কলেজের ফেয়ারওয়েলের দিন যাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিলে তাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলেও গেলে???
তুমি কি রাহুল???
?
বাহ্ তাহলে এখনও মনে আছে দেখছি!!???
সেদিনের জন্য আমাকে মাফ করো রাহুল।।
????
আমি গরিব বলে আমাদের এত ভালো বন্ধুত্ব ভেঙে,,, আমাকে সেদিন কত অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে।।
মনে আছে????
সব মনে আছে রাহুল,,,
I am very sorry রাহুল।।।
????
যাই হোক তুমি এখন নিশ্চয়ই খুব ভালো আছো।???
তোমার বর আর তুমি নিশ্চয়ই দারুন মজা করছো???????
???
কি হলো বলো।।।
আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে রাহুল!!!??????
কি???কিন্তু কেন???
প্রথমে আমরা দুজনেই আমেরিকায় খুব ভালো ছিলাম।।।
হঠাৎ আমার বর খুব রাত করে বাড়ি আসতে শুরু করলো,,,আর এই নিয়ে আমাকে মিথ্যে বলতেও শুরু করলো।।।
তারপর??????
আমার সন্দেহ বাড়তে লাগলো!!!
এরপরে একদিন একটা মেয়ের সাথে দেখলাম,,,যাকে নিয়ে ও সবসময় আমাকে মিথ্যা বলতো।।
এরপর আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে ইন্ডিয়া তে চলে আসি।।
????
আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই কালইইই।।।
এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে রাহুল।।।
????
দেরি হয়ে গেছে মানে???
কি হয়েছে???
???
কিছু না।।।
ভালো থেকো।।
????
বলো কি হয়েছে তোমার।।????
আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে রাহুল।।।
???
কি???
তুমি পাগল হয়ে গেছো!!
আমি বিশ্বাস করি না।।??
এটাই সত্যি রাহুল।।
তোমাকে কে বলেছে এটাই সত্যি?????
আমি গত বছর ডাক্তার দেখানোর পর আমার সি.টি.স্ক্যান রিপোর্ট এ ব্রেন টিউমার ধরা পরেছে!!!?????
?
তাই এত মায়া বাড়িয়ে কি হবে!!!
আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না রাহুল!!!?????
এসব কিছুই হবেনা,,,
আমি কিছু হতেই দেবো না।।।।
আমি তোমাকে অনেক বড়ো বড়ো ডাক্তার দেখাবো।।
???
এসব বাদ দাও,,,আমার শেষ ইচ্ছে তুমি আমাকে মাফ করো রাহুল,সেদিন খুব ভুল করেছি।।।
জানো আজও তোমার নাম্বার আমার কাছে “সুইটু” নামে সেভ্ করা আছে।।
আজও ভালোবাসি তোমাকে।।।
??
আমি আজও তোমার সুইটু???
????
কিন্তু আমার তো সময় খুব কম,,,তোমার জীবনে আমি আর থাকতে পারবো না।।
???চুপ।।
???
তুমি আমার কাছেই থাকবে,,কালই আসছি আমি।।
যদি আমি না বাঁচি???
আমার মনে সবসময় বাঁচবে তুমি।।
বুঝেছো???
কিন্তু…
???
কোনো কিন্তু না,,,কালই আসবো আমি।।
তোমাকে সুস্থ করবোই।।
তারপর???
তুমি রাজি থাকলে আমরা বিয়ে করে একসাথে থাকবো।।।☹☹☹☹☹☹
আমি থাকবো তোমার কাছে,,,,রাজি আমি তোমার কাছে থাকতে।।।
????
আজ রাত পেরোলেই আমি তোমার কাছে আসছি,,, আমার সুইটু।।।
????
নিলীমা আর তন্নয় একে অপরকে খুব ভালোবাসে। তন্নয় নিলীমাকে প্রথম প্রপোজ করে কিন্তু নিলীমা রাজি হয়নি। তখন তন্নয়কে নিলীমা খুব অবহেলা করত।নিলীমা আর তন্নয়ের ২বছর আগের কথা। ২ বছর আগে ও নিলীমা তন্নয়কে এতটা ভালোবাসেনি । তন্নয় নিলীমার কাছে গেলেই বিরক্তি বোধ করতো। একদিন তন্নয় নিলীমা কে বলল….
তন্নয় : হাই……
নিলীমা : (কিছু বলে না)
তন্নয় : কি হলো তোমাকে বলছি শুনতে পাচ্ছো….????
নিলীমা : কি এমন চেচাছেন কেনো..?? আপনার ইচ্ছা হইছে আপনি বলছেন আমি কি আপনাকে আমার সাথে কথা বলতে বলছি।
তন্নয় : হুমমম তা বল নাই,, তাই বলে কি কথা বলা যায় না।
নিলীমা : (চুপ করে চলে গেলো কিছু না বলে)
এমন অবহেলা, বিরক্তি, আর তন্নয়ের ভালোবাসায় দিন চলতর থাকে।যত বার তন্নয় নিলীমার কাছে যায় ততবারই নিলীমা তন্নয়কে অপমান করে। এমন করে চলে গেলো অনেকটা দিন। কিন্তু নিলীমা সেই তন্নয় কে অপমানই করে। এমন করতে করতে কখন যে নিলীমা তন্নয়ের প্রেমে পরে গেছে নিলীমা বুঝতেই পারেনি। নালীমা এখন তন্নয়কে অপমান করলে তার নিজেরই খারাপ লাগে, বাসা বার বার তন্নয়ের কথা ভাবে। হঠ্যাৎ তন্নয়কে সে দেখে না। তন্নয় আর আসে না নিলীমার কাছে। নিলীমা খুব চিন্তায় পরে যায় যে তন্নয় কেনো আসে না। তবে কি আর আসবে না। যদি না ই আসবে তাহলে কেনো বুকের ভিতর ভালোবাসাে সৃ্ষ্টি করলো। নিলীমা এখন খুব কাদে তন্নয়ের জন্য, অপেক্ষা করে কিন্তু তন্নয় আসে না। নিলীমা তন্নয়ের বন্ধুদের কাছে খবর পেলো যে তন্নয়ের খুব জ্বর কয়দিন ধরে। তন্নয়ের বন্ধুরা তখন নিলীমাকে খুব বকা বকি করে কেনো তন্নয়ের খবর চাও, এখন তন্নয়কে অপমান করতে পারো না বলে..??? তখন নিলীমা কান্না করেদেয় আর বলে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি,, আর এটা ও বুঝেছি যে আমি তন্নয়কে খুব ভালোবেসে ফেলেছি, তন্নয় যে আমার অমূল্য রতন। তখন তন্নয়ের বন্ধুরা খুসিতে চিতকার দিয়ে উঠে আর বলে ভাবি এখন কান্না থামান। তন্নয়ের জ্বর কমলে আমরা তাকে বলে দিব সব ঠিক হয়ে যাবে। তন্নয়ের জ্বরের কথা শুনে তন্নয়কে দেখতে খালা আর খালাতো বোন আসে। তন্নয় এখন আগের থেকে একটু সুস্থ্য বলে খালাতো বোনকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। আর তা নিলীমা দেখে। তন্নয়ের পাশে মেয়ে দেখে নিলীমার রাগ হয় আর তন্নয়ের কাছে গিয়ে বলে……
নিলীমা : এটা কি হচ্ছে..???
তন্নয় : কি হচ্ছে আর কি হচ্ছে…!!!
নিলীমা : কি হট্ছে হুমমম মেয়েটা কে..??
তন্নয় : কেনো তা বলতে হবে নাকি….?
নিলীমা : হে বলতে হবে। মেয়ে নিয়ে ঘুরা হয় বুঝি…??? তোমার না জ্বর..???
তন্নয় : যদি বলি এটা আমার বউ তা হলে কি করবে। আর আমার জ্বর তুমি কি করে জানলে…???
নিলীমা : (কান্না করে) এটা তোমার বউ তুমি বিয়ে করলে কবে…???
তন্নয়: তা কি তোমায় বলতে হবে..???
নিলীমা : বলো না তন্নয় মেয়েটা কে..??? আমার খুব খারাপ লাগছে…।
তন্নয় : ও আমার খালাতো বোন তন্নিমা।
নিলীমা : তন্নিমা
তন্নয় : হুমম কেনো।
নিলীমা : তোমার নাম তন্নয় আর অর নাম তন্নিমা মিলিয়ে।
তন্নয় : হুমমম ভাই বোনের নাম কি এক হয় না।
নিলীমা 🙁 হাসি দিয়ে) হে হয়। আমি তো তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে তোমার খোজ নিয়ে ছিলাম, জানতে পারলাম তোমার জ্বর।
তন্নয় : কেনো খুজ নিয়েছ তুমি আমার..?? কে হই আমি তোমার…? নাকি অপমান করতে পারছো না বলে…??
নিলীমা : (তন্নয়কে জরিয়ে ধরে) Sorry তন্নয় আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর আমি যে তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি তন্নয়, আর তুমি বললে তুমি কে আমার,,… তন্নয় তুমি আমার অমূল্য রতন।তুমি যে আমার জীবনের আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।
তন্নয় : সত্যি বলছ নিলীমা..???
নিলীমা : হে তন্নয়….. I Love You ?
তন্নয় : নিলীমা I Love You Too ?
নিলীমা : আমাকে ছেড়ে যাবে না তো..
তন্নয় : না কখনো যাবো না… তোমাকে আমার এই বুকে রাখবো আমি ও যাবো না তোমাকে ও কখনো যেতে দিবো না.
নিলীমা : হুমমম যাবো না।
এমন করে চলে গেলো কিছু সময়। তন্নয়ের খালাতো বোন বলে আরে ভাইয়া আমি লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু। তন্নয় বলে তো কি হয়েছে। আমি একটু প্রেম করছি আমার পাগলিটার সাথে। নিলীমা বলে হুমমম ঠিকইতো।
তন্নয় আর নিলীমা এখন দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে। একে অপরকে ছাড়া থাকতেই পারে না। ওদের বিয়ে হয়েছে। অরা খুব খুশি। নিলীমা প্রেগনেন্ট অরা মা বাবা হবে খুব খুশি অনেক স্বপ্ন। তার পর পার হয়ে গেল কয়টি মাস….নিলীমার জমজ দুটি বাঁচ্চা হয় একটি ছেলে একটি মেয়ে। মেয়ের নাম রাখে তন্নয়ের সাথে মিল করে তন্নি আর ছেলের নাম রাখে নিলীমার সাথে মিল করে নিলয়। অদের হাসি খুশিতে দিন কাটে খুব খুশি অরা। আজ তন্নয়ের জন্ম দিন। নিলীমা অনেক আয়োজন করেছে,,, আর সবাইর সামনে তন্নয়কে একটি কিস করে বলে তন্নয় তুমি আমার অমূল্য রতন,,, তন্নয় ও বলে তুমি আমার অমূল্য রতন। তার পর জরিয়ে ধরে একে অপরকে।
সমাপ্ত
(প্রিয় পাঠক, গল্পটি কেমন লাগলো লাইক, কমেন্টস করে জানাবেন সবাই।
গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।)
আজমিরা ও মিরাজ একে অপরকে খুব ভালোবাসে। আজমিরা আর মিরাজের বাসা এক পাশা পাশি। আজমিরাকে প্রথম দেখেই মিরাজের ভালোলেগে যায় এবং আজমিরার ও। কিন্তু কেও কাউকে বলেনি। প্রতিদিনই তাদের দুজনের দেখা হয়। এমন করে দেখতে দেখতে কিছু দিন চলে গেলো। একদিন মিরাজ কিছু না ভেবেই আজমিরাকে বলল…..
মিরাজ : আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই, যদি কিছু মনে না করেন..!!
আজমিরা : ( নিচে তাকিয়ে হাসছে) হ্যাঁ বলেন।?
মিরাজ : কেমন আছেন..???
আজমিরা : জ্বী ভালো… আপনি কেমন আছেন..??
মিরাজ : হুমমম আমিও ভালো আছি…। আচ্ছা তোমার নাম কী..??
আজমিরা : আমার( বলতে না বলতেই)
মিরাজ : ইয়ে মানে Sorry… ?
আজমিরা : কেনো..??? ?
মিরাজ : ভুলে তুমি করে বলে ফেলেছি তার জন্য..?
আজমিরা : Ok কোনো সমস্যা নেই,, আমাকে আপনি তুমি করেই বলতে পারেন… ?
মিরাজ : আচ্ছা তাহলে আপনি ও ইয়ে মানে তুমি ও আমাকে তুমি করে বলবে…। এখন বলো তোমার নাম কী..? ?
আজমিরা : আমার নাম আজমিরা…☺ আপনার নাম টা… ( বলা শেষ না হতেই)
মিরাজ : মিরাজ আমার নাম মিরাজ ? আমি তোমার বাসার পাশেই থাকি….।
আজমিরা : ওওও তাই বুঝি তা তোমার( কথা শেষ না হতেই)
মিরাজ : আজমিরা I LOVE YOU ☺
আজমিরা : ( লজ্জা পেয়ে আর খুশি হয়ে) কি বললা তুমি…???
মিরাজ : না মানে… আমি তোমাকে ভালোবাসি….
আজমিরা কিছু না বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে আর মিরাজ ও লজ্জায় ভয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছে না। আজমিরা একটু দূরে গিয়ে বলে… আমি ও? মিরাজ অর কথা শুনে খুব খুশি….। অরা প্রতিদিন কথা বলে, দেখা করে আর অনেক ভালোবাসে। মিরাজ আজমিরাকে রাগানোর জন্য কত কিছু বলে ইচ্ছে করে অন্য মেয়েদের কথা বলে। আর আজমিরা ও রেগে যায়। এমন করেই তাদের দুষ্টু মিষ্টি প্রেম চলতে থাকে। কিন্তু কথায় আছে না বেশি সুখ কপালে সয় না। আজমিরার মামাতো ভাই আছে। আর ভাই যেহেতু তো কথা তো হতেই পারে… আজমিরা যে তার ভাইয়ের সাথে কথা বলে তা আবার মিরাজ অর ফোনে চেক করে দেখে,,, কিন্তু আজমিরা কিছু বলে না সে চায় মিরাজ সব দেখুক। কিন্তু মিরাজ আজমিরাকে সন্দেহ করতে শুরু করে। মিরাজ আজমিরাকে বলে….
মিরাজ : আজমিরা তুমি তোমার মামাতো ভাইয়ের সাথে কেনো কথা বলো তুমি কি তাকে ভালোবাসো…??
আজমিরা : এই সব তুমি কি বলছ মিরাজ। তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি…!!তুমি আমাকে এই কথাটা বলতে পারলে মিরাজ…। ?
মিরাজ : হে পারলাম… তোমার ভাই তোমাকে ভালোবাসে…!!
আজমিরা : না মিরাজ এটা তোমার ভুল ধারনা,, তুমি আমাকে বিস্বাস করো( কাদঁতে কাদঁতে) মিরাজ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি….
মিরাজ : মিথ্যে কথা,, আর শুনো আমার সাথে তুমি আর কথা বলবা না….!! ?
আজমিরা : মিরাজ এমন করে বলো না আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না,,, তুমি আমাকে সন্দেহ করে না প্লিজ।আচ্ছা আমি তোমার সামনে আমার ভাইকে কল দেই তুমি শুনো প্লিজ।?
তার পর আজমিরা তার মামাতো ভাইকে কল দিল এবং সাউন্ড বারিয়ে দিলো ফোনের,, কল রিসিভ করলো আজমিরার মামাতো ভাই আর বলল…..
আজমিরার মামাতো ভাই :: হেল্লো
আজমিরা : শুন ( একটু কান্না কন্ঠে)
ভাই : হে বল,, আর তর গলা এমন লাগছে কেন..?? কি হইছে ?
আজমিরা : তুই কি আমাকে ভালোবাসাস…??
ভাই : এই এইসব কি বলছিস তুই মাথা ঠিক আছে তোর…? তুই আমার বোন,, আর বোন হিসাবে যতটুকু একটা ভাই ভালোবাসে ততটুকুই তোকে ভালোবাসি.. আর তেমন করে কিছু না।
আজমিরা : তুই বল ভালো বাসিস না.
ভাই : না বাসি না…। তুই আমাকে এমন কথা বলতে পারলি ?
কল কেটে দিয়ে আজমিরা মিরাজ কে বলল।
আজমিরা : শুনেছ তুমি ( কেদে কেদে) এখন তো বিস্বাস করো আমাকে।
মিরাজ : হয়েছে তোমার কান্না শুনে তোমার ভাই মিথ্যে কথা বলেছে..!!?
আজমিরা : মিরাজ..তুমি আমাকে ভুল বুঝ না প্লিজ…
মিরাজ : শুনো তোমার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। আর তুমি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করবে না।
আজমিরা : তুমি কোনো আমাকে ভুল বুঝতাছ… এমন করে বলো না প্লিজ…. আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি..আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না… ??
মিরাজ : আমি কিছু শুনতে চাই না।
মিরাজ আজমিরার কোনো কথাই শুনে চায়নি,,, সন্দেহ করে ভুলই বুঝল কিন্তু আজমিরা এত কিছুর পর ও মিরাজ কে কাছে পেতে চাইলো। কিন্তু মিরাজ আজমিরার ভালোবাসাটা বুঝলো না। আজমিরা খুব কান্না করে। কিন্তু মিরাজ তার মূল্য দিল না।
সমাপ্ত
কিছু কথা:- ভালোবাসায় কখনো কেউ কাউকে সন্দেহ করবেন না। কারণ সন্দেহ খুব খারাপ যা সম্পর্ককে, জীবনকে শেষ করে দেয়। ভালোবাসায় ভুল বুঝা বুঝি না করে বিস্বাস করতে হয়। এমন অনেক আজমিরার মত লোক আছে যে সব কিছু নিরবে সয়ে যায় তবুও ভালোবাসার মানুষটাকে তার জীবনে চায়। তাই সবার কাছে অনুরোদ প্লিজ সম্পর্কের মাঝে কেউ অবিস্বাস,, সন্দেহ,ভুল বুঝা বুঝি করবেন না। তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকবে সুখের হয়ে।
গল্পটি কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ,
আর গল্পটি যদি ভালোলেগে থাকে তাহলে প্লিজ লাইক দিবেন,, আর শিয়ার করে আপনার বন্ধুদের পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।
আপনাদের একটা বিয়ের ছবি আমাকে দেয়া যাবে? – নিদ্র নিজের অজান্তেই বলে ফেললো। অচেনা কারো কাছ থেকে বিয়ের ছবি চাওয়াটা মনে হয় ঠিক হয়নি।
মিস্টার ব্রন্ড কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– অবশ্যই, কেনো নয়?
চেয়ার ছেড়ে উঠে ভেতরের দিকে চলে গেলেন। নিদ্র একটু স্বস্তি বোধ করলো।
কিছুক্ষণ পর মিস্টার ব্রন্ড ছোট্ট একটা ছবি এনে নিদ্রের হাতে দিয়ে বললেন
– এটাতে হবে?
নিদ্র ছবিটা দেখে বললো
– অবশ্যই!
মিস্টার ব্রন্ড মুচকি হেসে বললেন
– নিশ্চয়ই স্পেশাল কাউকে ছবিটি দেখাতে চাচ্ছো?
– হ্যাঁ, যদি সুযোগ হয়।
– অবশ্যই সুযোগ হবে।
নিদ্র বিড়বিড় করে বললো
– প্রিয় মানুষের দেখা সবাই পেলেও, স্পর্শ করার ক্ষমতা সবার মাঝে থাকেনা!
অদ্রির সামনে লিলি বেশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অদ্রি তাকে কী বলার জন্য ডেকেছে সেটা বুঝতে পারছেনা লিলি। অদ্রি আপা কি জেনে গেছে, তার নদীর পাড়ে বসে থাকার কথা? অদ্রি আপা তো এই বাড়ির উঠানে পর্যন্ত নামেন না। তার কাছে অন্য এলাকার মানুষ তো দূরে থাক এই এলাকার মানুষই আসেনা। কে বলবে? রীতা বলেছে নাকি? না, সে নিজেও তো বাসার বাইরে বের হননা।
অদ্রি চায়ের শূন্য কাপ বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিলে রেখে ভারি কণ্ঠে বললো
– কোথাও যাওয়া হয় আজকাল?
লিলি স্বাভাবিক ভাবেই বললো
– আপনার মতো বাসায় বসে থাকতে আমার ভালো লাগেনা!
অদ্রি এরকম উত্তর পাবে আশা করেনি। একটু অবাকই হলো।
– তাহলে কী ভালো লাগে? বেহায়াপনা করতে ভালো লাগে?
– ঘুরে বেড়নো কি বেহায়াপনা?
– গায়ের জামাকাপড় কিছু ঠিক থাকে নাকি তোমার? মুখে মুখে কথা তো বলতে খুব ভালো জানো
অদ্রি রেগে বললো
– তোমাকে কীভাবে সোজা করতে হয় আমার জানা আছে। ফের যদি দেখি বাসার বাইরে বের হয়েছো তাহলে আমার অন্যদিকের ব্যবহার দেখতে পারবে! খুব ভালো ব্যবহার করেছি। যাও এখান থেকে।
লিলি রাগে ফুসছিলো। অদ্রির কঠোর ব্যবহার তার আত্মসম্মানে আঘাত করেছে। লিলি তার রুমের দিকে পা বাড়ালো। অদ্রির কোনো কথাই সে শুনবেনা।
রশীদ সাহেব চিঠিটা পোস্টঅফিসে পোস্ট করে বাসায় ফিরছিলেন। নাজমুল কে দাওয়াত দেয়া কি ঠিক হবে? ও আসবেনা এটা সে শিওর। না আসলেও নিদ্রকে পাঠিয়ে দিবে। তাতেও লাভ আছে রশীদ সাহেবের। মেয়ের বিয়ের কথা শুনে কিছু টাকা বা গিফট পাঠাবে। টাকাপয়সার অভাবে আতিথ্য করতে তার যে কী পরিমাণ কষ্ট হবে, তা বোঝার ক্ষমতা একমাত্র তার মতো বাবারাই জানে। অদ্রি তাকে একটা টেনশন থেকে মুক্তি দিয়েছে। সে কি এর বিনিময়ে কিছু করতে পারবে?
অদ্রির টাকাপয়সার অভাব নেই। যা যা দরকার সবই তার আছে। না, কিছুই দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। নামাজে বসে মোনাজাতে প্রাণভরে দোয়া করতে পারবে – আর কিছুই করার ক্ষমতা তার নেই।
অদ্রি রিতাকে বললো
– আচ্ছা ২০ জনের মতো মানুষকে ৭/১০ দিন তিন বেলা খাওয়াতে কী পরিমাণ খরচ হতে পারে?
রিতা পান মুখে দিয়ে বললো
– চাল, ডালের হিসাব বলতে পারবো কিন্তু টাকার পরিমাণ টা আমি ঠিক বলতে পারবো না।
– রশীদ চাচার ছোটো মেয়ের বিয়ে এই বাড়িতে হবে। আমি চাচ্ছিলাম খাওয়া খরচ, বর যাত্রীর আপ্যায়ন সব আমি দিবো।
– তাহলে তো বেশ খরচের বিষয় অদ্রি। আমি একা এতো জনের রান্না করতে পারবো না। যদি একজন মানুষ সহকারী হয় তবে সহজ হবে।
– রশীদ চাচাকে আমি দুইজন লোক আনতে বলবো। আর বাড়িটাও রঙ করতে হবে।
– অদ্রি তুমিও বিয়েটা করে ফেলো। আমি ঘটকালি করবো।
অদ্রি মুচকি হেসে বললো
– আমি বিধবা।
রিতা আজকেই প্রথম জানলেন, অদ্রি বিধবা! তার কেনো যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা। এতো অল্পবয়সী মেয়ে বিধবা? মেয়েটার এতো ছন্নছড়া থাকার কি এটাই কারণ?
অদ্রি বললো
– রশীদ চাচা কখন বের হয়েছেন?
– ১ ঘণ্টার মতো!
– লিলি কি করছে?
– সে দরজা আটকে তার ঘরে আছে।
– মেয়েটার যে কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা। আগে সারাদিন আমার পিছু পিছু আর এখন তাকে খুঁজে পাওয়া যায়না।
– নয়া যৌবন এসেছে বুঝতে হবে!
– ঠিক বুঝলাম না।
– নতুন যৌবনে পা দিলে প্রত্যেক ছেলে – মেয়ের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে। এইসময় তাদের চোখে চোখে রাখতে হয়।
– আমি আগামীকাল থেকে চোখে চোখে রাখবো। আজকে নিচে নামতে ভালো লাগছেনা। আগে বাগানে বেশ সময় কাটাতাম এখন কিছুই ভালো লাগেনা।
– ছাদে যেতে না?
– না!
– চলো আজকে ছাদে যাই। ভালো লাগবে। এতো সুন্দর বাড়িটাকে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হলে আরো ভালো লাগবে। বিশেষ করে তোমার রুমটা। দেখে কে বলবে বলোতো এটা অল্পবয়সী মেয়ের রুম?
– অল্পবয়সী বিধবা! কি অদ্ভুত উপাধি তাই না?
– চিঠিটা কাকে পাঠানোর জন্য দিলে?
