Friday, September 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2040



প্রয়োজন পর্বঃ ১৪

0

#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১৪
লেখায়ঃ তানিয়া তানু

” কে তুমি? স্টেজের পিছনে কী করছো?”
আচমকা প্রশ্ন ও পুরুষালি গম্ভীর কণ্ঠ শুনে আত্মা কেঁপে উঠলো। পরিচিত কণ্ঠ লাগলো। কিন্তু তাও কে সেই লোক তা দেখার জন্য ঘাড় ঘুরালে দেখতে পেলাম। আকাশ ভাইয়া আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে এখানে দেখে মনে হলো বিস্মিত হলেন। তাই তো দেখেই বললেন,

“তুই? স্টেজের পিছনে কী করছিস?”

সত্যটা বলার মতো সাহস এখনো হয়নি। তাই বললাম,
“নাচ দেখছিলাম”
আমার উত্তরে বোধয় সন্তুষ্ট হননি। চোখ-মুখ কুচকে বললো,
“এখান থেকে। সামনে থেকে দেখলে কী হয়?”
“এত মানুষ তো। তাই ভালোমতে দেখতে পারিনি।”
সামনের দিকে এক নজর তাকিয়ে আমাকে বললো,
“নাচ শেষ। এখন সবাই নিলার সাথে ফটো তুলবে। আয়।”
যাবো কী না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। গেলে যদি নিয়নের ভাই দেখে ফেলে। তারপর কী করবে! আল্লাই জানে!
“কীরে? আয়।
তারপরও সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব বক্সে বন্দী করে আকাশ ভাইয়ার পিছনে পিছনে গেলাম। কিন্তু চারপাশে উনার দেখা নেই বলেই বেবলির পাশে দাঁড়ালাম। বেবলি এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো,
“আপা, আমি না তোর গাঁয়ে হলুদে এমন ভাবে নাচবো।দেখিস, গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান আমরাও নিলা আপাদের মতো করবো।”
বেবলির অবুঝ কথাবার্তা শুনে স্মিত হাসলাম। ওদের মতো বারান্দার সাজ ও সাজাতে আমার সামর্থ হবে কী না তাতেও প্রচুর সন্দেহ। কিন্তু নাচের কথা মনে আসতেই বললাম,
“এখন কেন নাচছিস না?সবাই নাচছে তুইও নাচ।”
“ও তো আর আমার আপন আপা নয়। নাচলে মানুষ আমাকে নিয়ে যা তা বলবে।”
“মানুষের মুখ আছে। ওরা তো অনেক কিছুই বলবে। তুই না শুনার ভান করে নেচে ফেলবি।”
“তাও এইখানে নাচবো না।”
ওর এমন কথা শুন”যাহ্”বলেই ধাক্কা দিয়ে নাচের ভীড়ে ফেলে দিলাম। কিন্তু ভাগ্য তার উলটো হলো। ও যাবার সাথে সাথেই নাচ শেষ হয়ে গেল। মুখটা বেজায় বেজার করে আমার সামনে এসে বললো,
“আপা, আমি শুধু তোর বিয়েতেই নাচবো।”

সবাই ফটো তুলায় ব্যস্ত। আমি কী না এই লোকটাকে খুঁজে দেখছি। হায় ভাগ্য!

“দীপ্তি, এ্যাই দীপ্তি।”
পুরো ছাদ খুঁজে দেখছিলাম। নিলার ডাকে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ও হাত দিয়ে বার বার ডাকছে। ভাভারে ভাবা বিয়ের কনেও এই ভাবে চিল্লাইতে পারে। কিন্তু সবাই না পারলেও আমার বান্ধুবি ঠিকই পারে।

“এই ভাবে ছাগলের মতো ভ্যা ভ্যা করছিলি কেন? একবার ডাকলে হয় না বুঝি।” ওর পাশে গিয়ে বসে এই কথা বললাম।
“হু, তুই বোধয় এক ডাকেই শুনছিলি। যাকগে, বাদ দে সেসব কথা। এবার বাংলার পাঁচের মতো চেহেরা না বানিয়ে হাসিখুশি চেহারা রাখ। মুখ দেখলে সবাই ভাববে বিয়ের আগেই তুই জামাই হারা।”

মুখের ভয়ার্ত ভাব দূরে সরে রাখার চেষ্টা করলেও এতক্ষণ পারছিলাম না। কিন্তু নিলার কথায় নিজের চেহেরার এমন মন্তব্যে আমি বড়ই আশাহত হলাম। তাই মুখটাকে স্বাভাবিক রেখে ক্যামেরার দিকে যেই না তাকালাম। দেখলাম ক্যামেরাম্যানের পিছনে আমায় দেখে ডেবিল মার্কা হাসি দিচ্ছেন। উনার এই মুড দেখে মনে হচ্ছে আমায় পেলেই আলু ভর্তা করে খাবেন। হায়!

“আপু, প্লিজ একটু হাসুন। আর কনের গা ঘেঁষে বসুন।”
ক্যামেরাম্যানের কথায় হুঁশ এলেও নিজেকে যথা সম্ভব ঠিক রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু কোনো মতেই পারছি না। ক্যামেরাম্যান যতটা ক্লিক করলো সব গুলোতেই অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম।
“আপু, আপনার হাতে থাকা চশমাটা লাগিয়ে ফেলুন। এতে আপনাকে সুন্দর লাগবে। হয়তো আপনার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে। আর আপনিও দেখতে পারবেন। ক্যামেরা ঐ দিকে নয় এদিকে।”
লোকটার কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হাসিতে বোম ফাটালো। আর আমিও লজ্জায় মিইয়ে গেলাম।পরক্ষণে নজর দিলাম হাতে থাকা চশমাটার দিকে। নিয়নের ভাইয়ের চশমা আমার হাতে। চশমার দিকে খানিক তাকিয়ে উনার দিকে তাকালাম। দেখতে পেলাম ভ্রুযুগল কুচকে আমার দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করছেন। খানিক পর সবার দিকে তাকিয়ে চশমাওয়ালী সেজে ভয়টয় বন্দী রেখে ক্যামেরা দিকে তাকালাম। কিন্তু উনার দিকে তাকালে আবারো ভয়টা এসে ভীড় জমালো।

“আপু, প্লিজ ক্যামেরার দিকে তাকান। এইটা লাস্ট ফটো।”
এই ক্যামেরাম্যান যেন আমায় জ্বালাতান করার জন্য নতুন তৈরি হয়েছে।

“আমি আর ফটো তুলছি না।”
রাগ দেখিয়ে উঠে আসতেই মনে হলো। এখান থেকে বের হলেই আমার জীবনে বাকি তেজপাতাও থাকবে না। তাই আবারো বসে ক্যামেরাম্যানকে জোর করেই কয়েকটা তুললাম। কিন্তু শুধু কি আমিই ফটো তুলবো? না তো। কিন্তু এখান থেকে উঠতেও মন সায় দিচ্ছে না।
“অয়ন এবার তুই আর আমিই ফটো তুলবো।”
হঠাৎ আকাশ ভাইয়ার এই কথাশুনে আমার চেহারায় ভয়ের রেশ কেটে জায়গা করে নিলো এক চিলতে হাসি। যেন মেঘের আড়ালে সূর্যের হাসি।

আকাশ ভাইয়া আর নিয়নের ভাই ফটো তুলায় ব্যস্ত হলেই ভীড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। উনার দৃষ্টিসীমায় আমি বের হলেও উঁকিঝুঁকি বেশ কয়েকবার দেখতে পেলাম উনি যে আমায় আড়চোখে বার বার খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন। উনার প্রত্যেক ফটোই বেশ ভালো হচ্ছে। কী সুন্দর হাস্য উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ফটো তুলছেন! অন্যের চেহারায় ভয়ে ভাব ফুঁটিয়ে নিজেরটায় বেশ আছেন। আরেকবার উঁকি দিয়ে দেখলাম এবার আকাশ ভাইয়ার জায়গায় নিয়ন এসে নিলার পাশে বসেছে। এতক্ষণ পর দুষ্টুমির রাজার দেখা পেলাম। চশমায় দুই ভাইকে একই গ্রহের প্রাণীর বদলে ভিন্ন গ্রহের প্রাণী লাগছে। দুই রকমের দুই চশমা দুজন পড়েছে। কারণ এখনো উনার চশমা আমার হাতে।

নিলাকে আজ ভারি লজ্জাবতী মনে হচ্ছে। লজ্জাবতী গাছের সম্পূর্ণ লজ্জা যেন ওর মধ্যে এসে স্থান পেয়েছে। গাছ হয়ে জন্মানো লজ্জাবতী আর নারীর মধ্যে স্থান পাওয়ায় হয়তো সে ভারি খুশি। একমাত্র বিয়েতেই মনে হয় নারীর যত লজ্জা তা দেখতে পাওয়া যায়।
নিলার কথা ভাবতেই মনে পড়ে গেল আমার ভ্যানিটিব্যাগে রাখা পাপড়ি কথা।ভীড় থেকে কিছু দূরে একপাশে নির্জন দিকে গেলাম। এই দিকটায় কেউ আসবে না। কারণ এটা অনুষ্ঠান থেকে বেশ দূরে। আর এই চিপায় এসে মানুষ কী করবো। আর মতো তো আর তাদের মহৎ কাজ নেই।
তাড়াতাড়ি ব্যাগের চেইন খুলে কাগজে মুড়ানো পাপড়ির দিকে খানিক তাকালাম। তারপর কাগজ খুলে কয়েক খানেক পাপড়ির মধ্যে একটা পাপড়ি তুলে নিলাম। চোখে চশমা পড়ে পাপড়ি হাতের পিঠে রেখে চোখ বন্ধ রেখে, মনে মনে বলতে লাগলাম, হে নবী, মায়ার নবী, আল্লাহ তায়ালেক বলুন আমার সব প্রয়োজন মিটিয়ে দিতে। তবে ধীরে সুস্থে।
এগুলো বলে যেই না পাপড়িতে ফু দিবো। তখন কারোর শীতল হাতের ছোঁয়া অনুভব করলাম। হাত দিয়ে কে যেন আমার হাত জরিয়ে নিলো। অন্যরকম অনুভূতিতে ছেয়ে গেল আমার শহর।

আচমকা কে যেন আমার চোখের চশমা খুলে নিলো। তড়িৎ গতিতে আমিও চোখে খুলে দেখলাম। নিয়নের ভাই একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চোখ থেকে চশমা খুলার সাথে নিজের কালো চশমাও খুলে ফেললো। মৃদু হেসে আমার চোখে কালো চশমা লাগিয়ে বললো,
“এই চশমায় আপনাকে বেকুব বেকুব লাগে। আর এই চশমায় বেশ স্মার্ট লাগে। দেখবেন? দেখুন।
বলেই ফোনের ক্যামেরা অন করলো। আমিও ভ্যাবলাকান্তের মতো দেখতে লাগলাম আমাকে কেমন দেখাছে। কালো চশমায় কেমন একটা গুন্ডি গুন্ডি ভাব ফুটে উঠলো। স্ক্রীনে শুধু আমি না আরেকটা মুখ খুব হাস্য উজ্জ্বল দেখা যাচ্ছে ।উনাকেও ফোনের স্ক্রীনে আমার সাথে দেখা যাচ্ছে। দুইজনই কাপলদের মতো করে মনে হচ্ছে সেলফি তুলছি। এই ভাবনা মনে হতে দূরে সরে যেতে চাইলেই,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

প্রয়োজন পর্বঃ ১৩

0

#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১৩
লেখায়ঃ তানিয়া তানু

রাত বারোটায় শুরু হলো গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান। চারদিকে আলোর ঝলমলে পরিবেশে এক অনন্য জগত তৈরি করেছে। দেখতেও বেশ ভালো লাগছে। এই মাত্র সালোয়ার কামিজ পড়ে বের হলাম। সবাই শাড়িতে আর আমিই এক মাত্র ব্যক্তিই যে কীনা জামা পরিধান করেছে। তাই নিজেকে যে নিজের কাছে অদ্ভুদ গ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে। সে যাইহোক বেবলিকে খুঁজতে হবে বলে দরজা থেকে বের হয়ে নিচে গেলাম। সেখানে নিচ তলায় বিউটিশিউয়ানরা যেখানে সাজিয়েছে সেই রুমে গেলাম। রুমের মধ্যে বিউটিশিউয়ানরা আড্ডায় মত্ত। আবার কয়েকজন আশি বছরের বুড়িদের সাজাতেও ব্যস্ত। তাদের এমন সাজানো হয়েছে যে এখন বুড়ি আর লাগে না। এই তো নীলার দাদুকে দেখে আমি নিলার খালাকে ভেবেছিলাম। উনি আমায় দেখে বললেন,
“ও নাতি। তুই জামা পড়লি ক্যান?”
অভাব কাউকে দেখালে সে তোমার সামনে সসমবেদনা জানাবে। কিন্তু আড়ালে আবডালে তোমায় নিয়ে হাজারবার উপহাস করবে। তাই দাদিকে বললাম,
“বু, একটু অন্যরকম সাজার চেষ্টা করলাম বৈ কি।
“ও ভালা। কিন্তু তুই সাজিস নাই ক্যান। ক্যামন জানি খালি খালি লাগতাছে। আ তো দেহি। আমার কাছে আয়।”

