Monday, August 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1990



ভালোবাসার রাত পর্ব ১৩

0

# ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (১৩)

তিলকে অবাক করে দিয়ে রিদ বিছানায় উঠে গেলো। তিলের পড়োহিত জামায় হাত দিতেই তিল চিৎকার করে উঠলো,,

“” আমি চেন্জ কলছি,প্লিজ জামা ছিলবেননা””
“” গুড,তোর তো দেখি দিনে দিনে বুদ্ধী বাড়ছে। কিন্তু বুদ্ধীর উৎপত্তি এতো লেট করে করছিস কেন? সারের দাম কি বেড়েছে? চিন্তা করিস না আমি নাহয় সার কেনার টাকাটা তোকে দিয়ে দিবো,তুই এককালীন কিস্তিতে আমাকে পরিশোধ করিস। তবে হ্যা,চক্রবৃদ্ধি হারে কিন্তু সুদও দিতে হবে,বুঝেছিস?””
“” চক্লবৃদ্ধীতে কেন?””
“” সেটা তোকে পরে বলবো। এখন ঝটপট জামাটা পাল্টে নে।””

তিল নিজের বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই রিদ বলে উঠলো,

“” তুই যদি ওয়াশরুমে গিয়েই জামা পাল্টাবি,তাহলে আমি এতো কষ্ট করে দরজায় সিটকিনি লাগালাম কেন? সিটকিনি লাগাতে আমার কতটা এনার্জি লেগেছে জানিস?””
“” তাহলে কোথায় চেন্জ কলবো?””

রিদ নিজের হাতটাকে সামনের দিকে তাক করে বললো,

“” এই যে এই জায়গায়,ঠিক আমার সামনে দাড়িয়ে চেন্জ করবি। দাড়া আমি আগে ঠিকঠাক পজিশনে বসে নেই।””
“” কি! আপনাল সামনে?””
“” চোখদুটো এমন রসগোল্লার মতো করেছিস কেন? তুই জানিস না আই হেট রসগোল্লা? রসমালাইয়ের মতো করতে পারিস কজ আই লাভ রসমালাই!””

রিদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে তিলের মনে হলো উনার সামনে কয়েক কেজি রসমালাই রাখা আছে। আর সে এখনি দুহাত মেখে টপাটপ মুখে পুড়বে।

“” কি,হলো শুরু কর!””

তিল জামাটা রিদের দিকে নিক্ষেপ করে গালটা শক্ত করে বললো,

“” আমি পালবোনা।””
“” কেন,পারবিনা? এটা তো এতো কষ্টের কাজ না,তিল। সামান্য জামা চেন্জ করাতেও তোর এতো আলসেমি? আগে জানলে তো তোকে গরম পানিতে গোসল না করিয়ে ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতাম।””
“” উফ! বলছি তো পালবোনা। আপনি এখান থেকে যান।””

রিদ বিছানা থেকে নেমে এসে তিলের সোজাসুজি দাড়িয়ে বললো,

“” এটা তো কষ্টের কাজ না,তিল। এতো বেশি আলসেমি তোকে মানায় না। এই দেখ আমি তোকে দেখাচ্ছি। এই যে এভাবে জামাটা নিচ দিকে শক্ত করে ধরবি,এক হাত পেছনের পার্ট আরেক হাত সামনের পার্ট ধরবি,তারপর আসতে আসতে উপরে তুলে, গলা দিয়ে বের করে ফেলবি,ব্যাস হয়ে গেলো!””

রিদ নিজের গেন্জিটা পুনরায় আগের মতো করতে করতে তিলকে বললো,

“” আচ্ছা,তুই নিচ থেকে ধরে উপরে তুলে চেন্জ করিস,নাকি আগে হাতা থেকে হাত বের করিস??””

রিদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তিল জামাটা নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। বাইরে থেকে রিদের মুচকি হাসিটা তিল দেখতে পেলোনা। আমি তো এটাই চাই, তুই আমার কথার অবাধ্য হোস। কিছু কিছু ভালোবাসায় অবাধ্যটাতো খুব বেশি গভীর ভালোবাসার জানান দিয়ে যায়!

“” বাহ! লাল কালার জামাই তো তোকে বেশ মানিয়েছে।””

তিলকে আয়নার সামনে নিয়ে দাড় করালো রিদ। আর কানে ফিসফিস করে বললো,

“” মনে আছে,ছোটবেলায় তোর লাল জামাটা ছিড়ে ফেলেছিলাম বলে তুই কিভাবে ভ্যা ভ্যা করে কাদছিলি?? কেন কাদছিলি বল তো? জামা ছিড়ে ফেলেছিলাম বলে? আজ থেকে তুই কবুল বলার আগ পযন্ত শুধু লাল কালার জামাই পড়বি। এটা তোর শাস্তি। কারন ঐদিন তোর কান্নার জন্যই তো আমি তোকে শাড়িটা পড়াতে পারিনি। যা ওয়াড্রবটা খুলে দেখ!””

তিলকে কথা বলার কোনো সুযোগ না দিয়েই রিদ দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো।

তিল ওয়াড্রবটা খুলে তো অবাক,এখানে তার পুরোনো কোনো জামাকে দেখতো পারছেনা। শুধু লাল আর লালের খেলা জমে আছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীর সবটা লাল রং এখানে এসে বাসা বেধেছে। নতুন জামা দেখে মনটা খুশিতে নেচেও উঠলেও পরক্ষণেই বিরক্ত নেমে আসে চেহারায়। প্রতিদিন এক কালার জামা পড়লে কেমন দেখাবে?? বিচ্ছিরি লাল পোকার মতো নিশ্চয় যাদের জামার প্রয়োজন হয়না।

~~
তিলকে বেশ সুন্দর করেই সাজানো হয়েছে। পুরো ক্রেডিটটাই ঘটা করে নিজের আয়ত্ত করে নিচ্ছে রিমা। আর পাশ থেকে সিকান্দারও বার বার শার্টের কলারটা ঠিক করার বাহানায় বার বার বুঝাচ্ছে রিমা যে তার বউ। আর বউয়ের ক্রেডিট মানেতো তারই ক্রেডিট তাইনা???

রিদকে লাল পান্জাবীতে মনে হচ্ছে,যুদ্ধে জয়ী হওয়া কোনো দেশের রাজপুত্র আর জয়ী হবার সুবাদেই সেখানকার রাজা তার কন্যাকে কন্যাদান করছেন। তিলের চোখ যেন আজ রিদের দিক থেকে সরছেইনা। তার লাল কুৃমারটা এতো সুন্দর কেন???

তিলের ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটান বড় আব্বু। পাশ থেকে তিলের হাতটা ধরে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে আসে। নিজের বিছানার পাশে বসিয়ে পায়চারী করছেন। তিল এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,

“” কি হয়েছে বড় আব্বু? তুমি এরকম ঘামছো কেন? এনিথিং রং?””
“” আমি জানি তোর এই বিয়ে তে মত নাই। রিদানের অত্যাচারের ভয়েই করছিস তো? কিন্তু তুই কি এটা বুঝতে পারছিসনা ওকে বিয়ে করা মানে ওর সাথে সারাটা জীবন কাটানো। তাহলে তুই কোন অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য এরকম করছিস?? তোকে কি বলবো? আমি নিজেই বাবা হয়ে ছেলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারছিনা। এতো বছর পর ছেলেকে কাছে পেয়ে আমার শক্ত মন নরম হয়ে গেছে এতোই নরম হয়েছে যে..””

বড় আব্বু নিজের কথা শেষ না করেই পুনরায় পায়চারী করতে করতে বললো,

“” তিল,তোকে আমি সম্পুর্ন হেল্প করতে রাজী আছি। তুই কি পালিয়ে যেতে চাস? তাহলে আমি নিজে তোকে…””

তিল মুচকি হেসে বড় আব্বুর দিকে এগিয়ে গেলো। উনার পায়ে সালাম করে বললো,

“” বড় আব্বু,আমি তোমাকে আব্বু ডাকার আগে যে বড় বলে সম্বোধন করিনা? এই বড় শব্দটা মুছে ফেলতে চাই আর সেটা তোমার ছেলেকে বিয়ে করে।””
“” মা,তুই বুঝতে..””
“” আমি কিছু বুঝতেও চাইনা,শুধু এটা বুঝি তোমার ছেলের অত্যাচারগুলোকে যেন কখনো মিস করতে না হয় সেই কাজটাই করছি,আর সেটা তোমার ছেলের ভয়ে নয়,ভালোবেসে!””

আমির আলী সাহেব খুবই বিস্মিত হলেন। আমার ছেলেটার সাথে কি তাহলে মেয়েটাও পাগল হয়ে গেলো???

~~
তাসমিয়া বেগম বারবার চোখের পানি মুছে ভিজিয়ে ফেলেছেন নিজের শাড়ীর আঁচল। আজ দুটো ভালোবাসার পুর্নতা পাচ্ছে। কেউ জানুক আর না জানুক সেতো জানতো তিল রিদের জন্য কত চোখের পানি ফেলেছে??? আর রিদ? সে তো ছোট্টবেলায় তিলের কপালে সেকেন্ডে সেকেন্ডে কালো টিপ দিতো যাতে তিলের দিকে কারো নজর না পড়ে। টিপটা হালকা হয়ে এলেই সাথে সাথে গাঢ় করে দিতো। বলাতো যায়না হালকা করে থাকা কাজলের টিপ যদি বদ নজরের সাথে লড়াই করতে না পারে??? তাসমিয়া বেগমের ইচ্ছে হলো আজকেও তিনি তিল আর রিদের কপালে নজর কাটা দিয়ে দিতে। যাতে তাদের উপর কেউ নজর লাগাতে না পারে।

রিদ আর তিলের এনগেজম্যান্ট সম্পন্ন হলো খুবি ঘরোয়াভাবে। হঠাৎ করে রিদের চাওয়াকে পুরন করতে যে কয়জনকে পেয়েছেন সেকয়জনকে বাসায় এনে হাজির করেছেন আমির আলী।

“” রিদ,বিয়েটা তিলের পরীক্ষার পরে ঠিক করলে হয়না,বাবা?””
“” না,হয়না। পরীক্ষার এখনো দুমাস বাকি,আব্বু। আমি এভাবে একা একা থাকতে পারবোনা। আই নিড তিল ইন মাই বেড রুম!

ছেলের এমন লজ্জাহীন কথায় নিজেরই মুখ ঢেকে ফেলার অবস্থা হয়েছে আমির আলী সাহেবের। এভাবে বাবার সামনে কোনো ছেলে যে এমন কথা বলতে পারে সেটা রিদানকে না দেখলে হয়তো জানতে পারতেননা। এই মুহুর্তে এখানে থেকে ছেলের লজ্জাহীন কথা না শুনার থেকে ভালো বিয়ের কাজে লেগে পড়ার। আর কটা দিনই বা আছে? ১৫ মার্চ বিয়ে মানে হাতে আর ১৭ দিন বাকি। আমাদের বংশের একমাত্র ছেলে বলে কথা বিয়েটা তো যেন তেনভাবে দেওয়া যাবেনা।

~~
তিল বিছানা গুছানোর সময় সিকান্দার সাহেব এসে হাজির। হাতে একটা হলুদ পান্জাবী।

“” তিল,আপামনি, আপনি কি আমাকে একটু বিষ দিবেন? আমি খেয়ে মরে যায়??””
“” আত্মহত্যা করবেন? কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় দুলাভাই,আমার কাছে কোনো বিষ নাই।””

বিষ নাই শুনে সিকান্দার সাহেবের মাথায় বাড়ি পড়লো। এমনি ভাব নিয়ে তিলের মাত্রই ঝেড়েঝুড়ে পরিষ্কার করা বিছানায় ধপ করে বসে পড়লেন। ডান হাতটা কপালে ঠেকানো।

“” কি হয়েছে,দুলাভাই? আমাকে কি বলা যাবে?””

তিলের এই কথাটারই জন্য মনে হয় সিকান্দার সাহেব ওয়েট করছিলেন। চট করে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলেন। হাতের পান্জাবীটা তিলের দিকে বাড়িয়ে বললো,

“” দেখুন,রিমা বলছে আপনাদের গায়ে হলুদে নাকি আমাকে এই পান্জাবী পড়তে হবে।””

তিল পান্জাবীটার দিকে চোখ বুলিয়ে বললো,

“” সুন্দরীতো। আপনাকে বেশ মানাবে,দুলাভাই। কিন্তু এটার জন্য আপনাকে বিষ খেতে হবে কেন সেটা এখনো বুঝতে পারছিনা।””

সিকান্দার পান্জাবীটা ভালো করে মেলে বুকের দিকটা বাড়িয়ে বললো,

“” দেখুন হলুদ পান্জাবীতে কালো কালারের গাঁদা ফুলের ছাপ। আপনিই বলুন গাঁদা ফুল কি কালো কালার হয়? আর তাও কি হলুদ পান্জাবীতে? আপনার গায়ে হলুদে আমার কি কোনো প্রেস্টিজ থাকবে?””

তিল পান্জাবীটা ভালো করে দেখলো,সত্যিই হলুদ কালার পান্জাবীতে কালো গাদা ফুলের ছাপ রয়েছে। নিচে আবার ক্যাপশন হিসেবে ইউস করা আছে আমার কালো গাঁদা। তবে দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। কিন্তু সিকান্দার সাহেবের অসহায় কথা আর অসহায় মুখ দেখে বেশ মায়া হলো তিলের। রিমাটাও কি তাহলে রিদ ভাইয়ার মতোই হলো???

“” তুমি,আবার তিলের কাছে নালিশ করতে চলে এসেছো? দাড়াও শুধু পান্জাবীতে কেন তিলের গায়ে হলুদে তোমাকেও গাঁদা ফুল দিয়েই সাজাবো।””

~~
তিল বিছানায় শুয়েই শরীরটা মেলে দিলো প্রশান্ত শান্তিতে। মনের ভেতর কেমন জানি প্রাপ্তি প্রাপ্তির শান্তি অনুভব হচ্ছে। মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে আর কিছুদিন পর রিদ ভাইয়া তার বর হবে।

তিল ঘুমের ঘোরেই বুঝতে পারলো তার মুখে গরম বাতাসের ছোয়া লাগছে। কিন্তু সেটা বার বার ছেড়ে ছেড়ে আসছে,এমনটাতো কেউ ফু দিলে লাগে। তিল চোখ মেলতেই রিদের মুখটা ভেসে উঠে,ঠোটটা এখনো চুক্কা করে আছে,যেন এখন চোখটা না মেললেই আবার ফু দিতো।

“” আপনি? এভাবে ফু দিচ্ছেন কেন?””

তিলের কথার উত্তর না দিয়েই ওর চোখটা বেধে ফেললো রিদ। তাও ওরি লাল ওড়না দিয়ে।

“” আলে, কি কলছেন? আমাল দম বন্ধ হয়ে আসছে।””
“” চোখ বাধলে দম বন্ধ হয়? আমি কি তোর গলা চেপে ধরে আছি?””

বলতে বলতে তিলকে কোলে তুলে নিলো রিদ। পায়ে পায়ে কদম ফেলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে।

“” আমাকে কোলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? আমি কি আবাল কিছু ভুল কলছি? আপনি কি ছাদে উঠছেন? আমাকে ছাদ থেকে ফেলবেননা প্লিজ,লিদ ভাইয়া! এতো উপল থেকে পললে আমাল ভয় লাগবে।””
“” এই জন্যই তো চোখ বেধে নিয়েছি। কতটা উপর থেকে পড়বি,তুই দেখতেও পারবিনা।””

চলবে

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ১২

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (১২)

আগে হালকাভাবে ছুলেও এবার খামচি দিয়ে চেপে ধরে তিলকে আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” তোর সুড়সুড়ির কাছে আমার বলা সরি এতো নগন্য হয়ে গেলো? আমি যে তোকে সরি বললাম সেদিকে কোনো হুশ নেয় তুই তোর সুড়সুড়ি নিয়ে পড়ে আছিস? আমার হাত থেকে তোর হাত সরাবি নাকি? নাকি আমি তোর জামা সরিয়ে ফেলবো?””

তিল চট করে নিজের হাতটা সরিয়ে ফেলে।

রিদও নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে বললো,

“” তুই এমন কেন,তিল? যখন আমি থাকবোনা তখন বুঝবি,আমি কি ছিলাম!

রিদের ঠান্ডা কথার মাঝে কি ছিলো তিল জানেনা। কিন্তু এই সামান্য প্রশ্নটাই তিলের ভেতরে ভয় ঢুকিয়ে দিলো। তিল পেছন থেকে রিদকে জড়িয়ে নিয়ে কান্না করে দিলো।

রিদ তিলের হাতটা টেনে নিয়ে নিজের বুকের বা পাশটায় রাখলো। তিলের হাতটা নিজের হাত দিয়ে হালকা করে চেপে ধরে বললো,,

“” এই জায়গায়টায় খুব ব্যথা হয় রে। ব্যাথার প্রকট এতোই বেশি বেড়ে যায় তখন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারিনা। জানিস এই জায়গায় ব্যথাটা কবে থেকে শুরু হয়েছে??””

তিলের উত্তরের জন্য ওয়েট না করেই রিদ বলতে শুরু করে।

“” তুই যেদিন হলি,সেদিন আমার ভীষন জ্বর এসেছিলো। ১০৪ ডিগ্রি। আব্বুও তখন ব্যবসায়ের কাজে অন্যত্র। আম্মু কাকিমাকেই সামলাবে নাকি আমাকে সামলাবে বুঝতে পারছিলোনা। একবার আমার কাছে তো আরেকবার কাকিমার কাছে যাচ্ছে। টেনশনে আম্মুর সব কাজ পাক খেয়ে যাচ্ছিলো। এমনি পাক খেয়ে গেলো যে,তোর নাড়ি কাটার ব্লেডটা আমার দিকে বাড়িয়ে বলতেছিলো নে,তাড়াতাড়ি নাড়িটা কেটে নেতো! সেদিন এতো জ্বরের মধ্যেও আমি শব্দ করে হেসে দিয়েছিলাম। যে ছেলেটা একটুু পরপর কাপুনি দিচ্ছিলো সেই ছেলেটাকেই তোর নাড়ি কাটার ব্লেডটা শরীর ঝাকিয়ে হাসিয়ে দিলো। তারপর টানা সাতদিন পর আমি সুস্থ হলাম। কিন্তু তোকে দেখতে পেলাম না। তুই তো তখন কাকিমার সাথে,আতুর ঘরে। আর সেখানে আমার যাওয়া নিষেধ। এদিকে তোকে দেখার জন্য আমি ছটফট করছি। এতো ছটফট তো রিমার বেলাই ও করিনি! এই ছটফট নিয়েই ৪০ দিন পার হলো। আম্মুর মুখে শুনলাম,তুই নাকি বড় হয়ে যাচ্ছিস।হাত,পা,চুল একটু একটু করে চেন্জ হচ্ছে! তুই বড় হচ্ছিস অথচ আমি তোর বড় হওয়া দেখবোনা?? এটা হয়?? সেদিন রাতেই সবাই ঘুমিয়ে গেলে কাকিমার রুমে ঢুকে পড়ি,কাকিমা তখন গভীরঘুমে। কিন্তু তুই? তুই তোর ব্যাটারির মতো চোখ গুলোকে নাড়িয়ে নাড়িয়ে আমাকে দেখছিস। আর আমিও খপ করে তোকে কোলে তুলে বাড়ি ছাড়লাম। কেন ছাড়লাম জানিনা। শুধু এটা মনে হয়েছিলো তোকে মন ভরে না দেখা পর্যন্ত আমার মনের ছটফটানি বন্ধ হবেনা। আর আম্মুতো আমাকে দেখতেই দিচ্ছেনা! তারপর ঘটলো সেই ব্যথার সুত্রপাত। তোকে নিয়ে আমি একটা গাছের ডালের উপর বসে আছি। আর তোকে মন ভরে দেখছি। তুই ও আমাকে দেখছিলি,আর হাসছিলি। তোর তো তখন দাত ও উঠেনি রে তিল। কি অমায়িক হাসি। আমি দেখেই মুগ্ধ! হঠাৎ ই কোথা থেকে আব্বু আর আম্মু চলে আসলো। সাথে তোর আব্বুও ছিলো। আম্মু আমার কাছ থেকে তোকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। কারন আমি তো তোকে দিতে চাচ্ছিলাম না। পেছন থেকে আব্বুও আমাকে পেটাচ্ছে। আম্মু ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তোর এই হাতের আঙুলগুলো আমার হাতের বৃদ্ধা আংগুলটা চেপে ধরে ফেললো। আমি তোর হাতের দিকে তাকিয়ে আছি। আম্মুর মুখে শুনেছিলাম তখনো তুই কোনো কিছুকে আকড়ে ধরতে শিখিসনি তাহলে আমার আংগুলটা কেন ধরলি? বল কেন ধরলি???””

