Sunday, June 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 233



ফ্লুজি পর্ব-১২

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১২]

” আজ রোহানকে দেখলাম হসপিটালে ভর্তি।অনিমা তুমি যদি ছেলেটার মুখ দেখতে আঁতকে উঠতে।”

” তুমি কেন গেলে সেখানে?”

” আমার কাজ ছিল বিধায় আমি গিয়েছি।হঠাৎ দেখা হলো রোহানের দুলাভাইয়ের সাথে সে বললো সবটা।আমিও গিয়ে এক নজর দেখে এলাম।ঠোঁট ফুলে কলাগাছ জিহ্বা নাড়ানোর শক্তিও নেই।”

” পোকা কামড়েছে নাকি?”

” না না তাকে নাকি কে বিছুটি পাতা খাইয়ে দিয়েছে।চুলকাতে চুলকাতে ছেলেটার অবস্থা ভীষণ খারাপ।”

ভাতের লোকমা তুলে কেশে উঠলো খুশবু।রাত বাজে বারোটা তার মনটা উড়ো উড়ো করছে কখন আরশাদের সাথে কথা বলবে আর রোহানের ব্যপারে আপডেট পাবে।তার আগেই বাহারুল হক খবর নিয়ে হাজির।খুশবুর হাসি হাসি মুখটা দেখে জহুরি চোখে তাকালেন তার বাবা,

” আরশাদের সাথে রাতে কোথায় ছিলে তুমি?”

” কোথায় আর থাকবো রেস্টুরেন্টে।”

” তুমি যে রাতভর তার সাথে এমন ঘুরোঘুরি করছো এসব কিন্তু আমার একদম পছন্দ হচ্ছে না।আমি মেয়ে তুলে দেইনি তাই নিজের মর্জি মতো চলা বন্ধ করো।”

খুশবু মাথা ঝাকালো।বাহারুল হকের চিন্তা ভাবনায় অনিমা সায় দিলেও তবুও বিপক্ষে একটা উত্তর যেন তার তৈরি থাকে।তিনি ফোড়ন কেটে বলেন,

” এসব কি বলছো তুমি?মেয়ে তার স্বামীর সাথে ঘুরছে আমরা বাঁধা দেওয়ার কে?”

” এইজন্যই তো চুপচাপ থাকি।তবুও এটাই আমার ফাইনাল অর্ডার সাতটার মধ্যে তোমাকে বাড়তে ঢুকতেই হবে।মেয়ে বিয়ে দিয়েছে বিদায় তো আর করিনি।যেদিন মেয়ে বিদায় হবে সেদিন সারারাত বাইরে থাকবে আপত্তি থাকবে না।”

” আচ্ছা বাবা তুমি যা বলবে তাই হবে।”

খাবার টেবিলে পুনরায় নিরবতা ছেঁয়ে গেল।খুশবুর ছোট মামারা চলে গেল আজ দুপুরে তাই সারা ঘরটা কেমন নিরব শান্ত।অনিমা ভাতের লোকমা মুখে পুরে বলেন,

” নুহাটা চলে গেল ঘরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ঘরে বাচ্চা-কাচ্চা থাকলে ঘরটা আমেজে থাকে।কবে যে নিজের নাতি নাতনির মুখ দেখবো।”

অনিমার কথায় ফোড়ন কাটলেন বাহারুল হক

” নাতি নাতনির মুখ দেখা তো দূরের কথা এমন জায়গায় মেয়ে দিয়েছো সচক্ষে নিজের মেয়েকে দেখতে পাবে কি না সন্দেহ।”

“আমার মেয়ে ভালো থাকলে তাকে না দেখার আফসোস আমার জাগবে না।”

খুশবুর গলায় খাবারটা বিধে গেল।বাবা মায়ের এমন ধীর স্থির রেষারেষি আর কতকাল চলবে?
.
সাধা সিধে জীবনটায় কীভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসে জীবন পালটাতে হয় তা যেন আরশাদ থেকে শিখতে হয়।খুশবুর জীবনটা ছিল সাধাসিধা অন্যরকম।অথচ আরশাদ এসে পালটে দিল সবকিছু।তাদের ভালোবাসার বন্ধনে কেটে গেছে তিনমাস।খুচরো হিসেবে বললে এই তো চারমাসের কাছাকাছি।খুশবুর ইতালিতে যাওতার পাসপোর্ট সহ সকল কাগজ পত্র তৈরি হলেও ভিসায় গন্ডোগোল দেখা দিয়েছে।এখন শুধু ভিসার কাগজ পত্রের অপেক্ষা,একবার ভিসাটা ঠিক ঠাক হোক আরশাদ আর এক মুহূর্ত দেরি করবে না।সেদিনি উড়াল দেবে তার ফ্লুজিকে নিয়ে।

খুশবুর পরিক্ষা চলছে,এই পরিক্ষা নিয়ে আরশাদের সাথে খুশবুর খুব কম সময় কাটানো হচ্ছে।পরিক্ষার পূর্ব সময়টাতে পড়াশোনার প্রতি ভীষণ সিরিয়াস হয়ে যায় মেয়েটা অথচ সারা বছর বইয়ের সাথে তার বিচ্ছেদের প্রহর কাটে।

আরশাদ গাড়ি নিয়ে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।আরিব তার পাশে দাঁড়িয়ে এটা ওটা বিশ্লেষণ করছে।খুশবু তাড়াহুড়ো করে আরশাদের সামনে এসে দাড়ালো।বাসা থেকে ভার্সিটির দূরত্ব বেশি নয় কিন্তু খুশবু আজ একটু আগে বেরিয়েছে।অবশ্য এর পেছেনেও একটা কারণ আছে।আরশাদের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর বাহানা।আজ পরিক্ষা শেষ এরপর আবার আগের বেশভুষায় ফিরে যাবে খুশবু।

খুশবুর দিকে আগাগোড়া তাকিয়ে কিঞ্চিৎ অবাক হলো আরশাদ।ইদানীং তার মনে বাসা বাঁধছে কিছু প্রশ্নেরা।অনলাইনে যখন ফ্লুজির সাথে প্রেম চলছিল তখন সে দেখেছে ফ্লুজি সবচেয়ে বেশি খোলামেলা পোশাক পড়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।এক কথায় মেয়েটা ওয়েস্টার্ন লাভার।আর খুশবুকে শুরুর দিন থেকে দেখছে গাউন বা থ্রিপিস যেটাই পরবে ওড়নাটা এক পাশ ঝুলিয়ে চুল খোলা রাখবে।
আরশাদের মনে কিছু প্রশ্নেরা উকি দেয়। সেই মেয়েটির নাম তুবা ছিল।
খুশবুর সাথে এই মেয়েটার চাল-চলন আচার-আচরণের অনেক ফারাক যেমন তুবার সর্বদা এটা চাই ওটা চাই আরশাদের কাছে তার বায়নার শেষ নেই।আর খুশবু লজ্জায় কখনো আরশাদের কাছ থেকে কিচ্ছুটি নিতে চায় না।আরশাদের সান্নিধ্যে যেন মেয়েটার সকল প্রাপ্তি।

আচ্ছা সত্যি কি এই মেয়েটা তার ফ্লুজি নয়!আরশাদ আর ভাবতে পারে না।মাথাটা তার কেমন কেমন করছে।সত্য আর মিথ্যা সে বোঝে না জানে না।আরশাদের ভেতরের মনটা যেন বলে উঠে, তোমাকে হারালে আমি সব হারাবো।তোমাকে হারালে মুখ থুবড়ে পড়বো ঠিকানা হারানো পাখির মতো।”

আরশাদের চিন্তিত মুখটা দেখে খুশবু অবাক হলো আলতো হাতে ধাক্কা দিল আরশাদকে।

” এই কি হলো আপনার? ”

” ক..কিছু না।গাড়িতে বসো।”

আরিব খুশবুর দিকে মন বসালো সে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে,

” ভাবি আমি কিন্তু কাবাবে হাড্ডি হতে আসিনি সামনেই নেমে যাব।”

” আরিব ভাইয়া তুমি আমাকে আর তোমার ভাইকে একসাথে দেখলে পালাই পালাই কর কেন?”

” আমি চাইনা তোমার প্রাইভেসি নষ্ট কর‍তে।”

” আমাদের আবার কিসের প্রাইভেসি!”

বিড়বিড় করে বললো খুশবু।আরশাদ বুঝতে পেরে কিঞ্চিৎ হাসলো।তাদের গন্তব্য বেশি দূর নয় আরিব নেমে গেল মাঝ পথে।আরশাদের চুপচাপ মুখখানি দেখে খটকা লাগলো খুশবুর।

” আপনি আজ এমন চুপসে আছেন কেন?”

” জানি না কিছু ভালো লাগছে না।”

” আমার প্র‍তি কি বিরক্ত এসে গেছে?”

আরশাদ আচমকা ব্রেক কষলো টেনে ধরলো খুশবুর হাত।

” এসব কথা কখনো বলবে না প্লিজ তোমার প্রতি আমার কেন বিরক্ত আসবে?”

” জানি না।”

দুজনের মাঝে ছড়িয়ে গেল নিরবতা।আরশাদ মনটা খচখচ করছে।এলোমেলো তার সকল ভাবনা।

” ভিসাটা নিয়ে আপনি চিন্তিত আরশাদ?”

” একদম না ভিসা আজ না হোক কাল হবে এসব ছাড়ো।”

দুজনের কথা চললো দীর্ঘক্ষণ।ভার্সিটির কাছাকাছি আসতে আরশার গাড়ি থামালো।দুহাত আগলে জড়িয়ে ধরলো তার ফ্লুজিকে।ফ্লুজিও আজ নিজ থেকে আরশাদের কপালে চুমু খেল।দুজনের গভীর আলিঙ্গন শেষে মন খারাপেরা বিদায় জানিয়েছে।

” পরিক্ষা দেখে শুনে ভালোভাবে দেবে।যাওয়ার সময় আমি আসবো নিয়ে যাব।আজ কিন্তু সন্ধ্যায় মুভি দেখবো।ডিনার শেষে ছাড়বো তোমায় এর আগে যদি বাহারুল হক আমার নামে যু দ্ধ ঘোষণা করেন তাতেও আমি আমার বউ ছাড়বো না।”

” শ্বশুরের নাম ধরে কেউ ডাকে?”

” আমি ডাকলাম।মাঝে মাঝে মনে হয় উনি আমার শ্বশুর নয় শত্রু।”

“আরশাদ।”

” লাভ ইউ জান।এবার যাও।”
.

খুশবু পরিক্ষা শেষে প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইল আরশাদের আশায়।কিন্তু আরশাদ আসেনি।ছেলেটার কোন বিপদ হয় নি তো?দুশ্চিন্তারা এসে দখল করে খুশবুর মন মস্তিষ্ক।মনের ভুলে আজ ফোনটাও নেওয়া হয়নি, একটা খবর যে নেবে সেই উপায়ও নেই।খুশবু বাড়ি ফিরে দেখতে পেল অনিমার ফ্যাকাশে মুখ।

” আম্মু কিছু কি হয়েছে?তোমায় এমন লাগছে কেন?”

” ফ্রেশ হয়ে নে।আমি ভাত বাড়ছি।”

” না আমি এখন ভাত খাব না।তুমি বলো কি হয়েছে?”

” আরশাদ চলে গেছে মা।”

” চলে গেছে মানে?কোথায় চলে গেছে?”

” ইতালি।”

ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো খুশবু।আরশাদ তাকে না বলে চলে গেল!কেন চলে গেল?মেয়ের অবস্থা দেখে অনিমা বিচলিত হলো খুশবুকে আগলে ধরে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,

” তুই ভয় পাচ্ছিস?আরশাদ আসবে তো।ওর দাদিমাকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে উনার অবস্থা নাকি ভীষণ খারাপ।আরশাদ যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করে গেছে।”

” আমি উনার কাছে যাব আম্মু।”

” আরশাদ আসবে তো।তোর কাগজ পত্র তৈরি হলে তোকে নিয়ে যাবে।”

খুশবু উঠে দাঁড়ালো।দ্রুত নিজের কক্ষে গিয়ে ফোন চেক করলো।হোয়াটসঅ্যাপে আরশাদের মেসেজ এসেছে।

” আমার ফ্লুজি,আমি চলে যাচ্ছি মানে ভেবো না আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি।গ্র‍্যানি হসপিটাল ভর্তি।মম ড্যাড পূর্বে আমাকে এই কথা না জানালেও গ্র‍্যানির শারিরীক অবস্থা অবনতিতে আমাকে জানাতে বাধ্য হলো।সুযোগ মতো আমি তোমাকে সব আপডেট দেব।আমি জানি এখন তুমি আশাহত হয়ে ছিটকে পড়েছো তুমি শুধু বিশ্বাস রাখো আমার উপর।আমি ফিরে আসবো।আজ হয়তো আমাদের সবচেয়ে সুন্দর সন্ধ্যা হতো কিন্তু তা যে এভাবে বিষাদে রূপ নেবে কে ভেবেছিল?আমি তোমাকে এই ম্যাসেজ যখন লিখছি তখন আমার হাত কাঁপছে,একেকটা শব্দ তুলতে আমার ভীষণ কসরত করতে হচ্ছে।এক দিকে গ্র‍্যানির চিন্তা অন্যদিকে তোমাকে রেখে যাওয়ার আফসোস,শোক।
দৃঢ়তা দিয়ে বলছি আমি ফিরবো।যদি আমি ফিরে না আসি তবে তুমি আমাকে ফিরিয়ে এনো,যেমনটা আমি তোমায় ফিরিয়ে এনে পুনরায় তোমাকে বদ্ধ করেছে আমার পিঞ্জিরায়।নিজের যত্ন নেবে,নিজেকে ভালোবাসবে।আজ আবারো বলছি,এই ম্যাসেজটি যখন পড়ছো, মন থেকে ভেবে নিও তোমার চোখের জলে ভেজা ঠোঁট দুটো আমার দখলে।
চলবে___

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১২ বাকি অংশ]

” ছেলে চলে গেছে এই ছেলে আর ফিরবে কি না কে জানে।এখন রুমের দরজা আটকে শোক পালন করে কী হবে?”

” আহ চুপ করবে তুমি।মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা এবার ছাড়ো।”

” আমি কষ্ট দিচ্ছি?ওই আরশাদকে বিয়ে করতে তুমি নিজেই তো উষ্কে দিয়েছিলে অনিমা।”

” আমি উষ্কেছি?তুমি যদি রোহানের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি না হতে আমি কখনোই মেয়ের বিয়ে আরশাদের সাথে দিতাম না।তুমি নিজের মতামতের জোর খাটালে আমিও খাটালাম।”

বাহারুল হক প্রত্যুত্তর করলেন না।তবে আপন মনে বকতে বকতে চলে গেলেন নিজের কক্ষে।বাবা মায়ের ঝগড়া খুশবু সবটাই শুনলো।আরশাদ এভাবে চলে যাওয়ায় তার ভেতরটা যে কতটা পুড়ছে কেউ কি বুঝতে পারছেনা?না চাইতেও মনের কোনে উকি দিচ্ছে একটাই কথা আরশাদ কি আমায় ঠকালো?নাকি আরশাদ প্রতিশোধ নিল।আমি তো আরশাদের সেই প্রেমিকা নই আমি কেন সব দায় মাথায় নেব। অঝরে কাঁদলো খুশবু।হাতে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে তার অপেক্ষা কখন আরশাদ যোগাযোগ করবে তার সাথে!
.
টানা ১৪ ঘন্টা জার্নি শেষে বাসায় ফিরলো আরশাদ।মন মেজাজ সবটাই তার বিক্ষিপ্ত।গ্র‍্যানির চিন্তায় ছেলেটার পা গ ল পা গ ল অবস্থা।আরিবের দু’চোখ ফুলে আছে, সর্বদা হাস্যজ্বল ছেলেটা যে আজ সারাটা রাস্তায় কেঁদেছে এই কথা কি কেউ মানবে!

দুই ভাই বাড়ি ফিরে দেখা পেল বাবা ইমরান ইহসানের। দুই ছেলেকে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন তিনি।তার শ্বেত মুখখানি রক্তিম বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।কান্নার আওয়াজে এগিয়ে এলেন আরশাদের মা আফরোজা।বাঙালি মায়ের দিকে তাকিয়ে আরশাদের মনে পড়ে গেল তার ফ্লুজির কথা।মেয়েটা এখন কেমন আছে?

” মম কি করে হলো এসব?”

” তোমার গ্র‍্যানির শ্বাস কষ্ট আছে সেটা তো জানোই হঠাৎ বেড়ে গেল কি থেকে কি হলো নিজেও বুঝলাম না।হাসপাতাল নেওয়া হয়েছে অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে আরশাদ।”

” তোমরা আমাকে আগে জানাওনি কেন?”

” তোমার গ্র‍্যানি অসুস্থ হয়েছেন দুইদিন হলো আমরা ভেবেছি সবটা ঠিক ঠাক হয়ে যাবে।উনার তো মাঝে মাঝেই এমন হয়।”

” গ্র‍্যানির সাথে আমি দেখা করতে চাই।”

” এখন গিয়েও লাভ নেই দেখা করা যাবে না।কাল যেও।”

আরশাদ মাথা দুলালো।ইমরান ছেলের দিকে তাকিয়ে কাধে হাত দিয়ে বলেন,

” খুশবু কেমন আছে?”

” ভালো।”

” তাকে বলে এসেছো?”

” না।ফ্লুজির এক্সাম ছিল।আমার শাশুড়ীকে বলে এসেছি।”

” যাও বিশ্রাম করো।আরিব তুমিও তোমার ঘরে যাও।”

আরশাদ এবং আরিব দুজনে লাগেজ হাতে তুললো।আরশাদ উলটো দিকে হাটা দিতে আফরোজা বলেন,

” আরশাদ আজ আরিবের সাথে থাকো।আর না হয় গেস্টরুম ফাঁকা আছে সেখানে থাক। তোমার ভিলা পরিষ্কার করা হয়নি।”

” আমি যাওয়ার পর সব কি গোছগাছ করা হয়নি?”

” তা হয়েছে।তবে আজ আর পরিষ্কার করিনি।”

” আমি পারবো সমস্যা নেই।”

আরশাদ পুনরায় লাগেজ নিয়ে হাটা শুরু করলো।
সিড়ি ঘর পেরিয়ে নিচে তাদের স্টোর হাউজ।স্টোর হাউজের মাধ্যমে আরশাদের ভিলায় যাওয়ার শটকাট মাধ্যম।ভিলার দরজা খুলে গহীন অন্ধকারের গহ্বরে হারিয়ে গেল আরশাদ।

কতদিন পর এসেছে সে নিজের নীড়ে।তার বয়স যখন সতেরো তখন এই বাড়িটা নতুন কেনা হয়।আরশাদের অনেক ইচ্ছা নিজের মতো করে একটি ভিলা সাজাবে সেখানে তার পছন্দে সব হবে।আরশাদের প্রতিটা চাওয়া পাওয়া রাখার চেষ্টা করে তার বাবা ইমরান ইহসান।যেহেতু আরশাদের চাওয়া খুব কম আর সেই কম টুকুকে অধিক গুরুত্ব দেয় তার বাবা মা।মোবাইলের ফ্লাশ অন করে সুইচ বোর্ড খুঁজে বের করলো আরশাদ।আফরোজা প্রতিটা আসবাবপত্রে আলগা কাপড় বিছিয়ে রেখেছে যেন ধুলো জমে নষ্ট না হয়।

এসব ফেলে আরশাদ চললো দোতলায় নিজের কক্ষে।যতটা পারা যায় পরিষ্কার করে শাওয়ার নিতে প্রস্তুত হলো।একটা লম্বা শাওয়ার শেষে মোবাইল হাতে জানলা খুলে বসলো সে।বর্তমানে গরম পড়লেও মৃদু বাতাসে গায়ে কাটা তুলছে তার।বিন্দু বিন্দু জলকণা এখনো দখল করে আছে আরশাদের দেহের প্রতিটা ভাজে।আরশাদ ঘড়িতে তাকালো সময় এখন রাত বারোটা তাহলে বাংলাদেশে এখন নিশ্চয়ই ভোর চারটা।ফ্লুজি নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে।তিমিরে ঢাকা আকাশটায় তাকিয়ে মনটা হুহু করে কেঁদে উঠে আরশাদের।আকাশের নিরবতা যেন আজ তার দুঃখ বুঝে।

আকাশকে সাক্ষি রেখে আরশাদ বার বার বলতে চায়, আমি ফিরবো ফ্লুজি আমি ফিরবো।আমি ফিরবো তোমার কাছে,আমি তোমার সহিত থাকতে চাই যেমনটা অশ্রু মিশে থাকে দু’লোচনে।

আরশাদ ফোন তুলে ফ্লুজিকে মেসেজ করলো ভেবে রেখেছিল মেয়েটা ঘুমে নিশ্চয়ই এখন মেসেজ দেখবে না।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার ম্যাসেজটি সাথে সাথে সিন হলো।আরশাদ তৎক্ষনাৎ ফোন করলো তার ফ্লুজিকে।অপর পাশ থেকে ফোন রিসিভ করে নিরব হয়ে রইল মেয়েটা।

” ফ্লুজি আমার জান।”

” আমাকে একা ফেলে কেন চলে গেলেন?”

” আমি আসবো।”

” জানি।”

” বিশ্বাস করো আমায়?”

” খুব বেশি।”

” তাহলে ভয় কিসের?”

” নিঃসঙ্গতার।”

আরশাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।হিম বাতাসে তার গায়ে কাটা তুললেও বসে থাকতে মন্দ লাগছে না।

” গ্র‍্যানি কেমন আছে আরশাদ?”

” আমি দেখতে যাইনি।কাল যাবো।”

” আঙ্কেল আন্টি ভালো আছেন?”

” এই সময়ে আর কতটা ভালো থাকতে পারে।”

” ভয় পাবেন না।ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে।”

” গ্র‍্যানির তোমায় নিয়ে কতটা আহ্লাদ ছিল তুমি ভাবতেও পারবে না।আমি চাই না গ্র‍্যানি এই অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাক।”

” মনোবল রাখুন।”

” তুমি ঘুমাওনি কেন?গলা ভাঙা লাগছে কেন?”

” ঘুম আসেনি তাই ঘুমাইনি।”

” এই মেয়ে তুমি কাঁদছিলে?”

” ক..কই একদম না।আমি তো মুভি দেখছিলাম।”

” মিথ্যা বলছো আমায়?আগে পরে যা করেছো এবার আমি তোমায় সামনা সামনি দেখেছি চিনেছি বুঝেছি।কখন তোমার নিশ্বাসের তাল ঘন হয় কখন হালকা হয় আমি সবটাই জানি।পুরো তোমাকেই চিনে ফেলেছি।”

” কিন্তু আমি আপনাকে চিনতে পারিনি আরশাদ।”

দুজনের মাঝে ছেয়ে যায় নিরবতা।আরশাদ জানলা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে বিছানায়।

” আমি চলে যাওয়ার পর আঙ্কেল নিশ্চয়ই তোমাদের কথা শুনিয়েছে তাই না?”

” ক…কই..”

” মিথ্যা বলবে না।আঙ্কেল আমায় একটুও পছন্দ করেন না।তিনি নিশ্চয়ই ভেবে বসে আছেন আমি তোমাদের ঠকিয়ে এখানে চলে এসেছি।”

” হুম বলেছে।”

” যাও ঘুমাও ভিসাটা হয়ে যাক তুমিও আসবে আমার সাথে।”

খুশবু ফোন রাখলো।এই সম্পর্কের কোন নিশ্চয়তা সে পেল না।আদৌ কি আরশাদের ফেরা হবে?
.
সেই রাতে আরশাদের আর ঘুম হলো না।সকাল হতে তৈরি হয়ে সে আর আরিব মিলে চলে গেল গ্র‍্যানিকে দেখতে।সবচেয়ে খুশির ব্যপার ডাক্তাররা আশার আলো দেখিয়েছেন।গ্র‍্যানি ডেঞ্জার জোন থেকে ফিরে এসেছেন সুস্থ হতে সময় লাগলেও আশা করা যায় তিনি খুব শীঘ্রই আগের মতো ফিরবেন।

আরিবকে হসপিটালে রেখে আরশাদ তার রেস্টুরেন্টে ঘুরতে এলো।সম্পূর্ণ নিজের জমানো টাকা দিয়ে আরশাদ একটি বাঙালিয়ানা রেস্টুরেন্ট দিয়েছে।ইতালির রোমে অনেক বাংলাদেশির বসবাস।মাঝে মাঝে তাদেরো ইচ্ছে হয় কব্জি ডুবিয়ে বাঙালি খাবার খেতে।ব্যস্ততায় সব পদের খাবার সেভাবে রান্না করাও হয় না।বাঙালি মায়ের বুদ্ধিতে আরশাদ এই রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু করে।শুরু থেকেই সে সফলতার মুখ দেখেছে।পুরোটা রেস্টুরেন্টের সব কর্মচারী বাঙালি।কেউ ইন্ডিয়ান কেউ বাংলাদেশের।

রেস্টুরেন্টের একজন হাস্যজ্বল কর্মচারীর নাম রিমি।মেয়েটা পড়াশোনার তাগিদে রোমে থাকছে।আরশাদের সাথে তার ভীষণ সখ্যতা।রেস্টুরেন্টে আরশাদকে দেখেই খুশিতে আত্মহারা রিমি।

” শুভ সকাল স্যার।কেমন আছেন আপনি?”

