Thursday, July 10, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1851



শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৯

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৯
#Tabassum_Kotha

দেয়ালের সাথে ঠেস্ দিয়ে দুই বাহু চেপে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো নীল। নীল এর এমন আকস্মিক আক্রমণে পাথরের মতো জমে গেছি। পুরো মাথা হ্যাং হয়ে আছে আমার। নীল আমাকে এভাবে জোর করে কিস করেছেন! সত্যি কি মানুষটা নীল? কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। নীল তো এমন না, তার দ্বারা এমন কিছু আমি স্বপ্নেও আশা করি নি। আর সে কি না নির্দ্বিধায় এই কাজ টা করে যাচ্ছে। নীল এর প্রতি ঘৃণায় আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে।

নীল এর বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু যতোই নিজেকে ছাড়াতে চাচ্ছি ততোই শক্ত করে আঁকড়ে ধরছে নীল। বেশকিছুক্ষণ চেষ্টা করেও নিজেকে নীলের বাহুডোর থেকে ছাড়াতে পারলাম না। নিজেকে অনেক বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। দুচোখ বেয়ে পানি পরছে আমার কিন্তু নীলের সেদিকে কোনো হুশ নেই। এদিকে অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়াতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হয়তো আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে নীল এর বুকেই মরে যাবো।

হঠাত নীল আমাকে ছেড়ে দিলেন, আমি কান্না জরানো চোখে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। আর নীল নেশা লাগানো দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। এই মুহূর্তে নীল কে খুন করতে পারলে হয়তো আমার ভিতরের রাগ টা কমতো। কিন্তু সেটাও করতে পারছি না।

আচমকা নীল আমাকে তার বুকে জরিয়ে নিলেন। এবার যেনো আমার রাগের বাঁধ ভেঙে গেছে। এতোক্ষণ আমার ঠোঁটের উপর হামলা চালিয়ে কি মনের স্বাদ মিটে নি যে আবার এভাবে জরিয়ে ধরেছে!

— কি করছেন ছাড়ুন আমাকে। এসব অসভ্যতামির মানে কি ছাড়ুন বলছি। নীল! ছাড়ুন আমাকে। এভাবে কেউ দেখলে আপনার কিছু না হলেও আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না।

নীল আরও শক্ত করে কথাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— বলেছিলাম না এইবার যখন ধরেছি আর কোনো ছাড়াছাড়ি হবে না। আর এসব অসভ্যতামি নয় সোনা। এটা আমার ভালোবাসা।

— ছিঃ! এই আপনার ভালোবাসা! ভালোবাসা মানে কি শুধুই শারীরিক চাহিদা!

— আমাকে ভালোবাসার মানে বুঝাতে গেলে যে আবারও আমার প্রেমে পড়ে যাবি। তোর কি মনে হয় অভিমান করে শাড়ি ফেলে দিলেই আমি কষ্ট পেয়ে যাবো! কখনই না। আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিস। এখন আমার ভালোবাসা নিতে শিখে যা।

— ছাড়ুন বলছি আমাকে।

— না ছাড়বো না। আমাকে নিজের নেশায় ফেলে দিয়ে এখন আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিস! ততোক্ষণ তোকে ছাড়বো না যতোক্ষণ না আমার অশান্ত মন শান্ত হচ্ছে।

— প্লিজ ছাড়ুন আমাকে! কেনো বুঝতে পারছেন না কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

— দেখলে দেখুক। সবাইকে বলে দেবো আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।

— আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

— ভালোবাসিস না? (কথাকে ছেড়ে দিয়ে কথার দুই বাহু ধরে বললো নীল)

— না আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

— কালকে সকালেও হয়তো তুই বলেছিলি আমাকে ভালোবাসিস।

— হ্যাঁ বলেছিলাম। আর সাথে এটাও বলেছিলাম আর কখনও ভালোবাসার দাবি নিয়ে আপনার সামনে আসবো না।

— এবার ভালোবাসার দাবি নিয়ে আমি তোর সামনে আসবো। একবার নয় বারবার আসবো। আর তোকে সেই ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিতেই হবে। (কথাকে আবারও নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো নীল)

— এমনটা কখনই হবে না। আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না।

— তুই আমাকে আগেও পাগলের মতো ভালোবাসতি আর এখনও ভালোবাসিস। শুধু তোর ভালোবাসায় অভিমানের মরিচা ধরে গেছে। সমস্যা নেই। আমার ভালোবাসা দিয়ে তোর সব অভিমান দূর করে দেবো।

নীল এই সব কথাগুলো আমাকে জরিয়ে ধরেই বলছিলেন। নীল এর হাতের বাঁধন একটু শিথিল হয়ে এলেই তাকে নিজের থেকে সরিয়ে তার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম। নীল গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।

— কি মনে করেন আপনি নিজেকে? আমাকেই বা কি মনে হয় আপনার! রাস্তার মেয়ে আমি? নাকি সত্যি কোনো পতিতা? পতিতা বলে গালি দিয়েছিলেন আপনি আমাকে। ভুলে যাই নি কিছুই। আপনার জন্য নিজের জীবন নষ্ট করতে বসেছিলাম আমি। আপনার মতো একটা ইমোশোনলেস পাথরের জন্য আমি আমার জীবন দিতে বসেছিলাম। কিন্তু এখন আর সেই আগের মতো বোকামি করবো না। আপনাকে আর কখনই ভালোবাসবো না আমি। কখনই না!

— শ্রাবণের প্রতিটি মেঘের মতো তুই আমারই থাকবি। আর তোর সকল অভিযোগ শোনার জন্য আমি তোর পাশে আছি।

কথাগুলো বলে নীল একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার কপালে তার ঠোঁট ছুইয়ে দিলেন। এসব আমি সহ্য করতে পারছি না। নীল কে একটা ধাক্কা দিয়ে আমার সামনে থেকে সরিয়ে তার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।

?

?

কাল রাতে কাব্য ভাইয়ার তানিয়া আপুকে লেখা চিঠিটা পড়ার পর থেকে রাতে আর ঘুমোতে পারি নি। আব্বু আর কাব্য ভাইয়া ফুপি আম্মুর বাড়িতে গিয়েছিল রাতে আর ফিরে নি। তাই ভাইয়াকেও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি নি। ভেবে রেখেছিলাম সকাল হতেই তানিয়া আপুকে সব জিজ্ঞেস করবো। সে জন্যই সকাল সকাল খান বাড়িতে এসেছিলাম। কিন্তু দুতলায় উঠতেই নীল এসব কিছু করে বসলেন। অসহ্য, জাষ্ট অসহ্য। এই লোকটা দিন দিন আমার বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। একদিন সত্যি এই লোকটাকে আমি খুন করবো। পরে না হয় ভালো উকিল ধরে জেল থেকে ছাড়া পাবো।





নিতুর ঘরে গিয়ে ধপ করে বিছানার উপর বসে পরলাম। রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি। কিন্তু উপকার পাচ্ছি না। নীল এর বাচ্চার সাহস কতোবড় আমাকে এভাবে জোর করে কিস করলো। চড় খাওয়ার পরেও আবার দাঁত কেলানো হচ্ছিল। লাইফের প্রথম চুমু নিয়ে একটা মেয়ের কতো জল্পনা কল্পনা থাকে। আর আমার সেই কল্পনা তে নর্দমার পঁচা পানি ফেলে দিলো। উফফ!

— কি গো ভাবি, বসে বসে কি ভাইয়ার সাথে বাসরের স্বপ্ন দেখছো নাকি? (নিতু)

— চুপ পেত্নি একদম বাজে বকবি না।

— এই কথা এদিকে তাকা তো। এ মা! তুই স্বপ্নে কি করছিলি বলতো!

— কিহ! কি বলছিস এসব?

— আমাকে বোকা বানাস না। তোর ঠোঁট ফুলে আছে আবার কোনায় রক্ত লেগে আছে। সত্যি করে বলতো নীল ভাইয়া তোকে কিস টিস করে নি তো!!

মরেছি! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম নীল কিস করার সময় কামড় বসিয়ে দিয়েছিলেন। আর সেটা কি না নিতু দেখে ফেললো! এখন কি হবে!

— চুপ করে আছো কেনো ভাবি বলো? ভাইয়া বুঝি আদর করে দিয়েছে?

— পাকনামো হচ্ছে তাই না! তোর ভাইয়া যেই নিরামিষ। আমি পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি। আর কিছু হয় নি।

— যদিও বিশ্বাস করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তবুও মানছি। এই কথা জানিস তুলির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

— কি বলিস! কবে! কার সাথে?

— আরেহ কালকে হঠাত করে তুলিকে দেখতে এসেছিল। সেখানেই পছন্দ করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রেখে গেছে।

— কিন্তু এতো কিসের তাড়া ছিল? তুলির বয়স তো এখনও কম। আর কয়েকটা দিন যেতে পারতো!

— কম কোথায়? এই সময়েই মেয়েদের বিয়ে দেয়। তায়েবা আপু তো এই সময় গর্ভবতী ছিলেন। তানিয়া আপুর গায়ের রং টা একটু চাপা বিধায় এতো দিন লাগলো।

— তবুও একটু বেশি তাড়াহুড়া করে ফেললো। সামনে মাসেই ফাইনাল পরীক্ষা।

— শুনেছি পরীক্ষার আগেই নাকি বিয়ে হয়ে যাবে।

— কাজ টা কি ঠিক হলো?

— বেঠিক হলেই বা কি করার, ফ্যামিলি ম্যাটার! আর তুই কালকে কোথায় ছিলি? সেই যে আমাদের বাড়ি থেকে গেলি আর তো ফোনও করলি না।

— তেমন কিছুই না একটু ব্যস্ত ছিলাম।

“কেমন আছিস কথা?” — তানিয়া।

— আরেহ তানিয়া আপু যে! আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো?

— আমি,, ভালোই আছি। নিতু! তোকে ছোট মা ডাকছে। যা শুনে আয় কি বলছে।

— মাও না ডাকার আর সময় পায় না, কথা এসেছে একটু আড্ডা দেবো তবুও।

— এতো কথা বলিস না তো যা জলদি, নয়তো ছোট মা রাগ করবেন।

— হুহ।

— কেমন আছিস কথা?

— ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো?

— হ্যাঁ! চাচি কেমন আছে?

— হুম ভালো।

— আর চাচা?

— ভালোই।

— ওহ। আর সবাই ভালো আছে বাসায়?

— হুম। আচ্ছা তানিয়া আপু দুলাভাই এর নাম টা জানো কি?

— উনার নাম তো কাব্য! না মানে রাজীব।

— হ্যাঁ তোমার বরের নাম রাজীব আর আমার ভাইয়ার নাম কাব্য।

— হ্যাঁ সেটাই। কাব্যর কি খবর ভালো আছে তো!

— নিজের স্বামীর নাম তুমি কি করে ভুলতে পারলে? স্বামীর জায়গায় পরপুরুষের নাম কেনো এলো তোমার মুখে?

কথার তীরের মতো ছোড়া প্রশ্নে তানিয়া থতমত খেয়ে যায়। আসলেই তো বিয়ের পর স্বামীর নামের জায়গায় তার মুখ দিয়ে পরপুরুষের নাম বের হলো!

— আসলে আমি,, মানে,,

— থাক আর বলতে হবে না। রাজীব ভাইয়া কেমন আছে তাই বলো! ভালোবাসে তো তোমাকে?

— হ্যাঁ ভালো আছে। অনেক ভালোবাসে আমাকে।

— আর তুমি? তুমি ভালোবাসো তাকে?

— ভালো না বাসার কি আছে। উনি আমার স্বামী।

— উত্তর পাই নি আমি। আচ্ছা ছাড়ো ওসব কথা। কাব্য ভাইয়াকে কেনো ভালোবাসলে না?

তানিয়া কিছু চুড়ি নাড়চাড়া করছিল, কথার করা প্রশ্নে চুড়িগুলো ঝনঝন করে মেঝেতে বিছিয়ে পরলো। আর তানিয়া চমকে কথার দিকে তাকালো।

— এসব কি বলছিস?

— সব জেনে বুঝেও ওবুঝের মতো করছো কেনো? কেনো চলে গেলে না কাব্য ভাইয়ার হাত ধরে দূরে কোথাও? কেনো দিলে নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন?

— হুশ! আস্তে বল। কেউ শুনতে পারলে আগুন লেগে যাবে আমার সংসারে।

— আর যেই আগুন তোমার আর কাব্য ভাইয়ার মনে জ্বলছে সেটা কিভাবে নেভাবে তুমি?

— এসব তোকে কে বলেছে কাব্য?

— কেউ বলে নি। তোমাকে দেওয়া কাব্য ভাইয়ার চিরকুটে লেখা ছিল। কেনো করলে এই বিয়েটা আপু? কেনো পালিয়ে গেলে না ভাইয়ার হাত ধরে?

— এই সমাজ আমার আর কাব্যর সম্পর্ক কখনই মেনে নিতো না রে কথা। আমি যে কাব্যর চেয়ে বয়সে বড়। এটা যে মানানসই না।

— আজকের সময়ে এসেও তোমার চিন্তা ধারা এই ধরনের! কেনো করলে সমাজের পরোয়া? তোমরা দুজন আলাদা হয়েছো এতে সমাজের কেউ তো কষ্ট পাচ্ছে না। কষ্ট পাচ্ছো তুমি আর ভাইয়া।

— কাব্য আর আমার মধ্যে প্রেমের তো কোনো সম্পর্ক ছিল না। ছিল শুধু কিছু আবেগ, না বলা কিছু কথা। অপূর্ণতায় ভরা কিছু মোহ।

— হ্যাঁ শুধুই মোহ যেটা ভালোবাসার থেকে কম কিছু ছিল না।

— চুপ কর কথা। কাব্য আর আমার কোনো ভবিষ্যত ছিল না একসাথে।

— একবার চেষ্টা করেই দেখতে। হয়তো সুন্দর একটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ভবিষ্যতের দেখা পেতে।

— সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না কথা। কিছু কিছু অসম্পূর্ণ ভালোবাসার কাহিনী সময়ের পাতায় চাপা পরে যায়।

— কেনো পূর্ণতা পায় না ভালোবাসা বলতে পারো?

— চার আঙুলের এই ভাগ্য বড়ই কঠিন রে। কাব্যকে বলিস তার তানুকে ক্ষমা করে দিতে।

— তুমি কি ভাইয়াকে ভুলতে পারবে?

— আমি রাজীবকে ভালোবাসতে চাই নতুন করে।

— অন্তত এই উত্তর টা তো দাও।

— প্রথম প্রেম ভোলা যায় না কথা। শেষ নিশ্বাস অব্দি মনের কোনো এক কোনায় ধুলোর আস্তরে পরে থাকে।

–,,,,

— কিন্তু নতুন করে ভালোবাসতে তো বারণ নেই।

— বারণ আছে। নতুন করে কারো প্রেমে পড়া বারণ আছে। তুমি আর কাব্য ভাইয়া যেই বোকামি করেছো সেটা আমি পারবো না করতে।

— কি বলছিস এসব! সব কথা নিজের মনে চেপে যা কথা। এসব জানাজানি হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

“কিসের কেলেঙ্কারি হবে?”– নিতু?

— কিছু না। কথা আর আমি এমনেই রাজীবের কথা বলছিলাম। (তানিয়া)

— নিতু আমার শরীর টা ভালো লাগছে না। আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।

— আরেহ আড্ডা তো দেওয়াই হলো না। কথা!





খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাগলের মতো ছুটছি রাস্তা দিয়ে। কিসব বললো তানিয়া আপু এগুলো! সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না! না এটা হতে পারে না। দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসা! অসম্ভব। নীল ব্যতিত অন্য কারো সাথে জীবনের এক মুহূর্ত কাটানোর কথাও আমি চিন্তা করতে পারি না। নীল কে না পেলে সারাজীবন একা কাটিয়ে দেবো আমার এক তরফা ভালোবাসাকে আগলে ধরে। তবুও অন্যকাউকে আমার জীবনে কল্পনাও করতে পারি না।

রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে আচমকা কথা রাস্তার ঠিক মাঝখানে একটা গাড়ির সামনে এসে পরে। গাড়ির ড্রাইভার ঠিক সময়ে ব্রেক কষায় একটুর জন্য কথার এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে যায়। যদিও কথার চোট লাগে নি কিন্তু তানিয়ার বলা কথা গুলোতে কথার কষ্ট দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। নীলকে ছাড়া সে কিভাবে বাঁচবে সেটা চিন্তা করতেই রুহ কেঁপে উঠছে কথার।।

?

?

খান বাড়িতে নজরুল সাহেব তাহেরা বেগম আর নয়নতারা বেগম সবাই একসাথে বসে আছেন। তাহেরা বেগম রাইসা কে কোলে নিয়ে খেলছেন আর নয়নতারা বেগম পাশে বসেই আমতা আমতা করছেন।

— কিছু বলতে চাও নয়ন? (নজরুল সাহেব)

— আসলে,, বলছিলাম কি, আমাদের তো ব্যবসা বাণিজ্য বেশ ভালোই চলছে। আপনার পর তো সেগুলো নীল আর নীরবই দেখবে।

— হ্যাঁ সেটা তো ঠিক আছে। মূল কথাটা বলে ফেলো।

— বলছিলাম নীল এর বিয়ে টা করিয়ে দিলে কেমন হয়?

— কি বলছিস তুই নয়ন? নীলের তো পড়া শেষ হয় নি এখনও। (তাহেরা বেগম)

— আপা তোমার কথা ঠিক আছে কিন্তু বিয়ে করিয়ে বউ আনলে বউ তো আর না খেয়ে মরবে না। অঢেল টাকা পয়সা আছে তায়েবার আব্বুর। আমি বিষয় টা নিয়ে ভাবছি কারণ ছেলে বড় হয়েছে। উল্টা পাল্টা কিছু করলে বংশের নাম খারাপ হবে।

— তুমি ঠিক বলছো নয়ন। তা মেয়েও তো দেখতে হবে। (নজরুল সাহেব)

— মেয়ে আমার দেখাই আছে। আমার বোনের মেয়ে মুনতাহা,, ওকে আমার ভীষণ পছন্দ। আমি চাই আপনি আর আপাও মুনতাহা কে দেখেন তারপর বলেন আপনাদের কেমন লাগে।

— তাহলে তুই আজকেই মুনতাহাকে আমাদের বাড়িতে আসতে বল নয়ন। আমরাও দেখি নীল এর সাথে কেমন মানায় মুনতাহা কে। (তাহেরা বেগম)

বোনের মেয়ের সাথে নিজের ছেলের বিয়ের কথাটা উঠাতে পেরে নয়নতারা বেগম যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। যতো দ্রুত নীল আর মুনতাহার বিয়ে দিতে পারবে সে ততো দ্রুত কথা কে নীল এর জীবন থেকে সরাতে পারবে। নীল এর মতি গতি তার সুবিধের ঠেকছে না। আজকে সকালেও কথা নীল কে একঘরে দেখেছে সে।

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৮

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৮
#Tabassum_Kotha

??

কথা কে পাঁজাকোলে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালের করিডোর দিয়ে ছুটে চলছে নীল। পিছনে পিছনে কলি বেগমও ছুটে আসছে আর্তনাদ করতে করতে। নিস্তেজ হয়ে পরে থাকা কথাকে দেখে নীল এর বুকের ভিতর যেনো আগুন জ্বলছে। বারবার নিশ্বাস আটকে আসছে নীল এর।

কিছুক্ষণ আগে কথাদের বাড়ির সামনে বেশকিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলেও যখন কেউ দরজা খুলে না তখন নীল এর সন্দেহ হয়। কোনো একটা অঘটন ঘটেছে। হাতের ব্যাগ টা নিচে রেখে দরজা ধাক্কা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে করতেই কলি বেগম ভিতর থেকে দরজা খুলে দেয়। ক্রন্দনরত অবস্থায় কলি বেগমকে দেখে নীল এর মনের সন্দেহ টা আরও গাঢ় হয়ে যায়।

বুকের মধ্যে ইতোমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে নীল এর। বারবার মন বলছে তার কথা! তার কথা ঠিক নেই!

— নীল কথা কে বাঁচা বাবা। আমার কথা মা কে বাঁচা।

কলি বেগমের কথা শুনে যেনো নীল এর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। এমন কিছু তো সে কোনো দুঃস্বপ্নেও চিন্তা করে নি।

— নীল! আমার মেয়েকে বাঁচা। ওর ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। প্রায় আধা ঘন্টা যাবত দরজা ধাক্কাচ্ছি কিন্তু কথা সাড়া দিচ্ছে না। কিছু একটা কর। কাব্য ওর বাবার সাথে গেছে। তুই আমার মেয়েকে বাঁচা। আমার মন কুঁ ডাকছে। নিশ্চিত কথার কিছু হয়েছে।

নীল কলি বেগমের দিকে একনজর তাকিয়ে কিছু না বলে হাতের ব্যাগটা মেঝেতে ফেলে বিদ্যুৎ গতিতে কথার ঘরের দিকে ছুটলো। ডান-বাম না দেখে স্বজোরে কয়েকটা ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলো নীল। ভিতরে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য নীল বা কলি বেগম কেউই প্রস্তুত ছিল না। কথা নিস্তেজ হয়ে বিছানার সাথে লেপ্টে আছে। পাশেই ঘুমের ঔষধের পাতাটা পরে আছে।

নীল এর যা বোঝার সে বুঝে নিয়েছে। তার ভিতর ঝড় শুরু হয়ে গেছে। মনে মনে শুধু আল্লাহ কে ডাকছে সে, যাতে এই ঝড় তার কথাকে তার কাছে থেকে কেঁড়ে না নেয়। কলি বেগম কান্নাকাটি করে মুহূর্তেই পুরো বাড়ি মাথায় করে নিয়েছে। নীল কলি বেগম কে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে কথাকে পাঁজাকোলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরলো। নষ্ট করার মতো আর এক মিনিট সময় তার হাতে নেই। কথাকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে। এটাই তার বর্তমান লক্ষ্য।

কলি বেগম নীল এর সাথে জিপ এ বসে পরলো কথার মাথা তার কোলে নিয়ে। নীল পাগলের মতো ড্রাইভ করছে। আর বারবার পিছন দিকে তাকিয়ে কথা কে দেখছে। কথাদের বাড়ি থেকে হাসপাতালের দুরত্ব প্রায় ২০ মিনিট কিন্তু আজ যেনো পথ শেষ হচ্ছে না। যদিও নীল ৮ মিনিটের মধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছে গেছে। কিন্তু তবুও তার মনে সংকোচ রয়ে গেছে যে সে দেরি করে ফেলেছে।

?

কথাকে ভর্তি করা হয়েছে। কলি বেগম হাসপাতালের করিডোরে বসে কান্নাকাটি করছে আর কিশোর সাহেবকে ফোন করছে। নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য কিশোর সাহেবের ফোন লাগছে না। সময় টা দুপুরের কিন্তু আকাশ কালো মেঘে ঢেকে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হতে আর কিছুক্ষণ বাকি।

হাসপাতালের ছাদে হাটুতে বসে কান্না করছে নীল। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই, কিন্তু নীল আজ এই অপরাধ টা করছে। কিভাবে সে তার কান্না আটকাবে তার জন্যই তো কথার এই অবস্থা। এতোটা নিষ্ঠুর সে কিভাবে হতে পারলো, কিভাবে কথাকে সে এতো কষ্ট দিলো। কথার ভালোবাসাকে সবসময় সে দূরে ঠেলে দিয়েছে। যা নয় তা বলে অপমান করেছে।

হাজার অপমান সত্ত্বেও কথা তাকে নিস্বার্থভাবে ভালোবেসে গেছে। আর সে কি না আজ কথার এই অবস্থার জন্য দায়ী! আজ যদি কথার কিছু হয়ে যায় সে কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।

“আমার পাপ এর শাস্তি আমার কথা কে দিও না আল্লাহ। আমার কথা কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। আর কখনও কথা কে কষ্ট দেবো না আমি ওয়াদা করছি। আমার কথাকে সুস্থ করে তোলো। বিনিময়ে আমার জীবন নিয়ে নাও, যা শাস্তি ইচ্ছা আমাকে দাও। আমার বাকি জীবন কথার পায়ের কাছে কাটাতে হলেও আমি রাজি। শুধু আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।”

নীল এর আর্তনাদে যেনো আকাশও বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। বজ্রপাত আর বিদ্যুতের ঝলকানি অনাগত ঝড়ের জানান দিচ্ছে। নীল এর মনের মতো প্রকৃতিও অন্ধকারে ছেয়ে আছে। নীল এর অস্থির অশান্ত মন কে শান্ত করতে এখন কথার স্নিগ্ধতা প্রয়োজন। একবার কথাকে বুকে জরিয়ে না নিতে পারলে নিশ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে তার।



ছাদ থেকে নেমে কথার কেবিনের বাইরে যেতেই ডাক্তার আর কলি বেগমের কথা শুনতে পায় নীল।

— আমার মেয়ে কেমন আছে ডাক্তার?

— চিন্তার কোনো কারণ নেই। হয়তো ঘুমের ঔষধ খেয়েছিল। তবে এখন সুস্থ আছে। কিছুক্ষণ পর বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।

— ধন্যবাদ ডাক্তার। আমি কি কথা কে দেখতে পারি?

— হ্যাঁ অবশ্যই।

কলি বেগম কথার কাছে চলে গেলে নীল দৌড়ে এসে রুমের বাইরে দাড়ায়। ভিতরে ঢুকতে গিয়েও নীল এর পা থেমে যায়। আজ কথার এই অবস্থার জন্য শুধুমাত্র সে দায়ী। সে কিভাবে কথার সাথে চোখ মেলাবে? জানালার কাঁচ দিয়ে অবচেতন কথার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীল। তার অজান্তেই দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো তার চোখ দিয়ে। হয়তো এই অশ্রুর কারণ সে জানে! সে নিজেও তো কথা কে ভালোবাসে।

নীল এর ভাবনার সুঁতো কাটে কলি বেগমের ডাকে। কথার জ্ঞান ফিরেছে। কলি বেগমের চোখে মুখ থেকে দুশ্চিন্তার ছাঁপ টা কেটে গেছে। কথার জ্ঞান ফেরাতে নীল যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। কিন্তু সেই সাথে এক অজানা কষ্ট তাকে জাঁকড়ে ধরছে। কথা একবারের জন্যও নীল এর দিকে তাকায় নি। কথাকে দেখে মনে হচ্ছে নীল তার সামনে উপস্থিত নেই। একবার নীলের দিকে তাকালে হয়তো তার অশ্রুভেজা চোখ জোড়া কথার চোখে পরতো। নীল আকুতি ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কথার দিকে কিন্তু কথা ভুলেও তার দৃষ্টি নীল এর দিকে ফেলছে না।

কিছুক্ষণ কথার দিকে অস্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নীল বাইরে চলে গেলো। বুকের বা পাশে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার, কথার অবহেলা কিভাবে মেনে নেবে সে! তবে তাকে যে এই কষ্ট মেনে নিতেই হবে। একই কষ্ট সে এতোদিন কথাকে দিয়ে এসেছে। এখন হয়তো তার পালা সহ্য করার।

?

?

সন্ধ্যার আগ দিয়ে কথা কে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়। কাব্য আর কিশোর সাহেবকে কলি বেগম আর কিছুই জানান নি। হাসপাতালে সবকিছু নীল ই ম্যানেজ করে নিয়েছে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা অব্দি কথা নীল এর সাথে ভালো মন্দ কোনো কথাই বলে নি।

নীল কথা কে জিপ থেকে নামাতে গেলে কথা বাঁধা দেয়।

— আমি এখন ঠিক আছি। হেঁটে যেতে পারবো।

— কথা ডাক্তার তোকে নড়তে চড়তে মানা করেছে। (কলি বেগম)

— কিন্তু আমি হেঁটে যেতে সক্ষম।

— নীল সাহায্য করছে তাতে তোর সমস্যাটা কি বলতো! নীল তুই একটু কথাকে ভিতরে দিয়ে যা তো। আমি বাড়িতে যাচ্ছি।

কলি বেগম বাড়ির সদর দরজা খুলে ভিতরে চলে গেলেন।

কথা নীলের বিপরীত দিকে বেঁকে বসে আছে।

— এদিকে ঘুর। নামাতে হবে তোকে।

— তুমি! সরি! আপনি সরুন আমি নামতে পারবো।

— বেশি বুঝিস না। বলেছি তো আমি নামাবো। ঘুর এইদিকে।

— আমিও তো একবার বলেছি যে আমি একাই পারবো।

— বড্ড বেশি বড় হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে। সব একা করতে শিখে গেছিস।

— শিখতে হয়। নির্লজ্জের মতো কদিন আর অন্যের আশায় বসে থাকবো।

— হুম।
নীল জোর করে কথাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো।

— ছাড়ুন আমাকে। এসব কি অসভ্যতামি। ছাড়ুন বলছি।

— ছাড়ার জন্য তো ধরি নি। এবার যখন ধরেছি আর কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।

কথা আর কিছু না বলে রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো নীলের মুখপানে। কথা যতোই রাগ দেখাচ্ছে নীল যেনো সবটা শুষে নিচ্ছে একটা ম্লান হাসি দিয়ে। এটাও কথার কাছে চরম বিরক্তির মনে হচ্ছে। কথা তো এমন রুক্ষ ব্যবহার করছে যাতে নীল কষ্ট পায় কিন্তু নীল কেনো কষ্ট পাচ্ছে না!

নীল কথা কে তার ঘরে শুইয়ে দিয়ে কথাদের বাড়ি থেকে চলে যায়। কলি বেগম কথার মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে সবার জন্য রান্না করার জন্য চলে যায়।



বিছানার সাথে লেপ্টে আছি, বেশকিছুক্ষণ ঘুম হয়েছে আজ তবুও ভিতরের জ্বালা পোড়া টা কমছে না। কে যেনো বলেছিল ঘুমালে কষ্ট কমে যায়। সেই লোকটাকে আজ হাতের কাছে পেলে কুচি কুচি করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিতাম। হ্যাঁ রে ভাই, তোরা এতো সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলে কি লাভ পাস! কষ্ট তো কমলোই না আমার। উল্টো অপরাধ বোধ কুঁড়ে খাচ্ছে। দুই বছরের ভালোবাসার জন্য আমি আমার জন্মদাতা মা-বাবা কে কষ্ট দিতে যাচ্ছিলাম। আমার মা বাবা ভাইয়া এরাই তো আমার জীবন। আমার কিছু হয়ে গেলে সব চেয়ে বেশি কষ্ট এদেরই হতো। তখন আমি কিভাবে ক্ষমা করতাম নিজেকে!

বিছানা ছেড়ে উঠে আস্তে আস্তে আম্মুর কাছে গেলাম কিচেনে। আম্মুকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম।

— কি হলো উঠে এলি যে! আরেকটু শুয়ে থাক শরীর টা ভালো না।

— তুমি একবারও জিজ্ঞেস করলে না আমি কেনো ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম!

— না। কারণ আমি জানতাম কিছুক্ষণ পর তুই নিজ থেকে আমাকে সব খুলে বলবি।

— এতো বিশ্বাস কেনো করো আমাকে? আমি তোমাদের বিশ্বাসের যোগ্য নই।

— কে বলেছে এই কথা? আমার কথা মার মতো ভালো মেয়ে আর কয়টা আছে শুনি!

— সরি মা। ভুল হয়ে গেছে। আর কখনও এমন হবে না।

— আমি জানি। যা এখন একটু বিশ্রাম নে। একটু পরে খাইয়ে দেবো।

কথা কিচেন থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই একটা শপিং ব্যাগ নিচে পরে থাকতে দেখে তুলে নিলো। কিছু একটা ভেবে কথা ব্যাগ টা নিয়ে তার ঘরে চলে গেলো। ঢুলু ঢুলু শরীরের বিছানার উপর বসে ব্যাগ থেকে একে একে সব জিনিস বের করতে লাগলো।

প্রথমেই ব্যাগ থেকে অনেকগুলো নীল কাঁচের চুড়ি বের করলো কথা। তারপর নীল শাড়ি আর কাজল টাও বের করলো। কদমের গুচ্ছটা মলিন হয়ে গেছে। ঠিক যেমন কথা মলিন হয়ে গেছে। অন্য সময় হলে হয়তো জিনিস গুলো দেখে কথা খুশিতে লাফিয়ে উঠতো কিন্তু এখন এই জিনিস গুলো দেখে তার বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। এবার আর সে নীল এর ভালোবাসার সামনে তার আত্মসম্মাণ কে বিসর্জন দিবে না।

অনেক অপমানিত হয়েছে সে। এখন আর অপমান সহ্য করার মতো শক্তি তারমধ্যে অবশেষ নেই। যতোই নিজেকে শক্ত করুক তার মনে নীল এর জন্য ভালোবাসা তো আজও আগের মতোই আছে। সেই ভালোবাসা তো বিন্দুমাত্র কমে নি। হ্যাঁ সেই ভালোবাসার সাথে জমা হয়েছে একরাশ ঘৃণা অথবা অভিমান! পরম যত্নে জিনিসগুলো ব্যাগে ভরে ধীর পায়ে ব্যালকোনিতে গিয়ে দাড়ালো কথা।

বৃষ্টি হচ্ছে মুশুলধারে। রাতের আকাশ আর কথা হয়তো পাল্লা দিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। কিন্তু যার জন্য এই চোখের পানি ফালাচ্ছে সে কি আদৌ এই পানির যোগ্য! নাহ সেই মানুষটা তো সবসময় তাকে অপমানই করেছে। কখনও ভালোবাসে নি। তাহলে কেনো এতোকিছুর পরেও কথা নীল কে মন থেকে সরাতে পারছে না। হয়তো এটাই ভালোবাসা! নির্লজ্জতার শেষ সীমা হলো ভালোবাসা!!



আমাদের বাড়ির ঠিক সামনে, আমার ব্যালকোনি বরাবর কোনো এক ছায়ামূর্তি একটা জিপ এ হেলান দেওয়া অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। আমার দূরের দৃষ্টি একটু দুর্বল, লোকটার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পারছি না। কিন্তু আমি জানি লোকটা নীল। নীল কে চেনার জন্য আমার স্পষ্ট দৃষ্টির প্রয়োজন নেই। চোখ বন্ধ করেও আমি উপস্থিতি টের পাই। নীল এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে, নিশ্চিত পরদিন তার জ্বর হবে। কিন্তু তাতে আমার কিছু আসবে যাবে না। এই তুচ্ছ আবেগ আমি ঝেরে ফেলে দিয়েছি আমার মন থেকে। সত্যি কি ফেলে দিয়েছি? হাতে রাখা শপিং ব্যাগটাও নীল এর দেওয়া। আমি কি এতোটাই নিম্ন স্তরের হয়ে গেছি যে এতো অপমান সহ্য করে তার দেওয়া উপহার নেবো!

এতোটা তুচ্ছ নই আমি, আর এটা নীল কে বুঝতে হবে। তার দেওয়া অপমান গুলো আপন করে নিয়ে নিয়েছি। এখন আর এসব উপহার চাই না!

কথা তার হাতের ব্যাগ টা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। বৃষ্টি হওয়ার দরুণ বাগানে কাঁদা জমে ছিল। শাড়িটা আর কদমের গুচ্ছটা উড়ে কাঁদায় গিয়ে পরলো। কাঁচের চুড়ি গুলো নিচে পরে ঝনঝন শব্দে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।

দূরে দাড়িয়ে নীল সবটাই দেখছে। কথার দৃষ্টির সাথে সাথে মনে অবস্থাটাও নীল বুঝতে পারছে। যদিও এভাবে শাড়িটা ফেলে দেওয়াতে নীল এর ভীষণ কষ্ট লাগছে। কিন্তু সে সব কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত। কথার প্রতি সে অনেক অন্যায় করেছে। তার করা সব অপমানের ফলস্বরূপ এটুকু তার পাওনা। সব কষ্টের পর সে তার কথার ভালোবাসা পুনরায় ফিরে পাবে।

নীল এর দেওয়া সব জিনিস ফেলে দিয়েও শান্তি পাচ্ছি না। বুকের বাম পাশের চিনচিনে ব্যথাটা কমছে না। দুচোখের পানিও থামছে না। কিন্তু নীলকে আমি আমার চোখের পানি দেখাবো না। তার সামনে আর দুর্বল হবো না। চোখের পানি মুছে নিয়ে ঘরের ভিতরে চলে এলাম। হয়তো নীল এখনও রাস্তায় দাড়িয়ে ভিজছেন, হয়তো না। কিন্তু আমি আর তার চিন্তা করবো না।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে পরে থাকা হ্যান্ড ব্যাগটা দেখে তানিয়া আপুর বিয়ের দিনের কথা মনে পরে গেলো। বিয়ের দিন আপুর আলমারি থেকে পরে যাওয়া একটা চিরকুট রেখেছিলাম ব্যাগটাতে। এতোদিন নিজেকে নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলাম যে এই কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। ব্যাগ থেকে চিরকুট টা বের করে পড়া শুরু করলাম। বেশি না মাত্র দুই তিনটা লাইন লেখা।

“প্রিয় তানু,

চলো পালিয়ে যাই দূরে কোথাও, যেখানে সমাজের কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম থাকবে না। থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। থাকবো শুধু তুমি আমি, আর আমাদের ছোট্ট একটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সংসার।

——–তোমার কাব্য”

চলবে…

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৭

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৭
#Tabassum_Kotha

“নীরবের সামনে এসব কি হলো?” – প্রচন্ড রাগ নিয়ে নীল কে কথা টা জিজ্ঞেস করলো কথা।

— কি হলো?

— এসব কথার কি মানে? কেনো বললেন নীরবকে এসব?

— কি বললাম?

— কিছুই বুঝেন না তাই না?

— কি বুঝতে হবে?

— আপনি এমন কেনো নীল? কেনো সবসময় এমন করেন? আমার মনের অবস্থা কি একবারও বুঝতে পারেন না? কতোটা ভালোবাসি আপনাকে আপনার ধারণাও নেই। এই ভালোবাসার জন্য বারবার আপনার অপমানের পরেও ফিরে আসি আপনার কাছে,, নির্লজ্জের মতো। তবুও আপনার চোখে আমি খারাপ। কেনো আপনার চোখে আমি খারাপ বলুন তো! একটা কারণ দেখান আমাকে! নীরব ভাইয়া আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।

— সম্পর্ক নেই বলেই শাড়ির আঁচল ফেলে কোমড় জরিয়ে ধরে। সম্পর্ক নেই বলেই মাঝ রাস্তায় গোলাপ নিয়ে প্রপোজ করে আর সম্পর্ক নেই বলেই একা কথা বলার ইচ্ছা জাগে,, তাই না রে কথা?

— আপনি ভুল বুঝছেন!

— আমি ভুল বুঝছি? আমাকে কি ছোট বাচ্চা মনে হয় তোর? আমি কিছুই বুঝি না! ব্যাপারটা বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে গেছে আর তুই বলছিস আমি ভুল বুঝছি! তোকে সেদিন এতো বাজে বাজে কথা বলার পর থেকে অপরাধবোধে ভুগছিলাম। ভেবেই নিয়েছিলাম তোর প্রতি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। যা যা বলেছি তা বলা আমার একদম ঠিক হয় নি। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু আমি তো ভাবতেই পারি নি তুই গাছের টাও খাবি তলার টাও কুড়াবি। আমাকে ভালোবাসি বলে নীরবের সাথে সম্পর্ক করবি! এতো প্ল্যানিং কিভাবে করিস একটু বলবি?

— আপনি আবারও আমাকে ভুল ভাবছেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন এবার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা বাকী নেই আমার মধ্যে আপনার ভুল ভাঙার। সত্যি বলতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। ধৈর্য জিনিস টা আমার মধ্যে একদমই নেই। তবুও অনেক চেষ্টা করেছি আপনার ভুল ভাঙানোর, আমার ভালোবাসা টা বোঝানোর। কিন্তু পারি নি।

সেদিন বলেছিলাম ভালোবাসার দাবি নিয়ে আর কখনও আপনার সামনে আসবো না, কিন্তু তবুও আপনার কাছে আসার পাপ আমি করে ফেলেছি। কেনো জানেন?
ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে। ভালোবাসার কোনো পরিমাপ বা সীমা যদি থাকতো, তাহলে হয়তো আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা সীমাহীন হতো। আমার প্রতিটা নিশ্বাস জানান দেয় আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি। কিন্তু আমি জানি না ঠিক কোন কারণে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, উল্টো ঘৃণা করেন। প্রিয়জনের অবহেলা সহ্য করে কি করে বাঁচতে হয় আমার জানা নেই। তবে আপনাকে আর কখনও কষ্ট দেবো না আমি। ভালো থাকবেন। আজ শেষ বারের মতো ওয়াদা করছি, ভালোবাসার দাবি নিয়ে আর কখনও আপনার সামনে আসবো না।

কথা কাঁদতে কাঁদতে খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এতোক্ষণ নীল এর ঘরে দাড়িয়ে নীল এর সাথে কথা বলছিল কথা। নীরবের হঠাত করে বিয়ের কথা তোলায় নীল ভুল বুঝেছে সেটা কথা ভালো করেই বুঝেছিল। তাই নীলের পিছে ছুটে গিয়েছিল তার ভুল ভাঙানোর জন্য। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও সেই অবহেলা আর অপমানই ফিরে পেলো কথা।

?

সেন্টার টেবিলে রাখা ফুলদানি টা হাতে নিয়ে স্বজোরে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুড়ে মারলো নীল। বিকট শব্দ করে কাঁচ টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পরলো। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার, এতোটা বাজে ব্যবহার সে কি করে করতে পারলো কথার সাথে! যেই মেয়েটা তাকে এতোটা ভালোবাসে তাকেই কেনো সে বারবার এতো কষ্ট দেয়। কেনো সে নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারে না! কথা কে সে নিজেও ভালোবাসে তাহলে কেনো সে কথাকে আপন করে নিতে পারে না? কেনো বারবার কথা কে অপমান করে তারিয়ে দেয়। এতোটা কঠোর তো সে ছিল না কখনও! তাহলে কেনো কথার বেলাতেই এতো রুড!

বুকের বা পাশ টা অসম্ভব রকম জ্বালা পোড়া করছে নীল এর। ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে কথা কে বুকে জরিয়ে নিতে। কাব্য এর সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে সে কথা কে আর নিজেকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। আচ্ছা কাব্য তো তার ছোট বেলার বন্ধু, সে কি বুঝবে না তার আর কথার সম্পর্ক টা? এক বার একটু স্বার্থপর হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে? কথার ভালোবাসায় সাড়া দিলে তো কোনো অন্যায় হবে না! আর অন্যায় হলেও সব শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত নীল। আর সহ্য করতে পারছে না সে। খুব কষ্ট হয় তার কথাকে কষ্ট দিতে, কথার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। সব কষ্টের সমাপ্তি আজকেই করবে নীল। আর ভাবাভাবি নয়। আজকেই কথার কাছে ক্ষমা চাইবে সে। হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় নীল।

— নীল দাড়া। রাজীব বাবাজির বাড়ি গিয়ে এই জিনিসগুলো দিয়ে আয়। তোর বাবা তোকে এখনই যেতে বলেছেন। (নয়নতারা বেগম)

— মা আমার একটু তাড়া আছে। নীরব কে পাঠাও।

— এই বাড়ির বড় ছেলে তুই। তোর বাবার শরীর ভালো না তাই তোকে যেতে বলেছে। নীরব হলো ছোট। নীরব গেলে ব্যাপার টা খারাপ দেখায়। তুই যা।

— মা এখানে বড় ছোট এর কি হলো? নীরব আর আমি দুজনেই খান বাড়ির ছেলে এতে সমস্যার কি আছে?

— মেয়ের শ্বশুরবাড়ি বলে কথা। এতো বেশি বুঝিস না। তোর বাবার পর এ বাড়ির কর্তা তুই। তাই তোকেই যেতে হবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে রূপা কে দিয়ে জিপ এ রাখাও সব জিনিস আমি জিপ এর চাবি নিয়ে বেরুচ্ছি।

কথার সাথে দেখা করতে গিয়েও যেতে পারলো না নীল কাজের জন্য। এদিকে সারা রাস্তা কান্না করতে করতে বাড়ি ফিরেছে কথা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। নীল এর অপমান, অবহেলা, ভালোবাসার ব্যর্থতা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। এই অসহ্য যন্ত্রণা তার ভিতরটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এই মুহূর্তে তার যন্ত্রণা না কমলে সে আর ঠিক থাকতে পারবে না। কি করবে কিছু দিশা পাচ্ছে না। বারবার মাথায় ঘুরছে এই যন্ত্রণা কমাতে হবে।

দিশাহীন ভাবে তার অস্থির মন ছুটে চলছে। কি রেখে কি করবে সে জানে না। অস্থির হয়ে বাবা-মার ঘরে ছুটে গেলো কথা। কিছু একটা খুঁজছে সে, তার শান্তি প্রয়োজন। হয়তো ঘুমালে ভিতরের অস্থিরতা টা কমে যাবে। কিন্তু দুচোখের কোনায় ঘুম নেই। ঘুমের ঔষধ লাগবে। তাই বাবার ঘরে ঘুমের ঔষধ খুঁজছে কথা।

কিছুক্ষণ খোঁজার পর ঘুমের ঔষধের পাতা খুঁজেও পেলো। বেশি ঔষধ নেই তিন টা ট্যাবলেট আছে। কথা ঔষধের পাতা নিয়ে তার ঘরে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে আটকে দিলো। ঔষধের পাতা থেকে একটা ঔষধ বের করে খেয়ে নিলো। ঔষধের পাতা টা নিচে ফেলে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলো। ঘুম আসছে না, অশান্তিও কমছে না।

কথা ঝট করে বিছানা থেকে উঠে বাকী দুইটা ট্যাবলেটও খেয়ে নিলো।

আমাকে ক্ষমা করে দিও আব্বু-আম্মু ভাইয়া। আমি তোমাদের যোগ্য সন্তান হতে পারি নি। এই কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না। জানি তোমাদের সাথে অন্যায় করছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। ভালোবাসা মানুষ কে কি থেকে কি বানিয়ে দেয়! এই ভালোবাসা তো আমার আত্মসম্মাণটাও শেষ করে দিলো। আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে এই ভালোবাসা তবুও ভুলতে পারছি না নীল কে।

ভালো থাকবেন নীল, আর জ্বালাতন করবো না। ধীরে ধীরে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে ঘুমের দেশে পাড়ি দিচ্ছি। এটাই কি আমার শেষ নিদ্রা! এরপর কি আর ঘুম ভাঙবে না? আমি যদি মরে যাই তখন কি নীল বুঝতে পারবে আমার ভালোবাসা টা!!

?

দুই ঘন্টা পর,

কথাদের বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে নীল। হাতে একটা বড় শপিং ব্যাগ, যার মধ্যে রয়েছে একটা নীল শাড়ি, অনেকগুলো কাঁচের চুড়ি, একটা কাজল আর এক গুচ্ছ কদম। সবকিছুই কথার জন্য এনেছে সে। কথার কাছে তার পূর্ব ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছে সে। তার করা অপমান শুধু একটা সরির মাধ্যমে মুছে ফেলা যাবে না সে জানে। কিন্তু সে অসহায় ছিল, কথাকে সেদিন নীরবের সাথে ওই অবস্থায় দেখে কিছুতেই রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি। আজকেও নীরব আর কথাকে একসাথে দেখে সে আহত হয়েছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই আজও কথা কে যা নয় তা বলেছে। তবে আজ সে তার সব ভুল শুধরে নেবে। কথার প্রতি তার করা সব অন্যায়ের জন্য সে ক্ষমা চাইবে। ততোদিন সে অপেক্ষা করবে যতদিন না কথা তাকে ক্ষমা করতে সক্ষম হচ্ছে। এবার নীল আঁদা-জল খেয়ে মাঠে নামবে কথার ভালোবাসা পুনরায় অর্জন করার জন্য। কথার সেই চাঞ্চল্যতা নীল এর ফিরে চাই। এর জন্য সে সব করতে প্রস্তুত।

ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে নীল কলিং বেল এ চাপ দেয়। একবার কলিং বেল চেপে মিনিট দুয়েক এর মতো সে অপেক্ষা করে। কিন্তু ভিতর থেকে কেউ দরজা না খুললে নীল আরও একবার কলিংবেল বাজায়। কিন্তু এবারও কেউ দরজা খুলে না। কেনো যেনো নীলের মনে কু ডাকছে। কিছু একটা গরমিল হয়েছে। এই সময় কথা আর কলি বেগমের বাসায় থাকার কথা। তাহলে কেনো দরজা খুলছে না!

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৬

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৬
#Tabassum_Kotha

“I love you Kotha. Will you marry me?”

কোচিং এর ঠিক সামনে একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে নিয়ে কথার সামনে হাটুতে ভর দিয়ে বসে কথাগুলো বললো নীরব।

চোখ কপালে তুলে নীরবের দিকে তাকিয়ে আছি। এভাবে সবার সামনে প্রপোজ করে বসবে ভাবতেই পারছি না। এখন ঠিক কিভাবে রিয়েক্ট করবো বুঝতে পারছি না। নীল ব্যতিত কারো সম্পর্কে এরকম আমি ভাবতেও পারি না। আর তো নীরব! নীরব ভাইয়াকে তো দেবরের রূপেই ভেবেছি সবসময়। কিন্তু এটা কি হলো!

কিছুক্ষণ আগে,,

কোচিং এ গিয়ে দেখি নিতু আসে নি। হয়তো তানিয়া আপু আর দুলাভাই বেড়াতে এসেছে তাই আসে নি। আমি আর তুলিই ছিলাম শুধু। আজ একবারের জন্যও নীল এর দিকে তাকাই নি। সারা ক্লাসে মাথা নিচু করে বইয়ে মুখ গুঁজে বসেছিলাম। নীল এর দিকে তাকালেই আবার পাগলামি শুরু হয়ে যাবে। আমার আত্মসম্মাণ কে এভাবে বিসর্জন তো দিতে পারবো না তার সামনে। তাই তার দিকে তাকানোই ছেড়ে দেবো।

পুরো ক্লাসে নীলের মনোযোগ কথার উপর ছিল। এই তিনদিন কথা কে না দেখে খুব কষ্টে তার সময় কেটেছে। আগে কথার পাগলামিগুলো বিরক্তিকর লাগতো তার কাছে। কিন্তু এই কয়েকদিন সে এই পাগলামি গুলো মিস করেছে। কথার চাঞ্চল্যতার কমতি খুব ভালো ভাবেই অনুভব করছে নীল।
সে নিজেও ভাবে নি সে কথার প্রতি দুর্বল হয়ে যাবে। না ভাবলেও সে জানে কথার প্রতি আসা তার সব আবেগ অন্যায়। এই তুচ্ছ আবেগের জন্য ছোট বেলার বন্ধুত্বকে হারাতে পারবে না সে। কিন্তু কথার এভাবে তাকে ইগনোর করাও সে মানতে পারছে না। নীল মনে প্রাণে চায় সবকিছু আগের মতো হয়ে যাক। কিন্তু তার ইচ্ছা কতোদূর পূর্ণ হয় এটাই দেখার বিষয়।

কোচিং এর শেষ ক্লাস টা নীল এর অন্য এক বন্ধু করায়। তাই নীল তার ক্লাস শেষ করে কোচিং এর সামনের চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। কথা আর তুলি ক্লাস শেষ করে কলেজে যাওয়ার জন্য এগুতে থাকে। কিন্তু কোচিং থেকে বেরিয়ে চায়ের দোকানের সামনে যেতেই নীরব পথ আটকে দাড়ায়। কথার কিছু বুঝে উঠার আগেই নীরব পিছন থেকে গোলাপের গুচ্ছ সামনে এনে হাটুতে বসে পরে।
ঘটনার আকস্মিকতায় কথা চমকে উঠে। সেই সাথে নীলও অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে যায়। নীল এর নিজের ভাই যে কথা কে সবার সামনে প্রপোজ করতে পারে সেটা নীল এর ধারণার বাইরে ছিল। নীল নিজে যেখানে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে নিজের অনুভূতিগুলো কে লুকিয়ে রাখছে সেখানে এসবকিছু তার হজম হচ্ছে না।

বর্তমান,,

একটু আশে পাশে তাকাতেই দেখলাম এক গাদা মানুষ জরো হয়ে তামাশা দেখছে। এই জনগনেরও কোনো কাজ নেই। খালি খালি বসে থাকে আর মানুষের জীবন নিয়ে গবেষণা করে। ভীরের মাঝে নীল কে দেখে আমার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নীল অগ্নিমূর্তি ধারণ করে তাকিয়ে আছে আমার আর নীরবের দিকে।

নীলের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এখনি আমাকে খেয়ে ফেলবেন। হার্ট টা অসম্ভব দ্রুত বিট হচ্ছে। তবে আজকে ভালোবাসার অনুভূতির জন্য নয় আজকে তো ভয়ে বুক কাঁপছে।

— বলো না কথা, করবে আমাকে বিয়ে? — নীরব

— আআমমি মমানে!!

— দেখো আমি অন্য সবার মতো রিলেশন করে মজা নিতে চাই না। আমি সত্যি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।

— মানে কি!

— তোমাকে আগেও আমি অনেক দেখেছি। নিতুর সাথে তুমি বাসায় আসতে, কিন্তু কখনও খারাপ চোখে দেখি নি। তানিয়া আপুর হলুদে তোমাকে প্রথমবার শাড়িতে দেখলাম। আগে শুধু শুনেছি মেয়েদের শাড়িতে অপরূপা লাগে। তোমাকে শাড়িতে দেখার পর এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি। সেদিনের পর থেকে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এখন এমন অবস্থা যে তোমাকে ছাড়া আর একদিনও কাটবে না আমার।

— এসব কি বলছেন নীরব ভাইয়া! আমি আপনাকে সবসময় কাব্য ভাইয়ার মতোই দেখেছি।

— এতোদিন যাই ভেবেছো, এখন তো আমাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারো। এমন তো না যে আজকেই আমাকে উত্তর দিতে হবে, তুমি তোমার সময় নাও। যতো সময় দরকার সবটাই নাও। তারপর উত্তর ‘হ্যাঁ’ দাও।

কি মুশকিল রে বাবা! যার ভালোবাসা চাই সে পাত্তা দেয় না, আর যাকে দেবর মনে করি সে ভালোবাসা চায়!

নীল এখনও আগের ভঙ্গিতেই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। তফাত শুধু এটুকুই এখন তার চোখ নিয়ে আগুন ঝরছে, আর সেই আগুনে আমি যেকোনো সময় জ্বলে-পুড়ে যাবো। জামাইর সামনে দেবর প্রপোজ করছে বিয়ের জন্য। “ওও ভাই মারো মুঝে মারো,” বলে চিত্কার করতে ইচ্ছে করছে।

— কথা কিছু একটা তো বলো! কদিন সময় চাও বলে দাও আমি অপেক্ষা করবো। কজ আই লাভ ইউ।

লে হালুয়া! জামাই জি এর খবর নাই আর দেবরজি আমাকে লাভ ইউ বলছে।

— ভাইয়া আপনি আগে সোজা হয়ে দাড়ান। অনেক অস্বস্তি হচ্ছে আমার আপনি এভাবে বসে আছেন!

— তুমি আগে বলো আমাকে বিয়ে করবে!

— ভাইয়া পাগলামো বন্ধ করেন। মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে আছি আমরা।

— সরি কথা। আসলে তোমার সামনে এলেই নিজেকে গুলিয়ে ফেলি। সো সরি। তোমাকে আমার জন্য সবার সামনে লজ্জা পেতে হলো। আমি চলে যাচ্ছি। তুমি তোমার সময় নিয়ে আমাকে উত্তর জানিয়ে দিও।

নীরব ভাইয়া গোলাপগুলো জোর করে আমার হাতে গুজে দিয়ে চলে গেলেন। গোলাপ হাতে নিয়ে হ্যাবলা কান্তের মতো নীল এর দিকে তাকিয়ে আছি। আর নীল রাগে সাপের মতো ফুস ফুস করছে। আচ্ছা নীল রাগ হচ্ছেন কেনো? আর আমিই বা ভয় পাচ্ছি কেনো?

নীল তো আমাকে ভালোবাসেই না, তাহলে আমাকে অন্যকেউ প্রপোজ করলে তো তার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না! তাহলে কেনো সে এমন ফুসছে রাগে? আচ্ছা এমন নয় তো নীল আমাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে! ডাল মে কুছ কালা হেই। নীল কি জেলাস ফিল করছে নীরবের আমাকে প্রপোজ করাতে? যদি সত্যি এমন হয় তাহলে এই জেলাসি টা আমি কাজে লাগাতে পারি। নীল এর মনে আমার জন্য ভালোবাসা থাকলে নীরবের সাথে আমাকে দেখে সে অবশ্যই জেলাস হবে। নীলের ভালোবাসায় তো আর কম নির্লজ্জ হই নি, এই শেষ উপায় টা অবলম্বন করতে দোষ কি!

নীল আমার আত্মসম্মানে আঘাত করেছেন, কিন্তু তবুও তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারি না। নীল এর ভালোবাসা পাওয়ার লোভ ছাড়তে পারি না। কেনো আমি এতো বেহায়া, কেনো বারবার খালি হাতে ফেরার পরেও মন তাকেই কাছে পেতে চায়? এই প্রশ্নগুলোর সঠিক কোনো উত্তর আমার জানা নেই। হয়তো উত্তর একটাই, তাকে খুব ভালোবাসি।

সেদিন কলেজের কোনো ক্লাসেই আমার মন বসে নি। বারবার ঘুরে ফিরে আমার মস্তিষ্ক নীল এর মধ্যেই আটকে ছিল।

ছুটির পর তুলি আর আমি হেটে যাচ্ছি চৌরাস্তা পাড় হয়ে।

— সকালে কি হলো বলতো! তুই তো নীল ভাইয়া কে ভালোবাসিস। আর নীরব তোকে প্রপোজ করলো। ব্যাপার টা কেমন যেনো হয়ে গেলো না!

— হলো তো বটেই কিন্তু এমন কিছু হবে কে জানতো?

— নীল ভাইয়া সবটাই দেখেছেন। এখন সে কি করবেন? আবার নীরব যদি জানতে পারে তোর আর নীল ভাইয়ার ব্যাপারে তখন কি হবে?

— নীল আর আমার ব্যাপারে মানে? নীল আমাকে কখনই ভালোবাসে নি। নীল কে আমিই এক তরফা ভালোবেসে এসেছি সবসময়। আর রইলো নীরব ভাইয়া! তাকে আমি সব বুঝিয়ে বলবো।

— দেখ কথা আমার বিশ্বাস আজ নয়তো কাল নীল ভাইয়ার মনেও তোর জন্য ভালোবাসা জন্মাবে।

— সেটা নিতান্তই একটা স্বপ্ন। স্বপ্ন আর বাস্তবতা অনেক পার্থক্য। নীল আমাকে কখনই ভালোবাসে নি হয়তো আর ভালোবাসবেনও না।

— তুই তো জ্যোতিষী তাই না!

— আচ্ছা শুন! একটা আইডিয়া মাথায় দৌড়াচ্ছে!

— বলে ফেল কি বলবি?

— না কিছু না। তুই যা।

— বল না!

— বললাম তো কিছু না। যা তুই।

— হুম, যাচ্ছি।

?

গোধূলি বেলা শুরু হয়ে গেছে, আকাশে মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে, যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। অনেকদিন পর আজ এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করছে। নীল এর ভালোবাসা পাওয়ার লোভ টা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। মনকে হাজার বেঁধে রেখেও নীল এর জন্য ভালোবাসা কমাতে পারি নি। আরও একবার বেহায়া আর ছ্যাঁচড়া উপাধি টা পেতে চলেছি আমি। কিন্তু এসবের মাঝে নীরবের তো কোনো দোষ নেই। নীরবকে ইউজ করে নীল এর ভালোবাসা পেতে চাইছি আমি! ছিঃ! কতোবড় অন্যায় করতে যাচ্ছি আমি। কারো ফিলিংস্ নিয়ে খেলে আমি কিভাবে সুখী হতে পারবো!

বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। শ্রাবণের এই মেঘ যদি আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে এনে দিতো!
এই বর্ষণের ধারা যদি আমার ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট আর হাহাকার ধুয়ে নিয়ে যেতো তাহলে কি খুব ক্ষতি হতো!!



সেদিন রাত টা কি করবো সেটা চিন্তা করতে করতেই কেটে গেলো। নীল কে পাওয়ার লোভ টা তীব্র আঁকাড়ে কাজ করছে আমার মধ্যে। একই সাথে নীরব ভাইয়ার সাথে অন্যায় হবে সেই দুশ্চিন্তা টাও আছে। বুঝতে পারছি না কি করবো!

পরদিন সকালে নিজে থেকেই খুব তাড়াহুড়া করে কোচিং এ গেলাম। আজ কলেজ অফ, সেজন্য আম্মুকে বলে এসেছি নিতুদের বাড়িতে যাবো তানিয়া আপুর সাথে দেখা করতে। যদিও উদ্দেশ্য তানিয়া আপুকে দেখা নয়। মূল উদ্দেশ্য নীরব কে নীল আর আমার সম্পর্কে সব জানিয়ে দেওয়া। আগে নীরবকে সব বলে তারপর হেল্প চাইবো নীল কে একটু জেলাস ফিল করানোর কাজে আমার সাথে থাকার জন্য। নীরব ভাইয়া কে রাজী করানো কোনো ব্যাপার না। নীরব ভাইয়া নীল এর মতো যমরাজ না।

আজকে নীল ভাইয়া কোচিং এ আসে নি, জানি না কেনো। তবে নিতু এসেছে। কোচিং শেষে তুলি কে বিদায় দিয়ে নিতুর সাথে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। খান বাড়িতে পৌঁছে তানিয়া আপু আর রাজীব দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করে নীরব ভাইয়ার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু ঘরে ঢোকার আগেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে গেলাম।

এই বাড়িতে এলেই আমি ধাক্কা উষ্টা সব খাই। কুফা একটা বাড়ি।

” এই কথা! দেখে চলতে পারিস না? যখন দেখি তখনই আমার সাথে যেচে একটা ধাক্কা খেতে আসিস!”
ভ্রুঁ কুঁচকে নয়নতারা বেগম কথাগুলো বললেন।

— আসলে খালাম্মা আমি আপনাকে দেখি নি।

— কোন খেয়ালে থাকিস যে সামনে কে আছে দেখতে পাস না?

— আপনার ছেলের খেয়ালেই তো থাকি। (বিরবির করে)

— কি বললি?

— ককোই কিছু না তো!

— শোন কথা। তুই নিতুর বান্ধবী, তাই আমারও মেয়ের মতো। কিন্তু তোকে বুঝতে হবে। এই বাড়িতে দুইটা যুবক ছেলে আছে। আর তুইও এখন ছোট না। বেশ বড় হয়েছিস। আমি চাই না আশাপাশের লোকজন কথা বলার সুযোগ পাক। তাই এখন থেকে এই বাড়িতে আসা যাওয়া টা একটু কমিয়ে দে।

— আমি কি কিছু ভুল করেছি খালাম্মা?

— ভুল এখনও করিস নি কিন্তু করতে কতোক্ষণ? এমনিতেও তুই নীল এর প্রতি অনেক দুর্বল। দুর্বলতা টা কাটিয়ে উঠ।

নয়নতারা খালাম্মার কথায় আমি একপ্রকার চমকে উঠলাম। খালাম্মা কিভাবে জানলেন? কপাল বেয়ে চিকন ঘাম দিচ্ছে। এখন কি হবে? নীল তো আমাকে ভালোবাসলেনই না। তবুও কি সবাই সবকিছু জেনে যাবে?

— সেদিন রাতে ছাদ থেকে নামতে দেখেই বুঝেছিলাম সব। কিন্তু চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করেছি। নীল এর থেকে যতো দুরত্ব বজায় রাখবি ততো ভালো তোর জন্য। এসব বয়ঃসন্ধিকালের আবগ কে প্রশ্রয় দিস না। নীল আর তোর একসাথে কোনো ভবিষ্যত নেই। যা নিতুর সাথে আড্ডা দে আমি রূপা কে দিয়ে নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

দুইচোখ ইতোমধ্যে পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পরবে। আমার সাথেই সবসময় এমন কেনো হয়? কি দোষ করেছি আমি যার জন্য কারো প্রিয় হয়ে উঠতে পারলাম না কখনও। নীল কে পাগলের মতো ভালোবাসি কিন্তু তার চোখে আমি চরিত্রহীন। আজকে নীল এর মা সরাসরি বলে দিলেন নীল এর থেকে দূরে থাকতে। আমি তো নীল কে ভালোবাসি। এটা তুচ্ছ বয়ঃসন্ধিকালের আবেগ না। কেনো কেউ বুঝতে চায় না? এটা ভালোবাসা। আমি নীলকে ভালোবাসি।

নীরব ভাইয়ার ঘরের সামনে থেকে চলে যাচ্ছিলাম তখন নীরব ভাইয়া ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।

— কথা তুমি! আমার ঘরের সামনে! কিছু বলতে এসেছিলে আমাকে? বাইরে দাড়িয়ে আছো কেনো, আসো না ভিতরে এসে বসো। কদিন পর তো এই ঘরটা তোমার ঘর হবে।

কান্না চেপে নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বললাম,
— ভাইয়া আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি একটু সময় দিতেন।

— আমার সব সময় তো তোমার জন্যই। বলো না কি বলবে।

— এভাবে নয় একটু একা কথা বলার সুযোগ যদি পেতাম।

“প্রেম তো মনে হচ্ছে জমে ক্ষীর হয়ে গেছে তোদের,” তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বললো নীল।

— কি যে বলিস নীল!

— যা দেখছি তাই বললাম আর কি। এখন থেকেই একা দেখা করতে চায়, একা কথা বলতে চায়! এতেই বোঝা যায় তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে কথা।

— নীল প্লিজ কাব্যকে কিছু বলিস না। সময় হলে আমিই সব বলে দেবো কাব্য কে। তারপর বাবাকে বলে আমার আর কথার বিয়ে টা ঠিক করে নেবো।

নীরবের মুখে তার আর কথার বিয়ের কথাটা নীল এর বুকে তীর মতো বিধলো। তীর বুকের এপার উপার বেরিয়ে গেলে যতোটা ব্যথা পাওয়া যায় হয়তো নীল তার থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছে। তবুও জোরপূর্বক মুখে একটা হাসি ফুঁটিয়ে কথার দিকে তাকালো।

— ভাই তুই আমার আর কথার সম্পর্কে খুশি তো! — নীরব।

— খুশি হবো না কেনো! অনেক খুশি আমি। কিন্তু একটু সাবধান ভাই। আজকালকার মেয়েরা জামা পাল্টানোর মতো ভালোবাসা পাল্টায়। আজ একজন কে ভালোবাসি বলে কাল অন্য কারো হাত ধরতে এদের সময় লাগে না।

নীলের কথার মানে বেশ ভালোই বুঝতে পারছি আমি। এবারও সে আমাকে কথা শুনাচ্ছে। কিন্তু এবার আমি নির্দোষ, নীরবের সাথে আমি শুধু কথা বলতে এসেছিলাম। আর নীরব সেই কথা বলা টা কে সম্পর্কের নাম দিয়ে দিলো! এই খান বাড়ির ছেলেরা পারেও বটে!!

— কথা এমন না নীল। ও অনেক ভালো।

— হ্যাঁ আমি জানি কথা এমন না। কথা আমার স্টুডেন্ট, ও কেমন সেটা কি আমি জানবো না!

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৫

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৫
#Sumaya_Tabassum_Kotha

আহত দৃষ্টিতে কথার দিকে তাকিয়ে আছে নীল, কাল রাতে হয়তো অনেক বেশি বলে ফেলেছে সে। কথাকে এতো কিছু বলা অন্যায় হয়েছে তার, কিন্তু সেই বা কি করবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম সে! সারা সন্ধ্যা চেষ্টা করেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি। সেই চাপা রাগটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় কথার শাড়ির আঁচল নিচে পড়া দেখে। এজন্যই কথাকে নির্দ্বিধায় এতো বাজে কথা বলেছে সে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিপ এ উঠে বসলো নীল।

— বড় মা তোকে ডাক্তারের কাছে নিতে বলেছেন, তোর শরীর নাকি খারাপ!

— আমার মতো একটা পতিতা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া টা আপনাকে শোভা দেয় না! আপনি বরং আমাকে বাড়িই পৌঁছে দিন। যতো দ্রুত আমার থেকে দূরে যাবেন ততো কলঙ্ক মুক্ত থাকবেন।

নীল বাকরুদ্ধ হয়ে স্থির দৃষ্টিতে কথার দিকে তাকিয়ে আছে। নীল এর ভাবতে বেশ অবাক লাগছে, এই কি সেই কথা যে এতোদিন পাগলের মতো ভালোবাসার ঝুলি নিয়ে নীল এর পিছনে পরেছিল! এই কি সেই কথা যে হাজার অপমানের পরেও হাসিমুখে ফিরে আসতো! অবাক চোখে প্রতিবার নীল কে দেখতো! কতোটা তফাত হয়ে গেছে এক রাতের মধ্যে!

বাড়ি ফেরার সময় দুজনের কেউই আর কারো সাথে কথা বলে নি। নীরবতার মধ্যেই পথটুকু পাড়ি দিয়েছে। খান বাড়ি পৌঁছে আবারও ব্যস্ত হয়ে পরেছে নীল। বোনের বিয়ে বলে কথা, ভাইদের হাজার টা কাজ থাকে।

তানিয়া আপুর জিনিস গুলো নিয়ে তার ঘরে যাচ্ছিলাম। তখন কাব্য ভাইয়া কে তানিয়া আপুর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। কাব্য ভাইয়াকে দেখে কাল রাতে তার ফোলা চোখের কথা মনে পরে গেলো। ওই নীল যমরাজ টার জন্য আমার ভাইয়ার কথাও ভুলে গেছি আমি। কেমন বোন আমি ছিঃ! ভাইয়ার সাথে কথা বলা খুব জরুরি কিন্তু হাতে একদম সময় নেই। কিছুক্ষণ পরেই বিউটিশিয়ান এসে পরবে।

তানিয়া আপুর ঘরে ঢুকতেই দেখলাম আপু ওয়াশরুম থেকে বেরুচ্ছেন। আপুকে দেখে মনে হলো সে আমাকে দেখে জোরপূর্বক একটু হাসির রেখা ঠোঁটে ফুঁটিয়ে তুললেন। চোখ দুটোও কেমন ফোলা ফোলা। আচ্ছা এসব কি হচ্ছে আমার আশে পাশে। সব কেমন রহস্যের জালে আবদ্ধ লাগছে! আচ্ছা কাব্য ভাইয়া আর তানিয়া আপুর মধ্যে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক নেই তো! না না সে কি করে সম্ভব! তানিয়া আপু তো ভাইয়ার বয়সে বড় আর তাদের কখনও এক সাথেও দেখি নি। হয়তো সম্পূর্ণটাই আমার মনের ভুল!

আপুকে জিনিসপত্র গুলো দিয়ে আমি নিতুর ঘরে চলে গেলাম। সেখানে তুলি আগে থেকেই উপস্থিত ছিল।

— ভাবি এসেছো! ভাইয়াকে তো মনে হয় আজকে প্রপোজ করেই দিয়েছিস তাই না! (নিতু)

— আরেহ এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি! কথার মতো পাগলী কি আর এতো বড় সুযোগ মিস করেছে নাকি! (তুলি)

— তা ভাবি, ভাইয়াকে কিস টিস করার সুযোগ দিয়েছেন নাকি আপনিই সব করে দিয়েছেন? (নিতু)

— নিতু, তোর যে নিরামিষ ভাই! কি মনে হয় সে নিজে থেকে কিছু করবে! আমার তো মনে হয় কথাই সব করে দিয়েছে। (তুলি)

— আচ্ছা তোরা শুরু টা করেছিস কি বলতো! বাইরে থেকে এসেছি কোথায় একটু রেষ্ট নিতে দিবি তা তো না উল্টো প্যাড়া দিচ্ছিস। (কথা)

— যা ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নে,, আবার সাজগোজ শুরু করতে হবে। (নিতু)

— খিদে নেই। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

— ভাইয়ার সাথে খেয়ে এসেছো বুঝি ভাবি! (তুলি)

— ফাজলামো বাদ দে তো। কারো সাথে খাই নি, ফ্রেশ হয়ে এসে খাবো। আমি কেনো না খেয়ে থাকতে যাবো! এই নিতু জলদি যা আমার জন্য খাবার নিয়ে আয়।

— তুই যা ফ্রেশ হো। খাবার টেবিলে রাখছি।

?

খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি, কিন্তু খাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই। কেনো যেনো অনেক অশান্তি লাগছে। কিছুই ঠিক নেই। কেনো ঠিক নেই? নীল কে আমি নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি। তাহলে কেনো তার ভালোবাসার যোগ্য নই আমি! কি কমতি আছে আমার মধ্যে? কেনো সে আমাকে এইভাবে অপমান করে। তার করা হাজার অপমান সহ্য করতে আমি রাজি, তবুও যদি সে একবার আমাকে ভালোবাসতো!
আমিও না অনেক বেশি আবেগি। সে আমাকে কেনো ভালোবাসবে! আফ্টার অল একটা পতিতা কে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না।

খাবার মুখের সামনে নিয়েও ফিরিয়ে নিলাম। নীল কি খেয়েছে? সকাল থেকে শুধু কাজ করতেই দেখলাম। তায়েবা আপুর মেয়ে রাইসা কে সামনে দেখে ডাকলাম।

— রাইসা মামনি। তোমার নীল মামাই খেয়েছে?

— মামাই তো সকাল তেকে কাত কলে।

— মামনি আমার একটা কাজ করে দেবে। তোমাকে চকোলেট দেবো।

— তক্কেত!

— হ্যাঁ। এই প্লেট টা তোমার নীল মামাইকে দিয়ে আসো। বলবে খেয়ে নাও।

— টিক আতে।

রাইসা গুটিগুটি পায়ে খাবার প্লেট টা হাতে নিয়ে উঠানে চলে গেলো। দরজার আঁড়াল থেকে লুকিয়ে দেখছি। আমি নিশ্চিত নীল কিছু খায় নি।

— মামাই তোমাল খাবাল। খেয়ে নাও।

— ওরে আমার বাবাই টা আমার জন্য খাবার এনেছে!

— না কথা খালামনি পাতিয়েতে।

— কথা!

— হুহ। তুমি খাও আমি যাই।

— দাও বাবাই আর তুমি ঘরে গিয়ে খেলো।

নীল খাবার প্লেট টা হাতে নিয়ে আনমনেই একটা ম্লান হাসি আঁকে ঠোঁটে।

নীলের হাতে রাইসা খাবার দিয়ে এলে রাইসাকে চকোলেট দিয়ে আমি ঘরে চলে এলাম।

মেহমান আসা শুরু হয়ে গেছে। তানিয়া আপুকে সাজাচ্ছে সবাই। আমি, নিতু আর তুলি তিনজনেই লাল রঙের লেহেঙ্গা পরেছি। যদিও নিতু আর তুলি অনেক সেজেছে, আমি সাজি নি। আসলে ইচ্ছে হয় নি। আমার সব সাজ তো নীল এর জন্য কিন্তু তার আমার সাজা আর না সাজায় কিছু আসে যায় না। তাই আমার সাজসজ্জারও কোনো মানে হয় না।

হালকা কাজল, লিপষ্টিক আর খোলা চুলে আমি তৈরি। বরযাত্রী এসে পরেছে। সবাই বর আর মেহমানদের সামলাতে ব্যস্ত। আমি এক কোনায় দাড়িয়ে সবটা দেখে যাচ্ছি। কাল বিকেল পর্যন্তও তানিয়া আপুর বিয়ে নিয়ে অনেক উৎসাহ ছিল। কিন্তু রাতে নীল এর সেই কথা গুলো আমার মন টাকে কেমন মলিন করে দিয়েছে। ঘুরে ফিরে সেই কথা গুলোই কানে বাজে।

নীল একটা সাদা সুতির কাজ করা পাঞ্জাবী পরেছে। এমনিতেই এতো সুদর্শন তার উপর সাদা রং। আরও বেশি আকর্ষনীয় লাগছে তাকে। সত্যি আমি অনেক বেহায়া না চাইতেও চোখ বারবার তার দিকে যাচ্ছে।

কাজী সাহেব তানিয়া আপুর বিয়ে পড়াচ্ছেন। একটু পর হয়তো আপুকে বিদায় করে দেবে। মেয়েদের জীবনটাও কতো বিচিত্রময়। জন্মের পর থেকে যাদের আপন করে বেঁচে থাকে, সুখে-দুঃখে সব মুহূর্তে যারা পাশে থাকে,,, কবুল আর একটা স্বাক্ষর তাদের সবাইকে পর বানিয়ে দেয়।

— কথা! তানিয়া আপুর আলমারিতে গয়নার একটা বাক্স আছে, যা তো নিয়ে আয়। (নিতু)

— আচ্ছা।

বাড়ির ভিতরে গিয়ে সোজা তানিয়া আপুর ঘরে ঢুকে পরলাম। আপুর আলমারির চাবি কোথায় থাকে সেটা আগে থেকেই জানতাম। আলমারি খুলে গয়নার বাক্স বের করতেই বক্সের সাথে আটকে একটা চিরকুট নিচে পরে গেলো। কৌতুহল-চঞ্চল মন আমার চিরকুট টা না দেখলে অস্থিরতাতেই মরে যাবো। কিন্তু চিরকুট টা খোলার আগেই তুলি চলে এলো ঘরে আমাকে ডাকার জন্য।

— এখানে টাইম পাস করছিস ওদিকে তোর শাশুড়ী নয়নতারা বেগম পাগল হয়ে গেলো ডাকতে ডাকতে।

— সো সরি চল জলদি চল।

তাড়াহুড়ায় চিরকুট টা হ্যান্ড ব্যাগে রেখে নিচে চলে গেলাম।

তানিয়া আপুর বিদায় পর্ব শেষ, তুলিও বাসায় চলে গেছে। এখন আমারও যাওয়ার পালা।

— আজ আমার কাছে থেকে যা না কথা! তানিয়া আপু চলে গেছে মনটা ভীষণ খারাপ। (নিতু)

নিতুর জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমি নীল এর সামনে আর এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না। অনেক কষ্টে নিজেকে স্ট্রং বানিয়েছি। তার সামনে থাকলে আবারও দুর্বল হয়ে পরবো। নিতুকে বুঝিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।

খান বাড়ির উঠানে দাড়িয়ে আছি, বুকের বা পাশে অসম্ভব রকম যন্ত্রণা হচ্ছে। ভেবেছিলাম এই দুইদিন এ নীল কে আমার ভালোবাসার উপলব্ধি করাবো। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! নীল কে সারাজীবনের মতো হারিয়ে যাচ্ছি। অনেক স্বপ্ন ছিল এই খান বাড়িতে নীল এর বউ হয়ে ফিরে আসবো। সেই খান বাড়ির উঠানেই আমার সব স্বপ্ন মাটি চাপা দিয়ে যাচ্ছি।

— কথা বাইকে উঠে বস। রাত নেমে এসেছে। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। — কাব্য

— চলো।

শেষ বারের মতো খান বাড়ির চারদিকে হণ্যে হয়ে একটা মুখ খুঁজছি। হাতে একদম সময় নেই। শেষ বার কি দেখতে পারবো না নীল কে? না নীল কোথাও নেই। এক বুক কষ্ট নিয়ে কাব্য ভাইয়ার সাথে চলে এলাম।

?

ছাদের কার্নিশ ঘেসে দাড়িয়ে আছে নীল। বেশকিছুক্ষণ হয়ে গেছে কথা চলে গেছে। কথার যাওয়ার প্রায় অনেকক্ষণ আগে থেকেই সে এখানে দাড়িয়ে আছে। কথার অস্থির দৃষ্টি, একবার তাকে দেখার অধীর আগ্রহ সবটাই সে নিশ্চুপে দেখেছে। হয়তো কাল রাতের পর সামনে যাওয়ার সাহস হয় নি তাই দূর থেকেই দেখেছে।

রাতের অন্ধকার আর নীল এর জ্বালানো সিগারেটের ধোয়া একসাথে মিশে ভৌতিক একটা পরিবেশ তৈরি করেছে। আর এই পরিবেশে নীল একটা প্রেতাত্মার ভূমিকা পালন করছে। বুকে কষ্টের পাহাড় জমে আছে তবুও ভীষণ ভালোলাগা কাজ করছে। এতোদিনে সে বুঝতে পেরেছে কথা তাকে কতোটা ভালোবাসে। কথা নীল কে ভালোবাসে সে আগেই জানতো কিন্তু কাব্যর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে কখনও কথার আবেগ কে প্রশ্রয় দেয় নি। বুকের বা পাশের ব্যথাটা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। নীল নিজেও জানে না তার কি হচ্ছে!

মধ্য রাত্রি পাড় হয়েছে অনেকক্ষণ হয়েছে হয়তো কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। প্রতিদিন বেলা আট টা পর্যন্ত ঘুমানো মেয়ের চোখে রাত ৩:৩০ টার দিকে ঘুম নেই। কেউ কি বিশ্বাস করবে এটা! কষ্ট হচ্ছে, বারবার নীলের মুখটা চোখের সামনে আসছে। চোখ বন্ধ করেও শান্তি নেই, ঘুমের ঘোড়ে নীলকেই দেখতে পাই। নীল কি কখনই আমাকে ভালোবাসবে না! আমার মনের অবস্থাটা কি সে কখনই বুঝবে না!!

?

পরদিন তানিয়া আপুর বউভাতের অনুষ্ঠান। নিতু অনেকবার বলেছিল সাথে যেতে কিন্তু মন সায় দেয় নি পুনরায় নীলের সামনে যেতে। সেদিনের পর নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নীল এর থেকে দূর করে নিলাম। আমার ধ্যানে জ্ঞানে নীল থাকলেও মুখে আর কখনই সে থাকবে না। ভালোবাসাকে বুকেই চাপা দিয়ে রাখবো সবসময়।

তিন দিন পাড় হয়ে গেছে কোচিং এ যাই না। নীল স্যারের কোচিং এই পড়ি, না চাইলেও কোচিং এ গেলে তার মুখোমুখি হতে হবে। এজন্য না যাওয়াটাই ভালো মনে হলো। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা এগিয়ে আসছে। বাসায় আম্মু আর ভাইয়া তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে দিয়েছে। এখন নাকি আব্বুর কানে দেবেন কোচিং এ না যাওয়ার কথাটা। আব্বু জানতে পারলে মেরে আলু ভর্তা বানিয়ে দেবে। না আব্বুর মার খাওয়ার থেকে ভালো কোচিং এ চলে যাই।

কলেজের ড্রেস পরে, দুই বেণী করে কাঁধের ব্যাগটা বারবার টেনে কোচিং এর দিকে হেটে যাচ্ছি। কিন্তু কেমন সব ঘোলাটে ফিলিং আসছে। কি একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পরবো নীল এর সামনে সেটা আমি আন্দাজ করতেই পারছি।

হাটতে হাটতে কোচিং এর সামনে এসে পরেছি। বুকের বা পাশের চিনচিনে ব্যথা টা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে চাই না। নীল এর সামনে নিজেকে আর ছোট করতে চাই না।

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৪

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৪
#Sumaya_Tabassum_Kotha

মধ্য রাত্রি চলছে,, অন্ধকার আর নিস্তব্ধতায় নিমজ্জিত হয়েছে চারপাশ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকাতে তারকারাজী ঢাকা পরেছে। দূর থেকে দুই একটা পেঁচার ডাক ভেসে আসছে। হয়তো মানুষ প্রজাতির সাথে সাথে বাকি পক্ষীকূলও ঘুমিয়ে পরেছে। কিন্তু দুটি অশান্ত মন দুদিকে একটি নির্ঘুম রাত পার করছে। দুজনের মনেই অশান্তি ভর করেছে। দুজনের কষ্টের পরিমাণ এক হলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। একজন প্রিয়জনকে কষ্ট দিয়ে ব্যথা পাচ্ছে। আরেকজন প্রিয়জনের দেওয়া কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ব্যথা পাচ্ছে।

জলন্ত সিগারেটের ধোয়ায় চারপাশ ভারী হয়ে উঠেছে। মেঘাচ্ছন্ন রাতে এ যেনো আরও বিষন্নতা নামিয়ে আনছে। কথার আনা গোলাপ টা হাতে নিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নীল। চোখের কোনায় টলমল করা পানিগুলো ঝরে পরার অনুমতি পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরপর দীর্ঘ নিশ্বাসের সাথে কষ্ট গুলো ঝেরে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করছে নীল।

নিতুর ঘরের ব্যালকোনিতে জরোসরো হয়ে বসে নিশ্চুপে কেঁদে যাচ্ছে কথা। কিছু সময় আগেও তার চোখ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিল। আর এখন! চোখের পানিতে দুচোখের কাজল লেপ্টে একাকার হয়ে গেছে। কথা স্বপ্নেও ভাবে নি ভালোবাসার মানুষটার কাছে থেকে এতো অপমান পেতে হবে তার। প্রিয়জনের দেওয়া আঘাত সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।

বেশকিছুক্ষণ কান্না করে নিশ্বব্দে ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ি পাল্টে নিলো কথা। শাড়ি আর চুড়ি গুলোকে একবার দেখে পুনরায় ব্যাগের ভিতর রেখে নিতুর পাশে শুয়ে পরলো সে।

?

?

সকালে নিতুর খুব ভোরেই ঘুম ভাঙে,, সারারাত কান্না করে শেষ রাতের দিকে চোখ লাগে কথার। নিতু ফ্রেশ হয়ে দেখে কথা এখনও ঘুমাচ্ছে। তখন নিতুর বড় মা তাহেরা বেগম দরজার সামনে এসে নিতুকে কিছু বলে যায়। বড় মা চলে গেলে নিতু কথা কে ডাকতে শুরু করে।

— এই মেয়ের কোনো আক্কেল আছে কি নাই! বিয়ে বাড়ি আর উনি পরে পরে ঘুমাচ্ছে। মা আর বড় মা যদি জানতে পারে কথা এতো অলস তাহলে আর হয়েছে নীল ভাইয়ার সাথে বিয়ে। (নিতু)

— এই কথা উঠ, আরেহ এই কুম্ভকর্ণের গফ উঠ। ভুলে যাস না এটা তোর হবু শ্বশুরবাড়ি। বিয়ের আগেই বউর এমন কুম্ভকর্ণ টাইপ স্বভাব দেখলে তোকে এই জন্মে এই বাড়ির বউ করবে না।

— কি হয়েছে এমন ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেনো?

— আমি ষাঁড়! তাহলে তুই গাধা।

— হুহ। যা সর ফ্রেশ হতে দে আমাকে।

— শোন নীল ভাইয়ার সাথে জুয়েলারির দোকানে যেতে হবে। তানিয়া আপুর কানের দুল আর কিছু জিনিস আনতে হবে। বড় মা আমাকে বলেছিল, আমি তোর কথা বলে দিয়েছি বড় মা কে। নীল ভাইয়ার সাথে রোমান্স করে আসো ভাবি।

— নিতু তুই ই চলে যা। আমি না হয় বাসায় ই থাকি।

— ওহহ উড বি ভাবি ঢং বাদ দে,, এমনিতে তো ভাইয়ার কাছে যাওয়ার জন্য এক পায়ে দাড়িয়ে থাকিস। আজকে সুযোগ পায়ে হেটে এসেছে আর আজকে মেডামের ঢং বেরেছে। যা চট জলদি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।

— নীলের ছায়া টা মাড়ানের শখও আমার মিটে গেছে। (বিরবির করে)

নিতু কে আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আয়নায় নিজেকে দেখেই বুকটা লাফ দিয়ে উঠলো। দুচোখের কাজল লেপ্টে চেহারার অবস্থা দফারফা। অন্ধকারে নিজেকে দেখলে নিজেই ভয়ে হার্ট ফেইল করতাম। ভাগ্যিস নিতু চেহারা দেখে নি, তাহলে আমার আগেই মরে যেতো।

গোসল সেড়ে বের হয়ে ব্রেড চিবুতে চিবুতে উঠানে গিয়ে দাড়িয়ে পরলাম। সকালের সময়টাই বাকি, তারপর দুপুর থেকে মেহমান আসা শুরু হবে। চারপাশে চোখ বুলাতেই সামনে নীল কে দেখলাম।

খান বাড়ির গেইটের সামনে জিপ এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে নীল। যদিও এতো দূরে দাড়িয়ে আছে কিন্তু তার স্থির দৃষ্টি আমাতেই নিবদ্ধ। নীল কে দেখে কাল রাতের সব কথা আবার মনে পরে গেলো। নীলের মুখে থেকে শোনা পতিতা শব্দ টা আমার কানে বাজছে। মনে হচ্ছে যেনো আমার হৃদয়ে রক্ত ঝরাচ্ছে।

উঠানে এখনও ঠায় দাড়িয়ে আছি, যাবো না নীল এর বাচ্চার সাথে। আমাকে এতো বাজে বাজে কথা শুনিয়েছে কেনো যাবো আমি তার সাথে! নীল এর বড় মা তাহেরা বেগম তায়েবা আপুর মেয়ে রাইসা কে নিয়ে আমার কাছে এসে বললেন,

— এই কথা দাড়িয়ে আছিস কেনো জলদি যা। নীল দাড়িয়ে আছে। তানিয়ার মেয়েলি কিছু জিনিস লাগবে সেগুলো তো আর নীল কে বলতে পারি না। নিতুও ব্যস্ত তাই তুই যা।

— বড় খালাম্মা, বলছি কি আমার শরীর টা ভালো লাগছে না। নিতুর হাতের কাজ টা আমি করে দেই নিতুই যাক নীল স্যারের সাথে।

— শরীর খারাপ?

— হুম।

— এই নীল! শোন এদিকে আয়।

— জ্বি বড় মা!

— শোন কথার শরীর খারাপ। শপিং শেষ করে আসার সময় ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নিয়ে আসিস। কেমন! যা এখন জলদি যা। কতো কাজ বাকি।

— কথা!

— হুম।

— যা জিপ এ গিয়ে বস।

— হুম।

এখন আর মানা করে কি লাভ! সেই আমার যেতেই হলো যমরাজ টার সাথে!

?

সকালের মিষ্টি রোদ চার দিকে ছড়িয়ে পরেছে। শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি হয়েছে হালকা,, মেঘ ভাঙা রোদের আলো খোলা জিপের উপর এসে পরছে। নীল এর বিপরীত দিকে তাকিয়ে আছি। আর একবারও তাকাবো না তার দিকে। আর না কোনো কথা বলবো।

— একটু ভিতরের দিকে এসে বস পরে যাবি তো! (নীল)

কথা বলার আর কোনো টপিক পেলো না হয়তো। তার কথায় কোনো পাত্তা দিয়ে আমি আমার মতোই বসে রইলাম। সারা রাস্তা আর তার দিকে তাকাই নি, কোনো কথাও বলি নি। হয়তো নীল আমার দিকে দুই একবার তাকিয়েছিলেন, হয়তোবা তাকান নি।
জুয়েলারি শপ থেকে কানের দুল আর তানিয়ার আপুর সব জিনিস কিনে আমি সোজা জিপ এ উঠে বসলাম। নীল ভাইয়া এখনও ফেরে নি। হয়তো কিছু কিনছেন।

একটু পর নীল ভাইয়া ফিরে এলেন। হাতে দুইটা চকোলেট। নীল ভাইয়ার হাতে চকোলেট দেখে মন টা আকুপাকু করা শুরু করে দিয়েছে চকোলেট খাওয়ার জন্য। কিন্তু নিজেকে তার সামনে আর বেহায়া প্রমাণ করতে মন সায় দিচ্ছে না।

— কথা! নে ধর এই দুইটা। তোর আর নিতুর জন্য।

নীল ভাইয়ার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। কালকে রাতে এতো অপমান করে এখন সে আমাকে চকোলেট দিচ্ছেন। জুতা মেরে গরু দান খুব ভালোই করতে জানে। নীল এর হাত থেকে একটা চকোলেট নিয়ে নিলাম।

— এইটাও নে নিতুকে দিয়ে দিস।

— নিতুর জন্যই নিয়েছি এটা। ওটা আপনার কাছেই থাক।

— এটা তোর জন্য এনেছি। নে ধর।

— আপনার কাছে থেকে চকোলেট নেওয়াটা ঠিক হবে না স্যার। আপনার আর আমার তেমন কোনো সম্পর্কই নেই। আর আমার মনে হয় না আমার মতো চরিত্রহীন কোনো মেয়ে আপনার কেনা জিনিস ডিজার্ভ করে। বাসায় চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।

কথার বলা সবগুলো কথা নীলের বুকে তীরের মতো বিঁধলো। কথা এতো রুড ভাবে বলবে এটা নীলের ধারণার বাইরে ছিল।

চলবে..

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০৩

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০৩
#Tabassum_Kotha

“শরীর দেখিয়ে ছেলেদের বশ করতে চাইছিস! জানিস তো পতিতা রাও এই ঘৃণ্য কাজ টা করে না। তুই তাদের চেয়েও!! অন্যসব ছেলেরা তোর শরীর দেখে তোর ফাঁদে পা ফেললেও আমি তোর শরীরের মোহে পরছি না।” — নীল।

নীল ভাইয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি। এতো বাজে কথা আমি আজ পর্যন্ত শুনেছি কি না সন্দেহ। মুহূর্তেই দুচোখের কোনায় পানি জমা হয়ে গেছে আমার। নীল এখনও স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা আমার দুচোখের পানি কি তার চোখে পরছে!

কিছুক্ষণ আগে,,,

সবাই তানিয়া আপুকে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত, সেই ফাঁকে আমি নীল এর কাছেই যাচ্ছিলাম তখন কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে গেলাম। কোমড়ে অনেক ব্যথা পেয়েছি। পরে যাওয়াতে আমার খোঁপা করা চুল গুলো খুলে গেছে। এতো কষ্ট করে সাজলাম আর সেটা কি না এই আহাম্মক টা মাটি করে দিলো! মাথা তুলে তাকাতেই দেখি কাব্য ভাইয়া সামনে দাড়িয়ে আছে।

ভাইয়াকে এই অবস্থায় দেখে আমি অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। ভাইয়ার চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। দেখে যে কেউ বলে দেবে ভাইয়া কান্না করছিল। ভাইয়াকে আমি হাসতে দেখেছি, রাগ করতে দেখেছি কিন্তু কখনও কাঁদতে দেখি নি। ভাইয়ার হাতে হলুদ লেগে আছে, হয়তো তানিয়া আপু কে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে এলেন। কিন্তু ভাইয়ার এই অবস্থার কারণ কি?

আমি উঠে দাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই ভাইয়া সেখান থেকে চলে গেলেন। নিজেকে সামলে আমিও ভাইয়ার পিছেন পিছন গেলাম। ভাইয়া সরাসরি নীল ভাইয়ার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। ভাইয়ার দরজায় নক করবো ঠিক তখন নিতু সেখানে এলো।

— আচ্ছা মুসিবত মেয়ে তো তুই। এখানে কি করছিস? ফাংশন চলছে উঠানে।

— আরে কাব্য ভাইয়া এই ঘরে ঢুকেছেন।

— ঢুকেছেন তো তোর কি হয়েছে! কাব্য ভাইয়ার বেষ্ট ফ্রেন্ডের ঘর এটা সে ঢুকতেই পারে। এখনও তোর ঘর হয়ে উঠে নি এটা বুঝলি?

— আমি কি সেটা বলেছি নাকি?

— এই তুই একটু চুপ কর তোর কিছু বলতে হবে না। তুই নিজেও পাগল সাথে আমাকেও পাগল বানাবি। নিচে চল এখন। তানিয়া আপুকে হলুদ লাগাবো।

— কিন্তু!

— কোনো কিন্ত টিন্তু নয় চল তুই।

নিতু আমাকে টেনে সেখান থেকে নিয়ে গেলো, ব্যস্ততায় কাব্য ভাইয়ার বিষয় টা আমার মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো। উঠানে গিয়ে নিতু আর আমি দৌড় লাগালাম তানিয়া আপুর কাছে। অনেকগুলো হলুদ নিয়ে আপুর সারা শরীরে মাখিয়ে দিলাম।

নিতু আমার মুখে হলুদ লাগিয়ে বাড়ির ভিতরের দিকে পালালো। আমাকে হলুদ লাগিয়ে এতো সহজে পালিয়ে যাবে! সেটা তো হতে পার না। আমিও হলুদ হাতে নিয়ে পিছন পিছন ছুটলাম। বিপত্তি টা ঠিক সেখানেই ঘটলো। শাড়ির আঁচলে লাগানো সেফটিপিন টা কিভাবে খুলেছে জানি না, কিন্তু আঁচল খুলে মাটিতে পরে গেলো। আর সেই আঁচলে পা লেগে আমি মাটিতে পরে যাচ্ছি।

আচমকা সব হওয়াতে নিজেকে সামলানো তো দূরেই থাক বুঝতেই পারি নি কি থেকে কি হচ্ছে! চোখ মুখ খিচে আছি, একটু আগেও পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি,, এবারো পাবো। কিন্তু মনে হচ্ছে আমি হাওয়ায় ভাসছি। কেউ আমার কোমড় জরিয়ে ধরে রেখেছে! আচ্ছা এই কেউ টা নীল নয়তো! হতে পারে সেও আমাকে ভালোবাসে তাই আমাকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচাচ্ছে।

ধীরে ধীরে চোখ মেলছি আর মনে মনে চাইছি সামনে যেনো নীল কে দেখতে পাই। কিন্তু আমার স্বপ্নের সেগুড়ে বালি। নীল এর ভাই নীরব আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে। কোথায় ভেবেছিলাম আমার জামাই টা আমাকে বাঁচাবে তা না বাঁচিয়েছে দেবর জি। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি নীরব ভাইয়ার কাছ থেকে। কিন্তু নীরব ভাইয়া তো এক ধ্যানে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি মুশকিল এমনভাবে দেখছেন যে একটু পরেই আমাকে খেয়ে ফেলবেন।

ঠিক তখনই কাঁচ ভাঙার শব্দে নীরব চমকে উঠে আমাকে ছেড়ে দিলো। নিজেকে সামলে আঁচল ঠিক করে সামনে তাকাতেই দেখি অনেকগুলো কাঁচের গ্লাস ভেঙে মেঝেতে পরে আছে। আর নীল অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আমার আর নীরবের দিকে তাকিয়ে আছেন। নীলের চোখ দেখে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে আর সেই আগুনে আমাকে পুড়িয়ে দেবে। আমি ভয়ে পুরোই শুটকি হয়ে গেছি। কি করবো ভেবে না পেয়ে দৌড়ে বাড়ির ভিতর চলে এলাম। ফাংশন চলাকালীন আমি আর নিচে যাই নি।

?

রাত প্রায় ১ টা বাজে, ঘুম আসছে না। আমার এতোদিনের প্ল্যানিং বাস্তবায়িত করার সময় এসে পরেছে। নিতু আমার পাশেই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। বেচারা নিতুর জামাই টার কপাল পুড়া, যেই জোরে নাক ডাকে নিতু। রাতে আর ঘুমাতে হবে না তার।হিহিহি।

আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে ব্যাগ থেকে একটা কালো শাড়ি আর কালো কাঁচের চুড়ি বের করে, পরে তৈরি নিলাম। তারপর ব্যাগের এক কোনায় রাখা গোলাপ ফুলটা হাতে নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলাম। নিতুর কাছে থেকে আগেই খবর নিয়েছি লাইটিং এর কাজের জন্য নীল রাত দুইটা পর্যন্ত ছাদে থাকবেন। এর থেকে সুবর্ণ সুযোগ আমি আর পাবো বলে মনে হয় না। রাতের বেলা একা প্রপোজ করলে নীল কিছুই করতে পারবে না। আজকে তো আমি তাকে আমার ভালোবাসার কথা বলেই ছাড়বো।

সিড়ি বেয়ে উঠে চলেছি,, কাজলে দুই চোখ ভরিয়ে তুলেছি। নীলের পছন্দের লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি। ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপষ্টিক পরেছি। পুরো সাজটাই নীল এর পছন্দের। আজকে ঝড় আসুক আর সুনামি, আমি আমার ভালোবাসার কথা নীল কে বলেই দম নেবো। হাটুতে বসে গোলাপ টা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলবো, “নীল আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

ছাদের কার্নিশ ঘেসে দাড়িয়ে আছে নীল,, ধোয়া জাতীয় কিছু উড়ে যাচ্ছে। হয়তো স্মোক করছে। একটু এগিয়ে সামনে যেতেই কিছু একটার সাথে হোচট খেয়ে গোলাপ টা হাত থেকে নিচে পরে গেলো। নিচু হয়ে গোলাপ খুঁজতে গেলে আঁচল টা কাঁধ থেকে পরে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে নীল ভাইয়া আমার দিকে ঘুরে তাকান। আর আমাকে এতো বাজে মন্তব্য করেন।

বর্তমান,,,

ভীষণ কষ্ট হচ্ছ, যাকে ভালোবাসি তার মুখ থেকে নিজের জন্য এই ধরনের কথা মেনে নেওয়া যায় না। এতোক্ষণ নীল এর প্রতি যেই ভালোবাসা না উতলে উঠছিল সেখানে একরাশ অভিমান এসে জমা হয়ে গেছে। দুচোখ বেয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো।

— এখনও বেহায়ার মতো দাড়িয়ে আছিস। সন্ধ্যার মতো আঁচল ফেলে ছেলেদের শরীর দেখানো শেষ নাকি?

— চুপ করে আছিস যে! তুই যে কাব্যর আপন বোন সেটা আমার বিশ্বাসই হয় না। কতোটা বেহায়া তুই সেটা তো কাব্য জানেই না। তা বলি কি নীরবকে শরীর দেখানো শেষ নাকি যে আমার কাছে এসেছিস?

— কতোবড় নির্লজ্জ তুই এখনও আমার সামনে দাড়িয়ে আছিস!

— হ্যাঁ আমি নির্লজ্জ, বেহায়া, ছ্যাঁচড়া। আমি জানি এই উপাধি গুলো বিশেষভাবে আমার জন্যই বানানো। বানিয়েছেন আপনি। অবশ্য দোষ আপনার না। দোষ আমার, অনেক বেশি আবেগী তো আমি, তাই এই উপাধি গুলো আমার পাওনা। কিন্তু পতিতা!!
একবার বিবেক খাটিয়ে বলুন তো, আমি কি সত্যি পতিতা! এই উপাধি টা তো আমার পাওনা ছিল না। আমার ধ্যানে, জ্ঞানে শুধু একটাই নাম,, একজনকেই মনে জায়গা দিয়েছি। একজনের প্রেমেই বৈরাগী হয়েছি,, আর আজ সেই একজনই আমাকে কলঙ্কিনী বানিয়ে দিলো!
আমি আপনাকে ভালোবাসি নীল! আপনি কি বুঝতে পারেন না? একবারের জন্যও কি আমার চোখে আপনার জন্য ভালোবাসা দেখতে পান না! আমার মনে যে আপনার নামের ভালোবাসা আকাশ ছুয়েছে বুঝতে পারেন না! দুই বছর ধরে পাগলামি করে আসছি,, একবারের জন্যও কি বুঝতে পারেন নি আমার পাগলামির পিছনের কারণ কি হতে পারে! সেদিন বিকেলে আপনাকে ভালোবাসি বলতে গিয়েছিলাম। আপনার ভয়ে পরে মিথ্যা বলেছি। আজকেও হয়তো ভালোবাসি বলার পর আপনার ভয়ে মিথ্যা বলতাম।

আপনি জানেন আপনাকে কতোটা ভালোবাসি আমি? আপনাকে একদিন না দেখে থাকতে পারি না, পাগল মনে হয় নিজেকে। উঠতে, বসতে শুধু নীল, নীল আর নীল। এই নীল নাম টা তেই যেনো আমার পুরো পৃথিবী আটকে গেছে। আপনার কালো রং পছন্দ বলে সপ্তাহে দুই দিন কালো ড্রেস পরে আসি, শুধু আপনাকে দেখাবো বলে। আজ পর্যন্ত যতো মেয়েরা আপনাকে প্রপোজ করেছে সবাই কে মিথ্যা বলে বলে আপনার কাছে থেকে সরিয়েছি শুধু ভালোবাসি বলে,, নিজের ভালোবাসার ছায়া টাও অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারবো না বলেই এতো ছ্যাঁচড়া, বেহায়া, নির্লজ্জ আমি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি পতিতা কিংবা চরিত্রহীন নই আমি মন থেকে আপনাকেই ভালোবেসেছি। শুধু ভালোবেসেছি।
কিন্তু আজকের পর থেকে আর কখনও আপনার সামনে আসবো না ভালোবাসার দাবী নিয়ে। নিজের এক তরফা ভালোবাসার আগুনে সারাজীবন পুড়তে হলেও পুড়বো। তবুও কখনও ভালোবাসি বলতে আসবো না। কখনও না। এই নির্লজ্জ কথা আর কখনও আপনাকে জ্বালাবে না।

দুচোখে পানি ছেড়ে দিয়ে কথা সেখানে থেকে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। সবকিছু সহ্য করা গেলেও প্রিয়জনের ধিক্কার সহ্য করার ক্ষমতা সবার থাকে না। কথারও নেই সেই ক্ষমতা। কাঁদতে কাঁদতে যাওয়ার সময় কথা নয়নতারা বেগমের সাথে হালকার উপর একটা ধাক্কা খেলো। নয়নতারা বেগম পানি নেওয়ার জন্য কিচেনে এসেছিলেন। ধাক্কা সামলে কিছু না বলেই কথা নাক টানতে টানতে নিতুর ঘরে ঢুকে গেলো।

কিছুক্ষণ সময়ের জন্য নয়নতারা বেগমের সামনে ছিল কথা, কিন্তু সেই অল্প সময়েই নয়নতারা বেগম কথার চোখের পানির মানে বুঝে গেছেন। কিছু না বলে নয়নতারা বেগম ঘরের দিকে আগালেন।

পুনরায় ছাদের কার্নিশ ঘেসে দাড়িয়ে আছে নীল। বাইরের ব্যক্তিত্ব টা যতোই কঠোর তার, ভিতরের মানুষটা ততোই দুর্বল। সে জানে নিজের দুর্বলতা বাইরের কাউকে দেখানো বোকামি। তাই তো এই কঠোর আবরণটা ধারণ করেছে সে। বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা করছে। সাইড টেবিলে রাখা সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে আরেকটা সিগারেট জ্বালালো নীল।

চলবে…

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০২

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০২
#Tabassum_Kotha

“মা তোমার মেয়ে এইচএসসির পরীক্ষার দুইমাস আগে কোচিং এর টেষ্ট পরীক্ষায় ফেল করেছে!!” — কাব্য।

ভাইয়ার কথা শুনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি,, হঠাত করে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় ঘুরলো!

— নীল দুই বছর চেষ্টা করেও ওকে পাশ করাতে পারে নি, দেখো অবস্থা দুই মাস বাকি পরীক্ষার। আর এখন ফেল করে। আজকে আব্বুকে বলে দেবো।

— ভাইয়া, আব্বুকে বলিস না। আমি অনেক ভালো করে পড়বো,, দেখিস ফাইনালের রেজাল্ট অনেক ভালো হবে। প্লিজ বলিস না।

— ঠিক আছে। সুযোগ দিলাম। ফাইনালে যেনো রেজাল্ট ভালো হয়। আর নীল যদি এর পর বিচার দেয়, তোর একটা হাড়ও আস্ত থাকবে না।

— হুম।

সেদিনের মতো সব কথা ধামা চাপা পরে গেলো। যাক বাবা নীল কাব্য ভাইয়াকে কিছু বলে নি। মানুষটা এতো ভালো দেখেই তো তাকে এতো ভালোবাসি। হ্যাঁ নীলকে আমি ভালোবাসি। গত দুই বছর ধরে ভালোবাসি।

আগে শুধু পরিচিত ছিল কাব্য ভাইয়ার বেষ্টফ্রেন্ড হিসেবে। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর যখন তার কোচিং এ গেলাম তখন থেকে তাকে চিনতে শুরু করলাম।

নীল অনেক হ্যান্ডসাম, এজন্য না চাইতেও তার দিকে চোখ যেতো। হালকা আবেগ হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। বুঝতে পারি নি এই হালকা আবেগ কখন ভালোবাসায় রূপ নিলো। এখন এমন অবস্থা হয়েছে আমার, নীল কে একদিন না দেখে থাকতে পারি না। তাই তো ঝড়-বৃষ্টি যাই থাকুক কোচিং মিস দেই না। কিন্তু নীল তো বোঝেই না। যখন সে ক্লাস করায় অংকের দিকে না তাকিয়ে, ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু সে বুঝেই না, উল্টো খালি রাগ করে। এখন সব সয়ে নিচ্ছি কিন্তু বিয়ের পর এমন টাইট দেবো না যে তার চৌদ্দ পুরুষ আমাকে মাথায় করে রাখবে হিহিহি।

?

প্রতিদিনের মতো আজকেও আমার ঘুম ভেঙেছে দেরিতে, কোচিং এ যেতে হবে। চট জলদি গোসল টা সেড়ে কালো চুড়িদার টা পরে নিলাম। কালো রং টা নীলের পছন্দের তাই তো আমার আলমারি ভরা কালো রঙের জামা।

ভেজা চুল গুলো পিঠে ছড়িয়ে দিয়ে চোখে কাজল পরছিলাম তখন নিতু হুরমুড়িয়ে রুমে ঢুকলো।

— তুই সারাদিন আয়নার সামনে বসে থাক আর এদিকে দুনিয়া অর্ধেক ভেঙে যাক।

— তুই একদম কথা বলবি না, অপরাধী! তুই আমার বাড়ি এলি কেনো? যাহ! যাহ! হুশ! হুশ!

— বললেই হলো! আমার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি এটা। কে আটকাবে আমাকে?

— আমি আটকাবো। পেত্নি তোর জন্য কালকে তোর ভাইয়া আমাকে মাঝ রাস্তায় দাড় করিয়ে রেখেছে। তুই আইডিয়া দিয়েছিল প্রপোজ করার।

— ও মা এখন সব আমার দোষ তাই না! তা বলি কি প্রপোজ না করলে ভাইয়া তোকে কেনো ভালোবাসতে যাবে? সে তো জানবেই না তোর মনে কি আছে।

— কিন্তু করেই বা কি লাভ হলো! দেখলি তো কি করলো যমরাজ টা!

— তুই তো একটা গাধা,, কেনো বলতে গেলি যে ডেয়ার ছিল?

— এটা না বললে যমরাজ কাব্য ভাইয়াকে সব বলে দিতো।

— মেরি জান, যাব পেয়ার কিয়া তো ডারনা কেয়া!

— তুই অনেক পেঁকে গেছিস। তোর ভাইয়া আর আমার বিয়ের পর সবার আগে তোকে বিয়ে দেবো।

— কেনো কেনো আমি কি করলাম!

— ননদিনী তোমায় তো বিদায় করবোই। তারপর পুরো বাড়িতে আমার রাজত্ব। হিহিহি।

— আগে ভাইয়াকে পটাও ভাবি জি।

— আজকে কালো চুড়িদার পরেছি, দেখিস আমার হাটু অব্দি চুল দেখে তোর ভাইয়া ফিদা হয়ে যাবে।

— সে তো দুইবছর ধরেই দেখছে!

— আজকে রাতেই তোর ভাইয়া আমার প্রেমে পরবে দেখিস তুই।

— ভালো কথা মনে করিয়েছিস। তানিয়া আপুর হলুদের ফাংশনের পর কিন্তু আর বাসায় আসতে পারবি না। আমার সাথেই থেকে যাবি।

— আসতে চায় কে! আমি তো নীলের সাথে থাকতে চাই সবসময়। কপাল ফুঁটা তাই তোর সাথে থাকতে হবে। (বিরবির করে বললো কথা)

— কি বলছিস?

— কিছুনা, চল জলদি যাই। নয়তো আবার যমরাজ রেগে যাবেন।




ক্লাসে নীল ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি, মুখে মশা ঢুকলেও কিছু করার নেই। আজকে আমার কালো রং পরাতে কি যে খুশি লাগছে! নীল ভাইয়াও একটা কালো শার্ট পরে আছে। পুরোই ডার্ক চকোলেটের মতো লাগছে। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

— এভাবে আমার ভাইয়ের ওপর নজর লাগিও না ভাবি।

— ননদিনী আজ নজর লাগাবো না,, আজ তো পুরোই চকোলেট লাগছে তোমার ভাইয়া!

— খেয়ে ফেলবি নাকি!

— ওরে তোরা কে কোথায় আছিস আমাকে সামলা নাহলে সত্যি খেয়ে ফেলবো উনাকে!

কোচিং এর সিনিয়র আপুরা নীলের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সব লুচিগুলো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আমার জামাইটাকে। এর আগেও কতোগুলো আমার জামাই কে প্রপোজ করেছিল। সেগুলোকে কতো কষ্টে দূর করেছি তা শুধু আমি জানি। এই মেয়েগুলো আমার থেকেও বড় ছ্যাঁচরা। এমন ভাবে তাকাতে হবে কেনো অন্যের জামাইর দিকে!!

ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে গেছে, নীল ভাইয়া মাথা নিচু করে কিছু কাগজ গুছাচ্ছেন। আমি তার সামনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছি।

— কি হলো, কিছু বলবি?

— না আসলে!

— বল কি বলবি?

— নীল ভাইয়া!

— আবার ভাইয়া!

— মানে নীল স্যার! বলছি কি,, আপনি আর কালো শার্ট পড়বেন না।

— কেনো পরবো না? (ভ্রঁ কুচকে)

— আরেহ আপনি দেখেন না ওই সিনিয়র আপু গুলো কিভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আপনাকে! কালো শার্টে আপনার ফর্সা শরীর টা আরও বেশি ফুঁটে রয়েছে। আর এসব কি হ্যাঁ! উপরের বাটন খুলা কেনো? আপনি বোঝেন না আমার হিংসা হয় কোনো মেয়ে আপনার দিকে তাকালে!

— আমার দিকে যেই তাকাক তোর কেনো হিংসা হবে? তুই আমার কি লাগিস?

— আমি আপনার,,,

— বল! কি সম্পর্ক তোর আর আমার? আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড?

নীল ভাইয়া কথাগুলো বলছেন আর একপা দু পা করে আমার দিকে এগুচ্ছেন। আর আমি একপা একপা করে পিছাচ্ছি। পিছাতে পিছাতে দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে। নীল ভাইয়া এখনও আমার দিকে আগাচ্ছেন। এক পর্যায়ে উনি একদম আমার মুখ বরাবর এসে থামলেন। এই দুই বছরে নীলের এতো কাছে কখনও আমি আসি নি। আমার নিশ্বাস খুব দ্রুত উঠা নামা করছে। বুকে কেমন ধুকধুক করছে। জানি না এমন কেনো লাগছে, কিন্তু সব মিলিয়ে বেশ অস্বস্তি লাগছে।

— কিরে বল! আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি প্রেমিক? নাকি জামাই? কোনটা আমি তোর?

— ককিছু ননা।

— তাহলে কেনো তোর হিংসা হয়?

নীলের প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার কাছে নেই। মাথা নিচু করে চোখ-মুখ খিচে দাড়িয়ে আছি। হঠাত কিছু ছেড়ার শব্দ কানে এলে চোখ মেলে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।

নীল আমার পরণের কালো ওরনার বেশখানিক টা ছিড়ে ফেলেছেন!

— এটা কি করলেন আপনি? আমার ওরনা ছিড়ে দিলেন! এখন তো আমার পুরো ড্রেসটাই বাতিল হয়ে গেলো!

— বাতিল করার জন্যই ছিড়েছি। আজ তো শুধু ওরনা ছিড়েছি। এর পর যদি কখনও দেখেছি কালো রং এর জামা পরেছিস,, তাহলে ওরনা নয় সোজা জামা ছিড়বো। এখন এখান থেকে যা।

রাগে আমার ইচ্ছে হচ্ছে আমার ওরনার মতো তার শার্ট টাও ছিড়ে ফেলি। না শুধু ছিড়লে আমার রাগ কমবে না। কাঁচি দিয়ে কুচি কুচি করে কাটবো। ব্যাগ টা কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে হাটা ধরলাম। চুল গুলো হাত খোঁপা করে নিয়েছি। যার জন্য এতো কষ্ট করে সাজলাম, সে কি করলো! আমার ওরনা টাই ছিড়ে দিলো! ছাড়বো না, দেখে নেবো!

অতিরিক্ত রাগ হলে আমার চোখ বেয়ে পানি পড়া শুরু হয়। এবারও চোখ বেয়ে পানি পরছে। কি মনে করে সে নিজেকে? আমার ভালোবাসা তো বোঝেই না উল্টো এমন করে আমার সাথে। যাবো না তার বোনের বিয়েতে। আর ভালোবাসবো না তাকে। আজকেই ভুলে যাবো!!

?

বাড়িতে গিয়ে কাঁধের ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে একটা চকোলেট নিয়ে খেলাম। এখন অনেকটা ভালো লাগছে। রাগটাও অনেকটা কমে গেছে।

একটা ব্যাগে হলুদের জন্য শাড়ি আর প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র ঢুকাচ্ছি। তানিয়া আপুর হলুদে যেতে হবে না! ওই যমরাজ টার ওপর রাগ করে আমি কেনো আমার আনন্দ মাটি করবো? আমাকে কি শাবানা মনে করে নাকি যে এতোটুকুতেই কেঁদে টেদে অস্থির হয়ে যাবো!

আম্মু আব্বুর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম নীল দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কাল নীলের বোন তানিয়া আপুর বিয়ে। নীল স্যারের বাবা নজরুল খান দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম পক্ষে তাহেরা বেগম আর তার দুই মেয়ে তায়েবা আর তানিয়া আপু আর এক ছেলে নীরব। তায়েবা আপুর আগেই বিয়ে হয়েছে। দ্বিতীয় পক্ষে নয়নতারা বেগম। তার ছেলে নীল আর মেয়ে নিতু। নীল স্যার বংশের বড় ছেলে। আর আমি খান বাড়ির ভবিষ্যত বড় বউ,, “নীলের বউ।” নিজেকে নীলের বউ বলতে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে! ইশশ!!

ভাবনার সুতোয় টান পরলো খান বাড়ির গেইটের সামনে এসে। পুরো বাড়ি জাঁকজঁমক সাজে সজ্জিত। উঠোনে সব মহিলা রা কাজ করছে। হয়তো এখানেই হলুদের ফাংশন করা হবে।

বাড়ির সাজ দেখে তো রীতিমত আমার মুখ খোলাই রয়ে গেছে। মেয়ের বিয়েতে এতো কিছু করেছে, বাড়ির বড় ছেলের বিয়েতে না জানি কি করবে! বাড়িতে ঢুকতেই সবার আগে আমার শাশুড়ী নয়নতারা বেগমের সাথে ধাক্কা খেলাম।

— এই কথা দেখে চলতে পারিস না! জানিস বিয়ে বাড়ি হাজার টা কাজ আমার।

— সরি আম্মা লাগে নি তো!

— আমি তোর আম্মা কবে হলাম? খালাম্মা বা চাচি বলবি!

— জ্বি খালাম্মা।

আমার কপাল টাই খারাপ! জামাই তো আছেই তিতা নিম, শাশুড়ীও তেমনই। যাক কোনো ব্যাপার না একবার বিয়ে টা হতে দাও সবাই কে টাইট দিয়ে দেবো।

সন্ধ্যায় আমি আর নিতু এক সাথে সেজেগুজে তৈরি। দুজনেই এক শাড়ি পরেছি, সেজেছিও অনেক টা এক ভাবে। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই এক দফা ক্রাশ খেলাম। আজ তো নীল পুরো লাট্টু হয়ে যাবে আমাকে দেখে। এইবার তো নীল এই কথার প্রেমে পরেই যাবে।

মেহমানে পুরো বাড়ি ভরে গেছে। এতো ভীরের মধ্যেও আমার চোখ দুটো নীল কে খুঁজছে। উঠানের মাঝ বরাবর তানিয়া আপুকে সবাই হলুদ দিচ্ছে। তার এক পাশে দাড়িয়েই নীল মেহমানদের সামলাচ্ছে।

নীল একটা হলুদ পাঞ্জাবী পরে আছে। চুল গুলো সেট করা, পাঞ্জাবীর হাতা কুনুই পর্যন্ত উঠানো। এতো হ্যান্ডসাম লাগছে যে আমার চোখ সরছেই না তার উপর থেকে। আচ্ছা তার এতো হ্যান্ডসাম হওয়ার কি দরকার ছিল! এখানেও সব মেয়েরা তার দিকে তাকিয়ে আছে। এই অবলা মেয়েটার জিনিসে সবাই নজর দেয়।

শাড়িটা সামলে নীল এর দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই কারো সাথে জোড়ে ধাক্কা লেগে ধারাম করে নিচে পরে গেলাম। কোমড়ে বেশ ব্যথা পেয়েছি। মাথা তুলে তাকাতেই দেখি সামনে…

চলবে…

শ্রাবণের মেঘ পর্ব_০১

0

#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_০১
#Tabassum_Kotha

কান ধরে চৌরাস্তার মোড়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে কথা। কাঁধে স্কুল ব্যাগ, মাথায় দুই বেণী করা তার। সামনের ছোট চুল গুলো মুখে এসে পরছে বারবার। গোধূলী লগ্ন শুরু হয়েছে মাত্র। দিনের শেষ রোদের ফালি কথার কপালে এসে পরছে। আশেপাশের উৎসুক জনতা বেশ উৎসাহের সাথে হা করে দেখে যাচ্ছে তামাশা। কানাঘুসার সাথে সাথে ঠাট্টাও শুরু করে দিয়েছে। এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি তাদের জন্য।

মাথা নিচু করা অবস্থাতেই চোখ চারদিকে ঘুরিয়ে দেখছি কতোজন অপরাধী আমার অসহায়ত্বের মজা নিচ্ছে। গুণেছি, মোট তেতাল্লিশ জোড়া পা দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার অপমান দেখছে। এর মধ্যে দুই জোড়া পা আমার দুইটা কুত্তি বান্ধবীর। দেখে নেবো দুজনকেই। তুলিকে হালকার উপর ছেড়ে দিলেও নিতুকে ন্যাঁড়া করে গাঁধার পিঠে চড়াবো। কারণ নিতুর ভাইয়ার জন্যই এভাবে দাড়িয়ে আছি। ভাই-বোন দুজনেই অপরাধী। বোন প্রপোজ করার আইডিয়া দেয় আর ভাই প্রপোজ করলে মাঝ রাস্তায় কান ধরে দাড় করিয়ে রাখে। যত্তসব! মশাগুলোও আজ বেইমানি করছে। কামড়ে মনে হচ্ছে খেয়েই ফেলবে।

একটু ঝুঁকে মশা তাড়াতে গেলেই সামনে দাড়িয়ে থাকা যমরাজটা চেচিয়ে উঠলো,
— এই কথা! তুই নিচে ঝুঁকলি কেনো? তোকে আমি সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে বলেছি না?

— আমি কি করবো মশা কামড়াচ্ছে তো।

— মশা শুধু তোকেই চোখে দেখে তাই না! আমিও তো বসে আছি কোই আমাকে তো দিলো না কামড়।

— মশা তিতা রক্ত খায় না,, আপনার রক্ত তিতা। মশা মিষ্টি রক্ত খায় যেমন আমার।

— কি বললি? আমার রক্ত তেতো?

— আর নয়তো কি? তিতা না হলে সবসময় মুখ থেকে নিমের রস পরে কেনো?

— চুপ একদম চুপ। একদম ফালতু কথা বলবি না।

— দেখেন নীল ভাইয়া আমি ফালতু কথা বলি না।

— ওই আমি তোর কোন জনমের ভাই লাগি? তুই কি আমার মায়ের পেটের বোন যে কথায় কথায় ভাই ডাকিস!

— ছিঃ ছিঃ!! মায়ের পেটের ভাই হতে যাবেন কেনো? এলাকার বড় ভাই লাগেন আর কাব্য ভাইয়ের বেষ্টফ্রেন্ড আপনি সেই সুবাদে আর কি।

— কোনো সুবাদ টুবাদ নেই। আমি তোর স্যার লাগি। আমাকে স্যার বলেই ডাকবি।

— হুম। এখন যাই? স্যার!!

— শাস্তির শর্ত অনুযায়ী দশবার কান ধরে উঠবস বাকি আছে।

— অ্যাঅ্যা স্যার! মাঝরাস্তায় কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছেন সেটা কি যথেষ্ট নয়? বলি কি উঠবস টা না করলে হয় না?

— তুই যদি এখন উঠবস না করিস তাহলে আমি কাব্যকে বলে দেবো তুই আমাকে প্রপোজ করেছিস।

— এই না না নীল ভাইয়া আপনি কাব্য ভাইয়াকে এসব বলবেন না প্লিজ। বাবা জানতে পারলে আমাকে মেরে কুচিকুচি করে ফেলবে।

— তাহলে বল প্রপোজ কেন করেছিলি?

— ডেয়ার ছিল তাই করেছিলাম।

— কিহ! প্রপোজ করার ডেয়ার! মাথা নষ্ট তোর কথা? আস্ত একটা ছাগলি তুই। এই ধরনের ডেয়ার কেউ নেয়?

— বকছেন কেনো? সরি বলেছি, শাস্তিও দিয়েছেন। এখন বাসায় যাই? সন্ধ্যা নেমে যাবে কিছুক্ষণপর।

— আচ্ছা ঠিক আছে যা। তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ যেনো আর না হয়। সকালে কোচিং এ ঠিক সময়ে আসবি।

— হুম। নীল ভাইয়া!!

— কি হলো?

— আপনাকে নেভি ব্লু শার্টে অনেক হ্যান্ডসাম লাগে!!

— যা এখান থেকে! ছ্যাঁচড়া মেয়ে কোথাকার!

— তুই ছ্যাঁচড়া তোর বাপ ছ্যাঁচড়া তোর চৌদ্দগোষ্ঠী ছ্যাঁচড়া। (কথা বিরবির করতে করতে সেখান থেকে সরে এলো)

চৌরাস্তার মোড় থেকে সরে এসে নিতু-তুলিকে আর পেলাম না। শাকচুন্নি দুইটা মার খাওয়ার ভয়ে পালিয়েছে। কাঁধের ব্যাগটা আরেকটু টেনে হাটা ধরলাম বাড়ির দিকে।

আমি কথা রহমান। কিশোর রহমান ও কলি রহমানের দুইমাত্র সন্তানের মধ্যে ছোট। আমার বড় একটা ভাই আছে। যে কিনা মূলত একটা কষাই। দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তেইশ ঘন্টা আমায় প্যাড়া দেয়। ভাইয়ার নাম কাব্য। আর এতোক্ষণ যে আমাকে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রেখেছিল সে হলো নীল। শ্রাবণের বৃষ্টির দিনে জন্মেছিল, তাই তো স্বভাবটাও বর্ষণের মতো,, হিহিহি।।

নীল ভাইয়ার বাবা আমাদের এলাকাল চেয়ারম্যান। তার ছোট বোন নিতু আমার বেষ্টফ্রেন্ড। নীল এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে আছে কাব্য ভাইয়ার ব্যাচমেট। এলাকার সব মেয়ের একমাত্র ক্রাশ নীল ভাইয়া। হয়তো মেয়েদের ক্রাশ লিষ্টের দ্বিতীয় স্থানে আমার ভাইয়াও আছে। শুধু দেখতেই হ্যান্ডসাম কিন্তু আসলে আস্ত একটা বাদুড়। হিহিহি।

?

গোধূলী লগ্নের শেষ প্রহর চলছে। এই সময় টা বরাবরই আমার পছন্দের। মাঝে মাঝে পড়ার টেবিলে বসে স্বপ্নের জগতে হারিয়ে যাই। কোনো এক শ্রাবণের দিনে আকাশে খুব মেঘ করবে,, আর সেই মেঘের লুকোচুরি দেখতে দেখতে গোধূলি বেলায় প্রিয়তম এর হাত ধরে নদীর তীর বেয়ে অজানায় হারিয়ে যাবো!!

স্বপ্নের জগত থেকে আমাকে টেনে বের করে আনলো আমার আম্মিজান। বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে, ঝাসির রাণীর রূপ ধারণ করে। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় ঢাল তলোয়ার নিয়ে মাঠে নেমে পরবে।

— এতো দেরি কেনো করলি কথা?

— নীল ভাইয়ার কোচিং এ গিয়েছিলাম।

— আমি বুঝি না এই নীল ছেলেটা তোকে আর তোর ভাইকে কি জাদু করেছে! কিছুই বুঝিস না তোরা ওকে ছাড়া।

— আম্মু! মাত্রই বাড়ি এলাম সারাদিন পর তাও এমন কেনো করছো ভিতরে যেতে দাও।

— হ্যাঁ হ্যাঁ আমার কথা কি আর তোমাদের ভালো লাগে নাকি। মা তো নই যেনো কাজের লোক শুধু।

টুয়েন্টি ফোর আওয়ারের অটো রেকোর্ডার শুরু হয়ে গেলো। এখন বেশকিছুক্ষণ একা একাই আমাদের তিনজনকে সাবান পানি ছাড়া ধোবে। আব্বু বাসায় থাকলে আর কথা বলতে পারতো না। আব্বু খুব রাগি। তার রাগ কে আমরা সবাই ভীষণ ভয় পাই।

ঘরে গিয়ে রোজকার মতো ব্যাগটা ছুড়ে বিছানায় ফেলে দিলাম। তবে আজকে একটু জোরে ফেলেছি। কারণ আজ আমি রেগে আছি। নীল ভাইয়া আমাকে মাঝ রাস্তায় অপমান করেছে। তাকে একটা শায়েস্তা না করলেই না। অনেক বার বেড়েছে সে। ছোট বলে কি আমার আত্মসম্মাণ নেই! কিন্তু শত হলেও দোষটা আমার, তার সামনে আমার সব আত্মসম্মাণ বিসর্জন!!

ফ্রেশ হয়ে চিপসের প্যাকেট হাতে টিভির সামনে বসে আছি, বুক ধুকধুক করছে! নীল ভাইয়া হুমকি দিয়েছে কাব্যকে সব বলে দেবে,,, সত্যি যদি বলে দেয়! তাকে আমি বিশ্বাস করি না, ভারী ডেঞ্জারাস লোক সে। কদিন আগেই লুকিয়ে পার্কে যাওয়ার কথাটা কাব্য ভাইয়া কে বলে দিয়েছে।

চিন্তায় আছি, টম এন্ড জেরিতেও মনযোগ দিতে পারছি না। চিপস্ গুলো করুণ দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে কখন আমি তাদের খেয়ে সাবার করবো। কিন্তু ওইযে চিন্তায় আছি তাই খাওয়ার দিকে মুড নেই।

ঘড়িতে সন্ধ্যা ৭:৫৬ বাজে, আর চার মিনিট পর নবাবজাদা বাড়ি ফিরবেন। কারণ আব্বু বাড়ি ফেরেন ৮:২০ এ। আর কাব্য ভাইয়া আব্বু বাড়ি ফেরার আগেই আসবেন। অস্থিরতা আমাকে গ্রাস করে নিয়েছে। ভাইয়া যদি বাবাকে বলে দেয় প্রপোজ করার কথা!! বাবা তো আমাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবেন মাটি তে!! ইয়া খোদা এই অবলা কথা কে বাঁচাও তুমি।

— মা! ও মা! জানো তোমার মেয়ে কথা আজ কি করেছে? (কাব্য)

যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। যমরাজ টা সব বলে দিয়েছে কাব্যকে আর কাব্য এখন বাবা কে বলে দেবে! ইচ্ছে করছে এক গ্লাস পানিতে ডুবে মরে যাই। ভাইয়াকে যতোই চোখের ইশারা করছি সে ততো জোরে চেচাচ্ছে।

— কি হলো চেচাচ্ছিস কেনো? কি করেছে কথা? (কলি বেগম)

— মা তোমার মেয়ে আজ!! তোমার মেয়েকে আজ নীল কানে ধরিয়ে দাড় করিয়ে রেখেছিল!(কাব্য)

— কিহ! কি বললি তুই? কিন্তু কেনো? কি করেছিস তুই কথা? কাব্য কি বলছে এসব!

মা বিস্মিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যতো দোয়া দূরদ জানা ছিল মনে মনে সব পড়ে শেষ করে ফেলেছি। কিন্তু ভাইয়ার রাগি মুখটা স্বাভাবিক হচ্ছে না। আজ হয়তো আর শেষ রক্ষা হবে না। মা যেমন তেমন আব্বু আমাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেবেন। হয়তো আজকেই নীল ভাইয়ার কোচিং এ যাওয়ার শেষ দিন ছিল আমার। বেটা যমরাজ আজ যদি আমি বেঁচে যাই তবে কাল তোকে দেখে নেবো। নাহলে আমার নামও কথা না হুহ!!

চলবে,,

শুকনো ঘাস ফুল part: 18 &last

0

#শুকনো_ঘাস_ফুল?
#natasa_islam_muntaha
#part::18 &last

সেই হাত ওয়ালা :আমি চাই সব সময় এভাবেই থাকতে আহাধ

আহাধ হাতটাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে এই হাতটা তার কাছে খুব চেনা …

রাহুল তখন ওখান এ আসে আর

রাহুল:মিষ্টি ওহ সরি ভুল সময় আসলাম ..আমি আসি কেমন ….পরে না হয় আবার একদিন আসবো
আহিবা:ভাইয়া প্রথম আসলা কিছু খেয়ে যাও
রাহুল:নাহ রে মিষ্টি পাখি পরে একদিন আসবো কেমন
আহিবা:আচ্ছা আপুকেও নিয়া আসবা
রাহুল:আচ্ছা আনবো সাবধানে থাকিস বোন …নিজের খেয়াল রাখিস ..আর কোনো সমস্যা হলেই জানাবি আমায় ..
আহিবা:হুম ভাইয়া

রাহুল চলে যেতেই আহাধ চোখটা পিট পিট করে খোলে …আর মুখে বিশাল একটা হাসি দেয়

আহাধ:আমি জানতাম তুমি আসবে
আহিবা:ওহ হো তাই নাকি ..আপনি কি জ্যোতিষী নাকি যে জানতেন
আহাধ:হুম তো আমি ভালোবাসার জ্যোতিষী
আহিবা:হুম হয়েছে এখন হাতটা ছারুন

আহাধ আহিবাকে টান দিয়ে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে দেয় ..

আহাধ:আমার বউ আমার বাড়ি কাকে ছারবো আর না ছারবো সেটা আমি বুঝবো বুঝলা
আহিবা;এইটা কেমন কথা ছারুন তো
আহাদ:ওকে এখন অসুস্থ দেখে ছেরে দিলাম ..সুস্থ হও তারপর আর কোনো ছারা ছারি নেই

আহাধ আহিবার কপাল এ চুমু দিয়ে ছেরে দেয়

দুজনের ঘুনশুটিতেই কাটতে থাকে তাদের সময় আহিবার ১ বছর পর আবার পড়াশুনা শুরু করে ..সাথে আহাধ একদিন নিজের পড়াশুনা অন্যদিকে অফিস সামলায় ..বেশ ভালোই দিন কাটে

বাসায় আসতেই নিছা কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যায় ..নিছা বাসার সবার চোখের মনি …এই ৫ বছরে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই ..

এনি আর রাহুল একটা এক্সিডেট এ মারা যায় কপাল গুনে বেচে যায় ছোট নিছা …ডাক্তার আহিবাকে বলেছে সে চাইলেও আর কখনই মা হতে পারবে না …আহিবা ভেগে পরেছিল বড্ডা …..

কিন্তু রাহুল আর এনির মৃত্যুর পর আহিবা নিছাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে ..নিজের মেয়ের মতো তাকে বড় করে তোলে একটু একটু করে নিছার বয়স মাএ দেড় বছর ..তার আদো আদো কথা ভড়িয়ে রাখে সমস্ত বাড়িটাকে …

রাফি বিয়ে করছে ..মিমকে মাশা-আল্লাহ তার যেমন রুপ তেমন ব্যাবহার …নিছাও তার চোখের মনি কেউ কখনও বুঝতে দেয়না ..নিছা এই পরিবারের সদস্য না …

নিছা:মাম্মা আমলা এখানে ক্যান এতেসি
আহিবা:এটা কবর স্থান সোনা ..তোমার আর একটা মাম্মা আর বাবাই

হুম আজ রাহুল আর এনির প্রথম মৃত্যু বার্ষিকি তাই আহিবা আর আহাধ কবর জিয়ারত করতে এসেছে ছোট নিছা কে নিয়ে ….

নিছা:বাবাই মাম্মা কি বলতে আর এলটা মাম্মা আর বাবাই মানে
আহাধ:মানে তোমার তারাও একটা মাম্মা আর বাবাই হয় সোনা .
নিছা:ওহ আমি বুলতে পেরেচি…
আহিবা :হুম তো এখন চলো
আহাধ:হুম

আহাধ আহিবা আর নিছা কিছুটা দূরে এসে আবার পিছন ফিরে তাকায় আহিবা আর একটা ছোট দীর্ঘস্বাস ফেলে

আহিবা ;আপু তোরা চলে যাওয়ায় যতটা কষ্ট পেয়েছি তা হয়তো তোরা বুঝবি না ..কিন্তু তোদের নিছাকে জড়িয়ে আমি সেই সব কষ্ট ভুলতে থাকতে পেরেছি …আল্লাহ আমার মা হওয়ার ক্ষমতা কেরে নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু আমার কোল অন্ধকার করে দেন নি ….আপু তোরা ভালোথাক …এটাই কামনা করি ….মনে মনে কথা গুলো বলতে বলতেই চোখের কোনা থেকে গড়িয়ে পরেছে কয় এক ফোটা পানি

মানুষের কপাল এ কখন কি আছে কেউ জানে না ….রাহুল এনি মারা গিয়ে আহিবার সংসার পরিপূর্ন করে দিয়েছে ……তাদের জন্য সুখের দিন ছিল সিমীত …..এটাই তাদের ভাগ্যের খেলা ….যাক ভালোথাক এমন ভাবে সব সময় ….আর গল্পটাও আজই শেষ ..কিন্তু কাহিনি চলতে থাকুক সারা জীবন…

সমাপ্ত