– নিদ্র, আমাকে বেশ সাহায্য করেছিলো ব্যক্তিগত বিষয়ে। আমার হাতের হাবিজাবি রান্না খেয়ে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বেচারা চা খেতে পছন্দ করতেন কিন্তু আমার হাতের চা খেয়ে তার এখানে থাকার সখ হাওয়া হয়ে গেছে। আপনি আসার পরে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো প্রতিউত্তর পাইনি তাই এবার লাস্ট চেষ্টা করলাম।
– রশীদ সাহেবের জন্য এতো কিছু কেনো করতে চাচ্ছেন?
– সে আমার জন্য যা করেছে তার কোনো বিকল্প আমি কখনো দিতে পারবো না। বিধবা হবার পরে যখন এখানে চলে আসলাম কেবলমাত্র রশীদ চাচাই আমাকে সাহায্য করেছে। এতো বড় বাড়িতে আমি আর লিলি ছিলাম কেউ জ্বালাতন করার সাহস পায়নি। একমাত্র ওনার কারণে। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে আমি বাধ্য।
– রাতে কী খাবেন? দুপুরের খাবার গরম করে এনে দিবো নাকি থাই স্যুপ করে খাওয়াবো?
– আপনি পারেন?
– আমি অনেক ধরনের রান্না জানি।শুধু তুমি বলবে।
– আপনার ইচ্ছা হলে করবেন। আজকে থাক, দুপুরের খাবারেই হবে। কাল স্যুপ করে খাওয়াবেন।
রিতা খাবার গরম করার জন্য রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে নিচে নেমে আসলেন।
বিয়েটা রশীদ চাচার ছোটো মেয়েটার বদলে তারও হতে পারতো। এই বাড়ির গণ্ডি পেরিয়ে গেলে হতে পারে কেউ জুটে যাবে কিন্তু নিদ্রকে তো পাওয়া যাবেনা।
তার মতো একজন বিধবাকে কেনইবা নিদ্র ভালোবাসবে?
তার এই শরীরে আজ অবদি নিদ্র ছাড়া কারও স্পর্শ পড়েনি। বিয়ে তার ঠিকই হয়েছিল তবে সেটা নামেমাত্র বিয়ে!
একজন মানুষ তাকে ভুলের মধ্যে রেখেছিলো। তার মা – বাবাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে সেই মানুষ টা।
ভাবতেও ঘৃণা লাগে এরপর নিচু মানসিকতার কারো সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো!
তোমাদের যেমন ইচ্ছে,,
ফাতেমা বেগম চলে গেলো
মিথিলা আবার বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো,কিন্তু কিছুতেই বইতে মন বসাতে পারেনি, বার বার বইয়ের পাতায় যেন ইহানের নিঃস্বপাপ মুখটা ভেসে উঠছে, এমন সময় নির্ঝরিণী এসে বল্লো
– আপু আমার দুলা ভাই কি কাল সত্যি আসছে?
মিথিলা বিরক্তি নিয়ে নির্ঝরিণীর দিকে তাকিয়ে বল্লো,
– নির্ঝর , কে তোর দুলা ভাই
নির্ঝরিণী – কেনো কাল যে আসবে সে দুলা ভাই নয় কি?
মিথিলা ভ্রু কুঁচকে বল্লো
– দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায়
নির্ঝরিণী – তা ঠিক, কিন্তু আপু আমার মন কি বলছে জানো,
মিথিলা নির্ঝরিণীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
নির্ঝরিণী একটু থেমে আবার বল্লো
– আমার মন বলছে তোমার এখানেই বিয়ে হবে
মিথিলা- তোর এমন মনে হওয়ার কারন?
নির্ঝরিণী – কারন জানি না, তবে মনে হলো আর কি
মিথিলা- শুন তোকে একটা কথা বলি তুই না পড়া শুনা বাদ দিয়ে দে,বটতলায় জ্যোতিস বিদ্যা নিয়ে বস,,খুব অল্প সময়ে ফেমাস হয়ে যাবি
নির্ঝরিণী মুখ ভার করে বল্লো
– আপু তুমি সব সময় কেনো এমন করো আমার সাথে,আয়ান কে তো ঠিক ই আদর করো
এমন সময় আয়ানের এন্ট্রি
আয়ান- জানিস কেনো তোকে সবাই আদর করে না,,কারন তোকে তো রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে তাই
নির্ঝরিণীর চোখে টলমল পানি
যেন একটু টোকা দিলিয়ে টপ করে ঝরে পড়বে
– ঠিক আছে আব্বু আজ আসুক আমি আব্বুকে বলবো এই বলে নির্ঝরিণী দূত পা ফেলে বেরিয়ে গেলো,
মিথিলা- আয়ান কি দরকার ছিলো তোর এই রকম করার
আয়ান- আপ্পি ভালো হয়েছে কাঁদুক একটু হি হি হি
মিথিলা-পাগলী টা তো সত্যি ভেবে নিয়েছে
আয়ান- বুদ্ধি শুদ্ধি মোটে ও নেই।
মিথিলা- যাই হোক তুই কিছু বলবি?
আয়ান- ম্যাথ এর একটা সাপ্টার বুঝতেছি না,একটু বুঝিয়ে দিবি
মিথিলা- ঠিক আছে চল
রাতে মাসুম ফারুকি বাসায় আসতেই নির্ঝরিণী কেঁদে কেঁদে নালিশ করলো
মাসুম ফারুকি তখন খুব টায়ার্ড ছিলো,,মেয়ের এই ছেলে মানুষী দেখে হাসবে না কিছু বলবে ভেবে পাচ্ছে না
আয়ান এসে হাসতে হাসতে বল্লো
– বাবা সত্যি টা বলো,ওকে তো আমরা
হাসপাতাল থেকে এনেছি তাই না
মাসুম ফারুকি ছেলে কে ধমক দিতে যাবে, তার আগেই নির্ঝরিণী বল্লো।
– বাবা দেখো ও মিথ্যা বলছে একবার বলছে রাস্তায় আবার বলছে হাসপাতালে,তুমি বল্লো সত্যি টা কি।
মাসুম ফারুকি- পাগলী মেয়ে, তুই আমার মেয়ে ঐ দুষ্টুর কথা শুনিস না তো
নির্ঝরিণী, বাবাকে ঝড়িয়ে ধরে হেসে ফেল্লো
– বাবা কতোদিন তোমায় কাছে পাই না বলো,এতো ব্যাস্ত কিসের তুমি
ফারুকি সাহেব একটা নিশ্বাস ফেলে বল্লো মারে সব বুঝবি আগে বড় হয়ে নে
আয়ান- আব্বু মেয়ে কে আদর দিলে হবে না মা ডাকছে তাড়া তাড়ি এসো
পরদিন সকালেই মিথিলারা সবাই ব্যাস্ত
ফাতেমা বেগম নির্ঝরিণী কে বল্লো,
-শুন নির্ঝর ঘর টা ভালো করে গুছিয়ে রাখবি,, কতো বড় ঘর থেকে আমার মিথি কে দেখতে আসছে জানিস
নির্ঝরিণী – মা উনারা দুপুরের পরে আসবে এতো ব্যাস্ত হচ্ছো কেনো এখন
ফাতেমা বেগম- সর তো সব কাজে তোর ফাঁকি বাজি,,যা গিয়ে দেখ মিথিলা কি করছে,
নির্ঝরিণী উঠে গেলো, মিথিলার কাছে
-আপু একটা ফ্যাস প্যাক বানিয়েছি একটু খানি মুখে লাগিয়ে নে,দেখবি ফ্রেশ ফ্রেশ লাগবে
মিথিলা – উহ নির্ঝরিণী যাহ তো এই সব চাঁই পাস আমি লাগাইনা
নির্ঝরিণী – ওকে আমি লাগাই, কিন্তু এর পর যদি বর পক্ষ তোর বদলে আমাকে পছন্দ করে তখন চোখে তেল দিয়ে কাঁদতে পারবি না বলে দিলাম
মিথিকা মুচকি হেসে বল্লো
– ঠিক আছে আব্বুকে বলবো তোকে আগে বিয়ে দিতে, আর আজকের ছেলেটা কে যদি তোর পছন্দ হয় তা হলে এর সাথে ই তোর বিয়ে হবে
নির্ঝরিণী হাসছে মিথিলার কথা শুনে
বিকেলে মেহমানরা চলে আসে
মাসুম ফারুকি তাদের বসতে দিলো
মাসুম ফারুকি- ইয়ে মানে আপনাদের ছেলে আসেনি
ছেলের বাবা আতাহার চৌধুরী দুঃখিত হয়ে বল্লো
– আসলে আমরা খুবই লজ্জিত,আপনাদের কাছে আর ক্ষমাপ্রার্থি, আমার ছেলে আসার কথা ছিলো কিন্তু জরুরী মিটিং এ আটকে পড়েছে তাই আসতে পারেনি, কিন্তু সে তার মাকে পাঠিয়েছে বলে দিয়েছে মায়ের পছন্দ হলে ই হলো,
মাসুম ফারুকি- আলহামদুলিল্লাহ
এর পরে আমাদের কোন কথা থাকতে পারে না,
আয়মন চৌধুরী ছেলের মা কিছু বলতে যাবে তখন ই
ফাতেমা বেগম আড়াল থেকে মাসুম ফারুকি কে ডেকে নিয়ে গেলেন
মাসুম ফারুকি আসতেই
ফাতেমা বেগম বললেন
– তুমি পাগল হয়ে গেছো নাকি,আমাদের মেয়ে ছেলে কে দেখেনি,এখানে ছেলে মায়ের পছন্দ বিয়ে করবে এটা কেমন কথা,এ যুগের ছেলে রা কি এমন হয়,আমার কেমন জানি খটকা লাগছে
মাসুম ফারুকি- তুমি এতো চিন্তা করো না হয়তো ছেলে সত্যি খুব ভালো হবে, আমার মন বলছে
ফাতেমা বেগম তোমার যা ইচ্ছে করো,
মাসুম ফারুকি আর কোন কথা বল্লো না, বসার ঘরে আবার ফিরে গেলো
মিসেস আয়মন চৌধুরী মাসুম ফারুকি কে বল্লো মেয়ে কে তো আমরা আগেই দেখেছি,এখন আর নতুন করে দেখতে হবে না, আপনি মেয়ে কে ডাকুন আমি আজ ই আমার বউ মাকে চেইন পরিয়ে রাখতে চাই
মাসুম ফারুকি- কিন্তু, ছেলে মেয়ে কেউ কাউকে দেখেনি,বিয়ের পাকা কথা বলা কি ঠিক হবে
আতাহার চৌধুরী- আমরা ছেলের ছবি সংগে এনেছি, ছেলে আসতেই ছেয়েছিলো কিন্তু জরুরী মিটিং এর কারনে আসতে পারেনি, বেয়াই আপনি আর অমত করবেন না আমার উপর বিশ্বাস রাখুন,আপনার মেয়ে খুব মিষ্টি আমি তাকে দেখেছি আমার কোন মেয়ে নেই,বউ মা হয়ে নয় মেয়ে হয়ে থাকবে আপনার মেয়ে আমার বাড়িতে
মাসুম ফারুকি- আলহামদুলিল্লাহ,, ঠিক আছে আমি আমার মিথিলা মাকে নিয়ে আসছি আপনারা বসুন
মিসেস আয়মন চৌধুরী- বেয়াই সাহেব আমি যাচ্ছি বউ মাকে নিয়ে আসতে,আপনারা বরং কথা বলুন
মিথিলার রুমে নির্ঝরিণী মিথিলার কানের কাছে গুন গুন করছে শাড়ি পরার জন্য
মিথিলার একটাই কথা শাড়ি সে পরবে না,, আজ শাড়ি পরলে নিজেকে বড্ড অপরাধি মনে হবে, সেদিন ইহান কতো রিকুয়েস্ট করেছিলো,,এই সব ভেবেই মিথিলা শাড়ি পরেনি
নির্ঝরিণী – যাহ আপু কি ভেবেছিলাম আর কি হলো?
মিথিলা – কি হয়েছে
নির্ঝরিণী – সকাল থেকে রুপচর্চা করেছি কতো কি করেছি,যদি দুলাভাই আমার দিকে একটু নজর দেয় এখন শুনছি উনি আসে ই নি
মিথিলা- আহ হারে,কি করবি এখন….
এমন সময় মিসেস আয়মন মিথিলাদের রুমে প্রবেশ করলো
– কি কথা হচ্ছে দু বোনের মাঝে
মিথিলা তাড়া তাড়ি করে মাথায় ওড়না টেনে দিয়ে পাশে সরে গেলো
নির্ঝরিণী – আন্টি বসুন
মিসেস আয়মন মিথিলার মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে বল্লো,মাকে কেউ লজ্জা পায়, আমি ও তো তোমার আরেক মা হতে চাই,
শুনো মা প্রথম দেখেই তোমার মাঝে আমি মেয়ে মেয়ে গন্ধ পেয়েছি তাই আর দেরি করিনি,আমার তো কোন মেয়ে নেই তাই তোমাকেই আমার লাগবে
মিথিলা কিছুই বল্লো না,
মিসেস আয়মন, একটি ডায়মন্ড হার পরিয়ে দিলো মিথিলার গলায়, আমি আমার মেয়েকে এই হার দিয়ে দোয়া করে গেলাম,,
নির্ঝরিণী – আরেহ আন্টি, আপনি একা কথা বলেই যাচ্ছেন আমাকে ও কিছু বলার সুযোগ দিন
মিথিলা ইশারা করে চুপ করতে বল্লো নির্ঝরিণী কে
মিসেস আয়মন- বলো মা তুমি কি বলবে
নির্ঝরিণী – আমি আর কি বলবো আপনি তো সব বলেই দিয়েছেন, হি হি হি,তবু ও বলছি দুলা ভাই আসেনি কেনো
মিসেস আয়মন কিছু বলার আগেই ফাতেমা বেগম সেখানে এলো,,
– কিছু মনে করবেন না আপা মেয়েটা আমার এই রকম ই
মিসেস আয়মন- না না কি যে বলেন আমি বুঝতে ফেরেছি,আসো মা বসার ঘরে এসো, এই বলে মিসেস আয়মন মিথিলাকে নিয়ে গেলো,
আতাহার চৌধুরী আর মাসুম ফারুকির কাছে,
মিথিলার উপস্থিতিতে বিয়ে সামনের মাসের পনেরো তারিখে ঠিক হয়
আতাহার চৌধুরী – বল্লো আমার একটাই ছেলে,তার বিয়েতে কোন কিছুর কমতি যেন না থাকে তাই এতো লম্বা সময় নিলাম মিঃ ফারুকি,আপনাদের কোন আপত্তি নেই তো।
মাসুম ফারুকি – না,না, আমাদের কোন আপত্তি নেই কি বলো জিমির আম্মু,মাসুম ফারুকি স্ত্রী ফাতেমা কে লক্ষ করে কথা টা বললেন
ফাতেমা বেগম- তা ঠিক আছে,কিন্তু বিয়ের আগে একবার ছেলে মেয়ের দেখা দেখির ব্যাপার টা সেরে ফেললে ভালো হয়
মিসেস আয়মন- ঠিক আছে সময় করে এর মাঝে আমি একবার ছেলে কে পাঠিয়ে দিবো
আতাহার চৌধুরী- তা হলে আমরা আজ উঠি,,আতাহার চৌধুরী আর মিসেস আয়মন বেরিয়ে গেলো,গাড়িতে বসে আতাহার চৌধুরী বললো
-তোমার ছেলে কে বুঝাও মুন, ঐ ডিসকো মেয়েকে আর যাই হোক বাড়ির বউ করা যায় না
আতাহার চোধুরী আয়মন চৌধুরী কে ভালোবেসে মুন বলে ডাকে সেই বিয়ের পর থেকে তাদের মাঝে এই চুক্তি হয়,আজ অব্দি এক বিন্দু ভালোবাসার অভাব দেখা দেয়নি তাদের মাঝে
মিসেস আয়মন- তুমি চিন্তা করো না,ছেলে আর যাই করুক আমার কথার অবাধ্য হবে না,একবার বিয়েটা হয়ে যাক দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে
ইহান গেলো না তাই অরনি ও যায়নি
অরনি- ইহান তুই এভাবে ভেঙে পড়ছিস কেনো বল,দেখ জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,যাস্ট মুভ অন, ডিয়ার
ইহান মৃদু হেসে বল্লো
– ঠিক ই বলছিস জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,আবার জীবনে একা পথ চলতে ও কেউ পারে না, তুই দেখনা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানুষ একা থাকে,তার পর জীবনের বিশেষ সময় গুলো দুজনে মিলে কাটায়
অরনি- আমি বলবো তোর সেই সময় এখন ও আসেনি ইহান
ইহান- তুই আমাকে ইহান বলছিস কবে থেকে?
অরনি বিব্রত বোদ করে ইহানের কথা শুনে
ইহান- তোরা আমাকে ইহু বলিস,ইহান বলে ডাকার দরকার নেই,
অরনি কিছু বল্লো না
ইহান- দোস্ত আমি এখন উঠি রে ভালো লাগছে না কিছু
অরনি- এখন ই যাবি?
ইহান- হুম
অরনি- ঠিক আছে সাবধানে যেও
ইহান নিঃশব্দে হেসে বেরিয়ে পড়ে গাড়ি নিয়ে
ইহানের হাসি অরনি দেখতে পায়নি,দেখলতে হয়তো বুঝতো হাসিটার কারন
মিথিলা খাবার টেবিলে বসে আছে, খাওয়ার প্রতি তার মন নেই
মাসুম ফারুকি- তো মিথিলা মা,কোন কলেজে ভর্তি হতে চাস তুই
মিথিলা- বাবা কাছে কোন কলেজে ভর্তি হয়ে যাবো,,
নির্ঝরিণী – তা হলে আপি তুই ভুঁইয়া একাডেমী কলেজে ভর্তি হয়ে যা,, বাড়ি থেকে হেটে ও যেতে পারবি
মিথিলা- হুম ঠিক বলেছিস
মাসুম ফারুকি- তা হলে ফাইনালি ভুঁইয়া একাডেমী কলেজে ভর্তি হবি তাই তো
মিথিলা- হুম বাবা,কালকেই যাবো ভাবছি
আয়ান- আপু তুমি একা ভর্তি হবে তোমরা ফ্রেন্ডসদের ফেলে? একা হয়ে যাবে না
মিথিলা – জানি না,, হয়তো ওরা অন্য কোন নামী কলেজে ভর্তি হবে,,আমার ওতো নামী কলেজে যাওয়ার দরকার নেই
ফাতেমা বেগম- ঠিক বলেছে মিথি,,সামর্থ্য নিয়ে কথা,
খাবার শেষ করে মিথিলা স্টাডি রুমে গেলো,, ক্লাস শুরু হয়ে গেলে এই বই গুলো আর পড়া যাবে না, তাই আবার বই নিয়ে বসলো
পরদিন মিথিলা কলেজে ভর্তি হয়ে ফিরে এলো,, ক্লাস শুরু হতে কয়েকদিন লাগবে
নির্ঝরিণী আজ স্কুলে যায়নি,পড়া চুরি করা তো ওর নৃত্য দিনের কাজ আজ ও তাই হলো
মিথিলা জানালার পাশে বসে আছে বই নিয়ে
নির্ঝরিণী – আপি সারা দিন বই পড়তে ভালো লাগে বল
মিথিলা- প্যাঁচাল না ফেড়ে কি বলতে আসছিস বলে চলে যা
নির্ঝরিণী – ওকে.শুনো আপি পরিক্ষা শেষ করে তুমি কোথায় ও বেড়াতে যাওনি,,এখন তোমার কলেজে ক্লাস শুরু হতে ও সময় লাগবে, চল না বড় আন্টিদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি
মিথিলা- আমার ইচ্ছে নেই তুই যা
নির্ঝরিণী – আমাকে যেতে দিলেই তো যেতাম,কিন্তু আপু আব্বু আম্মু তোমার কোন কথা ফেলেনা তুমি বললে ই রাজি হয়ে যাবে
মিথিলা- তারা তো আমাকে যেতে দিবে এতে তোর লাভ কি?
নির্ঝরিণী – দূর তুমি কিচ্ছু বুঝো না, তুমি বলবে নির্ঝর কে সাথে নিতে চাই, তা হলে মা আর নিষেধ করতে পারবে না
মিথিলা কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাবলো,
– সত্যি ভালো লাগছে না, বই তো শুধু সবাইকে দেখানোর জন্য সামনে নিয়ে বসে থাকি,মূলত বইয়ের মধ্যে আমার মন বসাতে পারছি না,,কোথায় থেকে বেড়িয়ে আসলে যদি ভালো লাগে
নির্ঝরিণী ভাবছে
– আপু চুপ করে আছে কেনো নিশ্চই এটা ঝড়ের পর্বাশ, আমি নিরবে কেটে পড়ি,নির্ঝরিণী পিছু হাটতে থাকে
মিথিলা- ঠিক বলেছিস নির্ঝরিণী, চল আন্টিদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি অনেক দিন কোথায় ও যাওয়া হয়নি
নির্ঝরিণী থমকে দাড়ালো চোখ বড় বড় করে ফেল্লো,মিথিলা এতো সহযে রাজি হবে এটা নির্ঝরিণী ভাবতেই পারেনি
মিথিলা- কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা আমার আর তোর জামা কাপড় গুছিয়ে নে,আমি মা কে বলে আসি
নির্ঝরিণী – ওকে আপু
মিথিলারা তার বড় আন্টির বাসায় রওনা হলো
পুরো সাতদিন থেকে আজ তারা নিজের বাড়ি ফিরে যাবে
মিথিলার আন্টি রাহেলা বেগম কিছুতে ই বোনঝি দের যেতে দিতে চায় না,তার একটা ই কথা মিথিলা বাড়িতে গিয়ে ডুকলেই আর আসবে না, তাই আর ও কয়দিন দিন থাকতেই হবে
নির্ঝরিণী ও খুশি আন্টির কথা শুনে,মনে মনে বলছে আল্লাহ আপু যেন রাজি হয় আর ও কয়দিন থাকার জন্য
কিন্তু মিথিলা থাকবে না
– আন্টি কলেজ বন্ধ হলে অবশ্যই আসবো,আর তা ছাড়া নির্ঝরিণীর পড়া বন্ধ আজ কতো দিন,এমনিতে ও পড়তে চায় না তার উপর এতো ছাড় দিলে তো মটেও পড়বে না ও
অবশেষে রাহেলা বেগম রাজি হলো,,মিথিলারা চলে এলো বাড়িতে,
মিথিলা কলেজে যেয়ে বড় একটা শকড খেলে যাদের এড়িয়ে চলার জন্য আলাদা কলেজে ভর্তি হয়েছে তারা ও সেই কলেজে
ক্লাসে ডুকে অরনি আর ইহান কে দেখে চমকে উঠলো
অরনি- কিরে মিথি কেমন আছিস,তোকে ফোন করলে ফোন তুলিস না,তার পর কলেজে ও আসিসনি কোথায় ছিলি
মিথিলা- বড় আন্টির বাড়িতে বেড়াতে গেছি,
ইহান- কিরে মিথি তুই কি আমাকে দেখিস নি নাকি, অন্ধের মতো আমাকে ফেরিয়ে অন্য ব্যাঞ্চের দিকে গেলি
মিথিলা- দেখেছি কিন্তু কি বলবো বল,,তোরা এই কলেজে ভর্তি হবি আমি ভাবতে পারিনি
ইহান- তোর মতো টেলেন্টেড মেয়ে যদি এই কলেজে পড়তে পারে তা হলে আমরা কেনো নয়
মিথিলা- বাই দ্যা য়ে, সাম্মি রাহি ওরা কোথায়
অরনি- ওরা দুজন, রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়েছে
মিথিলা- এতো দূরে কেনো
অরনি- বলতে পারছি না
মিথিলা – ও,
মিথিলা আর কথা বলেনি,তাই সবাই চুপ
ক্লাস শেষে মিথিলা সবার আগে বেরিয়ে গেলো
অরনি- ইহান তোর এই কলেজে ভর্তি হওয়া ঠিক হয়নি
ইহান অবাক চোখে অরনির দিকে তাকায়
– তুই এই কথা বলছিস অরু, তুই তো সবার আগে আমাকে সাপোর্ট দেয়ার কথা
অরনি- স্যরি, মিথিলা তোকে এভয়েট করছে,ব্যাপার টা আমি সহ্য করতে পারছি না তাই বললাম
ইহান- এভয়েট করছে আমাকে কষ্ট হচ্ছে তোর?
অরনি- স্যরি, এমনি বলেছি
ইহান- আমি জানি অরু মিথিলা আমাকে এভয়েট করবে তবুও আমি এক ই কলেজে কেন ভর্তি হয়েছি জানিস,,একটিবার ওকে চোখের দেখা দেখবো বলে, কথা না বল্লে কি হবে দেখতে তো পাবো তাকে,আর আমার বিশ্বাস একদিন সে আমার ভালোবাসা বুঝবে
অরনি আর কিছু বলেনি,, যে যার বাসায় চলে এলো
এভাবেই মান অভিমানের মাঝে, কলেজের ফাষ্ট ইয়ার শেষ হলো
মিথিলা কখনোই নিজে থেকে ইহানের সাথে কথা বলেনি, যত টা সম্ভব এড়িয়ে গেছে সব কিছু,
এই রকম ই এক বিকেলে কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে অভ্যাস বসত বই নিয়ে বসে,এমন সময় মিথিলার পাশে এসে দাড়ালো তার মা ফাতেমা বেগম
মিথিলা বই থেকে চোখ না সরিয়ে বল্লো,কিছু বলবে মা
ফাতেমা বেগম- হুম,, কিন্তু তুই তো পড়ছিস
মিথিলা বই বন্ধ করে বল্লো,এবার বলো কি বলবে
ফাতেমা বেগম- তুই যে তোর বড় আন্টির বাসায় কয়দিন আগে বেড়াতে গেলি না
মিথিলা ফাতেমা বেগমের কথার মাঝখানে বল্লো
– কয়দিন আগে বলছো কেনো মা প্রায় নয় দশ মাস হবে
ফাতেমা বেগম- ঐ এক ই হলো, একটু থেমে ফাতেমা বেগম আবার শুরু করলেন
– তোর আন্টিদের পাশের বাসার যে ভদ্র মহিলা আছে না,তার বোন তখন বোনের বাসায় বেড়াতে এসে তোকে দেখে পছন্দ করেছে তার ছেলের জন্য,
তুই তো চলে এলি,মহিলার স্বামি ও তখন দেশে ছিলো না গত মাসে এসেছিলো,তার পর তোর আন্টির থেকে কলেজের ঠিকানা যেনে কলেজে যাওয়ার পথে তোকে দেখেছে ভদ্র মহিলার স্বামি
ভদ্র মহিলার মতো তার স্বামির ও তোকে পছন্দ হয়েছে, তারা কাল তাদের ছেলে কে নিয়ে তোকে দেখতে আসতে চায়,তোর বাবা আসতে বলে দিয়েছে তাদের,,তাই বলছি কাল তুই কলেজে যাস না,
লম্বা কথা শেষ করে থামলো,মিসেস ফাতেমা
মিথিলা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্লো
মা আমি তো এখন পড়াশুনা করছি বলো,
ফাতেমা বেগম-দেখতে এলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি, আসুক না দেখতে,আমরা ও তাদের ছেলে কে দেখি তার পর না বুঝতে পারবো,তুই এখন ই এতো টেনশন করিস না মা
রাইমা- কি জানি হবে হয় তো
মায়ের মনতো তা হয়তো অন্য কিছু বলছে আমার মন
রায়হান চৌধরী- কি ভাবছে তোমার মন?
রাইমা- শিওর না হয়ে, বলতে পারছি না, দেখা যাক কি হয়
রায়হান চৌধরী- ওকে রাই. তা হলে আমার এখন উঠতে হচ্ছে,একটা মিটিং আছে
রাইমা- তোমার তো এখন মিটিং থাকবেই, আচ্ছা বলো তো,কতো দিন আমরা এক সাথে সময় কাটাই না সেই কলেজ লাইফের মতো,
রায়হান চৌধরী- সত্যি সেই দিনন গুলো ছিলো অন্যরকম, তোমার সাথে প্রথম দেখা,তার পর প্রপোজ করা,মনে হয় এই তো সেই দিনের কথা,তুমি কতো লজ্জা পেতে তখন, অবশ্যইই এখন লজ্জা তোমার কম নয়
রাইমা চৌধরী বিব্রত হয়ে বল্লো
– তোমার না মিটিং আছে,তাড়া তাড়ি যাও
রায়হান চৌধরী, স্ত্রীর গালে টোকা দিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো,লজ্জা টা তোমার এক বিন্দু ও কমেনি রাই,
ইহান নায়াকে এয়ারপোর্ট এ নামিয়ে দিয়ে, অরনিদের বাড়ির দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো
আজকের পার্টি অরনিদের বাসায় হচ্ছে, অরনির বাবা মা দেশের বাইরে,,তাই অরনি নিজের বাড়িতেই সব এরেঞ্জ করেছে
ইহান পোঁছে গেলো অরনিদের বাড়িতে, সব ফ্রেন্ডসরা উপস্থিত আছে শুধু মিথিলা ছাড়া
ইহানের চোখ শুধু চারিদিকে ঘুরছে, শুধু এক নজর দেখার জন্য
সাম্মি- তোর চোখ যাকে খুঁজছে সে আসেনি, অরনি অনেক করে রিকুয়েস্ট করেছে আমি করেছি,,রাহি করেছে,তার একটা ই কথা সে আসবে না
ইহান- তা হলে আর কি করা বল
এমন সময় অরনি এসে বল্লো
কিরে ইহান এসে গেছিস, তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম চল গিয়ে বসি,আগে বল কি খাবি
মিথিলা স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে
অরনি ভাংগা গলায় বল্লো
– মিথি কিছু বল
অরনির কথায় মিথিলা সম্বিত ফিরে আসে
মিথিলা কঠোর কন্ঠে বল্লো
– ইহান কি করছিস কি তুই,তুই জানিস তুই কতো টা ভুল পথে হাটছিস
ইহান- আমি জানতে চাই না,আমি শুধু তোকে চাই মিথিলা
মিথিলা- এ সম্ভব নয়
ইহান- কেনো সম্ভব নয় বল?
ইহান পাগলের মতো করে বল্লো,ওহ তুই ভয় করছিস এই ভেবে যে আমার বাবা মা আমাদের মেনে নিবে না তাই তো,তুই বিশ্বাস কর আমার কথার বিরুদ্ধে আব্বু আম্মু একটা কথা ও বলবে না
মিথিলা – তা নয় ইহান,তুই এখন আবেগে ভাসছিস, ভালোবাসা কি বুঝিস না,তোর মনে প্রেম জেগেছে, আর কোন প্রেম কখনো স্থায়ী হয় না
ইহান- আচ্ছা যা মেনে নিলাম তোর কথা,, কিন্তু প্রেম থেকেই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়
মিথিলা- হয় না ইহান
ইহান- প্লিজ এমন করিস না তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না,
মিথিলা- এখন প্রথম কয়দিন কষ্ট হবে তার পর যখন তোর মন থেকে প্রেম অনুভূতিটা উবে যাবে তখন দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে
ইহান কঠোর কন্ঠে বল্লো
– তুই কি বুঝাতে চাইছিস মিথি, আমার ভালোবাসা ক্ষনিকের, কিছুদিন পর আর থাকবে না তাই তো
মিথিলা- হুম ঠিক তাই
—ঠাসসসসস ইহান শরিরে সব শক্তি দিয়ে মিথিলা কে থাপ্পড় মারে
মিথিলা টাল সামলাতে না ফেরে পড়ে যায়
অরনিরা কেউ ই এই রকম পরিস্থির জন্য প্রস্তুত ছিলো না আকস্মিক এমন হওয়াতে সবাই বিমূঢ় হয়ে গেলো
মিথিলা উঠে দাড়ালো, বাম গাল্টা প্রচণ্ড ঝলছে
মিথিলা- তুই আমাকে হাজার টা থাপ্পড় দিলে ও আমার কথার কোন পরিবর্তন হবে না, এই বলে মিথিলা পিছনে ফিরে দাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য
ইহান মিথিলার হাত ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো
প্লিজ মিথি মাফ করে দে আমাকে আমি তোকে থাপ্পড় মারতে চাইনি, তুই কেনো আমার ভালোবাসা কে সন্দেহ করছিস বল, ভালোবাসি তোকে
মিথিলা- হাত ছাড় ইহান
ইহান তবুও হাত ধরে রাখলো
– হাত ছাড় বলছি মিথিলা ঝাটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো আমি আবার বলছি, আবেগি হয়ে লাভ নেই
ইহান উঠে দাড়ালো
-তুই আমাকে বলছিস আমি আবেগ দিয়ে চলি? আমার বয়স টা আবেগের?
খুব বেশি বুঝিস তুই না,কয়েকটা বই ঘাটা ঘাটি করে খুব জ্ঞানী হয়ে গেছিস তাই না….
মিথিলা- প্লিজ আমি তোর লেকচার শুনতে চাই না,
মিথিলা আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালো না হন হন করে হেটে বেরিয়ে গেলো
ইহান মাথা নিচু করে বসে পড়লো
অরনি ইহানের কাধে হাত রাখলো,শান্তনার স্বরে বল্লো
– ভেঙে পড়িস না ইহু নিজেকে শক্ত কর,সামনে আর ও অনেক সময় আছে মিথিলা একদিন না একদিন তোকে ঠিক ই বুঝবে
ইহান কান্না কন্ঠে বল্লো
– অনেক স্বপ্ন নিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়েছি ও এভাবে আমার হাত টা ফিরিয়ে দিতে পারলো?
আমার ভালোবাসা নাকি ক্ষনিকের ও এতো দিনে আমাকে এই জানলো?
অরনি- ভাবিস না সব ঠিক হয়ে যাবে
ইহান চোখ মুছে বল্লো, অরু মিথির গালটা লাল হয়ে গেছিলো আমি তখন দেখলাম,একটু ঠান্ডাবরফ দিলে ভালো হতো
অরনি- তুই ভাবিস না সাম্মি আর রাহি ওর পিছু পিছু গেছে,ওরা ঠিক কিছু ব্যাবস্থা করবে
ইহান-ওরা আছে মিথির সাথে আচ্ছা আমি একটা ফোন করি,তখন মাথা ঠিক ছিলো না তাই ও ভাবে
অরনি- এতো টেনশন নিস না,ফোন করে দেখ ওরা কোথায়
মিথিলা বের হতেই রাহিরা
মিথিলার পিছু নিলো
– সাম্মি মিথিলা দাড়া কথা শুন
মিথিলা না দাঁড়িয়ে একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো
রিক্সা চলছে
রাহি- এই মিথি টা যে কি বুঝি না,ইহান অনেক মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ, আর সেই ইহানকে মিথিলা রিজেক্ট করলো?
সাম্মি- আর বলিস না মিথিলা একটু বেশি বাড়া বাড়ি করছে এবার
রাহি -চলতো মিথিলার বাসায় যাবো
সাম্মি- হুম চল
সাম্মি আর রাহি মিথিলাদের
বাসায় এসে কলিংবেল দিয়ে যাচ্ছে অনেক্ষন থেকে কিন্তু মিথিলা দরজা খুলছে না
প্রায় বিশ মিনিট সময় কেটে গেলো,,
মিথিলা ভালো করে চোখে মুখে পানি দিয়ে মুখ মুছে তার পর দরজা খুলতে গেলো,,মিথিলা যে কেঁদেছে এটা রাহিদের বুঝতে দিতে চায় না
মিথিলা- ওয়াশ রুমে ছিলাম,,তোরা কিছু বলবি,মিথিলা এমন ভাবে কথা বলছে যেন কিছুই হয়নি
সাম্মি- তোর ভাব দেখে মনেই হচ্ছে না, একটু আগে তুই বিরাট কান্ড ঘটিয়ে এসেছিস
মিথিলা একটু চুপ করে শান্ত কন্ঠে বল্লো
একটু আগে যা ঘটেছে তা অতিত হয়ে গেছে সুতরাং তা নিয়ে মাথা না ঘামানো ই উচিত
রাহি- তুই ইহান কে কষ্ট দিয়ে এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিস
মিথিলা- আমি কাউকে কষ্ট দিইনি কেউ যদি সেচ্ছায় কষ্ট কে ডেকে আনে তা হলে আমার কিছু করারর নেই
রাহি- ও তোর সাথে টাইমপাস করতে চায়নি,তোকে বিয়ে করতে ছেয়েছে, এ যুগে কয়টা ছেলে এ ভাবে বিয়ের প্রপোজাল দেয়,তুই বল
মিথিলা- তা হলে তোরা এটা ও যেনে রাখ,এই যুগের মানুষ খুবই ফাষ্ট, এরা প্রেম করে সময় নষ্ট করে না, বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে পুতুল খেলতে পছন্দ করে
সাম্মি- কিন্তু ইহান সবার থেকে আলাদা
মিথিলা- তোরা আমাকে ও তো সবার থেকে আলাদা বলিস,প্লিজ দোস্ত তোরা আমার বন্ধু,কারো চামচামি করিস না আমার কাছে এসে
রাহি অনেক টা রেগে বল্লো
– সাম্মি চল এখানে থেকে কোন লাভ নেই
রাহি আর সাম্মি চলে গেলে
মিথিলা স্টাডি রুমে বসে খুব কান্না করে,
আমি. আমি কি করবো. আমার কিচ্ছু করার নেই ইহান প্লিজ তুই আমাকে ভুল বুঝিস না,,কাঁদতে কাঁদতে পাগলের মতো কথা গুলো বলছে মিথিলা
সেদিন সন্ধ্যা বেলা মিথিলার বাবা মা গ্রাম থেকে ফিরে আসে
মিথিলা- বাবা এতো তাড়া তাড়ি চলে এলে যে,তোমাদের তো আর ও কয়েকদিন থাকার কথা ছিলো
মাসুম ফারুকি কিছু বলার আগে ফাতেমা বেগম বল্লো
– তোর বাবা আমাদের থাকতে দিলো কই,তুই বাসায় একা,এই চিন্তায় উনার ঘুম হচ্ছিলো না
মাসুম ফারুকি- মিথিলাকে কাছে টেনে বল্লো,বস মা,কতো দিন তোকে দেখিনি
মিথিলা-মাত্র তো তিন দিন বাবা
মাসুম ফারুকি- হা তাই তো তিন দিন তোকে দেখিনা,ভাভা যায়
নির্ঝরিণী – হা হা সব আদর মেঝো মেয়েকে দাও, আমার জন্য কিচ্ছু রেখো না
ফাতেমা বেগম বল্লো বাপ বেটি ঢং গুলো পকেটে রেখে খেতে এসো,
নির্ঝরিণী- একদম জব্দ হয়েছে,
সবাই ডাইনিং এ গিয়ে বসলো
কিছুদিন পরে মিথিলাদের পরিক্ষার রেজাল্ট বের হয়
বরাবরের মতো এবার ও মিথিলা সবার প্রথম হয়েছে
নির্ঝরিণী – আপ্পি তুই এতো ভালো রেজাল্ট করেছিস তাই আমি তোর জন্য, একটা ডিম ভাজি করে এনেছি নিজ হাতে,হি হি হিহি
মিথিলা- তো,হাসছিস কেনো
নির্ঝরিণী – তুই যে কখনো এক্সাম এ ডিম পাসনি তাই আমি তোর জন্য দয়া করে ডিম এনেছি,নে খেয়ে বল কেমন হয়েছে
মিথিলা- ডিম ভাজি খেতে ডিম ভাজির মতোই হবে,রেখে যা পরে খাবো
এর মাঝে আয়ান এসে গেলো
মিথিলা- ঐ তো আরেকজন এসেছে, কিছু বলবেন
আয়ান হেসে বল্লো
– কিছু বলবো না কিছু দিবো
মিথিলা- কি?
আয়ান- আমি যে তোর একটি মাত্র ভাই,তোর এই সাকসেস এ ভিষন খুশি তাই তোর জন্য আমার ছোট্ট উপহার,আয়ান পকেট একটি কলম বের করে দিলো মিথিলা কে
মিথিলা- কলম টা তো বেশ,আমার ভাইকে আমি ধন্যবাদ দিবো না,সত্যিকার ভাইয়ের মতো কাজ করেছে ভাইটি
আয়ান-তোর পছন্দ হয়েছে আপি
মিথিলা- খুব
আয়ান- বাবা যে টিপিনের জন্য টাকা দিতো সেখান থেকে কিছু টাকা বাছিয়ে কিনেছি ভালো হয়নি বল
আয়ানের কথা শুনে মিথিলার চোখে পানি চলে আসে গভীর মমতায় ভাইকে বুকে ঝড়িয়ে নেয় মিথিলা,
– খুব ভালো হয়েছে, আমি খুব খুশি হয়েছি
নির্ঝরিণী – ওহ শুধু ভাইকে আদর করবে আমাকে করবে না,কারন আমি তো কিছু আনতে পারিনি
মিথিলা আরেক হাত দিয়ে নির্ঝরিণী কে কাছে টেনে নিলো
আয়ান- এখানে ও তোর হিংসে তোর হিংসার জ্বালায় বাছিনা আর
*
ইহান মিথিলা এবার ও সবার প্রথম হয়েছে,,একবার ফোন করে কংগ্রাচুলেশনস জানানো দরকার
ইহান মোবাইল বের করলো কল দেয়ার জন্য
এই সময় নায়া এসে বল্লো
– ইহান কি করছিস তুই তাড়া তাড়ি রেডি হয়ে নে, আমি একটু পর বের হবো
ইহান নায়া কে দেখে মোবাইল আবার পকেটে রেখে দিলো
নায়া – কাকে ফোন করছিলি
ইহান- কাউকে না
নায়া- ওহ আমার ভাবি কে ফোন করছিস
ইহান- আপিইই,তুই ও না
নায়া- দাড়া মোম কে বলছি
মোম মোম, ড্যাড কই তোমরা বলতে বলতে নায়া ইহানের রুম থেকে বেরিয়ে যায়