Friday, August 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 232



আমার তুমি পর্ব-৩০+৩১

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_৩০[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“আপনার মনে হয়নি আপনি আমাকে অবহেলা টা বেশি করেন?
আর আমি অনেক বার বলেছি স্টিভ এর সাথে আমার কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই। জাস্ট ফ,,,,

-“মিথ্যা বলা শেষ হয়েছে?
তবে আমি ওই দিন যা দেখেছি সেটা কি?”

-“আমি মিথ্যা বলছি না ওয়াজিদ।
কখনো কখনো চোখের দেখার মাঝেও ভুল হয়।”

কথা টা শেষ করেই রিধি ফোন টা কেটে দিলো।কি দরকার বার বার নিজে কে ছোট করার?
তারচেয়ে ঢেরবেশি ভালো মা বাবার পছন্দ মতো ছেলে কে বিয়ে করে নিবে এবার দেশে যাবে।
রিধি চোখের পানি গুলো একটু পর পর হাত দিয়ে মুছে যাচ্ছে। কিন্তু এতে একফোঁ টা লাভ হচ্ছে না।এই অবাধ্য চোখ জোরা থেকে অঝর দ্বারা জল পরছে।
রিধি মেঝে থেকে উঠে বিছানায় বসে। ওর শরীর বিন্দু পরিমাণ শক্তি পাচ্ছে না। শরীর এর ব্যাথার থেকে যে মনের ব্যাথার বেশি ভারি।
রিধি সুইচ টিপে লাইট টা অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।
আর মনে পড়ে যায় আজ থেকে মাসখানেক আগের একটা ঘটনা।
সে দিন অফিস বন্ধ ছিল রিধির। রিধি একটা জব করে।সেখানের একটা রিধির খুব ভালো ছেলে বন্ধু আছে।
ওয়াজিদ ডক্টর হওয়াতে ওদের বেশি একটা দেখা সাক্ষাৎ হতো না তবে ফোনে সব সময় কথা হতো।সে দিন রিধির অফিস বন্ধ ওয়াজিদ তাই রিধির সাথে দেখা করবে বলে। রিধি রাজি হয়।কিন্তু রিধি ওয়াজিদ এর লোকেশান অনুযায়ী সেখানে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায়।তবে বাঁধ সাধে রাস্তায়।রিধির বন্ধু স্টিভ রিধি কে বলে ওর গার্লফ্রেন্ড কে গিফট দিবে তাই রিধি যেনো একটা কিছু পছন্দ করে দেয়।
রিধি রাজি হয়ে যায়। বেশি সময় তো আর লাগবে না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ওরা যেই রেস্টুরেন্টে এ দেখা করার কথা ওরা সেখানের একটা শপিংমল যায়।
আর সেখানে ওয়াজিদ রিধির জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু রিধি ওয়াজিদ কে দেখে নি ওয়াজিদ ঠিকই রিধি কে দেখে ছিল আর ওয়াজিদ ভেবেছে রিধি তাকে ঠকাচ্ছে। তাই সে দিন রিধির সাথে প্রচন্ড ঝগড়া করে তবে রিধি কে কিছু বলতে দেয় আর না রিধির কোনো কথা ওয়াজিদ শুনেছে।
শুনবে কি করে রিধি যে সত্যি আরও একবার দেশে থাকা কালিন অবস্থায় এমন একটা ঘটনা করে ছিল।এবারের ঘটনা মিথ্যা হলেও সেবারের ঘটনা সত্যি ছিল। আর এবারের সত্যি কি ওয়াজিদ কোনো দিন জানতে চাইবে?
এদিকে ওয়াজিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিধির ছবির দিকে।এটা ইতালির একটা রেস্টুরেন্টে যেখানে রিধি শাড়ী পড়ে একটা দোলনায় বসে আছে আর ওয়াজিদ পাশে বসে রিধির দিকে তাকিয়ে আছে। ছবি টা ক্লিক করেছে ওয়াজিদ এর সেখানকার এক ফ্রেন্ড। ছবি টা ছয় সাত মাস আগের হবে।
তখনো তো সে সব পুরনো সৃতি ভুলে আবার নতুন করে বাঁচতে চেয়ে ছিল তবে কেন রিধি সেই একই কাজ আবার করলো?
কেন আগের মতো ওকে ঠাকলো?
দু’টি মনে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন কিন্তু প্রশ্নের উত্তর গুলো কি এক?

———–

সাদনান আজ শপথ বাক্য পাঠ করতে যাবে। আজ তাকে সরকারের পক্ষে হতে পুরো সিকিউরিটি সাথে সব দায়িত্ব দেওয়া হবে
সাদনান শোয়া থেকে উঠে বসে। সকাল ছয় টা বাজে এখন প্রিয়তা নামাজ শেষ আবার ঘুমিয়েছ সাদনান নিজেও প্রিয়তার সাথে নামাজ পড়েছে। কিন্তু সে আর ঘুমায় নি মুলত ঘুম আসছে না।
সাদনান এক পলক প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। বহু দিন হয় নিজের হাতে কফি করে খাওয়া হয় না। বউয়ের হাতে খায় কিন্তু আজ নিজে হাতে বানিয়ে বউ কে খাওয়াবে।
সাদনান নিচে এসে দেখলো লিভিং রুমে সোফায় আম্বিয়া মির্জা বসে আছে। ওনার হাতে চা।
বাড়ির কেউ এখনো উঠে নি শুধু কাজ লোকেরা উঠেছে।
সাদনান লিভিং রুম হতে রান্না ঘর সব চোখ বুলিয়ে নিলো। রান্না ঘরে কেউ নেই ডাইনিং টেবিলে দুইজন কাজের লোক কিছু করছে। সাদনান সব পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

-“দাদু ভাই কোথায় যাচ্ছো?
কফি লাগবে তুমি বসো আমি কাউ কে বলছি।”

আম্বিয়া মির্জা সাদনান কে দেখে বলে উঠে।
সাদনান মুচকি হেঁসে মাথা নেড়ে বলল

-“না দাদি।
কাউ কে বলতে হবে না। আমি করে নিচ্ছি।”

আম্বিয়া মির্জা আর কিছু বলে না।এটা নতুন নয় সাদনান আগে প্রায়শই নিজের কাজ নিজে করে। পড়া লেখার সুবাদে বাড়ির বাহিরে থেকেছে নিজের রান্না বান্না কাপড় ধোঁয়া আর সেই থেকে নিজের কাজ নিজে করে।
তিনি চা চুমুক বসায়।সাদনান মিনিট পাঁচ এক পর ফিরে এলো হাতে দুই টা কফির মগ। আম্বিয়া মির্জা যা দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলেন তিনি কফি খায় না।তবে নাতি কার জন্য কফি বানিয়েছে?
তিনি কিছু বলবে তার আগেই সাদনান কফি নিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে আসে।
প্রিয়তা তখন সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে বসছে।গায়ে সাদা একটা কুর্তি ওড়না পাশেই রাখা।চুল গুলো হাল্কা ভেজা প্রিয়তা আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে ঘড়ির দিকে তাকায়।সাড়ে ছয় টা বাজে এখন নিচে যেতে হবে নয়তো দাদি আবার কি করে বসে আল্লাহ মালুম। প্রিয়তা গায়ে ওড়না জড়াতে যাবে তখুনি একটা গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো

-“ওড়না পড়তে হবে না।
শাড়ী পড়ার কথা ছিল? ”

-“রাতে পড়ে ছিলাম।
আর এখন তো বাহিরে যেতে হবে আপনি নিজে তো না করেছেন বাহিরে শাড়ী পড়ে ন,,,,

প্রিয়তা সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না। তার আগেই সাদনান কফির মগ রেখে এগিয়ে এসে প্রিয়তা কে নিজের কাছে টেনে নেয়।
চুল গুলো নিজের ডান হাত দিয়ে গুছিয়ে দিতে দিতে বলল

-“হুম।
কিন্তু তুমি চাইলে এখন পড়তে পারতে।”

-“এখন তো নিচে যেতে হবে।”

-“রাতে ফিরতে দেরী হবে।”

-“অপেক্ষা করবো।”

সাদনান এর কথার বিপরীতে জানায় প্রিয়তা।
সাদনান মুচকি হেঁসে এগিয়ে যায় সেন্টার টেবিলের দিকে।
এক টা কফির মগ প্রিয়তার হাতে দিয়ে আরেক টা নিজে হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়।
সূর্য মামা লাল আভা ফুটিয়ে উঠে এসছে অনেক টা দেখতে দারুণ লাগছে।
সাদনান মেঝেতে বসে প্রিয়তা কেও টেনে কোলে বসাল।
দু’জনে চুপচাপ বসে সে দিকে তাকিয়ে রইলো।

————-

-“এই মেয়ে একা একা এখানে কি করছো?”

সারা আকস্মিক রাহানের কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো।তবে নিজে কে সামলে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ঘুরালো চার দিকে।
বেশ কয় টা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গেইট এর বাহিরে সাথে অনেক গুলো বাইক।
সারা’র চঞ্চল মস্তিষ্ক খুব দ্রুত বুঝে গেলো এগুলো তার ভাইয়ের সাথে যাবে আজ।
সারা ওড়না দ্বারা চট করে নিজের মাথা সহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে নিলো।
সারার এখানে আসার কোনো যুক্তিগত কারণ নেই এমন-ই হাঁটতে হাঁটতে বাগানে এসে কখন যে বসে পড়েছে সে দিকে খেয়াল নেই।
না, কারণ আছে এই রাহান ভাই কে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তো এমন অবস্থা হলো।
সে দিন রাতের পর আজ দেখা হলো তাদের।রাহান একটা কালো শার্ট পড়ে আছে। সাথে কালো প্যান্ট মুখে ছোট ছোট দাঁড়ি, চুল গুলো অর্ধেক কপালে পড়ে আছে দেখতে দারুণ লাগছে। সারা’র ইচ্ছে করলো চুল গুলো নিজের হাত দ্বারা গুছিয়ে দিতে।কিন্তু সারা’র ইচ্ছে মনেই রয়ে গেলো আর রাহাম
সারা’র ভাবনার মাঝেই ধমকের স্বরে বলল

-“এই মেয়ে এক্ষুনি ভেতরে যাবে।”

-“যাচ্ছি তো।
এভাবে বলার কি আছে।”

সারা শেষ এর কথা টা বিরবির করে বলে।
যা রাহানের কানে যায় না।
রাহান মুচকি হাসে হয়তো প্রেয়সীর কথা না শুনলেও মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে মনে কি চলছে।

#চলবে…..

#আমার_তুমি
#পর্ব_৩১[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

মাইশার আজ শেষ পরীক্ষা।তিন্নি আর ও দু’জনে পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে দু’দিকে চলে গেলো তিন্নি কবির এর গাড়ির দিকে মাইশা আয়ানের বাইকের দিকে এগিয়ে এলো।
আয়ান বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে স্ক্রল করছিল।
মাইশা কে দেখে ফোন পকেটে নিয়ে নিজে বাইকে বসতে বসতে তাগাদা দিয়ে বলল

-“তাড়াতাড়ি উঠে বসো।
আমার একটা জরুরি কাজ আছে।”

মাইশার একটু অভিমান হলো।তার কারণ আজ পরীক্ষা শেষ কই ভেবেছে আয়ান তাকে নিয়ে আজ ঘুরাঘুরি করবে। এখন তো সবাই জানে সব টেনশন করবে না
ওরা এক সাথে থাকলে কেউ কিছু বলবেও না। তবে মুখে কিছু বলে না চুপ চাপ ওঠে বসে বাইকে আয়ান বাইক স্টার্ট দেয়।

————

ওয়াসিফ দেওয়ান বসে আছে মির্জা বাড়ির লিভিং রুমের সোফায়। সামনে হরেক রকমের নাস্তা। পাশেই বসে আছে জাফর মির্জা তার উল্টো দিকের সোফায় আজ্জম মির্জা, মফিজুর মির্জা, রাহাত দাদির পাশে।
সারা আর প্রিয়তার রেজাল্ট দিয়েছে আজ তিন দিন হলো।
দু’জনেই ভালো রেজাল্ট করেছে।
ওয়াসিফ দেওয়ান এর এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য হলো আজ এনগেজমেন্ট এর তারিখ ঠিক করে যাবে।প্রিয়তা সাদনান কে ফোনে এসব বলা মাত্রই সাদনান রাহান কে নিয়ে বাড়ির পথে গাড়ি ঘোরাতে বলে ড্রাইভার কে।
ওরা যাচ্ছিল রিধি কে রিসিভ করতে। রিধি আজ বাংলাদেশ আসছে।
রাহান ওর বাবা কে ফোন দিয়ে রিধি কে রিসিভ করতে বলে দেয়।
রাহান আর সাদনান বাড়িতে প্রবেশ করতেই ওয়াসিফ দেওয়ান লম্বা চওড়া হেঁসে সাদনান কে জড়িয়ে ধরে। রাহানের মাথায় কিছু ঢুকছে না।
বাড়ির মহিলারাও আছে এখানে।
আম্বিয়া মির্জার পেছনে মাইশা চুপটি করে দাঁড়িয়ে। সারা আর প্রিয়তা রুমে।

-“তা আমি চাইছিলাম এনগেজমেন্ট টা সেরে ফেলতে।
এমপি মহোদয় কি বলেন?”

-“আপনার ছেলে?”

সাদনান ওয়াসিফ দেওয়ান কে জিজ্ঞেস করলো। ওয়াসিফ দেওয়ান মুচকি হেসে বলল

-“আমার কথা শেষ কথা।”

-“আমি এটা বলি নি।
যদি আপনার ছেলের কোনো পছন্দ থাকে?”

ওয়াসিফ দেওয়ান কিছু টা থমথমে হলেন।
আশে পাশে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল

-“থাকলে বলতো।”

-“আপনি কি কখনো জিজ্ঞেস করেছেন? ”

ওয়াসিফ দেওয়ান সাদনান এর প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগেই ওয়াজিদ সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
জাফর মির্জা সহ আজ্জম মির্জা ওয়াজিদ কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
ওয়াজিদ সবাই কে শান্ত হতে বলে। অতঃপর বাবার পাশে গিয়ে বসে বলল

-“একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলে না?”

-“তোমার পছন্দ আছে?”

-“না।
তবে তুমি কি জানো তুমি তোমার অজান্তেই ভুল করতে যাচ্ছিলে?”

-“মানে?”

-“তুমি কি এখনো চুপ থাকে থাকবে রাহান?”

ওয়াসিফ দেওয়ান এর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওয়াজিদ রাহান কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে।
রাহান হকচকিয়ে উঠে। সবার দৃষ্টি তখন রাহানের উপর কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।
এ-র মধ্যে জাফর মির্জা আশ্চর্য হলেন।তিনি কিছু টা আন্দাম করতে পারছেন।
কিন্তু এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না। একবার সাদনান এর দিকে তাকালো সাদনান কিছু ইশারা করলে তিনি চুপ থাকেন।নাতির উপর ওনার বিশ্বাস আছে।
আর এটাও শিওর নাতি তার আগে থেকে সব জানতো।
আজ্জম মির্জা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো

-“রাহান কি বলবে?
আমরা তো তোমার সম্পর্কে জানতে চাইছি।”

ওয়াজিদ উত্তর দেয় না।
শুধু একবার আঁড়চোখে সাদনান এর দিকে তাকালো। রাহানও তাকিয়ে অসহায় চোখে সাদনান এর দিকে। তার যে আজ অগ্নি পরীক্ষা দিতে হবে এখানে এসে তাহলে সে কিছুতেই এখানে আসতো না।
তবে কতদিন আর পালিয়ে বেড়াবে একদিকে না একদিন এটা সবার সামনে আসতো তাই মনের শক্তি আর ভালোবাসার জোরে গম্ভীর কণ্ঠে জানালো

-“আমি সারা কে ভালোবাসি।
সারা নিজেও আমাকে ভালোবাসে।বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করে নিন।”

আহ কি সুন্দর নিরদ্বিধায় বলে দিলো কথা টা।সাদনান এর মনে ধরলো কথা টা। সে তো বোধহয় এতো টা সাহস করে শফিক সওদাগরের নিকট বলতে পারে নি।
আচ্ছা সে কি করে চেয়ে ছিল তার ভালোবাসা?
এই তো এখনো মনে পড়ে কি ধমক টায় না আয়ান কে দিয়ে ছিল আর শফিক সওদাগরের কে হুমকি। তবে যা-ই হোক ক’জন পারে এভাবে মেয়ের বাবা কে হুমকি দিয়ে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিতে?
সাদনান এর মনে পড়ে গেলো সে দিনের কথা হোটেলের ভেতর ঢুকেই সোজা শফিক সওদাগরের রুমে চলে গিয়ে ছিল।
অতঃপর ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। বলে ছিল আপনার মেয়ে কে বিয়ে করতে চাই আমি।শফিক সওদাগর আমতা আমতা করে বলে ছিল মেয়ে তো এখনো ছোট।
ব্যস সাদনান এতেই ক্ষেপে গিয়ে ছিল।ততক্ষণে আয়ানও এসে উপস্থিত হয়ে ছিল।
বন্ধুর এমন কথা শুনে বলে ছিল দেখ এটা কি করে হয় ওতো ছোট। সাদনান সে দিন আয়ান কে এক ধমক দিয়ে বলে ছিল তোকে কিছু জিজ্ঞেস করি নি।আয়ান দ্বিতীয় বার আর কিছু বলার সাহস পায় নি।
সাদনান এর এই রূপ ততক্ষণে শফিক সওদাগর বুঝতে পেরেছে আর কিছু বলে লাভ হবে না।
তাইতো বিনাবাক্য রাজি হয়ে হয়ে গেলেন এটা নিয়ে তিনি অবশ্য আজ্জম মির্জা সাথে কথা বলে ছিল। সবাই রাজি ছিল সাথে পুরনো সম্পর্ক আবার বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তাই বেশি ঘাটে নি।
আর সাদনান সে বা কোন দিক দিয়ে কম।
এমন ছেলে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।

-“সারা?”

জাফর মির্জা জোরে ডেকে উঠে সারা কে।
সারা প্রিয়তার হাত চেপে ধরে।
ভয়ে মেয়ে টা একদম চুপসে গিয়েছে। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে।
প্রিয়তা সারা কে আশ্বাস দিয়ে বলল

-“যা কিচ্ছু হবে না।
আর তুই না রাহান ভাই কে এতো ভালোবাসি?
তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন?
যদি রাহান ভাই সবার সামনে বলতে পারে তবে তুই কেন না?
তাছাড়া তোর ভাইয়া তো আছে।”

সারা কিছু টা সাহস পেলো যেনো।
গেস্ট রুম হতে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো লিভিং রুমে।
প্রয়িতাও পেছন পেছন বেড়িয়ে এসে সুফিয়া বেগম এর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ে।
সবাই চুপচাপ নিরবতা পালন করছে।
মূলত সামনে কি হতে পারে তা সেটা ভাবছে।
সারা গিয়ে জাফর মির্জা আর সাদনান এর পেছনে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে ডাকে

-“দাদু।”

সাদনান টেবিলের উপর রাখা নাস্তার ট্টে হতে একটা কাবাব তুলে সেটা মুখে পুরো নিনো।
জাফর মির্জা সে দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে সারা কে নিজের সামনে আসতে বলে।সারা কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনে এসে দাঁড়াল।
জাফর মির্জা গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো

-“রাহান যা বলছে সব সত্যি?”

সারা জাফর মির্জা প্রশ্নে চট করে একবার রাহান এর দিকে তাকিয়ে আবার বাবা বড় ভাই,এক এক করে সবার দিকে তাকিয়ে শেষ সাদনান এর দিকে তাকালো।
সাদনান বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছু ইশারা করতেই সারা বলে উঠলো

-“হ্যাঁ।”

-“যাও।”

জাফর মির্জা সহজ সরল কণ্ঠে আদেশ দেন।
সারা আবারও চার দিকে দৃষ্টি বুলালো।
অতঃপর এগিয়ে গিয়ে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে পড়ে।আজ্জম মির্জা বাবার উপর দিয়ে কোনো কথা বলবে না এটা সাদনান খুব ভালো করে জানা আছে।
সাদনান দাদার দিকে তাকিয়ে নরম কণ্ঠে বলল

-“তুমি যা বলবে তাই হবে।
আর আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না অন্য কারোর ভালোবাসা কেঁড়ে নিতে? ”

সাদনান ওয়াজিদ কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন টা করে।
ওয়াজিদ মুচকি হাসলো।সাদনান যে ভীষণ চালাক সাথে প্রচন্ড ভালো সেটা তার এই তিন মাসের ব্যবহার দেখে বুঝে গিয়েছে।
অবশ্য না বোঝার কোনো উপায় আছে?
সাদনান এর জন্যই তো তার চোখ সত্যি মিথ্যা চিনতে পারলো।
যদি সাদনান এর সাথে সে দিন কথা না হতো? তবে সে এতো টা খুঁজ নিতো বুঝি?
সাদনান বলেছে বলেই তো সে খুঁজ নিয়ে সত্যি টা জানতে পারলো।
এখন নিজের প্রেয়সী কে সে নিজের করে নিবে।
ওয়াজিদ এর ভাবনার মাঝেই জাফর মির্জা রাহান কে বলল

-“কাল বাবা মা নিয়ে আসবে।
বাকি কথা আমি ওনাদের সাথে বলতে চাই।”

#চলবে…….

আমার তুমি পর্ব-২৮+২৯

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৮ [অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সন্ধ্যা ছয় টার বেশি সময় বাজে। সাদনান আর রাহান বেড়িয়ে এলো একটা ভবন থেকে। সেখানে আজ একটা মিটিং ছিল কয়েকজন বড় বড় নেতা ছিল।
সাদনান রাহান দু’জনেই গাড়িতে উঠে বসে। রাহান আজ বাড়ি চলে যাবে। আজ চার দিন ধরে বাড়ি যাওয়া নেই রাহান এর মা আজ ফোন দিয়ে কান্না কাটি করেছে বাড়ি যেতে বলেছে।এক ছেলে তার ভীষণ আদরের আর এক মেয়ে তাকেও কাছে পায় না। সেই ইতালি পারি জমিয়েছে আজ বছর পাঁচ বছর হতে চলে। বলেছে এই বছর দে-শে ফিরে আসার কথা এখন বাকি টা আসলে বলা যাবে।
সাদনান নিজের বাড়ির সামনে নেমে গেলো আর ড্রাইভার কে বলল রাহান কে বাড়ি পৌঁছে দিতে।
সাদনান গেইট দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা মিলে জাফর মির্জা ফোনে কথা বলছে বাগানে দাঁড়িয়ে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো দাদার দিকে।

-“হ্যাঁ, হ্যাঁ।
আপনি চিন্তা করবেন না আমি বাড়িতে আজ রাতেই এই বিষয়ে কথা বলবো।”

-“আচ্ছা আচ্ছা।
আপনি চিন্তা করবেন না।
আচ্ছা তাহলে রাখি।”

জাফর মির্জা কথা শেষ ফোন কেটে পেছন ফিরতেই দেখে সাদনান ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি কিছু বলবে তার আগেই সাদনান বলল

-“সরি দাদু।
কারোর কথা লুকিয়ে শোনা ঠিক না কিন্তু আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই না চাইতেও কথা গুলো আমার কানে গেলো।”

-“ইট’স ওকে দাদু ভাই।
এমনিতেও আমি তোমার সাথে এই ব্যাপারে আজ কথা বলতাম।ওয়াসিফ দেওয়ান ছিল কলে।”

জাফর মির্জা হেঁসে সাদনান এর কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে বলল।
সাদনান বাড়ির সদর দরজায় এসে থামলো।
ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জানালো

-“দাদু আমি ভীষণ ক্লান্ত।
ফ্রেশ হয়ে রাতে কথা বলি।”

-“হুম।
তবে তোমার সাক্ষাৎ কেমন ছিল নেতাদের সাথে?”

-“যেমন টা তুমি আশা করেছিলে।
ওরা ওদের মতো বুঝালো।আমার মতে অফার।”

-“বুঝতে পারছি।
কিন্তু তুমি তোমার মতো করে এগিয়ে যাও।
আর গাড়ির জিপি নেওয়ার ব্যাপার টা কি আগের ঘোষণা থাকবে?”

-“হ্যাঁ দাদু এটা তুমি জানিয়ে দিয়েও।”

সাদনান এর কথা জাফর মির্জা সম্মতি দিলো। আর সাদনান নিজের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো।
নমিনেশন পাওয়ার পর সাদনান ভোট হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো ড্রাইভার থেকে টাকা নিতে না করেছে। এতে ড্রাইভাররা ভীষণ খুশি। তার কারণ রোজ ইনকাম হয় কতো একজন ড্রাইভার এর?তার মধ্যে যদি চাঁদা দিতে হয় তো তাদের থাকে কি?
এটা নিয়ে আগের এমপির কাছে অনেক বার দরখাস্ত করেও কোনো লাভ হয় নি।আর সাদনান নমিনেশন পাওয়ার পর পর সেটা উঠিয়ে দিয়েছে। বলা যেতে পারে ড্রাইভার আর ফুটপাতে দোকানদার সাথে গরিব মানুষের জন্য আজ সাদনান এখানে।
সাদনান রুমে এসে ঘড়ি খোলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।
প্রিয়তা রুমে নেই নিশ্চয়ই রান্না ঘরে না কারণ রান্না ঘরে থাকলে দেখতে পেতো রান্না ঘরে কাজের লোক আর সুফিয়া বেগম ছিল।প্রিয়তা হয়তো দাদির ঘরে নয়তো সারা, মাইশার সাথে।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবি খোলে ফোন হাতে মাইশা কে মেসেজ দেয়।
অতঃপর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
প্রিয়তা মাইশার পাশে শুয়ে ছিল আর ওর ওপাশে সারা।
ওরা গল্প করেছিল এর মধ্যে হঠাৎ মাইশা প্রিয়তা কে বলল

-“ভাইয়া এসছে তুমি রুমে যাও।”

প্রিয়তা একটু লজ্জা পেলে তবে সেটা ধামাচাপা দিয়ে মাইশা কে বলল

-“তোমাকে কত বার বলেছি?
আমাকে আগের মতো তুই করে বলবে।”

-“আরে বাবা ঝগড়া পরে করিস।
এখন রুমে যা।”

মাইশা কথা টা বলতে বলতে প্রিয়তা কে শোয়া থেকে উঠিয়ে রুম থেকে বেড় করে দিলো সাথে সারাও সাহায্য করে।
প্রিয়তা রুমে এসে কাউ কে দেখতে পায় না। কিন্তু সোফায় সাদনান এর পাঞ্জাবি দেখে বুঝতে পারে সাদনান সত্যি এসছে।
প্রিয়তা এগিয়ে সেটা হাতে নিয়ে শ্বাস টেনে নেয়।
অতঃপর সেটা ভাজ করে রাখে।
সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে প্রিয়তা কে দেখলো দরজা বুয়ার হাত থেকে কফির মগ নিচ্ছে।
সাদনান শুধু একটা টাওয়াল পড়ে আছে আর এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত দিয়ে মাথার চুল ঝাঁকিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করছে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে সাদনান এর হাতে কফির মগ টা দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো ফিরে এলো হাতে আরেক টা টাওয়াল নিয়ে।
সাদনান ততক্ষণে সোফায় বসে আছে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে সাদনান এর পেছনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো মুছতে লাগলো।
সাদনান একবার আঁড়চোখে পেছনে তাকিয়ে আদেশের স্বরে বলল

-“সামনে দিয়ে এসো।”

প্রিয়তা শুনলো বাধ্য মেয়ের মতো সামনে দিয়ে এলো।
সাদনান প্রিয়তা কে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।
গলায় মুখ গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল।
সাদনান বিরক্ত হলো।
ভ্রু কুঁচকে বলল

-“খাবার শেষ তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসবে।
মনে থাকবে?”

প্রিয়তা মাথা নাড়ে।আবারও চুল মুছতে শুরু করে। সাদনান কফি শেষ উঠিয়ে গিয়ে একটা ট্রাউজার আর সাদা টি-শার্ট নিয়ে পড়ে নিলো।
প্রিয়তা ততক্ষণে নিচে চলে গিয়েছে।
সাদনানও কাপড় পড়ে নিচে চলে আসে। লিভিং রুমে সবাই বসে আছে। রাহাত, মফিজুর মির্জাও আছে হয়তো তার আসার পর পরই ওনারাও এসছে।
সাদনান সহ এসে দাদার পাশে বসে পড়ে। সবাই টুকটাক সাদনান এর আজকের ঘটনা জিজ্ঞেস করছে কেমন কাটলো দিন সাথে খুব সাবধানের সহিত থাকতে হবে এটা সেটা বাপ, চাচা, দাদা সবাই উপদেশ দিচ্ছে।যদিও সাদনান এর জ্ঞান সম্পর্কে তারা অবগত তবুও বড় হিসেবে তাদেরও কিছু উপদেশ দিতে হয়।
তাদের কথার মাঝেই জাফর মির্জা ওয়াসিফ দেওয়ান এর বলা কথা জানায়।তিনি মাইশা কে ওনার ছেলের জন্য চান। মাইশা সারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আম্বিয়া মির্জার পেছনে কথা টা শোনা মাত্রই মাইশা সারা হাত চেপে ধরে।
সারা আশ্বাস দেয়।ইশারায় বোঝায় ভাইয়া আছে তো।কিন্তু সারা হয়তো জানেই না এই পরিস্থিতি টা ঘুরে-ফিরে ওর উপর আসবে।
এ-র মধ্যেই মফিজুর মির্জা সাদনান এর দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো

-“কিন্তু শফিক ভাই তো আয়ানের জন্য বলে ছিল।”

-“কথা দিয়ে ফেলেছো?”

-“তেমন না দাদু ওনি অনেক আগেই আবদার করেছে।
তাই আর কি।”

সাদনান ফোড়ন কেটে বলে উঠে।
জাফর মির্জা একবার সারার দিকে তাকালো।এর মধ্যে
খাবার এর জন্য ডাক পরে তাই সবাই চলে যায় শুধু সাদনান মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা বসে আছে জাফর মির্জা কিছু বলবে সেই আশায়।

-“আমি ওয়াসিফ দেওয়ান এর সাথে কথা বলবো।”

সবাই সায় জানালো।অতঃপর তারাও ডাইনিং টেবিলে চলে গেলো। জাফর মির্জা ভাবছে সারার জন্য বলবে।যদি রাজি হয়।সমন্ধ টা ভালো হাত ছাড়া করা যাবে না। তবে তার মন বলছে রাজি হবে কারণ মাইশার থেকে সারার একটু লম্বা সাথে চেয়ার ভালো তবে মাইশার থেকে গায়ের রঙ টা সামান্য কালচে।

————

সাদনান ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। প্রিয়তা তখন রুমে এলো আজ কফি আনে নি মুলত সাদনান নিজেই না করেছে আনতে।
প্রিয়তা রুমে এসে সাদনান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো। সাদনান নিজেও তাকালো।
প্রিয়তা ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে সাদনান বলল

-“চলো।”

-“কোথায় যাব?”

-“আহ চলই না।”

সাদনান প্রিয়তার গায়ে একটা চাদরে জড়িয়ে দিয়ে হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
লিভিং রুম তখন একদম ফাঁকা। রাত দশ টা বাজতে চলে সবাই যার যার রুমে।
রান্না ঘরে একজন বুয়া ছিল। সাদনান ওনাকে ডেকে বলল ঘুমিয়ে পড়তে ওরা এক্সট্রা চাবি দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে।
অতঃপর ওরা বেড়িয়ে পড়ে।
সাদনান দারোয়ান এর হাতে গাড়ির চাবি দিলো এতে প্রিয়তার মন টা একটু খারাপ হলো।
সাদনান বউয়ের মন খারাপ এর কারণ বুঝতে পারে।কিন্তু পাত্তা দেয় না।
এখন সে আর আগের মতো সাধারণ নয়। সে না মানলে এটাই সত্যি সেখানে নিজের সিকিউরিটি ছাড়া বাইক নিয়ে বেরুনো টা মোটেও শোভনীয় নয়।

#চলবে…

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৯[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“আপনার বোঝার ভুল হয়েছে মির্জা সাহেব।
আমি প্রথমেই আপনার ছোট্ট নাতনির কথা বলেছি।”

জাফর মির্জা চায়ের কাপ টা মুখে সামনে ধরে ছিল সবেমাত্র। কিন্তু ওয়াসিফ দেওয়ান এর ফোনের ওপাশে হতে বলা কথা টা শোনা মাত্রই তিনি অবাক হয়ে গেলো।চা মুখে নেবার কথা ভুলে গেলো।
খাবার শেষ রুমে এসে ফোন করেছেন ওয়াসিফ দেওয়ান কে।আর মাইশা কে না সারার কথা বলাতে ওয়াসিফ দেওয়ান উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠে।

-“সারা’র কথা?”

জাফর মির্জা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে। ওয়াসিফ দেওয়ান খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব বলে উঠে

-“হ্যাঁ।
আপনি বড় নাতনি কে না তো।”

জাফর মির্জা সহসা কিছু বলতে পারে না। তবে তিনি জানায়া বড় বোনের বিয়ে না দিয়ে তো আর ছোট বোন কে দেওয়া যাবে না।
তাছাড়া বাড়ির সদস্যদের সাথে তো কথা বলতে হবে। তাই তিনি আশ্বাস দিলেন মাইশার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেলেই তিনি সারা’র বিষয়ে কথা বলবে।
জাফর মির্জা সাথে কথা শেষ তিনি তাদের রুমের পাশে বড় গেস্ট রুম টা থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমের দিকে পা বারাতেই দেখলো কাজের মহিলা টা সদর দরজা আটকাচ্ছে।তিনি চায়ের কাপ টা দেওয়ার জন্য বুয়া কে ডাকতেই মহিলা টা এগিয়ে এসে খালি চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে চলে যেতে নিলে তিনি আবারও ডেকে জিজ্ঞেস করলো

-“এতো রাতে দরজা বন্ধ করলে যে কেউ বাহিরে গিয়েছে?”

বুয়া একটু চমকালো।তবে সত্যি টা বললে জাফর মির্জা কিছু বলবে না। তাই তিনি মাথা নুইয়ে জানালো

-“ছোট সাহেব বউ মনিরে নিয়া বাইরে গিয়েছে।”

কাজের মহিলা কথা শেষ করে চলে গেলো।
জাফর মির্জা রুমে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরে দেখলো আম্বিয়া মির্জা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি ভাবলেন হয়তো ওনার দেরী হয়েছে তাই এসেছে।
বউয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল

-“তুমি আসতে গেলে কেন পা ব্যাথা নিয়ে আমি তো যাচ্ছিলাম।”

আম্বিয়া মির্জা কিছু বললো না আগে আগে রুমে চলে গেলো পেছন পেছন জাফর মির্জাও যায়।

———–

সাদনান ড্রাইভিং করছে। প্রিয়তা পাশে বসে আছে এক হাত কোলের উপর আরকে হাত সাদনান তার হাতের উপর ধরে রেখেছে।
বউকে সময় দেওয়া হয় না তার অনেক দিন হয়।শুধু রাতে একটু কাছে পায়।এতো দিন দিতে পারে নি দৌড়াদৌড়ি কাজের চাপের জন্য। আর কাল হয়তো রাত দিন কোনোটাই দিতে পারবে না। তাই আজ সারা রাত বউ কে দেবো রাতের শহর ঘুরবে তারা।
সাদনান বাড়ি থেকে সোজা প্রিয়তাদের স্কুল এর পাশে দক্ষিণ দিকের চায়ের দোকানের সামনে থামায়।
সাদনান প্রিয়তা কে গাড়ি তে বসতে বলে নিজে গাড়ি থেকে বেড় হয়ে দোকানের কাছে গিয়ে দোকানদার কে দুই টা চা দিতে বলে।এখানে আরও দুই তিন টা কাপল +ভার্সিটির কিছু ছাত্র ছাত্রীও আছে। সাদনান গাড়ি তেকে নামার আগে একটা কলো মাস্ক পড়ে নিয়েছে।
তাই তাকে কেউ চিনতে পারে নি।কিন্তু এই দোকানে সাদনান, আয়ান, রাহান, রাহাত মাঝে মধ্যে চা খেতে আসে এটা তাদের সেই স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে ভার্সিটি পর্যন্ত চলেছে নিয়ম করে।কিন্তু এখন আর তেমন আসা হয় না মাঝে মধ্যে আসা হয়। তাই সাদনান কে চিনতে দোকানদার এর ভুল হয় না।
তিনি অবাক হয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে উঠলো

-“ছোট মির্জা?”

সাদনান তৎক্ষনাৎ ফিসফিস করে বলল

-“হ্যাঁ চাচা।
আপনি,,,,

-“বুঝবার পারছি।
আপনার সমস্যা হইবো।আপনি দাঁড়ান আমি এক্ষুনি চা করে দিচ্ছি।”

তিনি কথা বলতে বলতে দুই টা চায়ের কাপ হাতে হঠাৎ থেমে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো

-“আপনি একা আইছেন আজ?
আবার চা দুই,,,,

-“আপনার বউ মা এসছে সাথে, গাড়িতে আছে।”

মধ্যবয়সী দোকানদার সামছুল মিয়া কে থামিয়ে বলে উঠে সাদনান।
সামছুল মিয়ার মুখের হাসি মূহুর্তে গায়েব হয়ে গেলো অবাক হয়ে জানতে চাইলো

-“আপনি বিয়া করছেন?

-“হ্যাঁ চাচা।
তবে এটা আপাতত কেউ জানে না।আমি আপনাকে খুব কাছের মানুষ মনি করি তাই বললাম। আশা করি আমার বিশ্বাস টা রাখবেন।”

-“এই চিনলেন এতো দিনে!
আচ্ছা বউ মা কি এনের?”

-“হ্যাঁ চাচা আয়ানের ছোট বোন।”

সাদনান এর কথায় তিনি হেঁসে ফেলে।তিনি হয়তো কিছু বুঝতে পারে।
অতঃপর চা বানিয়ে সাদনান এর হাতে দেয়।
সাদনান কাপ দু’টো টুলের উপর রেখে পকেট হাতরে ওয়ালেট বের করে একটা পাঁচশ টাকার নোট ওনার হাতে দিয়ে বলল

-“খুচরা নেই।
আরেক দিন এসে চা খেয়ে যাব।”

সাদনান এর কথায় তিনি হাসলো।প্রতি বার এমন করে খুচরো নেই বলে বড় নোট ধরিয়ে দেয়।
তাই তিনি কথা বাড়ায় না মুচকি হেঁসে বলল

-“আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক।”

সাদনান বিনিময়ে হাসলো।অতঃপর সেখান থেকে চলে আসে। দোকান দারের কোনো ছেলে নেই শুধু দুই টা মেয়ে একজন কে বিয়ে দিয়েছে আর একজন এখনো পড়ালেখা করে এবার হয়তো অষ্টম শ্রেণি বা নবম শ্রেণির ছাত্রী হবে।
সাদনান জানালা দিয়ে প্রিয়তা কে বলল গাড়ি থেকে নামতে প্রিয়তা নেমে এলো।
সাদনান একটু এগিয়ে গেলো সামনে অন্ধকার দিক টায় কিন্তু সেখানে গিয়ে একজোড়া কাঁপল এর কথোপকথন কানে আসে।
প্রিয়তা খুব সহজে কণ্ঠ গুলো চিনে ফেলে।
আর মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো

-“কবির স্যার?”

কবির আর তিন্নি চায়ের কাপ হাতে পেছনে ফিরে আবছা আলোয় সাদনান আর প্রিয়তা কে দেখে তিন্নি বলে উঠলো

-“সাদনান ভাই, প্রিয়তা।”

-“ভালো হলো।
দেখা হয়ে গেলো।”

প্রিয়তা মুচকি হেঁসে এগিয়ে গিয়ে বলল।
সাদনান কবির এর সাথে কথা বলে আর তিন্নি প্রিয়তার সাথে।
ওদের সাথে কথা বলে জানতে পারলো কবির, তিন্নি সেই বিকেলে বেড়িয়েছে আর খাবার দাবার ঘুরাঘুরি শেষ তারা এখান থেকে চা খেয়ে বাড়ি চলে যাবে।কিন্তু এখন আর যাবে না তিন্নি আর প্রিয়তা বায়না ধরলো ওরা আইসক্রিম খাবে।
সাদনান আবার মাস্ক টা পড়ে নিয়ে প্রিয়তা কে নিয়ে গাড়িতে বসে।কবির আর তিন্নিও ওদের গাড়িতে যায়।
ওরা সেখান থেকে দশ মিনিট গাড়ি চালানোর পর একটা আইসক্রিম পার্লারে সামনে গাড়ি থামায়।
আর ওরা সেখানে গিয়ে আইসক্রিম অর্ডার দেয়। কিন্তু সাদনান প্রিয়তা কে বেশি খেতে দেয় নি।এখনো হাল্কা ঠান্ডা আছে আবার তার উপর রাত এতো প্রিয়তা অভিমান হয় নি।বরং ভালো লেগেছে কতো দিন পর সাদনান তাকে এমন ভাবে কেয়ার করলো।
ওরা ঘুরাঘুরি শেষ যে যার বাসায় চলে যায়।
তখন হয়তো রাত বারো টা ছুঁই ছুঁই করছে।
সাদনান চাবি দিয়ে সদর দরজা খোলে ভেতরে ঢুকে।অতঃপর আবার লক করে প্রিয়তা কে নিয়ে রুমে চলে আসে। কিন্তু এই পুরো ঘটনা টা আম্বিয়া মির্জা তার রুমের দরজার দাঁড়িয়ে দেখলো।

———

“আমি আপনার জন্য এখানে পড়ে আছি ওয়াজিদ।
আর সেই আপনি আমাকে না বলে দেশে চলে গেলেন?”

ফোনের স্কিন মেসেজ টা জ্বলজ্বল করছে। হোয়াটসঅ্যাপ এসছে এটা।
ওয়াজিদ মেসেজ টা পড়ে ফোন টা মুঠো করে ব্যালকনিতে এসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস টানে।
ঠিক তক্ষুনি হাতে থাকা ফোন টা এবার সশব্দে বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে তাকাতেই দেখলো কল টা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এসছে আর মাঝে গোল একটা পিকচার ভেসে উঠলো একজন স্কুল পড়া ষোড়শী কন্যা স্কুল ড্রেস পড়ে দুই দিকে দুটি বিনুনি হাতের মুঠো পুরো আগে আগে হাঁটছে তার ঠিক পেছনে কলেজ ড্রেস পড়ুয়া ওয়াজিদ মেয়েটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
ছবি টা কবের?এই তো সাত কি আট বছর আগের হবে।
ওয়াজিদ ফোন টা কেটে দিলো।কিন্তু ওপাশের রমণী টা হার মানলো না আবারও কল দিলো।
ওয়াজিদ এবার ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে মিষ্টি একটা কণ্ঠে কান্না ভেজা গলায় বলে উঠলো

-“আর কি করলে আপনি আমার আমায় মেনে নিবেন ওয়াজিদ?”

ওয়াজিদ হাসলো এই মেয়ে টার চোখে তার জন্য ভয়ংকর ভালোবাসা দেখে।কিন্তু, কিন্তু তাহলে সে কেন তাকে কষ্ট দিবে? সেও তো ভালোবাসে কই সে তো এমন করে না।মায়ের পর এই নারী কে সে অন্য চোখে দেখে তার মনে এই নারীর জন্য ভালোবাসা অনুভব করে।
কিন্তু নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে না ওয়াজিদ। নির্বিকার কণ্ঠে শুধালো

-“প্রথম ভুল করেছো মেনে নিয়েছি।আবার একই ভুল তুমি দ্বিতীয় বার করেছো।সেটা কি করে মেনে নেবো? ভুল মানুষ একবার করে,আর সেই একই কাজ বার বার করলে সেটা অন্যায়।”

#চলবে……

আমার তুমি পর্ব-২৬+২৭

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৬[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

“দুই মিনিট এর মধ্যে ছাঁদে এসো”

মেসেজ টা পড়ে সারা আরও একদফা অবাক হলো।
মানে এটা কিভাবে সম্ভব?
এই আইডির কথা একমাত্র মাইশা জানে আর কেউ না কারণ আইডি টা মাইশা নিজে খুলে দিয়েছে।
সেখানে রাহানের এমন কথায় স্পষ্ট যে রাহান সারার আইডি এটা জানে।
তাহলে কি রাহান ভাই জেনে গিয়েছে?
কিন্তু কিভাবে? মাইশা আপু?

“কি হলো আসছো না কেন?”

সারার ভাবনার মাঝেই আবারও টুং করে মেসেজ এর শব্দ হলো।
সারা শোয়া থেকে উঠে বসলো।
মাইশা পাশেই সোফায় বসে আয়ানের সাথে কথা বলছে।
সারা পা টিপে টিপে রুম হতে বেড়িয়ে যেতে নিলেই মাইশা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করে

-“এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস?”

সারা হাল্কা চমকালো।তবে নিজে কে সামলে মনে মনে একটা মিথ্যা সাজিয়ে আমতা আমতা করে জানালো

-“আপু পানি খেতে যাচ্ছি।”

মাইশা পাশে সেন্টার টেবিলে তাকালো সত্যি জগে পানি নেই।

-“তাড়াতাড়ি আসবি যা।”

মাইশার অনুমতি পেয়ে তৎক্ষনাৎ সারা মাথা নাড়িয়ে তড়িঘড়ি করে রুম হতে বেড়িয়ে এলো।
রুম থেকে বেড়িয়ে লম্বা একটা শ্বাস টানে সারা।ভাগ্য ভালো জগে আজ পানি রাখে নি।
সারা চার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
ছাঁদে আসতেই দেখা মিলে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটা অবয়ব এর।
রেলিং এর উপর এক পা ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সারা আলগোছে এগিয়ে এলো।
কেশে রাহানের দৃষ্টি আকর্ষণ এর চেষ্টা করে।
রাহান ফিরলো চাঁদের আবছা আলোয় চকচক করতে থাকা সারার দিকে।
হ্যাঁ চকচকই তো করছে। এই যে রাহান এর নিকট ভীষণ মায়াবী লাগছে।
রাহান এগিয়ে এলো সারা ছোট হাত টা নিজের দানবীয় হাত টার মাঝে মুঠোয় পুরো নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।
চাঁদটার থালার মতো আকার। রাহান চাঁদ টা দিকে তাকিয়ে বলল

-“আমার জীবনেও একটা ব্যক্তিগত চাঁদ আছে।”

সারা’র বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। কে আছে রাহান ভাইয়ের জীবনে?
তবে কি আমি আসার আগে ওনার জীবনে অন্য কেউ এসে পড়েছে?
কথা টা ভাবতেই সারা’র চোখ চিকচিক করে উঠলো।বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো।
বুকে টিপটিপ শব্দ হচ্ছে।
আচ্ছা এটা জানাতেই কি আজ রাহান ভাই তাকে এখানে ডেকেছে?

-“কিছু বলবেন?”

মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে সারা।
অর অকারণেই কেন জানি কান্না পাচ্ছে।রাহান সারা দিকে তাকালো।
সম্পূর্ণ সারা দিকে ফিরে ওর মুখ টা রাহান ওর নিজের দুই হাতের আঁজলে নিলো।
সারা তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল। চোখে টলমল পানি স্পষ্ট। রাহান সহসা হাসলো। এই মেয়ে নিশ্চয়ই অন্য কিছু ভাবছে।
রাহান সারা’র চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে শুধালো

-“আমার চাঁদের চোখে পানি?
একদম শোভনীয় নয়।”

-“মানে?”

সারা ঝটফট রাহান এর হাত গালের উপর থেকে হতে সরানোর চেষ্টা করতে করতে থমথমে কণ্ঠে প্রশ্ন করে।
রাহান ছেড়ে দিলো সারা কে।সারা সামান্য পিছিয়ে গেলো।
রাহান নিজের পরিহিত প্যান্ট এর পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

-“রাত অনেক হয়েছে রুমে যাও।
আরও একটা কথা আমার মনে শুধু দুই জন নারী আছে।
একজন আমার মা দ্বিতীয় জন না হয় নাই বললাম।
তবে এটুকু জেনে রেখে আমরা চোখ সেই নারী ছাড়া অন্য কোনো নারী এই চোখ দেখে না।”

সারা স্তব্ধ। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ঠোঁট জোড়া অনবরত কাঁপছে।

-“আর হ্যাঁ কাল রুম থেকে বেশি বেরোবে না।”

-“কেন?”

রাহানের কথা শুনে সারা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।
রাহান চরম বিরক্ত হলো।
এই মেয়ে সাইজে ছোট হলে কি হবে মনে কৌতুহলে ভরা।শুধু প্রশ্ন করবে পেঁচাবে। বলেছে যখন নিশ্চয়ই কারণ তো আছেই।
তবে বিরক্তি প্রকাশ না করে বলল

-“আগে এটা চেয়ারম্যান বাড়ি ছিল।
বাট এখন এটা এমপি বাড়ি।”

-“তাতে কি হয়েছে?”

সারা আগের মতো আর নার্ভাস না।
কি সুন্দর অবলীলায় প্রশ্ন করেই যাচ্ছে এককের পর এক।
রাহান হাসলো আবারও।বাচ্চা একটা মেয়ে কিন্তু কি সুন্দর নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছে।

-“সেটা না হয় কাল সকালে দেখে নিবে।”

সারা বুঝতে পারে না।
আরও কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই রাহান গম্ভীর কণ্ঠে হুকুম এর স্বরে বলল

-“আমি যেতে বলেছি।”

ব্যাস এটাই যথেষ্ট সারার জন্য। মুখ আধার দেখা মিলে।
এই লোক টা এমন কেন?
একটু ভালো করে কথা বলে না তার সাথে। সব সময় ত্যাড়া কথা বলে।
সারা অভিমান হলো নিজে ডেকে আনলো আর এখন কেমন করছে।
কথা বলবে না লোকটার সাথে।
সারা ছাঁদের দরজা দিকে পা বাড়াতেই রাহান পেছনে থেকে ওর হাত টেনে ধরে।
সারা অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই রাহান মিহি কণ্ঠে বলে উঠলো

-“অভিমান করো না মেয়ে। বুকে তীব্র যন্ত্রণা হবে।
তবে হয়তো সারা রাত ছটফট করতে করতে কেটে যাবে।”

সারা অবুঝ চোখে তাকিয়ে রইলো রাহানের দিকে।
রাহান হাত ছেড়ে দিলো।

দুই পা এগিয়ে এলো।ঠিক সারা’র বরাবর দাঁড়াল। চোখে চোখ রেখে বলল

-“আমার রোজ ঘুমের ঔষধ এর প্রয়োজন হয়।
যখন বাড়িতে থাকি তখন ভীষণ কষ্ট হয়। তাই ভাবছি পুরো ফার্মেসি টা আমার বাসায় নিয়ে যাব।”

সারা এবার হাসলো।
সারা কিছু আন্দাজ করতে পারছে হয়তো।
তাই তো নিজেও রাহানের মতো ফিসফিস করে বলল

-“আপনি ব্যবস্থা করুন ফার্মেসী আপনার বাড়ি যেতে আগ্রহী।”

কথা টা শেষ করে সারা আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না।
চট জলদি পা চালিয়ে নিচে চলে গেলো।
রাহান সে দিকে তাকিয়ে নিজের পাম হাত দ্বারা মাথার পেছনে চুল খামচে ধরে মুচকি হেসে বিরবির করে বলল

-“ভালোবাসার প্রথম প্রণয় হলো তবে।”

———

সাদনান সকালে ঘুম থেকে উঠে বউ কে পাশে পায় না। চোখ তার ভীষণ জ্বলছে। কয় টা বাজে তখন সকাল আটটার বেশি। কতক্ষণ ঘুমালো? এই তো হবে হয়তো ঘন্টা দুই।ঘুমিয়েছে তো একদম শেষ রাতে ভালোবাসার মূহুর্ত শেষ করে সাওয়ার নিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত তো প্রায় শেষ হলো।
ঘুমিয়ে ছিল তো বউ কে বুকে নিয়ে। তবে উঠে গেলো কখন আর সে টেরও পেলো না।
সাদনান উঠে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে মিনিট দশ এক পর বেরিয়ে এলো।কিন্তু বউ তার রুমে আসে নি।সাদনান টাওয়াল টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো আর ঠিক তক্ষুনি দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।সাদনান বুঝতে পারে বউ তার আসে নি বউ আসলে দরজায় নক করতো না তাই গম্ভীর কণ্ঠে অনুমতি দেয় আসার জন্য।
একজন বুয়া এসছে হাতে ধুঁয়া উঠা কফির মগ।সে টা সেন্টার টেবিলে রেখে জানালো নিচে অনেক মানুষ এসছে তাকে ডাকছে সেখানে। তিনি কথা শেষ
আবার চলে গেলো সাদনান কফি টা হাতে নিলো।সেটায় একবার চুমুক দিয়ে নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
সাদনানের কাছে মনে হলো এটা কফি কম শরবত বেশি। তাই আর খেলো না রেখে দিলো সেখানে। অতঃপর নিজেকে পরিপাটি করে ফোন টা হাতে নিয়ে রুম হতে বেরোতেই দেখা মিলে রাহানের। রাহান সাদনান কে ডাকতেই আসছিল। রাহান সহ সাদনান দুইজনে টুকটাক কথা বলতে বলতে নিচে চলে আসে। সাদনান নিচে আসতেই ওর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। গেস্ট দের নিচে একটা রুম আছে সেখানে শুধু রাজনীতির বিষয়ে কোনো সমালোচনা হলে সেখানে হয়। আর তার ঠিক পাশের রুম টায় আম্বিয়া মির্জা থাকে প্রিয়তা সেই রুম হতে বেড়িয়ে আসছে আর একটা ছেলে করিডরে দাঁড়িয়ে ফোন কথা বলছিল প্রিয়তা কে দেখে ছেলে টা ফোন কানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ছেলে টা মোটামুটি মির্জা বাড়ির সদস্য নিয়ে অবগত। কিন্তু এটা কে হতে পারে বুঝতে পারছে না।
ছেলে টার ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা চলে গেলো। ও না দেখেছে পেছন দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে কে আর না দেখেছে করিডরের ওপাশে থাকা সাদনান রাহান কে। ছেলে টা সাদনান কে দেখতে পেয়ে ফোন টা কেটে এগিয়ে আসে রাহান বুঝতে পারে সাদনান রেগে গিয়েছে।
তাই ছেলে টা ওদের সামনে আসার আগে ফিসফিস করে বলল

-“ঝামেলা করিস না।
এমনিতেই হাওয়া বেশ গরম আর বিয়ের খবর টা পাঁচকান হলে সমস্যা হবে।”

সাদনান রাহানের কথা শুনে বাঁকা হাসলো।রাহান বুঝতে পারে এই হাসির মানে।
নিশ্চয়ই ভয়ংকর কিছু তার বন্ধুর মাথায় চলছে।
ওদের কথার মাঝেই ছেলে টা এগিয়ে এলো মুচকি হেসে হাত টা এগিয়ে দিয়ে বলল

-“আমি ওয়াসিফ দেওয়ান এর ছেলে ওয়াজিদ দেওয়ান।
আমি দেশের বাহিরে ছিলাম। কাল রাতে ফিরেছি।”

সাদনান মুচকি হেসে নিজের হাত এগিয়ে হাত মিলায়।
সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন পুরুষ টা আবারও বলে উঠে

-“এনিওয়ে।
Congratulations new এমপি মির্জা সাদনান শাহরিয়া।”

#চলবে…….

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৭[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

সকাল থেকে বাড়িতে এককের পর এক বড় বড় নেতা থেকে শুরু করে দলের সব ছেলেপেলেরা সবাই শুভেচ্ছা জানাতে আসছে।
সাদনান সবার সাথে কম বেশ কথা বলে বাকি দায়িত্ব দাদার আর বাবার উপর দিয়ে রাহান আর আর সিকিউরিটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়বে মিটিং এর উদ্দেশে।আজকে দিন টা শুধু হাতে আছে।কাল আবার অনেক কাজ। শপথ বাক্য পাঠ করতে যেতে হবে।
অনেক কিছু করা বাকি এখনো এমপি হওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।জায়গায় না আসলে জায়গার কদর বোঝা যায় না। এটা হচ্ছে ঠিক তেমন আগে আসতে পারার জন্য কষ্ট করতে হয়েছে জণগণ তাকে ভরসা করে এই স্থানে বসিয়েছে এখন সেই বিশ্বাস ভরসার ভালোবাসার দাম রাখার জন্য কষ্ট করতে হবে। শুনেছে বিপরীত দলের প্রাক্তন এমপি নাকি কাল রাতেই দেশ ছেড়েছে।না ছেড়ে উপায় আছে। জণগণ যা ক্ষেপে আছে হয়তো আগে থেকে আন্দাজ করতে পেড়ে ছিল হেরে যাবে তাই তো আগে থেকে পথ মেপে রেখে ছিল। সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে রেডি হয়ে নিলো।
গায়ে সফেদা পাঞ্জাবি জড়িয়ে আয়নায় দেখে নিলো। চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে নিয়ে দামী ঘড়ি টা হাতে বাঁধতে বাঁধতে দেখে নিলো ক’টা বাজে।
বেলা এখন সাড়ে নয় টার বেশি বাজে।সে নিচ থেকে নাস্তা করে আসার সময় বলে এসছে প্রিয়তা যেনো রুমে আসে।কিন্তু এই মেয়ের তো কোনো খবর নেই। অবশ্য একটু আগে যা জারিজুরি দিয়েছে না আসাটাই গ্রহনযোগ্য। সাদনান বিছানা হতে নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে সেটা পাঞ্জাবির পকেটে পুরে নিলো।সাদনান এর ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ঠিক তক্ষুনি দরজা ঠেলে কেউ ভেতরে এলো।
সাদনান বুঝতে পারে বউ তার রুমে এসছে।
প্রিয়তা সোজা এসে সাদনান এর সোফায় ফেলে রাখা ভেজা টাওয়াল টা নিয়ে ব্যালকনিতে দিয়ে এলো।ফিরে রুমে আসার সাথে সাথে সাদনান প্রিয়তা কে নিজের কাছে টেনে নিলো।আদুরে স্পর্শে করে মাথায় গলায় মুখে। প্রিয়তা তখন দেখছে সাদনান কে।
এই লোক টা আধঘন্টা আগেও কত টা রাশভারী কণ্ঠে তাকে শাঁসালো। একটু তো শুনতে পারতো তার কথা।না শুনেই তো নিজের মতো করে মন্তব্য করে গিয়েছে।
সে কি ইচ্ছে করে নিচে গিয়েছে।
দাদি তো তাকে ডেকে ছিল ওনার নাকি সকাল সকাল পায়ে ব্যাথা করছিল।কাজের লোক সবাই কাজে ছিল বলে তাকে দিয়ে পা মালিশ করাতে।

-“সাবধানে থাকবে।”

সাদনান প্রিয়তার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলে উঠলো। প্রিয়তা অভিমান হলেও তা প্রকাশ করে না। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো

-“কখন ফিরবেন?”

-“তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো।
তবে কখন ফিরতে পারবো সময় বলতে পারছি না।”

সাদনান প্রিয়তার পেট হতে কুর্তি সরিয়ে নিজের হাত দু’টো চেপে ধরে শক্ত করে সেখানে।
প্রিয়তার সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।নিজে কে সামলাতে সাদনান এর পাঞ্জাবি বুকের কাছের অংশ খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
সাদনান সহসা হাসলো।
সেই হাসি ঠোঁটে রেখেই বলল

-“সময় থাকলে অবশ্যই সুযোগ টা কাজে লাগাতাম।
এখন বেঁচে গেলে।”

সাদনান ছেড়ে দিলো প্রিয়তা কে। প্রিয়তাও সড়ে দাঁড়ায়।
সাদনান প্রিয়তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকিয়ে আলগোছে কুঁচকানো পাঞ্জাবি টা ঠিক ঠাক করে গম্ভীর মুখ করে বেড়িয়ে গেলো।

———–

তিন্নি মির্জা বাড়ি থেকে এসেই রান্না ঘরে চলে গেলো। আর কবির ফ্রেশ হতে। সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ এই নির্বাচন এর জন্য অবশ্য কাল থেকে আবার খোলা। কালাম খাঁন অফিস চলে গিয়েছে মির্জা বাড়ি থেকে। নিজের কোম্পানি সেখানে এসব নির্বাচন নিয়ে থাকলে তো আর হবে না।এখন বাড়িতে দুই জন কাজের বুয়া আছে যারা এখন তিন্নি কে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। তিন্নি এই বাড়িতে এসছে পরে রান্না টা নিজেই করে।অবশ্য এটা কবিরের আবদার তার সাতাইশ বছর বয়স ধরে কাজের লোকের রান্না খেতে খেতে সে অতিষ্ঠ। যদিও মাঝে মধ্যে দুই বাপ ছেলে মিলে ছুটির দিনে নিজেরা রান্না করতো তবুও কেমন একটা খালি খালি লাগতো তৃপ্তি হতো না।
তিন্নি তরকারি গুলো রান্না করে ভাত বসিয়ে কাজের লোক কে বলে শাওয়ার নিতে চলে গেলো।গা টা কেমন মেজমেজ করছে কাল সকালে এই বাড়ি থেকে শাওয়ার নিয়ে ওবাড়ি গিয়েছে আর এখন দুপুর হতে চলল।তবুও কাজ
এক্কেবারে সব কমপ্লিট করে যেতে কিন্তু এর মধ্যে কবির চার বার এসে এই একটু সময়ের মধ্যে নিচে ঘুরঘুর করে গিয়েছে। তিন্নি দেখেও না দেখার মতো থেকেছে। কবির নিজের লজ্জা সড়িয়ে তিন্নি কে ডাকতে পারে নি। কিন্তু তিন্নি খুব করে চাইছিল কবির তাকে ডাকুক অধিকার নিয়ে বলুক “তিন্নি এখুনি রুমে এসো” কিন্তু কবির তো এসব কিছু বলে নি তাই তিন্নি ইচ্ছে করে রুমে যায় নি।
তিন্নি রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়।
বুঝতে পারছে না ভেতরে যাবে কি না।যদি কবির ধমক দেয়?
ইশ কেন যে তখন এতো সব অধিকার খুঁজতে গেলো ও তো জানে কবির ওর জন্যই নিচে আসছিল।

-“দুই সেকেন্ড এর মধ্যে ভেতরে এসো।”

হঠাৎ কবির রুম থেকে বলে উঠলো।
তিন্নি চট করে রুমে ঢুকে গেলো।কবির সোফায় বসে ফোনে স্ক্রল করছে।
তিন্নি ভ্রু কুঁচকে নিলো।ওনি তো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে বোঝলেন কি করে আমি এসছে?

-“তুমি যেমন করে বুঝতে পারো।”

তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির কথা টা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো তিন্নির নিকট।
অতঃপর নাক মুখ কুঁচকে বলল

-“তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিতে যাও।”

তিন্নি নিজেও ঘামের গন্ধ পাচ্ছে তবে কবির এভাবে বলাতে একটু লজ্জা পেলো।
তাই কিছু না বলে তড়িঘড়ি করে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
কবির হাসলো।
এই মেয়ে তো কিছু না নিয়েই চলে গিয়েছে সেটা কি খেয়াল করেছে?
অবশ্য ভালোই হলো এই ফাঁকে একটু মজা করা যাবে।

কবির আয়েশ করে আবারও আগের স্থানে বসে গেলো।
নিশ্চিন্তে ফোনে স্ক্রল করতে লাগলো তার ঠিক সাত আট মিনিট এর মাথায় তিন্নির কণ্ঠ ভেসে এলো

-“আপনি একটু বাহিরে যান।”

-“কেন?”

কবির সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
তিন্নির ভেজা চুল আর গলার কিছু টা অংশ দৃশ্যমান। এতেই কবির এর হার্ট টিপটিপ শব্দ করতে লাগলো।
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।
অতঃপর আলগোছে এগিয়ে গেলো।ওয়ারড্রব এর দিকে।সেখান থেকে একটা শাড়ী আর তার সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এগিয়ে এলো তিন্নির নিকট।
তিন্নি নিজের হাত টা কনুই পর্যন্ত বেড় করে কাপড় হাতেই নিয়ে ভ্রুকুঁচকে নিলো।

-“কুর্তি দিন না।
শাড়ী কেন?”

-“যা দিছি পড়ো নয়তো যেভাবে আছো সেভাবেই এসে নিজের পছন্দ মতো ড্রেস নাও।
তবে হ্যাঁ আমি রুম থেকে কোথাও যাচ্ছি না।”

তিন্নি অসহায় মুখ করে ওয়াশ রুমের দরজা টা বন্ধ করে দিলো।কবির মুচকি হেঁসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো।
কয় দিন পর পরীক্ষা অনেক কাজ।
কবির কাজ করছে এক মনে। এদিকে তিন্নি কোনো রকম শাড়ী টা গায়ে পেঁচিয়ে বেড়িয়ে এলো। ওয়াশ রুম কি শাড়ী পড়া সম্ভব? মোটেও না এমনিতেই হঠাৎ হঠাৎ পড়ে তার মধ্যে বারো হাত একটা শাড়ী চিকনা এই শরীর টায় সামলাতে বেশ কসরত করে হয়।
তিন্নি শাড়ী টা কোনো রকম ধরে মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে কবির এক সামনে দাঁড়াল। মিনমিন করে অনুরোধের স্বরে বলল

-“প্লিজ এখন তো যান।”

কবির শুনলো তবে আমলে নিয়েছে বলে মনে হলো না। সে ল্যাপটপ কোলে হতে নামিয়ে সাইডে রেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো তিন্নির কাছে অতঃপর তিন্নির শরীরের রেখেই শাড়ীর আঁচল টা ঠিক করে দিলো আলগোছে।
তিন্নি তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নিয়ে। সারা শরীর যেনো তার অবস হয়ে গেলো। যদিও কবিরের হাতের স্পর্শ ওর শরীর পড়ে নি তবুও কেমন একটা লাগছে ওর।কবির ধীরস্থিরে শাড়ী কুঁচি গুলো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে সে গুলো তিন্নির হাতে দিয়ে ইশারায় গুঁজে নিতে বলে।
তিন্নি আলতো হাতে কুঁচি গুলো গুঁজে নিলো।কবির এর মধ্যে গিয়ে আবার নিজের স্থানে বসে পড়ে।
তিন্নি শাড়ী টা ঠিক ঠাক করে মাথা থেকে টাওয়াল টা খুলে ব্যালকনিতে চলে এলো।

আর ঠিক তক্ষুনি রুম থেকে কবির বলল

-“শুনো।
আজ বিকেলে আমরা বেরবো।”

-“কোথায়?”

তিন্নি রুমে আসতে আসতে জিগ্যেস করে।
কবির ল্যাপটপ এর ডিসপ্লের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠলো।

-“গেলই দেখতে পাবে।”

————-

-“শুনলাম মাইশার বিয়ে কথা চলছে।”

-“হ্যাঁ,ঠিক শুনেছেন।

ওয়াসিফ দেওয়ান এর কথায় জাফর মির্জা চওড়া হেঁসে জানালো।
ওয়াসিফ দেওয়ান নিজেও হাসলো জাফর মির্জা সাথে তাল মিলিয়ে বলল

-“আমার ছেলে কে তো দেখেছেন?”
কাল রাতেই ইতালি থেকে ফিরেছে।”

-“হুম। আগের চায় দেখতে কিন্তু অনেক টা বদলে গেছে।
আমি তো প্রথমে চিনতে পারছিলাম না।”

-“আমার একটা আবদার আছে।”

-“কি যে বলেন আপনি।
একবার শুধু বলে দেখুন আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সেই আবদার পূরণ করার চেষ্টা করবো।”

-“আমি আপনার ছোট নাতনি কে আমার ছেলের জন্য চাইছি।”

জাফর মির্জা কথা টা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো। কিন্তু বুঝতে পেরে মুখের হাসি আরও কয়েক গুণ বাড়লো।

#চলবে….

আমার তুমি পর্ব-২৫

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৫[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

বেশ রাত করে ভোট গণনা করার পর জানা গেলো বিপরীত দলের চেয়ে দিগুণ ভোটে জয় লাভ করেছে মির্জা সাদনান শাহরিয়া।
ড্রয়িং রুমে টিভির সামনে মির্জা বাড়ির প্রতি টা মহিলা সদস্য তখন বসে আছে।
এই খবর পাওয়া মাত্র সবার খুশির শেষ নেই।
আম্বিয়া মির্জা তো খুশিতে প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে ফেলে।
প্রিয়তা অবাক। বিস্ময় নিয়ে সালেহা বেগমর দিকে তাকালো। তিনি মুচকি হাসে।প্রিয়তা ওনার পাশেই বসে আছে সেই সুবাদে জড়িয়ে ধরা টা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

——————-

রাত একটা নাগাদ সাদনান সহ বাড়ির প্রতি টা পুরুষ সদস্য বাড়িতে এলো।
সাথে কবির আর কালাম খাঁনও আছে।
আজ রাত টা তারা এখানেই থাকবে।বাড়ির সবাই তখন ঘুমে জুবুথুবু হয়ে আছে।
লিভিং রুমে শুধু সালেহা বেগম আর সুফিয়া বেগম বসে আছে।সবাই কে ফ্রেশ হতে বলে দুই জা মিলে কাজের লোক এর সাহায্য নিয়ে খাবার এর ব্যবস্থা করতে চলে গেলো। এতোক্ষণ
প্রিয়তা, সারা,আয়না,মাইশাও তাদের সাথে ছিল কিন্তু ওদের ঠেলেঠুলে রুম পাঠিয়ে দিয়েছে ওনারা।
কিন্তু রুমে গিয়েও কি ওরা ঘুমিয়েছে?
উঁহু, এই তো সাদনান ক্লান্ত দেহ টা টেনে নিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই দেখা মিলে বউয়ের। গুটিশুটি মেরে বসে আছে সোফায়।
প্রিয়তা পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে সাদনান কে দেখে চট করে উঠে এলো সোফা ছেড়ে। এগিয়ে এসে
এলোমেলো হাতে পাঞ্জাবির উপর তিন টা বোতাম খুলে লোমযুক্ত উন্মুক্ত বুক অধর ছুঁয়ে দিলো।
সাদনান ঠোঁট এলিয়ে হাসে।
এটা এখন প্রিয়তা সাদনান বাড়ি ফিরলে রোজ করে।
তবে সাদনানের আজ অন্য কিছু চাই।

-“এটুকু যথেষ্ট নয়।
আরও কিছু চাই।”

কথা শেষ করে সাদনান নিজের অধর দিয়ে বউয়ের অধর চেপে ধরে।
প্রিয়তা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো। তবে বুঝতে পরে নিজেও সঙ্গ দেয় স্বামীর।বেশ অনেক টা সময় নিয়ে সাদনান বউয়ের অধর ভালোবাসার পরশ দিয়ে ছেড়ে দেয়।
প্রিয়তা মাথা নুইয়ে দূরে সরে দাঁড়াতেই সাদনান এক টানে নিজের গায়ের সাদা পাঞ্জাবি টা খুলে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে।
এখন গায়ে শুধু একটা চিকন ফিতার সাদা গেঞ্জি হাতের মোটা পেশিবহুল দৃশ্যমান।এই শক্ত পোক্ত পেটানো শরীর টা প্রিয়তা নিকট বেশ লাগে। প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ব্যালকনি হতে টাওয়াল নিয়ে আসে সাদনান বউয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
প্রিয়তাও গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
সে নিচে আসতেই সালেহা বেগম সাদনানের খাবার থালা টা প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল

-“নিচে আসার প্রয়োজন নেই।
কম দখল যায় নি সারা দিন। ”

প্রিয়তা ভীষণ খুশি হলো তবে তা প্রকাশ করে না। ওর ইচ্ছে করছিল খাবার টা রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু এটা বললে কেমন দেখায় তাই বলে নি কিছু। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার সালেহা বেগম এটা নিজ থেকে বলল।
প্রিয়তা খাবার টেবিলে বসা সবার দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে উপরে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
তিন্নি সে দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যি প্রিয়তার দেখতে অসম্ভব সুন্দর। গায়ের রঙ টা বেশি সাদা নয়। তবে যে কেউ এক দেখে পছন্দ করবে।
এই সতেরো বছর বয়সে যেই মেয়ে এতো টা সুন্দর সেই মেয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী হলে কেমন লাগবে?
তিন্নি কবিরের দিকে তাকায়
কবির এক মনে খাবার খেয়ে যাচ্ছে কবির এর পাশেই তিন্নি দাঁড়িয়ে আছে।
কবির ওকে সব বলেছে। তিন্নির কষ্ট হয় নি বরং খুশি হয়েছে যে কবির তাকে সব সত্যি বলেছে। ঠকাতে চায় নি।
একটা সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা জরুরি। আর কবির সেটাই রক্ষার্থেই তার সব অতীত বলে দিয়েছে যাতে করে পরবর্তীতে তিন্নি এসব জানলে ওর কক্ষণো খারাপ না লাগে মনে যেনো না হয় কবির তাকে ঠকিয়েছ। যে অন্য কাউ কে মনে রেখে ওকে ভালোবাসার অভিনয় করেছে মনের বিরুদ্ধে সংসার করেছে।যদিও এখন কবির এর মনে তেমন কিছু নেই
আর এমনিতেও ওই সব এর কোনো ভিত্তি নেই।
তবুও মন টা তো একবার না একবার সেই নিষিদ্ধ জিনিস টা বড্ড নিজের কেরে পাওয়ার জন্য উতলা ছিল।
এটা কবির কে এখন কেমন বুকের মাঝে যন্ত্রণা দেয়।
খাবার শেষ তিন্নি কবির কে নিয়ে সারা রুমে চলে আসে। সারা মাইশার সাথে থাকবে। গেস্ট রুমে কালাম খাঁন আর রাহান থাকবে।
তিন্নি রুমে এসেই বিছানা গুছিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকে।
কবির ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল আয়নায় নিজে কে একবার দেখে নিলো।
তিন্নি সে দিকে তাকিয়ে রইলো।
কবির রাহাত এর একটা গাঢ় সবুজ রঙের গেঞ্জি পড়ে আছে।
আর পড়েন সেই সকালে বাড়ি থেকে পড়া আসা কালো প্যান্ট।
কবির চুল গুলো হাত দিয়ে আঁচড়ে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে

-“ঘুমাও নি কেন?”

-“আপনি বাহিরে ছিলেন।”
ঘুম আসছিল না।”

-“এখন আসবে? ”

-“একদম।
কোনো ভুল নেই।”

তিন্নি আনমনে বলে উঠে।
কবির আঁড়চোখে সে দিকে তাকিয়ে হাসলো।
বড্ড ভালোবাসে মেয়ে টা তাকে।কোনো সন্দেহ নেই এতে।
কবির নিজেও বাসে।
কিন্তু কত টা?
যত টা হলে প্রথম অনুভূতি ভুলে থাকা সম্ভব। পুরনো সব ভুলে নতুন করে ভালোবাসতে মন চায় সুন্দর একটা জীবন চায় ভালোবেসে সংসার করা যায়।
আচ্ছা সংসার টা কি হচ্ছে তাদের মাঝে?
নাকি শুধুই তার প্রথম অনুভূতি ভুলে থাকতে?
আচ্ছা এটা নিয়ে তিন্নির কি খারাপ লাগে?
অবশ্যই লাগে বিয়ের তিন মাসেও যদি স্বামী ভালোবাসা না পায় তবে শুধু খারাপ কেন মেয়ে নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে।
আর দিবে না আর দুই মাসেই তো।তার পর অনেক ভালোবাসা দিবে গুছিয়ে সংসার করবে।
কবির এক দৃষ্টিতে তিন্নির দিকে তাকিয়ে আছে।
সে দিন সকালে যখন ঘুম থেকে উঠার পর কবির এর রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে তখন ভীষণ অবাক হয়েছে তিন্নি সাথে ভেবেছে ঘুমের ঘোরে হয়তো এসে পড়েছে। কিন্তু কবির যখন বলেছিল সে নিজেই এনেছে আর আজ থেকে এই রুমে থাকবে। তখন তিন্নি আরও অবাক হয়েছে।
কারণ এর আগে কবির প্রিয়তা কে নিয়ে তার মনে ভেতর এক সময় তৈরি হওয়া অনুভূতি গুলো বলে ছিল।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির এসে তিন্নি কে ঝট করে কোলে তুলে নেয়।
তিন্নি আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠে।
তড়িঘড়ি করে কবির এর বুকের কাছে খামচে ধরে।
কবির ভ্রু কুঁচকে নেয়।
তিন্নির হাতের নখ ছোট কিন্তু যা আছে এতেই বেশ বিঁধে যায়।
কবির কুঁচকানো ভ্রু জোড়া সোজা করে চোখে দুষ্ট হেসে বলে উঠে

-“এখনি এই অবস্থা।
সম্পূর্ণ সব হলে আমাকে সামলাবে কি করে? ”

তিন্নি লজ্জায় আরও একদফা গুটিয়ে গেলো।
নিজের লজ্জা রাঙা মুখ লোকায় কবির এর বুকে।
কবির ততক্ষণে সারার রুমের সাথে লাগানো ছোট ব্যালকনি টায় এসে পড়ে।
মেঝেতে থাকা কার্পেট এর উপর নিজে বসে তিন্নি কেও নিজের কোলে বসায়।
তিন্নির জামার উপর দিয়ে নিজের দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে।
তিন্নি হাল্কা কেঁপে উঠল।
কবির তিন্নির কাঁধে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল

-“রাত শেষ হয়ে যাবে।
আর এই শেষ রাতে আমরা চন্দ্র বিলাস করবো।”

কথা শেষ কবির তিন্নির কানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
অতঃপর দু’জনেই দূর আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে থাকে।

————

মাইশা ফোনে কথা বলছে আয়ান এর সঙ্গে।
সারা কেও পরীক্ষার পর ফোন দেওয়া হয়েছে। সে ফোনটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মূলত রাহান এর আইডিতে একটু আগেই নিজের আগের প্রোফাইল টা চেঞ্জ করেছে রাহান। সেখানে অনেক গুলো রিয়েক্ট আর শখানেক কমেন্ট। এর মধ্যে বেশির ভাগ মেয়ে।
সারার এসব দেখে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ওনার ছবিতে কেন এতো মেয়ে কমেন্ট করবে?
সারাও একটা আইডি খুলেছে নিজের নাম না অন্য নাম দিয়ে। আর সেটা দিয়ে রাহান কে ফলো দিয়ে রেখেছে রাহান ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করে নি।
সারার এসব ভাবতে গিয়ে কখন যে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে বুঝতেই পারে নি।
চোখের পানি টা মুছেই ফোনের ডাটা অফ করার জন্য ডাটা অপশন অফ করতে গিয়ে টুং করে একটা মেসেজ এলো।
সারা ডাটা অফ না করে মেসেজ টা চেক করে ওর চোখ কপালে।
রাহানের আইডি থেকে মেসেজ এসছে।

———–

খাবার শেষ প্রিয়তা এঁটো থালা টা সেন্টার টেবিলে রেখে দেয়।
এতো রাতে আর নিচে যাবে না। অতঃপর হাত ধুয়ে আসে।
সাদনান সোফায় বসে তখন ল্যাপটপ কোলে কিছু করছে।
প্রিয়তা ওড়না পাশে রাখে বিছানা গুছাতে লাগলো।
আর প্রিয়তার লম্বা মোটা চুলের বিনুনি টা তখন এদিক সে দিক কাজের সাথে সাথে দোল খেয়ে যাচ্ছে।
সাদনান কাজ ফেলে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।

-“আসুন শুয়ে পড়ুন।
বাকি সব কাজ কাল করতে পারবেন।”

সাদনান এর ঘোর কাটে।
ল্যাপটপ সোফায় রেখে আলগোছে ওঠে আসে।
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বউ কে। প্রিয়তা অনাকাঙ্খিত স্পর্শে কেঁপে উঠল।
তবে নিজে কে সামলে নিলো।
মিনমিন করে বলল

-“ক্লান্ত আপনি শুয়ে পড়ুন।”

সাদনান শুনে না। প্রিয়তার উন্মুক্ত পেটে নিজের হাত চেপে বুকের সাথে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলল

-“আমার সব ক্লান্তি তোমার এই মুখ দেখলে দূর হয়ে যায়।
তোমার এই ছোট্ট ছোট্ট হাতের স্পর্শ আমাকে হাজার অশান্তির মাঝে শান্তি দেয়।আমার মনে হাজার উতালপাতাল শান্ত করে দিতে তোমার এই মিষ্টি কণ্ঠ যথেষ্ট আমার জান।”

#চলবে……

আমার তুমি পর্ব-২৪

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৪[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নত_সুলতানা

তিন্নি শাড়ী টা পড়ে বসে আছে বিছানায়। আর একটু পর পর নিজের শরীরের দিকে তাকাচ্ছে। আর লজ্জা পাচ্ছে।
শাড়ী পড়েছে ঠিক তবে শরীরে প্রতি টা ভাঁজ স্পষ্ট। সাথে ব্লাউজ এর হাতা গুলো স্লিভলেস।
এখন এটা পড়ে কবির এর সামনে কি করে যাবে তিন্নি বুঝতে পারছে না।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির হাতে ঘড়ির ফিতা বাঁধতে বাঁধতে রুমে প্রবেশ করে বলে উঠে

-“আর কতক্ষণ হ,,,,,

কবির আর কিছু বলতে পারে না।
তিন্নির দিকে তাকিয়ে কবিরের চোখ আটকে যায়।তিন্নি বেশি সাজে নি খোলা চুল চোখে হাল্কা কাজল আর ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। কানে এক জোড়া ইয়ার রিং গলায় ছোট একটা লকেট যে গুলো কবির বিয়ের দিন দুপুরে তিন্নি নিজে হাতে পড়িয়ে দিয়ে ছিল।
এই রূপ কবির কে জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম এটা কি সামনে বসা রমণী জানে?
উঁহু জানবে কি করে কখনো বলা হয় নি যে।
আচ্ছা মেয়ে টা এতো টা মায়াবী আগে তো কখনো চোখে পরে নি।নাকি ভালোবাসার মানুষ টা যেমনই হোক ভালোবাসার মানুষটার কাছে সবচাইতে বেশি সুন্দর?
এদিকে তিন্নি লজ্জায় গুটিয়ে আছে।
সে চুপ করে মাথায় নুইয়ে দৃষ্টি মেঝেতে ফেলে রেখেছে।
কবির হাসলো।
একটু এগিয়ে গিয়ে তিন্নির ডান হাত টা ধরতেই তিন্নি কেঁপে উঠল।
মাথা তুলে কবিরের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও মাথা নুইয়ে নিলো।

-“মিসেস খাঁন আমাকে মারার প্ল্যান করেছে বুঝি?”

তিন্নি কবির এর কথার মানে বুঝতে পারে ছোট নয় ও।
তাই তো আরও কিছু টা গুটিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু কবির কি গুটিয়ে থাকতে দেয়।
সে তো টেনে দাঁড় করালো তিন্নি কে। অতঃপর ড্রেসিং আয়নার সামনে দাঁড়াল।
তিন্নির চাইতে কবির একটু লম্বা হওয়ার দরুনে ঘাড় নুইয়ে কবির নিজের থুতনি ঠেকিয়ে তিন্নির কাঁধে। দুই হাত রাখে তিন্নির পেটের উপর।
তিন্নি তখনো চোখ বন্ধ সাথে কাঁপা কাঁপি তো আছেই।
কবির তিন্নির অবস্থা বুঝতে পারে।
তাই তিন্নি কে স্বাভাবিক করতে ঠোঁট টিপে হেসে বলল

-“এখুনি কিছু করছি না।
তাই এতো কাঁপা কাঁপির কিছু নেই।”

কথা শেষ কবির তিন্নি কে ছেড়ে দিয়ে হো হা করে হেঁসে দিলো।
অতঃপর ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে এক জোড়া চুড়ি তিন্নির হাতে পড়িয়ে দেয়।
তিন্নি একটু স্বাভাবিক হয়।চুড়ি গুলো কবির দিয়েছে কিন্তু তিন্নি পড়ে না ওগুলো। সব সময় নরমাল চুড়ি পড়ে থাকে কারণ কবির যে গুলো দিয়েছে সে গুলো গোল্ড।
আর তিন্নি খুব সাধারণ ভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করে। আর তাই এগুলো ওর কাছে বিলাসিতা লাগে।
কবির চুড়ি পড়িয়ে দিয়ে আলমারি খোলে সেখান থেকে একটা চাদর বেড় করে তিন্নির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল

-“আমি চাই না এই রূপ আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ দেখে।”

তিন্নি অবাক হল তবে মনে মনে বেশ খুশি হলো।
কারণ ওর ভীষণ অস্বস্তি লাগছিল।

-“চলো যাওয়া যাক।”

তিন্নি সম্মতি দেয়।
কবির তিন্নির হাত ধরে বেড়িয়ে আসে বাড়ি থেকে।
কবির ড্রাইভার নিয়েছে।
ওরা পেছনে বসেছে। তিন্নি জানে না ওরা কোথায় যাচ্ছে একবার অবশ্য কবির কে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু কবির বলে নি শুধু জানিয়েছে গেলেই দেখতে পাবে।
গাড়ি চলছে নিজ গন্তব্যে তবে তিন্নির রাস্তা টা ভীষণ চেনা লাগছে।
লাগছে না এটাই তো সেই রাস্তা যেটা দিয়ে এতিম খানায় যায় আগে তিন্নি যেখানে থাকতো সেখানে।
তবে কি ওরা সেখানে যাচ্ছে? না যাচ্ছে না গাড়ী টা এসে এতিম খানার গেইট এ থামে দারোয়ান গেইট খুলে দেয় গাড়ী ভেতরে প্রবেশ করে।
তিন্নি কবির গাড়ী থেকে নামে।
আর অমনি ভেতর হতে অনেক গুলো বাচ্চা সহ পাঁচ জন মহিলা বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে।
সবাই এসে এক সাথে তিন্নি কে জন্ম দিন এর শুভেচ্ছা জানায়। তিন্নি স্তব্ধ কবির ড্রাইভার কে কিছু ইশারা করতেই ড্রাইভার গাড়ি থেকে বেড়িয়ে পেছনে গিয়ে গাড়ির ডিঁকি খুলে সেখান থেকে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ এনে তিন্নি আর মহিলা গুলোর হাতে দেয়।
কবির তিন্নির দুই বাহুতে হাত রেখে মুচকি হেঁসে বলে উঠে

-“happy birthday..