রিদ তিলের দিকে ঘুরে গেলো। তিলের হাতটা চেপে ধরে বারবার বলছে,

“” বল কেন ধরেছিলি সেদিন? আমি বলেছিলাম ধরতে? বলিনি তো? তাহলে? কেন ধরলি?””

রিদের এমন প্রশ্নে তিল কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারলোনা। একটা ৪০ দিনের বাচ্চা কেন হাত ধরেছিলো সে কিভাবে বলবে???

“” জানিস নাতো? কিন্তু আমি জানি। তোর চোখ আর তোর হাতের ছোয়া আমাকে স্পষ্ট করে বলছিলো,রিদ তুমি আমাকে কখনোই তোমার থেকে আলাদা করোনা। আমি এভাবেই তোমার হাতটা আকড়ে ধরে এভাবে গাছ তলায় কাটিয়ে দিতে পারবো। আমার শুধু তোমার হাতের শক্ত বাধনটা চাই!””

রিদের কাছ থেকে গল্প শুনতে শুনতে তিলের ভেজা চোখ শুকিয়ে এসেছে। চোখদুটো বড়বড় করে বললো,,

“” তাই বলেছিলাম?””
“” হুম,তাই তো বলেছিলি। তোর কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি? আমি মিথ্যেবাদি? তুই আমাকে মিথ্যেবাদি প্রমান করতে চাস??””

রিদ যে আবার রেগে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে বুঝতে পারলো তিল। তাই সাথে সাথে বলে উঠলো,

“” তালপল,কি হলো লিদ ভাইয়া?””
“” তারপর আর কি? আমার বুকের বা পাশে ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। এমনি ব্যথা যে দিনের ২৪ টা ঘন্টার মধ্যে পারলে ২৮ ঘন্টায় তোর খেদমতে ব্যস্ত। তোকে,গোসল করানো,কপালে টিপ পড়ানো,জামা কাপড় পড়ানো, হিসু করলে কাথা পাল্টানো,কোলে নিয়ে গান শুনানো,ঘুম পাড়ানো,সব আমি করছি,শুধু দুধটা কাকিমা খায়িয়েছিলো।””

“” কেন? দুধটা আপনি খাওয়াতে পাললেননা? তাহলে আল কি খেদমতটা কললে শুনি? তালমানে আমি ছোট ছিলাম বলে আপনি ফাকিবাজি কলেছিলেন?””
“” খাবি একটা থাপ্পড়,আমার সাথে মশকরা করা হচ্ছে? আমি তোকে কিভাবে দুধ খাওয়াবো? আমি কি মেয়ে মানুষ?””

তিল ঠোট টিপে হালকা হেসে বললো,

“” তালপল?””
“” তারপর আর কি? এভাবেই গরুর মতো খেটে তোকে বড় করতে লাগলাম। হঠাৎই খেয়াল করলাম তুই আর আগের মতো আমার সাথে থাকতে পছন্দ করিসনা। রিমার সাথে ঘুরিস,পুতুল খেলিস,মেয়েলি খেলা আরকি। এটা আমার সহ্য হচ্ছিলোনা,কিন্তু তোকে কিছু বলতেও পারতাম না। সব সহ্য করে থাকলেও যেই দেখলাম তুই রবিনের সাথেও খেলিস,সেদিনই আমার মাথা গরম হয়ে গেলো। এমনি গরম হলো যে তোকে কঠিন শাস্তি দিতে শুরু করলাম। আর তোর প্রেমে পড়তে শুরু করলাম। প্রেমে অবশ্য সেই ছোটবেলায় ই পড়েছিলাম কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম এইটে উঠার পর।””
“” তালপল?””
“” তালপল তো তুই সবি জানিসই। তবে একটা জিনিস জানিসনা।””
“” কি?””
“” ছোটবেলার পাগলামিগুলো আমি না বুঝেই করেছিলাম,বয়সের দোষ বলে যেটাকে কিন্তু ইউকে থেকে আসার পর যা করেছি সব অন্য কারনে।””
“” কি?””

রিদ তিলের মাথাটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

“” আমি সব সময় চেয়েছিলাম,তুই আমার বিপরীতে কিছু করবি,কিছু বলবি। কিন্তু তুই এটা কখনোই করিসনি। সবসময় আমি যা বলি তাই করিস। ছোটবেলাতো তাও কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে দিতি,কিন্তু এখন তাও করিসনা। এটা আমাকে খুব বেশি রাগাতো। মনে হতো তুই একটা পুতুল। আমি কি এতোদুর থেকে একটা পুতুলকে বিয়ে করতে এসেছি? তাই তোর উপর ডাবল ডোজ দিয়ে চেষ্টা করছিলাম তোকে মানুষ রুপী বানানোর জন্য! আর সেটাই আমি সফল,তবে এখনো পুরোপুরি হয়নি। মনে হচ্ছে আরো টাইম লাগবে। বাট এতো টাইম নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।””

তিল এবার মাথাটা উচু করে রিদের দিকে তাকিয়ে বললো,

“” জাস্ট এটাই? কিন্তু আমাল তো কখনো এমন মনে হয়নি!””
“” তোর মতো গাধীদের মনে হবেওনা। দেখি সর,আমি এখন রুমে যাবো।””
“” কেন?””

রিদ তিলকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে উঠে বসে পড়লো। অন্য দিকে ঘুরে বললো,

“” এখানে আর ১ সেকেন্ড থাকলে আমি ভয়ংকর কিছু করে ফেলবো।””
“” ভয়ংকর কিছু মানে?””
“” যা বিয়ের আগে করা অন্যায়!””

রিদ আর এক মুহুর্তও সেখানে দাড়ালোনা। এক কঠিন অস্থিরতা তাকে গ্রাস করেছে। এভাবে ওড়না ছাড়া কেউ উপুত হয়ে মাথা উচু করে তাও এক রুমে,একি বিছানায়,একটা কম্বলের নিচে,এই মাঝরাতে????

তিল রিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। কি এমন হলো যে হঠাৎ করেই উনার ভয়ংকর কিছু করে ফেলতে মন চাইলো??

রিদের চলে যাওয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে কম্বলের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই গরমেও উনি কম্বল গায়ে দেন কেন? আমি তো ঘেমে গোসল করে ফেলছি। উনার শরীরটাও কেমন গরম গরম লাগছিলো। আর উনি যখন উনার হাতটা আমার পেটে রাখলো তখন মনে হয়েছিলো ওটা হাত না,আগুনের তাপে শক্ত হয়ে আসা পাতিলের তলা। এতো গরম হাতও কারো হয়? ছেলেদের হাত কি এমন গরমি থাকে? নাকি শুধু উনার হাতই এমন গরম???

তিল ভাবনার রাজ্যে ডুবতে ডুবতে কম্বলটা ভাজ করে রিদের রুমে চলে যাচ্ছে। উনার তো আবার কম্বল ছাড়া ঘুৃম হবেনা।

তিল রিদের রুমের কাছে যেতেই রিদ বলে উঠলো,

“” আজ আর শীত লাগবেনা,তিল। তুই এখন আমার রুমে ঢুকবিনা।””

তিল ঢুকতে গিয়েও থেমে গেলো। কেন জানি আজ উনার নিষেধে হুংকার নয় অনুনয়ের ছোয়া পেলো। তাহলে কি মানুষটা আসতে আসতে পাল্টে যাচ্ছে???

~~
তিলের ঘুৃম ভাংলো রিমার ডাকে। ঘুমঘুম চোখে চোখ মেলতেই রিমার হাসি হাসি মুখ ভেসে উঠলো। তিলকে টেনে তুলে বসিয়ে নিয়ে রিমা বললো,

“” আমি জানতাম,তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস। কিন্তু প্রকাশ করতিনা।””
“” মানে? আর তুই হঠাৎ এখানে কেন রিমা? তুই আসবি এটা তো আমাকে জানালিনা।””

তিলের কথার উত্তর দিলো রিমার বর সিকান্দার সাহেব।

“” আমিও তো জানতাম না,তিল আপামনি। রিমা আমাকে ঘুম থেকে তুলে বললো,আমার ভাইয়ের এনগেজমেন্ট আর তুমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো? এখনি উঠো নাহলে কিন্তু গরম পানি মাথায় ঢেলে দিবো! আপনিই বলেন এই গরমে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে কি শরীর মানবে? ঠান্ডা পানি হলেও মানা যেতো। তাই গরম পানির ভয়েই আমি এই লুংগি পড়েই রিমাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি।””

তিল সিকান্দার সাহেবের দিকে তাকিয়ে সত্যিই অবাক হলো। শ্বশুড়বাড়িতে নতুন জামাইয়ের আগমন কিনা লুংগি পড়ে????

“” কার এনগেজমেন্ট রে রিমা?””
“” কার আবার,তোর আর ভাইয়ার। আমার যে কি খুশি লাগছেনা? আমি তো ভেবেছি,আমি আর সিকা বেলি ফুলের একি ছাপার শাড়ি আর পান্জাবী পড়বো। কেমন হবে রে,তিল?””
“” আমার এনগেজমেন্ট অথচ আমিই জানিনা? আর এই সিকাটা কে?””

তিলের প্রশ্নে মন খারাপের সুরে সিকান্দার বলে উঠলো,

“” আমি, আপা মনি। রিমা আমার নামের শর্টফর্ম করে সিকা দিয়েছে। আর ছেলেদের পান্জাবীতে কি কখনো বেলি ফুল যায় বলুন তো? গোলাপ ফুল হলেও একটা কথা ছিলো!””

রিমা এবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো,

“” সিকা নামের সাথে বেলি ফুলই যায় বুঝেছো? এখানে আসতে না আসতেই আমার বান্ধুবীর কাছে নালিশ দেওয়া শুরু করেছো? থাকবোনা আমি আর এখানে আমি একখনি বাপের বাড়ি চলে যাবো।””
“” তুই তো বাপের বাড়িই আছিস,রিমা,আর কোন বাপের বাড়ি যাবার কথা ভাবছিস??””

তিলের কথায় রিমা জিহ্বায় কামড় কেটে বললো,

“” আমি কেন বাপের বাড়ি যাবো? সিকাকে ওর বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিবো।””

সিকান্দার সাহেব আকুতি নয়নে তিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। তিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় পাশ থেকে রিদ বলে উঠলো,

“” রিমা,তোর হাবলু রে নিয়ে এখান থেকে যা তো। আমার তিলের সাথে দরকার আছে।””
“” তোর দরকারে বা হাত ঢুকাচ্ছে কে? তুই তোর দরকার শেষ কর। তার জন্য আমাদের কেন যেতে হবে?””
“” তুই এখান থেকে যাবি নাকি আমার হাতে তোর হাবলুরেও মাইর খাওয়াতে চাস?””

রিমা কান্নাকন্ঠে বললো,

“” বিয়ে করার আগেই বোনকে বের করে দিচ্ছিস? তাহলে বিয়ের পর কি করবি,ভাইয়া? ডেকে এনে এভাবে অপমান করলি তো? থাকবো আর এখানে,আজি আমি আমার শ্বশুড়বাড়ি চলে যাবো।””

রিমা তার বরকে টানতে টানতে তিলের রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো।

রিমা চলে যেতেই রিদ তিলের রুমের দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দিলো। তিলের দিকে একটা প্যাকেট ছুড়ে দিতেই তিল লাফিয়ে উঠে।

“” কি এটা? আল আপনি দলজা আটকালেন কেন??””

রিদ দরজা ছেড়ে তিলের সামনে থেকে প্যাকেটটা নিয়ে ছিড়ে ফেললো। ভেতর থেকে একটা লাল জামা বের করে তিলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

“” নে,এটা পড়ে নে।””
“” কেন?””
“” কথা বলবি তো থাপ্পড় খাবি!””
“” এখনি পলতে হবে?””

তিলকে অবাক করে দিয়ে রিদ বিছানায় উঠে গেলো। তিলের পড়োহিত জামায় হাত দিতেই তিল চিৎকার করে উঠে।

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ১১

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (১১)

তিল পুরো এয়ারপোর্ট তন্ন তন্ন করে খুজছে। কিন্তু কোথাও নিজের রিদ ভাইয়াকে দেখতে পারছেনা। এদিকে তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে রাস্তার মধ্যে ছোটখাটো এক্সিডেন্টও হয়ে গেছে। পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সেদিকে তাকালে যে তাকে চলবে না যে করেই হোক তার রিদ ভাইয়াকে খুজে পেতেই হবে।

পুরো এয়ারপোর্ট ঘুরে ঘুরে তিলের পা ব্যথায় ফুলে উঠেছে,না খেয়ে বাসা থেকে বের হওয়ায় পেটটা পিঠের সাথে লেগে গেছে। গলা শুকিয়ে তিতা হয়ে আসছে,মাঝে মাঝে বমি আসবে এমনও মনে হচ্ছে। কিন্তু এতোকিছু তুরি মেরে তিল উড়িয়ে দিতে পারতো যদি সে তার রিদ ভাইয়াকে খুজে পেতো। তাহলে কি রিদ ভাইয়াকে আমি আবার হারিয়ে ফেললাম? কিন্তু উনিতো বলেছেন আমার জন্য ওয়েট করবেন তাহলে? উনি কি উনার কথা রাখেননি? নাকি আমি আসতে লেট করে ফেলেছি??? তিল কি করবে কিছুই বুঝতে পারলোনা। চোখে পানির ঝড় বয়ে যাচ্ছে, বুকে রিদ ভাইয়াকে হারানোর তুফান বয়ে যাচ্ছে,মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীতে সে একা,নিস্ব,অসহায় একটা মেয়ে! উফ! যাকে না পেয়ে আমি আধবেলাই ঠিক থাকতে পারছিনা তাকে না দেখে সারাজীবন কিভাবে কাটাবো? তাহলে কি আমার পথচলার,স্বপ্ন দেখার এখানেই ইতি টেনে দিবো? তিল আর কিছু ভাবতে পারলোনা,তার ভাবনাগুলোও যেন মিলিয়ে যাচ্ছে,মনে হচ্ছে তার গলাটা কেউ চেপে ধরে আছে,নিশ্বাসটাও টানতে পারছেনা!

~~
তিল হাটু ভেংগে ভেংগে বাড়ি ফিরে আসে। এই মুহুর্তে তাকে দেখলে যে কোনো কবি তাকে নিয়ে পৃষ্ঠা ভরে ভরে কবিতা লিখে শেষ করতে পারবেনা,যে কবিতার নাম হবে *ভালোবাসায় ব্যথিত অসহায়িনী*

বাসার মেইন ডোরে ঢুকতেই তিল হাটু ঘেরে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে থাকে। তাসমিয়া বেগম খাবার টেবিল ছেড়ে দৌড়ে এসে তিলকে বুকে নিয়ে কেদে উঠেন,

“” তিল,মা তোর কি হয়েছে? এ কি অবস্থা হয়েছে? তোর বুকের ওড়না কই? চুল এমন অগোছালো কেন? আর এভাবে কাদছিস কেন? কি হয়েছে,বল না মা। আমার বুক কেপে উঠছে,তোর কান্না দেখে!””

তিল যতটা পেরেছে নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছে কিন্তু মায়ের শরীরের ছোয়া আর কথার ছোয়ায় তিল আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্নায় ভেংগে পড়ে।

এতক্ষনে খাবার টেবিলে বসে থাকা সকলেই তিলকে ঘিরে ফেলেছে। সবাই একি প্রশ্ন নিয়ে দাড়িয়ে আছে কি হয়েছে ওর? কিন্তু কারো কথার কোনো উত্তর দিতে পারছেনা তিল। মনে হচ্ছে আজ এই কান্না দিয়ে সে সব কষ্ট ধুয়ে ফেলবে।

“” আম্মু,মুরগির মাংসের প্লেটে উইংস পার্ট কই? তুমি জানোনা ওটা আমার কত প্রিয়?””

রিদের কন্ঠ পেয়ে তিল চোখ মেলে টেবিলের দিকে তাকালো। নিমিষেই চোখের পানি ভেনিস হয়ে সেখানে অবাক জায়গা করে নিয়েছে। মায়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ধীর ধীর পায়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে এগুলো।

রিদ মাথাটা ঝুকিয়ে বাম হাতটা দিয়ে মাংসের বাটিতে উইংসের পার্টটা খুজে যাচ্ছে। এমনভাবে খুজছে যেন ওটা ছাড়া তার ভাত খাওয়াটাই বৃথা! তিল অবাক নয়নে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা কি করে হতে পারে? যাকে খুজে খুজে আমি নাই হয়ে গেলাম সে কিনা এখানে মুরগির উইং খুজায় ব্যস্ত???

“” কিরে,এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তোর খেতে মনে চাইলে খেতে বসে যা! কেউ তো মানা করেনি। কিন্তু আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি কি তোর ভাগেরটা খেয়ে ফেলছি? তোর কি আমাকে এতো নিচু মনের মানুষ মনে হয়?””
“” আপনি,আপনি এখানে? আপনি ইউকে তে যাননি?””

রিদ তিলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পুনরায় মাংসের বাটিতে মনোযোগ দিলো। তিল তখনো তার প্রশ্নের উত্তরের জন্য গভীরভাবে চেয়ে আছে। কিন্তু রিদের সেদিকে কোনো ভ্রক্ষেপ না দেখে তিলের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রিদের সামনে থেকে মাংসের বাটিটা কেড়ে নিয়ে ওর মাথায় ঢেলে দিয়ে বললো,

“” শুধু পাখা কেন?পা,কলিজা,গিলা,হাড্ডি,চামলা,ভুলি,পশম সব গিলে গিলে খান। এগুলো খেয়েও যদি আপনাল পেট না ভলে তাহলে আমাল মাথাটা চিবিয়ে খেয়ে নিন, যত্তসব!””

তিল বিরক্ত নিয়ে চলে যেতে নিলে রিদ ওকে টেনে খাবার টেবিলের সাথে চেপে ধরে। এক হাতে ওর হাত দুটো পেছনে নিয়ে বাকিয়ে আটকে আরেক হাত দিয়ে,টেবিলে থাকা যত তরকারি আছে সব তিলের মাথায় ঢেলে দিয়ে বললো,

“” তোর কি মনে হয় আমি এত বছর পর এখানে এসেছি বোনের বিয়ে খাবো বলে? নাকি বিয়ে খাওয়া শেষ হলে ফিরে যাবো বলে??? এতো সহজেই তুই ছাড়া পেয়ে যাবি? নরম গলায় দুএকটা ভালোবাসার কথা বলেছি দেখে ভেবে নিলি আমি পাল্টে গিয়েছি? কখনোই না তোর মৃত্যুর লাস্ট ১ সেকেন্ডেও তুই আমার কাছে অত্যাচারিত হবি। আমি এখানে এসেছি শুধু তোর জন্য। অন্য কারো হাতে তোকে তুলে দেওয়ার জন্য না। আমি বেঁচে থাকতে কোনো ছেলের স্পর্শ তো দুরে থাক চোখের চাহনিও তোর উপর পড়তে দিবোনা। কি ভেবেছিলি তুই? তুই এখানে অন্য কারোর সাথে সুখের ঘর বাধবি আর আমি ইউকে তে বসে শোক পালন করবো? এতোই সহজ? আজ যা হয়েছে পুরোটাই আমার প্লেনমাফিক হয়েছে। আমার সাথে রাগ দেখাস? তেজ দেখাস? আমিও দেখে ছাড়বো তোর তেজপাতা কত বেশি সুগন্ধী ছড়াতে পারে।””

~~
সাওয়ার নিতে নিতে তিলের সর্দি বেধে গেলো। তবুও নিজের শরীর থেকে মসুরীর ডালের গন্ধ যাচ্ছেনা। যখনি মনে হচ্ছে আর গন্ধ করছেনা বের হবে,তখনি আবার নাকে গন্ধ লাগছে। চুলগুলোও কেমন আঠালো হয়ে রয়েছে। ইশ! আমি যে কেন উনার মাথায় মাংস ঢালতে গেলাম? আমি না ঢাললে নিশ্চয় উনিও ঢালতেননা। আমার এতো সাহস কোথা থেকে আসলো???

