.
–চলে গেছে মানে? (আমি)
.
–হ স্কুলে চলে গেছে। কি নাকি কাজ
আছে।(আম্মু)
.
–আচ্ছা। আমি তাহলে যাই। রিক্সা করে
স্কুল যাচ্ছি, আজ মনে হচ্ছে রিক্সা
চলছে না। রাস্তাও বুঝি আর
ফুরোচ্ছে না। কি কাজ থাকতে পারে
ওর?
না তেমন কোন কাজওতো নেই,,
আর প্রাইভেট স্যারের তো আজ পড়া
নাই।।
তবে কি কারো সাথে দেখা করতে
আসছে,, মেজাজটা বেশ খারাপ
হচ্ছে।।
রিকসা থেকে নেমে ভাড়া দিচ্ছি-
.
–মামা এই নাও
.
–কত দিলেন মামা?
.
–কেন ১৫ টাকা
.
–মামা ২০ টাকা তো।।
.
–১৫ টাকা দিছি ওটাই রাখো
.
–মামা আপনে ২০ টাকাইতো
দিতে চাইছেন।।
–দুর রাখো।।
কখনো রিকসা ওয়ালা মামাদের সাথে, উচু
গলায় কথা বলি না, কিন্তু কেন জানি আজ
বকা দিলাম। পরে আবার গিয়ে ৫ টাকা
দিয়ে আসলাম।
ক্লাসে ঢুকে যে সিন দেখলাম তা
দেখে মাথা গরম হয়ে গেলো।
আমার বউ অন্য ছেলের সাথে হাসি
তামাসা করছে। কেমন কাছে গিয়ে
কথা বলছে।
ওদের মাঝে কি তবে কিছু আছে?
ওরা কি তবে একে অপরকে,,,,,
.
না না কি সব ভাবছি আমি, আর ও চলে
গেলে তো আমার খুশি হওয়ার কথা।
আমার এমন লাগছে কেন। কেমন
যেন মনে হচ্ছে, যেমনটা প্রিয়
কোন জিনিস হারালে লাগে।
। ভাবতে
ভাবতে গিয়ে সান্তাকে ডাকলাম-
.
–সান্তা, শোন
আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে
নিলো,, মনে হলো আমি যেন বিরক্ত
করছি ওকে।।
–সান্তা,, এইদিকে শোন
.
–কি হইছে? (একটু রেগেই বল্লো)
.
–এদিকে একটু শোন
.
–যা বলার এখানেই বল।।
.
–না কিছুনা।।
.
বলেই চলে আসলাম।। আমি কি কম নাকি,
গিয়ে টিনার সাথে আমিও হাসি তামাশা শুরু
করে দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ ধরে
হাসি তামাসা করছি কিন্তু ও কোন রকম
রিসপন্স করলো না।। আজ ওর মাঝে
আর রাগ দেখতে পেলাম না। আজ আর
চোখ গরম করলো না, বেশ স্বাভাবিক
ভাবেই বসে আছে।। তবে কি সত্যি ও
ঐ ছেলেটার সাথে কোন
রিলেশনে জড়িয়েছে?
.
কেন জানি আজ আর ক্লাসে মন
বসছে না, যে মেয়ে দিনে অনেক
বার তাকাতো সে আজ ভুলেও একবার
তাকায়নি।।
.
স্কুল ছুটির পর বাসায় যাবো, কিন্তু রিকসা
পেলাম না।। তাই দুজন হেটেই যাচ্ছি
আর মাঝে মাঝে কথা বলছি–
.
–ঐ ছেলেটা কে রে?
.
–কেও না
.
–ও,, পছন্দ করিস?
.
–তাতে তোর কি?
.
–না এমনি,, তোদের ভাল মানাবে
.
–জানি,, ও কাল ওর আম্মুকে আমার কথা
বলবে।।
.
–এত ফাষ্ট তোরা?
.
–হুম
.
–আমার উপর রেগে আছিস?
.
–কেন? রাগ করবো কেন?
.
–না, এমনি মনে হলো,, আজ যে বিছানা
ভিজালি না, দুষ্টমিও করলি না।
.
–কে বলছে করি নি,, আজ ওরে (ঐ
ছেলে) কিল দিছি পিঠে।
.
–ও,, আচ্ছা তারাতারি হাট
.
কেন জানি খুব খারাপ লাগছে, আজ ও
অন্য কারো সাথে দুষ্টুমি করছে।
কিছু ভালো লাগছে না।বলতে ইচ্ছে
করছে, সান্তা তুই আমার সাথে দুষ্টমি
করবি, আর কারো সাথে না। কিন্তু সে
সুযোগটা হয়তো আর নেই।
.
বাসায় গিয়ে দেখি খেয়ে দেয়ে
সান্তা ব্যাগে কাপড় গুছাচ্ছে।।
.
–কিরে কই যাস? (আমি)
.
–কাল বাড়ি যামু
.
–কেন?
.
–তোগো বাড়ি থাইকা তোরে
দিস্টার্ব কইরা লাভ নাই। কাল আম্মু আব্বু
আসবো।
.
–তুই কোথাও যেতে পারবি না।
.
–আমাকে যেতেই হবে।
.
কেন জানি জোর করতে পারলাম না,
কারন এ বাসা থেকে যাওয়ার কারনটা যে
আমি। খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকের
ভেতরটা কেমন যেন করছে,,
কাঁদতে পারছি না। আম্মুর কোলে মাথা
রেখে কাঁদতেছি আর আম্মু বলছে
.
–কিরে কি হইছে?
.
–আম্মু অনেক পেট ব্যাথা করছে।
(সত্য কথাটা বলতে পারলাম না যে সান্তার
জন্য খারাপ লাগছে) .
–পানি দিয়ে ঔষধটা খা।।
.
–না খাবো না, এমনিতেই চলে যাবে।।
.
রাতে আর খেলাম না, শুয়ে পড়লাম।।
সান্তা আমার পাশে আর একটা কম্বল
নিয়ে শুয়ে আছে।। কেউ কিছু বলছি
না। অনেক ক্ষণ পর আমিই কথা শুরু
করলাম।।
.
–সান্তা,,,,,,,,,, ওই সান্তা,,,, ঘুমাইছিস?
.”
–কি হইছে বল।।
.
–কালকি সত্যি তুই চলে যাবি?
.”
— হ,, থাইকা কি করুম বল।।
.
–হ তাইতো,,
……(চলবে)
.
-আন্টি আন্টি দেখে যাও, তোমার
ছেলে বিছানা নষ্ট করে
ফেলেছে। এই বুড়া বয়সে।। –কি
করছিস এটা? (আম্মু)
.
–কিছু করি নি তো,,
.
–তাহলে বিছানা ভেজা কেন?
.
— ও ভিজাইছে।
.
–ও ভিজাইলে ওর জমা ভেজা থাকবো,
তোর প্যান্ট ভেজা কেন? .
— আন্টি আগে বলতা তোমার
ছেলের এ অভ্যাস আছে, তাহলে
আমার ভাতিজার পেমপার্স নিয়ে আসতাম,,
পড়ে ঘুমাইতো।। (সান্তা) .
–তুই কিন্তু বেশি কথা বলস (আমি) .
–ইইইই বিছানা নষ্ট করতে পারবা, কেও
বলতে পারবো না।
.
বলতে বলতে দুজনে রুম থেকে
চলে যায়, যাওয়ার আগে কি যেন ইঙ্গিত
করে সান্তা।। কিন্তু কি তা বুঝলাম না।।
তাহলে কি সত্যি সত্যি বিছানা নষ্ট করে
দিলাম,, খাটের তলা থেকে স্যান্ডেল
বের করতে গিয়ে দেখি খালি পানির
জগ, তার মানে বজ্জাতটার কাজ।। কিসের
পাল্লায় পড়লাম রে ভাই।।। ভাবতে ভাবতে
গোসল করে স্কুলের জন্য রেডি
হতে হতে ৮.৩০ বেজে গেছে। ।
বিয়ের পর প্রথম স্কুল আজ।
দুইজনে রিকসায় যাচ্ছি। রিকসাটাও যেন
ওর দখলে।। কোন রকম একটু বসে
যাচ্ছি আর রিকসাওয়ালা বলল।
.
–মামা গালফ্রেন্ড নাকি?
.
–গালফ্রেন্ড হলেতো ব্রেক আপ
কইরা বাইচা যাইতাম।। (আমি)
.
–তাইলে কি?
.
–এইডা আমার দজ্জাল বউ।।
.
–অই তুই আমারে দজ্জাল কইলি কেন?
(সান্তা)
.
–তোরে কি কইবো?
.
–মামা কওতো আমার মত সুন্দরি মেয়ে
ওর মত বাদর মার্কা পোলায় পাইবো?
.
. (রিকসাওয়ালা আমাদের দিকে ঘুড়ে
তাকিয়ে)
.
–না পাইবো না।
.
হায়রে কপাল, রিকসাওয়ালা মামাও ওর পক্ষ
নিলো। কোথায় যাবো।। নাহ আর না
ওরে আমি মজা দেখাবো।।
.
–অই তুই ঐ মায়ার দিকে তাকিয়ে ছিলি
কেন?
–কই নাতো।।
.
— হ তাকিয়ে ছিলি। দেক কারো দিকে
তাকাবি না, নইলে তোর খবর আছে।।
.
আমি অন্য কারো দিকে তাকালে
অনেক রাগ করে,, তাহলে অন্য
কারো সাথে প্রেম করতে
দেখলে কি অবস্থা হবে।। ও ইয়েস,,
দাড়াঁও মেয়ে তোমার প্রতিষোধ
নিচ্ছি।। .
স্কুলে সেরা ১০ সুন্দরিদের মধ্যে
ও নিজেও আছে। আর কাটা দিয়েই কাটা
তুলতে হবে।।। টিনাও সেরা সুন্দরিদের
মধ্যে ১ জন।। তবে টিনার সাথে আজ
থেকে প্রেম করবো,, টিনা আমাকে
আগে
থেকেই পছন্দ করে। ওর সাথেই
রিলেশন করবো। এ মেয়ের সাথে
সংসার করা যাবে না।
.
স্কুলে গিয়েই টিনার সাথে ঘেসে
ঘেসে কথা বলছি, আর হাসাহাসি করছি
দুজন।। আরেক জন লুচির মত
ফুলতেছে।। এটাইতো চেয়েছিলাম।।
যাক বাচা গেছে স্কুলের কেও
জানে না যে আমাদের বিয়ে হইছে।।
.
স্কুল ছুটির পর আবার রিকসায় বাড়ি যাচ্ছি,,
কিন্তু এবার আর কথা নেই।।মাথা নিচু করে
বসে আছে।। বাসায় গিয়েই আম্মুকে
বলছে।।
.
–আন্টি আমি বাসায় যাবো।।
.
–কেন বাসায় যাবে কেন? তোমার
আব্বু আম্মুতো হজ্জ থেকে
আসে নি।। তুমি একা বাড়িতে। না না
এখানেই থাক।।
.
–না আন্টি আমি বাসায় যাবো..
.
— পাজিটা কিছু করছে?
.
–না
.
— বকছে?
.
–না,, এমনিতেই বাসায় যাবো।।
.
–কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।। কাপড়
ছেড়ে গোসল করে খেতে
আস।।
.
আম্মুর কথায় বাধ্য হয়ে থাকছে। আমার
কি, গেলে ভালো হতো বেঁচে
যেতাম।। সাবধানে থাকতে হবে, আবার
কোন মতলব আটছে জানিনা।।
.সেদিনের মত রাতে খেয়ে
দেয়ে ঘুমাতে গেলাম। খেতে
বসে ওকে দেখা যায় নি,, রুমে এসে
দেখি ও আলাদা কম্বল নিয়ে শুয়ে
আছে।। আজ কম্বল ভিজায় নি, কোন
মতলবও করে নি।। যাক বাবা আজ
শান্তিতে ঘুমানো যাবে।। কিন্তু ঘুম
যেন আসছে না।। দুষ্টমি করলো না
কেন? ওর দুষ্টমিতে একটু একটু রাগ
হলেও বেশ ভালই লাগতো।। আজ
ভাললাগাটা মিছ করছি।।
আজ আর ঘুম আসলো না। মধ্যরাত
হয়ে গেছে কিন্তু ঘুম আসলো না।।
আজ ওর পাঁ’টাও আমার উপর দিয়ে দেয়
নি।। আমার উলটো দিকে মুখ করে
শুয়ে আছে।। যাক বাবা ঘুমাই সকাল সকাল
ওর আগে উঠতে হবে নইলে আবার
কোন কান্ড করে বসবে।।
.
সকালে উঠতে উঠতে তাও ৮টা
বেজে গেছে।। কাজ সেরেছে
আজ আবার কি করেছে,, বিছানা চেক
দিলাম, না ভেজা না।। আয়নার সামনে
গেলাম, না মুখেও কিছু নেই।। কেন
জানি খুব খারাপ লাগছে।। মনে হচ্ছে কি
যেন নেই।। সবকিছুর মাঝেও কি একটা
যেন নেই।। ভাবতে পারছি না।।
.
গোছল করে স্কুলের জন্য রেডি
হয়ে ৯ টায় নাসতা করতে বসছি। কিন্তু
ওকে দেখলাম না।। কেন যেন খুব
জানতে ইচ্ছে করছে দুষ্টুটা
কোথায়।।
.
–আম্মু,,
.
–কি বল?
..
–না কিছু না।।
.
–ওকে খা,,
.
–আম্মু, সান্তা কই? দেখছি না যে। .
–ও তো চলে গেছে……(চলবে)
!
!
..
কি করবো কিছুই বুঝতেছি না, আম্মু ওর
হাতে মানে ক্ষমতা ওর হাতে।।
জোট সরকারকে আমি বিরোধী দল
কি করতে পারবো।
কিন্তু করতে হবে, ভাবতে ভাবতে
মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। এক গ্লাস সরবত
বানিয়ে নিয়ে গেলাম।-
.
-সান্তা, সান্তা
.
-ওই আমার নাম ধরে ডাকলি কেন?
.
-তুইনা আমার আদরের বউ।
.
-বাহ বা,, এত পীরিত,, নিশ্চই কোন
মতলব আছে
.
-তুইযে কি বলিস, মতলব করবো কেন,
তাছাড়া তোরে সেই কবে থেকেই
আমার ভাল লাগতো, তোর দিকে
তাকিয়ে থাকতাম। (পুরাই ফাপড়)
.
-ওই মুখ ছুটাইস না, তুই তাকাইতি শ্রাবণীর
দিকে।।
.
(এই মেয়ে দেখি আমাকে আগে
থেকেই ফলো করছে, ফাপর
দিয়েও কাপড় ছিড়লো না।। উলটা ধরা
খেলাম)
.
.-দুর কি যে বলিস, তুইতো আমার সব,
আমার আদুড়ি।
.
–হইছে হইছে কি করতে হইবো
সেটা বল।।
.
– এই সরবতটা খা।। তোর জন্য বানিয়ে
এনেছি।।
.
–এত ভালবাসিস আমাকে?
.
-হুম, তুই বুঝিস না?
.
-হুম বুঝছি। দে গ্লাসটা (গ্লাসটা নিয়েই
চিল্লাতে থাকে,)
.
–আন্টি, আন্টি,, আন্টি,,,,
.
— আন্টিরে ডাকস কেন,, ওই থাম থাম
আম্মুরে কেন?
.
–কি হইছেরে মা? ( আম্মু)
.
–আন্টি, তোমার ছেলে আমারে
কি যেন খাওয়াইতে চাইছিলো, এই
সরবতে মিসেয়ে
.
–সত্যি? ছিজান বল এমন করেছিস? .
— না আম্মু কিছু নাই ওটায়।।
.
–তাহলে তুই খাঁ।।
.
(এই সেরেছে,, এটা খেলেতো
টয়লেটে গিয়ে বসে থাকতে হবে)
.
–না আম্মু একটু আগে অনেক পানি
খেলাম।।।
.
-আন্টি খাবেনা দেইখেন।। কার এডের
ভিতর কিছু দিছে।।
.
দুই জনের চিল্লা চিল্লিতে সরবতটা বাধ্য
হয়ে খেলাম।। খাওয়ার ঘন্টাখানেকের
মধ্যে একশন শুরু।। গুনে গুনে ১৭ বার
টয়লেটে যাই।। শেষবার টয়লেটে
যাওয়ার আগে দেখি টয়লেট তালা
দেওয়া।। আম্মুও পাশের বাড়ি গেছে।।
নিশ্টই এটা বজ্জাত মায়াটার কাজ।।
.
-ওই বাতরুমে তালা দিছে কে? (আমি)
.
-আমি।
.
-তুই ভয় পাসনা আমারে? আবার বলস
“আমি”
.
– তোরে? আর ভয়? হি হি হি
.
-হাসি থামা আর চাবি দে।
.
-না,, চাবিও দিমু না হাসিও থামামুনা,, হি হি হি, হো
হো হো।। (আরো যেন বেশি হাসি
শুরু করলো, এদিকে আমার যায় যায়
অবস্থা)
.
-দেনা চাবিটা?
.
-তাইলে ক আর আমার পেছনে লাগবি না
.
–আইচ্ছা, এবার চাবিটা দে (পেটে খুব
গন্ডগোল করছে। মনে হয় প্যান্ট
নষ্ট হয়ে যাবে।।) –এই নে এবারের
মত দিলাম,, আমার সাথে লড়তে আইলে
তোর অবস্থা খারাপ করে ফেলবো।।
.
চাবিটা নিয়ে বাতরুমে, গেলাম ইস
আরেকটু দেরি হলে প্যান্ট নষ্ট
হয়ে যেত।। মেয়েটাকে জব্দ
করতে হবে।। আজ বাতরুমে যেতে
যেতে অবস্থা শেষ।। দাড়াঁবার শক্তি
পাচ্ছি না।। ভাবতেছি আর মনে মনে
বলছি-সখী রাতে আসো দেখাবো
মজা।।। বাতরুম থেকে বের হয়ে
দেখি ও দাড়াঁনো।।
.
–ভিতরে বইসে বইসে কি ভাবলি,,
আমারে জব্দ করবি?
.
–না না, তা কেন,,, (ও জানলো
কেমনে আমি বসে বসে ওকে
জব্দ করার কথা ভাবছি,, মেয়েটাকি তবে
কালা জাদু জানে?)
.–দেক আমার সাথে পাঙ্গা লবি না।। মায়া
মানুষের সাথে পাঙ্গা লইলে তার ফল
ভাল হয় না।।
.
–থাক বাবা, তুই তোর মত আমি আমার
মত।।
.
–জি না,, আমি যা বলুম তোরে তা শুনতে
হইবো।।
.
–ইস আমার ঠেকা পড়ছে!!
.
-করবি নাতো? ঠিক আছে তোরে
দেখে নেবো।।
.
সেদিন রাতে বসে খাচ্ছি সবাই, খাবারটা
বেশ মজা হইছে।। আহ কি মজা, গরুর
মাংশটা বেশ হইছে।। তাই আম্মুকে
জিজ্ঞাস করলাম- .
-আম্মু গরুর মাংশ কে রান্না করছে?
.
-সান্তা,, কেন?
.
-একটুও মজা হয় নাই। (মজা কিন্ত ঠিকই
হইছে, বাট উলটা টা বল্লাম,, বলতে
চাইছিলাম মজা হইছে বাট ও রান্না করছে
তাই বল্লাম মজা হয় নাই )
.
-মজা হয় নাই? কাওরে খাইতেতো
কেও জোর করতাছে না।। আন্টি
আপনার কেমন লাগছে?
.
— হুম, অনেক মজা হইছে।। (আম্মু) .
–আন্টি তোমার মজা লাগলেই হইবো।।
.
মজার মাংশ প্লেটে রেখে উঠতে
ইচ্ছে হচ্ছিলো না। কিন্তু ইজ্জতের
একটা ব্যাপার সেপার আছে। উঠে
রুমে গেলাম।। আজ নিজের কম্বল
আলাদা এনেছি। আজ আর আমাকে
জ্বালাতে পারবে না।।
.
কিন্তু যা ভাবলাম তার উলটোটা হলো।।
ও জগ দিয়ে পানি আনলো। ভাবছিলাম
আমার কম্বলটা ভিজাবে।। একি সে
নিজের কম্বলটাই ভিজালো। আবে মায়া
নিজেরটা নিজেই ভিজাইলো, মাথা খারাপ
হইলো নাকি। যাইহোক আমারটা ভিজায় নি
তো।।
.
কম্বল ভিজিয়ে বাইরে
চলেগেলো।।
এবার দেখি আম্মুকে নিয়ে এসে
রিপোর্ট-
.
–আন্টি দেখো তোমার ছেলে কি
করছে?
.
–কি করছে?
.
–আমার কম্বলে পানি ঢেলে দিছে।।
.
(বলেই নেকা কান্না শুরু করছে, আর
আমাকে লুকিয়ে, লুকিয়ে
ভেঙাচ্ছে।। আল্লাহ কোথায় এসে
পড়লাম।।)
.
— আম্মু আমি ভিজাই নি, ও নিজেরটা
নিজেই ভিজাইছে।।
.
—থাক, আর বলতে হইবো না।। যা দুইটায়
এক কম্বল নিয়েই ঘুমা।। .
কিছু করার নেই, একই কম্বলের নিচে
দুজনে শুতে হলো কিন্তু কম্বলটা
কালকের মত আবার নিজেই দখল করে
নিলো।। আম্মুকে ডাকতে চাইলাম
.
–আম্মু, আম্মু
.
-বুইড়া পোলা আম্মুরে কেন?
.
-দেখামু কতটুকু কম্বল দিছস।। .
–ও তাই,, দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা,, তোর কষ্ট
করা লাগবেনা আমিই ডাকি।। আন্টি আন্টি
.
–অইে চুপ চুপ।। আর করুম না
.
–কানে ধর
.
–না,,
.
— আন্টি,,,,
.
– ধরছিতো,,
.
–এবার ঘুমা।। কিছু করার চেষ্টা করবি তার
ফল ভাল হবে না।। কিছু বল্লাম না, ঘুমিয়ে
পড়লাম।। সারা দিনের ধকলে শরির
ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
প্রতিদিনের মত আজও মাঝরাতে ঘুম
ভেঙে যায়।। ঘুম ভাংতেই দেখি তার
একটা পাঁ আমার উপর দিয়ে ঘুমাচ্ছে।।
ইচ্ছে হচ্ছে পাঁ টা ভেঙে দেই।।
কিন্তু শত হলেও আমার বউতো।। তাই
আমিও ওর উপর হাত দিয়ে ঘুমিয়ে
পড়লাম।। সকাল বেলাই ওর চিল্লাচিল্লি
শুনে ঘুম ভাংলো,।। আম্মুকে ডাকছে-
.
— আন্টি, আন্টি দেখে যাও তোমার
ছেলে কি করছে।।
.আবার কি করলাম,
আবার কোন মতলব আটলো দুষ্টুটা?………(চলবে)
!
আম্মু আম্মু ঐ মেয়েটা নাকি
আমার সাথে শুবে।।
আমার বিছানায়। কেমন লাগে
বলো।। এমনিতেই আমার রাতে
লুঙ্গি ঠিক থাকে না, তার উপর
আবার এই মেয়ে যে দুষ্টু।। না না
আম্মু, আমার রুমে আমি একা
থাকবো।।
.
তখন থেকে আমি আম্মুকে বলেই
যাচ্ছি, বলেই যাচ্ছি কিন্তু আম্মু
কিছু বলছে না। শুধু মুচকি মুচকি
হাসছে।।
বিরক্ত হয়ে শুতে আসলাম।। কিন্তু
সেই মেয়েটা আমার বিছানা দখল
করে আছে।। কি পাজিরে ভাই,
কিছু বল্লেই সাপের মত ফনা তুলে।
কিছু বলতে পারি না।
না জানি কি করে বসে।। কিছু
বলার আগেই আন্টি আন্টি করে
আম্মুকে ডাকে। আর কি সব
বানিয়ে বানিয়ে বলে আম্মুর
হাতে আমাকে জব্দ করে।।
এই পাজি মেয়েটাকে আম্মু আমার
গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে।।
.
একদিন যেই ক্লাসে একটু কলম
চেয়েছিলাম বলে কেমনই না
করলো।। আমাকে সারা ক্লাস
ভেঙিয়েছে।।।
.
আম্মুযে কি করলো, পাজি আর
ফাজিল মেয়েটারে আমার গলায়
ঝুলিয়ে দিলো।
.
.ক্লাসের সবাই যদি জানে
আমাদের দুজনের বিয়ে হইছে,
তবেতো শেষ।। তার উপর আবার
আমি মাত্র ১৬ বছর বয়সি। এত
পিচ্চি বয়সে বিয়ের কথা বল্লে
কেমন যেন হাসে।। যাইহোক
সাত পাঁচ না ভেবে ওকে
ডাকলাম।।
.
-ওই শোন।
.
-কি হইছে? (এমন ভাব নিলো যেন
রুমটা ওর)
.
-আমার রুমে, আমারই বিছানায়
শুয়ে বলছো কি হইছে?
.
-তোর রুম,? তোর বিছানা? নাম
লেখা আছে?
.
-নাম লিখা লাগবে না, এগুলো
আমার
.
– বল্লেই হলো আমার,, এগুলো
আমার, আমি আগে শুইছি আমার।।
.
কিসের পাল্লায় পড়লামরে বাবা,
আমার বিছানা দখল করে, বলছে
তার বিছানা।।
এই ছিলো আমার কপালে। বাসর
রাতে নাকি কত রোমেন্টিক কথা
বার্তা বলে, বউ আর বর।।
আমার বউ, ইস যেন ধানি লঙ্কা।।
কি আর করার, শীতের ভেতর ছোট
লেপটা নিয়ে পাশাপাশি শুয়ে
আছি, কিন্তু লেপটা যেন তার
একাই লাগবে।। টেনে পুরোটা
নিজেই দখল করে রেখেছে। তাই
বিরক্ত হয়ে বল্লাম-
.
-দেখ ভাল হচ্ছে না কিন্তু
.
-অই অই তুই আমারে কি ভাল
দেখাবিরে?
.
-তোরে ধইরে পিটামু।
.
-ইইইইইইই,,, আইছে বীরপুরুষ,,রাত্র ে
নিজের লুঙ্গি ঠিক রাখা পারে
না, আসছে আমার সাথে পাঙ্গা
লইতে।।
কিছু বল্লাম না, এ মেয়ে দেখি
সবই জানে, ইজ্জতের ১২ টা
বাজিয়ে দিবে নইলে।। ঘুমানোর
চেষ্টা করছি আর ভাবছি,,
১৬ বছরে কোন ছেলে যেন বিয়ে
না করে নইলে আমার মত ফাইসা
যাইবো।।।
.
মাঝরাতে কেনযানি ঘুমটা ভেঙে
যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি ও
ঘুমিয়ে আছে, এলোচুলে যেন ওর
প্রতি কেমন যেন একটা আকর্ষন
হচ্ছে,, ইচ্ছে করছে ওর এলো চুল
গুলো ঠিক করে দিই।।
ডিম লাইটের আলোতে, ওকে যেন
সর্গের পরীর মত লাগছে।।
আমি ছুয়ে দিতেই, চ্যা চ্যা করে
চিল্লায় ও।।
.
–অই অই মায়া মানুষের শরিরে হাত
দেস? আন্টি আন্টি..
(বলতে বলতেই চেচায়, আমি হাত
দিয়ে মুখটা চেপে ধরতেই সজরে
কামড় বসিয়ে দেয়।।)
–মা গো বাবা গো,,, আমাকে
কামড় দিয়ে মেরে ফেল্লো গো।।
এবার ও আমার মুখ চেপে ধরে।
আমি কিছু বল্লাম না।।
.
–কিরে কামড় দিবি না? (ও)
.
-না দিবো না,, আমি তোর মত
ফাজিল না।।
.
–আমি ফাজিল হইলে তুই
ফাজিলের জামাই,, হি হি হি
.
-হাসিছ না হাসিছ না, হাতটা
জইলে গেছে
.
–কই দেখি দেখি
.
—না দেখা লাগবো না, কামড়
দিয়া অহন আবার ঢং
.
-কি আমি ঢং করি?
.
-তা নাইলে কি,, যা ঘুমা আমারেও
ঘুমাইতে দে।।
.
সেদিনের মত ঘুমিয়ে পড়লাম,
সকালে ঘুমথেকে উঠে দেখি,
পাজিটা ঘুমাচ্ছে।। ইচ্ছে হচ্ছিলো
পাতিলের তলাটা ঘষে সাদা
মুখটা কালো করে দিই। কিন্তু
দিলাম না।।
ঘড় থেকে উঠে আমার নিত্য
দিনের অভ্যাস সূর্যটা দেখা, তাই
দেখতে বেরুলে, সবাই আমার
দিকে তাকিয়ে হাসে। কিছু বুঝে
উঠার আগে তুমুল হাসি।। অতিপতি
করে আয়নার সামনে গিয়ে দেখি!
গালে পাওডার, ঠোঁটে
লিপিষ্টিক, কপালে টিঁপ। এগুলো
বজ্জাতটার কাজ।। বজ্জাত
মেয়েটার আজ খবর করছি,, আজ ওর
একদিন কি আমার একদিন।। বলতে
বলে বেশ রেগে মেগেই রুমে
গেলাম কিন্তু কোথাও খুজে
পেলাম না।। শেষে দেখি আম্মুর
পেছনে গিয়ে লুকিয়েছে।।। একি
সর্বনাস হলো আমার। আমার
আম্মুটাকেও দখল করে ফেলেছে।।
এ মেয়েকে যে করেই হোক দ্রুত
তাড়াতে হবে।।…..(চলবে)
মিলিকে বিয়ে করার পর বাসর রাত থেকে অবাক হওয়া শুরু হয়েছে,সেটা এখনো চলছে।
আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাসর রাতে ঘরে ঢোকার আগে আমাকে খুব করে বলল,,,
–বউকে যতটা সম্ভব হাতের মুঠোয় রাখবি ?
•
–কিভাবে ?
•
–খুব ভয় দেখাবি,,,,আর কঠিন গলায় কথা বলবি,,,,
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,,,,,
–ভার্সিটি পড়ুয়া একটা মেয়ে,আমি তাকে এভাবে ভয় দেখাবো আর সে পাবে,,,,
•
–হুম,,,,পাবে,,,,
আমার বন্ধু হয়তো ভুলেই গেছে যে, বিয়ের পর থেকে ওর বউ ওকে এখানো হাতের মুঠো করে রেখেছে সেটা আমি যানি না।
যে মানুষ নিজের বউকে হাতে রাখতে পারেনি। এখনো নিজের বউয়ের কথায় উঠ বস করে।
এরকম একজন মানুষের থেকে টিপস নিয়ে নিজের বউকে হাতে রাখার চিন্তা করা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
তাই এসব চিন্তা বাদ দিয়ে বাসর ঘরে ডুকলাম,,,
মিলিকে আগে থেকেই হালকা চিনতাম।মিলি আমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে দু একবার আমাদের বাসায় এসেছিল।
আমি বিছানায় গিয়ে বসতেই মিলি বলল,,,,
–কোন বুদ্ধি করে আসছ ?
•
–কিসের বুদ্ধি ?
•
–আমাকে হাতে রাখার ?
•
–নাহ,,,
•
–সত্যি,,
•
–আসলে, খুঁজেছি কিন্তু কোন বুদ্ধি পাইনাই।
•
–আর কখনো খুঁজবাও না কোন বুদ্ধি।
•
–কিন্তু তুমি কিভাবে বুঝলা ?
•
–সব ছেলেরাই এমনই হয়,,,বাসর রাতে বিড়াল মারার চিন্তা ভাবনা করে আসে।যাতে মেয়েরা তাদের সব সময় ভয় পায়।
•
–ওহ্,,,,তোমার তো দেখি ভালো অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যাপারে।আগে কি কখনো বিয়ে হয়েছিল নাকি ?
•
–আজব,,,এসব জানতে হলে কি বিয়ে করা লাগে নাকি।
•
–তাহলে,,,
•
–যে বান্ধবী গুলির বিয়ে হয়েছে তাদের থেকে জেনেছি।
•
ওহ্
•
–কেন তোমার বন্ধুরা তোমাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনাই,,,
•
–ওরা আর কি বলবে,,,নিজেদের বউকে হাতের মুঠোয় আনতে গিয়ে নিজেরাই বউদের হাতের মুঠোয় চলে গেছে,,,
•
–তাই,,,নাকি,,,
•
–হম,,
সেদিন থেকে মিলিকে একটু কঠিনই মনে হত।তবে এখন অতটা মনে হয়না।
কিছুদিন আগের ঘটনা,,,
রাতে বাসায় ফিরে দেখি মিলি বই পড়তেছে,,,
ওর কাছে গিয়ে বললাম কাল তো আমার অফিস বন্ধ।চলো কাল কোথাও ঘুরতে যাই,,,
আমার কথা শুনে মিলি কোন উওর দিল না।
মিলির কাছ থেকে আশা অনুরূপ কোন উওর না পেয়ে খুব হতাশ হলাম।
পরের দিন বিকেল বেলা মিলি আমাকে দুটি শাড়ি দেখিয়ে বলল কোন শাড়িটি পরলে আমাকে মানাবে,,,,
–দুটি শাড়িই খুব ভালো।তুমি যাই পরবে তাতেই তোমাকে ভাল লাগবে,,,
আধা ঘন্টা পর মিলি রুম থেকে বেরিয়ে এল নীল শাড়িটা পরে।ও নীল শাড়িটা পরাতে আমি একটু আবাকই হলাম।
কারো প্রতি ভালবাসা থাকলে হয়তো তার মনের কথা জানা যায়।আর মিলিও হয়তো এভাবেই আমার মনের কথাটা জেনেছে।
মিলি আমার কাছে এসে বলল,,,
–কেমন লাগছে আমাকে ?
•
–ভাল,,
•
–শুধু ভাল,,,আর কিছু না।
আমি মিলির কপালের টিপ টা ঠিক জায়গাতে বসিয়ে তারপর বললাম এখন পারফেক্ট লাগছে।
–আমি কপালের টিপ টা ইচ্ছা করেই ঠিক জায়গাতে পরিনি।
•
–কেন ?
•
–তোমাকে পরীক্ষা করে দেখলাম আমার সবকিছু তোমার নজরে পরে কি না।
•
–হম বুঝলাম,,,কিন্তু এত সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছ তুমি ?
•
–ঘুরতে,,,
•
–কার সাথে ঘুরতে যাবে ?
•
–তোমার সাথে,,
•
–কাল রাতে যখন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছিলাম তখন তো কিছুই বললে না।
•
–তখন বলিনি তো কি হয়েছে এখন তো বলছি,,,
যাও তারাতারি রেডি হয়ে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছি,,,,
আমি রেডি হয়ে এসে দেখি মিলি আমার জন্য বসে আছে।তারপর দুজন একসাথে বের হলাম।
–এই রিক্সা যাবে ?
•
–কোথায় যাবেন ‘স্যার’
•
–যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন গন্তব্যে নেই।তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী এই শহরের অলিতে গলিতে সন্ধ্যা নামার আগ পযন্ত আমাদের কে তোমার রিক্সায় নিয়ে ঘুরবা।
•
–আচ্ছা ‘স্যার’,,,, রিক্সায় উঠে বসেন।
রিক্সা চলতেছে তার আপন গতিতে।মিলি তাকিয়ে আছে প্রকৃতির দিকে আর আমি তাকিয়ে আছি মিলির দিকে।
নাকি শুধুমাত্র দেহের প্রতি চাহিদা? নিদ্র কাছে আসলেই ঠোঁটে, গলায়, কোমড়ে স্পর্শ করবে। এমন কেনো?
কাছে বসে তো গায়ে হাত না দিয়েও তো ভালোবাসা যায়।
তাহলে ও কেনো এমন? সকাল টাই তার নষ্ট করে দিয়ে গেলো। একটু না করাতেই রাগ করে অমনি চলে গেলো। পাশে একটু বসলো না!
রুমে গিয়ে কী করছে কে জানে! সারারাত ঘুমায়নি সেটা ওর চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চোখ মুখে চিন্তার গভীর ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো। একজন মানুষের কখন রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়?
খুব বড় ধরনের চিন্তাভাবনা নিয়ে যখন ব্যস্ত থাকে, তখন। আমার জন্যই ও চিন্তিত ছিলো, আর আমিই কিনা এরকম বাজে ব্যবহার করলাম?
সারারাতের চিন্তার পর একটু স্বস্তি খোঁজার জন্যই হয়তোবা তার এতো কাছে এসেছিলো। আর সে কিনা এমন ভাবে….
আর এমন না যে নিজের কাছে ওর এই ধরনের পাগলামি খারাপ লাগে।
অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হয়। অজানা অচেনা অনুভূতি তড়িৎ গতিতে তার পুরো শরীরে বয়ে যায়।
ওর নিশ্বাস আর শরীরের গন্ধটা আরও বেশি অস্থিরতা তৈরি করে। অস্থিরতা টাই সহ্য হয়না তার।
যেখানে সে ভালোবাসে কিনা শিওর না সেখানে এভাবে স্পর্শ করতে দেয়াটা ঠিক না।
মাথার বাপ দিকে খুব ক্ষীণ একটা চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়েছে। ব্যথাটা বেড়ে যাবে অদ্রির মনে হলো।
অদ্রি তাকে এভাবে অপমান করতে পারে ভাবতেও পারছেনা নিদ্র। ভালোবাসলে স্পর্শ করবে – এটাই স্বাভাবিক। পুরো এক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে সে। অদ্রি কি সেটা জানে? কতোটা চিন্তার আর কষ্টের একটা রাত ছিলো সে ভাবতেও পারে? পুরো রাত তো নাক ডেকে ঘুমিয়েছে, সে কি বুঝবে! কিছুই না।
বাস্তবতা অনেক কঠিন। ভালোবাসলেই তাকে কাছে পাওয়া যায়না।
নিদ্রের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এমন ভাবে রিজেক্ট হতে হবে ভাবতেই পারছেনা সে।
সকালের নাস্তা করে ব্যথার মেডিসিন খাওয়ার পরে কিছুটা ভালো লাগতে শুরু করলো। রিতা তাকে বিছানা থেকে নামতে সাহায্য করাতে একটু সুবিধাই হলো।
নিদ্র কি নাস্তা করেছে নাকি রাগ করে আছে? রিতাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা যাবেনা। সন্দেহ জাগলে সমস্যা।
– খালা মনি?
