Monday, August 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 170



একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৩০+৩১+৩২

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_30(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা ও রায়ানের বিয়ের পর পেরিয়ে গেছে ৬ টা মাস। এই ৬ মাসে অনেক কিছু বদলে গেছে। আবিরের সব কুকীর্তি ধরা পড়েছে। তাকে কানাডা থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের আদালত তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। বর্তমানে সে নিজের কুকর্মের সাজাই ভোগ করছে।

এদিকে বিবাহ পরবর্তী জীবনে অনেক সুখী আছে রায়ান ও প্রভা। তাদের জীবনে ভালোবাসার কোন কমতিই নেই। রায়ান প্রভাকে একদম নিজের সবটুকু দিয়েই আগলে রাখছে। তার গায়ে ফুলের টোকাও লাগতে দিচ্ছে না। এদিকে আবির গ্রেফতার হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার দরুণ তার সংসদীয় আসন ফাকা হয়ে আছে। তাই নির্বাচন কমিশন কতৃক এই আসনে উপনির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রুহুল আমিনের পার্টির লোকেরা চাইছেন রুহুল আমিনের ছেলে মানে রায়ান এবার এই আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়াক। রুহুল আমিনকে এই বিষয়ে বলতেই তিনি সবটা রায়ানের উপরেই ছেড়ে দেন। কিন্তু রায়ানের এসব রাজনীতির প্রতি আগ্রহ না থাকায় সে সরাসরি না বলে দিয়েছে৷ কিন্তু দলীয় নেতৃবৃন্দ আদা জল খেয়ে তার পেছনে লেগেছে। যাতে রায়ানকে এই নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করানো যায়। আজও তারা এসেছিল রায়ানের সাথে দেখা করতে। কিন্তু রায়ান আজও অমত জানিয়েছে। এরপরেই প্রভাকে নিয়ে সে ঘুরতে বের হয়েছে। প্রভা অনেকদিন থেকেই বলছিল সে ঘুরতে যেতে চায়। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য হয়ে উঠছিল না। আসলে প্রভা কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর আবারও চট্টগ্রাম মেডিকেলেই ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেছে। এই জন্য তাকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। এদিকে রায়ানও তার বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছে৷ আজ অনেক কষ্টে দুজনেই টাইম ম্যানেজ করেছে। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুজনে ঘুরতে বেড়িয়েছে।

আজ দুজনে সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরি করল। প্রভার খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিল। সে রায়ানকে বলে,”চলুন না আইসক্রিম খাই।”

রায়ান প্রভাকে বলে,”তুমি না একজন ডক্টর৷ তুমি এমন কেয়ারলেসের মতো কথা কিভাবে বলতে পারো? এই ঠাণ্ডায় তুমি আইসক্রিম খাবে?”

প্রভা বলে,”হ্যাঁ, আমি ডক্টর। কিন্তু তার আগে আমি একজন মানুষ। আমার তো একটা স্বাদ আহ্লাদ থাকতেই পারে তাইনা? আর কে বলেছে এখন ঠান্ডা পড়েছে? এখনো তো আবহাওয়া বেশ গরমই।”

রায়ান বলে,”বাহ, আমার ইনোসেন্ট গার্ল তো দেখছি বেশ ভালোই কথা বলতে শিখেছে। এখন তো তোমার সাথে কথা দিয়েও আমি পারব না।”

প্রভা উত্তরে স্মিত হাসে। রায়ান প্রভাকে একটা আইসক্রিম এনে দেয়। অতঃপর বলে,”চলো এখন যাওয়া যাক।”

“হ্যাঁ, চলো।”

প্রভা ও রায়ান যেতে যাবে তখনই তারা হঠাৎ দেখতে পায় রাস্তায় কিছু মানুষ আন্দোলন করছে। বেশ বড়সড় জটলা পেকেছে সেখানে। মানুষজন কিছু প্লাকার্ড হাতে বেরিয়েছে। তাদের দাবি একটাই, এলাকার বেহাল অবস্থার উন্নতি করতে হবে। প্রভা ও রায়ান সেদিকে এগিয়ে যায়। মিছিলে কিছু মানুষ বক্তব্য রাখে। তাদেরই একজন বলে,”দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকায় আবির হোসেন অপশাসন চালিয়েছেন। তার শাসনামলে এখানে কোন উন্নতি তো হয়নি বরং আরো অবনতি হয়েছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা লুট, অবৈধ প্রকল্প, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবনতি আমরা দেখতেই পাচ্ছি। বৃষ্টি হলে গোটা চট্টগ্রাম শহর ডুবে যায়। সবমিলিয়ে শহরে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। এইজন্য আমাদের একজন যোগ্য নেতার প্রয়োজন। কিন্তু এখনো অব্দি উপনির্বাচনে যাদেরকে প্রার্থী করা হয়েছে তারা প্রায় সবাই দূর্নীতিগ্রস্থ এবং তাদের জনগণের উন্নতি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথাই নেই। তারা শুধু নিজের স্বার্থে লড়ছে।”

এভাবে নানা জনগণ তাদের দূর্ভোগের কথা জানায়। সব শুনে রায়ান ও প্রভা দুজনেরই খুব খারাপ লাগে। সত্যি অপশাসন এবং দূর্নীতি একটি দেশ বা অঞ্চলের উন্নতির পথে প্রধান অন্তরায়। রায়ান ও প্রভা আর সেখানে বেশিক্ষণ না থেকে রওনা দেয়। গাড়িতে উঠে প্রভা ও রায়ান দুজনেই চুপচাপ ছিল। রায়ান কোন চিন্তায় মগ্ন ছিল। প্রভার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। রায়ান প্রভার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমিও কি সেটাই ভাবছ যেটা আমি ভাবছি?”

প্রভা বলে,”হুম। আমার মনে হয় আপনার নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিৎ। যাতে করে আপনি এলাকার মানুষের সকল দূর্ভোগ দূর করতে পারেন।”

রায়ান এসব নিয়েই ভাবতে থাকে। সে তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। বাড়িতে ফিরেও সে এসব নিয়ে ভাবছিল। এমন সময় রুহুল আমিন তার রুমে আসেন। রুহুল আমিনকে দেখে রায়ান তার সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে। একসময় নানা কথা বলতে বলতে সে বলে,”আচ্ছা, আব্বু। তুমি কেন রাজনীতিতে এসেছিলে?

রুহুল আমিন বলেন,”আমি বড় হয়েছি খুব দরিদ্র পরিবেশে। সেই থেকেই আমার মনে জেদ ছিল যে আমি একসময় মানুষের দুঃখ দূর্ভোগ দূর করব। সেই ভাবনা থেকেই রাজনীতিতে আসা। আমি জানি না কতোটা সফল হয়েছি। কিন্তু নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি।”

রায়ান যেন তার উত্তর পেয়ে যায়। রুহুল আমিনের সামনে মাথা নিচু করে বলে,”তুমি আমাকে দোয়া করো আব্বু। আমি যেন তোমার দেখানো পথে হেটে মানুষের সব দুঃখ দূর্ভোগ দূর করতে পারি।”

রুহুল আমিন খুশি হন। তিনি কখনোই রায়ানের উপর জোর করে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চান নি। তাই রাজনীতির ব্যাপারেও তাকে জোর করেননি। কিন্তু রায়ান নিজে থেকেই এই ব্যাপারে এগিয়ে আসায় তিনি অনেক খুশি।
~~~~~
সেদিনের পরই রায়ান মনোনয়ন পত্র তুলে জমা নিয়েছিল। আর স্বাভাবিকভাবেই দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। বর্তমানে সে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছে জোরদমে। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছে। রাজনীতিতে সে অনভিজ্ঞ। এইজন্য তাকে বেশ বুঝে শুনে পা ফেলতে হচ্ছে। তার বাবা তাকে অনেক পরামর্শ দিচ্ছে৷ এছাড়া আরো অনেক সিনিয়র রাজনীতিবিদও তার পাশে আছে। প্রভাও রয়েছে রায়ানের পাশে। একজন যোগ্য সহধর্মিণীর মতো সে সবসময় রায়ানের পাশে দাঁড়ায়। নিজের কাজের বাইরে সময় বের করে সে আজ এসেছে রায়ানের হয়ে ভোটের প্রচার করতে। একটি জনসভা থেকে প্রভা বলে,”আমি আমার স্বামীকে মানুষ হিসেবে যতোটা চিনি তিনি অনেক ভালো মানুষ। আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিতে পারি আপনারা যদি তাকে ভোট দেন তাহলে আপনারা একজন যোগ্য মানুষকেই বেছে নিতে পারবেন। আর দেখবেন আমাদের চট্টগ্রাম শহর উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাবে। এমনকি উন্নতিতে ঢাকাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এখন মানুষ যেমন ঢাকায় যায় তেমনি দেখবেন আমার স্বামী এমপি হয়ে শহরের এমন উন্নতি করবে যে সবাই চট্টগ্রামে আসবে। চট্টগ্রাম শিল্প, শিক্ষাদীক্ষা, পর্যটন সব দিক দিয়েই এগিয়ে যাবে। এখান থেকে দারিদ্র্য একেবারে মুছে যাবে। বিপদে আপদে সবসময় আপনারা আমার স্বামীকে পাশে পাবেন।”

এরকম আরো নানান ভাষণ দেয় সে। হঠাৎ করে তার অনেক ক্লান্তি অনুভূত হয়। প্রথার মাথা ঘুরতে থাকে। আর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রায়ান সাথে সাথেই মঞ্চে উঠে যায়। এরপর তার এক কর্মীকে বলে,”তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো। প্রভাকে হাসপাতালে নিতে হবে।”

রায়ান প্রভার জন্য অনেক চিন্তা করতে থাকে। তার মনে হয় প্রভার স্ট্রেসের জন্যই এমন হয়েছে। সে পানি নিয়ে প্রভার মুখে ছিটায়। প্রভার জ্ঞান ফিরে আসে। রায়ান প্রভাকে বলে,”তুমি ঠিক আছ তো?”

প্রভা বলে,”হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। হঠাৎ করে কেন জানি মাথা ঘুরে..”

এই বলে হঠাৎ করে প্রভা মুখ চেপে ধরে। তার কেন জানি খুব বমি পাচ্ছে। রায়ান বলে,”কি হয়েছে? এনি প্রব্লেম?”

প্রভা আর কিছু বলার সময় না দিয়ে বমি করা শুরু করে।

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_31
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভাকে নিয়ে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসে রায়ান। অত:পর প্রভাকে বিশ্রাম নিতে বলে। আজ সে ঠিক করেছে প্রভার খেয়াল রাখবে সারাদিন। তাই খাওয়া দাওয়া করে এসে প্রভার পাশেই বসে। প্রভা রায়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। রায়ান প্রভার হাসা দেখে সন্দিহান হয়ে পড়ে। অদ্ভুত ভাবে তাকায় প্রভার দিকে এবং তাকে জিজ্ঞেস করে,”তুমি এভাবে হাসছ কেন প্রভা?”

প্রভা আচমকা রায়ানের কোলে মাথা রেখে দেয়। রায়ান প্রভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। প্রভা এবার রায়ানের উদ্দ্যেশ্যে বলতে শুরু করে,”দুদিন নেই আমার মাথা ব্যাথা করছিল, সাথে বমি বমি ভাব। প্রথম দিকে আমি এটাকে এসিডিটি ভেবেছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে বুঝলাম এটা সাধারণ এসিডিটি নয়। আজ জনসভায় অজ্ঞান হয়ে যাবার পরই আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম। তাও ঘরে এসে প্রেগ্ন্যাসি কিট দিয়ে টেস্ট করলাম। প্রত্যাশিত ফলাফলই পেলাম। আমি মা হতে চলেছি। আর আপনি বাবা হতে চলেছেন রায়ান।”

প্রভার মুখে এই কথা শুনে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে রায়ান। প্রভার উদোম পেটে হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,”আমি ভাবতেই পারিনি এত বড় একটা সুখবর পাবো। আমি আজ কত খুশি বলে বোঝাতে পারব না। আমি বাবা…প্রভা আমি…”

রায়ানের এই উত্তেজনা দেখে প্রভাও খুশি হয়। মা-বাবা হওয়ার মতো সুন্দর অনুভূতির কোন তুলনাই হয় না।

~~~~~~~~~~~~~~~~~
কয়েক দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে নির্বিঘ্নে। এই ক’দিনে রায়ানের খুশির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে এসেছে। আজই নির্বাচন অনু্ষ্ঠিত হলো। রায়ান নিজের জয় নিয়ে আশাবাদী। এমনিতেই চট্টগ্রাম শহরে রুহুল আমিনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আর রুহুল আমিনের উপর ভরসা রেখে তাই তার ছেলে রায়ানও ভালোই ভোট পাবে নিঃসন্দেহে। তার উপর রায়ান নিজেও ভোটে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জনগণকে৷ এবং বিভিন্ন সমীক্ষাতেও জনগণ তার পক্ষেই রায় দিয়েছে। শেষমেশ ভোটের ফল বেড়িয়ে এলো। এই ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হলো রায়ান। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীকে প্রায় আড়াই লাখ ভোটে হারিয়েছে সে। পুরো শহর জুড়ে বিজয় মিছিল বের করা হয়। চট্টগ্রামবাসী এখন উন্নয়নের স্বপ্নে বিভোর।

এদিকে এমপি হওয়ার দরুণ রায়ানের ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব পড়লেও নিজের স্ত্রীর যত্নে সে কোন অবহেলা করতে ইচ্ছুক নয়। প্রভার এই সময় অনেক খেয়াল রাখতে হবে। তাই রায়ান প্রভাকে হাসপাতালে যেতে বারণ করেছিল যাতে তার উপর স্ট্রেস কম পড়ে কিন্তু প্রভা তো প্রভাই। নিজের দায়িত্বে সে কিছুতেই অবহেলা করবে না। তবে অনেক বলে কয়ে প্রভার ওয়ার্কিং টাইম কমিয়ে এনেছে সে। তাছাড়া বাড়িতে যতক্ষণই থাকে সে প্রভার যত্ন নেয়ার চেষ্টা করে।

প্রভাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া, তার খুটিনাটি সব কাজ করে দেওয়া সহ সব দিকেই খেয়াল রাখছে সে। অনুরাধাও প্রভার খবরটা পেয়ে তার সাথে দেখা করতে এসেছে। সাথে এনেছে নিজের মেয়ে স্নেহাকেও। অনুরাধা প্রভাকে বলে,”আমি খুব খুশি হয়েছি তোর খবরটা পেয়ে।”

দুই বান্ধবী মিলে অনেক গল্প করে। অনুরাধা নিজের প্রেগ্ন্যাসির এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করে প্রভার সাথে। যদিও একজন ডাক্তার হিসেবে তার এসব সম্পর্কে ধারণা আছে তবে তবুও নতুন করে এসব জেনে তার ভালোই লাগছে। আসলে প্রথমবার মা হচ্ছে তো তাই অনুভূতিটা অনেক সুন্দর।

৯ মাস পর,
প্রভা ও রায়ান একসাথে সময় পার করছিল। রায়ান এতদিন ঢাকায় ছিল। আজ চট্টগ্রামে ফিরেই প্রভার খেয়াল রাখছে পুরোদমে। আর কিছুদিন পরেই প্রভার ডেলিভারি ডেট। তাই বর্তমানে সে বেড রেস্টেই থাকে সবসময়। আজ কথায় কথায় প্রভা হঠাৎ বলে,”আচ্ছা তোমার কি মনে হয়? আমাদের ছেলে হবে না মেয়ে?”

রায়ান হেসে বলে,”ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমি তো চাই যেই আসুক সে সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসুক। তবে আমি শুনেছি মেয়েরা বাবার অনেক আদরের হয়। তাছাড়া আমি নিজের মাকে কখনো পাশে পাই নি। তাই মেয়ে হলে আমি একটু বেশিই খুশি হবো। আমার মনে হবে আমার মেয়ে নয় মা এসেছে আমার কাছে।”

প্রভা স্মিত হাসে। নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বলে,”আমিও খুশি হবো যদি আপনার এই চাওয়া পূর্ণ হয়।”

রায়ান বলে,”তবে ছেলে হলেও কোন ব্যাপার না। আমার রাজপুত্র, রাজকন্যা যেই আসুক তাকে আমি আগলে রাখবো সাথে আমার রাণীকেও।”

প্রভা রায়ানের উপর ভীষণ মুগ্ধ হয়। এত অসাধারণ ব্যক্তিত্ব রায়ানের যা তাকে সবসময় মুগ্ধ করে। প্রভার নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় রায়ানের স্ত্রী হতে পেরে। সে এটাও জানে তাদের সন্তানও অনেক ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী হবে রায়ানকে বাবা হিসেবে পেয়ে।

দিন গুলো ভালো ভাবেই চলতে থাকে। তখনো প্রভার ডেলিভারি ডেটের এক সপ্তাহ বাকি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রভার লেবার পেইন শুরু হয়। রায়ান সেইসময় বাড়িতেই ছিল। সে দ্রুত প্রভাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। প্রভাকে এডমিট করা হয় হসপিটালে। অত:পর অটির বাইরে পায়চারি করতে থাকে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে নিজের স্ত্রীর সুস্থতার। রায়ান অনেকক্ষণ ধরে পায়চারি করছিল। কিন্তু ভেতর থেকে কোন খবর আসে নি৷ রায়ানের চিন্তা বাড়ছিল। সৌভিক, অনুরাধা ওরাও ছুটে আসে হসপিটালে। সৌভিক রায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,”তুই চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এমন সময় একজন নার্স একটি শিশুকে কোলে করে নিয়ে বাইরে আসে৷ রায়ানের হৃদস্পন্দন বাড়ছিল। নার্স রায়ানের কোলে বাচ্চাটিকে তুলে দিয়ে বলে,”অভিনন্দন স্যার, আপনার মেয়ে হয়েছে। মা-মেয়ে দুজনেই ভালো আছেন। এই নিন আপনার মেয়েকে কোলে নিন।”

রায়ান তার মেয়েটিকে কোলে তুলে নেয়। আবেগাপ্লুত হয়ে বলে,”আমার রাজকন্যা! আমার মা!”

সৌভিক, অনুরাধা ওরা দুজনেও অনেক খুশি হয়।

প্রভা ও রায়ানের দিনগুলো এরপর অনেক সুখেই অতিবাহিত হয়। কিছুদিনের মধ্যেই রায়ান ও প্রভা তাদের মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফেরে। রুহুল আমিন ধুমধাম করে তার নাতনিকে ঘরে তোলেন।

বাবা হওয়ার পর থেকে রায়ান আরো অনেক বেশি দায়িত্ববান হয়ে গেছে। সবসময় মেয়েকে কোলে রাখছে। রায়ান তার কন্যাশিশুকে মেয়ে কম মা হিসেবে বেশি ভালোবাসছে। আর কাকতালীয়ভাবে রায়ানের মেয়ের সাথে তার দাদীর চেহারার অনেক মিলও আছে। রুহুল আমিন তো নিজের নাতনিকে কোলে তুলে নিয়েই বলেন,”একদম সেই টানাটানা চোখ, নাক সবকিছুই ওর মতোনই।”

রায়ান ও প্রভার মেয়ে কিন্তু অনেক রূপবতীও হয়েছে। এই বয়সেই এত সুন্দরী বোঝা যাচ্ছে বড় হলে অনেক বেশি সুন্দরী হবে সে।

~~~~~
প্রভা ও রায়ানের মেয়ের আকিকার দিন চলে আসে। রায়ান নিজের মেয়ের জন্য আগে থেকেই নাম ঠিক করে রেখেছিল। আকিকার দিন সে বলে,”আমার ও প্রভার মেয়ের নাম আমি রাখলাম রুকাইয়া জাহান প্রণালী।”

রুকাইয়া ছিল রায়ানের মায়ের নাম। নিজের মায়ের স্মৃতি রেখেই এই নাম দিয়েছে সে। প্রণালী নামটা মূলত প্রভাই ভেবেছিল। দুজনেই মতামত দিয়ে এই নাম রেখেছে। রায়ান নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমার প্রণালী মা অনেক বড় হবে। নিজের বাবা-মায়ের মুখ অনেক উজ্জ্বল করবে তাই না মা?”

ছোট্ট প্রণালী তখন খিলখিল করে হেসে ওঠে। প্রভাও নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি জানি আমার মেয়ে অনেক সফল হবে জীবনে। আমাদের গোটা পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। আমি দোয়া করি, ওর ভবিষ্যৎ জীবন অনেক সুখের হোক।”

প্রণালীর ভবিষ্যৎ জীবন সুখের হবে না দুঃখের তা তো জানা যাবে সামনেই। দেখা যাক, ভাগ্য কোন খেলা খেলে।

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_32
#ইয়াসমিন_খন্দকার

৫ বছর পর,
প্রভা তৈরি হচ্ছে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। আজ তার অনেক ব্যস্ত সিডিউল। অনেক রোগী দেখতে হবে। এরমধ্যে হঠাৎ সে লক্ষ্য করল প্রণালী দৌড়ে রুমে প্রবেশ করছে। প্রভা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। এই মেয়েটাকে নিয়ে সে আর পারে না। এত ডানপিটে আর চঞ্চল হয়েছে যা বলার বাহিরে। প্রভা বুঝতে পারে না তার মতো শান্ত নারীর গর্ভে এই অশান্ত মেয়ে কিভাবে এলো। প্রণালী রুমে এসেই বিছানায় বসে পড়ল। প্রভার উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আম্মু, আমার আজ হাসপাতালে যেতে খুব ইচ্ছা করছে। তুমি আমাকে নিয়ে চলো না।”

প্রভা ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”ওখানে গিয়ে তুমি কি করবে? তোমার আজ স্কুল আছে না?”

প্রণালী মুখ ভাড় করে বলে,”আমার আজ স্কুলে যেতে একদমই ইচ্ছা করছে না। তুমি আমায় হাসপাতালে নিয়ে চলো না।”

“তুমি বেশ পড়াচোর হয়েছ দেখছি। এসব একদম চলবে না। আমার সাথে চলো আমি তোমাকে স্কুলে নামিয়ে দেব।”

প্রণালী একদম কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। সে আজ কিছুতেই স্কুলে যাবে না। প্রভা নিজের এই জেদি, চঞ্চল মেয়েটাকে সামলাতে ব্যর্থ হয়। এমন সময় রায়ানও রুমে চলে আসে। প্রণালীকে কাঁদতে দেখে সে এসে নিজের রাজকন্যাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,”আমার প্রিন্সেস কাঁদছে কেন? কি হয়েছে মা?”

প্রণালী গাল ফুলিয়ে বলে,”আমি আজ স্কুলে যাব না বাবা।”

রায়ান বলে,”কোন ব্যাপার না। আজ আমি তোমাকে নিয়ে নাহয় ঘুরতে যাব।”

প্রভা বলে,”এভাবেই মেয়েকে মাথায় তোলো৷ ওকে আস্কারা দিয়ে তুমি কিন্তু একদম ঠিক করছ না। সামনে ওর এনুয়াল এক্সাম এইসময় ফাঁকিবাজি আমি একদম বরদাস্ত করব না।”

“তুমি এমন করছ কেন প্রভা? একটা দিনেরই তো ব্যাপার। আমি নাহয় ওকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাব।”

“কেন? তোমার কাজ নেই? লোকে যদি জানে এমপি নিজের কাজ ছেড়ে সারাদিন নিজের মেয়েকে নিয়ে ঘুরছে তাহলে কিন্তু পরেরবার একটা ভোটও পাবে না।”

“সারাবছর তো জনগণকে সময় দেই। এই একটা দিন নাহয় নিজের মেয়েকে সময় দিলাম।”

প্রভা আর কিছু বলে না। সে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। এমন সময় রায়ান এসে প্রভাকে বলে,”নিজের যত্ন নিও। এইসময় কিন্তু তোমাকে নিজের প্রতি আরো যত্নবান হতে হবে। কারণ তোমার মাঝে যে আরো একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে।”

প্রভা মৃদু হাসে। দ্বিতীয় বারের মতো মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চলেছে সে। কয়েকদিন আগেই জানতে পেরেছে সে মা হতে চলেছে। তাই প্রভার মধ্যে আনন্দের কোন কমতি নেই। সাথে রয়েছে কিছু আশংকাও। যদিও সেই ব্যাপারে রায়ানকে এখনো তার কিছু বলা হয়নি। আজ হসপিটালে গিয়েই প্রভা সবার আগে গাইনি বিশেষজ্ঞ মিসেস চৌধুরীর সাথে কথা বলবে। তিনিই তাকে এই বিষয়ে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে। প্রভা কিছু একটা মনে করে রায়ানকে বলে,”তুমি ওদের খোঁজ নিয়েছিলে?”

“ওদের মানে?”

“আবির ভাইয়ার স্ত্রী ও সন্তানের?”

প্রভার কথা শুনে রায়ানের চোয়াল শক্ত হয়। আবির নামটাকেই তার ইদানীং সহ্য হয়না। এই আবিরের জন্যই তার জীবনের ১২ টা বছর নষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয় আবিরের খাওয়ানো ওষুধের পাশ্ব-প্রতিক্রিয়ার জন্য রুহুল আমিনও কিছু বছর আগে মারা গেছেন। নাহলে তিনি হয়তো আজও পৃথিবীতে থাকতেন। কিছুদিন আগেই রায়ান জানতে পেরেছে আবির গোপনে একটা বিয়ে করেছিল। সেই ঘরে আবিরের একটা ছেলেও আছে। প্রভা এটা জানার পর দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। প্রভার মনে হয়েছিল আবির হয়তো ঐ মহিলাকেও বোকা বানিয়েছে। কিন্তু রায়ান খোঁজ নিয়ে দেখেছে ঐ মহিলা আবিরের ব্যাপারে সব সত্যি জেনেই তাকে বিয়ে করেছে। এখনো আবিরের জমানো টাকায় বেশ আয়েসি জীবন যাপন করছে। তাই রায়ান আর এই ব্যাপারে কোন কথা বলে না। প্রভাকে শুধু এটুকুই বলে,”ওরা ভালো আছে। তুমি চিন্তা করো না।”

~~~~~~~
নিজের প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে আছে প্রভা। ডা.চৌধুরী প্রভাকে বলে,”আপনি নিজেও একজন চিকিৎসক। তাই অবস্থা যে কতটা ক্রিটিকাল আপনি বুঝতে পারছেন। এই সন্তানটা জন্ম দিতে গেলে আপনার লাইফ রিস্ক আছে। আমার মনে হয় আপনার গর্ভ*পাত করা উচিৎ।”

প্রভা নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বলে,”আমি এমনটা চাই না। তাছাড়া আপনিই তো বললেন আমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২০%, তাহলে তো রিস্কটা নিতেই পারি।”

“আপনি বুঝতে পারছেন না মিসেস আহসান, এটা একটু বেশিই রিস্কি হয়ে যাবে। আপনার এই রিস্ক নেওয়া উচিত হবে না।”

“আমি একজন মা হয়ে কিছুতেই নিজের গর্ভের সন্তানকে মে*রে ফেলতে পারব না। তার জন্য যদি নিজের জীবনটা রিস্কে ফেলতে হয় তাতেও আমার কোন অসুবিধা নেই।”

বলেই প্রভা উঠে দাঁড়ায়। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আর নিজের সিদ্ধান্তে যে সে অটল সেটাও সে ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রভা নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বলে,”তুমি চিন্তা করো না। তোমার মাম্মা তোমায় পৃথিবীতে আনবেই। তোমার কোন ক্ষতি হতে দেব না।”

~~~~~~~
কয়েক মাস পর,
আজ প্রভার ডেলিভারি ডেইট। প্রভাকে নিয়ে যথাসময়ে হাসপাতালে পৌঁছে গেছে রায়ান। প্রভা রায়ানকে নিজের অবস্থার ব্যাপারে বলে নি। তাই সে অনেকটা নিশ্চিন্তে আছে। কিন্তু আজ যখন ডাক্তারের কাছে সবটা জানতে পারল তখন রায়ানের পায়ের তলার মাটি সরে গেল। রায়ান যদি আগে জানত প্রভার লাইফ রিস্ক আছে তাহলে সে কখনো প্রভাকে এত বড় ঝুঁকি নিতে দিত না। রায়ান তখন সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকে। প্রভার কোন ক্ষতি হলে যে সে সেটা মেনে নিতে পারবে না। রায়ান কাঁদতে থাকে অনবরত। প্রণালীকে নিয়ে অনুরাধা হাসপাতালে আছে। প্রণালী রায়ানকে কাঁদতে দেখে বলে,”বাবা, তুমি কাঁদছ কেন?”

রায়ান নিজের মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে কাঁদতে থাকে। প্রণালী কিছু বুঝে উঠতে পারে না। এমন সময় একজন ডাক্তার এসে বলে,”অবস্থা ভীষণ ক্রিটিকাল। আমরা মা এবং সন্তানের দুজনেরই লাইফ রিস্ক আছে। তবে আমরা বাচ্চাটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করব। মাকে বাঁচানোর কথা আমরা দিতে পারছি না।”

প্রণালী অনুরাধার কাছে গিয়ে বলে,”ডাক্তার কি বলছে আন্টি? মায়ের কি হয়েছে?”

অনুরাধা এই ছোট বাচ্চাটাকে কিভাবে সামলাবে সেটা বুঝে উঠতে পারে না। সময় যত এগোচ্ছিল রায়ান ততই দূর্বল হয়ে পড়ছিল। প্রভাকে হারানোর ভয় জেকে বসতে থাকে তার মনে। এমন সময় ডাক্তার এসে বলে,”আপনার ছেলে হয়েছে। সে একদম সুস্থ আছে তবে আপনার স্ত্রীর অবস্থা আশংকাজনক। আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাব। বাকিটা আল্লাহর হাতে।”

এই বলে তিনি চলে যান। রায়ানের মধ্যে এই মুহুর্তে অদ্ভুত অনুভূতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না নিজের ছেলে হওয়ার খবরে খুশি হবে নাকি প্রভার এই অবস্থার জন্য কষ্ট পাবে। কিছুক্ষণ পরেই একজন নার্স এসে তাদের সন্তানকে রায়ানের কোলে দিয়ে যায়। রায়ান নিজের ছেলেকে কোলে নিয়ে বলে,”আমার রাজপুত্র!”

সময় গুলো কাঁটতে থাকে দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে। প্রভার অবস্থা এখনো স্থিতিশীল। তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার এখনো কোন ভরসা দিতে পারছে না। রায়ান নিজের ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে। সৌভিক তার কাধে হাত রেখে বলে,”অনুরাধা প্রণালীকে সামলাচ্ছে। তুই চিন্তা করিস না। ভাবির কিছু হবে না।”

রায়ান নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার সন্তানেরা কি মাতৃহারা হয়ে যাবে সৌভিক? আমি ওদের একা কিভাবে সামলাবো? প্রভাকে ছাড়া বাকি জীবনটাই বা কিভাবে কাটাবো? ও কিভাবে এরকম স্বার্থপরতা করতে পারল কিভাবে?”

বলে আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো রায়ান।

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-২৭+২৮+২৯

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_27
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভাকে নিজের বুকে আগলে নেয় রায়ান। তাকে শক্ত আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে। কিন্তু প্রভা অনুভূতিহীনের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। রায়ান প্রভাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রভা বলে ওঠে,”আপনাকে আমায় কিছু বলতে হবে না। আমি সব জানি। আপনি আমায় একটুও বিশ্বাস করেন না তাইনা? এইজন্যই বোধহয় এত গুলো বছর ধরে এইসব মিথ্যা নাটক করলেন?”

রায়ান নিরুত্তর। প্রভা মলিন হেসে বললো,”জানেন আপনাকে যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছি যে আপনিই আমার রায়ান। কিন্তু আমি এতদিন ধরে আপনাকে না চেনার ভান করে গেছি শুধু একটাই কারণে। আমার বিশ্বাস ছিল যে আপনি আমার কাছে এসে নিজের মুখে সব সত্যি আমায় বলবেন। নিজের আসল পরিচয়ে আমার সামনে আসবেন। কিন্তু..আপনি আমার সাথে নাটক করে গেলেন। আমাকে হয়তো আপনার বিশ্বাসযোগ্যই মনে হয়নি।”

“প্রভা লিসেন..”

“আমার কিছু শোনার নেই রায়ান। আপনার কাছে আমি কোন কৈফিয়ত চাইবোনা। আমার ১২ বছরের কষ্টের ফিরিস্তি নিয়েও বসব না। শুধু আপনাকে একটা কথাই বলবো, আমাকে কি একটুও বিশ্বাস করা যেত না?”

রায়ান কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। সেও তো ভেতরে ভেতরে এতদিন ছটফট করেছে প্রভাকে সবকিছু বলার জন্য কিন্তু পরিস্থিতি তাকে এইসব নাটক করতে বাধ্য করেছে। রায়ান এইজন্য অনেক লজ্জিত৷ সে বারবার করে প্রভার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকে। কিন্তু প্রভার প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে। তাই সে রায়ানকে সরাসরি বলে দেয়,”আমার আর আপনার কাছে কিছু শোনার নেই রায়ান। আপনার কাছে আমার শুধু এখন একটাই অনুরোধ। প্লিজ আমায় একা থাকতে দিন। আমি না বলা পর্যন্ত আর আমার সামনে আসবেন না।”

এই বলে প্রভা রায়ানের বাড়ি থেকে চলে যায়। আর রায়ান অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে।

রায়ান বলতে থাকে,”তুমি আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলে না প্রভা। আমি এখন তোমার ভুল কিভাবে ভাঙাবো?”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আবির পা রেখেছে কানাডার মাটিতে। উদ্দ্যেশ্য প্রভাকে খুঁজে বের করে তার চ্যাপ্টার চিরদিনের জন্য ক্লোজ করে দেওয়া। কারণ আবির জানে প্রভা তার জন্য অনেক বড় বিপদের কারণ হতে পারে। আবির জানত প্রভা এখন কানাডাতেই আছে। কারণ প্রভার কানাডায় আসার কথা ছিল। এরপর নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সে প্রভা বর্তমানে কোথায় আছে সেই সব ডিটেইলস জেনে নিয়েছে। তবে আবির এবার অনেক ভালো চাল চেলেছে। বর্তমানে সে আর কাউকে বিশ্বাস করে না। এজন্য সব কাজ বেশ সাবধানে করেছে। গোপনে পাসপোর্ট, ভিজার আবেদন করেছে। এবার সৌভিককেও কিছু জানায় নি। কারণ কাউকে সে বিশ্বাস করতে পারে না আর। ঢাকায় মিটিংয়ের কথা বলেই সে কানাডায় এসেছে। এখন আবিরের লক্ষ্য একটাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রভাকে খুঁজে বের করে তাকে শেষ করে দিয়ে তারপর আবার দেশে ফেরা।

আবির প্রভার ঠিকানা পেয়ে গিয়েছিল। তাই সেখানেই প্রভার খোঁজ করতে যায়। কিন্তু প্রভা বাসায় ছিল না। তার দরজার সামনে তালা ঝুলছিল। এইজন্য হতাশ হয়ে ফিরে আসছিল সে। প্রভার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে কিছুদুর যেতেই কারো একটা সাথে ধাক্কা খায় সে। বোঝাই যাচ্ছিল লোকটা অনেক তাড়ায় ছিল। লোকটা আবিরকে লক্ষ্যই করে নি। তাই আবিরের দিকে না তাকিয়েই সরি বলে চলে যায়।

এদিকে কন্ঠস্বরটা শুনে আবির দাঁড়িয়ে যায়। কন্ঠস্বরটা তার কাছে অনেক চেনা লাগে। তাই পিছনে ফিরে তাকিয়ে লোকটাকে দেখার চেষ্টা করে কিন্তু আর তাকে দেখতে পায়না। আবির বিড়বিড় করে বলে,”রায়ানের গলা শুনলান মনে হয়।”

তারপর নিজেই নিজের মাথায় চাটি দিয়ে বলে,”ধুর, কিসব ভাবছি আমি? রায়ান তো কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে এখন আবার কিভাবে আসবে ও? নিশ্চয়ই আমারই শুনতে ভুল হয়েছে। না, এসব ভেবে সময় নষ্ট করা যাবে না। আমাকে আগে ঐ প্রভাকে খুঁজে বের করে ওর চ্যাপ্টার ক্লোজ করতে হবে। খুব ভালোবাসে না ও ঐ রায়ানকে? আজ ওকে আমি রায়ানের কাছেই পাঠিয়ে দেব।”

এই বলে গগণবিদারী হাসতে থাকে আবির। তার এই হাসি এত ভয়ানক ছিল যে শয়তানও তার এই হাসি দেখে ভয় পেয়ে যাবে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রভা আজ হাসপাতালেই রোগী দেখতে ব্যস্ত ছিল। প্রভা নিজের কাজের ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। কখনই নিজের পারসোনাল প্রব্লেমের জন্য নিজের প্রফেশনাল লাইফে কোন সমস্যা আসতে দেয় না। তাই আজও মনে অনেক কষ্ট নিয়েই হাসপাতালে এসেছে। নিজের দায়িত্ব সে কোনমতেই অবহেলা করে না।

হঠাৎ করে প্রভার অনেক ক্লান্তি হচ্ছিল তাই সে একটু বাইরে আসে। এমন সময় একজন ওয়ার্ড বয় তার কাছে এসে তাকে বলে,”আপনাকে সানা প্রিস্ট ছাদে ডাকছে।”

প্রভা ওয়ার্ড বয়ের কথা শুনে ছাদে চলে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাউকেই দেখতে পায়না। এমন সময় পেছন থেকে আবির এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”নাইস ঠু মিট ইউ।”

প্রভা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার করতে যাবে তার আগেই আবির তাকে ক্লোরোফম মিশ্রিত রুমাল দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। তারপর দুজন ওয়ার্ড বয়কে ইশারা করতেই তারা লাশ রাখার প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে আসে। আসলে আবিরই এই ওয়ার্ড বয়দের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে।

আবিরের নির্দেশমতো ওয়ার্ড বয়রা প্রভাকে লাশ রাখার ব্যাগের মধ্যে ঢুকায়। তারপর তাকে নিয়ে যেতে থাকে। যার ফলে কেউ আর সন্দেহই করেনা তাদেরকে। তারা প্রভাকে নিচে আবিরের ঠিক করা একটা এম্বুল্যান্সের কাছে নিয়ে যায়। আবিরও ছিল তাদের সাথে। এমন সময় ডাক্তার অভিষেক চক্রবর্তী তাদের আটকিয়ে বলে, “কি হচ্ছে এখানে?”

ওয়ার্ড বয়েরা ভয় পেয়ে যায়। আবির ব্যাপারটাকে সামলানোর জন্য বলে,”আমার স্ত্রী এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। ওর ক্যান্সার হয়েছিল লাস্ট স্টেজ। ওকে আর বাঁচানো যায়নি ”

বলেই কান্নার অভিনয় করতে শুরু করে। ডাক্তার অভিষেকের প্রথমদিকে একটু সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু আবিরের কথা শুনে তার অনেক মায়া লাগে। তিনি আবিরকে শান্তনা দিয়ে বলে,”আপনি কষ্ট পাবেন না। জন্ম-মৃত্যু সব তো সৃষ্টিকর্তার হাতে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করব আপনার স্ত্রীর আত্না যেন শান্তি পায়।”

বলেই তিনি চলে যান। আবির তাড়া দিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি এটাকে গাড়িতে তোল।”

দুজন ওয়ার্ড বয় মিলে প্রভাকে এম্বুলেন্সে তুলে দেয়। এরপর তারা আবিরের কাছ থেকে টাকা বুঝে নেয়। আবির প্রভাকে নিয়ে রওনা দেয়। শয়তানী হাসি হেসে বলে,”আজ আমি তোর এমন অবস্থা করব যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”

~~~~~~~
রায়ান আজ সারাদিন ধরে প্রভাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। প্রভা নাতো তার ফোন ধরছে আর নাতো তার সাথে যোগাযোগ করছে। প্রভাকে খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালে চলে আসে রায়ান। কিন্তু এখানেও তার কোন খোঁজ পায়না। সে উদাস হয়ে যায়। রায়ান উদাস মনে হাসপাতালের ছাদে চলে যায়। হঠাৎ তার পায়ে কিছু একটার সাথে হোচট লাগায় সে সেটা চেক করতে গিয়ে দেখে একটা ফোন পড়ে আছে। ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে সে বুঝতে পারে এটা প্রভার ফোন। অত:পর হতভম্ব হয়ে বলে,”প্রভার ফোন এখানে কি করছে? আর প্রভা কোথায়?”

এমন সময় রায়ানের ফোন বেজে উঠল৷ সৌভিক ফোন করেছে। রায়ান ফোনটা রিসিভ করতেই সৌভিক বলে,”তুই কোথায় রায়ান? তোকে একটা খারাপ খবর দেওয়ার আছে।”

“কি খারাপ খবর?”

“আবির কানাডায় গেছে।”

“কি? কবে এসেছে? আর তুই এখন আমায় এটা জানাচ্ছিস?”

“আমিও একটু আগেই জানতে পারলাম। ও আসলে কাউকেই বলে যায়নি। তুই সাবধানে থাকিস আর প্রভারও খেয়াল রাখিস। আবির কিন্তু প্রভার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।”

রায়ানের মনে ভয় ঢুকে যায়৷ আবির আবার প্রভার কোন ক্ষতি করলো না তো?

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_28(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রায়ান অস্থির হয়ে যাচ্ছিল প্রচুর। প্রভার জন্য তার খুব চিন্তা হচ্ছিল। তাই সে বিন্দুমাত্র কাল বিলম্ব না করে সানা প্রিস্টের কেবিনে তার সাথে দেখতে যায়৷ রায়ান হাফাতে হাফাতে সানা প্রিস্টের কেবিনে প্রবেশ করলে সানা প্রিস্ট রায়ানের দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই নাও পানি খাও। কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন লাগছে কেন?”

রায়ান পানিটা খেয়ে বলে,”প্রভার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মনে হয় ওর কোন বিপদ হয়েছে। আমি ওর ফোনটা ছাদে কুড়িয়ে পেয়েছি। তুমি প্লিজ একটু সিসিটিভি দেখে খোঁজ লাগাও।”

সানা প্রিস্ট রায়ানের কথা মতো কাজ করে। যদিও ছাদে কোন সিসিটিভি ছিল না কিন্তু একজন ওয়াড বয় প্রভাকে কিছু বলার পর সে ছাদের দিকে চলে যায় এটা সিসিটিভিতে দেখা যায়। এমনকি সেই ওয়াড বয় যে আরেকজনকে সাথে নিয়ে পুনরায় ছাদ থেকে একটা লাশের ব্যাগ নিয়ে বের হয় সেটাও দেখা যায়। রায়ান উত্তেজিত হয়ে বলে,”এই ওয়াড বয়কে ডেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করো।”

সানা প্রিস্ট পুলিশকে এই ব্যাপারে সব জানায়। পুলিশ ওয়াড বয় দুজনকে গ্রেফতার করে এবং তাদের জেরা করতে থাকে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে বেশি কিছু করতে পারে না। এদিকে রায়ান হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। সে হন্যে হয়ে প্রভাকে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে।

হঠাৎ করে রায়ানের ফোন বেজে ওঠে। রায়ান সেই ফোনটা রিসিভ করতেই আবির বলে ওঠে,”অনেকদিন পর আবার তোর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হলো দোস্ত।”

রায়ান রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। অনেক কষ্টে নিজের রাগ সংবরণ করে বলে,”প্রভাকে তুই কিডন্যাপ করেছিস তাইনা? বল, কোথায় রেখেছিস তুই ওকে?”

“কুল, কুল। এতদিন পর নিজের বেস্টফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিস আর আমার খবর না নিয়ে নিজের প্রেমিকার খবর নিচ্ছিস। দিস ইজ নট ফেয়ার রায়ান। প্রভার কথা বাদ দে। তুই নিজের কথা বল। কিভাবে এত খেলা খেললি তুই? ১২ বছর ধরে মৃত হওয়ার নাটক করলি কিন্তু কোন লাভ হলো না৷ আমি কানাডায় আসার আগেই রকস্টার রিহানের পারফরম্যান্সের একটা ক্লিপ দেখেছি। আর সেটা দেখেই আমি বুঝে গেছি যে রিহানই রায়ান। তোর গলার সুর আমি ভুলিনি দোস্ত। যাইহোক, সব নাটকের এবার শেষ হোক। আমি তোকে একটা ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই সেখানে চলে আয়। আর হ্যাঁ, একদম চালাকি করে পুলিশ আনার চেষ্টা করবি না। নাহলে তোর প্রভাকে আমি শেষ করে দেব।”

“না আবির, তুই এমন কিছু করবি না। তুই যা বলবি আমি তাই করবো।”

“এই তো গুড বয়।”

বলেই আবির ফোন রেখে দেয়। তারপর রায়ানকে ম্যাসেজ করে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দেয়। এরপর সে প্রভার কাছে যায়। প্রভাকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে আবির। প্রভার সামনে বসে বলে,”আজ তোর আর রায়ানের চ্যাপ্টার একসাথে ক্লোজ করব। ঐ বাংলায় একটা কথা আছে না সহমরণ? আজ তোদের সহমরণ হবে।”

প্রভা আবিরের দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”আপনার এই ইচ্ছা কোনদিন পূরণ হবে না। আপনার পাপের বিনাশ হবেই। মনে রাখবেন, আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না৷ এতদিন ধরে আপনি অনেক অন্যায় করেছেন। এবার আপনার সব অন্যায়ের ফল আল্লাহ আপনাকে দেবেনই।”

আবির অট্টহাসি দিয়ে বলে,”দেখা যাক।”

~~~~~~~
রায়ান ছুটতে ছুটতে চলে আসে একটি পরিত্যক্ত শপিং মলে। এই ঠিকানাই আবির তাকে ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছে। রায়ান সেখানে এসেই প্রভার নাম ধরে ডাকতে থাকে। তখনই আবির এসে রায়ানের সামনে দাঁড়ায়। রায়ান আবিরের শার্টের কলার ধরে বলে,”প্রভা কোথায় আবির? কোথায় রেখেছিস ওকে?”

“এত প্রভা প্রভা করছিস কেন? একটা মেয়েকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন রে তোর? এই মেয়েটার জন্য নিজের ১২ বছর নষ্ট করলি। আহ, কি ভালোবাসা!”

“বাজে বকা বন্ধ কর আর বল আমার প্রভা কোথায়।”

“যমের দুয়ারে গেছে? তুই যাবি নাকি?”

রায়ান নিজের ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। আবিরকে একের পর এক প্রহার করতে থাকে। আবির রায়ানের হাত ধরে তাকে আটকিয়ে দিয়ে বলে,”ব্যাস, অনেক হয়েছে আর না। ঐ দেখ তোর প্রভাকে।”

রায়ান দেখতে পায় আবিরের লোক প্রভার মাথায় বন্দুক ধরে আছে। রায়ান হতাশ হয়ে যায়। আবির হেসে বলে,”কি রে থামলি কেন? মা’র আমায়।”

“আবির তুই প্রভাকে ছেড়ে দে। তোর শত্রুতা আমার সাথে। প্রভাকে এসবের মাঝে টানিস না।”

“ছেড়ে দেব? এত সহজে? নাহ, এবার দেখ তোদের আমি কি হাল করি।”

বলেই আবির একটি রড হাতে তুলে নেয়। তারপর রায়ানকে বেধড়ক মা’রতে শুরু করে। প্রভা রায়ানের নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে। আবিরের মনে কোন দয়া হয়না। সে নির্দয়ের মতো মা’রতে থাকে রায়ানকে। রায়ান প্রভাকে বাঁচানোর জন্য সব মার মুখ বুজে সহ্য করে। কোন প্রতিবাদ করে না। আবিরের রড দিয়ে মে*রে রায়ানকে রক্তাক্ত করে দেয়। রায়ান মেঝেতে শুয়ে গোঙাচ্ছিল। তার রক্তে চারিদিক রঞ্জিত হয়ে গেছে। তার নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে। প্রভা আর এসব কিছু সহ্য করতে পারছিল না। এরমধ্যে আবির রায়ানের মাথা লক্ষ্য করে সজোরে একটা আঘাত করে রড দিয়ে। রায়ান মাথায় হাত দিয়ে পড়ে যায়। প্রভা লক্ষ্য করে রায়ানের কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে৷ প্রভা হতভম্ব। রায়ানের মাথায় এর আগেও আঘাত লেগেছিল দূর্ঘটনার কারণে। আজ আবারো এই আঘাতের ফল কত ভয়াবহ হতে পারে একজন ডাক্তার হিসেবে এটা সহজেই অনুমান করতে পারে প্রভা। সে আর কোন উপায় খুঁজে পায়না৷ রায়ানের বাঁচানোর জন্য এবার আবিরকে আটকাতেই হবে। প্রভা সুকৌশলে তার মাথায় বন্দুক ধরে থাকা ব্যক্তির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেয়। তারপর আবিরের হাতে,পায়ে গুলি করে। আবির মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

এমন সময় সানা প্রিস্টও পুলিশ নিয়ে হাজির হয়। রায়ানই তাকে সবটা ইনফর্ম করেছিল। পুলিশ আবির ওর তার দলের বাকি লোকদের গ্রেফতার করে। প্রভা দৌড়ে রায়ানের কাছে আসে৷ রায়ানের কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রভা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে সানা প্রিস্টকে বলে,”রায়ান কোন রেসপন্স করছে না কেন? ওর কিছু হয়ে গেল না তো?”

সানা প্রিস্ট প্রভাকে শান্তনা দিয়ে বলে,”তুমি কোন চিন্তা করো না প্রভা। আমি এখনই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবহার করছি।”

~~~~~~~
সানা ও প্রভা দুজনেই বসে আছে অটির বাইরে৷ ভেতরে রায়ানের চিকিৎসা চলছে৷ প্রভা সমানে আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে। সানাও তার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে।

একজন ডাক্তার আসতেই প্রভা তার সম্মুখীন হয়ে বলে,”রায়ান এখন কেমন আছে?”

ডাক্তার হতাশ কন্ঠে বলে,”আমরা নিজেদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবে ওনার বাঁচার আশা একেবারে নেই বললেই চলে। পরপর দুবার মাথায় সিভিয়ার আঘাত পেলেন।”

~~~~~
২ দিন পর,
রায়ানকে ৭২ ঘন্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। প্রভা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে থাকে। একসময় সে বলে,”আল্লাহ তুমি আমার রায়ানকে বাঁচাও। প্রয়োজনে আমার জীবন নিয়ে নাও। তবুও রায়ানকে বাঁচিয়ে দাও।”

প্রভা এরপর রায়ানের কেবিনে যায়। রায়ানের পাশে বসে বলে,”একবার আপনাকে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম রায়ান। আপনাকে পাওয়ার কোন আশা ছিল না কিন্তু আল্লাহ আপনাকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে দিলো। আপনি আরেকবার লড়াই করে আমার কাছে ফিরে আসুন না। আমাদের যে এখনো অনেক পথচলা বাকি আছে। আমার না অনেকদিনের স্বপ্ন আমাদের একটা সুখের সংসার হবে। আপনাকে ছাড়া যে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। আপনাকে একবার হারিয়ে আমি আধমরা হয়ে বেঁচে ছিলাম কিন্তু আরেকবার যদি হারাই তাহলে আমি একেবারে মরে যাব। প্লিজ আমায় আর কাঁদাবেন না। আপনার প্রেম যে বারংবার আমায় কাঁদাচ্ছে।”

হঠাৎ করেই রায়ান জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। প্রভা রায়ানের হার্টবিট চেক করে বুঝতে পারে তার হার্টবিট ক্রমশ কমছে। যা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। কিছুক্ষণ পর প্রভা লক্ষ্য করে রায়ানের আর শ্বাস পড়ছে না। প্রভা দূরে সরে যায়। রায়ানের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,”তুমি আবারো আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে রায়ান!”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_29(বিয়ে স্পেশাল)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

চট্টগ্রাম শহরে রায়ানদের বাড়ি সেজে উঠেছে আলোকসজ্জায়। রুহুল আমিন আজ খুশি মনে সবটা তদারকি করছেন। আজ যে তার একমাত্র ছেলের বিয়ে! তাই আয়োজনের কোন ত্রুটি রাখতে চাইছেন না তিনি।

নিজের রুমে বসে তৈরি হচ্ছে রায়ান। তার পরনে একটা সুন্দর কারুকার্য করা পাঞ্জাবি। সৌভিক রায়ানকে দেখে বলে,”তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। প্রভা আজ তোকে দেখে একদম ফিদা হয়ে যাবে।”

রায়ান হেসে বলে,”নতুন করে আর কি ফিদা হবে? ও তো ১২ বছর ধরেই আমার উপর ফিদা!”

অন্যদিকে নিজের বাড়িতে তৈরি হচ্ছে প্রভাও। তার পড়নে গোলাপী রঙের খুব সুন্দর একটা বেনারসি শাড়ি৷ সাথে রয়েছে বিভিন্ন ভারী গহনা। সব মিলিয়ে তাকে আজ একদম রাণীর মতোই লাগছে। অনুরাধা প্রভার কাছে এসে বলে,”তোকে অনেক সুন্দরী লাগছে বউয়ের সাজে! ইশ, যদি আমি ছেলে হতাম তাহলে আমিই তোকে বিয়ে করে নিতাম। দেখবি রায়ান ভাইয়া আজ আবার নতুন করে তোর প্রেমে পড়বে।”

প্রভা মৃদু হাসে। এখন তার চেহারায় সবসময় এই হাসিই বজায় থাকে। দুঃখ যেন বিদায় নিয়েছে তার জীবন থেকে। প্রভা ভাবতে থাকে তার দুঃখের সময়গুলো। সে তো সেদিন ভেবেছিল রায়ানকে দ্বিতীয়বারের মতো হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু মীরাক্কেল ঘটে যায়! রায়ানের সেদিন শ্বাস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও পরবর্তীতে সে আবার শ্বাস নেয়। এরপর ২ মাস কোমায় থেকে রায়ান একেবারে সুস্থ হয়৷ রায়ান সুস্থ হবার কিছুদিনের মধ্যেই তারা দুজনে বাংলাদেশে ফিরে আসে। আর তখন থেকেই তাদের বিয়ের কথা পাকা হয়। আজ অবশেষে সেই শুভদিন এসেই গেল। যেদিন তাদের চার হাত এক হবে।

~~~~~~~~~~
অনুরাধা ও প্রভার কিছু কাজিন মিলে রায়ানকে গেটে আটকে রেখেছে। রায়ান তাদের সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”বলো তোমাদের দাবি কি?”

অনুরাধা বলে,”বেশি না দুলা ভাই। মাত্র ১০ লাখ টাকা দিলেই আমরা গেট ছেড়ে দেব।”

সৌভিক ছিল রায়ানের পাশেই৷ সে বিষম খেয়ে বলে,”এটা একটু বেশিই হয়ে গেল না? এত টাকা তোমরা কি করবে? আমার বন্ধুটার উপর একটু দয়া কর।”

অনুরাধা বলে,”কোন দয়ামায়া হবে না। তোমার বন্ধু এই ১২ বছর ধরে আমার বান্ধবীকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই ওকে তো এত সহজে যেতে দেওয়া যাবে না। সেই তুলনায় ১০ লাখ টাকা তো কমই হয়ে গেছে। আমাদের তো ১ কোটি টাকা চাওয়া উচিৎ ছিল।”

রায়ান কোন কথা না বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকার চেক তাদের হাতে তুলে দেয় এবং বলে,”প্রভার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। আর অপেক্ষা করতে চাইছি না। তাই তোমরা যত তাড়াতাড়ি গেট ছাড়বে ততোই ভালো।”

প্রভার খালাতো বোন মশকরা করে বলে,”বোঝাই যাচ্ছে আমাদের হবু দুলাভাই প্রভার বিরহে একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই তোরা জলদি গেট খুলে দে। নাহলে এই বিরহের জ্বালায় উনি না আবার পুড়ে যান।”

রায়ান এসে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়৷ কিছু সময়ের মধ্যে প্রভাকেও নিয়ে আসা হয়। প্রভাকে বধূবেশে দেখে রায়ান মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। প্রভার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারে না। সৌভিক তার পিছন থেকে হালকা কেশে বলে ওঠে,”দেখার আরো অনেক সময় পাবি। আপাতত বিয়েটায় মন দে।”

রায়ান তবুও প্রভার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারছিল না। বড্ড বেহায়া হয়ে উঠেছে যেন।

রায়ান ও প্রভাকে মুখোমুখি বসিয়ে তাদের সামনে একটা পর্দা রাখা হয়। আয়নায় তারা একে অপরের মুখ দেখে৷ কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।

“৫ কোটি মোহরানা ধার্য করে মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সুযোগ পুত্র আব্দুল্লাহ রায়ানের সাথে আকরাম খানের সুযোগ্যা কন্যা প্রভা খানের বিয়ে ঠিক করা হলো। মা, এবার তুমি কবুল বলো।”

প্রভা কিছুটা সময় নিয়ে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

রায়ানকে কবুল বলতে বললে সে অবশ্য সময় নেয় না। তড়িঘড়ি করে বলে,”জ্বি, কবুল।”

বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন হয়। সবাই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করতে থাকে। রায়ান এবার পর্দা সরিয়ে প্রভার দিকে তাকায়। মৃদু হেসে বলে,”অপেক্ষার পালা শেষ! এবার আমাদের মিলনের প্রহর ঘনিয়ে আসছে।”

প্রভার বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছিল। প্রজ্ঞা বেগম এসে নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। আকরাম খান নিজের স্ত্রীকে সামলে বলেন,”এমন করো না প্রজ্ঞা। মেয়েটা তো অনেক কষ্ট পাচ্ছে।”

এরপর তিনি রায়ানের হাতে প্রভাকে তুলে দিয়ে বলেন,”আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম বাবা। ও জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। ওর ১২ টা বছর অনেক কষ্টে কেটেছে। বাকি জীবনটা ওকে সুখে রেখো।”

রায়ান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলে,”আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েকে আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও আগলে রাখব।”

এই বলে প্রভাকে নিয়ে রওনা দেয় রায়ান। প্রভা নিজের মা-বাবার সামনে স্বাভাবিক থাকলেও গাড়িতে উঠে কান্নায় ভেঙে পড়ে। রায়ান তাকে সামলে বলে,”তুমি একদম কাঁদবে না প্রভা। এতদিন তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ। আজকের কান্নাই যেন তোমার জীবনের শেষ কান্না হয়। আর কখনো যেন আমি তোমার চোখে জল না দেখি।”

~~~~~
প্রভা ও রায়ান রায়ানদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হতেই রুহুল আমিন বরণ ডালা নিয়ে আসেন। তিনি হেসে বলেন,”আজ আমি নাহয় একটু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাই। সাধারণত ছেলের মায়েরাই নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তোলে। কিন্তু রায়ানের মা তো বেঁচে নেই। তাই আমিই আমার ছেলের বউকে আমার ঘরের বউকে বরণ করে ঘরে তুলি।”

এই বলে তিনি প্রভাকে বরণ করে ঘরে তোলেন। রুহুল আমিনের বোন রাহেলা খাতুন প্রভাকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেন। তিনি প্রভাকে বলেন,”অনেকদিন বাড়িতে খুশির আমেজ তৈরি হলো। আশা করি তোমরা অনেক সুখী হবে।”

♪♪
কথায় আছে, “অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকায়ে যায়”

আজ যেন এই কথার বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পেল রায়ান। সে এখন তাদের বাসর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সৌভিকের নেতৃত্বে রায়ানের আরো কিছু বন্ধুবান্ধব দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। তাদের একটাই দাবি ২০ লাখ টাকা না দিয়ে রায়ান কিছুতেই ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশেষ করে সৌভিক একরোখা। তার স্ত্রী অনুরাধা সৌভিকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নিয়েছে তাই নিজের মুখ রাখতে তাকে ২০ লাখ নিতেই হবে। রায়ান আর কোন উপায় না পেয়ে সৌভিকের দাবি মেনে নিয়ে ২০ লাখ টাকা দিয়ে তবেই বাসর ঘরে প্রবেশ করে।

প্রভা তখন ঘোমটা মাথায় বসে ছিল। রায়ান প্রভার কাছে গিয়ে তার ঘোমটা তোলে। প্রভার দিকে কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে থাকে রায়ান। প্রভা বলে,”কি দেখছেন এভাবে?”

“দেখছি এক রাজকন্যাকে। যে আমার ঘরে রাণী হয়ে এসেছে।”

প্রভা মৃদু হাসে। রায়ান প্রভার গাল আলতো করে ছুঁয়ে বলে,”তোমাকে যে আবার নিজের করে পাবো সে আশা আমি করিনি প্রভা। আসলেই আমি কতো বোকা ছিলাম। আমার বোকামোর জন্য তোমাকে কতোটাই না সাফার করতে হয়েছে! আমি কেন বুঝলাম না তুমি আবিরকে নয় আমায় ভালোবাসো।”

প্রভা বলে,”আজ আমাদের জীবনে অনেক স্মরণীয় একটি দিন। আজ আমরা তিক্ত অতীতের কথা মনে না করি। বরং গড়ে তুলি সুন্দর ভবিষ্যৎ।”

প্রভার কথা শুনে রায়ান অনেক খুশি হয়। আলতো করে তার কপালে চুমু খায়। অত:পর ধীরে ধীরে প্রভার আরো নিকট হতে থাকে। অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর তাদের দুটি দেহ ও মনের মিলন সম্পন্ন হয়। যেখান থেকে তৈরি হতে চলেছে।

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-২৪+২৫+২৬

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_24(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা নিজের কেবিনে বসে রকস্টার রিহানকে নিয়েই ভাবছিল। কাল দ্বিতীয় বার লোকটার মুখোমুখি হওয়ার পর এবং তার বলা কিছু কথা শোনার পর থেকেই প্রভা ভীষণ দুশ্চিন্তায় ভুগছে। সে জানে না যে এসব কি হচ্ছে এবং কিভাবে হচ্ছে। প্রভার কাছে সবটাই শুধু ধোয়াশা। যেখান থেকে বেরোনোর কোন উপায় সে খুঁজে পাচ্ছে না। প্রভা চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। এমন সময় কারো পায়ের শব্দে সে চোখ মেলে তাকালো। নিজের চোখের সামনে সানা প্রিস্টকে দেখে সে উঠে দাঁড়ালো। সামান্য হেসে বললো,”ম্যাডাম আপনি! আসুন ভেতরে আসুন।”

সানা প্রিস্টও হাসি মুখে প্রভার সামনে এসে বললো,”হ্যালো, কেমন আছ?”

“জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি হঠাৎ আমআর কেবিনে এলেন? কোন সমস্যা হয়েছে কি?”

“আরে না! তোমার সাথে কিছু ব্যক্তিগত কথা বলতে এলাম।”

“ব্যক্তিগত কথা!”

“হুম। আমার ভাই রিহান প্রিস্টকে তুমি তো কাল দেখলে। তা ওকে তোমার কাছে কেমন লেগেছে?”

প্রভা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,”না..মানে..ভালোই তো”

সানা প্রিস্ট হেসে বলে,”জানো আমার ভাই না একদম পিওর সিঙ্গেল। জীবনে কখনো প্রেমে-টেমে জড়ায় নি। ব্যাপারটা আমার কাছেও অদ্ভুত লাগে। কানাডাতেই ওর জন্ম আর কানাডাতেই ওর বেড়ে ওঠা। যেখানে কানাডায় টিনএজ বয়সেই সবাই ভার্জিনিটি হারায় সেখানে আমার ভাই জীবনে কোনদিন ডেট করেনি। আমার তো আমার ভাইকে নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল। ও বলেছিল ওর মেয়েদের প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে ও গে নাকি। কিন্তু পরে দেখলাম ওর ছেলেদের প্রতিও আগ্রহ নেই। তখন নিশ্চিত হয়েছি কিছুটা। জানো, ও আগে কখনো কোন মেয়ের প্রতিই ইন্টারেস্ট দেখায় নি। কিন্তু কাল পার্টিতে তোমায় দেখার পর তোমার সম্পর্কে আমার কাছে অনেক কিছু জানতে চেয়েছে। আমি তো পুরো হতবাক হয়ে গেছি। এটাই কি আমার ভাই? সত্যিই অবিশ্বাস্য, ঘন্টার পর ঘন্টা ও তোমাকে নিয়েই আমার সাথে কথা বলেছে।”

প্রভা অবাক হয়ে সবকিছু শুনছে। সানা প্রিস্ট হঠাৎ করে বলে ওঠে,”আমার মনে হয় আমার ভাই তোমার উপর ইন্টারেস্টেড। তুমি কিন্তু ওর সাথে ডেট করতে পারো।”

প্রভা বলে,”সরি, এটা সম্ভব নয়। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।”

সানা প্রিস্ট হতাশ হয়ে বলে,”ওহ, কোন ব্যাপার না। সরি, কিছু মনে করো না।”

“আমি কিছু মনে করিনি।”

~~~~~~~
প্রভা হসপিটাল থেকে নিজের ফ্ল্যাটে ফেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল। সানা প্রিস্টের বলা কথাগুলোই শুয়ে শুয়ে ভাবছিল সে। তাছাড়া রিহান ছেলেটাও তাকে ভাবাচ্ছে। ছেলেটার গলার স্বরের সাথে রায়ানের এত মিল কেন? আর ও সব সময় নিজের মুখই বা ঢেকে রাখে কেন? কোন প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পায় না প্রভা। বদলে জোটে এক বুক দীর্ঘ শ্বাস। এরই মধ্যে নোটিফিকেশনের টুংটাং আওয়াজ বেজে ওঠে প্রভার ফোনে৷ সে নিজের ফোন হাতে নিতেই দেখতে পায় তার সেই সমস্যা সমাধানকারীর ম্যাসেজ। সামান্য, “Hi” লিখেছে সে।

প্রভা প্রতিত্তোরে লিখে,”এতদিন পর অনলাইনে!”

“হ্যাঁ, আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম।”

“আপনাকে একটা কথা জানাতে চাই। আমি এখন কানাডায় আছি।”

“সত্যি?” হ্ম

“জ্বি, আপনার সাথে দেখা করতে চাই।”

“দুঃখিত। এটা সম্ভব না। আপনার যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আমায় বলতে পারেন।”

প্রভা এবার রিহানের কথা মনে করে বলল,”আসলে আমি কানাডায় এসে এমন একজনকে দেখেছি যার সাথে আমার পরিচিত একজনের ভীষণ মিল রয়েছে। কিন্তু আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না যে এই আমার সেই চেনা মানুষটা কিনা।”

“হুহ, বুঝলাম। সমস্যাটা বেশ গভীর। আচ্ছা যার সাথে আপনি আপনার চেনা ব্যক্তির মিল খুঁজে পেয়েছেন তার সাথে কথা বলেন নি?”

“হ্যাঁ,বলেছি।”

“তার সাথে কথা বলে কি মনে হয়েছে? আর সে কি আপনাকে চিনতে পেরেছে?”

“না। সে আমায় চিনতে পারেনি।”

“আপনার মন কি বলছে?”

“আমি কনফিউজড।”

“থাক, এত কনফিউজড থাকতে হবে না। আপনি নিজের কনফিউশান খুব সহজেই দূর করতে পারবেন।”

“কিন্তু কিভাবে আমি নিজের কনফিউশান দূর করব?”

“দেখুন, একটা মানুষকে কিন্তু খুব সহজে চেনা যায়না৷ বিশেষ করে যখন কেউ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। তখন তাকে সঠিক ভাবে চিনতে গেলে আমায় তাদের সাথে মিশে যেতে হয়৷ তাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই তো বোঝা যাবে সে আপনার পরিচিত কিনা।”

“তাহলে আমার কি করা উচিৎ?”

“আপনার উচিৎ ঐ ব্যক্তিটির সাথে আরো বেশি বেশি সময় কাটানো। তাহলেই আপনি ওনাকে চিনবেন। আপনার মনের সব ধরনের কনফিউশানও দূর হবে।”

“এজন্যই আপনাকে আমার এত ভালো লাগে৷ আমার এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান আপনার কাছে নেই।”

বিপরীত দিক থেকে আর কোন উত্তর আসে না। প্রভা বুঝতে পারে আর রিপ্লাই আসবেও না৷ তাই সে ফোনটা রেখে দিয়ে বাইরে চলে যায়।

বাইরে এসেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায় প্রভা। আর তার মুখ ফুটে বের হয়,”সরি।”

তখনই সে নিজের চোখের সামনে রকস্টার রিহানকে দেখতে পায়৷ রকস্টার রিহানকে দেখে সে চুপ করে যায়। রকস্টার রিহান বলে,”হেই, ইনোসেন্ট লেইডি, চোখে দেখতে পান না? এভাবে ধাক্কা খেলেন কেন?”

রিহানের বলা কথা গুলো শুনে প্রভা হারিয়ে যায় ১২ বছর আগের অতীতে। মনে পড়ে যায় রায়ানের সাথেও এভাবে ধাক্কা খেত সে। আর রিহানের বলা ইনোসেন্ট লেইডি ডাকের সাথে রায়ানের বলা সাধাসিধা মেয়ে ডাকেরও মিল খুঁজে পায় সে। প্রভা আর কিছু ভাবতে পারে না। হঠাৎ তার মাথা ঘুরতে থাকে। সে পড়ে যেতে নিতেই রিহান তাকে আগলে নেয়৷ প্রভা রিহানের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”আমার রায়ান!”

প্রভার জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করে নিজের রুমে। সানা প্রিস্ট তার মাথার কাছেই বসে আছে। প্রভা উঠে সানার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি হঠাৎ এখানে কি ভাবে চলে এলাম?”

“তোমার কি হয়েছিল প্রভা? তুমি হঠাৎ কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে? রিহান যখন আমায় ডেকে পাঠালো..”

“আপনার ভাই..”

“ও বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়াও, আমি ডাকছি। রিহান ভেতরে এসো।”

রিহান ভেতরে চলে আসে। এসে প্রভাকে বলে,”আপনি এখন কেমন আছেন?”

“ভালো।”

প্রভা সানা ও রিহানকে বসতে বলে। দুজনে বসে পড়ে। দুজনে প্রভার সাথে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করে। হঠাৎ করে সানা প্রিস্ট বলে ওঠে,”আমার কিছু জরুরি কাজ আছে৷ তোমরা গল্প করো আমি আসছি।”

বলেই সে চলে যায়৷ রিহানও কয়েক পলক চুপ থেকে প্রভাকে বলে,”আপনি নিজের খেয়াল রাখুন৷ আমি আসছি।”

বলেই রিহান বিদায় নেয়। রিহান চলে যাবার কিছু সময় পরেই প্রভা ফোনের রিংটন শুনতে পায়। ডেস্কের উপর একটা ফোন দেখে সে অবাক হয়। কারণ এটা তার নিজের ফোন নয়৷ ফোনটা হাতে তুলে নেয় প্রভা। প্রোফাইল পিকে রিহানের ছবি দেখে সে বুঝতে পারে এটা রিহানের ফোন। হঠাৎ ফোনে এমন একটা জিনিস লক্ষ্য করে যাতে সে চমকে ওঠে৷ কিছুক্ষণ পর রিহান পুনরায় প্রভার রুমে এসে বলে,”আমি বোধহয় আমার ফোনটা রেখে গেছি।”

প্রভার হাতে নিজের ফোন দেখে বেশ ঘাবড়েও যায় সে। প্রভা রিহানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আর কতদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন আপনি? আমি আপনার ব্যাপারে সব জেনে গেছি। আর আপনি পালিয়ে বেড়াতে পারবেন না।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_25
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা উঠে বসে রিহানের কাছাকাছি চলে যায়। রিহানের চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেক ভয় পেয়ে আছে। প্রভা রিহানের সামনে গিয়ে বলে,”এতদিন কেন সত্যিটা লুকিয়ে রেখেছিলেন আমার কাছে? শেষ পর্যন্ত তো আমি সব জানতেই পারলাম।”

রিহান বুঝতে পারে সে ধরা পড়ে গেছে। তাই আর ভনিতা না করে বলে,”আসলে…”

“আসলে কি? এমনটা আপনি কি করে করতে পারলেন? এতগুলো দিন ধরে আমাকে বোকা বানিয়ে গেলেন! আর সৌভিকদাও আপনার সাথে আছে তাইনা?”

রিহান বলে,”আমি কিছু কারণে সবকিছু গোপন রাখছিলাম। কিন্তু.. ”

“থাক, আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না মিস্টার রিহান। এতদিন ধরে আমার সব সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ মিস্টার সমাধানকারী।”

এই বলে প্রভা রিহানের হাতে তার ফোনটা তুলে দেয়৷ রিহান ফোনটা হাতে নেয়। ফোনটা হাতে নিয়ে সে দেখে ফোনে তার আইডি থেকে সে যে প্রভাকে ম্যাসেজ করে সেটা দেখা যাচ্ছে। হয়তো নোটিফিকেশনের কারণেই প্রভা এটা জানতে পারছে৷ রিহান বলে,”তার মানে ও এটা নিয়েই কথা বলছিল।”

অত:পর সে প্রভাকে বলে,”তার মানে আপনি সেই মেয়ে যাকে আমি সাহায্য করতাম।”

প্রভা অবাক হয়ে বলে,”তার মানে আপনিও এটা জানতেন না। আজকেই প্রথম জানলেন? আমার তো সেটা মনে হচ্ছে না।”

“আমি সত্যিই জানতাম না।”

“সৌভিকের সাথে আপনার কোন যোগাযোগ নেই?”

“এই সৌভিক আবার কে?”

প্রভা হতাশ হলো। সে বুঝতে পারছে না রিহান কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছে না নাকি সব বুঝেও না বোঝার ভান করছে। তাই সে রিহানকে বলে,”আপনি তার মানে সব সত্যিই বলছেন?”

“ইয়েস। আচ্ছা আপনি যে বলেছিলেন যে একজনের সাথে আপনি নিজের খুব চেনা কারো মিল খুঁজে পাচ্ছেন তো সেই একজন কি আমি?”

“হুম।”

“তাহলে পরীক্ষা করে দেখুন আমায়। ”

“আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে না৷ শুধু আপনার মুখটা আমায় দেখান৷ তাহলেই সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”

“এত সহজ না ম্যাম! দীর্ঘ ৩ বছর ধরে আমার কোন ফ্যানই আমার মুখ দেখতে পায়নি৷ সেখানে আপনি দুদিনের মেয়ে হয়ে আমায় দেখবেন!”

“তাহলে কিভাবে আমি নিজের কনফিউশান দূর করব?”

“আমি আজ ফ্রি আছি৷ আর আপনিও তো অসুস্থতার জন্য আজ হসপিটালে যান নি। তাই আমি আপনাকে অফার করছি আজ আমার সাথে একটা দিন স্পেন্ড করুন। তাহলেই আপনি সব ডাউট ক্লিয়ার করতে পারবেন।”

প্রভা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”ওকে ডিল।”

রিহান ও প্রভা একসাথে বেরিয়ে পড়ে৷ রিহান নিজের গাড়ি বের করে এবং প্রভাকে তার পাশে বসতে বলে৷ তখন প্রভা আপত্তি জানিয়ে বলে,”আমি আপনার পাশে বসবো না।”

“আমার পাশে না বসলে নিজের কনফিউশান কিভাবে দূর করবেন?”

প্রভা কিছু একটা ভেবে রিহানের পাশে বসে পড়ে। রিহান প্রভাকে সাথে নিয়ে ড্রাইভ করতে শুরু করে। রিহান প্রভাকে জিজ্ঞাসা করে,”বলুন কোথায় যেতে চান?”

“আপনার যেখানে খুশি নিয়ে যান।”

“আচ্ছা। ”

রিহান অনেকক্ষণ ড্রাইভ করে প্রভাকে নিয়ে অটোয়া নদীর তীরে একটা শান্ত পরিবেশে নিয়ে যায়৷ যেখানে খুব একটা জন সমাগম নেই। কারণ রিহান এমন একটা নির্জন পরিবেশই খুঁজছিল। দুজনে নদীর তীর ধরে হাঁটতে থাকে। এই সময় রিহান হঠাৎ করে প্রভার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি কি আপনার হাতটা ধরতে পারি?”

প্রভা হ্যাঁ বা না কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে রিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিহান সাথে সাথেই বলে,”সবকিছু তো আপনার কনফিউশান দূরের জন্যই।”

“ঠিক আছে ধরুন।”

রিহান প্রভার হাত ধরে অটোয়া নদীর তীর ঘেষে হেটে চলে। অনেক বছর পর সে কোন পুরুষের হাত ধরে হাঁটছে। সর্বশেষ ১২ বছর আগে এভাবে রায়ানের হাত ধরে পার্কে হাঁটছিল সে। আর সেটাই ছিল রায়ানের সাথে তার কাটানো শেষ সময়। কারণ সেদিনই যে রায়ান তাকে চিরতরের জন্য ছেড়ে চলে যায়। প্রভার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে৷ রিহান সেটা লক্ষ্য করে বলে,”আপনি কাঁদছেন কেন প্রভা?”

“একজনের কথা খুব মনে পড়ছে।”

“তাকে খুব ভালোবাসেন বুঝি?”

“কিভাবে বুঝলেন?”

“এই যে তার কথা ভেবে আপনার চোখে জল আসছে।”

“সত্যি ভালোবাসি। তার প্রতি আমার ভালোবাসা এতটাই গভীর যে তাকে হারানোর ১২ বছর পরেও আমি তাকেই ভালোবাসি।”

“হারিয়ে ফেলেছেন মানে?”

প্রভা কিছু বলে না আর৷ চেয়ে থাকে আকাশের দিকে৷ কিছু সময় চুপ থেকে বলে,”এখন যাওয়া যাক!”

রিহান আপত্তি প্রকাশ করে বলে,”না, একটু অপেক্ষা করুন। আরেকটু থাকলেই আমরা সূর্যাস্ত দেখতে পারবো।”

“আমার জীবনের সূর্য তো এমনিই ডুবে গেছে। এখন আর নতুন করে আমায় সূর্যাস্ত দেখতে হবে না।”

এই বলে প্রভা চলে যাচ্ছিল তখন রিহান হঠাৎ করে তার হাত ধরে তাকে আটকে দিয়ে বলে,”কারো জীবনের সূর্য এত দ্রুত অস্ত যায় বা। আমি আপনার জীবনে নতুন করে সানরাইজ নিয়ে আসতে চাই মিস প্রভা।”

প্রভা এবার একটু রাগী স্বরে বলে,”আমার কাউকে লাগবে না কাউকেই না। আমি শুধু আর শুধু আমার রায়ানকেই ভালোবাসি আর আজীবন তাকেই ভালোবাসব।”

“আপনি তো বললেন আপনি নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলেছেন।”

“সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। ও আমার সাথে থাকুক বা না থাকুক আমি সবসময় ওকেই ভালোবেসে যাব। আমার ভালোবাসা কখনো বদলাবে না ”

“এসব ডায়লগ সিনেমায় শুনতে ভালো লাগে৷ কিন্তু বাস্তবে আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না। আর ১২ বছর আগে তো আপনি টিনেজার ছিলেন। টিনেজার আবেগকে এতো গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।”

“হ্যাঁ, টিনেজার ছিলাম কিন্তু আমার অনুভূতি একদম সত্যি ছিল। যার প্রমাণ আমি আপনাকে দিতে ইচ্ছুক নেই।”

“আচ্ছা, আপনি শান্ত হোন৷ এই বিষয় নিয়ে কথা বা বলি৷ ঐ দেখুন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আমাদের এখানে একটা প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে অটোয়া নদীর তীরে সূর্যাস্তের সময় কোন উইশ করলে সেটা পূরণ হয়। আপনি কোন উইশ করে দেখতে পারেন।”

প্রভা ডুবন্ত সূর্যের পানে চায়। দেখে মনে হচ্ছিল সূর্য অটোয়া নদীতেই ডুবে গেছে। প্রভা সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,”আমি শুধু একটা জিনিসই চাই। আমি নিজের রায়ানকে ফেরত চাই। জানি এটা হয়তো অসম্ভব কিন্তু এটা ছাড়া আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। কিছুই না।”

এই বলে প্রভা স্থান ত্যাগ করে। রিহান তার পিছু পিছু যায়। প্রভা রিহানকে বলে,”সূর্যাস্ত তো হয়ে গেছে। এখন তাহলে যাওয়া যাক!”

“যাচ্ছি। তার আগে আপনি এটা বলুন তো যে আজ সারাদিন আমার সাথে থেকে আপনার কি মনে হলো? আমার সাথে কি আপনার পরিচিত ব্যক্তির কোন মিল খুঁজে পেলেন?”

প্রভা কড়া গলায় বলল,”কোন মিল নেই আপনাদের মধ্যে।”

“আমার সাথে থেকে কি আপনি কিছুই ফিল করেন নি প্রভা?”

“না।”

বলেই প্রভা গাড়িতে উঠে বসে। রিহান অস্তমিত সূর্যের দিকে তাকায়৷ মলিন হেসে বলে,”তুমি আমায় চিনতে পারলে না প্রভা!”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_26(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভাকে তার ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিয়ে উদাস মনে নিজের বাড়িতে ফিরল রিহান। অত:পর নিজের রুমে এসে উদাস মনে বসে পড়লো বিছানার উপর। নিজের নীল রঙের লেন্স এবং নকল চুলটা খুলে ফেলল। রিহান রূপ ছেড়ে রায়ান রূপে ফিরল সে। কিছুক্ষণ ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিল। প্রভার সাথে আজ কাটানো মুহুর্ত গুলো মনে করে হাসছে। আজকের দিনটা অনেক সুন্দর ছিল। অনেকদিন পর প্রভার সাথে এত সুন্দর সময় কা’টালো। তবে আফসোস এখনো তার প্রভা তাকে চিনলো না। রায়ানের এমন ভাবনার মাঝেই সৌভিক তাকে ফোন করল। রায়ান ফোন রিসিভ করতেই সৌভিক রাগী গলায় বলল,”তুই এমন কেন রে রায়ান?”

“এমন মানে?”

“প্রভাকে এত কষ্ট দিচ্ছিস কেন? মেয়েটা এমনিতেই ১২ বছর অনেক কষ্ট করেছে। এখন তো মেয়েটাকে একটু সুখের মুখ দেখতে দে৷ তুই কোথায় এখন ওকে আগলে রাখবি তা না তুই আরো ওকে বেশি কষ্ট দিচ্ছিস।”

“তুই সব জেনেও এমন কথা বলবি?”

“আমি সব জানি জন্যই তো বলছি রায়ান। তুই আর প্রভার সাথে এই লুকোচুরি খেলা খেলিস না। এবার বন্ধ কর এইসব। মেয়েটাকে এবার আপন করে নে।”

“…”

“একদম চুপ। আর একদম সঠিক সময়ের কথা বলবি না। আমি আবিরের বিরুদ্ধে প্রায় অনেক প্রমাণ একজোট করেছি। আর কিছুদিনের মধ্যেই ওর মুখোশ সবার সামনে খুলে দেব। তুই এখন প্রভার কাছে গিয়ে নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ কর।”

“হুম শীঘ্রই সব করব।”

সৌভিক কিছুটা থেমে বলে,”আমাকে এখনো কিন্তু তুই তোর অতীতের ব্যাপারে কিছু বলিস নি। ১২ বছর ধরে কেন তুই মৃত হওয়ার নাটক করছিলি রায়ানা? আমিও তো এতদিন তোকে মৃতই জানতাম। মাত্র ৬ মাস আগে তুই আমার সাথে যোগাযোগ করলি। প্রথম যখন তুই আমাকে ফোন করে জানালি তুই রায়ান আমি তো তখন বিশ্বাসই করতে পারিনি। তারপর যখন তুই ভিডিও কল দিয়ে আমার সাথে কথা বললি তখনই তোকে চিনতে পেরেছি। তুই তখন বললি সবটা গোপন রাখতে৷ আবিরের অপকর্মের ব্যাপারে সব কথা আমায় বললি। তোর কথা মতোই আমি আবিরের আরো বেশি ঘনিষ্ঠ হলাম। আবিরের বিশ্বাস অর্জন করলাম। কিন্তু এসবের পেছনে আসল রহস্য কি সেটা আমায় বল তো।”

রায়ান এবার ডুব দিলো তার অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোতে।

সেইদিন দূর্ঘটনায় আসলে রায়ান মারা যায়নি। কিন্তু মারাত্মক ভাবে জখম হলো সে। রুহুল আমিন যখন চিকিৎসকের সাথে কথা বলেন তখন তিনি বলেছিলেন রায়ানের চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠাবে। রুহুল আমিন তখন তাকে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। এদিকে রায়ানের মনে তখন অন্য ভাবনা চলছিল। যেই প্রভাকে সে এত ভালোবাসে সে কিনা তারই প্রাণপ্রিয় বন্ধু আবিরকে ভালোবাসে। এমনকি তার বন্ধু আবিরও প্রভার জন্য তার সাথে ফাইট করল এত সব ধাক্কায় রায়ান অনেক ভেঙে পড়েছিল। তাই সে রুহুল আমিনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি বিদেশে যাব কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”

“কি শর্ত?”

“তোমায় সবাইকে জানাতে হবে যে আমি মারা গেছি।”

“রায়ান! এসব কি বলছিস তুই?”

“আমি যেটা বলছি সেটাই করো৷ নাহলে কিন্তু আমি বিদেশে যাব না।”

“রায়ান!!”

এমন সময় ডাক্তার তাকে গোপনে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে,”আপনার ছেলের অবস্থা কিন্তু এখন বেশি ভালো না। যদি ভালো চান তো নিজের ছেলের কথাই শুনুন। নাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে।”

রুহুল আমিন নিজের ছেলেকে খুব ভালোবাসতেন। তাই তিনি ছেলের ভালোর কথা ভেবে রাজি হয়ে যান। যার ফলস্বরূপ ডাক্তার এবং রুহুল আমিন সেসময় মিথ্যা নাটক করেন যে রায়ান মারা গেছে এবং রায়ানকে চিকিৎসার জন্য কানাডায় পাঠানো হয়। সেই সময় সানা প্রিস্টই রায়ানের চিকিৎসা করেছিল। এদিকে রায়ানের মৃত্যুর নাটক সাজানোর জন্য রায়ানের বাবা মিথ্যা বলেন যে তার জানাজা গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে প্রভা বা অন্য কাউকেই তিনি যেতে দেন না। সেসময় তিনি সবার সাথে রূঢ় ব্যবহার করতে বাধ্য হন।

এদিকে রায়ানের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। ডাক্তার তো তার বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল কিন্তু সৌভাগ্যবশত সে বেঁচে যায়। রুহুল আমিনের মাথায় এসময় সন্তান হারানোর ভয় আরো বেশি জেকে বশে। আর এই জিনিসটারই সুযোগ নেয় রায়ান। সে নিজের বাবাকে অভিনয় চালিয়ে যেতে বাধ্য করে। রায়ান সেইসময় টিনেজার ছিল আর ছোটবেলা থেকে বেশ জেদি হওয়ায় সে ঠিক ভুল বুঝতে পারছিল না। রায়ানের কথাতেই রুহুল আমিন আবিরকে দত্তক নেন এবং তাকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করতে থাকেন। রায়ান এসব কিছু করেছিল শুধুমাত্র প্রভার সুখের জন্য। কারণ সে ভেবেছিল আবির ও প্রভা একে অপরকে ভালোবাসে এবং একসাথে সুখী হতে পারবে। রায়ানও কানাডায় অন্য পরিচয়ে বড় হতে থাকে। সানা প্রিস্টের সাথেও তার সম্পর্ক অনেক ভালো হয়ে যায়। সানা প্রিস্ট রায়ানকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখতে শুরু করে। এভাবে সময় এগিয়ে যেতে থাকে। দীর্ঘ ১১ বছর এভাবেই চলে যায় কিন্তু রায়ান তখনো অব্দি অভিমান করেই দূরে থাকে। এই ১১ বছর কানাডাতেই থেকেছে সে। কখনো বাংলাদেশে ফেরেনি। শুধুমাত্র গোপনে রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। এরপর ১১ বছর পর হঠাৎ একটি ঘটনা তাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। আবিরকে নিয়ে অনেক নিউজই তার সামনে আসছিল। কিন্তু আবির এমপি হওয়ার পর থেকে তার করা বিভিন্ন ভয়ানক অপরাধের খবর পায় রায়ান। সেসময় তার সন্দেহ হয়। রায়ানের সাথে কানাডায় বাংলাদেশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার দেখা হয়েছিল এর মাঝে। তার মাধ্যমে রায়ান আবিরের উপর নজরদারি করায় এবং এর ফলে তার হাতে আবিরের সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। আবির যে পুরো চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে সেটা জানা যায়। বাংলাদেশের প্রশাসন অনেক দূর্নীতিগ্রস্থ এবং আবিরের সাথে অনেক উচ্চপদস্থ নেতার যোগাযোগ আছে। তাই এত সহজে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে না এটা রায়ান সহজেই বুঝে গেছিল। এমনকি সে কিছু করতে গেলে আবির যে রুহুল আমিন ও প্রভার ক্ষতি করতেও দুবার ভাববে না এটাও বুঝে যায় রায়ান। তাই রায়ান তখন সৌভিকের সাথে যোগাযোগ করে। অত:পর সৌভিকের মাধ্যমেই আবিরের উপর নজরদারি করতে থাকে। সেই সময়ই রায়ান সৌভিকের মাধ্যমেই জানতে পারে প্রভা আসলে আবিরকে নয় তাকেই ভালোবাসে৷ এটা জেনে রায়ানের অনেক আফসোস হতে থাকে। রায়ান নিজেও বুঝতে পারে যেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য রায়ানই পরোক্ষভাবে দায়ী। সে যদি এসব নাটক করে দূরে না থাকত তাহলে আবিরও আজ এই ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করতে পারত না। আর না প্রভাকে এত কষ্ট পেতে হত। এইসব কারণেই রায়ান আজো প্রভার মুখোমুখি হতে ভয় পায়। কারণ সে যে প্রভার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না। প্রভার কাছে যে সে অপরাধী। শুধুমাত্র তার ভুল বোঝার জন্যই প্রভাকে এই ১২ বছর যে কত কষ্টে পার করতে হয়েছে সেটা রায়ান জানে।

এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে রায়ান বলে,”আমি প্রভার সামনে কিভাবে নিজের আসল পরিচয় নিয়ে দাঁড়াবো সৌভিক?”

“তুই এত ভাবিস না। আজ নাহয় কাল তোকে ওর সামনে যেতেই হবে। তাই আর দেরি করিস না রায়ান। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রভাকে নিজের আসল পরিচয় জানা। এই রিহান হওয়ার নাটক বন্ধ কর।”

রায়ান বলে,”তুই ঠিক বলেছিস। আমি এবার রায়ান হয়েই প্রভার মুখোমুখি হবো। প্রভাকে নিজের সব কথা জানাবো। এই ১২ বছর অনেক কষ্ট পেয়েছে সাধাসিধা মেয়েটা। আমি ওকে আর কষ্ট পেতে দেবো না।”

বলেই রায়ান ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়। নিজের ঘরের দরজা খুলতেই চমকে যায় সে। কারণ প্রভা ঠিক তার দরজায় দাঁড়িয়ে। প্রভার চোখ অশ্রুতে টলোমলো করছে। প্রভা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,”আপনাকে আমায় আর কিছু বলতে হবে না রায়ান। আমি আপনাকে চিনতে পেরে গেছি।”

to be continue…

একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় পর্ব-২১+২২+২৩

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_21
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা টের পেল কারো একজনের অস্তিত্ব। কেউ ছাতা হাতে তুলে তাকে বৃষ্টি থেকে আড়াল করছে। প্রভার মনে হলো এটা রায়ান। তাই সে অস্ফুটস্বরে বলে,””‘রায়ান! আপনি ফিরে এসেছেন আবার!”

প্রভা সাথে সাথেই পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনে ফিরে তাকাতেই হতাশায় মজে যায় সে। প্রভার দৃষ্টিগোচর হয় দুটো নীল চোখ। ব্যক্তিটির মাস্ক পড়ে আছে বিধায় তার মুখ সে দেখতে পায়না। হতাশার শ্বাস ফেলে। লোকটির নীল চোখ, ব্রাউন কালারের চুল দেখেই বোঝা যায় সে এদেশীয় কেউ। তাই প্রভা নিজের ভুল বুঝতে পেরে হতাশ হয়। যুবকটি প্রভার থাকা ছাতাটি তুলে দিয়ে বলে,”Take this umbrella otherwise you will drench in the rain’s water.”

কথা টুকু বলেই যুবকটি চলে যায়। অদ্ভুতভাবে এই কন্ঠটা অনেক পরিচিত লাগে প্রভার। হুবহু রায়ানের মতো। কিন্তু সেটা কি করে হতে পারে? ইনি তো একজন বিদেশী ব্যক্তি। তাই প্রভা নিজের মনের দ্বন্দ্ব দূর করার জন্য যুবকটিকে ডাক দিলো। বলল,”Please wait.”

যুবকটি দাঁড়ালো। প্রভা তার সামনে গিয়ে বলল,”Can you show me your face, please!”

যুবকটি বোধহয় হাসলো। অত:পর বেশ ঠান্ডা মেজাজেই বলল,”Sorry. I can’t. Excuse me.”

বলেই সে চলে যায়। প্রভার হতাশার পাল্লা বাড়ে। যুবকটির কন্ঠ এবার ভালো করে শুনেছে প্রভা। তাই তার আবারো মনে হয় এটাই রায়ান। সে চিৎকার করে বলে,”রায়ান!”

কিন্তু যুবকটি এবার আর অপেক্ষা করে না। ত্রস্ত পায়ে হেটে চলে যায়। প্রভা তাকে অনুসরণ করতে যায় কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই যুবকটি তার দৃষ্টিগোচর হয়ে যায়। প্রভা হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,”এতদিন পর তো একটা আশার আলো দেখতে পেলাম। সেটাও কি নিভে গেল?”

প্রভার হঠাৎ করেই মনে হলো এটা কি সত্যিই রায়ান ছিল? যদি রায়ান হতো তাহলে তার সাথে কথা বলল না কেন? তাহলে কি এটা অন্য কেউ? প্রভা কিছু বুঝতে পারছে না। সে তো কন্ঠটা শুনেছে ঠিক করে। অবিকল রায়ানের মতো। কিন্তু এ যে ভিনদেশী যুবক। প্রভার কাছে সবটা কেমন খালি খালি লাগছে। সে আর কিছু ভাবতে পারছে না৷ হঠাৎ করেই তার মাথা ঘুরতে থাকে। এরপর প্রভার চোখ ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায়। সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। এমন সময় ঝাপসা চোখে সে দেখতে পায় কেউ এগিয়ে আসছে তারদিকে। জ্ঞান হারানোর পূর্বে আবারো তার দৃষ্টিতে এসে বাধে সেই দুটি নীল চোখ!

~~~~~~~~~
প্রভার জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে আবিষ্কার করে৷ তার পাশেই বসে থাকতে দেখতে পায় ডাক্তার অভিষেক চক্রবর্তীকে। প্রভা খুঁজতে থাকে সেই নীল চোখের যুবকটিকে। অভিষেক চক্রবর্তী প্রভার জ্ঞান ফিরতে দেখে বলে,”আপনি ঠিক আছেন তো? দেখেন তো কি কাণ্ড। ডাক্তার হতে এসে তো আপনি একদম রোগী হয়ে গেলেন।”

প্রভা বলল,”আসলে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এখানে কে নিয়ে এলো?”

অভিষেক চক্রবর্তী বলল,”আমি যতদূর শুনেছি একজন যুবকই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে।”

প্রভা অস্থির হয়ে জানতে চায়,”সেই যুবক এখন কোথায়? আমাকে প্লিজ তার কাছে নিয়ে চলুন না।”

অভিষেক চক্রবর্তী বলেন,”আপনি আগে শান্ত হন মিস:প্রভা। উনি আপনাকে হসপিটালের মধ্যে রেখেই চলে গেছে।”

“উনি আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেলো?”

“আপনি ওনাকে চেনেন নাকি? কে ছিলেন উনি?”

প্রভা সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে,”না, মানে আমার এত বড় উপকার করলেন তো। তাই ওনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল। কিন্তু পারলাম না।”

“আরে এটা নিয়ে এত ভাবতে হবে না। এখানে সবাই এমন হেল্পফুল। আমার বাঙালিদের মতো কানাডিয়ানরা নয়। আমাদের বাঙালিদের ব্যাপারে তো জানোই একবার কোন উপকার করলে ঢাকঢোল পিটিয়ে বেড়ায়। কিন্তু কানাডিয়ানরা এমন না। কিছুদিন এখানে থেকেই বুঝতে পেরেছি এরা অনেক পরোপকারী এবং ভদ্র জাতি।”

এরপর ডা: চক্রবর্তী আরো অনেক কথা বলতে থাকেন৷ কিন্তু প্রভা সেসব কথায় আর কানই দেয়না। সে তো শুধু ঐ নীল চোখের যুবকের কথা ভাবতে থাকে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে এই ছেলের সাথে রায়ানের অনেক মিল। তাই প্রভাকে যে করেই হোক তার সন্ধান পেতেই হবে। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব হবে?

~~~~~~“
১ মাস পর,
প্রভার কানাডায় পৌঁছানোর পর এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই এক মাসে প্রভা কানাডায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হলেও সে এখন নিজেকে সামলে নিয়েছে। নিয়মিত সে অনুরাধার মাধ্যমে নিজের মা-বাবারও খবর নেয়। তবে সেই দিনের পর আরো অনেক খুঁজেও সেই যুবকের কোন খোঁজ পায়নি প্রভা। তাই তার আশাও ছেড়ে দিয়েছে।

প্রভা আজ হসপিটালের ডিউটি শেষে বের হচ্ছিল। এমন সময় তার এক সহকর্মী ইলিয়ানা এসে তাকে বলে,”আজ আমরা একটা কনসার্ট দেখতে যাব। তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?”

প্রভা আপত্তি জানিয়ে বলে,”সরি, আসলে আমি আজ খুব টায়ার্ড আছি। তাই যেতে পারবো না।”

“ইটস ওকে। তুমি যেতে না পারো কিন্তু আমরা যেই কনসার্টে যাচ্ছি সেখানে আজ কে আসবে সেটা আগে শোনো শুধু।”

“কে আসবে?”

“রকস্টার রিহান।”

“রকস্টার রিহান? কে তিনি?”

“তুমি রকস্টার রিহানকে চেনো না? Oh my god, ওয়েট আমি তোমাকে ওনার একটা গান শোনাচ্ছি।”

এই বলেই ইলিয়ানা নিজের ফোন বের করে একটা গান চালিয়ে দেয়,
This night is cold in the kingdom
I can feel you fade away
From the kitchen to the bathroom sink and
Your steps keep me awake

Don’t cut me down, throw me out, leave me here to waste
I once was a man with dignity and grace
Now I’m slippin’ through the cracks of your cold embrace
So please, please

Could you find a way to let me down slowly?
A little sympathy, I hope you can show me
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
Let me down, down, let me down, down, let me down
Let me down, down, let me down, down, let me down
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly

Cold skin, drag my feet on the tile
As I’m walking down the corridor
And I know we haven’t talked in a while
So I’m looking for an open door

Don’t cut me down, throw me out, leave me here to waste
I once was a man with dignity and grace
Now I’m slippin’ through the cracks of your cold embrace
So please, please

Could you find a way to let me down slowly?
A little sympathy, I hope you can show me
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly
Let me down, down, let me down, down, let me down
Let me down, down, let me down, down, let me down
If you wanna go then I’ll be so lonely
If you’re leavin’, baby, let me down slowly

প্রভা গানটা শুনে হতবাক হয়ে যায়। কন্ঠটা তার কাছে নিদারুণ চেনা লাগে৷ ১২ বছর আগে এই কন্ঠেই তো সে সুমধুর গান শুনেছিল যা আজো তার কানে বাজে। প্রভা ইলিয়ানার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমি তোমার সাথে যাব।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_22(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা তার কলিগ ইলিয়ানার সাথে রকস্টার রিহান এর কনসার্ট দেখতে এসেছে। তার মনে অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে এই ভিনদেশী রকস্টারকে নিয়ে। কারণ তার গান প্রভাকে কারো কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যেই লোকটিকে সে ভুলতে পারছে না। ১২ বছর আগে যাকে হারিয়েছে কিন্তু এখনো খুঁজে বেড়ায়। প্রভার আজও মনে হয়, কোন একদিন রায়ান আবার তার সামনে এসে দাঁড়াবে। হোক না সেটা কোন রূপকথার গল্পের মতো। কিন্তু গল্পও তো কখনো বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যায়। আর যেই গল্প বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যায় তাই উদাহরণ সৃষ্টি করে দেয়।

প্রভা লক্ষ্য করছে ইলিয়ানা অনেক উদগ্রীব। দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে রকস্টার রিহানের অনেক বড় গান। প্রভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। তার রকস্টার রিহানকে নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। সে তো শুধু নিজের মনের সন্দেহ দূর করার জন্য এখানে এসে পৌঁছেছে। রিহানের কনসার্ট দেখার জন্য তারা এসে উপস্থিত হয় অটোয়া শহরের কিংস গ্রাউন্ডে। এই কিংস গ্রাউন্ডেই আজ রিহানের কনসার্ট হবে। যেই উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছে চারিদিকে। প্রভা বুঝল রকস্টার রিহান বেশ জনপ্রিয়। সে খুব কমই এত জন সমাগম দেখেছে। কোথাও পা ফেলার পর্যন্ত যায়গা নেই। প্রভার মনে এই মুহুর্তে অন্য চিন্তা এলো। সে কি তবে এখানে ভুল বশত চলে এলো? তার সন্দেহ কি তবে শতভাগ ভুল? এতটা ভুল সে কি করে হলো রায়ানের গলার স্বর শুনতে। প্রভা বুঝতে পারল না কিছুই। তবে এখন তার রকস্টার রিহানের জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তাই প্রভা অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগল।

সময় যতো এগোচ্ছিল প্রভার মনে উত্তেজনার পারদ ততোই চড়ছিল। এমনিতেই তার এত ভীড় ভাট্টা পছন্দ নয়। ছোটবেলা থেকেই এসব এড়িয়েই চলেছে সে। ইন্ট্রোভার্ট আর প্রচণ্ড ঘরকুনো ছিল প্রভা। এখন একটু চেঞ্জ হলেও পুরোপুরি বদলে যায়নি সে। তাই এত লোকের সমাগমে সে বিরক্তই ছিল। তবু দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছিল সত্য উদঘাটন করার উদ্দ্যেশ্যে। সময় যতো এগোচ্ছিল প্রভার অপেক্ষা যেন আর শেষই হতে চাইছিল না। প্রভার পাশে বসে থাকা ইলিয়ানাও চরম উত্তেজিত। সে প্রভার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আর একটু পরই রকস্টার রিহান স্টেজে পারফর্ম করার জন্য উঠবে। আমার তো খুব এক্সাইটেড লাগছে।”

প্রভা হাফিত্তেশ করে। ইলিয়ানা দীর্ঘ সময় ধরে এই এক কথাই বলে চলেছে। তবে বাস্তবতা হলো রিহানের আসার এখনো কোন খোঁজ খবরই নেই।

প্রভার এহেন ভাবনার মধ্যেই স্টেজে উঠে এলো এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক। তিনি এসেই বলেন,”Ladies and gentleman, thanks for your patience. I know that you all are waiting for Rock star Rihan. And he is on the way. Just wait… he will arrive soon. ”

উপস্থিত দর্শক আরো উত্তেজিত হয়ে যায়। তারা সকলেই নিজেদের আইডলকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল। তাই কারো আর তড় সইছিল না৷ এমন সময় সঞ্চালক পুনরায় সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”The time is coming. Rock star Rihan is here…please welcome him.”

দর্শক উত্তেজিত হয়ে কড়তালি দেওয়া শুরু করে। কেউ তো আবার রিহানের নামে প্লাকার্ড নিয়ে চিল্লাতে থাকে। প্রভা এসবে বিরক্ত হচ্ছিল ভীষণ। তবু সে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করে রিহানের আগমনের জন্য। অবশেষে প্রভার অপেক্ষার পালা শেষ হয়৷ রকস্টার রিহান এসে উপস্থিত হয় কিংস গ্রাউন্ডের মঞ্চে। প্রভা ভালো করে তাকিয়ে দেখতে পায় সেই দুটি নীল চোখ আর ব্রাউন চুলের লোকটিকে। প্রভা হতবাক কন্ঠে বলে ওঠে,”ইনিই রিহান!”

পাশ থেকে ইলিয়ানা বলে,”হ্যাঁ, এই হলো রকস্টার রিহান। যার জন্য সবাই পাগল। দেখেছ কি হ্যান্ডসাম? এইজন্য ওনার এত এত ফ্যান। শুধু হ্যান্ডসামনেস নয় ওনার গানও খুব সুন্দর। তুমি তো শুনলেই।”

প্রভা কিছু বলল না। লোকটি আজও মাস্ক পড়ে এসেছে। প্রভার এই ব্যাপারটা অনেক বিরক্ত লাগে। প্রভা শুধু অপেক্ষা করে তার মাস্ক খোলার। কিন্তু সে মাস্ক না খুলেই তার অডিয়েন্সের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলতে থাকে। প্রভা ইলিয়ানাকে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা এই রকস্টার রিহান মাস্ক পড়ে আছে কেন? সে কি নিজের মুখ দেখাবে না?”

ইলিয়ানা মৃদু হেসে বলে,”ওহ তুমি বোধহয় জানো না, রকস্টার রিহান আজ অব্দি কোনদিন জনসম্মুখে নিজের মুখ দেখায় নি। মাস্ক পড়েই সবসময় কনসার্ট এটেন্ড করেছে। তার এত ফ্যান থাকার পরেও কারো আজ অব্দি তার মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কত সাংবাদিক চেষ্টা করেছে তার ছবি তোলার কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। উনি এতোটা প্রাইভেসি মেইনটেইন করে চলেন যা বলার বাহিরে।”

প্রভা বিড়বিড় করে বলে,”স্ট্রেঞ্জ! এত বড় একজন সেলিব্রিটি অথচ তার মুখ কেউ দেখে নি। ব্যাপার টা বেশ রহস্যজনক লাগছে।”

এরমধ্যে রকস্টার রিহান ঘোষণা দেয় আজকের কনসার্টটা অনেক স্পেশাল হবে। কারণ আজ সে ১৫ টি ভিন্ন ভাষায় ১৫ টি দেশের গান বলবে। যার মধ্যে আছে ইংরেজি, তুর্কি, কোরিয়ান, ফ্রেঞ্চ, চাইনিজ, ইটালিয়ান,পর্তুগীজ, স্প্যানিশ, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, জার্মান, ফিলিপিনো, সিংহলি এবং বাংলা।

রিহানের এই ঘোষণা তো তার ভক্তদের
অনেক খুশি করে দেয়। ইলিয়ানা তো উত্তেজিত হয়ে বলে,”আজ তো এই কনসার্ট লাখো দর্শকের হৃদয়ে আলোড়ন তুলবে। রিহানের ম্যাজিকাল কন্ঠে আজ আমরা ১৫ টি ভাষার ১৫ টা গান শুনতে পারবো। ভাবলেও খুশি হচ্ছে খুব।”

রিহান ঘোষণা দিয়েই বসে থাকে না। প্রথমেই সে জনপ্রিয় ইংরেজি গান, “See You Again” দিয়ে স্টেজে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর টার্কির ভাইরাল আইসক্রিম সংগ গায়। এরপর কোরিয়ান “গ্যাংগনাম স্টাইল” গেয়ে স্টেজ কাপায় সে। হিন্দিতে গায়, “Dilwale Dulhaniya le jayegenge” মুভির টাইটেল সংগ। এরপর পালা আসে বাংলার। বাংলা গানের পালা আসতেই রিহান চুপ রয় কিছুক্ষণ।

এদিকে প্রভা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রিহানের মুখে বাংলা গান শোনার জন্য। এতক্ষণ তার কন্ঠ ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছে প্রভা। তাতে সন্দেহ অনেকটাই গাঢ় হয়েছে। কিন্তু এবার যদি তার গলায় বাংলা গান শোনে তাহলে একদম শত ভাগ নিশ্চিত হতে পারবে যে এই তার রায়ান।।

অন্য দিকে রকস্টার রিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাংলায় গাইতে শুরু করে,
❝যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় তবে
প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?
যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়
তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়?
যদি মিথ্যা মনে হয় সব পুরোনো কথা…❞

রিহান তার পুরো গান শেষ করার আগেই প্রভা চিৎকার করে বলে,”রায়ান! আপনি ফিরে এসেছেন!”

এই বলে দৌড়ে স্টেজের দিকে যায় প্রভা। ইলিয়ানাও কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তার পিছনে দৌড় দেয়। প্রভাকে শুরু থেকেই তার অন্যরকম লাগে। আর আজ যা হলো তা সত্যিই অন্যরকম ছিল। এটা সে আশা করেনি।

প্রভা দৌড়ে স্টেজে উঠে রকস্টার রিহানকে জড়িয়ে ধরে। লাখ লাখ দর্শক একদম হতবাক হয়ে যায়। প্রভা রিহানকে জড়িয়ে ধরেই বলে,”আমি আপনাকে চিনতে ভুল করিনি। আপনি আমার রায়ান। কোথায় ছিলেন এতদিন আপনি? কেন আমার থেকে লুকিয়ে ছিলেন?”

রকস্টার রিহান বলে,”Who are you? And what are you saying? I can’t understand.”

“আমি প্রভা। তুমি আমায় চিনতে পারছ না?”

রকস্টার রিহান অপলক তাকিয়ে থাকে।

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_23
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা রকস্টার রিহানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে। রকস্টার রিহান প্রভাকে হতাশ করে বলে,”May you have some misunderstanding. I am not Riyan, I’m rockstar Rihan.”

প্রভা তবুও জোর দিয়ে বলে,”আমার কোন ভুল হয়নি। আপনিই আমার রায়ান।”

রকস্টার রিহান বিরক্ত হয়ে প্রভাকে নিজের থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,”Somebody take her.”

প্রভা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল রিহানের দিকে৷ তার সন্দেহ কি তবে ভুল? তাহলে কি এ তার রায়ান নয়? যদি রায়ান হতো তাহলে কি পারত প্রভাকে এভাবে বলতে? প্রভাকে কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড টেনে নিচে নামালো। ইলিয়ানা প্রভার কাছে এসে বললো,”কি হয়েছিল তোমার? তুমি হঠাৎ এমন করেছিলে কেন? এভাবে স্টেজে উঠে..”

“আমি যাচ্ছি।”

বলেই প্রভা চলে আসে৷ রকস্টার রিহান নিজের পারফরম্যান্স চালিয়ে যায়। এসবের মধ্যে বেচারি ইলিয়ানাকেও প্রভার পিছনে ছুটতে হয়। সে তো বুঝলই না এখানে কি কি ঘটল।

~ ~ ~~~~~~~~~~~~~~~~
সেদিনের পর আরো কিছু দিন পেরিয়ে গেল। প্রভা রকস্টার রিহানের ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি। বলা বাহুল্য ইচ্ছে করেই ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে সে। আপাতত প্রভা সৌভিকের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। আবির মোটেই সুবিধার লোক নয়৷ সে যেকোন সময় রুহুল আমিন বা প্রভার মা-বাবার কোন ক্ষতি করতে পারে। তাই প্রভা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবিরের আসল মুখোশ সবার সামনে আনতে চায়। সৌভিক প্রভাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”তুমি এত চিন্তা করিও না৷ আমি এদিকটা সব সামলে নিচ্ছি। আবির খুব শীঘ্রই বিপদে পড়তে চলেছে। তার অপরাধ সবার সামনে আসবেই।”

প্রভা কিছু একটা মনে করে সৌভিককে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা দাদা, আপনি যে আমায় বলেছিলেন কানাডায় কেউ আমাকে সাহায্য করবে কিন্তু এখনো তো সেই ব্যাপারে কিছু জানলাম না।”

সৌভিক বলে,”যার সাহায্য করার সে ঠিকই গোপনে সাহায্য করে যাচ্ছে। সঠিক সময় সে সামনে আসবে।”

এই বলে সৌভিক ফোন রেখে দেয়। প্রভা আবারো ভাবনায় পড়ে যায়৷ সৌভিক কি বলতে চাইলো? গোপনে সাহায্য মানে? প্রভা চুপচাপ ভেবে গেলো। আর একটু পরেই তার মাথায় অন্য চিন্তা এলো। রকস্টার রিহানের কথাটা আরেকবার এলো তার মাথায়। অনেকদিন পর মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। প্রভা বলল,”যদি সুযোগ পাই তাহলে আমি সব সত্য বের করবোই।”

প্রভার ভাবনার মাঝেই ডা:ইলিয়ানা ও ডা:অভিষেক এলো তার কেবিনে। তারা এসেই প্রভাকে বলল,”আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?”

প্রভা বলল,”জ্বি, কেন?”

ডা:ইলিয়ানা ও ডা:অভিষেক একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ দেখল। অত:পর ডা:ইলিয়ানা প্রভাকে বলল,”আমরা সবাই সানা প্রিস্টের আমন্ত্রণে একটা পার্টি এটেন্ড করতে যাচ্ছি। আপনিও চলুন আমাদের সাথে।”

প্রভার এসব পার্টি তেমন ভালো লাগে না। কিন্তু সানা প্রিস্টের ডাক সে উপেক্ষা করতে পারবে না। মহিলাকে অসম্ভব ভালো লেগে গেছে তার। যখনই দেখা হয় হাসি মুখে কথা বলেন। যা থেকে বোঝাই যায় যে তিনি ভীষণ আন্তরিক। তাই প্রভা বলে,”ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি আপনাদের সাথে।”

তিনজনে মিলে বের হলো সানা প্রিস্টের পার্টি এটেন্ড করতে। প্রভা এসে দেখলো পার্টিতে খুব একটা লোক সমাগম নেই৷ হাসপাতালেরই কিছু স্টাফ এখানে উপস্থিত। এটা দেখে সে স্বস্তি পেল। সানা প্রিস্ট তাদের দিকে এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল,”আপনারা এসে গেছেন। দেখে খুশি হলাম। এনজয় করুন।”

প্রভা সৌজন্য সূচক হাসে। অত:পর কয়েকজন পরিচিত কলিগের সাথে কিছু কথা-বার্তা বলে। এভাবেই সময় যাচ্ছিল।

কিছুক্ষণ পরেই সানা প্রিস্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল,”আপনাদের সাথে আজ আমি কারো পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আপনারা সবাই জানেন যে আমার একজন ভাই আছে৷ যে মূলত টরেন্টোতে থাকে। আজ সে এখানে এসেছে। আজ মূলত তাকে ওয়েলকাম জানানোর জন্যই আমি এই পার্টির আয়োজন করেছি। দীর্ঘ ৩ বছর পর আমার ভাইটা টরেন্টো থেকে আবার অটোয়াতে এলো আমার সাথে দেখা করতে। তাই আমার কাছে আজকের দিনটা খুবই স্পেশাল।”

সবাই সানা প্রিস্টের ভাইকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। ইলিয়ানা প্রভা ও অভিষেককে বলল,”আমি অনেক শুনেছি সানা প্রিস্টের ভাইয়ের সম্পর্কে। দুই ভাই বোনের সম্পর্ক নাকি অনেক মধুর। কিন্তু ৩ বছর আগে কিছু একটা নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা হয়৷ আসলে সানা প্রিস্ট চেয়েছিল তার ভাই স্টাডি শেষ করে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করুক কিন্তু তার ভাই নাকি মিউজিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিল। এই নিয়ে দুই ভাই বোনের মধ্যে মান অভিমান হয়। আর সেই মান-অভিমান থেকেই ওনার ভাই টরেন্টোতে চলে যান। আজ আবার অটোয়াতে ফিরছেন। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগল।”

এমন সময় কারো আগমন ঘটল। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”ঐ তো আমার ভাই এসে গেছে।”

সবাই পিছনে ফিরে তাকালো। প্রভাও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সেও ফিরে তাকালো। তার পিছনে ফিরে তাকাতেই সে দেখতে পেল সেই পরিচিত দুটো নীল চোখ। চোখ দেখেই সে চিনে ফেলল ইনি কে। বিস্মিত কন্ঠে বলল,”রিহান!”

ইলিয়ানাও অবাক হয়ে গেছে রিহানকে এখানে দেখে। আর আজও সে মাস্ক পড়েই এসেছে। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আপনারা একদম ঠিকই ধরেছেন ও হলো আমার ভাই রিহান প্রিস্ট। যাকে আপনারা সবাই রকস্টার রিহান নামেই চেনেন। লেট’স ওয়েল্কাম হিম।”

সবাই করতালি দিয়ে রিহানকে স্বাগতম জানালো। অনেকে তো হুমড়ি খেয়ে পড়লো তার সাথে সেলফি তোলার জন্য তো আবার কেউ অটোগ্রাফ নিতে গেল। কিন্তু প্রভা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। রিহানকে এখানে দেখে সে ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। সেই ঘোর থেকে এখনো বেরই হতে পারছে না।

রিহানও কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করল প্রভাকে। সানা প্রিস্ট সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আমিই সেই যে আমার ভাইয়ের মিউজিক ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থাকলেও আমার মনে হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা মূলক মঞ্চে ও নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে না। কিন্তু রিহান আমাকে ভুল প্রমাণ করেছে। ও নিজের ট্যালেন্ট দিয়ে আজ এই যায়গায় পৌঁছেছে যে সকলে ওকে এক নামে চেনে। এখন আমিও নিজের ভাইকে নিয়ে অনেক গর্ব করি।”

এরইমধ্যে ইলিয়ানা বলে ওঠে,”ম্যাম, আমার একটা প্রশ্ন আছে। যদি আপনি অনুমতি দেন তো করতে পারি।”

“হ্যাঁ, করো।”

“আচ্ছা রকস্টার রিহান কাউকে মুখ দেখায় না কেন? আজও উনি মুখ ঢেকেই এখানে এসেছেন।”

রিহান হেসে বলে,”আমিই এই প্রশ্নের উত্তর দেই। আমি নিজের মুখ এখনো কাউকে দেখাই নি কারণ আমি সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। সঠিক সময় এলেই আমি সবাইকে আমার মুখ দেখাব।”

কথাটা প্রভার দিকে তাকিয়েই বলে রিহান। প্রভা ব্যাপারটা খেয়াল করে না৷ সে তো শুধু রিহানের বলা কথা আর সৌভিকের বলা কথার মধ্যে সাদৃশ্যই খুঁজে পাচ্ছিল। প্রভা চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে। বিড়বিড় করে বলে,”তাহলে কি রিহানই সেই ব্যক্তি যে আমায় সাহায্য করবে?”

প্রভা রিহনের দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হয়। অত:পর সবকিছুই শান্ত। কিছুক্ষণ পর প্রভার কাছে আসে রিহান। এসে ফিসফিস করে বলে,”কেমন আছেন আপনি আমার ক্রেজি ফ্যান?”

“আমি মোটেই আমার ক্রেজি ফ্যান না।”

“তাহলে সেদিন ওভাবে মঞ্চে উঠে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন কেন?”

“আমার কিছু ডাউট ছিল।”

“ওহ, আমায় ভালো টালো বাসেন নাকি?”

প্রভা ম্লান হেসে বলে,”আমি শুধু একজনকেই ভালোবাসি। আর আজীবন তাকেই ভালোবেসে যাব৷ অন্য কারো প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই।”

রিহান বলল,”কে সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি?”

প্রভা রাগী কন্ঠে বলে,”আপনাকে জানতে হবে না। আমার প্রতি এত আগ্রহ আপনার দেখানোর দরকার নেই।”

“আমার তো মনে হয় আপনি আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড।”

প্রভা চোখ পাকিয়ে বলে,”আমার আপনার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ শুধু কিছু ডাউট আছে। আপনার কন্ঠের সাথে একজনের খুব মিল পাই। কিন্তু অন্য কোন মিল নেই আপনাদের মাঝে।”

এটা বলেই প্রভা পার্টির ওখান থেকে চলে আসলো৷ রিহান প্রভার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগল।

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-১৯+২০

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_19
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আবির প্রভার উপর ঝাপিয়ে পড়তে যাবে ঠিক সেই সময় কেউ এসে পিছন থেকে আবিরের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে। আবির মাথায় হাত দিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। সে দেখতে পায় হুডি পড়া এক ব্যক্তিতে। মাস্ক পড়ে থাকায় যার চেহারা সে দেখতে পায় না। আবির বলে ওঠে,”কে তুই?”

কিন্তু সে কোন উত্তর না দিয়ে আবিরের মাথায় আরো একটা বাড়ি মা*রে। আবির মাটিতে পড়ে যায়। এই সুযোগে প্রভা উঠে দাঁড়ায়। কোনরকমে শাড়িটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে সে দৌড় দেয়। হুডি পড়া লোকটিও তার পিছনে যায়। আর আবির অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। বাইরে এসে লোকটি প্রভাকে একটি গাড়ি দেখিয়ে সেখানে উঠতে বলে। কিন্তু প্রভা লোকটিকে বিশ্বাস করতে পারছিল না তাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর লোকটি নিজের মুখ থেকে মাস্ক সরাতেই হতবাক হয়ে যায় প্রভা। কারণ সে আর কেউ নয়, সৌভিক।

সৌভিককে দেখে প্রভা বলে,”দাদা আপনি?”

সৌভিক বলে,”হ্যাঁ, আমি। এখন আর সময় নষ্ট করো না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়িতে উঠে বসো। আবির যে কোন সময় আবার চলে আসবে। আমি যেতে যেতে তোমায় সব বলছি।”

সৌভিকের কথা মতো প্রভা গাড়িতে উঠে বসে। অতঃপর সৌভিকও গাড়িতে উঠে বসে এবং ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে। প্রভা সৌভিকের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”দাদা আপনি এখানে কি করে এলেন? আপনি কি জানতেন আবির এমন কিছু করতে পারে?”

সৌভিক বলে,”হ্যাঁ, এই কদিনে আমি আবিরকে খুব ভালোই চিনেছি। তাই ও কি করতে পারে সেই ব্যাপারে আমার ঠিকই ধারণা আছে।”

“আপনি তো সবসময় আবিরের সাথেই থাকেন। ওর ব্যাপারে যদি আপনি আগেই সব জেনে গেছিলেন তাহলে কোন পদক্ষেপ নেন নি কেন?”

সৌভিক অসহায় কন্ঠে বলে,”তুমি আবিরের ব্যাপারে কিছু জানো না জন্য এমন বলছ। আবিরের যে কত ক্ষমতা সেটা আমি জানি। ও যে কত অপরাধ করেছে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেটা তুমি জানো না। আমি কিছুদিন আগেই ব্যাপারটা জেনেছি।”

“ওনার সব অপরাধের প্রমাণ আমি বের করবোই। উনি যে আঙ্কেলকে ভুল ওষুধ খাইয়েছেন সেটা আমি জানি। আর এর প্রমাণও আমার কাছে আছে।”

সৌভিক বলে,”এসব প্রমাণে কোন লাভ হবে না প্রভা। তুমি ব্যাপারটা বুঝছ না। আবির চাইলে সব প্রমাণ বদলে দিতে পারে। আর বর্তমানের আইন সম্পর্কে তো তুমি জানোই। সবই টাকা দিয়ে কেনা যায়।”

“তাহলে আপনি কি বলতে চাইছেন? ওনার সব অপরাধের ব্যাপারে জেনেও আমরা চুপ থাকব? আজ উনি আমার সাথে যেটা করতে চেয়েছিলেন তারপর আমি কিছুতেই চুপ থাকব না। ওনাকে যোগ্য শাস্তি দেবোই।”

সৌভিক প্রভাকে অনুরোধের সুরে বলে,”এতটা অধৈর্য হয়ো না বোন। আবিরের পেছনে যে কতজন আছে তুমি জানো না। সব নামী-দামী নেতা মন্ত্রীদের সাথে ওর ওঠাবসা। তুমি ওর বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না উল্টে ঐ তোমাকে ফাসিয়ে দেবে।”

“তার মানে আপনি কি চাইছেন দাদা? আমি চুপ থাকি?”

“আমি মোটেই সেটা চাইছি না। কিন্তু এখন তোমার ভালোর জন্য এছাড়া আর কোন উপায় নেই। আপাতত এখানে থাকা তোমার জন্য নিরাপদ নয়। আবির কু**ত্তাটা এখন যেন তেন প্রকারে তোমার ক্ষতি করতে চাইবে। তোমায় মেরে ফেলতে দুবার ভাববে না।”

“আমি এটার ভয় পাইনা। আমি ওনার মুখোশ খুলবোই।”

“এখনই সেটার সঠিক সময় আসে নি বোন। তুমি তোমার এই দাদার উপর ভরসা রাখো। আমি আবিরের সব মুখোশ খুলে দেব। কিন্তু এখন সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে তোমার নিরাপত্তা। আমি রায়ানকে কথা দিয়েছিলাম তার অবর্তমানে আমি তোমায় দেখে রাখব। আমার সেই কথা আমি রাখবোই।”

এই বলে সৌভিক নিজের ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে প্রভার হাতে তুলে দিয়ে বলে,”এই নাও।”

“কি আছে এখানে?”

“এখানে তোমার কানাডায় যাওয়ার পাসপোর্ট, ভিসা সব আছে।”

প্রভা অবাক হয়ে বলে,”কিন্তু এগুলো কিভাবে হলো? আমি তো এখনো এপ্লাই করিনি।”

“এখন এত কিছু বলার সময় নেই বোন। আমি তোমায় এখন বিমানবন্দরে নিয়ে যাচ্ছি একটু পরেই কানাডার ফ্লাইট। তুমি যেই হাসপাতালে জবের জন্য এপ্লাই করেছিলে সেখানেই তুমি এখন ডক্টর হিসেবে জয়েন করতে পারবে৷ আর এখন তোমার নিরাপত্তার জন্য তোমায় কানাডায় যেতেই হবে। আর বাকি কথা তুমি কানাডায় গেলেই জানতে পারবে। অনেক কিছুই তোমার অজানা।”

প্রভা অবাক হলো ভীষণ। কি তার অজানার মধ্যে রয়ে গেছে?

~~~~~
বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে গাড়ি থেকে নামল প্রভা ও সৌভিক। সৌভিক প্রভাকে বলল,”সাবধানে যেও।”

এমন সময় অনুরাধা সামনে থেকে চলে এলো। সে বিমানবন্দরেই প্রভার জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রভাকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরে সে। দুই বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আবেগপ্রবণ হয়ে কান্না শুরু করে দেয়। অনুরাধা প্রভাকে বলে,”সাবধানে যাস তুই। ওখানে গিয়ে নিজের খেয়াল রাখিস। এদিকটা আমি সামলে নেবো।”

“মা-বাবাকে একটু দেখে রাখিস অনু।”

“তুই এসব নিয়ে ভাবিস না। তোর অবর্তমানে আঙ্কেল আন্টির দায়িত্ব আমার।”

সৌভিক তাড়া দিয়ে বলল,”তোমরা আর সময় নষ্ট করো না। এই দেশে থাকাটা এখন প্রভার জন্য নিরাপদ নয়। ঐ আবির নিশ্চয়ই এতক্ষণে জ্ঞান ফিরে পেয়েছে এবং চারিদিকে নিজের লোক পাঠিয়ে দিয়েছে প্রভাকে খোঁজার জন্য। তাই প্রভা তুমি যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে যাও।”

প্রভা অনুরাধা ও সৌভিকের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় বিমানবন্দরের ভেতরে। সে চলে যাবার পর সৌভিক অনুরাধার সামনে এসে বলে,”এখনো কি আমার উপর রাগ করে আছ?”

অনুরাধা নিজের চোখের জল মুছে বলে,”নাহ, আমি কেন রাগ করে থাকব? তুমি আমাকে সবটা বলতে পারতে তো। তাহলে আমার এত কষ্ট হতো না।”

“কিভাবে বলতাম বলো? ও তো আমায় এসব বলতে মানা করেছিল। ওর নির্দেশেই তো আমি এতদিন সবকিছু করছিলাম। আবিরের বিশ্বস্ত হওয়ার জন্যই তোমাদের সাথে এত খারাপ ব্যবহার করতে হয়েছে।”

অনুরাধা সৌভিককে জড়িয়ে ধরে বলে,”যদিও তুমি কোনদিন আমায় এসব ব্যাপারে আমায় বলো নি তবুও যান আমি তোমার এই বদলে যাওয়া রূপ কখনোই সহজে মানি নি। সব সময়ই আমার মনে হতো তুমি এতটা বদলে যেতে পারো না। হয়তো কোন বিশেষ উদ্দ্যেশ্যেই এমন কাজ করছ। অবশেষে আমার ভাবনাটাই মিলল।”

সৌভিক প্রভার কপালে একটু চুমু খেয়ে বলে,”আমার উপর এই ভরসাটা রাখার জন্য ধন্যবাদ। নাহলে তো আমি ভেবেছিলাম এই খারাপ হওয়ার অভিনয় করার চক্করে আমি না আবার আমার বউকে হারিয়ে ফেলি।”

“আমি যখন তোমার হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিলাম তখনই শপথ করেছিলাম যে মৃত্যুর আগে অব্দি আমি এই হাত ছাড়ব না। তুমি যদি সত্যি বদলেও যেতে তবুও আমি তোমায় ছেড়ে যেতাম না সৌভিক।”

সৌভিক শক্ত করে অনুরাধাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”এই সুযোগ তুমি কখনো পাবেও না। আমি তোমায় নিজের থেকে দূরে কোথাও যেতে দেবো না। তুমি আমার ছিলে, আমার আছো আর সবসময় আমারই থাকবে।”

সৌভিক ও অনুরাধা খুব খুশি আজ। আজ আবার অনেকদিন পর তারা এত সুন্দর মুহুর্ত উপভোগ করছে।

to be continue…
#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_20(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা বিমান ভ্রমণ করার পর অবশেষে কানাডার মাটিতে পা রাখল প্রভা। এই প্রথমবার উত্তর আমেরিকা মহাদেশের এই দেশটিতে এলো সে। মনে অনেক সংশয় প্রশ্ন নিয়েই দেশটিতে এলো সে। প্রভা প্লেন থেকে নেমেই তাকালো চারিদিকে। যেদিকে চোখ যায় সাদা চামড়ার মানুষদের ভীড়। প্রভা মূলত এসেছে কানাডার রাজধানী অটোয়াতে। অটোয়ার ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে ল্যান্ড করেছে সে। অটোয়া শহরটি কানাডার অন্টারিও প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে কুইবেক প্রদেশের সাথে সীমানাতে, গাতিনো নদী, রিদো নদী ও অটোয়া নদী তিনটির সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। অটোয়া নদী অন্টারিও ও কেবেক প্রদেশের মধ্যে প্রাকৃতিক সীমান্ত গঠন করেছে। শহর থেকে অটোয়া নদীর অপর পাড়ে কেবেক প্রদেশ অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে অটোয়া দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম মহানগর এবং অন্টারিও প্রদেশের ২য় বৃহত্তম শহর। মহানগর এলাকাসহ এর লোকসংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ।

বিমানবন্দর থেকে নেমেই প্রভা সৌভিকের দেওয়া চিঠিটা খোলে। এখানেই তাকে কোথায় যেতে হবে সেই ঠিকানা দেওয়া আছে। সৌভিক আসার সময় প্রভাকে এদেশের মূদ্রাও দিয়ে দিয়েছে যাতে এখানে চলতে ফিরতে কোন অসুবিধাও না হয়। এসবের কারণেই প্রভার ধারণা তার এখানে আসা নিয়ে অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছে সৌভিক। কিন্তু সে তো একা এসব করেনি। নিশ্চয়ই কেউ সৌভিককে সহায়তা করেছে এবং সে কানাডারই কেউ। কিন্তু লোকটা কে? প্রভাকে এখন তাকে খুঁজে বের করতেই হবে।

প্রভা বিমানবন্দরের বাইরে এসে ট্রাক্সির জন্য ওয়েট করে। কানাডায় মূলর ট্যাক্সিই প্রধান যান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিওবা এখানকার রাস্তায় প্রাইভেট কারই বেশি দেখা যায় তবে বাংলাদেশের মতো রিক্সার চল সেখানে নেই।

প্রভা একজন ট্রাক্সি চালকের সাথে কথা বলতে যায়। কিন্তু তার পূর্বেই অন্য একজন ট্রাক্সিচালক তার সামনে এসে বলে,”Bonjour”

এরপর আরো কিছু বলে যা প্রভার বোধগম্য নয়। প্রভা বুঝতে পারে লোকটি ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলছে। কিরগিজস্তানে থাকাকালীন একজন ফ্রেঞ্চ ফ্রেন্ড ছিল প্রভার। তার কাছ থেকে টুকটাক ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখেছে তাই সে জানে Bonjour মানে হলো হ্যালো। তবে সবসময় তার সাথে ইংরেজিতে কথা বলায় ফ্রেঞ্চ ভাষা তেমন বোঝে না প্রভা। এদিকে অটোয়া কানাডার বৃহত্তম ফরাসি ভাষাভাষী শহরগুলির একটি; এখানকার অর্ধেকেরও বেশি অধিবাসী ফরাসি ভাষাতে কথা বলেন। অটোয়া শহরে বেশ কিছু শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। এদের মধ্যে জাতীয় শিল্পকলা কেন্দ্র ও কানাডার জাতীয় চিত্রশালা উল্লেখযোগ্য।

প্রভা লোকটিকে বলে যে সে ফ্রেঞ্চ বুঝতে পারে না৷ তখন লোকটি প্রভাকে ইংরেজিতে বলে তার সাথে যেতে। হাসপাতাল থেকেই নাকি তাকে পাঠানো হয়েছে। প্রভা হতবাক হয়ে যায়। সে যে আজ এখানে আসবে সেটা হাসপাতালের লোক কিভাবে জানল? তাহলে কি প্রভার আড়ালে অনেক কিছুই ঘটেছে?

প্রভা আর ভাবল না কিছু। চুপচাপ ট্যক্সির মধ্যে উঠে পড়লো সে৷ এরপর অপেক্ষা করতে লাগল গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য সেখানে গিয়েই হয়তো সে এই ব্যাপারে জানতে পারবে।

রাস্তায় যেতে যেতে প্রভার চোখে পড়ে অসংখ্য ম্যাপল ট্রি। অবশ্য কানাডায় ম্যাপল ট্রি থাকা অস্বাভাবিক নয়। কানাডাকে তো ম্যাপল পাতার দেশই বলে।

প্রভা কিছু সময় জার্নি করল। অতঃপর পৌঁছে গেল অটোয়া ম্যানিয়ালিন হসপিটালের সামনে। এই হসপিটাল শহরের অন্যতম প্রসিদ্ধ হসপিটাল। এখানেই কাজের সুযোগ পেয়েছে সে।

প্রভা গাড়ি থেকে নামলো। এমন সময় একজন লোক এগিয়ে এসে প্রভাকে স্বাগতম জানালো। প্রভাকে যেই বিষয়টা অবাক করল সেটা হলো লোকটা বাঙালি এবং তিনি বাংলাতেই কথা বলছেন। প্রভাকে নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন,”হ্যালো আমি অভিষেক চক্রবর্তী। আমি মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে এখানে এসেছি। আমিও এই হসপিটালের একজন ডাক্তার। শুনলান আজ এখানে নতুন একজন বাঙালি ডাক্তার আসছেন। তাই আমি স্বাগত জানানোর জন্য চলে এলাম।”

প্রভা ভদ্রতা সূচক হাসল। অতঃপর অভিষেক চক্রবর্তীকে বলল,”আপনাকে ধন্যবাদ।”

“ধন্যবাদ জানানোর প্রয়োজন নেই। বিদেশে বাঙালিই তো বাঙালিকে দেখবে তাইনা? আপনি আসুন আমার সাথে আসুন। আমি আপনাকে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি।”

লোকটি প্রভাকে নিজের সাথে করে নিয়ে যায়। যাওয়ার পথে অনেক গল্পও করে এখানকার সম্পর্কে। তিনি কানাডার আবহাওয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন,”বর্তমানে কিন্তু কানাডায় monsoon মানে বর্ষাকাল চলছে। যখন তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। তাই নিজের সাথে ছাতা রাখবে সবসময়।”

প্রভা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। একটু সামনে এগোতেই হঠাৎ করে অভিষেক চক্রবর্তী কাউকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। প্রভাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,”প্রভা ইনি হলেন সানা প্রিস্ট, এই হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর।”

প্রভা সানার সাথে পরিচয় করে নেয়। সানা মূলত বছর ৪০ এর একজন স্বপ্নবাজ মহিলা। যিনি খুব কম বয়সেই অনেক সফলতা অর্জন করেছেন। প্রভাকে দেখে তিনি অভিবাদন জানান।প্রভাকে এখানে আসার জন্য ওয়েলকামও করেন। সবার এমন ব্যবহারে প্রভা আপ্লুত হয় খুব। সানা প্রভার সাথে কথা বলা শেষ করে সামনে এগোয়। তারপর কাউকে একটা ম্যাসেজ করে বলে,”ব্রো, সে এসে গেছে কানাডায়। তুমি তাকে দেখতে আসবে না?”

বিপরীত দিক থেকে উত্তর আসে,”সে যখন এসে গেছে তখন তার টানে তো আমায় যেতেই হবে।”

এদিকে ডাক্তার অভিষেক চক্রবর্তী প্রভাকে হাসপাতালের আশেপাশটা ঘুরিয়ে দেখায়। অত:পর বলেন,”আপনার তো কাল থেকে ডিউটি। তাই আজ আমি আপনাকে হাসপাতালটা ভালো ভাবে দেখিয়ে দিলাম যাতে কোন সমস্যা না হয়। এছাড়া যদি কোন সমস্যায় পড়েন তাহলে আমায় জানাবেন।”

প্রভা তখন বলে,”আসলে আমি তো এখানে আজই প্রথম এলাম তাই এখানে কোথায় থাকব সেটা এখনো ঠিক করিনি।”

অভিষেক চক্রবর্তী হেসে বলেন,”এটা নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না। এই হসপিটালের সকল বিদেশী কর্মীদের জন্য এখান থেকেই রুমের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। পাশের একটি ফ্ল্যাটেই আপনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর শুধু তাই নয়, তিন বেলার খাবারও হাসপাতাল থেকেই দেওয়া হয়। আপনি আমার সাথে আসুন আমি আপনাকে আপনার রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।”

প্রভা অভিষেক চক্রবর্তীর সাথে যেতে থাকে। লোকটাকে তার কাছে অনেক ভালো মনে হয়। বিদেশের মাটিতে এমন নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করার মতো লোকের খুব অভাব। প্রভা তো ভেবেছিল এখানে এসে না জানি কোন অকূল পাথারে পড়বে। কিন্তু এখন তো সে দেখছে সব সমস্যারই সমাধান হয়ে যাচ্ছে।

~~~~
তখন বিকেল বেলা। কানাডার আবহাওয়া বর্তমানে বেশ উষ্ণ। প্রভা এসেছে থেকে ফ্ল্যাটের মধ্যেই অবস্থান করছে। বর্তমানে তার কেমন জানি দমবন্ধ লাগছে সবকিছু। তাই সে একটু বাইরে ঘোরার জন্য বের হলো। এখানে আসার পর অভিষেক চক্রবর্তী তাকে এখানকার সিম কার্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাই প্রভা নিজের ফোনটাও সাথে নিয়ে নিল যাতে করে কোন সমস্যায় পড়লে অভিষেক চক্রবর্তীকে কল করতে পারে। লোকটা প্রভাকে নিজের নাম্বারও দিয়েছে। প্রভার এখন কেমন জানি মনে হচ্ছে সত্যিই কি মানুষ এমন নিঃস্বার্থ হয়? নাকি তিনি কারো কথা মেনে এসব করছেন? এই প্রসঙ্গে সৌভিকের বলা কথাগুলো প্রভার মনে পড়ে যায়। সৌভিক তো বলেই ছিল কানাডায় সব ব্যবস্থা করাই আছে। কিন্তু কে করল এসব?

এই ভাবনা নিয়েই প্রভা বাড়ি থেকে বের হলো। অত:পর রাস্তায় বেরিয়ে উদ্দ্যেশহীন ভাবে হাটতে লাগল। কিছুদূর গিয়ে প্রভা অবলোকন করল আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। হয়তো একটু পরই বৃষ্টি শুরু হবে। প্রভার ভাবনার মাঝেই টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হলো। প্রভা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। বেশ অনেকটা দূরই সে চলে এসেছে। এখানে কোন ট্যাক্সিও পাওয়া যাবে না। প্রভার আফসোস হলো খুব। অভিষেক চক্রবর্তী তো তাকে সতর্ক করেই ছিল বৃষ্টির ব্যাপারে। সেই আমলে নেয়নি। এখন হয়তো এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে।

প্রভা একটা ল্যাম্পপোস্টের সামনে এসে দাঁড়ালো। বৃষ্টির গতি বাড়ছে। প্রভা ভিজে যাচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ পিছন থেকে কেউ তার মাথায় ছাতা ধরে। প্রভা হতবাক হয়ে যায়। আজ থেকে ১২ বছর আগে রায়ান তার মাথায় যেভাবে ছাতা ধরেছিল ঠিকই একই ভাবে! এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। কিন্তু কে এই ব্যক্তি যে তার মাথায় ছাতা ধরল। কেন জানি প্রভার নাকে অনেকদিন পর চেনা একটা ঘ্রাণ ভেসে এলো। অতীতের কথা মনে করে সে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,”রায়ান! তুমি ফিরে এসেছ!”

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-১৭+১৮

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_17(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা নিজের কেবিনে বসে রোগী দেখছিল। এমন সময় হঠাৎ করে আবির হন্তদন্ত করে এসে তার কেবিনে প্রবেশ করল৷ আবিরকে দেখে প্রভা ভড়কে গেল। সুধালো,”আপনি হঠাৎ এখানে? আপনাকে তো আমি বলেছিলাম যে, আমি ভেবে চিন্তে নিজের সব সিদ্ধান্ত আপনাকে জানাব। আপনার কি একটুও তড় সইছে না?”

আবির হাফাতে হাফাতে বলল,”তুমি আমায় ভুল বুঝছ প্রভা। আমি এমনি এমনি এখানে আসিনি। রুহুল আমিন আঙ্কেল অনেক অসুস্থ। ওনার অবস্থা বেশি ভালো না। ওনাকে এই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছে। উনি তোমাকে দেখতে চাইছেন। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসো।”

রুহুল আমিনের অসুস্থতার কথা শুনে অস্থির হয়ে উঠল প্রভার মন। সে ত্বরিত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”কি হয়েছে আঙ্কেলের?”

“হঠাৎ করেই ওনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখেই ওনাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি।”

প্রভা আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করল না। আবিরকে বলল,”চলুন। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”

আবির আর প্রভা একসাথে রুহুল আমিনের কেবিনের বাইরে এসে উপস্থিত হলো। আবির প্রভাকে বলল,”আমি তো পেশেন্টের বাড়ির লোক তাই আমাকে এখন ওরা যেতে দিচ্ছে না ভেতরে। তুমি তো একজন ডাক্তার। তুমি গিয়ে ওনার সাথে দেখা করো।”

প্রভা তাই করল। কেবিনে প্রবেশ করেই রুহুল আমিনের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারকে সে বলল,”ওনার অবস্থা এখন কেমন?”

“আরে ডা:প্রভা, উনি তো তখন থেকে আপনার কথাই বলছিলেন। ওনার অবস্থা বেশি ভালো না। তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ওনাকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

প্রভা বৃদ্ধ রুহুল আমিনের দিকে তাকালো। লোকটাকে দেখে প্রভার অনেক খারাপ লাগে। গোটা চট্টগ্রামের মানুষ এই লোকটাকে শ্রদ্ধা করে। একজন এমপি হয়েও যে জনগণের সেবা করা যায়, নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সকলের মন জয় করা যায় তার উদাহরণ এই লোকটা। অথচ আজ তার এই কি বেহাল দশা। প্রভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,”আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন আঙ্কেল। আমি এই কামনাই করি।”

বলেই সে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। প্রভাকে বাইরে আসতে দেখে আবির তার নিকটে গিয়ে বলে,”আঙ্কেলের এখন কি অবস্থা? উনি ঠিক আছেন তো?”

“আপনি চিন্তা করবেন না। উনি ঠিক হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।”

আবির প্রভাকে দেখানোর জন্য নাটক শুরু করল। মিছে কান্না করে বলতে লাগল,”ঐ লোকটাই তো এখন আমার একান্ত আপন। উনি ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? ওনার কিছু হয়ে গেলে যে আমি একদম একা হয়ে যাব।”

প্রভা নিশ্চুপ থাকে। আবিরের নিদারুণ অভিনয় আর চোখের জল দেখে তার মনেই হয়না যে সে কত বড় নাটক করছে৷ প্রভার মন একটু হলেও গলে যায় আবিরের প্র‍তি। সে আবিরকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। উনি সবকিছু ঠিক করে দেবেন।”

এটুকু বলেই প্রভা সেখান থেকে বিদায় নেয়। কারণ একটু পর তার একটা অস্ত্রোপচার করতে হবে।

~~~~~~~
অটি থেকে বেরিয়ে সোজা রুহুল আমিনকে দেখতে তার কেবিনের সামনে গিয়ে হাজির হলো প্রভা। বাইরে থেকে সে একটি সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেল। আবির নিজের হাতে রুহুল আমিনের পাশে বসে তার হাত-পা ডলে দিচ্ছে৷ তার জন্য চোখের জলও ফেলছে। এসব দেখে প্রভার মন আবিরের প্রতি আরো কোমল হতে থাকে। প্রভা ভাবে আজ রায়ান বেঁচে থাকত হয়তো সেও এভাবেই নিজের বাবার সেবা করত। আবিরের প্রতি তার এতদিনের ধারণা এখন ভুল মনে হতে থাকে। তার মনে হয়, সত্যি হয়তো আবির অতীতের জন্য অনুতপ্ত। তাই হয়তো সে এখন রুহুল আমিনের সেবা করছে এভাবে। প্রভা কেবিনে প্রবেশ করে। রুহুল আমিনের পাশে গিয়ে বলে,”আপনি এখন ঠিক আছেন আঙ্কেল?”

রুহুল আমিন অসুস্থতার মাঝেও স্মিত হেসে বলেন,”পরিস্থিতি আর আমায় কই ঠিক থাকতে দিচ্ছে মা। যতবার আমার মনে পড়ে আমার ছেলের শেষ ইচ্ছাটা অপূর্ণই থেকে যাবে ততবার আমার বুক কেপে ওঠে। মৃত্যুর পর ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াব কিভাবে?”

প্রভা চুপ হয়ে থাকে। কিছু বলার নেই তার। আবির বলে ওঠে,”আঙ্কেল, কারো ওপর জোর করার অধিকার তো আমাদের নেই। আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না। এতে আপনার শরীর আরো খারাপ হবে।”

প্রভা রুহুল আমিনের পাশে বসে। তার হাতটা ধরে আশ্বাসের সুরে বলে,”আপনি চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। রায়ানের শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থাকবে না। আমি আবিরকে বিয়ে করতে রাজি আছি।”

প্রভার মুখে এই কথা শুনে আবিরের মনে যেন লাড্ডু ফোটে। সে মনে মনে বলে,”অবশেষে প্রভাকেও আমি তোর কাছ থেকে চিরতরে কেড়ে নিতে পেরেছি রায়ান। তোর সবকিছুই এখন আমার।”

রুহুল আমিন প্রভার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি জানি, তুমি রায়ানকে অনেক ভালোবাসো৷ হয়তো সারাজীবনই এমন ভালোবেসে যাবে। তবে তোমার কাছে একটাই অনুরোধ। এই হতভাগা আবিরকে একটু ভালোবাসা দিও। ছেলেটা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল।”

প্রভা এর প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। কারণ তার পক্ষে রায়ান ছাড়া অন্য আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।

~~~~
আবির সেদিনই প্রেস কনফারেন্স ডাকল। প্রেস কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল রুহুল আমিনের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে অবগত করা। কিন্তু আবির মূলত তার আর প্রভার বিয়ের ব্যাপারটাকেই হাইলাইট করেছে। যাতে প্রভা আর এরপর চাইলেও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সহজে পিছিয়ে আসতে না পারে। সব নিউজ চ্যানেলেই এই নিউজটা চর্চিত হয় যে, চট্টগ্রামের এমপি আবির হোসেন বিয়ে করতে চলেছেন ডা:প্রভা আহসান কে।

এইদিকে প্রভা উদাস মনে হাসপাতালের করিডোরে বসে রয়েছে। হঠাৎ করেই ভীষণ মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছে সে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যে মানুষকে কতটা অসহায় করে দিতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ এখন সে নিজেই। প্রভা চোখ বন্ধ করল। এমতাবস্থায় সে শুধু রায়ানকেই দেখল পেল। এমন সময় হঠাৎ কারো ডাকে তার ঘোর ফিরল। একজন নার্স এসে তাকে বলল,”ম্যাম আপনাকে ইমিডিয়েটলি অটিতে যেতে হবে।”

“হুম যাচ্ছি।”

প্রভা উঠে বসে। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের জন্য সে দায়িত্বে অবহেলা কিছুতেই করতে পারে না। তাই সে নিজের মন খারাপ পাশ কাটিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ করেই ডা:খানের কেবিনের সামনে এসে তার মনে হলো ভেতরে যেন কোন ঝামেলা হচ্ছে। ডা: খানই রুহুল আমিনের চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন। প্রভা কৌতুহল বশত সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লো। তখনই ডা:খানের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন নার্স সুমি। তাকে ভীষণ ভীত লাগছিল। সুমি চলে যেতে নিলে প্রভা তাকে দাঁড় করালো। সুমি দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রভা তার কাছে গিয়ে বলল,”ভেতরে কিসের ঝামেলা লেগেছে?”

“কি…কিছু না।”

“সত্যি করে বলো।”

সুমির সাথে প্রভার বেশ ভালো সম্পর্ক। প্রভাকে বেশ সম্মানও করে সুমি। নার্সদের মধ্যে সেই বেশ অন্যরকম, প্র‍তিবাদী স্বভাবের। সুমি এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রভার কাছে এসে বলে,”জানেন ম্যাম, মিস্টার রুহুল আমিনের কেস নিয়ে আমার কিছু সন্দেহ আছে। আমি একজন নার্স হওয়ায় আমারও ওষুধ সম্পর্কে কিছু ধারণা আছে। রুহুল আমিনকে যেসব ওষুধ খাওয়ানো আছে তার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন ভেজাল আছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি ডা:খান প্রেসকিপশনে যেসব ওষুধ লিখে দিচ্ছে তা একজন শ্বাসকষ্ট রোগীর আরোগ্যের জন্য নয় বরং এসব খেলে শ্বাসকষ্ট আরো বাড়তে পারে।”

“এসব কি বলছ তুমি সুমি?”

“আমি একদম ঠিক বলছি।”

“কিন্তু ডাক্তার খান কেন এমন করবেন হঠাৎ? উনি তো এই হাসপাতালের অনেক পুরাতন একজন ডাক্তার।”

“সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে আমি এমপি মহোদয়ের সাথে ওনাকে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুনেছি।”

“আবির!!”

সুমি বলে,”আমি একজন সাধারণ নার্স। এত বড় মানুষদের সাথে লড়তে পারব না। তাই এই বিষয়ে আর কোন সাহায্য করতে বলবেন না প্লিজ।”

বলেই সুমি চলে যায়। প্রভা সুমির বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। তার মনে সন্দেহ দানা বাধে। প্রভা মনে মনে বলে,”তাহলে কি আবিরের এসব ভালোমানুষির পেছনে গভীর কোন চক্রান্ত লুকিয়ে আছে? আমাকে সবটা জানতেই হবে। আমি আঙ্কেলের কোন ক্ষতিই হতে দেবো না।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_18
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা আজ বাড়িতে ফিরল উদাস মনে। তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা। যা তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না মোটেই। আবিরের প্রতি তার সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছে। তাই সব সত্য প্রভাকে বের করতে হবে। আর সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

এদিকে প্রভা বাড়িতে আসতেই দেখল তার বাবা-মায়ের খুশি মন। প্রজ্ঞা বেগম এগিয়ে এসে প্রভার মাথায় হাত রেখে বললেন,”তাহলে শেষমেষ আল্লাহ তোকে সুবুদ্ধি দিলো। এখন তুই বিয়ে করে সংসারী হলেই আমি আর তোর বাবা নিশ্চিত নই।”

প্রভা মলিন হাসল শুধু। আকরাম খান নিজের মেয়ের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”বিয়ের পর দেখবি তুই অনেক সুখী হবি। অতীত আর ফিরে আসবে না তোর জীবনে।”

প্রভা এসব কথায় মনযোগ দিল না। তার এখন আবিরের ব্যাপারে জানতে হবে। আর এই জন্য সে একটা পন্থা বেছে নিলো। প্রভা আবিরের ব্যাপারে ইন্টারনেটে সার্চ করল। এতে অবশ্য তার নামে ভালো ভালো নিউজই সামনে এলো। কোথাও গরীবদেরকে বস্ত্র বিতরণ করছে তো কোন অনাথ আশ্রমে দান খয়রাতি করছে। এসব দেখে প্রভার মনে হলো,”একটা মানুষ কি সত্যিই এত সুন্দর নাটক করতে পারে? সমাজের সামনে এতটাও ভালো সেজে থাকা যায়? এমন একজন মানুষ যখন জনপ্রতিনিধি হয় তখন তো সেই এলাকার মানুষ কিছুতেই সেফ থাকে না। আমাকে এসব ব্যাপারে আরো খোঁজ নিতে হবে।”

হঠাৎ করেই একটা নিউজে প্রভার চোখ আটকে গেল। নিউজে প্রভা দেখল সেখানে লেখা,”ড্রাগ ডিলিং এর কেসে জড়িত হিসেবে সন্দেহ করাচ্ছে হচ্ছে চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য আবির হোসেনকে।”

প্রভা আরো বিস্তারিত নিউজ পড়ল। সেখান থেকেই সে বুঝল কেসটা নিয়ে পড়ে আর কথা হয়নি৷ তার মানে এই কেসটাকে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।হয়ত নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই এটা করেছে আবির। প্রভা নিউজটার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলল,”যতই মুখোশ পড়ে থাকুন না কেন মিস্টার আবির হোসেন, আপনি যে কেমন মানুষ সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারছি। এবার শুধু আপনার বিরুদ্ধ কোন প্রমাণ চাই আমার।”

~~~~~
পর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রভা দেখল তার মা-বাবাকে ভীষণ ব্যস্ত লাগল। প্রভা এসব দেখে জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে? তোমাদের এমন দেখাচ্ছে কেন?”

আকরাম খান হেসে বলেন,”আমাদের মেয়ের এনগেজমেন্ট বলে কথা। আমাদের তো একটু ব্যস্ত হতেই হবে। কত গেস্টদের দাওয়াত দিতে হবে।”

প্রভা হতবাক হয়ে বলে,”এনগেজমেন্ট মানে?”

“মিস্টার রুহুল আমিন তো আজ কল করেছিল। উনিই তো বললেন আজ তোর আর আবিরের এনগেজমেন্ট করাতে চান।”

“এভাবে হঠাৎ করে…”

“ওনারা নেতা-ফেতা মানুষ। অনেক ব্যস্ত থাকেন। এখন হয়তো ফ্রি আছেন তাই তাড়াহুড়ো করে এনগেজমেন্ট টা করিয়ে দিতে চাইছেন।”

প্রভা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল। না আবিরের মতো একজন মানু্ষকে সে কিছুতেই নিজের জীবনে জড়াবে না। তাই তাকে যা করতে হবে দ্রুততার সাথেই করতে হবে। এই ভাবনা নিয়েই সে বাড়ি থেকে বের হতে নিলো। এমন সময় প্রজ্ঞা বেগম তার পথ আটকে বললো,”তুই এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস? আজ তোর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।”

“আমাকে যেতেই হবে মা। আমার খুব জরুরি কাজ আছে।”

এই বলে আর কোন কথা শুনেই প্রভা চলে গেল। প্রজ্ঞা বেগম হতাশ হয়ে চেয়ে রইলেন শুধু।

এদিকে প্রভা রুহুল আমিনের সাথে দেখা করতে এসেছে। আজ সকালেই রুহুল আমিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছেন। আবির তখন বাড়িতে ছিল না। প্রভাকে দেখেই রুহুল আমিন বললেন,”প্রভা মা, তুমি এসেছ।”

“হ্যাঁ, আঙ্কেল। শুনলাম আপনি নাকি আজ আমাদের এনগেজমেন্ট করাবেন বলে ভেবেছেন।”

“ঠিক শুনেছ। আসলে আমার শারীরিক অবস্থা তো বুঝতেই পারছ। আর ক’দিন বাঁচি না মরি তার তো কোন ঠিক নেই। এই জন্য আমি চাচ্ছি আমার জীবনদ্দশাতেই তোমাদের বিয়েটা হোক। এখন আপাতত এনগেজমেন্ট টা করাই। এরপর সঠিক সময়ে বিয়ের ব্যবস্থাও করাব খুব শীঘ্রই।”

“মিস্টার আবির কি বাড়িতে আছেন?”

“না, ও কিছু জরুরি কাজে বাইরে গেছে।”

প্রভা মনে মনে বলে,”এটাই সঠিক সুযোগ। আমাকে এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে হবে।”

প্রভা রুহুল আমিনকে বলে,”আঙ্কেল আপনার শ্বাসকষ্টের ওষুধটা একটু দেখতে পারি?”

রুহুল আমিন প্রভাকে ইশারা করে দেখাল। প্রভা ওষুধটা হাতে নিয়ে দেখল। আর বিড়বিড় করে বলল,”ওষুধটা তো ঠিকই আছে। তাহলে…আমায় এই ওষুধ পরীক্ষা করে দেখাতে হবে যে এখানে কোন ক্ষতিকর কিছু মেশানো আছে কিনা।”

প্রভা ওষুধের কিছু অংশ সুকৌশলে নিজের সাথে একটা বোতলে ভড়ে নেয়৷ অতঃপর রুহুল আমিনকে বলে,”আঙ্কেল, আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। আমি আসছি। আজ তো আবার দেখা হবেই।”

“আচ্ছা মা, সাবধানে যেও।”

প্রভা ওষুধের স্যাম্পল নিজের সাথে এনেছে৷ এখন তার উদ্দ্যেশ্য এই স্যাম্পল টা ল্যাবে টেস্ট করাতে হবে৷ তারপর যেই রেজাল্ট আসবে সেটা দেখেই সে আবিরের আসল রূপ সবার সামনে আনতে পারবে।

~~~~~
তখন সন্ধ্যাবেলা। আবির ও প্রভার এনগেজমেন্টের আয়োজন তখন করা শেষ। এখন সবাই শুধু প্রভার আসার জন্যই অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রভার আশার কোন কথা নেই। এদিকে রুহুল আমিনও নিজের রুম থেকে বের হন নি এখনো। প্রজ্ঞা বেগম রাগে গজগজ করছেন। নিজের স্বামীকে তিনি বলছেন,”দেখো তোমার মেয়ের কাণ্ড। এদিকে সকল গেস্ট এসে উপস্থিত হয়েছে আর ওনার কোন পাত্তাই নেই।”

আকরাম খান বলেন,”তুমি কোন চিন্তা করো না তো৷ ওর সময় হলে ও ঠিকই চলে আসবে। হয়তো কোন কাজে আটকে পড়েছে।”

আবির এগিয়ে এসে তাদেরকে বলল,”আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি প্রভাকে আনতে ওর হাসপাতালে পৌঁছে যাচ্ছি।”

আবির বেরিয়ে পড়ে। প্রভার হাসপাতালের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রভা তখনই হাসপাতাল থেকে বের হয়। আবির প্রভাকে দেখে বলে,”এসো। আমি তোমাকে নিতে এসেছি।”

প্রভা আবিরের কথা মতো চুপচাপ তার গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়িতে চলার পথে আবির অনেক কথা বলে। প্রভা শুধু হু হা করতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ প্রভার ফোন বেজে ওঠে। সে ফোনটা হাতে নেয়। রিপোর্ট এসে গেছে। প্রভা যা সন্দেহ করেছিল তাই ঠিক৷ রুহুল আমিনের ওষুধে ভেজাল আছে।

প্রভাকে ফোনে ব্যস্ত দেখে আবির বলে,”এত মনযোগ দিয়ে কি দেখছ?”

প্রভা স্বাভাবিক ভাবে বলে,”তেমন কিছু না।”

আবির বাকা হাসে৷ হঠাৎ অন্ধকার একটা স্থানে গাড়ি থামিয়ে বলে,”আমাকে এতটা বোকা ভেবো না প্রভা। তুমি হয়তো জানো না রুহুল আমিনের রুমে আমি সিসিটিভি লাগিয়ে রেখেছি। তাই ওনার রুমে কখন কি হচ্ছে তার সবকিছুই আমি চাক্ষুস দেখতে পাই।”

প্রভা বুঝতে পারল সে যে রুহুল আমিনের রুম থেকে ওষুধের স্যাম্পল টেস্ট করার জন্য নিয়েছে সেটা আবির বুঝতে পেরেছে। তাই সে আর ভনিতা না করেই বলে,”আপনি এত বড় বেঈমান কি করে হতে পারলেন আবির ভাইয়া? যে মানুষটা আপনাকে নিজের ছেলের মতো দেখল আপনি তারই ক্ষতি করতে চাইছেন। আপনার মধ্যে কি একটুও মনুষ্যত্ব নেই?”

“না নেই আমার মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব। আমি যে কতটা অমানুষ হতে পারি সেই সম্পর্কে তোর কোন ধারণা নেই৷ যদি নিজের ভালো চাস তো আমার কথা মেনে নে। সব কথা গোপন রেখে আমায় বিয়ে করে নে। আমি তোকে অনেক সুখী রাখব। একদম রাজরানী করে রাখব।”

“আপনার মতো একজন খারাপ মানুষকে বিয়ে করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবোনা।”

“বুঝতে পেরেছি তুই ভালো কথায় মানবি না। এবার দেখ তোর আমি কি হাল করি।”

বলেই আবির প্রভাকে টেনে গাড়ি থেকে নামাল। তারপর পাশেই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গেল প্রভাকে। তাকে মেঝেতে ফেলে বললো,”ভালো কথার মানুষ তুই না। রাজরানী হতে যখন চাস না তখন আর কি। আজ এখানেই তোকে ভোগ করে মে*রে ফেলে রেখে চলে যাব। কেউ টেরও পাবেনা।”

বলেই আবির প্রভার শাড়ির আঁচল ধরে টানতে থাকে। প্রভা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে থাকে। সাথে চিৎকার করে সাহায্যর জন্য। আবির বলে,”এখানে কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে না। আজ আমি এখানেই তোকে মে&*রে পুতে রাখব।”

বলেই প্রভার শাড়ি টেনে খুলে আবির৷ প্রভার পড়নে তখন শুধু পেডিকোট আর ব্লাউজ। সে নিজের সম্ভ্রম বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। শাড়িটা কোনরকমে তুলে নিজেকে আবৃত করার চেষ্টা।

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-১৫+১৬

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_15(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে আছে। আজ অনেক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সে। এতদিন নিজ সিদ্ধান্তে অটল ছিল যে রায়ানের স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবন কা’টাবে। কিন্তু আজ আবিরের সাথে কথা বলার পর তার মধ্যে অন্যরকম ভাবনা কাজ করছে। রুহুল আমিনের কথাও ভাবাচ্ছে তাকে। লোকটা সত্যি তাকে অনেক ভালোবাসে। প্রভা যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে তখন সে তার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে। এই ফেসবুক ফ্রেন্ডের সাথে তার ২ বছর আগে প্রথম কথা হয় কিরগিজস্তানে থাকাকালীন। লোকটাই প্রথমে ম্যাসেজ দেয়। তিনি নাকি কানাডায় থাকেন। এই লোকটা কে সেটা প্রভা জানে না। কিন্তু লোকটা প্রভার অচেনা হয়েও যেন খুব চেনা হয়ে গেছে। প্রভার সব সমস্যা লোকটার সাথে শেয়ার করে সে। যদিও রায়ানের কথা কখনো বলে নি। কারণ এই কথা সে কারো সাথে সহজে শেয়ার করতে চায়না।

আজও লোকটাকে ম্যাসেজ দিল কিন্তু লোকটা এখন অফলাইনে৷ তাই প্রভা তার অনলাইনে আসার জন্য অপেক্ষা করল। এমন সময় হঠাৎ করে কেউ তার দরজায় নক করে বলল,”ভেতরে আসবো?”

প্রভা চোখ তুলে তাকিয়ে অনুরাধাকে দেখল। অতঃপর বলল,”অনু তুই! আয় ভেতরে আয়।”

অনুরাধা ভিতরে আসল। মেয়েটা আগে অনেক চিকন ছিল কিন্তু বিয়ের পর কেমন যেন মুটিয়ে গেছে। অনুরাধা হাফাতে হাফাতে প্রভাকে বলল,”তুই কি ডিশিসন নিলি প্রভা? এদেশেই থেকে আবির ভাইয়াকে বিয়ে করবি নাকি কানাডায় যাবি?”

“একটু আগেও যদি তুই আমাকে প্রশ্নটা করতি তাহলে আমি নিঃসংকোচে উত্তর দিতাম যে আমি কানাডায় যাব। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। এখন আমি কনফিউশনে আছি।”

অনুরাধা বলল,”আমি আবির ভাইয়ার থেকে সবই শুনেছি। আমি এখন তোকে কিছু কথা বলব, তুই একটু চিন্তা করে দেখিস।”

“হ্যাঁ, বল।”

” তুই তো কলেজ লাইফে প্রথমে আবির ভাইয়াকেই পছন্দ করেছিলি তাইনা?”

“এসব তো পুরোনো কথা অনু। এখন আবার কেন নতুন করে এগুলো বলছিস?”

“বলছি তার কারণ আছে। আচ্ছা তুই নিজেই ভেবে দেখ, আবির ভাইয়ার প্রতি কোন ফিলিংস ছিল কিন্তু এরপরও তুই রায়ান ভাইয়াকে ভালোবাসতে পেরেছিস। কি তাইনা?”

“তুই তো সবটাই জানিস যে, আমার সাথে কি কি হয়েছিল। সব জেনেও তুই এই কথা বলবি? আবির ভাইয়ার তো আমার প্রতি কোন ফিলিংস ছিল না। উনি আমার সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেছিলেন। কিন্তু রায়ান সে তো আমায় ভালোবাসত, আমায় কখনো অসম্মান করেনি, সবসময় আমার কেয়ার করত ও আমায় বুঝত। ওর এসব গুণের জন্যই তো আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আর আবির ভাইয়ার প্র‍তি যা ছিল তা শুধুই ভালো লাগা। তাছাড়া রায়ান আমাকে যতোটা ভালোবাসত ততোটা ভালো আমার আর কেউ কোনদিন বাসতে পারবে না।”

অনুরাধা প্রভার কাধে হাত রেখে বলে,”এবার আমি যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোন। তুই আসল সত্য জানিস না। ইনফ্যাক্ট আমি নিজেও জানতাম না। একদিন সৌভিক আর আবির ভাইয়ার কথোপকথন থেকেই আমি সব জানতে পারি। আবির ভাইয়াও তোকে সেই সময় ভালোবাসত। কিন্তু ও কোনভাবে জেনে গিয়েছিল যে রায়ান তোকে ভালোবাসে। তাই নিঃস্বার্থ ভাবে সরে গিয়েছিল তোদের মাঝ থেকে।”

প্রভা বাকা হেসে বলে,”বাহ, কি নিদারুণ নিঃস্বার্থতা দেখিয়েছেন উনি। এইজন্যই তো রায়ান আর আমার মাঝে আবার ফিরে এসেছিলেন তাইনা?”

“প্রভা তুই বুঝিস না কেন? মানুষ তো এমনই। নিজের আবেগ কি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া সেই সময় উনি তো টিন এজার ছিলেন। আবেগ টা একটু বেশিই ছিল। কিন্তু তোর প্রতি ওনার ভালোবাসাটা তো মিথ্যা না। এটা ঠিক যে রায়ান ভাইয়া তোকে ভালোবাসত কিন্তু তার মানে তো এই না যে আর কেউ তোকে ভালোবাসতে পারবে না। তুই তো আর কাউকে সেই সুযোগই দিতে চাসনা।”

“না,চাইনা আমি।”

“তোকে একটা কথা আমি বলে দিচ্ছি, তুই অনেক বড় ভুল করেছিস। তোর অনেক আগেই মুভ অন করা উচিৎ ছিল। ভাগ্য কিন্তু কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। রায়ান ভাই তোর ভাগ্যে ছিল না তাই ও মরেছে। কিন্তু তাই বলে এই না যে তোকে আজীবন একা থাকতে হবে। তুই আবির ভাইয়াকে বিয়ে কর। উনি তোকে অনেক সুখী রাখবে।”

প্রভা হালকা হেসে বলে,”তুই আগেও এভাবে আমাকে আবিরের দিকে ঠেলে দিয়েছিলি ১২ বছর আগে। আজ আবারও তুই আগের কাজটাই করছি। তবে এখন আমি আর আগের মতো বোকা নই তাই আমি নিজের মনের কথা শুনব।”

“আমি সেই সময়ও তোর ভালো চাইতাম আর আজও তোর ভালো ভাই প্রভা। তাই আমি যা বলছি তোর ভালোর জন্যই বলছি। তাছাড়া এই বিয়েতে শুধু তোর একার ভালো না। রুহুল আমিন আঙ্কেল, আবির ভাইয়া, তোর বাবা-মা সবার ভালো লুকিয়ে আছে এর মাঝে। তুই একটু ভেবে দেখ তুই তোর মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তোর কথা ভেবে তো আংকেল আন্টিও ডিপ্রেশনে থাকে। তাই তুই যা করবি ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিস।”

এটা বলে অনুরাধা উঠে বসে অতঃপর প্রভার হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে বলে,”এই বিয়েতে মত দিয়ে দে। দেখবি তারপর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে একসময় তুই রায়ান ভাইয়াকে ভুলে আবির ভাইয়ার সাথে সুখে সংসার করতে পারবি। তোর মা-বাবাও সুখী হবে। রুহুল আমিন আংকেলও সুখী হবে আর রায়ান ভাইয়া সেও যেখানে আসে খুশিই হবে। তুই নিজেই ভেবে দেখ না, রায়ান ভাইয়া তো তোকে ভালোবাসত। তোকে অসুখী দেখলে কি সে সুখী হবে? তাই তোর নিজের জন্য না হোক রায়ান ভাইয়ার কথা ভেবে হলেও বিয়েটা কর।”

এই বলে অনুরাধা বেরিয়ে আসে। অনুরাধা চলে আসার পর প্রভা তার বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে।

অনুরাধা বাইরে আসার পর সৌভিক অনুরাধাকে কল করে। অনুরাধা ফোনটা রিসিভ করতেই সৌভিক বলে,”কি হলো? প্রভাকে ম্যানেজ করতে পেরেছ?”

“আমি নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। যতভাবে ইমোশনাল গেইম খেলা যায় খেলেছি। এর থেকে বেশি কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

সৌভিক রাগী গলায় বলে,”কি পারো টা কি তুমি? শোনো, প্রভা যদি এই বিয়েটা না করে তাহলে তোমার আমার সম্পর্কও কি শেষ!”

“সৌভিক!”

“একদম গলা নামিয়ে কথা বলো। তুমি তো সবটাই জানো, বর্তমানে আমার কোন কাজ নেই। বেকার হয়ে বসে আছি। এই সময় আমার টাকার প্রয়োজন যাতে আমি নতুন করে বিজনেস শুরু করতে পারি। আর সেই টাকা আমায় কে দেবে? আবির। কিন্তু এর বিনিময়ে ও কি বেশি কিছু চেয়েছে? না চায়নি শুধু চেয়েছে যাতে তুমি প্রভাকে যে করেই হোক এই বিয়েতে রাজি করাও। আর অর্ধেক কাজ তো আবির নিজেই করেছে। তোমার কাজ ছিল শুধু যে ভাবেই হোক ওকে কনভিন্স করা সেটাও করতে পারবা না? তাহলে কেমন বেস্ট ফ্রেন্ড তুমি?”

অনুরাধা এবার পাল্টা প্রশ্ন করে,”তাহলে আবিরই বা তোমার কেমন ফ্রেন্ড? যে তোমায় সাহায্য করার জন্য এমন শর্ত দেয়?”

“মুখ সামলে কথা বলো অনু। এমনি তোমার জন্য আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবার তো তোমায় এখনো মেনে নেয়নি। তোমার জন্য তো কম অশান্তি হয়নি। তার উপর যেই রূপ দেখে তোমার প্রেমে পড়েছিলাম সেই রূপও আর নেই। আর এখন যদি তুমি আমার এইটুকু কাজ করতে না পারো তাহলে তোমার সাথে সম্পর্ক রেখে কি লাভ?”

“তুমি এই কথাটা বলতে পারলে সৌভিক? একবারো আমাদের মেয়েটার কথা ভাবলে না?”

“আমায় এসব বলতে তুমি বাধ্য করেছ। যাইহোক আমি আর কথা বাড়াতে চাই না। রাখছি।”

সৌভিক ফোনটা রেখে দিতেই অনুরাধার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। সময় কি মানুষকে এতটাই বদলে দেয়? ভালোবাসাটা কি এতটাই রং বদলায়? কই রায়ানের প্রতি প্রভার ভালোবাসা তো এতদিন পরেও কমেনি। বরং রায়ানের মৃত্যুর এতগুলো বছর পরেও প্রভা তাকে কতোটা ভালোবাসে। তাহলে অনুরাধার সাথে এমন কেন হলো? সৌভিক কেন এতোটা বদলে গেল? তাহলে কি তার ভালোবাসায় কোন খাদ ছিল.

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_16
#ইয়াসমিন_খন্দকার

গভীর নিস্তব্ধ রাত। প্রভা তখনো জেগে রয়েছে। তার মনে নানানো চিন্তা ঘুরপাক খাওয়ার বদৌলতে ঘুম তাকে বশ করতে পারছে না। হঠাৎ করেই তার ফোনে টুংটাং শব্দে নিস্তব্ধতা কা’টল। প্রভা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল সময় এখন রাত ২ টা। তারমানে কানাডায় এখন সকাল। প্রভার আর বুঝতে বাকি রইল না তাকে ম্যাসেজটা কে দিয়েছে। সে ফোনটা হাতে নিয়েই ম্যাসেজের উত্তর দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সে লিখল,”এতক্ষণে তাহলে আমার ম্যাসেজের উত্তর দেওয়ার সময় হলো আপনার।”

কিছুক্ষণ পর ম্যাসেজের উত্তর আসলো,”আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম৷ ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে আপনার ম্যাসেজেরই উত্তর দিলাম। বলুন কি সমস্যা আপনার?”

“আমি কি শুধু সমস্যায় পড়লেই আপনাকে ম্যাসেজ দেই।”

“সেটা তো আমার থেকে ভালো আপনি নিজেই জানেন।”

প্রভা আর বেশি বাড়তি কথা বলতে চাইছিল না। তাই নিজের সমস্যার কথা খুলে বলল,”আমার ফ্যামিলি থেকে বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমি বিয়েটা করতে চাই না।”

“কেন?”

“আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছা নেই।”

“কোন ভ্যালিড রিজন তো আছেই?”

“আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে তাকে আমার একদম পছন্দ নয়। তাকে ঘিরে আমার অনেক বাজে অতীত রয়েছে। তাকে আমার কাছে অপরাধী মনে হয় কিন্তু আর সবার চোখে সে আমার জন্য পারফেক্ট৷ তবে আমার তাকে ভরসা করতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমি অনেকটা অসহায়।”

“আমি বুঝতে পারছি আপনি খুব কঠিন একটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে এই কঠিন সমস্যার একটা অনেক সহজ সমাধান আছে।”

“কি সমাধান?”

“আপনি বিয়েতে রাজি হয়ে যান।”

“এটা কি করে বলতে পারেন আপনি? সবাই কেন আমাকে এই একটা সমাধানের কথাই বলছে? বিয়ে কি সব সমস্যার সমাধান?”

“আমি সেটা কখন বললাম। আমি তো শুধু আপনাকে বিয়েতে রাজি হতে বলেছি, বিয়েটা করতে তো আর বলি নি। বিয়েতে রাজি হওয়া আর বিয়ে করার মধ্যে তফাৎ আছে।”

প্রভা কিছু একটা মনে করে লিখে,”কিন্তু এই বিয়েতে রাজি হয়ে আমার কি লাভ?”

“আপনিই তো বললেন আপনার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে আপনার কাছে তাকে অপরাধী বলে মনে হয়৷ এখন তার কাছাকাছি গিয়েই তো আপনি তার ব্যাপারে আরো ভালো জানতে পারবেন। এভাবে বিয়েটা ভাঙার একটা ভ্যালিড রিজনও দাড় করাতে পারবেন নিজের ফ্যামিলির কাছে ”

প্রভা হেসে ম্যাসেজ করে,”এইজন্যই আমার আপনাকে এত ভালো লাগে। আমার সব সমস্যার কত সুন্দর সমাধান করে দেন আমি।”

অন্যদিক থেকে আর কোন উত্তর আসে না। প্রভা কিছুক্ষণ রিপ্লাইয়ের জবাব অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়ে। এদিকে তার সমস্যার সমাধানকারী বাকা হেসে বলে,”আমিই যে তোমার জীবনের সব সমস্যার সূত্রপাত।”

~~~~~~~~~~~~~~~~
আবির ও সৌভিক একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আবির নানা প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ একসময় বলল,”অনুরাধা কি কাজটা করতে পারবে বলে তোর মনে হয়?”

“পারবে। বেস্ট ফ্রেন্ড তো। প্রভা একটু হলেও ভুলবে ওর কথায়। তুই চিন্তা করিস না।”

“আচ্ছা। তুই বল তোর কি খবর?”

“কি খবর চাস। কোন কুক্ষণে যে ঐ অনুরাধাকে বিয়ে করেছিলাম। আমার জীবনটা একদম তেজপাতা করে দিলো। আমার ছোট ভাই মা-বাবার পছন্দে বিয়ে করল। শ্বশুর বাড়ি থেকে অনেক যৌতুক পেল। বাবাও তার উপর খুশি হয়ে নিজের সব সম্পত্তি ওর নামেই লিখে দিয়েছে। এদিকে অনুরাধাকে বিয়ে করে আমি সব দিক থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তুই তো জানিসই ওর বাপের বাড়ি থেকে অন্য যায়গায় বিয়ে ঠিক করেছিল। সেই সময় আমার আবেগের বয়স ছিল তাই পালিয়ে এনে বিয়ে করি। পরে যদিওবা ওর পরিবারে বিয়েটা মেনে নেয় কিন্তু যৌতুক আর পাওয়া হলো না। আর আমার পরিবারে তো ওকে মানেই নি। তাও আগে একটু দেখতে শুনতে ভালো ছিল। বাচ্চাটা হওয়ার পর থেকে যা মোটা হয়েছে ওর উপর আমার আর রুচিই আসে না। জানিস আমি কতদিন থেকে ওর সাথে ফিজিক্যালও হই না। ওকে দেখলেই রুচি চলে যায়।”

আবির বাকা হেসে বলে,”আরে এত চিন্তা করিস না। আমার কথা মতো চল দেখবি জীবনে শুধু লাভ আর লাভ। এই মেয়েটাকে দেখ।”

বলেই আবির নিজের ফোন থেকে একটা মেয়ের ছবি বের করে সৌভিককে দেখায়। সৌভিক মেয়েটার ছবির দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”মেয়েটা তো সেই হ*ট।”

“বিছানায় নিতে ইচ্ছা করছে?”

“অবশ্যই। ইশ, আমি কতদিন ধরে এমন কাউকেই খুঁজছিলাম।”

“পেয়ে যাবি শুধু আমার কথা শুনে চল।”

“বল কি করতে হবে?”

“তুই এতদিন নিজের কাজ খুব ভালো ভাবেই করেছিলাম। রুহুল আমিন আঙ্কেলকে তোর জন্যই তো এই বিয়েতে আমি কনভিন্স করতে পেরেছি। এখন তোকে আর বেশি কিছু করতে হবে না। এই ওষুধটা নে এটা রুহুল আমিন আঙ্কেলের খাবারে মিশিয়ে দিবি।”

“এটা কিসের ওষুধ?”

“এটা এমন একটা ওষুধ যেটা খেলে উনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর তখন প্রভাকে এই বিয়েতে মত দিতেই হবে।”

“যদি কেউ টের পেয়ে যায় তখন? না, না আমি এসব কিছু করতে পারবো না।”

“তুই এত ভয় পাস না। আমি আছি তো আমি সব ম্যানেজ করব। তাছাড়া রুহুল আমিন আঙ্কেল তোকে অনেক ভরসা করে। তাই তোকে উনি সন্দেহ করবে না। আর এখন ওনার বাড়ির সবাইকে তো আমিই নিয়ন্ত্রণ করি। তাই তুই বাড়তি চিন্তা করা বন্ধ কর। শুধু নিজের লাভের কথা ভাব। জীবনে ভালো মানুষ হয়ে কোন লাভ পাওয়া যায়না।”

সৌভিক বলে উঠল,”একদম ঠিক বলেছিস তুই। ভালো মানুষ হয়ে আসলেই কোন লাভ নেই। আমি ভালো মানুষ হয়ে কোন লাভ পেয়েছি জীবনে? কত বছর বেকার বসে ছিলাম। তারপর একটা চাকরি পেলাম তো সেখানেও আমায় মিথ্যা চুরির দায়ে বের করে দিল। তখন থেকেই আমি বুঝেছি এ পৃথিবীতে সুখে থাকতে হলে খারাপ পথই বেছে নিতে হবে।”

“একদম ঠিক বুঝেছিস তুই। নিজের সুখের কথা সবার আগে চিন্তা করতে হয়। আমি তো সবসময় তাই ভেবেছি।”

এসব বলেই অতীতে ডুব দেয় আবির। মনে করে তার ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। ছোটবেলায় তার মা-বাবা এক্সিডেন্টে মারা যাবার পর তাকে মামার বাড়িতে থাকতে হয়েছে। মামা-মামীর কত খোটা শুনতে হয়েছে। জীবনে সুখ সে পায়নি, না পেয়েছে কারো ভালোবাসা৷ অন্যদিকে তারই প্রিয় বন্ধু রায়ান কত বড়লোকের ছেলে ছিল। কত সুখী ছিল তার জীবন। এটা নিয়ে আগে থেকেই আবিরের মনে রায়ানের জন্য হিংসা ছিল। পরে যখন জানতে পারে যেই প্রভাকে সে ভালোবাসে তাকে রায়ানও ভালোবাসে তখন নিজের কথা ভেবেই সে সরে গিয়েছিল। কারণ রায়ানের সাথে থাকার জন্য সে অনেক সুবিধা পেত৷ রায়ান প্রায়ই তাকে ভালো রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতো, ভালো শপিং মলে নিয়ে গিয়ে নিজের টাকায় শপিং করাত। রায়ানের মামা বাড়ি থেকে তাকে পড়াশোনার জন্যও তেমন টাকা দিত না৷ রায়ানই আবিরের পড়াশোনার খরচের অনেকাংশ বহন করত। এসবের জন্যই তো সে প্রভার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু একসময় ঠিকই তার মনে চাপা হিংসা ভেসে ওঠে। তাই তো সেদিন সে গিয়েছিল প্রভার কাছে। আবির আরো একটা ঘটনার কথা মনে করে। সেদিন সে ঠিকই দেখেছিল ট্রাকটা তাদের দিকে ধেয়ে আসছিল। এইজন্য সে তো নিজেই সরে আসত সেদিন। তবে রায়ানই তাকে ঠেলে ফেলে দেয়। আবির চাইলেই আরো আগে রায়ানকে সতর্ক করতে পারত। কিন্তু সে সেটা করে নি। আবিরের মনে সেইসময় একটাই চিন্তা ঘুরছিল রায়ান ম**রলেই সে প্রভাকে পাবে। কারণ সেও জানত প্রভা তাকে নয় রায়ানকে ভালোবাসে৷ এইজন্যই তো সেদিন সে রায়ানের মৃত্যু কামনা করেছিল। পরবর্তীতে তার চাওয়াই পূরণ হয়৷ এরপর সে যা করেছিল সবই নাটক। রায়ানের মৃত্যুতে সে বিন্দুমাত্র কষ্ট পায়নি। বরং খুশি হয়েছিল। তবুও নিজের স্বার্থের জন্যই নাটক করে। যার দরুণ এই নাটক দিয়েই সে রুহুল আমিনের মন জয় করে রায়ানের যায়গা নিতে পেরেছে। এসবের জন্য সে নিজের উপর গর্বিত।

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-১৩+১৪

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_13
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রায়ানের ডাক শুনে তার দিকে তাকায় আবির ও প্রভা দুজনেই। রায়ান ছুটে এসে আবিরের শার্টের কলার ধরে বলে,”তোর এত বড় সাহস! তুই আমার ভালোবাসার দিকে হাত বাড়াস। তোকে আমি নিজের বন্ধু ভাবতাম আর তুই…”

আবির নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”বন্ধুত্বর কথা ভেবেই আমি এতদিন দূরে ছিলাম। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব নয়। আমি প্রভাকে ভালোবাসি আর ওকে নিজের করেই নেব। তার জন্য যদি আমাকে তোর সাথে ফাইট করতে হয় আমি তাতেও রাজি আছি।”

রায়ান প্রভার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমিও তো আবিরকে পছন্দ করো তাই না? এই জন্যই তো আমাকে কিছু না বলে চলে এলে তখন। কিন্তু শুনে রেখ,আমি রায়ান। ছোটবেলা থেকেই আমি বড্ড জেদি। একবার যেটা চাই সেটা যে করেই হোক আদায় করেই নেই। আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি সাধাসিধা মেয়ে। আমি তোমাকে অন্য কারো হতে দেব না। তুমি শুধু আমার হবে শুধু আমার।”

এটা বলেই সে আবিরকে বলে,”আয় আমার সাথে ফাইট কর। যে জিতবে সেই প্রভাকে পাবে ”

আবিরও বলে,”ঠিক আছে। আমি তৈরি।”

প্রভা তাদের থামানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু তারা প্রভার কোন কথা শুনছিলই না। প্রভা আর কোন উপায় না পেয়ে চিৎকার করে লোক ডাকতে থাকে। কিন্তু তার ডাক শুনে কেউ এগিয়ে আসে না। প্রভা রায়ানকে বলে,”আমার কথা শুনুন। আমার মতামতটা নিন। আমি কোন পণ্য নই যে আমাকে পাওয়ার জন্য আপনারা এমন ফাইট করবেন। আমার মতামতটা শুনুন।”

রায়ান প্রভার ডায়েরি পড়ে ভেবে নিয়েছে সে আবিরকেই বেছে নেবে। তাই সে প্রভার কথা শুনতে চায় না। রায়ান অনবরত আবিরকে মা*রতে থাকে। আবির কিছুতেই রায়ানের সাথে পেরে ওঠে না। রায়ান ঘু’ষি মে’রে তার নাক-মুখ ফা’টিয়ে দেয়। আবির ও রায়ান ফাইট করতে করতে পার্ক সংলগ্ন রোডে চলে যায়। প্রভার ভয় বাড়তে থাকে। রাস্তায় প্রতিনিয়ত গাড়ি ঘোড়া যাতায়াত করছে। যেকোন সময় যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেই প্রভা ছুটে গেল ওদের সরিয়ে আনতে। এরইমধ্যে রায়ান ও আবির মাঝ রাস্তার মধ্যে চলে গেল। বিপরীত দিক থেকে দ্রুতবেগে একটি ট্রাক ছুটে আসতে থাকে। ট্রাকটিকে দেখে নেয় রায়ান। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাক অনেক কাছে চলে আসে। আবির তখনো সেদিকে নজর দেয়নি৷ রায়ান আবিরকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। কিন্তু নিজে ট্রাকের সামনে পড়ে যায়। প্রভা এটা থেকে চিৎকার করে বলে ওঠে,”রায়ান ভাইয়া!”

আবিরও পুরো ঘটনায় বোকে বনে যায়। রায়ান ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দূরে পড়ে যায়। রাস্তা রক্তাক্ত হয়ে যায় রায়ানের লাল রক্তে। প্রভা হতভম্ব। এক মুহুর্তের মধ্যে এসব কি হয়ে গেল! সে দৌড়ে ছুটে যায় রায়ানের দিকে। রায়ান নিভু নিভু চোখে প্রভাকে দেখে। তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। প্রভা রায়ানের পাশে বসে পড়ে। আবিরও ছুটে আসে রায়ানের দিকে। প্রভা রায়ানকে বলল,”এটা কি করলে তুমি?”

রায়ান শ্বাস টেনে বলে,”আমি জানি প্রভা তুমি আবিরকে ভালোবাসো। আবিরের কিছু হয়ে গেলে তুমি যে আমায় ক্ষমা করতে পারতে না। তাই আমি আবিরকে বাঁচিয়ে দিলাম। তোমরা সুখী হয়ো। তোমাদের সুখী দেখলেই আমি শান্তি পাবো৷”

এই বলে সে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি প্রভাকে তোর হাতে তুলে দিলাম। তুই জিতে গেলি বন্ধু। ওর খেয়াল রাখিস।”

এটুকু বলে রায়ান আবারো তাকায় প্রভার দিকে। আর বলে,”তোমাকে আমি সত্যি ভীষণ ভালোবেসেছিলাম প্রভা। তোমার দিকে তাকিয়েই আমি বিদায় নিতে চাই…”

এটুকু বলেই সে চোখ বন্ধ করে নেয়। প্রভা পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলে,”চোখ খুলুন রায়ান। আমি আবিরকে নয় আমি আপনাকে ভালোবাসি। প্লিজ চোখ খুলুন।”

বলে অনবরত কাঁদতে লাগল সে। আবির মূর্তির মতো হয়ে গেছে। ভীষণ অনুশোচনায় ভুগছে ছেলেটা। তার জন্যই সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।

ততক্ষণে রাস্তায় অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। সবাই মিলে রায়ানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।

~~~~~~
রুহুল আমিন ছুটে ছুটে হাসপাতালে আসেন। স্ত্রীকে হারানোর পর তো তার ছেলেই তার একমাত্র আশ্রয়। এখন ছেলেকে হারালে তিনি একা কিভাবে থাকবেন। আসার পথে তিনি নিজের ছেলের আরোগ্য কামনা করতে থাকেন। হাসপাতালে এসেই ডাক্তারের মুখোমুখি হন। প্রশ্ন করেন,”আমার ছেলে..আমার রায়ান এখন কেমন আছে?”

ডাক্তার করুণ স্বরে বলেন,”আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি কিন্তু আপনার ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না।”

রুহুল আমিন পাথরের মতো শক্ত হয়ে যান। একেই নিজের স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি অসহায় হয়ে ছিলেন। তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল তার ছেলে। আর আজ সৃষ্টিকর্তা তার থেকে তার একমাত্র ছেলেকেও কেড়ে নিলেন। রুহুল আমিন হাহাকার শুরু করে দিলেন। বলতে লাগলেন,”কেন আল্লাহ কেন? কেন তুমি আমার সাথে এমন করলে?”

এদিকে প্রভা ও আবির হাসপাতালে এসে বসে আছে। তারা এখনো রায়ানের মৃত্যুর খবর পায়নি। সৌভিক আর অনুরাধাও ততক্ষণে ছুটে এসেছে। অনুরাধা আসতেই তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয় প্রভা। কাঁদতে কাঁদতেই সে বলে,”আমি এটা মানতে পারছি না অনু। আমি এসব কিছুর জন্য দায়ী। আমার জন্যই আজ রায়ান ভাইয়ার এই অবস্থা। ওনার কোন ক্ষতি হয়ে গেলে আমি যে নিজেকে আর কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।”

আবিরও সৌভিককে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। অনুরাধা প্রভাকে শান্তনা দিয়ে বলে,”তুই চিন্তা করিস না। কিছু হবে না রায়ান ভাইয়ার। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

এমন সময় একজন ডাক্তার চলে আসেন। তাকে দেখে প্রভা ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,”রায়ান চৌধুরী কেমন আছে এখন?”

“আপনারা হাসপাতালে আসতে অনেক দেরি করে দিয়েছেন। He is no more.”

প্রভার মাথায় যেন হঠাৎ আকাশ ভেঙে পড়ে। রায়ান আর নেই এই কথাটা তার বিশ্বাসই হতে চায় না। প্রভা কয়েকপা পিছোয়। তারপর কান্নামিশ্রিত স্বরে বলে,”এটা হতে পারে না। রায়ান ভাইয়া এভাবে চলে যেতে পারেন না। উনি তো আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন আমি ওনাকে ভালোবাসি কিনা। আমার উত্তর না নিয়েই উনি এভাবে চলে যাবেন? ডাক্তার আপনি আমায় রায়ানের কাছে নিয়ে চলুন। আমি ওকে বলব যে আমি শুধু ওকে ভালোবাসি৷ অনেক অনেক ভালোবাসি।”

অনুরাধা প্রভাকে সামলে বলে,”প্রভা তুই সামলা নিজেকে। রায়ান ভাইয়া আর নেই।”

“চুপ কর তুই। রায়ান ভাইয়ার কিছু হয়নি৷ উনি আমার থেকে ভালোবাসার কথা জানতে চেয়েছিলেন। আমি এখনো ওনাকে বলতে পারিনি আমি ওনাকে কত ভালোবাসি। উনি এভাবে চলে যেতে পারেন না।”

আবির বলে,”এসব কিছু আমার জন্য হয়েছে। আমার জন্যই রায়ান নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। আমি এই গ্লানি নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকতে পারব না। আমিও নিজেকে শেষ করে দেব।”

বলেই সে ছাদের দিকে দৌড় দেয়৷ উদ্দ্যেশ্য ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেবে। সৌভিকও যায় তার পিছু পিছু। এদিকে প্রভা নিজেকে দূর্বল অনুভব করে। নিজের রক্তভেজা জামা দেখে তার চোখের সামনে দূর্ঘটনার সময়টা ভেসে ওঠে। রায়ানের বলা শেষ কথাগুলো মনে পড়ে। তার দিকে তাকিয়ে রায়ানের শেষ হাসির কথা মনে পড়ে। এর মাঝে সে রায়ানকে কল্পনা করে। রায়ান যেন তার সামনে এসে বলছে,”আমি চলে যাচ্ছি প্রভা। তুমি আবিরকে নিয়ে সুখী হও।”

প্রভা বলে ওঠে,”আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না। আপনাকে ছাড়া আমি সুখী হতে পারব না রায়ান ভাইয়া। আমার সুখ তো আপনার সাথেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। আজীবনের জন্য আমার জীবনটাকে জাহান্নাম করে যাবেন না।”

বলেই সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। রায়ানের কথা ভাবতে থাকে। “আমাকেও নিয়ে যান রায়ান ভাইয়া। আপনাকে ছাড়া একটা জীবন আমি কাঁটাতে পারব না।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_14
#ইয়াসমিন_খন্দকার

বর্তমানে,

প্রভা হাতে একটা কফি মাগ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বাসার বেলকনিতে। কাল সারারাত জেগে সে অতীতের স্মৃতিচারণ করছিল। মনে করছিল রায়ানকে। তার সঙ্গে উপভোগ করা সুন্দর সময়গুলো। সাথে মনে পড়ছিল কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতিও। যা তাকে দুঃখের উপলব্ধি করিয়েছে। প্রভা ভাবতে থাকে রায়ানের মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলো। সেদিন আবির আত্মহ**ত্যার চেষ্টা করলেও সৌভিক তাকে রক্ষা করে। কিন্তু আবিরের মানসিক অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়৷ রুহুল আমিন আবিরের এই অবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়ায়। আবিরের মা-বাবা কেউ বেচে ছিলেন না। সে নিজের মামার বাড়িতে থাকত। রুহুল আমিনও রায়ানকে হারিয়ে একা হয়ে পড়েছিলেন। তাই তিনি আবিরকে দত্তক দেন। এরপর থেকে রায়ানের যায়গাটা আবিরকেই দিয়েছেন। নিজের ছেলের মতোন দেখেছেন আবিরকে। সমাজে সবাই আবিরকেই রুহুল আমিনের ছেলে বলে জানে। এমনকি রুহুল আমিন আবিরকেই তার পরবর্তীতে অত্র এলাকার এমপি করতে চেয়েছিলেন। এইজন্য নিজে না লড়ে বয়সের কথা বলে পিছিয়ে যান। আর নিজের বদলে আবিরকে ভোটে দাড় করান। রুহুল আমিনের এলাকায় অনেক সুনাম ছিল। তার দীর্ঘ শাসনামলে এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছিল এইজন্য সবাই তাকে অনেক শ্রদ্ধা থাকে। যেই কারণে তিনি যখন আবিরকে মনোনিত করেন তখন আবির ব্যাপক জনসমর্থন পায়। যেই কারণে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সে এমপি হয়।

প্রভা এসব ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। রুহুল আমিনের ছেলের যায়গা হয়তো আবির নিতে পেরেছে কিন্তু তার মনে আবির কোন যায়গা দখল করতে পারে না। প্রভা আজও শুধু আর শুধুমাত্র রায়ানকেই ভালোবাসে। রায়ানের মৃত্যুর পর ১২ বছর অতিবাহিত হয়েছে৷ এখনো প্রভার মনে অন্য কেউ রায়ানের যায়গা নিতে পারেনি। রায়ানের মৃত্যুর পর প্রভা অনেক ভেঙে পড়েছিল৷ তবে সে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছিল এইচএসসি পরীক্ষায়। কিন্তু সে সরকারি মেডিকেলে চান্স পায়নি৷ এরপর প্রভা কিরগিজস্তানে যায় এবং সেখানকার মেডিকেলেই অধ্যয়ন করে। সেখান থেকে মেডিকেলের পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই চাকরি নিয়েছিল প্রভা। সে আর চায়নি কখনো দেশে ফিরতে। রায়ানের স্মৃতি যে তাকে কষ্ট দিত। তবে নিজের মা-বাবার আকুল আবেদন সে ফেরাতে পারেনি। তাই একসময় দেশে ফিরতে হয়। কিন্তু দেশে ফেরার পর থেকে তারা যেভাবে বিয়ের জন্য বলছে আবার এখন আবির তাকে বিয়ে করার জন্য তার পেছনে পড়ে আছে এটা প্রভার ভালো লাগছে না। এইজন্য প্রভা আবার একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে আর দেশে থাকবে না। প্রভা কানাডার একটা মেডিকেলে এপ্লাই করেছে। এখন যদি সেখান থেকে ডাক আসে তো সে আবার কানাডায় চলে যাবে।

“ভেতরে আসব?”

নিজের মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় প্রভা। প্রজ্ঞা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, মা আসো। কিছু বলবা?”

“তুই নাকি কানাডায় যেতে চাইছিস?”

“কে বললো তোমায়? অনু?”

“সেটা বড় কথা নয় যে কে বলেছে। তুই কি মনে করেছিস বল তো?”

“আমি এটা করতে বাধ্য হয়েছি। তোমরা যেভাবে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছ তাতে এছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।”

“তুই কেন বুঝতে পারছিস না?”

“আমি সবটাই বুঝতে পারছি। তোমরা আমার সুখের কথা ভেবেই এমন করছ। কিন্তু বিশ্বাস করো এতে আমার দুঃখ আরো বাড়ছে। কেন তোমরা আবার আমার অতীতকে আমাকে মনে করিয়ে দিলে? জানো ঐ আবিরকে দেখলে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনা। আমি জানি আবির রায়ানকে খু** ন করেনি তবু আমার ওকে দেখলে মনে হয় ও রায়ানের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর আমার এই ভাবিনা ভুলও নয়। আর এমনিতেও আমি শুধু আবির জন্য বলছি না, অন্য কাউকেই আমি নিজের জীবনের সাথে জড়াতে পারব না।”

“তাই বলে আজীবন একা থাকবি?”

“৩০ টা বসন্ত তো একাই পার করলাম। বাকি জীবনটাও এভাবে চলে যাবে। তুমি ভেবো না। আমি একা থাকতে পারব।”

“ঠিক আছে। তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর। আমার বা তোর বাবার কথার তো কোন দাম নেই তোর কাছে। তাই আমরাও আর তোকে কিছু বলব না।”

প্রভা বুঝতে পারে তার মায়ের অভিমানটা। তবে সে কিছু বলে না। কখনো কখনো পরিস্থিতি মানুষকে অনেক স্বার্থপর বানিয়ে দেয়। প্রভাকেও হয়তো এভাবেই পরিস্থিতি একদম পরিবর্তন করে দিয়েছে। ১২ বছর আগের প্রভার সাথে বর্তমানের প্রভার তাই যেন কোন মিলও নেই।

~~~~~~
হোস্টেলে মুখোমুখি বসে আছে আবির ও প্রভা৷ মূলত আবিরের ডাকেই প্রভা আজ এখানে এসেছে। আবির প্রভার সাথে শেষবারের মতো দেখা করতে চেয়েছিল আজ। আবির কিছু বলছেনা দেখে প্রভাই বলে,”কি জন্য আমায় ডেকেছিলেন বললেন না তো।”

“তুমি নাকি কানাডা যাচ্ছ?”

“আপনার কাছেও এই খবর চলে গেছে?”

“হ্যাঁ, শুনলাম। দেখো প্রভা তোমাকে আমি একটা কথা জানাতে চাই। তুমি হয়তো রায়ানের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী ভাবো এমনকি আমি নিজেও এই ব্যাপারটা নিয়ে হীন্যমনতায় ভুগি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যদি জানতাম এমন কিছু হবে তাহলে সেদিন রায়ানের সাথে..”

“অতীত ঘেটে তো কোন লাভ নেই তাইনা? এখন এসব বলে আর কিছুই ঠিক হবে না।”

“তুমি অনেক বদলে গেছ প্রভা।”

“প্রত্যেকটা মানুষই সময়ের সাথে বদলায়।”

“এতটা না বদলালেও পারতে।”

“যদি কোন কাজের কথা থাকে তো বলুন আর নাহলে আমায় যেতে দিন।”

“তুমি এই বিয়েটায় রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”

“সম্ভব নয়।”

“আমি এটা নিজের জন্য বলছি না প্রভা। বলছি রুহুল আমিন আঙ্কেলের জন্য। তুমি হয়তো জানো না উনি কতোটা অসুস্থ। ডাক্তার বলেছেন ওনার হাতে আর বেশিদিন সময় নেই। আর উনি যবে থেকে এটা জেনেছেন যে রায়ান মৃত্যুর আগে তোমাকে আর আমাকে সুখী দেখতে চেয়েছিল তখন থেকেই উনি আমাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন নিজের ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য। ইভেন বিশ্বাস করো আমিও শুরুতে এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু ওনার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবেই রাজি হয়েছি।”

“তাহলে আপনি এখন কি চান? আমিও এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাই?”

“তুমি তো রায়ানকে ভালোবাসতে প্রভা৷ তাই রায়ানের শেষ ইচ্ছার দাম তো তোমারও দেওয়া উচিৎ। তাছাড়া রায়ানের বাবার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে তো? একেই তো রায়ানের মৃত্যুর গ্লানি নিয়ে এত গুলো দিন বেঁচে আছ। এরপর যদি আঙ্কেলের কিছু হয় তাহলে তো…”

প্রভা একদম বরফের মতো জমে যায়। আবিরের একটা কথাও অযৌক্তিক নয়। প্রভা এই মুহুর্তে ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আদতে কি করবে সে? প্রভা ভাবল, এখন তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। তাই সে আবিরকে বলল,”আমি ভেবে আপনাকে আমার সিদ্ধান্তটা জানাচ্ছি।”

এটুকু বলেই প্রভা উঠে চলে যায়৷ প্রভা যাওয়ার পর আবির হেসে বলে,”আমি জানি এবার তুমি রাজি হবেই। কারণ আমি তোমার দূর্বল যায়গাটায় আঘাত করেছি। তোমাকে পাওয়ার যুদ্ধে তাহলে আমি জিতেই গেলাম। রায়ান, তুই মরে গিয়ে আমার অনেক উপকার করে দিয়ে গেছিস দোস্ত। তুই মরেছিস জন্য তো আমি তোর যায়গায় স্থান পেয়েছি, রাজপুত্রর মতো জীবন অতিবাহিত করেছি, আজ এমপি হতে পেরেছি আর খুব শীঘ্রই প্রভাকেও পাব। তুই মরে আমার লাভই হয়েছে বল?”

বলেই অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগল আবির।

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-১১+১২

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_11
#ইয়াসমিন_খন্দকার

বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। সময় যেন সবকিছু বদলে দেয়। সময়ের আবর্তনে এখন অনেক কিছুই ঠিক তেমনি বদলে গেছে। সৌভিক অনুরাধার সম্পর্ক যত দিন যায় গভীর হয়েছে। এদিকে প্রভার মনের অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। একসময় আবিরের জন্য তার মনে অনুভূতি ছিল। কিন্তু এখন সেই সব অনুভূতি সরে গেছে রায়ানের দিকে। কারণ প্রভা তার প্রতি রায়ানের কেয়ার, দায়বদ্ধতা এসবে মুগ্ধ গেছে। যদিও সে রায়ানকে তার অনুভূতির কথা জানাতে পারে নি। কিন্তু আজ জানালো নিজের বান্ধবী অনুরাধাকে। সব শুনে তো অনুরাধা অনেক বেশি খুশি হয়ে গেল। প্রভাকে বলল,”তুই অনেক ভালো একজনকে বেছে নিয়েছিস প্রভা। প্রথমদিকে আমার রায়ান ভাইয়া, সৌভিক সবার সম্পর্কে খারাপ ধারণা ছিল। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি ওরা আসলে কত ভালো। তুই চাইলে আমি সৌভিককে বলব রায়ান ভাইকে তোর ব্যাপারে বলতে।”

প্রভা লজ্জা পেয়ে গিয়ে বলে,”তোর এমন করতে হবে না। সময় হলে আমি নিজেই গিয়ে বলব।”

এমন সময় সৌভিক চলে এলো সেখানে। এসেই অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। অনুরাধাও হাসল তাকে দেখে। প্রভা তাদের দেখে চলে যেতে উদ্যত হলো। কারণ ইতিমধ্যেই সে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানে। শুধু প্রভা নয় কলেজের সবাই কমবেশি জানে। ঝগড়া দিয়ে শুরু হওয়া সম্পর্ক একটু বেশিই গভীর হয়। সৌভিক আর অনুরাধা কলেজে এত ক্লোজ থাকে যে তাদের বিষয়টা জানতে সবাইকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। প্রভাকে অবশ্য অনুরাধা নিজেই বলেছিল। প্রিয় বান্ধবী বলে কথা।

প্রভাকে চলে যেতে দেখে অনুরাধা বলে,”কোথায় যাচ্ছিস তুই? থাক না এখানে।”

প্রভা হেসে বললো,”তোরা একটু একান্তে সুন্দর সময় উপভোগ কর। আমি আসছি।”

অনুরাধা লজ্জা পেলো। সৌভিক এসে তার হাত ধরল। অনুরাধা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,”এভাবে হুটহাট হাত ধরো কেন? কেউ দেখলে কি ভাববে?”

“আমি তো সারাজীবনের জন্য এই হাত ধরতে চাই। কে কি ভাবল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।”

বলেই অনুরাধার অনেক কাছে চলে এলো সৌভিক। অনুরাধা বলল,”আরে কি করছ?”

সৌভিক নেশাতুর কন্ঠে বলল,”আমার ঠোঁটে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তোমায় চুমু না খাওয়া পর্যন্ত এই উত্তেজনা কমবে না।”

অনুরাধা সৌভিকের শার্টের কলার ধরে টেনে তাকে কিস করতে থাকে। সৌভিকও তার সাথে তাল মেলায়। একসময় অনুরাধা একটু নিচে নেমে সৌভিকের গলায় কামড় খায়। সৌভিক মৃদু আর্তনাদ করে বলে,”এটা কি করলে?”

অনুরাধা বলল,”লাভ বাইট দিয়ে দিলাম। এটা তোমায় সবসময় আমার কথা মনে করিয়ে দেবে। আর যখন অন্য মেয়েরা তোমার পাশে ঘুরবে তখন তাদের এটা দেখাবে আর বুঝিয়ে দেবে যে তুমি সিঙ্গেল নও তোমার হবু বউ আছে।”

সৌভিক অনুরাধার কাধে হাত রেখে বলল,”ও এই ব্যাপার। তার মানে তুমি জেলাস?”

অনুরাধা রেগে বলল,”ঐ রিয়া নামের মেয়েটা সবসময় তোমার গায়ে পড়ে কেন? ঐ দেখ মেয়েটা এদিকেই আসছে। ওকে গিয়ে এই কামড়ের দাগটা দেখিয়ে বলো তোমার হবু বউ আছে। ও যেন তোমার থেকে দূরে থাকে।”

সৌভিক বলে,”এটা করা কি ঠিক হবে?”

“তোমাকে যেটা বলছি সেটা করো। নাহলে ব্রেকআপ করে দেব।”

সৌভিক আর কোন উপায় খুঁজে পায় না। অনুরাধার কথামতো রিয়ার সামনে যায়। নিজের গলার কামড়ের দাগটা দেখিয়ে বলে,”এই দেখ, আমার হবু বৌ আমার ঘাড়ে লাভ বাইট দিয়েছে। তুমি প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকো। নাহলে আর কোথায় কোথায় লাভ বাইট দেবে সেটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে।”

রিয়া তখন কান্নার সুরে বলে,”ইটস ওকে। আমি অন্য কাউকে খুঁজে নেব।”

বলেই সে চলে যায়। অনুরাধা হেসে বলে,”এভাবেই সব সতীন কাটা দূর করতে হয়।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রভা যখন কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল তখন হঠাৎ তার সামনে একটি গাড়ি এসে থামে প্রভা উৎসুক দৃষ্টিতে গাড়ির দিকে তাকায়। গাড়ি থেকে নেমে আসেন এলাকার এমপি রুহুল আমিন। প্রভা চেনে তাকে। ইনি তো রায়ানের বাবা। প্রভা তাকে দেখে সালাম দিয়ে বলে,”আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুমি প্রভা না?”

“জ্বি, আঙ্কেল। কিছুদিন আগে কলেজের ফাংশনে আপনি এসেছিলেন। তখন রায়ান ভাইয়া আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।”

“হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আসলে আমি রায়ানের জন্যই এখানে এসেছি। রায়ান খুব অসুস্থ সেইজন্য আজ কলেজে আসতে পারেনি। ও তোমাকে দেখতে চাই।”

প্রভা উত্তেজিত হয়ে বলে,”কি হয়েছে রায়ান ভাইয়ার?”

“আরে তেমন কিছু হয়নি। সামান্য জ্বর হয়েছে। কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিল তো।”

প্রভার মনে পড়ে কাল বৃষ্টি হয়েছিল খুব। প্রভা ছাতা আনে নি জন্য রায়ান তাকে নিজের ছাতা দিয়েছিল এবং সে কিছুটা ভিজে গাড়িতে গিয়ে উঠেছিল। এজন্যই বোধহয় তার জ্বর এসেছে। প্রভার খুব খারাপ লাগে রায়ানের জন্য। ছেলেটা তার কথা ভাবতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাই প্রভা আর সময় নষ্ট না করে রুহুল আমিনের সাথে যেতে রাজি হয়।

রুহুল আমিনের সাথে রায়ানদের বাড়িতে যায় প্রভা। পথে যেতে যেতে রুহুল আমিন রায়ানের ব্যাপারে প্রভাকে অনেক কথা বলেন। তিনি বলেন,”জানো রায়ান আমার অনেক আদরের সন্তান। আমার আর আমার স্ত্রীর বিয়ের দীর্ঘ ১২ বছর আমাদের কোন সন্তান হয়নি। তারপর আল্লাহর কাছে অনেক কান্নাকাটি করে আমরা রায়ানকে পাই। ও আমাদের নয়নের মণি ছিল। কিন্তু ওর যখন মাত্র ৪ বছর বয়স তখন ওর মা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। তারপর আমি রায়ানকে একা বড় করি। ও ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। তাই ওকে অনেক আদরে বড় করেছি, গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগতে দেই নি।”

রায়ানদের বাড়িতে এসে তার রুমে যায় প্রভা। রুহুল আমিনই তাকে নিয়ে যায়। তারপর রায়ানকে বলে,”দেখ রায়ান তোমার সাথে দেখা করতে কে এসেছে।”

রায়ান প্রভাকে দেখে অনেক খুশি হয়। প্রভা রায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”আপনি এখন কেমন আছেন?”

রায়ান হেসে বলে,”এতক্ষণ অসুস্থ বোধ করছিলাম কিন্তু তুমি আসার পর নিজেকে অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে।”

প্রভা এমন উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারবে না। কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে বলে,”ওষুধ খেয়েছেন?”

রায়ান হ্যাঁ বোধক ইশারা করে। প্রভা বলে,”চিন্তা করবেন না। আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।”

রায়ান আবারো হেসে বলে,”তুমিই তো আমার মেডিসিন। তোমাকে যখন দেখেছি তখন আমি নিশ্চয়ই সুস্থ হবো।”

রুহুল আমিনের সামনে এমন কথা বলায় প্রভা অনেক অস্বস্তিতে পড়ে। সে মুখ লুকানোর যায়গা খুঁজছিল। রুহুল আমিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে প্রভার কাছে এসে বলে,”আমি কিছু মনে করিনি মা। ও তো অসুস্থ তাই এসব ভুলভাল বকছে।”

তারপর তিনি রায়ানকে বলেন,”তোমার তো ওকে দেখা হয়ে গেছে। তাহলে ওকে আমি ওর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসি। নাহলে ওর পরিবারের লোকজন আবার চিন্তা করবে।”

রায়ান বলে,”হ্যাঁ, ওকে সাবধানে নিয়ে যেও। আর দেখবে ওর যেন কোন অসুবিধা হয় না।”

রুহুল আমিন রায়ানের কানে কানে বলে,”তুই চিন্তা করিস না বেটা৷ তোর বাপ তার বৌমাকে নিরাপদেই বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

রায়ান এবার প্রাণখুলে হাসে যা দেখার মতো ছিল। এরপর সে প্রভাকে বলে,”সাবধানে পৌঁছে যেও। আমি এরপর কলেজে ফিরেই তোমাকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিবো।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_12
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা আজ কলেজে এসেছে অনুরাধার সাথে। দুজনের মনে আজ দু ধরণের চিন্তা। অনুরাধা ভাবছে আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী যার মানে ভালোবাসার দিন। আজকের দিনটা সৌভিকের সাথে কিভাবে উপভোগ করবে সেটাই ভাবছে সে। তার এই ভাবনার মাঝেই আবার পরিবার নিয়েও সমস্যা। পরিবারের লোক ইদানীং সন্দেহ করছে যে অনুরাধা তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছে।

অন্যদিকে, প্রভা ভাবছে সে কি করবে। রায়ান আজ তাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছে। কিন্তু কি সারপ্রাইজ দেবে সেটা প্রভা অনুধাবন কর‍তে পারছে না। প্রভা আর অনুরাধা কলেজে পৌঁছে গেল। আজ ক্লাসে যাওয়ার আগে রায়ানের সাথে দেখা হলো প্রভার। রায়ান প্রভাকে বলল,”ক্লাস শেষে অনুরাধাকে সাথে নিয়ে চলে এসো।”

প্রভার সেদিন ক্লাসে মনই বসলো না। ক্লাস শেষের পর প্রভা অনুরাধার সাথে যেতে লাগল। অনুরাধা প্রভাকে নিয়ে একটি পার্কে উপস্থিত হলো। অনুরাধা গেল সৌভিকের সাথে। আর প্রভা পড়ে রইলো রায়ানের সাথে। রায়ান প্রভাকে বলল,”তুমি আমার সাথে এসো।”

প্রভা রায়ানের সাথে যেতে লাগলো।

~~~~~~~~~~
আবির কলেজে মনমরা হয়ে বসে আছে। তার মন মেজাজ আজ খুব খারাপ। কারণ রায়ান আজ তাকে বলেছে সে আজ প্রভাকে প্রপোজ করবে। যা শুনে আবিরের মনে আজ অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। আবিরের আজ খুব খারাপ লাগছে। সে বুঝতে পারছে প্রভার জন্য তার মনের অনুভূতি গাঢ় হচ্ছে। আবির নিজেই নিজের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”বন্ধুত্বের জন্য প্রেমকে বলিদান দেওয়ার আমার সিদ্ধান্ত বোধহয় ভুল ছিল। আমি এভাবে থাকতে পারছি না। প্রভাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়৷ না যাই হয়ে যাক আমি প্রভাকে এত সহজে হারাতে পারব না। প্রভাকে আমি অন্য কারো হয়ে যেতে দেখতে পারবো না। প্রভা শুধু আমার শুধুই আমার।”

এটা বলেই আবির উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়ালো পার্কের দিকে আর বলতে লাগল,”রায়ান আমার বন্ধু হতে পারে। আমি জানি রায়ান আমার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করতে পারবে। কিন্তু আমি এতটা মহান হতে পারবো না। এতদিন তো মহান হওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু রায়ান কি সত্যিই আমার যায়গায় থাকলে এত মহানুভবতা দেখাতো? ও তো প্রভাকে নিজের করেই নিতো। তাহলে এবার আমি হাল ছাড়বো না। আমি চেষ্টা করবো। আমি ওকে নিজের করে নেব। রায়ানের সাথে কোন প্রতিযোগিতায় তো কোনদিন জিততে পারিনি। রূপের দিক থেকে ও আমার থেকে অনেক সুন্দর, পড়াশোনাতেও আমি ওর ধারের কাছে নেই। কিন্তু প্রভাকে পাওয়ার জন্য আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করব।”

এটা বলেই আবির নিজের পায়ের গতি বাড়ায়।

~~~~
প্রভা ও রায়ান একে অপরের পাশাপাশি হাটছে। কিন্তু দুজনের কেউই কোন কথা বলছে না। হঠাৎ করে রায়ান প্রভার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”প্রভা, এই দেখ এই পার্কে একটা আর্টিফিসিয়াল লেক আছে। এই লেকে নৌকাও আছে। তুমি কি আমার সাথে নৌকাতে চড়তে ইচ্ছুক?”

প্রভা কিছু বললো না৷ সামান্য সময় চুপ থেকে মাথা নাড়ালো। রায়ান নৌকায় উঠে বসলো। তারপর হাত বাড়িয়ে দিলো প্রভার দিকে। প্রভা রায়ানের হাত ধরে নৌকায় বসল। রায়ান হেসে বললো,”এখানে কোন নাবিক নেই৷ নিজেদেরই নৌকা চালাতে হবে৷ আমি আজ তোমার নাবিক হয়ে যাচ্ছি।”

খুশি হলো প্রভা। সামান্য হেসে বললো,”আমিও রাজি আছি আপনার যাত্রী হওয়ার জন্য।”

রায়ান নৌকা চালাতে শুরু করল। দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ বিরাজ করল পিনপিতন নীরবতা। রায়ান মাঝ রাস্তায় গিয়ে প্রভাকে বলল,”তোমার কি ভয় লাগছে?”

প্রভা বলল,”নাহ, ভয় লাগবে কেন? আমি ঠিক আছি।”

“যাক, শুনে একটু স্বস্তি পেলাম। আমাকে ভরসা করো তো?”

“হুম, করি।”

“আজ যেভাবে আমায় ভরসা করে নৌকায় উঠে বসলে এভাবে আমার হাত ধরে সারাটা জীবন পারি দিতে পারবে তো?”

প্রভা কোন উত্তর দিলো না। রায়ান প্রভার থেকে কোন উত্তর না পেয়ে বলে,”জানো, আজকের দিনটা সম্পর্কে? আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী, ভ্যালেন্টাইন্স ডে। আমার কাছে অবশ্য মনে হয় ভালোবাসার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন নেই। ভালোবাসা থাকলে প্রতিটা দিনই ভালোবাসার জন্য পারফেক্ট। তবু আজকের দিনটাকেই আমি বেছে নিলাম।”

এরপর একটু থেমে সে বললো,”আমি তোমার জন্য একটা গান বানিয়েছি, নিজেই সেই গান সুর দিয়েছি। গানটা শুনবে তুমি?”

প্রভা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ-বোধক ইশারা করে। রায়ান তখন তার সাথে আনা গিটারটা হাতে তুলে নিয়ে বাজাতে শুরু করে। অতঃপর গান গাইতে শুরু করে,
“যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় তবে প্রেমিকা কোথায়
আর প্রেমই বা কোথায়?
যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়।
তবে ইশারা কোথায়?
আর আশারা কোথায়?
যদি মিথ্যা মনে হয় সব পুরোনো কথা
তবে চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা
তবে বুঝে নিও চাঁদের আলো কত নিরূপায়।
লা লা লা লা লালা লালা লা
লালা লালা লালা লালা লালা লালা লা।”

গান শেষে রায়ান আবার তাকালো প্রভার দিকে। প্রভার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,”আমি তোমাত ভালোবাসি প্রভা। তুমি কি আমার প্রেমিকা হবে?”

প্রভা হচকচিয়ে যায়। সে এই মুহুর্তটার জন্য তৈরি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সে কেন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। থতমত খেয়ে বলল,”আমি…”

রায়ান বুঝল প্রভা লজ্জা পাচ্ছে, হয়তো অপ্রস্তুত হয়ে উঠেছে সে। প্রভার সময় দরকার। এইজন্য রায়ান প্রভাকে বলল,”আমি তোমায় তাড়াহুড়ো করে কোন ডিশিসন নিতে বলব না প্রভা। আমি তোমায় সময় দিচ্ছি। তুমি নিজে বোঝার চেষ্টা করো আমার প্রতি তোমার এমন কোন অনুভূতি আছে কিনা। নিজেকে সময় দাও। আশা করি তোমার সিদ্ধান্তে আমি বা তুমি কেউই নিরাশ হবো না। আর তোমার উত্তর যদি নাও হয় তবু আমি খুশি মনে তোমার সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেব। এখন বাকিটা তোমার উপর ছেড়ে দিলাম।”

প্রভা চুপ করেই থাকলো। সময় গড়ালো। লেকের অপর প্রান্তে এসে রায়ান প্রভাকে বলল,”আমরা ঘাটে এসেছি।”

প্রভা তড়িঘড়ি করে নামল নৌকা থেকে। রায়ান প্রভাকে বলল,”আমি তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো।”

প্রভা কিছু না বলেই চলে যায়।

আবির দৌড়াতে দৌড়াতে পার্কের মধ্যে চলে এলো। দূর থেকেই সে দেখতে পেল প্রভাকে। দৌড়ে চলে এলো প্রভার কাছে। এসে প্রভাকে বললো,”তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।”

প্রভা আবিরকে দেখে অবাক হলো খুব। বলল,”আবির ভাইয়া আপনি এখানে!”

“হ্যাঁ, আমি। তোমাকে কিছু বলতে চাই।”

~~~~~~~~~
রায়ান নৌকা থেকে ওঠার সময় লক্ষ্য করল প্রভা যাওয়ার সময় ব্যাগ ছেড়ে গেছে। রায়ান ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে বললো,”সাধাসিধা মেয়েটা এখনো সাধাসিধাই রয়ে গেল। ব্যাগটাও এখানে রেখে গেছে। যাই গিয়ে দিয়ে আসি।”

রায়ান উঠতে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করল প্রভার ব্যাগটা থেকে একটা ডায়েরি পড়ে গেল। রায়ান কৌতুহল বশত ডায়েরিটা তুলে নিলো। যদিও সে পড়তে চায়নি তবে ডায়েরিটা খুলে যাওয়ার কারণে তার চোখে কিছু লেখা দৃশ্যমান হলো যাতে তার চোখ আটকে গেল। রায়ানের চোখ আটকে গেল যে প্রভা তার ডায়েরিতে আবিরের নাম লিখেছে। রায়ান ভালো করে পড়ে দেখলো সেখানে লেখা,”আবির ভাইয়ার প্রতি আমার অনুভূতি দিন দিন তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে। আমি বুঝতে পারছি যে আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”

রায়ান হতভম্ব হয়ে গেল। তার ভালোবাসার মানুষটা কিনা তারই ভালো বন্ধুকে ভালোবাসে! রায়ানের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটিটাই সে সরে গেল। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারল না। মেজাজ হারিয়ে সে উঠে দাঁড়ালো। ডায়েরিটা আর পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করল না৷ পড়লে হয়তো জানতে পারত প্রভা এখন আর আবিরকে নয়। সে তাকেই ভালোবাসে। রায়ান উঠে দাঁড়িয়ে রেগে প্রভার সাথে কথা বলার জন্য যেতে লাগল। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সে আবির আর প্রভাকে একসাথে দেখল৷ এতে তার মেজাজ আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। হুংকার দিয়ে বলে উঠল,”আবিররররর!!!”

to be continue…

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৯+১০

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_9
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রায়ানের সাথে একটু দূরে আসে আবির। সে রায়ানকে প্রভার প্রতি তার অনুভূতির কথা বলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়ান তাকে বলল,”জানিস, তোকেও আমার কিছু বলার ছিল।”

“হ্যাঁ, বল।”

” না, আগে তুই বল।”

“আমার কথা পড়ে শুনিস আগে তুই বল।”

রায়ান ভাবল এবার সে আবিরকে সব বলবে। তাই সে বলা শুরু করল,”তুই তো আমাকে স্কুল থেকেই চিনিস আবির। তুই তো এটাও জানিস আমি জন্মগত সিঙ্গেল।”

“সেটা আর বলতে। তোর জন্য তো স্কুলে কত মেয়েই পাগল ছিল। প্রতিদিন কত শত লাভ লেটার পেতি। তাও তুই সিঙ্গেল।”

“এর কারণ আমি স্কুলে নিজের পছন্দ মতো কোন মেয়েকে খুঁজে পাইনি। আমার কাউকে দেখেই পছন্দ হয়নি। এজন্য। তবে কলেজে এসে ব্যাপারটা বদলে গেছে। কলেজে এসে আমি প্রথম দিনই একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছি।”

“কি? সত্যি বলছিস তুই? তাহলে আমাকে এতদিন তার কথা বলিস নি কেন? কে সেই মেয়ে? কি হলো বল?”

“তুই তাকে চিনিস। সে আর কেউ নয় প্রভা।”

রায়ানের মুখে প্রভার নাম শুনে হচকচিয়ে গেল আবির। অনেক বড় ধাক্কা খেল সে। শেষপর্যন্ত কিনা তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু তার পছন্দের মেয়েকেই পছন্দ করল। আবির যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। আবিরের এমন ভাবনার মাঝেই রায়ান বলতে লাগল,”প্রথম দিন দেখাতেই আমি ঐ সাধাসিধা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছি।”

রায়ানের কথা শুনে আবিরের অনেক কষ্ট হচ্ছিল। সে কিছু বলতেও পারছিল না। নিজের বন্ধুর মুখে এই কথা শোনার পর কিভাবে সে বলে যে সেও ঐ একই মেয়েকে পছন্দ করে। আবিরকে চুপ দেখে রায়ান বলে,”কিরে? তুই এমন চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল।”

আবিরের খুব কষ্ট হলেও সে নিজের কষ্ট লুকিয়ে হেসে বলে,”তোদের একসাথে অনেক ভালো মানাবে। আমি তোদের জন্য অনেক খুশি।”

“হ্যাঁ, এখন শুধু প্রভাকে আমার মনের কথা জানানো বাকি।”

“তাড়াতাড়ি জানিয়ে দে। বেশি দেরি করলে সমস্যা হতে পারে।”

“আমিও সেটাই ভাবছিলাম যে তাড়াতাড়ি ওকে নিজের মনের কথা জানিয়ে দেব। যাক গে সেসব কথা। তুই যে আমায় কিছু বলতে চাইছিলি সেটা বলবি না?”

আবির আমতাআমতা করে বলল,”আমার সেরকম জরুরি কিছু বলার ছিল না। আমি বলতে চাইছিলাম যে, অনেকদিন তো আমরা কোথাও ঘুরতে যাইনি তাই চল না আজ কোথাও থেকে গিয়ে ঘুরে আসি।”

রায়ান বলল,”হুম, মন্দ হয়না। চল রায়ানকেও আমাদের সাথে নিয়ে নেই।”

আবির রায়ানের সাথে যেতে লাগল আর মনে মনে বলল,”তোর ভালোবাসার জন্য আমি নিজের ভালোবাসার কোরবানি দিয়ে দিলাম বন্ধু। তুই ভালো থাক, সুখে থাক। আমার কাছে ভালোবাসার থেকে বন্ধুত্বটাই বড়। আমি জানি, আমার যায়গায় থাকলে তুইও এই কাজই কর‍তি। এখন শুধু আমি এটাই চাইব যে তোরা সুখে থাক। আমার দুঃখের বিনিময়ে হলেও তোরা সুখে থাক।”

~~~~~
বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। ক’দিন থেকে প্রভা খেয়াল করছে আবির কেমন যেন তাকে ইগ্নোর করছে। আগে যখন আবিরের সাথে তার দেখা হত তখন আবির হেসে কথা বলত। কিংবা কথা বলা না হলেও তার দিকে তাকিয়ে হেসে চলে যেত। কিন্তু ইদানীং দেখা হলে সে অচেনার মতো ভান করে চলে যায়। এই ব্যাপারটা প্রভাকে অনেক মর্মাহত করেছে। তাই সে এই ব্যাপারে অনুরাধার সাথে কথা বলে। অনুরাধা প্রভাকে বলে,”আমার মনে হয় আবির ভাইয়া কোন কারণে তোর উপর রাগ করেছে। তোর সরাসরি ওনার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা উচিৎ।”

“কিন্তু..”

“কোন কিন্তু না। তুই তো আবির ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাহলে কেন এমন করছিস? তোকে তো আর আমি প্রপোজ করতে বলছিনা। তুই শুধু গিয়ে জানতে চাইবি উনি তোকে কেন এড়িয়ে চলছে। আর এখন তুই কথা না বললে ব্যাপারটা যদি আরো খারাপ হয়ে যায় তাহলে?”

প্রভা অনুরাধার কথায় যুক্তি খুঁজে পায়। তাই সে ঠিক করে নেয় আজ কলেজ ছুটির পর আবিরের সাথে কথা বলবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। আজ কলেজ ছুটির পর প্রভা আবিরের মুখোমুখি হলো। আবিরকে নিজের থেকে একটু দূরে দেখে সে বলল,”ভাইয়া, একটু থামুন। আপনার সাথে আমার কথা আছে।”

আবির দাঁড়িয়ে যায়। প্রভা হাস্যোজ্জ্বল মুখে তার কাছে গেলেও সে খুব রাগী স্বরে বিরক্তির ভঙ্গিমায় প্রভাকে বলে,”যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আমার বেশি সময় নেই।”

“আপনি কি কোন কারণে আমার উপর রাগ করেছেন?”

“কেন আমি তোমার উপর রাগ করতে যাব কেন? কে হও তুমি আমার?”

“না, সেটা না। কিন্তু…”

“শোনো আমার সাথে এসব ন্যাকামো করতে এসো না। তোমাদের মেয়েদের এসব ন্যাকামো আমার সহ্য হয়না। ছেলেরা একটু হেসে কথা বললেই তোমরা অনেক কিছু ভেবে নাও তাইনা? আমার থেকে দূরে থাকবে। তোমাকে আমার একদম সহ্য হয়না। অসহ্য মেয়ে কোথাকার।”

প্রভা ফ্যালফ্যাল করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না আবির কেন তাকে এভাবে অপমান করছে। সে তো এমন কিছু বলে নি। আবির আবারো বলে,”আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? দূর হও আমার চোখের সামনে থেকে। গেট লস্ট।”

প্রভা কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে যায়। প্রভা যাওয়ার পর আবিরেরও অনেক খারাপ লাগে। আবির বলে,”সরি এসবের জন্য। আজকের পর তুমি নিশ্চয়ই আমায় ঘৃণা করবে। আর আমি এটাই চাই।”

প্রভা যখন কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই তার সাথে কারো ধাক্কা লাগে। প্রভা চোখ তুলে তাকাতেই রায়ানকে দেখতে পায়। রায়ান প্রভার চোখে জল দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। উদগ্রীব হয়ে জানতে চায়,”তুমি কাঁদছ কেন সাধাসিধা মেয়ে? কি হয়েছে তোমার?”

প্রভা কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিল। তখন রায়ান প্রভাকে আটকে বলে,”বলে যাও তুমি কাঁদছ কেন? কেউ কি তোমায় কিছু বলেছে? আমাকে শুধু তার নাম বলো। যে তোমার চোখে জল এনেছে তাকে আমি ছাড়বো না।”

“কেউ কিছু বলেনি। আমার পার্সোনাল প্রব্লেম।”

রায়ান প্রভার মন ভালো করার জন্য বলে,”তুমি কি আমার সাথে পার্কে দেখতে যাবে? আমার কাছে দুটো টিকিট আছে।”

“না, আমার ভালো লাগছে না।”

“ভালো লাগছে না জন্যই তো তোমায় নিয়ে যেতে চাইছি। ওখানে গেলে দেখবে মন ভালো হয়ে যাবে।”

প্রভা যেতে না চাইলেও রায়ানের জোরাজুরিতে সে রাজি হয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তারা অনেক আনন্দ করে। অনেক রাইডে চড়ে। রায়ান প্রভাকে তার পছন্দের ফুচকাসহ আরো অনেক খাবার খাওয়ায়। এসবের কারণে প্রভার মন ভালো হয়ে যায়। প্রভাকে খুশি দেখে রায়ানেরও অনেক ভালো লাগে।

রায়ান প্রভাকে জিজ্ঞাসা করে,”এখন তুমি খুশি তো?”

প্রভা হ্যাঁ বললে রায়ানের অনেক ভালো লাগে। তার নিজেকে স্বার্থক মনে হয়। এরপর তারা দুজনে ফিরে যায়। যাওয়ার পথে প্রভার দেখা হয় অনুরাধার সাথে। প্রভা আর রায়ানকে একসাথে দেখে তো অনুরাধা অবাক হয়। রায়ান প্রভাকে অনুরাধার কাছে রেখে চলে যায়। অনুরাধা প্রভাকে বলে,”তুই রায়ান ভাইয়ার সাথে কি করছিস? তোর তো আবির ভাইয়ার সাথে থাকার কথা ছিল।”

“ওনার নাম আর নিবি না আমার সামনে।”

“কেন? কি হয়েছে?”

প্রভা অনুরাধাকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে তো অনুরাধা অনেক রেগে যায়। বলে,”ঐ আবিরের বাচ্চাকে তো আমি গোবর জলে ডুবাবো। তোকে শুধুশুধু এত অপমান করল। আমি তো ওকে ভালো ভেবেছিলাম এখন দেখি ও জাত বজ্জাত। ওর থেকে তো সৌভিক আর রায়ান ভাইয়া অনেক ভালো। আমরাই মানুষ চিনতে ভুল করেছি।”

“আচ্ছা। বাদ দে এসব কথা। আজকের পর থেকে আমি ওনার থেকে দূরে থাকব। ওনার প্রতি সব অনুভূতিও মুছে ফেলার চেষ্টা করব।”

“এটাই ঠিক হবে। আর সামনে তো কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তুই এটায় মন দে। আমি নৃত্য দেব। তুই কিন্তু গান দিবি।”

“গান? আর আমি?”

“হ্যাঁ, নাটক করিস না তো। আমি জানি তুই অনেক ভালো গান জানিস।”

“আচ্ছা, ভেবে দেখব।”

to be continue…

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_10
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রভা আজ একাই কলেজে এসেছে কারণ অনুরাধা তার এক আত্মীয়র বিয়ের জন্য আজ কলেজে আসেনি। প্রভার অনুরাধা ছাড়া আর তেমন কোন বন্ধুবান্ধব না থাকায় সে আজ অনেক চুপচাপ ছিল। কলেজ ছুটির পর প্রভা যখন একা যাচ্ছিল তখন রায়ান তাকে দেখে ফেলে। প্রভাকে একা যেতে দেখে সে এগিয়ে এসে বলে,”কি হয়েছে সাধাসিধা মেয়ে? তুমি একা কেন? আজ তোমার বান্ধবী আসেনি?”

প্রভা সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়,”না, আসে নি।”

“তুমি একা যেতে পারবে তো?”

রায়ানের এমন প্রশ্নে প্রভা অবাক হয়। সে একটু সাধাসিধা হতে পারে কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে সে ছোট বাচ্চা যে সে একা কলেজে যেতে পারবে না। রায়ান প্রভাকে বলে,”তোমার সমস্যা হলে বলতে পারো। আমি তোমাকে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসি।”

প্রভা বলে,”আমি একাই যেতে পারব ভাইয়া। আপনাকে কষ্ট করে আমায় পৌঁছে দিতে হবে না।”

রায়ান আর কিছু বলে না। কিন্তু প্রভার জন্য তার চিন্তা হতে থাকে। তাই সে প্রভা বারণ করার পরও গোপনে প্রভার পিছু নেয়। প্রভা সেটা বুঝতে পারে না। রায়ানের সন্দেহই আজ সত্য হলো। প্রভাকে আজ কিছু শ*য়তান ছেলে ঘিরে ধরল মাঝ রাস্তায়। তারা প্রভাকে টিটকারি মে*রে বলল,”কোথায় যাচ্ছ সুন্দরী?”

প্রভা হঠাৎ করে খুব ভয় পেয়ে যায়। কয়েকটা ছেলে তার কাছে আসতে যাবে তখনই রায়ান সেখানে চলে আসে৷ সবাইকে হুংকার দিয়ে বলে,”যদি কেউ ওকে স্পর্শ করে তাহলে তার হাত আমি ভেঙে ফেলবো।”

প্রভা হতবাক হয়ে যায়। রায়ান সেই সব ছেলেকে মে*রে তাড়িয়ে দেয়। মা**রামারি করতে গিয়ে রায়ানের হাতে আঘাতের সৃষ্টি হয়। প্রভা সেটা লক্ষ্য করে বলে,”ভাইয়া আপনার হাতে ক্ষত তৈরি হয়েছে। আমার ব্যাগে ফাস্ট এইড আছে। আপনি একটু বসুন।”

রায়ান চুপচাপ প্রভার কথা শোনে। প্রভা রায়ানের হাতে ব্যান্ডেজ করার পর রায়ান প্রভাকে রাগী সুরে ধমকে বলে,”এইজন্য আমি তোমার সাথে আসতে চেয়েছিলাম। তুমি তো আমার কথা শুনলে না। দেখলে তো কত বড় বিপদ হতে যাচ্ছিল।”

প্রভা বলল,”তবুও তো আপনি আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন। আপনাকে ধন্যবাদ।”

“আমি আসলে এই পথ দিয়েই যাচ্ছিস। ভাগ্যটা ভালো। নাহলে কি হতো বলো তো?”

“আমিও সেটাই ভাবছি।”

প্রভার কথা শুনে রায়ান বলে,”বাকি পথ আর তোমায় একা যেতে হবে না। চলো আমি তোমায় পৌঁছে দেব।”

“আচ্ছা ভাইয়া।”

~~~~~~~~~~~~~~~~
অনুরাধা আজ এসেছে তার খালাতো বোনের বিয়েতে। সে আজ বেশ খুশি। অনুরাধা তার কিছু কাজিনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। তাদেরই মাঝে একজন বলে ওঠে,”আজ বিয়েতে নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর সুন্দর ছেলে আসবে। আমরা সেখান থেকে নিজেদের বয়ফ্রেন্ড খুঁজে নিতে পারব।”

আরো কিছু কাজিন তাদের তালে তাল মেলায়। কিন্তু অনুরাধা নিশ্চুপ ছিল। আজ হঠাৎ কেন জানি তার সৌভিকের কথা খুব মনে পড়ছে। অনুরাধা নিজেও বুঝতে পারছে না তার সাথে এসব কি হচ্ছে। তার কেন মনে পড়ছে সৌভিকের কথা? এরমাঝে অনুরাধার এক কাজিন তাকে অন্যমনস্ক দেখে বলে,”কিরে অনু? তুই এত চুপচাপ কেন?”

অনুরাধা বলে,”এমনি। আমার আসলে একটু রেস্ট দরকার। আমি রুমে যাচ্ছি।”

রাতের দিকে বিয়ের সময় পাত্রপক্ষ এসে হাজির হয়। অনুরাধা তখনো ঘুমাচ্ছিল। অনুরাধার ছোট বোন অনুস্কা এসে তার ঘুম ভাঙায়। অনুরাধাকে বলে,”দিদি, তুমি এখনো ঘুমাচ্ছ কেন? বর এসে গেছে তো। চলো গিয়ে দেখি।”

অনুরাধা দ্রুত উঠে বসে এবং নিজের বোনের সাথে বর দেখতে যায়। বর দেখতে গিয়ে তো অনুরাধা ভীষণ অবাক হয়। কারণ বরপত্রের মাঝে সৌভিকও ছিল। সৌভিকও অনুরাধাকে দেখে অনেক অবাক হয়। আসলে বর হলো সৌভিকের মামাতো ভাই। দুজনে একে অপরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।

~~~~
অনুরাধার এক কাজিনের কথায় সে অনেক বিরক্ত হচ্ছিল। কারণ সে তাকে বিয়েতে উপস্থিত বিভিন্ন ছেলের রূপের বর্ণনা দিচ্ছে। একটু পরেই সে সৌভিককে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে,”ঐ দেখ ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম। দেখে তো মনে হচ্ছে দারুণ।”

অনুরাধা মুখ বাকিয়ে বলে,”তোর রুচির তারিফ না করে পারছি না। এই ছেলের মধ্যে এমন কি পেলি? কেমন পাঠকাঠির মতো চেহারা।”

“আরে তুই অন্ধ নাকি? ভালো করে দেখ ছেলেটা কি সুদর্শন। আমি তো একেই প্রপোজ করব আজ।”

অনুরাধা খুব জেলাস হতে থাকে তার কাজিনের মুখে এমন কথা শুনে।

অন্যদিকে সৌভিককে তার চাচাতো ভাই অনুস্কাকে দেখিয়ে বলল,”দেখ সৌভিক ঐ মেয়েটা অনেক সুন্দরী না? আমার পাশে খুব মানাবে বল?”

সৌভিক অনুস্কাকে দেখে বলে,”কোথায় সুন্দরী? ঐ মেয়েটা তো একদম ভালো না। দেখেই কেমন ঝগড়ুটে ঝগড়ুটে লাগছে। তোর চয়েজ খুব খারাপ।”

“তুই কচু জানিস? মেয়েটাকে ভালো করে দেখ অনেক মিষ্টি দেখতে। আমার মা তো এমন মিষ্টি একটা মেয়েকেই তার বৌমা হিসেবে দেখতে চায়। তাই আমি ভাবছি মেয়েটার সাথে গিয়ে কথা বলব। ওর ফোন নম্বর নেব। তারপর…”

“এই থাম। বেশি আগানোর দরকার নেই। নাহলে আমি কাকাকে কিন্তু সব বলে দেব।”

“তুই এমন কেন রে?”

“আমি এমনই।”

“দেখবি তোর কপালে ডাইনি বউ জুটবে সৌভিক। যে তোকে জ্বালিয়ে মারবে, তোর রক্ত চুষে খাবে।”

সৌভিক অনুরাধার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,”তথাস্তু।”

বিয়ে সমাপ্ত হওয়ার পর সৌভিক অনুরাধার কাছে যায়। অনুরাধা একাই দাঁড়িয়ে ছিল। সৌভিককে নিজের দিকে আসতে দেখে হঠাৎ করেই অনুরাধার হৃদস্পন্দন আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। সে নিঃশ্বাস নিতে পর্যন্ত ভুলে যায়। সৌভিক অনুরাধার পাশে এসে বলে,”হ্যালো।”

“হ্যাঁ, দাদা কিছু বলবে?”

সৌভিক অনুরাধার মুখে দাদা ডাক শুনে খুব রেগে যায়। বলে,”তুমি আমাকে দাদা বলছ কেন? আমি তোমার কোন জন্মের দাদা?”

“এভাবে বিয়ে বাড়িতে আমি ঝগড়া করতে চাই না। আমার কোন জন্মের দাদা না হলেও তো তুমি আমার এই জন্মের সিনিয়র।”

“আগে তো কখনো সম্মান দেখিয়ে দাদা বলো নি। তাহলে আজ এমন কেন বলছ?”

অনুরাধা কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। সৌভিক অনুরাধাকে বলে,”আমি তো এখানে কিছুই চিনি না। আমাকে একটু ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দেবে?”

অনুরাধা বলে,”আমার সাথে আসুন।”

সৌভিক অনুরাধার পেছন পেছন যায়। একটু দূরে যেতেই সৌভিক হঠাৎ করে নিজের পেছন থেকে একটা গোপাল ফুল বের করে। অনুরাধার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ে। আর বলে,”আমি তোমায় ভালোবাসি অনুরাধা। তোমার এটা শুনে অদ্ভুত লাগতে পারে যে যেই ছেলেটা সবসময় তোমার সাথে ঝগড়া করে সে কিভাবে তোমার প্রেমে পড়ল। বিশ্বাস করো এই প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানি না। কখন কিভাবে তোমার প্রেমে পড়লাম এটা আমি বলতে পারব না। শুধু এটাই বলতে পারব যে আমি তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি। তুমি আমায় ভালোবাসো তো?”

অনুরাধা অনেক দুঃসাহসিক একটা কাজ করে ফেলে। সৌভিকের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে সে সরাসরি সৌভিককে কিস করতে শুরু করে। তাও আবার ঠোঁটে। সৌভিক অনুরাধার এমন আচরণে হতবাক হয়ে যায়। অনুরাধা সৌভিককে বলে,”তোমার ঠোঁটের স্বাদ অনেক মিষ্টি। আমি শুনেছিলাম, যখন আমরা কাউকে কিস পড়ার পর আমাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় তার মানে আমরা তাকে ভালোবাসি। এই জন্যই তোমাকে ভালোবাসি কিনা সেটা পরীক্ষা করে নিলাম। আর এর উত্তর হলো আমিও তোমায় ভালোবাসি।”

সৌভিক অনেক খুশি হয়। সে অনুরাধাকে নিজের অনেক কাছে টেনে নিয়ে কিস করতে থাকে। আর বলে,”আজ থেকে তুমি শুধু আমার।”

to be continue…