মন পবনের নাও পর্ব-০২

0
136

#মন_পবনের_নাও
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২

আনাবিয়া ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে এসে মোবাইল হাতে নিলো, নাহহ তানিমের কোন মেসেজ আসেনি!
আনাবিয়া মনে মানে ভাবলো, আমাকে এখন আর কি দরকার এখন তো আছেই সাকচুন্নি স্বর্ণা। কতক্ষণ আউলা, ঝাউলা চিন্তা ভাবনা করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,তুমি আমাকে কিভাবে ভুলে যেতো পারো তানিম! তুমি না বলেছিলে, জীবনে প্রেম করোনি আর আমিই তোমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা, তাহলে কেন এসব করলে?
নীলা বেগম উঁচু স্বরে ডাকতে লাগলেন, আনা, আনা…
‘এভাবে ডাকছো কেন?
‘তুমি কার পারমিশন নিয়ে এবাড়িতে এসেছো?
‘আমার বাড়িতে আসতে আবার আমার পারমিশন লাগবে?
‘অবশ্যই লাগবে। স্বামীর আদেশ ছাড়া স্ত্রী বাহিরে বের হলে ফেরেশতারা সেই মহিলাকে লানত দিতে থাকে। আমি কতবার তোমাকে বলেছি,ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখো, আমার কথা কে শুনে!
‘এটা কেমন কথা হলো? আমি কি মূর্খ নাকি! ঠিক ভুল আমি বুঝি।
‘তুমি এই মূহুর্তে ও বাড়িতে ফিরে যাবে আর আসতে হলে তানিমকে বলে তবেই আসবে।
‘মা’আমি এই সংসার আর করবো না।তোমাদের জামাইকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।
‘বিয়ে কি পুতুল খেলা?তিন বছর খেলেছো এখন খেলবে না! সংসারে মানঅভিমান, ঝামেলা হবেই তাই বলে তো সংসার ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাহলে তো কোন সংসার টিকতো না।
‘মা ‘আজ যা হয়েছে এরপর আর আমার পক্ষে সম্ভব না ওই লোকটার সাথে একি ছাদের তলায় থাকা।
‘কারন বলো।
‘আনাবিয়া সবটা খুলে বললো।
নীলা বেগম সবটা শুনে বলে, তুমি জানো কারো উপর মিথ্যে অপবাদ দেয়া কত বড় গুন্নাহ! তুমি যা দেখেছো,সত্যটা তার ভিন্ন হতে পারে!
‘আমার চোখ ভুল দেখেনি নিজের চোখে দেখেছি।
‘চোখের দেখাও ভুল হয়। আর তানিম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে অত্যান্ত নম্র,ভদ্র সে কখনো এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না।
‘মা ‘নামাজ পরলেই কেউ ফেরেশতা হয়ে যায় না।
‘তুমি কি বোরখা ছাড়া এসেছো এ বাসায়?
‘হ্যা এসেছি তো!
‘তোমার হ্যাসবেন্ড বিয়ের পর থেকে তোমাকে আগলে রেখেছে সবার নজর থেকে আর একদিনেই তুমি তা শেষ করে দিলে?
‘উফফ মা’ আর ভালো,লাগছে না সেই কখন থেকে জ্ঞান দিচ্ছো!
‘আমার একটা বোরখা নাও আর সোজা নিজের বাড়িতে চলে যাও,আগে সত্যিটা জানো তারপর আমরা ফয়সালা নিবো।

‘স্বর্ণা মনের আনন্দে রান্না করছে,এতোদিনে তার মনের বাসনা পূর্ণ হলো।কত আশা ছিলো তানিমের বউ হওয়ার কিন্তু সবাই তাকে রেখে আরেকজন মেয়েকে বউ করে আনলো!

রহিমা বেগম কিচেনে এসে বলে, আমার রান্নাঘরে তোর ছায়াও জেনো না পরে। বের হও এখান থেকে।
‘মামি এতো রেগে যাচ্ছে কেন! বুঝতে তো তোমরাই ভুল করেছেন, নিজের ছেলের পছন্দের মেয়েকে রেখে বাহিরের মেয়েকে বউ করে এনে।
‘তুমি তো চলে গিয়েছিলে আবার কেন এসেছো? আমার শান্তির সংসারে অশান্তি করতে?
‘আপনার ছেলেকে আমার ভিষণ পছন্দ। আনা তো চলেই গেছে আমাকে মেনে নিন।
‘দরকার পরলে এবাসা ছেড়ে বস্তিতে যেয়ে থাকবো তবুও তোমাকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে মানবো না।
‘আজ না মানলে কাল মানবেন, কাল না মানলে পরশু,মেনে তো নিতেই হবে।

‘তানিম রুমে ঢুকে নিশ্চুপ বসে রইলো,হঠাৎ তার মায়ের সাথে বাজে বিহেভিয়ারের কথা মনে পরলো মনে, মানে বলে আমি কি করবো মা’আমি যে নিরুপায় সামান্য একটা ভুল আমাকে আজ এতো বাজে পরিস্থিতিতে এনে ফেলেছে। আল্লাহ আপনি আমাকে ক্ষমা করুন আর এর থেকে মুক্তির পথ সহজ করে দিন।
অনেকটা সময় পর মোবাইলটা হাতে নিলো কল করার জন্য। আনাবিয়ার নাম্বার ডায়েল করেছে এমন সময় দরজায় কেউ আঘাত করতে লাগলো৷
‘তানিম দরজার সামনে যেয়ে বলে,স্বর্না সব কিছুর লিমিট থাকে, লিমিট ক্রস করার পর মানুষ আর কোন কিছুকেই ভয় পায় না আর একবারও তুই আমার সামনে আসবি না।
‘আপনার মনে কি সব সময় স্বর্ণা থাকে? মানে ওকে ছাড়া কাউকে কল্পনা করতে পারেন না!
‘তানিম দ্রুত উঠে দরজা খুলে দিয়ে আনাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আমি জানতাম আমাকে ছেড়ে তুমি থাকতে পারবে না ঠিক চলে আসবেই।
‘ছাড়ুন আমাকে একদম ইমোশনাল কথা বলে আমাকে গলানোর চেষ্টা করবেন না। সকালে যা দেখেছি তার বিহিত হবে তারপর আপনার সাথে কথা। এখন চলুন আমাকে বাসায় দিয়ে আসবেন।
‘তানিম বিছনার উপর পা দুলিয়ে বসে বলে, আমাকে তো পা’গ’লা কুকুর কামড়েছে নিজের বউকে আরেক বাসায় রেখে আসবো!
‘অতো কথা তো আমি জানিনা আপনি নিজে আমাকে নিয়ে যাবেন৷
‘বউ ছাড়া থাকতে আমার ভিষণ কষ্ট হবে, আমি আবার বউ পাগল ছেলে।
‘ তা বউ পাগল হতে ক’টা বউ লাগে? একটা বউ থাকলে বুঝি বউ পাগল হওয়া যায় না?
‘আনা একদিন এসব কথার জন্য আফসোস করবে।
‘আমি চাই আফসোস করতে, আমাকে সত্যিটা বলুন। ওই লিপস্টিক আপনার ঠোঁটে কি করে এলো? বলুন আপনি আর স্বর্ণা এতো কাছাকাছি কি করে এলেন? আমাকে ভুল প্রমান করুণ বিশ্বাস করেন এসব ভুল প্রমাণিত হলে আমি সবচেয়ে খুশি হবো।
‘তানিম চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো,না পারছে সত্যিটা বলতে না পারছে আনার এমন আচরণ সহ্য করতে।

🌿
আজরান বাসায় ঢুকতেই জারা বলে, ভাইয়া তুমি কোন সুইমিং পুলে গোসল করে নিজের চেহারা বদলে এসেছো? বলে স্ব শব্দে হেসে দিলো।
‘আজরান জারা কে ধমক দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলো, শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করার সময় দেখে তার পকেটে একটা ইয়ার রিং। রিংটার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবছে এটা আবার কোথা থেকে আসলো? আজরান ড্রেস চেঞ্জ করে কিচেনে চেয়ে নিজের জন্য কড়া করে এক কাপ কফু বানালো। কফি নিয়ে সোফায় আয়েশ করে বসে কফিতে চুমুক দিলো৷
‘নাহার বেগম কফি কাপটা হাত থেকে নিয়ে বলে, আর কত নিজের কফি নিজে বানিয়ে খাবি? একটা বউ থাকলে তোর জন্য কফি বানিয়ে এনে দিতো, আমার সাথে হাতে,হাতে সাহায্য করতো, কত ভালো লাগতো ভাবতো?
‘মা আমি কি বলেছি বিয়ে করবো না! মেয়ে দেখো পছন্দ হলেই বিয়ে পাকা। তব হ্যা মেয়ের বয়স অবশ্যই আঠারো বছরের বেশি হতে হবে।বলেি কফি মগটা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।

🌿আনা বোঝাতে ব্যার্থ তানিম দু’জনেই বের হবে ঠিক তখন রাইমা এসে বলে, ভাবি তোমরা কোথায় যাচ্ছো?
‘আনা বলে,আজকে দেখে তোমার আমার মাঝে শুধু বন্ধুত্ব কোন ভাবি, ননদের সম্পর্ক নেই মনে থাকবে?
‘হঠাৎ কি হলো তোমার? মাথা ঠিক আছে?
‘নিজের কথা থেকে নড়বে না কিন্তু, বলেছিলেনা তোমার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক না থাকলেও আমাদের বন্ধুত্ব সময় সময় থাকবে।
‘হ্যা তা তো থাকবেই কিন্তু হলো টা কি?
‘আনা কিছু না বলে বের হয়ে গেলো।

‘তানিম রুমেই বসে আছে, কিন্তু সে যানে আনার কত জেদ সত্যি যদি গাড়ির সাথে ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করে! দ্রুত একটা টিশার্ট পরে বের হয়ে গেলো।

‘আনা হাঁটে আবার একটু পিছু তাকায়, আবার হাঁটে আবার একটু পিছু তাকায়।
‘তানিম পেছন থেকে বলে,ভালোবাসি বউ প্লিজ এবারের সত ক্ষমা করে আমার সাথে চলো, ভবিষ্যতে কখনো এমন ভুল হবে না৷ এই কানে ধরেছি।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে