সেজেগুজে বসে আছে
সুন্দরী রমণী,
পাত্রপক্ষ দেখতে তাকে
আসবে যে এখুনি।
দেখে তাকে মনে ধরে
পাত্রপক্ষ সকলের,
এইবার দরাদরি
শুরু হয় যৌতুকের।
ছেলের চাকরি সরকারি,
এমন চাকরিজীবী ছেলে পেতে
যৌতুক তো দরকার-ই।
তাই পাত্রপক্ষ চেয়ে বসে
চড়া করে দাম,
যৌতুকের পরিমাণ শুনে
পাত্রীর বাবার গাত্রে দেয় ঘাম।
পাত্রী বলে উঠে
আমি নই তো দোকানের পন্য,
তবে এখানে এতো দরাদরি
হচ্ছে কিসের জন্য?
পাত্রের মা পাত্রীর পানে
অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়,
এ মেয়ে ভারি অসভ্য
বড়দের মাঝে কথা বলে,
বলেই মুখটা বাঁকায়।
পাত্রীর ব্যবহারে মনক্ষুন্ন
পাত্রপক্ষ যায় চলে,
ওরে পোড়ামুখো, একি করলি!
পাত্রীর বাবা গর্জে উঠে বলে।
পাত্রী পিতা মাতাকে বলে
আপন মনে মনে,
তোমরাই যদি না থাক সনে,
তোমরাই যদি দিতে চাও যৌতুক,
তোমরাই যদি তোমাদের কষ্টে
ব্যথিত করতে চাও আমার বুক।
তবে করব কী আমি?
আমার কপালে কী আছে
তা তুমিই জান অন্তর্যামী।
আমি কি পাবো না কোনদিনই
নারী বলে সম্মান?
তবে কি ব্যর্থ যাবে
কাজী নজরুলের সাম্যের গান?
#গল্প_পোকা_কবিতা_লিখন_প্রতিযোগিতা
কবিতাঃ আমি সেই নারী
লেখকঃ নেপচুনের_প্রাণী
আমি সেই নারী,
যাকে নিয়ে যৌনাচার আর যৌনাচার
যাকে ছাড়া হয় না পুরুষের ঘর সংসার ।
আমি সেই নারী,
যার শ্রমের মূল্য কোথাও নেই
রাতের অন্ধকারে নিঃসংকোচে
স্বামীকে শরীর বিলিয়ে দেই।
আমি সেই নারী,
চারিদিকে শুধু লজ্জা, লজ্জা আর লজ্জা
যে যেদিকে পারে ভাঙছে অস্থি মজ্জা ।
আমি সেই নারী,
যৌতুকের বলী হয়ে স্বামীর ঘর ছাড়ি ঘর
পোড়া আসবাবপত্রের মতো দগ্ধ হয়ে মরি।
আমি সেই নারী,
পথে ঘাটে হর হামেশা হারাই সম্ভ্রম
সুবিচার পেতে বের হয়ে যায় মোদের দম।
আমি সেই নারী,
আমার নেই কোনো লিঙ্গের অহংকার
সবাই আমার উপর করে বলাৎকার।
আমি সেই নারী,
কারো স্ত্রী, মা কিংবা আদরের বোন
আমার শ্লীলতা কেড়ে নেয়া হয়,
রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরির মতোন।
আমি সেই নারী,
পুরুষ পাষন্ডের লোলুপ দৃষ্টিতে,
আত্মসম্মান রক্ষায় নিদারুণ আতঙ্কে
বুক ভরা যন্ত্রণা নিয়ে চলাফেরা করি।
আমি সেই নারী,
জেগেছি এবার ,
আমার কন্ঠে এখন তীব্র প্রতিবাদের হাতিয়ার!
সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি যোগ্য,
আমি দুর্বার !!
#গল্পপোকা_কবিতা_লিখন_প্রতিযোগিতা
কবিতা : কাঠগোলাপ কথন
কবি : আহসান হাবিব আরাফ
কাঠগোলাপ নামে যে আদতে কোনো ফুল আছে তাহা আমি জানতুম না।
আমি ভাবতুম সকলে হয়তো গোলাপকে কটাক্ষ করিয়া কাঠগোলাপ বলে সম্মোধন করিত।
কিন্তু গোলাপকে যে মানুষের কটাক্ষ করিবার কারণ থাকিতে পারে ইহা ভাবিয়াও,
ভাবনার কূল-কিনারা খুজে পেতুম না।
পৌষের কোনো এক বিকেলে আমার খুব কাছের একজন মানবীর মুখ থেকে শুনিয়াছিলাম যে কাঠগোলাপ আসলেই আলাদা একটি ফুলের নাম।
ইহা কটাক্ষ করা গোলাপ নহে!
সে আমাকে বলিয়াছিল, ‘তুই কাঠগোলাপ এখনো চিনিস নে!?’
তাহার কথা শুনিয়া সেই সময় আমার লজ্জায় মূর্ছা যাওয়ার জোগাড় হইয়াছিল।
তাহার কথায় বুঝিতে পারিলাম যে ফুলকে লইয়া তাহার ঝুলিতে ভারি জ্ঞান বিদ্যমান।
আর তা থাকিবে নাই বা কেনো;
যে কোনো ফুল হাতে পাইলে তাহা নিয়ে কপোলের চুল সরিয়ে কানে গুঁজিয়া রাখিতে পরিলে তবেই যেন তার সুখ।
তাহার যে লম্বা কালো কেশ!
সেই কেশে যদি কোনো ফুল যুক্ত হইতো, তখন তাহাকে দেখিতে ভারি মিষ্টি লাগিত।
হয়তো কোনোদিন সে কাঠগোলাপও তাহার কানের উপর গুঁজিয়াছিল।
সে যাকগে, তাহার লম্বা কেশের বয়ান নাহয় পরে আরেকদিন দেওয়া যাইবে।
শুনেছিলুম যে বসন্তেই নাকি কাঠগোলাপ ফোটে।
তাই আমার চক্ষু যুগল বসন্তের শত ফোটা ফুলের মাঝেও কেবল চাতক পাখির মতো কাঠগোলাপকে খুঁজিতো।
বসন্তের কোনো এক চঞ্চলা দুপুরে আমার চক্ষু যুগল হঠাৎ এক ফুলের উপর স্তব্ধ হইলো।
ভালো করিয়া অবলোকনে বুঝিলাম ইহাই সেই কাঠগোলাপ।
কি স্বচ্ছ তাহার পাপড়িগুলো!
যেন আস্ত এক খন্ড সাদা মেঘ জমিয়াছে।
সেদিন কাঠগোলাপের সহিত আমার কথোপকথন হইয়াছিল।
আমি চক্ষু, ওষ্ঠ্য দিয়ে ফুলগুলোকে অজস্র বার চুম্বন করিয়াছিলাম।
সে এক অন্যরকম পরম তৃপ্তি।
#গল্পপোকা_কবিতা_লিখন_প্রতিযোগিতা
কবিতা : কাঠগোলাপ কথন
কবি : আহসান হাবিব আরাফ
কাঠগোলাপ নামে যে আদতে কোনো ফুল আছে তাহা আমি জানতুম না।
আমি ভাবতুম সকলে হয়তো গোলাপকে কটাক্ষ করিয়া কাঠগোলাপ বলে সম্মোধন করিত।
কিন্তু গোলাপকে যে মানুষের কটাক্ষ করিবার কারণ থাকিতে পারে ইহা ভাবিয়াও,
ভাবনার কূল-কিনারা খুজে পেতুম না।
পৌষের কোনো এক বিকেলে আমার খুব কাছের একজন মানবীর মুখ থেকে শুনিয়াছিলাম যে কাঠগোলাপ আসলেই আলাদা একটি ফুলের নাম।
ইহা কটাক্ষ করা গোলাপ নহে!
সে আমাকে বলিয়াছিল, ‘তুই কাঠগোলাপ এখনো চিনিস নে!?’
তাহার কথা শুনিয়া সেই সময় আমার লজ্জায় মূর্ছা যাওয়ার জোগাড় হইয়াছিল।
তাহার কথায় বুঝিতে পারিলাম যে ফুলকে লইয়া তাহার ঝুলিতে ভারি জ্ঞান বিদ্যমান।
আর তা থাকিবে নাই বা কেনো;
যে কোনো ফুল হাতে পাইলে তাহা নিয়ে কপোলের চুল সরিয়ে কানে গুঁজিয়া রাখিতে পরিলে তবেই যেন তার সুখ।
তাহার যে লম্বা কালো কেশ!
সেই কেশে যদি কোনো ফুল যুক্ত হইতো, তখন তাহাকে দেখিতে ভারি মিষ্টি লাগিত।
হয়তো কোনোদিন সে কাঠগোলাপও তাহার কানের উপর গুঁজিয়াছিল।
সে যাকগে, তাহার লম্বা কেশের বয়ান নাহয় পরে আরেকদিন দেওয়া যাইবে।
শুনেছিলুম যে বসন্তেই নাকি কাঠগোলাপ ফোটে।
তাই আমার চক্ষু যুগল বসন্তের শত ফোটা ফুলের মাঝেও কেবল চাতক পাখির মতো কাঠগোলাপকে খুঁজিতো।
বসন্তের কোনো এক চঞ্চলা দুপুরে আমার চক্ষু যুগল হঠাৎ এক ফুলের উপর স্তব্ধ হইলো।
ভালো করিয়া অবলোকনে বুঝিলাম ইহাই সেই কাঠগোলাপ।
কি স্বচ্ছ তাহার পাপড়িগুলো!
যেন আস্ত এক খন্ড সাদা মেঘ জমিয়াছে।
সেদিন কাঠগোলাপের সহিত আমার কথোপকথন হইয়াছিল।
আমি চক্ষু, ওষ্ঠ্য দিয়ে ফুলগুলোকে অজস্র বার চুম্বন করিয়াছিলাম।
সে এক অন্যরকম পরম তৃপ্তি।
গ্রীষ্মের রুক্ষ দুপুরে ক্লান্ত শরীরে
আজো চেয়ে থাকি
ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত রাস্তায়।
শত পথিকের আনাগোনা মাঝে
হয়তো হঠাৎ দেখবো তোমায়!
বৃষ্টি শেষে শান্ত প্রকৃতি
অশান্তি শুধু আমার এ মনে,
দুই নয়নে জল ছলছল
আজও সব স্মৃতি আছে যতনে।
আজও খুঁজে ফিরি, কতো পথ ঘুরি
খুঁজে পাবো তোমায় শুধু এ আশায়।
কত দিন গেল, শত বেলা ফুরালো
অপেক্ষার এ অবসান হলো নাতো হায়!
তবে কী তুমি
ভুলে বসেছ সব, ভুলেছো আমায়?
মনরে শুধায়।
সেই যে গেছ, দুই যুগ গত
অপেক্ষায় আছি আজও অবিরত।
সেই যে গেছ, ফিরলে না আর
অপেক্ষার অবসান হবে না কি আর?
বাংলায় কথা বলতে, বাংলায় লিখতে
বুকে লালনের স্বপ্ন নিয়ে বাংলায় চলতে
যারা রিপুর সম্মুখে পেতেছিল বুক
যারা রাইফেল হাতে ছুটেছিল বাংলা ভাষা রক্ষায়,
তারা তো কভু ভীরু কাপুরুষ নয়!
রফিক, সালামসহ যারা রাজপথ ভাষা আন্দোলনে কাঁপিয়েছিল, তারা তো বাংলার সূর্য সন্তান।
যাদের হুংকারে মুখরিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান।
চুয়ান্নতে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদ বাতিল,
বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে গভর্নর জে জি এম।
ছাপ্পান্নতে রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে মেনে নেয়,
হাসি ফুটে প্রান্তিক-শহুরে বাঙালির বদনে।
বাক স্বাধীনতা অবরুদ্ধ করার পরেও স্বভাষায়
প্রতিবাদের ঝড় উঠে পূর্ব বাংলার মানুষের মুখে।
বাঙালির মুক্তির সনদের দাবিতে মাঠ হতে
তেপান্তর স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল।
ভেসে আসে গণকন্ঠের আহ্বান, সম্মিলিত সুরে
আওয়াজ তোলে “রাষ্টভাষা বাংলা চাই”।
ছয় দফা আন্দোলন শেষে, উনসত্তরে এক
হত্যার প্রতিবাদে মিছিলে মিছিলে ছেয়ে যায়
দেশ। গণআন্দোলনে কাঁপে সমগ্র ভূমি।
রূপায়িত হয় শেষে গণঅভ্যুত্থান নামে।
এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠন, প্রস্তুতি দেশ রক্ষায় আহবের সম্মুখ পানে রাইফেল হাতে ছুড়তে।
পূত ভূমি, মায়ের মততার আচল রক্ষায়
শপথ পাঠে দেশ রক্ষার পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ।
যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে সহজ সরল বাঙালি
দেশমাতৃকার বুকে রক্তিম রুধি ঝরিয়ে
স্বদেশ বাঁচাতে চায়, বাক স্বাধীনতা চায়
সেই সাতই মার্চের অগ্নিময় ভাষণ স্মরণ রেখে।
দুর্মতি কৌশল অবলম্বের পথ হৃদয়ে গাঁথে
পাক বাহিনী, মেধা শূণ্য করতে চেয়েছিল পূর্ব বাংলা।
বুলেটে বুদ্ধিজীবীদের তাজা প্রাণ কেড়ে নেয়,
তবুও বিজয় পারিনি কুঙ্খিত রাখতে হাতে।
বাঙলার দামাল ছেলের দল কভু পশ্চাতে ফিরেনি,
হৃদয়ে পূর্ণ সাহস ও বঙ্গবন্ধুর সুপ্ত জোয়ারে প্রাণের সংঞ্চারিত ভাষণের উৎসাহ, উদ্দীপনাকে বুকে ধারণ করে
ছিনিয়ে আনে বহুল প্রত্যাশিত বিজয়।
স্বাধীনতার পদধ্বনি বাজে গগনপটে
মরুতে বিজয়াধূম উল্লাসের ধ্বনি ভাসে
শ্রমিক জেলে কৃষক সকলের বদনে হাসি
আমার বাংলা, আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
আমরা মানুষ, আমরা নির্বোধ
নিজ স্বার্থ হাসিলে খুঁজি সুযোগ,
আমরা মানুষ, আমরা ধূর্ত
আপন কাজে অন্যের জন্য খুড়ি গর্ত,
আমরা মানুষ, আমরা অহংকারী
সময়ের ব্যাবধানে আমরা সম্পর্ক ছিন্নকারী ।
আমরা মানুষ, আমরা লোভী
স্বল্প ব্যয়ে অধিক আশাবাদী;
আমরা মানুষ, আমরা চাটুকদার
উপকার করলে করি তার অপকার ।
আমরা মানুষ, আমরা পাপী
নিজ দোষ না খুঁজে অন্যের দোষ খুঁজি,
আমরা মানুষ, আমরা আলসে
নিজ কাজ করায় অন্যকে দিয়ে ,
আমরা মানুষ, আমরা হিংসুক
অন্যের দুঃখে পায় মহাসুখ ।
আমরা মানুষ, আমরা অবুঝ
নিজ গর্তে পড়লে তবেই ফিরে হুস!
#গল্পপোকা_কবিতা_লিখন_প্রতিযোগিতা
কবিতা : অজ্ঞাতপরিচয়
কবি : আহসান হাবিব আরাফ
মাগো আমার বাপে কই
কেন দেখিনা আমি তারে?
লোকে কয় আমার বাপ নাইক্কা!
কেন নষ্টা তোমায় বলে?
নষ্টা কি মা,তুমি কও না মোরে?
চুপ করে ক্যান থাকো?
বাদলের মায় মোরে জারজ বলে
জারজ কি মা মোরে বলো?
মাগো আমার বাপ আসে না
ক্যান লয় না মোরে কোলে?
চোখ ফুটিয়া দেখছি তোমায়
বুঝিনা বাপের আদর কারে বলে।
টুকুর বাপে ওরে বুকে জড়ায় ‘সোনামানিক’ ডাকে।
আমার বাপ আসে না কেন মাগো?
তুমি কও না মোরে সত্যি করে।
মা আঁচল দিয়ে চোখ মুছে আর কিছু নাহি কইতে পারে
বলতে চায় অনেক কথা ছোট্ট খোকা সেসব বুঝবে না যে।
মনে পড়ে নুরবানুর ঐ কালো রাতের কথা,
একলা পেয়ে পশুরা সব করল তাকে হানা।
চিল শকুনের মতো করে তাকে ছিঁড়ে ফেলে সেদিন
ঝোঁপের মাঝে পড়ে ছিল তার নিথর দেহ দুদিন।
কিছুদিনের মাথায় আসে খোকা তাহার পেটে
সমাজ তাকে তাড়িয়ে দিল বিনা বাচ-বিচারে।
পশুগুলো চেনা তাহার,সে বলতে নাহি পারে
সমাজ তাকে বলে কলঙ্কিনী,
পশুরা সব বুক ফুলিয়ে বাঁচে।
শত শত নুরবানুরা পায় না সঠিক বিচার
খোকার মতো বালক সবাই পায় না বাপের পরিচয়।