বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে রুকু চৈত্রের শেষের দিকে।ফাগুণ আগুন লাগিয়ে কবেই চলে গিয়েছে।এখন ঝড় উঠছে, চারদিক লন্ডভন্ড করছে।টুং করে শব্দ হলো।পাশের ঘরে আবিদের লেপটপে হলো আওয়াজটা।রুমে গিয়ে লেপটপের সামনে বসতেই দেখলো মেইল এসেছে।ওপেন করতেই বুঝতে পারলো এটা সুমুর মেইল। মেইলের উত্তর দিয়ে আবার বারান্দায় গিয়ে বসলো রুকু।আজ ২ বছরের মত হয়ে গিয়েছে সে রাতের ঘটনার পর।এরপর ২ টো বসন্ত পার হলো।ফাগুনের নবধারা বয়ে গিয়ে চৈত্রের রুক্ষতা, বৈশাখী ঝড়, জৈষ্ঠ্যের খরতাপ গেলো।কিন্তু আজও রুকু সে রাত ভুলতে পারেনি।
রাত ৯টা থমথমে পরিবেশ পুরো হাসপাতাল জুড়ে।নাভিদ এর অপারেশন শেষ তবে জ্ঞান ফেরেনি।সে আপাদত ইন্টেন্সিভ কেয়ারে আছে।ডাক্তার বলেছেন নাভিদের জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।তবে হয়তো ব্রেইন হ্যাম্পার্ড হবে।চোট টা গভীর।সুমুর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু সে ভীষণ চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।রুকু ঘুমাচ্ছে তার পাশে আবিদ বসে আছে।রুকুর একপাশে নীহা গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।
আবিদের মা আবিদের এহেন কর্মকান্ডে রেগে বোম হয়ে আছেন।আবিদের বাবা আবিদের মাকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছেন লাভ হয়নি।এক পর্যায়ে আবিদের মা উঠে সরাসরি ইলমার মায়ের কাছে গিয়েই ইলমা আর আবিদের বিয়ের কথা বললেন।ইলমার মা ইতস্তত করেছিলেন।কারণ আবিদ রুকুকে বিয়ে করতে চেয়েছে।কিন্তু নিজের মেয়ের জন্য এত ভালো সম্বন্ধে আর বেশিক্ষণ গাঁইগুঁই করতে পারলেন না।
হাসপাতালে ৩ দিন থাকার পর রুকু আর মেঘ কে নিয়ে সবাই বাসায় চলে এলেন।নাভিদের জ্ঞান ফিরেছে।তবে তাকে হাসপাতালেই থাকতে হবে তাই সুমুও ওর কাছেই রয়ে গিয়েছে।তবে একটাই সমস্যা।নাভিদ পুরোনো কিছুই মনে করতে পারছেনা।স্মৃতি শক্তি চলে গিয়েছে।এবং এক কানেও শুঞ্চছে না।বেশ ব্যাথা পেয়েছে।
রুকুর নতুন বাবুকে যখন ব্যস্ত সবাই তখন আবিদের মা আবিদ আর ইলমার বিয়ের কথা তোলেন সবার সামনে। আবিদ অবাক হয়ে যায়।ইলমা আর রুকুও।কিন্তু রুকু মুচকি হেসে মেনে নেয়।আবিদ রুকুর হাসি দেখে রেগে যায়।
বাসায় এসে আবিদ তার মাকে জেরার মুখে ফেলে।কিন্তু তার মা এবার জেদ ধরেছেন তিনি ছেলেকে ইলমার সাথেই বিয়ে দিবেন।
নাভিদকে বাসায় আনা হয়েছে। ২ মাস কেটে গিয়েছে।নাভিদ আর সুমুর মাঝে বন্ধুত্বও হয়েছে বেশ।নাভিদের কোনো কাজই সুমু ছাড়া হয়না।তাই সবাই তাদের এবার জোড়া বেঁধে দিতে চাইছেন পাকাপোক্ত ভাবেই।সামনের শুক্রুবার বাদ জুম্মা তাদের বিয়ে ঠিক হয়।কে জানতো সেদিন একসাথে কতগুলো জীবন পালটে যাবে।সবাই সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।কেউ পাবে কেউ হারাবে।
রুকুর অবস্থা বেগাতিক দেখে আবিদ রুকুর হাত শক্ত করে ধরে আছে।হাসপাতালে আসতেই রুকুকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয় লেবার রুমে।রুকু শেষ বার আবিদকে দেখে তাকে বলে আমার বেবিটাকে বাঁচাবেন প্লিজ।আবিদ রুকুর হাত ধরে বলে আমি তোমাদের দুজনের একজনকেও হারাতে চাইনা রুকু।
ইমারজেন্সি রুমে সুমুকে আইভি ড্রিপ দেয়া হয়।সবাই যখন সুমুর আর রুকুর চিন্তায় অস্থির তখন আরো একটা খারাপ সংবাদে সবার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
নাভিদ এর জ্ঞান ফিরছেনা।ওর জ্ঞান কবে ফিরবে বা আদৌ ফিরবে কিনা কেউ জানেনা। সুমুর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু সে কারো কথার কোনো জবাব দিচ্ছেনা।বডিতেও কোনো মুভমেন্ট নেই।ডাক্তাররা বলেছেন খুব বড় রকমের শক থেকে এরকমটা হচ্ছে।নাভিদের মাকে নিঝুম সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ওখান থেকে।সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে।আমিনা বেগম মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে এসে ছেলের এক্সিডেন্টের সংবাদ শুনে শোকে কাতর।এদিকে আবিদ রুকুর টেনশনে নিহাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
জীবন খুবই আনপ্রিডিক্টেবল।কখন কি হয়ে যায় তা কারো জানা থাকেনা,জানা নেই।কোথায় নতুন প্রাণের আগমনের খুশির জোয়ার তো কোথায় মৃত প্রায়ের জন্য শোক। আল্লাহ কখন কার ভাগ্যে কি রেখেছেন জানা বড্ড দায়।
অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হলেন।আবিদের সামনে গিয়েই তাকে বাবা হওয়ার অভিনন্দন জানালেন।আবিদ প্রথমে অস্বস্তি বোধ করলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে ডাক্তার কে বললো –
আমি বেবির বাবা না।
ডাক্তার অবাক হয়ে বললেন তাহলে বাবা কে?
-হি এক্সপায়ার্ড।
– ওহ দুঃখিত।বেবি আর মা দুজনেই সুস্থ আছেন। আপনি চাইলে দেখা করতে পারেন।তাকে কেবিনে শিফট করা হবে।
আবিদ ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে কেবিনের দিকে গেলো।নরমাল প্রসিজারেই রুকুর বাচ্চা হয়েছে। দুজনেই সুস্থ।আবিদ কেবিনে ঢুকতেই দেখে রুকুর পাশে একটা ছোট্ট পুতুল শুয়ে আছে।আবিদ রুকুর সামনে যেতেই রুকু আবিদকে দেখে মুচকি হাসে। আবিদ বেবিটাকে কোলে নেয়।রুকু আবিদের হাসি দেখে।নিহা রুকুর বিছানার উপরে উঠে রুকুর বুকে শুয়ে জিজ্ঞেস করে-
মামণি এটা ভাইয়া নাকি আপু? রুকু হেসে দেয় নিহার কথায়।
– এটা ভাইয়া নিহা।
নিহার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে যায়।
– আমি ওর একটা নাম রেখেছি মামণি।
– কি নাম?
– মেঘ।
– আচ্ছা বেশ।তবে এই নামেই আমরা ওকে ডাকবো কেমন?
– আমি কি ওকে কোলে নিতে পারি?
আবিদ বলে কেনো নয়? অবশ্যই পারো।আবিদ আর রুকু নিহার কোলে ছোট্ট মেঘ কে দেয়।নিহার বিস্ময় জেনো কাটছেইনা।এত ছোট বাবু ও আর কখনোই দেখেনি।
রুকুকে এখনো নাভিদের কান্ডিশন জানানো হয়নি।আবিদ সবাইকে রুকুর ছেলে হবার খবর দিতে বেড়িয়ে যায়।নিহা রুকুর পাশেই বসে থাকে।
আবিদ এর কথা শুনে সবাই খুশি হয়। রুকুর বাচ্চাকে দেখতে যায় সবাই আর সুমুর কাছে নার্সকে রেখে যায়। রুকুর শাশুড়ি তো ভেবেই নিয়েছেন তার ছেলে ফিরে এসেছে তার কাছে।আবিদের মা ইলমার সাথে আবিদের বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছিলেন। তবে এ পরিস্থিতিতে তা সম্ভব না।কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবিদ রুকুর মাকে অার শাশুড়িকে বলেন –
আন্টি আমি রুকুর আর তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাই।আবিদের কথা শুনে তার মা হতভম্ব হয়ে যান।কি বলছে তার ছেলে?
ইদানীং রুকুর মন খারাপ থাকে খুব।কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়না।সারাদিন সে শুধু উপন্যাসের বইয়ে ডুবে থাকে।ক্ষুধাও কমে গিয়েছে।বাচ্চাটাও দুষ্টু হয়েছে বেশ।শুধু পেটেই নাড়ানাড়ি। রুকু তার অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলে।
আরো আশ্চর্য ব্যাপার হলো রুকু চোখ বন্ধ করে আবিদের চেহারাটা দেখতে চায়।আবিদের চেহারা তার কল্পনার ঘরে উঁকি দেয়। আবিদের হাতে এক দেবশিশু দেখা যায়।কিন্তু সেটা তার মৃত স্বামী আবিদ নয়। সে তার কল্পনা থেকে বেড়িয়ে এসে হাসফাস করতে থাকে।সে যখন কল্পনায় আবিদের জায়গায় অন্য আবিদকে দেখে তার পেটের শিশুটাও তার অস্তিত্ব জানান দেয়।
রুকুর ডিলেভারির এখনো এক সপ্তাহ বাকি।আজ আমিনা বেগম বাদে বাসার সবাই শপিং এ গিয়েছে।রুকুর অনাগত সন্তানের জন্যও শপিং করতে হবে।প্রধান উপলক্ষ নাভিদ আর সুমুর বিয়ে।নাভিদ ইদানীং অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুমুকে সময় দিতে পারছেনা খুব একটা। এ নিয়ে সুমুর মাথা ব্যথা নেই সে একাই একশ। তাই নিজে নিজেই শপিং করছে। নতুন সংসারের জন্য তার বহু প্ল্যান।আজ রুকুর শাশুড়ি আর নিহার দাদীও গিয়েছেন শপিং এ।তাদের দুজনের মধ্যে আলাদা ভাব হয়েছে।বুড়ো বয়সে সই পাতিয়েছেন দুজন।নিহার দাদীর এর পেছনে একটি উদ্দেশ্য রয়েছে।তিনি তার বড় পুত্রের জন্য পাত্রী খুঁজছেন।সে ক্ষেত্রে তার পুত্রের জন্য ইলমাকে যোগ্য বলে মনে হয়েছে।যদিও বয়সের গ্যাপটা বেশি তাতে কি? সুখী হতে বয়স লাগেনা।তিনি সুযোগ খুঁজছেন কখন ইলমা আর আবিদের ব্যাপারে কথাটা বলবেন সবাইকে।
নিহা আবিদের পিঠের উপর বসে আছে।আবিদ পুশ আপ দিচ্ছে।নিহা সেটা কাউন্ট করছে।
-৮৮, ৮৯,৯০, ৯১… আব্বু?
