Friday, August 8, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 14



নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৪

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৪]
-তামান্না

রিহান:সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একজন অপরিচিত মানুষের গলার শব্দ শুনতে পায়।কিছু একটা শুনে হাত থেকে ঠাস করে ফোন টা নিচে পড়ে যায়।
নিরু মাত্রই রুমে এসেছে।ফোন পড়ে যেতে দেখে মোবাইল টা হাতে নেয়।নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। কয়েকবার হ্যালো বলার পর কেউ একজন বলে নীলা আর রিফাত এক্সিডেন্ট করেছে,, দুজনেরই অবস্থা খুবই গুরুতর।বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম।আর যে ফোন করেছে সে হলো রিফাতের কাজিন নয়ন।

–নিরু ফোন টা টেবিলের উপর রাখতেই স্যান্সলেস হয়ে পড়ে যেতে নিলে রিহান ধরে ফেলে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজে ও বসে পড়ে নিচে।

–সবচেয়ে কাছের মানুষের মধ্যে একজন হলো রিফাত।তার এমন বাজে পরিণতি শুনে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।কেমন যেন ফাঁকা লাগছে।ফাঁকা বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিরুকে।

–বাসা থেকে মানবে না মানবে না করে কতো যুদ্ধ পেড়িয়ে গত সপ্তাহে ওদের বিয়ের কাবিন হলো। দুটি ভালোবাসার পরিণত হলেও একসাথে বাঁচা হলো না একজীবন।আফসোস ভালোবাসা এবং খাঁটি ভালোবাসা গুলো অকালেই ঝড়ে গেলো।অথচ চারপাশে এতো বিশ্বস্ত এবং খাঁটি মানুষ আজকাল পাওয়া যায় না।

–হঠাৎ করেই বুকটা কেঁপে ওঠে নিরুকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা ও করে না রিহান।মাথা সোজা করে দেখে সেন্স নেই,, তাড়াতাড়ি করে বিছানায় শুয়ায় পানি এনে চোখে মুখে দেয়।
নিরুর জ্ঞান ফিরতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিহান। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,তুমি যাবে হসপিটাল?তোমার বেশি খারাপ লাগছে?
–নিরু:প্রিয় মানুষ গুলো এমন কেন?খুব সহজেই ছেড়ে চলে যায়।ওদের ছাড়া আমাদের যে কষ্ট হয় বুঝে না কেন?আচ্ছা! ওরা কি নিজ ইচ্ছায় আমাদের ছেড়ে চলে যায়?

–রিহান:জীবনের আয়ু ফুরিয়ে গেলে কিভাবে থাকবে বলো?ওদের কিছু হবে না চলো তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো।তারপর দুজনে এভাবেই বেড়িয়ে যেতে নিলে রিহান এসে নামাজ পড়ার হিজাব টা দিয়ে বলে এটা পড়ে নাও।
.
.
–এক ঘন্টা পর হসপিটালে এসে পৌঁছায় রিহানরা এসে দেখতে পায় ওদের আত্মীয় স্বজনরা চলে এসেছে।সবাই কান্না কাটি করছে। ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে দুজনেই মা-রা গেছে।

–তারপর এখান থেকে সবাই রিফাতদের বাসায় চলে যায়।ওখানে দাফন দিতে দিতে পরদিন বিকেল হয়ে যায়।নিরুর বাড়ির মানুষ রিহানদের বাসার মানুষ সবাই এসেছে।
–রিহান:নিরু!এবার বাসায় চলো?ফ্রেশ হতে হবে তো!
–নিরু:নীলা রিফাত ভাইয়া অনেক আরামে আছে বলেন? পৃথিবীর সাথে আর যুদ্ধ করতে হবে না।
–রিহান:এগিয়ে এসে নিরুর মাথা ওর পেটে চেপে ধরে। নিরু বসে থাকায় আর রিহান দাঁড়িয়ে থাকায় এভাবেই ধরতে হয়েছে।নিশা আর রিফা ও এগিয়ে এসে অনেক কষ্টে ওকে নিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।

সারা রাস্তা নিরবে শুধু চোখের পানি ফেলেছে আর একটু পরপর হেঁচকি দিয়েছে।যতই সবাই বুঝাক মন কি আর মানে।প্রিয় মানুষ গুলোর শূন্যতা যে ভীষণ কঠিন।

*********-
–ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ আনমনা হয়ে বেলকনিতে বসে আছে নিরু।কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। নিশা আর রিফা রুমে আসে।এগিয়ে এসে নিরুর পাশে বসে।
–রিফা:কিছু করার নেই আপু।জীবনে সবচেয়ে চরম সত্যি মৃত্যু সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। প্লিজ তুমি একটু স্বাভাবিক হও।
–নিশা:বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে,,কষ্ট পেও না।
–নিরু:চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।জোর পূর্বক হেসে বলে,একদিন আমি ও হারিয়ে যাবো।আচ্ছা!যদি এমন অকালে হারিয়ে যাই কেমন হবে?
–রিহান :ভালোই হবে।নীলা আর রিফাতের মতো তোমার আর আমার জানাজা এক সাথে সবাই মিলে পড়ে যেতে পারবে।রিফা আর নিশা উঠে চলে যায়।

–নিরু এবার শব্দ করে কান্না করতে থাকে।রিহান এগিয়ে এসে পাশে বসে বলে,,মৃত্যু চিরন্তন সত্যি। তবে হয়তো অকালে ঝড়ে গেছে দুটি প্রাণ কিন্তু ভালো কিন্তু একটা হলেও উপর ওয়ালা করেছে।

“নিরু:যেমন?
–রিহান :ভেবে দেখো রিফাত আর নীলা যথেষ্ট কষ্ট করে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে।ওদের ভালোবাসা মনে গেঁথে যাওয়ার মতো।আজকে যদি একজন মা-রা যেতো তাহলে?তাহলে অন্য জন বেঁচে থাকলে ও জীবনের কোনো স্বাদ পেতো না।ভালোবাসা হারিয়ে গেলে বেঁচে থাকা সহজ না।এর থেকে ভালো দুজনের ভালোবাসার সমাপ্তি একসাথে থেকেই হয়েছে।হয়তো কষ্ট অনেক তবে মেনে তো নিতেই হবে বলো?
–নিরু:আমি যদি হঠাৎ করে মা-রা যাই?আমার জন্য তো কারো জীবনের স্বাদ চলে যাবে না?
–রিহান :নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে উঠে দাঁড়ায়। রুমে গিয়ে পাশে থাকা ফুলদানি টা ছুড়ে মারে ফ্লোরে।সাথে সাথে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

–নিরু চোখে পানি নিয়ে ও জোর পূর্বক হাসে।এর মধ্যে রুমে আসে মিরা।
–মিরা:আসার পর তো তোর বউয়ের সাথে কথায় হলো না রিহান।জানি তোদের ভীষণ মন খারাপ নিরুপমা কই?
–রিহান :সাবধানে পা কেটে যাবে।প্লিজ মিরা আমি মারতে পারছি না তুই একটু আমার হয়ে ফাজিল মেয়ের গালে দুটো থাপ্পড় দিয়ে দিছ তো।
–মিরা:চারপাশে তাকিয়ে বলে এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে?
–নিরু:বেলকনি থেকে এগিয়ে এসে সালাম দেয়। মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করে ভালো আছে কি না!

–মিরা:বাহ্ খুব মিষ্টি বউ পেয়েছিস তো।আসো আমার পাশে বসো।এগিয়ে গিয়ে মিরার পাশে বসে নিরু।সুন্দর করে ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে নম্র ভদ্র একটা মিষ্টি মেয়ে মাথা নুয়ে বসে আছে। আড় চোখে কয়েকবার দেখে নেয় রিহান।মনে মনে বলে মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।অথচ আমাকেই ভেজে ফেলে।

–মিরা:হাসতে হাসতে বলে ভাই!তোর বউ তুই সারাজীবন দেখতে পাবি চুরি করে নিয়ে যাবো না।
এবার রিহান লজ্জা পেয়ে যায়।এরমধ্যে কাজ করে যে আন্টি রুম পরিষ্কার করে দিয়ে যায়।

–মিরা:এতো সহজ সুন্দর বউ পেয়ে ও রাগ হয় কেমনে?একটু তো কন্ট্রোল করতে শিখ নিজেকে!
–রিহান:সহজ?তুই নিরুপমা কে সহজ বলছিস? তুই জানিস তোকে আর আমাকে ও সন্দেহ করতে ছাড়ে নি এই পাকা মেয়ে।

–নিরু এবার চোখ বড় বড় করে রিহানের দিকে তাকায়।মিরা হাসতে হাসতে বলে,,সত্যি নিরুপমা?
–নিরু:দ্রুত মাথা নেড়ে বলে না না।
–রিহান :আচ্ছা!তবে মনে মনে স্বস্তি নাও মিরা বিবাহিত মহিলা!তারপর হাসতে থাকে।
–মিরা:বিয়ে হয়েছে বলেই মহিলা হয়ে গেলাম?
–নিরু:দেখলা আপু কেমন সে?
–রিহান :তো!
–নিরু:মহিলা বলা হয় আম্মু চাচিদের বয়সী লোকদের।
.
.
কয়েকদিন পর,,
–রিফা:তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো ভাইয়া!
–রিহান :হুম!বলে ফেল,আমার সাথে কথা বলতে আবার কবে অনুমতি নিয়েছিস?
–নিরু ও খানিকটা চমকে যায়।যে মেয়ে সব সময় বকবক করে ভাইয়ের সাথে সে কিনা আজকে অনুমতি নিতে আসছে?
–রিফা:জানি তুমি রেগে যাবে।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি অনেক ভেবে দেখেছি।
–রিহান :ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বোনের দিকে তাকিয়ে বলে কি?
–রিফা:চোখ বন্ধ করে বলে আমি একজনকে ভালোবাসি ভাইয়া।
–নিরু:সাথে সাথে মুখ টা মলিন করে বলে,, কে সে?
–রিফা:আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই।রিহান একবার নিরুর দিকে তাকায় আবার বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,,আচ্ছা!পরিচয় করিয়ে দিস দেখি ভালো হলে সমস্যা নেই।

–রিফা:তুমি তাকে ভালো ভাবেই চেনো।কিন্তু বিশ্বাস করো ভাইয়া সে পাল্টে গেছে।আমাকে বলেছে কখনো বাজে কাজ,, ব্যবহার করবে না।

–রিহান :ভ্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে কে সে?
–রিফা:চোখ বন্ধ করে বলে নিরব ভাইয়া।সাথে সাথে মনে হলো একটা কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে।চোখ খুলে দেখে চেয়ার টা ছিটকে পড়ে আছে সাথে জিনিস পত্র ও।
–নিরু:প্লিজ!শান্ত হও তোমরা।রিফাকে দু’হাতে আগলে ধরে বলে মজা করে বলেছে হয়তো।
–রিহান:চিৎকার করে বলে,ওর সাহস হয় কি করে?রিহানের চিৎকারের শব্দ শুনে ওর আব্বু আম্মু ও চলে আসে।

–তারপর ছোট খাটো একটা ঝড় বয়ে যায় পুরো বাড়িতে।রিফা কান্না করতে করতে যে রুমে গিয়ে দরজা আটকে রেখেছে।নিরু সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছে খুলছে না।

********************************************–রিফার কান্ড দেখে দেখা করতে বাধ্য হলো রিহান।নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে।মুখোমুখি বসে আছে নিরব রিহান আর এক বন্ধু।

–রিহান :ঠান্ডা মাথায় বলে ,, তোর সাথে আমাদের শত্রুতা তুই এরমধ্যে রিফা কে কেন জড়াচ্ছিস?
–নিরব:কেন?ভুল হয়ে গেছে বুঝি?প্রিয় মানুষ গুলোতে হাত বাড়ালে কেমন লাগে?খুব কষ্ট হয় বুঝি?

–রিহান :দাঁতে দাঁত চেপে বলে সন্ধান পেলি কোথায়? তোর সাথে তো রিফার যোগাযোগ হওয়ার মতো সুযোগ সুবিধা নেই?

–নিরব:হাসতে হাসতে বলে,,নরম খেলোয়াড় ভেবেছিস?একেবারে পিষে দেবো।

একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়ে যায়।চারপাশের কয়েকজন এগিয়ে এসে থামায়।কিন্তু লাস্ট কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না রিহান।দুকদম পিছিয়ে পড়ে যেতে নিলে ধরে ফেলে ওর বন্ধু।
কোনো রকম তর্কে না জড়িয়ে চুপচাপ চলে আসে বাসায়।

–নিরু:কি হয়েছে?এমন অস্বাভাবিক লাগছে কেন তোমায়?নিরব ভাইয়া কি বলেছে?দেখা হয়েছে?আরও কিছু বলতে নিলে এর আগেই ঠাস করে থাপ্পড় মা’রে রিহান।ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দরজা আটকে ফেলে ভিতর থেকে।
–রিফা:এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে নিরুকে আগলে ধরে।নিরু এখনো স্তব্ধ হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে পারছে না ঠিক কি হয়েছে?বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তো এমন ছিলো না?চোখ দিয়ে আপনা আপনি কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।এমন দিন কেন বারবার ফিরে আসে? যা হজম করার ক্ষমতা উপর ওয়ালা দেয় নি এমন দিন কেন দেয়?কেন এমন পরিস্থিতি তে ফেলে।মনে মনে এই কথা গুলোই চিন্তা করে।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৩

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৩]
-তামান্না

–নিরু:রিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে এতো হাইপার হচ্ছেন কেন?কে হই আমি আপনার?আমার হাত কেটে যাক মা-রা যাই আপনার কি?আপনার তো রূপবতী ধবধবে সাদা বালিকা রুপী নব্য প্রেমিকা আছে।আমি তো কুৎসিত আমার জন্য এমন করছেন কেন??
–রিহান :দুই হাতে নিরুর দুই বাহু চেপে ধরে বলে সেটা আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই।
–নিরু:মানুষ দেখছে ছাড়ুন!
–রিহান :দেখুক!তোমার পাড়ার মানুষজন যে তুমি কতোটা অসভ্য স্বামীর কথা অব্দি শুনো না।
–নিরু:আপাতত স্বামী স্ত্রীর কথা শুনছে না।রাগ করে চলে যাচ্ছে।
রিহান ছেড়ে দিয়ে কতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
–রিহান :বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলে বাসায় ফিরে চলো?
–নিরু:চলেন!
–রিহান :আমাদের বাসায়।
–নিরু:নাহ্।এক সপ্তাহ ছুটি দিয়েছেন আম্মু।
–রিহান :খানিকটা মন খারাপ করে বলে আচ্ছা।

–খাওয়া দাওয়া শেষ করে বের হয়ে যায় শ্বাশুড়ির থেকে বিদায় নিয়ে।যাওয়ার আগে একবার ও নিরুর সাথে কথা বলে নি।
.
.
–এভাবেই বাবার বাড়ি তে এক সপ্তাহ কেটে যায়। রিহান ফোন ও করে নি একবার আসে ও নি।তবে মায়ের সাথে কথা হয়েছে নিরুর।আজকে শ্বশুর শ্বাশুড়ি রিফা ওদের বাসায় বেড়াতে আসবে।এবং নিরু কে নিয়ে যাবে।নিরুর মা ও এখন সুস্থ।

–নিশা:রিহান ভাইয়ার সাথে কি ঝগড়া হয়েছে?
–নিরু:তার সাথে কবেই বা ভাব ছিলো?
–নিশা:এতো প্রশ্ন করলে বাচ্চাদের ব্রেণ নষ্ট হয়ে যায় জানিস না?প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন নয় উওর চাই।
–নিরু:মন খারাপ করে বেলকনির গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে বলে,, তুই আম্মু আর আব্বুর মতো কেউ আমাকে বুঝে না।রিহান সে তো প্রশ্নই আসে না।
–নিশা:সমাধান করা যায় না?
–নিরু:চমকে গিয়ে পিছনে ফিরে ভয় পাওয়ার কন্ঠে বলে তুই কি ডিভোর্সের কথা বলছিস?আমি আমার জীবন থাকতে এসবে যেতে পারবো না।
–নিশা:বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে বোকা।বাবা মায়ের বড় সন্তান যে বোকা থাকে তা তোকে দেখে শিউর হলাম।সমাধান মানেই কিন্তু বিয়োগ নয়।বিয়োগে বিচ্ছেদ আর সমাধানে শান্তি।মিলন বুঝলি।আমি বলছি প্রকাশ কর কাছে টেনে নে দেখবি সুখ কাকে বলে।

–রিফা:ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলে শুনে ফেলেছি। বুঝলে ভাবি,তোমার বিচ্ছু বোনকে বরং বিয়ে দিয়ে দাও বেচারি সুখের সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকতে চাচ্ছে।
–নিশা:বোনকে ছেড়ে দিয়ে বলে বাজে চিন্তা ভাবনার লোকজন কোথাকার।খারাপ লোক সর।
–নিরু:হয়েছে এবার থামো।কখন এলে?আব্বু আম্মু কোথায়?
–রিফা:বিয়াই বিয়াইনরা বসে আড্ডা দিচ্ছেন।

–নিশা:ভাইয়া আসে নি?
–রিফা:চোখ টিপ দিয়ে বলে বাসায় কাজিন এসেছে একা রেখে আসতে চায় নি।আমার মামাতো বোন ভাইয়ার সাথে বন্ডিং ভালো তাই আড্ডা দিচ্ছে।
–নিশা:কি বলিস?দেখতে কেমন রে?একা একটা বাড়ি তে ছেলে মেয়ে, একা কিভাবে রেখে এলি?
ইশ আমার তো ভয় করছে একটা মাত্র বোনের জামাই বল।
–নিরু:তোরা থামবি।রাগ দেখিয়ে চলে যায়।