– হ্যাঁ বলো।
– সবার নাস্তা করা শেষ?
– হ্যাঁ।
– আপনি করেছেন?
– করবো।
– সবারই তো শেষ?
রিতার মনে পড়লো ওই নিদ্র নামের ছেলেটাকে সে নিচে নামতেই দেখেনি।
– না একজন নাস্তা করেনি। নিদ্র নামের ছেলেটা আজকে নিচেই নামে নাই। খুব অদ্ভুত ছেলে। গতকাল রাতে তোমার অজ্ঞান হওয়ার পরে ওই ছেলেই কোলে নিয়ে বিছানা অবদি নিয়ে এসেছিলো।
ছেলেটার গেঞ্জিতে রক্ত মেখে অবস্থা খারাপ ছিলো।
– আপনি ট্রে তে করে খাবার নিয়ে আসবেন?
– আমিই তাহলে দিয়ে আসবো?
– না, আমিই পারবো। এক হাতে ধরতে পারবো।
অদ্রি বাম হাতে ট্রে নিয়ে নিদ্রের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক বার নক করার পর নিদ্র দরজা খুলে দিলো।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো
– কিছু বলবেন?
– আমাকে ভিতরে আসতে তো দিবেন?
নিদ্র দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো।
– ট্রে টা তো ধরবেন।
নিদ্র ট্রে নিয়ে ছোটো টেবিলের উপর রেখে দিলো। অদ্রি বললো
– দরজাটা আটকান। আপনার সাথে আমার কথা আছে।
– না, এভাবেই বলুন। আমি আপনার কথার অমান্য করতে চাচ্ছি না।
– দরজা আটকান। এটাও আমার কথা।
অগ্যতা নিদ্রকে দরজা আটকে দিতে হলো।
বিছানার উপর আয়েশ করে বসে অদ্রি বললো
– নাস্তা কেনো করেননি?
নিদ্র দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বললো
– ঘুমাচ্ছিলাম।
– আপনার চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছেনা।
– কী বলার জন্য এসেছেন বলে চলে যান।
অদ্রির কিছুটা খারাপ লাগলো কথাটা শুনে। আসলে দোষ তো তার নিজেরই। না করারও একটা সিস্টেম আছে।
– নাস্তা এনেছি করে নেন।
– আপনি যান আমি করে নিবো।
– আপনি আমার সামনে নাস্তা করবেন। তারপর আমি যাবো।
নিদ্র রেগে গিয়ে বললো
– আমি সবসময় কেনো আপনার কথা শুনবো? আপনি তো কখনো আমার কথা শুনেন না।
নিদ্রের কাছে গিয়ে অদ্রি বললো
– আচ্ছা, এখন থেকে শুনবো। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো?
নিদ্র চাপাস্বরে বললো
– রাগবো না কেনো? সারারাত আপনার চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি। আপনাকে ভালোবাসি বলেই চুমু দেই, আদর করি, স্পর্শ করি। ভালোবাসলে তাকে কাছে পেতে প্রত্যেক পুরুষেরই ইচ্ছা করে। আমি একা নই, যার সাথেই রিলেশনে যাবেন সেই চাইবে।
তাহলে আমার ক্ষেত্রে কেনো এতো নিয়ম?
নিদ্রের বুকের উপর বাম হাত রেখে অদ্রি খুব আস্তে আস্তে বললো
– sorry আর হবেনা এমন। আপনি আমাকে যখন ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা স্পর্শ করতে পারেন।
– আমি মোটেও আপনাকে স্পর্শ করবো না। কোনোদিনও না।
অদ্রির সামনে একটাই উপায় – নিজ থেকে এগিয়ে যাওয়া। কারণ সে নিদ্রকে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে দেয়া যাবেনা। এমনও হতে পারে তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে।
নিদ্রের চিবুকে চুমু দিয়ে অদ্রি বললো
– সরি বললাম তো!
নিদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে।
নিদ্রকে জড়িয়ে ধরলো এমনভাবে যে মাঝে এক চুল পরিমাণও ফাঁক রইলো না।
নিদ্র রাগীস্বরে বললো
– হয়েছে আর ঢং করতে হবেনা। নিজেই না করে নিজেই আবার আসে।
নিদ্রের চিবুকে চুমু দিয়ে বললো
– কী করবো বলুন? বড্ড ভালোবাসি যে।
– ছাই।
– না, আপনি একটা রত্ন। দেখুন তো কী পরিমাণ সুন্দর আপনি! আপনার সংস্পর্শ কোন মেয়ে চাইবেনা?
– অন্য কেউ চাইলেও। আপনি চান না।
– আচ্ছা রাগ করা থামান তো। এবার আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন তো। সকালে যেভাবে চুমু খেয়েছিলেন ঠিক তার চেয়ে দ্বিগুণ গভীর চুমু দিন তো। যেন আমি আমার খেই হারিয়ে ফেলি আপনার মাঝে। প্লিজ নিদ্র, না করবেন না।
নিদ্র দুই হাতে অদ্রির মুখ তুলে নিয়ে প্রথমে কপালে চুমু দিলো আলতো করে। তারপর গালে পাগলের মতো চুমু খেলো। অদ্রি অস্থিরতায় নিজেকে সামলে নিতে পারছিলোনা। মনে হচ্ছে একবারেই মিশে যেতে নিদ্রের সাথে।
নিদ্র আলতো করে অদ্রির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে চুমু খেতে শুরু করলো। চুমুর তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। অদ্রি পুরোপুরি ভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেললো।
প্রতিটা চুমুতে ভালোবাসা, অস্থিরতা, অভিমান মিশে আছে নিদ্রের। নিদ্র যে কতোটা অস্থির হয়ে আছে তার প্রতিটি চুমুতে প্রকাশ পাচ্ছে।
অদ্রির বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। শেষ হবে কবে কে জানে???
নির্ঝরিণী গান শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে নিজের সিটে এসে বসলো
করতালিতে চারি দিকে মুখর,আর মুগ্ধতা সবার চোখে
এবার আয়াপ গান গাইবে, আয়াপ স্টেজে উঠে নির্ঝরিণীর দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলো
নির্ঝরিণী অস্বস্তিতে পড়ে গেলো
তার পর আয়াপ গান গাইতে শুরু করলো
“থাকতে পাশে হয়নি জানা ছিলাম তোমার আপন কতো
সব হারিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে বুকে নিয়ে গভীর ক্ষত
মাঝখানে দেয়াল দুই দিকে দুইটি জীবন
এভাবে জীবন আমি চাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে তোমায় পাইনি ।।
করোনা ক্ষমা ই অনুনয়, কাটেনা একা কি সময়
তোমাকে ছাড়া জীবন ছন্নছাড়া বেছে থাকা যন্ত্রণাময় ।।
মাঝখানে দেয়াল দুই দিকে দুইটি জীবন এভাবে জীবন আমি চাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে তোমায় পাইনি ।।
বুঝে ও বুঝিনি কি করেছি ভুল কি করে দেবো সে মাশুল এসো না ফিরে তুমি থেকো না দূরে
ও আমার অভিমানী ফুল ।।
মাঝখানে দেয়াল দুই দিকে দুইটি জীবন এভাবে জীবন আমি চাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে তোমায় পাইনি ।।,,,
গান শেষ হলো তবু ও চারি দিকে নিরাবতা
নির্ঝরিণীর অস্বস্তি আর ও বেড়ে গেলো মনে হচ্ছে পুরো গান আয়াপ নির্ঝরিণী কে ভেবেই গেয়েছে
নির্ঝরিণী তবু মনকে পাত্তা দিলো না নিজের মন কে বুঝালো,সব বুঝার ভুল
অনুষ্ঠান শেষে নির্ঝরিণী চলে যাচ্ছিলো আয়াপ এসে নির্ঝরিণী কে বাধা দেয়
আয়াপ- নির্ঝু প্লিজ আমার কথা শুনো দেখো সেদিন তুমি যা ভেবেছো সব ভুল
নির্ঝরিণী – আমি যা বুঝেছি সেটাই ঠিক আপনি এখন আমাকে ভুল বুঝানোর চেষ্টা করছেন
আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাইনা
প্লিজ লিভ
আয়াপ- তোমাকে শুনতেই হবে
নির্ঝরিণী – পাব্লিকের সামনে সিনক্রিয়েট করবেন না প্লিজ,
আয়াপ- আমার একটা কথা…….
নির্ঝরিণী – চুপ একদম চুপ একটা কথা শুনতে চাই না আপনার কাছে এর পরে ও যদি আপনি কথা বলেন তা হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি
নির্ঝরিণী আর পিছনে না থাকিয়ে হাটতে থাকে
গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে নির্ঝরিণী
একটা মেয়ে এসে বল্লো
– হাই নির্ঝরী আপু তোমার গান আমার কাছে অনেক ভালো লাগে,, একটা সেল্পি নিই তোমার সাথে
নির্ঝরিণী – সিওর, সেল্পি তুলে মেয়েটি চলে যাচ্ছিলো আবার পিছনে ফিরে বল্লো আপু,এই টা তোমাকে আয়াপ খান দিয়েছে
নির্ঝরিণী – কি এটা?
মেয়েটি বল্লো তুমি পড়ে দেখো কি আছে এতে,এই বলে মেয়েটি চলে যায় নির্ঝরিণী কাগজ টা ব্যাগের মধ্যে রেখে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে
অফিস শেষে মিথিলা বাসায় এসেই শুয়ে পড়লো খুব টায়ার্ড লাগছে এমন সময় মিথিলার ফোন আসে
মোবাইলের স্কিনে ইহানের নাম টা ভেসে উঠলো
মিথিলা- হ্যালো ইহান বল
ইহান- মিথিলা তুই জলদি সরোওয়ার্দি হসপিটাল চলে আয়, অরনির অবস্থা ভালো না
মিথিলা কথা টা শুনে আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো
হাসপাতালের ক্যাবিনে বসে আছে ওরা চারজন,অরনির মা নিচে গেছে ওষুধ আনতে
অরনি এতোক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকলে ও চোখ খুলে সবাই কে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো কিন্তু সেই হাসিতে কোন প্রান নেই
– তোরা সবাই এসে পড়েছিস দেখছি,কি ভেবেছিলি আমি মরে গেছি?
