Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1609



গুমোট অনুভুতি পর্ব-৩+৪

0

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩

সামনে থাকা মেয়েটিকে মাথা চেপে বসে থাকতে দেখে সায়ান কিছুটা হতাশ হলো, ওকে দেখে আশেপাশের মেয়েরা হা করে তাকিয়ে, প্রশংসা করে কিন্তু এই প্রথম কোন মেয়েকে দেখলো যে ওর দিকে সেভাবে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। বিষয়টির সাথে খুব অপরিচিত সায়ান। আফটার অল সায়ান জামিল খান নামটা শুনলেই মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে,ঢাকা শহরের নামকরা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট যে কিনা মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে গোটা একটা কোম্পানির সিইও যেটার ব্রাঞ্চ শুধু বাংলাদেশ আরো অনেক কান্ট্রিতে আছে। এশিয়ার টপ টেন কোম্পানির একটি। তার উপর দেখতে মাশাল্লা অনেক হ্যান্ডসাম তাই অনেকের স্বপ্নের পুরুষ সে!

সায়ান কিছু না বলে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো তারপর চেয়ার টেনে রুশির ঠিক সামনাসামনি বসলো।কিছু একটার স্মেইল পেতেই রুশি মাথা তুলে তাকালো, বাদামি চোখ জোড়ার পরপরই চোখে পড়লো জলন্ত সিগারেট। রুশির চেহারায় স্পষ্ট আতঙ্ক ফুটে উঠলো, ভয়ে জড়োশড় হয়ে বসে পুনরায় মাথা নিচু করে ফেললো। কাঁপাকাঁপা হাতে বিড়বিড় করে কিছু বলতে লাগলো আর হাত দিয়ে কিছু একটা সরানোর ইশারা করছে। সায়ান রুশির কথা শুনতে না পেরে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে শুনতে পেলো মেয়েটি বিড়বিড় করে বলছে

“আগুন! আগুন! সব শেষ করে দিবে। সব শেষ!আগুন!”

সায়ান পরিস্থিতি বুঝতে পেরে হাতে থাকা সিগারেট ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষে আগুন নিভিয়ে ফেললো, তারপর কিছু শান্ত গলায় বললো

“কাম ডাউন! কিছু হয়নি। সি কোন আগুন নেই”

কিন্তু মেয়েটি অনবরত কেঁপেই যাচ্ছে আর বিড়বিড় করছে, সায়ান বুঝতে পারলো মেয়েটি ট্রমার মধ্যে আছে। কিন্তু এই ধরনের আচরণ মানুষ তখনি করে যখন সে ভয়ংকর কিছু ফেস করে,কথায় আছে না
“ঘর পোড়া গাই সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়”
সায়ান কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো, এই মুহুর্তে সিগারেট না জালালেও পারতো। কিন্তু মেয়েটিকে শান্ত করা দরকার তাই কিছুনা ভেবেই জড়িয়ে ধরলো মেয়েটিকে যদিও এটাই প্রথমবার নয়। পিঠে হালকা হাত রেখে শান্তনা দিচ্ছে,মেয়েটি ভয়ে ওর শার্ট খামচে ধরে বুকে লুকিয়ে আছে যেনো ছোট্ট খরগোশ ছানা লুকোচুরি খেলছে। মেয়েটির কাঁপুনি কিছুটা কমতেই সায়ান ওকে ছেড়ে দিলো তারপর অভয়ের স্বরে বললো

“সি কোন আগুন নেই, আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন”

কিন্তু মেয়েটি ভয়ে তাকাচ্ছে না দেখে সায়ান কিছুটা ধমকের স্বরেই বললো

“লুক এট মি! তাকান আমার দিকে, তাকান!”

ঠান্ডা কন্ঠের ধমক খেয়ে রুশি হচকিয়ে গেলো আর প্রায় সাথে সাথেই তাকালো আর সামনে সাথা ব্যাক্তির চোখে একরাশ আশ্বাস ছিলো যেনো চোখ দুটি বলছে “রুশি ভয় পেয়োনা, সত্যিই কিছু হয়নি”

রুশির কেনো যেনো এই বাদামি চোখ দুটোকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো তাই পাশে তাকানোর সাহস না থাকলেও তাকালো। ফ্লোরে চোখ যেতেই ছাই হওয়ে যাওয়া সিগারেট চোখে পড়লো, নাহ আগুন নেই, সত্যিই নেই!

রুশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পাশে তাকালো,এতোক্ষন একটা ছেলের অনেকটা কাছে ছিলো তাতেই যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নখ খুটতে লাগলো। ওর এখনো স্পষ্ট নয় ও ঠিক এখানে কেনো? কেনো নিয়ে আসা হয়েছে ওকে এখানে? তাও আবার সায়ান জামিল খান ওর সামনে বসে আছে! রুশি মনে মনে ভাবছে প্রশ্ন গুলো কি করে করা যায় তার মাঝেই সামনের ব্যাক্তি প্রশ্ন করলো

“আমি জানি আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আর থাকাটাই স্বাভাবিক। আমিই আপনাকে এখানে নিয়ে আসতে বলেছি”

রুশি ফট করে বলে ফেললো

“ও তাহলে আপনিই আমাকে কিডন্যাপ করেছেন?কিন্তু কেনো! আমার থেকে না টাকা পয়সা পাবেন না অন্যকিছু তাহলে আবার অন্য জন ভেবে ভুল করে তুলে আনেন নি তো?এই আপনি কি আমার কিডনি বিক্রি করে দিবেন নাকি বিদেশে প্রাচার করে দিবেন?সাংঘাতিক লোক তো আপনি!”

বেশি কথা বলা সায়ানের কোন কালেই পছন্দ ছিলো না আর না কারো ননস্টপ কথা শুনতে তাও আবার এইরকম ননসেন্স কথাবার্তা! লাইক সিরিয়াসলি?ওর টাকার পয়সার কি এতোই অভাব যে এই কিডনি বিক্রি করতে হবে আর বিদেশে প্রাচার!রাবিশ, সায়ানের রাগ লাগলেও সেটা চেহারায় প্রকাশ করলো না, কারণ ঠান্ডা মাথায় সবকিছু হেন্ডেল করার অভ্যস আছে ওর নাহয় এতো বড় কোম্পানি একা হাতে সামলানো চারটিখানি কথা নয়।কয়েকবার জোরে শ্বাস নিয়ে রাগ সংযত করলো তারপর চেহারায় হালকা হাসি টেনে বললো

“তেমন করার ইচ্ছে নেই আপাদত মিস.রুশানি, আপনি যদি সোজা কথায় গার্ডদের সাথে চলে আসতেন তাহলে এমন কিছুই করতে হতোনা আমায়। যাইহোক আপনার সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলতেই এখানে ডাকা হয়েছে আপনাকে। আশাকরি আপনার ননসেন্স কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করবেন না”

রুশি কথাটা শুনে কিছুটা রেগে গেলেও কিছু বললো না, ওর কি হয়েছে ও নিজেই বুঝতে পারছে না। এই ধরনের ফাউল কথা বললো কি করে সেটাই ভাবতে পারছেনা। এতো বড় বিজনেস ম্যান ওর কিডনি বেচতে যাবে কোন দুঃখে! কিন্তু হঠাৎ করে কথা বলতে ইচ্ছে করেছিলো তাই বলে দিলো নাহয় এমনিতেই কথা কম বলে ও তারউপর এই ধরনের যুক্তিহীন কথা বার্তাতো বলারই কথা না। তাহলে এটা কি মুডসুইং?যার জন্য হঠাৎ ওর অনেক অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছে!

রুশির ভাবনার মাঝেই সায়ান গলা খাঁকারি দিলো,এই মেয়ে হুটহাট কোথায় গায়েব হয়ে যায় তাই খুজে পাওয়া যায় না। রুশি ওর দিকে তাকাতেই কিছুটা সিরিয়াস ভংগিতে বললো

“দেখুন আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারিনা, আপনাকে এখানে ডেকে আনা হয়েছে কারণ আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই!”

সায়ান আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো, পরের কথাটা ঠিক কিভাবে বলবে ও বুঝতে পারছে না। এদিকে রুশি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, দ্যি গ্রেট সায়ান জামিল খান প্রোপোজ করছে ওকে তাও বিয়ের জন্য! এটা হয়তো ওর জন্য সৌভাগ্য হতো আর যাইহোক যে নরকে ও আছে সেটা থেকে মুক্তি পেতো ও কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন, ও এখন একা নয় বরং ওর মাঝেই অন্য একটি প্রান ভেসে উঠছে। রুশি মাথা নিচু করে ফেললো আর কিছুটা শান্ত স্বরে বললো

“আমি আপনাকে করতে পারবো না, বলতে পারেন আমি আপনার যোগ্য নই, কোনদিক থেকেই না। আমার পক্ষে হ্যাঁ বলা সম্ভব নয়”

রুশির কথা শুনে সায়ান কিছু বললো না, উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ডেস্কের উপর থেকে কিছু একটা নিয়ে রুশির দিকে এগিয়ে দিলো। রুশি বুঝতে না পেরে সেটা নিয়ে দেখা শুরু করলো আর খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারলো এটা ওর প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট।কিন্তু এটাতো ও নিজ হাতে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে তাহলে এই লোকের কাছে কি করে এলো?ভয়ার্ত কন্ঠে সায়ানের দিকে তর্জনি আংগুল দিয়ে বললো

“আপনি কি করে জানলেন?এটা আপনার কাছে কি করে আসলো? আমি নিজ হাতে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি এটা। আপনার কাছে কেনো এটা?”

“উইথ মাই পাওয়ার একটা রিপোর্ট বের করা করা কোন কঠিন কাজ নয় আমার জন্য”

রুশি ঢোক গিলে বললো

“এই নিউজ দিয়ে আপনি কি করবেন?আপনার কি যায় আসে এতে?”

“অনেক কিছু যায় আসে কারণ আমি এই বাচ্চার বাবা!”

রুশি অবাক করা চাহনিতে তাকালো,এতোক্ষন এই ব্যাক্তির জন্য যে শ্রদ্ধা আর সম্মান কাজ করেছিলো তা নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।মুখে একরাশ ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ পেলো না । আজ ওর লাইফ যে মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে তার জন্য একমাত্র দায়ী হচ্ছে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি, সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত এই ও শুধু একটাই উইশ করে গেছে যে এই জঘন্য লোকের সাথে দ্বিতীয়বার দেখা না হয়। আর যাই হোক ও এটা ডিজার্ভ করতো না,ওর লাইফ নষ্ট করে দিয়ে এখন আদিক্ষেতা দেখাতে এসেছে।ও কাউকে ক্ষমা করবে না, না এই লোকটিকে আর না..

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৪

এক মাস পুর্বে~~~~

রুশি তখন ভার্সিটির গন্ডিতে পা রেখেছে চারমাস হলো,ভার্সিটিতে বিশেষ ক্লাস ছাড়া খুব একটা যাওয়া হয়না। কলেজে থাকতে ওর দুইজন বান্ধুবী ছিলো স্নেহা আর তিথি যদিও তিথির সাথে সখ্যতা বেশি ছিলো যাকে বলে বেষ্ট ফ্রেন্ড। তাই তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা দেখা করবে। রুশি সেদিন লংড্রেস আর আর গলায় স্কার্ফ ঝুলিয়ে পার্স নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এই ড্রেসটি জন্মদিনে ওর বাবাই গিফট করেছিলো। যেহেতু এমনি এমনি বাড়ি থেকে বেরুতে পারবে না তাই টিউশনির সময় বেরিয়েছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে। ওরা প্রায় কয়েক ঘন্টা ঘুরাঘুরির পর হঠাৎ স্নেহা বলে উঠলো

“চল পাশেই একটা ক্লাব আছে সেটাতে যাই,এটা অনেক পরিচিত একটা ক্লাব অনেক মজা হবে”

প্রায় সাথেসাথেই তিথি হ্যা বলে কিন্তু রুশি বেকে বসে। এসব ক্লাব সম্পর্কে ওর এতোটা ধারণা নেই তবে টিভিতে দেখেছে মেয়েরা ছোট ছোট ড্রেস পরে থাকে আর ডান্স করে তাছাড়া এলকোহলও সার্ভ করা এখানে। তাই ও রাজি হতে চাইলো না আর তাছাড়া প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে বাবাইকে কি জবাব দিবে ও?ও না করে দিতেই ওর বান্ধুবীরা মন খারাপ করে ফেললো, তিথি বলেই ফেললো

“আমরা যাই বলি সবকিছুতেই তুই না করে দিস, তোকে আমাদের ট্রিটয়ে নিয়ে যাবো প্লিজ চলনা অনেক মজা হবে। জাস্ট থিংক লাইফের ফার্স্ট টাইম ক্লাবে যাবো, আমার তো ভাবতেই খুশিখুশি লাগছে”

রুশি বুঝতে পারলো ওদের এতো আগ্রহের কারণ, টিনেজারদের স্বভাবই হচ্ছে সবকিছুতে অদম্য কৌতুহল! জিনিসটা ভালো হোক বা না হোক সবকিছু একবার না একবার ট্রাই করে দেখা চাই। তাই হয়তো জীবনের প্রথম সিগারেট ছেলেরা কৈশরেই খায়।কিন্তু ক্লাবে কোন ভালো জিনিস নয় সেটা রুশি ঢের বুঝতে পারলো কিন্তু ভাবলো বান্ধুবীরা এতো করে বলছে যাওয়াই যায়। অল্প কিছুক্ষণ থেকে নাহয় চলে আসবে।বাবাইকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে যে ও ওর বান্ধুবীর বাসায় থেকে পড়াশুনা করবে আজকে।
ওরা সেই ক্লাবের সামনে যেতেই ওদের গার্ডরা ভেতরে ঢুকতে দিলো। ওর বান্ধুবিরা কিছুটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়লেও ওর পোষাকে বাঙালিয়ানা ছিলো তাই ক্লাবের মানুষগুলো ওর দিকে কেমন করে যেনো তাকাচ্ছিলো।
রুশি চুপচাপ এক কর্নারে বসে ওর ফ্রেন্ডদের ডান্স দেখেছিলো, ওর হাতে সফট ওরেঞ্জ জুস ছিলো যা ওর ফ্রেন্ড ওর্ডার করে দিয়েছিলো। ওর কিছুক্ষনের মাঝে নিজের ফ্রেন্ডদের কিছু ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলো যা ওর ভালো ঠেকলো না তাই ও তিথির কাছে গিয়ে কানেকানে বললো যে ও বাড়ি ফিরে যেতে চায় কিন্তু তিথি বললো ও একটু ওয়াশরুমে যাবে, ওর সাথে যেনো রুশি যায়। ওয়াশরুম থেকে ফিরেই বাসায় চলে এই মর্মে তিথির সাথে ও দোতলার একটি রুমে যায়। ক্লাবের রেস্টরুমের ব্যাবস্থা আছে তা দেখে রুশি অবাক হয়, আফটারল দামি ক্লাব।তিথি ওর হাত ধরে বলে

“তুই এখানে বস, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি”

রুশি মাথা নাড়িয়ে খাটের উপর বসে পড়ে, ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফেসবুক স্ক্রল করতে থাকে। ওর কেনো যেনো মাথা ঝিমঝিম করছে আর খুব ঘুম পাচ্ছে। প্রায় দশ মিনিট পরেও যখন তিথি বেরুলো না তখন ওয়াশরুমের দরজায় নক করতেই তিথি বলে আরেকটু সময় লাগবে ওর। রুশি আগের জায়াগায় গিয়ে বসে পড়ে, ওর চোখের সামনে সবকিছু কেমন যেনো অস্পষ্ট হতে লাগলো।অনেক চেষ্টা করেও চোখ খুলে রাখতে পারছিলো না, ঘুমে এক প্রকার ঝিমোচ্ছিলো ওর তাই বিছানায় সুয়ে পড়লো, ওর ধারণা তিথি বের হলে ওকে ডেকে দিবে।

কতক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়েছে ও জানেনা তবে ও টের পাচ্ছিলো ওর শরীর গরম হয়ে আছে, রিতীমত ঘামছিলো কিন্তু চোখ মেলে তাকানোর ক্ষমতা ছিলো না, কেউ একজন ওকে ডাকছিলো, বিছানা থেকে উঠতে বলছিলো কিন্তু ও চোখ মেলে তাকাতে পারছিলো না।ওর মনে হচ্ছিলো ওটা একটা মেয়ে ছিলো।ঝাপসা চোখে লম্বা চুল,মেয়েলি পারফিউম আর কন্ঠ!তারপর কি হয়েছে কিছু মনে নেই।

সকালের মৃদু আলো চোখে পড়াতে ও চোখ মেলে তাকায়,বিরক্তি নিয়ে চারপাশে তাকালো আর বুঝতে পারলো ও বাসায় নেই। ও চারপাশে তাকিয়ে তিথিকে খুজছিলো কিন্তু পায়নি। নিজের শরীর হালকা মনে হতেই সব কিছু ক্লিয়ার হয়ে গেলো। ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে মানে সেখানে কেউ শাওয়ার নিচ্ছে।ওই মুহুর্তে কি করা উচিৎ ওর মাথা কাজ করেছিলো না, শুধু জানে এখান থেকে বেরুতে হবে যেকোন মুল্যে বেরুতে হবে। নিজের জামাকাপড় ঠিক করে পার্স নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো সেখান থেকে, চারপাশের মানুষ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তাই স্কার্ফ মাথায় দিয়ে মুখ ঢেকে বেরিয়ে পড়ে সেখান থেকে। ওর এখনো শরীর কাঁপছে, কাল রাতের ঘটনা ভাবার সাহস পাচ্ছেনা কিছুতেই। গাল বেয়ে পানি পড়ছে, এই পর্যন্ত প্রায় বিশবারের মতো তিথিকে কল করেছে কিন্তু বরাবরি নাম্বার ব্যাস্ত দেখাচ্ছে। তিথি ওই অবস্থায় কোনরকম বাসায় চলে আসে, আর আসতেই পালক মায়ের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। অনেক কথা শুনেছে জন্ম নিয়ে যেমন নিশ্চিত কারো পাপের ফসল তাই ফেলে চলে গেছে আর এখন আমাদের ঘাড়ে এসে জুটেছে। রুশি মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো, এসব কথার জবাব দিতে কখনোই ইচ্ছে করে না কারণ ও জানে না কেনো ওর বাবা ওকে ফেলে চলে গেছে। হয়তো এমন কিছুই হয়েছিলো তাই…
কিছুক্ষণ লেকচার শুনার পর ও নিজের রুমের দিকে যায়, একেরপর এক ফোন দিতে থাকে কি হয়েছে তা জানার অন্য কিন্তু তিথি ধরেনি। প্রায় এভাবে অনেকদিন কেটে যায় আর স্নেহা, তিথি দুইজনকেই ফোন দেয় কিন্তু কেউ ধরেনা। রুশি বুঝতে পারে ওরা ইচ্ছে করে এমন করেছে ওর সাথে, কিন্তু রুশির খারাপ লাগছে শেষ পর্যন্ত তিথিও এমন করলো! ও তিথিকে নিজের ফ্রেন্ড কম বোন বেশি মনে করতো আর সে কি করে এমন জঘন্য খেলা খেললো ওর সাথে?
আর ওই লোকটি! ওর অবস্থা দেখে একবারো দয়া হয়নি তার!মনে হয়নি এই অসহায় মেয়েটিকে ছেড়ে দেই?সব ক্ষেত্রে সুযোগ পেলেই কেনো তার সদ্ব্যবহার করতে হবে?কিছু কিছু সময় এটাও তো ভাবা যায় যে এই মেয়েটি কারো ঘরের সম্মান তার ভবিষ্যৎ স্বামীর আমানত। তাকে ছেড়ে দেই কারণ আর যাই হোক সেসময় ওর পরিস্থিতি দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে ও ইচ্ছে করে সে জায়গায় যায়নি!

কিন্তু তাকে আর কি বলবে যেখানে নিজের কাছের মানুষটিই ধোঁকা দিয়ে দিলো,ওর এতোবড় সর্বনাশ করলো!রুশির কাছে নিয়তি মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না, তার উপর ওর বেবি!আর যাই হোক এমন কিছু ও ডিজার্ভ করেনা, খুব কি ক্ষতি হতো যদি এমনটা না হতো ওর সাথে!

_____বর্তমান_____

গত একমাসের কথা ভাবতেই ওর চোখ ভরে এলো, ওর এখনো মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে এমন কিছু হয়নি ওর সাথে। চোখ মেললেই এই দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে কিন্তু বাস্তবতা বড্ড কঠিন।হাজার চাইলেও বদলানো সম্ভব নয়। রুশি চোখদুটি লাল হয়ে আছে যাতে ফুটে উঠেছে রাগ, ঘৃণা, অভিমান আর অসহায়ত্ব। সায়ানের এই চোখের ভাষা পড়তে কষ্ট হয়নি, ও বুঝতে পারছে ওর একটা ভুলের কারণে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। লজ্জায় সায়ান মাথা নিচু করে ফেলেছে কিন্তু ও যা করেছে ইচ্ছে করে করেনি।

ওর কিছু ফ্রেন্ডদের সাথে একমাস আগে ও ক্লাবে গিয়েছিলো কোম্পানির পাঁচবছর পুর্তি সেলিব্রেট করতে। যেহেতু ক্লাবটি ওর একটি বন্ধুর ছিলো তাই ওদের সবার জন্যই সেখানে আগে থেকেই রুম বুক করা ছিলো। যেহেতু খুশির মুহুর্ত ছিলো তাই ফ্রেন্ডদের রিকোয়েস্টে একটু বেশি ড্রিংক করে ফেলেছিলো কিন্তু এতোটাও নয় যে নিজের হুশ হারিয়ে ফেলবে। বরাবরই ওর এলকোহল টলারেন্স খুব ভালো তাই হাল্কা মাথা ঝিমঝিম করলেও তেমন একটা কিছু হয়না। কিন্তু ওইদিন কি হয়েছে ও জানে না,ওর সারা শরীরে মনে হচ্ছিলো কেউ হিট দিচ্ছে। হি কুডেন্ট জাস্ট কন্ট্রোল হিমসেল্ফ!রুমে গিয়ে একটা মেয়েকে বিছানায় দেখে ও তাও চেষ্টা করেছিলো তাকে উঠাতে যাতে কোন ভুল না হয় কিন্তু মেয়েটি রেস্পন্স করেনি তাই ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বেরিয়ে যাবে বাট কেউ একজন বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়েছিলো আর ওর পকেটের ফোন গায়েব ছিলো। হি ওয়াজ টোটালি হেল্পলেস আর…

যাইহোক সকালে মেয়েটি কিছু না বলেই বেরিয়ে গিয়েছিলো তাই ও ওর লোকদের বলেছিলো মেয়েটির উপর নজর রাখতে আর খোঁজখবর নিতে। একটা প্রজেক্ট নিয়ে এই একমাস অনেক ব্যস্ত ছিলো তাই মেয়েটির সাথে কথা বলার সুযোগ পায়নি। সেই প্রজেক্ট নিয়ে ও এখনো ব্যাস্ত তবে কালকে জানতে পারে মেয়েটা প্রেগন্যান্ট তাই ও সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েটির সাথে কথা বলা দরকার। মেয়েটি মিডল ক্লাস ফেমিলি থেকে বিলং করে তাই এটা মেয়েটির জন্য অনেক বড় ইস্যু। কারণ আমাদের সমাজে কেউ কাউকে সাহায্য করুক আর না করুক তাদের কথা শুনাতে বড্ড ভালোবাসে।

সায়ান বুঝতে পারলো রুশি মনের অবস্থা বর্তমানে ভালো নয়, তাই ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে হবে।সায়ান শীতল কন্ঠে বললো

“দেখুন আমি জানি যা করেছি তাতে আমার ছোট্ট একটা স্যরি তা ঠিক করতে পারবে না।আর তা বলে আপনাকে অসম্মান করতেও চাইনা, আমি শুধু রেস্পন্সিবল হতে চাই আপনার জন্য। আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুণ তবে যা হয়েছে তা আমার ইচ্ছেতে হয়নি”

সায়ান একনিশ্বাসে কথাগুলো বললো তারপর কিছুটা থেমে আবারও বলে উঠলো

“আই ওয়াজ ড্রাগড! আমি জানি এটা কে করেছে কেনো করেছে, আমি তার ব্যাপারে এখনো ইনভেস্টিকেট করছি। তাই ওইদিন যা হয়েছে তা আমি ইচ্ছে করে করেনি। আম রিয়ালি স্যরি ফর দ্যাট নাইট”

রুশি রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো সায়ানের,স্যরি!সামান্য স্যরি ওর হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারবে?পারবে সবকিছু বদলে দিতে!রুশি ঠোঁটের কোন তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বললো

“আর আপনার কেনো মনে হয় আপনি যা বলছেন তা আমি বিশ্বাস করে নিবো?আমাকে কি বাচ্চা মনে হয় যা বুঝাবেন তাই বুঝবো?আপনি যা করেছেন ইচ্ছে করে করেছেন, একা একটা মেয়েকে পেয়ে এতোবড় সুযোগ হাতছাড়া করবেন কেনো? আপনারা সব পুরুষরাই এক, কখনো নারীদের মনকে ভালোবাসেন নি বেসেছেন তাদের সৌন্দর্যকে”

সায়ান রাগে হাত মুঠো করে ফেললো, এই মেয়ের সাথে যতো ঠান্ডা মাথায় কথা বলছে তত রাগ দেখাচ্ছে। জীবনের প্রথম কাউকে স্যরি বলেছে আর এই মেয়েকে দেখো উল্টো মেজাজ দেখাচ্ছে। এর এক পার্সেন্ট ও যদি নিজের সৎ মায়ের উপর দেখাতো তাহলে কি এমন পরিস্থিতিতে থাকতো কিন্তু না তখনতো মিনি বেড়াল হয়ে থাকে। সায়ান কয়েকবার শ্বাস ফেলে বললো

“যদি মিথ্যেই বলতাম তবে তোমাকে এখানে ডেকেছি কেনো?আমিতো ইজিলি এই দ্বায়িত্ব নেয়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারতাম আর তুমি জানতেও পারতে না কিন্তু আমি যা বলেছি তা সম্পুর্ণ সত্যি বলেই তুমি আমার সামনে বসে আছো। আম…স্যরি তুমি করে বলে ফেলেছি!”

রুশি কিছুক্ষণ ভাবলো, আসলেই যদি যা বলেছে তা সত্যি না হয় তাহলে সায়ান জামিল খান ওর সামনে ধরাই বা কেনো দিবে আর যাই হোক তার লাইফে মেয়ের কোন অভাব নেই। রুশি চোখ মুছে তার দিকে তাকিয়ে বললো

“তো এখন কি করতে চান?”

“দেখুন আমি…আমি আপনাকে বিয়ে করে দায়িত্ব নিতে চাই আর আপনাকে সেফও রাখতে চাই কিন্তু আমি আপনাকে সারাজীবনের জন্য বিয়ে করতে পারবো না! বলতে পারেন আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, চাইলেও সম্ভব নয় কারণ আমি ওয়াদাবদ্ধ! আমার বাচ্চা এটলিস্ট দুইবছর হওয়া পর্যন্ত আপনাকে ওর পাশে থাকতে হবে আর তারপর আপনি ওকে আমার কাছে দিয়ে দিবেন”

রুশি হাসলো, যেটা ভেবেছে সেটাই। দ্যি গ্রেট সায়ান জামিল খান ওকে সারাজীবনের জন্য বিয়ে এটা ও ভাবলো কি করে?হাহ, নিজের সন্তানের দায়িত্ব নিতে এসেছে! আর ও? ভেবেছে ওর ব্যাপারে যে ও কি করে থাকবে এরপর! সবকিছু নাহয় বাদ ই দিলো, ওর সন্তান! ওকে ছাড়া কি করে থাকবে? এটা কি আদোও সম্ভব যে যাকে নয়মাস গর্ভে ধারণ করবে তাকে ছেড়ে ও চলে যাবে?
রুশি কঠিন গলায় বললো

“আর আপনার এটা কেনো হয় যে আমি আপনার শর্তে রাজি হবো?আমার সন্তান আমার কাছে থাকবে আর আমি একাই তার জন্য যথেষ্ট”

“আমার এটা মনে হয় না বরং আপনি এমনটাই করবেন কারণ আপনি বাধ্য। বিয়ের ছাড়া একটা বাচ্চাকে লালন পালন করা কি হাতের মোয়া মনে করেন?এই সমাজ টিকতে দিবে আপনাকে?কখনোই দিবে না। কিন্তু আমার কথায় রাজি হলে আপনি প্রপার সম্মান যেমন পাবেন তেমন আমি আপনার কেরিয়ার গড়ে দিবো যাতে ভবিষ্যতে আপনি ইন্ডিপেনডেন্ট থাকতে পারেন। আর তাছাড়া আপনি চাইলেই আপনার বাচ্চার সাথে দেখা করতে পারবেন আমি বাধা দিবো না। শুধু মাত্র একটা কথাই রাখতে হবে আর তা হচ্ছে আপনি আমাদের বিয়ের কথা বাইরে প্রকাশ করতে পারবেন না”

সায়ানের কথা শুনে রুশি দোটানায় পড়ে গেলো, সায়ান যা বলছে তা সত্যি এই সমাজে ও নিজের বাচ্চা নিয়ে বাঁচতে পারবে না। কিন্তু তাই বলে তিনবছরের বিয়ে!তবে এই মুহুর্তে এইটাই সবচেয়ে সেফ ডিসিশন আর যাইহোক ওর বাচ্চাকে কেউ ভবিষ্যতে কিছু বলতে পারবে না কারণ তার বাবা আছে।রুশি নিজেকে রাজি করালো আর যাইহোক নিজের সন্তানের জন্য ওকে রাজি হতে হবে।রুশি কাঁপা গলায় বললো

“আমি রাজি তবে আমার একটা শর্ত আছে! ভবিষ্যতে আমার সন্তান আমাকেই মা হিসেবে চিনবে”

সায়ান মাথা নাড়ালো এছাড়া আর কোন উপায় দেখছে বলে মনে হচ্ছে না, তবে সামনে থাকা মেয়েটির জন্য ওর খারাপ লাগছে। ওর হাতে কারো জীবন নষ্ট হয়ে গেলো কিন্তু ওতো ওয়াদাবদ্ধ কারো কাছে যা চাইলেও ভাংতে পারবে না। কিন্তু ও নিজের দায়িত্ব পালন করে যাবে,দরকার হয় ভবিষ্যতে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রুশির বিয়ে দিবে। ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে রুশির প্রতি দায়িত্বগুলো পালন করার!

#চলবে🌸

(আশাকরি সব ক্লিয়ার হয়েছে, আর চেইক করার সময় পাইনি তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।শুভ রাত্রি)

গুমোট অনুভুতি পর্ব-১+২

0

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১

“মিস. রুশানি! কংগ্রাচুলেশন,আপনি মা হতে চলেছেন”

কথাটা শুনে রুশি থম মেরে বসে রইলো, ডাক্তারের এগিয়ে দেয়া রিপোর্ট হাতে নিবে সেই সাহস হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে কোন এক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছে, চোখ মেললেই সব মিথ্যে হয়ে যাবে। রুশিকে চুপ করে থাকতে দেখে ডাক্তার বলে উঠলো

“আপনার হাজবেন্ড আসেনি সাথে?না আসলে তাকে বলে দিতাম আরকি আপনার খেয়াল রাখতে। আপনার শরীর বেশ দুর্বল তাই বেবির ক্ষতি হতে পারে, আমি কিছু ভিটামিন দিয়ে দিচ্ছি।”

রুশির কর্ণপটে হাজবেন্ড ব্যতীত অন্য শব্দ ঢুকেনি, কোনরুপ কাঁপা হাতে রিপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়লো হসপিটাল থেকে। হসপিটালের চৌকাঠ পেরুতেই অবাধ্য চোখের জলগুলো গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। হাজবেন্ড! সেটা কোথা থেকে আসবে ওর?
সবেমাত্র আঠারো পেরিয়ে উনিশে পা দিয়েছে তার মধ্যেই জীবনে এতো বড় ঝড়!

সামনে থাকা পার্কের ঘাসে বসে পড়লো সামনে লেকের পানির উথালপাতাল ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে ওর অন্তরের অশান্ত স্পন্দন। ঢুকরে কেঁদে উঠলো ও।

“বিধাতা! আমার সাথেই কেনো এমন হয়?জন্মের পর বাবা মা ফেলে চলে গিয়েছে, ছুড়ে ফেলে দিয়েছে অনাথ আশ্রমের দরজায়। যাও বাবাই দয়া করে আমাকে নিজের মেয়ে বানিয়ে তার গৃহে ঠায় দিয়েছে তাও আম্মু কোনদিন মেনে নেইনি আমায়! প্রতিনিয়ত আমাকে স্মরণ করিয়েছে আমি অনাথ, আমার কোন পরিচয় নেই। তাও তো ভালো ছিলাম, দু মুঠো ভাত তো কপালে জুটতো! কিন্তু আজ! এখন তো আমার মাথার শেষ আশ্রয় টুকুও থাকবে না। আম্মু তো আমাকে আর ওই বাড়িতে জায়গা দিবে না। কই যাবো আমি?”

রুশি পার্কে বসে কান্না করছে নিশ্চুপে তবে ওর কান্না দেখার মতো কেউ নেই। অনাথদের কেউ থাকে না ওরও নেই। যতো অনাথ শব্দটা মনে পড়ে তত নিজের আসল বাবা মায়ের জন্য ঘৃণা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। আজ ওর এই অবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী ওর আসল বাবা মা, তারা যদি ওকে ফেলে না যেতো তবে আজ এইখানে এইভাবে বসে ওকে চোখের জল ফেলতে হতো না।

ওর পালক বাবা মায়ের আরো দুজন সন্তান আছে, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে যারা ওর থেকে বড়।ছেলে গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করে বেকার হয়ে বসে আছে আর মেয়েটি ওর থেকে দুই ক্লাস সিনিয়র। রুশি সবে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে উঠেছে। ইন্টার পর্যন্ত পালক বাবা খরচ চালালেও এর আর চালাতে পারছে না কারণ তার স্ত্রী এটা পছন্দ করেনা। আর স্ত্রীর কথার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই, তাই রুশি টিউশনি করে তিনটা তাতেই আপাদত খরচ চলে যায়। মাঝেমাঝে তিনি বড্ড আফসোস করেন ওর জন্য যে ওকে সঠিক ভাবে লালনপালন করতে নিয়ে আসলেও তিনি তার কথা রাখতে পারেনি। কিন্তু রুশিকে যে অনাথ থেকে এখানে এনে ঠায় দিয়েছে এতেই রুশি অনেক কৃতজ্ঞ তার কাছে তার উপর ছোট থেকে এই একটা মানুষই তাকে বড্ড ভালোবাসে!

রুশি উঠে দাঁড়ালো তারপর হাতে থাকা রিপোর্ট ছিড়ে টুকরো টুকরো করে লেকের পানিতে ভাসিয়ে দিলো। ও জানেনা কয়দিন পর্যন্ত এই সত্য লুকিয়ে যেতে পারবে তবে আপাদত এই রিপোর্ট হাতে বাড়ির ফেরার সাহস ওর নেই। ও কি করবে এই মুহুর্তে কিছুই জানেনা তবে বাড়ি ফেরা দরকার প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সন্ধ্যার আগে বাড়ি না ফিরলে রাতের খাবার কপালে জুটবে না আজ, ছোট থেকে এটাই নিয়ম, কোন ভুল করলেই খাবার বন্ধ হয়ে যেতো এমনও হয়েছে যে সারাদিন না খেয়ে আছে কিন্তু জিজ্ঞেস করার কেউ নেই। রাতে বাবা এসে তারপর চুপিচুপি খাইয়ে দিয়েছে।

রুশি বাসার উদ্দ্যেশ্য রওনা দিলো, রাস্তার ধারে আনমনে হাটছিলো হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। ওর কেনো যেনো মনে হচ্ছে কয়েকটা পা ওর পিছুপিছু আসছে। প্রায় সাথে সাথেই পেছনে তাকালো কিন্তু পিলার ছাড়া আর কিছু চোখে পড়লো না। বাড়ির ফেরার পথে এরুপ কয়েকবার পিছনে তাকিয়েছো কিন্তু হতাশ হয়েছে। পরে মনের ভুল ভেবে আর তাকাইনি। বাড়ির দরজা খুলতেই তীব্র গতিতে একটা পাতিল ওর পায়ে এসে পড়লো, তীক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভব হতেই কয়েককদম পিছিয়ে গেলো। আশে পাশে ভাত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সামনে তাকিয়ে দেখে পালক মা রাগে ফুসছে তার হাতে কাঠের খুন্তি। সেটা হাতে নিয়েই এগিয়ে আসলো আর চড়া গলায় বললো

“মহারাণী কই থেইকা ফিরেছেন হ্যা?সারাদিন যহন বাইরে কাটাইবার ব্যাবস্থা হইয়াই গেছে তয় আর বাড়ি ফিরোনের দরকার আছে নি।হারাডাদিন আমি কাম কইরা কইরা খাটমু আর আপনে আইসা গিলবেন শুধু?এই নাহাররে কামের বেডি পাইছুন নি”

রুশি কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে, পালক মায়ের কথায় খারাপ ইংগিত প্রকাশ পেলেও খুব একটা ভাবান্তর হলো না ওর। বুঝ হওয়ার পর থেকে এসব শুনতে অভ্যস্ত ও তাই শরীরে সয়ে গেছে। ও সুন্দর মতো বসে ভাতের পাতিল ঠিক করতে লাগলো তখনি কানে একটি কন্ঠ ভেসে আসলো ওর পালক বাবার মেয়ে নিহা মায়ের সাথে তালমিলিয়ে বলছে

“দেখো মা টিউশনির নামে কার সাথে কি কি করে!এসব মেয়েকে আমাদের এখানে রাখলে মান সম্মান থাকবে বলে মনে হচ্ছেনা মা। বাবা যে এসব আপদ আমাদের ঘাড়ে কেনো এনে ফেলেছে বুঝিনা।একে তাড়াতাড়ি তাড়ানোর ব্যাবস্থা করো মা নাহয় রুপের মায়া জালে ভাইকে কখন ফাঁসিয়ে ফেলে!দেখোনি আগে কেমন সাইড নিতো ওর”

নিহার কথায় রুশির পিলে পর্যন্ত জলে উঠলো, ওর পালক ভাই নিহাল যাকে ও কোন কালেই পছন্দ নয়। তার সুদর্শন চেহারার পেছনে লুকিয়ে আছে আস্ত এক লম্পট। ছোট থেকে আদরের বাহানায় অসংযত স্পর্শ করার যেনো তার অভ্যস হয়ে গিয়েছে, প্রথম প্রথম না বুঝলেও পরে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেছে। এখন সুযোগ পায়না বলে রুশি এখন তার চরম শত্রু।
রুশি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পাতিল সুন্দরমতে রান্না ঘরে রাখলো তারপর নিজের জীর্ণশীর্ণ কামরার দিকে রওনা হলো,দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নরম স্বরে বললো

“অন্নকে সম্মান না করলে অকালে তা কপাল থেকে চলে যায়”

তারপর রুমে ঢুকে গেলো আর দরজা লক করে দিলো, বাইরে থেকে নাহার বেগম মানে ওর পালক মায়ের কন্ঠ ভেসে আসছে

“আমারে তর চাকরানী মনে হইতাছে, রাইতের খাওন কে রানবো?”

কিন্তু রুশির সেই কথার জবাব দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে বা অধিকার কোনটিই নেই কারণ ও পালক সন্তান, দুমুঠো খাবার দিচ্ছে তাতেই অনেক। বিছানায় গা এলিয়ে দিলো, কয়েকদিন ধরেই শরীর ভালো যাচ্ছিলো না তাই টিউশনির টাকা পেতেই ডাক্তারের কাছে গেলো কিন্তু এতোবড় কিছু হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি। এই বাচ্চাকে ও পৃথিবীর মুখ কি করে দেখাবে যেখানে নিজের থাকারই নিশ্চয়তা নেই?তাছাড়া বিয়ে ছাড়া কোন সন্তান জন্ম দেয়াকে এই সমাজ মেনে নিবে সেখানে মেয়েটার দোষ থাকুক আর না থাকুক। রুশি নিজের পেটের উপর হাত রাখলো, ও ভাবতেই পারছেনা ওর এই দেহে একটা ছোট্ট প্রান ধীরেধীরে বেড়ে উঠছে!

“তোর মা বড্ড অসহায় বাবু কিন্তু তুই চিন্তা করিস না, নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও তোর কিছু হতে দিবে না তোর আম্মু। তুই শুধু আম্মুকে ছেড়ে যাস না”

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২

বিশাল বড় বিল্ডিং এর দশতলায় হেড বসের অফিস, সেই অফিসের দরজার সামনে দুজন বডিগার্ড মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, বসের এসিসট্যন্ট নিশ্চুপ ভাবে দাঁড়িয়ে বসের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে কিন্তু ঠিক ধরতে পারছে না। প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ তার সামনে থাকা ব্যাক্তিটি চেয়ারে মাথা এলিয়ে একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, সাহস করে যেই কয়বার তাকিয়েছে সেই কয়বারের একবারো তাকে চোখের ফলক ফেলতে দেখেনি।

আজ প্রায় একমাস ধরে নিজের বসকে অবসার্ভ করছে সাহিল, এর পুর্বে এতোটা শান্ত কখনো দেখেনি তাকে। যদিও তিনি খুব একটা কথা বলেন না কিন্তু তার মুখে একটা মিষ্টি হাসি থাকতো যা এই এক মাসে চোখে পড়েনি! সারাক্ষণ মনে হয় বস কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত, কিছু একটা তাকে ভেতরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সাহিলের খুব ইচ্ছে করে কারণ জানতে কিন্তু সাহসে কুলায় না, কিছুক্ষণ বাদেই দরজায় নক পড়ে যার দিকে তার বস আগ্রহ নিয়ে তাকায় এবং সাহিলকে ইশারা করে নিয়ে আসতে। সাহিল হাতে একটা ফাইল নিয়ে ঢুকে আর তা নিজের বসের হাতে দেয়।

সাহিলের সামনে থাকা ব্যাক্তিটি সেই ফাইলটি হাতে নেয় আর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে সামনে থাকা ছবিটির দিকে। এই চেহারা সে চাইলেও ভুলতে পারবে না! পাশে বড় বড় অক্ষরে লিখা
“রুশানি আনাম”, বয়স:১৯ বছর, অনার্স ফার্স্ট ইয়ার, আরো অনেক ইনফরমেশন। ছোট থেকে এখন পর্যন্ত সকল তথ্য এতে দেয়া এমনকি দত্তক নেয়ার কথাও উল্লেখ আছে।

ব্যাক্তিটির কপাল কিছুটা কুচকে গেলো তারপর ফাইল বন্ধ করে মুখ শক্ত করে বসে রইলো। তারপর সাহিলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বললো যাতে সাহিল বেশ অবাক হলো। কিছুটা ইতস্ততভাবে বলে উঠলো

“বস আপনি সত্যিই এমনটা করবেন? আই মিন যদি মেডাম…”

“তোমাকে যা বলা হয়েছে তাই করো সাহিল! আর হ্যা এই খবর তুমি আমি ছাড়া তৃতীয় ব্যাক্তি যেনো না জানে”

সাহিল মাথা নাড়ালো তারপর বসের কথামতো বেরিয়ে গেলো,এই প্রথমবার মনে হলো ওর বস যা করছে তা ঠিক করছে তো! যদি এটা করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়ে যায়?

_____________________

আজ সকাল থেকে রুশির শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা, সকাল থেকে বেশি কিছু পেটে কিছু পড়েনি, ধরতে গেলে কিছুই মুখে দিতে পারেনি কেমন গন্ধ গন্ধ লাগে সবকিছু। ঘরের সব কাজ সেরে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো টিউশনির জন্য, যদিও শরীরে কুলাচ্ছিলো না কিন্তু কালকে টিউশনির নাম করে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো তাই আজ গ্যাপ দেয়া সম্ভব নয়। তিন নাম্বার টিউশনি শেষ করে বাসার দিকে এগুচ্ছে, এখন প্রায় বিকাল, সুর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, কিছুটা শীতল আবহাওয়া তাই হাটতে ভালো লাগছে।

ওদের বাড়িটা কিছুটা গ্রামের মতো, এখানে ঘরগুলো ইটের তৈরি হলেও মানসম্মত নয়। রুশির পালক বাবা দুবছর আগে এই জীর্ণশীর্ণ বাড়িটা কিনেছেন মোটামুটি ভালো দামেই। দেখতে যেমনি হোক ঢাকা শহরের বাড়ি মানে আগুনের মতো দাম!রুশি কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরলো, পা এগুতে না চাইলেও আরেকটু হাটতে হবে। সামনের গলি পার হলেই ওদের ছোট্ট বাড়ি ঠিক ওর না ওর পালক বাবার বাড়ি। রুশি ধীর পায়ে সেদিকেই এগুচ্ছে কিন্তু হঠাৎ সামনে কালো কিছু দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। মাথা তুলে একজন কালো পোশাকধারী লোক দেখতে পেলো। ঠিক একজন না বরং বেশ কয়েকজন, তবে সামনে থাকা লোকটির হাতে সাদা কিছু একটা। লোকটি ওর দিকে চেয়ে আছে মনে হচ্ছে কিছু মেলানোর চেষ্টা করছে। রুশির বাড়তি ঝামেলা মনে হলো তাই পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই লোকটি আবার ওর সামনে দাঁড়ালো আর মাথা নিচু করে বললো

“মিস রুশানি, প্লিজ আপনি আমাদের সাথে আসুন”

“আপনাদের সাথে যাবো মানে?কে আপনারা? আমার রাস্তা ব্লক করছেন কেনো?”

“দেখুন আমরা কারা তা আপনি গেলেই বুঝতে পারবেন। এটা আমাদের বসের অর্ডার আপনাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে”

“আপনাদের বসকে আমি চিনিনা, অযথা বিরক্ত করবেন না আমায় নাহয় চেঁচিয়ে রাস্তায় মানুষ জড়ো করবো”

রুশির চড়া কন্ঠ কিছুটা কাজে দিয়েছে বলে মনে হয়েছে, সেই লোকটি কিছুটা দমে গিয়েছে আর ফোন বের করে কিছু একটা করছে। কিন্তু তা দেখার সময় ওর নেই, দ্রুত পায়ে হাটা শুরু করলো। কিছুদূর যেতেই মুখের উপর কাপড় জাতীয় কিছু টের পেলো, মনে হচ্ছে মাথা ঝিমঝিম করছে। ওকে কেউ উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এতোটুকু টের পেলেও আর কিছুই মনে নেই।

চোখখুলে নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করলো, রুমটা ঠিক বেডরুম নয় কিছুটা অন্যরকম। ভালো করে খেয়াল করে বুঝতে পারলো এটা একটা অফিস আর ও এই অফিসে থাকা সোফায় শুয়ে আছে। ঝটপট উঠে বসলো রুশি, মাথা এখনো ঝিমঝিম করছে কিছুটা। যদি সঠিক ভাবে এনালাইসিস করস হয় তাহলে ওকে দিনের আলোতে কিডন্যাপ করা হয়েছে কিন্তু কিডন্যাপ করলেতো কোন অন্ধকার কালো জায়াগায় নিজেকে আবিষ্কার করার কথা, হয়তো চেয়ার টেয়ারে বেধে রাখবে তা না করে এতো সুন্দর জায়াগায়!
আর তাছাড়া ওকে কিডন্যাপ করে লাভই বা কি?নাকি ওকে বড়োলোকের মেয়ে ভেবে ভুলে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে?এসব সাত পাঁচ ভাবছিলো রুশি ঠিক তখনি একটা শব্দ কানে এলো

“মিস রুশানি রাইট?”

রুশি পাশে তাকিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষকে দেখতে পেলো, কম্পলিট ব্লাক স্যুট পড়া, গালে খোঁচাখোঁচা দাড়ি তবে বিশেষত্ব হচ্ছে বাদামি চোখদুটো যাতে হাজারো মায়ার ভীড়!কিছুক্ষনের জন্য রুশির মনে হলো কোন দক্ষ কারিগরের হাতে আঁকা দামি পেইন্টিং দেখছে। এতো সুদর্শন ছেলে দেখেছে বলে ওর হয় না, আর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নির্ঘাত ক্রাশ খাবে হয়তো কিন্তু নিজেকে দমিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ একটা ছেলের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার জন্য নিজেই যেনো লজ্জা পেলো। এতো বেহায়া কবে থেকে হয়ে গেলো ও!
কিন্তু কিছু একটা ভেবে আবারো তাকালো সেদিকে, এই চেহারা খুব চেনা চেনা লাগছে। রুশির চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ যেনো অপ্রত্যাশিত কিছু দেখে ফেলেছে। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বললো

“সায়ান জামিল খান!”

তারপর নিজের তর্জনী আংগুল ছেলেটির দিকে এক প্রকার ছুড়ে বলে উঠলো

“আপনি সায়ান জামিল খান তাইনা?খান গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিস এর মালিক?”

এই লোকটিকে কেনো চিনবে না রুশি?রুশি যে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে সেখানেই এই লোকটিও পড়াশোনা করেছে। যেহেতু ইয়াং তারউপর সাকসেসফুল তাই প্রায়ই সায়ানকে নিয়ে আলোচনা এমনকি শিক্ষকরাও সবাইকে তার মতো সফল হতে অনুপ্রেরণা দেয়। খান গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রি যখন দেউলিয়া হয়ে যাবে তার ঠিক পুর্ব মুহুর্তে সায়ান জামিল খান এটার হাল ধরেন আর গত পাঁচ বছরে এটি দেশের নাম্বার ওয়ান ইন্ডাস্ট্রি। কিভাবে এটা সম্ভব হয়েছে কেউ জানেনা কিন্তু গত বছর সায়ান জামিল খান বেস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হিসেবে “ইউথ আইকন” এওয়ার্ড পেয়েছে আর দেশের হাজার মেয়ের ক্রাশ। সবার মুখে প্রশংসা শুনে রুশির ইচ্ছে ছিলো তার সাথে দেখা করার কিন্তু সেটা এতো তাড়াতাড়ি পুরণ হবে ভাবতেই পারেনি।ওয়েট এতোবড় একজন ব্যাক্তি ওকে কিডন্যাপ করেছে ওকে?কি চায় সে?

রুশির ছোট্ট মাথা একসাথে এতো কিছু নিতে পারছে না, যেনো হ্যাং হয়ে গেছে। রুশি মাথা চেপে ধরে বিড়বিড় করছে

“এটা স্বপ্ন, এই সব স্বপ্ন। বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই”

#চলবে
(আস্তে আস্তে সব বলা হবে তাই আশাকরি একটু ধৈর্য সহকারে পড়বেন)

মেঘের আড়ালে পর্ব-১৬ শেষাংশ

0

#মেঘের_আড়ালে
#পর্ব__১৬ (শেষাংশ)
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

৩৯.

ছাদে রেলিং হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, পাশে ইয়াদ দাঁড়ানো আমার সাথে। আজ আবহাওয়াটা খুব ফুরফুরে চারপাশে বসন্তময় হওয়া বয়ছে। অনিক ভাইয়ার বিয়ে শেষ হয়েছে আজ এক সাপ্তাহ। এই এক সাপ্তাহ আমার জীবনে এক মাজিক এর মতো ছিলো সব কিছু। মানুষজন আসলে ঠিকই বলে প্রেমের শহর হলো সাজেক আর চ্রটগ্রাম তাইতো সেইখান থেকে আসার পর আমার জীবনে একটু হলেও সুপ্ত রঙ এসেছে। ইয়াদ এখন আমার সাথে আগের মতো রাগারাগি করেন না।আমার দুষ্টু মিতে সে এখন আমার পাশে থাকে আমার কাছে ব্যাপারটা মানতে খুব বদহজম টাইপ।সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হলো আমি যখন রাতে রুমে বসে টিভি দেখি ইয়াদ তখন হুট করে এসে আমার ঘা এর সাথে ঘা ঘেঁষে বসে টিভি দেখে চেহারার এমন ভাব থাকে উনি কিছুই করেনি।। রাতে যখন বেডে ঘুমাতে যাই তখন মাঝ বরাবর আমাদের পাহাড় সমান মহারাজা কোলবালিশ মশায় থাকে কিন্তু সকালে যখন চোখ খুলি তখন নিজেকে ইয়াদ এর উম্মাদ বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে আবিষ্কার করি নিজেকে আর কোলবালিশ মহারাজকে উঠে নিচে ফ্লোরে পাই। তখন সব কিছু সাজানো এক সুন্দর সপ্নের মতো মনে হয়। চলুক না এভাবে কিছু অজানা ভালো লাগা সপ্নোগুলো যদি জানতে গেলে এই সপ্নো ফুরে যায়।।।।।।

.

.
“নূর”।।

.
হুম(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
.
আমার সাথে আজ একটু বাহিরে যাবা!!!
.
আমি আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে উনার দিকে তাকালাম উনি আমার থেকে উত্তর জানার জন্য অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু না বলে শুধু মাথা দুলালাম। উনি বিবরীতে সেই মাতাল করা বিশ্বজয় হাসি দিলেন আর আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি উনার দিকে,একটা মানুষ এর হাসি এতো সুন্দর নিখুঁত হয় কিভাবে তা আমার জানা নেই।

.
চারটা বাজে উনার সাথে বের হওয়ার কথা, উনি লাঞ্চ করে একটু আগে বাহিরে গেছে যাওয়ার আগে অভস্য আমাকে বলে গেছেন আমি যাতে রেডি থাকি সময় মতো। রুমে এসে আলমারি খুলে মিনিট বিশ এর মতো দাঁড়িয়ে আছি কি পারবো কি বের করবো তাই ভাবছি।আজ উনার সাথে এই প্রথম তিন মাস এর মধ্যে কোচিং সেন্টার ছাড়াও কোথাও বাহিরে যাচ্ছি ভাবতেই মনে এক ভালো লাগা দোল বয়ছে, তাই আজ একটু আলাদাভাবে নিজেকে সাজাতে চাই।।অনেক ভেবে ঠিক করলাম আজ শাড়ি পরবো। বসন্তের এক তারিখ আজ প্রিয়সি সাথে বের হচ্ছি। এই মাসে সবায় সবার প্রিয়তমার সাথে হাতে হাত ধরে শাড়ি পরে ল্যাম্পপোস্ট নিচে হাতে, আবার অনেকে রিক্সা করে ঘুরে,,আমি হয়তো হাতে হাত ধরে হাটতে পারবো না,কিন্তু শাড়িতে তো নিজেকে সাজাতে পারবো।। নিয়তি কখনো এমন সুযোগ আবার নিয়ে আসবে কিনা জানা নেই, তাই হারাতে চাচ্ছিনা এই সুযোগটা।

.

.
কালো শাড়িতে চোখে হাল্কা কাজল,চুলগুলো আদ খোঁপা ঠোঁটে লাল ক্লার লিপস্টিক, কানে ঝুমকো, হাতে সাদা কালো রেশমি চুড়ি। নিজেকে আয়না খুঁটিয়ে দেখছি খারাপ লাগছেনা তো এই হাল্কা সাজে লাগলে ও কিছু করার নাই। আমি এর থেকে বেশী সাজতে পারিনা।মুঠো ফোন রিং হওয়াতে আমি আয়না থেকে চোখ ফিরিয়ে খাটে উপর থেকে ফোন নিলাম স্কিনে বড় বড় অক্ষরে ভেসে উঠল সাইকো নামটা দেখেই মুখে লজ্জা আভা এসে ভর করলো। লোকটা এমন কেন কাছে না থেকে ও এতো লজ্জা দিচ্ছে। আমি কাপা কাপা হাতে ফোন রিসিভ করলাম।অই পাশ থেকে নরম কণ্ঠে বলে উঠল,,,,

” নিচে আসো, আমি দাঁড়িয়ে আছি ম্যাডাম তোমার জন্য”।।

.

.
আদুরে মাখা কণ্ঠ তার মুখ থেকে” তোমার জন্য” শুনেই চোখ থেকে এক ফোটা খুশির পানি বেয়ে পরল। আমি তার বিবরীতে কিছু বলতে পারলাম না শুধু বললাম ছোট করে।”হুম্ম”
.

.
নিচে এসে দেখি সেই গাড়ির সাথে হেলাল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হলো। সে ও আজ নিজেকে কালো পাঞ্জাবীতে পরিহিত করেছে মুখে তার আকাঁবাকা দাতের সেই হাসি। সাদা চামড়ায় কালো পাঞ্জাবীতে মারাত্মক লাগছে।আমি মনে মনে চোখ বুঝে বলে উঠলাম, “বাচ্চেকি জান লোগে কেয়া”।।।

.
উনি আমার সামনে এসে হাতের তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠল,, এভাবে কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না চলবে ম্যাডাম।।।

.
ইশশশশশশ কি লজ্জা আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,,,,আমি তো যেতে নিচ্ছিলাম আপনি এসেই তো মাঝ পথে দাঁড়িয়ে আছেন মশায়।
.
উনি আমার কথা শুনে নিঃশব্দে উপরের বাকা দাত দিয়ে ঠোটঁ কামড়িয়ে হাসলেন।
.
লোকটা আজ এতো হাসছে কেন।।।উনি কি বুঝে না উনার এই মুগ্ধ করা টোল পরা হাসি দেখে আমার বড্ডো হিংসে হয়।আমি কপাল কুঁচকে পাশ কাটিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।উনি ও আমার পিছু পিছু এসে গাড়িতে বসলো।।।

.”আচ্ছা,আমারা কোথায় যাচ্ছি “।(সীট ব্যাল্ট লাগাতে লাগাতে)

.কোনো এক জায়গা তো যাচ্ছি ।।।(সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে)

.
সেই তো আমি ও জানি। জায়গায় টার তো অাদৌ কোনো নাম আছে।।।(কপাল কুঁচকে)
.
না নেই,, নামবিহীন জায়গা।(আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে)
.
আজ উনার কার্যকলাপে খুব অদ্ভুত লাগছে কথা না বারিয়ে গাড়ির জানালায় হাতের উপর মাথা রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছি।প্রায় তিশ মিনিট পর গাড়ি এসে থামল নিজ গন্তব্য । বাহিরে তাকিয়ে দেখি বড় বড় অক্ষরে সাইন বোডে লিখা রসুলপুর নিচে লিখা নারায়ণগঞ্জ। বুঝতে আর সমস্যা হল না আমরা যে আমাদের প্রিয় জেলা নারায়ণগঞ্জে আছি। ইয়াদ গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশের দরজা খুলে আমাকে নামিয়ে গাড়ি লক করে সামনে আঁকাবাকা মাটির উঁচু পথে হাটা ধরল।আমি মুগ্ধ নয়নে আশেপাশে তাকিয়ে আছি। এতোবছর নারায়ণগঞ্জ থাকলে ও এইখানে আসা হয়ে উঠেনি আমার, আশেপাশে ফুলের রাজ্য আর সবজির চাষ আর মাঝে দূরে একটা কুরের ঘর দেখা যাচ্ছে। ইয়াদ আমাকে নিয়ে হাটতে হাটতে সেই কুরের ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরটি সামনে গিয়ে আমি পুরো থ সামনে ইয়া বড় এক বিল জায়গাটা আসলে অসম্ভব সুন্দর পিছে ফুলের রাজ্য আর মাঝে এক চিলতে কুরের ঘর আর সাথে বিল।

.
“পছন্দ হয়েছে ”

.

অনেক বলে বুঝানো যাবেনা। অনেক অনেক ধন্যবাদ ইয়াদ আমাকে এইখানে নিয়ে আসার জন্য।উনার হাত ধরে।।।।

.
উনি বিবরীতে আমার হাতের উপরে নিজের হাত রেখে মিস্টি এক হাসি দিয়ে, হাতের ইশারা উনার সাথে সামনে বিলের পারে যেতে বললেন।

৪০.
সন্ধায় হয়ে গেছে এখনো বিলের পারে পা ডুবিয়ে বসে আছি চারপাশে থেকে জি জি আওয়াজ হচ্ছে জোনাকির পোকার আরো কতো না জানার কিছুর পোকার ও আওয়াজ হচ্ছে। আমাদের আশেপাশে দূর দূরান্ত কোনো বাসা নেই এতো বড় জায়গায় আমরা দুইজন আছি দূর দূরান্ত আর কেউ নেই। আজ আর ভয় করছেনা মনে মধ্যে করছে একঝাক ভালো লাগা।হঠাৎ নিরবতা ভেঙে ইয়াদ বলে উঠল,,,

.
নূর

.
“আমি বিলের দিকে তাকিয়ে উনার বিবরীতে বলে উঠলাম।হুম্ম।”

.
ভালোবাসো আমায়!!!

.
উনার এমন কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। কি বলবো উনাকে।।
.
কি হলো চুপ করে আছো যে!!ভালোবাস বল।।(সামনের থেকে চোখ সরিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে)

.
যদি বলি বাসি তাহলে আপনি কি আমাকে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিবেন ইয়াদ।(ছলছল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে)
.
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,, আমি সাদিয়াকে ভালোবাসি তা জেনে ও আমাকে ভালোবাসবে!!!
.
আমি জানি আপনি সাদিয়াকে ভালোবাসেন,
হয়তো আজও বাসেন। আপনার ভালোবাসায় আমার কোনো সন্দেহ নেই ইয়াদ।।আমি কখনো বলবো না আপনি সাদিয়াকে ভুলে জান আমাকে ভালোবাসেন। আমি শুধু বলবো, আমাকে কি আপনার একটু পাশে থাকতে দিবেন,,,, দূরে ঠেলে দিবেন না নিজের থেকে। আমি আপনার পাশে থেকেই আপনার মতো উম্মাদ হয়ে নির্সাথ্য ভাবে আপনাকে বাকীটা জীবন ভালোবাসতে যেতে চাই।।। যে ভালোবাসায় থাকবেনা কোনো সার্থ্য শুধু থাকবে সুপ্ত অনুভুতির একঝাক অফুরন্ত ভালোবাসা।।।দিবেন কি ইয়াদ আমাকে সেই ভালোবাসার সুযোগটা।।।

.
যদি বলি, সাদিয়া মারা যাইনি তখন কি তুমি চলে যাবে।।।(উনি আমার দিকে প্রশ্ন বিন্দুক ট্যাগ করে তাকিয়ে আছে)

.
আমি চুপ করে আছি, কি বলবো উনাকে। উনার এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা আছে কিন্তু আমি এই মূহুতে তা বলতে চাচ্ছিনা আমার গলার সুর ভিতরে সব আটকে আসছে।আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে উঠলাম মলিন হেসে।যে আমার না তাকে হাজার লাক্ষ চেষ্টা করে বেধে রাখলে সে আমার কখনো হবেনা।(বিল থেকে উঠতে উঠতে) আর যে আমার তাকে যতো দূরে ঠেলে দেই সেই আমারই থাকবে।আর কিছু বলতে মন চাইছে না তাই চলে যেতে নিতেই,,,,

.
“উনি পিছ থেকে আমার হাত খোপ করে ধরলেন”
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছিনা।চোখের অবাধ্য পানি গুলো আর আটকে রাখতে পারলাম না গাল বেয়ে নিচে বেয়ে পরছে”।উনি এক হেঁচকা টানে আমাকে নিজের বুকের সাথে মিশে নিয়ে আমার এক হাত আমার পিঠের পিছে যা উনি ধরে রেখেছেন নিজের হাত মুঠো দ্বারা খুব শক্ত করে আর এক হাত দিয়ে আমার চোখের পানিগুলো মুছে বলে উঠলেন,,,

.
এতোই যেহেতু আমাকে ভালোবাস তাহলে এভাবে চলে যাচ্ছো কেন। নিজের ভালোবাসার উপরে কি তোমার একটু ও ভরসা নেই।এতোই ঠুংকো তোমার ভালোবাসা।

.
আমি ছলছল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি কিছু বলার শক্তি নেই। কিন্তু উনি আমার ভালোবাসাকে ঠুংকো বলেছেন। তাই কান্নামিশিতো সুরে বলে উঠলাম আমার ভালোবাসা ঠুংকো হলো কিভাবে ইয়াদ আপনিতো সাদিয়া আপুকে ভালোবাসেন তাইনা।।।

.
ভালোবাসি আর ভালোবাসা এই দুইটা কথায় মাঝে পার্থক্য আছে তা জানো তো??
.
মানে!!
.
সাদিয়া আমার ভালোবাসা ছিলো যাকে আমি উম্মাদ এর মতো ভালোবাসতাম আর তুমি যাকে আমি ভালোবাসি। হলো না পার্থক্য বলো।

.
কিন্ত আপনি,যে বললেন সাদিয়া আপু বেচেঁ আছে তাহলে আপনি তো এখনো তাকেই ভালোবাসেন।
.
ভুল আমি সাদিয়াকে ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর বাসি না।।আমার ভালোবাসা অর প্রতি কোনো ঠুংকো ভালোবাসা ছিলো না। আমি অকে উম্মাদ এর মতো ভালোবাসতাম কিন্তু নিয়তি এক বড় খেল খেলেছে আমার সাথে জানতো ও আমাকে কখনো আদৌ ভালোবাসেনি অর ভালোবাসা ছিলো ঠুংকো কাচ এর মতো। যদি ও আমাকে ভালোই বাসতো তাহলে তিনটে বছর আমার থেকে দূরে পালিয়ে সিলেটে এতো সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারতোনা।

.
সিলেটে।।।। আপনি জানলেন কিভাবে।।।

.
তোমার এক্সাম এর পরে আমি একটা অফিসের কাজে সিলেটে গিয়েছিলাম মনে আছে অইখান থেকে আসার সময় আমার সাদিয়ার সাথে দেখা হয়।।কিছুক্ষন চুপ থেকে,,,,,,,,,

.
নূর ,আমি ভালোবেসে একবার ঠকেছি দ্বিতীয় বার ঠকার আর শক্তি নেই আমার মধ্যে । এভার ঠকলে হয়তো আমি মরেই যাবো আর বাচঁবো না।আমি তোমাতে আমি হয়ে হারিয়ে যেতে চাই(কান্নামিশিতো কণ্ঠে)। এই আমি তুমিতে তুমিবিহীন কে চাই যাকে ছাড়া আমার একটি মূহুত ও যাবেনা। আমি তুমিবিহীন অসুখে নিজেকে বিলিন করতে চাই।।।জীবনকে আবার রংধনুর রঙে সাজাতে চাই তোমার মাধ্যমে। অফুরান্ত ভালোবাসতে পারবো কিনা জানিনা কিন্তু নির্সাথ্য ভাবে ভালোবাসে বাচঁতে চাই তোমার সাথে। এই তুমিতে আমি মিশে ইনআয়াত কে চাই,, দিবে কি।।।

.
আমি উনার কথাগুলো শুনে কান্নায় ভেঙে উনাকে শক্ত করে ধরে বললাম।দিবো এই সাইকো কে যে বড্ডো বেশী ভালোবাসি ফেলেছি। এই আপনিহীনা যে আমি থাকতে আর পারবো না ইয়াদ।

.
উঁহু শুধু ভালোবাসলে চলবেনা ম্যাডাম । (বুক থেকে মুখ তুলে হাতের আঙুলের বাজে মুখ উঁচু করে)নাম যেহেতু সাইকো দিয়েছন, এখন এই সাইকোর পাগলামো গুলো ও সহ্য করতে হবে পারবে তো।।

.
আমি ইয়াদ এর বুকে মুখ লুকিয়ে বলে উঠলাম পারবো।।

“এই সাইকো কিন্তু খুব জ্বালাবে, আপনি পারবেন তো তার জ্বালাতোনে পুরতে।।।
.
পারবো কোনো সন্দেহ আছে মশায়।(নাক ফুলিয়ে)
.
উঁহু। বলেই আমাকে কোলে নিয়ে হাটা দিলে সেই কুঁরের ঘরের আর আমি তার বুকে মুখ লুকালাম।
.

.
দুইবছর পর,,,,,,

ভার্সিটি ক্লাসে বসে ক্লাস করছে নূর আজ তার সেকেন্ড ইয়ারে লাস্ট ক্লাস এক মাস পর ফাইলান এক্সাম।মাথায় গুরছে শত শত অনেক টেনশন, আজ অনেক দিন পর ভার্সিটিতে এসেছে সামনে পরীক্ষা কিন্ত সে কিছুতেই চেয়ে ও ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছেনা ঘুমে হেলেদুলে বার বার তাসফি আর আয়াত এর উপরে পরে যাচ্ছে।

তাসফিঃ অই মাইয়া, ঢইলা পরস কে,(বিরক্তি সুরে)এটা কি তোর ঘুমানোর জায়গায় যে ঘুমাস বড এর হাড্ডি, বজ্জাত ছেমরি । রাইতে কি করসোস!! চুরি করস!!সারারাত কি বসে বসে মশা মারসোস।।।। যে ক্লাসে ঘুমাস দূর হয় আমার গাল্ডফ্রেন্ড ভুলে টুলে দেখলে আমারে হুদাই ভুল বুঝে প্যারা দিবো।

.

.
“এটা যদি তুই বুঝতি তাইলে আর জিজ্ঞাইতিনা”।নূর

আয়াতঃ হ্যা,তাসফি বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে তেসপাতা তা না বল,,,, দোস্ত (মুখ চেপে হেসে)

.
কচুঁ
.

“এর মধ্যে ক্লাসের বাহির থেকে কেউ বলে উঠল স্যার আসবো??

.
আরে আপনি আসুন আসুন, আমি তো আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
.
সবায় ক্লাসের বাহিরে দাঁড়ানো সেই লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে অসম্ভব সুর্দশন চোখে কালো সানগ্লাস, গায়ে হোয়াইট ক্লার টি-শার্ট কালো ক্লার প্যান্ট মুখে আঁকাবাকা দাতের সেই মুগ্ধ কড়া হাসি উচ্চতা পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি হবে একদম বড় সড় ক্রাশ খাওয়ার মতো।এভার সে এক গাল হেসে ক্লাসে প্রবেশ করল ইতিমধ্যে সবার মন গেলো ভেঙে কারন তার বুকে বেবি ক্যারি ব্যাগ যার মধ্যে এক ফুটফুটে বাচ্ছা বাবার শাটের বোতাম আদৌ অাদৌ আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিছে আর খিলখিল করে খেলছে।।।।

.

“তাকে দেখে তাসফি আর আয়াত হাসচ্ছে মুখ চেপে।।।আর নূর বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে।।।
.

“তা স্যার,, আমি কি আমার বাচ্চার মাকে নিয়ে যেতে পারি।।।৩২ বাতি দিয়ে।।।

.

না, নিয়ে গিয়ে কি তুই আমাকে শান্তি দিবি শালা(রাহাত)। তুই বাচ্চা বউ নিয়ে ঘুরঘুর করিস আর আমি এখনো বিয়াটাই করতে পারলাম না।যাহ দূর হয় শয়তান।।।আমি পরে তোরে নোট দিমুনে।।।

.
ইতিমধ্যে নূর ক্লাস থেকে ব্যাগ নিয়ে হনহন করে বেরে গেলো। হঠাৎ পিছ থেকে কেউ এসে নূরের হাত শক্ত করে ধরলো,,

.
নূর রেগে চিল্লিয়ে বলে উঠল,,,, এটা কি ছিলো ইয়াদ।।।। এখন ক্লাসের সবায় আমার ব্যাপারে কি ভাববে।।।।আপনি এমন কেন!!!বলুন তো?
.
কি আর ভাববে, বলবে মেয়েটার হ্যাসবেন্ড মেয়টারে কতো ভালোবাসে।।।আর আমি যেমনই তোমার তো।। ৩২ বাতি দেখিয়ে।।।
.
অসহ্য।।
.
সহ্য।
.
আপনারা বাপ মেয়ে দুইটা এমন কেন বলুন তো।। আমার জীবন পুরো ত্যানা ত্যানা করে দিয়েছেন।বয়সে সাত মাস হলে কি হবে একদমই বাবা মতো মিস্কা শয়তান খালি আমাকে জ্বালায়। রাত ভরে
ঘুমাতে দেয় না ফাজিল।।।আর দিনে বাপ মেয়ে দুইটাই আমার পিছ ছাড়েনা। জীবনটা আসলেই বেদনাময় আমার। তাইতো ইয়ান না এসে ইনআয়াত আসছে বাপ মেয়ে মিলে আমাকে জ্বালাতে।।।।
_________________সমাপ্ত___________________

[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি।আমার মতো ছোট লিখিকার গল্প শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ 🥰]

মেঘের আড়ালে পর্ব-১৬ ( শেষাংশ প্রথমংশ)

0

#মেঘের আড়ালে💞
#পর্ব__১৬(শেষাংশ প্রথমংশ)
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা
৩৬.

গানের মাঝে হঠাৎ ছাদের কেঁচি গেট জোড়ে সোড়ে ধাক্কা আওয়াজে সবায় গান, নাচ বন্ধ করে চোখ বড় সড় গোল করে তাকিয়ে আছে দরজার পাশে হেলেদুলে নূর এর দিকে।কমোড়ে মাঝ বরাবর হলুদ ক্লারের হুডি গিট্ট দেওয়া, লাল ক্লার এর টি-শার্ট এর উপরে কালো উরনা গলায় ঝুলানো, পায়ে কালো প্লাজোটা এক পাশে উঁচু আর পাশে নিচু করা, দুইপায়ে ভিন্ন দুইটো জুতো।চুলগুলো সামনে উল্কোসুল্কো এলোমেলো হয়ে আছে।।।


“দিপ্ত নূরের হেলেদুলে অব্যস্থা দেখে ছাদের মাঝ বরাবর টেবিল থেকে উঠে চ্রট করে নূরের কাছে আসলো,,,নূর দিপ্তর দিকে তার আঙুল ট্যাগ করে খিলখিল করে হাসছে।।।।

.

দিপ্তঃ এই কি নূর,,,, তুই এইখানে কি করছিস!!! আর এভাবে দুলছিস কেনো?? (চিন্তিতো সুরে) ঠিক আছিস বোন ঝাকিয়ে।।।।এভাবে হাসছিস কেন বাতাস টাতাস লাগলো না তো আবার কপালে হাত বুলিয়ে ।।।।

.
উঁহু নূর একা না ব্রো আমিও আছি, অট্রো হাসি হেসে।।।পিছ থেকে উক্কি দিয়ে বলল ইশারা।।।

.

নূর ইশারার দিকে তাকিয়ে মুখে আঙুল দিয়ে দিপ্ত ভাইয়ার বুকে পিঠে ঠেকিয়ে ইশারাকে হুসসসস ।।।।এতো হাসে না আপি লোকে পাগল বলবে তোয়য়য়য়য়য়।।।।

.
দিপ্ত দুই বোনের কারবার দেখে পাগল হওয়ার উপক্রম এক হাত দিয়ে নিচের মাথা চুল গুলো টানছে আর এক হাত দিয়ে নূরের হুডির টুপি টেনে নূরকে সামলাচ্ছে।।।।

.
দিপ্তঃ ইশারা তুই,,, তোরা দুইটা এতো রাতে এখানে কি করছিস!!! (রাগিত সুরে)আর দুলছিস কোন সুখে ??? ইডিয়েট (দুইটো কে দুই কাধে নিয়ে) ঔই ইফরান ভাই দেখো তোমার অতি আদরের বউ আর শালি গায়ে বাতাস টাতাস বাধিয়ে হ্যাংলার মতো করতেছে ।আর তুমি বসে বসে মনের সুখে বিয়ার খাইতাসো মিয়া।।।। চিল্লিয়ে।।।

.

দিপ্তর কথা ইফরান এর কানে যেতে দেরি হলো কিন্ত মুখ ফুস্কে বিয়ার বের হয়ে নাকে মুখে উঠে কাশ শুরু হতে আর দেরি হলো না।।।। ইফরান নিজেকে সামলিয়ে দিপ্তর কাধে ইশারা আর নূরের দিকে তাকালো দুইজন হেলেদুলে অদ্ভুত ভাবে খিটখিট করে হাসছে আর দিপ্ত দুইটাকে কোন রকম ধরে আছে কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে হিমসিম খাচ্ছে ।ইফরান হন্তদস্ত হয়ে ইশারার কাছে ছুটে আসলো,,,,,

.
ইফরানঃ এই কি ইশু,,তোমার কি হয়েছে!! তুমি এমন করছো কেনো???আর ভাবিকা তুমি এইখানে কি করছো।।। ইশারাকে কাছে টেনে।।

.

ইশারাঃ উঁহু,,, একদম কথা বলতে আসবা না ইরফান দূরে যাও ,,,, (ইরফান এর মুখে আঙুল ট্যাগ করে)।তুমি অনেক খারাপ কান্না করে। আমাকে আর একটুও ভালোবাসো না আগের মতো। ভালোবাসলে কি আর এইই কাজ গুলা করতে পারতা আমার সাথে।।।।।ন্যাকা কান্না করে।।।।

.
এই মূহুতে ইশারার মুখে এমন কথা শুনে, ইফরান এর দিকে এক প্রকার সন্দেহ দৃষ্টিতে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে দিপ্ত, অনিক,ফারদিন ।।।।

.
কি হইছে শালাবাবু তোমরা এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন অসহায় ভাবে।(ইফরান)
.
কি হয়েছে দোলা, এটা তো আপনি বলবেন!! আমার বোন এর সাথে এমন কি করছেন আপনি!!।।।(অনিক)
.
ইফরানঃএই ইশু,,, এমন করছো কেন!আমি কি করেছি জান।।। আর তোমার এমন কেন মনে হলো যে আমি তোমায়কে একটু ও ভালোবাসিনা।।।(গালে আঙুলের বাজে মুখ ধরে)অসহায় ভাবে কথা গুলো বলল।।।

.
ইশারাঃ তো কি বলবো। (চোখ ছোট করে নাক ফুলিয়ে)তুমি যদি আমাকে ভালোবাসতা তাহলে টেবিলের দিকে ট্যাগ করে অই টেস্টি জুসটা আমাকে রেখে একা খেতে পারতা এইভাবে।।।।। উহু একদমই না।।।।।। পারতা বলো!!

৩৭.
“ইশারা হাতের ট্যাগ অনুসরণ করে দৃষ্টি রেখে যা বুঝার বুঝে গেলো সবায়, ইতিমধ্যে বুঝতে আর কিছু বাকী রইলনা ইশারা আর নূর যে কোনো ভাবে ভুলে বিয়ার খেয়ে ঘটনা যা রটার রটে ফেলেছে।

.

.
“দিপ্ত মাথায় হাত দিয়ে রাগে দুঃখে চেপে।।।। এই ইফরান ভাই আপনি ইশারাকে ধরে নিয়ে নামুন তো আমি নূরকে নিয়ে নামছি।।।

.

.
“উহু আমি জামুনা আমি নাচমু।।।। এই ফারদিন অওঅঅঅঅ মুরসি ওওও গান ছার আইইইই আজ নাচমু।(ঠোট উল্টিয়ে বলল)নূর।
.
দিপ্তঃ আচ্ছা,, বইন নাচিস কিন্তু এখন না পরে।।।। ক্লান্তি সুরে।।।

.
নূরঃ কোনো পরে টরে না, এখুনি।। কপাল কুঁচকে।। আইচ্ছা শামসু ভাই (দিপ্তর দিকে হেলে)আমার জামাই কই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে এইইইই ম্রিস্টার বজ্জজাত উগন্ডার প্রেসিডেন্ট গোম্রা প্রটাসসসসস ম্রিস্টার ইন্ডিয়া কই।।। দেখছিনা যে!!!

.
অনিকঃ হোয়াট এ গুড কোয়শেন বইন।।।তোর জামাই নিচে।।। তো এখন চল নিচে যাই।

.
নূরঃ তোমরা কেন যাইবা আমি জামু আমার জামাইর কাছে।।। এইই জিজু তোমার ভাই কোথায়।।।।

.
ইফরানঃ নিচে গেস্ট রুমে।।

.
নূরঃ এটা তো আমিও জানি, নতুন কি আছে বল।।।উহহ,কোন রুমে।।।এটা বলো।।ইফরান এর কাছে এসে কমোড়ে হাত দিয়ে।।।বিরক্তি সুরে।।।
.
শেষের রুমে।।। পিছ থেকে ফারদিন বলল।।

.
আচ্ছা শুন আমি আসতেসি,,,একদমই গান বন্ধ করবিনা তোরা।।। আমি এসে নাচমু।।। খিলখিল করে হেসে।।।।

৩৮.
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইয়াদ। আজ নিজেকে বড্ডো শূন্য শূন্য আর বোকা মনে হচ্ছে ।।। আকাশের দিকে তাকিয়ে উপরের ঠোট দিয়ে নিচের ঠোট চেপে তাচ্ছিল্যের সুরে হাসচ্ছে অদ্ভুত ভাবে। চোখ দুইটো তার ছলছল আয়নার মতো চিকচিক করছে আর বিড়বিড় করে বলছে। জীবনটাই আসলে রং বিহীন এই রঙ বিহীনের দুনিয়াতে কোন তুমিবিহীন নেই। আছে আধারে মাঝে সব ধোঁয়াশা, ভালোবাসা বলে আদৌ কিছু নেই আছে শুধু একঝাক ধোকা।

“হঠাৎ পিছু থেকে কে জানি এসে বুকে দুই হাত গুঁজে শক্ত করে আকরে পিঠে সাথে বুক মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।।। তার গরম ভারি নিশ্বাস গুলো পিঠে আছড়ে পরছে।।।তার এভাবে হুটহাট স্পষ্ট করাতে হার্টবিট গুলো জোড়ে ঢোল বাজানো শুরু করেছে ইতিমধ্যে নিজের সাথে তালমিলিয়ে পিছে থাকার ব্যক্তির ও ঢোল বাজছে। ইয়াদ এর বড্ডো অস্থির লাগছে এখন ও রেগে হাত ছাড়তে নিতেই,,,,,,

.
উঁহু,,,, একদমই নড়বেন না,, এভাবে থাকুন কিছুক্ষন ।।।

.
“নূরের আওয়াজ শুনে ইয়াদের আর বুঝতে বাকী রইলনা না এটা যে নূর”। ও অই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে নূরের হাতের উপর নিজের হাত রেখে এতোক্ষনে যে শূন্যতা কাজ করছিলো এখন নিমিষেই ভালো লাগা কাজ করছে।।।

.
কি ভেবে ছিলেন মশায় ?? অন্য কেউ এভাবে আকরে ধরেছে আপনাকে, আপনার জল্পনাতে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আহহহহহহা।।।ইসসসস শখ কতো আপনার(মুখ ভেংচি কেটে)।।। শুনেন,,,,,এইইই নূর বিহীন ছারা আপনাকে এই জীবনে এভাবে আকরে ধরার কেউর দূর সাহস নেই। ইয়াদ এর পিঠ থেকে সরে হাত দিয়ে গুরিয়ে (মলিন হেসে)

জীবন রঙ বিহীন নয় ইয়াদ,,,, (কিছুক্ষন থেমে ব্যালকনির রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে)।।এই রংধনু রঙিন দুনিয়ার মাঝে আপনি নিজেকে রঙ বিহীন করে গুটিয়ে রেখেছেন। তাই আপনার কাছে নিজেকে বড্ডো রংবিহীন লাগছে।তুমিবিহীন আপনার মাঝেই বসবাস আছে (ইয়াদ চোখের দিকে ছলছল ভাবে তাকিয়ে)যে আপনাকে তার সব দিয়ে আকরে ধরে বাচতে চাই একটিবার কিন্তু আপনি তাকে দূরে ঠেলে নিজেকে তাকে এই তুমিহীনা অসুখে বেধে রেখেছেন। ধোঁয়াশা আধারে মাঝে আপনার জন্য #মেঘের_আড়ালে থেকে কেউ এক চিলতে রোদ নিয়ে আপেক্ষা করছে আপনার সাথে নতুন ভাবে নতুন করে বাচঁবে বলে।।। এই তুমিতে মিলে আমি হবে বলে (ইয়াদ এর বুকের পাশে আঙুল ট্যাগ কিরে)যে আমিতে মিশে থাকবে একঝাক শুধু নির্সাথ্য অফুরান্ত অবিরাম ভালোবাসা।
.

.”চুপ চাপ বসে তুমি #মেঘের_আড়ালে”

“দূতেরা তোমায় নিয়ে গান লিখে যাবে”

“তোমার পথ চেয়ে সারাটা জীবন”

“আমার দিন রাত আজ হয়েছি পাগল”

“এই মন”

” কিছু বোঝেনা ”

“জীবন তোমাকে ছাড়া”

“ঝড়িয়ে দাও”

“অসীম অগচরে”

“ঝড়িয়ে দাও”

বৃষ্টি সুর ধরে”

“ঝড়িয়ে দাও”
“তোমার শীতল প্রেমে🎶🎶🎶🎶

“মেঘে উড়ে উড়ে”

“আসো বৃষ্টি সুরে”

“ভেজা শালিক এর কলরবে ”

“যেটুকু সময়

পাবো তোমায় কাছে”

আপন করে নেব ভুলে”

“এই মন কিছু বোঝেনা”

জীবন তোমাকে ছাড়া

“ছাদের এই গানটা এতোক্ষনে চলছিলে গানটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নূর ইয়াদের পায়ের উপরে নিজের পায়ের ভর দিয়ে ঠোট দখল করে নিলো,,,,,,ইয়াদ নূরের পিঠে দুইহাত দিয়ে শক্ত করে আকরে নূরের সাথে চোখ বুঝে তালমিলাচ্ছে” সাথে চোখের পানি গুলো গাল বেয়ে ঝরছে।।

“বিশ সেকেন্ড পর নূর ইয়াদকে ছেড়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে”।।।ভালোবাসি ইয়াদ খুব বেশী ভালোবাসি এই আপনিহীনা থাকাটা আমার জন্য খুব বড্ডো প্যারা ধায়ক আপনি কি আমার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা আদৌ দেখতে পাননা, না বুঝে ও বুঝেন না কোনটা।।।ইয়াদ এর দিকে কপাল কুঁচকে রাগি ভাবে তাকিয়ে।।। শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে আপনাকে ভালোবাসার অপরাধে, এক বার শুধু ইয়ানকে আসতে দিন,,,,

“ইয়ানকে”(কপাল থেকে চুল সরিয়ে)

.
কে আবার আপনার আমার ছেলে যে ইয়াদ নূর থেকে মিশে আমাদের জীবন আলৌকিত করে এক “ইয়ান “হবে । একবার শুধু আসতে দিন আমার ছেলেকে তার পর মা ছেলে মিলে আপনাকে শাস্তি দিব দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা হুহ তখন নো ছাড়াছাড়ি ।।।।(ঠোট ফুলিয়ে) বলেই ইয়াদ এর উপরে ঠেলেদুলে বুকে পরলো।।।

.
ইয়াদ নূর এর হেলেদুলে এভাবে পরায় প্রথমে ভয় পেলেও পরে গায়ে স্মেইলে বুঝতে পারলো নূর যে ড্রিংক করেছে। তাই সেই এমন করছে।।।। নূরকে এভাবে বুকে সাথে মিশে নিয়েই ইয়াদ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সেই #মেঘের_আড়ালে চাঁদের দিকে,,,,,
চলবে…..

[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি।]

মেঘের আড়ালে পর্ব-১৫

0

#মেঘের আড়ালে 💞
#পর্ব__১৫
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

৩৩.
চারটে বিয়ারের ক্যান এর সামনে গোল হয়ে বসে আছে দুই জন বালিকা।। ছাদ থেকে বাহুত কষ্টে কাঠখড় পুড়িয়ে এই চারটি ক্যানকে কিডন্যাপ করেছি এক প্রকার সবার চোখ ফাঁকিবাজি দিয়ে সেই চারটে কথা।

ইশারাঃ এইকি তোরা বসে আছিস কেন শুরু কর ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে।।।

নূরঃ তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখন টুপুস করে বসে পরতো,,,, মিশন বিয়ার এর টেস্টিং সেস্টিং শুরো করা যাক। আজ টেস্ট করে জানতে হবে এর মধ্যে কাইশার ভাইয়ের কোন ফর্মুলা মুলার জুস লুকানো আছে । যার কারনে আমার অতি প্রিয় ভাইয়েরা তাদের ব্যাচেলার পার্টিতে এন্টি নিতে দিলো না।এই মালিহা যাতো নিচ থেকে দুইটো গ্লাস নিয়ে আয় চ্রটজলদি করে।।

মালিহাঃ দুইটো কেনো!!! আমরা তো তিন জন আপি।।

নূরঃ এতো কথা কস কিল্লাই যাতো এখন,,, আর শুন নিচে বাবুচি মামা ফ্রাই বাজঁছে অইখান থেকে আমাদের জন্য গরম গরম ছয়টা ফ্রাই নিয়ে আসবি আসার সময় মনে করে আহহহহহা।।।(দুই হাত পিছে ভর দিয়ে কাধ হয়ে আধো শুয়া হয়ে) এভাবে তাকিয়ে আছিস কিল্লাই এলিয়েন দের মতো রসগোল্লার চোখ করে, তোরা টিভিসিভিতে মুভি দেখিস না বিয়ার সাথে যে ফ্রাই ট্রাই খাই নায়িকা নায়করা তাই তো বললাম। জীবনে প্রথম যেহেতু একটু টেস্টিং করছি সেই ভালো করেই করি।।।।৩২ বাতি লাইট দেখিয়ে।।

মালিহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।।

নূরঃ আর শুন এসে ডাক দিবি আমাদের, তোর আওয়াজ শুনেই দরজা খুলবো এর আগেনা।।।

মালিহাঃ আচ্ছা আপি।।
.

.
মিনিট পাঁচ না হতে হতেই মালিহা যাওয়া পর পরই দরজায় টোক্কা পরলো। দরজায় টোক্কা হওয়াতে আমার আপির গলা শুখিয়ে কাঠ হয়ে গেলো ইতিমধ্যে একে উপরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে দরজার দিকে জোরসোড় হয়ে তাকিয়ে আছি ভয়ে,মালিহা আসলে তো ডাক দিবে,,,,,,,, তাহলে,,,,,এরা কি কোন ভাবে টের পেয়ে গেলো আমরা যে চারটে বোতল লুকিয়ে এনেছি। (ঢোক দিয়ে নূর বলল)

ইশারাঃ এইইইই নূর গিয়ে দেখনা কে আসছে।।।কাপা কাপা কণ্ঠে বলল।।।।

নূরঃ চোখের সামনে এতো বড় বইন বসে থাকতে আমি কেন বাচ্চা মানুষ যাবো খুলতে,, তুমি গিয়ে দেখে আসো আমি পারমুনা।।।

ইশারাঃ দেখ বোন তোর মতো কি আর আমার
মনে এতো শতো সাহস সঞ্চয় আছে বল।।।। যেখানে সব ভাইদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাদ থেকে তুই অনায়ার বিয়ার এনেছিস ,,,,সেখানে দরজায় খুলা কোন মুলার ক্ষেত তুই দরজা ঠিকই খুলতে পারবি এটা কোন বড় ব্যাপার স্যাপার না তোর কাছে।।।

নূরঃ পাম দিচ্ছো আমাকে,, (অসহায় সুরে)এভাবে আমাকে ঠেলে দিতে পারলা। হেইইইই আল্লা, এইইইই আমি ঘসিটির বেগমের মতো বইন এর কথায় শুনে নাচতে নাচতে শেষ মেস চুরিটা করছিলাম।।।।।। আল্লা (আড়চোখে তাকিয়ে দেখি আপি খাটে কম্বল টেনে বসে আছে আমার বুঝতে আর বাকি রইলনা আমার ডারফক বইন যে ইহা কালে আর উঠবে না)তুমি এতো অকামের ডেহি কেন।।।(অসহায় ফ্রেশ করে জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে),,,,, এক কাজ করো তুমি ঘুমের নাটক করো আর বিয়ার এর বোতল গুলো কম্বল এর নিচে লুকিয়ে রাখো।।।আমি দেখছি।।।

ইশারাঃ আচ্ছা।।।

৩৪.
“আল্লা এভারের যাএরায় মতো বাঁচিয়ে দিও।।।পিছে দিকে তাকিয়ে আমি খুললাম ” (ঢোক গিলে)

দরজায় খুলে আমি যা দেখলাম বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই,,,,, তা দেখে আমার মেজাজ গেলো তিব্বো পরিমান চ্রটে। দরজার ওইপাশে আর কেউনা আমার কাজিন গুনোধর খালাতো বইন মালিহা দাঁড়িয়ে আছে এক হাতে ট্রে যার মধ্যে গ্লাস আর কিছু ফ্রাই নিয়ে আছে,,,আর এক হাতে ফ্রাই যা ও কিছুক্ষন পর পর মুখে পুরচ্ছে আর চোখ বুঝে চিবাচ্ছে।। এমনেই আমি সেই সন্ধায় থেকে ইয়াদ এর ভয়ে রুমে লুকিয়ে আছি এর মধ্যে এই মাইয়া আরো ভয় দিলো এই ছোট মনে। দুই ভয় মিলে মনের মধ্যে যদি ব্লাস্ট ফ্লাস্ট হয়ে যেতো তখন কি হতো আমার ভেবেই মালিহার পিঠে দিলাম এক কিল্লল্ল,,,,,,

মালিহাঃ আহা মারলা কেন!!চিল্লিয়ে।।।।

নূরঃ বদ এর হাড্ডি টোক্কা দিলি কেন।।।।রেগে।।।

মালিহাঃ তাই মারবা আমাকে।।।।

ইশারাঃ তোরে যে অয় এই দোতালা সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দেই নাই এই শুকরিয়া কর আল্লার কাছে ।।।খাট থেকে উক্কি দিয়ে বললো।।।

মালিহাঃ আমারে কেউ ভালোবাসে না,,,ন্যাকা কান্না করে।।

নূরঃ চুপ কর বজ্জাত বেটি।।।

ইশারাঃ আচ্ছা এখন ভিতরে আয় কেউ দেখলে সমস্যা হবে।।।

“নিচে ফ্লোরে বসে আল্লার নাম নিয়ে বিয়ার এর ক্যান খুলে একে উপরে মুখের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা সেল্ফি তুলে নিলাম।।হায়য়য়য়য় সেই ফিলিংস,,,,,,,,,,,

নূরঃ এভার খাওয়া যাক,,,, বলে মুখে এক সিপ দিতেই নিমিষে করলার মতো মুখ তিতো হয়ে গেলো।।।।ইয়াজ্ঞজ্ঞজ্ঞজ্ঞ ছিয়য়য়য়য় এসব ছাইপাঁশ খাই কেমনে মানুষ,,,,,,,,, নেশা হওয়ার তো দূরের কথা মুখই চিরতা হয়ে গেলো আমার।।। ইয়াজ্ঞজ্ঞ থু থু।।

ইশারাঃ শুন নূর প্রথম সিপে একটু তিতো লাগে পরে আর লাগেনা খেয়ে দেখ আমার তো এর টেস্ট সেই লাগছে।।।

নূরঃ বলছো??? খাবো।।

মালিহাঃ হ্যা,আপি খেয়ে দেখো না অতো ও খারাপ না।

নূরঃ আচ্ছা, বলেই নিজের হাতের ক্যান দিকে তাকিয়ে চোখ নাক কুঁচকে দুই সিপে শেষ করে ফেললাম,, (এক নিশ্বাসে) শেষ করার সাথে সাথেই হৈচঁকি উঠে গেলো।।। রুমে তো পানিও নেই যে পানি খেয়ে এই হৈচকি থেকে রেহাই পাবো কুল কিনারা না পেয়ে পাশে যে আর একটা এক্সট্রা বিয়ার ছিলো তা খেয়ে ফেললাম।।। হৈচকি তো বন্ধ হলো কিন্তু এখন লাগছে অতি গরম কান দিয়ে ট্রেন এর ধোয়া বের হচ্ছে আমার। নিচ থেকে উঠে হুডি খুলে ফেলে দিলাম ফ্লোরে তার পর ও গরম কমছেনা। মাথা ও যেমন চোরকির মতো ঘুরছে।। সব কিছু যেমন ঘোলা ঘোলা লাগছে।।।।অৎতেরিকি এই কি হলো আমার এক সাথে এতো কিছু কেন লাগছে।।।।আল্লাহ,,,, এই মালু ফেন এর সুইচটা দেয় তো।।।।

.
এ এএএএইইইই ক ক কই কি করচ্চছিস কি তোরা।।।।

.
এভাবে কেপে কেপে কথা বলছো কেন? তুমি কি শেষমেস মিরকি টিরকিতে আক্রান্ত হলা আপি।(খাটে আধো শুয়া হয়ে)
.
থাপপ্পড়া চি চিনিসসস(হাত নাড়িয়ে) ফাজিল মাইয়া।।।ফে য়ন কেন ছারচ্ছিস !!(নিচ থেকে উঠতে উঠতে )
.
তো।
.
তো তোর মুন্ডু বদ এর হাড্ডি, (ফেন অফ করে)আজ এমনেই খুব ঠ্যান্ডা পরছে বাহিরে তার উপরে সন্ধায় থেকে একটু পর পর ক্ষনে ক্ষনে বৃষ্টি হচ্ছে তার মধ্যে কোন সুখে এই খাট্রার গাট্রার উড়ো চান্ডিকা ছারচ্ছিস!!!! এমনে তেই তোর ঠ্যান্ডার সমস্যা আছে জানিস না।।রেগে।।।হেলেদুলে।।।।
.
বাহিরে ঠ্যান্ডা, কাল বৈশাখী আদি তুফান বৃষ্টি থাকলে কি হবে আপি!!! মনটা আজ আমার বড্ডো অশান্ত এই অশান্তকে শান্ত করার প্রচেষ্টাই মূলত ফেন অন করেছি। যদি এতে একটু শান্ত হয়।
চলবে,,,,

[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি।]

মেঘের আড়ালে পর্ব-১৪

0

#মেঘের আড়ালে💞
#পর্ব__১৪
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

৩০.
নাম বিহীন এক পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ের উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছি এইখান থেকে নিচের মানুষগুলোর সাইজ এক একটা পিঁপড়া মতো লাগছে আমার কাছে। চ্রটগ্রাম এসেছি আজ দুইদিন হবে এই দুইদিনে কোথাও বের হওয়া হয়ে উঠেনি। তার অভস্য এক বিশেষ কারন ও আছে বটে, তা হলো আমার অতি ভোলাভালা অনিক ভাইয়া বিয়ে আসর থেকে কন্যকে তুলে এনেছে এই ঘটনায় পুরো থানচি টু নারায়ণগঞ্জ ইতিমধ্যে ভাগ মিরকা ভাগ টাইপ রটে গেছে অলরেডি।।। আমরা এখানে আসার পর ও ভাবির বাসার লোকেরা এসে অনেক ঝামেলা করেছেন। কাল দুপুরে পরে দুই পরিবার একসাথে বসে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনিক ভাইয়া আর ভাবি মানে রুপা যেহেতু তারা পালিয়ে দুই পরিবার এর সম্মান অলরেডি ধুলোতে মিশে দিয়েছে তাই আর বাকি সম্মান না মিশিয়ে এক্সট্রা সমস্যা না বারিয়ে দুই পরিবার মিলে তাদের চার হাতকে এক করে দেওয়া ভালো হবে এতে আশেপাশে কানাকানি ও কম হয়ে যাবে আর সম্মান ও কম নষ্ট হবে।।।।।

.

.
দুপুর দুইটায় শপিং থেকে এসে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে এক ঘুম দিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি পুরো বাড়ি ফাকা আম্মু খালামনিরা আশেপাশের কিছু কাছের আত্নীয়-স্বজনদের দাওয়াত করতে বের হয়েছেন।আব্বু আর খালুজান মেন্ডেইল এর কাজ গুলো দেখছে আপাতত আর আমার কাজিনরা ব্যাচেলার পার্টি থিম এর জন্য জিনিসপাতি আর খাবার দাবাড় আনতে বের হয়েছে। পুরো বাসাতে আমি দিপ্ত ভাইয়া আর ফারদিন অনিক ভাইয়ার ছোট ভাই আছি। তাই আমরা ঠিক করলাম বাসায় এভাবে বসে না থেকে আশেপাশে থেকে একটু হেটে আসি এতে মন ও ফুরফুরে হবে।

.

.
ফারদিনঃএইইই অনিক ভাইয়া মেসেজ দিয়েছে বাসায় সবায় এসে পরেছে,এখন চল আমরাও বাসায় যাই । এখন বাসায় না গেলে পরে সন্ধায় পাহাড় দিয়ে হেটে যেতে সমস্যা হবে অনেক, কাল আবার সবায় মিলে একসাথে আসা যাবে এখন চল বইন। আল্লা ওয়াস্তে এই পাহাড়ি সাথে প্রেম স্রেম ভাব পরে এসে করিস।।

.
দিপ্তঃ হ্যা বইন চল, এমনেই আমি এক রক্ত শূন্যতা রোগী এর মধ্যে ফ্রিতে একঝাক রক্তদান আর করতে পারছিনা এইভাবে দাঁড়িয়ে,আর পা দুইটো ও চলতে চাইছেনা আমার।।। করুনা কর ভাইয়ের উপর একটু।।।অসহায় ভাবে।।।।
.

নূরঃ তোমরা কতো খারাপ আল্লা,,, এই নিরহ সিংগার প্রানীদের একটু মিস্টি রক্তদান করে পূন অর্জন করছো তা আর হজম হইলো না তোমাদের এই বদ পেটে,,,,ধরো এই মশাটা আজ জন্ম নিসে, মশা হায়াত মাএরো দুইদিনের জানো তো!!!! দুইদিন বাদে যখন মরে যাবে তখন বলতে তো পারতো ঢাকা থেকে সেই এক দিপ্ত দ্যা বডি বিল্ডা এসেছিলো সে আমাকে পরোম আদরে তার রক্ত শোষণ করতে দিয়েছিলো আহা কই মজা ছিলো ,,,,,,, জীবনটাই তোমাগো বেদনা দ্যা মশা কোম্পানি থেকেও নাম কামাইতে আর পারলানা,,,,,,চলো।মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে হাটতে হাটতে।।।।

৩১.
বাসায় এসে দেখি বাগানের মাঝে মেন্ডেইল এর টেবিলে বসানো হয়েছে তার মধ্যে সবায় গোল হয়ে বসে আড্ডাবাজি দিচ্ছে আর টেবিলের মাঝে বরাবর গরম গরম ধোয়া উঠা চা আর সবজির পাকোড়া রাখা আছে অইখান থেকে নিয়ে সবায় খাচ্ছে আর গল্প করছে।। আমি ও আর দাঁড়িয়ে না থেকে জলদি করে গেলাম যদি পাকোড়া শেষ হয়ে যায়। টেবিল সামনে গিয়ে উক্কি ঝুক্কি দিয়ে চার পাচটে পাকোড়া আগেভাগে নিয়ে সুয়েটার এর পকেটে পুরে নিলাম। আর একটা নিয়ে মুখে দিতেই পিছ থেকে আম্মু বলে উঠল,,,
.
আম্মুঃ আস্তে নূর পাকোড়া খুব গরম মুখ পুড়ে যাবে তো।।।
.
.
” আমি আম্মুর বিবরীতে শুধু অহুহু অহু করলাম কারন ইতিমধ্যে আমার ঘটনা ঘটে গেছে আমার মুখ পুরো পুড়ে গেছে।।বহুত কষ্টে মুখের পাকোড়াটা চাবিয়ে শেষ করে পানি খাচ্ছি একেতো অতি গরম ছিলো দ্বিতীয় অনেক ঝাল ছিলো আমার চোখ ঝালে লাল হয়ে আছে আর গরমে কান দিয়ে ট্রেন এর ধুয়া বের হচ্ছে।।। বাগান থেকে বড় বড় ধাপে দোতালা রুমে আসলাম যে রুমটা আমাকে আর অনিক ভাইয়ার দুইটো কাজিনকে এক সাথে থাকতে দেওয়া হয়েছে। রুমে এসে আমি পুরো থ আপি খাটের উপরে ল্যাকেজ রেখে জামা বের করছেন।

.

.
নূরঃ আপি তুমি,,,কখন আসলে আমাকে তো কেউ বললো ও না।।।। তুমি আসছো।। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে।।।।
.

.
“নূরের কথায় ইশারার কানে যেতেই হাত থেকে শাড়ি খাটে রেখে নূরের সামনে আসলো।এসেই ধমক এর শুরে বলে উঠল,,,,,
.

.
ইশারাঃ ঔই বদ এর হাড্ডি তোর ফোন কইরে, ফোন দিলে পাইনা কে চান্দে দেশে থাকস।।।। আর আমাকে না জামিয়ে উড়ো চান্ডিকার মতো এখানে উড়ে আসলি কেন।তুই জানিস তোকে কতো শত শত ফোন দিয়েছি আমি ।।। প্রথমে তো আমার একটাও ফোন পিক করিস নাই তার উপর পরে আবার ফোন দিয়ে দেখি ফোন বন্ধ করে রেখেছিস।।।রাগিতো সুরে।।।
.
.
নূরঃ অহহ রিলাক্স আপি এতো চিল্লাও কিল্লাই জিজু শুনলে তো ভেগে টেগে যাবে কানে হাত দিয়ে।।ফোনের সাথে এখানে এসে ইতিমধ্যে আমার সম্পর্ক খুব খারাপ হয়ে গেছে, ফোন ড্রয়ারে ঘুমায় চার্জার আনতে ভুলে গেছি তাই আপাতত বন্ধ হয়ে পরে আছে।।।।আর তার থেকে বড় কথা সবাইতো এইখানে আমাকে ফোন দিবে আর কে তাই ফোন আর চার্জ দেওয়া দরকার মনে করিনি।।।তাই দেইনি।।।।

.

.
ইশারাঃ বাহহহ সেই ভালো,, একজন ফোন ধরবে না বন্ধ করে নাকে তেল দিয়ে রাখবে আর একজন বাসায় এসে জিনিসপত্র ভাংচুর করবে তাকে বাড়িতে ফোনে কোথায় খুঁজে না পেয়ে। আর এইসব ঠ্যালা সামলাতে হবে কা কে আমাকে।।।।।রেগে কথা গুলো বললো।।

.
.
মানে!!!! কি বলতে চাও তুমি।আমি সামান্য ফোন না ধরায় কার তুলকালাম হলো।।।। মোবাইল কোম্পানি বাদে আমারে আবার কেঠাই তার সুখেদুঃখে এতো মনে করল।।।অবাক হয়ে।।। একটু রচনাটা বলবা।।।
.

.

এরপর আমি যা শুনলাম আপির থেকে তা শুনে আমার কান পুরো শুদ্ধ,,,,,,,, উনি কোথায় আপি?? তোমাদের সাথে কি এসেছেন।ভাবুক হয়ে।।।।

.

.
নিচে ভাইয়া, ইরফান অনিক ভাইয়া আর আব্বুর সাথে কথা বলছে,,,, তুইতো বাসায় ছিলিস না তাইতো অনিক ভাইয়াকে দিয়ে ফারদিনকে মেসেজিং করে তোদের তারাতারি আসতে বললাম।।। এভার সামলা কেমনে কি করবি।।।

৩১.
আমি আপুর কথা শুনে কথা বলার ব্যাকরুদ্ধ হারিয়ে ফেললাম ইতিমধ্যে , কি বলবো আপুর বিবরীতে, আপুকে কিছু না বলে বড় সড় এক ঢোক গিলে ব্যালকনিতে আসলাম। নিচে উক্কি ঝুক্কি দিতেই বেশী কষ্ট আর করতে হলো না,,, লাল প্যান্ডেল এর পাশে সাদা শার্ট এক যুবোক দিকে চোখ গিয়ে থোমকে গেলো আমার।শাটের উপরে দুই তিনটে বোতাম খোলা তার মধ্যে সানগ্লাস ঝুলানো , চুলগুলো উল্কোসুল্কো হয়ে আছে এলোমেলো হয়ে কপালে উড়ে পরছে,,মুখটা চুপসে আছে চোখ দুইটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। এই উল্কোসুল্কো তেও বেটা সাইকো কে নোট ব্যেড।।। এভার চোখ গেলো তার বাম হাতের দিকে হাতে ব্যান্ডেজ করা তাহলে আপিকি সত্যি বললো,,,,ইয়াদ নাকি সেদিন বাসায় আসেনি পরেদিন বিকালে এসেছেন এসেই ছাদে চলে যায় কাউকে কিছু না বলে আর ছাদে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা লক করে রাখে, রাত দশটায় ছাদ থেকে এসে যখন বাড়িতে রুমে আমাকে কোথায় ও খুঁজে পাইনি তখন বলে আমার উপর চিল্লানো শুরু করেছে। মামনি ইরার সাথে দেখা করতে হোস্টেল গিয়েছিলো তাই সে বলতে পারিনি আমি কোথায় আছি। সেইদিন রাত দশটায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ইয়াদ গাড়ি নিয়ে আমাদের বাসায় উদ্দেশ্য রওনা দেয় বাসায় এসে দেখে বাহিরে তালা দেওয়া। তালা দেখে উনার রাগ আরো সপ্তম আসমানে চলে যায়। আমাকে নাকি ফোন দিয়েছে আমার ফোন বন্ধ ছিলো রাগে বাসায় এসে রুমের সব জিনিস হাতের সামনে যাই পেয়েছেন তা এক প্রকার নিয়ে ভাংচুর করা স্ট্রাট করে দেয়। আপু ভয়ে আব্বু আম্মুকে অনেক ফোন দেয় কিন্তু কেউই ফোন পিক করে না। করবে কি করে এইখানেতো কম ঝামেলা চলছিলো না তখন,ফোন তুললেও কোন ঝড় রেখে কোন ঝড়কে আগে থামাতেন।।।রাতে যখন মামনি বাসায় ফিরে তখন এই ইয়াদ এর এইসব পাগলামো শুনে রুমে আসে। তখন ইয়াদ মামনির কথা শুনে শান্ত হয়। নূরের বাবা নূরকে নিয়ে চ্রটগ্রাম যাওয়ার আগে তাকে ফোনে দিয়ে জানিয়ে দিয়ে ছিলো।।।

“এতো পাগলামির মানে কি যাকে তিল পরিমান সহ্য করতে পারেনা সেই আমার জন্য এতো পাগলামো করেছে আদৌ ভাবা যায়।।।।হোয়াট এ ইতিহাস নূর।।।। এইটুকু জীবনে কপালে আর কি কি শুনা বাকি রাখছে আল্লামালুম কে জানে।।।

.
“অনিক ভাইয়ার হাতের ট্যাক অনুযায়ী উনি নিচ থেকে উপরে আমার দিকে তাকালেন উনার এই রুক্ষচোখে চোখ পরতেই আমার ভয়ে কলিজা কেপে উঠল আমি রুমে এক প্রকার দৌড় দিলাম।।।।আব্বু বাচাও এই সাইকো বেটা ছোবলা থেকে মনে হয় এই চোখ দিয়েই আমাকে আজ বর্স্য করে ফেলবে,,,
চলবে,,,,,,

[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি ]

মেঘের আড়ালে পর্ব-১৩

0

#মেঘের_আড়ালে 💞
#পর্ব__১৩
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

২৭.
জোৎস্না বিলাস করতে গিয়ে যে ঠ্যান্ডায় জ্বরে অবস্থা করুনাময় নাজেহাল হয়ে যাবে আমার তা জানলে এই জিন্দিগিতে ভুলে ও আর যাইতাম না ছাদে ফ্রি সার্ভসিতে বিডিতে বরফ এর বিলাস করতে। আমার অতি সামান্য ঠ্যান্ডায় হলেই আমার ট্রুউউউউউ লাভ টন্সিলের এন্টি রটে যায় গলা ফুলে। অতি ভালোবাসে আমাকে তাই তো এই জিন্দেগীতে আমার পিছ আর ছাড়ল না এই বেটা টন্সিল।।। এভার ও ব্যতিক্রম কিছু হলো না আমার সাথে,গলা ফুলে গলার সুর যেমন বরফে হয়ে আটকে আছে যা আদৌ অাদৌ বাক্যতে ও কিছুতেই বের হচ্ছে না গলা দিয়ে।। ইয়াদ আপির থেকে আমার সমস্যা কথা জানতে পেরে খুব রাগারাগি করেছেন কথা ও বলছেনা সাইকোটা ঠিক করে আমার সাথে। আমি কথা বলতে চাইলে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু একঝাক টেনশন ও ছিলেন বটে আমার ৪ দিন পর পরীহ্মা এর মধ্যে আমি এতো অসুস্থ পরীহ্মা এটেন্ড করবো কিভাবে।।। এই চারদিন উনি আর অফিসে যাইনি রাহাত ভাইয়াকেও আসতে না করেছেন। আমার সাথে কথা না বললে ও হিতলার গুনোধর জামাই আমার পড়ার নামক টর্চার ঠিকই চালিয়ে গেছেন আমার উপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০ ঘন্টায় বই এর মধ্যে মুখ গুঁজে থাকতে হয়েছে এক প্রকার বাধ্য হয়ে।।।।
.

.
আজ ফাইনালি পরীহ্মা নামক প্যারা থেকে পিছা ছুটলো আমার।।।ইয়াদ আমাকে বাসায় দিয়ে ঢাকার বাহিরে গেছেন। কোথায় গিয়েছেন বলে যাইনি।কথা বলতে গেলেই পান সাপ এর মতো অতি ফোস ফোস করে উঠেন বেটা বজ্জাত।।। ছোবলার খাওয়ার ভয়ে কিছু আর জিজ্ঞাস করেনি। এমনি ও অকালে ছোবলা খেয়ে থোবলা হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই আমার।।।আমাকে আর আগের মতো করে এই বাসায় কেউ ভালোবাসে না সবাই খালি আমাকে ধমকাই বিশেষ করে ইয়াদ আর আপু। ইয়াদ বাসায় নাই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাগপত্র গুছাচ্ছি আজ বাপের বাসায় চলে যাবো। ১৫ দিনেও এই চাঁদখানা মুখ এর দশন দেখাচ্ছিনা। বেটা সাইকো মে মাইকে চালি জাওঙি আব তুম দেখতে রাহিও হুহ।।।। আমি কেনো একলা একলা বিরহে পুরবো ,,,,,, এভার বুঝ এই নূর এর বিরহে কেমন লাগে বেটা।বহুত তেল খরচ করেছি এমনেই তেলের দাম বারসে ১৩০ টাকা হয়ে গেছে মুখের কথা।।।। এভার আপনি তেল দেন আমার বোতল এর তেল শেষ।।।।।

২৮.
এইকি মামনি,,,,,,,, কোথায় যাচ্ছিস এই ব্যাগপএ সাথে নিয়ে?
.

তোমার কাছেই আসছিলাম মামনি।।।বাসায় যাচ্ছি আব্বুর কথা খুব মনে পরছে (ডাহা মিসা কথা)। সেই বিয়ের পরের দিন যে বাসায় গিয়েছি আর তো যাইনি আর এই তিন মাসেও আব্বুর সাথে তেমন দেখা হয়নি(ন্যাকা কান্না জুড়ে)। আজ যেহেতু পরীহ্মা শেষ হয়েছে তাই আমি বাসায় যাচ্ছি আব্বুর কাছে গিয়ে কিছুদিন থাকবো।।।। জানো তো মামনি কিছুদিন ধরে আব্বুকে বড্ড সপ্নেও দেখছি।।।এই তো কাল দেখলাম আব্বু খুব রাগ করে আছে আমার উপর আমি কেন তার সাথে দেখা করিনা কান্না মিশিত সুরে।।। আমি কি বাসায় যাবো মামনি???

.
হ্যা, সেই যা মামনি পিঠে হাত বুলিয়ে।।।কিন্তু একা যাইবি ইশারা যাবেনা!!!চিন্তিতো সুরে।।।।
.
নিজে এনতে পালাইতে পারলে আমার মিরজাফর বাবার নাম বিড়বিড় করে।।।।
.
কিছু বললি মামনি??
.
আপু পরে যাবে মামনি,আমি এখন যাই মামনি প্লিজজজজজজ আর না করোনা।।। কাছে এসে ইনোসেন্ট ফেশ করে।।।

.
দেখো মেয়ের কান্ড আমি কি তোকে না করেছি এক বারো।।। সেই যাবি জা ইয়াদ জানে।।।
.
হ্যা,জানে(ডাহামিথ্যে)
.
তাহলে আমি আর কি বলবো যা।।।।
.
লাভ উ মামনি।।।।উম্মম্মাহহহহ।। গলা জড়িয়ে।।
.
বাসায় আপাতত কোনো গাড়ি নেই। দুইটোই গাড়ি আছে একটা ইয়াদ নিয়ে বের হয়েছে আর একটা দিয়ে জিজু আর বাবা অফিসে গিয়েছেন।তাই আমি বাসায় থেকে বের হয়ে ডাইরেক্ট রিক্সা নিলাম। মিনিট বিশ এর মধ্যে বাসায় এসে পৌছালাম ভাড়া মিটিয়ে পিছে তাকাতেই আমি পুরো শুদ্ধ ।।।।আম্মু, আব্বু, আমার ছোট খালামনি আর কাজিন মহল ব্যাগ পএ বুস্কা বাস্কি সাথে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।।
.

.
এই কি আম্মু আমি আজ বাসায় আসলাম আর তোমরা পালাচ্ছো।।।।।। এই ছিলো তোমাদের মনে।।।।
এই দিন ও দেখার ছিলো আমার।।। আল্লাহ মাটি একটু ফাক করো আমি একটু ঢুকে দুঃখো প্রাকাশ করে আসি ।।।

.
” হঠাৎ এমন কথায় সবায় সামনে নূর এর দিকে গুরে তাকালো। নূরকে এইভাবে দেখে তার আম্মু অনেকটা অবাক হয়ে যায়। নূর যে আজ আসবে তা বলেনি একবারো তার থেকে বেশী অবাক হয় নূর এর হাতে ব্যাগ দেখে আর একা আসতে দেখে।।কিন্তু নূর এর খালামনি আর কাজিনরা অকে দেখে অনেকটাই খুশি হয়েছে।।।তাদের মুখের হাসির ঝলক দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

.

.
আম্মুঃ নূর তুই একা কেন!!! জামাই, ইশারা কোথায়??আর হাতে ব্যাগ কেন? ঝগড়া করে এসেছিস!! তুই কি বড় হইবিনা।।।দেখো তোমার মেয়ের কান্ড।।।কি ঘটিয়ে এসেছে কে জানে।।। তাইতো এভাবে না বলে চলে এসেছে।।।।হাইপার হয়ে।।।।

.
২৯
আব্বুঃ আহা থামবা তুমি।।।মেয়েটা না আসতেই তুমি তোমার প্রশ্ন ফসাদ করা শুরু করে দিয়েছো।।।বাবাইটা আজ না তোমার পরীহ্মা ছিলো। কেমন হয়েছে??
.
নূরঃ ভালো হয়েছে আব্বু।।

.
আব্বুঃ আলহামদুলিল্লাহ, তা বাবাই তুমি একা কেন!! ইশারা ইয়াদ কোথায় আসেনি তোমার সাথে।।

.
নূরঃ আমাকে দেখে কি আব্বু তুমি খুশি হওনি!!আমি কি এখন নিজের বাসায় আসতে পারবো না?আমি কি এতোটা পর হয়ে গিয়েছি এখন(অভিমান এর শুরে)তোমাদের কাছে। তোমার আম্মুর কথা খুব মনে পরছিলো কিছুদিন ধরে তাইতো আজ পরীহ্মা শেষ হতেই চট করে চলে আসলাম তোমাদের কাছে।কিন্তু এখন তো দেখছি ভুল করেছি এসে।।।
.
আব্বুঃ দেখসো তোমার জন্য আমার বাবাইটা কতো কষ্ট পেয়েছে ইশারা আম্মু সব সময় তুমি একটু বেশি রিয়েক্ট করো।।।আর বাবাই আমাকে দেখে কি তোমার মনে হচ্ছে আমি খুশি হইনি তোমাকে দেখে।।।দিনকাল অব্যস্থা জা বাজে যাচ্ছে এর মধ্যে তুমি একা আসছো এইভাবে না বলে ভয় হয়তো তোমার জন্য তাইতো তোমার আম্মু টেনশনে কথাগুলো বলছে।।।মাথায় হাত বুলিয়ে।।
.
নূরঃ স্যরি আব্বু, আর হবেনা।।তা তোমরা কোথায় যাচ্ছো এভাবে পোঁটলাপুটলি নিয়ে।।কোথায় ও নির উদ্দেশ হচ্ছো।ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করল।

.
দিপ্তঃ তেমন কিছু নারে পুচকি।অনিক ভাইয়া তো ঘটনা রটে ফেলসে তাইতো চ্রটগ্রাম যাচ্ছি।তোর পরীহ্মা বলে কিছু জানাইনি তোকে কিন্তু ইশারা সাথে কথা হয়েছিলো ও বলছে পরশুদিন তুই ইশারা ইয়াদ ইরফান একসাথে আসবি চ্রটগ্রাম তাইতো তোকে দেখে এক প্রকার ভূত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছি সবায়।

.
নূরঃ মানে!!! আমার অতি ভোলা ভালা ভাইয়া এমন কি করলো যে ঘটনা রটে ফেললো ইতিমধ্যে যে আমি খবরই পেলাম না।আর আমি এভেরেস্ট জয় করতে বসিনি যে আমাকে গরম গরম নিউজ থেকে দূরে ঠেলে দিবা।মুখ গোমরা করে।।।

.
” এখন মানে টানে পরে কর বনু ব্যাগ কাধে তুলতে তুলতে গাড়ি চলে এসেছে বাকি কথা নাহ হয় গাড়িতে বসে বলি।।।।।
চলবে,,,,,,

[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি ]

মেঘের আড়ালে পর্ব-১২

0

#মেঘের_আড়ালে💞
#পর্ব__১২
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা নাভিলা

২৪.
চারপাশে আযানের মিষ্টি শব্দে কানে আসতেই নূর এর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমো ঘুমো চোখে তাকিয়ে নিজেকে ইয়াদের বাহুডোরে উম্মাদ বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে খুব কাছে আবিষ্কার করে। কালকের কথা মনে আসতেই মুখে এক লজ্জার আভা মিশিত সুপ্ত প্রাপ্তির এক জয় করা হাসি। আজকের দিনের শুরুটা সব থেকে আলাদা এক অন্যরকম প্রশান্তি মনে মধ্যে ভালো লাগার দোল বয়ছে।। ইয়াদ এর বুক থেকে মাথা তুলে কানের কাছে মুখ নিয়ে কিছুটা মৃদু আওয়াজে শুভ সকাল ইয়ান ইনঅায়াত এর আব্বু প্রতিটা সকাল তোমার আমার শুরুটা হোক এক সুপ্ত অনুভুতি সাথে।।। মুচকি হাসি দিয়ে কপালে এক গম্ভীর ভালোবাসার স্পষ্ট একে দিয়ে।।।।

.

.
চট করে ধীরে সুস্থে উঠে ইয়াদের গায়ে ভালো করে কম্বল দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ওযু করতে।নামাজ পরলে ও সব সময় ফজর নামাজটা কায়জা হয়ে যায়। আজ যেহেতু উঠতে পেরেছি তাই নামাজটা কিছুতেই আর কায়জা করতে চাইছিনা।। ফজর নামাজ শেষে সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিলাম আমাদের আগামী দিনগুলো যাতে এভাবে হাসিখুশি ভাবে শুরু হয়।।।। নামাজ শেষে জানামাজ বাজ করে জায়গায় রেখে ব্যালকনিতে আসলাম।আজ মনটা খুব ফুরফুরে আমার আশেপাশে কুয়াশা চাদর দিয়ে ঢাকা ব্যস্ততা রাস্তায় কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে কুয়াশা বেদ করে নিজ নিজ কাজের গন্তব্য ছুটে যেতে।। আবার কয়েক জন জোড়া শালিক দম্পতিকে ও দেখা জাচ্ছে হাতে হাত ধরে মুখে এক গাল হাসি নিয়ে জগিং যেতে।।। তাদের দেখে মনে এক ইচ্ছে এসে জাগলো কোন এক দিন ব্যালকনি থেকে ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে।।। আপনি আর আমি কুয়াশা বেদ করে হাতে আঙুলের বাজে হাত আকঁরে ধরে পাশাপাশি হাটবো সেইদিন থাকবে না কোনো বাধা নিজেরদের মাঝে ইনশাল্লাহ সেইদিনটা খুব তাড়াতাড়ি আসবে আমাদের জীবনে ইয়াদ আমি অপেহ্মা প্রহরে রইলাম ।।।
.

.

.
“গরম গরম কফির ধোয়া ইয়াদ এর ঘুম ভাঙল ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে নূর দাঁড়িয়ে আছে হাতে তার গরম গরম ধোয়া উঠা কফি “। চুলগুলো আধ খোঁপা মুখে তার আঁকাবাঁকা দাতে এক মিষ্টি কড়া হাসি। শাড়ির আচলটা কমোড়ে গুঁজানো পাকা গিন্নীদের মতো কপালে আর নাকে ঘেমে আছে আর সামনের কিছু চুল ঘামে লেপে আছে।দেখতে পুরো বউ বউ লাগছে।।।। হঠাৎ নূরের এই রুপ দুই দিনের ব্যবধানে এতো পরিবর্তনে ইয়াদ টাস্কি চাহনিতে তাকিয়ে আছে।।।।

.

“গুড ম্রনিং জামাই মশায়,,,, উঠুন আপনার জন্য আপনার প্রান প্রিয় চিরতা রসকস নিয়ে আমি হাজির হয়েছি।।।। আমি জানি আমি দেখতে খুবই সুন্দর তাই এভাবে ক্যাবলাকান্তর মতো হ্যা করে তাকিয়ে আর নজর দিতে হবেনা। আপনারই বউ আমি পাশের বাসার ভাবি না যে এভাবে দিনদাহারে চোখ দিয়ে আস্ত গিলে খাচ্ছেন।।। ফ্রেশ হয়ে এসে রিলেক্স ভাবে ধীরো সুস্থে দেখুন মশায় চোখ টিপ দিয়ে ।।। পালিয়ে যাব না আমি এখন উঠুন।।।।। এই বলে নূর ইয়াদকে টেনে উঠিয়ে হাতে কফি দিয়ে এক গাল হাসি দিয়ে চলে গেলো।।।

.

.
“ইয়াদ নূর এর দিকে তাকিয়ে কফিয়ে চুমুক দিতেই মুখ থেকে ফুসস করে ফেলে দিলো”। এটা কি??

.
পিছে দিকে গুরে অমাহ আপনি জানেন না এটা কি?? শুনুন এখন থেকে রোজ আপনার চিরতা রসে সাথে দুই চামচ করে চিনি থাকবে।।।যদি এই সামান্য চিনিতে আমার জীবনে একটু চিনি এনে দিতে সক্ষম হয়।।। অসহায় ভাবে।।। আর আপনি কতো বড় খচ্চোর মুখ না ধুরে ভাসি মুখেই কফি খান ইয়ায়ায়াজ্ঞজ্ঞ।।।।।।।ইয়াদ আপনি এমন করলে দুইদিন পর আমাদের বাচ্চাকাচ্চা তার বাবা থেকে কি শিক্ষা টা পাবে।।। মুখ কুঁচকিয়ে রাগ দেখিয়ে হনহন করে চলে গেলো।।।

.
“ইয়াদ নূর এর কথায় শুনে আর এক ধফা বড় সড় টাস্কি খেয়ে কাশ উঠে গেছে এভার তার হজম করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।।।

.

.
২৫
কোচিং এর বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে নূর ইয়াদ এর জন্য। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা বিশ বেজে গেছে।।।ইয়াদের নাম্বার ও আমার কাছে নেই যে একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করবো কোথা উনি।।।অভস্য আমি একা নয় তাসফির ও আছে আয়াত ও ছিলো কিছুক্ষন আগে চলে গেছে। তাসফি আমাকে এভাবে একা রেখে যেতে চাইনি তাই আমার সাথে দাঁড়িয়ে আছে আমার ভাই আর অর গাল্ড ফ্রেন্ড এর প্যারাময় কাহিনি বলছে,,,, আমি ভালো মেয়ের মতো অর কেচকেচ শুনছি আর সাথে ফ্রিতে দুইটা একটা ঘুষা থাপ্পড় দিচ্ছি পিঠে।। ও ভালো ভাই এর মতো আমার হাতে মাইর খাচ্ছে আর কথা বলে চলছে।।।এর মধ্যে কোথা থেকে আইলা লাইলা সুনামি গতিতে একটা গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো আমি ছিটকে পরার আগেই তাসফি আমাকে হাত ধরে টান দিয়েছে যার জন্য ব্যাথা পাইনি। আর একটুর জন্য পরকাল যেতে যেতে বেচেঁ গেছি বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছি কি থেকে কি হয়ে গেলো। তাসফি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। এমনেই আমার জানপাখি যাই যাই এর মধ্যে হঠাৎ হাতে হেচকা টান অনুভব করলাম তাকিয়ে দেখি ইয়াদ খুব রুক্ষচোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে চেরাতে রাগের ছাপ স্পষ্ট ।।।এতো রেগে আছেন কেনো।। । উনার কোবলা বোম ফুটাসসস চেহারা দেখে আমার জান পাখি উড়ে যায় যায় অবস্তা।।।।

.
ই ইইয়য়য়াদ।।।।কাপা কাপা সুরে।।আঅাপনি ঠ ঠিক আ,,,,,

.
উঠো।।।ধমক এর সুরে।।।চিল্লিয়ে।।

“যাক বাবা এতো রাগার কি হলো।।।আমি তো সামান্য হালচালই জিজ্ঞাস করসি,,,তাসফি দিকে তাকিয়ে দেখি ও কিছুটা ভয়ে ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে আছে। আল্লা আমার ফ্রেন্ড এর সামনে আমার ইজ্জত এর মুয়া বানাইয়া ফেললো বজ্জাতটা।।।তাসফির দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে দোস্ত আসি তোর সাথে পরে ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে বাচলে দেখা হবে। ইনশাল্লাহ।।।।।। একদমেই বলেই গাড়িতে ঝট করে উঠে পরলাম আমি ।এখন বাচলে আমার বাবার নাম এতো জলদি অকালে আক্কা পেতে চাই না।।।আল্লা বাচাও।।

.

.
গাড়িতে ইয়াদ এর সাথে কোনো কথা হয়নি মুখ খুললেই দশ নাম্বার বিপদ সংকেত এসে হাজির হবে তাই আমি খাল কেটে কুমির না এনে চুপ করে বাহিরের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছি।।

.
বাসার সামনে গাড়ি এসে থামতেই আমি চট করে নামতে নিতেই।।।
.
কাল থেকে তোমার আর কোচিং যাওয়া লাগবে না।এই পাঁচ দিনে যা সীট দিবে আমি নিয়ে আসবো।।।অফিস থেকে আসার সময়। সামনের দিকে তাকিয়ে ইয়াদ বলে উঠল।।।

.
আমি উনার কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।।।।অবাক কাটিয়ে।।কিন্তু কেন হঠাৎ যাবো না!!!জানতে,,,

.
আমি বলেছি তাই।।।চিল্লিয়ে।।।আর কিছু জানতে চাও।।।রাগে কপালে রগ গুলো ফুলে উঠেছে।।।।
.
আমি আর কথা বা বারিয়ে ঢোক গিলে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।।।। রুমে যাওয়ার সাহস নেই এখন তাই বাসায় এসেই স্ট্রেডি রুমে গিয়ে চুপসে বসে আছি রাহাত ভাইয়ার জন্য।
.

২৬.
রাত এগারো টায় উনি সোফায় বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। উনার হাবভাব এমন আমার সাথে উনার বিকালে কিছুই হইনি।। আমি খাটে বসে বসে পড়ছিলাম আর আড়চোখে উনাকে দেখছিলাম কি শান্ত ভাবে কাজ করছে, কেউ দেখে বলতেই পারবেনা এই শান্তর ছেলে মধ্যে যে এক অশান্ত পাজি বড্ড এর হাড্ডি বসবাস আছে।।।
আমি খাট থেকে উঠে বুক সেল্ফে বই গুলো আর সীটগুলো গুছিয়ে রাখছি আপাতত পড়তে আর ভালো লাগছে না মাইন্ডে একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার। মন খারাপের নৃত্যদিনের সঈী হলো আমার ব্যালকনি তাই দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ব্যালকনি আসলাম এসে গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকতেই দেখি আজ আকাশে চাঁদ উঠেছে সাথে তারা সমাহার মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো।কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে একটা ইচ্ছে আসলো,,, তা ভাবতেই ঠোট কামড়িয়ে হেসে রুমে আসলাম।।।

.
ইয়াদ এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি আর হাত কচলাচ্ছি বাংলা সিনেমার নাইকাদের মতো করে।কিন্তু এতে ইয়াদ বেটা মতিগতি ভ্রুহ্মেপ বিশেষ কিছু হল বলে মনে হয়না সেই তার আগের মতো কাজেই ব্যস্ত। তাই গাল ফুলিয়ে ধপাস করে তার ঘা এর সাথে ঘা ঘেষে বসলাম এভার উনি আমার দিকে তাকালেন।ব্যাপারটা হয়তো উনি সহজে নিতে পারেননি।।। তাতে আমার জামাইর কি।।।আমি ৩২ বাতি বের করে।।।

“অগো শুনুন না ইয়াদ।।।সুর টেনে।।।

.
উনি আমার মতো সুর টেনে ফাইল এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল।।। ওগো বলুন না নূর।।।।
.
আজ একটা আবদার করবো আপনার কাছে রাখবেন কি!!! মুখে একটু ইনোসেন্ট ভাব এনে।।।

” নূরের এমন কথা ইয়াদ হাত থেকে ফাইল রেখে নূর এর দিকে তাকিয়ে আছে”, আজ প্রথম বার তিন মাস এর মধ্যে নূর ইয়াদ থেকে কিছু আবদার করছে।।
ইয়াদ প্রশ্ন বিন্দুতে তাকিয়ে আছে নূর এর দিকে।।

.

ভয় নেই মশায় আপনার কিডনি চাইবো না।আমার সাথে বিনা কোনো সংকোচে ছাদে কিছু সময় এর জন্য জোৎস্না বিলাস করবেন।


ছাদে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ আর নূর। ইয়াদ আকাশ এর দিকে একমনে তাকিয়ে আছে।আর নূর জোৎস্না বিলাস করতে এসে ফ্রিতে বরাফ বিলাস করছে আর থরথর করে কাপছে।।।

.
আপনি এতো পাষাণ কেন বলুন তো!!
.
নূর এর এমন কাপা কাপা কথায় ইয়াদ আকাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে নূরের দিকে তাকালো ঠ্যান্ডায় নূর এর ঠোট কাঁপছে কথাও বলতে পারছেনা।।।। তুমি এমন কাপছো কেন শাল নিয়ে আসো নাই কেন।।।নিজেকে কি ডিপিকা মনে করো যে পাতলা শাড়ি পরে নাচতে নাচতে এই শীতে মধ্যে ছাদে চলে আসছো।ফাজিল।।।ধমক এর শুরে।।।

.
ডিপিকা নিজেকে মনে করতে যাবো কেন দুঃখে ।।আর মনে করলেও কি আপনি কি আর রানবির সিং হয়ে যাবেন যে বউ শীতের অনবরত কাঁপছে আপনি গায়ের জেকেট খুলে আমাকে দিবেন সেই আমিষ কপাল কি আমার আছে আদৌ।।সরুন তো।।
.
কি করছো কি তুমি নূর জেকেট এর চেইন কেন খুলছো।সরো আমি খুলে দিচ্ছি।।।
.
হুসসসস এতো বেশি বুঝতে আপনারে কে বলসে দেখুন আমি কি করি রাগিত সুরে।।।জেকেট এর চেইন খুলে ইয়াদ এর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ইয়াদের বুকে সাথে নূরের পিঠ ঠেকিয়ে উল্টো হয়ে জেকেট আকরে দাঁড়িয়ে আছে।।।মুখে তার এক চিলতে রাজ্যজয় হাসি।।।
.
ইয়াদ নূর এর দিকে তাকিয়ে আছে কেন জানি নূর এর কাজে একটু ও বিরক্তি লাগছে না হঠাৎ মনে এক ভালোলাগা শান্তি কাজ করছে।।।
.
এভাবে আমার দিকে না তাকিয়ে চাঁদকে দেখুন মশায়।।।।।এক গাল হাসি দিয়ে।।।।

চলবে,,,,,
[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি। ]

মেঘের আড়ালে পর্ব-১১

0

#মেঘের আড়ালে 💞
#পর্ব__১১
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা

২৩.
রান্নাঘরে তাক এর উপরে বসে চোখের মধ্যে গোল বড় ফ্রেম এর কালো সানগ্লাস পরে চোখের পানি নাকের পানি এক করে বেটা পেয়াজকে কুচিকুচি করে কেটে উদ্ধার করছে নূর। সবে মাএরো আট থেকে নয়টা কেটেই তার অব্যস্থা করুন নাজেহাল।ইশারা ডিম এর কোরমা করছে আর মামনি ভুনাখিচুড়ি রান্না করছে আপাততো । আর নূরকে দিয়েছিলো মাংসের জন্য পেয়াজ কাটতে।।।। বাকিটা ইতিহাস।।।

.

নূরঃ মামনি দেখতো মাংসের জন্য আরো পেয়াজ কাটতে লাগবে কিনা!!নাক টেনে টেনে জিজ্ঞাস করলো।।।।

.

” নূর এর এমন টানটান আওয়াজে রান্না থেকে চোখ সরিয়ে দুইজন থ হয়ে তাকিয়ে আছে।।।।। মিনিট পাঁচ এর মধ্যে এই কি অব্যস্থা করে ফেলেছে চেহারার।।। ফর্সা চেহারাতে নাক এর ঢকাটা লাল হয়ে আছে,, আর পুরো চেহারা চোখের পানিতে ভিজে আছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে সানগ্লাস ঠেলছে তার সাথে তাল মিলিয়ে নাক টানছে।।।।নূরের এই করুন অব্যস্থা দেখে দুইজন একে উপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।।।।।।। এই কি অব্যস্থা করেছিস মামনি তোর।।।।।।

.

“অলে আমার বাবুটা তোকে এই অব্যস্থাই যে কতো কিউট লাগছে রে বনু।।।।।আমার ভাসুর মশায় যদি তোরে এখন দেখতো তাহলে নির্ঘাত হার্টফেইল করতো তার সাথে সাথে এলাকাজুড়ে মাইকিং এ রটে যেতো ব্যাপারটা।। বউ এর করুন চেহারা দেখে জামাই ফেইল হায় হায় কি সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার ।গাল টেনে।।। রোল পরা হাসি দিয়ে।।

.

নূরঃ মজা নিচ্ছো তোমরা আমার।।।। এতো হাসার কি হলো।।। অভিমান এর সুরে।।।শুনো,,,পেয়াজটা ভালো দোকান থেকে কিনা ছিলো না তাই এমন হয়েছে।।।তার ইয়াদ কেনো হার্টফেইল করবে আমার করুন অব্যস্থা দেখে!! করবে তো আমার সেইইই আশিক ভাই ।।।।৩২ বাতি দেখিয়ে।।।

.

” আশিক কে”??? গম্ভীর হয়ে।।।

.

আপনার অভ্যাস টা আর পাল্টাতে পারলাম না মশায়,,,,,,,, তাক থেকে নামতে নামতে।।।কেউর কথার মাঝ বরাবর যে খরগোশ এর মতো কান খাড়া করে কথা শুনতে নেই এভাবে আড়ালে দাঁড়িয়ে। আপনি জানেন না ম্যানাস এর নানা।।।নাক ফুলিয়ে।।

.

আমাকে দেখে কি তোমার অকর্মা মনে হয়।।।।(চোখ ছোট ছোট করে) যে আমি সারাদিন আমার কাজকর্ম রেখে তোমার পিছু পিছু ঘুরবো কখন তুমি মুখ থেকে খই ফুটবা।।।।ধমক এর শুরে।। পানি খেতে এসেছিলাম বেয়াদব।।।।।

ইফরানঃ ভাই তুই দেখি আমার ভাবিকার মতো কথা বলা শিখে গেছিস এক্কেবারে তাহার স্টাইলে ।।।। রান্নাঘরে আসতে আসতে।।।

.

ইশারাঃ এই ভাবিকা টা আবার কে??হাতে খুন্তি নিয়ে সন্দেহ চাহনিতে।।। বল ইফরান চুপ কেন।।।

ইফরানঃ আরে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ইশু।।
আমার ভাবিকা আই মিন তোমার ছোট আদরের বোন আমার এক মাএ শালিকা, আমার এক মাএ বড় ভাইয়ের একমাএ বউ,সাথে তোমার বড় ভাবি। সেই সূএে হলো না ভাবিকা। ভাবি +শালিকার (কা)= ভাবিকা।।। সম্পক কে বণ্টন করে মিলিয়ে নিলাম।।।হুদাই আমারে খালি ভুল ভাবো তোমরা।।।। আর ভাই তুমি আশিককে ভুলে গেলা?? আরে আমার স্কুল ফ্রেন্ড আশিক।।।

.
ইয়াদঃ তোর স্কুল ফ্রেন্ড এর সাথে নূর এর কি সম্পর্ক!!আড়চোখে নূরের দিকে রাগিতো ভাবে তাকিয়ে।।।

.

নূরঃ সম্পক হইতে কতো দূর,,,,,,,, আর হইতে বা দিলেন কই আপনি মশায়।।আফসোস এর শুরে।।ইফরান আর ইশারার দিকে চোখ টিপ দিয়ে।।।

.
ইয়াদঃ মানে!!
.
ইশারাঃ আশিক ভাই নূরকে খুব পছন্দ করতো।।।

.
ইফরানঃ শুধু পছন্দ করতো এই কথা বললেই ভুল হবে পুরো পাগল ছিলো,,,বাকা হাসি দিয়ে।।।

.
নূরঃ জানেন আমার কতো ইচ্ছে ছিলো, একটা প্রেম স্রেম করবো এটাও আবার ভার্সিটি সিনিয়র ভাই এর সাথে হায়য়য় সেই ফিলিংস। (রান্নাঘর থেকে ড্রয়িং আসতে আসতে)তার পর আশিক ভাইকে দেখে আর তার প্রেম প্রেম ভাব দেখে চিন্তা ভাবনা বদলে ফেললাম, এতো কষ্ট করে ভার্সিটিতে গিয়ে প্রেম করবো কেন হাতের সামনে আশিক ভাই এর মতো অতি হ্যান্ডসাম মুন্ডা থাকতে।আপুর বিয়ের পর ভেবেছিলাম আশিক ভাইকে এভার হ্যা বলে জীবনটা পুরা আমিষ ময় করে তুলবো তা আর হইলো কই।।।।।। আপনার মতো নিরামিষ এর পাল্লায় পরে নিরামিষ হয়ে গেলাম।।।। ( আহাত এর শুরে)তার পর ও এখনো একটা আসা আছে এই মনে।।। জীবন যেহেতু আছে আসা ঘর তো থাকবেই মনে।।। আর তা হলো ভার্সিটি তে গিয়ে সিন, , ,,

.
ইয়াদঃ চলো।।। হাতের বাহু টেনে।।।

.
নূরঃএভাবে কথায় কথায় টানাটানি করেন কেন।।।হাত ভেঙে ফেলবেন তো।।। ছাড়েন তখন আমার কি হবে??

.
ইয়াদঃ তুমি এতো পাল্লাই পাল্লাই করো কেন তাইতো টানতে হয় (শয়তানি হাসি দিয়ে) চল পড়তে বসবা বহুত হইসে তোমার উড়াধুরা এক সাপ্তাহ পর যে পরীহ্মা সেই খবর কি আসে!!।।।আর হাত ভাঙলে সমস্যা নাই।। বাসার সাথেই কবরস্থান আছে দুইটা। অইখান থেকে একটা হাত এনে জোড়া লাগিয়ে দিবো কেমন।

নূরঃ কথা বলতে ঠিকই পারে আর মাথা শত শোয়াসের কুটনা বুদ্ধি ঠিকই দৌড়াই।।।।।। খালি প্রেমটাই চলে না হায়য়য়য়। বেটা ইবলিশ এর নানার টেম্পুতে মনে হয় পেট্টল শেষ আর নাহলে চাক্কা মনে হয় পাঞ্চার হইসে নির্ঘাত ,,,, সমস্যা নাই আমি আছি তো।।।মনে মনে।।।

২৪.
রাত এগারোটায় সবায় রাতের খাবার খেয়ে নিচে গল্প গুজব করছে।।। আর নূর মাথা ব্যাথার বাহানা দিয়ে ইয়াদ এর চোখ ফাঁকি দিয়ে রুমে এসেছে।।।।
মুখে তার এক রহস্যময় হাসি। রুমে এসেই ফট করে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো, আসার সময় হাতে করে এক মগ পানি নিয়ে বের হলো বেডের এক পাশে আর কিছুটা সোফার মধ্যে মগে পানি হিসাববিজ্ঞানের বণ্টন এর সূএ প্রয়োগ করে ঢেলে দিলো। এভার কোথায় যাবেন বাবু মশায়।।।।। লাইট অফ করে শয়তানি হাসি দিয়ে নূর খাটের এক সাইডে গিয়ে চেপে শুয়ে পরলো।।।।।


মিনিট তিশ এর পর ইয়াদ রুমে আসলো এসে দেখে রুম পুরো অন্ধকার। রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট এর মৃদু আলো বারান্দা থাই বেদ করে রুমে আসায় সেই আলোতে দেখা যাচ্ছে নূর বাচ্চাদের মতো গুটি মেরে কম্বল মুড়ি দিয়ে খাটে একদম কিনারে শুয়ে আছে।।ইয়াদ কিছুক্ষণ অর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে লাইট না অন করে ওয়াশরুমে চলে গেলো চেঞ্জ করতে।।।।ওয়াশরুম থেকে এসে বাধল বিপত্তি খাটে শুতে গিয়ে দেখে মাঝ বরাবর পানি দেওয়া।।। নূর এর দিকে তাকিয়ে মেজাজ গেলো চটে সব সময় বলে অকে সাবধানে কাজ করতে নিশ্চয় তারাতারি করে পানি খেতে গিয়ে ফেলে দিসে রিডিকুলাস।।।। এখন তাকে সোফায় শুতে হবে,,,,, সোফায় গিয়েও বাধল সেইম বিপত্তি, পুরো সোফায় পানিতে ভিজা এভার ইয়াদ এর মেজাজ গেলো সপ্তম আকাশ চ্রটে।।।। নূরকে তুলে ঠ্যাঠিয়ে অত্যন্ত একটা কষে চড় দিতে পারলে রাগটা কমতো।।। বেডে গিয়ে মাঝ বরাবর থেকে কোলবালিশ সরিয়ে ভিজা যায়গা রেখে ইয়াদ ঘুটি মেরে নূর থেকে কিছু দূরত্ব ব্জায় রেখে শুয়ে পরলো।। মিনিট বিশ এর পর ইয়াদের সবে মাএরো চোখে ঘুমে আসতে নিলো এর মাঝেই ঘটলো আর এক বিপত্তি, ইয়াদ কাচা ঘুম এর মধ্যে অনুভব করছে তার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।।। বুকটা কেমন ভারি ভারি হয়ে আছে লড়ানো খুব দ্বায় মনে হচ্ছে।ঘুমো ঘুমো চোখে তাকিয়ে দেখে নূর তাকে গলা পেঁচিয়ে কোলবালিশ বানিয়ে বুকের সাথে একদম মিশিয়ে দিব্বি ভাবে শুয়ে। এভাবে কি ঘুমানে সম্ভব,,,,,, ইয়াদ অনেক চেষ্টা করে ও নূরকে এক ইঞ্চি ও সরাতে পারলো না। না পেরে ক্লান্ত হয়ে শেষমেস নূরকে অইভাবে কম্বল মুড়িয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্য পারি দিলো।

“নূর ইয়াদ বুকে মাথা রেখেই চোখ বুজে এক প্রশান্তি হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল,,,, এটা কে বলে মাঝ বরাবর থেকে পাহাড় সরানো নিঞ্জাটেক বাবু মশায়।।।।
চলবে,,,,,,

[ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি]

মেঘের আড়ালে পর্ব-১০

0

#মেঘের আড়ালে 💞
#পর্ব__১০
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা

২১.
ব্যালকনি দাঁড়িয়ে আছে নূর চোখ দুইটো তার বাহিরে কুয়াশা চাদরে মুড়ানো আকাশের বেদ সূযের এক চিলতে আলোর দিকে। প্রতিটি রাত এর পর এক নতুন দিন আসে আমাদের বাচাঁর জন্য এক নতুন সূচনা নিয়ে।।। আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো নূর কাল সারা রাত সে নিঘুমে কাটিয়েছে চোখ মুখে তার এক ক্লান্তি ছাপ।।। রুমে এসেই চোখ গেলো ইয়াদ দিকে।।।।।
.

.
ইয়াদ বেডে এখনো কম্বল মুড়ি দিয়ে বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছে। আমি ধীরো পায়ে উনার পাশে এসে বসলাম।এতো দিনে উনার এতো কাছে এসে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়ে উঠেনি। ফর্সা হাসি মাখা উজ্জ্বল চেহারা চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে চেহারাতে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছ , খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো বেশ বড় হয়েছে ।।।। কতোটা রাত যে নিঘুমে কাটিয়েছে বুঝাই যাচ্ছে চোখের নিচের কালি গুলো দেখে।।। মাথা হাত বুলিয়ে,,,, কপালে পরোম আদরে গম্ভির উষ দিয়ে ইয়াদ হাত নিজের হাতের বাজে নিয়ে। ।।। আমি আপনার বাজে বউ না ইয়াদ,,,,, তাইতো আপনার রাগের আড়ালে এতো পাহাড়ের মতো জমিয়ে রাখা কষ্ট গুলো বুঝতে পারিনি।।।।(ফুঁপিয়ে কান্না করে)। টাক টেনে টেনে,,,,,,, আমি কথা দিচ্ছি ইয়াদ আপনাকে আমি আর এভাবে কষ্ট পেতে দিবো না।।।আমি আপনার জীবনে #মেঘের আড়ালে হয়ে সব আধার কাটিয়ে দিবো।।।।যেখানে না থাকবে হারানোর ভয় আর না থাকবে কোনো সংশয়।।। শুধু থাকবে অফুরান্ত ভালোবাসা।।।আমি জানি না আমি আপনাকে আদৌ কতো টুকু বুঝে উঠতে পেরেছি,,,, কিন্তু এইটুকু বলতে পারি যতটুকু বুঝলে একজনকে নিসার্থ ভাবে ভালোবাসা যায়। আমি জানি না আমার এই নতুন সুপ্ত অনুভুতিগুলো কে,,,কি আদৌ ভালোবাসার নাম দেওয়া যায় কিনা। কিন্তু আমি এটা বুঝে গেছি এই রাগি রাক্ষস বদ মেজাজি ইয়াদ সাইকোহীন নূর এর জীবন ব্যাথ।।।। আজ থেকে নতুন করে নতুন আফতারে আমাদের পথ চলা শুরু হবে সবকিছু নতুন ভাবে কি রেডিতো।। ম্রিস্টার সাইকো জামাই।।।।।।।।

.

.

“চোখের উপরে কিছুক্ষণ পর পর বার বার পানি ছিটা আসাতে বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে ইয়াদ,,,,,,,,, ঘুমো ঘুমো জড়ানো চোখ জোড়া খুলে সেয় থ অবাক হয়ে যায় কিছুটা।।।।।।।। আচ্ছা বেশিহ্মন ঘুমানোর কারনে কি আদৌ ভুল দেখছে না তো,,, না এমন তো হওয়ার কথা না,,,,,,,চোখ ডলে আবার তাকায় এভার ও সেই একি দেখছে।।এভার সে শুয়া থেকে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে চোখ বুলিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে সে আসলেই কথায়।।।।নাহ সে তো তার রুমেই আছে তাহলে।।। খাট থেকে ধীরে পায়ে ব্যালকনি সামনে এসে দাঁড়ায় কপাল কুঁচকে ,,,,,, তার সামনে ঠিক এক রমণী কালো শাড়িতে উল্টো দিকে মুখ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে তার তোয়ালে যা দিয়ে আপাততো চুলগুল ঝাড়তে ব্যস্ত সে,,,,,, আর তার সাথে তালমিলিয়ে তার হাতের চুড়ি থেকে এক মিষ্টি টুংটাং ছন্ধ বাজছে,,,, সূয আলোতে সোনালি রঙ এর চুড়ি গুলো টুংটাং সাথে সং সেজে নৃত্য করছে চিকচিক করে হাত উঠা নামানোর সময় ,,,,,,,চোখ ফিরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সবে মাএরো সাতটা বিশ বাজে।।।এটা কি কোনো ঘোর লাগানো সপ্ন,,,,,,,,, সপ্ন হলেও ভালো,,,,, কেন জানি এই দৃশটা দেখতে অতো মন্দ ও লাগছেনা মুখে এক হাসি দিয়ে,,,সাথে মন কাড়া এই টুংটাং ছন্ধ শব্দ শুনতে ভালোই লাগছে।।।।বারান্দা থাই এর সাথে হেলাল দিয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত বুকে বাজ করে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ইয়াদ সেই রমণীর দিকে।।।এভার সে রমণী হাতের তোয়ালে ঝেড়ে টানটান নিখুঁত ভাবে বারান্দায় গ্রিলে শুকিয়ে দিলো।।। ইয়াদ তার কার্যকালাপ গুলো দেখছে,,,,কোমরে শাড়ি গুঁজানো ছিলো তা টেনে ঠিক করতে করতে এভার সে গুরে তাকালো।।।।।।।।।।।। ইয়াদ এর মুখ থেকে অফুরান্ত সুরে কপাল বাজ করে বের হলো ননননূরর।।।।।।। এটা আসলেই সপ্ন ছিলো??? নূর শাড়ি বা কেন পরবে এতো সকালে!!!!! অতো শাড়ি পরে না।। চোখ বন্ধ করে।।শ্বাস নিয়ে।।।। ভাবছে সে।।।।

.

.
ছি আমি আপনাকে কতোটা ভালো মনে করেছিলাম আপনি কতোটা খারাপ।।।।।একটা নিরহ অবলা মেয়েকে আপনি এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলেন এতক্ষণ ধরে।।।।। হায় হায় হায় এই মুখ আমি কাকে দেখাবো এখন। (মুখে হাত দিয়ে)

.

মানে!!!!!কি বলতে চাও তুমি?? (চোখ খুলে) বড় বড় করে তাকিয়ে বেকুব এর মতো করে।।।

.
আপনি আমার দিকে এভাবে ক্যাবলাকন্তর এর মতো পুয়া মাছের মুখ করে ইইইইয়য়য়া বড় হ্যা করে তাকিয়ে ছিলেন কেনো????সামনে এসে।।।। বলুন বলুন ভ্রু নাচিয়ে।।।।

.

তুমি এতো সকালে আজ শাড়ি কেন পরেছো??? আর এমন সং সেজে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো কেন??? ধমক দিয়ে।।।

.
প্রশ্ন বদলে উল্টো প্রশ্ন করা আরে বাহ হোয়াট এ টেকনিক ইয়াং ম্যান কাধে চাপোট দিয়ে।।।।।। শাড়ি পরেছি তো কি হয়েছে মহাভারত তো আর অশুদ্ধ হয়ে যাইনি আমার শাড়ি পরাতে।।।। আমার এই টুকু একটা ছোট মন (হাত দিয়ে দেখিয়ে) সেখানে শাড়ি পরতে চাইতেই পারে আর সং সাজা কই দেখলেন সিদ্দীকি সাহেব (ভ্রু-কুঁচকে) । দেখছেন আমার কপালটা কতো বড় দেড় ইঞ্চি এক ফুটো একে তো সাইকো জামাই কপালে এসে জুটলো ২য় সেকেন্ডনাল মাল পাইলাম শেষমেস আফসোস এর সুরে বিড়বিড় করে।।।। তার উপর কথায় কথায় বেটা আমার উপর হুদাই খালি চিল্লায় নিজেতো একটা বয়ড়া মনে করে আমিও বয়ড়া।।।।।। তার উপর এখন আবার দিন কানা রাত কানা রোগ এসে আমাদানি হইলো।।।।।।।।।। হায়রে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে।। হোয়াট এ টেনে টুনে কপাল!!! কি হবে এখন আমার।।।

.
সার্ট আপ।।।।।। ধমক এর শুরে।।।।।

.

অয়য়য়য়য় আপনি এতো কিউট কেন।।।আগে তো খেয়ালই করিনি থাক এখন তো দেখলাম।। ৩২ বাতি দিয়ে।।। অলে আমার কিউটিরে টুনুমুনু জামাইরে রাগলে তোমায় আরো লাগে হেব্বিরে।। গাল টেনে।।।

.

ইয়াদ কিছু বলতে যাবে,,,, নূর এর এমন কথা শুনে বড় সড় সর্ক খেলো।।।।।বড় সড় হ্যা করে তুমি ঠিক আছো কপালে হাত দিয়ে।।ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে কোনো সমস্যা হয়েছে তোমার,,, বলো আমাকে নূর,কোথায় ব্যাথা পেয়েছো।।।(চিন্তিতো হয়ে)।

.

সমস্যা হলে তো নিয়ে যেতেই হবে চিন্তিতো হওয়ার ভঙিতে।।।সেইতো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন কিন্তু( লজ্জা পাওয়ার ভঙিতে।।।) এখন না পরে,,,,

.
মানে!!!! পরে নিয়ে যাবো কেনো??? এখনই নিয়ে যাব চল।।। এতো সকালে,,,,,

.
এইইই আপনি এতো রসকষহীনা কেন বলুন তো।। মনে একটু ও কি রসিক্তা অবশিষ্ট আর নাই।। সব কি অই চিরতায় শেষ করে দিসে আল্লা। এখন তো দেখছি নিজেকেই ধান ক্ষেত করে নিজেকেই কষ্ট করে আবার পাকা ধানে গিয়ে আমাকেই মই দিতে হবে।।। জীবনটাই দেখছি বেদনা সেখানে রেডিমেড কিছু আর পাইলাম না।।।।। কপালে হাত দিয়ে গোমরা মুখ করে।।।সরুন তো এমন খাম্বার মতো না দাঁড়িয়ে থেকে।।। কতো কাজ আছে আমার আপনার মতো আকাশ কুসুম ভাবার মতো টাইম নাই।।বলে ধাক্কা দিয়ে হন হন করে নিচে চলে গেলো।।।।।
.

নূর জাওয়ার দিকে ইয়াদ কিছুক্ষণ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে কি হলো এসব,,, ও কি এসব আবাল তাবল বললো সবই অর মাথার উপর দিয়ে গেলো মনে হচ্ছে।।। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে পা দিতেই ধপাস খেয়ে পরে গেলো।।।।।।।। এই মাইয়া জিন্দিগিতে আর ভালো হইলো না,,, চুল ঝাড়তে এসে বারান্দাকেই চুলের পানি দিয়ে ঝেড়ে গেছে।।।ফাজিল মাইয়া।।।।কমোড়ে হাত দিয়ে।।।

২২.
ড্রায়রিং রুমে সবায় বসে এক সাথে নাস্তা করছে কিন্তু ইয়াদ তাকিয়ে আছে নূর এর দিকে কমোড় ব্যাথায় ঠিক করে হাটতে ও পারচ্ছেনা আর বসতে তো আরো কষ্ট হচ্ছে,,,,কিছুক্ষণ পর পর ব্যাথায় রাগি লুকে তাকাচ্ছে । কিন্তু নূরের তো সেদিকে খেয়াল করার সময় নেই বললেই চলে।।।সেই পাকা গিন্নীদের মতো কমোড়ে আচল গুঁজে সবায়কে খাবার দিচ্ছে চুলগুলো আলোমেলো হয়ে আছে বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর কানের পিঠে গুঁজছে আর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘামের বিন্দু গুলো মুচছে।।। আচ্ছা শাড়ি পরলে কি সব মেয়েদের এমন
maturely এসে পরে,, তখন কি সবায়কে এমন বড় বড় লাগে হঠাৎ করেই।।।ইয়াদ আড়চোখে নূরকে কিছুক্ষণ পর পর দেখছে আর ভাবছে কথা গুলো ।।।

.

কিরে দাদুভাই খাচ্ছিস না কেন???বসে আছিস যে!!

.
আমার হয়ে গেছে দাদিমা।।।।আর খাবো না।।নূরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে। কেউ যদি ভেবেই থাকে ঘরের কাজ দেখিয়ে পাকা গিন্নী সেজে আজ কোচিং এ যাবেনা আর আমি কিছু বলবো না তাহলে তার এটা নিহাত ভুল ধারনা।।।গম্ভীর হয়ে।।।।

.

.
আমি জানি আপনি যে আমার পরোম সৌভাগ্য করে পাওয়া আল্লাহ থেকে অনলি ওয়ান পিস ইবলিশ মার্কা জামাই তাই এসব আসাও মনে আর দেখা দেয় না আমার।। যাইহোক,,, ম্রিস্টার সাইকো আপনি এক মিনিট বসেন আমি দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসছি।।মামনি আজ তুমি আমি আর আপি মিলে রাতে রান্না করবো ঠিক আছে।।।গালে চুমো দিয়ে।।।। আগে থেকেই বলে রাখলাম তখন কিন্তু কোনো ভাবে না করতে পারবে না আমাকে।।।

.
আচ্ছা ঠিক আছে।।।। পাগলি মেয়ে একটা।।।মুচকি হেসে।।।।।।

.

.

.
গাড়িতে বসে নূর মুঠো ফোনে ক্যান্ডি ক্রাস খেলছে আর ইয়াদ ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে নূরের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে আজ এতো শান্ত।।।।

.
আচ্ছা আমাকে দেখতে কি আজ সুন্দর লাগছে???ফোনের দিকে তাকিয়ে।

.
মানে!!!
.
উফফফফ,,,,, এতো মানে টানে করেন কেন কথায় কথায়? কপাল কুঁচকে।।। কথা কি বুঝেন না? না কথায় বেজাল আছে কোনটা? এতো নিরামিষ হলে আমি টেম্পুটা চালামু কেমনে মশায়।।।।

.
এখানে টেম্পু আসলো কোথা থেকে।।।। যে তুমি চালাবে??আর গাড়ি থাকতে তুমি টেম্পু চালাবা কেন??

.
হায়রে,,,,,বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে কচুঁ পাতা বিড়বিড় করে।।

.
কিছু বললে!
.
নাহ,,,,,

চলবে,,,
[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি।]