ভালোবাসার মূল্য
সাহরিয়ার শেখ সাব্বির
মনের আকাশ দিবো লিখে আমি তোমার নামে,
সেই আকাশ টি বিক্রি হবে ভালোবাসার দামে।
পারলে তুমি ভালোবেসে নিও তোমার করে,
আমি কিন্তু ভালোবাসবো সারাজীবন ধরে।
সাহরিয়ার শেখ সাব্বির
মনের আকাশ দিবো লিখে আমি তোমার নামে,
সেই আকাশ টি বিক্রি হবে ভালোবাসার দামে।
পারলে তুমি ভালোবেসে নিও তোমার করে,
আমি কিন্তু ভালোবাসবো সারাজীবন ধরে।
ক্লোজ ফ্রেন্ড আয়ান এবং নিধী।দুজন খুব ভাল স্টুডেন্ট।পুরো ভার্সিটির এবং ফ্যামেলির সবাই জানে অদের ফ্রেন্ডশিপের কথা।৫ম শ্রেণী থেকে দুজন একসাথে।এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।কিন্তু নিধী মনের অজান্তেই আয়ানকে ভালবেসে ফেলে।আজ নিধী ভালবাসার কথা বলবে আয়ানকে।
নিধীঃহ্যালো,
আয়ানঃহ্যা,বল
নিধীঃদেখা করতে পারবি?
আয়ানঃতুই বললি দেখাতো করতেই হবে।
নিধীঃপুকুর পারে,বিকেল ৫টায়
বিকেল ৫টা ১০মিনিট।
নিধীঃ আজও ১০মিনিট লেট।
আয়ানঃআর বলিস না,রাস্তায় তমালের সাথে দেখা হইছিল(তমাল অদের কলেজ ফ্রেন্ড)
নিধীঃ ও,তা কেমন আছে অরা?কি সুন্দর তাই না,ফ্রেন্ড থেকে ভালবাসা তারপর বিয়ে।
আয়ানঃসুন্দর না ছাই,খুব শিগ্রই ডির্ভোস নিচ্ছে দুজন।ফ্রেন্ড ছিল তাইতো ভাল ছিল।এখনতো সব শেষ।
নিধীঃনা,এখন আয়ানকে ভালবাসার কথা বলা যাবে না।অ যদি রাগ করে,আমাদের ফ্রেন্ডশিপ যদি নষ্ট হয়ে যায়।আমার আরেকটু সময় নেয়া দরকার।(মনে মনে বলছে)
আয়ানঃতোর কি হলো, বাদ দে তো অদের কথা।তুই না কি বলবি?
নিধীঃকই,আমিতো কিছু বলবো না।
আয়ানঃজরুরী তলব দিয়ে আনলি
নিধীঃও,তকে ডাকতে বুঝি এখন কারন লাগবে?ফুসকা খাবো
আয়ানঃফুসকা!তুই পারিস ও।দারা, আনছি।
আয়ানের ভাই রায়ানের বিয়ে ঠিক হইছে।আয়ানের মা নিধীকে কল করে………
আয়ানের মাঃহ্যালো,
নিধীঃহ্যা,আন্টি কেমন আছ?
আয়ানের মাঃ ভাল আছিরে মা।তুইতো জানিস,তোর ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হইছে।তোকে কিন্তু দুদিন আগেই আসতে হবে।আমারতো মেয়ে নাই,তোকেই সব করতে হবে।
নিধীঃঠিক আছে
আয়ানের মাঃআব্বু আম্মুকে নিয়ে সময় মত চলে আসবি কিন্তু।
নিধীঃঠিক আাছে বাবা,আসবো।তুমি ভাল থেকো।
আজ রায়ানের বিয়ে।বরযাত্রি কনেপক্ষের বাড়িতে যাবে এমন সময় খবর আসে, নিধীর দাদুর এক্সিডেন্ট হইছে।নিধীর বাবা-মা এখনি নিধীকে নিয়ে গ্রামে যাবে।আয়ান যেতে চেয়েছিল তাদের সাথে ।কিন্তু নিধী বলে,এখানে তোর বেশি প্রয়োজন।আমি ফোনে তকে জানাবো।
বর যাএি কনেপক্ষের বাড়ি গেল।সেখানে একটি মেয়েকে আয়ানের অনেক ভাল লাগে।মেয়েটি হলো আয়ানের ভাবি “তানভি” র ছোট বোন তুহি।বিয়ে শেষ হলো।
আজ তুহি যাবে আয়ানের বাড়িতে তানভিকে দেখার জন্য।কিছুদিন থাকবে সখানে।আয়ানের সাথে বেশ ভালো সময় কাটলো তুহির।খুব হাসি ঠাট্টা করে দুজনে।এত দিনে আয়ান বুঝতে পারে , তুহি শুধু তার ভাল লাগা নয় ।হ্যা,আয়ান তুহিকে ভালোবেসে ফেলেছে।
রাতে আয়ান নিধীকে কল করে..……
নিধীঃহুম, বল
আয়ানঃ কিরে,কবে আসবি?
নিধীঃ দাদু এখন মুটামুটি সুস্থ। আমরা কাল ই আসবো।
আয়ানঃ তাড়াতাড়ি আস।তোর সাথে অনেক কথা আছে ।
নিধীঃকি বল?
আয়ানঃসারপ্রাইস।
দুদিন পর
আয়ানঃভাবি (তানভি), এটা হলো নিধী,
ভাবিঃতুমিই তাহলে নিধী,আয়ানের কাছে তোমার অনেক কথা শুনেছি,তা কেমন আছ?
নিধীঃভাল আছি,আপনি কেমন আছেন ভাবি?
ভাবিঃআমিও ভালো আছি।
আয়ানঃভাবি, অ কিন্তু কাউকে আপনি করে বলতে পারে না
ভাবিঃ তাহলে তো আমি নিধীর সাথে রাগ করবো
নিধীঃসরি ভাবি, আর বলবো না ।
আয়ানঃভাবি,তুহি কোথা?
ভাবিঃবাগানে
আয়ান নিধীকে নিয়ে বাগানে চলে গেল ।
আয়ানঃতুহি,অ হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিধী।আর নিধী,অ হচ্ছে তুহি ভাবির ছোট বোন।
তুহিঃআপু কেমন আছেন?
নিধীঃভাল,তুমি ?
তুহিঃআমিও ভাল আছি।
ভাবিঃতুহি,এদিকে আয়তো(দূর থেকে)
তুহিঃআপনারা কথা বলুন ,আমি আসছি।
তুহি চলে গেল
নিধীঃকই তোর সারপ্রাই?
আয়ানঃতুহি
নিধীঃমানে?
আয়ানঃঅকে আমার অনেক ভাল লাগে। বলতে পারিস ভালোবাসি।
একথা শুনে নিধীর মাথায় আকাস ভেঙে পড়লো।এক মুহুর্তে সব শেষ হয়ে গেল নিধীর।নিধী নিজেকে সামলে নিয়ে বললো খুব মিষ্টি মেয়েটি ।আমি অনেক খুশি হইছি।বলছিস অকে? না বললে তাড়াতাড়ি বলে দিস।তানা হলে কেউ অকে নিয়ে উরাল দেবে।বলে সেখান থেকে প্রস্থান। বাড়িতে গিয়ে অনেক কান্না করে।
তুহি বাড়িতে চলে যায়।কিন্তু প্রতিদিন আয়ানের সাথে ফোনে অনেক কথা হয়।তুহির আয়ানের সাথে কথা বলতে ভালই লাগে।একদিন আয়ান তুহিকে ভালবাসার কথাটা বলে ।তুহি বলে,আমি আপনাকে ফ্রেন্ড ছারা কিছুই ভাবি না।ফ্রেন্ড হিসেবে থাকলে ভাল,তানা হলে আর যোগাযোগ করবেন না। আয়ানের অনেক কষ্ট হলেও তুহির প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। আগের মতই কথা চলতে থাকে।এভাবে তিন বছর।তুহিও বুঝতে পারে যে,আয়ান শুধু তার বন্ধু নয় ভালবাসা।এবং সে আয়ানকে কথাটা বলতে চায়। ঠিক তখনি আয়ানের মা তুহির বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় আয়ানের জন্য । তুহি শুনে খুশিই হয়।কিন্তু এ খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ি হল না।তুহির ফ্যামেলি রাজি নয়।আর তুহি নিজের কষ্ট হলেও ফ্যামেলির অবাধ্য হবে না।তার ভালবাসার কথা আর আয়ানকে বললো না।কিছুদিন পর তুহির বিয়ে ঠিক হলো।আয়ানও বিয়েতে এসেছে।আয়ান এখনো তুহিকে অনেক ভালবাসে।তুহি এবং আয়ান দুজনেই কেউ কারো কষ্ট কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না।বিয়ে শেষ হলো।আয়ান সোয্য করতে না পেরে রেল লাইনে গেল নিজেকে শেষ করার জন্য। নিধী সেখান থেকে অকে বাচিয়ে আনে।
এদিকে বাসর ঘরে তুহি……..
তুহিঃশুনেছি বাসররাতে নাকি হাসবেন্ড তার স্ত্রীকে গিফ্ট দেয় ।আজ আমি আপনার কছে কিছু চাইবো ।দিবেন?
নিহাল(তুহির হাসবেন্ড) ঃঃকি চাও?
তুহিঃসময়
নিহালঃমানে কি?
তুহিঃএই পরিবেশে মানিয়ে নিতে
নিহালঃকতদিন
তুহি মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে
নিহাল শব্দ করে হেসে বললো ভয় পাবেন না, আপনার যত সময় লাগে নেন।কিন্তু আমার দুটি সর্ত আছে। একটি হলো আজ সারা রাত আমার সাথে গল্প করতে হবে আর সিনেমার মতো একজন বিছানায় আর একজন নিচে থাকবে তা হবে না।আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।
তিনদিন পর হঠাৎ বিজনেসের জন্য নিহালকে বাহিরে যেতে হবে।রাস্তায় তার এক্সিডেন্ট হয় এবং নিহাল মারা যায়।তুহি দুই মাস নিহালের বাড়িতে থাকার পর বাড়ি ফিরে আসে।আজ দুবছর।তুহি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পায়।স্কুলে আজ তার প্রথম দিন।স্কুলে গিয়ে তুহি অবাক। সেখানে আয়ানও চাকরি করে।বিয়ের পর আজ তাদের প্রথম দেখা।কেউ ভাবেনি অদের এভাবে দেখা হবে।আয়ান অনেক চেষ্টা করেছিল তুহির সাথে দেখা করতে কিন্তু তুহি যোগাযোগ করে নি। এরপর আয়ান একদিন তুহিকে বলে যে,সে এখনো তুহিকে ভালবাসে ।তুহি কোন জবাব দেয় না।রাতে তুহি আয়ানকে কল করে বলে……. সেও আয়ানকে ভালবাসে।আয়ানতো খুশিতে আত্তহারা।বাড়ির সবাই রাজি।আয়ান খুশির সংবাদটি নিধীকে জানায়। কিন্তু নিধীর জন্য এটা সুখের সংবাদ না। সে এখনো আয়ানকে ভালবাসে।বাড়ি থেকে বিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু অ রাজি হয় নি।তুহির বিয়ের পর নিধী আয়ানকে প্রোপোস করেছিল কিন্তু আয়ান তহির মত বলেছিল,ফ্রেন্ড হিসেবে থাকলে থাক।
স্কুলে তুহি গ্যান হারিয়ে ফেলে।মাথায় পানি ঠেলে সবাই তাকে ঠিক করে।আয়ান তুহিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।ঠিক সেই সময়,আয়ানের ফোন আসে,নিধীর এ্যাকসিডেন্ট হইছে।
তুহি বলে আমি ডাক্তার দেখাই, তুমি নিধীর কাছে যাও।আয়ান নিধীকে দেখতে হাসপাতালে চলে গেল
ডাক্তার নিধীকে বাচাতে পারলেও তার চোখকে বাচাতে পারে না।নিধী আয়ানকে বলে, তোর বিয়ে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু তা আর হলোনা।
পরের দিন
আয়ানঃতুহি,ডাক্তার কি বলেছে?
তুহিঃটেনশনের জন্য।
আয়ানঃটেনশন কর কি নিয়ে?
তুহিঃতোমার বাড়িতে কিভাবে মানিয়ে নিবো এই আরকি
আয়ানঃআমিত থাকবো তোমার পাশে,টেনশন করো নাতো
তুহিঃ আজতো তোমার বাবা-মা আমাদের বাড়িতে যাবে।বিয়ের তারিখ করতে,তুমি তাদের ৬মাস পরের যে কোন তারিখ দিতে বল না।
আয়ানঃএত দেরি,আচ্ছা এতই যখন অপেক্ষা করলাম ।আর৬ মাস নাহয় করবো।
ইদানিং তুহি আয়ানের ফোন ধরে না ঠিক মত কথাও বলে না।চাকরি টাও ছেরে দিয়েছে।
আয়ান তুহির বাড়িতে যায়
আয়ানঃকি হয়েছে তোমার,আমাকে এরিয়ে চলছো কেন?চাকরিটা ছেরে দিলে কেন?
তুহিঃচাকরি করতে ভাল লাগে না, তাই।আর আমি তোমায় এরিয়ে চলছি না একটু ব্যস্ত থাকি তাই।
আয়ানঃবুঝলাম,সেদিন দেখলাম পার্কে একটা ছেলের সাথে কথা বলছো,ছেলেটা কে?
তুহিঃতুমি আমায় সন্দেহ করছো।বিয়ে করতে হবে না আমাকে।
আয়ানঃএকটা ছোট কথাকে এত বড় বানাচ্ছ কেন?
তুহিঃতুমি আমাকে সন্দেহ করছো,এটা ছোট কথা।তুমি এখন যাও এখান থেকে।
আয়ান রাগ করে চলে গেল
বাড়িতে এসে আয়ান ভাবে,আমার ই ভুল।এভাবে বলা উচিৎ হয় নি আমার। ফ্রেন্ড হতে পারে।রাগ করারই কথা।থাক আমি সরি বলি।ফোন করছে তুহিকে।কিন্তু ফোনটা বন্ধ। পরের দিন তুহির বাড়িতে গেল।তানভি বাবার বাড়িতেই আছে।আয়ান বাড়িতে গিয়ে দেখে বাড়িটা স্তব্দ হয়ে গেছে।তুহির মা এবং তানভি কাদছে।আয়ানকে দেখে তারা চোখের পানি মুছে ফেললো।তুহির বাবা এসে আয়ানের হাত ধরে বলে….আয়ান আমাকে ক্ষমা করে দাও তুহির ভুলের জন্য আমার তানভিকে কষ্ট দিয় না কাদতে কাদতে বলছে।তুহির হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।
আয়ান কিছু বুঝতে পারছে না।আয়ান তুহির বাবাকে চেয়ারে বসিয়ে বলছে আপনি শান্ত হন।তারপর তানভিকে বললো কি হয়েছে ভাবি,আর তুহি কোথায়?
তারপর তানভির কাছে যা শুনতে পারলো, তাতে আয়ানের পায়ের নিচের মাটি সরে গেল।তুহি নাকি বিয়ে করেছে।সকালে একটা ছেলেকে সাথে নিয়ে এসে বলে ওরা নাকি দুজন দুজনকে ভালবাসে এবং বিয়ে করেছে। তুহির বাবা অকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তানভির কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে তুহির বাসায় যায়(তুহি যাওয়ার সময় তানভিকে ঠিকানে দিয়ে গেছে)
সেখানে দেখে তুহির সাথে সেই ছেলেটা। যে ছেলেটাকে আয়ান তুহির সাথে দেখেছিল।
আয়ানঃআমাকে বললেই পারতে আমি নিজেই চলে যেতাম।আমার সাথে কেন এরকম করলে?
তুহিঃআমি তোমাকে কিছু বলতে বাধ্য নই।
আয়ানঃতুমি এত নিচু মনের,
তুহিঃহ্যা আমি নিচু মনের, এবার তুমি চলে যাও।
আরো নানা কথা বলে আয়ানকে অপমান করে তারিয়ে দেয়।
কিছুদিন পর তুহি দেখে নিধী রাস্তায় দারিয়ে…..
তুহিঃআপু কেমন আছেন?
নিধীঃকে?
তুহিঃআমি তুহি,আমি রাস্তা পার করে দেই আপু(হাত ধরে)
নিধীঃহাত ছারো বলছি,তোমার মত খারাপ মেয়ের হেল্প এর কোন দরকার নেই।আয়ান তোমাকে কত ভালবাসতো আর তুমি অকে ঠকালে।তোমার জন্য অ আমার ভালবাসা গ্রহন করে নি। আর তুমি………তুমি কোনদিনও সুখি হতে পারবেনা।
নিধীর ফ্রেন্ড এসে নিধীকে নিয়ে চলে গেল।তুহি দারিয়ে আছে(চোখ দিয়ে পানি ঝরছে)
এক মাস পরে,আয়ানের সাথে সেই ছেলেটা দেখা করতে আসে ।যাকে তুহি বিয়ে করেছিল।যার নাম আবির।
আয়ানঃতুই এখানে কেন আসছিস?তুহি পাঠিয়েছে তোকে দেখার জন্য ,অর ধোকার পর বেচে আছি নাকি মরে গেছি।আরে অর মতো ক্যারেকটারলেজ মেয়ে…
আবিরঃতুহির সম্পর্কে একদম বাজে কথা নয়।(আয়ানকে থামিয়ে)
আয়ানঃআরে অর থেকে তো পারার মেয়েও ভাল
আবিরঃতুহির ব্লাড ক্যান্সার
আয়ান আবিরের কথা শুনে থমকে গেলো
আবিরঃতুহির কাছে একেবারেই সময় নেই।তোমার মনে আছে,তুহি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল।সেদিনই তুহি একথা জানতে পারে। কি করবে বুঝতেছিল না।তাই বিয়ের তারিখ ৬ মাস পরে ঠিক করতে বলেছিল।আমিতো শুধু অর ফ্রেন্ড।তুহি আগেও তোমাকে ভালবাসতো আর এখনো।তুহি আমাকে সবার সাথে অভিনয় করতে বলে।কাউকে কিছু বলতে না করে।কিন্তু এই দুমাসে আমি অকে ভালবেসে ফেলেছি।তোমাদের কষ্ট দিয়েছে এই ভেবে, যাতে অর চলে যাওয়ার পর তোমরা কষ্ট না পাও।কিন্তু অর শেষ সময়ে সবাই অকে ঘৃণা করবে।এটা আমি মানতে পারলাম না।তাই অর মানা সত্যেও সবটা বলে দিলাম।সকাল অর বাবা-মাকে বলেছি ।তারা এখন তুহির কাছে।
আয়ানঃকোথায় তুহি?(চোখ দিয়ে অঝরে অশ্রু ঝরছে)
আবিরঃসিটি হাসপাতালে।
আয়ান হাসপাতালে গেল।আয়নকে দেখে সবাই রুম থেকে চলে গেল(তুহির বাবা-মা,তানভি)আয়ান তুহি কাছে গিয়ে বসলো।দুজনের চোখেই অশ্রু।
আয়ানঃসরি,আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি।তোমাকে নিয়ে কত খারাপ মন্তব্য করেছি।
তুহিঃআমার যাওয়ার সময় তুমি এভাবে বলনা প্লিস।
আয়ানঃচুপ,যাওয়ার সময় মানে কি?কোথাও যেতে দিবো না তোমাকে।(কাদতে কাদতে)
তুহিঃচোখে পানি নিয়ে হাসতে হাসতে বলছে,আরে ছেলেরা কখনো কাদে নাকি।
আয়ানঃদেখ, আমার কি অবস্থা। আমি তোমাকে ছারা ভাল থাকতে পারবো না।ভাল থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি।আমার জন্য তোমাকে বাচতে হবে।
তুহিঃআমার হাতটা একটু ধরবে(আয়ান তুহির হাত ধরলো)তুমি নিধী আপুকে বিয়ে করবে।
আয়ানঃএটা কি বলছো তুমি,আমি তোমার জায়গা কাউকে দিতে পারবো না
তুহিঃএটা আমার শেষ ইচ্ছা,প্লিস।আর সব সময় ভাল থাকার চেষ্টা করবা।আর আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
আয়ানের হাত থেকে তুহির হাত নিচে ঠলে পরলো
আয়ানঃতুহি চুপ করলে কেন।চিৎকার করে,তুহি কথা বলনা আমার সাথে।
ডাক্তার এসে বললো,তুহি আর নেই।
৫ বছর পর আয়ান রাস্তায়,সাথে নিধী এবং তাদের তিন বছরের মেয়ে তুহি।আয়ান আবিরকে রাস্তার পাসে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে যায়।
আয়ানঃআবির
আবিরঃকে?
আয়ান অবাক!আবির চোখে দেখতে পায়না।
আয়ানঃকিভাবে হলো এসব?
আবিরঃতুহিকে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে শুনি।অ অর চোখ নিধীকে দিতে চেয়েছিল।কিন্তু ডাক্তার না করে।তুহিকে ছারা আমার জিবনটাই তো অন্ধকার।তাই তুহির ইচ্ছে টাই পুরন করলাম।ডাক্তারকে আমি বলতে না করে ছিলাম তোমাদের।
সবার চোখেই পানি।নিধী ভাবছে,এই মেয়েকে সেদিন আমি অপমান করেছিলাম।শুধু তোমার জন্য আমি আয়ানকে পেয়েছি ,তোমার জন্য,তুহি।
ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৪
তামান্না খান
হ্যালো আয়ান,
আম্মু বল শুনতেছি
আজ একটু তাড়াতাড়ি আসবি
কেন আম্মু?
তোকে বলেছিলাম না!তুহির জন্য তোর মামা বিয়ের প্রস্তাব এনেছিল।তারা আজকে তুহিকে দেখতে আসবে, পছন্দ হলে আজকেই দিন তারিখ ঠিক করবে।
অকে আগে অনার্সটা কমপ্লিড করতে দাও।
আরে তারা বিয়ের পরেও তুহিকে পড়াবে।
আচ্ছা আম্মু,আমার অফিসে তো অনেক কাজ, আমি তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবো না।
চেষ্টা করে দেখিস
ঠিক আছে,রাখছি।
কেমন জানি খুব রাগ হচ্ছে।আমারতো খুশি হওয়ার কথা। আমার চিরশত্রু এবার বিদাই হবে,তবে আমি খুশি হতে পারছি না কেন?আম্মু কেউ মিথ্যা বললাম।অফিসে তেমন কোনো কাজ নেই।আচ্ছা আম্মুকে মিথ্যা বললাম কেন?
বিকেলে তমালকে ফোন করে বললাম মাঠে আসতে
কিরে আয়ান,তুই অফিস থেকে বাসায় না গিয়ে সরাসরি এখানে আসলি?
হুম,ভাল লাগছেনা।ভাবলাম অনেক দিন ধরে তোদের সাথে আড্ডা মারা হয়না,তাই চলে এলাম।
ও….সব বুঝেছি
কি বুঝেছিস?
এইতো তোর ভাল না লাগার কারন!
মানে?
অনিকের কাছে শুনলাম আজ তুহিকে দেখতে আসছে।
হ্যা তো?
তো এই জন্যই তোর মন খারাপ।
তুই আবার শুরু করলি
তাহলে তুই ই বল তোর মন খারাপ কেন? তোর তো মন ভাল থাকার কথা।তহিতো তোর শত্রু তাই না?
জানি না,হইছে,অনেক আড্ডা হলো এখন বাসায় যেতে হবে। আম্মু চিন্তা করবে।
কথা কাটিয়ে নিলি আয়ান।
কথা কাটাতে যাব কেন?এগুলো হচ্ছে তোর আজে বাজে ভুল ধারনা।যাই এখন ,দেখা হবে।
তোকে না বললাম তড়াতাড়ি আসতে।মেহমানরা দশ মিনিট হলো গিয়েছে।
আম্মু চেষ্টা করেছি আসতে
ঠিক আছে,তারা তুহিকে খুব পছন্দ করেছে।তুহিকে আংটি পরিয়ে গেছে।আর বিয়াটা কিন্তু পনের দিন পরেই।
কি বলছো আম্মু !এত তাড়াতাড়ি।
হ্যা এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
ঠিক আছে
কেন জানি এখন আরো বেশি রাগ হচ্ছে।
তুই আমার রুমে কি করছিস(চেচিয়ে বললাম)
তা শেয়ালের মত হাক ছাড়ছিস ক্যান,বড় মা তোর ঘরে পানি রাখতে বলছে তাই জগটা রাখতে এলাম।
খেয়াল করে দেখলাম,অ নীল রং এর শাড়ী ও হালকা সেজেছে ।মেহমানরা কিছুক্ষন আগে চলে গেছে এখনো চেন্চ করেনি।ভালই লাগছে।পরক্ষনেই রেগে বললাম রাখা শেষ হইছে এখন যা এখান থেকে।
যাচ্ছি যাচ্ছি আর ঘেউ ঘেউ করতে হবে না বলে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবছি তমালের কথাগুলো। সত্যি কি তাহলে আমি তহিকে..…….না না এটা কিভাবে সম্ভব।এটা সম্ভব না।
খাওয়ার টেবিলে
তুহি আয়ানকে ডাক দেতো
আমি পারবোনা বড় মা,তখন পানি রাখতে গেছিলাম আমাকে কেমন করলো।আচ্ছা বড়মা আমিতো আর কয়েকটা দিনই আছি।এখনো অর আমার সাথে এমন না করলে হয় না। মন খারাপ করিস নে আমি কথা বলবো আয়ানের সাথে।এইতো আয়ান এসেছে,বস। কখন থেকে ডাকছি।তুহির ফোন বেজে ওঠলো।ফোনটা অর হাতেই।কে রে (বড়মা)নাম্বারটাতো চিনি না ,দেখছি
হ্যালো কে বলছেন?
আমি জিসান
কোন জিসান?
আরে তোমার হবু বড়।
আমি তোর নাম্বাটা দিয়েছি,রুমে গিয়ে কথা বল(বড়মা)
ও সরি ,আমি বুঝতে পারি নি।
এক ঘন্টা ধরে গেছে তাই ফোন করতে হবে।যতসব নেকামি(আয়ান মনে মনে বললো)
আম্মু আমার খাওয়া হয়েছে।আমি ওঠলাম।
হয়েছে মানে তুই তো কিছুই খেলি না।
খেলামতো আর খাব না।রুমে গেলাম(আয়ান)
#তুহি
রুমে এসে কথা বলছি
হ্যা কথা বলছেন না যে(জিসান)
বলছিতো,খাবার খেয়েছেন?(তুহি)
হ্যা খেয়েছি,শুনেছি আপনি নাকি একটু চনচল?কিন্তু আপনার সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে না।(জিসান)
আসলে এরকম না,এভাবে আগে কারো সাথে কথা বলি নাই তো তাই একটুু না……(তুহি)
আরে এত নারভাস হতে হবে না(জিসান)
আচ্ছা বড়মা আমাকে ডাকছে পরে কথা বলি?(তুহি)
ঠিক আছে,গুড নাইট(জিসান)
দরজার সামনে থেকে আয়ান বললো,তুই মিথ্যে বললি কেন?
আমি মিথ্যে বলি নাই। বড়মা ডেকেছে তুই মনে হয় শুনিসনি।আর এখন আবার কি নিয়ে ঝগরা করতে এলি?
আমি তোকে খুব বিরক্ত করি তাই না?
আয়ান কোনোদিনও এভাবে বলে না।আমি কিছু বলার আগই কিছু না বলে চলে গেল।
আয়ান….শোন
বল আম্মু
দেখ তুহিতো আর কয়েকটা দিনই আছে।এখন অর সাথে ঝগরা করিস না।অযেন খুশি মনে নতুন জিবন শুরু করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখবি।আর কাল থেকে কাজ শুরু করবি,সব দায়িত্ব কিন্তু তোর।কিছু বললাম না সুধু মাথা নারালাম।
ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৩
লেখাঃতামান্না খান
এস এস সি পরিক্ষা শুরু হল।দুইটা পরিক্ষা দিলাম,অনেক ভাল হয়েছে।দুপুরে পড়তে বসেছি এমন সময় কারেন্ট চলে গেল।সন্ধ্যা হয়ে গেল কারেন্ট এখনো আসেনি।পরে দেখা গেল সবার বাড়িতেই কারেন্ট আছে।শুধু আমাদের বাড়িতেই নেই।কারেন্ট এর লাইনে কিছু সমস্যা হয়েছে সকাল না হলে ঠিক করা যাবে না।এদিকে চার্জার লাইটে চার্জ নেই,আমি মোমের আলোতে পড়তে পারি না।কালতো ইংরেজী পরিক্ষা।কিভাবে যে পড়ি।আমার পড়ার যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য আয়ান রাস্তার পাশ থেকে চোরাই লাইনের ব্যবস্থা করলো।ভোরে সবার ওঠার আগেই লাইন খুলে ফেললো।আমি তো অবাক হচ্ছি,যে আয়ান আমাকে ইচ্ছে করে ঝামেলায় ফেলে সে কিনা আমার জন্য এই কাজ করলো।যাই হোক, একটা ধন্যবাদ না দিলেই নয়।
আয়ান…..
কি বলবি বল?
ধন্যবাদ
এটা কি শুনছি আমি!এতো দেখি ভুতের মুখে রাম রাম।তুই কি ভাবছিস তোর জন্য আমি এগুলো করেছি?তোর পরিক্ষা খারাপ হলে আমার কিছু যায় আসবে না কিন্তু আমার আব্বু আম্মু অনেক কষ্ট পাবে।যা আমি কখনোই চাইনা।এজন্যই একাজ করা।হয়েছে হয়েছে, আর বলতে হবে না।আমার বুঝতে ভুল হয়ে গেছে।তবুও ধন্যবাদ।তোর মতো বাদর ছেলে যে আব্বু আম্মুর কথা ভেবেছে তাইতো অনেক।
দেখ একদম বারর বলবি না।একশ বার বলবো।বাদর বাদর বাদর।তোর পরিক্ষাই ভাল হবে না।শকুনের কথায় গরু মরে না বুঝলি।কি তুই আমাকে শকুন বললি,দারা।এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।।
পরিক্ষা শেষ হয়েছে আজ রেজাল্ট দিবে। রুমে বসে আছি,খুব টেনশন হচ্ছে।কেমন যে হলো।ওই তুহি….কি হইছে ডাকছিস ক্যান?তোর কাছে এটা আশা করি নাই,এরকম রেজাল্ট আমার বংশেও কেউ করেনি।আব্বু আম্মুর মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলি।আবার বলিস ডাকি ক্যান।
আয়ানের কথা শুনে কেদে দিলাম।আমিতো ভালই পরিক্ষা দিলাম তবে?কিরে তুহি কাদছিস কেন(বড় মার এন্ট্রি)
বড় মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।বুঝতে পারছিনা কিভাবে এমন হল।
বুঝেছি,আয়ান তুহিকে কি বলেছিস?কই আমি কিছু বলিনাইতো।
জানিস তুই পুরো জেলাতে টপ করেছিস।তবে যে আয়ান বললো…..তুই তো অকে চিনিসই।আয়ান হাসছে।আমাকে কাদাতে তোর খুব ভাল লাগে তাই না ।শয়তান কোথাকার।বলে বালিস দিয়ে ঠিল মারলাম।অই বান্দুন্নী আমি একবারও বলিনি তুই ফেল করছস।কুত্তা থামবি।আম্মু তোমার সামনে আমাকে গালি দিচ্ছে।তুই কেনো অর সাথে এরকম করস।আম্মু তুমিতো অর পক্ষই ধরবে।বাদ দে এখন তোর আব্বুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিষ্ট কিনে আন।
বড় মার একটা আবদার আয়ান আমাকে কলেজে নিয়ে যাবে।আয়ানের কলেজেই ভর্তি হলাম।বড়মার কথা ভেবে দুজনেই রাজি হলাম।
কই তুই কি আসবি?
এইতো আসছি,
ওই তুই কি কলেজে পড়তে যাবি নাকি বিয়ে বাড়ির দাওয়াত খেতে যাবি?এত সময় লাগে রেডি হতে।
প্রতিদিন বক বক করতে তর কেমন লাগেরে
তাও তো প্রতিদিন দেরি করিস।আম্মু বলেছে,তাই প্রতিদিন এই জ্বালা পোহাতে হয়।
তোর কি মনে হয়,তোর সাথে কলেজ যাওয়ার জন্য আমি নাচতেছি।আমিও বড় মার জন্যই এই অত্যাচার সোয্য করছি।
আয়ান ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।প্রতিদিন আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে তারপর অ ভার্সিটিতে যায়।আয়ানের সাথে বাইকে করে যাই।এমন কোন দিন নেই যে আমাদের ঝগরা না হতো।মাঝে মাঝে অ আমাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিত।আবার মাঝে মাঝে আমি নিজেই নেমে যেতাম।ছোট বেলার ঝগরা নাকি বড় হলে কমে যায় কিন্তু আমাদের ওল্টো।যতই বড় হচ্ছি ঝগরার পরিমান ততোই বাড়ছে।
এইস এস সি পাস করার পর…..
বড়মা আমি ভর্তি হবো না।কেনরে মা রেজাল্টতো ভাল হয়েছে তবে?বুঝলে না আম্মু তুহির বিয়ের ব্যবস্থা কর।বড়মা আয়ানকে চুপ করতে বল।ভর্তি হবো কিন্তু এবার থেকে আমি একাই ভার্সিটিতে যাব।হ্যা মা, আমিও ওকে নিয়ে যেতে পারবো না।এই প্রথম তুই কোন ভাল কথা বলছিস।কিন্তু তোরা তো এখন এখন এক ভার্সিটিতেই পড়বি (বড়মা)
তবুও আমরা আলাদাই যাব(দুজনে একসাথে)
আয়ান শুধু ঝগরা করে ।না মা তুহি আমার সাথে ঝগরা করে।তুই করিস
না তুই করিস
থামবি তোরা,যেতে হবে না তোদের একসাথে।
আমি এখন থার্ড ইয়ারে পড়ি।আয়ান অনার্স পাস করে ভাল একটা চাকরি করছে।
ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট২
লেখাঃতামান্না খান
রাতে টিভি দেখছি…..অই হাত থেকে রির্মোট নিলি ক্যান?দেখ আয়ান ভাল হবে না কিন্তু।দে বলছি।দেব না, কি করবি।কিছু না। বলে চলে আসলাম।আমার সাথে তেরামি।দেখাচ্ছি টিভি।বাইরে গিয়ে ডিসের লাইনের তার কেটে দিলাম।ভাল করে দেখ এখন।পিছন ফিরে,তুই?হ্যা আমি ।তার কাটলি ক্যান?বেশ করেছি।কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে চলে এলাম।বেশ করেছি কেটে দিয়ে।আমাকে দেখতে দিলি না আমি কিভাবে দেই।এখন ঘুমিয়ে পরি সকালে স্কুলে যেতে হবে।স্কুলে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম সেই ছেলেটি প্রতিদিনের মত দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ পেছন থেকে ডাক দিয়ে আমাকে প্রোপোস করে বসলো।আমি তখনি না করে দেওয়াতে আমাকে আজেবাজে কথা বলে অপমান করলো।বাড়িতে এসে বড়মাকে সব বলে কান্না করতেছি।দরজার সামনে দাড়িয়ে সবটা শুনলো আয়ান।আয়ানকে আমরা খেয়ালই করিনি।রেগে বলে ওঠলো,কি… রাস্তায় বিরক্ত করবে আবার বড় বড় কথা বলবে।ছেলেটা কে রে।তোকে কিছু বলছি(চিল্লিয়ে) তুজো।আয়ান যাস নে বাবা ,আয়ান(বড় মা)
পরের দিন তুজোর বাবা-মা বিচার দিতে আসলো আায়ান নাকি কাল অর বন্ধুদের নিয়ে তুজোকে খুব পিটিয়েছে।বড় মা তাদেরকে তুজোর কার্যকলাপের কথা বললো ।তারা লজ্জিত হয়ে চলে গেল।
দুপুরে…..অই, কোন ছেলে কিছু বললে আমাকে বলবি।কেন?যাতে তুই গুন্ডামি করতে পারস।তুই আসলেই বান্দুন্নী।এযুগে কারো ভাল করতে নেই।শয়তান্নি কোথাকার।তোকে আমার ভাল করতে বলছে কে। এক নাম্বারের গুন্ডা।
বিকেল…..
জানিস নয়ন,কারো ভাল করতে নেই।বন্দুন্নীটার জন্য তুজোকে মারলাম আর অ আমাকেই গুন্ডা বলছে।
আয়ান তুই কি তুহিকে ভালবাসিস?তোর কি মাথা ঠিক আছে?আমি তুহিকে ভালবাসতে যাব।অর সাথে পাচ মিনিট কথা হলে তিন মিনিটই ঝগরা হয়।তোকে একটা ঘুসি মারতে ইচ্ছে করছে।
আরে রাগ করিস ক্যান?তুই সব সময় অর কথা বলিস।আর কালতো অর জন্য তুজোকে মারলি।আরে তুহিতো আমার বোন।হ্যা বোন কিন্তু খালাতো বোন।আচ্ছা তুহি তোকে কোনদিন ভাইয়া বলেছে?বলে নাই ।তবে???আর এরকম ঝগরা থেকে ভালবাসা অনেক দেখেছি।বাদ দিবি নয়ন।নাকি সত্যি আমার ঘুসি খাবি?
আজ আমাদের স্কুলে বিদাই অনুষ্ঠান।ড্রেস হচ্ছে শাড়ি।ইপ্সিতা ও রিন্তি শাড়ি পরে আমাদের বাড়িতে এসেছে।এখান থেকে তিন জনে একসাথে স্কুলে যাব।
আরে ইপ্সিতা তোমাদের দুজনকে তো দারুন লাগছে।(আয়ান)
ধন্যবাদ ভাইয়া।তুহি কই?
বান্দুন্নীটা ঘরেই।সকাল থেকে রডি হচ্ছে এখনও হয়নি।তোমরা ওর রুমে যাও।
তুহি,
তোরা এসেছিস,এইতো আমার হয়েছে,চল।
আমরা আরো আগেই এসেছি,আয়ান ভাইয়ার সাথে কথা বললাম।নিশ্চয় আমার নামে কথা বলছে।
হ্যারে তুহি,তোকে কিন্তু সেই দেখাচ্ছে।আচ্ছা এখন চলতো।রুম থেকে বের হতেই আয়ান সামনে পরলো।কি অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে আছে। অর ঘোর কাটিয়ে বললাম। সরবি কি সামনে থেকে।জোরে হেসে বললো,বান্দুন্নিটাকে আজ পুরো পেত্নির মত লাগছে।অকে শয়তান বল চলে এলাম ।
ঝগরাটে ভালবাসা পার্ট-১
লেখাঃতামান্না খান
ওই তুই আমার চুলে ধরলি ক্যান।
আরে আমি ভাবছি ওটা নারিকেল গাছের পাতা।কি???আমার চুলকে তোর নারিকেল গাছের পাতা মনে হল?হ্যা,হলো।তোমরা সবাই বলতো আমি কি ভুল বললাম।নারিকেল গাছের মতো লম্বা আর চুল পাতার মত লম্বা।কি ভুল বললাম।সবাই জোরে হেসে ওঠলো।ওই তোরা থামবি ।আর তুই?আমি নারকেল গাছের…দারা দেখাচ্ছি,এই বলে মাটি দিয়ে ঠিল শুরু করলাম।
এরে পাগল খেপেছে পালাই???
সব বান্ধবিদের সামনে অপমান, দেখে নিব।খুব রাগ হচ্ছে।
তুহি.……
হ্যা,বড় মা বল?
খেতে এলিনা যে,তোমাকে না বললাম আমি খাবো না ,তুমি অযথা কষ্ট করতে গেলে কেন?তুইতো না খেয়ে ঘুমাতে পারিস না।পরে রাতে পেট ব্যাথা করবে।আয়ানের ওপর রাগ হয়েছে বুঝি?অনিক সব বলেছে আমাকে।ওকে আমি আচছা করে বকে দিব।অ সবসময় আমার সাথে এরকম করে।আমার সব বান্ধবীদের সামনে অপমান……..আরে বাদ দেতো। এখন হ্যা কর আমি খায়িয়ে দেই।
বড় মা তুমি না অনেক ভাল।তুমি না থাকলে আমি কখনো বুঝতেই পারতাম না বাবা-মায়ের আদর কেমন হয়।আমারতো মায়ের চেহারাও মনে নেই আর বাবাতো…..তুমি না থাকলে কবেই মরে যেতাম।
চুপ একদম চুপ,এরকম কথা যেন আর না শুনি।তোর কিছু হলে আমি কি বাচতে পারবো।সন্তানের কিছু হলে মা কি সোয্য করতে পারে।আমার কাছে তুই আর আয়ান এ্যাকি রকম।খাওয়া শেষ এখন ঘুমাতো।
আসলে বড় মা আমার খালামনি হয়।আমার বয়স যখন দুই বছর তখন আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে।আমার মাকে আমাকে সহ নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।মা কষ্ট সোয্য করতে না পেরে মারা যায়।তখন বড় আব্বু বড়মা আমাকে এখানে নিয়ে আসে।কোনো দিনও বাবা মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি।তাদের একমাএ ছেলে আয়ান।এই শয়তানটা সব সময় আমার সাথে ঝগরা করে। আর অনিক হচ্ছে আয়ানের চাচাত ভাই,আমরা দুজন একসাথেই পরি এস এস সি পরিক্ষার্থী আর আয়ান এইস এস সি পরিক্ষার্থী।
আয়ান…
হ্যা আম্মু ভিতরে আস।কিছু বলবা?মা বাবা ছারা মেয়েটাকে কেন খেপাস বলতো।আরে মা তুমি জান? অ কাল আমার বন্ধুদের সামনে আমাকে বাদর বলেছে।
আরে ওতো মজা করেছে। আর তুইতো বড়, তোকে তো বুঝতে হবে।
অ মজা করলে মজা আর আর আমি করলে…. আর বড়র কথা বল।ওকে তুই বলতে না করলে বলে দুই বছরের বড় নাকি বড় না।আম্মু তুমি খালি অর হয়ে কথা বল।বুঝি না তুমি অর আম্মু না আমার আম্মু।
আমি দুজনের আম্মু।আমার মেয়েকে আর জালাবি না।আর এখন ঘুমা।
আমার নামে বিচার ।দেখাচ্ছি তুহির বাচ্চা????(এক একা)
সকলে ওঠে ব্রাশ করতে ভাতরুমে… ..
