Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 14



Dark Mystery পর্ব-০৮

0

#Dark_Mystery (কালো রহস্য)
#Part_8
#Sabrina_Summa

বেডের সামনের সোফায় বসে আছে মাহির আর বেডে হেলান দিয়ে বসে সবকিছু তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে সুপ্তি। আর মাহির দেখছে তাকে।
সুপ্তি গবেষণা বন্ধ করে বললো, ” আমি…………… কোথায়? ” ( ভেঙ্গে ভেঙ্গে )
মাহির এই প্রশ্নটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। সে জানতো এই প্রশ্নটা উঠবেই।
মাহির : আমার বাসায়।
সুপ্তি : আপনার বাসা মানে! এখানে থাকেন?
মাহির : না। মাঝে মাঝে আসি।
সুপ্তি এবার নিজেকে পরুক করে বললো, ” আমি কার পোশাক পড়ে আছি? ”
মাহির : আমার ওয়াইফের।
সুপ্তি : আপনি বিয়ে করলেন কবে? বিয়ে করে বউ লুকিয়ে রেখেছেন, পুরো দেশ জানে আপনি সিঙ্গেল!
মাহির : আমার ফিউচার ওয়াইফের জন্য কিনা ছিল এগুলো। আর পুরো দেশ সত্যিটাই জানে।
সুপ্তি তিরস্কার করে বললো, “যাইহোক একটা প্লে বয় ছেলের বাসায় মেয়েদের জামা থাকবে এটা খুবই নরমাল। ”
মাহির : কী বলতে চাচ্ছো তুমি?
সুপ্তি : যেটা আপনি ভাবছেন!
মাহির : আমি ডেটই করি না আর তো রুম ডেট!
সুপ্তি আস্তে করে বললো, ” আমি রুম ডেটের কথা মিন করি নি। কতটা বাজে মাইন্ডের মানুষ! ”
মাহির গুমড়ো মুখ করে বললো, ” আমি শুনতে পাচ্ছি। ”
সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” কীরে বাবা। আমার মনও এখন জোরে জোরে কথা বলে! ”
মাহির কথা চাবিয়ে চাবিয়ে বললো, ” তোমার মন না তুমিই জোরে কথা বলছো। ”
সুপ্তি অ্যা করে উঠলো।
মাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। সুপ্তি উঠে এসে মাহিরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আমি কি একটু বেশিকিছু করে ফেলেছি?”
মাহির প্রথমে বুঝতে পারলো না পরে যখন বুঝতে পারলো তখন শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বললো, ” হ্যাঁ, তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে। ”
সুপ্তি : তো?
মাহিরের হাসি কিছুক্ষণের জন্য বিলীন হয়ে গেল। তারপর আবার হেসে বললো, ” দেখাবো , কিভাবে ধরে ছিলে? ”
বলেই এগিয়ে যেতে নিলো। তখন সুপ্তি বলে উঠলো, ” না মানে, আমি বলছিলাম আমি কি বেশি বলে ফেলেছি? ”
মাহিরের হাসিটা সম্পূর্ণই বিলীন হয়ে গেল।
এরই মাঝে তানিশা এসে বললো, ” খাবার রেডি। ”
সুপ্তি এখনো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে। কিন্তু মাহির সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত খাবার টেবিলে চলে গেলো।
সুপ্তি খেতে না চাইলেও মাহির ফ্রেন্ড হওয়ার নাম করে খাইয়েছে। শুধু তাই নয় সুপ্তির জন্য একটা সুন্দর ড্রেস সিলেক্ট করে তাকে পড়িয়েছে এবং গিফট করেছে। এরপর তাকে ক্যাম্পাসে ড্রপ করেছে।
আজকের দিনটা ভালোই কাটলো সুপ্তির।।

রাতে.,.

মাহির আর কিছু বডিগার্ড ও মাহিরের এবং মাহফুজ চৌধুরীর এসিস্ট্যান্ট দাঁড়িয়ে আছে মাহফুজ চৌধুরীর বাসার অফিসে। শুধু মাহফুজ চৌধুরী বসে আছে।
এরই মাঝে মিস সিক্রেট ভিতরে প্রবেশ করে বললো, ” আঙ্কেল, আমি এসে পড়েছি……..”
মাহফুজ চৌধুরী : এতক্ষণে!
মিস সিক্রেট আ…. হ্যাঁ। তারপর বললো, ” আচ্ছা কাজের কথা বলো। ”
মাহফুজ চৌধুরী : তোমাকে তাশরিফের সাথে যেতে হবে।
মিস সিক্রেট : কোথায়?
মাহফুজ চৌধুরী জায়গার নাম বলতেই মিস সিক্রেট ভয়ে ভয়ে বললো, ” সেখানে অনেক কবর আছে না? ”
মাহফুজ চৌধুরী : হ্যাঁ।
মিস সিক্রেট : আমি যাবো না।
মাহফুজ চৌধুরী : তোমাকে যেতে হবে। সেখান থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস আনতে হবে। তোমাকে আর তাশরিফকে ছাড়া আমি কাউকে ভরসা করতে পারছি না।
মিস সিক্রেট : আমি যাবো না, আঙ্কেল।
পিছাতে পিছাতে মাহিরের কাছাকাছি চলে গেলো।
মিস সিক্রেট হুডির উপর দিয়েই কানে হাত দিয়ে আছে। সে কাপছে আর ঘামছেও।
মাহির মনে মনে – ” এর আবার কি হলো? এরও দুর্বলতা আছে তাও আবার কবরেই! দুইদিন আগে না গোরস্থানে গেছিলো! ”
মাহফুজ চৌধুরী : প্লিজ…
কথা শেষ করার আগেই মিস সিক্রেট চিৎকার করে বললো, ” আমি যাবো না। ”
বলা শেষ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে নিলো। মাহির তার পাশে থাকা সও্বেও ধরলো না। তবে পড়ার আগেই ইরফান এসে ধরলো।
উপস্থিত সকলে হতভম্ব। মাহফুজ চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বললো, ” ওকে ওর রুমে শুইয়ে দাও।”
নিজের এসিস্ট্যান্টকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” তুমি ডক্টরকে কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বলো। ”
ইরফান মিস সিক্রেটতে তার রুমে শুইয়ে দিলো।
অন্যদিকে মাহির অবাক হয়ে ভাবছে, ” কি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আমার! একই রোগ মানে ট্রমা দুইজনেরই!”
হঠাৎই তার সুপ্তির কথা মনে পড়লো। ফোন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে এখন তাকে ডকুমেন্টস আনতে যেতে হবে। তাই সে কাজেই রওনা দিলো।

ইরফান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিস সিক্রেটের দিকে। তার ৭ বছরের কর্মজীবনে অনেক বার মিস সিক্রেটকে আহত হতে দেখেছে। কয়েকবার তো মরতে মরতেও বেঁচে যেতে দেখেছে। তবে কখনো অজ্ঞান হতে দেখে নি।
মিস সিক্রেটের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে দেখলো৷ মূলত সে পাহাড়া দিচ্ছে মিস সিক্রেটকে। কিছুক্ষণ আগেই ডক্টর এসে দেখে গেছে। এখন ঘুমাচ্ছে মিস সিক্রেট।
ইরফান ইচ্ছে করলেই মিস সিক্রেটের মাস্কটা খুলে চেহারা দেখতে পারে। তবে সে বিশ্বাসঘাতক নই। আর তাছাড়াও এর শাস্তি সম্পর্কে জানে। এখন পর্যন্ত তিনজন মিস সিক্রেটের মুখ দেখেছে। আর সেই তিনজনই এখন উপরে মানে কবরে।
ভাবতে ভাবতেই তার মনে পড়লো আজ সারারাত তাকে জেগে পাহাড়া দিতে হবে।
তাই একজন মেইডকে কফি আনতে বললো।কিছুক্ষণের মাঝেই একজন এসে দিয়ে গেল।
কফির মগে চুমুক দিতে দিতে পুরো রুম একবার তল্লাশি দিয়ে একটা টুলে বসে পড়লো।

#চলবে.,.
(

Dark Mystery পর্ব-০৭

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_7
#Sabrina_Summa

আজ শনিবার। তবে কাজের চাপ আরো বেশি মিস সিক্রেটের। বাধ্য হয়ে তাকে তার সিক্রেট টিমের সাথে দেখা করতে যেতে হচ্ছে। অবশ্য অনেক দিন হয়ে গেছে টিমের সাথে দেখা হয় না।

অন্ধকার একটা রুমে প্রবেশ করলো মিস সিক্রেট। ঝাপসা আলোয় সামনে বসে থাকা ১৫ জনের অবয়ব দেখতে পাচ্ছে সে। তার উপস্থিতি পেতেই লাইট অন করে সবাই দাঁড়িয়ে বললো, ” গুড আফ্টারনুন, ম্যাম।”
মিস সিক্রেট : হুম। সিট ডাউন।
রুমের সবকিছু সাদা। এই সাদা রুমে কালো হুডি ও মাস্ক পড়ে ১৬ জন গোল টেবিলের চারিদিকে বসে আছে। দেখতেই খুব অদ্ভুত লাগছে।
মিস সিক্রেট সকলকে তার পজিশন নাম্বার দিয়ে ডাকে।
নাম্বার ১৩ বলে উঠলো, ” ম্যাম, আমরা কি মাস্ক খুলতে পারি না? ”
মিস সিক্রেট জানে নাম্বার ১৩ নতুন। তাই বেশি কিছু বললো না। তবে কড়া কন্ঠে উত্তর দিলো,” না।”
নাম্বার ১৩: বাট ম্যাম আমরা তো একটা টিম। আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারি না?
মিস সিক্রেট : হ্যাঁ তবে সেটা শুধু কাজের ক্ষেত্রে পরিচয়ের ক্ষেত্রে নই।
সবাই নিরব হয়ে গেলো।
নিরবতা ভেঙে মিস সিক্রেটই বললো,” ফালতু কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসো। খুব বিজি আমি। ”
নাম্বার ১৫ : ম্যাম, কিছু বাহিরের মাফিয়া গ্যাং আমাদের কাছে হেল্প চাচ্ছে!
মিস সিক্রেট : কেন? আই মিন, ভালো কাজে নাকি খারাপ কাজে?
নাম্বার ১১ : খারাপ কাজে।
মিস সিক্রেট পায়ের উপর পা তুলে বললো, ” তাহলে সেই দেশের সরকারকে তাদের সম্পর্কে ইনফরমেশন দিয়ে দাও। ”
নাম্বার ৭ : ভালো কাজের জন্যও চাইছে। কি করবো ম্যাম?
মিস সিক্রেটের কিছুটা রাগ হচ্ছে। এমনিতেই প্রচুর চাপ তার মধ্যে এদের বাচ্চামি প্রশ্ন। এরা সবগুলা কি নতুন। এতদিন তার সাথে কাজ করেও কখন কি করতে হবে তা জানে না!
তবুও মিস সিক্রেট স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” টাকা নিয়ে ইনফরমেশন পাঠিয়ে দিও।”
নাম্বার ৩ : ম্যাম। সবাই তো আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাই!
নাম্বার ৩ এর কথা শেষ হতেই কল আসলো মিস সিক্রেটের ফোনে৷
মিস সিক্রেট : বলে দেবে আমি মানেই তোমরা।
“আজের মতো বাই। খুব বিজি আছি। ”
কল রিসিভ করতে করতে বলে চলে এলো।
ইরফান নিচে গাড়িতে বসে আছে। এই ৭৭ তলা ভবনের কোনো এক তলায় মিস সিক্রেটের আড্ডাখানা। তবে সে কোনোদিন যায় নি সেখানে। খোঁজও করে নি। কারণ সে মিস সিক্রেটকে খুব ভালো করে চিনে!
ভাবনার মাঝেই মিস সিক্রেট গাড়িতে এসে বসলো।
ইরফান চমকে বললো,” ম্যাম, এত তাড়াতাড়ি! ”
মিস সিক্রেট : আর্জেন্ট কল। ( সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে)
ইরফান : কোথায় যাবো?
মিস সিক্রেট : ড্রাইভ করতে থাকো বলছি।

