Monday, August 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 168



এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-০৬

0

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৬

“আপনি যে মারাত্মক অসভ্য তা ঢের বোঝা যাচ্ছে মাস্টার জান। তবে আমার আঙ্গুল কামড়ে যে কষ্টটা দিচ্ছেন না। তার শাস্তি রুমেই দেবো।”

শেষটুকু ভাতের লোকমা শারফান কে খাওয়ে উঠে গেলাম। এর মাঝে শেরহাজকে বসারত অবস্থায় দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো শারফান। কেননা শাহানা কবেই খাওয়া শেষ করে উঠে পড়েছে। এর মাঝে এই ছেলের উঠার নামগন্ধ নেই। গম্ভীর গলায় সে শেরহাজের মনদৃষ্টি আকর্ষণ করে। শেরহাজ চোখ তুলে নিজ ভাইয়ের দিকে তাকালো। শারফান চোখের দৃষ্টি গাঢ় করে জিজ্ঞেস করে।

“তুই এখনো অব্দি খাওয়া শেষ করলি না কেনো? কি হয়ছে তোর? গতকাল থেকে দেখছি তোর স্বভাবে পরিবর্তন আসছে। এর কারণ কি?”

“আভ ভাইয়া ওমন কিছু না পরীক্ষার টেনশন হচ্ছে। তার উপর ফিও আসছে।”

“ফি কত আসছে?”

“আভ ভাইয়া এবার একটু বেশিই আসছে। কোর্সের ডিমান্ড যত তত বেশি আসছে।”

“হুম আমাকে মেসেজে এমাউন্ড জানিয়ে দিস।”

শেরহাজ খুশি হয়ে গেলো। তৎক্ষণাৎ খাওয়া শেষ করেই হাত ধুয়ে রুমে চলে গেলো। আমি বাসন কোসন গুছানোর সময় শেরহাজ এর কার্যাদি লক্ষ্য করে গেছি। তার অদ্ভুত ব্যবহার আমায়ও ভাবাচ্ছে। চোখের সামনে তুড়ি বাজাতেই চমকে তাকালাম। শারফান দুষ্টু হাসি দিচ্ছে। পরক্ষণে আমার আপাদমস্তক পরখ করে বলেন,

“নিজেকে কারো সামনে খোলামেলা ভাবে প্রদর্শন করবে না। যার কারণে চ’ড় খেতে হয়। নেক্সট টাইম খোলামেলা শাড়ি পরবে না। এভাবে ভদ্র কাপড় পরে ঘোমটা টানাই হলো বউদের আসল অলঙ্কার।”

“লোকটা আমায় আদর করেও বোঝাতে পারতো। চ’ড় মেরে বোঝানোর কি দরকার ছিল যতসব?”

দাঁতে দাঁত চেপে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে সোজা অন্য রুমে চলে গেলাম। শারফান তা দেখে ছুটে আসল। তার আগামন দেখেই ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। কারণ আমার শরীরের মধ্যে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা আমি শারফান কে বুঝতে দিতে চাই না। আজ আমি জানি আমার সঙ্গে কি হতে পারে? সেই ঘৃণ্য স্পর্শের ন্যায় পরপুরুষের ছোঁয়া কোমরে লেগেছে। ঢোক গিলে আলমারি খুলে অন্য থ্রিপিচ নিয়ে ওয়ালরুমের ভেতর ঢুকে পড়লাম।

দেখতে দেখতে আমার আর শারফান এর খুনসুটির আড়ালে দুমাস পার হয়ে গেলো। তার মাঝে শাহানা আর শেরহাজ হোস্টেল ফিরে গিয়ে ছিল। কিন্তু গতদিনই শারফান জানালো শেরহাজ আবারো আসছে। কেনো আসছে তা বলেনি! আমিও ওতটা আমলে নেয়নি। কারণ তার বাড়ি অবশ্য আসা যাওয়া করবে। তবে তার খাবারের আয়োজনে ত্রুটি রাখব না।
শারফানও অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আগের মত জারিফার নাম মুখে নেন না। তবে মাঝেমধ্যে নিজের ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি বুঝি তিনি তখন জারিফাকে স্মরণ করেন। তবে এ যেনো এক স্ত্রী হিসেবে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। কিন্তু আমার জন্য মানুষটা নিজেকে শোধরে নিচ্ছে এই ঢের। তিনি প্রায় এখন আমার পিছু ঘুরঘুর করেন। যিনি কয়েক দিন আগেও জারিফার নামে মুখে ফেনা তুলত আজ তার মুখে এই বউ ডাক ছাড়া অন্য নাম নেই। সেই মানুষটা আজ আমার হাতের রান্না ছাড়া খেতে বসে না, কাপড় ঠিকভাবে গুছিয়ে না‌ রাখলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। তার অভিমান করা মুখশ্রী দেখে যতটা শান্তি পায় ততটা সেই অচেনা স্পর্শের কথা মনের প্রান্তে জোড়ো হতেই ভয়ে শিউরে উঠি। আজও আমি খোঁজ লাগিয়ে বেড়ায়। কে সেই রাতে আমার কোমর স্পর্শ করে ছিল?
যাক সেসব ভাবনা বাদ। আজ নানার সাথে দেখা করতে যাবো। পুরো দুমাস উকিল জোগাড় করে নানার কেস লড়াইয়ের জন্য টাকা জমিয়েছি। কেস জিতার পর সেই টাকার মালিক ঐ উকিল হবেন। নানার বাড়িতে গিয়েই পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবো। আর একমাস হাতে আছে। মোটামুটি পড়াগুলো উদ্ভাসে দুমাস নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে আয়ত্তে নিয়েছি। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত শ্বশুরবাড়ি থেকেই উদ্ভাসে যাবো। হঠাৎ কারো ডাকে ধ্যান ফিরলো। সামনে কুসমা আপাকে দেখে টাকার ব্যাগ হাতে ধরিয়ে নিলাম। কুসমা আপা কে বুঝিয়ে দিলাম কি করতে হবে উকিলের কাছে কি কি প্রমাণ দিতে হবে সবটা টাকার ব্যাগেই দিয়ে দিয়েছি। তিনি মাথা নেড়ে চলে গেলেন। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিকশায় উঠে বসলাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)জানতাম না আমার এই দেখা করার অর্থ আমার স্বামী অন্যভাবে ধরে নেবেন। বাড়ি পৌঁছাতেই সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেলো। ভয়ে আছি শারফান এখন বাড়িতে আছে কিনা ভেবেই! দরজা চাবি দিয়ে গুলার আগেই কেউ দরজা খুলে দিলো। সামনে শাহানা কে দেখে অবাক হলেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু শাহানার চেহারা অনেকটা ঘোলাটে হয়ে আছে। তাকে কোনোরুপ প্রশ্ন করার পূর্বেই সে পাত্তাহীন দরজা খুলা রেখেই চলে গেলো। আমি তার দেখাদেখি দরজা বন্ধ করে শ্বশুর আব্বুর রুমে গেলাম। কিন্তু আশানুরূপ কিছু পেলাম না। যার মাধ্যমে জানতে পারবো বাড়ির লোকগণের নিশ্চুপতার কারণ! হতাশ হয়ে শারফান এর রুমের সামনে এলাম। শ্বশুর আব্বুর রুম এসময় বন্ধ দেখে সন্দেহ দৃঢ় হলো। শারফান এর রুমের দরজা খুলতে এগোতেই আমার হাত ধরে টেনে অন্যরুমে নিয়ে এলো শেরহাজ। আমি হতভম্ব হয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম। শেরহাজ মনে নিলো না এ কাণ্ডটা। তবে আমার হাতে আলতো হাত রেখে বলে,

“ভাবী এমুহুর্তে তুমি ভাইয়ার রুমে যেয়ো না।”

“আগে আপনি আপনার হাত সরান।”

শেরহাজ জোরপূর্বক হেসে সরিয়ে ফেললো। আমি প্রথমে খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করতেই শরীর অবশ হওয়ার উপক্রম। শেরহাজ এর হাতের উপর আঘাতের চিহ্ন। যা এখনো সরেনি। হয়ত ক্ষত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ লাগানো হয়েছিল। তাতে কি আর ক্ষতের দাগ সরানো যায়? এ দেখে আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। তবুও চুপটি করে তার কথা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে রইলাম। শেরহাজ মৃদু গলায় বলে,

“ভাবী ভাইয়াকে মনে হয় চাচী কানপোড়া দিয়েছেন। আজকে রেগেমেগে ভাইয়া ভাংচুর অব্দি করেছে। তোমাকে এখন সামনে পেলে মেরেই ফেলবে ভাইয়া। তার রাগ গলে ঠান্ডা হতে দাও। তারপর যেও।”

শেরহাজ এর কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

“আমি কি করেছি যে আমাকে শাস্তি দেবেন?”

‘দেখেন এটা।’ শেরহাজ তার ফোন থেকে চাচী শ্বাশুড়ি আর শারফান এর কথোপকথন এর দৃশ্য দেখাচ্ছে। সেখানে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে শারফান এর রাগী চেহারা। ঢোক গিললাম স্বামীর হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত রাগের কারণ কি হতে পারে ভেবে? আমতা আমতা করে বললাম।

“এ থেকে প্রমাণ হয় না শারফান আমার উপর রাগ করে আছেন।”

“আহারে ভাবী তুমি এখনো সরল বাচ্চা রয়ে গেলে।”

কথাটা বলেই শেরহাজ আমায় একহাতে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। আমি তার আচরণে গুটিয়ে যাচ্ছি। তার হাত সরিয়ে যথাসম্ভব দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম। শেরহাজ তার ভাবীর অবস্থা বুঝে হাত মুঠো বদ্ধ করে বলে,

“আচ্ছা ভাবী এই নেন প্রমাণ। চাচী ভাইয়াকে এ ছবিগুলো দেখিয়েছেন। যার কারণে ভাইয়া এগুলো দেখেই পুরো বাড়ি জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। আব্বু তো দেখেই তোমার উপর অতিষ্ঠ হয়ে রুমবন্দি হলেন। শাহানা তো তোমায় দুচোখে সহ্য করছে না। আমিই একমাত্র দেবর তোমার যে এই ছবি দেখে বিশ্বাস করলাম না যে তুমি অপরাধী বা অপরাধ করেছো।”

“বাহ্ মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি দেখছি। তবে যাই হোক স্বামী আমার নিশ্চয় তিনি এতটা ক্রোধিত হবেন না আমার উপর।”

আমার কাঠ কাঠ কথার জবাব দিয়ে আমি রুম থেকে বের হতে গেলেই শেরহাজ আমার হাত আঁকড়ে ধরল। বিরক্তির চোটে তার দিকে ফিরে কষে এক চ*ড় লাগিয়ে দিলাম। শেরহাজ জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে কিছু বলবে। তার আগেই কারো মুখে নিজের নাম শুনে পিছু তাকালাম। শেরহাজ ও থেমে গেলো। শারফান দুহাত বুকে গুঁজে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি করুণ দৃষ্টিতে তার নিকট যেতে নিলেই একজোড়া হাত শারফান এর হাত আঁকড়ে ধরল। অবাক হয়ে গেলাম। শারফানও দ্বিধাহীন সেই হাতজোড়ার মালিককে টেনে রুমের ভেতর আনলো। সেই হাতজোড়ার মালিক কে দেখে দুকদম পিছিয়ে গেলাম। এ আমি কাকে দেখছি? জারিফা?
শারফান সন্তপর্ণে আমার মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে বলেন,

“বলে ছিলাম আমি শুধু জারিফাকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা সত্য হলে অবশ্যই সে ফিরবে। দেখলে সে ফিরে এলো এবার তোমার যাওয়ার পালা এ বাড়ি থেকে, আমার জীবন থেকে।”

কথাগুলো শুনে নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে রইলাম। কিঞ্চিৎ মুহূর্ত পরে আমার হাতকে শেরহাজ ধরার চেষ্টা করতেই দাঁতে দাঁত চেপে কাঁচের টেবিলের রাখা ছুড়ি নিয়ে তার হাতের উপর আঘাত করলাম। বিস্ময়ে শারফান আর জারিয়া তাকিয়ে রইল। ‘ফারজানা’ মৃদু চিৎকার দিয়ে শারফান শেরহাজ এর হাত ধরে নিলো। আমার জ্বলন্ত বিধ্বংসী রুপ সম্পর্কে এরা অবগত নয়। তাইত আমার সাথে অবহেলিত নারীর মত আচরণ করছে। সেই ছুড়ি দিয়ে শারফান এর নিকট গিয়ে তার হাত চেপে ধরে তার হাতের উপরও জোরালো আঘাত করলাম। জারিফা ভয়ে পিছিয়ে গেলো। শারফান চিৎকার করে আমার হাত সরানোর চেষ্টা করল। কিন্তু আমি তাকে জখম দিয়ে নিজের হাতের বন্ধনীতে আবদ্ধ করে পাশে আটকে নিলাম। জারিফার দিকে তাকিয়ে বললাম।

“আমাদের ফ্যামিলি ড্রামার মধ্যে ইউ বাস্টার্ড বাহিরের মেয়ে ইন্টারফেয়ার না করলেই খুশি হবো। আর আপনি শারফান এ দুমাস একই ছাদের নিচে থেকে দু’জনের মানসিক মিলবন্ধন কি হতে পারেনি? নাকি আমি ব্যর্থ হয়ে ছিলাম আপনার কাছে? যদি ব্যর্থ হয়েই থাকি তবে স…..।”

পরের কথা মুখে নিলাম না। কারণ এখন সে সময় নয়। পরিস্থিতি আজ বিপরীতে যেতে চাচ্ছে। তবে আমি তা হতে দেবো না। স্বামী আমার তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা মানুষের ক্ষতি করতেও দু’সেকেন্ড ভাববো না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)শারফান কে ধাক্কা দিয়ে সোফায় বসিয়ে জারিফার দিকে ভয়ানক দৃষ্টি নিয়ে এগোলাম। মেয়েটা ভয়ে তটস্থ হয়ে গেলো। সে ভাবেইনি আমি এতটা ভয়ানক রুপ ধারণ করব। শেরহাজ ও হতবাক। শাহানা এসে দু’ভাইয়ের কাণ্ডকলাপ দেখছে। তবে টু শব্দ করেনি। দাঁতে দাঁত চেপে জারিফার গাল চেপে ধরলাম শক্ত করে। আরেক হাতে তার চুলের মুঠি ধরে চেঁচিয়ে বললাম।

“হা*রা*মজা*দী, সুযোগ সন্ধানী মেয়ে কোথাকার। তোকে আমার মা-নানার গোষ্ঠী কতটা সহায়তা করে ছিলো। সেই তুই আমার আগপিছে আমার স্বামীর সাথে রংঢং মারতে উদ্যত হয়েছিস। বল কি করেনি আমার মা-বাপ-নানা-নানী তোর জীবন সুন্দর বানানোর জন্য।”

কথার ছলে ঠাসঠাস করে চ’ড় দিলাম। এক চড়ে তার গাল থেকে রক্ত পড়তে লাগল। দেখেই পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললাম।

“এই হাত নর*পশুর শরীর টুকরো করে কেটে ছিল জানিস? জানবি কেমনে তুই না মরে গেছিলি ঐ কামুক*কর কু*ত্তার জন্য। যাকে না পেলে তুই মরেই যেতি। সেই তো নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরছিলি। আমার স্বামীকেও পিছু ঘুরিয়ে টাকা হাতড়ে নিলি। ঐ কামুক*কর পোলার সাথেও শুয়ে শুয়ে ইজ্জতের ছিটেফোঁটা ও রাখলি না।”

পুনরায় অপর গালে চ’ড় বসালাম। সে এবার যন্ত্রণায় কাশতে লাগল। মিসেস জাহানারা এসে শাহানা কে সরিয়ে রুমের ভেতর চোখ দিতেই ভয়ে মাথা চেপে ধরলেন নিজের। চিৎকার করে বললেন।

“এই শাকচুন্নী আমার মেয়েকে এত বেধম প্রহার করে মার*ছিস কেন?”

কথাটা আমার শ্রবণে প্রবেশ করতেই অগ্নিশর্মা হয়ে জারিফাকে ধরে রেখে চাচী শ্বাশুড়ির সামনে গেলাম। তার নিকট জারিফাকে ধাক্কা দিলাম। মিসেস জাহানারা জারিফার ভর সামলাতে না পেরে দুজনেই মাটিতে পড়ে গেলো। শারফান এতক্ষণ যাবত যা হয়েছে নিজ চোখে দেখে ভয়ে গুটিয়ে গেলো। শেরহাজ এর দিকে তাকিয়ে বললাম।

“জানিস আজ যদি তুই আমার স্বামীর ভাই না হতি তাহলে তোকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলতাম। আমার সাথে অসভ্যতামির ফলাফল হলো দণ্ডনীয় মৃত্যু। তোর মরার শখ জাগছে? পূরণ করে দেয়।”

সেই ছুড়ি নিয়ে এগোতে নিলেই শেরহাজ সুর সুর করেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মিসেস জাহানারা তার সঙ্গে জারিফাকে ধরে উঠিয়ে নিয়ে যেতে নিলেই গম্ভীর গলায় ডাক দিলাম। তাদের পা থেমে গেলো। আমার দিকে ঘুরতেই বললাম।

“এই আবর্জনাকে যেখান থেকে উঠিয়ে এনেছেন না সেখানেই ফেলে আসুন। নাহলে আজ আপনার লাশ এমন জায়গায় গেড়ে দেবো যেখান থেকে আপনার স্বামীও খুঁজে বের করতে পারবে না। গেট লস্ট ফম হেয়ার ব্লা*ডি বি*চে*স।”

শারফান নিশ্চুপ তাতে কি আমি জখম দিয়েছি স্বামীকে সৎ পথে আনতে। তাই আমিই এর সুরাহা দেবো। তার নিকট গিয়ে আঘাতহীন হাতটা ধরে ধীরে সুস্থে নিজ রুমে নিয়ে এলাম। শাহানা সবটুকু দেখে আচমকা হেসে ফেলল। সে মনেমন ভেবে রাখল।

“আজ আব্বু উঠলে বড়জোড় ফিল্মের মত কাহিনী শুনাতে পারব। ইশ্ ভাবী আমার সুপারডুপার উইম্যান। গুড জব ভাবী। এটুকু মেয়ে এতটা চটর ফটর ভাবা যায়? গ্রামে নিশ্চয় ভাবীর সাথে কিছু ঘটেছে। নাহলে কেনো ভাবী এরুপ ধারণ করতেও এক সেকেন্ড পিছপা হলেন না।”

মনে প্রশ্ন জাগলেও আপাতত জমিয়ে রেখে মুভি দেখতে রুমে চলে গেলো শাহানা। দরজা আটকে শারফান কে ধরে বিছানায় বসালাম। আলমারি থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে। মলমপটি লাগিয়ে দিলাম সুন্দর করে। শারফান হাঁসফাঁস করছে দেখেও নিবিড় হয়ে নিজের কাজ করছি। ব্যান্ডেজ করে শারফান এর শার্ট খুলতে লাগলাম। এর মাঝে নিজের গলায় পরিহিত উড়না নিজ হাতে সরিয়ে দিলাম। শারফান ইতস্তত হয়ে পিছু হতে চাইলেও তাকে ছাড়লাম না।

শার্টের শেষ বোতাম খুলে তার উদাম বুকে জোরালো কামড় বসালাম। শক্তপোক্ত সুঠামদেহে আমার কামড় তাকে যন্ত্রণা দিলে সে হাতমুঠো করে বসে রইল। আমি ততক্ষণ কামড়ে রইলাম যতক্ষণ না জায়গাটা লাল-রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।
দীর্ঘ খানিক পর খেয়াল করলাম শারফান এর বুকের বাম পাশে রক্তজমাট বাঁধছে। সেইদিক তাকিয়ে মৃদু ঠোঁটের স্পর্শ দিলাম। পুনরায় শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিলাম। শারফান আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে।

“নিজেই ক্ষত দিলে এখন নিজেই কেনো?”

“আপনি হয়ত পরকীয়া করতে পারেন আমিত নয়। আপনার জীবনে হয়ত প্রথম প্রেম ছিল কিন্তু আমার জীবনে তো আপনিই প্রথম পুরুষ। প্রেমের দিক বিশ্বাস নেই দেখেই স্বামীকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করেছি অগণিতবার। ভাবিনী এই স্বামীই তখনো পুরনো প্রাক্তনের মাঝে মজে থাকবে।”

চলবে……

এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-০৫

0

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৫ (রোমান্টিক পর্ব)

“ইয়া আল্লাহ আমার বউয়ের মাথায় খালি নোংরা কীট ঢুকে বসে থাকে কেন? দেখো কিভাবে নির্লজ্জের মত হাসছে মেয়েটা। ধ্যাত কেনো যে লুঙ্গির জায়গায় বউয়ের শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছিলাম। এখন এই শাড়ি পেঁচানো দেখে আমার বউয়ের হাসি থামছেই না।”

বিড়বিড় করে শারফান কে নিজের সাথেই কথা বলতে দেখে দুষ্টুমি মাথায় ছড়ে বসল আমার। নিজের গলার থেকে উড়না সরিয়ে বালিশের উপর রেখে আবেদনময়ী ভঙ্গিতে হেঁটে শারফান এর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। শারফান এর শ্বাসরোধ হওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেলো। মেয়েটার গলায় জ্বলজ্বল করছে বাদামী রঙের তিল। সেই থেকে মেয়েটা উড়না ছাড়া বিধ্বংসী রুপে দাঁড়িয়েছে। গলার ঢোক গিলতেও ভয় পাচ্ছে শারফান। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম , গলার স্বর কাঁপা দেখে মনে পড়ল লেখকদের গল্পে নায়িকারা এভাবেই কম্পন অনুভব করে। সেই ক্ষেত্রে আমিই হয়ত ইতিহাসের অনন্যরুপী এক মেয়ে। যে কিনা তার স্বামীর অনুভূতিতে চরম আকারে প্রণয় সংযোগের বিস্তার করছে। নিজের আলতো হাতে স্বামীর কাঁধের উপর থেকে আঁচল ফেলে দিলাম। মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় শারফানও আমার কোমরে তার শ্যামরঙা হাত রেখে আলতো চাপ দিলো। আবেশে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। তার উদাম লোমশ বুকের মাঝে নিজের কাঁপা ঠোঁটের স্পর্শ দিয়েই থেমে গেলাম। ইশ লোকটার হার্টবিট চরম আকার ধারণ করেছে। মাত্রাতিরিক্ত হারে লাফিয়ে চলছে। আড়চোখে মুখ তুলে স্বামীর দিকে তাকালাম। এই না কিছুক্ষণ আগেও লোকটা রাগী চেহারা বানিয়ে রেখেছিল। পরমুহূর্তেই ফুঁস হয়ে গেলো। ঠোঁট চেপে আস্তে করে স্বামীর কোমরের কাছে হাত দিতে নিলেই তিনি হাত চেপে ধরেন। আমিও থমকে তার দিকে তাকালাম। শারফান আমার হাতের দিকে তাকিয়ে ছিটকে আলমারির কাছে চলে গেলো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এ কি হলো? লোকটা রোমান্সের রও করতে দিলো না। শারফান গালে থাপ্পর মে*রে মে*রে আলমারি হাতড়ে নিজের জন্য প্যান্ট-গেঞ্জি বের করে আমার দিকে তাকালো। আমিও লোকটার দিকে করুণ চাহনীতে তাকিয়ে আছি। শারফান আমাকে দেখে বলে,

“ডাইনি আসতাগফিরুল্লাহ্ ফুঁ ফুঁ ফুঁ। আমি শুধু আমার জারিফাকে ভালোবাসি। কোনো ডাইনি আমার মন ভুলাতে পারবে না। জারিফা আই লাভ……।”

শারফান কিংবদন্তি হয়ে পিছিয়ে গেল। আমার স্বামীর মুখে অন্য মেয়ের নাম আমি কখনো সহ্য করতে পারব না। এখন সে মেয়ে আমার বান্ধবীও হোক না কেন! ঠোঁট চেপে লোকটার উপর নিজের শরীরের ভারসাম্য ছেড়ে দিলাম। এতে শারফান নিয়ন্ত্রণ করতে আমার কোমর চেপে ধরে দেওয়ালের সঙ্গে ঠেসে দাঁড়াল। উম্মাদের মত শারফান এর ঠোঁটে ক্ষতের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শারফান আমাকে জোরপূর্বক দূরে সরালেও আমি উন্মাদের মত তার ঠোঁটের নিজের নাম বসিয়ে দিলাম। দীর্ঘ পাঁচ মিনিট পর যেয়ে লোকটা কে ছেড়ে দিলাম। শারফান তার ঠোঁটে র*ক্ত দেখে বলে,

“এই মেয়ে ত…..।”

আমি আবারো ঠোঁট দুটো দেখিয়ে ইশারা করে বললাম।

“নিজের বউকে এই মেয়ে না ডেকে বউ ডাকতে শিখেন। না হলে এই ঠোঁটের সবেই মাত্র রক্ত ঝরিয়েছি পরের বার লাল টমেটো বানিয়ে ফেলবো। আমার বয়স ভালোই কম হোক না কেনো! স্ত্রী হিসেবে আমি রাসূল (স.) এর বিবি আয়েশার মতই হিংসুটে। তিনি যেখানে তার সতীনদেরও সহ্য করতে পারতেন না। সেখানে আমি সতীন তো দূর পরনারীর স্পর্শ ও আপনার শরীর আর মনজুড়ে সহ্য করব না। ভালো এটাই হবে আপনিও এ কথা আপনার মগজে ঢুকিয়ে নিন।”

শারফান এর কাছ থেকে সরে বিছানার থেকে উড়না নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলাম। রান্নাঘরে এসেই হাঁফাতে লাগলাম। আজকে স্বামীর চ’ড় খেয়েও ভয়ডরের পরোয়া না করে এতো কথা শুনিয়ে দিয়েছি। যাক ভালোমত জব্দ করেছি। মনের খুশিতে চুলায় রান্না গরম দিচ্ছি। গুনগুন করে বাসন ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখছি। আচমকা বিদ্যুৎ চলে গেলো।

শারফান এর হুঁশ এলো। সে আজ প্রথম কোনো নারীর সংস্পর্শে এসে পবিত্র ছোঁয়া পেয়েছে। বহু কষ্টে গলায় ঢোক গিলল। তার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে আবারো মেয়েটার ঠোঁটের রসালো মিষ্টি আমলে নিতে। শারফান মাথা ঝেড়ে নিজেকেই ধিক্কার জানালো।

“ছিঃ শারফান তোর এতটা অধঃপতন হলো যে ভালোবাসার মানুষটিকে রেখে বউ নামক প্যারা কে ছুঁয়ে দিতে চাইছিস? তোর আসলে চাই কি বল তো?”

“ভাইয়া তোমার এ ফিসফিসিয়ে কথা বলাটা না জাস্ট বিরক্তিকর। এখানে কারেন্ট চলে গিয়েছে সবাই গরমে ভিজে যাচ্ছি। জলদি যাও কারেন্ট আসছে না কেনো দেখো!”

শাহানা রুমের বাহির থেকে চিল্লিয়ে কথাগুলো বলায় শারফানও চটজলদি কাপড় পরে নিলো। দরজা খুলে শাহানাকে দেখল। সে হারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ভাইয়ের কাছে হারিকেন এগিয়ে দিলো। শারফান তা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। কেননা কারেন্ট চলে গেলে আইপিএস চালু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কারেন্ট গিয়ে তিন-চার মিনিট হয়ে যাচ্ছে আইপিএস চালু হলো না কেনো? সেই চিন্তায় রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে।

কোমরে গরম পুরুষেলী হাতের স্পর্শে শরীর শিউরে উঠল। তৎক্ষণাৎ পিছু ঘুরলাম। আমার হাতে ছুড়ি ছিলো। যার কারণে পিছু তাকাতেই যে আমাকে স্পর্শ করেছে তার হাতে ছুড়ির স্পর্শ লেগেছে। মৃদু ‘আহ’ করে উঠে সে। আমি অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছি না। তাই চুলায় জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে পিছু তাকাতেই শারফান কে দেখতে পেলাম। সে হারিকেন নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। আমি তার হাত ধরে আগপিছ করে দেখছি। না আমার স্বামী ছুড়ির আঘাত পায়নি। তবে কে পেলো ছুড়ির আঘাত? মনের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অন্ধকারে কার সাধ্য হলো আমার শরীর স্পর্শ করার? মাথা নুইয়ে চিন্তায় বিভোর হওয়ায় শারফান কে দেখেও অদেখা করে গরম রান্না টেবিলে সাজাতে চলে গেলাম।
শারফান অবাক হলো মেয়েটা তাকে পাত্তা দিলো না কেন?মাথা চুলকে আপনাআপনি বলে,

“আম্মু মাঝেমধ্যে না তোমার বউমার মাথার পোকাগুলো ঘুমিয়ে যায়। তাই হয়ত কখন কি করা লাগবে বুঝতে পারে না। এ দেখো রুমে তো কাণ্ড ঘটিয়ে এখন অচেনার ভাব করছে। হাহ্‌ আমার তো জারি….।”

“আহুম আপনার তো কি?”

আমাকে দেখে শারফান এর মুখ বন্ধ হয়ে গেলো ভয়ে। সে এখন আর কোনো ভাবেও তার ঠোঁটের উপর নির্যাতন সহ্য করতে পারবে না। বিধেয় সে আমতা আমতা করে বলে,

“কিছু না আমি আইপিএস চালু করতে আসছি।”

“সেটা রান্নাঘরের বাহিরে সাইড টেবিলের পাশে। রান্নাঘরের ভেতর নয়।”

“জানি জানি আমি পরীক্ষা করছিলাম তুমি জানো কিনা দেখতে।”

“এটা আমার সবে হওয়া শ্বশুরবাড়ি‌। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আমি জায়গাটা চিনছি। আর আপনি এতবছর যাবত নিজের বাড়ির কোথায় আইপিএস আছে সেটাও জানেন না দেখছি।”

শারফান দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে নিলেও বলল না। কারণ শ্বশুর আব্বু ডেকে নিলেন। তিনি মুখ ভেটকিয়ে আমার পাশ কেটে চলে গেলেন। ফিক করে হেসে দিলাম। পরক্ষণে নিজের কোমরে পরপুরুষের হাতের স্পর্শে মন খারাপ হয়ে গেল। কে হতে পারে? শারফান নয় কেননা তার হাতে কোনো রকম আঘাতের চিহ্ন অব্দি নেই। অথচ আমার এখনো মনে আছে ছুড়ির আঘাত জোরালো ভাবেই লেগেছে অচেনা লোকের হাতে। যে কিনা এ অন্ধকারে আমার কাছে এসেছিল অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)নিজের ভাবনা কে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজে লাগাতে হবে। সেই হিসেবে মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে সবার মাঝে গিয়ে বসলাম। তখনি চাচী শ্বাশুড়ি টুন মেরে বলে উঠেন।

“আমাদের আমলে বউদের এক টেবিলে খাওয়াই বারণ ছিল। আজকালের মেয়েরা নিজেদের কে স্মার্ট বোঝাতে মুরব্বির সমান ভাবে।”

চাচী শ্বাশুড়ির কথায় ঠোঁট কামড়ে খাবারটা সেভাবে রেখেই উঠে দাঁড়াতে গেলে শারফান আমার হাত চেপে ধরে। সে ভাত মাখানো অবস্থায় তার বাটির অংশ থেকে কিছু টুকরো ভাত তরকারির সাথে মিশিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো। থমকে গেলাম তার আচরণে। সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,

“হা করো।”

আমি ছলছল চোখে তার হাতের থেকে ভাত মুখে নিলাম। ভাত খাচ্ছি এতো প্রশান্তি বুকের মাঝে হচ্ছে যা বলে বোঝানো দ্বায়। সে আমার বাটির ভাতগুলো তার বাটিতে ঢেলে হাস্যজ্জ্বল মুখে বলে,

“চাচী আগের আমলে পুরুষগণ তার পরিবারের কাছে বাধ্য সন্তানের মত ছিলো। তাই অধিকের চেয়েও নারী মানসিক ভাবে নির্যাতিত হতো। তাদের প্রাপ্য সুখ-সমৃদ্ধি থেকে তারা বিতাড়িত হয়েও মুখ বুজে সহে নিতো। তাও যারা সেই আমল কাটিয়ে বাহিরে এসে সুখের দেখা পেতো তাও বেশিদিন টিকতো না। পৃথিবীর বুক থেকেই হারিয়ে যেতো সেসব নারীগণ।”

আমি শারফান এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। সে সন্তপর্ণে আমায় খাওয়ে দিচ্ছে। কিন্তু শেষের কথাগুলো রুক্ষতার সাথে বলে শ্বশুর আব্বুর দিকে কেনো তাকালো সে? তবে কি আমার শ্বাশুড়ি মায়ের সাথেও কিছু? মনের কথা মনে চেপে চাচী শ্বাশুড়ির দিকে তাকালাম। তিনি অপমানে তিক্ত হয়ে বলেন,

“ভাইয়া আপনার বাড়িতে এত অপমান সইতে হবে জানলে কখনো আসতাম না। ওটা আপনার ভাইয়ের আবদারে বউকে দেখতে এসেছিলাম। রাতে ফিরে গেলেও সেই দিনে আবার পাঠিয়ে দিলো। এখন তো দেখছি এ বাড়িতে সম্মানই পাবো না। এসেই যে আপনার ছেলের তিরস্কারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”

শ্বশুর আব্বু গম্ভীর গলায় চাচী শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন,

“ভুল তোমার জাহানারা। আমার ছোট ভাই কাপুরুষ তাই বলে তোমায় পাঠিয়েছে তাও খালি হাতে। বীরপুরুষ হলে সে সদ্য পরিবারের সঙ্গে বউ দেখতে আসতো। আর তুমি আগের আমলের কথা না তুললেই খুশি হবো জাহানারা। কারণ আগের আমলে তুমি কি ছিলে আর কাকে কি পদে নামিয়ে ছিলে ভালোই জানা আছে আমার।”

আমি পরিবেশ কে ঠান্ডা করতে শ্বশুর আব্বুর দিকে তরকারির বাটি এগিয়ে দিয়ে ভাতের সাথে চিংড়ি মাছের ঝোল পাতে দিলাম। শারফান দেখে বলে,

“হয়ছে সবাইকে আপ্যায়ন করা শেষ হলে নিজের স্বামীকেও খাওয়ে দিলে খুশি হবো।”

স্বামীর কথা শ্রবণে আসতেই আমার মাথায় বাজ পড়ল। তার দিকে তাকাতেই দেখলাম শারফান বাঁকা হেসে চোখের ইঙ্গিতে কাছে আসতে বলছে। বুঝলাম লোকটা আমার চুমুর বদলা হাতের উপর নির্যাতন করে নিতে চাইছে। ঢোক গিলে লাজুক মাথা নেড়ে না বললেও শ্বশুর আব্বু মিটিমিটি হেসে বলেন,

“যাও মা আমার অধম ছেলেটা সেই ছোটই থেকে গেলো। খেয়ে নাও দু’জনে আমার প্রায় শেষ। এই তোরা এখানো না খেয়ে বসে আছিস কেন? ফিল্ম দেখছিস নাকি-রে? তাড়াতাড়ি খেয়ে নেহ্।”

শাহানা আর শেরহাজ খিলখিলিয়ে হেসে খেতে থাকে। আমি শারফান এর দিকে বাঘিনী রুপে তাকিয়ে আছি। সে চোরা চোখে চুমু ইশারা করল। আমি তার প্রতিটা পদক্ষেপে কেঁপে উঠছি। এতদিন আমি দুষ্টুমি করতাম এখন এই লোক করছে।
আমি ভাতের বাটি থেকে ভাত মেখে তার ঠোঁটের কাছে নিতেই সে চমৎকার হাসি দিয়ে দাঁত দিয়ে কামড়ে আমার হাতের আঙ্গুল থেকে ভাত মুখে নিলো। ‘উফফফ’ মৃদু চিৎকার বের হলো মুখ থেকে। শারফান আমার কানের কাছে এসে বলে,

“জাইসি কারনি ওয়াইসি ভরনি।”

চলবে…..

এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-০৪

0

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৪

“আম্মু দেখলা তোমার বউমা কেমন বেশরম। এ মেয়ে কি দিয়ে তৈরি হলো? চ*ড় দিলাম কি কারণে তা না জেনেই গাঁ ঘেঁষাঘেঁষি বাড়িয়ে দিলো। চ*ড় খেয়ে মাথার তাঁর ছিঁড়ে গেলো নাকি। আম্মু দেখে রাখো তোমার বউমার বেহুদা আচরণ। অভিযোগ দিলাম তোমার কাছে।”

হঠাৎ পায়ের উপর পায়ের পারা খেয়ে কাশি উঠে গেল শারফান এর। এতক্ষণ যাবত সে তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মনেমনে কথাগুলো ভাবছিল। আমিও কম কিসে? দায়িত্বশীল স্ত্রীর মত স্বামীর কাছে পানি এগিয়ে দিলাম। সে চোখ বড়বড় করে আমার দিক তাকিয়ে পানি গিলল। চাচী শ্বাশুড়ি আড়চোখে আমাদের দেখছে। শ্বশুর আব্বুর পাশেই আমার স্বামী বসেছে নাস্তা করতে। তিনি শারফান এর পিঠে মৃদু মালিশ করতে থেকে জিজ্ঞেস করলেন।

“বাবা কি হলো তোর এতো কাশি কেন দিচ্ছিস কয়েকদিন ধরে?”

“আর বলো না আব্বু কাশি দেওয়ানোর মানুষ যে পেয়ে গেলো ভাইয়া। এখন থেকে এই কাশিই ভাইয়ার নিত্যদিনকার সঙ্গী হিসেবে আবহমান থাকবে। কি ভাইয়া সত্যি বললাম না?”

শেরহাজ এর কথায় ঢোক গিললাম। তবে মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করলাম না। শারফান এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম লোকটার মুখে লাজুকতা ফুটে উঠেছে। দেখেই চরম হাসি পেলো আমার। পুনরায় পা দিয়ে টুকা মা*রলাম। শারফান বেচারা আর সইতে না পেরে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। শ্বশুর আব্বু তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।

“কি হলো দাঁড়িয়ে গেছিস কেন?”

“আব্বু আমার পায়ে পারা দিতে মানা করে দাও এই বেয়াদব কে।”

“কে তোর পায়ে পারা দিচ্ছে বাবা?”

স্বামীর কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। স্ত্রী হিসেবে ফাজলামি করতেই পারি স্বাভাবিক। তাই বলে শ্বশুরের সামনে স্ত্রীর ফাজলামিটা টানবে নাকি এই বলদ মাস্টারে? শারফান মনেমন নিজেকে গা*লি দিলো। এই মেয়ের কারণে তার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। বাপের সামনে মুখ ফসকে কি বলে দিলো! এখন সামলাবে কেমনে? আমতা আমতা করে তার ভাই শেরহাজ কে ইঙ্গিত করে বলে,

“দিন দিন বেয়াদব হচ্ছিস তুই। ঠিকমত খাবার খেতে দিচ্ছিস না। পায়ের উপর পারা দেওয়া অফ দেয় নাহলে আজকে তোর রেহাই নেই বলে দিলাম।”

শেরহাজ মুখের ভেতর চীজ পটেটো বল আটকে নিজের ভাইয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকালো। অবাক কণ্ঠে বলে,

“ভাই এত বড় অপবাদ দিলা? আজ পর্যন্ত নিজের ক্লাসমেট তো দূর হবু গার্লফ্রেন্ড কে শুদ্ধ পায়ের উপর পারা দিলাম না। সেখানে তুমি আমার বড় ভাই হয়ে তোমাকে পারা দেওয়া মানে নিজের জান কবজ হাতে নিয়ে রাস্তায় ঘুরাঘুরি করা।”

“শেরহাজ চুপচাপ নিজের নাস্তা শেষ করে পড়তে বসো গিয়ে।”

“আব্বু ভার্সিটি থেকে আসলাম একদিনও হলো না। সেই তুমি আবারো ঐ বোরিং পড়ার মাঝে ডুব দিতে বলতেছো। তার চেয়ে ভালো আমি এই সাঁঝ সন্ধ্যায় নদীতে গিয়ে ডুব মা*রি। এতে অত্যন্ত গরম কম লাগবে।”

শারফান তার চেয়ার ছেড়ে শেরহাজ কে ধরতে নিলে বেচারা মুখের ভেতর আরো কয়েকটা চীজ পটেটো বল ঢুকিয়ে তার চীজ পাস্তা নিয়ে রুমে ছুটে পালালো। শ্বশুর আব্বু সহ আমরা হেসে দিলাম। তখনি নজর গিয়ে পড়ল চাচী শ্বাশুড়ির উপর। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তিনি বিরক্তির মত মুখ করে আছেন। বুঝলাম না আসছেন দিন থেকে আমাকে দেখার পর এ মহিলার চেহারার রঙ ফ্যাকাশে হয়ে আছে কেনো? শ্বশুর আব্বুর নাস্তা শেষ প্রায়। চায়ের মগ এগিয়ে দিলাম। শারফান এর দিকে তাকাতেই সে অন্যদিকে তাকালো। মনেমন হাসছি লোকটার ভয়ার্ত চাহনী দেখে। গলা ঝেড়ে শ্বশুর আব্বুকে বললাম।

“আব্বু আমি চাই কাল থেকে কলেজে যেতে। সেই সাথে অনুরোধ করবো আমায় উদ্ভাসে ভর্তি করিয়ে দিতে। আমার জন্যে সহজ হবে পড়াগুলো আয়ত্তে রাখতে।”

“কি বলছো এসব তুমি মা? শারফান যে কলেজে শিক্ষকতা করে সেখানেই তুমি নিঃসন্দেহে ভর্তি হয়ে যেতে পারো। সেখানে উদ্ভাসের ব্রাঞ্চ আছে। কলেজের পাশাপাশি উদ্ভাসে কোচিং করতে পারবে। তাই না বল শারফান‌ বাবা?”

শারফান থতমত খেলো। মাথা নেড়ে না না করে ইঙ্গিত করল। শ্বশুর আব্বু দেখে চোখ সরু করে বলে,

“না বলিস কেন-রে? তোর বউ হয় তারে তুই ভর্তি করাবি এই না হলো স্বামী কর্তব্য। নাকি তুই আমার বউমাকে না পড়িয়ে বসায় রাখতে চাস? এমনটা হলে তোকেই বাড়ির থেকে বের করে দেবো।”

না পারতে ফিক করে হেসে ফেললাম। শারফান জ্বলন্ত চোখে তাকালো। আজ বেচারা ভালোই জব্দ হচ্ছে। আমায় চ*ড় মারা একে বারে কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিচ্ছে তার শাস্তি। কেননা আজ পরিস্থিতি আমার হাতে। ঢং করে নাস্তার আধোয়া বাটি-মগ রান্নাঘরে বেসিনের সামনে রেখে চলে গেলাম শারফান এর রুমে। সে এখনো আসেনি। জানি আসলে আমার উপর ভূকম্প লাগিয়ে দেবে। তার চেয়ে ভালো নিজেকে পাগলাটে প্রেমিকা বউ বানিয়ে রাখা। উড়না ঠিকঠাক গলায় এলিয়ে বালিশে মাথা দিলাম। দরজার কট করে খুলার শব্দে সেদিক তাকালাম। শারফান নিশ্চুপে এসে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। অপেক্ষা করছি কবে সে বের হবে। চোখ বুজে কালকে গোপনে নানার সাথে দেখা করার কথা ভেবে চলেছি। এর মাঝে খেয়াল ছিলো না কতটা বেজে গেলো?
চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম। একি এক ঘণ্টা বিশ মিনিট পার হয়ে গেলো। এখনো সে বের হলো না। কি হলো তার? ধীর পায়ে মনেমন ভাবতে থেকে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দরজায় টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

“আপনি কি আজ সারারাত ওয়াশরুমে কাটানোর প্ল্যানিং করেছেন?”

অপরপাশে থেকে কোনো সাড়া শব্দ আসছে না। পুনরায় দরজায় টোকা দিলাম। এবার যেনো আমার পরাণে পানি আসল। লোকটা ‘হুম’ শব্দ তো বের করল। কপট রাগ দেখিয়ে দরজায় বা*রি দিয়ে বললাম।

“এই আমার ভয়ে কি আপনি আজ ওয়াশরুমে ওয়ান নাইট আউট করবেন? দেখেন আমি ওত নিষ্ঠুর নয় যে আমার অবলা স্বামী কে পাগলা বানিয়ে ছাড়বো। তাকে মাথার তাজ বানাতে হবে না? তাইত বিয়ের পরের দিন থেকে আপনার ঘাড়ত্যাড়ামির সঙ্গে আমিও পাল্লা দিয়ে ত্যাড়ামির ত্যাড়াবাঁকা বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

শারফান মেয়েটার ফাজিল মার্কা কথায় কাঁদো কাঁদো মুখ করে পাশের দেওয়ালে কপাল ঠেকিয়ে বার কয়েক বা*রি দিলো। ব্যথা অনুভব করায় থেমে গেলো। নিজেকে শান্ত রেখে বলে,

“দেখো মেয়ে আমি কি করি না করি এতে তোমার নাক না গলালেই হবে। আরে বোন আমাকে নিজের মত থাকতে দাও না। এমনিতে জারিফাকে ছাড়া আমি ভালো নে….।”

শেষ শব্দ মুখ থেকে বের করার পূর্বেই রুমের ভেতর থেকে জোরালো শব্দ হলো। শারফান ভয় পেয়ে গেলো। চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করল।

“এ মেয়ে কি ভেঙ্গেছো? দেখো আমি খুব নিট এন্ড ক্লিন
পার্সন। আমার রুমের কোনো জিনিস যদি ভেঙ্গেছো তবে তোমার নানার থেকে যৌতুক চাইবো বুঝতে পারছো মেয়ে?”

“আহেম আহেম” আমি গলা ঝেড়ে শারফান এর মোবাইল নিয়ে আরামে বিছানার উপর বসে গেলাম। আজ দেখি লোকটা আমার সাথে কেমনে লড়াই করে? কারণ তাকে বাহির থেকে আটকে দিলাম। এর মধ্যে তার জন্য চমৎকার এক অডিও ক্লিপ তৈরি করতে তৎপর হয়ে পড়লাম।

_______
“দেখ তুই আমার হাতে টাকা কড়ি দিয়ে দিলে আমি তোকে বড় ভাইয়ার বাসায় নিয়ে আসতে পারবো। তুই শুধু টাকার ব্যবস্থা করে দেয়। এ নেহ আমার বিকাশ নাম্বার পাঠিয়ে দিলাম।”

অপরপাশ থেকে কিছু কটু কথা শুনে তার মাথা ধরে গেলো। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“এই জাহানারা কোনো কাঁচা কাজ করেনা। এমনিতে শারফান এর ফুপি বাসায় আসেওনি আর আসবেও না।”

অপরপাশের কথা শুনে হঠাৎ তার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটল। পরক্ষণে তিনি গম্ভীরতা-র সুরে আদেশ করে কল রেখে দিলো। মিসেস জাহানারা আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে জোরালো হাসি হাসল। যা শুধু চার দেওয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ।
টুং করে শব্দ হয়ে বিকাশের নোটিফিকেশন এলো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তিনি তৎক্ষণাৎ বিকাশের নোটিফিকেশন চালু করে দেখে বিকাশে টাকা চলে এসেছে। সে এ নিয়ে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ির থেকে রাতবিরেতে বেরিয়ে গেলো। দরজা স্বাভাবিক ভাবেই আটকে গেলো। দারোয়ান রাতের দশটায় বাড়ির অতিথি মহিলাকে বের হতে দেখে ভ্রু কুঁচকে দাঁড় করিয়ে দেয়। এতে তিনি ঘাবড়ে গেলেও আমতা আমতা করে বলে,

“আমার স্বামী এসেছে মুদি দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তাই আমি চলে যাচ্ছি। এটা আমি ভাইয়াকেও জানিয়েছি।”

দারোয়ান মালিকের নাম শুনে দ্বিমত পোষণ করল না যেতে দিলো মহিলাটিকে। মিসেস জাহানারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তিনি চৌপাশে চোরা চোখে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে মুদি দোকানের সামনে গেলেন। তবে সেখানে না দাঁড়িয়ে সোজা সেলুন পার করে রাস্তার পাশে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে বিকাশের টাকা ক্যাশ আউট করে হাতে ধরিয়ে দিলো। ফিসফিসিয়ে তিনি বলেন,

“আর বাকি ষোলো হাজার টাকা তুই ব্যাংকে পাবি। তারপর আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে কোনো সমস্যা হবে না গ্যারান্টি !”

মেয়েটি খুশি হলো সে মিসেস জাহানারা কে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিলো। সেও মাথা নেড়ে চলে যাচ্ছি ইশারা করল। মিসেস জাহানারা ‘ঠিকাছে’ বলে মেয়েটিকে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। তিনিও সময় ব্যয় না করে নিজ স্বামীর বাড়ি রওনা দিলেন। এ মুহূর্তে বড় জায়ের বাড়ি প্রবেশ করার মানে হলো প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া। এ পরিস্থিতিতে তিনি মোটেও পড়তে চান না বলে দারোয়ান কে বলে চলে এসেছেন। সিএনজি ভাড়া করে চলে গেলেন।

_______.
আমার অডিও ক্লিপ বানানো শেষ। স্বামী আমার সাথে ঘাড়ত্যাড়ামি দেখাচ্ছে। তার প্রতিশোধ মিষ্টিভাবেই নিবো আমি। সেই হিসেবে প্রস্তুতি নিলাম। স্বামীর ফোন নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুঘণ্টা হয়ে গেলো তিনি ভেতরে বসে আছেন। মনেমন শাঁসালাম।

“দাঁড়া বাচ্চু আজ তোকে জব্দ করব মারাত্মক ভাবে।”

পুনরায় ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিলো। শারফান হাঁসফাঁস করছে। আমি আদুরীয় গলায় স্বামীকে ডাকলাম।

“ওওওও আমার স্বোয়ামী জী।”

আদুরীয় গলার টান শুনে শারফান ঢোক গিলল। এ মেয়ে যা পাঁজি। আদরের ডাক দেওয়া মানেই হলো তাকে ফাঁদে ফেলা। না সে পণ করেছে আজকে মেয়েটার ফাঁদে পা দেবে না মোটেও। দুদিনেই তাকে কাহিল বানিয়ে দিলো। আমি স্বামীর কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে পুনরায় ডাক দিলাম। তবুও সে পাত্তা দিলো না। মুখ ফুলিয়ে বিড়বিড় করে বললাম।

“ওমা এ লোকটা তো দেখি হুদাই ঝগড়া করার ফন্দি আঁটছে। দাঁড়ান এখন অডিও ক্লিপ শুনিয়ে আপনার ঢিলামি বের করছি।”

‘আহুম আহুম’ করে কেশে দিয়ে শারফান এর ফোনটা দরজার কাছ বরাবর ধরে অডিও চালু করলাম।
অডিওতে চালু হয়েছে শারফান আর আমার কথোপকথন।

“দেখো মেয়ে আমার মোটেও তোমার সাথে থাকার ইচ্ছে নেই।”

“কিন্তু আমি করেছি কি?”

“একটাই দোষ তুমি যৌতুক আনোনি। বাড়ির কনে বিয়ে দেওয়ার সময় কি বলতে হয় যৌতুক দেওয়ার কথা? এমনিতেই উপহারের নাম করেও দেওয়া যায়। সেখানে তোমার পরিবার একখানা কুড়িও দিলো না।”

তারপর আমার কান্নার শব্দ হয়ে অডিও শেষ হয়ে গেলো। শারফান হতভম্ব। মেয়েটা তার কথার উল্টো অর্থ বের করেছে ভাবা যায় ব্যাপারটা কি হলো? কেউ এই অডিও ক্লিপ শুনলেই ধোলাই দেবে। আমতা আমতা করে বলে,

“হেই মেয়ে আমি এসব কবে বললাম? তুমি এআই ইউজ করে আমার মান-সম্মান ডুবাতে চাইছো কেনো?”

“কারণ একটাই জানকবজ আমার। আপনি যে আমায় চ’ড় মে*রে ছিলেন। তারপর এটিটিউড দেখিয়ে নাস্তার টেবিলে মুখ ফসকে আমায় লজ্জা ফেলতে চাইছিলেন। এখন আমার সাথে বেড শেয়ার করতে না চাওয়ার অপরাধের একমাত্র শাস্তি হল আপনার এই অডিও ক্লিপ। জানেন তো আমি আবার খুব শ্বশুর ভক্ত। আব্বুও আমায় খুববব পছন্দ করেন। এখন যদি গিয়ে অডিওটা আব্বুকে শুনায় তাহলে কি হবে নিজেই কল্পনা করে নেন। নিঃসন্দেহে আপনার সিক্স সেন্স প্রখর মাস্টার জান।”

কথাটা বলে আরামে আমি বিছানার উপর গিয়ে বসে পড়লাম। হঠাৎ দরজা গুলার শব্দে ওয়াশরুমের দিকে নজর গেলো। কিন্তু যা দেখলাম হাসি আটকে রাখতে পারলাম না। হুহা করে হাসতে হাসতে বিছানার উপর গড়াগড়ি খেতে লাগলাম।

চলবে….

এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-০৩

0

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৩

“মাস্টার জান আপনি যত জারিফার নাম মুখে জপবেন, আমি তত আপনার মুখের পানি থেকে শুরু করে যে খাবারই মুখে নেবেন সেসব মুখ ফসকে বের করার দায়িত্ব নিলাম। যেই মুখে আমার নেই সেই মুখে খাবার গেলার হকও নেই। আরেকবার জারিফার নাম যদি আপনার ঠোঁট পেরিয়ে বের হয়েছে। সেই ঠোঁটের উপর চরম লজ্জাজনক নির্যাতন চালাবো মনে রাখিয়েন হুহ্।”

স্বামীর মুখে জারিফার প্রতি প্রেমের প্রলেপ আমাকে হিংসুটে বানিয়ে দেয়। তার চেয়ে অধিকারটা আমারই বেশি। কেননা তার প্রেমিকের নামের সাথে আমার নাম জুড়ে গিয়েছে। বউ নামক পবিত্র সাহেবা আমি শারফান এর। তাইত প্রশ্নটায় চুপ করে থাকতে পারিনী। বার্ন ক্রিম লাগিয়ে তা জায়গা মত রেখে রুম থেকে বের হতে গিয়েও থেমে গিয়ে ছিলাম। লোকটা আমার পিট পিছে চোরা হাসি দিচ্ছিল। কারণ তার মনে যে জারিফা নামক ভূত ঘুর ঘুর করছিল। আমি ছেড়ে চলে যাবো সেই আশায় পড়ে আছে এই জনাব। তাকে আড়চোখে খেয়াল করে দাঁতে দাঁত চেপে কথা শুনিয়ে নিজের হৃদয়কে শান্ত করলাম।
শারফান ক্যাবলাকান্তের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমার কথাটা হজম করতে পারছে না তা ঢের বোঝা যাচ্ছে। শয়তানি হাসি দিয়ে চোখ মারলাম। স্বামীকে তার নিজ বাড়িতে ইভটিজিং করে চলেছি। এর চেয়ে মজাদার ব্যাপার এক স্ত্রীর জন্য আর কি হতে পারে?
রান্নাঘরে এসে দুপুরের খাবার সব সাজিয়ে টেবিলে পরিবেশন করে সকলকে উচ্চস্বরে হাঁক সেরে ডাকলাম।

“বাহ্! মামুনি রুই মাছের ভুনাটা মুখরোচক হয়েছে। জানো তোমার শ্বাশুড়ি মায়ের হাতের রান্না আমার বেশ পছন্দের ছিল। আজ প্রায় তিন বছর পর সেই রকম ঘরণীর রান্নার স্বাদ পেয়েছি।”

টেবিলে বসা শাহানা আর শেরহাজ এর চোখজোড়া ভিজে ভিজে গিয়েছে। অন্যদিকে, নির্লিপ্ত রূপে খেয়ে চলেছে শারফান। তার চোখজোড়া লাল হয়ে গিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে মায়ের কথা স্মরণে আসতেই বোধ হয় লোকটার এরুপ দেখা যাচ্ছে। সবার নিস্তদ্ধ রুপ পরিবেশ কে কঠোর বানিয়ে তুলছে। তাই পরিবেশ ঠান্ডা হাস্যকর বানাতে শ্বশুর আব্বুর পাতে ভাত তুলে দিলাম।

“এই না না মা আর ভাত দিও না। ডায়বেটিসের রোগী বেশি খেলে শরীর সইবে না।”

“আরে আব্বু কি যে বলছেন? আমার আব্বা বলতেন খাবার মজাদার হলে মোটেও শরীরের কথা ভাবতে নেই। খেয়ে পেট ভরলেই শান্তি।”

“আচ্ছা মা দাও দাও আমার ওমনেও লোভ জাগছে শাক দেখে। প্রথমে মাছ ভুনা দেখে জ্বিভে জল এসে গিয়ে ছিল। তাই প্রথমেই সেই স্বাদ নিতে খেয়ে নিলাম।”

আমি হেসে শারফান এর পাতেও দিলাম। শাহানা আমায় ধরে শারফান এর কাছে বসালো। তার দিকে একপলক তাকালাম। কিন্তু সাড়া নেই। তাই জোরপূর্বক হেসে শাহানা কেও ভাত বেড়ে দিলাম। আমার দেবর কে তো বলতেই হচ্ছে না। সে মনের সুখে খেয়ে চলেছে। হাতের আঙ্গুল চেটেপুটে খেতে খেতে বলে,

“মাশাআল্লাহ ভাবী আপনার হাতে জাদু আছে। প্রতিদিন আপনিই রান্না করিয়েন ভাবী।”

“ইন শা আল্লাহ্ দেবরজী।”

চেয়ার টানার শব্দে চোখ ফিরিয়ে দেখি শারফান উঠে পড়েছে। হাত ধুয়ে দরজার দিকে এগোতে নিলেই আমার শ্বশুর থামিয়ে দিলেন। সেও থেমে গেলো। তবে পিছু মোড়ে দেখলো না। শ্বশুর আব্বু গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন।

“এখন দুপুর দুটা বাজছে। তীব্র তাপদাহে আজ কলেজও বন্ধ। তবে কোথায় যাচ্ছো এ সময়?”

“আব্বু কলেজ থেকে আমার কলিগ কল করেছেন। আজ থেকে ছাত্রদের সিটি মার্কস জমা দিতে হবে। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। আমি আবার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এই ব্যাচের শ্রেণী শিক্ষক। দায়িত্ব আমার উপরে একটু বেশি।”

শ্বশুর আব্বু আর কিছু বললেন না। শুধু সাবধানে যেতে বললেন। শারফান চলে গেলো। ইশ আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? লোকটা আমার রান্না নিয়ে কোনো রুপ মন্তব্য করেননি বলে? ধ্যাঁত আমিও না কি যে ভাবছি। শাহানা আর শেরহাজ নিজ নিজ রুমে চলে গেল। কাজের ছেলেটা বাসন কোসন গুছিয়ে নিজ হাতে তার স্ত্রীর কাছে দিয়ে আসছে। সন্ধ্যার পর তারা নিজ গৃহে ফিরে যায় ভোর হলেই কাজের সূত্রে চলে আসে। এই নাকি নিয়ম তাদের এই বাড়িতে। নিজের অভ্যন্তরীণ গৃহস্থের দশা নিয়ে সন্দিহান হলেও সামনে প্রেমময় দম্পতি দেখতেও ভালো লাগে। থাক না আমার আর আমার স্বামীর মধ্যকার দূরত্ব। কোনো একদিন মিটবে সেই ক্ষুন্ন আশা মনে পুষে রুমে চলে এলাম। শারফান তার ফোন বিছানায় রেখেই চলে গিয়েছে। হয়ত পাসওয়ার্ড খুলতে না পারার দুঃখে। ভেবেই হাসি পেলো আমার। ফিক করে হেসে দিলাম। ফোন হাতে নিয়ে পাসওয়ার্ড খুলতেই স্ক্রিনে জারিফার সুশ্রী মুখ ভেসে উঠল। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। জারিফা এই পৃথিবীর মাঝে নেই। তবুও কারো অন্তরে নির্দ্বিধায় বসবাস করে চলেছে। আমি থেকেও যেনো নেই। জারিফার ছবিটাকে সরিয়ে দিলাম না। যেহেতু ফোনের মালিক শারফান সেহেতু অপেক্ষায় থাকব তার নিজ ইচ্ছায় সরানোর দিনের। নিজের মোবাইল নাম্বার মুখস্ত ছিল। কল দিলাম রিং হচ্ছে। যত রিং হচ্ছে বুকের ভেতর তত অস্থিরতা অনুভব করছি। নানা ঠিক আছেন কিনা তা নিয়ে আশংকা হচ্ছে। হঠাৎ কল রিসিভ হলো। কাজের যে মহিলাটি আসতেন। সেই মহিলা কল রিসিভ করেছেন। ফোন চেপে দৃঢ় গলায় নানার ব্যাপারে জানতে চাইলাম। মহিলাটি হতাশাময় কণ্ঠে বলেন,

“আপা-রে তোমার নানাকে পুলিশ জেলের মাঝে পুরে দিয়াছে। পুরো একদিন হয়ে গেলো তোমার খবর কেউ পাইলো না দেখে। সবাই তোমার নানা-রে তাচ্ছিল্য করতে লাগল। নানা বিধ্বস্ত হইয়া জেলের মাঝে সময় কাটান। আপনে চাইলে কথা বলাতে পারুম আপা।”

মহিলাটির কথা শুনে চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। চোখ মুছে কাঁপা গলায় সুধালাম।

“ও কুসমা আপা আমাকে কোনো ভাবে নানার সাথে কথা বলিয়ে দিন না।”

“ঠিক আছে আপা আপনাকে আমি বিশ মিনিট পর যাইয়া কল দিতাছি।”

“ঠিক আছে আপা আমি অপেক্ষা করছি।”

কট করে কল কেটে দিলো অপরপাশে হতে। নানা কে জেলে নেওয়া হলো আর আমি অভাগী সংসারে পরে নানাকে ভুলে গেলাম। যিনি আমাকে বাঁচাতে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিলেন। না আমি গুটিয়ে বসে থাকবো না। তখনি শাহানা হেলেদুলে রুমে চলে এলো। আমি তাকে দেখে সর্তকতার সাথে চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে পিছু ঘুরলাম। শাহানা মুখ ফুলিয়ে বলে,

“ভাবী একা একা কেনো বসে আছেন? আমি আরো ভেবেছি আপনি আমার রুমে এসে গল্প করবেন। আপনাকে না আসতে দেখে নিজেই চলে এলাম। তবে এ কি আপনার চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে কেনো? কিছু পড়েছে চোখে না কান্না করছেন? ভাইয়া কিছু বলেছে ভাবী জারিয়ার জন্য?”

শক্ত কণ্ঠে নামটা উচ্চারণ করল শাহানা। তা খেয়াল করে আমি মাথা না-সূচক দুলিয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলাম। এতে শাহানা উৎফুল্ল হয়ে মিটি কণ্ঠে বলে,

“তাহলে আসুন ক্যারম খেলি।”

“আব শাহানা বোন আমার এখন কাপড় ধুঁয়া বাকি আছে।পরে এসে খেলি?”

কথার মাঝে শারফান এর ফোন ভাইব্রেট হতে লাগল। আমি ফোন চেপে রাখলাম। কোনো ভাবেও শাহানার সামনে সত্য প্রকাশিত করতে ইচ্ছুক নয়। শাহানা ঠোঁট কামড়ে বলে,

“আচ্ছা ভাবী তাহলে আমি এখানে বসে অপেক্ষা করি। আপনি আসলে না হয় খেলবো।”

“আবব না শাহানা তার দরকার নেই। আমি তোমার কাছে আসবো তো।”

“ঠিকাছে ভাবী তবে আপনি তোতলাচ্ছেন কেনো?”

“আআরে না আমার গলায় কাঁটা আটকে গেছিল। সেটা বের করার পর থেকে গলায় একটু ব্যথা করছে। তুমি যাও আমি আসছি ওকে?”

শাহানা ওত না ভেবে ‘ওকে’ বলে চলে গেলো। ফোনের ভাইব্রেশন অফ করে কল রিসিভ করলাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) অপরপাশ থেকে
ভাঙ্গা নিপীড়িত নানার কণ্ঠ শুনে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। ফোন চেপে ধরে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম।

“নানানানুভাই আপনি কেনো আমাকে পাঠিয়ে দিলেন? আপনার থেকে ঐ জেলে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাই না? আপনি আর চিন্তা করিয়েন না। আমি আজ বাদে কাল কোনো না কোনো ব্যবস্থা করতেছি।”

“না-রে নাতীন শুন সংসারে মন দেহ্। তোর নানুভাই তোর নানীরে কবর দিতে পারল এই যথেষ্ট। তোরেও ভালো ঘরের মাঝে পাঠিয়ে আমি উদ্ধার। নইলে মরে গিয়ে তোর বাবা-মায়ের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হতো। আচ্ছা নাতীধ তোর জামাই কেমন-রে? তোকে ভালোবাসে তো?”

চোখের পানি গণহারে ঝরছে। নানার কথায় মুখ চেপে কান্না আটকে বললাম।

“জি নানুভাই তোমার নাতজামাই অনেক ভালা। আমারে অনেক ভালোবাসে। প্রতিদিন চোখে হারায়। আজকে প্রথম রান্না করেছি নানুভাই। উনি খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জয়নাল আঙ্কেলও খুব পছন্দ করেন আমায়। আমার চেয়ে ছোট-বড় দুই ননদ-দেবর ও আছে। ওরাও খুব পছন্দ করে আমাকে।”

“যাক আল্লাহর লাখ লাখ শোকরিয়া।‌ তোর নানুভাই এবার শান্তিতে মরতে পারবো।”

“নানুভাই প্লিজ এমনটা বলো না। আমি আসব নেহ্। আপনি একা সামলে উঠতে পারবেন না।”

“ও চাচা কয়েদিদের এতক্ষণ ফোনালাপ করার নিয়ম নেই। আপনারা একঘণ্টা যাবত কথা বলছেন। আপনি মুরব্বি দেখে কথা বলতে দিছি। এখন আর নয়।”

কল কেটে গেলো। অপরপাশে বোধহয় থানার অফিসারই ফোন নিয়ে ফেলেছে। হঠাৎ ফোন পুনরায় বেজে উঠায় কল রিসিভ করতেই কুসমা আপার কণ্ঠ শুনা গেলো। তিনি হতাশার কণ্ঠে বলেন,

“আপা ফোন দিয়া দিছে। আপনার নানা শেষে কইলো আপনাকে বলতে জেলে না আইতে।”

“ঠিকাছে আপা আপনি একটু বাড়ি গিয়ে সাফসুতরো করে রাখেন। আমি আপনার ভাইরে নিয়া ঘুরতে আসবো আজ বাদে কাল।”

“ওমা সত্যি আপা? তাইলে আজই আমি যাইয়া সাফসুতরো করে মুছে দিয়া আসি।”

“জি আপা যান।”

কল কেটে ফোন চার্জে লাগিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। যেহেতু শাহানার সাথে খেলার শর্ত ছিল সেহেতু ঠান্ডা তরমুজের শরবত বানিয়ে তার রুমে গেলাম। রুমে শেরহাজ কে দেখে তার হাতেও শরবত এগিয়ে দিলাম। মৃদু স্পর্শ লাগলেও বড় ভাইয়ের নজরে দেখে হেসে স্পর্শ হওয়াকে পাত্তা দিলাম না। শাহানা ক্যারমের গুটি খুলে সাজিয়ে নিচ্ছে। শেরহাজ আমার পাশে গাঁ ঘেঁষে বসল। আমি হেসে শাহানার সাথে খেলায় মনোযোগ দিলাম।
খেলার মধ্যে আমার পরবর্তী নিশানা হলো লাল গুটি। কারণ আমার কালো গুটি সব গর্তে ঢুকিয়েছি। শাহানার এখনো তিনটি সাদা গুটি বাকি। কিন্তু সমস্যা হলো লাল গুটিটা কোণারে ঠেসে লেগে আছে। তার জন্যে আমি কোমর বাঁকা করে হেলে লাল গুটিকে সরাতে নিলেই কেউ আমার হাত চেপে দাঁড় করিয়ে চ*ড় লাগায়। হতভম্ব হয়ে হাতের মালিকের দিকে তাকালাম। শারফান কে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ নামিয়ে ফেললাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)লোকটা এতো রেগে আছে কেনো? পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করেছি বলে? ঢোক গিলে গালের থেকে হাত সরিয়ে আশপাশ না দেখে ছুটে অন্য রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। রুমটা শারফান এর রুমের বিপরীত পাশেই। আয়নার সামনে গিয়ে নিজের প্রতিবিম্বে নজর পড়ল। গালে শক্ত চড়ের দাগ বসেছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না থামাতে চেয়েও পারলাম না বিছানায় গুটিসুটি হয়ে কাঁদতে লাগলাম। কতক্ষণ কেঁদেছি তার ঠিক নেই। চোখ খুলতেই খেয়াল হলো আমি এখনো সেই রুমেই। তার মানে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বুঝেই চুপটি করে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে রইলাম। ঘড়ির কাঁটায় এখন মাগরিবের আযানের সময় হয়েছে। শারফান এসে চ*ড় লাগিয়ে ভুলের ক্ষমা অব্দি চাইলেন না। একটু এসে খবর নিলেও পারতেন আপনি শারফান! মনে মনে কথাটি আওড়ে নিলাম। ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে শাড়ির আঁচল মাথায় দিয়ে দরজা খুলতেই সামনে শাহানা কে নজরে পড়ল। সে নিজেও ভয় পেলো। আমি হঠাৎ দরজা খুলব এ ধারণা করেনি সে। কৃত্রিম হাসি ঠোঁটের কোণায় টেনে আমার হাত ধরে বলে,

“সরি ভাবী আর কখনো আমি আপনাকে ফোর্স করিয়ে ছেলেদের মাঝে খেলতে আনবো না। ভাইয়া আজকে শেরহাজ কে কেনো যেনো খুব বকেছে! আমি জিজ্ঞেস করলেও বলেনি। উল্টো শেরহাজকে তার রুমে টেনে নিয়ে কথা শুনিয়ে বেরিয়ে গিয়ে ছিল শারফান ভাইয়া। এখনো অব্দি বাসায় আসিনী।”

“ভাবী আইম সরি টু।”

শেরহাজ কে দেখে আমার মায়া হলো। দু’ভাই-বোন কে শারফান কেনো বকলো বুঝে উঠতে পারলাম না। দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম।

“আচ্ছা বলো নামাজের পর নাস্তা বানাতে হবে। কি খাবে তোমরা? আমি ওতো নাস্তা না বানাতে পারলেও চীজ পাস্তা আর চীজ পটেটো বল বানাতে পারবো।”

“চীজ পটেটো বল কি ভাবী?”

“তা তো এখন বলছি না। সন্ধ্যার নাস্তায় দেখতে পাবে। এখনো যাও দুজনে নামাজের জন্য ওযু করে নাও। শেরহাজ ভাই আপনি মসজিদে চলে যান। ছেলেদের জন্য উত্তম হলো মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা।”

“ওকে ভাবী যাচ্ছি।”

বলেই শেরহাজ আর শাহানা চলে গেলো। শারফান নেই শুনে ভালো লাগছে কারণ সামনে থাকলে রাগ লাগতো বিনা কারণে চড় মেরেছে এ ভেবে। তার রুমে গিয়ে নিজের লাগেজ খুলেই অবাক। লাগেজের ভেতরখান শূন্য। থমকে আলমারি খুলে দেখি আমার জামা শারফান এর আলমারিতে সাজিয়ে রাখা। তব্দা খেলাম লোকটা কি আমি রাগ করেছি ভেবে অভিমান ভাঙ্গানোর প্রয়াস চালিয়েছেন? তাতে কি আমি গলে যাবো ভেবেছেন তিনি? মোটেও না। নিজের প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে সেই বিপরীত রুমে চলে এলাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)শাড়ির পরিবর্তে আজ থেকে থ্রিপিচ পরব বলে ভেবে নিলাম। যে গরম পড়ছে শাড়ি সামলানো খুব মুশকিল। ভাগ্যিস ছোট থেকে সুতি কাপড়ের প্রতি জোঁক বেশি ছিল আমার। তাই মা আর নানী সুতির থ্রিপিচ কিনে জমিয়ে রাখতো। আজ কাজেও দিচ্ছে। শাড়ি বিশেষ দিনে পড়বো বলে শারফানের রুমের আলমারিতে রেখে আসলাম।
কানে আযানের শব্দ আসতেই চোখ বুজে দোয়া পড়ছি। খুতবা শেষে নামাজ আরম্ভ হতেই আমিও জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায়ে মগ্ন হলাম।

সন্ধ্যা ৬:৪০ বাজে,
গরম তাজা চীজ পাস্তা আর চীজ পটেটো বল বাটি করে টেবিলে এনে সবার পাতে সাজিয়ে দিলাম। তারা এখনো আসেনি। তবুও নিজের যে দায়িত্ব তা মিটিয়ে নিচ্ছি। পাশেই এক জগ ভর্তি তরমুজের শরবত বানিয়েছি। শ্বশুর আব্বু নামাজ পড়তে যাওয়ার পূর্বে খুব আবদারের সহিতে শরবত বানাতে বলেছিলেন। সেই আবদার পূরণেই ঘন-তরল তরমুজের তরতাজা শরবত বানিয়ে গ্লাস ভর্তি করে সবাইকে ডাক দিলাম।
এর মাঝে মোটেও ফুপি শ্বাশুড়ি কে খেয়াল করলাম না। দুপুরেও খেতে আসেননি তিনি। শাহানা ডেকেছিল কিন্তু তিনি মাথা ব্যথা করছে বলে ওষুধ খেয়েই ঘুমে কাঁদা হয়ে ছিলেন। সন্ধ্যায় আসবে কিনা জানি না। তবুও কটু কথা শুনার ভয়ে ফুপি শ্বাশুড়ির জন্যেও সাজিয়ে রাখলাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
হঠাৎ কারো কাশির শব্দে আমি চোখ তুলে তাকালাম। শারফান কে এখন স্বাভাবিক লাগছে। সে সময় মুখটাও লাল হয়ে গিয়ে ছিল। এখন কি ডপ মারতে এসেছেন তিনি?

“গরু মে*রে জু*তা দান করতে এসেছেন আপনি?”

“হ্যা আসলে তোমার নাকি একজোড়া জুতা আছে খালি। তাই মার্কেট থেকে চার জোড়া জুতা এনেছি। ভেবে নাও ঐ চ*ড়ের কারণে সরির বিনিময়ে উপহার দিচ্ছি।”

জুতা দেখে ভালোও লাগছে উল্টো রাগও লাগছে। লোকটা ইচ্ছেকৃত সুন্দর কালেকশনের জুতা এনেছেন। যাতে আমি গলে যায়। কিন্তু আমি মোটেও গলবো না। আজকে এ লোককে জব্দ করবো। এমন জব্দ করব না নিজের দাদীর নাম মনে ভুলে যাবে হাহ্। মুখ ঝামটা মে*রে শারফান এর সামনে থেকে রান্নাঘরে এসে নোংরা পাতিল এক পাশে রেখে দিলাম। সবার খাওয়া শেষ হলেই বাটি গ্লাস ধুয়ে পড়তে বসব। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা মাথার উপর মাছির ভনভন করে ঘুরছে। না পড়লে কিছুই পারবো না। তার চেয়ে বড় কথা আমার পরীক্ষার হল সেই গ্রামেই পড়েছে। যেখান থেকে চলে এলেও প্রবেশপত্র চলে আসায় কলেজ পরিবর্তন করার উপায় নেই। সেসব ভাবনার মাঝে কাঁধে হাত রাখল কেউ। শারফান এর কথা মাথায় আসতেই রেগে পিছু মোড়ে শেরহাজ কে দেখে হকচকিয়ে গেলাম। গলার উড়না ঠিক করে মাথায় উড়না টেনে আমতা আমতা করে বললাম।

“আরে শেরহাজ ভাই আপনি আমাকে ডাকলেই পারতেন।”

“ভাবী অস্থির হয়েন না। আব্বু ডাকছে সবাই টেবিলে এসে বসেছেন। নোট্যাংকি ফুপিও এসে বসেছেন মাত্র।”

“ওহ আচ্ছা আসেন যাই।”

শেরহাজ কে রেখে আমিই তড়িঘড়ি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।

চলবে…..

এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-০২

0

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০২

“আম্মু জানো তোমার বউমা এক নম্বরের নির্লজ্জ মেয়ে। ওর কারণে নিজের রুমে ঢুকতেই ভয় লাগছে। পা রাখতেই যদি বলে উঠে,’জামাই আপনার কি প্রেম পাচ্ছে?’ এই প্রশ্নের উত্তরের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তোমার ছেলের। সামনে পেলেই নাউজুবিল্লাহ্ মার্কা কথা বলা শুরু করে দেয়।”

শারফান রুমের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মেরে ফিসফিসিয়ে নিজের সাথে কি যেনো বলছে। সেই সাথে আমাকে চোরা চোখে দেখছে। আমি রুমের ভেতর থেকে তার কান্ড দেখছি। বাসররাতে শক্তপোক্ত সুঠামদেহী লোকের গম্ভীর মুখশ্রী দেখে ভেবে ছিলাম লোকটা বোধহয় বদ মেজাজী। কিন্তু এতো আমার ভাবনার বিপরীত দিক প্রমাণিত হলো। আজ সকাল থেকে আমার সাথে মেপে মেপে কথা বলছে। যা শুধু রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও মানা যেতো। তবে লোকটা আমার শ্বশুরের সামনে অব্দি ভয়ভীতি চেহারা বানিয়ে রেখেছিল। দেখতে কি পরিমাণ লজ্জা লাগছিল আমার! ইচ্ছে তো করছে লোকটার গলা টিপে দেয়। নিজের মাত্রাতিরিক্ত রাগকে থামিয়ে বললাম।

“কুল ফারজানা কুল। স্বামী তোর তাকে সামলাতেও হবে তোর। এই নাকি আরো সরকারি কলেজের মাস্টার ভাবা যায়।”

‘আহেম আহেম’ স্বামীর বেক্কলমার্কা কাশির শব্দে নিজেকে ধাতস্থ করে সামনে তাকালাম। তিনি আমার কাছে এসে গম্ভীর গলায় বলেন,

“আপনার পড়ালেখা কি আর করতে হবে না? ঘরের মধ্যে বসে কি ডিম পারার ইচ্ছে আছে?”

“ডিম পারতে না পারলেও বাচ্চা দিতে অবশ্যই পারবো।”

বলেই চোখ মারলাম। লোকটা থতমত খেয়ে উল্টো কাশতে লাগল। আমি বিছানার পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে স্বামীর মুখের কাছে ধরলাম। তিনি পানি মুখে নিতেই আমি বললাম।

“সোজাসাপ্টা বললেই পারেন আপনার থেকে আমার সাথে শুইতে ইচ্ছে করছে।”

আমার কথা শুনেই শারফান এর মুখ ভর্তি পানি ফসকে বেরিয়ে গেলো। ভাগ্যিস আমি তার সামনে ছিলাম না। নাহলে কতগুলো জীবাণু আমার সুন্দর মুখের সাথে আকর্ষিত হতো কে জানে? সে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোমার মাথায় খালি এসব বেহুদা চিন্তাই ঘুরে? কখনো পজেটিভলি কথা বললেও তো পারো।”

“শুইতে চাওয়া মানে হলো বিশ্রাম করা এর আবার পজেটিভ নেগেটিভ মিনিং কোথার থেকে উদয় হলো? আপনি নিজেই ডার্টি মাইন্ডেড মাস্টার। জোয়ান মেয়ে দেখলেন কি! ওমনেই নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা করছেন ছিঃ।”

লোকটাকে ফাঁসাতে ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। রান্নাঘরে গিয়ে মন খুলে হাসলাম। পরক্ষণে নিজের নানার কথা মাথায় আসতেই মন খারাপ হয়ে গেলো। আজ পুরো দুদিন পার হয়ে গেলো। অঞ্জলপুর গ্রামে নানার কি হাল হয়েছে কে জানে? আমাকে নিরাপদে শহরে পাঠিয়ে তিনি কি সামাল দিতে পারছেন সব? লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)হঠাৎ সৎ চাচার কথা মাথায় আসতেই নিজের হাতের দিকে তাকালাম। এই হাত দিয়েই ঐ বদ*মা*ই*শ কে র*ক্তা*ক্ত করেছি। ঢোক গিললাম আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানেই না আমার দ্বারা কত বড় পাপ হয়েছে। আচ্ছা তারা জানলে কি আমায় ত্যাগ করবেন?
মনের ভাবনার মাঝে কাঁধে কারো স্পর্শে চমকে পিছু তাকালাম। কিশোরী এক মেয়েকে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো। আমার চাহনী দেখে মেয়েটা মিটি হাসি দিয়ে বলে,

“আমি হলাম তোমার ননদীনি। মেজো ভাইয়া কেও দেখোনি তাই না? ভাইয়া আর আমি তোমাদের বিয়েতে ছিলাম না। ভাইয়া সাউদান ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। তাই ওখানকার হোস্টেলে থাকে। এখানে বন্ধেই আসে। গত রাতেই আমরা এসেছি। তুমি আর ভাইয়া ঘুম দেখে আমরা ডিস্টার্ব করিনী। ওহ এতো কথার মাঝে ভুলেই গেলাম বলতে আমি হলাম শাহানা মারুফ। সামনে এসএসসি দেবো আর মেজো ভাইয়ার….।”

“ছোটু আমার নাম আমিই বলবো। সো মিসেস ভাবীজি আমি হলাম তোমার একমাত্র দেবরজী মিস্টার শেরহাজ মারুফ।”

দুই ভাই-বোন কে আসলেই না দেখে ভেবে ছিলাম শারফান একলা সন্তান আমার শ্বশুরের। এখন দেখছি পরিবারে সদস্য মোটামুটি ভালোই আছে । আমি মুচকি হেসে বললাম।

“তোমাদের সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগল। আমি ফারজানা। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবো।”

“পরীক্ষা দেবেন আবার এই মহারাণী দেখতে তো চাকরানীর থেকে কম মনে হচ্ছে না।”

পান‌ চিবুতে থেকে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল এক ভদ্রমহিলা। তার কথায় আমি অপমানিত বোধ করলেও জবাব দিলাম না। কেননা অপরিচিত কে না কে তার সাথে লাগতে কেনো যাবো? আগে দেখি এই মহিলা এদের কি হয়? তারপর বুঝতে পারবো। শাহানা রাগী গলায় বলে,

“চাচী এসব কি ধরনের কথাবার্তা ভাইয়া শুনলে অবশ্যই রাগ করবে। আর এই মেয়ে কি? এটা আমাদের ভাবী আর আপনাদের বউমা।”

“হাহ্ ঢং কত।”

“ততই ঢং যত আপনার আছে।”

বলেই আমার চুল নেড়ে দুই দেবর-ননদী কে নিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে এলাম। সেখানে শ্বশুর কে চা-নাস্তা দিচ্ছে কাজের ছেলেটা। এই ছেলে আর তার বউ বাড়ির কাজ কারবার করে যা দেখে বুঝতে পারলাম। চাচী শ্বাশুড়ি এসে ছেলেটাকে ডাক দেয় তাও আবার অভদ্র ভাষায়। শুনেই আমার বিতৃষ্ণা চলে এলো এই মহিলার উপরে। শ্বশুর আব্বু মুখ গম্ভীর করে চাচী শ্বাশুড়ি কে বলেন,

“দেখো জাহানারা কত বার বলব অশ্রাব্য ভাষা মুখ থেকে বের করতে হলে আমার ঘরের ভেতর প্রবেশ করবে না। আজকেই শেষ পরের বার হলে সোজা নিজের বাড়ির রাস্তা ধরবে।”

চাচী শ্বাশুড়ি কে দেখলাম তিনি আমার শ্বশুরের চোখের আড়ালে মুখ বাঁকালেন। আমি তৎক্ষণাৎ টুন মেরে বললাম।

“আরে চাচী আপনি আব্বুর কথা অমান্য করে মুখ ভেংচি দিচ্ছেন কেনো? এটা যে গর্হিত অপরাধ জানেন না? আমার শ্বশুর কত সাদরে নম্র গলায় আপনাকে বুঝালেন আর আপনি মুখ বেঁকিয়ে আমার শ্বশুরের অপমান করছেন?”

আমার চটর ফটর কথায় চাচী শ্বাশুড়ি থতমত খেয়ে মাথা না নেড়ে না না করে বলেন,

“না আমি বলছিলাম আর করব না তুমিও না বউমা খুব মজাদার।”

“আমি কি কোনো খাবার যে মজাদার হবো?”

চাচী শ্বাশুড়ি চোখ গরম করে তাকাচ্ছেন বারংবার। তিনি পারছেন না বসা থেকে উঠে এসে আমাকে চ’ড় মা’রতে। মহিলাকে যে হারে জব্দ করছি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) দুই দেবর-ননদী মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। আমার শ্বশুর গম্ভীরতার চাহনী কাটিয়ে ফিচেল হেসে বলে,

“জাহানারা আমার বউমা হলো সেরা ডপবাজ। বেঁচে থেকো তার কাছ থেকে।”

এই বলে শ্বশুর আব্বু চা নাস্তা শেষ করে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“বউমা রান্নার বাজার শেষ। আমি বের হচ্ছি রুই মাছ আর মুরগির মাংস কেটেকুটে লোক ভাড়া করে পাঠিয়ে দেবো। আজকে আমার রুই খেতে মন চাচ্ছে ভুনা করে রেঁধো কেমন? আমি সোজা দোকান বন্ধ করে আসবো।”

আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। পড়ে গেলাম মুসিবতে। বাবার ঘরে রান্না করা কখনো শিখা হয়নি। তার উপর নানীর ঘরে নানী লোক দিয়ে রান্না করাতেন। এখন আমি কেমনে রাঁধবো? চিন্তিত মনে রুমে চলে আসলাম। এদিক সেদিক খেয়াল না থাকায় জানি না যে আমার হাদারাম স্বামী গোসল সেরে তোয়ালে পরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বিছানায় বসে স্বামীর মোবাইল হাতে নিলাম। আমার ফোন নানার কাছে থেকে গেছে। এখন ফোন নিতেও সময় লাগবে। তাই আপাতত স্বামীর মোবাইলকে কাজে লাগাবো। অনেকক্ষণ ধরে পাসওয়ার্ড খুলার চেষ্টা করলাম। খুলতে না পেরে আমার স্বামী অর্থাৎ শারফান এর দিকে তাকালাম। তার পরণে শুধু লুঙ্গি আর হাত কাটা গেঞ্জি। টিশার্ট গায়ে জড়ায়নি তাতেও আমার খেয়াল নেই। যেমনে হোক আজকে শ্বশুর কে খুশি করব এই চিন্তা আমার মাথায়। শারফান এর দিকে তাকিয়ে আদেশ করলাম।

“জলদি ফোনের পাসওয়ার্ড বলেন।”

“একদম না আমার ফোন কেনো তুমি চালাবে? তোমার নিজের ফোন কই?”

“আমার ফোন নানার কাছে দিয়ে চলে এসেছিলাম। বলে ছিলাম আমার জামাই কিনে দেবে। সো আপনি কিনে না দেওয়া অব্দি আপনার ফোনই আমার ফোন। যো তেরা বো মেরা বি হে সোয়ামী জি। এখন ফটাফট পাসওয়ার্ড বলেন।”

“বলব না। আচ্ছা জোরজবরদস্তি করতেছো তুমি?”

“দেখেন আমার সরল রুপের পরীক্ষা নিয়েন না। লুঙ্গি টান দিয়ে খুলে ভিডিও বানিয়ে একে বারে স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেবো। এরপর কানের থেকে ধোঁয়া বের হবে আপনার মাস্টার গিরির।”

“আআআমি দেবো না বববললাম তো তো।”

“দেবেন না সত্যি তো?”

“না না দিচ্ছি।”

এই বলে শারফান আমার হাত থেকে ফোনটা চট করে নিয়ে জারিফার নাম লিখলো। দেখেই মেজাজটা গরম হয়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে শারফানের দিকে তাকিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে প্রথমেই পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে রাখলাম ‘জামাই আমাকে উম্মাহ দাও’। বাঁকা হেসে পাসওয়ার্ড সেভ করে ইউটিউব ভিডিওতে রুই মাছ ভুনা করার কৌশল দেখছি। শারফান অবশ্য আড়চোখে দেখেছে কিন্তু প্রশ্ন করেনি। আমি প্রায় একঘণ্টা যাবত দেখলাম। যোহরের আযান দেওয়ায় শারফান ফোন রেখেই বেরিয়ে গেলো। আমিও তার ফোন চার্জ দিয়ে নামাজ পড়ার জন্য ওযু করে নিলাম।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ঘণ্টাখানেক পর শারফান রুমে এসে ফোন হাতে নিতেই দেখে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ। বেচারার ইচ্ছে করছে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে কপাল ফাটাতে। কিন্তু সে অসহায়। নিজেকে সামলে জোরে জোরে ‘হেই মেয়ে’ বলে ডাক দিলো। কিন্তু তাতে ফায়দা হলো না। মেয়েটাকে আসতে না দেখে শাহানা কে সামনে পেলো। তাকে ডেকে বলে,

“এই শাহানা তোর ভাবী কোথায়?”

“ভাবী কে রান্নাঘরে রাঁধতে দেখলাম।”

শারফান মনে মনে বলল,

“দাঁড়াও মেয়ে অনেক জ্বালিয়েছো এবার আমার পালা।”

শাহানা কে যেতে ইশারা করে সে কাপড় চেঞ্জ না করেই রান্নাঘরের সামনে চলে গেল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তখনি ভেতরে তাকাতেই থমকে গেলো। ধীরস্থির পায়ে হেটে রমণীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। পাতিলের ঢাকনা খুলে পরখ করছি মাছের মধ্যে থাকা পানি কমেছে কিনা। লবণ ছেকে আরেক বার লবণ মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিলাম। এখন মাছ হতে হতে আমি পুঁইশাক রান্নার কাজে হাত দিলাম। পাশেই কাজের মহিলাটা কেটেকুটে রাখছে সব। তাকে আগেই বলে রেখে ছিলাম আমি।
বড় ফ্রাইপেনে তেল ঢেলে গরম হতে দিলাম। এর মাঝে
রেহানা বুবু বলে ডাক দিলাম।
তিনি শুনেছেন বোধহয় এই ভেবে বললাম।

“বুবু শাক ধুয়া হলে তাড়াতাড়ি দাও। পেঁয়াজ রসুন তেলে দিয়ে ফেলেছি।”

কথার ছলে মসলা দিয়ে খুন্তি নাড়ছি তখনো বুবু শাক না দেওয়ায় তীব্র গলায় পুনরায় চাইলাম। রেহানা বুবু দিচ্ছে না দেখে যেই না পিছু মোড়লাম শক্তপোক্ত এক শরীরের সাথে আমার শরীরের ধাক্কা লাগল। মাটিতে পরতে পরতে বেঁচে গেলাম। চোখ ফিরিয়ে দেখি আমার হাদারাম থুক্কু স্বামী হ্যাবলার মত তাকিয়ে আছেন। তার তাকানো কে ঠোঁট নাড়িয়ে চুমুর ইশারা করলাম। তিনি হুঁশে ফিরলেন। আমায় ঠিকভাবে দাঁড় করিয়ে বলেন,

“আহুম আমি আসছি জানতে আমার মোবাইলের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করেছো কেনো?”

“ওমা এই কথা জিজ্ঞেস করতে রান্নাঘরে চলে এলেন?”

“দেখো ফাজলামি চাইছি না তাড়াতাড়ি পাসওয়ার্ড বলো।”

“ঠিকাছে বলছি শুনেন আগে আমার কথা।
জামাই আমাকে উম্মাহ দাও।”

“কিই ছিঃ কেমন খারাপ মেয়ে তুমি দিনদুপুরে আসতাগফিরুল্লাহ্ মার্কা কথা বলছো। আসতাগফিরুল্লাহ্ তওবা তওবা।”

বলেই স্বামী তার দু গালে মৃদু থাপ্পর দিলো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। নিজের বউকে চুমু খেতে বলা কি গুনাহ নাকি? শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে খুন্তি’টা শারফান এর মুখের কাছাকাছি রেখে বললাম।

“আপনাকে কি দেখে কলেজের শিক্ষক বানিয়েছিল সেখানকার অথোরিটিগণ? তারা কি দেখেনি আপনি যে একটা আহাম্মক নাম্বার ওয়ান। বউকে চুমু দেওয়া আসতাগফিরুল্লাহ্ হলে রাতবিরেতে বউয়ের কোমর চেপে ধরা মাশাআল্লাহ হয়? হুম জবাব দেন?”

“কি না না আআআআমি কখন তোমার কোমর চেপে ধরছি? আমি বালিশ পারিয়ে ওপার শুদ্ধ যাইনি। সকালেই ঘুম থেকে উঠে দেখেছি আমি আমার জায়গায় ঠিকঠাক ভাবে ছিলাম।”

“এ্যাঁ আসছে সাধুবাবা কোনখান। পুরো রাত আমার কোমর চেপে ধরে ঘুম দিয়েছেন তাও পাশবালিশ ভেবে। সকালে আমি জাগনা পেয়ে ছিলাম বলে কিছু বলিনী। ভেবেছি আপনি ঘুমের ঘোরে চেপে ধরে ছিলেন। তাই নিজ হাতে আপনাকে আপনার জায়গায় শুয়ে দিয়ে ছিলাম। যান তো এখন মাথা নষ্ট করিয়েন না আমার।”

কথা শেষ করে পুনরায় খুন্তি নাড়তে লাগলাম‌। মনেমন হেসে কুটিকুটি অবস্থা আমার। লোকটা কে আচ্ছামত জব্দ করতে পারছি। শারফান ইতস্তত বোধ গলায় পুনরায় বলে,

“হেই মেয়ে দাও না প্লিজ।”

মেজাজ চটে যাচ্ছে লোকটার ‘হেই মেয়ে’ সম্বোধনে। আমি তার বউ। কোথায় আদুরীয় গলায় বউ বউ বলে মুখে ফেনা তুলবে তা না করে অপরিচিত মেয়েদের ডাকছে মত করে ডেকে চলেছে। তার কথায় কান না দিয়ে শাক নিয়ে পাতিলে দিলাম। ছ্যাঁত করে উঠল। দুয়েক ফুটো তেল ছিটকে শারফান এর হাতের উপর পড়ে। ‘আহহ’ করে মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠে সে। ভড়কে গেলাম। খেয়াল ছিল না ঢাকনা দেওয়ার কথা। তৎক্ষণাৎ ঠান্ডা পানিতে শারফান এর হাতকে চুবিয়ে দিলাম। পানিতে হাতকে মালিশ করছি আর ফুঁ দিচ্ছি। দাগ এতটা বসেনি তবে জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। বার্ন ক্রিম লাগাতে হবে। চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে শারফান কে ধরে রুমে আনলাম। লোকটা পুরো সময় চুপ করে ছিলো। যেনো কেউ তার মুখে তালা দিয়েছে। শারফান কে বসিয়ে আমি আঁচলে হাত মুছে আলমারি খুলে এদিক সেদিক খুঁজলাম। ফাস্ট এইড বক্স কোথায় রাখা আছে জানি না। কেননা নিজের লাগেজের কাপড় এখনো জামাইয়ের আলমারিতে রাখা হয়নি। মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করলাম।

“আপনার আলমারিতে ফাস্ট এইড বক্স কোথায় রেখেছেন?”

“থার্ড ড্রয়ারে দেখো। লাল বক্স পাবে সেখানেই হয়ত বার্ন ক্রিম রাখা।”

স্বামীর কথা অনুসরণ করে বার্ন ক্রিম পেয়ে গেলাম। সন্তপর্ণে তার কাছে গিয়ে ফুঁ দিয়ে ক্রিম লাগিয়ে দিলাম।

“তোমার খারাপ লাগে না জারিফাকে আমি ভালোবেসে উম্মাদ হয়েছি জেনে? তার জন্য তোমাকে মানছি না জেনে?”

হঠাৎ স্বামীর শীতল গলায় বলা প্রশ্নটি আমার হৃদয়কে ছন্নছাড়া করার ন্যায় থমকে দিলো। তার হাতের উপর রাখা হাত নিশ্চুপে সরিয়ে নিলাম।

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-০১

0

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#সূচনা_পর্ব

বিয়ের দ্বিতীয় রাতে স্বামী কে নিজের বান্ধবীর ছবির সাথে প্রেমালাপ করে কাঁদতে দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললাম। লোকটা নির্দ্বিধায় প্রেমের আলাপ করে কেঁদে যাচ্ছে। এতে আমি বিচলিত হয়ে পড়লাম। সদ্য বিবাহিত বধু আমি। এই ঘর, এই স্বামী আমার। সেই স্বামীর সম্পর্ক কিনা আমার বান্ধবীর সাথে চলছে? তার কাছে গিয়ে যা দেখলাম। জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা আমার। লোকটা আমার মৃত বান্ধবীর ছবি নিয়ে প্রেমের প্রলেপ আওড়ে কাঁদছে। ভেবে ছিলাম আমার বান্ধবী নিশার সাথে তার সম্পর্ক চলছে। এইতো দেখি উল্টো কেস। যে পুরুষ আমার জীবনে প্রথম পুরুষ বলে গণ্য হওয়ার কথা ছিল। সেই পুরুষ কিনা আমার মৃত বান্ধবীর পাগল প্রেমিক ছিল। বুকের ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে। স্বামীর কাছে গিয়ে একপলক তার হাতে থাকা আমার প্রিয় মৃত বান্ধবীর ছবির দিকে তাকালাম। সেই চোখ ফিরিয়ে স্বামীর চেহারায় চোখ পড়ল। লোকটা এক কথায় সুদর্শন বটে। গলায় একটা ঘন কালো তিল দেখা যাচ্ছে। এমন সুপুরুষ কয়জনের কপালে জুটে। যে কিনা তার প্রেমিকার মৃত্যুর শোক না মিটিয়ে বয়ে বেড়ায়? ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলাম।

“খুব বেশি ভালোবাসেন জারিফা কে?”

আমার মুখ থেকে বিয়ের দ্বিতীয় রাতে এরুপ কথা লোকটা বোধহয় আশা করেননি। তিনি বিস্ময় নজরে তাকিয়ে আছেন। লজ্জা পেলাম তার চাহনীতে। চোখ নামিয়ে বললাম।

“আমি জারিফার ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ড ছিলাম। আমিই সেই ফারজানা যার সাথে জারিফা একসময় আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়ে ছিল।”

চোখ তুলে স্বামীর দিকে তাকালাম। যেই চোখে কিছুক্ষণ আগেও শোকের ছায়া বিরাজ করছিল, সেই চোখে এ মুহূর্তে গম্ভীরতা ছড়িয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ভুল কিছু বলে ফেলেছি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) লোকটা কোনো জবাব দিচ্ছেন না কেনো? তৎক্ষণাৎ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমার খুব খারাপ লাগল। চিৎকার করে বলতে মন‌ চাচ্ছে।

“যদি আমাকে পছন্দই না করেন তবে বিয়ে করে ছিলেন কেনো? বিয়ের প্রথম রাতে স্বামী সোহাগ পাওয়ার কথা ছিল। অথচ সেই রাত স্বামী সঙ্গহীন নিদ্রায় কেটে গেল। সেই যখন আপনাকে রুমে আসতে দেখলাম মনটা খুশিতে ভরে গিয়ে ছিল। বিয়ের প্রথম রাত না হোক দ্বিতীয় রাতকে সুখের রাত ভেবেই পার করবো আশা করে ছিলাম। সেই আশায় ও গুঁড়ে বালি।”

কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে গেলো।‌ নিশ্চুপে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। স্বামী কে দুয়েক এক বার কাছ থেকে মৃদু গলায় ডাকলাম। সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝলাম লোকটা ঘুমিয়ে পড়েছেন। এদিকে আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। এ কাকে বিয়ে করলাম? এক টুকরো সুখের আশায় এ গৃহে সংসার সাজাতে এসে ছিলাম। ভাবিনী সংসারটা আগেই অন্যের হওয়ার কথা ছিলো।

আমি ফারজানা তায়্যিবা। মা মিসেস জুবাইদা বেগম আর বাবা জনাব আব্দুল মোল্লা। তিনি গ্রামের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার যখন সতেরো বছর তখন বাবা-মা শহর থেকে আসার পথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। সে সময় আমি হয়ে যায় এতিম কন্যা। আমার বাবার এক সৎ ভাই ছিলেন। তিনি হঠাৎ এসেই আমার নানীর কাছে আবদার করেন তিনি আমায় বিয়ে করবেন। নানী আর আমি হতবাক হয়ে গিয়ে ছিলাম কথাটা শুনে। বাবার ভাই অথবা সৎ ভাই মানেই চাচার সমতুল্য। এ পুরুষের বয়স ছিল চল্লিশের কাছাকাছি। আমার বাবার চেয়েও বয়সে বড় ছিলেন। তার আবদারে আমার নানা-নানী ক্ষেপে গিয়ে ছিলেন। গ্রামের সকলের সামনে সেদিন চাচাকে অপমানিত করে তাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন।
আমি ছিলাম নীরব দর্শক। আমার এতিম জীবনে শুধু নানা-নানী সাহারা রুপে ছিলেন। দাদা-দাদীর ভালোবাসা কখনো পায়নি। কারণ বাবা নাকি মা কে ভাগিয়ে বিয়ে করে ছিলেন। তাই বাবাকে তার পরিবার ত্যাজ্য পুত্র করে দিয়ে ছিলেন। জীবনটা তখন আমার কাছে ধ্বংস স্তূপের মনে হচ্ছিল। বাহিরে গেলেই একপ্রকার ভয়ে আতঙ্কে সময় পার হতো। নানা সঙ্গে গেলেই কিছুটা স্বস্তি পেতাম। তবুও বেশিদিন টিকতো না। গ্রামের বখাটে ছেলেরা একটু আধটু উ্যক্ত করতেও পিছপা হতো না। বাবা-মা হীন মেয়েকে কেনোই বা তারা গ্রামের সম্মানিত চেয়ারম্যান এর মেয়ে বলে সম্মান দেখাবে? অথচ এই গ্রামের প্রতিটা কষ্টের মাঝে আমার বাবা তার জীবন বাজি রেখে দিতেন। সেই কষ্ট ভুলে এখন তারা আমায় কলঙ্কিত করার পিছনে লেগে পড়ে আছেন।
এভাবে একবছর কেটে যায়। আমি এখন আঠারো বছরের যুবতী নারী। এবার এইচএসসি দেবো। আমার যৌবনে ভরা রুপ দেখেই সেই সৎ চাচা পাগল হয়ে গিয়েছেন। তার সেই কু’দৃষ্টির থেকে কি বাঁচতে পেরে ছিলাম?
নানা-নানী আর আমি মিলে টিনের ঘরের মধ্যে ভালোই চলছিলো আমাদের দিনকাল। তাদের ভালোবাসায় সিক্ত ছিলো আমার জীবন। ভেবেছিলাম আর কোনো বিপদ ছুঁইবে না। তবে ভাবনাটা শুধুই ভাব বিলাস মাত্র তা পরে বুঝে ছিলাম।
ঘরের দরজায় কারো কড়া নাড়ার শব্দে নানা লাঠি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে দরজা খুলে দিলেন। দেখলেন সৎ চাচা দাঁড়িয়ে আছেন। সঙ্গে তার দুই ছেলেপেলে। নানা-নানী আর আমি ভয়ে আঁতকে উঠলাম। সৎ চাচা নম্র গলায় বললেন,

“দেখেন মোল্লা মিয়া আপনার নাতনীকে মনে ধরেছে দেইখা বিয়ের পীড়িত বসাইতে চাইতেছি। বিয়ে কইরা নিলে দেখবেন সুখে খালী চিৎকার করবো। ওমন সুখ দেবো আপনার নাতনী কে চাদর ছাইড়া উঠবো না। আপনি একবার রাজি হইয়া যান মিয়া।”

“দেহো বাপ তুই এখান থেইকা চইলা যা। আমি আমার নাতনীর বিয়ে তোর লগে দিমু না। মরে যামু আমরা তবুও তোর লগে বিয়ে দিতাম না। আইছে কোথাকার কোন বুইড়া ব্যাটা।”

সৎ চাচার দেখলাম মাথা গরম হয়ে গেল। তিনি রাগে বলেন,

“এই হা*রাম*জাদা কি বললি খাড়া আজই তোর নাতনীর এমন হাল করমু সকালে ওর মুখ দেইখা সবাই থুথু মারবো।”

আমি ভয়ে নানী কে চেপে ধরে বসে ছিলাম। নানা লাঠি দিয়ে মা*রা আরম্ভ করলেন। আমাকে নানী কৌশলে পালাতে দিতে সহায়তা করতে নিলে নানীর গলায় কোপ বসালো সৎ চাচা। নানী বলে চিৎকার করে উঠলাম। সেই রাত ছিলো বৃষ্টির রাত। কেউ আমাদের কোলাহল শুনতে পাচ্ছিল না। নানী ঐ অবস্থায় মা*রা গেলেন। সৎ চাচা পৈশাচিক হেসে আমাকে টেনে রুমে ঢুকিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন। বুকের উপর থেকে ওড়না টেনে ফেলে দিয়ে নিজের লুঙ্গি, শার্ট খুলতে লাগলেন। আমি ভয়ে ‘নানা নানা বাঁচাও’ বলে চিৎকার দিচ্ছি। নানা নীরবে নানীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। নিজের জীবন রক্ষার্থে এক মেয়েকে সাহসী হতেই হয় নাহলে এরুপ লোকেরা জীবনটায় ছাড়খার করে দিয়ে কলঙ্ক লেপ্টে দেয়। বিছানার পাশেই নানীর সুপারি কাটার মেশিন অর্থাৎ যাঁতি রাখা ছিলো। নানী ঘুমানোর আগেই সুপারি কেটে পান খেয়ে ঘুমাতেন। আমি সেই যাঁতি নিয়ে সৎ চাচার লুঙ্গির উপর দিয়ে তার গো*পনা*ঙ্গ কেটে দিলাম। লোকটা চিৎকার করে গ*লা কাটা মুরগীর মত চেঁচামেচি করতে লাগল। এতে তার ছেলেপেলে দুটা তেড়ে আসলে তাদের মাথায় জোরেসরে আঘাত করে বেরিয়ে পড়ি। নানা কে বিধ্বস্ত দেখে তৎক্ষণাৎ নানার হাত ধরে পালাতে চাইলে নানা থেমে রইলেন। আমি অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলাম। নানা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“গোসল সেরে সুন্দর জামা পইড়া আয়। তোকে রেল স্টেশনে ছাইড়া দিমু। কাল থেকে তুই তোর জয়নাল আঙ্কেলের বাসায় থাকবি। ওর হাতে তোর যাবতীয় জিনিস কয়েক দিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দিমু। আর হুন জয়নালের পোলার লগে তোর কালকেই বিয়ে হইবো। আমি তোর নানীরে কবর না দিয়া কোথাও যামু না। এ ঘরও সামলানো লাগবো। আমার চিন্তা করিস না। তোর নানা বহুত শক্ত মানুষ। কখনো জামাইরে অবহেলা করিস না। সবসময় তারে ভালোবাসবি। জামাই যা বলবো মানিস। জামাই রাইগা থাকলে তুই চুপ থাকবি। দেখবি ঘর-সংসার শান্তিতে পূর্ণ থাকবো। যা এবার গোসল করে আয়।”

সে রাতে নানার কথামতই হলো সব। স্টেশন থেকে জয়নাল আঙ্কেল তার নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সেখানে আন্টিকে দেখলাম না। পরে আঙ্কেল থেকে জানতে পারলাম আমার শ্বাশুড়ি মা নেই। আঙ্কেল আমার নানার কথা অনুযায়ী সেই রাতে তার ছেলের সাথে বিয়ে পাকা করে রাখেন। তার পরের দিন দুপুরে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন। সে সময় ছেলে কোনো রুপ অমত পোষণ করেনি। বরং নির্লিপ্ত চাহনী নিয়ে এক প্রকার ঘোরের মাঝে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। ছেলে কবুল বলেই আমায় রেখে বাহিরে চলে যায়। কোথায় গেল আঙ্কেল কে জানায়নি। সে সময় আঙ্কেলের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমার স্বামী যার নাম শারফান মারুফ। তিনি একজন সরকারি কলেজের শিক্ষক। শুনে খুশি হয়ে ছিলাম বটে। কারণ আমার একনিষ্ঠ ইচ্ছে ছিল আমার জীবনসঙ্গী যেনো কোনো শিক্ষক হোন। কারণ তারা শিক্ষার মর্যাদা বুঝেন। অবশ্য লোকটা আমায় পড়াবেন সেই আশায় আমি একটু হলেও মনে শান্তি বোধ করছি। পুরো একদিন শারফান কে দেখলাম না। একেবারে বিয়ের দ্বিতীয় রাতে পেলাম মৃত প্রাক্তনের জন্য কান্না করার মাঝে। সে সব চিন্তাভাবনায় কবে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না।
সকাল বেলা মুখের উপর পানির জোয়ার পরায় চমকে জেগে উঠলাম। মুখের উপর থেকে পানি মুছে সামনে তাকাতেই অবাক। শারফান রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তার হাতে মগ দেখে বুঝলাম লোকটাই পানি নিক্ষেপ করেছেন আমার উপরে। বুঝতে পারলাম না আমি কি কোনো ভুল করেছি কিনা? মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করলাম।

“কি হলো আপনি আমার উপর পানি ঢাললেন কেনো?”

“তবে কি আপনার মুখ দর্শনে টাকার বর্ষণ করা উচিৎ ছিল? দেখেন আজ প্রথম তাই মাফ করলাম। পরবর্তীতে আপনি বিছানায় ঘুমাবেন না। আমি আমার পাশে জারিফা কে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারি না।”

চুপটি করে তাকিয়ে রইলাম। শারফান ভ্রু কুঁচকে পুনরায় বলেন,

“বুঝেছেন কি বলেছি আমি?”

একে তো আমার ঘুমের তেরোটা বাজিয়ে দিলো এই লোক। এখন সাতসকালে পাগলের প্রলেপ গাইছে। দাঁড়া বাচ্চু তোর খেলাফত করছি এখনি। শারফান এর সামনে গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ালাম। লোকটা থতমত খেলো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তার পা দুয়েক পদ পিছিয়ে গেলো। তাতে আমিও এগোলাম। লোকটা মৃদু কাঁপছে। তার থরথর করে কাঁপা ঠোঁট দেখে আমার মনমাঝারে উম্মাদনার সৃষ্টি হচ্ছে। তার সেই কাঁপা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বললাম।

“একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন। আজ প্রথমদিন তাই আপনাকে মাফ করলাম। নাহলে বাসর রাতে সদ্য বিবাহিত বউ রেখে হঠাৎ উধাও হওয়া আবার বাসরের দ্বিতীয় রাতে কোথাকার কোন মইরা ভূত হয়ে যাওয়া প্রেমিকার শোকে কান্না করার অপরাধে বিছানার উপর বেঁধে আপনার উপর বেধম প্রহার চালাতাম‌। আপনি হয়ত আমার ব্যাপারে কিছুটি জানেন না। সিয়ানা আমি বুঝছেন। আমার সাথে পাঙ্গা তো আপনি লুঙ্গি ছাড়া বুঝলেন?”

লোকটা কাঁপতে কাঁপতে সোফার বসে গুটিয়ে গেলেন। মাথা নেড়ে সায় দিলেও মুখ ফুটে বলেন,

“দেদেদেদেখুন আপনি কিন্তু মেয়ে হয়ে আমার মত পুরুষের গায়ে অশ্লীলমার্কা ভাবনায় স্পর্শ করতে পারেন না। না হলে আপনাকে পুলিশে দেবো।”

“দেন যান এখনি যান। এই নেন আপনাকে জোরালো ঘন চুমু খেয়ে দিচ্ছি।”

লাজ লজ্জা ভুলে নিজ স্বামীর ঠোঁটের উপর ঘন চুমুক খেয়ে ছেড়ে দিলাম। বিয়ের পর এ প্রথম স্পর্শ দু’জনের মাঝে বিরাজিত হলো। লোকটা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলেন,

“আপনি আমার ইজ্জত লুট করেছেন। আপনাকে আমি পুলিশে দেবো তাদের বলব আপনি আমার ইজ্জত হরণ করেছেন রুমে অবলা একা পুরুষ পেয়ে।”

“মাস্টার হবেন আপনি বাহিরের লোকদের জন্যে, আমার কাছে আমার স্বামী বুঝলেন? তার গোরা মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আমার অধিকার কুট কুট করে ভরা। চাইলে যান গিয়ে দেখান আমার অধিকার রোধের কোনো ফায়সালা পান কিনা। যদি না পেয়েছেন বাসর রাতে যেটা আপনার কাজ, সেটা আমি করিয়ে দেখাবো। তাও আবার আপনাকে অজ্ঞান করে।”

চলবে……

একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায় পর্ব-৬২ এবং শেষ পর্ব

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Last_Part
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালী ও সমুদ্রের জীবনে আরো কয়েকটি বসন্ত এসেছে। সময়ের পরিক্রমায় ৩ টি বছর অতিক্রম করেছে। সমুদ্র নিজের ব্যবসায় উন্নতি করেছে। আগের অভাব অনটন তাদের আর নেই। বরঞ্চ বেশ স্বচ্ছল জীবন যাপন করছে তারা। তাদের দাম্পত্য জীবনও সুখে-আনন্দে ভড়ে উঠেছে। প্রণালী এখন একজন উকিল। কয়েকটা কেসও লড়েছে এবং সাফল্যও পেয়েছে। তবে প্রণালী এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। খুব শীঘ্রই তাদের জীবনে আসতে চলেছে নতুন অতিথি। তাই আপাতত কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছে সে। এই নিয়ে তাদের খুশির অন্ত নেই। আজ রায়ান সাহেব এবং প্রত্যুষ এসেছে তাদের দুজনের সাথে দেখা করতে। প্রত্যুষকে দেখেই সমুদ্র ঠাট্টা করে বলে,”বাহ, ডাক্তার সাহেব যে। এত ব্যস্ততার মধ্যে আপনার চরণ যে আমার বাসায় পড়েছে এতেই আমি খুশি।”

প্রত্যুষ লাজুক হাসে। সে এখনো আগের মতোই চাপা স্বভাবের৷ খুব একটা কথা বলে না৷ পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস জন্য বাইরে তেমন একটা বেরোয় না। তাছাড়া সামনে তার সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম। এজন্য আরো খাটতে হচ্ছে। তবে আজ সে এসেছে প্রণালীর অনুরোধে। প্রণালী গতকাল রাতে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছে। বলেছে তার নাকি এখন ভয় হচ্ছে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে তার কিছু হয়ে যায়৷ এজন্য বাপ-ভাইকে দেখতে চায়। প্রত্যুষ তো ছোটবেলা থেকে মায়ের ভালোবাসা পায়নি। প্রণালী তাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে। তাই বোনের মুখে এমন কথা শুনে ঘাবড়ে গেছে। কয়েকটা কথাও শুনিয়ে দিয়েছিল। তারপর আজ সে এখানে।

প্রত্যুষ সমুদ্রের সাথে সালাম বিনিময় করে জানতে চায়,”আপি কোথায় জিজু? ওকে কোথাও দেখছি না।”

প্রণালী নিজের পেট সামলে ধীরে ধীরে আসে। প্রত্যুষকে দেখে ভীষণ খুশি হয়। কতদিন পর নিজের ভাইটাকে দেখল। প্রত্যুষ সোজা গিয়ে প্রণালীকে জড়িয়ে ধরল। বলল,”তুমি ঠিক আছো তো আপি? কাল রাতে তোমার কথা শুনে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। তাই, রেগে কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম। কিছু মনে করো না প্লিজ।”

“ধুর পাগল! আমি তো জানি আমার এই শান্তশিষ্ট ভদ্র ভাইটা আমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে। সেজন্যই তো এমন রিয়্যাক্ট করছিল।”

দুই ভাইবোন নিজের মধ্যে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। রায়ান সাহেব ও সমুদ্র তাদের নিজেদের মতো কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় বসে আলাপ করতে থাকে। কেউ নেই দেখে প্রণালী প্রত্যুষকে বলে,”তো বল তোর কি খবর! কোন গার্লফ্রেন্ড হয়েছে?”

“আপি! তুমিও না! এসব কি যে বলো। গার্লফ্রেন্ড তাও আমার। এটা কি সম্ভব?”

“হুম, বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমার এই এত হ্যান্ডসাম ভাইটাকে কোন মেয়ে পছন্দ করে না এমনটা তো হতে পারে না!”

“পছন্দ তো করে। অনেকে তো প্রপোজও করেছিল। কিন্তু আমি পাত্তা দেই নি। নিজের সমস্ত ফোকাস আমি পড়াশোনায় রাখতে চাই।”

প্রণালী ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আচ্ছা, ভাই আমার। ভালো করে পড়। তোকে একজন বেস্ট ডাক্তার হিসেবে দেখতে চাই।”

~~~~~~~
রায়ান সাহেব সমুদ্রের সাথে আলাপের একপর্যায়ে বলে ওঠে,”তোমাকে একটা কথা৷ বলব। যদি কিছু মনে না করো?”

“জ্বি, বলুন। আমি কিছু মনে করবো না।”

“তুমি একবার নিজের মায়ের সাথে কথা বলো। ৩ বছর ধরে তুমি ওনার সাথে কথা বলো না। আমি যতদূর জানি উনি এখন ভীষণ অসুস্থ। আমি মানছি, তিনি অনেক ভুল করেছেন জীবনে। কিন্তু মানুষের জীবনে তো এমন অনেক ভুল থাকে। এই তিন বছরে তো উনি তার প্রায়চিত্ত করেছেন যথেষ্ট।”

“কিন্তু..”

“তুমি সবটা বিবেচনা করে দেখো বাবা। নিজের বাবাকে হারিয়েছ, মা এখনো আছে। তার করা ভুলগুলো ভুলে গিয়ে আপন করে নাও। নাহলে মাকে হারানোর পর আফসোস করতে হবে।”

সমুদ্র সায় জানালো। এবার সে ঠিক করল পুষ্পা চৌধুরীর সাথে দেখা করবে।

~~~~~~~
অনেকদিন পর চৌধুরী ম্যানশনে এসেছে সমুদ্র। তাকে দেখে পুষ্পা চৌধুরী ভীষণ খুশি হয়েছেন। প্রথমে তো তিনি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেন নি। তবে পরে যখনই বুঝেছেন সমুদ্র সত্যি এসেছেন তখন তিনি আহ্লাদে আটখানা।

সমুদ্র পুষ্পা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করে,”কেমন আছেন আপনি?”

“এতদিন ভালো ছিলাম না বাবাই। কিন্তু আজ তোমায় দেখে আমি ভীষণ খুশি।”

সমুদ্র ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পুষ্পা চৌধুরীকে। আগের আভিজাত্য আর নেই তার মাঝে। গায়ে সাধারণ সাদা সুতি শাড়ি, শরীরও অনেক শুকিয়ে গেছে তার। চোখের নিচে কালশিটে। সমুদ্র দীর্ঘশ্বাস শ্বাস ফেলে বলে,”নিজের যত্ন নেন না একদম?”

পুষ্পা চৌধুরী মলিন হেসে বলে,”কার জন্য নিজের যত্ন নেব? আমার কোন আপনজনই যে আমার কাছে নেই।”

“নিজের দোষেই তাদের হারিয়েছেন।”

“এখন ভীষণ পস্তাচ্ছি।”

সমুদ্র বলে,”আজ আমায় একটা সত্যি কথা বলবেন? আমার দাদা কেন তার সমস্ত সম্পত্তি আপনার নামে লিখে দিয়েছিলেন? এই সত্যটা আমি জানতে চাই।”

পুষ্পা চৌধুরীর মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।
“কিছু কথা না জানাই ভালো।”

“কিন্তু আমি জানতে চাই। বলুন আমায়।”

পু্ষ্পা চৌধুরী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,”তোমার বাবা আমার সাথে বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তিনি একটা গরীব পরিবারের মেয়েকে ভালোবাসতেন। কিন্তু তোমার দাদা নিজের আভিজাত্য রক্ষায় এমনটা চান নি। তাই তিনি একপ্রকার জোর করে আমার সাথে ওনার বিয়ে দেন। কারণ আমার বাবা এক ধনী লোক ছিলেন। বিয়ের আগে আমি এসব ব্যাপারে অবগত ছিলাম না। কিন্তু বাসর রাতে জানতে পারি উনি আমায় না অন্য কাউকে ভালোবাসেন। সেদিন ভীষণ কষ্ট হয়েছিল আমার। উনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় মেয়েদের গায়ে ডিভোর্সি ট্যাগ অনেক ভয়ানক ছিল। তাই আমি দাঁতে দাঁত চেপে সংসার করতে থাকি। কিন্তু তোমার বাবা ঐ মেয়েকে ভুলতে পারে নি। বিয়ে পরেও তার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যায়। যাকে সহজ ভাষায় বলে পরকীয়া। আমি এসব না পারছিলাম মানতে আর না সইতে। এইসময় তোমার দাদা তোমাকে বাবাকে শায়েস্তা করতে তার সব সম্পত্তি আমার নামে করে দেন। এরপর তোমার বাবা রেগে ঐ মেয়ের সাথে পালিয়ে যেতে চায়। সেই সময় তোমার দাদা বুদ্ধি করে নিজের এক ভরসাযোগ্য কর্মচারীর ছেলের সাথে ঐ মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। তোমার বাবা এসব কিছু জানত না। তার কাছে মনে হয়, তার প্রেমিকা তাকে ঠকিয়েছে। এই সময় কাছাকাছি আসি আমি আর তোমার বাবা। কিন্তু তার উপর একটা রাগ আমার থেকেই গিয়েছিল। কারণ সে নিজের প্রেমিকাকে পুরোপুরি ভুলতে পারে নি। এই রাগ থেকে ধীরে ধীরে আমার মাঝে ক্ষোভ বাড়তে থাকে তার প্রতি। তুমি হওয়ার পর এবং তোমার দাদার মৃত্যুর পর সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু আমি হই। তখন আমার মধ্যে আগের সব ঘটনার জন্য প্রতিশোধ স্পৃহা জন্ম নেয়। সেইজন্য আমি তোমার বাবাকে কোনঠাসা করে দেই। আর তোমাকে নিজের মতো মানুষ করি। ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে উঠি। প্রণালীকেও আমি ঠিক এই কারণে মেনে নিতে পারিনি কারণ ও তোমার বাবার পছন্দ করা মেয়ে।”

~~~~
সব সত্য জানার পর সমুদ্র নিজের মায়ের প্রতি নরম হয়। এরমধ্যে আরো কিছু দিন চলে যায়। প্রণালীর কোল আলো করে একটা পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পুষ্পা চৌধুরী নিজের নাতিকে পেয়ে ভীষণ খুশি। প্রণালীকেও এখন তিনি মন থেকে মেনে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক ভালো। প্রণালী যে একটা নতুন মা পেয়েছে। পুষ্পা চৌধুরীকে তো সবসময় মা বলেই ডাকে। পুষ্পা চৌধুরী সমুদ্রকে ব্যবসার দায়ভার তুলে দিয়ে এখন নিজের নাতির সাথেই অবসর সময় কাটান। রায়ান সাহেবও ভীষণ খুশি নাতির আগমনে। প্রত্যুষও মামা হতে পেরে আনন্দিত।

~~~~~
পরিশিষ্ট
প্রণালী নিজের ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এমন সময় পেছন থেকে কেউ প্রণালীকে জড়িয়ে ধরে। প্রণালীর কাধে মাথা রেখে সমুদ্র বলে,”ভীষণ ভালো লাগছে। নড়ো না প্লিজ।”

প্রণালী মুচকি হেসে বলে “ঠিক আছে।

সমুদ্র প্রণালীকে আচমকা নিজের কাছে টেনে নেয়। প্রণালীর অধরে স্পর্শ করে বলে,”এতো ভালো লাগে কেন তোমায়?”

প্রণালী বলে,”জানি না।

সমুদ্র হেসে ফেলে। দুজন একসাথে পূর্ণিমার চাঁদ দেখছিল। সমুদ্র হেসে বলে,”এই চাঁদটা তোমার থেকে সুন্দর নয়।”

প্রণালী প্রাণখুলে হেসে বলে,”আমায় এতো ভালোবাসো কেন তুমি? আমার প্রেম তোমায় অনেক কাঁদিয়েছে। তবুও প্রেম যেন বেড়েই চলেছে।

সমুদ্র প্রণালীকে জড়িয়ে ধরে বলে,”প্রেম কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়। আমাকেও কাঁদিয়েছে। তবে তার থেকে বেশি আনন্দ দিয়েছে। প্রেম সম্পর্কিত একটা বিখ্যাত গান আছে শোনো নি?”

“না, কি গান?”

সমুদ্র গাইতে থাকে,
“যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম আমায় কাঁদায়
তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়
যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়
তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়
যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরোনো কথা
যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা
তবে বুঝে নিও চাঁদের আলো কত্ত নিরুপায়।”

বলেই প্রণালীকে কাছে টেনে গভীর চুম্বনে আবৃষ্ট করে। রাত সাক্ষী হয় দুই কপোত কপোতীর পবিত্র প্রেমের।

~The End

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৬১

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_61
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সমুদ্র নিজের বাবার সামনে থেকে উঠে ধীরে ধীরে পুষ্পা চৌধুরীর সামনে যায়। পুষ্পা চৌধুরী মাথা নিচু করে ছিলেন। সমুদ্র তার সামনে গিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,”এখন তুমি খুশি হয়েছ তাই না মম? এটাই তো চেয়েছিলে তুমি! এখন সবকিছুর উপর তোমার একার রাজত্ব৷ যাও সবকিছু একা ভোগ করো।”

“বাবাই..”

“আমি তোমার মুখ থেকে আর কিচ্ছু শুনতে ইচ্ছুক নই মম। আমি আজ আমার ড্যাডকে হারিয়েছি। ভেবে নেব এখন থেকে আমি অনাথ।”

“এসব কি বলছ তুমি বাবাই। আমার কথা শোনো..”

“আমার আর কিছু শোনার নেই।”

এরমধ্যে সায়মা চৌধুরী পুষ্পা চৌধুরীর দিকে আঙুল তুলে বলেন,”এই মহিলা আমার ভাইকে মে’রে ফেলেছে। এ আমার ভাইয়ের খু**নি। কাল আমার সামনে ভাইয়াকে যা তা বলে অপমান করেছে। ভাইয়া এসব কিছু সহ্য করতে পারে নি।”

সবাই ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকায় পুষ্পা চৌধুরীর দিকে। এমনকি সমুদ্রও। নিজের ছেলের এমন দৃষ্টি সহ্য হয়না পুষ্পা চৌধুরীর। তিনি ব্যাথায় জড়ানো কন্ঠে বলে,”বাবাই..মমকে কিছু বলার সুযোগ দাও।”

সমুদ্র চিৎকার করে বলে ওঠে,”আমার কোন মম নেই। মা*রা গেছে আমার মম।”

পুষ্পা চৌধুরী হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন সমুদ্রের দিকে। এই ছেলেটাকে তো নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসেন তিনি। আর আজ তার চোখে এমন ঘৃণা। যেই ছেলে মা বলতে অজ্ঞান ছিল তার কাছে আজ তার না জীবনদশাতেই মৃত!

সমুদ্র বলল,”একজন সন্তানের কাছে তার বাবার লাশের ভার কত তুমি বুঝবে না মম। কারণ তোমাকে কোনদিন এই ভার বহন করতে হয়নি।”

পুষ্পা চৌধুরী আজ কিছু বলতে পারছেন না। চুপ করে বসে পড়েন। সমুদ্রের আরো অনেক কিছু বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু পারল না। বাবার মৃত্যুর শোক তাকে ভেতর থেকে একদম ভেঙে দিয়েছে।

সময় গড়িয়ে চলে। সজল চৌধুরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সমুদ্র নিজের বাবার খাটিয়া বহন করে চলে যায় কবরস্থানের উদ্দ্যেশ্যে। পুষ্পা চৌধুরী তখনো মেঝেতেই বসে ছিলেন। কোন রেসপন্স করছিলেন না। যেন পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়েছেন। সায়মা চৌধুরী এসে তাকে বলেন,”দেখেছ ভাবি, তোমার মিথ্যা অহংকার আর দম্ভ আজ তোমায় কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে। ভাইয়ার জীবন কেড়ে নিল এই দম্ভ। নিজের ছেলের চোখেও তোমাকে ঘৃণ্য বানিয়ে দিল। তবুও কি তুমি বদলাবে না?!”

~~~~~~
সজল চৌধুরীর লাশ দাফন করে সমুদ্র উদভ্রান্তের মতো অবস্থায় বাড়িতে ফিরে আসে। এসে দেখে রায়ান সাহেব, সৌভিক, প্রণালী সবাই এসে উপস্থিত। প্রণালী সমুদ্রকে দেখেই ছুটে যায় তার দিকে। সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। এই ক’দিনেই যে সজল চৌধুরী তার মনে অনেকটা যায়গা করে নিয়েছিল। লোকটা তাকে মা বলে ডাকত। রায়ান সাহেব এগিয়ে এসে সমুদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলেন,”তোমাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। আমি কিছু জরুরি কাজে চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। তোমার বাবার খবরটা পাওয়ার পরই ছুটে চলে আসি ঢাকায়। কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেললাম। শেষবারের মতো ওনাকে দেখতেও পেলাম না। তবে প্রণালীর কাছ থেকে সব শুনলাম। তোমাদের যে এত কষ্টে থাকতে হয়েছে জানতাম না। তুমি এসব কথা আমাকে বা তোমার বাবাকে জানাতে পারতে! তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এত খারাপ হতো না।”

সমুদ্র বলে,”এখন তো সব জেনে গেছেন আঙ্কেল। এখন আপনি চাইলে নিজের মেয়েকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে পারেন আমি কোন বাঁধা দেব না। এমনিতেও আমার আর কোন ভবিষ্যৎ নেই।”

প্রণালী বলে ওঠে,”একদম এমন কথা বলবেন না! আপনাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।”

“আমার কাছে থাকলে যে তোমায় চরম দারিদ্রের মধ্যে থাকতে হবে। মানিয়ে নিতে পারবে তো?”

প্রণালী বলে,”পারব।”

রায়ান সাহেব বলেন,”এসব কথা উঠছে কেন সমুদ্র? আমার কি কম সম্পত্তি আছে? এগুলো আমি কার জন্য করেছি? আমার ছেলে-মেয়ের জন্যই তো। তুমি তো আমার জামাই তোমার হক আছে এসবে।”

সমুদ্র বলে,”মাফ করবেন আমায়! আমি আপনার থেকে কোন সাহায্য নিতে পারব না। আপনি চাইলে নিজের মেয়েকে যা খুশি দিতে পারেন কিন্তু আমি নিতে পারব না।”

“এমন করে বলছ কেন?”

“কারণ আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই তাও সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায়। এর জন্য হয়তো অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তবে আমি সেই পরিশ্রম করতে রাজি আছি। আমার আপনার কাছে বেশি কিছু চাইনা। শুধু এটুকুই চাই যেন আপনি আপনার মেয়েকে আমার ভরসায় দিন। আমি যতটুকু পারব ওকে খুশি রাখব।”

“কিন্তু..”

রায়ান সাহেব কিছু বলার আগে সৌভিক বাবু তার পিঠে হাত রেখে বলেন,”ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দে। ওরা ঠিকই নিজেরা নিজেরা ভালো থাকবে।”

রায়ান সাহেব আর কথা বাড়ালেন না।

~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র সকল আত্মীয় স্বজনের থেকে বিদায় নেয়। সবশেষ সায়মা চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলে,”তুমি সবসময় আমায় অনেক ভালোবাসা দিয়েছ ফুপি। যার ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না। তুমি আমার জন্য দোয়া করো, যেন আমি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি।”

সায়মা চৌধুরী সমুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”ভাইয়ার বুক ভরা দোয়া আছে তোর জন্য। মরতে মরতেও উনি তোর কথা ভাবছেন। আমিও দোয়া করব তোর জন্য। মানুষের মতো মানুষ হ বাপ। নিজের বাপ-দাদার মুখ উজ্জ্বল কর।”

সমুদ্র সবার থেকে বিদায় নিলেও পুষ্পা চৌধুরীর সাথে দেখা করে না। প্রণালীর হাত ধরে চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে ধরে। এমন সময় পু্ষ্পা চৌধুরী এসে উপস্থিত হন সেখানে। সমুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,”কোথায় যাচ্ছ তুমি বাবাই? নিজের এত সম্পদ থাকতে তুমি কেন আলাদা করে লড়াই করবে। এসব কিছু তো তোমারই পূর্ব পুরুষের সম্পদ। আমি সবকিছু তোমার নামে করে দেব। প্রণালীকে নিয়েও কোন আপত্তি করবো না। তুমি এখানেই থাকো। এভাবে সবকিছু ছেড়ে যেও না।”

সমুদ্র স্পষ্ট বলে দেয়,”আমার এসব কিছুই লাগবে না মিসেস পুষ্পা চৌধুরী। এসব কিছু আপনি রেখে দেন। এই সহায় সম্পত্তি নিয়ে ভীষণ অহংকার না আপনার। এসব নিয়েই আপনি কবরে যাইয়েন।”

“বাবাই..”

সমুদ্র বলে,”আপনি বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। যদি আপনি আরো আগে সবটা উপলব্ধি করতে পারতেন তাহলে আজ আমায় আর এভাবে নিজের বাবাকে হারাতে হতো না। এখন আমার আর এসবকিছুর দরকার নেই। আমি নিজের ব্যবস্থা নিজেই করে নিতে পারব। এই সম্পত্তি আপনিই সামলান। যতদিন পারেন রাজ করে চলুন।”

বলেই সমুদ্র প্রণালীর হাত ধরে বেড়িয়ে যায় চৌধুরী ম্যানশন থেকে। একে একে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনও বিদায় নেয়। দিনশেষে পুরো বাড়ি ফাকা হয়ে যায়। পুষ্পা চৌধুরী একা ভীষণ একা হয়ে পড়ে। হয়তো বাকি দিনগুলো তার একাকীত্বে আর আফসোস, আত্মগ্লানির মধ্যেই চলে যাবে।

~~~~~~~~
সমুদ্র ও প্রণালীর দিনগুলো এরপর বেশ হাসি-কান্নার মধ্য দিয়ে যায়। সমুদ্র নিজের মতো একটা ব্যবসা করার উদ্যেগ নেয়। এজন্য পুঁজির দরকার ছিল। রায়ান সাহেব সাহায্য করতে চাইলে সমুদ্র সাহায্য নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই রায়ান সাহেব একটা বুদ্ধি খাটান। নিজের এক বন্ধুর মাধ্যমে সমুদ্রকে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন বিনা সুদে এবং একই সাথে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য কোন চাপ দিতে মানা করেন। তবে এসব বিষয় সমুদ্রের থেকে গোপন রাখেন। এভাবে কয়েক মাস পেরিয়ে যায়। সমুদ্র ছোটোখাটো একটা বিজনেস শুরু করে। সৌভাগ্যক্রমে এতে লাভের মুখ দেখে এবং তাদের দিন বদলে যায়।

এরমধ্যে একদিন শান্ত আসে প্রণালীর সাথে দেখা করতে। তবে এই শান্তর সাথে আগের শান্তর অনেক পার্থক্য। আগের থেকে অনেকটা শুকিয়েছে অনেকটা কষ্টে দুঃখে জর্জরিত সে। প্রণালী তো প্রথমে শান্তকে দেখে রেগে গিয়ে নানারকম কথা বলে। শান্ত সব মনযোগ দিয়ে শুনে বলে,”আমি জানি আমি অনেক অন্যায় করেছি। আর এখন সেই অন্যায়ের শাস্তিও পাচ্ছি। লারার মৃত্যুর পর থেকে আমার জীবনে দুঃখের শুরু হয়েছে। লারার মৃত্যুর জন্য হয়তো আমি দায়ী ছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করো ওকে আমি খু**ন করিনি। ওর পরিবার আমার বিরুদ্ধে কেস করে। সেই জন্য আমায় জেলে গিয়ে থাকতে হয়। আমার মায়ের জমানো সব টাকা শেষ হয়ে যায় কেস লড়তে। এদিকে জেল থেকে খবর আসে আমার বাবা(আবির) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এতে মা আরো ভেঙে পড়েন। গতকাল মাও আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। আমি এখন সম্পূর্ণ একা। আজ আমি বুঝতে পারছি লারা আমার জীবন কতটা জুড়ে ছিল। ওর জন্য ভীষণ আফসোস হয়। ওর কাছে আর ক্ষমা চেয়ে ওঠা হবে না তবে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি প্রণালী। সবকিছুর জন্য আমায় ক্ষমা করিও যদি পারো। কিছুদিন পরেই আমি সৌদিতে যাচ্ছি। ওখানে গিয়ে কাজ করে খাব। ধর্মের পথে ফিরতে চাই আমি৷ অনেক পাপ করেছি। আশা করি,আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইলে পাপ লাঘব হবে। ভালো থেকো তুমি। সুখে সংসার করো। আল্লাহ তোমার জীবন সুখে ভড়িয়ে দিক।”

বলেই বেরিয়ে আসে শান্ত। প্রণালী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে। সত্যিই জীবন বড়ই অদ্ভুত। কখন কাকে কি রকম পরিস্থিতিতে নিয়ে গিয়ে ফেলে তা বলা যায়না।

to be continue…..

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৬০

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_60
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সমুদ্র বেরিয়ে পড়েছে নতুন কাজ খুঁজতে। তবে অভাগার ভাগ্য বোধহয় এত সহজে বদলায় না৷ সারাদিন ঘুরেও সে কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ পেল না। ওদিকে প্রণালী আর সমুদ্র সকাল থেকে না খেয়ে আছে কারণ তাদের কাছে খাবার কেনার মতোও টাকা নেই৷ সমুদ্রর ভীষণ অসহায় বোধ হতে লাগল। এমন সময় সে দেখল রাস্তায় কনস্ট্রাকশানের কাজ চলছে। সমুদ্রের মনে একটা ভাবনা এলো। এ ছাড়া তার সামনে কোন পথ খোলা ছিল না। যদিও জীবনে কখনো ভাবেনি এই পর্যায়ে তাকে আসতে হবে। তবে পেটের খুদার কাছে সব তুচ্ছ!

~~~~~~~~
সায়মা চৌধুরীর চিৎকার শুনে পুষ্পা চৌধুরী বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে আসেন। এসেই বিরক্ত গলায় বলেন,”কি হয়েছে তোমার? এত চেচাচ্ছ কেন?”

সায়মা চৌধুরী বললেন,”দেখো না ভাবি, ভাইয়া কোন কথা বলছে না। আমার খুব ভয় করছে।”

“সরো আমায় দেখতে দাও।”

পুষ্পা চৌধুরী সজল চৌধুরীর নিঃশ্বাস চেক করে দেখেন নিঃশ্বাস পড়ছে কিন্তু খুব ধীরে। তিনি খুব ভয় পেয়ে যান। বলে ওঠেন,”দ্রুত এম্বুলেন্স ডাকতে হবে। ওকে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে নিতে হবে।”

“ভাইয়ার কিছু হয়ে যাবে না তো ভাবি?”

“এই প্রশ্নের উত্তর শুধু ডাক্তারই দিতে পারবে। তুমি ওখানে নিয়ে এসো সোফায় শোয়াতে হবে ওনার হাতে পায়ে মালিশ করতে থাকো। আমি এম্বুলেন্সে কল করছি।”

পুষ্পা চৌধুরীও যেন আজ ভীষণ উতলা হয়ে উঠেছেন স্বামীর এই অবস্থা দেখে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র যখন রাস্তায় বালি বোঝাইয়ের কাজ করছিল তখন তার ভীষণ কান্না পাচ্ছিল। সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিল গরীব মানুষদের কত কষ্ট। আজীবন আভিজাত্যে জীবন গেছে তার। কখনো অভাব অনটন অনুভব করে নি। না চাইতেই সবকিছু পেয়ে গেছে। তবে আজ সে তিক্ত বাস্তবতা নিজের চোখে দেখছে। এতদিন গরীব মানুষদের কত অবহেলা করেছে সে, তাদের সমাজের কীট মনে করেছিল। আপনাদের মনে আছে প্রণালীর সাথে সমুদ্রের প্রথম সাক্ষাতের ঘটনা? সেই সমুদ্র আর এই সমুদ্রের মধ্যে আজ কত তফাৎ। সৃষ্টিকর্তা বুঝি সবাইকে তার কর্মের ফল সুদে আসলে ফেরত দেওয়ার জন্যই তাদের জীবনে বিপদ-আপদ দেন। যাতে তারা বাস্তবতাটা উপলব্ধি করতে পারে। যেমন এখন সমুদ্র পারছে। দু মুঠো খাবারের জোগাড় করার জন্য কত খাটতে হচ্ছে।

সমুদ্র কাজ করতে করতে হঠাৎ বুকের বা পাশে তিক্ত ব্যাথা অনুভব করল। গতকাল রাত থেকে কেমন জানি ব্যাথা করছে। মনেও কেমন জানি কু গাইছে। সমুদ্র ট্যালিপ্যাথির কথা শুনেছিল। তাহলে তার সাথে এখন এমন কিছুই ঘটছে? ট্যালিপ্যাথির কারণেই কি তার মনে হচ্ছে তার কোন আপন জনের বিপদ আসন্ন? এসব ভাবতে ভাবতেই সে কাজ করছিল। কাজ শেষে সে নিজের পারিশ্রমিক নিয়ে একটি হোটেলে গিয়ে খাবার কিনে নিলো। আজ এই খাবার দিয়েই তার এবং প্রণালীর ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে। সমুদ্রের সামনে হঠাৎ প্রণালীর মুখশ্রী ভেসে ওঠে। বেচারি মেয়েটা নিশ্চয়ই সকাল থেকে না খেয়ে ভীষণ কষ্টে আছে। সমুদ্র তো তার দায়িত্ব নিয়েছিল। সমুদ্রের জন্যই তো প্রণালী নিজের বাবার কাছে যায়নি। সেখানে গেলে তাকে এত কষ্টে তো থাকতে হতো না। আভিজাত্যে থাকত। তবুও মেয়েটা কোন অভিযোগ করছে না। শুধু সমুদ্রের কথাই ভাবছে। চাচ্ছে যেন সমুদ্র নিজের বাসায় ফিরে যায়। সমুদ্র বেশ বুঝতে পারে তাকে কষ্টে দেখতে না পেয়েই এমন কথা বলে। সমুদ্র এই সব কথা ভেবে মুচকি হেসে বলে,”পাগলী মেয়েটা! ও বোঝেই না ওকে ছাড়া আমি একদম ভালো থাকব না।”

খাবার নিয়ে সমুদ্র হাজির হয় তাদের বাসায়। প্রণালী সমুদ্রের আশাতেই বসে ছিল। সমুদ্র আসতেই প্রণালী হাসি মুখে বলে,”আপনি এসেছেন?”

“হুম। তুমি ঠিক আছ তো? সকাল থেকে না খেয়ে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হয়েছে?”

“একদম না। আমার একটুও কষ্ট হয়নি। আপনার বরং খুব কষ্ট হয়েছে। সারাদিন নিশ্চয়ই খুব খাটুনি গেছে? কোন নতুন কাজ পেলেন?”

সমুদ্র কোন উত্তর না দিয়ে বলে,”আমি খাবার এনেছি। তুমি বসে পড়ো। একসাথে খাই!”

প্রণালী বুঝল সমুদ্র প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতে চাইছে। তাই সে-ও আর বেশি না ঘাটিয়ে থালা এনে সেখানে খাবার বাড়ে নিজের আর সমুদ্রের জন্য। তারপর দুজনে একসাথে বসে খেতে শুরু করে। সমুদ্র দেখে প্রণালী অল্প করে খাচ্ছিল। এটা দেখে সে বলে,”এসব দিয়ে খেতে নিশ্চয়ই তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে? কি করবো বলো যা টাকা ছিল আমার কাছে তা দিয়ে এতটুকুই হয়েছে।”

“আরে না। এমন নয়। আসলে আমি বাইরের খাবার তেমন খেতে পারিনা। তাই ভাবছি এবার নিজেই রান্নাটা শিখে নেব। পাশের বাসার ভাবি নাকি খুব ভালো রান্না করে। তার থেকে রান্নাটা শিখতে হবে।”

“আমি ভীষণ অপেক্ষায় আছি তোমার হাতের খাবার খাওয়ার জন্য।”

এভাবেই কথাবার্তা এগোতে থাকে তাদের দুজনের। খাওয়া শেষ করে সমুদ্র প্রণালীকে বলে,”জানো কাল রাত থেকে আমার মনটা কেমন করছে। মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। আচ্ছা বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো?”

প্রণালী বলে,”যদি তোমার বাড়ির জন্য মন খারাপ হচ্ছে তাহলে যাও না বাড়ি থেকে ঘুরে আসো। তাহলে হয়তো তোমার মনের এই খুতখুতানি দূর হবে।”

“আমি ঐ বাড়িতে এখন আর ফিরব না প্রণালী। আমি প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছি আমি সেদিনই ফিরব যেদিন আমার মম সসম্মানে তোমায় ঐ বাড়িতে ফিরিয়ে নেবে। যেভাবে উনি তোমায় অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছেন তার দ্বিগুণ সম্মানে তোমায় ফেরত নেবে।”

প্রণালী সমুদ্রের দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে তাকায়। অত:পর বলে,”আপনার মায়ের সাথে নাহয় আপনার সমস্যা কিন্তু বাবা-ফুপি তাদের সাথে তো সমস্যা নেই? আমি নাহয় এখনই যাবো না কিন্তু আপনি যান না ওদের সাথে দেখা করে আসুন। বাড়িতে না যান বাড়ির বাইরে তাদের আসতে বলুন।”

“তাহলে কি এমনটাই করব?”

“হ্যাঁ। এমনটাই করুন। আপনি নিজের পরিবারের সাথে দেখা করে আসুন। এতে আপনিও মানসিক শক্তি পাবেন। পরিবারের সাপোর্ট টা যে এখানে বড়। তাছাড়া আপনার মনে যখন এমন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তখন..”

“ঠিক আছে, তাহলে আজই গিয়ে দেখা করে আসব।”

~~~~~~~~~~
খাওয়া দাওয়া শেষে একটু পরই সমুদ্র বেড়িয়ে পড়েছে নিজের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে। মাঝে সে অনেকবার সায়মা চৌধুরী এবং নিজের বাবাকে ফোন করেছে কিন্তু তারা কেউই ফোনটা রিসিভ করেনি। সমুদ্র বুঝতে পারে না এর কারণ কি। এদিকে চৌধুরী ম্যানশনের সামনে এসে সে দেখে বাড়ির সামনে অনেক মানুষের ভিড়। সমুদ্র আরো ধন্দে পড়ে যায়। ভিড় ঠেলে বাড়িতে প্রবেশ করতেই তার পায়ের তলা থেকে যেন মাটিই সরে যায়।

সামনেই সজল চৌধুরীকে সাদা কাফনে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। সমুদ্র নিজের বাবাকে এই অবস্থায় দেখে হতবিহ্বল হয়ে যায়। সামনেই সায়মা চৌধুরী মাতম করে চলেছেন। পুষ্পা চৌধুরী একদিকে চুপচাপ বসে আছেন। সমুদ্রকে দেখতেই সায়মা চৌধুরীর আর্তনাদ আরো ভারি হলো। তিনি আহাজারি করে বললেন,”শেষবেলায় ভাইয়া তোকেই দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু তার এই ইচ্ছা পূরণ হলো না।”

সমুদ্রের কানে এখন এসব কোন কথা যায় না। সে বশে পড়ে সজল চৌধুরীর দেহের সামনে। তার মস্তিষ্ক ফাকা হয়ে আসছে। মনে পড়ে যাচ্ছে বাবার সাথে কাটানো সমস্ত সুন্দর স্মৃতি। বাবার মৃতদেহ জড়িয়ে ধরলো। তারপর একদম ছোট বাচ্চার মতো চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।

“আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে শেখালে
তুমি জীবনের পথ চলা
নিজে না খেয়ে তুমি খাওয়ালে
শেখালে কথা বলা

বাবা তুমি আমার যত খুশির কারণ
বলো তোমার মতো করবে কে শাসন
বাবা তুমি আমার বেঁচে থাকার কারণ
নেই তোমার মতো কেউ এতোটা আপন

দু পা, দু পা এগিয়ে, তোমার হাত ধরে
পথ চলতে শিখেছি
জানি না কতোটা বাধা তুমি একা সয়েছো
বুঝতে দাও নি কিছু

আজ আমি হয়েছি বড়
নিজের মতো করে বুঝি সবই
অজান্তে কত কি ভুল করেছি
তুমি ক্ষমা করো আমায়

বাবা তুমি আমার যত খুশির কারণ
বলো তোমার মতো করবে কে শাসন
বাবা তুমি আমার বেঁচে থাকার কারণ
নেই তোমার মতো কেউ এতোটা আপন”
to be continue…..

একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় পর্ব-৫৯

0

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_59
#ইয়াসমিন_খন্দকার

প্রণালী আজ সকালে উঠে ভার্সিটিতে গিয়ে এক্সামের জন্য টাকা জমা দিয়ে এসেছে। সমুদ্রের এই অবস্থার কথা ভেবে তার কাছে চায় নি আবার স্বামীর আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে বাবার কাছেও হাত পাতে নি। প্রণালী নিজের গলার স্বর্ণের চেইন বিক্রি করেই টাকার জোগাড় করেছে।

এখন আপাতত নিশ্চিত লাগছে তার। বাসায় ফিরে লম্বা একটা ঘুম দেওয়া যাবে। এমনটা ভেবেই বাসার দিকে পা বাড়ালো। বাসায় ঢুকতেই যাবে এমন সময় এক চেনা জানা কণ্ঠ শুনে পেছনে ফিরে তাকিয়ে অবাক গলায় বলে,”শান্ত..তুমি?”

শান্ত ধীর পায়ে এগিয়ে এসে প্রণালীর সম্মুখীন হয়। এসে প্রণালীকে বলে,”তোমায় এত কষ্টে থাকতে হচ্ছে প্রণালী! আমি তো ভাবতেই পারিনি।”

“তোমাকে ভাবতেও হবে না আমাকে নিয়ে। প্লিজ তুমি এখান থেকে যাও। আমার তোমাকে একদম সহ্য হচ্ছে না।”

“তুমি এটা ডিজার্ভ করো না প্রণালী। কত ঐশ্বর্যে বড় হয়েছ তুমি। আর এখন এমন গরীবি জীবন যাপন করতে হচ্ছে তোমায়? আমি এটা মেনে নিতে পারছি না। তুমি আমার সাথে চলো, আমি তোমাকে অনেক ভালো রাখব।”

প্রণালী সপাটে চ’ড় বসিয়ে দেয় শান্তর গালে। এরপর রাগী গলায় বলে,”যদি যাওয়ার হতো তাহলে আমি নিজের বাবার কাছেই যেতে পারতাম। আমার বাবার কাছে যখন যাইনি তখন তোমার কাছে কেন যাব? আমার বাবার মতো কি তুমি ধনী?”

শান্ত অপমানিত বোধ করল। চোখমুখ শক্ত করে বলল,”তোমার বাবার মতো ধনী না হলেও তোমার স্বামীর থেকে তো বেটার আমি। অন্তত নিজের যোগ্যতায় একটা চাকরি করি। নিজের বাড়িও আছে। আর তোমার স্বামীর তো না আছে কোন চাকরি আর বাড়ি থেকেও বহিস্কৃত।”

“সব জেনে গেছ তাহলে!”

“হ্যাঁ, সব জেনেছি জন্যই তোমায় এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছিলাম। কিন্তু..”

“কিন্তু আমি ইচ্ছুক নই। তুমি এখন আসতে পারো। ফারদার, যেন তোমায় ছায়াও না দেখি।”

বলেই প্রণালী শান্তর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়। শান্ত রেগে বলে,”এসব কিছুর প্রতিশোধ আমি নেবোই প্রণালী। তুমি আমাকে যতটা অপমান করলে তার থেকে হাজারগুণ বেশি অপমান আমি তোমার স্বামীকে করব। দেখে নিও তুমি।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র শপিং কমপ্লেক্সের মধ্যেই ছিল। এমন সময় শান্ত সেখানে চলে আসে। শান্তকে দেখে যদিও সমুদ্র ভীষণ রেগে যায় তবে এটা তার কাজের যায়গা তাই নিজেকে স্থির রাখে। শান্ত সমুদ্রকে দেখে গা জ্বালানি হাসি দেয়। শপিং কমপ্লেক্সের অন্য একজন কর্মচারী শান্তর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”বলুন স্যার, আপনার কি লাগবে?”

শান্ত বলে,”আমি জুতা কিনতে চাইছিলাম। আপনি ঐ লোকটাকে আসতে বলুন। উনি আমায় জুতা বাছতে সাহায্য করবে।”

সমুদ্রের দিকে ইশারা করে কথাটা বলে শান্ত।

“এই সমুদ্র এদিকে আসো, দেখ স্যার কি চাইছে।”

সমুদ্রের অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে আসতে হয়। শান্ত যেন সুযোগ পেয়ে যায়। সমুদ্র শান্তকে জুতা দেখাতে থাকলে শান্ত বলে,”কি অবস্থা হয়েছে তোমার! আমার ভীষণ আফসোস হচ্ছে। এত বড়লোকের ছেলে শেষপর্যন্ত কিনা সেলসম্যান হা হা হা।”

সমুদ্র অনেক কষ্টে নিজের মেজাজ সামলিয়ে ঠান্ডা মাথায় নিজের সব কাজ করতে থাকে। শান্ত একটা জুতা পছন্দ করে সমুদ্রকে বলে,”আমার এটা পছন্দ হয়েছে। জুতাটা একটু পড়িয়ে দাও তো দেখি ফিট হয় কিনা।”

সমুদ্র রক্তিম চোখে তাকায়। শান্ত বলে,”চোখ রাঙাচ্ছ কাকে? ভুলে যেও না, তুমি এখানকার সামান্য একজন কর্মচারী আর আমি একজন কাস্টমার। চুপচাপ যা বলছি করো নাহলে আমি তোমার নামে রিপোর্ট দেব।”

সমুদ্র নিরুপায়। বাধ্য হয়ে সে নিচে বসে শান্তকে জুতা পড়াতে সাহায্য করছিল। শান্ত ফোন বের করে বলল,”এই দারুণ একটা ঘটনা তো ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে হয়। তোমার স্ত্রীকে তো দেখাতে হবেই। তার অনেক অহংকার না। সেটা এবার ভাঙতে হবে।”

সমুদ্র এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না। উঠে দাঁড়িয়ে শান্তকে জোরে একটা পাঞ্চ পারল। শান্ত নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে গেল। তার নাক দিয়ে রক্ত পড়তে লাগল। উঠে দাঁড়িয়ে সেও ফাইট করতে লাগল সমুদ্রের সাথে। আশেপাশের কিছু মানুষ ছুটে এসে তাদের থামালো।

সমুদ্রের এরকম কাস্টমারের সাথে মারামারি মোটেই ভালো ভাবে নিলেন না শপিং কমপ্লেক্সের মালিক। তার শপিং কমপ্লেক্সের রেপুটেশন এর জন্য কমে গেছে। তাই যা হওয়ার তাই হলো। তিনি সমুদ্রকে কাজ থেকে ফায়ার করলেন।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সজল চৌধুরী বাড়িতে ফিরে পুষ্পা চৌধুরীর উপর রাগারাগি করতে শুরু করে দিয়েছেন। সায়মা চৌধুরীর থেকে সব শুনে তার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে।

“পুষ্পা এত সাহস পেল কোথায়? কোন সাহসে ও আমার ছেলে আর ছেলের বউকে বাড়ি থেকে বের করে দিল? এই বাড়ি আমার বাপ-দাদার। ওর নামে লিখে দিয়েছে জন্যই যা খুশি তাই করবে?”

পুষ্পা চৌধুরী এসে বললেন,”হ্যাঁ, করব। আমার যদি ইচ্ছা হয় তাহলে এখন আমি তোমাকেও ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করব। কি করবে তুমি?”

“পু্ষ্পা!”

“এই! গলা নামিয়ে কথা বলো। এত অডাসিটি আমি ট্রলারেট করব না।”

“আমি এক্ষুনি যাচ্ছি, আমার ছেলে আর ছেলের বউকে ফিরিয়ে আনতে। অনেক সহ্য করেছি আর না।”

“এই বাড়ি থেকে বেরোলে আর কোনদিন এই বাড়িতে ফিরতে পারবে না। বাড়ির দরজা চিরকালের জন্য তোমার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।”

“পুষ্পা!”

পুষ্পা চৌধুরী আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলন। সজল চৌধুরী ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। হঠাৎ করেই যেন নিজেকে খুব অসহায় আর অবহেলিত বোধ হলো। তিনি যেন বুঝতে পারছেন চিরকাল আভিজাত্যপূর্ণ জীবনযাপন করলেও তার পায়ের তলার মাটি শক্ত নয়। তাই তো নিজের ছেলে-ছেলের বউয়ের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। হঠাৎ করেই তার বুকের বা পাশে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হলো। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। তিনি আর বেশিক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। সিঁড়ি ধরে বসে পড়লেন। সায়মা চৌধুরী দৌড়ে এসে বলল,”ঠিক আছ তো ভাইয়া?”

সজল চৌধুরী কোন সাড়া দিলেন না।

~~~~~~~~~~~~~~
সমুদ্র বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরল। তাকে এই অবস্থায় দেখে প্রণালী বিচরিত হয়ে পড়লো। অস্থির কন্ঠে বলল,”আপনাকে এরকম লাগছে কেন? সব ঠিক আছে তো?”

সমুদ্র কোন কিছু না বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। প্রণালী লক্ষ্য করল সমুদ্রের মুখে আঘাতের দাগ। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ আঘাত করেছে। প্রণালী আর দেরি করলো না। পাশের বাসার ভাবির থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। এসে সমুদ্রকে বলল,”উঠে বসুন,আমি ফাস্ট এইড করে দিচ্ছি।”

সমুদ্র উঠে না বসে প্রণালীকে কাছে টেনে নিলো।

“কি করছেন? আপনার ব্লিডিং হচ্ছে তো
কিভাবে হলো এমন? আমাকে ফাস্ট এইড করতে দিন।”

“লাগবে না। তুমি শুধু আমার পাশে থাকো।”

প্রণালী সমুদ্রকে বোঝানোর প্রয়াস করল কিছুক্ষণ। অত:পর দমে গিয়ে বলল,”আপনার এত জেদ কেন?”

সমুদ্র বলল,”জানি না, আমি। তোমাকে ছাড়তে একদম ইচ্ছা করছে না। বুকে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, আমার খুব কাছের কাউকে হারিয়ে ফেলতে চলেছি। তুমি আমায় ছেড়ে যেও না প্রণালী। আমি বাঁচবো না তোমায় ছাড়া।”

“আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না, সমুদ্র। আপনি সামলান নিজেকে। কি অবস্থা আপনার। কে করলো এমনটা?”

সমুদ্র নিশ্চুপ। প্রণালী আর বেশি ঘাটালো না। সমুদ্রকে ফাস্ট এইড করে দিলো সন্তপর্ণে। অত:পর দুজনে একসাথে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো। রাতে ঘুমানোর আগে সমুদ্র শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমালো প্রণালীকে। কেন জানি হারানোর ভয় তাকে জেঁকে বসেছে। প্রণালীও কিছু বলল না।

to be continue…..