–এদিকে রিহান ইচ্ছে করেই দূরত্ব তৈরি করেছে। অফিসের কাজেই ব্যস্ত রেখেছে নিজেকে। মামাতো বোন এসেছে বাসায় বেড়াতে সাথে ওর বর।বর হলো ওদের খালাতো ভাই। দুজনেই রিহানের ক্লাসমেট এবং বন্ধু।সুতরাং ভীষণ ভালো সম্পর্ক।
নিরুদের বাসায় অনেক বার যেতে বলেছে কিন্তু মাহিন(বর)একটু অফিসের কাজে ট্যুরে যাবে তাই মিরা(বউ)কে নিয়ে বের হবে।বিকেলে মিরা বাসায় চলে আসবে আর মাহিন ট্যুরে চলে যাবে।মাহিন ফিরে এলেই মিরা কে নিয়ে নিজেদের বাসায় ফিরবে এই কয়দিন মিরা ওর ফুপ্পির বাসাতেই থাকবে।

–নিরুরা বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।এসে দেখে কেউ নেই।তারপর রুমে চলে যায়।। পুরো রুম খুব সুন্দর ভাবে গুছাতে থাকে। পুরো রুম এলোমেলো হয়ে আছে।
–রিফা :কি করছো?
–নিরু:তোমার খাচ্চোর ভাই কি অবস্থা করে রেখেছে দেখো!
–রিফা:ওহ আচ্ছা!এখানে মিরা আপু ভাইয়া আড্ডা দিয়েছে এই কয়দিন।বাসায় ফিরে নি আপুর সাথে বাইরে আছে।
–নিরু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার কাজ করতে থাকে।এই মিরা টা কে দেখতে হবে তো।আচ্ছা এটাই কি তার বালিকা প্রেমিকা নাকি?কিছু একটা ভেবে বলে।

–নিরু:আচ্ছা রিফা তোমার মিরা আপুর বয়স কেমন দেখতে কেমন গো?
–রিফা:কোনো রকম হাসি আটকে রেখে বলে,, ভাইয়ার বয়সীই তবে ধবধবে ফর্সা।চেহারা কাটিং ভালোই।
–নিরু:ওঁরা প্রতিদিনই বাইরে বের হয়?
–রিফা:হ্যাঁ!কলিং বেলের শব্দে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় রিফা।
.
.
–রিহান :খাবারের প্যাকেট গুলো ড্রয়িং রুমে রেখে বলে খাবার নিয়ে এসেছি সবার জন্য।নিরু রান্না ঘরে থেকে সবটা শুনে।
–রিফা:এতো রাত হলো যে?
–রিহান :হয়েছে এমনি।সর বলে রুমে চলে যায়। মিরা আগেই চলে গেছে।
–রিফা:ফিসফিস করে বলে বউ কিন্তু চটে আছে।
–রিহান :ফিসফিস করে বলে কেন?
–রিফা:মেয়ে নিয়ে রাত বিরাতে ঘুরছো বলে।তারপর মিটিমিটি হাসতে থাকে।রিহান ও মুচকি হেসে চলে যায়।

–এদিকে রেগে রেগেই খাবার গুলো খুলে রাখে।রিহানের চেহারা খানা দর্শন করার জন্য রুমে আসে।
–রিহান :ফর্মাল ড্রেস আপেই শুয়ে আছে।নিরুকে দেখে চমকে যাওয়ার ভান করে বলে, তুমি? তুমি কখন এলে?
–নিরু:সেটা না জানলে ও চলবে।বউ তো আর চারপাশে কম অভাব পড়ছে না!
–রিহান :সেটাই তাহলে তুমি আসলে কেন?আমি তো বলিনি তোমায় প্রয়োজন।
–নিরু:তেড়ে গিয়ে শার্টের কলার টা ধরে বলে এখন তো প্রয়োজন হবেই না।বিয়ে করার সময় তো তা মনে হয় নি।তারপর আবার হঠাৎ করেই নরম গলায় বলে,আসলে আমারই ব্যর্থতা।মায়ায় জড়াতে পারি নি।আমি শুধু কলঙ্ক বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছি ভালোবাসা নয়।হুট করে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।রিহান স্তব্ধ হয়ে গেছে।পাঁচ মিনিট এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো।

–নিরু কতক্ষণ দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে।তারপর চোখ মুছে বের হয়ে আসে রুম থেকে।

–মাথায় লম্বা করে ঘুমটা টেনে চুপচাপ সবাই কে খাবার বেড়ে দেয়।সবাই খেতে বসেছে রিহান ও।তবে মিরা রুম থেকে বের হয় নি।
–শ্বাশুড়ি :নিরু ও বসে পড়ো একসাথে খেয়ে ফেলি সবাই।
–নিরু:আমি খাবো না।ভালো লাগছে না আম্মু।
–রিহান উঠে হাত ধুয়ে চুপচাপ চলে যায়।
–শ্বশুর :এর আবার কি হলো?
–নিরু:খাবার রুমে দিয়ে আসবো আব্বু।

–সবাই খেয়ে চলে গেলে সুন্দর করে গুছিয়ে খাবার প্লেটে নিয়ে রুমে আসে নিরু।অন্য দিকে ঘুরে আছে রিহান চুপচাপ প্লেট টা রেখে বলে খাবার রেখে গেলাম। রিহান এদিকে ফেরার আগেই বেড়িয়ে যায় নিরু।
নিরু আজকে রিফার সাথে থাকবে বলে ওর রুমে চলে এসেছে।
–রিফা:ঝগড়া হয়েছে তোমাদের?
–নিরু:বিছানায় শুতে শুতে বলে, নাহ্।ভালো লাগছে না নিশাকে ভীষণ মিস করছি তাই তোমার সাথে থাকতে চলে এসেছি।তারপর শুয়ে শুয়ে দুজনে অনেক গল্প করে।

–এদিকে রিহান অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে কিন্তু নিরু ফিরে আসছে না দেখে উঠে খুঁজে।কোথাও না পেয়ে রিফার রুমে আসে।এসেই লাইট অন করে ফেলে।
আচমকা লাইটের আলোয় উঠে বসে রিফা আর নিরু।
–রিহান:এই রুমে কি করছো নিরু?
–নিরু:ঘুমুতে এসেছি।
–রিহান:তুই একটু বাইরে যা রিফা আমার ওর সাথে কথা আছে।
–নিরু:তুমি বাইরে যাবে না রিফা।আর আপনি আপনার রুমে যান।
–রিহান:জোরে ধমক দিয়ে রিফাকে বলে, কিছু বলেছি আমি?
–রিফা:যেতে যেতে বলে,,কার ঝাঁজ কার উপর। ভাই তোদের ব্যাপারে হুদাই আমি ধমক খাচ্ছি কিন্তু মোড ভালো হলে একটা ট্রিট দিয়ে দিও।রিহান চোখ গরম করে তাকাতেই দৌড়ে বের হয়ে যায় রিফা।

–রিহান:রুমে চলো?
–নিরু:এই রুমে থাকবো।
–রিহান:বেশ!তাহলে আমি রিফাকে বলে দিচ্ছি আমার রুমে ঘুমিয়ে পড়ুক।
–নিরু:আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না।
–রিহান:বিছানায় বসে নরম ভঙ্গিতে বলে আচ্ছা! তুমি কি চাও?
–নিরু:কিছু চাই না!
–রিহান:তাহলে আলাদা রুমে আসলে কেন?যত যাইহোক স্বামী স্ত্রী আলাদা রুমে থাকলে শয়তান সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে।রাগ অভিমান সব করার অধিকার তোমার আছে কিন্তু আলাদা থাকার নেই।সেটা আমি দিবো না কখনো।
–নিরু:প্লিজ আর কথা বাড়িয়ো না তো।যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।তোমার থেকে আমি কোনো অভিনয় নিতে পারি না রিহান।কথাটা বলেই কান্না করতে করতে বসে পড়ে।

–সব সময় রিহান কে তুমি বলে ডাকলে ও সেই ঘটনার পর থেকে আপনি বলেই সম্বোধন করে নিরু।তবে অনেক দিন পর আবার নিরুর মুখ থেকে তুমি এবং নিজের নাম শুনে ভালোই লাগে।
–রিহান :কান্না করো না উঠো!
–নিরু:খানিকটা চিৎকার করে বলে,, ভালো লাগছে না বলছি তো!
–রিহান :রুমে চলো ভালো লাগবে।নিরুর হাতটা ধরে বলে চলো!
–নিরু:এক ঝটকায় হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে, আমায় ছুবেন না।
–রিহান :আচ্ছা!তাহলে কাকে পাঠাবো তোমায় ছুয়ার জন্য।
–নিরু:নির্লজ্জ পুরুষ।খারাপ লোক।তারপর হনহন করে রুমে চলে যায়।
–রিহান :হাসতে হাসতে বলে বোকা বউ আমার।
.
.
–রিহান :উঠো খেয়ে ঘুমাবা।
–নিরু:খাবো না।
–রিহান :আরে খাও!বিয়ে তো আরেক টা করতেই হবে।রোগা কাউকে কি আর তখন কেউ বিয়ে করবে?
–নিরু:আমার জন্য আপনার না ভাবলে ও চলবে।
–রিহান :উঠো তো বলেই এক টানে বসায় দেয়।তারপর জোর করে মুখে খাবার তুলে দেয়।মুখে দিলে ও এভাবেই বসে থাকে।চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়তে থাকে।এক পর্যায়ে হেঁচকি উঠে।রিহান তাড়াতাড়ি করে পানি এনে দিলে ও দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুমে বমি করে দেয়।

–রিহান ও অস্থির হয়ে যায়।নিরুর পিছনে যেতে নিলেই ওর ফোন বেজে ওঠে।তাকিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার।

–রিহান:সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একজন অপরিচিত মানুষের গলার শব্দ শুনতে পায়।কিছু একটা শুনে হাত থেকে ঠাস করে ফোন টা নিচে পড়ে যায়।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১২

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১২]
-তামান্না

–রিহান:শায়েস্তা না মেরে ফেলবে। সাথে সাথে মুখটা মলিন হয়ে যায় নিরুর।মৃত্যু শব্দ টা ভীষণ যন্ত্রণার নিজের বাবা আর নানু নানার মৃত্যুতে বুঝে গেছে।ভালোবাসার মানুষ বলতে এরাই ছিলো এখন কয়েক জন আছে।ওঁরা ও থাকবে না ভাবতে ও পারে না নিরু।
কোনো কথা না বলে মন খারাপ করে চলে আসে।চুপচাপ বেলকনিতে চলে যায়।
–কিছুক্ষণ পর রিহান চুপচাপ এসে নিরুর পিছনে দাঁড়ায়।
–রিহান:তুমি কি চাচ্ছো এখনই ফোন করে নিয়ে আসবো নিরবকে?নাহ মানে আমাকে মে’রে ফেলার জন্য।আচমকা এসে রিহানের গলার শব্দ পেয়ে ভয় পেয়ে যায়।বুকে থুতু দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,আপনাকে কেন মারবে?এরচেয়ে ভালো এসে আমাকেই বরং মেরে দিয়ে যাক।

–রিহান:এমা তোমাকে কেন মারবে? আর আমি দিবো কেন?আমি তো তোমায় ভালোবাসি।তুমি তো আর আমায় ভালোবাসো না।এতে তো তোমারই লাভ।
–নিরু:কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাইরে তাকিয়ে বলে ভালো তো আমি নিজেকে ও বাসি না।বরং ক্ষতিটা আমারই হোক।
–রিহান:তোমার কেন নিজেকে ভালোবাসতে হবে? তোমাকে ভালোবাসার জন্য তো আমি আছি তাই না!
–নিরু একবার পিছনে ফিরে রিহানের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।তারপর আবার ঘুরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, আপনার মতো সুদর্শন যুবকের মুখে কুৎসিত মানুষ কে ভালোবাসা মানায় না।আপনি বরং সাদা ধবধবে নতুন একজন বালিকার প্রেমে পড়ুন এতে মনের খায়েশ মিটবে।

–রিহান :স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলে,, আর?
–নিরু:পছন্দ হওয়ার মতো কথাটাই বললাম!
–রিহান :হুম!আর আসলেই তো তুমি অসুন্দর তোমায় কেন ভালো বাসতে যাবো?সেদিন সত্যিই বলেছি।রিহানের এমন কথা শুনে পিছনে ছলছল চোখে ঘুরে তাকায় নিরু।
রিহান কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।ইচ্ছে করেই নিরুকে হার্ট করার জন্য কথা টা বলে রিহান।আর দূরত্ব নয় কাছে আসার জন্য খানিকটা আঘাত কিংবা কষ্ট দেওয়া দরকার।মানুষ ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে সুতরাং ব্যথা দেওয়া টা ও জরুরি।

–আজকে রাতে আর রিহান নিরুর রুমে ফিরে আসে নি।গেস্ট রুমে থেকে গেলেও নিরু জানে না রিহান বাসায় আছে কি না!

–খাওয়া দাওয়া শেষ হলে রুমে এসে অপেক্ষা করে নিরু।চিন্তায় কিছু খেতে ও পারে নি।কেউ জানে ও না রিহান কোথায়।নিরু প্রায় অর্ধেক রাত অব্দি অপেক্ষা করে, ইচ্ছে করছিল ফোন করে জানতে তবে করে নি।
মনে পড়ে তারপর অপমান করা পরিস্থিতি চারপাশ মানুষের তাচ্ছিল্য,, যা আজকে নিজের মুখে স্বীকার করেছে রিহান,, সবটা মন থেকেই করেছে তাহলে!
বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি মুছে শুয়ে পড়ে।মনে মনে বলে নতুন করে মায়ায় জড়াবে না।এমনি যা জন্মেছে তা মৃত্যু ব্যতীত মুছে ফেলা সম্ভব নয় সুতরাং এর পরিধি আর বাড়তে দেওয়া যাবে না
.
.
–সকাল সকাল মায়ের ফোন পেয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ি মায়ের বাসায় পাঠায় নিরুকে।নিরুর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে একা নিশা সামলাতে পারছে না।সারা রাত রুমে না ফেরায় নিরু ভেবেছে রিহান বাসায় ফিরে আসে নি।
তাই আর বলা হয় নি রিহান কে না বলেই চলে আসে।শ্বাশুড়ি বলে দিয়েছেন এক সপ্তাহ থেকে আসতে।

–নয়টায় ঘুম থেকে ওঠে জানতে পারে নিরু বাসায় নেই।রিহানের প্রচুর রাগ হয়।ওর বউ ওর থেকে অনুমতি না নিয়ে বাসায় চলে গেলো? ঠিক ঠাক ভাবে শায়েস্তা করেই ছাড়বে।
রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়।যাওয়ার সময় মা বলে দিয়েছে যেন নিরুদের বাসায় চলে যায়।

–নিরু বাসায় এসে নিজের হাতে রান্না করে মা আর বোনকে খাওয়ায়।মায়ের জ্বর হয়েছে।তাছাড়া শরীর ও ভীষণ দূর্বল।এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে নিয়েছে।আসার পর থেকে হাজার টা প্রশ্ন রিহান কে বলে এসেছে কি না। আসে নি কেন? নিরু কোনো রকম কথা কাটিয়ে নিয়েছে।বড় সন্তান ভীষণ আদুরে সুতরাং বাবা মায়ের এক্সপেকটেশন ও থাকে বেশি।
এতো দিন এই বাসায় অভ্যস্ত হলেও আজকে কেন জানি ভালো লাগছে না নিরুর।ফাঁকা লাগছে।মনে হচ্ছে শূন্যতায় ছেয়ে গেছে চারপাশ।

–শ্বাশুড়ির খোঁজ ফোনে নিয়ে নিয়েছে রিহান।তারপর অফিসের কাজ শেষ করে কিছু কেনাকাটা করে হাত ভরে নিয়ে চলে যায় শ্বশুর বাড়ি।
এতো রাতে কলিং বেলের শব্দে ভ্রু কুঁচকে আসে নিরুর।নিশাকে মায়ের পাশে বসিয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।রিহান কে দেখে হঠাৎ ভয় পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি পিছন দিকে ঘুরে ওড়না টেনে মাথায় কাপড় দিয়ে নেয়।বাসায় থাকায় মাথায় কাপড় ছিলো না।পিছনে ফিরেই বুকে থুতু দিয়ে সামনে ঘুরে তাকায়।নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনি এতো রাতে?
–রিহান:সোফায় ব্যাগপত্র গুলো রেখে আবার গাড়ির কাছে চলে যায় পিছন পিছন নিরু ও আসে।নিরু হাতে কিছু দিয়ে বাকি গুলো নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
–নিরু:এতো কিছু আনতে গেলেন কেন?
–রিহান :টাকা বেশি হয়েছে তাই!সরো বলে মিতার রুমে চলে যায়।

–নিরু:ফাজিল লোক।এই বাজে লোকের মোড মনে হয় না আমার জীবনে বুঝা হবে।

–মিতা:রিহান কে রুমে নিয়ে যা নিরু।ওকে কাপড় দে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।তারপর রিহান কে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।রিহান এসেই ওয়াশরুম থেকে পা ধুয়ে ধুপ করে শুয়ে পড়ে।

–নিরু:রাতে থেকে যাবেন?
–রিহান :হেসে তুমি চাচ্ছো?
–নিরু:আমি চাওয়ার কে?রাতে বাসায় না ফিরলেই বা আমার কি?
–রিহান :তাই তো!
–নিরু:তারপর কি করবেন?
–রিহান :বিয়ে তো করে নিয়েছি আপাতত রোমাঞ্চ করবো।
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
–রিহান :ভয় পাই না।তারপর উঠে নিরুর হাত থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

************** ************* **************
–রাত এগারোটা নিরু মাত্রই নুডলস রান্না করে রুমে এলো।রিহান রাতে খানা খায় নি।মা ও খানিকটা সুস্থ নিশা পাশে আছে।তবে রুমে এসে দেখে ফোনে কথা বলছে রিহান।ভীষণ হাসিখুশি ভাবে কথা বললেও ভীষণ আস্তেই কথা বলছে।
–রিহান:সরি!আজকে আসতে পারবো না রাতে। অফিসের কাজে বাইরে আছি।এবার কথা টা জোরেই বলে।যেন নিরু শুনতে পারে।

–নিরু:মনে মনে কালকে রাতে তাহলে অন্য কোথাও ছিলো?
–রিহান :ফোন টা রেখে পিছনে ঘুরে চমকে যাওয়ার ভান করে বলে তুমি কখন এলে?
–নিরু:আজকে রাতে যেতে পারছেন না সেই দুঃখ প্রকাশের এক মিনিট আগে।আর আপনার পায়ে কেউ বেঁধে রাখে নি সুতরাং যেতে পারেন।
–রিহান :হাসার চেষ্টা করে এগিয়ে এসে নুডলস এর বাটি হাতে নিয়ে বলে,,থাক!আজকে রেস্ট করুক।খুব সুন্দরী একটা অল্প বয়সী বালিকা গায়ের রং ধবধবে সাদা পেয়েছি।তুমি মনে হয় সেদিন মন থেকেই দোয়া করে ছিলে তাই এতো তাড়াতাড়ি পেয়েছি।ধন্যবাদ।তারপর খেতে বসে।

–নিরু:গম্ভীর কন্ঠে বলে,, বিয়ে করে নিন।
–রিহান :হাসতে হাসতে বলে অনুমতি দিচ্ছো?
–নিরু:সে অধিকার নেওয়ার প্রয়োজন নেই। হারামে না থেকে খানিকটা আরামের জন্য হলেও বিয়ে করে নিন।
–রিহান :বিয়ে করে কি করবো?
–নিরু:ড্রয়িং রুমের কর্ণার র্্যাগে সাজিয়ে রাখবেন।
–রিহান :তাহলে তো আগে তোমাকে রাখতে হয়।
–নিরু:খানিকটা মন খারাপ করে বলে আমি কি আর আপনার বউ নাকি?আমি ধবধবে সাদা বালিকা নই যে সাজিয়ে রাখলে ঘরটা সুন্দর লাগবে।
–রিহান :তাহলে তুমি কে?
–নিরু:আমি নিরুপমা।
–রিহান :বাটিটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলে মিসেস রিহান।এরপর সোজা লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।
.
.
–সারারাত ঘুম হয়নি নিরুর।ওর রুমের সোফাটা ও অনেক ছোট তাই শুতে পারে নি।রিহান বুঝতে পেরে ওকে নিয়ে ছাঁদে বসে আড্ডা দেয়। অবশ্য নিরু বলেছিল রুমে এসে শুয়ে থাকতে তবে রিহান শুনে নি।
ভোরের আজানের শব্দে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে রিহান।নিরু নামাজ শেষ করে গেস্ট রুমে খানিকটা জিরিয়ে চলে আসে রান্না ঘরে।নতুন জামাই একটু ভালো মন্দ তো করতেই হয়।আম্মু ও যখন অসুস্থ দায়িত্ব টা আপাতত নিরুই নিয়ে নিয়েছে।

–রান্না শেষ করতে করতে বেলা বারোটা বেজে গেছে।এরমধ্যে নাস্তা করে আম্মু আর নিশাকে দেওয়া হয়েছে তবে রিহান কে ডাকলে ও ওঠে নি।বেচারা শুয়েছেই মাত্র কতক্ষণ।
সব কিছু গুছিয়ে সালাত কাটতে গিয়ে হাত কেটে যায় নিরুর।খানিকটা বেশিই কেটে গেছে।এমন বেখেয়ালি তো কখনোই হয় নি।তারপর রক্ত থামছে না দেখে ভয় পেয়ে যায়।চিৎকার করতেই আম্মু আর নিশা বের হয়ে আসে।রিহান ও মাত্র ই উঠলো শব্দ শুনে রুমের বাইরে এসে দেখে নিরু কান্না করছে।তাড়াতাড়ি করে ওকে ধরে রুমে নিয়ে যায়।

–নিরু চুপচাপ বসে আছে।আপাতত সবাই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
–রিহান:দাঁড়িয়ে অন্য দিকে ঘুরে চোখের উপর হাত রেখে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
–নিরু:এএএএমন কককককরছেন কককেন?
–রিহান :দাঁতে দাঁত চেপে কি করছিলে রান্না ঘরে?এতো সুন্দর ভাবে হাতটা কাটলে কেন?
–নিরু:ভয়ে উঠে দাঁড়ায়।মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলে রান্না করছিলাম।আম্মু তো অসুস্থ।
–রিহান এগিয়ে আসতে আসতে বলে কার জন্য?
নিরু পিছিয়ে যেতে যেতে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।আমতা আমতা করে বলে, আপনার জন্য।আপনি এভাবে এগুচ্ছেন কেন?
–রিহান :দেয়ালের দুই পাশে হাত রেখে বলে,, আমি কি রাক্ষস?নাকি তোমার মনে হয় জীবনে কিছু খাই নি?
নিরু ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।রিহান পাশে রাখা মগটা ফ্লোরে আছাড় মেরে ওয়াশরুমে চলে যায়।তারপর কোনো রকম কাপড় পাল্টে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

–নিরু দৌড়ে পিছন পিছন এসে বলে কোথায় যাচ্ছেন?এই দুপুরে কেউ বের হয়?তাছাড়া খাওয়া দাওয়া ও করেন নি।খেয়ে যান।
–রিহান :তাই তো!আমি তো কয়েক হাজার বছরের অভুক্ত আমাকে খাওয়ানোর জন্য হাত পা পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।
–নিরু:রিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে এতো হাইপার হচ্ছেন কেন?কে হই আমি আপনার?আমার হাত কেটে যাক মা-রা যাই আপনার কি?আপনার তো রূপবতী ধবধবে সাদা বালিকা রুপী নব্য প্রেমিকা আছে।আমি তো কুৎসিত আমার জন্য এমন করছেন কেন??

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১১

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১১]
-তামান্না

–নিরু রান্না শেষ করে রুমে এসে শুয়ে আছে।ভয় হচ্ছে সব কিছু ঠিকঠাক হলো তো?রিফা তো বললো হয়েছে। রিহান ও বাসায় নেই কোথায় গেছে বলে ও যায় নি।শ্বশুর বাড়িতে যতই বিশ্বস্ত মানুষ থাকুক না কেন।স্বামী ছাড়া কি থাকা যায়? স্বামী বিহীন শ্বশুর বাড়ি তে কেমন জানি এতিম এতিম লাগে।

–রিহান বাসায় পৌঁছে সবাই কে ড্রয়িং রুম অব্দি নিয়ে এসে তুলে দেয় মা আর আর বোনের দায়িত্বে আড্ডা দেওয়ার জন্য।গোসল করতে হবে তারপর আবার বউয়ের মুখ টা ও তো পরিদর্শন করতে হবে।
–রুমে এসে দেখে শাড়ী পড়ে ঘোমটা টেনে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে নিরু।ভিতরে প্রবেশ করে ফেললে ও আবার বেরিয়ে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দেয়।
–নিরু:পিছনে ফিরে বলে,, এমন করার কি আছে আপনার ই তো রুম।
–রিহান :ভিতরে প্রবেশ করে আলমারি থেকে কাপড় বের করে বলে,, নাহ মানে হাত দিয়ে দূরত্ব দেখিয়ে বলে,,ঘরে দূরত্বশীল বউ থাকলে অনুমতি লাগে।কথাটা শেষ হতে দেরি হয় নি এর আগেই ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ।

–রিহান ওয়াশরুমে যেতেই রুমে রিফার সাথে নিশা আর নীলা দৌড়ে এসে নিরুকে ঝাপটায় ধরে।
–নিরু:অবাক হয়ে বলে তোমরা এখানে?কখন এলে?
–রিফা:হাসতে হাসতে বিছানায় বসে বলে,, তোমার প্রাণপ্রিয় বর তোমার হাতের শ্বশুর বাড়ি তে প্রথম রান্না খাওয়াতে গিয়ে নিয়ে এসেছে।সাথে মন ভালো করার বিষয়টা ও সাইডে রেখেছে আরকি।

–নিশা হাসতে হাসতে রিফার পাশে বসে বলে,, বুড়ি হয়ে যাচ্ছে মেয়ে টা ওকে ও একটা জামাইয়ের ব্যবস্থা করে দে না আপু!নিশার কথায় সবাই হাসলে ও রিফা বালিশ নিয়ে দৌড়াতে থাকে।
–এরমধ্যে রিহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওদের কান্ড দেখে বলে কি হয়েছে?
–নিশা:তোমার বোন কে জামাই দিচ্ছি না দেখে মারছে আমায়!
–রিহান:কেন?তুই কি রিফার জামাই নিয়ে নিছিস নাকি??ছিছিছি এটা করতে পারলি?
এবার সবার হাসির শব্দ আরও বেড়ে যায়।নিশা রিফা নীলা বিরবির করতে করতে বের হয়ে যায়। রিহান তোয়ালে টা হাতে নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে নিরুর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,, হাসলে কিন্তু আগের থেকে ও দারুণ লাগে। রিহানের কথা শুনে হাসি বন্ধ হয়ে যায়।তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে আঁচল টা মাথায় টেনে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

–নিরু:রুমের বাইরে এসে হাসি আটকে রেখে বলে এই লোকের সামনে বেশিক্ষণ থাকলে মনে হয় না রাগ আমার থাকবে।

–সবাই মিলে একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করার জন্য আজকে সব কিছু গুছিয়েছে নিরু। সবাই কে সুন্দর ভাবে খাবার সার্ভ করে।অনেক দিন পর এতো উৎসাহ এবং হাসোজ্জল চারপাশ দেখে দারুণ লাগছে নিরুর।সবাই খাওয়া শুরু করলে রিহান বলে,,তুমি ও বসে পরো নিরু একা খেতে ভালো লাগবে না।

–শ্বাশুড়ি :বসে পড় একসাথে দারুণ লাগবে।
–শ্বশুর :অনেক দিন পর সবাই একসাথে খেতে বসলাম এতো সুন্দর আনন্দ হয় না বহুবছর।নিরুর বাবা বেঁচে থাকতে সবাই একসাথে হতাম আর নিরু রিহান পাশে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতো।আর নিশা ছোট ছিলো ঘুম পাড়িয়ে খেতে আসতো মিতা।
নিরুর এসব কথা শুনে ভীষণ লজ্জা লাগছে।রিহান আর ও একসাথে থাকতো ভাবা যায়?রিহান মুখ টিপে হাসছে আর খাচ্ছে সাথে বাবা মা শ্বাশুড়ির কথা শুনছে।
অবশেষে সবাই কে জোরে জোরে হাসতে দেখে নিরু ও হাসি আঁটকে রাখতে পারে নি।রিহান মুচকি হাসলে ও শব্দ করে হাসছে না।বউয়ের সাথে আগেই বোধহয় রোমান্স ভালো ছিলো পাশাপাশি থাকা হতো।হাত ধরা হতো ঝগড়া ও হতো আর বড় হয়ে রোমান্সের র ও হচ্ছে না।

–সারাদিন মিতা নিশা নীলা সবাই থাকে।সন্ধ্যা বেলা সবাই চলে যায়।কালকে আবার নিরুরা যাবে।বিয়ের পর এই সময়টাই যেতে হয় এটা নিয়ম।
–সারাদিন সবার সাথে থাকলে ও সন্ধ্যার পর রুমে আসে নিরু।খুব ভালো কেটেছে আজকের দিন।শাড়ী পাল্টে আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়।রিহান এখনো রুমে আসে নি।রিফা ও নিজের রুমে আছে।শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও সারাদিন ভীষণ খুশি ছিলেন।

–রিহান বাইরে গেয়েছিলো আসার সময় ফুসকা নিয়ে এসেছে।এসে কাউকে পায়নি আর রিফা এসব পছন্দ করে না আব্বু আম্মু তো না-ই।নিরুর আবার সব সময় এসব পছন্দ। কতো বকেছে ওকে তারপর ও অভ্যাস পাল্টায় নি।তাই আজকে নিয়ে এসেছে।রুমে এসে দেখে নিরু উপন্যাস নিয়ে বসেছে।লাইব্রেরি রুমে অনেক গুলো উপন্যাসের বই রাখা আছে তাছাড়া আরও অনেক বই আছে কিছু নিজে সাজেস্ট করে কেনা কিছু রিভিউ দেখে আর কিছু নিরুর কথায় কেনা হয়েছিল।
নিরুর সামনে ফুসকার প্যাকেট টা রেখে রিহান লাইব্রেরি রুমে চলে যায়।নিরু দেখলে ও হাতে নেয় নি।

–রিহান:ফিরে এসে বলে,,কেউ চাইলে খেতে পারে আমরা এসব খাই না।
–নিরু:বইয়ের দিকেই তাকিয়ে বলে,,কেউ অতোটাও রাক্ষস নই যে উড়া উড়া বললেই লম্বা জিহ্বা বের করে খেতে বসবে।
–রিহান:হাসতে হাসতে সোফায় বসে বলে, তোমার জিহ্বা লম্বা নিরু?না মানে কখনো দেখিনি তো!
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে বলে মিল দেওয়ার ধান্দা!
–রিহান:হয়েছে!তবে খেতে পারো তোমার জন্যই আনলাম।
–নিরু:হাতে নিয়ে বলে কতো টাকা?একসময় দিয়ে দিবো!
–রিহান:উঠে দাঁড়িয়ে রাগ দেখিয়ে বলে কয়েকশো কোটি!এরপর আর দাঁড়ায় নি বের হয়ে যায়।নিরু পিছন থেকে বলে, দিয়ে দিবো আমার বরের থেকে নিয়ে।ফিসফিস করে বলে বরের থেকে নিয়ে বরকে দিবো হাহাহা।

*********
–রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই শুয়ে পড়লে রিফা ভাইয়ের রুমে আসে। ঘুম আসছে না তার।
–রিফা:ভাবি চলো আমরা আজকে একটু লুডু খেলি।
–নিরু:ফিসফিস করে বলে তোমার ভাইয়া কে বলো!এসব খেলায় মজার মানুষ না থাকলে জমে না।
–রিহান:ছোট মানুষের সাথে এসব খেলি না লুডু হচ্ছে বড়দের খেলা।ছোট মানুষ ছোট ব্রেণ দেত!
–নিরু:মোটেও না রিফা।তুমি বলে দাও যে এসব বলছে আমি তার সমবয়সী।মোটেও ছোট মানুষ না।
–রিহান:গুনে গুনে আমি তিন মাসের বড় হুম।

–রিফা দুজনকে থামিয়ে বসে।নিরু বসে মাথায় ওড়না সুন্দর করে দিয়ে বালিশে হাত গুঁজে বসে আছে।
রিহান একটু পরপর নিরুকে দেখছে।রিফা বুঝতে পারলে ও নিরু বুঝতে পারছে না।রিফা সারাক্ষণ মিটিমিটি হাসে।অবশেষে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রিহান মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, ফাজিল বের হ।রিফা হাসতে হাসতে বলে,,এনজয় ব্রো হাহাহা হাহাহা!

–নিরু:রিহান পাশের রুমে চলে যাওয়ার সময় বলে ধন্যবাদ।এতো সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য।
–রিহান:আহা এই ধন্যবাদ দিবে বলে কাছের মানুষের সাথে ভালো সময় কাটালাম বুঝলে!
–নিরু:সোজা কথা বেশি সুন্দর কঠিন এবং জটিল হলেও।এমনিতেই ঘুরানো পেচানো কথা সোজা করতে লাগে কষ্ট সোজা করার পর মানে বুঝতে পেরে লাগে আরেক কষ্ট।
–রিহান:হেসে আবার থেমে বলে,,নিরব পাগল হয়ে গেছে আমাদের ক্ষতি করার জন্য সুতরাং খুব সাবধান।
–নিরু:যার যার কর্মফল ঠিক তাকেই ভোগ করতে হবে করুক না।
–রিহান:কর্মফল যেন পায় সেজন্যই তো সাবধানে থাকতে হবে।তাছাড়া সে কতোটা হিংস্র তা তো তুমি জানো।ইদানীং বুদ্ধি ব্রেণ আরও খেয়ে ফেলেছে আর মানুষ নেই।

–নিরু:বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,বাড়ি ছাড়া করেছে আমাদের ইজ্জত নিয়ে খেলেছে আর কি বা ক্ষতি করবে?
–রিহান:আমাকে,,একেবারে মেরে ফেলার ফন্দি নাকি আঁটছে।ওর টার্গেট আমি এবং একমাত্র আমি।আর সে খবর আমার কাছের একজন ওর সাথে মিশে জানিয়েছে।
–নিরুর বুকটা কেঁপে ওঠে।বুকে হাত দিয়ে বলে,, এতো জঘন্য?এখন কি করা উচিত?বড় বড় করে নিশ্বাস নিতে থাকে।
–রিহান:এতো হাইপার হচ্ছো কেন?এতো সহজ নাকি?একটা ধ্বংস স্তুপের ও শেষ ধ্বংস আছে আর সেটা আমার হাতেই ধ্বংস হবে।নিরবের বিকৃত মন আমি উপরে ফেলবো।আমি জানি ও কতোটা আমার লাইফের ক্ষতি করেছে।
–নিরু:সে খুব খারাপ তার সাথে লাগতে যাওয়া টা ও বোকামি।নিজের চাচা চাচি চাচাতো বোনকে পর্যন্ত ছাড় দিতে জানে না।

–রিহান:ফোন হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বলে তোমার ই তো ভালো আমার ক্ষতি হলে,,আমি তো আর তোমার কেউ না।কথাটা বলে লাইব্রেরি রুমে চলে যায়।
–নিরু ফুঁসতে ফুঁসতে পিছন পিছন এসে বলে এতোই যখন কিছু না তবে বিয়ে কেন করলি? আমি পিছন পিছন এসে বলি নি বিয়ে কর আমায় বিয়ে কর।
–রিহান:ইশশ! ভুল হয়ে গেছে।আর একটু অপেক্ষা করলে বোধহয় শুনতে পেতাম তাই না?
–নিরু:এরচেয়ে ভালো নিরব ভাইয়াই ঠিক আছে শায়েস্তা করুক।
–রিহান:শায়েস্তা না মেরে ফেলবে। সাথে সাথে মুখটা মলিন হয়ে যায় নিরুর।মৃত্যু শব্দ টা ভীষণ যন্ত্রণার নিজের বাবা আর নানু নানার মৃত্যুতে বুঝে গেছে।ভালোবাসার মানুষ বলতে এরাই ছিলো এখন কয়েক জন আছে।ওঁরা ও থাকবে না ভাবতে ও পারে না নিরু।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১০

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১০]
-তামান্না

এরপর রিহান মাথা তুলে বসে।এবং একবার আড় চোখে নিরুকে ও দেখে নেয়।যা দেখে আপনা আপনি মুখ টা ঠিক হয়ে যায়।খানিকটা স্বস্তি ফিরে আসে।ফটাফট সবাই মিলে এক সাথে ছবি তুলে অনেকক্ষণ।
বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই নিরুপমার কান্নার শব্দ ভেসে ওঠে।নিশা দৌড়ে এসে বোন কে জড়িয়ে ধরে। এক মিনিটের ভিতরে পুরো বাসায় একেক করে সবাই কান্না করতে থাকে।নিশা আর নিরুর কান্না কোনো ভাবেই থামাতে পারছে না।

–অতঃপর বিদায় নিয়ে যেতে হয় নতুন গন্তব্যে।যেখানে অপেক্ষা করছে অনিশ্চিত নিয়তি পরিস্থিতি এবং চারপাশ।ভালো হলে তো খুশির শেষ নেই।তবে খারাপ হলে গোটা জীবন শেষ হয়ে যায়।একটা খারাপ সম্পর্কে পুরুষের থেকে ও বেশি কলঙ্ক বহন করতে হয় একজন মেয়ে কে।এতে যে পক্ষেরই দোষ থাকুক না কেন।পুরুষ মানুষের কোনো কলঙ্ক থাকে না তারা সব সময় শুদ্ধই থাকে।অবশ্য সমাজের চোখে।

–রিহান চুপচাপ বসে আছে নিরুর পাশে।ড্রাইভারের পাশে রিফা আর কেউ নেই এই গাড়ি তে।নিরু কান্না করেই যাচ্ছে।রিহান কিছু বলতে ও পারছে না।ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে শক্ত করে আকড়ে ধরতে তার প্রিয়তমা স্ত্রী কে।কিন্তু ভাগ্য এতো সুন্দর আর সহজ যে রাখে নি।

***********
–বিয়ে বাড়ি হলেও বাসাটা একদম ফাঁকা।কোনো মেহমান সাজসজ্জা রুম কোনো কিছুই নেই।রিহান নিয়ম শেষ করে যে রুমে গেছে আর বেরই হয় নি।নিরুকে ও কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে নি।তবে নিরুর অভিমান হচ্ছে রিহান আসছে না দেখে।
–সবাই মিলে একসাথে খাবার খায় রাতের।তখন রিহান ও উপস্থিত ছিলো তবে মাথা তুলে একবার ও তাকায় নি।নিরু বিয়ের শাড়ি পাল্টে থ্রি পিছ পড়ে আছে।মাথায় লম্বা করে ঘুমটা।
–রিফা:ভাইয়ার কি মন খারাপ?এভাবে মনমরা হয়ে আছো কেন?
রিফার কথায় নিরুর বুকটা কেঁপে ওঠে।মন খারাপ হয়ে যায় আরও।
–রিহান :মাথা তুলে জোর পূর্বক হেসে বলে,, তেমন টা না।মাথা টা ধরে আছে,,একটু রেস্টের প্রয়োজন।কথাটা বলেই হাত ধুয়ে উঠে চলে যায়।

–খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিরুকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে শ্বাশুড়ি।কিছু জামা কাপড় শাড়ি আর গয়না তুলে দেয় ওর হাতে।নিজ হাতে গহনা আর শাড়ী পড়িয়ে তারপর রিফাকে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেয় অন্য কিছু বলে নি।যদিও ওনাদের ও মন খারাপ এমন টা হওয়ায়।
–রিফা:ভাইয়া আসবো?
–রিহান:তাড়াতাড়ি করে উঠে দরজা খুলে স্বাভাবিক হয়ে বলে আয়!আর নিরুপমা কে কোন রুমে থাকতে দিয়েছিস?সব কিছু হাতের কাছে আছে তো?
–রিফা:নিরুকে নিয়ে রুমে চলে আসে।হাত থেকে জিনিস পত্র গুলো বিছানায় রেখে বলে,, আম্মু বলেছে ভাবি আজ থেকে এই রুমে থাকবে আর তুমি গেস্ট রুমে।অবশ্যই তাড়াতাড়ি মন জয় করে যেন এই রুমে আসতে পারো সেই দোয়ায় করবে।কথাটা বলেই রিফা রুম থেকে বের হয়ে যায়।

–রিহান:ওয়ালেট ফোন আর ব্লুটুথ টা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিলে…।
–নিরু:দরকার নেই।অযথা এতে আব্বু আম্মুর চিন্তা বাড়বে।আপনি এখানেই থেকে যান আমি লাইব্রেরি রুমের সোফায় ঠিক মানিয়ে নিবো।
–রিহান:আচ্ছা!তবে আমি লাইব্রেরি রুমে চলে যাচ্ছি তুমি বরং এখানেই থেকে যাও।তারপর পাশের রুমে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলে,, রুম সাজাতে আমিই বারণ করেছি।সমস্যা নেই তুমি যা চাও না তা হবে না।আমি যথেষ্ট মানিয়ে নিতে পারবো।

–রিহান পাশের রুমে গিয়ে দরজা আটকে ফেলতেই নিরু বসে পড়ে বিছানায়। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে করছে নিয়ম পরিস্থিতি পৃথিবী সব ছেড়ে চলে যেতে।
লাইট টা অফ করে এভাবেই কাপড় না পাল্টে শুয়ে পড়ে।প্রিয় মানুষের গায়ের গন্ধ মিশে আছে বিছানায় পুরো রুমটায়, কেমন যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।অর্ধেক রাত অব্দি কান্নাই করে।আজ কে ভীষণ আব্বু কে মনে পড়ছে।আব্বু মা-রা যাওয়ার সময় যেমন কষ্ট হয়েছিলো আজ কে ও সেই রকম কষ্ট হচ্ছে।
একা একটা বিছানায় কখনো শুয়া হয় নি হয়তো পাশে আম্মু নয়তো নিশা থাকতো।তাই আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে।
**********
–রিহান ভোরে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়।এসব আর ভালো লাগছে না সুতরাং যেতে হবে এসব থেকে দূরে।ব্যবসার অযুহাত দেখিয়ে দূরে থাকবে কয়েক দিন।সারারাত না ঘুমুতে পাড়ায় চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।চুপচাপ রুমে এসে দেখে নিরু শুয়ে আছে।এদিকে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
একটা ভালো টিশার্ট আর পেন্ট ওয়ালেট ফোন আর হাতে ঘড়ি।গায়ে কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ।
আস্তে করে এগিয়ে আসতে নিলে আচমকা উঠে বসে নিরু।রিহান ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিরু কাপড় টাও চেঞ্জ করে নি।সাজ গহনা সব কিছু এখনো শরীরেই।চোখ নামিয়ে বিছানার পাশে থাকা ড্রয়ার থেকে নিজের আইডি কার্ড নিয়ে বের হয়ে আসে।
কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে এসে বলে,,তোমাকে ছুটি দিয়ে যাচ্ছি।ফিরবো না আপাতত তবে তোমার বিশ্রাম শেষ হলে জানিয়ে দিও।আসছি বলে আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায় নি।

–নিরু চুপচাপ বিছানায় হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে তা না করে কি না রিহান দূরত্ব টানছে?কিন্তু দূরত্ব যে সংসার সম্পর্ক মজবুত নয় বরং নষ্ট করে দিবে।
মিনিট পাঁচেকের ভিতরে রিহান রুমে ফিরে আসে।সোফায় হেলান দিয়ে হাত রেখে বসে আছে।
–রিফা:ভিতরে আসবো?
–নিরু:হাত দিয়ে চোখ মুছে বিছানা থেকে নেমে বলে আসো।
–রিফা:তুমি কি গো ভাবি?বিয়ের পরদিন বরকে ছেড়ে দিচ্ছো অমঙ্গল ডেকে আনার জন্য?কথা গুলো বলতে বলতে রুমে ঢুকে মুখ টা হা হয়ে যায়। কপালে হাত দিয়ে বলে এখনো কাপড় ও চেঞ্জ করো নি?তাড়াতাড়ি যাও,কিছু নিয়ম আছে।আর হ্যা শাড়ী পড়ে নিও আলমারি তে রাখা আছে।একেবারে গোসল করে দুই জন বর বউ মিলে একসাথে নিচে আসবে।আর তোমাদের দেখে আমাদের চোখ দুটো জুড়াবে।

–রিহান :চুপ!আমি তোর বড় নাকি তুই আমার বড়?সেই কখন থেকে ভাষণ শুনে যাচ্ছি।
–রিফা:ভেংচি কেটে বলে এহহ বুঝে না কিছু আবার আসছে!এরপর আর পায় কে সোজা এক দৌড়ে বাইরে।

–নিরু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রিহানের দিকে। রিহান জোর পূর্বক হেসে বলে,, যেতে দেয় নি তো!তোমার শ্বাশুড়ি আর ননদ কান্না কাটি জুড়ে দিয়েছে।ফিসফিস করে বলে কই বউ কেঁদে ভাসাবে তা না।
–নিরু:আচ্ছা!মুখে আচ্ছা বললেও মনে মনে বেশ খুশিই হয়েছে।

**********
–শ্বাশুড়ি :আমাদের বংশের নিয়ম বিয়ের পরদিন নতুন বউকে নিজ হাতে রান্না করে সবাই কে খাওয়াতে হয়।তোকে কিছু করতে হবে না নিরু আমি মরিয়মের মাকে সব রান্না করে ফেলতে বলেছি।সব সময় তো সে-ই রান্না করে।
–নিরু:এগিয়ে এসে শ্বাশুড়ির ঘা ঘেঁষে বলে আমি পারবো।তুমি শুধু রেসিপির নাম টা ফটাফট বলে দাও।
–রিফা:আর সাহায্য করার জন্য আমি আছি তো।তারপর নিরুকে জড়িয়ে ধরে।আজকে ভীষণ মিস করছে নিশাকে।মেয়ে টা নিরুকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।মন খারাপ এটা ওটা সবটাই জুড়ে থাকতো নিরু।একটু আগে ও মা বোনের সাথে কথা হয়েছে নিশা ভীষণ কান্না করেছে।

–নিরু রিফা রান্না ঘরে আড্ডা দিতে দিতে রান্না করছে।নতুন গিন্নী রা রান্না করছে তার আভাস ড্রয়িং রুম থেকেই পাওয়া যাচ্ছে।রিহান হাসতে হাসতে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবে ওদের ও আসতে বলেছে দুপুরে,, নিশা আর শ্বাশুড়ি কে ও নিয়ে আসবে।তাহলে নিরু এবং ওদের পরিবার সবাই খুশি হবে।

–এদিকে মিতা নিশাকে নিয়ে শুয়ে আছে।বাচ্চা মেয়েটার ভীষণ মন খারাপ।পুরো বাড়িটাই একদম ফাঁকা হয়ে গেছে।দুই বোন মিলে সারাদিন কতোই না খুনসুটি করতো।স্বামী মা-রা যাওয়ার পর আজকের মতো মন খারাপ কোনো দিন হয় নি।
রিহান বন্ধুদের নিয়ে সাথে নীলাকে ও নিয়ে সবাই এক সাথে চলে আসে নিরুদের বাড়িতে।কলিং বেলের শব্দে মিতা চোখ টা মুছে দরজা টা খুলে দেয়।রিহান কে দেখে অনেক টাই অবাক হয়ে যায়।
–রিহান:হা করে আছো কেন?ছেলেকে ঘরে আসতে বলবে না?
–মিতা:এবার কান্না করে দেয় রুম থেকে দৌড়ে চলে আসে নিশা,দুজনকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রিহান।মুখে হাসি রেখে বলে,, যখন ইচ্ছে করবে মেয়ের কাছে চলে যাবে এখানে নিয়ে আসবে,,মন খারাপ করছো কেন?শুধু মেয়ের পিছন পিছন আমাকে ও রেখো।
–মিতা:হাসতে হাসতে চোখের পানি মুছে দিয়ে সবাই কে ভিতরে নিয়ে বসায়।

–মিতা:তোমরা বসো আমি নাস্তা আনছি বলে ভিতরে চলে যায়।

–নিশা:আপুকে আনলে না কেন?
–রিহান:আপু কিন্তু এখন আমার সম্পত্তি মাঝে মধ্যে খানিকটা সুযোগ দিতে হবে নাকি?
–নিশা:হাসতে হাসতে বলে কাগজ পত্র ঠিক হলেও আশা করি সম্পত্তির মধ্যে খানিকটা ময়লা ঝড়া পাতা জমে আছে,, পরিষ্কার করার কাজে লেগে পড়ো।
–রিহান:তোমার কি মনে হয় পরিষ্কার করা যাবে?
–নিশা:অবশ্যই!সুন্দর এবং নরম মনের মানুষের মনে রাগ জমে থাকে না তবে অভিমান জন্মে আর সেটা ভালোবাসা দিয়ে দূর করা যায়।

–নীলা :নিশার কানটা টেনে দিয়ে বলে,বেশি পাকা হয়ে গেছিস তাই না?
–নিশা:হাসতে হাসতে বলে,,বেশি না একটু।বড়দের থেকে শিখেছি।সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।

–সবাই মিলে আড্ডা দেয় অনেকক্ষণ।রিহান শ্বাশুড়ির সাথে রুমে বসে আড্ডা দেয়।
–মিতা:খারাপ ব্যবহার করেছে নিরু?
–রিহান:নাহ্।তবে দূরত্ব অনেক অনেক।
–মিতা:বুঝিয়ে বলবো?
–রিহান:থাক!জোর করে কোনো কিছু স্থায়ী হয় না।এরচেয়ে ভালো আমি না হয় ভালোবেসে আগের নিরুকে ফিরিয়ে আনবো।আগের নিরু হলেই হবে কোনো কমতি থাকবে না।
–মিতা:দোয়া করি সব কিছু তাড়াতাড়ি করে ঠিক হয়ে যাক।
–রিহান:এতো কিছু জানি না।তুমি এখন আমাদের সাথে যাবে।
–মিতা:এখন?এখন কিভাবে যাবো বাবা?
–রিহান :হাত ধরে টেনে দাড় করিয়ে বলে,, তোমার মেয়ে প্রথম বার রান্না করছে শ্বশুর বাড়ি তে আর সে খাবার তুমি খাবে না তা কি করে হয়?

–নিরু রান্না শেষ করে রুমে এসে শুয়ে আছে।ভয় হচ্ছে সব কিছু ঠিকঠাক হলো তো?রিফা তো বললো হয়েছে। রিহান ও বাসায় নেই কোথায় গেছে বলে ও যায় নি।শ্বশুর বাড়িতে যতই বিশ্বস্ত মানুষ থাকুক না কেন।স্বামী ছাড়া কি থাকা যায়? স্বামী বিহীন শ্বশুর বাড়ি তে কেমন জানি এতিম এতিম লাগে।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৯

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৯]
-তামান্না

–নিরু:আমি রিহানের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।
–রিহানের আব্বু :আচ্ছা!তোমরা কথা বলে আসো তবে উওর টা কিন্তু হ্যাঁ – ই চাই!নিরু কিছু বলে নি চুপচাপ উঠে আগে আগে ছাঁদে চলে যায়।

–রিহান:বলো?
–নিরু:বিয়ে হবে?
–রিহান:সত্যি?খুশি হয়ে বলে,, সত্যি বলছো?
–নিরু:আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, বিয়ে হবে কি না?
–রিহান:এটা কেমন কথা?তুমি বিয়ে টা হোক চাও না?
–নিরু:যেহেতু ইচ্ছে সিদ্ধান্ত সবটাই বড়রা নিয়েছে বিয়ে করে সংসার টা আমি তাদের সাথেই করতে চাই।আপনার সাথে নরমাল স্বামী স্ত্রীর মতো নয়।
–রিহান:হোয়াট?
–নিরু:এরপর যদি না করতে চান আমার কিছু করার নেই।তবে আপনার সাথে সংসার এক রুম এক বিছানা আমি ভাবতে ও পারছি না।কারণ ঠকে যাওয়া মানুষের মনে আশঙ্কা থাকে বেশি,, ঠকে যাওয়ার।বিশ্বাস টা সহজে আগের মতো স্থাপন হয় না।

–রিহান:খানিকটা থেমে এবং ভেবে বলে,, যাইহোক আমি এতো কিছু চাই না।তুমি আমাকে বিয়ে করছো এটাই না হয় আমার হয়ে থাকুক বাকি সব তোমার ইচ্ছে।আর উপর ওয়ালা চাইলে সবকিছু অবশ্যই সহজ হবে।তুমি অন্য কারো হবে না এটা তো নিশ্চিত থাকবো।
–নিরু:এভাবে বিরক্তি আসলে ছেড়ে দিতে পারবেন আমার কোনো বাঁধা কিংবা আপত্তি থাকবে না।আমি আমার মতামত জানালাম বাকি দায়িত্ব আপনার,,কিভাবে সবাই কে ম্যানেজ করবেন।
–রিহান:বিয়ে টা তো করছো?
–নিরু:শুধু মাত্র বড়দের ওয়াদা পালনের লক্ষ্যে।আমার কাছে আমার দৃষ্টিতে আপনি বলতে সেদিন কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনোর মতো চরিত্রের।ভালো এবং বিশ্বস্ত ভাবার মতো কোনো কারণ কিংবা ঘটনা এখন অব্ধি আমার চোখে পড়ে নি। নিরুপমা সব সময় একরকম আছে তবে খানিকটা চালাক হয়েছে।বুঝতে শেখেছে মানুষ,, এখন মানুষ পড়তে পারে তবে অতো সময় কই?তাই পড়া বা দেখার ঝামেলায় না গিয়ে সোজা এড়িয়ে চলে।

–রিহান:আমার বর্ণনা আমি মুখে নয় কাজে দেখাতে চাই যেন ছেড়ে যাওয়ার বদলে ঝাপটায় ধরতে বাধ্য হও।
–নিরুপমা এবার তাচ্ছিল্যের মতো হেসে বলে,, আপাতত আপনি আপনার দিকটা সহজ করুন।না করতে পারলে দায়ভার আপনি নিয়ে সমাপ্ত করবেন বলে আশা করি।
–রিহান:সে গুড়ে বালি।সিদ্ধান্ত নড়চড় হচ্ছে না শিউর থাকো।বাকিটা আমার ব্যাপার ওকে?এরপর আর রিহানই দাঁড়ায় নি।আগে আগে নিচে নেমে আসে।কোনো রকম একটা অজুহাত দেখিয়ে বের হয়ে যায়।রাতে নিরু আর ওর সম্পর্কে কথা বলবে বলে যায়।আপাতত বাদ দিয়ে নিশ্চিত থাকতে বলে।

–নীলা :আমি নিরুর বাসায় দরকারে এসেছি আম্মু।চলে আসবো সন্ধ্যার আগে।
–আম্মু :এই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।তোর বাবা রাগারাগি করছে তোর উপর।
–নীলা:ফোন টা ঘুরিয়ে অন্য কানে নিয়ে বলে,, আমি বলেছি তো গ্রাজুয়েশন শেষ না করে এসবে আমি নেই।তারপর ও কেন এভাবে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছো আম্মু?
–আম্মু :তোর আব্বু বাসায় এসে না পেলে অশান্তি করবে,, তাড়াতাড়ি চলে আয়।ছেলে তোকে এমনিতেই পছন্দ করেছে এবার বাড়ির লোক দেখে ডেট ঠিক করবে।তারপর তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা বলে কল কেটে দেয়।নীলার ভীষণ ভয় হচ্ছে।হাত পা কাঁপছে।হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিজে একটা সিদ্ধান্ত নিবে তার ও তো রাস্তা নেই।রিফাত তো হ্যা না কিছুই কখনো বলে নি।বাইরে এসেছিল কথা বলার জন্য।এখানে দাঁড়িয়েই নিরু কে টেক্সট করে বের হয়ে যায়।একটা রিকশা নিয়ে নেয়।যদিও রিকশায় করে বাসায় যেতে সময় লাগবে অনেক বেশি,, সি এন জি করে গেলে তাড়াতাড়ি হয়।কিন্তু ইচ্ছে করছে না অনেক গুলো মানুষের সাথে বসে যেতে।অস্বস্তি হবে যে।

–খানিকটা ভেবে রিফাতের নাম্বারে কল করে।কিন্তু বারবার রিফাত ও কল কেটে দিচ্ছে।ভীষণ রাগ হচ্ছে।
তারপর পাঁচ মিনিট পর রিফাত কল ব্যাক করে।
–নীলা :রিসিভ করেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।রিফাত ফোন রিসিভ করেই কান্না করে দেওয়ার মানে বুঝতে পারছে না।
–রিফাত:এই নীলু?কি হয়েছে?এভাবে বোকার মতো কান্না করছো কেন?
–নীলা :হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে বিয়ে দিতে চাচ্ছে সবাই।ছেলে পক্ষ আসছে।
–রিফাত:বাসায় ফিরলে কখন?তুমি না রিহানদের বাসায় গেছো?
–তারপর নীলা পুরো ঘটনা বলে।রিফাত তাদের কলেজ মাঠে নেমে পড়ার জন্য নীলাকে বলে কল কেটে দেয়।রিহান রিফাত আমান সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো বসে।

******
–রিফাত:দুই টা তাজা গোলাপ সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে,, এতো কিছু জানি না শুধু জানি আজকে তোমার বিয়ে হবে না।তেজি রগচটা মেয়ে টা আমার সামনে ভীতু হয়ে যাওয়া,, আমার কথা মেনে চলা আর দেখতে অসম্ভব সুন্দরী না হওয়ার পরে ও আমি তোমায় ভালোবাসি।তুমি যদি রাজি হও তোমার বাবা মা কে রাজী করার দায়িত্ব আমি নিবো।
অতিরিক্ত বিলাসবহুল জীবন দিতে পারবো কি না জানি না তবে ভালোবাসার কোনো কমতি থাকবে না।এবার আর চুপচাপ থাকতে পারে নি নীলা।রিফাত কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।রিফাত ও সুন্দর করে আগলে রাখে নীলাকে আর মুখে প্রাপ্তির হাসি।

–এদিকে রিহান আড্ডা দিয়ে অনেক রাত করে বাসায় ফিরে আসে।বাসায় আসতেই ওর আব্বু আম্মু ডেকে জিজ্ঞেস করে।
–রিহান:মাথা নুয়ে মন খারাপ করে বলে,, একটু সুযোগ চাই আব্বু আম্মু।আমাদের উপর যদি ছেড়ে দাও আমি অবশ্যই জয়ী হবো।সম্পর্ক টা একটু স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ দিও।তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলে।তবে নিরুকে জানাতে বারণ করে।খুব আত্নবিশ্বাসের সাথে পারবে বললে ও রিহানের মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে রিহান নার্ভাস।তবে ওদের ভিতরে কথা বলাটা ও যুক্তিসঙ্গত নয়।চাপিয়ে জোর করে তো আর সব হয় না।

–রিহান:খানিকটা থেমে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বলে,, বিয়ে টা কম আয়োজন কম মানুষের শেষ করো আব্বু।এরপর না হয় করা হবে।তারপর নিজের রুমে চলে আসে।

*******
–রিহান :নিরুর ফোনে মেসেজ পাঠায়,,বিয়ে নিয়ে আর কোনো প্ল্যান থাকলে জানাতে পারো।
–নিরু:খানিকটা ভেবে বলে,,,কম মানুষ অল্প আয়োজন আর রাতের বিয়ে।
–রিহান:লুকিয়ে করতে চাচ্ছো?
–নিরু:হুম!আমি চাই এই শহর আকাশ বাতাস মানুষ সবাই না জানুক আমাদের পরিণেয় কথা।কেননা এটা কোনো সুস্থ এবং ভালো সঙ্গীর পরিণয় নয়।
–রিহান:তারপর?
–নিরু:বিরক্ত হলে কিংবা মোড পরিবর্তন হলে মুক্তি দিয়ে চলে যেতে পারেন।
–রিহান:তোমাকে স্পর্শ করতে পারা পৃথিবীর সবচেয়ে অনিশ্চয়তা,,আমি মেনে নিয়েই এগুচ্ছি।তোমার শরীরের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই তবে জড়িয়ে ধরার গাল, হাত স্পর্শ করার লোভ অবশ্যই আছে।তবে তুমি না চাইলে এই এটা ও হবে না,,এতে যতই কষ্ট আমার হোক।

–নিরু:কোনো দরকারী কথা থাকলে বলতে পারেন।আর আপনার স্পর্শ করা চিন্তা ভাবনা সব কিছু প্ল্যান মাফিক হয় সেটা সেদিন ই বুঝতে পেরেছি।কমপক্ষে জোর করে আমার সামনে নিজেকে প্রমাণ করতে আসবেন না প্লিজ।এতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।এরপর আর কোনো রিপ্লাই আসে নি।
হয়তো দুই প্রান্ত থেকেই দুজনে কষ্ট পাচ্ছে।

–আজকে রাতেই বিয়ে।ঘরোয়া ভাবে কম আয়োজন আর কম মানুষের সাথেই শেষ করবে। নীলা সকাল সকাল এসে পড়েছে।নিরুকে বাসন্তী আর খয়েরী রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে।যেহেতু ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে তাই বাসার সামনে বাগানেই করা হচ্ছে।
–নিশা:এই রঙে তোমায় দারুণ লাগছে আপু।
–নিরু:আপনার কাছে ঠিক কোন রঙে আমায় দারুণ লাগে না বলবেন আপা?
–নীলা:আমাদের প্রিয় মানুষ সব রঙেই আমাদের কাছে সুন্দর,, তাই না নিশা?
–নিশা:হুম।

–রিফা:নিরুকে ভিডিও কল করে।নিশা রিসিভ করে সুন্দর করে দেখাচ্ছে নিরুকে।শাড়ী পড়ে বসে আছে আর একেক করে সবাই হলুদ দিচ্ছে। রিফা নিজের দিকের ক্যামেরা টা অফ করে সাউন্ড মিউট করে ভাইকে দেখায়।
–রিহান:কি?
–রিফা:দেখো তোমার হবু বউকে কতো কিউট লাগছে।ইশশ কেন যে ছেলে হলাম না,,নয়তো আমিই বিয়ে টা করে ফেলতাম।করুন গলায় বলে,, ভাগ্য আমার সহায় হয় নি!
–রিহান:মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, তবে ভালোই হয়েছে।সামনে আরও ভালো হলেই হয়ে যাবে।তারপর খপ করে ফোন টা নিজের কাছে নিয়ে নেয়।বিশ মিনিট পর্যন্ত নিজের কাছে রাখে।আর সব কিছু বসে বসে দেখে।নিরুর ব্রু কুঁচকে থেকে হলুদ মুখে নেওয়া আর পানি দেওয়া মাথায় নিয়ম কানুন সবটাই বসে দেখে।এক পর্যায়ে একজন নিরুর লম্বা চুল গুলো খুলে দিতেই মাটি পর্যন্ত পড়ে।মোড়াতে বসে থাকার পরে ও মাটি তে পড়ে খানিকটা জমে আছে।নিরুর এতো লম্বা চুল এর আগে দেখার সৌভাগ্য হয় নি।

–অথচ যখন রিহান বলতো আমার লম্বা চুল পছন্দ তখন নিরু এমন করতো যেন ওর চুল অনেক ছোট।এতো ঘণ লম্বা চুল কখনো বলে নি।

–এক পর্যায়ে কোনো সাড়া শব্দ ভিডিও কলে সামনে আসা না পেয়ে কল কেটে দেয় নিশা।

–তারপর একদম নরমাল ভাবে একটা কাতান শাড়ী আর দোপাট্টা সাথে কিছু গহনা আর হালকা সাজে সাজানো হয়।বিয়ের দিন এটুকু না হলে তো আর হয় না।
–নীলা :কানে কানে বলে,,বিয়ের পরে পিটিয়ে সোজা করে ফেলবি রিহান ভাই কে।যেন বাকি জীবনে কারো পাতা ফাঁদে পা না ফেলে।নিরু আর কিছু বলে নি।শরীর হাত পা কাঁপছে।না জানি কি অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে।

–রিহান সাদা শেরওয়ানি দামী ব্রান্ডের ঘড়ি আর কড়া ঘ্রাণের পারফিউম দিয়ে এসেছে।চুপচাপ ড্রয়িং রুমে মাথা নুয়ে বসে আছে।মেহমান বলতে বন্ধু বান্ধব আর বাইরের তিন চারজন লোক আর কেউ না।মন খারাপ করেই বসে আছে।সবাই হাসাহাসি এটা ওটা বলছে রিহানের কান পর্যন্ত যেন পৌঁছাচ্ছেই না।তারপর আবার একটু পরপর ঘাম মুছছে।

–নিরুকে এনে পাশে বসালে ও মাথা তুলে নি রিহান।
–রিফাত:একটু মুখ টা তুলে বস না ছবি তুলি।
–আমান:রিহান তুই কি নার্ভাস? এতো ঘামছিস কেন?আমানের কথায় বন্ধুরা সবাই একসাথে হেসে ওঠে।
এরপর রিহান মাথা তুলে বসে।এবং একবার আড় চোখে নিরুকে ও দেখে নেয়।যা দেখে আপনা আপনি মুখ টা ঠিক হয়ে যায়।খানিকটা স্বস্তি ফিরে আসে।ফটাফট সবাই মিলে এক সাথে ছবি তুলে অনেকক্ষণ।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৮

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৮]
-তামান্না

–রিফাত :আর একদিন যদি এই মেয়ে কে সামনে দেখি মেরে ফেলবো বলে দিলাম কথাটা বলে রাগে চলে যায়।
–আমান:বাপরে এই আমি কাকে দেখছি?এটা আমাদের রিফাত তো?হঠাৎ এতো রিয়েক্ট করছে কেন?
–আরিফ:সামথিং সামথিং,,তারপর সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।

–এরপর আর কারো সাথে কারো যোগাযোগ হয় নি।নীলার বাসা থেকে বিয়ের জন্য বলছে।কিন্তু নীলা রাজি হচ্ছে না এখন বিয়ে করতে তাই বিয়ে দিতে পারছে না।তারপর আবার আজকাল মেসেঞ্জারে প্রচুর কথা হয় রিফাতের সাথে। যদিও কেউ কাউকে প্রপোজ কিংবা মনের কথা বলে নি।তবে ফ্রী ভাবেই চলছে বন্ধুত্বের থেকে ও খানিকটা বেশি কথাবার্তা।
নীলা শিউর ও হতে পারছে না রিফাত সম্পর্কে,, রিফাত ওকে চায়?নাকি এমনি কথা বলে? এসব চিন্তায় এখন মাথায় ঘুরে।

********
–অবসরে দুই বোন মিলে পিকনিক করছে।নিজেরা রান্না করে খাবে আজকে।অবশ্য নিরুর রান্নার হাত ভীষণ ভালো।আর নিশা সাহায্য করে। নীলা কে বলে দিয়েছে নিরু দুপুরে যেন চলে আসে।এক সাথে খাবে ওঁরা।
প্রচুর গরম তারপর আবার আলগা মাটির চুলা।তবে এই বসন্ত কালে রোদ হলেও হালকা একটু বাতাস ভীষণ পছন্দ নিরুর।কোমরে ওড়না বেঁধে রান্না করছে,, গরমে শরীর মুখ ঘেমে একাকার। পড়নে প্লাজু আর ঢোলা কামিজ,,আর চুল গুলো খোঁপা করে আটকে রাখা।একদম অন্য রকম নিরু।তবে নরমালে বেশি ভালো লাগে নিরুকে,,মাঝে মধ্যে নীলা বলে,,তোর গঠন চেহারার সাথে নরমালই মানায়।নিরু ও এটাই বিশ্বাস করে তাই তো কোনো সাজগোছ ওর পছন্দ না তবে ভীষণ পরিপাটি।

–রিহান কে নিয়ে নিরুদের বাসায় ওর আব্বু আর রিফা এসেছে।যদিও মিতা জানে যে ওঁরা আসবে। রিহানের আম্মু ও আগের থেকে খানিকটা সুস্থ তবে একলা অতোটাও হাটাহাটি করতে পারে না।
রিহান আর রিফা এসে শুনতে পায় দুই বোন ছাঁদে আছে।তাই চলে আসে।আর রিহানের আব্বু ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলে।
–রিফা তাড়াতাড়ি করে ডাক দিয়ে ছাঁদে প্রবেশ করতে নিলে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রিহান।
–রিহান:ফিসফিস করে বলে,, চুপ।দেখি এই দুই পাগল কি করে।
রিফা আর কিছু বলে নি।নিরু আর নিশা হাসাহাসি করছে আর রান্না করছে।
–নিশা:তুমি কি জানো আপু?তোমায় এখন পুরো ভূতনির মতো লাগছে।
–নিরু:হয়েছে আমার দাদিমা আর হিংসে করে মিথ্যা বলতে হবে না।তারপর একটু ঢং করে বলে আমি জানি আমি কতো কিউট।

–তারপর খানিকটা থেমে মন খারাপ করে বলে,, আমি কি সত্যিই অসুন্দর নিশা?গায়ের রং কি বেশি চাপা?আমাকে কি পছন্দ করা যায় না?
–নিশা:এবার উঠে এসে নিরুকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি তো আমার চোখে সব চেয়ে সুন্দরী আপু।তোমাকে পছন্দ করা যায় ভালোবাসা যায়।তারপর দুষ্টুমী করে বলে খেয়ে ফেলা ও যায়।এবার নিরু হেসে হাতে থাকা চামচ টা পিছনে ঘুরিয়ে বলে এবার কিন্তু মাইর খাবি।নিশা আর নিরু দুজনেই হেসে ওঠে।

–রিফা:ফিসফিসিয়ে,,এবার হয়েছে তোমার লুকিয়ে দেখা?আমি কি এবার যেতে পারি সামনে?
–রিহান :মাথায় গাট্টি মেরে বলে যাহ্ ফাজিল।রিহানের সাথে সম্পর্ক থাকলে ও কখনো এভাবে নিরুকে দেখা হয় নি।সব সময় মাথায় হিজাব থাকতো।আজকে যেন একদম অন্য রকম নিরুকে দেখছে।গলা মাথা চুল পিছনে খানিকটা পিঠ এসব কখনো খুলে রাখে না বাইরে।বাসায় আসায় দেখা মিললো।তারপর চুপচাপ নিচে চলে যায়।সামনে আর যায় নি,, সুযোগে যাবে বলে।

–রিফা:পিছনে গিয়ে চিল্লিয়ে বলে হাউউউউউ। হঠাৎ এমন শব্দে নিশা আর নিরু ভয় পেয়ে যায়।
–নিরু:খুশি হয়ে বলে,, খুব ভালো হয়েছে আমরা একসাথে খেতে পারবো।ঝুলাভাতি খেলতেছি একা খেতে মজা নেই দারুণ হবে।
–রিফা:ভালো সময় এসে পড়েছি বলো?
–নিশা:অবশ্যই ছোট সাহেবা।নিশার কথায় তিন জনেই একসাথে হেসে ওঠে।

–নিশা আর রিফা এসেছে রুমে।নিশা একেবারে গোসল করে প্লেট নিয়ে ছাঁদে যাবে রিফা কে নিয়ে। ওঁরা গেলে নিরু নিচে আসবে।এই ফাঁকে নিরু আলু ভাজা করে নিচ্ছে।
আজকের আইটেম গুলো হলো,, ভাত,আলু ভাজা,মুরগির গোস্তো আর ডাল সাথে ডিম ভোনা।

–রিহান এবার সুযোগ পেয়েছে চুপচাপ ছাঁদে চলে যায়।নিরুর পিছনে গিয়ে গলা খাঁকারি দেয়।
–নিরুর তো মাথায় ও আসে নি যে কার সাথে রিফা এলো?এবার কোনো পুরুষ মানুষের গলা খাঁকারির শব্দ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে রিহান।হঠাৎ রিহান কে দেখে ভয় পেয়ে যায়।ভালো করে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়,, নাহ্ সত্যি ই তো দেখছি।

–নিরু:তাড়াতাড়ি ওড়না ঠিক করে মাথায় দিয়ে বলে আপনি?
–রিহান:হুম!বাড়ি বয়ে দেখা করতে চলে এলাম।এসে দেখছি প্রেমিকা আমার সত্যি সত্যি বউ হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।আগের থেকে বেশ গুলুমুলু হয়ে গেছো কিন্তু।
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে চুলা থেকে কড়াই টা নামাতে নামাতে বলে,, ছিহ্ মুখের কি ভাষা।
–রিহান:তাই!একটু ভালো ভাষা শেখানোর দায়িত্ব তো নিতেই পারো।
–নিরু:শুনুন আমি কোনো শিক্ষক নই।আর রইলো দায়িত্ব,,নিজের থেকে ও ভারী কারো দায়িত্ব নেওয়া যায় না।
–রিহান:তুমি আমায় মোটা বলছো?তবে কি জিম কিংবা ডায়েট করতে হবে?
–নিরু:সে সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।আর আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?অসুন্দর মানুষের থেকে উপদেশ নিতে নেই,, ওদের উপদেশ গুলো ও না অসুন্দর হয়।কথা টা বলে চলে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে নিরুর।এক টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,, এক কথার জন্য ঠিক কতোবার আঘাত করবে?কি চাও তুমি?
–নিরু:ছলছল চোখে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,, মৃত্যুর মতো দূরত্ব।
–রিহান:এবার ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,, এটা কখনো সম্ভব না।তুমি থেকে যেয়ে শাস্তি দাও মাথা পেতে নিবো।
–নিরু:থেকে গেলে পৃথিবীর কোনো শাস্তিই অসয্যকর মনে হবে না।আর কিছু সম্পর্কে শেষ করে পূর্ণতার স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্ন।
–রিহান:নিরুর হাত টা ধরে বলে ভুল করেছি নিরু।সেদিন সবটা মিথ্যে ছিলো আমার ভিতর টা এমন নয়।আমি জানি আমার মনে শুরু থেকে তুমি গেঁথে ছিলে।
–নিরু:মনের মানুষ কে জোর করে ভুল বুঝে অসম্মান করা ব্যক্তির ভালোবাসার যোগ্যতাই নেই। কথাটা বলেই হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে চলে যায়।

***************
–এরপর আর কেউ কারো মুখোমুখি হয় নি। রেজাল্ট বের হয়েছে।নিরু ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে নামকরা ভার্সিটিতে চান্স পায় এবং ভর্তি হয়ে যায়।
বাসা থেকে যাতায়াত করা যায়,, নীলা ও চান্স পেয়েছে তবে ডিপার্টমেন্ট আলাদা।একসাথেই যাওয়া আসা করা যায়।

–এদিকে রিহানের ইচ্ছে করছে না দেশ ছেড়ে যাওয়ার।তাই ভার্সিটিতে চেষ্টা না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেয়।কারণ এখানে নিয়মিত ক্লাস করতে হয় না।ফলে ব্যবসা টা সুন্দর ভাবে সামলানো সহজ হবে। বাবা আর মিতা আন্টি বলে দিয়েছে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে নয়তো নিরুর আশা ছেড়ে দিতে।আর বাবার ও ব্যবসায় সব সময় নিয়মিত না থাকায় খুব বাজে হাল।নতুন করে সবটা করতে হচ্ছে। সেই সুবাদে ভীষণ ব্যস্ত রিহান।মাঝে মধ্যে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির সামনে অপেক্ষা করে এবং আড়াল থেকেই নিরুকে দেখে চলে যায়।এতো সময় ও তো হাতে নেই।

–মিতা:তোমার আন্টির জন্মদিন আজকে পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে যাবো।ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় চলে এসো।নিশা আমার সাথেই যাবে রাত হবে ফিরতে।
–নিরু:আমি ও যাবো।ভার্সিটি শেষ করে না হয় চলে যাবো,,শুধু মাত্র তোমার বান্ধবীর ছেলে বাসায় না থাকলেই হয়ে যাবে।
–মিতা:খুশি হয়ে,, তোমার আন্টি আঙ্কেল ভীষণ খুশি হবেন গেলে।তারপর একেবারে তৈরি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।কালো একটা গাউন মাথায় সাদা হিজাব,, চাদরের মতো গায়ে মুড়ানো সাদা ওড়না আর একপাশে কলেজ ব্যাগ।চোখে নতুন ফ্রেমের চশমা।এটাই বেশি ভালো লাগে দেখতে নিরুকে।আগের থেকে ও খানিকটা ফর্সা আর মোটা ও হয়েছে।এখন মুখ টাও ভরে গেছে শুকনো লাগে না।গোল মুখে বড় বড় চোখ আর চোখে চশমা দারুণ লাগে দেখতে।

***********
–নিরু হাতে করে অনেক গুলো তাজা গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা নিয়ে বিকেলে চলে আসে আন্টির বাসায়।আন্টির আবার ভীষণ পছন্দ বেলি ফুলের মালা আর তাজা গোলাপ।অবশ্য এটা নিরুর ও ভীষণ পছন্দের।তবে আজকে সাথে নীলাকে ও নিয়ে এসেছে।

–কলিং বেলে চাপ দিতেই রিফা এসে দরজা খুলে দেয়।ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে সাথে কিছু মেহমান ও।আন্টি কে দেখেই মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।রিহানের আম্মু ও নিরুর মাথায় চুমু খেয়ে বলে এবার কিন্তু আমার মেয়ে সত্যি সত্যি বড় হয়ে গেছে।
নিরু আন্টির সামনে বসে বলে,, সারাজীবন ছোট থাকলে মায়েদের সেবা করবো কি করে?তারপর সবাই হেসে ওঠে।
–আঙ্কেল :তবে নিরু কিন্তু দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে,, এবার নিরু লজ্জা পেয়ে যায়।এরমধ্যে মাথা মুছতে মুছতে শিড়ি বেয়ে নিচে নামে রিহান।নিরুকে দেখতে পায় নি।বাবার পাশে বসে বলে,, তোমার মেয়ে কে এবার আমার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিত হও তো আন্টি।আর ভালো লাগে না এতো লুকো…..।আর কিছু বলতে পারে নি নিরুকে দেখে চুপসে যায়।রিহানের থেমে যাওয়া দেখে বড়রা সবাই শব্দ করে হেসে ওঠে। রিহান জোর করে হাসি দিয়ে মাথা চুলকাতে থাকে।

–রিহানের আব্বু :আমি চাই এবার সত্যি সত্যি আমাদের ইচ্ছে টা পূরণ হোক নিরুপমা।আমরা তোমার আব্বু কথা দিয়েছিলাম প্লিজ আর না করো না!
–মিতা:আমার উর্ধ্বে তুমি যেতে পারো না নিরু। আমরা সবাই আছি আর রিহান ঠিক তোমায় সুখে রাখবে।আর তোমরা আমাদের কষ্ট বাড়িয়ো না।তারপর কিছু ইমোশনাল কথা বলে সবাই মিলে।নিরু জানে এঁরা যে করেই হোক বিয়ে দিবেই।তাছাড়া সবার মন ভাঙ্গার সাহস ওর নেই। ঠিক তেমনি সহজে রিহান কে মেনে নেওয়া ও সম্ভব নয়।ভাঙ্গা মন জোড়া সহজে লাগে না হয়তো একটা সময় নতুন করে মেনে নেওয়া যায় তবে কষ্ট ঠিকই মনে গেঁথে থাকে।অতিরিক্ত ভালোবাসা পেলে ও কোনো সময় ভালোবাসা দিয়ে কষ্ট গুলো মাটি দেওয়া যায়।তবে অবশ্যই দরকার ভালোবাসা সেটা হতে হবে মজবুত এবং নিঃস্বার্থ।নিরুর ভালোবাসা খাঁটি হয়তো ক্ষমা করাও সহজ তবে সহজ মানেই প্রথমেই অন্যায় কে ভুলে যাওয়া নয়।নিজেকে অসম্মান করা নয়।
–নিরু:আমি রিহানের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৭

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৭]
-তামান্না

–নিরবের প্রতিশোধের নেশা আরও বেড়ে গেছে।কারণ রিহান নিরবের আসল রুপ সবাই কে বলে দিয়েছে।এখন শুধু সুযোগ খুঁজছে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায়।এখন রিহানদের বন্ধু কারো সাথে মিশে না নিরব।আলাদা একটা টিম ওঁরা তৈরি করে নিয়েছে।তবে পড়াশোনার আশেপাশে ও নেই।
নিরুদের সাথে বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর কারো সাথে যোগাযোগ হয় নি।এমনকি এই শহরেই যে ওঁরা আছে তা ওদের চাচারা জানেন ও না।

–মিতা:পরীক্ষা দিয়ে সোজা বাসায় চলে আসবা আর নিরবকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবা।কখন কি করে বসে বলা যায় না। রিহান কে দিয়ে কতো বাজে একটা কাজ করালো।
–নিরু:রিহান ছোট বাচ্চা নয়।মানছি নিরব ভাইয়া খারাপ তবে তোমার আদরের বান্ধবীর ছেলে কে আমি ভালো বলতে পারছি না সরি!
–মিতা:কম বুঝার চেষ্টা করিস,,বড়দের থেকে বেশি বুঝতে নেই।
–নিরু:বাদ দাও না আম্মু।পরীক্ষা দিতে বের হবো এসবে আমার অস্বস্তি হয় ভালো লাগে না।মিতা কিছু বলে নি।মেয়ে কে তৈরি হতে বলে চলে যায় ভাত আনতে।প্রথম দিন সাথে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু আজকে স্কুলে ও দরকারী মিটিং আছে।

–নিশা:চলো তোমাকে প্রথম দিন পরীক্ষায় আমি নিয়ে যাই।বাবার দায়িত্ব আমিই না হয় পালন করে দেই।
–নিরু:খাবার মুখে নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,, বাচ্চা মানুষ বাবার দায়িত্ব পালন করতে আসছে। পরে দেখা গেছে পরীক্ষা বাদ দিয়ে আমার তোকে খুঁজতে বের হতে হবে।চুপচাপ স্কুলে যা আর মনে মনে আমার জন্য দোয়া দুরুদ পড়।
–নিশা:মুখ ভেংচি কেটে বলে আমার অতো সময় নেই হুম।আমি নিজের জন্য দোয়া দুরুদ পড়বো।তারপর নিরু হেসে ওঠতেই চলে যায় নিশা।

–নীলা :নিরুকে কয়েক বার কল করে না পেলে ওর মায়ের নাম্বারে কল করে জিজ্ঞেস করে বের হয়েছে কি না।নীলা প্রায় পৌঁছে গেছে।
–নিরু:আসছি।তারপর মায়ের থেকে দোয়া আর বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায়।যেখানে পরীক্ষা হবে ঐ কলেজ গতকাল কে মায়ের সাথে দেখে এসেছে।

*****
–আব্বু :তোমার আম্মু কে ডাক্তার দেখিয়ে সেন্টারে যাবো।ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা টা দিও।
–রিহান:আচ্ছা বলে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের গালে একটা চুমু খেয়ে বের হয়ে যায়।বাসার গাড়ি নিয়েই যেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু আব্বু বারণ করায় নেয় নি।পরীক্ষা দিতে যাবে এখানে এতো বড়লোকি ভাবের দরকার কি?
–আর কথা বাড়ায় নি।একটা রিকশা নিয়ে চলে যায় স্টেশনে ওখান থেকে বন্ধুদের নিয়ে চলে যায় কলেজে।

–নিরব:রিহান কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,,একটা লুজার কে খুব সুন্দর করে নিজের মতো নাচালাম।শা*লা হাঁদারাম হাহাহা।
–কথাটা একদম রিহানের কানে পৌঁছে যায়,, রাগে তেড়ে আসে রিহান।রিফাত আটকে দেয়।পরীক্ষায় এসে এসবে জড়ানো ঠিক হবে না।কোনো রকম নিজেকে কন্ট্রোল করে।তারপর সবাই কে রেখেই নিজের সিট খুঁজতে চলে যায়।

–নিরু নীলার সাথে খুঁজে নিজেদের সিট বের করে।বরাবরের মতোই ওদের দুই বান্ধবীর সিট আলাদা রুমে পড়ে।কখনো পাশাপাশি কিংবা এক রুমে বসে ওদের পরীক্ষা দেওয়া হয় নি।এই আফসোস বোধহয় থেকেই যাবে।কতক্ষণ দুজনে আড্ডা দিয়ে তারপর যার যার রুমে গিয়ে বসে।নিরু চুপচাপ বসে আছে।
কলেজ ড্রেস আর হিজাব চোখে চশমা,, মুখের মাস্ক টা খুলে রেখেছে।বেশিক্ষণ মাস্ক পড়ে থাকতে পারে না নিরু।কারণ চশমা টা ঘোলাটে হয়ে যায়।

–পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট পর নিরুর চোখ যায় পাশের বেঞ্চে।পাশাপাশি টেবিলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে রিহান।এতোক্ষণ তো মাথায় ও আসে নি।নিরু আর রিহান চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নেয় নিরু।
মনে মনে ভাবে তবে কি এতোক্ষণ আমায় দেখছিল রিহান?নাহলে আমায় দেখেই বা মুচকি হাসি দিবে কেন?পুরো অস্থির হয়ে যায় নিরু।নিজেকে স্বাভাবিক করে মনোযোগ দেয় খাতায়। তারপর আর কোথাও তাকায় নি।

–রিহান বসা ছিলো আগেই,, তবে নিরু আসার সময় দেখতে পায়।আর এই মেয়ে বেঞ্চে বসে অন্য কোথাও তাকায় নি ফলে রিহান কে দেখতে পায় নি।রিহান এতোক্ষণ বসে দেখছিল এই অতিসাধারণ আর সহজ মেয়ে বসে কি করছিল।চারপাশে এতো মেয়ে তবে একটা ও নিরুর মতো এতো সাধারণ নয়।কিন্তু নিরুকে সাধারণেই বেস্ট লাগে মায়াবী লাগে।সহজে একদম মনে বসে যাওয়ার মতো মায়াবতী।

–আসার সময় মেয়ে কে নিয়ে না আসতে পারলে ও পরীক্ষা শেষ হওয়ার বিশ মিনিট আগে এসে বসে থাকে।
নিরু পরীক্ষা শেষ করে বের হলে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রিহান।একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে ক্লান্ত লাগছে ভীষণ!মুখ টা মুছে নাও।
–খানিকটা দূরে থেকে টিজ করে নিরব বলে আহারে পুরনো প্রেম জেগে ওঠলো!
ভ্রু কুঁচকে মাস্ক টা পড়ে ডান পাশে তাকায় নিরু।মূহুর্তেই নরম হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,, এড়িয়ে চলা এবং শান্ত থাকা একজন ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য।সবাই কে সবার কথাকে মনে রাখতে এবং শুনতে নেই।তারপর চুপচাপ চলে যায়।এই কথা বলার কারণ হলো নিরু জানে ও চলে যেতেই রিহান তেড়ে যাবে নিরবের দিকে। তাই ঠান্ডা মাথায় একটা সুন্দর কথা বলে চলে গেলো।
রিহান বুকে হাত দিয়ে নিরুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।নিরুর এই রাগ আর নরম স্বভাব টা যেন তার সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত।এই হঠাৎ জড়িয়ে নিবে কিন্তু ফেইস পর্যন্ত ই,,মুখ দিয়ে উচ্চারণ করার আগেই নরম হয়ে যায়।এটা ইদানীং বেশি মিস করে রিহান।

–মিতা মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন হলো পরীক্ষা?
–নিরু:আলহামদুলিল্লাহ ভালো।কিন্তু শুরুতেই তোমার বান্ধবীর ছেলেকে পাশের সিটে দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে গিয়ে ছিলাম।
–রিহান:কেন আন্টি?আমি কি পরীক্ষার সেন্টারে এসে তোমার মেয়ে কে মারতাম নাকি?রিহানের এমন কথায় পিছনে তাকায় নিরু।তবে এরপর আর দাঁড়ায় নি চলে যায় সামনে নীলার সাথে।

–মিতা:ভালো হয়েছে তো?
–রিহান:আলহামদুলিল্লাহ তবে তোমার মেয়ের থেকে ভালো নয়।ছেলে মানুষ কে থাকতে হয় উপরে কিন্তু তোমার মেয়ে দেখছি সব সময় আমায় পিছনেই রেখে দিবে।অবশ্য এতো সুন্দরী বউ পেলে পিছনে থাকতে ও আমি রাজি…কথা টা বলে মাথা চুলকাতে থাকে রিহান।
–মিতা:তোদের দুজনকে নিয়েই তো আমার যতো চিন্তা।
রিহান আর মিতা দুজনেই হেসে ওঠে একসাথে।

*****************
–তারপর এভাবেই পরীক্ষা টা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যায়।আজকেই শেষ পরীক্ষা।একটু আগে এসেছে নীলা আর নিরু।এসে কলেজের বকুল গাছটার নিচে বসে।
এরমধ্যে কলেজের কয়েকজন ক্লাস মেট এগিয়ে এসে নিরুর থেকে ক্ষমা চায়।
–নিরু আচমকা ওদের ক্ষমা চাওয়ার কারণ টা বুঝতে পারে নি।
–সবাই :সত্যি সরি গো।তোমায় আমরা ভুল বুঝে ছিলাম কিন্তু রিহান নিজের মুখে সবাই কে ডেকে সত্যি টা বলেছে।তোমার মতো মানুষ কে খারাপ ভাবা না জেনে,, আমাদের অনেক অন্যায় হয়েছে। প্লিজ আমাদের মাফ করে দিও।
–নিরু:খানিকটা অবাক হলেও প্রকাশ না করে বলে,,তোমাদের দোষ নেই হয়তো আমার জীবনে এতোটুকু অসম্মান লেখা ছিলো।তারপর টুকটাক কথা বলে চলে আসে।এরপর নীলার থেকে পুরো কাহিনি শুনে।
নিরু কষ্ট পাবে বলে এরপর আর রিহানের কথা তুলে নি নীলা।নিরু খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চারপাশ টা একটু সহজ হয়।

–রিহান:নিরুপমা?পরীক্ষা শেষ হলে প্লিজ একটু দাঁড়িয়ো!
–নিরু কথাটা শুনলে ও চোখ তুলে ফিরে তাকায় নি।চুপচাপ পরীক্ষা দিতে থাকে।অর্ধেক পরীক্ষা দেওয়ার পর দেখে রিহান প্রশ্ন দেখছে তবে লিখতে পারছে না।বোধহয় কমন পড়ে নি।তারপর নিজ ইচ্ছায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? ইশারায় রিহান কয়েক টা প্রশ্ন কমন পড়ে নি বলে। তারপর নিরু খাতা তুলে ওকে দেখায়।

–নীলা :আজকে চল একটু ঘুরি?চারপাশে নাকি অনেক সুন্দর!
–নিরু:আন্টিকে বলে আমাদের বাসায় চলে আসবি পুরো শহর ঘুরে দেখাবো।আজকে না আজকে বাসায় চল।
–নীলা :মিরা বলছিল আজকে নাকি সামনের পার্কে তিন দিন ব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে চল যাই।

–রিহান তাদের বন্ধুদের নিয়ে ওদের পিছনে এসে বলে চলো আমরা নিয়ে যাই।
–নিরু:শুনুন?আমাদের কোনো বডিগার্ড লাগবে না আর আপনারা যে বিনা পয়সায় মেয়েদের হেল্প করতে কলেজে আসেন তা কি বাবা মা জানে?
–রিহান:ওদের টা জানে কি না জানি না।তবে আমার আব্বু আম্মু জানে যে তাদের ছেলে নিরুপমার বডিগার্ড।
–নীলা :ভীষণ জ্বালাচ্ছেন কিন্তু।যার যার মতো আলাদা পথে হাঁটুন না!
–রিফাত:একধাপ বেশিই তো দেখি বুঝো,, তারপর খানিকটা ঝুঁকে বলে,, একটু সাহায্য করতে পারো না আমার বন্ধু কে?
–নীলা :বেশ জোরে বলে,, সরেন।আমি নিরু নই যে চুপচাপ সব শয়ে যাবো এবং ভুলে যাবো বা সরে যাবো।ভুল আর অন্যায় দুটো আমার কাছে এক শব্দ নয়।

–তারপর রাগে নীলা আগে চলে যায়।কিছুটা এগিয়ে যেতেই হাতে টান পড়ে।
–নীলা:চল আমরা মেলায় যাই নিরু,, ভীষণ মজা হবে।
–নিরব:এর থেকে বেশি ভালো হবে হোটেলে গেলে,,সত্যি অনেক ম*জা পাবে,, চলো!
–পিছনে তাকিয়ে নিরব কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। নিরু কে ও দেখতে পাচ্ছে না।ভয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না।এবার মনে হয় কান্নায় করে দিবে নীলা।
–নিরব:সাথে টাকা ও দিবো বোনাস হিসেবে চলো সুন্দরী?
–নিরব হাত ধরে টেনে নেওয়ার আগে চোখ বন্ধ করে ফেলে নীলা।হঠাৎ হাতটা আলগা হতেই চোখ খুলে দেখে রিফাত দুই তিন টা থাপ্পড় মেরে দিয়েছে অলরেডি।

–এরমধ্যে অনেক টা হাতাহাতি হয়ে যায় নিরবের সাথে।রিহান এগিয়ে আসতেই কেটে পড়ে নিরব।
–রিফাত :ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় নীলার গালে।রেগে বলে খুব তো গলা ফাটাতে এবং মুখ খারাপ করতে পারো।কই ছিলো এতোক্ষণ তোমার মুখ?নাকি নিজে ও প্রস্তাব গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলে?এবার মাথা নুয়ে কান্না করে দেয় নীলা।এরমধ্যে নিরু এগিয়ে আসতেই জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় নীলা।
নিরু রিহানের আব্বুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার কথা বলতে বলতে খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে ছিলো।আর রিহানরা বকুল গাছটার নিচে বসে ছিলো।
তারপর পুরো ঘটনা আমানের থেকে শুনে নিরু।
–নিরু:কষ্ট পাস না।চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,, আমাদের দুজনের শুধু খারাপ লোকের সাথেই পরিচয় হয়।তবে এটাই বোধহয় উপর ওয়ালা ও চায় নয়তো এমন হতো না।কথা টা বলার সময় আড় চোখে রিহানের দিকে তাকায় নিরু।রিহান বুঝতে পারে এটা ওকে উদ্দেশ্য করেই নিরু বলেছে।

–রিফাত :আর একদিন যদি এই মেয়ে কে সামনে দেখি মেরে ফেলবো বলে দিলাম কথাটা বলে রাগে চলে যায়।
–আমান:বাপরে এই আমি কাকে দেখছি?এটা আমাদের রিফাত তো?হঠাৎ এতো রিয়েক্ট করছে কেন?
–আরিফ:সামথিং সামথিং,,তারপর সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৬

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৬]
-তামান্না

–নিরু:ভালো লাগে না ঐখান টাতে।মানুষ গুলো ও খুব বিরক্তিকর।দম বন্ধ হয়ে আসে,, ঐ শহর টাতে তোমার মেয়ে কলঙ্কিত আম্মু!
–মিতা:তুমি তো জানো তুমি কেমন?নিজের কাছে নিজে শুদ্ধ থাকাটাই আসল।পৃথিবীতে সব মানুষ কে খুশি করতে এবং কথা গায়ে মাখতে আসো নাই।আর সবাই তো একজনকেই ভালোবাসে না মা।নিজের জন্য বেঁচে থাকা ভালো থাকা মানিয়ে মেনে নেওয়া ও একটা সুস্থ এবং সুন্দর যুদ্ধ।
তারপর অনেক কিছু বুঝিয়ে কল কেটে দেয় নিরুর আম্মু।দুই মাস পরেই পরীক্ষা।যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই নিতে হবে।

–এদিকে রিহান নিরুর আম্মুর থেকে নিরুর নতুন সিমের নাম্বার টা নিয়ে নেয়।তবে সাহস নিয়ে আর সেদিন ফোন কিংবা মেসেজ করে নি।

–দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেলো।নিরুর মা নিরুকে রিকোয়েস্ট করে রাজি করায় পরীক্ষা দিতে। অনেক বুঝানোর পর রিহানদের কলেজ থেকে পরীক্ষা দিতে রাজি হয়।শুধু পরীক্ষা দিবে ক্লাস বা কলেজে যাবে না।যেহেতু পরীক্ষা অন্য কলেজে গিয়ে দিতে হয় এতে অতোটাও সমস্যা হবে না।

–মিতা:একটা কথা বলার ছিলো নিরু,,তবে তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবা তাই হবে।
–নিরু:হাতের কাজ করতে করতে বলে,, বলো?
–মিতা:রিহানের আব্বু রিকোয়েস্ট করছে তোকে রিহানের সাথে বিয়ে দিতে।
–নিরু:বিয়ের বয়স কি তোমার বান্ধবীর ছেলের আর আমার অনেক বেশি পেড়িয়ে গেছে?দুই পরিবারের মানুষ শিক্ষিত আর শিক্ষক হয়ে কিভাবে বাল্যবিবাহ দিতে চাচ্ছো?তাছাড়া আমি যাকে তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নই।বড় করে শ্বাস ছেড়ে বলে,,জোর করে কিছু হয় আম্মু?
–মিতা:রিহান ও চাচ্ছে।কথা বলার সময় রিহান উপস্থিত ছিলো।আমার কাছে মাফ চেয়েছে।
–নিরু:তারপর!তুমি খুশি হয়ে মাফ করে দিয়ে আমায় তুলে দিতে প্রস্তুত হয়ে গেছো?
–মিতা:তোর আন্টি ভীষণ অসুস্থ নিরু।উনাকে দেখার জন্য বাসায় মানুষের দরকার,, এক হাত পা প্যারালাইজড হয়ে গেছে।

–নিরু:তাই বলে মানুষ বলতে ছোট দুইজন মানুষ কে বিয়ে দিয়ে দেওয়া।আমি আন্টিকে ভীষণ ভালোবাসি তবে খানিকটা থেমে অনেক কষ্টে বলে রিহান কে না।এরপর আর পায় নি সোজা দৌড়ে রুমে চলে আসে।

************
–রিহান এখন বাসা থেকে বের হয় না।কলেজে নিরুর নামে যে মিথ্যা ভিডিও বানানো হয়েছে তা স্বীকার করে এসেছে।নিরবের সাথে শত্রুতা বেড়েছে।রিফাত আমান মাঝে মধ্যে বলে আর রিহান শুনে।নিজেকে কন্ট্রোল রাখার চেষ্টা করে।বাসায় এমনিতেই আম্মু অসুস্থ মন মেজাজ ভালো না।একটা নার্স ঠিক করে রেখেছে চব্বিশ ঘণ্টা দেখাশোনা করেন।

–রিহান:নিরুপমার নাম্বারে নতুন সিম দিয়ে অনেক গুলো মেসেজ করে কিন্তু রিপ্লাই আসে নি।দুই দিন চেষ্টা করে তিন দিনের দিন রিহান মেসেজ পাঠায়,”রিহান তোমাকে ব্যবহার করেছে নাকি তুমি ব্যবহার করেছো?
–নিরু:রং নাম্বার থেকে মেসেজ আসলে নজরে আসে।কিন্তু রিপ্লাই করে নি।আজকে এমন মেসেজ দেখে রিপ্লাই করে।
–নিরু:কে আপনি? আমার আর রিহানের সম্পর্কে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে?
–রিহান:সত্যি টা স্বীকার করুন মিস নিরু!
–নিরু:আমরা কেউ কাউকে ব্যবহার করি নি,, নিয়তি আমাদের কে ছিটকে আলাদা করে দিয়েছে।তবে অভিযোগ নেই আমার তরফ থেকে,,অভিমান বেড়েছে নিজের প্রতি অনুভূতির প্রতি।কারণ আমার অনুভূতি গুলো স্বস্তি দিতে পারে নি।
–রিহান:ভালোবাসা বুঝি অনেক কঠিন?একসাথে অনেক জনকে যায় না?
–নিরু:আমি শিউর আপনি কোনো ফাজিল আর খারাপ লোক।এজন্য এতো বাজে চিন্তা থেকে বাজে প্রশ্ন করছেন।আর শুনুন আমি আর রিহান এক নেই সুতরাং আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না।ভালো থাকুন আর বেশি বেশি প্রেমে পড়ে অনেক জনকে একসাথে ভালোবাসুন টাটা বলেই ব্লক লিস্টে ফেলে রাখে নাম্বার টা।তারপর বসে বসে একা একাই ইচ্ছে মতো গালাগালি করে।

–নিশা:আমরা কবে যাচ্ছি আম্মু?
–মিতা:সামনে সপ্তাহে।তোমার খালু একটা বাসা দেখেছে।ফ্ল্যাট টা আমার ও ভীষণ পছন্দ হয়েছে। দেখি কনফার্ম করতে পারি কি না।তবে কিছু লোন ও বোধহয় নেওয়া হতে পারে।
–নিরু:হোক তাও একটা নিজেদের বাড়ি হোক আম্মু।সেখানে আমরা তিন জনের সংসার সাজাবো রাজ্য ভর্তি সুখ নিয়ে বেঁচে থাকবো।সুখের থেকে ও স্বস্তি জরুরি আম্মু।টাকা পয়সা চেহারা স্বাস্থ্যের থেকে ও যেমন জরুরি সুস্থ থাকা বেঁচে থাকা।

★★★★★
–তারপর দেখতে দেখতে দুই মাস পেড়িয়ে যায়।নিরুদের একটা বাড়ি হয়।সামনে সপ্তাহে পরীক্ষা নিরুর আম্মু গিয়ে আঙ্কেলের থেকে দরকারী কাগজ পত্র সব এনে দেয়।এই দুই মাস মোবাইল ফোন থেকে পুরোপুরি দূরে ছিলো নিরু।রিফা আর আন্টি আঙ্কেলের সাথে এখন মাঝে মধ্যে কথা হয়।রিহানের আম্মু আগের থেকে খানিকটা সুস্থ তবে হাঁটতে বসতে পারে না একা একা।
–নিশা:আপু চল না আজকে ফুসকা খেতে যাই।
–নিরু:সামনে সপ্তাহে পরীক্ষা এসব চলবে না নিশা।অবসরে অনেক খাওয়াবো কেমন?
–নিশা:প্লিজ!আজকে তোকে নিয়ে খাবো বলে স্কুলে ও খাই নি।
–নিরু:ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে,, কোথায় গিয়ে খাবি?
–নিশা:পার্কে!অনেক সুন্দর এখন একটু ঘুরতে ও পারবো।
–নিরু:আচ্ছা!জাস্ট পাঁচ মিনিট সময় দিলাম রেডি হয়ে নিবি।এতো সাজগোজের সময় কিন্তু দিবো না।

–মিতা:আমি তোদের নানুর বাসায় যাচ্ছি। ফিরতে রাত হবে দুজনে ফিরে এসে পড়তে বসো।কিছু কাগজ পত্রে ঝামেলা ঠিক করতে হবে জমি সংক্রান্ত।
–নিরু:তাড়াতাড়ি চলে এসো।তারপর রেডি হয়ে দুই বোন মিলে বেড়িয়ে পড়ে।দুই মাস পর নিজের শহরে ঘুরতে বেড়িয়েছে।নিজেদের শহর হলেও ওদের নতুন বাড়িটা নিজের এলাকায় না।এখান থেকে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগবে বাবা চাচাদের বাড়ি যেতে।কলেজ ও অনেক দূর তবে ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হবে যেই কলেজে গিয়ে ওটা ওদের বাসা থেকে কাছে।দুই বোন মিলে রিকশায় করে খোলা বাতাস খেতে খেতে ঘুরে চারপাশ টা।ভালো করে দেখা হয় নি জায়গা টা।ভীষণ সুন্দর। নিজের বাড়ির পর এ জায়গা টা ও সুন্দর ভাবে মনে ধরেছে।

–নিশা:তোমার পরীক্ষার পরে চলো না লম্বা ছুটির একটা ঘুরতে বের হই।কক্সবাজার,, রাঙামাটি,, সিলেট।সব কিছু একসাথে।
–নিরু:একদম না।ঘুরবি পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের পর।বরের সাথে পুরো দেশ আর সামর্থ্য থাকলে পুরো পৃথিবী ঘুরবি।
–নিশা:তাহলে এখনই বিয়ে দিয়ে দাও বলে হাহাহা করে হেসে দেয়।
–নিরু:মাথায় গাট্টি মেরে বলে,,ফাজিল আজকে আম্মু কে বাসায় গিয়ে বলছি দাঁড়া।

–এদিকে রিফাকে নিয়ে মার্কেটে এসেছিল রিহান।অনেক দিন পর বোনের আর আব্বুর রিকোয়েস্টে দুই ভাই বোন বের হয়।সচরাচর সব সময় কেনাকাটা গুলো এখান থেকেই করে রিহান।কেনাকাটা শেষ হলে গাড়িতে রেখে দুজনে পার্কে আসে।
ছোট বেলায় আব্বু আম্মু আর নিরুর পরিবার শিশু পার্কে ঘুরতে যেতো।নিরু বেশি মিশতো না কারণ রিহান মারামারি করতো বেশি।

–হাটাহাটির সময় এক পর্যায়ে নিরু আর নিশা কে চোখে পড়ে রিহানের।একটা বাইরে থাকা টেবিলের সামনে বসে আছে দুই বোন।দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনে খোশগল্প করছে।
–রিহান রিফা কে নিয়ে সোজা সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ওদের।
–রিহান:নিশা?
–আচমকা রিহানের কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায় নিরু।তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।মুখে মাস্ক টা ঠিক করে খানিকটা পিছিয়ে যায়।রিফা এগিয়ে গেলে হাসি মুখে ওর সাথে কথা বলে।তারপর নিশা কে উদ্দেশ্য করে বলে আমি সামনে যাচ্ছি,, তুই চলে আসিস।রিফা কিছু বলতে গেলে সুযোগ দেয় নি।
–রিহান:এক্সকিউজ মি!তোমরা একটু বসো আমি আসছি বলেই দৌড় দিয়ে গিয়ে নিরুর সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকায়।

–নিরু:চোখ নিচে নামিয়ে এড়িয়ে যেতে নিলে রিহান দুহাত ছড়িয়ে আটকায়।
–রিহান:আমার দিকে চোখ তুলে তাকাও নিরু প্লিজ!কেমন আছো?
–নিরু:জ্বি!ভালো আছি,, পথ টা ছাড়ুন যেতে হবে।
–রিহান:আপনি বলছো?
–নিরু:এবার চোখ তুলে তাকায়।হাত পা কাপছে নিশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, কোনো সুদর্শন আর বড়লোক মানুষ কে তুমি বলার অধিকার অসুন্দর আর কুৎসিত মানুষের থাকে না।আর সব মানুষ বারবার ভুল করে না।কথা গুলো বলতে বলতে চোখ গুলো টলমল করে উঠে।যা রিহানের চোখ এড়ায় নি।
–রিহান:ভালোবাসো না আমায়?
–নিরু:অন্য দিকে মুখ করে খানিকটা সময় নিয়ে বলে,, নাহ!
–রিহান:হাসতে হাসতে নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করে বলে,,সেটা তোমার চোখ ই বলে দিচ্ছে।জীবনে এটা ও একটা প্রাপ্তি কোনো নারী আমার কথা মনে করলে চোখ ভিজে আসে।সমুদ্র বয়ে চলে চোখের পাতায়।
–নিরু:নিশ্চুপ!
–রিহান:আমি ভুল করেছি ভুল শুনেছি তবে মিথ্যে ভালোবাসি নি।তোমার প্রতি আমার করা অন্যায় টা যেমন সত্যি তেমনি ভালোবাসা টা ও সত্যি।অনুভূতি গুলো কে এখন বড্ড মিস করি নিরু।প্লিজ ফিরে আসো।
রিহানের কথা শুনে চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।কোনো রকম মুছে।রিহানের দিকে তাকায়।এক মিনিট রিহানের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে হঠাৎ দৌড়ে চলে যায় নিশার কাছে। বোনের হাত ধরে টেনে তাড়াতাড়ি করে রিকশায় উঠে বসে।

–নিশা:কিছু বলেছে ভাইয়া?
–নিরু:নিশার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙায়।ভয়ে আর কিছু বলে নি নিশা।বোনের অভিমান সম্পর্কে ধারণা আছে ওর।

–এদিকে মিতা ভাইয়ের সাথে দরকারী কাজ শেষ করে।তবে সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো স্কুল থেকে তাদের বাড়ির পাশের এক কলিগের থেকে শুনতে পায় নিরব নিরুর বড়সড় একটা ক্ষতির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

*************
–রিহান:আব্বু!তোমরা প্লিজ পরীক্ষার পরে আমার আর নিরুর বিয়ের ব্যবস্থা করো।সেটা যেভাবেই হোক।তবে বিয়ের পরের দিন ই আমি বিদেশে চলে যাবো।আমি নিরুকে সময় দিতে চাই। আমার বিশ্বাস নিরু আবার আগের রুপে ফিরে আসবে।
মনে মনে বলে আমার নামে লিখে তারপর দূরত্ব রাখলেই আমার অভাবে আমার কাছে ছুটে আসবে।আমি বিশ্বাস করি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে আর অভিমান জমিয়ে রাখবে না।আমি আবার ওকে ওর যোগ্য সম্মান ভালোবেসে ফিরিয়ে দিবো।এর আগে আমার বানিয়ে নেওয়া ভীষণ জরুরি।আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বলে তোমার চোখ দেখে আমি সবই বুঝতে পারি বোকা নিরু।তোমার সব থেকে শক্তি শালী অভ্যস হলো নিশ্চুপ থাকা।তুমি নিজেকে খুব সহজে আড়ালে রাখতে পারো,,#নৈশব্দে_চলে যেতে পারো সবার জীবন থেকে।তর্ক এবং ঝামেলা এবং অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ মেজাজ যে তোমার অভিধানে নেই।তোমাকে, তোমার হৃদয় চেনা আমার হয়ে গেছে প্রিয়তমা।

–রিফা:নিরু আপুই কিন্তু তোমার যোগ্য এবং আমাদের বাড়ির যোগ্য।তাড়াতাড়ি করে আমার কাছে এনে দাও তো ভাইয়া।
–রিহান:বোনের মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, বিয়ে করিয়ে ভাইকে বউ ছাড়া রাখার ধান্দা না?
–রিফা:দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,, রাতে তো তোমার বউ তোমার কাছেই থাকবে।তারপর হাসতে হাসতে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

–রিহান : মিস নিরুপমা!আপনাকে আমি মিসেস রিহান খুব শীগ্রই বানাবোই।কথাটা বলেই বাঁকা হাসে।

–নিরবের প্রতিশোধের নেশা আরও বেড়ে গেছে।কারণ রিহান নিরবের আসল রুপ সবাই কে বলে দিয়েছে।এখন শুধু সুযোগ খুঁজছে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায়।এখন রিহানদের বন্ধু কারো সাথে মিশে না নিরব।আলাদা একটা টিম ওঁরা তৈরি করে নিয়েছে।তবে পড়াশোনার আশেপাশে ও নেই।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৫

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৫]
-তামান্না

–রিফাত :আসল কাহিনি শোনা হয়েছে রিহান?
–রিহান:কি কাহিনি? কি হয়েছে?
–রিফাত :নিরব তার প্ল্যান সম্পর্কে সব কিছু শেয়ার করেছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিমনের সাথে।সে ইচ্ছে করেই সবটা করেছে।তার সাথে পারিবারিক সমস্যা ছিলো নিরুদের।তারপর সব কাহিনি খুলে বলে।
রিহান চোখ বন্ধ করে চুপচাপ সব কথা শুনে।দুই দিন যাবত এটাই আন্দাজ করছিল।

–রিহান:একদম শান্ত গলায় বলে তারপর কি করা উচিত?
–রিফাত :হ্যালো!হ্যালো!তুই ঠিক আছিস রিহান?
–রিহান :রাখছি।মাথা ঠিক লাগছে না।তারপর কল কেটে ফোন টাকে ফ্লোরে ছুড়ে মারে।চুল গুলো শক্ত করে হাত দিয়ে মুঠোয় বন্দী করে বসে পড়ে।ভীষণ রাগ লাগছে ভীষণ।নিরুপমার চেহারা অসহায় চাহনি সব কিছু এখন ভাসছে।সব কিছু ক্লিয়ার করা হয়েছে কিন্তু সবটা হাত থেকে দূরে ফসকে যাওয়ার পর।

–রিফা:ভাইয়া!ভাইয়া!দরজা খোল।তারপর কান্না করতে করতে বলে আম্মু কেমন করছে।ভাইয়া দরজা খোল।
–চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে রিহানের।বোনের মুখ থেকে এমনটা শুনে দৌড়ে দরজা খুলে বের হয়।ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে সেন্স নেই মায়ের।
–রিহান:তুই আব্বু কে কল কর।তারপর মা’কে কোলে করে গাড়িতে বসে।পিছনের সিটে মায়ের মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে রিফা আর কান্না করছে।

–বারান্দায় সবাই মিলে অপেক্ষা করছে ডাক্তার আসার।রিফার কান্না কোনো ভাবেই থামছে না।
রিহান মাথা নুয়ে বসে আছে আর ওর আব্বু ও মন খারাপ করে বসে আছেন।আর একটু পর পর চোখের পানি মুছছেন।
ছোট থেকে আজ অব্ধি বাবা মায়ের মধ্যে ভালোবাসা ছাড়া কোনো ঝগড়া দেখে নি।সব সময় একে অপরের পরিপূরক হয়েই পাশে রয়ে গেছে।আজকে প্রথমবার তাদের খানিকটা দূরত্ব চোখ দিয়ে পানি সব মিলিয়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছে রিহানের।সবটাই বোধহয় ওর অন্যায়ের ফল।এর মধ্যে কয়েক বার নিরুকে কল করেছে রিহান।কিন্তু ফোন সুইচড অফ।নিরুর মায়ের ফোন অন থাকলে ও রিসিভ হয় নি।

–ডাক্তার :আসলে রোগী স্ট্রোক করেছেন।জ্ঞান ফিরে আসে নি তবে ফিরে আসবে।কিন্তু…
–রিহান:ককককিন্তু কিহহহহহ?
–ডাক্তার :প্যারালাইসড হয়ে গেছে এক হাত এক পা।তবে বিশ্রাম কিংবা মানসিক ভাবে সুস্থ আর পুরোপুরি যত্ন পেলে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।এতে খানিকটা সময় লাগবে।

–এবার রিহানের আব্বু কান্না করতে করতে বসে পড়েন।রিহান বাবার দিকে তাকিয়ে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে শেষ করে নেন।
–রিহান:বাবার কাঁধে হাত রেখে বসে বলে,,তোমার মতো মানুষ ভেঙে পড়ে?শক্ত হতে হবে তো আব্বু।আমরা যে পুরুষ মানুষ।সবাই মিলে আম্মু কে সুস্থ করে ফেলবো।তারপর নিশা এগিয়ে আসতেই বাবা আর বোন কে জড়িয়ে ধরে।
ছোট বেলায় বাবা মা যেমন আদর করে সন্তান কে আগলে রাখেন ঠিক তেমনি বাবা মা বৃদ্ধ হলে সন্তান বড় হলে বাবা মা কে আগলে রাখতে হয়।

********
–নিরুরা বাসায় আসার পর থেকে তিন দিন চলে যায় বাসা গুছাতে।তারপর তিন দিন চলে যায় কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত কাজে।অবশেষে নিরুকে সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি করে তবে আগামী তে এইচএসসি দিতে হবে।আর নিশাকে ও স্কুলে ভর্তি করা হয়।
সব গুছিয়ে এক সপ্তাহ পরে নিরুর আম্মু মেয়েদের কে রেখে চলে আসেন বোনের বাসায়। উপর মহল থেকে কাগজ পত্র ঠিক হলে তারপর ট্রান্সফার এপ্লিকেশন ওকে হবে।আপাতত মিলিয়ে এবং মানিয়ে নিতে হবে সবটা।বোনের বাসা থেকে স্কুল চালিয়ে নিবে,, ফাঁকে ফাঁকে মেয়েদের ওখানে ও যাবে।
–দুই দিন যাবত একটা নাম্বার ফোন করছে।ভয়ে রিসিভ ও করছে না।নিরুর ভয়ে এতো দিন আরও রিসিভ করে নি।তবে আজকে সমস্যা নেই তাই রিসিভ করে।
–মিতা:ওয়ালাইকুম আসসালাম!কে?
–রিহান:আমি রিহান আন্টি।ভালো আছো?কোথায় তোমরা?
–মিতা:চোখের চশমা টা ঠিক করে বলে,, রিহান?
–রিহান:আম্মু অসুস্থ আন্টি।কথাটা বলার সাথে সাথেই দুপাশ থেকে নিরবতা।
–মিতা:কোথায় তোমরা?হসপিটাল নাকি বাড়িতে?আমি স্কুল শেষে আসবো।।
–রিহান :বাসাতেই আজকে আনা হয়েছে।তুমি বরং এসে দেখে যেও।তারপর কথা শেষ করে কল কেটে দেয়।

*************
–আব্বু :ফ্লাইট তো ক্যান্সেল হয়ে গেলো? এখন কি করবা?
–রিহান:এইচএসসি শেষ করে যেতে চাই।তারপর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে দেশে এসে মাষ্টার্স শেষ করবো।চাকরি বা ব্যবসা যেকোনো একটা স্থায়ী করে নিবো।
–আব্বু :জোর করবো না।তুমি যা ভালো বুঝো।চাইলে এইচএসসি শেষ করেও আমার ব্যবসায় যোগ দিতে পারো।এমনিতেই আমার শরীরের পক্ষে এতো দখল নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
–রিহান:সময় তো আছে দেখি কি করা যায়। আর আম্মুর দেখাশোনা ও তো করতে হবে। রিফা ছোট মানুষ সবটা সামলাতে পারবে না।

–এদিকে নিরু আর নিশা পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।নিরুর অবশ্য তেমন চাপ নেই তবে নিশার চাপ বেড়েছে।নিরু বাসাটা খুব সুন্দর করে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছে।
নিজেদের বাড়ির মতো না হলে ও খুব সুন্দর বাসাটা।তিনটে রুম মস্ত বড় বেলকনি আর রান্না ঘর ড্রয়িং রুম সব আছে।বাসার সামনে ও ছোট একটা বাগান।মামা ও নতুন বাড়ি দেখছেন কিনবে বলে।বাবার পেনশনের টাকা আর বাড়ি বিক্রি করার চাচার দেওয়া টাকা,, মায়ের কিছু জমানো টাকা সব মিলিয়ে নিজেদের একটা বাসস্থানের প্রয়োজন আছে।আর হয়ে ও যাবে সহজেই।

–নিরু:কি করছো আম্মু?ভীষণ ব্যস্ত,,সারাদিন একটা কল ও করো নি?
–মিতা:স্কুল থেকে ফিরে আসি নি মিটিং হচ্ছে।বাসায় গিয়ে কল করবো।তারপর কোনো রকম কল কেটে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন মিতা।কলিং বেলে চাপ দিতেই রিফা দরজা খুলে দেয়।
তারপর রিফার সাথে ওর আম্মুর রুমে চলে যায়। রিহান ওর আব্বু ওখানেই আছে।
–রিহান :সালাম দিয়ে এগিয়ে এসে বসতে বলে।
–রিহানের আম্মুর দিকে তাকিয়ে কান্না করে দেয় মিতা।রিহানের আম্মু চুপচাপ মলিন মুখ করে তাকিয়ে আছে।আর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

–রিহানের আব্বু :তুমি এসেছো মিতা?এতো কিছু হয়ে গেলো আমরা একসাথে কথা বলে মিটমাট করতে পারলাম না?
–মিতা:সব কিছু হাতের বাইরে ছিলো ভাইজান। আপনি তো জানেন নিরুর চাচা চাচিরা কেমন।ছোট্ট একটা ঘটনার পর এসব হয়ে গেলো।
–রিহান মাথা নুয়ে ফেলে।ভীষণ খারাপ লাগছে।কোনো রকম একটা অজুহাত দেখিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
–রিহানের আব্বু :আমি জানি রিহান যা করেছে অন্যায়।তবে রিহান বুঝতে পেরেছে ও ভুল করেছে,, আর ভুল পথটা জোর করে বের করে দিয়েছে নিরব।তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলে।
–মিতা:যা ভাগ্যে ছিল তাই হয়েছে।তবে আমার মেয়ে টা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।সহজ সরল মেয়ে আমার সত্যিই কিন্তু রিহান কে ভালোবেসেছে।আমি সেই শুরু থেকেই খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।তবে খুশিই হয়েছি।যেহেতু আমরা এটাই চাচ্ছিলাম ওদের বিয়ে দিতে।তারপর বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নিরুর আব্বুর ও ভীষণ শখ ছিলো রিহান তার মেয়ের জামাই হবে।
তারপর এতো জটিল কিছু হয়ে গেলো আমার মেয়ের ক্যারিয়ার ও নষ্ট হওয়ার পথে,, সব মিলিয়ে খানিকটা দখল যাচ্ছে।তাছাড়া সম্মান তো আর কিনতে পাওয়া যায় না।

–রিহানের আম্মু :আস্তে আস্তে অস্পষ্ট স্বরে হাত তুলে মাফ চায়।সাথে রিহানের আব্বু ও।রিফা এগিয়ে এসে আন্টিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
এরমধ্যে রিহান রুমে প্রবেশ করতেই ওর আব্বু বলে বসো রিহান।তোমার সামনেই সবটা বলতে চাই।
–রিহানের আব্বু :বাসায় একজন মানুষের ভীষণ প্রয়োজন আর রিফার পক্ষে সব কিছু সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।তাই আমি আর তোমার বান্ধবী ভাবছি নিরু আর রিহানের বিয়ে টা দিয়ে দিতে।মিতা কিছু বলতে গেলে হাত দিয়ে থামিয়ে বলে,, যেহেতু সেই ছোট বেলায় আমরা ঠিক করে রেখেছি।রিহান অবাক হয়ে কথা গুলো শুনে। ছোট বেলায় ওদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে সত্যি? মনে মনে এসব প্রশ্ন করে রিহান।

–মিতা:মাফ করবেন ভাইজান।এটা কখনোই সম্ভব না,, নিরুর সামনে এই প্রস্তাব আমি কখনোই রাখতে পারবো না।আমি আমার মেয়ের সামনে ছোট হয়ে যাবো প্লিজ!
–রিহান:আমি ওকে রাজি করাতে পারবো আন্টি।গত এক বছরে ওকে মোটামুটি ভালো ভাবে চেনা হয়েছে আমার।
–মিতা:তাও রাজি হবে না।আর তুমি যে অন্যায় টা করেছো….আর কিছু বলতে পারেন নি মিতা।দৌড়ে এসে পায়ের কাছে বসে পড়ে রিহান।মাথা নুয়ে বসে।

–রিহান:তোমার মেয়ে কে সত্যি আমি ও ভালোবাসি।যা করেছি ভুল দেখানোর জন্য করেছি আন্টি।আমি আমার জীবনে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য হলেও ওকে চাই।না হলে এতো অনুশোচনা আর অপরাধ বোধ আমাকে বাঁচতে দিবে না।
সেদিন আমার ও খুব কষ্ট হয়েছে আমিও এরপর আর ভালো থাকছি না।প্লিজ আন্টি আমাকে একটা সুযোগ দাও।মিতা হাত দিয়ে রিহান কে দাঁড় করিয়ে বলে,,আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। সব কিছুর দায়িত্ব শুধু তোমার, দেখো রাজি করাতে পারো কি না!
–তারপর রিহানের মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে আসছি ভালো থাকিস।

**************
–নিশা:এখানে ভালো লাগে না আপু।চলনা আমরা আমাদের শহরে চলে যাই।ওখানে বাসা নিয়ে থাকি।
–নিরু:ঐ শহর নিষিদ্ধ নিশা।ঐ শহরে তোর বোন কলঙ্কিত ছাড়া কিছু নয়।সেখানে তোর সম্মান রাখতে পারে নি তোর বোন।সেজন্য আমি ভীষণ লজ্জিত।কথা গুলো বলে বোনকে জড়িয়ে ধরে নিরু।চুপচাপ কান্না করতে থাকে।
–নিশা:থাকুক। আমরা তো জানি তুমি কেমন।আমরা আমাদের মতো আমাদের রাজ্যে রাজকন্যা হয়ে থাকবো।
–নিরু:বাবা ছাড়া মেয়েরা রাজকন্যা হয় না তার প্রমাণ চাচারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো।

–এরমধ্যে কল বাজতেই রিসিভ করে নিরু।তারপর কতক্ষণ মায়ের সাথে আড্ডা দেয় দুই বোন মিলে।
–মিতা:একটা কথা বলি নিরু?আগেই বলি রাগ করবি না।
–নিরু:বলো।
–মিতা:আমি অনেক চেষ্টা করছি দুই বছর আগে ট্রান্সফার করা সম্ভব না।তোরা বরং এই শহরে চলে আয়।তোর আঙ্কেল বলছেন পরীক্ষা টা দিয়ে দিতে।অযথা এক বছরের নিচে পড়ার দরকার কি?
–নিরু:ভালো লাগে না ঐখান টাতে।মানুষ গুলো ও খুব বিরক্তিকর।দম বন্ধ হয়ে আসে,, ঐ শহর টাতে তোমার মেয়ে কলঙ্কিত আম্মু!

#চলবে