Wednesday, August 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1975



লতাকরঞ্চ (৪)

0

লতাকরঞ্চ (৪)

এক গুচ্ছ ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর ভাই। ফুলগুলো সুন্দর। নাম মনে করতে পারছিনা।
দরজা খুলেই কিশোর ভাইকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কিশোর ভাই হচ্ছে আমার আব্বার একজন বিশেষ ছাত্র। আব্বা ম্যাথের টিচার ছিলেন হাই স্কুলে, সেখানে সর্বদাই টপ লিস্টে সবার আগে নাম উঠতো এই ভাইয়ের। নম্র,ভদ্রতার শীর্ষে থাকার জন্যে আব্বার প্রিয় এই ছাত্র এখন আমাদের পরিবারেরই একটা অংশ হয়ে গিয়েছে।

মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠান ও আব্বার নানান অপ্রয়োজনীয় আয়োজনে প্রায়াশই কিশোর ভাইকে দাওয়াত করা হয়, উনি আসেন।
এবার উনি যতই কাজে ব্যস্ত থাকুক না কেন, স্যারের কথা ফেলা যাবেনা। এটা উনার জন্য এক কথায় অধর্ম।

উনি আসলেই আমার সাথে উনার কথা হয়, মেলামেশা হয়। খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ একজন মানুষ বলতে গেলে।
রাগী স্বভাবটা নেই বললেই চলে।
যতবার আসবে আমাদের বাড়িতে; ততবারই ফুল নিয়ে আসবে। একদম কখনো ভুল করেও ভুল করেনা এই ধারায়।

আব্বার জন্য আনেন কিছু নিজের বানানো সরঞ্জামাদি ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই। আম্মার জন্য কিছু হাদিসী বই ও আনেন। কিন্তু কখনোই লিমা আপুর জন্য কিছু আনেনা। কারনটা জিজ্ঞেস করবো করবো করে আর করা হয়না। কিশোর ভাই অনেক মেধাবী মানুষ।
সবসময়ই মুখে হাসি লেগে থাকে। ম্যাথমেটিক্সে অনার্স,মাস্টার্স শেষ।
________

আমার ধ্যান ভাঙিয়ে দিয়ে বললো,
– কি? এবারের ফুলগুলো পছন্দ হয়নি?
— কি বলেন ভাইয়া!হবেনা কেন! এগুলো কি ফুল?
– এগুলো হচ্ছে… নাহ্। চলো আজকে বিকেলে ঘুরতে যাই। এই ফুলগুলোর সন্ধানে.. ফুলেল সমৃদ্ধ এক বিশাল বাগানেই নিয়ে যাবো তোমায়।
আমি আর না করলাম না। মাথায় উল্টাপাল্টা চিন্তারা দম ধরে আছে। এদের দূর করতে হবে।
•°•
লাঞ্চ টাইমে…
খাওয়ার টেবিল থেকে হঠাৎ উঠে চলে আসলাম।
আমি উঠার সাথে সাথে কিশোর ভাই ও উঠে চলে এলো।

আমি আমার রুমের জানালার পাশে বসে খাচ্ছি।
কিশোর ভাইও পাশের চেয়ারটা টেনে এনে আমার পাশেই বসলো।

আমি মনে মনে ভাবছি, এবার হয়তো প্রান্ত ভাইয়ার মত করে আধো আধো গম্ভীর স্বরে বলবে,
– পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে তোর?
আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে কিশোর ভাই বললো,
– জানো আজ আমার ছোট বোন রাফা কি করছে? তোমার জন্য নিজে গিয়ে, নিজের পছন্দমত ফুল নিয়ে আসছে।

রাফা আমার ৪ বছরের ছোট হয়। খুব দুষ্ট, মিষ্টি একটা মেয়ে। আমার গানের পাগল। যখনি আসবে বা দেখা হবে কোথাও; তখনি আবদার করে বসবে,
– আপু, একটা গান শোনাও না!
আমি আবার মোটামোটি গান-টান পারি। একদম অল্প। একেবারেই যাচ্ছেতাই গাই। তবে দু:সময়ের এক প্রিয় সঙ্গী হয়ে হানা দেয় আমার এই গানগুলোই। ভালোবাসি গাইতে।

পারিবারিক আড্ডায় একবার একটা গান ধরেছিলাম। সবাই প্রশংসা করলেও প্রান্ত ভাই মুখ বাঁকা করে বলেছিলো,
– এগুলো কি গানের পর্যায়ে পড়ে? কিসব হাবিজাবি গাস,বলদ কোথাকার। গলায় আরো ধার দিবি তারপর গাইতে আসবি।
কথাগুলো খুব গায়ে লাগছিলো।
আমি যেঁচে গান গাইতে যাইনি।
সবাই জোর করাতেই একটা গেয়েছিলাম।
প্রান্ত ভাইয়ের এরকম উপদেশ আমার মোটেও ভাল্লাগেনা। তারপর ফুফু এসেই থামালো এই অটোমেটিক মেশিনকে।

অথচ কিশোর ভাই একদম তার উল্টো।
উনি আমার গান খুব পছন্দ করে।
মাঝেমধ্যে, সাথে করে ছোট বোন রাফাকে নিয়ে আসে মূলত আমার গান শোনার জন্যই। অথচ নিজে কোনোদিন কোনো আবদার করেনি।
যে লতা অমুক গানটা গাও বা এরকম কিছু।
•°•
কিছুক্ষন পর শুনলাম সবাই “প্রান্তিক প্রান্তিক” বলে চিৎকার করছে।
তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখলাম খাবার না খেয়েই হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে সেই ভদ্রলোক।
খাবার ফেলে দিয়ে এভাবে চলে যাওয়ার অর্থ কি তা আমার জানা নেই আর জানতেও চাইনা।

যথারীতি,
কিশোর ভাই আর আমি বেরিয়ে পড়ার জন্য রেডি হয়ে গেলাম।
আকষ্মিকভাবে কিশোর ভাই আর আমার জামা-কাপড়ের কালার এক হয়ে গেলো।
দুজনেই সাদা কালারের শার্ট আর থ্রি-পিস পড়েছি। কেউই আগে থেকে কোনো ডিসিশন নেই নি, প্ল্যানিং তো দূর।

বেরিয়ে পড়ার আগে অবশ্য প্রান্ত ভাইকে দেখেছিলাম। আমি না দেখার ভান করে ক্রস করে চলে আসছিলাম। উনি যে আমাকে দেখার জন্য উতলা হয়ে আছে একদম; ঠিক তা না। তেমন কোনো প্রভাবই পড়েনি লোকটার উপর।
তবে মুখ দেখে মনে হয় কাউকে বুঝি এখনি খুন করে আসছে এবং সেই দায়েই আজ ফেঁসে গেছে।
নয়তো অমন গোমড়া মুখ করে থাকার কোনো মানে আছে?
___________

কিশোর ভাইয়ের সাথে আমি এমনিতে অনেকটাই ফ্রি। কারন কিশোর ভাইতো প্রান্ত ভাইয়ের মত নয়। উনি হচ্ছে একদম খোলা-মেলা মনের মানুষ। উনার মুখ দেখলেই সব বুঝে নেওয়া যায়..খোলা বইয়ের ন্যায়, যখন যার ইচ্ছা সব পড়ে নিতে পারে।(মানুষ ভেদে)

উনার মধ্যে সাহিত্যরস আছে।
আমার মধ্যেও খানিকটা আছে।
আব্বার ও সাহিত্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে লিপ্ততা আছে বিধায় আব্বার কিশোর ভাইকে এত পছন্দ করে।

উনি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে।
মন খারাপ হলে ১ মিনিটেই ভালো করে দিতে পারে। সেন্স অফ হিউমর অতটা না থাকলেও উনার বোকা বোকা কিছু কথা হাসিয়ে ফেলতে বাধ্য করে।

বের হওয়ার আগে একবার আম্মার রুমে যাচ্ছিলাম। গিয়ে দেখলাম ফুফু, প্রান্ত ভাই আর আম্মা কিসব যেন আলোচনা করছে। আমাকে দেখেই প্রান্ত ভাই এগিয়ে আসলো।
আমাকে বোধ হয় আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগতেছে তাই হয়তো কিছু বলতে আসতেছে…
ভ্রান্ত ধারণাকে পিষে দিয়ে বরাবরের মতই লোকটা পাশ কাটিয়ে চলেই গেলো।

আমি আম্মার কাছে বলে বেরিয়ে পড়লাম।
____________

আমরা এক বিশাল বড় পুকুরের পাড়ে বসে আছি, পিছনটায় আছে প্রকাণ্ড মাঠ। মাঠে কিছু গরু -ছাগল আছে.. এক পাশে আছে বাহারি ধরণের গাছ। দৃশ্যপট ভালো। পাশের মানুষটাও ভালো।
সবকিছু মিলিয়ে ভালোই লাগতেছে সবকিছু। গতকাল রাতের সেই পীড়াদায়ক মুহূর্তের কষ্ট এক নিমিষেই কেটে গেলো।

অনেক গল্প করলাম। অনেক কিছুই শিখলাম।
আমাকে নাকি ফুল দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে অথচ এখনো ফুলের কাছেই নিয়ে গেলোনা।
– ভাইয়া, ফুলের বাগান? কোথায় সেই ফুল?

কিশোর ভাই মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
– এই পরিবেশে আবার ঐ ফুল খুঁজো?
এখানেও ফুল আছে তবে এরা অবহেলিত।
এই বলে কিছু কচুরিপানার ফুল,ঘাসফুল তুলে এনে দিলো। দামী প্যান্টটা বটে,ইস্ত্রি করা শার্টের হাতা বটে নিয়ে পুকুরের মধ্যে ভাসমান কচুরিপানার ফুল তোলার সময় মানুষটার সাদা শার্টে কিছুটা কাদা লেগে গেলো…
অথচ সেদিকে তার বিন্দুমাত্র ও খেয়াল নেই।

তারপর বললো,
– সুন্দর না এগুলো? জানো, এগুলো আমার প্রিয় ফুল। কত সুন্দর দেখতে.. তাইনা?
আমি মাথা নাড়ালাম হ্যাঁসূচকভাবে।

ভাই কৌতূহলী কৌতূহলপরবশ হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– তোমার কোনো কারনে খুব মন খারাপ; তাইনা?
•°•
আমি আচমকা এই কথা শুনে চোখের পাঁপড়ি ঘন ঘন ফেলে ঠোঁট চেপে বললাম,
– না মানে…হ্যাঁ।
ভাই বললো,
– আমি এসেই বুঝতে পারছিলাম। তাছাড়া লিমা আপু বলেছিলো যে কোনো একটা অজানা কারণে তোমার মুড অফ।
আমি কিছুই বললাম না।
ইচ্ছা করতেছে কালকের সব ঘটনা শেয়ার করি।
কিন্তু অজানা কারণে মন সায় দিচ্ছেনা অথচ ইচ্ছেরা তাড়া দিচ্ছে।
___________

” শুনো লতা, জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত এনজয় করার চেষ্টা করবা। সবকিছু তোমার মর্জিমাফিক হবে এমন কোনো ধরা-বাঁধা নেই। যাই হয় সবই পজিটিভলি মেনে নিবা; আর যার জন্য হয় তাকে নেগেটিভভাবে নিয়ে নিজের চিন্তাশক্তির বাইরে ছেঁড়ে দিবা। যে তোমায় বুঝবে, পছন্দ করবে তুমিও তাকে তাই করবা। দেখবা মন উৎফুল্লতায় ভরপুর থাকবে। ভালো লাগবে। খারাপ লাগার মত কথাগুলো থেকে শিক্ষা নিবা তারপর পড়ে থাকা বাকি উচ্ছিষ্টগুলো ঝেড়ে ফেলে দিবা। ”

কথাগুলো কিশোর ভাইয়ের মুখ থেকে বেরোচ্ছিলো আর আমার হৃদয়ে একটা- একটা করে গেঁথে যাচ্ছিলো।
কি সুন্দর করে কথা বলে মানুষটা।
•°•
দুজন একসাথে বাড়ি ফিরলাম।
বিকেলে আড্ডার আসর জমেছে।
প্রান্তিক ভাই ও আছে, কিশোর ভাই ও আছে।
আমি গিয়ে আব্বার পাশে বসলাম।
আব্বার থেকে কিছু দূরেই বসে আছে কিশোর ভাই। প্রান্ত ভাই অপোজিট সাইডে বসে মোবাইলের স্ক্রিনে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে।
নিশ্চয়ই ঐ শোভার সাথে প্রেমালাপ(প্রেমের আলাপ) চলছে…
একবার চোখাচোখি হয়ে গেলো প্রান্ত ভাইয়ের সাথে।

এমনভাবে চোখ ফিরিয়ে নিলো যেন আমি উনার বাড়া ভাতে ছাঁই দিয়েছি।
চলবে….

#ফারজানা_রহমান_তৃনা।

লতাকরঞ্চ (৩)

0

লতাকরঞ্চ (৩)

৫ টা মেয়ের সাথে একটা ছেলের আড্ডাবাজি দেখতেছি রিক্সায় বসে বসে। অনেক কষ্টে একটা রিক্সা জোগাড় করেছিলাম। শপিংমলের সামনে পৌঁছেই লক্ষ্য করে দেখলাম ৫ টা মেয়ের মাঝে থাকা ঐ একটা ছেলে হচ্ছে প্রান্তিক ভাই। বাহ্!
এই যে আমি, মিস লতা এভাবে রাগ করে চলে গেলাম এইজন্য তো তার সামান্যতম ভ্রুক্ষেপ নেই_ই তদুপরি কি চলছে? তুমুল হাসি-ঠাট্টা! বাহ্!
– আফা নামেন। (রিক্সাওয়ালা)
নেমে পড়লাম। প্রান্তিক ভাই একবার তাকিয়ে সিউর হয়ে নিয়েছেন যে আসলেই আমি আসছি কিনা।

এই একবার যে তাকালো আর ফিরেও তাকালো না। আমি কিভাবে আগে কথা শুরু করবো ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছিনা। ফুফাতো ভাই হলেও ভাইয়ার সাথে আমার দুরুত্ব তৈরী হয়ে গেছে নানান কারণে।

আমি ভাইয়ার পিছন বরাবর গেলাম। যাতে উনি বুঝতে পারে যে আসলে আমি উনার জন্যই আবার এতদূর ছুটে এসেছি। কিন্তু না। ভাই ঐ মেয়েদের সাথে কথা বলেই যাচ্ছে। আমি যে তার পিছনে আসতে পারি বা তার জন্যই আবার মৃতপ্রায় হয়ে ছুটে আসতে পারি; এমন কিছু হয়তো মানুষটা ভাবেইনি।
আমি ভাইয়ার আরো কাছে গেলাম। ডাক দিবো তখনি শুনলাম তাদের কথোপকথন…

একজন বলছে,
– কিরে প্রান্তিক? শোভাকে আর কয়দিন এভাবে ঝুলায়ে রাখবি? বেচারি তো তোর জন্য বিয়ে ও করতে পারতেছেনা.. মেয়ে হয়ে তোকে প্রপোজ করলো আর তুই কিনা চুপ করে আছিস!!
ভাই মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে শুধু।

ভাইয়ের পাশেই গা ঘেষে বসে আছে যে মেয়েটা ঐ মেয়েটার অবস্থা সীমাহীনমাত্রার সৌন্দর্যে ভরপুর।
মেয়েটার ড্রেস আপ, জুয়েলারি, চুল সবই চরম শৌখিনতায় ঠাঁসা। একদম পাক্কা ঢাকাইয়া, ফ্যাশনাবল মেয়ে বলা চলে।
মেয়েটা একটু বেশিই ক্লোজ হয়ে বসে আছে ভাইয়ার সাথে। ভাইয়াও নড়ছে না। মেয়ে কি বলি, আপুই হবে। নির্ঘাত আমার চেয়ে বড় হবে, শারীরিক গঠন ও তাই বলে।

এটলিস্ট ভাইয়াতো একটু সরে বসতে পারতো।
তাহলে এই মেয়েটাই কি শোভা?
কিছুক্ষন পরে অন্য একটা মেয়ে ধাক্কা দিয়ে যখন আমার সন্দেহ করা সেই মেয়েটির প্রতিই ইঙ্গিত করে বললো যে,
– কিরে শোভা? বল, ঠিক বলছিনা? তখনি বুঝতে পারলাম ব্যাপারখানা।

শোভা নামের মেয়েটা কথাটা শুনেই মাথা নিচু করে হাসতে লাগলো। ব্যস!
আরকি? বুঝা হয়ে গেলো সব আমার। ভাইয়ার তাহলে অলরেডি গার্লফ্রেন্ড আছে।
আমি লিমা আপুকে কল করে আপুর কাছেই চলে গেলাম। শপিং শেষে নিস্তব্ধ হয়েই বাড়ি ফিরে এলাম। আপু পথে একবার জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে মন খারাপ?
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
– না না।
মঞ্জু ভাই আপুর পাশেই বসেছে। বসে বসে কত কথাই না বলছে.. একটু গাঁধা টাইপের তবে ভালোই।

আপুকে একটা রিং আর কানের দুল গিফট করেছে নাকি।
আমার জন্যও নাকি কি কি কিনেছে কিন্তু আমার সেদিকে মন নেই। জানিনা কেন এত মন খারাপ লাগছে। মঞ্জু ভাই হেসে বললো,
– লতা, চকোলেট খাবি? কত খেতে চাস? এই দেখ তোর জন্য কতগুলো চকোলেট এনেছি।
আমি মৃদ্যু হাসি দিয়ে বললাম,
– থ্যাংক ইয়্যু ভাইয়া।
আর কিছুই বের হলোনা মুখ থেকে।
অত:পর বাসায় ফিরে এলাম।
______________

এতদিন প্রান্তিক ভাইয়ের প্রতি সামান্য দূর্বলতা ছিলো আমার। ফেসবুকের সার্চ লিস্টে সবার আগে উনার নামটাই ছিলো। দিন রাত মিলিয়ে কয়বার করে যে এই একাউন্টে আমি ঢু মেরে আসতাম তা বলাই বাহুল্য। এক কথায় অগণনীয়।
•°•
এতদিন একটা চাপা রাগ ছিলো ভাইয়ার প্রতি আমার। কারন উনি আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়নি।
উনার স্ট্যাটাস, পোস্ট সবকিছুতেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েদেরই কমেন্ট, লাভ রিএকশন পড়ে বেশি।
যদি ও সবগুলো মেয়ে রিপ্লাই পায় ও না। তবে প্রশ্রয় পাচ্ছে এরা তা বুঝা যাচ্ছে। কমেন্টে রিপ্লাই না থাকলেও ইনবক্সেও যে চ্যাট হচ্ছে না তা আমি জানবোই বা কি করে। জানার কথাও না।
আমি রোজ নিয়ম করে একবার দেখে আসতাম ভাইয়ার ভার্চুয়াল জগত। রীতিমত সেলিব্রেটি উনি.. কত ফ্যান, ফলোয়ারস উনার..

এদিকে আমি যে এক কোণায় পড়ে আছি তার ইয়েত্তাই নেই..
থাকবেই বা কেন? কে আমি!
বাড়িতে ফিরেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ফেলি। খুব কান্না পাচ্ছে।
কারন জানা নেই। আমি কি তাহলে প্রান্ত ভাইকে মনে মনে পছন্দ করতাম?
এত কষ্ট কোথা থেকে সাপ্লাই হচ্ছে! এদ্দিন(এতদিন) কই ছিলো!

গায়ের জামা-কাপড় গুলোও ছাড়িনি, এগুলো নিয়েই শুয়ে পড়লাম। মাঝখানে আম্মা চিৎকার চেঁচামেচি করে দরজা খুলিয়ে ভাত খাইয়ে গেলো; একরকম জোর করেই। আম্মা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই প্রচন্ড মাথাব্যাথা শুরু হলো। প্রচণ্ড ব্যাথা।
আমার আবার সহসা মাথাব্যাথা হয়না কিন্তু একবার হলে আর ছাঁড়েনা।

আজ ও তার ব্যতিক্রম নয়। বমি করে সব ভাসিয়ে দিলাম। কিছুটা কমেছে কিন্তু ঘুম আসছে না।
মাথায় নানা রকমারি প্রশ্ন আর চিন্তারা ঘূর্ণিপাক খাচ্ছে অনবরত। ঝিম ধরে আছে মাথাসহ পুরো শরীর। চোখ বন্ধ করলেও ঐ শোভা নামের মেয়েটিকে দেখি, খোলা রাখলেও তাই..

বিছানার এপাশ-ওপাশ গড়াচ্ছি কেবল।
খুব হিংসা হচ্ছে..
মেয়েটাকি সত্যিই আমার থেকে বেশি সুন্দর?
সেদিন রাতে পুরোপুরিভাবে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। সারারাত ছটপট ছটপট করতেছিলাম।
____________

সকালটা অবশ্য খুব সুন্দর করেই শুরু হয়েছিলো।
আমি আব্বাকে ভীষণরকমভাবে পছন্দ করি।
সকালটা তার মুখ দেখেই শুরু হলো।
ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বা মিষ্টি, পায়েস সামনে নিয়ে বসে আছে। হাতে একটা ম্যাগাজিন বা পত্রিকা দেখা যাচ্ছে। আমাকে উঠতে দেখেই আব্বা খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– অবশেষে আমার রাজকন্যার ঘুম ভাঙলো!
এতক্ষন ধরে আমার ঘুম ভাঙার জন্যই অপেক্ষা করে বসেছিলো।

আমি আব্বার হাতে মিষ্টি,পায়েস দেখে চমকে গেলাম। আব্বা আবার আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেনিতো?
আমি তোঁতলাতে তোঁতলাতে জিজ্ঞেস করলাম,
– কি হইছে আব্বা?
আব্বা হাতে থাকা পত্রিকাটা এগিয়ে দিলেন আমার সামনে।
আব্বা আবার গল্প,কবিতা লিখেন মাঝেমধ্যে; শখের বশত। রিটায়ার্ডের পর এইটার প্রতি আব্বার এক অভাবণীয় আসক্তি জন্মেছে। আব্বার লিখা গল্প পত্রিকার জন্য সিলেক্ট হয়েছে,ছাপানোও হয়েছে। সেই খুশিতে আব্বা কালুকে দিয়ে দোকান থেকে কুমিল্লার মিষ্টি আনিয়েছে।(কালু বাড়ির কাজের লোক।)

আম্মাকে ভোরে উঠিয়ে দিয়ে পায়েসও রান্না করিয়েছে। দুপুরের জন্য কাচ্চি বিরিয়ানীর আয়োজন হচ্ছে। সেই বিরিয়ানীর গন্ধে মৌ মৌ করছে সারা বাড়ি। আমাদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান, বিয়ে ছাড়াই মাঝেমধ্যে এরকম খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দের শোরগোল দেখা যায়।
সবই আব্বার ইচ্ছা, খুশি মোতাবেক হয়।

আব্বা যেকোনো রকমের সুসংবাদ বা সামান্য খুশিতেই হৈ চৈ শুরু করে দিয়ে সারা বাড়ির সবাইকে মাতোয়ারা করে ফেলে।
অল্পেই তুষ্ট হওয়া একজন নিতান্তই নীরব প্রকৃতির ভালো মানুষ আমার আব্বা।
আব্বার মিষ্টি গল্পের সাথে সাথে সকালের পাখির কিচিরমিচির ধ্বনি আর মিষ্টি পান দিয়েই আমার সকালটা সমাপ্ত হলো।
•°•
আব্বা চলে যাওয়ার পর আবার মনে পড়ে গেলো ওসব বাজে-বিদঘুটে মুহূর্তগুলো।
দরজার ছিটকিনিটা লাগিয়ে, মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবার ফেসবুকে ঢুকে প্রান্তিক ভাইয়ের একাউন্টে গেলাম।
দেখলাম এখনো আমার রিকুয়েস্টটা ফিজরাপুলের আসামির ন্যায় ঝুলে আছে।
খুব খুব রাগ হলো।
১২ ঘন্টা আগেই দেখা যাচ্ছে উনি ফটো আপলোড করেছেন। ক্যাপশনে দেওয়া,
” কিছু সুন্দর মুহূর্ত, কিছু সুন্দর সুন্দর বান্ধবীদের সাথে! ”

ঐ পাঁচটা মেয়ের পাশাপাশি শোভা নামের মেয়েটা আর প্রান্ত ভাইয়ার আলাদা করে তোলা কিছু সেলফিও দেখা যাচ্ছে।
দুজনের হাসিভরা সেলফি দেখে এক মুহূর্তের জন্য নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। গা কুঁকড়ে উঠলো।

মেয়েটা দেখতে সুন্দরই হয়তো কিন্তু আমার কেন জানিনা ওকে এখন দেখলেই কেমন যেন একটা অস্বস্তি- অস্বস্তিভাব লাগে। অথচ গতকাল হয়তো সব জানার আগে ভালোই লাগছিলো।

মেয়েটা আমার চেয়েও বেশি শিক্ষিত, সুন্দরী। আচ্ছা। কিন্তু আমি এত ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ছি কেন?

এইতো সেদিন ও তো মনে মনে ভাবছিলাম নিজের বোনের সাথেই বিয়ে দিয়ে দিবো..
তাহলে কি আমি মনে মনে…..
কথাগুলোকে পাত্তা না দিয়ে সোজা ভাইকে ব্লক করে দিলাম। লাগবেনা আমার কাউকে।
_____________

কিছুক্ষন এভাবেই চুপ করে বসে রইলাম জানালার পাশের সেই ছোট্ট পুকুরটার দিকে তাকিয়ে….
হঠাৎ জোরে জোরে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেলাম।
এতটাই অন্যমনষ্ক ছিলাম যে কড়া নাড়ানোর আওয়াজটা টেরই পেলাম না!

দরজার ওপাশ থেকে লিমা আপু বলছে,
– লতা, এই লতা। দরজা খোল। কিরে? আর কতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখবি? দেখ দেখ তোর সাথে দেখা করার জন্য কে আসছে। জলদি খোল!
•°•
আমি হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেলে দিলাম বিছানায়।
চোখের কোণায় জমে থাকা জলগুলো মুছে ফেলতে ফেলতে ভাবলাম,
– প্রান্তিক ভাই নয়তো?
চলবে…

(আসলে আজকে গুরুতর একটা কারণে নেটওয়ার্কের বাইরের একটা জায়গায় চলে আসতে হয়েছে আমার। তাছাড়া পড়াশোনার কিছু চাপের তাগিদে ও নানান সমস্যা থাকার কারণে দেরী হয়ে যাচ্ছে এই ধারাবাহিক গল্পটা দিতে। এর জন্য আমি বিশেষভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি সবার কাছে। দু:খিত। আর #লতাকরঞ্চের প্রতি আপনাদের অগাধ ভালোবাসা আমার লিখায় আরো উৎসাহ ও প্রাণস্পন্দন জুগিয়েছে। ধন্যবাদ পাঠকগণ। এভাবেই পাশে থাকুন। ফিয়ামানিল্লাহ্।)

#ফারজানা_রহমান_তৃনা।

লতাকরঞ্চ (২)

0

লতাকরঞ্চ (২)

আমাদের দুজনের মধ্যে দুরুত্ব খুব বেশি নেই। একি ট্যাক্সিতে পাশাপাশি বসে আছি দুজন। প্রান্তিক ভাইয়া যদি এখন কিছু বলে ফেলে আমি কি বলবো?
যদি বলে, ” চল লতা আমরা অমুক জায়গায় যাই…. চল তমুক জায়গায় আজ তোকে নিয়ে যাবো.. ”
তখন আমি কি বলবো? লতা ভাবছে..

ভাইকি এখন আলতোভাবে স্পর্শ করে দিবে আমার হাত?
আমি তখন মৃদ্যু স্বরে বলে উঠবো,
– আরে আরে কি করছেন? ড্রাইভার আংকেল আছে তো!

ভাই কি তখন বলবে?
– থাকুক না! ক্ষতি কি? হাত ধরা কি অপরাধের কিছু?
লতা ভাবছে..
সে এইসব কথা শুনার পর সুন্দর করে একটা হাসি দিবে তারপর চোখ ফিরিয়ে নিবে বাইরের দিকে..

•°•°•°•°•°•°•°•

” এই লতা! কিরে? কি ভাবছিস এত? নেমে পড়, শপিংমল এসে গেছে। ”
প্রান্ত ভাইয়ের এই কথা শুনে লতা কাচুমাচু করতে লাগলো। সেকি! ভাইয়াতো কিছুই বললোনা,করলো না।
এতক্ষন বুঝি সে স্বপ্নই দেখতেছিলো?
কিন্তু ওতো স্বপ্নগুলো অনুভব করতে পেরেছিলো!
মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি ছুঁয়ে দিলো!
এই বুঝি ছুঁয়ে দিয়েছে..
এমনটাই তো মনে হলো!
তাহলে?

লতা নামছে না।
প্রান্ত বললো,
– সমস্যা কি তোর? নামছিস না কেন?
লতা কিছু বললো না।
প্রান্ত বললো,
– ঠাঁস করে একটা চড় দিবো। নাম বলছি!
লতা চোখ ধাঁধিয়ে তাকালো এই কথাটা শুনে।
সে লক্ষ্য করলো ড্রাইভার সাহেব খুব বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কারণ উনার ভাড়ার সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু লতা নামছে না।

লতা আরো নোটিস করলো প্রান্ত ভাইয়ের চোখ-মুখে ফের রাগী রাগী ভাব চলে এসেছে, সামান্য এইটুকুর জন্যই!
লতা ড্রাইভারকে বললো,
– আংকেল আপনি গাড়ি ঘুরান। আমি আবার আগের জায়গাতেই যাবো।
ড্রাইভার সাহেব বললো,
– কি কন আফায়! তো, আমনেগো বাড়ির সামনেই আবার নিয়া যামু?
লতা হ্যাঁসূচক দৃষ্টি দিয়ে মাথা নাড়ালো।

প্রান্ত ভাই বলে উঠলো,
– মানে কি! এই! তুই কোথায় যাচ্ছিস? বাড়িতে! কিন্তু কেন?
লতা ফিরেও তাকালো না।
প্রান্ত বললো,
-আশ্চর্য তো! তুই নামবি কিনা?
লতা ড্রাইভারকে বললো,
– কি হলো আংকেল? গাড়ি চালান না কেন?

গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে।
প্রান্ত ভাই এতক্ষন বাইরে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সির দিকে ঝুঁকে ছিলো। যখন দেখলো আমি আর তাকাচ্ছিই না, গাড়িটাও স্টার্ট দিয়ে দিলো তখন উনি সরে দাঁড়ালেন।

•°•°•°•°•°•°•

বাড়ির দিকেই আবার রওনা হলাম।
ভাবতেছি, বেশি বেশি হয়ে গেলোনা?
এত রাগই বা আসলো কেন?
আমি যেটা ভাববো ওটাই হতে হবে কেন?
ইশ! কেন যে এই ওভাররিয়েক্টটা করে ফেললাম!
হয়তো আমাকে ভাইয়া এখান থেকেই কোথাও নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলো! কে জানে! ধুর!

ভাইয়াকে এখনি একটা ফোন দিবো।
তারপর সরি বলবো,ব্যস কাজ শেষ। বেশিই করে ফেলছি একদম… উনি আমার হয়ে আপুকে কথা শুনিয়েছে, একসাথে এসেছে…
কিন্তু, প্রান্তিক ভাইয়ের নাম্বারটা খুঁজে পাচ্ছিনা!

কি মুশকিল!
সেদিনই তো প্রান্তিক ভাই ড্রয়িংরুমে আমাকে ডেকে নিয়ে, নিজ হাতে সেইভ করে দিয়েছিলো উনার নাম্বারটা!
তাহলে এখন কোথায় গেলো নাম্বার?

আজ সকালে অবশ্য দেখলাম লিমা আপু ফোন খুঁজে পাচ্ছিলোনা..
তখন আমার কাছ থেকে আমার ফোনটা চেয়ে নিয়েছিলো। ওর নাকি আর্জেন্ট কাজ আছে।।

তবে কি এটাই ছিলো ওর আর্জেন্ট কাজ?
নাম্বারটাই ডিলেট করে দিয়েছে!
তাহলে কি আপু প্রান্ত ভাইকে…………
আমার আসলে প্রান্ত ভাইকে নিয়ে এসব ভাবা একদম ঠিক না। কিছুক্ষন আগে যে এক্সপেক্টেশনটা পুষে রেখেছিলাম মনে; ওটা একদমই অনুচিত আর অযৌক্তিক ছিলো।
আপু হয়তো উনার জন্য দূর্বল।
আমি যে প্রান্ত ভাইকে পছন্দ করি তাও না।
ব্যস! সামান্য ভালো লাগে, এই যা।
আর এরকম রাগী মানুষকে পছন্দ করতে আমার বয়েই গেছে।
এইসব উল্টাপাল্টা ভাবনা হচ্ছে বয়সের দোষ।

ফোন বেজে উঠলো।
নাম্বার অচেনা। চেনা চেনা লাগছিলো।

নিশ্চয়ই কোনো বাজে ছেলের ফোন। খুব ডিস্টার্ব করে সারাদিন। বাড়ির পাশেই একটা চায়ের দোকান। সারাদিন ওখানেই এদের আড্ডাবাজি চলে। আর কোনো কারণে যদি আমাকে বারান্দায় দেখছে তো, এই সারছে… বাইরেতো বের হওয়াই টাফ। সারাক্ষন পিছু নিবে, বাজে বাজে মন্তব্য ছুঁড়বে। আর আল্লাহর দুনিয়ার সব উল্টাপাল্টা গান গাওয়া শুরু করবে। পথেঘাটে দেখলে করে অপ্রাসঙ্গিক উক্তিতো আছেই। আর এই সময়ে ফোন করেছে.. কি একটা ঝামেলা আর টেনশনের মধ্যে আছি এখন।

রিসিভ করেই জোরালো কণ্ঠে বললাম,
– কে আপনি? সারাদিন শুধু মেয়েদের ডিস্টার্ব করা,না? আরেকবার ফোন করলে আব্বার কাছে বলে দিবো কিন্তু। যত্তসব।
ওপাশ থেলে শীতল কণ্ঠে বললো,
– বাহ্! নাম্বার নিজ হাতে সেইভ করে দিয়েছি তাও ডিলেট করে দিয়েছিস! এত বড় স্পর্ধা তোর!

এইরে!
এটাতো প্রান্ত ভাই! (প্রান্তিক কে শর্ট করে প্রান্ত বলে লতা।)
– ইয়ে মানে___ না ভাইয়া____আসলে আমি না___

ফোন কেটে দিয়েছে ঐ রাগী মানুষটা।
এবার সত্যি সত্যিই রাগ উঠেছে উনার।
এবারে আমাকেই কিছু করতে হবে।
– ড্রাইভার আংকেল! গাড়িটা ঘুরান প্লিজ!
উনি গাড়ি থামালেন না। চালিয়ে যাচ্ছেন…
– এই যে! গাড়িটা ঘুরাতে বললাম তো! একটু তাড়াতাড়ি ঘুরান না, প্লিজ!

ড্রাইভার আংকেল থামালেন গাড়ি।
খুব গম্ভীর দৃষ্টি নিয়ে মুখটাকে প্যাঁচার মত করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— কি? সমস্যা কি আফনের?
আমতা আমতা করে বললাম,
– না মানে আমাকে আবার আগের জায়গাতেই নিয়ে যান। আমি আপনার সব টাকা দিয়ে দিবো। তাও প্লিজ, একটু তাড়াতাড়ি করুন!

ড্রাইভার সাহেবের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে।
নির্ঘাত রাতে ঘুমায়নি অথবা গাঁজা, ভদকা খেয়েছিলো মনভরে তাই এরকম দশা হয়ে আছে চেহারার!
খুব ভয় লাগতেছে উনাকে দেখে।
এত রাগী চোখে প্রান্ত ভাই ও তাকায়নি কোনোদিন।
— আফা, আপনে নামেন। নাইম্মা যান্ কইতাছি।

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– নামবো মানে? আপনার যত হয়েছে ততই দিয়ে দিবো; বললাম তো!
উনি রেগে বললেন,
– না। আমি যামুনা। আমার আমনের মত এমন পাগল প্যাসিঞ্জারের দরকার নাই। আমনে নামেন। একবার কন এদিকে যান, আবার কন ঐদিকে যান। আমারে আর কয়বার চক্কর দেওয়াইবেন? পাগল পাব্লিক।

আমি ভ্যাবলাকান্তের ন্যায় তাকিয়ে আছি।
দুনিয়ার সবাই_ই বুঝি আমার সাথে এমন করে!
সবার রাগারাগি, রক্তচক্ষু, প্যাঁচার মত মুখ সবই বুঝি আমার জন্য?
শেষমেশ, এই ড্রাইভার আংকেল ও…
আহ্! কি হাস্যকর!
চলবে….

•°•°•°•°•°•°•°•°•°•°•
#ফারজানা_রহমান_তৃনা

লতাকরঞ্চ(১)

0

ওড়নাটা ঠিক করে পর, পড়ে যাচ্ছে। নিজের গায়ের ওড়নাটাও সামলে রাখতে পারিস না,বলদ?
কথাটা হঠাৎ কানে আসতেই লতা হুড়মুড়িয়ে পড়লো ওড়না ঠিক করা নিয়ে। সত্যিই তো! ওড়নাটা ঠিকভাবে ঠিক জায়গায় নেই!
প্রান্তিক ভাই না বললে হয়তো অনেক আফসোস করতে হতো আজ। একটা দাওয়াতে এসেছিলো তারা। প্রান্তিক ভাইয়া আমার ফুফাতো ভাই। এখন কুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। আমি লতা, সবে মাত্র অনার্সে উঠলাম।

প্রান্তিক ভাই আমায় ক্লাস এইটেই জানিয়েছিলো উনি আমায় পছন্দ করে। কিন্তু আমি উনার সাথে কম্পোর্টেবল না, এটা উনাকে বুঝতে দেইনা। মানে উনার পাশে আমি নিজেকে কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা। কারন উনার মেজাজ, উনার চাল-চলন ও বেশভূষা খুবই মার্জিত। আমার বড় ফুফুর একমাত্র আদরের দুলাল এই ভাইয়া। উনাকে কোনোদিনই আমি অন্য চোখে দেখিনি কিন্তু উনি যে আমায় পছন্দ করে তা আমার একেবারেই মনে হয়না। এখন আর করেনা বলেই আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিউর।

কারন তুই তুকারি করে শুধু। যেকোনো কথায় ও কাজে শুধু বকে। এত রাগী লোক যে দেখলেই ভয় লাগে। আমার আবার এত বকাবকি ভাল্লাগেনা। যে আমাকে বকে সেই আমার জন্য খারাপ। যেমন আমার আব্বা। উনি বেজায় রাগী মানুষ, তবে ভালো মানুষ। খুব আদর করে আমায় কিন্তু অল্প কিছুতেই খুব বকাবকি শুরু করে দেয় এজন্যই ভালো লাগেনা। তবে আব্বা আমার কাছে মোটেও খারাপ কেউ নয়। খারাপ লোক তো উনি, প্রান্তিক ভাই।

প্রান্তিক ভাই ঐ কথাটা বলেই হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে। আর ফিরেই তাকালো না। মনে হলো যেন উনার ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে তাই সেই ট্রেন ধরতেই যাচ্ছে এমনভাবে। ভাই দেখতে খুব সুন্দর, স্মার্ট। আর আমি! আমিতো তার ধারে কাছে ও যাইনা।
কিন্তু তবুও কেন যে..
অবশ্য এখন আর উনি আমাকে পছন্দ করেনা বলেই আমার মনে হয়।
কারন সেই ক্লাস এইটে থাকাকালীন কথাটা বলেছিলো,
আবেগের বয়স ছিলো; তাই হয়তো..
•°•
আমার বোন লিমা খুব সুন্দরী। ওর জন্য আমার খুব হিংসা হয়। বড় বোন দেখে বলতেও পারিনা কিছু। এবার সে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বেরিয়েছে। বাবা বিয়ের জন্য দেখছে কিন্তু
এক কথায় “না” করে দিয়েছে সে।
ও নাকি এখন বিয়ে করবেনা। এই ঝগড়ুটে বোন আর কারো কপালে না জুটুক এটাই মনে মনে কামনা করি। ওহ্! সারাক্ষন শুধু আমার পিছনে লেগে থাকে।

চুন থেকে পান খসলেই ক্যাঁচক্যাঁচ করে কথা বলে। বিশ্বাস করুন ঐ ক্যাঁচক্যাঁচানিটা এত তীক্ষ্ণ হয়ে যে কানের পর্দা ছেদ করে সেই ধ্বনি আমার মাথার ভেতরে চলে যায় আর সেখানে পৌঁছে আবার প্রতিধ্বনি করে! ফলফ্রসূ কি হয়?
তুমুল মাথাব্যাথা শুরু হয়।
এইজন্য ওকে আমি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি।
এটাকে মাথার উপর থেকে সরানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে একে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। কিন্তু…
•°•
প্রান্তিক ভাই বয়সে আমার অনেক বড় হয়। প্রায় ৬/৭বছরের মত। আমি উনাকে দুলাভাই হিসেবেই দেখি। আমি চাই লিমা আপুকে তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ঝাড়া হাত পা হতে।
কিন্তু প্রান্তিক ভাই কেমন যেন একটা।
উনি আপুকে তেমন একটা পছন্দই করেনা।

আপুর রুমে আমার এতদিন শুতে হতো।
এখন কি জানি কি হয়েছে আমাকে আর এলাউ করা হয় না সে রুমে। হয়তো এখন কোনো গোপণীয়তা আছে..
আমারই কেবল গোপণীয়তা জিনিসটা আসেনা! হাহ হা!
____________

” গাড়িতে করে যাবি নাকি বাইকে? ”
কথাটা পিছন থেকে প্রান্তিক ভাই বলে উঠলো আমি তখন লিমা আপুর সাথে যাচ্ছিলাম শপিং করতে। আমার জন্য না, আপুই কিনবে। আসলে সত্যি বলতে কি, ওর সাথে গিয়ে কেনাকাটা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। নিজের জন্য ঠিকি ভালোটা পছন্দ করবে আর আমার বেলাতেই ওর এলার্জি চাপে।

লিমা আপু প্রান্তিক ভাইয়ের কথা শুনেই আমাকে ডিঙিয়ে উঠে পড়লো বাইকে। তারপর আমাকে বললো,
– এই লতা! যা তুই ঐ ট্যাক্সিতে করে আয়। বলিস, মৌচাকের মোড়ে নামাতে।
এই বলে আপু বাইকে উঠে প্রান্তিক ভাইকে বললো,
– চলেন। আপনি আর আমিই যাই।
প্রান্তিক ভাই জিজ্ঞেস করলো লিমা আপুকে,
– তোমাকে বলছি? তোমাকে আমি তুই করে বলিনা কারণ পিঠাপিঠি বয়স। আমি লতাকে মিন করে বলেছিলাম। উদ্ভট। নিজে সাথে করে নিয়ে এসে নিজের পিচ্চি বোনকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে নিজেই চলে যাচ্ছে আগে!
লিমা আপু হা করে তাকিয়ে আছে..

প্রান্তিক ভাই আমাকে ট্যাক্সিতে উঠে বসার জন্য ইশারা দিলো। আমি উঠে পড়তেই উনিও বসে পড়লো পাশে। তারপর বাইরে কাউকে ইশারা দিতেই ভাইয়ার ক্লাসমেট মঞ্জু এসে পড়লো। মঞ্জু ভাই ডাক্তারি পড়ে। উনি লিমা আপুকে মোটামোটি পছন্দ করে বলে আমার মনে হয়।
প্রান্তিক ভাই মঞ্জু ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– তুই ওকে নিয়ে যাস। আমি লতার সাথেই যাচ্ছি।

প্রান্তিক ভাইয়া আমার পাশেই বসে আছে।
জানিনা কেন এত ভাল্লাগতেছে।
ভাইয়া রাগী স্বর নিয়েই বললো,
– তোর পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে?
আমি বললাম,
– এইতো ভালোই।
ভাইয়ার সাথে দেখা হলেই এই বিশ্ববিখ্যাত কথাটা বলে দেয়, ” তোর পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে? ”
কেন ভাই আপনার মনে কি আর কোনো প্রশ্ন থাকেনা? নাকি এই লাইনটাই শুধু সেইভ করা আছে আমার জন্য?
মিনমিনিয়ে বলছে লতা।
চলবে..

লতাকরঞ্চ(১)

#ফারজানা_রহমান_তৃনা

আমার_ঘর_আমার_সংসার ৬ষ্ঠ পর্ব/শেষ পর্ব

0

আমার_ঘর_আমার_সংসার
৬ষ্ঠ পর্ব/শেষ পর্ব

হুট করে খেয়াল করলাম তুর্জ কথা বলতে শুরু করেছে।তুর্জকে কথা বলতে দেখে আমার আনন্দের মাত্রাটা যেন বেড়ে গেল।মনে হচ্ছে খুশিতে আমার কথায় আটকে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে।তারপর ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে বললাম

-তুর্জ আপনি কথা বলছেন।আমার কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না।আমার খুশিতে কথা আটকে যাচ্ছে।

তুর্জ আমার হাত থেকে তার হাত টা ছাড়িয়ে জবাব দিল

-হ্যা কথা বলতে পারছি।আচ্ছা ইশিতা তুমি এখন চলে যাও।বাকিটা আমি সামলে নিতে পারব।তুমি বাসায় যাও আর পড়তে বস।বাসায় গিয়ে পড়া শেষ কর।আমি এসে সব দেখব।ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে আর আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে খাণিকক্ষন পর আসছি।

কিন্তু তুর্জকে ছেড়ে যেতে কেন জানি না আমার একটু ও ভালো লাগছে না।তাই তুর্জকে বললাম

-আমি থাকি না আপনার সাথে।পড়া আমি সারা রাত পড়ে কমপ্লিট করে দিব।প্লিজ থাকি।

তুর্জ গম্ভীর গলায় জবাব দিল

-তোমাকে যেতে বলেছি তুমি যাও তো।আর বিরক্ত কর না।যা বলছি তাই কর।

আমি চুপচাপ হয়ে মন খারাপ করে বললাম

-আচ্ছা যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু।

উনি শান্ত স্বরে বলল

-যাও আসব তো বলছি।এবার যাও।

আমি ঐ জায়গা থেকে চলে আসলাম।মাকে সবটা বললাম।মা ও বেশ খুশি হল।মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন

-সব তোমার জন্য হয়েছে মা।

আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম নিজের প্রসংশা শুনে।কিছুটা লজ্জা পেয়ে উনাকে বললাম

-মা আমি এখন যাই।পড়তে বসতে হবে।এসে যদি দেখে পড়া কমপ্লিট হয় নি তাহলে আমাকে মারবে।আমি যাই।

মা হাসতে হাসতে বলল

-যাও।

আমি চলে আসলাম আমার রুমে।আমার রুমে এসে পড়তে লাগলাম।কিন্তু মনটা পড়ে রইল তুর্জের কাছে।বারবার ওর কথা মনে পড়ছে।কখন যে আসবে এটা ভেবে মন আনচান করছে।ইশ কাউকে ভালোবাসলে বুঝি এমনেই হয়।বেশ অস্থির লাগছে।অস্থিরতা যেন কাটছে না।পড়তে ও পারছি না ঠিক করে।সময় যেন কাটছে না।অনেকক্ষণ পর তুর্জ আসল।তুর্জকে দেখে মনে অস্থিরতা যেন কাটল।মনের সব কষ্ট যেন দূর হল।আমার ভিতরের বয়ে যাওয়া জড় যেন থেমে শীতল হয়ে গেল।আমি তুর্জকে বলললাম

-আপনি এসেছেন।আমার আপনার জন্য মন কেমন করছে।

-হ্যা বুঝছি।যাও পড় গিয়া।

কিন্তু তুর্জ আসার পর থেকে কেমন জানি অস্থির ছিল।আমি বুঝতে পারলাম না তুর্জের কি হল।অনেক জিজ্ঞেস করলাম।তুর্জ কোন জবাব দিল না।তুর্জের জবাব না পেয়ে বেশ ব্যাহত হলাম।কিন্তু তুর্জ তবুও কোন জবাব দিল না।বেশ কষ্ট লাগল।সারাদিন এসবের মধ্যেই গেল।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তুর্জ পাশে নেই।তুর্জকে খুঁজে পলাম না কোথাও।কোথায় গেল এত সকালে।ফোন করেও পেলাম না।অনেকক্ষণ পর তুর্জ আসল।সাথে একটা মেয়েকে নিয়ে।আর আমার চিনতে বাকি রইল না এ মেয়েটাই লামিসা।আমি তুর্জকে বললাম

-লামিসাকে কোথায় পেলেন আপনি।

জবাবে তুর্জ বলল

-ঐদিন ওকে দেখেই আমার মুখে কথা ফুটেছিল। অনেক কষ্টে ওকে খুঁজে বের করে জোর করে ধরে আনি।

পাশে থাকা লামিসা আমাকে দেখে বলল

– এ কে?

তুর্জ উত্তরে বলল

-তোমার পরে ওকে বিয়ে করেছিলাম।

লামিসা তুর্জের গালে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে বলল

-লজ্জা করে না ঘরে বউ থাকা সত্ত্বেও আরেক বাড়ির বউকে তুলে আন।

তুর্জ বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল

-আরেক বাড়ির বউ মানে?

-হ্যা আরেক বাড়ির বউ।আমি তো তোমাকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করেছি।আমার বাচ্চাও আছে।আমি আমার জায়গায় ভালো আছি।তুমিও তোমার বউকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা কর।আর আমি কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছি।তার মধ্যে তুমি এ কাহিনী করলে।

-আমি তোমাকে কতটা ভালোবেসেছিলাম সেটা তো তুমি জানতে তারপর ও এমন কাজ করতে তোমার বিবেকে আটকাল না।

-দেখ তুর্জ সব কিছু বিবেক বা আবেগ দিয়ে হয় না।আর আমি ভালো আছি।আমাকে ভালো থাকতে দাও।

মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-নিজের স্বামীকে সামলাও।আর আমার পিছু আসতে নিষেধ কর।আর তোমার নাম্বারটা দাও।তোমার স্বামী কোন ঝামেলা করলে যেন তোমাকে পাই।ইনফর্ম করতে পারি।

আমি নাম্বারটা দিলাম।উনি নম্বার টা নিয়ে চলে গেল।আর তুর্জ বেশ চুপ হয়ে গেল।বুঝতে পারছি ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে।ঘরে গিয়ে চুপ করে বসে রইল।খানিকক্ষণ পর তুর্জ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল

-চলো আমরা সব শুরু করি আগের মত।

আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম

-আমি তো শুরু করতে চাই।আপনি চাইলেই সব সম্ভব।

-আমি চাই আর তোমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করব।

খানিকক্ষণ পর একটা অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসল।মেয়েজটা পড়ে আমার মথাটা বেশ ঝিম ধরতে লাগল।কারন মেসেজটা দিয়েছে লামিসা আর মেসেজটাই লিখা ছিল।

আমি জানি তোমার নাম ইশিতা।আমি জানি তুমি আমার তুর্জকে ভালো রাখবে।তুর্জকে আমি অনেক ভালোবাসি।কিন্তু আমার বিয়ের ১ বছর পরেই জানতে পারি আমার ক্যান্সার হয়েছে আর বেশিদিন বাঁচব না।আমি এখন ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে আছি।বিদশেই চিকিৎসা করতেছি।হয়ত আর কিছুদিন বাঁচব।চেয়েছিলাম তুর্জ আমাকে ছাড়া ভালো থাকুক।আর আমি এখন নিশ্চিত সে সেটা পারবে।ওকে এসব বল না।তোমরা ভালো থাকো।কালকেই দেশের বাহিরে চলে যাব কোথায় যাব সেটা অজানায় রেখে গেলাম।কারন বললে হয়ত আবার ঝামেলা হবে তোমাদের মধ্যে।

লামিসা।

আমার চোখ দিয়ে অজোরে শ্রাবণের ধারা নামতে লাগল।একটা মেয়ে কতটা ভলোবাসলে এমন করতে পারে।তুর্জকে না বলে থাকতে পারলাম না।তুর্জকে বলার পর তুর্জ বেশ কষ্ট পেল।লামিসাকে অনেক খুঁজল কিন্তু লামিসাকে আর খুঁজে পেল না।কোথায় যে গেল ও।তবে লামিসা চেয়েছিল আমি আর তুর্জ যেন ভলো থাকি।তুর্জ লামিসার জন্য আমাকে মেনে নিল।লামিসার শূন্যতা তুর্জকে মাঝে মাঝে গ্রাস করলেও আমি সেটা ভালোবাসার পাহাড় দিয়ে থামিয়ে দেই।

মাস খানেক পর আমার পেটে তুর্জের বাচ্চা আসে।তুর্জ বেশ খুশি হয়।আমার যখন ৯ মাস চলে তখন আমার ঠিকানায় একটা চিঠি আর গিফট আসে।খুলে দেখে অবাক হয়ে যাই।এগুলা সব লামিসা পাঠিয়েছে।

চিঠিটা পড়ে নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।চিঠিতে লিখা ছিল

প্রিয় ইশিতা

তুমি যখন চিঠিটা হাতে পাবে তখন হয়ত আমি দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে যাব।তোমার বাচ্চা হবে শুনেছি।তোমার বাচ্চার জন্য আমার পক্ষ থেকে কিছু জিনিস দিয়ে গেলাম।তুর্জের কিছু পছন্দের জিনিস আমার কাছে ছিল সেগুলো আগলে রাখার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম।আর আমার তুর্জকে আগলে রেখো।সংসারটা মন দিয়ে কর।কারন এটা যে তোমার ঘর তোমার সংসার।আর শুনেছি মেয়ে হবে।মেয়ের নাম রেখ পরী।।আশা করি আমার কথাটা রাখবে।

ইতি লামিসা

আমি চিঠিটা পড়ে তুর্জকে চিঠিটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।তুর্জ ও চিঠিটা পড়ে কাঁদতে লাগল।একটা মেয়ে কতটা ভালোবাসতে পারে লামিসাকে না দেখলে বুঝতাম না।

কিছুদিন পর আমার পরী জন্ম নিল।লামিসার কথা মতেই ওর নাম পরী রাখি।ভলোই কাটতে লাগল আমাদের সংসার।মাঝে মাঝে লামিসাকে বেশ মনে হয়।কতটা ভালো মানুষ বাসতে পারে একজন কে।আমিও লামিসার দেওয়া সংসার টাকে বলতে পারি এটা “আমার ঘর আমার সংসার”

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

আমার_ঘর_আমার_সংসার ৫ম পর্ব

0

আমার_ঘর_আমার_সংসার
৫ম পর্ব

খানিকক্ষণ পর উনার রুমে এসে চমকে গেলাম কারন উনি একটা কাগজে লিখেছেন

-সরি তোমাকে এতদিন এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য।তোমার সব ঠিক আছে।তবে তুমি বকবক টা একটু বেশি কর।বকবকানি আমার একদম ভালো লাগে না।

আমি উনার এ লিখাটা পড়ে এত খুশি হয়েছি যে কি বলব।আমি খাুশিতে নাচতে নাচতে বললাম

-বকবক তো একটু করতেই হবে।না হলে আপনি সুস্থ হবেন না।

কাগজে পুনরায় লিখলেন

-তোমার মত এরকম বকবক লামিসাও করত।কেমনে পার এত বকবক পকপক করতে?

লামিসার কথাটা শুনে কেন জানি না লামিসাকে বেশ হিংসা লাগল।হিংসার পাহাড় টা নাক ফুলে বের হল।নাক ফুলাতে ফুলাতে বললাম

-আপনি মনে হয় লামিসাকে খুব বেশি ভালোবাসেন তাই না।

উত্তরে উনি লিখলেন

-সত্যি বলতে লামিসাকে অনেক ভালোবাসি আর আগেও ভাসতাম।লামিসা যে কোথায় চলে গেল বুঝতে পারলাম না আজও।কোন টাকা পয়সা নেয় নি।টাকা পয়সা নিলে হয়ত ভাবতাম টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে।কিন্তু কোথায় যে গেল আজও তার হদিশ মিলল না।খুব কষ্ট হয় মাঝে মাঝে উত্তর খুঁজে না পেয়ে।

আমি বুঝতে পারলাম উনার ভিতরে বেশ কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু এখন কোনভাবেই উনাকে কষ্ট পেতে দেওয়া যাবে না।আমাকেই যা করার করতে হবে।আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম

-আমাকে কি লামিসা ভাবা যায় না।লামিসার মত আমাকে ভালো না বাসুন লামিসার ভালোবাসার থেকে একটু ভালোবাসা তো দিতে পারেন।আমি না হয় ঐটা নিয়েই থাকব।আমি তো আপনার স্ত্রী আমাকে কি ভালোবাসা যায় না।কাছে রাখা যায় না।আবার কি নতুন করে সব শুরু করা যায় না?

এবার ও উনি কথাগুলো শুনে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল।কিন্তু আমি নাছোড়বান্দার মত ধরেই ছিলাম।উনি হুট করে আমাকে চিমটি দিয়ে বসল।চিমটি খেয়ে আমি আহ করে বলে উঠলাম

– কি ব্যাপার চিমটি দিলেন কেন?

উনি কাগজে রাগ রাগ মুখে বললেন

-তুমি হুট করে এভাবে ঝাপটে ধর কেন।

আমি লজ্জা মাখা মুখে উত্তর দিলাম

-আমার মন চাইছে।আমার কথার উত্তর গুলো কিন্তু পাই নি।

উনি গজগজ করে কাগজে লিখলেন

-সব তো শুরু করা যায় তবে আমার যে অনেক বদঅভ্যাস সেগুলো একদিনে ঠিক হবে না।আর লামিসার জায়গা দিতে পারব না।ওকে আমি যে কতটা ভালোবাসি বলে বুঝাতে পারব না।ওর জায়গা না দিয়ে যতটা পারা যায় শুরু করব।

যাক উনি যে নতুন করে সব শুরু করতে রাজি হয়েছে এটাই অনেক।আমি একটু হেসে বললাম

-আমার শুধু একটা রিকুইস্ট আপনি কোন রুব্বান বাসায় আনবেন না।মানে মেয়ের নেশাটা বাদ দিতে হবে।

উনি মাথা ঝাকিয়ে বললেন আচ্ছা।

আমার যে কি খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারব না।এত খুশি আগে কখনও লাগে নি।আমিও এখন বলতে পারব এটা আমার ঘর আমার সংসার।তুর্জকে আবার ঝাপটে ধরে বললাম

-আমি অনেক খুশি হয়েছি।আমার এতেই হবে।আমি আপনাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।

উনি আবারও আমাকে চিমটি দিয়ে বসল।চিমটি খেয়ে আমি উনাকে ছাড়লাম।উনি আবারও লিখলেন

-তোমার সমস্যা কি?আর এভাবে ঝাপটে ধর কেন?ঝাপটে ধরতে না করেছি না।হুট করে ঝাপটে ধরে দম বন্ধ করে দাও।তোমার মত পাগল কম দেখেছি।

আমি একটু কপালটা কুচকে কানটা ধরে জিহ্বায় কামড় দিয়ে জবাব দিলাম

-জানি না কেন এমন করে ফেলি।অটো হয়ে যায়।

-পড়া লিখা কতদূর করেছ?

-এইচ.এস.সি দিব।সামনে পরীক্ষা।

-এই মেয়ে তোমার সামনে পরীক্ষা আর তুমি এখানে এভাবে সময় নষ্ট করছ?

– না মানে আমি তো বই নিয়ে আসে নি।

উনি আবার কাগজে লিখে বললেন

-মাকে গিয়ে এটা দিয়ে আসবে।

কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলাম উনি লিখেছেন

-মা ইশিতার সামনে পরীক্ষা আমি না হয় জানতাম না।তুমি তো জানতে।তাহলে বই কেন কিনে দাও নি।আজকেই বই কিনে দিও।

আমি দৌঁড়ে লিখাটা মায়ের কাছে নিয়ে গেলাম।মা লিখাটা পড়ে হাসতে হাসতে বললেন

-তুর্জ একটু পড়া পাগল ছেলে ছিল।তোমাকে দেখো পড়ার জন্য কত প্রেসার দেয়।আজকে তোমার জন্য বই যদি না কিনে আনি দেখবে আমার উপর রাগ করে বসবে।আমি তোমার জন্য বই কনে আজকেই আনব।এখন তুমি তুর্জের গোসলের ব্যাবস্থা কর।

-আচ্ছা মা আমি যাচ্ছি।

এ বলে আমি তুর্জের রুমে গিয়ে তুর্জকে ধরে বাথরুমে নিয়ে যেতে লাগলাম।বেচারা জানি কি বলতে চাচ্ছে।বেচারার হাতে খাতা কলম ও নাই আর কিছু বলতেও পারছে না।আমি তুর্জকে জোর করে ধরে গোসল খানায় এনে গোসল করাতে লাগলাম।বুঝতে পারছিলাম উনি বেশ রেগে যাচ্ছে।তবুও গোসল করাতে লাগলাম।গোসল শেষে উনাকে বললাম

-হয়েছে এবার রুমে যান এ তোয়ালেটা পড়ে।আর খাটের উপর কাপড় রাখা আছে পড়ে নিবেন

তুর্জ আমার হাত থেকে তোয়ালে টা জোরে টান দিয়ে রুমে প্রবেশ করল।আমিও গোসল টা সেড়ে ফেললাম।।

গোসল থেকে বের হয়ে বেশ সারপ্রাইজ পেলাম।কারন এত অল্প সময়ে যে শ্বাশুড়ি মা বই নিয়ে আসবে বুঝতেই পারি নি।চক চকা তক তকা বই গুলো যেন টেবিলের উপর জলকাচ্ছে।আর তুর্জ সেগুলো হাত দিয়ে দেখছে।কি যে আনন্দ লাগছে।আমি আনন্দের চুটে তুর্জকে গিয়ে আবার ঝাপটে ধরে ছেড়ে দিলাম।জিহ্বায় কামড় দিয়ে কান ধরে বললাম

-ভুল করে ধরে ফেলেছি।আবেগে।রাগ করবেন না।প্লিজ।

উনি মুচকি হাসি দিয়ে হাতে ইশারা দিয়ে বললেন ঠিক আছে।আর আমাকে হাতে ইশারা দিয়ে বুঝালেন।এখন যেন খেয়ে পড়তে বসি।আমি মাথা নেড়ে হ্যা বলে দৌঁড়ে খাবার নিয়ে আসলাম।উনাকে খাবার দিলাম।নিজেও খেতে বসলাম।উনি আমাকে ভালো ভালো মাছের পিছ দিয়ে ইশারা করে খাওয়ার জন্য।আমি কত করে বললাম।আপনি খান। নাহ উনি কথা শুনলই না।উনি বুঝাল আমাকে অনেক পড়তে হবে আর খেতে হবে।খাওয়ার পর্ব শেষ করে পড়তে বসলাম।

আহ….কতদিন পড় বই হাতে নিলাম।নতুন বইয়ের গন্ধ যেন আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে।বইগুলো দেখে খুশিতে নাচতে লাগলাম।ঠিক এ সময় খেয়াল করলাম।তুর্জ আমার ঘাড়ে তার ঠোঁট দিয়ে সুরসুরি দিচ্ছে।আজকে তুর্জের স্পর্শ আমার কাছে অন্যরকম লাগছে।মনে হচ্ছে এ স্পর্শ পেয়ে আমি আবেগে ডুবে যাচ্ছি।নিজেকে সামলানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলাম।মুহুর্তের মধ্যেই কি যে অণুভুতি জাগল বুঝতে পারি নি।তুর্জের ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে ভালোবাসার সাগরে ডুবে গেলাম।শীতল অণুভুতিতে মনটা শান্ত হয়ে গেল।প্রবল জড় যেন সবকিছু তছনছ করে দিয়ে আবার থেমে গেল।এক পশলা ভালোবাসার মেঘ আমার চোখ দিয়ে নামল।ইশ এ ভালোবাসার ছোঁয়ায় তো আমি এতদিন খুঁজছিলাম।আজকে পেয়ে যেন আমার অশান্ত মন শান্ত হল।আমি স্বস্তি পেলাম।তুর্জকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলাম।আদো আদো হাতে তুর্জ আমার কপালে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে একটা চুমু একে দিল।মনের গহীনে থাকা সব কষ্ট যেন নিমিষেই মিলিয়ে গেল।আমি এক আদুরে লজ্জাবতী লতা হয়ে গেলাম।খানিকক্ষণ পর তুর্জের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু তুর্জ ছাড়ল না।

মনে মনে ভাবতে লাগলাম এত ভালোবাসা আমার কাপলে সইবে তো।ভাবতে ভাবতে নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।তুর্জের চিমটি খেয়ে ভাবনার ঘোর কাটল।আমি তুর্জকে ছেড়ে উঠলাম।আর বললাম

-হুট করে চিমটি দিলেন কেন।

তুর্জ ইশারা দিয়ে বলল আমি এত চুপ হয়ে আছি কেন।আমি বললাম।

-এমনি।

পরের দিন সকালে খেয়াল করলাম তুর্জ কোথায় জানি যাচ্ছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম

-আপনি এ অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন।

তুর্জ কাগজের গুটা গুটা অক্ষরে লিখলেন

-আমি এখন ঠিক আছি।আর একটু বাইরে যাচ্ছি।আর এখন আবার ঝাপটে ধর না। আমি বাইরে থেকে এখনেই চলে আসব।আর মায়ের ফোনটা হাতে রেখ।মাঝে মাঝে মেসেজ দিব ওকে।আর তুমি এখন পড়তে বস।

এ বলে উনি চলে গেলেন।

আমি পড়তে বসলাম।খানিকক্ষণ পর উনি মেসেজ দিলেন

-তোমার বডি সাইজ কত?

মেসেজটা দেখে কেমন জানি লাগছিল।হুট করে উনি বডি সাইজ জিজ্ঞেস করল কেন?আমি একটু লজ্জাও পাচ্ছিলাম।মেসেজের রিপ্লাই এ সাইজটা বললাম।কিন্তু কিছুটা রাগ ও হল।কতটা শয়তান।কিসব জিজ্ঞেস করে।

বেশ কিছুক্ষণ পর কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে দৌঁড়ে গেলাম।বুঝতে পারলাম উনি এসেছে।দরজা খুলে দেখলাম উনি দাঁড়ানো হাতে কিছু জিনিস পত্র নিয়ে।আমি সব কিছু নিজ হাতে নিয়ে উনাকে সাথে করে রুমে ঢুকলাম।আর বললাম

-লজ্জা কি নাই আপনার কি সব মেসেজ দেন?

উনি হাসতে হাসতে ইশারা দিল।ব্যাগ গুলো খুল।আমি ব্যাগ গুলো খুলে অবাক হয়ে গেলাম।কারন উনি আমার জন্য অনেক গুলো জামা,ড্রেস আর শাড়ি এনেছে।

বেশ ভালোই কাটছিল আবার দিনগুলো।তুর্জকে নিয়ে কিছুদিন পর হাসপাতালে যাই।হুট করে তুর্জ….

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

আমার_ঘর_আমার_সংসার ৪র্থ পর্ব

0

আমার_ঘর_আমার_সংসার
৪র্থ পর্ব

-তাহলে শুন।তুর্জ যখন ভার্সিটিতে পড়ত।তখন তুর্জের সাথে লামিসা নামের এক মেয়ের রিলেশন হয়।প্রথমে ভালো বন্ধুত্ব হয় পরে আস্তে আস্তে সে বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়।তুর্জের তখন মদের নেশা, অন্য কোন মেয়ের নেশা ছিল না।তখন আমার সোনার টুকরা ছেলে ছিল তুর্জ।লামিসার সাথে বন্ধুত্বটা আস্তে আস্তে প্রেমে গড়ায়।বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সম্পর্ক।একদিন আমার ছেলে এসে আমাকে লাজুক মুখে বলল

-মা একটা কথা বলব।রাগ করবে না তো।

আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম

-কি কথা?রাগ কেন করব।টাকা লাগবে?

-আরে মা টাকা লাগবে না।তবে…

-কি রে আটকে গেলি যে।

-নাহ মানে।

-কি রে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিস মেয়েদের মত ঘটনা কি?

আমার ছেলে লজ্জা মাখা মুখে উত্তর দিল

-মা আমি লামিসাকে খুব পছন্দ করি।তুমি যদি চাও আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।

আমারও মনে মনে লামিসাকে বেশ পছন্দ ছিল।মেয়েটা সুন্দরীও ছিল আর শিক্ষিতাও ছিল।আচার ব্যাবহার ও অনেক ভালো ছিল।তাই আমি ছেলের প্রস্তাবে আর অমত করেনি।তুর্জকে হাসতে হাসতে বললাম

-এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?লামিসাকে আমার ও বেশ পছন্দ।কবে ওদের বাড়ি যাব আমাকে বলিস।

তুর্জ মাথা চুলকাতে চুলকাতে জবাব দিল

-তুমি যদি চাও কালকেই যাব ওর বাসা থেকেও অন্য জায়গায় বিয়ের প্রেসার দিচ্ছে।এজন্য যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততই ভালো।

-আচ্ছা। কালকেই যাব তাহলে।ওদেরকে জানাতে বল।

পরদিন সকালে আমি আর তুর্জ লামিসাদের বাসায় যাই।লামিসার মা,বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখি।তারাও অমত করে নি।তারাও হাসি মুখে বলেছিল

-ছেলে মেয়ে পছন্দ করেছে এখানে আমাদের অমতের কিছু নেই।

কিছুদিনের মধ্যেই লামিসা আর তুর্জের বিয়ে হয়।বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সংসার।কোন জগড়া বিবাদ কিছুই ছিল না।হাসি খুশি সুখী সংসার বলতে পার।

মা এবার কথাগুলো বলে একটু দম নিতে লাগলেন।আমি বুঝতে পারলাম না এত সুখী সংসার রেখে লামিসা কেন চলে গেল।তার মানে লামিসা কি পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়েছিল।আমি মাকে প্রশ্ন করলাম

-মা লামিসাকে কি তাহলে পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়েছিল?অন্য ছেলের সাথে কি চলে গিয়েছিল।

মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল

-নাহ এমন কিছুই হয় নি।

-তাহলে?

-জানি না লামিসার কি হয়েছিল কোথায় গিয়েছে আর কেন গিয়েছে।লামিসাকে ৫ বছর যাবত পাওয়া যাচ্ছে না।বিয়ের ১ বছর পর যে কোথায় চলে গিয়েছিল বুঝতে পারে নি।জানতেও পারি নি।অনেক খুঁজ নিয়েছি খুঁজ পায় নি।সবাই তো বলে বসল পালিয়ে গিয়েছে কোন ছেলের সাথে।তুর্জ ও এখন ভাবে হয়ত লামিসা পালিয়ে গিয়েছে।এরপর থেকে তুর্জের বদঅভ্যাস গুলো বাড়তে থাকে।অনেকবার বিয়ের কথা বলেছি রাজি হয় নি।লামিসাকে কোনভাবেই তুর্জ ভুলতে পারে নি।লামিসার কথা শুনলেই তুর্জ রেগে যায়।লামিসা চলে যাওয়ার পর এমন একটা এটাক হয়েছিল।আর আজকে তুমি ওকে এসব নিয়ে বেশ কথা শুনিয়েছ তাই আবার এমন হল।

আমার ভিতরেও একটা প্রশ্ন জাগল তাহলে লামিসা কোথায় গেল?মনে মনে বেশ অপরাধবোধ ও হল। কারন না জেনে উনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।এমনটা করা আমার উচিত হয় নি।কথা শুনতে শুনতেই ভোর হয়ে গিয়েছে।মসজিদে ফজরের আযানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে।আমি অযু করে নামাজে দাঁড়ালাম।রবের কাছে আমার স্বামীর সুস্থতা কামনা করলাম।আমার দুই নয়নে শ্রাবনের মেঘ যেন বেয়ে চলেছে।নামাজ শেষ করে এসে দেখলাম ডাক্তার সাহেব এসেছে।ডাক্তার সাহেবকে উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করলাম

-তুর্জের অবস্থা কেমন?

ডাক্তার সাহবে স্বস্তি ভরা গলায় জবাব দিলেন

-আমরা তো ভেবেছিলাম উনি হাঁটতে চলতে পারবে না।কিন্তু এটা তো ক্ষতি উনার হয় নি।হাঁটতে চলতে পারবে তবে কথা বলতে পারবে না।উনার মুখের ব্যায়াম গুলো বেশি বেশি করাতে হবে আর উনার সামনে বেশি বেশি কথা বলতে হবে।তাহলে হয়ত কথা বলতে পারবে আবার।আর আবারও সাবধান করে দিচ্ছি উনাকে কোনভাবে উত্তেজিত করা যাবে না।

আমি শান্ত সুরে জবাব দিলাম

-সেটা মাথায় থাকবে।আমি কি একটু দেখা করতে পারি উনার সাথে?

-হ্যা পারবেন।তবে যেকোন একজন যেতে পারবেন।আপনাদের মধ্যে কে যাবেন ভেবে একজন যান।

আমি কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।মনে হয় আমার শ্বাশুড়ি মা যেতে চাইবে।কিন্তু ঠিক এ মুহুর্তে আমার শ্বাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল

-মা তুমিই যাও।

কথাটা শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না।দৌঁড়ে তুর্জের কাছে চলে গেলাম।দেখলাম উনি তাকিয়ে আাছে।আমি উনাকে ধরে কাঁদতে লাগলাম।উনি আমাকে ছাড়াতে চাইলেও আমি উনাকে ছাড়তে চাইলাম না।ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম

-আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি আর এমন করব না।আমি কিছু না জেনে এমন করেছি।আপনি যে সুস্থ আছেন এতেই আমি খুশি।

একের পর এক এসব বলতে লাগলাম।হঠাৎ করে খেয়াল করলাম তুর্জ আমায় চিমটি দিয়ে বসল।আমি তুর্জের চিমটি খেয়ে তুর্জের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তুর্জ কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।হাতে ইশারা দিয়ে যেন কি বুঝাতে চাচ্ছে।অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারলাম উনি খাতা কলম চাচ্ছে।আমি একটা খাতা আর কলম জোগাড় করে উনাকে দিলাম।উনি কি একটা যেন লিখছেন।লিখার পর আমাকে দেখালেন।আমি লিখাটা দেখে বেশ লজ্জা পেয়ে বসলাম।উনি লিখেছেন

-তুমি আমার উপর এভাবে হামলে পড়েছ কেন?আর যা হয়েছে তো হয়েছেই এটা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।এত মাফ চাইতে হবে না।আর দয়াকরে আবার আমাকে ঝাপটে ধরে আমার উপর হামলে পড় না।

আমি লজ্জায় লাল মুখ হয়ে মাথা নেড়ে বললাম

-আচ্ছা।

দুইদিন হাসপাতালে থাকার পর উনাকে বাসায় নিয়ে গেলাম।ডাক্তারের কথা মত উনার সাথে অনেক কথা বলতে লাগলাম।বেচারা মাঝে মাঝে আমার কথা শুনে হাসে আবার বিরক্ত ও হয়।কিন্তু আমার কথার ফুলঝুরি আর থামে না।উনি বিরক্ত হয়ে খাতায় লিখল

-তুমি এত বক বক কেন করছ পাগলের মত।বেশ বিরক্ত লাগছে।আমার রাগ উঠার আগে এখান থেকে বের হও তো।

-হ্যা আপনার কথায় আমি বের হয়ে যাই।আর আপনি এভাবে পড়ে থাকেন।আমি বের হওয়ার পর আপনার সেবা কে করবে শুনি?ঐদিন বাসায় যে রুব্বানকে নিয়ে এসেছিলেন।যে রুব্বানের জন্য আমাকে ঘর থেকে বের করে উনার সাথে থেকেছিলেন।সে রুব্বান তো আপনার এ হাল দেখে চলে গিয়েছিল।ঐগুলা তো আসে টাকার জন্য।কেন আপনি এসব করবেন।আমি আপনার স্ত্রী। একজন মানুষের জন্য তো আপনি আরেকজনকে কষ্ট দিতে পারেন না।আর সবাই তো এক না।আর এটা ভাব্বেন না যে আমি চলে যাব।চলে যাওয়ার হলে এত কিছু সহ্য করতাম না।আপনি শুধু আমার থাকেন।আপনার এ অবস্থা না হলে জানতামেই না আমি আপনাকে কতটা ভালোবেসেছি।আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন উপলব্ধি করেছি যে আমি আপনাকে মনের অজান্তেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।আর শুনেন আজকে নাকি চকলেট ডে।তাই আপনার জন্য চকলেট এনেছি।

উনি আবারও বিরক্ত মাখা মুখে কাগজে লিখলেন

-তুমি যাও তো।আমি চকলেট খাব না।আর পরের বার ঘরে আসলে একটা কস্টেপ নিয়ে আসবা।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

-আপনি কস্টেপ দিয়ে কি করবেন?

কাগজে লিখে জবাব দিলেন

-তেমার মুখে মারব।

আমি হাসি হাসি মুখে বললাম

-আপনি চকলেট টা না খেলে কিন্তু আমি আরও বক বক করব।জানেন তো কলেজে আমি অনেক বকবক করতাম।আমার পাশে কেউ বসত না আমার বকবকের জ্বালায়।

কাগজের গুটা গুটা অক্ষরে হাসি হাসি মুখে লিখে জবাব দিলেন

-সে তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আর চকলেট খানা দাও।আমি খাচ্ছি।আর তুমি এখন বিদায় হও।

আমি চকলেটটা দিয়ে চোখ টিপুনি দিয়ে বের হয়ে গেলাম।

খানিক্ষন পর উনার রুমে এসে বেশ চমকে গেলাম।কারন উনি…

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

আমার_ঘর_আমার_সংসার ৩য় পর্ব

0

আমার_ঘর_আমার_সংসার
৩য় পর্ব

তর্কের এক পর্যায়ে তুর্জ আমাকে কষিয়ে চড় দিতে নিল।আমি এবারও তুর্জের হাত ধরে বললাম

-অনেক সহ্য করেছি, সহ্যের মাত্রা অতিক্রম করলে আমিও আর সহ্য করব না।আমি বোকা না।নিজের অধিকার আদায় কিভাবে করতে হয় আমি জানি।আপনার আগের বউ এর মত অবলা না।আগেরটা পালিয়ে গিয়েছে বলে আমি আপনার মার খাওয়ার পর পালিয়ে যাব সেটা ভাববেন না।বউকে সম্মান দিতে পারবেন না তো বিয়ে কেন করেছেন?কাপুরুষের মত আচরণ করেন আবার মেয়েদের গায়ে হাত তুলে নিজের পুরুষত্ব ফলাতে চান।আপনার আগের বউ পালিয়ে গিয়ে ভালোই করেছে। কারন আপনার মত কাপুরুষের সাথে থাকার চেয়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক ভালো। আমি তো বাধ্য হয়ে আপনার কাছে থাকতেছি।

আরও কিছু বলতে নিব ঠিক এ মুহুর্তে তুর্জ আমার হাত থেকে ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আমার গালে জোরে একটা চড় দিল।আমি চড়টা খাওয়ার পর উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি বেশ গম্ভীর হয়ে গিয়েছে আমার একথা গুলো শুনে আর আমাকে চড়টা দিয়ে।আমাকে চড়টা দেওয়ার পর কেমন জানি দম ধরে বসে পড়ল।খেয়াল করলাম কিছুক্ষণের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।আমি বুঝতে পারছিলাম না তুর্জের কি হল?মুহুর্তের মধ্যে তুর্জ জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।আমার কলিজার পানি যেন শুকিয়ে যাচ্ছিল।হঠাৎ কি এমন হল যে তুর্জ এভাবে জ্ঞান হারাল।আমি তু্র্জকে ধরে ডাকতে লাগলাম।তু্র্জের কোন সেন্স কাজ করতেছিল না।আমি পানি এনে তুর্জের মুখে ঝাপটা দিতে লাগলাম।তুর্জের জ্ঞান ফিরতেছিল না তবুও।এর মধ্যে তুর্জের রুমে থাকা মেয়েটা চলে গেল।বাড়িতে শুধু আমি একা।আমার শ্বাশুড়ি মা বাইরে।এখন কি করব কোনভাবেই বুঝতে পারছিলাম না।অনেকটা অসহায়ের মত নিজেকে মনে হল।আমার কোন আলাদা মোবাইল ও নাই যে কাউকে কল দিব।আমার শরীরটা বেশ কাঁপতে লাগল।কোনভাবেই তুর্জের জ্ঞান ফিরছিল না।আমি কোন দিশা না পেয়ে তুর্জের মোবাইলটা খুঁজতে লাগলাম।তুর্জের মোবাইলটা দেখলাম ওয়ারড্রবের উপর পড়ে আছে।মোবাইলটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিলাম।এর আগে কখনও উনার মোবাইল আমি হাতে নেই নি।যতবার মায়ের সাথে কথা বলেছি সেটা শ্বাশুড়ি মায়ের ফোন দিয়ে।তাই মোবাইলটা নিতেও আমার বেশ ভয় লাগছে।তবুও সাহস করে মোবাইলটা হাতে নিলাম।মোবাইলটা একটা চাপ দেওয়ার সাথে সাথে লক স্ক্রিনে একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠল।বেশ সুন্দরী পরিপাটি একটা মেয়ে।মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগল এ মেয়ে কে?হতে পারে কোন বাইরের মেয়ে।উনার জীবনে তো মেয়ের অভাব নেই।এসব ভেবে লাভ নেই।কিন্তু মোবাইলটা লক করা খুলব কিভাবে?মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না।একের পর এক চেষ্টা করে যেতে লাগলাম।কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না।হুট করে মনে হল মোবাইলে তো ফিঙ্গার দেওয়া আছে তাই তারাহুরা করে উনার কাছে গেলাম।উনার হতটা দেওয়ার সাথে সাথে মোবাইলের লক টা খুলল।লকটা খুলার সাথে সাথে খেয়াল করলাম ঐ মেয়েটার আরেকটা ছবি।আমি বেশ চমকালাম।এটা কোন মেয়ে আর এ মেয়ের ছবি উনার ফোনে কেন?

সাত পাঁচ ভাবার সময় এখন না।তাই সাত পাঁচ না ভেবে আমি আমার শ্বাশুড়ি মাকে কল দিলাম।শ্বাশুড়ি মাকে সবটা খুলে বললাম।আমার শ্বাশুড়ি মা বললেন

-না জেনে এত কিছু না বললেও পারতে।আমি ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছাবে।তুমি ওকে পানির ঝাপটা দিতে থাক।দেখ জ্ঞান ফিরে কি না।

এই বলে উনি ফোনটা কেটে দিলেন।আমার শ্বাশুড়ি মা ফোনটা কাটার পর আমি উনার শরীরে হাত দিয়ে খেয়াল করলাম উনার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমি উনার শরীরটা মালিশ করতে লাগলাম।খানিক্ষণ এর মধ্যে ডাক্তার চলে আসল।ডাক্তার তুর্জকে দেখে বলল

-রোগীর অবস্থা তো তেমন ভালো মনে হচ্ছে না।রোগীকে এখনি হাসপাতালে নিতে হবে।

কথাটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।মনে মনে নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হতে লাগল।কেন জানি না মনে হতে লাগল এসবের জন্য আমিই দায়ী।আমার উচিত হয় নি উনাকে এভাবে কথা বলা।আজকে উনার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।এর মধ্যে এম্বুলেন্স চলে আসল।উনাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।আমার শ্বাশুড়ি মা তুর্জের এ অবস্থা শুনে বেশ স্তব্ধ হয়ে গেল।ফোনটা কেটে দিল।আমি এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে গেলাম।তু্র্জকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেল।আমি বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।আমার মনটা বেশ ছটফট করতে লাগল।এতটা বাড়াবাড়ি আমার করা উচিত হয় নি।কিন্তু কেন উনি এভাবে জ্ঞান হারাল আমার মাথায় সেটাও আসছে না।খানিকক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলল

-রোগীর ছোটখাট একটা এটাক হয়েছে।এক সাইড অবশ হয়ে গিয়েছে।প্রচন্ড মানসিক আঘাতে এমন হয়েছে।জ্ঞান ফিরতে আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে।আর হাঁটা চলা তেমন করতে পারবে না।কথাও বলতে পারবে না।থেরাপি এক্সারসাইজ করলে হয়ত ঠিক হতে পারে।তবে সেটাও সময় সাপেক্ষ। আপনার শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করেন কোথায় এসেছে।উনাকে সবটা বুঝিয়ে বলা হয়েছিল এর আগে।তবুও কেন সতর্ক হয় নি।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

-এর আগেও বলা হয়েছিল মানে?

-এর আগেও উনার এরকম এটাক হয়েছিল।তখনেই উনাকে না করে দেওয়া হয়েছিল যে কোনরকম উত্তেজিত যেন না করা হয়।তবে উনাকে এভাবে কি বিষয়ে উত্তেজিত করল সেটা জানা দরকার।আপনার শ্বাশুড়ি কোথায়?

-মা জ্যামে আটকে আছে।কাছাকাছি চলে এসেছে।এর আগে কিজন্য এমন হয়েছিল আমাকে বলুন প্লিজ।

-সেটা আপনি আপনার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নিবেন।আপাতত কিছু টাকা একাউন্টে জমা দিতে হবে সেটার ব্যাবস্থা করুন।

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম

-আমার হাতে তো এখন এত টাকা নেই।মা আসলেই সবটা দিবেন।আপনি চিকিৎসা করতে থাকুন

-আচ্ছা ঠিক আছে।চিকিৎসা চলেতেছে।আপনার শ্বাশুড়ি আসলে দ্রূত আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন।

-আচ্ছা।

তুর্জের এ অবস্থার জন্য আমিই দায়ী।কেন যে এমন হল।আল্লাহ আমার আর কত পরীক্ষা নিবেন জানি না।আমার ভিতটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।ভিতরটা বেশ শূন্য শূন্য লাগছে।কেন আমি এমন করতে গেলাম এ প্রশ্নটা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে।তবুও কাঁদতে পারছি না।হুট করে খেয়াল করলাম মা এসেছে।মাকে দেখে একটু ভরসা পেলাম।দৌঁড়ে মায়ের কাছে গেলাম

-মা ডাক্তার সাহেব বলেছে আপনাকে দ্রূত উনার সাথে যোগাযোগ করতে।

-আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেই এসেছি।এখন তুর্জ একটু ভালো আছে।তবে আবার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।এর আগে এমন হয়েছিল অনেক চিকিৎসা, থেরাপি নেওয়ার পর ভালো হয়েছিল।এখন আবার হয়েছে।কি হবে কে জানে।কে ওর দেখাশুনা করবে আমি সেই টেনশনে আছি।

-মা আপনি দেখাশুনার চিন্তা করবেন না সেটা আমিই করতে পারব।কিন্তু এর আগে উনার এরকম কেন হয়েছিল।

-এগুলো বলতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে তবুও কথা শেষ হবে না।

-মা আমি উনার স্ত্রী । আমার জানার অধিকার অবশ্যই আছে।আপনি আমাকে বলুন।

-কি শুনবে মা?শুনলে কি তুমি সহ্য করতে পারবে?

-এতকিছু সহ্য করতে পেরেছি আরও কঠিন কিছু হলেও পারব।কপাল তো এমনেই ফাটা আর কত ফাটবে।আপনি বলুন।

-তাহলে শুন তুর্জ যখন…..

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

আমার_ঘর_আমার_সংসার পর্ব-২

0

আমার_ঘর_আমার_সংসার
পর্ব-২

কারন আমি জানতে পারি আমার স্বামীর এ আগেও একটা বিয়ে করেছে।আর সে বউ তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।কে বা থাকবে এমন মানুষের সাথে।আমি তো কষ্ট সহ্য করে বাধ্য হয়ে থাকতেছি।আমার ভিতরের কষ্টটা বুঝার মত ক্ষমতা কারও নাই।আমার বাবা, মা অর্থের লোভে পড়ে ছেলের খবরও ঠিক করে নেয় নি।আজকে আমার মত অসহায় আরও কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না।ইচ্ছা করছে শ্বাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করি কেন উনি সবটা লুকিয়েছেন?কিন্তু জিজ্ঞেস করলেই বা কি হবে? উনি উনার মতই মনগড়া কয়েকটা জবাব দিবে আর বলবে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে।আর আমার মাকে বললে বলবে বিয়ে তো হয়েই গিয়েছে এখন আর ঝামেলা করিস না। মানিয়ে নে আমরাও তো মানিয়ে নিয়েছি।কেউ আমার মনের দিকটা ভাববে না।তাই ওদের এসব ভিত্তিহীন নিতী কথা শুনে কাউকে কিছু বলার মত রুচি জাগল না।

সেদিন আর সব দিনের মতই ঘরে বসে ছিলাম।সারাদিন একা ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ আমার নেই।নিজেকে খুব বন্ধী পাখির মত মনে হয়।মনে হয় খাঁচার ভিতর থেকে উড়বার জন্য ছটফট করতেছি।ঠিক এসময় খেয়াল করলাম তুর্জ এসেছে।সাথে একটা মেয়েও এসেছে।মেয়েকে বেশ অন্তরঙ্গ ভাবে ধরে আছে। মেয়ের সাথে এরকম অন্তরঙ্গ ভাবে আছে দেখে মনটা বেশ অশান্ত হয়ে গেল।নিজেকে কেন জানি না সামলাতে পারলাম না।তুর্জের কাছে গিয়ে বললাম

-আপনি এত রাতে বাড়ি ফিরেছেন সাথে একটা অন্য মেয়ে নিয়ে।লজ্জা করল না ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েকে ঘরে তুলতে?রাতের পর রাত নেশা করে বাড়ি ফিরেন।কাপুরুষের মত ঘরে এসে বউ এর গায়ে হাত তুলেন।সাথে পর নারী নিয়ে ঘরে ফিরেন।আপনি কি মানুষ।

পাশ থেকে মেয়েটা তুর্জের দিকে তাকিয়ে বলল

-এ মেয়ে কে? আর এভাবে কথা বলছে কেন?আমাকে ইনসাল্ট করে কথা বলছে আর তুমি চুপ করে আছ।এরকম কথা শুনানোর জন্য তুমি আমাকে নিয়ে এসেছ।এরকম জানলে আমি তোমার সাথে আসতামেই না।আমি এখনেই চলে যাচ্ছি।

তুর্জ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল

-ও আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।মা গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছে।ও মাথায় ও সমস্যা আছে।মাইন্ড কর না প্লিজ।

মেয়ে অবাক হয়ে তুর্জকে বলল

-একটা কাজের মেয়ের এত বড় স্পর্ধা কি করে হয় এভাবে কথা বলার।

-আরে বল না।মা এর লাই পেয়ে একদম মাথায় চড়ে বসেছে।গাইয়া ক্ষেত মেয়ে মায়ের লাই পেয়ে আমাকে স্বামী করে পাবার স্বপ্ন দেখছে।তুমি ওর কথা সিরিয়াসলি নিও না।

মেয়েটা আমার দিকে তাকাল।তারপর একটু মুখটা বাঁকালো আর বলল

-সাহস কি করে হয় এভাবে কথা বলার?কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মত থাক।

-আমি কাজের মেয়ে?না জেনে উল্টা পাল্টা কথা বলতে লজ্জা লাগছে না।আপনাদের মত নিকৃষ্ট মেয়েদের জন্যই সমাজের এ হাল।লজ্জা লাগে না, একটা পরপুরুষের সাথে বিয়ে বহির্ভূত মেলামেশা করতে?তার বেডে চলে আসতে?নিজেকে কতটা নীচে নামাবেন?

-কি বলতে চাচ্ছ তুমি।বেয়াদব মেয়ে।গাইয়া ভূত, তুমি কি বুঝবা আধুনিক যুগের চালচলন।বড় তো হয়েছে গ্রামে থেকে।

আমি একটু হেসে জবাব দিলাম

-ভাগ্যিস শহরে থেকে বড় হয় নি।শহরে থেকে বড় হলে হয়ত নিজের সম্মান কি করে পরপুরুষের হাতে বিলিয়ে দিতে হয় খুব ভালো করে বুঝে যেতাম।নির্লজ্জ বেহায়াপনা শিখে যেতাম।আধুনিকতার নাম দিয়ে নোংরামি করে বেড়াতাম।ভাগ্যিস আমি স্মার্ট না।শার্ট প্যান্ট পড়ে ছেলেদের মত বেশ ধরে নাইট ক্লাবে যাওয়া আর বউ থাকা সত্ত্বেও পরপুরুষের সাথে ঢলাঢলি করা যদি স্মার্টনেস হয় তাহলে এমন স্মার্ট আমি না তার জন্য শুকরিয়া আদায় করি।

মেয়েটা আমার কথা শুনে আরও রেগে গেল।বুঝায় যাচ্ছিল কথাগুলো মেয়েটার গায়ে লাগছে।রেগে গিয়ে আমার উপর হাত তুলতে নিল গায়ে হাত দেওয়ার জন্য।আমি হাতটা ধরে মুচর দিয়ে বললাম

-ভুলেও এ কাজ করার সাহস দেখাবেন না।আমি কোন অযৌক্তিক কথা বলে নি যে আপনি গায়ে হাত তুলবেন, আর আমি মেনে নিব।হাতটা একদম ভেঙ্গে দিব।গ্রামে থেকে বড় হয়েছি।এর আগে অনেক গাছের ডালপালা ভেঙ্গেছি।এ কোমল হাত ভাঙ্গতে বেশিক্ষণ লাগবে না।ভুলেও গায়ে হাত তুলার দুঃসাহস দেখাবেন না।

খেয়াল করলাম মেয়েটা আমার কথা শুনে বেশ রাগান্বিত হল।কোন রকমে আমার হাত থেকে উনার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তুর্জকে বলল

-তুমি কি আমাকে অপমান করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছ?আমি আর এক মুহুর্ত ও এখানে থাকব না।

তুর্জ আমার দিকে তাকাল।তুর্জের চোখ রাগে রক্তলাল হয়ে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে কষিয়ে একটা চড় দিয়ে বলল

-সাহস কি করে হয় তোমার ওর সাথে এমন আচরণ করার?আর বের হও রুম থেকে।

এ বলে আমার গলাটা ধাক্কা দিয়ে আমাকে বের করে দিল।যে জায়গায় নিজের স্বামীই ঠিক না সে জায়গায় আর কথা বলতে মন চাচ্ছিল না।কোনরকমে উঠলাম।খেয়াল করলাম মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর একটু হাসি দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল।কি যে কষ্ট হচ্ছিল তখন বলে বুঝাতে পারব না।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে, পাশের রুমে গেলাম।হায়রে কপাল আমার যে ভালবাসাটা পাওয়ার অধিকার ছিল সে ভালোবাসা পাচ্ছে অন্য একটা মেয়ে।আমার শ্বাশুড়ি তো দিব্যি আমার চিন্তা রেখে ব্যবস্যা করছে।আমাকে নিয়ে ভাবার মত কারও সময় নেই।

এত টাকা তো আমি চাই নি।কোন মেয়েই তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিবে না।আর আমার কি পুড়া কপাল নিজের চোখের সামনে এতকিছু করছে বলতে পারছি না।সবটা মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে।আজকে বড্ড অসহায় লাগছে আমার।মা কে ফোন দিলে সে একেই নিতী বাক্য শুনায়।আর কত সহ্য করব আমি।অসহায়ত্বের মত্রা কতটা তীব্র হলে এমন লাগে আজকে বুঝতে পারছি।প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা মানুষকে সব দিতে পারলেও ভালোবাসাটা দিতে পারে না।ভালোবাসার জন্য দরকার সুন্দর একটা মানসিকতার।যা সবার হয় না।

মেয়েটার সাথে যতক্ষণ তুর্জ এক রুমে ছিল।আমার বুকে ততক্ষণ একটা অজানা জড় বয়ে চলছিল।যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করতেছিল।কোনভাবেই মানতে পাড়ছিলাম না, নিজেকে সামলাতেও পারছিলাম না।এটা সহ্য করার মত ও না।কেন জানি না হুট করে আমার মধ্যে এক অজানা সাহস জাগল প্রতিবাদ করার।আমি মনে সাগস জুগিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।খানিকক্ষণ পর তুর্জ দরজা খুলল।আমাকে দেখে তুর্জের রাগ টা আরও দ্বিগুণ হল।আমি তুর্জকে চিৎকার করে বললাম

-আমি আপনার স্ত্রী। আমাকে রেখে আপনি এমন কাজ করতে পারেন না।কোন মেয়েই এটা সহ্য করবে না।আপনি শুধু শুধু কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন?আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?বিয়ে করতে না চাইলে বিয়ের আগে বলতেন।আমাকে কেন এভাবে বিয়ে করে কষ্ট দিচ্ছেন।অমানুষের মত এসব করতে লজ্জা লাগছে না আপনার।একটা নারীর মন নিয়ে খেলছেন আপনার ত লজ্জা হওয়া দরকার।বউ রেখে পরনারীর সাথে রাত কাটায় কাপুরুষেরা।

কথাগুলো শুনে তুর্জের রাগের মাত্রা আরও বেড়ে গেল।আমার চুলগুলো ধরে আছড়ে ফেলে দিয়ে বলল

-অনেক বেশি বলে ফেলছিস।না জেনে অনেক কথা বলেছিস।আরেক একবার দরজাটা ধাক্কা দিলে বুঝবি।

এ বলে দরজা লাগিয়ে দিল।আমার ভিতরেও ঝড়টা আরও বাড়তে লাগল।আমি পুনরায় দরজা ধাক্কা দিতে লাগলাম।এবার দরজা খুলল ঐ মেয়েটা। দরজা খুলে আমাকে বলল

-সমস্যা কি তোর?

-আমার সমস্যা কি মানে?ভদ্র ভাষায় কথা বলুন।

-সেন্স নেই তোর।এখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দরজা লগিয়ে প্রাইভেট টাইম পাস করছে আর তুই এভাবে চিল্লাছিস?লজ্জা নাই তোর।তুর্জ এত মারে ঘৃনা নাই তোর?

-আমাকে লজ্জা ঘৃনার চ্যাপ্টার পড়াতে হবে না।লজ্জা তো হওয়া দরকার আপনার।আপনি জানেন যে তুর্জের বউ আছে জেনেও কিভাবে নিজেরে বিলিয়ে দিচ্ছেন।প্রাইভেট টাইম পাস করছেন নাকি বেহায়াপনা করছেন একটু ভেবে দেখুন।বেহায়াপনা করবেন আর কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে জ্ঞান দিবেন।বেশ্যা মেয়ের মত চলাফেরা করে আধুনিকতার দোহাই দেন আপনার লজ্জা লাগে না।

এটা বলার পর মেয়েটা বেশ রাগ হয়ে তুর্জকে বলল

-আমি আর এখানে থাকব না।এ কোন মেয়েকে গ্রাম থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছ আমাকে অপমান করার জন্য।

তুর্জ মেয়েটার কথা শুনে দরজার সামনে এসে আমাকে বলল

-তুই যাবি নাকি এভাবে অশান্তি করবি?

-আমি অশান্তি করছি?অশান্তি ত করছেন আপনি?এর আগেও একটা বিয়ে করেছেন বউ রেখে চলে গিয়েছে এখন আমাকে বিয়ে করে নষ্টামি করতেছেন অন্য মেয়ের সাথে।আপনার মত অমানুষ কেউ আছে বলে মনে হয় না।আগের বউটা চলে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে।আর আমি তো বেঁচে থেকেও মরে আছি।

আমার একথাটা শুনার পর তুর্জের রাগের পরিমাণ তীব্র হতে তীব্র হতে লাগল।আমাকে বলল

-এখান থেকে যা।

আমিও বেশ জোড়ালো গলায় বললাম

-যাব না কি করবেন?এ মেয়েকে বিদায় না করলে যাব না।

একের পর এক তর্ক হতে লাগল।তর্কের এক পর্যায়ে তুর্জ…..

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

(পর্বগুলো ছোট হবে আর একদিন পর পর দিব।কারন আমার সামনে পরীক্ষা।)

আমার_ঘর_আমার_সংসার পর্ব-১

0

আমার_ঘর_আমার_সংসার
পর্ব-১

আমার বিয়ে হয়েছে ১ সপ্তাহ হয়েছে।কিন্তু আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্কটা তেমন ভালো না।বিয়ের রাত থেকে উনি আমাকে যতবার কাছে নিয়েছে তা শুধু শারিরীক চাহিদার জন্য।এর বাইরে উনি আমার সাথে ঠিক মত কথাও বলে না।আমাদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিক সূত্রে।আমার স্বামী আমাদের পরিচিত ছিল।কিন্তু উনারা ঢাকায় থাকার কারনে তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না।

আমার শ্বাশুড়ি কিছুদিন আগে গ্রামে বেড়াতে আসে।আর সেখানে আমাকে দেখে উনার পছন্দ হয়।আর বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা মুটামুটি।আর আমি সবে মাত্র ১২ ক্লাসে পড়ি।পাত্রের তুলনায় আমি অনেক ছোট।কিন্তু পাত্র যোগ্য আর আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার দরুণ আমার পরিবারও অমত করে নি।বিয়ের আগে আমি আমার স্বামীকে দেখে নি।আমার স্বামীও আমাকে দেখতে আসে নি।বিষয় টা নিয়ে আমি একটু আপত্তি জানালে আমার মা বাবা বলেছিল যে

-ছেলে হয়ত মায়ের কথা শুনে তাই মায়ের পছন্দের বাইরে বিয়ে করবে না।তাই মা যাকে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করবে।এজন্য হয়ত আলাদা করে দেখার কোন প্রয়োজন মনে করে নি।

-কিন্তু মা তবুও তো উনার মত আছে কি না।আর উনি তো শহরে থেকে বড় হয়েছে আর আমি গ্রামে।একটু দ্বিমত তো থাকতেই পারে।উনার সাথে কথা বললে হয়ত ভালো হত।

মা একটু রাগ হয়েই বলল

-অমত থাকলে তো ছেলের মা সব জানাত।আর বিয়ের ব্যাপারে তোর এত নাক গলাতে হবে না।এত ভালো পাত্র পাচ্ছিস তবুও মনে এত দ্বিধা কেন?

মায়ের কথাটা শুনে তখন খুব খারাপ লেগেছিল।হয়ত আমি যোগ্যতায় উনার কম।তবুও তো আমার একটা মতের মূল্য দেওয়া উচিত ছিল।তবুও মা বাবার কথাটাকে মেনে নিয়েছিলাম।তারা যা বলেছে তাই করেছি।বিয়ের দিন যখন বরকে প্রথম দেখি তখন মনটা বেশ আনন্দে নেচে উঠেছিল কারন মনে হয়েছিল আমি মা,বাবার কথা শুনে ঠকে নি।আমি উনাকে দেখে চোখ সরাতে পারছিলাম না।এত সুন্দর ছেলে আমার স্বামী হবে ভেবেই ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছিলাম।

কিন্তু সে খুশি আমার বেশিক্ষণ টিকল না।বাসর রাতে আমার বর প্রথমে এসেই আমাকে বলেছিল

-তোমার মত মেয়েকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না।মা পছন্দ করেছে আর মায়ের অসুস্থতার জন্য শুধু তোমাকে বিয়ে করেছি।

কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগল।মুখ ফুটে কোন জবাব দিতে পারলাম না।কষ্ট হতে লাগল খুব।চোখে একফোঁটা শিশিরবিন্দু নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।রাত তখন ২ টা।খেয়াল করলাম কেউ আমার শরীরের নরম মাংসে হাত বুলাচ্ছে।আমি চিৎকার দিয়ে উঠতে নিতেই আমার মুখটা চেপে ধরল।আদু আদু আলোতে আমি চোখ মেলে দেখতে লাগলাম এটা কে?খেয়াল করে দেখলাম এটা আমার স্বামী।বুঝে উঠার আগেই উনি আমাকে একের পর এক স্পর্শ করতে লাগল।কেন জানি না সে স্পর্শ টা আমার শরীরে কাটার মত লাগছিল।শারিরীক সেই সময়টাই আমার স্বামী আমাকে বেশ কয়েকবার জান ভালোবাসি তোমায়,এ কথাটা বলেছে।যখন শারিরীক চাহিদাটা শেষ হয়ে গেল তখন সে আমাকে রেখে চলে গেল।

একেই বুঝি স্বামীর ভালোবাসা বলে।বয়সটা খুব বেশি না আমার।তবে হাজার খানেক স্বপ্ন নিয়ে এ বাড়িতে ঢুকেছিলাম।কি চেয়েছি আর কি হচ্ছে।উনি আমার সাথে তেমন কোন কথা বলে না।শুধু রাতের ঐ সময়টুকুতেই বলে জান ভালোবাসি তোমায়।এছাড়া উনার মুখে আমি ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করতে দেখি নি।মা,বাবাকে সবটা বলার সাহস হল না।কারন তারা কষ্ট পাবে।

বেশ কিছুদিন পর খেয়াল করলাম আমার স্বামীর অনেক বাজে নেশাও রয়েছে।সে সাথে প্রধান ছিল মেয়ের নেশা।টাকা পয়সার অভাব আমার স্বামীর নেই।আমার শ্বশুর সাহেব মারা গিয়েছেন অনেক আগেই।আমার শ্বাশুড়ি সব কিছু সামলিয়েছেন এরপর।আমি কাঁদতে কাঁদতে আমার শ্বাশুড়িকে বললাম

-মা আপনি আপনার ছেলের সব বাজে নেশার কথা জানতেন।বিয়ের আগে একটু বলতে পারতেন।আমি কিভাবে এসব সহ্য করব আপনিই বলুন।একেক দিন একেক মেয়ের সাথে থাকে কিছু বললেই গায়ে হাত তুলে।আমাকে আপনিই বলেন কি করব।

আমার শ্বাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন

-প্রথম যেদিন দেখেছিলাম তখন বুঝে ছিলাম তুমি অনেক বুদ্ধিমতি মেয়ে।সংসার, ব্যাবস্যা সামলাতে গিয়ে আমার তুর্জকে বেশি সময় দিতে পারে নি।(আমার স্বামীর নাম তুর্জ আর আমার নাম ইশিতা)।কখন যে তুর্জ বিগড়ে গিয়েছে বুঝতে পারে নি।কাজের মানুষের কাছে বড় হয়েছে তাই ওর খেয়ালটা আমি নিতে পারে নি।আর বুঝতে যখন পেরেছি সেটা অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পর।তখন আমার করার কিছু ছিল না।মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।বিয়ে যেহুত হয়ে গিয়েছে একটু মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর।ভেবেছিলার বিয়ের পর হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ঠিক হয় নি।তুমি একটু বুঝাও।তোমার সংসার তুমি গুছিয়ে নাও মা।

মায়ের কথাগুলো শুনার পর আর কিচ্ছু বলতে মন চাইল না।কত সহজ করে উনি বলে দিলেন আমার সংসার আমি গুছিয়ে নিতে।অথচ কাকে নিয়ে সংসার গুছাব যে কিনা আমাকে ভালোবাসে না।শারিরীক চাহিদার বাইরে কিছু ভাবতে পারে না।মদ, সিগারেটের নেশার সাথেও মেয়ের নেশাও আছে।মনটা ভেঙে গেল।আমি আমার মাকে বলার পরও আমার মাও বলল

-দেখ মা মেয়েদের বিয়ে একবারেই হয়।তুই আর অহেতুক ঝগড়া করিস না।মানিয়ে নে
মানিয়েই সংসার করতে হয়।আমরাও মানিয়েই সংসার করেছি।

মায়ের কথাগুলো শুনেও আজকে নিজেকে বেশ পরগাছা মনে হতে লাগল।কেউ আমার মনের কথাটা ভাবল না।আমার পরিস্থিতি টা চিন্তা করল না।যে যার মত করে বলে দিল।বুঝে গিয়েছি অহেতুক আর সুখের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই।এ স্বপ্ন আর আমার কপালে টিকবে না।

প্রতিরাতেরই একেই ঘটনা একেই কাজ।খুব কষ্ট হলেও সহ্য করে নিতে হবে।সেদিন আমার পিরিয়ড হয়েছিল।আমি খেয়াল করলাম আমার স্বামী নেশা করে ঘরে ফিরেছে।আমি আমার স্বামীকে ধরে ঘরে ঢুকালাম।খাবার দিতে চাইলাম।খাবার খাবে না বলে দিয়েছে।আমারও আর খেতে মন চাইল না।না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।খানিকক্ষণ পর উনার স্পর্শ অণুভব করলাম উনাকে বললাম আমার তো এখন পিরিয়ড চলছে দয়াকরে এ সময়টায় আমাকে কষ্ট দিবেন না।এমনিতেও আমার অনেক কষ্ট হয়।উনি আমার কথায় কোন সাড়া না দিয়ে উনার মত যা করার করে নিল।আমার সেদিন মনে হয়েছিে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।স্বামীরা বুঝি এমনি হয়?তখন উনার মুখে ভালোবাসি শব্দটা আমাকে শুধু যন্ত্রণায় দিল।অমানসিক এ যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সারারাত পার করলাম।সকালে উঠার শক্তি পাচ্ছিলাম।কোন রকমে উঠে কাপড় চেন্জ করলাম।মনে মনে কষ্ট পেতে লাগলাম।কাকে বলব আমি এসব কথা।কাকে বলব আমি আমার স্বামীর কাছে প্রতিদিন রেইপ হচ্ছি।আইন তো এমন কোন কথা বিশ্বাস করবে না।সবাইকে বললে বলবে নিজের স্বামী চাইবে না তো কে চাইবে?কিন্তু কেউ আমার মানসিক অবস্থাটা বুঝতে চাইবে না।নিজেকে আজ বেশ অসহায় লাগছে।

এসব অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না।একবার মনে হচ্ছিল নিজেকে শেষ করে দেই।কিন্তু সে সাহসটা আর পেলাম না।কয়েকদিন পর একটা বিষয় জানতে পেরে কষ্টে বুক ফেটে গেল।আমার বাবা,মা টাকার লোভে পড়ে ছেলের কোন খুঁজ খবর না নিয়েই আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল।হায়রে সমাজ। এ সমাজে মানুষ শুধু টাকাটাই দেখে।ভালো মানসিকতা আর কেউ দেখে না।আজকে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হতে লাগল।মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াটায় যেন পাপ মনে হতে লাগল।কারন আমি জানতে পারি আমার স্বামী…

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা