়। মিথ্যে বোকা মানুষ বলতে পারেনা, মিথ্যা বলতে হলে চালাকচতুর হতে হয়। যেন সেটা ধরা না পড়ে।
সুফি সাহেব মিথ্যে বলতে তেমন একটা পছন্দ করেননা। কিন্তু মাঝেমধ্যে বলতে হয়।
ইতি কে সেই অফিসে ডেকে এনেছিলেন। অবশ্য কাজটা সে পরোক্ষভাবে করেছিলেন। নিষিদ্ধ পল্লীর সেই ইতি অনেক বেশি সুন্দরী ছিলো। তিনি টাকা খাইয়ে ওই মেয়েকে ফুসলেফাসলে এনে ছিলেন।
ফুসলেফাসলে কথাটা ঠিক না। অতি মাত্রায় ভালবাসতো মেয়েটি ইখলাস সাহেবকে। ইখলাস সাহেবও তাই কিন্তু তিনি গ্রহণ করবেন না স্ত্রী হিসেবে? কেনো রে প্রয়োজন তো একসময় ঠিকই মিটিয়েছেন আর সামাজিক মর্যাদা দিতে সমস্যা?
এরকম ভালবাসার কী প্রয়োজন? যাকে গ্রহণ করতে পারবো না!
সুফি সাহেব চেয়েছিলেন ইখলাস সাহেব আর ইতিকে এক করে দিতে আর অদ্রিকে মুক্তি দিতে। কিন্তু হয়ে গেলো উল্টো।
ইতি ইখলাস সাহেবের সামনেই আত্মহত্যা করেছিলো।
ইতিকে সে সবকিছু দিতে পারবে কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতি দিতে পারবেননা। এক কথায় দুই কথায় ইতি ডেড।
ইখলাস সাহেব আমার চালাকি টা কিছুটা হলেও ধরতে পেরেছিলেন তাই তো আমাকে বিশ্রী ফাঁদে ফেলে দিয়ে গেলেন।
টাকা থাকলে গুপ্তচর পাওয়া অসম্ভব কিছুনা। গুপ্তচর অবশ্য এখনো আমার আছে। নিদ্রের পিছনে লাগিয়েছি। আসলেই কি সে অদ্রির শুভাকাঙ্ক্ষী নাকি ধ্বংস কামনাকারী ; জানতে হবেনা তাকে?
মেয়েটাকে সেই তো মুক্তি দিয়েছে। তবে পুরোটা দিতে পারিনি। এখন যদি এই অল্পবয়সী আবেগী ছেলেটা পারে।
দুটি প্রাণের জন্য তার মাঝে কখনওই অনুশোচনা জাগেনা আর জাগবেও না। কারণ, একটি ঠাণ্ডা মাথার শয়তান কে সে ধ্বংস করেছে। কোনো মানুষ কে সে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়নি। একজন অসুস্থ মানসিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ইখলাস সাহেব।
নিজের ফুফুকে সে গলাটিপে হত্যা করেছেন আমার সামনে। আমি কিছুই করতে পারিনি। একজন অসহায় বৃদ্ধা মহিলা যে,এই ইখলাস কে তিলেতিলে বড় করেছে তার নিশ্বাসবন্ধ করে দিতে তিনি পিছুপা হননি।
আমার তখন কিছুই করার ছিলোনা। আমাকে উনি ভীষণ ভাবে আটকে রেখেছিলেন এক বিশ্রী ফাঁদে। অদ্রিকে ফুফু সম্পর্কে জানানো হয়েছিলো – তিনি তার নিজ বাড়িতে চলে গেছেন।
এসব সত্যি আমি ফাঁস করে দিলে আমিই ফেঁসে যাবো।
কী দরকার নিজের পায়ে কুড়াল মারার?
ভালোই তো আছি বউ, বাচ্চা নিয়ে।

অদ্রি হালকা নীল রঙের সালোয়ার
কামিজ পড়েছে। ভেজা চুল গুলো ঘাড়ের এক পাশ দিয়ে এলিয়ে দিয়ে সে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে।
নিদ্র অদ্রিকে বেশিরভাগ সময় এভাবেই দেখেছে। তবে আজকে একটু পার্থক্য আছে। অদ্রির মাথায় ঘোমটা আজ নেই। হালকা নীলে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নিদ্র দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে আর ভাবছে ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবেনা?
অদ্রি বুঝতে পারছে নিদ্র ঠিক তার ঘরের দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
ভিতরে আসছে না কেনো সে তার কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা।