মুখ এরকম লাগে কেন।এটাতো পেষ্ট না। পেষ্টের খাপে ফেস ওয়াস ! এটা ওই শয়তানটারি কাজ।বমি আসলে ভাল হতো ।মুখের ভিতরা কেমব লাগছে।বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি শয়তানটা হাসছে।ওই শয়তান তুই আমার পেষ্টএ …..কুত্তা,বানর।
ওই বান্দুন্নী,আমার নামে বিচার-বুঝ এবার।
হ্যারে, তোরা আবার শুরু করলি।সব সময় ঝগরা করে দুজনে (বড় মা)
আরে করতে দাও।ওদের জন্য বাড়িটা ভরা থাকে(বড় আব্বু)
সাহরিয়ার শেখ সাব্বির
তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে চাই দূর তাঁরার দেশে,
তুমি কী যাবে আমার সাহে হাত বাড়িয়ে ভালোবেসে?
ভাসতে চাই দুজনায় সুখের ভেলায়,
তুমি কী থাকবে আমার সাথে নাকি রাখবে অবহেলায়?
কাছে টেনে ভালোবাসায় ভরিয়ে দাও না আমায়,
ভালোবাসি বড্ডো বেশি আমি যে তোমায়।
ফাগুণের নবধারা
পর্ব-১৩
শাহাজাদী হুমাশা।
ভ্যাপ্সা গরম পরেছে খুব।ফাগুণের মাস শেষের দিকে প্রায়। কতগুলো ফাগুণ যে এভাবেই পার হয়েছে জানা নেই সুমুর।গরমে কুপুকাত অবস্থা।শুধু ভাবে যদি এসি না থাকতো তাহলে নাহিয়ান তো গরমে সেদ্ধ হয়ে যেতো।নবাবের ব্যাটা গরম সহ্য করতে পারেনা।বকাটা বিড়বিড় করে দিয়েই জীভ কাটলো সুমু।
আজ ছুটির দিন তাই সুমুও আজ রান্না ঘরে দিন কাটাবে।আর দিনতো সব শাশুড়ি করেন শুধু ছুটির দিন গুলোতেই সুমু রান্না করে।আজ নাহিয়ানের পছন্দের সব রান্না করবে সুমু।
রান্না ঘরে রান্না করতে করতেই গরমে সিদ্ধ হবার যোগার সুমুর।ভাবছে সবার জীবন এখন আনন্দময় কাটছে।বেশ ভালো লাগে সুমুর সবাইকে সুখী দেখে।তার ছোট্ট বোন নিধি কি সুন্দর আবিরের সাথে সংসার করছে।ইলমাটা তো এত কিছুর পর ইশরাকের সাথে ভালো আছে।বেচারীর উপর কি ঝড়টাই না গিয়েছে।আর রুকু আপা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটা। আবিদ ভাই সব সুখ তাকে দিয়ে পরিপূর্ণ করেছে তাকে।শুধু খারাপ লাগে নিঝুমটার জন্য। ভাইবোন সব হারিয়েছে সে।বাবা মাও পারতপক্ষে তেমন যোগাযোগ রাখেন না।আর নিঝুমের স্ত্রী! ওর সাথে নাকি ত্বালাকের কথা হচ্ছে।কে জানে কি চায় ছেলেটা।রিদিমাও করেকবার ক্ষমা চেয়েছিলো রুকু আপার কাছে কিন্তু আপাতো মানলেনই না।মাঝে মাঝে খারাপ লাগে নিঝুমের জন্য।
কলিংবেলটা বেজেই চলেছে।কেউ দরজা খুলছেনা কেনো??
দরজাটা খুলতে একজন লোক হাতে এতগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো নাহিয়ান।
– আআসসালামু আলাইকুম।আমি কি ভিতরে আসতে পারি??
লোকটার তাকে সালাম দেয়ায় নাহিয়ানের বেশ ভালো লাগলো লোকটাকে।সে সালামের উত্তর দিয়ে তাকে ভিতরে আসার সুযোগ করে দিলো।এর আগেও সে এই লোকটাকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে।
– আপনি কাকে চাচ্ছেন?? প্রশ্ন করলো নাহিয়ান। লোকটা নাহিয়ান কে দেখে মুচকি হেসে বললো তোমার দাদা দাদু বাসায় আছেন??
পাশের ঘর থেকে আমিনা বেগম এবং তার স্বামী বেড়িয়ে এলেন।
তাদের দেখে লোকটা সালাম দিলো।
নিজের পরিচয় দিলেন।
– আমি রিয়াদ। আমি একজন বিজনেস ম্যান। আপনাদের বিজনেস এ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে একজন।সুমু ম্যা’ম চেনেন আমাকে।
নাহিয়ান তার মা কে ডাকতে চলে গেলো।
– তা এখানে কি মনে করে?? প্রশ্ন নাভিদের মায়ের।তিনি ছেলেটাকে দেখেই চিনে নিয়েছেন এটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাই।
সুমু কিচেন থেকে লিভিং স্পেসে আসতেই তার হাত পা জমে গেলো।এই বজ্জাত লোকটা বাসা অব্দি চলে এসেছে।রাগে কাপঁছে সুমু।
কিছুদিন আগেই পরিচয় হয়েছিলো রিয়াদের সাথে।এবং রিয়াদ সুমুর সবকিছু জেনেই ভালোবেসেছিলো তাকে।কিন্তু সুমুর আপত্তির জন্য ব্যাপারটা এগুচ্ছেনা।তাই রিয়াদ পণ করেছে সে সুমুকে পাবেই।বহুদিনের প্রতীক্ষার পরও যখন কিছু করতে পারলো না তখন সুমুর শশুড় শাশুড়িই তার শেষ ভরসা।
সুমু আসার চা নিয়ে আসতে বললো তাদের বাসার কাজের লোককে।সুমু আসার আগেই রিয়াদ সুমুর শুশুড় শাশুড়ি কে বিয়ের ব্যাপারে বলে দিয়েছে।
– রিয়াদ সাহেব যে।ভালো আছেন?? তা এখানে কি মনে করে??
– আসলে আমি, না মানে এইতো নাহিয়ানেত জন্য খেলনা কিনেছিলাম সেগুলোই দিতে এসেছি।
– ঠিকাছে খেলনা দিয়েছেন নিশ্চই। চা আনতে বলেছি চা খেয়ে যাবেন।আমার অনেক কাজ আছে আমি উঠছি।
শাড়ি পরিহিতা সুমুকে এই প্রথম দেখলো রিয়াদ।কোমড়ে আচঁল গুজতে গুজতে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে সুমু।এই রূপ আগে কখনোই দেখেনি রিয়াদ। অফিসেতো সবসময় সালওয়ার স্যুট পরেই যায় কিনা।আজ আরো একবার প্রেমে পড়লো রিয়াদ সুমুর।বহু কষ্টে নিজের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে রিয়াদ বিদায় নিয়ে চলে গেলো।সুমুর এই কাটা কাটা স্বভাবে বেশ কষ্ট পেয়েছে রিয়াদ।
– তুই কেনো এমন ব্যবহার করলি ছেলেটার সাথে??ও তো ভালো বুঝেই এসেছিলো।তুই দিনদিন এমন পাথর কেনো হয়ে যাচ্ছিস সুমু??
– আহ মা ছাড়োতো।আমি ভাবেই ঠিক আছি।
তোমরা কেনো আমাকে পর করে দিতে চাও? আমি আর আমার ছেলে কি বোঝা তোমাদের জন্য??
– এ আবার কেমন কথা সুমু?? তুমি বাড়াবাড়ির মাত্রা অতিক্রম করছো।
– মা এ বিষয়ে আর একটা কথাও না।রান্না হয়ে এসেছে প্রায়। আমি গোসলে যাচ্ছি।বাকিটা তুমি দেখো।
আমিনা বেগম সুমুর চলে যাওয়ার পথে একদৃষ্টি তে চেয়ে আছেন।
সকাল গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।বেলাশেষের সময়টা সুমুর সবচেয়ে প্রিয় সময় স্মৃতি রোমন্থনের জন্য এর চেয়ে ভালো সময় হতেই পারেনা।গোধুলী লগ্নের প্রায় কাছাকাছি। আকাশ সাঁঝ করেছে।মেঘ গুড়্গুড় করে আহ্বান জানাচ্ছে বৃষ্টিকে ধরাকে স্বস্তি দিতে। সব জরা কে ধুয়ে মুছে নিয়ে যেতে।
বারান্দাটা থেকে নিচে দেখা যাচ্ছে। একজন যুবক গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুমু এই যুবক টাকে চিনে।কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে বদ্ধ পরিকর।কিন্তু সে ভুলে বসেছে প্রকৃত এবং পবিত্র ভালোবাসা সকল সিদ্ধান্তের ভীটকে নড়িয়ে দিতে জানে।সুমু বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিয়াদের দিকে চেয়ে আছে।এমন না যে সে পছন্দ করেনা।কিন্তু শুধু মাত্র নাহিয়ানের কথা ভেবেই সে আর এগুচ্ছেনা।কি প্রভাব পড়বে তার বাচ্চাটার উপর।এ কয় দিনে রিয়াদ একটু একটু করে সুমুর মনে যায়গা করে নিয়েছে।তবে নাভিদের সম পরিমাণ তা কখনোই না।দিনশেষে সেও তো মানুষ,নারী। তারও ভালো লাগে কারও এক্সট্রা কেয়ার পেতে।কিন্তু তার মাতৃস্বত্তার কাছে বারবার হেরে যায় তার নারী স্বত্তা।
রাত ন’টা বাজে বাহিরে ভেঙে চূড়ে ঝড় নেমেছে।বারান্দার দরজা সহ ঘরের সব জানালা বন্ধ।সুমুর ভয় হয় ফাগুণের নবধারা যদি আবার বারান্দা হয়ে চলে আসে তার ঘরে।সে ভয় পায় সবকিছু আবার হারানোর ভয়। নাহিয়ান তার দাদা দাদুর সাথে গল্পে মসগুল।সুমু রাতের খাবারের আয়োজনে ব্যাস্ত।
রাত ১১ টা বেজে ৫৫ মিনিট।
ঝড় জেনো থামছেই না। নাহিয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে।সুমুর চোখে ঘুম নেই।জানালা দিয়ে সে বাহিরের পথে চেয়ে আছে।যুবকটি এখনো দাঁড়ানো। শীতে কাঁপছে সে।কিন্তু একবারের জন্যও গাড়িতে গিয়ে বসছেনা।উফফ মেজাজ টা খিচড়ে যাচ্ছে সুমুর।কি দরকার আছে অমন প্রেমিক পুরুষ সাজার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে রাগে।জানালার কাঁচ টা একটু সরিয়ে বাহিরে তাকাতেই লোকটা উপরের দিকে তাকালো।শীতের প্রকপে কাঁপা কাঁপা হাসি দিচ্ছে বোকা লোকটা।সুমুর ইচ্ছে করছে এক চড় দিতে।কিন্তু পারছে কই??
আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে লোকটার মারাত্মক কিছু হয়ে যাবে।কান্না পাচ্ছে সুমুর।কিন্তু তার কান্নার কোনো মানেই হয়না।
চোখের পানি গুলো জেনো বাঁধ ভেঙ্গেছে আজ।নাহিয়ান উঠে এসে কখন সুমুর পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি সুমু।আঁচলে টান পড়তেই খেয়াল হলো সুমুর। ইংরেজ সাহেব দের মতো কথা বলা ছেলেটা তার বাংলা ভাষা কমই বুঝে সবদোষ তার দাদার। নাতিকে ইংলিশ স্কুলে পড়ানোর ফল।খুব আফসোস হয় সুমুর ছেলেটার বাংলা শুনে।তার বাচ্চাটা।
– ডু নট ক্রায় মম।ইউ আর নট আ ক্রায় বেবি। বিগ গার্ল গ্রো আপ।
– সুমু হাঁসছে নাহিয়ানের কথা শুনে।
– কেঁদো না আম্মু।তুমি রিয়াদকে বাসায় নিয়ে এসো।আজ সারাদিন সে কিচ্ছু খায়নি।পানিও না।আমি যখনই বারান্দা থেকে বাহিরে দেখেছি সে এদিকেই তাকিয়ে ছিলো।তুমি তাকে বাসায় নিয়ে এসো।
– থাকুক।ভিজুক বৃষ্টিতে। মাথা ঠিক হয়ে যাবে।
– আমি সব জানি আম্মু।আমার খুব ভালো লেগেছে রিয়াদকে।আমার তাকে পাপা ডাকতে আপত্তি নেই।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তুমি তাকে নিয়ে আসবে আমি এখন ঘুমোতে যাচ্ছি।তুমি যাও।
– ছেলের মুখের কথা শুনে সুমুর জেনো খুশি ধরছেনা।তার ছেলেটা এত বড় হয়ে গিয়েছে। এইটুকু বাচ্চা তার বাবার মত করে কথা বলছে।
– আম্মু তুমি যাবে নাকি আমি যাবো??
সুমু নাহিয়ানের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলো দ্রুত বলে উঠলো আ’ম গোয়িং হানি।আমি যাচ্ছি।
দ্রুত দরজা খুলে লিভিং রুম থেকে বাহিরের দরজার দিকে ছুটলো সুমু।নাহিয়ান পেছন থেকে ডেকে বললো –
হেই আম্মু ইউ ফরগোট দিস থিংস।
সুমু আবার দৌড়ে নাহিয়ানের কাছে গেলো।
একটা ছাতা আর একটা তাওয়াল ধরিয়ে দিলো নাহিয়ান তার মায়ের হাতে।সুমু নাহিয়ানের গালে চুমু খেতেই নাহিয়ান কপট রাগ দেখিয়ে ইয়াক বলে উঠলো।
সুমু কান্না মিশ্রিত হাসি দিয়ে ছুটলো নিচে যাবার জন্য।
নাহিয়ান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো যতক্ষণ না সে দরজার বাহিরে গিয়ে লিফটে উঠলো।সুমু যেতেই নাহিয়ান নভিদের ছবির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আর বললো আই প্রমিজ আমি আম্মুকে কখনো কষ্ট পেতে দিবোনা।
লিফট থেকে নেমেই সুমু ছাতা খুলে দৌড়ে গেলো রিয়াদের কাছে।ঠকঠক করে কাঁপছে রিয়াদ।সুমুর চোখ ভর্তি পানি টলটল করছে।রিয়াদ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-
আপনি নিচে কেনো এসেছেন?? ঠান্ডা লেগে যাবে আপনার।
সুমু ভেঙচি দিয়ে রিয়াদের মিমিক করলো- ঠান্ডা লেগে যাবে আপনার।
অসভ্য,বেহায়া লোক এই অবস্থায় কে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে আপনাকে? বাসায় আসলে কি আপনাকে কেউ ঢুকতে দিতো না?? কেনো দাঁড়িয়ে ছিলেন এভাবে?? কাঁদছে সুমু।
রিয়াদ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে সুমুর দিকে।নাফ্রোদিতির মত সুন্দর দেখতে দেবীটা তার জন্য কাঁদছে,অথচ কি সুন্দর লাগছে তাকে ক্রন্দনরত অবস্থা।ঠোঁট গুলো কান্নার তরে কেঁপে উঠছে।চোখ বেয়ে অশ্রু গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে চিবুক ছুঁয়ে দিচ্ছে। রিয়াদের খুব করে সুমুর চিবুকে ঠোঁট ছোঁয়াতে ইচ্ছে হচ্ছে।সুমু তাকে তাওয়ালে জড়িয়ে তার হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দিয়েছে রিয়াদ একদৃষ্টি তে সুমুকে দেখছে। আচমকা সুমু রিয়াদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তাকে শক্ত করে দুহাতে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে সুমু।রিয়াদ একহাতে সুমুকে জড়িয়ে ধরে ভাবছে এক বাচ্চার মা হলেও সুমুর ভিতরের কিশোরী স্বত্তাটা প্রবল। সে ততক্ষণাৎ একটা পণ করলো – সারাজীবন সে নাফ্রোদিতির মত দেখতে এই সুন্দরীকে খুনশুটি করে কাঁদাবে এবং তাকে আদরে আদরে কাণাকাণায় পরিপূর্ণ করবে, এ কান্না দেখেও সুখ।
এক পশলা ফাগুণের নবধারা আবার সুমুকে ভিজিয়ে দিলো কিন্তু এবার তার পাশে রিয়াদ রয়েছে তার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখার জন্য।জীবন বড্ড বৈচিত্র্যময়।??
সমাপ্ত।
প্রত্যাখান_পর্ব(১৫)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’
রাত্রি দশটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট।
পিয়াদের বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট পাঁচেক হয়ে গেছে।
কল দিয়েছিলাম পিয়ার বাবা জনাব সিদ্দিক সাহেবের ফোনে।
রিসিভ করে বলছে আসতেছে কিন্তু পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও ওনার খবর নেই কোন।
পুনঃবার কল দিলাম।
রিংটোনের আওয়াজ বলে দিচ্ছে, মানুষটা সিড়ি পেরিয়ে গেইটের অনেকটা কাছে চলে এসেছে।
কল কেটে গেইটের ভেতরে দৃষ্টি নিয়ে গেলাম।
বলতে বলতেই সিদ্দিক কাকা গেইটের একদম সন্নিকটে চলে আসে। আমাকে দেখে দুর থেকেই বলতে শুরু করেন তিনি,
‘বাপরে! বয়সের সাথে সাথে মাথাও কিছুটা নষ্টের পথে।
গেইট খুলার চাবি না এনে চলে আসছি ঔষধের বক্স নিয়ে।
তিনতলা পেরিয়ে দুতলায় আসতেই খেয়াল করি সেটা।’ কাকাকে সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম।
কুশলাদি বিনিময় করতে করতে কাকার সাথে তিনতলায় বাসায় ঢুকলাম। তিনকক্ষ বিশিষ্ট ছোট্ট একটা বাসা।
অনেকটা ছিমছাম এবং গুছানো।
একরুমে কাকা কাকি থাকেন, আরেক রুমে তাদের একমাত্র মেয়ে পিয়া এবং অন্য রুমে আগত অতিথিরা থাকেন।
যথারীতি কুশলাদি বিনিময়ের পর পিয়ার মা এবং পিয়া আমায় বসতে অনুরোধ করেন।
আমি বসার আগেই এদিক ওদিক তাকিয়ে পিয়ার দিকে দৃষ্টি নিলাম। প্রশ্ন করলাম,
‘পিয়া, কোথায় লাবণ্য?
ও’কে দেখছি না যে?’ চায়ের কাপটা পিয়ার মা আমার হাতে এগিয়ে দিতে দিতে জানান দেয়,
‘ঘুমুচ্ছে। আহারে বেচারী! পুরো দুপুর পথভুলে ঘুরে বেরিয়েছে রাস্তায়।
তারপর যাও মানুষের মাধ্যমে একটু রাস্তাটা ধরতে পারলো, ওমনি বৃষ্টি শুরু হলো।
সেকি বৃষ্টি! একদম মুশলধার।
ব্যাটা! ব্যবসা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে? ঘরের দিকেও তো একটু নজর দিতে হবে, তাই না?
এক কাজ করো। একদিন ব্যবসা কার্য থেকে দুইদিনের জন্য বিরতি নিয়ে ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখাও মেয়েটাকে।
যাতে ভবিষ্যতে পথভুলে হারিয়ে না যায়।’ পিয়ার মায়ের কথার প্রতিউত্তরে কিছুই বলতে পারিনি।
তার আগেই ওনি আবারও বলতে শুরু করেন,
‘আহারে বেচারী! সারাটা দিন অসহায়ের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে শেষমেশ বৃষ্টির জন্য টং দোকানে আশ্রয় নেয়।
পরে বৃষ্টি থামলে পাশের ফ্ল্যাক্সির দোকান থেকে শাশুড়ীকে কল দিয়েছে।
তারপর তোমার মা কল দিয়ে ওর বর্তমান অবস্থানটা আমাদের জানালে তোমার আঙ্কেল গিয়ে ওকে নিয়ে আসে।
ঐতো! লাবণ্য আসছে। ঘুম হলো মা?’ আন্টির দৃষ্টিকে অনুসরণ করে পেছনে ফিরে তাকালাম আমি।
ঘুমজড়ানো চোখে ছোট বাচ্চাদের ন্যায় আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে লাবণ্য।
চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে কাপটা একপাশে রেখে ওঠে দাঁড়ালাম সোফা থেকে।
‘আন্টি! আজ তাহলে আমরা আসি।
লাবণ্য চলো।’ লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে আচমকাই বলে ওঠলাম কথাটা।
‘কি বলছো তুমি বাবা? আসছো মানে?
আজ কোথাও যাওয়া হবে না। আজ তোমরা আমাদের এখানে থাকবে।’
সোফা থেকে ওঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে পিয়ার মা কথাটা বলে।
‘ না আন্টি, আজ নয়৷ অন্য আরেকদিন। আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?
যাও, কলেজ ব্যাগ নিয়ে আসো।’
অনেকটা অধিকার খাটানোর ন্যায় লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম।
জবাবে আন্টির দিকে ফিরে তাকায় লাবণ্য।
ভাবমূর্তিখানা এমন যে, আমার কথায় যেন ভিষণ রকম বিরক্ত ‘ও’।
এতরাতে বাসা থেকে বের হওয়ার কোন ইচ্ছেই যেন ওর নেই।
ওর সেই মুখভঙ্গিকে কাজে লাগিয়ে আরো জোর গলায় জানান দেয় আন্টি, ‘না, বাবা!
এই প্রথম মেয়েটা এসেছে। আজ যাওয়া যাবে না।
এতরাত্রিতে তো কোনভাবে নয়। তুমি বরং সকালে এসো।
‘ কেন জানি আন্টির সাধারণ কথায়ও সেদিন আমার মেজাজ চরমে ওঠে গিয়েছিলো।
লাবণ্যর দিকে না তাকিয়েই বললাম, আচ্ছা!
ও থাকুক তবে। আসি আন্টি। আঙ্কেল আসসালামু আলাইকুম।
বাসা থেকে বের হয়ে নিজের ওপর চরম রাগ ওঠে যায়।
এ আমি কি করলাম?
রাগের জন্য ওকে রেখেই চলে আসলাম? না এটা ঠিক হয়নি আমার। ভালো লাগছিলো না কিছুই।
বাসায় না গিয়ে ঘুরঘুর করতে লাগলাম রাস্তায়।
আর মনে মনে লাবণ্যর সাথে কথা বলতে লাগলাম,
‘না হয় আমি বলেছিই থাকতে, তাই বলে তুমি এমন করতে পারলে?
আমাকে একবার থামিয়ে বলতে পারলে না, আমিও যাবো আপনার সাথে?
কি এমন ক্ষতি হতো এটা করলে?’ মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে তিনতলার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি।
নাহ! কেউ দাঁড়ায়নি আমার পথপানে তাকিয়ে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পেছনের দিকে তাকাতেই ভূত দেখার ন্যায় চমকে ওঠলাম আমি।
ছাতা হাতে স্বয়ং লাবণ্য দাঁড়িয়ে।
তারপাশেই আরো একটি ছাতা হাতে সিদ্দিক কাকা দাঁড়িয়ে।
আসলে হচ্ছেটা কি? বুঝতে পারছিলাম না কিছুই।
স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাই তাকিয়ে আছি ওদের পানে।
সিদ্দিক কাকা দুষ্টুমির হাসি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে।
তুই তো পুরো বাপের মতো হয়েছিস।
তোর বাপও এমন করত।
অকারণে ভাবির(তোর মা) সাথে ঝগড়া করতো।
তারপর তোর মা বাপের বাড়ি চলে গেলে রাত্রি আধারে তোর বাপ শ্বশুরের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো।
কাকার কথায় লজ্জা পেলাম ভিষণ।
কাকা আবারো বলতে শুরু করেন, রাগ করে চলে আসছে লাবণ্য,
এটা আমায় আগে বলিসনি কেন?
আগে বললে তো তোকে এত কষ্ট করতে হতো না৷
ভাগ্যিস, বারান্দার গ্লাসগুলো মিলিয়ে দেয়ার সময় নিচে দৃষ্টি আসে আমার।
কাকা, আমি আসলে….
পুরো কথা বলতে পারিনি। তার আগেই কাকা লাবণ্যর দিকে ফিরে তাকায়।
‘শুনো মা, বর ঝগড়া করলে,
তাদের ঘাড়ের রগ বাকা থাকলে সেগুলো টেনে সোজা বানানোর দায়িত্ব তোমাদের।
রাগ করে এভাবে হুটহাট বাপের বাড়ি/অন্য কোথাও যাওয়ার আগে নেক্সট টাইম একলা ঘরে বসে এটাই ভাববা,
কিভাবে টাইট দিলে বর সোজা থাকে।
কি মনে থাকবে?’
মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ-বোধক জবাব দেয় লাবণ্য।
হাসি এসেও আসলো না আমার। কাকার থেকে বিদায় নিয়ে পায়ে হেঁটে দুজন চললাম সামনের দিকে।
খানেকদুর যেতেই মাথায় দুষ্ট বুদ্ধির উদয় হয়।
ওর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর হাতের ছাতাটা ছেড়ে দিলাম ওপরে শূন্যের দিকে।
মুহূর্তেই দমকা হাওয়া এসে সেটা উড়িয়ে নিয়ে যায় দুরে। চলবে….