আরশাদের সান্নিধ্যে খুশবু কি পেয়েছে কি হারিয়েছে তার সঠিক জবাব খুশবুর কাছে নেই।তবে আরশাদের সান্নিধ্যে আস্ত একটা সুখের আকাশ পেয়েছে।এক কোণে বানানো কোণ ঠাসা জগৎটা ছিড়ে বেরিয়ে এসেছে।আরশাদের হাত ধরে ঘুরছে অজানা শহরে।এসব শহরের ঐতিহ্য ইতিহাস তার তো আগে জানা ছিল না কোনদিন ধারণাও করেনি বাংলাদেশ পাড়ি দিয়ে সে আসবে অন্য এক দেশে বসবাস করবে অন্য আরেক মানুষের সাথে।
মিলান শহরে এডনা এই প্রথম বারের মতো এসেছে মেয়েটা আজ ভীষণ এক্সাইটেড।এলোনের পাশে দাঁড়িয়ে তার ছবি তোলা আর শেষ হলো না।আরশাদ তার ফ্লুজির হাত ধরে হাটছে।খুশবু অনেকবার মিলান ক্যাথেড্রাল দেখেছে তবে সামনা সামনি নয় মুভিতে গানে।ক্যাথেড্রালের সম্মুখে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয় খুশবু।এত সুন্দর!এত চমৎকার দৃশ্য! এতো তার ভাবনার বাইরে ছিল।মিলান ক্যাথেড্রালকে নিজের চোখে দেখা ফটোগ্রাফে দেখার মতো এক নয়। সামনা সামনি ক্যাথেড্রালের সৌন্দর্যের কাছে উচ্ছ্বসিত হয় মনপ্রাণ।ভ্রমন পিপাসুদের কাছে এটি একটি উত্তম স্থান।
” আরশাদ আপনি আগে এসেছিলেন এখানে?”
” হুম।তিন বছর আগে এসেছিলাম।”
আরশাদ খুশবুর হাত ধরে হাটতে থাকে।মেয়েটা বোঝাতে শেখাতে তার কোন কার্পণ্য নেই।
মিলানের সবচেয়ে বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভটি পরবর্তীকালে এই ক্যাথেড্রালে পরিণত হয় যার পুরো নাম ‘সান্তা মারিয়া নাসেন্টে’।গথিক স্থাপত্যের এই দুর্দান্ত ভবনটিকে মিলানের প্রতীক বলা হয়, কারণ এটি শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। ।
গথিক যুগের গির্জাগুলো ঐতিহ্যগত ভাবে অসংখ্য ভাস্কর্য দিয়ে সজ্জিত, কারণ অন্তহীন বিবরণ গথিক ভবনগুলির প্রধান সজ্জা হিসাবে বিবেচিত হয়।
মিলান ক্যাথিড্রালে ২২৪৫ টি ভিন্ন এবং খুব অসাধারণ ভাস্কর্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাধুদের মূর্তি, বাইবেলের গল্পের দৃশ্যের চিত্র এবং অদ্ভুত ফ্যান্টাসমাগোরিক প্রাণী। বিল্ডিং সজ্জিত বিবরণ অনেক মধ্যযুগীয় মুখ চিত্রিত।
সামনের ভাগে কেন্দ্রীয় ব্যালকনিতে অবস্থিত কিছু মহিলা চিত্রগুলি নিউ ইয়র্ক স্ট্যাচু অফ লিবার্টির সাথে খুব মিল।
ডিলান, আরশাদ এবং খুশবুর বেশকিছু ছবি তুললো।জনের কথাগুলো মাথায় আসতে মন মরে যায় ডিলানের।খুশবু এমন মেয়ে?আদৌ কি এই কথা বিশ্বাস হয়!কোথায় যেন শুনেছে একই চেহারার মানুষ পৃথিবীতে সাতজন আছে তাহলে খুশবুর সাথেও কি সেই তেমনটা ঘটছে?ক্যাথেড্রালের আশেপাশে মানুষজনের অভাব নেই।নানান শহরের নানান দেশের মানুষ এখানে উপস্থিত।বন্ধুরা যে যার মতো ঘুরছে ডিলান ক্যাথেড্রালের সৌন্দর্য ক্যাপচার করতে ব্যস্ত।মনের ভুলে তার সাথে ধাক্কা লেগে একটি মেয়ের ফোন ছিটকে পড়ে রাস্তায়।মেয়েটির পাশে দাঁড়ানো ছেলেটি চেচিয়ে উঠে।ডিলান নিজের ভুলে মাথা নত করে।মাফ চায় ছেলেটির কাছে।মেয়েটি ফোন হাতে তুলে দাঁড়াতে ডিলান চমকে যায়।থমকে যায় তার স্নায়ু। কি এক অদ্ভুত প্রহেলিকায় আটকে গেছে তার জ্ঞান বুদ্ধি।
মেয়েটি ফোন হাতে তুলে ন্যাকামিতে বলে,
” আমার ফোন…দেখে হাটবেন তো।”
মেয়েটির সম্মুখে থাকা ডিলান নামক ছেলেটাকি বাংলা বুঝে?একদমি না।অথচ মেয়েটির কথা ছিল বাংলায়।ডিলানের নিরবতায় সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বিরক্ত হয়।তার পাশে থাকা ছেলেটিকে তাড়া দিল।দু’জনে যখনি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তখনি ডিলান মেয়েটির হাত ধরে ফেলে।
এক অপ্রতিভ অবস্থায় আটকে যায় দুজনে।ডিলান লাহমায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে।মেয়েটি ঝটকায় সরিয়ে ফেলতে চায় তার হাত।ডিলান চেচিয়ে উঠে,আরশাদকে ডাকে হাঁক ছেড়ে।ডিলানের এমন চিৎকারে আরশাদ ছুটে আসে।খুশবু তখন এডনার সাথে ছিল বিধায় ডিলানের ডাকা ডাকিতে সে আগ্রহ দেখাল না।
আরশাদ ডিলানের সামনে আসতে চোখ পরে ওয়েস্টার্ন পরাহিত একটি মেয়ের দিকে।মেয়েটি দেখতে হুবহু খুশবুর মতো।আশ্চর্য!অবিশ্বাস্য কান্ড!আরশাদ ঢোক গিললো মেয়েটির পানে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে,
” হু আর ইয়ু?”
আরশাদের এমন আচরনে হতবুদ্ধ হয়ে যায় মেয়েটি।আরশাদের দিকে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে তাকিয়ে রইল পিটপিট চোখে।ডিলান উত্তেজিত হয়ে বলে,
“হোয়াট’স ইয়ুর নেম?”
” নীরা।”
মেয়েটির গলার স্বর ফুরিয়ে এলো।হঠাৎ এই দু’টি ছেলের আচরণ নীরাকে চিন্তায় ফেললো।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি তাড়া দিয়ে বলে,
” তুমি যাবে?এই ছেলেরা কী চায় তোমার কাছে?”
নীরার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির বিরক্তিকর চাহনি বুঝতে পারলো।ব্যাগ থেকে একটি কার্ড নিয়ে ডিলানের হাতে ধরিয়ে দিল নীরা।
” এটা আমার কার্ড।নাম্বার আছে যোগাযোগ করবেন।চার্জের ব্যপারে না হয় ফোনেই আলাপ হবে।”
ডিলান এবং আরশাদ ভড়কে গেল।চার্জ!কিসের চার্জ?ততক্ষণে এলোন এগিয়ে এলো।নীরাকে দেখে দু’কদম পিছিয়ে গেল সে।নীরার বাহুতে সেই চিরচেনা টেটু দেখে এলোন বলে,
” এতো সেই কলগার্ল মেয়েটা।”
আরশাদ চমকে গেল।ডিলান এলোনের কথায় সায় জানালো।নীরাকে নিয়ে এই তিনটা ছেলের এতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে কেন?এসব নিয়ে নীরা বেশ অপ্রস্তুত হলো সে,এরা এতটা আলোচনা করছে কেন?
এডনা এলোনকে বারবার ডাকছিল কিন্তু এলোন কি আর তার ডাক শোনে?ছেলেটার চোখের সামনে আশ্চর্যজনক একটি কান্ড ঘটেছে তার কর্ণকুহুরে আজ আর কোন ডাক যাবে না।
এডনা এলোনের কাছে আসে তার সাথে খুশবু এগিয়ে এসে দাঁড়ায়।নীরার দিকে তাকিয়ে চমকে যায় সে।হুবহু তার মতো দেখতে এই মেয়েটি কে? ডিলান এলোন আরশাদ সবাই খুশবুর দিকে তাকিয়ে।খুশবুর সন্ত্রস্ত চাহনিতে ঘুরে তাকালো নীরা।খুশবুকে দেখে সে নিজেও চমকে যায়।মুখোমুখি হয় দু’টো সত্তা।কডি স্তম্ভিত হয়ে বলে,
” কি হচ্ছে এসব?”
খুশবুর মাথা ঘুরে যায়।তার শরীর কাঁপে লাগামহীন।আরশাদ তাকে দ্রুত ধরে তার মাঝে যতটা না ভয়ভীতি দেখা যাচ্ছে নীরার মাঝে তা কিছুই দেখা যাচ্ছে না।নীরা এগিয়ে আসে খুশবুর গাল চেপে বলে,
” তুমি খুব সুন্দর।আমার মতো সুন্দর।”
নীরার কথার পালটা জবাব খুশবু দেয় না মূলত দিতে পারে না।মেয়েটা এখনো তার হোচট খাওয়ার জগৎ থেকে বের হতে পারেনি।আরশাদ নীরাকে বলে,
” আপনি কে?আপনার পরিচয় কী?”
” আগে আপনি বলুন,আপনি কে?”
বিস্মিত হয় আরশাদ।নীরা কারো দিকে মনোনিবেশ করলো না সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল খুশবুর পানে।এই মেয়েটা দেখতে তার মতো কেন?নীরার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা তাকে ভীষণ তাড়া দিল।।নীরা আর দাঁড়ানোর সুযোগ সময় কোনটাই পেল না।খুশবু নীরাকে বলে,
” আপনি কে?আমার মতো দেখতে আপনি?আপনার আসল পরিচয় দিন দয়া করে।”
” আমার কার্ড দেওয়া আছে।পরে যোগাযোগ করা যাবে।এখন আমার হাতে সময় নেই।”
খুশবুর মাঝে ভয়ের বাসা বাঁধে।আচ্ছা আরশাদ যে মেয়েটাকে ভালোবাসতো সেই মেয়েটা এই মেয়েটা নয়তো?নীরা মেয়েটা যে কলগার্ল খুশবু এখনো বুঝতে পারলো না।তাই সে তার সন্দেহে জোরালো হলো আরশাদের প্রেমিকা নিশ্চয়ই এই মেয়েটাই ছিল।
খুশবু নীরার পথ আটকে দাঁড়ায়।আরশাদের দিকে ইশারা করে বলে,
” আপনি উনাকে চিনেন?”
নীরা আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
” না।”
” সত্যি করে বলুন আপনি উনাকে চিনেন না?”
” না।”
” উনি আপনাকে ভালোবাসতো আপনার জন্য পাগল ছিল।ভালো করে মনে করে দেখুন উনি আপনাকে ফ্লুজি বলে ডাকতো।”
নীরা বিরক্ত হলো।আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
” আমি উনাকে চিনি না।কে ভালোবাসতো আমায়?আমি কাউকে ভালোবাসিনি,চাহিদার কাছে ভালোবাসা ফিকে।শোনো আমার তাড়া আছে তোমার সাথে পরে কথা বলবো।”
নীরা চলে গেল ছেলেটার হাত ধরে।ডিলান সহ বাকিরা এবার শিওর হয়ে গেল জন মিথ্যে বলেনি।খুশবুর মতো দেখতে মেয়েটির নাম নীরা।আর নীরা মেয়েটা কলগার্ল।
.
ঘুরাঘুরির সব আনন্দে ভাটা পড়ে গেছে।খুশবু তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে।নীরা নামের মেয়েটির সাথে খুশবুর কি সম্পর্ক এর সঠিক কোন ব্যাখ্যা পাচ্ছে না সে।আরশাদ কি বলবে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।সব মিলিয়ে কি একটা বিশ্রি পরিস্থিতির শিকার তারা।খুশবু চোখ মুছলো ব্যাগ হাতড়ে খুঁজলো তার ফোন।ফোন হাতে পেয়ে বাহারুল হককে ফোন করতে গেলে আরশাদ বাঁধা দিল।
” খবরদার ফ্লুজি কাউকে ফোন করবে না তুমি।”
” কিন্তু কেন?বাবা মা নিশ্চয়ই জানেন এই মেয়েটি কে?আমার তো কোন বোন নেই তাহলে এই মেয়েটি কে?”
” সে যেই হোক।এখন কাউকে কিচ্ছু জানানোর দরকার নেই।”
” কেন দরকার নেই হ্যাঁ?বলুন কেন দরকার নেই?”
” নীরা নামের মেয়েটির সাথে বিস্তারিত আলাপ না করে এভাবে সবাইকে চিন্তায় ডুবিয়ে মারা কি ঠিক হবে?”
” আরশাদ আপনি যেদিন আমায় ফ্লুজি বলেছিলেন,আপনি দাবি করেছিলেন আমি আপনার প্রেমিকা আমি ভেবেছিলাম আপনার বোধহয় মাথায় সমস্যা কিসব বলছেন আপনি।আমি কোন ছেলের সাথে প্রেম করিনি তাহলে হঠাৎ একটা ছেলে এসে আমাকে কেন তার প্রেমিকা দাবি করবে?এখন বুঝতে পারছি ওই মেয়েটা আপনার প্রেমিকা ছিল তাই না?”
” আমি যাকে দূর থেকে ভালোবেসেছি সেই মেয়েটার সাথে এই মেয়েটার অনেক ফারাক।এই মেয়েটার গা ভরতি টেটু,হাতে কাটা গর্ত দাগ।অথচ আমার ফ্লুজির কোন কাটা দাগ ছিল না।অন্তত চাল চলনে মিল নেই।”
খুশবু নাক টেনে শ্বাস নেয়।আরশাদের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
” আরশাদ আমাকে বিশ্বাস করেন?আমাকে একটু বিশ্বাস করুন।আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি আপনার প্রেমিকা নই।নীরা যদি আপনার প্রেমিকা না হয়,আমি যদি আপনার প্রেমিকা না হই তাহলে আপনার প্রেমিকা কে?কার সাথে আপনি মন বদল করেছিলেন?কাকে ভালোবেসেছিলেন?”
খুশবু কেঁদে ফেললো।প্রশ্ন তো আরশাদের মনেও জেগেছে।কিন্তু অতীতের কালো অধ্যায়গুলো ভাবতে চায় না সে।এই মেয়েটাকে নিয়ে সে ভীষণ খুশি।আরশাদ তার ফ্লুজির দু’গাল আঁজলায় নেয় মেয়েটার চোখের পানি মুছে বলে,
” ‘ফ্লুজি’।মানে কি জানো?ফ্লুজি মানে সুন্দরী।তুমি আমার সুন্দরী।ভুল ভ্রান্তি এখন আর চাইলেও সংশোধন হবে না আমি করতে চাই না।আমার পুরোনো প্রেমিকা যদি তুমি সত্যি না হও, তাও তুমি আমার ফ্লুজি।আমি আমার অনুভূতিহীন পাষাণ মন নিয়ে তোমার ক্ষতি করতে গেলাম অথচ ফিরে এলাম এক বুকে ভালোবাসার বাগান নিয়ে।আমাকে আর ব্যথিত করো না।আমার পাশে থাকো।তুমি জানো?,
তুমি আমার মন গোপনের সুখের ব্যথা।”
চলবে…
এবার বলুন তো আরশাদের সেই প্রেমিকা তাহলে কে?
__রাত জাগা পাখিরা সবাই সাড়া দিয়ে যাবে কিন্তু 🥺
খুশবু প্রত্যুত্তর করলো না।ভিডিওর দিকে মনোনিবেশ করলো সে।হঠাৎ ভিডিও ফুটেজে আরিব আর এলিনাকে দেখতে পেল খুশবু।মেয়েটা আরশাদকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
” দেখনু দেখুন এলিনা আর আরিবকে কি সুন্দর লাগছে।”
” লাগলেও লাগা বারণ।”
” কেন বারণ?”
আরশাদ চুপ হয়ে যায়।ভিডিও ফুটেজটিতে সবাইকে দেখা যাচ্ছে।খুশবু আরশাদকে ঠেলে যখন দূরে সরিয়ে দেয় সেই সময়টাতে আরশাদ খুশবুর চোখে চোখ রাখে।
” কীভাবে পারলে আমাকে সরিয়ে দিতে ফ্লুজি?একটুও বুক কাঁপলো না?”
” না কাঁপলো না।”
হঠাৎ একটি সিন দেখে আরশার ছলকে উঠলো।গরম কফি ছিটকে পড়লো তার হাতে।এলিনা এবং আরিবকে চুম্বনরত অবস্থায় দেখে হতবাক সে।ভিডিওটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আরিব নিজেকে সরিয়ে আনলেও এলিনা সেচ্ছায় আরিবকে কাছে টেনেছে।আরশাদ ঢোক গিললো এতো সাংঘাতিক ব্যপার!ভালোবাসতে বাঁধা নেই কিন্তু এদের সম্পর্কে অনেক দিক বেদিক জড়িত।
খুশবু আরশাদের বাহু চেপে ধরে আতঙ্কিত নয়নে তাকায় তার পানে,
আরশাদ কফির মগটা রেখে উঠে দাঁড়ায়।কিয়ৎক্ষণ পায়চারি করে চলে যায় আরিবের কাছে।আরিব তখন বন্ধুদের সাথে গ্রুপ কলে ব্যস্ত।ভিডিও কলে হেসে হেসে কথা বলছে ছেলেটা।প্রতিবারের মতো আরশাদ আজ আর অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলো না।সরাসরি চলে এলো ভাইয়ের কক্ষে।হঠাৎ আরশাদকে দেখে অবাক হলো আরিব,
” ব্রো কিছু বলবে?”
“হুম।ফোন রাখো।”
” পাঁচ মিনিট সময় দাও।”
” পাঁচ সেকেন্ডো দিতে পারবো না।”
আরশাদের কড়া জবাবে আরিব দ্রুত কল কাটে।
” কি হয়েছে?তোমাকে চিন্তিত লাগছে কেন?”
” এলিনাকে পছন্দ করো তা আমি জানি।এলিনা কি তোমাকে পছন্দ করে?”
” হঠাৎ এসব কথা কেন?”
” এলোনের বিয়ের ডান্সে তোমরা কি করেছিলে?সজ্ঞানে করেছিলে?এলিনা ডান্স শেষ করার পরেও মাতাল ছিল না আমার ঠিক ঠাক মনে আছে।তাহলে তোমরা….”
বুকের ভেতরটা প্রবল ভাবে কেঁপে উঠলো আরিবের।গলাটা কেমন বেঁধে গেল আচমকা।আরশাদ জানলো কি করে?
“ব্রো প্লিজ ভুল বুঝনা ওটা এক্সিডেন্ট ছিল।”
” সিরিয়াসলি?ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুজনকে,বাই দা ওয়ে এলিনা এরপরে তোমাকে কিছু জানিয়েছে?”
” সে তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত ব্যস এইটুকুই।আর কোন কথা হয়নি আমাদের।ও যে মাতাল হয়েছিল এসব ঘোরেই হয়েছিল।”
” তুমি কি এলিনাকে চাও?”
” এলিনা আমাকে চায় না।সেদিনের পর এলিনা আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম।”
” শুনো,এলিনা খ্রিস্টান আমরা মুসলমান।এলিনার বাবার পক্ষের পরিবারের কেউ আমাদের পছন্দ করে না সেটা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়।”
” আমি জানি।আমি নিজেকে বুঝিয়েছি আমার এলিনার দিকে ঝুঁকে পড়া বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।”
” এলিনার বাবার বন্ধুর ছেলে সাথে আন্টি চান তার বিয়ে দিতে সেদিন আমাকে ছেলের ছবিও দেখিয়েছে।তোমরা যদি দুজনে দুজনের অনুভূতিকে সম্মান জানাও তবে আমি একটা ব্যবস্থা করবো।”
” আমি নিজেকে বুঝিয়েছি শুধু শুধু আমাদের পারিবারিক সম্পর্কটা নষ্ট হবে।আমি চাই না এই সম্পর্কে জড়াতে।”
” এলিনা?”
” তার সাথে আমি কথা বলবো।’
আরশার দ্বিতীয় বার কথা বলার আগ্রহ পেল না।আরিবের পিঠে হাত বুলিয়ে চলে গেল তৎক্ষণাৎ।
.
আজ জনের জন্মদিন পার্টিতে আরিব,আরশাদ এবং খুশবুকে ইনভাইট করা হলেও আরশাদ খুশবুকে নিয়ে পার্টিতে গেল না।জনের মতিগতি তার মোটেও ভালো লাগে না।তাছাড়াও খুশবুকে নিয়ে জনের এত আগ্রহ কীসের?যতবার খুশবুকে সে দেখেছে বিভিন্ন ভাবে নানান ইঙ্গিতে কথা বলেছে।
জন্মদিনের পার্টি শেষে বন্ধুরা সবাই মিলে নাইট ক্লাবে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আজ জনের বন্ধুরাও আছে।সব মিলিয়ে প্রায় বিশজনের দল তারা।পার্টির সবকিছু বুঝে শুনে সমাপ্ত জানিয়ে ক্লাবে আসবে বললো জন তাই জনের বন্ধুরা সবাই নিজ নিজ গাড়ি নিয়ে ক্লাবে রওনা হলো।
আরশাদ তখন ওয়াইনের গ্লাস হাতে মাত্র চুমুক বসালো।কডি জনকে উদ্দেশ্য করে বলে?
আরশাদ আড় চোখে তাকালো কডির পানে।তার বন্ধুরা সব এডভান্স।ভাগ্যিস এসবে সে সাহস করেনি অবশ্য তার সাহস করার সাধ্য নেই ইমরান ইহসান এবং আফরোজ জানলে তাকে বাড়ি ছাড়া করবে।সে তার ফ্লুজিতে মগ্ন।ফ্লুজির কথা ভাবতেই মনটা কেমন আনচান করে,মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলে একটু শান্তি লাগত।
আরিবের অন্যমনস্ক ভাবটা জনের চোখ এড়ালো না, সুযোগ্য সুযোগ এসেছে। আরশাদকে আজ রাতেই সত্যটা জানাতে হবে।জন আরিবের দিকে তাকিয়ে বলে,
” শুনো এলিনা ভালো মেয়ে।সময় থাকতে থাকতে এলিনাকে স্বীকৃত দাও না হলে আরশাদের মতো তোমার কপালেও কলগার্ল জুটবে।”
শেষোক্ত বাক্যটি আরশাদের কানে বজ্রধ্বনির ন্যায় পতিত হলো।ওয়াইনের গ্লাসটা রেখে উঠে দাঁড়ালো আরশাদ।ডিলান আরিব সহ বাকিরা এই কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।জন যে এই মুহূর্তে এমন কথা বলবে স্বপ্নেও ভাবেনি তারা।আরশাদ স্থির চোখে তাকালো জনের পানে,
” কী বললে তুমি?”
” ইয়ুর ফ্লুজি ইজ এ কলগার্ল।”
আরশাদ স্তম্ভিত!হতভম্ব নয়নে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।তারপর আচমকাই ফিক করে হেসে ফেললো।আরশাদের হাসিতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো জন।
” সারাদিন কি মাথায় এসব ঘুরে?আজকাল সবাইকে কি এক কাতারে নামিয়ে এনেছো ব্রো?সাবধান করছি আমার বউকে নিয়ে বাজে কথা আমি বরদাস্ত করবো না।”
” আরশাদ তুমি অতি বোকা ছেলে।”
” হ্যাঁ বোকা ছেলে বলেই তোমার কথা এখনো শুনে যাচ্ছি।”
” তোমার ফ্লুজি কলগার্ল।এটা তো মিথ্যা নয়।আমি কক্সবাজার তার সাথে ছিলাম আমার কাছে প্রমান আছে।”
আরশার রেগে গেল।তেড়ে এসে জোর খাটিয়ে ঘুষি দিল জনের নাকে।ভাগ্যক্রমে জন সরে গেল।অবশ্য এই ঝড়ের জন্য প্রস্তুত ছিল জন।ডিলান আরশাদকে চেপে ধরলো এবং শান্ত করতে চাইলো বারবার।কিন্তু আরশাদ কি শান্ত হওয়ার পাত্র?তার স্ত্রীকে নিয়ে বাজে কথা উঠছে সে কি করে পারবে শান্ত হতে।
জন তার কাছে থাকা সকল ছবি আরশাদকে দেখালো।আরশাদ চুপচাপ দেখলো সব।তার ফ্লুজির শরীরের সহিত অন্য পুরুষের শরীর মিশে এই মুহূর্তে তার দাঁড়িয়ে থাকার জো নেই।শরীরের সমস্ত শক্তি এই মুহূর্তে এসে ফুরিয়ে গেছে।আরশাদ বসে পড়লো চেয়ারে।ভাইয়ের ভেঙে পড়া অস্বস্তি দেখে আরিব পাশে দাঁড়াল।এলোন আরশাদকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
” মেয়েটা তোমাকে ঠকালো আরশাদ তুমি কি বুঝতে পারলে না?এখন সময় আছে সবটা এসপার-ওসপার করো।”
আরশাদের ভেঙে পড়া দেখে জন যেন সফল হলো।যদিও এতে একদিকে আরশাদের ভালো চাইল জন।তার ভাষ্যমতে সে চায় না আরশাদ ঠকে যাক।জন আরিবের দিকে তাকিয়ে কঠোর ভাবে বলে,
” আরিব তুমি তো সবটা জানতে কেন জানালে না আরশাদকে?”
আরিব আরশাদের চোখে চোখ রেখে থমকে গেল।প্রত্যুত্তর করার আগে আরশাদ তার দিকে তাকিয়ে স্থির চোখে বলে,
” আরিব ফ্লুজি এমন বিশ্বাস করো?”
” ন…না।”
” কেন বিশ্বাস করো না তুমি?”
কেন বিশ্বাস করে না আরিব? এর সঠিক উত্তর সে নিজেও জানে না।তার ভাবনা চিন্তায় ধারণায় এইটুকুই বুঝে ফ্লুজি এমন মেয়ে হতেই পারেনা।আরিবের নীরবতা মানতে পারলো না আরশাদ।চট করে আরিবের গালে চড় বসিয়ে দিল সে।
” তুমি কেন বিশ্বাস করো না?আচ্ছা সব বাদ আমাকে আগে জানাওনি কেন?”
” আমি…”
আরিব কথা শেষ করার আগে জন বলে,
” তুমি তো তোমার ফ্লুজির অন্ধভক্ত।তাকে নিয়ে কোন কথা তুমি সহ্য করো?সবাই এসব জানে কেউ তোমাকে সাহস করে জানায়নি।ফ্লুজিকে অন্ধবিশ্বাস করা এবার বন্ধ করো।”
” না করবো না।বরং আজকের পর থেকে।আরো বেশি বিশ্বাস করবো তার পাশে থাকবো।তাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করবো।তার পেছনে যে কুকুর লেগেছে সেই কুকুরগুলোকে সরাতে হবে।ফ্লুজিকে নিয়ে বাজে কথা কখনো সহ্য করিনি আর করবো না।”
” চোখ থেকেও অন্ধ তুমি।”
” হ্যাঁ আমি অন্ধ।অন্ধ বলেই তো বুঝতে পারছি ছবির মেয়েটি আমার ফ্লুজি নয়।আমি ওর হাজবেন্ড ওর খুঁত নিখুঁত সব আমি জানি।”
” কী জানো?মেয়েটার ছলনায় ডুবেছো তুমি।”
” ভালোয় ভালোয় কথা বলছি বলে তোমার ভালো লাগছে না তাই না?আমি তো বলেছি ছবির মেয়েটি আমার ফ্লুজি নয়।”
আরশাদ জোরালো গলায় বললো।বন্ধুরা সবাই অবাক হয়ে দেখলো আরশাদের কান্ড।অ্যাডেন এর সত্যতা জানতে মুখিয়ে আছে সে আরশাদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলে,
” এই মেয়ে যদি তোমার ফ্লুজি না হয় তাহলে এই মেয়েটা কে?জন মিথ্যা বলছে না, জনের সিনিয়রাও এই মেয়ের সাথে থেকেছে।”
” অ্যাডেন তুমি আমার বন্ধু এমন কোন কথা বলনা যার কারণে তোমার মুখ দেখার ইচ্ছাও আমার মরে যায়।আমি বলছি তো এই মেয়ে আমার ফ্লুজি নয়।এই মেয়ের হাতের পুরোনো কাটা দাগ গর্ত হয়ে আছে আমার ফ্লুজির কোন কাটা দাগ নেই।এই মেয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে টেটু আর আমার ফ্লুজির এসব নিয়ে কোন ধারণাও নেই।”
আরশাদ বোঝাতে চাইল মানাতে চাইল।কডি বলে,
” তাহলে কল গার্ল মেয়েটা কে?”
” জানি না।”
জন ওয়াইনের বোতলে চুমুক বসিয়ে হেসে ফেললো আরশাদের কাঁধে হাত চাপড়ে বলে,
” আরশাদ মজা করছো?তোমার ওয়াইফ যে কলগার্ল… ”
আচমকা কাঁচ ভাঙার শব্দে চমকে গেল সবাই।জনের কপাল ফেটে গলগলিয়ে রক্ত ঝরছে।আরশাদ ওয়াইনের বোতল দিয়ে জনের মাথায় ফা টি য়েছে।আরিব দ্রুত আরশাদকে ধরে ফেললো।বাকি বন্ধুরা ভয়ে ঢোক গিলে সরে দাঁড়ালো,
” আজ ট্রেলার দেখালাম।পরবর্তীতে মুভি দেখিয়ে ছাড়বো।এত বড় অপবাদ তোলা হয়েছে এর সত্যতা আমি বের করেই ছাড়বো।”
.
আরিব কতবার কত কথায় আরশাদকে শান্ত করতে চাইলো কিন্তু আরশাদ শান্ত হলো না।সে বিশ্বাস করতে নারাজ তার ফ্লুজি এমন মেয়ে।এসব কথা ভাবতেও আরশাদের বুক কাঁপে।
তারা একে অপরের কাছে আসার প্রথম রাতটা কি আরশাদকে প্রমান করে দেয় না তার ফ্লুজি নির্দোষ?
স্বার্থ ছাড়া জন কেন জল ঘোলা করছে?এসবে নিশ্চয়ই জনের স্বার্থ জড়িয়ে।
আরশার বাড়ি ফিরলো মাঝ রাতে।স্টোর রুমের দরজা দিয়ে ভিলায় প্রবেশ করলো সে।ফ্লুজি তখন ঘুমে বিভোর।মেয়েটার নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখখানী আরশাদকে প্রবল ভাবে টানে।আরশাদ শরীরের ভর ছেড়ে দেয় ফ্লুজির শরীরের উপর।মেয়েটার বুকে মাথা রেখে ভিজে উঠে তার চোখ,
” আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো।শক্ত করে ধরো, তোমার স্পর্শ আমার প্রয়োজন।তোমার স্পর্শে আমার দুশ্চিন্তারা মুখ থুবড়ে পড়ে।”
খুশবু মৃদু হেসে জড়িয়ে ধরে আরশাদকে।ছেলেটার হঠাৎ আবার কী হলো?
” আরশাদ কি হয়েছে?”
” কিছু হয়নি।তোমাকে আরো ভালোবাসা প্রয়োজন,আরো বিশ্বাস করা প্রয়োজন।”
” এই কি হলো আপনার?”
” কিছু হয়নি হওয়া জরুরি,তবে তুমি সামলাতে পারবে না আমি জানি।এই ঘরে একটা ছোট বাচ্চার প্রয়োজন।”
” কিসব বলছেন।আরশাদ আপনার কি মন খারাপ?”
” তুমি আমায় বিশ্বাস করো?”
” না করি না।আপনাকে বিশ্বাস না করলে এতদূর আসতাম?আপনি আমায় বিশ্বাস করেন আরশাদ?”
” কি বলেছি মনে নেই?চামড়া কেটে দেখবে?”
” না দেখতে হবে না।আমি বিশ্বাস করি আপনাকে।বিশ্বাস আস্থা উভয় আছে আপনার উপর।”
” তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখো,আমি তোমার বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে বাধ্য”
খুশবু প্রত্যুত্তর করে না।আরশাদের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে চিন্তার দুয়ারে হুমড়ি খেয়ে পড়লো সে।
চলবে…..
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২১ বাকি অংশ]
ভীষণ ভয় নিয়ে আজ কফি বানালো খুশবু।আরশাদ যদি দেখতো খুশবু চুলা জ্বালিয়েছে তবে সুনামি মুহূর্তে তার উপর দিয়ে বয়ে যেত।গতরাতে আরশাদের কি হয়েছে কে জানে।ছেলেটা কেমন কাতর ছিল।সকাল দশটা বেজে গেল অথচ আরশাদের ঘুম ভাঙার নাম নেই।কফি মগ হাতে বিছানার কোনায় বসলো খুশবু।
” আরশাদ শুনছেন?”
পিটপিট চোখ মেলে তাকালো আরশাদ।খুশবুকে দেখেই হাসলো।
” গুড মর্নিং ফ্লুজি।”
” গুড মর্নিং।”
খুশবুর হাসিতে আরশাদ হাসলো।গতরাতের কথা মাথায় আসতে থমকে গেল সে।তবুও নিজেকে রাখলো স্থির।তার ফ্লুজিকে নিয়ে এত বড় কথা উঠেছে এর বিরুদ্ধে তাকে রুখে দাঁড়াতেই হবে।
” আরশাদ কফি।”
” কফি করেছে কে?”
” আমি।”
গলার স্বর নেমে এলো খুশবুর।কপট রাগ দেখিয়ে আরশাদ তার দিকে তাকিয়ে রইল।কফির মগে চুমুক বসিয়ে আরশাদ তৃপ্ত হলো।তখনি ইমরান ইহসানের ফোন আসে।আজ ছুটির দিন বিধায় সবাই বাড়িতেই আছে।বাবার সাথে কথা বলার এক পার্যায়ে আরশাদের মন মরে যায় ফোনটা রেখে খুশবুর কোলে মাথা রেখে বলে,
” কি বলতে চাও বলে ফেল।তোমার এই চোরা চাহনির স্বভাবটা আমার ভালোলাগছে না।”
” আ’ম সরি।”
” কি জন্য?”
” সেদিন রাতে…”
” ওটা নিয়ে পড়ে থেকো না যা হয়েছে ভুলে যাও।”
” সত্যি!তুমি কিছু মনে করোনি তাই না?”
” হুম।”
” আমি আজ চলে যাব।কথা ছিল আরশাদ ভাইয়া সহ ভেনিস যাব কিন্তু ভাইয়া বললো সময় নেই আমার আর কি করার আমি তো এখানে থাকার জন্য আসিনি।”
” চাইলে পার্মানেন্ট থেকে যেতে পারো।থাকবে?”
আরিবের প্রশ্নে পুলকিত হয় এলিনা।পার্মানেন্ট থাকা মানে কি বোঝাতো চাইছে?
” পার্মানেন্ট কিভাবে থাকবো?”
” ভাবিমনি যেমনটা থেকেছে।”
পরোক্ষ ভাবে বিয়ের ইঙ্গিত দিল আরিব।এলিনা অবাক হলো এবং এমন প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করলো।
” ভেবে বলছো?মাথা খাটিয়ে বলছো?কি বলছো তুমি!”
এলিনা উত্তেজিত হলো।আরিব মেয়েটার চোখে চোখ রাখল ।না এই চোখে ভালোবাসা নেই কোন অনুভূতি নেই।নিজের আবেগকে মাটি চাপা দিল আরিব।
“জাস্ট কিডিং এত হাইপার হচ্ছো কেন এলিনা?আমার কাজ আছে তোমার কথা শেষ হলে যেতে পার।”
এলিনা থতমত খেল।আরিবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল সে।
.
এলোনের বাসায় জন আছে এই খবরটা আরশাদের কানে আসতে দেরি করলো না সে।এলোনের বাসায় এসে উপস্থিত আরশাদ।জন আরশাদকে দেখেই ঢোক গিললো। এডনা আরশাদকে বসতে বলে চলে গেল কিচেনে।ডিলান জনকে ইশারায় স্থির থাকতে বললো।
” তোমাকে আমি সম্মান করি কিন্তু এই সম্মানটা আর স্থায়ী রইল না।আমার ওয়াইফের বিরুদ্ধে যেতে তোমাকে কে উস্কে দিয়েছে?”
” তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা আছে?নাকি তোমার ওয়াইফের সাথে আছে?আমার কারো সাথে কোন ঝামেলা নেই।আমি যা বলেছি সঠিক বলেছি।”
” কার সাথে মিলে এসব করছো জন ভাইয়া?ভালোয় ভালোয় সত্যটা বলো আমি কিন্তু মানুষ ভালো নই।মাডার করতেও ছাড়বো না।”
” আবারো বলছি এই অন্ধবিশ্বাস তোমাকে ধ্বংস করবে।আমার যদি অসৎ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে আমি আরো বাজে স্টেপ নিতাম।আমি বাংলাদেশ থাকা কালিন এলোনকে এই মেয়ের পিকচার পাঠিয়েছি অথচ তখন তোমার ফ্লুজিকে না এলোন চিনতো আর না আমি।সেদিন ভিডিও কলে তোমার বউকে দেখে আমি অবাক হই এবং এলোনকে জানাই।”
এলোন ভয় নিয়ে আরশাদের চোখে চোখ রাখে এবং বলে,
” জন ভাই ঠিকি বলছে আরশাদ।”
আরশার বিশ্বাস করতে চাইলো না।ফল কাটার ছুরি কৌশলে হাতে নিয়ে জনের উপর হামলে পড়লো সে।এলোন ডিলান আরশাদকে থামাতে চাইলেও লাভ হলো না।ছেলেটা তার শক্তিতে অনড়।
জনের গলায় ছুরি বসিয়ে দাঁত হিসহিসিয়ে আরশাদ বলে,
” সত্যটা বলো আমার ফ্লুজিকে নিয়ে বাজে কথা কেন তুললে?”
” আমার ঈশ্বরের দিব্যি আমি মিথ্যা বলিনি।আমি সেই মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছি।আমার কোন কিছুর প্রমান করার ইচ্ছে নেই যেহেতু তোমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাই তোমার উচিত এর সত্যতা বের করা।আমিও জানতে চাই তোমার ফ্লুজি যদি সেই মেয়ে না হয় তোমার ফ্লুজির সাথে সেই মেয়ের বৈশিষ্ট্য না মিলে তাহলে সেই মেয়ে কে? আমিও জানতে চাই।”
আরশাদ আর দ্বিতীয়বার কোন কথা বলে না।আর কী বলবে সে?সবটা ধোঁয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে।এলোনের বাসা থেকে ফিরে আরশাদ বাংলাদেশে থাকা রনির সাথে যোগাযোগ করলো।খুশবুকে খুঁজে দিতে এই ছেলেটাই সাহায্য করেছিল তাহলে নিশ্চয়ই সেই কলগার্লের খোঁজ সেই ছেলেটা জানবে।
আরশাদ রনিকে সবটা জানালো।রনি সবটা শুনে যতটা সিরিয়াস হওয়ার ভাব দেখালো প্রকৃত পক্ষে সে আরশাদের কোন কথাই গায়ে লাগালো না।
এক পৃথিবীতে একই চেহারার দুটি মানুষ থাকতেই পারে তারা যদি জমজ হয় তাহলে তারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে কেন?এসবের উত্তর বের করা কি রনির কাজ?এসবের উত্তর নিশ্চিয়ই খুশবুর বাবা মা জানে।তাদের না জানিয়ে এসব জটিল কেস মিমাংসা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।রনির মনে কোন তাগিদ জাগলো না কলগার্ল সেই মেয়েকে খুঁজে বের করার।
অথচ আরশাদ রনির উপর ভরসা করে আছে।সময় পেরিয়ে গেল এক মাস, দুই মাস।হ্যাঁ দুই মাস সময় পেরিয়ে গেল।
ইতালি আসার পর থেকে তুষারপাত কিংবা বৃষ্টি কোনটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি খুশবুর।অথচ আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ করে ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামলো।ভিজিয়ে দিল শুষ্ক পরিবেশ।ঠান্ডায় শিউরে উঠলো খুশবু।
বড় জানলার কাছে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিল বৃষ্টি।কত মাস পর সে বৃষ্টি ছুঁয়েছে!মনের ছলকে ওঠা আবেগকে আজ দমাতে পারলো না সে যার দরুনে প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছে মেয়েটা।আরশাদ তখন রাতের রান্না করছিল।ভেবেছিল খুশবু হয়তো টিভি দেখছে তাই আর বিরক্ত করলো না সে।নিজের রুমে ফিরে আধা ভেজা খুশবুকে দেখে রেগে গেল।দ্রুত এসে টেনে ধরলো খুশবুর হাত।
” এই তুমি জ্বর বাঁধাতে এসব করছো?”
” না।প্লিজ আরশাদ জানলা বন্ধ করবেন না।আমি বৃষ্টি দেখিনি বহুদিন।”
আরশাদের হাত থেমে গেল।ফ্লুজির কথা ফেলতে পারে না সে।বৃষ্টির ফোঁটারা ক্রমশ তীরের ন্যায় ছুটে এসেছে বিঁধছে খুশবুর শরীরে আরশাদ পেছনে দাঁড়িয়ে তাই তো সেও প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছে।আচমকা বৃষ্টির গতিক বেড়ে গেল সেই সাথে শীতের প্রকোপ বাড়লো বুঝি।আরশাদ খুশবুর ভেজা টি’শার্ট তুলে দিল উদর অবধি।মেয়েটার ভেজা চুল লেপ্টে গেছে ঘাড়ে আরশাদ যত্ন নিয়ে সরিয়ে দিল সেই চুল।দু’ঠোঁটের অবস্থান দৃঢ় করলো খুশবুর ঘাড়ে।
খুশবু বাঁধা দিতে পারে না।বাঁধা দেওয়া তার সাধ্যের বাইরে।যতবার আরশাদকে বাঁধা দিয়েছে ততবার আরশার তাকে উস্কে দিয়ে সরে গেছে।ব্যপারটা ভীষণ পীড়াদায়ক তার কাছে।তাই আরশাদ যতবার ভালোবাসার আলিঙ্গনে কাছে ডেকেছে ফিরিয়ে দেয়নি সে।
বৃষ্টির ফোঁটারা লাগামহীন ছুটছে মৃদু বাতাসে গায়ে কাটা দিল খুশবুর।শীতে কাঁপতে কাঁপতে জানলা বন্ধ করতে চাইলে আরশাদ নিজ থেকেই বন্ধ করে।ভেজা শরীর গুটিয়ে মেয়েটা দাঁড়িয়ে রয় এক পাশে।আরশাদ হাসে।ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় তার ফ্লুজির।
” আর ভিজবে?”
” ঠান্ডা লাগছে।”
” লাগুক আমি আছি তো।”
” আপনি থাকলে কি হবে?”
” সব কথা বুঝিয়ে বলতে হবে?
” ধ্যাঁত যান তো,আপনার যত বাজে কথা।”
” যাব কোথায়?সেই তো উষ্ণতার লোভে আমার কাছেই আসবে।”
খুশবু লজ্জা পায়।তার লজ্জায় গুটিয়ে যাওয়া শরীরটা ধীরে ধীরে নিজের আয়ত্তে আনে আরশাদ।
.
কাজের উদ্দেশ্যে ডিলানকে ইতালির মিলান শহরে যেতে হবে।যেহেতু ডিলান যাচ্ছে তার সাথে আরশাদ যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।বাকি বন্ধুরা পিছপা হয়নি তারাও মিলান ঘুরবে বলে জানায়।
মিলানের উদ্দেশ্যে তাদের যাত্রা শুরু হয় সকাল সকাল।হাসি আড্ডায় তাদের এবারের জার্নিটা ভীষণ মজার ছিল।এডনা ভীষণ মিশুক প্রকৃর মেয়ে সে নিজের বন্ধুর মতো খুশবুকে শিখিয়ে পড়িয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে।এডনা আর খুশবুর এতটা মিল দেখে আরশাদের স্বস্তি হয়।
আজকে তাদের গন্তব্য মিলান ক্যাথেড্রাল।
মিলান ক্যাথেড্রাল হলো একটি ব্যতিক্রমী ইউরোপীয় ক্যাথিড্রাল, যেটি শহরের প্রতিটি ভ্রমণকারীকে অবশ্যই দেখতে হবে তাই তো সবার এবারের উদ্দেশ্য ক্যাথেড্রাল দেখতে যাওয়া।মিলান ইতালির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।ইতালির জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে রোমের পরেই মিলানের স্থান। এটি অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিকের দিক থেকে ইতালির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর।চারদিকে নানান মুখ-মুখোশের মানুষের ছড়াছড়ি।এডনা খুশবুর সাথে কথা বলতে বলতে ক্যাথেড্রালের দিকে যাচ্ছিলো।হঠাৎ একটি মেয়েকে দেখে এডনা থমকে যায়।
চোখে লাগানো কালো চশমাটা খুলে তাকায় খুশবুর পানে।
“খুশবু আমি তোমার মতো একটা মেয়েকে এইমাত্র দেখেছি।”
খুশবু ফিক করে হেসে ফেলে।এডনার কথা মাথায় না নিয়ে বলে,
” দূর কি যে বলো।”
” সত্যি বলছি আমি তোমার মতো দেখতে হুবহু একটি মেয়েকে এই মাত্র দেখলাম।ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেল।”
এলিনা চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে আরিবের পাশে।আরিব কপালে হাত ঠেকিয়ে ফোনে মগ্ন এলিনা যে তার সামনে প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে তাতে কোন পাত্তা নেই ছেলেটার।
” ভাইয়া কী হয়েছে তোমার?”
” বললাম তো কিছু হয়নি।”
” তাহলে মন মরা কেন?”
” আমি ঠিক আছি।”
” না তুমি ঠিক নেই।”
আরিব বিরক্ত হয়ে তাকালো এলিনার পানে।এই মেয়েটা তাকে এত জেরা করছে কেন?কি সমস্যা তার?আরিবের মাথা ধরে আছে।চিন্তায় মাথা ফেটে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।খুশবু এমন মেয়ে নয়, আরশাদের ফ্লুজি এমন মেয়ে হতেই পারে না।বাহারুল হক’কে অন্তত এতদিনে সে বেশ ভালোভাবেই চিনেছে খুশবু কোথায় যাচ্ছে কি করছে কার সাথে চলাফেরা করছে সবটাই তিনি নজরে রাখেন।তাহলে খুশবুর মতো মেয়ে কি না কল গার্ল!হোয়াট দা…না না এ হতে পারে না কোথাও কোন গন্ডোগোল আছে।ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে,তাকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।জন এসব কেন করছে?রোহানের সাথে তার হাত নেই তো?এসব কি রোহান করছে?বিয়ে ভাঙার জেদ ধরে রোহান কি জনের সাথে হাত মেলালো?
সব বাদ আরশাদ কি তার ফ্লুজির প্রেমে এতটাই অন্ধ? সে একবারো বুঝতে পারলো না তার ফ্লুজির মাঝে সন্দেহের কিছু ছিল কি না।আরিব চিন্তায় ঢোক গিললো আরশাদকে যখন এসব জানানো হবে তখন তার প্রতিক্রিয়াটা কী হবে?
” ভাবি অসুস্থ জেনেও কেন তোমার কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না আরিব ভাইয়া?ভাবিকে তুমি কতটা কেয়ার করো তা তো আমি জানি।প্লিজ আরিব ভাইয়া আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার?”
” এলিনা আমার মাথা খেয়ে ফেলো না প্লিজ এখান থেকে যাও।”
“তুমি কি চিন্তিত?”
” না।”
“আমাকে ইগ্নোর করছো ভাইয়া?”
” প্লিজ এলিনা আমাকে ভুল না বুঝে আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
এলিনা কথা বাড়ালো না।অভিমান জমিয়ে চলে গেল।আরিব ভাবলো, সারাটা রাত ভাবলো।এই ভাবনার হিসাব মিলিয়ে যা বুঝলো ফ্লুজি এমন মেয়ে নয়।যদি এমন মেয়ে হতো তবে কি আরশাদ বুঝতো না?বাহারুল হকের নজর এড়িয়ে এতটা বিশ্রী কাজে সে যুক্ত হতো না।কিন্তু এই বিশ্রী কাজে ফ্লুজি কেন জড়াবে?তার তো সঙ্গদোষ নেই নাকি আছে টাকার লোভ।মেয়েটা সব নিয়ে পরিপূর্ণ এসবের কোন প্রশ্নই আসে না।
আরিব সব মিলিয়ে সাহস পেল না।এমন এক জঘন্য কথা কি করে বলবে তার ভাইকে?
.
সময় গড়ালো আরো কিছুদিন।ততদিনে মাথা থেকে এসব কথা ঝেরে ফেলেছে আরিব।সে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে ভাবির উপর।এসব নিশ্চয়ই রোহানের ফাঁদ সেই ফাঁদে জড়িয়েছে জন।
ভাইকে জানানোর সাহস করেনি আরিব।একবার মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডাক্তার নিয়ে যারপরনাই ব্যতিব্যস্ত হতে হয়েছিল।আরশাদের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিলো এখন আবার এসব বিশ্রি ব্যপার রটালে আরশাদের কী হবে?
আরিব এই বিষয়টাকে একাই ধামাচাপা দেবে বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল।
.
আচমকা এলোনের বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারিত হলো।ছেলেটাকয়েক মাস লিভইনে ছিল ‘এডনা’র সহিত।তারা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় এবার তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত।তাই দিন তারিখ ঠিক করে বিয়ের আয়োজন সেরে ফেললো খুব দ্রুত।
বিয়েতে আরশাদের পরিবারের সকলে নিমন্ত্রিত হলেও বিয়েতে গেল আরশাদ- খুশবু,এলিনা এবং আরিব।
গির্জার মাঠে ছুটোছুটি করছে এলিনা এবং আরিব।দুজনের মাঝে কিছু নিয়ে দ্বন্দ চলছে।তারা ছুটছে দিক বেদিক।এলিনা দিক হারিয়ে একটি ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে পড়লে মাঠে।আরিব ভ্রু কুচকে তাকালো ছেলেটির পানে।ইতালিয়ান ছেলেটির জিভ কামড়ে হাত বাড়ালো এলিনার দিকে।এলিনা সেই হাতে হাত রাখার আগে আরিব হেঁচকা টেনে দাঁড় করায়।ছেলেটা এলিনার পানে তাকিয়ে বলে,
” মি ঢিসপিয়াস (আমি দুঃখিত)।”
এলিনা হাস্যজ্বল মুখ ধরে রেখে প্রত্যুত্তর করার আগে আরিব তাকে টেনে নিয়ে গেল অন্য দিক।ছেলেটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল তাদের পানে।
আচমকা গির্জার ঘণ্টা বেজে উঠল।সবার আড্ডা আসর ভেঙে ছুটে গেল গির্জার কাছে।অচেনা এক অনুভূতিতে শিহরিত হলো ফ্লুজি।সাদা গাউন ঠেলে আরশাদের হাতে হাত রেখে হাটতে থাকে গির্জার দিকে।এর আগে খ্রিস্টানদের বিয়েতে তার অংশগ্রহণ করা হয়নি।গির্জা দেখতে কেমন সে তো সেটাও জানে না।মুভিতে যা একটু আধটু দেখেছে এই যা।
এলোনের ওয়াইফ এডনা আজ সেজেছে সাদা গাউনে।মেয়েটার কানে ও গলায় চকচকে হিরের নেকলেস,দুল, মাথায় টায়রা।
মেয়েটাকে সবসময় সবাই ওয়েস্টার্ন লুকে দেখেছে আজ বিয়ের সাজে মেয়েটাকে স্নিগ্ধ অপ্সরী লাগছে।এলোনের বাদ বাকি বন্ধুরা অর্থাৎ আরশাদ,ডিলান,অ্যাডান তাদের সাথে আছে জন সহ অনন্যরা “ও….ও” শব্দে ধ্বনি তুললো।
এলোন কালো স্যুট পরে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটার হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ।এলোনের কালো সিল্কি চুলগুলো পরিপাটি করে একপাশে আঁচড়ানো।এলোনের হাস্যজ্বল মুখ আর চোখ জুড়ে ব্যাকুলতায় প্রকাশ পাচ্ছে, ছেলেটা আজ কতটা খুশি!
এডনার কাজিন তার হাত ধরে নিয়ে গেলো এলোনের সামনে।এলোনের হাতে এডনার হাত গুজে দিতে এলোন প্রশস্ত হাসলো।
গির্জায় সকলে উপস্থিত বিয়ে পড়ানোর কার্যক্রম শুরু হতে লাগলো।কিছুটা সময় বাদে বিয়ে পড়ানো শুরু হলো।
এলোন গ্রেগরি এবং এডনা এথালিয়া
তোমরা কোন ভাবে কারো বাধ্যতায় নয় বরং সেচ্ছায় স্বাধীনভাবে ও পূর্ণভাবে এই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে এসেছো?
এলোন বলে,
” হ্যাঁ এসেছি।”
এডনা মতামত জানাতে বলে
” হ্যা এসেছি।”
বিবাহিত জীবনে তোমরা কি পরস্পরকে আজীবন ভালোবাসতে ও সম্মান করে চলতে সম্মত আছো?
” হ্যাঁ সম্মত আছি।”
” হ্যাঁ সম্মত আছি।”
ভবিষ্যতে তোমাদের সন্তান হলে তোমরা কি তাদেরকে ঈশ্বরের দান হতে গ্রহণ করতে ও মানুষের মতো মানুষ করতে সম্মত আছো?
“হ্যাঁ সম্মত আছি।”
” হ্যাঁ সম্মত আছি।”
সুতরাং তোমরা দুজনে পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দীর্ঘ সংকল্পে আছো বলে তোমরা পরস্পর পরস্পরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ডান হাতের উপর ডান হাত রেখে পরমেশ্বরকে সাক্ষী রেখে তোমাদের বিবাহ প্রতিজ্ঞা শপথ পাঠ করবে,
এলোন এই দিনটি নিয়ে ভীষণ এক্সাইটেড ছিল অবশেষে যখন দিনটি এসেই গেল তখন তার খুশি আর যেন ধরে না।এডনার চোখে চোখ রেখে শপথ পাঠে বলে,
” যেদিন তোমাকে অনুভূতিহীন চোখে দেখেছিলাম সেই দেখায় শেষ দেখা ছিল।এরপরের দেখাগুলো ছিল অনুভূতি নিয়ে।ভালোবাসার ব্যাকুলতা নিয়ে।আমি তোমার পাশে থাকতে চাই।আমার শেষ নিশ্বাস অবধি তোমাকে আমার পাশে রাখতে চাই।আমি আরো আরো ভালোবাসতে চাই তোমায়।আমাদের ভালোবাসায় মিশে থাকুক সম্মান শ্রদ্ধা।”
এলোনের হাতে থাকা হীরের আংটি পরিয়ে দিল এডনার অনামিকা আঙুলে।মেয়েটা দু’চোখ অশ্রুতে টইটুম্বুর।এবার সময় এসেছে এডনার শপথ পাঠের।মেয়েটাও আজ জানালো তার অনুভূতি,
” আমার জীবনে তোমার চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই।তোমাকে যতটা ভালোবাসেছি, ভালো রেখেছি তার থেকেও বহুগুন ভালোবাসতে চাই তোমায়।”
এলোনের আঙুলে আংটি পরিয়ে দিল এডনা।
“আমি এলোন গ্রেগরি,গ্রহন করছি এডনা এথালিয়াকে আইনত আমার স্ত্রীরূপে। সে আছে এবং থাকবে সকল পরিস্থিতিতে।”
সম্পূর্ণ কথা এক নিমিষে বললো এলোন।তার চোখে চোখ রেখে এডনা বলে,
“আমি এডনা এথালিয়া, গ্রহন করছি এলোন গ্রেগরিকে আইনত আমার স্বামীরূপে। সে আছে এবং থাকবে সকল পরিস্থিতিতে।”
এলোন এডনা একে অপরের হাতটা ওরা শক্ত করে ধরে আছে।খুশবু চোখ জুড়িয়ে দেখলো তাদের।নব দম্পত্তির খুশি আজ যেন সে নিজেও অনুভব করতে পারছে।আরশাদকে কাছে পেয়ে সে নিজেও তো এতটা খুশি হয়েছিল।
এলোন এবং এডনাকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিতে অতিথিরা হাতে তালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়।
গির্জার পাশেই তাদের বিয়ের ভেন্যু ছিল।সকল অথিতিরা গিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়।আজ বন্ধুরা ভীষণ আনন্দ করছিলো।জন যদিও আজ কুটকাচিলে খুব একটা সময় পেল না।
সময় গড়িয়ে রাত হলো বয়সে ইয়াং কাপলরা থেকে বাকি সকলে বিদায় জানাল।বন্ধুরা মিলে আজ পার্টি করবে।বিয়ের সাদা গাউন পরে নাচানাচি করছিলো এডনা।এডনার এবং এলোনের কাজিনরা মিলে ভীষণ হইহুল্লোড় করছিল।চারদিকে মিউজিকের শব্দ।গানের তালে তালে নাচতে ব্যস্ত এডনা এবং এলোন।সবাই যে যার মতো কাপল বেছে নিল।এলিনা সাদা গাউন তুলে মুখ গোমড়া করে তার পাটনার খুঁজতে লাগলো।কার সাথে নাচবে সে?আরিব বুঝতে পারলো এলিনার চাওয়া।সে দ্রুত এলিনার হাত টেনে বলে,
” আমার সাথেও তো নাচতে পারো।”
” তুমি নাচবে?”
” কেন নয়?”
” ওকে।লেট’স গো।”
এলিনা খুশি হলো।আরিবের হাতে হাত রাখলো।এলিনার কোমড়ে হাত রাখতে আরিবের সমস্ত স্পর্ধা থমকে গেল।এই মেয়েটাকে ছুঁয়ে কি সে অন্যায় করে ফেলেছে?সমস্ত অনুভূতিরা আজ আন্দোলন করছে কেন?
I found a love for me
Oh, darling, just dive right in and follow my lead
Well, I found a girl, beautiful and sweet
Oh, I never knew you were the someone waiting for me
‘Cause we we were just kids when we fell in love
Not knowing what it was
I will not give you up this time
But darling, just kiss me slow, your heart is all I own..
নাচ থেমে গেল।এলোন এবং এডনা দীর্ঘ চুম্বনে মত্ত হলো তাদের সাথে পিছিয়ে রইলো না বাকি দম্পত্তিরা।তারাও একে অপরের ঠোঁটে নিজেদের অস্তিত্বে জানান দিল।কিন্তু এলিনা আরিব?তারা তো চাইলেও এই কাজটা করতে পারবে না।সকল ভাবনাকে দূরে সরালো আরিব।কিন্তু এলিনা!তাকে দমাবে কে?ঘোরের মাঝে আরিবের ঠোঁটে ঠোঁট মেশালো সে।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেল ভালো মন্দের তফার বোঝা তাদের আর হয়ে উঠলো না।দুজনে দুজনের সর্বোচ্চ দিয়ে ঠোঁটে হামলে পড়লো।
চুম্বনরত অবস্থায় খুশবু আবেগের দুনিয়া থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলো।আরশাদ কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, খুশবুর আশকারা পেলে সে আরো বেশি
করবে।খুশবু আরশাদের বুক ঠেলে সরে দাঁড়ালো।আরশাদ তখন ক্ষুদার্ত বাঘের মতো কাতর চোখে তাকিয়ে আছে খুশবুর পানে।খুশবু সেসব পাত্তা না দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো।আরশাদ এগিয়ে এলো এবং হাত চেপে ধরলো তার ফ্লুজির।
” ফ্লুজি কি হয়েছে?”
” আরশাদ এখানে এসব…”
খুশবুর কথার মাঝে জন এগিয়ে এলো।জনের পাশে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে।আরশাদের দিকে তাকিয়ে জন ইতালিয়ান ভাষায় বলতে শুরু করে যার দরুনে জনের কোন কথাই বুঝতে পারলো না খুশবু।
জন আরশাদকে টিপ্পনী কেটে বলে,
” তোমার বউয়ের বোধহয় রুচি পাল্টেছে।”
” মানে?”
” তোমাকে যেভাবে ছিটকে দূরে সরিয়ে দিল আমার তো তাই মনে হলো।”
” কোথায় কি বলছো ভেবে বলবে।পোশাক পাল্টানোর মতো পুরুষ পাল্টানোর স্বভাব বাঙালি মেয়েদের নেই অন্তত এসব তাদের কালচারে নেই।”
” ওহ রিয়েলি?”
কথাটি বেশ মজার স্বরেই বললো জন।তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চিকন গড়নের মেয়েটিকে জড়িয়ে সে চলে গেল অন্যদিক।রাত বাড়তে থাকে এলোন এবং এডনা অনুষ্ঠান অতি দ্রুত সমাপ্ত করতে চায় সে সবাইকে ডিনারের উদ্দেশ্যে ডাকে।কিন্তু বিপত্তি বাঁধে এলিনার বেলায়।মেয়েটা অতিরিক্ত নেশাপানীয় গ্রহন করায় নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে।মূলত চুম্বন শেষে এলিনার হুশ ফিরে মেয়েটা আরিবের কাছে মাফ চায় লজ্জায় গুটিয়ে যায় বারংবার।সবটা সইতে না পেরে দ্রুত বার সেকশনে যায় এবং ঘটিয়ে ফেলে আরেক বিপত্তি।
আরশাদ আরিবকে নির্দেশ দিল এলিনাকে নিয়ে যেন বাড়ি ফিরে যায়।আরিব দাঁড়ালো না এলিনাকে সঙ্গে নিয়ে সে চলে যায় গাড়ির দিকে।
.
খুশবু ভয়ে ভয়ে কদম ফেলছে।সেই সময়টার পর আরশাদ কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেছে।প্রতিটা কাজে নিজের রাগ প্রকাশ পেলেও তার ফ্লুজির দেখভালে অনিহা করছে না।রাগের মাঝেও খুশবুর গাউন তুলে বসতে সাহায্য করছে, খাবার বেড়ে দিচ্ছে আরো কত কি।কিন্তু মন তো মানে না আরশাদের রাগকে খুশবু ভয় পায়।এরপর কি হবে?কি করে আরশাদকে মানাবে খুশবু?
.
খুশবু যখন বাড়ি ফিরে তখন গ্লোরিয়ার চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পায়।আরশাদ জানে গ্লোরিয়া কেন চেচামেচি করছে তাই সে পাত্তা দিল না।বড় বড় পা ফেলে চলে গেল নিজের ভিলায়।খুশবু কৌতুহল দমাতে না পেরে দ্রুত গেল গ্লোরিয়ার কাছে।মাতাল হয়ে বিছানার কোনায় বসে আছে এলিনা।মেয়েটাকে চেপে ধরে আছেন আফরোজ।আরিব নত মাথায় সবটা পরখ করছেন।ইমরান ইহসান গ্লোরিয়াকে শান্ত করতে চাইছেন কিন্তু কে শুনে কার কথা?গ্লোরিয়া বার বার তেড়ে যাচ্ছেন মেয়েকে মারার জন্য।
গ্লোরিয়ার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল খুশবু।আমতা আমতা করে বলে,
” না।”
” এলিনার বয়স কম এসব থেকে প্রতিবার আমি তাকে দূরে রাখি।আমরা যে সোসাইটিতে আছি একটু আধটু খেতেই হয় আমি পারমিশন দিয়েছি কিন্তু তাই বলে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরবে?আরিব তুমি কি একবারো এলিনাকে দেখনি?”
আরিব মাথা নত করলো।সে তো এলিনার সামনে দাঁড়ানোর সাহস করেনি।সবাই যদি চুম্বনের ব্যপারটা জানতে পারে তবে কী হবে?এসব ভেবে আরিবের প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে।
.
আরশাদ নিজ ভিলায় ফিরে মন মরা হয়ে পড়লো।ফ্লুজি তাকে উপেক্ষা করেছে এসব সে মানতে পারবে না কখনোই না।ফ্লুজির জীবনে যত যা থাকবে সবকিছুর ঊর্ধে আরশাদের অবস্থান থাকবে।ফ্লুজির প্রায়োরিটি লিস্টে সর্বপ্রথম থাকবে আরশাদ ইহসান,দ্বিতীয়তে থাকবে আরশাদ ইহসান এবং তৃতীয় থাকবে আরশাদ ইহসান।আরশাদের চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হলো।নিয়ন্ত্রণ হারালো নিজের ক্ষোভের কাছে।স্নায়ু স্থির রাখতে দ্রুত বসলো পছন্দের একটি বই নিয়ে।কিন্তু চিন্তায় ভারী হয়ে থাকা মন মেজাজ কি আর অন্য দিকে ঘুরে?
গায়ের কালো ব্লেজার ছুড়ে ফেললো সোফায়।রান্না ঘর থেকে একটি ওয়াইনের বোতল নিয়ে বসলো টেবিলে।এটি আরশাদের স্টাডি রুম।হরেক রকমের গাছ এবং বিশাল বুক সেলফে সাজানো রুমটা আরশাদের মন ভালো করে দেয়।কিন্তু আজ মন যে বেপরোয়া হয়েছে মন আজ আর তার কথা শুনলোই না।
এক চুমুক ওয়াইন মুখে তুলে আরশাদ মুখ কুচকে ফেললো।সে যানে এটাতে তার নেশা হবে না তাহলে শুধু শুধু কেন ছাইপাঁশ গিলছে?
দরজার ক্যাচক্যাচ শব্দে ঘুরে তাকালো আরশাদ ফ্লুজি এসেছে।মেয়েটা সাদা গাউন ধরে হেটে আসলো আরশাদের সামনে।
” এলিনার উপর ফুফু ভীষণ ক্ষেপে আছেন।”
” জানতাম এমনি হবে।”
” আপনি কি খাচ্ছেন?”
” ওয়াইন।খাবে?”
” নো থ্যাংক্স।নেশা ধরে যাবে তো।”
” তুমি ছাড়া আমার আর কোন নেশা নেই।আ’ম এডিক্টেড টু ইয়ু।”
খুশবু প্রত্যুত্তর করে না।আরশাদ তার গলার টাই ঢিলে করে।ছেলেটার চোখ মুখ অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে।
” আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে আরশাদ?”
” হুম খুব খারাপ লাগছে ভালো করে দেবে?”
” এভাবে বলছেন কেন?কী হয়েছে আমাকে বলুন।”
” আমাকে তোমার ভালোলাগে না?বলো আমার ফ্লুজি, আমাকে তোমার ভালোবাসতে আর ইচ্ছে হয় না?কী চাই তোমার?যা চাও পায়ের কাছে এনে রাখবো।”
” আরশাদ এভাবে বলছেন কেন?”
” তুমি আমাকে তখন উপেক্ষা করেছো কেন?কোন সাহসে?আমি একদিন বলেছি আমি যখন ভালোবাসা নিয়ে তোমাকে ছুঁয়ে দেব তখন তুমি আমাকে সরিয়ে দিতে পারবে না।আমি তোমার সম্মতিতে কিস করেছি তাহলে পরবর্তীতে তুমি কেন আমাকে সরালে?আমাকে কি ভালো লাগছে না?নাকি আমার ছোঁয়ায় সমস্যা হচ্ছে?”
খুশবু ঢোক গিললো।সে জানতো আরশাদ এই ব্যপারটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করবে।
” আরশাদ সকলের সামনে হঠাৎ আমার লজ্জা লাগছিল আমি এসবে অভ্যস্ত নই।”
” আমি আপনাকে আঘাত দিয়ে ভুল করেছি।সবটার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী।আরশাদ আপনি জেদ ধরে নিজের ক্ষতি করবেন না।”
আরশাদ ঢোক গিললো।গ্লাস ছেড়ে এবার চুমুক দিল ওয়াইনের বোতলে।খুশবু জানে আরশাদকে কি করে দমাতে হবে অন্তত এতদিনে খুশবু বুঝেই ফেলেছে আরশাদের দূর্বলতা হলো খুশবু।এই ছেলেটা খুশবুর কাছে নিয়ন্ত্রণহীন।
আরশাদের জেদ দেখে খুশবুর খারাপ লাগলো সাদা গাউন তুলে বসে পড়লো আরশাদের হাটুতে।মেয়েটার দু’পা ঝুলে গেল দু’দিক।আরশাদ অবাক হলো ওয়াইনের বোতল মুখ থেকে সরাতে খুশবু তা টেনে রেখে দিল টেবিলে।
” আমি ছাড়া নাকি অন্য নেশা ধরে না?তাহলে বেহুদা নেশা করছেন কেন?”
” আমাকে অগ্রাহ্য করো না উপেক্ষার দুয়ারে ঠেলে দিও না।আমি মরে যাব, পাগল হবো,দিকশূন্য হয়ে হারিয়ে যাব।আমার তোমাকে চাই।বিশ্বাস করো আমার জান, বাংলাদেশে আমি তোমাকে মারতে গেছিলাম আমি তোমাকে খুনের নেশায় সেদিন তুলে এনেছি কিন্তু কি হলো আমি জানি না আমি নিজেই খুন হয়ে গেছি।আমি তোমার কাছে এসে থমকে যাই।তোমাকে পাওয়ার নেশাটা জেদে রূপান্তরিত হলো সবশেষে তোমাকে পেয়েও আমি সন্তুষ্ট নই।আমার তোমাকে চাই এখনো বলছি আমার তোমাকে চাই তোমার প্রায়োরিটি,দরকার,ভালোলাগা, মন্দলাগা,জড়তা সবটায় আমি মিশে থাকতে চাই।ইয়ু আর মাই ইন্ড এন্ড ইয়ু আর মাই বিগেনিং জান।”
” যদি কোনদিন জানতে পারেন আমি আপনার সেই ফ্লুজি নই তখন কি ছুড়ে ফেলে দিবেন?”
আরশাদ খুশবুর ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরলো।
” ইসস খালি বাজে কথা।তোমাকে আমি ছাড়বো না কখনো না।”
” বাজে কথা নয় আরশাদ।যদি ছেড়ে যান?”
” বিশ্বাসের প্রশ্ন তুলছো? আমার চামড়া কেটে দেখ প্রতিটি শিরা উপশিরা রক্তের সাথে মিশে আছে তোমার প্রতি বিশ্বাস আশ্বাস।”
খুশবু মূঢ় হাসলো।আরশাদের কপালে কপাল ঠেকিয়ে চুমু খেল আরশাদের ঠোঁটে।আরশাদ নিজেও পালটা প্রতিক্রিয়া জানালো।খুশবুর পিঠে হাত রেখে গাউনের চেইন এক টানে খুলে ফেললো।উন্মুক্ত হলো মেয়েটার ফর্সা পিঠ।টেবিলে থাকা সব বই কলম ফুলদানি ঠেলে ফেলে দিল আরশাদ। ফ্লুজিকে ঠেলে বসিয়ে দিল টেবিলে।আরশাদের সঙ্গ দিয়ে তার ফ্লুজি একে একে সব শার্টের বোতাম খুললো।উন্মুক্ত হলো দু’টি দেহ।দুজনের মাঝে কাজ করলো না কোন জড়তা।আরশাদ কক্ষের বাতি নিভিয়ে দিল শুধু চললো হলুদ রঙের কিছু নিয়নবাতি।সেই আবছা নিয়নের আলোয় খুশবুর আবেদনময়ী দেহখানী আরশাদকে আরো টানলো।দেরি করলো না সে,দেরি করতে চায় না খুশবু নিজেও আরশাদের পাগলামিতে সাড়া দিচ্ছে মেয়েটা।আরশাদ তার ফ্লুজির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো যার দরুনে পেছনে ঝুঁকে গেল ফ্লুজি।আরশাদের ঠোঁটের ছোঁয়া বিচরণ করে ফ্লুজির সারা দেহে।আরশাদ নিজেকে সামলে ফ্লুজিকে প্রশ্ন করে,
” হানি ঠিক আছো তুমি?”
” ঠিক থাকতে চাইছি না।”
চলবে…
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২১ বাকি অংশ]
ভীষণ ভয় নিয়ে আজ কফি বানালো খুশবু।আরশাদ যদি দেখতো খুশবু চুলা জ্বালিয়েছে তবে সুনামি মুহূর্তে তার উপর দিয়ে বয়ে যেত।গতরাতে আরশাদের কি হয়েছে কে জানে।ছেলেটা কেমন কাতর ছিল।সকাল দশটা বেজে গেল অথচ আরশাদের ঘুম ভাঙার নাম নেই।কফি মগ হাতে বিছানার কোনায় বসলো খুশবু।
” আরশাদ শুনছেন?”
পিটপিট চোখ মেলে তাকালো আরশাদ।খুশবুকে দেখেই হাসলো।
” গুড মর্নিং ফ্লুজি।”
” গুড মর্নিং।”
খুশবুর হাসিতে আরশাদ হাসলো।গতরাতের কথা মাথায় আসতে থমকে গেল সে।তবুও নিজেকে রাখলো স্থির।তার ফ্লুজিকে নিয়ে এত বড় কথা উঠেছে এর বিরুদ্ধে তাকে রুখে দাঁড়াতেই হবে।
” আরশাদ কফি।”
” কফি করেছে কে?”
” আমি।”
গলার স্বর নেমে এলো খুশবুর।কপট রাগ দেখিয়ে আরশাদ তার দিকে তাকিয়ে রইল।কফির মগে চুমুক বসিয়ে আরশাদ তৃপ্ত হলো।তখনি ইমরান ইহসানের ফোন আসে।আজ ছুটির দিন বিধায় সবাই বাড়িতেই আছে।বাবার সাথে কথা বলার এক পার্যায়ে আরশাদের মন মরে যায় ফোনটা রেখে খুশবুর কোলে মাথা রেখে বলে,
” কি বলতে চাও বলে ফেল।তোমার এই চোরা চাহনির স্বভাবটা আমার ভালোলাগছে না।”
” আ’ম সরি।”
” কি জন্য?”
” সেদিন রাতে…”
” ওটা নিয়ে পড়ে থেকো না যা হয়েছে ভুলে যাও।”
” সত্যি!তুমি কিছু মনে করোনি তাই না?”
” হুম।”
” আমি আজ চলে যাব।কথা ছিল আরশাদ ভাইয়া সহ ভেনিস যাব কিন্তু ভাইয়া বললো সময় নেই আমার আর কি করার আমি তো এখানে থাকার জন্য আসিনি।”
” চাইলে পার্মানেন্ট থেকে যেতে পারো।থাকবে?”
আরিবের প্রশ্নে পুলকিত হয় এলিনা।পার্মানেন্ট থাকা মানে কি বোঝাতো চাইছে?
” পার্মানেন্ট কিভাবে থাকবো?”
” ভাবিমনি যেমনটা থেকেছে।”
পরোক্ষ ভাবে বিয়ের ইঙ্গিত দিল আরিব।এলিনা অবাক হলো এবং এমন প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করলো।
” ভেবে বলছো?মাথা খাটিয়ে বলছো?কি বলছো তুমি!”
এলিনা উত্তেজিত হলো।আরিব মেয়েটার চোখে চোখ রাখল ।না এই চোখে ভালোবাসা নেই কোন অনুভূতি নেই।নিজের আবেগকে মাটি চাপা দিল আরিব।
“জাস্ট কিডিং এত হাইপার হচ্ছো কেন এলিনা?আমার কাজ আছে তোমার কথা শেষ হলে যেতে পার।”
এলিনা থতমত খেল।আরিবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল সে।
.
এলোনের বাসায় জন আছে এই খবরটা আরশাদের কানে আসতে দেরি করলো না সে।এলোনের বাসায় এসে উপস্থিত আরশাদ।জন আরশাদকে দেখেই ঢোক গিললো। এডনা আরশাদকে বসতে বলে চলে গেল কিচেনে।ডিলান জনকে ইশারায় স্থির থাকতে বললো।
” তোমাকে আমি সম্মান করি কিন্তু এই সম্মানটা আর স্থায়ী রইল না।আমার ওয়াইফের বিরুদ্ধে যেতে তোমাকে কে উস্কে দিয়েছে?”
” তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা আছে?নাকি তোমার ওয়াইফের সাথে আছে?আমার কারো সাথে কোন ঝামেলা নেই।আমি যা বলেছি সঠিক বলেছি।”
” কার সাথে মিলে এসব করছো জন ভাইয়া?ভালোয় ভালোয় সত্যটা বলো আমি কিন্তু মানুষ ভালো নই।মাডার করতেও ছাড়বো না।”
” আবারো বলছি এই অন্ধবিশ্বাস তোমাকে ধ্বংস করবে।আমার যদি অসৎ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে আমি আরো বাজে স্টেপ নিতাম।আমি বাংলাদেশ থাকা কালিন এলোনকে এই মেয়ের পিকচার পাঠিয়েছি অথচ তখন তোমার ফ্লুজিকে না এলোন চিনতো আর না আমি।সেদিন ভিডিও কলে তোমার বউকে দেখে আমি অবাক হই এবং এলোনকে জানাই।”
এলোন ভয় নিয়ে আরশাদের চোখে চোখ রাখে এবং বলে,
” জন ভাই ঠিকি বলছে আরশাদ।”
আরশার বিশ্বাস করতে চাইলো না।ফল কাটার ছুরি কৌশলে হাতে নিয়ে জনের উপর হামলে পড়লো সে।এলোন ডিলান আরশাদকে থামাতে চাইলেও লাভ হলো না।ছেলেটা তার শক্তিতে অনড়।
জনের গলায় ছুরি বসিয়ে দাঁত হিসহিসিয়ে আরশাদ বলে,
” সত্যটা বলো আমার ফ্লুজিকে নিয়ে বাজে কথা কেন তুললে?”
” আমার ঈশ্বরের দিব্যি আমি মিথ্যা বলিনি।আমি সেই মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছি।আমার কোন কিছুর প্রমান করার ইচ্ছে নেই যেহেতু তোমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাই তোমার উচিত এর সত্যতা বের করা।আমিও জানতে চাই তোমার ফ্লুজি যদি সেই মেয়ে না হয় তোমার ফ্লুজির সাথে সেই মেয়ের বৈশিষ্ট্য না মিলে তাহলে সেই মেয়ে কে? আমিও জানতে চাই।”
আরশাদ আর দ্বিতীয়বার কোন কথা বলে না।আর কী বলবে সে?সবটা ধোঁয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে।এলোনের বাসা থেকে ফিরে আরশাদ বাংলাদেশে থাকা রনির সাথে যোগাযোগ করলো।খুশবুকে খুঁজে দিতে এই ছেলেটাই সাহায্য করেছিল তাহলে নিশ্চয়ই সেই কলগার্লের খোঁজ সেই ছেলেটা জানবে।
আরশাদ রনিকে সবটা জানালো।রনি সবটা শুনে যতটা সিরিয়াস হওয়ার ভাব দেখালো প্রকৃত পক্ষে সে আরশাদের কোন কথাই গায়ে লাগালো না।
এক পৃথিবীতে একই চেহারার দুটি মানুষ থাকতেই পারে তারা যদি জমজ হয় তাহলে তারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে কেন?এসবের উত্তর বের করা কি রনির কাজ?এসবের উত্তর নিশ্চিয়ই খুশবুর বাবা মা জানে।তাদের না জানিয়ে এসব জটিল কেস মিমাংসা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।রনির মনে কোন তাগিদ জাগলো না কলগার্ল সেই মেয়েকে খুঁজে বের করার।
অথচ আরশাদ রনির উপর ভরসা করে আছে।সময় পেরিয়ে গেল এক মাস, দুই মাস।হ্যাঁ দুই মাস সময় পেরিয়ে গেল।
ইতালি আসার পর থেকে তুষারপাত কিংবা বৃষ্টি কোনটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি খুশবুর।অথচ আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ করে ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামলো।ভিজিয়ে দিল শুষ্ক পরিবেশ।ঠান্ডায় শিউরে উঠলো খুশবু।
বড় জানলার কাছে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিল বৃষ্টি।কত মাস পর সে বৃষ্টি ছুঁয়েছে!মনের ছলকে ওঠা আবেগকে আজ দমাতে পারলো না সে যার দরুনে প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছে মেয়েটা।আরশাদ তখন রাতের রান্না করছিল।ভেবেছিল খুশবু হয়তো টিভি দেখছে তাই আর বিরক্ত করলো না সে।নিজের রুমে ফিরে আধা ভেজা খুশবুকে দেখে রেগে গেল।দ্রুত এসে টেনে ধরলো খুশবুর হাত।
” এই তুমি জ্বর বাঁধাতে এসব করছো?”
” না।প্লিজ আরশাদ জানলা বন্ধ করবেন না।আমি বৃষ্টি দেখিনি বহুদিন।”
আরশাদের হাত থেমে গেল।ফ্লুজির কথা ফেলতে পারে না সে।বৃষ্টির ফোঁটারা ক্রমশ তীরের ন্যায় ছুটে এসেছে বিঁধছে খুশবুর শরীরে আরশাদ পেছনে দাঁড়িয়ে তাই তো সেও প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছে।আচমকা বৃষ্টির গতিক বেড়ে গেল সেই সাথে শীতের প্রকোপ বাড়লো বুঝি।আরশাদ খুশবুর ভেজা টি’শার্ট তুলে দিল উদর অবধি।মেয়েটার ভেজা চুল লেপ্টে গেছে ঘাড়ে আরশাদ যত্ন নিয়ে সরিয়ে দিল সেই চুল।দু’ঠোঁটের অবস্থান দৃঢ় করলো খুশবুর ঘাড়ে।
খুশবু বাঁধা দিতে পারে না।বাঁধা দেওয়া তার সাধ্যের বাইরে।যতবার আরশাদকে বাঁধা দিয়েছে ততবার আরশার তাকে উস্কে দিয়ে সরে গেছে।ব্যপারটা ভীষণ পীড়াদায়ক তার কাছে।তাই আরশাদ যতবার ভালোবাসার আলিঙ্গনে কাছে ডেকেছে ফিরিয়ে দেয়নি সে।
বৃষ্টির ফোঁটারা লাগামহীন ছুটছে মৃদু বাতাসে গায়ে কাটা দিল খুশবুর।শীতে কাঁপতে কাঁপতে জানলা বন্ধ করতে চাইলে আরশাদ নিজ থেকেই বন্ধ করে।ভেজা শরীর গুটিয়ে মেয়েটা দাঁড়িয়ে রয় এক পাশে।আরশাদ হাসে।ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় তার ফ্লুজির।
” আর ভিজবে?”
” ঠান্ডা লাগছে।”
” লাগুক আমি আছি তো।”
” আপনি থাকলে কি হবে?”
” সব কথা বুঝিয়ে বলতে হবে?
” ধ্যাঁত যান তো,আপনার যত বাজে কথা।”
” যাব কোথায়?সেই তো উষ্ণতার লোভে আমার কাছেই আসবে।”
খুশবু লজ্জা পায়।তার লজ্জায় গুটিয়ে যাওয়া শরীরটা ধীরে ধীরে নিজের আয়ত্তে আনে আরশাদ।
.
কাজের উদ্দেশ্যে ডিলানকে ইতালির মিলান শহরে যেতে হবে।যেহেতু ডিলান যাচ্ছে তার সাথে আরশাদ যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।বাকি বন্ধুরা পিছপা হয়নি তারাও মিলান ঘুরবে বলে জানায়।
মিলানের উদ্দেশ্যে তাদের যাত্রা শুরু হয় সকাল সকাল।হাসি আড্ডায় তাদের এবারের জার্নিটা ভীষণ মজার ছিল।এডনা ভীষণ মিশুক প্রকৃর মেয়ে সে নিজের বন্ধুর মতো খুশবুকে শিখিয়ে পড়িয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে।এডনা আর খুশবুর এতটা মিল দেখে আরশাদের স্বস্তি হয়।
আজকে তাদের গন্তব্য মিলান ক্যাথেড্রাল।
মিলান ক্যাথেড্রাল হলো একটি ব্যতিক্রমী ইউরোপীয় ক্যাথিড্রাল, যেটি শহরের প্রতিটি ভ্রমণকারীকে অবশ্যই দেখতে হবে তাই তো সবার এবারের উদ্দেশ্য ক্যাথেড্রাল দেখতে যাওয়া।মিলান ইতালির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।ইতালির জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে রোমের পরেই মিলানের স্থান। এটি অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিকের দিক থেকে ইতালির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর।চারদিকে নানান মুখ-মুখোশের মানুষের ছড়াছড়ি।এডনা খুশবুর সাথে কথা বলতে বলতে ক্যাথেড্রালের দিকে যাচ্ছিলো।হঠাৎ একটি মেয়েকে দেখে এডনা থমকে যায়।
চোখে লাগানো কালো চশমাটা খুলে তাকায় খুশবুর পানে।
“খুশবু আমি তোমার মতো একটা মেয়েকে এইমাত্র দেখেছি।”
খুশবু ফিক করে হেসে ফেলে।এডনার কথা মাথায় না নিয়ে বলে,
” দূর কি যে বলো।”
” সত্যি বলছি আমি তোমার মতো দেখতে হুবহু একটি মেয়েকে এই মাত্র দেখলাম।ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেল।”
রাগে টগবগ করছে আরশাদের শরীর।আগুনের ফুলকি আজ যেন তার চোখে ভাসছে।সেই ফুলকিতে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে খুশবুকে।আরশাদের চোখের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয়বার কথা বলার সাহস পেল না খুশবু।পুরুষ মানুষের এই হিংস্র রাগটাকে সে একটু বেশি ভয় পায়।যতই বাবার আদরের দুলালি থাক না কেন বাহারুল হক কোন ভুল ত্রুটি দেখলে বুঝিয়ে বলতেন পালটা সেই ভুল আবার হলে ওনার রাগ সংবরন করা মুশকিল।
খুশবু ওড়নার কোনায় আঙুল গুটিয়ে আমতা আমতা স্বরে কিছু বলতে প্রস্তুত হলে তার পাশে দাঁড়ানো এলিনা বলে,
আরশাদের ধমকে কেঁপে উঠলো খুশবু।তার গলা শুকিয়ে চৌচির।এই মুহূর্তে তার নিজেকে এই দেশে সবচেয়ে একা একা লাগছে।মায়ের কড়া শাসনের আড়ালে আদরে মুখটার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।খুশবুর চোখ ঝাপসা হলো আরশাদ সেই পর্যায়ে থমকে গেল।তবুও নিজের অগ্নিশর্মার রেশ ধরে রইল।
” কি হলো প্রশ্ন করেছি জাবাব কে দেবে?”
” আপনারা ছিলেন না বলে এলিনা আর আমি একটু হাটতে বেরিয়েছি ব্যস এইটুকুই।”
আরশাদ আর ফ্লুজিকে কিছু বলে না।এলিনার দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলে,
” তোমার ভাবিকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাও আমার ভিলায় তার স্থান নেই।সে যখন আমাকে না বলে এতদূর গিয়েছে তখন আমি তাকে আমার কাছে রাখতে চাই না।”
সন্ধ্যার পর আরশাদ,আরিব সহ বাড়ির সবাই যে যার কাজে বাইরে চলে যায়।বাড়িতে থেকে যায় এলিনা।একা একা দুজনে বাড়িতে বসে বিরক্ত হচ্ছে বিধায় এলিনা বললো বাইরে থেকে ঘুরে আসতে।খুশবু প্রথমে বারণ করলো জানাতে চাইলো আরশাদকে কিন্তু এলিনা তাড়া দেখাল আধা ঘন্টা থাকবে বলে বাইরে কাটিয়ে দিল তিন ঘন্টা।বাইরে থেকে এসে আরশাদের ভিলার তালা খোলা দেখে খুশবু ভয় পেল।তার ভয়টাকে সত্যি করে আরশাদ পরপর এতগুলো কথা শুনিয়ে দিল তাকে।
এলিনার সাথে ঘরে ফিরে নিরবে কাঁদলো খুশবু।তার ফোলা ফোলা চোখের দিকে তাকিয়ে এলিনার মনটা বিষণ্ণে ভরে গেল।
” তুমি একদম কান্না করবে না প্লিজ।আমার কষ্ট হচ্ছে।”
খুশবু চুপ হয়ে যায়।এলিনা এটা ওটা কত কি বলে খুশবুর মন ভালো করার চেষ্টা করে।কিন্তু এই মন কি ভালো হয়?আরশাদ তার প্রিয় মানুষ।প্রিয় মানুষের একটা ফোড়ন মনে যেন দশটি ফোড়ন সৃষ্টি করে।
কিয়ৎক্ষণ বাদে আরশাদ ভিলায় এলো এলোমেলো পায়ে।তার পরনে সাদা শার্ট বুকের উপর তিনটে বোতাম খোলা যার দরুনে লোমশ বুকখানি উঁকিঝুঁকি মারছে খুশবুর পানে।বাদামী চোখ জোড়া খুশবুর পানে একবার তাকিয়ে যেন কড়া শাসনে কিছু বললো।আরশাদ এলিনাকে বলে,
” এচি ডাল্লা স্টেঞ্জা।”(রুম থেকে বের হও)
এলিনা রুম থেকে চলে যেতে আরশাদ দরজা বন্ধ করলো।হাতে থাকা প্যাকেট খুশবুর হাতে ধরিয়ে আরশাদ বসে চেয়ারে।খুশবু ভীতু চাহনিতে একবার আরশাদের পানে আবার প্যাকেটটির দিকে নজর ঘুরালো।
” শাড়িটা পরো।”
খুশবু দ্রুত প্যাকেট থেকে শাড়িটি বের করলো।সাদা শাড়ির উপর স্টোনের কাজ।
” শাড়ি কেন পরবো?”
” তোমাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি তৈরি হও।”
খুশবু ভয়ে কেঁদে ফেললো।হাতের প্যাকেটটি ছুড়ে আরশাদের হাত ধরে বসে পড়লো মেঝেতে।
” এমন করছেন কেন আপনি?ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এমন কেন করছেন?”
” কৈফিয়ত দিতে চাই না।”
” আরশাদ প্লিজ।”
খুশবুর হাত টেনে দাঁড় করায় আরশাদ।ফ্লুজির অশ্রু ভেজা দু’গাল চেপে ধরে সে বলে,
” যা বলছি করো।”
” না আমি পরবো না।আমি যাব না আমি আপনার সাথেই থাকবো।”
” আমি তোমাকে আমার সাথে রাখতে চাই না।যে ভুল একবার করলে সে ভুলের শাস্তি পেতেই হবে।”
” আমি একবার গেলে আর কিন্তু ফিরবো না, জোরাজোরি করলেও না।”
” আমি জোরাজোরি করবো না।”
খুশবুর মনে জেদ চাপলো।মেঝে থেকে প্যাকেট তুলে চলে গেল ওয়াশরুমে।আরশাদ তাকে টেনে বের করলো এবং চেয়ারে বসে কঠিন স্বরে বলে,
” আমার সামনেই পরবে।”
” হোয়াট!”
” ইয়েস।”
” বাড়াবাড়ি করছেন কেন?”
“লজ্জা লাগছে?লজ্জা তো আগেই ভেঙে দিয়েছি।শুরু করো।”
খুশবু জেদ ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।আরশাদ তার শার্টের আরেকটা বোতাম খুলে রিল্যাক্স হয়ে বসলো।
” হানি ডু ইট প্লিজ।”
খুশবু আরশাদের কথা গায়ে মাখলো না।সে শুধু ফুঁপিয়ে কাঁদছে।ঘড়ির দিকে নজর বুলালো আরশাদ।এগিয়ে এসে নিজ হাতে খুলতে শুরু করে খুশবুর টপস।গায়ের জামা উদর ছাড়িয়ে বক্ষ ভাজে উঠতে খুশবু ছিটকে দূরে সরলো।কড়া চোখে আরশাদের দিকে তাকিয়ে শাড়ি নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
.
এলোমেলো খোলা চুল তার মাঝে সাদা শাড়িতে খুশবুকে অদ্ভুত লাগছে।না না অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।আরশাদ হাসে খুশবুর চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
” ইয়ু লুক লাইক হন্টেড হাউজ কুইন।”
আরশাদ খুশবুর হাত টেনে আনলো।খুশবু মনে মনে প্রস্তুত হলো আজকেই আরশাদের সাথে তার শেষ বোঝাপড়া।আজকের পর আর কোন সখ্যতা রাখবে না সে।
আরশাদ খুশবুর হাত ধরে এগিয়ে গেল নিজের ভিলার দিকে।অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে খুশবু।আরশাদ তার হাত ধরে আছে বলে নিজেকে সংযত রাখছে তা না হলে এতক্ষণে মেয়েটা চিৎকার চেচামেচি করে জ্ঞান হারাতো।নিজের গায়ে সাদা শাড়ি তার নিজেকেই নিজের কাছে লাগছে ভুতের বউ।
স্টোর রুম শেষে নিচ তলায় প্রবেশ করতে আচমকা আলো ছিটকে আসে খুশবুর চোখে।নিরবতা ছিন্ন করে একে একে ফাটতে থাকে বেলুন।তার মাথায় পড়ছে ঝিলমিল কাগজের টুকরো।খুশবু হতভম্ব,হতবিহবল!কি হচ্ছে তার সাথে?সারা ঘর আলোতে পরিপূর্ণ।একে একে দেখা দিল ইমরান ইহসান,আফরোজ,আরিব,গ্র্যানি, গ্লোরিয়া, এলিনা।সবাই চেচিয়ে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।আজ তার জন্মদিন!খুশবু দেয়াল ঘড়িতে তাকালো ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁয়েছে।
” কেমন সারপ্রাইজ দিলাম ভাবি?”
এলিনার প্রশ্ন মাথা ঢুকলো না খুশবুর।আরিব খুশবুর ভেজা চোখ দেখে বলে,
” ভাবিকে অনেক জ্বালানো হয়েছে আর কেউ জ্বালাবে না।আসো ভাবি কেকটা কাটো।”
আফরোজ জড়িয়ে ধরলেন খুশবুকে।চোখ মুছে এগিয়ে নিলেন।
” তোমাকে ভয় দেখানো হয়েছে মেয়ে।তোমার জন্মদিনের আয়োজন করতে আমরা এতকিছু করলাম।”
” এই রে মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে সব ভুলে গেছে।গতবার যে গোল্ডের গহনা পাঠিয়েছিলাম মনে নেই?তুমি তো ভীষণ পছন্দ করেছিলে।”
খুশবু প্রত্যুত্তর করলো না।গত জন্মদিন সে পরিবারের সহিত পালন করেছে অথচ উনি এসব কী বলছে?এক মুহূর্তের জন্য খুশবুর মনে হচ্ছে তার নিশ্চয়ই স্মৃতি হারিয়েছে আর না হয় তার জমজ কোন বোন আছে।আরশাদ যাকে অতি প্রিয় সম্বোধনে ফ্লুজি বলে ডাকে সেই মেয়েটি তবে কে?চিন্তার জগৎ-সংসারে আরেকবার হারিয়ে যায় খুশবু।
জন্মদিন উপলক্ষে আজ বাইরে থেকে খাবার আনা হয়েছে।আরশাদের ভিলায় সবাই আনন্দ সহকারে ডিনার সারলো।সবাই যেতে দরজা বন্ধ করে আরশাদ দাঁড়ালো তার ফ্লুজির সম্মুখে।
” আ’ম সরি জান।তোমাকে কাঁদাতে চাইনি।”
” আমি দেশে ফিরতে চাই।আমাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।”
” রাগ করে না জান।”
” রেগে বলছি না সজ্ঞানেই বলছি আমি চলে যাব।”
খুশবু মুখ ফেরালো।মেয়েটার অভিমানি দু’চোখের ভাষা আরশাদ বুঝে।দ্রুত হাতে খুশবুকে কোলে তুললো সে।
” চলো ভালোবাসার জগৎতে হারিয়ে যাই।”
” আপনার রোমান্টিক মুড আপনি আরেকটা বউ খুঁজুন আমি এখন রোমান্টিক মুডে নেই।আমি বাড়ি যাব।”
আরশাদ হাসে।দ্রুত পায়ে চলে যায় দোতলার কক্ষে।
দ্বিতীয় বারের মতো আরশাদের কক্ষ আজ সাজানো হয়েছে।সফেদ চাদরে গোলাপের লাল পাপড়ি গুলো খুশবুর মনোযোগ টানছে।আরশার খুশবুকে বিছানায় বসায়।মেয়েটার নগ্ন পা বিছানায় তুলে ঝুকে যায় খানিকটা।
” আরশাদ আজকের দিনটার কথা আমার মনে নেই।আপনি আমাকে একটু ইঙ্গিতো দিলেন না আমার জন্মদিন আজ।”
” সারাটা দিন সারাটা সময় তুমি আমার মাথায় ঘুরছো তোমার এই বিশেষ দিন আমি ভুলে যাব?ইট’স রিডিকিউলাস।”
” কিন্তু আমাকে কাঁদালেন কেন আরশাদ?আপনি জানেন আমি কতটা ভয় পেয়েছি?”
” সরি জান।এমন না করলে তোমার আকুতি দেখতাম কী করে?”
” জানেন আজ একটা কান্ড হলো।রেস্টুরেন্টে আমাদের একটা ছেলের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে,ছেলেটা ইন্ডিয়ান।”
” তো?”
“ছেলেটা বুঝতে পারেনি আমি বিবাহিত এলিনার কাছে একটা নাম্বার দিয়ে গেছে।”
” তো?”
” সে আমার সাথে সম্পর্কে যেতে চায়।হা হা হা আমরাও কিচ্ছু বলিনি আমি যে বিবাহিত আমরা শুধু মজা নিয়েছি।”
আরশাদ থমথমে মুখে তাকিয়ে থাকে খুশবুর পানে।আনন্দের মাঝে ছলকে উঠে তার রক্ত।শিরায় উপশিরায় বয়ে চলে ভয় আর হিংসা।আরশাদ খুশবুর হাত টেনে ধরে।ছেলের পাগলামি চোখের পলকে বেড়ে যায়,
আরশাদ উঠে দাঁড়ালো জগ থেকে পানি নিয়ে দ্রুত গলা ভেজালো।ছেলেটা পাগলের মতো বিলাপ করছে।ফ্লুজির হারিয়ে যাওয়ায় আরশাদের মাঝে যে প্রভাব ফেলেছে তার রেশ যেন আবার ফিরে আসছে।আরশার উন্মাদ হলো, খুশবুকে জড়িয়ে রাখলো শক্ত করে।
” আমাকে আর ভালো লাগে না?আমার ছোঁয়া ভালো লাগে না?আমাকে ভালোবাসতে আর ভালো লাগেনা?”
” আরশাদ এসব কি বলছেন?”
” ফ্লুজি আই নিড ইয়ু।আই বেডলি নিড ইয়ু।”
আরশাদের উন্মদনা বাড়ে।খুশবু আর বারণ করে না।এলোমেলো হয় আরশাদের হাতের ছোঁয়া।আরশাদ যে সুস্থ স্বাভাবিক নেই খুশবু বুঝতে পারে।প্রতিহিংসার বশে ডুবে এই রাতটা খুশবুর জাহান্নাম করে ছাড়বে।খুশবু ভয় পায় আরশাদের কোমল ছোঁয়া গুলো ধীরে ধীরে হিংস্র হয়ে উঠে।খুশবু কৌশলে আরশাদকে জড়িয়ে নেয় ছেলেটার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“আরশাদ আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যেয়ে চাই না।আমি আমৃত্যু আপনার সাথে থাকতে চাই।রাখবেন আমায়?”
আরশার মুখ তুলে তাকালো।আগুনে জল পড়লে যেমন সব থেমে যায় তেমনি থেমে গেছে আরশাদ।তার ভয় কেটেছে।খুশবু সেচ্ছায় আরশাদের ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।এলোমেলো ছোঁয়ায় উত্তাল হয় দু’টো শরীর।আরশাদের ছোঁয়ায় ক্রমশ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায় খুশবু।আরশাদ কৌশলে বিছানার হেডবোর্ডে খুশবুর হাত বেধে দেয়।মেয়েটার নগ্ন দেহ নিজের দেহের ভাজে আড়াল করে হাসে।খুশবু ভয় পায় নিজের হাত ছাড়াতে চাইলে আরশাদ মেয়েটার ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।আরশাদ হাঁপিয়ে উঠে।তার ফ্লুজির মুখে আসা চুল কানে গুজে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
” ফ্লুজি আমার জান,বেটার ফিল করছো?”
” আপনি এমন করছেন কেন?আমার হাতটা ছাড়ুন।”
” পালাবে?অন্য কার কাছে যাবে?তোমার হাসিতে নিশ্চয়ই ছেলেটার হৃদয়ে আন্দোলন করেছে অথচ আমার যে জখম লেগেছে।”
” আরশাদ প্লিজ ভুল বুঝবেন না। আপনার কি চাই বলুন।
” তুমি কি সুখ হবে?শুধু আমার।”
চলবে….
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৯ বাকি অংশ]
মৃদু বাতাসে নগ্ন গায়ে কাটা তুললো খুশবুর।পেটে ভারি অনুভব হতে মাথা তুলে তাকালো একবার।এ আর নতুন কী?প্রতিটা সকাল খুশবুর এক ভাবেই শুরু হয়।হয় আরশাদ তার সারা দেহ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আর না হয় আরশাদের বুকের পাটায় বন্দি সে।বিছানায় দুমড়ে মুচড়ে থাকা গোলাপের পাপড়িগুলোতে হাত বুলিয়ে দেখলো খুশবু।গত রাতের কথা মাথায় আসতে ঠোঁট বাকায়।তার মনে হয় আরশাদ একটা পাগল, না না শুধু পাগল নয় বুঝদার পাগল।এই পাগলের পাগলামি শুধুমাত্র তাকে ঘিরে।
আরশাদের আকুল কণ্ঠে খুশবু চুপসে যায়।আরশাদের চাহনিয়ে লজ্জায় পড়ে দ্রুত হাত রাখে উন্মুক্ত বক্ষ ভাজে।আরশাদ হাসে মেয়েটার চোখে চোখ রেখে বলে,
” লজ্জা পায় না জান।আর কতবার লজ্জা ভাঙতে হবে?”
” আরশাদ সরে যান উঠতে হবে।”
আরশাদ সরে না বরং উঠে এসে নিজের বুকের কোনে জড়িয়ে ধরে খুশবুকে।মেয়েটার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
” জান যাবে?”
” কোথায়?”
” ভেনিস!স্বপ্নের শহরে।”
” সত্যি?”
” হুম।তৃতীয় বাসর ওখানে করতে চাই।”
” এসব ছাড়া কি আর কোন কথা নেই আপনার?”
“আর কি বলবো?ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর কথা বলবো?তাতেও তো আবার সেই কথা।”
” আরশাদ।”
” বলো জান।”
” আমাকে উঠতে দিন।”
আরশাদ শরীর বাকিয়ে উঠে বসলো।হাত টেনে ধরলো তার ফ্লুজির।মেয়েটা উন্মুক্ত দেহে দ্রুত চাদর টেনে নিজেকে আবৃত করল।আরশাদ মৃদু হেসে কোলে তুলে নেয় তার ফ্লুজিকে।পূর্ব আকাশে সূর্যটা উঠতে শুরু করেছে।নীল আকাশ তার মাঝে মৃদু বাতাস জানান দিচ্ছে ইতালির বসন্ত।ব্যাক ইয়ার্ডে সবুজ ঘাসে হেলেদুলে নৃত্য করছে সাদা ডেইজিরা।আরশাদ জানলার সম্মুখে দাঁড়ালো শীতল সমীরে খুশবুর গায়ে কাটা দিল সহসা।আরশাদের বাদামী চোখের তাকিয়ে খুশবু হারিয়ে যায় বারংবার।খুশবুর হাত আপনা আপনি ছুঁয়ে গেল আরশাদের চুলে।আরশাদ হেসে বলে,
” আরেক বার চলবে?”
” মানে?”
” লুক এট মি জান।”
” তাকিয়ে কি হবে?”
” তুমি গলে যাবে?”
” গলে কি হবে?”
” গলে তুমি নিজেই বাধ্য হবে আমার কাছে নিজেকে উজাড় করতে।”
” আমি উজাড় করি আর না করি আপনি তো এক ধাপ এগিয়ে আমাকে সিডিউস করতে।”
” আমি জোরাজোরি করে কিছু করতে চাই না।জোরাজোরি করে করার চাইতে তোমাকে সিডিউস করা বেটার অপশন, তাই না জান?”
খুশবু ঠোঁট কুচকায়।আরশাদ তার ফ্লুজির কানের লতিতে চুমু খেয়ে ছুটে চলে যায় ওয়াশরুমে।
” একটা হট শাওয়ার দরকার জান।”
” ওকে আপনি যান।আমি পরে যাব।”
” তুমি ছাড়া শাওয়ার হবে তবে হট হবে না।”
আরশাদ তার ফ্লুজিকে নামালো না।বরং কোলে নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
.
আরিবের ক্লাস শেষ হতে দুপুর হয়ে গেল তার ইউনিভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়া থেকে কফি নিয়ে ফিরে এলো মাঠে।আরিব তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিল হঠাৎ তার সম্মুখে উপস্থিত হয় ডিলান, অ্যাডেন, কডি এবং এলোন।
তাদের সকলের পেছন এসে দাঁড়ায় জন।আরিব তার হাস্যজ্বল মুখ ধরে রেখে বলে,
” হ্যালো ব্রো।”
ডিলান কিঞ্চিৎ হেসে প্রশ্ন করে,
” কেমন আছো আরিব?”
” ফাইন।হঠাৎ এখানে?”
” তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।”
” আমার সাথে?”
কডি আরিবের কাঁধে হাত রেখে বলে,
” তোমার সাথে কথা আছে আরিব প্লিজ আমাদের কিছুটা সময় দাও।”
আরিব ঘাবড়ে গেল।তার ভাইয়ের বন্ধুরা এভাবে কখনো একা আসেনি।
” কিছু কি হয়েছে?”
” কিছু হয়েছে কি না জানি তবে তোমাকে কথা গুলো জানানো জরুরি।”
” কি হয়েছে?”
” ক্যাফেটেরিয়ায় বসি?”
” শিওর।”
সবাই মিলে চলে গেল ক্যাফেটেরিয়ায়।আরিবের বুকের ভেতরটায় ধুকপুক করছে।কোন ভনিতা ছাড়া জন বলে,
” আমাকে চিনতে পেরেছো?”
” জি না।”
” আমি এলোনের কাজিন।আরশাদের সিনিয়র।”
” ওকে।”
” সমস্যাটা আরশাদকে নিয়ে।সরাসরি এই কথাটা আরশাদকে বলা মানে আমরা সবাই লা শ হওয়া।তাই আমরা চাই না কেউ বলতে।”
” কি হয়েছে ভাইয়া?”
” আরশাদের ফ্লুজি অর্থাৎ সেই মেয়েটা একজন প্রফেশনাল কলগার্ল।”
” হোয়াট!”
” ইয়েস।”
” এতটা বাজে কথা বলার সাহস কি করে পেলেন?ভাবি যথেষ্ট ভালো মেয়ে সে ভালো ফ্যামিলির মেয়ে।”
” ভালো মেয়ে মাই ফুট।”
” কোথাও কোন ভুল হচ্ছে।ফ্লুজি ওমন মেয়ে নয়।”
” প্রুভ লাগবে?প্রুভ ছাড়া কথা বলতে আসিনি।”
জন তার ফোন বের করে সব ছবি দেখাল।আরিবের গা শিউরে উঠলো।বিশ্বাসের আয়না ভেঙে চুরমার হয়ে গেল মুহূর্তে।ঘৃণায় বিষিয়ে উঠলো মন।
” বিশ্বাস হয়?”
” হোয়াট দা হেল।আরশাদ ভাইয়া জানলে…”
“আরশাদকে এসব যে জানাবে সেই বিপদে পড়বে তাই তো তোমার কাছে এলাম।”
” আপনারা এসব ছবি কোথায় পেলেন?”
জন হাসে।গা ছেড়ে বসে বলে,
” বাংলাদেশ গিয়েছিলাম আমার সিনিয়রদের সাথে সেখানে একটি বিলাসবহুল হোটেলে এক রাতের জন্য সবাই তোমার ভাইয়ের ফ্লুজিকে বুক করে।মেয়েটার চার্জ জান?পুরুষের মনরঞ্জের এক্সপার্ট।আরশাদ তো প্রতিদিনি ভোগ বিলাশ করছে।”
আরিব চোখ বন্ধ করে লজ্জায় বিষিয়ে যচ্ছে তার শরীর।
” আমাকে এখন কি করতে হবে?কোন প্রমান ছাড়া আমার ভাইয়ের সংসার ভাঙতে হবে?”
আরিবের কথায় ভ্রু কুচকে ফেললো কডি।ছেলেটা টেবিলে আঘাত করে বলে,
” প্রমান?আরো প্রমান চাই?এসবে হচ্ছে না।”
” না হচ্ছে না।”
” বোকা ছেলে তুমি কি চাও তোমার ভাইয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করতে?শুনো আরশাদ আমাদের বন্ধু আমরাও আরশাদের ভালো চাই।তুমি ওর ভাই ওঁকে সহজে বোঝাতে পারবে।আমাদের কথা কোন কালে আরশাদ গায়ে মাখেনি।”
আরিব হ্যাঁ না কোন কথাই বললো না।ছেলেটা মূঢ় হয়ে বসে রইল।আরিবকে আরো বুঝিয়ে সবাই চলে গেল।ছেলেটা নিজের দিশা হারালো এতটা বাজে সত্যের মুখোমুখি তাকে কেন হতে হলো?আরশাদ সুখে আছে থাক না সুখে কেন আচমকা প্রলয় এসে ছিন্ন করছে তার জীবন।
.
সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আসলো আরশাদ।নিজের ভিলায় ফিরতে গ্র্যানি আর এলিনাকে বিছানায় দেখলো।সবার মাঝে খুশবু শুয়ে।মেয়েটার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন আফরোজ।আরশাদ উত্তেজিত হলো দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলে,
” কী হয়েছে ফ্লুজির?”
আফরোজ চিন্তিত হয়ে বলেন,
” হঠাৎ মেয়েটার জ্বর এলো কেন?”
আরশাদ ঢোক গিললো।আবেগে পড়ে তখন দুজনে মিলে মিশে ভিজে একাকার হয়েছিল।ঘন্টার পর ঘন্টা আবেগকে স্বীকৃতি দিয়ে এই অঘটন ডেকে আনলো।আরশাদ দ্রুত বসলো তার ফ্লুজির কাছে মেয়েটার জ্বরে গা পুড়ছে।
” চলো ডাক্তারের কাছে যাই।”
আফরোজ বলেন,
” ওষুধ আনা হয়েছে আজ রাতটা দেখো কাল যদি জ্বর না সারে তবেই যেও। ”
” না না আজ যাব এক্ষুনি যাব।”
” মেয়েটা জ্বরে দাঁড়াতেই পারছে না তুমি এখন কীভাবে যাবে?”
” কোলে নিয়ে যাব।”
গ্র্যানি পাশ থেকে বলেন,
” এত উতলা হতে হবে না।ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে জলপট্টি দিয়েছে অসুখ সেরে যাবে।”
” শুনো মেয়েটাকে ঘুমাতে দাও।প্রপার রেস্টের প্রয়োজন।ওষুধ যা খাওয়ানোর আমি খাইয়ে গেছি।রাতে আরেকটা ওষুধ আছে।তুমি গরম গরম স্যুপ করো।আমি গেলাম।”
আফরোজ চলে গেলেন সেই সাথে গ্র্যানিও চলে গেলেন।এলিনা সব কিছু এড়িয়ে অবাক হয়ে তাকালো আরিবের পানে।আরিবের হঠাৎ কি হলো?সারাক্ষণ ছেলেটা ভাবি ভাবি বলে অস্থির অথচ ভাবি আজ জ্বরে পুড়ছে ছেলেটা দেখেও আগ্রহ দিল না!কিন্তু কেন?
.
আরশাদের সারাটা রাত গেল দুশ্চিন্তা।তার ফ্লুজির সুস্থতা রাতের ঘুম কেড়েছে।ঘুমন্ত ফ্লুজির গালে কপালে কত বার যে চুমু খেয়েছে তার হিসেব নেই।ছেলেটার ভয় বাড়লো অতি জ্বরে তার ফ্লুজির না আবার কোন ক্ষতি হয়ে যায়।
রাত পেরিয়ে ভোর হলো।আরশাদের শরীর ততক্ষণে ঝিমিয়ে এসেছে।ঘুমন্ত ফ্লুজিকে জড়িয়ে রেখে বিড়বিড় করে বলে,
” আমার সুখ অসুখে পুড়ছে আমি সুখে থাকবো কেন?”
আরশাদের মনে হঠাৎ জেদ চাপলো।ছুটে গেল ওয়াশরুমে।ঝরনার নব ঘুরাতে ঝিরঝিরে পানি ভিজিয়ে দিল তাকে।মনের জেদে ঘন্টার পর ঘন্টা সে দাঁড়িয়ে রইল।আসুক আজ জ্বর সেও তার সুখ অসুখে সে কেন থাকবে সুখে?