অদ্রির মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ব্যবহার, কথাবার্তা, স্টাইলে। মেয়েটা আসলেই সুন্দর। নিদ্র বলল
– ভিতরে আসতে পারি?
অদ্রি পিছন না ফিরেই বলল
– হ্যা পারেন।
– গল্পগুজব করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আপনাকে দেখে তো সেরকম গল্পের মুডে আছেন বলে মনে হচ্ছেনা।
– যুক্তিটা বলবেন নিদ্র সাহেব?
– উদাসীন হাওয়া যেন আপনার মনের কোণ জুড়ে বয়ে যাচ্ছে।
– তো হাওয়া টা কোথা থেকে আসছে জানেন?
– মনে হচ্ছে আপনার প্রিয় জানালা থেকে।
– আপনার গবেষণা সবসময় ঠিক হয়না সেটা জানেন?
– জানলাম আজকেই প্রথম।
– তো চা না কফি খাবেন?
– খাবো না পান করবো।
অদ্রি উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে। নিদ্র তার চলে যাওয়া দেখছে। চুল গুলো ঢেউ খেলানো, হাঁটার সময় দুলে উঠে অনবরত।

চলবে……..!

#Maria_Kabir

তিনি এবং ও ! ৩৩

0
তিনি এবং ও ! ৩৩
তিনি এবং ও ! ৩৩

তিনি এবং ও !

৩৩.

