Monday, July 7, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1878



প্রেমপিপাসা পর্ব – ১১

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ১১
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
ভার্সিটি ছুটির পর রেহান কুহুকে বাইকে করে বাসায় পৌঁছে দেয়।
আজ রেহানের সাথে আসতে কুহুর এতোটাও অস্বস্তি হয়নি বরং কিছুটা ভালোলাগছে!

রেহান কুহুকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
কুহু বাসায় ঢুকতেই দেখে জেরিন বসে আছে। মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেচারি অনেক টেনশনে আছে।
কুহুকে দেখেই দৌড়ে কুহুর কাছে আসে।

জেরিন – হাই আপি… আজ সারা দিন কেমন কাটলো গো?

কুহু জেরিনের কথায় রেগে যায়। কতো টা অসভ্য মেয়ে! নিজেই বিপদে ফেলে নিজেই জিগ্যেস করছে আজ সারাদিন কেমন কাটলো! কুহু রেগে গেলেও তার রাগটা প্রকাশ করে না।

কুহু – ভালোই কাটলো (মুখ গোমড়া করে)

জেরিনকে আর কিছু বলতে না দিয়েই কুহু রুমে চলে যায়।

জেরিন – যাহহ বাবা কিছুই তো বুঝলাম না। এমন ভাবে উত্তর দিলো যে দুটানায় পড়ে গেলাম। না ভালো না খারাপ!

জেরিন কিছুক্ষণ বিরবির করে নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই তিশান (হিয়ার বয়ফ্রেন্ড) কে ফোন দেয়।

— হ্যালো

জেরিন – হ্যা ভাইয়া কাজ টা হয়েছে তো। আই মিন রেহান বিশ্বাস করেছে তো?

— জ্বী আপু।

জেরিন – ওকে ধন্যবাদ ভাইয়া।

জেরিন ফোন টা কেটে দেয়। এই মূহুর্তে জেরিনের ইচ্ছে করছে নাচতে!

জেরিন – তার মানে রেহান সত্যি বিশ্বাস করে নিলো তিশান নামের কেউ আপির বয়ফ্রেন্ড!
আহারে ভাবতেই কেমন খুশিখুশি লাগছে আমার।

এদিকে কুহু ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে যায়।
খাওয়া শেষ করে এসে ফোন টা হাতে নিয়ে এফবিতে ঢুকে।
অনেক খুঁজে রেহানের আইডিটা পেয়ে যায়। অবশ্য রেহান আগে থেকেই কুহুকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে রেখেছে।

কুহু কিছু একটা ভেবে একসেপ্ট করে। কিছুক্ষণ পরই রেহানের আইডি থেকে ম্যাসেজ আসে…

— জানপাখি এতো দিন আমাকে ঝুলিয়ে রেখে আজ একসেপ্ট করার সময় হলো?

কুহু তো অবাক! রেহান জানলো কি করে এটা কুহুর আইডি! ধুরর কোথায় ভেবেছিলো রেহান কে একটু পরিক্ষা করবে তা না বেটা তো সব জেনেই গেলো।

রেহান – কি হলো? কথা বলছো না যে?

কুহু – আপনি জানলেন কি করে এটা যে আমার আইডি?

রেহান – ওহ তাই বলো! তোমার ফ্রেন্ড সানিয়া ওর আইডিটা পেয়েছিলাম ওর কাছ থেকেই তোমার টা নিলাম। বাই দ্যা ওয়ে… তুমি ফেইক একাউন্ট ইউজ করো কেনো?

কুহু – এমনিই।

রেহান – ওহহ ওকে। খেয়েছো?

কুহু – হুম। আপনি?

রেহান – হ্যাঁ। ফোন নাম্বার টা দাও।

কুহু – কার?

রেহান – আমার বাবার!

কুহু – মানে?

রেহান – মানে তোমার কাছে যেহেতু চাইছি তাহলে নিশ্চয় তোমার নাম্বারটাই চাইছি।

কুহু – আচ্ছা দিচ্ছি। (কুহুর নাম্বার টা দিয়ে দেয়)

রেহান – ওকে এখন বাই। রেস্ট করো তুমি।

কুহু – আচ্ছা।

তারপর রেহান কুহুকে অনেক গুলো কিস ইমুজি দিয়ে অফলাইনে চলে যায়।

কুহু ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

বিকেলে…

কুহু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কফি বানাতে চলে যায়।

পেছন থেকে জেরিন ডেকে উঠে।

জেরিন – আপি

কুহু – হ্যা বল

জেরিন – ছাঁদে যাবে?

কুহু – চল যাই।

জেরিন – ওকে আসো। আমি কফি বানিয়ে নিই।

কুহু – তুই যা। আমিই বানিয়ে আনছি।

জেরিন ছাদে চলে যায়। আর কুহু অনিচ্ছা স্বত্তেও কফি নিয়ে ছাদে আসে।

জেরিন কে একটা মগ দিয়ে আরেক টা নিজে রাখে।

অনেকখন দুজন কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে। হটাৎ কুহু নিচে তাকাতেই দেখে রেহান বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে ।

তার মানে রেহান এখানে এসেছিলো? কিন্তু চলেই বা যাচ্ছে কেনো? কুহু চিন্তায় পড়ে যায়।

রাতে সবাই একসাথে বসে ডিনার করে নেয়। কুহু নিজের রুমে চলে আসে। কুহু ভাবছে রেহানকে কি একটা ফোন দিবে? ভাবতে ভাবতেই কারো ফোন আসে।

কুহু মোবাইলের স্কিনে তাকাতেই দেখে রেহানের নাম্বার। কুহু ভয়ে ভয়ে ফোন টা রিসিভ করে।

রেহান – ছাঁদে আসো।

কুহু – কিহহহহ!

রেহান – কানে কম শুনতে পাও কবে থেকে?

কুহু – কম শুনবো কেনো?

রেহান – তাহলে কি বললাম কানে গেলো না? (দাঁতে দাঁত চেপে)

কুহু – না মানে… এতো রাতে ছাঁদে গিয়ে কি করবো?

রেহান – আমার সাথে প্রেম করবা ডেম এট…

কুহু রেহানের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

কুহু – ছাঁদে আপনার সাথে প্রেম করবো মানে?

রেহান – তুমি যে বোকা আমি জানতাম কিন্তু সেই লেভেলের বোকা সেটা তো জানতাম না।

কুহু – দেখুন বেশি বলে ফেলছেন কিন্তু।

রেহান – পকপক বন্ধ করে ছাঁদে আসো। আমি ছাঁদে আছি অনেকখন হলো।

কুহু – আপনি আমাদের ছাঁদে?

রেহান – না আমার বাসার ছাঁদে!

কুহু – (এই অসভ্য ছেলেটার মুখে মধু দেয় নাই ক্যান! কথায় কথায় রেগে যায়)

রেহান – আসো ফাস্ট।

কুহু – আচ্ছা ঠিক আছে।

রেহান ফোন কেটে দিলে কুহু চুপিচুপি ঘর থেকে বের হয়ে দেখে সবার দরজা বন্ধ। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
কুহু মেইন দরজা টা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।
এতো রাতে ছাঁদে যেতে অবশ্য কুহুর অনেক টা ভয়ও করছে। কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই।

কুহু ছাদে আসতেই কেউ কুহুকে একটানে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।
ভয়ে কুহুর প্রানখানা উড়াল দিবে এমন অবস্থা!

কুহু তাকিয়ে দেখে রেহান!

কুহু – আপনি এতো রাতে এখানে এলেন কী করে?

রেহান কুহুর কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে কুহুর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।

কুহু রেহানের কাজে বেশ অবাক হয়ে যায়। এমন কিছু করবে রেহান তা ভাবতেও পারেনি।
কুহু রেহান কে ছাড়াতে চেষ্টা করে রেহান কুহুকে আরও চেঁপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

অনেকখন পর রেহান কুহুকে ছেড়ে একটু দূরে সরে দাড়ায়।

রেহান – সরি জানপাখি

কুহু – কেনো? (অবাক হয়ে)

রেহান – তোমার পারমিশন ছাড়াই তোমাকে কিস করেছি।

কুহু – আচ্ছা। এখন বলুন এখানে আসলেন কী করে? আর আমাদের ছাঁদের দরজা টা তো বন্ধ থাকে। তাহলে?

রেহান – আমি তো খুলাই পেলাম। আমি জানতাম না বন্ধ থাকে তাও এসে খুলা পেয়েছি বলেই তোমাকে কল করলাম।

কুহু – আর বন্ধ থাকলে নিশ্চয় আবার বাড়ি ফিরে যেতেন?

রেহান – উহুম…তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। যেভাবে হোক দেখা করেই যেতাম।
বন্ধ থাকলে ফোন করে তোমাকে নিচে ডাকতাম।

কুহু – যদি না আসতাম তো?

রেহান – তোমার ঘরেই চলে যেতাম। কেউ দেখলে দেখতো আই ডোন্ট কেয়ার! (ভাব নিয়ে)

কুহু – হুহহহ হয়ছে।

রেহান – ইয়াপ জানপাখি। সত্যিই ভয় পাবো না৷ কিন্তু আমি এখন এতোটাও বোকামি করবো না। কারন আমি চাই না তোমার ঐ গুনধর বোন আমাদের ব্যাপার টা জানুক।

কুহু – আচ্ছা জানলে সমস্যা টা কী বলুন তো?

রেহান – ওকে সারপ্রাইজ দিবো!

কুহু – এ আবার কেমন সারপ্রাইজ?

রেহান – সময় হলেই বুঝবে।

কুহু – হুম। ঐ সময় চলে গেলেন যে?

রেহান – তুমি দেখে নিয়েছো?

কুহু – হ্যা।

রেহান – তোমার সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম। দেখলাম তুমি ছাঁদে আর তোমার সাথে আরও একজন আছে। থাকলে তো জেরিনই থাকতো। তাই চলে গিয়েছিলাম।

কুহু – ওহহ। বুঝেছি। আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এবার বাড়ি যান।

রেহান – পরে যাই।

কুহু – না যান তো। কাল ভার্সিটি আছে আমার।

রেহান – আমারও তো আছে। তাতে কি?

কুহু – আপনার কিছু না কিন্তু আমার অনেক কিছু। আমি এখন ঘুমাবো। বুঝেছেন?

রেহান – ওকে। রেহান কুহুর দিকে একটু এগুতেই কুহু ভয়ে পিছিয়ে যায়। রেহান কুহুর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে…

রেহান – গুড নাইট। —- বলেই কুহুর কানের নিচে চুমু দেয়।

কুহু কেঁপে উঠে। গুড নাইট কথাটাও এভাবে বলতে হই? আজিব!

রেহান চলে গেলে কুহুও নিজের রুমে চলে যায়।

কুহু রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই জেরিন রুম থেকে বেরিয়ে আসে….

জেরিন – এতো রাতে আপি কোথায় গিয়েছিলো?
জেরিন মাথায় হাজারটা চিন্তা নিয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে কুহু ঘুম থেকে উঠে ফোনের রিংটোন এর শব্দ শুনে রিসিভ করতেই কারো মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে….

— গুড মর্নিং জানপাখি….

কুহু মুচকি হাসে।

— ভার্সিটিতে আসবে না?

কুহু – হ্যা।

— ওকে ফ্রেশ হও।

কুহু – ওকে।

ফোন কেটে দিতেই কুহু ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসে।

কুহুর মা – কিরে আজ এতো তারাতারি?

কুহু – হুম।

কুহুর মা – কোনো কাজ আছে?

কুহু – না এমনিই। সব সময় তো দেরি করেই যাই। তাই আজ একটু তারাতারি যাবো।

জেরিন – (কিছু একটা ভেবে) আপি আমিও আজ তোমার সাথে ভার্সিটি যাবো।

কুহু – তুই আবার কবে ভার্সিটিতে ভর্তি হলি? তাও আমাদের ভার্সিটিতে?

জেরিন – না মানে এমনিই ঘুরে দেখতে যাবো আরকি।

কুহু – ভার্সিটি নিশ্চয় পার্ক নয় যে তুই ঘুরে দেখবি। তাছাড়া আমাদের ভার্সিটিতে বাহিরের কাউকে এলাউ করে না।

জেরিন – ওহহ আচ্ছা।

কুহু ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠে চলে যায়।

কুহু বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা করে ভার্সিটিতে চলে আসে।
এতো তারাতারি এসেও বেচারি ঝামেলায় পড়লো। না সানিয়া আর রিহা এসেছে না রেহান!
একা একা অস্বস্তি ফিল করছে। কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করতেই দেখে রিহা আর সানিয়া আসছে। ওদের দেখে কুহুর যেনো প্রান ফিরে পেলো।

কুহু – এতো খনে আসার সময় হলো? (ওদের কাছে এগিয়ে গিয়)

সানিয়া – আরেব্বাস! এ আমি কাকে দেখছি?

কুহু – নিশ্চয় তোর শাশুড়ি কে না! আমাকেই দেখছিস।

রিহা – সেটাই তো! তুই এতো তারাতারি?

কুহু – এমনিই ভালো লাগছিলো না বাসায় তাই চলে আসলাম।

সানিয়া – বাহ উন্নতি হচ্ছে দেখছি!

কুহু – আরে আজিব! তারাতারি আসলে বুঝি উন্নতি হয়?

রিহা – সে তুমি বুঝবে না খুকি। এবার চলো।

কুহু – হু চল।

কুহু ওদের সাথে হাটছে আর বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

সানিয়া – কেউ বোধহয় আসেনি আজ! আহারে যার জন্য এতো কষ্ট সেই মিসিং!

কুহু ভ্রু কুঁচকে সানিয়ার দিকে তাকায় সাথে সাথেই সানিয়া চোখ টিপ মারে।

এদিকে রেহান ঘুম থেকে উঠতে অনেক টা লেট করে ফেলে। কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে চলে আসে।

রেহানের বাবা – আজ ভার্সিটিতে যাবে?

রেহান – হ্যা বাবা।

রেহানের বাবা – তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

রেহান – হ্যা বলো না। ব্রেকফাস্ট করতে করতেই শুনে ফেলি।

রেহানের মা – থাক না। রাতে বললে হয় না।

রেহানের বাবা – না এখন বলবো। সারা দিন ও ভেবে নিবে রাতে আমাকে জানাবে ব্যাস।

রেহানের বাবার কথা শুনে রেহান কিছুটা অবাক হয়ে যায়। এমন ভাবে কথা বলছে কেনো বাবা?
কী এমন কথা যে সারা দিন ভাবতে হবে।

চলবে…

প্রেমপিপাসা পর্ব – ১০

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ১০
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
জেরিন ফোন টা হাতে নিয়ে রেহান কে কল করে।
২ বার কল দেয়ার পরও রেহান কল রিসিভ করে নি।

জেরিন – হলো টা কী? ফোন তুলছে না কেনো? আরেকবার দিয়ে দেখি…
ভাবতে ভাবতেই জেরিন আবার রেহান কে কল করে। এবার রেহান সাথে সাথেই ফোন টা রিসিভ করে নেয়।

রেহান – হ্যা বলো…

জেরিন – তিশান ভাইয়ার ফোন নাম্বার আর এডড্রেস টা পেয়েছি।

রেহান – ওকে ম্যাসেজ করে দাও।

জেরিন – ওকে। — রেহান ফোন কেটে দিতেই জেরিন নাম্বার আর এডড্রেস টা পাঠিয়ে দেয়।

রেহান নাম্বার টা পেয়ে সাথে সাথেই নাম্বারে ফোন দেয়।

— হ্যালো… কে?

রেহান – আমি কে সেটা পরে জানতে পারবে। তুমি নিশ্চয় তিশান?

— হ্যা।

রেহান – গুড। ফ্রি আছো আজ?

তিশান – হ্যা আছি। কিন্তু কেনো?

রেহান – মিট করবো তাই।

তিশান – কিন্তু আমি আপনার সাথে মিট করবো কেনো?

রেহান – এতে তোমারই ভালো হবে।

তিশান – ওকে কোথায় আসবো বলুন।

রেহান তিশানকে একটা ঠিকানা ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দেয়। আর বলে আগামিকাল সকাল ৯ টায় চলে আসতে।

পরের দিন….

জেরিন আজ খুব খুশি নিশ্চয় তার মনের মতো কিছু ঘটবে আজ!

কুহু রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়। গেইটে ঢুকতেই কেউ কুহুর হাত চেপে ধরে। কুহু তাকিয়ে দেখে রেহান।

কুহু – হাত ধরলেন কেনো?

রেহান – ওহহ আমি ধরলেই যতো সমস্যা! আর তিশান ধরলে বুঝি খুব ভালো লাগে তোমার? (রাগি লুক নিয়ে)

কুহু – বাজে কথা কম বলুন। কে তিশান? আমি কোনো তিশান কে চিনি না আর কতো বার বলবো বলুন তো?

