Saturday, August 9, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 15



নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৪

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৪]
-তামান্না

–তারপর মিথ্যে হিংসা প্রতিশোধ সব ভুলে যায় রিহান।বাবা মায়ের মুখে ও শুনতো নিরুর প্রশংসা।সবাই উৎসাহ দেখালে ও নিরবের ভালো লাগতো না।
একের পর এক দোষ তুলে ধরে নিরুর।প্রতি নিয়ত এটা ওটা বলতে শুরু করে।নিরুপমার সাথে পাড়ার দুই তিন জনের সাথে প্রেম এটা ওটা অনেক কিছু।আস্তে আস্তে প্রতিশোধের নেশা বাড়িয়ে দেয়।তবে ক্ষতি করার মতো সাহস পেতে গোটা এক মাস সময় লাগে।বন্ধুরা সবাই বারণ করলে ও নিরবের কথায় এগিয়ে যায় রিহান।কথায় বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।আর এই অসৎ সঙ্গী একজন হলেই হয়ে যায়।

–সেদিন নিরব লাস্ট কলে এটাই বলেছিল হাতে নাতে নিরুকে এক ছেলের সাথে ধরা হয়েছে আর সেই প্রমাণ ওর কাছে আছে।ব্যস রিহান ঘৃণায় রাগে অঘটন টা ঘটানোর প্ল্যান করে।
প্রথমে এগিয়ে যায় নিরুপমার কাছে আর পিছনে আমান ভিডিও করে।যদিও নিরুপমা নিজের সম্মান রক্ষার্থে রিহান কে কাছে ঘেঁষতে দেয় নি। রিহানের সাথে ধস্তাধস্তি করে এক পর্যায়ে বের হয়ে যায়।
তবে ভিডিও তো পিছন দিক থেকে করা তাই এতো কিছু বোঝা যায় নি।নিরুপমা চলে যেতেই আমানের থেকে ফোন টা নিয়ে নতুন নাম্বার দিয়ে নিজের বাবার ফোনে রিহান নিজেই ভিডিও টা সেন্ড করে।ঠিক এক ঘন্টার মধ্যে সবার কাছে পৌঁছে দেয় এবং যায়।তারপর সিস্টেম করে অফিসের মিনি প্রজেক্টরে সেট করে দেয়। যার ফলে সবাই দাঁড়িয়ে দেখতে পারে।
তারপর কি হলো তা তো প্রথমেই দেখতে পেলেন।

–নিরুপমা সব কিছু গুছানো শেষ হলে নিশা কে নিয়ে বের হয়।মুখে মাস্ক পড়ে নিয়েছে।আজকেই শেষ নিজের শহর ঘুরবে তারপর আসা হবে কি না জানা নেই।চলে যাওয়ার আগে হলেও এ শহরের ধূলো তে পা রাখতে চায়,,ব্যস্ত রাস্তা এবং পরিবেশ ভালো করে ধারণ করে নিয়ে যেতে চায়।যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকে।স্মৃতি গুলো প্রখর হলেই তো বেশিদিন মনে থাকবে।
–নিরু:হ্যালো!তুই কি অবসর আছিস নীলা?কলেজে আসতে পারবি?
–নীলা :এই অবেলায় কলেজে কেন?
–নিরু:আয় না একটু।আমি আর নিশা এসেছি,, কালকেই চলে যাচ্ছি ভোরে।
–নীলা :দশ মিনিট অপেক্ষা কর আসছি আর আমি কোচিংয়েই আছি।স্যার কে বলে আসছি। বিকেল বেলা কলেজটা একদম নিরব থাকে।তবে কেন জানি নিরুপমার কলেজের এই নিরবতা ভালো লাগে না।
ছাত্র ছাত্রীদের হৈ হুল্লোড় খেলাধুলা আড্ডা মানুষ এসবেই যেন প্রাণবন্ত লাগে কলেজ।

–আচমকাই বৃষ্টি আসার আভাস পাওয়া যায়।চারপাশে অন্ধকার হালকা বাতাস এবং মেঘের গর্জন শুরু হয়।কলেজটা ও ফাঁকা।যেসব স্যাররা কোচিং করান মাঠের শেষ প্রান্তের ছোট ভবন টাতেই করায়।তাই নিরুপমাদের দিকটাই মানুষ নেই।
–নিশা:চল বারান্দায় দাঁড়ায়,, বৃষ্টি শুরু হচ্ছে।
–নিরু:হাতে থাকা পার্স আর মোবাইল টা নিশার হাতে দিয়ে বলে,, শেষ দিন এই শহরের বৃষ্টি ও বোধহয় আমায় ছুঁতে চাচ্ছে।ভীষণ মিস করবো কলেজ আর স্কুল থেকে বৃষ্টি তে ভিজে বাড়ি ফেরা দিন গুলো।তাই আজকে এতো সুন্দর সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাই না।তারপর দৌড়ে মাঠে চলে যায়। পড়নে কালো বোরখা আর গোল্ডেন কালার হিজাব।ভিজলে ও বোরখা পড়ায় বেশি খারাপ দেখাবে না।

–নীলা কোচিং থেকে স্যারকে বলে বের হয়।বৃষ্টি আসবে বলে দৌড়ে মাঠের এই দিক টাই চলে আসে।মাঠের ঐ পাশটায় দেখতে পায় রিফাত নিরব আমান রিহানরা বসে আছে।নীলা কে ছুটে আসতে দেখে নিরব বলে,, কোনো ছেলের পিছনে ছুটছো নাকি?
–নীলা থেমে যায়।অলরেডি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তারপর সোজা বারান্দায় উঠে নিরবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কুৎসিত মনটা পড়বেন।আর বাইরে মেয়ে কে টিজ করার আগে অবশ্যই নিজের মা আর বোনের চেহারা টা মনে করবেন।দেখবেন আপনা আপনি আপনার লাগামহীন মুখ কন্ট্রোল হয়ে গেছে ।

–নীলার কথায় আমান আর রিফাত মুখ টিপে হাসে।আর রিহান ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

–নিরব:উঠে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচু করে বলে বেশি বাড় বাড়লে বান্ধবীর মতো মুখ থুবড়ে পড়বে।
–নীলা :আপনি আমার কচু করবেন বলে বৃষ্টির মধ্যেই দেয় এক দৌড়।

–রিফাত:ভালো কথা মনে হলো।নিরব তোর তো নিরুর সাথে ধরা পড়া ছেলের ছবি দেখানোর কথা।কই দেখালি না তো?
–নিরব:ভয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বলে,, সে দেখে কি করবি?ঝামেলা হওয়ায় ফোন থেকে কেটে ফেলেছি।
–রিহান :ভয় পাচ্ছিস নাকি?আমি কিন্তু তোর কথায় কোনো সত্যতা এখন অব্ধি পায় নি।
–নিরব:বাদ দে ইয়ার।এসব দেখে আর কি করবি,, সব তো শেষ হয়েই গেছে।

–আমান:শুধু কি শেষ হয়েছে?সাথে অনেক কিছুই হয়েছে।

–রিফাত :চল ফুটবল খেলা যাক।তারপর সবাই মিলে একমত হয়ে হৃদয় কে বসিয়ে ফোন গুলো দিয়ে মাঠে নেমে পড়ে।

–এদিকে নিরুপমা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে মাথা নুয়ে বসে আছে।দূর থেকে নীলা নিরুকে দেখে ব্যাগ আর ফোন নিশার হাতে দিয়ে চলে আসে। নিশা বসে বসে গেইম খেলতে থাকে।

–নীলা :নিরু?
–নিরু:উঠে এসে হাত দিয়ে মুখের পানি মুছে বলে চলে যাবো।তাই শেষ মূহুর্তে বৃষ্টির লোভটা সামলাতে পারি নি।
–নীলা:চল বলে হাতে ধরে সামনে এগিয়ে বলে,, তোর আর আমার শেষ কলেজ ঘুরা এক সাথেই হোক।এরপর আমিও আর কলেজ বৃষ্টি অবসর আড্ডা এসবে থাকবো না।পরীক্ষা দেওয়া শেষ হলেই চলে যাবো।তোর শূন্যতায় আমি ও ভালো থাকবো না।
–নিরু:এবার নিরু দাঁড়িয়ে কান্না করতে থাকে। তবে বৃষ্টির পানির সাথে সব ধুয়ে যাচ্ছে।
–নীলা :মন খারাপ করিস না।দেখবি ভালো সময় আসবে। মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসিস।
–নিরু:এটা বোধহয় আর হবে না রে।তারপর নিরব আর ওর আব্বুর কাহিনি বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সব কিছু খুলে বলে।

–রিহানরা খেলার জন্য এই পাশে চলে আসে। দূর থেকে নীলা আর নিরুকে দেখতে পায়।
–রিফাত:এই অবেলায় এরা বৃষ্টি তে ভিজে কেন? আর নিরু ও এ সময়?
–নিরব:দেখ গিয়ে বোধহয় কোনো কু*কর্ম করতে এসেছে এই সময়।
–রিহান:মাঝে মধ্যে একটু বেশিই বলিস।আর মাইন্ড একটু নোংরা মুক্ত রাখার চেষ্টা করবি।নিরব দাঁতে দাঁত চেপে কোনো রকম সয্য করে।
–রিফাত:বাদ দে।খেলতে এসেছি খেলতে চল।

–নীলা :রিহান কলেজেই আছে।
–নিরু:বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে নীলা।প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকা যুদ্ধ মনে হচ্ছে।আমি এভাবে একলা হতে চাই নি।এর থেকে খারাপ আমি কখনো থাকি নি।আমার বাঁচতে কষ্ট হচ্ছে স্মৃতি কন্ঠ চেহারা প্রতিনিয়ত ধাওয়া করছে।কথা গুলো বলতে বলতে হেঁচকি উঠে।
–নীলা:একদম ভেঙে পড়বি না।ওদের উপর সঠিক বিচার উপরওয়ালা ঠিক করে নিবেন।
–নিরু:এটা আমি কখনো চাই না।আমি চাই সে ভালো থাকুক।আমি তার কখনো ক্ষতি চাই না মৃত্যু চাই না।দূরে থেকে তার বেঁচে থাকার গন্ধ শুনতে চাই নিশ্বাস শুনতে চাই।সে আমার হোক সেটা ও চাই না তবে চাই সে বেঁচে থাকুক।তারপর আবার আমাদের দেখা হোক সেদিন তার চোখে অনুতাপ অনুশোচনা আমি নিজের চোখে দেখতে চাই।
–নীলা:চল।জ্বর চলে আসবে।নিরু সামনে তাকাতেই রিহানদের দেখতে পায় তাই চুপচাপ চলে যায় এখান থেকে।

–নিরু:তুই বস নিশা আমি আর নীলা ঐদিক টাতে যাই।বৃষ্টি থামলেই বাড়ি ফিরবো।
–নিশা:আম্মু বকা দিবে কিন্তু।এখানে দাঁড়াও আমার সাথে। নিরু ধমক দিয়ে চলে যায়।

–নিরুদের চলে যেতেই রিহান নিশার কাছে আসে।
–রিহান :কি অবস্থা নিশা?আজকাল তো তোমার দেখায় যায় না?
–নিশা:আপনি এমনটা করতে পারলেন রিহান ভাই?আমার বোন কিন্তু ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।এরপর আমাদের যাওয়ার আশা করেন?
–রিহান :অন্য দিকে তাকিয়ে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বলে,, বাদ দাও এখানে কেন?একা এসেছো?
–নিশা:আপু এসেছে।কালকে চলে যাচ্ছি আমরা।আর আসা হবে কি না জানা নেই।
–রিহান:কোথায় যাচ্ছো?আর বাড়ি ছেড়ে কেনই বা যাচ্ছো?

–নীলা :চলে আয় নিশা।নিরু চলে যাচ্ছে।
–নিশা:আমি যাচ্ছি রিহান ভাই ভালো থাকবেন আর দেখা হবে কি না জানা নাই।

***********
–ভোর ছয় টায় রওয়ানা দেয় নিরুরা।ট্রেনে করে যাচ্ছে।শখের জিনিস বা শখ গুলো এমন আচমকা পূরণ হয় তখন আর শখ মনে হয় না মনে হয় পরিস্থিতি।কতো দিনের শখ ছিলো ট্রেন জার্নি করবে এবং জানালার পাশটায় বসে উপভোগ করবে সবটা।
আজকে তা হচ্ছে ও কিন্তু উপভোগ করার মতো আর শখ কিংবা সুখময় অনুভূতি আর নেই।
–ভীষণ কান্না পাচ্ছে,, বুক ফেটে যাচ্ছে।যতই সামনে এগোচ্ছে ততই বুকের ব্যাথাটা দীর্ঘ হচ্ছে।
আসল জীবন সোনালী সময় ছেলেবেলা সব কিছু ত্যাগ করে যাচ্ছে।
–নিশা:মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,আব্বু একা হয়ে গেলো আম্মু।আর কেউ রোজ করে কথা বলার জন্য কবরের পাশটায় দাঁড়াবে না।
–নিরু:এতো ভাবছো কেন?আব্বু আসল জায়গায় আছে যেখানে জীবন বাস্তবতা পরিস্থিতি কিছুই নেই।বিশ্বাসঘাতক ও নেই। আম্মু দুজনকেই জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বলে তোমরাই আমার জীবন।তোমাদের সফলতা দেখতে পারলেই আমার জীবন সার্থক।

–আব্বু :সব কিছু ওকে কালকে রাত তিনটের ফ্লাইট।
–রিহান:আচ্ছা!
–আম্মু :কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,, আগের থেকে অনেক টা শুকিয়ে গেছো।তোমায় ছেড়ে থাকতে হবে ভাবি নি।
–রিহান:আমরা যা ভাবি সব সময় কি তা হয়?
–আব্বু :নিরুরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।আর বাড়ি ওর চাচারা দখল করে নিয়েছে।জীবন কতো কঠিন কখনো কি ভেবেছে রহিম তার মেয়েরা বাড়ি ছাড়া হবে।
–আম্মু :নিরবের বাবারা শেষ পর্যন্ত সফলই হলো।তবে এতে সর্বোচ্চ দোষ তোমার ছেলের। রিহান চুপচাপ উঠে চলে যায়।

