Monday, August 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 171



একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৭+৮

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_7
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রায়ান প্রভাকে কোলে নিয়ে চলতে লাগল। অনেক খোঁজার পর রায়ান জঙ্গল থেকে বের হবার রাস্তা খুঁজে পেল এবং প্রভাকে নিয়ে জঙ্গল থেকে বের হয়ে এলো। তারপর কিছুদূর হেটে যেতেই তাদের সাথে দেখা হলো সৌভিক ও অনুরাধার। অনুরাধা প্রভাকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। বলতে লাগল,”তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি প্রভা? জানিস তোর জন্য আমার কত চিন্তা হচ্ছিল।”

রায়ান রাগী স্বরে বলে,”এতই যদি চিন্তা হচ্ছিল তাহলে নিজের বান্ধবীর খেয়াল রাখো নি কেন? আজ যদি ওর বড় কোন বিপদ হয়ে যেত তাহলে এর দায় কে নিত?”

অনুরাধাও রেগে গেল রায়ানের এমন কথা শুনে। তেতে উঠে বলল,”আমার বান্ধবীকে নিয়ে তোমাকে এত মাথা ঘামাতে হবে না। আর তুমি ওকে কোলে নিয়েছ কেন? নামাও ওকে কোল থেকে।”

প্রভা বলল,”তুই চুপ কর অনু। উনি যা করেছেন আমার ভালোর জন্যই করেছেন। আমার পায়ে চোট লেগেছে।”

সৌভিক অনুরাধাকে বলল,”এই মেয়ে তুমি কি দিয়ে গড়া হ্যাঁ? আমার বন্ধু তোমাদের এত বড় উপকার করল আর তুমি ওকে ধন্যবাদ না দিয়ে কথা শোনাচ্ছ?”

অনুরাধা কিছু বলে না। সে সত্যিই অনেক লজ্জিত। আবিরও সেখানে চলে আসে। সে অন্য দিকে প্রভাকে খুঁজতে গিয়েছিল। প্রভাকে সুরক্ষিত দেখে আবির স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,”থ্যাংকস গড। তুমি একদম ঠিক আছো।”

প্রভা আবিরের দিকে তাকায়। আবিরও তাকায় প্রভার দিকে। প্রভাকে এভাবে রায়ানের কোলে দেখে আবিরের মোটেও ভালো লাগে না।

~~~~~~
প্রভা টেন্টের মধ্যে রেস্ট নিচ্ছিল। তার পাশেই ছিল অনুরাধা। সে প্রভাকে অনেক কথা শোনাচ্ছিল এভাবে হুট করে বনের মধ্যে ঢুকে পড়ার জন্য। কিন্তু প্রভা সেসব কথায় কান না দিয়ে আবিরের কথা ভাবতে থাকে। আবিরের চোখে সে নিজের জন্য আজ অনেক দুশ্চিন্তা দেখতে পেয়েছে। প্রভা বুঝতে পারে না এই দুশ্চিন্তার কারণ কি। এছাড়া আবিরের চোখমুখ দেখে সে এটাও বুঝেছে যে তাকে রায়ানের কোলে দেখে আবির মোটেও খুশি হয়নি। এইসব ব্যাপার প্রভাকে অনেক ভাবাচ্ছে। তাহলে কি আবিরও প্রভাকে পছন্দ করে?

অনুরাধা প্রভাকে চুপ থাকতে দেখে বলে,”তুই চুপ করে আছিস কেন? কিছু তো বল।”

“আমি কিছু ভাবছি।”

“কি ভাবছিস তুই?”

“আজ আবির ভাইয়ার চোখে আমি আমার জন্য দুশ্চিন্তা দেখেছি।”

“সেটা তো আমিও দেখেছি। আজ তো আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে গেছি যে আবির ভাইয়া তোকে ভালোবাসেন। তোকে ঐ ছেলেটার কোলে দেখে কি পরিমাণ রেগে গিয়েছিল।”

“তুইও ব্যাপারটা খেয়াল করেছিস?”

“করেছি তো। আমার মনে হয় এবার তোকেই দুই পা আগাতে হবে। আবির ভাইয়ার মনের কথা বোঝার চেষ্টা করতে হবে তোকে।”

প্রভা কিছু বলতে যাবে এমন সময় টেন্টের মধ্যে প্রবেশ করে রায়ান। তার হাতে একটা মলম। রায়ান এসে প্রভাকে জিজ্ঞাসা করে,”তোমার পায়ের অবস্থা এখন কেমন?”

“জ্বি, আগের থেকে ভালো।”

রায়ান তার দিকে মলমটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই মলমটা পায়ে লাগিয়ে নাও সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এটুকু বলেই রায়ান বেরিয়ে যায়। রায়ান বেড়িয়ে যেতেই অনুরাধা বলে,”আচ্ছা, এই ছেলেটা তোর এত কেয়ার করছে কেন রে?”

প্রভা বলে,”আমার মনে হয় উনি খুব ভালো মনের মানুষ। তাই সবসময় আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেন।”

“আমার কাছে তো ব্যাপারটা অন্যরকম লাগছে?”

“কিরকম?”

“আচ্ছা এই ছেলেটা তো আবির ভাইয়ার বন্ধু তাইনা?”

“হুম।”

“এবার আমি ব্যাপারটা বুঝলাম।”

“কি বুঝলি?”

“আবির ভাইয়াই বোধহয় ওকে পাঠিয়েছে তোকে এই মলমটা দেওয়ার জন্য।”

“তাই?”

“তা নয়তো কি? নাহলে ঐ ছেলের কি ঠ্যাকা তোর এত কেয়ার করার? আসলে আবির ভাইয়া অনেক লাজুক প্রকৃতির তো। তাই নিজে না এসে তার বন্ধুকে পাঠিয়েছে তোর সাহায্য করার জন্য। এভাবেই নিজের ভালোবাসার মানুষটার খেয়াল রাখছে।”

প্রভা ভাবতে থাকে অনুরাধার কথাই হয়তো ঠিক। নাহলে কেনই বা রায়ান তাকে শুধু শুধু সাহায্য করবে।

~~~~
প্রভা ও অনুরাধা বাইরে বের হয়। একটু পরেই তাদের স্কুলের সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করবে। তারপর হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাইরে এসেই প্রভাদের সাথে দেখা হয় আবিরের। আবির প্রভাকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,”তুমি এখন কেমন আছ?”

“জ্বি, ভালো।”

“ওহ। নিজের খেয়াল রেখো।”

বলেই সুন্দর করে হাসি দেয়। প্রভা সেই হাসির দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। অনুরাধা তাদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এদেরকে পাশাপাশি কত সুন্দর লাগে। একদম রাব নে বানা দে জোড়ি।”

অনুরাধার ঘোর কা’টে সৌভিকের ডাকে। সৌভিক এসে তাদেরকে বলে,”তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? স্যার, ম্যাডামরা সবাই খেতে ডাকছে।”

অনুরাধা বিরক্ত হয়ে বলে,”হ্যাঁ, যাচ্ছি যাচ্ছি। প্রভা চল।”

আবির প্রভার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকে।

খাবার টেবিলে পাশাপাশি বসে প্রভা ও আবির। অনুরাধা আর সৌভিকও পাশাপাশি বসেছে। রায়ান বসেছে অন্য দিকে। অনুরাধা তো সৌভিককে নিজের পাশে দেখে অনেক বিরক্ত হচ্ছে। বিড়বিড় করে বলছে,”ভগবান! তুমি তো জানো এই ছেলেটাকে আমার সহ্য হয়না। তাও কেন বারবার এর সাথেই আমাকে থাকতে হয়?”

সৌভিক অনুরাধার কথা শুনে বলে,”আমারও কোন ইচ্ছা নেই তোমার পাশে বসার। তুমি চাইলে এখান থেকে উঠে যাও।”

“মামার বাড়ির আবদার যেন! আমি কেন যাব? যেতে হলে তুমি যাও।”

সৌভিক আর কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। কারণ স্যার ম্যাডামরা ততক্ষণে খাবার দেওয়া শুরু করেছে। আবির প্রভাকে বলে,”তোমার কিছু লাগলে আমাকে বলো।”

আবিরের এমন ব্যবহারে প্রভা আরো বেশি করে মুগ্ধ হতে থাকে। সে যেন নিশ্চিত হতে থাকে যে আবির তাকে ভালোবাসে।

রায়ান দূর থেকে প্রভার দিকেই দেখছিল। প্রভাকে দেখে সে মনে মনে বলে,”এত মায়া কেন তোমার মধ্যে? তোমাকে যতই দেখি ততই বেশি করে তোমার মায়ায় ডুবে যেতে থাকি আমি। তোমায় দেখার তৃষ্ণা কমার বদলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তোমাকে যে করেই হোক আমি নিজের করে নেবো।”

খেতে খেতে অনুরাধার গলায় খাবার আটকে যায়। সে কাশতে থাকে। সৌভিক অনুরাধার দিকে পানি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই নাও জল খাও।”

অনুরাধা পানিটা খেয়ে নিয়ে বলে,”তুমি জল বললে কেন? তুমি কি হিন্দু?”

সৌভিক বলল,”হ্যাঁ, কেন?”

“আমিও হিন্দু।”

“তো কি করব? তোমার কপালে সিঁদুর পড়িয়ে বিয়ে করব?”

অনুরাধা রেগে গিয়ে বলে,”আমি সেটা কখন বললাম। তুমি কি এক লাইন বেশি বোঝো নাকি?”

সৌভিক হেসে দেয়। অনুরাধার সাথে ঝগড়া করতেও তার কেন জানি খুব ভালো লাগছিল। কিছুক্ষণ পর সৌভিক নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে বলে,”আমি এই মেয়েটাকে নিয়ে এত ভাবছি কেন? কি হচ্ছেটা কি আমার সাথে?”

অনুরাধাও সৌভিকের কথা ভাবছিল। আজ সকালে বাস থেকে পড়ে যাওয়ার সময় সৌভিকই তাকে বাঁচিয়েছে আবার প্রভাকে যখন খুঁজে পাচ্ছিল না তখন সে কাঁদছিল তখন সৌভিকই তাকে সামলাচ্ছিল এখন আবার পানিও খেতে দিলো। তাকে এত সাহায্য করছে কেন? অথচ সে সবসময় ছেলেটার সাথে ঝগড়া করে। অনুরাধার মনেও এবার সৌভিকের জন্য ভালো ধারণার জন্ম নেয়। সে ভাবে,”ছেলেটা একটু কড়া কথা বললেও মনের দিক দিয়ে খারাপ নয়।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_8
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রাঙামাটি থেকে ফেরার সময় পাশাপাশি সিটে যায়গা হলো প্রভা ও রায়ান। রায়ান এতে অনেক খুশি হলেও প্রভার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগল না। সে চাইছিল আবিরের পাশাপাশি থাকতে। অন্যদিকে সৌভিকের পাশে যায়গা পেয়েছে অনুরাধা। এতে অবশ্য প্রথমে অনুরাধা নাখোশ হয়েছিল। সৌভিকের পাশে বসতেও চাইছিল না। কিন্তু পরে আর কোন উপায় না পেয়ে বসে গেছিল। তবে বসার পর থেকে সে মুখ লটকিয়ে ছিল।

রায়ান প্রভার পাশে বসে থাকায় কিছুক্ষণ পরপরই সে প্রভার দিকে তাকাচ্ছিল। প্রভার দিকে তাকাতেই অদ্ভুত প্রশান্তি এসে বাসা বাঁধে রায়ানের মনে। সে যেন নিজের মনে খুঁজে পায় স্বর্গীয় সুখ। রায়ান নিজের বুকের বা পাশে হাত দিয়ে খুবই আস্তে বলে,”আমি জানি না, কখন এবং কিভাবে তুমি আমার এখানে স্থান পেলে। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি তোমাকে আমি কতোটা চাই।”

প্রভা রায়ানকে বলল,”ভাইয়া কিছু বললেন?”

“না, সাধাসিধা মেয়ে। আমি কিছু বলিনি।”

প্রভা আর কিছু বলে না। সে পিছনের দিকে তাকিয়ে একবার অনুরাধাকে দেখে নেয়। অনুরাধা তার দিকে অসহায় চোখে তাকায়। অনুরাধার থেকে চোখ ফিরিয়ে সে তাকায় আবিরের দিকে। আবিরও সেইসময় প্রভার দিকে তাকিয়ে ছিল। দুজনের চোখাচোখি হতেই প্রভা দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। আবির প্রভার এই কাণ্ডে বেশ অবাক হয়। আবির ভাবতে থাকে,”প্রভা আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে চোখ সরিয়ে নিলো কেন? তাহলে ও কি কোনভাবে আমায় পছন্দ করে?”

ব্যাপারটা ভাবতেই হাসি ফুটে ওঠে আবিরের মুখে। ব্যাপারটা তার কাছে অনেক ভালো লাগতে থাকে। আবির বলে,”প্রভা যদি আমায় পছন্দ করে তাহলে ব্যাপারটা অনেক দারুণ হবে। সেই প্রথম দেখার পর থেকেই তো আমি মেয়েটাকে পছন্দ করি। যা আজ অব্দি আমি কখনো ওকে বলতে পারিনি।”

~~~~~
তখন একটু রাত হয়েছে। বাসের মধ্যে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সৌভিকেরও ঘুম পাচ্ছিল। এমন সময় সে খেয়াল করে তার কাধে কারো মাথা। সৌভিক চমকে ওঠে। নিজের কাধের দিকে তাকিয়ে অনুরাধাকে দেখে আরো বেশি চমকে যায় সৌভিক। অনুরাধাকে নিজের এত কাছে দেখে তার হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে খুব দ্রুত বেড়ে যায়। আগে কখনো কোন মেয়েকে নিজের এত কাছে দেখে নি সে। সৌভিক চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস নেয়। সে হাসফাস করছিল কিন্তু অনুরাধা ঘুমিয়ে থাকায় কিছু করতে পারছিল না। সে চাইছিল না অনুরাধার ঘুম ভাঙাতে। এর মাঝে অনুরাধা হঠাৎ কেশে ওঠে। সৌভিক বুঝতে পারে জানালা খোলা থাকায় হাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। তাই সে খুব সাবধানে জানালাটা বন্ধ করে দেয়। অনুরাধা তবুও কাশছিল। সৌভিক খেয়াল করে অনুরাধার গায়ে কোন ভারী পোশাক নেই। তাই সে আর কোন উপায় না পেয়ে নিজের ব্যাগ খুলে তার সাথে আনা চাদর জড়িয়ে দেয় অনুরাধার গায়ে। তারপর অনুরাধার দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত অনুরাধাকে কতোই না ইনোসেন্ট লাগছে। সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”কে বলবে এই মেয়ে জেগে থাকলে কিরকম ঝগড়া করে? মেয়েটাকে কিন্তু আসলেই অনেক মিষ্টি দেখতে।”

প্রভাও ঘুমিয়ে পড়েছে রায়ানের কাধে মাথা রেখে। রায়ান ব্যাপারটাকে অনেক বেশি এনজয় করছে। প্রভাকে নিজের এত কাছে দেখে সে অনেক খুশি। অন্যদিকে আবির দূর থেকে এটা দেখে অনেক বেশি জেলাস হয়ে যায়। আবির ভাবে যদি প্রভা তার সাথে বসতো তাহলে কতোই না ভালো হতো। একটু ভেবেই সে বলে,”রায়ানকে আমার মনের কথাটা জানিয়ে দিতে হবে। ওর মনে তো আর প্রভাকে নিয়ে কোন অনুভূতি নেই। রায়ান তো আমার ছোটবেলার বন্ধু। ও যখন আমার মনের কথা জানতে পারবে তখন নিশ্চয়ই সাহায্য করবে আমাকে আর প্রভাকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া প্রভাও তো আমাকেই পছন্দ করে।”

এটা ভেবেই খুশি হতে থাকে আবির। তবে সে তো আর জানে না রায়ানের মনে প্রভাকে নিয়ে অনুভূতি করতো প্রখর। যেটা দিনকে দিন আরো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছিল।

অনুরাধার ঘুম হঠাৎ করে ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে সে নিজের গায়ে চাঁদর দেখে অবাক হয়। আবার জানালার দিকে তাকিয়েও অবাক হয়। কারণ সে যখন জেগেছিল তখন তো দেখেছিল জানালা খোলা। অনুরাধার নজর যায় সৌভিকের দিকে। ছেলেটা শীতে কাপছিল। অনুরাধা হালকা কেশে সৌভিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,”এই চাদরটা কি তোমার?”

“হ্যাঁ।”

“তোমার তো ঠান্ডা লাগছে। তুমি এটা নিতে পারো।”

“না, থাক। আমার কোন সমস্যা নেই।”

সৌভিকের এই ব্যাপারটা অনুরাধার অনেক ভালো লেগে যায়। কারণ সে স্পষ্ট বুঝতে পারছিল সৌভিকের ঠান্ডায় অনেক প্রব্লেম হচ্ছে কিন্তু তবুও সে অনুরাধার কথা ভাবছে। অথচ সে কখনো সৌভিকের সাথে ভালো ভাবে কথা পর্যন্ত বলে নি। অনুরাধা এবার চাদরের কিছু অংশ দিয়ে সৌভিকের শরীর ঢেকে দিয়ে বলে,”এবার তো ঠিক আছে তাই না? আমারও হলো আর তোমারও।”

সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকায়, অনুরাধাও তাকায় সৌভিকের দিকে। কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার পর দুজনেই প্রচণ্ড লজ্জায় আবার চোখ সরিয়ে নেয়।
~~~~~
ভোর ৬ টায় সকলে পৌঁছে যায় চট্টগ্রামে। তাদের কলেজের সামনে এসে বাস থামে। সকলের হুড়োহুড়ির শব্দে প্রভার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে যখন সে বুঝতে পারে সে রায়ানের কাধে মাথা দিয়ে রেখেছে তখন দ্রুত স্বাভাবিক হয়। রায়ানকে বলে,”সরি ভাইয়া। ঘুমের মধ্যে কোন খেয়াল ছিল না তাই..”

“কোন ব্যাপার না। আমি কিছু মনে করি নি।”

প্রভা সৌজন্য সূচক হাসি দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে। বাস থেকে নামতেই সে দেখতে পায় অনুরাধাকে। অনুরাধা সৌভিককে তার চাদর ফিরিয়ে দিয়ে বলে,”গতকাল রাতের জন্য ধন্যবাদ। আর আগের সব বেয়াদবির জন্য সরি। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি অনেক ভালো ছেলে।”

সৌভিক হেসে বলে,”আমার মাও আমাকে তাই বলে যে আমি গুড বয়। কিন্তু তোমার কাছে ব্যাড বয় হয়ে থাকতেই আমার ভালো লাগছিল।”

প্রভা অনুরাধার নাম ধরে ডাক দেওয়ায় সে আর কথা না বাড়িয়ে সৌভিকের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সৌভিক অনুরাধার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকে।

রায়ান এসে সৌভিকের কাধে হাত রেখে বলে,”কিরে সৌভিক?! ঐ ঝগড়ুটে মেয়েটার সাথে রাত কেমন কা”টল।”

সৌভিক মুখ ফুসে বলে ফেলে,
“বিন্দাস।”

“কি?”

সৌভিক দ্রুত জিভ কে’টে বলে,”কি আর বলবো দুঃখের কথা মেয়েটা যা নাক ডাকে। একেবারে কুম্ভকর্ণের মতো। ওর নাক ডাকার শব্দে তো আমি রাতে ভালো করে ঘুমাতেই পারিনি।”

“তাহলে একটু আগে হেসে হেসে কথা বলছিলি কেন?”

সৌভিক প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বলে,”আরে তেমন কিছু না। আচ্ছা, তুই আমায় বল সারারাত ভাবির পাশে কেমন কা’টলো? আমি তো খেয়াল করেছি ভাবি তোর কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল।”

রায়ান গতকাল রাতের কথা ভেবে হাসতে থাকে। গতকাল রাত সত্যি তার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছিল যে। রায়ানের ভাবনায় ছেদ পড়ে আবিরের ডাকে। আবির দূর থেকে দৌড়ে দৌড়ে তাদের দিকেই আসছিল। রায়ানের সামনে এসে সে হাফাতে থাকে।

আবির সৌভিক আর রায়ানকে বলে,”তোরা সবসময় আমাকে রেখে কি গোপন কথা বলিস রে এত?”

সৌভিকঃআরে তেমন কিছু না।

রায়ান বলে,”তুই জানতে চাস তো আমরা কি কথা বলি?”

“তোর কথা পরে শুনব রায়ান। আগে তুই আমার একটা গোপন কথা শোন। যেটা আমি তোকে বলতে চাই। তুই আমার সাথে আয়। এখানে বলা যাবে না। এটা তোর আর আমার গোপন কথা।”

সৌভিক বলে,”আমাকে বলা যাবে না?”

আবির বলে,”না, আগে আমি রায়ানকে বলব তারপর সবাইকে।”

এটা বলে সে রায়ানকে নিজের সাথে টেনে নিয়ে যেতে থাকে আর মনে মনে বলে,”আজ আমি রায়ানকে প্রভার প্রতি আমার ভালো লাগার কথা বলে দেব। রায়ান নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে এই ব্যাপারে।”

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৫+৬

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_5
#ইয়াসমিন_খন্দকার

দেখতে দেখতে অনুরাধা ও প্রভার কলেজে কয়েকটা দিন সানন্দে অতিবাহিত হয়ে গেল। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অনেক কিছু বদলেছে। প্রভার সাথে আবিরের যতবারই দেখা হয়েছে প্রভা ততবারই লজ্জায় মূর্ছা গেছে। কখনো ঠিকভাবে কথাই বলতে পারে নি৷ এদিকে অনুরাধা হাত ধুয়ে পড়ে আছে প্রচার সাথে আবিরের রিলেশন করিয়ে দেওয়ার জন্য। এজন্য সে সবসময় প্রভাকে বলে আবিরের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে। কোন পড়া বুঝতে চাওয়ার ভান করে হলেও তার সাথে সময় কাটাতে কিন্তু লাজুক প্রভা এসব কথা কানে নেয় না৷ তবে অনুরাধা হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। সেও নানারকম ভাবে সুযোগ খুঁজছে আবির ও প্রভার প্রেম করিয়ে দেবার।

এরকমই একদিন হঠাৎ কলেজে ঘোষণা করা হলো খুব শীঘ্রই কলেজ থেকে শিক্ষাসফরে যাওয়া হবে রাঙামাটিতে। সব ছাত্র-ছাত্রীই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল। অনুরাধাও এই শিক্ষা সফরে যেতে ইচ্ছুক। প্রভাকে এই ব্যাপারে বলতেই সে বলল,”তুই গেলে যা, আমি যাবো না।”

“এমন কেন রে তুই প্রভা?”

“তুই তো জানিসই আমার এসব ভালো লাগে না।”

অনুরাধা প্রভাকে নানাভাবে মানানোর চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়৷ শেষে হাল ছেড়ে বলে,
“ঠিক আছে। তুই না গেলে না যা। আমি একাই যাবো।”

~~~~~~~
শিক্ষাসফরে কারা যাবে কি যাবে না সেই নাম লিস্টে তোলার দায়িত্ব পড়েছে আবির, রায়ান, সৌভিক এই বন্ধুর হাতে। রায়ান ও সৌভিক যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের আর্টসের ক্লাসে গিয়ে নাম লেখাতে থাকে তখন রায়ানের দুচোখ শুধু প্রভাকেই খুঁজতে থাকে। এরমধ্যে অনুরাধা এসে বলে,”আমার নামটা লিখিয়ে নাও।”

সৌভিক বিরক্তি নিয়ে বলে,”কি নাম তোমার বলো।”

“অনুরাধা দাস।”

“আচ্ছা, লিখিয়ে নিয়েছি যাও এখন।”

অনুরাধা যেতে যাবে এমন সময় রায়ান তাকে আটকে বলে,”তোমার ঐ সাধাসিধা বান্ধবী যাবে না?”

“না, ওর যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।”

বলেই অনুরাধা চলে আসে। সৌভিক রায়ানকে বলে,”তোর ব্যাড লাক ভাই। ভাবি শিক্ষাসফরে যাবে না।”

“ও যাবে।”

“যাবে মানে? ঐ মেয়েটা তো বললোই যে ও যেতে ইচ্ছুক নয়।”

“তোকে এত কিছু ভাবতে হবে না৷ তুই শুধু খাতায় প্রভার নামটা তুলে নে। টাকা আমি দিয়ে দেব।”

“এটা কিভাবে হয়?”

“তোকে যেটা বলেছি সেটা কর। বাকিটা আমি সামলে নেব।”

~~~~~~~
আজ কলেজ থেকে যারা যারা শিক্ষাসফরে যাবে তাদের নামের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় নিজের নাম দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেল প্রভা। অবাক হয়ে অনুরাধাকে জিজ্ঞেস করল,”আমি তো শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য নাম লেখাই নি। তাহলে আমার নাম এখানে এলো কিভাবে?”

“জানি না প্রভা। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“সত্যি করে বল তো তুই আমার নাম দিস নি তো?”

“তুই কি পাগল হলি নাকি? নিজেই শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য কত কষ্ট করে ৫ হাজার টাকা ম্যানেজ করলাম তার উপর আমি আবার তোর নাম কিভাবে দেব?”

প্রভা ভেবে দেখে অনুরাধা তো ঠিকই বলছে। তাহলে তাঁর নামটা লেখালো কে? প্রভার ভাবনার মাঝেই অনুরাধা বলল,”কি রে কি ভাবছিস?”

“কিছু না।”

বলেই প্রভা কোথাও যেতে নেয়। অনুরাধা প্রভাকে আটকে বলে,”কই যাচ্ছিস রে তুই?”

“স্যারকে বলে আমার নামটা ক্যানসেল করতে হবে।”

“আরে থাক। তোর নাম যখন একবার উঠেই গেছে তখন তুই চল আমার সাথে। আমিও তো যাবো খুব মজা হবে।”

“আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।”

অনুরাধা কিছুক্ষণ ভেবে বললো,”এক মিনিট দাঁড়া, তোদের ক্লাসে শিক্ষাসফরে নাম কি আবির ভাইয়া লিখিয়েছে?”

“হুম। কেন?”

” তোকে কি কিছু জিজ্ঞেস করেছিল?”

“হ্যাঁ, বলেছিল শিক্ষা সফরে যেতে চাই নাকি। আমি সোজা না করে দিয়েছিলাম। তারপর আর কিছু বলেনি।”

“এবার আমি সবটা বুঝতে পারলাম।”

“কি বুঝলি?”

“আমার মনে হয় আবির ভাইয়াই তোর নাম লিখিয়েছে।”

“উনি এমন কেন করবেন?”

“তুই আসলেই একটা গাধী। তুই বুঝতে পারছিস না আবির ভাইয়া এমন কেন করল?”

“না, পারছি না।”

“আরে গবেট, আবির ভাইয়া চায় যে তুই সকলের সাথে শিক্ষাসফরে যাস।”

“উনি এমনটা কেন চাইবেন?”

“কারণ ওনার তোকে পছন্দ।”

“এসব কি বলছিস টা কি তুই?”

“যেটা সত্যি সেটাই।”

“তুই কিভাবে বুঝলি যে উনি আমায় ভালোবাসেন?”

“কারণ আমার সিক্স সেন্স আছে। সেদিন ক্যান্টিনে যখন আবির ভাইয়া যেচে তোর সাথে কথা বলতে এসেছিল তখনই তো আমি ওর চোখ দেখেই বুঝেছিলাম যে ও তোকে ভালোবাসে।”

প্রভা এবার একটু লজ্জা পেয়ে যায়। প্রভা বলে,”আরে দেখো মেয়ের অবস্থা। লজ্জায় ফর্সা গাল একদম লাল হয়ে গেছে।”

প্রভা বলল,”তাহলে এখন আমার কি করা উচিৎ?”

“তোর উচিৎ আমাদের সাথে শিক্ষাসফরে যাওয়া।”

“কিন্তু বাড়িতে কি বলব?”

“তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি আন্টির সাথে কথা বলে নেব। আমি বললে আন্টি ঠিকই রাজি হবে।”

“আচ্ছা। যা ভালো মনে করিস কর।”

~~~~
আজ শিক্ষাসফরে যাওয়ার দিন। সকাল সকাল অনুরাধা এসে উপস্থিত হয়েছে প্রভাদের বাসায়। প্রজ্ঞা বেগম অনুরাধাকে ভালো করে পরখ করে নিলো। অনেক সুন্দর করে সেজেছে মেয়েটি। আর অন্যদিকে তার মেয়ে প্রভা। যার সাজসজ্জার প্রতি কোন আগ্রহই নেই। তিনি অনুরাধাকে বললেন,”প্রভাকে একটু দেখে রেখো। আগে কখনও তো একা এতদূর যায়নি। তোমার ভরসাতেই কিন্তু ওকে যেতে দিচ্ছি।”

“আপনি কোন চিন্তা করবেন না আন্টি। আমি ওর খেয়াল রাখব।”
~~~~~~~~

প্রভা ও অনুরাধা যথাসময়ে কলেজে এসে উপস্থিত হলো। কলেজে আসতেই তাদের সাথে আবিরের দেখা হয়ে গেল। আবির প্রভাকে দেখে বললো,”তুমি তাহলে শিক্ষাসফরে যাচ্ছ?”

প্রভা লাজুক হেসে বললো,”জ্বি।”

আবির আর কিছু বলতে যাবে তখনই সৌভিকের ডাক শুনে অন্যদিকে চলে গেল। সে যেতেই অনুরাধা বললো,”আমি আজকেও নোটিস করলাম। আবির ভাইয়া তোর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল।”

অনুরাধার কথায় প্রভা লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে থাকে। এরইমধ্যে তাদের একজন শিক্ষিকা মোছাঃআনোয়ারা বেগম সেখানে এসে তাদের বলেন,”তোমরা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও গিয়ে বাসে উঠে পড়ো। এখনই আমরা রওনা দেব।”

অনুরাধা ও প্রভা বাসের দিকে যায়। প্রভা বাসে উঠে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায়। রায়ান পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে,”আবার ধাক্কা!”

প্রভা আমতা আমতা করে বলে,”সরি।”

“আবার সরি!!”

প্রভা আর কিছু ভাবতে না পেরে দ্রুত বাসে উঠে পড়ে। অন্যদিকে অনুরাধাও তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠতে গিয়ে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যেতে ধরে। তখনই হঠাৎ কারো দুটো বাহু তাকে আগলে নেয়। প্রভা অনুরাধাকে পড়ে যেতে দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে,”অনু…”

অনুরাধার জান যেন বেডিয়ে যাওয়ার জোগাড়। নিজেকে শুন্যে আবিস্কার করে সে আলতো করে চোখ খুলতেই দেখতে পেল সৌভিককে। দেখে প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেল। সৌভিক অনুরাধাকে সোজা করে দিয়ে বলে,”চোখ কোথায় থাকে তোমার? নাকি শুধু মুখই চলে। এখনই আমি না ধরলে তো পড়ে গিয়ে হাত-পা সব ভাঙতে।”

“ধন্যবাদ।”

বলেই সামনে এগিয়ে যায় অনুরাধা। অনুরাধা ও প্রভা গিয়ে একই সিটে পাশাপাশি বসে পড়ে। রায়ান প্রভার দিকে দেখে বারকয়েক। এরমধ্যে আবিরও বাসে উঠে পড়ে। আবির ও রায়ান দুজনে অনুরাধা ও প্রভার কাছে অবস্থিত একটি সিটেই বসে। যেখান থেকে প্রভাকে ভালোভাবেই দেখা যায়। রায়ান বারবার লুকিয়ে লুকিয়ে প্রভাকে দেখছিল। বাস রওনা দেয়৷ সারা রাস্তায় রায়ান যে কতবার লুকিয়ে প্রভাকে দেখেছে তার কোন ঠিক নেই। অন্যদিকে প্রভাও বারকয়েক লুকোচুরি তাকিয়েছে তাদের দিকে। তবে সে রায়ানের দিকে নয় তার চোখ ছিল আবিরের দিকে। এরইমধ্যে একবার তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়। দুজনেই দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। দুজনের মনেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা ঘুরতে থাকে।

রায়ান ভাবছে,”সাধাসিধা মেয়েটা কি ভাবলো? যে আমি হ্যাংলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম? কিন্তু ও তো আমার দিকে তাকালো। তার মানে কি…”

রায়ান আবারো তাকালো প্রভার দিকে। এদিকে প্রভা ভাবলো,”উনি কি ভাবলেন? যে আমি ওনার বন্ধুকে..ছি ছি! আমি আর ভাবতে পারছি না। আমি কি করে এতটা নির্লজ্জ হলাম?”

ভেবেই সে নিজেকে গুটিয়ে নিলো।

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_6
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রাঙামাটিতে পৌঁছে গেছে সকলে। অনুরাধার সাথে বাস থেকে নামে প্রভা৷ তাদের পিছু পিছু আবির ও রায়ানও নামে। সৌভিক একটু পরে নামে। শিক্ষকরা তাদের একসাথে থাকতে বলে এবং অনুসরণ করতে বলে। তারা তাই করে।

রাঙামাটিতে এসে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে থাকে প্রভা। অন্যদিকে রায়ান ডুবে যায় প্রভার মাঝেই। সৌভিক ব্যাপারটা খেয়াল করে নিজের বন্ধুকে বলে,”তুই তো দেখছি প্রেমের সমুদ্রে একেবারে ডুবে গেছিস রে।”

রায়ান হেসে বলে,”এই সমুদ্রের নাম যদি প্রভা হয় তাহলে আমি হাজারো বার এই সমুদ্রে ডুবতে রাজি আছি।”

“তোর রোম্যান্টিক কথা শুনেই আমি বুঝতে পারছি, তুই অনেক ভালো প্রেমিক হবি।”

“তাই যেন হয়।”

এমন সময় আবির সেখানে উপস্থিত হলো। তার হাতে একটি DSLR ক্যামেরা। আবির এসেই সৌভিক ও রায়ানকে বলে,”কিরে, তোরা ঘুরতে এসে এখানে ঘাপটি মে*রে বসে আছিস কেন? চল, গিয়ে রাঙামাটির সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী করি।”

সৌভিক বলল,”এই যে, এসে গেছেন আমাদের ক্যামেরাম্যান আবির। রায়ান তুই যাবি নাকি?”

রায়ান প্রভার দিকে তাকিয়ে ছিল। সৌভিকের কথায় তার ধ্যান ভাঙে। মৃদু হেসে বলে,”চল যাওয়া যাক।”

যদিও তার যাওয়ার তেমন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু আবিরকে খুশি করতে সে রাজি হলো যেতে। কারণ সে না গেলে আবির অনেক কষ্ট পাবে। আর রায়ান নিজের বন্ধুকে কষ্ট দিতে চায় না।

রায়ানরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অনুরাধা এসে প্রভাকে বলল,”চল আমরা একটু আশেপাশে ঘুরে দেখি।”

প্রভা বলে দিলো,”আসলে আমার যাওয়ার ইচ্ছা নেই রে।”

“ইচ্ছা নেই বললেই হলো? চল আমার সাথে।”

এসব বলে একপ্রকার জোর করেই প্রভাকে নিয়ে গেল অনুরাধা। তারা দুজনে মিলে আশপাশটা ঘুরে দেখতে লাগল। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ প্রভার সাথে কারো ধাক্কা লেগে গেল। প্রভা চোখ তুলে রায়ানকে দেখল। রায়ান স্থির চোখে তার দিকেই তাকিয়ে। প্রভা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকায় রায়ান বলল,”আজ সরি বললে না যে?”

প্রভা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। রায়ান প্রভার দিকে একটু ঝুকে এসে বলল,”তোমার কি আমার সাথে ধাক্কা খেতে খুব ভালো লাগে নাকি?”

অনুরাধাও প্রভার পাশে ছিল। সে রায়ানকে বলল,”এই তুমি আমার বান্ধবীকে কি বলছ হ্যাঁ?”

“তেমন কিছু না।”

তাদের কথার মাঝেই আবির চলে এলো সেখানে। আবিরকে দেখে প্রভা হাসিমুখে তার দিকে তাকালো। আবিরও প্রভার দিকে হাস্যোজ্জ্বল দৃষ্টিতেই তাকালো। কিন্তু তাদের মাঝে কোন কথা হলো না। ততক্ষণে সৌভিক সেখানে উপস্থিত হয়ে অনুরাধাকে দেখতে পেল। অনুরাধাকে দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে গেল। তার কেন জানি এই মেয়েটাকে সহ্যই হয় না। সৌভিক আবির আর রায়ানকে বলল,”তোরা কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি সামনেও যাবি?”

আবির বললো,”হ্যাঁ, চল।”

রায়ান যেতে চাইল না কিছুতেই। তার ইচ্ছা করছে প্রভার দিকে তাকিয়ে থাকতে। মেয়েটাকে দেখলে সে যে অদ্ভুত শান্তি পায়। অনুরাধা প্রভাকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে গেলো। তারা যাওয়ার পর সৌভিক এসে রায়ানের কাধে হাত রেখে বললো,”আমার তো মনে হয় এই অনুরাধা নামের মেয়েটা যতদিন আছে ততদিন তোর ভাবিকে নিজের করতে পাওয়া হবে না। ভাবিকে পেতে হলে তোকে আগে এদের বন্ধুত্ব ভাঙতে হবে।”

রায়ান একবাক্যে বলে দেয়,”যদি ঐ সাধাসিধা মেয়ে আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে ওকে আমি এমনিই পাবো। ওকে পাওয়ার জন্য কোন ছলচাতুরী করা বা কারো বন্ধুত্ব ভাঙার প্রয়োজন হবে না।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রায়ান ও আবির ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিল৷ সৌভিক একটু আলসে টাইপ। তাই সে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়। এইজন্য সে আর ওদের সাথে না ঘুরে ক্যাম্পের কাছে ফিরে আসছিল। এমন সময় হঠাৎ কারো কান্না শুনে সে থেমে যায়। কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করে সামনে গিয়ে দেখতে পায় অনুরাধা কাঁদছে। সৌভিকের ভ্রুজোড়া কুচকে যায়। সে অনুরাধার কাছে গিয়ে বলে,”এভাবে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছ কেন? কি সমস্যা তোমার?”

অনুরাধা কান্না থামিয়ে বলে,”অনেক বড় সমস্যা হয়ে গেছে। আমি প্রভাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।”

“খুঁজে পাচ্ছ না মানে? ও তো তোমার সাথেই ছিল।”

“হ্যাঁ, আমার সাথে ছিল কিন্তু আমার ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। এইজন্য আমি ওকে এখানে অপেক্ষা করতে বলে ওয়াশরুমে যাই। তারপর এসে থেকে আর ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। কি করব কিছুই বুঝছি না। আমি আন্টিকে কথা দিয়েছিলাম ওর খেয়াল রাখব। এখন যদি ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি আন্টিকে কিভাবে মুখ দেখাব?”

এসব বলে আরো কাঁদতে থাকে অনুরাধা। সৌভিক বিরক্ত হয়ে রাগী গলায় বলে,”স্টপ। এভাবে কাঁদলে কোন সমস্যার সমাধান হবে না। তার থেকে ভালো চলো আমরা আশেপাশে ওকে খুঁজে দেখি।”

“আমি ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু ওকে কোথাও পাইনি।”

“এতটা ইউজলেস কেউ কি করে হতে পারে? চলো আমার সাথে স্যারদের জানাতে হবে। এভাবে বসে থাকলে হবে না। আমরা কেউ এখানকার কিছুই চিনি না। না জানি তোমার বান্ধবী কোন বিপদে ফেসে গেছে।”

তখনই আবির আর রায়ানও সেখানে চলে আসে। রায়ান এসে বলে,”কার বিপদের কথা বলছিস তুই?”

সৌভিক তাদের সব কথা খুলে বলে। সব শুনে আবির ও রায়ান দুজনেই ভীষণ ঘাবড়ে যায়। দুজনেই একসঙ্গে ছুট লাগায় প্রভাকে খোঁজার জন্য।

~~~
প্রভা একটা বড় চাপালিশ গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনুরাধা তাকে রেখে ওয়াশরুমে চলে যাবার পর সে একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বোর হচ্ছিল এইজন্যই আশেপাশে একটু ঘুরে দেখতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে সে একটা বনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তারপর কখন যে বনের গহীনে চলে আসে সেটা বুঝতেই পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। এখন এই বনটা তার কাছে পুরো গোলকধাঁধা লাগছে। এখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুরেফিরে সেই চাপালিশ গাছটার সামনেই আসছে। প্রভার এখন ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।

এমন সময় হঠাৎ সে সামনে থাকা ঝোপের আড়ালে নড়াচড়ার শব্দ শোনে। সাথে সাথেই সে অনেক ঘাবড়ে যায়। না জানি বনের কোন ভয়ানক প্রাণী হবে। প্রভা মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে।

সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণে দৌড় দেয়। কিছুদূর সামনে গিয়ে হঠাৎ গাছের শিকড়ে পা আটকে পড়ে যায়। যার ফলে প্রভার পায়ে চোট লাগে এবং রক্ত পড়তে থাকে। সে গোঙাতে থাকে। বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকে। এমন সময় কেউ তার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রভা মাথা তুলে দেখতে পায় রায়ানকে। বলে ওঠে,”আপনি!”

রায়ান বলে,”ভেবেছিলাম তুমি শুধু সাধাসিধা এখন দেখছি তুমি যতটা না সাধাসিধা তার থেকেও বেশি গাধী। তাড়াতাড়ি আমার হাত ধরে উঠে এসো।”

প্রভা রায়ানের হাত ধরে উঠে পড়ে। কিন্তু তার পায়ে চোট লাগায় ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিল না। রায়ান প্রভার এই অবস্থা দেখে বলে,”তোমার কি মিনিমাম সেন্স নেই? কি করে এসব বিপদ বাধালে?”

“সরি।”

“আমাকে সরি বলছ কেন? আজ যদি আমি তোমাকে খুঁজে না পেতাম আর তুমি এই বনে হারিয়ে যেতে তাহলে কি হতো ভাবতে পারছ? এত কেয়ারলেস কেউ হয়?”

“সরি।”

“তুমি সরি বলা বন্ধ করবে?”

প্রভা আর কিছু বলে না। রায়ান চারপাশে তাকিয়ে বলে,”আমিও তো তোমার খোঁজে কোন কিছু না ভেবেই বনের মধ্যে চলে এলাম। এখন এই বন থেকে বের হবো কি ভাবে?”

“আপনিও কি রাস্তা ভুলে গেছেন?”

“সেটাই তো মনে হচ্ছে।”

“তাহলে আমাদের কি হবে?”

“তুমি চিন্তা করো না সাধাসিধা মেয়ে। আমি কোন উপায় বের করছি। তুমি আমার সাথে এসো।”

প্রভাকে সাথে নিয়ে রায়ান হাটতে থাকে। কিন্তু প্রভার পায়ে চোট লাগায় সে ঠিকমতো হাটতে পারছিল না। তার উপর তার পা থেকে অনবরত রক্ত পড়ছিল। এইজন্য রায়ান নিজের টি-শার্টের কিছু অংশ ছিড়ে প্রভার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আর কিছু জঙ্গলি গাছ এনে দেয় যাতে রক্তপড়া বন্ধ হয়। তারপরেও প্রভার হাটার সমস্যা হওয়ার কারণে প্রভাকে কোলে তুলে নেয়। প্রভা হতবাক হয়ে বলে,”এ কি করছেন?”

রায়ান শান্ত অথচ কড়া গলায় বলে,”হুশ। নো মোর ওয়ার্ডস। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”

বলেই সে প্রভাকে কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। আর প্রভা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-০৪

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_4
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা ও অনুরাধার আজ দ্বিতীয় দিন কলেজে। শুরুর দিনটা তাদের সেরকম ভালো যায়নি। অনুরাধা যেভাবে স্টেজে উঠে সিনিয়রের সঙ্গে ঝামেলা করেছে তা নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। রাতারাতি কলেজে তার নাম বনে গেছে ঝগড়ুটে মেয়ে। অনুরাধার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগে নি। তাই তো সে আজ কলেজেও যেতে চায়নি। প্রভা একপ্রকার টেনে নিয়ে আসছে তাকে। অনুরাধা এতে বিরক্ত হয়ে বলছে,”তুই আমায় জোর করছিস কেন প্রভা? তোকে তো বললাম আমি কলেজে যেতে চাই না।”

“যাব না বললেই হলো? তুই না গেলে আমি একা কলেজে যাব কিভাবে?”

“তুইও নাহয় কদিন কলেজ মিস দিতি।”

“আমি শুরুতেই কলেজ মিস দিতে পারব না। অনেক পিছিয়ে পড়ব রে।”

“তুই যেভাবে পড়িস আমার মনে হয় বছরে একদিন কলেজে গেলেও তোর কোন অসুবিধা হবে না। যাইহোক, নিয়েই যখন যাচ্ছিস চল। কিন্তু আজ যদি আমাকে কেউ ঝগড়ুটে মেয়ে বলে আমি মে-রে তার নাক ফা-*টিয়ে দেব। আর ঐ ছেলেটা সৌভিক না কি যেন নাম ওর সাথে যদি দেখা হয় তাহলে তো..”

“এই না। আর কোন ঝামেলা করিস না প্লিজ।”

বলতে বলতেই তারা কলেজে পৌঁছে গেল৷ আজ কলেজে তাদের দিন মোটামুটি ভালোই যাচ্ছে। ক্লাস শেষ করে দুই বান্ধবী ক্যান্টিনে মুখোমুখি বসে আছে। অনুরাধা আজ তাদের ভুগোল ক্লাসে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা বলছিল৷ তাদের ক্লাসের একটা মেয়ে নাকি আজ অনুরাধাকে ঝগড়ুটে বলেছিল। আর তারপর অনুরাধা সেই মেয়েটার চুলে চুইংগাম আটকে দিয়েছিল। মেয়েটা বুঝতেই পারে নি কিভাবে কি হলো। তারপর তার মুখটা দেখার মতো ছিল।

অনুরাধা এসব বলে খিটখিট করে হাসছিল। প্রভা কিছুটা রেগেই বলে,”তুই এমন না করলেও পারতি অনু!”

“ধুর, তোর মতো আমি এত ভালো হতে পারব না প্রভা। আমার দিকে ইট ছু’ড়লে আমি পা-*টকেল ছুড়ব।”

তাদের আলাপচারিতার মাঝেই আবির হঠাৎ করে সেখানে চলে এলো। আবির এসেই বসে পড়লো তাদের পাশে। প্রভার দিকে তাকিয়ে বলল,”তুমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে না?”

আবিরকে দেখে প্রভার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। মনে রাঙিয়ে যায় অন্যরকম অনুভূতিতে। সে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,”জ্বি।”

“আচ্ছা, কিছু মনে করো না, তোমাকে কেন জানি আমার খুব চেনা চেনা লাগে। আমাদের কি আগে কখনো দেখা হয়েছিল?”

প্রভা বলে,”জ্বি, আমার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার ক’মাস আগে আমি যখন লাইব্রেরিতে বই পড়তে গিয়েছিলাম তখন আমার বইটা হারিয়ে গিয়েছিল। ভুলবশত সেদিন আমি আপনার বই নিয়ে এসেছিলাম। তারপর আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করে বইটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।”

“ও, হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে। তুমি তাহলে সেই মেয়েটা। আমার তো মনেই ছিল না। তোমার স্মৃতি শক্তি তো দারুণ!”

প্রভা স্মিত হাসে। আবির বলে,”তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে ভালো লাগল। ভালো করে পড়াশোনা করো। আর কোন হেল্প লাগলে আমাকে বলো। আসছি। আবার দেখা হবে।”

বলেই আবির চলে গেলো। আবির চলে যাওয়ার পর প্রভা তার দিকেই তাকিয়ে রইল। অনুরাধা বলে উঠল,”তোর দ্বারা কিছু হবে না।”

“আমি আবার কি করলাম?”

“সেটাই তো বলছি আমি যে তুই কিছুই করিস নি। তোর তো কিছু করা উচিৎ ছিল?”

“কি করা উচিৎ ছিল আমার?”

“হায় ভগবান! তুমি আমায় তুলে নাও। এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারবো না। আরে গবেট তুই এত বোকা কেন? তোকে কি করতে হবে সেটাও এখন আমি বলে দেব? আর কি আপনি আজ্ঞে করছিলি হ্যাঁ? তুমি করে বলতে পারলি না? আর ফোন নম্বরও তো নিতে পারতি!”

“কিসব বলছিস তুই! উনি আমার সিনিয়র ওনাকে তুমি করে কেন বলব।”

“সিনিয়রের উপর ক্রাশ খেতে পারো আর তাকে তুমি করে বলতে পারবে না? ঢং।”

“আমি ক্রাশ খেয়েছি কে বললো তোকে অনু?”

“আমাকে কিছু বলতে হয়না। আমার সিক্স সেন্স আছে।”

“…”

“কিরে এভাবে থতমত খেয়ে গেলি কেন?”

প্রভা বলল,”কিছু না। চল ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে আমরা যাই।”

প্রভা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ করে বাইরে আসার সময় কারো সাথে ধাক্কা খেল। দুকদম পিছিয়ে এসে বললো,”সরি।”

রায়াম মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল প্রভাকে। মেয়েটার সাজসজ্জা নিতান্তই সাধারণ। অন্যান্য মেয়েদের মতো নিজেকে পরিপাটি করে সাজায় না সে৷ মুখে নেই কোন কৃত্রিম মেকআপ। সবটাই ন্যাচরাল বিউটি। গালের ডান পাশে অবস্থিত তিলটি তার সৌন্দর্য যেন বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। মুগ্ধতার রেশ কাটিয়ে উঠে রায়ান বলল,”সাধাসিধা মেয়ে! তুমি কি আর ধাক্কা লাগানোর মানুষ খুঁজে পাওনা? বারবার আমার সাথেই তোমায় ধাক্কা খেতে হবে কেন?”

প্রভা এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিল। রায়ানের গলা শুনে মুখ তুলে তাকায় রায়ানের দিকে। সে নিজেও আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে অনুরাধা সেখানে চলে আসে। আবার রায়ানের পিছন পিছন সৌভিকও চলে আসে। অনুরাধা ও সৌভিক একে অপরকে দেখেই ক্ষেপে যায়। যেন দুজন হাজার বছরের শত্রু। অনুরাধা সৌভিকের দিক থেকে নজর সরিয়ে রায়ানকে বললো,”দোষ আমার বান্ধবীর নয় দোষ তোমার। মেয়েদের সাথে চিপকে থাকতে নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগে তাই বারবার আমার বান্ধবীর সাথে ধাক্কা খাও ইচ্ছা করে।”

প্রভা ইশারা করে অনুরাধাকে চুপ করতে বলে। রায়ান অনুরাধার কথা শুনে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে। সৌভিক দাঁত কটমট করে বলে,”এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো। আমার বন্ধু সম্পর্কে তুমি কিছু জানো না। ওর জন্য কত মেয়ে পাগল জানো তুমি? ওকে নিয়ে এমন কথা কিভাবে বলছ তুমি?”

“তোমার কাছে আমি কোন জ্ঞানের কথা শুনতে চাইনি। তোমাদের দুই বন্ধুই একই কোয়ালিটির বোঝাই যায়।”

রায়ান অনুরাধার কথা শুনে প্রভার দিকে তাকায়। প্রভাকে প্রশ্ন করে,”তোমারও কি তোমার বান্ধবীর মতো একই কথা মনে হয়?”

প্রভা সাথে সাথে মাথা দুলিয়ে নাবোধক ইশারা করে। রায়ান তৃপ্তির হাসি হেসে বলে,”বেশ। যাও তোমরা।”

প্রভা যেতে থাকে। সাথে অনুরাধাকেও টেনে নিয়ে যেতে থাকে। ওরা যাওয়ার পর সৌভিক রায়ানকে বলে,”তুই এই মেয়েটাকে এভাবে যেতে দিলি কিভাবে? তোকে আর আমাকে কিভাবে অপমান করল দেখলি না?”

“থাক,যেতে দে। শুনলি না ঐ সাধাসিধা মেয়েটা বলল আমাকে ওর এমন মনে হয়না। এই কথাটা বলে ও আমার মনে নিজের যায়গাটা আরো শক্তপোক্ত করে নিলো। ওকে কিভাবে শাস্তি দেই?”

সৌভিক হতবাক হয়ে বলল,”তার মানে আমি যেটা ভাবছি সেটাই…”

“হুম।”

রায়ান হালকা হেসে নিজের চুলে হাত বুলোয়। সৌভিক এক পলক তাকায় নিজের বন্ধুর দিকে। রায়ানের সারা দেহ একদম ধবধবে ফর্সা। একদম রাজপুত্রর মতো চেহারা। অবশ্য হবে নাই বা কেন এলাকার এমপি রুহুল আমিনের একমাত্র ছেলে সে। আদর যত্নের কোন কমতি নেই। আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন। কত মেয়েই পাগল তার এই বন্ধুর জন্য। অথচ তার এই বন্ধু মন দিলো নিতান্তই সাধারণ একটি মেয়ের দিকে। হ্যাঁ, প্রভা মেয়েটা নিঃসন্দেহে সুন্দরী। তবে এর থেকেও অনেক সুন্দরী মেয়ে রায়ানের জন্য ফিদা।

সৌভিক ভাবলো, তাতে কি? ভালোবাসা কি বলে কয়ে হয়? কখন কে কাকে ভালোবেসে ফেলবে সেটা কেউ বলতেই পারে না। যদিও সে নিশ্চিত না তার বন্ধুর অনুভূতি কি। ভালোবাসা নাকি নিতান্তই ভালো লাগা?

এসব ভাবনা পাশে সরিয়ে দিলো সৌভিক। তারপর অনুরাধা মেয়েটার করা অপমানের কথা ভাবলো। তার চোয়াল শক্ত হলো। নিজের হাত মুঠো করে বলল,”ঐ মেয়েকে তো আমি একটা শিক্ষা দিয়েই ছাড়ব। গতকাল আমায় অপমান করেছে আর আজ রায়ানকে। ওকে আমি ছাড়বো না।”

যেই ভাবা সেই কাজ। সৌভিক কিছু একটা দুষ্টু ফন্দি এটে নিলো তারপর। মনে মনে বলল,”এবার তুমি বুঝবে মেয়ে সৌভিকের সাথে লাগতে আসার ফল কি হয়।”

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-০৩

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_3
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রায়ান একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল প্রভাদের দিকে। সেটা নজর এড়ায় না প্রভা কিংবা অনুরাধার। অনুরাধা তো ক্ষেপে গিয়েই বলে,”তুই দেখতে পাচ্ছিস প্রভা, ঐ ছেলেটা কিভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে? সেটাকে দেখেই তো লু**চ্চা লু**চ্চা লাগছে আমার। ওকে তো আমি…”

প্রভা অনুরাধার হাত ধরে তাকে বাধা প্রদান করে বলে,”অনু, থাম তুই। আজ একটা ঝামেলা না বাধিয়ে বোধহয় শান্তি পাবি না!”

“ঐ ছেলেটাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”

“এত হাইপার হস না, ওদিকে চল। আজ মেবি কলেজে নবীন বরণ হবে। চল এরেঞ্জমেন্ট দেখে আসি।”

বলেই অনুরাধাকে একপ্রকার জোরপূর্বক নিয়ে গেল প্রভা৷ রায়ান তাদের যাওয়ার দিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। রায়ানের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধু সৌভিকের নজর এড়ালো না বিষয়টা। সৌভিক রায়ানকে বললো,”কিরে? তুই ঐদিকে কি দেখছিস?”

“কিছু না।”

“আরে, বল না বন্ধু। কোন মেয়ের উপর ক্রাশ খেলি নাকি?”

“জানি না, তবে একজনকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি।”

“রিয়্যালি? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। দ্যা গ্রেট রায়ান চৌধুরীকে শেষ পর্যন্ত কোন একটা মেয়ে মুগ্ধ করেছে!”

“কেন? তুই কি ভেবেছিলি? আমি কোন মেয়েকে দেখে মুগ্ধ হবো না?”

সৌভিক দুষ্টু হেসে বলে,”আমি ঠিক তাই ভেবেছিলাম। তুই যেভাবে সবসময় আবিরের সাথে চিপকে থাকিস আমার তো মনে হতো তুই আবিরকেই…”

নিজের কথা শেষ করতে পারে না সৌভিক। রায়ানের রাগী দৃষ্টি দেখে থেমে যায়। রায়ান কটমট করে তাকিয়ে বলে,”তোর আমাকে গে মনে হতো?”

সৌভিক ঢোক গিলে বলে,”না, সেটা না। আসলে স্কুল লাইফ থেকেই তো তোকে চিনি। কখনো কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব তো দূরের কথা, কথা বলতেও দেখিনি। আর আবির তো তোর জিগরী দোস্ত। সবসময় তোদের একসাথেই দেখা যায়। তাই আমার…”

এমন সময় আবির চলে আসলো সেখানে। তার হাতে দুটো সেভেন আপের বোতল। আবির এগিয়ে এসে একটা বোতল রায়ানকে দিয়ে বলল,”এই নে দোস্ত ধর।”

সৌভিক বলল,”শুধু রায়ানের জন্য এনেছিস। আমার জন্য আনিস নি?”

আবির একগাল হেসে বললো,”না, আসলে সেভেন আপ দেখলে তোর দুঃখ হবে জন্য তোর জন্য আনিনি।”

সৌভিক মুখ লুকানোর যায়গা খুঁজলো। কারণ সে ব্রাজিল সাপোর্টার। আর এই রায়ান আর আবির দুজনেই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। এই জন্য সুযোগ পেলেই ওরা এভাবে খোঁচায় তাকে। সৌভিক মুখ ভাড় করে চলে যায় অন্যদিকে। সে যেতেই রায়ান আবিরকে বলে,”তোর আসতে এত দেরি হলো কেন?”

আবির বললো,”একটা মেয়েকে দেখে থমকে গিয়েছিলাম তাই।”

রায়ান আবিরের চোখ থেকে তার চশমা নিলো। আবির রেগে বললো,”আরে, এটা কি করছিস?”

“দেখছি আমার বন্ধুর চোখের পাওয়ার ঠিক আছে কিনা। যদি চশমার দোষে ভুল মেয়েকে পছন্দ করে ফেলে।”

“রায়ান, আমার চশমা দে। জানিস তো আমি চশমা ছাড়া কিছুই দেখতে পাইনা।”

রায়ান আবিরকে চশমা পড়িয়ে দিতে দিতে বললো,”হুম, জানি তো। আমার এই চাশমিশ বন্ধু যে চশমা ছাড়া অসহায়।”

“তুই আবার আমাকে চাশমিশ বলছিস?”

“সরি, ভুল হয়ে গেছে। তোকে তো আমার কানা বলা উচিত।”

“তবে রে..”

বলেই রায়ানের পেছনে ছুট দিলো। তাদের এই খুনশুটি সবসময় চলে৷ ছোটবেলা থেকেই তাদের এমন সম্পর্ক। এই ঝগড়া-ঝাটি, মা**রামারি আবার দুজনে একে অপরকে ছাড়া অচল। তাদের এই ঘনিষ্ঠতার জন্যই তারা মানিকজোড় বলে খ্যাত।

~~~~~
অনুরাধা ও প্রভা দাঁড়িয়ে আছে তাদের নতুন কলেজের মাঠে অবস্থিত একটি বিশাল বট গাছের সামনে। অনুরাধা এখনো মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রভার সেদিকে খেয়াল নেই। সে নবীনবরণের আয়োজন দেখতে ব্যস্ত। চুপচাপ, শান্তশিষ্ট স্বভাবের মেয়ে হলেও তার এসব উৎসব, অনুষ্ঠান দেখতে খুব ভালো লাগে।

এরইমাঝে হঠাৎ করে প্রভা থমকে যায়। নিজের চোখকে যেন সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে, “ও এখানে!”

অনুরাধা প্রভার দিকে ফিরে বলে,”ও মানে কে?”

প্রভা অনুরাধার পানে তাকিয়ে বলে,”ঐ ছেলেটা।”

অনুরাধা প্রভার কথামতো সেদিকে তাকিয়ে দেখতে পায় একটা ছিপছিপে গড়নে উজ্বল ফরসা দেখতে ছেলে। চোখে তার চশমা। অনুরাধা প্রভার কাছে জানতে চায়,”কে ঐ ছেলেটা?”

প্রভা বলে,”এই ছেলেটার সাথেই আমার লাইব্রেরিতে দেখা হয়েছিল।”

অনুরাধা উত্তেজিত হয়ে বলে,”এই ছেলের সাথেই তো বই অদল বদল হয়েছিল?”

“হুম।”

অনুরাধা যেন সুযোগ পেয়ে যায়। বলে ওঠে,”ছেলেটাকে কেমন লেগেছে তোর?”

“ভালোই তো।”

“প্রেম করবি?”

প্রভা বলল ওঠে,”ধ্যাত, তুইও না। ভালো লাগলেই কি প্রেম করতে হবে?”

“না, তুই ছেলের সাথে প্রেম করবি কেন? তুই যা গিয়ে বইয়ের সাথে প্রেম করে। ঐ পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ওদের সাথে প্রেম কর। ওদেকেই বিয়ে করিস। আর ওদের নিয়েই সংসার করিস। এমনকি ওদের বাচ্চারই মা হোস।”

“অনু, এসব কি যা তা বলছিস!”

“তাহলে আর কি বলবো?”

“জানি না।”

অনুরাধা নিরাশ হয়ে তাকায় প্রভার দিকে। আর বলে,”তুই একটা গাধী। শুধু পড়াশোনা জানলেই হয়না। সব দিক দিয়ে এক্সপার্ট হতে হয়।”

এরইমধ্যে স্টেজে এক এক করে সব নতুন স্টুডেন্টদের ডাকা হয়। সিনিয়রেরা তাদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে তাদের বরণ করে নিতে থাকে।

পর্যায়ক্রমে প্রভার পালাও চলে আসে। প্রভাকে ফুল দেওয়ার সময় স্টেজে দাঁড়িয়ে ছিল আবির। প্রভার মনে এবার বেশ অন্যরকম অনুভূতির তৈরি হয়। অনুরাধাও ফিসফিস করে বলে,”এটাই বোধহয় ডেস্টিনি প্রভা। এই ছেলের সাথেই তোর বই বদল হয়েছিল, এই প্রথম ছেলে যাকে নিয়ে মুগ্ধতার কথা তুই প্রথম আমায় বলেছিলি আর এই ছেলেই কিনা আজ তোকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিবে। এভাবেই দেখবি একদিন তোদের মালাবদলও হবে।”

প্রভা অনুরাধাকে চোখ পাকিয়ে চুপ করতে বলে। তারপর এগিয়ে যায় ফুল হাতে তুলে নিতে। যতই সামনে এগোচ্ছিল প্রভার হৃদস্পন্দন ততোই বাড়ছিল। সে বুঝতে পারছিল না কেন এমন হচ্ছে। অন্যদিকে আবির হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে ছিল প্রভার দিকে। প্রভা স্টেজে উঠতে না উঠতেই রায়ান আবিরের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা কেড়ে নেয়। অতঃপর সে এগিয়ে এসে প্রভার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেয়। প্রভার মনটা খারাপ হয়ে যায়৷ তবুও সে সৌজন্যতার খাতিরে সামান্য হাসে। প্রভার হাতে ফুল তুলে দিয়ে রায়ান বলে,”মিস সাধাসিধা মেয়ে এখন থেকে তুমি আমার জুনিয়র। কোন সমস্যা হলে আমায় বলবে আমি সমাধান করে দেব।”

প্রভা সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে চলে আসে। রায়ান প্রভার যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে। প্রভা অনুরাধার পাশে এসে দাঁড়াতেই সে বলে,”এই ছেলেটা চাইছে টা কি? দেখলি কিভাবে উড়ে সে জুড়ে বসল। কাবাব মে হাড্ডি একটা।”

প্রভার মনটা এমনিই অনেক খারাপ ছিল। সে আর কিছু বলল না। রায়ান স্টেজ থেকেই প্রভার দিকে তাকায়। প্রভার নিষ্পাপ মুখশ্রী তাকে বিমোহিত করতে থাকে।

এদিকে কিছুক্ষণ পরেই অনুরাধার ডাক পড়ে। অনুরাধা যখন স্টেজে ওঠে তখন তার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে সৌভিক। অনুরাধার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়ার সময় অনুরাধার হাত ফসকে ফুলের তোড়া পড়ে যায়। সৌভিক বিরক্ত হয়ে বলে,”চোখে দেখতে পাওনা নাকি?”

অনুরাধা তেতে উঠে বলে,”ভদ্রভাবে কথা বলুন।”

“এখানে অভদ্রতার কি পেলে তুমি? নিজেই তো সিনিয়রের সামনে গলাবাজি।”

“বেশ করেছি গলাবাজি করেছি। আমাকে অন্ধ বলার সাহস তুমি কই পেলে? সিনিয়র বলে কি মাথা কিনে নিয়েছ। নিজের হাতে তো বল নেই আবার আমার খুঁত ধরে।”

“তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছ।”

“ঝগড়া আমি শুরু করিনি।”

সবাই তাদের এই কথা কাটাকাটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। মাঝখানে আবির এসে সৌভিককে বলে,”এই সৌভিক! এখানে ছোট বাচ্চার মতো ঝগড়া করছিস কেন? চল আমার সাথে।”

সৌভিককে একপ্রকার টেনে নিয়ে আসে সে। এদিকে প্রভাও এসে অনুরাধাকে বলে,”আমি জানতাম তুই যেখানে যাবি সেখানেই কোন না কোন ঝামেলা পাকাবি।”

“আমি ঝামেলা পাকিয়েছি? তুই আমার বান্ধবী দোষ দিচ্ছিস? আর ঐ ছেলেটা যে আমায় যা নয় তাই বলল তার বেলা?”

“তুইও কিছু কম বলিস নি।”

“যা, তোর সাথে আর কথাই বলবো না।”

বলেই গাল ফুলিয়ে চলে যায় অনুরাধা। প্রভা ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”এই পাগলিকে নিয়ে আর পারিনা!”

এদিকে সৌভিক আবিরকে বলে,”বাপরে এটা মেয়ে ছিল নাকি অন্যকিছু! যার বউ হবে তার কপাল শেষ করে দেবে।”

আবির বলে,”তাতে তোর কি? তোর সাথে তো আর ওর বিয়ে হচ্ছে না।”

“তা আর বলতে। এই মেয়ে পৃথিবীর শেষ মেয়ে হলেও একে বিয়ে করব না।”

to be continue…

একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় পর্ব-০২

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_2
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা এসে উপস্থিত হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। আজ তাকে অনেক রোগী দেখতে হবে। সারাদিন অনেক ব্যস্ত শিডিওল আছে। নিজের কেবিনে প্রবেশ করল সে। অতঃপর চেয়ারে বসে পড়লো৷ কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে রোগী দেখতে বসে পড়লো। কিছু সময় গড়ালো। একটা সময় পর একজন নার্স এসে তাকে বলল,”ম্যাম একজন আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন।”

“কোন পেশেন্ট?”

“না, উনি বলছেন আপনার সাথে জরুরি কথা আছে।”

প্রভা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,”তুমি জানো না কাজের সময় আমি কোন অন্য কাজে ধ্যান দেইনা। যিনি এসে থাকুন না কেন ওনাকে অপেক্ষা করতে বলো।”

“ম্যাম, উনি সাধারণ কেউ নন।”

প্রভার রাগের মাত্রা বাড়লো। চেচিয়ে বললো,”কে উনি প্রেসিডেন্ট না প্রাইম মিনিস্টার? যেই হোন না কেন ওনাকে অপেক্ষা করতে বলো আর নাহলে বলো চলে যেতে।”

“ভেতরে আসবো?”

চেনা পরিচিত কন্ঠস্বরটা কানে আসতেই প্রভা তাকালো দরজার দিকে। কিছুটা অবাক হয়ে বলল,”আপনি?”

“হ্যাঁ, আমি। ভেতরে আসতে বলবে না?”

প্রভা নার্সকে বলল,”তুমি একটু বাইরে যাও।”

নার্স বাইরে চলে যেতেই প্রভা বলল,”আসুন আঙ্কেল ভেতরে আসুন।”

বৃদ্ধ রুহুল আমিন প্রভার কেবিনে প্রবেশ করলেন। প্রভা রুহুল আমিনকে প্রশ্ন করল,”ভালো আছেন তো আঙ্কেল?”

“ভালো আর থাকতে দিলে কই মা?”

“কেন আঙ্কেল.?”

“আমার ছেলেটাকে এভাবে ফিরিয়ে দিলে কেন?”

প্রভা কিছু বলল না। রুহুল আমিন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন প্রভাকে। দেখে বোঝার জো নেই এই মেয়ের বয়স ৩০ ছুঁয়েছে। এখনো আগের মতোই স্নিগ্ধতা আছে মেয়েটার মাঝে।

রুহুল আমিন হাহাকার ভরা কন্ঠে বললেন,”আমি একজন রাজনীতিবিদ মা। জীবনে অনেক চড়াই উতড়াই দেখেছি। পাঁচ বার এই এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। আমার জীবনে অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। অনেক কিছু হারিয়েছি আবার অনেক কিছু অর্জনও করেছি। কিন্তু তবুও দেখো আমি আজ তোমার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। তাহলে তুমি কেন হাসতে পারছ না মা?”

প্রভা বলল,”কি করবো আঙ্কেল? অতীত যে আমায় হাসতে দেয় না।”

“অতীতকে ভুলে যাও।”

“সবাই শুধু এটাই বলে। কিন্তু চাইলেই কি সব ভোলা যায়? আপনি পেরেছেন ভুলতে ১২ বছর আগের ঘটনাটা?”

হঠাৎ করে রুহুল আমিনের চোখ ভিজে উঠল। মনে পড়লো অতীতের টুকরো কথা।

“চা খাবেন বা কফি?”

“কিছু না মা, আমি শুধু তোমাকে এটুকু বলব অতীত ভুলে পারলে সামনে এগোও। চলি তাহলে।”

রুহুল আমিন বেরিয়ে গেলেন। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল প্রভা। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। তারপর ডুব দিলো ১২ বছর আগের সেই দিনগুলোয়। হাসি, মজা, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসায় ভরা সেই দিনগুলোর গল্প এবার আপনারাও শুনুন,,,,

~~~~~~~
১২ বছর আগে,,,

“এই প্রভা এখনো ঘুমাচ্ছিস কেন? আজ না আমাদের কলেজের প্রথম দিন, তাড়াতাড়ি উঠ।”

অনুরাধার ডাকে ঘুম ভাঙে প্রভার। সে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বলে,”সকাল হয়ে গেছে?”

তখনই প্রজ্ঞা বেগম রুমে এসে বললেন,”অনেক আগেই সকাল হয়েছে মা। সূর্য অনেক আগেই কিরণ দিয়েছে। তোমার অপেক্ষায় বসে নেই।”

“ওহ বুঝতে পারিনি।”

“তা বুঝবে কিভাবে? সারারাত জেগে পড়লে তো এমনই হবে না। আমি বুঝি না, কলেজ শুরু হতে না হতেই তোমার এত কিসের পড়াশোনা। বাপের জন্মে এমন পড়াকু মেয়ে দেখিনি।”

অনুরাধা প্রজ্ঞা বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আপনার কথা শুনে আমি আপনার ফ্যান হয়ে গেলাম আন্টি। ইস,আমার মাও যদি আপনার মতো হতো। তা না, সারাদিন শুধু বলে পড় পড়, মানে পড়া ছাড়া দুনিয়ায় যেন আর কোন কাজই নেই।”

প্রজ্ঞা বেগম অনুরাধার কথার প্রতিত্তোরে বললেন,”আমিও তো প্রভাকে সেটাই বলি। পড়াশোনার তো একটা লিমিট আছে নাকি। সারাদিন রাত ২৪ ঘন্টা বইয়ের সামনে বসে থাকবে। না কোথাও ঘুরতে যাবে, না অন্য কিছু করবে। এই পড়াকু মেয়েকে নিয়ে আমি আর পাইনা।”

তাদের কথার মাঝেই প্রভা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলো। অনুরাধাকে বলল,”চল, আমি তৈরি হয়ে গেছি।”

“চল মানে? নাস্তা করে যাও।”

“না, মা। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

অনুরাধা বলে উঠল,”কিচ্ছু দেরি হয়নি৷ আন্টি তুমি ওর সাথে সাথে আমাকেও খেতে দাও তো, আমি তো আসার সময় খিচুড়ির গন্ধ পাচ্ছিলাম। তুমি নিশ্চয়ই আজও তোমার হাতের স্পেশাল ভুনা খিচুড়ি করেছ। যাও নিয়ে এসো।”

“আচ্ছা, তুমি প্রভাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসো। আমি দিচ্ছি।”

প্রজ্ঞা বেগম যেতেই প্রভা অনুরাধাকে বলল,”আচ্ছা, তুই না বললি দেরি হয়ে গেছে তাহলে এখন খেতে চাচ্ছিস কেন?”

“ক্ষুধা পেয়েছে খুব।”

প্রভা কিছু বলল না আর। চুপচাপ খেতে বসে পড়লো অনুরাধাকে নিয়ে৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে অনুরাধার সাথে কলেজের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো। দুই বান্ধবী যেতে যেতে গল্প করছিল। গল্প করছিল বললে অবশ্য ভুল হবে। অনুরাধা বলছিল আর প্রভা চুপচাপ শুনছিল। প্রভা খুবই চুপচাপ স্বভাবের। গুনে গুনে কথা বলে। অপরদিকে অনুরাধা মুখর প্রকৃতির। তার হাতের থেকে মুখ চলে বেশি।

অনুরাধা বলে চলছিল,”আমি তো কলেজ লাইফ নিয়ে খুব এক্সাইটেড। স্কুল লাইফে তো একটা প্রেম করতে পারলাম না। কলেজে যদি মনের মতো কাউকে পাই।”

প্রভা বলল,”এসব প্রেমের কথা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় ফোকাস কর। লাইফে ভালো কিছু হবে।”

“তুই চুপই থাক। তুই ভুলে যাচ্ছিস, আমি আর্টসের স্টুডেন্ট তোর মতো সাইন্সের না। পড়াশোনা শেষ করে আমি লাইফে প্রেম করার পর্যাপ্ত সময় পাবো।”

প্রভা চুপ হয়ে গেল। অনুরাধা যেতে যেতে হঠাৎ বললো,”তবে আমার আরো একটা ইচ্ছা আছে। এবার কলেজে তোকেও একটা ছেলের সাথে প্রেম করিয়ে দেব। একটা হ্যান্ডসাম দেখে ছেলে৷ স্কুলে তো কম প্রপোজ পেলি না। কত বেচারার মুখের উপর না বলে দিলি। এবার কলেজে কিন্তু তোকে প্রেম করতেই হবে।”

“আমাকে আবার এসব প্রেম-টেমের মধ্যে টানছিস কেন?”

“কেন রে? তোর কি ফিলোফোবিয়া আছে যে প্রেম করতে পারবি না?”

“ঠিক সেটা না কিন্তু….”

কথা বলতে বলতে খেয়ালই ছিল না প্রভার। অন্যমনস্ক হয়ে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে যায়। খানিকটা পিছিয়ে এসে বলে,”সরি।”

“সরি? হোয়াট সরি? চোখে দেখতে পাও না?”

“সরি।”

“আবার সরি? ধাক্কা দিয়ে সরি বললেই সব মিটে যায়?”

অনুরাধা তেঁতে উঠে বললো,”এই ছেলে তোমার সমস্যা কি হ্যাঁ? আমার বান্ধবী তো সরি বললই। আর কি চাও তুমি? এবার কি তোমায় পায়ে পড়বে?”

চোখ থেকে সানগ্লাসটা নামিয়ে অনুরাধা এবং প্রভাকে ভালো করে পরখ করে নিলো রায়ান৷ অতঃপর অনুরাধাকে বলল,”প্রয়োজনে তাই করবে।”

অনুরাধা প্রচণ্ড রেগে গেলো। আরো কিছু বলতে যাবে তখন প্রভা তার হাত টেনে বললো,”চল এখান থেকে। শুধু শুধু ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। আমাদের লেইট হয়ে যাচ্ছে।”

এই বলে অনুরাধাকে একপ্রকার টেনে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। রায়ান সেদিকে তাকালো। প্রভার দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো,”মেয়েটা বেশ সাধাসিধা। ঝামেলা এড়িয়ে চলে। আই লাইক ইট।”

~~
অনুরাগ ফুঁসতে ফুঁসতে বলতে লাগল,”তুই আমাকে ওখান থেকে এভাবে নিয়ে এলি কেন প্রভা? ছেলেটার এত সাহস বলে কিনা তোকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে। আজ ওকে মজা দেখিয়ে দিতাম।”

“তুই কি ঝামেলা ছাড়া কিছু বুঝিস না অনু? কি দরকার এসবের? চল তো আমরা যাই, লেইট হচ্ছে তো।”

“ধুর। তুই এত সাধাসিধা কেন রে? এমন হলে তো এই জটিল দুনিয়ায় টিকতেই পারবি না।”

কথা বলতে বলতেই কলেজের সামনে উপস্থিত হলো দুজনে৷ নতুন কলেজ, নতুন উন্মাদনা। কলেজের গেট ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করতেই পিলে চমকে গেল দুজনের। অনুরাধা চমকে উঠলো,”এই ছেলে এখানে!”

প্রভাও অবাক হয়ে গেলো বেশ৷ রায়ানেরও নজর পড়লো প্রভাদের দিকে। প্রভার দিকে একনজর তাকিয়ে বললো,”এই সাধাসিধা মেয়েটা তাহলে আমাদের কলেজেই পড়বে! ইন্টারেস্টিং।”

to be continue…

একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় পর্ব-০১

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_1
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিজের হবু বর হিসেবে এলাকার নব নির্বাচিত এমপিকে দেখে চমকে উঠলো প্রভা। চমকে তাকালো নিজের সামনে দাঁড়ানো বলিষ্ঠ দেহী ৩২ বছর বয়সী পুরুষটির দিকে। তার নিজের বয়সও বর্তমানে ৩০ ছুঁইছুঁই। এতদিন নানা কথা বলে নিজের বিয়ে আটকে রেখেছিস সে। কিন্তু এবার! তার বাবা নিশ্চয়ই এবার কোমড় বেঁধে নামবে এই বিয়েটা দেওয়ার জন্য। আর কিছু ভাবতে পারল না প্রভা। চুপচাপ নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। তার বাবা আকরাম খান ভীষণ রেগে গেলেন মেয়ের এমন ব্যবহার দেখে। ধমকে বলে উঠলেন,”তোমাকে এখান থেকে যাওয়ার অনুমতি কে দিয়েছে প্রভা?”

প্রভা থামল। পিছন ফিরে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল,”আমি কারো অনুমতির পরোয়া করিনা। আমি নিজের ইচ্ছেয় এখানে এসেছিলাম আর নিজের ইচ্ছাতেই যাব।”

আকরাম খান এবার রেগে নিজের স্ত্রী প্রজ্ঞা বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”মেয়েকে এই শিক্ষাই দিয়েছ? এতগুলো লোকের সামনে নিজের বাবাকে এভাবে বলছে?”

প্রজ্ঞা বেগম চোখ পাকিয়ে তাকালেন প্রভার দিকে। তার বছর ৩০ এর মেয়ে একজন ডাক্তার। স্বাধীনচেতা রমণী। তবে তার মানে এই নয় তাকে শাসন করার হক তার নেই। প্রজ্ঞা বেগমও নিজের মেয়েকে ধমকে বললেন,”বাবার সাথে এমন ভাবে কথা বলছ কেন তুমি? কিছু বলি না জন্য মাথায় উঠে গেছ? ওনারা নিজে তোমায় দেখতে এসেছেন। আর তুমি এভাবে ডেংডেং করে ওনাদের সামনে থেকে চলে যাচ্ছ। ভদ্রতা-সভ্যতা কি সব ভুলে গেছ?”

“না। ভুলিনি। আর ভুলিনি জন্যই এখনো নিজের মেজাজ শান্ত রেখেছি।”

“প্রভা!!”

“আমি যদি আগে জানতাম বাড়িতে তোমরা এমন রঙ্গমঞ্চ তৈরি করবে তাহলে আজকের দিনটা আমি হাসপাতালের করিডোরেই কাঁটিয়ে আসতাম।”

বলেই হনহন করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। নবনির্বাচিত এমপি চুপচাপ পর্যবেক্ষণ করল সবকিছু। তার ধারণাই সঠিক। এই ১২ বছরে কোন কিছুই বদলায় নি। এখনো এই মেয়ে সেই আগের জেদ, রাগ বজায় রেখেছে। তবে মেয়েটা বদলেছে অনেক। নম্র, ভদ্র, চুপচাপ স্বভাবের মেয়েটার মধ্যে রুঢ়তা এবং উগ্রতার আগমন ঘটেছে। অবশ্য এটা হওয়ারই ছিল।

সে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর ভদ্র ভাবে আকরাম খানের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আমি তাহলে আজ চলি আঙ্কেল।”

“আমার মেয়ের ব্যবহারে কিছু মনে করো না বাবা। তুমি তো সবটাই জানো।”
“হ্যাঁ, জানি। আর জানি বলেই কিছু মনে করছি না। আপনারা কেউ ওকে জোর করবেন না। আমি ওকে মানানোর চেষ্টা করব।”

“আচ্ছা।”

~~~~~
ঘরে এসেই শাওয়ার নিতে চলে আসল প্রভা। বাথরুমে এসেই বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ল। ধীরে ধীরে শক্ত খোলস খুলে বেড়িয়ে আসলো সে। প্রভা আহাজারি করে বলতে লাগল,”কেন আল্লাহ কেন? আজ এতগুলো দিন পর কেন আমায় আবার তিক্ত অতীতের মুখোমুখি করালে? আমি তো সব কিছু ভোলার চেষ্টা করছিলাম। আজ আবার সব স্মৃতি তাজা হয়ে গেল। আবারো যেন আমার রাতজাগার অসুখ ফিরে আসবে। আমি আর পারছি না, আর না!”

~~~~
সূর্য উঁকি দিচ্ছে পুবের আকাশে। প্রভা আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়লো। অতঃপর গায়ে জড়িয়ে নিল সাদা এপ্রোনটা। এপ্রোন পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে পরখ করে দেখতে লাগল। বয়স তার ৩০ পেরিয়েছে ক’মাস আগে। কিন্তু চেহারা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। বড়জোর ২৪-২৫ এর তরুণী লাগে। প্রভা আয়নার সামনে থেকে সরে আসল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,”এই রূপ যৌবনের কি সত্যি আমার কোন দরকার আছে? কার জন্য এই রূপ, লাবণ্য? আমি কি জন্য বেঁচে আছি এই পৃথিবীতে?!”

“প্রভা,,”

নিজের মায়ের ডাকে হুশ ফিরল প্রভার। পিছনে ফিরে তাকিয়ে বলল,”কিছু বলবে? আমি এখন বেরোবো।”

“তুমি কি নিজের জীবনকে দ্বিতীয় সুযোগ দিবে না?”

প্রভা কিছু বলল না। বলার মতো অবস্থাতে সে ছিলোও না। প্রভাকে চুপ দেখে প্রজ্ঞা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,”যা হয়েছে সব ভুলে যাও। আর কত দিন এভাবে একা থাকবি তুই? জীবনকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে কি সমস্যা?”

প্রভা বলে উঠল,”অতীতকে ভোলা এত সহজ না, মা। আমি চাইলেও স্মৃতিগুলো তো মুছে যাবে না।”

“জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।”

“কিন্তু আমার জীবন থেকে আছে ১২ বছর আগেই। আমি চাইলেও সেসব ভুলতে পারব না।”

বলেই প্রভা আর এক মুহুর্ত নষ্ট না করে সামনে এগোলো। প্রভা বেরিয়ে যাবার পরই প্রজ্ঞা বেগম কাঙ্খিত নম্বরটিতে। ওদিক থেকে রিসিভ হতেই তিনি বললেন,”প্রভা বেরোলো। আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তুমি চেষ্টা করে দেখো, যদি তোমার কথা শোনে।”

~~~~
বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুদূর আসতেই প্রভার দেখা হলো নিজের প্রিয় বান্ধবী অনুরাধার সাথে। অনুরাধাকে দেখে একগাল হাসল প্রভা। বলল, “অনু তুই! কেমন আছিস? কতদিন পর বাবার বাড়িতে এলি। শ্বশুর বাড়ি থেকে তো নড়তেই চাস না।”

“আমি তো ভালোই আছি। তুই?”

“আমিও ভালো। তোর মেয়ে তো অনেক বড় হয়েছে রে।”

বলেই অনুরাধার মেয়ের গাল টিপে দিলো।

“হুম, এবার ৩ বছর হলো।”

“ও মনে হয় অনেক শান্তশিষ্ট তাইনা?”

“শান্তশিষ্ট না ছাই! এখন এমন দেখছিস জন্য। বাড়িতে তো আমি আর সৌভিক ওর যন্ত্রণায় বাঁচি না।”

“সৌভিকদা ভালো আছেন?”

“হুম, ভালো।”

“বাহ, তাহলে তো ভালোই। তুই বেশ ভালোই সংসার করছিস।”

“তা তো বটেই। তবে যাই বলি আর তাই বলি, তোকে দেখে এখন কেউ আর বলবে না তুই আমার বান্ধবী। এখনো চেহারা কিরকম ধরে রেখেছিস। বাই দা ওয়ে, তুই কি চিরকুমারী থাকার সিদ্ধান্তে এখনো অটল?”

প্রভার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। সে বললো,”থাক এসব কথা। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

প্রভা যেতে নিতেই তার হাত চেপে ধরল অনুরাধা। বলল,”বিয়ের কথা উঠতেই কেন এভাবে পালিয়ে যাস?”

“অনু ছাড় আমায়।”

“না, ছাড়বো না। তুই এত জেদি কেন রে? নিজে যা ভালো ভাবিস তাই করিস।”

“আমি তো এমনই।”

“আগে তো এমন ছিলি না? সেই নম্র, ভদ্র, ইনোসেন্ট মেয়েটা কোথায় হারিয়ে গেল?”

প্রভা কিছু বলল না। প্রভার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো অনুরাধা। সে ভাবতে লাগল অতীতের কিছু সুন্দর আবার কষ্টের স্মৃতি। একই পাড়ায় বড় হয়ে ওঠা দুই বান্ধবী প্রভা আর অনুরাধা। তাদের দুজনের ধর্ম ভিন্ন। কিন্তু ধর্ম কখনো তাদের বন্ধুত্বে বাধা তৈরি করতে পারে নি। স্কুল, কলেজে তাদের বন্ধুত্ব অটুট থেকেছে। তারপর দুজনের গন্তব্য বদলে গেলেও বন্ধুত্বে ফাটল ধরে নি। কিন্তু কলেজ জীবনের কিছু মর্মান্তিক ঘটনা বদলে দিয়েছে প্রভার জীবন। যা ভাবলে এখনো বুক আঁতকে ওঠে অনুরাধার।

হঠাৎ করেই অনুরাধার চোখে জল চলে আসে। প্রভা অনুরাধার চোখে জল দেখে বলে,”কিরে হঠাৎ এভাবে কাঁদছিস কেন?”

“তুই কিভাবে সব সহ্য করে এত বছর বেঁচে আছিস প্রভা? আমার তো তোর কথা ভাবলেই কান্না পাচ্ছে। ১২ বছর আগে…..”

“অনু প্লিজ! আমায় কাজে যেতে হবে। এখন এসব কিছু মনে করতে চাইছি না৷ দুঃখবিলাস করার আরো সময় পাবো।”

“তোর পুরো জীবনটাই কি দুঃখবিলাস করে কা’টিয়ে দিবি?”

প্রভারও এবার খুব কান্না পেল। কিন্তু সে নিজেকে শক্ত রেখে বললো,”তা ছাড়া!”

ব্যস, এটুকু বলেই সামনের দিকে রওনা দিলো। প্রভা চলে যাবার পর অনুরাধা ফোন দিল প্রজ্ঞা বেগমকে। হতাশ স্বরে বললো,”সরি আন্টি, আমি পারলাম না। ওকে বোঝানোর সাধ্যি আমার নেই। ওর যায়গায় নিজেকে কল্পনা করলেই আমি আতকে উঠি। সেখানে ওকে কিভাবে বোঝাবো।”

প্রজ্ঞা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,”জীবন এমন কেন অনুরাধা? আমার মেয়ের জীবনে কি আর শান্তি আসবে না? আমার হাসিখুশি, নম্র, ভদ্র মেয়েটা কি আজীবন এমন কাঠখোট্টা, কঠোর হয়েই থাকবে?”

To be continue…

তুমি আমার চেনা হয়েও অচেনা পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0

#তুমি_আমার_চেনা_হয়েও_অচেনা
#আফরোজা_আহমেদ_কুহু
#অন্তিম_পর্ব

আমাকে কথা বলতে না দেখে এবার আহির আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

–“কি হলো?বলছেন না কেন? আপনিই কি আফরাকে নিয়ে এসেছেন? সে আমাদের মেয়ে?কোথায় সে?

আমি শুধু হাত দিয়ে ইশারা করে আফরার কক্ষটি দেখিয়ে দিলাম। তারা দ্রুত রুমে প্রবেশ করলো।আমি আমার থেকে কিছুটা দূরে থাকা চেয়ারে গিয়ে বসলাম। “আহির” সে আমায় চিনতে পারে নি। আমার শ্বাস কেমন যেন আঁটকে আঁটকে আসছিল। অস্থির অস্থির লাগছিল। অতীতটা আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়ে। শেষে কি না আহিরের মেয়ের মাধ্যমে আবার দেখা হলো।কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলাম সেই পুরোনো স্মৃতির পাতায়। এরপর শ্রাবণের ডাকে আমি আমার ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসি।
শ্রাবণ আমার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে বললো,
–“কি হয়েছে মিহি?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ করছে? ”
আমি মাথা নেড়ে না বললাম। “আমি ঠিক আছি শ্রাবণ”।
–” তো এখনো ওষুধ কেন লাগাও নি? হসপিটালে আছো তাও একবার ডাক্তার দেখাবে না।কপালের রক্ত শুকিয়ে গেছে অলরেডি।” (কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বললো)

আমি আমার কপালে হাত ছোঁয়ালাম। সত্যিই শুকিয়ে গেছে। এত কিছুর মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমারও ব্যাথা লেগেছে। হঠাৎ আহির বেরিয়ে এলো সেই কক্ষ হতে। শ্রাবণ আহিরকে দেখে একবার আমার দিকে তো একবার আহিরের দিকে তাকাচ্ছে। আহির আমার সামনে এসে বললো,

–“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে মিহিতা। প্লিজ একটু এদিকে আসবে?শুধু পাঁচ মিনিটের জন্য প্লিজ। ”

আমি আহিরের দিকে তাকালাম। তার মানে সে আমাকে চিনতে পেরেছে। তাহলে তখন বউ থাকায় নাটক করলো। আমি শ্রাবণের দিকে তাকালাম। সেও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে আমার উত্তর শোনার জন্য। আমি শ্রাবণকে আস্তে আস্তে বললাম,
–“যাবো?
–“যাও।”
শ্রাবণের বলা কথাটায় কেমন যেন রাগ ছিলো। সে উঠে চলে গেল। আমিও তার পিছু যেতে নিলেই আহির আটকালো।এরপর বললো,
–“আ’ম সরি মিহিতা। ”
–“কেন?”
–“আসলে আমি তখন বুঝতে পারি নি। তুমি আমাকে এতটা ভালোবেসে ফেলবে। বিশ্বাস কর, আমি বুঝতে পারি নি। ”

আমি হাসলাম। সব সংকোচবোধ একপাশে সরিয়ে আমি নিজেকে তার সামনে একজন শক্ত মানুষ হিসেবে তুলে ধরতে চাইলাম। এই সাত বছরে নিজেকে আমি তার থেকে অনেক দূরে নিয়ে এসেছি। আর চেষ্টা করলেও তা ফিরে আসবে না। আমার অনূভুতি গুলোকে আমি আমার মনের মধ্যে থাকা ডায়েরীটায় বন্দী করে ফেলেছি। দিন যাবে, এই ডায়রীতে ধুলো পড়বে। হয়তো একদিন খুলে দেখবো ডায়রীর পাতা গুলো হঠাৎ করেই। আবার সেই পুরোনো কথা গুলো মনে করে কষ্ট হবে কিছুক্ষণ। কিন্তু সময়ের সাথে পুনরায় এই ডায়েরী বন্ধ হয়ে যাবে। আবার হারিয়ে যাবে সময়ের স্রোতে। নতুন স্মৃতির ডায়রী গুলোর নিচে পড়ে যাবে তা।

–” মিহিতা, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি পরে সব আরাবির কাছ থেকে জেনেছিলাম। তুমি ওই শহর ছেড়ে আসার পর। হ্যাঁ, আমি মানছি আমি ভুল করেছিলাম। আমি ভাবতে পারি নি আমার এই ভালোলাগাটুকুর জন্য তুমি এতদিন অপেক্ষা করবে। তুমি প্লিজ নতুন করে তোমার জীবনটা শুরু করো মিহি।”

–“আমার নাম মিহি নয় মিহিতা। মিহি শুধু তারাই ডাকতে পারে যারা আমার আপন। তাছাড়া আপনাকে কে বললো মি.আহির আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হ্যাঁ,কিছু তিক্ত অনুভূতি তৈরি হয়েছিল আমার।কিন্তু সেই অনুভূতি গুলো শুধুই আমার। একান্তই আমার। আর তাছাড়া নতুন জীবন তো আমি কবেই শুরু করেছি। এই যে দেখছেন, রাগ করে চলে গেল। সে আমার হবু বর। কিছুদিন পরই বিয়ে। আপনার দাওয়াত রইলো। সবাই আসবেন কিন্তু। ”

কেন জানি না। আহিরের কথাগুলোতে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এতকিছুর পরও সে এসেছে আবার কথা বলতে। সে কি একদমই কিছুই বোঝে নি। আচ্ছা বুঝলাম না হয় কিছুই বোঝে নি। তবে কেন রিলেশনে যাওয়ার পর ওই জন্মদিনের দিন এসেছিল কথা বলতে। কিছু মানুষ সত্যি হঠাৎ এসে সুন্দর সাজানো জীবনটাকে তছনছ করে দিয়ে বলে সে কিছুই জানতো না। মজা নিতে এসব করেছে শুধু।
হঠাৎ আফরার কন্ঠ শুনতে পেলাম। সে দৌড়ে এসে বললো,
–“পাপা আমরা বাড়ি যাবো কখন?”
–“এই তো এখনি যাবো। ”

মালিহা আমার কাছে এসে বললো,
–“আপু, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে তো আমরা জানতেও পারতাম না। আফরা কোথায় আছে।
আমি হেঁসে সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। এখন কেন জানি না অনেকটাই শান্তি লাগছে। আজকে প্রথম ও শেষবারের মতো আহিরের সাথে আমি কথা বলেছি। আশা করি আর যেন দেখা না হয়। অবশ্য দেখা হলে তার প্রতি কোনো অনুভূতি আমার প্রকাশ হবে না।আজকে সত্যিই আমি সফল। সম্পূর্ণরুপে আহিরকে আমি নিজের জীবন থেকে দূরে করতে পেরেছি। নিচ তলায় এসে দেখলাম। শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে উল্টো দিকে ঘুরে। সাদা শার্ট ইন করা আর কালো প্যান্ট। ফর্মাল গেট আপই আছে। আমি হেঁসে তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলাম। শ্রাবণ চমকে গেল মনে হয়। আমার হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে বললো,
–“তুমি আমাকে জরিয়ে ধরলে মিহি?”
–“কেন ধরতে পারি না। ”
–“তো আহির এখানে কি করছে মিহি?আর তুমি কি আমাদের বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে চাইছো কোনোভাবে?”
সে আশাহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আবারও হাসলাম। শ্রাবণ জানে না যে আহিরের বিয়ে হয়েছে। আমিই জানাই নি।আমি তো আর জানতাম না যে এভাবে আবার দেখা হবে। জানলে বলে দিতাম। আমি শ্রাবণকে বললাম,

–“মি.শ্রাবণ হাওলাদার। আহির এখানে তার মেয়ের জন্য এসেছে। আর বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আপনাকে জরিয়ে ধরেছি নাকি? ”
শ্রাবণ ভ্রুর- কুঁচকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললো,
–“আহিরের মেয়ে মানে?সে বিয়ে করেছে? ”
–“জ্বী মিস্টার। সবাই কি আর আপনার মতো নাকি যে আমার আশায় থাকবে?”
শ্রাবণ হেঁসে নিজের ঠোঁটের এক কণা কামড়ে ধরে বললো,
–“তুমি কি কাউকে আশায় থাকতে বলছো নাকি?আমি কিন্তু এসব কিচ্ছু এলাউ করবো না, মিসেস শ্রাবণ। ”

এমন সময় আহিররা নিচে নামলো। মালিহা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আপু তবে এবার আসি আমরা। ”
–“আচ্ছা। ”

আমরা একসাথে বের হলেও দুই রাস্তায় চলে গেলাম। সারাজীবনের মতো। সত্যিই কষ্টের পরই সুখ থাকে। আমি যদি আহিরকে না হারাতাম তবে তো আর শ্রাবণকে পেতাম না। শ্রাবণ আমাকে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো। আমি ঘড়িতে সময়টা দেখে নিলাম। রাত এগারোটা বাজে। চারদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। আমি শ্রাবণকে বললাম,
–“নদীর দিকটায় যাবেন শ্রাবণ? ”
শ্রাবণ হাঁটা থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“এখন? এত রাতের বেলা? তুমি না অন্ধকার ভয় পাও?”
–“আর কিছুতে ভয় পেতে চাইছি না। চলুন না কিছুক্ষণ থাকবো। তাছাড়া চাঁদের আলো আছে তো। অন্ধকার কোথায়?”

শ্রাবণ আমার দিকে তাকিয়ে আমার কপালে আলতো করে চুমু খেল। এরপর আমরা চললাম নদীর ধারে। নতুনভাবে নতুন করে পথ চলা শুরু হবে।

অবশেষে তুমি আমার স্মৃতির পাতায় রয়ে যাবে আর অন্য কারোর ভাগ্যে। তোমাকে না চিনে, না জেনেই যেমন ভালোবেসেছিলাম। অত:পর তুমি আমার চেনা হয়েও অচেনা সে ডায়রীর পাতায় রয়ে যাবে সারাজীবন।

সমাপ্ত

তুমি আমার চেনা হয়েও অচেনা পর্ব-০৫

0

#তুমি_আমার_চেনা_হয়েও_অচেনা
#আফরোজা_আহমেদ_কুহু
#পর্ব_০৫

হঠাৎ কারোর কথায় নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে মিহিতা। উক্ত বলা কথাটির মালিককের দিকে তাকাতেই সে দেখতে পেল শ্রাবণকে। সে মিহিতাকে জরিয়ে ধরলো।চিন্তিত কন্ঠে শ্রাবণ মিহিতাকে জিজ্ঞেস করলো,
–“বাচ্চাটা ঠিক আছে?”
–“হ্যাঁ, স্যালাইন চলছে। ”
আসলে মিহিতা তার পুরনো সব বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল আজ। এত বছর পর তার স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে মোটামুটি সব বন্ধুরা আজ এক জায়গায় হয়েছে। ওদের সাথে গল্প আড্ডা দিয়ে রিকশা করে ফেরার সময়। হঠাৎ একটা বাচ্চা কোথা থেকে যেন দৌড়ে আসে তার রিকশার সামনে। রিকশাওয়ালা মামা বাচ্চাটিকে বাঁচাতে গিয়ে দ্রুত রিকশা সাইড করে, যার ফলে অসাবধানতাবশত রিকশার চাকা ঢুকে যায় রাস্তায় থাকা একটা গর্তে মধ্যে। যার কারণে হঠাৎ ঝাঁকুনিতে মিহিতা রিকশা হতে পড়ে হাত-পা সহ মাথায় ব্যাথা। অন্যদিকে বাচ্চাটি হঠাৎ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ায় সে দ্রুত বাচ্চাটিকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়৷ সাথে শ্রাবণকেও ফোন করে। শ্রাবণের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিছুদিন পরই বিয়ে। সেই শহর ছেড়ে আসার পর। শ্রাবণ আমাদের পাশের কলেজেই লেকচারার হিসেবে জয়েন করে৷তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে ঠিকানা কোথায় পেল?
সে তখন হাত দিয়ে তার মাথার চুল গুলোকে পিছনে ঠেলে বলেছিল,
–“যে পুরো আমিটাকেই নিয়ে গেছে। তার ঠিকানা খুঁজতে কি বেশি সময় লাগবে? ”
এই সাত বছর সে আমার পাশে ছায়া হয়েই থেকেছে। প্রথমে সম্পূর্ণভাবে ইগনোর করলেও সে পিছু ছাড়ে নি৷ মাঝে মাঝে রাগ হতো৷ বিরক্তি নিয়ে চলে যেতে চাইলেও সে হাসি মুখে তাকিয়ে থাকতো৷ এরপর ভালোবাসার দাবি না মানলেও বন্ধুত্বটাকে টিকিয়ে রেখেছিলাম। তখন একের পর এক বিয়ে ভাঙ্গার কারণে আমি হয়ে উঠলাম বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার মূল। তারা প্রকাশ না করলেও বুঝতাম। শ্রাবণের সাথে আমার বন্ধুত্বটার কথা বাবা-মা জানতো৷ ভার্সিটি লাইফে সকল জটিলতা কাটিয়ে উঠতে শ্রাবণই সাহায্য করে গেছে। তাই শ্রাবণ যখন পুনরায় বিয়ে প্রস্তাব পাঠালো। তখন রাজি হয়ে গেলাম। এতেই হয়তো সবার ভালো হবে।

যেদিন শ্রাবণ তার পুরো পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়ি এসেছিল। আমি তখন দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম৷ এরপর যখন আমাদের একা কথা বলার সময় দেওয়া হলো৷ তখন শ্রাবণ আমার দু’হাত তার মুঠোয় নিয়ে বলেছিল।
–“তোমাকে আমায় ভালোবাসাতে হবে না মিহি। শুধু সারাজীবন পাশে থেকো তাতেই হবে। বিশ্বাস কর, কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিবো না৷ ”
তার এত আবেদনীয় কন্ঠে বলা কথাগুলোর কারণে তখন আর আমি না করতে পারি নি। সেই মানুষটার তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমার হওয়ার তো আর কোনো পথ নেই। তার সাথে তো কথাও হয় নি আমার। আমার অনুভূতিগুলো একান্তই আমার। তা নাহয় শুধু আমারই থাক।

বাচ্চাটিকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করালাম। আমার প্রচন্ড ভয় কাজ করছিল। বাচ্চাটার কিছু হয়ে যাবে না তো। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাচ্চাটির জ্ঞান ফিরলো। ডাক্তার জানালো ভয়ের কারণে এমনটা হয়েছে৷ তাছাড়া শরীর দুর্বল। আমি বাচ্চাটির কাছে গেলাম। এরপর একটা টুল টেনে বসলাম তার পাশে। বাচ্চাটির বয়স চার-পাঁচ বছর। এতটুকু বাচ্চাকে রাস্তায় কেউ কিভাবে একে ছাড়তে পারে। আমি বাচ্চাটিকে তার নাম জিজ্ঞেস করলাম। বাচ্চাটি অস্পষ্ট কন্ঠে বললো তার নাম আফরা৷ আমি বাচ্চাটিকে তার বাবা-মার সম্পর্কে জানতে চাইলাম। মেয়েটি আমাকে তার বাবার নাম আহির ও মায়ের নাম মালিহা বললো। “আহির” নামটা শুনতেই আমার কেমন যেন একটা অনুভূতি হলো। এরপর নিজেকে বোঝালাম পৃথিবীতে অনেকের নামই তো আহির থাকতে পারে। বাচ্চাটিকে তার বাবা অথবা মায়ের ফোন নাম্বার সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বললো৷ মেয়েটা বেশ বুদ্ধিমতী আর চুপচাপ স্বভাবের বলেই আমার মনে হলো।প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এর বাহিরে আর একটাও কথাও বলছে না।আমি তাকে পুনরায় প্রশ্ন করলাম,
–“তুমি রাস্তায় ওভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন? তোমার বাবা-মা কোথায় ছিল?”
মেয়েটি ভীত কন্ঠে জানালো তারা মেলায় ঘুরতে এসেছিল। তবে অনেক ভীড়ের মধ্যে সে হারিয়ে যায়। তখন সে তার বাবা-মাকে খুঁজতে খুঁজতে মেলা থেকে বের হয়ে একটা নিরব রাস্তায় চলে আসে। রাস্তাটা অন্ধকার হওয়ায় সে ভয়ে দৌড় দিয়েছিল। এরপর আমি আফরার বলা নাম্বারে কল করলাম। কল করতে অপরপাশ হতে একটি মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো। ফোনের এপাশ হতেই বুঝতে পারলাম তিনি অস্থির হয়ে আছেন। আমি তাকে হসপিটালের নাম বলে এখানে আসতে বললাম। তিনি দ্বিগুণ অস্থিরতা জড়িত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, “তার মেয়ে ঠিক আছে কি না ” আমি তাকে ভরসা দিয়ে ফোন রাখলাম। মেয়েটির হাতে স্যালাইন লাগানো। আমি তার পাশে বসে টুকটাক কথা বললাম।

মিনিট দশেকের মধ্যেই পুনরায় আমার ফোনে একটা কল এলো। অপরিচিত নাম্বার। রিসিভ করে কানে দিতেই ভেসে এলো একটি পুরুষনালীয় কন্ঠ।আমি থমকে গেলাম। এ কন্ঠ তো আমার চেনা। সেই সাত বছর ধরে যার সাথে আমার যোগাযোগ নেই। যার থেকে পালিয়ে এসেছিলাম আমি। ব্যক্তিটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

–“আফরা কত তলায় আছে?”
–“তিনতলায়। ”
বলেই ফোন রেখে। আমি বের হয়ে এলাম। তবে কি পুনরায় সেই ব্যক্তিটির সাথে আমার দেখা হবে? এত বছর পর আবারও কি তার সামনে দাঁড়াতে হবে আমায়?আমি এসব ভাবতে ভাবতেই আমার সামনে উপস্থিত হলো এক দম্পতি। আমি থমকে গেলাম। সাত বছর পর আবারও তার দেখা। আগের থেকে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। গালে চাপ দাড়ি। মুখে চিন্তার ভাঁজ। দুজনই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটি আমাকে অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

–“আফরা, কোথায়? ও আমার মেয়ে! ”

সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে,আমার কথা বলার শক্তিটুকু হচ্ছিল না। “আহির” এত বছর পর, আবার, আবার কেন আমার সামনে আসতে হলো?আমি সব কিছুকে পিছনে ঠেলে তো চলে এসেছিলাম। তবে কেন আবার ভাগ্য আমায় একই জায়গায় এনে দাঁড় করালো। আমাকে কথা বলতে না দেখে এবার আহির আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

–“কি হলো?বলছেন না কেন? আপনিই কি আফরাকে নিয়ে এসেছেন? সে আমাদের মেয়ে?সে কোথায় আছে?”

#চলবে

তুমি আমার চেনা হয়েও অচেনা পর্ব-০৪

0

#তুমি_আমার_চেনা_হয়েও_অচেনা
#আফরোজা_আহমেদ_কুহু
#পর্ব_০৪

ততক্ষণে আরাবি চলে এসেছে। আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। তবে কি আরাবিই বলেছে? সে কিভাবে পারলো এটা করতে?আমার অনুভূতির কথাগুলো তো সে ব্যতিত আর কেউ জানে না! আমি জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিলাম। এরপর কলেজ গেট হতে বেরতেই আরাবী দৌড়ে এলো আমার কাছে। ওকে দেখে তখন আমার প্রচুর রাগের সাথে সাথে কষ্ট হচ্ছিল। আরাবি এসে আমার পথ আটকিয়ে বলে,
–“মিহি, বিশ্বাস কর। ভাইয়া অনেক ভালো একটা ছেলে।”

আমি কোনো কথা না বলে চলে যেতে নিলে সে পুনরায় আটকায়।
–“মিহি, তুই আমার উপর যতোই রাগ করিস না কেন। কিন্তু আমি তো তোর ফ্রেন্ড তাছাড়া আমি তোকে আমার ফ্রেন্ডের থেকে বেশি বোন ভাবি। আমি সত্যিই তোর খারাপ চাই না। শ্রাবণ ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসে। কতদিন আর এভাবে চলবে বল?”

–“প্লিজ আর ভাবিস না আমায় নিয়ে। আমাকে প্লিজ একা থাকতে দে। আমি আমার মতো করে তো ভালো আছি। আমি চাই না পুনরায় কেউ আর আমাকে ভেঙ্গে দিক। ”
কথাটা বলেই চলে এসেছিলাম। প্রচন্ড কান্না আসছিল। কিন্তু রাস্তায় তো আর কান্না করা যায় না। বার বার চোখ পানিতে পূর্ণ হয়ে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ আহিরকে দেখলাম। তার এক বাহু জরিয়ে রিবা হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। কত সুন্দর লাগছে তাদের!এতক্ষণ ধরে আটকিয়ে রাখা কান্নাটা যেন এভার বাঁধ ভেঙ্গে বেরিয়ে এলো। আর পারছিলাম না নিজেকে সামলাতে। দ্রুত একটা ফাঁকা গলিতে ঢুকে পড়ি। সেই পথ ধরেই কান্না করতে করতে দৌড়ে যেতে থাকি। গলিতে থাকা কিছু মানুষ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। আমি সব কিছু উপেক্ষা করে দৌড়ে যাচ্ছিলাম। আর সহ্য করতে পারছি না এই অবহেলা। দম বন্ধ হয়ে আসছিল।হঠাৎ বৃষ্টি হতে শুরু করলো। রাস্তার মানুষ সব বৃষ্টি হতে বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করছে। আমি থামলাম সেই মুহুর্তেই। আমার অবাধ্য হয়ে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো লোনাজল। যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।আমি চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলাম বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা। আজ আমার মতো আকাশের মনেও কালো মেঘ এসে জমেছে। যা একমাত্র এইভাবেই দূর হবে। এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব হলো। আশেপাশের থেকে কয়েকটা মানুষ চিৎকার করে কিছু একটা বলছে যেন৷ কি বলছে আমি শুনলাম না। আজকে আমি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিতের বাহিরে চলে গেছি। হঠাৎ কেউ হাত ধরে টেনে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আমায়। সে জরিয়ে ধরেই বলছে,

–“আ’ম সরি, মিহিতা। আমার তোমাকে ওভাবে সবার সামনে বলা ঠিক হয় নি। আ’ম রিয়েলি সরি। ”

বলে পুনরায় আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আমি মাথা উঠিয়ে দেখলাম এটা শ্রাবণ। আমি ভ্রুর- কুঁচকে তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরত্বে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে পুনরায় কিছুটা এগিয়ে এসে বললো,

–“এভাবে প্লিজ নিজেকে শেষ করে দিও না, মিহি প্লিজ।”
–“আচ্ছা”
বলেই আমি চলে এলাম সেখান থেকে। দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তা পেরিয়ে রেললাইনের দিকে চলে এসেছিলাম আমি৷ মানুষ হয়তো ট্রেন আসা নিয়েই ডাকছিল আমায়।
বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ যাবত কান্না করি। মা এসে অনেকবার ডেকে গিয়েছিল। মাথা ব্যাথা করছে বলে আর দরজা খুলি নি।
এরপর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বেরিয়ে এলাম। বাবা জানালো তার হঠাৎ আবার বদলি হয়েছে। এ শহর থেকে দূরে। যেহেতু কিছুদিন পরই আমার ফাস্ট ইয়ার শেষ হয়ে যাবে। তাই এইচএসসিটা খালামণির বাসায় থেকেই করতে বললো। কিন্তু আমি মানা করলাম। বাবাকে কলেজে গিয়ে টিসির বিষয়ে কথা বলতে বললাম। বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পরে ঠিকই রাজি হলো। এরপর ফাস্ট ইয়ারটা ওখানে শেষ করে চলে আসার সময় আরাবি আমাকে ধরে প্রচন্ড কাঁদলো। তার ভাষ্য মতে তার জন্যই আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমি তো তার জন্য যাচ্ছি না। আমি পালাতে চাচ্ছি আহিরের থেকে। এই শহর থেকে। সময় ঘনিয়ে এলো আমাদের যাওয়ার। আরাবি এলো আমাকে বিদায় দিতে। দূর হতে শ্রাবণ ভাইয়াকেও দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে। আশাহত চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম আর কাউকে প্রয়োজন নেই আমার৷ আমি শেষবারের জন্য একবার গিয়ে দাঁড়ালাম সেই স্থানে। যেখান হতে এসবের শুরু। আজ আবার সেখানেই এসবে শেষ করে দিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। চলে যাচ্ছি বললে ভুল হবে পালিয়ে যাচ্ছি। এ শহরে আর আসা হবে না। আর কাউকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হবে না। কাউকে দেখে কষ্ট হবে না। কারোর জন্য ব্যাকুলতা থাকবে না। আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। শেষবারের জন্য একবার আহিরকে দেখার ইচ্ছে হলো। কিন্তু ইচ্ছে পূরণ হলো না। তার সাথে আমার আর কোনো কথা হলো না কখনোই। আর হবেও না। এই শহরটা ছেড়ে যেতে প্রচন্ড খারাপ লাগছে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। মায়ের কাঁধে কিছুক্ষণ মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলাম কিছুক্ষণ।আমার এই চেনা শহরের মতো #তুমিও_আমার_চেনা_হয়েও_অচেনা হয়ে গেলে। এবার আর ভাগ্য আমাদের এক সাথে করতে পারবে না। না আমাকে আর সেই দহনে পুরতে হবে।

—————————————
এরপর কেটে যায় সাতটি বছর। সাত বছরের মাঝে আমি শুধু একবার ফিরে গিয়েছিলাম সেই শহরে। সেখানে আহিরের একজন বন্ধুর কাছে জানতে পারলাম। আহির বিয়ে করেছে। কিন্তু রিবাকে নয়। অন্য আরেকটি মেয়েকে।পারিবারিকভাবেই নাকি বিয়েটা হয়েছে। রিবা নাকি আহিরকে চিট করেছে। কথাটা শুনে আমি হাসলাম। কেন হাসলাম জানি না। সেই ভাইয়াটা আমাকে হাসতে দেখে বললো,

–“আপু হাসছো তুমি?জানো তোমার প্রতি আহিরের এত ডেস্পারেট ভাব দেখে আমরা সবাই ভেবে নিয়েছিলাম সে তোমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এরপর হঠাৎই রিবা কোথা থেকে এলো,সম্পূর্ণ আহিরটাকেই পাল্টে দিলো। আমাদের সাথেও সে যোগাযোগ আস্তে আস্তে বন্ধ করে দিলো। তোমার কথা আমাদের বন্ধু মহলে আলোচনা হতো। তখন আহির বলেছিল তার নাকি তোমাকে শুধুই ভালো লেগেছিল। এরপর রিবার সাথে সম্পর্ক জরিয়ে পড়ে। এরপর থেকেই তোমাকে ইগনোর করে। ”

আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমি যা শোনার ছিলো শুনে নিয়েছি।

–“সরি,মিহি এতক্ষণ ওয়েট করানোর জন্য।তুমি ঠিক আছো? হাতে তো ব্যাথা পেয়েছো, মাথাও ফাটিয়েছো।এক্সিডেন্টটা হলো কিভাবে? ”

হঠাৎ কারোর কথায় নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে মিহিতা। উক্ত বলা কথাটির মালিককের দিকে তাকাতেই সে দেখতে পেল শ্রাবণকে। সে মিহিতাকে জরিয়ে ধরলো।চিন্তিত কন্ঠে শ্রাবণ মিহিতাকে জিজ্ঞেস করলো,
–“বাচ্চাটা ঠিক আছে?”
–“হ্যাঁ, স্যালাইন চলছে। ”

#চলবে

তুমি আমার চেনা হয়েও অচেনা পর্ব-০৩

0

#তুমি_আমার_চেনা_হয়েও_অচেনা
#আফরোজা_আহমেদ_কুহু
#পর্ব_০৩

এরপর এলো সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। এসএসসির রেজাল্ট। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। রেজাল্ট কি আসবে?ভালো হবে না খারাপ। আমার অস্থিরতা দেখে মা কিছুক্ষণ পর পরই এসে আমাকে বলছিল,

–“যা হওয়ার হবে এত টেনশন করিস না। আল্লাহ যা রেখেছে তা তো হবেই। ”

মায়েরও যে টেনশন হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম। বাবাও কিছুক্ষণ পর পর ফোন করছিল অফিস হতে। অবশেষে রেজাল্ট দিলো। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে আমার রোল নাম্বারটা তুললাম। এরপর চোখ বন্ধ করে ক্লিক করতেই রেজাল্ট সামনে এলো মনে হয়। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। যদি ভালো না হয় তখন কি হবে? কিভাবে বলবো মা-বাবাকে?মা আমার পাশে ছিলো। সে আমাকে ধরে কান্না করে দিলো। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এরপর রেজাল্টের দিকে তাকিয়ে দেখি জিপিএ-৫ এসেছে। তখন বুঝলাম এটা কষ্টে কান্না নয় এটা খুশির কান্না।

এরপর আমি ভর্তি হই কলেজে। আমাদের বাসা হতে ২০মিনিটের দূরত্ব ছিল।প্রথমদিন অনেক এক্সাইটেড ছিলাম।কি হবে, কেমন মানুষ থাকবে সেখানে?কিন্তু ক্লাসে যেতেই মনে হলো অবশেষে হয়তো আমি আহিরকে সরাতে পারবো আমার মন থেকে। কেননা আহিরের সাথে তো আর দেখা হবে না৷ দূরে থাকলে সে আমার থাকবে, আমার কল্পনায়। যেখানে আমি নিজের মতো সব সাজাতে পারবো। কিন্তু আহির সামনে এলেই যে আমার কল্পনাগুলোকে পাল্টে দেয়। কিন্তু ভাগ্যের কি অদ্ভুত খেলাই না চলছিল তখন।
আহির তখন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে সেইখানেই। আমি হাজার বার যাকে ভুলতে চাইছি। সে বার বার আমার সামনে আসছে। কিন্তু সে আমার হয়ে নয় বরং অন্য কারোর হয়ে। ভাগ্য যেভাবে সব জায়গায়ই আমাদের এক করে দিচ্ছে। চাইলেই কি সে আমার হতে পারে না?এক অদ্ভুত জাদু কি হতে পারে না জীবনে, যেখানে সে শুধু আমার হবে। কলেজ জীবনের কিছুদিনের মধ্যেই জানলাম আহিরের প্রেয়সীও এখানেই ভর্তি হয়েছে। সে যখন তার প্রেয়সীর জন্য অপেক্ষা করতো। আমি দূর হতে তা দেখতাম। বার বার চোখ ফিরিয়ে নিলেও বেহায়া চোখ শুধু তার পানেই তাকিয়ে থাকতো। সে কি একটি বারও আমার দিকে তাকাতে পারে না।সে হয়তো কোনোদিনই জানতে পারবে না এই কথা। কলেজের ফাঁকে ফাঁকে যে তাকে কেউ আড়াল থেকে দেখে, সে তা কখনোই বুঝতে পারবে না যার মনে সে ভালো লাগার একটি ছোট গাছ লাগিয়েছিল। সেই গাছ ভালোবাসার রুপ নিয়েছে। সে কখনোই শুনতে পাবে না আমার অভিযোগ গুলো।কেন ভাগ্য আমাকে সেই থার্ড পার্সনই বানালো। আমি তো হতে চাই নি। আমি সারাদিন তার আগের কথা গুলো ভাবি। তার বলা প্রথম ভালোবাসি কথাটা এখনো আমার কানে বাজে। সে যদিও নাম নেয় নি। আমার প্রতি তার হয়তো ভালো লাগাই ছিলো। মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে বরাবরই আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। সে তার প্রেয়সীর দিকে যখন মুগ্ধ নয়নে তাকাতো তখন আমার মধ্যে ঝড় বয়ে যেতো। কে বলেছিল আমার সাথে এমন আচরণ করতে? কিন্তু উত্তর পাই নি কখনোই। না কোনোদিন পাবো। ক্লাসে আমার নতুন একজন ফ্রেন্ড হয়। নাম আরাবি। সে ছিলো অনেক মিশুক একটা মেয়ে। কিছুদিনের মধ্যেই সে আমার প্রিয় মানুষদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল। আহিরকে লুকিয়ে দেখা নিয়ে সে একদিন আমাকে প্রশ্ন করেছিল। আমি বলেছিলাম তাকে আমার সেই একপাক্ষিক অনুভূতির কথা। সে আমার দিকে তখন অবাক নয়নে তাকিয়ে ছিলো। হয়তো এসব কথাভাবে নি। এরপর আমি চলে যেতে নিলেই সে আমাকে জরিয়ে ধরেছিল। দিয়েছিল একরাশ সান্ত্বনা। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলাম তখন। প্রথম কারোর কাছে নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখা অনুভূতিকে প্রকাশ করায় কেমন জানি লাগছিল।

এরপর কেঁটে যায় আরো ১মাস, তখন জানুয়ারী মাস।ঠান্ডা প্রকোপ বেড়েছে আবারও। আমি বাসা হতে বের হয়ে সেইস্থানে দাঁড়ালাম। যেখানে তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। চারপাশে তাকালাম। ঠান্ডায় এখনো কথা বললে মুখ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই কয়েকবছরে রাস্তার ঘাটের পরিবর্তন তেমন একটা হয় নি। রাস্তার পাশে থাকা দোকানগুলোও রয়েছে নিজ জায়গায়। সব কিছুই সেই আগের মতোই রয়েছে। আজকের আর সেইদিনের মধ্যে পার্থক্য এইটুকুই সেইদিন এই স্থানে সে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা তখন একে অপরকে চিনি না। আমি মাথা নিচু করে তার পাশ কাটিয়ে চলে গেলেও আমি বুঝতে পেরেছিলাম সে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। সেই সময় তার চোখে আমাকে দেখার ব্যাকুলতা দেখতে পেতাম। কিন্তু আজ যখন আমি তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি। আজ সে মানুষটাই নেই।সেদিন তো আমি তার চোখে ভাষা বুঝেছিলাম। তবে সে কেন বুঝলো না আমাকে। আমার চোখের ব্যাকুলতা কি সে দেখতে পায় নি। পেয়েছিল হয়তো পাত্তা দেয় নি।

হঠাৎ মনে হলো কেউ দেখছে আমায়। আমি পিছনে ঘুরে দেখলাম অপরিচিত মুখ। আমি ঘুরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। গন্তব্য জানি না। শুধু এই ব্যস্ত নগরীতে একটু একা হাঁটতে চাই। নিজের মতো করে উদ্দেশ্যহীনভাবে। কিছুক্ষণ যেতেই লক্ষ্য করলাম লোকটি আমার পিছু নিয়েছে। সে কি ফলো করছে আমায়? করুক আমি আর ফিরে তাকাবো না। আর কারোর চোখের ভাষাও আমি বুঝতে চাই না। আমি আর মাথা ঘামালাম না। আমি চাই না এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। কারোর জীবনে আর থার্ড পার্সনের ভূমিকা আমি রাখতে চাই না। নিঃসঙ্গতাই বরং থাকুক। অন্তত সে আমায় ছেড়ে যাবে না। আহির, সে তো আমার চেনা হয়েও অচেনা মানুষ হয়ে গেছে। এখন নাহয় নিঃসঙ্গতাই থাক। আমার হয়ে আমার মতো করে।

এরপর আমিও তাকে এভয়েড করার চেষ্টা করতাম। লাভ বিশেষ হতো না। তাও তার সামনে বেহায়ার মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম না। আড়ালে দেখতাম।একদিন আমি কলেজের মাঠে বসেছিলাম। আমার নতুন বান্ধবী আরাবি গেছে লাইব্রেরীতে। মিরাও মাঝে মাঝেই ফোন করে আমাকে। আমি ধরি না। সে আমার অনুভূতি গুলো না জানলেও আহিরের তখনকার আমার প্রতি আচরণগুলো জানতো। তবুও সে কথার মাঝে রিবা আর আহিরকে তুলতো। এতে যে আমার হ্রদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয় যে হয়তো বুঝতো। তবে তবুও হয়তো সে আমাকে এসব বলে মানসিক শান্তি পেতো। তাই আমিও যোগাযোগ রাখি না। নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে অন্যের মানসিক শান্তির কারণ, আমি হতে চাই না।

তখন আমি বসে ফোন স্ক্রোল করছিলাম। এমন সময় একজন ছেলে এসে বসলো আমার পাশে। দেখতে এককথায় সুদর্শন। সেইদিন ওনিই আমার পিছু নিয়েছিল।সিনিয়র ছিল আমার। আমাদের ভার্সিটির না হলেও কলেজে তিনি এখানেই পড়তেন। তাছাড়া ভালো ছাত্র হওয়ায় সামনের বছর লেকচারার হিসেবে এখানে জয়েন দিবে বলে শুনেছিলাম।তার নাম শ্রাবণ৷আমি তাকে দেখে দ্রুত উঠতে নিলেই সে হাত ধরলো আমার। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও ছাড়লো না। উল্টো বললো,

–“ভালোবাসি মিহিতা।”

আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। ভার্সিটির অনেক ভাইয়া আপুরাও তখন উপস্থিত ছিল। এত লোকের সামনে এভাবে কেউ প্রপোজ করাতে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম। আমার অস্থিরতা দেখে সে আমার হাত আরোও শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

–“জীবনটাকে কি আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায় না? ”

আমি অবাক হলাম। সে কি আমার সম্পর্কে জানে? কিন্তু কিভাবে?

ততক্ষণে আরাবি চলে এসেছে। আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। তবে কি আরাবিই বলেছে? সে কিভাবে পারলো এটা করতে?আমার অনুভূতির কথাগুলো তো সে ব্যতিত আর কেউ জানে না!

#চলবে