মিথিলা- এমন করে বলিস না অরু
অরনি- তোকে আর ইহান কে এক বাধনে বেধে তার পর আমি শান্তিতে চলে যাবো
মিথিলার কথা শুনে সাম্মি নড়ে ছড়ে উঠলো
ইহান- অরু তোকে একটা কথা জানানো হয়নি শুধু তুই কেনো এখানকার কেউ ই জানে না,
আমি জানি না তোরা আমার কথা কি ভাবে নিবি তবু ও বলছি অরুর জন্য,, অরু, মিথি ভুল হলে তোরা আমায় ক্ষমা করে দিস
মিথিলা- এমন কি কথা বলবি যে আগে ক্ষমা ছেয়ে নিলি
অরনি চুপ করে ইহানের দিকে ছেয়ে আছে বুঝার চেষ্টা করছে ইহান কি বলতে চায়
ইহান সাম্মির দিকে তাকিয়ে বল্লো
– সাম্মি তুই কথা টা বল
সাম্মি ইতস্তত করে বল্লো তুই বল
ইহান- আসলে শুন, মানে মিথিলার বিয়ের সময়, আসলে
ইহানের নার্ভাসনেস দেখে
সাম্মি বল্লো- আসলে আমরা দুজন বিয়ে করে নিয়েছি
অরনি যেন বড় একটা ধাক্কা খেলো চোখ বড় করে বল্লো কি বললি
মিথিলার মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না মনে হয় যেন কিছুই হয়নি সব স্বাভাবিক
রাহি- কখন করলি বিয়ে কি ভাবে হলো আমাদের তো বললি না, কি করে গোপন করলি আমাদের কাছে থেকে
ইহান চুপ করে বসে আছে, কিছুই বলতে পারছে না নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে
সাম্মি- আসলে মিথিলার বিয়ের দিন ইহান রাগ করে বেরিয়ে যায় আমরা কেউ সেদিনের পর থেকে ইহানের খবর পায়নি,তার কিছুদিন পরে আমি রাজশাহী যাই আমার আন্টির বাসায়, রাজশাহী কলেজে আমার কাজিন পড়াশুনা করে তো কাজিনের সাথে দুষ্টুমির ছলে ওর কলেজে যাই,আর সেই কলেজে আমি ইহান কে দেখতি পাই খুব অবাক হয়েছি আমি ইহান কে রাজশাহী কলেজে দেখতে পেয়ে,সেদিন ইহানের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম ইহান আগের মতো নেই খুব ভেংগে পড়েছে, তখন ইহান তোদের দুজনের কথা শুনতেই পারতো না,আর ইহান আমায় বলে তার সাথে দেখা হওয়া, কথা হয়েছে এগুলা যেন তোদের না বলি,ট্রাষ্ট মি দোস্ত আমি বলতাম তোদের কিন্তু ইহান আমায় প্রমিজ করায় তাই আমি……এতোটুকু বলে সাম্মি চুপ হয়ে যায়
পুরো রুমে পিন পতন নিরাবতা কারো মুখে কোন কথা নেই
নিরাবতা ভেঙে ইহান বল্লো
– সেদিন থেকে সাম্মির সাথে আমার যোগাযোগ হতো,আর সাম্মি আমাকে প্রচুর মেন্টালি সাপোর্ট দেয়,একটা সময় আমি দেশের বাইরে চলে যাই,সাম্মির সাথে ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিই
তার কিছু দিন পর সাম্মি অস্ট্রিয়ায় যায় একটা পার্টিতে সাম্মির সাথে কথা হয়,,
তার পর জানতে পারি কাকতালীয় ভাবে সাম্মির মা আর আমার মা কাজিন সিস্টার উনারা আমাদের বিয়ের জন্য প্রেসার দেয় তখন ও আমার মিথিলা অরনির উপরে রাগ কমেনি আমি রাগের মাথায় মা কে বলে দিই আমি বিয়ে করবো কিন্তু সেটা যেন জানা জানি না হয়,খুব ঘরোয়া ভাবে আব্বু আম্মুর উপস্থিতিতে আমাদের বিয়ে হয়
সাম্মি- দোস্ত তোরা আমায় ভুল বুঝিস না আমি চাইনি বিয়েটা করতে, কিন্তু ইহান তখন অনেক সিনক্রিয়েট করাতে রাজি হলাম
ইহান- আসলে তখন আমি ভেবেছি তোরা দুজন আমাকে কষ্ট দিয়ে ভালো আছিস,আমি কেনো ভালো থাকবো না, তার অনেক পরে শুনি আমার আপু বিয়ে করেছে আর তাদের কাপল পিক আমায় পাঠায় তখন আমি আপির সাথে ইভান কে দেখে রাহির সাথে যোগাযোগ করি আর জানতে পারি সব কিছু
তার কিছুদিন পরে আমি দেশে আসি সাম্মি কে ওখানেই রেখে আসি,সাম্মি আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে,বলেছে মিথিলার বিপদে তুই পাশে না থাকলে কে থাকবে
ইহান এতোটুকু বলে থেমে গেলো,
সাম্মি- স্যরি মিথিল, স্যরি অরু
মিথিলা উঠে সাম্মির পাশে এসে বসে বল্লো
-স্যরি বলছিস কেনো,খুব ভালো হয়েছে, আমি অনেক খুশি আজ
সাম্মি- দোস্ত বিশ্বাস কর আমরা একদিনের জন্য স্বামি স্ত্রীর মতো থাকিনি ইনফ্যাক্ট আমি কলেজের হোস্টেলে থাকতাম,ও আলাদা বাসা নিয়ে থাকতো
মিথিলা- দূর কি বলিস আমি তোর কাছে এই সব শুনতে ছেয়েছি নাকি,,
রাহি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্লো কংগ্রাচুলেশনস তোদের দুজন কে
অরনি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখের পানি মুছে বল্লো
ভালো করেছিস সাম্মি, তুই জিতেছিস ইহান এমন একজন মানুষ যাকে আমি মনের সব সত্তা দিয়ে চাইতাম,তোকে কংগ্রাচুলেশনস,
মিথিলা- ইয়ে মানে দোস্ত এবার আমাকে উঠতে হচ্ছে,
সাম্মি- গাড়িতে গিয়ে বস ইহান আসছে তোকে পৌছে দিবে
মিথিলা- দরকার নেই, আমি একা ই যেতে পারবো
মিথিলা উঠে দাড়ালো রাহি মিথিলার পিছন পিছন এলো
রাহি- তুই ঠিক আছিস তো মিথিলা
মিথিলা- ঠিক না থাকার মতো কিছু হয়েছে কি?
রাহি- ঠিক থাকলেই ভালো,
মিথিলা এই রাতের বেলা রিক্সা নিতে চাইলো অন্ধকারে রাস্তার ধারে ল্যাম্প পোস্টের আলোতে হাটতে ইচ্ছে করছে
মিথিলা হাটছে
– এই মিথিল দাড়া
মিথিলা পিছনে ফিরে দেখলো সাম্মি ডাকছে মিথিলা দাঁড়িয়ে গেলো
সাম্মি- চল হাটতে হাটতে কথা বলি,
মিথিলা কিছু না বলে হাটতে শুরু করলো,বেশ কিছুক্ষন হাটার পর সাম্মি বল্লো
– মিথি তুই কি জানিস ইহান তোকে এখন ও ভালোবাসে
মিথিলা- জানার ইচ্ছে নেই
সাম্মি- অরনির সামনে তোকে একটা সত্যি জানানো হয়নি,অরনি কষ্ট পাবে ভেবে আমি ছেপে গেছি কথা টা
মিথিলা- তা হলে আমার কাছে ও ছেপে যা শুনতে চাইনা কোন সত্যি
সাম্মি- তবু ও আমি বলবো,ইহান আর আমি কাগজে কলমে স্বামি স্ত্রী ইহান আমায় বিয়ের রাতে বলেছে” সাম্মি তুই তো আমার সব কথাই জানিস আমি মিথিলা কে ভালোবাসি, আজ ও মিথিলা কে ভুলতে পারিনি, আমি তোকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না,শুধু মায়ের অনুরোধে বিয়ে করেছি সাম্মি তুই আমায় ভুল বুঝিস না”সেদিন আমার ইহানের কথা মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলো না,
ইয়ে আমি তোকে একটা কথা মানে একটা প্রস্তাব দিতে এসেছি
মিথিলা- কি?
সাম্মি- অরুর মতো আমি ও চাই তুই আর ইহান এক হয়ে যা
মিথিলা – সাম্মিইইইইইই,পাগল হয়ে গেছিস তুই?
সাম্মি- আমি সিরিয়েস
মিথিলা- আর একটা কথা বললে থাপ্পড় খাবি, যা আমার সাথে তোর আর আসতে হবে না
মিথিলা বাসায় এসে নির্ঝরিণী আর আয়ান কে কথা টা জানায়, আয়ান অনেক খুশি আজ
আয়ানের থেকে ও অনেক বেশি খুশি আয়ানের দুই বোন ভাইয়ের খুশি তাদের কাছে রাজ্য জয়ের সমান
নির্ঝরিণী – ভাই এবার মন দিয়ে পড়াশুনা কর দেখলি তো তোর হবু শ্বশুর কি বল্লো
আয়ান- তোকে এতো পাকামি করতে হবে না
নির্ঝরিণী – দেখলি আপু এখন ও বিয়ের কতো দেরি এখনি ভাই আমায় পাত্তা দিচ্ছে না বউ আসলে জানি কি করে
আয়ান- আপু নির কে কিছু বল
মিথিলা- উফফ তোরা আবার শুরু করলি? নির্ঝর আমার সাথে কিচেনে আয় কাজে হেল্প কর, তা হলে আর ঝগড়া করার ফন্দি মাথায় আসবে না
নির্ঝরিণী – আমি পারবো না তোমার আদরের ভাই কে বলো
মিথিলা- নির্ঝরিণীইইই আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে আসবি কি না বল
নির্ঝরিণী – এই রে আপু রেগে গেছে আসছি আপু,,আমার পুরো নাম ধরে ডাকলেই বুঝে যাই আমাদের চশমা ওয়ালির রাগ উঠেছে হি হি হি
মিথিলা বাসার সব কাজ শেষ করে অফিসের জন্য বের হলো আজ ও লেইট হয়ে গেলো অফিসে পৌছতে ইহান খুব রেগে গেছে আজ
ইহান- মিথিলা তুই জানতিস আজ অফিসে অনেক কাজ পুরোনো হিসেব গুলো সব করতে হবে,আজকে আতাহার গ্রুপ কে তাদের দেনা পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে এর পর থেকে ঐ গ্রুপের সাথে চৌধুরী গ্রুপের কোন সম্পর্ক থাকবে না,এর পর তুই আজ লেইট করলি
মিথিলা- স্যরি?
ইহান- ইটস ওকে,আজ থেকে অফিসের একটা গাড়ি তোকে বিকেলে দিয়ে আসবে,সকালে নিয়ে আসবে ওকে
মিথিলা- তার দরকার নেই বাসার কাজ সামলাতে একটু লেইট হয়েছে তাই পৌছতে পারিনি, এর পর এমন হবে না
ইহান- ওকে এটাই লাস্ট,এর পর ভুল হলে আমি যা বলবো তোকে তা শুনতে হবে,,সব ব্যাপারে বেশি বুঝতে যাবি না,বেশি বুঝে জীবনের বারটা বাজিয়েছিস
মিথিলা চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে
ইহান- কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা হিসেব গুলো দেখ
মিথিলা নিজের ক্যাবেনি বসে কাজ করছে,, এমন সময় ইহানের কল আসে
– মিথিলা কাজ হয়েছে? শেষ হলে তাড়া তাড়ি ফাইল হুলো নিয়ে আয় মিঃ চৌধুরী এসে গেছে
মিথিলা- এই তো শেষ আর একটু,মিথিলা ফাইল গুলো নিয়ে ইহানের ক্যাবেনি ডুকে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে ইহানের সামনে ইভান বসে আছে মিথিলার পা চলছে না যেন থমকে গেছে
ইহান- কি হলো মিস মিথি দাঁড়িয়ে পড়লে যে এসো
মিথিলা গিয়ে ইহানের পাশে দাঁড়ায়
মিথিলা কে দেখে ইভান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।
ইহান- মিঃ চৌধুরী আপনার আবার কি হলো, দাঁড়িয়ে পড়লেন যে বসুন
মিথিলার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে
ইভানের ও সেম অবস্থা
ইহান- কি হলো আপনারা দুজন দুজনকে হাই বলুন
ইভান ইহানের কথায় কান না দিয়ে বল্লো
– কাজের কথায় আসুন মিঃ ইহান চৌধুরী
ইহান- তা তো আসবো ই আফটার অল দীর্ঘ দিন পর চৌধুরী গ্রুপ আর আতাহার গ্রুপের বন্ধুত্বের সম্পর্ক টা ভাংতে যাচ্ছে তার আগে বলুন,আপনি মিস আফরিনা কে ছিনেন কিনা
কি হলো আফরিনা তুমি ছিনো নাকি মিঃ চৌধুরী কে
মিথিলা- ইহান, স্যরি, বসস আপনি প্লিজ কাজের কথায় আসুন এখানে পার্সোনাল কথা না বলি
ইহান- ফর্মালিটি শিখাচ্ছো আমাকে? অবশ্যই শিখাতেই পারো তুমি আমার সেক্রেটারি প্লাস আর কতো কি বলে ইভানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বল্লো বাই দ্যা য়ে কাজের কথায় আসা যাক
মিথিলা কে দেখার পর ইভান পুরো টা সময় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে ও কোন লাভ হয়নি ইহান তার চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছে ইভান জ্বলছে আর লুচির মতো ফুলছে
ইভান ফাইল হাতে নিয়ে বল্লো
– আর দেখতে হবে না,আমার বিশ্বস্ত মানুষ ই ফাইল গুলো দেখেছে
ইহান- এক্সকিউজমি কিছু বললেন?