ভাষাই মানুষের পরিচয় – একটা কথা আছে জানেন তো?
নিদ্রের উত্তরের অপেক্ষা না করে সুফি সাহেব বললেন
– অফিসের মধ্যে এরকম ঝামেলা শুরু হবে আমরা ভাবিনি।মেয়েকে তো ইখলাস সাহেব কোনোরকম বুঝিয়ে অফিস থেকে বের করলেন কিন্তু কর্মচারীরা তাকে আড় চোখে…. মানে বুঝোই তো।
আমাদের সাথে যারা লেনদনে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যেও ব্যাপার টা ছড়িয়ে গেলো। নিষিদ্ধ পল্লীর যে,ওই মেয়ে এটা জানতে কর্মচারীদের সমস্যা হয়নি। কারণ, সবাই তো আর সাধু না।
ইখলাস সাহেবকে অনেক কথাই শুনতে হয়েছে। কেউ ঠাট্টাতামাসা করে বলেছে আবার কেউ ঘৃণাবশত হয়ে বলেছে।
নিদ্র বলল
– অদ্রির কানে যায়নি?
– অদ্রিকে অফিসের কেউই কোনোদিন দেখেনি, আমি ছাড়া। সুফি সাহেব জানতেন, সত্য কোনোদিন গোপন থাকেনা।এই কারণেই তিনি অদ্রিকে আড়ালে রেখেছিলেন। শেষ বয়সের ভরসা হিসেবে।
– আপনি কেনো অদ্রিকে বলেননি?
– বলার কোনো উপায় আমি পাইনি। সেদিনই তিনি ওই মেয়ের কাছে যান। কী হয়েছিলো আমি জানি না।
ইখলাস সাহেব প্রায় ১ সপ্তাহ অফিসে আসেননি। বাসায় ছিলেননা।
অদ্রির সাথেও আমার যোগাযোগ নেই।নিষিদ্ধ পল্লীতে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম, সেই সুন্দরী মেয়ে আত্মহনন করেছেন।
– সে কবে সুইসাইড করেছিলো?
– ইখলাস সাহেবের সুইসাইড করার ৩ দিন আগে। এই হলো ভালবাসা!
– ভালবাসা হলে সে যতোই নোংরা জায়গার মানুষ হোক না কেনো তাকেই জীবনসঙ্গী করতেন।
– দুই নৌকায় পা দিলে যা হয়।
– না। এটা মানায় না। কর্মফল ভোগ করতেই হবে।
– তবে আজব ব্যাপার হচ্ছে সুইসাইড করার আগের দিন তিনি তার সব সম্পত্তি অদ্রিকে দিয়ে যান। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইছিলেন মনে হয়।
– আমার একটা বিষয়ে বেশ খাপছাড়া লাগছে। অদ্রি সত্যিই কিছুই জানতো না?
– আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি ততটুকুন তোমাকে বলেছি।
– ব্যবসার কী হলো?
– অদ্রি তার অংশটুকু বিক্রি করে দিয়েছে আমিও তার ১ মাস পর বিক্রি করে দিয়ে এক অজপাড়া গায়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
মনের মধ্যে অনুশোচনা বোধটা কোনোভাবেই যাচ্ছিলো না। রাতে আমি ঘুমাতে পারতাম না। হুট করেই অদ্রি বাড়িঘর বিক্রি করে উধাও হয়ে গেলো।অনেক খুঁজেছি ওকে। প্রত্যেক মা – বাবার উচিত তার সন্তানকে বিশ্বাস করার।সন্তান যতোই ভুল করুক না কেনো মা – বাবার উচিত তার সন্তানকে স্নেহে আগলে রাখা। এতে সন্তান প্রথমে ভুল করলেও পরবর্তীতে যেন তা না করে। অদ্রি প্রথমে তার মা – বাবার কাছেই গিয়েছিলো কিন্তু তারা তাকে গ্রহণ করেনি। তাদের কাছে মেয়ের বর ফেরেশতা আর মেয়ে শয়তান। মেয়ের ক্যারেক্টার এর কারণেই নাকি তার ফেরেশতা জামাই আত্মহত্যা করেছেন। গলায়দড়ি দেয়ার আগে অদ্রির মা – বাবার সাথে তার কথা হয়।অদ্রির মা – বাবা কে বলেছে- আমার সাথে নাকি অদ্রির খুব প্রেম চলছে। আমাদের নাকি বিয়ে যেন তারা দিয়ে দেয়।
জানেন নিদ্র, মিথ্যা কে আমি খুব ভয় পাই।
– অদ্রির মা, বাবাকে যে তিনি ফোন করেছিলেন সেটা জানলেন কীভাবে? পুলিশ ইনভেস্টিগেশন?
– পুলিশ? এলাকার পুলিশ তার আশেপাশের এলাকার পুলিশ তাকে ভালো ভাবেই চিনতেন। এলাকার দারোগা তাকে কতোবার যে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে ধরেছেন। টাকার জোড়ে বেঁচেছেন। আর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী তার মৃত্যু গলায়দড়ি দিয়েই। গলায় গভীর দাগ ছিলো।
ওনার এই কাণ্ডের পর আমাকে আর অদ্রিকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আমাদের মাঝে সম্পর্ক আছে এই কারণে আমরা ইখলাস সাহেব মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি – এই মর্মে অদ্রির বাবা কেস করেছিলেন।
– আমার প্রমাণের অভাব ছিলো কিন্তু টাকার অভাব ছিলোনা।কেস থেকে রেহাই পাই কিন্তু অনুশোচনা থেকে পাইনি আজও।
উপর দিয়ে দেখাই সুখী একজন মানুষ আমি। কিন্তু আমার ভেতর যে ঝড় চলছে আজও সেটা কেউই দেখেনি। আর দেখতেও দিবোনা।
মাঝেমধ্যে ভাবি, আমি কেনো ইখলাস সাহেবের কথা শুনে অদ্রির সাথে মেলামেশা শুরু করেছিলাম? না করলেই তো আমাকে অনুশোচনার আগুনে জ্বলতে হতোনা। পরে ভাবি, আমি না হয় বেঁচে যেতাম কিন্তুকিন্তু……
– কী?
– অন্য কাউকে দিয়ে অদ্রির বড় কোনো ক্ষতি করতে পারতেন। আমি তো তাকে বন্ধু, ছোটোবোনের চোখে দেখেছি। ওই খাঁচা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছি কিন্তু ব্যর্থ।
– আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি?
– সেটা আপনার ইচ্ছা। আমার জানা যতটুকু ছিলো বলেছি।
– ওই বুড়িকে কোথায় পাবো?কেসের সাক্ষী হিসেবে তো ওনাকে…….
– ইখলাস সাহেবের মৃত্যুর দেড় মাস আগেই তিনি ওই বাসা ছেড়ে চলে যান।
– তার বাড়ির ঠিকানা?
– তিনি ইখলাস সাহেবের ফুফু ছিলেন। আপন কিনা সেটা অদ্রি ভালো জানে।
আর কিছু জানার আছে?
– আপাতত নেই। আগে সমীকরণ মিলিয়ে নেই।আমি কাল খুব ভোরে চলে যাবো।
– তাই ভালো মৌরি থেকে পালানো উচিৎ।
ওরকম অসুস্থ মেয়েকে আমি কারো ঘাড়ে চাপাতে চাইনা।

অদ্রি তার ঘরে হিসাবের খাতা নিয়ে বসেছে। আজকেই তাকে শেষ ছক কেটে ফেলতে হবে।
আর বেশি সময় নেয়া ঠিক হবেনা।

চলবে……..

#Maria_kabir

তিনি এবং ও! ৩২.

0
তিনি এবং ও! ৩২.
তিনি এবং ও! ৩২.

তিনি এবং ও!

৩২.
– আপনাকে মৌরি পুকুরে চুবিয়েছে?
বেশ গম্ভীর স্বরেই প্রশ্নটা সুফি সাহেব নিদ্রকে করলেন।
নিদ্র তীক্ষ্ণ স্বরে বলল
– না, সেরকম কিছু করলে জানতে পারতেন।
সুফি সাহেব সিগারেট ফেলে দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বলে থাকা শিখার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছু একটা ভাবছেন।
ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে নিলেন।
নিদ্রের কাছে সুফি সাহেবের এরকম ঢিলেমি একদম সহ্য হচ্ছেনা। তারপরও কিছুই করার নেই তার। তারই প্রয়োজন বেশি। আর মানুষ টা আজ খুব অসুস্থ, সারাদিন কিছুই সে খেতে পারেননি।
নীরবতা মানুষ কে কখনো খুব জ্বালায়। কখনো আরাম দেয়। কিন্তু এই মুহূর্ত তাকে খুব জ্বালাতন করছে।
সুফি সাহেব চায়ে লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন
– আমার মা সেইসময় খুব অসুস্থ। মায়ের অসুস্থতা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত তার সাথে আবার অদ্রির বিষয়টা যোগ হয়। আমি প্রথমে তো না করলাম কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, খারাপ মানুষের অভাব এই পৃথিবীতে নেই। আমি না হয় ইখলাস সাহেবকে না করলাম কিন্তু সে তো টাকার বিনিময়ে অন্য কাউকে ব্যবহার করতে পারে। কী করবো ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না। এরকমভাবে অন্য একটা মেয়ের সাথে আমি? মিলাতে পারছিলাম না।
সুফি সাহেব আবারো চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ বুজে বসে রইলেন।
চোখ বুজা অবস্থায় বললেন
– আমি একটা মাস্টারপ্ল্যান করলাম। অদ্রির সাথে মিশবো ইখলাস সাহেবের প্ল্যান সাকসেসফুল করার জন্য না। ইখলাস সাহেবের কুকীর্তি প্রকাশের জন্য।
নিদ্র বলল
– অদ্রি যে আপনার কথাই বিশ্বাস করবে এরকম ভাবার কারণ?
– বৎস আমি আটঘাট বেঁধে নেমেছিলাম। কিন্তু ওই বুড়ি ঝামেলা পাকালো। বুড়ি তো পিছু ছাড়েই না।
– ইখলাস সাহেবের প্ল্যান অনুযায়ী তো আশেপাশে কাউকে জানানো যাবেনা। এরকম ছিলো?
সুফি সাহেব মুচকি হেসে বললেন
– তোমার যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। আসল কথা হচ্ছে ওই বাড়ির মধ্যে এক বুড়ি ছাড়া চেনাজানা কেউই থাকতো না। দারোয়ান তো মেইন গেটের সাথের রুমের।অদ্রির সাথে কথাবার্তা বলতে শুরু করলাম। বাড়ির মধ্যে ঘুরাঘুরি, দাবা খেলা বেশ চলতো।
অদ্রির সাথে ১ সপ্তাহ কথা বলার পর বুঝতে পারলাম, সে তার স্বামী মহোদয় কে খুব বিশ্বাস করেন।
এই ১ সপ্তাহে আমি অদ্রিকে পরোক্ষভাবে ইখলাস সাহেবের কথা বলেছি।
চায়ের কাপ পাটির উপর রেখে সুফি সাহেব বললেন
– অদ্রি মনে হয় এসব আকার ইঙ্গিত এসব বুঝেনা।মাথার মধ্যে প্যাচ না থাকলে অন্যের প্যাচ ধরা যায়না।
ওই বুড়ি বুঝতে পেরে ইখলাস সাহেবকে বললেন। ব্যাস তেলে বেগুনে সম্পর্ক। তিনি আমাকে ডেকে কী বলেছিলেন জানেন?
নিদ্র বলল
– আমি কীভাবে জানবো? আমি তো ওইসময় ছিলাম না আপনাদের সাথে বা আপনিও ইতোপূর্বে বলেননি।
– সায়ানাইড বিষ চিনো সুফি? তোমার মাকে খুব ভালোবাসো তাই না? আপনি না বড়োই ফাজিল সুফি সাহেব। আমার নামে আমার বউ এর কাছে কুটনামি করা তাই না?