রেহান – এইসব নাটক করতে হবে না আর। তোমার তিশান আসছে তখন সামনাসামনি না হয় বলে দিও তুমি ওকে চিনো না। (বাঁকা হেসে)

কুহু এবার বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। কি হচ্ছে এসব! কে তিশান? যাকে আমি চিনিই না নামও জানিনা সে সামনে আসলেই কি বা না আসলেই কি আজিব!

রেহান কুহুর হাত আগের মতোই চেপে ধরে আছে।
গেইটের সামনে কেউ এসে অনেক খন ধরেই কাউকে খুঁজছে। ফোন টা হাতে নিয়ে কল দিতেই রেহানের ফোন না বেজে উঠে।

রেহান – চলে এসেছো?

— হ্যা। আমি তো ভার্সিটির গেইটের সামনেই আছি। আপনি কোথায়?

রেহান গেইটের সামনে তাকাতেই একটা ছেলেকে দেখতে পায় কানে ফোন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রেহান কুহুর হাত টা ধরে রেখেই ছেলেটার কাছে যায়।

রেহান – হ্যালো তিশান!

— ওহহ হাই। আপনিই রেহান?

রেহান – হুমম।

— তা কেনো ডেকেছেন?

রেহান – এভাবে রাস্তায় কথা না বলে আমার মনে হই কোনো কফিশপ বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কথা বলা যাক।

— এজ ইউর উইশ।

কুহুর মাথায় কিছুই ঢুকছে না কে এই ছেলে? সে তো স্বপ্নেও এই ছেলে কে দেখেনি বাস্তবে দূরে থাক!
রেহান কুহুর হাত টা আগের মতোই ধরে আছে।

রেহান কুহু আর ছেলেটা একটা কফিশপে যায়।

রেহান – তা তিশান তুমি কোন বর্ষে?

ছেলেটা – জ্বী আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়া

রেহান – ওহহ গুড।

ছেলেটা রেহান কে দেখেই কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। কারন রেহানের চোখ গুলো ভয়ংকর রকমের হয়ে আছে। তাছাড়া রেহান ওর সিনিয়র।

ছেলেটা – আচ্ছা আপনার সাথে উনি কে? নিশ্চয় আপনার গার্লফ্রেন্ড?

এবার কুহু বড়সড় শক খেলেও রেহান যেনো একদমই স্বাভাবিক আছে। কুহু রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহানের কোনো রিয়াকশন নেই।
এটা কিভাবে সম্ভব! তিশান নাকি আমার বফ! অথচ আমি তাকে চিনতাম না। এখন তো দেখছি এই তিশান ও আমাকে চেনে না!!
তাহলে উনি বার বার কেনো বলে যাচ্ছেন তিশানের সাথে আমার রিলেশন আছে!
ওহহ আল্লাহ এতো কনফিউশন আর ভালো লাগছে না!

রেহান – সেকি! তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ড কে চিনতে পারছো না! হাউ ফানি! (বাঁকা হেসে)

রেহানের কথা শুনে মিস্টার তিশান পুরাই হাম্বা বলদ টাইপ হয়ে গেছে!

ছেলেটা – ( তার মনে এই কুহু! এর জন্যই হিয়া আমকে রাজি করিয়েছিলো? কিন্তু আমিই বা কি করবো আমি তো এই মেয়েকে কখনো দেখিই নি। ঐ হিয়ার বাচ্চা হিয়াও তো আমাকে কোনো পিক দেয়নি। এখন কি করি? ধরা তো পরে গেলাম!…মনে মনে)

রেহান – কি হলো মিস্টার তিশান? আপনি এতো ঘামছেন কেনো? বেশি গরম লাগছে? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)

ছেলেটা – জ্বী…. না মানে আমি ঠিক আছি। আপনি কেনো ডেকেছেন বললেন না তো?

রেহান – কতো পেয়েছিস? (রাগি কন্ঠে)

রেহানের রাগ দেখে কুহুর হাত পা রীতিমত কাঁপছে।
আর সাজানো তিশান তো ভয়ে চুপসে গেছে।

ছেলেটা – (এখন কি করি? ধরা পরে গেলাম! কিন্তু হিয়া তো বলেছে সাকসেস হতে না পারলে আমাকে ব্রেকাপ করে দিবে! ধুরর করলে করুক আগে নিজে বাঁচি। এই ছেলে যা রাগি। মেরে আমাকে মাটির নিচে পাঠিয়ে দিবে মনে হচ্ছে। বেঁচে থাকলে কতো গার্লফ্রেন্ড পাবো!!… মনে মনে)

রেহান – কত টাকা পেয়েছিস বল? (কিছুটা চিৎকার করে)

রেহানের চিৎকার শুনে আশেপাশের সব মানুষ ওদের দিকে তাকায়।

রেহানের এমন ভয়ংকর রুপ দেখে ছেলেটা সাথে সাথে রেহানকে হাত জোর করে বলতে থাকে…

ছেলেটা – ভাইয়া আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ। আমার কোনো দোষ নেই বিশ্বাস করুন আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না। কিন্তু হিয়া আমাকে ব্রেকাপ করার কথা বলায় রাজি হয়েছিলাম। (কেঁদে দিয়ে)

রেহান – হিয়া টা কে?

ছেলেটা – আমার গার্লফ্রেন্ড। জেরিন নামে ওর ফ্রন্ড আছে৷ সেই ওকে বলেছে ওর কোনো ফ্রেন্ডকে তিশান সাজিয়ে দিতে। তাই ও আমাকে দিয়ে এই সব করিয়েছে। আমায় মাফ করে দিন ভাইয়া।

রেহান – ওকে তুমি যাও। —- বলেই কুহুর হাত ধরে হাটা শুরু করে।

রেহান কুহুকে নিয়ে ভার্সিটির ছাঁদে চলে আসে।
কুহু একপাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে আরেকপাশে রেহান।
রেহানকে দেখতে শান্ত মনে হলেও এই মূহুর্তে কুহুর অনেক ভয় করছে। কারন রেহানের এই চুপ থাকার পেছনে কি পরিমাণ রাগ লুকিয়ে আছে তা বুঝার ক্ষমতা হয়তো কুহুর নেই।

কুহুর এটা ভেবেই খারাপ লাগছে জেরিন এই কাজটা করেছে! যাকে কিনা নিজের আপন বোনের মতো ভালোবাসতো! কুহুর চোখ বেয়ে দু ফুটা পানি বেরিয়ে আসে।
হটাৎ রেহান কুহুর কাছে এসে কুহুকে জড়িয়ে ধরে…

রেহান – আমায় মাফ করে দিও সোনা। সত্যিই যখন শুনেছি তুমি রিলেশন এ আছো আমার মাথা ঠিক ছিলো না। হ্যাঁ মানলাম রিলেশন থাকতেই পারে তোমার। কিন্তু আমি যে তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তোমাকে ছাড়া থাকতেও পারবো না। তাই তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছা টা এতোটা তীব্র হয়েছে।

কুহু – কে বলেছিলো আমি রিলেশন করি?

রেহান কুহুকে হালকা ছেড়ে দিয়ে দাড়ায়।

রেহান – তোমার আদরের বোন জেরিন।

কুহু ভাবতেও পারছে না জেরিন এতোটা নিচ।
কুহু – আপনিও বিশ্বাস করে নিলেন? (করুন ভাবে)

রেহান – আমি বিশ্বাস করলে নিশ্চয় এই প্লান টা করতাম না।

কুহু – মানে? (অবাক হয়ে)

রেহান – মানে জেরিনের কথাটা আমি ঠিকঠাক ভাবে বিশ্বাস করতে পেরেছিলাম না।
আমার প্রথমই সন্দেহ হয় কেনো জানো?,
ঐ দিন ছাদে ইশারা করে আমি তোনার ফোন নাম্বার টা চেয়েছিলাম। তুমি বাসায় চলে যাওয়ার পর জেরিন নিচে এসে ওর নিজের ফোন নাম্বার টা দেয়।
আমি চেয়েছিলাম তোমার নাম্বার কিন্তু ও মিথ্যা বলে নিজের নাম্বার টা তোমার বলে আমাকে দিয়ে দেয়। আমিও ভেবেছিলাম নাম্বার টা হয়তো তোমারই। কিন্তু ফোন দিয়ে বুঝতে পারি নাম্বার টা জেরিনের।
আর তখনই বুঝলাম তোমার এই বোন মিথ্যে বলার জন্য একদিন নিশ্চয় নোবেল পাবে!

তাই ওর বলা কথা গুলো বিশ্বাস করি নি। তাছাছা ওর সাথে মিট করার সময় ওর হাবভাব দেখেও আমি বুঝেছি ও মিথ্যা বলছিলো।

কুহু – তাহলে আমাকে এতো কথা শুনালেন কেনো? (কিছুটা রেগে)

রেহান – জানপাখি সবই যদি প্রথমে বলে দিতাম তাহলে বিষয় টা ঝাপসা থাকতো। আমি প্রমান ছাড়া কিছু করতে পারি না। তাই তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।

কুহু – তাই বলে এই রকম বিহেভ? (অভিমান করে)

রেহান – আহারে কতো কষ্ট পাইছে আমার জানপাখি টা। বাই দ্য ওয়ে তুমি কি আমার প্রেমে পড়ে গেলা নাকি? আমি তো জানতাম তুমি আমাকে সহ্যই করতে পারো না। এখন তো দেখছি সামথিং সামথিং! (চোখ মেরে)

কুহু – হুহহ বয়েই গেছে (মাথা নিচু করে)

রেহান – প্রেমে না পড়লে এতো লজ্জা পেতে না বুঝলে?
মুখে না বললেও আমি কিন্তু ঠিকই বুঝতে পেরেছি।

কুহু – হয়েছে এবার চলুন এখান থেকে। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে।

রেহান – কুহু আমার একটা কথা রাখবে?

কুহু – বলুন…

রেহান – তুমি জেরিন কে কিছুই বলবে না। যা বলার আমিই বলবো। আমি যে সত্যি টা জানতে পেরেছি তা যেনো জেরিন বুঝতে না পারে।

কুহু – কিন্তু কেনো?

রেহান – কারন আছে তাই। বেশি প্রশ্ন করো না।

কুহু – আচ্ছা ঠিক আছে। চলুন এবার।

কুহু চলে যেতে নিলে রেহন কুহুর হাত ধরে কাছে আনে

কুহু -আবার কি হলো?

রেহান কিছু না বলে কুহুর কপালে চুমু দেয়।

রেহান – ব্যাস… এবার চলো।

কুহু মুচকি হাসে সাথে রেহানও!

চলবে…

প্রেমপিপাসা পর্ব – ৯

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৯
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
রেহান – আমার সন্দেহ টাই যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি পাড় পাবে না। এর মাশুল তোমাকে দিতেই হবে!

এদিকে জেরিন বাসায় এসে ভাবতে থাকে কি করবে? কোথ থেকে নাম্বার জোগাড় করবে। আর তিশান নামের কাউকে পাবেই বা কী করে?
হাজারো চিন্তা জেরিনের মাথায়।
জেরিন রুমে গিয়ে সোজা দরজা বন্ধ করে ভাবতে থাকে কী করা যায়।
জেরিন ওর বন্ধবী দের কাছে ফোন দিয়ে সব বলে। সবারই একটা কথা তারা এই বিষয়ে কোনো সাহায্য করতে পারবে না।
হটাৎ জেরিনের মাথায় আসে হিয়ার কথা হিয়া দেশেই থাকে। হিয়ার সাথে জেরিনের পরিচয় হয় ফেইসবুকে। যদিও ওরা ফেইসবুক ফ্রেন্ড তাও অনেক ক্লোজ।

জেরিন হিয়ার ফোন নাম্বার বের করে হিয়াকে কল করে।
কয়েকবার রিং হতেই হিয়া কল টা রিসিভ করে।

— হ্যালো.. আমার কথা মনে আছে নাকি তোর?

জেরিন – ইয়াপ বেইবি মনে আছে নিশ্চয়ই না হলে কি ফোন দিতাম বল?

হিয়া – হ্যা তা ভালো করেই জানি। এখন বল কেমন আছিস? কেমন দিন কাটছে বাংলাদেশে?

জেরিন – ভালো না রে! অনেক বড় একটা সমস্যায় পড়েছি।

হিয়া – বলিস কী? দেশে আসতে না আসতেই সমস্যা! তা কী সমস্যা জানতে পারি?

জেরিন – হ্যা অবশ্যই। তোর কাছে হেল্প চাইবো বলেই তো ফোন করা।

হিয়া – হ্যা বল। আমি যতোটা পারি তোকে হেল্প করবো।

জেরিন হিয়াকে রেহানের ব্যাপারে সব বলে।

হিয়া – বুঝলাম তুই ছেলেটাকে চাস। কিন্তু সে কি তোকে চায়? আই মিন তোকে ভালোবাসবে? নাকি অন্য কেউ আছে তার?

জেরিন – হ্যা আছে।

হিয়া – তাহলে তো আর কথাই নেই। যেহেতু ওর গার্লফ্রেন্ড আছে।

জেরিন – গার্লফ্রেন্ড না। ও আমার কুহু আপিকে বোধহয় ভালোবাসে। কিন্তু আপি ওকে একসেপ্ট করছে না। ইভেন অনেকবার আপিকে বলেছে ও তাও আপি রাজি হয় নি।

হিয়া – হ্যা তো? একসেপ্ট করেনি কী হয়েছে? করে নেবে।

জেরিন – কিন্তু আমি তো তা চাই না। আমি চাই একসেপ্ট করার আগেই জেনো রেহান আপি কে ভুল বুঝে।

হিয়া – মানে? কী বলছিস তুই? তুই কি চাস না তোর আপির রিলেশন টা হোক।

জেরিন – আমি ওকে ভালোবাসি আর আমি চাইবো ওর সাথে অন্য কারো রিলেশন হোক! আর ইউ ক্রেজি?

হিয়া – তুই আসলে কী করতে চাইছিস বল তো?

জেরিন – দেখ একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর। আপি যেহেতু রেহান কে একসেপ্ট করছে না তাহলে নিশ্চয় কোনো কারন আছে। যদিও সত্যি টা হলো কোনো কারন নেই কিন্তু আমি রেহান কে বলেছি যে আপির তিশান নামে একজনের সাথে রিলেশন আছে। ইভেন রেহান সেটা বিশ্বাসও করে নিয়েছে। সে ভাবছে আপির সত্যিই তিশানের সাথে রিলেশন আছে। তাই আপি ওকে একসেপ্ট করছে না।

হিয়া – তারপর?

জেরিন – রেহান আমার কাছে ঐ তিশানের এডড্রেস আর ফোন নাম্বার চাইছে। এখন প্রবলেম হলো আমি তো এই নামে কাউকে চিনিই না। তাহলে এইসব কিভাবে জোগাড় করবো?
তাছাড়া এখানকার কারো সাথে আমার তেমন কোনো যোগাযোগ ও হয়না। এখন তুই পারিস আমাকে হেল্প করতে।
তোর কোনো ছেলে ফ্রেন্ড থাকলে ম্যানেজ করে দে প্লিজ। যেভাবেই হোক তিশান নামের কাউকে আমার চাই।

হিয়া – তুই কি পাগল হয়েছিস? তুই না বলেছিস কুহু আপি আর তার বাবা মা তোকে নিজের করে দেখে। তাহলে? এঔ সব কেনো করতে চাইছিস? তাছাড়া এটা তো অন্যায়।

জেরিন – হ্যা মানছি ওরা আমাকে অনেক ভালোবাসে তাই বলে কি আমি যাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাকে হারাতে দিবো। আর রইলো অন্যায়ের কথা! ন্যায় অন্যায় বিবেচনা করার টাইম নেই আমার সত্যি বলছি। আমার রেহান কে চাই ই চাই।
তুই আমার এইটুকু সাহায্য কর প্লিজ।

হিয়া – আচ্ছা ঠিক আছে। তোর যা ভালো মনে হই তুই তাই করিস। আমি ম্যানেজ করবো।

জেরিন – অনেক অনেক ধন্যবাদ ডিয়ার। আর হ্যা একটা কথা টাকা নিয়ে বলবি টেনশন না করতে যতো টাকা চায় আমি দিবো সমস্যা নেই।

হিয়া – ওকে। ম্যানেজ করে আমি তোকে জানাবো।

জেরিন – ওকে বাই।

হিয়া – বাই।

জেরিন ফোন টা কেটে দিয়ে খুশিতে মোবাইল টাকে একটা চুমু দেয়….

জেরিন – এখন কিভাবে বিশ্বাস না করে থাকতে পারো আমিও দেখে নিবো মিস্টার রেহান!
আপি কে অবিশ্বাস করা ছাড়া তোমার কাছে আর কোনো রাস্থা নেই।

বিকেলে…

কুহু ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে আসে। অনেকক্ষণ ছাদের গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ নিচে তাকাতেই দেখে গাড়ি করে কেউ কুহুদের বাসায় এসেছে।
মানুষ দুজন কে দেখেকুহুর চোখ আটকে যায়।

কুহু এক দৌড়ে নিচে নেমে আসে। দরজা খুলেই ফুপিইইই বলে জড়িয়ে ধরে।
কুহুর ফুপি আর ফুপা মানে জেরিনের মা বাবা এসেছে।

জেরিন ও দৌড়ে এসে তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে।

জেরিনের মা – কেমন আছো আম্মুনিরা?

জেরিন কুহু দু’জনই উত্তর দেয় – ভালো আছি। তাদের উত্ততে পার্থক্য এতটুকুই জেরিন আম্মু বলেছে আর কুহু ফুপি।

জেরিনের বাবা – দেখলে তোমাকে পেয়ে আমার দুই মেয়ে আমাকেই ভুলে গেছে।

কুহু – তোমাকে ভুলবো? অসম্ভব!

জেরিনের বাবা – হ্যা হ্যা বুঝেছি পাকনি বুড়ি। তা জেরিন মামুনি কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো তোমার?

জেরিন – একদম না আব্বু। আমি অলওয়েজ ফাইন।

কুহুর মা – আপা অনেক গল্প হয়েছে এবার তো ভিতরে এসে বসুন। ভাইজান ভেতরে আসুন।

জেরিনের বাবা মা ভেতরে এসে বসে।

কুহু – ফুপি তোমরা আসবে আমাকে কেউ বলে নি কেনো?

জেরিন – আমারও তো একি প্রশ্ন!

জেরিনের মা – আমিই না করেছি ভাবিকে(কুহুর মাকে) তোদের জেনো না জানায়। কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? (হেসে)

কুহু – সে আর বলতে হয়!

কুহুর বাবা – পথে কোনো সমস্যা হয়নি তো তোদের?

জেরিনের মা – না ভাই একদম না।

কুহুর বাবা – কুহু তুমি তোমার ফুপা ফুপি কে রুমে নিয়ে যাও কিছুক্ষন রেস্ট করুক। অনেক জার্নি করেছে।

কুহু – চলো ফুপি।

কুহুর মা – আপা কিছুর প্রয়োজন হলে ডাকবেন আমায় কেমন?

জেরিনের মা – এতো ব্যাস্ত হবেন না। তাছাড়া এই বাড়িতে কি আমি নতুন নাকি হ্যা? কোনো সমস্যা নেই বুঝলেন। (হেসে)

কুহু একটা রুম খুলে দেয়।

কুহু – ফুপি তোমরা রেস্ট করো। কোনো সমস্যা হলে আমাকে ডেকো কেমন? আমি পাশের রুমেই আছি।

জেরিনের মা – ঠিক আছে আম্মুনি।

জেরিন – মা ভাইয়া আসেনি কেনো?

জেরিনের মা – তুই তো জানিস তোর ভাইয়া কেমন। যা বলে তাই করে। বলেছে ওর একটা কাজ আছে আসতে পারবে না। এতো বার করে বলার পরও আসলো না ও নিজের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত।

জেরিন – ওহো… ভাইয়া আসলে তো আরও ভালো হতো। (মন খারাপ করে)

জেরিনের মা – মন খারাপ করেনা। কাজ শেষ হলে আমি বলবো চলে আসতে।

কুহু – ফুপি এবার কিন্তু তারাতারি চলে যেতে দিবো না বলে দিলাম।

জেরিনের মা – এবার ৪ মাস থাকবো! খুশি তো?

কুহু – অন্নেক খুশি। (জেরিনের মাকে জড়িয়ে ধরে) আচ্ছা তোমরা রেস্ট নাও কেমন।

কুহু আর জেরিন চলে আসে। জেরিন নিজের রুমে চলে যায়। তার বাবা মা আসাতে এতোটাও খুশি হয়নি।

জেরিন – ধুরর মা বাবা আসার এখনি সময় হলো? কিছুদিন পরও তো আসতে পারতো। যদি আমার প্লান টা জানতে পেরে যায় তাহলে তো আমাকে মেরেই ফেলবে। ওফফফ এতো টেনশন আর ভালো লাগছে না। যা করার সাবধানে করতে হবে।
জেরিন ফোন টা হাতে নিতেই দেখে হিয়ার মিসডকল। ওর মা বাবার সাথে কথা বলার সময় হয়তো ফোন দিয়েছে। তাই রিসিভ করা হয়নি।

জেরিন তারাতারি করে হিয়ার কল ব্যাক করে…

হিয়া – কিরে কোথায় ছিলি? ফোনে পেলাম না যে?

জেরিন – মা বাবা এসেছে। তাই কথা বলছিলাম।

হিয়া – বলিস কি! খুশির খবর তো!

জেরিন – ধুরর খুশি না ছাই! এখন আমি আর নিজের প্লান মতো কাজ করতে পারবো না। যদি মা বাবা জানতে পারে তো আমাকে মেরেই ফেলবে।

হিয়া – তাহলে কি সব ক্যান্সেল?

জেরিন – আরে না। তুই ম্যানেজ করতে পেরেছিস তো?

হিয়া – দেখ আমার কোনো ফ্রেন্ড রাজি হয়নি। উপায় না পেয়ে আমার বফ কে বললাম। জানিস তো বেচারা আমি যা বলি তাই করে। তো ওকে সব টা বললাম। প্রথমে রাজি না হলেও আমার জন্য রাজি হয়ে যায়।

জেরিন – আরে নো প্রবলেম তোর বফ হোক বা বরই হোক আমি তো নিয়ে যাচ্ছি না। শুধু এক্টিং করবে ব্যাস।

হিয়া – ওকে। আমি ওর ফোন নাম্বার দিচ্ছি। সাথে এডড্রেস ও।

জেরিন – এই শোন শোন…. ওর বাবা মা?

হিয়া – ওর বাবা মা এখানে থাকে না। ও এখানে থেকে পড়াশুনা করছে বুঝেছিস।

জেরিন – ওহহ ওকে।

হিয়া – হুম। আমি তোকে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।

হিয়া ফোন টা কেটে দেয়। জেরিনের খুশি আর দেখে কে? জেরিন তো পারলে ড্যান্স করে!

রাতে…

সবাই একসাথে খেতে বসে। জেরিন আর কুহুর খাওয়া শেষ হলে ওরা রুমে চলে যায়।
আর বাকিরা ড্রয়িং রুমেই বসে কথা বলে।

এদিকে জেরিন নিজের রুমে এসে ভালো করে দরজাটা আটকে দেয়।

খাটে বসে মোবাইল টা হাতে নিয়ে রেহান কে কল করে….

প্রেমপিপাসা পর্ব – ৮

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৮
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
রেহান কুহুর আচরণ দেখে রেগে সেখান থেকে চলে আসে।
বাসায় এসে ফোন হাতে নিতেই দেখে জেরিনের ম্যাসেজ। যেহেতু কাল জেরিন নাম্বার টা দিয়েছিলো আর রেহানের সাথে কথাও হয়েছে তাই জেরিনের নাম্বার টা চিনতে রেহানের বেশি একটা সমস্যা হয় নি।
অনিচ্ছা স্বত্তেও রেহান ম্যাসেজটা ওপেন করে।

জেরিন রেহান কে দেখা করতে বলে সাথে একটা কফিশপের নামও পাঠায়।

রেহান খনিকটা বিরক্ত বোধ করে তাও রেহান ভাবে হয়তো দেখা করলে তিশানের বিষয়ে কিছু জানা যাবে।
রেহান রাজি হয়ে যায় সাথে জেরিন কে একটা ম্যাসেজ পাঠায়।

” ওকে আসবো ”

ম্যাসেজ টা পাঠিয়ে রেহান ফোন অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

কিছুক্ষন পরই রেহানের মা আসে…

রেহানের মা – তুই ফ্রেশ ও হলি না খেতেও আসছিস না। কি হলো তোর?

রেহান – কিছুনা মা আমি খাবো না তোমরা খেয়ে নাও।

রেহানের মা – দেখ তুই না আসলে যে তোর বাবা কতোটা রেগে যাবে তুই ভালো করেই জানিস। তাই বলছি ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।

রেহানের ইচ্ছে নেই খেতে যাওয়ার তাও ওর বাবার রাগ না দেখতে ফ্রেশ হয়ে খেতে যায়।

খাবার টেবিলে রুপসা আর রেহানের বাবা বসে একসাথে গল্প করছে।

রুপসা – ভাইয়া এনেছো?

রেহান – কী? (অবাক হয়ে)

রুপসা – তার মানে আনে নি তাই তো? তোমার আজ দুপুরের খাওয়া বন্ধ। (রেগে)

হটাৎ রেহানের মনে পড়ে রুপসা তো আইসক্রিম চেয়েছিলো।
রেহান কোনো রকমে রুপসাকে শান্ত করাতে চাইছে।

রেহান – দেখ রুপ আমার না একটুও খেয়াল ছিলো না। তবে বিকেলে পেয়ে যাবি।

রুপসা – প্রমিস?

রেহান – পাক্কা প্রমিস। (মুচকি হেসে)

রেহানের মা – দুই ভাই বোনের গল্প করা শেষ হলে এবার তাহলে খাওয়া শুরু করো।

রেহান – হ্যা মা।

খাওয়া শেষ হলে রেহান নিজের রুমে চলে যায়।
রুমে এসে বিছানায় শুয়ে রেহান ফোন টা হাতে নিতেই দেখে প্রণয়ের ফোন।

রেহান – হ্যা বল..

প্রণয় – কিরে তুই কোন গ্রহে আছিস?

রেহান – মঙ্গলগ্রহে কেনো?

প্রণয় – আজ তো ভার্সিটিতেও গেলাম না একবার দেখাও করলি না। বাহ ভাবিকে পাওয়া মাত্রই আমরা আউট তাই তো।

রেহান – ফাজলামি করিস না তো? কিছু বললে বল।

প্রণয় – কিছু হয়েছে দোস্ত? তুই এমন ভাবে কথা বলছিস হটাৎ?

রেহান – না কিছুই হয়নি।

প্রণয় – দেখ আমাকে না বললে যে তোর রাতে ঘুম হয়না সেটা আমি ভালো করেই জানি সো ন্যাকামি না করে বল কি হয়েছে?

রেহান – আরে বললাম না কিছু হয়নি।

প্রণয় – ওকে না বলতে চাইলে বলিস না। এজ ইউর উইশ।

রেহান – হুম। কাল ভার্সিটিতে যাবি?

প্রণয় – হ্যা যাবো।

রেহান – ওকে কাল কথা হবে নাউ বাই।

রেহান ফোন টা কেটে দেয়।

এদিকে জেরিন অনেক সাজুগুজু করছে নিজের রুমে।
কুহু জেরিনের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জেরিন কে সাজতে দেখে দাড়িয়ে যায়।

কুহু – কিরে! কোথাও যাচ্ছিস নাকি?

জেরিন – হ্যা আপি আসলে একটা কাজ আছে তাই যেতে হবে।

কুহু – আমাকে তো বললি না! তুই একা যাবি?

জেরিন – হ্যা। তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি যেতে পারবো। তাছাড়া আমি এখন রাস্তা অনেক টাই চিনে নিয়েছি। অনেকদিন তো থাকছি এখানে। এখানকার রাস্তাঘাট সম্পর্কে অনেক টা ধারনা জন্মেছে।

কুহু – (জেরিনের হটাৎ এতো পরিবর্তন? ও তো কোনো দিন আমাকে ছাড়া কোথাও যায়নি। আজ একা একা চলে যাচ্ছে। আমাকে তো একবার জানাতে পারতো।…. মনে মনে)

জেরিন – কি হলো আপি? কিছু ভাবছো?

কুহু – হ্যা….কই না কিছু ভাবছি না তো। আচ্ছা সাবধানে যাস। আর কিছু প্রয়োজন হলে আমায় বল আমি দিয়ে যাই।

জেরিন – না আপি কিছু লাগবে না আমার। তুমি চিন্তা করো না আমি তারাতারি বাসায় ফিরবো।

কুহু – ঠিক আছে। সমস্যা হলে ফোন করিস কেমন।

জেরিন – ওকে আপি। — বলেই বেরিয়ে যায়।

জেরিন রিকশা নিয়ে চলে আসে। কুহু জানালা দিয়ে দেখে কিছুটা অবাক হয়।

কুহু – কি ব্যাপার? জেরিন রিকশা করে গেলো? একা একা বেরিয়েছে ড্রাইভার কে বললেই তো পারতো ওকে পৌঁছে দিতো। মেয়েটা যে কি করে না মাঝে মাঝে!

জেরিন কফিশপে এসে প্রায় ৩০ মিনিট বসে আছে। এই ৩০ মিনিটপ জেরিনের ৩০ বার রেহানকে ফোন দিতে ইচ্ছে করছিলো বেচারির যেনো তর সইছে না। কিন্তু রেহান যে কতোটা রাগি তা জেরিন ও আন্দাজ করতে পেরেছে। রেহানকে ফোন দিলে ও নিশ্চয় রেগে যাবে তাই আর ফোন দেয়ার সাহস হয়নি।

কিন্তু অনেক খন পরও রেহান কে আসতে না দেখে জেরিন ফোন করে…

ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙে রেহানের।
মোবাইলের স্কিনে জেরিনের নাম্বার টা দেখতে পায়। পাশে ঘড়িতে তাকাতেই দেখে ৫ টা বাজে। প্রণয়ের সাথে কথা বলে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো কখন যে ঘুমিয়ে গেছে!

জেরিনের সাথে বিকেল ৪ টায় দেখা করার কথা ছিলো। এখন বাজে ৫ টা নিশ্চয় মেয়েটা এতোখন ওয়েট করেছিলো।
কিন্তু তাতে রেহানের বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই!

রেহান ধীরেসুস্থে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
পথে জেরিন আরও অনেক বারই ফোন দেয় রেহান কে কিন্তু রেহান কল রিসিভ করে নি।

২০ মিনিট পর রেহান কফিশপে পৌঁছে। তখন প্রায় ৬ টা বাজতে চললো। জেরিন প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হয়ে যায়। তাও মুখে প্রকাশ করে নি।
রেহানের সাথে হাসি মুখেই কথা বলা শুরু করে।

রেহান – বলো কি বলবে? (চেয়ার টেনে বসতে বসতে)

জেরিন – হ্যা অবশ্যই। কফি অর্ডার করি আগে।

রেহান – তুমি চাইলে তোমার জন্য করো। আমাকে কি বলবে সেটা বলে ফেলো আমার তাড়া আছে।

জেরিন রেহানের কথায় রেগে যায়। অনেক কষ্টে নিজের রাগ টা কনট্রোল করে…

জেরিন – দেখুন এটা কেমন দেখায় না। আপনি বসুন না দু’জনের জন্যই অর্ডার করি। কফি শেষ হতে হতেই সব বলবো। ওকে?

রেহান কিছুটা বিরক্ত ফিল করলেও রাজি হয়ে যায়।

জেরিন দু’জনের জন্য দুইটা কফি অর্ডার করে।

জেরিন – আচ্ছা আপনার নাম টা নিশ্চয়
জানতে পারি? আসলে এখনো তো আপনার নাম টাই জানা হলো না তাই আরকি!

রেহান – আমার নাম জিগ্যেস করার জন্য ডেকেছো? (রাগি কন্ঠে)

জেরিন – না তা কেনো হতে যাবে। আপনি বলতে না চাইলে থাক। (এই ছেলেটা এতো বদমেজাজি কেনো? ওফফ জাস্ট অসহ্য!)

রেহান – রেহান ওয়াহিদ।

জেরিন – বাহ সুন্দর নাম তো! আমার নাম জিগ্যেস করলেন না যে?

রেহান – আমি তোমার সাথে এখানে প্রেমআলাপ করতে আসিনি ডেম এট!

জেরিন রেহানের ধমক শুনে ভয় পেয়ে যায়৷ এর মধ্যেই অর্ডার করা কফি নিয়ে আসে। জেরিন একটা কফি রেহানের দিকে এগিয়ে দেয় আরেকটা নিজে নেয়।

জেরিন – আসলে আপনাকে যে কারনে ডেকেছিলাম… আপনাকে তো কাল তিশান ভাইয়ার ব্যাপারে সব বললাম। তো কি ডিসিশন নিলেন?

রেহান – কিসের ডিসিশন? (অবাক হয়ে)

জেরিন – আই মিন… আপির তো বফ আছে। তো আপির পিছু পড়ে থাকাটা কেমন দেখায় না। তাই আরকি।

রেহান – আচ্ছা কুহুর যে বফ আছে সেটা তুমি জানো কিভাবে?

জেরিন – আমি জানবো না তো কে জানবে? আপি আমার কাছে সব কিছুই শেয়ার করে। আর তিশান ভাইয়া যখন আপিকে প্রপোজ করেছিলো ফাস্ট আপি আমাকে দেখিয়েছিলো আমি বলেছিলাম ছেলেটা দেখতে মন্দ না ব্যাস আপিও হ্যা বলে দিলো।

রেহান – তোমার আপু তোমার কথায় উঠে বসে নাকি? এতো বড় একটা ডিসিশন তোমাকে জিগ্যেস করেই নিয়ে নিলো! হতেও তো পারে ছেলেটা ভালো না। বা কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কুহুকে প্রপোজ করেছে।

জেরিন – না না। তা হবে না কারন তিশান ভাইয়াকে আমি অনেক ভালো করেই চিনি। তাছাড়া ভাইয়ার সাথে অনেক কথা বলতাম ইভেন এখনো বলি।
জানেন আপি আর ভাইয়া ঝগড়া করলে তো আমিই সমাধান করে দিই।

রেহান – ওহ রিয়েলি?

জেরিন – হ্যা। আপি ভাইয়াকে এতোটাই ভালোবাসে আপি অন্য কারো সাথে বিয়ের কথাটাও সহ্য করতে পারে না। আপি তো বলেই দিয়েছে বিয়ে করলে তিশান ভাইয়া কেই করবে!

রেহান – আচ্ছা তিশানের বাড়ির এডড্রেস টা দাও তো।

জেরিন – ইয়ে মানে… ভাইয়ার বাসা কোথায় তা তো আমি জানিনা।

রেহান – বাসা কোথায় জানো না? অথচ তোমার বোন কে রিলেশন এ রাজি হতে বলে দিয়েছো? আচ্ছা কোনো ব্যাপার না। ওর ফোন নাম্বার টা নিশ্চয় আছে তোমার কাছে?
ফোন নাম্বার টা দাও।

রেহানের কথা শুনে জেরিন বিষম খেয়ে যায়।

জেরিন – আ..আসলে.. ফোন নাম্বার ছিলো… ক…কিন্তু ডিলিট হয়ে গিয়েছে।

রেহান – ওহহ আচ্ছা। কুহুর নাম্বার আছে নিশ্চয়?

জেরিন – হ্যা আছে৷ (এইরে আপির ফোন নাম্বার দিয়ে আবার কি করবে? যতোই চাইছি ভুলাতে তাও পেরে উঠছি না অসহ্য!….মনে মনে)

রেহান – ওকে ফাইন। কুহুকে কল দাও এন্ড ফোন টা লাউড দিয়ে কথা বলবে ওকে?

জেরিন – ক…কি বলবো?

রেহান – বলবে যে তোমার কাছ থেকে তিশানের নাম্বার টা ভুলবশত ডিলিট হয়ে গেছে। এখনি যেনো তিশানের নাম্বার টা তোমাকে সেন্ট করে।

জেরিন এবার জোরে জোরে কাশতে থাকে। রেহানের কথা শুনে ভয়ে জেরিনের হাত পা কাঁপছে। রেহান কি সত্যি টা জেনে গেলো!!

রেহান – আর ইউ ওকে? (বাঁকা হেসে)

জেরিন – হ..হ্যা আমি ঠিক আছি।

রেহান – ওকে গুড। দেন আমার কাজ করো জলদি ফোন নাম্বার টা নাও।

জেরিন – আসলে হয়েছে কি আমার ফোনে ব্যালেন্স শেষ তাই…

রেহান – ওহহ ওকে। তাহলে অন্য একদিন নিয়ে নিবো। আজ তাহলে উঠি।

জেরিন – হ্যা হ্যা শিওর। (জেরিন যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে)

রেহান কফির বিল মিটিয়ে দিয়ে জেরিন কে বাই বলে চলে যায়৷ জেরিন রিকশা করে বাড়ি চলে যায়। আর রেহান বাইকে করে।

বাসায় এসে রেহান নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে আর ভাবতে থাকে…

রেহান – আমার সন্দেহ টাই যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি পাড় পাবে না। এর মাশুল দিতে হবে তোমাকে!

চলবে…

প্রেমপিপাসা পর্ব – ৭

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৭
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
কুহু ক্লাসে যাওয়ার সময় হটাৎ কেউ তার হাত ধরে টান দেয়। কুহু ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিলেই কুহুর মুখটা চেঁপে ধরে।
কুহু সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়! রেহান দাড়িয়ে আছে। চোখ মুখ দিয়ে যেনো রক্ত ঝড়ছে!

কুহু – আ… আপনি?

রেহান – কেনো? এখানে কাকে একসেপ্ট করছিলে? তিশান কে? (প্রচন্ড রেগে)

কুহু – মানে? তিশান কে?

রেহান – ওহহ না চেনার ভান করছো তাই না? দেখো কুহু আমাকে রাগিও না। ভালোই ভালোই বলো তোমার তিশান টা কে?

কুহু – কোন তিশান কোথাকার তিশান আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। (অবাক হয়ে)

রেহান কুহুর কথা শুনে আরও প্রচন্ড রকমের রেগে যায়।

রেহান – একদম ন্যাকামি করবা না কুহু। সোজাসাপ্টা উত্তর দাও। তিশান কে? ভালোই ভালোই সব বলো নয়তো কোনো দিন তিশান কে তোমার আশেপাশেও যদি দেখি তো আস্ত রাখবো না।

কুহু রেহানের ধমক শুনে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
সবকিছু যেনো কুহুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কে এই তিশান? কিছুই মাথায় ঢুকছে না।

রেহান – কি হলো? এখন মুখটা অফ কেনো? কথা বের হয়না কেনো এখন? ওহহ বুঝেছি তোমার তিশান কে নিয়ে আমার কাছে কিছু বলার ইচ্ছে নেই তাই তো?
না বলতে চাইলে বলো না তবে একটা কথা বলে দিই আমি তোমাকে চাই মানে চাই। তোমার তিশান কে বলো ভালোই ভালোই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে নয়তো ওর কপালে খারাপ আছে বলে দিলাম।

রেহান রেগে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে কুহু এখনো বোকার মতো দাড়িয়ে আছে।

কুহু – এই লোকটা কি পাগল? কি সব বলে গেলো! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কে তিশান। আমি তো কোনো দিন তিশান নামের কাউকে দেখবো দূরে থাক নামও শুনি নি।

এদিকে সানিয়া আর রিহা কিছুদূর যাওয়ার পরই পেছন ফিরে তাকায়…

সানিয়া – কুহু…. কুহু কোথায় গেলো?

রিহা – আমাদের সাথেই তো আসছিলো। পেছনে ছিলো কই গেলো ও?

সানিয়া – ওফফফ এই মেয়ে টা না! কিছু না বলেই চলে গেলো। এখন কোথায় খুঁজবো বল তো?

কুহু ক্লাসথেকে বের হয়ে একপ্রকার দৌড়ে নিজের ক্লাসের দিকে যেতে থাকে।
দৌড় দিয়েই সানিয়া আর রিহার সামনে পড়ে…

সানিয়া – এই তুই কোথায় ছিলি? হাওয়া হয়ে গিয়েছিলি নাকি?

রিহা – হ্যা সেই তো। আমিও ভাবলাম আমাদের মাঝ খান থেকে তোকে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলো নাকি?

কুহু – হ্যা সেটাই তো করেছে (অন্যমনস্ক হয়ে)

রিহা – কিহহহ? (অবাক হয়ে)

সানিয়া – তোকে কেউ কিডন্যাপ করেছে আবার এনে দিয়েও গেছে? বলি তুই তো পাগল হয়েছিস এবার আমাদেরও পাগল করে ছাড়বি!

কুহু – আরে রাখ না। আচ্ছা তিশান কে চিনিস?

কুহুর এমন প্রশ্নে সানিয়া রিহা দু’জনই অবাক হয়ে যায়।

সানিয়া – তিশান? (অবাক হয়ে)

রিহা – তিশান আবার কে?

কুহু – জানিস না তাইনা? হ্যা আমিও তো জানিনা তিশান কে?

রিহা – কুহু তুই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছিস?

কুহু – আরে না! সত্যিই বলছি আমিও তো চিনি না তিশান কে?

সানিয়া – হয়েছে? এবার তোর এইসব কথা বন্ধ করে ক্লাসে চল। ক্লাস বোধহয় শুরু হয়ে গেছে।

কুহু – হ্যা চল।

সানিয়া আর রিহা কুহুকে নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। ক্লাসে সবাই যার যার মতো মন দিলেও কুহুর মন পড়ে আছে রেহানের বলা কথা গুলো ভাবতে!

কুহু – ( কে এই তিশান? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। ওফফফ! আমি তো পাগল হয়ে যাবো এতো টেনশনে।)

ক্লাস শেষে কুহু একা একাই বের হয়ে আসে।

সানিয়া আর রিহা পেছন পেছন দৌড়ে বের হয়।

রিহা – কুহু…. ফেলে রেখেই চলে যাচ্ছিস কেনো? ওহহ ভার্সিটি তে উঠতে না উঠতেই পালটে ফেললি?

কুহু – কি পালটে ফেললাম? (অবাক হয়ে)

সানিয়া – বুঝতে পারছিস না কি? আমাদের।

কুহু – তোদের পালটাবো? পাগল হলি নাকি?

সানিয়া – তাহলে এভাবে ফেলে রেখে নিজে নিজেই চলে যাচ্ছিলি কেনো?

কুহু – সরি রে। আসলে মাথায় অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে তাই ভুল হয়ে গেছে।

রিহা – ওকে। এখন কি বাসায় চলে যাবি?

কুহু – হ্যা তো?

সানিয়া – না মানে কিছুক্ষণ থাকবি না?

কুহু – নাহ।

রিহা – কুহু… তুই কি কোনো কারনে আপসেট?

কুহু – আরেহ না। আমি একদম ঠিক আছি।

রিহা – দেখ আমাদের বলতে পারিস। আমরা তো তোর ফ্রেন্ড তাইনা। হেল্প ওত করতে পারি। বলেই দেখ না।

সানিয়া আর রিহা জোর করায় কুহু রেহানের বলা সব কথা বলে দেয়। রিহা সানিয়া দুজনই অবাক হয়ে যায়….

সানিয়া – তিশান মানে? রেহান ভাইয়া কি ভাবছে তোর বফ আছে? যার নাম তিশান?

কুহু – হ্যা।

রিহা – কি বলিস? আমরা তো জানি তোর কোনো বফ নেই ইভেন তুই কোনো রিলেশনও করিস নি। তাহলে তিশান আসলো কোথ থেকে। তুই কোনো দিনও আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকাস নি। আমরা নিশ্চয় জানতাম।

সানিয়া – আমার কি মনে হই জানিস? রেহান ভাইয়াকে কেউ তোর নামে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে। এই জন্যই রেহান ভাইয়া তোকে ভুল বুঝছে।

কুহু – হোয়াট? ঐ ছেলে আমাকে ভুল বুঝলো বা ঠিক বুঝলো তাতে আমার কি যায় আসে। আমার একটাই কথা তিশান কে? আমি কোনো দিন রিলেশন করি নি তাহলে উনি কেনো এই সব বলছে?
আমি এতো বড় মিথ্যে মেনে নিবো কেনো?

সানিয়া – তার জন্য তো ভাইয়া কে সবটা বলতে হবে তাইনা। না বললে তো ভাইয়া ঐ মিথ্যাটা কেই সত্যি মনে করবে।

রিহা – কুহু তুই মন খারাপ করিস না। দেখ আমার কি মনে হই জানিস কেউ হয়তো তোকে আর ভাইয়াকে নিয়ে জেলাস ফিল করছে। এতো স্মার্ট একটা ছেলে তোর পিছন পরে আছে অথচ তুই পাত্তাও দিচ্ছিস না তাই কেউ তোর নামে বাজে কথা বলেছে ভাইয়াকে।
তুই কিছু চিন্তা করিস না আমি নিজে ভাইয়ার সাথে কথা বলবো। আমি ভাইয়াকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।

কুহু – আজিব ওকে কি বলবি তুই। ওকে কেনো বুঝাতে যাবি। কে ও? আমি শুধু জিগ্যেস করবো আমার সম্পর্কে এতো খারাপ কথা বলার সাহস হলো কি করে।

সানিয়া – আচ্ছা বাবা এবার বাড়ি চল।

রিহা – হ্যা তুই বরং বাড়ি যা। গিয়ে রেস্ট কর। তোর এমনি তেই মাথা গরম। বাড়ি যা।

কুহু সানিয়া আর রিহা বেরিয়ে যায়। কুহুকে এক রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে সানিয়া আর রিহা অন্য রিকশায় উঠে যায়।

এদিকে কিছুক্ষন পরই রেহান পুরো ক্যাম্পাস খুজতে শুরু করে। কিন্তু কুহুকে কোথাও দেখতে পায় না। রেহান কালকের মতো গেইটের বাইরে এসে ফুচকাওয়ালার কাছে যায় কিন্তু সেখানেও কুহুকে দেখতে পায় না। রেহানের প্রচন্ড রাগ হয় কুহুর উপর।

রেহান – এই মেয়েটার সাহস দেখে আমি বরাবরই অবাক হচ্ছি। এতো সাহস হয় কি করে ওর!
কালকে এতো বলার পরও আজ চলে গেলো! বার বার বলেছিলাম আমি পৌঁছে দিবো। আমার জন্য ওয়েট না করেই চলে গেছে! নিশ্চয় ওর তিশান ওকে পৌঁছে দিবে তাই চলে গেছে।
আজ যদি ওকে রাস্তায় পাই না জ্যান্ত পুঁতে দিবো বেয়াদব মেয়ে!

রেহান রেগে হনহন করে বাইকের কাছে গিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়।

কুহু – এই লোকটা আসলেই বাজে। না জেনেই আমাকে এতো গুলো কথা শুনিয়েছে! আর কোনো দিনও উনার সামনেও যাবো না ফালতু লোক কোথাকার।
বাসার সামনে এসে কুহু রিকশা থেকে নেমে অবাক হয়ে যায়….

রেহান কুহুর বাসার সামনে দু’হাত বুকে গুঁজে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রেহান কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক টা রেগে আছে সে।
রেহানের কথা গুলো মনে পড়তেই কুহুর রাগ উঠে। কুহু রেহান কে উপেক্ষা করে বাসায় ঢুকে পরে৷ রেহান কে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি এমনকি নিজেও কিছু বলেনি।
রেহান কুহুর কাজে আরও রেগে যায়।

রেহান – এখন তো আমাকে এড়িয়ে যাবেই। তোমার তিশান কে পেয়েছো না! ইচ্ছে করছে তোমাকে আর তোমার ভালোবাসার তিশান দু’জনকেই উপরে পাঠিয়ে দিই।

কুহু বাসায় এসেই নিজের রুমে চলে যায়। জেরিন বিষয় টা খেয়াল করেই বুঝতে পারে কুহুর কিছু একটা হয়েছে।

জেরিন – নিশ্চয় আমার হিরো কিছু একটা বলেছে আপি কে। না হলে তো আপি এতটা চুপচাপ কোনো দিন থাকেনি। ওফ! আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে!

চলবে…

প্রেমপিপাসা পর্ব – ৬

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৬
#writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
ভাবতে ভাবতেই রেহান নাম্বারটায় ফোন দেয়। রিং হতে না হতেই ওপাশ থেকে ফোন টা রিসিভ করে…

রেহান – বাবাহ আমার ফোনের জন্য ওয়েট করছিলে বুঝি? না হলে এতো তারাতারি ফোন রিসিভ করতে না নিশ্চয়?

— আমি তো সবসময়ই আপনার জন্য ওয়েট করে থাকি। সারাক্ষন শুধু আপনাকে নিয়েই ভাবি। জানেন? আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো যদি আপনাকে আরেক বার সামনাসামনি দেখতে পারতাম! আল্লাহ আমার ইচ্ছে পূরণ করেছে। এমনকি আপনার সাথে কথাও বলতে পারছি। সত্যি সব কিছুই কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে!
আজ আমি সত্যিই অনেক অনেক খুশি।

রেহান – (কি হলো এটা! এতো দেখছি ভুতের মুখে রাম রাম! যে কিনা আমাকে সহ্যই করতে পারতো না সে এখন বলছে আমার সাথে কথা বলতে পেরে খুশি! আশ্চর্য!
আর গলার স্বর টাও কেমন কেমন লাগছে! কি জানি কুহুর সাথে তো কোনো দিন ফোনে কথা হয়নি। ফোনে তো সবার স্বরই পালটে যায়। হতেই পারে এমন। কিন্তু ও হটাৎ এমন বিহেভ করছে কেনো? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি?…. মনে মনে)

— এইযে মিস্টার… কথা বলছেন না কেনো?

রেহান – হ্যা বলুন.. না মানে বলো…

— নিশ্চয় খুব অবাক হচ্ছেন? আমার মুখ থেকে এসব কথা শুনে? আসলে কি জানেন? অনেক মেয়েরা তো কখনো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। কাউকে ভালোবাসার কথা তো না ই। আমিও সেরকমই একজন।
আপনাকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু আমার বিহেইভিয়ার দিয়ে বুঝাই নি ইভেন আপনাকে মুখেও বলি নি। তাই হয়তো আপনার অবাক লাগছে। কি তাই তো?

রেহান – আর ইউ ওকে কুহু?

— কেনো আমার আবার কী হবে? আপনার কি মনে হয় আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?

রেহান – না তা না। বাই দ্যা ওয়ে তুমি কে?

— আপনি কার কাছে ফোন করেছেন?

রেহান – ফোন কাকে করেছি তা জানিনা তবে আমি কুহুর সাথেই কথা বলতে চাই অন্য কারো সাথে না।

— আচ্ছা এতো কুহু কুহু করার কী মানে হই বলুন তো? ও তো আপনাকে পাত্তা ও দেয় না। তাহলে আপনি কেনো ওর জন্য ওয়েট করে আছেন?

রেহান – হোয়াট!! তুমি তার মানে কুহু না?

— না আমি কুহু না। আপনার কি মনে হয় কুহু এরকম বিহেভ করবে আপনার সাথে? ও তো আপনাকে সহ্যই করতে পারে না।

রেহান – জাস্ট সাট আপ ডেম এট তোমার সাহস তো কম না। তুমি কুহুর নামে এতো বাজে কথা বলছো কোন সাহসে? তুমি নিশ্চয় কুহুর বোন?

— হ্যা আমি জেরিন।

রেহান – ইউউ… তোমাকে যদি এখন কাছে পেতাম না কষে দুইটা থাপ্পড় মারতাম। লজ্জা করে না তোমার? নিজের বোনের বফের সাথে প্রেমের আলাপ করছো?

জেরিন – বোনের বফ?

রেহান – ইয়াপ.. আজ না হই কাল কুহু আমাকে ঠিকই মেনে নিবে। তখন তো আমাকে দুলাভাই ডাকবে তুমি !!

জেরিন রেহানের কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায়।

জেরিন – দুলাভাই মাই ফুট… দেখুন না আপি আপনাকে মেনে নেয় কিনা। কোনো দিনও মানবে না বুঝলেন কারন আপি শুধু তিশান ভাইয়াকে ভালোবাসে। আপির মনে তিশান ভাইয়ার জায়গা টা কেউ নিতে পারে নি আর পারবে ও না। আপনি তো কখনো না!!

রেহান – তিশান কে?

জেরিন – সেটা না হয় আপনার না জানাই থাক। না জেনেই যেহেতু ভালোবেসেছেন না জানাই থাকুক।

রেহান – তিশান কে? আন্সার মি….(চেচিয়ে)

রেহানের ধমক শুনে জেরিন কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।

জেরিন – আপির বয়ফ্রেন্ড। ৩ বছরের ডিপ রিলেশন তাদের। জানেন? আপি তিশান ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে ইভেন নিজের থেকেও বেশি। এই জন্যই হয়তো আপনাকে মেনে নিতে পারছে না।

রেহান জেরিনের কথা শুনে কিছু না বলে ফোন টা কেটে দেয়। রেহানের এমন চুপ থাকার মধ্যেও তার ভয়াবহ রাগই প্রকাশ পায়।
রাগে রেহানের কপালের রগ টা ফুলে উঠেছে। হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। অনেক খন ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে রেহান। আর এরকম করার একটাই কারন নিজের রাগ কনট্রোল করার চেষ্টা করছে সে।

রেহান – তোমার তিশান কে ভালোবাসো তাই না? তিশান!
ভালো তো তুমি আমাকেই বাসবে। তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছি বলে টের পাওনি তাই না? রেহানের ভালো রুপ টাই চোখে পড়েছে তাই এড়িয়ে গেছো কাল থেকে ভয়ংকর রুপটা দেখবে! জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ্!

রেহান রেগে হাতের কাছে থাকা ফুলদানি টা তুলে আাছাড় মেরে ভেঙে ফেলে।
মাথায় দু’হাত দিয়ে চেঁপে ধরে বসে থাকে।

এদিকে কুহু ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। অনেক খন বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়ে অফলাইনে চলে যায়। কিছুক্ষন পরই কুহুর মা আসে…

কুহুর মা – খেয়ে আয় কুহু।

কুহু – ওকে মা আসছি।

কুহু খাবার টেবিলে গিয়ে বসে। জেরিন ও আগে থেকেই বসা ছিলো।
জেরিন কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অনেক খুশি!

কুহু – কিরে এতো খুশি খুশি! কোনো গুড নিউজ আছে নাকি?

জেরিন – (গুড নিউজ তো বটেই আপি! কিন্তু সরি গো…. তোমাকে তো বলা যাবে না!)
না না আপি গুড নিউজ কিসের আবার। এমনিতেই ভালো লাগছে আজ।

কুহু – ওহহ আচ্ছা খাওয়া শুরু কর।

জেরিন – হুম।

সবাই খাওয়া শুরু করে। কুহুর খাওয়া শেষ হতেই সে নিজের রুমে চলে যায়।

জেরিনও নিজের রুমে যায়। গিয়েই ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে রেহান ফোন দিয়েছে কিনা?
কিন্তা না! রেহানের কোনো ফোন বা ম্যাসেজ কিছুই আসেনি।

জেরিন – হুহহহ দেমাক কতো ছেলেটার! যাকগে আমিই ফোন দিয়ে দেখি।

জেরিন রেহান কে ফোন দেয় কিন্তু রেহানের ফোন অফ। জেরিন একটু পর পরই রেহান কে ফোন দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু রেহানের ফোন অফ।

জেরিন রেহান কে একটা ম্যাসেজ পাঠায় যাতে লিখা ছিলো….

” কাল আমার সাথে একবার দেখা করবেন প্লিজ? কিছু কথা ছিলো। ”

ম্যাসেজ টা দিয়েই জেরিন ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে…

রেহান ঘুম থেকে উঠে দেখে ৮ টা বাজে। রেহান একলাফে উঠে বসে পড়ে।

ভার্সিটির দেরি হয়ে যাবে তাই রেহান দ্রুত উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রেহান ফ্রেশ হয়ে আসতেই তার মা রুমে আসে…

রেহানের মা – আজ এতো বেলা অব্দি ঘুমালি যে?

রেহান – হ্যা। তুমি ডাকলে না যে?

রেহানের মা – তোকে কতো বার ডাকতে এসেছি আমি নিজেও জানিনা। তোর ঘুম ভাঙ্গলে তো?

রেহান – ঠিক আছে ব্রেকফাস্ট রেডি করো আমি আসছি।

রেহানের মা – হ্যা আয় তারাতারি।

রেহান ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। রেহান সবাইকে গুড মর্নিং জানায়।

রেহানের বাবা – রাতে কি ঘুম হয়নি?

রেহান – না। তাই তো সকালে উঠতে পারি নি।

রেহানের বাবা – হুম বুঝলাম। ভার্সিটিতে যাবে না?

রেহান – হ্যা যাবো বাবা। ( যেতে তো আজ হবেই!)

রেহানের বাবা – ওকে খেয়ে নাও তারাতারি।

রুপসা ( রেহানের ছোট বোন) – ভাইয়া আজ কিন্তু আমার পাওনা টা চাই।

রেহান – তোর আবার কিসের পাওনা শুনি? (ভ্রু কুঁচকে)

রুপসা – ঐযে আমার আইসক্রিম।

রেহান – ওরে বাবা! এখনো মনে আছে তোর। আমি তো ভেবেছিলাম তোর মাথায় গোবর ভরা কিছু মাথায় রাখতে পারিস না।

রুপসা – ভাইয়াআআআ……বেশি বলছো না তুমি?

রেহান – ওকে বাবা সরি। এই কান ধরছি (কান ধরার ভান করে)

রুপসা – হবে না। আইসক্রিম চাই।

রেহান – ঠিক আছে বাবা আনবে আনবো।

রেহানের বাবা – আচ্ছা ঠিক আছে এবার খেয়ে নে।

রেহান খাওয়া শেষ করে উঠে পরে।

রেহান ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে।

ভার্সিটি তে আসার পর অনেকক্ষণ ধরে রেহান কারো জন্য ওয়েট করছে।

এদিকে কুহু সানিয়া আর রিহার সাথেই ভার্সিটি তে ঢুকে।

ভার্সিটিতে আসার পরই কুহুর চোখ আটকে যায়।
তার ব্ল্যাক কিং!
বাহ আবার সেই আগের মতোই তবে আজ একটু ব্যাতিক্রম লাগছে!
সাদা শার্ট হাতা ফোল্ড করা, কালো জিন্স, চোখে সানগ্লাস, চুল গুলো বার বার অবাধ্য হয়ে চোখে পড়ছে।

কুহু একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।

সানিয়া – কিরে… প্রেমে পড়লি নাকি?

রিহা – আমার তো মনে হচ্ছে সামথিং সামথিং!

সানিয়া – আরে এবার তো চোখ নামা। বেচারার নজর লেগে যাবে তো!

রিহা আর সানিয়ার হাসাহাসিতে কুহু ধ্যান ভাঙে।

কুহু – কি হয়েছে এভাবে হাসছিস কেনো?

সানিয়া – যাহ বাবা! দেখায় এতোটাই ব্যাস্ত ছিলি যে আমরা এতোখন কি বললাম কিছুই শুনলি না!

কুহু – বাজে কথা বন্ধ করে ক্লাসে চল।

সানিয়া – এখনো ও ক্লাস শুরুই হয়নি। তাছাড়া মনে হই ক্লাসে কেউ যায়ও নি। একটু পরে যাই?

কুহু – এখনি চল। কেউ যায়নি তো কি হলো? আমরা গিয়ে আড্ডা দিবো কিছুক্ষন।

রিহা – ওকে চল।

কুহু চলে যাওয়ার সময় একপলক রেহানের দিকে তাকায়। কুহু বেশ বুঝতে পারছে রেহান রেগে আছে। কিন্তু কেনো রেগে আছে তার কারন টা কুহুর অজানা।

চলবে…

প্রেমপিপাসা পর্ব – ৫

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৫
#writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
কুহু – ফালতু কথা বলবি তো এক চরে দাঁত ফেলে দিবো। ফেলে দিবে কেনো শুনি? ওর এতো সাহস আছে নাকি? মুখে মুখেই যতো গুন্ডামি কথা।

সানিয়া – আচ্ছা বাবা হয়েছে। এবার ক্লাস কর মন দিয়ে।

ক্লাস শেষে..

সানিয়া – কুহু বাড়ি যাবি? নাকি থাকবি কিছুখন?

কুহু – একটু পরে যাই।

সানিয়া – ওকে।

রিহা – ফুচকা খেতে যাবি?

সানিয়া – হ্যা যাওয়াই যায়।

কুহু – চল।

তিন জন ভার্সিটির পাশেই ফুচকা খেতে চলে যায়।
এদিকে রেহান কুহুকে সারা ভার্সিটি খুঁজছে।

রেহান – গেলো কোথায় মেয়েটা? ওর সাহস আছে বটে। আমি এতো বার করে বলার পরও চলে গেলো!

রেহান প্রচন্ড রেগে যায়। রাতে রেহানের মুখ লাল বর্ণ ধারন করছে। রেহান কুহুকে এদিক সেদিক খুঁজে বেরাচ্ছে।

আর কুহু বেচারি মন মতো ফুচকা খেয়েই যাচ্ছে।

কুহু – মামা লাস্ট আরেক প্লেট বানান তবে হ্যা ঝাল দিবেন বেশি করে।

রেহান কুহুকে খুঁজতে খুঁজতে গেইটের বাহিরে চলে আসে।

বাহিরে আসতেই রেহান দেখে কুহু ওর বান্ধবী দের সাথে ফুচকা খাওয়ায় ব্যাস্ত। রেহানের রাগ টা আরও বেরে যায়। সারা ভার্সিটি খুঁজে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আর এই মেয়ে এখানে ফুচকা খাচ্ছে! খাওয়াচ্ছি তোমার ফুচকা দাড়াও!!

রেহান রেগে কুহুর পাশে গিয়ে দাড়ায় সানিয়া আর রিহা রেহান কে দেখে অনেক টা ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু কুহুর কোনো খবরই নাই বেচারি ফুচকা খাওয়ায় ব্যাস্ত।

রেহান রেগে কুহুর হাত চেঁপে ধরে টানতে টানতে ভার্সিটির ভেতরে নিয়ে আসে। কুহু রেহানের কাজে ভয় পেলেও প্রকাশ করে না বরং কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে…

কুহু – আপনার সমস্যা টা কী বলুন তো? সব সময় আমার পিছন পড়ে থাকেন কেনো? আমার কি কোনো পার্সোনালিটি নেই নাকি? এভাবে রাস্থায় সবার সামনে হাত ধরে নিয়ে এলেন কেনো?

রেহান কুহুর কথায় কোনো জবাব দেয় নি বরং রাগি চোখে কুহুর দিকে একপলক তাকিয়ে আবার টানতে টানতে একটা ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
কুহু এবার খেয়াল করে অনেক খন আগেই ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে৷ এখন তো পুরো ভার্সিটি ফাঁকা।

কুহু – (এই ছেলে আমাকে ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কেনো? এমনিতেই তো ভার্সিটি ছুটি হয়েছে অনেক খন আগে। এখন নিশ্চয় কেউ নেই। তাহলে!!
আল্লাহ এই গুন্ডার হাত থেকে রক্ষা করো আমায়!! মনে মনে)

রেহান কুহুকে একটা ক্লাসরুমে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে…

রেহান – বলেছিলাম না ছুটির পর থাকতে? আমি বাসায় পৌঁছে দিবো। বলেছিলাম কি না? (ধমক দিয়ে)

রেহানের ধমকে কুহু কেঁপে উঠে..

রেহান – কথা বলছো না কেনো? কে বলেছিলো রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচকা খেতে? আমি বলেছিলাম? খুব সখ না ছেলেদের সামনে দাড়িয়ে ফুচকা খেতে? (দাঁতে দাঁত চেপে)

কুহু – আমি কি করবো না করবো সেটা কি আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে নাকি? এতো অধিকার খাটাচ্ছেন কেনো? আপনি কি আমার ভাই? নাকি আমার বর?

রেহান কুহুর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়….

রেহান – বর। কেনো সন্দেহ আছে নাকি?

কুহু – এইসব ফালতু কথা বলবেন না একদম! আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার মতো অসভ্য লোক কে বর বানাবো।

রেহান – তোমার বানাতে হবে না কোকিল পাখি। আমিই বানাবো।

কুহু রেগে রেহান কে ধাক্কা মারে কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি। বেচারি রেহান কে এক ইঞ্চি ও সরাতে পারেনি৷

রেহান – আমার মতো বডি বিল্ডারের কাছে তোমার মতো পুঁচকি মেয়ের সামান্য শক্তি কিছুই না। বুঝলে? (বাঁকা হেসে)

কুহু – বডি বিল্ডার না বলুন হাতি হাতি!!

রেহান কুহুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকায়….

রেহান – সিরিয়াসলি হাতি!!

কুহু – অবশ্যই!!

রেহান – হাতি বলো আর গন্ডার বলো তোমারই তো বর তাইনা। (মুচকি হেসে)

কুহু – বাজে কথা রাখুন আর আমাকে যেতে দিন।

রেহান – হুম চলো।

কুহু – আমি একাই যেতে পারবো।

রেহান – তুমি কি চাইছো তোমাকে আমি কোলে করে নিয়ে যাই।

কুহু রেহানের কথা শুনে রেগে যায়। তাও শান্ত ভাব নিয়ে বলে…

কুহু – না… চলুন যাচ্ছি।

রেহান মুচকি হেসে কুহুর হাত ধরে।

কুহু – হাত ধরলেন কেনো?

রেহান – পারমিশন নিতে হবে নাকি? (দাঁতে দাঁত চেপে)

কুহু – না ঠিক আছে৷ (অসভ্য ছেলে কোথাকার। ইচ্ছে করে দাঁত গুলো ভেঙে দিই)

রেহান কুহুকে বাইকের পেছনে বসিয়ে নিজেও উঠে বসে।

কুহু – এইভাবে যাবো নাকি?

রেহান – তো? উড়োজাহাজ ভাড়া করবো নাকি? (রেগে)

কুহু – না চলুন। (এই ছেলের মুখে কি মিষ্টি কথা নেই নাকি৷ মনে হয় জন্মের সময় মুখে মধু না দিয়ে নিমপাতার রস দিয়েছিলো…. মনে মনে)

রেহান বাইক স্টার্ট দেয়।

রেহান – ধরে বসো নয়তো পড়ে ব্যাথা পাবে।

কুহু – ঠিক আছি আমি। ( তোকে ধরতে যাবো কোন দুঃখে)

রেহান কুহুর কথায় কিছুটা রেগে যায়। তাও প্রকাশ করে না। রেহান ইচ্ছে করেই বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয়। কুহু কয়েক বার পড়ে যেতে নিলেও রেহান কে খামচে ধরে বাঁচে। তাই বাধ্য হয়ে রেহানকে ধরে বসে।
কুহু ধরা মাত্রই রেহান বাইকের স্পিড কমিয়ে দেয়।

কুহু – (এ তো দেখি আস্ত একটা শয়তান!! ইচ্ছে করে এতোখন স্পিডে চালিয়েছে!! মনে মনে)

কিছুক্ষণের মধ্যেই রেহান কুহুকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়।

কুহু সোজা বাড়িতে ঢুকতে গেলেই রেহান পেছন থেকে ডাক দেয়…

রেহান – কেউ হেল্প করলে যে তাকে থ্যাংকস্ বলতে হয় শিখোনি?

কুহু রেহানের কথা শুনে দাড়িয়ে যায়। কিছুটা রেগে রেহানের দিকে তাকায়…

কুহু – থ্যাংকস্। এবার শান্তি?

রেহান – ইয়াহ… (মুচকি হেসে)

কুহু রেগে হনহন করে বাসায় চলে যায়। রেহান কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে নিজেও চলে আসে।

বিকেলে…

কুহু পড়ে ঘুমাচ্ছে এর মধ্যেই জেরিন রুমে আসে…

জেরিন – আপি…আর কতো ঘুমাবে? উঠো তো।

কুহু – ডাকছিস কেনো? (ঘুমের ঘোরে)

জেরিন – আরে আপি আরেকটু পরই সন্ধা হয়ে যাবে। এই টাইমে কেউ ঘুমায় নাকি! উঠো ছাদে যাই চলো ভালো লাগবে।

কুহু উঠে বসে।

কুহু – হ্যা ঠিকই বলেছিস। শোন না তুই দু কাপ কফি বানিয়ে ছাদে চলে যা। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।

জেরিন – ওকে আপি তারাতারি এসো।

জেরিন কফি বানিয়ে ছাদে যায়। কুহু ফ্রেশ হয়ে নেয়।
জেরিন কফি গুলো হাতে নিয়ে ছাদের এক কোণে গিয়ে দাড়াতেই চমকে উঠে..!
একি! এ আমি কাকে দেখছি??

আমার হিরো!!

জেরিনের ইচ্ছে করছিলো এক লাফে তার হিরোর কাছে পৌঁছে যেতে কিন্তু এটা তো সম্ভব না। বেচারি এক বালতি দুঃখ নিয়ে রেহান কে ইশারা করতে থাকে। কিন্তু রেহানের দৃষ্টি কুহুর ঘরের জানলার দিকেই স্থির।

এর মাঝেই কুহু ছাদে চলে আসে।

জেরিন – ( এই রে কেনো যে আপিকে আজ ছাদে আসতে বললাম কে জানে! ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় কফি টা ঢেলে দিই। এখন তো নিশ্চিত আপিকে দেখে ফেলবে আমার হিরো টা!)

কুহু – সরি রে অনেক খন ওয়েট করতে হলো তোকে।

জেরিন – আ…আপি চলো না ঘরেই চলে যাই। আমার এখানে ভালো লাগছে না।

কুহু – কেনো? (ভ্রু কুঁচকে)

জেরিন – এমনিই চলো। (জেরিন বার বার নিচে তাকাচ্ছে)

কুহু কিছু একটা ভেবে নিচে তাকায়।

কুহু – একি! এই গুন্ডা টা এখানে কি করছে? (রেগে)

জেরিন – এই যাহহ! দেখেই নিলো।

কুহু – এই ছেলের জন্য তুই ছাদ থেকে চলে যেতে চাইছিস তাই না। কেনো রে? ও কি ছাদে এসে উঁকি মেরে দেখবে আমাদের?

জেরিন – না। এমনিতেই। জেরিন বার বার নিচে তাকাচ্ছে।

রেহান – ধুর বাবা এতোখন ধরে দাড়িয়ে আছি একবারও আসার নাম নেই। ওর ঘরে যে জানলা আছে সেটা ও যানে তো!! আমার তো মনে হই জানেই না। না হলে এতোখনে একবার অন্তত আসার কথা ছিলো।
রেহান এদিক ওদিক তাকিয়ে হটাৎ ছাদে তাকাতেই চমকে উঠে।

রেহান – ছাদে এরা কে? মনে তো হচ্ছে কুহুর বোন। সাথের টা কে?

কুহু – জেরিন তুই কি উঁকি মেরেই থাকবি নাকি বসবি কোথাও? (রেগে)

জেরিন – এইতো আমার হিরো তাকিয়েছে। জেরিন বেচারি তো মহা খুশি। বার বার চুল ঠিক করছে। কত রকমের স্টাইল করছে। কিন্তু রেহান এসব দেখায় ব্যাস্ত না। জেরিনের সাথে কে আছে দেখার চেষ্টায় আছে সে।

কুহু – জেরিন চল তো। এই বাদর টাকে কি দেখছিস এতো। (কুহু নিচে তাকাতেই রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। রেহান বুঝতে পারে জেরিনের সাথে কুহুই ছিলো)

রেহান কুহুকে ইশারা করে ফোন দেখায়।

কুহু – বজ্জাতের হাড্ডি টা কি দেখাচ্ছে রে?

জেরিন – আপি বোধহয় ফোন নাম্বার চাইছে!

কুহু জেরিনের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়!
এতো বড় সাহস আমার বাড়ির সামনে এসে আমারই ফোন নাম্বার চাইছে!!

কুহু কিছু না বলে দ্রুত সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে।
জেরিন ও সাথে সাথে নামে।

কুহু বাসার সামনে যেতেই রেহান কুহুর কাছে আসে।

রেহান – ও বাবাহ! আমার বউ টার দেখি অনেক টান আমার জন্য! যেই দেখলো আমি দাড়িয়ে আছি অমনি নিচে নেমে এসেছে।

কুহু – বাজে কথা বন্ধ করুন। আর এখানে কেনো এসেছেন আপনি?
এসেছেন তাও আবার ছাদে ইশারা করছেন লোকে দেখলে কি ভাববে বলুন তো?

রেহান – কি ইশারা করছিলাম বুঝতে পারো নি?
ফোন নাম্বার দাও।

কুহু – হোয়াট? আপনাকে ফোন নাম্বার দিবো তাই না!

রেহান রেগে কুহুর দিকে তেড়ে আসতেই কুহু এক দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়।

রেহান – পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। কাল এসো ভার্সিটিতে পরে বুঝতে পারবা পালানোর মজা।
রেহান চলে যেতে নিলে কেউ পেছন থেকে ডাক দেয়। রেহান পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে জেরিন।

জেরিন – হাই আমি জেরিন।

রেহান – তোমার সাথে হাই হ্যালো করার সময় নেই। যদি পারো তো কুহুর ফোন নাম্বার টা দাও।

রেহানের কথায় জেরিন মারাত্মক রেগে যায়। তার মতো এতো সুন্দরী মেয়েকে কতো কতো ছেলে পটাতে চেয়েছে কেউ সাকসেস হতে পারে নি। আর এই ছেলে কিনা তাকে এভাবে ইনসাল্ট করেছে!
জেরিন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে হাতে থাকা একটা কাগজের টুকরো রেহানের দিকে এগিয়ে দেয়।

রেহান – কী এটা? (ভ্রু কুঁচকে)

জেরিন – আপনি যেটা চাইছিলেন সেটাই।

রেহান – আর ইউ শিওর?

জেরিন – একদম!

রেহান – ওকে থ্যাংকস্ — বলেই কাগজের টুকরো টা হাতে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

জেরিন তো মনে মনে নাগিন ড্যান্স দিচ্ছে। যাক এতোদিনে তার মনের আশা পূরণ হলো!

জেরিন বাসায় চলে আসতেই দেখে কুহু দাড়িয়ে আছে।

কুহু – তুই ঐ ছেলের সাথে কী কথা বলছিলি?

জেরিন – এমনি কিছুনা।

কুহু – দেখ জেরি ছেলেটা ভালো না। যদি ভালো হতো আমিই তো তোকে হেল্প করতাম বল। আমি তো চাইবো না জেনে শুনে আমার বোন কে একটা বখাটে ছেলের পাল্লায় ফেলতে।

জেরিন – আপি আমি কারো পাল্লায় পড়ি নি। — বলেই চলে আসে।

কুহু – ( তুই যে কেনো বুঝতে পারছিস না। ছেলেটা সত্যিই তোর জন্য পারফেক্ট না রে। আস্ত বখাটে ছেলে ও।)

এদিকে রেহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাম্বার টা হাতে নেয়।

রেহান – একবার ফোন করে দেখবো? হুম দেখি। নিশ্চয় অবাক হয়ে যাবে আমার কোকিল পাখিটা। ওর বোন টা হেল্প না করলে তো মহারানির ফোন নাম্বার টাই পেতাম না।
ভাবতে ভাবতেই রেহান নাম্বার টা দিয়ে ফোন দেয়….

চলবে…

প্রেমপিপাসা পর্ব – ৪

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৪
#writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
কুহু খেয়াল করে দেখে ছেলেটা ওদের দিকেই আসছে।

কুহু – এই রিহা.. এই ছেলে টা কে রে? এদিকে আসছে।

রিহা কুহুর ডাকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বেচারিও ক্রাশ খায়।

রিহা – ছেলেটা তো পুরাই জোস।

কুহু রেগে রিহার দিকে তাকায়…

কুহু – অমনি না!! ছেলে দেখলি আর শুরু হয়ে গেলো তোর লুচুগিরি।

রিহা – আরেহহ কথা কম বল। ছেলেটা এদিকে কেনো আসছে সেটা ভাব।

এরি মাঝে ছেলেটা কুহুর কাছে এসে চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে কুহুকে চোখ মারে।

কুহু বেচারি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে….

কুহু – নাআআআ…….. এ আমি কাকে দেখছি!!

রিহা – তুই উনাকে চিনিস? (ভ্রু কুঁচকে)

কুহু কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলে উঠে….

— চিনবে না মানে! নিজের বর কে কেউ ভুলে যেতে পারে বলুন তো?

কুহু এবার ১০০০ বোল্ডের শক খায়।

কুহু – বররর!!!

রিহা – বর!! কুহু তুই বিয়ে করে ফেললি একবার জানালিও না? আমরা কি এতোই পর ছিলাম?

কুহু – আরে আমার কথা টা তো শুন! আমি এই অসভ্যকে বিয়ে করতে যাবো কেনো বল তো? এ তো ঐ অসভ্য ছেলেটা তোদের না কাল সব বললাম।

রিহা – ওওহহ!! উনি? তবে যাই বলিস ছেলেটা সত্যিই কিউট (কুহুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে)

কুহু রেগে রিহার দিকে তাকায়…

রেহান – তো মিস কোকিল পাখি কাল যেনো কি বলছিলে…?

কুহু – হোয়াট কোকিল পাখি? আমি কুহু ওকে।

রেহান – সে যাই হোক। কাল কি বলছিলে তুমি? আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে ভার্সিটি থেকে তাই তো? ঢুকতে দিয়েছে কে আমাকে তাই না? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)

কুহু – হ্যা বলেছি। তো?

রেহান রেগে কুহুর দিকে তেড়ে যায়। কুহু ভয় পেয়ে পিছু ফিরে গাছের সাথে আটকে যায়।
কুহু আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই ওদের দেখছে।

কুহু – আপনার সাহস দেখে আমি বরাবরই অবাক হচ্ছি। আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করার সাহস পান কোথায়? (রেগে)

রেহান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আশেপাশের সবাই সরে যায়।

কুহু অবাক হয়ে যায়। হচ্ছে টা কী? এই ছেলেকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে আজিব!

রেহান এবার রিহার দিকে তাকায়। রেহানের তাকানো দেখেই রিহার আত্না উড়ে যায়।

রেহান – আপনাকেও কি আলাদা করে বলতে হবে? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)

রিহা – মা.. মানে?

রেহান – মানে বুঝতে পারো নি? এখান থেকে কেটে পরো। (ঝারি মেরে)

রেহানের ঝাড়ি শুনে রিহা সেখান থেকে সাথে সাথে কেটে পড়ে।

রিহা চলে যাওয়াতে কুহু ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে থাকে।

রেহান রেগে গিয়ে কুহুর গাল চেপে ধরে…

রেহান – এতো বড়বড় কথা বলার সাহস পাও কই তুমি? আর তোমাকে কিছু বলতে গেলে আমার সাহস লাগবে নাকি? কি মনে করো নিজেকে? দুইদিনের পুঁচকি মেয়ে আমাকে আসছে সাহস দেখাতে? আর কাল বলেছিলে না আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে কিন্তু তোমার ভাগ্য খারাপ জানো তো! আমি এই ভার্সিটির সিনিয়র। সো আমার উপর কারো কথা বলারও সাহস হয় না। আর সেখানে তুমি বলছো আমাকে দারোয়ান দিয়ে ঘাড় ধরে বার করে দিবে তাই না!!

কুহু রেহানের কথা শুনে বেহুঁশ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।

রেহান – আজকের পর থেকে আর আমার মুখে মুখে তর্ক করবা তো তোমার বারোটা বাজাবো আমি মাইন্ড ইট। (রেগে)
রেহান কুহুর গাল ছেড়ে দিয়ে কুহুর কপালে চুমু দিয়ে সেখান থেকে হনহন করে চলে আসে।

কুহু রেহানের কাজে আরও রেগে যায়। বার বার কপাল মুছছে। ইচ্ছে করছে গাছের সাথে কপাল ঘষা দিতে যাতে করে ঐ অসভ্যর ছোঁয়া না থাকে!

কুহু রেগে ক্লাসরুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে রিহা আর সানিয়া একসাথে বসে কথা বলছে।

কুহু – তোরা কখন আসলি?

সানিয়া – এই মাত্র আসলাম। তুই এতো লেট করলি কেনো?

কুহু – লেট কি সাধে করেছি? ঐ ছেলের জন্য মনে হই এই ভার্সিটিতে থাকা হবে না।

সানিয়া – ঐ ছেলে? ঐ হারামী টা আমার আসছে? ওরে বের করে দিলি না ক্যন? আমাদের ভার্সিটিতে বার বার আসার সাহস পায় কোথায় ও?

সানিয়া বক বক করেই যাচ্ছে কুহু আর রিহা ঢোক গিলছে কারন পিছনে যে রেহান রাগি লুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে!

সানিয়া – তুই না আসলেই বোকা কিছু করতে পারলি না? আমি হলে তো সিরিয়াসলি ঘাড় ধরে বের করে দিয়ে আসতাম।

রেহান – ওহ সিরিয়াসলি!!

সানিয়া – হ্যা….. এই কুহু এটা কার কন্ঠ রে?

কুহু ইশারা করে সানিয়াকে পেছন তাকাতে বলে। সানিয়া পেছনে তাকিয়ে দেখে রেহান দু’হাত পকেটে গুঁজে রাগি লুক নিয়ে সানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

সানিয়া বেশ ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু রেহানের কাছে কিছুতেই প্রকাশ করতে চাইছে না।

সানিয়া – আপনার এতবড় সাহস? এখানে আসলেন কিভাবে?

রেহান – সিনিয়র দের সাহস লাগেনা। তারা যখন যেখানে ইচ্ছে থাকতে পারে। বুঝলে??

সানিয়া – সি..সি…সিনিয়র!!

রিহা – হ্যা রে উনি আমাদের সিনিয়র। তুই তখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছিস। এতো করে ইশারা করলাম থাম থাম তাও থামলি না। এবার মজা বুঝ।

রেহান – আমার বিষয়ে আর কারো কিছু জানার আছে? (ধমক দিয়ে)

সানিয়া – ন..না না.

রিহা – না ভাইয়া কিছু জানার নেই আর।

রেহান – ভাইয়া না দুলাভাই আমি তোমাদের। অবশ্য এখনকার দিনে দুলাভাই এর থেকে ভাইয়া ডাকা টাই ভালো মেবি।

সানিয়া – জ্বী দুলাভাই না মানে ভাই…. (ভয়ে ভয়ে)

রেহান সানিয়া আর রিহার অবস্থা দেখে হেসে দেয়। সাথে ক্লাসের কয়েক জনও বেশ ভয় পায়।

রেহান ইশারা করে যার যার কাজে মন দিতে বলে। সবাই রেহানের কথা মতো নিজের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

রেহান – কুহু আমার সাথে চলো!!

কুহু – নেভার!

রেহান কিছুটা রেগে যায়… তারও নিজের রাগ কনট্রোলে এনে বলে..

রেহান – কুহু চলো। এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না আমি।

কুহু – আপনি পছন্দ করেন বা না করেন তাতে আমার কি? আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না দ্যাটস ফাইনাল।

রেহান এবার প্রচন্ড রেগে কুহুকে কোলে তুলে নেয়। সানিয়া আর রিহা কিছু বলতে গিয়েও রেহানের ভয়ে বলেনি।

কুহু- ছাড়ুন আমায় কি হচ্ছে টা কি? ছাড়ুন….

কুহু নিজের মতো করে বলেই যাচ্ছে কিন্তু রেহানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। রেহান কুহুকে সোজা ছাঁদে নিয়ে আসে।

কুহু এবার একটু ভয় পেয়ে যায়। ছাদে কেনো আনলো এই ছেলেটা? ছাদ থেকে ফেলে দেবে না তো?

রেহান কুহুকে ছাদের এক পাশে দাড় করায়।

কুহু – আমাকে এখানে আনার মানে কী?

রেহান – অনেক মানে আছে।

কুহু – ফাজলামি বাদ দিন। এখানে কেনো আনলেন আমায়? আর আপনি আমার পিছু কেনো পড়ে আছেন শুনি? (রেগে)

রেহান – জাস্ট সাট আপ ওকে। আমি তোমার পিছু পড়ে থাকবো কেনো? হোয়াই? রেহান ওয়াহিদ কখনো কারো পিছু ঘুরঘুর করে না। কোনো মেয়ের পিছু তো নয় ই। আর হ্যা… আমি তোমার পিছু নেই নি। তোমাকে ভালো লেগেছে তোমাকে আমার চাই ব্যাস আর কিছু না।

কুহু – তোমাকে আমার চাই!! হাসালেন! আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন আমি কোনো দ্রব্য না যে চাইলেই পেয়ে যাবেন। আমি মানুষ। আমার নিজেরও পছন্দ অপছন্দ আছে।
আর আপনার মতো অসভ্য, বাজে লোক কে আমি কোনো দিনও একসেপ্ট করতে পারবো না বুঝতে পেরেছেন?

রেহান – তোমাকে একসেপ্ট করতে কে বললো?
আমি নিজেই নিজের টা আদায় করে নিবো বুঝছো? তোমাকে ভালোও বাসতে হবে না পছন্দও করতে হবেনা।

কুহু – আপনার এই গুন্ডামি টাইপ কথা গুলো অন্য মেয়েদের গিয়ে বলুন ওকে। আমি আপনার এইসব ফালতু কথায় কান দিবো না। আপনার যা ইচ্ছে করুন গিয়ে। আপনাকে আর আশেপাশে আসাও সহ্য করতে পারবো না। মনে রাখবেন কথাটা।

কুহু রেগে চলে যেতে নিলে রেহান কুহুর হাত ধরে ফেলে। কুহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান একটানে কুহুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে…

রেহান – অনেক বড়বড় কথা বলেছো! তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না তাইনা? সহ্য করতে হবেও না। আমার থেকে দূরে কোনো দিনও যেতে পারবে না। যতো কিছুই করো আমার কাছেই থাকতে হবে তোমার।

কুহু রেহানের চাহনি দেখে ভয় পেয়ে যায়। রেহান মারাত্মক রেগে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। দেখতে কেমন হিংস্র লাগছে। কুহুর গলা শুকিয়ে যায়।

কুহু – ক্লাস শুরু হয়ে গেছে আমায় যেতে দিন। (ভয়ে ভয়ে)

রেহান বুঝতে পারে কুহু বোধহয় রেহান কে ভয় পাচ্ছে।

রেহান কিছুনা শান্ত হয়ে বলে…

রেহান – ভার্সিটি ছুটির পর ওয়েট করো আমি বাসায় পৌঁছে দিবো ওকে।

কুহুর রাগে রেহান কে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে….

কুহু – ঠিক আছে।

রেহান কুহুর দু গালে হাত রেখে কুহুর কিছুটা কাছে যায়। রেহানের কাছে আসাতে কুহু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রেহান মুচকি হেসে কুহুর ঠোঁটে চুমু দিয়ে কুহুকে ছেড়ে দেয়।

রেহান – যাও। আর হ্যা কোনো ছেলের সাথে যেনো কথা বলতে না দেখি ওকে।

কুহু রেগে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মূহুর্তে এতোটাই রাগ হচ্ছে বেচারির ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে টানতে।

কুহু – (যদি তোকে এই ছাদ থেকে ফেলে দিতে পারতাম আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হতো না। মনে মনে)

রেহান – কি হলো? কি ভাবছো এতো? ক্লাসে যেতে বললাম না? আর হ্যা ছুটির পর দাড়িয়ে থাকবা যতো খন আমি না আসি।

কুহু রেহানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বরং চোখ গরম করে রেহানের দিকে তাকিয়ে চলে আসে ছাদ থেকে।

রেহান কুহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

রেহান – আই নৌ ডিয়ার… তুমি আমার উপর মারাত্মক রেগে গেছো বাট মুখে কিছুই বলতে পারো নি। বলতে পারবেও না। (বাঁকা হেসে)

কুহু রেগে ক্লাসরুমে গিয়ে দেখে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। কুহু ভয়ে ভয়ে টিচারের পারমিশন নিয়ে ক্লাসে ঢুকে।

রিহা – কিরে এতোখন কোথায় ছিলি? কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো তোকে? (ফিসফিসিয়ে)

কুহু – ছাদে!

সানিয়া – কিহহহ! ভাগ্যিস ছাদ দেখে ফেলে টেলে দেয় নি। না হলে তের বাবা মার কাছে কী জবাব দিতাম আমরা বল তো?

কুহু – ফালতু কথা বলবি তো এক চরে দাঁত সব ফেলে দিবো। ফেলে দিবে কেনো শুনি? ওর এতো বড় সাহস আছে নাকি? মুখে মুখেই যতো গুন্ডামি কথা!

চলবে…

প্রেমপিপাসা পর্ব – ৩

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৩
#writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
কুহু রেহানের পিক গুলো দেখছে…
হটাৎ করেই কালকের কথা মনে হতেই কুহু রেহানের টাইমলাইন থেকে বের হয়ে যায়।

কুহু – যত্তসব ফাজিল কোথাকার… এইটা তো আমার ক্রাশ হয়ে পারে না এইটা একটা বাঁশ!

এদিকে জেরিন বেচারি রেহানের আইডি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত।

বিকেলে….

কুহু – আম্মু….

কুহুর মা – হ্যা বল…

কুহু – আব্বু কোথায়?

কুহুর মা – তোর বাবা তো মনে হই বাহিরে গেছে। তোর টাকা দিয়ে গেছে আমার কাছে। নিয়ে যা আয়…..

কুহু টাকা নিয়ে জেরিনের কাছে যায়…

কুহু – মহারানি রেডি তো আপনি?

জেরিন – হ্যা আপি। চল…

কুহু জেরিন কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
শপিং এ গিয়ে দু’জন সব কেনা কাটা করতে প্রায় সন্ধা হয়ে যায়।

জেরিন – আপি আমার অনেক ক্ষুদা লাগছে। চলো না কিছু খেয়ে নিই।

কুহু – হ্যা খেতেই পারি। চল…

কুহু আর জেরিন একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নেয়।

কুহু – এইরে অনেক রাত হয়ে গেলো তো… ফোনের ও চার্জ শেষ বাসায় তো জানাতেও পারবো না নিশ্চয় আম্মু আব্বু টেনশন করছে। এবার কি করি…

জেরিন – আমারও তো একি প্রবলেম।

কুহু – দেখছিস একটা রিকশাও পাচ্ছি না। এতো রাতে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে অসহ্য লাগছে রে।

জেরিন – আকাশের অবস্থা ও তো ভালো না।

কুহু – এই আকাশ টা আবার কে রে? (ভ্রু কুঁচকে)

জেরিন – আরে আপি আবহাওয়া ভালো না যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে।

কুহু – হ্যা সেটাই তো।

কুহু আর জেরিন অনেকক্ষন দাড়িয়ে থেকেও কোনো রিকশা পায় না তারপর বাধ্য হয়েই দু’জন হাটা ধরে…

কিছু দূর যেতেই শুরু হয় বৃষ্টি। কুহুর কেঁদে দিতে ইচ্ছে করছে কেনো যে এতো লেট করলো!

জেরিন – আপি চলো কোথাও গিয়ে দাড়াই।

কুহু – বাজে কথা কম বল। এখন গিয়ে দাড়িয়ে থাকলে কাল সকালে বাসায় ফিরতে হবে বুঝেছিস।
তার চেয়ে বরং হেটেই চল।
এমনিও ভিজতেই হবে।

কুহু আর জেরিন হেটেই যাচ্ছে হটাৎ ওদের সামনে একটা গাড়ি ব্রেক কষে….কুহু অনেক টা ভয় পেয়ে যায়। সাথে জেরিন ও।

কুহু – এই কানা টা আবার কে রে? মরার আর জায়গা পায়না নাকি… যত্তসব!

গ্লাস সরিয়ে মুখটা বের করতেই কুহু আর জেরিন চমকে উঠে…

কুহু – আপনিইই!!!

কুহুর সাথে জেরিনও অবাক হয়ে বলে উঠে…

জেরিন – আমার হিরো…..!

জেরিন কথা শুনে রেহান ভ্রু কুঁচকে জেরিনের দিকে তাকায় সাথে কুহু ও।

রেহান – সরি! কে হিরো?

জেরিন – আপনি! (আনমনে)

রেহান জেরিনের কথা শুনে মুচকি হাসে।

রেহান – ওহো!! আমি যদি হিরোই হই তবে একজনের হিরোই হতে চাই। অন্য কারো না। (কুহুর দিকে তাকিয়ে)

জেরিন – মানে!,

রেহান – মানে তোমার না বুঝলেও চলবে। বাই দ্য ওয়ে এতো রাতে তোমরা বাহিরে কি করছো? সাথে কাউকে আনো নি কেনো?

কুহু – আপনাকে কৈফিয়ত দিতে আমরা নিশ্চয় বাধ্য নই।

রেহান – জাস্ট সাট আপ!

রেহানের ধমক শুনে কুহু জেরিন দু’জনই ভয় পেয়ে যায়।

রেহান – তোমাদের কোনো কমন সেন্স নেই? এতো রাতে দুইটা মেয়ে একটা রাস্থায় বের হয়েছো তাও বৃষ্টিতে। যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় তো?

কুহু – আমরা নিজেদের সামলাতে পারবো ওকে। এই সব নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে — বলেই জেরিনের হাত ধরে হাটতে নেয়…

রেহান – স্টপ… সোজা গাড়িতে এসে বসো। আমি ড্রপ করে দিবো।

কুহু – তার কোনো প্রয়োজন নেই। আর আপনাকে চিনি না জানি না আপনার গাড়িতে কেনো উঠবো বলুন তো?

জেরিন – আপি চল না প্লিজ না করিস না। দেখ আমার কাছে সব কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে! আমি আমার ক্রাশের গাড়িতে করে যাবো সত্যিই ভাবতেও পারছি না। (কুহুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে)

কুহু জেরিনের দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকাতেই জেরিন চুপ করে যায়।

রেহান – কি হলো কথা কানে ঢুকছে না? বসতে বলছি

কুহু মনে মনে ভাবছে এখন না বসেও উপায় নেই আর। কোনো রিকশা ও পাচ্ছে না তার চেয়ে বরং উঠেই যাক।

কুহু গিয়ে পেছনের সিটে বসে পড়ে আর জেরিন এসে সামনে রেহানের সাথে বসে।

জেরিন তো বেচারি মহা খুশি। আর এদিকে রেহান রাগে ফুলছে!

রেহান – এতোবড় সাহস তোমার? পিছনে বসছো তোমার এই লুচু বোন টাকে সামনে পাঠাই দিছো!!

রেহান রেগে কটমট করে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

কিছুক্ষণ পরই কুহুর বাড়ির সামনে গাড়ি দাড় করায়…

কুহু আর জেরিন দুজনই নেমে পড়ে…

জেরিন – আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে যে কি হতো আজ!! (ঢ্যং করে)

কুহু – কি হতো? তোকে কি গুন্ডা ধরছিলো যে উনি এসে বাঁচিয়েছে? (রেগে কটমট করে)

জেরিন – না মানে রিকশা তো পাচ্ছিলাম না তাই আরকি। (মাথা নিচু করে)

কুহু – এতো বকবক না করে চল।

রেহান – তুমি ভেতরে যাও। তোমার আপুর সাথে আমার একটা কথা আছে। ও আসছে তুমি যাও। (জেরিন কে উদ্দেশ্য করে)

জেরিন – কী কথা? (অবাক হয়ে)

রেহান – কি কথা সেটা না হয় তোমার বোনই শুনবে। তোমাকে যেতে বলেছি। (দাঁতে দাঁত চেঁপে)

জেরিন কিছু না বলে রেগে ভেতরে চলে আসে। কুহু অবাক হয়ে যায় রেহানের ব্যবহারে।

কুহু – আপনি ওকে ধমকানোর সাহস পেয়েছেন কোথায়?

রেহান – আমি তোমার ফালতু কথার উত্তর দিতে ওকে ভেতরে পাঠাইনি। তোমার সাথে কথা আছে আমার।

কুহু – আপনার সাথে তো আমার কোনো কথা নেই। সো আমি এখন আসছি। — বলেই কুহু বাড়ির ভেতরে চলে যেতে নেয়। রেহান কুহুর হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে….

কুহু – আহহহ আমার হাতে লাগছে। হাত ছাড়ুন।

রেহান – একটা কথা বলবে তো হাত টা মুচড়ে ভেঙে দিবো। বলছিলাম না কথা আছে৷ না শুনেই চলে যাচ্ছো কেনো?
আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস পাও কোথায় তুমি? (রেগে)

কুহু – আপনাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সাহস লাগবে নাকি? আপনি কে?

রেহান কুহুর হাত টা আরও শক্ত করে মুচড়ে ধরে….

রেহান – আর কোনো দিন যদি রাতে বের হতে দেখি তাহলে আমি কে হারে হারে বুঝাবো তোমায়।
বলেই হনহন করে চলে আসে।

কুহুর ইচ্ছে করছিলো রেহান কে তুলে একটা আছাড় মারতে। কুহু রেগে বাসায় চলে আসে।

জেরিন – আপি ও কি বললো?

কুহু – আমার মুন্ডু। (বলেই রুমে চলে আসে)

কুহুর প্রচুর রাগ উঠছে। ইচ্ছে করছে সব ভেঙে ফেলতে।

এর মধ্যেই রিহা ফোন করে…

রিহা – কিরে সব রেডি তো?

কুহু – হ্যা।

রিহা – শাড়ি ম্যানেজ করেছিস?

কুহু – পাইনি শেষে শপিং থেকে এনেছি।

রিহা – দ্যাটস গুড৷ ওকে তাহলে রাখি কাল দেখা হচ্ছে।

কুহু – ওকে বাই।

পরের দিন সকালে….

কুহু শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নেয়। জেরিন কুহুকে দেখে অবাক হয়ে যায়…

জেরিন – আপি তুমি কি শাড়ি পড়ে ভার্সিটি যাবে নাকি?

কুহু – ইয়েস বেপি। ভালো লাগছে না আমায়?

জেরিন – হ্যা। (এইরে আজ যদি আমার হিরোর সাথে আপুর দেখা হয় আমার হিরো তো পাগল হয়ে যাবে।)

কুহু সবাই কে বলে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে। ভার্সিটিতে এসেও রেহান কে দেখে কুহুর মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়।)

কুহু সানিয়া আর রিহাকে সব বলে…

সানিয়া – ওহোহহ এই কথা! তবে যাই বলিস ছেলেটা কিন্তু অতটা ও খারাপ না। তোদের এতো রাতে বৃষ্টির মধ্যে বাসায় পৌঁছে দিলো কোনো অসভ্যতামি করেনি। আমার মনে হই ছেলেটা ভালোই।

রিহা – আমারও একি কথা। মনে হয়না ছেলেটা খারাপ।

কুহু ওদের কথা শুনে রেগে যায়….

কুহু – তোরা কি পাগল? ঐ ছেলেটা অসভ্য নয়? ও আমাকে টাচ করার অধিকার পেলো কোথায়? এটাকি অসভ্যতা না?

সানিয়া – যাই হোক বাদ দে তো এসব।
রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে বাসায় চল।
তারপর তিনজনই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়৷

সানিয়া আর রিহা এক রিকশা করে চলে যায়। আর কুহু অন্য রিকশা করে বাসায় চলে আসে।

বাসায় আসতেই জেরিনের আগমন।

জেরিন – আপি? আজকে কি আমার হিরোর সাথে তোমার দেখা হয়েছিলো?

কুহু – হ্যা দেখা হয়ছে আমায় কোলে নিয়ে নাচছে ও তোর সমস্যা? (রেগে)

জেরিন – বলো কি!!

কুহু জেরিন কে ধমক দিয়ে হনহন করে রুমে চলে আসে।

রুমে এসে চেঞ্জ করে নেয়।

কুহুর মা এসে খেতে ডাকলেও কুহু যায়নি।

কুহু – মা খেয়ে এসেছি আমি এখন ঘুমাবো একটু। রাতে খেয়ে নিবো৷

কুহুর মা – ঠিক আছে ঘুমা তুই।

রাতে…

জেরিন নিজের রুমে বসে কেঁদে কেঁদে সাগর বানাচ্ছে।

কুহু জেরিনের রুমে গিয়ে খেতে ডাকে…

জেরিন – আমি খাবো না তুমি যাও।

কুহু – কী হয়েছে তোর? এই ভাবে কথা বলছিস যে?

জেরিন – কিছু হয়নি। যাও তুমি।

কুহু বুঝতে পারছে না মেয়েটার হলো কী?
কুহু আর কিছু না বলে চলে আসে জেরিনের রুম থেকে।

কুহু এসেই খেতে বসে যায়…

কুহুর মা – কিরে জেরিন কই? ও আসলো না কেনো খেতে?

কুহু – জানিনা আম্মু। ও আসছে না কেনো? ও বোধহয় রেগে আছে।

কুহুর মা – সেকি! মেয়েটা রাগলো কেনো আবার?

কুহুর বাবা – তুই কিছু বলেছিস ওকে?

কুহু – আমি তো কিছু বলিনি আব্বু।

কুহুর মা – আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ওর রুমে খাবার দিয়ে আসবো নি। তোমরা খেয়ে নাও।

কুহু – হ্যা তাই করো। আমার ক্ষিদে পেয়েছে খুব।

খাওয়া শেষ করে কুহু নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অমনি সানিয়ার ফোন আসে…

কুহু – হ্যা বল…

সানিয়া – কী করছিস?

কুহু – শুয়ে আছি।

সানিয়া – কাল ভার্সিটি তে আসবি তো?

কুহু – হুম। তুই?

সানিয়া – হ্যা আসবো। আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ ঘুমিয়ে পড় তুই।

কুহু – ঠিক আছে।

সকালে….

কুহু ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে ৮ টা বাজে।
উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

কুহুর মা – ভার্সিটিতে যাবি না?

কুহু – যাবো আম্মু। আমি রেডি হয়ে আসছি।

কুহুর মা চলে যায়। কুহু রেডি হয়ে নিচে আসে।

কুহুর বাবা – গুড মর্নিং মা।

কুহু – গুড মর্নিং আব্বু।

কুহুর বাবা – দুপুরে কিন্তু বাড়িতে এসে খাবে। বুঝেছো?

কুহু – ওকে।

কুহু খেয়ে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়ে। রিকশা করেই চলে আসে।

কুহু – সানিয়া কি আসেনি এখনো?

রিহা – এই কুহু দাড়া।

কুহু – তুই চলে এসেছিস সানিয়া কোথায়?

নিহা – আমিও তো খুঁজছিলাম। আসেনি এখনো। চল আমরা ওদিকে গিয়ে বসি। সানিয়া আসলে একসাথে ক্লাসে চলে যাবো।

কুহু – হ্যা চল।

কুহু আর নিহা গিয়ে একটা গাছের নিচে বসে গল্প করতে থাকে। হটাৎ ভার্সিটিতে একটা ছেলে আসে বাইকে করে।

কুহু তো হা করে ছেলেটার দিক তাকিয়ে আছে।
বাবাহ ব্লু কালার শার্ট সাথে ব্ল্যাক জিন্স, হাতে ঘড়ি, আবার চোখে সানগ্লাস ও। এ তো দেখি পুরাই ক্রাশ।

চলবে…

প্রেমপিপাসা পর্ব – ২

0

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ২
#Writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
জেরিন – আপি এই সব কেনো বলো? আমি তো এখানেই কথা বলছি। এই ছেলে শুনবে কিভাবে এতো দূর থেকে।

কুহু – আমিও তো সেটাই ভাবছি।

জেরিন – আপি মনে তো হচ্ছে আমাদের দিকেই এগুচ্ছে। এবার কি হবে?

কুহু – চুপচাপ বসে থাক বেয়াদব মেয়ে। এতক্ষন এই সব বলছিলি কেনো হ্যা? (ধমক দিয়ে)

রেহান কুহু আর জেরিনের দিকে এগিয়ে আসে।

রেহান – হেই বিউটি কুইন…. নাম কী তোমার?

জেরিন – জ্বী জেরিন। জেরিন আমার নাম। (খুশিতে গদগদ করে)

রেহান – আমি কি তোমায় জিগ্যেস করেছি? (চোখ রাঙ্গিয়ে)

রেহানের কথা শুনে কুহু এদিক সেদিক তাকায়। নাহ…. এখানে তো আপাতত আমি আর জেরিন ছাড়া কেউই নেই। তাহলে?
এই ছেলে কার নাম জিগ্যেস করছে?

রেহান – হ্যালো মিস…. আমি আপনাকেই জিগ্যেস করছি। (কুহুকে উদ্দেশ্য করে)

কুহু এবার হা করে রেহানের দিকে তাকায়।

কুহু – (কিহহহ এত্তো বড় সাহস এই ব্যাটার!! আমার নাম জিগ্যেস করে আবার আমাকে বিউটিকুইন ডাকে!)

রেহান – কথা বলতে পারো না তুমি? কখন থেকে জিগ্যেস করছি নাম কী নাম কী কিছু বলছো না কেনো?

কুহু – আপনাকে আমার নাম কেনো বলবো? আপনি কে? কোথ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে নাম জিগ্যেস করছে… যত্তসব।

রেহান – হোয়াট….! আমি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি মানে? এই পার্ক টা কি তোমার নামে রেজিস্ট্রি করা নাকি?

কুহু – ফালতু কথা কম বলবেন। যদি আমার নামে রেজিস্ট্রি করা থাকতো তাহলে আপনার মতো লোকদের ঢুকতে নিষেধ দিতাম।
পার্কে এসে মেয়েদের বিরক্ত করা!!

প্রণয় – দোস্ত এই মেয়েটা বেশি বক বক করছে। আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে চর মারি।

রেহান – চুপ কর। (প্রণয় কে ধমক দিয়ে)

রেহান – নাম টা বলো কুইক। (দাঁতে দাঁত চেপে)

কুহু এবার রেগে বসা থেকে উঠে পড়ে।

কুহু – জেরিন চল…. এখানে আর এক সেকেন্ড ও থাকতে চাই না। এই সব ফাজিল অসভ্য ছেলেদের জন্য পার্কে আসাও নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

কুহু জেরিনের হাত ধরে টেনে চলে যেতে নিলেই রেহান কুহুর হাত ধরে ফেলে….

রেহান – তোমায় আমি কিছু জিগ্যেস করেছিলাম। আমার কথার উত্তর না দিয়ে এখান থেকে যাওয়ার সাহস হলো কিভাবে তোমার?

রেহান কুহুর হাত ধরায় কুহু মারাত্মক রেগে যায়।

কুহু – ইউউ…! আপনার সাহস হলো কিভাবে আমাকে টাচ করার? আর এতো প্রশ্নই বা করছেন কেনো?
কে হোন আপনি আমার?

প্রণয় – এতো কথা না বারিয়ে নাম টা বলে ফেলো।

কুহু – বলবো না। হাত ছাড়ুন বলছি।

রেহান আরও শক্ত করে কুহুর হাত টা চেঁপে ধরে। এবার কুহু হাতে ব্যাথা পেয়ে কেঁদে দেয়ার অবস্থা হয়ে যায়।

কুহু – লাগছে আমার হাতে। ছাড়ুন প্লিজ।

রেহান – নাম বলো। (রেগে)

কুহু – কুহেলিকা কুহু।

বলার সাথে সাথেই রেহান কুহুর হাত টা ছেড়ে দেয়।
কুহু বেচারি যেনো প্রাণ ফিরে পায়। আর এক সেকেন্ড সময় ও নষ্ট না করে কুহু একপ্রকার দৌড়ে জেরিন কে নিয়ে পার্ক ত্যাগ করে।

প্রণয় – দোস্ত প্রেমে পড়লি নাকি?

রেহান – জানিনা। তবে ওকে আমার চাই। আট এনি কস্ট।

কুহু আর জেরিন দৌড়ে এসে রিকশায় উঠে।

কুহু – বাবা গো বাবা বাঁচলাম। এ কোন রাক্ষসের মুখে পড়েছিলাম আমি।

জেরিন – ধুরর কি থেকে কি হয়ে গেলো। ভেবেছিলাম আমাকে নাম জিগ্যেস করবে! তা না ঐ ছেলে তো দেখছি তোমার উপর ক্রাশ খাইছে। আপি যেভাবেই হোক তুমি ওরে বইলো যে তুমি ওরে ভালোবাসো না। আমি ভালোবাসি। প্লিজ আপি।

কুহু জেরিনের কথা শুনে রেগে কটমট করে জেরিনের দিকে তাকায়।

কুহু – ফাজিল মেয়ে। অমন লুচু পোলার উপর ক্রাশ খাইছিস ক্যান? দেখলি না আজ কি একটা অসভ্যতা করলো! ঐ ছেলে নিশ্চয় সব মেয়েদের সাথেই এমন করে। নাম জিগ্যেস করে না বললেই হাত ধরে ফেলে।
ওরকম একটা ছেলের উপর তুই ক্রাশ খাইবি আর আমি তাকাই তাকাই দেখমু!! অসম্ভব!

জেরিন – আরে আপি!! ও যাই করোক আমর দেখার বিষয় না। ওকে এখন থেকে আমি ভালোবাসবো। ব্যাস ও আগের সব ভুলে আমাকেই ভালোবাসবে।

কুহু – আর একবার যদি এই কথা বলিস তোরে কি করবো নিজেও জানিনা।

কুহুর রাগ দেখে বেচারি জেরিন একদম চুপ।

তারপর দুজনেই বাসায় আসে।

রেহানের কান্ডে কুহুর রাগ টা এখনো কমেনি।
বাসায় এসেই রুমে গিয়ে দরজা লক করে দেয়।

জেরিন এখনো বোকার মতো ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে আছে।

কুহুর মা – কিরে জেরিন। কুহুর কি হয়েছেও এতো রেগে আছে যে?

জেরিন – কই? কিছু হয়নি তো। তুমি শুধুশুধু চিন্তা করছো মামুনি।

কুহুর মা – ঠিক আছে তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে যা।

জেরিন – আচ্ছা।

এদিকে কুহু নিজের রুমে এসে রেগে বসে আছে।

কুহুর মা অনেকক্ষন ধরে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু কুহুর কোনো সাড়া নেই।

কুহুর মা এবার চিন্তায় পড়ে যায়। হলো কী মেয়ে টার।

কুহুর মার ডাকাডাকির শব্দ শুনে কুহুর বাবাও চলে আসে।

কুহুর বাবা – কী হয়েছে? এভাবে ডাকছো কেনো ওকে?

কুহুর মা – দেখো না কখন থেকে ডাকছি সাড়া দিচ্ছে না।

কুহুর বাবা – আরে ও হয়তো ঘুমাচ্ছে। তাই দরজা খুলছে না।

কুহু এবার দরজা খুলে দেয়…

কুহু – কী হলো মা? এভাবে ডাকছো যে?

কুহুর মা – এতো খনে তোর দরজা খুলার সময় হলো তাইনা? কখন থেকে ডাকছি। চিন্তায় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।

কুহুর বাবা – নাও। এবার শান্তি তো? সব কিছুতে বেশি বেশি ভাবো তুমি। — বলেই চলে যায়।

কুহুর মা – কী করছিলি এতোখন? দরজা খুলিস নি যে?

কুহু – কিছু না।

কুহুর মা – তোর কী হয়েছে বল আমায়। আসার পর থেকেই কেমন হয়ে আছিস।

কুহু – কী হবে আবার? কিছুই হয়নি। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো।

কুহুর মা – হ্যা সব কিছুই আমি শুধু শুধু করি। খেতে আসো এবার।

কুহুর মা চলে যায় পেছন পেছন কুহুও আসে।

সবাই একসাথে খেতে বসে যায়।

কুহুর বাবা – তো কেমন ঘুরাঘুরি হলো তোমাদের?

কুহু – ভালো আব্বু।

কুহুর বাবা – ঠিক আছে।

কুহু – আব্বু শুনো…

কুহুর বাবা – হ্যা মা বল…

কুহু – আমার কিছু টাকা লাগবে।

কুহুর বাবা – কেনো?

কুহু – শপিং এ যাবো কাল।

কুহুর বাবা – তুমি একা যেতে পারবে? জেরিন কে নিয়ে যেও।

কুহু – হ্যা ওকে নিয়েই তো যাবো। আর ওর ও কিছু কেনাকাটা করতে হবে তাই।

কুহুর বাবা – আচ্ছা ঠিক আছে।

সবার খাওয়া শেষ হলে যার যার রুমে চলে যায়।

জেরিন নিজের রুমে গিয়ে রেহানের কথা ভাবতে থাকে।

জেরিন – যেভাবেই হোক আমার ঐ হিরো কে চাই ই চাই৷
কিন্তু ও তো আপিকে পছন্দ করে মেবি। আমাকে কি পছন্দ করবে?
কোনো সমস্যা নাই আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো আর আমেরিকা ফিরবো না। আমি চলে গেলেই আমার ক্রাশকে আপি নিয়েই যাবে। তার চেয়ে বরং আমি এখানে থেকে ওকে চোখে চোখে রাখবো। কিন্তু নাম টাই তো জানা হলো না আমার হিরোর। ধুররর….. সব হলো আপির জন্য। আমার তো এখন জেলাস ফিল হচ্ছে। আমি এতো সুন্দরী একটা মেয়ে পাশে বসা থাকতে শেষে কিনা আপির কাছেই গেলো।
জেরিন নিজে নিজে বক বক করতে থাকে।

এদিকে কুহু নিজের রুমে এসে ফোন টা হাতে নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকে।
কুহুর বান্ধবীদের সাথে কথা বলে শুয়ে পড়ে।

কুহু – ( ছেলেটার সাহস কত বড়। আমার হাতে টাচ করে। ইচ্ছে করছিলো কষে দুইটা থাপ্পড় মারতে। মনে মনে)

কিছুক্ষন পরই কুহু ঘুমিয়ে যায়।

সকালে….

কুহু ঘুম থেকে উঠে দেরি করে যেহেতু আজ ভার্সিটি বন্ধ।

কুহু উঠে দেখে সবার ফ্রেকফাস্ট শেষ।

কুহু – এই যাহহহ!! সবাই আমাকে রেখেই খেয়ে ফেললো।

কুহুর মা কিচেন থেকে আসে।

কুহুর মা – তুই তো মাত্র উঠলি। আমি সব রেডি করেই রেখেছি। বস তুই খেয়ে নে।

কুহু – হুম। আমারও অনেক ক্ষিদে পেয়েছে।

কুহু খাওয়া শেষ করে জেরিনের রুমে যায়…

কুহু – কিরে শাকচুন্নি কি করছিস?

জেরিন ফোন টিপছিলো কুহুকে দেখে মুচকি হাসে।

জেরিন – দেখনা আপি চমার হিরো টার ফেইসবুক আইডি খুঁজছিলাম কিন্তু বেড লাক পাচ্ছি না।

কুহু – কোন হিরো? (ভ্রু কুঁচকে)

জেরিন – ঐ যে কাল দেখা হয়েছিলো।

কুহু – তুই আবার ঐ ছেলের নাম নিয়েছিস? (রেগে)

জেরিন – নাম নিলাম কোথায়? নাম জানলে তো ভালোই হতো। (হতাশ হয়ে)

কুহু – তো কিভাবে ফেইসবুক আইডি খুঁজছিলি শুনি? নাম না জানলে কি লিখে সার্চ দিয়েছিস? হিরো নাকি??

জেরিন – আপি…. মজা নিচ্ছো তুমি।

কুহু – এই সব ফালতু কাজ বাদ দে। আর মনে আছে তো আজ বিকেলে শপিং এ যাবো।

জেরিন – হ্যা মনে আছে।

কুহু – ওকে আমি তাহলে যাই।

জেরিন – আচ্ছা।

কুহু নিজের রুমে চলে যায়।

জেরিন – (হুহহহ…. এইসব ফালতু কাজ বাদ দে!
বাদ কেনো দিবো শুনি? আমার হিরো কে তো আমার করেই নিবো। যে যাই বলুক। ওকে আমার চাই। যেভাবেই হোক)

কুহু নিজের রুমে এসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন টা হাতে নেয়। ফেইসবুকে ঢুকে দেখে অনেক গুলো ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট। কুহু সবাই কে একসেপ্ট করে না।
কয়েক জনকে করে অন্য একটা আইডিতে চোখ যেতেই কুহু চমকে উঠে।

কুহু – আরেহহ!! এটা তো ঐ ছেলেটার আইডি!
আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছে! কিন্তু আমার আইডি পেলো কোথায়? আমার আইডিতে তো আমার পিক দেয়া নেই। সবচেয়ে বড় কথা নাম টাও ফেইক। তাহলে বুঝলো কিভাবে?
ধুরর মনে হই অন্য মেয়ে ভেবে রিকুয়েষ্ট দিয়ে ফেলছে।

দেখো কান্ড ঐ দিকে জেরিন এই ছেলের আইডি খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে আর এদিকে অসভ্য ছেলেটা আমাকেই রিকুয়েষ্ট দিয়ে রাখছে।

কুহু রেহানের টাইমলাইনে ঢুকে দেখতে থাকে।

কুহু – বাবাহ!! ছেলে টা তো সত্যিই হিরো! এতো মনে হই হাজারো মেয়ের ক্রাশ। ইয়া লম্বা দেখতে, গায়ের রং তো মনে হচ্ছে আমার থেকেও ফর্সা, চুল গুলো কি সুন্দর সিল্কি সিল্কি, সামনের চুল গুলো আবার চোখের সামনে এসে পড়ে, চাপ দাড়ি, বডি ও মাশআল্লাহ, নাম টা তো আরও সুন্দর দেখছি, রেহান ওয়াহিদ….!

চলবে…