ইভান- নাহ কিছু বলার নেই আপনাকে আসি গুড বাই
ইহান- এক মিনিট একটা প্রশ্ন করার ছিলো
ইভান- করুন
ইহান তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বল্লো
-আপনি কি Jealous ফিল করছে
ইভান- আপনার কি দেখে মনে হলো,আমি Jealous ফিল করছি
ইহান- না মানে খুব তাড়া আপনার এখান থেকে বেরুনোর জন্য
ইভান- আপনি এখন থেকে আমার বিজনেস ক্লাইন্ট নন,আপনার সাথে আমি রিলেটেড নই সো আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই
ইহান- তাই নাকি দুলা- ভাই
ইভান আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলো
গাড়িতে বসে আজ উলটা পালটা ড্রাইভ করছে মাথার মধ্যে মিথিলার ছবি আর ইহানের কথা গুলো ভন ভন করে গুরছে,তার পর গাড়ি টা থামিয়ে কিছুক্ষন জিম মেরে বসে রইলো,
– মিথিলা মিথিলা হ্যা মিথিলায়ায়ায়ায়া তার যোগ্যতা প্রমান করে দিয়েছে সে এখন চৌধুরী গ্রুপের এমডির পি এস আমি তাকে রিজেক্ট করেছি সে প্রতিশোধ নিয়ে নিলো, যাদের জন্য আমি তাকে বুঝতে পারিনি সে তাদের কম্পানিতে কাজ করছে নো য়ে মিথিলা আমার, মিথিলাকে আমি এই চাকরী করতে দিবো না মিথিলা আমার ওর উপর সব অধিকার আমার ই আছে কি বল্লো ঐ ছেলেটা , আমি Jealous কি না,আমি কেনো Jealous হবো মিথিলা আমার, সো আমার Jealous হওয়ার কোন দরকার নেই, আই লভ হিম
ইহান- খুব জব্দ হয়েছে আজ বুঝলি মিথি আজ সারাদিন লুচির মতো ফুলবে দেখিস
মিথিলা- এই সবের কোন দরকার ছিলো না ইহান,উনি কাজে এসেছে কাজের বাইরে কথা গুলো বলা কি ঠিক হয়েছে
ইহান রহস্য ভরা দৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– এ.ল্লো তোর কি বুকের বাম পাশে লেগেছে খুব
মিথিলা- ইহান ফাজলামি করিস না ভালো লাগে না সব সময় ফাজলামি
ইহান- এই তুই ভাবিস কি নিজেকে তুই বিশ্ব সুন্দরি সব ছেলে তোর জন্য পাগল? ,আমি এখন ও তোকে চাই তাই তো? তা হলে আমি বলবো তুই ভুল দারনা করছিস
মিথিলা- ইহান আমি এটা কখন বললাম, আমি শুধু বলেছি মজা করা সব সময় ভালো লাগে না
ইহান টেবিলে আঘাত করে বল্লো,অবশ্যই ভালো লাগতে হবে বিকজ আম ইউর বস ওকে
মিথিলা আর কিছু না বলে রাগে গজ গজ করতে করতে নিজের ক্যাবিনে ফিরে এলো
– এমন করছে কেনো ইহান,জব ই তো করছি বিক্রি তো হয়ে যাইনি ওর কাছে,এই জব টা ছেড়ে দিবো তার আগে অন্য কিছু একটা খুজে নিতে হবে
ইহান – উফফ মিথির সাথে এ ভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি,কিন্তু কি করবো কতোক্ষন আর নিজের ভেতর কষ্ট ছেপে রাখবো, ভালো বেসেছিলাম তোকে আর তুই করেছিলি অবহেলা, জীবন টা ই শেষ হয়ে গেলো
মিথিলা অফিস ছুটির আগেই বেরিয়ে পড়ে
কাজে মন বসছিলো না ঠিক করলো আজ হেটেই বাসায় ফিরবে
মিথিলার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন নিশ্চুপ একা হাটতে পছন্দ করে এতে অনেক টা পথ হাটা যায় পা ও ব্যাথা হয়না যেহেতু তখন সময় টা ঘোরের মধ্যে কাটে
মিথিলা হাটছে হঠ্যাৎ নজর পড়লো সামনে গাড়ি পার্ক করে ইভান দাঁড়িয়ে আছে পথ রোধ করে
মিথিলা পাশ কাটিয়ে যেতেই ইভান বাধা হয়ে দাঁড়ায়
মিথিলা দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু কোন কথা বলেনি
ইভান- এই মেয়ে খুব অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছো তাই না অবশই দেখানোর কথা চৌধুরী গ্রুপের এমডির পি এস এর অ্যাটিটিউড থাকবে না এ হয় নাকি,মিথি তুমি ঐ ছেলেটার সামনে সামনে থাকো কেনো বলো তো আমার বুঝি খারাপ লাগে না
মিথিলা – দিন দুপুরে ড্রিংক করে অসভ্যের মতো মাতলামি করতে ভালো লাগছে তাই না
ইভান- একটু খেয়েছি কি করবো বলো তুমি নেই এই হৃদয়ে যে মরুভূমি হয়ে আছে একটু বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছি, দেবে কি এক ফোটা বৃষ্টির জ্বল, অবশ্যই তা দিয়ে মরুভূমি তে কিচ্ছু হবে না তবুও আমি তৃপ্ততা খুজে নিবো প্লিজ
মিথিলা- আপনি এখন সেন্সে নেই বাসায় যান
ইভান- বাসায় যাবো? কিন্তু সেখানে তো তুমি নেই তোমাকে দেখে ও যে চোখের তৃষ্ণা মিটেনা বার বার দেখতে চায় এই চোখ, চলনা মিথি নতুন করে পথ চলা শুরু করি
মিথিলার খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু দাতে দাত ছেপে সহ্য করছে পাগলের সাথে পাগলামি করার কোন মানে হয় না মিথিলা পাশ কেটে চলে যাচ্ছিলো ইভান মিথিলার হাত ধরে টেনে গাড়ির সাথে ছেপে ধরে বল্লো
– এই মেয়ে এই কান খুলে শুনো, চাকরী টা ছেড়ে দাও,আমার বউ অন্যের সেক্রেটারি, ব্যাপার টা কেমন হয়ে গেলো না, আমার কিসের অভাব বলো,কোন কিছুর অভাব নেই, বলো চাকরি টা ছাড়বে কি না
মিথিলা- উফফ আমায় ছাড়ুন রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাতলামি করা আপনার সুশীল সমাজে থাকতে পারে,কিন্তু আমার অভদ্র সমাজে নেই
ইভান- ঠিক আছে তোমায় ছেড়ে দিবো আগে বলো তুমি এই চাকরী টা ছেড়ে দিবে
মিথিলা- নাহ,আমি চাকরী তো ছাড়বো ই না, এই বলে ইভান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মিথিলা চলে এলো, রাস্তার মানুষ জন কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে মিথিলার দিকে মিথিলার সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই আপন মনে হেটেই চলছে
আজ মধুপুর কলেজে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে প্রদান অথিতি শিল্পি নির্ঝরিণী,
নির্ঝরিণী সেখানে পৌছে তো অবাক হয়ে গেছে কারন সেখানে আয়াপ খান ও আছে
নির্ঝরিণী সিন্ধান্ত নিলো এখানে গান গাইবে না কিন্তু দর্শকের অনুরোধের কারনে যেতেও পারেনি
এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা যিনি করবেন আমান সাহেব তিনি নির্ঝরিণী আর আয়াপ কে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়ে স্টেজে বরন করে নিলো, সবার অনুরোধ আগে নির্ঝরিণী গান গাইবে
মিথিলা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে বেরিয়ে যায় ইভান পিছন থেকে ডাকলে মিথিলা সেদিকে পাত্তা দেয়নি
আয়ান আর নির্ঝর পড়তে বসেছে হঠ্যাৎ আয়ান পড়া বন্ধ করে বল্লো
– নির তোর সাথে কি আয়াপের ঝগড়া হয়েছে
নির্ঝরিণী বিরক্ত হয়ে বল্লো
– কেনো
আয়ান- না আজ প্রাইভেট থেকে ফেরার পথে আয়াপ খানের সাথে দেখা হলো,বল্লো তুই কেনো ওর ফোন রিসিভ করছিস না,আর তুই যা বুঝেছিস সেটা ভুল
নির্ঝরিণী – ভাই ঐ শয়তান টা কে নিয়ে কোন কথা আমাকে বলবি না ওর ব্যাপারে বলতে আমার ভালো লাগে না
আয়ান- নির অনেক সময় আমরা যা দেখি যা বুঝি তার মধ্যে ভুল থাকে সব সময় আমাদের চোখ যে সঠিক টা দেখবে এমন তো নয়
নির্ঝরিণী – ভাইই আর একটা কথা বললে আমি আপু কে ডাকবো
আয়ান- আপু বাসায় ফেরেনি এখন ও
নির্ঝরিণী উঠে অন্য রুমে চলে গেলো যে ভুল সে করেছে আর কোন ভুল করতে চায় না
আয়াপ নির্ঝরিণী দের বাড়ির একটু দূরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জানে এই ভর সন্ধায় নির্ঝরিণী বের হবে না তবু ও কিছু ভালো লাগছে না, নির্ঝরিণী এমন বাজে ছেলে মনে করে আমাকে ছিঃ আমার ই ভুল ছিলো আগেই ওকে ব্যাপার টা ক্লিয়ার করে বললেই হতো
এতো দিন বুঝিনি নির্ঝরিণী কে আমি কতো টা চাই আজ বুঝে ও নির্ঝরিণী আমার থেকে অনেক দূরে, ভালোবাসি নির্ঝু তোকে,, এই পুঁচকে মেয়ের এতো রাগ,এতো বুঝে, আয়াপ নিজেই হেসে উঠলো নির্ঝরিণী দূরদর্শীতা দেখে, আসলে এখন যে যুগ এই যুগে নির্ঝরিণীর দূরদর্শীতা দেখানো ভুল কিছু নয়
এখানে দাঁড়িয়ে থেকে ও ওর দেখা পাবো না সো বাসায় যাই খুব খিধা পেয়েছে উফফ
মিথিলা বোনের কথা শুনে মুচকি হাসলো, এই টুকু মেয়ে ঠিক কথা লুকাতে শিখে গেছে
ছোট খাটো কোন ফাংশান হলে সেখানে নির্ঝরিণী কে ডাকা হয় আয়াপের সাথে থেকে নির্ঝরিণী কে ও এখন অনেক ই ছিনে তাই আর আয়াপের সাথে তার কাজ করতে হয় না
একদিন এক শো তে মিথিলা নির্ঝরিণীর জনপ্রিয়তা দেখে খুব খুশি হয়
যাক বোন আমার একা একাই কিছু করার চেষ্টা করছে এই সাহস টা ও তো সবার থাকে না
মিথিলা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে যায়,এখন থেকে যেয়ে আবার টিউশনি ধরতে হবে ইচ্ছে থাকা সত্তে ও বোনের পার্ফম দেখা হয়নি
মিথিলা রিক্সা না পেয়ে হাটছে এই শহরে পথ চলার সংগি রিক্সা মিথিলার খুব প্রিয়ো
মিথিলার পাশ ঘেঁষে একটা গাড়ি থেমে যায়
মিথিলা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায় গাড়ি থেকে একটা অচেনা ছেলে নেমে বল্লো
– আপু কোথায় যাবেন চলুন আপনাকে লিফট দিই
মিথিলা কপাল কুঁচকে বল্লো
– কে আপনি, পাগল হয়েছেন নাকি, অচেনা একটা মেয়েকে লিফট দিতে চাইছেন
ছেলেটি আর অন্য কেউ নয় আয়াপ খান ই নির্ঝরিণীর কাছে যেতে না ফেরে বুদ্ধি করে মিথিলা কে ফটাতে আসছে যদি মিথিলা কে মাধ্যম করে নির্ঝরিণীর সাথে কথা বলা যায়
বুদ্ধি টা আসলে আয়ানের দেয়া সেদিন রাতে আয়ানের সাথে অনেক কথা হয় সব কথার মাঝে আয়ান বল্লো নির্ঝরিণী আপুর কথা বেশি শুনে কাজেই আপনার আপু কে ম্যানেজ করতে হবে
সেখান থেকেই আজ সেধে সেধে মিথিলার সাথে কথা বলতে আসা
আয়াপ- কি বলছেন আপু আমি তো আপনাকে ছিনি রোজ দেখিও আপনি চৌধুরী গ্রুপে জব করেন তাই না,,
তাই ভাবলাম আপনি যে পথে যাবেন আমি ও সেই পথেই যাচ্ছি লিফট দিতে প্রব্লেম কি
মিথিলা- কিন্তু আমি আপনাকে আগে কখনো দেখিনি
আয়াপ- তাতে কি আপু সবাই যে সবাইকে ছিনতে হবে এমন কোন কথা নেই, আমি আপনার ছোট ভাইয়ের মতো প্লিজ আসুন
মিথিলার মোটেও গায়ে পড়ে সাহায্য করার ব্যাপার টা ভালো লাগলো না
– স্যরি আসলে আমার পথে একটু কাজ আছে তাই গাড়িতে যেতে পারছি না,বলে মিথিলা হন হন করে হাটা শুরু করলো
আয়াপ – যাক বাবা দুই বোনের ই শুচিবায়ু, একটু বেশিই বুঝে ধেৎ মেজাজ টা ই খারাপ হয়ে গেলো
আয়ানের আজ মন টা ভালো নেই কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না নির টা ও নেই তা হলে ওর সাথে একটা পরামর্শ করা যেতো উতলা কে ছাড়া আমি থাকবো কি করে ওর মা যে ওর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে
আয়ান টেবিলে হাত রেখে হাতের উপর মাথা দিয়ে বসে আছে
মিথিলা বাসায় ফিরে নিজের কাজ গুলো শেষ করে রিডিং রুমে এসে দেখে আয়ান এমন করে বসে আছে মিথিলা আয়ানের মাথায় হাত রেখে বল্লো
– ভাই তোর কি শরির খারাপ?