– আপনার মা তখনো জীবিত ছিলো?
– হ্যা, হাসপাতালে ভর্তি ছিলো।তারপর আমার মাস্টারপ্ল্যান চেঞ্জ করলাম। কিন্তু সেটাও কাজে দিলোনা। ইখলাস সাহেব নিজেই লোক ভাড়া করে অদ্রিকে ইভটিজিং করিয়ে ছিলেন। যাতে ভয়ে বাসা থেকে বের না হতে পারে।
আর তার বাসায়ও কোনো আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী আসতো না। কারণ তো জানেনই। না জানলে বলুন আমি এক্সপ্লেইন করি?
– না না আমি বুঝেছি।
– নিষিদ্ধপল্লীর সেই সুন্দরীর কথা মনে আছে? গতকাল গল্পে বললাম।
– জি জি ইখলাস সাহেব তাকে ভালবাসতেন।
– এইতো মনে আছে। ওই মেয়ের কাছে যাওয়াআসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ওই মেয়েও তাকে খুব ভালবাসতো।ইখলাস সাহেব যে বিয়ে করেছেন, সেটা জানতে পারে। তারপর….. তারপর একদিন অফিসে এসে হাজির। ইখলাস সাহেবকে অনেক কথা বলেছিলো। তার সবকয়টি আমার মনে নেই। কিছুকিছু মনে আছে।
আমি আর ইখলাস সাহেব তার অফিসকক্ষে ব্যবসা সম্পর্কিত জরুরি কিছু কাজ করছিলাম।
পিওন এসে বলল – ইখলাস ভাই একজন মেয়েমানুষ আসছে। আপনার লগে দেখা করতে চায়।
ইখলাস সাহেব ইশারায় আসতে বলে দিলেন। যখন ওই মেয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো, আমরা দুজনই মোটামুটি অবাক।
ইখলাস সাহেব ঘামতে শুরু করলেন, এসির ঠাণ্ডা বাতাসেও।
জানো তো এসব মেয়েদের লাজলজ্জা কম থাকে।কী না কী বলে বসে তাই আমি উঠে চলে যাবো তখন ইখলাস সাহেব আমাকে বসতে বললেন।
মেয়ে বলল – বিয়ে করে আমাকে ভুলে গেলেন? এখন আর এই পুরাতন দেহের স্বাদ মিষ্টি লাগেনা?
ইখলাস সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন
– এসব নিয়ে পরে কথা হবে। এখন তোমার জায়গায় তুমি যাও।
– আপনি আজ প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে আমার কাছে আসেননি। কারণ টা কি জানতে পারি?
– হ্যা পারো। তবে এখানে না।
– কেনো না? আমার দেহের স্বাদ তো নিতে পারেন সেটা স্বীকার করতে পারেননা?
বউকেও তো ভোগ করেন। সেই একই তো হলো। স্বীকারোক্তি তেই তো পার্থক্য।
– বললাম না, এখানে এসব না।
– আমাকে সমাজে আপনার স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তা না হলে…..
– কী করবে শুনি?
– আমি আপনার বাচ্চার মা হতে চলেছি।
ইখলাস সাহেব বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন
– গাঁজাখুরি কথা বলবা না।
– ক্যান? আমার সাথে ঘুমান নাই আপনি?
– আচ্ছা তোমার কতো মাস চলে?
– ৫ মাস।
ইখলাস সাহেব হেসে বললেন
– তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। আমার আজ থেকে প্রায় ১ বছর আগেই ওই ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তারি পরীক্ষায় তাই ধরা পড়েছে। তোমার ওইধরনের কথা হাস্যকর।
জানেন নিদ্র মেয়েটা বেশ আস্তে আস্তে কথা বলছিলো। লাস্টের কথাগুলো শোনার পর মেয়েটার চেহারা দেখার মতো ছিলো। আর মেয়েটাও প্রথমে বলল ১ বছরের বেশি যায় না তার কাছে। পরে বলে ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট। হাস্যকর।
মেয়েটি রাগে ফুপাচ্ছিলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
– তো ওই মা* খায়েশ মিটাও ক্যামনে?

সুফি সাহেব তিক্ত স্বরে নিদ্রকে বললেন
– বিশ্বাস করেন নিদ্র, আমি ছেলে হয়েও এধরনের বাক্য কখনো বলিনি বা ব্যবহার করিনি।
নিদ্র চোখ বুজে বলল
– আমি তো এই প্রথম শুনলাম।

চলবে…..!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও! ৩১.

0

তিনি এবং ও!

৩১.
সুফি সাহেব বড় এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে ফেললেন। পান করলেন ব্যাপার টা তার কাছে ঠিক মানায় না এভাবে পানি খাওয়ার সাথে। এই নিয়ে সে ১১ তম গ্লাসের পানি গিললেন। তার স্ত্রী ভীতিবিহ্বল হয়ে তার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। সাধারণত খুব টেনশন আর রাগ না হলে ১ ঘণ্টায় এতো পানি তিনি খান না।
দেড় ঘণ্টার মাথায় তিনি পানিবমি করতে শুরু করবেন। আধা ঘণ্টা পানিবমির পর সে সহ্যা নিবেন। মৌরি ঘটনাটা ঘটার সময় ঘড়ি ধরে মাপে। তার এই বাসায় আসার পর সুফি সাহেবের মাসে চার বার এমনকি পাঁচবার এরকম হয়।মৌরি এমন কিছু করে বসে তাতে সুফি সাহেবের টেনশন বাড়বে আর তা না হলে রাগেগরগর করবেন।
প্রতিবারই দেড় ঘণ্টা সময় নেন সুফি সাহেব সহ্যা নেয়ার।
সুফি সাহেবের স্ত্রী অবশ্য বুঝতে পারছেন, মৌরি নতুন অতিথির সাথে কিছু একটা করেছে তার ফলে তার স্বামী টেনশনে এরকম করছেন।
মানুষ টাকে সে খুব ভালবাসে আর সম্মান করে কিন্তু তার বোন কখনওই তাকে সম্মান করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখ ভেংচি কেটে কথা বলে।
বাসায় যে এতো কিছু ঘটছে তার দিকে নিদ্রের কোনো খেয়াল নেই। নিদ্র, নিদ্রায় ব্যস্ত। সকাল ৮ টা পর্যন্ত অদ্রির সাথে একনাগাড়ে কথা বলার পর তার ঘুম যেন পিছু ছাড়ছেই না।
সে বেহুঁশ এর মতো ঘুমাচ্ছে।
সকাল ৯ টায়,
সুফি সাহেব নিদ্রের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নক করবে ঠিক তখন খেয়াল করলেন, দরজা খোলা। এক হাতে ট্রেতে দু কাপ কফি নিয়ে নিদ্রের রুমে ঢুকলেন। নিজ হাতে অতিথির জন্য কফি বানিয়েছেন। বিছানার উপর নিদ্র চার হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে ঘুমুচ্ছে। সুফি সাহেব বুঝতে পারলেন, মৌরি কিছু একটা করেছে। খুব সাবধানে কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলেন উষ্ণতা।
তার মতে শরীর একটু গরম হওয়া মানেই জ্বর আসা।
মৌরি তাকে পুকুরে চুবায় নাই তো?
ঘুম থেকে টেনে তোলাও ঠিক হবে না। কী করা যায়?
কফি ওভাবেই ঘরের মধ্যে রেখে চলে এলেন তার ঘরে।
মৌরিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর কিছুই জানতে না পেরে আরো বেশি টেনশনে পরে যান।
জ্বর যদি মেয়াদে চলে যায়? তখন?
এভাবে একজন মেহমান কে বিপদে ফেলা টা ঠিক হলোনা।
তারপর থেকে তার টেনশন বাড়তে বাড়তে পানি খাওয়া বাড়লো।
তারপর আর কী? সেই ঘটনা চক্র আবার ঘটবে ।
লিলি দর্জি বাড়ি থেকে নতুন জামা কাপড় নিয়ে বেশ হাসিহাসি ভাবেই বাসায় আসলো।
এতক্ষণে আপামনির ঘুম থেকে উঠে যাওয়ার কথা। সকালের নাস্তা তাহলে রেডি। এতদূর হেটে এসে তার খুব খিদে পেয়েছে।
কিন্তু বাসার মধ্যে প্রবেশ করেই তার মনে হলো আপামনি ঘুম থেকে উঠে নাই।
সরাসরি দোতলায় উঠে অদ্রির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো লিলি। দরজা খোলা ছিলো।
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো, অদ্রি ঘুমুচ্ছে। গভীর ঘুমে সে পরে আছে বিছানায়। হাতের মুঠোর মোবাইল।
বিছানার একপাশে জামাকাপড় রেখে লিলি রান্নাঘরে চলে এলো।
এভাবে এইপ্রথম সে আপামনিকে এভাবে দেখলো।
ঘুমন্ত মুখখানা দেখে তার মনে হচ্ছিলো সে হাসছে। হাসিটার মধ্যে আনন্দ খেলা করছিলো।
সুফি সাহেব পানিবমি করতে শুরু করলেন। তার স্ত্রী মৌরিকে রাগ করতে শুরু করলেন। মৌরি খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো।
নিদ্রের ঘুম ভাঙলো বাচ্চার কান্নার শব্দে।
তার মনে হচ্ছে ৫ মিনিট হয়েছে ঘুমিয়েছে।
চোখ খোলার সাথে সাথে তার ফোনালাপ এর কথা মনে পড়লো।
খুব ভালোই কেটেছে সময়। অন্ততপক্ষে ওই বিরক্তিকর মেয়ে থেকে দূরে থাকতে পেরেছে।

সুফি সাহেব বিছানার উপর পরে আছেন, নিদ্র তার পাশে লাল রঙের চেয়ারে বসে আছে।
নিদ্রকে সে হাজার বার প্রশ্ন করেছেন, সুস্থ আছেন কিনা?
নিদ্র তাকে কয়েকশ বার বলেছে, সে সুস্থ!
নিদ্রের এদিকে বাসায় যেতে হবে।
গতকাল রাতে পুরোটা গল্প বলে দিলেই হতো।
তাকে এভাবে আটকে থাকতো হতোনা। এই একমাত্র মানুষ যিনি ইখলাস সাহেবের ব্যাপারে ভালো ভাবে জানেন।
আর কেউ জেনে থাকলেও নিদ্রের জানা নেই।
সুফি সাহেব বললেন
– আমি আজকেই আপনাকে বলে দিবো। আমার যতটুকু জানা আছে জানাবো।
নিদ্রের বলতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু তারপরও বলল
– না আপনি সুস্থ হন তারপর……
– না, আজ রাতেই আমি আপনাকে ছুটি দিয়ে দিবো। মৌরি আপনাকে খুব জ্বালাচ্ছে। ও না এমনি। বাসায় ছেলে মেয়ে কেউই আসতে পারেনা আমাদের এখানে।
বলুন কী করবো?
– বিয়ে দিয়ে দিন।
– দিয়েছিলাম। পাগলামি মানে এসব যা করে সেই কারণে তালাক হয়ে গেছে।
– আবার বিয়ে দিয়ে দিন।
– মাথা খারাপ। ওকে বিয়ে দিয়ে অন্য পুরুষের জীবন নষ্ট করবো নাকি?
প্রথম জনের যে,অবস্থা হয়েছিলো। পাগলের ডাক্তার দেখাতে হয়েছিলো। জানি না এখন তার কী অবস্থা।
সুফি সাহেব আর নিদ্র আগের রাতের মতোই ছাদে বসে আছেন।
নিদ্র অধীর আগ্রহে বসে আছে।
সুফি সাহেব সিগারেট হাতে নিয়ে ঝিমুচ্ছেন।

চলবে…….!

#Maria_kabir

তিনি এবং ও ! ৩০.

0
তিনি এবং ও ! ৩০.
তিনি এবং ও ! ৩০.

তিনি এবং ও !

৩০.

২ টা প্রশ্ন নিদ্রের মাথার মধ্যে ব্যথার সৃষ্টি করেছে।
মাথাব্যথা যেন ক্রমশ বাড়ছে। প্রশ্নের উত্তর মৌরি আর সুফি সাহেব জানেন। এই কৃষ্ণ সুন্দরী কখনওই সত্য বলবে না। সুফি সাহেবকে এখন এইসময় বিরক্ত করতেও ইচ্ছে করছে না নিদ্রের।
কিন্তু প্রশ্ন দুটোর উত্তর তার চাই। তা না হলে মাথাব্যথা কমবে না।
খুব বিশ্রী একটা সমস্যা নিদ্রের। কোনো প্রশ্ন মাথার ভেতর প্রবেশ করলেই হয় একবার। সঠিক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তার স্বস্তি হবেনা। এমনকি এই নিয়ে বেশি চিন্তা করলে মাথাব্যথা শুরু হবে।
এরকম অবশ্য অনেকদিন পর হলো। নিদ্র জানে এখন রেস্ট নেয়াটা খুব দরকার তার।
মৌরি নিদ্রকে চিমটি কেটে বলল
– কী? ভয় করছে নাকি?
এভাবে গায়ে হাত দেয়াটা নিদ্রের বেশ অপছন্দ। তার উপর অসহ্যকর একটা মেয়ে তাকে ছুঁয়েছে।
নিদ্র বেশ শান্ত মেজাজে বলল
– একটা শর্ত দিবো। যদি পূরণ করতে পারেন তাহলে আমি আপনার সাথে ঘুরতে বের হবো।
মৌরি তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
– কী আবার শর্ত ? আর আমিই বা মানবো কেনো?
নিদ্র শান্ত কণ্ঠে বলল
– আমিই বা ঘুরতে যাবো কেনো? যান তো এখান থেকে! আমি ঘুমাবো।
– যাবোনা। কী করবেন?
নিদ্র মৌরিকে উপেক্ষা করে বিছানার উপর শুয়ে পড়লো। এমনভাবে বিছানায় শুয়ে রইলো যেন দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি উপস্থিত নেই।
মৌরি ঠিক বুঝতে পারছেনা কী করবে? এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে তার নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। এই প্রথম কোনো পুরুষ তাকে অগ্রাহ্য করলো। তাকে এতোটা অপমান করলো।
মৌরি খুব অস্থির অনুভব করছে। সে নিঃশব্দে রুম থেকে বের হয়ে দরজা আটকে দিলো।
নিদ্রের মাথাব্যথা কিছুটা কমেছে। অনেক কষ্টে সে তার প্রশ্নগুলোকে ঘুম পাড়িয়েছে। এখন সে ঘুমাবে।
হঠাৎ অদ্রির সেই লাল টকটকে চোখ দুটি তার মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠলো।
অদ্রির লাল টকটকে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। নিদ্র ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো পানি না, লাল রঙের তরল পদার্থ। তার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে।
অদ্রির ওড়না, জামা সেই রক্তে লাল হয়ে উঠছে ধীরেধীরে।
একসময় হুট করেই ক্যানভাস থেকে পুরো দৃশ্যটা উধাও হয়ে গেলো।
যেমন করে এসেছিলো ঠিক তেমনভাবেই।
নিদ্রের ঘুম আর হলোনা।
সহ্যা ছেড়ে উঠে বসলো। রশিদ সাহেবকে ফোন দিলো।
এবার প্রথম রিং এ ফোন রিসিভ হলো। ফোনের ওপাশ থেকে রশিদ সাহেব ঘুমে জড়ানো কণ্ঠে বলল
– কী বাবা? কোনো সমস্যা হয়েছে?
নিদ্র যথাসাধ্য চেষ্টা করলো নিজেকে শান্ত রাখার। তারপর বলল
– চাচা অদ্রির মোবাইল নাম্বার টা দিবেন?
রশিদ সাহেব কোনো প্রশ্ন না করেই বলল
– আচ্ছা আমি ম্যাসেজে পাঠাচ্ছি।
ফোন কেটে দিয়ে রশিদ সাহেব মেসেজে অদ্রির নাম্বার পাঠিয়ে দিলো।
অনেক সাধনার পর ম্যাসেজ দেয়া সে শিখেছে।
তারপর আবারো ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের ঘোরে ছিলেন বলেই কোনো প্রশ্ন না করেই কাজটা করেছেন। জাগ্রত থাকলে নিদ্রকে বিরক্ত করেই নাম্বার দিতেন।

