Wednesday, August 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2348



মন ফড়িং ❤ পর্ব – ৯ 

0
মন ফড়িং ❤
পর্ব – ৯
প্রিয় মানুষের চেহারাটা হয়তোবা কখনো মনে রাখা যায়না। নিদ্রকে সে কোনো ভাবেই কল্পনায় আনতে পারেনা। কিন্তু তার স্বামীর চেহারা ভুলতে পারেনা। যতবার চেষ্টা করে ততবারই সেই চেহারা আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে যায়। জীবন তাকে কিছুই দিবেনা। রশীদ চাচার মেয়েটার বিয়ে তার এই বাড়িতে হবে। চোখের সামনে তার মতোই একজন মেয়েকে নতুন জীবনে পা বাড়াতে দেখবে। স্বামীর ভালোবাসায় স্বপ্ন গুলো তার রঙিন হবে। তার সব স্বপ্ন একটি একটি করে পূর্ণতা পাবে। রীতাকে আসতে দেখে অদ্রি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। রীতা নামে এই মায়ের বয়সী মহিলা তাকে খুব বেশি যত্ন করে। টাকা দিয়ে এরকম যত্ন কেনা যায়না। সে তো নিজে কখনো বেশি কথা বলেনি রীতার সাথে। তাহলে কীভাবে বা কী কারণে এতোটা যত্ন সে পায়? রান্নাবান্নার কাজের জন্য তাকে আনা কিন্তু সে ধীরে ধীরে সবকিছুতেই প্রভাব খাটাচ্ছে। অদ্রির রুটিন করা অনিয়মকে খুব সহজেই নিয়মে রূপ দিচ্ছে।
রীতা অদ্রিকে চুপচাপ দেখে বললেন
– আজকে একটু ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে।
অদ্রি বললো
– আচ্ছা যাবেন। চাবি আমার কাছ থেকে নিয়ে নিবেন।
– আমার সাথে আপনিও যাবেন। ভালো লাগবে।
– আমার শরীর তেমন ভালো না। ভালো হলেই যাবো। আর আমাকে তুমি করে বলবেন।
– শরীর ভালো করার জন্যই তো বলছি ছাদে যাওয়ার কথা।
– অন্যদিন আমি যাবো।
রীতা বুঝতে পারলেন একে এভাবে বলে নিয়ে যাওয়া যাবেনা।
– আচ্ছা বাদ দাও। আগে খেয়ে নাও
– খাবার রেখে যান। আমি খেয়ে নিবো।
– ওই ভুল অনেক করেছি আর না। আমি এখন থেকে তোমাকে খাইয়ে দিবো।
– আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা।
– কষ্ট না। রান্নাবান্না ছাড়া তো আর কোনো কাজই নেই। তোমার যত্নে না হয় কিছু সময় কাটুক। সুস্থ হলে না হয় আর করবোনা।
অদ্রি অনিচ্ছাসত্ত্বেও খেতে হলো। কোনো খাবারই তার ভালো লাগছেনা। কেমন যেন তিক্ত স্বাদের। কিন্তু খুদাও বেশ পেয়েছে। খুদার কারণে তিক্ত স্বাদের খাবার তাকে খেতে হচ্ছে।
রীতা বললেন – তিতা লাগতেছে তাই না?
– হ্যাঁ।
– বোধহয় হালকা জ্বর তোমার শরীরে। পেট ভরে খেয়ে আবার ঘুম দাও ঠিক হয়ে যাবে।
লিলি নদীর পাড়ে বসে আছে। আশেপাশের মানুষ এখন আর তাকে কোনো প্রশ্ন করে না। প্রথম দিকে এখানকার স্থানীয় মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে রীতিমতো বিরক্ত ছিলো। এখন কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয়না। লিলির বাসায় থাকতে ভালো লাগেনা। তার যুবক ছেলেদের দেখতে ভালো লাগে। ইচ্ছা করে তাদের মধ্যেকার কেউ একজন তাকে সঙ্গ দিক। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করুক
– এভাবে একা বসে থাকো কেনো? মন খারাপ?
না, তাকে কেউই জিজ্ঞেস করবেনা। কারণ সে তো কাজের মেয়ে। আজ পড়াশোনা করলে কোনো স্কুলে থাকলে এর বিপরীত ঘটনা ঘটতো।
তার বয়সী কতো মেয়েকে সে এখানকার ঝোড়ঝাপে লুকিয়ে প্রেম করতে দেখেছে।
শুধু কি এরা প্রেম করে? মনে পড়তেই লিলির পুরো শরীরে কেমন তড়িৎ বয়ে যায়!
নদীতে ঠিক এই সময় ৭-৮ জনের মতো যুবক ছেলেদের দল আসে গোসল করতে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর যে যুবক তাকে লিলির খুব ভালো লাগে। ক’দিন যাবত সেই ছেলেও কীভাবে যেন তাকায় ওর দিকে। ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। লিলির খুব ভালো লাগে! ছেলেটাও কি একইরকম ভাবে?
ইশ !
৭-৮ জনের দলটি ইতিমধ্যে এসে গোসলে নেমেছে।
সেই যুবকের দিকে তাকিয়ে আছে লিলি।
সন্ধ্যা হবার কিছুক্ষণ আগেই লিলি বাসায় ফিরেছে। রীতা বললেন
– অদ্রি তোমাকে ডেকেছে। তবে এখন যেয়ো না। ও ঘুমাচ্ছে।
লিলি বেশ বিরক্ত হয়ে বললো
– আমি সেটা বুঝবানি।
– কী বুঝবা না বুঝবা তোমার ব্যাপার কিন্তু অদ্রির ঘুমে যেন ব্যাঘাত না হয়। ও খুব অসুস্থ। বুঝতে পারছো কী বলেছি?
রীতার  কঠোর গলায় কথাটা শুনে লিলি কিছুটা ভয় পেলো। কোনো উত্তর না দিয়েই সে তার ঘরে চলে গেলো।
দরজা আটকে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। সে কি সত্যি খুব সুন্দর? তাহলে ওই যুবক কেনো তার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকে?
এই বয়সের মেয়েরা পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি কে ভালোবাসা ভেবে নেয় বুঝি। তা না হলে লিলি ওই যুবকের তাকানোর অর্থ বুঝতে পারতো।
নিদ্রের ঘুম ভাঙলো তখন রাত ৩ টা বেজে ৪৫ মিনিট। অন্ধকারে ঘড়ির কাটা জ্বলজ্বল করছে।
সকাল ৮ তাকে যেতে বলেছে। রঙের কাজ এখনো কিছু বাকি আছে। তার স্ত্রী নাকি সকাল ১০ টার দিকে আসবেন। এতো সহজে কি সে পেয়েছে? তাকে জিজ্ঞেস করলে বলবে কিছু?
মিস্টার ব্রন্ড আবার তাকে খারাপ ভাব্বে না তো? ভাবলে ভাবুক।
ঘুম আসছে না নিদ্রের। কী করবে? নতুন কোনো নকশা তৈরি করার চেষ্টা করবে? নাকি তার কাজে কী কী পরিবর্তন করা যায় সেটা নিয়ে বসবে? দাদীর সাথেও তো আজ তেমন কথাই হয়নি। একটু দেখে আসা যাক কী করছেন আসমা জামান?
নিশ্চয়ই দাদার ছবি হাতে নিয়ে নীরবে চোখ ভেজাচ্ছেন। দেখে ফেললে, স্বীকার করতেই চাইবেনা।
নিদ্র দাদীর রুমের দরজার কাছে যেতেই বুঝতে পারলো, দাদী জেগে আছেন এবং দাদার ছবি হাতে নিয়ে নীরবে কাঁদছেন! নিদ্র দাদীর কাছে বিছানার উপর বসলো। আসমা জামান ছবিটা উপর করে রেখে চোখ মুছে বললেন
– ঘুম আসছে না?
– তা তো দেখতেই পাচ্ছো।
– মেয়েটাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। ছবি আছে তোর কাছে?
– আছে। তবে আমি চাই তুমি সামনাসামনি ওকে দেখবে। ছবিতে তোমার ওকে একদমই ভালো লাগবেনা।
– কবে যাবি?
– টাকাই তো জোগাড় হচ্ছে না। আর দুই একটা কাজ করলে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে।
– ওই মেয়ের যদি বিয়ে হয়ে যায় তখন?
– তখন আর কী? ভাবতে হবে আল্লাহ তায়ালা আমার ভাগ্যে ওর নামটা লিখে দেয়নি।
– জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দিবি?
– আসলে দাদী, আমি অনেক চেষ্টা করেছি ভুলে থাকার। বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছি ওকে না জানিয়ে। এখানে এসেও কোনো যোগাযোগ করিনি। ও চিঠি পাঠিয়েছে কিন্তু আমি তার প্রতিউত্তর দেইনি। তারপরও আমি পারছিনা। ক্লাবে, বারে গিয়ে কতো সুন্দরী মেয়েদের সাথে মেশার ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তাই আমি চাচ্ছি একটা শেষ চেষ্টা করবো। মনে করো যদি একটু বুঝতে পারি, আমার জন্য অল্প একটু ফিলিংস আছে। তাহলেও আমি ওকে…..
নিদ্রের গলার কাছে কথাটা আটকে গেলো। বিছানা ছেড়ে উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো নিদ্র।
আসমা জামান, নিদ্রের চলে যাওয়ার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
নাজমুল সাহেব ডান হাতে দুটো টিকিট নিয়ে বসে আছেন। আরেক হাতে এলকোহলের বোতল। আজকে আর গ্লাসে নিয়ে খাচ্ছেন না। নাজমুল সাহেব বোতল রেখে তার মায়ের রুমের দিকে গেলেন। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলেন। আসমা জামান বললেন
– আয়। ঘুমাস নাই?
– না, ঘুমাতে ইচ্ছা করছেনা।
– নাকি ঘুম আসছে না?
– ওই একই কথা?
ছেলের হাতের টিকিট দেখে জিজ্ঞেস করলেন
– কীসের টিকিট রে বাপ?
– তোমাদের বাংলাদেশ যাওয়ার টিকিট। আর যাওয়ার সময় মনে করো কিছু টাকা রেখেছি। তা না হলে ভুলে যাবো।
– বাপ তুই আরেকটা বিয়ে কর।
নাজমুল সাহেব হো হো হো করে হাসতে শুরু করলেন। হাসি থামিয়ে বললেন
– এখন ছেলের বিয়ের বয়স আর যদি আমি করি তাহলে ব্যাপারটা একটু কেমন হয়ে যায়না?
– বিয়ের কোনো বয়স নাই বাপ।
– তারপরও আমার আর ওতে মন নেই। মা, আমি যাই নেশাটা বেশি হয়ে গেছে মনে হয়। মাথাটা কেমন যেন লাগছে।
নাজমুল সাহেব টিকিট মায়ের হাতে দিয়ে বললেন
– মা, আমাকে পারলে মাফ কইরো। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে আর নিদ্রকে। বেচারাকে আমি মনে হয় কখনো ভালোবাসতে পারিনি।
বাবা হতে পারিনি আমি, মা। আমি পারিনি!
চলবে…..!
© Maria Kabir

প্রত্যাখান_পর্ব(১৪)

0

#প্রত্যাখান_পর্ব(১৪)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

‘এত যে কষ্ট মনের ভেতরে, তবুও মেয়েটির বিন্দু মাত্র ক্ষোভ নেই বাবা-মায়ের প্রতি। সবসময় মুখে হাসির রেখা ঝুলেই থাকবে। প্রকাশ করে না ঠিক’ই। কিন্তু বুঝি তো, সব বুঝি,’ জানালেন ভাবি। অনেকটা হাহাকার মিশ্রিত ছিল সে কথা।

খানেক থেমে তিনি আবারও বলতে শুরু করে, ‘জানেন, সেবার যখন আপনার মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো, তখন ওর কি আহাজারি! কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করবে না। করতেই যদি হয় তবে আপনাকে বিষয়টা জানিয়েই করবে।’
এ কথা শুনে আপনার মা খানেক হাসলেন৷ তারপর লাবণ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন তিনি, ‘বোকা মেয়ে! বিয়েই তো হয়েছে। অন্যায় তো কিছু করো নি। নিজেকে এত ছোট কেন ভাবছো? ছোট তো হওয়া উচিৎ ঐ মুখোশদারী মানুষটির, যে তোমাকে প্রতি পদে পদে ঠকিয়েছে।’
তারপর আর আন্টির মুখের উপর কথা বলেতে পারেনি সে। সব ঠিকঠাক ছিলো। বিপত্তিটা ঘটল সেদিন, ‘যেদিন লাবণ্য ফেসবুকে আপনার স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানতে পারলো মিথ্যে কথা একদম বরদাস্ত করেন না আপনি। হোক তা মজা করেও।’
আর সেদিনই সে আংকেলকে ডেকে প্রত্যাখান করে দেয় বিয়ের প্রস্তাব।
সত্যি বলতে প্রথম দেখাতেই(ছবি দেখে) ও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। জায়গা দিয়ে ফেলেছিলো মনের ছোট্ট কুঠুরিতে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি।
‘একটা বিয়ে হয়েছে, স্বামী সংসারে থাকতে পারেনি তিনমাসও, চলে আসতে হয়েছে। এসব নানাবিধ কারণে ও হীনমন্যতায় ভুগতো। নিজেকে ভিষণ ছোট ভাবতো। মানুষের ভালোবাসার অযোগ্য মনে করতো নিজেকে।’

লাবণ্যর ভাবির কথাগুলো শুনছিলাম আর দু’চোখ দিয়ে অকাল শ্রাবণ ঝরছিল আমার। মনে মনে শুধু এটাই ভাবছিলাম, ‘এ আমি কি করলাম! কেন করলাম? কোন কিছু না জেনে বুঝে কেন এমনটি করলাম?’
‘শুভ্র ভাই! বেলা বয়ে গেল বলে। আপনি কি আজ রাতটা আমাদের ছোট্ট কুটিরে থেকে যাবেন?’ অনেকটা অনুনয়ের স্বরে ছিল সে প্রশ্ন।
সম্বিত ফিরে আমার। ঠোঁটের কোণে মেকি হাসির দেখা ফুটিয়ে তুলি। ‘না, না, ভাবি! আমার এখন যেতে হবে। আসি।’

হেনা ভাবির থেকে বিদায় নিয়ে আমি যখন নরসিংদী থেকে রওয়ানা দেই, তখন বিকেল ৫টা বেজে ১৩ কি ১৪মিনিট। বাসায় যখন ফিরি তখন রাত্রি সাড়ে ৯টা বাজে।
দরজায় নক করতেই ‘আশা’ এসে দরজাটা খুলে দেয়। যদিও প্রতিটা দিন ড্রয়িং রুমে বসে আমার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনতো লাবণ্য।
ভেতরে প্রবেশ করেই আমার আকুল নয়ন খুঁজতে থাকে লাবণ্যকে। এদিকে বোন যে আমার প্রশ্ন করেছে, ‘কিরে ভাইয়া! এরকম দেখাচ্ছে কেন তোকে?’ সেদিকে একটুও মন নেই আমার।
বোনের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই দ্রুতপায়ে এগিয়ে যাই নিজ রুমের দিকে, খুঁজতে থাকি লাবণ্যকে।
কিন্তু নাহ! পাইনি ও’কে। ভেতরটা আমার হাহাকার দিয়ে ওঠে। দ্রুত পায়ে মায়ের রুমে গেলাম। মায়ের রুম থেকে গোসলখানা, কিচেন, এরুম-ওরুম সবখানেই খুঁজলাম ও’কে মনে মনে, ভিষণ সংগোপন।

আমার এরকম হন্তদন্ত হয়ে ছুটাছুটিতে কিছুটা অবাক হয় মা। প্রশ্ন করে, ‘কিরে! কি হয়েছে তোর? কি খুঁজছিস এভাবে?’
হতাশ চোখে মায়ের দিকে তাকালাম আমি। তারপর অনেকটা ভেঁজা গলায় প্রশ্ন করলাম, ‘কোথায় লাবণ্য? ও’কে কোথাও পাচ্ছি না?’
বিয়ের পর এই প্রথম নিজ থেকে লাবণ্যর খোঁজ নিয়েছি৷ ব্যাপার’টাতে অবাক হয় মা। কিন্তু অস্বাভাবিক হয়নি। মনে হচ্ছে যেন এরকম কিছু ঘটবে সেটা ওনি আগে থেকেই জানতেন।
কিছুটা উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করলাম আবারও, ‘কি হলো? কিছু বলছো না যে? কোথায় লাবণ্য?’
মায়ের জবাব, ‘বৃষ্টির জন্য আটকে গিয়েছিলো রাস্তায়। পরে পথভুলে আশ্রয় নেয় বান্ধবীর বাসায়। এখন পিয়াদের বাসায় আছে। কাল সকালে চলে আসবে।’
কেন জানি না, সেদিন আমার ভিষণ রাগ হয় লাবণ্যর প্রতি। ‘না হয় পথভুলে কিছু টা সময় নষ্টই হলো, তাই হলে এভাবে অন্যের বাসায় রাত কাটাবে?’
ঘড়িতে ১০টা বাজার শব্দ হলো তখনই। ঝুলে যাওয়া টা-ই’টা ভালো ভাবে বেধে মায়ের দিকে ফিরে তাকালাম, ‘আমি আসছি পিয়াদের বাসা থেকে। গেইটটা লাগিয়ে দাও।’
পিছু ডাকছে আশা। ‘ভাইয়া! শুন। বাইরে বৃষ্টি পরছে। যাসনে। এই ভাইয়া! ছাতাটা তো নিয়ে যা। এইরে! চলে গেলো। মা, তুমি এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো, কিছু বললে না কেন ভাইয়াকে?
জবাবে একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে আমার মা সেদিন নিজ রুমে চলে গিয়েছিল….

চলবে….

‘সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০৩)

0
'সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০৩)
'সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০৩)

না, অন্য আট/দশটা ছেলের মতো মাস্তানি কিংবা রাজনীতিতে দক্ষ ছিলো না সে।

সে ছিলো ভিষণ শান্ত।

খুব একটা সাহস তার ছিলো না।

বরং চুপচাপ নিরবে সবকিছুর সাক্ষী হয়ে রয়ে যেতো।

রাজপথে মিছিল চলছে।

সেখান দিয়ে হেঁটে গেলেই, আমার হাতে কারো হ্যাঁচকা টান অনুভব করতাম।

পরক্ষণেই নিজেকে আবিষ্কার করতাম ফুটপাতে, মিছিলের বিপরীত পথে।

না, না! ওকে কখনো ভিতু মনে হয় নি আমার।

শুধু বুঝতে পারতাম- ওর সাহসটা একটু কম ছিলো।

প্রতিবাদ করার ধরনটা ছিলো একটু অন্য রকমের।

গায়ের জোরে নয়, ও চাইতো ওর কলমটাকে শক্তি দিতে।

আমার সাহসী প্রেমের সাথে মিশে ওর ভীরু প্রেম একটু একটু করে কখন যেন জমাট বেঁধে গিয়েছিলো বুঝতেই পারি নি!

আর যখন বুঝলাম, ফেরা হয়নি আর।

সেদিন শিবপুরের একটা কম দামি রেস্টুরেন্টে বসে ওর দুটো হাত নিজের হাতে নিয়ে বলেছিলাম

– ‘এবার তো দুজনকে দুজনের বাড়িতে বলা উচিত।

‘ কথা ছিলো পরের শনিবার দেখা হলে বলবো যে বাড়ির সবাই শুনে কি বললো,

মেনে নিলো কি না।

কিন্তু তার আগেই তো সেই অচেনা বুলেট টা!

নাম বদলে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে গেলো স্বপ্নটাই।

যে ছেলেটা সব রকম গন্ডগোল থেকে দুরে সরে থাকতো!

যে নিজেকে কোনো ঝামেলাতে জড়াতোই না কখনো!

যে কেনো সে দিন কলেজের বাইরে দুর থেকে হলেও দেখার চেষ্টা করছিলো ভেতরে এতো পুলিশ কেনো!

সেই ছেলেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।

অনেক খুঁজেছি তাকে কিন্তু পাইনি। কোন কথাবার্তা ছাড়াই সে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো।

আচ্ছা, এটাই কি নিয়তি! এভাবেই কি শেষ হয়ে যায় ভালোবাসারা?

না চাইলেও কি এভাবেই প্রিয়জনকে ছেড়ে থাকতে হয়?

ধীরে ধীরে অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাই আমি।

হয়ে যাই ডিপ্রেশনের রোগী।

আমার বাবা খুব কঠিন মনের মানুষ।

যেটা বলেন সেটাই হয়।

ছোটো বেলা থেকে যা বলেছেন সেটাই শুনে আসতে হয়েছে।

তবু আমি জানতাম বাবাকে ঠিক মানিয়ে নেবো।

চেষ্টা করবো বুঝাতে- ‘আমি আর ও’ সুন্দর একটা স্বপ্ন,

যা সব মেয়েরাই দেখে।

এই যে যার সাথে বাবা হঠাৎই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন,

এই যে আমার হাজার বারণ কোনো দাম পেলো না আর, সত্যিই যদি কাল আমায় তিন শব্দের কবুল বলতে হয়!

তখন কি করবো আমি?

যে তিন শব্দের কবুল একদিন মনে মনে বলে আমি আর সেই ছেলেটা হৃদয় বদলে নিয়েছিলাম আল্লাহ’কে কে সাক্ষী রেখে, তার কথা কি আমার তখন মনে পড়বে না এক বারও?

আমি কি চোখ বুজলেই দেখবো না সেই হাসি মুখটা?

যে হাসি মুখটার প্রেমিকা ছিলাম আমি।

চলবে….

‘সর্বনাশের দিনে’

(পর্ব-০৩)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

‘সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০২)

0
'সর্বনাশের দিনে'(পর্ব-০২)

তোমার মতো ছেলেকে নিয়ে চিঠি লিখবো এ যে আমার কল্পনারও অতীত।

তবুও লিখতেই হচ্ছে!

সারারাত চোখের জলের নুন মেখে,

দগদগে ঘা’য়ে,

নিজেকে পোড়াতে পোড়াতে তবুও লিখতেই হচ্ছে তোমাকে নিয়ে,

নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে।

জানো কবি! তোমাকে মনে পড়লেই কষ্টের বাষ্প ফোটে আমার দুটি চোখে।

চাই না !

তবুও কেন জানি না তোমার ছবি হৃদয়ের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে।

জানি তো সামনা সামনি দাঁড়িয়ে কোনোদিনও আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস তোমার নেই।

তাই ইন্দ্রজিত এর মতো মেঘের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে একটার পর একটা শুকুনির দান চেলে গেছো তুমি!

ভাবছো কিছুই বুঝি না!

বুঝি,

সবই বুঝি আমি।

কিন্তু অবুঝের মতোই দেখে গিয়েছি শুধু।

আজ তোমার কাছে আমার একটাই প্রশ্ন।

ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে কেনো এসেছিলে জীবনে?

কেন কাঁদালে আমায়?

কেড়ে নিলে আমার স্বপ্ন দেখার অধিকার!

তোমার জন্যই আজ আমার রাত জাগার রুটিন।

তবুও একবুক হাহাকার বুকে নিয়ে অভিশাপ দিতে পারিনি তোমায়।

তোমা বিহনে একা,

একা দগ্ধ আমি আজও তোমায় আগের মতোই ভালোবাসি।

জানো সখা!

আমার বুকের বাঁ’দিকে ভিষণ ব্যথা।

তারপরও হারিয়ে যাওয়া ক্ষণটুকু গচ্ছিত আছে হৃদয়ে।

আফসোস শুধু তোমার ফেলে রাখা ধোঁয়াটে সময়ের রঙ্গমঞ্চের অভিনয়টা প্রথম কেন ধরতে পারি নি?

আজ তুমি আমার থেকে অনেক অনেক দুরে।

কিন্তু রাতের আঁধার যে বেশিক্ষণ থাকে না প্রিয়!

তোমার বোঝানো ভুলে তাই একদিন না একদিন মরচে পড়বেই,

আর সেদিনই খুলে যাবে সীমান্ত পথ ।

তুমি হেরে গেছো কবি,

হেরে গেছো পবিত্রতার কাছে।

হেরে গেছো তুমি আমার ভালোবাসা’র কাছে।

ভাবতে তবু অবাক লাগে তুমি নাকি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসো আমাকে!

এ তোমার কেমন ভালোবাসা ছিলো কবি!

যাকে তুমি নিজের প্রেমিকা বলে ভাবো তার জন্যই সারাটা পথ জুড়ে তুমি এঁকে দিলে কাঁটার পাহাড়!

তবে আজ না হয় কাল তোমার সূর্যও জেনে যাবে আসল নকল।

তখন কি তোমার বাতাসে জমবে না একটুও লজ্জার শ্বাস?

না কি আয়নারা হেসে হেসে দেখাবে না স্বরূপ তোমার!

তোমাকে আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে কবি!

‘কলেজ গেইট’ সেই অগোছালোময় রেস্টুরেন্টের কথা তোমার মনে আছে?

যে টেবিলে বসে কফির ধোঁয়া সরিয়ে তুমি একদিন আমার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলেছিলে

‘ভালোবাসি’ সেই টেবিলেই অপেক্ষায় থাকবো ঠিক অপরাহ্নে শেষবারের মতো তোমার জন্য।

চলবে…

‘সর্বনাশের দিনে’

(পর্ব-০২)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

‘ সর্বনাশের দিনে’

0
' সর্বনাশের দিনে'
' সর্বনাশের দিনে'

ক্লান্ত দুপুর!

ভেতরে হাতুড়ি দিয়ে দুরমুশ পেটানোর শব্দ আর আমার ভীরু পায়ের এক একটা কদম।

গন্তব্য শিবপুর কলেজ গেইট।

যেখানে দাঁড়িয়ে তুমি আমারই অপেক্ষায়।

বাসস্টপে অগণিত মানুষ যেন থেকেও নেই।

শুধু তুমি আর আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের প্রথম দৃষ্টি ।

সেই প্রথম তোমাকে সামনাসামনি দেখা।

কনে দেখা আলোর ন্যায় বুক জুড়ে শুধুই লজ্জা।

প্রচন্ড খিদে পেটে তুমি জানতে চেয়েছিলে- খিদে পেয়েছে তো লক্ষ্মী!

এদিকে কোন রেস্টুরেন্ট আছে কি?

পরিচিত শহর।

পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন তোমায় শিবপুর থেকে মনোহরদীতে।

পাশাপাশি চেয়ারে বসেছিলাম দুজন।

তোমার অপলক দৃষ্টি আমার দিকে।

যে দৃষ্টির কাছে লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছিলাম আমি।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। তা সত্ত্বেও ঘাম জমেছিল আমার নাকে মুক্তোদানার ন্যায়।

তোমার শব্দ করে হাসা আমায় ঘায়েল করলো পুনঃবার।

মন বলছিলো- এ যে আমার স্বপ্নের পুরুষ!

তোমাকে এবং তোমার কথোপকথন গুলোকে সেদিন খুব করে মিলিয়ে দেখছিলাম আমি।

মনে হচ্ছিল সবটাই একটা রামধনুর মতো।

হাজার রঙের ক্যানভাসে আঁকা আমার কল্পনা।

নিরব থেকে তোমার মুখপানে তাকিয়ে ছিলেম পলকহীন দৃষ্টিতে। ভাবছিলাম,

এই তুমিটার সাথেই তো কতো রাত কেটেছে আমার না ঘুমিয়ে, জেগে জেগে,

স্বপ্ন বুনে।

কি ছিলো সেদিন বলো তো!

কলেজ গেইটের ডান দিকের সুরু রাস্তা ধরে হেঁটে আসা আলোয় কেনো লুকিয়ে ছিলো আমার এমন সর্বনাশ!

সেদিন তোমার দেওয়া প্রথম উপহার ‘স্মৃতির ডায়েরী’র প্রচ্ছদ পেরিয়ে তোমার হাতে আমার হাত রাখা।

চশমার কাঁচের পিছনে তোমার দুটো গভীর চোখ আর টেবিলে রাখা কফির কাপ দুটোর অস্পষ্ট ছাপ,

সব, সব আজও বুকে রয়ে গেছে ঠিক সেদিনের মতো। আমার স্বপ্নের পুরুষ!

কিছু ভুল মাঝে মাঝে দুরত্ব টেনে দেয় বটে কিন্তু কল্পনার ক্যানভাসে তার ছবিখানা রয়ে যায় চিরটা কাল।

অনুভবে হলেও শক্ত করে ধরি হাত।

দিগন্ত পেরিয়ে আসে বিকেলের রোদ্দুর। মনে পড়ে যায় আমার তোমার কথা ভিষণ,

ভিষণ ভাবে।

বাতাসের কানে কানে তখন খবর পাঠাই-

‘ হে আমার স্বপ্নের পুরুষ! হে প্রিয় কবি!

শুনতে কি পাচ্ছো তুমি!

আজও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।’

চলবে….

‘ সর্বনাশের দিনে’

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

 প্রত্যাখান_পর্ব(১৩)

0
 প্রত্যাখান_পর্ব(১৩)
 প্রত্যাখান_পর্ব(১৩)

প্রত্যাখান_পর্ব(১৩)

লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

লাবণ্যকে নিয়ে যখন বাড়ি পৌঁছালাম তখন রাত্রি সাড়ে দশটার মতো বাজে।

রুমে প্রবেশ করেই আমার চক্ষু চড়কগাছ।

ফুলে ফুলে সজ্জিত রুমটির চতুর্দিকে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো।

বিছানায়ও একই রকম ভাবে লাল টকটকে গোলাপের পাপড়িগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

কে বা কারা এই কাজ করেছে জানি না আমি।

রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষে মামাতো বোন কনা এবং চাচাতো লিমা এসেছিলো লাবণ্যকে নিয়ে।

সাথে ছিলো কাজীনের বউ লিপি ভাবি।

লাবণ্যকে খাটের একপাশে বসিয়ে ভাবি ওর কানে কানে কিছু একটা বলে।

মুহূর্তেই লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় লাবণ্যর পুরো মুখ।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে ননদদের সাথে নিয়ে চলে যান ওনি বাহিরে।

ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম আমি।

যখন ফিরলাম তখনো লাবণ্য পূর্বের ন্যায় পা দুলিয়ে বিছানার একপাশে বসে।

প্রশ্ন করলাম, ‘কি ব্যাপার? সারারাত কি এভাবে বসে থাকার পন করে এসেছো নাকি?’

অনেকটা ঝাঁঝালো গলার প্রশ্নটা ছিলো। চটজলদি ছুটে আসলো সে আমার দিকে।

পা ছুঁয়ে সালাম করে নিলো। তারপর দুজনে মিলে একসাথে নামাজটা আদায় করে নিলাম।

বিয়ের মতো পবিত্র রাত্রিতেও অনেকগুলো তিক্ত কথা শুনিয়েছিলাম আমি লাবণ্যকে।

নিশ্চুপ লাবণ্য মাথা নিচু করে বসেছিলো শুধু।

নেহাৎ’ই পুরুষত্বের ডাকে সাড়া দিতে সে রাতে ওর সাথে মিলিত হই আমি।

স্থাপন করি শারীরিক সম্পর্ক।

‘দিনে পড়াশোনা+বাবা মায়ের দেখাশোনা,

একটুখানি গল্প গুজব,

কাজের বুয়ার সাথে হাতে হাতে রান্নার কাজে সাহায্য করা আর রাতে আলো নেভালে আমার শারীরিক চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়া,

এগুলোই ছিলো ওর দৈনন্দিন রুটিনের তালিকায়।

‘ এর বাইরেও যে আলাদা একটা জীবন আছে, সেটা আমি ভাবতাম না। ভাবতে চাইতামও না।

আমি প্রায়ই লক্ষ্য করতাম, ‘মা আমায় কিছু একটা বলার জন্য আমার কাছে ছুটে আসতো, সময় চাইতো।

আমি মা’কে কোন পাত্তায় দিতাম না৷ এড়িয়ে যেতাম।

এমন ভাব করতাম যেন আমার কোন সময়ই নেই অফিসের কাজ ছাড়া অন্য কোথাও মন দেয়া।

ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে মা আমার ফিরে যেতো নিজ রুমে।’

এভাবেই চলে যায় অনেকগুলো দিন, মাস, বছর।

ফোর্থ ইয়ারে উত্তীর্ণ হয় লাবণ্য। স্যারদের কঠোর নির্দেশ,

‘প্রথমদিকে নিয়মিতই ক্লাস করা চাই।’ লাবণ্যকেও তাই প্রত্যেহ ভার্সিটিতে যেতে হতো।

যথারীতি সেদিনও লাবণ্য ভার্সিটিতে যায়। ব্যবসায়ের কাজে আমাকে যেতে হয়েছিলো নরসিংদী।

ফেরার পথে একটা অদৃশ্য টানে লাবণ্যদের বাসায় গেলাম সবার সাথে দেখা করে আসার জন্য।

বিদায় নিয়ে চলে আসছিলাম। পথবেধে দাঁড়ায় লাবণ্যর ভাবি ‘হেনা’।

অনেকটা ভেঁজা গলায় বিশেষ দরকারের কথা বলে আমার কাছে তিনি একটু সময় চাইলেন।

সময় দিলাম। আমার ভাবনার আকাশে কালো মেঘ জমে সেদিনই হেনা ভাবির কথা শুনে।

ভেতরটা আমার ডুকরে কেঁদে ওঠে।

চোখে নামে অকাল শ্রাবণ।

আমার বিরুদ্ধে, লাবণ্যর সাথে এতকাল করে আসা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আমার মন।

আমি জানতাম না ঘটনার পরও ঘটনা থাকে, থাকে নাটকের ওপর নাটকীয়তা।

যেই লাবণ্যকে লোভী,

স্বস্তা অপবাদে এতকাল নিজের মনের থেকে দুরে সরে রেখেছিলাম,

সেই লাবণ্য যে এভাবে আমাকে আমার বিবেকের কাছে অপরাধী বানিয়ে দিবে,

কখনো ভাবিনি আমি।

চিৎকার করতে চেয়েও আমি পারছিলাম না। গলার ভেতর দলার ন্যায় কিছু একটা কুন্ডলী পাকিয়ে ছিলো।

তা সত্ত্বেও কান্না জড়ানো গলায় অনেকটা উঁচু স্বরে প্রশ্ন করি ভাবিকে, ‘

এতবড় সত্যিটা কেন আপনারা আমার থেকে গোপন রেখেছিলেন?

কেন আগে জানাননি? কেন? কেন? কেন?’ চলবে….

ফাগুণের নবধারা পর্ব-১১

0

ফাগুণের নবধারা
পর্ব-১১

– শাহাজাদী হুমাশা

কক্সবাজার থেকে ফিরে আসার পর হতেই রুকু আর কখনো নিঝুমের সাথে যোগাযোগ করেনি।
সময় সময়ের মতই পার হচ্ছিলো।কিন্তু সব ভালোর মাঝেও খারাপ থাকে।সব খারাপকে মেনে নিয়েই জীবন যুদ্ধে এগোতে হয়। বিপদের আঁচ পেলেও মানুষ বিশ্বাস রাখে সৃষ্টিকর্তা সব ঠিক করে দিবেন।কিন্তু কিছু বিপদ আর কিছু দুঃসময় যে কখনই ফুরাবার নয়।

ইদানীং রুকু অনেক দুঃস্বপ্ন দেখছে ঘুমে।এটা প্রেগনেন্সির একটা ফেইজ। মাত্র তো ৪ মাস। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছেনা সে।গতবারও মেঘের বেলায় এমন হয়েছিলো রুকুর।কিন্তু তখন আবিদের সাথে দুর্ঘটনাটা ঘটে।আবিদ আর ফিরে আসেনি।তাহলে এবারো কি?? না না। কক্ষনো না এবার এমন কিছু রুকু সহ্য করতে পারবেনা।পাগল হয়ে যাবে ও।আবিদ ওর পাশে নেই।রেস্টলেস ফিল করছে।আবিদের সাথে কথা বলতে মন চাইছে।কিন্তু আবিদ হয়তো এখন ফ্লাইটে।কি করবে ও?? কিছুক্ষণ উঠে পায়চারি করে। অযু করে তাহাজ্জুদের নামাজে বসে রুকু। মন তার অস্থির হয়ে আছে আবিদের জন্য।এই মানুষটাকে রুকু পাগলের মত ভালোবাসে।জীবনের প্রতিটি সুসময় কিংবা দুঃসময়ে সে আবিদ কে তার পাশে চায়।এই মানুষটার পাগলামিতে পাগল হতে চায়,তার ভালোবাসায় সিক্ত হতে চায়, তার আহ্লাদে,আদরে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে ভেসে থাকতে চায়।সে শুধু আবিদ এবং নিজের সন্তানদের নিয়ে একটা সুখী জীবন চায়।আল্লাহ জেনো তার বেঁচে থাকার অবলম্বন গুলো কেড়ে না নেন সেই দোয়াই করছে রুকু।

ভোর সারে পাঁচটা নাগাদ আবিদের কল আসে।কল রিসিভ করতেই মিষ্টি কন্ঠে আবিদ বলে ওঠে আমার বিড়ালীটা কেমন আছে?? আর আমার বিড়াল ছানারা কেমন আছে?? রুকু চেষ্টা করেও নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।কান্নার দমকে হেচকি উঠে যায় রুকুর পাশে শোয়া মেঘ আর রুকুর নিধি জেগে যায়।নিধি আবিদ না ফেরা পর্যন্ত রুকুর বাসাতেই থাকবে আবিদের আদেশ সেটা।সুমুর রিকোয়েস্টে নিধি থেকে যায় ওদের বাসায়।পাশের ঘর থেকে আবির ছুটে আসে রুকুর কান্না শুনে।
– ভাবি তুমি ঠিক আছো??
– রুকু আপা তুমি শান্ত হও দীর্ঘশ্বাস নাও।এভাবে কেঁদো না।আমরা সবাই আছি।
রকুর এহেন অবস্থা দেখে আবিদ ভয় পেয়ে যায়।সে দ্রুত ফিরে আসবে বলে রুকুকে আসস্ত করে।রুকুও আবিদ কে একনজর দেখার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছে।

ইলমা আর ফাহিম সিলেটেই আছে। ফাহিমের বদলী না হওয়ায় ঢাকায় ফিরতে পারছেনা।ইলমা ঢাকায় একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ জব পেয়েছে।ফাহিম বদলীর চেষ্টা করছিলো এ কয় মাস যাবত অবশেষে তার চেষ্টা সফল হলো।কিন্তু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে আগামী ১বছর পর তাকে নিউইয়র্ক শিফট করতে হবে। ইলমা রাজি।সে শুধু রুকু আর সুমুকে চোখে চোখে রাখার জন্যই ঢাকায় আসতে চেয়েছে।মানুষ দুটোকে যে সে বড্ড ভালোবাসে।আজ তার ভালোবাসার মানুষকে পাশে পাওয়ার পিছনে এদের সবচেয়ে বড় হাত রয়েছে।তাদের এতটুকু ক্ষতিও সে মেনে নিতে পারবেনা। প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করবে সে।
কে জানতো আল্লাহ তার মনের কথাটা শুনে নিবেন আর তার জীবনটাই তার থেকে চেয়ে নিবেন??

রাত ২টা বেজে ১৩ মিনিট।বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে মুসুল ধারে।
কিছুতেই ঘুম আসছেনা সুমুর।সময় জেনো কাটছেই না।ব্যথাটা সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে।
এক পর্যায়ে তা তীব্র আকার ধারণ করে। সুমুর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় নাভিদের।ধড়মড় করে উঠে বসে সে।
– কষ্ট হচ্ছে সুমু??
– আম্মাকে ডাকো নাভিদ আমার লেবার পেইন হচ্ছে ওয়াটার ব্যাংক ব্রোক করেছে।
– স্টে দেয়ার,কিপ পেসেন্স। আমি মাকে ডাকছি
নাভিদ মাকে ডাকতে গেলো। সুমু জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
নাভিদ আর তার মা ঘরে ঢুকেই দেখেন সুমুর অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।তিনি নাভিদকে বললেন গাড়ী বের করতে সুমুকে ইমিডিয়েট হসপিটালাইজ করতে হবে। নাভিদ পকেটে মানিব্যাগ আর গাড়ীর চাবি নিয়ে নিচে নামলো।সুমুকে তার শাশুড়ি আর শশুড় মিলে নিচে নিয়ে এলো। নাভিদ নিধিকে কল দিয়ে সব জানালো।এবং দ্রুত সুমুকে নিয়ে হাসপাতালের জন্য রওনা হলো।যদিও সুমুর নরমাল ডিলেভারি হবার কথা ছিলো।কিন্তু বাচ্চা পেটে বমি করে দেয়ায় ডাক্তাররা অপারেট করতে চাচ্ছেন।নাভিদ ঘাবড়ে গিয়েছে।মাথা ঠান্ডা রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করছে সে।ইতো মধ্যে নিধি ওর মা বাবাকে নিয়ে চলে এসেছে।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় সুমুকে ব্লাড দিতে হবে তাই ডোনার হিসেবে নিধিকে রেখেছে।কিন্তু নিধি বেশি হলে একব্যাগ রক্ত দিতে পারবে আর হাসপাতালে আর রক্ত নেই ও।তাই নাভিদের বাবা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করছেন।ফাহিম এর ব্লাড সুমুর সাথে ম্যাচ করে তাই নাভিদ ফাহিমকে কল দিয়ে রেডি হতে বললো।নাভিদ গাড়ি নিয়ে বের হলো ফাহিমকে আনতে।ইলমা ঠিক করলো সে রুকুদের বাসায় যাবে রুকু একা আছে।

প্রচন্ড ঝড়ো বৃষ্টির মাঝেই ফাহিম আর ইলমাকে নিয়ে বের হলো নাভিদ।ইলমাকে ড্রাইভারের সাথে ইলমাদের গাড়িতে পাঠিয়ে দিলো নাভিদ।আর ফাহিমকে নিয়ে দুটো ব্লাড ব্যাংকে খোঁজ নিতে গেলো।এর মধ্যে নাভিদের বাবা ফোন দিলো।ফোনটা তুলতেই –
– নাভিদ ব্লাড যোগাড় হয়ে গিয়েছে তুই শীঘ্রই চলে আয়। ডাক্তাররা সুমুকে ওটিতে নিয়ে গিয়েছে।
– বাবা আমরা আসছি।
– বন্ডে সই করে দিয়েছি আমি। তুই তাড়াতাড়ি আয় বাপ।
– আমরা আসছি বাবা বের হয়েছি ড্রাইভ……….
– হ্যালো নাভিদ? হ্যালো?? নাভিদ??

কলটা ডিসকানেক্ট হয়ে গেলো। তিন ঘন্টা পার হতে চললো নাভিদ এবং ফাহিমের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ওদিকে সুমু ওটি তে। চিন্তায় সবার মাথা খারাপ হবার যোগার।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে নতুন ভোরের আলোয় নতুন রঙ ছড়াবে এ নবধারায়।ঝড়ের পরের শান্ত সেই মুহূর্ত শুরু হয়ে গিয়েছে।
ডাক্তার বের হতেই সবাই ডাক্তারকে ঘিরে ধরেছে।
– কংগ্রাচুলেশনস 

 মিসেস নাভিদের পুত্র সন্তান হয়েছে।মিসেস নাভিদ এবং বেবি দুজনেই সুস্থ।
– সবাই এক সাথে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।
-বেবিকে আজ ইনকিউবেটরে রাখা হবে।কাল বিকেলে সবার সাথে দেখা করতে পারবেন।পেসেন্টকে কাল ক্যাবিনে শিফট করা হবে।

চলবে……

ফাগুণের নবধারা পর্ব-১০

0
ফাগুণের নবধারা পর্ব-১০
ফাগুণের নবধারা পর্ব-১০

ফাগুণের নবধারা
পর্ব-১০

-শাহাজাদী হুমাশা

সবার সব চাওয়া যে পূর্ণতা পায়না তা প্রকৃতি সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়।সময় বহমান কারো জন্যই তা অপেক্ষা করেনা।মানব জীবনে ঝড় এলে সব লণ্ড ভন্ড হয়ে যায় ঠিক প্রকৃতির মতই।যেমন লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে ওদের আটজনের জীবনটা। প্রকৃতির খেলা বড্ড বিচিত্র।এখানে টিকে থাকে সেই যার খুটি শক্ত।জীবন খাপছাড়া সবার ভাগে সমান সুখ জোটে না।সময় মাঝে মাঝে আমাদের বাধ্য করে সব কিছু মেনে নিতে। মানিয়ে নিতে।নিজের মনের বিপরীতে গিয়েও সুখি হতে কিংবা অভিনয় করতে, বেঁচে থাকতে।আবার মাঝে মাঝে বিপরীত এই পরিস্থিতি থেকেই মানুষ সুখের সন্ধান খুঁজে নেয়।

ঘুম থেকে উঠে রুকু ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।ল্যাপটপে অফিসিয়াল কিছু মেইল ছাড়াও দুটো মেইল এক্সট্রা জমা পড়েছে।একটা ইলমার এবং একটা নিধির।রুকু ঠিক করলো আগে ইলমার টাই পড়বে।

ল্যাপটপে ইলমার পাঠানো মেইল পড়ে রুকু চিন্তা মুক্ত হলো।তার কাছে এই বিরক্তিকর সকালটা এখন ভালো লাগছে।ইলমা খুব সংক্ষেপে কিছু কথা লিখেছে।এই যেমন সে ভালো আছে।তার বর এবং ছেলে দুজনেই ভালো আছে।ইলমার মা ও ভালো আছে।ফিলাডেল্ফিয়াতে সে একটা চাকুরী করছে তার চাকরী জীবনও ভালোই চলছে।ইসরাকের সাথে খুনশুটি আর বহু প্রচেষ্টার পর তার জীবন ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে ইত্যাদি।

রুকু ভাবলো এক কাপ কফি খেতে পারলে মন্দ হতো না।
আবিদ রুকুর সামনে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি ধরলো।রুকু অবাক হয়ে দেখলো।বিবাহিত জীবনের ৭ বছর চলছে ওদের।তবুও আজ পর্যন্ত সে আবিদের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।সে এখনো বুঝেনা তার অবচেতন মনে বলা কথা গুলো সে কি করে বুঝে যায়??

রুকু কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নিধির মেইলটা খুললো।আবিদ বারান্দায় মেঘ আর মানাফকে নিয়ে দুষ্টামিতে মসগুল।নীহারিকা তার গানের ক্লাসের জন্য গিয়েছে।বাসায় শুধু তারা ৫ জন সদস্যই থাকে। আর আবিদ চলে গেলে তারা ৪জন।আবিদের সাথে বিয়ের ৩ বছরের মাথায় মানাফ আসে রুকু আর আবিদের ছোট্ট সংসারে।এখন নীহারিকা, মেঘ আর মানাফকে ঘিরেই আবিদ এবং রুকুর জীবন।শশুড় গত হয়েছেন ২ বছর হলো।শাশুড়ি মা এখন তার ছোট ছেলের সাথে জার্মানিতে থাকেন।বেশ মর্ডান হয়েছেন তিনি।রুকুর ভালো লাগে।তিনি ছেলের বউ এর সাথে থাকেন।আগে রুকুর সাথে সাংসারিক ঝামেলা করতেন এখন ছোট ছেলের বউ এর সাথে করেন না এবং রুকুর সাথেও না।শশুড় মারা যাবার পর থেকে তিনিও শান্ত হয়ে এসেছেন।তবে ছোট ছেলের বউকে তিনি বেশ ভালোবাসেন।এতে রুকু বরং খুশিই হয়।

নিধির মেইল খুলে রুকু বুঝতে পারলো এতো ঝড়ঝাপটার পর অবশেষে সবাই ভালো আছে। শাশুড়ি মাও ভালো আছে।নিধির দু বছরের মেয়ে কণিকা এবং আবিরও ভালো আছে।নিধি সবার একটা ফ্যামিলি ফটো পাঠিয়েছে।

রুকু হাসলো মনে মনে সবাই এখন সবার বর্তমান জীবনে সুখি। আর যে সুখি ছিলো না সেও সুখ খুঁজে পেয়েছে।এ পৃথিবীতে প্রকৃতি সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়।শুধু রুকুর চিন্তা একজনের জন্যই। আর সে সুমু।অত্যন্ত চঞ্চল আর ভালোবাসায় ঘেরা মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। নাভিদ ছাড়া যার চলতো না সে এখন নাভিদের স্মৃতি এবং শেষ চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছে।

রুকু ল্যাপটপ রেখে আবিদের কাছে গেল। বাচ্চা দুটো খেলছে।আবিদ ফোনের স্ক্রিনে সবার ছবি দেখছে।গ্যালারি ঘেটে সে সেই দিনের ছবিগুলো দেখছে যেগুলো কক্সবাজার যাবার আগের দিন রাতে ট্রেণে তোলা হয়েছিলো।সবার হাসিমুখের ছবি।রুকুর দেবর আবিরও আছে এই ছবিতে জার্মানি থেকে বেড়াতে এসেছিলো ছুটিতে।ফাহিম, ইলমা, নিধি,আবির,রুকু,সুমু,নাভিদ,আবিদ,মেঘ আর নীহারিকার ছোটবেলার উজ্জ্বল মুখের কিছু ছবি।রুকুর মন টা ধক করে উঠলো।মনে পরে গেলো সে রাতের পর সকালের সময়টা। কে জানতো কক্সবাজার তাদের জীবনে এত বৈচিত্র্য নিয়ে আসবে যে জীবন নামক নদীর গতিপথ পালটে যাবে।

রুকুরা সকালে ট্রেণ থেকে নেমে প্রথমে নিঝুমের বাসায় যাওয়ার প্ল্যান করলো। তারা নিঝুমকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো।যেই ভাবা সেই কাজ।নিঝুমের অফিস থেকে তার বাসার ঠিকানা নিয়ে ওরা সবাই রওনা হলো।
নিঝুমের বাসায় পৌঁঁছেই বেল বাজালো ওরা।দরজা খুললো একজন মহিলা।ঠিক মহিলা বলা চলে না মেয়ে। বয়স বেশি না।২২-২৪হবে।হলুদ রঙা সুতি শাড়িতে গাড় সবুজ রঙা পার।দেখতে বেশ সুন্দর।মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো কাকে চাই?? রুকুরা ভেবেছিলো হয়তো ভুল বাসায় চলে এসেছে ওরা।কিন্তু ভেতর থেকে যখন নিঝুমকে কথা বলতে আসতে দেখলো সবাই ভাবলো ঠিকানাতো ঠিকি আছে কিন্তু মেয়েটা কে?? নিধির বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।রুকু সামনে দাঁড়ানো মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভিতরে চলে গেলো।নিঝুম ভয়ে শেষ।এখন কি বলবে সবাইকে? রুকু আপাকে কি করে বোঝাবে সব??রিদিমাকেই বা কি বলবে?

রিদিমা ধাক্কা খেয়ে রেগে রুকুর হাত টেনে ধরলো। রুকু সব বুঝে গিয়েছে।রিদিমা চিৎকার করে বলছে – এরকম অভদ্রের মত কারো বাসায় পরিচয় না দিয়ে প্রবেশ করছেন কোন সাহসে?? আমি সিকিউরিটি কে ডাকবো বের হন বাসা থেকে।
– নিঝুম রিদিমাকে চুপ করতে বলতে না বলতেই ঠাস ঠাস করে কতগুলো চড়ের আওয়াজ হলো।সবাই এহেন অবস্থায় হতভম্ব।
রুকু প্রথমে নিঝুমের দুগালে দুটো চড় দিলো।এবং সাথেসাথেই পিছে ঘুরে রিদিমার গালেও একটা কসে চড় বসালো।রিদিমা সোফার উপরে গিয়ে পড়লো চড়ের ঝাক্কি সামলাতে না পেরে।নিঝুম কিছু বলতে পারছেনা। নিধি দরজার কাছে বসে পড়েছে অবাক হয়ে ছলছল চোখে সব দেখছে।তার অস্বস্তি হচ্ছে এখানে থাকতে তার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আবির বুঝতে পেরে ইলমার কানে কানে কি যেন বলে নিধিকে টেনে নিয়ে গেলো বাসার বাহিরে।আবিদ রুকুকে জাপটে ধরে আছে রাগে থরথর করে কাঁপছে রুকু আর কেঁদে যাচ্ছে।নাভিদ আর সুমু অবাক।সুমুকে নাভিদ ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো।ঘটনার আকষ্মিকতায় সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।রিদিমা ভিতরের রুমে যেতে নিয়েছিলো।সেও বুঝতে পেরে গিয়েছে এরা কারা? এরা নিঝুমের পরিবার।যাদের ছবি না দেখলেও নিঝুমের কাছ থেকে তাদের কথা শুনেছে সে বহুবার।সে কখনই চায়নি নিঝুম এদের কাছে ফিরে যাক।সে বহু কাঠখর পুরিয়ে নিঝুমকে বাগিয়েছে।নিঝুমকে হারাতে চায়না সে।তাই নিঝুমকে আর ঢাকামুখী হতে দেয়নি সে।কিন্তু কে জানতো তারা এখানে চলে আসবে? রাগে আর গালের ব্যাথায় সে কাপঁছে।রুকুকেও চড় দিতে চেয়েছিলো কিন্তু নিঝুম তার গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দিয়েছে।গালে হাত চেপে সে ভেতরের রুমে চলে গিয়েছে।

আবিদ রুকুকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।রুকু কেঁদেই যাচ্ছে।তার কাছে নিজেকে নিধির অপরাধী মনে হচ্ছে।সে চারপাশ তাকিয়ে নিধির কথা জিজ্ঞেস করতেই সুমু বলছে আপা ও ঠিক আছে।নিঝুম রুকুর পায়ের কাছে বসে আছে।নিধির কথা শুনতেই সে হকচকিয়ে গিয়েছে।এতক্ষণে সে ইলমা আর ফাহিমকেও দেখলো।নাভিদ কাউকে কিছু না বলেই ট্যাক্সি ডেকে নিলো।তারা এখনি হোটেলে রওনা দিবে।নিঝুম রুকুর পা ধরে বসে আছে।ক্ষমা চাইছে।রুকু শুধু বললো – তুই আমাদের একবার বললেও পারতিস আমরা কেউ তোর সুখের আড়ে আসতাম না।শুধু শুধুই একটা মেয়েকে কষ্ট দিলি।ভালো থাকিস আর আজকের পর আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করিস না।
রুকু বের হয়ে এলো নিঝুমের বাড়ি থেকে সবাই তার পিছু পিছু চলে এলো।এরপর নিঝুম রুকুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।রুকুর বাবা মা এখন সুমুর সাথেই থাকে।নাভিদের শেষ স্মৃতি নিয়েই তাদের বসবাস।

সেদিনের পর রাতের ট্রেনে সবাই ফিরে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু রুকু সবাইকে বুঝিয়ে ওখানেই কিছু দিন থাকলো।সবাই মিলে অনেক আনন্দ করলো।আবিরের সান্নিধ্যে নিধিও সব কিছু ভুলে ব্যাপারটা মানিয়ে নিলো।নিঝুম আর তার স্ত্রী রিদিমা এসেছিলো হোটেলে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে কিন্তু রুকু দেখা করেনি।রুকুর বাবা মায়ের সাথে অবশ্য নিঝুমের এখনো কথা হয়।নিঝুম আর রিদিমার এখনো কোনো সন্তান নেই।সমস্যাটা নাকি রিদিমার।

রুকুরা কিছুদিন আনন্দ করেই ফিরে এলো ঢাকায়। সবাই সব কিছু মেনে নিয়েছে।এখন আর সমস্যা নেই।

চলবে…..

ফাগুণের নবধারা পর্ব-৯

0
ফাগুণের নবধারা পর্ব-৯
ফাগুণের নবধারা পর্ব-৯

ফাগুণের নবধারা
পর্ব-৯

শাহাজাদী হুমাশা

রুকুর ফোন টা বেজেই চলেছে। কেউ ধরছেনা। সবাই যার যার কাজে বাহিরে।বাসায় শুধু রুকু আর মেঘ।২ বছরের মেঘকে ঘুম পারিয়ে রেখে রুকু গোসলে গিয়েছে।মেঘ সম্পূর্ণই তার বাবার মত হয়েছে।শান্ত আর ঘুম কাতুরে।গোসল শেষে বারান্দায় কাপড় নেড়ে রুকু আবার রুমে এলো। ফোনটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে আবার ডায়াল করলো।অপর পাশে হ্যালো বলতেই রুকুর বিরক্ত ভাব দেখিয়ে বললো

– এতো বার কল করতে হয়? তোদের জন্য যদি বাবু ঘুম থেকে উঠে যেতো??

অপর প্রান্ত থেকে সবাই চিৎকার করে সরি জানালো।রুকু আবার রাগ হয়ে বললো –

আস্তে।সবাই চুপ?

কলাপাতা রঙের শাড়িতে রুকুকে দারুণ মানিয়েছে।শাড়িটা আবিদের পছন্দের।আজ ২ সপ্তাহের ফ্লাইট শেষ করে আবিদ আসবে।১ সপ্তাহের ছুটিতে।তাই সবাই মিলে এবার একটা ট্যুর প্ল্যান করলো।সবাই ঠিক করলো তারা কক্সবাজার যাবে।নিঝুমের কাছে।নিঝুম কে চমকে দিবে।বিসিএসের পর নিঝুমের পোস্টিং চট্টগ্রামেই হয়েছে।তাই ওকে সারপ্রাইজ দেয়া যাবে ভালো।নাভিদ ফোনের অপর পাশ থেকেই সুমুকে বকা দিচ্ছে।

– তুমি সাবধানে হাটতে পারো না? সারাক্ষণ দৌড়ানোর দরকার আছে?? আপাতো কোথাও চলে যাচ্ছেনা।
-তুমি কথা থামাও।আমাকে কেনো ডাকলেনা আপাকে কল করার সময়? তোমার এত সাহস।আজ তুমি আমায় ফুচকা খেতে নিয়ে যাবে কোলে করে তোমার শাস্তি।

– নাভিদের মুখটা চুপসে গিয়েছে।এ মেয়েটার সাথে কেন জেনো সে পেরে ওঠেনা।না শাস্তিতে, না শাসনে, আর না ভালোবাসায়।

রুকু দেখলো সুমু ফুলে ঢোল।এত্ত বড় একটা পেট নিয়ে দৌড়ে আসছে।রুকুও বকা দিলো।
– আস্তে হাটঁ পরে যাবিতো।
– আপা কেমন আছো?? দেখো তুমি নিজেই দেখো তোমার ভাই আমার কি অবস্থা করেছে। আমি ওকে মাফ করবো না।ওর জন্য আমি শান্তিতে কিচ্ছু করতে পারিনা।মানুষ একটা নিয়ে হিমশীম খায় সে আমায় ট্রিপল করার ট্রায় করেছে।বদ লোক।

নাভিদ লজ্জায় কাচুমুচু হয়ে গিয়েছে।এই মেয়েটা এত্ত বেফাঁস কথা বলে।
রুকু ওদের কান্ড দেখে হাসছে।সাথে ইলমা, ফাহিম আর নিধিও হাসছে।

ফাহিম আর ইলমা বিয়ের পর হ্যাপি কাপল লাইফ লিড করছে।ফাহিম একটা মাল্টিন্যাশনালে জব করে।ইলমা ব্যাংকে। দুজনের সুখি পরিবার।প্রথমে ফাহিমের মা মেনে না নিলেও ধীরে ধীরে সবাই মেনে নিয়েছে। নিধি একটা সনামধন্য স্কুলের শিক্ষিকা।চোখে চশমা দেয়াতে ওকে আরেকটু আলাদা লাগছে আগের চাঞ্চল্যতা নেই।

রুকু ভাবছে সবাই সবার জীবনে সুখী। কত ঝড়ঝাপটা পার করে আজ সবাই এখানে।
এবার শুধু নিঝুম আর নিধির একটা গতি করে দিলেই রুকুদের দায়িত্ব শেষ।

সবাই মিলে ঠিক করলো আবিদের জন্মদিন উপলক্ষে সবাই কক্সবাজার যাবে আর নিঝুম কেও সারপ্রাইজ দেয়া হবে।
আর আবিদের জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ রেখেছে রুকু।

রাতের ১০ আবিদ বাসায় ফিরে দেখে সবাই টিভি দেখছে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।নীহারিকা বাবাকে দেখে দৌড়ে এলো। আবিদ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।রুকু রান্নাঘর থেকে এসে আবিদের ব্যাগ বেডরুমে রেখে আসলো।সবার সাথে গল্প শেষ হতেই রুকু বললো ফ্রেশ হয়ে আসতে খাবার দিচ্ছে।আবিদ ও চলে গেলো।
খাবার টেবিলে রুকু ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানটা বললো। আবিদ রাজি হলো।বহুদিন সবার সাথে দেখা হয়না। নাভিদ আর সুমু আসতো আগে বাবুকে দেখতে তবে এখন তো সুমুর ও ৮ মাস চলছে।তবে আবিদ প্রশ্ন করলো সুমুর এই অবস্থায় জার্নি ঠিক হবে কি?? রুকু বললো প্ল্যান্টা ওরই।সবাই বারণ করেছিলো তবুও সে যাবেই। তার নাকি ওখানের কাকড়া ভাজা খেতে ইচ্ছে করেছে।আবিদ সহ সবাই হাসছে।সুমু সত্যিই পাগলী।তাই আবিদ ট্রেন এ সিট বুক করলো ৬ টা কেবিন।আগামীকাল রাতের ট্রেনে যাবে সবাই।

রাত ২ টা বাজে সুমু আর নাভিদ ছাদে বসে আছে।নাভিদ চেয়ে আছে সুমুর দিকে। সুমু মনোযোগ দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর উম্ম করে শব্দ করছে।নাভিদ হাসছে।
সে এক উদ্ভট দৃশ্য।সন্ধ্যায় নিয়ে আসা ফুচকা সে রাত দুটায় খাচ্ছে।এমন পাগলামি একমাত্র ওকে দ্বারাই সম্ভব।নাভিদ মনে মনে ভাবছে ২ বছর আগের কিছুই ওর মনে নেই।কিন্তু এই দুবছরে সুমু ওর জন্য যা করেছে তা মনে আছে ওর।এই মেয়েটাকে সুখী করতে সে যেকোনো কিছু করতে পারে।সে তার প্রেয়সী, স্ত্রী, আর সবচেয়ে বড় বিষয় সে তার সন্তানদের মা।সন্তানদের বলার কারণ সুমুর টুইন্স হবে।আর এ নিয়ে সুমু নাভিদ কে বকা দেয়ার শেষ নেই।কারণ সে জেনেছে টুইন্স ডিলভারি করাটা কঠিন কাজ।আর পালাটা আরো কঠিন।তাই।সে যদি মারা যায় তবে বাচ্চাগুলা কে দেখবে? নাভিদ এসব কথায় রাগ করে কিন্তু কিছু বলতে পারে না।এক জীবনে সুমুর থেকে আর কিছু চায়না সে।সুমুকে ভালোবাসাই তার মোক্ষম উদ্দেশ্য।

ভোরের সূর্য জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছে। নামাজ পড়ে নিধি বাহিরে চেয়ে আছে।নিধি ভাবছে কালকের সূর্যটা সে নিঝুমের সাথে দেখবে।তার অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে এবার।গত দুবছর যাবত সে নিঝুমের সামনে যায়নি।এবার সব অভিমান ভুলে নিঝুমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে।নিঝুম কি তাকে মেনে নিবে? নাকি সে এখনো ইলমাকে ভুলতে পারেনি??

চলবে….

ফাগুনের নবধারা পর্ব-৮

0

ফাগুনের নবধারা
পর্ব-৮
শাহজাদি হুমাশা

জোহরের আযান শোনা যাচ্ছে।সবাই জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে ছুটছে।আবিদদের বাড়ি এবং পাশের বাড়িটা মানুষে গমগম করছে। বৌ সাজানো হচ্ছে।
আজ এ বাড়িতে ২ টি বিয়ে।রুকু এ কদিন বেশ চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয়না।আর কাউকে রুমে যেতেও দেয়না।বাচ্চাকেউ কাউকে দেখতে দেয়না।শুধু নীহারিকা এ রুমে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। ইলমার বেশ কষ্ট হয় তার ভাবির জন্য।ইলমা তার মায়ের সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে প্রায়।ইলমার মায়েরও বেশ খারাপ লাগছে কিন্তু তিনি নিরুপায়।

নামাজ পড়ে সবাই চলে আসছে।আবিদ ঠিক করেছে সে আজ পালাবে।একা নয় রুকু, নীহা এবং মেঘ কে নিয়েই।ব্যবস্থাও করে ফেলেছে।
বধূ বেশে বসে আছে ইলমা আর সুমু।পাশে নিধিও বসে আছে।সে আজ বেশ খুশি অবশেষে আজ তার আপির বিয়ে।তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে।নিঝুম বেশ তদারকি করছে সবকিছুর।
নাভিদ বারান্দায় বসে আছে সুমুকে এক পলক দেখার জন্য কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারছেনা।সবাই কনেকে ঘিরে বসে আছে।

নাভিদ, আবিদ দুজনকেই বেশ লাগছে বর বেশে।ঠিক হয়েছে আগে নাভিদ আর সুমুর বিয়ে হবে এবং পড়ে আবিদ আর ইলমার।তাই সবাই যখন নাভিদ আর সুমুর বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আবিদ সেই সময় পালাবে রুকুকে নিয়ে।কিন্তু রুকু কি রাজি হবে? রাজি না হলে নেই অপহরণ করবে প্রয়োজনে কিন্তু সে তার ভালোবাসাকে হারতে দিবেনা।কক্ষনো না।

নাভিদরা সুমুদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।আবিদ সেই সুযোগে রুকুদের বাসায় গিয়েছে।বাসায় বউ বরণ করতে রুকু আর কিছু আত্মীয়া রয়েছেন।আবিদকে আগেও দেখেছেন সবাই তাই খুব একটা কিছু মনে করেন নি কেউ।রুকুর রুমে ঢুকতেই রুকু চমকে যায়।
– আপনি এসময়ে এখানে কি করছেন??
– শোনো রুকু আমাদের হাতে সময় কম।তাই আমাদের এখনই করতে হবে যা করার।
এতক্ষণে আবিদের চোখ পড়লো রুকুর উপর।এমরোল্ড গ্রীণ কালারের বেনারসি পড়েছে রুকু।তাকে দারুণ লাগছে এই সাজে।
যদিও সে জানে রুকু সাজতে চায়নি।সবাই তাকে একপ্রকার জোর করেই সাজিয়েছে।শাড়িটাও আবিদেরই দেয়া। বড্ড কৌশলে এ শাড়ি রুকুর পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়েছে তাকে।
রুকুকে কিছুক্ষণ মন ভরে দেখে নিলো আবিদ।পরক্ষণেই তারা দিতে শুরু করলো সে।রুকুতো কিছুই বুঝতে পারছেনা।আবিদ তাকে সবটা খুলে বললো।
– আমি পালাবো না।ইলমার কি হবে আপনি ভেবে দেখেছেন?? আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারবোনা।
– আমি ইলমার ব্যবস্থা করেই এসেছি।
– মানে?!!
– কিছুক্ষণ পড়েই বুঝবে।

আবিদের কথা কিছুই বুঝতে পারলোনা রুকু।

এদিকে নাভিদ এবং সুমুর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে সবাই খেতে বসে গিয়েছে।ভিতরে বিয়ের পড়ের নিয়মগুলো হচ্ছে।নাভিদ এক দৃষ্টিতে সুমুকে দেখছে। তার জীবনের পুরোনো সময় গুলো মনে নেই তার তবে গত দুমাস সে সুমুর প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করেছে।আর তার ফল স্বরূপ আজ তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।সুমুও ভাবছে একজীবনের কোনো পুণ্যর ফলে আজ তার ভালোবাসার মানুষটা তার হলো।কজনের এমন ভাগ্য হয়?!! শত ঝড়ঝাপটার পরও আজ তারা এক।এবং আজীবন এভাবেই এক হয়ে থাকবে।

সন্ধ্যে হতে চললো।নাভিদ বউ নিয়ে বাসায় এসেছে অনেক আগেই।বাড়িতে বেশ থমথমে পরিবেশ সবাই চিন্তিত। আবিদ, রুকু, ইলমা, নেহা, মেঘ কারোর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না সবাই বেশ চিন্তিত।

ট্যাক্সিতে ইলমা বসে আছেন তার পাশে লাল রঙের পাঞ্জাবি পরা আরো একজন বসে আছে দেখতে বেশ সুদর্শন।ইলমাকে বেশ খুশি কিন্তু তবুও মনের গভীরে কোথায় যেন একটা সূক্ষ্ম চিন্তা রয়ে গিয়েছে।

ফাহিম ইলমাকে দেখে বলে উঠল চলো কিছু খেয়ে নেয়া যাক। কিছুক্ষণ পরেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাব তখন আমারা বেশিক্ষণ সময় পাবো না কিছু খাওয়া দাওয়ার জন্য কারণ আমরা ফ্লাইটে উঠবো আর এখনই যদি খেয়ে না নেই তাহলে তখন বেশ দেরী হয়ে যাবে।ইলমা ফাহিম এর কথায় সায় দিল কি তারা একটা রেস্টুরেন্ট এর কাছে ট্যাক্সি থামানো এবং সেখানে গিয়ে দুজনে বসে কিছু খেয়ে নিলো।

ফাহিম অপলক দৃষ্টিতে ইলমার খাওয়া দেখছে।সে ভাবছে আজ যদি ইলমা তার না হতো তবে জীবনের সুখগুলো অপ্রাপ্তিতে পরিণত হতো।ইলমা মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে।ফাহিম আবিদকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালো।সেদিন যদি ফাহিম আবিদকে সবকিছু খুলে না বলতো তবে আজ তার ইলমাকে পাওয়া হতোনা।

চলবে……