–রিফাত :আসল কাহিনি শোনা হয়েছে রিহান?
–রিহান:কি কাহিনি? কি হয়েছে?
–রিফাত :নিরব তার প্ল্যান সম্পর্কে সব কিছু শেয়ার করেছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিমনের সাথে।সে ইচ্ছে করেই সবটা করেছে।তার সাথে পারিবারিক সমস্যা ছিলো নিরুদের।তারপর সব কাহিনি খুলে বলে।
রিহান চোখ বন্ধ করে চুপচাপ সব কথা শুনে।দুই দিন যাবত এটাই আন্দাজ করছিল।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৩

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৩]
-তামান্না

–রিফাত :গলা পরিষ্কার করে বলে নিরুপমা? তারপর এগিয়ে যায়।রিহান বাইক রেখে চুপচাপ গাছের আড়ালে চলে যায়।
–নিরু:ভালো থাকুন ভাইয়া।কলেজে একটা সময় আপনাকে নিজের ভাইয়ের মতো মনে হয়েছে।কথাটা বলতেই ছলছল করে উঠে চোখ।
–রিফাত:ক্লাস করলে না,,চলে যাচ্ছো যে?
–নিরু:চলে যাচ্ছি।টিসি টা দেখিয়ে বলে এটার জন্যই আসা।হয়তো আর দেখা হবে না তবে ভালো থাকবেন।কথাটা বলেই সামনে এগিয়ে যেতে নিলে,,
–রিফাত:কই চলে যাবা নিরুপমা?
–নিরু:জোর পূর্বক হেসে পিছনে তাকিয়ে বলে,, অচিন পুরে।অচেনা মানুষ আর বিশ্বস্ত পরিবেশে।এখন আমি আমার ইচ্ছে মাফিক জায়গায় বসত করবো,,আজকেই ছুটি নিয়ে নিবো এই জন্মের শহর।মানুষ মায়া অবসর ভালো লাগা আর ভালবাসা থেকে।দোয়া করবেন এই ছুটি যেন আজন্ম কালের হয়।
তবে আমার শহরের মায়া জমানো কিছু মানুষ ধুলোবালি প্রিয় শৈশব কে ভীষণ মিস করবো। আফসোস নিয়ে কাটিয়ে দিবো জীবনের শুরুর দিকের এই ভুলের জন্য।দোয়া করবেন সামনের জীবনে ভুল কে যেন পায়ের তলায় পিষে সামনের গন্তব্যে চলতে পারি।আসি বলে একটা রিকশায় উঠে বসে।

–আর এদিকে রিফাত এখনো তাকিয়ে আছে নিরুপমা আর ওর চলে যাওয়া রিকশার দিকে।

–রিহান:চলে যাচ্ছে?
–রিফাত :হুম!কেন খুশি হস নি?
–রিহান:সামনেই তো পরীক্ষা এখন কোন কলেজে যাবে?ফরম ফিলাপ সবই অলরেডি করা হয়ে গেছে।
–রিফাত:যা ইচ্ছে তা করুক তোর কি?তুই তো এটাই চেয়েছিলি?
–রিহান:আমি চেয়েছি খানিকটা শিক্ষা পাক তবে জীবন নষ্ট হয়ে যাক এটা চাই নি।তাছাড়া সে কি কম নাকি?আমাদের পরিবারের সাথে সখ্যতা থাকার পরে ও আমার নামে বদনাম করতো নিরবের সাথে।তাছাড়া আমি না হয় মন থেকে সম্পর্কে যাই নি,, সে কি কম নাকি?গোপনে আরও সম্পর্কে আছে।
–রিফাত:আমার মনে হয় নিরব কে প্রয়োজনের থেকে ও বেশি বিশ্বাস করে ফেলছিস।তাছাড়া নিরব ওর চাচাতো ভাই হয়ে ও কিভাবে ওর খারাপ চায়??
–রিহান:নিশ্চয়ই নিরু ভালো না দেখেই ভাই হয়ে ও খারাপ চায়।
–রিফাত :একদিন ভীষণ ভাবে পস্তাবি, নিরুপমার অভাবে দুঃখে থাকবি।কথাটা বলেই ওকে ফেলে রিফাত একা একাই চলে যায়।

*******
–নিরুর আম্মু :এটা কিন্তু ঠিক করছেন না ভাইজান?ন্যায্য দাম না দিন অর্ধেক তো দিবেন? তাছাড়া আমার তো মেয়েদের নিয়ে চলতে হবে। স্কুলে ও দৌড়াদৌড়ি করে ম্যানেজ করতে হবে সবটা।
–বড় চাচা:এক পয়সা ও বেশি দিবো না। তোমার তো ভাগ্য ভালো মেয়ের মা হয়ে ও সম্পত্তির ভাগের টাকা পাচ্ছো।চুপচাপ যা দেই নিয়ে নাও।
–নিরুর আম্মু :কান্না করতে করতে টাকা গুলো হাতে নিয়ে নেয়।তারপর বলে,, সবাই মিলে আমাদের বড্ড ঠকালেন।তবুও উপর ওয়ালার প্রতি কোনো আক্ষেপ নেই,, কারণ ভাগ্যে রেখেছে বলে।আর আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী।আর এটাও বিশ্বাস করি খারাপ সময় কেটে গিয়ে ভালো সময় আসবে।টাকা গুলো হাতে নিয়ে বের হয়ে যায়।

*********
–কয়েক দিন লাগবে আরও ট্রান্সফার হতে চাকরি।তবে এখান থেকে ও চলে যেতে হবে তাই আগে থেকেই নিরুর মামাকে দিয়ে ভাড়া বাসার ব্যবস্থা করে।
আর আজকেই সেখানের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় রওয়ানা দিবে।দুই দিন ঢাকা থেকে মেয়েদের কে রেখে আবার এখানে চলে আসবেন,, স্কুলে বোনের বাসা থেকেই কয়েক দিন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত যাতায়াত করবেন।
–নিশা (নিরুর ছোট বোন)সকাল থেকে শুধু কান্না করে যাচ্ছে।বয়স অল্প আবেগ কম বোধ বুদ্ধি ও কম।শব্দ করে করে কান্না করছে।সে বাবার বাড়ি ছেড়ে যেতে চায় না।নিরুর প্রচুর খারাপ লাগছে নিশার আর্তনাদ শুনে।সে তো বলতে পারছে না তারও অনেক কষ্ট হচ্ছে।বাবার স্মৃতি ছেড়ে থাকা যে ভীষণ কষ্টের।এহ বাড়িতে আজও ওরা নিজের বাবার গন্ধ পায়।অনুভব করতে পারে ছেলেবেলা ভালো সময় বাবা দাদা দাদু একত্রে কাটানো মূহুর্ত গুলো।

–নিজের বাড়ির আঙিনা ছাঁদ রুম বাগান প্রকৃতি এলাকা বিদ্যাপিঠ সব কিছু মিস করবে।এই কষ্ট যেন মরে যাওয়ার থেকে কম না।তবে কষ্ট হলেও ভীষণ ভাবে চেষ্টা করছে দমিয়ে রাখার।আজকে ওর ভুলের জন্যই তো এমন পরিস্থিতি।নয়তো চাচারা সহজে এতো দূর করতে পারতো না।পিছন থেকে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে একদম কষ্ট পাবি না।নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তো,,মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে হবে না?
–নিরু:মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে ভীষণ ভালোবাসি মা।তোমায় আব্বু আর নিশাকে আমার নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসি।প্লিজ তোমরা আমার জীবনে গত হয়ে যেওনা আব্বুর মতো।তোমাদের ছাড়া আমি অচল।এবার নিশা ও এসে আম্মু আর বোনকে জড়িয়ে ধরে।
–আম্মু :তোর মিতা আন্টি ফোন করেছিল।
–নিরু:খানিকটা দূরে সরে অপ্রস্তুত সুরে বলে কককি বললো?
–আম্মু :তোর টিসির ব্যাপারে।ভেবেছে তুই কষ্টে এক বছর বাসায় বসে গ্যাপ দিবি।রিহানের কান্ডে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে,, ছেলেকে বকেছে অনেক।তোকে নিয়ে যেতে বললো।
–নিরু:সমাপ্তি ঘটুক আম্মু কিছু শখের সুখের মানুষের সাথে থাকা সম্পর্কের।আমি সত্যি তোমাদের সবার কাছে লজ্জিত।প্লিজ আমার দুঃখ আর বাড়িয়ে দিও না।
–আম্মু :ছোট বেলায় তোমার আব্বু আর আঙ্কেল কথা দিয়েছিল তোমাকে রিহানের সাথে বিয়ে দিবে।
–নিরু ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকাতেই মা বলে,, তোমাকে তো এখন আমই রিহানের সাথে বিয়ে দিবো না।তবে প্লিজ মিতার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার কথা বলো না।কতক্ষণ নিরবতা পালন করার পর নিরু বড় করে নিশ্বাস নিয়ে কাপড় ভাজ করতে করতে বলে,, তবে আমাকে সঙ্গী করো না ওদের সামনে।আমি ছুটি নিয়ে নিজের মতো বেঁচে স্বপ্ন পূরন করতে চাই।

★★★★★
–এদিকে রিহানের আব্বু দৌড়াদৌড়ি করে ব্যবস্থা করে দেশের বাইরে যাওয়ার।আর ওখানে গিয়ে বাকি পড়াশোনা টা করবে।যদিও এইচএসসি দিতে হবে না নতুন করে গিয়ে ডিপ্লোমা করে ইন্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করবে। আর যদি সিস্টেম টা হয়ে যায় তবে এইচএসসি ও ওখানে দিয়ে দিবে।
–রিহান:এতো তাড়া কেন আম্মু?এইচএসসি শেষ করে যাই!
–আম্মু :এসব আমি জানি না।তোমার বাবা সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে।তুমি ও বখাটে খাতায় চলে যাচ্ছো।

–রিহান:হাসালে আমায়।তোমরা কিন্তু একটা ঘটনা নিয়ে ভুল বুঝছো।আমি কিন্তু দোষী না।শুধু যার যেটা প্রাপ্য সেটাই ফিরিয়ে দিয়েছি।
–আম্মু :তোমার এই ব্যাপারে কথা বলতে চাই না। তাছাড়া হিরে না হারালে কেউ হিরের কদর বুঝে না,, আশা করি খুব শীগ্রই বুঝতে পারবে। এই কয়দিনে বন্ধুদের সঙ্গ থেকে দূরে থেকো।
–রিহান:আমার বন্ধুদের পছন্দ নয়?
–আম্মু :নিরব কে আমার ভালো লাগে না।কেমন জানি অন্য স্বভাবের মনে হয়।
ওদের পরিবারের সাথে নিরুপমাদের সব সময় দ্বন্দ লেগেই থাকে।
–রিহান:কিহ?কি নিয়ে দ্বন্দ?কই নিরব তো আমায় বলে নি।আর সব সময় বলে এসেছে খুব ভালো সম্পর্ক ওদের সাথে।নিশা নিরুপমা ওর সাথেই সময় কাঁটায়।
–আম্মু :দারুণ হাসির কথা তো!আজ অব্ধি কখনো এমনটা দেখি নি।তোমার আঙ্কেল বেঁচে থাকতে ও তো এমনটাই শুনতাম।নিরুদের কোনো ভাই না থাকায় ওঁরা সব সময় চাইতো বাবার বাড়ি টা দখলে নিতে।কিন্তু নিরুর দাদা মৃত্যুর আগে ছোট ছেলে মানে নিরুর বাবা কে লিখে দিয়ে যায়।তবে ঝামেলা শুরু হয় নিরুর দাদা মা-রা যাওয়ার পর থেকে।

–রিহান:চিন্তিত সুরে বলে বাদ দাও।ওঁদের ঝামেলা ওঁরা বুঝবে।আর আন্টি কি কিছু বলেছে?
–আম্মু :কষ্ট পেয়েছে বোধহয় ভীষণ।তবে মুখ ফুটে বলে নি।তোমার আব্বু বাসায় এলে ওদের বাসায় যাবো।একটা দরকার আছে।
–রিহান:তুমি কি জানো,,নিজের সন্তানের থেকে ও বান্ধবীর মেয়ে কে মাঝে মধ্যে প্রায়োরিটি দাও বেশি।
–আম্মু :ভালোবাসা সম্মান মূল্য প্রাধান্য এগুলো মনের ব্যাপার।আর তোমরা আমার সন্তান অবশ্যই অন্যের থেকে ও ভীষণ প্রিয় তবে অন্যায়ের ক্ষেত্রে নয়।

–রিহান:এই শহর এখন আর আমার ও ভালো লাগে না।আমি ও মুক্তি চাই কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে।মনে মনে এই কথা গুলো বলে রুমে চলে যায়।
মনে পড়ে সেই এক বছর আগের কথা।যদিও হিংসা এবং প্রতিশোধের তাড়নায় নিরুপমার পিছনে ঘুরে।কারণ নিরব সব সময় উষ্কে দিতো।রিহানের নামে এটা ওটা নাকি নিরু বলতো।আর এসব ও নাকি বলতো যে রিহানকে পাত্তা দেয় না নিরু।আরও নানা ঘটনা আর জেদ থেকেই পিছনে পড়া নিরুর।
প্রথম এক সপ্তাহ ভীষণ বিরক্ত লাগতো তারপর আস্তে আস্তে নিজের ও উৎসাহ বাড়ে অভ্যস্ততা বাড়ে।আগে অবশ্য নিরু মায়ের সাথে ওদের বাসায় প্রায়ই যেতো।তবে যেদিন থেকে নিরুকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় রিহান এরপর আর যায় নি।নিরব ফোন করে এখানে ওখানে ডাকতো এলাকায় যেতো,,নিরবদের বাড়ির পাশে ক্রিকেট খেলতো।
আর সেখানেই নিরুপমার সাথে দেখা হয়ে যেতো।অবশ্য একটা সময় ভালো ও লাগতো রিহানের।আর নিরুপমা ও আস্তে আস্তে দূর্বল হতে শুরু করে।

–এভাবে চলতে চলতে প্রায় ছয় মাস পেড়িয়ে যায়।একদিন নিজ থেকে এসে নিরুপমা ই জানায় সে সম্পর্কে যেতে ইচ্ছুক।তারপর হালকা পাতলা অনুভূতি গুলো ও প্রকাশ করে।
আর এই খবর নিরব পেয়ে আরও নানা ভাবে রিহান কে উষ্কে দেয়।রিহান কন্টিনিউ করে।নিরু কোথাও ঘুরতে যেতো না কোনো আবদার ফাঁকি বাজী কিছুই করতো না।শুধু বলতো বড় হতে হবে একটা কিছু করবে আমি আর তুমি অল্প দিয়েই সুখী হবো।
আমিও করবো রোজগার আমাদের সুখের সংসার হবে।তবে হুটহাট বায়না করতো রিহান কে এক পলক দেখার।নোট কালেক্ট করে এক্সট্রা সব রিহান কে ও দিতো।সম্পর্কের পাঁচ মাস চলে যায়। আস্তে আস্তে নিজেকেও খানিকটা দূর্বল মনে হতে থাকে।অভিনয় কখনো মনে হতোই না মন থেকেই সবটা হতো।ভালো লাগতো নিরুপমার সব কিছু।শ্যামলা গায়ের মেয়ে টাকে ও তার কাছে পরী মনে হতো।এবং অনুভূতি গুলো ও প্রকাশ করে ফেলতো নিরুর সামনে।নিরুও ভীষণ খুশি হতো।অল্প চাহিদার মানুষ হলো নিরু।রিহানের পাগলামি তে মাঝে মধ্যে কান্না ও করে দিতো।বয়স টা ও তো অল্প,, এই বয়সে সব কিছু ই রঙিন লাগে নিরুর ও তা লাগতো।

–তারপর মিথ্যে হিংসা প্রতিশোধ সব ভুলে যায় রিহান।বাবা মায়ের মুখে ও শুনতো নিরুর প্রশংসা।সবাই উৎসাহ দেখালে ও নিরবের ভালো লাগতো না।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০২

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[২]
-তামান্না

–আব্বু :থাকা লাগবে না।আমি এমনিতেই তোমার জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে আমি দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবো।যেদিন একজন ভালো মন মানসিকতার মানুষ হতে পারবে সেদিনই দেশে আসবে এর আগে নয়।
–আম্মু :এগিয়ে এসে রিহান কে ধরতে নিলে সরে দাঁড়ায়।তারপর বলে এমন করো না আব্বু,, তুমি আমাদের ভীষণ আদরের।অন্যের ক্ষতি করতে নাই তোমার নিজের ও তো বোন আছে বলো?
–রিহান:প্লিজ!আমার ভালো লাগছে না বলে উঠে চলে যায় রুমে।
রুমে আসতেই কল করে নিরব।রিসিভ করতেই বলে,, কি শুনলাম এটা?এতো ভালো খবর তুই নিজে দিলি না?
–রিহান:সত্যি নিরব এবার আমি নিরুপমার সতী সাবিত্রী চরিত্রে দাগ লাগিয়ে দিতে পেরেছি।সব সময় তোর কাছে আমার নামে বদনাম করতো না?এবার সামলাতে থাকুক।

–নিরব:ইশশ!বড্ড মিস করলাম সিন গুলো।আমি আজকেই চলে আসছি এসেই আমার চাচাতো বোনের মুখ খানা দর্শন করবো।দেখি কেমন চেহারা করে ঘুরছে।
–রিহান :বাসায় বকা খেতে হচ্ছে আমার। তোর বোন যেমনটা হোক,,অহংকারী হিংসুটে বদমেজাজি আর খারাপ কিন্তু ভীষণ বোকা।তবে চরিত্র খারাপ এটা মেলাতে পারি নি।তুই না বলতি আরও রিলেশন করে?কিন্তু এক বছরে আমার চোখে তো পড়ে নি।
–নিরব:পড়বে পড়বে,, এবার পড়বে।বয়ফ্রেন্ড তো আরও আছে দেখবি এবার গর্ত থেকে বের করে দেখিয়ে দেখিয়ে ঘুরবে।তারপর আরও কিছু কথা বার্তা বলে কল কেটে দেয়।

–নিরব:শয়তানি হাসি হেসে বলে,, এবার মা মেয়ের ভাব সব গুচিয়ে দিবো।দুই মেয়ে কে নিয়ে আমার চাচির বড্ড বড়াই তাই না?এবার আমরা আস্তে আস্তে সব সম্পত্তি গুলো ও দখলে করে নিবো হাহাহা।
তারপর নেকামি করে একা একাই বলে সরি রে নিরু,,খুব সরি।দাঁতে দাঁত চেপে বলে সেদিন বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় যে হাত দিয়ে চড় মেরেছিলি সে হাত ও এবার আমি ভেঙে দিবো।তারপর হাহাহা করে হাসতে থাকে।

–এদিকে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসে নিরু।ছোট বোন স্কুল থেকে ফিরে আসে নি আর আম্মু ও।
আসলে নিরুপমারা দুই বোন।ছোট বোন ক্লাস নাইনে পড়ে আর আম্মু বোনের স্কুলেরই টিচার। নিরুপমার আব্বু ও একজন টিচার ছিলেন তবে গত হয়ে গেছে প্রায় সাত বছর।তারপর থেকে আম্মুর বেতনের টাকা আর বাবার পেনশনের টাকায় চলে যাচ্ছে।
রান্না ঘরে গিয়ে দেখে রান্না করা কিছু নেই।তারপর এক বাটি নুডলস কোনো রকম করে রুমে চলে আসে।কলেজ ড্রেস সহই শুয়ে পড়ে। অথচ এই বাজে অলসতা অভ্যাস কখনো নিরুপমার নেই।

*********
–তারপর পরের দিন শুরু হয় নিরবদের অত্যাচার।সবার কাছে এলাকায় প্রচার করে নিরুপমার নামে বদনাম।
–বড় চাচা:আমাদের এতো সুনাম যে মেয়ে নষ্ট করেছে তাকে এই বাড়িতে থাকতে দিবো না।আর যে ঘরে কোনো ছেলে সন্তান নেই তাদের তো একলা এক্সট্রা বাসার ও প্রয়োজন নেই।
–নিরুর আম্মু :এগুলো কি ধরনের কথা?আমার স্বামীর বাড়িতে আমাদের জায়গা হবে না?এরকম অনেক ঝগড়া ঝাটি এটা ওটা হয়।তিন দিন যাবত অনেক অত্যাচার সয্য করে।
এরমধ্যে নিরুপমা কলেজে যায় নি।মাকে সব কিছু খুলে বললে উনি রিহানের আম্মুর সাথে কথা বলতে চাইছিলেন তবে নিরু তা দেয় নি।নিরব ও যা তা এসে বলছে।
–নিরু:তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি সব কিছু ম্যানেজ করো,,অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করো।কান্না করতে করতে বলে এখানে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
–আম্মু :কলেজ থেকে টিসি নিতে হবে আর এখন অন্য কলেজে গেলে এক বছর গ্যাপ হয়ে যাবে।
–নিরু:হোক।এমনিতেই আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারবো না এই সিচুয়েশনে।
–আম্মু :মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,, কেন এসব করলি?তুই কেন এসব ফাঁদে পা দিলি।মা মেয়ে মিলে কতক্ষণ কান্না করে নেয়।
মনে মনে বলে আমার মেয়ের জন্য কখনোই রিহান উপযুক্ত নয়।যে ছেলে একজন মেয়ে কে এভাবে অপমান করতে পারে তার হাতে আমি মেয়ে দিবো না।আমি প্রয়োজনে উনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো তবুও আমার মেয়ে কে দিবো না।প্রয়োজনে আর ভালোর জন্য হলেও কথা ভঙ্গ করতে হয়।

*****
–সাতদিন পরে কলেজে আসে নিরু।ফ্যাকাশে মুখ ভালো করে মাথায় হিজাব পেঁচানো।আজকে আর কলেজ ড্রেস গায়ে নেই।একটা থ্রি পিছ হিজাব আর কাঁধে কলেজ ব্যাগ।
–নিরুকে দূর থেকে দেখেই দৌড়ে এগিয়ে আসে নীলা।এই কয়দিনে বাসায় গিয়ে ও দেখা মিলে নি নিরুর সাথে।তারপর ফোন তো সুইচড অফ থাকে।
–নীলা :কি অবস্থা করেছিস নিজের?তুই ও এতো বোকা নিরু?তোর মতো মানুষ ও ভেঙে পড়ে?
–নিরু:জোর পূর্বক হেসে বলে,, তাড়া আছে রে।ছুটি নিবো কিছু জায়গা আর কিছু মানুষের থেকে। তুই বরং এখানে বস আমি আসছি অফিস থেকে।তারপর সামনে হাঁটা ধরে নিরুপমা।

–রিহান আর ওর বন্ধুরা এতো দিন কলেজে আসে নি।সবাই মিলে ট্যুরে গিয়েছিল।যদিও নিরব ওদের সাথে ছিলো না।আজকে সবাই মিলে যোগাযোগ করে কলেজে আসে।
–রিফাত :নিরুপমার কি খবর রে নিরব?
–নিরব:কি আর খবর থাকবে যখন খবর বের হবে দেখবি তরতাজা হেডলাইন।
–রিহান:এক কাজ কর তো নিরব।তুই বরং রিফাত কে তোদের বাসায় নিয়ে যা কারণ ওও মনে হয় নিরুপমা কে ভীষণ মিস করছে।
–নিরব:নাকি রিহানের মতো এক বছরের চান্স নিবি শা*লা?
–রিহান:তুই কিন্তু ইন ডিরেক্টলি আমাকে বাজে বকছিস!তোর কথায় মাঝে মধ্যে ঝাঁজালো ভাব দেখতে পাই।
–নিরব:কেন?মিথ্যা কিছু বলছি নাকি?একবছর তো ঠিকই ব্যবহার করেছিস।এবার আর সয্য করতে পারে নি রিহান।তেড়ে আসে মারার জন্য। বন্ধুরা মিলে রিহান কে আটকায় তবে নিরব ভীষণ বাজে ব্যবহার করে।

–নিরুপমা অফিসে গিয়ে স্যারের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।এবং গিয়ে জানতে পারে প্রিন্সিপাল স্যার দুই সপ্তাহের ছুটি তে আছেন। তবে স্যারের পরিবর্তে যার উপর দায়িত্ব দেওয়া তার সাথে কথা বলে নেয়।
প্রথমে উনি রাজি না হলে ও অনেক কষ্টে রাজি করায়।
–ইংরেজি স্যার:এই মূহুর্তে তুমি টিসি নিয়ে বের হলে এক বছর গ্যাপ চলে যাবে বুঝতে পারছো?তাছাড়া প্রিন্সিপাল স্যার কলেজে নেই উনার ব্যক্তিগত কাজে দূরে আছেন।
–নিরু:নানা ভাবে এটা ওটা বলে ম্যানেজ করে এবং স্যার ফোন করে প্রিন্সিপালের থেকে অনুমতি নিয়ে রেডি করে রেখে যাওয়া টিসি ফরম পূরণ করে দিয়ে দেয়।নিরুর অনুরোধে প্রিন্সিপাল কে ছাত্রীর নাম টা বলে নি।অনেক বলে রাজি করিয়ে নেয়।
–নিরু:স্যার ম্যাম আপনাদের সবার প্রতি আমার অনেক কৃতজ্ঞতা ভালো থাকবেন।ভীষণ মিস করবো আপনাদের।তারপর নিজের কষ্ট কোনো রকম লুকিয়ে অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসে।

–চারপাশে অনেকেই তাকিয়ে আছে।ইতিমধ্যে রিহানদের কানে ও পৌঁছে গেছে যে নিরু কলেজে এসেছে।
মাঠে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ায় নিরব।
–নিরব:বাহ্ বাহ্!কলেজে আবার চলে এসেছিস? আমায় রিজেক্ট করে বড়লোকের ছেলে পটিয়ে নিলি এখন কই তোর সেই প্রেমিক?
–নিরু:সেটা একদম আমার পার্সোনাল ব্যাপার।তবে এটুকু বুঝতে পারছি তুমি এসবের মধ্যে যুক্ত আছো।তবে তোমার ভালো কখনো হবে না।

–নীলা:কি হয়েছে? তুই আমার কাছে না গিয়ে এখানে কি করছিস?
–নিরব:তোমার সতী সাবিত্রী বান্ধবী প্রেমিক খুঁজতে বোধহয় এসেছে।
–নীলা:ছিহ!আপনার না নিরু বোন হয়?এভাবে ভাই হয়ে কথা বলা যায়?শুনেছি,, পৃথিবীতে মানুষের সাথে উপর ওয়ালা শয়তান ও সৃষ্টি করেছে আর সেটা বোধহয় আপনি একজন।
–নিরব:দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, খুব বাড় বেড়েছো।তোমাকে তো আমি দেখে নিবোই নিবো।
–নীলা :আঙুল টা নিচে নামিয়ে কথা বলুন মিষ্টার নিরব।আমি নিরুর মতো মেধাবী না তবে ওর মতো সরল আর বোকা নই।কাউকে সম্মান দিতে না পারলে রুম থেকে বের না হয়ে মায়ের চুড়ি আর জামা কাপড় পড়ে বসে থাকবেন ওকে?তারপর নিরুর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায়। আর পিছনে দাঁড়িয়ে ফুঁসতে থাকে নিরব।

–নিরু:আমি চলে যাচ্ছি নীলা।টিসি নেওয়া হয়ে গেছে।কথাটা শোনা মাত্র ই পা দুটো থেমে যায় নীলার।
–নিরু:নীলা কে ঝাপটিয়ে ধরে বলে মিস করবো অনেক।তারপর ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়।নীলা একদম চুপসে যায়।সেই ছোট বেলা থেকে পথচলা ওদের।
–নীলা :শেষ বেলা কোথায় যাবি?সুন্দর গন্তব্য হবে না তো!
–নিরু:দূরে চলে যাবো।সেখানে শেষ বেলা নয় শুরু হবে সবটা।
–নীলা:পালিয়ে যাচ্ছিস শরীরে কাঁদা নিয়ে?
–নিরা:খানিকটা দূরে সরে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে কলেজের দিকে তাকিয়ে বলে,, মাঝে মধ্যে জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।আমি বাঁচতে চাই ব্যস।তবে আমার জীবনে ধোঁকা খাওয়ায় কিন্তু আসল কষ্ট বিষাদ নয়।আমার জীবনে রক্তের মানুষের তাচ্ছিল্যের হাত পড়েছে।অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এতিমের হক খাওয়ার ধান্দা চেপে বসেছে কিছু মানুষের।
তবে আমি ঝামেলা প্রিয় মানুষ নই অতো মানিয়ে নিতে পারি না।তবে ভালো থাকার রাখার চেষ্টা আমি করতে জানি।
তারপর চোখ মুছে বলে তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব আজীবন থাকবে।কলেজ শেষ করে আমরা এক সাথে ভার্সিটিতে পড়বো।

–নীলা:ভালো থাকিস নিরু।তোর খারাপ থাকা আমাকে ও খারাপ রাখে।তবে আমি ভীষণ একা হয়ে যাবো।তোকে মিস করবো।
–নিরু:ভাগ্য দূরে ঠেলে দিলে ও ভুলবো না তোকে।আসি বলে বের হয়ে আসে।

–রিহান বাইক নিয়ে কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। নিরব চলে গেছে আরও আগেই।রিহানের কাছে নিরব কে বিরক্ত লাগছে আজকে।এরমধ্যে চোখে পড়ে নিরুপমা কে বেড়িয়ে আসতে।
–রিহান:রিফাত জিজ্ঞেস করিস কিছু।দেখি কি বলে!
–রিফাত :কেন?আর কেন ওর পিছনে পড়ে আছিস?ওকে ওর মতো থাকতে দে।
–রিহান:পিছনে লাগছি না জাস্ট একটু খবর নিচ্ছি।

–রিফাত :গলা পরিষ্কার করে বলে নিরুপমা? তারপর এগিয়ে যায়।রিহান বাইক রেখে চুপচাপ গাছের আড়ালে চলে যায়।
–নিরু:ভালো থাকুন ভাইয়া।কলেজে একটা সময় আপনাকে নিজের ভাইয়ের মতো মনে হয়েছে।কথাটা বলতেই ছলছল করে উঠে চোখ।
–রিফাত:ক্লাস করলে না,,চলে যাচ্ছো যে?

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০১

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১]
-তামান্না

–তুই এখানে?সবাই বাইরে কি বলাবলি করছে নিরু?প্রিন্সিপাল স্যারের হাতে নাকি কি সব ভিডিও দেওয়া হয়েছে?
–নিরু:কিসের ভিডিও? আর আমিই বা কি করে জানবো?দেখতেই তো পাচ্ছিস নোট করছি।
–নীলা :হাত ধরে টানতে টানতে অফিস রুমের সামনে চলে আসে।হালকা ভীড় ঠেলে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখিয়ে বলে এসব কি?আচমকা এমন কিছু দেখে মাথা ঘুরে যায় নিরুপমার।সে কি দেখছে?আর সবাই ও দাঁড়িয়ে এসব দেখছে?

–প্রিন্সিপাল :ছিহ!কমপক্ষে নিরুপমার থেকে এটা আশা করি নি। কলেজের ফাস্ট গার্ল হয়ে কি-না,, আমার ছেলের সাথে এমন করলো?তারপর ধমক দিয়ে সবাই কে পাঠিয়ে দেয়।নিরুপমা দৌড়ে একটা রুমে চলে আসে।নিজের মুখ খামছি দিয়ে কান্না করতে থাকে।
–নীলা:কি করে হলো নিরু?এমন জঘন্য কিছু হতে পারে?
–এরমধ্যে রিফাত রুমের সামনে এসে বলে প্রিন্সিপাল স্যার তোমায় ডাকছে নিরু।তাড়াতাড়ি এসো।
–নিরু:দৌড়ে গিয়ে রিফাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলে আপনার বন্ধু কই রিফাত ভাই?এমনটা কিভাবে হলো?তারপর ফোন নিয়ে কয়েকবার কল করতেই রিসিভ হয়।
–প্রিন্সিপাল :কোথায় তুমি? অফিস রুমে এসো।তোমার সাহস তো কম নয় আমার ছেলেকে আবার ফোন করছো?
তারপর হাত থেকে ফোন টা পড়ে যেতেই ধপ করে বসে পড়লো নিরু।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়ছে।রিফাত তাড়া দিয়ে চলে গেছে।
–নীলা:রিহান ভাই কই?এমন একটা পরিস্থিতিতে ও তোকে খোঁজ করতে আসছে না??

–নীলা:স্যার যখন ডাকছেন তুই অফিসে যা নয়তো হিতে বিপরীত হবে।
–নিরু:আমি কি বলবো নীলা? স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে স্যারের ছেলের সম্পর্কে কিছু বলা যায়?
–নীলা:চিন্তা করিস না।আমি জানি তুই খুব ই ব্রিলিয়ান্ট ঠিক মোকাবিলা করতে পারবি।

–এদিকে রিহান অফিস রুমে এসে আরামে বসে আছে। তার এসব মজাই লাগছে।যে বাবা এতো দিন যে মেয়ের জন্য কান ঝালা পালা করে ফেলতো আজকেই তার বিরক্তি আসছে সে মেয়ের প্রতি।

************
–নিরু:কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, মে আই কামিং স্যার?
–প্রিন্সিপাল :এসো!
–নিরু ভিতরে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে যায় এখানে বসে আছে রিহান?তবে ভয়ে আর মাথা তুলতে পারে নি।
–প্রিন্সিপাল :তোমাকে অনেক ভালো জানতাম।আমরা কেউ তোমার থেকে এটা আশা করি নি।তুমি আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে জোর জবরদস্তি করতে পারলে?
–রিহান:শুধু আজকে না পাপা।আমাকে গত এক বছর যাবত বিরক্ত করে আসছে এই মেয়ে।আজ কাল তো কলেজে এলে একে এড়িয়ে থাকতাম। তবে আজকে আমি পারি নি।রিহানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে নিরু।

–স্যার:ছিহ্ নিরুপমা তোমার থেকে এটা আশা করি নি।অনেক জনে অনেক কথা বলে।নিরুপমা মাথা নুয়ে চোখের পানি ফেলছে।
–রিহান:চরিত্র নষ্ট মেয়ে,, আজকে তোমার জন্য আমাকে অপমানিত হতে হলো।নেক্সট টাইম এই কলেজে যেন না দেখি।আর আমি চাইবো এই মেয়ে কে যেন কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
–প্রিন্সিপাল :এমনটা হয় না।নিরুপমা একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট আর দুই তিন মাস পরেই ফাইনাল পরীক্ষা।তবে এটুকু বলবো তোমার আচরণে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।
–ম্যাম:আজকে বুঝলাম ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকলেই সারাজীবন সেরূপে থাকা যায় না।
তারপর নানা ধরনের অপমান জনক কথা শুনে #নৈশব্দে_নিরুপমা বেড়িয়ে আসে।

–অফিস থেকে বের হয়েই রিহান বন্ধুদের সাথে হাত মিলিয়ে বলে,, অবশেষে মিশন সাকসেসফুল।
–তৃণা:এটা কিন্তু ঠিক হলো না।একজন ভালো মানুষ কে ভালোবাসা দেখিয়ে আবেগ তৈরি করে এভাবে খারাপ বানিয়ে ছুঁড়ে ফেলাটা।
–সাগর:সেটা তোকে ভাবতে হবে না।
–রিহান:কষ্ট তো কম করতে হয় নি।ছয় মাস পিছনে ঘুরে ফাঁদে ফেলে তারপর ছয় মাসের প্রেম।বাপরে গোটা একটা বছর আমার অভিনয়ের মধ্যেই চলে গেলো।
–আমান:তবে যাই বলিস মেয়ে টার ক্যারিয়ার আর লাইফে একটা দাগ পড়ে গেলো।
–রিহান:এটাই তো চেয়েছিলাম।আমি এই মেয়ের জন্য পাপার কথা শুনেছি প্রতিনিয়ত।কলেজে আমাদের এড়িয়ে চলতো নিজের সস্তা এট্রিটিউড আমার সাথে দেখায়!ভাবা যায়?

–নিরু:আমি বাসায় যাবো নীলা।তবে যাওয়ার আগে প্লিজ একবার রিহানের সাথে দেখা করে যেতে চাই।
–নীলা:দরকার নাই।তুই আমার সাথে বাসায় চল।তোকে কতোবার বারণ করেছি রিহানের কথায় গলে যাস না।কিন্তু ফলস্বরূপ কি হলো?এই বাজে ভিডিও গুলা এই রিহানই করেছে এখন আমি শিউর।
–নিরু:চোখের পানি মুছে বলে তবে এগুলো সত্যি না।আমি কেমন আমি জানি আর রিহান ও জানে।হয়তো ভয়ে রিহান এমনটা বলেছে।রিহান এমন নয় বিশ্বাস কর,,একটুও এমন না।গত এক বছর যাবত আমি ওকে দেখছি।অন্য ছেলেদের মতো গায়ে পড়া স্বভাবের অশ্লীল সে নয়।সে সত্যি আমাকে ভালোবাসে।

–নীলা :বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে ভালোবাসলে কেউ অন্যের সামনে অপমান করতে পারে না।শুধু ভালোবাসলেই হয় না আগলে রাখতে জানতে হয়।নিরুর দুই গালে হাত দিয়ে ধরে বলে তুই ঠকে গেছিস নিরু,,বাজে ভাবে ঠকে গেছিস।

–এক হাতে চোখের পানি মুছে রিহান কে কল করে নিরু।দুই তিন বার রিং হওয়ার পর কল করে।
–রিহান:আবার কল করেছো?স্যার রা এতো কিছু বললো লজ্জা হয় নি?
–নিরু:কান্না করতে করতে বলে,, এখন আমি কি করবো রিহান।বাসা অব্দি এই নিউজ চলে গেলে কি জবাব দিবো?পড়াশোনা কিভাবে কন্টিনিউ করবো?তুমি তো জানো এমন কিছু না।তাছাড়া আমি এমন কিছু করি নি বরং তোমায় আটকাচ্ছিলাম।পিছন দিক থেকে খারাপ দেখা যায় মানলাম তবে খারাপ কিছু তো হয় নি।এতো বাজে ভাবে কে এমনটা করলো?
–রিহান:সেটা তোমার ব্যাপার।আর হে শুনো মরে যাও তুমি।নেক্সট আমার পিছনে লাগতে আসলে না বাকি ইজ্জত টুকুও ফিনিশ করে দিবো।কথা টা বলেই ফোন কেটে দেয়।

–রিফাত :সব কিছু ভালো হচ্ছে তো রিহান?তোর অপরাধ বোধ জাগছে না?মেয়ে টা যদি কোনো কিছু করে বসে?
–রিহান:তাহলে তুই বলে দে!এখন আমার কি করা উচিত?কোলে করে বাসায় নিয়ে বসিয়ে রাখা উচিত নাকি?
রিহানের এমন তাচ্ছিল্য কথায় রিফাত চুপ হয়ে যায়।
–এরমধ্যেই নীলা আর নিরুপমা কলেজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বাইরে আসে।
–একজন:প্রিন্সিপালের ছেলের সাথে প্রেম করার শখ না,,একদম ঘুচে গেছে।
–অন্যজন:আমি আগেই বুঝে ছিলাম এতো সুন্দর ছেলে কি-না,, নিরুর পিছনে ঘুরছে?যদিও মেয়ে টা ভালো তবে ফর্সা তো আর নয়।একেক জনের একেক কথায় চোখ টলটল করে উঠে।সেই ছোট বেলা থেকে আজ অব্ধি নিজের গায়ের রং কিংবা চেহারা নিয়ে কোনো কথা শুনে নি।কারণ তার আশে পাশে সব সময় ভালোবাসার মানুষ গুলোই থাকে।এমন টক্সিক মানুষের সাথে পরিচয়ই হয় নি।
নিরুপমা সব কিছু উপেক্ষা করে গেইটের সামনে আসতেই রিহানদের আড্ডা দেখতে পায়।এবং ওকে দেখে টিটকারি করার শব্দ টা ও কানে আসে।
–নীলা :বাদ দে,, বাসায় চল।
–নিরু:চোখ টা মুছে বলে,, বাদই দিবো তবে মন কে বুঝানোর জন্য হলেও আমার রিহানের সামনে দাঁড়ানো উচিত।নাহলে আমি শান্তি পাবো না অস্বস্তি হবে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হবে।

–নীলা কে পিছনে ফেলে কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে রিহানের সামনে দাঁড়ায়।
–রিফাত :নিরুপমা?আবার কেন?বাসায় চলে যাও সব ঠিক হয়ে যাবে।
–আমান:সবাই আরও তাচ্ছিল্য করবে এর থেকে ভালো বাসায় চলে যাও আর গিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
–নিরু:খুব সহজ?কই গত এক বছর আগে তো সবাই মিলে আপনাদের গড়ানো নাট্য মঞ্চে নিখুঁত ভাবে অভিনয় করে গেলেন।আমি তো কোনো সম্পর্কে যেতে চাই নি।আর কোনো অশ্লীলতা করি নি।তাহলে এতো বড় বদনাম কেন আমার জীবনে যুক্ত করে দিলেন?
–রিহান:বাব্বাহ!বদনাম হয়ে গেলো বুঝি?এখন কি করবে?মরে যাবে?এতো ভাব কোথায় রাখো?এমনিতেই তো ভাবে থাকতে যে কোনো ছেলে মানুষ সয্যই হয় না তারপর বড়লোক ছেলে পেয়ে ঠিকই তো গায়ে ঘা ঘেঁষে প্রেমে নেমে গেলে।কই? এখন কই গেলো ভাব?

–নিরুপমা :একজন কে ভালোবাসলে আদৌও এমন কুৎসিত ইঙ্গিত করা যায়?
–রিহান:সরি!ভালোবাসা সস্তা জিনিসে আসে না। একটু ভালো করে চেহারা টা দেখো,,আর তোমার ব্রিলিয়ান্ট মেধা ধুয়ে পানি খেও কেমন?
–নিরু:চোখের পানি মুছে জোর পূর্বক হেসে বলে বেশ।আমার বেঁচে থাকার রাস্তা টা সহজ করে গেলাম।তবে তুমি ভীষণ ভালো অভিনয় করতে জানো,,আমি মেধাবী হয়ে ও ধরতে পারি নি।প্রশংসা পাওয়ার মতো,,তারপর ভালো থেকো আমি না হয় তোমাদের সবার জীবন থেকে নৈশব্দে চলে গেলাম।
তারপর রিহানের মুখের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে চলে গেলো।এবং মনে মনে ঠিক করে নিলো এটাই হবে রিহানের সাথে তার শেষ দেখা।চুপচাপ সবার জীবন থেকে ছুটি নিয়ে আলাদা জায়গায় বসবাস করবে।
চোখ মুছতে মুছতে মাথা নুয়ে কলেজ ছেড়ে চলে যায়।

–রিহান:আমার ভালো লাগছে না আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।কালকে কলেজে আসবো না তোরা চলে আসিস।
–এদিকে নিরু ও নীলা কে নিয়ে রিকশায় চড়ে বাসায় চলে যায়।

*******
–আব্বু :সবটা কি সত্যি রিহান?
–রিহান:খাবারের প্লেট থেকে মাথা টা তুলে বলে কোনটা?
–আব্বু :নিরুপমা সত্যিই এমন করেছে?আমার তো এমন মনে হচ্ছে না।তাছাড়া সব কিছু চুপচাপ কোনো বাঁধা আপত্তি শব্দ ছাড়া মেনে নিলো।একজন খারাপ মানুষের পক্ষে আদৌও সম্ভব?
–রিহান:মাথা নুয়ে খাবার নাড়াচাড়া করে বলে তবে কি তুমি আমায় অবিশ্বাস করছো আব্বু?
–আব্বু :করা যেতেই পারে।কারণ আমি নিরুপমা কে ও বিশ্বাস করি।তুমি জানো সে আমাদের পরিবারে ও কতোটা আদরের।তোমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে,,আমি কিভাবে ওদের সামনে পড়বো?

–রিহান এবার রেগে উঠে দাঁড়ায়।তারপর চেয়ার ছেড়ে দূরে গিয়ে বলে,, তাহলে আমিই বরং বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।তোমরা সবাই মিলে ঐ মেয়ে কে নিয়ে থাকো।
–আম্মু :বেশি করছো রিহান।তাছাড়া তুমি অনেক কিছুই জানো না।
–রিহান:এতো জানতে পারবো না।একজন খারাপ মেয়ে কে সাপোর্ট করছো আ…এরপর আর কিছু বলতে পারে নি।ঠাস করে এক থাপ্পড় দিয়ে দেয় ওর আব্বু।
–আব্বু :বেয়াদব!তুমি বললেই কেন আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?তোমার কি মনে হয় আমি বোকা?একজন মেয়ে একজন ছেলের সাথে জবরদস্তি করতে পারে?এটা শুনতে ও কিন্তু হাস্যকর।যদি এমন সস্তা ক্লো দিয়ে মাথা খারাপ করতে চাও তাহলে বলবো আমি অতোটাও বোকা আর সহজ নই।তোমার আর নিরুপমার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো আমরা জানি।
–রিহান:যা জানার গিয়ে জানো।আমি আর এই বাড়িতেই থাকবো না।তোমরা বরং ঐ নিরুকেই ছেলে বানিয়ে নাও।
–আব্বু :থাকা লাগবে না।আমি এমনিতেই তোমার জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে আমি দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবো।যেদিন একজন ভালো মন মানসিকতার মানুষ হতে পারবে সেদিনই দেশে আসবে এর আগে নয়।

#চলবে

Dark Mystery পর্ব-০৯

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_9
#Sabrina_Summa

মাহির মিস সিক্রেটকে কল করছে। সময় প্রায় ১০ টার কাছাকাছি। তিনবারের বেলায় রিসিভ করলো মিস সিক্রেট।
মিস সিক্রেট : প্রবলেমটা কি?
মাহির আতঙ্কিত কন্ঠে বললো, ” প্লিজ হেল্প মি। আমাকে কিডনাপ করা হয়েছে। প্লিজ কাম হেয়ার কুইকলি। ”
মিস সিক্রেট : মিথ্যেটাও ভালো করে বলতে পারো না। তোমাকে কিডনাপ করা হলে কিডনাপার তোমাকে ফোন দিয়ে রেখে দিবে না?
মাহির : আ’ম সিরিয়াস। প্লিজ হেল্প মি।
মিস সিক্রেট : ওকে, জায়গার নাম বলো।
মাহির জায়গার নাম বলতেই মিস সিক্রেট “ওয়েট ফর মি ” বলে কল কেটে দিলো। কল কাটতেই মাহির চেয়ারের উপর পা তুলে একটা শয়তানি হাসি দিলো৷ কিছুক্ষণের মাঝেই মিস সিক্রেট চলে এলো। ভিতরে প্রবেশ করতেই মিস সিক্রেট বিরক্তিতে ভ্রু কুচকালো৷ বিড়বিড় করে বললো, ” বরিং পরিবেশ। এই ঝাপসা আলো আর ভালোই লাগে না।”
মাহিরকে চোখে পড়তেই বললো, ” তাহলে তোমার বডিগার্ড তোমাকে কিডনাপ করেছে! ”
মাহির হেসে বললো, ” আরে না। এইটা তো একটা ফাঁদ ছিল তোমাকে আনার। ”
মিস সিক্রেট বিরক্ত হয়ে বললো, ” তা তো আমি জানতামই। দেখো নি ইরফানকে নিয়ে আসি নি। এখন বলো এত আদর যত্ন করে ডাকার কারণ কি? ”
মাহির : তুমি বাবাকে বলেছো আমি একটা মেয়েকে বাসায় নিয়ে গেছি?
মিস সিক্রেট : হ্যাঁ, ভুল কি বলেছি!
মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীকে এ কথা জানাতো না। তবে তার খুব খারাপ লেগেছে ইরফানের কাছে এটা জেনে যে অজ্ঞান হওয়ার সময় মাহির এত কাছে থাকার পরও তাকে পরার সময় ধরেনি। সে কি ইচ্ছা করে পড়েছিল! তার জায়গায় যদি সুপ্তি থাকতো তাহলে কি মাহির সুপ্তি কে ধরতো না! মূলকথা, সুপ্ত একটা রাগ থেকেই তার এ কাজ করা ।
মাহির এতক্ষণ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু শেষে আর না পেরে মিস সিক্রেটের পায়ে শুট করলো।
সাথে সাথে মিস সিক্রেট বসে পড়লো। রাগে নিজের গান দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মাঝে ৬ টা শুট করলো মাহির ও তার বডিগার্ডের পায়ে। তবে তা একটুর জন্য লাগলো না।
মাহির তিরস্কার করে বললো, ” গুলি খেয়ে শুট করা ভুলে গেলে নাকি?”
মিস সিক্রেট তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ” ভাগ্য ভালো তোমাদের। রাগ হলেও মারা ইচ্ছেটা নেই। না হয় মিস সিক্রেটের নিশানা কখনো মিস হয় না। ”
এরই মাঝে বাহিরে এ্যাম্বুলেন্সের শব্দ পাওয়া গেল। তাই সকলেই বাহিরে চলে গেলো।
মাহির গাড়িতে উঠতে উঠতে একটা নার্সকে বললো, ” ওকে হসপিটালে নিয়ে যাও। পেমেন্ট করা আছে। ”
মিস সিক্রেট প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে চলে গেল। অপারেশন করে গুলি বের করা হলো। ভাগ্য ভালো গুলি হাড়ে লাগে নি। এখন রক্ত দেওয়া হচ্ছে
বাহিরে ইরফানসহ অনেক বডিগার্ড পাহাড়া দিচ্ছে। এ্যাম্বুলেন্সে উঠার সময়ই ইনফর্ম করে দিয়েছিল ইরফানকে৷ অনেকদিন পর মাহির কল করলো সুপ্তিকে। প্রথম কলেই রিসিভ করলো সুপ্তি। এতে অবশ্য কিছুটা অবাক হলো মাহির।
তবুও স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো, ” সেই রাতের পর তো আমার সাথে কথা বা দেখা করছো না। কেমন আছো তুমি? ”
সুপ্তি চিৎকার করে বললো, ” জুতা মেরে গরু দান করছেন! ”
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” মানে! আমি কি করলাম। ”
সুপ্তি : কিছু না।
বিরক্তি নিয়ে কল কেটে দিলো।
কারো পায়ের আওয়াজ শুনে মাস্ক আর হুডির টুপিটা পড়লো। শ্বাস নেওয়াতে কষ্ট হওয়ায় খুলেছিল ৷

মাহফুজ চৌধুরী কেবিনে প্রবেশ করে বললো, ” কেমন আছো তুমি? ”
মিস সিক্রেট কেবিন বেডে হেলান দিয়ে বললো, ” আপনার ছেলে ভালো থাকতে দিলো কোথায়! ” মাহফুজ চৌধুরী : ভর্তি তো আমার ছেলেই করিয়েছে।
মিস সিক্রেট : গুলিটাও তো আপনার ছেলেই করেছে। মাহফুজ চৌধুরী অবাক হলেন। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানতো না।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ” আমার ছেলেকে আমি শাস্তি দিবো। প্লিজ তুমি কিছু করো না। ”
মিস সিক্রেট সোজা হয়ে বসে বললো, ” এখনো তাই বলবেন! ”
মাহফুজ চৌধুরী ভয়ার্ত স্বরে বললো, ” তাছাড়া কি বলবো! মারতে বলবো? নিজের ছেলেকে মারার পারমিশন দিবো? ”
মিস সিক্রেট তিরস্কার করে বললো, ” আপনার জন্যই আপনার ছেলে এখনো বেঁচে আছে। না হয় মিস সিক্রেটের দিকে গুলি চালানোর শাস্তি বুঝে যেতো। ”
তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো, ” টেনশন করবেন না। আমি আপনার ছেলেকে মারবো না। ”
মাহফুজ চৌধুরী : আমি জানি মিস সিক্রেট নিজের কথার নড়চড় করে না। আজ যাচ্ছি। ভালো থেকো। তাশরিফকে বাসায় গিয়ে আমি দেখছি। ( রেগে )
মিস সিক্রেট : ওকে, যান।
মাহফুজ চৌধুরী ও তার বডিগার্ড চলে যেতেই একজন ডক্টর দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, ” ম্যা আই কাম ইন ম্যাম। ”

#চলবে.,.

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৫

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৫
সায়না বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি পরেছে, হাত ভর্তি দোলনচাঁপা ফুল আরেক হাতে একটা কেক৷ গেটের সামনে আসতেই দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো, কাকে চাই?
“ডাক্তার অনিকেত মাহমুদ।”
” স্যার তো এই এপার্টমেন্টে ছেড়ে চলে গেছেন৷”
“আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো?”
” আপনাকে মিথ্যে কেন বলবো!সত্যি স্যার নতুন এপার্টমেন্টে উঠেছেন৷”
“সেটা কোথায় বলতে পারবেন?”
” নাহহ ম্যাডাম সেটা তো জানিনা৷”
“সায়না হতাশ হলো। চোখের কাজল খানিকটা লেপ্টে গেলো চোখের জলে। কেকটা রিকশায় রেখে কল করলো অনিকেতকে। সায়না বুঝতে পারলো অনিকেত তার নাম্বার দু’টো ব্লক করে দিয়েছে।”
” কই যাবেন ম্যাডাম?”
“রামপুরা নতুন বাজার।”
” রিকশা চলছে আপন গতিতে। সায়না ভেবে পাচ্ছে না কোথা থেকে ঠিকানা জোগাড় করবে। হঠাৎ মনে পরলো জিয়ানের কথা। সাত পাঁচ না ভেবে অসাধ্য সাধন করেই বসলো৷ জিয়ানকে কল করে বলে,অনিকেতের ঠিকানা বলো তো।”
“জিয়ান অবাক হয়ে বলে,তোর থেকে কমছে কম ১৩/১৪ বছরের বড় হবে ভাই বলে সম্বোধন কর।”
” ভাইয়া না ওই আবাল ডাক্তারকে ছ্যাইয়া বানাবো ঠিকানা দাও।”
“কিন্তু?”
“কোন কিন্তু মিন্তু নাই না দিলে এখন আমি গাড়ির নিচে ঝাপ দিবো।”
“দাঁড়া দিচ্ছি হোয়াটসঅ্যাপ চেক কর। বাপরে বোন আমার জুলিয়েট হয়ে উঠেছে।”
” তোমার বন্ধুকে বলে দিও বিয়ে আমি তাকেই করবো৷ যতই উড়ুক ঘাড় ধরে আমার আঁচলেই বাঁধবো। চুল বেঁধে নেই৷ আমিও যাবো আপনার সাথে।”
“ঠিক আছে চলো তবে বাসায় কাউকে বলবে না আমরা তোমাদের বাসায় যাচ্ছি।”
“কেনো আমরা কি চুরি করতে যাচ্ছি?”
” বেশি কথা না বলে রেডি হও।”
নিচে এসে সবার সাথে খেতে বসলো নয়না৷
নাজিম চৌধুরী নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,”আম্মাজান আপনি আমার সাথে দেখা করলেন না কেনো?”
“নয়না হতভম্ব হয়ে গেলো!তার বাবাও তাকে আম্মু ডাকে সব সময়। নয়নার চোখের কোন ভিজে উঠলো”
” নাজিম সাহেব মুচকি হেসে বলেন,আম্মাজান আমি আপনার শ্বশুর না আমি আপনার ছেলে মনে থাকবে তো?”
“নয়না বলল জ্বি আংকেল।”
” আঙ্কেল না বাবা বলবা।”
“জাহিন আড় চোখে নয়নার দিকে বার কয়েক দৃষ্টি দিলো৷ মনে মনে বলে,মেয়েটা অদ্ভুত রকমের মায়াবী!”
” মিতা বেগম জিজ্ঞেস করলো,তোমরা রেডি হয়ে খেতে বসেছো কোথাও যাচ্ছো নাকি?”
“জিয়ান বলল,হ্যা আম্মু ওর জন্য শপিং করবো।”
” খাওয়া শেষ হতেই নাজিম চৌধুরী জিয়ানের হাতে হাজার টাকার এক বান্ডিল ধরিয়ে দিয়ে বলে,আমার আম্মাজান আমার টাকায় শপিং করবে। নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে,আম্মাজান যা ইচ্ছে কিনবেন। আপনার জন্য আপনার ছেলের টাকা অফুরন্ত।”
“সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নয়না,আর জিয়ান বের হয়ে আসলো। গেটের সামনে এসে রিকশা ডাকলো।
“নয়না বলে,এতোগুলা গাড়ি থাকতে রিকশা কেন!”
” সুন্দরী বৌয়ের সাথে রিকশা ভ্রমণ করার মজা কি আর গাড়িতে পাওয়া যায়? বৌ পাশাপাশি ঘেঁষে বসবে,রিকশার ঝাঁকিতে আমার বাহু চেপে ধরবে। এই ফিলিংস কি গাড়িতে পাওয়া যাবে বাটার মাশরুম।”
“রিকশায় উঠে বসলো দু’জন হুট তোলা রিকশায় দু’জন গা ঘেঁষে বসে আছে। নয়নার মনে হচ্ছে এটা কোন সিনেমা! তার পাশে বসে থাকা হ্যান্ডসাম ছেলেটা হিরোর থেকে কোন অংশে কম না, রয়েল ব্লু রংয়ের শার্ট ফরমাল প্যান্ট। শার্টের হাতা ভাজ করে রাখা, চুলগুলো স্পাইক করা,হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। উফফ কি মারাত্মক সুদর্শন এক যুবক তার পাশে বসে আছে!”
” জিয়ান নয়ান হাত নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে বলে,তুই হাতে রাখলে হাত, পাড়ি দিবো আমি সুদীর্ঘ পথ, তুই পাশে থাকলে রাঙিয়ে দেবো গোধুলির বিকেল।”
“নয়নার ভালো লাগছে মূহুর্তটা সব কিছু যেনো স্বপ্নের মত লাগছে।”
” বৌ তুমি কিছু বলছো না কেন?”
“আপনি আমাকে ভালোবাসেন?”
” জিয়ান নয়নার এমন প্রশ্নে থমকে গেলো।”
“সব প্রশ্নের উত্তর হয়না। কিছু প্রশ্নের উত্তর অনুভব করে নিতে হয় প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।”

🌿

তালুকদার বাড়ির পরিবেশ থমথমে।
মিজান তালুকদার, মাহবুব তালুকদার, লতা বেগম, নীলাঞ্জনা সবাই একত্রে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
” নয়না বাসায় ঢুকেই বাবা বলে,মাহবুব তালুকদারকে জড়িয়ে ধরলো।”
“জিয়ান সবাইকে সালাম করে বসলো একটা সিঙ্গেল সোফায়।”
” নীলাঞ্জনা জিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো হ্যান্ডসাম এতো রিচ একটা ছেলেকে সে হাতছাড়া করলো! আফসোস করছে মনে মনে।”

“বাবা এখানে কি হচ্ছে?নয়নার প্রশ্নের উত্তরে মিতা বেগম বললেন, তোমার স্বামীর কুকীর্তির বিচার সভা৷”

“নয়না ভ্রু কুঁচকে বলে,জীবনে নিজের মেয়ের কুকীর্তির বিচার করলেন না আর আসছেন পরের ছেলের বিচার করতে! বাহহহহ সো নাইস!”
“জিয়ান নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল,সুনয়না একদম চুপ করে থাকো। আঙ্কেল এবার বলুন আমাকে কেনো ডেকেছেন?”
” মাহবুব তালুকদার নরম স্বরে বলল,দেখো বাবা এভাবে তোমাকে নিয়ে বসা আমাদের উচিত না কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে এতো বড় এলিগেশন আনার পরে আর উপায় পেলাম না।”
“আঙ্কেল আপনি যা বলতে চাইছেন নির্দ্বিধায় নিজের ছেলে ভেবে বলে ফেলুন।”
“তুমি পরশু রাতে নীলাঞ্জনার সাথে ছিলে? নীলাঞ্জনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেছো?”
” নয়না বলল এসব কি বলছো বাবা! পরশু রাতে তো আমরা বিচে ছিলাম।”

“মিতা বেগম ফুঁসে উঠে বলে,এইটুকু মেয়ে কি পাঁকা পাঁকা কথা! তুই চুপ কর একদম।”

“আঙ্কেল দেখুন আমি এমন একজন মানুষ যে একবার কিছু ছেড়ে দিলে দ্বিতীয়বার তার দিকে দৃষ্টিও দেইনা। থুতু ফেলে যেমন দ্বিতীয়বার ফেরত নেয়না আমিও কিছু মানুষকে থুতুর মত ফেলে দেই চিরজীবনের জন্য।”
“নীলাঞ্জনা বলল,তুমি মিথ্যে কেন বলছো রেজা? তুমি এখনো আমাকে চাও সেটা বলো তাহলেই সমস্যা শেষ।”
“জিয়ান নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে,জিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে কপালের রগ ফুলে উঠেছে চোখ লাল হয়ে গেছে।”
“নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে নীলাঞ্জনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুমি যদি সম্পর্কে আমার বড় বোন না হতে তাহলে এতোক্ষণে তোমার গালে দুই চারটা থাপ্পড়ের দাগ থাকতো। তোমার নিজের চরিত্রে সমস্যা তাই অন্যকেও তেমন মনে করে। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,যেটা তুমিও জানো তবুও বলছি যে তোমার মত মেয়েকে কোলে তুলে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে সে হলো আমার দেবর জাহিন চৌধুরী। সো এসব আষাঢ়ে গল্প বলে লাভ নেই৷ আমার হ্যাসবেন্ড তোমার মত মেয়েদের দিকে ফিরেও তাকায় না।”
“নয়না বড্ড বেশি বলছিস তুই! আমার আর রেজার মাঝখানে আসবি না।”
“নয়না জিয়ানের হাত ধরে বলে,উঠুন।”
” জিয়ান সেভাবেই বসে আছে৷”
“নয়না চিৎকার করে বলে,উঠতে বলেছি তো। যেখানে আমার হ্যাসবেন্ডের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়, যেখানে বাড়িতে ডেকে এনে আমার হ্যাসবেন্ডকে অপমান করা হয় সেই বাড়িতে আর এক মূহুর্তের জন্য থাকবো না।সারাজীবনের জন্য এদের আমি ত্যাগ করবো।”

” জিয়ান তার ষোড়শী বৌয়ের দিকে অপলক দৃষ্টি মুগ্ধ নেত্রে তাকিয়ে আছে। তার বাচ্চা বৌটা তার সম্মানের জন্য লড়াই করছে! জীবনে যা হারায় তা হারানোই যেনো মঙ্গল। নয়ত এমন অর্ধাঙ্গিনী কোথায় পেতাম!”

“জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,শান্ত হও সুনয়না৷ আমি তোমার বাবার সাথে একটু কথা বলবো৷”
” কিছু বলতে হবে না। আমার বাবার কাছে তার ভাইয়ের মেয়েই সব৷ থাকুক সে তাদের নিয়ে৷”

“জিয়ান মাহবুব তালুকদারকে উদ্যোগ করে বলল,আঙ্কেল এই বাড়িতে শুধুমাত্র আপনি জানেন আমার জমজ ভাই আছে।আর নীলাঞ্জনাও জানে। ওর মত মেয়ের কাছে এসব করা আহামরি কিছুই না। কারন লজ্জা, বা মানসম্মান কোনটাই নেই ওর। আমি আর নয়না পরশুদিন চট্টগ্রাম ছিলাম। আপনাকে হোটেলের নাম বলছি আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আজকের মত আসি আঙ্কেল। আম্মা ফিরলে নয়নাকে নিয়ে অন্যদিন আসবো।”

“জিয়ান নয়না বের হয়ে গেলো৷

“মিজান তালুকদার মাথা নিচু করে বসে আছে,তার চোখ দুটো অশ্রুত টইটম্বুর পুরুষ না হয়ে মহিলা হলে এতোক্ষণ চিৎকার করে কান্না করতো। মিজান তালুকদার লজ্জিত কন্ঠে বলল,ভাই আমাকে ক্ষমা করে দিও কথায় আছে বাপ ভালো তার ছেলে ভালো, মায়ের গুণে ঝি। আমার মেয়ের মধ্যে এই অসভ্য মহিলার ছায়া দেখতে পাচ্ছি। ঠিক তার মায়ের মত হয়েছে। মানুষ নিজে খারাপ হলেও সন্তানকে ভালো পরামর্শ দেয় আর এই রাক্ষসী মহিলা মেয়েটাকেও শেষ করে ছাড়লো। সাথে আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিলো।”

#চলবে

Dark Mystery পর্ব-০৮

0

#Dark_Mystery (কালো রহস্য)
#Part_8
#Sabrina_Summa

বেডের সামনের সোফায় বসে আছে মাহির আর বেডে হেলান দিয়ে বসে সবকিছু তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে সুপ্তি। আর মাহির দেখছে তাকে।
সুপ্তি গবেষণা বন্ধ করে বললো, ” আমি…………… কোথায়? ” ( ভেঙ্গে ভেঙ্গে )
মাহির এই প্রশ্নটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। সে জানতো এই প্রশ্নটা উঠবেই।
মাহির : আমার বাসায়।
সুপ্তি : আপনার বাসা মানে! এখানে থাকেন?
মাহির : না। মাঝে মাঝে আসি।
সুপ্তি এবার নিজেকে পরুক করে বললো, ” আমি কার পোশাক পড়ে আছি? ”
মাহির : আমার ওয়াইফের।
সুপ্তি : আপনি বিয়ে করলেন কবে? বিয়ে করে বউ লুকিয়ে রেখেছেন, পুরো দেশ জানে আপনি সিঙ্গেল!
মাহির : আমার ফিউচার ওয়াইফের জন্য কিনা ছিল এগুলো। আর পুরো দেশ সত্যিটাই জানে।
সুপ্তি তিরস্কার করে বললো, “যাইহোক একটা প্লে বয় ছেলের বাসায় মেয়েদের জামা থাকবে এটা খুবই নরমাল। ”
মাহির : কী বলতে চাচ্ছো তুমি?
সুপ্তি : যেটা আপনি ভাবছেন!
মাহির : আমি ডেটই করি না আর তো রুম ডেট!
সুপ্তি আস্তে করে বললো, ” আমি রুম ডেটের কথা মিন করি নি। কতটা বাজে মাইন্ডের মানুষ! ”
মাহির গুমড়ো মুখ করে বললো, ” আমি শুনতে পাচ্ছি। ”
সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” কীরে বাবা। আমার মনও এখন জোরে জোরে কথা বলে! ”
মাহির কথা চাবিয়ে চাবিয়ে বললো, ” তোমার মন না তুমিই জোরে কথা বলছো। ”
সুপ্তি অ্যা করে উঠলো।
মাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। সুপ্তি উঠে এসে মাহিরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আমি কি একটু বেশিকিছু করে ফেলেছি?”
মাহির প্রথমে বুঝতে পারলো না পরে যখন বুঝতে পারলো তখন শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বললো, ” হ্যাঁ, তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে। ”
সুপ্তি : তো?
মাহিরের হাসি কিছুক্ষণের জন্য বিলীন হয়ে গেল। তারপর আবার হেসে বললো, ” দেখাবো , কিভাবে ধরে ছিলে? ”
বলেই এগিয়ে যেতে নিলো। তখন সুপ্তি বলে উঠলো, ” না মানে, আমি বলছিলাম আমি কি বেশি বলে ফেলেছি? ”
মাহিরের হাসিটা সম্পূর্ণই বিলীন হয়ে গেল।
এরই মাঝে তানিশা এসে বললো, ” খাবার রেডি। ”
সুপ্তি এখনো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে। কিন্তু মাহির সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত খাবার টেবিলে চলে গেলো।
সুপ্তি খেতে না চাইলেও মাহির ফ্রেন্ড হওয়ার নাম করে খাইয়েছে। শুধু তাই নয় সুপ্তির জন্য একটা সুন্দর ড্রেস সিলেক্ট করে তাকে পড়িয়েছে এবং গিফট করেছে। এরপর তাকে ক্যাম্পাসে ড্রপ করেছে।
আজকের দিনটা ভালোই কাটলো সুপ্তির।।

রাতে.,.

মাহির আর কিছু বডিগার্ড ও মাহিরের এবং মাহফুজ চৌধুরীর এসিস্ট্যান্ট দাঁড়িয়ে আছে মাহফুজ চৌধুরীর বাসার অফিসে। শুধু মাহফুজ চৌধুরী বসে আছে।
এরই মাঝে মিস সিক্রেট ভিতরে প্রবেশ করে বললো, ” আঙ্কেল, আমি এসে পড়েছি……..”
মাহফুজ চৌধুরী : এতক্ষণে!
মিস সিক্রেট আ…. হ্যাঁ। তারপর বললো, ” আচ্ছা কাজের কথা বলো। ”
মাহফুজ চৌধুরী : তোমাকে তাশরিফের সাথে যেতে হবে।
মিস সিক্রেট : কোথায়?
মাহফুজ চৌধুরী জায়গার নাম বলতেই মিস সিক্রেট ভয়ে ভয়ে বললো, ” সেখানে অনেক কবর আছে না? ”
মাহফুজ চৌধুরী : হ্যাঁ।
মিস সিক্রেট : আমি যাবো না।
মাহফুজ চৌধুরী : তোমাকে যেতে হবে। সেখান থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস আনতে হবে। তোমাকে আর তাশরিফকে ছাড়া আমি কাউকে ভরসা করতে পারছি না।
মিস সিক্রেট : আমি যাবো না, আঙ্কেল।
পিছাতে পিছাতে মাহিরের কাছাকাছি চলে গেলো।
মিস সিক্রেট হুডির উপর দিয়েই কানে হাত দিয়ে আছে। সে কাপছে আর ঘামছেও।
মাহির মনে মনে – ” এর আবার কি হলো? এরও দুর্বলতা আছে তাও আবার কবরেই! দুইদিন আগে না গোরস্থানে গেছিলো! ”
মাহফুজ চৌধুরী : প্লিজ…
কথা শেষ করার আগেই মিস সিক্রেট চিৎকার করে বললো, ” আমি যাবো না। ”
বলা শেষ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে নিলো। মাহির তার পাশে থাকা সও্বেও ধরলো না। তবে পড়ার আগেই ইরফান এসে ধরলো।
উপস্থিত সকলে হতভম্ব। মাহফুজ চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বললো, ” ওকে ওর রুমে শুইয়ে দাও।”
নিজের এসিস্ট্যান্টকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” তুমি ডক্টরকে কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বলো। ”
ইরফান মিস সিক্রেটতে তার রুমে শুইয়ে দিলো।
অন্যদিকে মাহির অবাক হয়ে ভাবছে, ” কি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আমার! একই রোগ মানে ট্রমা দুইজনেরই!”
হঠাৎই তার সুপ্তির কথা মনে পড়লো। ফোন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে এখন তাকে ডকুমেন্টস আনতে যেতে হবে। তাই সে কাজেই রওনা দিলো।

ইরফান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিস সিক্রেটের দিকে। তার ৭ বছরের কর্মজীবনে অনেক বার মিস সিক্রেটকে আহত হতে দেখেছে। কয়েকবার তো মরতে মরতেও বেঁচে যেতে দেখেছে। তবে কখনো অজ্ঞান হতে দেখে নি।
মিস সিক্রেটের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে দেখলো৷ মূলত সে পাহাড়া দিচ্ছে মিস সিক্রেটকে। কিছুক্ষণ আগেই ডক্টর এসে দেখে গেছে। এখন ঘুমাচ্ছে মিস সিক্রেট।
ইরফান ইচ্ছে করলেই মিস সিক্রেটের মাস্কটা খুলে চেহারা দেখতে পারে। তবে সে বিশ্বাসঘাতক নই। আর তাছাড়াও এর শাস্তি সম্পর্কে জানে। এখন পর্যন্ত তিনজন মিস সিক্রেটের মুখ দেখেছে। আর সেই তিনজনই এখন উপরে মানে কবরে।
ভাবতে ভাবতেই তার মনে পড়লো আজ সারারাত তাকে জেগে পাহাড়া দিতে হবে।
তাই একজন মেইডকে কফি আনতে বললো।কিছুক্ষণের মাঝেই একজন এসে দিয়ে গেল।
কফির মগে চুমুক দিতে দিতে পুরো রুম একবার তল্লাশি দিয়ে একটা টুলে বসে পড়লো।

#চলবে.,.
(

Dark Mystery পর্ব-০৭

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_7
#Sabrina_Summa

আজ শনিবার। তবে কাজের চাপ আরো বেশি মিস সিক্রেটের। বাধ্য হয়ে তাকে তার সিক্রেট টিমের সাথে দেখা করতে যেতে হচ্ছে। অবশ্য অনেক দিন হয়ে গেছে টিমের সাথে দেখা হয় না।

অন্ধকার একটা রুমে প্রবেশ করলো মিস সিক্রেট। ঝাপসা আলোয় সামনে বসে থাকা ১৫ জনের অবয়ব দেখতে পাচ্ছে সে। তার উপস্থিতি পেতেই লাইট অন করে সবাই দাঁড়িয়ে বললো, ” গুড আফ্টারনুন, ম্যাম।”
মিস সিক্রেট : হুম। সিট ডাউন।
রুমের সবকিছু সাদা। এই সাদা রুমে কালো হুডি ও মাস্ক পড়ে ১৬ জন গোল টেবিলের চারিদিকে বসে আছে। দেখতেই খুব অদ্ভুত লাগছে।
মিস সিক্রেট সকলকে তার পজিশন নাম্বার দিয়ে ডাকে।
নাম্বার ১৩ বলে উঠলো, ” ম্যাম, আমরা কি মাস্ক খুলতে পারি না? ”
মিস সিক্রেট জানে নাম্বার ১৩ নতুন। তাই বেশি কিছু বললো না। তবে কড়া কন্ঠে উত্তর দিলো,” না।”
নাম্বার ১৩: বাট ম্যাম আমরা তো একটা টিম। আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারি না?
মিস সিক্রেট : হ্যাঁ তবে সেটা শুধু কাজের ক্ষেত্রে পরিচয়ের ক্ষেত্রে নই।
সবাই নিরব হয়ে গেলো।
নিরবতা ভেঙে মিস সিক্রেটই বললো,” ফালতু কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসো। খুব বিজি আমি। ”
নাম্বার ১৫ : ম্যাম, কিছু বাহিরের মাফিয়া গ্যাং আমাদের কাছে হেল্প চাচ্ছে!
মিস সিক্রেট : কেন? আই মিন, ভালো কাজে নাকি খারাপ কাজে?
নাম্বার ১১ : খারাপ কাজে।
মিস সিক্রেট পায়ের উপর পা তুলে বললো, ” তাহলে সেই দেশের সরকারকে তাদের সম্পর্কে ইনফরমেশন দিয়ে দাও। ”
নাম্বার ৭ : ভালো কাজের জন্যও চাইছে। কি করবো ম্যাম?
মিস সিক্রেটের কিছুটা রাগ হচ্ছে। এমনিতেই প্রচুর চাপ তার মধ্যে এদের বাচ্চামি প্রশ্ন। এরা সবগুলা কি নতুন। এতদিন তার সাথে কাজ করেও কখন কি করতে হবে তা জানে না!
তবুও মিস সিক্রেট স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” টাকা নিয়ে ইনফরমেশন পাঠিয়ে দিও।”
নাম্বার ৩ : ম্যাম। সবাই তো আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাই!
নাম্বার ৩ এর কথা শেষ হতেই কল আসলো মিস সিক্রেটের ফোনে৷
মিস সিক্রেট : বলে দেবে আমি মানেই তোমরা।
“আজের মতো বাই। খুব বিজি আছি। ”
কল রিসিভ করতে করতে বলে চলে এলো।
ইরফান নিচে গাড়িতে বসে আছে। এই ৭৭ তলা ভবনের কোনো এক তলায় মিস সিক্রেটের আড্ডাখানা। তবে সে কোনোদিন যায় নি সেখানে। খোঁজও করে নি। কারণ সে মিস সিক্রেটকে খুব ভালো করে চিনে!
ভাবনার মাঝেই মিস সিক্রেট গাড়িতে এসে বসলো।
ইরফান চমকে বললো,” ম্যাম, এত তাড়াতাড়ি! ”
মিস সিক্রেট : আর্জেন্ট কল। ( সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে)
ইরফান : কোথায় যাবো?
মিস সিক্রেট : ড্রাইভ করতে থাকো বলছি।

এদিকে মাহির সারাদিন ধরে সুপ্তিকে কল করছে। এরমধ্যে সুপ্তি শুধু একবার কল রিসিভ করছে। বাকিবার মাহির শুধু বন্ধ পেয়েছে না হয় বিজি পেয়েছে।

সূর্য ডুবে গেছে অনেক আগেই। প্রায় নির্জন একটা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্তি। সময় আর কয়টায় বা হবে! হবে হয়তো সাতটা বা আটটা।
পরিবেশ অন্ধকার হলেও কৃত্রিম আলো আছে। হয়তো দেয়ালের পিছনে কোনো বাসা আছে। সেখা থেকেই আলোটা আসছে!
অনেকক্ষণ যাবত কারো জন্য অপেক্ষা করছে সুপ্তি।
হঠাৎ কয়েকটা গাড়ি গেলো তার সামনে দিয়ে। তারই মাঝে একটা গাড়ি পিছিয়ে তার পাশ বরাবর থামলো। বাকি গাড়িগুলো সেই গাড়িটির আগে পিছে থামলো।।
গাড়ি থেকে মাহির নেমে বললো, ” আরে সুপ্তি যে!”
সুপ্তি মাহিরকে দেখেই ভ্রু কুচকালো। এই ছেলেটাকে তার একদম সহ্য হয় না।
মাহির এগিয়ে এসে বললো, ” এত রাতে একা একটা মেয়ে এখাসে কি করে? ”
সুপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো, ” রাত কোথায়? সন্ধ্যে!”
মাহির : ওই একিই হলো। কার জন্য অপেক্ষা করছো?
সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ” আমার ফ্রেন্ডের জন্য। ও এসে পিক করবে। ”
তারপর চোখ সরিয়ে রাস্তার দিকে নিলো৷
মাহির: চলো। আমি পৌঁছে দিয়ে আসি।
সুপ্তি হাত ভাজ করে বললো, ” লাগবে না। ”
মাহিরও হাত ভাজ করে তাকিয়ে রইলো সুপ্তির দিকে আর সুপ্তি রাস্তার দিকে।
কিছুক্ষণ পর মাহির বললো, ” পিছনে গণকবর আছে জানো? ”
সুপ্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, ” গণকবর! ”
মাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
সুপ্তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললো, ” আ-প-নি মি-থ্যে বল-ছে-ন না? ”
মাহির মাথা নাড়িয়ে না বলতেই সুপ্তির কাপনি শুরু হলো। ভয়ে মাহিরের ভাজ করা হাতটা ধরে কাঁপা ঠোঁটে বললো, ” প্লিজ আমাকে এখানে রেখে যাবেন না! আমি মরে যাবো। এরা আমাকে মেরে ফেলবে। ”
মাহির সুপ্তিকে ভালো করে ধরলো। সুপ্তি বলেই যাচ্ছে, ” প্লিজ। প্লিজ রেখে যাবেন না। ওরা আমাকেও মেরে ফেলবে। ”
মাহির সুপ্তিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো, ” না রেখে যাবো না। তুমি শান্ত হও। ”
সুপ্তি রীতিমতো ঘামছে।
মাহির ঘাপড়ে গেলো সুপ্তির এ অবস্থা দেখে। সুপ্তিকে গাড়িতে বসালো।
সুপ্তি মাহিরকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ” আপু, আপু। উঠো না প্লিজ। দেখো না ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমার আপুকে? আপু, উঠো। তোমাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে কেন ওরা? ”
এগুলোই অনর্গল বলে যাচ্ছে। মাহিরও চিন্তায় সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে আছে। কিছুক্ষণ পর সুপ্তি চুপ হয়ে গেল।
মাহিরের মনে হচ্ছে সুপ্তি অজ্ঞান হয়ে গেছে। তাই কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলো। তারপর খেয়াল করলো সুপ্তি ঘুমিয়ে গেছে।
মাহিরের গাড়ি প্রবেশ করলো একটা ডুপ্লেক্স বাড়িতে। এইটা মাহিরের বাড়ি। তার বাবা তাকে গিফট করেছিল।
মাহির ভিতরে এসে নিজের রুমে সুপ্তিকে শুইয়ে দিলো। সার্ভেন্টকে দিয়ে সুপ্তির জামা চেঞ্জ করালো। কারণ সুপ্তি ঘেমে গোসল করে ফেলেছিলো।

রাত এখন প্রায় ১০ টার দিকে।
মাহির সুপ্তির দিকে তাকিয়ে ভাবছে এও কখনো সম্ভব! শুধুমাত্র কবর নামক একটা শব্দ শুনে একটা মানুষ এতটাই পেনিক হয়ে গেলো যে সজ্ঞানেই আর রইলো না!
তানিশা এসে মাহিরের ধ্যান ফিরালো।
তানিশা : ঘুমাবে না?
মাহির সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো, ” কি করে ঘুমাবো। আমার বেডেই তো শুয়ে আছে। ”
তানিশা : তাহলে প্রথমে এনে শুয়ালে কেন এখানে?
মাহির : মাথা কাজ করছিলো না।
তানিশা : চুপচাপ শুয়ে পড়ো অন্যরুমে।
বলেই চলে গেলো।
মাহির কিছুক্ষণ সুপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ” মেয়েটা না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। ”
বলা শেষ করে মাহিরও চলে গেলো।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-০৬

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_6
#Sabrina_Summa

কফিশপের বাহিরে দাঁড়িয়ে সুপ্তি খুব গভীরভাবে কাউকে পর্যবেক্ষণ করছে।
উপযুক্ত সময় মনে করে ভেতরে গিয়ে কফি অর্ডার করলো। কিছুক্ষণ রেসিপশনে দাঁড়িয়ে থেকে একটা ট্রেতে কফি নিয়ে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো। ফলস্বরূপ সাথে সাথেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো। দুইজনই নিজের ড্রেস দেখছে।
সামনে থাকা ব্যক্তিটি বিরক্ত হয়ে কিছু কড়া কথা শুনাতে যাবে আর আগেই সুপ্তিকে দেখে শান্ত গলায় বললো, ” মিস সুপ্তি যে এখানে। ”
সুপ্তি সামনে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে তিরস্কার করে বললো, ” মন্ত্রীর একমাত্র ছেলে তাশরিফ এই নরমাল কফিশপে কি করে! ”
মাহির মুচকি হেসে বললো, ” তাশরিফ না মাহির বলো। ”
সুপ্তি ভ্রুটা আরো একটু কুঁচকে বললো, “কেন? পুরো দেশ আপনাকে তাশরিফ নামে চিনে আমি কেন মাহির বলবো? ”
মাহির : কারণ আমি বলতে বলেছি।
সুপ্তি : হোয়াট ইভার। আমাকে যেতে হবে।
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” এভাবে যাবে!”
সুপ্তি নিজের দিকে তাকালো। হোয়াইট কালারের একটা টপস পড়া ছিল কিন্তু এখন তা কফি কালার ধারণ করেছে।
সুপ্তি মনে মনে বললো, ” ওকে কফি দিয়ে গোসল করাতে এসে তো নিজেই গোসল করে ফেললাম। ”
মাহির সুপ্তির সামনে তুরি বাজিয়ে বললো, ” এই যে। কি এত ভাবছো? ”
সুপ্তি “আমাকে যেতে হবে ” বলেই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু মাহির আটকে দিলো।
মাহির: আজকে আবার কে পিছে লাগলো?
সুপ্তি ভ্রু কুচকে বললো, ” আমি কি চোর যে মানুষ আমার পিছে লাগবে! পড়তে হবে এক্সাম সামনে। ”
মাহির: ওকে ওয়েট।
নিজের জ্যাকেটটা খুলে বললো, ” এটা দিয়ে কভার করো। ”
সুপ্তি : এটা নিতে পারবো না। পরে ফেরত দিবো কিভাবে?
মাহির: কেন ৩১৯ নম্বর কক্ষ। না হয় তোমার কাছেই রেখো।
সুপ্তি জ্যাকেটটা তাড়াতাড়ি পড়ে চলে গেলো।
সুপ্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাহির মনে মনে বললো, ” তুমি নিজ ইচ্ছায় সামনে আসো বারবার নাকি নিয়তি আনে! ”
আরেক কাপ কফি নিয়ে এক কোনার একটা টেবিলে বসে মাস্কটা খুলে বললো, ” আমাকে মাস্ক পড়েও চিনলো কিভাবে?”
তানিশা টিটকারি করে বললো,” হয়তো তোমাকে নিয়ে একটু বেশিই গবেষণা করে ফেলেছে। ”
মাহির: তুমি জানো ও এমন করবে না।
তানিশা একটু সিরিয়াস হয়ে বললো,” তোমার ভয়েস শুনে হয়তো বুঝেছে। ”
মাহির: হয়তো। যাই বলো না কেন এই সুযোগে আবারো দেখা হবে।
তানিশা : কি জ্যাকেটের?
মাহির: হুম।
তানিশা : একটু বেশিই ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছো না ওকে নিয়ে?
মাহির উত্তর না দিয়ে ভাবনার জগতে ডুব দিলো। সত্যিই কি সে একটু বেশিই করছে!

রাত প্রায় ৯ টা। অনেকক্ষণ ধরে মিস সিক্রেট মাহিরের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু মাহির আমছে না।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর মাহির আসলো। মাহির মিস সিক্রেটকে দেখেই ভ্রু কুচকে কিছু বলবে তার আগেই মিস সিক্রেট বলে উঠলো, ” ভালোই তো দিন কাটাচ্ছো, প্লে বয়। ”
মাহির দাঁত কিড়মিড় করে বললো, ” কি বলতে চাচ্ছো? ”
মিস সিক্রেট হেসে জ্যাকেটটা সামনে ধরে বললো, ” এটাই যে কবে এতটা দয়ালু হয়ে গেলে যে জ্যাকেট বিতরণ করছো? ”
জ্যাকেটটার দিকে না তাকিয়েই বললো,” তুমি আমার বডিগার্ড চেঞ্জ করেছো কেন? ”
মিস সিক্রেট : তোমার ভালোর জন্য।
মাহির: নিজের ভালো আমি নিজে বুঝি।
মিস সিক্রেট বিড়বিড় করে বললো, ” সেটা আমি জানিই! কতটা বুঝো! ”
এতক্ষণে জ্যাকেটটা নজরে পড়লো মাহিরের।
মাহির চিন্তিত হয়ে বললো, ” এই জ্যাকেট কোথায় পেলে তুমি?”
মিস সিক্রেট ভ্রু নাচিয়ে বললো,” যাকে দিয়েছিলে তার কাছে। ”
মাহির ভয়ে ভয়ে বললো,” সুপ্তি কোথায়? কি করেছো তুমি ওর সাথে? ”
মিস সিক্রেট শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,” গুম।”
তারপর হাসতে হাসতে চলে গেলো।
মাহির অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো কারণ মিস সিক্রেটকে নিয়ে বিশ্বাস নেই।

রুমে এসে ছোট একটা ডাইরি থেকে একটা নাম্বার তুলে কল করলো ৷
রিসিভ হতেই অপর পাশ থেকে আওয়াজ এলো, ” কে আপনি?”
মাহির: সুপ্তি। আপনি কি সুপ্তি?
সুপ্তি নাম্বারটা একবার দেখলো। সে ভয়েস শুনেই বুঝে গেছে এটা মাহির।
সুপ্তি: হ্যাঁ।
মাহির হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
সুপ্তি: আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
মাহির: তুমি আমাকে চিনেছো?
সুপ্তি : হ্যাঁ। আমার উত্তর টা। মাহির: সেটা গুরুত্বপূর্ণ নই। আগে বলো আমার জ্যাকেট মিস সিক্রেটকে দিয়েছো কেন?
সুপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ” রাস্তায় দেখলাম। তাই ভাবলাম হয়তো আপনার বাসায় যাবে তাই দিয়ে দিলাম।”
মাহির: তুমি এটা ঠিক করো নি।
সুপ্তি : আমার প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু এখনো পাই নি।
মাহির: সেটা পাবেও না।
সুপ্তি বিরক্তিতে ধূর বলেই কল কেটে দিলো।
মাহির বসে বসে ভাবতে লাগলো এটা কি হলো!
নিজের মনে মনে বলতে লাগলো, “মানুষের ভালো চাইলেও তো দেখা যায় মানুষ ভালো বুঝে না। ”

অন্যদিকে.,
সুপ্তি বুঝতেই পারছে না তার নাম্বার মাহির কোথায় পেলো। তার ইনফরমেশন বের করা খুবই ইজি বাট তার নাম্বার অনলাইনে পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কীভাবে পেলো ও?

এদিকে.,.
“এই বোকা মেয়েটা হয়তো এখনো ভেবেই যাচ্ছে আমি নাম্বারটা কোথায় পেলাম। একবার নিজের পার্সটা চেক দিলেই কিন্তু বুঝতে পারে ওর পার্সোনাল মিনি ডাইরি আমার কাছে! ”
বলেই মুচকি হাসলো।

#চলবে.,.
(কেমন লাগছে জানাবেন)

Dark Mystery পর্ব-০৫

0

#Dark_Mystery( কালো রহস্য )
#Part_5
#Sabrina_Summa

মিস সিক্রেটের ফোন বাজতেই কল রিসিভ করে বললো, ” জ্বী আন্ঙ্কেল বলেন। ”
মাহফুজ চৌধুরী : শোনো। মাহির প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে গল্প করছে। তুমি কিছু করো যাতে প্রশিক্ষণটা শেষ করে।
মিস সিক্রেট : আন্ঙ্কেল, আমি বলেছি সকালে কোনো কাজ করবো না।
মাহফুজ চৌধুরী : আমার জন্যও না!
মিস সিক্রেট : আন্ঙ্কেল, আপনি কিন্তু আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছেন!
মাহফুজ চৌধুরী : আমি কিছু জানি না। তুমি না গেলে অন্য কাউকে পাঠাও।
মিস সিক্রেট : আপনার যে ঘাড়ত্যাড়া ছেলে সে যে কারো কথা শুনবে বলে আপনার মনে হয়! আমার কথায় তো সর্বপ্রথম শুনবে না।
মাহফুজ চৌধুরী : তুমি কিন্তু বাহানা বানাচ্ছো। এটা তোমার কাছে আশা করা যায় না!
মিস সিক্রেট : ওকে। পাঠাচ্ছি কাউকে। তবে সময় লাগবে ১০/১৫ মিনিট।
বলেই কল কেটে দিলো।

কেউ দৌড়ে এসে ৩১৯ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
একজন বলে উঠলো, “আরে আরে।”
আগন্তুক তার দিকে ঘুরে ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে কথা না বলার ইশারা করলো।
লোকটি ধীরো কন্ঠে বললো, ” কে তুমি? ”
লোকটির পাশ থেকে মাহির একমনেই বলে ফেললো, ” সুপ্তি ”
সুপ্তি মনে মনে বললো, ” আমি জানতাম তুমি আমার পরিচয় বের করবে। এরজন্যই তোমার সামনে আসতে চাইনি। ”
সুপ্তি না বুঝার ভান করে বললো, ” আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে? ”
মাহির : ইট’স ভেরি ইজি ফর মি।
একটু থেমে আবারো বললো, “কোনো রুমে প্রবেশের পূর্বে নক করতে হয় জানো না? ”
সুপ্তি : আসলে আমাকে কেউ ধাওয়া করছিলো।
মাহির দরজার দিকে যেতে যেতে বললো, ” কে করছিলো? দেখি! ”
সুপ্তি : আরে, আপনি পারবেন না।
মাহির সুপ্তির দিকে ঘুরে বললো, ” তোমার তাই মনে হয়। আমি প্রশিক্ষণ কি শুধু শুধু নেই?
সুপ্তি : আপনি প্রশিক্ষণও নেন! তা কোথায় প্রশিক্ষণ নেন?
মাহির : তুমি কি দেখতে পাও না! একজনের পার্সোনাল প্রশিক্ষণ কক্ষে এসে বলছো কোথায় প্রশিক্ষণ নেন!
সুপ্তি: এটা প্রশিক্ষণ কক্ষ তা তো বুঝাতেই পারছি। কিন্তু আপনি এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন?
মাহির: অবশ্যই।
সুপ্তি অবাক হয়ে বললো, ” শুয়ে শুয়ে? ”
মাহির ভাব নিয়ে বললো, ” আমি পার্ফেক্ট। সো আমার প্র্যাকটিসের দরকার হয় না। ”
সুপ্তি : আর ইউ সিরিয়াস?
মাহির : অফ কোর্স।
কিছু সেকেন্ডের মাঝে মাহির ফ্লোরে পড়ে গেলো।
সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকায়ে বললো, ” আপনার প্রশিক্ষণের দরকার আছে। ”
বলা শেষ করে যেভাবে দৌড়ে এসেছিলো সেভাবেই দৌড়ে চলে গেলো।
প্রশিক্ষক বিড়বিড় করে বললো, ” মেয়েটার দক্ষতা আছে। ”
মাহির কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বিষয়টা বুঝে উঠার পর তার খুব ইগোতে লাগলো।
সুপ্তির আসার কারণকে সফল করে মাহির প্র্যাকটিস শুরু করলো।

সকাল প্রায় পুনে আটটা। আজ সুপ্তি ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে একবার মাহিরের প্রশিক্ষকের কাছে এসেছিলো। সেখান থেকেই এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছে ৷
সুপ্তি খেয়াল করলো মাহির অনেক মেয়ের সাথে ফ্লাটিং করছে।
সুপ্তি বিড়বিড় করে বললো, ” এই ছেলে জীবনে ভালো হবে না। ”
সুপ্তিকে দেখে মাহির এগিয়ে এসে বললো, ” বাহ, বাহ। এখন প্রতিদিনই তোমাকে দেখতে পাওয়া যায়!”
সুপ্তি বিরক্তের ভাব নিয়ে চোখ ঘুরালো।
মাহির : তা এখানে কেন এসেছিলে? আমায় দেখতে! সুপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো, ” মেয়ে মানুষ দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছা করে না!” মাহির : হুম। সুপ্তি: ক্যারেক্টার লেস। মাহির: তুমি বলেছো যখন তাহলে তাইই। সুপ্তির বিরক্তি আরো বাড়লো। মাহির: বললে না তো কেন এসেছিলে? সুপ্তি : আপনার প্রশিক্ষক হিসেবে আমায় হায়ার করতে চেয়েছিলো। মাহির: কিহ্! মজা করছো না?
সুপ্তি : হুম। সুপ্তির এমন সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে মাহির নিজেই কনফিউজড হয়ে গেলো। মাহির: বলা না কেন এসেছিলে? সুপ্তি : আপনার প্রশিক্ষক ডেকেছিলো। মাহির : কেন? সুপ্তি : সেটা আপনি আপনার প্রশিক্ষকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। বলা শেষ করে চলে যেতে নিলে মাহির সুপ্তির বাম হাত ধরে আটকালো। সুপ্তি তাকাতেই বললো, ” আসলে দেখতে চেয়েছিলাম কাটা জায়গাটার কি অবস্থা। সুপ্তি ” ক্যারেক্টার লেস” বলেই হন হনিয়ে চলে গেলো। মাহিরের একটু রাগ হলেও বললো,” এবার তো তোমাকে আমার অবশ্যই লাগবে! ”

মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীকে একটা ছবি পাঠাতেই মাহফুজ চৌধুরী কল করলো। মিস সিক্রেট কল রিসিভ করতেই মাহফুজ চৌধুরী রেগে বললো, ” দিনকে দিন এই ছেলেটা বেশি বুঝছে। ” মিস সিক্রেট মৃদুস্বরে “হুম” বললো। মাহফুজ চৌধুরী : তাশরিফ কি সত্যিই মেয়েদের সাথে এমন করে? মিস সিক্রেট : আমার তথ্যে আপনার সন্দেহ আছে? মাহফুজ চৌধুরী : না। কিন্তু তোমাকেই ওকে ঠিক করতে হবে। মিস সিক্রেট : আন্ঙ্কেল, আমি আগেও বলেছি ও আমাকে সহ্যই করতে পারে না। মাহফুজ চৌধুরী : আমি তোমার কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছি। মিস সিক্রেট : কিন্তু….. মাহফুজ চৌধুরী : কোনো কিন্তু নই প্লিজ। মিস সিক্রেট : ওকে। বাট আমি ওকে ঠিক করার জন্য যা খুশি করতে পারি? মাহফুজ চৌধুরী : আমি ফুল পারমিশন দিচ্ছি। তবে তাশরিফকে শারীরিকভাবে কোনো আঘাত করো না। মিস সিক্রেট : এটা নিয়ে কোনো টেনশন করবেন না। কিন্তু, কাজটা হয়তো আমি অন্য কাউকে দিয়ে করাবো। মাহফুজ চৌধুরী : তুমি করলে ভালো হতো না? মিস সিক্রেট : বিলিভ মি আন্ঙ্কেল। মাহফুজ চৌধুরী : ওকে। মিস সিক্রেট “হুম” বলেই কল কেটে দিলো। সে সবসময় শেষ উক্তি দিতে পছন্দ করে। বলতে গেলে মানুষের মুখের উপর কল কাটতে পছন্দ করে এই আর কি! মিস সিক্রেট মনে মনে বললো,” কাল শুক্রবার। তোমার সাথে ওর দেখা হবে না। আমাকেই কিছু করতে হবে! ” তারপর নিজ কাজে চলে গেলো। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে শুক্রবারে খুব চাপ যাবে তার উপর দিয়ে।

#চলবে.,.