দাদির এই সাজানোর পাল্লায় আমি পড়তে অনিচ্ছুক। মূলত এখন এই স্থান ত্যাগ করাটা হবে আমার প্রধান কাজ। তাই দাদিকে বললাম,
“বু, শুনছো, শুনো, বেবলি আমায় ডাকছে। ও বোধয় ভয়-টয় পেয়েছে।আসি গো।
দাদি কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু আমি না শুনেই দৌড়াতে শুরু করলাম। রুম থেকে বের হয়েই মনে হলো এক আইফেল টাওয়ারের সাথে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা খেলাম। ধাক্কার চোটে মাথা সিঁড়িতে লাগতে গেলেই কেউ হাত দিয়ে আমার মাথার পিছনে ও কোমরে ধরে কাছে টানিয়ে গেল। পুরো শরীরটাই যেন ঘুরে গেল। তবে বাঁচা গেল। কোথাও কোনো ব্যথা পাইনি। তবে কোন আইফেল টাওয়ারের সাথে ধাক্কা লেগেছিলো। আর কেই বা বাঁচালো তা দেখার জন্য মাথা উঁচু করতেই দেখলাম নিয়নের ভাই আমার দিকে ঐ গভীর দুচোখ নিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।চশমাটার কারণে চোখ দুটো স্পষ্টভাবে দেখে যাচ্ছে না। তাই আমি চশমাটা খুলে নিলাম। অদ্ভুদ ব্যাপার হলো উনার নাড়াচাড়ার কোন ভাব দেখা গেল না। উনি এখনো এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কিন্তু কী দেখছেন! সেটা আল্লাই মালুম! আমি এমন আহামরি কিছু সাজিনি। যে এতক্ষণ ধরে আমায় দেখতে হবে। তবে আমিও উনাকে দেখছি। উনার সেই মায়াময় চোখ দুটিকে। চারপাশে যেন আগুনোর শিখা। মধ্যে গোল সমুদ্র। চোখের পাপড়ি ঘন। একেবারে মাথার চুলের মতো। পাপড়িগুলোও কী লম্বা! পাপড়ি যদি হাতে তালুতে রেখে চাওয়া পড়ে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে সেটা নাকি নবিজীর কাছে গিয়ে পৌছায়। নবীজি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করেন সেই চাওয়াগুলো পূরণ হওয়ার জন্য। কিন্তু আমি আমার পাপড়ি কখনো হাতে পাইনি। ছিড়তেও কষ্ট লাগে। আবার চাওয়াও অনেক। তাই উনার এত পাপড়ি দেখে লোভ সামলাতে পারছি না। হাত উপরে তুলে উনার পাপড়িতে আস্তে আস্তে নিচ্ছি। উনিও মনে হয় বুঝতে পারছেন না। আমি ঠিক কী করতে চাইছি। শুধু চেয়ে চেয়ে এতক্ষণ ধরে দেখছেনই। কিন্তু উনি যত দেখবেন। তত আমার লাভ। কোনোরূপ বাধাঁ ছাড়াই আমি পাপড়ি আনতে পারবো।

“আহহহ”
উনার চিৎকারে আমার হুঁশ এলো।হাতে থাকা কয়েকটা পাপড়ির দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বললাম, আহা! এতগুলো ছিড়লি। বেচারা তো অনেক কষ্ট পেলো। তাই না?

“আপনি এটা কী করলেন? আমার পাপড়ি ছিড়লেন কেন?”

উনি চোখে হাত রেখে এই প্রশ্নগুলো করলেন। মনে হচ্ছে অনেক ব্যথা পেয়েছেন। অন্যদিকে উনার প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। তাই এখান থেকে পালানোটাই উপযুক্ত মনে করলাম। তাই দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে ছুটলাম ছাদের দিকে। শুনলাম পিছন থেকে উনি চিল্লিয়ে বলছেন, আমি আপনাকে ছাড়বো না। দেখে নেবো।

দেখে নিলে নিবে। সে পড়ে দেখা যাবে। মন তো আনন্দে আর মানছে না। এত এত পাপড়ি হাতের মাঝে। এখন অনেক চাইবো। সেগুলো উড়িয়ে নবীজির কাছে পাঠাবো। আহা! কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। মন যেন আনন্দে মেতে উঠছে।

ছাদে উঠেই নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছি। আজ এতদিন পর এত জোরে দৌড় মনে হয় প্রথম দিলাম। সেই যে ছোটবেলায় কোনো এক দৌড় প্রতিযোগিতায় দিয়েছিলাম। তারপর এই আজ। উফ! দৌড়ে পুরো হাপিয়ে গেলাম। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি তবুও যেন ক্লান্ত মন শান্ত হচ্ছে না।

“কীরে এভাবে হাপাচ্ছিস কেন?”
আচমকা কারোর কথায় পিছন ফিরে দেখলাম আকাশ ভাইয়া। তার হাতে ক্যামেরা। পিক তুলছিলেন মনে হয়। সে যাইহোক, আমি সাধারণভাবেই বললাম,
“বেবলিরে খুঁজার জন্য সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠেছিলাম। তাই হাপাচ্ছি।”
“বেবাট! ও তো উপরেই থাকবে।যেহেতু উপরে মূল অনুষ্টান। ঐ দেখ, ও নাচ দেখে হাসিতে মত্ত হয়েছে।”
ভাইয়ার আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় অনুসরণ করে দেখলাম বেবলি, নাচ দেখে মিটিমিটি হাসছে। কিন্তু নাচ তো চমৎকার! তবুও ও হাসছে কেন? জানার জন্য কৌতূহলী হয়ে গেলাম ওর কাছে। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “বেবলি, তুই এইভাবে হাসছিস কেন?”
হঠাৎ আমাকে দেখে ও চমকিত হলো। পরক্ষণে হাসতে হাসতে বললো,
“আপা, একটু আগে আসতে পারতি। তখন দেখে জানতে পারতি। আমি কেন হাসছি?”
“একটু আগে তো আসিনি। এখন এসেছি। তাই দেখতেও পাইনি। তুই অন্তন্ত বল,আমি শুনি।”
” আপা একটু আগে একটা ছেলে নাচার মধ্যে ইচ্ছা করেই একটা মেয়েকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছে। মেয়েটা সবার সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। মেয়েটার অবস্থা কী বিচ্ছিরি লাগছিলো! তাই তো এখনো মনে পড়লে হাসি পায়।”
আমার এই কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। একটা মেয়ে তো আর ইচ্ছাকৃত ভাবে পড়িনি। তাকে ল্যাং মেরেছে। তো এখানে হাসার কী আছে। তাই রাগে বেবলিকে বললাম, বেবলি এই নিয়ে তোকে যেন আমি আর হাসতে না দেখি।ওকে।”
“ওকে”

প্রত্যেকের নাচ দেখে আমি মুগ্ধ। তার সাথে সবার হাসি। সবার হাসি দেখে মনে হচ্ছে ওদের মতো সুখী আর কেউ নেই। কিন্তু প্রত্যেক হাসির আড়ালে থাকে এক সাগর পরিমাণ দুঃখ। ভিন্ন ধরণের দুঃখ
যা নিজের সত্তা ছাড়া কারোর কাছেই ভাগ করা যায় না। এগুলো ভাবতে ভাবতে সিঁড়ির দিকে নজর পড়লো। নিয়নের ভাই দৌড়াতে দৌড়াতে আসছেন। উনার এইভাবে আসা দেখে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কী করবে এই ছেলেটা! সবার সামনে তুলে আছাড় দিবে না তো! যদি দেয় আমি কী করবো! নাহ, আমাকে লুকাতে হবে।

স্টেজের পিছনে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগলাম উনার পথচলার প্রতিটি পদক্ষেপ। এদিক সেদিক চেয়ে বার বার খুঁজছেন। খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলেন বেবলির কাছে। তারপর আর খোঁজার চেষ্টা করলেন না। বেবলির সাথে খোশগল্পে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। উফ, এই যাত্রায় মনে হয় বেঁচে গেলাম। কালই চলে যাবো। বিয়ে-টিয়ে কিচ্ছু খাবো না। তারপর টিউশনিতে গেলে কী হবে? নাহ, আর কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। মাথাটা যেন ঝিম ধরে আছে। কাজ করছে না। আচ্ছা উনি এখনও কী গল্পে মেতে আছেন। দেখার জন্য স্টেজের পিছন থেকে উঁকি দিলে দেখতে পেলাম। বেবলি বিভোর হয়ে নাচ দেখছে। কাপল নাচ। আমিও সেখান থেকে কাপল নাচ দেখতে লাগলাম। বলা তো যায় না সেখানে গেলেই যদি ঐ খাটাশটা চলে আসে।

” কে তুমি? স্টেজের পিছনে কী করছো?”
আচমকা প্রশ্ন ও পুরুষালি গম্ভীর কণ্ঠ শুনে আত্মা কেঁপে উঠলো। পরিচিত কণ্ঠ লাগলো। কিন্তু তাও কে সেই লোক তা দেখার জন্য ঘাড় ঘুরালে দেখতে পেলাম,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,

প্রয়োজন পর্বঃ ১২

0

#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১২
লেখায়ঃ তানিয়া তানু

নিয়নের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
উনার হাত থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য আপনাকে অগণিত ধন্যবাদ।

ধন্যবাদের প্রতিউত্তরে যে স্বাগত বলতে হয় সেটা তিনি বললেন না। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন,

~আপনি ঐ রুমে উঁকি দিয়েছিলেন কেন?
উনার প্রশ্ন শুনে নীরব হয়ে খানিক অসহায়ের দৃষ্টিতে মেঝের দিকে মাথা নিচু করে রইলাম। আমার উত্তর না পেয়ে উনি কিছুক্ষণ পর আরেকবার বললেন,

“আপনি কী ছাদে যাচ্ছেন?”
উনার এই প্রশ্নে খুশি হয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললাম,
“হুম”
“চলুন তাহলে যাওয়া যাক”
“আপনিও যাবেন নাকি?”
“আপনার সঙ্গে গেলে বুঝি সমস্যা হবে?”
“আপনার আড্ডা যে রইলো।”
“ও খানিক পর শেষ হবে।”
“অহ। তো চলুন।”

দুজনে চলে গেলাম ছাদে। ছাদে ডেকোরেটররা সাজানোতে ব্যস্ত। এই ছাদেই গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হবে। একপাশে মানুষ নেই বলে দুজনে সেদিকে গেলাম। ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ খুব সুন্দর করে দেখা যায়। আকাশে আজ মেঘ জমেছে। তবে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

“আকাশের আজ ভারি মন খারাপ। তাই না?”

উনার কথা শুনে আকাশের দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
“আকাশ কিন্তু মন খারাপেই বেশ সুন্দর।” আমার জবাবের সাথে সাথেই বললেন,
“ঠিক আপনার মতো”
“মানে?”
“আপনার চেহারায়ও সব সময় মেঘের ছায়া থাকে। হাসেন না কেন? হাসলে তো আপনায় দারুন লাগে।”
“কারোর হাসি না দেখে তার হাসির ধরণে মন্তব্য করা অনুচিত। এতে তাকে মিথ্যে প্রশংসার দাবিদার করা হয়।”

“হাসি দেখেই মন্তব্য করেছি। তাই বলেছি আপনার উচ্চস্বরের হাসিতে আমি মুগ্ধ।”

উনার কথায় ভারি আশ্চর্য হলাম। কারণ আজ পর্যন্ত উনার সামনে যতবার পড়েছি ততবার হাসিমুখে কখনো ছিলাম না। তাহলে উনি আমার হাসি দেখলেন কী করে? তাও আবার উচ্চহাসি।

“আমার হাসি দেখলেন কীভাবে?”

“প্রতিদিন নিয়নের সাথে খেলায় মেতে উঠে খিলখিল হাসি প্রতিবারই শুনি। তবে প্রথম যেদিন নিয়নের সাথে খেলছিলেন। সেদিনেই দেখেছিলাম।”

“তার মানে আপনি প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে আমার হাসি দেখেন।”
“মুটেই না। আমি প্রতিদিন শুনি। প্রথম দিন শুধু দেখেছিলাম। কারণ হঠাৎ উচ্চস্বরের হাসি শুনে অবাক হয়েছিলাম। তাই কারন জানতে দরজার আড়ালে থেকে দেখেছি।”
উনার কথার প্রতিউত্তরে কথা আর বললাম না। দুইজনই নীরব রইলাম। যেন নীরবতা নামের মানুষটি আজ আমাদের শহরে ঘুরতে এসেছে। তার এই শহরটা এতই ভালো লাগছে যে এখান থেকে যেতেই যাচ্ছে না। তবে অতিথি তো এক সময় যেতেই হয়। তবে তাকে আমি নয়। উনিও বিদায় করলেন। মনে হয় ওর অত্যাচারে বেশ বিরক্ত হচ্ছেন। তাই বিদায় দিয়ে বললেন,

“আসি। ভাইটা বন্ধুদের কাছে বসে আছে। আমায় না দেখে খুঁজতে পারে।”

“হুম। আমিও চলে যাবো। বেবলি তো নিলার কাছে। না জানি কী করছে!”

“বেবলি!”
“উহু,স্মৃতি ওর নাম। আমার বোন।”
“তাহলে বেবলি কেন ডাকেন?”
“ও একটু অবুঝ টাইপে। রাখি-বন্ধনের বেবলির মতো।”
“তাই স্মৃতির মতো এত সুন্দর নামে না ডেকে বেবলি ডাকেন।”
“জি।”
“পরে না হয় এই অবুঝ বালিকাকে দেখে আসবো। চলুন এখন এখান থেকে যাওয়া যাক।”

সিঁড়ি দিয়ে দুজনে নামার সাথে নিচ থেকে অনেক ডেকোরেটররা উপরে উঠছে। আর আমরাও নিচে নামছি। আমি ডান পাশে এক সাইডে আছি। ছেলেরাও দলে দলে আসছে। বেশি মানুষ জায়গাও হচ্ছে না। বার বার উনার সাথে ধাক্কা লাগছে। কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না।

হঠাৎ হাতে কারোর হিম শীতল হাতের স্পর্শ পেলাম। পুরো শরীর যেন অজানা এক অনুভূতিতে কেঁপে উঠলো। হাতের মালিক ছিলো পাশে থাকা মানুষটি। উনি আমায় বাম পাশে নিয়ে নিজে ডান পাশে চলে আসলেন।

সিঁড়ি দিয়ে নামার পরক্ষণে দুজন দুদিকে চলে গেলাম। হাতে থাকা টাকাটা এখনো দেওয়া হলো না ভেবে আফসোস হলো।

“আপা, এই বিয়ে বাড়িতে একলা আমায় রেখে যেতে পারলি?”

এসে দেখি নিলার পাশে মুখ ভারী করে বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ রাগ করেছে। তাই ওর পাশে গিয়ে বললাম,

“ওরে, আমার বনু রে। আর কক্ষণো তোরে একলা ফেলে যাবো না।”(গাল দুটো টেনে টেনে)”

“দীপ্তি, তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি?”
নিলার প্রশ্নে বেবলির পাশ থেকে উঠে নিলার কোলে মাথা রেখে বললাম,

“তুই তো চলে যাবি। তাই ছাদে গিয়ে একটু কেঁদে আসলাম।”
“আহা! কী প্রেম।”
” তোর বুঝি বিশ্বাস হচ্ছে না?”
“কী করে বিশ্বাস করবো বলো। এতদিন তো তোমার প্রেমটা দেখিনি।”
“কী করে দেখবি বল? সারাদিন তো টাইম পাসের প্রেমে ব্যস্ত ছিলি।”
টাইম পাসের প্রেমের কথা মনে পড়ার কারণে মনে পড়ে গেল রনি ভাইয়ের কথা। বিদায় অনুষ্টানে কী কান্নাটাই না নিলার জন্য কেঁদেছিলো। ওর কান্না দেখে তো আমি নিজেই একটা বালতি সমবেদনা হিসেবে দিয়ে এসেছিলাম।।দেওয়ার সাথে সাথে বলেছিলাম কান্নাগুলো এখানে জমিয়ে গোসল সেরে ফেলো। গাঁয়ে থেকে কী দুর্গন্ধ বের হচ্ছে!
আমার কথা শুনে কান্না থামিয়ে বালতি নেবার বদলে মুখ ভ্যাংচি দিয়ে লাগলো। আহা! এইটা যেন পরের ব্যথায় ব্যথী হওয়ার ফলসরূপ পেলাম।

“কোথায় হারালি?”
“রনি ভাইয়ার জগতে?”
“মানে?”
“নিলা, রনি ভাই জানে তর যে কাল বিয়ে?
“নিচে গিয়ে দেখ।”
“কী?”
“বাগানে রনি ভাই নতুন গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করতে ব্যস্ত।
“জিএফ কই পাইলো।”
“আমার বিয়েতে এসে জুটিয়েছে।
“হায়! তুই সেদিন কীভাবে সামলিয়ে ছিলি।”
“এটা আমার কড়ে আঙ্গুলের কাজ”
____________________________________

রাত যত আয়োজন যে ততই গাঢ় হচ্ছে। মেয়েরা সাজুগুজুতে ব্যস্ত হচ্ছে। ডেকোরেশন সব শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু কনে আসার অপেক্ষা। নিলাকে বিউটিশিউয়ানরা সাজানোতে ব্যস্ত। আর আমি ব্যস্ত আমার বোন বেবলিকে সাজাতে। সাজাতে এক্সপার্ট নই। তবুও যা পারছি সাজাচ্ছি। আমরা দুই বোন যে রুমে সেখানে আর কেউ নেই। বেশ কয়েকটা মেয়ে ছিলো। আকস্মিক দরজায় টুকটুক শব্দে দুই বোনই সেদিকে দৃষ্টিপাত করলাম। আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম আকাশ ভাইয়া এক হাত দেয়ালে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমায় দেখে বললেন,
“তোরা এই রুমে কী করছিস?”

প্রশ্ন শুনে অবাক হলাম। এ আবার কেমন প্রশ্ন। প্রত্যেক মেয়েরা সাজছে। আর আমরা দুই বোন সাজছি।
“তোর কী কোনো অসুখ হয়েছে নাকি?
অসুখ! হ্যাঁ একটা অসুখ খুব প্রবল ছিলো। তোমাকে দেখার অসুখ। মন ছটফট করতো তোমার শহরে এসে তোমার দেখা না মিললে। তবে সে অসুখ সেরে গেছে। মনে হয় না আর কোনোদিন এই অসুখে ভোগবো। তবে তোমায় দেখলে হৃদয়ের বেশ খানিক জায়গা পুড়ে। সারাক্ষণ একটা শুন্যতা অনুভব করি। তাই মৃদু হেসে জবাবের প্রতিউত্তরে বললাম
“আমার কেন অসুখ হবে?”
“অসুখ না হলে সারাক্ষণ চিন্তায় মগ্ন কেন থাকিস?
জবাব দিলাম না। কেন দেব? সব প্রশ্নের উত্তরই বা কেন দিতে হবে? আমার উত্তর না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস পেলে বললো,
“স্মৃতি কোথায়?”
“ভেতরে”
তারপর ভাইয়া ভিতরে উঁকি দিতে স্মৃতির অবস্থা দেখে বললো,
“ওরে পেত্নী কে সাজয়েছে?
পেত্নী! আমি আমার বোনকে পেত্নী সাজিয়েছি। আমার সাজ কী তবে এতই বাজে। রাগে আমি অন্যদিকে ভাব নিয়ে বললাম,”আমি সাজিয়েছি। সুন্দর না?
“ধুরু! একেবারে তালগাছের ঝুলন্ত পেত্নী লাগছে।”
“তাও ভালো। পেত্নী তো আর কেউ সাজাতে পারে না।”
“সেটাও ঠিক। এক পেত্নী তো আরেকজনকে পেত্নী সুন্দর করেই সাজাতে পারে। তাই না?”
“মানে?”
“তোরা দু বোন এখানে কেন সাজছিস? তোদের সাজার জন্য তো বিউটিশিউয়ান আছে।”
“এটা মানের উত্তর বুঝি?”
“এইটা টপিক বাদ। নিচে যাহ্। বিউটিশিউয়ানরা আছে।”
“আমি যেতে পারবো না। বেবলিকে যাবে।”
“তুই ও যাবি।”
উনার এই অধিকারবোধ দেখে পিত্তি জ্বলে উঠলো। কত সুন্দর করে বলছেন, তুই ও যাবি। হু।
“থাক। তুই চিন্তায় মগ্ন হ। স্মৃতিই সাজুক। তুই আবার বেশি সাজলে প্রেত এসে নিয়ে যাবে। তখন আমি একলা হয়ে যাবো।”
ভাইয়ার কথা না বুঝে মানে বললে খানিক নীরব থাকলেন। তারপর হন্তদন্ত হয়ে বেবলির কাছে গিয়ে ওরে টানতে টানতে নিয়ে গেল। বেচারা বেবলি কাজল লেপ্টে যাওয়ায় ঠিক করতে ব্যস্ত ছিলো। হঠাৎ কারোর ধাক্কা পেয়ে যেন ঠাওর করতে পারলো না। পরে বোধয় পেরেছে। তবে সেটা আমার জানা নেই।

চলবে„„„„„„„„„„„„„„

প্রয়োজন পর্বঃ ১১

0

#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১১
লেখায়ঃ তানিয়া তানু

কেটে গেল কয়েকদিন। সেদিনের পর বাবার বুকের ব্যথা কমলেও বেশ দুচিন্তায় আবারও বেড়ে যায়। বাড়ার পর খানিক বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়েও যায়। বাবাকে হাজার করে বেবলি আর আমি বুঝালাম যে ডাক্তার দেখাও, বাবা। কিন্তু তিনি গেলেন না। ডাক্তারের ফি যে অনেক। তার থেকে উনার মতে রাস্তার মোড়ে ফার্মেসীর ট্যাবলেট খেলে কমে যাবে। কমে তবে সেটা কিছুক্ষণের জন্য।
___________________________________

কাল নিলার গায়ে হলুদ। তাই আজই আমি আর বেবলি কাপড় গুছানো শুরু করেছি। আকাশ ভাইয়ার দেওয়া টাকাগুলোও খুব যতন করে তুলে রাখলাম ব্যাগে। আমায় যে দিতে হবে। যাইহোক, আমরা কিছুক্ষণ পরে চলে যাবো। তবে সমস্যা হলো আমার পরিধান করার মতো যোগ্য কোনো জামা নেই। মা আমায় দেখে বুঝে ফেললেন। মা তো। সন্তানের দৃষ্টিতেই বুঝে ফেলেন সন্তান কী চায়? সমাধান হিসেবে দিলেন মায়ের পুরোনো কাতান শাড়ি। সেটা ছিলো নীল কালারে মিশ্রিত। গাঁয়ে হলুদে পড়ার জন্য পূর্বেই একটা হলুদ কামিজ ছিলো। সালোয়ার আর উরনা সাদা রঙের। কিন্তু এবার সমস্যা হলো শাড়ির সাথে গলার আর কানে পরার মতো তেমন কোনো সেট নেই। ভাবতেই মনে পড়ে গেল
হ্যাঁ, আছে তো। দু বছর আগে অপরিচিত এক শুভাকাঙ্ক্ষী একটা গয়নার সেট দিয়েছিলো। সত্যি সেটা দেখে বেশ চমকিত হয়েছিলাম। দারুণ কারুকাজ ছিলো তাতে। কিন্তু কে দিয়েছিলো তা হাজার খানেক সময় নিয়ে ভেবেও উত্তর মিললো না। বেবলির কোথাও বের হয় না বলে ওর জামার কোনো সমস্যা হয়নি।
___________________________________

নতুন টিউশনি যখন বেতন দিলো মনে মনে লাখ লাখ শুকরিয়া জানিয়েছিলাম। উনি নিজেও জানেন না যে নিজ অজান্তেই আমার কত বড় উপকার করলেন! ইনশাআল্লাহ প্রত্যুপকার একদিন দিবো। সেই টাকায় আটশত টাকা দিয়ে জামদানি এক শাড়ি কিনলাম। তবুও মনে অনেক সংশয় হলো। সে এটা দেখে কেমন বোধ করবে? কোন নজরে দেখবে শাহেদা আন্টি?
ব্যাগপত্র গুছিয়ে মা-বাবাকে সালাম জানিয়ে চললাম নিলার বাড়ি। জানি না সেখানে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে?

___________________________________

পুরো বাড়ি আলোর ঝমাকানিতে নতুনত্ব সৃষ্টি করছে। পাশে থাকা বেবলি অবাক নয়নে বিভোর হয়ে তাকিয়ে আছে আলোকসজ্জায় সজ্জিত বাসার দিকে। কিছুক্ষণ পর হুঁশ এলে আমাকে লক্ষ্য করে বললো,
~আপা,আমরা না তোর বিয়েতে এমন ভাবে সাজাবো দেখিস।
অপূরণীয় কথা বলায় মৃদু হেসে বললাম, দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

বাসার ভিতর ঢুকে আরো অবাক হলাম। এত সজ্জায় সজ্জিত পুরো বাসার প্রত্যেক কোণায়। সিড়ি থেকে শুরু করে মেঝে পর্যন্ত বিভিন্ন ডিজাইনে পূর্ণ হলো তাদের কারুকাজ।অন্যদিকে এতো ভীড়ের মধ্যে মনে হলো কেউ আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিচ্ছে। কিন্তু এ শুধু অনুভব করতে পারছি। আশেপাশে এত মানুষের ভীড়ে নিক্ষিপ্ত করা দৃষ্টির মালিককে স্বচক্ষে দেখতে পেলাম না।
হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ একজন বললো,
দীপ্তি, তুই এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছিস?
কন্ঠস্বরে চিনে ফেললাম পরিচিত সেই মানুষটিকে। যেই না হাসিমুখে তাকে দাঁড়ানোর হেতু বলতে যাবো। পিছন ফিরে দেখলাম আকাশ ভাইয়ার পাশে দাঁড়ানো রামিসা। তাকে দেখেই গা যেন অদ্ভুদভাবে জ্বলে উঠলো। নীরব রয়ে মাথা নিচু করে মেঝের ডিজাইন আঁকা শিখতে শুরু করলাম।
~ভাইয়া, এত সুন্দর সাজানো হয়েছে যে এত্তক্ষণ সাজানোটাই দেখছিলাম।
আমি জবাব দিচ্ছি না দেখেই মনে হলো বেবলি জবাব দিয়েছে। বাহ, ওর তো বেশ বুদ্ধি হলো!
~ব্যাগপত্র রাখ। রেখে তারপর নাহয় পুরো বাড়ি দেখিস। (বেবলির দিকে তাকিয়ে)
~শুন্, নিলা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ওর রুমে যাহ্। (আমার দিকে তাকিয়ে)

আমাদের দুই বোনের সাথে আকাশ ভাইয়া যে কথা বলছে সেটা মনে হয় রামিসা সহ্য করতে পারলো না। তাই বললো,
” আকাশ, ঐদিকটায় একটু আয় তো। তোর সাথে কথা আছে।”

এই বলেই দুই হাত দিয়ে আকাশ ভাইয়ার হাত জড়িয়ে টানতে টানতে অন্যদিকে নিয়ে গেলেন। আমিও আশাহত হয়ে নিলার রুমে গেলাম।
___________________________________

নিলার রুমের দরজা ঠেলে ঢুকে দেখলাম, তাকে ঘিরে মেয়েরা বসে আছে। সবাই হাসাহাসিতে মত্ত হয়ে আছে। নিলার দৃষ্টি আমার দিকে পড়তেই বললো,
~আরে তুই দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে ঢুক।
দুই বোনই ভেতরে ঢুকলাম। খানিকক্ষণ ঘরের সাজানো মনোমুগ্ধকর হয়ে দেখলাম। বেশ ভালো সাজিয়েছে।

~দে?
আচমকা ওর দে শব্দটা শুনে অবাক হলাম ওকে আমি কী দেবো। ভাবলাম হয়তো শাড়িটা এখনি চাইছে। তাই চেইন খুলে শাড়িটা যেই আনতে যাবো তখন নিলা বললো,
~তোকে ব্যাগ খুলতে কী বলেছি?
আমি ভ্যাবলাকান্তের মতো ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

~এভাবে কী দেখছিস? তোকে ব্যাগ দিতে বলেছি?
আমিও ওহ একটা লম্বা টানে বলে ব্যাগটা ওর হাতে দিয়ে দিলাম। ও একটা ড্রয়ারে রেখে চাবি আমার হাতে দিয়ে বললো, যখনই দরকার হবে তখনই নিস।
আমিও নিঃসঙ্কোচে চাবিটা হাতে নিলাম।

হঠাৎ বেবলি নিলাকে বলল,
“নিলাপু, তুমি দেখি আজ আরো সুন্দর হয়ে গেলে?”

নিলার স্মিত হেসে বললো,
“তোরা বোনরা যে সুন্দর। তাই ভাবলাম তোরা এখানে এলে আমি পিছে পরে যাবো। আবার তোরা যদি সাজিস তবে আমি না তোদের সবাই কনে ভাববে। তাই একটু সুন্দর হওয়ার চেষ্টা করলাম আর কী!

নিলার কথা শুনে বেবলি যেন লজ্জা পেল। তারপর বললো,
“যাহ্, তুমি বানিয়ে একটু বেশি বলো। আমি তেমন সুন্দরী নই।”

ওর এই কথা শুনে সব মেয়েরা যে উচ্চ হাসিতে উল্লসিত হলো। সবাই প্রশংসা শুনতে আগ্রহী। যা শুনার পর মুখের আদল বদলে যায়। নতুনত্ব আসে চেহারায়। যেমনটা বেবলির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

___________________________________

নিলার রুম থেকে বের হয়ে এলাম। অনেক্ষণ ওর গল্প শুনেছি। ওর হবু হাবির সাথে কী কী কথা বলেছে নিঃসংকোচে সবই এক এক করে লজ্জা নিয়ে বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি বেশি কিছু শুনতে আগ্রহ নই। খুব যে কষ্ট হয়। ভালোবাসাময় কথাগুলো শুনলে নিজের জীবনের কথা মনে পড়ে যায়।

এদিকে সন্ধ্যেও হয়ে গেল। আকাশ ভাইয়াকে টাকা ফেরত দিবো বলে মনে মনে তাকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও না পেয়ে ভাবলাম একটু ছাদে ঘুরে আসি। অনেক তো হন্য হয়ে খোঁজা হলো। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠার আগে একটা রুমের পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। সেই রুমেই শুনতে পেলাম উচ্চহাসির আওয়াজ।তাই আগ্রহটা বেড়ে গেল। তাই দরজা কিছুটা ফাক করলাম। সেই দরজার ফাকে দেখতে পেলাম অনেক ছেলেরা বসে গল্পগুজবে মেতে উঠছে। সেখানেও আকাশ ভাইয়াও বসে আছে। কিন্তু আমার নজর আকাশ ভাইয়ার দিকে ছিলো না। আমি পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে নিয়নের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বিছানায় আয়েশ ভঙ্গিতে শুয়ে টুল পড়া গালে হাসিতে মত্ত হচ্ছে। হাসির নিমিত্তে গোল ফ্রেমের চশমাটা এদিক সেদিক হচ্ছে। উনিও বার বার ঠিক করছেন। চশমাটা না পড়লে এখন কী হয়! অযথা চমশটা উনাকে বিরক্ত করছে। উনার দিকে তাকিয়ে আনমনে কথাগুলো ভাবছিলাম। হঠাৎ দেখি উনিও আমার দিকে হাসি থামিয়ে তাকিয়ে আছেন।অন্যরা হাসছে। আর উনি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন। আর আমি কত বোকা! আমিও উনার দিকে তাকিয়ে আছি। দুইজনের কেউই চোখের পলক ফেলছি না। হঠাৎ কারোর পায়ের শব্দে হুঁশ ফিরে এলে বিব্রত হলাম। নিজেই নিজেকে খানিক বকা দিলাম। আবার উনার দিকে চাইলে উনি তখন সুযোগ বুঝে চোখ মারলেন। আমিও লজ্জায় সেখান থেকে সরে আসলাম।

___________________________________

দেখলাম শাড়ির কুচি ঠিক ধরে উপরে উঠছেন শাহেদা আন্টি । উনার কাছে পড়তে না চাওয়ার জন্য ছাদের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়। আমার ক্ষেত্রেও একঅই ঘটলো। শাহেদা আন্টি আমাকে ডাক দিলেন। আমিও থমকে গেলাম। দুর্ভাবনায় মাথা ঘামাতে লাগলাম। না জানি এখন কী বলবে এই মহিলা!
~আরে তুমি, চলে এসেছো।
~জি,আন্ট।
~তো এখানে দাঁড়িয়ে কী করছিলে?
~দাঁড়িয়ে ছিলাম না, আন্টি। ছাদের দিকে যাচ্ছিলাম।
~চুপ!
হঠাৎ করে এত জোরে শব্দ করে বললেন যে আমার আত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠলো। ভয়ে হিম শীতল হলো পুরো শরীর। মুখের কথাগুলো কেমন অগোছালো হয়ে গেল।
~তুমি ভালো করেই জানো। আমি মিথ্যে কথা পছন্দ করি না। তাহলে মিথ্যে কথা কেন বললে?
~_________

~তুমি এত্তক্ষণ ঐ দরজার পাশেই ছিলে। কী করছিলে সেখানে?

~ উনি আমার কাছে এসেছিলেন, আন্টি।কিন্তু আমি খোশগল্পে ব্যস্ত থাকায় ডিস্টার্ব আর করেননি। তাই এখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন।
এই কথা শুনে দুইজনই পিছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম নিয়নের ভাই এই কথাগুলো এক দমে বললেন।
~ওহ। তা তোমার কাছে কেন? তোমরা পরিচিত নাকি?
~আন্টি, উনি নিয়নের টিউটর। নিয়ন উনাকে ছাড়া কিছু বুঝে না। তাই উনাকে বলেছিলাম, উনি যদি বিয়েতে আসেন। তাহলে আমার সাথে যেন দেখা করেন। নিয়নকে যাতে উনার হাতে দায়িত্ব হিসেবে দিতে পারি।
~ভালো। তো আসি আমি। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। অনেক কাজ আছে তো। দেখতে হবে।
শাহেদা আন্টি চলে যেতেই মনে স্বস্তি নিলাম।
নিয়নের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

চলবে,,,,,,,

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_19 (শেষ পর্ব)

0

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_19 (শেষ পর্ব)
#adrin_anisha
.
অন্ধকার একটা রুমে টেবিলের উপর হাত রেখে বসে আছে আয়ান। মাথার উপর ছোট একটা লাইট বাতাসে নড়ছে। গরমে,চিন্তায়,ভয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে সে। টেবিলের সামনের চেয়ারটায় বসে আছে পুলিশের ওসি। হাতে লাঠি আর চোখে রাগ।
তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল,
– বল আমাকে খুলে, ঠিক কি হয়েছিলো?
আয়ান নিজের সামনে থাকা গ্লাসের পুরোটা পানি খেয়ে নিল। তারপর হাত দিয়ে ঘাম মুছে বলতে লাগলো,
– আমি নীলাকে ভালোবাসি৷ অনেক অনেক ভালোবাসি। ওর ক্ষতি করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না। কিছুদিন আগে ওর বাবা এসে আমায় বলেছিলেন আমি যেন নীলাকে আর বিরক্ত না করি। আমার ভালোবাসা নীলার বিরক্তির কারণ হোক সেটা আমি চাইনি। তাই আর বিরক্ত করিনি ওকে। তবে ওকে না দেখেও থাকতে পারছিলাম না। সবসময় মনে হতো যেন আমার নীলার কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। তাই দূর থেকেই ওকে প্রতিদিন একবার করে দেখে আসতাম। এর আগেও আমি সারাক্ষন নীলার উপর নজর রাখতাম যেন কেও ওকে ডিস্টার্ব না করতে পারে। ওর স্কুলেও গিয়েছিলাম। ওর ক্লাসের কিছু ছেলেদের টাকা দিয়েছিলাম যেন নীলাকে কেও বিরক্ত করলে আমাকে সাথে সাথে জানায়। নীলা যখন স্কুল থেকে বাসায় যেত আর বাসা থেকে স্কুলে আসতো তখনো আমি ওর উপর নজর রাখতাম। ও নিজেও জানতো না। ওকে যতবার কোনো ছেলে বিরক্ত করার চেষ্টা করেছে, আমি ততবার সবাইকে ওর থেকে দূরে রেখেছি। কখনো বুঝিয়েছি, কখনো পুলিশের ভয় দেখেয়েছি। হোক সেটা রাব্বি, দীপ, রিফাত বা অন্যকেউ।
আয়ানকে থামিয়ে দিয়ে ওসি বললেন,
– এক মিনিট, এরা সবাই নীলাকে বিরক্ত করতো?
আয়ান শান্ত গলায় বলল,
– নাহ, বিরক্ত করার সুযোগই পায়নি। তার আগেই আমি ওদের সাবধান করে দিয়েছি। তবে শুধু একজনই ছিলো যে বিনা বাধায় আমার নীলাকে বিরক্ত করেছে। মেঘ। মেঘের কথা আমি জানতে পারিনি, ওর স্কুলের কেউই কখনো আমাকে ওর ব্যাপারে কিছু বলেনি। আর তাই আজ আমার নীলার এই অবস্থা হলো।
কথাটা বলেই কাঁদতে শুরু করলো আয়ান।
– তারমানে তুমি বলতে চাও এসেছে ব মেঘ করেছে? কিন্তু এই মেঘ টা কে?
আয়ান এবার রাগে মুখ শক্ত করে বলল,
– মেঘ নীলার সিনিয়র। নীলা আর মেঘের ক্লাস মুখোমুখি। যেদিন থেকে নীলা ভর্তি হয়েছে সেদিন থেকেই ওর নজর নীলার উপর পড়েছে। অনেক জ্বালিয়েছে ও নীলাকে। এমনকি একদিন এসে নীলার ক্লাসে ঢুকে ওর সামনে হাত পর্যন্ত কেটেছে। কিন্তু তখনো আমি কিছুই জানতে পারি নি। আজ ঈদ, তাই নীলা কেমন সেজেছে একবারের জন্য তা দেখিতে গিয়েছিলাম। মাঝপথে ফোন এলো একটা। নীলার ক্লাসেরই একটা ছেলের ফোন ছিল। ফোন রিসিভ করতেই ও আমাকে সব খুলে বলল, আর এটাও বলল যে নীলাকে আজ মেঘ খুন করার প্ল্যান করেছে। আমি আর সময় নষ্ট না করে তখনই দৌড় দিলাম। টেনশানে গাড়িতে ওঠার কথাও মাথায় আসে নি। কথায় আছে “চোর পালালে বুদ্ধি হয়”। আমি গিয়ে দেখি নীলা রাস্তায় পড়ে আছে আর একটা ছেলে হাতে ছুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে ছিল মেঘ, ওর মুখে শয়তানি হাসি। আমি একটু ও দেরী না করে ওদের দিকে দৌড়ে গেলাম। আমাকে দেখেই ওরা দৌড় দিল। আমি নীলার দিকে একবার থেমে দেখলান দূরে ওর বন্ধুরা আসছে। আমি আর সময় নষ্ট না করে মেঘের পেছনে দৌড়ালাম। সবচেয়ে দুঃখের কথা কি জানেন স্যার? ওখানে প্রায় ১০-১৫ জন লোক ছিলো৷ সবাই দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলো একজনও যদি সাহস করে এগিয়ে আসতো তাহলে আজকে আমার নীলাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো না।
কথাটা বলেই একটা হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো আয়ান।
ওসির চোখে এখন আয়ানের প্রতি বিশ্বাস ভর করলো, কারণ ওর সব কথাগুলো মিলে যাচ্ছে হুবুহু বাকি সবার সাথে। কিন্তু মনে কোনো এক অজানা ভয় আসলো, ভ্রু কুঁচকে বলল,
– তাহলে মেঘকে কে কি তুমি ধরতে পেরেছো? কোথায় এখন সে?
আয়ান একনজর ওসির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলল,
– সরি, আইন নিজের হাতে নেয়ার জন্য।
আয়ান কথা শুনে ওসি কোনো এক অজানা ভয় নিয়ে আয়ানের দিকে তাকায়। আয়ান জানে কি সেই তাকানোর মানে।
মুচকি হেসে বলল,
– না না, চিন্তা করবেন না, ওকে আমি একেবারে মেরে ফেলেনি। শুধু আমার নীলাকে ছোঁয়ার অপরাধে আধমরা করে দিয়েছি।

আয়ানের কথা শেষ হতেই, আকাশ আর আকাশের বাবা এসে ঢুকলো রুমে। আকাশ সোজা এসে আয়ানের গলা চেপে ধরল৷ আয়ান আকাশের থেকে নিজেকে সরানোর কোনো চেষ্টাই করছে না বরং হাসছে। আকাশের চোখেও সে সেই ভালোবাসা দেখতে দেখিতে পাচ্ছে যা ও নিজের চোখে দেখতে পায়।
ওসি আর আকাশের বাবা এসে আকাশের হাত থেকে আয়ানকে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর সব খুলে বলে যে আয়ান নীলাকে মারতে নয় বাঁচাতে এসেছিলো।
– আমাদের অফিসাররা গেছেন মেঘকে ধরে আনতে। আজ আয়ানের জন্যই মেঘ এতো সহজে ধরা পড়লো।
আকাশ রাগে হাত মুষ্ঠি করে টেবিলের উপর জোরে এক ঘুষি মারলো।
– আমি ছাড়বো না ওই মেঘকে।
– নাহ তার আর প্রয়োজন হবে না। আয়ান অলরেডি ওকে আধমরা করে দিয়েছে।
.
কিছুক্ষন পর মেঘকে আর আরেকটা ছেলেকা ধরে নিয়ে আসলো পুলিশ।
– তাহলে এবার বলে ফেলো কেন করলে এমন? শুনেছিলাম তুমি নাকি ওকে ভালোবাসো?
মেঘ মুচকি হেসে বলল,
– নিজের ভালোবাসাকে যদি অন্যের হয়ে যেতে দেখেন কেমন লাগবে আপনার? আমারো ভালো লাগেনি। এতো ভালোবাসি আমি ওকে আর ও কি না বুঝতেই চাইলো না? তাই আমিই সব প্ল্যান করেছি৷ ও আমার বন্ধু রাজিব, ছোটবেলায়ই ওর দুলাভাইকে খুন করে পলাতক হয়েছে। তাই এই খানেও ওকেই আমি কাজে লাগিয়েছি।
পাশে থাকা রাজিবের দিকে তাকিয়ে বলল মেঘ। ভয়ে একদম চুপসে গেছে সে।
ওসি একনজর রাজিবের দিকে তাকিয়ে আবার মেঘের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কিন্তু মারতে চাইলে কেন?
– যাকে আমি ভালোবাসি সে আমার হবে না এটা আমি মেনে নিতে পারব না। আমার না হলে আমি ওকে কারো হতে দেবো না।
আয়ান আর আকাশ এতোক্ষন দূর থেকে সব শুনছিলো।
এবার রাগে মুখ শক্ত করে ঠাস করে একটা চড় মারলো মেঘকে আকাশ,
– তোর মনে হয় এটা ভালোবাসা? ভালোবাসার মানে জানিস তুই? ভালোবাসা মানে সেক্রিফাইস, যেটা আয়ান করেছে। ভালোবাসা মানে ভালোবাসার মানুষের খুশির জন্য যদি ওর থেকে দূরে সরে থাকতে হয় তাহলে তাই করা, যেমন টা আয়ান করেছে। ভালোবাসা মানে নিজের জীবনের বাজি রেখে হলেও ভালোবাসার জীবন বাঁচানো যেমনটা আয়ান করেছে। ভালোবাসা মানে ভালোবাসার মানুষকে সব রকমের বিপদ থেকে দূরে রাখা যেমনটা আয়ান করেছে। তুই যেটা করেছিস সেটা ভালোবাসা নয় বরং একটা নেশা, একটা আসক্তি। নেশাখোর যেমন নেশা না করতে পারলে হিংস্র হয়ে যায় তুই ও তেমনি অমানুষ হয়ে গেছিস।
পুলিশ এসে মেঘকে আর রাজিব কে নিয়ে যায় জেলের দিকে। যেতে যেতে মেঘ শুধু একটা কথাই ভাবলো, সত্যিই কি নীলাকে ও ভালোবেসেছিলো? নাকি সত্যিই ও একটা আসক্তির মাঝে ছিলো?

আকাশের দিকে মুচকি হেসে এগিয়ে আসে আয়ান। আকাশের হাত ধরে ওর এক কাধে হাত দিয়ে বলে,
– কে কাকে বেশি ভালোবাসে সেটা বড় কথা নয় আকাশ। বড় কথা হচ্ছে নীলার মনে কে আছে? নীলার মনে তুমি আছো আকাশ। আমি দেখেছি তোমাকে আর নীলাকে বৃষ্টিতে ভিজতে। শুধু তাই না নীলার চোখে যে ভালোবাসাটা আমি এতোদিন দেখতে চেয়েছি সেটা আমি সেদিন দেখেছিলাম৷ তবে তোমার জন্য। ভালো রেখো ওকে আকাশ।
কথা গুলো বলেই চলে গেল আকাশ। আকাশ বুঝতে পারলো না ঠিক কতটা ভালোবাসলে এভাবে ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দেয়া যায়? তবে যেতে যেতে আয়ানের ভেজা চোখ দুটো মোটেও চোখ এড়ালো না আকাশের।
.
জ্ঞান ফিরেছে নীলার। চোখ খুলে ঘরে বুঝিতে পারলো না সে কোথায়? আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। নিজের দিকে তাকাতেই মনে পড়লো,

“রাস্তার উপর যখন মার খেতে খেতে শরীরটা প্রায় অসার হয়ে আসে নীলার তখন মেঘ আসে নীলার কাছে। উবু হয়ে নীলার মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মেঘ বলল,
– কি ভেবেছিলি? আমাকে ঠকাবি? এবার দেখ তোর আমি কি অবস্থা করি, আমার না হলে তোকে আমি আর কারো হতে দেব না।
কথাটা বলেই নীলার পেটে একটা লাথি মারলো মেঘ। ”

সাথে সাথে চিৎকারে করে উঠলো নীলা। নীলার চিৎকার শুনে সবাই নীলার রুমে ঢুকলো। সবাইকে এভাবে নিজের সামনে দেখে মনে যেন সাহস খুঁজে পেল নীলা। বাবার হাতটা অনেক কষ্টে ধরে বলল,
– বাবা, ভাবিনি তোমাদের আর কোনোদিনো দেখতে পাবো।
নীলার কথা শুনে সবাই কেঁদে দিল।
.
.
.
(আমাদের বাস্তব জীবনেও নীলার মতো হাজার হাজার মেয়েকে সহ্য করতে হয় মেঘের মতো ছেলেদের যন্ত্রনা। শুধু আফসোস, আয়ানের মতো মানুষ শুধু হাজারে একটা মেয়ের কপালেই থাকে।)

সমাপ্ত

(গল্পের এন্ডিং টা কেমন হয়েছে জানিনা। গল্পের উদ্দেশ্য ছিলো এমন ধরনের এক তরফা ভালোবাসার ভূল ধারণা ভাঙা। যেমনই লাগুক, সবার থেকেই একটা রিভিউ আশা করছি। ধন্যবাদ)

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_18

0

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_18
#adrin_anisha
.
সাদিয়া হঠাৎ আয়ান এর মতো কাউকে দৌড়ে যেতে দেখলো, ভালো করে দেখার আগেই, মুন্নিকে চেচাতে শুনে সবাই সেদিকে দৌড়ে গেল।
– কি রে কি হয়েছে? দেখেছিস নীলাকে?
সাদিয়ার কথা যেন মুন্নির কানেই গেলো না। সে ভয়ে চুপসে গেছে, এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিয়া মুন্নিকে সামনে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও সামনে তাকায়, নীলা রক্তাক্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। সাথে সাথে নীলা বলে চেচিয়ে উঠলো সবাই। দৌড়ে নীলার কাছে সবাই।
সাবিহা কাঁদতে কাঁদতে নীলার মুখ ধরে বলল,
– নীলা, এই নীলা, কি হয়েছে তোর? ওঠ না প্লিজ। এই নীলা, এই…
সাদিয়া কাঁদতে কাঁদতে চারদিকে তাকিয়ে দেখে সবাই ছবি আর ভিডিও করতে ব্যাস্ত।
সাদিয়া রেগে উঠে বলল,
– আপনারা কি মানুষ, কোনো কমনসেন্স নেই আপনাদের? একজন এভাবে এখানে পড়ে আছে আর আপনারা ছবি তুলতে ব্যাস্ত? এটলিস্ট একটা এম্বুলেন্স তো ডাকতে পারেন। ছিঃ
সাদিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ দৌড়ে আসে। নীলাকে এভাবে দেখে তার যেন প্রাণ হারানোর মতো অবস্থা। তাড়াতাড়ি করে নীলাকে তুলে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসালো আকাশ।
.
.
নীলাকে আইসিইউ তে নিয়ে গেছে প্রায় ১ ঘন্টা হয়েছে, এখনো কোনো খবর পায়নি কেউ। বাইরে নীলার বাবা, আকাশের মা, সাবিহা,সুবাহ, রাফি, সাদিয়া, মুন্নি, সবাই কান্না করছে আর একটু পরপর হাত তুলে মুনাজাত করছে যেন নীলা ঠিক হয়ে যায়। নীলার মা সব শোনার পর থেকে এই নিয়ে ৩ বার সেন্সলেস হয়েছেন তাই ওনাকে এখন ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। আকাশের বাবা থানায় গেছেন বিষয় টা নিয়ে তদন্ত করতে। আর আকাশ এখনো পাথরের মত বসে আছে হাসপাতালের এক কোনায়৷ নীলার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কি হবে এটা ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছে আকাশ।

কিছুক্ষনের মাঝেই পুলিশ এসে পৌছালো। সবাই ছুটে গেল সেদিকে জানার জন্য কি হয়েছে ঠিক নীলার সাথে।পুলিশের ওসি নীলার বাবার বন্ধু।
তিনি এস নীলার বাবাকে বললেন,
-আমরা কথা বলে দেখেছি সেখানকার লোকজনের সাথে। এক একজন একেক রকম কথা বলছে, কেউ জানে না লোকটা কে ছিলো, কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট, ছেলেটার বয়স বেশি নয়। বড়জোর ১৯-২০ হবে। ওখানে থাকা লোকেদের মতে ছেলেটা এলোপাতাড়ি ভাবে নীলাকে লাথি মারে, তারপর ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে, পরে ওর বন্ধুদের আসতে দেখে পালিয়ে যায়। কেউ কেউ বলছে সেখানে আরো একটা ছেলে ছিলো, তবে সে মারামারি করেনি, সে শুধু দেখেছে। এখন এসবের মাঝে কতটা সত্যতা আছে সেটা তো শুধু নীলাই বলতে পারবে, কারণ মানুষের স্বভাব তিল থেকে তাল বানানো।