আয়ান মিথিলার ছোয়া পেয়ে মাথা উঠিয়ে ঠিক করে বসলো
মিথিলা আয়ানের চোখ দেখে আৎকে উঠে ভাই তুই কেঁদেছিস কেনো? ভাই বল তোর কি হয়েছে?
মিথিলা ব্যাস্ত হয়ে পড়ে আয়ান কে নিয়ে
আয়ান আর নিজেকে ধরে রাখতে না ফেরে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়
মিথিলার খুব ভয় করছে সে কি মনের অজান্তে ভাই কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে নাকি, কিন্তু মনে পড়ছে না তো কিছু
কাঁদছে কেনো আমার ভাই
মিথিলা কয়েক বার কান্না থামাতে বলে ও কোন কাজ হয়নি
পরে আয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– স্যরি আপু কেনো জানি আজ খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো তুই কিছু মনে করিস না, এই বলে আয়ান উঠে চলে যায় মিথিলা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কি হচ্ছে এই সব কিচ্ছু বুঝতে পারছে না
নির্ঝরিণী অবাক হয়ে বল্লো
– কেনো আপি যাওয়ার সময় তো ভালো ই দেখে গেলাম কি হলো ওর
মিথিলা সব কথা নির্ঝরিণী কে বল্লো
নির্ঝরিণী- আপু এমনিতে অনেক রাত হয়েছে তুমি শুয়ে পড়ো আমি দেখছি ভাইয়ের কি হয়েছে
মিথিলা- হুম, আর আয়ান কি বলে আমায় জানাস মিথিলা নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো
কিন্তু অস্বস্তি কাজ করছে কিছুতেই শান্তি লাগছে না, সারা দিন ভাই বোন কে শাসনের উপর রেখেছি, আর তাই ভাই আমায় ভয়ে তার মনের কথা বল্লো না এতো শাসন করেছি তাদের, এমন টা তো চাইনি আমি ছেয়েছি ভাই বোনে ভালোবাসার সব ধরনের ছোঁয়া দিয়ে আগলে রাখতে, কিন্তু কখন যে ওরা এতো দূরে সরে গেছেহ বুঝতে পারিনি
নির্ঝরিণী আয়ানের রুমে গিয়ে লাইট জ্বালালো
আয়ান উঠে বসলো নির্ঝরিণী আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– কি হয়েছে ভাই তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো
আয়ান- হুম উতলা খুব কেঁদেছে নির
বলেছে সুইসাইড করবে তবু ও অন্য কাউকে বিয়ে করবে না,আমি আপুকে কিছু বলতে পারছি না, বললে ও আপু মানবে না,না মানার ও যুক্তি আছে, কিন্তু
নির্ঝরিণী চুপ করে শুনছে সত্যি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, আপু কে বললে আপু কি ভাবে নিবে ব্যাপার টা, কিন্তু দুটি জীবন তো নষ্ট হতে দেয়া যায় না, আব্বুর মৃত্যু পর ভাইকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে কতো কষ্ট করতে হয়েছে
আবার যদি ভাই সে রকম হয়ে যায়,না আমি আপু কে ব্যাপার টা জানাই যা আছে কপালে তা ই হবে
নির্ঝরিণী আয়ান কে ছেড়ে উঠে দাড়ালো,আপু এখন ও ঘুমায়নি আমার বিশ্বাস
নির্ঝরিণী মিথিলার রুমের দরজায় এসে নক করে
মিথিলা- ভেতরে আয় নির্ঝর
নির্ঝরিণী ভেতরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো
মিথিলা শোয়া থেকে উঠে চোখে চশমা টা পরে নিলো,
– কিরে আয়ান তোকে কিছু বলেছে?
নির্ঝরিণী – আপি ব্যাপার টা তোকে কি করে বলি বলতো,আসলে ভাই ভয়ে তোকে কিছু জানাতে চায়নি,
মিথিলা- ছেয়ে ছিলাম ভালোবাসা দিয়ে তোদের জীবনের কানায় কানায় ভরিয়ে দিবো,কিন্তু আমি যে না চাইতেই তোদের মনে ভয় ডুকিয়ে দিয়েছি সেটা বুঝতে পারিনি
নির্ঝরিণী – আপু তুই কষ্ট পাস না প্লিজ,তুমি তো বড়, মা বাবার জায়গাতে আছো ভালো মন্দের জন্য বলতেই পারো,দোষ টা আমাদের আমরা তোমাকে বেশি ভুল বুঝে ফেলেছি
মিথিলার চোখে পানি চশমা খুলে চোখের পানি মুছে বল্লো
– বল তো আয়ানের কি হয়েছে
নির্ঝরিণী কোন ভনিতা না করে বল্লো
– উতলা আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, ছেলে সরকারী চাকুরী জীবি,তাই আন্টি এই সমন্ধ হাত ছাড়া করতে চাইনি,কিন্তু ভাই আর উতলা আপু দু জন দুজনকে ভালোবাসে খুব,
আপু ওদের ভালোবাসা কতো টা গভীর তুমি বুঝতে পারবে না, উতলা আপু বলে দিয়েছে ভাই কে না ফেলে সুইসাইড করবে,আর ভাই তোকে কষ্ট দিতে পারবে না ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে
মিথিকা নিস্তব্ধ হয়ে শুনছে নির্ঝরিণীর কথা,ভাবছে সে আমি চাইতাম না উতলা আয়ানের সাথে মিশে আয়ানের ছাত্র জীবন টা নষ্ট করে দিক টিনেজ বয়সে এই সব সম্পর্ক ভালো কিছু ভয়ে আনে না তাই তো আলাদা করতে ছেয়েছি, কিন্তু আমার মনে তো ভিন্ন কিছু ছিলো ভাই স্ট্যাবলিশ হলে উতলা কে ভাইয়ের বউ করে আনবো আমার ভাই যদি জীবন নিয়ে সুখি না হয় তা হলে আমরা সুখি হবো কি করে
মিথিলা কে চুপ করে থাকতে দেখে
নির্ঝরিণী বল্লো
– আপু দুটি জীবন এ ভাবে নষ্ট হতে দেয়া যায় না প্লিজ আপু তুই আন্টির সাথে কথা বল এখন ও অনেক সময় আছে
মিথিলা – আমি বললেই কি আন্টি রাজি হবে আমাদের আগের অবস্থান আর এখন কার অবস্থন আলাদা,আয়ান এখন স্টুডেন্ট আর ঐ ছেলে তো সরকারি চাকুরি করে
নির্ঝরিণী – আপু আমার ভাই কম কিসের, পড়া শুনা শেষ করে আমার ভাই যে সরকারি চাকুরি পাবে না তেমন তো নয়
মিথিলা- ওরা কি উতলা কে ততদিন পর্যন্ত রাখবে
নির্ঝরিণী – চেষ্টা করে দেখিনা,চেষ্টা করতে তো কোন দোষ নেই
মিথিলা- ঠিক আছে আমি কাল আন্টির সাথে কথা বলবো তুই আয়ান কে গিয়ে বল চিন্তা না করতে
নির্ঝরিণী চলে যায় মিথিলা ভাবছে ইহানের কথা এখন কার ছেলে মেয়েরা আমাদের থেকে এগিয়ে, তখন যদি আমি ভাগ্যকে মেনে না নিয়ে ইহান কে সব বলতাম তা হলে এতো গুলো জীবন নষ্ট হতো না,হয়তো অরণি ভালো থাকতো ,হয়তো আমি ও ইহানের সাথে ভালো থাকতাম,কিছুতেই আর দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি মিথিলা,রাত টা তার এভাবেই কেটে যায়,
সকাল সাত টায় মিথিলা উতলাদের বাসায় চলে
যায় পাশা পাশি বাসা হওয়ায় এই এক সুবিধা, সারা রাত ছটফট করেছে মিথিলা ভাইয়ের কথা ভেবে তাই সকাল না হতেই চলে এলো
উতলার মা মিথিলাকে দেখে তো অনেক খুশি
আন্টি- আরে মিথিলা তুই,আজকাল তো আমাদের বাসার পথ টা তুই ভুলেই গেছিস
মিথিলা হেসে বল্লো এখন থেকে রোজ আসবো আন্টি, আসলে সময় করতে পারি না বুঝো ই তো কতো ব্যাস্ত থাকি সারা দিন
আন্টি- তা আর বলতে হবে না মা,
বাপ মা মরা নির্ঝরী আর আয়ানের পাশে তুই না থাকলে তাদের যে কি হতো,,তোর মতো বোন যেন সবার ঘরে ঘরে হয়
মিথিলা হেসে বল্লো
– আন্টি আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো
উতলা ততক্ষনে পর্দার আড়ালে এসে দাড়িয়েছে
আন্টি- কি কথা বল মা
মিথিলা- আন্টি শুনলাম উতলা কে বিয়ে দিচ্ছেন
আন্টি হেসে বল্লো
– হ্যা মা ভালো ছেলে পেয়েছি তাই হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে হয়নি
মিথিলা- কিন্তু উতলা তো এখন ও ছোট এই বয়সে বিয়ে
আন্টি- তোর কি এই বয়সে বিয়ে হয়নি,তবু কি তুই পড়া শুনা ছেড়েছিস
মিথিলা- আন্টি সবার জীবন চক্র এক নয়
আন্টি- কি বলতে চাইছিস তুই
মিথিলা- আন্টি উতলা কে চাই আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে নয় আমার আরেক বোন হিসেবে,নির্ঝরিণী আয়ান কে যেমন আগলে রেখে বড় করেছি, উতলা কে ও তেমনি রাখব
আন্টি বিব্রত বোধ করতে লাগলো
– কিন্তু ওরা দুজনে তো এখন ও অনেক ছোট
মিথিলা- আমি এখন ই ছাচ্চি না বিয়েটা দিতে তবে আমাদের বড়দের মধ্যে পাকা কথা হয়ে থাক,তার পর ওরা যখন ম্যাছিউর হবে তখন ঢাক ঢোল বাজিয়ে উতলাকে নিবো
আন্টি- কিন্তু মা উতলার বাবা শুনলে মানবে না তা ছাড়া বিয়ের সব কেনা কাটা হয়ে গেছে…
মিথিলা- প্লিজ আন্টি আমি শুধু আমার ভাইয়ের কথা ভেবে বলছি না আমি উতলার কথা ও ভাবছি, উতলা সুখি হবে না,আর যদি খারাপ কিছু করে ফেলে তখন? আমরা কেউ ই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না, প্লিজ আন্টি আপনি আংকেল কে বুঝিয়ে বলবেন
আন্টি- তুমি তো আমায় চিন্তায় ফেলে দিলে মা,আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার আংকেল কে ফোন করে আসি
আন্টি উঠে চলে গেলো
– উতলা আর পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না বেরিয়ে এসো
উতলা এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় আপু তুমি খুব ভালো প্রথম যেদিন আয়ানের সাথে দেখা করতে গেছি সেদিন তুমি আয়ান কে মেরেছো আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি সব শুনেছি,, সেদিনের পর থেকে ঐ বাসায় যাওয়ার সাহস হয়নি,তোমাকে খুব খারাপ ভেবেছি সেদিন, আজ তুমি আমার ধারনা পালটে দিয়েছো
মিথিলা- পাগলি এতো কাদতে নেই, দেখি আন্টি কি বলে
বেশ কিছু সময় পর আন্টি হাসি হাসি মুখ করে ফিরে এসে বল্লো
– মিথিলা তোমার কথা বলাতে তোমার আংকেল অমত করেন যদি আয়ান কে উনি পছন্দ করেন না তবুও তোর ভাই তাই নিষেধ করেনি,তবে উনি বলেছে,আয়ান পড়া শুনা শেষ করলেই উতলা কে ঘরে তুলতে হবে,জবের জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না
মিথিলা খুশি হয়ে উতলার কপালে চুমু খেয়ে বল্লো
– আলহামদুলিল্লাহ আন্টি এতে ই অনেক,আমি আছি তো আমার বোনের কোন কষ্ট হতে দিবো না
কিরে এবার খুশি তো
উতলা লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে ফেল্লো
আন্টি মিষ্টি নিয়ে এলো
নে মা,শুভ কাজে মিষ্টি মুখ না করলে হয়
মিথিলা বাসায় এসে নির্ঝরিণী আর আয়ান কে কথা টা জানায়, আয়ান অনেক খুশি আজ
আয়ানের থেকে ও অনেক বেশি খুশি আয়ানের দুই বোন ভাইয়ের খুশি তাদের কাছে রাজ্য জয়ের সমান
সারা পথে নির্ঝরিণী কান্না করেছে,বাসায় এসে দেখে কেউ নেই আয়ান কলেজে আপু অফিসে একা বাসা পেয়ে নির্ঝরিণী চিৎকার করে কাদতে লাগলো,ছেলেরা এমন কেনো
কিছুক্ষন পর আয়ান বাসায় ফিরলো নির্ঝরিণী কে বাসায় দেখে বল্লো
– কিরে আজ শো তে যাসনি
নির্ঝরিণী – গিয়েছি, চলে এসেছি
আয়ান- তা হলে তোর আয়াপ খানের গাড়ি কলেজের সামনে দেখলাম যে
নির্ঝরিণী কর্কশ কন্ঠে বল্লো
– হয়তো কারো জন্য দাড়িয়ে ছিলো
আয়ান- ওহ হতে পারে বেছারা তো গাড়ি থেকে নামলেইই সবাই ছিনবে সেটা আবার আরেক প্রব্লেম,কবে তোর এমন জনপ্রিয়তা হবে
নির্ঝরিণী- উফফ ভাই চুপ করতো, ভালো লাগছে না নির্ঝরিণী উঠে চলে গেলো
আয়ান- আরেহ এতো রেগে আছে কেনো,নিশ্চয়ই আয়াপকে মনের কথা বলতে না ফেরে এই অবস্থা
মিথিলার অফিসে নিজের ক্যাবেনি বসে কাজ করছিলো ইন্টার কমে ডাক পড়লো, ইহান ডাকছে
মিথিলা- কিরে ডাকছিলি? কিছু কাজ ছিলো সেগুলা ই করছিলাম
ইহান- ওহ তোর কাজ কি শেষ
মিথিলা- হুম কেনো
ইহান- অরণি দের বাসায় যাবো,চল
মিথিলা – কেনো
ইহান গম্ভীর হয়ে বল্লো গেলেই বুঝবি তা ছাড়া আজ সেখানে সবাই থাকবে
মিথিলা আর কিছু বল্লো না অরণি দের বাসায় গিয়ে মিথিলা সত্যি সারপ্রাইজড হলো, সাম্মি রাহি সবাই সেখানে
মিথিলা গিয়ে সাম্মি কে ঝড়িয়ে ধরলো
– তুই তো আমায় ভুলেই গিয়েছিস সাম্মি
সাম্মি- ভুলিনি ইহানের থেকে তোর রোজকার খবর পাই
মিথিলা- ওহ তোর সাথে তো ইহানের বেশি কথা হয় এখন
অরণি আজ অসুখের কথা ভুলে গিয়ে বল্লো
– আজ সবাই এক হয়েছে, আজ কিন্তু আমি রান্না করে সবাইকে খাওয়াবো
মিথিলা- মাথা খারাপ? এই অসুস্থ শরির নিয়ে তুই যাবি কিচেনে
অরনি- মনে নেই মিথি তোর, ছয় বছর আগে তোর বার্থডে তে তুই আমাদের রান্না করে খাইয়েছিস,কথা ছিলো আমার বার্থডে তে আমি তোদের এমন ই রান্না করে খাওয়াবো, আজ আমার বার্থডে
মিথিলা ইহানের দিকে তাকায় আজ অরণির বার্থডে বলেই কি অফিসের কাজ ফেলে এসেছে
ইহান মিথিলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ছয় বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গেছে ইহান,ইহান মনে মনে প্রশ্ন করছে মিথিলা কে,মিথি আজ তোকে সেই ছয় বছর আগের মতো প্রপোজ করলে কি তুই ফিরিয়ে দিবি, আজ যে তোকে আমি ঠিক আগের মতো ই ভালোবাসি
মিথিলা ও আজ ইহানের চোখের ভাষা বুঝতে চাইছে,
মিথিলা আর ইহানের অবস্থা দেখে সাম্মি পাশে থেকে গলা খাকানি দিলো
– এহ এহেম্ম
সাম্মির গলার আওয়াজে ইহান বাস্তবে ফিরে এলো
মিথিলা ও নিজেকে সামলে নিলো
ইহান- এ কি করছি আমি ছয় বছর আগের জীবন আর আজকের জীবনের সাথে অনেক অমিল,আজ আমার জীবন একজনের সাথে বাধা আছে আমি কেনো সেটা ভুলে যাই,,
রাহি- এই তোরা কি ভাবনায় মজে থাকবি নাকি দুজনে
মিথিলা- না মানে
রাহি- ঠিক আছে আর না মানে করতে হবে না,চল অরনি সবার জন্য অপেক্ষা করছে ডাইনিং এ
ডাইনিং এ গিয়ে সবাই অবাক সেই আগের মেনু সেদিন মিথিলা যা যা রান্না করেছে চার জনের জন্য আজ অরণি ঠিক তা তাই রান্না করেছে
মিথিলা- হ্যারে এতো বছরে ও তুই সেদিনের খাবারের মেনু গুলো ভুলিস নি তাই না
অরণি – তোর সাথে তো আমার সব দিক থেকেই মিলে যায় মিথি, যেমন খাবারের মেনু গুলোর কথা তুই ও তো ভুলিস নি,ভুললে আজ ছিনতে পারতি না
মিথিলা আর কিছু বল্লো না,চুপ চাপ বসে পড়লো
ইহানের গলা দিয়ে খাবার নামছে না,ইহান বুঝে গেছে অরু কেনো সেই দিনের মেনু আজকের লাঞ্চে রেখেছে,সেদিন আমি মিথিলার রান্নার অনেক প্রশংসা করেছি,অরু চায় আজ ও সেদিনের মতো ওর রান্নার প্রশংসা করি
কিন্তু কি করে বুঝাবো অরু তোকে সেদিনের মতো কোন কিছুই আজ নেই, সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে
খাবার টেবিলে বসে কেউ ই খেতে পারছে না সবার চোখে পানি, অরণি ও আজ কাঁদছে
ইহান কোন ভাবে কয়টা খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে যায়
তার গলা দিয়ে খাবার নামছে না
ইহান কে উঠে যেতে দেখে অরনি ও উঠে গেলো, একে একে সবাই খাবার অসম্পূর্ণ রেখেই উঠে যায়
ইহানের খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু ছেলে হয়ে কাঁদতে ও পারছে না, লজ্জা করছে তার কাঁদতে
– তোরা কথা বল আড্ডা দে, আমি আসি, এই বলে ইহান কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায়
মিথিলা ও বাসায় চলে আসে অরণি সামনে থাকলে কেমন যেন অসহায় লাগে যদি এমন কোন কিছু থাকতো যা দিয়ে অরু কে আগের মতো সুস্থ করা যেত, তা হলে তাই ই করতাম আমি
মিথিলা বাসায় এসে ক্লান্ত শরির টা এলিয়ে দিলো বিছানায়
নির্ঝরিণী এসে মিথিলার পাশে বসলো নিজেকে অনেক টা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে
মিথিলা- কিরে কিছু বলবি,তোর চোখ ফুলে আছে কেনো
নির্ঝরিণী – আজ কলেজে যাইনি,সারা দিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছি তাই চোখ ফুলে গেছে
মিথিলা- তুই না সকালে বলেছিস আজ কলেজে যেতেই হবে তোর
নির্ঝরিণী – হুম পরে শরির টা কেমন জানি করছিলো তাই যাইনি
মিথিলা – অহ আচ্ছা
নির্ঝরিণী -বড় আপু ফোন করেছিলো,সেদিন যাওয়ার পথে দুলাভাইয়ের সাথে দেখা হয় আর তাদের মধ্যে অনেক কথা হয়,….
মিথিলা নির্ঝরিণী কে থামিয়ে বল্লো
– দুলাভাই মানে বড় আপুর জামাইর সাথে দুলাভাইর দেখা, মানে ইভানের দেখা
নির্ঝরিণী – হুম
মিথিলা – হুম তার পর
নির্ঝরিণী – দুলাভাই বলছে বড় দুলাভাইয়ের দেশের বাইরে যাওয়ার সব খরচ দিবে
মিথিলা- মানে কি, আপু ইভানের কাছে এই সব কথা বলেছে
নির্ঝরিণী – হুম,আপু বল্লো আপু নাকি কিছু বলেনি সোহাগ ভাইয়া ইভান ভাইয়ার কাছে কথার কথা বলেছে
মিথিলা- উফফ এখন ঐ লোকের সাহায্য নিতে হবে?এখন কয়টা বাজে নির্ঝর বলতো
নির্ঝরিণী – পাঁচটা
মিথিলা- ইভান তো এখন বাসায় থাকে না ওর নতুন বাসার ঠিকানা জানি না এখন
নির্ঝরিণী – তুই কি নিষেধ করবি নাকি
মিথিলা- মানা করতেই হবে ইভানের কাছে থেকে আমার পরবিবার কোন অনুগ্রহ নিক এটা আমি চাই না,আর তা ছাড়া সোহাগ ভাইয়ের মতো লোক দেশের বাইরে গিয়ে বাড়িতে টাকা পয়সা দিবে এটা অবিশ্বাস্য ,
নির্ঝরিণী – ঠিক বলেছিস
মিথিলা- ইভানের নাম্বার আছে তোদের কাছে
নির্ঝরিণী – আয়ানের কাছে আছে
মিথিলা-নাম্বার টা নিয়ে আয় তো
নির্ঝরিণী আয়ানের কাছে থেকে নাম্বার এনে দিলো মিথিলা ইভানকে কল করলো
দুই তিন বার রিং হয়ে যাওয়ার পর কল রিসিভ করলো ইভান
মিথিলা -আপনি কোথায় এখন
ইভান- মিথিইইই তুমি আমায় কল করেছো কি সৌভাগ্য আমার
মিথিলা- আজাইরা কথা বন্ধ করুন আপনি কোথায় আছেন বলুন
ইভান- বাসায় আছি, কেনো
মিথিলা- এখন ই ক্যাফটেরিয়া তে চলে আসুন
ইভান- আমি দু মিনিটে রেডি হয়ে এক মিনিটে আসছি
মিথিলা কল অফ করে দিলো
নির্ঝরিণী – আপু এখন না গেলেই নয়, এখন তো একটু রেষ্ট নিতে পারতি
মিথিলা- না এখন রেষ্ট নিলে ও শান্তি পাবো না
আচ্ছা আমি আসিরে মিথিলা বেরিয়ে যায়
– উফফ মিথিলা আমায় ফোন করে দেখা করতে বলেছে, ই্সস আমি আর ভাবতে পারছি না
ইভান তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসে
ক্যাফেটেরিয়াতে ইভান অনেক্ষন বসে আছে কিন্তু মিথিলা আসেনি
উফফ মিথি আসতে লেইট করছে কেনো, আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছি না
বেশ কিছুক্ষন পর মিথিলা আসে
ইভান- বসো আর কি খাবে বলো
মিথিলা- আমি এখানে আপনার সাথে গল্প করতে আসিনি,যাস্ট কিছু কথা বলতে এসেছি
ইভান- ঠিক আছে বলো
মিথিলা – এই যে শুনুন এই রকম ভালো মানুষীর মুখোশ পরবেন না আমার সামনে, আমি ছিনি আপনাকে,
ইভান……
– মহান হওয়ার ইচ্ছে আপনার তাই না আমার দুলা ভাইকে দেশের বাইরে পাঠানোর কথা কে বলেছে আপনাকে, আমি বলেছি? বলিনি তো তা হলে? শুনুন আমরা চাইলে আমার দুলা ভাইকে দেশের বাইরে পাঠাতে পারি তার জন্য আপনার মতো লোকের সাহায্য লাগবে না কিন্তু আমরা তাকে পাঠাতে চাই না
ইভান- আমি জানি তো কেনো পাঠাতে চাও না,বড় আপু আমায় বলেছে,ট্রাস্ট মি, মিথি ভাইয়া কে যেখানে পাঠাবো উনি আমার লোকেদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন খারাপ কিছু করতে পারবে না
মিথিলা- উফফ আপনি এভাবে কথা বলবেন না আপনার কাছে থেকে এভাবে কথা শুনতে আমি অভ্যাস্ত নই,আপনি প্লিজ আমাদের কে আমাদেত মতো করে থাকতে দিন
ইভান- তো আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করেছি নাকি,তুমি তো আমার সাথে দেখা করতে আসছো, আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই চলে এলে তাই না
মিথিলা- সাট আপ,যাস্ট সাট আপ,আপনার মতো লোকের সাথে দেখা করা কথা বলার কোন ইচ্ছে আমার নেই
ইভান এবার রেগে যায়
– আমার সাথে কেনো কথা বলবে তোমার প্রেমিক আছে না ইহান তার সাথে কথা বলতে ঘুরতে ভালো লাগবে এখন
মিথিলা- ছিঃ আপনার মতো লোকের কাছে এটাই আশা করা যায়,শুনুন আমি কোথায় যাই কার সাথে ঘুরি সেটা আমার ব্যাপার আপনি প্লিজ আমার ফ্যামেলীর লোকদের থেকে দূরে থাকবেন,আমি আপনাকে সহ্য করতে পারি না,আপনার এই মুখ টা না যাস্ট অসহ্য
মিথিলা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে বেরিয়ে যায় ইভান পিছন থেকে ডাকলে মিথিলা সেদিকে পাত্তা দেয়নি