Tuesday, August 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1970



Protected: আড়ালের গল্প ~রাকিবুল হৃদয়

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: বৃষ্টির দিন লেখা:- ফাহমিদা সুলতানা

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: এক বৈয়াম আমের আচার। লেখক:- মোমিন শুভ

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: প্রত্যাবর্তন লেখক: তাসলিমা আক্তার অনন্যা

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: বন্ধুত্ব,ভালোবাসা অতঃপর। কলমে – প্রমা মজুমদার

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: মিছিল কলমেঃসুমাইয়া মীম

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: স্বপ্ন ও সত্যি মাসুদ রানা তাসিন

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: আবর্তিত সন্ধিক্ষণ লেখা – মারইয়াম জামীলা

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: অপেক্ষা লেখা: সাবরিনা ইয়াসমিন রিয়া

0

This content is password protected. To view it please enter your password below:

ভালো লাগে ভালোবাসতে-পর্ব ১৪

3

গগ
#ভালো_লাগে_ভালোবাসতে
#পর্ব-১৪
#Writer:ইশরাত_জাহান_সুপ্তি

“মৃত্যু” শব্দটাই কত বিভীষিকাময়,তাই না?জীবনের শেষ নিষ্ঠুর পরিণতি।একদিন সবার তীরেই পারি জমাবে সেই নিষ্করুণ মৃত্যু নামের ভেলা।দেহটাকে কাগজের ন্যায় ছুঁড়ে ফেলে আত্মাকে গুটিয়ে নিয়ে টেনে দিয়ে যাবে জীবনের ইতি।হাজার হাজার স্বপ্ন,আকাঙ্খা,স্মৃতি সব চাপা পড়ে থাকবে এক ধূলিমাখাময় নিষ্প্রভ দীর্ঘশ্বাসের
তলে।নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুরতম তো সে তখন হয়ে উঠে যখন একজনকে প্রাণহীন করে সাথে আরেকজনকেও জীবন্ত লাশ বানিয়ে রাখে।জীবনের এই শেষ পরিণতির স্বীকার তো হতে হয় সবাইকেই তবুও কিছু কিছু মানুষকে জীবনের দীর্ঘতম সময় জুড়ে ভোগ করতে হয় সেই নিদারুণ মৃত্যুর যন্ত্রণা।ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে থাকার কষ্ট যে মৃত্যুকেও হার মানায়।একজন তো জীবনের ভীড়ে হারিয়ে যায় আর আরেকজন! তাকে তো থাকতে হয় একবুক হাহাকার,চিরদিনের নিস্তব্ধতা,হারানোর তীব্র ব্যাথায় মর্মাহত ক্ষত হৃদয় নিয়ে।স্মৃতিগুলো যে হিংস্র পশুর ন্যায় তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।একজনের হয় মৃত শরীর আর আরেকজনের হয় মৃত মন।হয়তো তাই মৃত মানুষটির চেয়েও তার জন্য হাহাকার করা রক্তাক্ত হৃদয়ের মানুষটির বেদনাই আমাকে বেশি কষ্ট দেয়।কতটা কষ্ট তার!কি করে কাটাবে সে তার বাকি জীবন!নিঃসঙ্গ,সঙ্গীহীন,নিষ্প্রাণ…এই তো!

এক মুহুর্তের জন্য অজ্ঞাত মেয়েটির জায়গায় নিজেকে অনুভব করতেই আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল।হসপিটাল জায়গাটা আমার এমনিতেই অপছন্দ,আর তার উপর এভাবে আজ এমন একটি ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে তা কে জানতো!
আজকেই এমনটা হতে হলো!
রিপোর্ট দিতে একটু দেরি হওয়ায় জেনারেল ওয়ার্ডের সামনে বসেছিলাম।হঠাৎ সেখানে এক শোকে মর্মাহত পরিবার এসে উপস্থিত হয়।তাদেরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো তারা তাদের কোনো এক আপনজনকে হারিয়েছে।তাদের সামনে স্ট্রেচারে করে অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়া একলোককে নিয়ে আসে।মৃত মানুষটিকে আনার সাথে সাথেই একটি ছিপছিপে গঠনের সুন্দর মেয়ে লাশটির হাত ধরে চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়ল।সবাই এখন মেয়েটিকে সামলাতে ব্যস্ত।তার কান্নার আতর্নাদ বারবার আমার ভেতরটাকে কাঁপিয়ে তুলছে।মেয়েটি কিভাবে সহ্য করবে তার স্বামীর হঠাৎ মৃত্যু।কতই বা বয়স তার।দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা নবদম্পতি।সেখান থেকেই শুনতে পেলাম তাদের বিয়ের দেড়বছর হয়েছে মাত্র,পাঁচ বছরের প্রেমের বিয়ে ছিল।কিন্তু আজ সব শেষ!কোন দোষের এত বড় শাস্তি সৃষ্টিকর্তা এই মেয়েটিকে দিল।মেয়েটার কান্না আজ আকাশকেও কাঁপিয়ে তুলবে।তার রক্তাক্ত হৃদয়ের মর্মযন্ত্রণা এক বিভৎস কান্নার প্রতিমূর্তি হয়ে বেড়িয়ে আসছে।না চাইতেও যা ছোঁয়াচের ন্যায় আমাকে ছাপিয়ে তুলছে।একটি কান্না আমার গলার কাছে এসে আটকে রয়েছে।চোখের পাতা ভারী করার তার কি দীর্ঘ প্রয়াস।একে বের করতে পারলেও যেনো আমি শান্তি পেতাম।অথচ সে স্তব্ধ মনের বহিঃপ্রকাশে কুন্ডলী পাকিয়ে আমার শ্বাসরোধের চেষ্টায় মগ্ন।চাইছি না সেখানে দেখতে তবুও আড়চোখে দৃষ্টি বারংবার সেখানেই চলে যাচ্ছে।আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন।আজকের দিনে আমি আমার মনকে এই বিষাদমাখা উদাসীনতায় নিমগ্ন রাখতে চাই না।আমাকে এড়িয়ে যেতে হবে এসবকিছু,মনকে নিক্ষিপ্ত করতে হবে অন্য কোনো স্মৃতির দাঁড়ে।

-‘হি হি হি!সুপ্তি,এতদিনে তোর বুদ্ধির দুয়ার খুললো তবে।নিদ্র ভাই কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে,এবার তার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে দে।বেচারাকে কিন্তু তুই ভালো যন্ত্রণা দিয়েছিস।তার জন্য তার শাস্তিস্বরূপ রোমান্টিক অত্যাচারের জন্য তৈরি থাক।’

সোমা আপুর কথায় আমি লাজুক হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে রাখলাম।তারা দুজন যেন আজ আমাকে লজ্জায় খুন করতে পারলেই ক্ষান্ত হবে।সেই কখন থেকেই সোমা আপু আর সাফা আমাকে নিয়ে ক্ষ্যাপানো শুরু করেছে।আর আমি লজ্জয়া মাটিতে মিশে যাওয়ার ফাঁকফোকর খুঁজে যাচ্ছি।সাফা হঠাৎ মুখ থমথম করে বলল,

-‘নিদ্র ভাই তোকে সেই ফাস্ট ডে থেকে পছন্দ করে তার সূত্রেই সে তোকে ছল করে বিয়ে করেছে আর এই কথা আমাকে তামিম এখনো জানায়নি।আমাকে জানালেও তো আমি তোকে জানাতে পারতাম।আজকেই ওর সাথে গিয়ে আমি ব্রেকআপ করবো!’

সোমা আপু সাফার মাথায় চাটি দিয়ে বলল,’ও আমার ব্রেকআপ রাণী!একজন এখানে ভালোবাসার মিলনের ধ্যানে আছে আর আরেকজন পৃথকের!’

-‘তো!ও আমাকে কিছু জানালো না কেনো?তোমাকে তো রাফি ভাই ঠিকই জানিয়েছে।তাহলে বলো এখন ওঁকে কি বলা দরকার।’

আমি সোমা আপুর দিকে তাকিয়ে অভিমানসুরে বললাম,’সোমা আপু,তুমি আমাকে এত বড় কথা বললে না কেনো বলো তো?তাহলেই তো আমি আরো আগে জেনে যেতাম।’

সোমা আপু বলল,
-‘নিদ্র ভাইয়ার কঠিন নিষেধ ছিল কেউ যেনো তোকে এই কথা না জানায়।নিদ্র ভাই চেয়েছে তুই যেনো তোর অনুভূতিগুলো নিজে থেকে বুঝতে পারিস।আর তার ভালোবাসায় ধরা দিস।আর সাফা তোকেও এই কারণেই জানানো হয়নি,তোর যেই পেট পাতলা!হয়তো তামিম ভাই তোকে বলতে দেরি করতো কিন্তু তুই আর সুপ্তিকে জানাতে দেরি করতি না।’

সাফা আমার কাঁধে থুতনি রেখে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলল,’সুপ্তি,ভাইয়াকে তাহলে কবে জানাবি বলে ঠিক করলি?’

আমি মৃদু হেসে মাথা নিচু করে বললাম,’আজকে রাতেই।’

আজকের রাত!কতটা বিশেষ আমার জন্য,আমাদের জন্য।আজ রাতেই আমি নিদ্রকে বলবো আমার মনের কথা।ব্যক্ত করবে হৃদয়ের সব ভালোবাসার সুর।অথচ আজ মনটা কতটা বিমর্ষ হয়ে উঠেছে।মাত্র একটা ক্লাস করেই আজ ভার্সিটি থেকে সোজা হসপিটালে চলে আসি।নিদ্র বলেছিল রিপোর্ট সে আনতে যাবে কিন্তু সে বিগত দুইদিন ধরে খুব ব্যস্ত।অফিসেই কাটাতে হয় বেশিরভাগ সময়।তাই আমি আর তাকে জানাইনি।না বলেই চলে এসেছি একা একা রিপোর্ট কালেক্ট করতে।কিন্তু এখানে এসে যে এমন পরিস্থিতিতে পড়বো তা জানলে কখনই একা আসতাম না।মেয়েটির কান্না বড্ড বারি খাচ্ছে আমার কানে।হাতগুলো কেমন যেন ঈষৎ কাঁপছে।মাইগ্রেনের ব্যাথাটা বুঝি ঐ আবার শুরু হলো।না এভাবে আজকের দিনে নিজের মনকে উদাসীনতায় গ্রাস হতে দেওয়া যাবে না।এর রেশ আমায় কাটাতে হবে।ভাবতো হবে অন্যকিছু,আরো অন্য ভালোকিছু।কোনো সুখ স্মৃতি।

-‘সুপ্তি,তোমাকে থার্ড ফ্লোরে নিদ্র ভাইয়া ডাকছে।’

অফ পিরিয়ডে বন্ধুদের সাথে আড্ডার মাঝে এমন তার হুটহাট ডাকে চরম বিরক্তিতে আমার কপাল কুঞ্চিত হয়ে গেল।এখন ভয়ানক বিরক্ত হলেও আমাকে তো যেতেই হবে।তার ডাকে সাড়া না দেওয়ার মতো দুঃসাহস আমার থাকলে তো কথাই ছিল না!
বিরক্তি আর ঈষৎ ভয় মাখানো অনুভূতি নিয়েই আমি উঠে পড়লাম তার খোঁজে।থার্ড ফ্লোরে এসে দেখি সবকয়টা ক্লাসই খালি।এখানে ক্লাস খুব কম হয়।এক একটা ফাঁকা ক্লাস ঘুরে ঘুরে আমি তাকে খুঁজতে লাগলাম।তার সামনে আসতে আগে থেকেই আমার ভয় ভয় লাগতো আর এখন বিয়ের পর সেই ভয়টা বেড়ে আরো দ্বিগুণ হয়ে গেছে।ভয়ের সাথে এখন এক প্রকার চাপা অস্বস্তিও মিশে থাকে,কেউ যদি আমাদের দেখে বুঝে যায় যে আমাদের বিয়ে হয়েছে তবে!
এই ভয় আর অস্বস্তির বশবর্তী হয়েই তার সাথে এখন আমি একটু কম থাকতে চাই কিন্তু সে এসব কিছুই বুঝে না।এমন ফাঁকা ফাঁকা ক্লাসে যে ডেকে পাঠায় কেউ দেখলে কি ভাববে!
গুটি গুটি পায়ে প্রায় সবগুলো ক্লাসরুম চেক করে একপ্রকার হাঁপিয়ে উঠে আরো একটি ফাঁকা ক্লাসরুমকে ক্রস করেতই হঠাৎ আমার হাত ধরে হ্যাচকা টানে কেউ আমাকে একটি বড় ফাঁকা ক্লাসরুমের মধ্যে আমাকে ঢুকিয়ে নিল।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি চমকে গিয়ে চিৎকার দিতে উদ্যত হলে একটি বলিষ্ঠ হাত দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে আমার মুখ চেঁপে ধরল।আকস্মিকতার ঘোর কাটলে চোখ বড় বড় করে আমি বুঝতে পারলাম ইহা আর কেউ নয় স্বয়ং নিদ্রই।তার সুদৃশ্য ভ্রু যুগল ঈষৎ কুঞ্চিত করে নিচের আলতো চেপে ধরা ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে দাঁড়িয়ে আমার ভয়ার্ত অভিব্যক্তির মজা নিচ্ছে।একসময় সে আমার মুখ থেকে হাত সরালে আমি হালকা শ্বাস টেনে বললাম,’এমন ভাবে কেউ ধরে,আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!’
সে বাম হাত আমার মাথার ডান পার্শ্বের দেয়ালে রেখে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,’ভীতুরা অলওয়েজ ভয় পাবে এতে আর নতুন কি?’

আমি মুখ ফুলিয়ে তাকে হাত দিয়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে আমার সামনে থেকে সরিয়ে বললাম,’তাহলে সবসময় ভীতু মেয়েকেই কেনো ডেকে পাঠান?একটা সাহসী মেয়েকে ডাকলেই তো হয়!আপনি একটা ভূত এনে সামনে দাঁড় করিয়ে রাখলেও হি হি হি করে হাসবে।’
আমার কথায় হেসে দিলেন উনি।পেছনে সরে হাইবেঞ্চে উঠে বসলেন আর বললেন,
-‘আমি তো জানতাম সিনিয়রকে থাপ্পড় মারা মেয়ে অনেক সাহসী হয়।সেই হিসেবে আমি তো কোনো ভুল করিনি।’

তার কথায় একটি মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে অগ্রসর হতেই কাঠের বেঞ্চের সাথে বাম পায়ে হোঁচট খেলাম।নিদ্র তড়িৎবেগে বেঞ্চ থেকে নেমে আমাকে একটি বেঞ্চে বসিয়ে পায়ে হাত দিল।আমি চমকে উঠে পা সরিয়ে নিলাম।সে এবার তার মাটিতে ভাঁজরত হাঁটুর উপর আমার পা আলতো করে রেখে দেখতে লাগলো।আমি ইতস্তত করে বলতে লাগলাম,’ভাইয়া আমি ব্যাথা পাইনি।আপনি আমার পায়ে…হাত..দি..চ্ছে ন
তার গরম চোখের চাহনিতে আর বাকি কথাটুকু বলতে পারলাম না।সে হাত বুলিয়ে আমার পায়ের গোড়ালি দেখে যাচ্ছেন।তার ছোঁয়ায় এক অদ্ভুত শিহরণ হতে লাগলো আর সাথে অস্বস্তিও।কেউ যদি এভাবে আমাদের দেখে ফেলে তাহলে কি ভাববে।তাছাড়াও অত ব্যাথা তো পাইনি।
বারবার দরজার দিকে নজর রাখতে লাগলাম কেউ যেন এসে না পরে।

-‘ভয় নেই,ফর্টি ফাইভ মিনিটের আগে এখানে কেউ আসবে না।’
তার কথায় আমি চমকে উঠে বললাম,’কেনো?’
সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,’থাক আর বোঝা লাগবে না।পা এখন ঠিক আছে?’
আমি পা নামিয়ে বললাম,’পা তো সেই কখন থেকেই ঠিক আছে।একটু হোঁচট খেলেই কি আর ব্যাথা পায়!’
-‘তুমি নিজেরটা পাও না অথচ আমি কেন এতো ব্যাথা পাই বলো তো?’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’মানে?’
-‘কিছু না।’
-‘তাহলে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন কেনো বললেন না তো?’
কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম হাত উঠিয়ে তার কালো রঙের শার্টের হাতায় মুছে বলল,’মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে,তার জন্য একজন মানুষ দরকার।তাই ডেকেছি,সুপ্তি আমার কপালের উপর একটু তোমার হাত রাখো তো।’
এতক্ষণে আমি খেয়াল করে দেখলাম সত্যিই তার মুখটা আংশিক শুকিয়ে রয়েছে।আমি বললাম,’মাথা ব্যাথার মলম লাগাবেন?আমার ব্যাগে আছে।’
একটি শর্ট বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে তিনি বললেন,’না লাগাবো না।তোমাকে যা বলছি তাই করো।’
আমি কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে তার মাথা টিপে দিতে লাগলাম।তিনি আমার হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বললেন,’টিপে দিতে হবে না।শুধু হাতটা কপালের সাথে ছুঁয়ে রাখো।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’শুধু ছুঁয়ে রাখলে কি হবে?তাতে কি ব্যাথা কমবে নাকি।’
তিনি শুকনো মুখে চোখ খুলে মৃদু হেসে বললেন,
-‘এই শহরের প্রত্যেকটি মানুষের অসুস্থতার এক রহস্যময়ী ওষুধ খুব সন্তর্পণে লুকিয়ে আছে অন্য আরেকজনের হাতের মাঝে।তোমাকে শুধু সেই হাত খুঁজে নিতে হবে।আমার ওষুধও যে তোমার হাতে।’

মেয়েটি আমার পায়ের কাছে এসে মূর্ছিত হয়ে পড়ল।আমি উঠে ধরার আগেই তার পরিবারের মানুষরা এসে তাকে ঘিরে ধরল।আর তার প্রায় সাথে সাথেই আমার একেবারে সামনে দিয়ে স্ট্রেচারে করে মেয়েটির স্বামীকে নিয়ে গেল।অ্যাক্সিডেন্টে থেতলে যাওয়া তার বিভৎস রক্তাক্ত মুখ এক পলকে দেখে এক শীতল স্রোত আমার শির দাড়া বেয়ে নেমে আমাকে কাঁপিয়ে তুলল।মাইগ্রেইনের অসহ্য ব্যাথাটা খুব ভালোভাবেই জাঁকিয়ে বসেছে মাথায়।
সেদিন নিদ্রর সেই কথার মানে আমি বুঝিনি।বরাবরের মতোই ড্যাবড্যাব চোখে শুধু তাকিয়ে ছিলাম।কিন্তু আজ তো বুঝি।আমার হাতের স্পর্শে যেমন তার অসুস্থতার ওষুধ আছে তেমনি আমার অসুস্থতার ওষুধও তো তার হাতেই।তাকে আমার এই মুহুর্তে দরকার,খুব দরকার।
কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তাকে কল করার আগেই ডক্টরের কেবিনে আমার ডাক পড়ল।
ডক্টরের প্রাসারিত বড় কেবিনে ঢুকে একটু হলেও মনটা শান্ত হলো।অন্তত সেই বেদনাদায়ক দৃশ্যের হাত থেকে তো রেহাই পেলাম।ডক্টরের টেবিলের উপর হাতের ফোনটি রেখে চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।হাত দিয়ে কপালের কার্ণিশে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিলাম।টেবিলে রাখা পরিষ্কার সাদা পিরিচে ঢাকা স্বচ্ছে কাচের গ্লাসে পানি দেখে মুহুর্তের মধ্যেই তৃষ্ণা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল।সামনে বসা সাদা এপ্রোণ গায়ের মধ্য বয়স্কের ডক্টরটি হয়তো বুঝতে পারলো।সাদা পিরিচটি সরিয়ে আমার সামনে গ্লাসটি বাড়িয়ে দিল।আমি এক চুমুকেই ঢকঢক করে সমস্ত পানি পান করে নিলাম।তারপর শুন্য গ্লাসটি টেবিলে রেখে মৃদু হাসি টেনে থ্যাংকস বলতেই ডক্টর বলে উঠল,
-‘আপনার সাথে কেউ আসেনি?’
-‘না।আমি একাই এসেছি।কেনো বলুন তো?’
তিনি কিছু না বলে আমার সামনে রিপোর্ট মেলে ধরে মাথা নিচু করে রইলেন।
আমি কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,’ডক্টর রিপোর্ট কি সব নরমাল?’
তিনি মাথা উঁচু করে বললেন,’আপনার কোনো গার্ডিয়ানকে আপনি নিয়ে আসবেন।’
আমি উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম,’আপনি আমার রিপোর্ট আমাকেই বলুন।প্লিজ।’
তিনি চুপ করে রইলেন।
আমি এবার শক্ত হয়ে বললাম,’ডক্টর প্লিজ,আমাকে বলুন সমস্যা কি?’
তিনি একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ থেকে ভারী চশমা খুলে বললেন,
-‘আপনার মাথা ব্যাথা কোনো স্বাভাবিক মাইগ্রেইনের ব্যাথা নয়।আপনি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত।’
ডক্টরের কথাটি শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।সারা শরীর যেনো শীতল হয়ে জমে রইল।নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
-‘আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে।কি..ভা..বে?’

-‘ব্রেইন টিউমার দুই ধরণের হয়,একটি ম্যালিগন্যান্ট অর্থাৎ ক্যান্সারযুক্ত আরেকটি বিনাইন মানে ক্যান্সারহীন।আপনার হয়েছে ম্যালিগন্যান্ট প্রাইমারী টিউমার।এই টিউমারটির উৎপত্তি মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে।আমাদের শরীরের কোষগুলো ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে মরে যায়।যার পরিবর্তেই নতুন কোষগুলো তৈরি হয়।কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় নতুন কোষগুলো তৈরি হয় ঠিকই কিন্তু পুরনো কোষগুলো ঠিক পুরোপুরি ভাবে বিনষ্ট হয় না।তখন কোষগুলো জমাট বেঁধে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এই কেসের অধিকাংশ মানুষই একে মাইগ্রেইনের নরমাল ব্যাথা মনে করে অবহেলা করে।আর যখন বুঝতে পারে ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে যায়।যদিও এখন এই রোগের চিকিৎসা স্বরুপ বিদেশে বিভিন্ন সার্জারির ব্যবস্থা মোটমুটি আছে….

তার শেষোক্ত আমতা আমতা করে বলা কথাগুলো মাঝ পথে থামিয়ে আমি বললাম,
-‘আমার হাতে আর কতদিন সময় আছে?’

তিনি একটি চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
-‘এই বেশি হলে দশ বা এগারো মাস।’

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।শব্দগুলো গলায় আটকে এলো।টেবিলের উপর শুন্য গ্লাসটা পড়ে রয়েছে।অথচ আরেকগ্লাস পানির তেষ্টায় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে রয়েছে।কিন্তু না আসছে ভেতর থেকে কোনো শব্দ আর না কোনো শক্তি।সামনে থাকা ফোনটি অনবরত বেজে যাচ্ছে।ফোনের স্ক্রিনে নীলাভ আলো জ্বলে গোটা গোটা অক্ষরে বারবার ভেসে উঠছে সেখানে একটি নাম,”নিদ্র।”

চলবে,,