– জ্বি।
– মামণি কে তুমি কতটা ভালোবাসো?
নিহার প্রশ্ন শুনে আবিদ থ হয়ে যায়।রুকুর কথা বলছে তার কন্যা সেটা বুঝতে বেশিক্ষণ লাগেনি তার।
নিহাকে পিঠ থেকে নামতে বলে আবিদ। নিহা নামতেই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে সে ম্যাট এর উপর।নিহা ঝাপিয়ে পড়ে বাবার বুকে।আবিদ নিহাকে জড়িয়ে ধরেই বলে-
উনি তোমার মামণি না নিহা।তোমার মামণি নেই।
– তাহলে মামণি যে বললো সে তোমাকে ভালোবাসে আর তুমি তাকে, আর আমার একটা ছোট ভাই নিয়ে আসবে তোমরা।
নিহার কথায় আবিদের মেজাজ খিচড়ে যায়।নিহাকে কিছু না বলেই আবিদের বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে দেয়।ঠান্ডা পানির নিচে দাড়িয়ে থেকে অনেক কিছু চিন্তা করে সে। শেষ পর্যন্ত সে ঠিক করে রুকুকে কিছু কঠিন কথা শুনাবে।আর নিহাকে রুকুর কাছে যেতে বারণ করবে।
গোসল সেরে চেইঞ্জ করে আবিদ নিহাকে নিয়ে রুকুদের দরজার সামনে দাঁড়াতেই চিৎকারের শব্দ পায়।ভড়কে যায় আবিদ। কলিং বেল চাপতেই।রুকুদের বাসার কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দেয়।আবিদ ভিতরে ঢুকে দেখে রুকু সোফায় বসেই চিৎকার করছে। তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে ব্যাথায়।আমিনা বেগম মানে রুকুর মা তাকে ধৈর্য ধরতে বলছেন।এম্বুল্যান্স ডেকেছেন তিনি।নাভিদকে বলেছেন চলে আসতে।রুকুর ওয়াটার ব্যাংক ব্রেক হয়েছে।অবস্থা বেগাতিক।তিনি নিজেও বুঝতেছেন না কি করবেন।সময়ের আগেই এমনটা হলো।আবিদ আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে নিহাকে রুকুর মায়ের কাছে দিয়ে রুকুকে কোলে নিয়ে দরজা দিয়ে বের হলো।লিফটে উঠতেই রুকুর মা কাজের মেয়েটাকে দরজা লক করতে বলে তিনিও পারসটা নিয়ে নিহাকে সাথে নিয়ে বের হলেন।নিহা কিছু বুঝতেছেনা কি হচ্ছে! আবিদের টি-শার্ট খামছে ধরে আর্তনাদ করছে রুকু।এ ব্যাথা সহ্য করার মত না।
আবিদের হাতের কিছু যায়গা কেটে গিয়েছে রুকুর জন্য। সে দিকে সে ভ্রুক্ষেপ না করে রুকুকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ড্রাইভার কে হাসপাতালে নিতে বললো।আর সে রুকুর পাশে গিয়ে বসলো।আমিনা বেগম ড্রাইভারের পাশের সিটে নিহাকে নিয়ে বসলেন।তিনি ড্রাইভারকে হাসপাতালের ঠিকানা দিলেন যেখানে রুকুকে এডমিট করার কথা।তিনি সবাইকে ফোন করে হাসপাতালে আসতে বললেন।রুকু ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বিপদ। তাই আবিদ রুকুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।
– রুকু তোমার বেবিটা আসতে চলেছে তোমার কাছে একটু অপেক্ষা করতে হবে।ধৈর্য ধরো।
– আবিদ আমার বাচ্চাটার কিছু হবেনাতো?
– কিচ্ছু হবেনা। আমি আছিতো।তোমার মাও আছে।সব ঠিক হবে।রিল্যাক্স।
– আমার কষ্ট হচ্ছে।আমাদের বেবিটা সুস্থ হবেতো? আমি বাঁচবোতো?
রুকুর কথা শুনে আবিদের হার্টবিট মিস করে কয়েকটা।সে মাথা ঠান্ডা রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করে। কিন্তু রুকুর শেষ কথাটা তার মনেও ভয় ঢুকিয়ে দেয়।রুকু না বাঁচলে তার কি হবে? নিহার কি হবে? রুকুকে বাঁচতে হবেই।
তাড়াহুড়ো করে নাভিদ অফিস থেকে বের হয়। আমিনা বেগমের কথামত সে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।জ্যামে আটকা পড়ায় পৌছাতে দেরি হচ্ছে তার।জ্যাম ছাড়তেই। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগুতেই একটা ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়।বিকট আওয়াজে গগণ কেঁপে ওঠে।ভিড় জমে যায় মুহূর্তেই।
সুমু সহ সবাই হাসপাতালে যচ্ছে।রুকু্র অবস্থা ভালোনা বেশি।সুমুর ফোনে এ সময়ে নাভিদের কল আসে।ভয়ে মুসরে যায় সুমু।কে জানে কেমন সংবাদ আসবে।ভয়ে ভয়ে রিসিভ করতেই স্তব্ধ হয়ে যায় সুমু। চিৎকার করার আগেই জ্ঞান হারায়।সবাই অবাক হয়ে যায় সুমুর অবস্থা দেখে।নিঝুম সুমুর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নাভিদের কল। সে ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই বুঝে যায় কি হয়েছে।কাউকে কিছু বলেনা সে।
সুমু বারান্দায় বসে নাভিদের দিকে চেয়ে আছে।অপর পাশের বারন্দায় বসে নাভিদও চেয়ে আছে।দুজনে চুপ, কিন্তু কথা বলছে তাদের চোখ আর কিছু অনুভূতি।একে অন্যের দিকে চেয়ে হাজারো না বলা কথা গুলো জেনো পড়ে নিচ্ছে।পুরোটা বিকেল তারা এভাবেই কাটালো।মাগরিবের আজানের পরই সুমু উঠে ভিতরে চলে গেলো।
নিঝুম বাহির থেকে এসে নিধির সাথে করা আজকের দূর্ব্যবহারের কথা চিন্তা করতে থাকলো।অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিলো সে নিধির কাছে মাফ চাইবে।
ইলমা বিকেলের অলস সময়টা ফাহিমের সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দিলো।আজ বহুদিন পর তার মনটা আনন্দে ভরে উঠেছে।সে আজ অনেক খুশি।আজানের পর নিঝুমের সাথে দেখা হতেই আজ আর সে তার সাথে দূর্ব্যবহার করলো না।বরং নিঝুমকে অবাক করে দিয়ে সে নিজেই তাকে কফি অফার করলো।কিন্তু বেচারা নিঝুম বিকেল থেকে নিধির কথাই ভেবে যাচ্ছে তাই আজ আর সে ইলমার কথায় খুব একটা পাত্তা দিলো না।এরকম আচরণে ইলমা অভস্ত না।হঠাৎ করে তার কি জেনো হলো।এই অবহেলাটা নিতে না পেরে তার মন খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু সে নিজের আচরণে নিজেই অবাক হচ্ছে।
আজ শুক্রুবার।দেখতে দেখতে প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলো রোকসানাদের এ বাড়িতে আসার।দুশ্চিন্তা মুক্ত কিছু সময় কাটালো রোকসানার। আরও কিছু জিনিস দেখলো সে।এই যেমন আবিদ লোকটা।তার সম্পর্কে করা রোকসানার প্রায় সকল ধারণাই ভুল হলো। তবুও তার ভুল গুলো হওয়াতেও সে অদ্ভুত এক আনন্দ পেলো।
বাসার সবাই আজ খানিকটা ব্যস্ত। সুমু আর নাভিদের বিয়ের শপিং করতে যাবে সবাই।রোকসানার শরীর ভালো না থাকায় সে বাসায় থাকবে আর নিঝুম বাসায় থাকবে সাথে তাদের বাসার কাজের মেয়েটা।ইলমার ইচ্ছে না থাকলেও মায়ের পিড়াপীড়ি তে যেতে হচ্ছে। সকালের নাস্তা করেই সবাই বের হবে।আসতে সন্ধ্যা হবে।আত্মীয় বাড়িতে দাওয়াতেও যেতে হবে তাই।আমিনা বেগম নিঝুম কে রুকুর খেয়াল রাখতে বলে সবাইকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।
সাড়ে ১১ টা নাগাদ ডোরবেলটা বেজে উঠলো। রুকুদের কাজের মেয়ে লতা দৌড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাসে দেখে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই একটা ৫ বছরের মেয়ে দৌড়ে রুকুর ঘরে গিয়ে রুকুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।নিঝুম রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো রুকু কার সাথে যেনো হেসে হেসে কথা বলছে। উকি দিতেই দেখলো একটা ছোট্ট মেয়ে।সে মেয়েটাকে চেনে।এটা বাড়িওয়ালার নাতনি নিহারীকা। সবাই নিহা ডাকে। রুকুকে দেখে নিঝুমেরও আনন্দ হচ্ছে।কতদিন পর রুকুকে এভাবে হাসতে দেখছে যে হাসিতে কোনো কৃত্তিমতা নেই। নিঝুম রুকুর ঘরে গিয়েই বললো –
মা মেয়ের কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য দুঃখিত।রোকসানা হাসলো।
নিঝুম আবার বললো আমি নিচে যাচ্ছি আপু।তুই থাক। কিছু লাগলে কল করে দিস।রুকু মাথা নেড়ে সায় দিয়ে আবার বাচ্চা মেয়েটার সাথে কথা বলতে লাগলো।
নিহা রুকুর বিছানায় বসে তার স্কুলের সব বন্ধুদের কথা বলছে আর হেসে কুটিকুটি হচ্ছে কি নিষ্পাপ সে হাসি।রুকু নিহাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো –
নিহা তুমি আমাকে মামণি ডাকো কেনো? তোমার আম্মু রাগ করবে না? মুহূর্তেই নিহার মন খারাপ হয়ে গেলো।সে বললো – আমার আম্মু নেই।চমকে গেলো রুকু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো তোমার আব্বু বাসায়? নিহা মাথা নেড়ে সায় দিলো।লতা নিহা আর রুকুর জন্য দুটো গ্লাসে জুস নিয়ে আসলো।নিহা জুস খেতে খেতে রুকুকে জিজ্ঞেস করলো – মামণি তোমার পেটে কি আমার ভাই?? নাকি বোন? রুকু নিহার কথায় হাসলো নিহা জুস শেষ করে রুকুর পেটে কান লাগিয়ে তার অনাগত ভাই বা বোন কে জলদি আসতে বললো সে তাদের সাথে বাবার সাথে সুইমিং শিখবে তাই।
নিহার কথায় রুকুকে অবাক করে দিয়ে পেটের ভেতরের বাসিন্দা লাথি দিলো মৃদু।
আবিদ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেড়ে ছাদে গেলো। গাছ গুলোতে পানি দিবে।সাথে তাদের ছাদের সুইমিংপুল টাতে কিছুক্ষণ সাতার কাটবে।সুইমিংপুল টা একান্তই আবিদের শখের বসে করা খুব বড় না হলেও খুব ছোটও না।১৩ তালা এপার্টমেন্ট টার ছাদের পুলটা অনেক শখ করেই বানিয়েছে আবিদ।পুরো ছাদ টা সে নিজের ইচ্ছেমত সাজিয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময় তাকে বাহিরে কাটাতে হয়।তাই নিজের বাসায় খুব একটা থাকা হয়ে ওঠেনা।সুইমিং করার কিছুক্ষণ পরেই নিচে চলে এলো আবিদ। নামাজে যাবার সময় হয়ে যাচ্ছে প্রায়।ঘরে এসে নিহাকে ডেকেও সে পেলোনা।নিহার দাদী জানালো সে রুকুদের ঘরে গিয়েছে।আবিদ মুচকি হাসলো।
নিহা আবিদের মেয়ে।তবে আপন মেয়ে নয়।নিহাকে আবিদ কুড়িয়ে পেয়েছিলো যখন নিহার বয়স দেড় বছরের মত ছিলো। এরপর থেকে নিহাকে সে নিজের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দেয়।প্রথমে আবিদের বাবা গাঁইগুঁই করলেও পরে নিহার সাথে তার সখ্যতা হয়ে যাওয়ায় সে আর এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি। তাই নিহা এখন তাদের পরিবারের সদস্য আবিদের কন্যা।
নিঝুম দুপুরে বাসায় খাবেনা বলে জানিয়ে দিলো রোকসানাকে।তাই রোকসানা নিহাকে নিয়ে খেতে বসলো।নিহাকে মুখে তুলে খায়িয়ে দিচ্ছে রুকু আর রাজ্যের গল্প করে যাচ্ছে নিহা।রুকুর খুব মায়া হচ্ছে মেয়েটার জন্য।আবিদ বাসায় ফিরে দেখলো নিহা নেই।নিহাকে ছাড়া সে কখনো খেতে বসে না। তাই উঠে নিহাকে ডাকতে গেলো রুকুদের বাসায়।কলিং বেল দিয়েই দাড়িয়ে রইলো সে।লতা দরজাটা খুলে দিলো আবিদকে দেখে।আবিদ নিহার কথা জিজ্ঞেস করতেই লতা রুকুর রুমটা দেখিয়ে দিলো আবিদকে।ভিতরে গিয়ে আবিদ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো নিহা আর রুকুর দিকে।নিহা গরগর করে কথা বলছে আর রুকু তার মুখে নলা তুলে দিচ্ছে।আবিদ অবাক কারণ নিহা সবার সাথে মিশেনা।দাদা-দাদী আর আবিদই তার ভুবন।সে কারো কাছে খেতেও চায়না।অথচ আজ পুরো ব্যাতিক্রম।
আবিদ নিহাকে ডেকে বললো –
আমাকে ছাড়াই খেয়ে নিলে? নিহা বাবার দিকে চেয়ে মিষ্টি হাসি দিলো।
– তোমার সাথেতো রোজ খাই বাবা,আজ মামণির সাথে খাচ্ছি।
আবিদের বিস্ময়ের সীমা রইলোনা।নিহা রুকুকে মা ডাকছে।অথচ এই মেয়ের জন্য সে বিয়ে করেনি।বাসা থেকে বহু পাত্রি দেখা হলেও নিহার পছন্দ হয়নি বলে আবিদ এগোয় নি।এছাড়া তার পেশার জন্য ও নিহাকে এমন কারো কাছে রাখবে বাবা মায়ের পরে যে বিশ্বস্ত এমন কাউকেই পায়নি।
রুকু আবিদের চেহারা দেখে বুঝলো আবিদ অবাক হয়েছে।রুকু আবিদ কে তাদের সাথে খেতে বসতে বললো আবিদ বসতে চাইলোনা।নিহা আবিদকে জোর করায় আবিদ বসলো।খাবারের আইটেম দেখে আবিদ আরো অবাক হলো প্রায় সবই তার পছন্দের খাবার।গরম ধোয়া ওঠা পোলায় চালের খিচুড়ি, ডিম ভুনা,মাছের কোফতা, সব্জি, সাদা মুরগির মাংস আরর সাথে সালাদ।
রুকু আবিদকে বেড়ে দিয়ে সে নিজে খেতে বসলো আবিদ মানা করলো তাকে ব্যস্ত হতে। এইসময়ে এত প্রেশার না নেয়াই ভালো।দুপুরের খাবার খেতে খেতে রুকু কথা বলছে আবিদের সাথে।চুপচাপ আবিদ একজন ভালো শ্রোতা।আর রুকু বক্তা।
– আবিদ সাহেব আপনার স্ত্রীর বিষয়ে জেনে দুঃখিত।এত ছোট বয়সে নিহা তার মাকে হারিয়েছে।নিহা লতার সাথে খেলছিলো তখন।আবিদ রুকুকে বললো
– আমি অবিবাহিত। নিহা আমার আপন মেয়ে না।আমি তাকে দত্তক নিয়েছি।
– অবাক হলো রুকু।আর বললো- আমি দুঃখিত।আমি জানতাম না ব্যাপারটা। আবিদ হালকা হেসে বললো ব্যাপারটা বাবা -মা ছাড়া আর কেউ জানেনা আর আপনি আজ জানলেন।আমার পেশার জন্য আমাকে বছরের অর্ধেক সময় বাহিরে থাকতে হয় নিহা তখন মার কাছে থাকে।
রুকু আবিদকে তার পেশা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো।আবিদ স্বাভাবিক ভাবে বললো সে একজন পাইলট। বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ এর।
রুকুদের খাওয়া শেষ হলে রুকুর ঘরে গিয়ে আবিদ দেখলো নিহা ঘুমিয়ে পড়েছে ক্লান্ত হয়ে।আবিদ রুকুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিহাকে ওখানেই রেখে এলো।আজকের দুপুরটা বেশ ভালো কেটেছে তার।অনেকদিন পর এভাবে গল্প করেছে কারও সাথে।রুকুও আবিদ যাওয়ার পর বিশ্রাম নিতে গেলো নিহার পাশে শুয়ে পড়লো সে।
এই হিরহিরে ঠান্ডা মেঘ বৃষ্টির লুকুচুরি খেলায় ও রোকসানার গরম লাগা শুরু করলো আর কিছুক্ষণের মধ্যে সে বিরক্ত হয়ে গেলো।দুপুরের পর সবাই হালকা বিশ্রাম নিচ্ছে।বাসাটা নিরব হয়ে আছে।অবাক রোকসানা, বাংলা গান অপছন্দ করা নাভিদ-নিঝুমের রুম থেকে গানের শুর ভেসে আসছে –
“এসো করি স্নান নবধারা জলে,
এসো নীপবনে,
ছায়াবীথি তলে…”
বিস্ময়ের সীমা রইলোনা রোকসানার…
ছাদে উঠে এসেছিলো লিফটে একাই।এই অবস্থায়। কারণ ঘরে তার দম আটকে আসছিলো। কিন্তু ছাদে এসে আরো কেমনজানি লাগলো রুকুর।তারও ইচ্ছে করলো বৃষ্টিতে ভিজি তাকে উপভোগ করার,যেভাবে এখন তার সামনে থাকা অত্যন্ত সুদর্শন, সুপুরুষটি করছে।দুহাত মেলে দিয়ে ভিজছে আর গান গাইছে।রুকু আর স্থীর থাকতে না পেরে ছাদে গিয়েই আবিদ কে জিজ্ঞেস করলো-
আমি কি আপনার সাথে ভিজতে পারি??
– আবিদ কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় বেক্কল হয়ে গেলো।সে একজন গর্ভবতী, ২৪ কি ২৫ বছর বয়সী মেয়ের শান্ত কিন্তু প্রাণোচ্ছল চোখের দিকে তাকিয়ে।
সম্মত ফিরে পেয়ে আবিদ একটা হাসি দিলো তার অর্থ হ্যাঁ।আবিদ আর রুকু বৃষ্টিতে মাত্র ৮ মিনিট ভিজলো। গুণে গুণে।তারপরই আবিদ বলে উঠলো গম্ভীর স্বরে-
মিসেস রহমান আমাদের এখন নিচে নামা উচিৎ। হতভম্ভ হয়ে রুকু চাইলো আবিদের দিকে-
মাত্রইতো এলাম।আমার চুলগুলোও ভিজেনি।আর চলে যাবো?
– হ্যাঁ কারণ আপনি এখন কোনোভাবেই ভেজার স্টেট এ নেই।আর আমি আপনার এই ক্রুশিয়াল মুমেন্টে অসুস্থ তা আফোর্ড করতে পারবোনা।রুকু অবাক হয়ে আবিদের কন্সার্ণ দেখলো তার প্রতি,বিব্রতও হলো।অপিরিচিত পরিচিত লোকটি কেনো এটা বললো?
আবিদ একপ্রকার জোর করে রুকু কে নিয়ে নিচে নামলো ফ্ল্যাটে ঢোকার আগে ওকে মাথা মুছতে বলতে ভুললোনা।রুকুকে অবাক করে দিয়ে পাশে বাড়িওয়ালাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলো।
রাতে রুকু শুয়ে শুয়ে ভাবছে আবিদ এর নামটাই মিলে শুধু বাকি সবকিছু ই আলাদা।যেমন – আবিদ বাঁচাল ছিলো,এত কেয়ারিং ছিলোনা,মুডি ছিলো, তবে গম্ভীর্যও ছিলো ডিফেন্সে ছিলো যে তাই,তার হাসব্যান্ড কে নিয়ে তার একটু নাক উঁচু হলো তার বর আর্মি অফিসার হওয়ায়।আর এই আবিদ বেশি হলে নিশ্চই কোনো কর্পোরেট জব করে।কি অদ্ভুত এক ব্যাপার সে কি ভাবছে আজ এগুলো?? ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো রুকু।
নাভিদ সুমুকে দেখে চমকে উঠলো। দুদিনের জ্বর তাকে কাবু করে ফেলেছে।সে খুব সুন্দর করে চোখে কাজল পড়েছে। তবুও তাকে আজ নিস্তেজ লাগছে।বাগদান হবার পরে তারা আর রাখঢাক করে দেখা করেনা।তবে তারা শালীন আর সচেতন তাদের সম্পর্ককে নিয়ে।
ভালোবাসা হয়তো এমনই হয়।রুকুর ডিলেভারির পরেই তাদের বিয়ের আয়োজন হবে
।নাভিদের বুকে মুখ গুজে থাকা সুমুর কপালে আলতো করে চুমু খেলো। সুমু ঘাড় সোজা করে তাকাতেই নাভিদ শুষ্ক ঠোঁট গুলোতে গভীর ভাবে চুমু খেলো। নাভিদ হঠাৎ বলে উঠলো –
সুমু তুমি কি জানো তোমার নামের সাথে একটা জিনিসের খুব মিল! নাভিদের কথায় সুমু প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।
নাভিদ উত্তর দিলো-
সু মু, চু মু
নিঝুমের এহেন কান্ডে বিস্মিত নিধি। তার চোখ বেয়ে পানি চলে এলো।নিঝুম ঝোকের মাথায় বলতে গেলে রাগের বসে নিধিকে একটা বিরাশি সিক্কার চড় মেরেছে।নিধি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
নিঝুমের হাতে ইলমাকে দেয়ার জন্য একটা সুন্দর ফ্লাওয়ার ভাজ।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা-
নিঝুম একটা মাটির ফুলদানি কিনেছে,ইলমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে।কথা হলো ভাজ গুলো মাটির ছিলো সেখান থেকে সুন্দর একটা বেছে নিয়েছে।নিঝুম সেটা শুধু খবরের কাগজ দিয়ে পেঁচিয়েছে আর কিছুইনা।তারপর রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলো।জ্যাম ছোটার আগেই সে পার হবার জন্য হাটতে লাগলো হঠাৎ একটা প্রাইভেট কার তার গা ঘেষে চলে যেতে নিলেই নিধি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় যেনো গাড়িটাতে তার ক্ষতি নাহত কিন্তু ভুল বসত নিঝুমের হাত থেকে সদ্য কেনা ফুলদানি টা পরে ভেঙ্গে গিয়েছে।নিঝুম রাগে হিতাহীত জ্ঞান ভুলে নিধিকে চড় দিয়েছে।নিধি প্রথমে ভেবেছে হয়তো তার নিজের ক্ষতির ভয়ে নিঝুম কাজটা করেছে মনে মনে এতজোরে চড় খেয়েও খুশি হচ্ছিলো কিন্তু তার আশায় জল ঢেলে দিয়ে নিঝুম রাস্তার সবার সামনে তাকে গায়ে পড়া মেয়ে বলে অপমান করেছে।আর ইলমার জন্য আনা ফুলদানিটার জন্য আফসোস করছে।নিধি সহ্য করতে না পেরে চলে গেলো পালালো বলা চলে। ভিড় থেকে কেউ একজন নিঝুমকে বললো আপনার জান বাঁচাতে মেয়েটা নিজেকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছিলো।কথাটা শুনে নিঝুমের হুঁশ ফিরলো সে এতক্ষণে পিছনে ফিরে তাকিয়ে নিধিকে খুজলো কিন্তু পেলোনা।সে হয়তো আর কখনো পাবেনা নিধিকে।তার হয়তো ক্ষমা চাওয়া আর পাওয়াটা কোনোদিনই হবেনা।
ফাহিম কে অনেক্ষণ ধরে ফোন দিয়েও ব্যর্থ ইলমা।ফোন রিসিভ করছেনা।গত একসপ্তাহ ধরে কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই ওদের। ইলমার কাছে ফাহিমদের ল্যান্ডফোনের নাম্বার আছে কিন্তু সে কল দিতে পারছেনা।ফাহিমের মাকে সে ভয় পায়।তিনি খুব সহজসরল হলেও অত্যন্ত রাগী। তার মতে তার ছেলে খুবই শান্তশিষ্ট তাকে ছাড়া সে কিছু বোঝেই না।কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায়ও নি।এইসব ভাবতে ভাবতেই ইলমা হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলো।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নিঝুম।এই ছেলেটাকে সে সহ্যই করতে পারেনা সারাক্ষণ তার পিছু পিছু ঘুরে তাই সে তার ভাবির বাসায় আসতে চায়না।কিন্তু তবুও আসে।ভাবিকে একা ছাড়তেও পারেনা।ভাই থাকলে হয়তো ও আসতো না।ভাইয়ের কথা মনে পড়লেই ইলমার মন খারাপ হয়ে যায়।নিঝুম ইলমার চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো-
কি হয়েছে?? মন খারাপ? আচ্ছা তুমি আমাকে দেখলেই ওমন পালাতে চাও কেনো?
– নিঝুমের প্রশ্নের উত্তরে ইলমা বললো-
আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা।বলেই সেখান থেকে চলে গেলো।
রোকসানা আজ ৭ মাস পর তার বাবার বাড়িতে এসেছে।আমিনা বেগম মেয়েকে কাছে পেয়ে তার খাতিরের কোনো ত্রুটি রাখছেন না।রোকসানার শাশুড়ি ও বেশ ভালো।আমিনা বেগম আর রোকসানার শাশুড়ি মায়মুনা ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছেন।আমিনা বেগম রোকসানার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন আর মায়মুনা বেগম চা পান করছেন।রোকসানার বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত তারা এখানেই থাকবেন।রোকসানার শাশুড়ি তার ছেলের ছোটবেলার কথা বলছিলেন সবাইকে আর তিনজনে হাসছিলেন।
রোকসানার স্বামী নাসির রহমান আবিদ।আর্মি অফিসার ছিলেন।রোকসানা যখন দুমাসের প্রেগন্যান্ট তখন মিশনের জন্য কল আসে তার আর মিশনে চলে যায় সে।কিন্তু জীবিত অবস্থায় আর ফিরতে পারেনি।তার লাশ এসেছিলো বাড়িতে।রোকসানা বেশ শক্ত সে তার স্বামীকে দুঃখ নিয়ে মনে করতে চায়না তাই হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে।গর্ভাবস্থার শেষ দিকে প্রায় সে।
আজ মিষ্টি রোদ উঠেছে মায়মুনার সাহায্য নিয়ে গোসল করার পর রোকসানা রোদ পোহাতে নিঝুমের সাথে ছাদে যায়।নিঝুম রোকসানাকে ছাদে রেখে নিচে নামে। রোকসানা ছাদের দোলনাটায় বসে।এ বাড়ির মালিক বেশ সৌখিন। তার প্রমাণ এ বাড়ির ছাদ দেশি বিদেশী গাছ,দিয়ে সাজিয়েছে মন ভালো করার মত পরিবেশ। হঠাৎ ছাদে কেউ একজন উঠে এলো।হাতে একটা সিগারেটের প্যাকেট। হয়তো বিদেশি সিগারেট। সে রোকসানা কে দেখতে পায়নি।কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থেকে সিগারেট ধরালো এক টান দিয়েই পিছন ফিরে তাকালো প্রথম বার খেয়াল করেনি পরমুহূর্তেই তাকানোর সাথে সাথে চমকে উঠলো। রোকসানা মৃদু হেসে ফেললো। লোকটা রোকসানার দিকে এগিয়ে এসে বললো-
আপনি কিছু মনে করেননিতো?
-না ঠিকাছে আপনি আমাকে লক্ষ করেননি তাই হয়তো।
-হ্যা আসলে। আগেতো আপনাকে দেখিনি এখানে।তাই একটু চমকে গিয়েছিলাম।
– আমি বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছি।আর ২ সপ্তাহ বাকি তাই।
-একা ছাদে বসে আছেন যে আজতো শুক্রুবার আপনার হাজব্যান্ডের তো আপনার পাশে থাকা উচিৎ এখন।
– হি এক্সপায়ার্ড এইট মান্থ এগো।
রোকসানার কথা শুনে খুব মায়া নিয়ে তাকালো তার দিকে লোকটি।
– ওহ আই এম স্যরি মিসেস -?
-রোকসানা। রোকসানা রহমান।
-হ্যাঁ। মানে আমার নাম আবিদ।রেদওয়ানুল হোসেন আবিদ।
নামটা শুনেই রোকসানার বুকটা ধক করে উঠলো।সে আবিদ কে বললো -আমি নিচে যাবো। ভালো থাকবেন।আবিদ রোকসানাকে ধরে উঠালো। লিফটে উঠিয়ে দিয়ে তার সাথেই নিচে নামলো রোকসানাকে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে রেখে সে বিদায় নিয়ে নিচে নামলো।আর সে লক্ষ করলো রোকসানা যে ফ্ল্যাট এ যাচ্ছে সেটা নাভিদদের ফ্ল্যাট।
ইলমা অবশেষে অনেক কষ্টের পর ফাহিম কে কলে পেলো।ফাহিম উদাসীন ভাবে কথা বলায় রাগে ইলমা ওকে কতক্ষণ গালিগালাজ করলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে।নিঝুম পিছন থেকে এগুলো শুনছিলো।কল কাটার সাথে সাথেই সে ইলমার উদ্দেশ্যে বলল-
বেশিদিন টিকবেনা।
– কি?
– তুমি যাকে এত মিষ্টি বকা দিচ্ছিলে সে।
বিরক্তভরা চোখে ইলমা নিঝুমের দিকে তাকালো-
তাতে আপনার কি? লুকিয়ে কথা শুনতে লজ্জা করে না?
– এতজোরে বললে তা আর লুকানো কথা হয় নাকি?
যাইহোক এই নাও আচার।আপুর জন্য এনেছিলাম ভাবলাম তোমার জন্যও নিয়ে আসি।
– নো থ্যাংকস আমি আচার খাইনা।
– খাওনা খাবে।আর একটা সময় প্রায় সব মেয়েরাই খায় আচার।
নিঝুমের কথা শুনে রাগে,লজ্জায় ইলমার কান গরম হয়ে যায়।কতবড় অসভ্যের মত কথাটা বলে ফেললো লোকটা।ইলমা তখনি নিঝুমকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
পাশের বারান্দা থেকে নিধি সবই আড়চোখে খেয়াল করে।সে ভেবে পায়না সে কেনো কষ্টপায় নিঝুমকে মেয়েটার সাথে দেখলে আর নিঝুমেরইবা কি দরকার ওই মেয়েটার পিছনে ঘুরার!! রাগে নিধি তার শখের গোলাপের টব টা হালকা উঠিকে নিঝুমের বারান্দায় ছুড়ে মারতে গিয়ে থেমে যায়।দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যাওয়ার সময় ধাক্কা লাগে সুমুর সাথে
ভোর রাত থেকে বৃষ্টি পড়ছে ঝিরি ঝিরি।গতকাল বিকেলেও ঝুম বৃষ্টি হয়েছে সন্ধ্যায় কমে আসার পর আর হয়নি।আমিনা বেগম ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়েই রান্না ঘরের দিকে গেলেন আমিনা বেগম।ভোর ৬ টা বাজে নাজমুল সাহেব ঘুম থেকে উঠলেন।নামাজ পড়ে নিয়েই তিনি ঘুমিয়েছিলেন।উঠেই শুনতে পেলেন রান্না ঘর থেকে ঘি এর ঘ্রাণ আসছে। আস্তে আস্তে রান্না ঘরের দিকে গেলেন তিনি।উকি দিয়ে দেখতে পেলেন আমিনা বেগম পরোটা ভাজছেন।স্ত্রীর সামনে গিয়ে মোরায় বসলেন।আমিনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন- তোমাকে চা দিবো? স্ত্রীর কথায় নাজমুল সাহেব মাথা দুলালেন তার মানে হ্যাঁ।
আমিনা বেগম পাশের চুলায় পানি ভর্তি করে কেটলিটা বসিয়ে দিলেন।এই মুহূর্তে নাজমুল ল্যান্ডফোনে কল এলো।নাজমুল সাহেব উঠে কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কথা এলো।কথা শেষ করে তিনি ফোনটা নামিয়ে রাখলেন।স্ত্রীর সামনে গিয়ে আবার বসলেন এবং বললেন-
নাভিদ বারান্দায় বসে পাশের বাসার বারান্দায় চেয়ে আছে।বৃষ্টির ছাট গুলো তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে এতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।হঠাৎ পাশের বারান্দায় আকাশী রঙের সালওয়ার কামিজ পড়া মেয়েকে দেখে নাভিদের ধ্যান ভাঙলো।নড়েচড়ে বসলো সে।কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত আশায় জল ঢেলে দিয়ে বারান্দার মেয়েটি হেসে উঠলো।
– কি নাভিদ ভাই! যার জন্য অপেক্ষা করছেন সে আসেনি বলে মনঃক্ষুণ্ণ হচ্ছেন??
– না মানে কারো অপেক্ষা করছিনা।তুমি কেমন আছো নিধি?
– হয়েছে আমার থেকে আর লুকাতে হবে না।আমি ভালো আছি।তবে যার অপেক্ষা করছেন তার জ্বর।বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা।
– ঠিকাছে ওর খেয়াল রেখো।
– আচ্ছা।
হঠাৎ বারান্দায় তাওয়াল পেঁচিয়ে নিঝুম এসে দাঁড়ালো ওকে দেখে নিধি উচ্চস্বরে হেসে দিলো।
– নাভিদ ভাই তোমার ভাইয়ের বুঝি কাপড় এর অভাব?
তাই তাওয়াল পড়েই বারান্দায় এসে পড়েছে?
অসম্ভব বিরক্তি নিয়ে নিঝুম নিধির দিকে তাকালো ওর ওই চেহারা দেখে নিধি আরো জোরে হেসে দিলো।নাভিদ কে উদ্দেশ্য করে বললো –
ভাইয়া তোকে মা ডাকছে রুকু আপুরা বাসায় আসবে আজকে।আর তুই আজকে অফিস যাবি না?
নাভিদ- না আজকে যাবোনা।শরীর ভালো লাগছেনা বাসায় বসেই কাজ করে ফেলবো।আমি যাচ্ছি আম্মার কাছে।
নাভিদ ওখান থেকে চলে গেলো।
নিঝুম নিধিকে হাসতে দেখে ভেংচি দিয়ে ওর মতো করেই হাসির অনুকরণ করলো যা দেখে নিধির পিত্তি জ্বলে যাবার উপক্রম। নিঝুমকে শাস্তি দিতে নিধি ভিতরে গিয়ে মগ ভর্তি পানি এনে নিঝুমের বারান্দার দিকে ছুড়ে মারলো।নিঝুম বেকুবের মত চেয়ে থেকে কিচ্ছুক্ষণ পর চলে গেলো।নিধিও ভিতরে চলে গেলো।
নিঝুম এর শোধ নিবেই।এর জন্য ফন্দি আটতে শুরু করলো।
জ্বরের ঘোরে সুমু কল্পনা করছে গতকাল বিকেলের ঘটনা।
ঝুম বৃষ্টির মাঝে নাভিদের হাত ধরে কুল্ফি খাচ্ছে আর বৃষ্টিতে ভিজছে।নাভিদ বারণ করলেও শুনছে না।একসময় নাভিদ জোর করে ওকে গাড়িতে এনে বসালো।শীতে কাঁপছে রীতিমতো।ওর ওড়নার এক কোণ চিপড়ে পানি নিংড়ে মাথা মুছে দিতে দিতে নাভিদ বললো-
-তুমি কি সারাজীবন বাচ্চাই থেকে যাবে সুমু?
কাঁপতে কাঁপতে সুমু বললো- শোনো আবার যেদিন ভিজবো সেদিন চা খেতে খেতে ভিজবো কেমন?
– আর এই উদ্ভট কাজ টা কোন কবি করতে বলেছে তোমায়?
– হুমায়ূন স্যার।হুমায়ূন আহমেদ স্যার বলেছে করতে।বৃষ্টির পানি টপ টপ করে চায়ে পড়বে আর আমরা সেই চায়ে হালকা করে চুমুক দিবো।দুটোর সংমিশ্রণ টা কেমন তা দেখবো।
– তুমি কি জানো সুমু তুমি যে পাগল?
– হ্যা জানি।এজন্যইতো তুমি আমায় ভালোবাসো।
– তাও ঠিক।
– বাড়ি চলো।
-হুম।
নাভিদ সুমুর সিটবেল্টটা পড়িয়ে দিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট বাধলো।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসায় রওনা হলো।
বাসায় আসার পর থেকেই সুমুর জ্বর।রাতে খায়নি।আর নাভিদের টেক্সটের রিপ্লাই ও দিতে পারেনি।গতকালের কথা ভেবেই সুমুর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।সুমুকে এভাবে হাসতে দেখে নিধি ভাবলো ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে হয়তো।
নাভিদ ওর মায়ের কাছে যেতেই আমিনা বেগম বলে উঠলেন বাবা তোমার সুমু বিলাস হয়েছে? নাভিদ মাথা চুলকে মুচকি হাসলো।
– তা নাস্তা কিছু করতে হবে না পেট ভরে গেছে?
– আম্মা ক্ষুদা লাগছে।
– নাস্তা করে বাজারে যাও রুকু আসবে আজকে।
বলেই আমিনা বেগম চলে গেলেন। নিঝুম রুকু আসার কথা শুনে যতটা খুশি হয়েছে তার চেয়ে বেশি খুশি হচ্ছে রুকুর সাথে ইলমা আসবে বলে। ইলমা রোকসানার ননদ।নিঝুম ইলমাকে বেশ পছন্দ করে।তার মতে ইলমার মত মেয়েই হয়না।ওর মনে হয় গভীর শান্ত চোখে দুষ্টুমি খেলা করে ইলমার।তার চোখ দুটোই যেনো ওকে আকর্ষণ করে বেশি।
নাভিদের ডাকে ঘোর কাটে ওর দুভাই মিলে বাজারের জন্য রওনা হয়।
ইহান- হুম, আসলে আমি কি ভুলটা ই না করছিলাম,এমন একটা সুবর্ন সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক নয় তাই আমি রাজি
সবাই হই চই করে উঠলো
সাম্মি- আমি তোকে হেল্প করবো
মিথিলা- লাগবে না তোরা বসে আড্ডা দে,
তবে অরু তুই আসতে পারিস আমার সাথে,আমার চশমার পাওয়ার টা চেঞ্জ করতে হবে এটা দিয়ে সব ক্লিয়ার দেখি না,তুই আমাকে এই কাজে হেল্প করতে পারিস চাইলে
অরনি- ও. এম. জি.কিচেনে আমি যেতে পারবো না
ইহান- তোর তো কোন গুন ই নাই অরু
অরনি গাল ফুলিয়ে কিছু বলতে যাবে…
ইহান- আমার ও রে,,মিথিলা যদি আমায় রিজেক্ট করে তা হলে বেঁচে থাকতে খুব কষ্ট হবে,
রাহি- এতো অলক্ষনে কথা ভাবিস কেনো তোরা, সব সময় ভালো কিছু ভাববি,দেখবি ভালো হবে
অরনি- ঠিক বলেছিস রাহি
ইহান- ঠিক না রে কিচ্ছু ঠিক না,,তোরা ও জানিস আমি ও জানি মিথিলা আমাদের মতো নয় ওর জগৎ আমাদের থেকে আলাদা
অরনি- ভাবতে পারছি না কিছু,,,
মিথিলা ফ্রিজে কি আছে দেখার জন্য ফ্রিজ খুল্লো,তিন রকম মাংস ফ্রিজ থেকে নামিয়ে রাখলো
মিথিলা- এই সাম্মি দেখ তো এই বাটিতে এগুলা কি মুড়ি?
সাম্মি-তখন মাছ পরিস্কার করছিলো, মিথিলার পাশে এসে বল্লো,মিথি তোর চশমা টা সবার আগে চেঞ্জ করা উচিত,আন্টি ভাত রান্না করে ফ্রিজে রেখে গেছে যেন ইহান খেতে পারে,,
মিথিলা চশমা খুলে মুছতে মুছতে বল্লো ঠিক বলেছিস রে
বাসায় গিয়ে বাবা কে বলতে হবে
সাম্মি- আচ্ছা এতো গুলো জিনিশ বের করলি,,কি করবি বল
মিথিলা- ইহানের জন্য ফ্রাইড রাইস,অরনির জন্য চিকেন ফ্রাইড,রাহির জন্য,খাশির রেজালা,আর তোর জন্য কি রান্না করবো তুই বললি না সাম্মি
সাম্মি- আমি ওদের মতো লাঞ্চে এগুলা খাবো না,লাঞ্চে যা খেলে ভালো লাগে আমি তা ই খাবো,
মিথিলা- সেটা কি
সাম্মি- ভাত আর গরুর মাংস ভুনা
মিথিলা- ওকে তাহলে ঠিক আছে
সাম্মি- কিন্তু অন্যের বাড়িতে এসে এই সব রান্না করবি তুই,খুঁজে পাবি তো সব মশলা,
মিথিলা- একটু খুঁজলে ই পেয়ে যাবো, চল কাজে লেগে পড়ি
মিথিলা অনেক সময় নিয়ে সবার পছন্দ মতো রান্না করলো
সাম্মি- মিথি তুই তো ঘেমে গেছিস, অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে তোকে,সত্যি রান্না করতে ও অনেক কষ্ট হয়,আজ বুঝলাম
মিথিলা- হুম তুই ইহানদের বুয়াকে ডেকে বল এগুলা টেবিলে সাজিয়ে দিতে
এর মাঝে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
সাম্মি – ওকে
মিথিলা – ফ্রেশ হতে চলে গেলো
সাম্মি ইহানদের কাছে এসে বল্লো বাহ সবাই তো বেশ ঝমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে আর ও দিকে আমরা রান্না করতে করতে হয়রান
ইহান- বেশি কথা বলিস তোরা মিথিলা শুনবে এই নিয়ে আর কোন কথা নয়
ইহান নিজের রুমে গিয়ে একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো
মিথিলা ভালো করে মুখে পানি মেরে, ফ্রেশ হয়ে বেরুতে গিয়ে সামনে ইহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ভয় ফেলো
– তুই
ইহান- হুম আমি,
মিথিলা- কথা না বলে এ ভাবে হুট করে এসে আলিফের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো
ইহান- এই নে তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে নে
-মিথিলা ইহানের কাছে থেকে তোয়ালে নিয়ে বল্লো
-ধন্যবাদ,বুয়া এতোক্ষনে হয়তো টেবিলে খাবার দিয়ে দিয়েছে চল সবাইকে নিয়ে ডাইনিং এ আয়
পাঁচজন মিলেই খেতে বসলো
ইহান খেতে খেতে বল্লো
– আহ মিথি দারুণ রেঁধেছিস,, কি করে শিখলি এতো ভালো রান্না
অরনি- আমি তো জানতাম তুই বই পড়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারিস না,এখন তো দেখি তুই সব ই পারিস
ইহান-তোর মতো হলে কিছুই পারতো না বুঝলি অরু, তুই তো একটা ই জানিস শুধু সাজুগুজু এই ছাড়া আর কিছু পারবি না
অরু-ইহান্নন্নন্ন
রাহি-তোরা থামতো,সারা দিন তোদের এগুলা ভালো লাগে না
ইহান আর অরু চুপ হয়ে গেলো
মিথিলা- তোরা একটু বেশি বেশি বলছিস
সাম্মি- একদম ঠিক
সাম্মি- আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস ই করতাম না
মিথিলা- আচ্ছা তোদের এই সব কথা শুনতে ভালো লাগছে না আমার
অরনি অবাক হয়ে বল্লো
– বলিস কি মিথি প্রশংসা শুনতে কে না চায়,সবারি ভালো লাগে প্রশংসা শুনতে
মিথিলা – কিন্তু আমার ভালো লাগে না
ইহান- এই জন্য ই তো তুই সবার থেকে আলাদা
এ ভাবেই গল্পগুজবের মাঝে খাবার শেষ করলো,,
সবাই গিয়ে আবার ড্রইং রুমে বসলো
মিথিলা অরনি রাহিরা কথা বলছে কিন্তু ইহানের সে দিকে মন নেই
ইহান বার বার ঘড়ি দেখিছে
মিথিলা- এই শুন অনেক্ষন তো থাকলাম এবার আমাকে যেতে হবে
ইহান- বললেই হলো,আরেকটু সময় তোকে থাকতেই হবে
মিথিলা- কেনো?
ইহান- এই যে আমরা সবাই মিলে কতো মজা করছি তাই
মিথিলা আর কিছু বল্লো না
ইহান উঠে গেলো সবার কাছে থেকে কিছুক্ষন পর অরনি ও চলে গেলো,,রাহি আর সাম্মি ও উঠে গেলো বাসায় ফোন করবে বলে
মিথিলা- ওরা সবাই আগে পরে করে কোথায় গেলো আমি এখন একা একা কি করবো
এমন সময় উপরের একটা ঘর থেকে অরনির কন্ঠ শুনা গেলো
অরনি- মিথিলা উপরে ইহানের রুমে চলে আয়,আমরা সবাই এখানেই আছি
মিথিলা ওদের আবার কি হলো এখান থেকে ইহানের রুমে গেলো কেনো,,যাই তার পর বুঝবো কি হচ্ছে সেখানে
এমন সময় রুমে আলো জ্বলে উঠলো, একি সাথে সবাই বল্লো হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মিথিলা,হ্যাপী বার্থডে টু ইউ
মিথিলা অবাক হয়ে রুমের চারি দিয়ে তাকিয়ে দেখছে,, সারা রুম আলোয় ঝলমল করছে,,রুমের চার দেয়ালের মধ্যেই মিথিলার ছবি, আর ছবির পাশে লেখা বার্থডে কুইন
মিথিলা- তোরা এই সব কখন করলি
অরনি- করেছি,তুই তখন রান্না করতে ব্যাস্ত ছিলি,তা ছাড়া এটা আমাদের অনেক আগে থেকেই প্লান ছিলো,অবশ্য অনুষ্ঠান রাতে করতে ছেয়েছিলাম, কিন্তু তোকে রাতে আর রাখা যাবে না
মিথিলা- আজকে যে আমার বার্থডে এটা তো আমার ও মনে নেই তোদের মনে আছে কি করে
রাহি- তুই যে আমাদের সবার প্রিয়,আর তোর বার্থডে মনে রাখবো না
ইহান- চল মিথিলা কেক কাটবি
অরনি- মিথিলা আমার তরফ থেকে তোর জন্য,কিছু বই,,আমার মনে হয় এগুলা পড়লে তোর ভালো লাগবে,
মিথিলা খুশি হয়ে বল্লো
– বই? ধন্যবাদ দোস্ত
সাম্মি- এটা আমার পক্ষ থেকে সামান্য একটা জিনিষ
মিথিলা- কি আছে এতে কোন বই মনে হচ্ছে
সাম্মি- বই না একটা ডায়েরী
মিথিলা- ওহ ডায়েরী, ধন্যবাদ
রাহি- আমি কিন্তু আগে থেকে জানতাম না তাই কিছু আনতে পারেনি,আমার পক্ষ থেকে তোকে দোলনচাঁপার শুভেচ্ছা
মিথিলা- ওয়াও আমার প্রিয়ো ফুল
ইহান- আমি ভাবলাম আগে কেক কাটা হবে পরে এগুলা দেয়া হবে কিন্তু তোরা তো সব গুলিয়ে দিলি
মিথিলা- কিচ্ছু গুলিয়ে যায়নি ইহান, আমার খুব ভালো লেগেছে তোদের এই পাগলামি
ইহান- ওকে নো প্রব্লেম তা হলে, আমার তরফ থেকে বার্থডে কুইনের জন্য এই সামান্য উপহার
মিথিলা- কি আছে বাক্সে, খুলে দেখবো
ইহান- দেখতে পারিস
মিথিলা বক্স টা খুলে দেখলো একটা চশমা
– তুই কি করে জানলি আমার একটা চশমার প্রয়োজন
অরনি- আজকের এই খুশিতে একটা গান হয়ে যাক মিথি, কি বলিস?
মিথিলা -আমি গান গাইতে পারবো না দোস্ত
সাম্মি-তোকে গাইতে হবে না, ইহু গাইবে
মিথিলা- কি বলছিস,এহানের ঐ ইংরেজি গান আমি শুনবোই না
ইহান- ওয়েট মিথিলা,কাল রাত জেগে তোর জন্য একটা বাংলা গান শিখেছি,সেটা ও শুনবি না
মিথিলা- তা হলে গাইতে
পারিস
অরনি- আমি গিয়ে গিটার নিয়ে আসছি , অরনি গিটার এনে ইহান কে দিতে গিয়ে ফিস ফিস করে বল্লো,দারুণ প্লান করেছিস,গানের অর্থ যদি মিথিলা বুঝতে পারে তা হলে ই হলো আর কি
ইহান- চুপ করে গিয়ে মিথিলার পাশে বস,
মিথিলা- এই অরনি তোরা কি ফিস ফিস করিছিস
অরনি- কিছু না,অরনি এসে মিথিলার পাশে বসলো
ইহান গিটারে সুর তুলে গান শুরু করলো
“”একটু কাছে আসো,
একটু ভালোবাসো
অনুভবে রাখো আমায়
চোখে চোখ রাখো
স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখো
ভালোবাসা দিবো তোমায়
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে
ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাকে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা
মনে পড়ে শুধু তোমাকে
হোওওওওওও
যখনি প্রথম দেখেছি তোমাকে রুপেতে গেছি হারিয়ে
ওও মায়াবি স্বপনে নিরবে
গোপনে দিয়েছি দু হাত বাড়িয়ে
ছড়ালে এ বুকের শহরে
কি যাদু আমি বোঝাতে পারি না,কিছুতেই নিজেকে
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাকে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা মনে পড়ে শুধু তোমাকে
কতো যে আপন ভেবেছি তোমাকে
বলবো বলো কি করে
ওওও মনেরি গহিনে রেখেছি যতনে সারাটা প্রহর ধরে
ঝড়ালে এ আমায় বলো না
কি সুখে জানোকি তোমারি জ্বলেতে ভিজে কে
এলো মেলো মেঘে বৃষ্টি হয়ে
ভিজিয়ে গেছো তুমি আমাজে
হৃদয়ের সব কথা ভাংগে নিরাবতা মনে পড়ে শুধু তোমাকে,,,,
ইহানের গান শুনে সবাই খুশি হলে ও মিথিলা খুশি হতে পারেনি
ইহান- মিথি গান ভালো হয়নি
মিথিলা -আমি বাড়ি যাবো
অরনি ইহান কে ইশারা করলো, ইহান তার প্যান্টের পকেট থেকে একটা আংটি বের করে মিথিলার সামনে
হাটু মুড়ে বসে বল্লো,
– মিথি উইল ইউ মেরী মি
সবাই বসার ঘরে ফিরে এলো
মিথিলা নাস্তা নিয়ে এলো সবার জন্য
ইহান খেতে খেতে বল্লো
– কে বানিয়েছে পিঠা গুলো, অনেক মজার আজ কাল তো এমন ঘরোয়া নাস্তা পাওয়া ই যায় না
মিথিলা- মা বানিয়েছে
ইহান- জানতাম আন্টি ছাড়া আর কে বানাবে,তুই কি জীবনে এসব পারবি
রাহি- এমন বলিস না ইহান,আমাদের মিথিলার ও অনেক গুন আছে,সে সব শ্বশুড় বাড়ির লোকেদের জন্য তুলে রেখেছে,ঠিক বলেছি না মিথিলা
– জানি না তুই ভালো বলতে পারবি,বল্লো মিথিলা অনেকটা কঠিন স্বরে
অরনি- মিথিলা তুই যে ঠোটে বইয়ের মতো এতো সুন্দর সাহিত্য পড়িস,সে ঠোঁটে কঠিন কথা গুলো উচ্চারন করিস কি করে?
মিথিলা – চলে আসে,মন না চাইলে ও আসে,আচ্ছা বাদ দে এই সব
ইহান-আমি একটা কথা বলতে চাই
সাম্মি- আবার অনুমতি নিচ্ছিস কেনো, বল
ইহান- ঐ চুপ কর তুই,, আমি বাড়ি ওয়ালির অনুমতি চাইছি
সাম্মি হেসে বল্লো
– অহহহহহ
মিথিলা- এতো ঢং তোরা কই থেকে আমদানি করিস বলতো,যাই হোক কি বলবি বল ইহান
ইহান- কাল আমার বাসায় কেউ থাকবে না, আম্মু, আব্বু, আপু, সবাই চট্রগ্রাম যাচ্ছে, আমি বাসায় আমাদের পাচ ছয় জন বন্ধু নিয়ে একটা পার্টি দিবো ভাবছি। কেউ থাকবে না আমরা আমরা ই,,,তোকে আসতে হবে কিন্তু মিথি কোন এক্সকিউজ শুনবো না
অরনি খুশি হয়ে বল্লো পার্টি,আমাকে আগে বলিসনি কেনো
রাহি- অরু আগে তো বলেই নি এখন ও আমাদের দাওয়াত করেনি,মিথিলাকে একা করেছে আমাদের কারো নাম বলেনি
ইহান- এই তোরা চুপ করবি, বলেছি না পাঁচ ছয়জন,তাদের মধ্যে তো তোরা ও পড়িস. তাই না,তোদের কে না বললে ও তোরা আসবি
আর যে আসবে না তাকে বলতে এসছি বুঝলি
রাহি কিছু বলতে যাবে তার আগে মিথিলা বল্লো
– কিন্তু আমি যেতে পারবো না,, বাসা খালি দেখছিস না
ইহান – জানতাম তুই এই কথা বলবি তাই তো তোর জন্য দারাওয়ান এনেছি
মিথিলা – মানে
ইহান- মানে সি সি ক্যামেরা, যাওয়ার সময় দরজার আড়ালে রেখে যাবি, এর মাঝে যদি চোর আসে এই ক্যামেরা তে তার ছবি উঠবে, ছবি দেখে চোর ধরতে সুবিধা হবে
মিথিলা- পাগল নাকি তুই,
অরনি- আরেহ মিথি বুঝিস না কেনো,, দুষ্টুটা অলওয়েজ দুষ্টু বুদ্ধি নিয়ে ই থাকে,
মিথিলা- দোস্ত প্লিজ ঝোর করিস না আমি সত্যি যেতে পারবো না
সাম্মি- বুঝেছি তুই সাইমুম সিরিজের বইগুলোর জন্য যাচ্ছিস না তাই তো,দেখ একদিন না পড়লে কিচ্ছু হবে না,,, প্লিজ প্লিজ
ইহান- দোস্ত আজকের পরে আরর কোখনো তোর কাছে কিচ্ছু চাইবো না প্লিজ রাজি হয়ে যা
মিথিলা হেসে বল্লো
– ঠিক আছে যাবো তোরা সবাই পাগল
তার পর আর ও কিছুক্ষন সবাই আড্ডা দিয়ে
সবাই চলে গেলো
মিথিলা আবার বই নিয়ে বসলো
পরদিন সকালে অরনির ফোন আসে
মিথিলা অরনি কেনো ফোন করেছে এতো সকালে
তার পর রিসিভ করে বল্লো
– অরু কিছু বলবি
অরনি- বলবো তো অনেক কিছু,সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি গাড়ি নিয়ে তাড়া তাড়ি আয়
মিথিলা- ও তাই,আমি তো এখনে রেডি হইনি, তুই বাসায় আয়,,আমার তো রেডি হতে দেরি হবে
অরনি- আমি জানি মটে ই তোর দেরি হবে না,সো আমি গাড়িতেই আছি
মিথিলা কল অফ করে দেয়
তাড়া তাড়ি চুল গুলো ঠিক করে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে যাচ্ছিলো দরজার সামনে গিয়ে মনে হলো ওহ নো এই জন্য ই তো সব ক্লিয়ার দেখছি না চশমা টা রেখে এসছি রুমে, মিথিলা চশমা চোখে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো গাড়ির কাছে এসে বল্লো, তোকে নিশ্চই অনেক্ষন অপেক্ষা করতে হয়েছে
অরনি- একদম না,তুই তো আর আমাদের মতো ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে সাজিস না, আমাদের তুলনায় অনেক কম সময় লেগেছে
মিথিলা গাড়িতে উঠে বসলো,,,ইহানদের বাসায় এসে মিথিলা অবাক পুরো বাসা ডেকোরেশন করা,, কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না মিথিলা
মিথিলা – এই অরু ইহানদের বাসায় কি কোন অনুষ্ঠান আছে বল, বাড়ির পরিবেশ অন্যরকম মনে হচ্ছে
অরনি- চল, বিতরে যাই,, তার পর বুঝবো কি হচ্ছে
ইহানদের ডুপ্লেক্স বাড়ি সারা বাড়ি সাজানো কিন্তু কোন মেহমান নেই যে কয়জন আছে বাড়ির পরিচারিকা,
মিথিলা বাসার গেটে এসে দাড়াতেই রাহি এসে বল্লো
মহারানী আপনি এক মিনিট দাড়ান, এখানে
সাম্মি এসে বাড়ির ঘেট পর্যন্ত ফুলের পাপড়ি চড়িয়ে দিলো
রাহি- মহারানী এবার আপনি আসুন ফুলের পাপড়ির উপর দিয়ে হেটে আসুন।কথা বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে
মিথিলা অবাক হচ্ছে খুব
– কি হচ্ছে আমাকে একটু বলবি তোরা
সাম্মি – কিছু না আয়
অরনি- কি হলো মিথি চল যাই
মিথিলা আর কিছু না বলে হাটতে শুরু করলো
ইহানদের ড্রইং রুমে এসে মিথিলা আবার শকড খেলে
উপরে উঠার শিড়ির শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে আছে ইহান হাতে ফুলের বকি নিয়ে
অরনি ফিস ফিস করে বল্ল
– তুই কি রে, তুই কি আমাদের সব প্লান ব্যাস্তে দিবি নাকি
ইহান- আমি আবার কি করলাম
অরনি- কি করিসনি বল,কি কথা ছিলো মিথিলা কে কোন কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না
আর তুই যা করছিস তাতে মিথিলা খুব শিগ্রই তোর সব কাজ ধরে ফেলবে,এমনিতে মিথিলা ওকে ঘিরে এতো আয়োজন করাতে সন্দেহ করছে
ইহান- তাই বলে….
অরনি ইহান কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
-আসতে কথা বল
ইহান এবার ফিস ফিস করে বল্লো
– তাই বলে আমি মিথিলাকে রান্না করতে দিতে পারবো না
অরনি- মিথি সন্দেহ করেছে আমাদের, এখন তুই যদি ওর কথা মেনে না নিস তা হলে মিথির সন্দেহ মজবুত হবে আর দেখবি একটা সময় মিথিলা হুট করে চলে যাবে
তখন এতো কষ্ট করে ওকে ম্যানেজ করে এনে লাভের ছেয়ে ক্ষতি বেশি হবে
ইহান- তাই তো আমি অতো কিছু ভাবিনি, থ্যাংক ইউ মাই ডিয়ার
অরনি- পাম্প দিতে হবে না,চল ওদের কাছে যাই, তুই আগে যা আমি পরে আসছি
ইহান- এক সাথে গেলে কি হবে
অরনি- বুদ্ধু, প্রেমে পড়ে তোর সব গেছে,আমরা এলাম আলাদা, আর এক সাথে বের হলে সন্দেহ হবে না,মিথিলা অনেক খুত খুতে টাইপের
ছবিটা আমি শুট করবো,আমি কিন্তু আপনাদের দলের নই
ইহান- ওকে তবে তাই হোক
নির্ঝরিণী উঠে ক্যামেরা হাতে নিলো,গ্রুপ পিক নেয়া শেষ হলে
ইহান অনুরোধ করে সবার একটা করে সিংগেল ছবি তুলতে
এতে কারো আপত্তি না থাকলে মিথিলা আপত্তি করে বসে, কিছুতেই সিংগেল ছবিতে রাজি হয়নি মিথিলা
মিথিলার কথা শুনে ইহানের মন খারাপ হয়ে যায় তবু ও না মেনে কোন উপায় নেই
নির্ঝরিণী -আপু চল বাসায় যাই,
মিথিলা- হুম চল
নির্ঝরিণী – তুমি যাও আপু আমি সবার কাছে থেকে বলে আসি,
মিথিলা- না বললে কি হবে
নির্ঝরিণী – আমি তোমাদের মাঝে ক্ষনিকের অতিথি, আর হয়তো তোমার বন্ধুদের সাথে আমার দেখা হবে না তাই আর কি
মিথিলা- সব জায়গা পাকনামি না করলে হয় না তোর,ঠিক আছে যা আমি গেটে অপেক্ষা করছি
নির্ঝরিণী সবার কাছে বলে ইহানের কাছে এসে সবার অলক্ষে তার হাতে একটুকরো কাগজ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো
ইহান অবাক হলো এই বাচ্ছা মেয়ে সবাইকে লুকিয়ে আমাকে এই কাগজ টা দিলো কেনো, আচ্ছা এতে প্রেম পত্র নেই, কথা টা মনে হতেই ইহানের চোখ বড় হয়ে গেলো
অরনি- ইহান চোখ বড় করে কি দেখছিস
ইহান- কিছু না চল যাই
ইহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো তখনি নির্ঝরিণীর দেয়া কাগজটার কথা মনে হলো,, এই পিচ্ছি মেয়ে প্রেম পত্র দিয়েছে আমাকে, কি লিখা আছে তাতে, দূর এক বোনের জন্য পাগল আমি আরেক বোন এসে প্রেম পত্র দিচ্ছে ব্যাপার টা কেমন হয়ে গেলো না,
একটুক্ষন ভেবে ইহান নিজেই নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বল্লো দূর কাগজ টা না পড়ে এতো কিছু মন্তব্য করা ঠিক হচ্ছে না,আসলেই আমি একটু বেশি বেশি ভাবি,, যতো চাই ভাবনাকে বাধতে,ভাবনা বাধা ই পড়ে না,,লাগাম হীন ভাবে ভেবে চলছে
ইহান ভাবনাকে আর এগুতে না দিয়ে চট করে উঠে শার্টের পকেট থেকে চিরকুট টা হাতে নিলো,চোখের সামনে মেলে ধরলো চিরকুট
‘ভাইয়া আপনি আপুর একটা ছবি নিতে ছেয়ে ছিলেন, আপু রাজি হয়নি,কিন্তু আমি আপনাদের দুজনের অনুমতি না নিয়ে, যখন আপনারা কথা বলতে ব্যাস্ত তখন একটা ছবি নিয়ে নিই.রিলে খুঁজলে পাবেন
অনুমিত না নেয়ার জন্য ক্ষমা করবেন,,
চিরকুট টা পড়ে ইহান এক লাফে ক্যামেরা হাতে নিলো,সব গুলো পিক দেখছে, একটা পিকে এসে চোখ আটকে যায়,হা পিক টা মিথিলার আর ইহানের,,
মিথিলা বরাবরই চোখ নামিয়ে কথা বলে আজ ও তাই বলছিলো,আর ইহান মিথিলার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে এমব অবস্থায় ছবি টা তুলেছে নির্ঝরিণী,
ইহান- মনে মনে কয়েকশ ধন্যবাদ জানালো নির্ঝরিণী কে, না চাইতে প্রিয়ো মানুষটার ছবি পেয়ে যাবে নিজের সাথে, তা ভাবতেই পারেনি ইহান
আচ্ছা আমি মনে মনে ধন্যবাদ দিচ্ছি কেনো, আমি তো ফোন করতে পারি নির্ঝরিণীর কাছে আচ্ছা ফোন করলে যদি মিথিলার মা রিসিভ করে ফোন তা হলে কি বলবো, মিথিলার সাথে কথা বলবো, নাকি নির্ঝরিণীর কথা বলবো,
কিন্তু নির্ঝরিণীর কথা বলা ঠিক হবে না,দূর এতো ভাবছি কেনো কল দিয়ে ই দেখি কি হয়
মিথিলা স্কুল থেকে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে পড়তে বসলো,আজ সারাদিন একটু ও পড়তে পারিনি, কি যে হবে পরিক্ষার দিন
নির্ঝরিণী মোবাইল নিয়ে গেম খেলছে
আয়ান তার পাশে বসে আছে
আয়ান- এই নির্ঝর বলনারে আজ সারা দিন কি কি করলি তোরা
নির্ঝরিণী – আমি কিছু করিনি যা করেছে সব আপু করেছে,কি করেছে সেটা শুনলে তুই অবাক হয়ে যাবি
আয়ান ও উৎসাহের সাথে জানতে চাইলো
– কি করেছে আপু।
নির্ঝরিণী – জানিস আপু গান গেয়েছে
আয়ান- বলিস কি,তার পর স্বাভাবিক হয়ে বল্লো
যাহ ঢপ মারছি গান গাইবে ঐ গ্রন্থকীট, এটা আমি বিশ্বাস করবো
নির্ঝরিণী – আরেহ সত্যি বলছি, তুই বিশ্বাস না করলে কি করি বলতো,এমন সময় মোবাইল বেজে উঠলো
আয়ান- কে কল করেছে দেখি
নির্ঝরিণী – তোর দেখে কাজ নেই নাম্বার টা আমার পরিচিত যাহ এখান থেকে
আয়ান- এই নির্ঝর তুই প্রেম করছিস না তো,
নির্ঝরিণী – থাপ্পড় টা কি এখন খাবি না পরে দিবো
আয়ান- আমি তোর বড় সম্মান দিয়ে কথা বল
নির্ঝরিণী – এহ আসছে বলদ দেড় বছরের বড় আপনি তেমন বেশি নয়
আয়ান- এখন কল রিসিব কর পরে ঝগড়া করিস
নির্ঝরী কল রিসিভ করে বল্লো
– ভাইয়া আপু কে দিবো ফোন টা
ইহান- না তোমাকে একটা কথা বলবো
নির্ঝরিণী – আমাকে,বলুন কি বলবেন
ইহান- থ্যাংক ইউ সো মাচ
নির্ঝরিণী – বুঝলাম কিন্তু এই কথা টা যেন আপু কোন দিন না জানতে পারে, তা হলে আমাকে দু টুকরো করে নদিতে ভাসিয়ে দিবে।
মিথিলা কিছু না বলেই মোবাইল হাতে নিলো
– কিছু বলবি ইহান
ইহান-স্যরি তোকে ডিস্টার্ব করার জন্য
মিথিলা- এতো ফর্মালিটি না দেখিয়ে বল কি বলবি
ইহান- বলছি তুই পরিক্ষার কেন্দ্রে যাবি কি করে
মিথিলা- কি করে আবার গাড়ি দিয়ে যাবো,পাব্লিক বাস গুলো আছে কিসের জন্য
ইহান- বলছি মিথিলা পাব্লিক বাসে গেলো অনেক প্রব্লেম সিট পাওয়া যায় না,তার পর সময় মতো বাস পাওয়া যায় না……
ইহানের কথার মাঝখানে মিথিলা থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– তুই কি বলতে চাস
ইহান- তেমন কিছুই না বলছি আমার সাথে রোজ ই গাড়ি যাবে এন্ড সিট খালি থাকবে, আমি কি তোকে লিফট দিতে পারি?
মিথিলা- না পারিস না,এই নিয়ে তোর সাথে একটা কথাও বলতে চাই না. বাই
মিথিলা ইহানের মুখের উপর লাইন কেটে দেয়
নির্ঝরিণীর দিকে তাকিয়ে মিথিলা বল্লো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি শুনছিস মোবাইল নিয়ে চলে যা
নির্ঝরিণী কিছু না বলেই চলে গেলো
মিথিলা আবার বইয়ে মুখ গুজে দিলো পরিক্ষার না শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময় তার নেই
পরিক্ষার দিন সকাল বেলা মিথিলার বাসার সামনে দুটো গাড়ি অপেক্ষা করছে, প্রথম টা ইহানের দ্বিতীয় টা ওর বাবার বাড়া করা সি এন জি
মিথিলা বইয়ের দিকে তাকাতে তাকাতে বাসা থেকে বের হলো, গাড়িতে উঠতে গিয়ে মিথিলা শকড খেলো,এতো দামি কার , তার বাবা ঠিক করেনি তা হলে
এমন সময় গাড়ির গ্লাস নেমে গেলো
অরনি জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বল্লো
– তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম মিথিলা চলে আয়
মিথিলা -অরু তুই? তোর তো এখানে আসার কথা ছিলো না
অরণি – সব কথা কি তোকে আগে থেকেই বলে রাখতে হবে
মিথিলা- ওকে তোরা যা আমি সি এন জি তে করেই আসছি তোদের পিছনেই থাকবো
অরণী – মিথিলা সি এন জি কে আমরা বিদায় দিয়ে দিয়েছি,ও এখন পাশের বাসার বাড়ার জন্য অপেক্ষা করছে, দাঁড়িয়ে থাকলে দেরি হয়ে যাবে
মিথিলা আর কথা না বাড়িয়ে উঠে বসলো,আট সিটের বিশার মাইক্রোবাস,সবাই আছে সাম্মি রাহি নতুন কয়েকজন আছে যারা শুধু ক্লাসমেট
রাহি- মিথিলা তুই আমাদের সাথে মিশতে চাস না কেনো
মিথিলা- চাই না কে বল্লো
সাম্মি- অনেক বলে কয়ে তোকে রাজি করাতে হয় কেনো,আমাদের কে তুই বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবতে পারিস না
মিথিলা- রাহি, সাম্মি রাতে কি পড়েছিস একবার করে দেখে এক্সাম হলে কাজে দিবে
অরনি- ঠিক বলেছিস মিথি, গাড়ি চলতে শুরু করলো
মিথিলা এ কি গাড়ি উলটো দিকে যাচ্ছে কেনো
অরনি- ইহান উঠবে, ইহান কে নিতে হবে না
মিথিলা- তার মানে এই গাড়ি ইহানের,
অরনি- না ইহানের না এটা বাবা কিনেছে আমার জন্য বাবা অবশ্য একটা জিপ কিনতে চেয়েছিলো
আমি নিষেধ করি জিপে তো তোদের সবাইকে নিয়ে বসতে পারবো না তাই, আমি প্লান করি সবাই এক সাথে যাওয়ার
মিথিলা- তা আসার পথে ইহান কে না এনে এখন উলটো পথে ইহান কে নিচ্ছিস কেনো
অরনি- এমনি( ইহান কে যে তুই এভয়েট করিস সেটা আমরা ভালো করেই বুঝতে ফেরেছি তাই আগে ইহান কে নিই নি) মনে মনে বল্লো
মিথিলা আর কিছু বল্লো না,,ইহান দের বাসার সামনে ইহান দাঁড়িয়ে আছে
ইহান গাড়িতে উঠে বসলো মিথিলার পাশের সিটে মিথিলা খেয়ালই করেনি তার পাশের সিটের দিকে ইহান বসতেই খেয়াল করলো,,পরে আফসোস করলো এই ভেবে যে যা এড়িয়ে চলতে চাই তা ই কেনো পিছু ছাড়ছে না আমার
ইহান- অরু পরিক্ষার ‘ হলে’ কি ছেলে মেয়ে এক সাথে বসবে নাকি
অরনি কিছু বলার আগে রাহি বল্লো
– কেনো মেয়ে পটানোর ধান্দা করছিস নাকি
ইহান- করলে ও করতে পারি
অরনি- তুই সেটা করবি না আমি জানি,,মজার ব্যাপার কি জানিস,তুই মিথিলা রাহি অর্চনা তোরা তিন জন ই পাশা পাশি,তার পর মাঝখানে এলো যাদের জীবনে ক্লাসে দেখিনি তারা,তাদের পাঁচজনের পরে আমি
ইহান- ওয়াও( এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি)
অরনি- তুই তো খুশি হবি
ইহান- অরু মেরা দোস্ত মন খারাপ করিস না
অরনি- রাখ তোর ফাজলাম
পুরো সময় মিথিলা কোন কথা বলেনি পরিক্ষার হলে ডুকে ও বলেনি
ইহান- দোস্ত মিথি হ্যাল্প করিস রে তুই তো আবার সব জান্তা হি হি হিহি
এভাবেই পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ততার মাঝে পরিক্ষা শেষ হলো
কিন্তু মিথিলার পড়া কখনো ই শেষ হবে না সে এখন গল্প উপন্যাসের বই নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে
আজ বাসায় কেউ নেই মা বাবা আয়ান নির্ঝরিণী সবাই গ্রামে নানু বাড়ি গেছে মিথিলাকে ও নিতে ছেয়েছিলো তারা কিন্তু মিথিলা যায়নি,
মিথিলা এখন সাইমুম সিরিজের বই গুলো নিয়ে খুব ব্যাস্ত রাত নেই দিন নেই সারা দিন বসে থাকে বই গুলোর সামনে
আজ ও খালি বাসা ডিস্টার্ব করার মতো কেউ নেই,মিথিলা বই সামনে নিয়ে বসে পড়লো
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো
মিথিলা- এখন তো কেউ আসার কথা নয় তা হলে কে আসবে
অনেকটা বিরক্ত হয়েই মিথিলা দরজা খুলতে গেলো
দরজা খুলে মিথিলা লাফিয়ে উঠলো
কারন
চারজনের এক স্বরে কথা শুনে
– সারপ্রাইজ মিথি চলে এলাম
অরনি- করেছিলাম তো আয়ানের সাথে কথা বলে এসেছি,জানতে পারলাম সবাই বেড়াতে গেলে ও তুই যাস নি তাই তোকে সংগ দিতে চলে এলাম
ইহান- তা ছাড়া বলে আসলে.তোর পাঁচের মতো হয়ে যাওয়া মুখটা তো দেখতে পারতাম না
কি বলিস তোরা
সবাই এক স্বরে বল্লো
হুম তাই
রাহি- এখন কি দরজায় দাড় করিয়ে রাখবি নাকি
মিথিলা- ওহ তাই তো আয় বস
ইহান এই প্রথম মিথিলাদের বাসায় এসেছে তাই সে না বসে বল্লো কিছু মনে করিস না মিথি
আমি কি তোদের বাসাটা একটু দেখতে পারি
মিথিলা ভ্রুকুঞ্চিত করে বল্লো
– কেনো
অরনি- মিথি আমার মনে হয় ইহান তোদের বাসা দেখতে চায় না,ও দেখতে চায় তোর স্টাডি রুম
কি ঠিক বলেনি ইহু
ইহান- হুম তাই
মিথিলা- ঠিক আছে তোরা সবাই আয়
সবাই মিলে চল্লো স্টাডি রুমের দিকে
স্টাডি রুম টা মোটামুটি সাইজের বড় চারি দিকে বইয়ের তাক,আর হরেক রকম বই দিয়ে সাজানো,
ইহান একটা জায়গাতে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে, তার পর ফিরে এলো ব্যাপার টা মিথিলার চোখ এড়ালো না,প্রশ্ন এলো মিথিলার মনে ইহান কি রেখেছে সেখানে
ইহান- চল এবার বেরুই
মিথিলা- বেরুবি মানে যাহ গিয়ে ড্রইংরুমে বস আমি আসছি
ইহান- আরেহ বেরুবো মানে স্টাডি রুম থেকে বেরুবো, তোদের বাড়ি থেকে নয়