তিন্নির চোখে পানি চিকচিক করছে।
কবির বুঝতে পারে মেয়ে টা অতি খুশিতে চোখে পানি চলে এসছে।

-“এগুলো সবাই কে দাও।”

তিন্নির হাতের শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলে।

তিন্নি সব গুলো বাচ্চা কে দিলো এগুলোর ভেতর সবার জন্য এক সেট করে কাপড় আছে।
সবাই ভীষণ খুশি বাচ্চা গুলোর খুশি থেকে তিন্নি কবির কে ধন্যবাদ দিলো।
কবির মুচকি হেসে বলল

-“আর আমার পক্ষ হতে আল্লাহ কে ধন্যবাদ এতো সুন্দর মনের একজন মানুষ কে আমার জীবনে দেওয়ার জন্য।
তাও আবার আমার জীবন সঙ্গী করে অর্ধাঙ্গিনী রূপে।”

তিন্নি উত্তর করে না।
সে সবাই কে দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
মুগ্ধ হয়ে দেখছে সব বাচ্চা গুলো কে। সে-ও এক সময় এরকম ছিল এদের মতো এতিম। তিন্নি কে না-কি এখানের একজন মহিলা রাস্তায় পেয়ে ছিল কেউ ফেলে দিয়ে ছিল হয়তো তিন্নির বয়স তখন কত হয়তো দুই বা তিন দিন ছিল।
তবে ওনারা তিন্নি কে যে দিন পেয়েছে সে দিন থেকে এই দিনে তিন্নির জন্ম দিন পালন করে সাথে সার্টিফিকেট সব জায়গা এই তারিখ ব্যবহার করে।
রাত একটা নাগাদ ওরা খাবার দাবার শেষ বাড়ি ফিরে আসে।
এর মধ্যে তিন্নি গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ে কবির তাই তিন্নি কে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে রাখে।
বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নেমে কবির তিন্নি কে নিজে কোলে করে এনে নিজের রুমে শুয়ে দেয়।
আর নিজেও ফ্রেশ হয়ে এসে তিন্নি কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

—————-

সকাল থেকে মির্জা বাড়ি শুনশান নীরবতা। কেমন থমথমে পুরো পরিবেশ আজ নির্বাচন। কবির তিন্নি আজ মির্জা বাড়ি এসছে।
মূলত কবির আর কালাম খাঁন ভোট কেন্দ্রে চলে যাবে তাই কবির তিন্নি কে এখানে রেখে যাবে।
সাদনান সেই সকালে বেড়িয়ে গেছে বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক নেই।
কবিরও তিন্নি কে দিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে গেলো।
কেন্দ্রে কিছু ঝামেলা হয়েছে বিপক্ষ দল না-কি ভুয়া ভোট দিতে এসে ধরা পড়ে গিয়েছে।
এটা নিয়ে ছেলে রা ক্ষেপেছে গিয়েছে।
এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল আর জয় সাদনান এর হবে বলে সবার ধারণা।
এখন বাকিটা ভোট গণনার পর বোঝা যাবে।

মির্জা বাড়ির সারা, প্রিয়তা,মাইশা বাদে সবাই গিয়েছে ভোট দিতে।
সবাই বারো টার দিকে দিয়ে চলে এসছে এখন বিকেল হয়ে গিয়েছে।
সালেহা বেগম এর শরীর খারাপ আম্বিয়া মির্জা চিন্তায় চিন্তায় সারা দিন কিছু খায় নি তাই ওনাকে এখন সুফিয়া বেগম জোর করে খাবার খাইয়ে ঘুমের ঔষধ দিয়েছে।
প্রিয়তা সারা দিন কেমন মন মরা হয়ে থেকেছে। তাই সারা, মাইশা, তিন্নি, আয়না ওর সাথে সাথে সারা দিন রয়েছে।
মাইশা ফোন হাতে এই মাত্র রুম হতে বেড়িয়ে ছাঁদে চলে আসে।
আয়ান কে মেসেজ দিয়েছে।
আয়ান বলে বলেছে মেসেজ করার মতো পরিস্থিতি নেই তবে ফোনে সর্ট কার্ট কথা বলতে পারবে।
মাইশা ছাঁদে আসার সাথে সাথে আয়ান এর ফোন আসে।
রিসিভ করতেই ওপাশ হতে আয়ান জিজ্ঞেস করে

-“প্রিয়তা খাবার খেয়েছে?”

-“নাহ সকালে মা অনেক জোর করে একটু খাইয়েছে আর খায় নি।”

-“কিছু বলছে?”

-“হ্যাঁ আপনি কি করে বোঝলেন?”

-“আমার বোন আমার জানা আছে।
তাড়াতাড়ি বলো বায়না কি ধরেছে?”

-“ভাইয়ার সাথে কথা বলতে চায়।
কিন্তু এটা কি সম্ভব?”

-“আমি দেখছি।”

আয়ান ফোন কাটে। মাইশা ফোন হাতে নিচে চলে আসে।
নিচে আসতেই হাতের ফোন টা আবারও সশব্দে বেজে উঠে।
এটাও আয়ান এর ফোন।
মাইশা ভাবে হয়তো কিছু বলবে তাই রুমে না এসে কল টা রিসিভ করে।
কিছু বলবে তার আগেই সাদনান এর গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো

-“ফোন টা ওর কাছে দে।”

মাইশা তৎক্ষনাৎ দৌড়ে রুমে এসে ফোন প্রিয়তার হাতে দেয়।
প্রিয়তা প্রশ্নবোধক চাহনি দেয় মাইশার দিকে মাইশা ইশারায় ব্যালকনিতে যেতে বলে।
প্রিয়তা কি ভেবে কিছু না বলে উঠে চলে যায়।
ফোন কানে নিতেই সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে

-“খাবার কেন খাও নি?”

-“আপনার ফোন কেন বন্ধ?
কখন বাড়ি আসবেন?”

প্রিয়তা সাদনান এর করা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো অস্থির হয়ে নিজে জিজ্ঞেস করে।
সাদনান হয়তো হাসলো।
অতঃপর মৃদু কণ্ঠে জানায়

-“আসবো অপেক্ষা করো খুব শীগগির সুখবর নিয়ে।
জানো তো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়?”

-“হুম।
অপেক্ষা করবো খুব তাড়াতাড়ি চলে আসুন।”

#চলবে….

আমার তুমি পর্ব-২৩

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২৩[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“মানে?”

সারা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
রাহান খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়

-“মানে সারা দিন খারাপ লাগছিল।
এখন সব ঠিক আছে।”

সারা কুঁচকানো ভ্রু জোড়া শীতল হলো।
এ-র মধ্যে সুফিয়া বেগম এসে রাহান কে ফ্রেশ হতে বলে।
রাহান সারার দিকে এক পলক তাকিয়ে গেস্ট রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো। সারাও চলে গেলো।
সাড়ে আটটা বাজতে চলে সবাই চলে আসার সময় হয়েছে।
তাই সুফিয়া বেগম কাজের লোক নিয়ে খাবার দাবার গুছিয়ে নিতে লাগলো।

———-

রাতে খাবার শেষ সাদনান রুমে চলে আসে।
মিনিট দশ এক পর প্রিয়তাও কফি হাতে রুমে আসে। সাদনান তখন ল্যাপটপ কোলে রেখে সোফায় বসে কাজ করছে।
প্রিয়তা কফির মগ টা সাদনানের সামনে সেন্টার টেবিলে রেখে দেয়।
সাদনান এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে কফির মগ টা হাতে তুলে সেটায় চুমুক বসায়।
প্রিয়তা তখনো দাঁড়িয়ে আছে সেভাবেই।
সাদনান বুঝতে পারে বউয়ের মন খারাপ যদিও তেমন কিছু হয় নি দাদি প্রিয়তার সাথে কথা বলে না।
এমনি কি খাবার টেবিলেও বা আজ্জম মির্জা, জাফর মির্জা কারোর সঙ্গে সন্ধ্যার বিষয়ে কথা বলে নি। তার হঠাৎ চুপ করে যাওয়ার কারণ প্রিয়তা বুঝতে পারে নি।
কিন্তু সাদনান এর এসব নিয়ে কোনো ভাবান্তর ঘটে নি।সে স্বাভাবিক যেনো সন্ধ্যা কথা সে ভুলে গিয়েছে বা এমন কিছু হয় নি।
তার কারণ টা জানার জন্য প্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে সাদনান বুঝতে পেরে একটু অন্যমনস্ক হয়ে সন্ধ্যা দাদির সাথে বলা কিছু কথা মনে পড়ে। দাদির তার এমন নয় সে জানে আর হঠাৎ পরিবর্তন টার মানে বুঝতে পারে নি।
তিনি আগের দিনের মানুষ সেই সুবাধে ওনার ভাষ্যমতে বউ তো বউ স্বামী সংসার সামলাবে। সে কেন বাড়ির বাহিরে রংঢং করে ঘুরে বেড়াবে?
সাদনান এর কানে আগেও এই কথা গুলো এসেছে দাদি প্রিয়তা কে বলেছে কিন্তু সে সব সূত্র ধরে কিছু বলে নি কিন্তু দাদি আজ নিজেও সাদনান এর সাথে এসব নিয়ে কথা তুলেছে।
সাদনান কিছু বলে নি।
চুপ করে দাদির অভিযোগ শুনেছে সর্বশেষ তার একটাই প্রশ্ন ছিল প্রিয়তার জায়গায় যদি সারা বা মাইশা হতো তবে কি তিনি এমন করতো?
আম্বিয়া মির্জা তখন নিশ্চুপ ছিলেন।
সত্যিই তো কিন্তু তিনি উত্তর দেয় নি শুধু জবাবে বলেছে তিনি মানিয়ে নিতে চেষ্টা করবে।

-“দাদি আজ কথা বলে নি।”

প্রিয়তার কথায় সাদনান ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে।
সে তো বেমালুম ভুলে বসে ছিল বউ তার সামনে দাঁড়িয়ে।
কিন্তু নিজে কে যথাসম্ভব শান্ত রেখে কোলে হতে ল্যাপটপ নামিয়ে পাশে সোফায় রাখে।
প্রিয়তার হাত টেনে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় সাদনান।
প্রিয়তা হাল্কা কেঁপে উঠল। ভড়কালো হকচকিয়ে সাদনান এর শুভ্র রঙের পাতলা সার্ট এর বুকের কাছ টায় খামচে ধরে।
সাদনান হাসলো আরও কিছু টা প্রিয়তার ছোট দেহ খানার কোমড় নিজের শক্ত হাতের মাঝে আরও শক্ত করে চেপে ধরে।
সাদনান প্রিয়তার চোখ বন্ধ দেখে মৃদু কণ্ঠে বলল

-“চোখ খুলো।”

প্রিয়তা তাড়াতাড়ি মাথা ঝাঁকিয়ে মিনমিন করে জানালো

-“আপনি অন্য দিকে তাকান।”

-“পাঁচ মাসের বেশি সময় হতে চলে।
এখনো এমন টা মোটেও আশানুরূপ আচরণ নয় মিসেস সাদনান।”

সাদনান এর এমন গম্ভীর কণ্ঠে বাণী প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ তুলে সাদনান এর চাপ দাঁড়ি ভর্তি সুন্দর সুশ্রী মুখপানে তাকালো।
আর অমনি প্রিয়তার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।
এতো সুন্দর হতে কে বলেছে এই লোক কে?
যা পড়ে এতেই ভীষণ সুন্দর লাগে।
প্রিয়তা আনমনেই সাদনানের কপালে পড়া থাকা এলোমেলো চুল গুলো নিজের হাতের সাহায্য ঠেলে পেছনে দিয়ে দেয়।
সাদনান আচমকাই প্রিয়তার হাত টা ধরে ফেলে।
প্রিয়তা আবার মাথা নুইয়ে নিলো।
সাদনান প্রিয়তার হাত টা নিজের গালে রাখে।

-“এই হাত দু’টো দিয়ে শুধু আমাকে ভালোবাসা হবে।
মনে থাকবে?”

-“আপনার কাজ ঠিক মতো হলেই তো হলো।”

-“সংসার করার জন্য সারাজীবন পরে আছে।
বিশেষ করে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত বাসায় থাকবো ততক্ষণ আমার সামনে থাকবে।
তার মানে এটা নয় আমি না থাকলে তুমি একা সব কাজ করবে।”

প্রিয়তা কিছু বলে না।
শুধু আগের ন্যায় মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয় যার মানে আচ্ছা।
সাদনানের মন ভরে না বউয়ের এমন মাথা নুইয়ে বসা থাকায় মুখ টা ঠিক স্পষ্ট নয়।
সাদনান প্রিয়তার মুখ টা দুই হাতের আঁজলে নিয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে কিন্তু এতেও যেনো মন ভরে না।
আরও কিছু হলে ভালো হয়।
ভাবে না সাদনান আর কিছু। মূহুর্তের মাঝে বউয়ের ওষ্ঠ জোড়া নিজের ওষ্ঠ দিয়ে চেপে ধরে ভালোবাসা দিতে থাকে।
প্রিয়তাও সাথে তাল মেলায়।সাথে সাদনানের হাতের অবাধ্য স্পর্শ তো আছেই।যা বড্ড জ্বালাচ্ছে প্রিয়তা কে। সাদনান অনেক টা সময় নিয়ে প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা প্রিয়তার ঠোঁট মুছে দেয়।
প্রিয়তা ছাড়া পেয়ে যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে। পিটপিট করে চোখ তুলে সাদনান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে সাদনান এর কোল হতে।
অতঃপর আলমারি খোলে সেখান থেকে রাতের পোষাক নামিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তা ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
সারা দিন মোটামুটি ভালোই খাটাখাটুনি হয়েছে তাই বিছানায় শোয়া মাত্রই নিদ্রা ভর করে।
সাদনান বেশ অনেক টা সময় পর নিজের সব কাজ শেষ ওয়াশ রুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে বউ কে টেনে নিজের বুকের উপর এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
প্রিয়তাও ঘুমের ঘোরে সাদনান এর বুকের মাঝে বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিয়ে গেলো।
সাদনান হাসলো যেই হাসিতে কোনো বিষাদ নেই আছে শুধু সুখ।

————

ভোট প্রচারণা চলছে।
সেই সাথে চলছে সাদনান এর ব্যস্ততা।
আর তিন দিন পর ভোট তাই ভীষণ গরম এলাকা।আজ কের পর ভোট প্রচারণা বন্ধ কাল থেকে তাই সাদনান আজ ভোট প্রচারণা বেড়িয়েছে সাথে ছিলেন ওয়াসিফ দেওয়ান।
আর অন্য দিকে গিয়েছে আজ্জম মির্জা জাফর মির্জা কোথাও যায় নি।
বয়স হয়েছে কিন্তু দেখতে এখনো জোয়ান।
কিন্তু দেখতে জেয়ান হলেও শরীর তার মেহনত সাথে হাঁটা চল করতে গেলে সেটা ধরা পরে।একটুতেই হাঁপিয়ে যায়।
তাই তিনি আজ পার্টি অফিস রয়ে গিয়েছে।

——————-

কবির তিন্নির হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল

-“রেডি হয়ে এসো।”

তিন্নি খাবার শেষ মাত্র রুমে এসছে এর মধ্যে কবির রুমে আসে।
তিন্নি কবির এর এমন কথায় ভ্রু কুঁচকে আসে।
কিন্তু নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে প্রশ্ন করলো

-“কি এটা?”

-“নিজে দেখে নাও।”

কথা শেষ কবির চলে গেলো।
তিন্নি প্যাকেট থেকে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের একটা পাতলা শাড়ী বেড় করে।
যেটা দেখে তিন্নির মুখ হা হয়ে গেলো।
এটা তো ওই দিন কবির শপিংমল থেকে নিয়ে ছিল।
তিন্নি তখন অতো খেয়াল করে নি শাড়ী টা এতো পাতলা তবে ওর এটা ভালো লেগে ছিল।
কিন্তু এতো পাতলা হবে বুঝতে পারলে সে কক্ষনও এটার দিকে তাকাতো না।
আর ও না তাকাতো আর না কবির এর দৃষ্টি ওটায় যেতো আর না আজ শাড়ী টা ওর হাতে আসতো আর না পড়তে হতো।
কিন্তু এখন কি করার কবির একবার যখন দিয়ে দিয়েছে তখন এটা পড়তেই হবে কিছু করার নেই।
তার কারণ কবির যা বলে তার উল্টো হলে সে ভীষণ রেগে যায়।
এটা তিন্নি জানে তার কারণ কলেজে বহুবার দেখেছে কবির এর রূপ।
তিন্নি এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে ওয়াশ রুম থেকে শাড়ী টা পড়ে আসে।
সে এই কয়েক মাসে শাড়ী পড়া টা বেশ শিখে নিয়েছে।
তার কারণও অবশ্য কবির প্রায়শই তিন্নির নিকট আবদার জুড়ে যেনো কবির এর ছুটির দিনে তিন্নি শাড়ী পড়ে।
তিন্নি মেনে নিয়েছে তার ভীষণ ভালো লাগে কবির এর এসব ছোট ছোট আবদার গুলো।
এই যেমন হুটহাট তিন্নির হাতে খাবার খেতে চাওয়া কলেজ থেকে আসার সময় এটা সেটা নিয়ে আসা আবার কলেজ যাওয়ার সময় কপালে চুমু খাওয়া।

#চলবে…..

আমার তুমি পর্ব-২২

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২২[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

-“বারণ করে ছিলাম না রান্না ঘরে না যাওয়ার জন্য?”

সাদনানের এমন ক্ষিপ্ত কণ্ঠে প্রশ্নে প্রিয়তা ভয়ে আরও একদফা ভায়ে গুটিয়ে গেলো নুইয়ে রাখা মাথা টা আরও নুইয়ে নিলো।
অতঃপর মিনমিন করে বলল

-“এখন তো পরীক্ষা শেষ।
তাছাড়া আমি তো এখন বউ এ বাড়ির।”

-“পরীক্ষা শেষ আমি যেতে বলেছি?”

সাদনান শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
প্রিয়তা এবার মাথা তুলে তাকালো সামনে শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত সুদর্শন পুরুষ টার দিকে।
মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট চুল অগোছালো দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারা দিন বেশ দখল গিয়েছে মানুষ টার উপর দিয়ে।
সাদনান প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।
রাগ তার পড়ে গিয়েছে তবে আজ একটু শক্ত কথা বলতেই হবে।
পরীক্ষা চলাকালীনও প্রিয়তা টুকটাক কাজ করছে। সাদনান দেখেছে সেটা।
কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু সমস্যা হলো দাদি।
সাদনান চোখে তেমন কিছু পরে নি কিন্তু সে শুনেছে সারা নিকট হতে।
দাদি প্রিয়তার পড়া লেখা নিয়ে ঝামেলা করেছে সাথে ওকে দিয়ে কাজ টাও করায়।
বউ তার ভীষণ ছোট তাই সে বউকে না হয় তাই একটু বেশি যত্ন করে এতেও তার দাদির সমস্যা।
এটাও নিয়ে নাকি সে দিন প্রিয়তা কে অনেক কথা শুনিয়েছে এটাও প্রিয়তা বলেনি সারা বলছে।
প্রিয়তা কোনো কথা সাদনান কে জানায় না।
কিন্তু সাদনান সে তো এসব জানা কোনো ব্যাপার না।
সাদনানের ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা মিনমিন করে উত্তর দেয়

-“না। ক,,,,

-“এই আমি না করি নাই?
তাহলে কেন গিয়েছো?”

-“বউ আমি এ বাড়ির।”

-“সময় চলে গিয়েছে?
সারা জীবন পড়ে আছে। তাছাড়া মা, ছোট মা রান্নাঘরে করলে সাথে কাজের লোক সাহায্য করে।
তো তোমার সময় উল্টো কেন?
তুমি নাও না কেন?”

-“আমাকে তো দাদ,,,,

প্রিয়তা হঠাৎ থেমে গেলো।
সে চায় না কোনো ঝামেলা হোক।
তাই কথা ঘুরাতে শান্ত হয়ে সাদনানের বাম গালে নিজের ডান হাত টা রেখে ধীরে কন্ঠে বলল

-“আচ্ছা আর কাজ করবো না।
মন দিয়ে পড়বো। আর যদি কাজ করি তো কাজের লোক এর সাহায্য নেবো।”

সাদনান শুনলো। কিন্তু মনে হয় না আমলে নিয়েছে।
সে প্রিয়তার হাত টা গাল থেকে নামিয়ে ওয়াশ রুম যেতে যেতে বলল

-“কফি।”

কথা শেষ সাদনান পাঞ্জাবি এক টানে খুলে সে টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে চলে গেলো।
প্রিয়তাও গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে সোফা হতে পাঞ্জাবি টা তুলে সেটার নাকের সামনে ধরে লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিলো।
ঘামের গন্ধ নেই।তবে পারফিউম আর সাদনানের শরীর গন্ধ টা প্রিয়তার নিকট বেশ লাগে।
সে এটা সব সময় করে তবে সেটা সাদনান এর অগোচরে।
কিন্তু আজ হয়তো আর সেটা লুকায়িত রইলো না।
সাদনান খট করে আবারও ওয়াশ রুমের দরজা খুলে তখন বেড়িয়ে এলে সে টাওয়াল নেয় নি।
কিন্তু এখানে এসে এরকম একটা দৃশ্য দেখবে সে ভাবতেও পারে নি।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে ছিল হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে সে চোখ খোলে সামনে সাদনান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোর ধরে পরে যাওয়ার মতো করে মাথা নুইয়ে কাচুমাচু
ভঙ্গিতে মিনমিন করে সাফাই গাওয়ার মতো করে বলল

-“দেখছিলাম ধুতে হবে নাকি।”

-“জিজ্ঞেস করি নি।”

সাদনান নির্লিপ্ত জবাব।
অতঃপর সে এগিয়ে গিয়ে ব্যালকনি হতে টাওয়াল নিয়ে পুনরায় ওয়াশ রুম চলে গেলো।

প্রিয়তা মুখ ভেংচি কেটে বিরবির করে বলে উঠে

-“আসার আর সময় পায় নি এখুনি আসতে হলো?”

—————-

রাহান কে সাদনান আজ সোজা মির্জা বাড়ি আসতে বলেছে।
তার কারণ রাহান ভীষণ ঘুমকাতুরে এই ছেলে যদি আজ নিজের বাড়ি যায়। তাহলে কাল দশ টার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারবে না।
কিন্তু কাল সকাল সকাল নির্বাচন কমিশন অফিস যেতে হবে।
আর সাদনান এর বাম হাত রাহান।
সে সুবাদে রাহান কে সাদনানের সাথে থাকা জরুরি।
কিন্তু এই ছেলে আজ বাসায় গেলে আর কাল সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবে না।
তাই সাদনান রাহান কে ফোন করে আজ মির্জা বাড়ি আসার জন্য বলেছে।
সারা সোফায় বসে টিভি দেখছিল।
সাথে সুফিয়া বেগম আছে। আয়না শাশুড়ীর রুমে।
আম্বিয়া মির্জাও সেই যে রুমে গিয়েছে আর বেড় হয় নি এর মধ্যে। রাত আটটার মতো বাজে পুরুষ কেউ এখনো বাড়ি আসে নি।
আর সবাই বাড়ি এলে যে আজ একদফা করবে আম্বিয়া মির্জা এতে কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু সাদনান এর সামনে টিকতে পারলে হয়।কারণ দোষ টা সম্পুর্ণ ওনার।
এই বাড়ির বউ শুধু রান্না করে আর সব কাজের লোক হাতে হাতে এগিয়ে দেয়। সেখানে আজ তিনি প্রিয়তা কে দিয়ে সব করিয়েছে। যদিও আগে ততটা কাজ করতে বলে নি এই যা।তবে আজ একটু বেশি করেছে অবশ্য একটু নয় অনেক টা বলা চলে।

সামনে টিভি চলছে ঠিক কিন্তু সারা সে দিকে ধ্যান নেই সে তো আনমনে কিছু ভেবে চলছে।
আর ওর ভাবনার মাঝেই কখন সুফিয়া বেগম চলে গিয়েছে সে টেরও পায় নি।
প্রিয়তা কে সাদনান নিয়ে যাওয়ার পর বাকি টা আয়না সুফিয়া বেগম মিলে করেছে আর সাথে তো কাজের দুই জন লোক আছেই।
সারা আনমনেই টিভির রিমোট হাতে নিয়ে বসে ছিল। এ-র মধ্যে হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল টা সশব্দে বেজে উঠে।
সারা ভাবে হয়তো দাদা সহ বাবা, ছোট বাবাই এসছে তাই রিমোট রেখে তড়িঘড়ি করে দরজা খোলে। কিন্তু বাড়ির কেউ আসে নি এসছে রাহান।
সারা রাহান কে দেখেই বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।
কালো সার্ট কালো প্যান্ট এলোমেলো চুল।
দেখতে বেশ লাগছে।
রাহান এক পলক সারা’র দিকে তাকিয়ে বুকের কাছের একটা বোতাম খুলতে খুলতে ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে বলল

-“একটু পানি দিবে।”

সারা ভীষণ মায়া হলো।
রাহান কথা শেষ সোফায় ধপ করে বসে গেলো।
সারা ডাইনিং টেবিলে রাখা জগ হতে আধ গ্লাস পানি নিলো তার পর ফ্রিজ খুলে সেখান থেকে বোতল হতে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে রাহান কে দিলো।
রাহান এক পলক তাকিয়ে গ্লাস টা হাতে নিয়ে সব টা পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।
অতঃপর সামনে থাকা সেন্টার টেবিলে গ্লাস টা রেখে আবারও গা এলিয়ে দিলো সোফায়।
ইশ এখন যদি সারা ওর বউ হতো তখন কি এভাবে বসে থাকা লাগতো?
মোটেও না নিশ্চয়ই সারা কে জড়িয়ে ধরে রাখতো।
তবে একটা কথা মানতেই হবে ভালোবাসার মানুষ টাকে দেখলে সব ক্লান্তি হতাশা দূর হয়ে যায়।
এই যে সারা কে দেখে রাহানের এখন কেমন একটা ভালো লাগছে।
সারা দিন এতো এতো দৌড়াদৌড়ি কাজ এখানে সেখানে দৌড়াতে হয়। কিন্তু এখন এই ছোট্ট মুখ টা দেখার পর মনে হচ্ছে এসব কিচ্ছু না।
কেমন একটা প্রশান্তি লাগছে।
রাহান চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে কয়েক বার।
সারা রাহান কে এভাবে দেখে ভাবলো হয়তো বেশি কাজ করছে।
অবশ্য কাজ বলা চলে না রাজনীতি মানেই সারা দিন বাহিরে রোদে দৌড়াদৌড়ি করা।
সারা চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
রাহানও তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
সারা আমতা আমতা করে।
শেষ মেষ কি বলবে বুঝতে না পেড়ে জিজ্ঞেস করে

-“আপনার কি শরীর বেশি খারাপ লাগছে?”

সারা প্রশ্নে রাহান মনে মনে হাসলো।
কেমন একটা শান্তি অনুভব হলো মনের ভেতর।
তবে মুখে গম্ভীর ভাব এনে জানালো

-“সারা দিন লাগছিল।
এখন সব ঠিক আছে।”

#চলবে……

আমার৷ তুমি পর্ব-২১

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা

পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন প্রাকটিক্যালও আজ শেষ। সারা প্রিয়তা দুইজনের পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে সব গুলো। এখন বাকি টা রেজাল্ট আউট হলে বোঝা যাবে।
আজ রাহাত ওদের নিতে আসবে কারণ কাল নমিনেশন দিবে সাদনান সহ জাফর,আজ্জম মির্জা তাই আজ ওয়াসিফ দেওয়ান এর বাসায় গিয়েছে এটা নিয়ে আজ মিটিং হবে।
প্রিয়তা সারা
ওরা দুজন স্কুল এর ভেতর হতে বেড়িয়ে এসে দেখলো রাহাত গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।
প্রিয়তা আর সারা কে এগিয়ে আসতে দেখে ফোন কেটে পকেটে নিয়ে নেয়।
এ-র পর টুকটাক কথা বলে ওরা গাড়িতে উঠে বসে।
রাহাতও গাড়ী স্টার্ট দিয়ে বাড়ির দিকে চলে আসে।

————–

মাইশা, আয়ান, তিন্নি অপেক্ষা করছে কবির খাঁন এর জন্য।
ওরা আজ চার জন এই বিকেল টা সারা এলাকা ঘুরে বেড়াবে।
তার কারণ তিন্নি। ওর ভীষণ মন খারাপ কলেজে কয়েক টা মেয়ে জেনে গিয়েছে ইলেকশন এর পর তিন্নি আর কবির এর বিয়ে হবে।
কিন্তু এটা জানে না তিন্নি আর কবির এর বিয়ে টা অলরেডি ঘরোয়া ভাবে হয়ে গিয়েছে।
তিন্নি ভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছে জেনে মেয়ে গুলো ওকে ওই দিন এতো কথা শোনাল আর যদি জানতে পারে বিয়ে হয়ে গিয়েছে তখন কি করতো?
তিন্নি কে কয়েক টা মেয়ে মিলে ভীষণ ভাবে বাজে কথা বলেছে।
সে কেন স্যার এর সাথে কলেজ আসে স্যার এর বাড়িতে থাকে।
মাইশা তখন বলতে চেয়ে ছিল বিয়ের কথা বলে দিতে কিন্তু তিন্নি বলতে না করেছে।
তিন্নি এদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় নি।
শুধু বলেছে এটা যেনো স্যার কে জিজ্ঞেস করে।
তখন মেয়ে গুলো একটু ভয় পেয়ে যায়।
আর এই ফাঁকে মাইশা বলতে চাই বিয়ে হয়েছে কিন্তু তিন্নি কথা ঘুরিয়ে বলছে বিয়ে ঠিক হয়েছে।
বিয়ে টা এখুনি ধুমধাম করার কথা ছিল। কিন্তু মির্জা বাড়ির কোনো পুরুষ এখন সময় দিতে পারবে না বিধায় বিয়ে টা সে দিন তিন্নি কে হোস্টেল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর দিন দিয়ে দিয়েছেন।
এতে অবশ্য মির্জা বাড়ির সবাই উপস্থিত ছিল।
তিন্নি গাড়িতে জানার উপর থুতনি ঠেকিয়ে এসব ভাবছিল।
ঠিক তক্ষুনি কবির এর ডাকে ধ্যান ফিরে।
কবির এসে পেছনের সিটে ওর পাশে বসে গিয়েছে অথচ ও টেরই পায় নি।
আয়ান মাইশা সামনে বসা।
কবির বেশ দূরত্ব রেখেই বসে আছে।
বিয়ে হয়েছে কিন্তু তিন্নি কবির এর মাঝে এখনো স্বামী স্ত্রী এর মতো কোনো সম্পর্ক এখন গড়ে ওঠে নি।
সামনে তিন্নির পরীক্ষা আর তাছাড়া কবির নিজের মাঝে এখন কি এক জড়তা কাজ করে।
তিন্নি নিজেও দূরে দূরে থাকে।
ভালোবাসার মানুষ টার আশে পাশে তো থাকতে পারে আর কি চাই।
এতেই ভীষণ খুশি তিন্নি।
কবির এর বাবাও তিন্নি কে ভালোবাসে নিজের মেয়ের মতো আগলে আগলে রাখে।
কবির এর চাইতেও বেশি খেয়াল রাখে কালাম তিন্নির একজন বাবা হিসেবে যা করা দরকার সব করে কালাম খাঁন।
তিন্নি ওনাকে অল্প কয়েক দিন এর মাঝে অনেক আপন করে নিয়েছে।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই তিন্নি একটা হাত কবির নিজের হাতের মুঠো পুরে নিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই ধীরে কণ্ঠে বলে উঠে

-“মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই।”

তিন্নি কিছু বলে না চুপ চাপ তাকিয়ে থাকে পাশে বসা শশী কালার সার্ট পড়া সুদর্শন পুরুষ টার দিকে।
বেশ লাগছে দেখতে তিন্নির নিকট কবির কে।
যদিও কবির এর গায়ের রঙ তিন্নির চেয়ে বেশ ফর্সা। আর গাল ভর্তি চাপ দাঁড়ি গোলগাল মুখ চোখে কালো চিকন ফ্রেমের চশমা। সার্ট এর হাতা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত রাখা নিঃসন্দেহে কোনো মেয়ে এক দেখায় এই পুরুষের প্রেমে পড়বে।
যেমন টা তিন্নি পড়ে ছিল।
যেটা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নিলো আর এখন পরিণয়।
কবির সামনে তাকিয়ে এক দৃষ্টিতে।
তার এই মেয়ে আশে পাশে থাকলে অন্য রকম অনুভূতি হয়।
খুব করে নিজের বাহুডোর আবদ্ধ করে রাখতে মন চায়।কিন্তু সেই সময় তো আর এখনো আসে নি এক্কেবারে নিজের করে পেতে যে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
ওদের ভাবনার মাঝেই আয়ান গাড়ি টা একটা রেস্টুরেন্টে এর সামনে থামায় তার পর সবাই রেস্টুরেন্টে এর ভেতর চলে যায়।
আজ সারা বিকেলে ঘুরবে ওরা।
মাইশা কেও সাথে রাখার পারমিশন আছে আর সেই জন্যই তো কবির কে বলে তিন্নি আয়ান কেও নিজেদের সাথে নিয়েছে।

——–

আজ রাতে রান্না প্রিয়তা কে করতে হবে।
আম্বিয়া মির্জা হুকুম।
ওনার কথা হলো বহুত তো হলো নাচানাচি বউ হয়ে বাহিরে। এখন তো পরীক্ষাও শেষ তাই এখন থেকে রান্না বান্না সব করতে হবে বউ বউয়ের মতো মন দিয়ে সংসার করবে ব্যাস।
প্রিয়তা রান্না মোটামুটি পাড়ে তবে অতটা পারদর্শী নয়।
ওর মনি ওকে দিয়ে এই কয় বছর কাজ করিয়েছে ঠিক তবে রান্না করে নি কক্ষণো প্রিয়তা।
হাতে হাতে এটা সেটা এগিয়ে দিয়েছে শুধু।
কিন্তু আজ এতো মানুষের রান্না একটু নার্ভাস প্রিয়তা।
সালেহা বেগম এর প্রেশার বেড়ে আছে তাই তিনি রুমে আছে এসব তিনি জানে না।
আর সুফিয়া বেগম আর আয়না আসতে পারবে না এটা আম্বিয়া মির্জার বারণ আর কাজের লোক গুলো যে যার মতো কাজ করছে তারা কেউ যেনো প্রিয়তা কে সাহায্য না করে এটাও ব’লেছে।
প্রিয়তা হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে চুলা হতে চিংড়ির তরকারি টা নামিয়ে রাখে।
ভাতের জন্য পানি বসিয়ে কেবিনেট খুলে সেখান থেকে চায়ের পাতা নামিয়ে পেছন ফিরতেই কাজের মেয়ে এসে বলে গেলো সাদনান এসছে আর প্রিয়তা কে রুমে যেতে বলেছে।
প্রিয়তা শুনলো না। ও ভাবছে রান্না টা করেই এক্কেবারে রুমে যাব।
তাই কফি করে কাজের মেয়ের হাতে দিয়ে পাঠিয়ে দিলো।
আম্বিয়া মির্জা তখনো সোফায় বসে।
প্রিয়তা কফি করে দিয়ে আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
কিন্তু সে টা আর স্থায়ী হয় না।
লিভিং রুমে ঝনঝন শব্দ তুলে কিছু ভাঙার আওয়াজ হলো।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ হাতের কাজ ফেলে তড়িঘড়ি করে রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই সাদনান কে দেখতে পেলো আর একটু আগে সাদা রঙের কফি করে দেওয়া মগ টা টুকরো টুকরো হয়ে চার দিকে ছড়ি ছিটিয়ে নিচে পড়ে আছে।
প্রিয়তার বুঝতে সময় লাগলো না সাদনান রেগে গিয়েছে।
আয়না,সালেহা বেগম সারা সহ সবাই উপস্থিত এখানে।
আম্বিয়া মির্জা তখন প্রিয়তার দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে সাদনানের দিকে তাকাতেই সাদনান ঝড়ের বেগে এসে প্রিয়তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে টেনে দাদির সামনে দাঁড়ালো।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো

-“বউ হয় আমার।
কাজের মেয়ে নয়।দ্বিতীয় বার ওকে দিয়ে কাজ করাবে না। এতো কাজের লোক দিয়ে কি হবে যদি আমার বউ কে সবার জন্য রান্না করতে হয়?”

কথা শেষ সাদনান অপেক্ষা করে না বউ কে টেনে নিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
প্রিয়তা স্তব্ধ।
সাদনান মিটিং শেষ পার্টি অফিস গিয়ে ছিল।
কাল নমিনেশন দিবে সেটা নিয়ে দলের ছেলেদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ছিল।
কিন্তু বাড়ি থেকে আয়নার ফোন হতে কল পেয়ে একটু ভ্রু কুঁচকে আসে।
কোনো সমস্যা হয়েছে ভেবেই ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ হতে সারা ফোন কানে বলেছিল দাদি প্রিয়তা কে আজ সবার রান্না করতে দিয়েছে।
ব্যাস এটুকুই।
সাদনান তড়িৎ গতিতে ফোন কেটে দিয়ে রাহান কে ওদিক টা সামলাতে বলে তড়িঘড়ি করে বাড়ি চলে এসছে।

#চলবে…..

আমার তুমি পর্ব-২০

0

#আমার_তুমি
#পর্ব_২০[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা

তিন্নি সিটে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সারা রাত ঘুমুতে পারে নি হয়তো তাই।সারা মুখ জুড়ে ক্লান্ত ছাপ স্পষ্ট। আর কবির সে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এতোক্ষণ গাড়ি চালাচ্ছিল।কিন্তু তিন্নি ঘুমিয়ে পরেছে বিধায় কবির গাড়ি থামিয়ে তিন্নির ক্লান্ত ভরা মুখ টা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে।
কিন্তু হঠাৎ করে কোথাও মনের ভেতর হতে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে।
আচ্ছা এই মেয়ে টা আরও কয়েক বছর আগে ওর জীবনে কেন এলো না?
বেশি না আর দুই বছর আগে এলেও তো ওর প্রিয়তার প্রতি কোনো অনূভুতি হতো না।
এখনো তাহলে বুকের ভেতর সব টা জায়গায় জুড়ে ওর নিজের বসবাস হতো।
কিন্তু এখন তো কোথাও একটা প্রিয়তার জন্য সুপ্ত অনুভূতি থেকে গেলো।
হয়তো এটা সারা জীবন থাকবে।
কারণ প্রথম ভালোবাসা সবার মনে কোথাও না কোথাও থেকে যায়। যেটা চাইলেও মুছা সম্ভব হয় না।

কবির কথা গুলো ভাবতে ভাবতে তিন্নির মাথা টা সিট হতে খুব সাবধানের সহিতে আলগোছে নিজের কাঁধের উপর রেখে দেয়।
তিন্নি হাল্কা নড়েচড়ে উঠে তবে সম্পূর্ণ তন্দ্রা ছুটে না।
বরং কবিরের বাহু টা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
কবির সারা শরীর কেমন একটা অনুভূতি হলো।হয়তো এই প্রথম কোনো মেয়ের এতো সন্নিকটে এসছে তাই।

কবির বেশি কিছু না ভেবেই আবারও গাড়ী স্টার্ট দেয়।
এক হাতে ড্রাইভ করছে আর এক হাতে তিন্নির মাথা টা কাঁধে একটু পর পর হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছে।
এই রাস্তা টা বেশ নির্জন গাড়ি খুব কম চলে।
পৌঁছাতে হয়তো আর মিনিট দশ এক সময় লাগবে।
যদিও এটুকু জায়গায় পৌঁছাতে মোটেও এতো সময় লাগে না।
তবে কবির খুব আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে।
ওরা বিকেলে রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়ে শপিং মলে গিয়েছে সেখানে গিয়ে অনেক গুলো থ্রি পিস আর দুই টা শাড়ী কিনে দিয়েছে কবির তিন্নি কে।
তিন্নি শুধু সব দেখছিল
ও যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। তিন্নি বুঝতে পারছিল না এসব কি হচ্ছে।
কবির শপিং মলে থেকে বেড়িয়ে তিন্নি কে নিয়ে পাশে একটা পার্কে গিয়ে ছিল।
আর সারা টা সময় তিন্নির হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের হাতের মুঠো নিয়ে রেখে ছিল।
তিন্নির তখন কেন জানি খুব করে কান্না পাচ্ছিল।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছিল ও বুঝতে পারছিল না হয়তো এভাবে কেউ কখনো এতো টা যত্ন করে আগলে আগলে রাখে নি, এতো টা ভালোবেসে যত্ন করে নি।
কবির তখন হটাৎ করেই তিন্নির হাত টা ছেড়ে দিয়ে নিজের পকেট হতে একটা রিং বেড় করে নিচে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলে ছিল সে সারা জীবন এভাবে তিন্নি কে আগলে রাখতে চায়।
পার্কে থাকা প্রতি টা কাঁপল আর পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা অনেকেই তিন্নি কে কবির এর প্রপোজে রাজি হয়ে যেতে বলছিল।
তিন্নি তখন কান্না ভুলে লজ্জা নুইয়ে পরে ছিল।
অতঃপর নিজের কাঁপতে থাকা বাম হাত টা কবির এর সামনে ধরে কবির সেটার অনামিকা আঙ্গুল রিং টা পড়িয়ে দিয়ে নিজের ঠোঁট জোড়া তিন্নির হাতের পিঠে ছুঁয়ে দেয়।
আর সবাই চার দিক হতে করতালি দেয়।
কবির এসব ভাবনার মাঝেই তিন্নি জোরে ডেকে উঠে

-“স্যার? ”

-“হ্যাঁ বলো।
কি হয়েছে?”

কবির তিন্নির হঠাৎ এতো জোরে ডাকা গাড়ি ব্রেক কষে জিজ্ঞেস করে তিন্নি অসহায় কণ্ঠে উত্তর দেয়

-“স্যার আমার অনেক টা পথ এগিয়ে এসছি।
হোস্টেল তো পেছনে।”

কবির তিন্নির কথা শুনে চার পাশে দৃষ্টি ঘুরিয়ে চাইলো।
সত্যি ওরা অনেক টা দূরে চলে এসছে হোস্টেল হতে।
আসলে কবির ভাবনার মাঝে এতোটাই বিভোর ছিল যে ও খেয়ালই করে নি। তবে
কবির নিজে কে ধাতস্থ করে বলে উঠে

-“খেয়াল করি নি।”

কথা শেষ কবির গাড়ি ঘুরিয়ে হোস্টেল এর দিকে আসে।
গাড়ি টা এসে হোস্টেল এর সামনে থামতেই তিন্নি নেমে এক সাইডে দাঁড়ায় কবিরও নেমে পেছন দরজা খুলে সেখান থেকে দুই টা প্যাকেট তিন্নির হাতে দিয়ে বলল

-“এখন এগুলো রাখো।
বাকি গুলো আমি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
বাবা এসে এই সাপ্তাহের মধ্যে তোমাকে নিয়ে যাব।”

তিন্নি প্যাকেট গুলো হাতে নিলো।
কিন্তু ও কিছু বলতে চাইছে তবে বলতে পারছে না হয়তো।
কবির বুঝতে পারলো আর এটাও বুঝলো তিন্নি কি বলতে চায়।
তাই তিন্নি কিছু বলার আগেই কবির বলে উঠে

-“এসব নিয়ে টেনশন করতে হবে না।
বিয়ের সব ব্যবস্থা করেই বাবা তোমাকে বাড়ি নিবে।
আর সেটা এক সাপ্তাহের মধ্যে হবে।”

তিন্নি কিছু বলে না।
কবির আবারও বলল

-“সাবধানে থাকবে।”

তিন্নি মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে

-“আচ্ছা।
আপনিও সাবধানে যাবেন।”

কবির তিন্নির দিকে তাকিয়ে আছে বেশ লাগছে দেখতে রাস্তার পাশে নিয়ন বাতি জ্বালিয়ে রাখার সেই কৃত্রিম আলোয়ে। তিন্নি ফিরে চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু কবির পেছন থেকে আবারও ডেকে উঠে

-“শুনো।
কাল থেকে আর টিউশন যাবে না।
সবাই কে না করে দেবে।
মনে থাকবে?”

-“আচ্ছা।”

তিন্নি সেভাবে থেকেই মিনমিন করে উত্তর দেয়।
অতঃপর তিন্নি চলে যায় আর কবির সে দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে যতক্ষণ পর্যন্ত তিন্নি গেইট অতিক্রম করে হোস্টেল এর ভেতর না যায়।
তিন্নি ভেতরে চলে গেলেই কবির গাড়িতে বসে পড়ে।
তার পর চার তলা বিল্ডিং এর দোতলার তিন নাম্বার রুমের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে থাকে।
এই রুম টায় তিন্নি থাকে কবির জানে আর কবির এটাও শিওর তিন্নি এখন রুমে গিয়ে একবার ব্যালকনিতে আসবে।
আর হলোও তাই কবিরের ভাবনার মাঝেই আবছা আলোর মাঝে তিন্নি কে ব্যালকনিতে এসে দুই হাত রেলিং এর উপর রেখে কবির এর গাড়ি টার দিকে তাকালো।
কবির সে দিকে তাকিয়ে নিজের ডান হাত টা বাহির করে ইশারা করে রুমে যাওয়ার জন্য।
তিন্নি রুমে চলে যায়।কিন্তু পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে ঠিক তাকিয়ে রয় কবির এর গাড়ি টা যতক্ষণ না দৃষ্টির আড়াল হয়।

——————

প্রিয়তা সাদনান এর দেওয়া কাপড় গুলো পড়ে পা গুটিয়ে বসে আছে বিছানায়। ঘুম থেকে উঠছে মাত্র।
ওর কেমন লাগছে। যদিও এখানে তেমন লাগার কথা নয়।
স্বামী হয় ওর কিন্তু তবুও কেমন কেমন লাগছে। হয়তো এসব পড়ে অবস্তু নয় তাই।সব সময় তো লং ফ্রক বা কুর্তি এসব পড়ে।
সাদনান নেই ফ্রেশ হয় খাবার খেয়ে কোথাও গিয়েছে।
প্রিয়তা দেখছে রুম টাকে।
এই রুম টাও সাদা রঙের।বিশাল বড় একটা রুম সাথে ছোট একটা ব্যালকনিও আছে।
সেখানে বিভিন্ন রকমের ফুলের টব আর বড় বড় সবুজ পাতার টবও আছে।
কিন্তু ফুলের গাছ গুলো শুকিয়ে আছে।
যত্নের অভাব।
প্রিয়তা সে গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলো। সন্ধ্যা সাত টার বেশি সময় বাজে এখন।দুপুর খাবার খেয়েছে কিন্তু এখন আবার ওর পেটে ভীষণ ক্ষুধা অনুভব করলো।
কিন্তু ও খাবে কি আর এই বাড়িতে তো প্রথম ও তো জানেও এখানে কিছু আছে কি না। আর দুপুরেতো সাদনান রুমে এনে খাইয়ে দিয়েছে।
আচ্ছা যা-ই হোক একবার রান্না ঘরে যাওয়া যাক আর সেখানে কিছু আছে কি না সেটাও দেখা যাবে।
প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে থম মেরে দাঁড়িয়ে রয়। এটাও সম্ভব? সাদনান রান্না ঘরে?
সাদনান রান্না ঘরে কিছু করছে।
প্রিয়তা সে দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো।
সাদনান টের পেয়েছে বউ তার পেছনে।
তাই কেবিনেট খুলে সেখানে কিছু খুঁজতে খুঁজতে বললল

-“আসার দরকার ছিল না।
দুই মিনিট এর মধ্যে আসছি।
তুমি রুমে যাও।”

প্রিয়তা শুনে না এগিয়ে গিয়ে ওভেন খোলে সেখান দেখা মিলে খাবার দিয়ে রাখা।
প্রিয়তা সেগুলো বের করে সাদনান ততক্ষণে প্লেট নামি ওভেন এর পাশে রাখে।
অতঃপর প্রিয়তার হাত থেকে খাবার প্লেট এ রাখে।
সাদনান প্লেট আর একটা পানির বোতল হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে সাথে আসার জন্য ইশারা করে।
প্রিয়তা সাদনানের পেছনে পেছন যেতে যেতে জিজ্ঞেস করে

-“খাবার কোথায় পেলেন?”

-“দারোয়ান দিয়ে আনিয়েছি।
কিন্তু সে গুলো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে তাই গরম করতে লেইট হয়ে গেলো।”

-“আমাকে বলতে পারতেন।”

-“হা করো।”

সাদনান প্রিয়তার মুখের সামনে খাবার ধরে হুকুম জারি করে।
প্রিয়তা মুখ খোলে ঝটপট খাবার খেয়ে নেয়।
সাদনান নিজেও খায়।
খাবার শেষ সাদনান প্লেট রেখে আসে রান্না ঘরে।
প্রিয়তা তখন রুমে বড় দেওয়ালের সাথে বসানো আয়নাটায় নিজে কে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। সাদা টি-শার্ট সাথে ছাই কালার থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট।
খারাপ লাগছে না ভালোই লাগছে।
বলা যেতে পারে নাইকার মতোই লাগছে।
প্রিয়তা নিচের দিকে তাকিয়ে গায়ের গেঞ্জি টা হালকা উঁচু করে কোমড়ের কাছে প্যান্টা ঠিক করে মাথা তুলে আয়নায় তাকাতেই দেখা মিলে সাদনান বুকে হাত গুঁজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
প্রিয়তা সেটা দেখে তড়িঘড়ি করে গেঞ্জি টা টেনেটুনে ঠিক করে পেছন ফিরে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে

-“কখন এসছেন?”

-“এই তো যখন প,,,,

সাদনান আর কিছু বলতে পারে না।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এসে পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে সাদনান এর মুখ চেপে ধরে নিজের ছোট হাতের সাহায্য।
আর সাদনান আস্তে আস্তে নিজের হাত জোড়া প্রিয়তার উন্মুক্ত কোমড়ে রাখে।
আসলে প্রিয়তা উঁচু হওয়ার কারণে ওর গায়ের গেঞ্জি টাও অনেক টা উপরে উঠে যায় তবে শরীর ঢেকে আছে।
কিন্তু সাদনান গেঞ্জি নিচ দিয়ে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে প্রিয়তার পেট।
আর এভাবে থেকেই সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে হেঁটে পাশের রুমে চলে আসে।
প্রিয়তা ততক্ষণে সাদনান এর গলা জড়িয়ে ধরে নেয়।
সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে রুমে এসে লাইট টা অন করতেই প্রিয়তার চোখ ছানাবড়া।
পুরো রুম সুন্দর করে সাজানো।
শুধু সাদা গোলাপ ফুল দিয়ে।
প্রিয়তা অবাক হয়ে সাদনানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে

-“এসব কখন করেছেন?”

-“রাহান এসছিল সন্ধ্যা।
ওই করে দিয়েছে।”

সাদনান কথা শেষ করে প্রিয়তার গলায় মুখ গুঁজে অধর ছুঁয়ে দেয়।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল।
কিন্তু প্রিয়তা হঠাৎ ধরে আসা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে

-“কাল বোম ছিল মিটিং এর জায়গায়?”

সাদনান শোনল অবাক হলো না।
বরং খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রিয়তার ঘাড়ে নাক ঘঁষে বলল

-“হুম।
রাহান বলেছে?”

-“না কাল রাতে আমি দাদু কে বলতে শুনেছি।”

সাদনান আর কিছু বলে না বউ কে ভালোবাসায় আর নিজের হাতের এলোমেলো স্পর্শে পাগল করে।
আর আরও একটা মধুচন্দ্রিমা রাত পাড় করে।
যার সাক্ষী হয়ে থাকে দূর আকাশের চাঁদ যার আলো কাচের জানালা দিয়ে আসছে যেটা এই অন্ধকার এর মাঝেও তাদের রুম টা কে আলো দিয়ে আলোকিত করছে।

#চলবে…….

ফ্লুজি পর্ব-২৬ এবং শেষ পর্ব

0

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব সংখ্যা ২৬ শেষ পর্ব]

আরশাদের বন্ধু সঞ্জয়ের মাধ্যমে প্রথমবার তুবার সাথে আরশাদের আলাপ হয়।সঞ্জয় ছিল ইন্ডিয়ান সনাতন ধর্মের ছেলে।
আরশাদ, সঞ্জয় এছাড়াও সাতজন ইতালিয়ান ছেলে মিলে সেবার তারা পরিকল্পনা করে কক্সবাজার ঘুরতে যাবে আর কক্সবাজার সম্পর্কে তাদের কারো তেমন কোন আইডিয়া নেই।ভিনদেশী ছেলেগুলো দেশে আসার জন্য উৎসুক ছিল।

এই ট্যুরের সকল দায়িত্বে ছিল সঞ্জয় এবং আরশাদ।তুবা তখন ঢাকায় থাকতো তবে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে তার বেশ কয়েকবার কক্সবাজার যাওয়া হয়েছিল।তুবা এমনটাই জানিয়েছিল আরশাদকে।আরশাদের তো আর দেশ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই তাই তুবার সব কথা তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য।

কক্সবাজার সম্পর্কে ধারণা নিতে গিয়ে তুবার সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয় আরশাদের।যদিও তুবা নিজেই সম্পর্কটা যেচে পড়ে করেছিল।কিন্তু আরশাদ তাকে ভীষণ ভালোবাসতো সম্মান করতো।ভালোবাসার সম্মতিতে
আদর করে তুবার নাম ডাকতো ফ্লুজি।ফ্লুজি অর্থাৎ সুন্দরী।আরশাদের চোখে তার প্রেমিকাই সবচেয়ে বেশি সুন্দর।

ভালোবাসার ভ্রম জালে নিজেকে জড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব হারানো সহজ কথা নয়।ভরসা,বিশ্বাস,ভালোবাসা,সবটাই তখন এক গন্তব্যে ঠেকে যায়।
আরশাদের বেলায় ব্যপারটা ভিন্ন হয়নি সে নিজেও তুবার অস্তিত্বে নিজেকে হারিয়েছে বিলিয়েছে।

তুবাকে কেন্দ্র করে সঞ্জয় আর আরশাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে।সেই সম্পর্ক আজও তাদের ঠিক হয়নি।কে কোথায় আছে কিংবা কোন পর্যায়ে আছে তারা কেউ জানে না।সঞ্জয় সম্পূর্ণ রূপে আরশাদকে ত্যাগ করেছে।

ঘুমন্ত আরশাদের পিঠে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো খুশবু।এত মাস পরেও পিঠে সেলাইয়ের দাগটা রয়ে গেছে।এসব দেখলে মেয়েটার কলিজা কাঁপে ভয়েরা হানা দেয় অন্তর জুড়ে।সেদিনের কথা ভাবলে দু’চোখ ঝাপসা হয় তার।শারীরিক ভাবে আঘাত পেলেও তা তো সেরে গেছে কিন্তু মানসিক যে আঘাত পেয়েছে তা তো এখনো সারেনি।খুশবুর মনে ভয় জমেছে বাসে উঠবে না বলে পণ করেছে।আরশাদকে একা ছাড়তে তার ভয় লাগে,এম্বুল্যান্সের সাইরেনে তার স্নায়ুর আন্দোলন বাড়ে,রক্ত দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে।একা থাকলে চোখের কোলে মৃত্যুর চিন্তা আসে, ফলে বেড়ে যায় তার ভয়।আরশাদের সেলাই করা স্থানে হাত বুলিয়ে কেঁদে ফেললো খুশবু।মেয়েটার উষ্ণ নোনা জল আরশাদের পিঠে গড়িয়ে পড়তে ছেলেটার ঘুম ছুটে যায়।পিঠে খুশবুর অস্তিত্ব বুঝতে পেরে রয়ে সয়ে পিঠ উল্টায়।

” ফ্লুজি কাঁদছো কেন?”

” জানি না।”

” কে কি বলেছে?ভয় পেয়েছো?”

” আরশাদ আপনার এই দাগগুলো….”

” থামবে তুমি?আমার থেকেও সবচেয়ে বেশি আঘাত তুমি পেয়েছো।”

” চা করেছি।”

” তুমি আবার এসব কেন করলে?আমি কি বলেছিলাম আমার কথা শুনবে না তুমি তাই না?”

” শুয়ে বসে আর কত দিন কাটবে।তাই একটু…”

” যা ইচ্ছে করো কিন্তু হাত বাড়িয়ে বিপদ ছোঁয়ার মানে নেই।”

আরশাদ চায়ের কাপটা হাতে তুলে চুমুক দিল।তৃপ্তিতে জুড়িয়ে গেল মন প্রাণ।

” চা ভালো হয়েছে।”

” আরেকটু আনবো?”

” না।বসো আমার কাছে।”

” শাশুড়ী মা একটু আগে ফোন করলেন।”

” কি কথা হলো?”

” জানতে চাইলো ইতালিতে যাব কবে।আমি কিছু জানাইনি।”

” তুমি বলো কবে যাবে?”

” চলুন আজকে যাই।”

খুশবুর বোকা বোকা কথায় আরশাদ হেসে ফেললো।চায়ের কাপে পুনরায় চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।

” বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকি আসছে।ভাবছি এবার একটা সারপ্রাইজ তাদের দেব।”

“তবে টিকেট কাটুন আমি যত দ্রুত সম্ভব যেতে চাই।”
.
খুশবু চলে যাবে শুনে সাহস করে দ্বিতীয় বারের মতো নীরা আজ খুশবুর বাসায় এসেছে।বাহারুল হক কিংবা অনিমা কেউ পছন্দ করেন না নীরাকে,তারা চাননা নীরার সাথে খুশবু কিংবা আরশাদ কেউ কোন সম্পর্ক রাখুক।কিন্তু খুশবু এসবে পরোয়া করে না নীরার সাথে তার সম্পর্ক ভীষণ ভালো।গরম গরম পকোড়া মুখে তুলে নীরা বলে,

” ধরো আমরা তিন বোন এক বাড়িতে থাকতাম।”

” আমরা একই জামা পরতাম।”

” ইসস কত সুন্দর হতো তাই না?”

” কিন্তু একজন তো মরেই গেল!আমার যে আরেকটা বোন আছে তা আমি জানলাম কিন্তু তার মৃত্যুর পর।আমাদের জীবনটা কি অদ্ভুত তাই না?”

” তুবার কোন খোঁজ আরশাদ নিয়েছিল?মেয়েটার পরিবার কোথায়?কার কাছে মানুষ হয়েছে?”

” তুবা বেশ ভালো ঘরেই বড় হয়েছে।ওর বাবা মা দুজনে সরকারি চাকরিজীবি।ওর একজন বড় ভাই আছে।এক কথায় ওঁকে নিয়ে বলা যায় মেয়েটা ভীষণ ছটফটে ছিল।”

” তুমি ওর মা বাবার সাথে দেখা করেছিলে?”

“একদমি নয়।আমার বাবা মা চাননা এসব নিয়ে চারদিকে কথা সৃষ্টি হোক।”

” হুম তোমার বাবা মা আমাকেও পছন্দ করেন না।না করাই স্বাভাবিক।”

“তুবাকেও কিন্তু ছোট বেলায় বিক্রি করা হয়েছিল।”

” জানি।শুধু আমাকেই রেখে দিল।রেখে কি হলো?আমার জীবনটা কেমন যেন হয়ে গেল।”

” নীরা তোমার কি এই পাপ থেকে বের হতে ইচ্ছে হয় না?আমি তোমায় সুন্দর জীবন দেব,মা বাবা দেব প্লিজ নীরা তুমি বেরিয়ে এসো ওই বিশ্রি জীবন থেকে।”

” সুন্দর জীবন!এতই সহজ?”

” আমাকে একটুখানি ভরসা করো।কথা দিচ্ছি আমি তোমার জীবন পালটে দেব।একটা স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে তুমি ফিরবে।”

নীরার দু’চোখ চকমক করে উঠলো।সুস্থ জীবনে বেঁচে থাকার লোভ তারো আছে কিন্তু পরিস্থিতি যে তার প্রতিকূলে।

” বলা সহজ করা কঠিন।”

” মোটেও না।প্লিজ নীরা তুমি পারবে।আমি আমার বাবা-মাকে বোঝাবো তারা তোমাকে ঠিকি মেনে নেবে।”

” দেখা যাবে।”

” তুমি ইতালি যাবে নীরা?আরশাদ তোমাকে কোন জব সেক্টরে সুযোগ করে দিতে পারে।”

” ভেবে দেখবো।”

” আমি যেদিন চলে যাব সেদিন তুমি আমাকে টেক অফ করতে আসবে?”

” আসবো।”

” আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার।”

খুশিতে নীরার হাত জড়িয়ে ধরলো খুশবু।ভাই বোন না থাকার যে আফসোসটা খুশবুর ছিল তা নীরা এসে ঘুচে দিল অতি সহজে।
.

এক্সিডেন্টের পর খুশবুর শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে অন্যদিকে আর মন ঘুরাতে পারেনি আরশাদ।নিজের শারীরের জখম নিয়েও ছুটেছে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত।মেয়ে জামাইয়ের অবস্থায় অনিমা ভীষণ ভাবে অসুস্থ হলেন তাকে নিয়ে শুরু হলো হসপিটাল ছোটাছুটি।তিনদিন তিনি হসপিটাল ভর্তি ছিলেন।সব মিলিয়ে আরশাদের জীবন থেকে নয় মাস কেটেছে।সে এবং খুশবু এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।আরশাদ ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে,
চোখ মুখ ঢেকে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল নীরা,ছাদে দাঁড়িয়ে তা চুপচাপ দেখলো আরশাদ।তখনি অনিমা এসে আরশাদের উপর চড়াও হলেন,

” তোমাকে বারবার বলেছিলাম নীরার সাথে খুশবু যেন যোগাযোগ না করে।শুনলে না আমার কথা।”

” সরি।খুশবুর খু্শি আমি কেড়ে নিতে পারবো না।”

” যা ভালো বুঝো করো।”

অনিমা রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন নিচে।আরশাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আর তো বেশিদিন নয় কয়েকদিন পরেই ইতালিতে পাড়ি জমাবে ফ্লুজিকে নিয়ে।নীরার সান্নিধ্যে খুশবু আর একটা দিনেই তো।

কথায় আছে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে।আরশাদ প্রথম পর্যায়ে খুঁজে ছিল তুবাকে অথচ পেয়ে গেল খুশবুকে।দ্বিতীয় পর্যায়ে নীরা সামনে এলো, নীরার সত্যতা যাচাইয়ে দেশে এলে কয়েক মাস পর বেরিয়ে এলো তুবার পরিচয়।
তুবার মৃত্যুর দিন আরশাদ তাকে শেষ বারের মতো দেখেছে।এক্সিডেন্টের প্রথম তিন মাস তার ব্যস্তায় কেটেছে বিঁধায় তুবার সম্পর্কে তেমন কোন খোঁজ নেওয়া হয়নি।

খুশবু যখন সুস্থের পথে আরশাদ তুবার পরিবারের খোঁজ লাগালো।সেদিনের এক্সিডেন্টের প্রতিটা নিউজ সবটা ঘেটেছে সে।মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় তালিকা থেকে আরশাদ তুবার সম্পর্কে কিছুটা তথ্য জানতে পারে।আর সেই সব ইনফরমেশন নিয়ে তুবার পরিবারকে খুঁজতে লোক লাগায়।
সেদিন গ্রাম থেকে ভাইয়ের সাথে শহরে ফিরছিল তুবা,মেয়েটা কি জানতো সেদিনি তার জীবনের ইতি টানতে চলেছ?খুশবু এবং আরশাদ যে বাসে ছিল তার বিপরীত বাসে ছিল তুবা এবং তার ভাই।মেয়েটার মৃত্যু আরশাদের কাছে কিছু অপ্রকাশিত অধ্যায় রেখে গেছে।

” সম্পর্কের একটা সময়ে এসে অযথা বাড়াবাড়িতে তুবা কেন সম্পর্ক ছিন্ন করলো?”

” আরশাদকে ছেড়ে যাওয়ার কারণ কি ছিল?”

” তুবা কি আসলেই ভালোবেসেছিল তাকে?”

” এত এত যত্ন আদরে মাখা বুলি সবটাই কি লোভ আরশাদের টাকার উপর ছিল?আরশাদ যখনি অতিরিক্ত দূর্বল হয়ে পড়লো সুযোগ বুঝে সরে গেল তুবা..কিন্তু কেন?”

এসবের উত্তর আজও অজানা আরশাদের কাছে।তুবার মৃত্যুর পর নিশ্চয়ই এসব প্রশ্নের সমাধান পাওয়া মুশকিল।তুবার বন্ধুদলের কেউ আরশাদকে চেনে না।তুবা যখন আরশাদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল তখন আরশাদ নামক প্রেমিকের কথা কাউকে জানায়নি।
তুবার মৃত্যুর পর সবার কাছে আরশাদ জানতে চেয়েছে কেউ আরশাদ নামের ব্যক্তিকে চেনে কি না।যে ছেলেটা একটা সময় তুবার প্রেমিক ছিল।
এই প্রশ্নের উত্তরে সবাই অবাক হয়েছে কেউ চেনে না আরশাদকে।কেউ না।সবাই বরং পালটা প্রশ্ন করেছে তুবার আবার কবে প্রেমিক ছিল?

সবশেষে ছেলেটার দীর্ঘশ্বাস ছাড়া উপায় নেই।ভাগ্যিস সরল সহজ খুশবুটা ছিল তা না হলে আরশাদের কী হতো?খুশবু যদি কোন একদিন তুবার মতো হারিয়ে যায়?এসব ভাবলে আরশাদের অস্থিরতা বাড়ে দম বন্ধ লাগে।আরশাদের আর বুঝতে বাকি নেই তুবা তাকে ঠকালো।তাই তো তুবার নামটাই তার কাছে বিষাক্ত রসের মতো।নামটা শুনলেই বিরক্তে মুখ কুচকে ফেলে সে।যার বর্তমান এত মধুর,স্নিগ্ধ,সরল সে কেন অতীতের বিষাক্তকে নিয়ে ভাববে?বর্তমান নিয়ে সুখে থেকেও যারা যেচে বিষাক্ত অতীতের পেছনে ছুটে তারা সত্যি কারের বোকা,নির্বোধ।
কিন্তু সব শেষে সত্যটা তো অপ্রকাশিত, সত্যি কি তুবা ঠকিয়েছিল আরশাদকে?নাকি বিপর্যয় পরিস্থিতিতে পড়ে মেয়েটা বাধ্য হলো আরশাদকে ছাড়তে।

আরশাদ ছাদ পেরিয়ে ঘরে ফিরলো।অনিমা আর খুশবুর ভীষণ ভাবে ঝগড়া চলছে,তাদের ঝগড়া কি নিয়ে তা নিশ্চয়ই বলতে হবে না?আরশাদ মা মেয়ের পাশ কাটিয়ে নিজের কক্ষে ফিরলো।ইতিউতি করে হাঁক ছেড়ে ডাকলো খুশবুকে।

“ফ্লুজি এদিকে আসো একটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছি না।”

খুশবুর ঝগড়া থেমে গেল।আরশাদের উদ্দেশ্যে চেচিয়ে বলে,

” কী খুঁজে পাচ্ছেন না?”

” আরে রুমেই তো ছিল।এখন খুজে পাচ্ছি না”

” কি পাচ্ছেন না বলবেন তো।”

” তুমি এসে খুঁজে দাও?”

খুশবু মায়ের সাথে আর তর্ক ছেড়ে চলে যায় আরশাদের কাছে।দরজার কাছে খুশবুকে দেখে চটজলদি মেয়েটাকে টেনে আনে সে।

” এই তো পেয়েছি।”

” কি পেয়েছেন?”

” তোমাকে।তোমাকেই তো খুঁজছিলাম হানি।”

” কেন খুঁজছিলেন?”

” তুমি ঠিক আছো?”

” হ্যাঁ আছি কেন?”

” তাহলে চলো।”

” কোথায়?”

আরশাদ প্রত্যুত্তর করলো না।তার আগেই শার্টের বোতামে হাত রাখলো।খুশবুর আর বুঝতে বাকি নেই আরশাদ কি চাইছে।মেয়েটা কপট রাগ দেখিয়ে আরশাদকে বলে,

” আরশাদ এখন না।”

“এখনি।”

” অসময়ে…”

” রোমান্সে সময় লাগে?আমি আরশাদ ইহসানের সব পরে রোমান্স আগে হোক সেটা সময় অসময়।”

” আমি বলে আপনাকে সামলাই অন্য কেউ হলে….”

” অন্য কেউ লাগবে না তুমি আছো তো।”

” না আমি নেই।”

খুশবু ছুটে পালাতে যায়।দরজা দিয়ে বের হওয়ার আগেই আরশাদ তার ওড়না চেপে ধরে টেনে আনে।দরজাটা সশব্দে বন্ধ করে বাঁকা হাসে।

” এমন ভাব করছো যেন আমরা নব দম্পত্তি।তুমি লজ্জায় পালিয়ে যাচ্ছো ”

” আপনিও তো এমন ভাব করছেন যেন আপনি…. ”

খুশবুর কথা থেমে যায়।আরশাদ তার কাছে এসে খোলা চুল গুজে দেয় কানে।দু’হাতের আঁজলায় দখল করে মেয়েটার দু’গাল।আরশাদের ডাকে সাড়া দেওয়া ছাড়া খুশবু আর উপায় খুঁজে পায় না।পাবে কি করে?প্রতিবার আরশাদ তাকে উস্কে দিয়ে ইনোসেন্ট ভাব ধরে সরে যায়।
.
এয়ারপোর্টের সামনে নীরার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে খুশবু।মেয়েটার আজ আসার কথা ছিল কিন্তু এখনো আসছে না ফোনটাও রিসিভ করছে না।কোন বিপদ হলো না তো?ভয়ে খুশবুর গলা শুকিয়ে আসছে।অনিমা বাহারুল এবং আরশাদ অনেকবার খুশবুকে যেতে বলেছে নীরা নিশ্চিয়ই আসবে না কিন্তু মেয়েটা জেদ ধরে বসে আছে যত যাই হয়ে যাক নীরা নিশ্চয়ই আসবে।সময় গড়িয়ে গেল আরো কিছুক্ষণ, আরশাদ আর দাঁড়ালো না ব্যাগপত্র হাতে তুলে যেতে নিলে খুশবু চোখ ঝাপসা হয় আরশাদকে অনুরোধ করে আরেকটু থাকতে।হঠাৎ একটি মেসেজের শব্দে মনোযোগ সরে খুশবুর।চেক করতে দেখতে পায় নীরা মেসেজ পাঠিয়েছে।

” এয়ারপোর্টে আসতে পারিনি বলে দুঃখিত।আমি অনেক ভেবে দেখিছি কেউ কখনো আমাকে গ্রহণ করবে না মূলত আমি এমন কোন পথে নিজেকে ধাবিত করিনি যে, যে কেউ আমাকে সাদরে গ্রহণ করবে।তোমার পরিবার নিয়ে তুমি খুশি থাকো খুশবু।আমি তোমার সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাব।মন খারাপ করেনা লক্ষ্মী বোন পরে কথা হবে।আমি এখন নতুন ক্লাইন্টের সাথে সিলেট যাচ্ছি।ভালো থেকো।”
.

প্রচন্ড ঠান্ডায় আরশাদের বুকে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়েছে খুশবু।বিড়াল ছানার ন্যায় ঘুমের মাঝে উষ্ণতা খুঁজছে সে।ঠান্ডায় শরীর থেমে আসছে আরশাদের রুম হিটার গত রাতে চালানো হয়েছে তাহলে এত ঠান্ডা হঠাৎ লাগছে কেন?আরশাদ পিটপিট চাহনিতে চোখ খুললো।পর্দার দরুনে বাইরের দৃশ্য চোখে পড়ছে না।আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুদিনের মধ্যে তুষারপাত হবে।তবে কি তুষার পড়ছে?আরশাদ খুশবুকে শুইয়ে উঠে দাঁড়ালো।মেয়েটার উন্মুক্ত দেহে ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে দিয়ে ছুটে গেল করিডোরে।
করিডোরের দরজা খুলতে হানা দিল তুলতুলে বরফেরা।চারদিকে ঘেরা তুলো পেঁজার ন্যায় বরফেরা ঘিরে রেখেছে চারিদিক।আরশাদ আনন্দে উত্তেজিত হয়ে পড়লো দ্রুত ছুটে গেল খুশবুর কাছে।মেয়েটাকে ব্লাঙ্কেট সহ পাঁজাকোলে তুলে ছুটে গেল বারান্দায়।তুলতুলে বরফেরা ছুঁয়ে দিল খুশবুর গাল গলা।ঠান্ডায় চমকে উঠে সে।চোখ খুলতে পৃথিবীর অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত মেয়েটা।

” আরশাদ আমি কি সত্যি দেখছি?”

” হ্যাঁ সত্যি জান।ফাইনালি তুমি স্নোফলের দেখা পেলে।”

” চলুন নিচে যাই।”

বাংলাদেশ থেকে এসে আরশাদ পরিকল্পনা করে স্নোফল দেখার উদ্দেশ্যে ফ্লুজিকে নিয়ে মিলান শহরে যাবে।এর আগের বার মিলানে গেলেও তাদের সেই স্মৃতিগুলো সুখকর ছিল না কেননা নীরার আগমন সবটাই উলটে পালটে দেয়।
জীবনের আনন্দেরা আজ এই পর্যায়ে এসে থমকে যায়।টিভিতে,অনলাইনে,মুভিতে সে কত দেখেছিল স্নোফল ফাইনালি খুশবু নিজে ছুঁয়েছে দেখেছে।তুষারে ঢেকে গেছে চারদিকে।আরশাদ তার ফ্লুজিকে নিয়ে একটি হোটেলে উঠেছে।হোটেলের মাঠে তুষারের বৃষ্টিতে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে মেয়েটা।এক দলা তুষার নিয়ে আরশাদের মাথায় ছুড়ে খুশবু আরশাদ কয়েক সেকেন্ড স্থির থেকে তুষার কুড়িয়ে খুশবুকে তাড়া করে।দুজনে ছুটতে থাকে উদ্দেশ্যহীন।একটা পর্যায়ে খুশবু ছিটকে পড়ে বরফের গোলায় সেই সাথে পড়ে যায় আরশাদ।

” আরশাদ সরি।আমি…”

খুশবু কথা শেষ করার আগেই আরশাদ বরফের গোলা নিয়ে খুশবুর মুখে ঠেসে দেয়।

” এটা কি করলেন আপনি?ঠান্ডা লাগছে তো।”

” উষ্ণতা লাগবে?”

আরশাদ চট করে খুশবুর ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।আশেপাশে অনেক ইতালিয়ান দম্পত্তি তাদের দেখে সিটি বাজায় কেউ বা হাসতে হাসতে ঠোঁট মেশায় তার স্ত্রী/প্রেমিকার।
.
এরপর সম্পর্কের চড়াই-উতরাইয়ে আরো তিনটে বছর পেরিয়ে গেল।এই তিন বছরে কি আরশাদ এবং খুশবুর সম্পর্ক মধুর হয়েছে?নাকি হেমলোকের বিষাক্ততা ঘিরে ধরেছে তাদের সম্পর্কে?
মানুষের সুখের সন্ধান তৃতীয় ব্যক্তির আড়ালে রাখা শ্রেয়।বদনজর বলেও তো একটা কথা আছে।
আরশাদ এবং খুশবুর সম্পর্কে কি তাই আছে?একজোড়া কপোত-কপোতীর সুখ পছন্দ হলো না তৃতীয় ব্যক্তির।নিজের হিংসাত্মক মনোভাবে একটা মেয়ের সংসার ভাঙতেও কুণ্ঠা বোধ করেনি নীরা।

শেকলের শব্দে আচমকা আরশাদের ঘুম ভেঙে যায়।পিটপিট চোখে তাকাতে দেখতে পেল খুশবু পা টিপে টিপে কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।মেয়েটার বোকা বোকা কার্যক্রমে আরশাদ হাসে।বিছানার সাথে বাঁধা শেকলটা টানতে খুশবু হুমড়ি খেয়ে পড়তে যায়,অবশ্য পড়তে পড়তেও নিজেকে ধরে নেয় সে।হাতের শেকলটার দিকে তাকিয়ে ভীত চাহনিতে তাকায় আরশাদের পানে।আরশাদ তখন বাঁকা হাসছিল।

” কোথায় যাচ্ছো ফ্লুজি?”

খুশবু ভয় নিয়ে বলে,

” আমার খিদে পেয়েছে।”

” খাবার তো ডয়ারে রাখাই আছে।”

” সব শেষ।”

আরশাদ উঠে বসে।দ্রুত পায়ে তার ফ্লুজিকে টেনে এনে বসায় বিছানায়।

” একটু অপেক্ষা করো জান আমি আসছি।”

এখনো পরিপূর্ণ সকাল হয়নি।ফ্লুজির খিদে পেয়েছে বলে আরশাদ তাড়াহুড়ো করে ফ্রিজ থেকে কিছু ফ্রোজেন খাবার নিয়ে গরম করলো।

খুশবু বিছানার এক কোণে বসে রয়।মেয়েটার বাম পায়ে এবং বাম হাতে শেকল বাঁধা।অবশ্য এই দশার জন্য সে নিজেই দায়ী।নীরার প্ররোচনায় আরশাদের সাথে অনেক মনোমালিন্য করেছে সে।ঝগড়া বিবাধে লিপ্ত হয়েছে।খুশবু যখন বাবা মায়ের কাছে ফিরতে চায় আরশাদ বারণ করেনি ইমার্জেন্সি টিকেট কেটে মেয়েটাকে দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে কিন্তু দেশে গিয়ে খুশবু তার রূপ পাল্টেছে।আরশাদকে ছাড়বে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ঝগড়ার মাঝে একদিন বলে বসলো আরশাদকে ডিভোর্স দেবে…সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেললো আরশাদ কৌশলে তার ফ্লুজিকে নিয়ে এলো ইতালিতে।
তারপরেই খুশবুকে বাঁধা হলো শেকলে।ফ্লুজি ছেড়ে যাবে মানে কী?আরশাদের কাছে ভালোবাসার সজ্ঞা ভিন্ন, ভালোবাসার মানুষকে মুক্তি দিয়ে ভালোবাসা মানে নিজে কষ্ট পাওয়া।আরশাদ কষ্ট পেতে চায় না সে চায় ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে বছরের পর বছর কাটাবে।নীরার সকল ষড়যন্ত্র আরশাদ ঠিকি বুঝলো একটা সময় পর খুশবু নিজের ভুল বুঝতে পারলো।সে যে ভুলটা করেছে এর হয়তো ক্ষমা হয়না।আরশাদের মতো মানুষকে কষ্ট দিয়ে সে ভুল করেছে।না শুধু ভুল নয় মহাভুল।

এত সবের পরেও নিশ্চয়ই প্রশ্ন থেকে যায় নীরার এসব করার কারণ কি?মূলত হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।
যেভাবে আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।মানুষের চরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ অন্যতম। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে বিষাক্ত করে তোলে।

খুশবুর জীবনে না পাওয়ার কি আছে?মেয়েটা ভালো পরিবার পেয়েছে,বিশ্বস্ত স্বামী পেয়েছে।খুশবুর এতটা সুখ নীরার আর সহ্য হলো না।নানান প্রবঞ্চনায় খুশবুকে জড়িয়ে আরশাদের নামে ইন্ধন জোগায় নীরা।সবশেষে বোকা খুশবু আরশাদকে ভুল বুঝলো সুখের সংসারটা গলা চেপে বিষময় করে তুললো।এসব নিয়ে খুশবুর এখন আফসোস হয় বড্ড বেশি আফসোস, সে কেন বোকামিটা করলো?আরশাদ এসব নিয়ে নীরার সহিত মুখোমুখি হয়নি।তার মনে একটাই প্রশ্ন জাগে তার ভালোবাসায় কী কমতি ছিল যে তার ফ্লুজি তাকে ভুল বুঝলো?ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন তুললো?

সব মিথ্যা সত্য হয়ে যাক,সুখেরা ডানা ঝাপটে মরে যাক,এই জগৎ সংসার আরশাদের বিপক্ষে যাক তবুও আরশাদ তার ফ্লুজিকে ছাড়বে না।আরশাদ বড্ড স্বার্থপর নিজের ভালোর জন্য ফ্লুজিকে তার চাই।

গরম গরম পাস্তা ফুঁ দিয়ে খুশবুকে খাইয়ে দিচ্ছে আরশাদ।এত কিছুর মাঝে আরশাদের ভালোবাসা দেখানো স্বভাবটা থামেনি কিন্তু বেড়েছে উগ্রতা, জেদ, রাগ।খুশবর শেকল বন্দি জীবন সম্পর্কে অনিমা কিংবা বাহারুল হক কেউ জানেন না।ইমরান ইহসান,আফরোজ এসব নিয়ে আরশাদের সঙ্গে যতবার আলোচনায় বসেছে ততবার আরশাদ এড়িয়ে গেছে।তার একটাই কথা তার ওয়াইফ সবটা তাকে বুঝে দেওয়া উত্তম।

খাওয়ার শেষে খুশবু পুনরায় বিছানায় শুয়ে পরে।শেকলের শব্দ তার জীবন থেকে ঠিক কবে যাবে সে জানে না।আরশাদ চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ে তার ফ্লুজির পাশে।মেয়েটার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আচমকা খুবলে ধরে সব চুল।ব্যথায় চাপা আর্তনাদে চেচিয়ে উঠে খুশবু,

” আরশাদ আমার লাগছে ছেড়ে দিন।”

” নীরা তোমায় কি বলেছিল জান?”

” আপ.. আপনি আমায় ভালোবাসেন না। আপনি তুবাকে ভালোবাসতেন আমাকে শুধু শারীরিক চাহিদার…”

” এতটা চাহিদা থাকলে তোমার মতো একটা মেয়েকে আনতাম?শুধু শারীরিক চাহিদার জন্য আমার রুচি এতটাই জঘন্য?আরশাদ ইহসানের জন্য মেয়ের অভাব নেই।”

যেদিন থেকে শেকলে বন্দি খুশবুর জীবন সেদিন থেকে আরশাদ একই প্রশ্ন করেছে এবং একই উত্তর দিয়েছে।খুশবুর ভীষণ ভাবে কান্না পায় সাজানো সংসারটা সে নিজ হাতে তছনছ করেছে। আরশাদ খুশবুর গাল চেপে পুনরায় প্রশ্ন করে,

” ছেড়ে যাবে আমায়?ডিভোর্স চাই?”

খুশবু প্রত্যুত্ত করার আগে গলগলিয়ে উগড়ে দেয় পেটের সব।মেয়েটার মাথা ঘুরছে,আরশাদ উঠে দাঁড়াতে খুশবু চেপে ধরে আরশাদের টি-শার্ট।

” আপনি যাবেন না আপনাকে আমার দরকার।আরশাদ আমার ভালো লাগছে না।আমার কেমন যেন লাগছে।”

কাঁপতে কাঁপতে আচমকা নিস্তেজ হয়ে গেল খুশবুর শরীর।আরশাদ ভীষণ ভয় পেলো।ভয়ের চোটে ছেলেটা কেঁদেই ফেললো।দ্রুত শেকল খুলে ফোন করলো আরিবকে।মেয়েটাকে ইমিডিয়েট হসপিটাল নিতে হবে।
.

খুশবু ভীত চাহনি শুধু আরশাদকে খুঁজছে।হসপিটালের একটা কক্ষে সে একাই শুয়ে।আরশাদ এলো বিধ্বস্ত অবস্থায়,খুশবু তাকে দেখে খুব চমকালো।ছেলেটা ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা,দু’চোখ লাল,চুলগুলো উষ্কখুষ্ক।

” আরশাদ আপনি ঠিক আছেন?”

আরশাদ প্রত্যুত্তর করলো না।খুশবুর পাশে বসে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটাকে।নিরবতা ছিন্ন করে আচমকা আরশাদ কেঁদে উঠলো হুহু করে।খুশবু ভয় পেল এক হাতে আরশাদের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,

” আরশাদ আমার কি খুব বড় অসুখ হয়েছে?”

” আমি বাবা হতে চলেছি জান।আসো মিষ্টি মুখ করি।”

খুশবু কিছু বুঝে ওঠার আগে ঠোঁটে ঠোঁট মেশালো।মেয়েটা হাঁপিয়ে ওঠতে আরশাদ তাকে ছেড়ে উঠে বসে।

” তোমার আদরে ভাগ পড়েছে জান।না না আমার আদরে ভাগ পড়ে।বলো কী চাই?সব দেব সব।এতটা খুশি আগে কখনো হইনি আমি।এলোমেলো আমি কি না বাবা হচ্ছি!”

” আমার আগের জীবন ফিরিয়ে দিন আরশাদ আমি যা করেছি সবটাই ভুল ছিল।”

” মানছো তবে?”

” অনেক আগেই মেনেছিলাম।”

” তুমি বুঝো না?আমার সব ক্লান্তি তেষ্টা নয়নের তৃপ্তি সবটা তোমায় ঘিরে।”

খুশবু হাসে আরশাদের গালে হাত রেখে বলে,

” অভিনন্দন জনাব।আপনি অবশেষে সফল।”

” ফ্লুজি আমার জান অভিনন্দন তোমাকেও, ৭৮ কেজির ভার সহ্য করেছো বলে।

খুশবু চোখ রাঙিয়ে তাকালো আরশাদের পানে।আরশাদ মুচকি হেসে পেছনে তাকাতে দেখতে পেল আরিব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের পানে।
__সমাপ্ত__