চলবে…
আরশাদ তার ফ্লুজির জন্য রান্নায় মশগুল।পাশে বসে ফ্লুজি অনিমার সাথে বিশেষ আলাপে মত্ত আছে।তাদের আলাপটা আজ নির্ধারিত কোন বিষয় নিয়ে নয়।হুটহাট এটা ওটা মাথায় আসছে মা মেয়ে সেই কথা নিয়েই গল্প জুড়েছে।কড়াইতে চিংড়ি মাছগুলো ভেজে একটি প্লেটে নিল আরশাদ।চিংড়ি ভাজার ঘ্রাণে খুশবুর নাকে যেন সুড়সুড়ি দিল।একবার আরশাদের দিকে আরেকবার তাকালো চিংড়ি মাছের দিকে।
আরশাদ বুঝলো তার ফ্লুজির চাওয়া।প্লেট বাড়িয়ে দিয়ে সে বলে,
” যতগুলো খেতে পারো খাও কোন নির্দিষ্টতা নেই।”
একগাল হাসে ফ্লুজি।অনিমা তখন বলে বসলেন আরেক সাংঘাতিক কথা,
” এই খুশবু রোহানের বিয়ে গতকাল আবার ভেঙেছে জানিস?ছেলেটার নাকি কাল কাবিন ছিল।”
” এবারের বিয়ে তো ভাঙার কথা না।”
কথাটি বলে আড়চোখে আরশাদের দিকে তাকালো খুশবু।আগের বার রোহানের গার্লফ্রেন্ড বাড়ি অবধি এসে ঝামেলা করার সাহস পাওয়ার মূল মন্ত্র ছিল আরশাদ।
সেই মেয়েটাকে আরশাদ ইন্ধন দিয়েছে বলেই তো মেয়েটা নিজের সাহসিকতা দ্বিগুণ অনুভব করে মাঠে নেমে পড়ে।তাহলে এবার কে ঝামেলা পাকালো?
আরশাদ তার ফ্লুজির চাহনিতে ঠোঁট বাঁকায়।খুশবু তখন অনিমার কথায় মগ্ন।
” এবারের কাবিন মেয়েদের বাড়ি গিয়ে ভাঙা হয়েছে।তবে আগেরবার যে প্রেমিকাটা এসেছিল ও নাকি সে নয় এই মেয়েটা আরেকজন।”
খুশবু ভিষম খেল।কি সাংঘাতিক কথা এই ছেলে কয়টা নিয়ে চলে?
আরশাদের ভিলায় তখন উপস্থিত হয় এলিনা মেয়েটার হাতে এক বাটি চিকেন ফ্রাই।এলিনাকে দেখেই খুশবু একগাল হাসলো,
” ভাবিমনি ফুপ্পি পাঠিয়েছে তোমার জন্য।”
আরশাদ টমেটো কিউব করছিল এলিনার কথা শুনে ফোঁড়ন কেটে বলে,
” কেন আমার জন্য দেয়নি?”
” ফুপ্পি তো তোমার কথা উল্লেখ করেনি।তোমার বউকে দিয়েছে তাতে হ্যাপি থাকো।”
” রেগে আছো কেন কিউটি?”
আরশাদের প্রশ্নে এলিনার রাগ যেন আরো তীব্র হলো।খুশবুর কাঁধে মাথা দিয়ে অভিমানে তাকিয়ে রইলো অন্যদিক।এই স্বাভাবিক ব্যপারটা আরশাদের ভালো লাগলো না।তার ফ্লুজির কাঁধে এই মেয়ের স্থান কেন?আরশাদ হাতের ছুরিটি নিয়ে এগিয়ে এলো এলিনার কাছে এবং কৌশলে মেয়েটিকে ভয় দেখাতে ছুরি বুক বরাবর তাক করতে এলিনা চিৎকার দিয়ে ছিটকে সরে যায়।এলিনার চিৎকারে খুশবুর কানের পর্দা যেন ফেটে গেল।এত জোরে কেউ চিৎকার করে!
“ভাইয়া মে রে ফেলবে তো।”
এলিনা ভয় নিয়ে বললো আরশাদকে।আরশার ছুরিটা দিয়ে ইশারা করে বলে,
” না মা রবো না। আগে বলো রেগে আছো কেন?”
” তোমাদের জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করবো?ভেনিস যাবে না?আমাকেও তো ফিরতে হবে বোঝার চেষ্টা করো।”
” ভেনিস তো বললেই যাওয়া যায় না।যাব যখন বলেছি অবশ্যই যাব আগে হাতের কাজটা গুছিয়ে আনতে দাও।”
ইতিহাস ঘেরা রোম শহরটাত পর্যটনের অভাব নেই।পুরোনো ইতিহাসকে জানার আগ্রহে দর্শনে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে এই শহরে।আরশাদের আজকের যাত্রা পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের বস্তু কলোসিয়ামে।
ঘুরতে যাওয়ার নাম উঠতে এই স্থানটি খুশবু নিজেই পছন্দ করে।সে জানে কলোসিয়ামের ইতিহাস।সবচেয়ে বড় ব্যপার পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি বিষয় তার সচক্ষে দেখার সুযোগ এসেছে।এই সুযোগ মিস করা মানে অনেক বড় বোকামি।
আরশাদের যাত্রা শুরু হয়েছে সকাল থেকে।অনেকটা রাস্তা যাওয়ার পর খুশবু দেখতে পেল বিশাল একটা প্রাচীর।মেয়েটার পুথিগত বিদ্যা জানান দিল হ্যাঁ এটাই কলোসিয়াম।খুশবু পুলকিত হলো তার চাহনি আরশাদকে আরো বেশি রোমাঞ্চিত করে।এই মেয়েটাকে নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরলে কেমন হয়?
আরশাদ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলো তার ফ্লুজিকে নিয়ে সে দেশ বিদেশ ঘুরবে।
গাড়ি পার্কিং করে কলোসিয়ামের দিকে অগ্রসর হলো আরশাদ।ফ্লুজির হাত জড়িয়ে প্রশ্ন করে,
” গ্লাডিয়েটর মুভিটা দেখেছিলে?”
“হ্যাঁ দেখেছিলাম?”
” তাহলে নিশ্চয়ই কলোসিয়াম সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে?”
” তা তো আছেই।”
আরশাদ এবং ফ্লুজি একসাথে প্রবেশ করলো কলোসিয়ামে।আরশাদের তেমন ভাব আবেগ না দেখা গেলেও ফ্লুজির চোখ জুড়ে আনন্দরা ঠিকরে পড়ছে।আরশাদ মেয়েটার চোখে তাকিয়ে যে তৃপ্তি পাচ্ছে সেই তৃপ্তি জনম ভর ফুরাবে না।
কলোসিয়ামের সিমানায় যত প্রবেশ করছিল ততটাই অবাক করেছে খুশবুকে,
আজ ২০০০ বছর পরেও রোদ বৃষ্টি ঝড় জাহান কাঁপানো ভূমিকম্প আর পাথরচোরদের দৌরাত্ন উপেক্ষা করে কালের ভয়ংকর গ্রাসের নানান সাক্ষী আপন শরীরে নিয়ে আমাদের সামনে তা গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অতীত ও আধুনিক যুগের মিলনকেন্দ্র হয়ে।
অবশেষে কলোসিয়ামের ভিতরে ঢুকার সৌভাগ্য হলো খুশবুর।সেএক গায়ে কাটা দেওয়া অনুভূতি!
সারি সারি গ্যালারী, কুলীন আর সাধারণ জনগণের জন্য পৃথক বসার ব্যবস্থা আর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সিজার আর সিনেটরদের জন্য আলাদা আলাদা বিলাসবহুল কক্ষ।
কলোসিয়ামের কেন্দ্রস্থলে প্রায় গোলাকৃতির এক মাঠ থাকার কথা যেমনটা পুথিপত্রে পড়া হয়েছিল বা মুভিতে এবং শিল্পির চিত্রকর্মে দেখানো হয়েছিল তা কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলোসিয়ামটির পাটাতন ভেঙ্গে পড়েছে অনেক অনেক আগেই।
আরশাদ খুশবুর সঙ্গে কিছু ছবি তুলল।চারদিকে কাপল ওয়েস্টার্ন পড়া বিদেশীদের ভিড়ে কয়েকজন বাঙালিও দেখা গেল।এই বিদেশের বুকে বাঙালিদের মায়াবী মুখখানী দেখলে খুশবু শান্তি পায় স্বস্তি পায়।তার পাশে দাঁড়ানো আমৃত্যুর সাথি আরশাদ যে কি না নিজেও ভিনদেশী।
খুশবু আরশাদের পাশাপাশি হাটছিল।মেয়েটা আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
” কলোসিয়াম যদি পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের বিষয় হয় তবে আমার কাছে অষ্টম আশ্চর্যের বিষয় কী জানেন?আজ সকাল থেকে আপনি আমার পাশাপাশি ছিলেন কিন্তু একবারেও চুমু খান’নি, খেতে বাধ্য করেন’নি, আশ্চর্য!এতো মহা আশ্চর্য!”
আরশাদ থমকে যায় ভ্রু কুচকে তাকায় খুশবুর পানে।হ্যাঁ তাই তো মেয়েটাকে সারাদিন অস্থির করে রাখা আরশাদ আজ এতটা ভালো হয়ে গেল!মূলত সে সময় পায়নি, কলোসিয়ামে আসার আগে যে তাকে কতটা তাড়াহুড়ো করে আসতে হয়েছে একমাত্র সে নিজেই বুঝে।আরশাদ খুশবুকে সন্নিকটে আনলো মেয়েটার পিটপিট চাহনিতে মাদকতা মিশিয়ে আনলো বহুগুন।
” হানি এই কথা বলা কি খুব জরুরি ছিল? চলো গাড়িতে ইচ্ছে মতো হবে।”
আরশাদ এবং খুশবু তারা ক্রমশ সামনের দিকে গেল।কত কি অজানা সব তাদের চোখে পড়ে সব তো তারা জানে না তাদের ধারণাতেও নেই।প্রাচীরের ভেতরে সারি সারি ছোট কামরাগুলো ব্যবহার হত পশুর খাঁচা, খাদ্যের গুদাম আর গ্ল্যাডিয়েটরদের বিশ্রামাগার ও শরীরচর্চার ক্ষেত্র হিসেবে।
খুশবু যতটা দেখছিল ঠিক ততটাই অবাক হচ্ছিল।এত এত বছর পূর্বে এত নিখুঁত গড়নের মঞ্চ তাও কি না কালের পর কাল টিকে আছে।
বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি হলো ইতালির রোম শহরে অবস্থিত ‘কলোসিয়াম’। এটি মূলত একটি ছাদবিহীন মঞ্চ। চারতলা অনেকটা বৃত্তাকার মঞ্চটি তার নির্মাণশৈলীর কারণে এখনো মানুষের বিস্ময় জাগায়। এখানে বসেই মানুষ ও প্রাণীদের নানা ধরনের খেলা, প্রদর্শনী ইত্যাদি উপভোগ করতেন তৎকালীন রোম সম্রাটরা।কলোসিয়ামে প্রায় ৫০ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসতে পারত। বিস্ময়কর এই মঞ্চটি অনেক করুণ ও বীভৎস কাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। এই কলোসিয়ামেই অনুষ্ঠিত হতো যোদ্ধাদের লড়াই প্রতিযোগিতা। লড়াইরত এই যোদ্ধাদের বলা হতো গ্ল্যাডিয়েটর।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একজন গ্ল্যাডিয়েটর আরেকজন গ্ল্যাডিয়েটরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করত। লড়াই করতে করতে এই গ্ল্যাডিয়েটররা রক্তাক্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। গ্যালারিতে বসে এই দৃশ্য দেখে উল্লসিত হতেন সম্রাটসহ অন্য দর্শকরা। অমানবিকভাবে এমন অসংখ্য মানুষের প্রাণহরণের সাক্ষী এই কলোসিয়াম।
কলোসিয়ামটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ৭২ খ্রিস্টাব্দে। ফেরিয়াস বংশের সম্রাট ভেসপাসিয়ান এটি নির্মাণ করেন। তিনি এটির নাম রেখেছিলেন এমফি-থিয়েটারিয়াম ফেভিয়াম। সাত বছরে তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ করে আকস্মিকভাবে মারা যান ভেসপাসিয়ান।
পরে তাঁর ছেলে সম্রাট টাইটাস এর নির্মাণকাজ শেষ করেন। টাইটাস ফেভিয়ামের নাম পাল্টে নতুন নাম রাখেন কলোসিয়াম। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম সম্রাটদের একজন ছিলেন টাইটাস। তিনিই কলোসিয়ামে গ্ল্যাডিয়েটরদের মরণপণ লড়াইয়ের সূত্রপাত করেন। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এই কলোসিয়ামটি অতীতের নিষ্ঠুরতা আর বিস্ময়ের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
কলোসিয়ামের কারণে রোম নগরীকে রক্তের আর হত্যার শহর বলেও ডাকা হতো এক সময়। বিশ্বের অনেকেই হয়তো জানেন না, লাখো রাজবন্দি, যুদ্ধবন্দি, ক্রীতদাস আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অসহায়দের রক্তে সিক্ত হয়েছে কলোসিয়ামের মাটি এবং প্রতিটি ধূলিকণা। অদ্ভূত কাঠামোর ইমারতটির প্রতিটি ইট,কাঠ,পাথরে মিশে আছে নিহতদের অন্তিম নিঃশ্বাস।
রক্ত-পিপাসু রোম সম্রাটদের বিকৃত আনন্দের খোরাক যোগাতে গিয়ে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এই বধ্যভূমিতে,
ইতিহাস তার সঠিক হিসাব রাখেনি।
শুধু মানুষই নয়, কলোসিয়ামের মাটিতে অজস্র্ বন্য জীবজন্তুর রক্তও মিশে আছে। সম্রাটদের নির্দেশে রাজকোষের অর্থে সেই সময় এক বিশেষ খেলার জন্য উত্তর আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমদানি করা হতো হাজারে হাজারে হাতি, গন্ডার এবং সিংহ। ভাল্লুকের সঙ্গে হাতি, হাতির সঙ্গে বুনো মহিষ বা গন্ডারের সঙ্গে হাতির লড়াই দেখত হাজারো বিশ্ব সম্ভ্রান্তরা।
পশুদের মৃত্যুবেদনার হুংকারের সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ত পুরো গ্যালারি। কলোসিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৯ হাজারেরও বেশি পশুর প্রাণ গিয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন পশুর লড়াই আর এগুলোর করুণ মৃত্যু দেখতে দেখতে একঘেয়েমি বোধ করেন সম্রাট টাইটাস। পশুর স্থলে মানুষে-মানুষে লড়াইয়ের ধারণা এলো তার মনে। আর পশুর খেলা বন্ধ করে, শুরু করা হলো মানুষের রক্তের হলি খেলা।
শুরু হলো মানুষের মৃত্যুর করুণ ও বীভৎস কাহিনী। যুদ্ধ বন্দিদের মরণপণ লড়াই যতক্ষণ না দুইজনের একজনের মৃত্যু হতো, ততক্ষণ পর্যন্ত চলত সেই দ্বৈত লড়াই। কিন্তু মাত্র একশটি খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল টাইটাসের।
এরপর হঠাৎ করেই একদিন বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যান তিনি। বন্ধ হয়ে যায় এই খেলা। লম্বা বিরতির পর ৬৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রুটাস ভ্রাতৃদ্বয় ফের চালু করেন ঐতিহ্যবাহী ওই খেলা। তারা “গ্ল্যাডিয়াস” বা খাটো তরবারির লড়াই চালু করেন। লড়াইকারীদের বলা হতো “গ্ল্যাডিয়েটর”। লড়াই চলাকালে কোনো এক “গ্ল্যাডিয়েটর” আহত হয়ে পড়ে গেলে উল্লাসে ফেটে পড়ত পুরো কলোসিয়াম।
মৃত্যু ভয়ে ভীত, ক্ষত-বিক্ষত “গ্ল্যাডিয়েটর” রেওয়াজ অনুযায়ী হাত তুলে সম্রাটের করুণা প্রার্থনা করত, প্রাণভিক্ষা চাইত।
মঞ্জুর করা বা না করা সম্পূর্ণ সম্রাটের মন-মেজাজের ওপর নির্ভর করত। সম্রাটের বাম হাতের বুড়ো আঙুল আকাশ নির্দেশ করলে অপর “গ্ল্যাডিয়েটর” বুঝে নিত যে “তাকে ছেড়ে দাও”। কিন্তু ভূমির দিকে নির্দেশ করার অর্থ, “তাকে শেষ করে দাও”।
রোমের দুর্ধর্ষ শাসক জুলিয়াস সিজার এখানে বসেই ৩০০ গ্ল্যাডিয়েটরের লড়াই উপভোগ করেন। আর সম্রাট ট্রাজান উপভোগ করেন পাঁচ হাজার দ্বৈত যুদ্ধ। খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হতো এ কলোসিয়ামে।
সেখানে ভ্যাটিকানের সর্বোচ্চ খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা উপস্থিত থাকেন। অংশ নিতেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও।
সেখানে এক ধর্মীয় উৎসবে উপস্থিত প্রত্যেককে কলোসিয়ামের এক মুঠো করে মাটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন পোপ গ্রেগরি। কিন্তু কেউই তা নিতে রাজি হননি। তাদের অভিযোগ, এই মাটি হাতে নিয়ে চাপ দিলে এখনো বের হবে তাজা রক্ত।এবং এই মাটিতে রয়েছে রক্তের গন্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যত রক্ত ঝরেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি রক্ত ঝরেছে রোমের কলোসিয়ামের এই মাটিতে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা সেই বিভৎস, জঘণ্যতম প্রাণ সংহারী দ্বৈত যুদ্ধের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে বিশেষ নির্মাণশৈলীর এ কলোসিয়াম।
.
সময় যত গড়িয়ে গেল সূর্যের তেজ তত প্রখর হলো।খোলা মঞ্চ কলোসিয়ামে সব রোদ যেন খুশবুর মাথায় ঢুকে পড়ছে।টগবগ করে উঠছে উত্তপ্ত মস্তিষ্ক।খুশবু আর দাঁড়াতে চাইলো না।চোখের পিপাসা মিটিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে তার।সামনে যত অগ্রসর হলো ততটাই পেছনে ফেলে এলো কালের ইতিহাসের কলোসিয়াম।রহস্যে ঘেরা রোম শহরের ইতিহাস যদি বলতে হয় তবে মাসের পর মাস ফুরিয়ে যাবে।রোমানরা ছিল উন্নত জাতি,বর্ণমালা সৃষ্টি, সাহিত্য স্থাপত্য, শিল্প, দর্শন ইতিহাস, ভাস্কর্য শিল্প এবং আইন কোন অংশে তারা পিছিয়ে ছিল না।
.
কলোসিয়াম ভ্রমণ শেষে বিকালে বাসায় ফিরে ঘুম দিল খুশবু।আরশাদ তাকে আর জ্বালায়নি।খুশবুকে ঘুমে রেখে আরশাদ তার ভিলার টুকটাক কাজ করেছে।ইতালির বুকে যখন আধার নামলো তখন ঘুম ভাঙলো খুশবুর।মেয়েটা আড়মোড়া কাটিয়ে উঠে বসতে দেখতে পেল আরশাদ তার জামা কাপড় গুছিয়ে বিছানায় রাখছে।হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগে খুশবুর,
” আরশাদ এসব নামালেন কেন?”
” ফ্লুজি আমার বন্ধুরা তোমাকে ডিনারে ইনভাইট করেছে।”
খুশবুর বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো।মুহূর্তে পালটে গেল মুখের ভাব।খুশবুর আতঙ্কেগ্রস্ত চাহনি আরশাদের চোখ এড়ালো না।
” না না আমি যাব না।”
আরশাদ এগিয়ে এলো খুশবুর হাতের ভাজে নিজের হাত পুরে বলে,
” জান এত না না করছো কেন?আমি আছি তো।ওরা এত বার বলছে না করতে পারলাম না।তাছাড়া দেখা তো হবেই হোক সেটা আজ আর কাল।’
চলবে…..
হাতের ব্যাগটা আরশাদের দিকে ছুড়ে মা রলো খুশবু।কথা থামিয়ে ব্যাগটি ধরে ফেললো আরশাদ।খশবুর গোমড়া মুখখানি দেখে বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটা কতটা বিরক্তি নিয়ে আছে।আরশাদ হাত বাড়িয়ে দিল খুশবুর দিকে খুশবু সেই হাতে হাত রাখতে মেয়েটাকে টেনে আনলো সে।
” এবার তো যাওয়া যাক?”
” আরশাদ আমি উনাদের সাথে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নেব!আমার কেমন কেমন যেন লাগছে।”
” ওরা ফ্রেন্ডলি দেখবে তুমি সহজ হতে পারবে ওদের সাথে।
আরশাদ যতই অভয় দিক খুশবু তো জানে তার মনে কী চলছে।অচেনা মানুষ অচেনা পরিবেশে এদের সামনে নির্ঘাত সে দম ব ন্ধ হয়ে ম রবে।আরশাদ ফ্লুজির কোমড়ে হাত রাখলো সে আজ নিজেও ব্লাক শার্ট পরেছে।আজ দুজন ম্যাচিং, দেখতেও তাদের পারফেক্ট লাগছে।
.
আলিশান রেস্টুরেন্ট চারিদিকে মোটামুটি নিরবতা, তেমন কারো কোন কথার আওয়াজ আসছে না।সবাই মন দিয়ে খাবার খাচ্ছে টুকটাক আলাপ সারছে কিন্তু এই আলাপে আওয়াজ অনেক কম।
খুশবু মাত্র রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো একটি লম্বা টেবিলে একদল ছেলেকে দেখে তার আর বুঝতে বাকি নেই আরশাদের বন্ধু নিশ্চয়ই এরাই।হলোও তাই আরশাদ বন্ধুদের দেখেই হাত মেলালো বন্ধুদের মাঝে উল্লাস শেষে সবার মনোযোগ ভিড়লো ফ্লুজির দিকে।সবাই যেন চিড়িয়াখানার বাঘ দেখছে অবাক পানে সবাই তাকিয়ে আছে আরশাদের ফ্লুজির পানে।একদল ছেলে পর পর হাত বাড়িয়ে বলে, “হ্যালো আ’ম ডিলান।”, ” হ্যালো আ’ম অ্যাডেন”
,”হ্যালো আ’ম কডি”, হ্যালো আ’ম এলোন।”
খুশবু ঘাবড়ে গেল সবার হাস্যজ্বল মুখটা তাকে বারবার নার্ভাস করে তুলছে।সবার সাথে পরিচিত হলো খুশবু।এর মাঝে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে জন।লম্বা চওড়া দেহের অধিকারী জন এগিয়ে এসে সবার উদ্দেশ্যে সরি জানালো।জনকে দেখে আরশাদ কিছুটা অবাক হলো, কই সে তো জানে না জন আসবে!
ফ্লুজি জনের পানে তাকালো জন মুহূর্তে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।যদিও সে জানতো আজ সে এই মেয়ের মুখোমুখি হবে কিন্তু হঠাৎ তার ঘাবড়ে যাওয়ার কারণটা নিজেই খুঁজে পেল না।
জন হাত বাড়ালো খুশবুর দিকে।
” হ্যালো আ’ম জন।ইয়ু লুক লাইক ব্লাক কুইন।”
জনের মন্তব্য আরশাদের মুড পালটে গেল।জনের প্রতি তার প্রকাশ পেল ক্ষোভ।ডিলান আরশাদের চাহনি বুঝতে পেরে জনকে বলে,
” জন ভাইয়া প্লিজ বসুন।কেমন আছেন আপনি?অনেকদিন পর এলেন।”
জন বসলো। আরশাদ ডিলানের পানে তাকিয়ে বলে,
” জন ভাইয়ার কি আসার কথা ছিল?না মানে আজ তো বন্ধুদের মিট করার কথা।”
” তোমার ওয়াইফ কি সবার ফ্রেন্ড? না মানে তাহলে সে এখানে কি করছে?আজ নাকি ফ্রেন্ডরা মিট করবে।”
আরশাদ পালটা জাবাব দেওয়ার আগে এলোন বলে,
” এই তোমরা চুপ করবে?আজকের মিট শুধুই আমরা ভাবির সাথে করতে এসেছি।প্লিজ সবাই চুপ কর।”
আরশাদের পানে তাকিয়ে সবাই ঢোক গিললো এই ছেলে একবার যদি রেগে যায় তবে সবটা লন্ডভন্ড করে ছাড়বে।ডিলান,কডি,অ্যাডেন সবাই ফ্লুজিকে দেখছে জহুরি চোখ।জন কলগার্ল বলে যেই মেয়ের ছবি দেখিয়েছিল তার সাথে খুশবুর হুবহু মিল।আশ্চর্য তারা তো আশা করছিল জন এবং ফ্লুজি মুখোমুখি হলে বিস্ফোরণ ঘটবে কিন্তু ফ্লুজির ভাবাবেগে স্বাভাবিক।মেয়েটা শুরুতে যেমন নার্ভাস আছে এখনো ঠিক একই অবস্থা।
জন সবার সহিত চোখাচোখি করলো।আরশাদ নিজের মেজাজ সামলে খাবার অর্ডার করলো।বন্ধুরা সবাই ইতালিয়ান ফুড অর্ডার করলো এদিকে খুশবু এসব খাবারে অভ্যস্ত নয় তাই মেয়েটার জন্য বেছে বেছে খাবার অর্ডার করলো আরশাদ।
জন আরশাদের সিনিয়র তাই চাইলেও কিছু বলতে পারবে না সে।সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি অন্তত যায় না।কডি ভদ্রতার হাসি দিয়ে খুশবুকে বলে,
” আপনি পড়াশোনা করছেন?”
প্রশ্নটা যেহেতু এবার খুশবুকে সরাসরি করা হয়েছে তাই মেয়েটা ঢোক গিললো।ইংরেজিতে টুকটাক কথা বলতে পারে সে কিন্তু এদের সামনে যদি আটকে যায় মান সম্মান জানলা দিয়ে পালাবে।খুশবু ধীরে ধীরে বলে,
” জি।”
” আপনার বাড়িতে কে কে আছে?”
” মা বাবা এবং আমি।”
” আরশাদের সাথে আপনার পরিচয় কীভাবে?না মানে প্রেমটা শুরু হলো কি করে?”
খুশবু থমকে গেল এবার সে কী বলবে?সে তো আরশাদের ফ্লুজি নয়।আরশাদ তো এসব কথা মানতেও চায় না।মূলত আরশাদের সাথে তার আগের ফ্লুজির পরিচয় কীভাবে খুশবু সেসব কিছুই জানে না।
খুশবুর নীরবতা আরশাদ বুঝতে পারে।সবার উদ্দেশ্যে আরশাদ বলে,
” আমাদের পরিচয় রিলেশনের সব কারো অজানা নয় নতুন করে জেনে কি করবি?”
সবাই মাথা দুলালো।অ্যাডান ফ্লুজির উদ্দেশ্যে বলে,
” আরশাদের মাথার তার দুই তিনটা যে ছিড়ে গেছে আপনি সেটা জানেন?সে তো মেন্টালি সিক যদিও সেটা তার ফ্লুজি জন্য অর্থাৎ আপনার জন্য হয়েছে।”
খুশবু বিষম খেল।আরশাদ বন্ধুদের দিকে তাকাতে সবাই দাঁত কেলিয়ে হাসে।সবাই তো খুশবুর উত্তরের আশা করছে।মেয়েটা গ্লাস ভরতি পানি গিলে বলে,
“পাগল হলেও আমার,ভালো হলেও আমার।সব মিলিয়ে সে আমার।”
আরশার ফ্লুজির কাছে এমন উত্তর আশা করেনি হয়তো সে এড়িয়ে যেত।কিন্তু তার ভাবনা মিথ্যা হলো ফ্লুজির দু’লাইনের একটা উত্তর তার বুকে প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেছে।মস্তিষ্কে আজ আন্দোলন করছে, এই মেয়েটাকে আরো আরো ভালোবাসতে হবে,যতটা ভালোবাসলে অতীত আর ভবিষ্যৎ ভুলে জীবনটা শুধু আরশাদের সহিত লেপ্টে থাকে।
বন্ধুরা সবাই হই হই করে উঠলো।নীরব রেস্টুরেন্টে তাদের চেচামেচিতে আশেপাশের সকলে একবার করে আড়চোখে তাকালো।জন কোন প্রতিক্রিয়া জানালো না।অর্ডারকৃত খাবার আসতে সবাই খাবারে মনোযোগ বসালো।
সবাই স্বাভাবিক হতে পারলেও জন স্বাভাবিক হতে পারে না।তার চোখে ভেসে উঠছে সেই রাতের কথা।ফ্লুজির উন্মুক্ত শরীরের ভাজে ভাজে কীভাবে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে ভাবতেই মনটা পুলকিত হয়।দু’টো মেয়ের সাথে সে লিভ ইনে ছিল কই তাদের জন্য জনের মন এতটা খচখচ করেনি যতটা ফ্লুজির জন্য করছে।
বাঙালি মেয়েটা জনকে যে তৃপ্তি দিয়েছে এই তৃপ্তি আর কি কেউ দিতে পারবে?এই জন্যই কি আরশাদ এই মেয়েকে নিজের গুহায় এনেছে?
আচ্ছা আরশাদ কি সবটা জেনেশুনে এমন করেছে?নাকি ফ্লুজি কলগার্ল ক্যারিয়ার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে?
জন এসব ভাবতে পারে না।আচমকা তার দেহের ক্ষুদা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত আর একটা রাতের জন্য ফ্লুজি যদি তার হতো…এসব ভাবা হয়তো বৃথা।
জন ফ্লুজিকে বাজিয়ে দেখতে বলে,
” আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম কক্সবাজার।এক সাপ্তাহ থেকেছি অনেক সুন্দর প্লেস।আপনি কক্সবাজার গিয়েছেন?”
” না।আমার কখনো দূরে কোথাও যাওয়া হয়নি।”
জন সহ বাকিরা চোখাচোখি করে।জনের সাথে ফ্লুজির দেখা হয়েছিল কক্সবাজার বিলাশ বহুল এক হোটেলে।
জন সন্দিহান কণ্ঠে বলে,
ফ্লুজি ঘাবড়ে গেল দ্রুত পানি গিলে তাকালো আরশাদের পানে।জনের এমন আচরণ আরশাদের ভালো ঠেকলো না সে বিরক্ত হয়ে বলে,
” ও যখন বলেছে যায়নি তাহলে আপনি এমন করছেন কেন জন ভাইয়া?”
জন বুঝতে পারে সে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।কথা ঘুরাতে সে বলে,
” আশ্চর্য এত সুন্দর একটা জায়গায় উনি যায়নি তাই আমার ভীষণ অবাক লাগলো।”
সবার মাঝে ঠেকলো নীরবতা।এলোন জনের হাত চেপে ধরলো ইশারায় বোঝালো কোন প্রতিক্রিয়া না জানাতে।খাবার শেষে সবার মাঝে টুকটাক কথা হচ্ছিল।এলোন সবার মাঝে বলে,
” চলো নাইট ক্লাবে যাই।”
জন শার্টের হাতা ফোল্ড করে বলে,
” আজ যেতেই হতো চলো সবাই একসাথে যাই।”
ডিলান সহ অনন্যরা সাড়া দিল।মুহূর্তে খুশবুর চোখে মুখে ছড়িয়ে গেল আতঙ্ক।আরশাদ কি তাকে এখন ক্লাবে নিয়ে যাবে?সেদিনের বিশ্রি অভিজ্ঞতা তার আর যাওয়ার ইচ্ছে নেই।অথচ সবাই সম্মতি দিলেও আরশাদ যেতে রাজি হলো না।ফ্লুজিকে নিয়ে তো কখনোই বন্ধুদের সহিত সে ক্লাবে যাবে না।এরা এখন ক্লাবে গিয়ে ঠিক কি কি করবে সবটাই আরশাদের জানা।ফ্লুজি এসব স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারবে না তাই আরশাদ যেতে চায় না।
জন বিরক্ত হলো আরশাদের অসম্মতিতে। সে তার বিরক্ত ধরে রেখে ফ্লুজিকে বলে,
” কেন আপনাদের দেশে কি এসব নেই?নাকি আপনি কখনোই যাননি?”
” আমি ভদ্র ফ্যামিলির মেয়ে এসব আমি ভাবতেও পারি না সেখানে আমি এসব জায়গায় যাব?আপনারা যান আরশাদ আমাকে বাসায় পৌঁছে দেবে।”
” ভদ্র অভদ্র জানিনা।এসব আমাদের কাছে ডাল ভাতের মতো।আপনিও চলুন ইতালিতে যখন এসেছেন অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।”
আরশাদ গম্ভীর মুখে সবার উদ্দেশ্যে বলে,
” তোমরা সবাই যাও আমি যেতে চাই না।”
এলোন আরশাদকে সম্মতি দিয়ে বলে,
” ভাবি না গেলে আরশাদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই।আমরা যাই।”
আরশাদ বিল মিটিয়ে রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে এলো।আরশাদ চলে যেতে বাকিরা চলে গেল নাইট ক্লাবে।এর মাঝে কেউ কোন কথাই বললো না।সবার মাঝে চলছে ঘোর।
নিঃসন্দেহে ফ্লুজি মেয়েটা সুন্দরী তবে সে যে কলগার্ল কারো কোন দিক দিয়ে মনে হলো না।ক্লাবে এসে দ্রুত রেড ওয়াইন অর্ডার করলো জন।সবাই ওয়াইনের গ্লাস হাতে তুলে বসলো সমালোচনার উদ্দেশ্যে।
সবার আগে ডিলান প্রশ্ন করে,
জন হাসে।পকেট থেকে ফোন বের করে একটি ছবি ধরে সবার সামনে।যেখানে দেখা যাচ্ছে রেড ইনার পরাহিত ফ্লুজি অন্য একটি যুবকের সহিত চুম্বনরত অবস্থায় মগ্ন।আরেকটি ছবিতে মেয়েটার বুকের খাঁজ অন্য পুরুষের বুকের সহিত মিশে আছে।এমন ছবি দেখে সবাই নজর সরালো।আরশাদের স্ত্রী তাদের কাছে সম্মানীয় ব্যক্তি অথচ সেই সম্মানীয় ব্যক্তির কুকীর্তি তারা মানতে পারছে না।সব প্রমাণ তো জনের কাছে আছেই।
এলোন বিস্ফোরিত নয়নে বলে,
” জন ভাই এসব ছবি কোথায় পেলে?”
“বলেছিলাম না সিনিয়রদের সাথে কক্সবাজার গিয়েছিলাম।এরাই সেই সিনিয়র।তোমাদের যদি আমাকে বিশ্বাস না হয় তাহলে আমি তাদের উপস্থিত করবো।”
” তারা হ্যাপি কাপল আমাদের কি উচিত তাদের সংসার ভাঙা?”
” আমি এতকিছু জানি না।বাট এই মেয়েকে আরেকটা রাতের জন্য চাই প্রয়োজনে ডাবল পেমেন্ট করবো।”
ডিলান রেগে গেল জনের দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলে,
” প্লিজ জন ভাইয়া এসব বলবেন না।আগে আমাদের এসবের মুখোমুখি হতে হবে।আরশাদের ওয়াইফকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করার পরিণাম কতটা ভয়াবহ তা আর নিশ্চয়ই বলতে হবে না।আমি এসব ভাবতেই পারছি না এর সমাধান চাই।”
ডিলানের কথায় দু’একজন সম্মতি জানাল।জন ঠোঁক বাকিয়ে হেসে উঠে যায়।একটি মেয়ে তাকে এতক্ষণ ইশারায় ডাকছিল সেই মেয়েটার কাছে গিয়ে জন ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।মেয়েটির সাড়া পেয়ে জন আরো বেশি উত্তাল হয়।শুরু হয় দুজনের মগ্নতা।আশেপাশে কেউ আছে কি নেই এসবে পাত্তা দিল না জন।
সোফায় পা গুটিয়ে বসে আছে খুশবু।তার পরনে লং শার্ট চুলগুলো ছড়িয়ে আছে পিঠ জুড়ে।আরশাদ আয়নায় দাঁড়িয়ে আড় চোখে দেখলো মেয়েটাকে।তার ফ্লুজির ডাগর ডাগর চাহনি তাকে বরাবরি আকৃষ্ট করে।
” ফ্লুজি এভাবে বসে না থেকে যা বলছি তাই করো।”
” আমি যাব না আরশাদ।”
” জান তোমার কথা আমি শুনতে চাইছি না।যা বলছি করো।”
” আমি নতুন জায়গায় সহজে এডজাস্ট হতে পারিনা।আমার ঘর থেকে বের হতে কেমন কেমন জানি লাগে।গ্র্যানি,গ্লোরিয়া ফুপ্পি,এলিনা এরা আমার সাথে মেশার জন্য পা গ ল তারা কথা বলতে চায় কিন্তু আমি তাদের কথা আয়ত্তে আনতে পারছি না।”
” একটা সময়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমাদের বাংলাও কিন্তু কম কঠিন নয়।”
” আপনি যান আরশাদ আমি যাব না।”
আরশার কিছুই বলে না।গায়ের শার্টটা ঠিকঠাক করে খুশবুর কাছে এগিয়ে যায় এবংমেয়েটাকে সোফা থেকে কোলে তুলে নেয়।খুশবুর দু’পা বেঁধে যায় আরশাদের পিঠে।নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আরশাদের গলা জড়িয়ে ধরে সহসা।
” যদি এখন বাইরে না যাও আমিও যাব না।যেহেতু আমার কোন কাজ নেই সেহেতু এখন অন্যকিছু হবে।”
” একটুতো রোমান্টিক হও জান।সব কি আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে হবে?”
” সেদিন কি বলেছেন মনে নেই?সামলে যাও জান,তুমি নিজেকে কন্ট্রোলে না আনলে এখন আমার কি হবে।তবে এখন এসব বলছেন কেন?”
” এখন কোন বাঁধা আছে?এখন চাইলে হ্যাঁ না চাইলেও হ্যাঁ।”
খুশবু ঠোঁট বাঁকায়।আরশাদের শার্টের বোতামে হাত রাখতে আরশাদ বলে,
” কিস মাই চেস্ট জান।”
” কি!”
” ঠিকটাই শুনেছো যা বলছি করো জান।”
” আপনি ভীষণ বাজে লোক।”
” জানি তো হানি।”
খুশবু সরে যায় আরশাদ তাকে বাঁধা দিয়ে আরো কাছে টানে।খুশবুর পালটে যাওয়া স্বরটা আরশাদের ধরে ফেলতে সময় লাগে না।ছেলেটা কিঞ্চিৎ হেসে তার ফ্লুজির গালে চুমু খেয়ে বলে,
” ছেড়ে দিলাম জান।তবে সুদ আসল দু’টোই আদায় করে নেব।”
.
একটি সুপার শপে ঘুরে ঘুরে খাবার দেখছে আরশাদ।তার প্রয়োজনীয় সব ঝুড়িতে তুলে খুশবুকে বলে,
” হানি আমার প্রয়োজনীয় সব নেওয়া শেষ।তোমার কি কি লাগবে নিয়ে নাও।এটা বাঙালি দোকান হালাল হারামের ঝামেলা পোহাতে হবে না।সবটাই হালাল যা ইচ্ছা নাও।”
” আমি আবার কি নেব।আমার কিছু চাই না।”
” তা বললে তো হবে না।চিপস চকলেট কি লাগবে বলো?”
” আরশাদ আমি বাচ্চা নই।”
” এসব খেতে হলে বাচ্চা হতে হয় নাকি?”
ফ্লুজি প্রত্যুত্তর করে না।তার চোখ যায় চকলেটের দিকে একটি চকলেট হাতে তুলে আরশাদকে দেখিয়ে বলে,
” এই একটা হলেই চলবে।”
আরশাদ ভ্রু বাঁকায়।দেরি না করে তাকে থাকা সব চকলেট নিজের ঝুড়িয়ে নিয়ে নেয়।শুধু এক ধরনের চকলেট নয় যত প্রকার চকলেট চিপস ছিল সবটাই নিজের ঝুড়িতে রাখে।খুশবু অবাক হয় আরশাদকে বাঁধা দিতে গেলে ছেলেটা তার মাথায় টোকা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।
শপে থাকা সবার চোখ তখন কপালে এমন ক্রেতা তাদের দোকানে আছে ঠিকি তবে যাচাই-বাছাই ছাড়া এভাবে কেনে কয়জন?
কেনাকাটা শেষে আরশাদ খুশবুর হাত ধরে বেরিয়ে এলো।সব প্যাকেট গাড়িতে রেখে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিল।
” বিকাল হয়ে গেছে কি খাবে জান?”
” যে চমক আপনি খাইয়ে ছাড়ছেন এরপর আমার পেটে আর কিছু ধরবে না।”
আরশাদ হাসে।কিছুক্ষণ পর তার গাড়ি এসে থামে বাঙালি একটি রেস্টুরেন্টের সামনে।খুশবু বুঝতে পারি এটি নিশ্চয়ই আরশাদের রেস্টুরেন্ট।
” এটা আপনার?”
” না তোমার।আমার সব তোমার ফ্লুজি।ইয়ু ওন ইট।”
আরশাদ তার ফ্লুজির হাত ধরে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।ইতালির পরিবেশের মাঝে এক টুকরো নিজের দেশীয় ছোঁয়া পেয়ে পুলকিত হলো খুশবুর মন।আশেপাশে মাটির ফুলদানি দিয়ে সজ্জিত।দেয়াল জুড়ে আছে হরেক রকম পেইন্টিং।প্রত্যেকটি পেইন্টিং দেশীয় ছোঁয়ায় আবদ্ধ।দেয়ালের এক কোণে আকা হয়েছে শিমুল গাছ।অন্য কোণে বাগান বিলাশ।বিশাল দেয়াল জুড়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশের ছবি।আরেকটি দেয়ালে নারীদের ধান ঝারার দৃশ্য।
খুশবু যখন সবটা অবাক পানে দেখছিল তখনি তার সামনে ভিড় জমায় একদল বাঙালি ছেলে মেয়ে।
আরশাদ সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় খুশবুকে।রিমি খুশবুর হাতে ধরিয়ে দেয় একটি লিলি ফুল।
” মেম আপনি লিলি ফুলের মতো সুন্দর।”
খুশবু কিঞ্চিৎ হাসে।এতক্ষণ পর কারো মুখে নিজের বাংলা কথা শুনে ছলকে উঠে তার মন।
আরশাদ তার ফ্লুজিকে বসায় একটি চেয়ারে।আশপাশটায় নজর ঘুরিয়ে সে বলে,
” রেস্টুরেন্ট ফাঁকা কেন?”
” এখানে সবাই ধরা বাঁধা নিয়ে চলে।সকালের নাস্তা তারা সকালেই কপ্লিট করবে।এবং দুপুরেরটা দুপুরেই শেষ হবে।সবটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর ক্লোজ হয়ে যায়।এবার তুমি বলো কি খাবে?”
” আপনি যা নেবেন।”
আরশাদ খুশবুকে মেন্যু কার্ড দেখায়।এটা ওটা কত খাবার।খুশবু নিজের নির্দিষ্ট কোন পছন্দের খাবারের নাম বলেনি।আরশাদ অসন্তুষ্ট হয়।মেন্যু কার্ড বন্ধ করে বলে,
” এই থামুন থামুন এত খাবার কে খাবে?আমি কিন্তু ভোজন রসিক না।”
আরশাদ হাসে।অর্ডার পেয়ে প্রত্যেকটা স্টাফ লেগে পড়ে তাদের কাজে।
আরশাদের সাথে একটা সুন্দর সময় কাটলো তার।রাতে পরিবারের সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো।যদিও সেখানে উপস্থিত নেই ইমরান এবং আরশাদ। এলিনা ভীষণ ছটফটে মেয়ে খুশবুকে নানান কথা বলে অস্থির করে তুলছে।গ্লোরিয়া গরম গরম পাকোড়া ভেজে বসলো তাদের সাথে।আফরোজ অফিস শেষে বাড়ি এসে বিশ্রাম নিচ্ছেলিন হঠাৎ খুশবুর খিলখিল হাসির শব্দে বেরিয়ে এলেন রুম থেকে।কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“এই হাসে কে?”
খুশবু ভড়কে যায় আমতা আমতা করে বলে,
” আমি আম্মু।’
” এই সুন্দর হাসিখানা কি আমার বেয়াই বেয়ানের সামনে দেওয়া যায় না?তারা যে আপনার চিন্তায় অস্থির আপনি কি জানেন?”
খুশবু লজ্জা পায়।আফরোজ মেয়েটার কপালে চুমু খেলেন।পালটা চুমু খেল গ্র্যানি।গ্লোরিয়া তখন ছুটে এসে বলে, “আমি বাদ যাব কেন?” গ্লোরিয়া চুমু খেল খুশবুর কপালে।এলিনা এসে সেও একই কাজ করলো।আরিব তখন সরু চোখে তাকিয়ে ছিল,
” আমি বাদ যাব কেন?”
আরিবের মুখে এমন কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠে।ছেলেটার মুখ ভঙ্গি বদলালো না।মাছি তাড়ানোর মতো বলে,
” ভাইয়ার প্রোপাটিতে যে এমন করছো ভাই জানলে শূলে চড়াবে।”
.
রাত বেশি নয় খুশবু বাবা মায়ের সাথে কথা সেরে আরশাদের ভিলায় ফিরে আসে।নিচ তলায় স্লো সাউন্ডে গান চলছে।রান্নাঘর থেকে শোনা যাচ্ছে খটখট চাকু চালানোর শব্দ।খুশবু এগিয়ে গেল, আরশাদ দক্ষ হাতে এভোকাডো স্লাইস করছে পাশের বাটিতে দেখা যাচ্ছে কিছু স্টবেরি কাটা।
” আরশাদ কি করছেন?”
” হানি এসেছো।কাম।”
খুশবু এগিয়ে এলো আরশাদের পাশে দাঁড়াতে দেখতে পেল, কিউই,রাসবেরি,আপেল রাখা।
” আমি কেটে দিব?”
” তুমি পারো?”
খুশবু দ্বিধায় পড়লো, কি বলবে সে?কাটাকুটির কাজে সে কখনো হাত লাগায়নি।অনিমা তাকে রেখেছে মোমের পুতুলের মতো।খুশবুর নিরবতা দেখে হাসে আরশাদ।মেয়েটার কোমড়ে হাত রেখে বসিয়ে দেয় উপরে।
” বসে থাকো।আমায় দেখো।”
” আপনি কি করছেন?”
” ফ্রুটস সালাদ করছি।তোমার নাকি ক্ষুধা নেই একটু কিছু তো খেতেই হবে জান।”
” খাও।”
.
ডিনার শেষে নিজের রুমে ফিরে আসে খুশবু।দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে নাকে লাগে এক মিষ্টি সুভাস।খুশবু ভয় পেয়ে যায় অন্ধকার রুমে এত সুভাস কিসের?মেয়েটা ঢোক গিলে পেছনে ছুটতে নিলে আরশাদের চওড়া বুকের সহিত ধাক্কা খায়।
” কি হয়েছে হানি?”
” আরশাদ কিসের ঘ্রাণ?”
আরশার খুশবুকে কোলে তুলে নেয়।রুমে প্রবেশ করে খুশবুকে বসিয়ে দেয় বিছানায়।বিছানায় হাত রাখতে হাতের ভাজে উপস্থিত হয় নরম পাপড়ি।আরশাদ লাইট অন করতে চমকে যায় খুশবু বিছানায় সব গোলাপের পাপড়ি।সারাটা রুম জুড়ে নানান ফুল ফুলদানিতে সাজানো।
” আরশাদ এসব কী?”
“তোমার জন্য কত কি ভেবে রেখেছিলাম কিছুই হলো না তাই ছোট্ট সারপ্রাইজ।”
আরশাদ উঠে যায় রুমের বাতি নিভিয়ে একে একে কয়েকটা প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়।
খুশবু উঠে গিয়ে দাঁড়ায় আরশাদের সামনে।জানলার দ্বার খুলে এই মুহূর্তে তার দেখতে ইচ্ছে করছে এই রাতটা কতটা সুন্দর।জানলার দ্বার খুলতে শীতল বাতাসে শিউরে উঠে খুশবু।আরশাদ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার ফ্লুজিকে।অন্ধকার আবছা আলোয় সুযোগ বুঝে ফ্লুজির ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।দু’ঠোঁটের ছোয়া ক্রমশ গভীর যায়।ফ্লুজি যখনি নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইলো তখনি আরশাদ সরে দাঁড়ালো।মেয়েটাকে বাজিয়ে দেখতে বলে,
” আ’ম সরি হানি।এভাবে কিস করা ঠিক হয়নি।আমি একবার কাছে এলে ফিরতে পারবো না।তুমি হয়তো প্রস্তুত নও আমার উচিত ছিল তোমার পার্মিশন নেওয়া।”
ফ্লুজি হতবাক।মেয়েটার অনুভূতি ছলকে দিয়ে আরশাদ দূরে সরতে চাইছে?তার চোখের ভাষা কি আরশার বুঝে না?সে তো প্রস্তুত, এবার কি মুখেই বলতে হবে!আরশাদ দু’কদম আগাতে তার শার্টের কলার চেপে ধরে ফ্লুজি।তীব্র রাগ নিয়ে আঁচড় কাটে ছেলেটার বুকে।আরশাদকে সে নাগাল পায় না তাই তো ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ার তীব্র বাসনা পূরণ করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।আরশাদের পায়ে পা তুলে দাঁড়ায় খুশবু।গলা জড়িয়ে আরশাদের কাছে আকুতির স্বরে বলে,
” আরশাদ প্লিজ।”
” হুম বলো।”
” আরশাদ….।”
” বলো জান।মুখে বলো।”
খুশবু রেগে যায়।রাগে দুঃখে তার কান্না পেয়ে যাচ্ছে।তাকে উষ্কে দিয়ে ছেলেটা মজা নিচ্ছে?তীব্র অভিমানে আরশাদকে ছেড়ে দূরে সরে খুশবু।মেয়েটার ছলছলে চোখ প্রদীপের আলোয় চিকচিক করছে।খুশবু দাঁড়ালো না অভিমান নিয়ে চলে গেল রুমের বাইরে।আরশাদ বুঝতে পেরে ঠোঁট কামড়ে হাসে।অনেক জ্বালিয়েছে মেয়েটাকে তবে আর নয়।খুশবুকে কোলে তুলে রুমে ফেরে সে।মেয়েটাকে বিছানায় পাপড়ির চাদরে বসিয়ে উন্মাদনায় ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।প্রতিটি উষ্ণ ছোয়া কখন যে কামড়ে রূপান্তর হয় খুশবু টের পেল না।প্রতিটি ব্যথায় পিলে চমকে উঠলো সে।আরশাদ মেয়েটাকে ছেড়ে ছিটকে বসে বিছানায়।
হাঁপাতে হাঁপাতে।তাকায় তার ফ্লুজির পানে।মেয়েটার দু’ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে।
আরশাদ দ্রুত হাতে শার্টের বোতাম ছাড়িয়ে মেঝেতে ছুড়ে দেয় শার্ট।বাঁকা হেসে তাকায় ফ্লুজির পানে।মেয়েটাকে হেঁচকা টেনে বিছানার ফেলে নিজের বুকের আদলে মিশিয়ে নেয় ।আরশাদের অন্যরকম মোহে খুশবু নিজেকে প্রস্তুত করে।প্রলয়ের ভয়ে নিজেকে বারবার গুটিয়ে রাখতে চাইলেও চিন্তা চেতনা দেহ আজ অন্য কথা বলছে।
আরশাদ এক চিলতে হাসে।ফ্লুজিকে কাছে টেনে গালে হাত বুলায়।
খুশবু ঘোরে পড়ে যায়।তবুও যন্ত্র মানবের ন্যায় আরশাদের প্রশ্নের সাড়া দিয়ে সম্মতি জানায়।আরশার হাসে।শক্ত হাতের বন্ধনীতে জড়িয়ে নেয় তার ফ্লুজিকে।আরশাদের বলিষ্ঠ দেহের নিচে চাপা পড়েযায় ফ্লুজির ছোট্ট দেহখানি।এলোমেলো হয় খুশবুর ছোঁয়া।মেয়েটা আরশাদের পিঠে,ঘাড়ে, বুকে আঁচর বসিয়ে দেয় উন্মাদনায়।আরশাদ যতটা আক্রমণাত্মক হয় ফ্লুজি ততটা হাঁপিয়ে উঠে।প্রদীপের আলোয় প্রজ্জ্বলিত রুমটায় ভেসে যায় শীৎকার ধ্বনি।আরশাদ নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায়।সময় যত গড়িয়ে যায় আরশাদ ততটাই ফ্লুজির বশের বাইরে চলে যায়।চাদরে ছড়িয়ে থাকা ফুলের পাপড়িরা দুমড়ে মুচড়ে নেতিয়ে যায়।আরশাদ তার ফ্লুজির দেহের প্রতিটা খাঁজে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়।ফ্লুজির দু’চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুপাত ঘটে।আরশাদ তার বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে মুছে দেয় অশ্রুকণা।দু’চোখে চুমু দেয় উষ্ণ আবেশে।
আনন্দ সুখ বেদনা সবটাই মিশে একাকার মেয়েটার কাছে।ফ্লুজি বারবার হারিয়ে যায় তমসাচ্ছন্ন আরশাদের বাদামী চোখে।আরশাদ চোখে হাসে।খুশবুকে হাতে নিজের হাতের ভাজে নিয়ে বলে,
” লুক এট মাই আইস জান,আ’ম ফুল অফ ইয়ু।”
চলবে….
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৭ বাকি অংশ]
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পথে।আকাশটায় সূর্যের আলো নেতিয়ে যাচ্ছে।দূর আকাশটা লাল নীল মিশে একাকার অবস্থা।জানলার কাছে দাঁড়িয়ে ভেজা চুলে আঙুল বুলায় আরশাদ।গত রাতের পাগলামির কথা মাথায় আসতে পুলকিত হয় তার মন।খুশবু অর্থাৎ আরশাদের ফ্লুজি একটি স্নিগ্ধ ফোঁটা ফুল।এই ফুলকে কেউ ছেড়ার সাধ্য করেনি।অবশ্য ছেড়া তো দূরের কথা কেউ প্রেমময় ছোঁয়াতে ছুঁয়ে দেখেছে কি না সন্দেহ।আরশাদ কিঞ্চিৎ হাসে তার স্নিগ্ধ ফুলের মধু সে একাই গ্রহণ করেছে।জীবনের একটি বড় চাওয়া পূর্ণ হয়েছে বলে আরশাদের হাসি চওড়া হয়।ফ্লুজিকে পেতে কম বেগ পোহাতে হয়নি তার এবং অবশেষে ফ্লুজি তার।
বিছানায় শুয়ে থাকা অর্ধ নগ্ন ফ্লুজির কাছে এগিয়ে যায় সে।মেয়েটার শরীরে ছড়িয়ে দেয় বিছানায় পড়ে থাকা গোলাপের পাপড়ি গুলো।আরশাদ পুনরায় উন্মাদ হয়,তার ফ্লুজির গলায় মুখ ডুবিয়ে নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা চালায়।
গলায় বুকে ভেজা কিছুর ছোঁয়া ভেঙে যায় ফ্লুজির ঘুম।দু’চোখের পর্দা মেলে তাকাতে দেখতে পেল আরশাদের বাদামি চোখ জোড়ার মেশাতুর দৃষ্টি।খুশবু অবাক হয় নড়চড় করতে নিলে বুঝতে পারে আরশাদ তার উপরে শরীরের ভর ছেড়ে দিয়েছে।গত রাতের কথা মাথায় আসতে খুশবু লজ্জায় নুইয়ে যায়।কিন্তু আরশাদ এখনো তাকিয়ে আছে তার দিকে।
আরশাদ হাসে।এতটা সময় কোথায়?আরশাদ তাকে ঘুমাতে দিয়েছে সকাল বেলায়।সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ঘুমানো বড় কোন ব্যপার নয়।আরশাদ উঠে যায় তার ফ্লুজির কাছ থেকে।ব্লাঙ্কেটে জড়িয়ে নিজের নগ্ন অবস্থা বুঝতে পেরে দ্বিধায় পড়ে ফ্লুজি,সে কি করে যাবে এখন ওয়াশরুম?আশেপাশে তাদের জামাগুলো ছড়িয়ে আছে।আরশাদ বুঝতে পেরে ফ্লুজির লং শার্ট এগিয়ে দেয়।তার ভেজা চুল আঙুলের সাহায্যে পেছনে ঠেলে দিয়ে বসে যায় ফ্লুজির পাশে।খুশবু আরশাদের ভেজা চুলে তাকিয়ে বলে,
” আপনি গোসল করেছেন?”
” হুম।তুমি সুযোগ দিলে আবার গোসল করতে রাজি আছি।”
আরশাদের পাগলামিতে সাড়া দিতে গেলে খুশবুর আজ আর বাঁচা হবে না।মেয়েটা দ্রুত গায়ে শার্ট জড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে।সর্বাঙ্গে চাপা ব্যথা অনুভব করতে ঢোক গিলে।আরশাদ বুঝতে পারে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে কোলে তুলে নেয় তাকে।নিজেকে বাঁচাতে আরশাদের গলা জড়িয়ে ধরে ফ্লুজি।লং শার্টটা ততক্ষণে হাটুর উপর চলে এসেছে।লজ্জায় আরো গুটিয়ে যায় মেয়েটা।তার অবস্থায় আরশাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।
.
ফ্লুজিকে গোসলে পাঠিয়ে আরশাদ ফিরলো রান্না ঘরে।খিদায় পেটের ভেতরটা খা খা করছে।এই মুহূর্তে ফ্লুজিরো নিশ্চয়ই খিদে পাবে।আরশাদ চটজলদি ভাত বসালো।ফ্রিজ থেকে একটি টুনা মাছের ক্যান নিয়ে পেয়াজ মরিচ কাটতে লাগলো।
আরশাদের রান্না হতে বেশি সময় লাগলো না এর মাঝে খুশবু উপস্থিত হয় আরশাদের সামনে।মেয়েটার ভেজা চুল দেখে আরশাদ বিচলিত হয়।
” ফ্লুজি হেয়ার ড্রায়ার রেখে এসেছি তো চুল শুকাওনি?”
” পরে শুকাবো।আমার খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দিন।”
” তুমি বসো এইতো খাবার তৈরি।”
আরশাদ টেবিলে সব খাবার এনে গুছিয়ে রাখলো।খুশবুর প্লেটে পরিমানের তুলনায় বেশি খাবার দিতে মেয়েটা কপাল কুচকে তাকায়।অবশ্য আরশার চোখ গরম করে আদেশ করে, সব ভাত শেষ করতে হবে।খাবার শেষে গরম গরম এক গ্লাস দুধ এনে টেবিলে রাখলো সেই সাথে রাখলো দু’টো ওষুধের খোসা।
” ওষুধ গুলো খেয়ে নাও।”
” কিসের ওষুধ?”
আরশাদ ভ্রু কুচকায়।খুশবুর অবচেতন মন সতর্কতার ইঙ্গিত দিতে দ্রুত ওষুধ দু’টো গিলে নেয়।
.
সন্ধ্যার পর খুশবু গ্র্যানির সাথে দেখা করতে গেল।এলিনা খুশবুকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।তার বকবক কোন মতেই থামছে না।আরিব গালের নিচে হাত রেখে তাকিয়ে আছে এলিনার পানে মেয়েটা কি করে পারে এতটা বকবক করতে।গ্লোরিয়া,ইমরান,আফরোজ তারা কেউ বাড়ি নেই।আরশাদ বেরিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।আড্ডার মাঝে এলিনা রোম ভেনিস সম্পর্কে নানান কথা বলে।কোথায় ঘুরতে গেলে ভালো হবে কিংবা কোথায় যাওয়া উচিত সবটাই বর্ননা করছে খুশবুকে।এলিনা অতি আগ্রহে চট করে বলে,
” ট্রেভি ফাউন্টেনে যাবে ভাবিমনি?জানো,যে সেখানে পয়সা ফেলবে সে আবার কোন না কোনদিন রোমে ফিরে আসবে এটাই সবার মাঝে বিশ্বাস।”
” দূর এসব কথা কি কেউ বিশ্বাস করে!”
” তুমি বিশ্বাস করছো না, তাই না?যখন যাবে তখন দেখবে।”
” এগুলো কুসংস্কার আমি এসব বিশ্বাস করি না এলিনা।”
আরিব হাসে।এগিয়ে এসে বসে খুশবুর মুখোমুখি এবং খুশবুকে বলে,
“আমরা উন্নত জাতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা কিছু মিথ নিয়ে চলি।যেমন তোমাদের দেশের কথাই বলো,মাজার অনেকের কাছেই এখনো প্রাধান্য পাচ্ছে,মাজারকে সিজদাহ্ করছে টাকা দিচ্ছে,মানত করছে আরো কত কি।সেইভাবে এই দেশের লোকের কাছেও এসব বিশ্বাসে পরিনত হয়েছে।”
” আমার কাল ক্লাস আছে যেতে পারবো না।আশা করি তুমিও যাবে না শুধু শুধু নিউ কাপলদের মাঝে ঢোকা ঠিক নয় এলিনা।তাদের একাই যেতে দাও।”
” আমি তাদের ডিস্টার্ব করবো না।”
” তুমি কি বাচ্চা মেয়ে?আসো গালটা চেপে দি।বাচ্চামো রাখো ওদের একাই যেতে দাও।তুমি আমার সাথে যেও আগামী ফ্রাইডেতে আমি ফ্রি আছি।”
এলিনার মনমরা মুখটা দেখে খুশবু বলে,
” এলিনা তুমি যেও।কোন সমস্যা নেই।”
আরিব এলিনার হয়ে বলে,
” না ভাবি ও যাবে না।তোমাদের তো ভেনিস যাওয়ার কথা আছে তখন না হয় আমরা সবাই মিলে ঘুরবো এখন তোমরা একাই যাও।”
এলিনা সম্মতি জানালো।গ্র্যানি সবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখছিলেন।সবার বাকবিতন্ডায় তিনি করে বসলেন আরেক মন্তব্য।
” আমরা পরিবারের সবাই একদিন পিকনিক করলে কেমন হয়?”
এলিনা এবং আরিব সম্মতি জানালো।তাদের খুশি যেন আজ আকাশে বাতাসে উড়ছে।পারিবারিক পিকনিকগুলো ভিষণ আনন্দের।
.
আরশাদ এখনো আসেনি।রাত বাজে প্রায় একটা।একা একটা ভিলায় থাকতে খুশবুর গা ছমছম করছে।নিজেকে স্থির রাখতে টিভির সাউন্ড জোরে দিয়েছে।ফ্রিজ থেকে চকলেট কোল্ড ড্রিংস এবং চিপ্স কত কি যে সাবাড় করেছে মেয়েটা।সারাটা ভিলা ঘুরে দেখলো খুশবু।আরশাদের শখের ভিলা তাই শখের ভিলা তো যেন তেন নয়।দামি পেইন্টিং,ফুল,আসবাবপত্র সবটাই দামি এবং ইউনিক।
ডোর বেলের শব্দে চমকে যায় খুশবু।তখন আবার ফোনটাও বেজে উঠেছে আরশাদ ফোন করেছে।ছেলেটা এসেছে তাই খুশবুকে জানান দিয়েছে।দরজা খুলে আরশাদকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে মেয়েটা।
” এত দেরি করলেন কেন?”
” সরি জান।একা একা বোর হচ্ছিলে?”
” হুম।”
আরশার দরজা বন্ধ করে কিচেনের দিকে যায়।টেবিলে খাবারের প্যাকেট রেখে বলে,
” পাস্তা এনেছি আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
রাতের খাবার শেষে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হয় দুজনে।একই ব্লাঙ্কেটের নিচে আরশাদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে খুশবু।মেয়েটার চোখে রাজ্যের ঘুম কিন্তু আরশাদ মুভি দেখছে।খুশবু তার সাথে জেগে মুভি দেখলেও মেয়েটার মন মুভিতে নেই।
” জান আগামীকাল বিকালে রেডি থেকো আমরা ঘুরতে যাব।”
” কোথায় যাবেন?”
“ট্রেভি ফাউন্টেন।তুমি নাকি যেতে চেয়েছো।”
” আমি কখন যেতে বললাম?”
” আরিব বললো।”
” ওরা আমাকে গল্প শোনালো আমি তো কিছুই বলিনি।”
আরশাদ হাসে। ফোনটা রেখে খুশবুকে বুক থেকে নামিয়ে বালিশে মাথা রাখে।
” ঘুমাও জান।”
খুশবু চোখ বন্ধ করতে সেই সুযোগে আরশাদ হামলে পড়ে তার ঠোঁটে, দু’হাতের ভাজে আরশাদ ক্রমশ দু’হাত চার করে মুষ্ঠিবদ্ধ করে।খুশবুর আতঙ্কগ্রস্ত মুখখানি দেখে ছেলেটা হেসে সরে যায়।
” এবার ঘুমাও।”
” আপনাকে আমি বিশ্বাস করিনা ঘুমের কথা বলে…”
” এই হিসসস চুপ, ঘুমাও।”
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে বিকাল সময়টাতে খুশবুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আরশাদ।তাদের যাত্রাটা প্রায় ঘন্টা খানেক।জানলার বাইরে তাকিয়ে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে খুশবু।এই শহরটা অন্যরকম সুন্দর।ঘন্টাখানেক বাদে ট্রেভি ফাউন্টেনে পৌঁছে গেল তারা।সন্ধ্যা নামার পথে পৃথিবীর বুকে নেমেছে অন্যরকম সৌন্দর্য।পর্যটকদের ভীরে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া দায় যে জায়গাটিতে তা হলো ট্রেভি ফাউন্টেন।
ট্রেভি ফাউন্টেনের সামনে পর্যটকের অভাব নেই।ভিড়ের মাঝেই চারপাশ পর্যবেক্ষণ করলো খুশবু।চারিপাশে সজ্জিত উঁচু দালান তার মাঝে স্বচ্ছ জলের ফোয়ারা।ট্রেভি ফাউন্টেন সমস্ত ইতালির বৃহত্তম ফোয়ারা।ফোয়ারায় অনেকগুলো সাদা মূর্তি দেখা যায়।স্বচ্ছ জলে চিকচিক করছে জলের তলায় পয়সাগুলো।
ত্রেভি শব্দটি এসেছে ইতালীয় শব্দ “ত্রে” এবং “ভিয়া”-র সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে যার অর্থ ‘তিন রাস্তা’।ট্রেভি ফাউন্টেন বা ত্রেভি ফোয়ারা ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত একটি ফোয়ারা। এটি রোম শহরের বৃহত্তম বারোক আনুমানিক ১৬০০ সালের দিকে যে শৈল্পিক রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল।
আরশাদ খুশবুকে দাঁড়াতে বলে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ছবি ক্যাপচার করে।ধীরে ধীরে যখন রোমের বুকে অন্ধকার নেমে এলো তখন ট্রেভি ফাউন্টেনের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেল।সেই সাথে বাড়লো মানুষজন।নানান দেশের লোক এখানে উপস্থিত।
আরশাদ খুশবুর হাত ধরে হাটে।আশেপাশে অনেকেই কয়েকটি পয়সা ছুড়ে ফেলছে স্বচ্ছ ফোয়ারার জলে।আরশাদ পকেট থেকে কয়েকটি পয়সা বের করে তার ফ্লুজিকে বলে,
“পয়সা ফেলো।”
” আমি এসব বিশ্বাস করি না আরশাদ।”
” আমিও করি না।কিন্তু যতবার এসেছি পয়সা ফেলেছি।একটা ট্রেন্ড বলতে পারো যা বছরের পর বছর চলে এসেছে।স্থানীয় লোককাহিনী অনুযায়ী কথিত আছে যে, কেউ এই ফোয়ারায় পয়সা ফেললে সে আবার কোন না কোনদিন রোমে ফিরে আসবে। প্রচলিত কথা হচ্ছে এই ফোয়ারায় একটি পয়সা ফেললে দ্বিতীয়বার রোমে বেড়াতে আসার স্বপ্ন পুরন হয়। ২য় এবং ৩য় পয়সা যথাক্রমে প্রেম আর বিয়ের জন্য। প্রায় চারশ বছরের পুরানো এই ফাউন্টেনে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ইউরো জমা হয়।”
খুশবু হাসে।কি অদ্ভুত বিশ্বাস এই শহরের মানুষদের।আরশাদের হাত থেকে পয়সা নিয়ে ফোয়ারার স্বচ্ছ জলে ফেললো খুশবু।মুহূর্তে তার মাঝে একট চিলতে হাসি দেখা যায়।
ভিড়ের মাঝে দেখা মিলে এক দম্পত্তি গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে।কিছুটা দূরে আরেক দম্পত্তি নিজেদের ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে জানান দিচ্ছে ভালোবাসার।আরশাদ খুশবুকে টিপ্পনী দিয়ে বলে,
” চলো ওদের ফলো করি।”
” ছিহ আরশাদ।সবার সামনে এসব করা…”
” এরা আমেরিকান দম্পত্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।এই রাতের শহরটায় কিছু অলিতে গলিতে আরো রহস্যময়।যদি বেপরোয়া হতে চাও তবে চলো আমার সাথে।”
” কোথায়?”
” নাইট ক্লাব।”
.
খুশবু বারণ করলো কিন্তু আরশাদ আর সেই বারণ শুনলো না।বন্ধুদের সাথে সে অনেকবার নাইট ক্লাবে এসেছে হালকা নেশা করেছে কিন্তু কোন মেয়ে নিয়ে তার নাইট ক্লাবে আসা হয়নি।আর দু’একজন বন্ধু গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসে সারারাত মাস্তি করেছে নেশার কবলে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।আরশাদ কখনোই এসবে নাক গলায়নি।যার যার যেমন লাইফ স্টাইল।
তবে ক্লাবে থাকা আবেদনময়ী মেয়েদের দেখে তার পুরুষত্ব যে ছলকে উঠেনি তা কিন্তু নয়।তবুও আরশাদ নিয়ন্ত্রণে ছিল।ডিলান আর আরশাদ এসবে নিজেদের খুব কম জড়িয়েছে।রাত যত গভীর হলো শহরটার ততটাই রহস্যময় হয়ে উঠছিল খুশবুর কাছে।নাইট ক্লাবে পৌঁছে আরশাদ খুশবুর হাত ধরে রাখে।চারিদিকে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরাহিত মেয়েদের হিড়িক পড়েছে।খুশবু আড় চোখে তাকিয়ে নজর ঘুরায়।সবার মাঝে সে একাই অন্যরকম।কড়া সিকিউরিটি পেরিয়ে আরশাদ এবং খুশবু নাইট ক্লাবে প্রবেশ করে।উচ্চ স্বরে গানের শব্দে মাথা ধরে এলো খুশবুর।চারিদিকে মেয়েদের লাস্যময়ী রূপে কোন ছেলে পারবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে?
” হানি কেমন লাগছে?”
” ভীষণ বাজে।”
” তোমার লাইফে নতুন এক্সপেরিমেন্ট।”
” আমার আব্বু জানলে আমাকে এক্ষুনি আদেশ করবে, এই আরশাদ ফারশাদ ব্যাটাকে ছেড়ে চলে আয়।”
“এত সহজ নয় হানি।তুমি আমার।”
“আব্বু জানলে কি যে বলবে এসব তারা মোটেও পছন্দ করবে না।”
আরশাদ হাসে।খুশবুর হাত ধরে নিয়ে যায় ভিড়ের মাঝে।ছেলে মেয়েদের বেহায়াপনা নাচানাচিতে গা গুলিয়ে উঠলো তার।আরশাদ তাকে নিয়ে যায় বার সেকশনে।এলকোহলহীন একটি জুস নিয়ে ফ্লুজিকে খেতে বলে কিন্তু তৎক্ষনাৎ বারণ করে মেয়েটা।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি ইতালিয়ান মেয়ে আরশাদের হাতে হাত রাখে আরশাদ কৌশলে সেই হাত সরিয়ে দেয়।মেয়েটা ইতালিয়ান ভাষায় কিছু জিজ্ঞেস করে এবং আরশাদ সেসব উত্তর দিয়ে সরে আসে।
আরশাদ এবং ফ্লুজি অন্য পাশে যেতে দেখতে পেলো ছেলে মেয়েদের রোমান্স।কারো কোন বাঁধা নেই সবাই সামনা সামনি গভীর চুম্বনে মশগুল।খুশবু অবাক হয় আরশাদ খুশবুকে ইশারা করে বলে,
” চলবে?”
” না।”
” কোন না নয় জান।চলবে।”
” নো।
” ইয়েস।”
আরশাদ এগিয়ে আসে তার ফ্লুজির চুল খামছে আবেশে দু’টো ঠোঁট মেলায়।সময় যত বাড়তে থাকে দু’জন তত লাগামহীন হয়ে যায়।ফ্লুজি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে
আরশাদ নিজেকে বশে এনে ফ্লুজিকে বুকে জড়ায়।বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে নাইট ক্লাব থেকে বের হতে দ্রুত হাটতে হাটতে বলে,
একটি সুন্দর দিন সুন্দর সকাল শুরু হলো আরশাদের জন্য।তার মনটা আজ ভীষণ খুশি।ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতের দিকে মূঢ় হয়ে রইল কিছুক্ষণ।খুশবুর সাথে রাতে তার কথা হয়নি এই মুহুর্তে কথা বলার ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে।মেয়েটাকে তিন চারবার ফোন করা হলেও মেয়েটা ফোন রিসিভ করেনি।নিশ্চয়ই ঘুমের সাগরে হুটোপুটি খাচ্ছে।আরশাদ দ্রুত মেসেজ টাইপ করলো,
‘ঘুমিয়ে নাও এটাই তো শেষ একা ঘুমানোর রাত।এরপর না তুমি ঘুমাবে না আমি।’
আরশাদ ফোন রেখে চলে গেল ওয়াশরুমের, আজকে হলুদের অনুষ্ঠান সব কাজ সেরে জলদি জলদি তাকে তৈরি হতে হবে।
.
খুশবুদের বাসাটা আজ আত্মীয়দের উপস্থিতিতে রমরমা।মামা-মামি,ফুফা-ফুফু,চাচা-চাচি সবাই আজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত।সবার ঘরে ছেলে মেয়ে আছে তারা হলুদ নিয়ে প্রচন্ড এক্সাইটেড।দুপুরের খাড়া রোদটা নামতে সবাই কাজে লেগে পড়ে।খুশবুর পরনে সবুজ পাড়ের হলুদ শাড়ি।মুখে তেমন কোন প্রসাধনী নেই ঠোঁট লাল করে লিপস্টিক দিয়ে নিজেকে সাজিয়েছে আজ।হাতে বাহুতে গলায় মাথায় সবটাই কাঁচা ফুল।গোলাপ গাঁদা মিলিয়ে মেয়েটাকে আজ ফুলপরী সাজানো হয়েছে।বাড়ির ছাদে ফুল কলাপাতা দিয়ে ছোট খাটো স্টেজ সাজানো হয়েছে।
” এত কম সাজলে কেন?একটু হাইলাইট লাগাও সুন্দর লাগবে।”
আফরোজ আর বাক্যব্যয় করলেন না।
নিজেই ঠিক করলেন খুশবুর সাজ।রোদটা একটু নেমে আসতে তারা চলে যায় ছাদে।আরশাদ এবং খুশবু দুজনে একসাথে বসেছে।আরশাদের এক্সাইটেড মুখখানি দেখে খুশবু নজর ফেরালো।
” দেখলে আমার চয়েজ শাড়িটায় কি সুন্দর লাগছে তোমাকে।শাড়িটা কিনে ভালোই করেছি।”
খুশবু প্রত্যুত্তর করার আগে ইমরান ইহসান বসলেন তাদের সামনে।হাত ভরতি হলুদ নিয়ে মাখলেন আরশাদ এবং খুশবুর গালে।একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়ালো তাদের।আরশাদের কাছে এই নিয়মরীতি গুলো নতুন।এর আগে বাঙালি বিয়ে দেখেনি সে।তবে খ্রিস্টানদের বিয়েতে তার থাকা হয়েছে।গির্জায় গিয়ে সাদা ড্রেস পড়ে বিয়ে করা তাদের রীতি অপরদিকে বাঙালিরা বিয়ে করছে নানান সাজে, নানান রঙে ঢঙে।
আরশাদের খুশি আর ধরে না।এই খুশিতে চুমু খেলে মন্দ হয় না।কিন্তু তার আশা যে পূরণ হওয়ার নয় আশেপাশে সবাই সিসি ক্যামেরার মতো লেগে আছে।
গায়ে হলুদ শেষ হতে সবাই মেতেছে রং খেয়াল।যে যাকে পারছে ইচ্ছে মতো রাঙিয়ে তুলছে।গুরুগম্ভীর বাহারুল হককেও আজ ছাড় দেওয়া হয়নি আরিব ধরে এনে তাকে রঙ মেখেছে।ছাদে সাউন্ড বক্সে জোরে গান চলছে সেই গানের তালে রঙ খেলায় মেতেছে সবাই।আরশাদ সবার ভিড় পরোয়া করে খুশবুকে টেনে নিয়ে যায় আড়ালে।চিলেকোঠার ঘরটাতে সমস্ত পুরোনো মাল দিয়ে ভর্তি।আরশাদ চিলেকোঠার দেয়ালে ঠেসে খুশবুকে জড়িয়ে ধরে আচমকাই ঠোঁটে ঠোঁট মেশালো।যদিও এর অবস্থান দীর্ঘক্ষণ নয়।
আরশাদ মুখ সরাতে নজর গেল চিলেকোঠার পেছনে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে খুশবুর ফুফাতো ভাই রিমন।ছেলেটা হা হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে
তার মানে এতক্ষণ কিসিং সিন সে দেখে ফেলেছে?সর্বনাশ!