এদিকে মাহির সারাদিন ধরে সুপ্তিকে কল করছে। এরমধ্যে সুপ্তি শুধু একবার কল রিসিভ করছে। বাকিবার মাহির শুধু বন্ধ পেয়েছে না হয় বিজি পেয়েছে।

সূর্য ডুবে গেছে অনেক আগেই। প্রায় নির্জন একটা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্তি। সময় আর কয়টায় বা হবে! হবে হয়তো সাতটা বা আটটা।
পরিবেশ অন্ধকার হলেও কৃত্রিম আলো আছে। হয়তো দেয়ালের পিছনে কোনো বাসা আছে। সেখা থেকেই আলোটা আসছে!
অনেকক্ষণ যাবত কারো জন্য অপেক্ষা করছে সুপ্তি।
হঠাৎ কয়েকটা গাড়ি গেলো তার সামনে দিয়ে। তারই মাঝে একটা গাড়ি পিছিয়ে তার পাশ বরাবর থামলো। বাকি গাড়িগুলো সেই গাড়িটির আগে পিছে থামলো।।
গাড়ি থেকে মাহির নেমে বললো, ” আরে সুপ্তি যে!”
সুপ্তি মাহিরকে দেখেই ভ্রু কুচকালো। এই ছেলেটাকে তার একদম সহ্য হয় না।
মাহির এগিয়ে এসে বললো, ” এত রাতে একা একটা মেয়ে এখাসে কি করে? ”
সুপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো, ” রাত কোথায়? সন্ধ্যে!”
মাহির : ওই একিই হলো। কার জন্য অপেক্ষা করছো?
সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ” আমার ফ্রেন্ডের জন্য। ও এসে পিক করবে। ”
তারপর চোখ সরিয়ে রাস্তার দিকে নিলো৷
মাহির: চলো। আমি পৌঁছে দিয়ে আসি।
সুপ্তি হাত ভাজ করে বললো, ” লাগবে না। ”
মাহিরও হাত ভাজ করে তাকিয়ে রইলো সুপ্তির দিকে আর সুপ্তি রাস্তার দিকে।
কিছুক্ষণ পর মাহির বললো, ” পিছনে গণকবর আছে জানো? ”
সুপ্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, ” গণকবর! ”
মাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
সুপ্তি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললো, ” আ-প-নি মি-থ্যে বল-ছে-ন না? ”
মাহির মাথা নাড়িয়ে না বলতেই সুপ্তির কাপনি শুরু হলো। ভয়ে মাহিরের ভাজ করা হাতটা ধরে কাঁপা ঠোঁটে বললো, ” প্লিজ আমাকে এখানে রেখে যাবেন না! আমি মরে যাবো। এরা আমাকে মেরে ফেলবে। ”
মাহির সুপ্তিকে ভালো করে ধরলো। সুপ্তি বলেই যাচ্ছে, ” প্লিজ। প্লিজ রেখে যাবেন না। ওরা আমাকেও মেরে ফেলবে। ”
মাহির সুপ্তিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো, ” না রেখে যাবো না। তুমি শান্ত হও। ”
সুপ্তি রীতিমতো ঘামছে।
মাহির ঘাপড়ে গেলো সুপ্তির এ অবস্থা দেখে। সুপ্তিকে গাড়িতে বসালো।
সুপ্তি মাহিরকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ” আপু, আপু। উঠো না প্লিজ। দেখো না ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমার আপুকে? আপু, উঠো। তোমাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে কেন ওরা? ”
এগুলোই অনর্গল বলে যাচ্ছে। মাহিরও চিন্তায় সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে আছে। কিছুক্ষণ পর সুপ্তি চুপ হয়ে গেল।
মাহিরের মনে হচ্ছে সুপ্তি অজ্ঞান হয়ে গেছে। তাই কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলো। তারপর খেয়াল করলো সুপ্তি ঘুমিয়ে গেছে।
মাহিরের গাড়ি প্রবেশ করলো একটা ডুপ্লেক্স বাড়িতে। এইটা মাহিরের বাড়ি। তার বাবা তাকে গিফট করেছিল।
মাহির ভিতরে এসে নিজের রুমে সুপ্তিকে শুইয়ে দিলো। সার্ভেন্টকে দিয়ে সুপ্তির জামা চেঞ্জ করালো। কারণ সুপ্তি ঘেমে গোসল করে ফেলেছিলো।

রাত এখন প্রায় ১০ টার দিকে।
মাহির সুপ্তির দিকে তাকিয়ে ভাবছে এও কখনো সম্ভব! শুধুমাত্র কবর নামক একটা শব্দ শুনে একটা মানুষ এতটাই পেনিক হয়ে গেলো যে সজ্ঞানেই আর রইলো না!
তানিশা এসে মাহিরের ধ্যান ফিরালো।
তানিশা : ঘুমাবে না?
মাহির সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো, ” কি করে ঘুমাবো। আমার বেডেই তো শুয়ে আছে। ”
তানিশা : তাহলে প্রথমে এনে শুয়ালে কেন এখানে?
মাহির : মাথা কাজ করছিলো না।
তানিশা : চুপচাপ শুয়ে পড়ো অন্যরুমে।
বলেই চলে গেলো।
মাহির কিছুক্ষণ সুপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ” মেয়েটা না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। ”
বলা শেষ করে মাহিরও চলে গেলো।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-০৬

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_6
#Sabrina_Summa

কফিশপের বাহিরে দাঁড়িয়ে সুপ্তি খুব গভীরভাবে কাউকে পর্যবেক্ষণ করছে।
উপযুক্ত সময় মনে করে ভেতরে গিয়ে কফি অর্ডার করলো। কিছুক্ষণ রেসিপশনে দাঁড়িয়ে থেকে একটা ট্রেতে কফি নিয়ে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো। ফলস্বরূপ সাথে সাথেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো। দুইজনই নিজের ড্রেস দেখছে।
সামনে থাকা ব্যক্তিটি বিরক্ত হয়ে কিছু কড়া কথা শুনাতে যাবে আর আগেই সুপ্তিকে দেখে শান্ত গলায় বললো, ” মিস সুপ্তি যে এখানে। ”
সুপ্তি সামনে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে তিরস্কার করে বললো, ” মন্ত্রীর একমাত্র ছেলে তাশরিফ এই নরমাল কফিশপে কি করে! ”
মাহির মুচকি হেসে বললো, ” তাশরিফ না মাহির বলো। ”
সুপ্তি ভ্রুটা আরো একটু কুঁচকে বললো, “কেন? পুরো দেশ আপনাকে তাশরিফ নামে চিনে আমি কেন মাহির বলবো? ”
মাহির : কারণ আমি বলতে বলেছি।
সুপ্তি : হোয়াট ইভার। আমাকে যেতে হবে।
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” এভাবে যাবে!”
সুপ্তি নিজের দিকে তাকালো। হোয়াইট কালারের একটা টপস পড়া ছিল কিন্তু এখন তা কফি কালার ধারণ করেছে।
সুপ্তি মনে মনে বললো, ” ওকে কফি দিয়ে গোসল করাতে এসে তো নিজেই গোসল করে ফেললাম। ”
মাহির সুপ্তির সামনে তুরি বাজিয়ে বললো, ” এই যে। কি এত ভাবছো? ”
সুপ্তি “আমাকে যেতে হবে ” বলেই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু মাহির আটকে দিলো।
মাহির: আজকে আবার কে পিছে লাগলো?
সুপ্তি ভ্রু কুচকে বললো, ” আমি কি চোর যে মানুষ আমার পিছে লাগবে! পড়তে হবে এক্সাম সামনে। ”
মাহির: ওকে ওয়েট।
নিজের জ্যাকেটটা খুলে বললো, ” এটা দিয়ে কভার করো। ”
সুপ্তি : এটা নিতে পারবো না। পরে ফেরত দিবো কিভাবে?
মাহির: কেন ৩১৯ নম্বর কক্ষ। না হয় তোমার কাছেই রেখো।
সুপ্তি জ্যাকেটটা তাড়াতাড়ি পড়ে চলে গেলো।
সুপ্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাহির মনে মনে বললো, ” তুমি নিজ ইচ্ছায় সামনে আসো বারবার নাকি নিয়তি আনে! ”
আরেক কাপ কফি নিয়ে এক কোনার একটা টেবিলে বসে মাস্কটা খুলে বললো, ” আমাকে মাস্ক পড়েও চিনলো কিভাবে?”
তানিশা টিটকারি করে বললো,” হয়তো তোমাকে নিয়ে একটু বেশিই গবেষণা করে ফেলেছে। ”
মাহির: তুমি জানো ও এমন করবে না।
তানিশা একটু সিরিয়াস হয়ে বললো,” তোমার ভয়েস শুনে হয়তো বুঝেছে। ”
মাহির: হয়তো। যাই বলো না কেন এই সুযোগে আবারো দেখা হবে।
তানিশা : কি জ্যাকেটের?
মাহির: হুম।
তানিশা : একটু বেশিই ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছো না ওকে নিয়ে?
মাহির উত্তর না দিয়ে ভাবনার জগতে ডুব দিলো। সত্যিই কি সে একটু বেশিই করছে!

রাত প্রায় ৯ টা। অনেকক্ষণ ধরে মিস সিক্রেট মাহিরের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু মাহির আমছে না।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর মাহির আসলো। মাহির মিস সিক্রেটকে দেখেই ভ্রু কুচকে কিছু বলবে তার আগেই মিস সিক্রেট বলে উঠলো, ” ভালোই তো দিন কাটাচ্ছো, প্লে বয়। ”
মাহির দাঁত কিড়মিড় করে বললো, ” কি বলতে চাচ্ছো? ”
মিস সিক্রেট হেসে জ্যাকেটটা সামনে ধরে বললো, ” এটাই যে কবে এতটা দয়ালু হয়ে গেলে যে জ্যাকেট বিতরণ করছো? ”
জ্যাকেটটার দিকে না তাকিয়েই বললো,” তুমি আমার বডিগার্ড চেঞ্জ করেছো কেন? ”
মিস সিক্রেট : তোমার ভালোর জন্য।
মাহির: নিজের ভালো আমি নিজে বুঝি।
মিস সিক্রেট বিড়বিড় করে বললো, ” সেটা আমি জানিই! কতটা বুঝো! ”
এতক্ষণে জ্যাকেটটা নজরে পড়লো মাহিরের।
মাহির চিন্তিত হয়ে বললো, ” এই জ্যাকেট কোথায় পেলে তুমি?”
মিস সিক্রেট ভ্রু নাচিয়ে বললো,” যাকে দিয়েছিলে তার কাছে। ”
মাহির ভয়ে ভয়ে বললো,” সুপ্তি কোথায়? কি করেছো তুমি ওর সাথে? ”
মিস সিক্রেট শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,” গুম।”
তারপর হাসতে হাসতে চলে গেলো।
মাহির অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো কারণ মিস সিক্রেটকে নিয়ে বিশ্বাস নেই।

রুমে এসে ছোট একটা ডাইরি থেকে একটা নাম্বার তুলে কল করলো ৷
রিসিভ হতেই অপর পাশ থেকে আওয়াজ এলো, ” কে আপনি?”
মাহির: সুপ্তি। আপনি কি সুপ্তি?
সুপ্তি নাম্বারটা একবার দেখলো। সে ভয়েস শুনেই বুঝে গেছে এটা মাহির।
সুপ্তি: হ্যাঁ।
মাহির হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
সুপ্তি: আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
মাহির: তুমি আমাকে চিনেছো?
সুপ্তি : হ্যাঁ। আমার উত্তর টা। মাহির: সেটা গুরুত্বপূর্ণ নই। আগে বলো আমার জ্যাকেট মিস সিক্রেটকে দিয়েছো কেন?
সুপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ” রাস্তায় দেখলাম। তাই ভাবলাম হয়তো আপনার বাসায় যাবে তাই দিয়ে দিলাম।”
মাহির: তুমি এটা ঠিক করো নি।
সুপ্তি : আমার প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু এখনো পাই নি।
মাহির: সেটা পাবেও না।
সুপ্তি বিরক্তিতে ধূর বলেই কল কেটে দিলো।
মাহির বসে বসে ভাবতে লাগলো এটা কি হলো!
নিজের মনে মনে বলতে লাগলো, “মানুষের ভালো চাইলেও তো দেখা যায় মানুষ ভালো বুঝে না। ”

অন্যদিকে.,
সুপ্তি বুঝতেই পারছে না তার নাম্বার মাহির কোথায় পেলো। তার ইনফরমেশন বের করা খুবই ইজি বাট তার নাম্বার অনলাইনে পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কীভাবে পেলো ও?

এদিকে.,.
“এই বোকা মেয়েটা হয়তো এখনো ভেবেই যাচ্ছে আমি নাম্বারটা কোথায় পেলাম। একবার নিজের পার্সটা চেক দিলেই কিন্তু বুঝতে পারে ওর পার্সোনাল মিনি ডাইরি আমার কাছে! ”
বলেই মুচকি হাসলো।

#চলবে.,.
(কেমন লাগছে জানাবেন)

Dark Mystery পর্ব-০৫

0

#Dark_Mystery( কালো রহস্য )
#Part_5
#Sabrina_Summa

মিস সিক্রেটের ফোন বাজতেই কল রিসিভ করে বললো, ” জ্বী আন্ঙ্কেল বলেন। ”
মাহফুজ চৌধুরী : শোনো। মাহির প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে গল্প করছে। তুমি কিছু করো যাতে প্রশিক্ষণটা শেষ করে।
মিস সিক্রেট : আন্ঙ্কেল, আমি বলেছি সকালে কোনো কাজ করবো না।
মাহফুজ চৌধুরী : আমার জন্যও না!
মিস সিক্রেট : আন্ঙ্কেল, আপনি কিন্তু আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছেন!
মাহফুজ চৌধুরী : আমি কিছু জানি না। তুমি না গেলে অন্য কাউকে পাঠাও।
মিস সিক্রেট : আপনার যে ঘাড়ত্যাড়া ছেলে সে যে কারো কথা শুনবে বলে আপনার মনে হয়! আমার কথায় তো সর্বপ্রথম শুনবে না।
মাহফুজ চৌধুরী : তুমি কিন্তু বাহানা বানাচ্ছো। এটা তোমার কাছে আশা করা যায় না!
মিস সিক্রেট : ওকে। পাঠাচ্ছি কাউকে। তবে সময় লাগবে ১০/১৫ মিনিট।
বলেই কল কেটে দিলো।

কেউ দৌড়ে এসে ৩১৯ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
একজন বলে উঠলো, “আরে আরে।”
আগন্তুক তার দিকে ঘুরে ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে কথা না বলার ইশারা করলো।
লোকটি ধীরো কন্ঠে বললো, ” কে তুমি? ”
লোকটির পাশ থেকে মাহির একমনেই বলে ফেললো, ” সুপ্তি ”
সুপ্তি মনে মনে বললো, ” আমি জানতাম তুমি আমার পরিচয় বের করবে। এরজন্যই তোমার সামনে আসতে চাইনি। ”
সুপ্তি না বুঝার ভান করে বললো, ” আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে? ”
মাহির : ইট’স ভেরি ইজি ফর মি।
একটু থেমে আবারো বললো, “কোনো রুমে প্রবেশের পূর্বে নক করতে হয় জানো না? ”
সুপ্তি : আসলে আমাকে কেউ ধাওয়া করছিলো।
মাহির দরজার দিকে যেতে যেতে বললো, ” কে করছিলো? দেখি! ”
সুপ্তি : আরে, আপনি পারবেন না।
মাহির সুপ্তির দিকে ঘুরে বললো, ” তোমার তাই মনে হয়। আমি প্রশিক্ষণ কি শুধু শুধু নেই?
সুপ্তি : আপনি প্রশিক্ষণও নেন! তা কোথায় প্রশিক্ষণ নেন?
মাহির : তুমি কি দেখতে পাও না! একজনের পার্সোনাল প্রশিক্ষণ কক্ষে এসে বলছো কোথায় প্রশিক্ষণ নেন!
সুপ্তি: এটা প্রশিক্ষণ কক্ষ তা তো বুঝাতেই পারছি। কিন্তু আপনি এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন?
মাহির: অবশ্যই।
সুপ্তি অবাক হয়ে বললো, ” শুয়ে শুয়ে? ”
মাহির ভাব নিয়ে বললো, ” আমি পার্ফেক্ট। সো আমার প্র্যাকটিসের দরকার হয় না। ”
সুপ্তি : আর ইউ সিরিয়াস?
মাহির : অফ কোর্স।
কিছু সেকেন্ডের মাঝে মাহির ফ্লোরে পড়ে গেলো।
সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকায়ে বললো, ” আপনার প্রশিক্ষণের দরকার আছে। ”
বলা শেষ করে যেভাবে দৌড়ে এসেছিলো সেভাবেই দৌড়ে চলে গেলো।
প্রশিক্ষক বিড়বিড় করে বললো, ” মেয়েটার দক্ষতা আছে। ”
মাহির কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বিষয়টা বুঝে উঠার পর তার খুব ইগোতে লাগলো।
সুপ্তির আসার কারণকে সফল করে মাহির প্র্যাকটিস শুরু করলো।

সকাল প্রায় পুনে আটটা। আজ সুপ্তি ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে একবার মাহিরের প্রশিক্ষকের কাছে এসেছিলো। সেখান থেকেই এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছে ৷
সুপ্তি খেয়াল করলো মাহির অনেক মেয়ের সাথে ফ্লাটিং করছে।
সুপ্তি বিড়বিড় করে বললো, ” এই ছেলে জীবনে ভালো হবে না। ”
সুপ্তিকে দেখে মাহির এগিয়ে এসে বললো, ” বাহ, বাহ। এখন প্রতিদিনই তোমাকে দেখতে পাওয়া যায়!”
সুপ্তি বিরক্তের ভাব নিয়ে চোখ ঘুরালো।
মাহির : তা এখানে কেন এসেছিলে? আমায় দেখতে! সুপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো, ” মেয়ে মানুষ দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছা করে না!” মাহির : হুম। সুপ্তি: ক্যারেক্টার লেস। মাহির: তুমি বলেছো যখন তাহলে তাইই। সুপ্তির বিরক্তি আরো বাড়লো। মাহির: বললে না তো কেন এসেছিলে? সুপ্তি : আপনার প্রশিক্ষক হিসেবে আমায় হায়ার করতে চেয়েছিলো। মাহির: কিহ্! মজা করছো না?
সুপ্তি : হুম। সুপ্তির এমন সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে মাহির নিজেই কনফিউজড হয়ে গেলো। মাহির: বলা না কেন এসেছিলে? সুপ্তি : আপনার প্রশিক্ষক ডেকেছিলো। মাহির : কেন? সুপ্তি : সেটা আপনি আপনার প্রশিক্ষকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। বলা শেষ করে চলে যেতে নিলে মাহির সুপ্তির বাম হাত ধরে আটকালো। সুপ্তি তাকাতেই বললো, ” আসলে দেখতে চেয়েছিলাম কাটা জায়গাটার কি অবস্থা। সুপ্তি ” ক্যারেক্টার লেস” বলেই হন হনিয়ে চলে গেলো। মাহিরের একটু রাগ হলেও বললো,” এবার তো তোমাকে আমার অবশ্যই লাগবে! ”

মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীকে একটা ছবি পাঠাতেই মাহফুজ চৌধুরী কল করলো। মিস সিক্রেট কল রিসিভ করতেই মাহফুজ চৌধুরী রেগে বললো, ” দিনকে দিন এই ছেলেটা বেশি বুঝছে। ” মিস সিক্রেট মৃদুস্বরে “হুম” বললো। মাহফুজ চৌধুরী : তাশরিফ কি সত্যিই মেয়েদের সাথে এমন করে? মিস সিক্রেট : আমার তথ্যে আপনার সন্দেহ আছে? মাহফুজ চৌধুরী : না। কিন্তু তোমাকেই ওকে ঠিক করতে হবে। মিস সিক্রেট : আন্ঙ্কেল, আমি আগেও বলেছি ও আমাকে সহ্যই করতে পারে না। মাহফুজ চৌধুরী : আমি তোমার কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছি। মিস সিক্রেট : কিন্তু….. মাহফুজ চৌধুরী : কোনো কিন্তু নই প্লিজ। মিস সিক্রেট : ওকে। বাট আমি ওকে ঠিক করার জন্য যা খুশি করতে পারি? মাহফুজ চৌধুরী : আমি ফুল পারমিশন দিচ্ছি। তবে তাশরিফকে শারীরিকভাবে কোনো আঘাত করো না। মিস সিক্রেট : এটা নিয়ে কোনো টেনশন করবেন না। কিন্তু, কাজটা হয়তো আমি অন্য কাউকে দিয়ে করাবো। মাহফুজ চৌধুরী : তুমি করলে ভালো হতো না? মিস সিক্রেট : বিলিভ মি আন্ঙ্কেল। মাহফুজ চৌধুরী : ওকে। মিস সিক্রেট “হুম” বলেই কল কেটে দিলো। সে সবসময় শেষ উক্তি দিতে পছন্দ করে। বলতে গেলে মানুষের মুখের উপর কল কাটতে পছন্দ করে এই আর কি! মিস সিক্রেট মনে মনে বললো,” কাল শুক্রবার। তোমার সাথে ওর দেখা হবে না। আমাকেই কিছু করতে হবে! ” তারপর নিজ কাজে চলে গেলো। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে শুক্রবারে খুব চাপ যাবে তার উপর দিয়ে।

#চলবে.,.

Dark Mystery পর্ব-০৪

0

#Dark_Mystery( কালো রহস্য )
#Part_4
#Sabrina_Summa

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাইকেল চলার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে মাহির চৌধুরী অরপে তাশরিফের গাড়ি। ভুল করে ড্রাইভার এদিক দিয়ে ঢুকে পড়েছে। ফলস্বরূপ খুব বেকায়দায় আছে তারা। কারণ রাস্তাটা খুব সরু।
রাস্তার পাশে মানুষের ভিড় জমছে কারণ কারোরই বুঝার বাকি নেই গাড়িটা কার।
হঠাৎই একটা মেয়ে গাড়ির সামনে এসে পড়লো।
সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করলো।
মূলত মেয়েটি সকলের ধাক্কায় গাড়ির সামনে এসে পড়েছে৷
মাহির গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটির কাছে এলো। তারপর মেয়েটার হাত ধরে বললো, ” দেখি দেখি কতটা কাটলো? ”
মেয়েটা ঝাপটা মেরে মাহিরের হাত সরিয়ে দিলো। তারপর নিজের হাতের দিকে তাকালো।
বাম হাতের তালুতে ভালোই কেটে গেছে। রক্তও পড়ছে৷
আসলে গাড়িটা ধীরেই চলছিলো কিন্তু সমস্যাটা হলো গাড়ির সামনে থাকা কোনো ধারালো জিনিস। মেয়েটা কিছুক্ষণ খুঁজেও বুঝতে পারলো না কোথায় ফ্যাস লেগে কেটেছে।
মেয়েটা বিরক্ত নিয়ে বললো, ” আপনার ড্রাইভার কি চোখ কপালে নিয়ে ঘুরে? ”
মাহির : তুমি কি চোখ কপালে নিয়ে ঘুরো?
মেয়েটা আরও বেশি বিরক্ত পোষণ করে বললো, ” এখন সব দোষ আমার না! আপনি এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ”
মাহির মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,” এরজন্য সরি। ভুল করে ঢুকে পড়েছি। ”
ঝামেলা দেখে মাহিরের এসিস্ট্যান্ট তানিশা এগিয়ে আসলো।
মাহির আবারো মেয়েটার হাত ধরতে ধরতে বললো, “তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করা প্রয়োজন। ”
মেয়েটা দূরে সরে গিয়ে বললো, ” নিজের কেয়ার নিজে করতে পারি। ”
বলা শেষ করে রাস্তার পাশে মাঠের একটা গাছের দিকে হাঁটা দিলো।
মেয়েটা বিড়বিড় করে বললো, ” যেখানে বাঘের ভয় সেখানে গিয়েই সন্ধ্যা হয়। আমি তোমার সামনে আসতে চাইনি! ”
মাহির মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছে।
গাছের নিচে তিনটে ছেলে একটা মেয়েকে রেগিং করছে।
মেয়েটা ভ্রূ নামিয়ে বললো, ” এখানে কি চলছে? ”
তিনটে ছেলের মধ্যে থেকে একজন বললো,” রেগিং”
মেয়েটা : রেগিং! কোন ইয়ার শুনি?

থার্ড
মেয়েটা : আর আমি ফোর্থ। এখন যদি আমি রেগিং করি তখন।

এইডারে আগে দেখছোস ক্যাম্পাসে?

যাই বল। মালডা কিন্তু সেই!
বলা শেষ করতেই মেয়েটা জোরে করে থাপ্পড় মারলো ছেলেটাকে। ছেলেটা ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলো।
মাহির ভাবছে এখন তার সেখানে গিয়ে এগুলো থামানো উচিৎ।
কিন্তু তার আগেই আরেকটা ছেলে এগিয়ে আসতেই মেয়েটা ছেলেটার মেইন পার্টে লাথি মারলো। ফলে ছেলেটিও বসে পড়লো মাটিতে।
মেয়েটা অবশিষ্ট ছেলেটার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই ছেলেটা মাটিতে শুয়ে বললো, “আপু, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এমনিতেই শুয়ে পড়ছি। ”
মেয়েটা মুচকি হাসলো। রেগিং হওয়া মেয়েটা বললো, ” থ্যাংকস আপু। ”
প্রতি উত্তরে শুধু মাথা নাড়ালো মেয়েটি।
মাহির গাড়িতে উঠতে উঠতে তার এসিস্ট্যান্টকে বললো, ” মেয়েটার তেজ দেখেছো। একদম পার্ফেক্ট! আমার সকল ইনফরমেশন চাই। ”
“আর ওকেও চাই। “( বিড়বিড় করে)

মাহির সুযোগ বুঝে মেয়েটার একটা ছবি তুলে নিয়েছিলো। তাই বেশি টাইম লাগলো না। ১০ মিনিটের মাঝেই ইনফরমেশন বের করে ফেললো তানিশা।
তানিশা : তাশরিফ পেয়ে গেছি।
মাহির : বলতে থাকো। তানিশা : নাম রিশিতা খান সুপ্তি। ডাকনাম সুপ্তি। বাবার নাম মিজানুর রহমান খান। অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার। সুপ্তি সামাজিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে অনার্স ফোর্থ ইয়ারে। মাহির অবাক হয়ে বললো, ” কিহ! ফোর্থ ইয়ারে! আমি এখানে কতবার এসেছি। ইনফ্যাক্ট দুই বছর আগে গ্রেজুয়েড হয়ে গেছি। জীবনে কখনো দেখিনি। অন্যদিকে.,. সুপ্তি : দেখবেন কিভাবে। আমি তো তিন বছর ক্যাম্পাসেই আসি নি। স্যার : তবে এখন এসেছো কেন? রূপ দেখাতে! সুপ্তি : স্যার, সামনে এক্সাম তাই। স্যার রেগে বললো, ” তিনবছর না পড়ে এক্সামে কি লিখবে? ” সুপ্তি চুপ থাকলো কারণ এখন তর্ক করা মানে আরও কথা শুনা। সাথে বেয়াদবের ট্যাগ লাগানো তো ফ্রিই। অনেকক্ষণ অপমান করার পর সুপ্তিকে ক্লাস থেকেই বের করে দিলো। এভাবেই সব ক্লাস গেলো। ২ টার দিকে বাসায় ফিরেছে সে। মনটা আজ বড্ড খারাপ তার।

#চলবে.,.

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৪

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪৪
নয়না চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে? তার পাশেই জিয়ান ঘুমিয়ে আছে৷ নয়না বেড থেকে নেমে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো৷ ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে লম্বা চুলগুলোতে তোয়ালে প্যাঁচিয়ে নিলো।বেডে তাকিয়ে দেখে জিয়ান ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত জিয়ানকে হ্যান্ডসাম লাগছে। নয়না গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো জিয়ানের দিকে৷ জিয়ানের চুলগুলো নয়নার ভিষণ পছন্দের হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো চুলগুলো। নয়না মুচকি হাসছে, কি যে অদ্ভুত ভালোলাগা ছুঁয়ে গেলো তার দেহ মন জুড়ে তা প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না৷ এবার আরো ভয়ংকর ইচ্ছে হচ্ছে নয়নার সাহস করে জিয়ানের ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে লজ্জায় মুখ ডাকলো দু’হাতে। লজ্জা রাঙ্গা মুখটা লুকিয়ে রাখলো হাতের আড়ালে। আবার উঠে আসলো রুমের একপাশে সোফা রাখা আছে। নয়না সেখানে বসলো। মনের মধ্যে লাল, নীল, হরেকরকম আনন্দ ঝলকাচ্ছে। নিজের মোবাইল বের করে রুম থেকে বের হয়ে আসলো, বাড়িটা একদম রাজকীয় দুইপাশে রুম মাঝখানে রুফটপের মত সেখানে নানারকম ফুলগাছ সুন্দর করে সাজানো। বসার জন্য টেবিল চেয়ার সুন্দর এক মনোরম পরিবেশ।নয়না সেখানে যেয়ে বসলো, কল লিস্টে যেয়ে তুষিকে কল করলো৷
ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই নয়না বলে,”এই তুই কই মরেছিলি এতোদিন! তোর ফোন বন্ধ ছিলো কেন?”
“তুষি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো ব্রেকআপ হয়েছে আমার৷”
নয়না হেসে বলে,”এটা নিয়ে একশ পঁচিশতম ব্রেকআপ। একজনের সাথে এতোবার ব্রেকআপ করতে তোর লজ্জা লাগে না ভুষি!”
“নন্টু এবার সিরিয়াস ব্রেকআপ করেছি৷”
“শোন কাল রেজাল্ট দিবে ভয় হচ্ছে ভুষি। আগে রেজাল্ট বাবা, মা দেখতো এখন শ্বশুর, শ্বাশুড়ি জামাই সবাই দেখবে।”
“নাটক কম করো প্রিয় তুমি এমনেও গোল্ডেন পাবা। ডাব্বা মারবো আমি।”
“বেশি করে ডাব্বা মার এরপর বিয়ে করবি রিকশা ওয়ালা মামাকে। তারপর তোর জামাই গান গাইবে ও সকিনা গেছো কিনা ভুইলা আমারে আমি এখন রিকশা চালাই ঢাকা শহরে৷”

“নন্টু চুপ কর আজকে আমার মন ভালো নেই।”
” আমার বাসায় চলে আয় মন ভালো হয়ে যাবে।”
“তোর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা কিছু মনে করবে না?”
” আরেহহহ নাহহ আমার শ্বশুর বাড়ির লোকগুলো পুরাই রসমালাই। খালি ওই প্লেন ড্রাইভার করলার জুস।”
“লোকেশন সেন্ট কর আসতেছি।”
” নয়নার হাঁটু অব্দি লম্বা চুলগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। নয়না কথা বলছে আর হাঁটছে। ওড়না গলায় ঝুলছে৷”

জাহিন করিডোরে এসে থমকে দাঁড়ালো এলোকেশী রমনীকে দেখে এখনো চেহারা দেখেনি৷ জাহিন পেছন থেকে বলল,*কে তুমি নন্দিনী আগে তো দেখিনি?”

“নয়না সামনের দিকে ঘুরে জিয়ানকে ভেবে বলে,সারাক্ষণ এই মেয়ে সেই মেয়েকে দেখলে ঘরের বৌকে তো নন্দিনী মনে হবেই।”
“জাহিন হতাশ। না মানে এই মেয়ে এতো কিউট কেন! এতো সুন্দরী মনে হয় যেনো আসমান থেকে নেমে আসা পরি! নয়না ওড়ানার একটা অংশ মাথায় তুলে নিয়ে বলে,শালা ড্রাইভার জীবনে ভালো হবে না৷ এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি লাগে তো।”
” নয়না সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
“এই যে মিস সুনয়না তালুকদার আমি জাহিন চৌধুরী নাম তো শুনা হোগ্যা?”
“নয়না থমকে দাঁড়ালো৷ পেছন ঘুরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দু’জন মানুষের মধ্যে এতো মিল! কন্ঠও সেম প্রায় কেউ না জানলে বোঝার উপায় নেই এরা দুজন ভিন্ন মানুষ।”
“কি হলো মিস এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? বিশ্বাস হচ্ছে না?”
“প্রথম কথা হলো আমি মিস না মিসেস জিয়ান রেজা চৌধুরী। দ্বিতীয় কথা হলো আমি আপনার ভাবি সো সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।”
“ডিয়ার মিসেস রেজা চৌধুরী আপনার বয়স আমার অর্ধেক সো আপনাকে নাম ধরে ডাকবো এসব ভাবি টাবি আমার দ্বারা ডাকা সম্ভব না।”
“নয়না কোন কথা না বলে রুমে চলে আসলো৷ রুমে এসে দেখে জিয়ান নেই! মাত্র লোকটা ঘুমিয়ে ছিলো আর এইটুকু সময়ের মধ্যে গায়েব! সাথে সাথে জিয়ানকে কল করলো৷”
“জিয়ান কল কেটে ব্যাক করলো।
“মানলাম আপনি প্লেন ড্রাইভার তাই বলে সারাক্ষণ ঊড়তে থাকবেন!”
“উড়ে আর কই যাবো বলো,আমি তো তোমার পিঞ্জরের বন্দী খাঁচার পাখি।”
“কোথায় আছেন এখন?”
“তোমার জন্য মেডিসিন নিলাম এখন চলে আসবো, আচ্ছা বলো তো তোমার কোন ফ্লেভার পছন্দ, স্ট্রবেরি নাকি চকোলেট?”
“হোয়াট! আপনি এতো অসভ্য কেনো?”
” অসভ্য মানে! তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসতাম ফ্লেভার বলো।”
“অসভ্য লোক এই কথাটা আগে বলা যেতো না!”
“তোমার চিন্তাভাবনা চেঞ্জ করো বেব বাসর করার জন্য এতোই উতলা হয়ে আছো আগে বলবা তো জানেমান।”
” নয়না ফোন কেটে দিলো। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,ছিহহহ নয়না চিন্তাভাবনা পরিবর্তন কর৷ এই লোকের সাথে থেকে থেকে তুইও লুচু হয়ে যাচ্ছিস!”

🌿

মিতা বেগম নয়না আর জিয়ানের জন্য খাবার নিয়ে এসে দেখেন দরজা খোলা, বেডে তার ছেলে আর বৌ ঘুমিয়ে আছে৷ মিতা বেগম খাবারের ট্রে নিয়ে বের হয়ে আসার সময় বা’হাত দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলো৷
“মেহনুর মিতা বেগমকে দেখে বলে,আম্মি এই খাবার কার জন্য?”
“মিতা বেগম বলল,এতো সকালে তুই! রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি বুঝি?”
“মেহনুর মিতা বেগমের হাত থেকে খাবার ট্রে নিয়ে বলে,আসো তো আমার রুমে গল্প করি তোমার সাথে।”
“মিতা বেগম রুমে ঢুকে বলেন, আমার ছেলে আর বৌমা ফিরেছে সকাল সকাল ওদের জন্য খাবার নিয়ে যেয়ে দেখি দু’জনে ঘুমাচ্ছে। মিতা বেগম চলে যাওয়ার পর থেকে মেহনূর আর স্থীর হতে পারেনি৷ রুমের মধ্যে পায়চারি করছে। চোখ থেকে না চাইতেও অশ্রু ঝরছে। নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করছে কিন্তু কোনভাবে স্বাভাবিক হতে পারছে না৷”

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্থীর হলো,হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে নিয়ে বলে,স্ট্রং হতে হবে তোকে। পরক্ষণেই চুল খামচে ধরে বলে,কিভাবে আমি রেজার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করবো! মেহনুরের শরীর কাঁপছে ফ্লাওয়ার ভাস উঠিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুড়ে মারলো,সাথে সাথে আয়নার কাঁচগুলো আওয়াজ তুলে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পরলো৷
“আওয়াজ পেয়ে জাহিন রুমে এসে বলে,কোন মোন্টালি সমস্যা আছে নাকি আপনার?”
” মেহনূর কাঁপছে তখনো কিছুতেই রাগ কমছে না তার৷”
“ও হ্যালো মিস বিদেশিনী ডাক্তার ডাকবো নাকি পাবনা পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। আমি কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছেন?”
” মেহনুর হুট করে এসে জাহিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।”
“জাহিন বেশ অবাক হলো!”
” আমি একটু ভালোবাসা চাই কেনো সেটুকুও পেলাম না! কেনো চলে গেলো আমার মম আমাকে ছেড়ে। আমি চাইলেও আর কোনদিন মমকে ফিরে পাবো না৷ আমি কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চাই কিন্তু কেউ নেই যে আমার মাথায় হাত রেখে একটু স্বান্তনা দেবে। চোখের জলটুকু মুছে দিয়ে হাতটা শক্ত করে ধরে বলবে আমি আছি তো৷”
“জাহিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার লাইফে এখন পর্যন্ত কোন মেয়ে আসেনি গার্লফ্রেন্ড হয়ে এসব থেকে সব সময় দূরেই থেকেছে জাহিন। কি করা উচিৎ ভাবতে ভাবতে মেহনুরের মাথায় হাত রেখে বলে,কান্না করবেন না প্লিজ। আপনি আমাকে ছাড়ুন আমি আম্মুকে পাঠাচ্ছি।”
“মেহনুর মনে মনে হাসলো। জাহিনের কাছ থেকে সরে এসে বলে,স্যরি এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য।”
“ইট’স ওকে। আপনি রিলাক্স হোন পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী হয় না। ভেঙে পড়লে তো চলবে না৷ আপনি বসুন আমি আম্মুকে পাঠাচ্ছি।”

জাহিন কোনমতে রুম থেকে বের হয়ে আসলো,নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,সারাজীবন শুনলাম মেয়েরা জড়িয়ে ধরলে ভালো লাগে! কি অদ্ভুত, এই মেয়ে জড়িয়ে ধরলো, এখন মনে হচ্ছে আমি ডোবা থেকে উঠে এসেছি!
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৩

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪৩
নয়না বেড থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো৷ ড্রেসিং টেবিল জুড়ে নামি-দামি ব্র্যান্ডের পারফিউম, বডি স্প্রে আর ঘড়ি। নয়না একটা পারফিউম বের করে তার ঘ্রাণ নিচ্ছিলো হটাৎ আয়নায় জিয়ানের প্রতিবিম্ব দেখে সামনে ফিরে তাকাতেই নয়ানা জিয়ানের বাহুতে ধাক্কা খেলো৷
নয়না দু’কদম পিছিয়ে যেতেই জিয়ান নয়নাকে নিজের বাহুতে আগলে নিলো। নয়নার হার্ট বিট, শ্বাস নেয়ার ধ্বনি সব বেড়ে গেছে।প্রথম বার কোন পুরুষের নগ্ন দেহের ছোঁয়া। নয়নার কেমন হাসফাস লাগছে। সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে জিয়ান। উন্মুক্ত শরীর জুড়ে বিন্দু বিন্দু জল। কোমড়ে তোয়ালে জড়ানো।
জিয়ান নয়নাকে নিজের সাথে আরএকটু মিশিয়ে নিয়ে নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,”এতোটুকুতেই জমে গেলে এই পুরো আমি টাকে কি করে সামলাবে পুটি মাছ!”
‘নয়নার মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। নিশ্বাসের শব্দ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এ কেমন দম বন্ধ কর অদ্ভুত অনূভুতির সাথে পরিচিত হচ্ছে নয়না?
‘জিয়ান নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”তোমার নাম নয়না একদম পার্ফেক্ট।”নয়না একটু ছোঁয়াও সয় না” না মানে এতোটুকু পরিমান কাছে আসাতেই তোমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা! পুরোপুরি কাছে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে পুটি মাছের মত লাফাতে লাফাতে শেষ না হয়ে যাও! গভীর ভালোবাসা দিলে তো প্রাণ বেড়িয়ে যাবে বোধ হয়। তখন তো আমার জে*ল,ফাঁ*সি হবে।”

নয়না নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,”আপনি কি ফিডার খাওয়া বাচ্চা! আপনাকে আমি সামলাবো। উল্টো আপনি আমাকে কিভাবে সামলাবেন সেই চিন্তা করুন। কারণ কথায় আছে বউ পালন করা হাতি পালন করার চেয়ে কঠিন!”
“এইটুকু পুটি মাছ সে আবার নিজেকে হাতির সাথে তুলনা করে!তোমার মত পুটিমাছকে সামলানোর জন্য আমার একটা আঙ্গুল যথেষ্ট।”
“কথায় আছে ছোটা প্যাকেট বড়া ধামকা। সো বি কেয়ারফুল। বৌকে এতো হালকা ভাবে নিতে নেই মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। প্লেন ড্রাইভ করা সহজ হলেও বৌ চালানো সহজ না। মিস্টার প্লেন ড্রাইভার।”
“আয়হায় ভয় পেয়েছি আমি। তা বড়া ধামাকা টেক্কা দেয়ার জন্য আপনার সামনে পাইলট জিয়ান রেজা চৌধুরি উপস্থিত।”
“এই যে মিস্টার প্লেন ড্রাইভার, শুনে রাখুন রাজা, বাদশাহও তার বিবিদের কাছে সামান্য প্রেমিক পুরুষ ছিলেন। আপনার মত প্লেন ড্রাইভার তো কিছু দিনের মধ্যেই আমার নেশায় বুদ হয়ে আমার ইশারায় নাচবেন।তখন বলবেন বৌ বললে তাই না বললে নাই।”
“এই তোমার বয়স সবে ষোল! কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হয় ম্যাচিউর। প্রাপ্ত একজন নারী আমার সামনে। যাক ভালোই হলো। আর অপেক্ষায় রইলাম তোমার নেশায় বুদ হওয়ার। কথাটা বলেই জিয়ান এক চোখ টিপলো।তবে নেশাখোরকে সামলাতে পারবে তো আফিমের ড্রাম?”
“আমি আফিমের ড্রাম?”
“জিয়ান নয়নাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,উঁহু তুমি তো আফিমের সমুদ্র। তোমার আফিমের উত্তাল ঢেউয়ে বেসামাল হতে চাই।”
“নয়নার শ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। জিয়ান নয়নার কাছে আসার সিমা অতিক্রম করতে চাইলেই নয়নার সাথে এমন হয়।
“জিয়ান দ্রুত নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,তাড়াতাড়ি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আম্মু খাবার নিয়ে চলে আসবে তো।”
“নয়না ড্রেসিং টেবিলের এককোণ আঁকড়ে ধরে বলে পানি৷ আমাকে একটু পানি দিন আমি নয়ত মরে যাবো৷”
“জিয়ান দ্রুত নয়নাকে পানি এগিয়ে দিলো। সবটুকু পানি পান করে জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,আপনাকে ঘৃণা করি আমি। বলতে বলতে ঢলে পরলো জিয়ানের বাহুতে।”
“জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে বেডে নিয়ে শুইয়ে দিলো। সকাল তখন ছয়টা পঞ্চাশ। জিয়ান নিজের ফোন বের করে অনিকেতকে কল করলো। রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে রিসিভ হচ্ছে না৷ জিয়ান লাগাতার কল করেই যাচ্ছে।”

অনিকেত ঘুম জড়ানো চোখে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে জিয়ানের কল৷ দ্রুত রিসিভ করে বলে,”কি হয়েছে সব ঠিক আছে? ”

জিয়ান বারান্দায় চলে আসলো,গ্লাস টেনে দিয়ে বলল,”আমার জন্য সুনয়নার এই অবস্থা। তুই কেমন ডাক্তার এই রোগের ঔষধ দিতে পারছিস না!”
“রিলেক্স ব্রো সব ঠিক হয়ে যাবে তুই আমাকে বল কি হয়েছে।”
“জিয়ান সবটা বলল।”
“তুই একটু দূরে দূরে থাকবি ভাবির কাছ থেকে। সে যতক্ষণ তোকে নিজ থেকে কাছে না ডাকবে ততক্ষণ তার কাছাকাছি যাওয়ার লিমিট ক্রস করবি না৷ভাবি এখনো ওই ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি৷ তোর স্পর্শ গভীর হলেই ভাবি ট্রামায় চলে যায়। যার ফলে প্যানিক আ্যাটক হয় আবার জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে৷ একটা মেয়ের জন্য এতো জঘন্য অতীত ভুলে যাওয়া সহজ নয়। আজ একবার ভাবিকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আয়। নতুন বাসা বাড্ডাতে লোকেশন সেন্ট করে রাখবো।”

“জিয়ান কল কেটে নয়নার মাথার পাশে বসলো,নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে জিয়ানের। আজ তার জন্য এই অবস্থা ফুলের মত মেয়েটার। অনুশোচনায় কুড়ে কুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেতর থেকে। নয়নার কপালে আলতোভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মাঝখানে কোলবালিশ রেখে শুয়ে পরলো নয়নার পাশ ফিরে৷ ঘুমন্ত নয়নাকে অপরুপা লাগছে। যেনো নয়নার চেহারা জুড়ে ফুটে উঠেছে সরলতার প্রতিমা। সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে!
জিয়ানের মনে পড়লো তার নানুর কথা।তার নানু একবার বলেছিল মানুষ কতটা ভালো তার পরখ করার জন্য ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে পরিদর্শন করলেই বোঝা যায়। ঘুমালে চেহারায় ফুটে উঠে কে কেমন। এই কথার সত্যতা জানা নেই জিয়ানের।

🌿

জাহিন অন্তর হসপিটালের মর্গে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে শিল্পি বেগমের লাশ। কেউ তাকে হ*ত্যা করেছে। লাশটা পাওয়া গেছে আরো দু’দিন আগে বুড়িগঙ্গার তীরে বস্তা বন্দি অবস্থায়।
অন্তর বলল,”দেখে মনে হচ্ছে শ্বাস রোধে মা*রা হয়েছে।”
জাহিন বলল,”ফরেনসিক রিপোর্টটা নিয়ে নে। জামাল সাহেব কেও কি মে*রে ফেলেছে নাকি সে জীবিত আছে?”
“আমি বুঝলাম না এমন কি কারন থাকবে যে যার জন্য ওনারা শহর ছেড়ে চলে আসার পরেও তাদের ছাড়লো না!”
“আমাকেও বিষয়টা ভাবাচ্ছে! রে*প করেছে তার মেয়েকে তারপর এমন কি হলো যার জন্য তাদেরকে মেরে ফেলতে হচ্ছে!”

অন্তর বলল,”আমরা কোন গভীর জালে আটকে যাচ্ছি।”
“জাল কাটবো বলেই তো নেমেছি। চল এবার বাসায় যাই৷ আচ্ছা কাল রাতে কল করলি কেন!”
“জানিস না টং দোকানে এক ফালতু মেয়ের সাথে ঝামেলা হয়েছে।”
“জাহিন হেসে বলে,তোর কপালে এডিই জুটবে, শা’লা একটা প্রেমও করতে পারলি না৷ প্রেম করা তো দূর তোকে তো কোন মেয়ে পাত্তাই দেয়না৷ মনে হয় তোর না কন্যারাশি।”
“কতবার বলছি শা ‘লা না সুমুন্দি বলবি৷”
“চুপ কর সুমুন্দির পুত। বাসায় চল।”

🌿

আজ অনিকেতের বার্থডে ছিলো৷ তাই আজ অনিকেত চেম্বারে বসেনি। সকালে শুধু ডিউটি করে চলে এসেছে৷ অনিকেত বারান্দায় বসে আছে। বাহিরের ব্যস্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে, “আচ্ছা আজ কি আমার সত্যি সত্যি জন্ম হয়েছিল! নাকি এটা এতিমখানায় যে আমাকে রেখে গিয়েছিলো তার দেয়া জন্ম তারিখ৷ আমার বাবা, মা কে? ওনারা জন্ম দিয়ে আমাকে এতো বড় দুনিয়াতে একা কিভাবে ছেড়ে গেলো!আমার কথা কি একটুও তাদের মনে পরে না? আচ্ছা যে মা আমাকে নয় মাস গর্ভে ধারণ করলো তারও কি একবারও আমার কথা মনে পরে না! নাড়ীর টান নাকি বড় টান তার কি সেই টানও অনুভব হয়না কোনদিন! অনিকেতের চোখের কোন ভিজে উঠেছে ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে। এই শহরের ইট পাথরের পাঁচিলের আড়ালে কত হৃদয় ভাঙ্গার আত্মা চিৎকার লুকিয়ে আছে সে-সবের কে খেয়াল রাখে!”
#চলবে

Dark Mystery পর্ব-০২

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_2
#Sabrina_Summa

ইরফান এসে ছাতা ধরলো।
মিস সিক্রেট ছাতা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো, ” গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার। ”
ইরফান : বাট ম্যাম…
মিস সিক্রেট রেগে বললো, ” আই সেইড গেট লস্ট। ইউ কান্ট হেয়ার? ”
ইরফান : সরি ম্যাম। বাট প্লিজ ম্যাম…
মিস সিক্রেট রাগী চোখে তাকাতেই থেমে গেল ইরফান। সাথে সাথে মাথা নিচুও করে ফেললো। মিস সিক্রেট কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ” কোনো কাজ আছে? ”
ইরফান : ইয়েস ম্যাম।
মিস সিক্রেট : ওকে। গাড়ি বের করো। আগে বাসায় যাবো। তারপর অন্য কোথাও।
ইরফান গাড়ি নিয়ে এলো। মিস সিক্রেট ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে বললো, ” কী কাজ? ”
ইরফান : আপনি একটা গোয়েন্দা টিমের সদস্য না। সেখানে কেউ বেঈমানী করছে বলে ধারণা।
মিস সিক্রেট : ওকে, আমি দেখছি। বিকেলে মিটিং ডাকো।
ইরফান তাকে একটি পাবলিক ওয়াশ রুমের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিস সিক্রেট ভিতরে গেলো তবে তাকে বের হতে দেখা গেলো না।

বিকেলে.,.

সবাই বসে আছে তবে মিস সিক্রেট আসছে না। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিস সিক্রেট চলে এলো। সবাই দাঁড়ালো তবে একজন বাদে সে হলো রাজিব খান। নাম করা গোয়েন্দা।
সবাইকে বসতে বলে মিস সিক্রেট নিজেও বসলো।
রাজিব খান তিরস্কার করে বললো, ” আমি তো ভাবলাম আপনি আমাদের ডেকে নিজেই পালিয়ে গেলেন। ”
মিস সিক্রেট : আমি না আসলেই তো আপনি খুশি হতেন। আমার জায়গাটা আপনি পেতেন !
রাজিব চুপ হয়ে গেলো। বাকি সবাই মুখ লুকিয়ে হাসলো।
মিস সিক্রেট : হোয়াট ইভার। কারেন্ট নিউজ কী? পাওয়া গেল?
— “ইয়েস, ম্যাম। তারা বড় ডিল পেয়েছে সোমবারে কেরানীগঞ্জের বড় বাড়িটায় সকলে মিট করবে।
কখন অ্যাটাক করলে ভালো হয় ম্যাম? ”
মিস সিক্রেট : বিকেলেই করি। কী বলেন রাজিব স্যার?
রাজিব থতমত খেয়ে বললো, ” আপনি যা ভালো বুঝেন। ”
মিস সিক্রেট : তবে এ কথায় রইলো।
তাই বলে উঠে চলে গেলো। রুমের বাহিরে চলে আসতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, বেঈমানীর বিষয়টা! ”
মিস সিক্রেট গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো, ” সবে আজ শনিবার। এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? ”
ইরফান : ম্যাম, যদি বলে দেয়।
মিস সিক্রেট : প্ল্যান বি তো আছেই। আচ্ছা এগুলো বাদ দেও৷ আরো কোনো কাজ আছে?
ইরফান : আজ নেই। তবে কাল একটা ইন্টারভিউ দিতে হবে আপনাকে।
মিস সিক্রেট : কেন? আই মিন কী উপলক্ষ্যে?
ইরফান : ম্যাম সাংবাদিকদের কাজ কি! শুধু শুধু বিরক্ত করা। আর পাবলিক তো আপনার পিছেই পড়ে আছে তাই।
মিস সিক্রেট : ওকে। বাট বেশি টাইম দিতে পারবো না।
ইরফান : আপনি রাজি হয়েছেন এইতো অনেক!
মিস সিক্রেট নিজের এপার্টমেন্টে চলে গেলো। সারাদিন খুব ধকল যায় প্রতিদিনই। আজ তো বৃষ্টিতে ভিজেছে কে জানে জ্বর চলে আসে কিনা!

সকাল.,.

মন্ত্রীর বাগানে বসে আছে মিস সিক্রেট, মাহির, রাগিনী।
আশেপাশে কিছু বডিগার্ড ও কিছু সাংবাদিক।
মাহফুজ চৌধুরী বক্তৃতা দিচ্ছে। সবাই খুব মন দিয়ে শুনছে। শুধু রাগিনী বেগম বাদে। তার এসব ভালো লাগে না। সারাদিন ছেলে ও স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখেই তার দিন যায়।
এরই মাঝে মাহফুজ চৌধুরীর বক্তৃতা শেষ হলো। এরপর মাহিরের স্থান হলেও সবাই মিস সিক্রেটকে এই স্থান দেয় কারণ সে দেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার ভালো কাজের জন্য সবাই তাকে পছন্দ করে। তাছাড়াও মিস সিক্রেট মন্ত্রীর ডান হাত। বডিগার্ডও বলা চলে। মাহফুজ চৌধুরী কোনো কাজ করেন না মিস সিক্রেটের পরামর্শ ছাড়া।
মিস সিক্রেট মাইকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে কিছু ফর্মাল কথা শেষ করে বললো,” আপনারা প্রশ্ন করুন আমি উত্তর দিচ্ছি। ”
এতে কেউ অবাক হলো না কারণ এটা প্রায়ই করে মিস সিক্রেট। সে কখনো বক্তৃতা দেয় না।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছে। মিস সিক্রেটও খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিচ্ছে।
হঠাৎই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলো, ” ম্যাম আপনাকে আর তাশরিফ স্যারকে কী কখনো একসাথে দেখা যাবে? ”
সেই সাংবাদিকের দিকে তাকাতে গিয়ে মিস সিক্রেট খেয়াল করলো একজন স্নাইপারকে। যে তার দিকেই রাইফেল তাক করে আছে।
মিস সিক্রেট মাস্কের আড়ালে মুচকি হাসলো। তারপর ইরফান কে মেসেজ করে জানালো। এরপর সাংবাদিকের প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, ” আমরা কোনো সিনেমার নায়ক নায়িকা নই যে একসাথে দেখার কথা বলছেন। ” বলা শেষ করে মাহিরের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। মিস সিক্রেট চোখ সরিয়ে স্টেজ থেকে নামতে নামতে বললো, ” তাছাড়াও ও আমার টাইপের না। ” এ কথা শুনে মাহিরের রিয়েকশন দেখার মতো। মাহির বিড়বিড় করে বললো, ” অসভ্য মহিলা তুইই আমার টাইপের না। ” ততক্ষণে মিস সিক্রেট চলে গেছে।

#চলবে.,.

Dark Mystery Part-03

0

#Dark_Mystery( কালো রহস্য )
#Part_3
#Sabrina_Summa

মিস সিক্রেট রুমে প্রবেশ করতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, আপনার কথা মতো ওটাকে ধরে রেখেছি তবে মুখ খোলাতে পারি নি। ”
মিস সিক্রেট : চলো।
স্নাইপারের সামনে গিয়ে মিস সিক্রেট একটা চেয়ারে বসলো। স্নাইপারের হাত – পা, মুখ বাঁধা। ইরফানকে ইশারা করতেই মুখ খুলে দিলো।
মিস সিক্রেট ভাবলেশহীন ভাবে বললো, ” কে পাঠিয়েছে বলো? ”
লোকটা চুপ করে রইলো।
মিস সিক্রেট : আমাকে মারতে এসেছো। তাহলে এটাতো ভালো করেই জানো আমি ভালোর সাথে ভালো, খারাপের সাথে খারাপ!
শেষবার বলছি বলবে কিনা?
স্নাইপারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে।
স্নাইপার ভয় পেয়ে বললো, ” বলছি ম্যাম, বলছি। রাজিব স্যার পাঠিয়েছে। ”
মিস সিক্রেট চেয়ারে বারি দিয়ে বললো, ” আমি জানতাম। আমার সন্দেহ কখনো ভুল হয় না। ”
তারপর ইরফানকে ডাক দিলো।
ইরফান : ইয়েস ম্যাম।
মিস সিক্রেট : ওকে ভালো করে আদর যত্ন করো।
ইরফান : ওকে ম্যাম।
মিস সিক্রেট : আমি কিন্তু সত্যিই আদর যত্ন করতে বলেছি। মারতে বলিনি। এখান থেকে বের হলে রাজিবই ওকে মেরে ফেলবে। তাই রাজিবের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত এখানে থাক।
বলা শেষ করে বের হয়ে যেতে নিয়েও আবার ফিরে তাকিয়ে বললো, ” এই কৈ মাছের আত্মা নিয়ে তুমি আমাকে মারতে আসছিলে! ”
স্নাইপারকে বলতে না দিয়ে বের হতে হতে নিজেকে নিজেই বললো, ” প্রফেশনে নতুন।”

সোমবার সকাল প্রায় ১০ টার কাছাকাছি।
কেরানীগঞ্জের বড় বাড়িটার তিন তলার ড্রয়িং রুমে বসে আছে কয়েকজন।
তারা ডিল নিয়ে কথা বলছে।
হঠাৎই একটা মেয়ের আওয়াজ পেলো, ” হোয়াটস অ্যাপ গাইস? ”
সবাই অবাক হয়ে তাকালো।
একজন দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ” মিস সিক্রেট! ”
মিস সিক্রেট : আরে আমাকে বসতেও বলবেন না। কত কষ্ট করে ঢুকতে হলো জানেন!
সবাই তার দিকে বন্দুক তাক করে আছে।
আরেকজন রেগে বলে উঠলো, ” আপনি না বলেছিলেন বিকেলে অ্যাটাক করবে! বিশ্বাসঘাতক। ”
মিস সিক্রেট : আরে, আরে। বন্দুকগুলো নামান ভয় পাচ্ছি তো।
বলতে বলতে একটা চুটকি বাজালো।
সাথে সাথে তার উপর যারা বন্দুক তাক করেছিলো তাদের পিছনে বন্দুক তাক করলো মিস সিক্রেটের ফোর্স। মূলত মিস সিক্রেট বারান্দা দিয়ে আগে রুমে এসেছে। পরে ফোর্স দরজা দিয়ে এসেছে।
রাজিব বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো, ” ম্যাম, দেখেছেন আমি ওদের কনফিউসড করে দিয়েছি। ”
উপস্থিত সবাই দাঁত কিড়মিড় করে তার দিকে তাকালো।
মিস সিক্রেট হেসে বললো, ” অনেক ভালো কাজ করেছেন। এরজন্য আপনাকে সম্মান দেওয়া হবে। ”
স্পেশাল ফোর্সকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” আপনারা যান প্লিজ। ”
তারা গিয়ে সবাইকে এরেস্ট করলো। মিস সিক্রেটের সাথে এসেছে দুইজন গোয়েন্দা অফিসার ও স্পেশাল ফোর্স।
একজন গোয়েন্দা অফিসার বললো, ” আপনি জানতেন রাজিব বেঈমানী করবে। ”
মিস সিক্রেট অবাক হয়ে বললো, ” অবশ্যই।”
আরেকজন গোয়েন্দা অফিসার মুখ ফঁসকে বললো,” কিভাবে? ”
মিস সিক্রেট বিরক্ত হয়ে বললো, ” আপনি আমার সিক্রেট টিম সম্পর্কে জানেন না? ”
অফিসার : সরি ম্যাম। ভুলে গেছিলাম আপনি কতটা পাওয়ারফুল।
মিস সিক্রেট : সরি বলারো কিছু হয়নি!
মিস সিক্রেট সবার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।
মিস সিক্রেট মনে মনে বললো, ” এরা অপরাধ কেন করে শুধু শুধু আমাকে ডিস্টার্ব করার জন্য! ”

মিস সিক্রেট গাড়িতে বসে আছে আর ইরফান গাড়ি ড্রাইভ করছে।
ইরফান : ম্যাম, কি দিলেন!
মিস সিক্রেট অবাক হয়ে বললো, ” কি দিলাম? ”
ইরফান : বিকেলে বলে সকালে অ্যাটাক করলেন।
মিস সিক্রেট : এটাকে বলে ধোঁকা।
ইরফান : ম্যাম, আপনি আগেই জানতেন ওরা সকালেই মিটিং করবে তাইনা!
মিস সিক্রেট : হুম। আমার টিম আমাকে আগেই খবর দিয়েছে।
ইরফান : আপনি তো সব খবরই রাখেন। কিন্তু আমি যখন বলি তখন আপনি না জানার ভান করেন কেন?
মিস সিক্রেট : জানি না।
ইরফান আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। নিরবতা ভেঙ্গে মিস সিক্রেট বললো, ” কালকে সকালে অামি কোনো কাজ করবো না। ”
ইরফান : কেন ম্যাম?
মিস সিক্রেট : শুধু কালকে না। শুক্রবার ও শনিবার ব্যতিত আমি এক দুপুর কোনো কাজই করবো না।
ইরফান : বাট ম্যাম…
মিস সিক্রেট কথার মাঝখানেই বললো, ” নো বাট নো হোয়াট। ”
ইরফান : ম্যাম আপনার তো কালকে কাজ আছে।
মিস সিক্রেট : ক্যান্সেল করে দেও।
ইরফান টেনে বললো, “ম্যাম………”
এতক্ষণ মিস সিক্রেট মজা করলেও এবার রাগী চোখে তাকালো।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেভাবেই বললো,” তুমি আমাকে ফেল করাতে চাচ্ছো? ”
ইরফান অবাক হয়ে মিস সিক্রেটের দিকে তাকায়ি , ” মানে? ”
মিস সিক্রেট : আরে, সামনে তাকাও। আমাকে এক্সিডেন্ট করে মারতে চাচ্ছো নাকি! ইরফান সামনে তাকিয়ে বললো,” ম্যাম, আপনি ফেল করবেন মানে? কিসে ফেল করবেন? ” মিস সিক্রেট : মানে কিচ্ছু না। আমি এক দুপুর কোনো কাজ করবো না দেটস সিট। ইরফান আর কিই বা বলবে! সে মিস সিক্রেটকে খুব ভালো করে চিনে। বলেছে তো বলেছেই। আর সে একজন এসিস্ট্যান্ট হয়ে জোর তো করতে পারে না। এরপর আর তাদের কথা হলো না। পাবলিক ওয়াশ রুমের সামনে মিস সিক্রেটকে নামিয়ে ইরফান গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। #চলবে.,.

Dark Mystery Part-02

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_2
#Sabrina_Summa

ইরফান এসে ছাতা ধরলো।
মিস সিক্রেট ছাতা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো, ” গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার। ”
ইরফান : বাট ম্যাম…
মিস সিক্রেট রেগে বললো, ” আই সেইড গেট লস্ট। ইউ কান্ট হেয়ার? ”
ইরফান : সরি ম্যাম। বাট প্লিজ ম্যাম…
মিস সিক্রেট রাগী চোখে তাকাতেই থেমে গেল ইরফান। সাথে সাথে মাথা নিচুও করে ফেললো। মিস সিক্রেট কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ” কোনো কাজ আছে? ”
ইরফান : ইয়েস ম্যাম।
মিস সিক্রেট : ওকে। গাড়ি বের করো। আগে বাসায় যাবো। তারপর অন্য কোথাও।
ইরফান গাড়ি নিয়ে এলো। মিস সিক্রেট ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে বললো, ” কী কাজ? ”
ইরফান : আপনি একটা গোয়েন্দা টিমের সদস্য না। সেখানে কেউ বেঈমানী করছে বলে ধারণা।
মিস সিক্রেট : ওকে, আমি দেখছি। বিকেলে মিটিং ডাকো।
ইরফান তাকে একটি পাবলিক ওয়াশ রুমের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিস সিক্রেট ভিতরে গেলো তবে তাকে বের হতে দেখা গেলো না।

বিকেলে.,.

সবাই বসে আছে তবে মিস সিক্রেট আসছে না। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিস সিক্রেট চলে এলো। সবাই দাঁড়ালো তবে একজন বাদে সে হলো রাজিব খান। নাম করা গোয়েন্দা।
সবাইকে বসতে বলে মিস সিক্রেট নিজেও বসলো।
রাজিব খান তিরস্কার করে বললো, ” আমি তো ভাবলাম আপনি আমাদের ডেকে নিজেই পালিয়ে গেলেন। ”
মিস সিক্রেট : আমি না আসলেই তো আপনি খুশি হতেন। আমার জায়গাটা আপনি পেতেন !
রাজিব চুপ হয়ে গেলো। বাকি সবাই মুখ লুকিয়ে হাসলো।
মিস সিক্রেট : হোয়াট ইভার। কারেন্ট নিউজ কী? পাওয়া গেল?
— “ইয়েস, ম্যাম। তারা বড় ডিল পেয়েছে সোমবারে কেরানীগঞ্জের বড় বাড়িটায় সকলে মিট করবে।
কখন অ্যাটাক করলে ভালো হয় ম্যাম? ”
মিস সিক্রেট : বিকেলেই করি। কী বলেন রাজিব স্যার?
রাজিব থতমত খেয়ে বললো, ” আপনি যা ভালো বুঝেন। ”
মিস সিক্রেট : তবে এ কথায় রইলো।
তাই বলে উঠে চলে গেলো। রুমের বাহিরে চলে আসতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, বেঈমানীর বিষয়টা! ”
মিস সিক্রেট গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো, ” সবে আজ শনিবার। এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? ”
ইরফান : ম্যাম, যদি বলে দেয়।
মিস সিক্রেট : প্ল্যান বি তো আছেই। আচ্ছা এগুলো বাদ দেও৷ আরো কোনো কাজ আছে?
ইরফান : আজ নেই। তবে কাল একটা ইন্টারভিউ দিতে হবে আপনাকে।
মিস সিক্রেট : কেন? আই মিন কী উপলক্ষ্যে?
ইরফান : ম্যাম সাংবাদিকদের কাজ কি! শুধু শুধু বিরক্ত করা। আর পাবলিক তো আপনার পিছেই পড়ে আছে তাই।
মিস সিক্রেট : ওকে। বাট বেশি টাইম দিতে পারবো না।
ইরফান : আপনি রাজি হয়েছেন এইতো অনেক!
মিস সিক্রেট নিজের এপার্টমেন্টে চলে গেলো। সারাদিন খুব ধকল যায় প্রতিদিনই। আজ তো বৃষ্টিতে ভিজেছে কে জানে জ্বর চলে আসে কিনা!

সকাল.,.

মন্ত্রীর বাগানে বসে আছে মিস সিক্রেট, মাহির, রাগিনী।
আশেপাশে কিছু বডিগার্ড ও কিছু সাংবাদিক।
মাহফুজ চৌধুরী বক্তৃতা দিচ্ছে। সবাই খুব মন দিয়ে শুনছে। শুধু রাগিনী বেগম বাদে। তার এসব ভালো লাগে না। সারাদিন ছেলে ও স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখেই তার দিন যায়।
এরই মাঝে মাহফুজ চৌধুরীর বক্তৃতা শেষ হলো। এরপর মাহিরের স্থান হলেও সবাই মিস সিক্রেটকে এই স্থান দেয় কারণ সে দেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার ভালো কাজের জন্য সবাই তাকে পছন্দ করে। তাছাড়াও মিস সিক্রেট মন্ত্রীর ডান হাত। বডিগার্ডও বলা চলে। মাহফুজ চৌধুরী কোনো কাজ করেন না মিস সিক্রেটের পরামর্শ ছাড়া।
মিস সিক্রেট মাইকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে কিছু ফর্মাল কথা শেষ করে বললো,” আপনারা প্রশ্ন করুন আমি উত্তর দিচ্ছি। ”
এতে কেউ অবাক হলো না কারণ এটা প্রায়ই করে মিস সিক্রেট। সে কখনো বক্তৃতা দেয় না।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছে। মিস সিক্রেটও খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিচ্ছে।
হঠাৎই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলো, ” ম্যাম আপনাকে আর তাশরিফ স্যারকে কী কখনো একসাথে দেখা যাবে? ”
সেই সাংবাদিকের দিকে তাকাতে গিয়ে মিস সিক্রেট খেয়াল করলো একজন স্নাইপারকে। যে তার দিকেই রাইফেল তাক করে আছে।
মিস সিক্রেট মাস্কের আড়ালে মুচকি হাসলো। তারপর ইরফান কে মেসেজ করে জানালো। এরপর সাংবাদিকের প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, ” আমরা কোনো সিনেমার নায়ক নায়িকা নই যে একসাথে দেখার কথা বলছেন। ” বলা শেষ করে মাহিরের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। মিস সিক্রেট চোখ সরিয়ে স্টেজ থেকে নামতে নামতে বললো, ” তাছাড়াও ও আমার টাইপের না। ” এ কথা শুনে মাহিরের রিয়েকশন দেখার মতো। মাহির বিড়বিড় করে বললো, ” অসভ্য মহিলা তুইই আমার টাইপের না। ” ততক্ষণে মিস সিক্রেট চলে গেছে।

#চলবে.,.