মন পবনের নাও পর্ব-০৩

0
124

#মন_পবনের_নাও
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩

‘দেখো তুমি যত যাই বলো কাজ হবে না, কারণ ‘শুকনো কথায় চিড়ে ভিজবে না!! আমাকে সত্যিটা বলতে হবে তবেই আমি ফিরবো। কথা শেষ করে আনাবিয়া নিজের ফোন বের করে তানিমের একটা পিক তুললো, তারপর নিজের বাসায় ঢুকলো।
‘তানিম অসহায় দৃষ্টিতে আনার যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো। আনা গেটের ভেতর ঢুকে গেট লক করে দিয়েছে৷ তানিম আকশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,কবে আমি এসব থেকে মুক্তি পাবো?
🌿
‘নীলা বেগম ভেবেছিলেন তার মেয়ে জেদি তাই তাকে বুঝিয়ে ওই বাড়িতে পাঠালে হয়ত তানিম মানঅভিমান মিটিয়ে নেবে।কিন্তু এমন কি হলো আনা আবার চলে আসলো? জেদি ঠিক কিন্তু ওতো খুব সফট হৃদয়ের গুরুতর কিছু না হলে নিশ্চয়ই আবার ফিরে আসতো না। নীলা বেগমের ভাবনার মাঝেই আনা নিজের ফোন বের করে তার মামনে রেখে বলে, দেখো আমি কার সাথে এসেছি। তবে মনে রেখো এরপর আমাকে ওই বাড়িতে পাঠাতে চাইলে ‘আমি তোমারদেরকেও ছেড়ে যাবো। কথা শেষ করে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো আনা।

‘আফজাল সাহেব বলেন, ‘নীলা নিজের সন্তানকে বুঝতে হয়, নিজের সন্তানের কঠিন সময় পাশে দাঁড়াতে হয়, নিজের সন্তানের সুখ, দুঃখ ভাগ করে নিতে হয়,আশাকরি আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পেরেছে?
‘জ্বি বাবা আমার ভুল হয়েছে সবটা না জানতে চেয়ে আনাকে আবার ওইখানে পাঠানো। আমি ওর সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করবো, জানতে চাইবো এমনটা করার কারন কি?

🌿 মা’আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি! কি এমন হয়েছে যে ভাবি বাসা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে!
‘আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবি না, আমি এখন কে? তোদের যার যেটা ইচ্ছে কর।
‘মা এভাবে কেন বলছো?
‘তাহলে আর কিভাবে বলবো! তোর ভাইকে আগে থেকে সাবধান করেছি ওই মেয়ের ব্যাপারে, এখন কি হলো যেটার ভয় ছিলো সেটাই হলো তো। তোকে সেই এক বছর ধরে বলছি বিয়েটা করে নে তুই আমার কথা শুনেছিস!তোর পড়ালেখা শেষ করে মন্ত্রী হতে হবে, তোর ভাইয়ারের ঘরে বউ থাকতে পরকীয়া করতে হবে তাহলে আমি কে? যে তোরা আমার কথার মূল্য দিবি!
তোদের যেটা করার তোরা সেটাই কর, আমার যে তিকে দু’ চোখ যায় আমি সেদিকে চলে যাবো।

‘কি শুরু করলে মা? সোজা কথার সোজা উত্তর দাও না।
‘নেই আমার কাছে সোজা উত্তর, তুই হয়তো আমার কথা শুনবি নয়তো তোকে রেখে আমি যেদিক দু’চোখ যায় চলে যাবো।
‘মা বলবা তো,হুট করে কি,হলো? কিছু তো বলবা না হলে বুঝবো কি করে?
‘তুই বিয়েটা করেনে আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড শিউলি তোর জন্য একটা পাত্র দেখেছে যদি মায়ের প্রতি একটুও ভালোবাসা থাকে তাহলে আমার কথাটা রাখ।
‘আশ্চর্য তোমার বউ রাগ করে বাড়ি ছেড়ে গেছে তবুও তুমি আমার বিয়ে নিয়ে পরে আছো!
‘আনা তো ঠিক কাজ করছে। ‘আমি আনার জায়গায় থাকলে আমিও এমন করতাম। আমার কথাটা শোন এসব জানাজানি হওয়ার আগেই কিছু একটা কর।
‘স্বর্ণা রাইমাকে বলে, রাই আমি তোর ভাইয়কে ভালোবাসি এক কাজ কর আমাদের বিয়েটা দিয়ে দে।
‘স্বর্ণা নিজের লিমিটের মধ্যে থাক লিমিট ক্রস করিস না। মনে রাখিস ‘ বেশি উড়লে পিপীলিকার পাখা ভেঙে যায়।
‘আমি পাহাড়ের মত, একবার গড়ে উঠলে ধ্বংস করা কঠিন।
‘ভূমিধস হলে পাহাড়ও নিমিষেই গুড়িয়ে যায়, তখন কোথাও তার অস্তিত্ব ও থাকেনা।

রাইমা বারান্দায় এসে আনাকে কল দিলো৷, রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। বার কয়েক কল করে বারান্দায়র রেলিং ধরে তাকিয়ে রইলো রাস্তায়।

‘তানিম বাসায় এসে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিলো। তারপর নিজের মায়ের রুমের সামনে এসে বলে,আসবো আম্মু?
‘নাহহহ আমার রুমে তোর আসতে হবে না।
‘মা আমাকে একটু সময় দাও আমার দিকটা আমি তুলে ধরবোই। একবার আমার কথাটা শুনো।

‘তানিম ‘রাহিমা বেগমের কাছে এসে তার পায়ের কাছে বসলো,নিজের পকেটে থেকে কিছু কাগজ পত্র বের করে,মায়ের হাতে দিয়ে বলে,মা আমি বের হচ্ছি আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় যদি ভুল করি তবে ক্ষমা করে দিও। আমার বোন আর স্ত্রীকে দেখে রাখবে আশাকরি।

‘বাহহহহ চুরি করে ধরা পরার ভয়ে পালাচ্ছিস আর তার নাম দিচ্ছিস আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় বের হচ্ছিস!
‘মা ‘যেদিন সবটা জানতে পারবে সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম আসি এখন।

‘আনাবিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে রাইমার অনেকগুলো মিসড কল। দ্রুত রাইমাকে কল ব্যাক করলো।
‘রাইমা রিসিভ করে বলে তুই আমাকে একদিনেই পর করে দিলি!
‘কি বলছিস তোকে পর করে দিয়েছি!
‘তুই কেন চলে গেলি কত শখ করে তোকে নিজের ভাইয়ের বউ করে এনেছিলাম।
‘মনে কর আমারা সেই আগের আনাবিয়া আর রাইমা। বেস্ট ফ্রেন্ড আছি ছিলাম থাকবো। মাঝখানে যা ছিলো দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যা।
‘তুই চলে গেছিস মা আমার জন্য ছেলে সিলেক্ট করে ফেলেছে, এখন দেখা করতে বলছে ওই ছেলের সাথে।
‘তো বিয়ে করবি না? আমি তো সেই তিন বছর আগেই করলাম এবার করে নে আর মানা করিস না।
‘তাহলে তুইও আয় একসাথে দেখা করতে যাবো৷
‘আচ্ছা আসবো,তুই লোকেশন সেন্ট করে রাখিস আর টাইম বলে রাখিস। আর হ্যা আম্মু কেমন আছে?
‘তোকে ছাড়া কেমন থাকবে? জানিস তো আম্মু তোকে কত ভালোবাসে। তুই নেই আম্মু মনে হয় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।
‘আম্মুর খেয়াল রাখিস রাই, আম্মুে যত্ন নিবি।
‘পারবো না এসব করার দ্বায়িত্ব ছেলের বৌয়ের তুই এসে কর।
‘আনা কথা না বাড়িয়ে বলে,আচ্ছা দেখা হচ্ছে বিকেলে। বলেই কল কেটে দিলো।

🌿আজরান ভার্সিটিতে এসে মনে মনে খুঁজতেছে ঝুমকাটা কার?এটা তার কাছে কিভাবে আসলো?
তার সাথের একজন কলিগ বলে,আজরান সাহেব মন আজ কোথায় রেখে এসেছেন?

‘মন আর কই হারাতে পারলাম বলুন! আমার মন তো হারাচ্ছেই না।
‘একবার হারালে সারাজীবনেও খুঁজে পাবেন না।
‘তবুও হারাক। বলেই ক্লাস রুমে ঢুকলো। আজ একটু আগেই বের হয়ে এসেছে ভার্সিটিতে থেকে। বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকবে দেখে রুম লক করা। আজরান জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলো, আম্মু, আম্মু।

‘নাহার বেগম বলেন, তুই বিয়ের জন্য রাজি না হওয়া পর্যন্ত এই দরজা খুলবে না।
‘আমি কখন বললাম বিয়ে করবো না!আমি বলেছি মেয়ে দেখো পছন্দ হলে বিয়ে করবো।
‘নাহহ তোর পছন্দ করতে হবে না, আমরা পছন্দ করবো তুই শুধু কবুল বলবি।
‘কি আশ্চর্য কথা আম্মু! আমার বিয়ে আর মেয়ে পছন্দ করবা তোমরা!
‘হু আমরাই করবো। এবার গেস্ট রুমে যা তোর ড্রেস রাখা আছে চেঞ্জ কর। তারপর বিকেলে আমার দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে যাবি।

‘দরজা খুলো আম্মু পরে দেখছি কি করা যায়।
‘দরজা খুলবে না, মেয়ে দেখে এসে ফিডব্যাক দিবি তারপর দরজা খুলবে।
‘মা’ একবার ভাবো আমার বৌ খুব ঝগড়ুটে হলো বা তাবিজ,টাবিজ করে আমাকে তার বশে করে নিল তখন?
‘করুক আমি চাই তোর বৌ তোকে বশ করুক, এসব লজিকলেস কথা আমাকে বলে লাভ নেই। আমার বৌ’মা যাই সে ঝগরুটে হোক বা যেমন হোক।
‘ঠিক আছে যাবো দরজা খুলে দাও।
‘আগে যাবে পরে পাবে।
আজরান গেস্ট রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলো। সে যাবেনা মানে যাবেনা।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে