আনাবিয়া ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে এসে মোবাইল হাতে নিলো, নাহহ তানিমের কোন মেসেজ আসেনি!
আনাবিয়া মনে মানে ভাবলো, আমাকে এখন আর কি দরকার এখন তো আছেই সাকচুন্নি স্বর্ণা। কতক্ষণ আউলা, ঝাউলা চিন্তা ভাবনা করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,তুমি আমাকে কিভাবে ভুলে যেতো পারো তানিম! তুমি না বলেছিলে, জীবনে প্রেম করোনি আর আমিই তোমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা, তাহলে কেন এসব করলে?
নীলা বেগম উঁচু স্বরে ডাকতে লাগলেন, আনা, আনা…
‘এভাবে ডাকছো কেন?
‘তুমি কার পারমিশন নিয়ে এবাড়িতে এসেছো?
‘আমার বাড়িতে আসতে আবার আমার পারমিশন লাগবে?
‘অবশ্যই লাগবে। স্বামীর আদেশ ছাড়া স্ত্রী বাহিরে বের হলে ফেরেশতারা সেই মহিলাকে লানত দিতে থাকে। আমি কতবার তোমাকে বলেছি,ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখো, আমার কথা কে শুনে!
‘এটা কেমন কথা হলো? আমি কি মূর্খ নাকি! ঠিক ভুল আমি বুঝি।
‘তুমি এই মূহুর্তে ও বাড়িতে ফিরে যাবে আর আসতে হলে তানিমকে বলে তবেই আসবে।
‘মা’আমি এই সংসার আর করবো না।তোমাদের জামাইকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।
‘বিয়ে কি পুতুল খেলা?তিন বছর খেলেছো এখন খেলবে না! সংসারে মানঅভিমান, ঝামেলা হবেই তাই বলে তো সংসার ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাহলে তো কোন সংসার টিকতো না।
‘মা ‘আজ যা হয়েছে এরপর আর আমার পক্ষে সম্ভব না ওই লোকটার সাথে একি ছাদের তলায় থাকা।
‘কারন বলো।
‘আনাবিয়া সবটা খুলে বললো।
নীলা বেগম সবটা শুনে বলে, তুমি জানো কারো উপর মিথ্যে অপবাদ দেয়া কত বড় গুন্নাহ! তুমি যা দেখেছো,সত্যটা তার ভিন্ন হতে পারে!
‘আমার চোখ ভুল দেখেনি নিজের চোখে দেখেছি।
‘চোখের দেখাও ভুল হয়। আর তানিম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে অত্যান্ত নম্র,ভদ্র সে কখনো এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না।
‘মা ‘নামাজ পরলেই কেউ ফেরেশতা হয়ে যায় না।
‘তুমি কি বোরখা ছাড়া এসেছো এ বাসায়?
‘হ্যা এসেছি তো!
‘তোমার হ্যাসবেন্ড বিয়ের পর থেকে তোমাকে আগলে রেখেছে সবার নজর থেকে আর একদিনেই তুমি তা শেষ করে দিলে?
‘উফফ মা’ আর ভালো,লাগছে না সেই কখন থেকে জ্ঞান দিচ্ছো!
‘আমার একটা বোরখা নাও আর সোজা নিজের বাড়িতে চলে যাও,আগে সত্যিটা জানো তারপর আমরা ফয়সালা নিবো।
‘স্বর্ণা মনের আনন্দে রান্না করছে,এতোদিনে তার মনের বাসনা পূর্ণ হলো।কত আশা ছিলো তানিমের বউ হওয়ার কিন্তু সবাই তাকে রেখে আরেকজন মেয়েকে বউ করে আনলো!
রহিমা বেগম কিচেনে এসে বলে, আমার রান্নাঘরে তোর ছায়াও জেনো না পরে। বের হও এখান থেকে।
‘মামি এতো রেগে যাচ্ছে কেন! বুঝতে তো তোমরাই ভুল করেছেন, নিজের ছেলের পছন্দের মেয়েকে রেখে বাহিরের মেয়েকে বউ করে এনে।
‘তুমি তো চলে গিয়েছিলে আবার কেন এসেছো? আমার শান্তির সংসারে অশান্তি করতে?
‘আপনার ছেলেকে আমার ভিষণ পছন্দ। আনা তো চলেই গেছে আমাকে মেনে নিন।
‘দরকার পরলে এবাসা ছেড়ে বস্তিতে যেয়ে থাকবো তবুও তোমাকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে মানবো না।
‘আজ না মানলে কাল মানবেন, কাল না মানলে পরশু,মেনে তো নিতেই হবে।
‘তানিম রুমে ঢুকে নিশ্চুপ বসে রইলো,হঠাৎ তার মায়ের সাথে বাজে বিহেভিয়ারের কথা মনে পরলো মনে, মানে বলে আমি কি করবো মা’আমি যে নিরুপায় সামান্য একটা ভুল আমাকে আজ এতো বাজে পরিস্থিতিতে এনে ফেলেছে। আল্লাহ আপনি আমাকে ক্ষমা করুন আর এর থেকে মুক্তির পথ সহজ করে দিন।
অনেকটা সময় পর মোবাইলটা হাতে নিলো কল করার জন্য। আনাবিয়ার নাম্বার ডায়েল করেছে এমন সময় দরজায় কেউ আঘাত করতে লাগলো৷
‘তানিম দরজার সামনে যেয়ে বলে,স্বর্না সব কিছুর লিমিট থাকে, লিমিট ক্রস করার পর মানুষ আর কোন কিছুকেই ভয় পায় না আর একবারও তুই আমার সামনে আসবি না।
‘আপনার মনে কি সব সময় স্বর্ণা থাকে? মানে ওকে ছাড়া কাউকে কল্পনা করতে পারেন না!
‘তানিম দ্রুত উঠে দরজা খুলে দিয়ে আনাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আমি জানতাম আমাকে ছেড়ে তুমি থাকতে পারবে না ঠিক চলে আসবেই।
‘ছাড়ুন আমাকে একদম ইমোশনাল কথা বলে আমাকে গলানোর চেষ্টা করবেন না। সকালে যা দেখেছি তার বিহিত হবে তারপর আপনার সাথে কথা। এখন চলুন আমাকে বাসায় দিয়ে আসবেন।
‘তানিম বিছনার উপর পা দুলিয়ে বসে বলে, আমাকে তো পা’গ’লা কুকুর কামড়েছে নিজের বউকে আরেক বাসায় রেখে আসবো!
‘অতো কথা তো আমি জানিনা আপনি নিজে আমাকে নিয়ে যাবেন৷
‘বউ ছাড়া থাকতে আমার ভিষণ কষ্ট হবে, আমি আবার বউ পাগল ছেলে।
‘ তা বউ পাগল হতে ক’টা বউ লাগে? একটা বউ থাকলে বুঝি বউ পাগল হওয়া যায় না?
‘আনা একদিন এসব কথার জন্য আফসোস করবে।
‘আমি চাই আফসোস করতে, আমাকে সত্যিটা বলুন। ওই লিপস্টিক আপনার ঠোঁটে কি করে এলো? বলুন আপনি আর স্বর্ণা এতো কাছাকাছি কি করে এলেন? আমাকে ভুল প্রমান করুণ বিশ্বাস করেন এসব ভুল প্রমাণিত হলে আমি সবচেয়ে খুশি হবো।
‘তানিম চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো,না পারছে সত্যিটা বলতে না পারছে আনার এমন আচরণ সহ্য করতে।
🌿
আজরান বাসায় ঢুকতেই জারা বলে, ভাইয়া তুমি কোন সুইমিং পুলে গোসল করে নিজের চেহারা বদলে এসেছো? বলে স্ব শব্দে হেসে দিলো।
‘আজরান জারা কে ধমক দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলো, শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করার সময় দেখে তার পকেটে একটা ইয়ার রিং। রিংটার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবছে এটা আবার কোথা থেকে আসলো? আজরান ড্রেস চেঞ্জ করে কিচেনে চেয়ে নিজের জন্য কড়া করে এক কাপ কফু বানালো। কফি নিয়ে সোফায় আয়েশ করে বসে কফিতে চুমুক দিলো৷
‘নাহার বেগম কফি কাপটা হাত থেকে নিয়ে বলে, আর কত নিজের কফি নিজে বানিয়ে খাবি? একটা বউ থাকলে তোর জন্য কফি বানিয়ে এনে দিতো, আমার সাথে হাতে,হাতে সাহায্য করতো, কত ভালো লাগতো ভাবতো?
‘মা আমি কি বলেছি বিয়ে করবো না! মেয়ে দেখো পছন্দ হলেই বিয়ে পাকা। তব হ্যা মেয়ের বয়স অবশ্যই আঠারো বছরের বেশি হতে হবে।বলেি কফি মগটা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
🌿আনা বোঝাতে ব্যার্থ তানিম দু’জনেই বের হবে ঠিক তখন রাইমা এসে বলে, ভাবি তোমরা কোথায় যাচ্ছো?
‘আনা বলে,আজকে দেখে তোমার আমার মাঝে শুধু বন্ধুত্ব কোন ভাবি, ননদের সম্পর্ক নেই মনে থাকবে?
‘হঠাৎ কি হলো তোমার? মাথা ঠিক আছে?
‘নিজের কথা থেকে নড়বে না কিন্তু, বলেছিলেনা তোমার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক না থাকলেও আমাদের বন্ধুত্ব সময় সময় থাকবে।
‘হ্যা তা তো থাকবেই কিন্তু হলো টা কি?
‘আনা কিছু না বলে বের হয়ে গেলো।
‘তানিম রুমেই বসে আছে, কিন্তু সে যানে আনার কত জেদ সত্যি যদি গাড়ির সাথে ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করে! দ্রুত একটা টিশার্ট পরে বের হয়ে গেলো।
‘আনা হাঁটে আবার একটু পিছু তাকায়, আবার হাঁটে আবার একটু পিছু তাকায়।
‘তানিম পেছন থেকে বলে,ভালোবাসি বউ প্লিজ এবারের সত ক্ষমা করে আমার সাথে চলো, ভবিষ্যতে কখনো এমন ভুল হবে না৷ এই কানে ধরেছি।
“আমার হ্যাসবেন্ড আর তার বোনকে এতোটা কাছাকাছি দেখে,রেগে গেলাম আমি। স্বর্ণা আমাকে দেখেই সরে গেলো। ‘বাপ্পি বললো আনা তুমি ভুল ভাবছ!
‘একদম আমাকে ঠিক ভুল শেখাতে আসবে না। আমি এতোটা অবুঝ না। নিজের চোখে যেটা দেখেছি সেটা অবিশ্বাস করবো!
‘চোখের দেখাও ভুল হয় আনা।
‘তুমি তো কথাই বলো না৷ লজ্জা করলো না তোমার! নিজের ওয়াইফ নেই সেই সুযোগে বোনের কাছাকাছি আসতে! ছিহহহ আমার ত ভেবেই গা গুলিয়ে বমি আসছে।
‘কি বলছো এসব আনা!
আনা বাপ্পির হাত ধরে আয়নার সামনে নিয়ে আসলো৷ আমি তো ভুল বলছি, কিন্তু আয়না নিশ্চই ভুল বলবে না! দেখো আর বলো তোমার ঠোটে এই লিপস্টিক কোথা থেকে আসলো! এবার এটা বলো না আমি নেই তাই আমার লিপস্টিক তুমি ব্যবহার করেছিলে।
‘আমি আর স্বর্ণা যাস্ট কথা বলছিলাম। আমি বসেছিলাম হুট করে দাঁড়িয়ে যাওয়াতে এই দূর্ঘটনা।
‘তা তোমার বউ নেই সেটা জানার পরেও নিজের বেড রুমে তোমার বোনকে আসতে দিলে কেনো?
‘ও আমার কাজিন ছোট থেকে এখানে বড় হয়েছে৷ ও নিজেদের মানুষের মতই৷ রাইমা যেমন আসতে পারে স্বর্ণাও পারে!
‘রাইমা আর স্বর্ণা এক না, রাইমার সাথে তোমার বিয়ও বৈধ না আর এরকম দূর্ঘটনা ও ঘটতো না।
‘আনা তুমি নিজের লিমিট ক্রস করছো!
‘যাস্ট সেট আপ মিস্টার বাপ্পি হাসান। আপনার আওয়াজ নিচে। আপনি যে ঘৃণ্য কাজ করেছেন তারপর এসব কথা মানায় না। ভুলে যাবেননা আমি আপনার সাথে একা একা আসিনি৷ আপনার বাবা মা আমাকে নিয়ে এসেছে৷ তো যা বলার তাদের সামনে বলবেন।
‘তুমি এতোদিনে আমাকে এই চিনলে!
‘পুরো জীবন কাটিয়ে দিলেও মানুষ চেনা যায় না৷ আর আপনার সাথে মাত্র তিন বছরের সম্পর্ক আমার! এতো কথা আমাকে না আপনার বাবা মাকে বলবেন!
‘আনা এই সমান্য বিষয় তুমি বাবা মাকে বলবে!
‘এটা আপনার মত চরিত্রে লোকদের জন্য সামান্য হতে পারে! কিন্তু আমার মত মেয়ের জন্য অসামান্য।
‘আচ্ছা কথা দিচ্ছি আর কখনো এরকম করবো না। আজকে থেকে স্বার্ণার সাথে কথা বলা বন্ধ।
‘আজকেই ওকে এ বাসা থেকে বের করে দেবেন। আমি এ বিষয়ে দ্বিতীয় কোন কথা শুনতে চাইনা।
‘আচ্ছা আমি বাবা মায়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো।
‘দেখো আমি তোমাকে যেটা বলছি সেটা না হলে, আমি যা করবো ভাবছি তাই করবো!
‘বাপ্পি চলে গেলো রুম থেকে। রাস্তায় বেড় হয়ে সিগারেট ধরালো। একে একে পুরো প্যাকেট শেষ করলো। কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছে না।
✨প্রফেসার আজরান চৌধুরী। নিজের ফ্যামেলি নিয়ে এসেছে মেয়ে দেখতে, এ পর্যন্ত শ’খানেক মেয়ে দেখেছে। তবে কাউকে তার মনে ধরছে না।
আজরান বসে আছে তার পাশেই জারা আর নাহার বেগম। সাথে জসিম আবসার চৌধুরী। তিনজনে ফিসফিস করছে, আজ যদি মেয়ে পছন্দ না হয় তবে আমরা আর মেয়ে দেখতে আসবো না।
এরমধ্যেই ট্রে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে এক ষোড়শী কন্য আসলো। আজরান মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো, তুমিই কি পাত্রী?
‘মেয়েটি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।
‘কানে শুনতে পাওনি কি জিজ্ঞেস করছি?
‘পাশ থেকে মেয়ের ভাবি বলে, এতো হাইপার হচ্ছেন কেন! এটাই পাত্রী। ওর নাম নীরু।
‘বাকি কথা না শুনেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো আজরান। রাগে নিজেই ড্রাইভার রেখে একা বেরিয়ে পরলো। চৈত্রমাসের প্রখর গরমে অতিষ্ঠ জন জীবন। তারচেয়ে বেশি অতিষ্ঠ আজরান । কি হচ্ছে তার সাথে!শেষে কিনা একজন টিনেজার মেয়েকে দেখতে আসলো আজরান! গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করছে, আসতে আসতে কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছে?হুট করেই গাড়ী হার্ট ব্রেক করলো। আরো বিরক্তি নিয়ে কাঁচ নামিয়ে বললো চোখে দেখতে পাননা নাকি!
‘এই যে মিস্টার” একটা প্লাস্টিকের গাড়ীর ড্রাইভার হয়ে এতো তেজ! দেখছেননা রাস্তায় পানি আপনার প্লাস্টিক ধীরে চালাতে পারলেননা।
‘,আজরান গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে,সমস্যা কি!
‘আমার তো কেন সমস্যা নেই সব সমস্যা আপনার মিস্টার প্লাস্টিক।
‘প্রচন্ড লেভেলের বেয়াদব আপনি। মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে তর্ক করছেন!
‘তো ভয় পাই নাকি, এই রাস্তা আমার।
‘এটা সরকারি রাস্তা তাই এখানে কারো মালিকানা নেই।
‘বললেই হলো নেই! এই যে দেখছেন বাউন্ডারি এটাকে বলে, তানিন কুঞ্জ।তার পাশে যে বিল দেখতে পাচ্ছেন সেখানে আমাদের জমি আছে। আর আমাদের জমির সোজা রাস্তাটুকু আমাদের! সরকার রাস্তা করেছে তাতে কি!
‘এসব ভুলভাল থিওরি আপনাকে কে শিখিয়েছে!
‘মোটেও ভুলভাল থিওরি না।আমার দাদাজান বলেছেন।
‘থাকেন তো এই নোংরা পরিবেশে। কেমন পানি জমে আছে রাস্তায়।
‘থাকি তাতে আপনার কি! আর এই নোংরা পরিবেশে আপনাকে নিশ্চয়ই কেউ নিমন্ত্রণ করে আনেনি। এবার এসেই যখন পরেছেন দেখুন কেমন মজা।
আনাবিয়া হাত দিয়ে পানি ছিটিয়ে আজরানকে ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
‘বাসায় চেয়ে চেঁচামেচি করে ডাকতে লাগলো দাদা।
আফজাল সাহেব বললেন, কি গো প্রেমিকা জামাই রাইখা এই বুইড়া প্রেমিকরে কেন মনে পড়লো?
‘আমি আর ওই বাড়িতে যাবো না।তোমাদের কথায় বিয়ে করেছি এখন যদি জোড় করে ওই বাসায় পাঠাও তাহলে সোজা ঝুলে পরবো সিলিংয়ে।
‘ওরেহহ বাপরেহহহ মেয়ের ত দেখি ভারি অভিমান হয়েছে! আয় ঘরে আয় তোর বাড়ি তোর যতদিন ইচ্ছে থাকবি কেউ তোকে জোড় করবে না।
‘তোমার ছেলে যদি কিছু বলে তাহলে?
‘ছেলের ঘাড়ে ক’টা মাথা? যে আমার প্রেমিকারে কিছু কইবো! কিন্তু এই পানিতে গড়াগড়ি খেয়ে কেন আসছেন বিবিজান?
‘আমার ইচ্ছে এবার সরো আমি ফ্রেশ হবো।
বাপ্পি বাসায় ফিরে দেখে স্বর্না লাল শাড়ী পরে সোফায় বসে আচার খাচ্ছে। বাপ্পি আসেপাশে তাকিয়ে বলে,আনা কই?
‘তোমার আনা তুমিই খুঁজে দেখো। খুচরো পয়সা ত হয়তো এদিক সেদিক পরে আছে।
‘রহিমা বেগম এসে বলে, হইছে তোর মনের খায়েশ পূরণ? আনাবিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। চরিত্রহীন পুরুষের সাথে কোন মেয়ে থাকবে?
‘মা’ ‘তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো ভুলে যেওনা আমার টাকায় সংসার চলে।
‘আমার কথা কম আর বেশি!একদিন এই মেয়ে কাল নাগিনীর মত তোর সব চুষে খাবে দেখে নিস। ঘরে সুন্দরী বউ থাকতে যে পুরুষ পর নারীর দিকে নজর দেয় এমন পুরুষের দিকে কেউ থুথুও ফেলে না। আর যে মেয়ে জেনে শুনে বিবাহিত পুরুষের মাথা খায় সে তো পতিতালয়ের ব্য’শ্যার চেয়ে নিকৃষ্ট। এটা এখন সংসার না বিষ মনে হচ্ছে। ‘কথাটা জানাজানি হলে পাড়া প্রতিবেশীর কাছে মুখ দেখানোর জো থাকবে না। ছিহহহ ছিহহহহ শেষে কিনা এইদিন ও দেখতো হলো! ‘ এসব দেখার আগে মরন আসলো না কেন?
বাপ্পি স্বর্নার দিকে রক্ত চক্ষু নিক্ষেপ করে তাকালো। কিছু বলবে তার আগেই বাপ্পির ফোনে টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠলো মোবাইল হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেখল স্পষ্ট অক্ষরে লেখা…….. তোমাকে বলেছিলাম, যতদিন তোমার স্পর্শ শুধু আমার থাকবে, ততদিন যা হয়ে যাক আমি তোমার থাকবো।তবে কথায় আছে না পুরুষ মানুষ এক নারীতে আসক্ত থাকতে পারে না।ঘরে বিরিয়ানি থাকলেও পরের ঘরের পান্তা ভাতের দিকে নজর দেবেই।
বিচ্ছেদ আমি কখনো চাইনি তবে ভাগের স্বামী আর ভালোবাসাও চাইনি। ডিভোর্স লেটার খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন। বাপ্পি হাসান।
কয়েক মূহুর্ত টেক্সটের দিকে তাকিয়ে থেকে লম্বা পা ফেলে নিজের রুমে প্রবেশ করে। স্বর্ণাও বাপ্পির পিছু পিছু আসে কিন্তু বাপ্পি স্বর্নাকে রুমে ঢুকতে না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
স্বর্ণা বাহির থেকে বলে,’ সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে দাও। মনে রাইখো সত্যি বেশিদিন চাপা থাকে না। আজ না হয় কাল জানাজানি হবেই। ‘ তখন দেখা যাবে কেঁচো খুড়তে কেউটে বেড়িয়ে আসবে”!!
সাদনান কোলে তুলে নিয়ে প্রিয়তা কে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
সারাও পাশে বসে।
প্রিয়তা ততক্ষণে ব্যাথা ছটফট করছে।
সাদনান এর বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। সে ড্রাইভার কে তাগাদা দিতে লাগলো।
———–
-“মাম্মা,বাপ্পা আসবে না?”
-“আসবে তো সোনা।
তুমি রেডি হয়ে আপু আর ভাইয়ার কাছে যাও।”
তিন বছর বয়সে পা দেওয়া ছেলে টা মায়ের কথা মতো কাজ করে।
রেডি হয়ে নেয় মায়ের হাতে।চেহারা টা দেখতে একদম সামনে দাঁড়ানো মায়ের কার্বন কপি।কিন্তু গায়ের রং আর শরীর এর গঠন ঠিক বাবার।যেমন ফর্সা তেমনিই লম্বা। বয়স তিন হলে দেখতে পাঁচ ছয় বছরের এর একজন ছেলে মনে হবে।
সতেরো বছর বয়সী একজন কন্যা এখন পঁচিশ বছর বয়সী প্রাপ্ত বয়স্ক নারী।
প্রিয়তা ছেলে প্রহর কে রেডি করে দিয়ে নিজে ওয়াশরুম চলে গেলো।
হাল্কা ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলো। পড়নে শাড়ী পড়ার সব প্রয়োজনীয় জিনিস।শাড়ী তো আর ওয়াশরুমে পড়া যায় না তাই বিছানার উপর লাল পাড়ের সাদা রঙের রাখা শাড়ি টা পড়তে মনোযোগী হলো।
শাড়ী পড়া শেষ কুঁচি গুলো নেড়েচেড়ে ঠিক করার চেষ্টা করলো আর ভাবলো বাকি টা নিচে গিয়ে কাউ কে দিয়ে ঠিক করে নিবে কিন্তু সেটা আর করতে হলো না তার আগেই এক জোড়া বলিষ্ঠ দানবীয় হাত শাড়ীর কুঁচি ঠিক করতে দেখা গেলো।
প্রিয়তার মুখখানা খুশিতে চকচক করে ওঠে।
তবে নিচে হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকা বলিষ্ঠ পেটানো শরীরের মানব টার দিকে দৃষ্টি যেতেই হাসি হাসি মুখ টা বিষাদময় হয়ে উঠলো।হাতের পেশি গুলো ঘামে ভেজা সাথে গলায় ঘাড়ে ঘাম চিকচিক করছে।
সাদনান প্রিয়তার কোনো রকম রেসপন্স না পেয়ে মাথা তুলে উপরে তাকালো প্রিয়তার ভাবুক আর মলিন মুখ দেখে মুচকি হাসলো।
প্রিয়তা সাদনান এর হাসি নজরে পড়তেই দৃষ্টি এলোমেলো ফেলে।
সাদনান ইশারায় উপর দিক ঠিক করতে বলে প্রিয়তা তাই করে।
সাদনান কুঁচি ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে হাতের ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখতে রাখতে জানতে চাইলো
-“প্রহর?”
প্রিয়তা ততক্ষণে পাশেই সেন্টার টেবিল হতে পানির গ্লাস নিয়ে সাদনান এর হাতে দিয়ে জানালো
-“ইনিয়া’দের কাছে পাঠিয়েছি।”
-“তুমি বসো।
আমি দশ মিনিট এর মধ্যে রেডি হয়ে আসছি।”
সাদনান পানি শেষ করে গ্লাস প্রিয়তার হাতে দেয়। গায়ের সাদা রঙের পাঞ্জাবিটার উপর পড়ে থাকা কালো কুর্তা টা খোলে পর পরই পাঞ্জাবি টাও একটানে গা হতে খোলে সোফায় ফেলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
-“বড় মনি আসবে না?”
সাদনান ওয়াশ রুম হতে বেড়িয়ে এলেই প্রশ্ন টা করে প্রিয়তা।সাদনান কোনো জবাব দিলো না চুপ করে রইলো।
সে জানে প্রিয়তা এতোক্ষণ হাত গুটিয়ে নিশ্চয়ই বসে নেই তাই জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। প্রিয়তা এবার ফুঁসে ওঠে।
এগিয়ে এসে সাদনান এর ঠিক বরাবর দাঁড়িয়ে আবারও বলল
-“আপনি তো বলে ছিলেন মনি কে নিয়ে আসবেন। তাহলে?”
-“সব টা তো জেনেই গিয়েছো।”
-“কিন্তু এটা কথা ছিল না।
আপনি কথা দিয়ে ছিলেন নিয়ে আসবেন বলে!”
সাদনান কোনো প্রতিত্তোর করে না। কি জবাব দিবে?সে তো নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষমেশ সফল হতে পাড়লো না।
পাড়লো না না-কি তাকে সফল হতে দিলো না তার ভাগ্য। সাদনান এর খুব করে আজ থেকে এক মাস আগের কথা মনে পড়ে গেলো।
সে দিন প্রিয়তার পঁচিশ তম জন্ম দিন ছিল। আর প্রিয়তা সাদনান এর থেকে উপহার সরূপ মিতা সওদাগর কে দেশে আনার প্রস্তাব রেখে ছিল সাদনান আশ্বাস দিয়ে বলে ছিল আনবে।
কিন্তু সমস্যা হলো মিতা সওদাগর আসতে কিছুতেই রাজি নয় সে আসবে না। সে এখন বিদেশে তার ভাইয়ের বাড়ি আছে। তিনি সেখানেই থাকবে।শফিক সওদাগর নিজেও চেষ্টা করছেন তবে মিতা সওদাগর রাজি নয়।
তার সাথে সাদনান একটু আগেও মিতা সওদাগর এর সাথে কথা বলেছে।তার শেষ কিছু উক্তি ফোনে রেকর্ড করে রেখে ছিল আর প্রিয়তা একটু আগে যে সে গুলো সাদনান এর ফোন থেকে শুনেছে।
তবে কথা গুলো ভীষণ স্নেহময় ছিল সাথে কি ছিল প্রিয়তা জানে না তবে তার মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে।
আর তাই তো না চাইতেও সাদনান এর উপর সব রাগ উগড়ে দিয়েছে।
সাদনান বুঝতে পারলো।প্রিয়তার হাত দু’টি নিজের শক্ত হাতের সাহায্য বুক হতে নামিয়ে নিয়ে নিজে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়তা কে।
প্রিয়তার ফুঁপানোর শব্দ শোনা গেলো অনেক্ক্ষণ যা সাদনান এর বক্ষদেশ ভীষণ বাজে ভাবে ক্ষতবিক্ষত করে রক্ত ক্ষরণ হলো হৃদয়ে।
সাদনান বউ কে স্বান্তনার বাণী দিয়ে বলল
-“মনি তো রাগ করে নেই।
তিনি তোমাদের জন্য সব সময় দোয়া করে।”
-“কিন্তু,,,,
-“আর কোনো কিন্তু না বউ।
রাত কয় টা বাজে সে খেয়াল আছে।
তার উপর আবার বাসর করতে হবে তো।”
সাদনান এর কথা শুনে প্রিয়তা লজ্জায় মিইয়ে গেলো। বিরবির করে বলে উঠলো
-“বয়স হচ্ছে।
ছেলে বড় হচ্ছে সে দিকে খেয়াল আছে!”
-“বয়স?সেটা তো তুমি প্রতি রাতেই বুঝতে পারো।
আর ছেলে? তার জন্য তো একটা বোনের প্রয়োজন।”
প্রিয়তা টুঁশব্দ করে না।কথা সে কোনো দিন পারে নি এই লোকের সাথে তাই কথা না বাড়িয়ে সাদনান এর ড্রেস বেড় করে দেয়।
সাদনান বউয়ের সামনেই রেডি হয়ে নেয়।
অতঃপর বেড়িয়ে এলো রুম হতে।
————
একটা টেবিলে পাঁচ টা বাচ্চা বসে আছে। তার মধ্যে তিন টা বাচ্চা বেশ হাসিখুশী কিন্তু দুই টা বাচ্চা একদম গম্ভীর।দেখে বোঝা যাচ্ছে বয়স কম হলেও এঁরা ভীষণ ম্যাচিউর। ইনিয়া এখান সবার বড় কিন্তু আচরণ প্রকাশ করে যেনো বাচ্চা।
আর তুরাগ সে তো বাবা মায়ের বাধ্যগত ঠিক যেনো কবির খাঁন,সে তার বাবা কে অনুসরণ করে। আর আয়ান, মাইশার ছেলে মিশান সেও ভীষণ দুষ্ট।পাশেই সারা আর রাহান এর ছেলে সোহান বসে দুষ্টুমি করছে। যদি দুষ্টমির এওয়ার্ড দেওয়া হতো তবে সে প্রথম হতো আর যদি প্রথম না হয় তবে দ্বিতীয় সে হবেই এটা কেউ আটকাতে পারবে না। আর এখানে সবার ছোট ওয়াজিদ আর রিধির মেয়ে কত হবে এই তো হবে হয়তো বছর দেড় বছর।দেখতে যেনো একদম কার্টুন এর মতো। সে এই প্রথম বাংলাদেশ এসছে তাও আবার সাপ্তাহ আগে তাই খুব বেশি একটা কারোর কাছে যাচ্ছে না। বাবার কোলেই গাপটি মেরে বসে আছে তবে মাজে মাজে হাসছে সবার দুষ্টমি দেখে।
পাশের টেবিলে রিধি, সারা,মাইশা, তিন্নি বসে আছে
একটু আগেই কেক কাটা হয়েছে। এখন খাওয়া দাওয়া শেষ বাহিরের সব মানুষ চলে গিয়েছে। শুধু এই কয়জন মানুষ রয়ে গিয়েছে।
আজ সবাই মির্জা বাড়িতে থাকবে।
রাত প্রায় সাড়ে এগারো টা। রাহান একটা ক্যামেরা নিয়ে ফিরে এলো।
সবাই কে এক জায়গায় জড়োসড়ো করে একটা ছবি তুল সবাই কে এক ফ্রেমে বন্দী করে নিলো।
ছবি তোলা শেষ বড়রা সবাই ঘুমাতে গেলো।আর বাচ্চারা সবাই বায়না ধরে এক সাথে ঘুমাবে।সবাই কে নিচে বড় গেস্ট রুমে দেওয়া হলো।সাথে একজন কেয়ারটেকার কেও রুমে থাকতে দেওয়া হলো।
———–
সারা নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে এলো রাহান নিজেও ফ্রেশ হয়ে এলো।সারা তখন নিজের শরীরে কিছু কৃত্রিম প্রসাধনী ব্যবহার করছে। রাহান এগিয়ে এলো।বউয়ের খুব নিকটে এসে দাঁড়াল। সারার দিকে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-“আমাকে আর কত জ্বালাবে? ”
-“যেখানে আমার তুমি সেখানে আমি আমাকে জ্বালাবো কেন?
নিজে কে নিজে কখনো জ্বালানো যায়?”
-“যায় তো।
এই যে তোমার এই রূপ আমাকে ভীষণ ভাবে জ্বালায়।”
সারা লজ্জা পেলো।
মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই রাহান আগলে ধরলো।
বউ কে কষ্ট করে বিছানায় যেতে হলো না আর না ভালোবাসতে সবটাই নিজেন করলো।
——–
ওয়াজিদ রিধি কে নিয়ে হাঁটতে বেড়িয়েছে।আগের সেই পুরোনো তাদের স্কুল, কলেজ জীবনের সেই যায়গা গুলোতে।
যেখানে ওয়াজিদ রিধির জন্য অপেক্ষা করতো।সুযোগ পেলে যেই বড় হিজল গাছ টার নিচে বসে দু’জন দু’জনের সুখ দুঃখের কথা বলতো।
এখন তারা ঠিক সেই জায়গায় টায় বসে আছে। রিধি ঠিক আগের মতো করে ওয়াজিদ এর কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।আকাশে বিশাল বড় চাঁদ হয়তো পূর্ণিমা এখন কয় দিন পর তো আবার নতুন চাঁদ উঠবে। রোজা আসবে।
রোজার কথা মনে হতেই রিধি ওয়াজিদ এর কাঁধ হতে মাথা তুলে ওয়াজিদ এর মুখের দিকে তাকিয়ে কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-“আমরা আবার চলে যাব?”
ওয়াজিদ হাসলো রিধির এমন কাতর গলায় প্রশ্ন শুনে।মেয়েটা ইতালি একদম যেতে চাচ্ছে না।আসার পর থেকেই এমন বায়না টা ধরেছে।
এসছে এক সাপ্তাহ আগে কিন্তু এই একটা প্রশ্ন হয়তো চৌদ্দ বার করেছে।
ওয়াজিদ এর মুখে হাসি দেখে রিধির গলা শুকিয়ে এলো।
-“যাচ্ছি না।”
পর পরই ওয়াজিদ এর কণ্ঠে অনাকাঙ্খিত কথা শুনে খুশি হয়ে গেলো রিধি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওয়াজিদ কে।
ওয়াজিদ নিজেও ধরে। সেখানে বসে বসে নিজেদের কিছু পুরনো সৃতিচারণ করতে লাগলো দু’জনে।
————–
-“ঘুমুতে যাব না?”
-“একটু বসেন না।
দেখছেন চাঁদ টা কত সুন্দর লাগছে আজ।”
আয়ান অসহায় চোখে চাঁদের আলোয়ে মাইশার মুখ খানার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। মাইশা আয়ানের চুলের ভাঁজে হাত চালাতে চালাতে জবাব দিলো।যা আয়ানের পছন্দ হলো না।
সে বউয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে জানালো
-“না আমার ব্যক্তিগত চাঁদ ভয়ংকর সুন্দর।”
কথা শেষ উঠে মাইশা কে কোলে তুলে নিলো।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে এলো।
মাইশা লজ্জায় আয়ানের বুকে মুখ গুঁজে রইলো।
——–
তিন্নি কবির এর জন্য শাড়ী পড়েছে।কবির সব সময় এটুকুই চায়।তিন্নি তার জন্য রোজ শাড়ী পরুক। তিন্নির নিজেরও এখন ভালো লাগে। প্রিয় মানুষ টার জন্য নিজে কে সাজাতে কার না ভালো লাগে তিন্নিরও লাগে।
কবির পাশেই বিছানায় বসে দুই হাত বালিশের উপর রেখে থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বউয়ের দিকে তাকিয় আছে। তিন্নি শাড়ী পড়ে এখন হাল্কা করে সেজে নিচ্ছে। যা মোটেও কবির এর পছন্দ হলো না।
সে নিঃশব্দে বিছানা ছাড়লো।
এগিয়ে এসে বউয়ের হাতের লিপস্টিক কেঁড়ে নিলো।তিন্নি ফ্যালফ্যাল করে কবির এর দিকে তাকিয়ে রইলো।
কবির ঝুঁকে এসে বউ কে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও তিন্নির উপর নিজের ভর ছাড়ে।গলায় মুখ গুঁজে নেশাক্ত কণ্ঠে জানালো
-“বলেছি না এসব দিবে না।
আমার বউ এমনি সুন্দর যা আমাকে তার প্রেমে বারবার পড়তে বাধ্য করে। তোমার হাসি আমাকে শান্তি দেয়।তোমার এই চোখ দু’টি দেখলে আমার সব ক্লান্তি চলে যায়।তোমার কণ্ঠ শুনলে আমি সব কষ্ট ভুলে যাই তখন শুধু তোমায় ভালোবাসতে মন চায়।”
তিন্নি শক্ত করে কবির এর গলা জড়িয়ে ধরলো। তার আগের আঠারো বছর না পাওয়া সুখ নিয়ে কোনো দুঃখ নেই, কোনো আফসোস নেই।বরং তিন্নির মতে তখন দুঃখ গুলো পেয়েছে বলেই আজ তার জীবনে এতো ভালোবাসা এতো সুন্দর।
মানুষ দুঃখ না পেলে সুখের মূল্য বুঝে না।
———–
আয়না ওয়াশ রুম হতে বেড়িয়ে এলো হাতে একটা প্রেগন্যান্সির কিট শরীর টা ভীষণ দুর্বল তাই ওটা হাত থেকে সেন্টার টেবিলে রেখেই বিছানায় শুয়ে পড়লো।
রাহাত গিয়েছে বাচ্চাদের দেখতে রুমে ফিরে এসে সে আগে আয়নার দিকে তাকালো।
পর পর নজর পড়ে সেন্টার টেবিলে রাখা যন্ত্রটার দিকে এগিয়ে এসে হাতে তুলে নিলো যন্ত্র টায় লাল টকটকে দুইটা দাগ স্পষ্ট।
রাহাত সেটা হাতে নিয়েই এগিয়ে গিয়ে বউ কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
-“এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
আমি দ্বিতীয় বারের মতো বাবা হবো।”
আয়না কিছু বললো না।
চুপ করেই রইলো।তবে পাশ ফিরে ঠিক জড়িয়ে ধরে রাহাত কে।
——-
-“বউ এটা ঠিক না।”
-“আপনি যে করেন সেটা ঠিক?”
-“সরি না সোনা।
বিজি ছিলাম আমি তবে রোজার পর পাক্কা প্রমিজ নিয়ে যাব।”
কি হলো প্রিয়তার কে জানে ওয়াশ দরজা খোলে বেড়িয়ে এলো।আর সাদনান ঝট করে বউ কে কোলে তুলে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে।
প্রিয়তা হাসে।এই লোক কে রাগাতে তার এখন ভীষণ ভালো লাগে।
অথচ আগে কি ভয় টায় না পেতো।একটা কথা বলতে গেলে ছয় বার ভাবতো।কিন্তু অভিমান ঠিক করে থাকতো।তবে এখন আর অভিমান করে না।
জীবন এমনই সব দিক দিয়ে সব পাওয়া সম্ভব নয়।এটাই প্রকৃতির নিয়ম।মেনে নিতে হবেই।
প্রিয়তাও মেনে নিয়েছে।
-“কোথায় নিয়ে যাবেন?”
-“আপাতত ভালোবাসার সমুদ্রে।”
-“ঘুরতে? ”
-“সুইজারল্যান্ড।”
সাদনান কথা শেষ আর দেরী করে না বউয়ের অধর আঁকড়ে ধরে।
প্রিয়তাও সাদনান এর চুল খামচে ধরে।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে
দুষ্ট হেঁসে জানালো
-“পাঁচ বছর পর ফুল ফ্যামেলি যাচ্ছি।
এখন ফ্যামেলি ফুল করতে সদস্য আনার জন্য মিশন শুরু করতে হবে।”
“ভালোবাসা সত্যি সুন্দর যদি ভালোবাসার মানুষ টা সঠিক হয়”
#আমার_তুমি
#পর্ব_৪৫[কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
প্রিয়তা নিজের হাতের প্রেগন্যান্সির কিট দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাম চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু দৃষ্টি তার অনড়।
ঠোঁট দু’টো তিরতির করে কাঁপছে। কোনো রকম ওয়াশ রুমের দরজা খোলে বেড়িয়ে এসে হাতের যন্ত্র টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বিছানায় বসে পড়লো।
আলতো করে নিজের ডান হাত টা পেটে ছোঁয়াতেই টুপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে বাম চক্ষু হতে।
অতঃপর কিছু বিরবির করতে করতে বিছানায় শুয়ে ঘুমের দে-শে তলিয়ে গেলো।
রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটার মতো বাজে।সাদনান মাত্রই রুমে এলো।
হাতের ঘড়ি খোলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।গায়ের ঘামে ভেজা জবজবে সফেদা রঙের পাঞ্জাবি গা হতে একটা টানে খোলে সোফায় রাখে।
দৃষ্টি তার বউয়ের দিকে।
যে এখন দুই হাতের কনুই ভাঁজ করে ঘুমিয়ে আছে।
সাদনান সে দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে ব্যালকনি হতে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে প্রায় আধঘণ্টা পর বেড়িয়ে এলো গায়ে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের টাওয়াল পেঁচিয়ে। বাম হাত কোমড়ে রেখে ডান হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো ঝেড়ে নিচ্ছে।
সাদনান এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো ঘন্টাখানেক আগে রাখা প্রিয়তার সেই যন্ত্র টা যেটাই স্পষ্ট লাল দুই টা দাগ জ্বলজ্বল করছে।
সাদনান কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা নিজের হাতে নিলো।চোখ দুইটা লাল হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
সাদনান নিঃশব্দে সেটা আগের স্থানে রেখে দিলো।
ড্রেস চেঞ্জ করে বউয়ের পাশে শুয়ে বউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তা হাল্কা কেঁপে উঠল তবে তন্দ্রা ছুটে না।নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে গেলো।
সাদনান আবারও বউয়ের কপালে চুমু খেলো আর অমনি প্রিয়তা ধপ করে চোখ খুলে ফেলো।সাদনান কে নিজের পাশে দেখে ছাড়িয়ে উঠে বসলো।
সাদনান নিজেও ওঠে বসে।সে অপলক বউয়ের ছোট গোলগাল মুখ খানার দিকে তাকিয়ে রইলো। যে চোখ দুই টায় তার জন্য অভিমান স্পষ্ট।
এই অভিমান সে কবে শেষ করতে পারবে?কবে ভাঙতে পারবে এই অভিমানের পাহাড়?
-“তাড়াতাড়ি ফিরলেন?”
-“কাজ শেষ।”
প্রিয়তা মুখ টা আরও ছোট হয়ে এলো।কাজ শেষ হয়েছে তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এসছে। লোক টা কেন অন্য কিছু বললো না! চাইলেই তো অন্য কিছু বলতে পারতো।
প্রিয়তা বেশি কিছু আর ভাবলো না।
নুইয়ে রাখা মাথা টা উঁচু করে জানতে চাইলো
-“খাবার?”
-“খেয়ে এসছি।”
সাদনান এর ছোট জবাব।
প্রিয়তা নিজেও ছোট করে বলল
-“ওহ্।”
অতঃপর ড্রেসিং টেবিলের উপর দৃষ্টি যেতেই দেখলো যন্ত্র টা সেভাবেই পরে আছে। যেভাবে সে রেখে এসছিল।যা দেখে মন টা দিগুণ খারাপ হলো। লোক টা এতো অমনোযোগী?
পাশ ফিরে শুয়ে পড়তে চাইলো।
কিন্তু সাদনান তা হতে দিলো না। নিজের শক্ত হাতের সাহায্য টেনে নিয়ে আসে নিজের বক্ষে।শক্ত করে চেপে ধরে প্রিয়তা ছুটতে চাইলো না কোনো রকম শব্দও করলো না। পরে রইলো সেভাবে। সাদনান বউয়ের এলোমেলো চুলের ফাঁকে চুমু খেলো।
মৃদু স্বরে জানতে চাইলো
-“চুল বিনুনি করো নি কেন?”
-“ইচ্ছে করে নি।”
সাদনান হাসলো তবে শব্দহীন হাসি।বউয়ের অভিমান এবার বেশ জোড়ালো কিভাবে ভাঙ্গবে?এটা ভেবে একটু চিন্তিত হলো।থমকে মুখ করে
বউ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো এগিয়ে এসে চিরুনি নিয়ে প্রিয়তা কে পাশ ফিরিয়ে বসিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলো।
প্রিয়তা চুপ করে রইলো। সাদনান এর একটু কষ্ট হলো লম্বা চুল গুলো বিছানায় বসে আঁচড়াতে। তবে শেষমেশ সফল হলো।লম্বা একটা বিনুনি করে দিলো।
চিরুনী ঢিল ছুঁড়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বউ কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তা তখন চুপ করে রইলো।
তবে ভেতরে ভেতরে ঠিক ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে এলো।রোজকার ন্যায় শরীরে মৃদু কম্পন হলো।তবে শক্ত হয়ে বসে থাকে।সাদনান সব টা অনুভব করতে পারলো।
বউয়ের ঢোলাঢুলা কুর্তি ঘাড় হতে সরিয়ে উন্মুক্ত ঘাড়ে নিজের পুরুষালী শক্ত অধর ছুঁয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল
-“এতো অভিমান করলে চলে!
জানতো কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়!
এই কয়টা মাসই তো।বাবা কে এমপি পদে নিয়োগ করছি আর আমি এমপি পদ হতে পদত্যাগ করছি।”
কথা টা প্রিয়তার কর্নপাত হতেই প্রিয়তা নড়াচড়া করে ছুটতে চাইলো।কিছু বলবে তার আগেই সাদনান আগের চেয়ে দিগুণ চেপে ধরে নিজের সাথে অতঃপর বলল
প্রিয়তা এবার অবাক হলো সাথে ভীষণ খুশি। সাদনান এর বাঁধন ততক্ষণে হাল্কা হয়েছে প্রিয়তাও সেই সুযোগে ফিরে জড়িয়ে ধরলো সাদনান কে।সাদনান নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
বউ তার ভীষণ আদুরে একটু আদুরে স্পর্শ করেলেই গলে যায়।
-“এখন বলো, তুমি কেন বলো নি আমি ব
-“আপনি বাবা হবেন আর আমি মা।”
সাদনান বলার আগেই প্রিয়তা বলে ফেলে।সাদনান বউয়ের কণ্ঠে স্পষ্ট লজ্জার আভাস পেলো।
প্রিয়তা কথা টা বলেই জোরে জোরে শ্বাস টানে। যা সাদনান কে আরও মাতাল করে।
নিজের সাথে আরও কিছু টা চেপে ধরে বউ কে।
-“আদর চাই!”
সাদনান এর কথার বিপরীতে কোনো জবাব দিলো না তবে আরও নুইয়ে গেলো।সম্মতির লক্ষ্মণ দেখা দিলো।সাদনান এর ভ্রু কুঁচকে এলো।এই মেয়ে তাকে পাগল কেন করছে যদি কোনো সমস্যা হয় পরে।আর বউ এর শরীর এর যা অবস্থা তাকে সামলাতে পারবে তো?
সাদনান কিছু টা চিন্তিত কণ্ঠে জানতে চাইলো
-“সহ্য করতে পারবে?
যদি কিছু হয়?”
-“কিছু হবে না।”
সাদনান বউয়ের এরূপ কথা এমন রোমাঞ্চকর মূহুর্তেও হাসি পেলো। যার একটু গভীর স্পর্শে বারবার মেয়ে মূর্ছা যায় সেই মেয়ে কি বলছে হয়তো নিজেও জানে না।
সাদনান বউয়ের আবদার পূর্ণ করলো।তবে যতটা করলে কোনো সমস্যা হবে না ঠিক ততটাই।
————–
সারা আর প্রিয়তার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে।
প্রিয়তার এখন ভরা পেট নয় মাস চলছে। যেকোনো সময় যা কিছু হতে পারে ডক্টর বলেছে।
আজ শেষ পরীক্ষা প্রিয়তা পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে এলো।শরীর টা ভীষণ খারাপ লাগছে সাথে পেটেও হাল্কা চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে তবে বিষয় টা পাত্তা দিলো না। পরীক্ষা গুলো সহিসালামতে দিতে পেরেছে এতেই খুশি।
সারা প্রিয়তা ভার্সিটির ভবন হতে বেড়িয়ে এলো।আজ তাদের হলে কবির স্যার ছিল ভীষণ সাহায্য করছে প্রিয়তা কে।যতই হোক প্রথম অনুভূতি প্রথম ভালোবাসা হোক না একতরফা তবুও তো ভালোবাসা। যদিও এখন কবির এর সব টা জুড়ে তার বউ আর ছেলে।
প্রিয়তা মাঠের মাঝখানে এসে হটাৎ মাথা টা চক্কর দিয়ে ওঠে। পরে যেতে নিলে সারা নিজের হাতের সব ফেলে আগলে ধরলো প্রিয়তা কে।বাহিরেই ওদের গাড়ী অপেক্ষা করছে।
প্রিয়তা নিজে কে সামলে চোখ গুলো বন্ধ করে রাখলো।ততক্ষণে অনেক মানুষ জড়োসড়ো হয়েছে কেউ কেউ বাতাস দিচ্ছে তো কেউ আবার পানির বোতল এগিয়ে পানি খাইয়ে দিলো।
তবে প্রিয়তার শরীর সায় দিলো না তার পেটে প্রচুর ব্যাথা শুরু হলে নাক মুখ কুঁচকে নিয়ে সারার বাহু খামচে ধরে কোনো রকম বলল
-“তাড়াতাড়ি গাড়ীতে চল।”
সারা শুনলো। এক হাতে বোরখা হিজাব পরিহিত প্রিয়তা কে আগলে আরেক হাতে প্রিয়তার ফাইল সহ নিজের টা নিয়ে নিলো।
তবে গেইট টপকে যাওয়ার আগে কোথা থেকে যেনো সাদনান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।
এসেই বউ কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।
সাথে তার নিজস্ব সিকিউরিটি তো আছেই।পাশেই একটা মন্ত্রী সভা ছিল আজ সেখানেই ছিল সে।প্রিয়তা কে না জানিয়ে রাখা তার গোপন সিকিউরিটি তাকে পাঁচ মিনিট আগে ফোন দিয়ে এখানকার খবর জানিয়েছে সাদনান ড্রাইভার কে রেখেই দশমিনিট এর রাস্তা চার মিনিটে চলে এসছে হয়তো। পেছন পেছন এসছে তার জন্য বরাদ্দকৃত সিকিউরিটির গাড়ী।
#আমার_তুমি
#পর্ব_৪২[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করবেন।]
সাদনান শাওয়ার নিয়ে মাত্রই বেড়িয়ে এলো।পড়নে ছাই রঙের একটা ট্রাউজার বলিষ্ঠ পেটানো উদাম শরীর বুকের ঘন কালো লোম গুলো পানি চিকচিক করছে। গলায় একটা টাওয়াল জড়ানো যার এক পাশ দিয়ে মাথার চুল গুলো মুছে নিচ্ছে।
শাওয়ার নেওয়ার ফলে চেয়ারায় আলাদা একটা স্নিগ্ধু লাগছে কিন্তু সেই স্নিগ্ধতা চাপা পড়ে মুখে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে বেশি।
সাদনান টাওয়াল সোফায় ছুঁড়ে ফেলে। চুল তার আগে বউ মুছে দিতো সব সময় কিন্তু আজ অনেক দিন হয় বউ এই কাজ হতে বিরতি নিয়েছে। কিন্তু সাদনান বিরতি আজ শেষ করবে আগের মতো আবার কন্টিনিউ করবে সব ঠিক ঠাক করতে হবে।
সাদনান এগিয়ে গেলো। দরজায় দাঁড়িয়ে নিজের বলিষ্ঠ কণ্ঠে মাকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।
সাদনান জানে মা তার সমস্যা বুঝতে পারবে।সাদনান এর মা নিচ থেকে গলা ছেড়ে ছেলে কে উত্তর করলো আসছি বলে।সাদনান ফিরে গিয়ে সোফায় বসে থাকে উদোম শরীর নিয়ে চুল থেকে তখনো পানি পড়ছে।
সাদনান এর ভাবনা সত্যি হলো মা প্রিয়তা কেই পাঠিয়েছে।
প্রিয়তা ওড়নার এক মাথায় হাত মুছতে মুছতে ঘরে প্রবেশ করে মাথা হতে ঘোমটা ফেলে দেয়।
সোজা বিছানার উপর ওড়না রেখে সাদনান এর দিকে এগিয়ে যায় সাদনান পুরো টা সময় বউয়ের দিকে তাকিয়েদ রয়।প্রিয়তা
সোফা থেকে টাওয়াল তুলে চুল মুছে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো
-“খাবার রুমে দেবো?”
-“তুমি তো খাও নি।তাছাড়া নিচে অনেক মানুষ এখন।
রুমে নিয়ে এসো।”
-“আচ্ছা,ঠিক আছে।”
সাদনান এর কথার বিপরীতে প্রিয়তা সম্মতি দিয়ে বলল।অতঃপর নিজের হাত দিয়ে সাদনান এর চুল মুছে টাওয়াল নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো ফিরে এসে ওয়াশ রুম গিয়ে হাল্কা ফ্রেশ হয়ে নিলো।যদিও ঘন্টা সময় এর মতো হবে শাওয়ার নিয়েছে তবে রান্না ঘরে ছিল বিধায় শরীর কেমন ভার লাগছে।
প্রিয়তা রুমে খাবার নিয়ে এলো তার পর দু’জন মিলে খেয়ে নিলো।
খাবার শেষ এঁটো থালা বাসন নিয়ে প্রিয়তা নিচে চলে গেলো। আর এদিকে সাদনান নিজে রেডি হয়ে নিলো এখন পাঁচ টার আশেপাশে বাজে সময়। মেহমান সব নিশ্চয়ই আসতে চলছে।
আজ প্রায় অনেক মানুষদের কে ইনভাইটেশন করেছে তার কারণও অবশ্য আছে।
বউ তার ধারে কাছে বেশি ঘেঁষে না সে বুঝতে পারে রাগের কারণ তবে কিছু করতে পারে নি মূলত সময় করতে পারে নি।
সাদনান রেডি হয়ে গায়ে পারফিউম দিয়ে নিজের গম্ভীর মুখ নিয়ে বেড়িয়ে এলো রুম হতে।
———-
-“আপনারা কেউ কেউ হয়তো জানেন!
আমি বিয়ে করেছি,তবে সেটা ঘরোয়া ভাবে তাই কাউ কে বলার বা নিমন্ত্রণ করার মতো সময় করে উঠতে পারি নি।আগামী সাপ্তাহে আমার বোনের বিয়ে আর সেই দিন সবার উপস্থিতি কামণা করছি।তখন না হয় আমার স্ত্রী কে দেখে নিবেন।”
সাদনান কথা শেষ সবাই করতালি দিলো।সাদনান কথা শেষ আবারও ফিরে এলো স্টেজ থেকে।
একটু আগেই কেক কাটার পর্ব শেষ হয়েছে এখন সবাই যে যার মতো এনজয় করছে।
প্রিয়তা সালেহা বেগম এর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে পড়নে মিষ্টি কালার একটা জামদানী শাড়ী জড়ানো। দেখতে ঠিক শাড়ী টার কালার এর মতোই মিষ্টি লাগছে পাশেই সারা ফোনে কিছু করছে।
আয়ান মাইশা কে আগলে একটা টেবিলে বসে আছে।মেয়ে টা একটু পর পর বমি করছে কিছু মুখে তুলতে পারছে না।আর একটু আগেই বমি করার ফলে হয়তো ক্লান্ত। রাহাত, আয়না ইনিয়া কে নিয়ে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে। আর ওদিক টায়?ওই তো কবির তার ছেলে কে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে পাশেই টেবিলে বসে তিন্নি খাবার খাচ্ছে।
এখানে প্রতি টা মানুষ তার ভালোবাসার মানুষ টাকে সময় দিচ্ছে আগলে রাখছে।প্রিয়তা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করলো।ভীষণ ভালো লাগলো তবে মনের কোথাও বড্ড কষ্ট হচ্ছে একটা চাপা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
-“ছোট নাত বউ!
সারা কে নিয়ে ভেতরে চলে যাও।”
প্রিয়তার মন টা আরও দিগুণ খারাপ হলো আম্বিয়া মির্জার কথায়।
সারা বিরক্ত হলো।তবে মুখে প্রকাশ করলো না মুখ ভেংচি কেটে প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে চলে গেলো।
সাদনান সব টা লক্ষ্য করলো।
দাদি তার এই কাজ টা একদম ঠিক করেছে মনে ধরলো সাদনান এর।তার অবশ্য কারণও রয়েছে।স্টেজে বসে তিন চার টা ছেলে সারা প্রিয়তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। ছেলে গুলো ভদ্র পরিবারের আর এদের বাবারা এখানে আছে তাই ওদের কোনো ব্যবস্থা তো করতে পারবে না তার উপর অতিথি।
———
-“আমাকে মায়ের কাছে রেখে আসুন।”
সাদনান রুমে আসা মাত্রই প্রিয়তা কথা টা বলে উঠলো। সাদনান মোটেও অবাক হয় না,আর না কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো।বরং খুব স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মিররের প্রিয়তার প্রতিবিম্বর দিকে তাকালো শান্ত কণ্ঠে জানালো
-“দ্বিতীয় বার মুখে এনো না।
ঠেং ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো, অতঃপর নিজে হাতে সব করিয়ে দেবো।”
প্রিয়তা সাদনান এর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।কিছু বলে আর কথা বাড়াতে চাইলো না।ঝামেলা করে কি লাভ সাদনান তো আর ইচ্ছে করে করছে না এসব ও জানে।কিন্তু এটা মস্তিষ্ক মানলেও মন মেনে নিতে নারাজ। প্রিয়তা চুপটি করে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। সাদনান ড্রেস চেঞ্জ করে লাইট অফ করে বিছানায় এসে শুয়ে প্রিয়তা কে ফিরিয়ে নিজের দিকে করে নিলো।প্রিয়তা তখন শক্ত হয়ে আছে।সাদনান বউয়ের মুখের দিকে তাকালো ছোট ছোট চুল গুলো কমলা রঙের ড্রিম লাইটেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সাদনান ফু দিয়ে চুল গুলো মুখের উপর হতে সারানো প্রায়শ চালালো তবে ব্যর্থ হলো তাই বাধ্য হয়ে হাত দিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল
-“তুমি এমন কেন করছো?
আমি ইচ্ছে করে তো আর এমনটা করছি না, পরিস্থিতি তুমি বুঝতে হবে।”
-“হ্যাঁ,আর আমার পরিস্থিতি?”
-“আর কয় টা দিন অপেক্ষা করো।”
-“আঠারো হয়ে গিয়েছে।”
-“আচ্ছা?”
-“আমি বাচ্চা না বাচ্চার মা হতে চাই।”
সাদনান ঝট করে প্রিয়তা কে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলো দিলো।
প্রিয়তা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। শক্ত করে সাদনান এর আকাশী রঙের টি-শার্ট টার কলার চেপে ধরে।
সাদনান সে দিকে তাকিয়ে হাসলো আজও বউ টা তার ছোঁয়া দিশে হারা হয়।অল্পতেই মূর্ছা যায় তবুও যথাসাধ্য নিজে কে শক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
সাদনান নিজের দানবীয় হাতের স্পর্শে কাবু করলো বউ কে।নিজের পুরুষালী শক্ত অধরের ভাঁজে চেপে ধরে প্রিয়তা অধর।প্রিয়তার নখ গেঁথে সাদনান এর উন্মুক্ত পিঠে সাদনান আরও উন্মাদ হলো নিজের সব টা দিয়ে বউ কে ভালোবাসতে লাগলো।প্রিয়তার আস্তে করে চোখ বন্ধ করে নিলো আর অমনি চোখের কোঠরি হতে গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো
সাদনান চাইলো বউয়ের বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে যা এখন কাজল লেপ্টে একাকার অবস্থা হয়ে আছে।
সাদনান সেই ভেজা চোখের পাতায় চুমু খেয়ে নেশাতুর কণ্ঠে বলল
-“কেন আমাকে পাগল করতে আসো!
শুধু শুধু নিজের কষ্ট ডেকে আনো।”
-“যদি সেই কষ্টের কারণ আপনি হোন তবে তা আমি হাসতে হাসতে গ্রহণ করবো।”
#চলবে……
#আমার_তুমি
#পর্ব_৪৩[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
-“আপনি কি করে জানতে পেরে ছিলেন স্টিভ আমার জাস্ট ফ্রেন্ড?
প্রথম তো বিশ্বাস করলেন না।”
-“কিছু জিনিস গোপনে সুন্দর।”
ওয়াজিদ কথা শেষ রিধির ঘাড়ে আবার চুমু খেলো।রিধি মোচড়ামুচড়ি করে সড়ে যেতে চাইলো তবে ওয়াজিদ এর শক্ত বাঁধন হতে নিজে কে ছাড়াতে পারলো না।
যা দেখে ওয়াজিদ হাসলো শব্দ করে সেই হাসি রিধির সর্বাঙ্গে শিউরে ওঠলে
-“এই বাঁধন এতো সহজে ভাঙ্গা যাবে?”
-“আমি চাইও না ভাঙ্গতে।
ওয়াজিদ রিধির কাঁধে আবারও চুমু খেলো। রিধি এবার ফিরে ওয়াজিদ কে জড়িয়ে ধরলো।
ওয়াজিদ বুঝতে পারে বউ তার সঙ্গ চাচ্ছে তাই তো কথা না বাড়িয়ে বউ কে কোলে তুলে সোজা রুমে চলে এলো।আর একে অপরের মাঝে ডুবে গেলো।
———
রাহান আর সারার বিয়ের শপিং এর জন্য বাড়িতে দোকান দার নিজে সব রকম পোশাক নিয়ে এসছে।দোকান গুলো অবশ্য মির্জাদের কর্মচারী রেখে দিয়েছে শুধু। আম্বিয়া মির্জার আদেশ কোনো মহিলা মার্কেট যেতে পারবে না।
এতে অবশ্য কারোর কোনো অসুবিধা নেই এতো বছর ধরে তো এই রীতি অনুযায়ী কাজ হয়ে আসছে।
শুধু মাইশার সময় মাইশার জোরাজুরি করাতে মাইশার বিয়ের শপিং মাইশা নিজে করতে চেয়েছে তাই দেওয়া হয়ে ছিল।
সবার জন্য সবার মোটামুটি কাপড় নেওয়া হয়েছে। গায়ে হলুদ এর কাপড় রাহান নিজে পাঠাবে।আর বিয়ের পোশাকও রাহান পাঠিয়ে দিয়েছে।
বাকি ছিল শুধু বাড়ির মানুষ জন। কাল সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ বাড়ির ঘর ঝকঝকে পরিষ্কার সাথে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে গায়ে হলুদের জায়গায় আগের ন্যায় বাগান টাই করছে, বিশাল জায়গায় নিয়ে তার কারণও অবশ্য রয়েছে ছেলের গায়ে হলুদও এখানে হবে। পরিবার বংশের ছোট মেয়ে তাই বিশাল ধুমধাম করে আয়োজন করা হয়েছে। পাড়াপ্রতিবেশি কাউ কে মনে হয় বাদ রাখে নি পাশের দুই এলাকায় পর্যন্ত বড় বড় মান্য গন্য ব্যাক্তিদের নিমন্ত্রিত করা হয়েছে।
সবার কাপড় নেওয়া শেষ আম্বিয়া মির্জা বেশ দামী দেখে ভারী একটা শাড়ী নিলো একদম লাল টকটকে যেটার দিকে সবাই কমবেশি হা করে তাকালো সাথে অবাক। জাফর মির্জা তো স্ত্রী দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে বলেই ফেললো
-“আমু নিজের বয়সের দিকে একটু নজর দাও।
এই বয়সে এসে তুমি এসব পড়বে?”
আম্বিয়া মির্জা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না, আর না কারোর দিকে তাকালো। সোজা সবার পেছন চুপ টি করে দাঁড়ানো প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কাছে ডাকলো।প্রিয়তা ভয় পেলো ফাঁকা একটা ঢুক গিলে আশেপাশে সবার দিকে দৃষ্টি বোলাল। সাদনান এর দিকেও তাকালো তবে সাদনান ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়তা বোনের দিকে তাকাতেই আয়না যেতে ইশারা করে প্রিয়তা হাতে থাকা চা পাতা কালার স্লিভলেস এর শাড়ী টা শক্ত করে চেপে ধরে এগিয়ে এলো।আম্বিয়া মির্জা উঠে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের শাড়ী টা প্রিয়তার গায়ের উপর মেলে ধরতেই সবার বোধগম্য হলো এটা প্রিয়তার জন্য নিয়েছে প্রিয়তা নিজেও অবাক হলো।আম্বিয়া মির্জা সবাই কে আরও একদফা চমকে দিয়ে প্রিয়তা কে হুকুমের স্বরে বলল
-“তুমি নিশ্চয়ই জানো সারার বিয়ের দিন তোমাদের একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠান করা হবে।
বিয়ের পর পরই এটা পড়ে রেডি হয়ে নিবে।
আর বিয়েতে ওই চা পাতা কালার শাড়ী টা পড়বে।”
প্রিয়তার চোখে পানি চলে এলো।তবে সেটা চোখের কোঠরি হতে বেড়িয়ে আসার আগেই আম্বিয়া মির্জা নিজের হাতের তালুর সাহায্য মুছে নিয়ে কঠিন স্বরে বলল
-“আমার সামনে একদম ন্যাকামো করবে না।
আর হ্যাঁ, দুই বোন রাতে আমার ঘরে আসবে। ”
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ মুছে নিলো আর সবার মুখে হাসি।আম্বিয়া মির্জা বরাবরই ভালো মানুষ শুধু একটু রাগী মানুষ টা সাথে বেশ পুরনো দিনের নিয়ম কানুন মানে এটাই যা নয়তো ভিষণ ভালো মানুষ প্রিয়তা আগে থেকে জানতো অবশ্য এটা শুধু প্রিয়তা না মির্জা বাড়ির প্রতি টা সদস্য জানে তাই তো সাদনান দাদি কে কখনো কোনো বিষয়ে কিছু বলতো আর না প্রিয়তা সাদনান এর কাছে কিছু জানাতো।
-“আচ্ছা দাদি।”
প্রিয়তা জানালো।আয়নাও সম্মতি দিলো।
অতঃপর আবারও সবাই কাপড় দেখায় মনোযোগী হলো। রাহাত আয়নার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই যখন কাপড় দেখতে ব্যস্ত রাহাত তখন আয়নার একটা হাত মুঠি পুরে নিয়ে ফিসফিস করে বলল
-“বলেছিলাম না দাদি ভীষণ ভালো!সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমার কথা ঠিক হলো তো?”
আয়না শুধু প্রশান্তির হাসি হাসলো।আয়না বরাবরই চুপ চাপ কথা কাটাকাটি কোনো দিনই করে নি রাহাত এর সাথে সব সময় কথা কম বলে।
রাহাতের অবশ্য প্রথম প্রথম মনে হতো আয়না হয়তো ওর সাথে এমন কিন্তু না আয়না মানুষ টাই এমন।থাকে না কিছু মানুষ অল্পতেই খুশি আয়নাও ঠিক তেমন।
———
প্রিয়তা, আয়না,সুফিয়া বেগম, সালেহা বেগম সবাই আম্বিয়া মির্জার রুমে উপস্থিত।
আম্বিয়া মির্জা বসে আছে বিছানায় সামনেই অনেক গুলো গহনা রাখা। গহনা গুলো যে অনেক পুরনো সেগুলো এক দেখায় যে কেউ বুঝতে পারবে।
তবে প্রিয়তা বুঝতে পারছে না তাদের এখানে ডেকে দাদি এগুলো কেন বেড় করেছে।
-“ছোট নাত বউ, এগুলো তুমি আমার দেওয়া শাড়ী টার সাথে পড়বে অনুষ্ঠানে।
মনে থাকবে?”
-“কিন্তু দা,,,
-“আমি কিছু শুনতে চাই না।”
প্রিয়তা চুপ করে গহনা গুলো হাতে নিলো। আম্বিয়া মির্জা আয়নার হাতেও সেম ডিজাইন এর একটা নেকলেস মোটা মোটা দুই টা বালা বড় বড় এক জোড়া কানের জিনিস এক জোড়া নুপুর সাথে নাকের একটা বড় নথ আর কোমড়ের একটা বিছা।
প্রিয়তা গহনা গুলো এক পলক দেখে নিলো গহনা সাজুগুজু এসবের প্রতি কোনো দিনই দুই বোনের বেশি আগ্রহ নেই।
আম্বিয়া মির্জা গহনা গুলো দিয়ে আগের স্থানে গিয়ে বসে পড়লো আবার অতঃপর দুই ছেলে বউয়ের উদ্দেশ্য বলল
-“তোমাদেরও কিন্তু দেওয়া হয়েছে।
আর তোমাদের মেয়েদের জন্য আছে।তবে বালা জোড়া শুধু বাড়ির বউয়ের পায়।”
-“জ্বি আম্মা।”
সুফিয়া বেগম বলল।
তার পর সবাই আম্বিয়া মির্জা রুম হতে বেড়িয়ে এলো।
প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে রুমে এসে সেগুলো বিছানায় রেখে সাদনান এর উন্মুক্ত বুকে শুয়ে পড়লো।
জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বলল
-“দাদি দিয়েছে।”
-“তোমার নেই।”
-“দাদি দিয়েছে।”
-“ভালো তো।”
সাদনান এর দায়সারা ভাবে জবাব। প্রিয়তা এবার মুখের অবস্থা এমন করলো যেনো কেঁদে ফেলবে।
সাদনান তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো বউ কে নিজের বাহুডোর আগলে নিলো।
মুচকি হেঁসে বলল
-“পাগল,মজা করছিলাম।”
প্রিয়তা তাও নাক টানে। ও ভেবেছে হয়তো সাদনান রাগ করে এসব বলেছে।
সাদনান বউ কে বুকের উপর আগলে রেখেই হঠাৎ জানতে চাইলো
-“ঔষধ খেয়েছো?”
-“প্লিজ।”
কণ্ঠে আকুতি। সাদনান এর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।সে কি একটু বেশি করছে?
সাদনান প্রিয়তা কে নিজের বুকের উপর হতে আলগা করলো। দুই হাতের আঁজল নিয়ে নিলো প্রিয়তার মুখখানা।
প্রিয়তা দৃষ্টিতে কেমন আকুলতা কিছু পাওয়ার জন্য আবেদন। সাদনান সে দিকে তাকিয়ে থমথমে খেলো।ফিরাবে না বউ কে আল্লাহ যদি চাই তবে আর কোনো কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার করবে না দেখা যাক কি হয়।
-“আমার তুমি কে সুস্থ দেখতে চাই, সব দিক সামলে চলবে।”
প্রিয়তা কি বুঝলো কে জানে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সাদনান কে।সাদনান নিজেও বউ কে আগলে নিলো।
———-
-“একটু তো লজ্জা পাওয়া উচিত সারু।”
সারা মাইশার কথা শুনে মুখ ভেংচি কাটে কোনো কথা বলে না।
মাইশা হতাশার শ্বাস ছাড়ে। এই মেয়ে কে বলেও কোনো লাভ নেই।কে বলবে এই মেয়ের বিয়ে আজ!দেখো কত সুন্দর সবার সাথে হেঁসে হেঁসে আড্ডা দিচ্ছি। একটু তো লজ্জা সরম পাওয়া উচিত কনের।
-“নিচে অনেক মানুষ।
আশা করি সেখানে ভদ্র ভাবে থাকবি।
নয়তো দাদি কে ডাকবো।”
মাইশা কথা শেষ করে চলে গেলো। মাইশা যাওয়ার পর পরই সারা কে কয়েকজন মেয়ে মিলে হলুদের অনুষ্ঠানের জায়গায় নিয়ে এলো।
#চলবে…..
#আমার_তুমি
#পর্ব_৪৪[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
সারা আর রাহানের হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।রাহান রা আবার তাদের বাড়ি ফিরে গিয়েছে। এখন শুধু সবাই যে যার মতো মজা করছে। প্রিয়তা সারার পাশেই বসে আছে তার ঠিক বরাবর সাদনান দাঁড়িয়ে কথা বলেছে কিছু লোকের সাথে প্রিয়তা সাদনান এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদনান একবারের জন্যও তাকায় নি।
অবশ্য বাড়ির পুরুষ লোক ছাড়া বাহিরের লোক এদিকে আসা নিষিদ্ধ।
সালেহা বেগম কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।
-“এখানে আর বসে থেকে কাজ নেই।
যা ফ্রেশ হয়ে চট করে শুয়ে পড় গিয়ে।”
সারা মায়ের মুখে পানে একবার তাকাল। কাল কের পর থেকে আর এই মুখ টা রোজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখা হবে না।
-“ওমা দেখো এখনো বসে আছে!
প্রিয়ু ওকে নিয়ে যা তো।”
প্রিয়তা কে উদ্দেশ্য করে বল সালেহা বেগম। প্রিয়তা সম্মতি দিয়ে জানায়
-“আচ্ছা মা।”
সারা চোখে হাল্কা পানি এলো তবে তা গড়িয়ে পড়ার আগে মুছে নিয়ে প্রিয়তার সাথে চলে গেলো।
————
সারা আর রাহানের বিয়ে টা খুব সুন্দর করে হয়ে গেলো।একটু তাড়াহুড়ো সহিতেই হয়েছে। বেলা এখন দুইটা।সারার বিয়ে শেষ ওদের এক সাথে বসানো হলো।ততক্ষণে প্রিয়তা কেও সাজিয়েগুছিয়ে নিয়ে এসছে আম্বিয়া মির্জা।
কেউ কেউ অবাক হলো কেউ আবার প্রশংসা করলো।অবাক হওয়ার অবশ্য অনেক কারণ রয়েছে।সাথে প্রশংসা করারও।
সবাই প্রিয়তা কে এটা সেটা দিচ্ছে কেউ আবার আগেই দিয়ে দিয়েছে। প্রিয়তার পাশেই আম্বিয়া মির্জা বসে আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই ওনি ওঠে চলে গেলো। প্রিয়তার এবার ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগলো।এতো মানুষের ভীড়ে পরিচিত মুখ খুব কমই আছে।তাও আবার সবাই দূরে দূরে। শুধু মাইশা একটু কাছে আছে তাও মাইশা নিজেও অসুস্থ তাকে তার মা সুফিয়া বেগম আগলে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান নেই এখানে থাকলে ঠিক বোনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো আর আয়না সে তো ইনিয়া কে নিয়ে হয়রান রাহাত নিজেও হয়তো কোথাও কাজ করছে।
প্রিয়তা সবার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে তবে ভেতরে ভেতরে ভয়ে লজ্জায় আড়ষ্ট।
ঠিক তক্ষুনি কোথা থেকে যেনো একজন বলিষ্ঠ শরীরের লোক প্রিয়তার পাশে ধপ করে বসে গেলো।প্রিয়তা ভাবনায় বিভোর ছিল তাই হঠাৎ এহেন ঘটনা হকচকিয়ে উঠে সরে বসতে চাইলো তবে পাশে বসা সুদর্শন পুরুষ সাদনান তা হতে দিলো না নিজের দানবীয় হাত খানা বউয়ের কোমড় চেপে ধরে। প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ চোখ ফিরিয়ে দেখে নিলো ব্যক্তিটা কে।
যে এখন কি সুন্দর হেঁসে হেঁসে সামনে কিছু লোকের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।
প্রিয়তা সাদনান কে দেখে একটু স্বভাবিক হলো।ধীরস্থির করে নিজে কে।
-“আমি আছি না!
এতো নার্ভাস কেন হচ্ছিলে?”
-“আগে ছিলেন না।”
-“কে বলেছে?
না থাকলে দেখলাম কি করে তুমি নার্ভাস?”
প্রিয়তা এবার থমথমে খেলো। সত্যি তো।তবে পরক্ষণেই কিছু মনে হতে, জিগ্যেস করলো
-“তাহলে তখন আসলেন না কেনো?”
-“ছিলাম তুমি দেখো নি।”
প্রিয়তা আর কথা বাড়ায় না চুপটি করে থাকে সাদনান নিজেও।
বিকেল সাড়ে পাঁচ টার দিকে সারা কে বিদায় দিবে সবাই তোড়জোড় করছে।বাড়ি কাছে হওয়াতে কেউ তেমন তাগাদা দেয় নি।কিন্তু এখন তো রাত হয়ে আসছে যাওয়া দরকার। কিন্তু সারা সে তো কতক্ষণ বড় ভাই কতক্ষণ ছোট ভাই তো কতক্ষণ মা একে একে সবাই কে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করেই যাচ্ছে। কত সুন্দর করেই না সেজে ছিল পার্লারের মেয়ে গুলো কে নিজে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে বলে সেজে ছিল কিন্তু এখন সেই সাজের বারো টা বেজে গিয়েছে।
বেশ অনেক টা সময় পর রাহানের বাবা আজ্জম মির্জা কে ইশারায় কিছু বোঝাতেই তিনি এগিয়ে এসে মেয়ে কে আগলে নিয়ে রাহানের হাতে মেয়ে কে তুলে দিলো। রাহান হাত টা শক্ত করে ধরে সেভাবে গিয়েই গাড়ীতে বসে।
সাদনান সে দিকে এগিয়ে যায় রাহান কঠিন স্বরে কিছু বলে যা সারার কানে যায় কিন্তু ততটা গুরুত্ব দেয় না
রাহান মুচকি হেঁসে আশ্বাস দিয়ে জানালো
-“তোদের মতো এতো বিলাসবহুল জীবন হয়তো দিতে পারবো না। কিন্তু ভালোবাসার কোনো কমতি হবে না, ইনশাআল্লাহ।”
গাড়ি ছেড়ে দিলো।সাঁই সাঁই করে গাড়ি ছুটে দৃষ্টির আড়াল হলো।সাদনান এর চোখ হতে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।বাড়ির প্রতি টা সদস্য কেমন চুপ চাপ হয়ে গেলো মূহুর্তের মধ্যে।
সালেহা বেগম ততক্ষণে কেঁদে কেটে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। চুপ করে আছে তিনি ওনাকে নিয়ে সুফিয়া বেগম আর প্রিয়তা ভেতরে চলে গেলো।
আস্তে আস্তে জায়গা টা জনমানবহীন হয়ে গেলো।
————–
সারা রিধির সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে।এই ঘন্টা খানিকক্ষণ হবে কয়েকটা মেয়ে মিলে সারা কে এখানে রেখে গিয়েছে।
সারা এখন একটা স্লিভলেস এর ব্লু কালার শাড়ী পড়ে আছে।শাড়ী টা রাহানের মা দিয়েছে মহিলা খুব ভালো মানুষ সারা জানে।
সারা রিধির সাথে কথা বলে ফোন কাটতেই দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সারা মাথায় ভালো করে ঘোম টা টেনে বসে।রাহানের মা এসছে।হাতে খাবার এর থালা।
সারা বুঝতে বাকি থাকে না খাবার তার জন্যেই এনেছে।
-” আজ সারা দিন নিশ্চয়ই কিছু খেতে পারো নি!
খাবার টা চট করে খেয়ে নাও।না-কি আমি খাইয়ে দেবো?”
রাহানের মা জানতে চাইলো।
সারা সহসা একটু অবাক হলো তবে মুখে বলল
-“না মা আমি পারবো।
আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন গিয়ে রাত তো অনেক হলো।
বাবা কোথায় আপনারা খেয়েছেন।”
-“পাগলি মেয়ে সবে তো সাড়ে আটটা বাজে। আমরা কেউ এখনো খাই নি। তোমার খাবার টা আরও আগে দিতাম কিন্তু এতো কাজ সব একা হাত,,,
-“না মা কোনো সমস্যা নেই।
আপনি যান খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ুন গিয়ে।”
সারার কথা শুনে তিনি মুচকি হেঁসে খাবার এর প্লেট টা সেন্টার টেবিলে রেখে সারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে প্রস্থান নিলো।
সারা দরজা টা হাল্কা ভিড়িয়ে এসে হাত টা ধুয়ে খেতে বসে গেলো। পেটেও ভীষণ ক্ষুধা ছিল তাই কোনো দিকে আর তাকাল না।
খাওয়ার মাঝেই কাশি ওঠে গেলো আর ঠিক তক্ষুনি কেউ পানির গ্লাস ধরে সামনে সারা না দেখে পানি নিয়ে খেয়ে নিলো।কিন্তু পানি খাওয়ার পর গ্লাসে রাখতে গিয়ে হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই মাথা তুলে তাকাতেই দেখা মিলে স্বামী নামক ব্যক্তিটার।
রাহান বউয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
সারা লজ্জা পেলো।মুখ ফিরে উঠে যেতে নিলেই রাহান হাত ধরে আঁটকে দেয়।
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে
-“খাবার ফেলে কোথায় যাচ্ছো?”
-“আমার খাওয়া শেষ।”
-“আচ্ছা।
কিন্তু আমরা খাওয়া শেষ হয় নি।
বসো আমাকে খাইয়ে দাও।”
সারা চমকে উঠলো। হাত টা মোচড়ামুচড়ি করে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
-“আপনি বসুন।
আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
-“আনতে হবে না।
তোমার হাতের টা খাইয়ে দাও।”
সারা আর কোনো বাক্য প্রয়োগ করলো না। সেভাবে বসে খাবার থালা হতে খাবার নিয়ে রাহান কে খাইয়ে দিলো রাহান তৃপ্তি করে খেলো সাথে খাওয়ার ফাঁকে সারার হাতে কামড় আর নিজের দানবীয় হাতের বেহায়া স্পর্শ তো আছেই। সারা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে।তবে একটা অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করেছে মেয়েটা দেহ মন জুড়ে।
খাবার শেষ এঁটো থালা রেখে নিজ হাত ধুয়ে রাহানের মুখ মুছিয়ে পানি খাইয়ে দিলো।
রাহান পুরো টা সময় বউয়ের দিকে তাকিয়ে রয়।
বিছানায় ফেলে রাখা গোলাপের পাপড়ি হাতে সারার উপর সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে।
সারা তবুও ফিরে তাকায় না যে মেয়ে টা কাল অব্দি লজ্জা পাচ্ছিল না আর আজ এখন এসে লজ্জায় বারংবার আড়ষ্ট হচ্ছে।
সারা নিজের চুল খোলে সে গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে বিনুনি করে।
রাহান ততক্ষণে বউয়ের একদম নিকটে এসে দাঁড়িয়ে। সারা মিররে দেখলো কিন্তু তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া করে না কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিক অস্বস্তি বোধ করে।
গলার নিচে নাকের ডগায় ঘাম চিকচিক করছে রাহান সব টা অবলোকন করলো।
আলগোছে নিজের দুই হাত সারার বাহুর উপর রেখে নিজের দিকে ফিরালো। সারা চোখ বন্ধ করে নিলো।রাহান হাসলো।এই মেয়ে ফোনে কি ফরফর করেই না কত কথা বলতো।
আর এখন দেখো লজ্জায় তাকাচ্ছেই না।
-“ঘুমিয়ে পড়বো?”
সারার কি হলো কে জানে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রাহান কে।
রাহান যেনো নিজের উত্তর পেয়ে গেলো।
এতো দিনের জমানো ভালোবাসা সব দিয়ে বউ কে উজাড় করে ভালোবাসলো।
#আমার_তুমি
#পর্ব_৪০[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
-“আআহ,ব্যাথা পাই।”
প্রিয়তা সাদনান এর মাথার চুল শক্ত করে চেপে ধরে ব্যাথাতুর শব্দ করে বলে উঠে।
-“প্রায় শেষ আর একটু সহ্য করো সোনা।”
সাদনান শুভ্র রঙের ব্যান্ডেজ টা পায়ে পেঁচাতে পেঁচাতে জানালো প্রিয়তা কে।
প্রিয়তা আর কোনো শব্দ প্রয়োগ করে না দাঁতে দাঁত খিঁচে শক্ত হয়ে থাকে।
সাদনান ব্যান্ডেজ টা পেঁচানো শেষ উঠে এগিয়ে গিয়ে আলমারি খুলে সেখান থেকে নিজের আর প্রিয়তার ড্রেস আনে।
সেগুলো সোফায় রেখে ফিরে এসে প্রিয়তা কে কোলে তুলে নিলো।
প্রিয়তা চুপটি করে গলা জড়িয়ে ধরলো।ভীষণ ব্যাথা করছে পায়ে।তাই আর কথা বাড়ায় না। পায়ে তখন একটা ব্লেড ভাঙ্গা গেঁথে গিয়ে ছিল।
রাহান সেটা বেড় করলেও রক্ত পড়া বন্ধ হয় নি।আর হসপিটাল যাওয়া টাও তখন সেফ ছিল না তাই তো বাসায় এসে সাদনান নিজে প্রাথমিক চিকিৎসা করেছে।অবশ্য একটা ইনজেকশন পুশ করছে যাতে ইনফেকশন না হয়।
সাদনান প্রিয়তা কে ওয়াশ রুমে এনে নিজে কলেজে ড্রেস বদলে টাওয়াল পেঁচিয়ে দিয়ে আবারও কোলে করে এনে সোফায় বসিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেয়।
প্রিয়তার নিজেও টেনেটুনে পড়ে নিলো।
সাদনান হাসলো হাতে থাকা ভেঁজা টাওয়াল টা নিয়ে ব্যালকনিতে যেতে যেতে বলল
-“একদম নড়াচড়া করবে না।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।খাবার রুমে দিতে বলবো।”
-“ভাবা যায়,এমপি মহোদয় বউয়ের সব কাজ নিজে হাতে করছে।”
প্রিয়তা কেমন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠলো। সাদনান ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য মাত্রই নিজের হাল্কা গোলাপি রঙের টাওয়াল টা সোফা হতে হাতে নিয়ে ছিল।
প্রিয়তার কথা শুনে প্রিয়তার সামনে দাঁড়াল নিজেও ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
-“কোথাও লেখা আছে এমপি’রা কাজ করতে পারবে না?”
-“কি বলুন তো,অপ্রত্যাশিত ছিল তো তাই।”
সাদনান প্রিয়তার কথা শুনে হঠাৎ মনে হলো প্রিয়তা একজন বাইশ, তেইশ বছর এর প্রাপ্ত বয়স্ক নারী।
কিন্তু কথা হলো এতো গভীর করে কেন তার সাথে কথা বলছে তার বউ?
-“তোমার হয়েছে টা কি?”
-“কিছু না তো।
আপনি যান বরং, আপনার আবার সময় অপচয় হচ্ছে।”
সাদনান জবাবে কিছু বলল না ওয়াশ রুম যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো।চার টার দিকে আজ কিছু মানুষ আসবে তার উপর একটা বিশেষ কাজও করতে হবে। সাথে দুপুরে আক্রমণকারী লোকদের একটা কিছু করতে হবে।রাতে না হয় আজ বউয়ের সব অভিযোগ শুনবে।সে জানে বউ তার মনে মনে অভিমানের পাহাড় তৈরি করে রেখেছে। অবশ্য রাখা’রই কথা।
কিন্তু তার নিজের কি দোষ এতো এতো ঝামেলা সামলে বউ কে সময় দিয়ে উঠতে পারছে না।
নতুন এমপি হওয়ার সুবাদে সব টা সামলে নিতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে। অবশ্য ততটা সমস্যা হতো না যদি না প্রাক্তন এমপি সব দায়িত্ব, নিয়ম ঠিক ঠাক পালন করতো।
সাদনান শাওয়ার নিয়ে একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে বেড়িয়ে এলো।
রুমে এসে প্রিয়তার পাশে বসে প্রিয়তা কে নিজের এক উরুর উপর নিয়ে চুল মুছে দিতে বলে।
প্রিয়তা বাধ্য মেয়ের মতো শুনলো। চুল মুছা শেষ সাদনান প্রিয়তা কে আবার আগের স্থানে বসিয়ে দিয়ে গায়ে একটা টি-শার্ট জড়িয়ে নিলো।
এ-র মধ্যে একজন কাজের লোক আর সুফিয়া বেগম খাবার নিয়ে হাজির হলো।
প্রিয়তার ব্যাপার টা নিয়ে সবাই অবগত তাই নিজে যে যেতে পারবে না সেই জন্য খাবার উপর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে সালেহা বেগম। সবাই অবশ্য খাবার শেষ করে নিয়েছে, তার উপর আয়নার নয় মাস শেষ এর দিকে তাই সালেহা বেগম সেখানেই আছে বলে জানালো সুফিয়া বেগম।
খাবার রেখে প্রিয়তার হালচাল জিগ্যেস করে তিনি চলে গেলো।
সাদনান ততক্ষণে নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে প্রিয়তার পাশে বসে খাবার থালা হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে খাইয়ে দেয় সাথে নিজেও খেয়ে নিলো।
প্রিয়তা এটা বেশ উপভোগ করলো।অনেক দিন পর সাদনান প্রিয়তা কে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।
খাবার শেষ সাদনান এঁটো থালা সেন্টার টেবিলে রেখে নিজের হাত ধুয়ে আসে বেসিন হতে।
প্রিয়তার মুখ মুছিয়ে দিয়ে একটা ব্যাথার ঔষধ খাইয়ে দিলো।প্রিয়তা বিনাবাক্য খেয়ে নিলো।সাদনান প্রিয়তা কে বিছানায় নিয়ে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো প্রিয়তার পাশে।
প্রিয়তা সাদনান এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেলো।
সাদনান সে দিকে তাকিয়ে মিনি কম্বল টা প্রিয়তার গায়ে দিয়ে দিলো।ঠিক তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সাদনান জিগ্যেস করলে জানালো নিচে মানুষ এসছে।সাদনান আসছি বলে।প্রিয়তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বেড়িয়ে এলো রুম হতে।
———–
সাদনান বসে আছে ওয়াসিফ দেওয়ান এর সামনে।সাথে আছে আরও কিছু বড় বড় নেতা।তারা মুলত কিছু নিয়ে সমালোচনা করছে।
বেশ অনেক টা সময় সাদনান সবার কথোপকথন শুনে। কিন্তু সে খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভেবে চলছে। ভাবনা অতি প্রখর যা ওয়াসিফ দেওয়ান পর্যবেক্ষণ করে।
-“সিকিউরিটি আরও কড়াকড়ি করতে বলবো!”
ওয়াসিফ দেওয়ান বললো।ওনার সাথে এখানে থাকা সবাই সায় দিলো।তবে সাদনান নাকচ করে দিলো।থুতনিতে নিজের দুই হাত ঠেকিয়ে জানালো
-“কি দরকার?
তারচেয়ে ঢের বেশি ভালো শেকড় টা উপড়ে ফেলা।”
-“সম্ভব হবে না।”
জাফর মির্জা বলল।সাদনান দাদার দিকে তাকালো।ফের দৃষ্টি ঘুড়িয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান এর দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেঁসে বলল
-“সময় বলে দিবে।
বাসায় যান রেস্ট করুন।”
————
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ তিন্নির এডমিশন টেস্ট এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন।
এখন বই নিয়ে বসে আছে টেবিলে পাশেই সোফায় কবির খুব মনোযোগের সাথে কিছু করে যাচ্ছে ল্যাপটপ স্কিন এর দিকে তাকিয়ে।
হাতের আঙুল গুলো অনবরত keyboard চালিয়ে যাচ্ছে।
তিন্নি সে দিক টায় তাকিয়ে থাকে অনেক্ক্ষণ যাবত।তবে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না খাবার খেয়ে এসছে এই একটু আগেই শরীর টা কেমন করছে গা ঘোলাচ্ছে। মনে পেটের ভেতর নাড়িভুড়ি সব বেড়িয়ে আসবে।
তিন্নি হাতে থাকা কলম টা টেবিলে রেখে মুখে হাত চেপে ধরে এক দৌড়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
কবিরের চোখে সেটা ধরা পরলো।ল্যাপটপ রেখে তৎক্ষনাৎ উঠে নিজেও পেছনে পেছনে ওয়াশ রুমে আসে ততক্ষণে তিন্নি ঘড়ঘড় আওয়াজ তুলে পেটের হাত চেপে ধরে বেসিনে উপর ঝুঁকে বমি করছে।
কবির এগিয়ে এলো চুল গুলো সামনে থেকে পেছনে এনে কোনো রকম বেঁধে দিয়ে মুখে পানি দিতে সাহায্য করলো।
বেচারা বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে চোখ মুখে কেমন আতংকের ছাপ স্পষ্ট।
তিন্নি চোখে মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে দূর্বল শরীর টা আর ধরে রাখতে পারে না।কবির এর বুকের উপর আলগোছে মাথা টা এলিয়ে দেয়।
কবির কি বুঝতে পারলো কে জানে।হঠাৎ করে কোলে তুলে নিলো। তিন্নি গলা জড়িয়ে ধরে ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জানালো
-“যেতে পারতাম।
দরকার ছিল না।”
-“হুম সেটা তো দেখতে পাচ্ছি।
ঠিক মতো খাও,,,
কবির কথা টা কি মনে করে আর সব টা সম্পূর্ণ করেনা।
তিন্নি কে বিছানায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসে কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলো
-“সব ঠিক ঠাক ছিল তো এই মাসে?”
তিন্নি হাসলো খুব সাবধানের সহিতে। মাথা টা কবির এর কাঁধে রেখে এক বাহু জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো
-“যদি বলি না!”
-“মজা করছো তুমি।”
-“আপনার তাই মনে হচ্ছে? ”
তিন্নি মাথা তুলে কবির এর মুখ পানে তাকালো। কবির খুশি কি না বুঝে উঠতে পারে না।
কবির ফিরে বসলো নিজের দানবীয় হাত জোড়া তিন্নির গোলগাল মুখ খানা নিজের সেই হাতের আঁজলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধালো
-“তুমি শিওর, আমি বাবা হবো!”
#চলবে…..
#আমার_তুমি
#পর্ব_৪১[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
রাত তখন তিন টা।রাহাত পাশেই ঘুমোচ্ছে আয়নার সে দিকে একবার দেখে নিলো।পেট টা হাল্কা ব্যাথা করছে। নিজের পেটের উপর হতে রাহাত এর ডান হাত টা সড়িয়ে অনেক কষ্ট উঠে বসলো।
সাইট টেবিল হতে গ্লাস ভর্তি পানি টা নিয়ে একটু পানি খেলো।
যদি পারতো তবে হয়তো পুরো টা খেয়ে নিতো কিন্তু সম্ভব না।কনসিভ করেছে পর থেকে পানি টা আয়না একদম খেতে পারে না,পানি না সব খাবারই কেমন অনিহা বোধ করে।
যদিও এটা প্রায়ই হয়ে থাকে প্রেগন্যান্সির সময়। তবে কষ্ট করে হলেও খেতে হয়।আয়নার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে জোর করে খেতে হয়।কিন্তু পানি টা?একদম খেতে পারে না।
আয়না পেটে হাত চেপে বসে আছে যদি পানি সব টা খেতে পারতো তবে হয়তো ব্যাথা টা কম তো।কিন্তু এখনো তো আরও বেড়েছে।
আয়না বুঝতে পারছে না কি করবে।রাহাত কে ডাকবে?দ্বিধা করতে করতে শেষমেষ না পেড়ে ব্যাথাতুর শব্দ করে ওঠে।
রাহাত কে ডাকবে তার আগেই আয়নার শব্দ রাহাত তন্দ্রা ছুটে।
আয়না কে বসে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি করে নিজেও ওঠে বসলো।
চুল গুলো বেঁধে দিলো পাশ থেকে ক্লিপ দিয়ে। আয়নার সারা শরীর ঘেমে ন্যায় একাকার অবস্থা রাহাত কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছে না।
আয়নাও কেমন হাঁস পাশ করছে। রাহাত যেনো কিছু বুঝতে পারলো।
কিছু জিগ্যেস না করেই আয়না কে কোলে তুলে নিলো।
দরজা শুধু ভিড়ানো ছিল বিধায় বেশি কষ্ট করতে হলো না।
রুম হতে বেড়িয়ে হতে হতে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল
-“একটু ধৈর্য্য ধরো।”
পরপরই নিজের বলিষ্ঠ কণ্ঠে সবাই কে ডাকতে লাগলো।উপর থেকে নিচে নামতে নামতে ওরা নিচের ঘরের সবাই লিভিং রুমে হাজির হলো মূহুর্তে মাঝে অন্ধকার বাড়ি টা আলোকিত হয়ে গেলো।
ঘটনা বুঝতে কারোরই তেমন কোনো অসুবিধা হয় না।যেহেতু বিষয় টা নিয়ে আগে থেকে সবাই অবগত ছিল যে কোনো সময় যা তা হতে পারে।তাই তো বাড়ির কোনো পুরুষ লোক আজ মাস ধরে রাতে বাহিরে থাকে না।
মফিজুর মির্জা কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে নিজের চোখের চশমা টা ঠেলতে ঠেলতে বেড়িয়ে গেলো গাড়ি বেড় করতে।
সালেহা বেগম শাশুড়ীর কাছে এগিয়ে এলো নমনীয় কণ্ঠে অনুমতির আবেদন করলো
-“আম্মা আমি যাব?”
-“যাও।”
সালেহা বেগম মনে মনে অবাক হলো তবে শাশুড়ী’র থেকে সম্মতি পেয়ে আর কথা বাড়ায় না তৎক্ষনাৎ স্বামীর পেছনে পেছনে বেড়িয়ে গেলো।
সাদনান প্রিয়তা সারা এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়।এটা তাদের কাছে অবাক করা বিষয় তাই সবাই একটু শকট। তবে সাদনান নির্বিকার। সে যেতো তবে সে যাওয়া মানেই বিপদ নিজে হাতে ডেকে আনা তাছাড়া তার কাল একটা বিশেষ কাজও আছে কতশত দায়িত্ব।
প্রিয়তা অবশ্য আয়না কে ওই অবস্থায় দেখে কেঁদে দিয়েছে কিন্তু শব্দহীন।
সে টা কেউ লক্ষ্য না করলেও সাদনান এর চোখে ঠিক ধরা পড়ে।
কিন্তু কিছু বলে না বোন আর ভাই কে যে প্রিয়তা ভীষণ ভালোবাসে অবশ্য আয়ান, আয়নাও ছোট বোন কে প্রচন্ড ভালোবাসে।
সবাই চলে গেলো যে যার রুমে সাদনানও প্রিয়তা কে নিয়ে রুমে এলো।
রুমে এসেই প্রিয়তা কেঁদে দিলো শব্দ করে সাদনান কিছু বলল না আগলে নিলো নিজের বাহুডোরে।
-“আপুর কিছু হবে না তো?”
-“তুমি পজিটিভ কেন ভাবছো না?”
-“আসে না।
আম্মু তো আমাকে রেখে চলে গিয়েছে।”
-“মায়ের তো সমস্যা ছিল বড়।
কিছু হবে না দোয়া করো।”
প্রিয়তা চুপ করে যায়।
সাদনান নিজেও চোখ বন্ধ করে আরও দেড় ঘন্টার মতো বাকি ফজরের আযান দিতে।
ঘুমানোর চেষ্টা চালায়।
—————
হসপিটাল পৌঁছাতে আধঘন্টা সময় লেগেছে।রাত শেষ এর দিকে হওয়াতে প্রায় সবাই ঘুমিয়ে ছিল।
শুধু কিছু সংখ্যক মানুষ আছে তবে তারাও কেউ রোগী কেউ বা বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে হাঁটা হাঁটি করছে।ডক্টর নার্স চোখে পড়ছে না রাহাতের।
মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা দৌড়ে ভেতরে গেলো রাহাতও ব্যাথায় ছটফট করতে থাকা আয়না কে নিয়ে এগিয়ে এলো।
তবে বেশি দূর যেতে হয় নি দুই বাপ চাচা সহ ডক্টর সমতে ফিরে এলো।
আর সবাই কে অপেক্ষারত ফেলে দিয়ে আয়না কে নিয়ে চলে গেলো ওটিতে।
সালেহা বেগম ছেলে কে অবয়ব দিচ্ছে এটা সেটা বলছে।আযান দিলে পুরুষ সবাই নামাজ পড়তে চলে গেলো।শুধু সালেহা বেগম বসে রইলো।কি করবে হঠাৎ কার কাছে যাবে বুঝতে পারছে না তাই বসে বসেই আল্লাহর কাছে ছেলে বউ আর তার অনাগত সন্তানের জন্য দোয়া করতে লাগলো।
রাহাত’রা সবাই যাওয়ার ছয় কি সাত মিনিট এর মাথায় একজন নার্স সাদা একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে একটা বাচ্চা কোলে ওটি হতে বেড়িয়ে এলো।
মুখে তার কি সুন্দর চমৎকার হাসি।সালেহা বেগম বসা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল।চট করে এগিয়ে এলো।
নার্স টা হাসি বজায় রেখেই সালেহা বেগম এর কোলে বাচ্চা টা কে দিলো।
নার্স টা হেঁসে বলল
-“আপনার মেয়ে ভালো আছে।”
নার্স এর কথায় সালেহা বেগম নিজেও হাসলো।নার্স টা আবারও চলে গেলো। নার্স টা বাচ্চা সম্পর্কে কিছু বলতে না দেখে সালেহা বেগম অবাক হলো অবশ্য পরে তা ঘুচে গেলো কেন না তারা যে কি বাচ্চা হবে জানে না সেটা তো আর নার্স জানে না।
সালেহা বেগম বাচ্চা টা নিয়ে বসে রইলো।তার ঠিক মিনিট এক মিনিট এর মাথায় সবার আগমন হলো।
রাহাত সবার পেছনে ছিল।
জাফর মির্জা আর মফিজুর মির্জা আগে এসে দেখে নিলো।সবার শেষ রাহাতের কোলে তুলে দিলো সালেহা বেগম রাহাত টলমল পায়ে এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুম্বন করলো নিজের অস্তিত্ব।
ঠিক তক্ষুনি একজন ডক্টর এলো জানালো আয়না কে কেবিনে দেওয়া হয়েছে আর রোগীর খেয়াল রাখতে বলে চলে গেলো ওনার সাথে অবশ্য মফিজুর মির্জা গেলো কথা বলতে।
রাহাত কেবিনে এসে দেখলো আয়না ঘুমিয়ে আছে। রাহাত কোনো শব্দ না করে আলগোছে এগিয়ে গিয়ে বাবু টা কে আয়নার এক বাহুর উপর শুইয়ে দিলো।
আয়নার হুঁশ নেই।হয়তো ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।
রাহাত চট করে সাথে থাকা বাবার ফোন টায় কয় টা ছবি তুলে নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে আবার delete for me করে দেয়।
অতঃপর বউ আর বাচ্চা কে পাহাড়া দিতে লাগলো।
————-
সময় কত দ্রুত চলে যায় তাই না! শুধু থেকে যা সৃতি হিসেবে কিছু মূহুর্ত।
তেমনি দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে একটা বছর।সারা প্রিয়তার এইচএসসি পরীক্ষা চলছে।আয়না রাহাতের মেয়ের এক বছর হলো আজ।হ্যাঁ সে দিন রাহাত আর আয়নার কোল আলো করে ইনিয়া এসছিল , তিন্নির আর কবিরের একটা ছেলে হয়েছে তিন মাস চলে বাচ্চার নাম তুরাগ খাঁন।মাইশা সেও কনসিভ করেছে তিন মাস চলে তবে বহু চেষ্টার পর আজ দেড় বছর পর মুখ তুলে চেয়েছে আল্লাহ মাইশা আর আয়ানের দিকে।ওয়াজিদ রিধি কে নিয়ে আবারও সেই সুদূর ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছে তবে শোনা যাচ্ছে আর বছর দুই এক পর তারা বাংলাদেশ এসে যাবে এক্কেবারে তাদের কোনো বাচ্চা হয় নি এখনো।
সারা আর রাহানের বিয়ের ডেট পড়েছে আর নয় দিন পর।আর আজ মির্জা বাড়ি বেশ জমজমাট পরিবেশ তার কারণ আজ মির্জা বাড়ির একমাত্র কন্যা ইনিয়ার বার্থডে আজ।একটা বছর পা রাখলো ছোট ইনিয়া যে কি না তার ছোট মা প্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে থাকে সারাক্ষণ যা নিয়ে সাদনান এর অভিযোগের শেষ নেই।
তার কারণ ইনিয়া হওয়ার পর থেকে প্রিয়তা তার ধারেকাছেও বেশি ঘেঁষে না সব সময় ওকে নিয়ে পরে থাকে।তাই তো সাদনান ভেবে নিয়েছে আজ রাতে একটা কিছু করবেই।
বেশ অনেক টা সময় সাদনান গাড়িতে বসে আছে গাড়িতে এসি চলছে কিন্তু সাদনান তাও ঘামছে।রাহান সে দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়ির ড্রাইভার কে এসির পাওয়ার টা একটু বাড়িয়ে দিতে বলে ড্রাইভার কথা মতো কাজ করে।
তার পর ধীরে স্বরে সাদনান কে জানালো
-“শোন বাবা বলেছে এই মাস থেকে অফিস যেতে।”
-“যা।
তবে আমি ঠিক ঠাক সঙ্গ পেলে হলো।”
সাদনান কণ্ঠ খুব শান্ত রেখে বলল।
রাহান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে এই কথা উঠলেই সাদনান সব সময় এমন খাপছাড়া জবাব।
রাহান আমতা আমতা করে বলল
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৮[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
-“আমার বোন আগেও কষ্ট পেয়েছ রাহাত।
আর এখন দাদি।
কবে ওর আর পাঁচ টা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন হবে?”
কথা গুলো বলেই আয়না কেঁদে দিলো।রাহাত বউয়ের পাশে বসে।
আয়নার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরো বলতে লাগলো
-“এটা কোনো সমস্যা না।দাদি আগের দিনের মানুষ।
আগের দিনের নিয়ম কানুন মেনে চলে। এসব তো শুধু প্রিয়তা না আমাদের সবার উপর এপ্লাই করে।
প্রিয়তা কে একটু বেশি কড়াকড়ি শাসন করার কারণ ও আছে বয়সে ছোট+দেখতে শুনতে ভালো সহজেই যে কারোর নজর পড়ে।তাছাড়া মা, চাচি, দাদি নিজেও বাহিরে লোকজনের সামনে যাওয়া টা পছন্দ করে না সেখানে প্রিয়তা রোজ স্কুল, কলেজ যাচ্ছে। তাই একটু অপছন্দ করে। দেখবে যখন তোমার মতো লেখা পড়া শেষ আর বাড়ির বাহিরে যাবে না তখন আবার তোমার মতো তোমার বোন কেও আদর করবে।”
রাহাত এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথা গুলো বলেই থামলো।
আয়না আসতে করে বিছানা হতে উঠে গিয়ে সেন্টার টেবিলে থেকে গ্লাসে পানি ভর্তি গ্লাস টা রাহাত কে দিলো রাহাত একটানে সব টা পানি শেষ করে গ্লাস টা নিজ ওঠে যথাযথ স্থানে রাখে।
ফিরে এসে আয়না কে বুকে আগলে নিয়ে আবারও শান্তনা দিয়ে বলল
-“আর মন খারাপ করো না তো।
সব ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।”
আয়নার নাক টানা তবুও শোনা যাচ্ছে। রাহাত বুঝতে পারে আয়না বোন কে প্রচুর ভালোবাসে।আর রাহাত নিজেও জানে সেটা।
রাহাত বেশি কিছু না ভেবে আয়না কে তাড়া দিয়ে বলল
-“দেখি চলো রেডি হও।
সাড়ে এগারো টা বেজে গিয়েছে। বরযাত্রী এসে পড়বে এক টা নাগাদ।”
আয়না উঠে এগিয়ে গিয়ে লাগেজ এর কাছে নিচে বসতে নিলেই রাহাত তৎক্ষনাৎ বসা ছেড়ে উঠে এগিয়ে এসে আয়নার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
আয়না বেচারি মেকি হাসি দিয়ে বলল
-“ভুলে গিয়েছি।
আর হবে না।”
রাহাত কিছু না বলে মুখের ভাব গম্ভীর রেখেই নিজে কাপড় বেড় করে লাগেজ হতে।
আয়নার জন্য শাড়ীর সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিস আয়নার হাতে দিয়ে বলল
-“এগুলো পড়ে এসো।
আমি রেডি করে দেবো।নয়তো একা একা পড়তে কষ্ট হবে।আর এখন মা,চাচি সবাই নিশ্চয়ই বিজি।”
আয়না কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।রাহাত সব সময়ই আয়নার প্রতি যত্নশীল আর এখন যেনো আয়না কনসিভ করার পর আরও দিগুণ হয়েছে সেটা।
———
সাদনান ফোনে কথা বলছে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। রুম থেকে ব্যালকনি একদম বরাবর। সাদনান ফোনে কথা বলছে ঠিক তবে দৃষ্টি তার রুমে শাড়ী পড়তে থাকা বউয়ের উপর।
প্রিয়তা শাড়ীর কুঁচি গুলো হাতে ভাঁজ করে নিচ্ছে। কিন্তু শাড়ী টা বেশ ভারী আর মোটা হওয়ার ফলে বারবারই কুঁচি গুলো ঠিক ঠাক হাতে ভাঁজ নিতে পারছে না। এদিকে সাদনানও রেডি হয়ে গিয়েছে।
প্রিয়তা বিরক্তে চোখ মুখে।চার, পাঁচ টা কুঁচি নিয়ে সেগুলো কোনো রকম আঁচল উপরে তুলে গুঁজতে নিলেই একটা শক্ত হাত বাঁধা প্রদান করলো।
প্রিয়তা মাথা উঁচিয়ে সাদনান কে দেখে সামন্য লজ্জা পেলো।তবে পরক্ষণেই মনে পরে এখন লজ্জা পেলে চলবে না।তাই লজ্জা মনে চেপে রেখেই কপালে বিরক্তিকর ছাপ ফেলে বলল
-“একটু কুঁচি গুলো ভাঁজ করে দিন হচ্ছে না।”
সাদনান প্রিয়তা কথা গুলো বলার আগেই কুঁচি দিয়ে সেগুলো কোমড়েও গুঁজে দিলো।
প্রিয়তা দ্বিতীয় বারের ন্যায় আবারও কুঁকড়ে যায়। এ-র মধ্যে সাদনান নিচে বসে কুঁচি গুলো সুন্দর করে ধরে থেকে প্রিয়তা কে বলল
-“উপরের দিক টা দেখো।”
প্রিয়তা দেখলো।তৎক্ষনাৎ চোখে এলো অনাবৃত কোমড় সহ বুকের কিছু টা অংশও দৃশ্যমান।
প্রিয়তা চট করে আঁচল ঠিক ঠাক করে নিলো।সাদনান নিজেও ওঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের ঘড়ি পড়ে আর সাইডে দাঁড়িয়ে প্রিয়তা নিজেও হাল্কা সাজুগুজু করে নেয়।
যতটুকু সাজ বিয়ে বাড়িতে চলনসই।
প্রিয়তার নিজেরও বেশি সাজতে বেশি ভালো লাগে না তারমধ্যে সাদনান এর কড়াকড়ি নিষেধও আছে। বেশি সাজগোজ না করতে তবে সেটা শুধু বাহিরে।
সাদনান রেডি হয়ে আগে নিজে বেড়িয়ে গেলো যাওয়ার আগে অবশ্য বলে গিয়েছে সারা বা মাইশা কে পাঠাবে।বিয়ে বাড়ি কে কোথায় আছে আর বিয়ের খবর টা যদি কারোর কানে যায় তবে ঝামেলা হবে।তবে বেশি দিন এই লুকোচুরি চলবে না মাস তিন এক পর প্রিয়তার আঠারো হবে তখন অনুষ্ঠান করে সবাই কে জানিয়ে দিবে।
————
রিধির বিয়ের সাজ কমপ্লিট। সাজানো শেষ একবার নিজে কে। রিধি দেখতে একটু ভিন্ন রকম সুন্দর। যে কেউ এক দেখায় মায়ায় পড়বে।মুখ টা একদম মায়ায় ভরপুর সেখানে কৃত্রিম সাজ আরও দিগুণ সুন্দর দেখাচ্ছে। তবে এতো সুন্দর মুখ টা কেমন মলিন হয়ে আছে।তবে যেটা শুধু রিধি দেখতে পাচ্ছে।সবাই রিধির রূপের প্রশংসা করছে।কিন্তু কেউ ভিতরে তীব্র যন্ত্রণা টা দেখতে পাচ্ছে না।যে টা রিধি কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। চিৎকার করে কেঁদে বলতে মনে চাচ্ছে “আমি বিয়ে করবো না,করবো যদি পাত্র ওয়াজিদ হয়ে তবেই” রিধির এমন ভাবনা চিন্তায় নিজের উপরেই হাসি পেলো।
এ-র মধ্যে সবাই বাহির হতে বর এসছে বর এসছে বলে হৈ-হুল্লোড় কানে এলো।কম বেশি সবাই চলে গেলো। রুম একদম ফাঁকা থাকার মধ্যে সারা,প্রিয়তা আয়না।
সারা কেও রেডি করে রেখেছে। রিধির বিয়ের পর পরই এনগেজমেন্ট টা হবে।
সারা কে একটা জাম কালার শাড়ী পড়িয়েছে। দেখতে মাশাআল্লাহ। ছোট নাদুসনুদুস দেহখানা ঝলমল করছে। শাড়ী টা বেশ মানিয়েছে।
দরজা হতে রাহান সব টা পর্যবেক্ষণ করে।কিন্তু পরক্ষণেই বোনের দিকে নজর যেতে মন টা খারাপ হয়ে যায়।একটু পরই বোন তার পর হবে।মিনিট সময় ব্যাবধান হয়তো।বেশী ডিফারেন্স না রাহান আর রিধির বয়সের হবে হয়তো এই দেড় বছর এর মতো। বোন তার সাথে ছিল না পাঁচ বছরেরও বেশি সময় কিন্তু তাদের মাঝে তবুও ভালোবাসা কমতি ছিল না।না আগে ছিল তবে এদিকে এসে বোন টা তার কেমন হয়ে গেলো একদম চুপচাপ আগের মতো আর কথা চঞ্চলতা নেই।এতে অবশ্য রাহান প্রথম মন খারাপ করলেও পরে সব টা ওয়াজিদ এর কাছ থেকে ঘটনা জানতে পেরে ওয়াজিদ কে মারতে গিয়েছিল।পরে অবশ্য ক্ষমাও চেয়েছে। সে জানে বোন তার ভীষণ ভালোবাসে ওয়াজিদ কে তাই তা বোনের মন আর ভালো করার চেষ্টা করে নি।বোনের মন সব সময় যাতে ভালো থাকে সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
-“আপু চল।”
রাহান বলল।রিধি উঠে এলো রাহান বোন কে আগলে নিলো।রুম হতে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো
পেছন পেছন আরও কিছু মানুষ এলো। রিধি কে মাইশা আয়ান রাহান বিয়ের ব্যবস্থা যেখানে করা হয়েছে সেখানে নিয়ে এলো তাদের সাথে সাথে সবাই এলো।
রিধির মাথায় ঘোমটা একটু বড় করেই দেওয়া। তাই আশেপাশের জিনিস খুব একটা নজরে আসে না। তবে ইচ্ছে থাকলে দেখতে পারবে কিন্তু রিধির কিছু দেখতে ইচ্ছে করছে না। তাই চোখ নিচু রেখেই রাহানের হাত ধরে লিভিং রুমে বর বউয়ের জন্য বরাদ্দকৃত সোফায় বসিয়ে দিয়ে রাহান বোনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
রিধি পাশে বসা মাত্রই খুব চিরপরিচিত একটা সুগন্ধি নাকে ভেসে এলো।
তবে এতো মানুষের ভীড়ে পাশে বসা তার না হওয়া বরের দিকে তাকাতে সাহস পেলো না।
-“কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
আমাদের আরও একটা শুভকাজ আছে।”
কাজি সাহেব সম্মতি পেয়ে বিয়ের সব নিয়ম কানুন করতে লাগলো।
তবে কাজের মুখে অনাকাঙ্খিত নাম শুনে চমকে উঠলো কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই রিধি পাশে বসা বর রূপে ওয়াজিদ কে এক পলক দেখে সাথে সাথে চোখ নামায়।
এদিকে কাজিও কবুল বলতে মেয়ে কে তাড়া দিচ্ছে। যা রিধির কান অব্দি যাচ্ছে না।
রিধির পক্ষ হতে কোনো জবাব না পেয়ে অনেকেই ফিসফিস করতে লাগলো।পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে ওয়াজিদ নিজের শক্ত হাত টা রিধির কোমড় স্পর্শ করে।
রিধি তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল সম্মতি ফিরে পেতেই বুঝতে পারে পরিস্থিতি বিগড়ে যাচ্ছে তার মধ্যে ওয়াজিদও ফিসফিস করে বলে উঠলো
-“সারপ্রাইজ পেয়ে এতোটাই চমকে গিয়ছো,যে এখন কবুল বলতে ভুলে গিয়েছো!
ফাস্ট, বলো, বলো।”
#চলবে….
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৯[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
-“আমাকে বলেন নি কেন আপনি ছিলেন পাত্র!”
ওয়াজিদ রুমে আসা মাত্রই রিধি উপরোক্ত কথা টা বলে উঠে।বিয়ের পর বাড়িতে আসা মাত্রই একটা ইমারজেন্সী কেস পড়ে যাওয়াতে নতুন বউ বাড়িতে রেখে তখুনি হসপিটাল যেতে হয়েছিল ওয়াজিদ কে। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয় টা ছিল আর এখন রাত সাড়ে দশ টার বেশি সময় বাজে।ওয়াজিদ নিজের হাতে থাকা ঘড়ি টার দিকে এক নজর তাকিয়ে বা হাতের ভাঁজে ঝুলিয়ে রাখা সাদা অ্যাপ্রোন সাথে ডান হাতে থাকা স্টেথোস্কোপ টাও রাখে সেন্টার টেবিলে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে নিজের হাত হতে ঘড়ি খোলে রাখে।
অতঃপর শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে রিধির পাশে গিয়ে বসলো।
সেকেন্ড এর মতো রিধির মায়াবী মুখ টার দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে রিধির কোলে মাথা তুলে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
রিধি চমকালো হকচকিয়ে উঠে নিজের হাত জোড়া গুটিয়ে নিতে যাবে তার আগেই ওয়াজিদ আঁটকে দিলো।
রিধির হাত জোড়ায় চুমু খেয়ে নিজের মাথার উপর রেখে দিলো।
রিধির সারা শরীর শিউরে ওঠে। এতোটা কাছাকাছি এর আগে ওরা কখনো হয় নি।তাই একটু নার্ভাস তবে ভীষণ ভালো লাগলো।নিজের অজান্তেই রিধির হাত জোড়া ওয়াজিদ এর চুলের ভাঁজে চালালো।
ওয়াজিদ মুচকি হাসলো।ওয়াজিদ পাশ ফিরে কাত হয়ে রিধির পেটে মুখ গুঁজে জিজ্ঞেস করলো
-“সারপ্রাইজ,ভালো লাগে নি?”
-“কষ্ট টা তো আগে হয়েছে।”
কণ্ঠে অভিমানের রেশ স্পষ্ট।
ওয়াজিদ ফের আগের ন্যায় হাসে।তবে উল্টো ফিরে থাকায় তা রিধির চোখে ধরা পড়ে না।
ওয়াজিদ সোজা হয়।উঠে ঠিক রিধির বরাবর বসে শান্ত কণ্ঠে শুধালো
-“জানতো,দুঃখের পরেই কিন্তু সুখ আসে।
দুঃখ আছে বলেই আমরা সুখ টা উপলব্ধি করতে পারি।”
রিধি শুনলো আলগোছে বিছানা হতে নেমে চলে যেতে নিলেই ওয়াজিদ বলে উঠলো
-“রিধু,আমার একটা টি-শার্ট পড়ো।”
রিধি অবাক হলো।
ওয়াজিদ এখনো মনে রেখেছে কথা টা?রিধি বিস্ময় নিয়ে পেছন ফিরে ওয়াজিদ এর চোখে চোখ রেখে জানতে চাইলো
-“আপনার মনে আছে আজও?”
-“মনে না থাকার কি আছে?”
-“ছয় বছর আগের কথা এটা!”
-“আমার সব টা জুড়ে তুমি।
সেখানে আমার আমি কে কি করে ভুলে যাব?”
রিধি প্রচুর অবাক হয় সাথে মনে মনে ভীষণ খুশি হয়।তার কোথাও একটা মনে হচ্ছে সে সত্যি ভাগ্যবতী। ওয়াজিদ যে দিন মেডিক্যাল চান্স পায় রিধি কে সে দিন অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল আর কথার কথায় তখন রিধি কে জিগ্যেস করে ছিল রিধি আজ ওয়াজিদ এর কাছে কি চাই?তখন রিধি লজ্জা মাখা হাসি হেঁসে বলে ছিল ওয়াজিদ এর ব্যবহার করা একটা টি-শার্ট চায়। তবে সেটা বিয়ের দিন রাতে। ওয়াজিদ অবাক হয়ে ছিল। তাই কৌতুহল নিয়ে আবারও প্রশ্ন করে ছিল শুধু একটা টি-শার্ট কেন?
রিধি তখন আবারও লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে জানিয়ে ছিল ওয়াজিদ এর টি-শার্ট তার ভীষণ ভালো লাগে।সে দিন ওয়াজিদ প্রচুর হেঁসে ছিল আর প্রতি বারের ন্যায় সেই হাসির প্রেমে পড়ে ছিল রিধি।
রিধির ভাবনার মাঝেই ওয়াজিদ গিয়ে নিজের ব্যবহার করা একটা গেঞ্জি এনে রিধি হাতে দিলো।
রিধি গেঞ্জি টার দিকে এক পলক তাকালো একদম গাঢ় নীল রঙের একটা টি-শার্ট।
যা দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল রিধি।
মুচকি হেঁসে ভারী লেহেঙ্গা টা উঁচু করে ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলো সাথে অবশ্য ওয়াজিদ একটা তার নিজের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টও দিয়ে দিলো।
তবে রিধি সে কি সত্যি ওয়াজিদ কে এতো সহজে মেনে নিবে?
আজ কি তাদের ভালোবাসা পূর্নতা পাবে?একে-অপরকে নিজের কাছে টেনে নিবে?
না-কি কেউ একজন বাঁধা প্রদান করবে?
ওয়াজিদ রুম টা চোখ বুলালো। ফুলে দিয়ে আর মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েছে রুম টা কে। এতে অবশ্য তার কাজিন দল তার কাছ হতে মোটা অংকের একটা টাকার এমাউন্ট নিয়েছে।
ওয়াজিদ চট করে গায়ের ঘামে ভেঁজা শার্ট টা বদলে নিলো।অতঃপর ট্রাউজার পড়ে আলমারি খোলে সেখানে কিছু নড়াচড়া করে।
রিধি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম হতে বেড়িয়ে এলো তবে সে লজ্জা বারবার চোখের দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরচ্ছে। ওয়াজিদ সে দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে উঠলো।
রিধি ইতালিতে থেকেছে দীর্ঘদিন তবে তার পোশাক আশাক সব সময় শালীন ছিল। সব সময় গলায় ওড়না ঝুলিয়ে রাখতো। কিন্তু আজ? শুধু একটা গেঞ্জি আর প্যান্ট যদিও এগুলো ভীষণ ঢিলাঢালা হচ্ছে তবে মেয়েলী ভাঁজ গুলো স্পষ্ট।
ওয়াজিদ এগিয়ে গেলো।
রিধি দুই পা পিছনে গেলো ওয়াজিদ অবাক হয়ে তাকালো।
রিধি কণ্ঠ খুব স্বাভাবিক রেখে বলল
কি ছিল কণ্ঠে? ওয়াজিদ জানে না। তবে কিছু একটা ভেবে রিধির কথা অনুযায়ী কাজ করে।
রিধিও মলিন হেঁসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তার কেন যেনো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। হওয়ারই কথা কেন ওয়াজিদ অধিকার দেখালো না?বরাবরের মতো এবারও সে চুপ করে রইলো।খুঁটি দেখলো না একটু।
রিধির ভাবনার মাঝেই শক্ত একটা হাত রিধির পেট আঁকড়ে ধরে।
রিধি এমন স্পর্শে কেঁপে উঠল। কিছু বলার মতো শব্দ পেলো না।
সারা শরীর অবস হয়ে আসছে শিরশির করছে শিরা-উপশিরা।
ওয়াজিদ নিজের হাতের বাঁধন টা আরও দৃঢ় করে।গেঞ্জি ভেদ করে উম্মুক্ত পেটে বিচরণ ঘটায়।
আরেক হাতে রিধি গেঞ্জি কাঁধ হতে নামিয়ে নিজের অধর ছুঁয়েই ফিসফিস করে জানালো
-“আমাকে পাগল করে, এখন দূরে রাখা হচ্ছে!
উঁহু, এটা সম্ভব হবে না মিসেস দেওয়ান।
ওয়াজিদ নিজের অধিকার বুঝে নিতে জানে।”
রিধির কি হলো কে জানে।হঠাৎ শব্দ করে কেঁদে দিয়ে উল্টো ফিল শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ওয়াজিদ হাসলো নিজের বুকের সাথে আরও কিছু টা চেপে ধরে যত টা ধরলে একটা মানুষের হাড়গোড় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম রিধি অবস্থাও তাই হলো।
শ্বাস নিতে কষ্ট হলো।
অনেক কষ্ট জানালো
-“কষ্ট হচ্ছে।”
ওয়াজিদ ছেড়ে দিলো।
নিজের সম্পূর্ণ ভর রিধির উপর দিয়ে সাইডে টেবিলে সুইচ টিপে লাইট অফ করে দিয়ে বুলি উড়াল
-“আজ থেকে এমন কষ্ট রোজ পেতে হবে, রিধু পাখি।”
——–
অনেক দিন পর প্রিয়তা আর সারা কলেজ যাচ্ছে।
সারা অবশ্য যেতে চায় নি তবে সামনে প্রথম বৎসর বার্ষিক পরীক্ষা।
সারা প্রিয়তা কে রেডি হতে বলে হেলেদুলে নিজের রুমে চলে গেলো।
প্রিয়তা শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিলো।সাদনান সেই সকালেই বেড়িয়েছে।কোথাও একটা আজ সাধারণ জনগণের সাথে বেশ বড়সড় সমাবেশ আছে।
প্রিয়তা জানে না কোথায় তবে রাহান যখন সাদনান কে নিতে এসছে তখন প্রিয়তা রান্না ঘরে ছিল আর রাহান ডাইনিং টেবিলে বসে জাফর মির্জা সাথে কিছু কথোপকথন শুনে বুঝতে পেরেছে ঝামেলা হওয়ার আশংকা রয়েছে।
বিরোধী দলের প্রাক্তন এমপিও নাকি বর্তমানে দেশে অবস্থান করছে।
তাই ভয় হওয়া টা স্বাভাবিক। তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে প্রাক্তন এমপি বেশ খারাপ লোক বলেই সবার মতামত।
প্রিয়তা কলেজ ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে হিজাব টা ভালো করে আঁটকে ব্যাগ টা কাঁধে ঝুলিয়ে সারার রুমে চলে আসে।ওর মন টা কেন জানি কেমন কেমন করছে। অস্থির অস্থির করছে।
তবে প্রিয়তা ভাবছে হয়তো শরীর খারাপ তাই এমন হচ্ছে। তাই বেশি কিছু আর ভাবে না। সারা কে সঙ্গে নিয়ে সালেহা বেগম এর কাছে বলেই দু’জন বাড়ি হতে বেড়িয়ে এলো।
———-
তখন দুপুর সমাবেশ শেষ সাদনান কে সিকিউরিটির সাহায্যে সাবধানের সহিতে তার সিকিউরিটিরা তাকে গাড়ি অব্দি নিয়ে এলো।
কিন্তু গাড়ির ভেতরে আর ঢুকতে পারে না।
তার আগেই গোলাগুলি শুরু হয়।কোথাও থেকে কারা যেনো গুলি ছুড়েছে আশেপাশের মানুষ জন ছুটাছুটি করতে লাগলো।
সিকিউরিটিরা তৎক্ষনাৎ দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়ে।হঠাৎ আক্রমণে তারা কোনো কিছু ঠাহর করতে পারছে না।এ-র মধ্যে দুই জন সিকিউরিটি অলরেডি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
সাদনান খুব সুক্ষ্ম ভাবে দক্ষতার সাথে নিচে পড়ে থাকা একজন সিকিউরিটির হাত থেকে বন্দুক টা নিজের হাতে তুলে নেয়।
কিন্তু অন্য সিকিউরিটিরা সাথে আইনের লোকেরাও সাদনান কে ব্যাড়িকেট দিয়ে গাড়িতে বসতে বলছে।কিন্তু সাদনান কিছুতেই গাড়িতে বসছে না সেও গুলি ছুড়ছে।তবে ঘটনা টা যতদ্রুত ঘটেছে ঠিক ততটাই দ্রুতার সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রা গুলিবর্ষণ কারিদের ইতিমধ্যে পাল্টা আক্রমণে তারা কিছু আহত হয়েছে এর মধ্যে জীবিত সবাই কে আটক করে নিয়েছেন তারা।
সাদনান পরিস্থিতি স্থিতিশীল দেখে গাড়িতে উঠে বসে।
কিন্তু হঠাৎ মনে হলো রাহান ওর সাথে ছিল কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে না কোথাও।
সাদনান ততক্ষণে আবারও গাড়ি থেকে নেমে পাশেই পুলিশ এর কাছে যেতে নিলেই দেখা মিলে রাহান সহ প্রিয়তা সারা কে নিয়ে পুলিশের তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এদিকে নিয়ে আসছে।
সাদনান অবাক হলো সারা আর প্রিয়তা কে এখানে দেখে।ও তো রাহাত কে বলে এসছিল যেনো ওরা কলেজে না আসে আজ।তার কারণ সমাবেশ টা কলেজ থেকে মিনিট পাঁচ দূরে একটা মাঠে বসেছে।তবেই কি রাহাত ওদের নিষেধ করে নি?
-“রাহাত ভাই ফোন দিয়ে বলল,ও ভুলে গিয়েছিল।”
-“কেয়ারলেস একটা।”
রাহানের কথা শুনে সাদনান বিরবির করে বলে উঠলো।
তবে হঠাৎ সাদনান এর দৃষ্টি বউয়ের পায়ে দিকে গেলো সাদা পায়জামা টা বাম পায়ের গোড়ালির বেশ অনেক টা অংশ লাল হয়ে আছে।
সাদনান এর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।
অস্থির হয়ে কিছু জিগ্যেস করার পূবেই সারা আশ্বাস দিয়ে জানালো
-“যখন গণ্ডগোল বাঁধাল তখন আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য একটা গাছের পাশে যাচ্ছিলাম তখন ওর পায়ে কিছু একটা পেছন হতে গেঁথে গিয়েছে।
রাহান ভাই বেড় করে দিয়েছে।”
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৬[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
ফুল দিয়ে সাজানো আয়ানের রুমে মাইশা বসে আছে। রুম জুড়ে ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
রাত এখন সাড়ে আটটা বাজে
সওদাগর বাড়িতে তেমন মেহমান নেই।তাই বাড়ি ফাঁকা। বিয়েতেও তেমন লোকজন যায় নি শুধু এলাকার কিছু মুরব্বি আর আশে পাশের কিছু পাড়াপ্রতিবেশি আর শফিক সওদাগরের হোটেলের কিছু কর্মচারী সাথে কিছু আয়ানের বন্ধু।
আর মাইশা কে পাশের বাড়ির কিছু মেয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে এখানে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
আয়না,প্রিয়তা কাউ কে আসতে দেয় নি আম্বিয়া মির্জা। আয়নার চার মাস চলে তাই আসতে দেয় নি।আর প্রিয়তা কেও আসতে দেয় নি আম্বিয়া মির্জা।
সারা আসতে চেয়ে ছিল কিন্তু কয় দিন পর আবার সারা অন্যের বাড়ির বউ হবে সেখানে এখন এখানে আসাটা ভালো দেখায় না তাই মাইশা আনে নি সারা কে।
মাইশার ভাবনার মাঝেই বাহির হতে খটখট শব্দ করে কেউ রুমে ভেতর প্রবেশ করে।
মাইশা একটু নড়েচড়ে বসে।বুকের ভেতর কেমন করছে টিপটিপ শব্দ হচ্ছে।
মাইশা জোরে জোরে কয়েক বার নিশ্বাস টানে নিজে কে স্বাভাবিক করতে চায় এ-র মধ্যে আয়ান দরজা টা বন্ধ করে এগিয়ে এলো।
হাতের ঘড়ি খোলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।
গায়ে একটা আকাশী রঙের শার্ট সেই এর হাতার ভাঁজ খুলতে খুলতে মাইশার দিকে এগিয়ে এলো।
মাইশা তখনো লম্বা ঘোম টা টেনে বসে আছে। আয়ান হাসলো।মাইশা তৎক্ষনাৎ দোপাট্টা টেনে সড়িয়ে দিলো।
ফুসফুস করে শ্বাস টেনে বলল
-“আপনি হাসছেন?
সেই কখন থেকে বসে আছি।আর আপনি এসে কোথায় আমার ঘোমটা সড়াবেন তা না করে হাসছেন।”
-“গরম কি বেশি লাগছে?”
মাইশা এবার লজ্জা পেলো।
মাথা নুইয়ে নিলো এদিক ওদিক তাকাল।সে তো ভুলেই বসে আজ তাদের বাসর আর সে কি না বাসর রাতে জামাইর সাথে এমন বিহেভিয়ার করছে?
অবশ্য গরম টাও ইদানীং একটু বেশি পড়ছে।তার মধ্যে এমন ভারি লেহেঙ্গা পড়ে সেই বেলা এগারো টা থেকে আর এখন রাত বাজে নয় টার বেশি সময়।
-“লজ্জা?
কোনো ব্যাপার না,একটু পর সব ঠিক করে দেবো।”
হাসতে হাসতে কথা টা বলে আয়ান।
মাইশা আবারও লজ্জা পেলো।আর লজ্জা আড়াল করতে আমতা আমতা করে জানালো
-“ফ্রেশ হবো।”
-“শাওয়ার নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আমি ড্রেস দিচ্ছি। শুধু এগুলো চেঞ্জ করে এসো।”
আয়ান কথা গুলো বলতে বলতে আলমারি খোলে সেখান থেকে একটা প্যাকেট বের করে এনে মাইশার হাতে দেয়।মাইশা প্যাকেট টা হাতে নিয়ে আচ্ছা বলে উঠে ওঠে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
আর আয়ান বাঁকা হাসলো।
মাইশা ওয়াশ রুম এসেই আগে দোপাট্টা খোলে তার পর সব গহনা।
শরীরে টাওয়াল পেঁচিয়ে প্যাকেট খুলতেই চোখ কপাল উঠে।
তড়িঘড়ি করে আবারও সে গুলো আগের স্থানে রেখে ওয়াশ রুমের দরজা খুলে আয়ান কে ডেকে উঠলো। আয়ান যেনো এটার অপেক্ষায় ছিল।
ফোন বিছানায় রেখে এগিয়ে আসে। হাসি চেপে মুখে কৌতূহল ভাব টেনে জিজ্ঞেস করে
-“কি হয়েছে?
কোনো সমস্যা?”
-“মানে আপনি জানেন না?”
মাইশা ভ্রু কুঁচকে নিজেও জিজ্ঞেস করে।
আয়ান সিরিয়াস মুখ করে বলল
-“না বললে জানবো কি করে?”
-“আচ্ছা জানতে হবে না।
আপনি একটা কাজ করুন না প্লিজ আমার লাগেজ টা খুলে সেখান থেকে একটা কুর্তি আর প্যান্ট দিন।”
মাইশা চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে।আয়ান যে ইচ্ছে করে এমন টা করেছে বুঝতে পারে তবে আজ প্রথম রাতে এমন একটা শর্ট ড্রেস পড়ে আয়ানের সামনে সে কিছুতেই যেতে পারবে না।
তাই নিজের মর্জি মতো পোশাক দিতে বলে।
আয়ান হয়তো বুঝতে পারে। মাইশা এসবে কমফোর্টেবল ফিল করতে পারছে না তাই আর জোর করে না।
-“আচ্ছা।”
আয়ান মুখ টা মলিন করে জানায়।
অতঃপর এগিয়ে গিয়ে মাইশার কথা মতো কাজ করে। মাইশা সে গুলো পড়েই ওয়াশ রুম হতে বেড়িয়ে আসে। হাতে বিয়ের জিনিস গুলো সব সোফায় রেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো খুলে ঠিক ঠাক করে আঁচড়ে নেয়।
আয়ান তখন বিছানায় ল্যাপটপ কোলে তুলে নিয়ে বসে কিছু কর ছিল কিন্তু মাইশা কে ওয়াশ রুম হতে বেড়িয়ে আসতে দেখে নিজে এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে কিছু একটা বেড় করে মাইশার হাতে দেয়।
মাইশা অবাক নয়নে তাকালো আয়ানের দিকে।
-“দেনমোহর তো আগে দিয়ে দিয়েছি।
বাসর রাতের উপহার।”
আয়ান মুচকি হেঁসে বলল।
মাইশা কি বলবে খোঁজে পাচ্ছে না। আয়ান বিয়ের ছয় মাস পরেই মাইশার নামে একটা একাউন্ট খোলে সেখান দেনমোহর এর টাকা রেখে দিয়েছে। এতো টাকা তো আর বাড়িতে দিতে পারে নি আর দিলেও বা রাখতো কোথায়?
তাই এটা আয়ান বেস্ট মনে করেছে। এতে অবশ্য মাইশা রাজি ছিল না। ভালোবাসার জোরের কাছে এসব কিছু না।
দেনমোহরে যদি সংসার এর চাবিকাঠি হতো তবে সমাজে এতো এতো ডিভোর্স হতো না।
মাইশার ভাবনার মাঝেই আয়ান মাইশার হাত থেকে পায়েল টা নিজের হাতে নিয়ে মাইশা কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলে বসিয়ে দিয়ে নিজেও হাঁটু গেঁড়ে বসে মাইশার পায়ে সোনার পায়েল টা পড়িয়ে দিলো।
মাইশা এক দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
-“রেগে আছেন?”
-“না।
তবে একটু একটু অভিমান হয়ে ছিল।
কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষ টার অস্বস্তি হোক আমি চাই না।”
আয়ানের কথার পিঠে মাইশা কিছু বলল না তবে মনে মনে ঠিক করে আয়ানের ইচ্ছে টা খুব শীগগির পূর্ণ করে দিবে।
মাইশা আয়ানের গালে হাত রেখে নিজের অধর জোড়া আয়ানের কপালে ছুঁয়ে চুমু খেয়ে সরে আসতে নিলেই আয়ান হুট করে মাইশা কে কোলে তুলে নেয়।
মাইশাও শক্ত করে আয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।
আয়ান মাইশা কে আলগোছে বিছানায় শুয়ে দিলো।
গলা হতে ওড়না টা সড়িয়ে গলায় মুখ গুঁজে সেখানে চুমু খায়।মাইশা শক্ত করে আয়ানের শার্ট সহ পিঠ খামচে ধরে।আর এভাবেই রাত যত গভীর হলো তাদের ভালোবাসা তত প্রখর হলো।
এক নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো।একে অপরের মাঝে হারিয়ে গেলো।
বিয়ে টা অনেক আগে হলেও এই অনুভূতি সম্পূর্ণ নতুন।
————
-“এদিকে ঘেঁষা হচ্ছে কেন?”
প্রিয়তা হকচকিয়ে উঠে। চুপ করে সাদনান এর বুকের উপর মাথা রেখে চোখ খিঁচে বন্ধ করতে নিয়েও করে না।
আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে।আজ দুই রাত ধরে সাদনান প্রিয়তার আশেপাশে ঘেঁষে না।
প্রিয়তা বুঝতে পারে সাদনান কেন এমন করে কিন্তু কিছু বলে নি।
কিন্তু আজ প্রিয়তা কে বুকেও নেয় নি তাই তো সাদনান ঘুমিয়েছে ভেবে সুড়সুড় করে সাদনান এর বুকের উপর নিজের মাথা টা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল কিন্তু হঠাৎ সাদনান সজাগ হয়ে উপরোক্ত কথা টা বলে।
প্রিয়তা সোজা শোয়া থেকে উঠে বসে সাদনান সেভাবেই শুয়ে থাকে।
বউ তার খেপেছ। এখন কি করে দেখার পালা।
-“এমন করছেন কেন আপনি?
সমস্যা কি আপনার?”
প্রিয়তা রাগে গজগজ করতে করতে প্রশ্ন করে। সাদনান খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়
-“কোনো সমস্যা নেই।
একদম ঠিক আছি।”
-“আমাকে তো আর প্রয়োজন নেই।
এখন নতুন কাউ কে পেয়েছেন না? আমাকে আর লাগবে না। আমি কালই মায়ের কাছে চলে য,,,,
প্রিয়তা কথা সমাপ্ত করতে পারে না সব টা তার আগেই সাদনান ঝড়ের বেগে শোয়া থেকে উঠে প্রিয়তা কে এক ঝটকায় নিজের নিচে ফেলে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে
-“উঁহু, ভুলেও এসব ভাবতে যেয়েও না, জান।
তুমি চাও আর না চাও তুমি এখানে এই আমার সাথে থাকতে হবে। হয় ইচ্ছে নয় অনিচ্ছায়।”
প্রিয়তা মুচকি হাসলো। দুই হাত সাদনান এর হাতের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে শক্ত করে সাদনান এর গলা জড়িয়ে ধরে বলল
-“আমি চাইও না আপনার থেকে ছাড়া পেতে ,এমপি মহোদয়। ”
#চলবে….
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৭[কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
রিধি হলুদের সাজে বসে আছে স্টেজে। সামনে পেছনে মানুষ গিজগিজ করছে।
রিধির হাসি-হাসি মুখ করে বসে আছে।অথচ বুকের ভেতর এক তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। কেন এমন হলো তার জীবন টা? এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।আচ্ছা সে নাহয় তখন ছোট ছিল। কিন্তু ওয়াজিদ? সে কি ঠিক ঠাক একজন প্রেমিক যা করে তা ছিটেফোঁটাও করতো রিধির জন্য? সব টাই কি রিধি ইচ্ছে করে করেছে?ওয়াজিদ এর বুঝি ভুল ছিল না?ভুল টা রিধি করেছে কিন্তু তার কারণ টা তো ওয়াজিদ ছিল।সে কি সময় দিতো রিধি কে?রিধির আজ খুব করে মনে হচ্ছে তখনকার সব টার জন্য ওয়াজিদ দায়ী। কখনো কি রিধি কে সময় দিয়েছে হাতে হাত রেখে এক সাথে হেঁটেছে?না সে শুধু ভালোই বেসে গেছে কিন্তু ভালোবাসলে হয় না ভালোবাসার মানুষ টার জন্য সত ব্যাস্ততার মাঝেও একটু সময় বেড় করে ভালো মন্দ জিগ্যেস করতে হয়।সে কি করেছে তেমন কিছু সে তো তখন নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত ছিল। আর যখন রিধি ভুল টা করে ছিল তখন কি একবারও রিধির পাশে থেকে সেই ভুল টা কে শোধরে দেওয়ার চেষ্টা করেছে? উল্টো নিজে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে দূর দেশে পাড়ি জমিয়ে ছিল।
রিধি আর ভাবে না।আর আজকের পর আর ভাববেয়েও না ভুলে যাবে সব। তার জীবনের সাথে যেই নতুন জীবন টা জুড়তে যাচ্ছে তাকে নিয়ে ভাববে।
শুনেছে সেও ডক্টর দেখতেও না-কি সুদর্শন।আর তাছাড়া একটু পর তো আসবেই তখন না হয় দেখে নিবে।
কিন্তু রিধির ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সারা এসে জানালো ছেলে আসে নি। ছেলর না-কি ইমারজেন্সী কেস পড়ে গিয়েছে। ছেলের কাজিন আর বন্ধুরা এসছে হলুদ নিয়ে।
এতে অবশ্য রিধির কিছু এসে গেলো না কারণ হলুদের সময় ছেলেও মেয়ের বাড়ি আসে এটা জানতো না। তাছাড়া বিষয় টা ভালো দেখায় না। কিন্তু ছেলে না-কি নিজে থেকে আসবে বলেছে তাই কেউ আর না করে নি।
রিধি ভাবে মাত্র তো আর কয়েক ঘণ্টা ব্যবধান তার পর তো সরাসরি দেখতে পারবে।
——-
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ রিধি ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে।কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।কেমন জানি সব এলোমেলো লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে। রিধির আর ঘুম আসে না ওঠে বসে ফোন হাতে ওয়াজিদ এর পিক গুলো দেখতে দেখতে চোখ হতে জল গড়িয়ে পড়ে। কেন একটু বিশ্বাস করলো না তাকে?কেন সব টা না জেনে তাকে ভুল বুঝলো?
রিধি ভাবনার মাঝেই রিধির হাতে থাকা ফোন টা সশব্দে বেজে ওঠে।
অপরিচিত নাম্বার থেকে ভ্রু কুঁচকে আসে।ধরবে কি ধরবে না দ্বিধা করতে করতে ফোন টা কেটে গেলো।
রিধি যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। তার কারণ রিধি ভাবছে যদি যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে হয়?
রিধি ফোন টা হাত থেকে বালিশের তলায় রাখতে যাবে ঠিক তখুনি আবার ফোন টা বেজে উঠল।
রিধি ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে রাশভারী কণ্ঠে ওয়াজিদ জিজ্ঞেস করলো
-“ঘুমিয়ে ছিলে?”
রিধি কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না।এতো কিছুর পরেও এতো টা স্বাভাবিক কি করে ওয়াজিদ?
-“শুয়েছি মাত্র।”
-“আসতে পারি নি বলে রাগ হয়েছে?
আসলে জরুরি একটা কেস পড়ে গিয়ে ছিল।”
-“এসব কেন আমাকে বলছেন?
তাছাড়া আপনার আসার না আসায় আমার কি আসে যায়?”
ওয়াজিদ এর কথা শুনে রিধি অবাক হয়ে বলল।
ওয়াজিদ আবারও খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠে
-“আসে যায়।
নিজ ইচ্ছে আসতে চেয়েছিলাম।”
-“আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।”
রিধি ওয়াজিদ এর কথা কিছু বুঝতে পারছে না তাই আগের ন্যায় আবার অবাক হয়ে বলে।
ওয়াজিদ রিধির কথা মুচকি হাসে যা রিধি ফোনের মাঝেও বুঝতে পারে।
ওয়াজিদ ফিসফিস করে ফোন টা মুখের সামনে ধরে বলল
-“বুঝতে হবে না সুইটহার্ট।
কাল সারপ্রাইজ আছে।”
কথা টা শেষ ওয়াজিদ খট করে ফোন কেটে দেয়।
আর রিধি এদিকে সারা রাত ভাবতে থাকে ওয়াজিদ কিসের কথা বলল?কি সারপ্রাইজ আছে?
———
বিয়ে বাড়ি মানুষ জন অভাব নেই। পাড়াপ্রতিবেশি থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনের।
রিধির নানা নানি নেই শুধু এক মামা আছে। ওনি ওনার পরিবার সমতে এসছে বিয়েতে।খুব কাছের আত্মীয় বলতেই এই ওনারাই।
তবে সমস্যা হলো রিধির মামি প্রিয়তা কে ওনার ছেলের জন্য চাইছে।
তিনি জানতো না সাদনানের বউ প্রিয়তা।এটা আম্বিয়া মির্জার কানে যাওয়া মাত্র তিনি মির্জা বাড়ির সবাই কে একটা রুমে ডাকে।
সাদনান দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশেই রাহাত। জাফর মির্জা আম্বিয়া মির্জা পাশে বিছানায় বসে আছে। রুমে থাকা দুই টা সিঙ্গেল সোফায় আজ্জম মির্জা সাথে মফিজুর মির্জা। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে সালেহা বেগম, সুফিয়া বেগম। আর সালেহা বেগম এর আঁচল ধরে প্রিয়তা চুপটি করে ওনার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তার কি দোষ ওই মহিলা তাকে সারার সাথে দেখেছে আর সারা কে প্রিয়তার পরিচয় জিগ্যেস করার মাত্র সারা জবাবে বলে ছিল তালতো বোন সাথে বান্ধবী।
ব্যস সেই থেকে ওনি প্রিয়তার পেছনে পড়ে আছে।
-“বাড়ির বউ হয়ে এমন রংঢং করলে তো এমনি হবে।
আছে কোনো বউয়ের চিহ্ন।”
-“আমার চোখে তো এমন কিছু পড়েনি।”
আম্বিয়া মির্জার কথার বিপরীতে বলল জাফর মির্জা।
-“আমি বলি আবার বিয়ে দিয়ে,,,
-“আচ্ছা?
চলো তবে তোমাকেও দিয়ে দেই।”
সাদনান এর কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। জাফর মির্জা না পেড়ে শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আম্বিয়া মির্জা মুখ বিরক্ত মুখে করে বলল
-“আপনি হাসছেন?”
-“তো কি করবো?
মেয়ে মানুষ এমন একটু আধটু এসব ঘটনা হবেই।
তাছাড়া বয়স টা এখন এমন পর্যায়ে এসব বিয়েসাদী সম্বন্ধ আসবেই।
এতে অবশ্য আমার প্রিয়তা দাদু ভাইয়ের কোনো দোষ নেই।”
জাফর মির্জা কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সবাই মোটামুটি ভ্রু কুঁচকে নেয়।
এখানে তো কারোর আসার কথা নয়।
-“ভাবি দরজা টা একটু খোলেন?”
রিধির মামি ভদ্রমহিলার কণ্ঠ।
সালেহা বেগম শ্বশুর শ্বাশুড়ি দিকে তাকালো।জাফর মির্জা ইশারায় দরজা খুলতে বলল।
রাহাত গিয়ে দরজা টা খোলে।রিধির মামি সহ ওনার স্বামী, রাহান, রাহানের, বাবা মাও রুমে আসে।
রাহানের বাবা ভদ্রলোক এসেই রাহাত এর পাশে একবার দাঁড়িয়ে নিজের স্ত্রী দিকে চোখ কটমট করে তাকালো। রাহানের মা তৎক্ষনাৎ ভাবির দিকে তাকালো।
ভদ্রমহিলা আমতা আমতা করে বলল
-“আমি জানতাম এসব।
আপনারা দয়া করে ব্যাপার টা নিয়ে কেউ রাগ করবেন না।”
-“না, না আপা এভাবে বলবেন না।
এটা তো একটা ভুল বোঝাবুঝি মাত্র।”
সালেহা বেগম বলল।
সাথে সবাই সায় দিলো।ব্যাপার টা এখানে মিটমাট করে সবাই আবার যে যার বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো।
———–
সাদনান প্রিয়তা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।প্রিয়তা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
-“ভাবা যায় মির্জা সাদনান শাহরিয়ার বউ এর জন্য আবার বিয়ের প্রপোজাল আসে!”
সাদনান টেনে টেনে বলল।
প্রিয়তা সাদনান এর এমন খামখেয়ালি কথায় অবাক হয়ে বলল
-“আপনি মজা নিচ্ছেন?”
-“নাহ একদমই না।”
কিন্তু প্রচুর রাগ হচ্ছে।”
প্রিয়তা ওঠে বসে শোয়া থেকে সাদনান নিজেও ওঠে বসে।
-“আপনাদের একদম উচিত হয় নি দাদি কে ওঠা বলা।”
-“কোন টা উচিত কোন টা অনুচিত সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।”
সাদনান নিজের বক্তব্যে শেষ নিজেও শুয়ে বউ কে আবারও নিজের উপর টেনে নেয়।
শক্ত দানবীয় হাতের লাগাম ক্রমেই ছাড়িয়ে যায়। সেই হাতের স্পর্শে কাবু হয় ছোট প্রিয়তা।
প্রিয়তা চুপচাপ সাদনান এর সঙ্গ দেয়।
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৪[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
গাড়ী চলছে আপন গতিতে। সাদনান ড্রাইভ করছে। প্রিয়তা পাশেই বসে একটু পর পর আঁড়চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সাদনান কে।
সফেদা পাঞ্জাবি গায়ে তার উপর কালো একটা কটি সাদনান কে দেখতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে প্রিয়তার নিকট।
আচ্ছা সারা দিন বাহিরে বাহিরে থাকে।কতশত মিটিং,সমাবেশ, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির অনুষ্ঠানে যায় সেখানে তো অনেক মেয়ে থাকে তারা কি সাদনান এর দিকে ঠিক এভাবে তাকায় না-কি সরাসরি তাকিয়ে থাকে?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান হঠাৎ গাড়ী ব্রেক কষে। প্রিয়তা সামন্য ঝুঁকে পড়ে সামনের দিকে।
তবে সিট বেল্ট লাগানো ছিল বলে কোনো ক্ষতি হয় নি।
সাদনান ততক্ষণে নিজের সিট বেল্ট খোলে প্রিয়তার টাও খুলতে হাত লাগিয়েছে।
প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকালো। কি হচ্ছে বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগে ততক্ষণে সাদনান এর বলিষ্ঠ শরীরে এর উপর প্রিয়তার অর্ধেক শরীর।
আর প্রিয়তা কিছু বলার আগেই সাদনান প্রিয়তা কে নিজের উরুর উপর বসিয়ে দুই গালে হাত রেখে বলল
-“লুকিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই।
পুরো মানুষ টা তোমার, জান।”
প্রিয়তা লজ্জা পেলো।
চোরা চোখে এদিক সেদিক এলোমেলো দৃষ্টি ঘুরালো। অবস্থা এমন যেনো চুরি করতে এসে ধরা পড়ে গিয়েছে। হ্যাঁ, চুরিই তো।না চুরি কেন হবে? ভালোবাসার মানুষ,স্বামী তার সেখানে এটা চুরি কেন হবে? ভালোবাসা হবে এটা হালাল ভালোবাসা।
প্রিয়তা অনেক কিছু ভাবলো।সাদনান এর দাঁড়ি ভর্তি দুই গালে নিজের ছোট নরম তুলতুলে হাত গুলো রাখে।মুখ টা এগিয়ে এনে সাদনান এর কপালে নিজের গোলাপি রঙের হাল্কা লিপস্টিক রাঙানো অধর জোড়া ছুঁয়ে দিলো।
সাদনান চোখ বন্ধ করে নিলো।
বউ তার ভীষণ আদুরে। একটু সময় এই কয় দিন কম দিয়েছে বলে কি অভিমান টাই না করে ছিল। সাথে রাগও ছিল। আর সাদনান এর একটু আদুরে কণ্ঠে সেটা গলে পানি আর অভিমান তো একটু ছোঁয়া পাওয়ার পর পরই ভেঙেছে। যখন গাড়ী তে সাদনান বসে ছিল আর প্রিয়তা শাল টা গায়ে দিয়ে ছোট ছোট কদম ফেলে গাড়িতে এসে বসার পর সাদনান জড়িয়ে ধরে বলেছি “দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের আজ ছয় মাস হলো।এতো টা সময় কখন শেষ হলো? বুঝতেই পারি নি।”প্রিয়তা নিজে তখন কিছু বলে নি।চুপচাপ অনুভব করে।
প্রিয়তা আর ভাবে না। অতঃপর মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে
-“আমার কোথায় যাচ্ছি?”
-“একটা নতুন রিসোর্ট হয়েছে পাশে।
তুমি বলে ছিলে, মনে আছে?”
-“হুম।তার মানে
আমরা সেখানে যাচ্ছি?”
-“ইয়েস।”
প্রিয়তা অবাক সাথে খুশি হয়ে প্রশ্ন করে সাদনান মুচকি হেঁসে জবাবে বলে।
প্রিয়তা কে আগের স্থানে বসিয়ে দিয়ে সাদনান আবার গাড়ী স্টার্ট দেয়।
ওদের রিসোর্টে পৌঁছাতে আর পাঁচ সাত মিনিট এর মতো লাগবে।
——–
রিধি ওয়াজিদ কে একটা মেসেজ লিখে সেটা হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়ে দিলো। রিধি ভাবছে ওয়াজিদ ফোন দিবে।আর দিলেও ওয়াজিদ ফোন তবে রিধি যা আশা করে ছিল ওয়াজিদ সেরকম কিছু বলে না খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-“বিয়ে ঠিক হয়েছে ভালো কথা।
আমাকে এভাবে বলার কি আছে?”
রিধি ওয়াজিদ এর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ও মোটেও এমন টা আশা করি নি।
ও তো ভেবেছে ওয়াজিদ হয়তো আগের মতোই করে ভালোবাসার কথা বলবে।
বহু কষ্টে রিধি নিজে কে সামলে নিলো।
ধরে আসা গলায় ওয়াজিদ কে প্রশ্ন করে
-“আপনি কিছু বলবেন না?”
-“কি বলবো?”
রিধি জবাব দেয় না ফট করে ফোন টা কেটে দেয়।
অতঃপর মেঝেতে বসে কান্না করতে লাগলো। আর বিরবির করে বলতে লাগলো
-“এটাই আমার প্রাপ্য।
আমি আগে ভুল করে ছি বলেই তো ওয়াজিদ এখন আমাকে আর বিশ্বাস করে না।”
বয়স টা তখন রঙিন। যা দেখে তাই ভালো লাগতো রিধির। অবশ্য শুধু রিধির না ষোল, সতেরো বছর বয়স টাই এমন।ভুল ঠিক, ভালো খারাপ যাচাই করে না।
রিধি তখন সবে সতেরো বছরে পা দিয়েছে। কলেজে ভর্তি হয় তখন নতুন বন্ধু বান্ধবী আর ঠিক সেই সময় মস্ত বড় এক ভুল করে বসে।
রিধি যেই কলেজে পড়তো সেখানের ভার্সিটির এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে ওর কথা হতো।
মূলত ছেলে টা রিধি কে প্রথম প্রথম ডিসটার্ব করতো।এতে রিধির ভালোই লাগতো আর এক সময় তাদের মাঝে সাময়িক একটা প্রেম হয়ে যায়।
ওয়াজিদ তখন মেডিকেলের দ্বিতীয় বৎসর ছাত্র।
তাই রিধি কে বেশি সময় দিতে পারতো না।আর রিধি তখন ওয়াজিদ কে লুকিয়ে ওই ছেলে টার সাথে প্রেম করতো।কিন্তু প্রেম টা বেশি দিন ছিল না। তার কারণ সিনিয়র ভাই টা ভালো ছিল না আর এটা রিধি যেনে গিয়ে ছিল বারো দিন প্রেম করার পর।
কিন্তু ততদিনে ওয়াজিদ সব টা জানতে পেরে যায়।
আর রিধির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।আর তার এক বছর পর ওয়াজিদ ইতালি চলে যায়। এটা জানতে পেরে রিধিও ইন্টার পরীক্ষা দেওয়ার পর ইতালি চলে যায় কিন্তু সেখানে গিয়ে ওয়াজিদ কে খোঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আর যখন পেলো তখন ওয়াজিদ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে সে রিধি কে কিছুতেই ক্ষমা করে রিধি কি আরেক টা সুযোগ দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু রিধি অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে।
সে ভুল করেছে মেনে নিয়েছে।
এর পর ভালোই চলছিল। তবে হঠাৎ করেই সব আবার এলোমেলো হয়ে গেলো।
——-
সাদনান ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলো। প্রিয়তা তখন ফুল দিয়ে আর মোম বাতি দিয়ে সাজানো রুম টা খুঁটি খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত।
সাদনান হাতে থাকা সফেদা রঙের টাওয়াল টা আস্তে করে ঝুরিতে ফেলে দিয়ে এগিয়ে এলো প্রিয়তা দিকে।
প্রিয়তা রুম টার ব্যালকনিতে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরতেই সাদনান এর বুকের সাথে ধাক্কা খেলো।
প্রিয়তা একটু চমকে উঠে পিছিয়ে যাবার জন্য পা বারাতেই সাদনান শক্ত হাতে টেনে ধরে প্রিয়তার কোমড়।
প্রিয়তা সাদনান এর কাঁধের কাছে সাদা টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে বলল
-“ধন্যবাদ।”
-“কেন?”
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে সাদনান।
প্রিয়তা মুচকি হেঁসে বলল
-“এতো সুন্দর সারপ্রাইজ।”
সাদনান হাসলো একটু ঝুঁকে এলো প্রিয়তার দিকে অতঃপর ফিসফিস করে বলে উঠে
-“ভালো লেগেছে?”
-“ভীষণ।”
প্রিয়তা উৎফুল্লতা নিয়ে জানায়।
সাদনান প্রিয়তা কে আরও একটু নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
ডান হাতে প্রিয়তার উন্মুক্ত কোমড়ে রেখে শক্ত করে চেপে ধরে।
সেভাবে রেখেই সামন্য উঁচু করে নিলো প্রিয়তা কে।
প্রিয়তার পা তখন শুন্যে ঝুলে।
প্রিয়তা নিজেও শক্ত করে সাদনান এর গলা জড়িয়ে ধরে। সাদনান প্রিয়তার কাঁধে নিজের অধর ছুঁয়ে দিলো।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠল চোখ গুলো খিঁচে বন্ধ করে
নিলো।
সাদনান গভীর ভাবে ওষ্ঠ জোড়া ছুঁয়ে বেশ অনেক্ক্ষণ থাকলো।
ততক্ষণে প্রিয়তা চোখ খোলে সাদনান এর মাথার পেছনে হাত রাখে।
সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিলো।
ছেড়ে দিয়ে নিচে নামাল। তার পর প্রিয়তার চোখে চোখ রেখে বলল
-“তবে আমার উপহার?”
প্রিয়তা একটু লজ্জা পেলো ইশ এতো এতো অভিমান করে ছিল সাদনান এর উপর কিন্তু নিজেই তো কিছু করে নি।
এখন কি দেবে কিছুই তো নেই।
প্রিয়তার অবস্থা থেকে সাদনান বাঁকা হাসে বলল
-“আছে তো অনেক কিছু।”
-“কিছু নেই।”
প্রিয়তা অবাক হয়ে জানায়।সাদনান আবারও হাসে। প্রিয়তা সে দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।সাদনান সে সব পাত্তা না দিয়ে নেশাতুর কণ্ঠে জানালো
-“আমার যা চাই।
তা নাহয় আমি নিজেই নিয়ে নিলাম।”
প্রিয়তার বিষয় টা বুঝতে একটু সময় লাগে। বুঝতে পেরে এক ধাক্কা সাদনান কে সড়িয়ে দিয়ে নিজে পিছিয়ে যেতে চায়।
কিন্তু প্রিয়তা সাদনান কে একটুও নড়াতে পারে না।
উল্টো সাদনান এক ঝটকায় বউ কে কোলে তুলে নেয়। বিছানার দিকে যেতে যেতে বলল
প্রিয়তা আরও দিগুণ লজ্জা পেলো সাদনান এর বুকে মুখ গুঁজে সেই লজ্জা আড়াল করতে চাইলো যা দেখে সাদনান আরও একদফা হেঁসে নিলো।
সাদনান এর হাসির দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা আনমনেই বলে উঠে
-“আমার আপনার মতো আরও একটা সাদনান চাই।
দিবেন?”
#চলবে….
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৫[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
প্রিয়তার কথা টা শুনে সাদনান হঠাৎ করে প্রিয়তা কে ছেড়ে দিলো।
সরে এসে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।প্রিয়তা উঠে বসলো শাড়ীর আঁচল ঠিক করে সাদনান এর দিকে তাকালো সাদনান চোখ বন্ধ করে আছে।
-“আজকের পর আর আমাদের মাঝে কিছু হবে না।
তুমি সম্পূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত।”
প্রিয়তা সাদনান এর দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে ছিল।এর মধ্যে হঠাৎ সাদনান চোখ বন্ধরত অবস্থায় কথা গুলো বলে উঠে।
প্রিয়তা এবার চমকে উঠলো।
তড়িৎ গতিতে সাদনান কে জড়িয়ে ধরে।
ধরে আসা গলায় বলল
-“আপনি এমন কেন বলছেন?”
-“বাচ্চা হবে তবে আল্লাহ যখন চাইবে।
আর তুমি? আমি যখন বুঝতে পারবো তুমি এন্ড আমার বাচ্চা ক্যারি করার মতো উপযুক্ত তখনি আমি আবারও তোমার ইচ্ছে পূর্ণ করার চেষ্টা করবো।
এর আগে আমি তোমার কাছে যাব না।”
প্রিয়তা কথা গুলোর মানে বুঝতে বেশ অনেক টা সময় লাগলো।
-“আমার কথা টা শুনু,,,
-“কি শুনবো? হ্যাঁ, হ্যাঁ? বলো কি শুনবো?
তোমার বয়স?,,,
সাদনান আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই প্রিয়তা সাদনান কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।সাদনান একটু শান্ত হলো।
জোরে জোরে শ্বাস ফেলে কয়েক বার নিজে কে স্বাভাবিক করতে চাইলো।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে শান্ত হয়ে নিজেও প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে বলল
-“তোমার কিছু হলে।
আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে জান।”
-“আচ্ছা।
আমি আর বলবো না।”
সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে। প্রিয়তার কেন জানি খারাপ লাগলো।সে যদি এসব না বলতো তবে হয়তো আজকের এই রাত টাও তাদের ভালোবাসাময় হতো।
আর সাদনান? ঠিকই তো বলেছে সে নিজেও এখনো একটা বাচ্চার মতোই বিহেভিয়ার করে।আর বয়স সবে তো সতেরো শেষ এর দিকে।আঠারো হোক তার পর না হয় আবার সাদনান এর কাছে কথা টা পাড়বে।
প্রিয়তাও এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে সাদনান এর বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রিয়তার নিশ্বাস ভার শুনতে পেয়ে সাদনান চোখ খুলে।সে ঘুমায় নি অপেক্ষা করছিল বউ ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য।
সাদনান আস্তে করে প্রিয়তার মাথা টা কাঁধ করে নিজের একটা বাহুর উপর রেখে নিজের মুখ টা প্রিয়তার মুখের কাছে নিয়ে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় প্রিয়তার এক গালে।
প্রিয়তা সামন্য কেঁপে উঠে তবে তন্দ্রা ছুটে না।যা দেখে সাদনান শব্দহীন হাসি হাসলো।
দ্বিতীয় বার এর মতো গালে আবারও ওষ্ঠ ছোঁয়া দিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো
-“এই লম্বা চওড়া দেহটা শুধু আমি বয়ে বেড়াই তার প্রাণ টা তো তোমার মধ্যে।সেখানে তোমার কিছু হলে আমার নিজের মৃত্যু, আমার জান।”
——
সাদনান আর প্রিয়তা রিসোর্ট থেকে সোজা শপিংমলে এসছে।
বাড়ির সবাই আসে নি সব বাড়িতে নেওয়া হয়েছে কিন্তু মাইশার আর সারা’র জোর করাতেই আয়ান,রাহান,রিধি,সারা,মাইশা,কবির,তিন্নি, সাদনান, প্রিয়তা ওদের শপিংমলে এসছে। শুধু এখন ওদের কেনাকাটা বাকি।
সাদনান নিজের সিকিউরিটি আনে নি।নিজেও একদম নরমাল পোশাক পড়ে এসছে। সাদা শার্ট কালো প্যান্ট সাথে কালো মাস্ক এতেই দেখতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। সাথে বোঝার উপায় নেই এটাই পাঞ্জাবি পরিহিত এমপি সাদনান।
শপিং শেষ ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে যার যার গন্তব্য রওনা দিলো।
রাহান রিধি কে কবির আর তিন্নির সাথে পাঠিয়ে দিলো আয়ান সারা,মাইশা,প্রিয়তা কে বাড়ি পৌঁছে দিলো আর রাহান সাদনান নিজেরা আবারও কোথাও মিটিং -এ গিয়েছে।
সাদনান গাড়িতেই বসে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো।রাহান পাশেই বসে আছে।
-“তুই জানতি না?”
হঠাৎই রাহান প্রশ্ন টা করে।সাদনান ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই জিজ্ঞেস করে
-“কি?”
-“আমার পছন্দ করা মেয়ে টা যে তোর বোন?”
-“তোর কি মনে হয়?”
রাহানের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাদনান নিজেও প্রশ্ন করে।
রাহান একটু নড়েচড়ে বসে বলল
-“তবে সে দিন আমার কথা তুই বললি না কেন?”
-“ভালোবাসে কে?”
রাহানের কথা শুনে সাদনান প্রশ্ন করে।
রাহান কথার ভাঁজে আনমনেই জবাব দেয়
-“আমি।”
-“তাহলে আমি কেন বলবো?”
-“বন্ধু হই না।
একটু পক্ষ তো নিতেই পারতি।
তাছাড়া তুই চাইলে আগেই এটা আমাকে জানাতে পারতি।
তা না করে আমাকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে আগুনের দিকে ঠেলে দিলি।”
-“ভালোবাসিস তুই সেটা আমায় কখনো বলেছিস?”
-“তুই জানতি।”
-“তুই তো বলিস নি।”
-“তুই আমার সব বুঝতে পারিস।
তাছাড়া আমি ভয় পেতাম সেটাও জানতি।”
সাদনান আর কিছু বলে না।
খানিক্ষন চুপ থাকে।
নিরবতা কাটিয়ে সাদনান বলে
-“ভালোবাসলে হয় না ভালোবেসে, ভালোবাসার জিনিস গুলো আগলে নিতে হয়।”
——–
-“তোমার বোন কে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো ছোট বউ।”
প্রিয়তা সবে মাত্র খাবার টা মুখে তুলবে ঠিক তক্ষুনি পাশ হতে আম্বিয়া মির্জা কথা টা বলে উঠে।
প্রিয়তা আশেপাশে তাকালো। একটু পর হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এখন সাড়ে ছয় টার মতো বাজে।প্রিয়তা এতোক্ষণ শাশুড়ীর সাথে হাতে হাতে কাজ করছিল।আজ সারা দিন শুধু বারো টার দিকে একবার খাবার খেয়ে ছিল তার পর আর সময় পায় নি সাদনান বাসায় নেই সাথে এতো কাজ।বাড়ির কে কখন খাবার খাচ্ছে তার ঠিক নেই বাড়িতে মেহমান, পাড়াপ্রতিবেশি দিয়ে ভর্তি।
সবাই এখন উপর অনুষ্ঠানের ওখানে আর প্রিয়তা খাবার খেয়ে রেডি হয়ে উপর যাবে।
কিন্তু মনে হয়ে না আজ আর খেতে পারবে।এমনিতেই দাদি রেগে আছে আর আজ এতো বড় সুযোগ পেয়েছে ছাড়বে না-কি?
প্রিয়তা এসব ভেবেই কান্না পেলো।
তবে মুখে বলল
-“দাদি আপনার কিছু লাগবে? আপনি বলেন আমি দিচ্ছি।”
-“থাক, থাক।
আমাকে ভুলাতে এসো না।বউ তুমি সেটা ভুলে যেয়েও না যেনো আবার।
বাড়িতে বাহিরের অনেক মানুষ জন আছে।
শাশুড়ীর সাথে সাথে থেকো।”
কথা গুলো বলেই তিনি চলে গেলো।
প্রিয়তার খারাপ লাগলো।সত্যি কি সে বেশি আজেবাজে চলে ফেরা করে?
হয়তো। তা নাহলে দাদি তাকে এভাবে বলতো না।সত্যি তো বউ হয়ে রোজ স্কুল যেতো এখন কলেজ যায়। আর এটা একজন বউয়ের জন্য মোটেও শোভনীয় নয়। বউ তো বউই বউ কেন আবার বাড়ির বাহিরে এমন রংঢং করে ঘুরে বেড়াবে?
কিন্তু সে তো একা যায় না সাথে সারা যায় আর সাদনান নিজেও থাকে।
সাদনান নিজের পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে।
আর ডাইনিং টেবিলে চোখ যেতেই দেখলো প্রিয়তা খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে নিলো আর ঘটনা বুঝতে পেরে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
এগিয়ে এসে শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে
-“এতো লেট করে খাবার?”
-“খেয়েছি।
আবার খাচ্ছি।”
প্রিয়তা হঠাৎ সাদনান কে দেখে চমকে উঠে। তাড়াহুড়ো সহিতে মুখে খাবার নিতে নিতে জানালো।
সাদনান এবার প্রিয়তার দিকে ঝুঁকে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-“মিথ্যা আমার একদম পছন্দ নয়।
তবে কেন বলো?”
প্রিয়তা এবার চুপ করে থাকে।
সাদনান সোজা হয়।রুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে
বলল
-“খাবার রুমে নিয়ে এসো।
আর হ্যাঁ,এই প্লেটে করেই।”
সাদনান কথা টা বলেই চলে গেলো প্রিয়তাও সাদনান এর কথা মতো কাজ করে।
———
হলুদের অনুষ্ঠান শেষে সাদনান এর কাছে সারা কিছু বললো।প্রিয়তা সে সব শুনে না রুমে চলে আসে।শরীর এই শাড়ী নিয়ে আর থাকা যাচ্ছে না তাই এসব চেঞ্জ করে হাল্কা কিছু পড়বে বলে রুমে চলে গেলো।
এদিকে মাইশা বসে আছে ফোনের সামনে। ফোনের স্কিনে আয়ানের হলুদ মাঝা মুখ জ্বলজ্বল করছে।
মাইশার নিজেরও একই অবস্থা ফ্রেশ হওয়া দরকার কিন্তু আয়ান যেতে দিচ্ছে না।
ছেলের বাড়ি থেকে কেউ আসে নি।মূলত আসার মতো কেউ নেই তাই আর এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় নি।
আয়ান আসবে বলে ছিল।কিন্তু লুকিয়ে এতো সিকিউরিটি টপকে আসতে মাইশা না করেছে।আর সেই শাস্তিস্বরূপ আয়ান ওকে গত একঘন্টা সময় ধরে ফোনের সামনে বসিয়ে রেখেছে।
বেশ অনেক টা সময় পর আয়ান হুট করেই বলল
-“তোমার ভাই কি করতে এতো সিকিউরিটি রেখেছে?”
-“কি সব বোকা বোকা প্রশ্ন করছেন,আয়ান?
এসব ভাই ইচ্ছে করে রাখে নি বরং ওনার স্থান টাই এমন যে না চাইলেও এগুলো ওনার সাথেই থাকবে।”
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩২[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আর তিন্নি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দুই হাত বাইরে দিয়ে সেই বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে।
আজ সারা দিন আকাশ মেঘ জমে ছিল আর সন্ধ্যা হতে না হতে সেই মেঘ বৃষ্টি হয়ে এসছে।
কবির রুমে বসে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কিছু করছে। তিন্নি জানে না কি করছে এতো মনোযোগ দিয়ে কি এমন রাজকার্য করছে।এতো সুন্দর ওয়েদার কোথায় বউয়ের সাথে রোমান্স করবে তা না করে কাজ নিয়ে পড়ে আছে।তিন্নি বিরক্ত হলো।আর ভাববে না কবির এর কথা। তিন্নি অনেক টা সময় হয় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর খুব করে ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু এটা সম্ভব হবে না কবির কখনো দিবে না।
তিন্নি হঠাৎ কোমড়ে একটা শক্ত হাতের স্পর্শ পেলো।তিন্নির সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো না স্পর্শ টা চিনতে। এই স্পর্শ টা এই চার মাসে খুব ভালো করে অনুভব করতে পেরেছে। তবে তিন্নির কাছাকাছি কবির যতবার আসে ঠিক ততবার তিন্নি কেঁপে কেঁপে উঠে।এবারও তার উল্টো হয় না।তিন্নি সারা শরীর অবস হয়ে আসার জোগাড়
তবে মুখে কিছু বলতে পারে না চুপ চাপ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।
কবির বাম হাত টা তিন্নির কোমড়ে রেখে ডান হাত টা দিয়ে তিন্নির বাহিরে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে থাকা ডান হাত টা মুঠোয় পুরো নিলো
হাত টা সেভাবে রেখেই ভেতরে আনে।অতঃপর তিন্নির কোমড়ে রাখে।ঠান্ডা বৃষ্টির পানি তার উপর হাল্কা শীত তিন্নি বরাবর এর মতো এবারও কেঁপে উঠল। তবে নিজে কে ধাতস্থ করে মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো
-“আপনার কাজ শেষ?”
-“হুম।”
কবির মাথা নেড়ে জবাবে বলে।
তিন্নি নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
-“চলুন তবে খাবার খেয়ে নিবেন।”
কবির তিন্নির ঘাড়ে হাল্কা করে কামড়ে ধরে। তিন্নি ব্যাথাতুর শব্দ করে উঠে।
কবির মুচকি হেঁসে ছেড়ে দিয়ে তিন্নি কে নিজের দিকে ফিরে তিন্নির কপালের উপর পড়া থাকা ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল
-“এটুকুতে এই হাল?
কিন্তু আজ এক ফোঁটাও ছাড়াছাড়ি নেই মিসেস কবির খাঁন।”
তিন্নি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
কথা টার মানে বুঝতে পারে নি।
তাই তিন্নি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে
-“মানে?”
-“মানে টা একটু পর বুঝিয়ে দেবো।”
কবির রুমে চলে আসে। তিন্নি নিজেও পেছন পেছন আসে।
তিন্নি তখনো কথা টা বুঝতে পারে নি। তাই কবিরের সামনে এসে দুই হাত কোমড়ে রেখে বলল
-“আপনার কি হয়েছিল বলুন তো?”
-“বাবা কোথায়?”
-“হয়তো রুমে।
আপনি বসেন আমি ডেকে নিয়ে আসছি।”
তিন্নি বুঝতে পারছে কবির বিষয় টা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করে না।
রাতে খাবার শেষ সব কিছু গুছিয়ে কাজের লোক কে বুঝিয়ে দিয়ে তিন্নি রুমে এসেই দেখলো পুরো রুম অন্ধকার সাথে গোলাপ ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে রুম জুড়ে।
তিন্নি ডান পাশে দেওয়ালে সুইচ টিপে লাইট অন করতেই
দেখে কবির এর হাতে একটা গোলাপ ফুল আর সেই ফুল থেকে পাপড়ি গুলো ছাড়িয়ে বিছানায় ফেলছে পাশেই সেন্টার টেবিলে আরও তিন চার টার মতো পরে আছে। সাদা চাদর এর উপর গোলাপের পাপড়ি গুলো কি সুন্দর লাগছে।
কিন্তু তিন্নির হঠাৎ মনে হলো কবির ফুল কোথা থেকে আনলো? বাহিরে তো বৃষ্টি? তবে কি,,,,
-“ফুল গুলো ছিঁড়ে নিলেন?”
-“হুম।”
তিন্নির প্রশ্নে খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয় কবির।
সব গুলো ফুল ততক্ষণে কবির বিছানায় ছড়িয়ে ফেলেছে।
তিন্নি আবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
কবির তিন্নির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা টা বন্ধ করে ফিরে এসে ঝুঁকে এক ঝটকায় তিন্নি কে কোলে তুলে নেয়।
তিন্নি হকচকিয়ে উঠে চমকে কবিরের গলা জড়িয়ে ধরে।
-“ফুল ছাড়া বাসর কি করে হবে?
তাই প্রিয় জিনিস দিয়ে আজ আমার প্রিয় মানুষ টাকে আপন করে নিতে চাই!”
কথা গুলো বলতে বলতে কবির তিন্নি কে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের সম্পূর্ণ ভর ছাড়ে তিন্নির শরীর এর উপর।
গলায় মুখ গুঁজে অধর ছুঁয়ে দেয় সেখানে।
তিন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর সারা শরীর কাঁপছে থরথর করে। কবিরের হুটহাট জড়িয়ে ধরা চুমু খাওয়া এ-সব করে কিন্তু এতোটা গভীর স্পর্শ কবির কখনো করে নি।তিন্নি গলা শুকিয়ে আসছে। এতো দিন তো এটাই চাইতো তবে আজ কেন সম্মতির জবাব দিতে পারছে না।
তিন্নি কাঁপতে থাকা ডান হাত টা কোনো রকম কবির এর পিঠের ওপর রেখে ধরে আসা গলায় প্রশ্ন করে
-“ভালোবাসেন?”
-“প্রমাণ দিয়ে দেই?”
কবির উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে।
তিন্নির ঠোঁটের কোণায় হাসি দেখা দিলো।কি অদ্ভুত এই কবির খাঁন। ভালোবাসে অথচ মুখে কখনো শিকার করে না সব সময় এড়িয়ে চলে এই বিষয় টা।না শুধু এটা না কবির খাঁন মানুষ টা সব কিছুতেই এমন বেশি বাড়াবাড়ি একদম পছন্দ করে না।
তিন্নি দ্বিতীয় বারের মতো আবার বাম হাত টা কবিরের পিঠে রাখে।
দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জানায়
-“ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি।”
কবির আর সেকেন্ড দেরী করে না শক্ত করে নিজের অধরের ভাঁজে বউয়ের অধর চেপে ধরে।
সাথে নিজের হাতের এলোমেলো স্পর্শ তো আছেই।তিন্নি যেনো দিশেহারা হলো।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্বামী কে।
আর কবির ব্যস্ত বউ কে ভালোবাসতে।সেই ভালোবাসার সাক্ষী সরূপ থাকলো আজ বৃষ্টির রাতে আকাশ থেকে জমিনে লুটিয়ে পড়তে থাকা বৃষ্টির পানি গুলো।
———–
রিধি সুন্দর করে একটা খয়েরী রঙের শাড়ী পড়ে রেডি হচ্ছে।
পাশেই সারা,মাইশা বসে আছে।আয়না আর আম্বিয়া মির্জা আসে নি। আয়না কনসিভ করেছে। তাই আম্বিয়া মির্জা নড়চড়া করতে দেয় নি।তাই আয়না আর আম্বিয়া মির্জা ছাড়া মির্জা বাড়ির সবাই আজ রাহানদের বাড়ি এসছে। তার কারণ রিধি কে আজ দেখতে আসবে।ছেলে কি করে রিধি জানে না। ছেলের সম্পর্কে কিছু জানে না রিধি। জানে বললে ভুল হবে সবাই জানাতে চেয়েছে কিন্তু রিধি শুনে নি।
ওর ভীষণ অভিমান হচ্ছে। কিন্তু কার উপর? যে আজ দুই মাসে একবারও রিধির খুঁজ নেয়নি তার উপর?
রিধি খুব করে চাইছে ওয়াজিদ যেনো আজ একটা বার ফোন করে। কিন্তু না রিধির ভাবনা চাওয়া সব ভুল ওয়াজিদ একবারও ফোন বা খুঁজ নেয়নি।
রিধির সাজানো শেষ প্রিয়তা গিয়ে তাগাদা দেয়।ছেলের বাড়ির সবাই এসেছে অনেক্ক্ষণ হয়।খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে এখন তারা মেয়ে দেখার জন্য তাঁরা দিচ্ছে।
প্রিয়তা রিধি কে নিচে নিয়ে যেতে বলে তড়িঘড়ি করে ছুটে গেস্ট রুমের উদ্দেশ্য।
সাদনান এসছে মিনিট পাঁচ এর মতো সময় হবে।তাকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য প্রিয়তা গেস্ট রুমে দিয়ে এখানে চলে এসছে।
বউ পাগল সাদনান না জানি ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে বউ কে রুমে না পেলে কি করে বসে তার ঠিক নেই।
তাই তো প্রিয়তা তাড়াতাড়ি করে রুমে আসতে নিয়ে ধাক্কা খেলে শক্ত একটা কিছুর সাথে।
বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো সামনের বস্তু টা কি।
-“আসছিলাম আমি।
প্রয়োজন ছিল না আসার।”
সাদনান কিছু না বলে টেনে নিয়ে রুমে ঢুকে পরে।
প্রিয়তা কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজের মাথা প্রিয়তার কোলে তুলে দিয়ে পেটে মুখ গুঁজে হুকুমের স্বরে বলে উঠে
-“আধঘন্টা ঘুমুতে হবে।
চুপ চাপ বসে থাকবে।ঘুম থেকে উঠে যেনো পাশে পাই।”
-“কি বলছেন আপনি?
বিয়ের কথা হবে একটু পর!”
প্রিয়তা সাদনানের কথা শুনে অবাক হয়ে জানায়।সাদনান সেসব পাত্তা না দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল
-“এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
আমি গেলেই কথা হবে।আর এখন দেখাদেখির পালা।
সো চুপ চাপ বসে থাকো।”
#চলবে….
#আমার_তুমি
#পর্ব_৩৩[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ]
#জান্নাত_সুলতানা
মেয়ে কে দেখতে ছেলে আসে নি। আর ছেলে ছাড়াই বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়ে গেছে। ছেলের বাবা আর ফুফি এসছে আর ছেলের ফুফি মেয়ে কে পছন্দ করে এক জোড়া বালা পড়িয়ে রেখে গিয়েছে।
রিধি ছেলের বাবা কে একবারও দেখে নি।দেখবে কি করে ওর মন এখানে ছিল কি? ওর মন তো অন্য কোথাও।
রিধির বিয়ের দিন সারা আর রাহান এর এনগেজমেন্ট হবে বলে জানিয়েছেন জাফর মির্জা। রাহানের পরিবার এর কেউ অমত পোষণ করে নি।অবশ্য করবে কি? করার মতো কিছু থাকলে তো করবে।জাত গোষ্ঠী নাম দাম সব ভালো মেয়ের দাদা এলাকার চেয়ারম্যান, বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান,চাচা, বড় ভাই ব্যবসায়ি ছোট ভাই এমপি। মেয়েও দেখতে শুনতে মাশা-আল্লাহ। আর কি লাগে।রাহানের বাবা বিজনেসম্যান সেখানে রাহানদের তুলনায় সারা’র পরিবার বহুত এগিয়ে।
পাত্র পক্ষ যাওয়ার পর মির্জা বাড়ির সবাই আবার বাড়ি ফিরে আসে।
কতশত কাজ বাকি রিধির বিয়ের আগে মাইশার আর আয়ানের বিয়ে টাও সেরে ফেলতে চায় শফিক সওদাগর জানিয়েছেন। এতে অবশ্য কেউ অমত করে নি তবে কাজের দখল টা বেশি হবে এই যা।নয়তো সব দিক দিয়ে ঠিক আছে । এমনিতেও রিধির বিয়ে তো এক মাস পর তাই বেশি ঝামেলা হবে না।
আর সওদাগর বাড়িতেও মানুষ নেই।মিতা সওদাগর সব সময় বাড়িতে একাই থাকে সেই সাথে ছেলের বয়স তো আর কম হলো না দেখতে দেখতে। এখন ছেলে কে বিয়ে দেওয়া দরকার।
দুই মেয়ে? হ্যাঁ দুই মেয়েই তো তাদেরও তো বিয়ে দিয়ে এখন ভালো আছে। তিনিও এখন একটু ভালো থাকতে চায়।
সেটা যদি হয় দূরে কোথাও গিয়ে?
হ্যাঁ দূরে চলে যাবে অনেক দূরে যেখানে চাইলেও শফিক ওনার খুঁজ পাবে না ফিরিয়ে আনতে পারবে না।
———
সারা প্রিয়তা কলেজে ভর্তি হয়েছে আগের প্রতিষ্ঠানেই তাই এখানে চিনার মতো নতুন কিছু নেই তবে সৃতি হিসেবে আবারও অনেক কিছু রয়েছে। এই যে রাত বিরাতে সাদনান এর সাথে এই দিকের বট গাছের পাশে চিকন রাস্তা টায় হাতে হাত রেখে হাটা পাশেই একটু দূরে চায়ের দোকান হতে চা খাওয়া।
আহ কি সুন্দর সুন্দর মূহুর্ত ছিল সে সব।
কিন্তু এখন শুধুই সৃতি এখন আর আগের মতো সাদনান তাকে সময় দেয় না। রাতে বাড়ি ফিরে লেট করে।
অবশ্য সে তো আর এখন আগের মতো আর সাধারণ জণগণ নয় সে এখন এমপি কতশত দায়িত্ব।
এই যে আজ বাদে দুই দিন পর বাড়িতে বিয়ে অথচ সাদনান এর খবর নেই। কাল সবাই আবারও শপিং করতে যাবে।প্রিয়তা ব্যালকনিতে মেঝেতে বসে এক দৃষ্টিতে হাল্কা মেঘাচ্ছন্ন করে থাকা আকাশ এর দিকে তাকিয়ে আছে। দূর আকাশে চাঁদ টা যেমন একটু পর পর এক টুকরো মেঘ এসে যেমন চাঁদ টাকে ঢেকে দেয় আবার খানিকক্ষণ সময় পর আবারও ভেসে উঠে ঠিক তেমন সাদনান এর দেখা পাওয়াটাও এমন হয়ে গিয়েছে।
দেখা হয় কখনো বা প্রিয়তা ঘুমিয়ে থাকে সাদনান বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রিয়তা তখন সজাগ পায়,আর মন টা খুব করে অভিযোগ করতে মন চায়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে মনের কষ্ট গুলো ধুয়েমুছে ছাফ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। তবে সে টার করা হয় না।ইচ্ছে করে না সাদনান এর ক্লান্ত ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে সে সব করতে। থাক না সে সব, চলুক না জীবন যেভাবে চলছে।কোনো কিছুর অভাব তো আর হচ্ছে না শুধু এই স্বামী নামক প্রিয় মানুষ টার সময় টা একটু কম দেয়।
হয়তো সামনে থেকে আরও কম দিবে।আর সেটা না হয় এখন থেকে অভ্যাস করে নেওয়া যাক।
রুমে দেওয়ালে থাকা বড় দেওয়াল ঘড়ি টা জোরে তিন বার শব্দ করে ওঠায় প্রিয়তার ধ্যান ফিরে আসে। বারো টা বেজে গিয়েছে। রুমে যাওয়া প্রয়োজন।প্রিয়তা রুমে এসে বিছানার পাশে থাকা সেন্টার টেবিলের উপর হতে বিয়ের রাতে তুলা ফটো ফ্রেম টা হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আজ ছয় মাস হলো সাদনান প্রিয়তার বিয়ের।
প্রিয়তার কেন জানি ডান চোখ হতে গড়িয়ে এক ফোঁটা জল পড়ে?
প্রিয়তা চোখের পানি টা মুছে নেয়।
ওড়না পাশে রেখে বিছানা গুছিয়ে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
আর ঠিক তক্ষুনি দরজায় নক পড়ে।প্রিয়তার ভ্রু কুঁচকে আসে। এই রাতে কে নক করে? সাদনান তো রুমে নক করে ঢুকে না।
প্রিয়তা কিছু বলবে তার আগেই সারা হড়হড় করে রুমে এসে প্রিয়তা কে নিজের হাতে থাকা ফোন টা এগিয়ে দিলো।
প্রিয়তা প্রশ্নবোধক চাহনি তাকিয়ে থাকে সারা’র দিকে।
সারা ইশারা করে ফোন কানে নিতে বলে।
প্রিয়তা এক বার ফোন টার দিকে তাকিয়ে ফোন টা কানে তুলতেই ওপাশ হতে সাদনান এর গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো
-“ফোন কোথায় তোমার?”
-“সাথে, সাথেই ছিল,,,,
প্রিয়তা সাদনান এর কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে সাদনান রেগে আছে।
তাই নিজের রাগের কথা ভুলে সাথে ভয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিল।
তবে সাদনান শুনে না সবা টা তার আগেই হুকুমের স্বরে বলল
-“দশ মিনিট সময়।
আলমারি খোলে ডান পাশের ড্রয়ারে সেখান একটা প্যাকেট পাবে।
ওটা পড়ে রেডি হয়ে নিচে এসো।
আমি অপেক্ষা করছি।
আর হ্যাঁ,শাল গায়ে দিয়ে আসবে।”
প্রিয়তা কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পায় না।তার আগেই সাদনান ফোন কাটে।
সারা বিরক্তে চোখ মুখ কুঁচকে ফোন টা নিজের হাতে নিতে নিতে বলল
-“তোর ফোন চালানোর কি দরকার?
কে দিয়েছে তোকে ফোন?”
প্রিয়তার মন টা হটাৎ কেন জানি বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো। সারা কে খুঁচা তে ইচ্ছুক করলো।
তবে হাতে সময় নেই তাই শর্ট কার্ট টিপুনি কেটে বলে
-“প্রেম করছিলি বুঝি?”
যদিও প্রিয়তা জানে সারা ঘুমিয়ে ছিল হয়তো সাদনান এর ফোন পেয়ে উঠে এসছে।
তবুও একটু রাগীয়ে দিলো।
সারা কটমট করে তাকালো প্রিয়তার দিকে ততক্ষণে প্রিয়তা আলমারি খুলে সেখান থেকে সাদনান এর কথা মতো কাজ করে ওয়াশ রুম চলে গিয়েছে। তাই সারা আর কিছু বলতে পারে না শুধু বিরবির করে বলল
-“অসভ্য মেয়ে মানুষ।
সবাই কে নিজের মতো ভাবে, হু।”
সারা রুমে থেকে বেড়িয়ে এলো। কিন্তু হাতে থাকা ফোন টা আবারও সশব্দে বেজে উঠে।
সারা ভাবে হয়তো আবার সাদনান ভাই ফোন দিয়েছে। তাই নাম্বার ভালো করে না দেখে রিসিভ করে ফোন কানে নিতেই ওপাশ হতে রাহান ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো
-“ঘুমিয়ে ছিলে?”
-“হ্যাঁ।
ভাইয়া ফোন দিয়ে বলল প্রিয়তার ফোন বন্ধ তাই ওর কাছে আসলাম।”
-“রেখে দেবো।”
-“না,,হ্যাঁ মানে আপনার খারাপ লাগলে রেখে দিন।”
সারা মলিন কণ্ঠে বলে।রাহান মুচকি হাসলো।
তার খারাপ লাগা তো এই মেয়ের কণ্ঠ শোনা মাত্র চলে যায়।
তা কি জানে এই মেয়ে?
জানলে কখনো বলতো না রেখে দেওয়ার কথা।
তবে রাহান মুখে বলল
-“খাবার খেয়েছো?”
-“হুম।
আপনি?”
-“মাত্র ফ্রেশ হয়ে এলাম।
মা খাবার রেখে গিয়েছে।”
এভাবে তাদের কথোপকথন চলতে থাকে।
——
এদিকে প্রিয়তা শাড়ী পড়ে রেডি হয়ে চুল গুলো হাত খোঁপা করে নেয়।
অতঃপর গায়ে একটা শাল জড়িয়ে রুম হতে বেড়িয়ে আসে।
নিচে আসতেই দেখলো সে দিনের কাজের মহিলা টা লিভিং রুমে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা বুঝতে পারে সে বেরুলে সে দিনের মতোই আজও তিনি দরজা বন্ধ করে রাখবে।
প্রিয়তা ওনার দিকে তাকিয়ে হাল্কা লজ্জা পেলো।
মহিলা টা এগিয়ে এলো।
মুচকি হেঁসে বলল
-“ছোট বউ সাবধানে, আর জলদি আইবার চেষ্টা কইরো।
হেই দিন কিন্তু দাদি তোমারে আর ছোট সাহেবরে এক লগে রাইতে বাড়ি ফিরতে দেখছে।”