” ফাইন।সবটা কেমন চলছে?”

” বেশ ভালো।ইমরান স্যার মাঝে মাঝে এসে সবটা চেক করে যান।স্যার আপনার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করবো?”

” না চা নিয়ে এসো।”

রিমি কিছুটা অবাক হলো।আরশাদ রেস্টুরেন্টে এসে কখনো চা চায়নি।মূলত আরশাদ চা খুব একটা পছন্দ করে না।আরশাদ কফি লাভার।কিন্তু হঠাৎ চা চাওয়ার রসহ্যটা রিমি বুঝতে পারলো না।মেয়েটার মনে খেল গেল প্রশ্নেরা।

” স্যার চা?”

” অভ্যস হয়ে গেছে।আমার উনি চা টা ভিষণ ভালো বানায়।আগে পছন্দ করতাম না আর এখন…ভিষণ মিস করছি।”

” ম্যাডাম কেমন আছে স্যার?”

” ভালো আছে।”

” স্যার ম্যাডামকে খুঁজে পাওয়ার গল্পটা বলবেন কবে?”

আরশাদ শ্লেষ হাসলো।চেয়ারে বসে ফোন হাতে তুলে বলে,

” এক কাপ চা আনো।আর যারা যারা প্রেমের গল্প শুনতে চায় তাদের ধরে আনো আজ আমি আমার গল্প শোনাবো।”

মালিক হিসেবে আরশাদ ভীষণ অমায়িক একজন মানুষ।এত মাস সবারি কৌতূহল ছিল আরশাদকি সত্যি তার ফ্লুজিকে পেয়েছে?আজ বুঝি সেই কৌতূহলের অবসান ঘটলো।আরশাদ সবাইকে সামনে বসিয়ে তার গল্প শোনাতে ব্যস্ত।

অপরদিকে জ্বরে কাঁপছে খুশবু।শরীরে যেন আগুনের লাভা সৃষ্ট হচ্ছে।একেরপর এক জল পট্টি দিয়েও জ্বর কমাতে ব্যর্থ অনিমা।খুশবু কখনো প্রেম করেনি,ভালোবাসায় মজেনি।সে জানে না প্রিয় মানুষের দুরত্ব কতটুকু পোড়ায়।আজ আরশাদের শূন্যতা তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে বদ্ধ যন্ত্রণা কাকে বলে।কাউকে বলা যায় না বোঝানো যায় না।নিরবে সহ্য করার এক ব্যর্থ চেষ্টা।
চলবে___

ফ্লুজি পর্ব-১১

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১১ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য]

” ফ্লুজি রাস্তায় সাবধানে হাটবে।”

” হুম।”

” চোখ সামলাবে।”

” কেন চোখ সামলাবো?চোখ সামলে হাটলে তো উষ্টা খেয়ে পড়বো।”

” পড়লে আমি ধরে ফেলবো। ”

” যত বাজে কথা।”

” চোখ আমার দিকে থাকবে শুধু আমার দিকে।”

” আপনি যেহেতু নেই সেহেতু অন্য দিকে তাকাতেই পারি।”

আরশাদ টুশব্দ করলো না তবে ছেলেটার দীর্ঘশ্বাসের চাপা শব্দটা ঠিকি কানে এলো খুশবুর।

” ক্লাস কয়টায় জান?”

” একটুপরে শুরু হবে।”

” শেষ হবে কয়টায়?”

” দুইটায় বের হবো।”

আরশাদ ফোন রাখলো।খুশবুর পাসপোর্ট ভিসার কাজে ইদানী সে একটু বেশি ব্যস্ত।অপরদিকে খুশবু ভার্সিটি এসেছে।পড়াশোনায় খুশবু খুব বেশি ভালো নয় মূলত ভালো খারাপের প্রসঙ্গ আসে চেষ্টায়।পড়াশোনা নিয়ে কে কতটা চেষ্টা চালিয়েছে সেই এগিয়ে যার চেষ্টায় ক্রুটি ছিল না।চেষ্টার প্রসঙ্গ আসলে খুশবু ঝুড়িতে শূন্য ছাড়া কিছুই নেই।পড়াশোনা মোটেও ভালো লাগে না তার।পরিক্ষার আগে একটু আধটু পড়ে যতটা মার্ক পাওয়া যায়।অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে পড়ছে খুশবু।দ্বিতীয় বর্ষে এডমিট হওয়ার পর থেকে একদিনো ক্লাস করা হয়নি তার।তাই কত তলার কোন রুমে ক্লাস হয় মেয়েটা তাও জানে না।

ভার্সিটির অলিতে গলিতে প্রতিটা বন্ধু দলের আড্ডা চলে কিন্তু খুশবুর কাছের বন্ধু বলে তেমন কেউ নেই।সহজে মানুষের সাথে মিশতে পারে না সে।যে দুজন বান্ধবী আছে তাদের সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয়।

” খুশবু চরকির মতো ঘুরছিস কেন?”

রিয়ার কথায় ঘুরে তাকায় খুশবু।এইতো তার বান্ধবী রিয়া এসেছে এবার তবে নিঃসঙ্গতা কমবে।

” আমাদের ক্লাস কোনটা?”

” তুই ক্লাস না পেলে আমাকে ফোন করবি তো।”

” ফোনে টাকা নেই।”

” আয় আমার সাথে।কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।”

খুশবু রিয়ার পিছু পিছু গেল।ক্লাসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল মায়া।তিন বান্ধবী একসাথে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য যখনি প্রস্তুত হলো তখনি ক্লাসে স্যার এসে উপস্থিত।স্যারের উপস্থিতিকে পাত্তা দিল না তিন বান্ধবী তারা তাদের কথাতে ব্যস্ত।রিয়া খুশবুকে উদ্দেশ্যে বলে,

” তোর বিয়ে খেতে গেলাম আর তুই নেই তুই গায়েব।সত্যি করে বল কোথায় ছিলি তুই?”

” এসব কথা আমার এখন বলতে ভালো লাগছে নারে।পরে একদিন বলবো।”

” না, পরে টরে না এখনি বলবি।তুই যে ফাঁকি বাজ আজকের পর ঠিক কবে আসবি তাও জানি না।পার্লার থেকে তুই কোথায় গায়েব হয়েছিলি?”

খুশবু সত্যটা চেপে গেল।সে জানে তাকে কি বলতে হবে।শুধু বন্ধুদের নয় প্রত্যেক মানুষকে সে একই মিথ্যা বলেছে।

” পার্লার থেকে ফেরার পথে আমাকে কিডন্যাপ করেছিল রোহানের প্রেমিকা।তারপর আমাকে একটা গুদামে আটকে রাখে।”

” সে কি এসব বিয়ে ভাঙতে করেছিল?”

” তা নয়তো আর কী?এরপর আমি দুই দিন ছিলাম সেখানে একদিন সুযোগ মতো পালিয়ে গেলাম।কিন্তু বেশি দূর যেতে পারিনি তার আগেই ধরা পড়লাম।আমি নিজেকে বাঁচাতে যখন ছুটছিলাম তখন পড়লাম একটা গাড়ির সামনে।সেই গাড়িতে ছিল আরশাদ।”

” আরশাদটা আবার কে?”

” তোদের দুলাভাই।”

” মানে কি তোর বিয়ে হয়ে গেছে?”

” হুম।”

মায়া এবং রিয়ার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে তারা তো জানতো না খুশবুর বিয়ে হয়েছে।এই মেয়ে এত চাপা কেন?সবটা আড়াল করে কী মজা পায়।

” তুই বিয়ে করেছিস একবার বললিও না।দেখি দুলাভাইর ছবি দেখা।”

খুশবু তাদের বিয়ের ছবি দেখালো।মায়া আর রিয়ার স্তম্ভিত নয়নে চোখাচোখি করলো।

” এটা কেরে ভাই।সেই মাল কোথা থেকে পেলি কি করে পেলি!কোন কোম্পানির মাল।”

খুশবু রেগে গেল দ্রুত হাতে ছিনিয়ে নিল তার ফোন।

” তোদের দুলাভাই আর তোরা মাল বলছিস ছিহ!”

” চুপ কর।এবার বল দুলাভাই কোথায় থাকে?”

” আমার মনে।”

” তা তো থাকবে এবার বল এটা কোন দেশের?”

” ইতালির।”

” তোকে কি নিয়ে যাবে?”

” হ্যাঁ।”

” তোর ভাগ্য তো সোনায় মুড়ানো।”

খুশবু চুপচাপ রইলো ক্লাসে স্যার তাদের দিকে তাকিয়ে আছে গম্ভীর চোখে।কিছুক্ষণ বাদে তাদের শুরু হলো ক্লাস টেস্ট।সারাটা সময় মুখে কলম নিয়ে বসে রইল খুশবু।আজ কোন অধ্যায়ের পরিক্ষা চলছে সে তো তাও জানে না।

.

” শুনছেন,তাবাসসুম আরা খুশবু।”

পুরুষালী কণ্ঠে নিজের নাম শুনে চমকে পেছনে তাকালো খুশবু।গরম গরম সিঙারা মাত্র মুখের সামনে ধরেছে মায়া রোহানকে দেখে আনমনে কামড় বসাতে ছ্যাকা লেগে চুপসে যায় সে।

” আমাকে দেখে চমকে যাচ্ছ কেন খুশবু?”

” আপনি এখানে কী করছেন?”

” তোমার খোঁজে এসেছিলাম।”

” বাবা তো আপনাকে বলেই দিয়েছে আমার সাথে কোন যোগাযোগ আপনি করবেন না।”

” আমি কারো কথার ধারধারি না।শুনলাম এখন যাকে বিয়ে করলে ছেলেটা নাকি বিদেশি।তা বিদেশি দেখেই কি বিয়ে করলে?দেশি চামড়ায় কি মন ভরে না?”

” মুখে লাগাম দিন।”

” লাগাম দেওয়ার মতো কোন কথাই আমি বলছি না।কয়েকদিন পর টিভিতে নিশ্চয়ই নিউজ হবে প্রেমের টানে ইতালি থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছে এক প্রেমিক।”

খুশবুর দু’চোখ টলমলে ক্রমশ শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার।কেউ তাকে আঘাত দিয়ে কথা বলবে এসব মানতে পারে না সে।রোহান তাকে একে একে অনেক কথা শুনিয়ে গেল কিন্তু কোনটার সঠিক জবাব দিতে পারলো না খুশবু।মায়া রিয়া রোহানকে চুপ করতে বললে উলটে তাদের ধমকে চুপ করায় সে।

রোহান তার কাজ হাসিল করে চলে গেল।বন্ধুদের আড্ডা বিষাদে রূপ নিলো মুহূর্তে।খুশবু কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা।অপরদিকে আরশাদ একেরপর এক ফোন করেই যাচ্ছে খুশবু ফোন তোলার নাম নেই।ক্লাস শেষ দুইটায় অথচ খুশবু ভার্সিটির গেট থেকে বের হলো তিনটার কিছুটা আগে।রাস্তার ধারে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরশাদ।তার আগুন চুল্লির মুখখানি দেখে তেমন ভাবে গায়ে মাখলো না খুশবু।

” কোথায় ছিলে ফ্লুজি?”

আরশাদের গম্ভীর স্বরে পালটা গম্ভীর ভাবে জবাব দিল খুশবু।

” ক্যান্টিনে।”

” এতক্ষণ ক্যান্টিনে কী করছিলে?”

” আড্ডা দিচ্ছিলাম।”

আরশাদ খুশবুর চিবুক তুললো।লালচে নাক,ফোলা রক্তিম চোখ আরশাদকে অতি সহজে জানান দিচ্ছে খুশবু কেঁদেছে কিন্তু কেন?

” তুমি কাঁদছো কেন?”

” ক…কই?”

“আমাদের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার নিশ্চয়ই হাসি মুখে হয়নি।প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত আমি তোমার কান্না দেখেছি তোমার সবটাই আমার মুখস্থ,কণ্ঠস্থ।

” আরশাদ আমি বাড়ি যাব।”

” আগে বলো কেন কেঁদেছো?”

” প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবেন না।”

” আমি তোমায় বিরক্ত করছি?”

আরশাদ রেগে গেল।তাতে খুব বেশি পাত্তা দিল না খুশবু।বরং পালটা রাগ দেখিয়ে সে হাটা শুরু করলো উলটো দিকে।খালি রিক্সা দাঁড় করিয়ে উঠতে নিলে তার হাত টেনে আনে আরশাদ।

” হোয়াট দ্যা হেল..”

“ছাড়ুন হাত আমি একাই যেতে পারবো।”

আরশাদ কোন কথাই শুনলো না।রাগে গজগজ করতে করতে খুশবুকে গাড়িতে তুললো সে।গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে দিল কয়েক গুন।এত জোরে গাড়ি চালানো দেখে কিছুটা ভয় পেল খুশবু কিন্তু সে কোন প্রতিক্রিয়া জানালো না।যদি এক্সিডেন্ট হয় তবে হোক।

সারাটা রাস্তায় দুজনের মাঝে কোন কথাই হলো না।আরশাদ গাড়ি থামাতে দ্রুত নেমে গেল খুশবু।তার পিছু পিছু এলো আরশাদ।অনিমা তো তাদের অপেক্ষায় ছিল, আরশাদ খুশবুকে নিয়ে আসবে এবং মেয়ে জামাই একসাথে লাঞ্চ করবে।কিন্তু বেজে গেল তিনটা তাদের আসার নাম নেই।ডোর বেল বাজতে অনিমা দরজা খুললো খুশবু দ্রুত পায়ে ঢুকলো তার পিছু পিছু প্রবেশ করলো আরশাদ।অনিমাকে সালাম জানিয়ে সেও ছুটে গেল খুশবুর পেছনে।

সেচ্ছায় রুমের দরজা রুদ্ধ করতে চেয়েছিল খুশবু।সে চায় না আরশাদের সাথে আজ আর দেখা হোক।কিন্তু আরশাদ তার পেছনে এসেই দরজা বন্ধ করলো।

” আপনি কেন এলেন আমার রুমে।”

” এটা আমারো রুম ফ্লুজি।তুমি আমার তোমার রুমটাও আমার।এখন বলো কাঁদছিলে কেন?”

” উফফ আমাকে একা থাকতে দিন।”

” নেভার এভার।”

খুশবু রাগ দেখালো বিছানায় থাকা ব্যাগটা ছুড়ে ফেললো মেঝেতে।আরশাদ পালটা রাগ দেখিয়ে গায়ের ব্লেজার খুলে ছুড়ে ফেললো মেঝেতে।আরশাদ নিজেকে স্থির করলো এক হাতে আগলে ধরলো খুশবুকে।

” আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কোন সমাধান হবে না তার থেকে ভালো দুজনে মিলে সমস্যার সমাধান করি।বলো জান, কী হয়েছে?”

” রোহান এসেছিল।আমাকে অনেক বাজে বাজে কথা শুনিয়েছে।আমি এসব বাজে কথা কেন শুনবো?কী অন্যয় করেছিলাম আমি?প্রথমে আপনি এলেন আমার নামে অনেকগুলো অভিযোগ জানালেন। এরপর, এরপর আমার জীবনটা পালটে গেল।আমি কিচ্ছু চাইনি আমি শুধু সবার চোখে আমার জন্য গুরুত্ব দেখতে চেয়েছি।অথচ দেখুন বাবাও আমাকে দূরে ঠেলে দিল,রোহান বাজে কথা শোনালো।এসব আমার ভালো লাগছে না।”

আরশাদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।খুশবুর মাথায় হাত বুলিয়ে নিরবে রাগটা দমন করলো।

” ফ্লুজি আমার জান,তোমার বিশ্বাস হয় আঙ্কেল তোমার উপর রেগে আছে?দুঃখ পেও না আঙ্কেল যা করছেন মন থেকে করছেন না জেদ থেকে করছেন।শান্ত হও এত কাঁদে না।যা হওয়ার হয়েছে রোহানের মুখোমুখি তুমি হবে তোমার পাশে আমি থাকবো।তুমি দেখিয়ে দেবে যোগ্য কাউকে তুমি পেয়েছো।”

” আচ্ছা আপনি যদি আমাকে ঠকান তখন?সবাই আমাকে নিয়ে হাসবে উপহাস করবে।”

খুশবু মাথা চেপে ধরলো তার মনে একটাই ভয় আরশাদ যদি তাকে ঠকায় তবে কি করে লড়াই করবে সে।সে তো মুখ থুবড়ে পড়বে।আরশাদ কিঞ্চিৎ হাসলো মেয়েটার অশ্রু ভেজা চোখে উষ্ম ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বলে,

” আমি যদি তোমাকে ঠকাই তবে তোমার প্রতিটি মোনাজাতে আমার ধ্বংস চেও।”

খুশবু কিছুই বললো না।চুপচাপ কাঁদলো সে।অপরদিকে আরশাদ মেয়েটার মনোযোগ ভঙ্গ করতে উঠে পড়ে লেগেছে, খুশবুর ফোঁপানো ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে শ্লেষ হাসলো আরশাদ।আচমকা খুশবু কেঁপে উঠলো আরশাদের চোখে চোখ রেখে মাথা নাড়িয়ে বলে,

” আরশাদ এখন না।”

” এখনি জান।”

” আরশাদ… ”

দু’আঙুলের সাহায্যে খুশবুর ঠোঁট চেপে ধরলো আরশাদ।খুশবু সরে যেতে চাইলে দেয়ালে ঠেসে দাঁড়ায় আরশাদ।দুহাতের বন্ধনীতে আটকে ভীতু চাহনিতে তাকালো মেয়েটা।আরশাদের ভাবাবেগ বুঝতে পারলো খুশবু নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে পালটা দৃঢ় বন্ধনীতে আটকে গেল।আরশাদ ঘোর লাগা স্বরে বলে,

” ইউর লিপস মেড মি ড্রাঙ্ক জান।”

খুশবু দু’চোখের পলক ফেললো।আরশাদ উন্মাদনায় ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো।খুশবুর সাড়া পেয় মেয়েটাকে ক্রমশ গ্রাস করলো সে।আরশাদ তার ফ্লুজির কোমড় জড়িয়ে উপড় করলো নিজের ভার রাখতে আরশাদের গলা জড়িয়ে ধরলো খুশবু।ক্রমশ অবাধ্য হলো দু’ঠোঁটের ছোয়া।অতীতের সব ভুলে আরশাদের কাছে নিজেকে সপে দিয়ে জগৎ ভুললো মেয়েটা।কিন্তু আরশাদের সাথে পেরে উঠে না সে, ওষ্ঠের লড়াইলে হাঁপিয়ে উঠলো শ্বাস আটকে আসার মুহূর্তে দ্রুত মুখ সরালো খুশবু,আরশাদ পূর্ণ দৃষ্টি রাখে প্রেয়সীর ঠোঁটে রক্তিম ফুলে থাকা ঠোঁট জোড়া তাকে যে আরো বেশামাল করে তুলছে।

” আরশাদ প্লিজ…”

” নো।”

” আর…

পুনরায় দু’ওষ্ঠের মিলন ঘটলো।এলোমেলো হলো খুশবুর ছোঁয়া।আরশাদ ক্রমাগত ঘায়েল করলো তার ফ্লুজিকে।ফ্লুজি যখন নিজের আরশাদের ছোঁয়ায় মগ্ন তখন আচমকা ফোন বেজে উঠলো।আরশাদ খুশবুকে ছাড়িয়ে নিল আবেগের দুনিয়ায় ছিন্ন হয়ে বাস্তবতায় ফিরলো সে।নিজের ভুল ভেবে জিভে কামড়ে সরে দাঁড়াতে চাইলো কিন্তু তার শার্টের কলার টেনে ধরলো ফ্লুজি।মেয়েটার চোখে অভিলাষের ঝড় বইছে আরশাদ পুনরায় ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে স্থির করতে চাইলো মেয়েটাকে।কিন্তু খুশবু জেদ ধরলো সে আরশাদকে ছাড়লো না।

” আরশাদ….

” সেম ফিলিংস জান,সামলে যাও।”

আরশাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল খুশবু।মেয়েটার অভিমানি চাহনি বুঝতে পারলো সে।খুশবুকে পেছন থেকে জড়িয়ে বলে,

“তুমি বেপরোয়া হলে আমাকে সামলাবে কে?”
চলবে___

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১১ ‘বাকি অংশ’ ]

” ফ্লুজি ঘুমাও ভোর হতে চললো।”

“আরেকটু থাকুন আরশাদ।আমার ঘুম আসবে না আজ।”

আরশাদ চুপ করে রইল।রাত এগারোটার পর থেকে তাদের কথা শুরু হয়েছে আর এখন পাঁচটা বাজতে চললো।মেয়েটার যত এলোমেলো কথা আর‍শাদ মন দিয়ে শুনল।খুশবু কখনো প্রেম করেনি প্রেমিকের প্রতি একজন প্রেমিকার অনুভূতি কেমন সে তাও জানে না।রোহানের সাথে তার কথা হয়েছে খুব অল্প কিন্তু এই অল্প স্বল্প আলাপনে রোহানের কথাই ছিল সবচেয়ে বেশি।রোহান বলেছিল তার আগামী জীবনের পরিকল্পনার কথা,তার কি চায়,কি কিনবে,কি করবে এসব।নিজেকে নিয়ে খুশবু খুব বেশি কথা বলতে পারেনি।অথচ আরশাদের কাছে নিজেকে খুচরো পয়সার মতো জমাচ্ছে সে।

আরশাদ তার সবচেয়ে বড় শত্রু,অথচ আরশাদ এখন বন্ধু হলো কী করে?তবে কি খুশবুকে ভুলে গেছে সেই দিনের কথা,যখন হুমকির মুখে ফেলে তাকে বিয়ের জন্য বাধ্য করেছিল।

” আরশাদ আমার একটা কথা মনে এসেছে।”

” কী কথা জান?”

” কাল রোহানের জন্মদিন।”

আরশাদ চুপসে গেল।খুশবুর এই দিনটার কথা মনে রাখা কী খুব জরুরি ছিল?আরশাদের নিরবতা ফসফস শ্বাসের শব্দ বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারলো খুশবু। দ্রুত সে কথা পালটে বলে,

” আমি…আমি বলতে চাইছি আসলে..”

” আসলে কী?”

” রোহান আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছিল।আমার কাছে সে একটি দামি ঘড়ি চেয়েছিল বাথডে হিসেবে তাই আরকি।”

” খুঁজে খুঁজে গিফট আদায়!ইন্টারেস্টিং।তা তুমি কি গিফট দিতে চাও?”

” সে আজ আমাকে যেসব কথা শুনিয়েছে এর পরেও..”

” আমার কথা শোনো তুমি গিফট দিতে যাবে এবং তার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলবে।”

” মাথা ঠিক আছে আপনার?”

” একদম ঠিক।এখন কোন কথা নয় ঘুমিয়ে পড়।”
.

অনিমার চেচামেচিতে ঘুম ভাঙলো খুশবুর।মেয়েটা ঘুমিয়েছে বেশিক্ষণ হলো না এর মাঝে এমন চেচামেচির টর্চার মানা যায় না।মুখ থেকে কাঁথা সরিয়ে পিটপিট চোখে তাকালো সে,

” আম্মু কি হয়েছে?”

” জামাইকে তুই কি বলেছিস?”

” আমি উনাকে কি বললাম!কই কিছু বলিনি।”

” এই ছেলে একশটা গোলাপ গাছ পাঠিয়েছে তোর জন্য। দুটো ভ্যান নিয়ে লোক দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাইরে।”

খুশবু লাফিয়ে উঠলো।কই সে তো কিছু বলেনি।এত গোলাপ গাছ পাঠানোর মানে কী?

” আম্মু আমি উনাকে কিছু বলিনি।”

” তোর বাপের বাগানে কি গোলাপ গাছ নেই?এত গাছ দিয়ে এখন তুই নৃত্য কর।আমার হয়েছে যত জ্বালা।”

খুশবু নিজেই পড়লো দোটানায়।দ্রুত হাতে ফোন তুলতে দেখতে পেল আরশাদের মেসেজ,
‘ হ্যাপি রোজ ডে মাই রোজ।একশটা ফুল দিয়ে সেই ফুল পঁচিয়ে কি লাভ?আমি না হয় একশটা গাছ পাঠিয়ে দিলাম।সারা বছর গাছ থেকে ফুল ফুটবে তুমি দু’চোখ ভরে দেখবে এতেই আমার শান্তি।”

রোজ ডে!কিসের ডে ফে কি বলছে আরশাদ।জীবনে এসব ডে পালন করেনি খুশবু।তার সিঙ্গেল জীবনে এসব দিন পালন করা বিলাসীতা ছাড়া আর কিছুই নয়।আড়মোড়া কাটিয়ে উঠে বসে খুশবু।ঘড়িতে বাজে সবে দশটা।ভ্যানের লোকদের বাড়িতে ডুকতে দেয় কাজের ছেলেটা।ভ্যান থেকে একে একে নামানো হলো একশটা গোলাপ গাছে।না শুধু লাল হয় নানান রঙের গোলাপে সেজেছে আজ খুশবুদের উঠন।

অনিমা কাজের ছেলেটাকে আদেশ করলেন সব গাছ যেন বাগানে লাগানো হয়।ছেলেটা আগ্রহ নিয়ে চললো গাছ লাগাতে।সব গাছের মাঝে টকটকে লাল গোলাপটা ছিড়ে নিজের এলো কেশ সরিয়ে কানে গুজলো খুশবু।মেয়েটার মনে আজ প্রজাপতিরা উড়ো উড়ো করছে।
.
লাঞ্চের সময়টা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে রোহান।খুশবু আজ তাকে ডেকে পাঠিয়েছে।এমন দিন যে তার কপালে আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি ছেলেটা।একটি রেস্টুরেন্টে দুজন বসে আছে মুখোমুখি।খুশবু পিৎজার স্লাইসে কামড় বসিয়ে দূর থেকে আড়চোখে তাকালো আরশাদের পানে।আরশাদ রোহানের পেছনের টেবিলে বসে।ছেলেটা জহুরি চোখে পরখ করছে খুশবুকে সে চায় না রোহান খুশবুর সাথে পালটা কোন প্রতিক্রিয়া করুক।

” এই দুপুরে পিৎজা!অন্যকিছু অর্ডার করি।”

” না না আমি ঠিক আছি।পিৎজাতেই আমার হবে।”

” হঠাৎ ডাকলে কেন?গত কালের জন্য আমি সরি আসলে মাথা ঠিক ছিল না।”

” চোরের মায়ের বড় গলা কথাটা শুনেছিলেন কখনো?”

” মানে?”

” না মানে আপনি প্রেম করলেন আপনার জন্য এতসব অথচ আপনি দোষটা দিলেন আমার।ব্যপারটা হাস্যকর না?”

” সরি রাগের মাথায়…”

” রাগের মাথা তাতে কী বিবেক বুদ্ধি কি বিসর্জন দিয়েছিলেন নাকি?”

রোহান চুপসে গেল খুশবুর কথা সে কোন গায়ে মাখলো না।

” তোমার হাজবেন্ড কোথায়?আমার সাথে দেখলে রেগে যাবে না?”

” সে তো আর জানবে না আপনি আমি একসাথে।নিন আপনার জন্মদিন উপলক্ষে আপনার গিফট।”

রোহান হতভম্ব চাহনিতে তাকালো খুশবুর পানে।ঘড়ির বক্সটা এগিয়ে নিয়ে বলে,

” সিরিয়াসলি?”

” জি।পছন্দ হয়েছে?

রোহান দ্রুত হাতে বক্স খুললো।ঘড়িটি হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাসিত সে।খুশবু অবাক হলো যে মেয়ের সাথে এই ছেলের সম্পর্ক ছিন্ন সেই মেয়ের কাছ থেকে এতটা সহজে কি করে গিফট গ্রহন করছে সে?আরশাদ ঠিকি বলেছে এই ছেলে বেহাইয়া।

রোহান ঝটপট ঘড়িটা হাতে পড়ে নিল।তার হাসি হাসি মুখ দেখে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো খুশবুর।

” গতকালের জন্য আমি সরি আসলে..”

ওয়েটার এগিয়ে এলো।খুশবুর অর্ডারকৃত পুদিনা লেমন জুসটি দিয়ে হাসি মুখে প্রস্থান করলেন তিনি।রোহান দ্রুত হাতে জুসটি মুখে তুলে কুচকে ফেললো মুখ,

” এমন কেন?”

” পছন্দ হয়নি?এই রেস্টুরেন্টে এটা আমার ফেভারিট।প্লিজ আপনি পুরোটা খান,না খেলে আমার কষ্ট লাগবে।”

রোহান হাসি মুখে পুরোটা জুস সাবাড় করলো।মুহূর্তে ছেলেটার মুখে যেন বিষ্ফোরিত হলো।মুখ চুলকে খুশবুর পানে তাকালো সে,

” আমার মুখ চুলকাচ্ছে কেন?”

” আমি কী জানি?”

” সিরিয়াসলি প্রচন্ড চুলকাচ্ছে।”

রোহান অস্থির হলো।সামনে থাকা পানির বোতল ঠেসে ধরলো মুখে।ঠোঁট চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে গেল তার সারা মুখ।খুশবু দাঁড়ালো টেবিলে ভর দিয়ে ঝুকলো রোহানের মুখোমুখি।

” গতকাল যা যা বলেছেন আমি কতটা আঘাত পেয়েছি আপনি জানেন?মানুষের জিহ্বা একটা ধারালো তরবারির সমান।শুধু একটা বাক্যে অপর মানুষের চিন্তা চেতনা ফালা-ফালা করে দিতে পারে।কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ গতকাল করেছেন আজ না হয় বোবা প্রাণি হয়ে থাকুন।ওটা পুদিনা পাতা ছিল না বিছুটি পাতা ছিল।আর রেস্টুরেন্টের নামে কেস মামলা থেকে বিরত থাকবেন না হলে ফলাফল খুব খারাপ হবে।”

খুশবু মুখ ভরতি থুথু ছুড়ে ফেললো রোহানের মুখে।গতকালের রাগ জেদ সবটাই তার এক নিমিষে গায়েব হলো।আরশাদ পেছন থেকে হাত তালি দিয়ে এগিয়ে এলো।খুশবুকে বাম হাতের সাহায্যে জড়িয়ে আগলে ধরে বুকে,

” ওয়েল ডান জান।”

শুরু থেকে শেষ সবটাই ছিল আরশাদের পরিকল্পনা খুশবু শুধু আদেশ মোতাবেক কাজ করে গেছে।
.
শান্ত স্নিগ্ধ দু’চোখের আদলে বারংবার হারিয়ে যাওয়ার কোন কারণ খুঁজে পায়না আরশাদ।যতটা দিন যাচ্ছে খুশবুর সান্নিধ্যে তার ধৈর্য ক্ষমতা কমে আসছে।কবে জানি ধৈর্য হারিয়ে কোন এক অঘটন ঘটিয়ে বসে সে নিজেও জানে না।আরশাদের বাদামী মনিজোড়া ঘোর লেগে আছে।পাশে বসে থাকা সুন্দরী রমনীর শরীর থেকে আসা মিষ্টি ঘ্রাণ তার নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।আরশাদ জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো বাম হাতের সাহায্যে এলোমেলো করলো বাদামি চুল।গ্র‍্যানির সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে গ্র‍্যানি এর মাঝে বাচ্চার কথাও বলে ফেলেছে অথচ এমন এক হিটলার শ্বশুর যে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সে কথা কি করে বোঝাবে আরশাদ।

বউ যদি প্রেমিকার মতো দূরে দূরে ঘুরে তাহলে বাচ্চা তো দূরের কথা আরশাদের এই জন্মে আর দেহের ক্ষুদা মিটবে না।গত রাতে ঘুমায়নি খুশবু আরশাদের সাথে বকবক করার মাঝে গাড়িতে ঘুমিয়েছে সে।এখন সময় রাত আটটা।বাহারুল হক দুই বার ফোন করে আরশাদকে ধমক দিয়েছেন কিন্তু আরশাদ খুশবুর ঘুম ভাঙায়নি।বউটা কাছে ঘুমিয়ে আছে ঘুমাক,সে চায় না জ্বালাতন করতে।
আরশাদের বাহুতে ঝুকে ঘুমিয়ে আছে খুশবু।আরশাদের ভ্রম হয়েছে, সব এলোমেলো ঠেকছে তার কাছে।আর কিছুক্ষণ যদি তার ফ্লুজি তার কাছে থাকে তবে আজ কিছু একটা ভুল হবেই।

এই ভুল হয়তো হওয়ারি ছিল নড়ে চড়ে আরশাদের সহিত আরো গভীরে লেপটে গেল খুশবু।ছেলেটা নিজের ধৈর্যের প্রশংসা জানিয়ে বিদায় জানালো ধৈর্যকে।ঝটকায় কোলে তুলে নিল খুশবুকে।অন্ধকার গাড়িতে আচমকা চোখ খুলে দিশাহীন মেয়েটা।

” আরশাদ আমি কোথায়।”

” আমার কাছে ফ্লুজি।

আরশাদের দেহের সাথে চেপে আছে খুশবু।নিজের অস্ত্বিত্ব বুঝতে পেরে লজ্জায় পড়লো সে।

” আপনার খালি দুষ্টুমি।আমাকে উষ্কে দিয়ে আপনি ভেগে যান।”

” তোমার বাবাকে বলো তোমাকে আমার কাছে পাঠাতে তাহলে তো আর সমস্যা নেই।”

” তখন তো অনেক সমস্যা।”

” কী সমস্যা?”

” না বলবো না।আমাকে ছাড়ুন আরশাদ আজ আর আপনার কোন কথায় আমি সাড়া দেব না।”

” সত্যি?”

” সত্যি।”

” আমিও দেখবো ফ্লুজি।”

আরশাদ শ্লেষ হাসলো খুশবুর গলায় আঙুল ছোঁয়াতে ছিটকে দূরে সরতে চাইলো সে।আরশাদ কি করে বুঝলো তাকে সিডিউস করার মতো সহজ মাধ্যম গলা।খুশবু নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আরশাদ বাঁকা হাসে।উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়ায় ছুঁইয়ে দিতে থাকে মেয়েটার গলদেশ।আরশাদের প্রতিটি ছোঁয়ায় নিজের জেদের কাছে সহজে হেরে গেল খুশবু।আরশাদের চুল খামছে জানান দিল তার চাওয়া।তৎক্ষনাৎ বেজে উঠলো আরশাদের ফোন।বাহারুল হক ফোন করেছেন।খুশবু রেগে গেল অসহায় চোখে তাকালো আরশাদের পানে।তার মনের কামনা বাসনা প্রতিবার এভাবে বিফলে যায়!আরশাদ তাকে উষ্কে দিয়ে কি মজা পায়?খুশবুর রাগান্বিত চাহনিতে ঠোঁট উল্টে আরশাদ বলে,

” সরি জান আমার কী দোষ?”
চলবে___

ফ্লুজি পর্ব-১০

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১০]

” আমার ফ্লুজি ফুল আর লাগবে?”

” দোকানে কী আর ফুল নেই?”

” না নেই।তোমার কি আরো লাগবে?অপেক্ষা করো ব্যবস্থা করছি।”

আরশাদ পকেট থেকে ফোন বের করলো।খুশবু অবাক হলো এই ছেলেটা বোকা নাকি?কম করে হলেও এখানে পাঁচশত গোলাপ ফুল আছে।আরশাদের কান্ড সকলে অবাক হয়ে দেখছিল।আত্মীয় স্বজনের মাঝে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আগে পড়েনি খুশবু।আরশাদ পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছলো ছেলেটা সে হাঁপিয়ে গেছে তা বুঝতে বাকি নেই অনিমার।খুশবুকে চোখ ইশারায় আরশাদকে রুমে নিয়ে যেতে বলেন তিনি।

” আরশাদ আমার সাথে আসুন।”

দ্বিমত করলো না আরশাদ।সে ছুটলো তার ফুলের পেছনে।

” ফুল পছন্দ হয়েছে ফ্লুজি?”

” এসব করার কি দরকার ছিল আরশাদ?”

” সব কি দরকারেই করতে হবে?মন থেকে কি করা যায় না?মনের শান্তির জন্য করেছি।আমার ফুলকে আমি ফুল দিয়েছি।”

” বাজে কথা।”

” তুমি ফুল আমি মৌমাছি।”

” মৌমাছি কিন্তু মধু আহরণের পর ফুলকে ফেলে যায়।”

“তুমি জান না ফুল মধুর বিনিময়ে মৌমাছির গায়ে জড়িয়ে দেয় রেণু।”

খুশবুর ফোন এলো অন্য কেউ নয় রোহান ফোন করেছে।আরশাদ ফোন রিসিভ করে চুপচাপ বসে রইলো।অপরপাশ থেকে শোনা গেল রোহানের উৎকণ্ঠা কণ্ঠ।

” খুশবু কেমন আছো?ফোন ধরো না কেন?প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না আসলে, আসলে তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি পুরোনো সম্পর্কের কথা জানাতে চাইনি।”

” সো হোয়াট?”

আরশাদের কথায় চমকে গেল রোহান।

” এই কে আপনি?”

” সুনু সুও মারিটো।”

” হোয়াট?”

আরশাদ আফসোস সুরে বলে,

” কে ই ফরতুনা।”

রোহান যেন গোলকধাঁধায় পড়লো।কে এই লোক,সে কি বলছে?খুশবুকে চেপে বসে আছে আরশাদ মেয়েটা পাশে বসে হেসে কুটিকুটি অবস্থা।রোহান ফোন কাটলো চটজলদি ফোন করলো বাহারুল হক’কে কিন্তু ব্যস্ততায় তিনি খেয়াল করলেন না কে ফোন করেছে।

দ্বিপ্রহর খাওয়া দাওয়ার আয়োজন শেষে বিদায়ের পালা।কনে বিদায়ের জন্য সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল অপরদিকে আরশাদ আরিব আজ বেজায় খুশি তাদের পরিবারের নতুন সদস্যকে বরণ করবে বলে।কিন্তু তাদের খুশিতে আজ কাঁটা তারের দেয়াল সাজালেন বাহারুল হক।বিদায়ের সন্ধিক্ষণে আরশাদকে বুকে জড়ালেন তিনি এবং অমায়িক স্বরে বলেন,

” বাবা আজ আমি যে মেয়ে বিদায় দিতে পারবো না।আমি সেই প্রস্তুতি রাখিনি।মেয়ে বিদায় দেওয়ার সেই ভরসা আমি পাচ্ছি না।অন্তত নিশ্চিয়তার ভরসার হাত আমি যতক্ষণ না পাচ্ছি আমি মেয়ে বিদায় দিতে পারবো না।”

বার্তা বিহিন হৃদ কম্পনে আরশাদ থমকে গেল।পূর্ণতার দলিল নিয়ে খালি হাতে ফিরে যাওয়ার তো কথা ছিল না।অনিমা চোখে চোখ রাখল আরশাদ।তিনি এই মুহূর্তে কিছুই বলার সাহস পেলেন না।বাহারুল হক সম্পূর্ণ ব্যপারটা দায়িত্বশীল হয়ে শেষ করেছেন।এই বেলায় এসে যখন এমন একটা যুক্তি দাঁড় করালেন তখন কিছু বলার সাহস নেই অনিমার।আরশাদ যেন বুঝলো না শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে সে বলে,

” বুঝলাম না,আপনি কী বললেন আঙ্কেল?”

” তোমার বাবা মা দুজনেই জীবিত।তারা বিয়েতে উপস্থিত নেই কিন্তু কন্যা সম্প্রদানে তাদের যে আমার চাই।তোমার বাবা না আসুক মা আসবে, মা না থাকুক বাবা আসবেন।আমার একমাত্র মেয়ে এভাবে মেয়ের বিদায় আমি দিতে পারি না।এই ব্যপারে যে তোমার বাবা মায়ের উপস্থিতি কাম্য।”

কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনলো খুশবু।তবে মনে চেপে থাকা ভয় কিছুতেই আড়াল করতে পারলো না সে।আরশাদ কী এখন বাবার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করবে?ছিনিয়ে নিতে চাইবে তার বাবার কাছ থেকে।বাবার ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজকন্যা সে অপরদিকে দাম্ভিক রাজার রানী সে।সম্পর্ক যে পাল্টেছে, দোটানায় পড়ে স্রোতের বিপরীতে চলতে চায় না খুশবু।আরশাদ স্থির রইলো বাহারুল হকের সিদ্ধান্তে সম্মতি জানালো।

” আমি আমার বাবা মা’কে নিয়ে আসবো খুব শীঘ্রই আসবো।সেদিন না হয় আপনি বাকি দায়িত্ব পূরণ করবেন।”

স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো সকলে।আরশাদের সম্মতিতে বুক থেকে ভারি পাথর সরলো খুশবুর।
.
খুশবুর বিয়ের খবর চারিদকে যেন বাতাসের গতিতে ছড়িয়েছে।রোহানরা যখনি খবর পেয়েছে ছুটে এসেছে।ঝগড়া-বিবাদ, হুমকি-ধমকি কোন কিছুতে পিছ পা হলেন না তারা।শেষ পর্যন্ত মামলা করার হুমকি দিয়ে গেল রোহানের পরিবার।এসবে কিন্তু নিরব খুশবুর পরিবারের সকলে অযথা ঝুট ঝামেলায় জড়িয়ে এদের উস্কে দেওয়ার মানে নেই।
.
সকাল এগারোটায় ঘুম ভাঙলো খুশবুর।দ্রুত তৈরি হয়ে নাস্তার উদ্দেশ্যে রান্না ঘরে যেতে দেখা হলো তার বাবার সাথে।বাহারুল হক যেন মেয়েকে এড়িয়ে যেতে চাইলেন।সরল মনে খুশবু বলে,

” বাবা কি খুঁজছিলে?মা কোথায়?”

” জানিনা।”

থমথমে মুখ নিয়ে সরে গেলেন বাহারুল হক।বাবার ব্যবহারে খুব বেশি অবাক হলো না খুশবু এই তো গতরাতে খাওয়ার সময় তাকে ডাকেনি।প্রতিদিনের মতো আদর করে পাতে এক চামচ ভাত তুলে দেয়নি।বাবার এড়িয়ে যাওয়া কি খুশবু বুঝে না?খুব করে বুঝে।

” বাবা আমার বিয়ে নিয়ে কি তুমি খুশি নও?”

” তোমার জীবন তোমার সিদ্ধান্ত বাবা হিসেবে যত যা দায়িত্ব আছে আমি পূরণ করেছি।এখন আবার ভাববে শ্বশুর বাড়িতে কেন যেতে দিলাম না?সেটাও আমার দায়িত্ব দেখে শুনে মেয়ে পাঠাবো এর আগে নয়।”

অনিমা এগিয়ে এলো বাহারুল হকের মন কষাকষি একদিন যে থাকবে না তিনি তা জানেন খুব ভালো করেই জানেন।বাহারুল হক চলে গেলেন নিজের কক্ষে। বাবার পানে খুশবু তাকিয়ে রইলো শূণ্য চোখে।

” খুশবু খেয়ে দেয়ে দ্রুত রেডি’হ আরশাদ আসবে।”

” কেন আসবে।”

” তোকে নিয়ে যাবে পাসপোর্টের কাজ আছে তো।”

” ওমা এসবের কি কাজ?”

“ছেলেটা বিয়ে করেছে কি বউকে ফেলে যাবে বলে?তোকেও নিয়ে যাবে।”

” আর তুমি সেই কথা খুশি হয়ে বলছো?তোমার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না।”

অনিমা চাপা হাসলেন।খুশবুর পিঠে হাত বুলিয়ে বলেন,

” তুই সুখে থাকবি এর চেয়ে আনন্দ আর কিছুতে নেই।”

” এত গ্যারান্টি দিচ্ছ কি করে আমি সুখে থাকবো?”

” খারাপটা ভাবতে নেই মা।মনে রাখবি সব সময় ভালো কিছু ভাবতে হয়।”
.
অনেক্ষণ হলো ড্রয়িং রুমে আরশাদ এসে বসেছে।অনিমা নাস্তা নিয়ে ছোটাছুটি অবস্থা বাহারুল হক আরশাদের সাথে দেখা করলেন না।মেয়ে জামাই নিয়ে তিনি যে খুশি নেই বেশ বুঝতে পারে আরশাদ কিন্তু সে যে এসব গায়ে মাখবে না।সে খুশবুকে ভালো রেখে দেখিয়ে দেবে অযোগ্য ছেলের কাছে বাহারুল হক মেয়ে দেননি।

খুশবু এলো ধবধবে সাদা থ্রিপিস পড়ে।লম্ব চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে কেমন হেলেদুলে হাটছে।মেয়েটাকে দেখেই আরশাদ চমৎকার হাসলো।

” ওই তো আমার জান এসেছে।”

দুই শ্বাশুড়ির সামনে এমন কথা বলে বেশ লজ্জায় পড়লো আরশাদ।অনিমা নিজেও লজ্জায় পড়লেন।নেহা মামি শ্বাশুড়ি বিধায় কিছু বলতে পারলো না, তা না হলে এতক্ষণ আরশাদকে টিপ্পনী কাটতে একবিন্দুও ছাড়তেন না।আরিব লাগাম ছাড়া ছেলেটা লাগাম ধরতে পারলো না আচমকা শব্দ করে হেসে উঠলো সে।খুশবু বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান ধরে চুপসে রইলো।আরশাদ খুশবুর উদ্দেশ্যে বলে,

” চলো যাই।”

” বাবার সাথে দেখা করেছেন?”

” আমাকে দেখেই তো রুমের দরজা লাগিয়েছেন।আমার প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই।”

খুশবু মাথা নামালো।বাড়ির নতুন জামাইকে এভাবে অপমান না করলে কি হয় না?বাবা এতটাই মনে কষ্ট রেখেছেন!আরশাদ খুশবুকে হাত ধরলো এবং চোখে চোখ রেখে বলে,

” ফ্লুজি তুমি কি মন খারাপ করছো?আমি কিন্তু এই ব্যপারটা সামান্য হিসেবে নিয়েছি।আমাকে আজ তার অপছন্দ কিন্তু আগামী বছর একই সময় তিনি হয়তো আমাকে অপছন্দ করার মতো কোন কারণ খুঁজে পাবেন না।স্থান কাল সময় আমাদের রুচি অভ্যস চাহিদা পাল্টে দেয়।”
.
পাসপোর্টের কাজ নিয়ে আজ সারাটা দিন গেল আরশাদের।সন্ধ্যার পর দম ফেলার মতো সুযোগ পেয়েছে তারা।খিদায় নাজেহাল অবস্থা সবার।একটি রেস্টুরেন্টে এসে আরিব ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে যে বসেছে আর উঠতেই চাইলো না।আরশাদ তাকে অনেকবার বললো ফ্রেশ হয়ে নিতে কিন্তু কে শুনে কার কথা আরিব নাছোড়বান্দা সে কিছুতেই উঠবে না।বাধ্য হয়ে আরশাদ একাই গেল ফ্রেশ হতে।খুশবুর অপ্রস্তুত ভাবটা দেখে আরিব বলে,

” ভাবি তোমাদের সব ঠিক ঠাক?”

আরিবের প্রশ্নটা ঠিক কি নিয়ে বুঝতে পারলো না খুশবু তবুও মাথা নেড়ে বলে,

” হ…হ্যাঁ ঠিক ঠাক।”

আরিব আশেপাশে তাকালো আরশাদ আসছে কি না নিশ্চয়ই সেটা পরখ করছিল সে।

” তোমার সাথে ভাইয়ার যখন ব্রেকাপ হলো সেদিনি ভাইয়া একে একে তোমার জমিয়ে রাখা সমস্ত স্মৃতি মুছে দিল।তুমি তো জানো ভাইয়ার বেডের পেছনে তোমার ছবি ছিল সমস্ত ছবি ভাইয়া পুড়িয়ে ফেলেছিল।ফোন ল্যাপটপ কোথাও তোমার কোন ছবি ভিডিও রাখেনি।এর মাঝে তুমি তোমার সব
সোস্যাল একাউন্ট ডিলেট করে দিলে কোন ভাবেই তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।আমরা সকলে দিনের পর দিন দেখে গেছি ভাইয়ার জেদ, পাগলামি,রাগারাগি।ভাইয়া হঠাৎ থেমে গেল পাগলের মতো খুঁজতে থাকলো তোমাকে।কেউ তোমার খোঁজ দিতে পারেনি।মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়লো ভাইয়া তার চাকরিটাও ততদিনে ছেড়ে দিয়েছিল।একদিন হঠাৎ ভাইয়ার খিঁচুনি উঠলো এরপর একেক দিন একেক সমস্যা দেখা দিল।রাত দিন ফ্লুজি ফ্লুজি ফ্লুজি।ড্যাড ভাইয়াকে সাহস দিলেন যে করে হোক খুঁজে বের করা হবে তার ফ্লুজিকে।এভাবে কেটে গেল দুইমাস।ভাইয়া ধীরে ধীরে সুস্থ হলো।লোক লাগালো তোমাকে খুঁজতে থাকলো।আটাশ দিন পর খোঁজ পাওয়া গেল তোমার কিন্তু তখন তোমার বিয়ে ঠিক তুমি ব্যস্ত বিয়ে নিয়ে।ভাইয়া বুঝতে পারলো তুমি তাকে ঠকিয়েছো।তোমাকে খু ‘ন করার সিদ্ধান্ত নিল সে আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোমার মুখোমুখি হবে।কখনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোমার আগের হাজবেন্ডকে গায়েব করে দেবে। এমন অহেতুক হাজার খানেক ভাবনা ছিল ভাইয়ার মাথায়।জানো মম তাকে অনেক বুঝিয়েছে গ্র‍্যানি নিজেও কত কি করলো।কিন্তু দিন শেষে ভাইয়া নিজের সিদ্ধান্তে অটল, সে আর কাউকে না তোমাকে গায়েব করবে।হঠাৎ করে ভাইয়া নিখোঁজ তারপর জানতে পারি ভাইয়া দেশে এসেছে। এরপরি তো এতসব।তবে তোমাকে যে বিয়ে করবে তা তো আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি তোমার প্রতি ভাইয়ার জমেছিল বিতৃষ্ণা।এই বিতৃষ্ণা থেকে বিয়ে…ব্যপারটা ইন্টারেস্টিং না?”

আরশাদকে আসতে দেখে আরিব থামলো।ভয়ে জড়োসড়ো অবস্থা খুশবুর।প্রথম দেখায় আরশাদের সাথে তার মুহূর্ত গুলো সুখকর ছিল না।আরশাদের চোখে দেখেছিল তার প্রতি ঘৃণা কিন্তু হঠাৎ আরশাদ তাকে বিয়ে করলো কেন?বিদেশ নিয়ে মা র বে বলে?

” জান শরীর খারাপ লাগছে?”

চমকে তাকালো খুশবু আরশাদ তার হাত ধরেছে কপালে ছুঁইয়ে দেখছে জ্বর আছে কি না।কিন্তু এই মুহূর্তে আরশাদকে তার জম ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।

আরিব উঠে দাঁড়ালো আড়মোড়া ভেঙে বলে,

” ব্রো তোমরা থাকো আমি পার্সেল নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি।”

” ওকে সাবধানে যাও।গাড়ি নিয়ে যাও আমরা চলে যেতে পারবো।”

আরিব গাড়ির চাবি নিয়ে চলে গেল কিন্তু কিছু ভেবে পুণরায় এলো সে আশাদের উদ্দেশ্যে স্বগোতক্তিতে বলে,

” সুযোগ করে দিয়েছি ব্রো।এমন ভাই আর পাবে না।”

” আরিব গো টু হেল।”

ওয়েটার খাবার দিয়ে গেল।একটু খাবারো ছুঁয়ে দেখলো না খুশবু।তার যে মনে ভয় ঢুকেছে আরশাদ কি সত্যি তাকে মা র তে চায়?আচ্ছা ইতালি নিয়ে কি তাকে মে রে ফেলবে?খুশবুর আতঙ্কগ্রস্ত মুখ দেখে আরশাদ বলে,

” জান কি হয়েছে?”

” আমি বাসায় যাব।”

” যাবে তো খাবারটা শেষ কর।”

” আমি ইতালি যাব না আরশাদ।”

” বাট হোয়াই ফ্লুজি?”

খুশবু কথা খুঁজে পেল না।কি বলবে সে?আরশাদ ততক্ষণে চামচে খাবার নিয়ে বসে আছে।

” হা করো জান।”

” আমি খাব না।”

” কেন?”

এবারেও কোন উত্তর খুঁজে পেল না খুশবু। আরশাদ খুশবুর গাল চেপে চামচ ভরতি ফ্রাইড রাইস পুরে দিল।

” আমি সত্যি বলছি আমি যাব না।”

” বাজে কথা শুনতে চাই না ফ্লুজি।”

দাঁতে দাঁত চেপে বললো আরশাদ।দ্বিতীয় বারের মতো চামচে খাবার নিয়ে খুশবুর মুখ চাপলো।আরশাদের রাগী রাগী মুখটা দেখে কি বলবে বুঝতে পারলো না মেয়েটা।তবুও খুশবু যে চুপ থাকার পাত্রী নয়।আরশাদের উদ্দেশ্যে সে বলে,

” আরশাদ একটা কথা বলবো?

” বলো জান।”

” আপনি কি আমায় ইতালি নিয়ে মে রে ফেলবেন?

” আমি মারার আগে প্রতি রাতে তুমি নিজেই বলবে, প্লিজ কি’ল মি জান।”

মুখের খাবার ছিটকে বেরিয়ে এলো খুশবুর।কাশতে কাশতে মেয়েটার দম আটকে যাওয়ার অবস্থা।আরশাদ বাঁকা হেসে চোখ মারলো।খুশবু কাশতে কাশতে বলে,

” অসভ্য লোক।”

” তুমি আমার অসভ্যর কারণ জান।”
_চলবে…

ফ্লুজি পর্ব-০৯

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৯]

” দুলাভাই আপনার সব সিদ্ধান্তে আমি সহমত পোষণ করলেও এই ব্যপারটা নিয়ে এক হতে পারছি না।”

শামীমের কথায় আড় চোখে তাকালেন বাহারুল হক।আরশাদের পরিবার যাওয়ার পর সবাই তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে।বাহারুল হক বিস্তার হাসলেন,

” সবাই দেখছি উঠে পড়ে লেগেছো আমার বিরুদ্ধে।”

” এমন সিদ্ধান্ত নিলে বিরোধিতা করবে না কেন?”

শেষোক্ত কথাটি অনিমা ঝাঁঝালো গলায় বললেন।খুশবু পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বাবা মায়ের মন কষাকষি দেখছে।

” দুলাভাই এই ছেলের বিয়ের আগেও সম্পর্ক ছিল সেই কথা আমাদের থেকে গোপন করেছে মানলাম কিন্তু খুশবুর কাছে প্রকাশ করলো না কেন?বিয়ের আগে সবটা ক্লিয়ার করে নেওয়া দোষের কিছু না।”

” বর্তমান সময়ে এসে প্রেমের ব্যপারটা চায়ের সাথে বিস্কুটের মতো।থাকলেও চলে, না থাকলেও চলে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সকলেই এখন প্রেম করছে বিয়ের আগে সম্পর্ক থাকতেই পারে।”

” আমি মানলাম থাকতে পারে।কিন্তু একটা কথা ভাবুন তাদের সম্পর্ক কতটা গভীর হলে মেয়েটা বিয়ে বাড়িতে এসে ঝামেলা করে।”

বাহারুল হক ব্যপারটা প্রতিবার এড়িয়ে যাচ্ছেন।তিনি শুধু জানেন রোহানের একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল ব্যস এতটুকু।কিন্তু এই সম্পর্কের নেপথ্যে কি চলছিল তা কি বাহারুল হক জানেন?একাধিক মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক,মিথ্যা প্রতিশ্রুতি সবটাই রোহানের নিকট পুতুল খেলার মতো সহজ।সহজ সরল ভদ্রতার লেবাসধারী রোহানের পেছনের গল্প খুশবুর পরিবারের কাছে যে অজানা।

বাহারুল হকের এড়িয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারলেন না অনিমা।তিনিও জেদ ধরে বসলেন আর যাই হোক রোহানের কাছে মেয়ে দেবেন না।

“তোমাকে আমি বলে দিচ্ছি পস্তাবে পস্তাবে নিজের সিদ্ধান্তে তুমি পস্তাবে।”

” অনিমা একদম চেচামেচি করবে না।আরশাদ যে ভালো তার প্রমান কী?”

শামীম এগিয়ে এলো বিনয়ের সহিত বাহারুল হককে বলেন,

” মোশারফ ভাইকে তো আপনি চেনেন জানেন।তিনি নিজে আমাকে ভরসা দিয়েছেন।”

” নিজের ভাগিনার ব্যপারে কেউ কি বাজে কথা বলবে?”

” মোশারফ ভাই সৎ এবং সত্যবাদী।একবার বিশ্বাস করেই দেখেন দুলাভাই।”

” আমি রোহানের মা’কে কথা দিয়েছি।তোমরা আরশাদের ব্যপারটা ভুলে যাও।”

অনিমা রেগে গেলেন।এই প্রথমবার স্বামীর সিদ্ধান্তে তিনি ঘোর বিরোধী।

” কথা যখন দিয়েছো তখন কথা তুমি ফিরিয়েও নিতে পারবে।”

” অনিমা জেদ করে লাভ নেই।আমি কথা ফিরিয়ে নিতে পারবো না।”

” তাহলে আমি দেব।”

” তোমাদের যা ইচ্ছে তোমরা করো এসবে খবরদার আমাকে টানবে না।”

” সত্যি যা ইচ্ছে তাই করবো?”

” অন্ধ হয়ে গেছ।”

” অন্ধ হয়েছো তুমি।আজকেই চলে যাব ভাইয়ের বাসায় থাকবো না তোমার সাথে।”

ফজরের আযানের সুর ভেসে এলো।ঝগড়া বিবাধে কখন যে ভোর হয়ে এলো কেউ টের পেল না।শামীম নেহা যে যার ঘরে চলে গেল।অপরদিকে অনিমা মনে মনে কষলেন এক জটিল সিদ্ধান্ত।
.

“খুশবু আম্মু উঠে যা।কইরে আম্মু উঠ।”

এত আদরের ডাক পেয়ে আচমকা খুশবু চোখ খুলে তাকায়।ভোরে যখন যে যার কক্ষে ফিরেছিল তখনো খুশবুর ঘুম আসনি।সারাটা সময় ছটফট করেছে মেয়েটা।তার চোখ লেগেছে আধা ঘন্টা আগে অথচ এখনি অনিমার ডাক,তাও কি না এত আদর সোহাগ মাখিয়ে!

” আম্মু মাত্র আটটা বাজে এখন… ”

“ছেলে পক্ষের মেহমান চলে আসবে উঠে আয়।”

” ছেলে পক্ষ মানে?”

“আগামীকাল নয় আজকেই তোর বিয়ে।বেশি কথা বলতে পারবো না তুই এক্ষুনি উঠে গোসল সারবি।”

” আম্মু….”

” চুপ কোন কথা নয় দেরি হলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”

খুশবু উঠে বসল ফোন চেক করে আরশাদের কোন আপডেট পাওয়া গেল না।গতকালের মেসেজ চেক করে কোন রিপ্লাই নেই।খুশবু আবার মেসেজ পাঠালো আরশাদকে এবং জানাল আজকেই তার বিয়ে।আরশাদ মেসেজটি সিন করে রেখে দেয়।প্রায় বিশ মিনিট পর রিপ্লাই দেয়, ” বিয়ে যখন হচ্ছে করে নাও আর কিছু বলার নেই।”

এক নিমিষে চুরমার হয়ে গেল খুশবুরব সকল আশা।আরশাদ কথাটা এভাবে বললো কেন?তবে কি আরশাদ তাকে ঠকিয়েছে!হতাশার সাগরে ডুবে ম রা র অবস্থা হয়েছে মেয়েটার তবুও বাইরে থেকে সে নিরব।কিন্তু রোহান যদি আজ বিয়ে করতে আসে তবে একটা না একটা অঘটন ঘটবেই আর তা ঘটাবে খুশবু নিজে।মনে মনে নিজের সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করলো সে।
.
অনিমা এবং নেহার রান্না ঘরে ব্যস্ততা চলছে।শামীম সবকিছু তদারকি করছে।কিয়ৎক্ষণ বাদে উপস্থিত হয় খুশবুর বড় মামা,খুশবুর ছোট খালা এবং ফুফু। বাহারুল হক অবাক হয়ে দেখছেন সব।কি চলছে?তিনি রান্না ঘরে উপস্থিত হলেন অনিমার দিকে তাকিয়ে কঠোর হয়ে বলেন,

” কি হচ্ছে এসব?”

” তোমার মেয়ের বিয়ে তাই কাছের মানুষেরা এলো।এদের ছাড়া তো আর বিয়েটা সম্পর্ণ হয় না।”

” বিয়ে!কি বলছো অনিমা।”

” গতরাতে কি বলেছিলে মনে নেই?আমার যা ইচ্ছা আমি যেন করি তুমি এসবে নেই।তোমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি।”

” সহ্যের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছি তোমার এসব বাচ্চামো রাখো।”

অনিমা বাহারুল হকের কথায় গা দিলেন না।তিনি তার কাজে ব্যস্ত।সকাল দশটা বাজতে আরশাদের পরিবার এসে উপস্থিত হয়।সফেদ সাদা পাঞ্জাবিতে আরশাদকে ভীষণ মোহনীয় লাগছিল।বাহারুল হক কি করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না,কেমন বেমিল হিসাবে আটকে গেলেন তিনি।অপরদিকে খুশবুর পরিবারের বাদ বাকি সদস্যরা ভীষণ অবাক এমন ভীনদেশী ছেলেকে কি করে খুঁজে পেল!সকলের মাঝে চলছিল ভীষণ কানাকানি।

আরশাদ যেন গতদিনের কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে।সে হাসি হাসি মুখে কোলাকুলি করলো বাহারুল হকের সহিত।আরশাদ সবার সাথে বিনয় হয়ে সাক্ষাৎ করছিল,তার বাংলা কথা শুনে সকলের বেহুশ হওয়ার অবস্থা।
বাহারুল হকের পক্ষ নিয়ে কেউ কথা বললো না সবাই যেন অনিমাকে পক্ষে।এই প্রথম মেয়ের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে তিনি কি তবে ভুল ছিল?

খুশবুকে তৈরি করে দিচ্ছিল নেহা।টকটকে লাল জামদানির সাথে মেয়েটাকে পুতুল লাগছিল।লাল দোপাট্টা মাথায় দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো সে।খুশবুর কক্ষে উকি দিয়ে এগিয়ে আসে তার ফুফাতো ভাই রিমন।

” খুশবু রানী কইরে?”

রিমনের কথায় মিষ্টি হাসে খুশবু।খুশবু এবং রিমন একই বয়সী দুজনের সম্পর্কটা খুনশুটির।

“কিরে খুশবু কালি ময়দা মেখে ফর্সা হয়েছিস।”

” ময়দা কি তোর দোকান থেকে কিনেছি?”

” তোর বরটা তো সেই।বিদেশি মাল।”

” ছিহ্ কথার কি ছিরি ভদ্র ভাবে কথা বল রিমন। ”

” উমম জ্বলে গেল ওমনি জ্বলে গেল।এখন থেকেই বরের জন্য পাগল বিয়ের পর তোর যে কি হবে।”

” কিছুই হবে না।তোর জন্য বিদেশিনী খুঁজে আনবো ঠিকাছে?”

” তা তো অবশ্যই।”

” রিমন একটু কষ্ট করবি পাড়ার দোকান থেকে আমার জন্য একটা গোলাপের গাজরা নিয়ে আয় হাতে লাগাবো সুন্দর লাগবে না?”

” হ্যা তাই তো।অপেক্ষা কর আসছি আমি।”
.
বসার ঘরে আরশার এবং খুশবুকে একসাথে বসানো হলো।আরিব তাদের পাশে বসে এটা ওটা বলে খেপাতে লাগলো।শামীম বিয়েতে দেরি করতে চাননা রোহানের পরিবার যদি জানতে পারে এমন কথা তবে আর রক্ষে নেই।বিয়ে পড়ানো শুরু হলো।ভিডিও কলে বিয়ের সকল কার্যক্রম দেখছিল আরশাদের বাবা মা এবং গ্র‍্যানি।

খুশবুকে যখন সই করতে বলা হলো তখন মেয়েটার হাত কাঁপুনিতে কলম ধরতে বেশ হিমশিমে পড়লো।একটা সই’য়ে সে আজ নিজের জীবনের বীজ বপন করবে।ভালো মন্দ কী আছে তার কপালে জানা নেই।

খুশবুর হাত থেকে কলম নিয়ে চোখ ইশারায় থামতে বলল আরশাদ।

” পানি খাবে?বেটার লাগবে।”

” আমি ঠিক আছি।”

” তা তো দেখতে পারছি।”

খুশবুর গলার স্বর নরম হলো।স্বগতোক্তি স্বরে আরশাদকে বলে,

” আমি ফ্লুজি নই আরশাদ আরেকবার ভাবুন।”

” ওকে ওকে। টুমি আমার খুচবু ওকে?”

আরশাদের কথায় সকলে চাপা হাসলো কি বিদঘুটে উচ্চারণ।গলায় শানিত তরবারি নিয়ে সই করে ফেললো খুশবু।যা হবার তা হবেই, ভাগ্যে যা আছে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না।

বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতে দুপুর হয়ে গেল।শামীম বাইরে থেকে আগেই খাবার অর্ডার করে রেখেছিল বিধায় খুব বেশি ঝামেলা হলো না।খাবার শেষে আরশাদ এবং খুশবুকে একা কথা বলার উদ্দেশ্যে কক্ষে পাঠানো হলো।আরশার বেশ কিছু ছবি তুললো খুশবুর।এই মানুষটা বউ নিয়ে কতটা সৌখিন বুঝতে আর বাকি নেই মেয়েটার।

ড্রেসিং টেবিলে থাকা খুশবুর প্রতিটা জিনিস আরশাদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল।কিছু জিনিসের সে ছবি তুলে নিয়েছে।এমনটা করার ঠিক কি কারণ বুঝতে পারলো না খুশবু।

” আরশাদ এসবের ছবি তুলছেন কেন?”

” তুমি কি কি ব্যবহার করো আমি তো জানি না ফ্লুজি।আজকেই সব কিনে ফেলবো।”

” আর কী কী কিনবেন?”

” জামা কাপড় কিনতে হবে মেয়েদের এসব আমি বুঝিনা।শাড়িটা দেখো কত বুদ্ধি খাটিয়ে কিনেছি।এই তোমার গহনা পছন্দ হয়েছে?মম বলেছে বাঙালিদের স্বর্ণই বেস্ট মানানসই।আমি নিজে পছন্দ করে কিনেছিন।”

খুশবু প্রত্যুত্তর করলো না।সে তাকিয়ে রইলো আরশাদের পানে।কি সুন্দর অবুঝ ভাব এই ছেলেটার কিন্তু কে বলবে রেগে গেলে আস্ত একটা বদমাইশে পরিণত হয়।হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো খুশবুর রোহান ফোন করেছে আরশাদ দ্রুত ফোন কেটে তার ফ্লুজির পানে তাকালো।আরশাদ আদেশ সুরে খুশবুকে বলে,

” খবরদার ওঁকে নিয়ে ভাববে না।”

” ভাববো না।”

” এখন থেকে আমাকে নিয়ে ভাববে।আরশাদ ইহসান তোমার হাজবেন্ড একবার না দুইবার বিয়ে করেছো।”

খুশবু হাসলো মাথা এলিয়ে দিল আরশাদের কাঁধে।তার কেন যেন ভীষণ কান্না পাচ্ছে।

” তুমি কি কাঁদতে চাইছো ফ্লুজি?একদম কাঁদবে না।কাঁদতে কিন্তু আমি অবাধ্য অভদ্র হয়ে যাব।দেখো ভদ্র ছেলের মতো বসে আছি আমি চাই না তোমার মেকাপ নষ্ট হোক।”

আরশাদ থামলো।খুশবুর নিরবে হাসলো।আরশাদ তার ফ্লুজির হাতের উলটো পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,

” তোমার হাতে ফুল কে দিল ফ্লুজি?”

” রিমন এনে দিয়েছে।”

আরশাদের মুখভঙ্গিমা পালটে গেল।ছলকে উঠলো তার রক্ত।হিংসাত্মক মনোভাবে বার বার চুরমার হলো তার ভদ্রতা।খুশবুর হাতের ভাজে হাত মিলিয়ে দুমড়ে মুচড়ে দিল সব ফুল।গোলাপের প্রত্যকটা পাপড়ি ঝড়ে পড়লো নিমিষে।আরশাদ স্বস্তি পেল।ফ্লুজির আলতো ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে কিঞ্চিৎ হাসলো।

” জান ফুল লাগবে?আনছি জান অপেক্ষা করো।”

খুশবু হতবাক হতভম্ব।আরশাদ উঠে গেল রুম থেকে বেরিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

” আমার ফুলকে আমি ফুল দিব।আর কেউ না কেউ না ।”
চলবে____

ফ্লুজি পর্ব-০৮

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৮ ]

” বিয়ের এই কাগজ পত্র আমি এগুলো তৈরি করেছি ভয় দেখিয়ে ফ্লুজিকে দমন করবো বলে।”

” কিন্তু আঙ্কেল হঠাৎ বিয়েতে রাজি হতে গেলেন কেন?”

” নিশ্চয়ই ব্রেন ওয়াশ করেছে।”

আরশাদের ফোনে পুনরায় খুশবুর কল এলো।ফোন তুলতে অপরপাশ থেকে ভেসে এলো অনিমার গলা।

” আমি খুশবুর মা বলছি।”

” আসসালামু আলাইকুম আন্টি।ভালো আছেন?”

“খুশবুর সাথে তোমার কি সম্পর্ক?”

অনিমার রাগান্বিত কণ্ঠস্বর আরশাদকে বুঝিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই তাদের সম্পর্কের কথা অনিমা জানতে পেরে রেগে গেছে।

” কথা বলছো না কেন?খুশবুর আর তোমার কিসের সম্পর্ক?”

” আমাদের সেই সম্পর্ক যার জন্য আমি ভীনদেশ ছেড়ে এখানে এসেছি।আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।”

” এতই সহজ!এখন তো আমার মনে হচ্ছে সেচ্ছায় তোমরা দুজন মিলে বিয়ে ভেঙেছো।”

” ব্যপারটা কিন্তু তা নয় আন্টি।আমরা কেউ বিয়ে ভাঙিনি।সেদিন বিপদে পড়ে আপনার মেয়ে আমার কাছে এসেছে।”

আরশাদ সত্যের মাঝে মিথ্যা মিশিয়ে দিল।অনিমা বেশ অবাক হলেন তার অগোচরে এতকিছু চলছে।

” আমার মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে?”

” তাকে জিজ্ঞেস করুন আমাকে বিয়ে করতে সে রাজি।”

অনিমা খুশবুর পানে তাকালেন।তার মেয়ে এতটা সেয়ানা কবে হয়েছে।

” বেশ তোমার যদি দম থাকে তাহলে তুমি তোমার পরিবার নিয়ে আসবে।তিনদিন পর ঘরোয়া ভাবে রোহানের সাথে খুশবুর বিয়ে।তোমার হাতে আর কতটা সময় আছে আশা করি বুঝতে পারছো?”

আরশাদ ভড়কে গেল।রাগ জেদ ভয় সব মিশিয়ে তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে।এত ঝুট ঝামেলা সে কেন করলো?সব শেষে যদি ফ্লুজি তার না হয় তবে কারো নিস্তার রইবে না একদম কারো না।

বসার ঘর থেকে অনেকক্ষণ যাবৎ কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল।কে কাঁদছে সেটাই তো বুঝতে পারলো না খুশবু।উৎসক হয়ে দেখতে যাবে এমন সময় তার হাত ধরেন অনিমা।

” কোথায় যাচ্ছিস?”

” কে কাঁদছে আম্মু?”

” রোহানের মা।গড়াগড়ি করে কেঁদে তোর বাপের মাথা ধুয়ে দিয়েছে।তিনি এখন কথা দিয়ে বসেছেন মেয়ে নাকি রোহানের হাতেই দেবেন।”

” সে কি কথা।সত্যি কাঁদছে?”

” আরে নাটক।আমি এক নারী হয়ে আরেক নারীর নাটক বুঝবো না?তোর নিখোঁজ নিয়ে কম কথা শুনায়নি আমাকে, আমি নাকি নষ্ট মেয়ে পেটে ধরেছি তাহলে তার ছেলে কী?তুই জানিস না তোর মামা একটু আগে আমাকে ফোন করে বারণ করেছে রোহানদের সাথে যেন কোন সম্পর্ক পুনরায় না গড়ি।তোর বাবা ওনার চোখের পানি দেখে গলে গেছে।”

খুশবু পড়লো বিপাকে।সুন্দর সাজানো জীবনে কি এক অশান্তির ঝড় এসে তাকে উলটে পালটে দিচ্ছে।অনিমা খুশবুকে টেনে বসালেন খাটে।সন্দিহান নজর বুলিয়ে বলেন,

” আরশাদের সাথে কবে থেকে সম্পর্ক হয়েছে তোর?”

আরশাদ তাকে যে অনিশ্চয়তার দুয়ারে দাঁড় করিয়েছে এসব কী অনিমাকে বলা যায়?আরশাদ তার ফ্লুজিকে ভালোবাসে অথচ সে ফ্লুজি নয়।খুশবুর মাঝে মাঝে মনে হয়েছে আরশাদের মানসিক সমস্যা।কিন্তু গত রাতে আরিব যেভাবে বললো সেভাবে মনে হচ্ছে খুশবুর নিজের মাথায় সমস্যা।তারা দুই ভাই ফ্লুজি ফ্লুজি করে তার কানের পোকা বের করে ছেড়েছে।অনিমার জহুরি চাহনি খুশবুর ভয় বাড়ালো।

” আম্মু আমি উনাকে অল্প স্বল্প চিনতাম অনলাইনের মাধ্যমে।উনি আমাকে পছন্দ করতেন আমি সেসব পাত্তা দিতাম না।কিন্তু আমার বিয়ের কথা শুনে তিনি দেশে আসেন যখন আমি বিপদে পড়ি ভাগ্যক্রমে উনার গাড়ির সামনেই পড়ি।”

” তুই ছেলেটাকে পছন্দ করিস?”

” হুম।”

খুশবু মায়ের সামনে প্রতিটা কথা সাজিয়ে মিথ্যা বললো।এর আগে পরিবারের সাথে কখনো এতটা মিথ্যা বলা হয়নি তার।হবে কী করে?খুশবুর তেমন কোন বন্ধু নেই যাদের সাথে ঘুরতে যেতে পরিবারের কাছে তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলা লাগবে।এক্সট্রা ক্লাসের নাম করে বন্ধুদের সাথে চিল করবে।বন্ধুর জন্মদিনের কথা বলে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে যাবে।

আরশাদের ফাঁদে পড়ে এক অনিশ্চয়তার জীবনে ঝুঁকে গিয়েছে সে।কে এই আরশাদ?বাস্তবতায় মানুষটা কেমন?আচ্ছা আরশাদ যখন জানতে পারবে সে তার ফ্লুজি নয় তখন কী ছুড়ে ফেলে দেবে তাকে?গভীর মৃত্যু খাদের কাছে হাটছে খুশবু একবার পা পিছলে গেলে সবটা এলোমেলো।তবে তো তার মৃত্যু নিশ্চিত।
.
কাচের দেয়াল গলিয়ে ভরা দুপুরের ব্যস্তময় শহরটা চোখে পড়তে আরশাদের চোখে চোখ রাখে খুশবু।ছেলেটাকে তাকে কিছুক্ষণ আগে বলেছে সেভাবে আছো বেরিয়ে আসো গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।খুশবু জামা পালটে বেরিয়ে গেল।মুখে তেমন কোন প্রসাধনী ব্যবহার করলো না।ব্যাগে পুরে নিয়েছিল সবকিছু।টুকটাক যা সাজার গাড়িতে বসে সাজলো সে।আরশাদ আড়চোখে বারবার দেখছিল খুশবুকে কিভাবে কোন স্টেপের পর কোন স্টেপ করছে।ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে নিলে আরশাদ বাঁধা দিয়ে বলে,

” আমি চুমু খাওয়ার পর তোমার ঠোঁটটা যেমন রক্তিমা কুণ্ডলী পাকায় ঠিক সেই রঙটা তোমাকে বেশি মানায়।”

খুশবুর দু’কান কেমন ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো।লজ্জায় ভারি হলো দু’গাল।

দুপুরের সময়টাতে বাসা থেকে কেউ খেয়ে বের হলো না বিধায় আরশাদ আগে খাবার অর্ডার করলো।দুজনে বসেছে পাশাপাশি।খুশবুর অপ্রস্তুত ভাবটা বোঝা যাচ্ছে না তবে কি খুশবুর জড়তা ভাবটা কেটেছে?আরশাদ একটা স্ট্যাম্প এগিয়ে দিল খুশবুর নিকট,তাতে চোখ বুলিয়ে হতভম্ব মেয়েটা।তার শরীর কাঁপছে গলা শুকিয়ে গেল তৎক্ষণাৎ।

” আরশাদ আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন।”

” সরি জান।”

” মিথ্যাবাদী এই কাগজের কোন মূল্য নেই আমার কাছে।আরশাদ বিয়েটা ছেলে খেলা নয়।”

” আমার কাছে এটা তোমাকে কাছে রাখার দলিল।এখন হয়তো তা আর কাজে লাগবে না।মম ডেড গ্র‍্যানি সবাই সম্মতি দিয়েছেন।যদি তোমার বাবা সময় দেন তবে সবাই একমাসের মধ্যে দেশে আসবে।আর আজ সন্ধ্যায় বড় মামা যাবেন তোমার বাবার কাছে।ছোট মামা দেশের বাইরে তাই যেতে পারবেন না।তোমার বাবা যখন জানতে চাইবেন তুমি কি চাও তখন কী বলবে?নিশ্চয়ই বলবে বাবা যা চান তাই হবে।

” আমি কি বলবো তা আমার ভাবনায় আছে আরশাদ।”

” আমি তোমাকে চেয়ে এতদূর এসেছি আমাকে তুমি খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না।”

” গলায় তরবারি নিয়ে আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি।আদৌ জানি না আপনার মনে কি চলছে।যদি আপনি মিথ্যা হন তবে ওই তরবারি সত্য হয়ে যাবে।এক টানে আমার জীবনের ইতি ঘটবে।”

” চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রাখতে পারো।এই আরশাদ ইহসান কখনো তোমাকে ঠকানো তো দূরের কথা অমর্যাদা করবে না।”

” আপনিও আমাকে বিশ্বাস করুন।আমি আপনার ফ্লুজি না আমি ভিন্ন আরেক মেয়ে।”

আরশাদ শ্লেষ হাসলো।হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিল খুশবুর গাল।

” আমি জানি তুমি ফ্লুজি নও।ফ্লুজি তো আমার দেওয়া এক নাম।যে নামে ভালোবেসে ডাকি তোমায়।ফ্লুজি মানে কী জানো?ফ্লুজি মানে সুন্দরী।তুমি ফুটন্ত ফুলের ন্যায় সুন্দর আমার কাছে।”

” আরশাদ আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন না।”

” তুমি আমাকে বুঝতে চাইছো না ফ্লুজি।আমরা অতীতটা ভুলে যাই গত কয়েকদিনের কথা ভাবি।তুমিই আমার ফ্লুজি।দীর্ঘ এই জীবনে কখনো কাউকে নিজ থেকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরিনি।অথচ দেখো তোমার কাছে আমি নির্লজ্জ বেহাইয়া।বারবার তোমার কাছে ছুটে যাই।সত্য মিথ্যার আড়ালে তুমি আমার শুরু তুমি শেষ।তুমি আমার সাথে থাকলেই হবে,এই জীবনে আর কেউ না আসুক কাউকে লাগবে না।”

অর্ডার করা খাবার চলে এসেছে আরশাদ চুপ হয়ে গেল।তার ফ্লুজির কোন ভাব আবেগ বোঝা যাচ্ছে না।হাতের স্ট্যাম্পটি দুমড়ে মুচড়ে ধরলো আরশাদ।

” আমার জান প্লিজ কোন গন্ডোগোল করো না।তোমাকে আমার দরকার।”

” জেদে পড়ে বিয়ে করছেন তাই তো?”

” ছোট বেলা থেকে আমার শখ কম।পছন্দের জিনিস কম।চাওয়া পাওয়া অল্প স্বল্প।কিন্তু আমি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি নিজের করেছি।আর তুমি তো ভালোবাসা আমার আবেগের বিষয় এই ব্যপারে কোন কম্প্রোমাইজ আমি করতে পারবো না জান।”

খুশবু মুখে তালা লাগায়।সে জানে বিয়েটা তার আরশাদের সাথে হবে।হতেই হবে।আরশাদের সাথে যদি বিয়ে না হয় তবে খুশবু নিজেই মানসিক পীড়নে মরে যাবে অপরদিকে খুশবু যদি আরশাদের না হয় তবে আরশাদ তার বাকি খেল দেখাবে।
.

মাগরিবের নামায শেষে নাস্তা করতে বসেছেন বাহারুল হক।খুশবুর আতঙ্কিত মুখটা তিনি বার বার পরখ করছেন।বিয়ে সম্পর্কে মেয়েকে তিনি কিছুই বলেননি।অনিমা ভীষণ রেগে আছেন তার কাজের ধরণে বোঝা যাচ্ছে তিনি কতটা রেগে।নেহা নুহাকে কোলে নিয়ে টুকটাক কাজ এগিয়ে দিচ্ছে।অনিমা নেহা এবং খুশবু এই তিন মানবীর মনে চলছে একই কথা কখন আরশাদ আসবে তার গার্জিয়ান নিয়ে।কিয়ৎক্ষণ আগে শামীম ফোন করে নেহাকে জানিয়েছেন মোশারফ ভাই তার সাথে আলোচনা করেছেন আরশাদ এবং খুশবুর বিয়ে সম্পর্কে।শামীম মন থেকে চায় আরশাদের সঙ্গে খুশবুর বিয়ে হোক।জেনে শুনে ভালো পাত্র হাত ছাড়া করার কোন মানে নেই।

ডোর বেলের শব্দে খুশবুর মন ছলকে উঠে।কে এসেছে?নিশ্চয়ই আরশাদ।নেহা দ্রুত দরজা খুলে মোশারফ হোসাইন তার স্ত্রী,আরশাদ এবং আরিবকে দেখতে পায়।তার সঙ্গ নিয়ে এসেছে শামীম।অনিমার হাসি প্রশস্ত হয় তিনি সকলকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান।বাহারুল হক কিঞ্চিৎ অবাক হলেন বিনা দাওয়াতে এরা কেন এসেছেন?মোশারফ হোসেন একজন ব্যস্ত মানুষ বেশ সম্মানীয় ব্যক্তি উনি।কিন্তু হঠাৎ বাহারুল হকের বাড়িতে কেন এলো?

খুশবু নুহাকে কোলে নিয়ে দ্রুত চলে যায় নিজের রুমে।বাহারুল হক সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলেন অনিমা সবার জন্য নাস্তার আয়োজন করেন।দুই পরিবারের মাঝে বেশ ভালোই আড্ডা চলছিল।আরশাদের মামি অনিমার উদ্দেশ্যে সকলের সামনে বলেন,

” আপনার ঘরে তো একটাই লক্ষ্মী তিনি কই?দেখতে পারছি না যে।”

অনিমা খুশবুকে ডাকলো মেয়েটা ভয় নিয়ে এসে উপস্থিত হলো সবার সামনে।আরশাদ আড় চোখে একবার দেখে তার নজর সরালো।কেটে গেছে আরো কিছুটা সময় খুশবু চলে যেতে মোশারফ হোসেন খুশবুর জন্য প্রস্তাব রাখে।কিন্তু তার বিনয় প্রস্তাবে ফিরিয়ে দিলেন বাহারুল হক।শামীম ভীষণ অপ্রস্তুত হলেন বাহারুল হক কি করে পারছেন এই বোকামি কাজটা করতে।সবার যুক্তি সবার চাওয়া পাওয়ার দাম দিলেন না বাহারুল হক।তিনি তার কথা এবং যুক্তিতে সচল রইলেন।তিনি এক কথায় বলে দিলেন মেয়ের বিয়ে রোহানের সাথেই হবে।

আরশাদ খালি হাতে ফিরে যাওয়ার পাত্র নয়।বাহারুল হক যখন নিজের কক্ষে ফিরে গেলেন তখন সে অনিমার উদ্দেশ্যে বলে,

” আমি দম নিয়ে এসেছি, প্রস্তাব রেখেছি আন্টি।আপনারা আমাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিলেও আমার হাত কিন্তু আমি পূর্ণ করতে পারবো।”

” তোমার আঙ্কেলকে আমি বোঝাবো।আমরা সবাই রাজি তিনি আর কতক্ষণ নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে আমিও দেখবো।”

আরশাদের পরিবার বেরিয়ে গেল।আরশাদ বুঝতে পারলো তার ফ্লুজি এখন ভয়ে আছে নিশ্চয়ই তার পরিবারে এখন যু দ্ধ যাবে।পকেট থেকে দ্রুত ফোন বের করলো আরশাদ।ফ্লুজিকে মেসেজ করলো তৎক্ষনাৎ।

“আমার জান ভয় পাবে না।আমি আছি তো।জাস্ট একবার ফোন দিয়ে বলবে বের হও তোমার সঙ্গে যাব,দেখবে এই বান্দা হাজির।”

” বাবা তার জেদে অনড়।সবার নিয়তিতে সবটা নেই আরশাদ।”

” তোমার নিয়তিতে আমার স্থান হোক। শত ঝড় ঝাপটা স্রোতের বিপরীতেও তোমার শেষ ঠিকানা আমার গন্তব্যে হোক।”

__চলবে…..

ফ্লুজি পর্ব-০৭

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৭]

ভয় নিয়ে আরশাদের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন আনিমা।এই ছেলের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে তার ধারণা নেই।ঝাল খেতে পারে নাকি পারে না।মাংস পছন্দ নাকি মাছ?সব ভেবে তার নাজেহাল অবস্থা।অনিমার অপ্রস্তুত মুখ দেখে আরশাদ কিঞ্চিৎ হাসলো।সম্মোহনী স্বরে বলে,

” ভয় পাবেন না আন্টি দেশি খাবারে আমার অভ্যস আছে।ঝাল টক সবটাই খেতে পারি।আমার মম বাঙালি।আর বাঙালিদের কি বাঙালি খাবার ছাড়া চলে?আমার মুখের বাংলাটা একটু বেশি এলোমেলো হলেও আমার ভাইয়ের কথা শুনেছেন তো।”

” শুনে খুশি হলাম বাবা।আমি যে ভয়ে ছিলাম।হাসের মাংসটা নাও।”

আরশাদ মিষ্টি হাসলো।ভাগ্যক্রমে শ্বশুর বাড়ির আপ্যায়ন যে এভাবে কপালে জুটবে কে জানতো।আচ্ছা আনিমা কি জানে এই ছেলেটাই তার মেয়ের জামাই।আড় চোখে খুশবুর পানে তাকালো আরশাদ।খুশবু তার মামার পাশে বসেছে।ছোট মামা শামীমের একটা অভ্যস আছে এই বাড়িতে এলে তিনি খুশবুকে ছাড়া খেতে বসেন না।খুশবুর অমনোযোগী ভাবটা ভীষণ ভাবে লক্ষ করলেন বাহারুল হক।তিনি গম্ভীর গলায় বলেন,

” আম্মু খাও না কেন?রান্না পছন্দ হয়নি?”

” আব্বু খেলাম তো।”

” কি খেলে আমি কি দেখিনি?”

” সন্ধ্যায় ভারি নাস্তা করেছি তো তাই পেট ভরা আব্বু।”

বাহারুল হক বাটি থেকে মাছের মাথাটা তুলে মেয়ের পাতে দিলেন।

” তোমার পছন্দের মাছের মাথা। এটা খেয়ে উঠবে।ভাত না খেলেও চলবে।”

আরশাদ ভ্রু নাচিয়ে তাকালো খুশবুর পানে।সবার মনোযোগ ছিন্ন করে সে বলে,

” তুমি মাছের মাথাও খাও!আমি তো ভাবলাম শুধু মানুষের মাথা খাও।এই যে আমার মাথাটা যেভাবে ফাটিয়ে খেতে চেয়েছিলে।”

সবার মাঝে হাসির রোল পড়লো।আরশাদের দিকে একপলক তাকিয়ে নজর সরালো খুশবু।বেয়াদব ছেলে হাড় মাংস সব জ্বলিয়ে খাচ্ছে।
খাওয়ার টেবিলে আরশাদের পরিবার সম্পর্কে কথা উঠে।সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছিল সবটা।আরিব তার মামার পরিচয় জানাতে চমকে গেল খুশবুর মামা।মুখে থাকা অর্ধেক ভাত ছিটকে গেল নাকে।শামীমের এমন কার্যকলাপে সবাই যে ভড়কে গেল।শামীম পুলকিত হয়ে আরিবকে বলে,

” আরেহ মোশারফ ভাই তোমার মামা।”

” হ্যা আমার আপন মামা।”

” সিরিয়াসলি!উনি আমার সিনিয়র তবে আমরা বন্ধু।চাকরির সূত্রে মোশারফ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় উনি ব্রিলিয়ান্ট একজন মানুষ।উনার যে কোন পরামর্শ আমি সাদরে গ্রহণ করি।এই তো গত মাসে মোশারফ ভাইয়ের বাড়িয়ে দাওয়াত ছিল নুহার আম্মু সহ গেলাম।”

আরশাদ পুলকিত হলো।তার কাজটা আরো সহজ হয়ে যাচ্ছে এরা পরিচিত!এবার নিশ্চয়ই বাহারুল হক মেয়ে বিয়ে দিতে দ্বিমত করবেন না।

” মোশারফ ভাই আমাকে সবসময় তার বোনের কথা বলতেন।ভীষণ ভালো বর পেয়েছে সে।তার দুইজন ছেলেও নাকি মাশাল্লাহ দুই রত্ন।তোমরাই যে তারা তা তো আমি বুঝতেই পারলাম না।”

” এবার মামার বাড়ি যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাদের সাথে করে নিয়ে যাব।প্লিজ কেউ বারণ করবেন না।”

সবার আড্ডা চললো রাত প্রায় একটা পর্যন্ত এরপর আরশাদ ফিরে এলো তার নিজ বাসায়।

হাতে হাতে সবটা গোছগাছ করছিলেন নেহা এবং অনিমা।খুশবুর উপস্থিতি পরখ করে নেহা,না খুশবু নেই।মনের কথাটা চেপে না রেখে নেহা বলে,

” আপা একটা কথা মাথায় এলো কিছু মনে করবেন না তো?”

” কি মনে করবো?কি বলতে চাস আগে সেটা বল।”

” মানে… আরশাদকে তোমার কেমন লেগেছে?খুশবুর সাথে আরশাদের যদি বিয়ে হতো।”

অনিমা চমকে গেলেন।চাপা হেসে বলেন,

” আমিও তো তাই ভাবলাম।”

” কেন যে মনে হয় খুশবুকে আরশাদ বেশ পছন্দ করে।দেখলে তো আসার পর থেকে কেমন চোখে চোখে রাখছিল।তাদের চোখাচোখি কথা দেখেছো?”

” কি বলছিস আমি তো এতকিছু খেয়াল করিনি।”

” আমাদের ভাবনা যদি সত্যি হতো ইসস কি ভালো হতো বলতো।”

” আকাশকুসুম ভেবে কি লাভ নেহা।উনারা নিশ্চয়ই ওখানকার মেয়ে বিয়ে করাবেন শুধু শুধু এসব ভেবে লাভ নেই।”

” হ্যাঁ ঠিক বলেছো।আরশাদের মামার সম্পর্কে তো তুমি টুকটাক জানো।কত নাম করা তারা।”

.
খুশবুর সকালটা শুরু হলো প্রতিদিনের নিয়মে।বাহারুল হক ঘরের সামনের উঠোনটাতে কিছু সবজি চারা লাগিয়েছেন সেসব তিনি পরিচর্যা করলেন।বিশাল উঠোনের মাঝে একটি একতলার ঘর।বাড়িটাকে তিনি নিজ মন মতো সাজিয়েছেন।ঘরের পছনে পুকুর কেটেছেন সবটাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা।খুশবু তার বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল কয়েক পল, অনিমাকে আসতে দেখে সে নজর সরায়।

” আম্মু একটা কথা বলবো?”

” বল।”

” আমার কি ভুলে যাওয়ার রোগ আছে?”

মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে কিঞ্চিৎ অবাক হলেন অনিমা।

” ছোট বেলায় তোর নানু কোমড় ভাঙার আগে তোকে কি বলেছিল?”

” পাকনা বুড়ি সুন্দর জামাই পাইবা।দেখি খাও তো আমার পান।আমিও নানুর হাত থেকে পান নিলাম এরপর তো পুকুর ঘাটে গিয়ে নানু কোমড় ভাঙলেন সেই যে পড়লেন আর শক্ত হয়ে উঠে দাড়ানোর সামর্থ্য হলো না।”

” দেখলি ছোট বেলার কথা মনে আছে।তাহলে তোর ভুলে যাওয়ার রোগ আছে কি না মনে সন্দেহ জাগলো কি করে?”

” আমার কি জমজ কোন বোন ছিল?”

” এক চড়ে মুখে তালা লাগিয়ে দিব।তখন থেকে কিসব বাজে বকছিস।চা রেখে এসেছি যা গিয়ে চা টা শেষ কর।”

বাহারুল হক এসে বসলেন বসার ঘরে।দরজায় বেল বাজতে অনিমা ছুটে গেলেন দরজা খুলতে।রোহানের মা’কে দেখে অনিমার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

” আপনারা? ”

” বেয়াইনের বাড়িতে আসবো না!বেয়াই কোথায়?”

রোহান এবং রোহানের মা বাহারুল হকের সামনে বসলেন।খুশবু এগিয়ে এলো কে এসেছে দেখতে। রোহানকে দেখে তার বুকের ভেতরটা ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো।
বাহারুল হক অকপটে বলেন,

” আপনারা কেন এলেন হঠাৎ?”

” আপনি কেমন আছেন বেয়াই সাহেব?”

” বেয়াই।বড্ড বেমানান ঠেকছে যে।সম্পর্কটা যে আর নেই আপনি কি বুঝতে পারছেন না।”

” যা হওয়ার তা হয়েছে এসব নিয়ে যদি মন কষাকষি বাড়তে থাকে তবে লাভ কী?”

” লাভ লসের হিসেব আমি বুঝি না।কিন্তু আমার মেয়ের ব্যপারে কোন রিস্ক আমি নিতে চাই না।পূর্বের সিদ্ধান্তটা নিঃসন্দেহে আমাদের নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তগুলোর একটি।তবে যা হয়েছে বা যা ঘটেছে তা তো আর ভুলে যাওয়া যায় না।আমি সোজাসাপটা বলতে চাই আপনাদের সাথে আমরা কোন আত্নীয়তা করতে চাই না।”

অপমানে থমথমে হয়ে গেল রোহানের মুখ।কিন্তু অসময়ের কথা গায়ে মাখতে নেই।নেহা এসে দাঁড়ালেন সবার সামনে রোহানের ছটফটে ভাবটা দেখে তিনি বলেন,

” শোনো রোহান আমরা মেয়ে যার তার হাতে তুলে দিতে গিয়ে একবার ভুল করেছি।আর কোন ভুল আমাদের দ্বারা হোক আমরা সেটা চাই না।”

পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা খুশবুকে
দেখে রোহান এগিতে গেল।খুশবুর হাত ধরে টেনে আনলো সবার সামনে।

” খুশবু তুমি জান না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।তোমার পরিবারের নেওয়া সিদ্ধান্তে তুমি বাঁধা দিচ্ছ না কেন?আমি তোমার চোখে স্পষ্ট আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।”

খুশবু দ্রুত নিজের হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো।সকলের চাহনি যে তাকে অপ্রস্তুতের দুয়ারে ঠেলে দিয়েছে।তবুও নিজের দায় এড়াতে সে বলে,

” এসব বিষয়ে আমার কোন সিদ্ধান্ত নেই।আমার পরিবার যা বলবে তাই হবে।”

খুশবু আর দাঁড়ালো না।দ্রুত পায়ে চলে এলো নিজের কক্ষে।বুকের ভেতরে যে তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।সহসা ফোন বেজে উঠলো তার।আরশাদ ফোন করেছে।এই সময়ে আবার আরশাদ ফোন করলো কেন!

” হ্যালো।”

” কোথায় ছিলে তুমি?কয়বার কল করলাম একবারো দেখেছো?”

” রোহান এসেছে আরশাদ।”

” কাবাবের হাড্ডিটা আবার কেন গিয়েছে?”

” পুনরায় বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে।”

” তোমার পরিবার কি বলেছে?”

” তা জানা কি খুব জরুরি?”

” তুমি কি বলেছো?”

” জানি না।”

” একদম কথা ঘুরাবে না ফ্লুজি।আমার শর্ত ভাঙলে কিন্তু জাহান্নাম করে ছাড়বো সব।”

” এতটা ধকল আমি আর নিতে পারছি না।এবার দয়া করুন আমাকে রেহাই দিন।”

” চলো।”

” কোথায়?”

” বিয়ে করবো।”

” ফা ল তু কথা।”

” তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম হচ্ছেনা ফ্লুজি?তুমি ছাড়া আমার ঘুম হারাম।”

” আর আপনাকে বিয়ে করলে আমার ঘুম হারাম হয়ে যাবে।”

“হতেই হবে।আরশাদ ইহসান বলে কথা কোন ছাড় নেই।”

খুশবু ফোন কেটে বসলো বিছানায়।এলোমেলো লাগছে তার সবকিছু।অপরদিকে আরশাদ ফোন রেখে ভীষণ চিন্তায় পড়লো।বিছানায় পড়ে থাকা স্ট্যাম্পটা হাতে তুলে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।পরবর্তী পদক্ষেপ ভীষণ কঠিন। যদি একবার বাহারুল হক রোহানের সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায় তবে সব আবার এলোমেলো।আরশাদের মাথা গরম হয়ে গেল সে দ্রুত ছুটলো ওয়াশরুমে।মাথায় পানি ঢেলে বের হতে দেখতে পেল আরিব দাঁড়িয়ে আছে।তার হাতে সেই স্ট্যাম্প।

” ব্রো তোমরা বিয়ে করেছো।”

” ইয়েস।”

” মম ডেড জানলে ভীষণ কষ্ট পাবে।তুমি বুঝে শুনে বিয়ে করেছো নাকি জেদে।”

” আরিব খবরদার এই কথা কিন্তু কেউ জানে না।আশা করি তুই কাউকে বলবি না।”

” ভাবি কি সেচ্ছায় বিয়ে করেছে?”

” না।সে তো জানে না বিয়ের কথা।”

আরিব মাথায় হাত দিয়ে বসলো।তার ভাই যে তাকে গোলকধাঁধায় ফেলেছে।আরশাদের ফোন পুনরায় বেজে উঠলো।ফ্লুজি ফোন করেছে।ফ্লুজির কান্নার শব্দে ভয় পেল আরশাদ অবচেতন মন যে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

“আরশাদ আব্বু কথা দিয়ে ফেলেছে।”

” আর তোমার মতামত?”

” জানি না।”

” তুমি এক্ষুনি গিয়ে সবাইকে সবটা বলবে তুমি বিয়েটা করছো না।”

” আব্বুর চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস আদৌ আমার হয়নি।”

” শর্তের কথা ভুলে গেলে?”

খুশবু দ্রুত ফোন কেটে দিল।অশনি ঝড়ের কথা ভেবে ভয়ে তার শরীর কাঁপছে।
দরজায় দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলেন অনিমা।খুশবু চোখ মুছে পেছনে তাকিয়ে অনিমার রাগে অগ্নিশর্মা মুখখানি দেখে দু’কদম পিছিয়ে গেল।মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে তিনি স্থির হয়ে বলেন,

” আরশাদকে ফোন কর।আমি কথা বলবো।আমি দেখতে চাই এই ছেলের কতটা সাহস।”
__চলবে…..

ফ্লুজি পর্ব-০৬

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৬]

” আমার ফ্লুজি একটা কঠিন অসুখে ভুগছি আমি।ওষুধটা রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা সেবনের জরুরি হয়ে পড়েছে।ডাক্তার বলে দিয়েছে সারাক্ষণ সেই ওষুধটা সাথে নিয়ে ঘুরবেন দেখবেন এই অসুখ সেরে যাবে।গত কয়েকটা রাত তোমার কাছাকাছি থাকার লোভে আমার ঘুম হয়নি।সেচ্ছায় ঝামেলা করতে বারবার তোমার কাছে ছুটে গিয়েছি।আজ আমার একা লাগছে ভীষণ একা।তোমার রেখে যাওয়া এলোমেলো রুমটা আমি আর সাজাতে দেইনি, থাক না পড়ে থাকুক ওভাবে।যতদিন না তুমি আসছো রুমটা ওভাবেই থাকবে।ডাক্তারের পরামর্শে একটা ক্রিম খুঁজে পেয়েছি তোমার জন্য,ইতালিতে থাকা তোমার দেওর দেশে আসতে নিয়ে আসবে।মনে প্রশ্ন আসতে পারে এই ক্রিম দিয়ে তোমার কাজ কি!গলায় সে দাগ দিয়েছি মনে আছে?এই দাগ সহজে গায়েব হয়ে যাবে।দাগ দেওয়াতো সবে শুরু এমন হাজার খানেক দাগ পড়বে,মানতে না চাইলেও তোমাকে মানতে হবে।সহ্য করতে হবে।
তুমি কি সুন্দর ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছো আর আমি!আমার চোখে ঘুম নেই জান।একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে কোন কাজ হলো না।এবার দুটো খেয়ে ফেলেছি।গুরুত্বপূর্ণ কথাটা শুনো আমার এই দীর্ঘ ম্যাসেজটা তুমি যখন পড়ছো মন থেকে ভেবে নিও তোমার ঠোঁট জোড়া তখন আমার দখলে।”

খুশবু ফোনটা ছুড়ে ফেললো বিছানায়।বেলা বারোটা বাজে এখন ঘুম ভাঙলো তার।আরশাদের এই হাবিজাবি ম্যাসেজ কেন যে সে মন দিয়ে পড়লো কে জানে।খুশবুর মন আটকে গেল একটা লাইনে এই মানুষটা তিনটা ঘুমের ওষুধ খেয়েছে!

দ্রুত গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিল খুশবু।যখনি রুম থেকে বের হবে এমন সময় অনিমার ফ্যাকাশে মুখটা দেখে ঘাবড়ে যায় সে।

” আম্মু কি হয়েছে?”

” আরশাদের সাথে তোর বাবার গতকাল দেখা হয়নি।তাই ভাবলাম ছেলেটাকে আজ দুপুরে দাওয়াত করি কিন্তু এই ছেলে আমার ফোন তুলছে না।কম করে হলেও আশিটা ফোন দিয়েছি।”

খুশবুর ভেতরটা কু-ডাকছে ঘুমের ওষুধ খেয়ে কি চিতপটাং হয়ে গেছে নাকি?
খুশবু নিজেও ফোন করেছে বেশ কয়েকবার কিন্তু আরশাদ ফোন ধরছে না।মেসেজ ফোন দিতে দিতে খুশবুর কেঁদে দেওয়ার অবস্থা হয়েছে কি হয়েছে এই মানুষটার?
.
গতরাতে ঘুম হয়নি আর আজ যে ঘুম থেকে উঠতেই পারছে না।আরশাদ যখন আধো আধো চোখ খুললো তখন বাজে দুপুর দুইটা।দেয়াল ঘড়িতে সময়টা দেখে মাথায় হাত তার।আজ আরশাদ খুশবুর সেই এলোমেলো রুমটা ঘুমিয়েছে বুকে চেপে আছে খুশবুর রেখে যাওয়া ব্যবহৃত ওড়না।মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খুশবুর লেহেঙ্গা।এই লেহেঙ্গা নিশ্চয়ই রোহানের বাড়ি থেকে এসেছে যখনি কথাটা মাথায় এসেছে সম্পূর্ণ লেহেঙ্গা যেভাবে পেরেছে ছিড়েছে।আরশাদ হাঁক ডেকে ডাকলো আনজুমকে।

” স্যার কিছু বলবেন?”

” এই ভারি জামাটা নিয়ে যান যেভাবে পারেন আ গু ন লাগিয়ে ছাই করে ফেলবেন।”

আনজুম মাথা দুলিয়ে চলে যায়।
আরশাদ উঠে চলে যায় নিজের কক্ষে।সারাটা শরীর ম্যাজম্যাজ করছে।মাথাটা কেমন ভারি হয়ে আছে।এই মুহূর্তে গোসল নেওয়া জরুরি তার জন্য। এলোমেলো পা ফেলে ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে কতক্ষণ দেখলো।টি-শাট খুলে যখনি ঝরণার নিচে গেলে গায়ে পানি পড়তে সে ছিটকে দূরে সরে এলো।পিঠে ঘাড়ে বিভিন্ন অংশে পানি লাগায় ভীষণ জ্বলছে।

আরশাদ পুনরায় আয়নার কাছে দাঁড়ায় বুঝতে পারে আসল কারণটা কি।তার ফ্লুজির নেইল এক্সটেনশনের রা ক্ষা সী নখ গুলোর আঁচড়ে তার এই হাল।আরশাদ হাসলো ফ্লুজির প্রতিটা স্পশে তার ভালো থাকার সুরেরা টানছে।লম্বা শাওয়ার নিয়ে কোমড়ে তোয়ালে জড়িয়ে বের হলো আরশাদ।বিছানায় ছোট ভাই আরিবকে দেখে ভূত দেখার মত অবস্থা তার।
আরিব এখানে কী করছে!আরিব নাটকীয় ভঙ্গিমায় জড়িয়ে ধরলো আরশাদকে এবং মিষ্টি হেসে বলে,

“সারপ্রেসা।”

“রাখ তোর চেংচুং কথা।বাংলায় কথা বল।”

” ভাই তোমার বাংলা শুনে এই দেশের লোকেরা কি হাসে না?কি বিদঘুটে বাংলা বলো তুমি।অথচ আমার বাংলা বলা দেখো একদম নিখুঁত।”

আরশাদ ঠোঁট বাঁকালো।আরশাদের মুখে বাংলা কথা শুনলে যেখানে কানের তালা লেগে যায় সেখানে আরিবের বাংলা বলার ধরণ সত্যি অসাধারণ।আরিব আর আরশাদের চেহারার অনেকটা মিল থাকলেও আরশাদের তুলনায় আরিব ফর্সা,লম্বায় আরশাদের তুলনায় খাটো।ছেলেটা যেন রাগতে জানে না সর্বদা হাসি লেগে থাকে ঠোঁটের কোণে।

” এখানে কেন এসেছো আরিব?”

” আহ ভাই তুমিতুমি করো না তো, তুই করে বলো অন্যরকম ফিলিংস আসে।বন্ধু বন্ধু ব্যপার।”

“এবার বল এখানে কেন এসেছিস?”

” সেটা তুমি ভালো করেই জানো কেন এলাম।”

” আমায় পাহারায় রাখতে?”

” ইয়েস।

আরশাদের ফোন বেজে উঠলো অনিমা ফোন করেছেন।তিনি জানিয়েছেন আরশাদের সঙ্গে আজ তারা ডিনার করতে চান।আরশাদ দ্বিমত পোষণ করলো না সে তো অপেক্ষায় কখন দেখা হবে তার ফ্লুজির সাথে।আরশাদ যখন ফোনে ব্যস্ত তখ ন তাকে জহুরি চোখে পরখ করছিল আরিব।ফোন রাখতে আরিব আরশাদকে বলে,

” তুমি নাকি বিয়ে এখন করবে না তাহলে কি ইয়ে করে ফেলেছো?বিবেক বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে?”

” এই কিসব হাবিজাবি বকছিস?”

” পিঠে ঘাড়ে কিসের দাগ ব্রো?”

আরশাদ বিষম খেল।ছোট ভাইটার সামনে লজ্জায় পড়লো যে।

” আরিব তুমি ছোট ছোটর মতো থাকবে।”

” ওকে ওকে। কপাল ফাটলো কী করে? ”

” ভালোবাসার ওভার ডোজ সহ্য করতে পারিনি কপাল ফেটে বেরিয়ে গেছে।”

আরিব হেসে ফেললো।ভাইয়ের মতিগতি তার যে সন্দেহ লাগছে।

” তুমি বিয়ে করবে না বলে মমকে আসতে বারণ করলে।তাই মম আমাকে পাঠিয়েছে তোমার খেয়াল রাখতে আর বেতালের মতো তোমার কাঁধে ঘুরতে।”

” ড্যাড,গ্র‍্যানি কেমন আছে?”

” তারা ভীষণ এক্সাইটেড তুমি কখন ভাবিকে নিয়ে যাবে।”

” যাব।খুব শীঘ্রই যাব।”
.

আরশাদ এসেছে শুনে ভয়ে গুটিয়ে গেছে খুশবু।আরশাদের আসার কথা ছিল রাতে অথচ সে এই সন্ধ্যায় কেন এলো?কী উদ্দেশ্যে এলো?আরশাদের গলার আওয়াজ খুব অল্প পাওয়া গেলেও তার ভাই আরিবের হাসির শব্দে সাড়া বাড়ি মুখোরিত।ছেলেটার একেকটা কথার বাঁকে সকলে হাসছে।হই হুল্লোড়ে মেতে আছে সারা ঘর।

নেহা এবং অনিমা রান্না ঘরে সময় দিচ্ছে এখনো তাদের কত রান্না বাকি।খুশবুর বড় মামা চলে গেলেও ছোট মামা আসবেন ডিনারের সময়।নুহা ঘুমিয়ে আছে খুশবুর কক্ষে।পর্দার আড়ালে আরিবকে দেখে চোখ আটকে গেল খুশবুর।পাশে বসে থাকা আরশাদের সাথে চোখাচোখি হলেও খুশবু পুনরায় চোখ রাখলো আরিবের পানে।এত কিউট কেন ছেলেটা?এত সুন্দর হাসি!

খুশবুর হৃদযন্ত্রের ধুকপুক বাড়লো।লজ্জা মিশিয়ে হাসলো সে।ওই আধাপাগল আরশাদকে কে বিয়ে করবে?আরিবের মতো একটা ছেলেকেই তো সে চায়।আচ্ছা আরশাদ যদি তার কেউ হয় তবে আরিব তার দেওর।ছিহ!কিসব ভাবছে খুশবু।

আরশাদ কেমন করে তাকিয়ে আছে খুশবুর পানে।নিজেকে আড়াল করে কক্ষে ফিরলো সে।বাহারুল হক এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নয়।বিছানায় আধোশোয়া অবস্থায় কথা বলছেন তিনি।আরশাদ আরিবকে মেসেজ করে বলে এদিকটা সামলাতে সে এখন তার ফ্লুজির সাথে দেখা করতে যাবে।ফোন আসার বাহানায় আরশাদ উঠে গিয়ে খুশবুকে খুঁজতে থাকে।

দরজা খোলা কক্ষে খুশবুকে পেয়ে যেতে আরশাদের সময় লাগলো না।কক্ষে এসে দ্রুত দরজা রুদ্ধ করে আরশাদ।হঠাৎ তাকে দেখে চমকে গেল খশবু তার চমকে যাওয়া মুখ ভঙ্গিমা দ্বিগুণ বাড়ালো আরশাদ।আলতো হাতে খুশবুকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে স্থির করলো।দ্রুত আরশাদকে ছাড়াতে চাইলো খুশবু কিন্তু আরশাদ যে নাছোড়বান্দা সে যে এই সুযোগ ছাড়বে না।

” ফ্লুজি আমার জান কেমন আছো?”

” ভ..ভালো।”

” আমাকে মিস করেছো?”

” না।”

” আরিবের দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন?”

” ক..কই।”

” আমি দেখেছি।এখন তুমি আমার দিকে তাকাও।”

দু’হাতের আঁজলা খুশবুর গাল জড়ালো আরশাদ।

” ফ্লুজি আমাকে দেখো।”

” আর কত দেখবো?”

” দেখতে থাকো।”

” দেখার মতো কিছু আছে?”

” দেখার মতো কি দেখতে চাও?”

” ধূর ভাল্লাগে না।”

আরশাদ খুশবুর গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।পকেট থেকে একটি রিং বের করে আলগোছে পরিয়ে দিল খুশবুর হাতে।

” নাও বিয়ের গিফট।”

” কিসের বিয়ে?আর এটা কেন দিচ্ছেন।”

” হাত থেকে খুলেছো তো…।”

খুশবু জেদ দেখিয়ে খুলতে নিলে আরশাদ খুশবুর আঙুলে কামড় বসায়।দুই পাটি দাঁতের পিষে ব্যথায় চিৎকারের আগে মুখ চেপে ধরলো আরশাদ।

” একদম বাড়াবাড়ি করবে না জান।তুমি সোজা আমিও সোজা।তুমি বেঁকে গেছো মানে আমি সম্পূর্ণ রূপে বেঁকে যাব।”

” এমন কেন আপনি?”

” যেমনি হই মেনে নেবে তো।”

আচমকা ফোন বেজে উঠলো খুশবুর।রোহান ফোন করেছে।এই ছেলে কি ফোন করার আর সময় পেল না!খুশবু ভয়ে ফোন তুললো না।আরশাদ ফোন তুলে খুশবুর হাতে দিল,

” কথা বলবে?”

” বলবো না কেন?”

” আচ্ছা বলো।”

আরশাদ ফোনটা তার ফ্লুজির হাতে দিয়ে বিছানায় বসলো পাশে টেনে বসালো ফ্লুজিকে।রোহান আর খুশবুর সব কথা নিরব দর্শক হয়ে শুনছিল সে।যখনি রোহান ইমোশনাল কথা বলে খুশবুর মন ঘুরাতে চাইলো তখনি অপরপাশ থেকে খুশবুর কোন সাড়া শব্দ পেল না রোহান।মেয়েটা কথার মাঝে কি উধাও হয়ে গেল?রোহান সাড়া শব্দ পাবে কি করে?
স্বাভাবিক নির্ঝঞ্ঝাট পরিস্থিতিতেও দুটি মানব মানবির মনে তখন চলছিল উত্তাল ঝড়।ঝড়ের বর্ষণে ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হতে থাকে দুটি ওষ্ঠের ছোঁয়া।খুশবুর কানে আসছে রোহানের কথা কিন্তু আরশাদের কারসাজির কাছে সে বারবার হেরে যায়।ক্রমশ আরশাদের আদলে হারিয়ে যায় তার ছোট্ট দেহখানি।খুশবু যতবার ইশারায় ফোনের ধরতে যায় আরশাদ ততবার একধাপ এগিয়ে যায়।খুশবু বুঝতে পারে এই বদ্ধ উন্মাদ ছেলেটা চায় খুশবুর অগ্রাধিকার তালিকায় একমাত্র সে থাকবে।খুশবুর ছটফট বাড়তে আরশাদ উঠে বসে।খুশবু দ্রুত ওড়না নিয়ে ঠোঁট মুছতে গেলে আরশাদ হাত ধরে ফেলে,

” খবরদার এমন করলে আবার আবার করবো কিন্তু।এবার থুথু না খাইয়ে ছাড়বো না।আমি কিন্তু ভালো ছেলে নই।”
#চলবে___

ফ্লুজি পর্ব-০৫

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব সংখ্যা ৫]

” তোকে আরশাদ দিয়ে গেল না?”

“হ..হ্যা মানে..”

” ছেলেটা কোথায়?”

খুশবু থমকে গেল।মায়ের মুখে আরশাদের নামটা এত সহজ লাগছে কেন?হাবভাবে মনে হলো ভীষণ ভাবে চেনেন তিনি।আনিমা খুশবুকে রেখে এগিয়ে গেল দরজার কাছে আরশাদকে প্রথম দেখায় চিনতে বেশ বেগ পোহাতে হলো না অনিমার।বাঙালিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা গোছের ছেলে আরশাদ তার মাঝে ভীনদেশি ব্যপারটা বৃদ্ধমান।আরশাদ মিষ্টি হেসে কুশুল বিনিময় করলো অনিমার সাথে।খুশবুর আতঙ্কিত মুখটা দেখে বেশ হাসি পেল ছেলেটার।

” আন্টি আপনি খুব মিষ্টি।”

অনিমা লজ্জায় চোখে হাসলেন।চেয়ার টেনে বসতে দিলেন আরশাদকে।

“তুমি আমার জীবন বাঁচালে বাবা।আমার এই একটাই মেয়ে।ওঁকে ছাড়া আমরা আমাদের বাঁচার কথা ভাবতেই পারি না।”

” কিন্তু আপনার মেয়ে সেই কৃতজ্ঞতা রাখেনি আন্টি।এই যে দেখুন আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।তিনটা স্টিচ লেগেছে।”

” সেকি… ”

আরশাদ হাত ইশারায় অনিমাকে বিচলিত হতে বারণ করে।খুশবুর মুখে তাকি বলে,

” আপনার মেয়ে আমাকে চিনতে পারেনি আন্টি।গতকাল উনাকে দেখালাম বিয়ের লেহেঙ্গা নিয়ে ছুটাছুটি করছে।পেছন থেকে কয়েকটা ছেলে তার পিছু নিয়েছিল তাই আমি গাড়িতে তাকে লিভ দিলাম। আমি উনাকে চিনতে পেরেছি।পেপারে তো উনার ছবি বেরিয়েছে।যে খুঁজে দিতে পারবে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হবে।উনাকে পেয়ে আমি আপনাকে ফোন করি এবং সবটা জানাই।ভালো করেছিনা আন্টি?”

ইনোসেন্ট মুখ নিয়ে অনিমার পানে তাকালো আরশাদ।অনিমার চোখ ঝাপসা।অপরদিকে খুশবুর সবটা মাথার উপর দিয়ে গেল। সে মায়ের হাত ধরে ঝাকিয়ে বলে,

” আমার ছবি পেপারে কি করছে আম্মু?”

” বিয়ের পরদিন তোর কোন খোঁজ না পেয়ে তোর মামা পেপারে তোর ছবি ছাপিয়েছে নিখোঁজ সংবাদ হিসেবে। আমরা কি করবো বল তোকে হারিয়ে পা গ ল হয়ে যাচ্ছিলাম।”

খুশবু চোখ গরম করে তাকায় আরশাদের পানে।কি সুন্দর ইনোসেন্ট মুখখানি ভাজা মাছটা উল্টে খেতে যানে না।আসলে যে এই ব্যাক্তি কাঁচা মাছ গিলে খায় জাতি কি তা জানে?
আরশাদ অনিমাকে বলে,

” আন্টি আপনার ফ্যামিলি ঝামেলা আমার জড়ানো ঠিক নয় তারপরেও জানতে চাই কি হয়েছিল বিয়ের দিন?”

” বর যাত্রী আসার আগে রোহানের প্রেমিকা এসে অনেক ঝামেলা করেছে বিয়ে বন্ধের জন্য।মেয়েটা নাকি বারবার হুমকি দিয়েছে যে করে হোক সে বিয়ে ভাঙবে।রোহান যদি তার না হয় তবে কোন মেয়ের হবে না।এসব আমরা তখনো জানতাম না।হঠাৎ খুশবু নিখোঁজ থানা পুলিশ করে আমাদের জান যাওয়ার অবস্থা।চারদিক থেকে কথা শোনাতে কেউ কম শোনায়নি,সবাই আমার মেয়েটাকে দোষারোপ করেছে।মেয়েটার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।খুশবুর মামারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন রোহানের প্রেমিকার কথা,সেই সব হুমকির কথা। আমাদের আর বুঝতে বাকি নেই খুশবু নিখোঁজের পেছনে ওই মেয়ের হাত আছে।”

” আপনারা সেই মেয়েকে ধরেননি কেন?”

” পুলিশ অনেক খুঁজেছে তাকে,কোথায় আছে কে জানে।তবে এই মেয়েকে যদি পাই তার কাছে আমার একটাই প্রশ্ন থাকবে যদি বিয়ে ভাঙার ইচ্ছে থাকতো বিয়ের আগে আমাদের সবটা জানালেই পারতো বিয়ের দিন এসব নাটক, ছিহ!”

ঘৃণায় মুখ কুচকালেন অনিমা।খুশবু এতক্ষণ সবটাই মন দিয়ে শুনলো।এসব যে আরশাদের কারসাজি তার বুঝতে তো বাকি নেই।একবার যখন সে নিজের নিড়ে ফিরেছে তখন আরশাদের কোন পরিকল্পনা সফল হতে দেবে না সে।অনিমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুশবু বলে,

” আমি যদি বলি আমার সাথে এসব ঘটেনি মা।তুমি জানলে…..”

দরজায় এসে দাঁড়ায় খুশবুর মামি।খুশবুকে দেখে তিনি ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইলেন কয়েক সেকেন্ড।অনিমা টেনে আনলো ভাইয়ের বউকে,

” দেখো নেহা আমার খুশবু এসেছে।”

নেহা চমৎকার হাসলো।ভিজে এলো তার দু’চোখ।খুশবুকে বুকে জড়িয়ে আর ছাড়তেই চাইলেন না।কোলের ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটা ফুপি ফুপি বলে ছুটে গেল অনিমার কোলে।আরশাদ বাচ্চাটাকে দেখে এগিয়ে গেল, আদুরে এই বাচ্চাটাকে কোলে না নিয়ে থাকা যায়?

” এই যে লিটল ফেইরি নাম কী তোমার?”

অনিমা আরশাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

” আমার ভাইঝি নাম নুহা।আর উনি আমার ভাইয়ের বউ নেহা।তুমি আন্টি বলে ডাকতে পারো।”

আরশাদ তার ভাঙা বাংলায় কুশল বিনিময় করলো নেহার সাথে।ভিনদেশি মানুষ দেখে ভীষণ অবাক হলেন নেহা, আনিমার কাছে ইশারায় জানতে চাইলো কে উনি?আরশাদ চোয়াল শক্ত করে খুশবুর দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা একটু আগে ঠিক কি করতে চাইছিলো তা বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছে আরশাদ।

” আন্টি আঙ্কেল কোথায়?”

” কিছু টেস্ট করার আছে তাই খুশবুর মামা নিয়ে গেছে তাকে।চলে আসবে তুমি একটু অপেক্ষা করো।
.

পর পর দুটো চড় গালে পড়তে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোহান।হসপিটাল থেকে তাকে যে অনিমা অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে এসব কথা মাকে বলায় তিনি যেন আরো বেশি ক্ষুব্ধ হলেন।

” তোকে কি বলেছিলাম বিড়ালের মতো বেহায়া হতে হবে এমনি এমনি বাহারুল হক মেয়ে দেবেন না।”

” মা আমি আর কি করতে পারি?বিয়ের আগে থেকে খুশবুকে এক্সট্রা কেয়ারের নাটক দেখে সবার চোখের মনি হয়েছিলাম আর এখন…জানো খুশবু একটা বোকা মেয়ে ওঁকে আমি নিশ্চয়ই মানিয়ে নিতে পারবো।”

” তোর গার্লফ্রেন্ডের কোথায়?”

” জানি না।যোগাযোগ নেই আমার সাথে।”

” প্রেম করতে গেলি কেন ওর সাথে?প্রেম যখন করলি শুতে গেলি কেন?শুতে যখন গেলি তখন তোদের জন্য বাজারে…”

রোহানের মা থেমে গেলেন।গাল ভরতি থুথু ছুড়ে ফেললেন ছেলের মুখে।অর্থ কড়ি সম্পদ তাদের কম নেই।কিন্তু তিনি ছেলের বউ এমন চান যেন ভবিষ্যৎ ভাগিদার একমাত্র তার ছেলে হতে পারে।খুশবুর কোন ভাই বোন নেই বাবার অর্থ সম্পদ সবটাই একমাত্র মেয়ের দখলে যাবে তাই তো খুশবুর সাথে বিয়ে নিয়ে এতটা মাথা ব্যথা রোহানের পরিবারের।

” খুশবুর মতো মেয়ে হাত ছাড়া করেছিস মানে বিশাল লসে পড়েছিস মাথায় রাখবি।”

” আমি খুশবুকে ঠিক মেনেজ করে ফেলবো মা।চিন্তা করো না।”
.

নেহার সাথে কথায় বিভোর খুশবু আর খেয়াল করলো না আরশাদ কোথায় কিংবা আরশাদের কোলে থাকা নুহা কোথায়।হঠাৎ অপরিচিত ফোনের রিংটোনে চমকে গেল সবাই।বেডে থাকা খুশবুর রাখা প্যাকেটটি থেকেই শব্দ আসছে।খুশবু বুঝতে পারলো এটা তো আরশাদের দেওয়া ফোন।দুইচার না ভেবে ফোন তুললো সে।নাম্বারটা আরশাদ নামে সেভ করা ছিল বলে সবার থেকে আড়ালে গিয়ে ফোন তুললো খুশবু।

” হ্যালো কে বলছেন?”

” ফ্লুজি নাম্বার সেভ করাই ছিল আবার জানতে চাইলে কেন?আজকাল কি সব ভুলে যাও?”

” বাজে কথা না বলে ফোন করেছেন কেন?”

” বাজে কথা আমি বলি নাকি তুমি বলো?তখন আন্টিকে কি বলতে চাইছিলে?”

” সবাইকে সবটা জানাবো আমি।আপনি আমাকে গতকাল খুজে পেয়েছেন?নাকি সেই বিয়ের দিন থেকে একের পর এক ঝামেলা আপনি করেছেন।”

” আমার জান তুমি খুব বোকা।রোহানের সাথে যা যা হয়েছে এগুলো সবটাই আসল ছিল কোনটাই নকল না।মাঝখান থেকে আমি তো তোমাকে বাঁচিয়ে দিলাম সবাই এখন দোষ দিচ্ছে, রোহানের গার্লফ্রেন্ড তোমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো তাই তুমি নিখোঁজ ছিলে।এখন যদি রোহানের গার্লফ্রেন্ডকে উপস্থিত করা হয় সে যদি বলে,তোমার কোন ক্ষতি সে করেনি তখন?”

” তখন আর কি আমি সবাইকে বলে দিব আপনি আমায় নিয়ে গেছিলেন।”

“আমার জন্য বেশ উপকার হবে ব্যপারটা।আমিও সবাইকে বলে বেড়াবো তোমার আর আমার সম্পর্কের কথা।এটাও বলবো তুমি আর আমি এক বাড়িতে স্বামী স্ত্রীর মতো ছিলাম।”

” আরশাদ লিমিট ক্রস করবেন না।”

” লিমিট ক্রস তুমি করেছো বলেই আজ আমি এ পার্যায়ে এসে ঠেকেছি।এতটা মিথ্যাচার কর‍তে পারলে আমার সাথে!ফ্লুজি আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়েছিলে তুমি।বাদ দিলাম সেসব কথা। আমাদের শর্তের কথা ভুলে যাওনি তাই না?বাবা মাকে মানিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করবে।”

” এই স্বপ্ন আপনার স্বপ্নই থাকবে।আমিও দেখবো কি করে কি হয়।”

” তুমি যে পালটে যাবে এসব আমি জানতাম।আরশাদ কাঁচা খেলোয়াড় নয়।যাই হোক তুমি কি সবাইকে এতদিনের ঘটনা সবটা বলবে? ”

” অবশ্যই বলবো।থানা পুলিশ যা যা লাগে সবটাই করবো।”

” নুহা কোথায়?”

হঠাৎ আরশাদের এমন প্রশ্নে ঘাড়বে গেল খুশবু হ্যাঁ তাই তো নুহা কোথায়?অনিমার কাছে জানতে চাইলে অনিমা বললো আরশাদের কোলে ছিল হয়তো বাইরে নিয়ে গেছে।ফোনের অপরপাশ থেকে আরশাদের হাসির আওয়াজ শুনে গায়ে কাটা দিল খুশবুর।অবচেতন মন যে অন্য কিছুর বার্তা দিচ্ছে।

” নুহাকে পেয়েছো?”

” আপনি কোথায় আরশাদ?”

” দশ তলার উপরে।নুহাকে নিয়ে।”

” নেমে আসুন প্লিজ ওখানে কি করছেন?”

” তোমার অদূরদর্শিতার ফল হয়তো এই বাচ্চাটা পাবে।যাস্ট একটুখানি ধাক্কা…”

” না না আরশাদ প্লিজ।আমি তো আপনাকে ভয় দেখাচ্ছিলাম সত্যি বলছি।আমি কখনোই এমন করবো না।আমি কাউকে কিচ্ছু বলবো না।”

” সত্যি? ”

” সত্যি বলছি।আপনি কোথায় আছেন?”

” হসপিটালের ছাদে।তুমিও এসো।”

আরশাদ ফোন রেখে ঠোঁট চেপে হাসলো।বোকাটাকে ভয় দেখিয়েছে।সে কি করে পারবে এই আদুরে বাচ্চাটার ক্ষতি করতে?আরশাদের চাপা দাঁড়ির গালটা ঘষে দিল নুহার মুখে তৎক্ষণাৎ বাচ্চাটা ঠোঁট কুচকালো তা দেখে হাসলো আরশাদ।আধো আধো কথা বলতে শিখেছে নুহা সেই কথাতে আরশাদ তাকে শিখিয়েছে জিজু কিন্তু নুহা তাকে বলছে জুজু।

” নুহা বলো জিজু।”

” জুজু।”

” জুজু তো ভুতের নাম।আমি কি ভুত?”

” পাপ্পাহ।”

” কোথায় পাপ্পাহ?”

খুশবু ছাদে এসে আরশাদকে দেখতে পেল।প্রচন্ড রাগ ঝেরে নুহাকে টেনে নিলো সে।

” একটা বাচ্চা দিয়ে ভয় দেখান বিবেক আছে আপনার?”

আরশাদ তার ফ্লুজির গাল টেনে দিল।

” আমার ফ্লুজি,প্রিয় ফ্লুজি তোমাকে রাগলে এত সুন্দর লাগে কেন?”

” ঢং করবেন না।”

” ওকে করবো না জান।”

” জান ডাকবেন না।”

” কেন ডাকবো না?”

খুশবু মাথা নোয়ালো ঠোঁট কুচকে বিরক্ত হয়ে তাকালো অন্যপাশে।

” জান শুনছো?”

” আবার,বললাম তো জান ডাকবেন না।”

” কেন ডাকবো না?জান।”

” আমার কেমন কেমন লাগে।”

আরশাদ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।নুহা খুশবুর কোল ছাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিল আরশাদের কাছে আরশাদ তাকে কোলে তুলে নিল।আশেপাশে আকাশচুম্বী ভবনগুলোর মানুষেরা ব্যস্তময়। আরশাদ খুশবুকে আড়ালে টেনে নিল।

” তুমি শর্ত রাখবে তো?বলো কোন ছলনায় জড়াবে না।”

” আরশাদ আপনি যত দ্রুত মানবেন আমি আপনার ফ্লুজি নয় তত দ্রুত এসব ঝামেলা থেকে নিজেও মুক্তি পাবেন।”

“ওকে আমি মানলাম তুমি ফ্লুজি নও।কিন্তু আমি তোমাকে গ্রহণ করেছি।তুমি সত্য তুমি মিথ্যা আর কিচ্ছু জানতে চাই না।”

খুশবু বিরক্ত হলো।আরশাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নুহাকে টেনে আনতে চাইলো কিন্তু আরশাদের শক্তির কাছে পেরে উঠলো না।খুশবুর হাত মুচড়ে তাকে দেয়ালের সাথে রুদ্ধ করে বাঁকা হাসলো সে।

” ফ্লুজি আমার ফ্লুজি।”

আরশাদ আচমকা খুশবুর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো।গভীর পরশে আলিঙ্গন করার আগে দূরত্ব বাড়ালো আরশাদ।খুশবুর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বলে,

“নন সওলো উন বাচিও,ভোগলিও উন লুঙ বাচিও।”

আরশাদ কী বললো?সবটাই খুশবুর মাথার উপর দিয়ে গেল।

” কি বললেন?”

” ইতালিয়ান বউ হতে চলেছো একটু আধটু জানতে হবে তো জান।”
.
মধ্যরাতে ঘুমে বিভোর খুশবু।থেকে থেকে বেজে উঠছে তার ফোন।আরশাদ কল করেছে এই ছেলেটা মাঝরাতে বিরক্ত করে কি মজা পাচ্ছে?অপরদিকে আরশাদের চোখ ঘুম নেই মন থেকে বার বার প্রশ্ন আসছে খুশবু যদি তাকে ছেড়ে যায়?খুশবুকে নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারবে তো?সব মিলিয়ে আরশাদের অবস্থা মাতাল মাতাল।নিজেকে দমিয়ে না রাখতে পেরে বারবার ফোন করছে তার ফ্লুজিকে।

খুশবু ঘুম ঘুম অবস্থায় আরশাদের ফোন তুললো।

” হ্যালো।”

” ঘুমে?”

” তো এই রাতে কি অন্যকে জ্বালাবো?”

” সেটাই তো করছো।আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।প্লিজ ফ্লুজি ভিডিও কলে আসো তোমাকে দেখতে চাই।”

” ফোন রাখুন আর যদি বিরক্ত করেন তবে…”

এলোমেলো হলো খুশবুর কথা।আরশাদকে জড়ানো কণ্ঠে বকতে থাকলো সে।অপরদিকে আরশাদের ছটফট বাড়লো কিছুক্ষণ আগে ঘুমের ওষুধ খেয়েও কোন কাজ হলো না।তার দু’চোখে ঘুম ধরা দিল না।কিছুতেই যখন চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছিলো না তখন আরশাদ আরো দুটো ওষুধ খেল।মন মস্তিষ্ক জুড়ে এই একটা মেয়ে ঘুনপোকার মতো তার সবটা দখল করেছে অথচ আড়ালে ক্ষয় করছে তার একাকিত্বের আপন সুখ।তার কাছে এখন সুখের অপরনাম প্রিয় মানুষ।প্রিয় ফ্লুজি।
__চলবে……

ফ্লুজি পর্ব-০৪

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৪]

” কোন শর্ত আমি মানতে পারবো না আরশাদ।”

” না মানলে কী করার এখানে থাকো তবে।”

” দম থাকলে আপনি আমার শর্ত মেনে দেখান।”

আরশাদ ভ্রু কুচকালো শ্লেষ হেসে এগিয়ে এলো তার ফ্লুজির কাছে।

” তুমি কি শর্ত দেবে আমায় প্রিটি গার্ল?”

” আপনার শর্তে কোথাও আমার মতামত আছে?বললাম আমি ফ্লুজি নয় তারপরেও…

আচমকা আরশাদ ধমক দিল।তার ধমকে কেঁপে উঠলো খুশবু।কথা বলার নিস্বন যেন তার ফুরিয়ে গেছে।

” নাটকটা দয়া করে বন্ধ করো।আমাকে আর শাস্তি দিও না।আমাদের কি সম্পর্ক আজ কিসে পরিনত হলো বুঝতে পারছো তুমি?”

” আপনি আমার জীবনটা যে পাটায় ফেলে পিষে দিচ্ছেন সেটা কি বুঝতে পারছেন না?”

” যদি সুন্দর জীবন চাও আমার হাত ধরে উঠে এসো সব পাবে সব।আর যদি আমাকে ঠেলে দু’কদম এগিয়ে যেতে চাও আই সোয়্যার ধ্বংস তোমার অনিবার্য।”

খুশবু হাসলো তার এখন আর এই আরশাদ লোকটাকে ভয় লাগছে না।না একটুও না।ভালোবাসার মরিচিকায় ছুটে লোকটা সদূর ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসেছে।কত্ত বড় বোকা এই লোকটা, তোর জন্য কি মেয়ের অভাব হয়েছে?তুই সুন্দর হ্যান্ডসাম ক্রাশ বয়, তুই যাবি আমেরিকা কানাডা লন্ডন যেখানে খুশি যা তুই কেন বাংলাদেশে এসে আমাকে শূলে চড়াবি।

” আমার জান কি ভাবছো?”

আরশাদের কথায় চমকে উঠে খুশবু।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে বসলো বিছানায়।

” আমরা চিরকুট গেম খেলবো।আপনার চারটে শর্ত চিরকুটে লেখা থাকবে।আমার চারটা শর্ত চিরকুটে লেখা থাকবে।সেই শর্তনামা আটটা চিরকুটের সাথে চারটা খালি কাগজের চিরকুট থাকবে।টোটাল বারোটা চিরকুট।খেলার নিয়ম চিরকুট গুলো এলোমেলো করে দেওয়া হবে সেখান থেকে প্রথম চয়েজ আপনি করবেন।আমরা দুইবার করে মোট চারটা কাগজ তুলবো।
যদি আপনার একটা শর্ত উঠে যায় তবে সেটা আমি মানতে বাধ্য।আমার শর্ত উঠলে আপনি মানতে বাধ্য।”

” যদি সাদা কাগজ উঠে?”

” তাহলে আপনি প্রথম বারে হেরে গেছেন।না শর্ত মানতে পারবেন, না শর্ত দিতে পারবেন।”

আরশাদ দেরি করলো না সে সম্মতি জানালো খুশবুর কথায়।নিজ হাতে সবটা চিরকুট লিখলো খুশবু।একটা বাটিতে রেখে সব চিরকুট এলোমেলো করে ধরলো আরশাদের কাছে।আরশাদ ভয় নিয়ে তুললো একটি চিরকুট।চিরকুট খুলতেই একগাল হাসে সে।

” খুচবুকে টিন চাপ্তা চময় দিওয়া হপে।এরপর…. ”

আরশাদ তার ভাঙা বাংলায় সম্পূর্ণ কথা উচ্চারণ করার আগে কাগজটা ছিনিয়ে নিল খুশবু।চিরকুটের লেখা পড়ে মেয়েটার বেহাল দশা।প্রথম দানে কি না আরশাদের শর্ত! সে বিড়বিড় করে আবার পড়লো,

” খুশবুকে তিন সাপ্তাহ সময় দেওয়া হবে এরপর আরশাদের যে কোন শর্ত সে মানতে বাধ্য।”

” মাই প্রিটি গার্ল মানবে তো সব শর্ত?”

খুশবু আরশাদের হাতের দিকে তাকালো ছেলেটা সব ভিডিও করে রাখছে বলা তো যায় না খুশবু যদি তার শর্ত ভাঙে।

এবার পালা খুশবুর মেয়েটা অনেক ভেবে চিনতে চিরকুট তুলতে চিরকুটটা খুলে যেন সে আশাহত হলো।চিরকুটে লেখা ছিল, “পরিবারকে মানিয়ে খুশবু আরশাদকে বিয়ে করবে।”

আরশাদ পুনরায় হাসলো দুদিক থেকেই সে জিতে গেছে।তৃতীয় বার চিরকুট তুললো আরশাদ সেখানে কিছুই লেখা নেই অর্থাৎ সাদা কাগজ।চতুর্থবার চিরকুট তুললো খুশবু।চিরকুটের লেখা দেখে চকচক করে উঠে মেয়েটার দু’চোখ।
” আজ খুশবুকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।”

আরশাদের কোন হেলদোল হলো না।কারন আরশাদের বড় শর্ত ছিল খুশবুকে পাওয়া যা ইতিমধ্যে সে পেয়ে গেছে।
.
নতুন জামা পড়ে নিজেকে আয়নায় দেখছে খুশবু।আজ তার খুশির দিন শুধু খুশির দিন নয় মহা খুশির দিন।ঝটপট তৈরি হয়ে চুলগুলো উপরে তুলে বাঁধতে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে সে।তার গলায় থাকা কালসিটে দাগ বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে।আনজুমের সাথে চোখাচোখি হয়ে ভীষণ লজ্জায় পড়ে খুশবু।আনজুম এসেছিল তাকে সাহায্য করতে।
দরজায় এসে উপস্থিত হয় আরশাদ।আরশাদকে দেখে আনজুম দ্রুত বেরিয়ে যায় কক্ষ ছেড়ে।

” আমার জান তোমাকে এত প্রাণবন্ত লাগছে কেন?নিশ্চয়ই আমাদের বিয়ের শর্ত দেখে।”

” আর কিছু বলবেন?”

” ইয়েস।এখানে একটা সই চাই জান।”

” কিসের সই?কোন মতলবে এসেছেন এখানে?”

খুশবুর সন্দিহান দৃষ্টির অগোচরে ফিচেল হাসলো আরশাদ।হাতে থাকা কাগজটা বাড়িয়ে দিল তার দিকে।খুশবু বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়লো কাগজটা।

এখানে লেখা এতদিন সে আরশাদ ইহসানের বাড়িতে ছিল এবং এই সম্পর্কে বৃত্তান্ত।অহেতুক একটা কাগজে সই করতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিল খুশবু।

” এটার জন্যেও আবার স্ট্যাম্প লাগে অদ্ভুত লোক আপনি।আরেকটা স্ট্যাম্প আনুন আমি যে আপনার মাথা ফাটিয়েছি নির্দ্বিধায় সই করে দেব।”

” এত স্ট্যাম্প দিয়ে কি হবে জান?একদম বিয়ের স্ট্যাম্প এনে দি।”

” যত্তসব..”

মনে মনে যত রকম গা লি জানে সবটা গা লি আরশাদের জন্য উজার করে ঢেলে দিল খুশবু।আরশাদের চোখ যায় খুশবুর গলায়।তার অতি ভালোবাসা যখন রাগে রূপ নেয় তখনি তার ফ্লুজিকে আঘাত দিয়ে বসে।আরশাদ তার ফ্লুজিকে কাছে আনলো।কালসিটে দাগটায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বাঁকা হেসে বলে,

” তোমার হবু বর রোহানকে এই দাগটা দেখাবে আশা করি তোমাকে বিয়ে করার স্বাদ এক নিমিষে তার মাথা থেকে চলে যাবে।”

” অসভ্য লোক।”

” আমি আরো অসভ্যতা করতে চাই।কিন্তু সুযোগের অপেক্ষা।”

.
খুশবু তৈরি হয়ে যখন কক্ষ থেকে বের হলো আশেপাশের পরিবেশ দেখে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল।টানা কয়েকদিন একটা কক্ষে ছিল সে।এই বাড়ির কোন কিছুই সে যানে না।রাজ প্রাসাদের ন্যায় সাজানো একটি বাড়ি।দেয়ালে বড় করে দুটো ছবি টাঙানো আছে।একজন হাস্যজ্বল বাঙালি নারীর ছবি তার পাশের জন দেখতে ঠিক আরশাদের মতো।বলা চলে হুবহু আরশাদ শুধু ছবির মানুষটা বয়সের ভারে চামড়া কুচকেছে অন্যজন তাগড়া যুবক।খুশবুর অবাক চাহনি দেখে আরশাদ বলে,

” তোমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি🔥।”

” বাজে বকবেন না।”

” আর তো তিন সাপ্তাহ এরপর তুমি আর আমি মিলে সুইটহানি হয়ে যাব ফ্লুজি।”

খুশবু বিরক্ত নিয়ে ছুটে চললো সামনের দিকে।আনজুম দাঁড়িয়ে আছে এক কোণে তাকে দেখে মিষ্টি হাসলো খুশবু।

” এই বাড়িটা আমার বাবা আমার মাকে গিফট করেছে।বাংলাদেশে আমাদের থাকা না হলেও এই বাড়িটার দেখাশোনার জন্য আলাদা লোক রাখা আছে।তোমাকেও একটা বাড়ি গিফট করবো ফ্লুজি।”

” প্রয়োজন নেই আমার।এর থেকে ভালো আমাকে নিস্তার দিন।”

” কি বললে বুঝলাম না।”

আরশাদ ভ্রু কুচকালো সে নিস্তারের অর্থ বুঝলো না।
.
বাহারুল হকের শারিরীক অবস্থা কিছুটা উন্নতির পথে।অসুস্থ স্বামিকে নিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হলো না আনিমার। তার ভাইয়েরা অর্থাৎ খুশবুর মামারা যথা সাধ্য সময় দিচ্ছেন তাদের।যেকোন প্রয়োজনে না চাইতে তারা এসে হাজির।বাহারুল হকের হঠাৎ অসুস্থতার মূল কারণ আকস্মিক তিনি উত্তেজিত হয়ে যান।

শুক্রবার বিয়ের দিন দুপুরে বর যাত্রী বের হওয়ার আগে রোহানদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় রোহানের প্রেমিকা।মেয়েটা অতিথি ভরা বাড়িতে বেশ সিনক্রিয়েট করছিল।মেয়েটা শেষ পর্যায়ে বারবার হুমকি দিয়েছে যে করে এই বিয়ে সে ভাঙবে।

রোহানের বাবা মা সেদিন সবার সামনে ছেলেটাকে নির্দোষ প্রমাণ করলেও প্রকৃত পক্ষে তারাও জানতো এই মেয়ের সাথে রোনার সম্পর্ক আছে।

এসব কথা যখনি বাহারুল হক খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তখনি তিনি ভীষণ রেগে যান।কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বুকের ব্যথায় তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

রোহান আজ আবার বাহারুল হককে দেখতে এসেছে।কেভিনের সামনে রোহানকে দেখে ভীষণ রেগে যান অনিমা।

” এখানে কেন এসেছো?আর কী ক্ষতি করতে চাও আমাদের?”

” আন্টি প্লিজ মানুষ মাত্র ভুল হয়।আমিও ভুল করেছি।

“আমার মেয়েটার ক্ষতি তোমার মাধ্যমেই হয়েছে রোহান।আমার মেয়ে নিখোঁজ আজ এতটা দিন,তুমি তার খোঁজ এনে দিতে পেরেছো?তোমার সেই প্রেমিকা কোথায়?তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

” আপনারা পুলিশকে তার কাজ চালিয়ে যেতে দিন।”

” চুপ থাকো।দূর হও আমার সামনে থেকে।আমার মেয়ের গায়ে যে কালি মাখালে মানসম্মান সবটাই ডুবলো আমাদের।”

” খুশবু এই মুহূর্তে এসে যদি দাঁড়ায় আমি তাকে এক্ষুনি বিয়ে করবো।আমার পরিবারের বাইরে গিয়ে হলেও আমি তাকে বিয়ে করবো।”

” কিন্তু আমি আমার মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দেব না।কখনোই না।প্রয়োজনে ওর বিয়ে না হলে না হবে তবুও তোমার কাছে মেয়ে দেব না।এখান থেকে যাও রোহান।সিকিউরিটিকে ডেকে বের করতে চাইছি না।”

রোহান দাঁড়ালো না।এতটা অপমানের ভার নেওয়ার সহ্য ক্ষমতা তার নেই।
.
আরশাদের গাড়ি এসে থামলো হসপিটালের সামনে।সারাটা সময় আরশাদ গম্ভীর হয়ে ছিল অথচ খুশবু চাতকপাখির ন্যায় ছটফট করেছে কখন ফিরবে তার নীড়ে।খুশবু গাড়ি থেকে দ্রুত নামতে নিলে আরশাদ তার হাত ধরে ফেলে।ছেলেটার চোখে মুখে বিষন্নতার বর্ষণ।

” চলে যাচ্ছ যাও।দেখা আবার হবে হতেই হবে।”

” যদি না হয়।”

” তুমি এমনটা করবে না ফ্লুজি।তুমি আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে এতটা দূর এসেছো।আমি বোকা কারন আমি তোমার প্রতি দূর্বল।যারা ভালোবেসে পিচলে যায় তারাই হয়তো সবচেয়ে বড় বোকা তাই না ফ্লুজি?”

” আমি কি করে জানবো আমি তো কাউকে ভালোবাসিনি।যে তিন সাপ্তাহ সময় আমি পেয়েছি সেই তিন সাপ্তাহের মাঝে আপনার সত্যিকারের ফ্লুজিকে আমি খুঁজে দেব।”

খুশবুর বোকা বোকা কথায় শ্লেষ হাসলো আরশাদ।কোলে থাকা প্যাকেটটি খুশবুর হাতে দিয়ে বলে,

” এখানে একটা নতুন ফোন আছে তোমার আগে সিম আছে।তোমার আগের ফোনটা ভেঙে গেছিলো তাই নতুন ফোন দিলাম।”

” লাগবে না ধন্যবাদ।”

“যেহেতু ফোনটা আমার কারনে ভেঙেছে সেহেতু লাগবেই।যাও বের হও আমার গাড়ি থেকে।”

শেষ কথাটা ধমকের সুরে বললো আরশাদ।খুশবু ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো তার পানে।কি অদ্ভুত লোক রে বাবা।যেখানে সারাক্ষণ তার কাছ ঘেষে থাকে সেখানে এখন তাকে বের করে দিচ্ছে।খুশবু গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল হসপিটালের দিকে হঠাৎ পেছন থেকে ছুটে আসে আরশাদ।ছেলেটা পুনরায় গাড়ির কাছে টেনে আনে খুশবুকে।একটি স্ট্যাম্প এনে ধরলো খুশবুর সামনে।

” এখানে সই করো জান।”

” এটা কিসের কাগজ?”

” তোমাকে যে সেফলি পৌঁছে দিলাম তার প্রমান কি?নাও সই করো।”

খুশবু বিরক্ত হলো।বাবা মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য তার ভেতরটা কতটা যে ছটফট করছে এই আরশাদ বুঝবে কী?কাগজটা ভাজ করে আরশাদ গাড়ির ডেকিতে ধরলো।কাগজটাতে খুশবু দ্রুত সই করে প্রস্থান করলো।
.
বাহারুল হকের কেভিন খুঁজতে মোটেও দেরি হলো না খুশবুর।আরশাদ তাকে বলেই দিয়েছে কত তলার কয় নাম্বার কেভিনে আছে তার বাবা।খুশবুকে দেখে অনিমা খুব বেশি অবাক হলেন না কারণ তিনি আগেই জানতেন খুশবু আসছে।মেয়েকে জড়িয়ে অনিমার আহাজারি বাড়লো।এলোমেলো চুমু খেল মেয়ের কপালে।অনিমা দরজার দিকে চোখে বুলিয়ে বলে,

” আরশাদ আসেনি তোর সাথে?”

খুশবু যখন কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলছিল তখনি অনিমার একটি প্রশ্নে তার দম যেন বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলো।মা কি করে জানলেন আরশাদের কথা?
চলবে____

ফ্লুজি পর্ব-০৩

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৩]

” তোমার আঙুলের রিংটা কোথায় ফ্লুজি?”

চট করে আরশাদের চোখ মুখের পরিস্থিতি পালটে গেল।অস্থিরতা থেকে মোড় নিয়েছে তীব্র রাগের দিকে।

” কি হলো কথা বলছো না কেন জান?আমার দেওয়া রিংটা কোথায়?”

খুশবু ঠোঁট বাঁকালো।কে দিয়েছে তাকে রিং!এই আরশাদ ব্যাটাকে সে এবার প্রথম দেখেছে।

” ফ্লুজি তুমি জাননা ওই রিংটা কতটা এক্সপেন্সিভ ছিল আমি নিজের পছন্দে অর্ডার করেছিলাম।ডায়মন্ডের রিংটা তুমি এক মুহূর্তের জন্য হাত থেকে খুলতে না তাহলে এখন কোথায় সেই রিং?”

শেষ কথাটা প্রবল ক্রোধ নিয়ে ধমকের সুরে বললো আরশাদ।খুশবু ভয় পেল নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলে আরশাদ আরো বেশি রেগে গেল।খুশবুর গত বছর জন্মদিনে তার বাবা তাকে একটি ডায়মন্ডের রিং গিফট করেছিল কই আর তো কেউ তাকে ডায়মন্ডের কোন কিছু গিফট করেনি।খুশবুর হাতে একটি বেশ বড় স্বর্ণের রিং আছে সেটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশাদ।

“জান এই রিংটি কে দিয়েছে?”

“র..বা..মানে”

ভয়ে খুশবুর মুখ থেকে কথা বের হলো না।ওই শ্বেত চামড়ার যুবকটির রাগে রক্তিম মুখ দেখে সব কিছু যেন তার হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।বাদামি মনির চোখ জোড়া তার চোখ রেখেছে স্থিরতায় ।কিন্তু এটাতো স্থিরতা নয় সে কথা জানে খুশবু। কাল বৈশাখীর প্রবল ঝড় শুরুর আগের গুমুট পরিস্থিতিটাই যে আরশাদের চোখে মুখে।

” রোহান দিয়েছে তাই না জান?তোমার সো কল্ড হবু বর।”

চমকে গেল খুশবু।এই লোকটা কি করে জানে রোহানের কথা?রোহানের কথা মাথায় আসতে খুশবুর এবার ভীষণ কান্না পেল।এই মানুষটা তাকে কত্তটা ভালোবাসে তা বলে বোঝানো যাবে না,কিন্তু পরিস্থিতির স্রোত তাকে উল্টো দিকে নিয়ে যাচ্ছে রোহানের ভালোবাসার প্রাপ্য মর্যাদা সে দিতেও পারলো না।

পিনপিনে নিরবতা ছেঁয়ে থাকা কক্ষে আচমকা হা হা শব্দে হেসে উঠে আরশাদ।তার হাসিতে গায়ে কাঁটা দিল খুশবুর।আরশাদ খুশবুর বাম হাতের ভাজে নিজের হাত মেলালো, ডান হাতের ভাজে হাত মিলিয়ে প্যাঁচিয়ে ধরলো মেয়েটাকে।খুশবুর দু’হাত এখন আরশাদের নিকট বন্দি।আরশাদ বাঁকা হাসলো সে সাথে হাসলো তার বাদামি চোখ জোড়া।সে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল মেয়েটার মুখে পড়ে থাকা চুল।সকল কার্যক্রম ভীতু চোখে পরখ করছে খুশবু মনে মনে একটা কথাই ভাবছে কী করে মুক্তি পাবে এই বদ্ধ উন্মাদের হাত থেকে!
আরশাদ তার ফ্লুজির গলায় নাক ঘেষে পুণরায় মুখ তুললো।

” ফ্লুজি আমার জান তোমার এই ভীতু মুখটা আমায় ভীষণ টানে।তুমি কি জানো না,গোটা তুমিটা আমার।তোমার অধিপত্যি বিস্তারকারী একমাত্র আমি।”

আরশাদ মুখ ডুবালো খুশবুর গলায়।একেকটা উত্তপ্ত ছোঁয়ায় কেঁপে উঠছিল খুশবু।আদরের ছোঁয়া ক্রমশ যেন রাগে ক্ষোভে পরিনত হচ্ছিল।আরশাদ তার ফ্লুজির চামড়া পিষে দিল দাঁতে চেপে।ব্যথা কেঁদে উঠলো তার ফ্লুজি।নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও শক্ত দেহের আদলে থেকে সে কিছুই করতে পারলো না।খুশবুর ছটফটানো দেখে মুখ তুলে তাকালো আরশাদ।চোখাচোখি হলো দুজনের।বাদামি চোখ জোড়া কেমন নেশাতুর দৃষ্টি তাকিয়ে আছে এই চোখের ভাষা বুঝতে পারে না খুশবু।আচমকা খুশবুর শুষ্ক ঠোঁটে চুমু খেল আরশাদ একে একে ছড়িয়ে গেল বিস্তার গালে।বাম হাতের সাহায্যে খুশবুর হাত থেকে রোহানের দেওয়া রিংটি বের করলো আরশাদ।দু’আঙুলের সাহায্যে রিংটা চেপে বাঁকা করে ছুড়ে ফেলে উদ্দেশ্যেহীন।

” এই আঙুলি একমাত্র আমার রিং থাকবে।যদি না থাকে এই আঙুল আর তোমার সঙ্গে থাকবে না ফ্লুজি।”

নিজের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে আরশাদকে সরিয়ে দিল খুশবু।রাগে রিরি করছে তার শরীর।

” কী ভাবেন নিজেকে?আর কতবার বলবো আমি ফ্লুজি নই।সেই মেয়ে আমি নই।আমার নাম খুশবু শুনতে পারছেন আমার নাম খুশবু।”

” খুচবু!”

বড্ড কষ্টে উচ্চারণ করলো আরশাদ।নিজের নামের এমন বিকৃতি উচ্চারণ দেখে পুনরায় দাঁতে দাঁত চাপলো খুশবু।

“খুচবু নয় খুশবু।”

” হোয়াট এভার।নামে কি আসে যায়?পরিচয় হওয়ার পর থেকে কম নামে নিজের পরিচয় দাওনি জান।একবার বললে টুবা,লাস্ট বার বললে টাচনোভা।”

” টুবা মানে!টাচনোভা মানে?এগুলা কারো নাম হয়?”

” নামে কি আসে যায়?তুমি আমার ফ্লুজি আমার শখের ফ্লুজি তুমি।”

” এই শুনুন আমি ফ্লুজি নই।আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আপনি খুঁজে নিন প্রয়োজনে আমি খুঁজে দিব।”

আরশাদ হা হা শব্দে হেসে উঠলো।তার ওয়ালেট খুলে একটি মেয়ের ছবি দেখালো যাকে দেখতে হুবহু খুশবুর মতো।মেয়েটার গলা অবধি ছবি তোলা।ছবিটি দেখার পর ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে পড়লো সে।যোজন বিয়োজন করে কোন কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।

” এই মেয়েটা আমার মতো দেখতে কিন্তু এই মেয়েটা আমি নই বিশ্বাস করুন।”

” আর কোন কথা নয় জান।তুমি রেস্ট করো।”

খুশবু রেগে গেল।সোফার সামনে থাকা টেবিল থেকে একটি ফুলদানি নিয়ে মাথায় ছুড়লো আরশাদের।

” কে তোর জান?তোর অত্যাচার অনেক সহ্য করেছি আর নয়।”

” ফ্লুজি ক্লাম ডাউন।”

” ফ্লুজি মাই ফুট।”

খুশবু ধাক্কা দিল আরশাদকে ছেলেটার মাথা ফে টে গলগল র ক্ত ধরছে।খুশবু পালিয়ে যেতে দরজা খুলতে চাইলো কিন্তু তার আর দরজা খোলা হলো না।বাইরে থেকে কেউ দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।অনেকবার করাঘাত করলো সে কিন্তু ফলাফল শূন্য।আরশাদ রক্তাক্ত স্থানে হাত রেখে চাপা হাসলো।ক্রমশ এগিয়ে গেল তার ফ্লুজির কাছে।

” মাই গার্ল এক ভুল আমি আর করবো না।তোমার উষ্কানিতে ঝামেলা করে ব্রেকাপ করেছি তোমার সব চিহ্ন নিজের থেকে মুছিয়ে নিয়েছি।কিন্তু সবশেষে আমি অনুভব করছি তোমায় ছাড়া আমি ভালো নেই,ভালো থাকবো না।আমার তোমাকে চাই ফ্লুজি।তোমাকে সামনা সামনি দেখে আরো গলে গেছি।প্লিজ জান সামলে যাও।”

” ফ্লুজি ফ্লুজি ফ্লুজি।বললাম তো আমি ফ্লুজি নই।খু ন করে ফেলবো ছেড়ে দিন আমাকে।”

খুশবু মেঝে থেকে একটি ভাঙা ফুলদানির টুকরো নিলো আর তা দেখে আরশাদ বাঁকা হাসলো।ক্রমশ এগিয়ে আসতে আসতে সে বলে,

” কিল মি জান।”

আরশাদের অভয়ে বড্ড বেশি ঘাবড়ে গেল মেয়েটা।আচমকা ফোন বেজে উঠলো আরশাদের।পকেট থেকে ফোন বের করতে ফোন ছিনিয়ে নিলো খুশবু।RONI নামে সেভ করা নাম্বার থেকে ফোন আসছে আরশাদ দ্রুত খুশবুর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।দুজনের টানাহ্যাঁচড়ায় ফোনটা কেটে গেল।খুশবু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল আরশাদকে বার বার ফোন আনলক করার চেষ্টা করলো সে।তখনি ফোনে একটি মেসেজ আসে সেই মেসেজটি পাঠিয়েছে রনি।

” গুরুত্বপূর্ণ খবর দেওয়ার আছে স্যার।আপনার ফ্লুজি অর্থাৎ ম্যাডামের বাবা বাহারুল হক উনাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে।মেয়ের শোকে উনার অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে।আমার মনে হলো এই কথাটা আপনাকে জানানো উচিত।”

হাতের ফোনটি আরশাদের দিকে ছুড়ে মারলো খুশবু।তীব্র ক্রোধ নিয়ে আরশাদের শার্টের কলার চেপে বলে,

” আমার বাবা আমার বাবা….”

খুশবুর দম ফুরিয়ে এলো সাথে ফুরিয়ে এলো তার নিস্বান।দেয়ালে পিঠ ঠেকে চুপ চাপ বসে রইলো গুটিয়ে।

মেয়েটার আচরনে আরশাদ অবাক হলো দ্রুত মেসেজটি পড়ে বুঝতে পারলো তার ফ্লুজির কি হয়েছে।

” বাবার কাছে যাবে জান?”

” যাবো যাবো।আমি ছাড়া আমার বাবার কেউ নেই বিশ্বাস করুন কেউ না।প্লিজ আরশাদ আমাকে মুক্তিদিন।”

আরশাদ কিঞ্চিৎ হাসলো।খুশবুর চোখের জল মুছে দিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো কপালে।

” যাবে তো জান।তার আগে আমার শর্ত মানতে হবে কিছু কথা শুনতে হবে।”

” আপনার সব শর্ত আমি মানবো।”

” তবে এখন গুডগার্লের মতো বসে থাকো।এই যে মাথা ফাটিয়েছো আগে চিকিৎসা করিয়ে আসি।”

খুশবু সত্যি নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো সে একটুও নড়লো না।
.
আরশাদের কপালে তিনটে সেলাই লেগেছে।বাংলাদেশে তার পরিচিত গুটি কয়েকজন মানুষ আছে।নানার বাড়িতে নানা নানু নেই তারা মা রা গেছেন বহু আগে।নানার বাড়িতে দুই মামার বসবাস।বাংলাদেশে আসার পর থেকে তারা বারবার ফোন করে যাচ্ছে কবে যাবে আরশাদ।আরশাদ ফ্লুজির ঝামেলা না মিটিয়ে একদমি নড়বে না।ব্যথার ওষুধ খেয়ে কফি হাতে বারান্দায় বসে আরশাদ।ছোট ভাই ‘আরিব’কে বারবার ফোন করছে অথচ ছেলেটা ফোন তুলছে না।দীর্ঘ সময় পেরিয়ে আরিব ফোন তুলে আরশাদের মেজাজ তখন বেজায় গরম।

” আরিব হোয়াট ইজ দিস?”

” সরি ব্রো ঘুমে ছিলাম।”

আরশাদ ইতালিয়ান ভাষায় গা লি দিল আরিবকে।তা শুনে হাসলো আরিব
বদমেজাজি ভাইয়ের গা লি শোনা নতুন কিছু নয়।

” তোমার ফ্লুজি কোথায়?”

” আছে।”

” সে কি সব স্বীকার করেছে?নাকি এখনো না চেনার ভান করে আছে।”

” সে আমাকে চেনে না।ফ্লুজির এমন নাটক করার মানে কি আরিব।”

” ফ্লুজি তোমাকে ভালোবেসেছিল কিন্তু তোমার রাগারাগি গা/লা/গা/লি শুনে মেয়েটা ব্রেকাপ করলো।তুমিও জেদ করে তার সমস্ত ছবি,মেসেজ,জমানো স্মৃতি মুছে দিলে।দুজনের মাঝে দুরত্ব তৈরি হলো হয়তো বা ব্রেকাপের সময়টাতে ফ্লুজি মুভ অন করেছে।সে নতুন জীবন সঙ্গী এনেছে জীবনে,তাই তো তোমাকে ইগ্নোর করছে ব্রো।”

” আমি ছাড়া ফ্লুজির জীবনে আর কোন অপশন থাকবে না।আমি তার জীবনের সব!সব মানে সব।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা কোট ম্যারেজ করবো ফ্লুজির দুরত্ব আমি আর মানতে পারছি না।”

” গ্রেড নিউজ ব্রো।এটাই ভালো হবে।”

” তোমরা সবাই বাংলাদেশে আসতে পারবে?”

” আমার আর মায়ের কাগজ পত্র সব রেডি যাস্ট টিকেট কাটবো।তবে বাবা গ্র‍্যানি আসতে পারবে না বাবা এলে গ্র‍্যানি একা হয়ে পড়বেন।”

“ওকে নো প্রবলেম।তোমরা দুজন আসো যত দ্রুত সম্ভব।”
.

আরশাদ খুশবুকে যেভাবে রেখে গেছে ঠিক সেভাবেই বসে আছে খুশবু।কোন সন্দেহ নেই মেয়েটা এক চুলো নড়েছে।থেকে থেকে কেঁপে উঠছে সে।অশ্রুপাতে দু’গাল ভিজে টইটম্বুর।

” ফ্লুজি আমার জান।”

ফ্লুজি মাথা তুলে তাকালো।আরশাদের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে মন থেকে একটুও খারাপ লাগা কাজ করলো না তার।আরশাদ তার ফ্লুজির নরম গালে হাত ছোঁয়ালো অশ্রু মুছে টেনে আনলো তার কাছে।

” এতটা ভেঙে পড়ে না জান।”

” আমি বাবার কাছে কখন যাব?”

” তোমার কাছে তিনটা শর্ত রাখলাম।এই তিনটা শর্ত তোমার আগামী কয়েক ঘন্টা এবং ভবিষ্যৎ এ প্রভাব ফেলবে।এমকি পালটে যাবে তোমার জীবন।”

” কী শর্ত?”

” শর্ত ১: তোমার জীবনে তোমার পরিবার থাকবে তোমার প্রিয় মানুষরা থাকবে সাথে আমিও থাকবো তোমার প্রাণেশ্বর হিসেবে।
শর্ত ২: তোমার জীবনে আমি থাকবো না..

আরশাদ কথা শেষ করার আগে খুশবু সানন্দে বলে,

” শর্ত ২,হ্যা শর্ত ২ মানবো আমি।”

খুশবুর বোকামিতে আরশাদ হেসে ফেললো।

” আগে পুরো কথা শুনো আমার জান।
শর্ত ২: তোমার জীবনে আমি থাকবো না, তোমার পরিবারের কেউ থাকবে না কেউ না।তোমার কোন প্রিয় মানুষের অস্তিত্ব তোমার জীবনে থাকবে না।তোমার সাথে কি ঘটবে আমি আসলেই জানিনা।”

শর্ত ৩: তুমি তোমার হবু বর রোহানকে এখন ফোন করবে এবং বলবে তুমি তোমার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছো।বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সে তোমার সাথে ইন্টিমেট হয়েছে কিন্তু এখন তোমার প্রেমিক তোমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে।এই মুহূর্তে এসে তুমি রোহানকে বিয়ে করতে চাও।এসব বলার পর রোহান যদি তোমাকে সত্যি বিয়ে করতে চায় তবে আমি তোমার জীবন থেকে সরে যাব ফ্লুজি।আর যদি রোহান তোমায় না মেনে নেয় তবে তুমি আমার হয়ে থাকবে।
আমি যা বলবো তাই তোমাকে শুনতে হবে করতে হবে।আমি মানে আমি তোমার জীবনে শুধুই আমি।

এক নিষ্ঠুর প্রহেলিকায় বেঁধে গেছে মেয়েটার জীবন।আরশাদ উঠে দাঁড়ালো আয়নায় নিজেকে দেখে তার ফ্লুজির উদ্দেশ্যে বলে,

” প্রিটি গার্ল সিদ্ধান্ত তোমার কাছে কী করবে তুমি?”

__চলবে…..