বিছানার উপর মোবাইল টা প্রায় চিৎকার করে জানান দিচ্ছে যে, অদ্রিকে কেউ ফোন করেছে।
অদ্রি জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জীবনের পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখছিলো।
একটু পরেই ভোর হবে। দিগন্ত রেখায় অগণিত আলোকরশ্মি তার আভা ছড়াবে। সেই আভা অদ্রির জীবনে কখনওই আসেনি।
তার দিকে শুধু অন্ধকারই ধেয়ে আসে। অন্ধকার তাকে দিনদিন আরো বেশি অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রথমে সে নিজেই চাইতেন অন্ধকারে ভেসে যেতে কিন্তু আজকাল তার সহ্যশক্তি কমে যাচ্ছে।
মোবাইল ৩ বারের মতোন জানান দিচ্ছে কেউ ফোন করছে। অদ্রি অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফোন রিসিভ করে শুকনো কণ্ঠে বলল
– হ্যালো।
নিদ্র কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। এসময় ফোন করেছে সে অদ্রি যদি রাগ হয়? নিদ্র আস্তে আস্তে বলল
– আমি নিদ্র বলছিলাম।
অদ্রি যেন তার কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। নিদ্র তাকে ফোন করেছে?সেও কি রাত জাগছে? আমার মতোই? না না এসব আমি কীসব ভাবছি, অদ্রি নিজেকে শুধরালো। অদ্রি বলল
– হ্যা বলুন।
নিদ্র আড়ষ্টভাবে বলল
– আমি খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছি।আমার এই ঠাণ্ডা পরিবেশেও খুব গরম লাগছে।
অদ্রি বলল
– স্বপ্নটা আমাকে বলুন। দেখবেন ভয় কিছুটা কমে যাবে।
নিদ্র, অদ্রির কথায় কিছুটা সহজ হলো। নিদ্র বলল
– আপনি কেঁদেছেন আবার তাই না?
অদ্রি থতমত খেয়ে গেলো। কীভাবে নিদ্র বুঝলো? নাকি সে আন্দাজে বলেছে?
অদ্রি কোনো উত্তর না দেয়াতে নিদ্র বলল
– আপনার লাল টকটকে চোখ বেয়ে লাল রঙের রক্ত গড়িয়ে পরছে। আপনার সাদা কামিজ, ওড়না রঙিন হয়ে যাচ্ছে।
এই স্বপ্ন আমাকে ঘুমাতে দিলোনা।
অদ্রি বলল
– চোখেরজল কখনওই রঙিন হয়না। কারণ কষ্টগুলো তো জীবনকে ফ্যাকাসে করে দেয়। জীবনের রঙটাকে চুষে খেয়ে ফেলে রাখে ফ্যাকাসে জীবনটাকে। সেই চোখেরজল কী করে রঙিন হয় বলতে পারবেন নিদ্র???

চলবে…….!

#Maria_kabir