তিল নাক টানতে টানতে বই খুলে বসে পড়ে। রিমার বিয়ের জন্য তো আর পড়তেই বসা হয়নি। অনেক পড়া বাকি রয়ে গেছে। কয়েকদিন পড়েইতো আবার পরীক্ষা! এখন তো রিদ ভাইয়াও এখানে আছে। শেষে ফেল করার জন্য দেখা যাবে বই ছিড়ে ছিড়ে আমাকে পড়া খায়িয়ে দিচ্ছে।

তিল ফোনে গান ছেড়ে দিয়ে অংক শুরু করে দিলো। হঠাৎই কারো হাতের স্পর্শ পেলো নিজের পায়ে। পা হালকা সরিয়ে নিতেই রিদ বলে উঠে,

“” পা সরালি কেন? তুই চাস এখন আমি বটি দিয়ে পা টা কেটে ফেলি?””

রিদের এমন কথা শুনে তিল সাথে সাথে পাটা আগের জায়গায় রেখে দিলো। উনি যেমন মানুষ সত্যি সত্যি কেটেও ফেলতে পারে। তখন তো আমাকে খুড়া হয়ে চলতে হবে!

রিদ তিলের পায়ে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করতে করতে বললো,

“” পা কি দিয়ে ডলিস রে? এমন সাদা ফ্যাকফ্যাক লাগছে কেন? আগে তো এতো সাদা ছিলো না। দেখি পাজামা টা আরেকটু উপরে তুলতো!””

রিদ পাজামায় হাত দিতেই তিল ঝট করে দাড়িয়ে গেলো। অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

“” উপলে কাটেনি তো!””
“” আমি কি তোকে জিজ্ঞেস করেছি উপরে কেটেছে নাকি? এতো বেশি বুঝিস কেন?””

তিল মাথা নিচু করে দাড়িয়ে এক পা দিয়ে আরেকপায়ের পাজামাটা টেনে পা ঢাকার চেষ্টা করছে।

তিল কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বললো,

“” আমাল পলীক্ষা,লিদ ভাইয়া। আমি একটু পলবো।””

রিদ ভ্রু কুচকে তিলের দিকে তাকিয়ে বললো,

“” তোর পরীক্ষা,তোর পড়া। তুই আমাকে কেন শুনাচ্ছিস? আমি কি তোকে পড়তে মানা করেছি? তুই কি আমাকে ইনডাইরেক্টলি চলে যেতে বলছিস?””
“” না,মানে!””

রিদ তিলের বিছানায় শুয়ে পড়ে বললো,

“” এখনো হ্যাংলার মতো দাড়িয়ে আছিস কেন? যা পড়তে বোস। আমি একটু ঘুমালাম। আমাকে ডাকবিনা। আসতে আসতে পড়বি যাতে ঘুমের কোনো ডিস্টার্ব না হয়। আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হলে কিন্তু তোর কপালে দুর্গতিই আছে।””

তিল আবার চেয়ার টেনে বসতেই মুখ দিয়ে কোনো পড়া বের হচ্ছেনা। বারবার রিদের দিকে চোখ পড়ে যাচ্ছে। নিশ্বাসটাও ধীরে ধীরে নেওয়ার চেষ্টা করছে,তবুও মনে হচ্ছে রিদের ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে। মাঝে মাঝেই নড়ে উঠছে!

উফ! এভাবে পড়া যায়? তিল বই খাতা নিয়ে উঠতেই রিদ বলে উঠে,

“” অন্য রুমে গিয়ে সবাইকে বুঝাতে চাস আমার জন্য তোর পড়ার ডিস্টার্ব হচ্ছে? খুব পড়ুয়া হয়ে গেছিস? এমন একটা ভাব নিচ্ছিস যেন রাষ্ট্রপতি তোকে গোল্ড মেডেল না দিতে পেরে উনার ঘুমের বারোটা বেজে যাচ্ছে! রুম থেকে বের হলে পা মুচড়িয়ে ভেংগে দিবো,বলে দিলাম!””

তিল গুটি গুটি পায়ে আগের জায়গায় ফিরে যেতেই রিদ আবার বলে উঠে,

“” তোর রুমে কোনো কম্বল নাই কেন? একটা ছিড়া কাথা সাজিয়ে রেখেছিস? কাকার কি টাকার অভাব পড়েছে?? যা এখনি আমার রুম থেকে কম্বলটা নিয়ে আয়।””

তিল নিশব্দে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। হাতে রিদের এতো বড় কম্বলটা টেনে নিয়ে আসতে আসতে তিলের কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়তে লাগলো।

“” এভাবে কম্বলটাকে হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছিস কেন? দেখতে পারছিস না শীতে আমি কেমন গুটিয়ে রয়েছি? এখন কি এই সামান্য কম্বলটা জড়িয়ে দেওয়ার জন্য তোর পায়ে পড়তে হবে?””

তিল রিদের শরিরে কম্বলটা জড়িয়ে দিতে নিলে রিদ খোপ করে কম্বলটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো,

“” তোর নাকে দেখি জীবানুরা পায়খানা করে পাহাড় বানিয়ে ফেলছে। মনেতো হচ্ছে এখনি ভেংগে গুড়িয়ে আমার উপর আক্রমন করবে। যা দুরে যা। কেমন গন্ধ বের হচ্ছে। বমি বমিও আসছে। আর হ্যা জোরে জোরে পড়বি। দেখি তোর পড়ার কেমন স্পিড। তবে হ্যা তোর এই নাক টানাটা আমাকে খুব ডিস্টার্ব করছে। তুই কি ইচ্ছে করেই সর্দি লাগিয়েছিস যাতে আমি ঘুমুতে না পারি? আমার উপর তোর এতো হিংসে??””

রিদের কথায় তিল তেলে বেগুনে জ্বলে যাচ্ছে। সর্দি কি আমি ইচ্ছে করে লাগিয়েছি? নিজেই তো আমার মাথায় কিসব ঢেলে দিলেন। আমাকে এতো কষ্ট দিয়েও উনার, শান্তি হচ্ছেনা। এখন কথা শুনানো হচ্ছে। আমার কি জন্মই হয়েছে উনার এই ঝাল মাখানো কথা শুনার জন্য? আল্লাহ উনার মুখে কি একটু মধু ঢেলে দিতে পারলেনা???

তিল পড়তে বসে বিপাকে পড়ে গেছে। নাক না টেনে সে কিভাবে থাকবে? টিস্যু দিয়েও মুছেও কাজ হচ্ছে না। কি যে করি!

পড়তে পড়তে তিলের মুখ তিতা হয়ে গেলো,টিস্যু দিয়ে নাক মুছতে মুছতে নাকে ঘা হয়ে গেলো,তবুও তার রিদ ভাইয়ের ঘুম ভাংগার কোনো লক্ষন দেখতে পেলো না। ঘুমে চোখ ভারী হয়ে আসছে,চোখ মেলে তাকাতে পারছেনা। উনি কি সারাজীবনের ঘুম আজকেই ঘুমিয়ে নিবেন? তিল যে গিয়ে ডাক দিবে সে সাহসটাও পাচ্ছেনা। অন্য রুমে গিয়ে ঘুৃমাবে তারও কোনো সুযোগ পাচ্ছেনা। রাত তিনটা বাজে সে কার রুমে গিয়ে ঘুমাবে? কাকে ডেকে তুলবে? আর যদি জিজ্ঞেস করে আমার রুমে কেন ঘুমাচ্ছিনা তাহলে??

তিলের ইচ্ছে হলো রিদের কানের কাছে গিয়ে ঢোল পিটাতে যাতে সে লাফিয়ে উঠে। পারলে পেটের উপর ঢোল বাজাতে।

এতোকিছু ভাবা বাদ দিয়ে রিদের বা পাশে ছোট্ট জায়গায় গিয়ে উল্টো দিকে মুখ করে শুতেই রিদ কম্বলটা নিয়েই তিলকে জড়িয়ে ধরে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে ওকে ঢেকে ফেলে। ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“” এভাবে কান্না করে কেউ? তোর কান্না দেখে মনে হচ্ছিলো আমি মরে গেছি,তুই মরা কান্না করছিলি? তাও আমাকে জীবীত রেখে? তোর কি ধারনা মরা কান্না করলেই আমি মরে যাবো?।””

তিল নড়ে উঠতেই রিদ কম্বলের নিচ দিয়ে ওর পেট আকড়ে ধরে বললো,

“” সরি!””

তিল রিদের গরম হাতের উপর নিজের হাত দিয়ে চিমটি দিয়ে ধরে বললো,

“” সুলসুলি লাগছে,লিদ ভাইয়া!””

আগে হালকাভাবে ছুলেও এবার খামচি দিয়ে চেপে ধরে তিলকে আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” তোর সুড়সুড়ির কাছে আমার বলা সরি এতো নগন্য হয়ে গেলো? আমি যে তোকে সরি বললাম সেদিকে কোনো হুশ নেয় তুই তোর সুড়সুড়ি নিয়ে পড়ে আছিস? আমার হাত থেকে তোর হাত সরাবি নাকি? নাকি আমি তোর জামা সরিয়ে ফেলবো?””

তিল চট করে নিজের হাতটা সরিয়ে ফেলে।

রিদও নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে বললো,

“” তুই এমন কেন,তিল? যখন আমি থাকবোনা তখন বুঝবি,আমি কি ছিলাম!

রিদের ঠান্ডা কথার মাঝে কি ছিলো তিল জানেনা। কিন্তু এই সামান্য প্রশ্নটাই তিলের ভেতরে ভয় ঢুকিয়ে দিলো। তিল পেছন থেকে রিদকে জড়িয়ে নিয়ে কান্না করে দিলো।

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ১০

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (১০)

তিল কথা শেষ করার আগেই ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো রিদ! তিলের কোমড়টা ডানহাতে পেচিয়ে নিজের খোলা বুকের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।

“”বিয়ে করবি আমায়,তিল?””

রিদের ঠোটের ছোয়ায় সে যে চোখ বন্ধ করেছিলো এখনো খুলেনি। রিদের বুকের মাঝে চুপটি করে মুখটা ঢেকে রেখেছে। রিদও যেন নিজের হাত দুটো দিয়ে ওকে ঢেকে রাখার চেষ্টায় করে যাচ্ছে। তিল এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা তার সাথে কি হচ্ছে। তার রিদ ভইয়া তো এমন ভালোবাসতে পারেনা। তাহলে এটা কে? এটাই কি তার সেই রাগে গজগজ করা রিদ ভাইয়া? যার স্পর্শে শুধু রাগ ছাড়া আর কিছু খুজে পাইনি??

“” বলনা,বিয়ে করবি আমায়?””

রিদেয় কথায় তিল নড়ে উঠতেই ওকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

“” নড়িস না,প্লিজ! তোকে এভাবে জড়িয়ে নিতে আমার ১৭ টা বছর ওয়েট করতে হয়েছে। মনের ক্ষুধা আমাকে ঘুমুতে দেইনি। মনের জ্বালা যে পেটের জ্বালা থেকেও জাহারগুন বেশিরে,তিল! তাহলে তুই বল এই এতটুকুন জড়িয়ে ধরায় কি আমার মন ভরবে? আমার তো ইচ্ছে করছে এভাবেই আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেই!

১৭ বছর মানে? আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য উনার কেন ১৭ বছর ওয়েট করতে হবে? আমাকে যে এতো এতো শাস্তি দিলো,কষ্ট দিলো তাতে তো উনার ১ সেকেন্ডও ওয়েট করতে হয়নি। আর সামান্য জড়িয়ে নিতে ১৭ বছর ওয়েট?

রিদ তিলকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে সোজা করে দাড় করালো। ওর গাল দুটো নিজের হাতের তালু দিয়ে ছুয়ে বললো,

“” আমার উপর খুব বেশি রেগে আছিস?””
“”……””
“” এখনো চোখ বুঝে আছিস কেন? তাকাবি না আমার দিকে?””

তিল পিটপিট করে রিদের দিকে তাকিয়েই আবার সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেলে। ইশ! কি লজ্জাটাইনা লাগছে। উনি এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন আমার দিকে? উনার এই চাহনি যে আমাকে গিলে খেয়ে ফেলছে। উনি কি বুঝতে পারছেননা আমি কত লজ্জা পাচ্ছি?? আর এতো আদুরী গলায় কেন কথা বলছেন?? শরমে আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। যে মাটিতে রিদ ভাইয়া ছাড়া আর কোনো উপাদান নাই!

“” তুই লজ্জাও পাস? ওকে তুই যখন তাকাবিইনা,তাহলে আর কি করার? যা,আমার রুম থেকে বেরিয়ে যা। আমার কথা বলা শেষ!””
“” আমি কথা শুনবো লিদ ভাইয়া!””

তিলের বড় বড় চাহনি আর কথা শুনে রিদ শব্দ করে হেসে দেই। রিদের মনে হলো তার তিল এখনও ছোট আছে।

“” বউ হবি আমার?””

রিদের কথায় তিল উত্তর দিতে গেলেই ওর ঠোট চেপে ধরে রিদের শাহাদাৎ আংগুল।

“” না,তিল। এখননা। তুই এখন কোনো কথা বলবিনা। আমি যা বলছি তাই শোন। পরশু আমি ইউকে বেক করবো। তোর হাতে আজ নিয়ে দুইদিন সময় আছে। এই দুইদিন তুই আমাকে নিয়ে ভাববি,খুব গভীরে গিয়ে ভাববি। যেমনটা পরীক্ষার হলে তোর আর্থিক বিবরনীর সম্পদের সাথে দায় না মিললে তুই প্রথম থেকে খুটে খুটে ভুল বের করিস,তেমন করে ভাববি! ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত তোর সাথে আমার ঘটানো প্রত্যেকটা ঘটনাকে সাজিয়ে নিয়ে ভাববি। তোর এই রাগী,বদমেজাজী,স্বার্থপর লিদ ভাইয়াকে তুই চাস নাকি। শুধু চাইলে হবেনা,মন থেকে চাইতে হবে। যদি তোর মন বলে যে আমাকে বিয়ে করে আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবি,আমার দেওয়া অত্যাচারগুলোকে সহ্য করতে পারবি তাহলেই তুই আমাকে বিয়ে করতে পারবি। একটা কথা সবসময় মনে রাখবি,আমার ভালোবাসা আর অন্য কারো ভালোবাসা এক রকম হবেনা। হয়তো আমাকে বিয়ে করলে তুই অনেক বেশি কষ্ট পাবি,আদরের থেকে কষ্টটাকেই বেশি নিতে হবে। আর তুই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করিস,সে তোকে ভালোবাসার সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। যেটা আমি পারবোনা। কেন পারবোনা সেটা জিজ্ঞেস করবিনা। আমি বলতে পারবোনা।””

তিল কিছু বলার জন্য ঠোট নাড়াতেই রিদ ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

“” পরশুদিন আমি কখন যাবো তোকে বলবোনা। তুই এই দুইদিন যদি নিজের মনে আমাকে খুজে পাস তাহলে এয়ারপোর্টে গিয়ে আমাকে নিয়ে আসবি। আমি তোর জন্য ওয়েট করবো। আর যদি তোর মনে আমাকে না পাস তাহলে যাবিনা। তোর অনুপস্থিতেই আমি বুঝে নিবো তোর কি ডিসিশন,বুঝলি?””

রিদের কথায় তিলের চোখ পানিতে ভরে গেলো। করুন চাহনি দিতেই রিদ বলে উঠলো,

“” আমি জানি,তুই এয়ারপোর্টে কখনো যাসনি,চিনিসও না। কিন্তু এটা তোর ভালোবাসার পরীক্ষা হবে। এটা হবে আমার ভালেবাসায় তোর এন্ট্রির প্রথম শাস্তি। বুঝতে পারছিস এন্ট্রী নিতেই তোর এতো বড় শাস্তি পেতে হচ্ছে তাহলে সারাজীবন তোর উপর দিয়ে কি কি ঝড় যাবে? এগুলোও ও ভাবিস! আর হ্যা,আরেকটা কথা,এই দুইদিন তোকে যেন আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে না দেখি।””
“” কেন?””
“” তাহলে তুই মাথা দিয়ে না আবেগ দিয়ে ডিসিশন নিয়ে ফেলবি। আর আমি সেটা চাইনা। এখন আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যা,আমার অনেক গুছগাছ করতে হবে!””

তিল তখনো ঠাই দাড়িয়ে রইলো। চোখদুটো ঠেকে আছে,রিদের লোমশ বুকে। একটু আগেও সে এই বুকেরই উষ্ণ ছোয়া পেয়েছিলি এটা কি ভাবা যায়?! আমি কি সত্যিই ঐ বুকেই মাথা রেখেছিলাম? আর রিদ ভাইয়া কি তার এই হাতগুলো দিয়েই আমাকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিয়েছিলো?? আর ঐ ঠোট…

“” কি হলো? তোকে না আমি বেড়িয়ে যেতে বললাম? এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?””

রিদের তির্যক কন্ঠে তিলের সব গোলমেল লেগে গেলো। মাথাটা নিচু করে রুম থেকে বের হতেই আম্মুর সাথে দেখা,

“” ছেলের ডায়রীয়া ভালো হয়ে গেছে। তুই বললে ওরা এখনি গাড়ী নিয়ে বের হবে। আমি কি বলবো আসতে?””
“” আম্মু,আমাকে চিমটি দাও তো!””
“” মানে?””
“” উফ! মানে মানে করো নাতো,চিমটি দিতে বলছি,চিমটি দাও।””

তাসমিয়া বেগম চিমটি কাটতেই তিল চিৎকার করে উঠলো,

“” তারমানে আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি না?””

তিল ওর মাকে ধরে লাফাতে লাফাতে কয়েক দফা চুমু খেয়ে নাচতে শুরু করে দিলো। গানের সাথে তাল মিলিয়ে হাত পা নাচাতে নাচাতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে,

****I love u love u love u

My love***

তাসমিয়া বেগম হা করে মেয়ের নাচ দেখতে থাকলেন। এদিকে হ্যাংলা কুমারের মায়ের কল বেজেই যাচ্ছে তো বেজেই যাচ্ছে! সে দিকে উনার কোনো হুশ নেই!

~~
তিল আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঠোট দুটোকে বাকিয়ে বাকিয়ে দেখছে৷ হাত দিয়ে টেনে বড় করেও যখন কোনো চিহ্ন পেলো না ইচ্ছে হলো ছুড়ি দিয়ে কেটে ফেলতে। সেদিন যখন উনি রেগে চুমু খেলেন তখন তো ঠোট ফুলে কেলেংকারী হয়ে গিয়েছিলো। আর আজ যখন ভালোবেসে চুমু খেলো তখন একটু লাল ও হলোনা? এ কেমন চুমু হলো? কিন্তু আমার বান্ধুবী যে বলতো চুৃমু খেলে নাকি ঠোট লাল হয়ে যায়? তাহলে কি উনি ঠিক মতো চুমুও খাননি? এতো বড় দামড়া ছেলে হয়েছে অথচ এখনো চুমু খাওয়া শিখলোনা? সামান্য লালই যদি করতে না পারলো তাহলে কিসের চুমু হলো? ধ্যাত!

তিল রাগ আর অভিমান নিয়ে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়লো। এটা কোনো কথা? আমি এমন একজনকে বিয়ে করবো যে কিনা চুমুই খেতে পারেনা? তাহলে কি আমার আর ঠোট লাল হওয়া চুমু খাওয়া হবেনা??

তিল বিছানায় শুয়ে আছে,আজ দরজাটা খুলাই রেখেছে। একটু পরপর দরজার দিকে তাকাচ্ছে,এই বুঝি তার রিদ ভাইয়া আসলো। কিন্তু দেখতে দেখতে যখন চারটা বেজে গেলো তবুও তার রিদ ভাইয়ার দেখা মিললোনা তখন মনে পড়লো তাকে যে ভাবনায় ডুব দিতে হবে!

তিল তখন থেকে চোখ বন্ধ করে ছোটবেলার ঘটনার কথা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই কিছু মনে পড়ছেনা। বারবার শুধু রিদের সেই ভেজা বুকের উষ্ণ ছোয়ার কথা মনে পড়ছে।

“” তিল,মা! তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? কলেজে যাবিনা?””

আব্বুর পরম স্নেহের হাতটা কপালে ঠেকতেই তিল নড়ে ওঠে।

“” আজকে যেতে ইচ্ছে করছেনা,আব্বু!””

রহমত আলী মেয়ের গলায় আর কপালে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে বললেন,

“” জ্বর তো আসেনি,মা। তাহলে যাবিনা কেন? পেট ব্যথা?””

তিল নিজের মাথাটা বাবার কোলের উপর রেখে বললো,

“” না,বাবা,মনে অসুখ করেছে। কলেজে না গেলেই ভালো হয়ে যাবে।””
“” এটা আবার কেমন অসুখ রে,মা? যেটা কলেজে না গেলে ভালো হয়ে যায়?””
“” তুমি বুঝবেনা। আচ্ছা আব্বু,তুমি আম্মুকে কেন বিয়ে করলে?””
“” কেন বিয়ে করলাম মানে?””

তিল এবার শুয়া থেকে উঠে বাবার মুখোমুখি হয়ে বললো,

“” আমি বলতে চাইছি,তুমি আম্মুকেই কেন বিয়ে করলে? আম্মুর জায়গায় অন্য আম্মুকে কেন নয়?””

মেয়ের কথা রহমত আলী বুঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু অনেক ভেবেও কিছু বুঝে উঠতে না পারায় বললো,

“” আম্মুর জায়গায় অন্য আম্মু মানে?””
“” ধুর,তুৃমি কিছু বুঝোনা।””

তিল আবার কাথাটা জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।

~~
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এলো। কিন্তু রিদ ভাইয়ার বাইরে বের হওয়ার কোনো নাম গন্ধই নেই। এদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা সোফায় বসে থাকতে থাকতে তিলের কোমড় ধরে আসলো। আর কতক্ষন সে টিভি দেখবে? কেউ কি বুঝছেনা আমি টিভি না তাকে দেখার জন্য বসে আছি। আমাকে তো তার কাছে যেতে মানা করেছে তাই বলে সে কি একটু দেখা দিয়ে যেতো পারেনা? তাকে দেখার জন্য আমার রিদয়টা যে শুকিয়ে যাচ্ছে।

আকাশে সূর্য ডুকে চাঁদ উকি দিচ্ছে কিন্তু রিদের কোনো দেখা মেলেনি তিলের। সারাটা দিন রাত উনি রুমে করছেটা কি? রাতে তো খেতেও আসলোনা। উনি কি না খেয়েই রয়েছেন? উনি কি জানেন উনার জন্য আমার ও খাওয়া হলোনা? উনি ভালোবাসার নামে এ কোন শাস্তি দিচ্ছেন?

তিল আর সহ্য করতে পারলোনা। নিজের রুম ছেড়ে গুটিগুটি পায়ে রিদের রুমের কাছে যেতেই দরজাটা ঠাস করে লাগানোর শব্দ হলো। সেই শব্দটা যেন তিলের কানে না বুকের ভেতরে ছিদ্র করে অন্য পাশে ঢুকে গেলো। ছিদ্রটা এতো বড়ই হয়েছে যে রিদ ভাইয়া চাইলে সেখানটা গুহা বানিয়ে থাকতে পারে।

সারাটা রাত তিলের নির্ঘুমে কাটল সকালে ঘুমিয়ে পড়লো। হঠাৎ গাড়ীর হর্নে তিল লাফিয়ে উঠে। আজই তো রিদ ভাইয়া চলে যাবে বলেছে। তিল দৌড়ে রিদের রুমের কাছে যেতেই দরজা খুলা পেলো। ভেতরটাও ফাকা। তাহলে কি উনি সত্যি সত্যি???? তিল আর কিছু ভাবতে পারলোনা,মাথাটা ঝিম ধরে যাচ্ছে। চোখে ঝাপসা দেখছে। কিন্তু তাকে তো দুর্বল হলে চলবেনা। তার যে রিদ ভাইয়াকে চাই। একদম নিজের করে!

তিল পুরো এয়ারপোর্ট তন্ন তন্ন করে খুজছে। কিন্তু কোথাও নিজের রিদ ভাইয়াকে দেখতে পারছেনা। এদিকে তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে রাস্তার মধ্যে ছোটখাটো এক্সিডেন্টও হয়ে গেছে। পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সেদিকে তাকালে যে তাকে চলবে না যে করেই হোক তার রিদ ভাইয়াকে খুজে পেতেই হবে।

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ৯

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (৯)

তিল একরাশ মন খারাপ নিয়ে বাসার গেটে ঢুকে পড়লো। ধীর পায়ে কদম ফেলে ফেলে এগুতেই মেইন দরজা খুলা দেখতে পেলো। ভেতর থেকে বিভিন্ন রান্নাবান্নার সুবাসও পাচ্ছে তিল। তারমানে ডাক্তারসাহেব চলেই এসেছে? উনি কি কবুলও বলে ফেলেছে? নাকি আমার সামনে বলবে বলে ওয়েট করে আছে??

তিল মেইন দরজাটা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই তার চোখ স্থির হয়ে গেলো ড্রয়িং রুমে বসে থাকা মানুষদের দেখে। কাধ থেকে ব্যাগটা ঝপ করে নিচে পড়ে গেলো। তিল অবাক নয়নে সবার দিকে তাকিয়ে রইলো।

একটা সোফাতে তার আব্বু পা দুটো উচু করে সমান তালে বকে যাচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে। সাথে তার আম্মু,বড় আব্বু,বড় আম্মু দুগালে হাত দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে কান্না দেখছে। কিন্তু এখানে রিদানকে না পেয়ে চোখটা একটু ঘুরাতেই টিভির সামনে সোফাতে দেখতে পেলো। মাথার নিচে কুশানটা দিয়ে রেখে শুয়ে আছে। ডান পাটা বাম পায়ের হালকা ভাজ করা হাটুর উপর। টিভিতে গানের সাথে তাল মিলিয়ে পাও নাচাচ্ছে। তিল বুঝতে পারলোনা, আসলে কি হয়েছে? ভালো করে বুঝার জন্য জুতাসহ ড্রয়িং রুমে ঢুকতে নিলেই রিদ বলে উঠে,

“” তুই কি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছিস যে এভাবে আবর্জনা মাখা জুতা পায়ে রুমে ঢুকে যাচ্ছিস। তোর জন্য কি এই বাসায় দশ দশটা চাকরানী রাখবো? আমার বাবার কি টাকা বেশি হয়েছে নাকি তোর বাবার টাকা বেশি হয়েছে? যে এখন তোর জুতোর ময়লার পেছনে খরচ করতে হবে?””

রিদের কথায় তিল তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মনে হলো সারা শরীরে ফোসকা পড়ে যাচ্ছে সাথে সাথে ব্যথাও শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ এতো রাগ কেন চলে এলো সেটা বুঝার চেষ্টা না করেই নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো তিল। রিদের কথার অবাধ্য হয়ে জুতোসহ ঢুকে গেলো।

“” কি হয়েছে,আব্বু? তুৃমি এমন বাচ্চাদের মতো কান্না করছো কেন?””

তিলের কথায় ওর বাবা রহমত আলী সোফা ছেড়ে ওঠে দাড়িয়ে বললো,

“” সরি রে,মা। আমি তোর বিয়েটা দিতে পারলাম না। তোকে সুইজারল্যান্ড পাঠাতে পারলাম না। আমাকে ক্ষমা করে দিস।””
“” বিয়ে দিতে পারলেনা মানে? ডাক্তারসাহেব আসেনি?””
“” এসেছিলো। কিন্তু এসেই আমার হাত পা ধরে বলতে শুরু করলো তোকে নাকি বিয়ে করতে পারবেনা। অথচ তুই যাওয়ার পর আমি যখন ফোন করে বিয়ে করার কথা বললাম ও তো খুশিতে ফোনেই আমাকে আব্বা আব্বা ডাকা শুরু করে দিলো। এমনভাবে ডাকলো যেন আমার নিজের ছেলে!””
“” তাহলে হঠাৎ বিয়ে করবেনা বললো কেন? আর তোমার হাত পা ই ধরলো কেন? এই তার ডাক্তারির নমুনা? আমাকে হাতে পায়ে ধরে অপমান করা? ওর ডাক্তারি আমি ছুটিয়ে ছাড়বো। মানহানির মামলা করবো। জেলে বসিয়ে বাসি রুটি খেয়ে যখন পেটে ডায়রিয়া হবে তখন নিজেই নিজের চিকিৎসা করবে!””

তিল বকতে বকতে নিজের রুমে চলে এলো। ফ্যানটা ফুল পাওয়ারে ছেড়ে দিয়েও ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে মাথায় বাতাস করতে লাগলো। এতো বেশি গরম লাগছে কেন আমার? মনে হচ্ছে গরমে মাথাটা পুড়ে যাচ্ছে! চুলগুলো খুলে দিয়ে মাথার কলেজের ড্রেসের সাথে সেটে দেওয়া স্কার্পটা খুলে নিলো। এপ্রোনের বোতামগুলোও আলগা করে নিলো।

“” একি! তুই এপ্রোনের নিচে জামা পড়িস না? এমন পাতলা সেমিজ পড়ে কলেজে যাস? তোর লজ্জা লাগেনা? সব তো দেখাই যাচ্ছে!””

রিদের কন্ঠে তিল নিজের বুকের দিকে তাকাতেই বুঝতে পেলো বোতাম খোলার ফলে বুকের পাশটাতে এপ্রোনটা কিছুটা সরে গেছে। কিন্তু সেতো কিছু দেখতে পাচ্ছেনা!

“” তোর মতো কানা রা কিছু দেখতে পাবেনা। আমি তো এতো দুর থেকেও সব দেখতে পারছি। আর তুই নিজের জিনিস নিজেই দেখতে পারছিস না?””

তিল তাড়াতাড়ি এপ্রোনের বোতাম লাগিয়ে রিদের দিকে সরু নয়নে তাকিয়ে রইলো। দরজার কাছটাতেই দাড়িয়ে আছে। ভেতরেও ঢুকছেনা বাইরেও যাচ্ছেনা। ইশ! রুমের দরজাটা যে কেন লাগালাম না। আবার কোনো ভয়ংকর শাস্তির মুখোমুখি হবো নাতো? তিল ওয়াশরুমে ঢুকার কথা ভাবতেই মনে পড়ে গেলো। উনি চাইলেতো বাইরে দিয়েও আটকে দিতে পারে। তাহলে? আমি কি উনাকে বের হয়ে যেতে বলবো? আমি বললেই কি উনি শুনবেন?

তিল কিছু বলার আগেই রিদ টপটপ করে রুমে ঢুকে গেলো। বিছানায় বসেই বললো,

“” এতো জোরে ফ্যান ছেড়েছিস কেন? আমার তো শীত করছে। তোর কি একাই এতো গরম লাগে যে বাংলাদেশের সব বিদুৎ তুই একাই ভোগ করবি? কলেজে কি পড়তে যাস নাকি কিভাবে সম্পদের অপচয় করতে হয় তাই শিখতে যাস?””

রিদ তিলের দিকে হাত বাড়াতেই তিল দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমি আর আপনার মুখোমুখি হতে চাইনা। আপনার দেওয়া কষ্টের স্বাদ নিতে চাইনা। আমি কষ্টের সাগরে ঢুকে পরিপূর্ণ হয়ে গেছি রিদ ভাইয়া। আমি জানি ডাক্তারসাহেবের পায়ে ধরার পেছনে আপনার হাত আছে। কিন্তু আমিও এতো অল্পতেই হাল ছাড়বোনা। নৌকার বৈঠাটা শক্ত করেই ধরবো।

“” বড় আম্মু,তোমার বোনের একটা ছেলে আছেনা? যেটা আমাদের এখানে এসে আমার দিকে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকতো? শুনলাম সে নাকি এবার বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে? জানো তো আমার অনেক শখ একটা বিসিএস ক্যাডারকে বিয়ে করার। অমন পরিশ্রমী স্বামী পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার! দেখি উনার নাম্বারটা দাও তো!””
“” তুই,হুট করে এমন বিয়ে পাগলী হলি কিভাবে? তুই তো এমন মেয়ে ছিলিনা? আজকাল দেখি আমাদের কথার অবাধ্যও হয়েছিস। কি হয়েছে বলতো আমাকে!””
“” রিমাটা বিয়ে করে ফেলছে তো তাই আমারও ভালো লাগছেনা। তাই ঠিক করেছি আমিও ওর মতো বিয়ে করে বরের সাথে থাকবো। কই নাম্বারটা দাও!””
“” তোর নাম্বার নিতে হবেনা। কি বেশরম হয়ে গেছিস! নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলে বেড়াচ্ছিস। যাতো! এখান থেকে,আমি ওকে কল দিয়ে বলে দিবো সন্ধ্যায় আসতে!””
“” শুধু আসলে হবেনা। আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে হবে!””
“” উফ! আচ্ছা নিয়েই যাবে হয়ছে? আমি সব সামলে নিচ্ছি। এখন আমাকে ঘুমুতে দে।””

~~
তিল নিজের প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস নিয়ে রুমের দরজা আটকে বসে আছে। বলা তো য়ায় না কখন আবার রিদ ভাইয়া এসে আমার গলা টিপে ধরে। শেষে দেখা যাবে আমাকে বিয়ে করার আগেই আমার বর বিধবা হয়ে গেছে! তার থেকে ভালো এভাবে বন্দী হয়েই বসে থাকি। যতক্ষননা হ্যাংলা কুমার আসছে ততক্ষন এভাবেই রুমে বসে থাকবো। আজ তো আমি বিয়ে করেই ছাড়বো।

তিল একটু পর পর ঘড়ি দেখছে। কিন্তু কিছুতেই সময় যাচ্ছেনা। আজ কি সময়েরাও তার সাথে এমন অবহেলা করছে? সবাই এমন স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে কেন? পরীক্ষায় বসলে তো পলকে পলকে ঘন্টার কাটা নড়ে ওঠে।

তিলের অপেক্ষা শেষ করে হ্যাংলাকুমার সবাইকে নিয়ে হাজির। তাসমিয়া বেগমের ডাকে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে তিল। ড্রয়িংরুমে সকলের হাসিঠাট্টা দেখেই বুঝতে পারলো সবাই বিয়ে তে রাজী। সাথে পান্জাবী পড়া এক লম্বা দাড়ীওয়ালাকে দেখে বুঝতে পারলো এটাই কাজীসাহেব। উনার মাধ্যমেই তাকে কবুল বলতে হবে। আশেপাশে কোথাও রিদ ভাইয়াকে না দেখে তিল সস্থির নিশ্বাস ফেলে হ্যাংলা সাহেবের গা ঘেসে বসে পড়ে। কাজীকে উদ্দশ্য করে বলে উঠলো,

“” কাজী আংকেল,বিয়ে পড়ান তাড়াতাড়ি। আমি কি কবুল বলবো?””

মেয়ের এমন কথায় লজ্জায় মরে যাচ্ছেন তাসমিয়া বেগম। আচল দিয়ে মুখ টিপে তিলকে বলে উঠলো,

“” কি করছিস,তুই? গলায় ওড়নাটা না জড়িয়েই চলে এলি? এভাবে কেউ বিয়ে করে?””
“” বিয়ে করতে ওড়নার কি দরকার,আম্মু? কবুল তো আমি বলবো,ওড়না না। তাহলে আমি থাকলেই তো হলো তাইনা?””

তিল এমন ঘেষে বসায় হ্যাংলা কুমার লজ্জায় লাল হয়ে একটু সরে বসতেই তিল চোখ রাঙিয়ে উঠলো,

“” ঐদিকে চাপলেন কেন? আমার গা থেকে কি গন্ধ বের হচ্ছে? হলে হবে। আপনাকে এই গন্ধ কনেকেই বিয়ে করতে হবে। এদিকে চেপে বসুন বলছি। নাহলে কিন্তু আমি আপনার কোলে গিয়ে বসে পড়বো!””

তিলের এমন ধমকে হ্যাংলাকুমার লজ্জায় লাল হয়ে তিলের কাছে চেপে বসলো।

“” কি হলো বিয়ে পড়ান!””

কাজী সাহেব তার কাজ শেষ করে তিলকে কবুল বলতে বললো। তিল যেইনা কবুল বলবে অমনি হ্যাংলা কুমার লাফিয়ে উঠে বললো,

“” গন্ধকনে,I need a bathroom,imidiatly! Where is bathroom?””

তিল কবুল বলার বদলে বলে উঠলো,

“” bath room,bathroom,bathroom!!!””

তিলের বলে দেওয়ার অপেক্ষা না করেই হ্যাংলাকুমার নিজের প্যান্টটা চেপে ধরে নিজেই বাথরুম খুজা শুরু করে দিলো।

পরপর ১১ বার বাথরুমে যাওয়া আসা করতে করতে হ্যাংলাকুমার চিৎপটাং হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

“” I need hospital. I need hospital. I need hospital!!!””

তিলের মতো সবাই আশ্চর্য হয়ে হ্যাংলাকুমারের দিকে তাকিয়ে রইলো। তিল অস্পষ্ট স্বরে কেদে উঠে বললো,

“” আমার বিয়ে, আমার বিয়ে,আমার বিয়ে!!!””

তিল সোফা ছেড়ে উঠে হাটা ধরলো রিদের রুমের দিকে। হাতদুটো মুঠো করে, শক্ত করে নিয়ে নিজের রাগটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আমি জানি এই সবের পেছনে আপনিই আছেন রিদ ভাইয়া। আপনি কখনোই আমার খুশি দেখতে পারেননা!

তিল রিদের রুমের দরজার কাছে আসতেই রিদ বলে উঠলো,

“” আমি মাত্রই সাওয়ার নিয়ে নিজেকে পবিত্র করেছি,আমি চাইনা কোনো গন্ধকনের গন্ধ আমার রুমে ছড়িয়ে পড়ুক আর আমাকে অপবিত্র করে ফেলুক। সো এখন তোর ভেতরে আসা নিষেধ!””

রিদের কথায় তিলের রাগ হাতের মুঠো থেকে মাথায় চড়ে বসলো। ঠাস করে দরজা খুলে রুমে ঢুকেই তিলের মুখটা হা হয়ে গেলো।

রিদ ভাইয়াকে এমন টাওয়াল পরিহিতভাবে কখনো দেখেনি তিল। অনলি টাওয়াল তো দুরে থাক কখনো খালি শরীরে দেখেছে নাকি সেটাও মনে পড়ছেনা। অমন খালি শরীরে টাওয়ালের সাথে রিদের ভেজাচুলগুলোকে তিলের কাছে লোভনীয় কোন আইসক্রীমের মতো লাগলো। যার নিচের দিকে পাতলা কাগজে মোড়ানো থাকে আর উপরটাতে মিল্ক আর সট্রভেরি মেশানো জমাটবাধা আইস। যার উপরে ছোট ছেট চকলেটের টুকরো ছিটিয়ে দেওয়া রয়েছে। রিদানের ভেজা চুল থেকে টপাটপ পানির ফোটাকে মনে হচ্ছে চকলেটের টুকরোগুলো গলে গলে নিচে পড়ে যাচ্ছে। তিলের ইচ্ছে হলো এমন আইসক্রিম সে এক কামড়ে গিলে ফেলতে না পারলে তার জীবনটাই বৃথা!

“” মানা করার পরও তুই আমাকে অপবিত্র করে দিলি,তিল? কতদিন ধরে গোসল করিস না যে তুই এমন তিল থেকে গন্ধকনে হয়ে গেলি?””

রিদের ঝাঝালো কথায় তিলের হুশ ফিরে আসে। মুখটাকে বন্ধ করে রিদের দিকে এগুতে এগুতে ঝাড়ি দিতে থাকলো,

“” আপনাল সমস্যা কি হুম? ছোটবেলা থেকেই আমাল পেছনে পলেছেন কেন? আমি আপনাল কোন চুলাই আগুন দিয়েছি যে আপনাল লান্না পুলে গেলো? আপনাল অকালনে দেওয়া প্রত্যেকটা আঘাতকে আমি যখন ভালোবাসায় লুপান্তল কলতে শিখলাম তখন তো আপনি ইউকে তে বিদেশীনীদেলমনিয়ে বিজি। আপনাল কি মনে হয় আমি কিছুই জানিনা? লিমা আমাকে সব বলেছে। দেখাতেও চেয়েছে কিন্তু আমি ইচ্ছে কলেই দেখিনি। মনে মনে লাগ কলেছি আপনাল সাথে। আমাল জন্য আপনি আপনাল ফ্যামিলি ছেলে এতো বছল ধলে এতো দুলে থাকেন দেখে আমি প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে অপলাধী হিসেবে ভুগেছি। আপনাকে দেখাল জন্য ক্ষমা চাওয়াল জন্য বিছানায় ঘুমেল ঘোলেও ছটফট কলেছি। এক সময় মনে হলো হয়তো আপনি আমাকে ভালোবাসতেন তাই এমন পাগলামী কলেছেন তাই আপনাল কাছে ক্ষমা চাওয়া বাদ দিয়ে ভালোবাসা দিতে চাইলাম কিন্তু আপনি???””

তিলের কথার তালে তালে পাটাও সামনে এগুচ্ছে আর রিদ পেছাতে পেছাতে বললো,

“” আমি কি?””
“” আপনি জানেন আমাল ছোটবেলা থেকে কত সাজগুজের প্রতি আকর্ষন ছিলো? কিন্তু যখন দেখলাম এই সাজগোজ আমাল কাল হয়ে যাচ্ছে,হাজালটা ছেলে আমাকে তাদেল লানী হিসেবে পেতে চাচ্ছে তখনি আমি এটাও ছেলে দিয়েছি। আমাল ক্লাস টিচাল মাহিল স্যার আমাল ক্রাশ ছিলো। আল উনিই যখন আমাকে বিয়ে কলাল প্লস্তাব দেয় আপনাল জন্য সেটাও ছুলে ফেলে দিয়েছি। গান,বাজনা,হাসি ঠাট্টা,ঘুলাঘুলি,বন্ধুবান্ধব সবকিছুতে ফেলে দিয়ে নিজেল লুমটাতে নিজেকে বন্দী কলে আপনাল অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম। অথচ আপনি এসে আমাল সবকিছুকে টিস্যুল মতো নাক মুছে ফেলে দিলেন?? তাতেও আপনাল শান্তি হয়নি? সেই ছোটবেলাল স্মিলিতিগুলোকে পুনলায় জাগ্লত কললেন আল কাল? কাল আমি কি কলেছিলাম? আমাকে কেন থাপ্পল মাললেন? আপনাল দেওয়া এতো কঠিন কঠিন আঘাতেল থেকেও কালকেল থাপ্পলটা হাজালগুন বেশি ব্যথা দিয়েছে আমাকে। আমার লিদয়টা চুলমাল কলে দিয়েছে। আল আজ যখন আপনাকে ছেলে দুলে যেতে চাচ্ছি তখন আপনি কেন এমন কলছেন। কি চান আপনি? আমি মলে যাই? কিভাবে মলবো বলুন,বিষ খেয়ে নাকি গলায় লশশশশশ….””

তিল কথা শেষ করার আগেই ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো রিদ! তিলের কোমড়টা ডানহাতে পেচিয়ে নিজের খোলা বুকের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।

“”বিয়ে করবি আমায়,তিল?

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ৯

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (৯)

তিল একরাশ মন খারাপ নিয়ে বাসার গেটে ঢুকে পড়লো। ধীর পায়ে কদম ফেলে ফেলে এগুতেই মেইন দরজা খুলা দেখতে পেলো। ভেতর থেকে বিভিন্ন রান্নাবান্নার সুবাসও পাচ্ছে তিল। তারমানে ডাক্তারসাহেব চলেই এসেছে? উনি কি কবুলও বলে ফেলেছে? নাকি আমার সামনে বলবে বলে ওয়েট করে আছে??

তিল মেইন দরজাটা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই তার চোখ স্থির হয়ে গেলো ড্রয়িং রুমে বসে থাকা মানুষদের দেখে। কাধ থেকে ব্যাগটা ঝপ করে নিচে পড়ে গেলো। তিল অবাক নয়নে সবার দিকে তাকিয়ে রইলো।

একটা সোফাতে তার আব্বু পা দুটো উচু করে সমান তালে বকে যাচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে। সাথে তার আম্মু,বড় আব্বু,বড় আম্মু দুগালে হাত দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে কান্না দেখছে। কিন্তু এখানে রিদানকে না পেয়ে চোখটা একটু ঘুরাতেই টিভির সামনে সোফাতে দেখতে পেলো। মাথার নিচে কুশানটা দিয়ে রেখে শুয়ে আছে। ডান পাটা বাম পায়ের হালকা ভাজ করা হাটুর উপর। টিভিতে গানের সাথে তাল মিলিয়ে পাও নাচাচ্ছে। তিল বুঝতে পারলোনা, আসলে কি হয়েছে? ভালো করে বুঝার জন্য জুতাসহ ড্রয়িং রুমে ঢুকতে নিলেই রিদ বলে উঠে,

“” তুই কি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছিস যে এভাবে আবর্জনা মাখা জুতা পায়ে রুমে ঢুকে যাচ্ছিস। তোর জন্য কি এই বাসায় দশ দশটা চাকরানী রাখবো? আমার বাবার কি টাকা বেশি হয়েছে নাকি তোর বাবার টাকা বেশি হয়েছে? যে এখন তোর জুতোর ময়লার পেছনে খরচ করতে হবে?””

রিদের কথায় তিল তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মনে হলো সারা শরীরে ফোসকা পড়ে যাচ্ছে সাথে সাথে ব্যথাও শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ এতো রাগ কেন চলে এলো সেটা বুঝার চেষ্টা না করেই নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো তিল। রিদের কথার অবাধ্য হয়ে জুতোসহ ঢুকে গেলো।

“” কি হয়েছে,আব্বু? তুৃমি এমন বাচ্চাদের মতো কান্না করছো কেন?””

তিলের কথায় ওর বাবা রহমত আলী সোফা ছেড়ে ওঠে দাড়িয়ে বললো,

“” সরি রে,মা। আমি তোর বিয়েটা দিতে পারলাম না। তোকে সুইজারল্যান্ড পাঠাতে পারলাম না। আমাকে ক্ষমা করে দিস।””
“” বিয়ে দিতে পারলেনা মানে? ডাক্তারসাহেব আসেনি?””
“” এসেছিলো। কিন্তু এসেই আমার হাত পা ধরে বলতে শুরু করলো তোকে নাকি বিয়ে করতে পারবেনা। অথচ তুই যাওয়ার পর আমি যখন ফোন করে বিয়ে করার কথা বললাম ও তো খুশিতে ফোনেই আমাকে আব্বা আব্বা ডাকা শুরু করে দিলো। এমনভাবে ডাকলো যেন আমার নিজের ছেলে!””
“” তাহলে হঠাৎ বিয়ে করবেনা বললো কেন? আর তোমার হাত পা ই ধরলো কেন? এই তার ডাক্তারির নমুনা? আমাকে হাতে পায়ে ধরে অপমান করা? ওর ডাক্তারি আমি ছুটিয়ে ছাড়বো। মানহানির মামলা করবো। জেলে বসিয়ে বাসি রুটি খেয়ে যখন পেটে ডায়রিয়া হবে তখন নিজেই নিজের চিকিৎসা করবে!””

তিল বকতে বকতে নিজের রুমে চলে এলো। ফ্যানটা ফুল পাওয়ারে ছেড়ে দিয়েও ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে মাথায় বাতাস করতে লাগলো। এতো বেশি গরম লাগছে কেন আমার? মনে হচ্ছে গরমে মাথাটা পুড়ে যাচ্ছে! চুলগুলো খুলে দিয়ে মাথার কলেজের ড্রেসের সাথে সেটে দেওয়া স্কার্পটা খুলে নিলো। এপ্রোনের বোতামগুলোও আলগা করে নিলো।

“” একি! তুই এপ্রোনের নিচে জামা পড়িস না? এমন পাতলা সেমিজ পড়ে কলেজে যাস? তোর লজ্জা লাগেনা? সব তো দেখাই যাচ্ছে!””

রিদের কন্ঠে তিল নিজের বুকের দিকে তাকাতেই বুঝতে পেলো বোতাম খোলার ফলে বুকের পাশটাতে এপ্রোনটা কিছুটা সরে গেছে। কিন্তু সেতো কিছু দেখতে পাচ্ছেনা!

“” তোর মতো কানা রা কিছু দেখতে পাবেনা। আমি তো এতো দুর থেকেও সব দেখতে পারছি। আর তুই নিজের জিনিস নিজেই দেখতে পারছিস না?””

তিল তাড়াতাড়ি এপ্রোনের বোতাম লাগিয়ে রিদের দিকে সরু নয়নে তাকিয়ে রইলো। দরজার কাছটাতেই দাড়িয়ে আছে। ভেতরেও ঢুকছেনা বাইরেও যাচ্ছেনা। ইশ! রুমের দরজাটা যে কেন লাগালাম না। আবার কোনো ভয়ংকর শাস্তির মুখোমুখি হবো নাতো? তিল ওয়াশরুমে ঢুকার কথা ভাবতেই মনে পড়ে গেলো। উনি চাইলেতো বাইরে দিয়েও আটকে দিতে পারে। তাহলে? আমি কি উনাকে বের হয়ে যেতে বলবো? আমি বললেই কি উনি শুনবেন?

তিল কিছু বলার আগেই রিদ টপটপ করে রুমে ঢুকে গেলো। বিছানায় বসেই বললো,

“” এতো জোরে ফ্যান ছেড়েছিস কেন? আমার তো শীত করছে। তোর কি একাই এতো গরম লাগে যে বাংলাদেশের সব বিদুৎ তুই একাই ভোগ করবি? কলেজে কি পড়তে যাস নাকি কিভাবে সম্পদের অপচয় করতে হয় তাই শিখতে যাস?””

রিদ তিলের দিকে হাত বাড়াতেই তিল দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমি আর আপনার মুখোমুখি হতে চাইনা। আপনার দেওয়া কষ্টের স্বাদ নিতে চাইনা। আমি কষ্টের সাগরে ঢুকে পরিপূর্ণ হয়ে গেছি রিদ ভাইয়া। আমি জানি ডাক্তারসাহেবের পায়ে ধরার পেছনে আপনার হাত আছে। কিন্তু আমিও এতো অল্পতেই হাল ছাড়বোনা। নৌকার বৈঠাটা শক্ত করেই ধরবো।

“” বড় আম্মু,তোমার বোনের একটা ছেলে আছেনা? যেটা আমাদের এখানে এসে আমার দিকে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকতো? শুনলাম সে নাকি এবার বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে? জানো তো আমার অনেক শখ একটা বিসিএস ক্যাডারকে বিয়ে করার। অমন পরিশ্রমী স্বামী পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার! দেখি উনার নাম্বারটা দাও তো!””
“” তুই,হুট করে এমন বিয়ে পাগলী হলি কিভাবে? তুই তো এমন মেয়ে ছিলিনা? আজকাল দেখি আমাদের কথার অবাধ্যও হয়েছিস। কি হয়েছে বলতো আমাকে!””
“” রিমাটা বিয়ে করে ফেলছে তো তাই আমারও ভালো লাগছেনা। তাই ঠিক করেছি আমিও ওর মতো বিয়ে করে বরের সাথে থাকবো। কই নাম্বারটা দাও!””
“” তোর নাম্বার নিতে হবেনা। কি বেশরম হয়ে গেছিস! নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলে বেড়াচ্ছিস। যাতো! এখান থেকে,আমি ওকে কল দিয়ে বলে দিবো সন্ধ্যায় আসতে!””
“” শুধু আসলে হবেনা। আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে হবে!””
“” উফ! আচ্ছা নিয়েই যাবে হয়ছে? আমি সব সামলে নিচ্ছি। এখন আমাকে ঘুমুতে দে।””

~~
তিল নিজের প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস নিয়ে রুমের দরজা আটকে বসে আছে। বলা তো য়ায় না কখন আবার রিদ ভাইয়া এসে আমার গলা টিপে ধরে। শেষে দেখা যাবে আমাকে বিয়ে করার আগেই আমার বর বিধবা হয়ে গেছে! তার থেকে ভালো এভাবে বন্দী হয়েই বসে থাকি। যতক্ষননা হ্যাংলা কুমার আসছে ততক্ষন এভাবেই রুমে বসে থাকবো। আজ তো আমি বিয়ে করেই ছাড়বো।

তিল একটু পর পর ঘড়ি দেখছে। কিন্তু কিছুতেই সময় যাচ্ছেনা। আজ কি সময়েরাও তার সাথে এমন অবহেলা করছে? সবাই এমন স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে কেন? পরীক্ষায় বসলে তো পলকে পলকে ঘন্টার কাটা নড়ে ওঠে।

তিলের অপেক্ষা শেষ করে হ্যাংলাকুমার সবাইকে নিয়ে হাজির। তাসমিয়া বেগমের ডাকে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে তিল। ড্রয়িংরুমে সকলের হাসিঠাট্টা দেখেই বুঝতে পারলো সবাই বিয়ে তে রাজী। সাথে পান্জাবী পড়া এক লম্বা দাড়ীওয়ালাকে দেখে বুঝতে পারলো এটাই কাজীসাহেব। উনার মাধ্যমেই তাকে কবুল বলতে হবে। আশেপাশে কোথাও রিদ ভাইয়াকে না দেখে তিল সস্থির নিশ্বাস ফেলে হ্যাংলা সাহেবের গা ঘেসে বসে পড়ে। কাজীকে উদ্দশ্য করে বলে উঠলো,

“” কাজী আংকেল,বিয়ে পড়ান তাড়াতাড়ি। আমি কি কবুল বলবো?””

মেয়ের এমন কথায় লজ্জায় মরে যাচ্ছেন তাসমিয়া বেগম। আচল দিয়ে মুখ টিপে তিলকে বলে উঠলো,

“” কি করছিস,তুই? গলায় ওড়নাটা না জড়িয়েই চলে এলি? এভাবে কেউ বিয়ে করে?””
“” বিয়ে করতে ওড়নার কি দরকার,আম্মু? কবুল তো আমি বলবো,ওড়না না। তাহলে আমি থাকলেই তো হলো তাইনা?””

তিল এমন ঘেষে বসায় হ্যাংলা কুমার লজ্জায় লাল হয়ে একটু সরে বসতেই তিল চোখ রাঙিয়ে উঠলো,

“” ঐদিকে চাপলেন কেন? আমার গা থেকে কি গন্ধ বের হচ্ছে? হলে হবে। আপনাকে এই গন্ধ কনেকেই বিয়ে করতে হবে। এদিকে চেপে বসুন বলছি। নাহলে কিন্তু আমি আপনার কোলে গিয়ে বসে পড়বো!””

তিলের এমন ধমকে হ্যাংলাকুমার লজ্জায় লাল হয়ে তিলের কাছে চেপে বসলো।

“” কি হলো বিয়ে পড়ান!””

কাজী সাহেব তার কাজ শেষ করে তিলকে কবুল বলতে বললো। তিল যেইনা কবুল বলবে অমনি হ্যাংলা কুমার লাফিয়ে উঠে বললো,

“” গন্ধকনে,I need a bathroom,imidiatly! Where is bathroom?””

তিল কবুল বলার বদলে বলে উঠলো,

“” bath room,bathroom,bathroom!!!””

তিলের বলে দেওয়ার অপেক্ষা না করেই হ্যাংলাকুমার নিজের প্যান্টটা চেপে ধরে নিজেই বাথরুম খুজা শুরু করে দিলো।

পরপর ১১ বার বাথরুমে যাওয়া আসা করতে করতে হ্যাংলাকুমার চিৎপটাং হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

“” I need hospital. I need hospital. I need hospital!!!””

তিলের মতো সবাই আশ্চর্য হয়ে হ্যাংলাকুমারের দিকে তাকিয়ে রইলো। তিল অস্পষ্ট স্বরে কেদে উঠে বললো,

“” আমার বিয়ে, আমার বিয়ে,আমার বিয়ে!!!””

তিল সোফা ছেড়ে উঠে হাটা ধরলো রিদের রুমের দিকে। হাতদুটো মুঠো করে, শক্ত করে নিয়ে নিজের রাগটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আমি জানি এই সবের পেছনে আপনিই আছেন রিদ ভাইয়া। আপনি কখনোই আমার খুশি দেখতে পারেননা!

তিল রিদের রুমের দরজার কাছে আসতেই রিদ বলে উঠলো,

“” আমি মাত্রই সাওয়ার নিয়ে নিজেকে পবিত্র করেছি,আমি চাইনা কোনো গন্ধকনের গন্ধ আমার রুমে ছড়িয়ে পড়ুক আর আমাকে অপবিত্র করে ফেলুক। সো এখন তোর ভেতরে আসা নিষেধ!””

রিদের কথায় তিলের রাগ হাতের মুঠো থেকে মাথায় চড়ে বসলো। ঠাস করে দরজা খুলে রুমে ঢুকেই তিলের মুখটা হা হয়ে গেলো।

রিদ ভাইয়াকে এমন টাওয়াল পরিহিতভাবে কখনো দেখেনি তিল। অনলি টাওয়াল তো দুরে থাক কখনো খালি শরীরে দেখেছে নাকি সেটাও মনে পড়ছেনা। অমন খালি শরীরে টাওয়ালের সাথে রিদের ভেজাচুলগুলোকে তিলের কাছে লোভনীয় কোন আইসক্রীমের মতো লাগলো। যার নিচের দিকে পাতলা কাগজে মোড়ানো থাকে আর উপরটাতে মিল্ক আর সট্রভেরি মেশানো জমাটবাধা আইস। যার উপরে ছোট ছেট চকলেটের টুকরো ছিটিয়ে দেওয়া রয়েছে। রিদানের ভেজা চুল থেকে টপাটপ পানির ফোটাকে মনে হচ্ছে চকলেটের টুকরোগুলো গলে গলে নিচে পড়ে যাচ্ছে। তিলের ইচ্ছে হলো এমন আইসক্রিম সে এক কামড়ে গিলে ফেলতে না পারলে তার জীবনটাই বৃথা!

“” মানা করার পরও তুই আমাকে অপবিত্র করে দিলি,তিল? কতদিন ধরে গোসল করিস না যে তুই এমন তিল থেকে গন্ধকনে হয়ে গেলি?””

রিদের ঝাঝালো কথায় তিলের হুশ ফিরে আসে। মুখটাকে বন্ধ করে রিদের দিকে এগুতে এগুতে ঝাড়ি দিতে থাকলো,

“” আপনাল সমস্যা কি হুম? ছোটবেলা থেকেই আমাল পেছনে পলেছেন কেন? আমি আপনাল কোন চুলাই আগুন দিয়েছি যে আপনাল লান্না পুলে গেলো? আপনাল অকালনে দেওয়া প্রত্যেকটা আঘাতকে আমি যখন ভালোবাসায় লুপান্তল কলতে শিখলাম তখন তো আপনি ইউকে তে বিদেশীনীদেলমনিয়ে বিজি। আপনাল কি মনে হয় আমি কিছুই জানিনা? লিমা আমাকে সব বলেছে। দেখাতেও চেয়েছে কিন্তু আমি ইচ্ছে কলেই দেখিনি। মনে মনে লাগ কলেছি আপনাল সাথে। আমাল জন্য আপনি আপনাল ফ্যামিলি ছেলে এতো বছল ধলে এতো দুলে থাকেন দেখে আমি প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে অপলাধী হিসেবে ভুগেছি। আপনাকে দেখাল জন্য ক্ষমা চাওয়াল জন্য বিছানায় ঘুমেল ঘোলেও ছটফট কলেছি। এক সময় মনে হলো হয়তো আপনি আমাকে ভালোবাসতেন তাই এমন পাগলামী কলেছেন তাই আপনাল কাছে ক্ষমা চাওয়া বাদ দিয়ে ভালোবাসা দিতে চাইলাম কিন্তু আপনি???””

তিলের কথার তালে তালে পাটাও সামনে এগুচ্ছে আর রিদ পেছাতে পেছাতে বললো,

“” আমি কি?””
“” আপনি জানেন আমাল ছোটবেলা থেকে কত সাজগুজের প্রতি আকর্ষন ছিলো? কিন্তু যখন দেখলাম এই সাজগোজ আমাল কাল হয়ে যাচ্ছে,হাজালটা ছেলে আমাকে তাদেল লানী হিসেবে পেতে চাচ্ছে তখনি আমি এটাও ছেলে দিয়েছি। আমাল ক্লাস টিচাল মাহিল স্যার আমাল ক্রাশ ছিলো। আল উনিই যখন আমাকে বিয়ে কলাল প্লস্তাব দেয় আপনাল জন্য সেটাও ছুলে ফেলে দিয়েছি। গান,বাজনা,হাসি ঠাট্টা,ঘুলাঘুলি,বন্ধুবান্ধব সবকিছুতে ফেলে দিয়ে নিজেল লুমটাতে নিজেকে বন্দী কলে আপনাল অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম। অথচ আপনি এসে আমাল সবকিছুকে টিস্যুল মতো নাক মুছে ফেলে দিলেন?? তাতেও আপনাল শান্তি হয়নি? সেই ছোটবেলাল স্মিলিতিগুলোকে পুনলায় জাগ্লত কললেন আল কাল? কাল আমি কি কলেছিলাম? আমাকে কেন থাপ্পল মাললেন? আপনাল দেওয়া এতো কঠিন কঠিন আঘাতেল থেকেও কালকেল থাপ্পলটা হাজালগুন বেশি ব্যথা দিয়েছে আমাকে। আমার লিদয়টা চুলমাল কলে দিয়েছে। আল আজ যখন আপনাকে ছেলে দুলে যেতে চাচ্ছি তখন আপনি কেন এমন কলছেন। কি চান আপনি? আমি মলে যাই? কিভাবে মলবো বলুন,বিষ খেয়ে নাকি গলায় লশশশশশ….””

তিল কথা শেষ করার আগেই ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো রিদ! তিলের কোমড়টা ডানহাতে পেচিয়ে নিজের খোলা বুকের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।

“”বিয়ে করবি আমায়,তিল?

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ৮

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (৮)

তিল সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসলো। রিদ ভাইয়া এগুলো কি বললো? বর বউ? আমি তো রিদ ভাইয়া আর আমাকেই আকঁছিলাম,তাহলে কি রিদ ভাইয়া বর আর আমি….তিল নিজের হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো। আমি রিদভাইয়ার বউউউ???

~~
“”will you marry me,???””

তিল মুখ থেকে হাত সরিয়ে সামনে তার পায়ের কাছে বসে থাকা ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।

সিজাত মাথাটা পেছন দিকে একটু কাত করে আছে। দুইটা হাটু মাটিতে ফেলে তার উপর ভর করে বসে আছে। হাতে একটা হীরের আংটি যা সিড়ির সাদা আলোর ছোয়ায় চিকচিক করে তার মূল্য বলে দিচ্ছে। সিজাত তিলের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অসস্থিতে পুনরায় বললো,

“” Will u marry me,Tiyamoty?””

তিল আগের মতোই নিঃশব্দে সিজাতের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তার মুখ ঢাকার জন্য ব্যবহৃত হাতদুটো এখনো সরল রেখার মতো সোজা হয়নি। মাঝপথেই আটকে আছ। হাতের আঙুলের নখের অংশগুলো এখনো গালের নিচটাতে লেগে আছে।

“” কি হলো,তিয়ামতী? কিছু তো বলো? আমি খুবই নার্ভাস ফিল করছি। তোমার কন্ঠ শোনার জন্য আমার কানদুটো কাপছে। কিছু তো বলো প্লিজ!””

তিল নিজেকে সামলে নিয়ে সিজাতের হাত ধরে টেনে সোজা করার চেষ্টায় বলতে থাকলো।

“” আপনি কি পাগল? কেউ দেখার আগে এখনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। নিজেতো মরবেন সাথে আমাকেও মারবেন। এতো অল্প বয়সে আমি মরতে চাইনা। আমার এখনো অনেক কিছু জানার আছে। কতই বা বয়স আমার? তাড়াতাড়ি চলে যান।””

সিজাতকে কথা শুনাতে শুনাতে বার বার আশে পাশে তাকাচ্ছে,তিল। আল্লাহ! রিদ ভাইয়া যদি একবার দেখে তাহলে আজকে আমাকে এই সিড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। আর আমিও গড়িয়ে গড়িয়ে মৃত্যুর দিকে পতিত হবো। কি ভয়ংকর হবে ব্যাপারটা? আর সিজারের কি হবে? দেখা যাবে উনি একটা কেচি নিয়ে এসে উনার পেট কেটে সিজার করে দিয়েছে! তখন উনাকে কেমন লাগবে? সিজার করে বাবু হলেও একটা কথা ছিলো। কিন্তু উইথআউট বাবু সিজার হলে মানুষ কি বলবে???

সিজাত তিলের হাতদুটো নিজের আয়ত্তে নিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। হাতদুটো চেপে ধরে বললো,

“” কিছু হবেনা,তিয়ামতী। তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন? আমি তো আছি? এ বাসার সবার মত আছে। জাস্ট তুমি একবার হ্যা বলো দেখবে আমি আজ রাতেই তোমাকে বিয়ে…””
“” হাত ছাড়েন বলছি। কিসব উল্টাপাল্টা বকছেন? আর সবার মত আপনি কখন নিলেন? রিদ ভাইয়ার মত নিয়েছেন? উফ! আমি তো ভাবতেই পারছিনা,আপনি এতো সাহস কোথায় পেলেন?””

সিজাত আচমকায় তিলকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,

“”দেখো আমার হার্টবিটরাও শুধু তোমার নামই ঝপছে। আমার শিরাউপশিরাতে বয়ে যাওয়া রক্তের ধমনিগুলোও তোমার কথা গেয়েই বয়ে যাচ্ছে তাহলে আমার ভয় হবে কিসে? আমার তো সব ভয় তোমাকে নিয়ে। তুমি যদি না বলে দাও তাহলে আমার রিদ স্পন্দনগুলো থেমে গিয়ে ইন্তেকাল করবে আর সাথে আমিও!””

তিল নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে ওর চোখ ঠেকলো রিদের উপর। সিড়ির শুরুর দিকটায় দাড়িয়ে আছে। হাতদুটো পড়নের ট্রাউজারের পকেটে। চোখ,মুখ সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও তিল বুঝতে পারলো এই স্বাভাবিকের পেছনে অন্যকিছু বয়ে আসছে। রিদ তার পায়ের দ্বারা এক এক করে সিড়ি বেয়ে আসছে। চোখের সম্পুর্ন চাহনি তিলের দিকে।

হয়তো রিদকে না দেখতে পেলে এতক্ষনে তিল নিজেকে সিজাতের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ফেলতো। কিন্তু রিদের সেই স্বাভাবিক চাহনি যেন তিলকে বশ করে ফেলেছে। চোখের পলকটা ফেলারও শক্তি হারিয়ে ফেলেছে তাহলে নিজেকে কিভাবে ছাড়াবে তিল???

“” তিয়ামতী,এভাবে চুপ করে থেকোনা,প্লিজ। তোমার নিঃশব্দের মাঝে আমি তোমার নিশ্বাসের শব্দে হারিয়ে যাচ্ছি। তুমি আমাকে আর কত নেশা ধরাবে??””
“” তিলকে ছাড়,সিজাত!””

হঠাৎ অন্যকারো গলা পেয়ে সিজাত তিলকে ছেড়ে দিলো।

“” রিদ,তুই?””
“” যা,বাসায় যা।””
“” আমি তো মাত্রই আসলাম। আর তুই তো জানিসই আমি এ বাসায় কেন আসি। কিছুক্ষনের জন্য আমাদেরকে একা ছেড়ে দে। আমি তিলের সাথে কথা শেষ করেই তোর সাথে দেখা করবো।””

রিদ গলাটা স্বাভাবিক রেখেই সিজাতকে আবার বললো,

“” আমি বলছি,এখন বাসায় যেতে।””
“” আরে তুই হঠাৎ আমার বাসায় যাওয়া নিয়ে পড়লি কেনননন…””

সিজাতের কথার শেষ সুর শেষ হওয়ার আগেই গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো রিদ। চোখে,মুখে,এমনকি গালদুটোও লাল টকটক করে চিৎকার করে উঠলো। সিজাতের কলারটা চেপে ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসছে রিদ।

রিদের এমন ভয়ংকর চেহারায় তিল ভয়ে কেপে উঠে। কিন্তু এ ভয়কে ফেলে তিল দৌড়ে এসে রিদের হাত থেকে সিজাতকে বাচানোর চেষ্টায় বলে উঠে,

“” ছালুননা,উনাকে? উনি ব্যথা পাচ্ছে।””

তিল রিদের হাতদুটো আলগা করতে গেলে রিদ ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় তিলের গালে। রিদের থাপ্পড়ের গতি তিলকে ছিটকে ফেলে দেয়ালের কাছে।

সিজাতকে টানতে টানতে মেইন দরজার কাছে নিয়ে আসে রিদ। ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে বললো,

“” শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে বেচে গেলি। তোকে যেন আর কখনো আমার বাড়ির আশেপাশের রাস্তাটাতেও না দেখি।””

রিদ দরজা আটকাতেই ওর মা বাবা ছুটে এসে ববলো,

“” কি হয়েছে রে রিদ? কেমন জানি শব্দ পেলাম। তিলকে দেখলাম কাদতে কাদতে রুমে চলে গেলো। আর তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?””
“” একটা পাগলা কুত্তা ঢুকে গিয়েছিলো,আম্মু। তিলকে কামড়াতে চেয়েছিলো তাই ও ভয়ে কেদে ফেলেছে। তোমরাতো জানোই ও কত ভীতু!””

রিদের বাবা আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বললো,

“” পাগলা কুত্তা? কই,কোথায় ঢুকেছে?””
“” আমি মেরে বের করে দিয়েছি। আর কখনো আসার সাহস পাবেনা।””

রিদ বাবা মাকে রেখে নিজের রুমে চলে গেলো।

রিদের বাবা রিদের আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“” রিদকে একটু চোখে চোখে রেখতো। কেন জানি মনে হচ্ছে আমি ওর মধ্যে সেই ছোটবেলার রিদের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। তখন তো ওরা ছোট ছিলো তাই সামলে নিতে পেরেছি কিন্তু এখন কিন্তু ওরা ছোটটি নেই। দুজনেই প্রাপ্ত বয়সী।””
“” তুমি সবসময় আমার সোনার টুকরা ছেলেটাকে নিয়ে এতো সন্দেহ করো কেন বলোতো? ছোটবেলা অবুঝ ছিলো তাই অমন করেছে। এখন ও অবুঝের মতো কান্ড করবে নাকি? আজ এতো বছর পর ছেলেটা আমার বুকে ফিরে এসেছে,তোমার সেটাও সহ্য হচ্ছেনা। তুমি এতো হিংসুটে হবে জানলে আমি কখনোই তোমাকে বিয়ে করতাম না!””
“” তাহলে এখনো পড়ে আছো কেন? তোমার বাবার কবরে গিয়ে বলো তোমাকে আরেকটা বিয়ে দিতে। এতো আদরী মেয়ে ছিলে তুমি উনি নিশ্চয় তোমার কষ্ট দেখে কবরে শুয়ে থাকবেননা? কোনো এক ভালো ভুতের সাথে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তখন শান্তিমতে ভূতের সাথে সংসার করো।””
“” কি আমি ভুতের সাথে বিয়ে করবো? তুমি আমাকে পেত্নি বললে? আজ রাতে তোমার খাবার বন্ধ। আমিও দেখবো তোমাকে কে খেতে দেই!””
“” আরে আমি তোমাকে পেত্নি বললাম কখন?””
“” ভুতরাতো পেত্নিদেরকেই বিয়ে করে তাহলে হিসেবে তো তুমি আমাকে পেত্নিই বলেছো।””

~~
রাতের খাবার গ্রহনের তাগিদে সকলেই খাবার টেবিলে বসে আছেন। রিদের বাবাকেও বসানো হয়েছে। কিন্তু তার সামনে খালি প্লেট দেওয়া হয়েছে। রিদের মায়ের ধারনা খাবার সামনে বসে,চোখের সামনে খাবার রেখে না খেতে পারাটাই সব থেকে বেশি কষ্টের! আর তিনিও তার স্বামীকে কষ্টকর শাস্তিটাই দিতে চান যাতে পরবর্তীতে তাকে আর পেত্নি বলার সাহস না পান।

তিল সবসময়ের মতো আজকেও রিদের সামনাসামনিই বসেছে। কিন্তু অন্যদিনের মতো আজ সে রিদের দিকে তাকাচ্ছেনা। তাকাবেও না। কেন তাকাবে? এমন পাষন্ড ভাইয়ের দিকে সে আর তাকাবেনা,তাকে নিয়ে আর স্বপ্নের মালা গাথবেনা। যে শুধু কষ্টই দেয় একটু ভালোবাসাও দেয়না তাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা আর দুকেজি চাল থেকে হাফ কেজি মরা চাল বেচে সময় ওয়েষ্ট করা একি কথা।

“” ডালের বাটিটা এদিকে দেতো,তিল।””

তিলের ভাতের মধ্যে আকা হাজারও আকিবুকির মধ্যে বাধা দিয়ে বসলো রিদ। তিল শুনেও না শুনার ভান করে ডালের বাটিটা উপুত করে সবটা ডাল নিজের প্লেটে ঢেলে নিলো।

রিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিল চেয়ার টেনে উঠে চলে গেলো। পেছন থেকে আব্বু,আম্মু এমনকি বড় আব্বুর ডাকটাকেও অগ্রাহ্য করার শক্তিটা কুড়িয়ে নিলো তিল।

~~
সে রাতে তিলের সাথে আরেকজনও খুদায় ছটফট করেছে যা তিল জানতেও পারলোনা। পেটের ভিতর ইদুরের ছুটাছুটির জন্য তিল ঘুমাতেও পারছেনা। তবুও আজ সে খাবেনা। কেন খাবেনা সেটা তিলের না জানলেও চলবে। তিল বিছানা ছেড়ে লাইট নিভাতে গিয়েও থমকে গেলো। মনে মনে কিছু একটা ভেবেই তিল দরজার সিটকিনি লাগিয়ে নিলো। বন্ধ রুমের মধ্যে লাইট নিবিয়ে ঘুমানোর সাহস পেলোনা তিল।

ঘড়ির কাটা কিছুটা ঘুরতেই দরজা নক করার শব্দ পেলো তিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৩ টা বেজে কুড়ি। এতো রাতে তার দরজায় কে আসতে পারে বুঝতে বাকি রইলোনা তিলের। তিলের মনে হলো দরজায় এক একটা নক করার শব্দ তার রুমের দরজায় নয় তার পেটের ভিতরে থাকা কলিজায় গিয়ে লাগছে। আর কি শাস্তি দেওয়ার বাকি আছে আপনার? রাত হলেই আপনার আমাকে কষ্ট দেওয়ার কথা মনে পড়ে? একটু ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনা? প্রত্যেকটা রাতই কেন শাস্তির নামে কষ্টতে পার করাবেন? একটা রাতও কি ভালোবাসার হতে পারেনা? খুলবোনা আমি ঐ দরজা। দেখি কত পারেন আপনি দরজা ভেংগে আসুন। সব শাস্তিগুলো এতো সহজে দিবেন তাতো হতে পারেনা একটা নাহয় বল ক্ষয় করে দিলেন। তিল মনে মনে কথা আউড়াতে আউড়াতে কানে ইয়ার ফোন গুজে দিলো। ফোন ঘেটে একটা ঝাকানাকা গান ছেড়ে ফুল সাউন্ড দিলো। বিছানায় শুয়ে একটা বালিশ নিচে আরেকটা কানের উপর দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। সে কিছুতেই কানে গান ছাড়া অন্য কোনো শব্দ শুনতে চাইনা। কারন এই দরজা খুলার জন্য রিদ ভাইয়ার বল নয় তার কন্ঠে তিল নামটা শুনাই যথেষ্ট!

রিদ বেশ কয়েকবার দরজায় নক করে থেমে গেলো। কিন্তু সেখান থেকে নড়লোনা। নিজের হাত দুটো গুটিয়ে এক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো।

~~
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কলেজের ড্রেস পড়ে নিলো তিল। নিজেকে ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে ব্যাগটা কাধে নিতে নিতে রুম থেকে বের হতেই রিদের চোখে চোখ পড়ে। ড্রয়িং রুমে টিভি ছেড়ে বসে থাকলেও এখন তার মাথাটা উল্টো করে তিলের দিকে ঘুরানো। তিল রিদের থেকে চোখ সরিয়ে মেইন দরজার কাছে গিয়ে মোজাটা পড়তে থাকে।

“” আমাকে এক গ্লাস পানি দিয়ে যাতো,তিল!””

তিল জুতোই পা ঢুকাতে ঢুকাতে ভাবলো পানি দিবে নাকি দিবেনা। শুনেছি কেউ পানি চাইলে না করতে নেই। এমন কি শত্রুরা পানি চাইলেও দিতে হয়। আর রিদ ভাইয়া তো আমার ভালোবাসা! তিল জুতো থেকে পা বের করে হাটা ধরতেই মন পাল্টে গেলো। তৃষ্ণার্ত মানুষ পানি চাইলে না করতে নেই কিন্তু আপনি তো তৃষ্ণার্ত না রিদ ভাইয়া! তিলের পা আটকে গেলো, চিৎকার করে নিজের বাবাকে ডেকে বললো,

“” আব্বু,তোমার কোন বন্ধুর ছেলে নাকি আমাকে বিয়ে করে সুইজারল্যান্ড নিয়ে যাবে বলেছে? উনাকে বলে দিও আমার ছোটবেলা থেকে অনেক শখ বরফের পাহাড়ে উঠার। আর উনাকে বলো আজকেই যেন কাজীসহ সবাইকে নিয়ে হাজির হয়। আমি কলেজ থেকে এসেই কবুল বলবো।””
“” সত্যি মা? তুই রাজী?””
“” হুম।””

তিলের বাবা খুশিতে প্যান্ট শার্টের পকেট হাতড়াতে লাগলো। এতো ভালো সুযোগ সে কিছুতেই মিস করতে চাইনা!

~~
তিল কিছুতেই ক্লাসেই মন বসাতে পারছেনা। শুধু থেকে থেকে কান্না পাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে চলে গেলে তো তার রিদ ভাইয়াকে আর দেখা হবেনা,তার সাথে কথা বলাও হবেনা। সে কি ফোন করে বাবাকে না বলে দিবে? তিল ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ফোনটা বের করছে তো আবার ঢুকাচ্ছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। ক্লাসে এমন অমনোযোগি হওয়ায় পুরো ক্লাসে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে হলো তিলকে। এদিকে তার আর ফোন করাও হলোনা। এতক্ষনে নিশ্চয় বাবার বন্ধু ডাক্তারসাহেব কাজী নিয়ে হাজির ও হয়ে গেছে!

তিল একরাশ মন খারাপ নিয়ে বাসার গেটে ঢুকে পড়লো। ধীর পায়ে কদম ফেলে ফেলে এগুতেই মেইন দরজা খুলা দেখতে পেলো। ভেতর থেকে বিভিন্ন রান্নাবান্নার সুবাসও পাচ্ছে তিল। তারমানে ডাক্তারসাহেব চলেই এসেছে? উনি কি কবুলও বলে ফেলেছে? নাকি আমার সামনে বলবে বলে ওয়েট করে আছে??

তিল মেইন দরজাটা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই তার চোখ স্থির হয়ে গেলো ড্রয়িং রুমে বসে থাকা মানুষদের দেখে। কাধ থেকে ব্যাগটা ঝপ করে নিচে পড়ে গেলো। তিল অবাক নয়নে সবার দিকে তাকিয়ে রইলো।

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ৭

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (৭)

তিল হাজার চেষ্টা করেও ঘুমকে বস করতে পারছেনা। বস করতে করতেই মাঝরাত হয়ে গেলো। যেইনা চোখ লেগে আসছে অমনি অদ্ভুত অদ্ভুত ফিলিং তাকে চুলকিয়ে দিচ্ছে।আর ঘুম ভেংগে যাচ্ছে।তিল শুয়ে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা শুধু মনে হচ্ছে তাকে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ঘুমের ঘোরে বারবার নড়েচড়ে উঠছে। এপাশওপাশ করেও যখন শান্তি পেলোনা,উঠে বসতেই মনে হলো তার পাশে কেউ বসে আছে। পাশে মুখটা বাকাতেই তিল অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,

“”লিদ ভাইয়া””

রিদ এতক্ষনে বসে থাকলেও তিলকে উঠতে দেখে তিলের পাশেই শুয়ে শুয়ে বললো,

“” আমার অনেক শীত লাগছে রে তিল,কাথাটা শরীরে জড়িয়ে দেতো।””

তিল নিজের শরীরের কাথা রিদের গায়ে দিতে নিলেই রিদ বলে উঠলো,

“” তোর শরীরের লাগানো জীবানু আমাকে দিচ্ছিস কেন? যা অন্য কাথা নিয়ে আয়। তোর জীবানুমাখা কাথা গায়ে দিলে আমার আরো বেশি শী লাগবে!””

রিদের কথায় তিল চিন্তায় পড়ে গেলো। আমার গায়ে জীবানু? আমি তো ডেইলি সাবান দিয়ে গোসল করি,তাও লাইফবয় সাবান দিয়ে তারপরও জীবানু রয়ে গেলো?? অতো ছোট ছোট জীবানুও রিদ ভাইয়া দেখতে পাচ্ছে??

“” ছোট ছোট কই পেলি? এক একটা হাতির মতো জীবানু, দেখ কেমন কিলবিল কিলবিল করছে। এই যে তোর নাকটা যে ঘেমে ছোটছোট বিন্দু জমে আছে,তোর কি মনে হয় এগুলো ঘাম? এগুলো হলো জীবানুর পায়খানা। দেখি একটু সরে বসতো। তোর নাকের জীবানুর পায়খানা থেকে গন্ধ আসছে,বমি বমিও লাগছে।””

রিদের কথা শুনে তিলের ভেতরেও মোচড় দিয়ে উঠলো। তারমানে সে সবসময় এই জীবানুর পায়খানা নিয়েই ঘুরাঘুরি করে? ছি! ছি!! ছি!!! জীবানুরা আর কোনো জায়গা পেলোনা শেষে কিনা আমার নাকের আগায় পায়খানা করলো??

“” কি হলো এখনো কাথা দিলি না? তুই কি চাস আমি শীতে কাপতে কাপতে মরে যায়?? আমি মরে গেলেই তো তুই বাচিস তাইনা?””

তিল বিছানায় নিজের কাথাটা ছাড়া আর কোনো কাথা খুজে পেলোনা। পাবেই বা কিভাবে? এই জৈষ্ঠমাসে ও কি কেউ কাথা গায়ে দেই?

তিল বিছানা ছেড়ে রুম থেকে বের হতে নিলেই রিদ ডেকে উঠলো,

“” এই মাঝরাতে কোথায় যাচ্ছিস তুই?””
“” আম্মুল কাছে,আপনাল জন্য কাথা….””
“” রাত কয়টা বাজে দেখেছিস? এখন তুই কাকিমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবি? উনারা কি তোর মতো হাওয়া খেতে খেতে নেচে বেড়ায়? কাথা আনতে হবেনা,তোর কান্ডকারখানায় আমার শীত চলে গেছে। যা আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়। আমার এখন কফি খেতে ইচ্ছে করছে।””
“” হুম।””

~~
তিল গুনগুন করতে করতে কফি বানাচ্ছে। তিলের মনে হলো এই প্রথম তার কফি বানাতে এতো ভালো লাগছে। কিন্তু কেন? রিদ ভাইয়ার জন্য বানাচ্ছি তাই??

তিল খুবই মনোযোগ সহকারে কফি বানিয়ে বার বার চেক করে নিলো,কোনোকিছু কম পড়ে গেলো নাতো??

হাতে কফি নিয়ে রুমে ঢুকতেই রিদ বলে উঠলো,

“” তুই কি রেষ্টুরেন্ট খুলে বসেছিস? একটা কফির জন্য আমাকে ১ ঘন্টা ওয়েট করিয়ে রাখলি? একটা কফি বানাতে তোর এতো সময় লেগে গেলো??””
“” সলি!””

রিদ তিলের হাত থেকে কফিটা নিয়ে ঢিল মেরে নিচে ফেলে দিলো।

“” এমন রেষ্টুরেন্টওয়ালির কফি রিদ খায় না।””

তিল ছলছল নয়নে রিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে কি জানে তার জন্য সব থেকে সুমিষ্টি কফিটা বানাতে আমি ৭ মগ কফি নষ্ট করেছি?? তার জন্য সকালে আম্মুর কাছে ৭০০ বকা খেয়ে ৭০০০চোখের পানির ফোটা ফেলতে হবে?? আর সব থেকে বড় কথা ঐ কফিতে যে আমার রিদয়ে রাখা ৭০০০০ হাজার সমুদ্রের পানির থেকেও বেশি ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম।

“” এভাবে হেবলার মতো তাকিয়ে কি দেখছিস? যা এখনি ৫ মিনিটের মধ্যে ২ কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসবি।””
“” দু কাপ কেন?””
“” আমি কত কাপ চা খাবো কেন খাবো সেটাও তোকে বিশ্লেষন করে বলতে হবে? তুই কি বড় বিশ্লেষক হয়ে গেছিস?””

রিদের বাকি কথা শুনার সময় না নিয়ে তিল বেরিয়ে পড়লো রান্নাঘরের দিকে। আপনি সবসময় আমার সাথে এভাবে কথা বলেন কেন? আমি তো আপনার সব কথা শুনার চেষ্টা করি। একটু ভালো করে বললে কি হয়? এতো রাগ দেখিয়ে কথা বলেন কেন? আমার যে আপনার প্রত্যেকটা কথায় খুব বেশি কষ্ট হয়।

তিল তাড়াহুড়ো করে চা বানাতে লাগলো। চা কাপে ঢালতে গিয়ে ছিটকে নিজের হাতে পড়ে গেলো। না চাইতেও মুখ দিয়ে আহ! শব্দ বের হয়ে আসলেও তিল সেদিকে ভ্রক্ষেপ করলোনা। তড়িঘড়ি করে কাপে চা ঢেলে নিয়ে উল্টোঘুরতেই রিদের সাথে ধাক্কা খেলো।

“”চা খেতে চেয়েছি বলে গরম চায়ের ছেকা খাওয়াবি? তোর মনে এতো কটুক্তি ছিলো তাতো জানতাম না,তিল! দিনে দিনে তোর এতো অধোপতন হচ্ছে? কাকা,কাকিমা তোকে এই শিক্ষা দিচ্ছে?””
“” আমি ইচ্ছে কলে,,,,””
“” ইচ্ছে করে দিসনি তো,আমি ইচ্ছে করে তোর কাছে ছেকা খেতে এসেছি তাইনা?””
“” না। কিন্তু আমি…””

রিদ তিলের গালদুটো চেপে ধরে বললো,

“” এখন আমার মুখে মুখে তর্ক করাও শিখে গেছিস?? খুব বড় হয়ে গেছিস তাইনা??””

রিদ তিলের মুখটা অমন করে চেপে ধরে হালকা উচু করে ধরতেই তিল ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তিলের এমন ভয়ার্ত চেহারায় রিদ মুচকি হেসে ফেলে। তিলের কোমড়টা বা হাতে জড়িয়ে তিলকে নিজের একটু কাছে টেনে নিয়ে বললো,

“” তোর নাকে করা জীবানুর পায়খানাগুলো ধুয়ে ফেল। নাহলে আমি প্রতিরাতেই তোর ঘুমের বারোটা বাজিয়ে চা খেতে চলে আসবো!””

রিদের কথায় তিল চোখ মেলতেই ওকে ছেড়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় রিদ। ঠোটে এখনো হাসিরা উকি দিয়ে যাচ্ছে।

~~
“” কিরে,তুই একটু পরপর মুখ ধুচ্ছিস কেন? তোরে কি মুখ খারাপ ব্যারামে ধরলো?””

মুখে পানির ঝটকা দিতে দিতে তিল তাসমিয়া বেগমের কথার উত্তরে বললো,

“” মুখ খারাপ ব্যারাম? সেটা আবার কেমন ব্যারাম আম্মু?””
“” বার বার বাথরুম পায়লে যদি পেট খাওয়া ব্যারামে ধরে তাহলে বারবার মুখ ধুলে তো মুখ ধুয়া ব্যারামই হয়। তোর কি মনে হয় আমি কিছুই জানিনা? আমি ক্লাস ৮ পাশ। তোর বাপের জন্যই তো আর পড়তে পারলাম না। তুই জানিস আমাদের ক্লাসে সব থেকে ভালো ছাত্রী তোর মা ছিলো?””
“” তাই?””

তাসমিয়া বেগম মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

“” নিশ্চয় কোনো ভুলভাল জিনিস মাখছোস তাইনা?””
“” আমি আবার কি মাখালাম?””
“” নাহলে তোর মুখ খারাপ ব্যারাম কি করে হলো?””

তিল মুখে পানির শেষ ঝটকা টা দিয়ে টাওয়াল টা হাতে নিলো। মুখটা মুছে নিয়ে মায়ের দিকে নাকটা বাড়িয়ে বললো,

“” আম্মু, দেখোতো আমার নাক থেকে পায়খানার গন্ধ আসছে নাকি?””
“” নাক থেকে পায়খানার গন্ধ?””
“” হুম। আব্বুকে বল তো ফার্মেসী থেকে একটা ভালো ওষুধ এনে দিতে,যেটা মাখলে আমার নাকটা ঘামবেনা আর জীবানুরা পায়খানাও করতে পারবেনা।””

নিজের হাতে থাকা টাওয়ালটা মায়ের গলায় পেচিয়ে দিয়ে তিল রুম ছেড়ে বেড়িয়ে আসলো।

“” এই তিল,তরকারীটা একটু নেড়ে দিয়ে যাতো। আমার হাতে ময়লা।””
“” চুলার ধারে গেলেই আমার নাকে জীবানুরা পায়খানা করবে,বড় আম্মু। তুমি কি চাও,তোমার ভাতিজির নাক দিয়ে গন্ধ বের হোক?””

তিল বড় আম্মুর কথার অবাধ্য হয়ে রিদের রুমের দিকে এগুলো। এখন নাকে কোনো পায়খানা নাই,উনাকে একটু দেখালে কেমন হয়??

তিল রিদের দরজার কাছে যেতেই রিদ বলে উঠলো,

“” পায়খানাওয়ালা নাক নিয়ে আমার রুমে আসবিনা। আমার আবার বমি আসছে!””

রিদের কথায় তিল নাকে হাত দিতেই হাতের আংগুল ভিজে এলো। তিলের ইচ্ছে হলো নিজের নাকটা কেটে ফেলতে। এতো কেন ঘামতে হয়? পৃথিবীর সব জীবানু কি আল্লাহ আমার নাকেই দিলো? আর ওদেরও কি সেকেন্ডে সেকেন্ডে পায়খানা হয়? কয় আমার তো এতো পায়খানা পায়না। তাহলে ওদের কেন পেতে হয়? আর একটু আটকে রাখলে কি হতো? ওরা কি বুঝেনা আমার রিদ ভাইয়ার কাছে না গেলে ভালো লাগেনা???

~~
“” এমন সরু ঠ্যাংওয়ালা কি তোর বর?””

তিল রিদের রুম থেকে ফিরে এসে ফুল পাওয়ারে ফ্যান ছেড়ে খাতা কলম নিয়ে বসেছিলো। ছবি আকা নিজের তেমন একটা পছন্দ না হলেও কেন জানি হঠাৎ করে নিজের রিদ ভাইয়ার হাসি মুখটা একে দেখতে ইচ্ছে হলো। বাস্তবে রিদের হাসি মাখা মুখটা তিলের চোখ ছুতে না পারলেও পেনসিল দিয়ে ছুতে চাইলো। অনেক কষ্টে ২ ঘন্টাভরে একটা ছেলে আকৃতি দিতে পারলেও মুখটা কিছুতেই আকতে পারলোনা। রাবার দিয়ে মুছতে মুছতে খাতা ছেড়ার অবস্থা হয়ে এলো। মুখটার মধ্যে একটা বড় হাসির ইমুজি একে নিলো। এতেও তিলের মন ভরলোনা। ইচ্ছে হলো নিজের হাসি হাসি রিদভাইয়ার সাথে পাশে দাড়ালে,নিজেকে কেমন লাগে তা দেখতে। সেই ইচ্ছে পুরনেই তিল খাতায় আকা রিদের পাশে একটা মেয়েকে আকছিলো। ঠিক তখনি রিদ পেছন থেকে এসে ছো মেরে তিলের খাতাটা নিয়ে নিলো।

“” তোর বর কি পাঠকাঠি দিয়ে বানানো? তুই নিজে বানিয়েছিস? আর এই পাশের মেয়েটা কে? তোর বরের দুই নাম্বার বউ?””

তিল বিছানা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেলো। মাটির দিকে তাকিয়ে বললো,

“” এক নাম্বাল বউ।””

রিদ খাতা থেকে চোখ সরিয়ে তিলের দিকে তাকিয়ে বললো,

“” তাই? কিভাবে বুঝলি? এটা এক নাম্বার বউ?””
“” জানিনা।””

তিল সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসলো। রিদ ভাইয়া এগুলো কি বললো? বর বউ? আমি তো রিদ ভাইয়া আর আমাকেই আকঁছিলাম,তাহলে কি রিদ ভাইয়া বর আর আমি….তিল নিজের হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো। আমি রিদভাইয়ার বউউউ???

“”will you marry me,???””

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ৬

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (৬)

শাওয়ার শেষে বের হতে গেলেই তিল বুঝতে পারলো তার দরজা খুলছেনা। বারবার সিটকিনি নাড়িয়ে চাড়িয়েও যখন দরজা খুলতে পারলোনা,ভয়ে তীলের গলা শুকিয়ে এলো। চিৎকার করে আম্মুকে ডাকছে আর দরজা বাড়ি দিচ্ছে। দরজার ওপাশ থেকে একটা কন্ঠ ভেসে উঠলো,

“” গলা ভেংগে চিল্লালেও কেউ শুনতে পারবেনা। বাসায় কেউ নাই।””

রিদের কন্ঠ পেয়ে তিলের কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসলো। এমনি শুকনো কাঠ যা রোদের কঠোর তাপে শুকিয়ে ফাটল ধরেছে। তাহলে কি বাইরে থেকে উনিই লাগিয়ে রেখেছে?? আবার কি করলাম? আবার কোন অন্যায়ের শাস্তি পাবো আমি?

তিল দরজা থেকে হাত সরিয়ে সোজা লম্বা সুপারির গাছ হয়ে দাড়িয়ে গেলো। কাল রাতের শাস্তি পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কি কি করেছে সবকিছু সময়সীমা ভেবে সাজাতে লাগলো। তেলাপোকা বলেছিলাম দেখে তো উনি শাস্তি দিয়েইছিলেন তাহলে? তারপর আর কি ভুল করছি?? তিল বারবার মনে করার চেষ্টা করেও কিছু খুজে পাচ্ছেনা। ইচ্ছে হচ্ছে নিজের মাথার মগজটা পানিতে চুবিয়ে রাখতে তাহলে যদি ঠিকঠাক মতো সাড়া দিতো। তিলের ভাবনার মাঝেই ওয়াশরুমের লাইটটাও অফ হয়ে গেলো। আর সাথে সাথেই তিল চিৎকার করে দরজায় বারি মারতে শুরু করে।

“” লিদ ভাইয়া,আপনি তো জানেন আমি অন্ধকালকে ভয় পাই! দলজা খুলুননা প্লিজ!এমন কেন কলছেন?””

রিদ তিলের বিছানার উপর শুয়ে আছে। হাত দুটো মাথার নিচে নিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“”চল একটা গেম খেলি,যদি তুই বের করতে পারিস তোকে আমি কেন অন্ধকারে বন্দী করে রেখেছি তাহলে ছেড়ে দিবো। এখন তুই ঠিক কর তুই শাস্তির সময়টা কতটা নিবি।””
“” আমি জানিনা। আপনি বলে দিন। তাল আগে আমাকে বেল হতে দিন,লিদ ভাইয়া। খুব ভয় কলছে!””
“” ভয়কে জয় করতে শিখ। আর শাস্তির কারনটা খুজে বের কর। আমার ঘুম ঘুৃম পাচ্ছে। বেশি লেট করলে কিন্তু আমি ঘুমিয়ে যেতে পারি। আর যদি ঘুমিয়ে যাই তাহলে সে ঘুম কখন ভাংগে আমার জানা নাই!””

তিলের বালিশে মাথা রাখতেই সমানে হামি উঠছে রিদের। এটা কি ঘুমকাতুরে বালিশ নাকি? এই ভর সন্ধ্যায় ঘুম পাচ্ছে কেন? আমি তো এই টাইমে কখনো ঘুমাইনা। চোখগুলো কেমন ভার ভার হয়ে আসছে। চোখের পাতাতে জ্বালা ধরেছে। তাহলে কি এটাতে তিলের ছোয়া আছে দেখে এমন ঘুম পাচ্ছে? রিদের মনে এক ভালো লাগার শিহরন বয়ে গেলো। যার ছোয়ামাখা সামান্য বালিশেই আমার চোখে এমন ঘুম নামিয়ে দিতে পারে তাহলে ও নিজেই যদি আমার বালিশ হয়ে যায় তাহলে তো ২৪ ঘন্টায় আমি ঘুমে ঢুলবো! ও মাই গড,কী মারাত্মক কান্ডটায় না হবে!

তিল ওয়াশরুমের ছোট জানালাটা খুলে দিলো। ওখান দিয়ে ছড়িয়ে পড়া ছোট্ট আলোর ঝিলিক পুরো রুমটাকে আলোময় না করতে পারলেও অন্ধকারের গভীরতাকে খানিকটা কমিয়ে এনেছে। কিন্তু তা তিলের মনের ভয়কে খুবই নগন্য পরিমানে কমাতেই সামর্থ্য পেলো। তিল দরজা থেকে মুখ সরিয়ে ছোট,সরু জানালার দিকে তাকিয়ে চিন্তায় ডুব দিলো। কিন্তু হাজারবার সব ঘটনা ধাপে ধাপে মিলিয়েও কিছু খুজে পেলোনা। পরক্ষনেই মনে হলো ছোটবেলার স্মৃতিতে ডুব দিলে কেমন হয়??

“” আহ! লাগছে লিদ ভাইয়া,আমাল নতুন চুলিগুলো ভেংগে যাচ্ছেতো। তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?? “”

তিলের কথার টোকা রিদের গায়েই লাগলো না। তিলের বা হাতটা চেপে ধরে টানতে টানতে ছাদের সিড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাবার সাথে মেলায় ঘুরতে দিয়ে চকচক করা লাল চুড়ির বায়না করেছিলো,তিল। আর বাবাও বায়না পুরন করে, মেয়েকে হাতে পড়িয়ে দিতেই বুঝতে পারলেন,তিনি চুড়ি নয় মেয়ের হাসি কিনেছেন। আর সেই চুড়ি দিয়েই দুহাত ভরে সাজিয়ে খেলছিলো তিল। হঠাৎ করে খেলার মাঝখান থেকে টানতে টানতে কোথাও একটা নিয়ে যাচ্ছে রিদ। হাতভর্তি চুড়ি থাকায় রিদের শক্ত হাতের চাপে টুকটুক করে চুড়ি ভেংগে ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। রিদের পায়ের তালের সাথে তিলের ছোট ছোট পাগুলো তাল মিলাতে পারছেনা। মাঝে মাঝেই মিস করে যাচ্ছে!

“” ও লিদ ভাইয়া,বলোনা,আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?””
“”……..””

নিজেরি ভেংগে যাওয়া চুড়ির টুকরোর সাথে পা লেগে তিলের পা কেটে গেলো। তিল কান্নাঝরিত কন্ঠে বলে উঠলো,

“” আমাল পা। লিদ ভাইয়া লক্ত!””

তিলের কথায় রিদ থমকে দাড়ালো। পায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে।

“” এ্যাাা,ব্যথা,লিদ ভাইয়া লক্ত!””

রিদ এবার তিলের পা থেকে চোখ সরিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই তিল কান্না থামিয়ে রিদের দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বললো,

“” লিদ ভাইয়া,সুলসুলি! পেটে সুলসুলি লাগছে!””

রিদ কপাল গুছিয়ে তিলের পেটের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো অন্যমনস্কতায় তিলকে কোলে নেওয়ার সময় ওর জামাটা ভাজ হয়ে পেটের একপাশ থেকে সরে রয়েছে। আর রিদের হাতের আংগুলগুলো ওর পেটে চেপে বসে আছে। রিদ একটা ধমক দিয়ে বললো,

“” এতো হাসছিস কেন? তোকে আমি হাসতে বলছি?””
“” সুলসুলিতো!””

রিদ তিলকে কোল থেকে নামিয়ে আবার হাটিয়ে হাটিয়ে টেনে নিয়ে ছাদে উঠে আসলো। ছাদের কোনায় ছোট্ট খুপড়িতে তিলকে ধাক্কা মেরে ঢুকিয়ে দিলো। আর বাইরে দরজা আটকিয়ে দিতেই তিল চিৎকার করে কান্না করে রিদকে ডাকছে।

“” তোর কি মনে হয় তুই তোর খিলখিল হাসি দিয়ে আমাকে ভুলিয়ে দিবি? রবিনের সাথে তোকে খেলতে মানা করেছিলাম না? তাও তোর ওর সাথেই খেলতে হয়? তাও দরজা আটকিয়ে?””
“” আমি তো লুকোলুকি খেলছিলাম,লিদ ভাইয়া। খুলোনা। আমাকে কালা ভুত খেয়ে ফেলবে। আমাল ভয় লাগছে।””
“” যে খেলায় দরজা আটকাতে হয় সে খেলা তুই খেলবি কেন? আমার মানা তুই শুনিস নি তো? এইবার কালা ভুতের সাথেই তুই লুকালুকি খেল। আমি দেখি তুই কত খেলতে পারিস।””
“” লিদ ভাইয়া,কালা ভুত লবিনের মতো ভালো না। আমাকে খেয়ে ফেলবে। কত বলো বলো মুখ,চোখ। আমি আম্মুল কাছে যাবো। খুলে দাও না। আল খেলবোনা।””

তিল চট করে চোখ মেলে ফেললো। আবার দরজার কাছে গিয়ে চিৎকার করে রিদকে ডাকতে লাগলো,

“” লিদ ভাইয়া,বিশ্বাস কলো আমি সিজাতকে নিয়ে লুমে আসিনি। বলো আব্বু বললো দেখেই তো সিজাত আমাকে নিয়ে লুমে এসেছিলো। আল উনি তো দরজা আটকাননি এমনি ভিলিয়ে দিয়েছিলো। আমি কিছু কলিনি,সত্যি বলছি। এই নাক ছুয়ে বলছি। দলজা খুলে দাও না প্লিজজজজ!””

ফোনের রিংটোনে রিদের ঘুম ভেংগে যায়। ঘুমঘুম চোখে ফোনটা কানে নিতেই ওর বাবা বলে উঠে,

“” রিদ, আমরা জ্যামে আটকা পড়েছি তাই আসতে লেট হচ্ছে! তুই কি বাসায় নাকি বাইরে? বাইরে থাকলে এখনি বাসায় চলে যা। তিল টা একা বাসায়, অনেক রাত হয়ে গেছে। নিশ্চয় খুব ভয় পাচ্ছে। আমার ফোনে চার্জ…””

ফোনটা কেটে গেলো। রিদ বুঝতে পারলো তার বাবা কি বলতে চেয়েছিলো। ফোনে তাকিয়ে দেখে ১০ টা বেজে ৫৭। ফোনটা পাশে রেখে রিদ আবার চোখটা বন্ধ করতেই লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ে। চারপাশে তাকাতেই মনে পড়ে সে এখনো তিলের রুমে
তিল? ও মাই গড। রিদ তরিঘরি করে ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই তিলকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে।

~~
“” এই,তিল। আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লি যে? খেয়ে শুয়েছিস তো?””

তাসমিয়া বেগমের ডাকে তিল ঘুমে আটকানো চোখটা মেলে তাকায়।

“” কিরে,কিছু বলছিস না যে? খেয়ে ঘুমিয়েছিলি?””
“” আম্মু!””
“” কি?””

তিল আর কিছু বলতে পারলোনা। নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকলো।

ডাইনিং টেবিলে বসে তিল সবাইকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। বিশেষ করে রিদকে। সবাইকে তো স্বাভাবিকই লাগছে তাহলে কি আমি স্বপ্ন দেখলাম?? তিল ভাত নাড়তে নাড়তে আবার ভাবনায় ডুব দিতেই তাসমিয়া বেগম বলে উঠে,

“” তুই এমন রাতেরবেলা হাতে চুড়ি পড়ে বসে আছিস কেন? তোর কি খাওয়ার সময় সাজুগুজু করতে ইচ্ছে হলো? হঠাৎ করে এমন সাজ পাগলি হলি কবে? তুই তো নায়িকাদেরকেও ছাড়িয়ে গেছিস।””

মায়ের কথায় তিল হাতে তাকাতেই চোখগুলো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো। এমন লাল লাল চকচক করা চুড়ি তার হাতে কিভাবে এলো? সেতো কোনোদিন চুড়ির দোকানেই যায় না তাহলে? তিল না চাইতেও রসগোল্লার মতো করা চোখদুটো রিদের দিকে চলে গেলো।

“” তোমার মেয়ের রুপ তো খসে খসে শেষ হয়ে যাচ্ছে,কাকিমা। তাই এখন কাচ টাচ পড়ে খসে যাওয়া রুপকে আবার মুখে লাগানোর চেষ্টা করছে!””
“” চুড়ি দিয়ে রুপ লাগানো?””
“” হুম। তোমার মেয়ে ফেসবুক থেকে এগুলোই তো শিখছে! কয়দিন পর দেখবে আলালের ঘরের দুলালের সাথে ভেগে গেছে। এখনি সামলাও!””

রিদ হাতটা ধুয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। তাসমিয়া বেগম রিদের পায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সামান্য চুড়ির জন্য আমার মেয়ে আলালের ঘরের দুলালের সাথে পালাবে???

তাসমিয়া বেগম মেয়ের কাছে গিয়ে হাতের চুড়ি খুলতে নিলে তিল হাতটা ছাড়িয়ে হাটা ধরে।

~~
তিল হাজার চেষ্টা করেও ঘুমকে বস করতে পারছেনা। বস করতে করতেই মাঝরাত হয়ে গেলো। যেইনা চোখ লেগে আসছে অমনি অদ্ভুত অদ্ভুত ফিলিং তাকে চুলকিয়ে দিচ্ছে।আর ঘুম ভেংগে যাচ্ছে।তিল শুয়ে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা শুধু মনে হচ্ছে তাকে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ঘুমের ঘোরে বারবার নড়েচড়ে উঠছে। এপাশওপাশ করেও যখন শান্তি পেলোনা,উঠে বসতেই মনে হলো তার পাশে কেউ বসে আছে। পাশে মুখটা বাকাতেই তিল অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,

“”লিদ ভাইয়া””

চলবে

ভালোবাসার রাত পর্ব ৫

0

#ভালোবাসার-রাত

#রোকসানা

পর্ব (৫)

তিলকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রিদ ওর ঠোট কামড়ে ধরলো। ব্যথায় তিল ছটফট করতে লাগলো। তাতে রিদের প্রতিক্রিয়া আরো বেকে বসলো। তিলকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে,ওর ঠোট থেকে বের হওয়া রক্ত চুষে নিচ্ছে রিদ! রিদের টেনে নেওয়া একেকটা নিশ্বাস তিলের রিদপিন্ডটা বের করে দিচ্ছে! সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে তিলের ইচ্ছে হলো রিদের গরম নিশ্বাসে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে। নিজের ভালোবাসায় মাখা হাতটা রিদের মাথার চুলে ডুবিয়ে দিতেই রিদ তিলকে ছেড়ে দিলো। তিলের উপর থেকে সরে পুনরায় কম্বলটা মুড়ি দিতে দিতে চিৎকার করে বলতে লাগলো,

“” বেড়িয়ে যা,আমার রুম থেকে। তোকে যেন আর কখনো আমার রুমে আসতে না দেখি। তাহলে রিদের না জানা চেহারাটাও তোর জানা হয়ে যাবে। আর সেটা কত ভয়ংকর হতে পারে তুই কল্পনায়ও ভাবতে পারবিনা!””

তিল ঘটনার আকস্মিকতা ভেংগে নিজেকে গুছিয়ে নিতে কিছুটা সময় নিলো। রিদের দিকে তাকিয়ে নিজের চুল,জামাকাপড় ঠিকঠাক করতে লাগে।

রিদ,কম্বলের নিচ থেকে একটা হাত বের করে তিলকে ধাকা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিয়ে বললো,

“” I said, get lost!””

তিল ফ্লোর থেকে উঠে ফুপাতে ফুপাতে বেড়িয়ে যাচ্ছে।

এতো কিসের রাগ আপনার? কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছেন আপনি? যখনি মনে হচ্ছে আপনি আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিচ্ছেন ঠিক তখনি আপনি ঝড়ের গতিতে আমাকে দুরে ঠেলে দিচ্ছেন। আবার যখনি মনে হচ্ছে আমি হয়তো কখনোই আপনার কাছে পৌছাতে পারবোনা তখনি আপনি নিজে এসে আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছেন। এ কোন দোটানায় ফেলে রেখেছেন আমাকে?? আপনি আসলে কি চাচ্ছেন?? আপনার ব্যবহার আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে! আপনি কি এই জ্বালা থেকে আমাকে মুক্তি দিবেননা???

তিল নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়তেই ঠোটের ব্যথারা আক্রমন করে বসলো। উফ! এতো কেন ব্যথা করছে?? সামান্য কামড়ে কি আমার মরন হবে?? যদি উনার সামান্য কামড়টাই সহ্য করতে না পারি? তাহলে কিসের ভালোবাসলাম আমি???

তিল চোখ দুটো শক্ত করে বন্ধ করে রাখলো। এই সামান্য কামড়েই তাকে হাল ছাড়লে চলবেনা!

~~
আয়নার সামনে দাড়িয়ে তিল ভয়ে শিউরে উঠলো। তার চিকন ঠোটদুটো আলুর মতো ফুলে ফেপে উঠেছে। ইশ! কি বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে আমায়! আমি এভাবে রিদ ভাইয়ার সামনে যাবো কিভাবে? শেষে যদি বলে উঠে,এতো বড় হয়েছিস অথচ অতি সামান্য কামড়ও সহ্য করতে পারিসনা??? তিলের ইচ্ছে হলো কেচি দিয়ে নিজের ঠোটটা কেটে পালিশ করে নিতে।

ঠোটে হাত বুলাতে বুলাতে তিল কাল রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনায় হেসে ফেলে। আমি আপনার রুমের সামনে যাওয়ার সাহস পায়না আর আপনি? আপনি খুব বেশি নির্লজ্জ। আপনার কি মনে হয়না আপনার রেখে যাওয়া সেই ছোট্ট তিল এখন আর ছোট্টটি নেই? তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শুধু শরীরের বাহ্যিক না তার ভেতরের অনুভূতিরাও যে এখন কথা বলে!

তিক রুম থেকে বের হয়েই সর্বপ্রথম মায়ের মুখোমুখি হলো,

“” তিল,তোর ঠোটে কি হয়েছে?””
“”তেলাপোকা কামড়িয়েছে, মা।””
“” সেকি,তেলাপোকা আর কোনো জায়গা পেলোনা,শেষমেষ আমার মেয়ের ঠোটে আক্রমন? তোর বাবাকে আমি এখনি তেলাপোকার ওষুধ আনতে পাঠাচ্ছি। তেলাপোকার চোদ্দগুষ্টিকে যদি আমি না কামড়িয়েছি তো আমার নামও…””
“” তুমি তেলাপোকাকে কামড়াবে?””
“” দরকার হলে তাই করবো। আমার দশটা না পাচটা না একটামাত্র মেয়ে আর সেই মেয়ের ঠোটের এই হাল করেছে? তেলাপোকারাও বুঝোক তোর মা তোর জন্য কি কি করতে পারে!””

তিলের মা ওর ঠোটের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিতেই তিল নিজের হাত দিয়ে ঠোটটা ঢেকে নিয়ে বলে,

“” মা,তেলাপোকা এখানে শুধু কামড়ই দেয়নি,তাদের হজম হওয়া উদ্দিষ্ট খাবারও রেখে গেছে। তাই তোমার এখানে হাত দেওয়া বারন।””
“” কেন?””
“” তোমাকে পরে বুঝিয়ে দিবো। এখন আমার ক্ষুধা পেয়েছে!””

তিল মায়ের দিকে ঘুরে তাকালোনা। তাকে পাশ কাটিয়ে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে ভালো করেই জানে এই মুহুর্তে তার মায়ের চেহারায় ভীষন বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ভেসে উঠেছে।

খাবার টেবিলে বসে সবাই খেতে ব্যস্ত হলেও তার রিদ ভাইয়াকে সেখানে পাওয়া গেলোনা। মাথাটা একটু ঘুরাতেই সোফায় ঠ্যাং দুটো ভাজ করে কোলের উপর প্লেট নিয়ে বসে আছে রিদ। চোখদুটো টিভির সামনে তাক করা। এমনভাকে তাকিয়ে আছে যেন তার চোখদুটোর পাপড়িগুলো কেউ সুপার গ্লু দিয়ে ব্রুর সাথে আটকে রেখেছে,পলক ফেলা নিষেধ। কি এমন দেখছেন উনি?? তিল টেবিল থেকে আরেকটু সরে এসে উকি দিয়ে টিভির দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে,

“” তুই কি ধনুক সাজার চেষ্টা করছিস?? শিকারীর ধনুক হবি?””

রিদের এমন কথায় তিল হকচকিয়ে গেলো। সোজা হয়ে মুখ বাকিয়ে চেয়ার টেনে খেতে বসে পড়লো। সবাই এখানে বসে খাচ্ছে উনার একা একা ওখানে খেতে হবে কেন?? এক সাথে খেলে কি উনার জাত যাবে?? সবকিছুতে বেশি বেশি।

তিল ঠোটের যন্ত্রনায় কিছুই খেতে পারছেনা। এদিকে বড় আব্বু তার বাল্যকালের ডক্টর বন্ধুকে ডেকে এনেছেন। তিনি তার চশমাটা খুলে তিলকে দেখছে যখনি মনে হচ্ছে দেখা শেষ,চশমাটা আবার পড়ে কিছু একটা লিখে আবার চশমা খুলে তিলের দিকে তাকাচ্ছে। তিলের মনে হলো উনি তিলকে দেখতে আসেনি বরং চশমা কিভাবে লাগাতে হয় আর খুলতে হয় শেটা শিখাতে এসেছেন।

পুরো বাড়ির সব জিনিসকে তছনছ করে তেলাপোকার ওষুধ লাগানো হচ্ছে। তিলকে বাসা থেকে বের করে মেইন দরজা আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে,ওষুধের প্রভাবে তেলাপোকারা ছুটাছুটি করবে আর তাদের দুশমন হিসেবে তিলকে আক্রমন করার চেষ্টা করবে তাই তার ভেতরে যাওয়া নিষেধ। এদিকে একা একা বাইরে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে তিলের কান্না পাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে আর কোনোদিন ঐ বাড়িতে ঢুকতে পারবেনা। কোনো এক অন্যায়ের কারনে তার চুলের মুঠি ধরে তাকে বের করা হয়েছে।

“” মিথ্যে কথাটাও ঠিকভাবে বলতে পারিসনা? কি বলছিস একবার ভাববিনা? মাথায় কি বুদ্ধীর ছিটেফুটাও নেই?””

রিদের কন্ঠ পেয়ে মাথাটা তুলে তাকালো তিল। তার ঠিক সামনেই একটা হলুদ কালারের টি-শার্ট পড়ে দাড়িয়ে আছে। চোখে,মুখে বিরক্তের ছাপ!

“” একটা কামড়ের জন্য তুই আমাকে তেলাপোকা বানিয়ে দিলি?””
“” সলি।””
“” সরি বললেই আমি এখন তেলাপোকা থেকে মানুষ হয়ে যাবো?””

তিল অনুশোচনা চাহনি নিয়ে রিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি তেলাপোকা বলেছি দেখে কি উনি সত্যিই তেলাপোকা হয়ে গেলো? তিল একটু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে নিলেই রিদ বলে উঠে,

“” হাত পাত।””
“” কি?””

রিদ তিলের হাতটা টেনে নিয়ে হাতের মধ্যে কয়েকটা আধমোরা তেলাপোকা রাখলো। যেগুলো এখনো থেকে থেকে নড়ে উঠছে। তিল ভয়ে ফেলে দিতে নিলে,রিদ ওর হাত চেপে ধরে বললো,

“” এইগুলো নিয়ে তুই এই রোদের নিচে ২ ঘন্টা দাড়িয়ে থাকবি।””
“” তেলাপোকা আমাল ভয় লাগে লিদ ভাইয়া!””
“” যে জিনিসে তোর ভয় লাগে সেটা তোর মুখ থেকে বের হলো কেন??””

তিলের উত্তরের প্রয়োজন মনে করলোনা রিদ। সে জানে তিল হাত পা কাপুনি নিয়ে চোখ বন্ধ করে হলেও ঐ রোদে ২ ঘন্টা দাড়িয়ে থাকবে।

~~
সিজাত অতি উৎসাহের সাথে তার বাবা মাকে নিয়ে হাজির। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। এতক্ষনে তার মা বাবার আসার কারনও সবাই জেনে ফেলেছে। কিন্তু এই ব্যাপারে তিলের মতামত সব থেকে বেশি প্রয়োজন মনে করলো তিলের বড় আব্বু।

“” আংকেল,আপনি ঠিকই বলেছেন। আমিও চাই তিলের মত নিয়েই শুভকাজ হোক। আমি কি ওর সাথে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে পারি?””

সম্মতি পেয়েই সিজাত তিলকে নিয়ে ওর রুমে চলে আসলো।

“” তিল,আমি আমার মনের কথা চিঠিতে সব বলে দিয়েছি। আর রিদ হয়তো তোমাকে চিঠিটাও দিয়ে দিয়েছে। চিঠিটা রিদের হাতে পাঠিয়েছি বলে তুমি রাগ করোনি তো?? আর তোমার ঠোটে কি হয়েছে?””

তিলের ইচ্ছে হলো সিজাত যে হাতে চিঠিটা রিদকে দিয়েছে সেই হাতটা কেটে টুকরো টুকরো করে ওর প্যান্টের ভেতর ভরে দিতে। সিজাতের হাতের দিকে তাকাতেই তিল অবাক হয়ে বললো,

“” আপনার হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ করা কেন?””
“” কি যে হয়েছে আমি নিজেও জানিনা। রাতে রিদের সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে উঠে দেখি হাতে ব্যান্ডেজ! রিদকে জিজ্ঞেস করায় বললো, রাতে ঘুমের ঘোরে নাকি তেলাপোকা হাত ফুটো করে রক্ত খাচ্ছিলো তাই ও ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আচ্ছা তিল,তেলাপোকারাও কি মানুষের রক্ত শুষে খায়?””

তিল আর কিছু ভাবতে পারছেনা। মাথাটা কেমন ভনভন করছে। মনে হচ্ছে মৌমাছিরা দল বেধে তার মাথায় মৌচাক বসানোর প্লেন করছে। সিজাতকে রুমে রেখেই ও বেড়িয়ে আসে। সবার ডাক অগ্রাহ্য করে সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে আসে।

শাওয়ার শেষে বের হতে গেলেই তিল বুঝতে পারলো তার দরজা খুলছেনা। বারবার সিটকিনি নাড়িয়ে চাড়িয়েও যখন দরজা খুলতে পারলোনা,ভয়ে তিলের গলা শুকিয়ে এলো। চিৎকার করে আম্মুকে ডাকছে আর দরজা বাড়ি দিচ্ছে। দরজার ওপাশ থেকে একটা কন্ঠ ভেসে উঠলো,

“” গলা ভেংগে চিল্লালেও কেউ শুনতে পারবেনা। বাসায় কেউ নাই।””

চলবে