আরশাদ থতমত খেয়ে গেল।রিমনের দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলে,
খুশবু রিমনকে দেখে থতমত খেয়ে গেল।এভাবে লজ্জায় পড়বে সে কখনো ভাবেনি।আরশাদের কি উচিত ছিল এই মুহূর্তে এসব করা!মেয়েটা ঘোমটা টেনে এক ছুটে পালালো।আরশাদ ঠোঁট কামড়ে তাকালো রিমনের দিকে।দু’দাঁতের পাটি পিষে বলে,
” অন্যের প্রেমে বাঁধা দিচ্ছো তো,তোমার কপালে বউ হবে না।”
.
বাড়ির মুরব্বিরা ছাদ থেকে চলে গেল।এখন শুধু ছাদে আছে ছেলে মেয়েরা।গানের তালে তালে কেউ নাচতে ব্যস্ত কেউ রঙ পানিতে মিশিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার গায়ে।এই রমরমা মুহূর্তটা বন্ধুদের কাছে সেয়ার না করলে নয়।আরশাদের ভীষণ আফসোস বন্ধুরা তার বিয়েতে উপস্থিত নেই।
আরশাদ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভিডিও কল দিল।তার বন্ধুরা তখন একসাথে আড্ডা দিচ্ছিলো সবাইকে পেয়ে গেল একদলে।আরশাদ সবাইকে দেখে একচিলতে হাসলো।ফোনের অপরপাশ থেকে বন্ধুর দল ডিলান,অ্যাডেন,কডি, এলোন সবাই চিৎকার দিয়ে উঠে।আরশাদের রঙ মাখামাখি অবস্থাটা দেখে তারা বুঝতেই পারছে কতটা আনন্দ করছে আরশাদ।
” আরশাদ তোমাকে চেনাই যাচ্ছে না।হোয়াট এ লুক।”
” এত আনন্দের মাঝে তোমাদের মিস করছি।লাভ ইউ অল।”
ডিলান বলে,
” মিস ইউ আরশাদ।আমাদের আফসোস তো বেড়ে গেল।কেন যে যেতে পারলাম না।”
সবাই সহমত জানালো।আরশাদ ফোন হাতে নিয়ে খুঁজলো তার ফ্লুজিকে।মেয়েটা তখন নিচে চলে যায় আর ফিরে আসেনি।আরশাদ ডেকে পাঠালো তাকে।মেয়েটা পুনরায় ছাদে এলো তবে তার মুখে এখন রঙ হলুদ কিছুই নেই নিচে নেমেই মুখ পরিষ্কার করেছে সে।
আরশাদ খুশবুকে ইশারা করলো,লজ্জা দ্বিধা নিয়ে ক্যামেরার সামনে আসে সে।খুশবুকে দেখে বন্ধুদের দলে হইহুল্লোড় বাড়লো।সবাই ইতালিয়ান ভাষায় তাদের উৎসাহ জানালো,এটা ওটা কত কি বললো কিন্তু খুশবু এসব কিছুই বুঝতে পারেনি।সে তো ইতালিয়ান ভাষা বুঝে না।অথচ আরশাদ কিছুক্ষণ পর পর তাদের চোখ পাকাচ্ছে।খুশবু শুধু হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে।
সবার হইহুল্লোড়ের মাঝে এলোনের কাজিন জন ফোনে চোখ রাখলো।সে এতক্ষণ গেমস খেলছিল কাকে নিয়ে এত মাতামাতি দেখতে ফোনে চোখ রাখে সে।খুশবুকে দেখা মাত্র ছেলেটার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়।এই মেয়েকে সে চেনে,না না শুধুই চেনে না, মেয়েটার শরীরের প্রতিটা ভাজে ভাজে নিজেকে ডুবিয়েছে জন।
জন এলোনের হাত টেনে বলে,
” হু ইজ শী?”
” আরশাদ’স ওয়াইফ।”
” হোয়াট!”
জন পুনরায় ফোনে চোখ রাখলো ঢোক গিলে এলোনের হাত টেনে সরিয়ে আনলো আড়ালে।ইতালিয়ান ভাষায় সে বলে,
” আরশাদের মতো একটা ছেলে এই মেয়েকে বিয়ে করছে!এর সাথেই কি তার প্রেম?তোমরা আগে দেখনি এই মেয়েকে?”
” কখনো না।সে সর্বদা তার ফ্লুজিকে আড়াল করেছে।আজ প্রথম দেখলাম তাকে,তবে মেয়েটাকে কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে।”
” বোকা ছেলে চিনতে পারোনি?”
” না।”
জন ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।হাতের ফোন নিয়ে চলে গেল গ্যালারিতে।একটি ছবি বের করে দেখালো এলোনকে।এলোন হতভম্ব,তার শ্বাস প্রশ্বাসের আন্দোলন ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।মুখ থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে এলো,
” হোয়াট দ্যা..”
” শী ইজ কল গার্ল।প্রতি রাতে তার চার্জ কতো সেটা আশা করি বলতে হবে না।অনেক আগেই তোমাকে এই মেয়ের ছবি সহ সব বলেছিলাম।”
এলোন যেন কথা বলতে ভুলে গেল।মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো চেয়ারে।এলোনের অবস্থা দেখে বাকি বন্ধুরা এসে তার সামনে দাঁড়ালো এবং জানতে চাইলো হঠাৎ তার কি হয়েছে?জন সবার উদ্দেশ্যে বলে,
” আরশাদের ফ্লুজিকে আগে কেউ কোথাও দেখেছো?”
ডিলান বলে,
” না কেন?”
” শী ইজ কল গার্ল।”
” ভাইয়া এসব বলবেন না প্লিজ আরশাদ জানলে সমস্যা হবে।শুধু শুধু একজনের নামে এতবড় কথা তোলা কি ঠিক?ফ্লুজি যথেষ্ট ভালো মেয়ে।”
” ভালো!ভালো?এটা কি তবে?”
জন তার ফোন সবার সামনে ধরলো।মুহূর্তে সবার ভাব ভঙ্গিমা পালটে গেল।জনের বুকে শুয়ে থাকা লাস্যময়ী মেয়েটি দেখতে হুবহু ফ্লুজির মতো।মেয়েটির শরীরে কোন পোষাকের চিহ্ন নেই।জনের বুকের সাথে ঢেকে আছে তার বক্ষের ভাজ।সবাই চোখ ঘুরালো এবং চোখাচোখি করলো।জন সবাইকে সারপ্রাইজ দিয়ে যেন মজাই পেল।
” আমি আমার সাথের কয়েকজন সিনিয়র মিলে বিডিতে গিয়েছিলাম সেখানে এই মেয়েটাকে একেক জন একেক রাতের জন্য নিয়েছিল।তার চার্জ জান?ডিমান্ড আছে।”
অ্যাডনের শরীর কাঁপে।তার কাছে এসব ডালভাত সে নিজেও লিভ ইনে আছে কিন্তু…কিন্তু আরশাদের মতো একটি ছেলের ভাগ্যে এমন মেয়ে কিছুতেই মানতে পারছে না তারা।সে বলে,
” আরশাদকে জানানো উচিত এমন একটা মেয়েকে সে কি করে মেনে নিল।”
ডিলান বাঁধা দিয়ে বলে,
” কোন দরকার নেই।মনে আছে ফ্লুজিকে ছাড়তে বলায় কডিকে মে রে হসপিটাল নিয়েছে।এখন যদি আমরা এসব বলি তাহলে আমাদের খু ন করে ফেলবে।”
কডি সহমত জানায়।আরশাদ যখন ফ্লুজির জন্য পা গ ল প্রায় তখন সে বলেছিল ফ্লুজিকে ছাড়তে।সঙ্গে সঙ্গে কডিকে মে রে রক্তাক্ত করে আরশাদ।সেই দিনের কথা ভাবলে এখনো তার গা শিউরে উঠে।
অপরদিকে অ্যাডেন তাদের ঘোর বিরোধী,
” প্লিজ যা হবার আগে হয়েছে আরশাদকে জানানো উচিত।”
জন কিঞ্চিৎ হেসে বলে,
” শুনো যে যার মতো চুপ থাকো।অন্ধ ভালোবাসা কতটা ভয়ংকর সে এবার টের পাবে।
.
খুশবুকে যখন শ্বশুর বাড়ি পাঠানো হয় মেয়ের শোকে চেতনা হারান অনিমা।অপরদিকে খুশবুর অবস্থা আরো করুন।আরশাদের বাড়িতে আসার পর থেকে তার হুশ জ্ঞান নেই।ডাক্তার দেখানো হয়েছে সুস্থ হতে না হতে রিসিপশন অনুষ্ঠানের দিন চলে আসে।রিসিপশনের পরের দিন সকাল সকাল খুশবুর ফ্লাইট।সে রাতটা খুশবু বাবা মায়ের কাছেই থেকেছে।
আজ সকালে তার বাংলাদেশ ছাড়ার দিন।এয়ারপোর্টে এসে ঝাপসা চোখে অনিমার দিকে তাকিয়ে আছে সে।বাহারুল হক মেয়েকে বুকে জড়ান কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি নিজেও।
ইমরান ইহসান তৎক্ষনাৎ সান্ত্বনার বানী ছুড়েন,
” মেয়েকে কি আমরা ফেলে দিব?নাকি অযত্ন করবো?কাঁদছেন কেন?মন ভরে তাদের জন্য দুআ করুন।”
আরিব ব্যাগপত্র হাতে তাড়া দিল এক্ষুনি তাদের যেতে হবে।খুশবুর ডান হাতটা ধরলো আরশাদ অপরদিকে বাম হাত জড়িয়ে আছে অনিমা।মায়ের সুতো ছিড়ে কিছুতেই যেতে মন চাইছে না তার।তবুও যেতে হলো। সবাইকে বিদায় জানিয়ে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করলো তারা।
সব ফর্মালিটি শেষে প্লেনে চড়ে বসলো দুজনে।তাদের পাশাপাশি সিট হওয়ায় আরশাদ তার ফ্লুজিকে এটা ওটা বুঝিয়ে দিচ্ছে।ছেলেটার কথার ভঙ্গিমায় বোঝা যায় সে আজ কতটা খুশি কিন্তু খুশবু?সে তো এখনো পিছুটানে জড়িয়ে আছে।আরশাদ খুশবুর হাতের পৃষ্ঠে চুমু খায়।খুশবুকে করে বসে এক সরল প্রশ্ন,
” এত শত ভীড়ে আমার উদ্দীপ্ত চাহনি কেন তোমার দিকে যায়,বলতে পারো?”
চলবে….
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৬ বাকি অংশ]
আরশাদ যতটা না ভেবেছিল তার থেকেও বেশি কিছু হয়ে গেল।টানা চৌদ্দ ঘন্টা জার্নি শেষে খুশবুর অবস্থা প্রচন্ড খারাপ।কিয়ৎক্ষণ বাদে বাদে উগড়ে দিচ্ছে পেটের সব।দাঁত খিচে বসে থেকে যাও নিস্তার পেল কিন্তু মাথা ব্যথা আচমকা প্রচন্ড বড় আকারে বাড়লো।এতটাই মাথা ব্যথা যে মেয়েটা চোখ খুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।চোখে আলো এসে ছিটকে পড়লে কষ্ট দ্বিগুন হয়।তাই চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্থির রাখতে চাইছে।খুশবুর অবস্থা দেখে সবার মাঝে চলছে অস্থির দুশ্চিন্তার আনাগোনা।ইতালিতে মেয়েটার প্রথম দিন তারা ভেবেছিল কত কি করে তাকে সারপ্রাইজ দেবে অথচ হলো তার উলটো।
রোমের লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ফিউমিচিনো বিমানবন্দর এফসিও পৌঁছে সকল ফর্মালিটি শেষে আরিব দ্রুত গাড়ি ঠিক করে।খুশবু ভেবেছিল কত কি, এই দেশে পা রেখে সবটা দেখবে এয়ার্পোট থেকে শুরু হবে তার জীবনে অন্যরকম যাত্রা।কিন্তু মেয়েটা এই সুন্দর শহরটাকে পূর্ণ দৃষ্টি রেখে দেখতে পারছে না।
গাড়ি থেকে নেমে খুশবু আরশাদের হাত জড়িয়ে রাখলো।ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে চললো সে।আরশাদ তাকে নির্দেশ দিচ্ছে কোথায় কোথায় পা ফেলতে হবে।মেয়েটা একটুও চোখ খুলতে চাইছে না।এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে তার মুক্তি চাই মুক্তি।
খুশবু ভিলায় প্রবেশ করতে নাকে এসে ধাক্কা লাগে মিষ্টি সুভাস।হঠাৎ তার গায়ে কিছু ছিটানো হয় পিটপিট চোখ খুলতে সে দেখতে পায় ছিমছাম গড়নের একটি মেয়ে।মেয়েটির বাদামী চুল হেলেদুলে খুশবুর দিকে তাকিয়ে হাসছে আর গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছে খুশবুর দিকে।পাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন বৃদ্ধা।কিন্তু তাকে বৃদ্ধা বললেও খুশবুর মুখে লাগবে এই বয়সে তিনি যতটা ইয়াং তা ভীষণ অবাক করা তার কাছে।
এলিনা জড়িয়ে ধরলো খুশবুকে হাতে দিয়ে দিল একটি ফুলের তোড়া ইতালিয়ান ভাষায় কত কি বললো তাকে কিন্তু খুশবু এসব কথার কিছুই বুঝতে পারে না।আরশাদ খুশবুকে নির্দেশ দেয় গ্র্যানিকে সালাম জানাতে খুশবু সালাম জানায়।গ্র্যানি আদুরে হাতে খুশবুকে জড়িয়ে ধরেন।খুশবুর গালের সহিত তার গাল মেশায়।গ্লোরিয়াকে না দেখে আরশাদ বলে,
” ফুফু কোথায়?”
এলিনা তার হাসি ধরে রেখে বলে,
” তোমার রেস্টুরেন্টে গেছে কিছু বাঙালি খাবার আনা হবে।ওসব তো মম রান্না করতে পারে না।”
আরশাদ আর দেরি করে না সবাইকে বোঝায় খুশবু অসুস্থ।ইমরান ইহসান আরশাদকে টিপ্পনী কেটে বলেন,
” তুমি কি তোমার গুহায় নিয়ে যাবে তাকে?আজকের দিনটায় এখানে থাকুক।”
” বাঘ গুহায় থাকলে বাঘিনী বাইরে থাকবে কেন?”
আরিব শব্দ করে হেসে ফেললো।আরশাদ তাকে নির্দেশ দেয় তাদের ব্যাকপ্যাক যেন ভিলায় রেখে আসে।আরিব দ্রুত ব্যাগপ্যাক নিয়ে আরশাদের ভিলায় যায় নিচ তলায় সব রেখে এসে সে পুনরায় ফিরে আসে।আরশাদ তার ফ্লুজির হাত ধরে ভিলার দিকে নিয়ে যায়।একটি সিড়ির সাহায্যে খুশবুকে ধরে আরশাদ নিচে নামাতে গেলে মেয়েটার দু’চরণ থেমে যায়।সে তো দোতলায় নয় এটাই তো নিচ তলা।তাহলে আরশাদ তাকে আরো নিচে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?এটা তো পাতালঘর মনে হচ্ছে।
” ভয় পেও না আমি আছি তো।লাইট অন করলে তোমার চোখে লাগবে এভাবেই চলো।”
খুশবুর ভয় বাড়লো।আরশাদের হাত আঁকড়ে ধরলো সে।এই অচেনা জায়গায় আরশাদ তার একমাত্র ভরসা কিন্তু আরিব যে একদিন বলেছে আরশাদ তাকে খু ন করতে চায় আরশাদ যদি ছলনা করে?নাকি ছলনা করছে?খুশবুর মাথায় এসব চিন্তা এলেও সে সবটাই সরিয়ে ফেলে।
সন্দেহ একটা সম্পর্কের বিষ। সে চায় না সন্দেহ করতে আরশাদ কখনোই তার ক্ষতি করবে না।
খুশবু যেন গহীন গহ্ববরে হারিয়ে গেল।অন্ধকারে খামচে ধরলো আরশাদের হাত।সেই অন্ধকারের মাঝে আরশাদ শিষ বাজালো।গুনগুন করে গাইতে থাকলো গান,Georgia wrap me up in all your
I want ya’, In my arms
Oh, let me hold ya’
I’ll never let you go again, like I did
Oh I used to say
“I would never fall in love again until I found her”
I said, “I would never fall unless it’s you I fall into”
I was lost within the darkness, but then I found her
I found you….
“আরশাদ প্লিজ থামুন।”
আরশাদ থেমে গেল।অন্ধকারে আরশাদের গানের সুর তার গায়ে কাটা দিচ্ছে।
” কি হয়েছে ফ্লুজি?”
” আমার বিশ্রামের প্রয়োজন।”
আরশাদ তার গতিবিধি বদলালো না।ফ্লুজিকে ধরে সে হাটলো আগের মতোই।আরশাদ তার ভিলার স্টোর রুমের দরজা খুলতে অন্ধকার চিরে দেখা মিললো আলোর।খুশবু স্বস্তি পেল।ছিমছাম সাজানো ভিলার নিচের তলাটা।কিচেন রুমটা বেশ বড়।দেয়ালের পাশ ঘেষে গেছে দোতলার সিড়ি।আরশাদ খুশবুর হাত ধরে সিড়ির কাছটায় যায় এবং খুশবুকে কোলে তুলে নেয়।আরশাদের এহেন আচরণে চমকে গেল খুশবু।নিজেকে সামলাতে জড়িয়ে ধরলো আরশাদের গলা।
” আরশাদ নামান আমি পড়ে যাব।”
” আমার উপর ভরসা নেই?”
” আপনি নামান আমি যেতে পারবো।”
” উহ পারবে না।”
আরশাদ নিজের চাওয়া বজায় রাখলো।ফ্লুজির ছোট্ট দেহখানী গুটিয়ে গেল আরশাদের মাঝে।আরশাদের বলিষ্ঠ হাতের বন্ধনীতে মেয়েটাকে শক্তপোক্ত করেই ধরে রেখেছে।যেন নেকড়ে তার শিকারকে নিজের কাছে বেঁধে রেখেছে একটু ছাড়া পেলেই পালিয়ে যাবে।
আরশাদ খুশবুকে না নামিয়ে সিড়ি বেয়ে চলে গেল নিজের রুমে।বিশাল রুমটা বেশ সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো।হাতের বাঁধন আলগা করে বিছানায় ফ্লুজিকে শুইয়ে দিল আরশাদ।
” আমি লাইট অফ করে দিচ্ছি তুমি রেস্ট করো।না খেয়ে ঘুমাবে না।”
” না না আমার ভয় লাগবে।লাইট থাক আমি চোখ ঢেকে রাখব।”
আরশাদ চলে গেল নিচে।দুটো ট্রলি নিয়ে নিজের রুমে রেখে চলে গেল ফ্লুজির জন্য খাবার আনতে।তার বাসায় কোন খাবার নেই যাওয়ার আগে সব পরিষ্কার করে তবেই গিয়েছিল।
খুশবু ঘুমানোর আগে বাবা মায়ের সাথে কথা সেরে নিল।তারপর তলিয়ে গেল রাজ্যের ঘুমে।আরশাদ আজ তাকে বিরক্ত করলো না।দুটো ট্রলি থেকে সব জামা কাপড় গুছিয়ে রাখলো নিজের আলমারিতে।
খুশবুর জন্য ছেড়ে দিল তার আলমারির একাংশ।খুশবুর প্রতিটা জামা শাড়ি সে যখন গুছিয়ে রাখছিল মনের কোণে কোথাও যেন প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।বিছানায় শুয়ে থাকা সফেদ ব্লাঙ্কেট জড়ানো ফ্লুজিকে দেখে আরশাদ তৃপ্তি নিয়ে হাসলো।এই তো নিজের কথা নিজে রেখেছে,এই তো তার আরেকটি চাওয়া পূরণ হয়েছে।
কাজ শেষে আরশাদ খুশবুর পাশে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।এই রাতে মেয়েটাকে জ্বালাতে একটুও মন সায় দিল না তার।
.
আচমকা খুশবুর ঘুমটা ভেঙে গেল। অন্ধকার রুমজুড়ে আরশাদের অস্তিত্ব খুঁজে পেল না সে।রুমে বাতি নেই জানলার কাছে বড় বড় পর্দা টেনে দেওয়া যার দরুনে সারাটা রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার অচেনা স্থানে খুশবুর ভয় বাড়লো।একটা জায়গায় থাকতে থাকতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায় কিন্তু নতুন স্থান নতুন পরিবেশে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
হাতড়ে হাতড়ে আরশাদকে বিছানায় খুঁজলো খুশবু কিন্তু বিছানায় যে ছেলেটার অস্তিত্ব নেই খুব সহজে বুঝতে পারলো সে।হাতড়ে হাতড়ে ফোন খুঁজতে গিয়েও নিজের ফোনটা পেল না।বেডের পাশে থাকা টেবিলে হাত রাখলো পুনরায় খুঁজলে ফোন পাওয়া তো দূরের কথা উল্টো তার হাতের ধাক্কায় ল্যাম্পটা ছিটকে পড়লো মেঝেতে তৎক্ষনাৎ ঝনঝন শব্দে খুশবু ভয় পেল।নিজেকে আর সাহস দিতে না পেরে শব্দ করে কেঁদে ফেললো সে।ঝনঝন শব্দে আরশাদ ছুটে এলো দরজা খুলতে দেখতে পেল খুশবু মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।
দ্রুত রুমের বাতি জ্বালিয়ে বিছানায় বসলো আরশাদ।
” ফ্লুজি কি হয়েছে?কাঁদছো কেন?”
আরশাদকে পেয়ে খুশবুর সাহস বাড়লো দ্রুত হাতে জড়িয়ে ধরলো আরশাদকে,
” তোমার চোখে আলো এলে ঘুম ভেঙে যাবে জান তাই তো অন্ধকার করলাম।ভয় পায় না আমি আছিতো।”
খুশবু স্থির হলো।আরশাদ উঠে গিয়ে অন্ধকার রুমটায় আলো ফিরিয়ে আনলো।বড় বড় পর্দা সরিয়ে খুলে দিল বড় জানলা।তার জানলা থেকে বাইরের এই দৃশ্যটা ভীষণ সুন্দর।আরশাদ হাত ইশারায় ডাকলো তার ফ্লুজিকে।জানলার কাছে দাঁড়াতে হীম হয়ে এলো দুজনের শরীর।খুশবু যখন আবেশিত নয়নে তাকিয়ে দেখছে বাইরের দৃশ্য আরশাদ তখন তার পেছনে দাঁড়িয়ে।
” সুন্দর না?”
” হুম।অন্যরকম সুন্দর।”
আরশাদ হাত বাড়ালো খুশবুর উদরে, থুতনি রাখলো মেয়েটার কাঁধে।
” এখন কয়টা বাজে আরশাদ?”
” সকাল এগারোটা জান।”
আরশাদ তাকে কোলে তুলে নিল ওয়াশরুমে গিয়ে দাঁড় করালো ফ্লুজিকে।দ্রুত হাতে ঝরনার নব ঘুরাতে ভিজে গেল মেয়েটার সমস্ত দেহ।খুশবু অবাক হলো চোখ বড় করে আরশাদের দিকে তাকাতে ছেলেটা কিঞ্চিৎ হাসলো,
” ড্রেস রেডি রেখেছি দ্রুত শাওয়ার শেষ করে বেরিয়ে এসো একসাথে নাস্তা করবো।বাই দা ওয়ে আমি কি জয়েন করতে পারি?”
আরশাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত দরজা বন্ধ করলো খুশবু।মেয়েটার কান্ডে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল আরশাদ।
.
ব্রেকফাস্ট আরশাদ আর খুশবু তাদের নিজের ভিলায় করছে।আরশাদের হাতে বানানো স্যান্ডউইচ এবং গরম গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছে খুশবু এর মাঝে আরশাদ বলে,
“আগামীকাল ডিনার’টা আমার বন্ধুদের সাথে করবো ঠিক আছে?তারা তোমাকে নিয়ে ভীষণ এক্সাইটেড।”
” সবাইকি ছেলে আরশাদ?”
” হুম।”
” তাহলে আমি যাব না।”
” কিন্তু কেন?”
” সব ছেলের মাঝে আমার ইরেটেটিং ফিল হবে।প্লিজ আমাকে জোরাজোরি করবেন না।”
” তাদের গার্লফ্রেন্ডরাও আসবে প্রবলেম হবে না।”
” তারা তো বাঙালি নয়।যেকোন পরিস্থিতিতে আমার নিজেকে মানাতে সময় লাগে প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।”
খুশবু ভ্রু কুচকালো।আরশাদ তার চেয়ার টেনে আরো কাছে আনলো।খুশবুর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা নসিলা আরশাদ নিজের ঠোঁটের দখলে নিল।স্তব্ধ পরিবেশটাকে আরো স্তব্ধ করে দিল দুজনে। সারাটা ঘরে কোন কথার শব্দ নেই শুধু পাওয়া যাচ্ছে দুটি মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ।খুশবুর দূর্বল শরীরটা আরশাদের দখলে যাওয়ার আগে আরশাদের বুকে হাত রেখে মৃদু ধাক্কায় সরিয়ে দেয় খুশবু।
” আমাদের গ্র্যানির কাছে যাওয়া উচিত আরশাদ।তারা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে।”
বাহাররুল হক ডাইনিং স্পেচে আসতেই চমকে গেলেন।আরশাদ একটি চেয়ার দখল করে বসে আছে।তার পাশে দাঁড়িয়ে খুশবু।বাহারুল হকের হতবাক চাহনি দেখে আরশাদ ঠোঁট কুচকে হাসলো।
” আসসালামু আলাইকুম আব্বু ভালো আছেন?”
সালামের জবাব নেওয়ার কথাও যেন ভুলে গেলেন বাহারুল হক।মেয়ের দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে তিনি বলেন,
” তুমি!”
” আজ সকালেই এলাম।”
বাহারুল হক ছুটে গেলেন রান্না ঘরে অনিমাকে ধমক দিয়ে বলেন,
” জামাই এসেছে এই কথা আমাকে জানাওনি কেন?”
” জানালে কি করতেন?নিশ্চয়ই ঝামেলা করতেন তাই তো জানাইনি।”
” দিন দিন কি বিবেক বুদ্ধি লোভ পেয়েছে?ঘরে বাজার সদাই আছে?কি রেঁধেছো?বাড়ির জামাই যা তা দিয়ে আপ্যায়ন করা সাজে না।”
” অনুমতি দেওয়ার কী আছে?যখন ইচ্ছে আসবেন তারা এখন আমাদের আত্নীয়।”
” বাবা মা এলে ফাইনাল কথা সারতে চান।অনুষ্ঠানের ব্যপারে তারা আগ্রহী।ড্যাড যেহেতু জব করছেন তার বেশিদিন ছুটি নেই।”
বুকের ভেতরটা কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে নরম হৃদয়টাতে আঘাত করল।কলিজা মুচড়ে গেল বাহারুল হকের।একটাই মেয়ে তার একটাই সুখ আহ্লাদ,আনন্দ জল্পনা কল্পনা।সেই মেয়েকে এত দূরে কিভাবে বিদায় দেবেন তিনি!
মন খারাপকে সঙ্গী না করে বাহারুল হক চট করে বললেন,
” আগামীকাল দুপুরে তোমার পরিবারের দাওয়াত রইল।আমি নিজে ফোন করে বলবো নাম্বার দিও আমাকে।”
” অবশ্যই আব্বু।”
খুশবু তার বাবার দিকে তাকালো।মানুষটা কেমন শান্ত হয়ে সব কথার জবাব দিচ্ছে অথচ কয়েকদিন আগেও ঘরে তান্ডব চালিয়েছেন।বাহারুল হক মেয়ের পানে তাকালেন আদেশ করে বলেন,
” তুমি বসছো না কেন?কখন খাবে।”
খুশবু বসলো তবে ভাত মুখে নিতেই চোখ মুখ কুচকে ফেললে।মেয়ের এমন রিয়েকশন বাহারুল হকের চোখ এড়ালো না।তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
” রান্না ভালো হয়নি?স্বাদ লাগছে না?”
” না না ঠিক আছে।”
খুশবু পুনরায় চোখ কুচকালো।তার ঠোঁটে যে ঘূর্নিঝড় তান্ডব চালিয়েছে সেই তান্ডবে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে ঠোঁট যুগল যার ফলে তরকারি মুখে লাগতেই জ্বলতে শুরু করে। আরশাদ বুঝতে পারে তাই তো বাম হাত কানে নিয়ে ইশারায় খুশবুকে সরি জানায়।
.
সারা বাড়ি হইচইয়ে মুখোরিত।একটি গোলাপি জামদানি শাড়ি জড়িয়ে বসে আছে খুশবু।তার পাশে বসে থাকা মানুষটি সম্পর্কের খাতিরে তার শাশুড়ী।লম্বা ফর্সা স্লিম বডির মানুষটিকে দেখে মুগ্ধ চোখে চেয়েছিল খুশবু।এতটা বয়সে এসেও এই মানুষটা যতটা ফিট স্ট্রং স্টাইলিশ এই বয়সে এসেও নিজেকে বয়স্ক ভাবেন না তিনি।কে দেখে বলবে এই নারীর এত বড় দুই ছেলে আছে।সাদা একটি শাড়ি পড়ে খোপা করেছেন তিনি।খুশবুর বিমহিত নজর দেখে হাসলেন আফরোজ।
” তুমি আমায় দেখে কি ভাবছো?জ ল্লা দ শাশুড়ী?এসব জ ল্লা দ গিরি করার সময় আমার নেই বুঝলে।আমার ছেলে তিনি তার তল্পিতল্পা নিয়ে আলাদা গুহায় থাকেন।তোমাকেও নিশ্চয়ই সেই গুহার বাসিন্দা বানাবে আমার গুহায় আসার সময় তোমার হবেও না।”
খুশবু চোখে হাসলো।তাদের কথার মাঝে এগিয়ে এলো তার শ্বশুর ইমরান ইহসান।খুশবুকে দেখেই বুকে জড়ালেন তিনি।লম্বা স্টং আরশাদের আদলে ঘেরা মুখখানি তার।সামনা সামনি এত লম্বা লম্বা মানুষের পাশে নিজেকে বিড়াল ছানা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না তার।ইমরান ইহসানের বাদামী চোখ জোড়া চকচক করছে তার খুশিতে যেন মুক্ত ঝরছে।
ইমরান ইহসানের কথা শুনে কিঞ্চিৎ হাসলো খুশবু।হাসি মুখে সব কথার জবাব দিলেও এদের মুখে বাংলা শুনতে তার মোটেও ভালো লাগে না।এরা যেন বাংলা কথার শ্রাদ্ধ করে ছাড়ে।আরশাদ এবং তার বাবা দুজনেই ভাঙা ভাঙা বাংলা বলেন অথচ আরিব ছেলেটার বাংলা বলার ধাঁচ ভিষণ সুন্দর।
আরশাদের সহিত খুশবুর এখনো দেখা হয়নি।আরিব ভাইয়ের ছটফটে ভাবটা বুঝতে পেরে তাকে খুশবুর কক্ষে নিয়ে এলো।ছেলের উপস্থিতি পেয়ে চলে গেলেন আফরোজ।আরিব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বলে,
” তোমার সুযোগ করে দিচ্ছি আর আমার বেলায় যত আদেশ উপদেশ বাধা বিপত্তি।”
” এখনো প্যান্টের চেইনটাও লাগাতে পারো না ঠিকঠাক ভাবে এই বয়সে এসেছো প্রেম করতে,হাস্যকর।”
খুশবুর সামনে ভিষণ লজ্জায় পড়লো আরশাদ।ছেলেটা আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেল রুমের বাইরে।আরশাদ দরজা হালকা লাগিয়ে বসলো খুশবুর মুখোমুখি,
” সদ্য ফোটা একটি গোলাপি লিলি আমার সামনে বসে।এই ফুটন্ত ফুলকে ছুঁইয়ে দিতেও ভয় লাগে যদি নুইয়ে যায়।”
আরশাদ কথাটি বলেই খুশবুর হাত ছুঁলো।
” না ভাইয়া গোলাপি জার্বেরা ফুলের মতো লাগছে।”
আরশাদ খুশবু দুজনেই অবাক হলো।দরজার দিকে তাকাতে দেখতে পেল আরিব দরজায় মাথা বের করে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আরশাদ উঠে দাঁড়ালো ধমক সুরে বলে,
খাবার টেবিলে সবার হই হুল্লোড় চলছে।সবচেয়ে বেশি মজার মানুষ আরশাদের বাবা ইমরান ইহসান এবং আরিব।তারা দুজন মিলে এতটাই আনন্দ করছে যে খুশবুর পরিবারের সাথে যেন আজ নয় বছরের পর বছর এদের পরিচিত।ইমরান ইহসান ছেলেকে নিয়ে ভীষণ গর্ব করে বলেন,
” আমি চাইতাম আমার ছেলেও একটা বাঙালি বউ ঘরে আনুক।বাঙালি মেয়েদের মতো এতটা সংসারি আর কেউ হয় না।এই যে আমার সহধর্মিণীকে দেখছেন ঘরে বাইরে সবটা সামলে যাচ্ছে।আমাদের বিয়ের গল্প শুনবেন?”
বাহারুল হক আগ্রহী হলেন কিঞ্চিৎ হেসে সম্মতি জানালেন শুনতে চান তিনি।ইমরান ইহসান বিয়ের গল্প শোনাতে কখনো আলসেমি করেননি।তার জীবনের বড় প্রাপ্তি এই প্রাপ্তির কথা শোনাতে কোন আলসেমি নেই।আরশাদ আরিব চুপচাপ দুইভাই চোখাচোখি করলো।জন্মের পর থেকে তারা তাদের মা বাবার সম্পর্কের রসায়ন জানতে জানতে বড় হয়েছে তাই তাদের কাছে এই গল্প মুখস্থ কণ্ঠস্থ।
আরো একধাপ অতীতে ফিরে যাওয়া যাক,বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পড়তে যাওয়া আফরোজ তখন কোন বন্ধু হয়নি।ক্যাম্পাসে বেশিরভাগ সময় সে একাই কাটিয়েছে এর মাঝে পরিচয় হয় ক্লিফটন নামের একটি ছেলের সঙ্গে।তারা ক্লাস মিট ছিল বিধায় সম্পর্ক ক্রমশ গাঢ় হয়।ক্লিফটনের বাবা মা সবার সাথেই বেশ সুসম্পর্ক ছিল আফরোজার।ক্লিফটনের বোন গ্লোরিয়া ভীষণ আদর করতো তাকে।সব মিলিয়ে ভালো চলছিল দিনকাল।ক্লিফটনের যেকোন অনুষ্ঠান আনন্দ সুখ দুঃখের ভাগিদার ছিল আফরোজা।মেয়েটাকে সে যত দেখেছে ততই অবাক হয়েছে এই মেয়েটার মাঝে রহস্য খুঁজে পায় সে।মেয়েটা কাছে থাকলে স্বস্তি লাগে অথচ দূরে গেলে হতাশায় ঘিরে ধরে তাকে।
ক্লিফটন তখনো বুঝতে পারেনা আসলেই কি সে আফরোজকে ভালোবাসে?বন্ধুত্বের বন্ধন এভাবে বছরেরপর বছর কেটে যায়।আফরোজের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে।এয়ারপোর্টে মেয়েটার হাত ধরে সেদিন প্রথম ভালোবাসার কথা জানায় ক্লিফটন কিন্তু আফরোজ কোন উত্তর জানায়নি।
সময় কেটে যায় অথচ থমকে যায় ক্লিফটনের জীবন।আফরোজকে ছাড়া তার প্রতিটা মুহূর্ত কঠিন হয়ে পড়ে।সে যেন ছিটকে যায় বাস্তবার দুনিয়া থেকে। একদিন আচমকাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে সে বাংলাদেশে যাবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাগজ পত্র তৈরি করে দেশে আসে।আফরোজের পরিবার তাকে গ্রহণ করে আদর যত্নের ত্রুটি রাখেনি কিন্তু যখনি জানতে পারে সে আফরোজকে বিয়ে করতে চায় তখনি হট্টগোল সৃষ্টি হয়।শুরু হয় তর্কাতর্কি ঝামেলা।
আফরোজের ভাই ক্লিফটনকে বের করে দেয় বাড়ি থেকে।কিন্তু আফরোজের মনে চলছিল অন্যকিছু এত বছরে তার মনেও ক্লিফটনের জন্য অনুভূতি জন্মেছে।কিন্তু বাঁধা তো একটাই ক্লিফটন খ্রিস্টান ধর্মের ছেলে।আফরোজ তাকে শর্ত জানায় যদি ক্লিফটন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তবেই বিয়ে করবে সে।আশ্চর্যের ব্যপার ভাবনা চিন্তা ছাড়াই ক্লিফটন রাজি হয়।সেদিন রাতেই ক্লিফটন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, তার নাম পালটে রাখা হয় ইমরান ইহসান।
তারপরের জীবনটা পালটে গেল দুজনের।ক্লিফটনের মা বাবা কেউ তাদের মেনে নিল না।একটা সময় ক্লিফটন এবং আফরোজের উৎসাহে তারাও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।কিন্তু ক্লিফটনের বোন গ্লোরিয়া ছিল বিবাহিত তার বিয়ে হয় অন্য আরেক খ্রিস্টান ধর্মের ছেলের সাথে।সে নিজের ধর্ম পাল্টাতে কিছুতেই রাজি নয়।
ক্লিফটনের পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ নিয়ে আত্মীয় বন্ধুবান্ধবদের মাঝে কানাঘুষা শুরু হয় চারদিকে ছড়িয়ে যায় নানান কথা।মানসিক শান্তির লোভে ক্লিফটনের বাবা আমেরিকা ছেড়ে পাড়ি জমান ইতালিতে।তারপরের জীবনটা শুরু হয় সুন্দর সুখময় স্বপ্নময় জীবন।
সেই দিনের ক্লিফটন আজ ইমরান ইহসান তার ঘরে দুই পুত্র আরশাদ ইহসান এবং ইমরান ইহসান।
আফরোজের মতো গুনবতী বুদ্ধিমতি সংসার সামলানো মেয়ে আরশাদের ভাগ্যে আছে তো?নাকি নারীর ছলনায় প্রবল ঝড়ে আচমকা ছিটকে যাবে পরিবারের সুতো।
চলবে….
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৫ বাকি অংশ]
আরশাদ এবং খুশবুর অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।হাতে সময় মাত্র দুইদিন।এই দুইদিন পর ঘরোয়া অনুষ্ঠানে খুশবুকে নেওয়া হবে শ্বশুরবাড়ি।এর একদিন পর খুশবুর রিসিপশন।উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে কারো কোন দ্বিমত না থাকলেও খুশবু জেদ ধরে বসে আছে তাদের বাড়িতে বড় কোন আয়োজন হবে না।কোন হলুদ মেহেদীর অনুষ্ঠান হবে না।মেয়েটার অহেতুক জেদের কারণ খুঁজে পাননা অনিমা।মেয়েটাকে কত করে বোঝানো হলো কিন্তু তার একটাই কথা যা হবে ঘরোয়া হবে এই বাড়িতে আর কোন বড় ধরণের অনুষ্ঠান সে চায় না।
একটা বিয়ে নিয়ে কম ধাক্কায় পড়তে হয়নি বাহারুল হককে।রোহানের সাথে যখন বিয়ের বন্দোবস্ত হলো কোন অংশে ত্রুটি রাখেননি তিনি।একমাত্র মেয়ের বিয়ে কেউ যেন কোন খুঁত ধরতে না পারে সেই জন্য সবটা নিজে সামলেছেন।কিন্তু খুঁত তো হয়েই গেল খুশবুর মিসিং ব্যপারটা এলাকায় পাড়া প্রতিবেশীতে রমরমা হয়ে ছড়িয়েছে।
এসব ভেবে খুশবু বড় কোন অনুষ্ঠান চায় না।কিন্তু আরশাদের এটাই তো প্রথম আয়োজন ছেলের বিয়েতে কোন ত্রুটি রাখতে চাননা আফরোজ এবং ইমরান।
আরশাদ অনেকবার বোঝালো খুশবুকে।অবশেষে প্রতিটা অনুষ্ঠান করতে রাজি হলো কিন্তু সে চায় ঘরোয়া ভাবে শুধু আত্মীয়রাই উপস্থিত থাকবে।আরশাদ তার ফ্লুজির কথা ফেলতে পারে না তাই সেও খুশবুকে সমর্থন জানায়।
শপিং এসে আরশাদের প্রতি ভীষণ বিরক্ত কাজ করছে খুশবুর।এই ছেলেটা শাড়ির দোকানে গিয়ে কাউকে কোন শাড়ি পছন্দ করার সুযোগ দিচ্ছে না,সে যেন একাই একশো।পছন্দ মতো শাড়ি তার ফ্লুজির গায়ে ধরছে আবার প্রশ্ন করছে, ‘এই, পছন্দ হয়েছে তোমার?’ ‘এই রঙটা কি ভালো মানাবে?’ ‘ছবিতে কোন রঙটা ভালো ফুটবে?’
হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে শাড়ি খুঁজে যাচ্ছে আরশাদ।আজকে শাড়ি কেনায় খুশবুরো পাত্তা নেই আরশার একাই একশো।ইমরান ইহসান ছেলের কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন।আফরোজ ছেলের এহেন কান্ড দেখে হতাশ।খুশবুর কপালে যে দুঃখ আছে তিনি ইতোমধ্যে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন।ইমরানের দিকে তাকিয়ে আফরোজ বলে,
অর্থাৎ আমার ছেলে।আমার ছেলে।ইমরানের হাসিতে আজ যেন মুক্ত ঝরছে।
অনিমা অবাক হলেন এই দেশের কালচারের সাথে এসব নিশ্চয়ই যায় না।কনের কেনাকাটায় বর পিছনে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।যদি প্রশ্ন করা হয় তখন মুখ থেকে যা টুশব্দ আসে এর বাইরে তো মুখে রা নেই।যদিও যুগ এখন আপডেট হয়েছে সবার মান্যতা পাল্টেছে কিন্তু তাতেও আরশাদ সবাইকে ছাড়িয়ে একধাপ এগিয়ে গেছে।
আরশার একটা শাড়ি কিনে ক্ষান্ত হয়নি।পরপর সে অনেকগুলো শাড়ি কিনেছে,পাতলা জরজেট শাড়ি দেখে মুখ কুচকে যায় খুশবুর।মায়ের দিকে তাকালো করুন দৃষ্টিতে।এসব শাড়ি সে পছন্দ করে না অনিমাও কখনো মেয়েকে এসব শাড়ি পরতে দেননি।পাতলা নেট ও জরজেটের শাড়ি বড্ড দৃষ্টিকটু ঠেকে তার কাছে।অথচ আরশার ঘুরে ফিরে এসব কেন কিনছে?খুশবু আরশাদের কাছে দাঁড়িয়ে স্বল্প স্বরে বলে,
” আমি এসব শাড়ি পড়ি না।”
” বাট হোয়াই?”
” পাতলা মানে ভালোলাগে না।”
” আমার তো লেগেছে।”
খুশবু আরশাদকে বোঝাতে পারলো না।হয়তো বুঝলেও মানতো না।মানলেও একবার পছন্দ যখন করেছে কিনেই ছাড়তো।
.
শাড়ি,জুতা কেনা শেষে সবার ঝোক গেল গহনার দিকে।সবাই গোল্ড কিনতে যাওয়ার জন্য অন্য ফ্লোরে গেল।খুশবু তাদের পেছন পেছন যাচ্ছিলো এমন সময় তাকে ফোন করে ছোট মামি নেহা।মেয়েটা কথায় মন দিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ হারিয়ে ফেললো তার দলকে।আরশাদ আরিব অনিমা কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।
খুশবু দ্রুত ফোন করলো আরশাদকে দুঃখের বিষয় ফোনে টাকা নেই যার কারণে ফোনে থাকা অপরপাশের ব্যক্তিটি তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে সুমিষ্ট স্বরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে।
এত বড় শপিংমলে সে কোথায় খুঁজবে তাদের।খুশবু গোল্ডের দোকান খুঁজতে লাগলো হঠাৎ তার পাশাপাশি কেউ সমান তালে হাটায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সে।
” খেল আমি দেখিয়েছি নাকি আপনি দেখিয়েছেন?আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছিহ!”
” বিয়ের আগে ওসব করাই যায়।এতে এত নাক কুচকানোর কি আছে?আচ্ছা আসল কথায় আসি আমি যখন বর যাত্রী সেজে তোমার বাড়ি গেলাম তখন তুমি নেই।তুমি উধাও।এবারো যদি একই ঘটনা পুনরায় ঘটে!তুমি বউ সেজে বসে রইলে তোমার বরটাই এলো না।”
বুকটা ধক করে উঠলো খুশবুর।মেয়েটা যেন শূন্যে ভাসছে এমন কথা শুনেই তো তার গায়ে কাটা দিচ্ছে।খুশবুর থমকে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে রোহান তার হাত চেপে ধরে।এতটা দুঃসাহস রোহান দেখাবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি।দ্রুত নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে সে।
” অসভ্য বেয়াদব কত্তবড় সাহস এই হাত ছাড়।”
” এই হাত আমার ধরার কথা ছিল শুধু আমার।”
” আমি মানুষ জড়ো করবো সবাইকে ডাকবো।”
” তো ডাকো।আই ডোন্ট কেয়ার।”
খুশবু কেঁদে ফেললো নিজের হাত ছাড়াতে চাইলে রোহান তাকে টেনে নিয়ে যায়।আশেপাশে সকলেই অবাক হয়ে দেখছিল তাদের কিন্তু কেউ কোন কথা বলার আগ্রহ দেখায়নি।রোহান যখন খুশবুর সাথে জোরাজোরি করছিল তখনি রোহানের গালে সশব্দে চড় পড়লো।খুশবুর হাত ছেড়ে ছিটকে দূরে সরলো সে।আরশার এক চড়ে থামলো না ক্রমশ কিল ঘুষি মারতে থাকলো রোহানকে।দাঁতের সাহায্যে ঠোঁট কেটে রোহানের রক্তাক্ত অবস্থা।খুশবু ভয় পেয়ে গেল আরশাদকে টেনে সরিয়ে আনতে সেখানে উপস্থিত হয় সিকিউরিটি গার্ড।কারো সাথে কোন কথা না বলে খুশবুকে নিয়ে সরে যায় আরশাদ।
” ও গালে দুটো চ ড় দিতে পারলে না?”
” আমি ঘাবড়ে গেছিলাম।”
” ঘাবড়ে গেছিলে?তাহলে এখন আমার গালে চড় মা রো।মা*রো মা* রো..”
আরশার খুশবুর হাত টেনে নিজের গাল চড় দিতে শুরু করে।খুশবু ভয় পেয়ে যায় হাত সরিয়ে নিতে গেলে আরশাদ বলে,
” ফ্লুজি এই ফ্লুজি হাত লাল হয়ে গেছে।খুব শক্ত করে ধরেছে তাই না?হাত দুটো ধরার অধিকার আমার তাই না?”
খুশবুকে টেনে নিয়ে গেল আরশাদ।চারদিকে ওয়াশরুম খুঁজতে খুঁজতে তার বেহাল দশা।অবশেষে পেয়েও গেল।শুরু হলো তার পাগলামো।
আরশাদ তার ফ্লুজির হাত শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যয় করে ঘষে যাচ্ছে।হ্যান্ডওয়াশের বোতলটা শেষ পর্যায়ে তবুও চেপে চেপে পরিমানের তুলনায় বেশি হ্যান্ডওয়াশ খুশবুর হাতে মাখছে আরশাদ।ছেলেটা রাগান্বিত উত্তেজিত অথচ চোখ জুড়ে বিরাজ করছে ভয়।
” আরশাদ.. ”
” চুপ!চুপ জান।কোন কথা নয়।”
আরশাদ তার কাজে আবারো মনোনিবেশ করলো।নখের সাহায্যে চেপে চেপে খুশবুর দু’হাত পরিষ্কার করছে সে।খুশবু দু’গাল অশ্রুপাতে টইটুম্বুর।ব্যথা সইতে না পেরে হাত ঝাকরা দিয়ে সরিয়ে দিতে আরশাদ রেগে ধমক দিল।খুশবু ভয় পেয়ে ফোঁপাতে লাগলো অনুনয় স্বরে বললো,
” আরশার ব্যথা লাগছে।”
” আরেকটু জান।ময়লা ছুঁয়েছে এই হাত।এই হাত পরিষ্কার করা প্রয়োজন।”
আরশাদের এমন আক্রমণাত্নক রূপ খুশবু প্রথম সাক্ষাৎকারে দেখেছিল এতটা হিংস্র আর কখনো হয়নি আরশাদ।
হাত পরিষ্কার শেষে খুশবুর দু’গাল মুখে দিল সে।
আরশাদ আদেশ সুরে বলে
” চলো আমার সাথে।”
” আমি বাড়ি যাব আরশাদ আমার ভালো লাগছে না কিছু।”
” ভালো লাগার কোন দরকার নেই।আমার সাথে এসো।”
খুশবু যেতে চাইলো না তবুও আরশাদ তার হাত টেনে নিয়ে গেল।ছেলেটার মাথায় কি ঘুরছে কে জানে।
.
খুশবুর আতঙ্কিত ফোলা চোখ দেখে অনিমা ভয় পেলেন।দ্রুত খুশবুকে কাছে টেনে বলেন,
“কোথায় ছিলি আম্মু?তুই কেঁদেছিস কেন?”
ইমরান ইহসান আরশাদের পানে তাকালেন।তিনি ভীষণ ভয় পান আরশাদের সাথে আবার কোন ঝামেলা হয়নি তো।সবার প্রশ্নবোধক চাহনি আরশাদ বুঝতে পেরে দায়সারা ভাবে বলে,
” হারিয়ে গেছিলো বলে কান্না করেছিল।”
অনিমা অবাক হলেন খুশবুর দিকে তাকিয়ে বলেন,
” ফোন করলেই তো হতো।”
” ফোনে টাকা ছিল না আম্মু।”
.
গহনা কিনতে আরশাদ কোন মতামত জানালো না।শাড়ি,জুতার ব্যপারে আরশাদ যতটা আগ্রহ দিয়েছিল গহনার ব্যপারে সে ততটাই এড়িয়ে যাচ্ছে।খুশবুর ভীষণ কান্না পেল আড়ালে বারবার চোখাচোখি করলো আরশাদের সঙ্গে।কিন্তু ছেলেটা অন্যদিকে তাকিয়ে।ইমরান আরিব এবং আফরোজ বুঝতে পারলেন দুজনের মাঝে জটিল কিছু হয়েছে আর তা না হলে আরশাদ এতটা এড়িয়ে যাবে কেন হঠাৎ?
আরিব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে টেনে আনলো আরশাদকে।এবং বাধ্য করলো তার পছন্দ গহনা কিনতে।
সব শপিং শেষ হতে রাত আটটা বেজে গেল।সবাই রাতের ডিনার একসাথে সেরে বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি।আরশাদ গাড়ি এনেছে খুশবুর পরিবারকে সে আগে ড্রপ করে দেবে অপরদিকে আরিব উবার নিয়ে চলে যাবে হ্যাঁ এমনটাই কথা হয়েছিল।
কিন্তু সব সিদ্ধান্ত ভেঙে দিলেন ইমরান ইহসান তিনি জানান এখন তিনি খুশবুদের বাড়ি যাবেন গায়ে হলুদের স্টেজ সহ অনন্য সাজসজ্জার ব্যপারে তিনি আইডিয়া দিতে চান।অনিমা বারণ করলেন না বরং প্রচন্ড খুশি হলেন।
আরিব উবার নিয়ে সবাইকে সাথে করে চলে গেল।পড়ে রইল খুশবু আর আরশাদ।তাদের যে একা করে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন ব্যপারটা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো আরশাদ।ঠোঁট বাকিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে খুশবুকে গাড়িতে উঠার জন্য নির্দেশ দিল।
” আরশাদ আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?এসব যে হবে আমি জানতাম না।”
” আমি তোমাকে বিশ্বাস করি ফ্লুজি।আমি তো জানি তুমি যদি আমাকে ঠকাও এর পরিনাম কত ভয়াবহ হবে সেটা তুমি নিজেও আঁচ করতে পারো।”
আরশাদ নিরব হুমকি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারলো খুশবু।
” রোহান তোমাকে কি বলছিল?”
রোহানের বলা প্রতিটা কথা খুশবু তাকে জানালো।সবটা শুনে হো হো শব্দে হেসে উঠে সে।এসব কথা যেন পাত্তাই দিল আরশাদ।আরশাদ মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামায় খুশবুর হাত টেনে কাছে এনে বলে,
” তুমি ঠিক আছো মানে সব ঠিক।তুমি ঠিক নেই মানে আমার এক সেকেন্ড লাগবে যুদ্ধের ময়দান বানাতে।”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে খুশবুর ঠোঁটে আলতো চুমুখায় আরশাদ।মেয়েটার আতঙ্কিত মুখ দেখে আরশাদ বলে,
” ভয় পাচ্ছো কেন জান?এই আরশাদ ইহসান তোমাকে ছাড়বে না।এবার তুমি ঘৃণার সঙ্গী হও নাকি ভালোবাসার সেটা তোমার ব্যপার।”
.
নিজের কাজ শেষে আরশাদ ফোন করলো রনিকে।ছেলেটাকে খুব সূক্ষ্ম বুদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বললো। আরশাদের আদেশ পাওয়া দেরি অথচ রনির কাজে লেগে পড়া দেরি না।আরশাদের আদেশ মোতাবেক রনির কাজটা সম্পূর্ণ করতে লাগলো দুই ঘন্টা।আরশাদ অপেক্ষায় ছিল কখন পরিকল্পনা অনু্যায়ী কাজের ফলাফল পাবে।
কিছু মুহূর্ত পর রনি তাকে একটি ভিডিও পাঠায় যেখানে দেখা যায় হসপিটালের বেডে ভাঙা হাত নিয়ে ছটফট করছে রোহান।ছেলেটার ডান হাত রক্তাক্ত বীভৎস।আরশাদের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।বাদামী চোখ জোড়ার চকচকে ভাবটা আরিবের নজর এড়ালো না।ভাইয়ের হঠাৎ খুশির কারন সে বুঝতে পারলো না।
আরশাদ হাসতে হাসতে চলে যায় বারান্দায়।হাতে তার জুসের গ্লাস।সুনশান আকাশের দিকে তাকিয়ে জুসে চুমুক দিয়ে সে বলে,
” আমি খারাপ ভীষণ খারাপ।তোমার জন্য যতটা খারাপ হওয়া যায় আমি ততটাই খারাপ হবো।তুমি মানো আর না মানো আমি তোমার জন্য সব করতে প্রস্তুত।”
আচমকা কাচ ভাঙার শব্দে আরিব ছুটে আসে বারান্দায় আরশাদের হাতের গ্লাসটি ভেঙে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাঙা একাংশ আরশাদের হাতের মুঠোয়,তার হাত রক্তাক্ত রঞ্জিত।হাতের দিকে তাকিয়ে আরশাদের কোন ভাবাবেগ নেই।
চলবে….
” আমাকে না জানিয়ে আমার মেয়ের জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত তুমি নিজে থেকে নিলে। না না তুমি তো একা নাওনি তোমার ভাইয়েরা মিলে নিয়েছে।এখন তারা কই?সেই ছেলে কোথায়?কোথাকার কোন ইতালির ছেলে এদের কেউ খোঁজ খবর না নিয়ে বিশ্বাস করে?এই মেয়ের ভবিষ্যৎ কি আমি জানি না।অনিমা তোমার বাড়াবাড়িতে মেয়েটার জীবন আজ ছন্ন ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।তুমি ওর দিকে তাকাও?ওর চোখের ভাষা বুঝ তুমি?সে কি চায় সে যে চিন্তায় চিন্তায় পুড়ে মরছে বুঝতে পারছো না তুমি?”
বাহারুল হক আজ ভীষণ রেগে গেলেন।খুশবুর ভিসা এসেছে আজ ষোল তম দিন।এই ষোল দিনে অনিমার সাথে আরশাদের কথা হয়েছে যতবার তত জানতে চেয়েছে সে কবে আসবে।কিন্তু আরশাদ তালবাহানা জুড়েছে।আরশাদের ব্যপারে অনিমার পূর্ণ বিশ্বাস জমে আছে। ছেলেটা আসবে সে ঠকায়নি।কিন্তু বাহারুল হক তাকে তো মানানো যাচ্ছে না।দিনের পর দিন উঠতে বসতে প্রতিটা কথার মাঝে আরশাদকে জুড়ে দিয়ে ঝামেলা করছেন তিনি।
মা বাবার তর্কতর্কি সবটাই শুনলো খুশবু।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে গলা ধরে আসছে বার বার।তার সাজানো গোছানো জীবনে এক পশলা প্রেমের বৃষ্টি নেমে আচমকাই সব মরুভূমি গড়ে উঠেছে।সেদিনের পর আরশাদের সাথে খুশবু আর কথা বলেনি দূরত্ব বাড়ালে হয়তো নিকটে আসা হবে ভেবে নিজের মনকে শক্ত করেছে।
ভ্যানেটি ব্যাগ কাধে তুলে চট জলদি বাসা থেকে বেরিয়ে যায় মেয়েটা।অনিমা মেয়ের যাওয়া দেখে পিছু হাটলেন সাত সকালে না খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মানে কি।
সারাটা রাস্তায় খুশবু কেঁদেছে কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।উদ্দেশ্যহীন হাটতে হাটতে মাথায় এলো ভার্সিটি যাওয়া যাক।
.
শীতল হাওয়া গায়ে মেখে আরশাদের ঘুম ভাঙে।খোলা জানলায় দাঁড়িয়ে অপরূপ প্রকৃতির প্রেমে পড়ে সে বারবার।ইতালিতে বসন্ত আসতে চলেছে।তাই তো প্রকৃতি শীতল মনোমুগ্ধকর রূপে ধরা দিতে চাইছে।রাতে বৃষ্টি হয়েছে বিধায় চারিদিকে স্বচ্ছতা বিরাজ করছে।
খালি গায়ে আরশাদ আয়নার সম্মুখে দাঁড়ালো।বাদামি চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে নিজেকে নিয়ে হাজারটা অভিযোগ জানাল।কতদিন হয়ে গেল ফ্লুজির সাথে তার কথা হচ্ছে না মেয়েটার এড়িয়ে যাওয়া যে আরশাদকে আঘাত করে মেয়েটাকি বুঝতে পারে না?বেডের পাশে ফ্লুজির ছবিটা ছুঁয়ে চুমে খেল সে।আর কতদিন!কতটা দিন অপেক্ষা করবে সে।গায়ে জামা জড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে আরশাদ চলে গেল তার বাবার ভিলায়।আরিব কফি মগ হাতে মাত্র বের হচ্ছিল রান্না ঘর থেকে, আরশাদকে দেখে মিষ্টি হেসে বলে,
আরিবের পানে সরু চোখে তাকালো আরশাদ।ইদানীং ভাইটা কোন কথাতেই ছাড় দিচ্ছে না।
” আরিব ভালো হয়ে যা।”
” সেম টু ইয়ু ব্রো।”
” আমি ভালো হলেও আমার ফ্লুজির খারাপ হলেও আমার ফ্লুজির।তোর তো কেউ নেই,কাউকে পেতে হলে তোকে আগে ভালো হতে হবে।”
” এভাবে না বললেও পারতে ছ্যাকা লাগে।”
” তোর পরিক্ষা কবে শেষ?”
” আর দুটো দিন অপেক্ষা করো তারপর আমার এক্সাম শেষ হবে তুমিও তোমার ফ্লুজির কাছে উড়াল দিও।”
আরশাদ কফির মগ হাতে চলে গেল গ্র্যানির কক্ষে।
.
ক্লাস রুমে খুশবুর উপস্থিতি অপ্রত্যাশিত ছিল মায়া এবং রিয়ার জন্য।এই মেয়ে ভার্সিটি আসার আগে জানিয়ে আসে কিন্তু আজ হঠাৎ করে এলো যে?রিয়া খুশবুর ফোলা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” তোর কি হয়েছে খুশবু?কাঁদছিলি কেন?”
” কিছু হয়নি।”
” ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
” ঝগড়া ছাড়া থেকেছি কবে?”
খুশবু বরাবরি চাপা স্বভাবের মেয়ে।কাউকে কিছু বলতে আগ্রহ পায় না।নিজের ঝামেলা তার নিজের কাছে। ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে আড়ালে রাখতে সে অভ্যস্ত।কিন্তু আজ তার নিজের ধৈর্যর সীমা ভেঙে গেছে আরশাদের ব্যপারে সবটাই বন্ধুদের মাঝে সেয়ার করেছে সে।রিয়া,মায়া দুজনেই আরশাদের ব্যপারে অবগত আরশাদ খুশবুকে কতটা ভালোবাসে সেই ব্যপারেও অবগত কিন্তু আরশাদের এমন কূটকচালে মানে কী?মায়া খুশবুর গালে হাত দিয়ে বলে,
” কাঁদিস না সুন্দরী।ওই বিদেশী মালটা তোকে বাজাই দেখতে চাচ্ছে।শুধু তুই একবার বল দেশে আসো দেখবি উড়ে উড়ে আসবে।”
” এই মাল কি?আমার বর হয়।”
” ওহ সরি দুলাভাই।ধলা দুলাভাই।”
রিয়া খুশবুর হাত টেনে বলে,
” শুন তুই পালটা খেলা দেখা বিদেশী নেকড়েটাকে।তুই আজ থেকে প্রেম শুরু কর।”
” প…প্রেম কিসব বলছিস আরশাদ জানলে আমার পা ভেঙে ফেলবে।”
” আরে পা ভাঙার জন্য হলেও তো তাকে দেশে আসতে হবে।শুন আমি যা বলছি তাই করবি।আমার দেওয়া ওষুধ তোদের দাম্পত্য জীবনে সুখ বয়ে আনবে।তবে হ্যাঁ এই ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।পার্শপ্রক্রিয়া হজম করে নিলে ফলাফল নিশ্চিত পাবি।”
” তোর ভিজিট কত? ”
” ভিজিট হিসেবে আপনার দেওর আমার।”
.
একটা পার্কে বসে ইতস্তত মুখে হাসছে খুশবু।তার নকল হাসি অতি সহজে ধরা যাচ্ছে বলে রিয়া কিড়মিড় চোখে তাকালো মেয়েটার দিকে।খুশবুর মুখোমুখি বসে আছে একটি ছেলে।দেখতে শুনতে এই ছেলেকে কেউ বলবে না খুশবু মায়া রিয়ার জুনিয়র।ছেলেটা সবে মাত্র এইচএইচি পরিক্ষা দিয়েছে ছেলেটির নাম রিদ।ছেলেটি মায়ার কাজিন।খুশবুর টুকটাক সমস্যার কথা জানিয়ে রিদকে এখানে আনা হয়েছে।দুপুরের কড়া রোদে খুশবুর মাথা ধরে এসেছে তার উপর এসব নাটক যদি আরশাদের কানে যায় তবে যে কি কেলেঙ্কারি হবে।
রিয়া এবং মায়া গপাগপ একের পর এক ফুসকা মুখে পুরছে।এই ফুসকার বিল আজ খুশবুকেই দিতে হবে।রিদ দাঁত কেলিয়ে হেসে তাকালো খুশবুর পানে।
” নকল গার্লফ্রেন্ড আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?”
” না, আমি ভয় পাচ্ছি তোমার জন্য ছোট ভাই।”
” এত চিন্তা কিসের?আগামীকাল রাতে আমি ট্যুরে যাচ্ছি আপনার হাজবেন্ড আর আমার নাগাল পাবে না।”
রিয়া পাশ থেকে খুশবুকে ইশারা করে রিদকে ফুসকা খাইয়ে দিতে।বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে বেচারির যে আর কি কি করতে হবে কে জানে।কাঁপা কাঁপা হাতে খুশবু চামচের সাহায্যে রিদের মুখে ফুসকা দিতে গেলে মায়া দ্রুত তাদের ছবি তোলে।সারাটা বিকাল খুশবু আর রিদ একসাথে সময় কাটায় যদিও তারা বন্ধু বেশে ছিল কিন্তু আরশাদ কি মানবে?
.
রেস্টুরেন্টে বসে হিসাব কষছে আরশাদ।টুকটাক কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে অনন্য কর্মচারিদের।হোয়াটসঅ্যাপে রনির মেসেজ পেয়ে মনোযোগ ভঙ্গ হলো তার এই ছেলেটা প্রয়োজন ছাড়া কখনো মেসেজ করে না।ছেলেটার মূল দায়িত্ব খুশবুর পিছনে ছায়ার মতো লেগে থাকা।রনি কিছু ছবি পাঠালো আরশাদকে যেখানে দেখা যাচ্ছে খুশবু একটি ছেলেকে ঝালমুড়ি খাইয়ে দিচ্ছে,আরেকটি ছবিতে তারা পাশাপাশি হাটছে।অন্য আরেকটি ছবিতে ছেলেটি আর খুশবু মুখোমুখি বসে তাদের দুজনের হাতে ফুসকার প্লেট।
চটজলদি আরশাদের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো রেস্টুরেন্টের এক কোনে নিরিবিলি স্থানে বসে ফোন করলো রনিকে।ছেলেটার কাছ থেকে সব আপডেট নিয়ে নিজের মাথা আর ঠিক রাখতে পারলো না।ঠিক এই কারণেই কি ফ্লুজি এতটা দিন তাকে এড়িয়ে গেছে?
দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইল আরশাদ।তার শরীর থেকে থেকে কাঁপছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সঞ্চয় হয়েছে।আরশাদ নিজেও জানে না সে নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
” আবার,আবার তুমি আমায় ঠকাতে চাইছো ফ্লুজি।যা করেছো এসব ভালো হবে না।ভালো হবে না।জানে মে রে ফেলবো আমি তোমায়।যতক্ষণ আরশাদ আছে ততক্ষণ তোমার শ্বাস আছে।এই আরশাদকে বাদ দিয়ে তুমি বাঁচতে পারবে না।আমি বাঁচতে দেব না।”
আরশাদ ফ্লুজিকে ফোন করলো প্রতিবারের ন্যায় ফ্লুজি ফোন ধরলো না।সেচ্ছায় এড়িয়ে গেল আরশাদকে।
সে সবটাই বুঝে যার ফলে রাগটা আরো প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পায়।সময় ব্যয় না করে সে দ্রুত ফোন করে অনিমাকে।আরশাদের গম্ভীর স্বরে অনিমা ভীষণ অবাক হন।এই ছেলে তো কখনো এতটা রেষ নিয়ে কথা বলে না।
অনিমা দ্রুত পায়ে ছুটে গেলেন খুশবুর কক্ষে।
” আরশাদ ফোন করেছে নে কথা বল।”
” আম্মু আমি পড়ছি এখন কথা বলতে পারবো না।”
” খুশবু বেয়াদবি করিস না।নে কথা বল।”
খুশবু না চাইতেও ভয় নিয়ে ফোন ধরলো। অনিমা চলে যেতে দরজা বন্ধ করে বসলো বিছানায়।
” বলুন।”
” কি বলবো আমি?তুমি বলো কি শুরু করেছো।”
” আমি আবার কি শুরু করলাম?”
” এই কথা ঘুরাবে না ছেলেটা কে?”
” কোন ছেলে?”
” যার হাতে হাত ধরে…. উফফ আমি ভাবতেও পারছি না।”
” আবার বয়ফ্রেন্ড সুন্দর না?”
“তোমার চো খ দুটো খুলে নিয়ে শোপিস বানিয়ে আমার কাছে রেখে দেব।এত সাহস তুমি পেলে কি করে?”
” আপনি ওইদিন কি বললেন মনে নেই আপনার?”
” কি বলেছি আমি?”
” আমার যা খুশি আমি যেন তাই করি।তাই আমার যা খুশি আমি তাই করছি।”
” যা খুশি তাই করো… হা হা হা আমার হুশিয়ারি তুমি বুঝতে পারলে না বোকা ফ্লুজি।যা খুশি তাই করো মানে তুমি একবার শুধু করে দেখ তারপর তুমি ফিনিশ।”
খুশবুর ধপ করে নিভে গেল।হাত পা গুটিয়ে বসে পড়লো বিছানায়।আরশাদের ধমকগুলো একের পর এক গিলে যাচ্ছে সে একটু পর নিশ্চয়ই বদহজম হয়ে সব উগড়ে দেবে।
খুশবুকে চুপ থাকতে দেখে আরশাদ ধমকে বলে,
” কি হলো কথা বলছো না কেন?”
” কী বলবো?”
” বলো ভালোবাসি।”
” ভালোবাসি।”
” বলো, আরশাদ জান আপনাকে আমার চাই আপনি আসুন প্লিজ।”
“আরশাদ জান আপনাকে আমার চাই আপনি আসুন প্লিজ।”
” ওকে জান আমি আসছি আরেকটু অপেক্ষা করো।এবার আসলে তোমার কপালে সুখ দুঃখ দুটোই আছে।”
খুশবু চুপসে গেল।শেষ পর্যন্ত জিত হলো আরশাদের।তাকে ধমক দিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য অনুরোধ করিয়ে ছাড়লো!
” জান। ”
” হুহ।”
” ইউর লিপ’স মাই লিপ’স,এপোক্যালিপ।”
” কিহ!”
” সি ইউ সুন জান।”
চলবে…..
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৪ বাকি অংশ]
সাত সকালে হসপিটালে এসে উপস্থিত খুশবু।তার ভীত চাহনিতে দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে মায়া।অপরাধীর চোখে আড় তাকাচ্ছে রিয়া।তার বুদ্ধিতেই তো আজ এত অঘটন ঘটলো।রিদ হসপিটালে ভর্তি।গত রাতে বাসায় ফেরার পথে তাকে নাকি ছিনতাইকারীরা আক্রমণ করে একটা পর্যায়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অচেনা এক গুদাম ঘরে।সেই ছিনতাইকারীরা ছিল অদ্ভুত তাদের টাকাও চাই না মোবাইলও চাই না তাদের আসলে কী চাই তারা হয়তো নিজেরাও জানে না।
রিদ প্রথম প্রথম ভীষণ ভয় পেল।সিমসাম গড়নের একটি ছেলে তাকে জানায় ভোর ভোর তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেওয়া হবে তবে এই দীর্ঘরাত তাকে ফুসকা এবং ঝাল মুড়ি খেতে হবে।এক মুহূর্তের জন্যেও থামা যাবে না তাকে আনলিমিটেড খেতে হবে।রিদের বুঝতে আর বাকি নেই এসব কার চাল।
মায়ার কথা মতো কাজ করে সে বিশ্রি ভাবে ফেঁসে গেছে আরশাদ ইহসান যে তার আজ আত্মার মাগফেরাত কামনা করিয়ে ছাড়বেন বলে মনে হচ্ছে।
রিদ প্রথমে রাজি না হলে রড তুলে মারতে যায় ছিনতাইকারীদের দলের একজন।ছেলেটা ভয়ে কুঁকড়ে যায় মার খাওয়ার চেয়েও ফুসকা খাওয়া অনেক ভালো।ফুসকা এবং ঝালমুড়ি খেতে গিয়ে বাঁধে আরেক বিপত্তি, উভয়তে নাগা মরিচ দেওয়া।রিদ ঝাল খোর,ঝাল খাওয়া নিয়ে বন্ধুদের মাঝে কম্পিটিশন হলে প্রতিবারি সে জিতে।তাই ব্যপারটা এত গায়ে লাগলো না তার।প্রথম ধাপ গুলো সহজ হলেও ক্রমশ তার অবস্থা খারাপের দিকে যায়।পরবর্তীতে নাগা মরিচ ছাড়াই তাকে ভোর পর্যন্ত ফুসকা আর ঝালমুড়ি খেতে হয়েছে।
এর মাঝে বেশ কয়েকবার উগড়ে দিয়েছে সবকিছু।এত বিশ্রি একটা রাত তার জীবনে আগে কখনো আসেনি।
সকালে বাড়ি ফিরতে তার ডায়রিয়া শুরু হলো সেই সাথে বুমি।কাউকে কিছু বলতে চেয়েও পারলো না সে।বললেই তো বিপদ পরের বার নাগামরিচ কাচামরিচ উভয় থেরাপি দিয়ে ছাড়বে।রিদের এই হালচালের অবস্থা কে করেছে মায়া বুঝতে পারে তাই তো দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে সে।মায়া ক্ষুব্ধ হয়ে বলে,
সিরিয়াস মুহূর্তে ফিক করে হেসে ফেললো খুশবু।তার হাসিতে বাকিরাও চুপ থাকতে পারেনি।খুশবু রিয়ার মাথায় গাট্টা দিয়ে বলে,
” রিয়া এসব বুদ্ধি যে তোর আরশাদ যদি একবার জানে তবে তোর অবস্থা যে কি হবে।”
” বলিস না দোস্ত বলিস না।তোর দাম্পত্য জীবনের কোন প্রবলেম আর সলভ করবো না প্রমিস।আমি ভেবেছিলাম আমার ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া তোর হবে এখন যে রিদের হবে কে জানতো।”
মায়ার মা এগিয়ে এসে দাঁড়ালেন।উনার চিন্তিত মুখখানী দেখে রিয়া বলে,
” আন্টি আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না ডাক্তার তো বলেছে ঠিক হয়ে যাবে।”
” মায়ার বাবা দেশের বাইরে আমি কি এই বয়সে একা সব সামলাতে পারি?ছেলেটা ভালোয় ভালোয় সুস্থ হয়ে যাক।আমার যে কতটা টেনশন হচ্ছে বলে বোঝাতে পারবো না।”
খুশবু বাড়ি ফিরলো দুপুরে।রিদের জন্য তার ভীষণ খারাপ লাগছে এতটা অমানুষিক কাজ কেউ করতে পারে?খুশবু ফোন করলো আরশাদকে।আরশাদ তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ছিল খুশবুর ফোন পেয়ে আড়ালে আসলো সে,
” জান আজ হঠাৎ নিজে থেকে ফোন করলে?”
” রিদের সাথে কাজটা আপনি ভালো করলেন না।আপনি নিশ্চয়ই জানতেন রিদ আমার জুনিয়র তারপরেও…”
” খাইয়ে দিয়েছে তো।আবার পাশাপাশিও হেটেছে আমি এসব কি করে সহ্য করবো বলো?”
” আপনি মানসিক রোগী নাকি?স্বাভাবিককে অস্বাভাবিক করে তুলছেন।”
আরশাদের সাথে কথায় পেরে উঠে না খুশবু।এই ছেলেটা হাড় মাংস সব জ্বালিয়ে খাচ্ছে।আরশাদের হঠাৎ কি যেন হলো।গম্ভীর স্বরে খুশবুকে বলে,
” তুমি আমার ভালোবাসা বুঝ না।তোমার মতো মেয়ের সাথে টেকা যায় না।”
” এখন তো এসব বলবেন কারন বিয়ে করা তো শেষ যখনি আপনার আদর আদর কথায় আমি ফেসেছি তখনি তো পালটি নিয়েছেন।”
” সে যাই হোক।আমার আর এসব ভালো লাগছে না।ফোন রাখছি।”
আরশাদ ফোন কেটে দিল।
সেদিনের পর আর খুশবুকে ফোন করেনি আরশাদ।খুশবু অবাক হয় ভীষণ অবাক হয় যেই ছেলের ফ্লুজি ফ্লুজি করে শ্বাস আটকে আসতো সেই ছেলে কি না তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
এসব মানতে পারে না খুশবুর সরল মন।আজ দুইদিন হয়ে গেল আরশাদের সাথে তার যোগাযোগ নেই।মূলত আরশাদ যোগাযোগ করেনি তার সাথে।কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার বেহাল দশা।অনিমা সবটাই দেখছেন বুঝতেও পারেন কিন্তু কিছুই বলার নেই তার।বাহারুল হক প্রতিদিন ঘরে অশান্তি করে যাচ্ছেন।মেয়ের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা তিনি কিছুতেই মানবেন না।
সকাল ছয়টায় বাহারুল হক হাটতে বেরিয়েছেন।অনিমা নিজের দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ছুটে গেলেন দরজার কাছে।আরশাদ এসেছে একটি ট্রলি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা।অনিমাকে দেখে খুশিতে আধখানা হয়ে আলগোছে জড়িয়ে ধরেছে ছেলেটা।খুশিতে অনিমার চোখে পানি এসে গেছে।
” আম্মু ভালো আছেন?”
‘আম্মু’ শব্দটা আরশাদের কাছে বেশ কঠিন।তবুও আদর মেখে ডাকছে সে।
” ভালো বাবা।খুব ভালো।কখন এলে?”
” এই তো দুই ঘন্টা আগে।মম ড্যাডকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সব বুঝিয়ে আমি এদিকে আসলাম।এখনো ফ্রেশ হয়নি।”
” তুমি মেয়েটার সাথে কি শুরু করেছো বলতো।গত দুইদিন থেকে তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। তুমি আসবে আমি সব জেনেও চুপচাপ হজম করছি।”
” আমি আসবো বলেই তো তার সাথে এমন একটা নাটক করলাম।ব্যপারটা সারপ্রাইজ।”
” যাও বাবা ফ্রেশ হও আমি খুশবুকে ডেকে পাঠাচ্ছি।”
” না না আমি এখন ঘুমাবো।আমি যাচ্ছি তার রুমে এই ট্রলিটা রাখুন এখানে যা যা আছে সব আপনাদের।”
অনিমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আরশাদ চলে গেল তার ফ্লুজির রুমে।মেয়েটা হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সারা বিছানা জুড়ে ঘুমিয়ে আছে।আরশাদ বসলো তার ফ্লুজির মুখোমুখি।কত মাস পর,কত মুহূর্ত পর আবার দেখা,আবার ছুঁইয়ে দেওয়ার লোভ পূরণ হতে চলেছে।
আরশাদ হাতের ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখলো।পকেট থেকে একে একে দরকারি সব বের করে ওয়ারুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো।আয়নায় নিজেকে দেখে নিল একবার ক্লান্ত হলেও আজ তাকে ক্লান্ত লাগছে না।ফুরফুরে মেজাজে শুয়ে পড়লো তার ফ্লুজির পাশে।আরশাদের মনে কোন দ্বিধা নেই সন্দিহান নেই।ক্লান্ত দু’চোখ নিয়ে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল তার ফ্লুজির পানে।ফ্লজিকে বুকে টেনে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল সে।একটা সুন্দর স্মৃতি,উষ্ণ মুহূর্তে কেটে গেল দুজনের মাঝে অথচ তাদের কারো হুশ জ্ঞান নেই।আরশাদের ক্লান্ত শরীর ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে অপরদিকে খুশবু উষ্ণতা পেয়ে নিজেকে আরো গুটিয়ে ঘুমকে সঙ্গ দিয়েছে।
বেলা বারোটায় আচমকা খুশবুর ঘুম ভাঙলো।শরীরে প্যাচানো ভারী বস্তুটার ওজন তার ছোট্ট দেহখানী নিতে ব্যর্থ।ঘুমের ঘোর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে খুশবু।ড্যাবড্যাব চোখে তাকাতে বুঝতে পারে আরশাদ!আরশাদ তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
এই সময়ে আরশাদ কোথা থেকে আসবে?তাও তার বিছানায়!এলোমেলো হয়ে যায় মেয়েটার ভাবনা চিন্তা থরথর করে কাঁপতে থাকে দেহখানী।খুশবু ফুঁপিয়ে উঠতে আরশাদের ঘুম ভেঙে যায়।ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে উত্তেজিত হয়ে বলে,
” কি হয়েছে জান কাঁদছো কেন?”
আরশাদ অস্থির হয়।নিজে কোন ভুল করেছে কি না ভেবে পাচ্ছে না সে।
” ফ্লুজি কাঁদছো কেন?”
খুশবু আরশাদের বুকে ঢলে পড়ে।বড় বড় নখের সাহায্যে খামছে দেয় আরশাদের বুক গলা।আরশাদ কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না কান্নার সাথে সাথে যে খুশবু রাগ ঝারছে তার আর বুঝতে বাকি নেই।
” এসব কথা বলবেন না খবরদার মে রে মুখ ভেঙে ফেলবো।আমায় কেন কষ্ট দিচ্ছেন আপনি?আমি কি দোষ করেছিলাম।জানেন বাবা মায়ের সাথে কতটা রাগারাগি করেছে, আমার সাথে মন খুলে কথাও বলে না।”
” সব ঠিক হয়ে যাবে আমি এসেছি তো।”
খুশবু সরে বসলো।গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল অন্য দিকে।আরশাদ কিঞ্চিৎ হেসে খুশবুর হাত টেনে বলে,
” তুমি দেখতে পারছো?”
” কি?”
” আমার তৃষ্ণার্ত দু’ঠোঁট।”
আরশার খুশবুর চুলে হাত বুলায়।রৌদ্রময় দুপুরে খা খা করছে তখন দু’টি হৃদয়।দু’ঠোটের মাঝে অচিরেই যেন খরার সৃষ্টি হয়েছে।প্রেমের বর্ষণ নামানো যে দায়, আরশাদ খুশবুকে বাঁধ্য করতে চায় না অপরদিকে খুশবু লজ্জায় কাছে আসেনা।খুশবুর ফোলা গাল চেপে ধরে আরশাদ,ভদ্রতার মুখোশ ছাড়িয়ে প্রেমের জোয়ারে ভেসে যায় উদ্দেশ্যহীন।খুশবু বাঁধা দেয় না।আরশাদের প্রতিটা ছোয়া তার খরা হৃদয়ের প্রাণ ফেরায়।আরশাদ ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে।ভালোবাসার প্রতিটা স্পর্শ ব্যথার সঞ্চার করতে কুঁকড়ে উঠে ফ্লুজি।
ফ্লুজির ছটফটে ভাব দেখে আরশাদ ছেড়ে দেয় তাকে।বুকের কোণে আগলে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
” সরি জান সরি। আমি একটু বেশি এগ্রোসিভ হয়ে পড়েছি।”
খুশবু চোখে জল এসে যায়।তিরতির করে কাঁপছে তার ঠোঁট,
” আমি বোধহয় আপনার হাতেই ম রবো।”
আরশাদ হাসে খুশবুর রক্তিম ঠোঁটে হাত বুলায়।খুশবুকে আরো কাছে টেনে বলে,
বন পালং ফুলটি ছিড়ে হাতে তুলে নিল আরশাদ।ফুলটার সৌন্দর্য অবলকন করে দু’ঠোঁটের সাহায্যে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিল উদ্দেশ্যহীন।আরশাদের ফুঁ’তে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সকল পাপড়ি উড়ে ছিন্নভিন্ন।ডেইজি ফুল গুলো তার দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে।আরশাদ একটি ডেইজি হাতে তুলে ভাবলো ফ্লুজির কথা।তার ভিলার ব্যাক ইয়ার্ডে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একটি আপেল গাছ।এত এত আপেল গাছে ধরেছে যে এত আপেল কে বা খাবে?অধিকাংশ আপেল গাছের পদতলে পড়ে নষ্ট হয়ে আছে।নিজ হাতে আরশাদ সবটা পরিষ্কার করলো।হালকা গরমেও সে কেমন ঘেমে একাকার।
” ফ্রাটেলো আরশাদ।”
হাতের কু ড়া ল রেখে ঘুরে তাকালো আরশাদ।তার দিকে ছুটে আসছে একমাত্র ফুফাতো বোন এলিনা।মুহূর্তে তার ঠোঁট জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চমৎকার হাসি।এলিনা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে আরশাদকে।ইতালিয়ান ভাষায় চলতে থাকে দুজনের বাক্যালাপ।
” কেমন আছো এলিনা?”
” অনেক অনেক ভালো।দিন দিন তুমি হ্যান্ডসাম হয়ে যাচ্ছ ভাইয়া।”
” সিরিয়াসলি?”
” ইয়াহ।”
এলিনা আরশাদকে ছেড়ে আপেল গাছটার কাছে গেল একটি আপেল ছিড়ে কামড় বসাতে বাঁধা দিল আরশাদ।
” না ধুয়ে খাওয়া ঠিক নয় এলিনা।”
” ভাইয়া তোমার গাছটা অনেক সুন্দর ভাবে বেড়েছে।”
” ফুফু এসেছে?”
” হ্যাঁ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে চলো তুমি।”
এলিনার হাত ধরে ভিলার দিলে এগিয়ে গেল আরশাদ।
আরশাদের দাদা দাদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও আরশাদের ফুফু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি।তিনি তার খ্রিস্টান ধর্মতে ছিলেন এবং আছেন।সেই সূত্রে এলিনা খ্রিস্টান ধর্মের মেয়ে।
আরশাদের হাত ধরে ঘরে ফিরলো এলিনা।আফরোজা তখন রান্নার কাজে ব্যস্ত।সেই ব্যস্ততাকে সঙ্গ দিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন আরশাদের ফুফু ‘গ্লোরিয়া’র সহিত।
আরিব ফোন চালাতে চালাতে বাইরে আসছিল তখনি অনুভব করে তার নাকে এসে সুড়সুড়ি দিচ্ছে মিষ্টি ঘ্রাণ।চকিতে তাকাতে আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরলো এলিনা।মেয়েটার নরম হাতের ছোঁয়ায় আরিবের গলা ধরে ঝুলে আছে।এলিনার প্রতি তার অন্যরকম টান এই টান সামলাতে হিমশিমে পড়তে হয় ছেলেটাকে।অথচ এলিনার মেদহীন নরম শরীরটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জটিল সমীকরণে ফেলছে।আরিব বিভোর হলো দুহাতের শক্ত বন্ধনীতে জড়িয়ে ধরতে চেয়েও পারলো না।আরশাদ দাঁড়িয়ে, ভাইয়ের সামনে নিশ্চয়ই এই ভুল করা যাবে না।
” আরিব ভাইয়া কেমন আছো?”
” আ’ম গুড সুইটি।কোথায় ছিলে এতক্ষণ?”
” আরশাদ ভাইয়ার সাথে ব্যাক ইয়ার্ডে।”
” ওর ভুতুড়ে ভিলায় গেলে নাকি?যেও না কিন্তু।”
” ভাবি এলে সেই ভুতুড়ে ভিলায় পরির দেখা মিলবে।আমরা সেই পরির অপেক্ষায়।”
এলিনার কথায় দুই ভাই কিঞ্চিৎ হাসলো।তাদের হইহুল্লোড়ে এগিয়ে এলো আরশাদের ফুফু গ্লোরিয়া।আরিব এবং আরশাদকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন তিনি।
” বউকে ছাড়া দেশে এলে কেন?”
“আমার আরেক বউ যে হসপিটালে।”
” সেটা বুড়ো হয়ে গেছে,তাকে বাদ দিয়ে দাও।”
” মায়া ফুফু মায়া।মায়া বড় ভয়ানক জিনিস।”
” বিদেশি বউ কি দেশি বউকে মানবে?দুই সতীন কিন্তু হেব্বি জমবে।”
ঘর জুড়ে হাসির রোল পড়লো।বহুদিন পর হাসলো সকলে।গ্র্যানির সুস্থতার খুশিতে সবার মাঝে বিরাজ করছে স্বস্তি আনন্দ উল্লাস।
.
আরশাদ ঘুম থেকে উঠার পর থেকে অনেকবার বার ফ্লুজিকে কল, ম্যাজেস করেছে কিন্তু মেয়েটা অনলাইনে আসেনি।আরশাদ ভেবেছে ও হয় ঘুমে তাই আর বিরক্ত করেনি।ইতালির ঘড়িতে সময় এখন সময় দুপুর একটা তাহলে বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা আরশাদ ফ্লুজিকে না পেয়ে অনিমাকে ফোন করলো।একের পর এক বারোটি মিসকল্ড দেওয়া শেষ তাও অনিমা ফোন তুলেনি।সাহস নিয়ে বাহারুল হক’কে ফোন করলো আরশাদ।বাহারুল হক কিছুক্ষণ পরে ফোন তুললেন,
” আসসালামু আলাইকুম বাবা, আরশাদ বলছিলাম।”
” কে তোমার বাবা?”
” কেন আপনি।শ্বশুর বাবা।কেমন আছেন বাবা?”
” খবরদার বাবা ডাকবে না।”
” রেগে আছেন মনে হচ্ছে।মা ভালো আছে?আর খুশবু কেমন আছে।”
বাহারুল হক তাচ্ছিল্য হাসলেন।এই তো সুযোগ আরশাদকে বকে দেওয়ার।তিনিও আজ সুযোগ ছাড়লেন না মন মতো রাগ জেদ সবটা উজাড় করে দিতে প্রস্তুত হলেন।
” আমার মেয়েকে কী পেয়েছো তুমি?মানলাম তোমার বিপদে তুমি চলে গেছ।আমার মেয়েটা কতটা নাজুক সেকথা আমি জানি।সকাল থেকে তার জ্বরে গা পুড়ছে।তুমি একবারো খোঁজ নিয়েছো?জ্বর কমার কোন অবস্থা নেই।ডাক্তারের কাছে এনেছি খোঁজ নেওয়ার হলে নেবে না হলে ছেড়ে দাও আমার মেয়েকে।”
আরশাদ হতবাক,হতভম্ব।এমনটা যে হবে সে তো ভাবেনি।
” খুশবুকে দিন আমি কথা বলতে চাই তার সাথে।”
” কোন দরকার নেই।বাসায় গিয়ে কথা বলবে এখন রাখছি।”
আরশাদের হাঁসফাঁস বাড়লো।এক ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে হলো বাংলাদেশে।দু’হাতের সাহায্যে মাথার চুল খামছে টেবিলে সাজানো কাচের ফুলদানিটা মেঝেতে ছুড়ে ফেললো।আরশাদের ভিলায় আরিব নিচ তলায় এসে সবে দাঁড়িয়েছিল।কাচ ভাঙার শব্দে চমকে গেল সে।দেরি না করে দ্রুত দোতলায় উঠে আরশাদের হাঁসফাঁস অবস্থা দেখে ভীষণ ভয় পেল ছেলেটা।
” ব্রো কি হয়েছে?”
” সর সামনে থেকে সর।”
” প্লিজ এমন করছো কেন কি হয়েছে?”
” ব্লাডি বিচ সর।”
কফি মগটা আরশাদ ছুড়ে ফেললো আরিবের পায়ের কাছে।ভাগ্যিস ছেলেটা ছিড়কে দূরে সরেছিল।আরিব ভীষণ অবাক হলো ভাইয়ের এমন আচরণে।ফ্লুজি চলে যাওয়া নিয়ে আরশাদের জঘন্যতম আচরণের সাক্ষি হয়েছিল আরিব।তবে কি আবার শুরু হতে চলেছে?কিন্তু কেন?ফ্লুজি তো এখন তার স্ত্রী।দুরত্ব চাইলেও সহজে মুক্তি নেই।থরথর করে কাঁপতে থাকে আরশাদ আরিব দ্রুত আরশাদকে জড়িয়ে ধরে।
” ব্রো কি হয়েছে আমায় বলো।”
” আমি কি করেছি?আমার কি দোষ?”
” আরে কি হয়েছে বলবে তো।”
” ফ্লুজি অসুস্থ আরিব।আঙ্কেল…আঙ্কেল আমার সাথে ধমক সুরে কথা বলেছেন।উনার প্রতিটা কথায় এটাই বুঝায় ফ্লুজির অসুস্থার জন্য আমি দায়ী।”
” তাই বলে তুমি এমন করবে?ডাক্তার তোমাকে কি বলেছে ভুলে গেছো?সহজে হাইপার হওয়া যাবে না।প্লিজ ক্লাম ডাউন।”
” আমি ফ্লুজির সাথে কথা বলবো।এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।ব্যবস্থা কর আরিব যেভাবে পারিস ব্যবস্থা কর।”
” আমি দেখছি তুমি শান্ত হও।”
.
ডাক্তার দেখানো শেষে বাসায় ফিরলো খুশবু।জ্বরের দাপটে দু’চোখে যে ঝাপসা দেখছে সে।কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন চেক করে আরশাদের ম্যাসেজ দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে ঠোঁটের কোনে।অনিমা বুঝতে পারেন মেয়ে কি চায় তাই তো তিনি খুশবুকে রেখে চলে যান অন্য রুমে।সেই সুযোগে আরশাদকে ভিডিও কল করে খুশবু।
” ফ্লুজি ঠিক আছো?”
আরশাদের এলোমেলো বিধস্ত অবস্থা দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয় সে।
” আপনাকে এমন লাগছে কেন?”
” তুমি খাওনি ঘুমাওনি অনিয়মে জ্বর বেঁধেছে তাই না?”
” না।”
” জিহ্বা টেনে ছি ড়ে ফেলবো।আমার সাথে কোন মিথ্যা কথা নয় বলো কি করেছিলে গতকাল।”
” রনিকে পাঠাব?পরিস্থিতি কিন্তু পালটে যাবে ফ্লুজি।”
রনি!সেই ছেলের নাম যে ছেলের মাধ্যমে আরশাদ খুশবুকে খুঁজে পেয়েছে।যে ছেলে আরশাদের ফোনে ম্যাসেজ দিয়েছিল বলে খুশবু সেদিন জেনেছিল তার বাবার অসুস্থতার কথা।আরশাদ নিজেই বলেছে রনি মোটেও ভালো ছেলে নয়।
” রনির হুমকি কেন দিচ্ছেন আরশাদ?”
” তা তো রনি গেলেই বুঝতে পারবে।পাঠাবো?নাকি তুমি বলবে।”
” আব্বু গতকাল থেকে এত এত কথা শুনিয়েছে যে আমার ধৈর্য কুলায়নি।সন্ধ্যা থেকে ওয়াশরুমে ভিজেছি,খাইনি ঘুমাইনি সব মিলিয়ে…”
” সাহস দেখে অবাক হই।সামনে থাকলে আবার গোসল করাতাম বে য়া দ ব মেয়ে।”
” গ্র্যানি কেমন আছে?”
” ভালো।সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আগামী সাপ্তাহে আবার ফিরবো।কিন্তু আমি ফিরছি না।আমি কি বলেছিলাম নিজের যত্ন নেবে।তুমি নাওনি নিজের যত্ন।তুমি আমার দেওয়া কথা রাখনি তাহলে আমি কেন কথা রাখবো?”
খুশবু আচমকা রেগে গেল।পালটা রাগ নিয়ে সে বলে,
“আসতে হবে না আপনাকে।আমি বলেছি আপনি আসুন?আপনি ছাড়াও আমার চলবে।শুধু চলবে না দৌড়াবে অন্তত এবার ফ্রিডম লাইফে ফিরছি।”
অপরদিকে আরিব ভাই ভাবির ঝগড়া সবটাই পরখ করলো।তবে ছেলেটা কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না।ল্যাপটপ কোলে নিয়ে অনলাইনে প্লেনের টিকেট দেখছিল সে।আরশাদের কথা মতো আগামী সাপ্তাহে বাংলাদেশে যাওয়ার কথা।হঠাৎ আরশাদের মত পালটে গেল আরিবের উদ্দেশ্যে বলে,
” আরিব টিকেট দেখতে হবে না ক্যান্সেল কর।যাব না বাংলাদেশে।
চলবে…..
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৩ বাকি অংশ]
” আরশাদ ভাইয়া ফিশ ফ্রাই নেবে না?”
” না। ”
” একটু মাংস নাও।”
” লাগবে না।”
” তুমি তো কিছুই নিলে না।শুধু ডাল দিয়ে কেউ খায় নাকি।মামীর বাড়িতে এলে তবেই তো ভিন্ন ভিন্ন খাবার হয় ভেবেছিলাম সবাই আড্ডা দিতে দিতে জমিয়ে ডিনার করবো।তোমার কী হয়েছে বলতো?”
আরশাদ পূর্ণ দৃষ্টি রাখলো এলিনার চোখে।ছেলেটার ভাব ভঙ্গিমা যে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে কতটা রেগে।আক্রমণাত্মক হওয়ার আগে আরিব আড়ালে আরশাদের পায়ে ধাক্কা দিল।চোখ ইশারায় বুঝিয়ে দিল এলিনার সাথে কোন রাগ দেখানো যাবে না।আরশাদ দমে গেল গ্লাস ভরতি পানি খেয়ে নিজের রাগটা সংবরন করলো।পরিস্থিতি পাল্টাতে আরিব এলিনাকে বলে,
” আমাকে ফিশ ফ্রাইটা দাও এলিনা।”
খাবার টেবিলে আবারো হইচই আড্ডা।আফরোজা ইমরান বুঝতে পারলেন ছেলের কিছুতো হয়েছে।ফ্লুজির সাথে আবার কোন ঝামেলা হয়নি তো?আর যদি কোন ঝামেলা হয়ও এসব মানতে পারবেন না তারা।সুস্থ সবল ছেলেটাকে কেমন উন্মাদ বানিয়ে ছেড়েছে।আফরোজার মনে জেদ ঢুকল এই মেয়েকে একবার হাতের কাছে পেলে ইচ্ছা মতো শাসিয়ে ছাড়বে।
.
খাবার আর খাওয়া হলো না আরশাদের।নিজের ভিলায় ফিরে নিচতলায় কিছুটা গোছগাছ করে দোতলায় গেল।দোতলার একটি কক্ষে বিশাল তিনটে বুকশেল্ফ।সেই কক্ষটা লাইব্রেরী হিসেবে সাজিয়েছে আরশাদ।মন মেজাজ ঠিক রাখতে বই খুলে বসলো সে।কিন্তু অস্থির মন এসব কি মানে?মূলত মানতে চায় না।আচমকা তার ফোন বেজে উঠলো ইতালিয়ান বন্ধু ডিলান ফোন করেছে।
আরশাদ আর ডিলানের অনেকক্ষণ কথা চললো এর মাঝে ডিলান বলে,
” তুমি জানো অ্যাডেন লিভ ইনে আছে ”
” কি!কবে কখন হলো এসব।”
” তুমি যাওয়ার পর থেকেই।আমাদের মাঝে তুমি ফাস্ট যে আগে নিজেকে ভার্জিনিটি হারিয়েছে।”
চট করে আরশাদের মুখভঙ্গি পালটে গেল।সে যেন একটা মজার কথা শুনেছে।আরশার হলো বিবাহিত ব্যাচেলর এসব কথা যদি ডিলান জানে ছেলেটা নিশ্চয়ই হাসবে।তার বিবাহিত স্ত্রীকে কাছে পাওয়ার স্বীকৃতি সে আদৌ পায়নি অথচ তার বন্ধু গালফ্রেন্ডের সহিত….পালটা মেজাজ খিঁচে গেল আরশাদের ভেতটায় জমলো রাগ জেদ।ফ্লুজির জন্য মনটা কেমন কেমন করছে।ডিলান তাড়া দিয়ে বলল,
” শরীর ভালো লাগছে না ডিলান এখন ফোন রাখছি পরে কথা হবে।”
আরশার অস্থির হলো কোলের বইটা রেখে নিজের কক্ষে ফিরলো।ইতালি সময় অনুযায়ী রাত এখন বারোটা।বাংলাদেশে নিশ্চিয়ই চারটা বাজে।আরশাদ অনলাইনে ঢুকতে দেখতে পেল ফ্লুজি এক্টিভ।চট করে তার মেজাজটা আবার পালটে গেল।এই অসুস্থ মেয়েটা কেন জেগে আছে?দেরি না করে ফ্লুজিকে ফোন করলো সে,ভেবেছিল রাগের মাথায় মেয়েটা ফোন রিসিভ করবে না কিন্তু আরশাদকে অবাক করে দিয়ে ফ্লুজি ফোনটা ধরলো।আরশাদ নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল,
” এত রাত অনলাইনে কেন?”
” এই কেন’র কোন উত্তর নেই।”
” কি করছো?”
” ক্যান্টিনে বসে গরম গরম সিঙারা খাচ্ছি।”
“মজা নাও আমার সাথে?এই রাতে… ”
” তো?আপনি অদ্ভুত প্রশ্ন করলে আমিও অদ্ভুত জবাব দিব।এই রাতে বিছানায় থাকা ছাড়া আর কোথায় থাকব?”
আরশাদ দমে গেল।
” জ্বর কমেছে?”
” হুম।”
” রাগ দেখাও আমাকে?এই রাগের ফল কিন্তু ভালো হবে না জান।”
” এমনিতেও কোন কিছু ভালো হচ্ছে না।ফোন করেছেন কেন?”
” আমার বউ আমি খোঁজ নিব না?”
” কে আপনার বউ?”
” বাংলাদেশের এক কোণে বসে থাকা এক ঝগড়াটে মহিলা যে পারে আমার দূত্বে ঝগড়া করতে।কাছে গেলে দম ফুসস।”
আরশাদের সহিত খুশবু ন্যাকা রাগ দেখালো দ্রুত সে ফোন কেটে অফ লাইনে চলে গেল।
.
ছয়দিন পর হসপিটাল থেকে গ্র্যানিকে বাসায় আনা হলো।গ্র্যানির ফিরে আসা নিয়ে ঘরে চললো ক্যান্ডেল লাইট ডিনানের আয়োজন।ডাইনিং স্পেচ টাকে সুন্দর করে সাজালো এলিনা।মেয়েটা ভেনিস থেকে প্রতিবার আসার সময় প্রস্তুত হয়ে থাকে যতটা পারা যায় আনন্দ করে যাবে।আরিব আড় চোখে বার বার নজর ঘুরালো এলিনার দিকে।বাদামি চুলের গোছায় খোঁপা করে কেমন তাড়া দিয়ে কাজ করছে মেয়েটা।একটা শাড়ি পড়ে কোমড়ে আঁচল গুজলে এই মেয়েকে নির্ঘাত বউ বউ লাগবে।সবার আড়ালে চুপিসারে বাইরে গেল আরিব।হাতে করে নিয়ে এলো কয়েকটা ডেইজি ফুল।
আরিব সবার আড়ালে এলিনার খোপায় গুঁজে দিল একটি ডেইজি ফুল।এলিনা অবাক হয়ে হাসলো।আরিব সেই হাসিতে মুগ্ধ হয়ে বলে,
” এলিনা মাই প্রিন্সেস।”
” আমি প্রিন্সেস!”
” তুমি কবে বড় হবে বলতো?”
এলিনা বুঝলো না আরিবের বাংলা কথা মেয়েটা শুধু আগ্রহ নিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে রইল।
” ভাইয়া কি বলছো আমি তো বাংলা কথা বুঝিনা।”
” বুঝতে হবে না।”
আরিব মাছি তাড়ানো ভঙিমায় চলে গেল।আরশাদ এসে বসলো গ্র্যানির পাশে।গ্র্যানি আদেশ সুরে বলেন,
” ফ্লুজিকে ফোন করো আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।”
” বাংলাদেশে এখন গভীর রাত গ্র্যানি।ফোন করলে মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে তো।”
” তুমি যাবে কবে?আরিবকে রেস্টুরেন্টের দায়িত্ব দিয়ে তুমি চলে যাও।”
” ওর পড়াশোনা আছে শুধু শুধু ওঁকে ঝামেলায় ফেলবো কেন?”
” হঠাৎ এত বুঝদার হলে যে?ফ্লুজির সাথে দেখা করার ইচ্ছে নেই নাকি?”
” সেই ইচ্ছা আমার কোন দিন ফুরাবে না।’
গ্লোরিয়া তখন গরম গরম মাংসের বাটি নিয়ে এলো।গরম বাটি টেবিলে রাখতে তাতে আঙুল পুরে দিল এলিনা।মাংস খাওয়ার তাড়ায় বেচারির চিরল দু’আঙুলে আচমকা ছ্যাকা লেগ গেল।এলিনা এসবে অভ্যস্ত নয় অল্পতে চেচিয়ে উঠলো সে আরিব পাশেই ছিল।এলিনার দুই আঙুল তৎক্ষনাৎ নিজের মুখে পুরলো।গ্লোরিয়া দৌড়ে গেলেন পানি আনতে।আরিব অধৈর্য হয়ে বলে,
” এলিনা জ্বালা কমেছে?”
” জ্বলছে তো।”
গ্লোরিয়া আসতে পানির বাটিটায় হাত চুবালো এলিনা।গ্লোরিয়া,গ্র্যানি আরিবের কর্মকান্ড স্বাভাবিক ভাবে নিলেও আরশাদ কিন্তু ঠিকি সরু চোখে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে।আরিবের অস্থিরতা সে জহুরি চোখে পর্যবেক্ষণ করলো।এলিনা সরে যেতে, আরিবের সহিত চোখাচোখি হয় আরশাদের।ব্যস আরিবের সব দম যেন ফুরিয়ে গেল।ইতস্তত বোধ কাটাতে ক্যাবলাকান্ত রূপে হাসলো আরিব।আরশাদ উঠে এলো আরিবের কাধে হাত দিয়ে চাপা স্বরে বলে,
” আমি পুরুষ,আমি প্রেমিক তাই তোর অস্থির দু’চোখের ভাষা আমি সহজে বুঝতে পারি।”
আরিব প্রত্যুত্তর করলো না।এলিনার ভীতি মুখখানি দেখে শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
.
আরশাদের রেস্টুরেন্টে আজ বাঙালিদের ঢল নেমেছে।যেহেতু আজ শুক্রবার অফডে সেই হিসেবে ইতালিতে থাকা প্রত্যেক প্রবাসী তাদের দিনটিকে আনন্দ উপভোগে কাটানোর জন্য রেস্টুরেন্টে এসেছে।কেউ এসেছে পরিবার নিয়ে কেউ বা এসেছে বন্ধুদের সঙ্গে।আরশাদ সবার কার্যক্রম পরখ করছিল, হাসি মুখে সবটা দেখে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে।এই রেস্টুরেন্ট থেকে যে তার ভালো পরিমানে আয় আসবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি।মূলত শখের দরুনে রেস্টুরেন্ট শুরু করেছিল সে।
আরশাদ সরু রাস্তায় গান গাইতে গাইতে হাটছিল তার সাথে সঙ্গ দিয়ে নাম না জানা এক পাখি ক্রমশ ডেকে চলছে।রাস্তার ধারে বিক্রি করা লিলি দেখে থেমে গেল সে।দোকানির কাছে গিয়ে জানতে চাইলো দাম কত।আরশাদ দামাদামি করে মুঠ ভরতি লিলি কিনলো।ইতালির জাতীয় ফুল লিলি।সাদা লিলি ইতালির একটি জাতীয় প্রতিক।সাধারণত ধর্মীয় প্রসঙ্গে ভার্জিন মেরি এবং পবিত্র পরিবারের সাথে যুক্ত।
নিজ ভিলায় ফিরে লিলিফুল গুলো একটি টবে রেখে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো আরশাদ।মন শরীর দুটোই ক্লান্ত। ফ্লুজি তাকে ইদানীং একটু বেশি এড়িয়ে চলছে ঠিক আগের বারের মতো।
আগের বার যেমন একেরপর এক এড়িয়ে যাওয়া আরশাদকে বিক্ষিপ্ত,রাগান্বিত করেছিল ঠিক তেমনটাই হচ্ছে।কিন্তু আরশাদ হাল ছাড়ার পাত্র নয় এখন আর পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ তো নেই।এই মেয়েটা বিবাহিত যতই এড়িয়ে যাক আর আড়াল হোক তার শেষ গন্তব্য আরশাদের বুকে।মুখ লুকালে আরশাদের বুকেই লুকাবে।
ফোন হাতে তুলে খুশবুর ছবি দেখছিল আরশাদ।ছেলেটা নিজের দাম্ভিকতা বজায় রেখে বলে,
” যেদিন তুমি বলবে আমি সেদিন ফিরবো তোমার কাছে।আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যেকটা জবাব আমি নিয়েই ছাড়বো।”
আচমকা বাতাসে উড়ে গেল জানলার সব পর্দা।সফেদ পর্দা গুলোর এলোমেলো উড়াউড়ি দেখে আরশাদ উঠে দাঁড়ালো দ্রুত হাতে জানলা বন্ধ করে বসলো কাউচে।এখন টিভি দেখলে মন্দ হয় না কিন্তু মনের সায় না পেয়ে রিমোট রেখে ফোন হাতে নিয়ে বসলো সে।
আরশাদ প্রতিদিনের ন্যায় ডু মারলো খুশবুর বন্ধু মায়া এবং রিয়ার আইডিতে।এই দুইজনের আইডি পাবলিক বলে আরশাদ খুব সহজে আপডেট পেয়ে যায়।খুশবুর বন্ধু বলেই এরাই আছে তাই খুশবুর সাথে সাথে এদের উপরেও গভীর পর্যবেক্ষণ চলে আরশাদের।কিন্তু আরশাদের সাথে আজ ঘটলো ভিন্ন পরিস্থিতি।মায়ার আইডিতে তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে পোস্ট করা কিছু ছবিতে চোখ আটকে গেল তার।
খুশবু আজ শাড়ি পরেছে।বেগুনি পাড়ের সাদা শাড়িতে মেয়েটাকে শুভ্র শীতল লাগছে।আরশাদের নজর আটকে গেল একদিকে।এমন সাজে ঢঙে রূপে ফ্লুজি কখনো ধরা দেয়নি তার কাছে।এত সুন্দর লাগছে কেন মেয়েটাকে?নাকি আরশাদের চোখে সে সুন্দর।
শেষ ছবিটায় তারা তিন বান্ধবী মিলে দাঁড়িয়ে আছে।খুশবুর হাত মায়ার কাঁধে তোলা মেয়েটা খিলখিলিয়ে হাসছে।হাত উপরে তোলার দরুনে শাড়ি সরে সাদৃশ্য হয়েছে মেদহীন পেটের কিছুটা অংশ।ছেলেটা অস্থির হলো দ্রুত হাতে শার্টের উপরের দুটো বোতাল খুলে গা ছাড়া দিয়ে বসলো।আরশাদ উষ্কখুষ্ক চুলগুলো চুলকে বলে,
” আমার একটাই মাথা তাও আবার নষ্ট করে দিল এই মেয়েটা।উফফ আরশাদ কন্ট্রোল কন্ট্রোল।”
আরশাদ ফোন করলো তার ফ্লুজিকে।কয়েকবার ফোন কাটার পর ফোন ধরলো সে।অবশ্য ফোন ধরে ঝাঁঝালো গলায় বলে,
” কী সমস্যা আপনার?দেখছেন তো ফোন কাটলাম।কি চাই?”
” তোমাকে জান।”
” সুর দেখি উলটো দিকে ঘুরছে বুঝলাম না।”
” আগে বলো শাড়ি যে পরলে আমাকে ভিডিও কল দিলে না কেন?”
“আপনি কি করে জানলেন আমি শাড়ি পরেছি আজ।”
” কখন কি করছো সবটা খরব রাখি।শাড়ি পরেছো ভালো কথা কিন্তু সামলে রাখনি কেন?যেটা আমার দেখার কথা সেটা সবাইকে দেখানো কি খুব জরুরি ছিল?”
” মানে?”
” শাড়ির আড়ালে যে আমার সুখ শান্তি উকি দিচ্ছিলো এটা আমার দেখার কথা কিন্তু অসংখ্য লোক দেখে ফেলেছে।আমি এসব মানতে পারবো না।তোমার ফ্রেন্ডকে বলে দিও এই ছবি যদি রিমুভ না করেছে তবে তার আইডির সাথে সাথে তাকেও গায়েব করে দেব।প্রমিস।”
খুশবু ঢোক গিললো।আরশাদের সাথে যতই রাগ জেদ দেখায় না কেন এই ছেলেটার হুমকিতে সে মারাত্মক ভয় পায়।খুশবু স্বল্প সরে বলে,
” আরশাদ।”
” বলো জান।”
” সব কাগজ পত্র তৈরি।ভিসার ঝামেলা শেষ।”
আরশাদ চমকে গেল।চমকের মাঝেই হাসলো চমৎকার।
“তুমি বললেই আমি দেশে আসবো।কি আসবো?”
খুশবু রেগে গেল।রাগের দরুনে কান্না পাচ্ছে তার।মেয়েটা ধরা গলায় বলে,
” কেন আসবেন আপনি?আপনি নিজে বলেছেন আপনি আসবেন না তাহলে আপনার আসা যাওয়ায় মতামত আমি কেন দেব?”
” ফ্লুজি আমাকে তুমি আবার রাগ দেখাচ্ছো?”
” কি করবেন আপনি?কিছুই করতে পারবেন না।দূরে বসে বসে শুধু নাটক করুন।আমি আপনার ধারাবাহিক নাটকের দর্শক।”
” ওকে যা খুশি তাই করো।”
” ঠিক আছে খুশি মতোই সবটা করবো।”
খুশবু চট করে ফোন কাটলো।রেগে মেগে আগুন হয়ে গেল আরশাদ।হঠাৎ ফ্লুজি তাকে একটি ছবি পাঠালো মেয়েটা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে।আরশাদের আগুনে যেন জল পড়লো।রাগ দেখাতে গিয়েও অনুভূতি কাছে ব্যর্থ সে।
আরশাদ দাঁতের সাহায্যে ঠোঁট চেপে ধরলো।আফসোস সুরে বলে,
” কাকে বকবো আমি?কাকে রাগ দেখাবো?এই মেয়েকে বকলে যে নিজেকে নিজে খু ন করতে মন চায়।”