নীলার বাবা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লেন,
– না জানি আমার ফুলের মত মেয়েটা কিভাবে সহ্য করেছে এসব?
ওসি এসে ওনাকে উঠিয়ে বললেন,
– প্লিজ শান্ত হোন মি.কবির। আপনাকে শক্ত থাকতে হবে। আমাদের বলুন তো আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়? যেহেতু আপনি একজন বিজনেসম্যান, সেহেতু আপনার শত্রু থাকা স্বাভাবিক। প্লিজ মনে করে বলুন তো।
নীলার বাবা চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে বললেন,
– দেখুন আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করি সবার সাথে ভালো ভাবে বিজনেস করতে, কারোর সাথে আমার শত্রুতা নেই। তবে অন্যের মনে যদি আমার জন্য কোনো শত্রুতা থাকে তাহলে সেটা তো আর আমি বলতে পারবো না।
কিছুক্ষন ভেবে নীলার বাবা আবার বলল,
– হ্যাঁ হ্যাঁ, এক মিনিট অফিসার। আমার মাত্র মনে পড়ল, আমার মেয়েকে একটা ছেলে ডিস্টার্ব করত, আয়ান নামের, তবে আসল নাম পরম। কিছুদিন আগেই আমি ওকে গিয়ে সাবধান করে এসেছি যেন আমার মেয়েকে আর ডিস্টার্ব না করে। ওই হয়তো কিছু করেছে। আপনি প্লিজ ওকে এরেস্ট করুন।
নীলার বাবার কথা শেষ হতেই সাদিয়া উঠে এলো,
– স্যার, আঙ্কেল ঠিক বলছেন। ওই ছেলেটা নীলাকে অনেক ডিস্টার্ব করেছে, আর সবচেয়ে বড় কথা৷ আজ যখন আমরা নীলার কাছে পৌছালাম তখন দেখেছিলাম আয়ানের মত কেউ পালিয়ে যাচ্ছে। তখন পাত্তা না দিলেও এখন আমি শিওর, ওটা আয়ানই ছিল। প্লিজ আপনি ওকে ধরে আনুন। ওই নিশ্চই কিছু।করেছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা দেখছি।
এই বলে ওসি বাকিদের নিয়ে চলে গেলো।
.
কিছুক্ষন পর আইসিইউ থেকে ডাক্তার বের হলেন। সবাই সেদিকে চলে গেল।
ডাক্তার একটা মুচকি হেসে বললেন,
– আপনার মেয়ে ঠিক আছে। শুধু এখনো সেন্স এ আসতে কিছুটা সময় লাগবে। তারপরই আমরা বাকিটা বলতে পারবো। কারন৷ বাইরের ক্ষতগুলো এলোপাতাড়ি হওয়ায় তেমন মারাত্মক হয়নি। মেবি পরে যাওয়ার কারনে মাথার সামনে একটু কেটে গেছে, সেটা নিয়ে যদিও এখনো টেনশান এর কিছু দেখছি না বাকিটা তো ওর সেন্স আসার পরেই বুঝতে পারবো।
নীলার বাবা অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– তাহলে ওর জ্ঞান কখন আসবে?
– সেটাই তো বলতে পারছি না, আশা করছি ২৪ ঘন্টার মাঝেই আসবে, আর তা না হলে ব্যাপারটা খুবই খারাপ হয়ে যাবে। আর এই নিন প্রেসক্রিপশন, এগুলো সবই নিচে কাউন্টারের পাশে পেয়ে যাবেন।
ডাক্তারের সাথে নীলার বাবাও চলে গেলেন ওষুধ আনতে। আর আকাশের বাবা গিয়ে আকাশকে খুঁজতে লাগলেন। কিছুক্ষন পরে হাসপাতালের বারান্দায় গিয়ে দেখলেন আকাশ দুই হাটু ভাজ করে তারউপর হাত রেখে মাথা নিচু করে বসে আছে। আকাশের বাবা গিয়ে ওর পাশে বসলেন।
মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
– বাবা, নীলা ঠিক আছে।
বাবার কথা শুনেই আকাশ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। জড়িয়ে ধরলো ওর বাবাকে।
– আমি জানতাম বাবা, ওর কিছু হতেই পারে না। ওর মত একটা নিস্পাপ মেয়ের সাথে আল্লাহ কখনোই এমন করবেন না আমি জানতাম। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ, কোটি কোটি শুকরিয়া, তিনি আমার নীলাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ও এখন কি করছে বাবা? ও কেমন আছে?

– এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তবে ডাক্তার বলেছে ২৪ ঘন্টার মাঝেই ফিরে আসতে পারে। টেনশন না করে এখন শুধু দোয়া কর যেন সব ঠিক হয়ে যায়।
আকাশের বাবার কথা শেষ হতেই হাপাতে হাপাতে এলো সাবিহা,
– আকাশ ভাইয়া, আঙ্কেল তাড়াতাড়ি চলুন। পুলিশ আয়ানকে ধরে ফেলেছে।
.
.
.
.
.
.
.
চলবে……

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_17

0

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_17
#adrin_anisha
.
পাশে থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালে নীলা। প্রথমে পানির হালকা ছিটা দিতে চাইলেও পরে পুরো গ্লাসের পানিটাই ঢেলে দেয় আকাশের মুখের উপর। সাথে সাথে চেচিয়ে উঠলো আকাশ, ধরফরিয়ে উঠে বসলো। ২ সেকেন্ড লাগলো বুঝতে যে ঠিক কি হলো ওর সাথে।
চেচিয়ে উঠলো আকাশ,
– কে রে আ….মা…….
কথাটা শেষ করতে পারলো না আকাশ। সামানে তাকিয়ে যেন ওর মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। এ যেনো এক অন্য নীলাকে দেখছে সে। মনে হচ্ছে আজ যেন সত্যিই আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে ওর ঘরে।
আকাশের চেচানোর শব্দে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় নীলা। কিছুক্ষন যাওয়ার পরেও যখন আর কোনো শব্দ শুনতে পায়নি তখন ধীরে ধীরে চোখ খুললো নীলা। আকাশ ততক্ষনে প্রায় নীলার মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
আকাশ কে এভাবে সামনে দেখে চমকে উঠে দুকদম পেছিয়ে যায় নীলা। আকাশ আরো দুকদম এগিয়ে যায় নীলা আবার পিছিয়ে যায় আর ভাবে আজকে ওর খবর আছে।
নীলা ভয়ে ভয়ে বলল,
– আকাশ ভাইয়া সরি, আর জীবনেও করবো না এমন, প্লিজ এইবার মাফ করে দেও।
আকাশ যেন নীলার কথা শুনতেই পায়নি। সে তার মতই এগিয়ে যাচ্ছে। আর নীলাও পিছোতে পিছোতে দেয়ালের সাথে লেগে গেল। ভয়ে নীলা হাতে থাকা গ্লাস দিয়ে মুখ ঢেকে নিল।
চোখ বন্ধ করে বলল,
– আকাশ ভাইয়া সত্যিই সরি, আমি আসলে বুঝতে পারিনি। আর তাছাড়া তুমিও অনেক বার আমায় এভাবে জ্বালিয়েছো। এখন আমি একবার মজা করেছি বলে তুমি এমন করছো? আচ্ছা সরি আর কখনো করবো না বললাম তো।
একদমে কথাগুলো বলল নীলা। কিন্তু এখনো আকাশের কোনো কথা শুনতে পেল না। তবে ওর ঠিক অনেকটা কাছেই আছে আকাশ এটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। আকাশের নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে নীলা। নীলার হার্টবিট বেড়ে গেছে, আর শরীর ও কাপতে শুরু করেছে। তখনই কপালে ভেজা দুটো ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব হলো নীলার, সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে নীলা আর হাতে থাকা গ্লাসটাও পড়ে যায় হাত থেকে। গ্লাস ভাঙার শব্দে যেন জ্ঞান হয় আকাশের। সাথে সাথে দুকদম পিছিয়ে যায় সে। এই সুযোগে নীলাও দৌড়ে পালিয়ে আসে। আকাশ নিজের ঘাড়ে হাত দিয়ে মুচকি হাসে।
.
নীলাকে এভাবে হাপাতে দেখে সাদিয়া আর মুন্নি গেল নীলার কাছে। সাদিয়া নীলার নিজের কাধ দিয়ে নীলার কাধে ধাক্কা দিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
– কি রে? আকাশ ভাইয়ার রুম থেকে এসে এভাবে হাপাচ্ছিস কেন? কি করেছিস এতক্ষন শুনি?
মুন্নি আর সাদিয়া শয়তানি হাসি দিয়ে তাকালো নীলার দিকে।
নীলা একগাল হেসে বলল,
– আরে পাগল শোন, আমি গিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া একটা লুঙ্গি আর গেঞ্জি পড়ে ঘুমিয়ে আছে, কি যে ফানি লাগছিলো। আমি কি করলাম জানিস? সোজা গিয়ে ওর মুখের উপর পানি ঢেলে দৌড়ে চলে এলাম। বিশ্বাস না হলে এই দেখ,
নীলা নিজের ফোন থেকে আকাশের তোলা ছবি গুলো দেখালো। সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। তখনই আকাশ বের হলো ঘর থেকে তোয়ালে দিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে। আকাশ কে দেখে নীলা হাসি বন্ধ করে দিল কিন্তু সাদিয়া আর মুন্নির হাসি আরো বেড়ে গেলো। ওরা কোনো মতো হাসতে হাসতে আকাশের কাছে গেল,
মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে সাদিয়া বলল,
– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, আমি সাদিয়া, নীলার বান্ধবী।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
মুন্নিও লাফিয়ে উঠলো,
– আর আমি মুন্নি। নাইচ টু মিট ইউ।
– মি টু। আমি একটু আসছি।
আকাশ চলে গেল।
সাথে সাথে নীলা এসে বলল,
– এই সুযোগে চলে যাই চল, নাহলে আজকে খবর আছে আমাদের।
সাদিয়া ব্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
– কিন্তু কোথায় যাবো?
সাদিয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে নীলা বলল,
– আরে গাধী যেই জায়গাটার কথা বলেছিলাম।
– ওহ, হ্যাঁ হ্যাঁ চল। তাড়াতাড়ি চল। ওটার জন্যই তো এসেছি।
নীলা, সাদিয়া আর মুন্নি চলে গেল ঘুরতে।
অনেক্ষন ছবি তুলে, নৌকায় চড়ে, আম চুরি করে খেয়ে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার পথ ধরলো সবাই।
টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে মুন্নি বলল,
– উফফ, এতোক্ষন এতো দৌড়ালাম কিন্তু গরম লাগলো না কিন্তু এখন ঘামে শেষ।
সাদিয়াও মুন্নির সাথে তালমিলিয়ে বলল,
– সত্যিই রে। অনেক গরম লাগছে তবে অনেক মজাও লাগছে। কতদিন এভাবে প্রাণখুলে হাসিনি।
ওরা কথা বলতে বলতে কিছুদূর আসতেই সাবিহা,সুবাহ আর রাফির সাথে দেখা হলো ওদের। ওরাও এদিকেই আসছিলো। ওরা জোর করায় নীলারা আবার ওই জায়গায় ফিরতে লাগলো। কিন্তু নীলার ফোন আসায় ও সবাইকে যেতে বলে ফোন রিসিভ করল,
– আসসালামু আলাইকুম, কে?
– নীলা?
– হুম, কিন্তু আপনি কে?
– তোমার পেছনে দেখো জেনে যাবে।
নীলা পিছনে তাকালো কিন্তু চেনা কাউকেই দেখতে পেল না।
– কোথায়? আমি তো কাউকে দেখছি না।
– এতো দূর থেকে দেখবে না। আরো এগিয়ে আসো।
নীলা এগিয়ে গেল কিন্তু কাউকে দেখলো না।
– উফফ, কোথায় আপনি? সামনে আসবেন নাকি চলে যাবো।
নীলার কথা শেষ হতেই ফোন কেটে গেল। নীলা চিন্তা করতে করতে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য পেছনে ফিরলেই ভয় পেয়ে যায়। একটা ছেলে ছুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে একটা রুমাল বাধা। নীলা কিছু না ভেবেই উল্টো দৌড় দিল। ছেলেটাও নীলার পিছনে দৌড়াতে লাগলো। নীলার জামা অনেক লম্বা হওয়ায় ভালো করে দৌড়াতে পারছে না। তবুও নিজের প্রাণ বাঁচাতে যতটা সম্ভব জোরে দৌড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পারল না রাস্তার একপাশে এসে জামায় পা আটকে পরে গেল নীলা। ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু উঠতে পারলো না। ততক্ষনে ছেলেটা নীলার কাছে চলে এসেছে। নীলার গালে সজোরে ঠাস করে একটা চড় মারলো সে। সাথে সাথে নীলার গাল কেটে ঠোঁট থেকে রক্ত পড়তে লাগলো।
.
এদিকে নীলার আসতে অনেক দেরী হচ্ছিলো বলে সাদিয়া, মুন্নি, সাবিহা সবাই চিন্তা করতে লাগলো। সাদিয়া অনেকবার নীলার ফোনে ফোন করলেও কেউ রিসিভ করলো না। তাই তাদের চিন্তা আরো বেড়ে গেল। সাবিহা রাফিকে পাঠালো আকাশ কে ডেকে আনতে। আর ওরা সবাই নীলাকে খুঁজতে লাগলো।
অনেক্ষন খুজেও নীলাকে কোথাও দেখতে পেল না তারা৷ হঠাৎ মুন্নি নীলা বলে চেচিয়ে উঠলো। সবাই সেদিকে দৌড়ে গেল। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
.
.
.
.
.
.
চলবে……..

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_16

0

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_16
#adrin_anisha
.
– খাইয়ে দে না, দেখ হাতে মেহেদী।
নীলা চোখ বড় বড় করে তাকালো আকাশের দিকে।
– মানে? আমি কেন খাওয়াবো? আমি তো আগেই বলেছিলাম এই হাতে মেহেদী দিও না। তুমিই দিলে এখন তুমিই বোঝো কিভাবে খাবে।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– প্লিজ, তুই না আমার কিউট পরী।
নীলা চোখ ছোট করে আকাশের দিকে মুখ নিয়ে বলল,
– ও হ্যালো, আমার উপর এইসব ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল কাজ করবে না বুঝেছিস?
আকাশের টেবিলের উপর দু হাত শব্দ করে রেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।
– ওই শোন, তোর কোনো ধারণা আছে আমি তোকে ছোটবেলা কতবার খাইয়ে দিয়েছি। আর এখন এটাই উপযুক্ত সময় তুইও আমায় তার প্রতিদান দিবি।
– আমি কি বলেছিলান খাইয়ে দিতে?
আকাশ রেগে গিয়ে বলল,
– চুপ, সামান্য একটা ব্যাপারকে এতো বড় করে তুলছিস কেন? খাওয়াবি নাকি তোর এই ছবিটা সবাইকে পাঠিয়ে দেব?
পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ছবি বের করে নীলার মুখের সামনে ধরলো আকাশ। ফোনে নীলার ছোটবেলার ঘুমন্ত এক ছবি। কিন্তু মুখে মেহেদী লেগে আছে।
ছোটবেলা প্রতিবার মেহেদী লাগাতে বসে ঘুমিয়ে পড়তো নীলা, আর প্রায় সময়ই গালে, ঘাড়ে, গলায় মেহেদীর ছাপ লেগে যেত। এমনই এক ঈদে আকাশ ওর ফোনে নীলার ছবি তুলে নেয়। এতোদিন জানতেই পারেনি নীলা যে ওর এমন কোনো ছবিও আকাশের কাছে। নীলা আকাশের থেকে ফোন কেড়ে নিতে চাইলে আকাশ তাড়াতাড়ি সেটা সড়িয়ে ফেলে।
নীলা মুখ গোমড়া করে আকাশ কে খাইয়ে দিতে শুরু করে। প্রথম রুটির টুকরো টা কোনোভাবে মুখের সামনে এনে ছুড়ে মারলো নীলা। পরের টা মুখের সামনে আনতেই আকাশ মুখ সামনে নিয়ে টুকরোটা গালে পুরে নিল, সাথে নীলার আঙুলেও কামড় লাগল।
নীলা চেচানোর আগেই আকাশ ওর হাত দিয়ে ইশারায় বলল,
– চুপ চুপ চুপ। চেচাচ্ছিস কেন? এভাবে খাওয়ালে আবার কামড় দেব। ভালো করে খাইয়ে দে।
নীলা দাতে দাত চেপে খাইয়ে দিতে লাগলো আকাশ কে। কিন্তু আকাশের ঠোঁটের সাথে নীলার আঙুল লাগতেই কেপে উঠলো নীলা। নীলার হাত কাপতে লাগলো, মুখে রাগের ছাপ সরে গিয়ে লজ্জার ছাপ এসে ভর করল। নীলা লজ্জায় মাথা পুরো নিচের দিকে নামিয়ে রেখেছে। আর আকাশ তো যেন হারিয়েই গেছে নীলার মাঝে। যতবার নীলার আঙুল ওর ঠোঁটে লাগছে বুকের মাঝে এক অন্যরকম ভালোলাগা বয়ে যাচ্ছে।
আকাশ মনে মনে ভাবছে,
– ইসস, এই সময়টা যদি এখানেই থেমে যেত। আমি তোর থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছি না। প্লিজ তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যা।
.
.
আজ ঈদ, তাই সবাই অনেক সকালই উঠে পরেছে। নীলা ঘুম থেকে উঠেই খুশিতে নাচতে লাগলো। আজ অনেক মজা করবে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে নীলা। ওর ফুফু, ওর মা আর আকাশের মা রান্নাঘরে নাস্তা তৈরি করছে। সাবিহা, সুবাহ আর রাফি ফোনে গেমস খেলছে। নীলা ওদের সাথে বসে ওদের ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
– কি করছো তোমরা?

নীলাকে দেখে রাফি বলল,
– আরে নীলাপু, ভালোই হলো তুমিও এসে গেছো, চলো চারজন মিলে লুডু খেলি।
সবাই সায় দিল রাফির কথায়।
খেলা শেষে নাস্তা করে সবাই ফ্রেশ হতে চলে গেল। আসার পর কেউ কাউকে ওদের ঈদের জামা দেখায়নি, যতটা সম্ভব লুকিয়ে রেখেছে সবাই। তাই এখন নিজের জামা দেখানোটাই সবার প্রধান কাজ।
নীলা ঘরে গিয়ে সাদিয়া আর মুন্নিকে কল দিল। ওরা জানালো ওরা রাস্তায় আছে। তাই নীলাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেল।
ফ্রেশ হয়ে একটা টপ আর প্লাজো পরে বের হয় নীলা।
তখনই সাদিয়া আর মুন্নি ওর ঘরে ঢুকলো। দুজনকে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে ঈদ মোবারক জানালো নীলা। তারপর দুজনকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
সাদিয়া একটা লাল আর ক্রিম কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। কানে দূল, হাতে চুড়ি আর চুল খোলা। আর মুন্নি পরেছে কালোর মাঝে সাদা পাথরের কাজের একটা ফুলহাতার লম্বা গাউন। সাথে কালো পাথরের কানের দুল হাতেও কালো রঙের চুড়ি, খোলা চুল। দুজনের দিকে অবাক হয়ে।তাকিয়ে নীলা বলল,
– ওয়াও দারুন লাগছে তো তোদের। তোরা এতো সুন্দর কেন?
মুন্নি হেসে বলল,
– কেনো রে হিংসে হচ্ছে তোর?
নীলা মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
– হুহ, বয়েই গেল আনার হিংসে করতে, আমি কি কম নাকি?
সাদিয়া নীলার কাধে হাত রেখে নিজের চুল নেড়ে বলল,
– দেখতে হবে না তুই কার বান্ধবী?
সাদিয়ার কথায় সবাই হাসতে শুরু করলো। হঠাৎ সাদিয়া লক্ষ্য করলো নীলা এখনো রেডি হয়নি। তাই নীলার দুই কাধে ধরে সাদিয়া বলল,
– কিরে নীলা এখনো রেডি হসনি তুই? আচ্ছা চল, আমরা আজকে তোকে রেডি করে দিচ্ছি, তুই তো শুধু জামা ছাড়া আর বাড়তি মেকঅাপ ও করবি না সেটা জানি। চল, যা আগে জামাটা পড়ে আয়।
নীলা জামা পড়তে গেলে মুন্নি আর সাদিয়া নিজেদের মেকঅাপ ঠিক করে নেয়।
কিছুক্ষন পর নীল রঙের একটা লং বারবি গাউন পরে বেরিয়ে আসে নীলা। সাদিয়া আর মুন্নি হা করে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে। বিনা মেকআপেই নীলাকে নীল পরী লাগছে। সাদিয়া আর মুন্নিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসে নীলা। হাত দিয়ে চুল গুলো কানের পেছনে নিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কেমন লাগছে তাকে। সাদিয়া আর মুন্নি দুজনেই হাত দিয়ে সুন্দর দেখালো। তারপর নীলাকে টেনে এনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিল। নীলা বার বার না করলেও জোর করে লিপস্টিক লাগিয়ে দিল ওকে।
মুন্নি বলল,
– আরে পাগল, এমন গর্জিয়াস জামার সাথে একটু কাজল, আইলাইনার আর লিপস্টিক না দিলে মোটেও ভালো লাগবে না।
নীলাকে সাজিয়ে সবাই মিলে ছবি তুলতে শুরু করলো৷
তারপর নিচে নেমে বড়দের সালাম করলো সবাই। তারপর সালামি হাতে নিয়ে খুশিতে লাফাতে শুরু করল।
নীলার মা এসে বলল,
– নীলা মা, দেখ তো একটু আকাশ হয়তো এখনো উঠেনি ঘুম থেকে। যা তো একটু দেখে আয়।
নীলা সাদিয়া আর মুন্নিকে সাবিহা, সুবাহ আর রাফির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ওদের গল্প করতে বলে চলে যায় আকাশের ঘরের দিকে।
আকাশ একটা লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে উপুর হয়ে শুয়ে আছে। নীলা মুখ চেপে হাসতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে আকাশের কাছে গিয়ে ওর কয়েকটা ছবি তুলে নিল নীলা। তারপর ডাক দিতে চেয়েও দিলো না। আকাশের বাসায় যতবার নীলা ঘুমিয়েছে প্রতিবার আকাশ ওর মুখে পানি ঢেলে ওকে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। আজ নীলার পালা ভেবেই একটা শয়তানি হাসি দিল নীলা।
.
.
.
.
.
.
চলবে………

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_15

0

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_15
#adrin_anisha
.
সাদিয়াকে ফোন দিয়ে সব খুলে বলল নীলা। সাদিয়াও সব শুনে অনেক অবাক হয়ে গেল।
নীলা সাদিয়া কে জিজ্ঞেস করল,
– আচ্ছা শোন না, আমি কি ওকে হ্যাঁ বলে দেব?
-কেন? তুই কি ওকে ভালোবাসিস?
-আরে না, তুই কি পাগল নাকি?
-তাহলে হ্যাঁ বলবি কেন?
– আরে ও যদি আমি হ্যাঁ বললে মুসলমান হয়ে যায় তাহলে আমার কত সওয়াব হবে বল,
– কিন্তু তাই বলে কি তুই ওকে বিয়ে করবি?
নীলা এবার ভাবলো, আয়ানের সাথে বিয়ের করার কথা ভেবেই কেমন অসস্তি হচ্ছে নীলার।
নীলা চুপ করে থাকায় সাদিয়া আবার জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে বল, তুই কি ওকে বিয়ে করতে পারবি।
– না, কিছুতেই না। আমি ওর সাথে আমাকে কল্পনাও করতে পারি না।
– তাহলে? হ্যাঁ বলবি কেন?
নীলা কিছুটা ভেবে বলল,
– আচ্ছা শোন, আমি যদি ওকে হ্যাঁ বলি পরে ও যখন মুসলমান হয়ে যাবে তখন ধর বললাম যে আমার ফ্যামিলি মানবে না বা এরকম কিছু বলে ব্রেকআপ করে নেব।
– ছিঃ, এসব কি বলছিস নীলা? তুই বোকা আমি জানি কিন্তু তুই যে এতো বোকা সেটা জানতাম না। এটা করলে যতটুকু সওয়াব পাবি তার চেয়ে বেশি পাপ হবে৷ কারো মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান, জানিস না সেটা?
নীলা এবার মাথা চুলকে বলল,
– আসলেই তো, এভাবে তো ভেবে দেখিনি? থেংক ইউ ইয়ার, ভাগ্যিস তোকে ফোন দিয়েছিলাম। নাহলে আজকে কত বড় একটা ভূল করে ফেলেতাম৷।
– হুম, সেটাই তো, আমি না থাকলে যে তোর কি হতো।
দুজনই হাসতে লাগলো।
হঠাৎ নীলা বলল,
– এই সাদি, ২দিন পর তো ঈদ। আসছিস তো বাসায়?
– হুম, অবশ্যই।
.
নীলা খুব নিশ্চিত হয়েই দিন কাটালো, এখন আয়ান ও নেই ওকে ডিস্টার্ব করার জন্য নেই। আর মেঘ ও নেই। খুব শান্তি লাগছে ওর।
নীলাদের বাসায় আজ অনেক মেহমান এসেছে। ওর মামাতো- খালাতো ভাই-বোনেরা, ওর ছোট ফুফু। মামার ২ মেয়ে, বড় মেয়ের নাম সাবিহা আর ছোট মেয়ের নাম সুবাহ। খালাতো ভাইয়ের নাম রাফি। সাথে আকাশ, আর ওর বাবা মা তো আছেই। ওরা বড়রা সবাই গেস্টরুমে কথা বলছে আর ছোটরা সবাই নীলার রুমে মেহেদী লাগাতে বসেছে। সাবিহা নীলার বড় কিন্তু আকাশের ছোট। আর সুবাহ এবং রাফি দুজনই নীলার ছোট। নীলা রাফিকে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে আর সাবিহা সুবাহকে। আর আকাশ বসে বসে দুজনের মেহেদী লাগানো দেখছে।
সাবিহা আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
– কি ব্যাপার আকাশ ভাইয়া, তুমিও মেহেদী লাগাবে নাকি?
নীলা সাবিহার কথায় হতাশ মুখ নিয়ে বলল,
– আপু প্লিজ, তুমি আমার বড় হয়েও ওকে তুমি বল কেন? আর আমি তোমার ছোট হয়েও তুই বলি, মার সামনে তুমিও তুই বলবে নাহলে আমার লজ্জা লাগে।
নীলার কথায় আকাশ হেসে দেয়।
– তোর আবার লজ্জাও আছে? তাহলে এক কাজ কর, এখন থেকে তুই ও আমাকে তুমি বলে ডাকা শুরু কর। নিজে তো বেয়াদব এখন অন্যদেরও বেয়াদব করতে চাইছিস কেন?
আকাশ হেসে হেসে কথাটা বললেও নীলার অনেক খারাপ লাগলো,
– তুই সবার সামনে আমাকে এভাবে বলতে পারলি? আজ থেকে আমিও তোকে তুমি বলেই ডাকবো, দেখিস, মানে দেখে নিও। তুমি তুমি তুমি,
কথাগুলো বলেই একটা মুখ ভেঙচি দিয়ে মেহেদী লাগানোতে মনোযোগ দিল নীলা।
রাফিকে মেহেদী দেয়া শেষ হলে আকাশ এসে নীলার সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়।
নীলা ব্রু কুচকে তাকালে আকাশ হেসে বলে,
– আমিও মেহেদি লাগাবো, তাড়াতাড়ি লাগিয়ে দে।
– সাবিহা আপু তো আরো ভালো করে লাগাতে পারে। ওকে বলো।
নীলার মুখে তুমি শুনে হাসি পাচ্ছে আকাশের। হাসি থামিয়ে বলল,
– না, লাগালে তোর হাতেই লাগাবো।
সাবিহাও বলল,
– আরে নীলা লাগিয়ে দে না। আমি তো এখনো সুবাহকেই লাগিয়ে শেষ করতে পারিনি, ওর আরো একহাত আছে।
নীলা আর উপায় না দেখে আকাশের হাত নিয়ে মেহেদী লাগাতে শুরু করে। কিছুটা লাগাতেই ওদের সবাইকে নীলার মা সবাইকে নিচে ডাকলো খাবার খেয়ে নিতে। সবাই সেখানে চলে গেল। নীলা যেতে চাইলেও আকাশ হাত ধরে থামিয়ে দিল,
– ওই আমাকে এভাবে মাঝপথে একা ছেড়ে চলে যাবি নাকি।
নীলা ব্রু কুচকে তাকালো। আকাশ আবার বলল,
– আরে মানে, এভাবে অর্ধেক মেহেদী লাগিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
– আমি কি খাবো না তাহলে?
– খাবি তো আমি আর তুই পড়ে খেয়ে নেব।
-উফফ, এতো জ্বালাস কেন আমায়?
নীলা আবার চোখ বন্ধ করে বলল,
– না মানে, এতো জ্বালাও কেন আমায়?
বলেই আবার মেহেদী লাগাতে শুরূ করলো। সাবিহা, সুবাহ আর রাফি অনেক আগেই চলে গেছে। ঘরে নীলা আর আকাশ একা। এই মুহুর্ত টা অনেক ভালো লাগছে আকাশের। জানালা দিয়ে চাঁদ দেখা যাচ্ছে৷ পুরো ঘরে নীরবতা, গালে হাত দিয়ে আকাশ নীলাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে৷ নীলার দিকে ঝুকে চুলের খোপার ক্লিপ্টা খুলে দিল আকাশ। সাথে সাথে নীলার কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল ছড়িয়ে পরলো। নীলা বিরক্তি নিয়ে তাকালো আকাশের দিকে। আকাশ মুচকি হেসে নীলাকে চোখ টিপ দিল। নীলা চোখ বড় বড় করে তাকালো।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– আমার দিকে কি দেখছিস? তাড়াতাড়ি লাগা।
নীলার মেহেদী লাগাতে শুরু করলো আবার কিন্তু বারবার বাতাসে ওর চুল মুখের উপর, চোখের উপর, ঠোঁটের উপর এসে পড়তে লাগলো। আকাশের এগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো।
মনে মনে ভাবলো,
-ইসস, আমিও যদি তোর ওই চুল হতাম তাহলে আমিও যখন ইচ্ছে তোর চোখ, গাল, ঠোঁট ছুয়ে দিতে পারতাম।
আকাশের ভাবনার ইতি ঘটলো নীলার কথায়। নীলা আকাশের সামনে হাত নাড়তেই আকাশের ধ্যান ভাঙে।
– কি ব্যাপার কি দেখছো? নিচে দেখ৷ মেহেদী লাগানো শেষ হয়ে গেছে।।

এবার আকাশ নিজের ডান হাত বাড়িয়ে দিল। নীলা অবাক হয়ে বলল,
– একি, এই হাতে লাগালে খাবে কিভাবে।
আকাশ হেসে বলল,
– সেসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তুই লাগিয়ে দে।
নীলা আবার মেহেদী দিয়ে দিতে লাগলো আর আকাশ আবার নীলাকে দেখতে লাগলো।
.
মেহেদী লাগানো শেষ হলে আকাশ আর নীলা নিচে নামে। ততক্ষনে সবার খাওয়া শেষ। তাই নীলা আর আকাশ খাবার নিয়ে নীলার রুমে এসে পড়লো। নীলা টেবিলে বসে খেতে শুরু করল। আকাশ ও ওর পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।
নীলা কৌতুহল নিয়ে আকাশের দিকে তাকালো,
– কি?
আকাশ হেসে বলল,
– খাইয়ে দে না, দেখ হাতে মেহেদী।
নীলা চোখ বড় বড় করে তাকালো।
.
.
.
.
.
.
চলবে……

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_14

0

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_14
#adrin_anisha
.
মেঘ হাতে কিছু ছবি নিয়ে নদীর পাড়ে বসে আছে। ইচ্ছে করছে এক্ষনি গিয়ে নীলাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতে এবং জিজ্ঞেস করতে কি সম্পর্ক ওর আর আকাশের মাঝে। মেঘের হাতে নীলা আর আকাশের সেদিনের বৃষ্টিতে ভেজার ছবি। ছবি গুলো দেখলে যে কেউ বলে দেবে ওদের দুজনের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। তাই সেগুলো দেখেই মেঘের মাথায় রক্ত উঠে আছে।
– নাহ, আর এভাবে বসে থাকা যায় না। আমি এখনি যাব নীলার বাসায়।
কথাটা বলেই মেঘ রাগে কটমট করতে করতে রওনা হলো নীলার বাসার দিকে।
.
ইফতারি শেষে নীলা আর আকাশ বেলকনিতে বসে কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে।
– এই আকাশ ভাইয়া, তুই তো ওই দিন বললি ওই ড্রেস টা তুই তোর গার্লফ্রেন্ড এর জন্য কিনে এনেছিস তাহলে আমায় দিলি কেনো?
– ভাবলাম ওটা তোকেই ভালো মানাবে।
– কিন্তু এখন ওকে কি দিবি?
– ওকে তো দিয়েই দিয়েছি। আর দেয়ার দরকার হবে না।
– বাব্বাহ, তারমানে তাকেও দিয়ে দিয়েছিস? কি চালু রে তুই। আচ্ছা প্লিজ বল না নাম কি ওর?
– কার?
– তোর গার্লফ্রেন্ড এর।
আকাশ মুচকি হেসে বলল,
– নীলা।
নীলা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল,
-ধুর, মজা করিস না তো, বল না নাম টা কি?
আকাশ হতাশ ভাব নিয়ে বলল,
– তুই নিজেই বের করে নে।
নীলা হেসে বলল,
– আচ্ছা ঠিক আছে, শোন, আমি তোকে ১০ টা নাম বলব N দিয়ে তুই বলবি এগুলোর মাঝে আছে কি না৷ ওকে?
আকাশ হেসে বলল,
– তোর বাচ্চামো আর গেলো না রে।
– না যাবেও না। বল না,
আকাশ মাথা ঝাকিয়ে বলল,
– ঠিক আছে। বল
নীলা খুশি হয়ে ভাবতে শুরু করলো, আর হাতে হিসেব করতে লাগলো,
– নয়নতারা, নাফিসা, নাদিয়া, নাজমা, নাসরিন, নাদিরা, নাহিদা, নিশাত
নাম গুলো বলেই গালে একটা হাত দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো নীলা,
– এই ভাইয়া, আর মনে পড়ছে না তো।
আকাশ হেসে বললো,
– নীলা আর নুসরাত বলে দে।
নীলা এবার শয়তানি হাসি দিয়ে আকাশের দিকে ঝুঁকি এলো৷ আকাশের চেয়ারের দুই হাতের উপর নীলার দু হাত রেখে একদম আকাশের মুখের উপর ঝুকে গেল নীলা। আকাশ অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে হঠাৎ কি হলো এই মেয়ের।
নীলা ঠোঁট বাকা করে হেসে বলল,
– কি ব্যাপার? হুম? নুসরাত কে? তার মানে তুই নুসরাত নামের কোনো মেয়েকে ভালোবাসিস তাই তো?
আকাশ বোকা বোকা হাসি হেসে বলল,
– উফফ, আমি তো সাথে নীলা নামটাও নিয়েছি। ওটাকে সন্দেহ করছিস না কেন?
নীলা আকাশের নাকে আঙুল দিয়ে একটা খোঁচা দিয়ে হেসে বলল,
-আমাকে কি বোকা পেয়েছিস? আমি তো তোর সামনেই ছিলাম এজন্য আমার নাম টা বললি, কিন্তু নুসরাত নামটা তোর মাথায় এলো কি করে শুনি? তারমানে এটাই তোর গার্লফ্রেন্ড। তাই তো?
আকাশের ইচ্ছে করছে নিজের মাথার নিজেই চুল নিজেই ছিড়ে ফেলতে। নিজেকে সংযত করে আকাশ মুচকি হেসে নীলার কাছে যেতে লাগলেই নীলাও পিছাতে লাগলো, নীলা নিজের চেয়ারে বসে পড়লো আর আকাশ চেয়ারের দুই হাতায় নিজের হাত রেখে নীলার দিকে ঝুকে বলল,
– দেখ তোর যা বোঝার তুই বুঝে নে, কিন্তু নুসরাত নামে আমি কাউকে চিনি না। ওকে?
কথাটা বলে নীলার নাকে নাক ঘষে দিল আকাশ। তারপর চলে গেল। নীলা বড় করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো, আকাশ এভাবে সামনে আসায় নীলার যেন নিশ্বাসই থেমে গিয়েছিল। নীলা লজ্জায় মুখ ঢেকে নিল।
.
মেঘ এতোক্ষন সব দেখছিল নীলার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে। দুজনকে এভাবে দেখে তার বিশ্বাস হয়ে গেল যে নীলা আর আকাশ একে অপরকে ভালোবাসে। রাগে সেখান থেকে চলে গেল মেঘ। আর মনে মনে ঠিক করলো যেভাবেই হোক নীলাকে ভুলে যাবে মেঘ৷
.
আকাশ নীলার বাবার রুমে গিয়ে কড়া নাড়লো,
– আঙকেল আসবো?
-আরে আকাশ বাবা, আসো। কিছু বলবে?
আকাশ নীলার বাবার পাশে বসে বলল,
– হুম, আসলে আয়ান এর ব্যাপার টা জানতে চেয়েছিলাম।
নীলা বাবার রুমে আসতে যাবে তখনই আয়ান এর নাম শুনে লুকিয়ে গেল। আর শোনার চেষ্টা করতে লাগলো কি বলছে তারা।
নীলার বাবা উঠে বসে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,
– আসলে তোমাকে বলতে আমার অসুবিধা নেই, তবে নীলাকে কিছু বলার দরকার নেই। ওর পড়াশুনার ক্ষতি হতে পারে।
– আপনি নিশ্চিত থাকুন আঙ্কেল।
– হুম, শোনো, আয়ান ছেলেটা হিন্দু আর ওর আসল নাম আয়ান না পরম।
আকাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কি?
– হুম, ও নীলাকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথেই দেখেছে। তারপর তোমার বাবার থেকে আমার নাম্বার যোগার করেছে। ভেবেছিল বিয়ের প্রস্তাব দেবে। কিন্তু সে হিন্দু, এবং ছোট একটা শোরুমের কর্মচারী, তাছাড়া নীলাও এখনো অনেক ছোট, এসব ভেবেই আর প্রস্তাব পাঠায়নি। কিন্তু সে চেয়েছিল আগে নীলাকে নিজের মনের কথা বলবে তাই নীলার পিছু নিতে থাকে এবং নীলাকে ওর কথা বলার চেষ্টাও করে। কিন্তু নীলা কখনো ওর কথা শোনার চেষ্টাও করেনি তাই আর সে ও বলতে পারেনি। ও হিন্দু থেকে মুসলমান হতে চায় নীলার জন্য, আর নীলার সাথে মিলিয়েই তার নাম রাখতে চায় নীল। এমনকি সে তার বাবা মা, দাদী, এবং সবাইকে নীলার ছবি দেখিয়েছে, এমনকি ওর বাবা মা রাজিও হয়েছে। কিন্তু ছেলের ধর্ম বদলানো কে মেনে নেননি, তবুও ও নিজের বাবা মায়ের বিরূদ্ধে গিয়েও নীলাকে বিয়ে করতে চায়।
-কিন্তু আঙ্কেল, আপনাকে এসব বিশ্বাস করলেন কেন? ও তো আপনাকে মিথ্যাও বলতে পারে।।
– ও বললে তো বিশ্বাস করতাম না বাবা। কিন্তু কথাগুলো বলেছে ওর বাবা।
– ওর বাবা?
– হুম, ওর বাবাই ওই শোরুমের মালিক। কিন্তু দোকানে ওদের মাঝে শুধুই মালিক আর কর্মচারীর সম্পর্ক। প্রথমে উনি অনেক বকলেন আয়ানকে। পরে আমায় নিয়ে এসে চা দোকানে বসলেন। তারপর সব কথা বললেন। আমায় অনেক বোঝালেন যেন আমি নীলাকে ওনার ঘরে পাঠাই।
কথাটা বলেই একটা নিশ্বাস নিলেন নীলার বাবা। নিশ্বাসটা যেন আকাশের বুকে এসে লাগলো। অধীর হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– তুমি কি বললে আঙ্কেল?
– আরে ধুর, তুই কি পাগল হলি? আমি কিভাবে হ্যাঁ বলব বল তো। ওরা শত হলেও হিন্দু।
আকাশ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ওদিকে নীলা সব শুনে হা হয়ে আছে। নিজের ঘরে গিয়ে ভাবতে লাগলো নীলা,
– আয়ান আমাকে ভালোবাসে? কই কখনো তো বলেনি। আর এতো ভালোবাসে যে নিজের ধর্ম ও বদলাতে রাজি। শুনেছি কেউ যদি কাউকে অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে আনতে পারে তাহলে তার জান্নাতে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। তাহলে আমি যদি ওকে হ্যাঁ বলে দেই তাহলে তো ও আমার জন্য মুসলমান হয়ে যাবে আর আমারো অনেক সওয়াব হবে। তাহলে কি আমি ওকে হ্যাঁ বলে দেব?
.
.
.
.
চলবে…..