Saturday, August 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 16



Dark Mystery পর্ব-০৪

0

#Dark_Mystery( কালো রহস্য )
#Part_4
#Sabrina_Summa

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাইকেল চলার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে মাহির চৌধুরী অরপে তাশরিফের গাড়ি। ভুল করে ড্রাইভার এদিক দিয়ে ঢুকে পড়েছে। ফলস্বরূপ খুব বেকায়দায় আছে তারা। কারণ রাস্তাটা খুব সরু।
রাস্তার পাশে মানুষের ভিড় জমছে কারণ কারোরই বুঝার বাকি নেই গাড়িটা কার।
হঠাৎই একটা মেয়ে গাড়ির সামনে এসে পড়লো।
সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করলো।
মূলত মেয়েটি সকলের ধাক্কায় গাড়ির সামনে এসে পড়েছে৷
মাহির গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটির কাছে এলো। তারপর মেয়েটার হাত ধরে বললো, ” দেখি দেখি কতটা কাটলো? ”
মেয়েটা ঝাপটা মেরে মাহিরের হাত সরিয়ে দিলো। তারপর নিজের হাতের দিকে তাকালো।
বাম হাতের তালুতে ভালোই কেটে গেছে। রক্তও পড়ছে৷
আসলে গাড়িটা ধীরেই চলছিলো কিন্তু সমস্যাটা হলো গাড়ির সামনে থাকা কোনো ধারালো জিনিস। মেয়েটা কিছুক্ষণ খুঁজেও বুঝতে পারলো না কোথায় ফ্যাস লেগে কেটেছে।
মেয়েটা বিরক্ত নিয়ে বললো, ” আপনার ড্রাইভার কি চোখ কপালে নিয়ে ঘুরে? ”
মাহির : তুমি কি চোখ কপালে নিয়ে ঘুরো?
মেয়েটা আরও বেশি বিরক্ত পোষণ করে বললো, ” এখন সব দোষ আমার না! আপনি এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ”
মাহির মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,” এরজন্য সরি। ভুল করে ঢুকে পড়েছি। ”
ঝামেলা দেখে মাহিরের এসিস্ট্যান্ট তানিশা এগিয়ে আসলো।
মাহির আবারো মেয়েটার হাত ধরতে ধরতে বললো, “তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করা প্রয়োজন। ”
মেয়েটা দূরে সরে গিয়ে বললো, ” নিজের কেয়ার নিজে করতে পারি। ”
বলা শেষ করে রাস্তার পাশে মাঠের একটা গাছের দিকে হাঁটা দিলো।
মেয়েটা বিড়বিড় করে বললো, ” যেখানে বাঘের ভয় সেখানে গিয়েই সন্ধ্যা হয়। আমি তোমার সামনে আসতে চাইনি! ”
মাহির মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছে।
গাছের নিচে তিনটে ছেলে একটা মেয়েকে রেগিং করছে।
মেয়েটা ভ্রূ নামিয়ে বললো, ” এখানে কি চলছে? ”
তিনটে ছেলের মধ্যে থেকে একজন বললো,” রেগিং”
মেয়েটা : রেগিং! কোন ইয়ার শুনি?

থার্ড
মেয়েটা : আর আমি ফোর্থ। এখন যদি আমি রেগিং করি তখন।

এইডারে আগে দেখছোস ক্যাম্পাসে?

যাই বল। মালডা কিন্তু সেই!
বলা শেষ করতেই মেয়েটা জোরে করে থাপ্পড় মারলো ছেলেটাকে। ছেলেটা ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলো।
মাহির ভাবছে এখন তার সেখানে গিয়ে এগুলো থামানো উচিৎ।
কিন্তু তার আগেই আরেকটা ছেলে এগিয়ে আসতেই মেয়েটা ছেলেটার মেইন পার্টে লাথি মারলো। ফলে ছেলেটিও বসে পড়লো মাটিতে।
মেয়েটা অবশিষ্ট ছেলেটার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই ছেলেটা মাটিতে শুয়ে বললো, “আপু, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এমনিতেই শুয়ে পড়ছি। ”
মেয়েটা মুচকি হাসলো। রেগিং হওয়া মেয়েটা বললো, ” থ্যাংকস আপু। ”
প্রতি উত্তরে শুধু মাথা নাড়ালো মেয়েটি।
মাহির গাড়িতে উঠতে উঠতে তার এসিস্ট্যান্টকে বললো, ” মেয়েটার তেজ দেখেছো। একদম পার্ফেক্ট! আমার সকল ইনফরমেশন চাই। ”
“আর ওকেও চাই। “( বিড়বিড় করে)

মাহির সুযোগ বুঝে মেয়েটার একটা ছবি তুলে নিয়েছিলো। তাই বেশি টাইম লাগলো না। ১০ মিনিটের মাঝেই ইনফরমেশন বের করে ফেললো তানিশা।
তানিশা : তাশরিফ পেয়ে গেছি।
মাহির : বলতে থাকো। তানিশা : নাম রিশিতা খান সুপ্তি। ডাকনাম সুপ্তি। বাবার নাম মিজানুর রহমান খান। অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার। সুপ্তি সামাজিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে অনার্স ফোর্থ ইয়ারে। মাহির অবাক হয়ে বললো, ” কিহ! ফোর্থ ইয়ারে! আমি এখানে কতবার এসেছি। ইনফ্যাক্ট দুই বছর আগে গ্রেজুয়েড হয়ে গেছি। জীবনে কখনো দেখিনি। অন্যদিকে.,. সুপ্তি : দেখবেন কিভাবে। আমি তো তিন বছর ক্যাম্পাসেই আসি নি। স্যার : তবে এখন এসেছো কেন? রূপ দেখাতে! সুপ্তি : স্যার, সামনে এক্সাম তাই। স্যার রেগে বললো, ” তিনবছর না পড়ে এক্সামে কি লিখবে? ” সুপ্তি চুপ থাকলো কারণ এখন তর্ক করা মানে আরও কথা শুনা। সাথে বেয়াদবের ট্যাগ লাগানো তো ফ্রিই। অনেকক্ষণ অপমান করার পর সুপ্তিকে ক্লাস থেকেই বের করে দিলো। এভাবেই সব ক্লাস গেলো। ২ টার দিকে বাসায় ফিরেছে সে। মনটা আজ বড্ড খারাপ তার।

#চলবে.,.

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৪

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪৪
নয়না চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে? তার পাশেই জিয়ান ঘুমিয়ে আছে৷ নয়না বেড থেকে নেমে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো৷ ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে লম্বা চুলগুলোতে তোয়ালে প্যাঁচিয়ে নিলো।বেডে তাকিয়ে দেখে জিয়ান ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত জিয়ানকে হ্যান্ডসাম লাগছে। নয়না গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো জিয়ানের দিকে৷ জিয়ানের চুলগুলো নয়নার ভিষণ পছন্দের হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো চুলগুলো। নয়না মুচকি হাসছে, কি যে অদ্ভুত ভালোলাগা ছুঁয়ে গেলো তার দেহ মন জুড়ে তা প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না৷ এবার আরো ভয়ংকর ইচ্ছে হচ্ছে নয়নার সাহস করে জিয়ানের ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে লজ্জায় মুখ ডাকলো দু’হাতে। লজ্জা রাঙ্গা মুখটা লুকিয়ে রাখলো হাতের আড়ালে। আবার উঠে আসলো রুমের একপাশে সোফা রাখা আছে। নয়না সেখানে বসলো। মনের মধ্যে লাল, নীল, হরেকরকম আনন্দ ঝলকাচ্ছে। নিজের মোবাইল বের করে রুম থেকে বের হয়ে আসলো, বাড়িটা একদম রাজকীয় দুইপাশে রুম মাঝখানে রুফটপের মত সেখানে নানারকম ফুলগাছ সুন্দর করে সাজানো। বসার জন্য টেবিল চেয়ার সুন্দর এক মনোরম পরিবেশ।নয়না সেখানে যেয়ে বসলো, কল লিস্টে যেয়ে তুষিকে কল করলো৷
ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই নয়না বলে,”এই তুই কই মরেছিলি এতোদিন! তোর ফোন বন্ধ ছিলো কেন?”
“তুষি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো ব্রেকআপ হয়েছে আমার৷”
নয়না হেসে বলে,”এটা নিয়ে একশ পঁচিশতম ব্রেকআপ। একজনের সাথে এতোবার ব্রেকআপ করতে তোর লজ্জা লাগে না ভুষি!”
“নন্টু এবার সিরিয়াস ব্রেকআপ করেছি৷”
“শোন কাল রেজাল্ট দিবে ভয় হচ্ছে ভুষি। আগে রেজাল্ট বাবা, মা দেখতো এখন শ্বশুর, শ্বাশুড়ি জামাই সবাই দেখবে।”
“নাটক কম করো প্রিয় তুমি এমনেও গোল্ডেন পাবা। ডাব্বা মারবো আমি।”
“বেশি করে ডাব্বা মার এরপর বিয়ে করবি রিকশা ওয়ালা মামাকে। তারপর তোর জামাই গান গাইবে ও সকিনা গেছো কিনা ভুইলা আমারে আমি এখন রিকশা চালাই ঢাকা শহরে৷”

“নন্টু চুপ কর আজকে আমার মন ভালো নেই।”
” আমার বাসায় চলে আয় মন ভালো হয়ে যাবে।”
“তোর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা কিছু মনে করবে না?”
” আরেহহহ নাহহ আমার শ্বশুর বাড়ির লোকগুলো পুরাই রসমালাই। খালি ওই প্লেন ড্রাইভার করলার জুস।”
“লোকেশন সেন্ট কর আসতেছি।”
” নয়নার হাঁটু অব্দি লম্বা চুলগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। নয়না কথা বলছে আর হাঁটছে। ওড়না গলায় ঝুলছে৷”

জাহিন করিডোরে এসে থমকে দাঁড়ালো এলোকেশী রমনীকে দেখে এখনো চেহারা দেখেনি৷ জাহিন পেছন থেকে বলল,*কে তুমি নন্দিনী আগে তো দেখিনি?”

“নয়না সামনের দিকে ঘুরে জিয়ানকে ভেবে বলে,সারাক্ষণ এই মেয়ে সেই মেয়েকে দেখলে ঘরের বৌকে তো নন্দিনী মনে হবেই।”
“জাহিন হতাশ। না মানে এই মেয়ে এতো কিউট কেন! এতো সুন্দরী মনে হয় যেনো আসমান থেকে নেমে আসা পরি! নয়না ওড়ানার একটা অংশ মাথায় তুলে নিয়ে বলে,শালা ড্রাইভার জীবনে ভালো হবে না৷ এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি লাগে তো।”
” নয়না সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
“এই যে মিস সুনয়না তালুকদার আমি জাহিন চৌধুরী নাম তো শুনা হোগ্যা?”
“নয়না থমকে দাঁড়ালো৷ পেছন ঘুরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দু’জন মানুষের মধ্যে এতো মিল! কন্ঠও সেম প্রায় কেউ না জানলে বোঝার উপায় নেই এরা দুজন ভিন্ন মানুষ।”
“কি হলো মিস এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? বিশ্বাস হচ্ছে না?”
“প্রথম কথা হলো আমি মিস না মিসেস জিয়ান রেজা চৌধুরী। দ্বিতীয় কথা হলো আমি আপনার ভাবি সো সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।”
“ডিয়ার মিসেস রেজা চৌধুরী আপনার বয়স আমার অর্ধেক সো আপনাকে নাম ধরে ডাকবো এসব ভাবি টাবি আমার দ্বারা ডাকা সম্ভব না।”
“নয়না কোন কথা না বলে রুমে চলে আসলো৷ রুমে এসে দেখে জিয়ান নেই! মাত্র লোকটা ঘুমিয়ে ছিলো আর এইটুকু সময়ের মধ্যে গায়েব! সাথে সাথে জিয়ানকে কল করলো৷”
“জিয়ান কল কেটে ব্যাক করলো।
“মানলাম আপনি প্লেন ড্রাইভার তাই বলে সারাক্ষণ ঊড়তে থাকবেন!”
“উড়ে আর কই যাবো বলো,আমি তো তোমার পিঞ্জরের বন্দী খাঁচার পাখি।”
“কোথায় আছেন এখন?”
“তোমার জন্য মেডিসিন নিলাম এখন চলে আসবো, আচ্ছা বলো তো তোমার কোন ফ্লেভার পছন্দ, স্ট্রবেরি নাকি চকোলেট?”
“হোয়াট! আপনি এতো অসভ্য কেনো?”
” অসভ্য মানে! তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসতাম ফ্লেভার বলো।”
“অসভ্য লোক এই কথাটা আগে বলা যেতো না!”
“তোমার চিন্তাভাবনা চেঞ্জ করো বেব বাসর করার জন্য এতোই উতলা হয়ে আছো আগে বলবা তো জানেমান।”
” নয়না ফোন কেটে দিলো। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,ছিহহহ নয়না চিন্তাভাবনা পরিবর্তন কর৷ এই লোকের সাথে থেকে থেকে তুইও লুচু হয়ে যাচ্ছিস!”

🌿

মিতা বেগম নয়না আর জিয়ানের জন্য খাবার নিয়ে এসে দেখেন দরজা খোলা, বেডে তার ছেলে আর বৌ ঘুমিয়ে আছে৷ মিতা বেগম খাবারের ট্রে নিয়ে বের হয়ে আসার সময় বা’হাত দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলো৷
“মেহনুর মিতা বেগমকে দেখে বলে,আম্মি এই খাবার কার জন্য?”
“মিতা বেগম বলল,এতো সকালে তুই! রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি বুঝি?”
“মেহনুর মিতা বেগমের হাত থেকে খাবার ট্রে নিয়ে বলে,আসো তো আমার রুমে গল্প করি তোমার সাথে।”
“মিতা বেগম রুমে ঢুকে বলেন, আমার ছেলে আর বৌমা ফিরেছে সকাল সকাল ওদের জন্য খাবার নিয়ে যেয়ে দেখি দু’জনে ঘুমাচ্ছে। মিতা বেগম চলে যাওয়ার পর থেকে মেহনূর আর স্থীর হতে পারেনি৷ রুমের মধ্যে পায়চারি করছে। চোখ থেকে না চাইতেও অশ্রু ঝরছে। নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করছে কিন্তু কোনভাবে স্বাভাবিক হতে পারছে না৷”

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্থীর হলো,হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে নিয়ে বলে,স্ট্রং হতে হবে তোকে। পরক্ষণেই চুল খামচে ধরে বলে,কিভাবে আমি রেজার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করবো! মেহনুরের শরীর কাঁপছে ফ্লাওয়ার ভাস উঠিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুড়ে মারলো,সাথে সাথে আয়নার কাঁচগুলো আওয়াজ তুলে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পরলো৷
“আওয়াজ পেয়ে জাহিন রুমে এসে বলে,কোন মোন্টালি সমস্যা আছে নাকি আপনার?”
” মেহনূর কাঁপছে তখনো কিছুতেই রাগ কমছে না তার৷”
“ও হ্যালো মিস বিদেশিনী ডাক্তার ডাকবো নাকি পাবনা পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। আমি কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছেন?”
” মেহনুর হুট করে এসে জাহিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।”
“জাহিন বেশ অবাক হলো!”
” আমি একটু ভালোবাসা চাই কেনো সেটুকুও পেলাম না! কেনো চলে গেলো আমার মম আমাকে ছেড়ে। আমি চাইলেও আর কোনদিন মমকে ফিরে পাবো না৷ আমি কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চাই কিন্তু কেউ নেই যে আমার মাথায় হাত রেখে একটু স্বান্তনা দেবে। চোখের জলটুকু মুছে দিয়ে হাতটা শক্ত করে ধরে বলবে আমি আছি তো৷”
“জাহিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার লাইফে এখন পর্যন্ত কোন মেয়ে আসেনি গার্লফ্রেন্ড হয়ে এসব থেকে সব সময় দূরেই থেকেছে জাহিন। কি করা উচিৎ ভাবতে ভাবতে মেহনুরের মাথায় হাত রেখে বলে,কান্না করবেন না প্লিজ। আপনি আমাকে ছাড়ুন আমি আম্মুকে পাঠাচ্ছি।”
“মেহনুর মনে মনে হাসলো। জাহিনের কাছ থেকে সরে এসে বলে,স্যরি এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য।”
“ইট’স ওকে। আপনি রিলাক্স হোন পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী হয় না। ভেঙে পড়লে তো চলবে না৷ আপনি বসুন আমি আম্মুকে পাঠাচ্ছি।”

জাহিন কোনমতে রুম থেকে বের হয়ে আসলো,নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,সারাজীবন শুনলাম মেয়েরা জড়িয়ে ধরলে ভালো লাগে! কি অদ্ভুত, এই মেয়ে জড়িয়ে ধরলো, এখন মনে হচ্ছে আমি ডোবা থেকে উঠে এসেছি!
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৩

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪৩
নয়না বেড থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো৷ ড্রেসিং টেবিল জুড়ে নামি-দামি ব্র্যান্ডের পারফিউম, বডি স্প্রে আর ঘড়ি। নয়না একটা পারফিউম বের করে তার ঘ্রাণ নিচ্ছিলো হটাৎ আয়নায় জিয়ানের প্রতিবিম্ব দেখে সামনে ফিরে তাকাতেই নয়ানা জিয়ানের বাহুতে ধাক্কা খেলো৷
নয়না দু’কদম পিছিয়ে যেতেই জিয়ান নয়নাকে নিজের বাহুতে আগলে নিলো। নয়নার হার্ট বিট, শ্বাস নেয়ার ধ্বনি সব বেড়ে গেছে।প্রথম বার কোন পুরুষের নগ্ন দেহের ছোঁয়া। নয়নার কেমন হাসফাস লাগছে। সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে জিয়ান। উন্মুক্ত শরীর জুড়ে বিন্দু বিন্দু জল। কোমড়ে তোয়ালে জড়ানো।
জিয়ান নয়নাকে নিজের সাথে আরএকটু মিশিয়ে নিয়ে নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,”এতোটুকুতেই জমে গেলে এই পুরো আমি টাকে কি করে সামলাবে পুটি মাছ!”
‘নয়নার মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। নিশ্বাসের শব্দ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এ কেমন দম বন্ধ কর অদ্ভুত অনূভুতির সাথে পরিচিত হচ্ছে নয়না?
‘জিয়ান নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”তোমার নাম নয়না একদম পার্ফেক্ট।”নয়না একটু ছোঁয়াও সয় না” না মানে এতোটুকু পরিমান কাছে আসাতেই তোমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা! পুরোপুরি কাছে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে পুটি মাছের মত লাফাতে লাফাতে শেষ না হয়ে যাও! গভীর ভালোবাসা দিলে তো প্রাণ বেড়িয়ে যাবে বোধ হয়। তখন তো আমার জে*ল,ফাঁ*সি হবে।”

নয়না নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,”আপনি কি ফিডার খাওয়া বাচ্চা! আপনাকে আমি সামলাবো। উল্টো আপনি আমাকে কিভাবে সামলাবেন সেই চিন্তা করুন। কারণ কথায় আছে বউ পালন করা হাতি পালন করার চেয়ে কঠিন!”
“এইটুকু পুটি মাছ সে আবার নিজেকে হাতির সাথে তুলনা করে!তোমার মত পুটিমাছকে সামলানোর জন্য আমার একটা আঙ্গুল যথেষ্ট।”
“কথায় আছে ছোটা প্যাকেট বড়া ধামকা। সো বি কেয়ারফুল। বৌকে এতো হালকা ভাবে নিতে নেই মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। প্লেন ড্রাইভ করা সহজ হলেও বৌ চালানো সহজ না। মিস্টার প্লেন ড্রাইভার।”
“আয়হায় ভয় পেয়েছি আমি। তা বড়া ধামাকা টেক্কা দেয়ার জন্য আপনার সামনে পাইলট জিয়ান রেজা চৌধুরি উপস্থিত।”
“এই যে মিস্টার প্লেন ড্রাইভার, শুনে রাখুন রাজা, বাদশাহও তার বিবিদের কাছে সামান্য প্রেমিক পুরুষ ছিলেন। আপনার মত প্লেন ড্রাইভার তো কিছু দিনের মধ্যেই আমার নেশায় বুদ হয়ে আমার ইশারায় নাচবেন।তখন বলবেন বৌ বললে তাই না বললে নাই।”
“এই তোমার বয়স সবে ষোল! কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হয় ম্যাচিউর। প্রাপ্ত একজন নারী আমার সামনে। যাক ভালোই হলো। আর অপেক্ষায় রইলাম তোমার নেশায় বুদ হওয়ার। কথাটা বলেই জিয়ান এক চোখ টিপলো।তবে নেশাখোরকে সামলাতে পারবে তো আফিমের ড্রাম?”
“আমি আফিমের ড্রাম?”
“জিয়ান নয়নাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,উঁহু তুমি তো আফিমের সমুদ্র। তোমার আফিমের উত্তাল ঢেউয়ে বেসামাল হতে চাই।”
“নয়নার শ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। জিয়ান নয়নার কাছে আসার সিমা অতিক্রম করতে চাইলেই নয়নার সাথে এমন হয়।
“জিয়ান দ্রুত নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,তাড়াতাড়ি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আম্মু খাবার নিয়ে চলে আসবে তো।”
“নয়না ড্রেসিং টেবিলের এককোণ আঁকড়ে ধরে বলে পানি৷ আমাকে একটু পানি দিন আমি নয়ত মরে যাবো৷”
“জিয়ান দ্রুত নয়নাকে পানি এগিয়ে দিলো। সবটুকু পানি পান করে জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,আপনাকে ঘৃণা করি আমি। বলতে বলতে ঢলে পরলো জিয়ানের বাহুতে।”
“জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে বেডে নিয়ে শুইয়ে দিলো। সকাল তখন ছয়টা পঞ্চাশ। জিয়ান নিজের ফোন বের করে অনিকেতকে কল করলো। রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে রিসিভ হচ্ছে না৷ জিয়ান লাগাতার কল করেই যাচ্ছে।”

অনিকেত ঘুম জড়ানো চোখে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে জিয়ানের কল৷ দ্রুত রিসিভ করে বলে,”কি হয়েছে সব ঠিক আছে? ”

জিয়ান বারান্দায় চলে আসলো,গ্লাস টেনে দিয়ে বলল,”আমার জন্য সুনয়নার এই অবস্থা। তুই কেমন ডাক্তার এই রোগের ঔষধ দিতে পারছিস না!”
“রিলেক্স ব্রো সব ঠিক হয়ে যাবে তুই আমাকে বল কি হয়েছে।”
“জিয়ান সবটা বলল।”
“তুই একটু দূরে দূরে থাকবি ভাবির কাছ থেকে। সে যতক্ষণ তোকে নিজ থেকে কাছে না ডাকবে ততক্ষণ তার কাছাকাছি যাওয়ার লিমিট ক্রস করবি না৷ভাবি এখনো ওই ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি৷ তোর স্পর্শ গভীর হলেই ভাবি ট্রামায় চলে যায়। যার ফলে প্যানিক আ্যাটক হয় আবার জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে৷ একটা মেয়ের জন্য এতো জঘন্য অতীত ভুলে যাওয়া সহজ নয়। আজ একবার ভাবিকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আয়। নতুন বাসা বাড্ডাতে লোকেশন সেন্ট করে রাখবো।”

“জিয়ান কল কেটে নয়নার মাথার পাশে বসলো,নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে জিয়ানের। আজ তার জন্য এই অবস্থা ফুলের মত মেয়েটার। অনুশোচনায় কুড়ে কুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেতর থেকে। নয়নার কপালে আলতোভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মাঝখানে কোলবালিশ রেখে শুয়ে পরলো নয়নার পাশ ফিরে৷ ঘুমন্ত নয়নাকে অপরুপা লাগছে। যেনো নয়নার চেহারা জুড়ে ফুটে উঠেছে সরলতার প্রতিমা। সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে!
জিয়ানের মনে পড়লো তার নানুর কথা।তার নানু একবার বলেছিল মানুষ কতটা ভালো তার পরখ করার জন্য ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে পরিদর্শন করলেই বোঝা যায়। ঘুমালে চেহারায় ফুটে উঠে কে কেমন। এই কথার সত্যতা জানা নেই জিয়ানের।

🌿

জাহিন অন্তর হসপিটালের মর্গে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে শিল্পি বেগমের লাশ। কেউ তাকে হ*ত্যা করেছে। লাশটা পাওয়া গেছে আরো দু’দিন আগে বুড়িগঙ্গার তীরে বস্তা বন্দি অবস্থায়।
অন্তর বলল,”দেখে মনে হচ্ছে শ্বাস রোধে মা*রা হয়েছে।”
জাহিন বলল,”ফরেনসিক রিপোর্টটা নিয়ে নে। জামাল সাহেব কেও কি মে*রে ফেলেছে নাকি সে জীবিত আছে?”
“আমি বুঝলাম না এমন কি কারন থাকবে যে যার জন্য ওনারা শহর ছেড়ে চলে আসার পরেও তাদের ছাড়লো না!”
“আমাকেও বিষয়টা ভাবাচ্ছে! রে*প করেছে তার মেয়েকে তারপর এমন কি হলো যার জন্য তাদেরকে মেরে ফেলতে হচ্ছে!”

অন্তর বলল,”আমরা কোন গভীর জালে আটকে যাচ্ছি।”
“জাল কাটবো বলেই তো নেমেছি। চল এবার বাসায় যাই৷ আচ্ছা কাল রাতে কল করলি কেন!”
“জানিস না টং দোকানে এক ফালতু মেয়ের সাথে ঝামেলা হয়েছে।”
“জাহিন হেসে বলে,তোর কপালে এডিই জুটবে, শা’লা একটা প্রেমও করতে পারলি না৷ প্রেম করা তো দূর তোকে তো কোন মেয়ে পাত্তাই দেয়না৷ মনে হয় তোর না কন্যারাশি।”
“কতবার বলছি শা ‘লা না সুমুন্দি বলবি৷”
“চুপ কর সুমুন্দির পুত। বাসায় চল।”

🌿

আজ অনিকেতের বার্থডে ছিলো৷ তাই আজ অনিকেত চেম্বারে বসেনি। সকালে শুধু ডিউটি করে চলে এসেছে৷ অনিকেত বারান্দায় বসে আছে। বাহিরের ব্যস্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে, “আচ্ছা আজ কি আমার সত্যি সত্যি জন্ম হয়েছিল! নাকি এটা এতিমখানায় যে আমাকে রেখে গিয়েছিলো তার দেয়া জন্ম তারিখ৷ আমার বাবা, মা কে? ওনারা জন্ম দিয়ে আমাকে এতো বড় দুনিয়াতে একা কিভাবে ছেড়ে গেলো!আমার কথা কি একটুও তাদের মনে পরে না? আচ্ছা যে মা আমাকে নয় মাস গর্ভে ধারণ করলো তারও কি একবারও আমার কথা মনে পরে না! নাড়ীর টান নাকি বড় টান তার কি সেই টানও অনুভব হয়না কোনদিন! অনিকেতের চোখের কোন ভিজে উঠেছে ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে। এই শহরের ইট পাথরের পাঁচিলের আড়ালে কত হৃদয় ভাঙ্গার আত্মা চিৎকার লুকিয়ে আছে সে-সবের কে খেয়াল রাখে!”
#চলবে

Dark Mystery পর্ব-০২

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_2
#Sabrina_Summa

ইরফান এসে ছাতা ধরলো।
মিস সিক্রেট ছাতা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো, ” গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার। ”
ইরফান : বাট ম্যাম…
মিস সিক্রেট রেগে বললো, ” আই সেইড গেট লস্ট। ইউ কান্ট হেয়ার? ”
ইরফান : সরি ম্যাম। বাট প্লিজ ম্যাম…
মিস সিক্রেট রাগী চোখে তাকাতেই থেমে গেল ইরফান। সাথে সাথে মাথা নিচুও করে ফেললো। মিস সিক্রেট কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ” কোনো কাজ আছে? ”
ইরফান : ইয়েস ম্যাম।
মিস সিক্রেট : ওকে। গাড়ি বের করো। আগে বাসায় যাবো। তারপর অন্য কোথাও।
ইরফান গাড়ি নিয়ে এলো। মিস সিক্রেট ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে বললো, ” কী কাজ? ”
ইরফান : আপনি একটা গোয়েন্দা টিমের সদস্য না। সেখানে কেউ বেঈমানী করছে বলে ধারণা।
মিস সিক্রেট : ওকে, আমি দেখছি। বিকেলে মিটিং ডাকো।
ইরফান তাকে একটি পাবলিক ওয়াশ রুমের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিস সিক্রেট ভিতরে গেলো তবে তাকে বের হতে দেখা গেলো না।

বিকেলে.,.

সবাই বসে আছে তবে মিস সিক্রেট আসছে না। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিস সিক্রেট চলে এলো। সবাই দাঁড়ালো তবে একজন বাদে সে হলো রাজিব খান। নাম করা গোয়েন্দা।
সবাইকে বসতে বলে মিস সিক্রেট নিজেও বসলো।
রাজিব খান তিরস্কার করে বললো, ” আমি তো ভাবলাম আপনি আমাদের ডেকে নিজেই পালিয়ে গেলেন। ”
মিস সিক্রেট : আমি না আসলেই তো আপনি খুশি হতেন। আমার জায়গাটা আপনি পেতেন !
রাজিব চুপ হয়ে গেলো। বাকি সবাই মুখ লুকিয়ে হাসলো।
মিস সিক্রেট : হোয়াট ইভার। কারেন্ট নিউজ কী? পাওয়া গেল?
— “ইয়েস, ম্যাম। তারা বড় ডিল পেয়েছে সোমবারে কেরানীগঞ্জের বড় বাড়িটায় সকলে মিট করবে।
কখন অ্যাটাক করলে ভালো হয় ম্যাম? ”
মিস সিক্রেট : বিকেলেই করি। কী বলেন রাজিব স্যার?
রাজিব থতমত খেয়ে বললো, ” আপনি যা ভালো বুঝেন। ”
মিস সিক্রেট : তবে এ কথায় রইলো।
তাই বলে উঠে চলে গেলো। রুমের বাহিরে চলে আসতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, বেঈমানীর বিষয়টা! ”
মিস সিক্রেট গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো, ” সবে আজ শনিবার। এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? ”
ইরফান : ম্যাম, যদি বলে দেয়।
মিস সিক্রেট : প্ল্যান বি তো আছেই। আচ্ছা এগুলো বাদ দেও৷ আরো কোনো কাজ আছে?
ইরফান : আজ নেই। তবে কাল একটা ইন্টারভিউ দিতে হবে আপনাকে।
মিস সিক্রেট : কেন? আই মিন কী উপলক্ষ্যে?
ইরফান : ম্যাম সাংবাদিকদের কাজ কি! শুধু শুধু বিরক্ত করা। আর পাবলিক তো আপনার পিছেই পড়ে আছে তাই।
মিস সিক্রেট : ওকে। বাট বেশি টাইম দিতে পারবো না।
ইরফান : আপনি রাজি হয়েছেন এইতো অনেক!
মিস সিক্রেট নিজের এপার্টমেন্টে চলে গেলো। সারাদিন খুব ধকল যায় প্রতিদিনই। আজ তো বৃষ্টিতে ভিজেছে কে জানে জ্বর চলে আসে কিনা!

সকাল.,.

মন্ত্রীর বাগানে বসে আছে মিস সিক্রেট, মাহির, রাগিনী।
আশেপাশে কিছু বডিগার্ড ও কিছু সাংবাদিক।
মাহফুজ চৌধুরী বক্তৃতা দিচ্ছে। সবাই খুব মন দিয়ে শুনছে। শুধু রাগিনী বেগম বাদে। তার এসব ভালো লাগে না। সারাদিন ছেলে ও স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখেই তার দিন যায়।
এরই মাঝে মাহফুজ চৌধুরীর বক্তৃতা শেষ হলো। এরপর মাহিরের স্থান হলেও সবাই মিস সিক্রেটকে এই স্থান দেয় কারণ সে দেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার ভালো কাজের জন্য সবাই তাকে পছন্দ করে। তাছাড়াও মিস সিক্রেট মন্ত্রীর ডান হাত। বডিগার্ডও বলা চলে। মাহফুজ চৌধুরী কোনো কাজ করেন না মিস সিক্রেটের পরামর্শ ছাড়া।
মিস সিক্রেট মাইকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে কিছু ফর্মাল কথা শেষ করে বললো,” আপনারা প্রশ্ন করুন আমি উত্তর দিচ্ছি। ”
এতে কেউ অবাক হলো না কারণ এটা প্রায়ই করে মিস সিক্রেট। সে কখনো বক্তৃতা দেয় না।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছে। মিস সিক্রেটও খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিচ্ছে।
হঠাৎই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলো, ” ম্যাম আপনাকে আর তাশরিফ স্যারকে কী কখনো একসাথে দেখা যাবে? ”
সেই সাংবাদিকের দিকে তাকাতে গিয়ে মিস সিক্রেট খেয়াল করলো একজন স্নাইপারকে। যে তার দিকেই রাইফেল তাক করে আছে।
মিস সিক্রেট মাস্কের আড়ালে মুচকি হাসলো। তারপর ইরফান কে মেসেজ করে জানালো। এরপর সাংবাদিকের প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, ” আমরা কোনো সিনেমার নায়ক নায়িকা নই যে একসাথে দেখার কথা বলছেন। ” বলা শেষ করে মাহিরের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। মিস সিক্রেট চোখ সরিয়ে স্টেজ থেকে নামতে নামতে বললো, ” তাছাড়াও ও আমার টাইপের না। ” এ কথা শুনে মাহিরের রিয়েকশন দেখার মতো। মাহির বিড়বিড় করে বললো, ” অসভ্য মহিলা তুইই আমার টাইপের না। ” ততক্ষণে মিস সিক্রেট চলে গেছে।

#চলবে.,.

Dark Mystery Part-03

0

#Dark_Mystery( কালো রহস্য )
#Part_3
#Sabrina_Summa

মিস সিক্রেট রুমে প্রবেশ করতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, আপনার কথা মতো ওটাকে ধরে রেখেছি তবে মুখ খোলাতে পারি নি। ”
মিস সিক্রেট : চলো।
স্নাইপারের সামনে গিয়ে মিস সিক্রেট একটা চেয়ারে বসলো। স্নাইপারের হাত – পা, মুখ বাঁধা। ইরফানকে ইশারা করতেই মুখ খুলে দিলো।
মিস সিক্রেট ভাবলেশহীন ভাবে বললো, ” কে পাঠিয়েছে বলো? ”
লোকটা চুপ করে রইলো।
মিস সিক্রেট : আমাকে মারতে এসেছো। তাহলে এটাতো ভালো করেই জানো আমি ভালোর সাথে ভালো, খারাপের সাথে খারাপ!
শেষবার বলছি বলবে কিনা?
স্নাইপারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে।
স্নাইপার ভয় পেয়ে বললো, ” বলছি ম্যাম, বলছি। রাজিব স্যার পাঠিয়েছে। ”
মিস সিক্রেট চেয়ারে বারি দিয়ে বললো, ” আমি জানতাম। আমার সন্দেহ কখনো ভুল হয় না। ”
তারপর ইরফানকে ডাক দিলো।
ইরফান : ইয়েস ম্যাম।
মিস সিক্রেট : ওকে ভালো করে আদর যত্ন করো।
ইরফান : ওকে ম্যাম।
মিস সিক্রেট : আমি কিন্তু সত্যিই আদর যত্ন করতে বলেছি। মারতে বলিনি। এখান থেকে বের হলে রাজিবই ওকে মেরে ফেলবে। তাই রাজিবের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত এখানে থাক।
বলা শেষ করে বের হয়ে যেতে নিয়েও আবার ফিরে তাকিয়ে বললো, ” এই কৈ মাছের আত্মা নিয়ে তুমি আমাকে মারতে আসছিলে! ”
স্নাইপারকে বলতে না দিয়ে বের হতে হতে নিজেকে নিজেই বললো, ” প্রফেশনে নতুন।”

সোমবার সকাল প্রায় ১০ টার কাছাকাছি।
কেরানীগঞ্জের বড় বাড়িটার তিন তলার ড্রয়িং রুমে বসে আছে কয়েকজন।
তারা ডিল নিয়ে কথা বলছে।
হঠাৎই একটা মেয়ের আওয়াজ পেলো, ” হোয়াটস অ্যাপ গাইস? ”
সবাই অবাক হয়ে তাকালো।
একজন দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ” মিস সিক্রেট! ”
মিস সিক্রেট : আরে আমাকে বসতেও বলবেন না। কত কষ্ট করে ঢুকতে হলো জানেন!
সবাই তার দিকে বন্দুক তাক করে আছে।
আরেকজন রেগে বলে উঠলো, ” আপনি না বলেছিলেন বিকেলে অ্যাটাক করবে! বিশ্বাসঘাতক। ”
মিস সিক্রেট : আরে, আরে। বন্দুকগুলো নামান ভয় পাচ্ছি তো।
বলতে বলতে একটা চুটকি বাজালো।
সাথে সাথে তার উপর যারা বন্দুক তাক করেছিলো তাদের পিছনে বন্দুক তাক করলো মিস সিক্রেটের ফোর্স। মূলত মিস সিক্রেট বারান্দা দিয়ে আগে রুমে এসেছে। পরে ফোর্স দরজা দিয়ে এসেছে।
রাজিব বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো, ” ম্যাম, দেখেছেন আমি ওদের কনফিউসড করে দিয়েছি। ”
উপস্থিত সবাই দাঁত কিড়মিড় করে তার দিকে তাকালো।
মিস সিক্রেট হেসে বললো, ” অনেক ভালো কাজ করেছেন। এরজন্য আপনাকে সম্মান দেওয়া হবে। ”
স্পেশাল ফোর্সকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” আপনারা যান প্লিজ। ”
তারা গিয়ে সবাইকে এরেস্ট করলো। মিস সিক্রেটের সাথে এসেছে দুইজন গোয়েন্দা অফিসার ও স্পেশাল ফোর্স।
একজন গোয়েন্দা অফিসার বললো, ” আপনি জানতেন রাজিব বেঈমানী করবে। ”
মিস সিক্রেট অবাক হয়ে বললো, ” অবশ্যই।”
আরেকজন গোয়েন্দা অফিসার মুখ ফঁসকে বললো,” কিভাবে? ”
মিস সিক্রেট বিরক্ত হয়ে বললো, ” আপনি আমার সিক্রেট টিম সম্পর্কে জানেন না? ”
অফিসার : সরি ম্যাম। ভুলে গেছিলাম আপনি কতটা পাওয়ারফুল।
মিস সিক্রেট : সরি বলারো কিছু হয়নি!
মিস সিক্রেট সবার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।
মিস সিক্রেট মনে মনে বললো, ” এরা অপরাধ কেন করে শুধু শুধু আমাকে ডিস্টার্ব করার জন্য! ”

মিস সিক্রেট গাড়িতে বসে আছে আর ইরফান গাড়ি ড্রাইভ করছে।
ইরফান : ম্যাম, কি দিলেন!
মিস সিক্রেট অবাক হয়ে বললো, ” কি দিলাম? ”
ইরফান : বিকেলে বলে সকালে অ্যাটাক করলেন।
মিস সিক্রেট : এটাকে বলে ধোঁকা।
ইরফান : ম্যাম, আপনি আগেই জানতেন ওরা সকালেই মিটিং করবে তাইনা!
মিস সিক্রেট : হুম। আমার টিম আমাকে আগেই খবর দিয়েছে।
ইরফান : আপনি তো সব খবরই রাখেন। কিন্তু আমি যখন বলি তখন আপনি না জানার ভান করেন কেন?
মিস সিক্রেট : জানি না।
ইরফান আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। নিরবতা ভেঙ্গে মিস সিক্রেট বললো, ” কালকে সকালে অামি কোনো কাজ করবো না। ”
ইরফান : কেন ম্যাম?
মিস সিক্রেট : শুধু কালকে না। শুক্রবার ও শনিবার ব্যতিত আমি এক দুপুর কোনো কাজই করবো না।
ইরফান : বাট ম্যাম…
মিস সিক্রেট কথার মাঝখানেই বললো, ” নো বাট নো হোয়াট। ”
ইরফান : ম্যাম আপনার তো কালকে কাজ আছে।
মিস সিক্রেট : ক্যান্সেল করে দেও।
ইরফান টেনে বললো, “ম্যাম………”
এতক্ষণ মিস সিক্রেট মজা করলেও এবার রাগী চোখে তাকালো।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেভাবেই বললো,” তুমি আমাকে ফেল করাতে চাচ্ছো? ”
ইরফান অবাক হয়ে মিস সিক্রেটের দিকে তাকায়ি , ” মানে? ”
মিস সিক্রেট : আরে, সামনে তাকাও। আমাকে এক্সিডেন্ট করে মারতে চাচ্ছো নাকি! ইরফান সামনে তাকিয়ে বললো,” ম্যাম, আপনি ফেল করবেন মানে? কিসে ফেল করবেন? ” মিস সিক্রেট : মানে কিচ্ছু না। আমি এক দুপুর কোনো কাজ করবো না দেটস সিট। ইরফান আর কিই বা বলবে! সে মিস সিক্রেটকে খুব ভালো করে চিনে। বলেছে তো বলেছেই। আর সে একজন এসিস্ট্যান্ট হয়ে জোর তো করতে পারে না। এরপর আর তাদের কথা হলো না। পাবলিক ওয়াশ রুমের সামনে মিস সিক্রেটকে নামিয়ে ইরফান গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। #চলবে.,.

Dark Mystery Part-02

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_2
#Sabrina_Summa

ইরফান এসে ছাতা ধরলো।
মিস সিক্রেট ছাতা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো, ” গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার। ”
ইরফান : বাট ম্যাম…
মিস সিক্রেট রেগে বললো, ” আই সেইড গেট লস্ট। ইউ কান্ট হেয়ার? ”
ইরফান : সরি ম্যাম। বাট প্লিজ ম্যাম…
মিস সিক্রেট রাগী চোখে তাকাতেই থেমে গেল ইরফান। সাথে সাথে মাথা নিচুও করে ফেললো। মিস সিক্রেট কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ” কোনো কাজ আছে? ”
ইরফান : ইয়েস ম্যাম।
মিস সিক্রেট : ওকে। গাড়ি বের করো। আগে বাসায় যাবো। তারপর অন্য কোথাও।
ইরফান গাড়ি নিয়ে এলো। মিস সিক্রেট ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে বললো, ” কী কাজ? ”
ইরফান : আপনি একটা গোয়েন্দা টিমের সদস্য না। সেখানে কেউ বেঈমানী করছে বলে ধারণা।
মিস সিক্রেট : ওকে, আমি দেখছি। বিকেলে মিটিং ডাকো।
ইরফান তাকে একটি পাবলিক ওয়াশ রুমের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিস সিক্রেট ভিতরে গেলো তবে তাকে বের হতে দেখা গেলো না।

বিকেলে.,.

সবাই বসে আছে তবে মিস সিক্রেট আসছে না। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিস সিক্রেট চলে এলো। সবাই দাঁড়ালো তবে একজন বাদে সে হলো রাজিব খান। নাম করা গোয়েন্দা।
সবাইকে বসতে বলে মিস সিক্রেট নিজেও বসলো।
রাজিব খান তিরস্কার করে বললো, ” আমি তো ভাবলাম আপনি আমাদের ডেকে নিজেই পালিয়ে গেলেন। ”
মিস সিক্রেট : আমি না আসলেই তো আপনি খুশি হতেন। আমার জায়গাটা আপনি পেতেন !
রাজিব চুপ হয়ে গেলো। বাকি সবাই মুখ লুকিয়ে হাসলো।
মিস সিক্রেট : হোয়াট ইভার। কারেন্ট নিউজ কী? পাওয়া গেল?
— “ইয়েস, ম্যাম। তারা বড় ডিল পেয়েছে সোমবারে কেরানীগঞ্জের বড় বাড়িটায় সকলে মিট করবে।
কখন অ্যাটাক করলে ভালো হয় ম্যাম? ”
মিস সিক্রেট : বিকেলেই করি। কী বলেন রাজিব স্যার?
রাজিব থতমত খেয়ে বললো, ” আপনি যা ভালো বুঝেন। ”
মিস সিক্রেট : তবে এ কথায় রইলো।
তাই বলে উঠে চলে গেলো। রুমের বাহিরে চলে আসতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, বেঈমানীর বিষয়টা! ”
মিস সিক্রেট গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো, ” সবে আজ শনিবার। এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? ”
ইরফান : ম্যাম, যদি বলে দেয়।
মিস সিক্রেট : প্ল্যান বি তো আছেই। আচ্ছা এগুলো বাদ দেও৷ আরো কোনো কাজ আছে?
ইরফান : আজ নেই। তবে কাল একটা ইন্টারভিউ দিতে হবে আপনাকে।
মিস সিক্রেট : কেন? আই মিন কী উপলক্ষ্যে?
ইরফান : ম্যাম সাংবাদিকদের কাজ কি! শুধু শুধু বিরক্ত করা। আর পাবলিক তো আপনার পিছেই পড়ে আছে তাই।
মিস সিক্রেট : ওকে। বাট বেশি টাইম দিতে পারবো না।
ইরফান : আপনি রাজি হয়েছেন এইতো অনেক!
মিস সিক্রেট নিজের এপার্টমেন্টে চলে গেলো। সারাদিন খুব ধকল যায় প্রতিদিনই। আজ তো বৃষ্টিতে ভিজেছে কে জানে জ্বর চলে আসে কিনা!

সকাল.,.

মন্ত্রীর বাগানে বসে আছে মিস সিক্রেট, মাহির, রাগিনী।
আশেপাশে কিছু বডিগার্ড ও কিছু সাংবাদিক।
মাহফুজ চৌধুরী বক্তৃতা দিচ্ছে। সবাই খুব মন দিয়ে শুনছে। শুধু রাগিনী বেগম বাদে। তার এসব ভালো লাগে না। সারাদিন ছেলে ও স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখেই তার দিন যায়।
এরই মাঝে মাহফুজ চৌধুরীর বক্তৃতা শেষ হলো। এরপর মাহিরের স্থান হলেও সবাই মিস সিক্রেটকে এই স্থান দেয় কারণ সে দেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার ভালো কাজের জন্য সবাই তাকে পছন্দ করে। তাছাড়াও মিস সিক্রেট মন্ত্রীর ডান হাত। বডিগার্ডও বলা চলে। মাহফুজ চৌধুরী কোনো কাজ করেন না মিস সিক্রেটের পরামর্শ ছাড়া।
মিস সিক্রেট মাইকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে কিছু ফর্মাল কথা শেষ করে বললো,” আপনারা প্রশ্ন করুন আমি উত্তর দিচ্ছি। ”
এতে কেউ অবাক হলো না কারণ এটা প্রায়ই করে মিস সিক্রেট। সে কখনো বক্তৃতা দেয় না।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছে। মিস সিক্রেটও খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিচ্ছে।
হঠাৎই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলো, ” ম্যাম আপনাকে আর তাশরিফ স্যারকে কী কখনো একসাথে দেখা যাবে? ”
সেই সাংবাদিকের দিকে তাকাতে গিয়ে মিস সিক্রেট খেয়াল করলো একজন স্নাইপারকে। যে তার দিকেই রাইফেল তাক করে আছে।
মিস সিক্রেট মাস্কের আড়ালে মুচকি হাসলো। তারপর ইরফান কে মেসেজ করে জানালো। এরপর সাংবাদিকের প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, ” আমরা কোনো সিনেমার নায়ক নায়িকা নই যে একসাথে দেখার কথা বলছেন। ” বলা শেষ করে মাহিরের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। মিস সিক্রেট চোখ সরিয়ে স্টেজ থেকে নামতে নামতে বললো, ” তাছাড়াও ও আমার টাইপের না। ” এ কথা শুনে মাহিরের রিয়েকশন দেখার মতো। মাহির বিড়বিড় করে বললো, ” অসভ্য মহিলা তুইই আমার টাইপের না। ” ততক্ষণে মিস সিক্রেট চলে গেছে।

#চলবে.,.

Dark Mystery Part-01

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#part-1
#Sabrina_summa

কবরস্থানে একটা করবকে সম্মান জানাচ্ছে মাহফুজ চৌধুরী ও তার পরিবার।
আজ ৫ ই আগস্ট। প্রতিবছর এই দিনে সম্মানিত অনেক ব্যক্তি এসে সম্মান জানায় তবে গত দুই বছর ধরে তেমন কেউ আসে না। শুধু আসে মন্ত্রী ও তার পরিবার।
সকলেই খুব ভক্তির সাথে সম্মান জানাচ্ছে। হঠাৎই বৃষ্টি নামলো। তারপরও সবাই নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে রইলো।
এমন অবস্থা দেখে একটি মেয়ে পিছে ঘুরলো। সাথে সাথে কিছু বডিগার্ড ছাতা নিয়ে এলো।
কালো হুডিসহ মাস্ক পড়া সেই মেয়েটি দুটি ছাতা হাতে নিলো।একটি মন্ত্রীর মাথার ওপর ধরলো এবং অপরটি ছাতাটি ইশারা করে মাহির চৌধুরী অর্থাৎ মন্ত্রীর একমাত্র ছেলেকে ধরতে বললো।মাহির ছাতাটা নিয়ে তার ও তার মায়ের মাথায় উপর ধরলো।এরই মাঝে সম্মান জানানো শেষ হলো। কিছু লোক গাড়ি থেকে ফুল আনতে গেল। তাড়াতাড়ির জন্য ফুল গাড়িতে রেখে চলে এসেছিল।
মাহফুজ চৌধুরী ছাতাটি নিয়ে নিজের ও তার স্ত্রীর মাথায় ধরলো। মাহির একাই ছাতা নিয়ে দাঁড়ালো।
মেয়েটির অ্যাসিস্ট্যান্ট দৌঁড়ে এসে তার ওপর ছাতা ধরলো।কিন্তু মেয়েটি বাকিদের উপর ছাতা ধরতে বললো।
মূলত আজ বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না তাই ছাতার সংকট।
মাহফুজ চৌধুরী আস্তে ছেলেকে ডাক দিলেন, “তাশরিফ” ( মাহিরের ডাকনাম)
মাহির: জ্বী বাবা ।
মাহফুজ চৌধুরী আস্তে করে বললেন,” তুমি একাই দাঁড়িয়ে আছো। ছাতাটা মিস সিক্রেট এর মাথার উপর ধরো।”
মাহিরও আস্তে বললো যাতে সাংবাদিকরা না শুনে, ” বাবা আমি যদি ছাতাটা ওর মাথায় ধরি তবে সাংবাদিকরা এটাকে তালকে তিল বানাবে। ”
মাহফুজ চৌধুরী : তুমি ছাতা না ধরলেও বানাবে।
মিস সিক্রেট মন খারাপ করে বললো,”বাদ দেন তো আঙ্কেল। ”
কথা না বাড়িয়ে মাহফুজ চৌধুরী কবরে ফুল দিয়ে এলেন। কবরটি একটি মেয়ের কবর।
মেয়েটির নাম তৃষিতা খান সুমি।
মাহফুজ চৌধুরী সকলকে তাড়া দিয়ে বললেন,” সবাই তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠো। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে।”
সবাই চলে যাচ্ছে শুধু দাঁড়িয়ে আছে কালো হুডি পড়া মেয়েটি অর্থাৎ মিস সিক্রেট ও তার এসিস্ট্যান্ট।
মাহফুজ চৌধুরী : কি হলো! তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেন? তাড়াতাড়ি আসো। এমনিতেই কাক ভেজা হয়ে গেছো।
মিস সিক্রেট :আঙ্কেল আপনি যান। আমি একটু পর যাবো।
মাহফুজ চৌধুরী : আচ্ছা তবে তাড়াতাড়ি এসো।
মিস সিক্রেট মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই সবাই রওনা দিলো।
মিস সিক্রেট নিচে বসে পড়লো। ইরফান মিস সিক্রেটের গাড়ি থেকে ছাতা আনতে গেলো।
মিস সিক্রেট কান্না করতে করতে বললো,” কি দোষ ছিল আমার! শুধু বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলাম তার প্রতিদানে এত অপমান !
আপু, আপু। দেখো। আজও ১০ বছর আগের সেই দিনের মতো বৃষ্টি হচ্ছে। খুব মিস করি আপু।কেন চলে গেলে এভাবে! “( আকাশের দিকে তাকিয়ে)
ইরফান এসে ছাতা ধরলো।
চলবে…

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪২

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪২
বাস যখন যাত্রাবাড়ী পৌঁছেছে রাত চারটা বাজে। নয়না গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। জিয়ান আগেই কল করে ড্রাইভারকে আসতে বলেছিলো৷ জিয়ান নয়নাকে কোলে নিয়ে গাড়ী থেকে নামলো।ড্রাইভার কে বলল ব্যাগপত্র নিয়ে গাড়িতে রাখতে৷ জিয়ান নয়নাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বসলো৷ নয়নার ঘুম ভেঙে গেছে ততক্ষণে, নয়না সরে এসে বলে সারাদিন আপনি এমন চিপকে থাকলে আমার অস্বস্তি হয় দূরে সরে বসুন৷
“জিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,আহা গো ম্যাডাম যখন কোলে করে নিয়ে আসলাম গাড়ি থেকে তখন মনে ছিলো না?”
“আমি কি বলেছি আমাকে কোলে নিতে! ওটাতো আপনার স্বভাব সুযোগ পেলেই চিপকে যান। চিপকু ড্রাইভার ।”
“ড্রাইভার নট, ক্যাপ্টেন রেজা চৌধুরী।”
” ওই একি পাইলট আর ড্রাইভারের মধ্যে আর তেমন কি পার্থক্য!”
“পার্থক্য নেই?”
” নাহহ নেই। আপনি আকাশে ড্রাইভিং করেন তারা রাস্তায় ড্রাইভ করে।”
“এতো ঝগড়ুটে কেন তুমি!”
” আমি ঝগড়ুটে?ঝগড়া তো করতেই পারি না আমি।”
“পারো না?”
‘চুপ করুন আমি ঘুমাবো। বলেই নয়না চোখ বন্ধ করে নিলো।”
“জিয়ান নিজেও গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর ট্রাই করছে।”
“পাঁচ মিনিট ও যেতে পারেনি নয়না ঘুমিয়ে ঢলে পরলো জিয়ানের উপর।”

জিয়ান নয়ার মাথা নিজের কাঁধে নিলো সযত্নে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। বাসার কাউকে জানানো হয়নি তাদের ফেরার কথা। একবার ভাবলো কল করবে, পরক্ষণেই ঘড়ির টাইম দেখে ভাবলো কাউকে ঘুমে ডিস্টার্ব করবে না৷
****
গাড়ি চৌধুরী ম্যানশনে এসে থামলো। জিয়ান নয়নার মাথা আলতো হাতে সিটের উপর রাখলো। এরপর কোমল কন্ঠে ডাকলো, এই শুনছো উঠো। দু’বার ডাকার পরেও নয়নার মধ্যে কোন হেলদোল নেই৷
জিয়ান একটু জোরে বলল,”আর একবার ডাকবো উঠলে উঠবা না উঠলে সোজা কোলে তুলে নিবো৷”
” নয়না মিটমিটিয়ে তাকালো৷ চুলগুলো হাত খোপা করে নিলো।ওড়নাটা সুন্দর করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বলে,আমার লজ্জা করছে।”
“আহাগো লাজুকলতা। চোখ বন্ধ করে আমার পিছু পিছু চলে আসো বৌ।”
“এভাবে কেউ শ্বশুর বাড়ি আসে?”
“তো কিভাবে আসে মিসেস চৌধুরী?”
” রিচুয়েল আছে তো।”
“আমার বৌ আমার সম্পদ রিচুয়েল কোন খেতের মুলা!”
” তবুও কেমন কেমন যেনো লাগছে।”
“বুঝেছি তুমি চাইছো আমি তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে যাই।”
“নয়না মাথা নাড়িয়ে না সূচক মন্তব্য জানালো৷”
“জিয়ান নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,হাতে হাত রাখো আর এগিয়ে চলো আমার পথে পথ মিলিয়ে।”
” নয়না হাত বাড়িয়ে দিলো৷”
“মনে রেখো এই হাত কিন্তু এজন্মে আর ছাড়তে পারবে না।”
“নয়না হাত সরিয়ে নিতে চাইলো৷”

“ততক্ষণে জিয়ানের হাতে আবদ্ধ হয়ে আটকে পরেছে নয়নার হাত। জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,আমি যখন হাত ধরেছি এ হাত ছাড়ানোর শক্তি, সাহস কোনটাই তোমার নেই। এবার পা মিলিয়ে সামনে এগিয়ে চলো৷”
” নয়না গুটিগুটি পায়ে চৌধুরী ম্যানশনে প্রবেশ করলো৷
“জাহানারা বেগম ফজরের নামাজ পরে কিচেন এসেছিলেন চা বানাতে পুরো বাড়ির সবাই তখন ঘুমে।”
নয়না জিয়ানের হাত আঁকড়ে ধরে বলে,”আমার মনের মধ্যে কেমন জেনো করছে?”
” কি হয়েছে সুনয়না? ঠিক আছো তুমি?”
“নয়না কিছু বলার আগেই জাহানারা বেগম কিচেন থেকে বের হয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,জিয়ান তুই!”
” জিয়ান বলে,হ্যা আম্মু এসেছি দু’দিন হলো। এবার ফ্লাইট ল্যান্ড করেছিলো চট্রগ্রামে ভাবলাম ওখানেই যখন নেমেছি সুনয়নাকে সাথে করে নিয়ে ফিরি৷”
“জাহানারা বেগম এগিয়ে এসে নয়নার মাথায় হাত রেখে বল,একদম ভালো কাজ করেছিস৷ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হ আমি খাবার পাঠাচ্ছি খেয়ে রেস্ট নিবি৷ আমার বৌমায়ের কোন কষ্ট হয়নি তো?ঠিকঠাক মত নিয়ে এসেছিস তো? তোমাকে কষ্ট দেয়নি মা?”
” নয়না না সূচক মাথা নাড়ালো।”
“যাও নিজের রুমে যাও। এটা তোমারই বাসা এতো ইতস্তত বোধ করতে হবে না।”
” নয়না সামনে এগোতে নিল।

জাহানারা বেগম বললেন, “একটু দাঁড়াও নতুন বৌ বাড়িতে এসেছে তাকে মিষ্টিমুখ করাতে হবে তো৷ তুমি দাঁড়াও আমি ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসছি।”
“নয়না আর জিয়ান দাঁড়িয়ে রইলো৷ জাহানারা বেগম মিষ্টি আনতে গেলো৷ জিয়ান বলে,এই যে মিসেস বাটার মাশরুম এই বাড়িটা আপনার সো লজ্জা টজ্জা পাওয়ার দরকার নেই।”
“নয়না নিম্ন স্বরে বলে,মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনার ডুপ্লিকেট ভার্সন কই? আসলেই আছে তো নাকি মিথ্যে বলেছেন।”
“সে হলো বাউণ্ডুলে ছেলে এই ভোরে তার দর্শন পাবে না৷ বারোটার পরে তোমাকে তার দর্শন করিয়ে দেবো।*
“জাহানারা বেগম কাটা চামচে মিষ্টি তুলে,নয়নাকে খাইয়ে দিলো,সেই মিষ্টির বাকি অর্ধেক জিয়ানকে খাইয়ে দিয়ে বলল, “সারাজীবন নিজেদের সুখ,দুঃখ এভাবে ভাগ করে নিয়ে একে অপরের পরিপূরক হও৷ মনে রেখো তুমি আমার রেজার অর্ধাঙ্গিনী। তুমি ছাড়া রেজা অপূর্ণ। জাহানারা বেগম নিজের গলায় থাকা চেইনটা খুলে নয়নাকে পরাতে নিলো।”
“নয়না বলল,না না এসবের দরকার নেই আন্টি৷”
“দরকার আছে তুমি আমাদের পরিবারের প্রথম পুত্র বধু তোমার সম্মানের দরকার অবশ্যই আছে।আর হ্যা আন্টি না আম্মি/আম্মু ডাকবে আমাকে৷ যাও রুমে যাও।”
” জিয়ান নয়নাকে নিজের রুমে নিয়ে আসলো৷
“নয়না রুমে ঢুকেই শুয়ে পরলো।
” জিয়ান তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে দিকে পা বাড়ালো, যেতে যেতে বলল,ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে তবেই ঘুম সো আমি না আসা পর্যন্ত জিরিয়ে নাও বেব৷”
“এই বেবি, বাবু, বেব এসব ছাড়া আর কোন ডাক নেই আপনার!”
“আছে তো, সুইটহার্ট, রাঙাবৌ, ময়নামতি, আদুরীনি, ডার্লিং, হানি আর আমার মোস্ট ফেবারিট বাটার মাশরুম বলেই চোখ টিপল৷”
“নয়না বিরবির করে কিছু বলল।
” বিরবির করতে থাকেন ম্যাডাম না খেয়ে ঘুমানো যাবে না৷ সো মনে মনে বকতে থাকুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ততক্ষণে।”

🌿

রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলো মেহনুর। তার মনের মধ্যে চলছে ইভিল প্ল্যান৷ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে জিয়ানদের জিম রুমে এসে জিম করছে মেহনুর৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ভোর ছয়টা বাজে সবে মাত্র! মেহনুর আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, মেহনুর শেখ কখনো নিজের জিনিস অন্য কাউকে শেয়ার করে না। যা আমার তা আমার। নিজের জিনিস নিজের কাছে ফেরাতে মেহনূর কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।মেহনুর যা চায় তা যেকোনো মূল্যে নিজের করেই ছাড়ে। মেহনুর পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসের সব পানি পান করে গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। সাথে সাথে ঝংকার তুলে গ্লাসটা ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে ছড়িয়ে পরলো৷ মেহনুর জিম রুম থেকে বের হয়ে গেস্ট রুমে চলে আসলো। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

🌿

লতা বেগম নীলাঞ্জনার পাশে বসে বলছেন,”তুই কেন রেজার মত ছেলেকে ছেড়ে দিলি! এমন ছেলে কেউ হাত ছাড়া করে? তোর বাপ চাচাও অপেক্ষা করেনি তুই চলে গিয়েছিস তারা নয়নাকে ঝুলিয়ে দিয়েছে রেজার গলায়।”

“নীলাঞ্জনা বলল,আম্মু রেজা কিভাবে মেনে নিলো এই বিয়ে! ওর মতো ছেলেকে কেউ ফোর্স করে কিছু চাপিয়ে দিতে পারবে না কোন কিছু। আমি জানি ওকে। তাহলে দোষটা তো ওর ও আছে।”
“দোষ তোর তুই কেন ছাড়লি এমন ছেলেকে? চাঁদ নিজে তোর হাতে ধরা দিয়েছে আর তুই সেই চাঁদকে পায়ে ঠেলে দিয়েছিস! এখন বল কাল রাতে রেজা তোকে কোথা থেকে নিয়ে এসেছে?”
“নীলাঞ্জনা সবটা বলল৷ তারপর বলল,আম্মু আমি শিউর না ওটা জিয়ান নাকি জাহিন।”
“জাহিন আবার কে?”
“জিয়ানের জমজ ভাই। জিয়ান তো পাইলট এই সময় ও কিভাবে দেশে থাকবে? আমার এখন মনে হচ্ছে ও জাহিন ছিলো।”
“চুপ কর এই কথা আর মুখ দিয়ে বের করবি না। যদি রেজা না হয়েও থাকে তুই বলবি ওটা রেজা ছিলো। কাউকে নিজের না করতে পারলে কি হয়েছে সম্মান তো নষ্ট করতে পারবি৷ আমি যেটা বলছি তুই সেটাই বলবি সবার সামনে।”
“কিন্তু বড় আব্বু তো জানে জাহিন আর জিয়ান জমজ ভাই।”
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪১

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪১

প্লেনে যাওয়ার প্ল্যান থাকলেও শেষ মূহুর্তে জিয়ান আর নয়না বাসে ট্রাভেল করে, নাইট কোচ বেড সিস্টেম। নয়না প্রথমবার অপরিচিত কারো সাথে ট্রাভেলিং করছে। মানুষটা তো তারই, অপরিচিত কি করে হয়! আবার ভাবে,সে যদি এখন আমাকে হ’ত্যা করে গাড়ির নিচে ফেলে দেয় অথবা কারো কাছে বিক্রি করে দেয়!নিজের মনে মনে আকাশ কুসুম চিন্তা ভাবনায় মগ্ন নয়না৷

জিয়ান নয়নার কাছে এসে বলে,”তোমার চেহারায় এতো আতংক কিসের বেব? নয়নাকে নিজের কাছে এনে বলে,তুমি কি এনি চান্স আমাকে ভয় পাচ্ছো জান?”
“নয়না চোখ বাঁকিয়ে বলে,ভয় আর আপনাকে? সুনয়না তালুকদার কাউকে ভয় পায় না।”

“বিগ মিস্টেক মিসেস চৌধুরী আপনার পরিচয় সুনয়না চৌধুরী নট তালুকদার৷ বাবার বাড়িতে অনেক তালুকদারি করেছন এবার হ্যাসবেন্ডের নামের উপর রাজ করবেন।”

“আমাকে আপনি করে বললেই তো আর আপনার বয়স কমে যাবে না মিস্টার প্লেন ড্রাইভার?”

“এতো সুদর্শন একজন এয়ার ক্যাপ্টেন কে ড্রাইভার বলতে তোমার হৃদয় কাপলো না!”

“ড্রাইভারকে ড্রাইভার বলবো না তো কি বলবো! প্লেন ড্রাইভার, প্লেন ড্রাইভার, প্লেন ড্রাইভার।”

“জিয়ান নয়নার মুখ চেপে ধরলো নিজের হাত দিয়ে। এখন কিন্তু মোটেও ভালো হচ্ছে না বৌ। ঠোঁট আরেকবার নড়লেই ঠোঁট কিন্তু দখল করে নেবো আমার ঠোঁট দিয়ে৷ বাসর যদি গাড়িতে সারতে না চাও তাহলে ভুলভাল বকবে না৷”

“নয়না হেসে উঠলো। এই লোকের মুখে বাসর ছাড়া কি আর কোন শব্দ বের হয় না!”

“জিয়ান নয়নাকে নিজের কাঁধে মাথা রাখতে ইশারা করে৷”
“নয়না বলে,বয়েই গেছে আপনার কাঁধে মাথা রাখতে!আম্মু কই আমি আম্মুর কাছে যাবো।”

“তুমি বড় হবা কবে?”

” আমি কি ছোট নাকি?”

“তো কি? নাক টিপলে এখনো ম্যাঁ ম্যাঁ করো।”

“একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না৷”

“জিয়ান নয়নার আঙ্গুল ধরে বলে,তুই ছুঁলি যখন তোরি হলো এই মন।”

“আমি কিন্তু আপনাকে ভালো টালো বাসতে পারবো না।”

“ভালোবাসতে কে বলল? তুমি শুধু আমার ভালোবাসা সমাদরে গ্রহণ করলেই হবে রাঙাবৌ।”

“আমি কারো বৌ টৌ না৷”

“তাহলে তুমি কি?”

“ভবিষ্যত ডাক্টার সুনয়না তালুকদার।”

“জিয়ান নয়নার নাক টেনে বলে,বারবার তালুকদার তালুকদার করবা না তো। ভবিষ্যত ডাক্তার সুনয়না চৌধুরী। নামটার মধ্যে কেমন রাজকীয় ভাইব আছে তাই না বেব।”

“নয়না জিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বলে,জানেন একবার কি হয়েছে?”

“তুমি না জানালে কিভাবে জানবো?”

” আমি এক ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলাম।”
“কেনো?”
“সে আমাকে টিজ করেছিলো তাই৷ রাস্তা থেকে একটা পাথর উঠিয়ে সোজা ছেলেটার মাথায় মেরে দিয়েছি৷”

“বাহহ তুমি এতো সাহসী!”

“নয়না কনফিডেন্সের সাথে মিথ্যা বলে মনে মনে নিজেকে সাহস দিচ্ছে।”

“জানো আমার প্রপোজ একটা মেয়ে রিজেক্ট করে দিয়েছিলো বলে,তাকে পাহাড় থেকে ধা’ক্বা দিয়ে ফেলে দিয়েছি।”

” নয়না এবার কেঁদেই ফেলল। আমি আম্মুর কাছে যাবো।”

“জিয়ান নয়নার মুখে হাত রেখে বলে একদম চুপ। একটুও কান্নাকাটি করবে না। আর কথায় কথায় ম্যা ম্যা করার স্বভাব কবে যাবে তোমার! এমন আদর দেবো এরপর কথায় কথায় জামাই জামাই করবা৷আমি শুবো তুমি লক্ষী মেয়ের মত আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়বা। ঠিক আছে?”

“কিসের ঠিক আছে!এটা তো জোর খাটানো বলে,এখানে ঠিক কি হলো?”

“বৌ আমার, জোরও আমার, ইচ্ছেও আমার সো চুপচাপ এসে বুকের উপর মাথা রাখো।

“নয়না মনে মনে বলে,ওটা বুক! নাকি আমাকে বশ করার তাবিজ! ওখানে মাথা রাখলেই আমার কেমন প্রেম প্রেম পায়৷ তখন নিজেকে কেমন উপন্যাসের হিরোইন মনে হয়৷ এই লোক কেনো যে প্লেন ড্রাইভিং ছেড়ে দেশে আসলো! নিশ্চিত আমাকে বশ করতেই এসেছে। নয়না বি কেয়ারফুল কয়দিন পর তোর বয়স সতেরো হয়ে যাবে এতো সহজে বশ হোস না বুদ্বু রানী।”

“তা তোমার জ্বিনের সাথে আলাপ আলোচনা আর কতক্ষণ চলবে?”

“নয়না এক ঝটকায় জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,জ্বিন! কোথায় জ্বিন? দোয়া দুরুদ পড়েন, জ্বিন তাড়ান প্লিজ আমার ভয় করছে?”

“জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,যেভাবে আছো ঠিক এভাবেই জড়িয়ে রাখো আমাকে নয়ত জ্বিন চলে আসবে। আর শোন ডিয়ার ওয়াইফি আমি আটদিন আছি আটটা দিন আমার সাথে ঠিক এভাবে চিপকে থাকবে। আমি এক মূহুর্তের জন্য ও তোমাকে মিস করতে চাই না৷ প্রতিটা মূহুর্তে তোমার স্পর্শ অনুভব করতে চাই, বলেই নয়নার কানের লতিতে আলতে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।”
জিয়ান ভাবছে যেখানে জীবন শেষ হয়েছে সেখান থেকে এতো সুন্দর জীবন উপহার পাবো কোনদিন ভাবিনি। মানুষ বলে না আমারা যা প্ল্যান করি তারচেয়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য যা প্ল্যান করে রাখে তা সবচেয়ে উত্তম। তুমি আমার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।

🌿

মিজান তালুকদার খোঁজ নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আসলেই সেদিন জিয়ান এখানে পৌঁছে দিয়ে গেছে নীলাঞ্জনাকে?
“নীলাঞ্জনা বলল, বাবা আমি ভুল করে হিরে ছেড়ে কাঁচকে বেঁছে নিয়েছিলাম। কাঁচের আঘাতে খন্ড বিখন্ড হয়ে গেছে আমার দেহমন৷ বাবা জিয়ান যদি আমার কাছে ফিরতে চায় তোমরা বাঁধা হবে না তো?”

“মিজান তালুকদার ঠাটিয়ে এক চড় মারলো নীলাঞ্জনার গালে। লজ্জা লাগে না নিজের ছোট বোনের হাসবেন্ডের দিকে নজর দিতে!নিজের জীবন নষ্ট করে এখন আমার ফুলের মত মেয়েটার জীবন নষ্ট করার জন্য উতলা হয়ে গেছিস?” মিজান তালুকদার নীলাঞ্জনার গলা চেপে ধরে বলে,”মেরে ফেলবো তোকে আমি। তোর মত মেয়ে আমার দরকার নেই। দরকার পড়লে তোকে মে’রে জেল খাটবো।”

“সূচনা দরজায় দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করলো৷”
“লতা বেগম দৌড়ে এসে নীলাঞ্জনাকে মিজান তালুকদারের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো৷ পাগল হয়ে গেছো তুমি! আমার মেয়েটাকে মেরে ফেললেই তো তোমাদের রাস্তা সাফ তাই না? আমি বেঁচে থাকতে তা কখনো হতে দেবো না৷”

“মিজান তালুকদার নীলাঞ্জনার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,তোর জন্য যদি সুনয়নার সংসার ভাঙ্গে আগে তোর মা’কে মারবো তারপর তোকে। মনে রাখিস।”

” লতা বেগম কিছু বলাবে তার আগেই মিজান তালুকদার বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন৷

🌿

অন্তর আনমনা হয়ে বসে আছে রাস্তার পাশের টং দোকানে। আজ জাহিনের সাথে সারাদিন কথা হয়নি ছেলেটা করতে কি চাইছে? অন্তর দোকানদারকে বলল, মামা এক কাপ কড়া লিকারের রং চা দাও তো।
“দোকানদার চায়ের কাপ অন্তরের দিকে বাড়িয়ে দিলো৷ হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দিলো।

“অন্তর রেগে বলে,সমস্যা কি আপনার? আমার জিনিসে হাত দেয়ার সাহস কি করে হলো?”

“তুষি কপাল কুঁচকে বলে,স্যরি ভাইয়া আমার অনেক বেশি চায়ের ক্রেভিং হচ্ছিলো তাই।”

“রাস্তায় দাঁড়িয়ে টংয়ের দোকানে চা কোন ভদ্র মেয়ে খায় না।”

“একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাইয়া আমি তো চরম লেভেলের অভদ্র। এই মাত্র সাতদিন আগে আমার ব্রেকআপ হলো, সে ব্রেকআপ করার আগে এটা বলেছিলো তাই দুই চারটা চড় দিয়ে অভদ্রতার প্রমাণ দিয়ে এসেছি৷” তুষি দোকানদারকে বলল,”মামা দাম কত?”

“দশ টাকা৷”

“তুষি বিশ টাকা দিয়ে বলে,এই ভাইয়াকে এককাপ দিয়েন৷”

“তুষি রিকশা ডেকে উঠে পরলো।”
” অন্তর বলে,এই মেয়ে নামো রিকশা থেকে৷”
“তুষি কানে হেডফোন গুঁজে বলে,মামা চলেন।”
” অন্তর মোবাইল বের করে জাহিন কে কল করে বলে,শা’লা তুই বাসা থেকে বের হ।”

🌿

অনিকেত দু’দিন ধরে বাসা থেকে বের হচ্ছে না৷ হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় লুকিয়ে আছে। সে কিছুতেই সায়নার সামনাসামনি হতে চায় না। অনিকেত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, তোর কপালে আসলে বৌ নেই বুঝলি অনিকেত সারাজীবন তুই সিঙ্গেল মরবি!
#চলবে

অনির পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0

অনির
শেষ পর্ব

ঘরে ঢুকে আমি চমকে গেলাম। সকাল থেকে যে পরিস্থিতি ছিল তাতে আমার ঘর কেউ সাজাবে এটা আমি একেবারেই আশা করিনি। শুধু যে সাজানো তাই নয় অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়েছে। নিশ্চয়ই হাসিবের কাজ, এজন্যই তাহলে অনুষ্ঠানে আসতে দেরি হয়েছে অথচ দেরি হয়েছে বলে ওকে কত কথাই না শোনালাম। একবার কথা প্রসঙ্গে ওকে বলেছিলাম বেলি ফুল অনিমার খুব প্রিয়। পুরোটা ঘরে বেলি ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। ভালো লাগল দেখে।

তাকিয়ে দেখি অনিমা খাটের সামনে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। টুকটুকে বউ বলতে যা বোঝায় ওকে মোটেও সেরকম লাগছে নাঃ যদিও ওর পরনে লাল টুকটুকে বেনারসি গা ভর্তি গয়না, মাথায় জড়ির ওড়না। দেখে মনে হচ্ছে ওর ভীষণ রকম অস্বস্তি হচ্ছে। ডিসেম্বরের শীতেও ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। যে ওকে এখানে বসিয়ে গেছে সে ফ্যানটা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে যায়নি। আমার অসম্ভব বিরক্ত লাগলো। চারিদিকে তাকিয়ে ওর কোন ব্যাগ দেখতে পেলাম না। আমি নাজমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম
ওর ব্যাগ কোথায়, চেঞ্জ করবে কি দিয়ে?
ব্যাগ নিচে, সবাই খুলে দেখছে ভাবি কি কি নিয়ে এসেছে
আমি বলার মতন কিছু খুঁজে পেলাম না, বাধ্য হয়ে আলমারি খুলে ওর জন্য কেনা শাড়িটা বের করে নাজমা কে দিয়ে বললাম ওকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। ওরা বেরিয়ে গেলে আমিও গোসল করতে চলে গেলাম। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। যদিও আমাদের আমাদের দিক থেকে কোন আয়োজন ছিল না শুধু অনুষ্ঠানটাতে যাওয়া তবুও এত রকম ঝামেলা গেছে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়॥

প্রত্যেক অনুষ্ঠানেই বোধহয় এমন একজন মানুষ থাকে, যার মান ভাঙাতে ভাঙাতেই পুরো অনুষ্ঠানটা শেষ হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না॥ বড় ফুফুকে কেন আগে থেকে সবকিছু জানানো হয়নি তাই তিনি বেকে বসেছিলেন অনুষ্ঠানে থাকবেন না। এ কথা শুনে মা এবং রেহানা ফুপু খুব খুশি হলেও বাবার মাথায় হাত পড়েছে; তার মাতৃতুল্য বড় বোন অনুষ্ঠানে না থাকলে ছেলের বিয়ে কেমন করে হবে। বারবার ফোন করার পরও তিনি আসতে রাজি হচ্ছিলেন না অবশেষে বাবার ওখানে গিয়ে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হয়েছে।

বাড়িতে ঢোকো মাত্রই বড় ফুপু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিলেন। অতিথিরা কে কোথায় থাকবে, কোথায় ঘুমাবে, কাদের জন্য কি রান্না হবে সেই সব কিছু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তার সঙ্গে কামাল ভাই তাঁর বউ তিন বাচ্চা নিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয় কামাল ভাইয়ের শাশুড়ি, তার দুই মেয়ে এবং দুজন কাজের লোকও এসেছে। বড় ফুপুর ভাষ্যমতে বিয়ের বাড়ি অনেক কাজকর্ম থাকবে ওরা সঙ্গে থাকলে উপকার হবে।যদিও তারা দুজন আসা মাত্রই মেহেদি লাগাতে বসে গেছে। কাজ যা করার তা ছোট ফুপু আর মা-ই করছে আর সঙ্গে আমাদের পুরনো কাজের মহিলা। বাড়ি ভর্তি লোকজন বেশিরভাগই এসেছে ঢাকার বাইরে থেকে আজ তারা এখানেই থাকবে। চাচাতো মামাতো ফুফাতো ভাই বোনদের মধ্যেই আমি সবার বড়। ভাই বোনেরা আনন্দে মেতে আছে সবাই কিন্তু দায়িত্ব নেবার মতন কেউ নেই।

বড় ফুফু আসায় একটু সুবিধা হবার কথা ছিল কিন্তু সেটা না হয়ে বরং উল্টোটা হচ্ছে, উনি সঙ্গে করে তার বেয়াইনকে নিয়ে এসেছেন তার আবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, কিছুক্ষণ পর পর খাবার দিতে হচ্ছে। বড় ফুপু রান্নাঘরে গিয়ে নানান রকমের খাবার তৈরি করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যেগুলো ইতোমধ্যে রান্না হয়েছে সেগুলো কি করলে আরো ভালো হতে পারত তাই নিয়ে উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। মা আগে থেকেই যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে আছে এসব দেখে সেটা চরম মাত্রায় পৌঁছালো।

আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি অন্যমনস্ক হয়ে থাকার। আজ আমার বিয়ে আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন আমার জীবনের চিরকালের জন্য আসবেই এই বোধটা মনের ভেতর আনার আপ্রান চেষ্টা করছি, কিছুতেই পারছি না। নানান রকমের দুশ্চিন্তা আমাকে পেয়ে বসছে॥ এরকম একটা পরিবেশে অনিমা কিকরে মানিয়ে নেবে এই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। আমি অন্যমনস্ক হয়ে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ করেই কেউ একজন পেছন থেকে খোঁচা দিয়ে বললো
ঘর সাজানোর কি ঠিক করলি?
পিছন ফিরে দেখলাম হাসিব। হাসিব আমার কলেজ জীবনের বন্ধু। আমরা দু বছর একসঙ্গে একই কলেজে পড়েছি। এইচ এসসির পর হাসিব ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে আর আমি চিটাগং চলে গেছি। ও এখানেই শহীদুল্লাহ হলে থাকে। গতবার এসে ওর হলেই উঠেছিলাম। আমার আর অনিমার ব্যপারটা ও শুরু থেকেই সব জানে। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল
কিরে লজ্জা পাইতেছিস নাকি?
আমি ম্লান হাসলাম, বললাম
আর ঘর সাজানো
ও ফিচেল হাসি হেসে বলল
তোদের না প্রেমের বিয়ে। তোদের আর ঘর সাজানোর কি দরকার? জঙ্গলে রাইখা আসলেও তোরা..
এই মুহূর্তে এইসব রসিকতা শোনার মতন মনের অবস্থা নেই। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম
চুপ কর! কি সব ফালতু কথা বলছিস
তোরে দিয়া হবে না। আমি নাজমার সাথে কথা বলতেছি
যা ইচ্ছা কর। আমার কিছু ভালো লাগছেনা
কেন, কি হইছে?
আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে
ফার্স্ট নাইট নিয়ে সবারই টেনশন থাকে। ভেরী ন্যাচারাল। কোন সাজেশন লাগলে বল
ধুর! তোর সঙ্গে কথা বলাই বেকার
আমি বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে এলাম। বাড়ির ভেতর কেমন দম বন্ধ লাগছে। রাস্তায় কিছুক্ষণ এলোমেলো হাঁটলাম। কেবল আড়াইটা বাজে। আমাদের রওনা দেবার কথা সাড়ে সাতটায় এখনো অনেক সময় বাকি আছে। আচ্ছা, অনিমা কি করছে এখন, পার্লারে গেছে কি? একবার ওকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করছে। ওর জন্য কোন উপহার কেনা হয়নি। চট করে একটা কিছু কিনে ফেললে কেমন হয়? কি কিনব বুঝতে পারছি না। টাকাও নেই বিশেষ। ওর জন্য অনেক কিছু কিনতে ইচ্ছা করছে। একটা সময় হয়তো আমার কাছে অনেক টাকা থাকবে, আমি চাইলেই ওকে অনেক কিছু দিতে পারব কিন্তু আজকের দিনটা তো আর ফিরে আসবেনা।

কথাটা মনে হতেই হঠাৎ ভীষণ হাসি পেল। এই ধরনের প্রতিজ্ঞা মনে হয় পৃথিবীর সব ছেলেরাই করে এবং একটা সময় যখন তাদের সামর্থ্য হয় তখন আর আলাদা করে এই কথাটা মনে থাকে না। এই কথাটা আমি বলছি অভিজ্ঞতা থেকে। আমার মনে আছে অষ্টাশির বন্যার সময় আমি খুব ছোট, স্কুলে পড়ি সে সময়ে বাবার ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তখন আমাদের এই বাড়িটা ছিল না। আমরা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। অবস্থা এমন ছিল যে বাড়ি ভাড়া দিতে পারতাম না। বাবার অনুরোধে মা তাঁর সমস্ত গহনা বিক্রি করে বাবাকে ব্যবসার জন্য দিয়েছিল। আজও মনে আছে বাবা প্রতিজ্ঞা করেছিল যখন টাকা হবে মাকে আবার সেই সব গয়না গড়িয়ে দেবে। একসময় বাবার হাতে টাকা এসেছে, আমাদের নতুন বাড়ি করা হয়েছে কিন্তু আলাদা করে বাবা কখনোই মাকে আর সেই গয়নাগুলি গড়িয়ে দেয়নি। মা সংসারে টাকা বাচিয়ে আবার গয়না গড়িয়েছে কিন্তু বাবা তার কথা রাখেনি, কিংবা সেটা প্রয়োজনীয় বোধ করেনি অথবা মনেই রাখিনি।

আমার কেমন মন খারাপ লাগছে। আমি হাঁটতে হাঁটতে নিউমার্কেটে চলে গেলাম। কি কেনা যায় ওর জন্য বুঝতে পারছি না। ভালো কোন বই দেয়া যায়। এটা বোধহয় ঠিক হবে না। বিশেষ একটা কোন উপহার দিতে ইচ্ছা করছে। আমাদের দিক থেকে ওকে কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি একটা আংটি পর্যন্ত না। রানু ফুপু উপহার হিসেবে একজোড়া আংটি কিনেছে। বিয়ে পড়ানোর পর সেটা পরানো হবে আমাদেরকে। ব্যস অতটুকুই, আর কিছুই না। আমার কিছুই মন মতো হচ্ছে না। ওকে অসম্ভব অসম্ভব সুন্দর কিছু উপহার দিতে ইচ্ছা করছে অথচ আমার সামর্থ্য এত কম। নিজের অক্ষমতায় নিজের উপরই রাগ হলো ভীষণ।

বইয়ের মার্কেটে কতক্ষণ এলোমেলো ঘুরে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। এদিকটায় কয়েকটা বেকারি তারপর গহনার দোকান। চট করি একটা জিনিস খুব চোখে লেগে গেল। মনে হল এটা বোধহয় ওর জন্যই তৈরি। সে সময় রুপার দাম খুব কম ছিল মাত্র সাড়ে ৭০০ টাকা ভরি। একজোড়া নূপুর নিলাম। এক জোড়া বালা খুব পছন্দ হয়েছিল। বেশ পুরনো আমলের ডিজাইন কিন্তু টাকা না থাকাই নিতে পারলাম না।

বাড়ি ফিরলাম সন্ধ্যা পার করে। ভেবেছিলাম বাড়ির অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হবে। ফিরে দেখলাম অবস্থা আগের চেয়ে আরো খারাপ। বড় ফুপু আর মায়ের মধ্যে বোধহয় এক প্রস্থ ঝামেলা হয়ে গেছে। দুজনের মুখই থমথমে। আমি পাত্তা না দিয়ে রেডি হতে চলে গেলাম। অনিমাদের ওখান থেকে আমার জন্য পোশাক পাঠানোর কথা ছিল। আমি রাজি হইনি। মা আমাকে সঙ্গে দিয়ে শেরওয়ানি কিনতে যেতে চেয়েছিল সেটাও আমার ইচ্ছে করেনি। ছোট মামা একটু জোরাজুরি করার চেষ্টা করেছিল লাভ হয়নি। এর প কেউ আর মাকে বিশেষ একটা ঘাটায়নি। সবাই জানে আমি সবার কথাই শুনি তবে শেষমেষ যেটা আমার ইচ্ছে করে সেটাই করি।

আমি সাধারণ একটা পাঞ্জাবি পরেই অনুষ্ঠানে গেলাম। অনুষ্ঠান সাদামাটা ভাবে হলেও আয়োজন যথেষ্টই ভালো ছিল। ওদের পক্ষ থেকে আমি তেমন কোনো জাঁকজমক দেখতে পেলাম না। সবারই পরনে সাধারণ পোশাক। তাদের পক্ষ থেকে খুব বেশি লোকজনও আসেনি। নিকট আত্মীয় ছাড়া কাউকেই যেমন দেখতে পেলাম না। বাবা বিয়েতে কোন কিছু দিতে না পারলেও ১০০ জন লোক খাওয়াতে হবে এই কথাটা তাদেরকে জানাতেই মোটেও কুন্ঠা বোধ করেননি।

আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল। ঢাকায় যেহেতু ওদের কেউ নেই অনুষ্ঠানের পর সমস্ত খাবার আমাদেরকে সঙ্গে করে দিয়ে দেয়া হলো। সেই সব খাবার নিয়ে বাড়িতে বেশ একটা হুলুস্থুল বেধে গেল। মা বাবা আর বড় ফুপু সবাই তখনই খাবার প্যাকেট করে প্রতিবেশী এবং যে আত্মীয়দের নিমন্ত্রন করতে পারিনি তাদের পৌছে দেবার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেল। যাকে উপলক্ষ করে এত কিছু তার কথা বোধহয় কারো মনেই রইল না। সহায্য করার মত তেমন কেউ নেই তাই আমাকেও কাজে লাগে হাত লাগাতে হলো। অনিমাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলাম না। বোধহয় ওকে আমার ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।

আমি ঘরে যেতে পারলাম রাত বারোটারও পরে। এতক্ষণ পর্যন্ত বেচারী ওই ভাবেই বসেছিল। আমি ওকে নাজমার সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়ে গোসলে ঢুকলাম। দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করলাম। ঘরে পা রাখতেই চমকে গেলাম। লাল বেনারসি শাড়িতে যাকে টুকটুকে বউ মনে হয়নি আমার কেনা সাধারণ সুতি শাড়িতেই তাকে রাঙা বউ লাগছে। অনিমা খাটের উপর বসে ভেজা চুল ছড়িয়ে। বোধহয় শুকানোর চেষ্টা করছে। ওর যে এত সুন্দর আর লম্বা চুল আগে কখনো লক্ষ্য করিনি তো। আমি এগিয়ে এসো ওর পাশে বসলাম। বললাম
দাও আমি করে দিচ্ছি
ওর চুলগুলোতে হাত দিতেই মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে এলো। কেমন বুনো ফুলের মতন একটা গন্ধ। এই গন্ধতেই পেয়েছিলাম যেদিন প্রথম ওকে দেখেছিলাম। আমি ওর চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দিলাম। এই গন্ধটা আমি আমার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাই। গন্ধতো কৌটায় কিংবা বাক্সে করে নিয়ে যাওয়া যায় না, আমি বোধহয় আমার অস্তিত্বের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। ও আচমকাই আমার দিকে ফিরে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। কমেক মুহূর্ত মাত্র। আমি বিস্ময়াবিভূত হয়ে কিছু বুঝে উঠবার আগেই ও মুখ নামিয়ে আমার বুকের মধ্যে মুখ গুজে বলল
থ্যাঙ্ক ইউ মুনির
কি জন্য?
এই যে আমার জন্য এত ঝামেলা করলে, এত কষ্ট করলে
তোমার জন্য করিনি
ও মুখ তুলে বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইল। ওর আয়তাকার বিশাল চোখ গুলো কেমন ছলছল করছে। ও অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
আমার জন্য না?
আমি দুই হাতের করতলে ওর মুখটা তুলে ধরে বললাম না তোমার জন্য না। যা করেছি সব নিজের জন্য। এই যে দুই হাতে তোমার মুখটা ধরে আছি, এই জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তাহলে আমি হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে মরে যেতাম।

এক মুহূর্তে সব কেমন বদলে গেল। যে আমি ঠিক করেছিলাম আজ রাতে ওকে একটুও বিরক্ত করবো না, শুধু আমার মনের মধ্যে জমে থাকা সব কথা বলে ওকে বলবো, কিছুতেই নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারলাম না। ও এমন ভাবে আমার কাছে এলো, মনেই হলো না যে আমরা এই প্রথমবার গভীর সান্নিধ্যে এলাম। মনে হল যেন যুগ যুগ ধরে আমরা এভাবেই একে অন্যের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে ছিলাম।

রাত্রির শেষ প্রহরে যখন ও আমার বুকের সঙ্গে মিশে ছিল, আমি আস্তে আস্তে বললাম
সামনে আমাদের খুব খারাপ সময় আসবে অনিমা। আমাদের অনেক ধৈর্য রাখতে হবে। আমি জানি, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব যেন তোমার কোন কষ্ট না হয়। যে কয়দিন আমারা একসঙ্গে…। ও আমার কথা শেষ হতে দিল না আমার বুকের মধ্যে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল

এখন এসব কঠিন কঠিন কথা শুনতে ইচ্ছা করছে না
তাহলে কি শুনতে ইচ্ছা করছে?
অন্য কিছু বল
অন্য কি?
সুন্দর, মন ভালো করা কিছু
একটা কবিতা শুনবে?
হু
আচ্ছা শোন

একে একে বানিয়ে তুলব সব, তুমি দেখে নিয়ো।
বাড়িঘর, খেতখামার,
উঠোনে লাউয়ের মাচা, জানলার পাশে
লতানে জুঁইয়ের ঝাড় –
একে একে সমস্ত বানাবো, তুমি
দেখে নিয়ো

দক্ষিণে পুকুর থাকলে ভাল হয়, তুমি বলেছিলে।
অবশ্য থাকবে।
পুকুরে হাঁসের স্নান দেখতে চাও, সে আর এমন
কী বেশী কথা,
সাদা ও বাদামী হাঁস ছেড়ে দেব।

যা চাও সমস্ত হবে,
একই সঙ্গে হয়ত হবে না, কিন্তু
একে-একে হবে।
ভালবাসা থাকলে সব হয়।

দেখো, সব হবে।
যা-কিছু বানানো যায়, আমি সব
দুই হাতে
দিনে-দিনে বানিয়ে তুলব, তুমি দেখে নিয়ো।

কবিতার নাম “তুমি দেখে নিয়ো” লিখেছেন
– নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

সমাপ্ত