Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 13



নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৮

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৮]
-তামান্না

–রিফাত :আর একদিন যদি এই মেয়ে কে সামনে দেখি মেরে ফেলবো বলে দিলাম কথাটা বলে রাগে চলে যায়।
–আমান:বাপরে এই আমি কাকে দেখছি?এটা আমাদের রিফাত তো?হঠাৎ এতো রিয়েক্ট করছে কেন?
–আরিফ:সামথিং সামথিং,,তারপর সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।

–এরপর আর কারো সাথে কারো যোগাযোগ হয় নি।নীলার বাসা থেকে বিয়ের জন্য বলছে।কিন্তু নীলা রাজি হচ্ছে না এখন বিয়ে করতে তাই বিয়ে দিতে পারছে না।তারপর আবার আজকাল মেসেঞ্জারে প্রচুর কথা হয় রিফাতের সাথে। যদিও কেউ কাউকে প্রপোজ কিংবা মনের কথা বলে নি।তবে ফ্রী ভাবেই চলছে বন্ধুত্বের থেকে ও খানিকটা বেশি কথাবার্তা।
নীলা শিউর ও হতে পারছে না রিফাত সম্পর্কে,, রিফাত ওকে চায়?নাকি এমনি কথা বলে? এসব চিন্তায় এখন মাথায় ঘুরে।

********
–অবসরে দুই বোন মিলে পিকনিক করছে।নিজেরা রান্না করে খাবে আজকে।অবশ্য নিরুর রান্নার হাত ভীষণ ভালো।আর নিশা সাহায্য করে। নীলা কে বলে দিয়েছে নিরু দুপুরে যেন চলে আসে।এক সাথে খাবে ওঁরা।
প্রচুর গরম তারপর আবার আলগা মাটির চুলা।তবে এই বসন্ত কালে রোদ হলেও হালকা একটু বাতাস ভীষণ পছন্দ নিরুর।কোমরে ওড়না বেঁধে রান্না করছে,, গরমে শরীর মুখ ঘেমে একাকার। পড়নে প্লাজু আর ঢোলা কামিজ,,আর চুল গুলো খোঁপা করে আটকে রাখা।একদম অন্য রকম নিরু।তবে নরমালে বেশি ভালো লাগে নিরুকে,,মাঝে মধ্যে নীলা বলে,,তোর গঠন চেহারার সাথে নরমালই মানায়।নিরু ও এটাই বিশ্বাস করে তাই তো কোনো সাজগোছ ওর পছন্দ না তবে ভীষণ পরিপাটি।

–রিহান কে নিয়ে নিরুদের বাসায় ওর আব্বু আর রিফা এসেছে।যদিও মিতা জানে যে ওঁরা আসবে। রিহানের আম্মু ও আগের থেকে খানিকটা সুস্থ তবে একলা অতোটাও হাটাহাটি করতে পারে না।
রিহান আর রিফা এসে শুনতে পায় দুই বোন ছাঁদে আছে।তাই চলে আসে।আর রিহানের আব্বু ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলে।
–রিফা তাড়াতাড়ি করে ডাক দিয়ে ছাঁদে প্রবেশ করতে নিলে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রিহান।
–রিহান:ফিসফিস করে বলে,, চুপ।দেখি এই দুই পাগল কি করে।
রিফা আর কিছু বলে নি।নিরু আর নিশা হাসাহাসি করছে আর রান্না করছে।
–নিশা:তুমি কি জানো আপু?তোমায় এখন পুরো ভূতনির মতো লাগছে।
–নিরু:হয়েছে আমার দাদিমা আর হিংসে করে মিথ্যা বলতে হবে না।তারপর একটু ঢং করে বলে আমি জানি আমি কতো কিউট।

–তারপর খানিকটা থেমে মন খারাপ করে বলে,, আমি কি সত্যিই অসুন্দর নিশা?গায়ের রং কি বেশি চাপা?আমাকে কি পছন্দ করা যায় না?
–নিশা:এবার উঠে এসে নিরুকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি তো আমার চোখে সব চেয়ে সুন্দরী আপু।তোমাকে পছন্দ করা যায় ভালোবাসা যায়।তারপর দুষ্টুমী করে বলে খেয়ে ফেলা ও যায়।এবার নিরু হেসে হাতে থাকা চামচ টা পিছনে ঘুরিয়ে বলে এবার কিন্তু মাইর খাবি।নিশা আর নিরু দুজনেই হেসে ওঠে।

–রিফা:ফিসফিসিয়ে,,এবার হয়েছে তোমার লুকিয়ে দেখা?আমি কি এবার যেতে পারি সামনে?
–রিহান :মাথায় গাট্টি মেরে বলে যাহ্ ফাজিল।রিহানের সাথে সম্পর্ক থাকলে ও কখনো এভাবে নিরুকে দেখা হয় নি।সব সময় মাথায় হিজাব থাকতো।আজকে যেন একদম অন্য রকম নিরুকে দেখছে।গলা মাথা চুল পিছনে খানিকটা পিঠ এসব কখনো খুলে রাখে না বাইরে।বাসায় আসায় দেখা মিললো।তারপর চুপচাপ নিচে চলে যায়।সামনে আর যায় নি,, সুযোগে যাবে বলে।

–রিফা:পিছনে গিয়ে চিল্লিয়ে বলে হাউউউউউ। হঠাৎ এমন শব্দে নিশা আর নিরু ভয় পেয়ে যায়।
–নিরু:খুশি হয়ে বলে,, খুব ভালো হয়েছে আমরা একসাথে খেতে পারবো।ঝুলাভাতি খেলতেছি একা খেতে মজা নেই দারুণ হবে।
–রিফা:ভালো সময় এসে পড়েছি বলো?
–নিশা:অবশ্যই ছোট সাহেবা।নিশার কথায় তিন জনেই একসাথে হেসে ওঠে।

–নিশা আর রিফা এসেছে রুমে।নিশা একেবারে গোসল করে প্লেট নিয়ে ছাঁদে যাবে রিফা কে নিয়ে। ওঁরা গেলে নিরু নিচে আসবে।এই ফাঁকে নিরু আলু ভাজা করে নিচ্ছে।
আজকের আইটেম গুলো হলো,, ভাত,আলু ভাজা,মুরগির গোস্তো আর ডাল সাথে ডিম ভোনা।

–রিহান এবার সুযোগ পেয়েছে চুপচাপ ছাঁদে চলে যায়।নিরুর পিছনে গিয়ে গলা খাঁকারি দেয়।
–নিরুর তো মাথায় ও আসে নি যে কার সাথে রিফা এলো?এবার কোনো পুরুষ মানুষের গলা খাঁকারির শব্দ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে রিহান।হঠাৎ রিহান কে দেখে ভয় পেয়ে যায়।ভালো করে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়,, নাহ্ সত্যি ই তো দেখছি।

–নিরু:তাড়াতাড়ি ওড়না ঠিক করে মাথায় দিয়ে বলে আপনি?
–রিহান:হুম!বাড়ি বয়ে দেখা করতে চলে এলাম।এসে দেখছি প্রেমিকা আমার সত্যি সত্যি বউ হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।আগের থেকে বেশ গুলুমুলু হয়ে গেছো কিন্তু।
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে চুলা থেকে কড়াই টা নামাতে নামাতে বলে,, ছিহ্ মুখের কি ভাষা।
–রিহান:তাই!একটু ভালো ভাষা শেখানোর দায়িত্ব তো নিতেই পারো।
–নিরু:শুনুন আমি কোনো শিক্ষক নই।আর রইলো দায়িত্ব,,নিজের থেকে ও ভারী কারো দায়িত্ব নেওয়া যায় না।
–রিহান:তুমি আমায় মোটা বলছো?তবে কি জিম কিংবা ডায়েট করতে হবে?
–নিরু:সে সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।আর আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?অসুন্দর মানুষের থেকে উপদেশ নিতে নেই,, ওদের উপদেশ গুলো ও না অসুন্দর হয়।কথা টা বলে চলে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে নিরুর।এক টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,, এক কথার জন্য ঠিক কতোবার আঘাত করবে?কি চাও তুমি?
–নিরু:ছলছল চোখে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,, মৃত্যুর মতো দূরত্ব।
–রিহান:এবার ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,, এটা কখনো সম্ভব না।তুমি থেকে যেয়ে শাস্তি দাও মাথা পেতে নিবো।
–নিরু:থেকে গেলে পৃথিবীর কোনো শাস্তিই অসয্যকর মনে হবে না।আর কিছু সম্পর্কে শেষ করে পূর্ণতার স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্ন।
–রিহান:নিরুর হাত টা ধরে বলে ভুল করেছি নিরু।সেদিন সবটা মিথ্যে ছিলো আমার ভিতর টা এমন নয়।আমি জানি আমার মনে শুরু থেকে তুমি গেঁথে ছিলে।
–নিরু:মনের মানুষ কে জোর করে ভুল বুঝে অসম্মান করা ব্যক্তির ভালোবাসার যোগ্যতাই নেই। কথাটা বলেই হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে চলে যায়।

***************
–এরপর আর কেউ কারো মুখোমুখি হয় নি। রেজাল্ট বের হয়েছে।নিরু ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে নামকরা ভার্সিটিতে চান্স পায় এবং ভর্তি হয়ে যায়।
বাসা থেকে যাতায়াত করা যায়,, নীলা ও চান্স পেয়েছে তবে ডিপার্টমেন্ট আলাদা।একসাথেই যাওয়া আসা করা যায়।

–এদিকে রিহানের ইচ্ছে করছে না দেশ ছেড়ে যাওয়ার।তাই ভার্সিটিতে চেষ্টা না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেয়।কারণ এখানে নিয়মিত ক্লাস করতে হয় না।ফলে ব্যবসা টা সুন্দর ভাবে সামলানো সহজ হবে। বাবা আর মিতা আন্টি বলে দিয়েছে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে নয়তো নিরুর আশা ছেড়ে দিতে।আর বাবার ও ব্যবসায় সব সময় নিয়মিত না থাকায় খুব বাজে হাল।নতুন করে সবটা করতে হচ্ছে। সেই সুবাদে ভীষণ ব্যস্ত রিহান।মাঝে মধ্যে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির সামনে অপেক্ষা করে এবং আড়াল থেকেই নিরুকে দেখে চলে যায়।এতো সময় ও তো হাতে নেই।

–মিতা:তোমার আন্টির জন্মদিন আজকে পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে যাবো।ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় চলে এসো।নিশা আমার সাথেই যাবে রাত হবে ফিরতে।
–নিরু:আমি ও যাবো।ভার্সিটি শেষ করে না হয় চলে যাবো,,শুধু মাত্র তোমার বান্ধবীর ছেলে বাসায় না থাকলেই হয়ে যাবে।
–মিতা:খুশি হয়ে,, তোমার আন্টি আঙ্কেল ভীষণ খুশি হবেন গেলে।তারপর একেবারে তৈরি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।কালো একটা গাউন মাথায় সাদা হিজাব,, চাদরের মতো গায়ে মুড়ানো সাদা ওড়না আর একপাশে কলেজ ব্যাগ।চোখে নতুন ফ্রেমের চশমা।এটাই বেশি ভালো লাগে দেখতে নিরুকে।আগের থেকে ও খানিকটা ফর্সা আর মোটা ও হয়েছে।এখন মুখ টাও ভরে গেছে শুকনো লাগে না।গোল মুখে বড় বড় চোখ আর চোখে চশমা দারুণ লাগে দেখতে।

***********
–নিরু হাতে করে অনেক গুলো তাজা গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা নিয়ে বিকেলে চলে আসে আন্টির বাসায়।আন্টির আবার ভীষণ পছন্দ বেলি ফুলের মালা আর তাজা গোলাপ।অবশ্য এটা নিরুর ও ভীষণ পছন্দের।তবে আজকে সাথে নীলাকে ও নিয়ে এসেছে।

–কলিং বেলে চাপ দিতেই রিফা এসে দরজা খুলে দেয়।ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে সাথে কিছু মেহমান ও।আন্টি কে দেখেই মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।রিহানের আম্মু ও নিরুর মাথায় চুমু খেয়ে বলে এবার কিন্তু আমার মেয়ে সত্যি সত্যি বড় হয়ে গেছে।
নিরু আন্টির সামনে বসে বলে,, সারাজীবন ছোট থাকলে মায়েদের সেবা করবো কি করে?তারপর সবাই হেসে ওঠে।
–আঙ্কেল :তবে নিরু কিন্তু দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে,, এবার নিরু লজ্জা পেয়ে যায়।এরমধ্যে মাথা মুছতে মুছতে শিড়ি বেয়ে নিচে নামে রিহান।নিরুকে দেখতে পায় নি।বাবার পাশে বসে বলে,, তোমার মেয়ে কে এবার আমার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিত হও তো আন্টি।আর ভালো লাগে না এতো লুকো…..।আর কিছু বলতে পারে নি নিরুকে দেখে চুপসে যায়।রিহানের থেমে যাওয়া দেখে বড়রা সবাই শব্দ করে হেসে ওঠে। রিহান জোর করে হাসি দিয়ে মাথা চুলকাতে থাকে।

–রিহানের আব্বু :আমি চাই এবার সত্যি সত্যি আমাদের ইচ্ছে টা পূরণ হোক নিরুপমা।আমরা তোমার আব্বু কথা দিয়েছিলাম প্লিজ আর না করো না!
–মিতা:আমার উর্ধ্বে তুমি যেতে পারো না নিরু। আমরা সবাই আছি আর রিহান ঠিক তোমায় সুখে রাখবে।আর তোমরা আমাদের কষ্ট বাড়িয়ো না।তারপর কিছু ইমোশনাল কথা বলে সবাই মিলে।নিরু জানে এঁরা যে করেই হোক বিয়ে দিবেই।তাছাড়া সবার মন ভাঙ্গার সাহস ওর নেই। ঠিক তেমনি সহজে রিহান কে মেনে নেওয়া ও সম্ভব নয়।ভাঙ্গা মন জোড়া সহজে লাগে না হয়তো একটা সময় নতুন করে মেনে নেওয়া যায় তবে কষ্ট ঠিকই মনে গেঁথে থাকে।অতিরিক্ত ভালোবাসা পেলে ও কোনো সময় ভালোবাসা দিয়ে কষ্ট গুলো মাটি দেওয়া যায়।তবে অবশ্যই দরকার ভালোবাসা সেটা হতে হবে মজবুত এবং নিঃস্বার্থ।নিরুর ভালোবাসা খাঁটি হয়তো ক্ষমা করাও সহজ তবে সহজ মানেই প্রথমেই অন্যায় কে ভুলে যাওয়া নয়।নিজেকে অসম্মান করা নয়।
–নিরু:আমি রিহানের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৭

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৭]
-তামান্না

–নিরবের প্রতিশোধের নেশা আরও বেড়ে গেছে।কারণ রিহান নিরবের আসল রুপ সবাই কে বলে দিয়েছে।এখন শুধু সুযোগ খুঁজছে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায়।এখন রিহানদের বন্ধু কারো সাথে মিশে না নিরব।আলাদা একটা টিম ওঁরা তৈরি করে নিয়েছে।তবে পড়াশোনার আশেপাশে ও নেই।
নিরুদের সাথে বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর কারো সাথে যোগাযোগ হয় নি।এমনকি এই শহরেই যে ওঁরা আছে তা ওদের চাচারা জানেন ও না।

–মিতা:পরীক্ষা দিয়ে সোজা বাসায় চলে আসবা আর নিরবকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবা।কখন কি করে বসে বলা যায় না। রিহান কে দিয়ে কতো বাজে একটা কাজ করালো।
–নিরু:রিহান ছোট বাচ্চা নয়।মানছি নিরব ভাইয়া খারাপ তবে তোমার আদরের বান্ধবীর ছেলে কে আমি ভালো বলতে পারছি না সরি!
–মিতা:কম বুঝার চেষ্টা করিস,,বড়দের থেকে বেশি বুঝতে নেই।
–নিরু:বাদ দাও না আম্মু।পরীক্ষা দিতে বের হবো এসবে আমার অস্বস্তি হয় ভালো লাগে না।মিতা কিছু বলে নি।মেয়ে কে তৈরি হতে বলে চলে যায় ভাত আনতে।প্রথম দিন সাথে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু আজকে স্কুলে ও দরকারী মিটিং আছে।

–নিশা:চলো তোমাকে প্রথম দিন পরীক্ষায় আমি নিয়ে যাই।বাবার দায়িত্ব আমিই না হয় পালন করে দেই।
–নিরু:খাবার মুখে নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,, বাচ্চা মানুষ বাবার দায়িত্ব পালন করতে আসছে। পরে দেখা গেছে পরীক্ষা বাদ দিয়ে আমার তোকে খুঁজতে বের হতে হবে।চুপচাপ স্কুলে যা আর মনে মনে আমার জন্য দোয়া দুরুদ পড়।
–নিশা:মুখ ভেংচি কেটে বলে আমার অতো সময় নেই হুম।আমি নিজের জন্য দোয়া দুরুদ পড়বো।তারপর নিরু হেসে ওঠতেই চলে যায় নিশা।

–নীলা :নিরুকে কয়েক বার কল করে না পেলে ওর মায়ের নাম্বারে কল করে জিজ্ঞেস করে বের হয়েছে কি না।নীলা প্রায় পৌঁছে গেছে।
–নিরু:আসছি।তারপর মায়ের থেকে দোয়া আর বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায়।যেখানে পরীক্ষা হবে ঐ কলেজ গতকাল কে মায়ের সাথে দেখে এসেছে।

*****
–আব্বু :তোমার আম্মু কে ডাক্তার দেখিয়ে সেন্টারে যাবো।ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা টা দিও।
–রিহান:আচ্ছা বলে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের গালে একটা চুমু খেয়ে বের হয়ে যায়।বাসার গাড়ি নিয়েই যেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু আব্বু বারণ করায় নেয় নি।পরীক্ষা দিতে যাবে এখানে এতো বড়লোকি ভাবের দরকার কি?
–আর কথা বাড়ায় নি।একটা রিকশা নিয়ে চলে যায় স্টেশনে ওখান থেকে বন্ধুদের নিয়ে চলে যায় কলেজে।

–নিরব:রিহান কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,,একটা লুজার কে খুব সুন্দর করে নিজের মতো নাচালাম।শা*লা হাঁদারাম হাহাহা।
–কথাটা একদম রিহানের কানে পৌঁছে যায়,, রাগে তেড়ে আসে রিহান।রিফাত আটকে দেয়।পরীক্ষায় এসে এসবে জড়ানো ঠিক হবে না।কোনো রকম নিজেকে কন্ট্রোল করে।তারপর সবাই কে রেখেই নিজের সিট খুঁজতে চলে যায়।

–নিরু নীলার সাথে খুঁজে নিজেদের সিট বের করে।বরাবরের মতোই ওদের দুই বান্ধবীর সিট আলাদা রুমে পড়ে।কখনো পাশাপাশি কিংবা এক রুমে বসে ওদের পরীক্ষা দেওয়া হয় নি।এই আফসোস বোধহয় থেকেই যাবে।কতক্ষণ দুজনে আড্ডা দিয়ে তারপর যার যার রুমে গিয়ে বসে।নিরু চুপচাপ বসে আছে।
কলেজ ড্রেস আর হিজাব চোখে চশমা,, মুখের মাস্ক টা খুলে রেখেছে।বেশিক্ষণ মাস্ক পড়ে থাকতে পারে না নিরু।কারণ চশমা টা ঘোলাটে হয়ে যায়।

–পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট পর নিরুর চোখ যায় পাশের বেঞ্চে।পাশাপাশি টেবিলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে রিহান।এতোক্ষণ তো মাথায় ও আসে নি।নিরু আর রিহান চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নেয় নিরু।
মনে মনে ভাবে তবে কি এতোক্ষণ আমায় দেখছিল রিহান?নাহলে আমায় দেখেই বা মুচকি হাসি দিবে কেন?পুরো অস্থির হয়ে যায় নিরু।নিজেকে স্বাভাবিক করে মনোযোগ দেয় খাতায়। তারপর আর কোথাও তাকায় নি।

–রিহান বসা ছিলো আগেই,, তবে নিরু আসার সময় দেখতে পায়।আর এই মেয়ে বেঞ্চে বসে অন্য কোথাও তাকায় নি ফলে রিহান কে দেখতে পায় নি।রিহান এতোক্ষণ বসে দেখছিল এই অতিসাধারণ আর সহজ মেয়ে বসে কি করছিল।চারপাশে এতো মেয়ে তবে একটা ও নিরুর মতো এতো সাধারণ নয়।কিন্তু নিরুকে সাধারণেই বেস্ট লাগে মায়াবী লাগে।সহজে একদম মনে বসে যাওয়ার মতো মায়াবতী।

–আসার সময় মেয়ে কে নিয়ে না আসতে পারলে ও পরীক্ষা শেষ হওয়ার বিশ মিনিট আগে এসে বসে থাকে।
নিরু পরীক্ষা শেষ করে বের হলে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রিহান।একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে ক্লান্ত লাগছে ভীষণ!মুখ টা মুছে নাও।
–খানিকটা দূরে থেকে টিজ করে নিরব বলে আহারে পুরনো প্রেম জেগে ওঠলো!
ভ্রু কুঁচকে মাস্ক টা পড়ে ডান পাশে তাকায় নিরু।মূহুর্তেই নরম হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,, এড়িয়ে চলা এবং শান্ত থাকা একজন ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য।সবাই কে সবার কথাকে মনে রাখতে এবং শুনতে নেই।তারপর চুপচাপ চলে যায়।এই কথা বলার কারণ হলো নিরু জানে ও চলে যেতেই রিহান তেড়ে যাবে নিরবের দিকে। তাই ঠান্ডা মাথায় একটা সুন্দর কথা বলে চলে গেলো।
রিহান বুকে হাত দিয়ে নিরুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।নিরুর এই রাগ আর নরম স্বভাব টা যেন তার সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত।এই হঠাৎ জড়িয়ে নিবে কিন্তু ফেইস পর্যন্ত ই,,মুখ দিয়ে উচ্চারণ করার আগেই নরম হয়ে যায়।এটা ইদানীং বেশি মিস করে রিহান।

–মিতা মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন হলো পরীক্ষা?
–নিরু:আলহামদুলিল্লাহ ভালো।কিন্তু শুরুতেই তোমার বান্ধবীর ছেলেকে পাশের সিটে দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে গিয়ে ছিলাম।
–রিহান:কেন আন্টি?আমি কি পরীক্ষার সেন্টারে এসে তোমার মেয়ে কে মারতাম নাকি?রিহানের এমন কথায় পিছনে তাকায় নিরু।তবে এরপর আর দাঁড়ায় নি চলে যায় সামনে নীলার সাথে।

–মিতা:ভালো হয়েছে তো?
–রিহান:আলহামদুলিল্লাহ তবে তোমার মেয়ের থেকে ভালো নয়।ছেলে মানুষ কে থাকতে হয় উপরে কিন্তু তোমার মেয়ে দেখছি সব সময় আমায় পিছনেই রেখে দিবে।অবশ্য এতো সুন্দরী বউ পেলে পিছনে থাকতে ও আমি রাজি…কথা টা বলে মাথা চুলকাতে থাকে রিহান।
–মিতা:তোদের দুজনকে নিয়েই তো আমার যতো চিন্তা।
রিহান আর মিতা দুজনেই হেসে ওঠে একসাথে।

*****************
–তারপর এভাবেই পরীক্ষা টা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যায়।আজকেই শেষ পরীক্ষা।একটু আগে এসেছে নীলা আর নিরু।এসে কলেজের বকুল গাছটার নিচে বসে।
এরমধ্যে কলেজের কয়েকজন ক্লাস মেট এগিয়ে এসে নিরুর থেকে ক্ষমা চায়।
–নিরু আচমকা ওদের ক্ষমা চাওয়ার কারণ টা বুঝতে পারে নি।
–সবাই :সত্যি সরি গো।তোমায় আমরা ভুল বুঝে ছিলাম কিন্তু রিহান নিজের মুখে সবাই কে ডেকে সত্যি টা বলেছে।তোমার মতো মানুষ কে খারাপ ভাবা না জেনে,, আমাদের অনেক অন্যায় হয়েছে। প্লিজ আমাদের মাফ করে দিও।
–নিরু:খানিকটা অবাক হলেও প্রকাশ না করে বলে,,তোমাদের দোষ নেই হয়তো আমার জীবনে এতোটুকু অসম্মান লেখা ছিলো।তারপর টুকটাক কথা বলে চলে আসে।এরপর নীলার থেকে পুরো কাহিনি শুনে।
নিরু কষ্ট পাবে বলে এরপর আর রিহানের কথা তুলে নি নীলা।নিরু খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চারপাশ টা একটু সহজ হয়।

–রিহান:নিরুপমা?পরীক্ষা শেষ হলে প্লিজ একটু দাঁড়িয়ো!
–নিরু কথাটা শুনলে ও চোখ তুলে ফিরে তাকায় নি।চুপচাপ পরীক্ষা দিতে থাকে।অর্ধেক পরীক্ষা দেওয়ার পর দেখে রিহান প্রশ্ন দেখছে তবে লিখতে পারছে না।বোধহয় কমন পড়ে নি।তারপর নিজ ইচ্ছায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? ইশারায় রিহান কয়েক টা প্রশ্ন কমন পড়ে নি বলে। তারপর নিরু খাতা তুলে ওকে দেখায়।

–নীলা :আজকে চল একটু ঘুরি?চারপাশে নাকি অনেক সুন্দর!
–নিরু:আন্টিকে বলে আমাদের বাসায় চলে আসবি পুরো শহর ঘুরে দেখাবো।আজকে না আজকে বাসায় চল।
–নীলা :মিরা বলছিল আজকে নাকি সামনের পার্কে তিন দিন ব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে চল যাই।

–রিহান তাদের বন্ধুদের নিয়ে ওদের পিছনে এসে বলে চলো আমরা নিয়ে যাই।
–নিরু:শুনুন?আমাদের কোনো বডিগার্ড লাগবে না আর আপনারা যে বিনা পয়সায় মেয়েদের হেল্প করতে কলেজে আসেন তা কি বাবা মা জানে?
–রিহান:ওদের টা জানে কি না জানি না।তবে আমার আব্বু আম্মু জানে যে তাদের ছেলে নিরুপমার বডিগার্ড।
–নীলা :ভীষণ জ্বালাচ্ছেন কিন্তু।যার যার মতো আলাদা পথে হাঁটুন না!
–রিফাত:একধাপ বেশিই তো দেখি বুঝো,, তারপর খানিকটা ঝুঁকে বলে,, একটু সাহায্য করতে পারো না আমার বন্ধু কে?
–নীলা :বেশ জোরে বলে,, সরেন।আমি নিরু নই যে চুপচাপ সব শয়ে যাবো এবং ভুলে যাবো বা সরে যাবো।ভুল আর অন্যায় দুটো আমার কাছে এক শব্দ নয়।

–তারপর রাগে নীলা আগে চলে যায়।কিছুটা এগিয়ে যেতেই হাতে টান পড়ে।
–নীলা:চল আমরা মেলায় যাই নিরু,, ভীষণ মজা হবে।
–নিরব:এর থেকে বেশি ভালো হবে হোটেলে গেলে,,সত্যি অনেক ম*জা পাবে,, চলো!
–পিছনে তাকিয়ে নিরব কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। নিরু কে ও দেখতে পাচ্ছে না।ভয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না।এবার মনে হয় কান্নায় করে দিবে নীলা।
–নিরব:সাথে টাকা ও দিবো বোনাস হিসেবে চলো সুন্দরী?
–নিরব হাত ধরে টেনে নেওয়ার আগে চোখ বন্ধ করে ফেলে নীলা।হঠাৎ হাতটা আলগা হতেই চোখ খুলে দেখে রিফাত দুই তিন টা থাপ্পড় মেরে দিয়েছে অলরেডি।

–এরমধ্যে অনেক টা হাতাহাতি হয়ে যায় নিরবের সাথে।রিহান এগিয়ে আসতেই কেটে পড়ে নিরব।
–রিফাত :ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় নীলার গালে।রেগে বলে খুব তো গলা ফাটাতে এবং মুখ খারাপ করতে পারো।কই ছিলো এতোক্ষণ তোমার মুখ?নাকি নিজে ও প্রস্তাব গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলে?এবার মাথা নুয়ে কান্না করে দেয় নীলা।এরমধ্যে নিরু এগিয়ে আসতেই জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় নীলা।
নিরু রিহানের আব্বুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার কথা বলতে বলতে খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে ছিলো।আর রিহানরা বকুল গাছটার নিচে বসে ছিলো।
তারপর পুরো ঘটনা আমানের থেকে শুনে নিরু।
–নিরু:কষ্ট পাস না।চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,, আমাদের দুজনের শুধু খারাপ লোকের সাথেই পরিচয় হয়।তবে এটাই বোধহয় উপর ওয়ালা ও চায় নয়তো এমন হতো না।কথা টা বলার সময় আড় চোখে রিহানের দিকে তাকায় নিরু।রিহান বুঝতে পারে এটা ওকে উদ্দেশ্য করেই নিরু বলেছে।

–রিফাত :আর একদিন যদি এই মেয়ে কে সামনে দেখি মেরে ফেলবো বলে দিলাম কথাটা বলে রাগে চলে যায়।
–আমান:বাপরে এই আমি কাকে দেখছি?এটা আমাদের রিফাত তো?হঠাৎ এতো রিয়েক্ট করছে কেন?
–আরিফ:সামথিং সামথিং,,তারপর সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৬

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৬]
-তামান্না

–নিরু:ভালো লাগে না ঐখান টাতে।মানুষ গুলো ও খুব বিরক্তিকর।দম বন্ধ হয়ে আসে,, ঐ শহর টাতে তোমার মেয়ে কলঙ্কিত আম্মু!
–মিতা:তুমি তো জানো তুমি কেমন?নিজের কাছে নিজে শুদ্ধ থাকাটাই আসল।পৃথিবীতে সব মানুষ কে খুশি করতে এবং কথা গায়ে মাখতে আসো নাই।আর সবাই তো একজনকেই ভালোবাসে না মা।নিজের জন্য বেঁচে থাকা ভালো থাকা মানিয়ে মেনে নেওয়া ও একটা সুস্থ এবং সুন্দর যুদ্ধ।
তারপর অনেক কিছু বুঝিয়ে কল কেটে দেয় নিরুর আম্মু।দুই মাস পরেই পরীক্ষা।যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই নিতে হবে।

–এদিকে রিহান নিরুর আম্মুর থেকে নিরুর নতুন সিমের নাম্বার টা নিয়ে নেয়।তবে সাহস নিয়ে আর সেদিন ফোন কিংবা মেসেজ করে নি।

–দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেলো।নিরুর মা নিরুকে রিকোয়েস্ট করে রাজি করায় পরীক্ষা দিতে। অনেক বুঝানোর পর রিহানদের কলেজ থেকে পরীক্ষা দিতে রাজি হয়।শুধু পরীক্ষা দিবে ক্লাস বা কলেজে যাবে না।যেহেতু পরীক্ষা অন্য কলেজে গিয়ে দিতে হয় এতে অতোটাও সমস্যা হবে না।

–মিতা:একটা কথা বলার ছিলো নিরু,,তবে তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবা তাই হবে।
–নিরু:হাতের কাজ করতে করতে বলে,, বলো?
–মিতা:রিহানের আব্বু রিকোয়েস্ট করছে তোকে রিহানের সাথে বিয়ে দিতে।
–নিরু:বিয়ের বয়স কি তোমার বান্ধবীর ছেলের আর আমার অনেক বেশি পেড়িয়ে গেছে?দুই পরিবারের মানুষ শিক্ষিত আর শিক্ষক হয়ে কিভাবে বাল্যবিবাহ দিতে চাচ্ছো?তাছাড়া আমি যাকে তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নই।বড় করে শ্বাস ছেড়ে বলে,,জোর করে কিছু হয় আম্মু?
–মিতা:রিহান ও চাচ্ছে।কথা বলার সময় রিহান উপস্থিত ছিলো।আমার কাছে মাফ চেয়েছে।
–নিরু:তারপর!তুমি খুশি হয়ে মাফ করে দিয়ে আমায় তুলে দিতে প্রস্তুত হয়ে গেছো?
–মিতা:তোর আন্টি ভীষণ অসুস্থ নিরু।উনাকে দেখার জন্য বাসায় মানুষের দরকার,, এক হাত পা প্যারালাইজড হয়ে গেছে।

–নিরু:তাই বলে মানুষ বলতে ছোট দুইজন মানুষ কে বিয়ে দিয়ে দেওয়া।আমি আন্টিকে ভীষণ ভালোবাসি তবে খানিকটা থেমে অনেক কষ্টে বলে রিহান কে না।এরপর আর পায় নি সোজা দৌড়ে রুমে চলে আসে।

************
–রিহান এখন বাসা থেকে বের হয় না।কলেজে নিরুর নামে যে মিথ্যা ভিডিও বানানো হয়েছে তা স্বীকার করে এসেছে।নিরবের সাথে শত্রুতা বেড়েছে।রিফাত আমান মাঝে মধ্যে বলে আর রিহান শুনে।নিজেকে কন্ট্রোল রাখার চেষ্টা করে।বাসায় এমনিতেই আম্মু অসুস্থ মন মেজাজ ভালো না।একটা নার্স ঠিক করে রেখেছে চব্বিশ ঘণ্টা দেখাশোনা করেন।

–রিহান:নিরুপমার নাম্বারে নতুন সিম দিয়ে অনেক গুলো মেসেজ করে কিন্তু রিপ্লাই আসে নি।দুই দিন চেষ্টা করে তিন দিনের দিন রিহান মেসেজ পাঠায়,”রিহান তোমাকে ব্যবহার করেছে নাকি তুমি ব্যবহার করেছো?
–নিরু:রং নাম্বার থেকে মেসেজ আসলে নজরে আসে।কিন্তু রিপ্লাই করে নি।আজকে এমন মেসেজ দেখে রিপ্লাই করে।
–নিরু:কে আপনি? আমার আর রিহানের সম্পর্কে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে?
–রিহান:সত্যি টা স্বীকার করুন মিস নিরু!
–নিরু:আমরা কেউ কাউকে ব্যবহার করি নি,, নিয়তি আমাদের কে ছিটকে আলাদা করে দিয়েছে।তবে অভিযোগ নেই আমার তরফ থেকে,,অভিমান বেড়েছে নিজের প্রতি অনুভূতির প্রতি।কারণ আমার অনুভূতি গুলো স্বস্তি দিতে পারে নি।
–রিহান:ভালোবাসা বুঝি অনেক কঠিন?একসাথে অনেক জনকে যায় না?
–নিরু:আমি শিউর আপনি কোনো ফাজিল আর খারাপ লোক।এজন্য এতো বাজে চিন্তা থেকে বাজে প্রশ্ন করছেন।আর শুনুন আমি আর রিহান এক নেই সুতরাং আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না।ভালো থাকুন আর বেশি বেশি প্রেমে পড়ে অনেক জনকে একসাথে ভালোবাসুন টাটা বলেই ব্লক লিস্টে ফেলে রাখে নাম্বার টা।তারপর বসে বসে একা একাই ইচ্ছে মতো গালাগালি করে।

–নিশা:আমরা কবে যাচ্ছি আম্মু?
–মিতা:সামনে সপ্তাহে।তোমার খালু একটা বাসা দেখেছে।ফ্ল্যাট টা আমার ও ভীষণ পছন্দ হয়েছে। দেখি কনফার্ম করতে পারি কি না।তবে কিছু লোন ও বোধহয় নেওয়া হতে পারে।
–নিরু:হোক তাও একটা নিজেদের বাড়ি হোক আম্মু।সেখানে আমরা তিন জনের সংসার সাজাবো রাজ্য ভর্তি সুখ নিয়ে বেঁচে থাকবো।সুখের থেকে ও স্বস্তি জরুরি আম্মু।টাকা পয়সা চেহারা স্বাস্থ্যের থেকে ও যেমন জরুরি সুস্থ থাকা বেঁচে থাকা।

★★★★★
–তারপর দেখতে দেখতে দুই মাস পেড়িয়ে যায়।নিরুদের একটা বাড়ি হয়।সামনে সপ্তাহে পরীক্ষা নিরুর আম্মু গিয়ে আঙ্কেলের থেকে দরকারী কাগজ পত্র সব এনে দেয়।এই দুই মাস মোবাইল ফোন থেকে পুরোপুরি দূরে ছিলো নিরু।রিফা আর আন্টি আঙ্কেলের সাথে এখন মাঝে মধ্যে কথা হয়।রিহানের আম্মু আগের থেকে খানিকটা সুস্থ তবে হাঁটতে বসতে পারে না একা একা।
–নিশা:আপু চল না আজকে ফুসকা খেতে যাই।
–নিরু:সামনে সপ্তাহে পরীক্ষা এসব চলবে না নিশা।অবসরে অনেক খাওয়াবো কেমন?
–নিশা:প্লিজ!আজকে তোকে নিয়ে খাবো বলে স্কুলে ও খাই নি।
–নিরু:ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে,, কোথায় গিয়ে খাবি?
–নিশা:পার্কে!অনেক সুন্দর এখন একটু ঘুরতে ও পারবো।
–নিরু:আচ্ছা!জাস্ট পাঁচ মিনিট সময় দিলাম রেডি হয়ে নিবি।এতো সাজগোজের সময় কিন্তু দিবো না।

–মিতা:আমি তোদের নানুর বাসায় যাচ্ছি। ফিরতে রাত হবে দুজনে ফিরে এসে পড়তে বসো।কিছু কাগজ পত্রে ঝামেলা ঠিক করতে হবে জমি সংক্রান্ত।
–নিরু:তাড়াতাড়ি চলে এসো।তারপর রেডি হয়ে দুই বোন মিলে বেড়িয়ে পড়ে।দুই মাস পর নিজের শহরে ঘুরতে বেড়িয়েছে।নিজেদের শহর হলেও ওদের নতুন বাড়িটা নিজের এলাকায় না।এখান থেকে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগবে বাবা চাচাদের বাড়ি যেতে।কলেজ ও অনেক দূর তবে ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হবে যেই কলেজে গিয়ে ওটা ওদের বাসা থেকে কাছে।দুই বোন মিলে রিকশায় করে খোলা বাতাস খেতে খেতে ঘুরে চারপাশ টা।ভালো করে দেখা হয় নি জায়গা টা।ভীষণ সুন্দর। নিজের বাড়ির পর এ জায়গা টা ও সুন্দর ভাবে মনে ধরেছে।

–নিশা:তোমার পরীক্ষার পরে চলো না লম্বা ছুটির একটা ঘুরতে বের হই।কক্সবাজার,, রাঙামাটি,, সিলেট।সব কিছু একসাথে।
–নিরু:একদম না।ঘুরবি পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের পর।বরের সাথে পুরো দেশ আর সামর্থ্য থাকলে পুরো পৃথিবী ঘুরবি।
–নিশা:তাহলে এখনই বিয়ে দিয়ে দাও বলে হাহাহা করে হেসে দেয়।
–নিরু:মাথায় গাট্টি মেরে বলে,,ফাজিল আজকে আম্মু কে বাসায় গিয়ে বলছি দাঁড়া।

–এদিকে রিফাকে নিয়ে মার্কেটে এসেছিল রিহান।অনেক দিন পর বোনের আর আব্বুর রিকোয়েস্টে দুই ভাই বোন বের হয়।সচরাচর সব সময় কেনাকাটা গুলো এখান থেকেই করে রিহান।কেনাকাটা শেষ হলে গাড়িতে রেখে দুজনে পার্কে আসে।
ছোট বেলায় আব্বু আম্মু আর নিরুর পরিবার শিশু পার্কে ঘুরতে যেতো।নিরু বেশি মিশতো না কারণ রিহান মারামারি করতো বেশি।

–হাটাহাটির সময় এক পর্যায়ে নিরু আর নিশা কে চোখে পড়ে রিহানের।একটা বাইরে থাকা টেবিলের সামনে বসে আছে দুই বোন।দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনে খোশগল্প করছে।
–রিহান রিফা কে নিয়ে সোজা সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ওদের।
–রিহান:নিশা?
–আচমকা রিহানের কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায় নিরু।তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।মুখে মাস্ক টা ঠিক করে খানিকটা পিছিয়ে যায়।রিফা এগিয়ে গেলে হাসি মুখে ওর সাথে কথা বলে।তারপর নিশা কে উদ্দেশ্য করে বলে আমি সামনে যাচ্ছি,, তুই চলে আসিস।রিফা কিছু বলতে গেলে সুযোগ দেয় নি।
–রিহান:এক্সকিউজ মি!তোমরা একটু বসো আমি আসছি বলেই দৌড় দিয়ে গিয়ে নিরুর সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকায়।

–নিরু:চোখ নিচে নামিয়ে এড়িয়ে যেতে নিলে রিহান দুহাত ছড়িয়ে আটকায়।
–রিহান:আমার দিকে চোখ তুলে তাকাও নিরু প্লিজ!কেমন আছো?
–নিরু:জ্বি!ভালো আছি,, পথ টা ছাড়ুন যেতে হবে।
–রিহান:আপনি বলছো?
–নিরু:এবার চোখ তুলে তাকায়।হাত পা কাপছে নিশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, কোনো সুদর্শন আর বড়লোক মানুষ কে তুমি বলার অধিকার অসুন্দর আর কুৎসিত মানুষের থাকে না।আর সব মানুষ বারবার ভুল করে না।কথা গুলো বলতে বলতে চোখ গুলো টলমল করে উঠে।যা রিহানের চোখ এড়ায় নি।
–রিহান:ভালোবাসো না আমায়?
–নিরু:অন্য দিকে মুখ করে খানিকটা সময় নিয়ে বলে,, নাহ!
–রিহান:হাসতে হাসতে নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করে বলে,,সেটা তোমার চোখ ই বলে দিচ্ছে।জীবনে এটা ও একটা প্রাপ্তি কোনো নারী আমার কথা মনে করলে চোখ ভিজে আসে।সমুদ্র বয়ে চলে চোখের পাতায়।
–নিরু:নিশ্চুপ!
–রিহান:আমি ভুল করেছি ভুল শুনেছি তবে মিথ্যে ভালোবাসি নি।তোমার প্রতি আমার করা অন্যায় টা যেমন সত্যি তেমনি ভালোবাসা টা ও সত্যি।অনুভূতি গুলো কে এখন বড্ড মিস করি নিরু।প্লিজ ফিরে আসো।
রিহানের কথা শুনে চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।কোনো রকম মুছে।রিহানের দিকে তাকায়।এক মিনিট রিহানের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে হঠাৎ দৌড়ে চলে যায় নিশার কাছে। বোনের হাত ধরে টেনে তাড়াতাড়ি করে রিকশায় উঠে বসে।

–নিশা:কিছু বলেছে ভাইয়া?
–নিরু:নিশার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙায়।ভয়ে আর কিছু বলে নি নিশা।বোনের অভিমান সম্পর্কে ধারণা আছে ওর।

–এদিকে মিতা ভাইয়ের সাথে দরকারী কাজ শেষ করে।তবে সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো স্কুল থেকে তাদের বাড়ির পাশের এক কলিগের থেকে শুনতে পায় নিরব নিরুর বড়সড় একটা ক্ষতির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

*************
–রিহান:আব্বু!তোমরা প্লিজ পরীক্ষার পরে আমার আর নিরুর বিয়ের ব্যবস্থা করো।সেটা যেভাবেই হোক।তবে বিয়ের পরের দিন ই আমি বিদেশে চলে যাবো।আমি নিরুকে সময় দিতে চাই। আমার বিশ্বাস নিরু আবার আগের রুপে ফিরে আসবে।
মনে মনে বলে আমার নামে লিখে তারপর দূরত্ব রাখলেই আমার অভাবে আমার কাছে ছুটে আসবে।আমি বিশ্বাস করি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে আর অভিমান জমিয়ে রাখবে না।আমি আবার ওকে ওর যোগ্য সম্মান ভালোবেসে ফিরিয়ে দিবো।এর আগে আমার বানিয়ে নেওয়া ভীষণ জরুরি।আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বলে তোমার চোখ দেখে আমি সবই বুঝতে পারি বোকা নিরু।তোমার সব থেকে শক্তি শালী অভ্যস হলো নিশ্চুপ থাকা।তুমি নিজেকে খুব সহজে আড়ালে রাখতে পারো,,#নৈশব্দে_চলে যেতে পারো সবার জীবন থেকে।তর্ক এবং ঝামেলা এবং অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ মেজাজ যে তোমার অভিধানে নেই।তোমাকে, তোমার হৃদয় চেনা আমার হয়ে গেছে প্রিয়তমা।

–রিফা:নিরু আপুই কিন্তু তোমার যোগ্য এবং আমাদের বাড়ির যোগ্য।তাড়াতাড়ি করে আমার কাছে এনে দাও তো ভাইয়া।
–রিহান:বোনের মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, বিয়ে করিয়ে ভাইকে বউ ছাড়া রাখার ধান্দা না?
–রিফা:দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,, রাতে তো তোমার বউ তোমার কাছেই থাকবে।তারপর হাসতে হাসতে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

–রিহান : মিস নিরুপমা!আপনাকে আমি মিসেস রিহান খুব শীগ্রই বানাবোই।কথাটা বলেই বাঁকা হাসে।

–নিরবের প্রতিশোধের নেশা আরও বেড়ে গেছে।কারণ রিহান নিরবের আসল রুপ সবাই কে বলে দিয়েছে।এখন শুধু সুযোগ খুঁজছে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায়।এখন রিহানদের বন্ধু কারো সাথে মিশে না নিরব।আলাদা একটা টিম ওঁরা তৈরি করে নিয়েছে।তবে পড়াশোনার আশেপাশে ও নেই।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৫

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৫]
-তামান্না

–রিফাত :আসল কাহিনি শোনা হয়েছে রিহান?
–রিহান:কি কাহিনি? কি হয়েছে?
–রিফাত :নিরব তার প্ল্যান সম্পর্কে সব কিছু শেয়ার করেছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিমনের সাথে।সে ইচ্ছে করেই সবটা করেছে।তার সাথে পারিবারিক সমস্যা ছিলো নিরুদের।তারপর সব কাহিনি খুলে বলে।
রিহান চোখ বন্ধ করে চুপচাপ সব কথা শুনে।দুই দিন যাবত এটাই আন্দাজ করছিল।

–রিহান:একদম শান্ত গলায় বলে তারপর কি করা উচিত?
–রিফাত :হ্যালো!হ্যালো!তুই ঠিক আছিস রিহান?
–রিহান :রাখছি।মাথা ঠিক লাগছে না।তারপর কল কেটে ফোন টাকে ফ্লোরে ছুড়ে মারে।চুল গুলো শক্ত করে হাত দিয়ে মুঠোয় বন্দী করে বসে পড়ে।ভীষণ রাগ লাগছে ভীষণ।নিরুপমার চেহারা অসহায় চাহনি সব কিছু এখন ভাসছে।সব কিছু ক্লিয়ার করা হয়েছে কিন্তু সবটা হাত থেকে দূরে ফসকে যাওয়ার পর।

–রিফা:ভাইয়া!ভাইয়া!দরজা খোল।তারপর কান্না করতে করতে বলে আম্মু কেমন করছে।ভাইয়া দরজা খোল।
–চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে রিহানের।বোনের মুখ থেকে এমনটা শুনে দৌড়ে দরজা খুলে বের হয়।ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে সেন্স নেই মায়ের।
–রিহান:তুই আব্বু কে কল কর।তারপর মা’কে কোলে করে গাড়িতে বসে।পিছনের সিটে মায়ের মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে রিফা আর কান্না করছে।

–বারান্দায় সবাই মিলে অপেক্ষা করছে ডাক্তার আসার।রিফার কান্না কোনো ভাবেই থামছে না।
রিহান মাথা নুয়ে বসে আছে আর ওর আব্বু ও মন খারাপ করে বসে আছেন।আর একটু পর পর চোখের পানি মুছছেন।
ছোট থেকে আজ অব্ধি বাবা মায়ের মধ্যে ভালোবাসা ছাড়া কোনো ঝগড়া দেখে নি।সব সময় একে অপরের পরিপূরক হয়েই পাশে রয়ে গেছে।আজকে প্রথমবার তাদের খানিকটা দূরত্ব চোখ দিয়ে পানি সব মিলিয়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছে রিহানের।সবটাই বোধহয় ওর অন্যায়ের ফল।এর মধ্যে কয়েক বার নিরুকে কল করেছে রিহান।কিন্তু ফোন সুইচড অফ।নিরুর মায়ের ফোন অন থাকলে ও রিসিভ হয় নি।

–ডাক্তার :আসলে রোগী স্ট্রোক করেছেন।জ্ঞান ফিরে আসে নি তবে ফিরে আসবে।কিন্তু…
–রিহান:ককককিন্তু কিহহহহহ?
–ডাক্তার :প্যারালাইসড হয়ে গেছে এক হাত এক পা।তবে বিশ্রাম কিংবা মানসিক ভাবে সুস্থ আর পুরোপুরি যত্ন পেলে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।এতে খানিকটা সময় লাগবে।

–এবার রিহানের আব্বু কান্না করতে করতে বসে পড়েন।রিহান বাবার দিকে তাকিয়ে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে শেষ করে নেন।
–রিহান:বাবার কাঁধে হাত রেখে বসে বলে,,তোমার মতো মানুষ ভেঙে পড়ে?শক্ত হতে হবে তো আব্বু।আমরা যে পুরুষ মানুষ।সবাই মিলে আম্মু কে সুস্থ করে ফেলবো।তারপর নিশা এগিয়ে আসতেই বাবা আর বোন কে জড়িয়ে ধরে।
ছোট বেলায় বাবা মা যেমন আদর করে সন্তান কে আগলে রাখেন ঠিক তেমনি বাবা মা বৃদ্ধ হলে সন্তান বড় হলে বাবা মা কে আগলে রাখতে হয়।

********
–নিরুরা বাসায় আসার পর থেকে তিন দিন চলে যায় বাসা গুছাতে।তারপর তিন দিন চলে যায় কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত কাজে।অবশেষে নিরুকে সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি করে তবে আগামী তে এইচএসসি দিতে হবে।আর নিশাকে ও স্কুলে ভর্তি করা হয়।
সব গুছিয়ে এক সপ্তাহ পরে নিরুর আম্মু মেয়েদের কে রেখে চলে আসেন বোনের বাসায়। উপর মহল থেকে কাগজ পত্র ঠিক হলে তারপর ট্রান্সফার এপ্লিকেশন ওকে হবে।আপাতত মিলিয়ে এবং মানিয়ে নিতে হবে সবটা।বোনের বাসা থেকে স্কুল চালিয়ে নিবে,, ফাঁকে ফাঁকে মেয়েদের ওখানে ও যাবে।
–দুই দিন যাবত একটা নাম্বার ফোন করছে।ভয়ে রিসিভ ও করছে না।নিরুর ভয়ে এতো দিন আরও রিসিভ করে নি।তবে আজকে সমস্যা নেই তাই রিসিভ করে।
–মিতা:ওয়ালাইকুম আসসালাম!কে?
–রিহান:আমি রিহান আন্টি।ভালো আছো?কোথায় তোমরা?
–মিতা:চোখের চশমা টা ঠিক করে বলে,, রিহান?
–রিহান:আম্মু অসুস্থ আন্টি।কথাটা বলার সাথে সাথেই দুপাশ থেকে নিরবতা।
–মিতা:কোথায় তোমরা?হসপিটাল নাকি বাড়িতে?আমি স্কুল শেষে আসবো।।
–রিহান :বাসাতেই আজকে আনা হয়েছে।তুমি বরং এসে দেখে যেও।তারপর কথা শেষ করে কল কেটে দেয়।

*************
–আব্বু :ফ্লাইট তো ক্যান্সেল হয়ে গেলো? এখন কি করবা?
–রিহান:এইচএসসি শেষ করে যেতে চাই।তারপর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে দেশে এসে মাষ্টার্স শেষ করবো।চাকরি বা ব্যবসা যেকোনো একটা স্থায়ী করে নিবো।
–আব্বু :জোর করবো না।তুমি যা ভালো বুঝো।চাইলে এইচএসসি শেষ করেও আমার ব্যবসায় যোগ দিতে পারো।এমনিতেই আমার শরীরের পক্ষে এতো দখল নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
–রিহান:সময় তো আছে দেখি কি করা যায়। আর আম্মুর দেখাশোনা ও তো করতে হবে। রিফা ছোট মানুষ সবটা সামলাতে পারবে না।

–এদিকে নিরু আর নিশা পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।নিরুর অবশ্য তেমন চাপ নেই তবে নিশার চাপ বেড়েছে।নিরু বাসাটা খুব সুন্দর করে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছে।
নিজেদের বাড়ির মতো না হলে ও খুব সুন্দর বাসাটা।তিনটে রুম মস্ত বড় বেলকনি আর রান্না ঘর ড্রয়িং রুম সব আছে।বাসার সামনে ও ছোট একটা বাগান।মামা ও নতুন বাড়ি দেখছেন কিনবে বলে।বাবার পেনশনের টাকা আর বাড়ি বিক্রি করার চাচার দেওয়া টাকা,, মায়ের কিছু জমানো টাকা সব মিলিয়ে নিজেদের একটা বাসস্থানের প্রয়োজন আছে।আর হয়ে ও যাবে সহজেই।

–নিরু:কি করছো আম্মু?ভীষণ ব্যস্ত,,সারাদিন একটা কল ও করো নি?
–মিতা:স্কুল থেকে ফিরে আসি নি মিটিং হচ্ছে।বাসায় গিয়ে কল করবো।তারপর কোনো রকম কল কেটে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন মিতা।কলিং বেলে চাপ দিতেই রিফা দরজা খুলে দেয়।
তারপর রিফার সাথে ওর আম্মুর রুমে চলে যায়। রিহান ওর আব্বু ওখানেই আছে।
–রিহান :সালাম দিয়ে এগিয়ে এসে বসতে বলে।
–রিহানের আম্মুর দিকে তাকিয়ে কান্না করে দেয় মিতা।রিহানের আম্মু চুপচাপ মলিন মুখ করে তাকিয়ে আছে।আর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

–রিহানের আব্বু :তুমি এসেছো মিতা?এতো কিছু হয়ে গেলো আমরা একসাথে কথা বলে মিটমাট করতে পারলাম না?
–মিতা:সব কিছু হাতের বাইরে ছিলো ভাইজান। আপনি তো জানেন নিরুর চাচা চাচিরা কেমন।ছোট্ট একটা ঘটনার পর এসব হয়ে গেলো।
–রিহান মাথা নুয়ে ফেলে।ভীষণ খারাপ লাগছে।কোনো রকম একটা অজুহাত দেখিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
–রিহানের আব্বু :আমি জানি রিহান যা করেছে অন্যায়।তবে রিহান বুঝতে পেরেছে ও ভুল করেছে,, আর ভুল পথটা জোর করে বের করে দিয়েছে নিরব।তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলে।
–মিতা:যা ভাগ্যে ছিল তাই হয়েছে।তবে আমার মেয়ে টা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।সহজ সরল মেয়ে আমার সত্যিই কিন্তু রিহান কে ভালোবেসেছে।আমি সেই শুরু থেকেই খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।তবে খুশিই হয়েছি।যেহেতু আমরা এটাই চাচ্ছিলাম ওদের বিয়ে দিতে।তারপর বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নিরুর আব্বুর ও ভীষণ শখ ছিলো রিহান তার মেয়ের জামাই হবে।
তারপর এতো জটিল কিছু হয়ে গেলো আমার মেয়ের ক্যারিয়ার ও নষ্ট হওয়ার পথে,, সব মিলিয়ে খানিকটা দখল যাচ্ছে।তাছাড়া সম্মান তো আর কিনতে পাওয়া যায় না।

–রিহানের আম্মু :আস্তে আস্তে অস্পষ্ট স্বরে হাত তুলে মাফ চায়।সাথে রিহানের আব্বু ও।রিফা এগিয়ে এসে আন্টিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
এরমধ্যে রিহান রুমে প্রবেশ করতেই ওর আব্বু বলে বসো রিহান।তোমার সামনেই সবটা বলতে চাই।
–রিহানের আব্বু :বাসায় একজন মানুষের ভীষণ প্রয়োজন আর রিফার পক্ষে সব কিছু সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।তাই আমি আর তোমার বান্ধবী ভাবছি নিরু আর রিহানের বিয়ে টা দিয়ে দিতে।মিতা কিছু বলতে গেলে হাত দিয়ে থামিয়ে বলে,, যেহেতু সেই ছোট বেলায় আমরা ঠিক করে রেখেছি।রিহান অবাক হয়ে কথা গুলো শুনে। ছোট বেলায় ওদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে সত্যি? মনে মনে এসব প্রশ্ন করে রিহান।

–মিতা:মাফ করবেন ভাইজান।এটা কখনোই সম্ভব না,, নিরুর সামনে এই প্রস্তাব আমি কখনোই রাখতে পারবো না।আমি আমার মেয়ের সামনে ছোট হয়ে যাবো প্লিজ!
–রিহান:আমি ওকে রাজি করাতে পারবো আন্টি।গত এক বছরে ওকে মোটামুটি ভালো ভাবে চেনা হয়েছে আমার।
–মিতা:তাও রাজি হবে না।আর তুমি যে অন্যায় টা করেছো….আর কিছু বলতে পারেন নি মিতা।দৌড়ে এসে পায়ের কাছে বসে পড়ে রিহান।মাথা নুয়ে বসে।

–রিহান:তোমার মেয়ে কে সত্যি আমি ও ভালোবাসি।যা করেছি ভুল দেখানোর জন্য করেছি আন্টি।আমি আমার জীবনে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য হলেও ওকে চাই।না হলে এতো অনুশোচনা আর অপরাধ বোধ আমাকে বাঁচতে দিবে না।
সেদিন আমার ও খুব কষ্ট হয়েছে আমিও এরপর আর ভালো থাকছি না।প্লিজ আন্টি আমাকে একটা সুযোগ দাও।মিতা হাত দিয়ে রিহান কে দাঁড় করিয়ে বলে,,আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। সব কিছুর দায়িত্ব শুধু তোমার, দেখো রাজি করাতে পারো কি না!
–তারপর রিহানের মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে আসছি ভালো থাকিস।

**************
–নিশা:এখানে ভালো লাগে না আপু।চলনা আমরা আমাদের শহরে চলে যাই।ওখানে বাসা নিয়ে থাকি।
–নিরু:ঐ শহর নিষিদ্ধ নিশা।ঐ শহরে তোর বোন কলঙ্কিত ছাড়া কিছু নয়।সেখানে তোর সম্মান রাখতে পারে নি তোর বোন।সেজন্য আমি ভীষণ লজ্জিত।কথা গুলো বলে বোনকে জড়িয়ে ধরে নিরু।চুপচাপ কান্না করতে থাকে।
–নিশা:থাকুক। আমরা তো জানি তুমি কেমন।আমরা আমাদের মতো আমাদের রাজ্যে রাজকন্যা হয়ে থাকবো।
–নিরু:বাবা ছাড়া মেয়েরা রাজকন্যা হয় না তার প্রমাণ চাচারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো।

–এরমধ্যে কল বাজতেই রিসিভ করে নিরু।তারপর কতক্ষণ মায়ের সাথে আড্ডা দেয় দুই বোন মিলে।
–মিতা:একটা কথা বলি নিরু?আগেই বলি রাগ করবি না।
–নিরু:বলো।
–মিতা:আমি অনেক চেষ্টা করছি দুই বছর আগে ট্রান্সফার করা সম্ভব না।তোরা বরং এই শহরে চলে আয়।তোর আঙ্কেল বলছেন পরীক্ষা টা দিয়ে দিতে।অযথা এক বছরের নিচে পড়ার দরকার কি?
–নিরু:ভালো লাগে না ঐখান টাতে।মানুষ গুলো ও খুব বিরক্তিকর।দম বন্ধ হয়ে আসে,, ঐ শহর টাতে তোমার মেয়ে কলঙ্কিত আম্মু!

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৪

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৪]
-তামান্না

–তারপর মিথ্যে হিংসা প্রতিশোধ সব ভুলে যায় রিহান।বাবা মায়ের মুখে ও শুনতো নিরুর প্রশংসা।সবাই উৎসাহ দেখালে ও নিরবের ভালো লাগতো না।
একের পর এক দোষ তুলে ধরে নিরুর।প্রতি নিয়ত এটা ওটা বলতে শুরু করে।নিরুপমার সাথে পাড়ার দুই তিন জনের সাথে প্রেম এটা ওটা অনেক কিছু।আস্তে আস্তে প্রতিশোধের নেশা বাড়িয়ে দেয়।তবে ক্ষতি করার মতো সাহস পেতে গোটা এক মাস সময় লাগে।বন্ধুরা সবাই বারণ করলে ও নিরবের কথায় এগিয়ে যায় রিহান।কথায় বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।আর এই অসৎ সঙ্গী একজন হলেই হয়ে যায়।

–সেদিন নিরব লাস্ট কলে এটাই বলেছিল হাতে নাতে নিরুকে এক ছেলের সাথে ধরা হয়েছে আর সেই প্রমাণ ওর কাছে আছে।ব্যস রিহান ঘৃণায় রাগে অঘটন টা ঘটানোর প্ল্যান করে।
প্রথমে এগিয়ে যায় নিরুপমার কাছে আর পিছনে আমান ভিডিও করে।যদিও নিরুপমা নিজের সম্মান রক্ষার্থে রিহান কে কাছে ঘেঁষতে দেয় নি। রিহানের সাথে ধস্তাধস্তি করে এক পর্যায়ে বের হয়ে যায়।
তবে ভিডিও তো পিছন দিক থেকে করা তাই এতো কিছু বোঝা যায় নি।নিরুপমা চলে যেতেই আমানের থেকে ফোন টা নিয়ে নতুন নাম্বার দিয়ে নিজের বাবার ফোনে রিহান নিজেই ভিডিও টা সেন্ড করে।ঠিক এক ঘন্টার মধ্যে সবার কাছে পৌঁছে দেয় এবং যায়।তারপর সিস্টেম করে অফিসের মিনি প্রজেক্টরে সেট করে দেয়। যার ফলে সবাই দাঁড়িয়ে দেখতে পারে।
তারপর কি হলো তা তো প্রথমেই দেখতে পেলেন।

–নিরুপমা সব কিছু গুছানো শেষ হলে নিশা কে নিয়ে বের হয়।মুখে মাস্ক পড়ে নিয়েছে।আজকেই শেষ নিজের শহর ঘুরবে তারপর আসা হবে কি না জানা নেই।চলে যাওয়ার আগে হলেও এ শহরের ধূলো তে পা রাখতে চায়,,ব্যস্ত রাস্তা এবং পরিবেশ ভালো করে ধারণ করে নিয়ে যেতে চায়।যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকে।স্মৃতি গুলো প্রখর হলেই তো বেশিদিন মনে থাকবে।
–নিরু:হ্যালো!তুই কি অবসর আছিস নীলা?কলেজে আসতে পারবি?
–নীলা :এই অবেলায় কলেজে কেন?
–নিরু:আয় না একটু।আমি আর নিশা এসেছি,, কালকেই চলে যাচ্ছি ভোরে।
–নীলা :দশ মিনিট অপেক্ষা কর আসছি আর আমি কোচিংয়েই আছি।স্যার কে বলে আসছি। বিকেল বেলা কলেজটা একদম নিরব থাকে।তবে কেন জানি নিরুপমার কলেজের এই নিরবতা ভালো লাগে না।
ছাত্র ছাত্রীদের হৈ হুল্লোড় খেলাধুলা আড্ডা মানুষ এসবেই যেন প্রাণবন্ত লাগে কলেজ।

–আচমকাই বৃষ্টি আসার আভাস পাওয়া যায়।চারপাশে অন্ধকার হালকা বাতাস এবং মেঘের গর্জন শুরু হয়।কলেজটা ও ফাঁকা।যেসব স্যাররা কোচিং করান মাঠের শেষ প্রান্তের ছোট ভবন টাতেই করায়।তাই নিরুপমাদের দিকটাই মানুষ নেই।
–নিশা:চল বারান্দায় দাঁড়ায়,, বৃষ্টি শুরু হচ্ছে।
–নিরু:হাতে থাকা পার্স আর মোবাইল টা নিশার হাতে দিয়ে বলে,, শেষ দিন এই শহরের বৃষ্টি ও বোধহয় আমায় ছুঁতে চাচ্ছে।ভীষণ মিস করবো কলেজ আর স্কুল থেকে বৃষ্টি তে ভিজে বাড়ি ফেরা দিন গুলো।তাই আজকে এতো সুন্দর সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাই না।তারপর দৌড়ে মাঠে চলে যায়। পড়নে কালো বোরখা আর গোল্ডেন কালার হিজাব।ভিজলে ও বোরখা পড়ায় বেশি খারাপ দেখাবে না।

–নীলা কোচিং থেকে স্যারকে বলে বের হয়।বৃষ্টি আসবে বলে দৌড়ে মাঠের এই দিক টাই চলে আসে।মাঠের ঐ পাশটায় দেখতে পায় রিফাত নিরব আমান রিহানরা বসে আছে।নীলা কে ছুটে আসতে দেখে নিরব বলে,, কোনো ছেলের পিছনে ছুটছো নাকি?
–নীলা থেমে যায়।অলরেডি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তারপর সোজা বারান্দায় উঠে নিরবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কুৎসিত মনটা পড়বেন।আর বাইরে মেয়ে কে টিজ করার আগে অবশ্যই নিজের মা আর বোনের চেহারা টা মনে করবেন।দেখবেন আপনা আপনি আপনার লাগামহীন মুখ কন্ট্রোল হয়ে গেছে ।

–নীলার কথায় আমান আর রিফাত মুখ টিপে হাসে।আর রিহান ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

–নিরব:উঠে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচু করে বলে বেশি বাড় বাড়লে বান্ধবীর মতো মুখ থুবড়ে পড়বে।
–নীলা :আপনি আমার কচু করবেন বলে বৃষ্টির মধ্যেই দেয় এক দৌড়।

–রিফাত:ভালো কথা মনে হলো।নিরব তোর তো নিরুর সাথে ধরা পড়া ছেলের ছবি দেখানোর কথা।কই দেখালি না তো?
–নিরব:ভয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বলে,, সে দেখে কি করবি?ঝামেলা হওয়ায় ফোন থেকে কেটে ফেলেছি।
–রিহান :ভয় পাচ্ছিস নাকি?আমি কিন্তু তোর কথায় কোনো সত্যতা এখন অব্ধি পায় নি।
–নিরব:বাদ দে ইয়ার।এসব দেখে আর কি করবি,, সব তো শেষ হয়েই গেছে।

–আমান:শুধু কি শেষ হয়েছে?সাথে অনেক কিছুই হয়েছে।

–রিফাত :চল ফুটবল খেলা যাক।তারপর সবাই মিলে একমত হয়ে হৃদয় কে বসিয়ে ফোন গুলো দিয়ে মাঠে নেমে পড়ে।

–এদিকে নিরুপমা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে মাথা নুয়ে বসে আছে।দূর থেকে নীলা নিরুকে দেখে ব্যাগ আর ফোন নিশার হাতে দিয়ে চলে আসে। নিশা বসে বসে গেইম খেলতে থাকে।

–নীলা :নিরু?
–নিরু:উঠে এসে হাত দিয়ে মুখের পানি মুছে বলে চলে যাবো।তাই শেষ মূহুর্তে বৃষ্টির লোভটা সামলাতে পারি নি।
–নীলা:চল বলে হাতে ধরে সামনে এগিয়ে বলে,, তোর আর আমার শেষ কলেজ ঘুরা এক সাথেই হোক।এরপর আমিও আর কলেজ বৃষ্টি অবসর আড্ডা এসবে থাকবো না।পরীক্ষা দেওয়া শেষ হলেই চলে যাবো।তোর শূন্যতায় আমি ও ভালো থাকবো না।
–নিরু:এবার নিরু দাঁড়িয়ে কান্না করতে থাকে। তবে বৃষ্টির পানির সাথে সব ধুয়ে যাচ্ছে।
–নীলা :মন খারাপ করিস না।দেখবি ভালো সময় আসবে। মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসিস।
–নিরু:এটা বোধহয় আর হবে না রে।তারপর নিরব আর ওর আব্বুর কাহিনি বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সব কিছু খুলে বলে।

–রিহানরা খেলার জন্য এই পাশে চলে আসে। দূর থেকে নীলা আর নিরুকে দেখতে পায়।
–রিফাত:এই অবেলায় এরা বৃষ্টি তে ভিজে কেন? আর নিরু ও এ সময়?
–নিরব:দেখ গিয়ে বোধহয় কোনো কু*কর্ম করতে এসেছে এই সময়।
–রিহান:মাঝে মধ্যে একটু বেশিই বলিস।আর মাইন্ড একটু নোংরা মুক্ত রাখার চেষ্টা করবি।নিরব দাঁতে দাঁত চেপে কোনো রকম সয্য করে।
–রিফাত:বাদ দে।খেলতে এসেছি খেলতে চল।

–নীলা :রিহান কলেজেই আছে।
–নিরু:বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে নীলা।প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকা যুদ্ধ মনে হচ্ছে।আমি এভাবে একলা হতে চাই নি।এর থেকে খারাপ আমি কখনো থাকি নি।আমার বাঁচতে কষ্ট হচ্ছে স্মৃতি কন্ঠ চেহারা প্রতিনিয়ত ধাওয়া করছে।কথা গুলো বলতে বলতে হেঁচকি উঠে।
–নীলা:একদম ভেঙে পড়বি না।ওদের উপর সঠিক বিচার উপরওয়ালা ঠিক করে নিবেন।
–নিরু:এটা আমি কখনো চাই না।আমি চাই সে ভালো থাকুক।আমি তার কখনো ক্ষতি চাই না মৃত্যু চাই না।দূরে থেকে তার বেঁচে থাকার গন্ধ শুনতে চাই নিশ্বাস শুনতে চাই।সে আমার হোক সেটা ও চাই না তবে চাই সে বেঁচে থাকুক।তারপর আবার আমাদের দেখা হোক সেদিন তার চোখে অনুতাপ অনুশোচনা আমি নিজের চোখে দেখতে চাই।
–নীলা:চল।জ্বর চলে আসবে।নিরু সামনে তাকাতেই রিহানদের দেখতে পায় তাই চুপচাপ চলে যায় এখান থেকে।

–নিরু:তুই বস নিশা আমি আর নীলা ঐদিক টাতে যাই।বৃষ্টি থামলেই বাড়ি ফিরবো।
–নিশা:আম্মু বকা দিবে কিন্তু।এখানে দাঁড়াও আমার সাথে। নিরু ধমক দিয়ে চলে যায়।

–নিরুদের চলে যেতেই রিহান নিশার কাছে আসে।
–রিহান :কি অবস্থা নিশা?আজকাল তো তোমার দেখায় যায় না?
–নিশা:আপনি এমনটা করতে পারলেন রিহান ভাই?আমার বোন কিন্তু ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।এরপর আমাদের যাওয়ার আশা করেন?
–রিহান :অন্য দিকে তাকিয়ে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বলে,, বাদ দাও এখানে কেন?একা এসেছো?
–নিশা:আপু এসেছে।কালকে চলে যাচ্ছি আমরা।আর আসা হবে কি না জানা নেই।
–রিহান:কোথায় যাচ্ছো?আর বাড়ি ছেড়ে কেনই বা যাচ্ছো?

–নীলা :চলে আয় নিশা।নিরু চলে যাচ্ছে।
–নিশা:আমি যাচ্ছি রিহান ভাই ভালো থাকবেন আর দেখা হবে কি না জানা নাই।

***********
–ভোর ছয় টায় রওয়ানা দেয় নিরুরা।ট্রেনে করে যাচ্ছে।শখের জিনিস বা শখ গুলো এমন আচমকা পূরণ হয় তখন আর শখ মনে হয় না মনে হয় পরিস্থিতি।কতো দিনের শখ ছিলো ট্রেন জার্নি করবে এবং জানালার পাশটায় বসে উপভোগ করবে সবটা।
আজকে তা হচ্ছে ও কিন্তু উপভোগ করার মতো আর শখ কিংবা সুখময় অনুভূতি আর নেই।
–ভীষণ কান্না পাচ্ছে,, বুক ফেটে যাচ্ছে।যতই সামনে এগোচ্ছে ততই বুকের ব্যাথাটা দীর্ঘ হচ্ছে।
আসল জীবন সোনালী সময় ছেলেবেলা সব কিছু ত্যাগ করে যাচ্ছে।
–নিশা:মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,আব্বু একা হয়ে গেলো আম্মু।আর কেউ রোজ করে কথা বলার জন্য কবরের পাশটায় দাঁড়াবে না।
–নিরু:এতো ভাবছো কেন?আব্বু আসল জায়গায় আছে যেখানে জীবন বাস্তবতা পরিস্থিতি কিছুই নেই।বিশ্বাসঘাতক ও নেই। আম্মু দুজনকেই জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বলে তোমরাই আমার জীবন।তোমাদের সফলতা দেখতে পারলেই আমার জীবন সার্থক।

–আব্বু :সব কিছু ওকে কালকে রাত তিনটের ফ্লাইট।
–রিহান:আচ্ছা!
–আম্মু :কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,, আগের থেকে অনেক টা শুকিয়ে গেছো।তোমায় ছেড়ে থাকতে হবে ভাবি নি।
–রিহান:আমরা যা ভাবি সব সময় কি তা হয়?
–আব্বু :নিরুরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।আর বাড়ি ওর চাচারা দখল করে নিয়েছে।জীবন কতো কঠিন কখনো কি ভেবেছে রহিম তার মেয়েরা বাড়ি ছাড়া হবে।
–আম্মু :নিরবের বাবারা শেষ পর্যন্ত সফলই হলো।তবে এতে সর্বোচ্চ দোষ তোমার ছেলের। রিহান চুপচাপ উঠে চলে যায়।

–রিফাত :আসল কাহিনি শোনা হয়েছে রিহান?
–রিহান:কি কাহিনি? কি হয়েছে?
–রিফাত :নিরব তার প্ল্যান সম্পর্কে সব কিছু শেয়ার করেছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিমনের সাথে।সে ইচ্ছে করেই সবটা করেছে।তার সাথে পারিবারিক সমস্যা ছিলো নিরুদের।তারপর সব কাহিনি খুলে বলে।
রিহান চোখ বন্ধ করে চুপচাপ সব কথা শুনে।দুই দিন যাবত এটাই আন্দাজ করছিল।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৩

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৩]
-তামান্না

–রিফাত :গলা পরিষ্কার করে বলে নিরুপমা? তারপর এগিয়ে যায়।রিহান বাইক রেখে চুপচাপ গাছের আড়ালে চলে যায়।
–নিরু:ভালো থাকুন ভাইয়া।কলেজে একটা সময় আপনাকে নিজের ভাইয়ের মতো মনে হয়েছে।কথাটা বলতেই ছলছল করে উঠে চোখ।
–রিফাত:ক্লাস করলে না,,চলে যাচ্ছো যে?
–নিরু:চলে যাচ্ছি।টিসি টা দেখিয়ে বলে এটার জন্যই আসা।হয়তো আর দেখা হবে না তবে ভালো থাকবেন।কথাটা বলেই সামনে এগিয়ে যেতে নিলে,,
–রিফাত:কই চলে যাবা নিরুপমা?
–নিরু:জোর পূর্বক হেসে পিছনে তাকিয়ে বলে,, অচিন পুরে।অচেনা মানুষ আর বিশ্বস্ত পরিবেশে।এখন আমি আমার ইচ্ছে মাফিক জায়গায় বসত করবো,,আজকেই ছুটি নিয়ে নিবো এই জন্মের শহর।মানুষ মায়া অবসর ভালো লাগা আর ভালবাসা থেকে।দোয়া করবেন এই ছুটি যেন আজন্ম কালের হয়।
তবে আমার শহরের মায়া জমানো কিছু মানুষ ধুলোবালি প্রিয় শৈশব কে ভীষণ মিস করবো। আফসোস নিয়ে কাটিয়ে দিবো জীবনের শুরুর দিকের এই ভুলের জন্য।দোয়া করবেন সামনের জীবনে ভুল কে যেন পায়ের তলায় পিষে সামনের গন্তব্যে চলতে পারি।আসি বলে একটা রিকশায় উঠে বসে।

–আর এদিকে রিফাত এখনো তাকিয়ে আছে নিরুপমা আর ওর চলে যাওয়া রিকশার দিকে।

–রিহান:চলে যাচ্ছে?
–রিফাত :হুম!কেন খুশি হস নি?
–রিহান:সামনেই তো পরীক্ষা এখন কোন কলেজে যাবে?ফরম ফিলাপ সবই অলরেডি করা হয়ে গেছে।
–রিফাত:যা ইচ্ছে তা করুক তোর কি?তুই তো এটাই চেয়েছিলি?
–রিহান:আমি চেয়েছি খানিকটা শিক্ষা পাক তবে জীবন নষ্ট হয়ে যাক এটা চাই নি।তাছাড়া সে কি কম নাকি?আমাদের পরিবারের সাথে সখ্যতা থাকার পরে ও আমার নামে বদনাম করতো নিরবের সাথে।তাছাড়া আমি না হয় মন থেকে সম্পর্কে যাই নি,, সে কি কম নাকি?গোপনে আরও সম্পর্কে আছে।
–রিফাত:আমার মনে হয় নিরব কে প্রয়োজনের থেকে ও বেশি বিশ্বাস করে ফেলছিস।তাছাড়া নিরব ওর চাচাতো ভাই হয়ে ও কিভাবে ওর খারাপ চায়??
–রিহান:নিশ্চয়ই নিরু ভালো না দেখেই ভাই হয়ে ও খারাপ চায়।
–রিফাত :একদিন ভীষণ ভাবে পস্তাবি, নিরুপমার অভাবে দুঃখে থাকবি।কথাটা বলেই ওকে ফেলে রিফাত একা একাই চলে যায়।

*******
–নিরুর আম্মু :এটা কিন্তু ঠিক করছেন না ভাইজান?ন্যায্য দাম না দিন অর্ধেক তো দিবেন? তাছাড়া আমার তো মেয়েদের নিয়ে চলতে হবে। স্কুলে ও দৌড়াদৌড়ি করে ম্যানেজ করতে হবে সবটা।
–বড় চাচা:এক পয়সা ও বেশি দিবো না। তোমার তো ভাগ্য ভালো মেয়ের মা হয়ে ও সম্পত্তির ভাগের টাকা পাচ্ছো।চুপচাপ যা দেই নিয়ে নাও।
–নিরুর আম্মু :কান্না করতে করতে টাকা গুলো হাতে নিয়ে নেয়।তারপর বলে,, সবাই মিলে আমাদের বড্ড ঠকালেন।তবুও উপর ওয়ালার প্রতি কোনো আক্ষেপ নেই,, কারণ ভাগ্যে রেখেছে বলে।আর আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী।আর এটাও বিশ্বাস করি খারাপ সময় কেটে গিয়ে ভালো সময় আসবে।টাকা গুলো হাতে নিয়ে বের হয়ে যায়।

*********
–কয়েক দিন লাগবে আরও ট্রান্সফার হতে চাকরি।তবে এখান থেকে ও চলে যেতে হবে তাই আগে থেকেই নিরুর মামাকে দিয়ে ভাড়া বাসার ব্যবস্থা করে।
আর আজকেই সেখানের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় রওয়ানা দিবে।দুই দিন ঢাকা থেকে মেয়েদের কে রেখে আবার এখানে চলে আসবেন,, স্কুলে বোনের বাসা থেকেই কয়েক দিন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত যাতায়াত করবেন।
–নিশা (নিরুর ছোট বোন)সকাল থেকে শুধু কান্না করে যাচ্ছে।বয়স অল্প আবেগ কম বোধ বুদ্ধি ও কম।শব্দ করে করে কান্না করছে।সে বাবার বাড়ি ছেড়ে যেতে চায় না।নিরুর প্রচুর খারাপ লাগছে নিশার আর্তনাদ শুনে।সে তো বলতে পারছে না তারও অনেক কষ্ট হচ্ছে।বাবার স্মৃতি ছেড়ে থাকা যে ভীষণ কষ্টের।এহ বাড়িতে আজও ওরা নিজের বাবার গন্ধ পায়।অনুভব করতে পারে ছেলেবেলা ভালো সময় বাবা দাদা দাদু একত্রে কাটানো মূহুর্ত গুলো।

–নিজের বাড়ির আঙিনা ছাঁদ রুম বাগান প্রকৃতি এলাকা বিদ্যাপিঠ সব কিছু মিস করবে।এই কষ্ট যেন মরে যাওয়ার থেকে কম না।তবে কষ্ট হলেও ভীষণ ভাবে চেষ্টা করছে দমিয়ে রাখার।আজকে ওর ভুলের জন্যই তো এমন পরিস্থিতি।নয়তো চাচারা সহজে এতো দূর করতে পারতো না।পিছন থেকে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে একদম কষ্ট পাবি না।নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তো,,মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে হবে না?
–নিরু:মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে ভীষণ ভালোবাসি মা।তোমায় আব্বু আর নিশাকে আমার নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসি।প্লিজ তোমরা আমার জীবনে গত হয়ে যেওনা আব্বুর মতো।তোমাদের ছাড়া আমি অচল।এবার নিশা ও এসে আম্মু আর বোনকে জড়িয়ে ধরে।
–আম্মু :তোর মিতা আন্টি ফোন করেছিল।
–নিরু:খানিকটা দূরে সরে অপ্রস্তুত সুরে বলে কককি বললো?
–আম্মু :তোর টিসির ব্যাপারে।ভেবেছে তুই কষ্টে এক বছর বাসায় বসে গ্যাপ দিবি।রিহানের কান্ডে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে,, ছেলেকে বকেছে অনেক।তোকে নিয়ে যেতে বললো।
–নিরু:সমাপ্তি ঘটুক আম্মু কিছু শখের সুখের মানুষের সাথে থাকা সম্পর্কের।আমি সত্যি তোমাদের সবার কাছে লজ্জিত।প্লিজ আমার দুঃখ আর বাড়িয়ে দিও না।
–আম্মু :ছোট বেলায় তোমার আব্বু আর আঙ্কেল কথা দিয়েছিল তোমাকে রিহানের সাথে বিয়ে দিবে।
–নিরু ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকাতেই মা বলে,, তোমাকে তো এখন আমই রিহানের সাথে বিয়ে দিবো না।তবে প্লিজ মিতার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার কথা বলো না।কতক্ষণ নিরবতা পালন করার পর নিরু বড় করে নিশ্বাস নিয়ে কাপড় ভাজ করতে করতে বলে,, তবে আমাকে সঙ্গী করো না ওদের সামনে।আমি ছুটি নিয়ে নিজের মতো বেঁচে স্বপ্ন পূরন করতে চাই।

★★★★★
–এদিকে রিহানের আব্বু দৌড়াদৌড়ি করে ব্যবস্থা করে দেশের বাইরে যাওয়ার।আর ওখানে গিয়ে বাকি পড়াশোনা টা করবে।যদিও এইচএসসি দিতে হবে না নতুন করে গিয়ে ডিপ্লোমা করে ইন্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করবে। আর যদি সিস্টেম টা হয়ে যায় তবে এইচএসসি ও ওখানে দিয়ে দিবে।
–রিহান:এতো তাড়া কেন আম্মু?এইচএসসি শেষ করে যাই!
–আম্মু :এসব আমি জানি না।তোমার বাবা সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে।তুমি ও বখাটে খাতায় চলে যাচ্ছো।

–রিহান:হাসালে আমায়।তোমরা কিন্তু একটা ঘটনা নিয়ে ভুল বুঝছো।আমি কিন্তু দোষী না।শুধু যার যেটা প্রাপ্য সেটাই ফিরিয়ে দিয়েছি।
–আম্মু :তোমার এই ব্যাপারে কথা বলতে চাই না। তাছাড়া হিরে না হারালে কেউ হিরের কদর বুঝে না,, আশা করি খুব শীগ্রই বুঝতে পারবে। এই কয়দিনে বন্ধুদের সঙ্গ থেকে দূরে থেকো।
–রিহান:আমার বন্ধুদের পছন্দ নয়?
–আম্মু :নিরব কে আমার ভালো লাগে না।কেমন জানি অন্য স্বভাবের মনে হয়।
ওদের পরিবারের সাথে নিরুপমাদের সব সময় দ্বন্দ লেগেই থাকে।
–রিহান:কিহ?কি নিয়ে দ্বন্দ?কই নিরব তো আমায় বলে নি।আর সব সময় বলে এসেছে খুব ভালো সম্পর্ক ওদের সাথে।নিশা নিরুপমা ওর সাথেই সময় কাঁটায়।
–আম্মু :দারুণ হাসির কথা তো!আজ অব্ধি কখনো এমনটা দেখি নি।তোমার আঙ্কেল বেঁচে থাকতে ও তো এমনটাই শুনতাম।নিরুদের কোনো ভাই না থাকায় ওঁরা সব সময় চাইতো বাবার বাড়ি টা দখলে নিতে।কিন্তু নিরুর দাদা মৃত্যুর আগে ছোট ছেলে মানে নিরুর বাবা কে লিখে দিয়ে যায়।তবে ঝামেলা শুরু হয় নিরুর দাদা মা-রা যাওয়ার পর থেকে।

–রিহান:চিন্তিত সুরে বলে বাদ দাও।ওঁদের ঝামেলা ওঁরা বুঝবে।আর আন্টি কি কিছু বলেছে?
–আম্মু :কষ্ট পেয়েছে বোধহয় ভীষণ।তবে মুখ ফুটে বলে নি।তোমার আব্বু বাসায় এলে ওদের বাসায় যাবো।একটা দরকার আছে।
–রিহান:তুমি কি জানো,,নিজের সন্তানের থেকে ও বান্ধবীর মেয়ে কে মাঝে মধ্যে প্রায়োরিটি দাও বেশি।
–আম্মু :ভালোবাসা সম্মান মূল্য প্রাধান্য এগুলো মনের ব্যাপার।আর তোমরা আমার সন্তান অবশ্যই অন্যের থেকে ও ভীষণ প্রিয় তবে অন্যায়ের ক্ষেত্রে নয়।

–রিহান:এই শহর এখন আর আমার ও ভালো লাগে না।আমি ও মুক্তি চাই কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে।মনে মনে এই কথা গুলো বলে রুমে চলে যায়।
মনে পড়ে সেই এক বছর আগের কথা।যদিও হিংসা এবং প্রতিশোধের তাড়নায় নিরুপমার পিছনে ঘুরে।কারণ নিরব সব সময় উষ্কে দিতো।রিহানের নামে এটা ওটা নাকি নিরু বলতো।আর এসব ও নাকি বলতো যে রিহানকে পাত্তা দেয় না নিরু।আরও নানা ঘটনা আর জেদ থেকেই পিছনে পড়া নিরুর।
প্রথম এক সপ্তাহ ভীষণ বিরক্ত লাগতো তারপর আস্তে আস্তে নিজের ও উৎসাহ বাড়ে অভ্যস্ততা বাড়ে।আগে অবশ্য নিরু মায়ের সাথে ওদের বাসায় প্রায়ই যেতো।তবে যেদিন থেকে নিরুকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় রিহান এরপর আর যায় নি।নিরব ফোন করে এখানে ওখানে ডাকতো এলাকায় যেতো,,নিরবদের বাড়ির পাশে ক্রিকেট খেলতো।
আর সেখানেই নিরুপমার সাথে দেখা হয়ে যেতো।অবশ্য একটা সময় ভালো ও লাগতো রিহানের।আর নিরুপমা ও আস্তে আস্তে দূর্বল হতে শুরু করে।

–এভাবে চলতে চলতে প্রায় ছয় মাস পেড়িয়ে যায়।একদিন নিজ থেকে এসে নিরুপমা ই জানায় সে সম্পর্কে যেতে ইচ্ছুক।তারপর হালকা পাতলা অনুভূতি গুলো ও প্রকাশ করে।
আর এই খবর নিরব পেয়ে আরও নানা ভাবে রিহান কে উষ্কে দেয়।রিহান কন্টিনিউ করে।নিরু কোথাও ঘুরতে যেতো না কোনো আবদার ফাঁকি বাজী কিছুই করতো না।শুধু বলতো বড় হতে হবে একটা কিছু করবে আমি আর তুমি অল্প দিয়েই সুখী হবো।
আমিও করবো রোজগার আমাদের সুখের সংসার হবে।তবে হুটহাট বায়না করতো রিহান কে এক পলক দেখার।নোট কালেক্ট করে এক্সট্রা সব রিহান কে ও দিতো।সম্পর্কের পাঁচ মাস চলে যায়। আস্তে আস্তে নিজেকেও খানিকটা দূর্বল মনে হতে থাকে।অভিনয় কখনো মনে হতোই না মন থেকেই সবটা হতো।ভালো লাগতো নিরুপমার সব কিছু।শ্যামলা গায়ের মেয়ে টাকে ও তার কাছে পরী মনে হতো।এবং অনুভূতি গুলো ও প্রকাশ করে ফেলতো নিরুর সামনে।নিরুও ভীষণ খুশি হতো।অল্প চাহিদার মানুষ হলো নিরু।রিহানের পাগলামি তে মাঝে মধ্যে কান্না ও করে দিতো।বয়স টা ও তো অল্প,, এই বয়সে সব কিছু ই রঙিন লাগে নিরুর ও তা লাগতো।

–তারপর মিথ্যে হিংসা প্রতিশোধ সব ভুলে যায় রিহান।বাবা মায়ের মুখে ও শুনতো নিরুর প্রশংসা।সবাই উৎসাহ দেখালে ও নিরবের ভালো লাগতো না।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০২

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[২]
-তামান্না

–আব্বু :থাকা লাগবে না।আমি এমনিতেই তোমার জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে আমি দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবো।যেদিন একজন ভালো মন মানসিকতার মানুষ হতে পারবে সেদিনই দেশে আসবে এর আগে নয়।
–আম্মু :এগিয়ে এসে রিহান কে ধরতে নিলে সরে দাঁড়ায়।তারপর বলে এমন করো না আব্বু,, তুমি আমাদের ভীষণ আদরের।অন্যের ক্ষতি করতে নাই তোমার নিজের ও তো বোন আছে বলো?
–রিহান:প্লিজ!আমার ভালো লাগছে না বলে উঠে চলে যায় রুমে।
রুমে আসতেই কল করে নিরব।রিসিভ করতেই বলে,, কি শুনলাম এটা?এতো ভালো খবর তুই নিজে দিলি না?
–রিহান:সত্যি নিরব এবার আমি নিরুপমার সতী সাবিত্রী চরিত্রে দাগ লাগিয়ে দিতে পেরেছি।সব সময় তোর কাছে আমার নামে বদনাম করতো না?এবার সামলাতে থাকুক।

–নিরব:ইশশ!বড্ড মিস করলাম সিন গুলো।আমি আজকেই চলে আসছি এসেই আমার চাচাতো বোনের মুখ খানা দর্শন করবো।দেখি কেমন চেহারা করে ঘুরছে।
–রিহান :বাসায় বকা খেতে হচ্ছে আমার। তোর বোন যেমনটা হোক,,অহংকারী হিংসুটে বদমেজাজি আর খারাপ কিন্তু ভীষণ বোকা।তবে চরিত্র খারাপ এটা মেলাতে পারি নি।তুই না বলতি আরও রিলেশন করে?কিন্তু এক বছরে আমার চোখে তো পড়ে নি।
–নিরব:পড়বে পড়বে,, এবার পড়বে।বয়ফ্রেন্ড তো আরও আছে দেখবি এবার গর্ত থেকে বের করে দেখিয়ে দেখিয়ে ঘুরবে।তারপর আরও কিছু কথা বার্তা বলে কল কেটে দেয়।

–নিরব:শয়তানি হাসি হেসে বলে,, এবার মা মেয়ের ভাব সব গুচিয়ে দিবো।দুই মেয়ে কে নিয়ে আমার চাচির বড্ড বড়াই তাই না?এবার আমরা আস্তে আস্তে সব সম্পত্তি গুলো ও দখলে করে নিবো হাহাহা।
তারপর নেকামি করে একা একাই বলে সরি রে নিরু,,খুব সরি।দাঁতে দাঁত চেপে বলে সেদিন বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় যে হাত দিয়ে চড় মেরেছিলি সে হাত ও এবার আমি ভেঙে দিবো।তারপর হাহাহা করে হাসতে থাকে।

–এদিকে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসে নিরু।ছোট বোন স্কুল থেকে ফিরে আসে নি আর আম্মু ও।
আসলে নিরুপমারা দুই বোন।ছোট বোন ক্লাস নাইনে পড়ে আর আম্মু বোনের স্কুলেরই টিচার। নিরুপমার আব্বু ও একজন টিচার ছিলেন তবে গত হয়ে গেছে প্রায় সাত বছর।তারপর থেকে আম্মুর বেতনের টাকা আর বাবার পেনশনের টাকায় চলে যাচ্ছে।
রান্না ঘরে গিয়ে দেখে রান্না করা কিছু নেই।তারপর এক বাটি নুডলস কোনো রকম করে রুমে চলে আসে।কলেজ ড্রেস সহই শুয়ে পড়ে। অথচ এই বাজে অলসতা অভ্যাস কখনো নিরুপমার নেই।

*********
–তারপর পরের দিন শুরু হয় নিরবদের অত্যাচার।সবার কাছে এলাকায় প্রচার করে নিরুপমার নামে বদনাম।
–বড় চাচা:আমাদের এতো সুনাম যে মেয়ে নষ্ট করেছে তাকে এই বাড়িতে থাকতে দিবো না।আর যে ঘরে কোনো ছেলে সন্তান নেই তাদের তো একলা এক্সট্রা বাসার ও প্রয়োজন নেই।
–নিরুর আম্মু :এগুলো কি ধরনের কথা?আমার স্বামীর বাড়িতে আমাদের জায়গা হবে না?এরকম অনেক ঝগড়া ঝাটি এটা ওটা হয়।তিন দিন যাবত অনেক অত্যাচার সয্য করে।
এরমধ্যে নিরুপমা কলেজে যায় নি।মাকে সব কিছু খুলে বললে উনি রিহানের আম্মুর সাথে কথা বলতে চাইছিলেন তবে নিরু তা দেয় নি।নিরব ও যা তা এসে বলছে।
–নিরু:তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি সব কিছু ম্যানেজ করো,,অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করো।কান্না করতে করতে বলে এখানে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
–আম্মু :কলেজ থেকে টিসি নিতে হবে আর এখন অন্য কলেজে গেলে এক বছর গ্যাপ হয়ে যাবে।
–নিরু:হোক।এমনিতেই আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারবো না এই সিচুয়েশনে।
–আম্মু :মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,, কেন এসব করলি?তুই কেন এসব ফাঁদে পা দিলি।মা মেয়ে মিলে কতক্ষণ কান্না করে নেয়।
মনে মনে বলে আমার মেয়ের জন্য কখনোই রিহান উপযুক্ত নয়।যে ছেলে একজন মেয়ে কে এভাবে অপমান করতে পারে তার হাতে আমি মেয়ে দিবো না।আমি প্রয়োজনে উনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো তবুও আমার মেয়ে কে দিবো না।প্রয়োজনে আর ভালোর জন্য হলেও কথা ভঙ্গ করতে হয়।

*****
–সাতদিন পরে কলেজে আসে নিরু।ফ্যাকাশে মুখ ভালো করে মাথায় হিজাব পেঁচানো।আজকে আর কলেজ ড্রেস গায়ে নেই।একটা থ্রি পিছ হিজাব আর কাঁধে কলেজ ব্যাগ।
–নিরুকে দূর থেকে দেখেই দৌড়ে এগিয়ে আসে নীলা।এই কয়দিনে বাসায় গিয়ে ও দেখা মিলে নি নিরুর সাথে।তারপর ফোন তো সুইচড অফ থাকে।
–নীলা :কি অবস্থা করেছিস নিজের?তুই ও এতো বোকা নিরু?তোর মতো মানুষ ও ভেঙে পড়ে?
–নিরু:জোর পূর্বক হেসে বলে,, তাড়া আছে রে।ছুটি নিবো কিছু জায়গা আর কিছু মানুষের থেকে। তুই বরং এখানে বস আমি আসছি অফিস থেকে।তারপর সামনে হাঁটা ধরে নিরুপমা।

–রিহান আর ওর বন্ধুরা এতো দিন কলেজে আসে নি।সবাই মিলে ট্যুরে গিয়েছিল।যদিও নিরব ওদের সাথে ছিলো না।আজকে সবাই মিলে যোগাযোগ করে কলেজে আসে।
–রিফাত :নিরুপমার কি খবর রে নিরব?
–নিরব:কি আর খবর থাকবে যখন খবর বের হবে দেখবি তরতাজা হেডলাইন।
–রিহান:এক কাজ কর তো নিরব।তুই বরং রিফাত কে তোদের বাসায় নিয়ে যা কারণ ওও মনে হয় নিরুপমা কে ভীষণ মিস করছে।
–নিরব:নাকি রিহানের মতো এক বছরের চান্স নিবি শা*লা?
–রিহান:তুই কিন্তু ইন ডিরেক্টলি আমাকে বাজে বকছিস!তোর কথায় মাঝে মধ্যে ঝাঁজালো ভাব দেখতে পাই।
–নিরব:কেন?মিথ্যা কিছু বলছি নাকি?একবছর তো ঠিকই ব্যবহার করেছিস।এবার আর সয্য করতে পারে নি রিহান।তেড়ে আসে মারার জন্য। বন্ধুরা মিলে রিহান কে আটকায় তবে নিরব ভীষণ বাজে ব্যবহার করে।

–নিরুপমা অফিসে গিয়ে স্যারের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।এবং গিয়ে জানতে পারে প্রিন্সিপাল স্যার দুই সপ্তাহের ছুটি তে আছেন। তবে স্যারের পরিবর্তে যার উপর দায়িত্ব দেওয়া তার সাথে কথা বলে নেয়।
প্রথমে উনি রাজি না হলে ও অনেক কষ্টে রাজি করায়।
–ইংরেজি স্যার:এই মূহুর্তে তুমি টিসি নিয়ে বের হলে এক বছর গ্যাপ চলে যাবে বুঝতে পারছো?তাছাড়া প্রিন্সিপাল স্যার কলেজে নেই উনার ব্যক্তিগত কাজে দূরে আছেন।
–নিরু:নানা ভাবে এটা ওটা বলে ম্যানেজ করে এবং স্যার ফোন করে প্রিন্সিপালের থেকে অনুমতি নিয়ে রেডি করে রেখে যাওয়া টিসি ফরম পূরণ করে দিয়ে দেয়।নিরুর অনুরোধে প্রিন্সিপাল কে ছাত্রীর নাম টা বলে নি।অনেক বলে রাজি করিয়ে নেয়।
–নিরু:স্যার ম্যাম আপনাদের সবার প্রতি আমার অনেক কৃতজ্ঞতা ভালো থাকবেন।ভীষণ মিস করবো আপনাদের।তারপর নিজের কষ্ট কোনো রকম লুকিয়ে অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসে।

–চারপাশে অনেকেই তাকিয়ে আছে।ইতিমধ্যে রিহানদের কানে ও পৌঁছে গেছে যে নিরু কলেজে এসেছে।
মাঠে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ায় নিরব।
–নিরব:বাহ্ বাহ্!কলেজে আবার চলে এসেছিস? আমায় রিজেক্ট করে বড়লোকের ছেলে পটিয়ে নিলি এখন কই তোর সেই প্রেমিক?
–নিরু:সেটা একদম আমার পার্সোনাল ব্যাপার।তবে এটুকু বুঝতে পারছি তুমি এসবের মধ্যে যুক্ত আছো।তবে তোমার ভালো কখনো হবে না।

–নীলা:কি হয়েছে? তুই আমার কাছে না গিয়ে এখানে কি করছিস?
–নিরব:তোমার সতী সাবিত্রী বান্ধবী প্রেমিক খুঁজতে বোধহয় এসেছে।
–নীলা:ছিহ!আপনার না নিরু বোন হয়?এভাবে ভাই হয়ে কথা বলা যায়?শুনেছি,, পৃথিবীতে মানুষের সাথে উপর ওয়ালা শয়তান ও সৃষ্টি করেছে আর সেটা বোধহয় আপনি একজন।
–নিরব:দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, খুব বাড় বেড়েছো।তোমাকে তো আমি দেখে নিবোই নিবো।
–নীলা :আঙুল টা নিচে নামিয়ে কথা বলুন মিষ্টার নিরব।আমি নিরুর মতো মেধাবী না তবে ওর মতো সরল আর বোকা নই।কাউকে সম্মান দিতে না পারলে রুম থেকে বের না হয়ে মায়ের চুড়ি আর জামা কাপড় পড়ে বসে থাকবেন ওকে?তারপর নিরুর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায়। আর পিছনে দাঁড়িয়ে ফুঁসতে থাকে নিরব।

–নিরু:আমি চলে যাচ্ছি নীলা।টিসি নেওয়া হয়ে গেছে।কথাটা শোনা মাত্র ই পা দুটো থেমে যায় নীলার।
–নিরু:নীলা কে ঝাপটিয়ে ধরে বলে মিস করবো অনেক।তারপর ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়।নীলা একদম চুপসে যায়।সেই ছোট বেলা থেকে পথচলা ওদের।
–নীলা :শেষ বেলা কোথায় যাবি?সুন্দর গন্তব্য হবে না তো!
–নিরু:দূরে চলে যাবো।সেখানে শেষ বেলা নয় শুরু হবে সবটা।
–নীলা:পালিয়ে যাচ্ছিস শরীরে কাঁদা নিয়ে?
–নিরা:খানিকটা দূরে সরে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে কলেজের দিকে তাকিয়ে বলে,, মাঝে মধ্যে জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।আমি বাঁচতে চাই ব্যস।তবে আমার জীবনে ধোঁকা খাওয়ায় কিন্তু আসল কষ্ট বিষাদ নয়।আমার জীবনে রক্তের মানুষের তাচ্ছিল্যের হাত পড়েছে।অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এতিমের হক খাওয়ার ধান্দা চেপে বসেছে কিছু মানুষের।
তবে আমি ঝামেলা প্রিয় মানুষ নই অতো মানিয়ে নিতে পারি না।তবে ভালো থাকার রাখার চেষ্টা আমি করতে জানি।
তারপর চোখ মুছে বলে তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব আজীবন থাকবে।কলেজ শেষ করে আমরা এক সাথে ভার্সিটিতে পড়বো।

–নীলা:ভালো থাকিস নিরু।তোর খারাপ থাকা আমাকে ও খারাপ রাখে।তবে আমি ভীষণ একা হয়ে যাবো।তোকে মিস করবো।
–নিরু:ভাগ্য দূরে ঠেলে দিলে ও ভুলবো না তোকে।আসি বলে বের হয়ে আসে।

–রিহান বাইক নিয়ে কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। নিরব চলে গেছে আরও আগেই।রিহানের কাছে নিরব কে বিরক্ত লাগছে আজকে।এরমধ্যে চোখে পড়ে নিরুপমা কে বেড়িয়ে আসতে।
–রিহান:রিফাত জিজ্ঞেস করিস কিছু।দেখি কি বলে!
–রিফাত :কেন?আর কেন ওর পিছনে পড়ে আছিস?ওকে ওর মতো থাকতে দে।
–রিহান:পিছনে লাগছি না জাস্ট একটু খবর নিচ্ছি।

–রিফাত :গলা পরিষ্কার করে বলে নিরুপমা? তারপর এগিয়ে যায়।রিহান বাইক রেখে চুপচাপ গাছের আড়ালে চলে যায়।
–নিরু:ভালো থাকুন ভাইয়া।কলেজে একটা সময় আপনাকে নিজের ভাইয়ের মতো মনে হয়েছে।কথাটা বলতেই ছলছল করে উঠে চোখ।
–রিফাত:ক্লাস করলে না,,চলে যাচ্ছো যে?

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০১

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১]
-তামান্না

–তুই এখানে?সবাই বাইরে কি বলাবলি করছে নিরু?প্রিন্সিপাল স্যারের হাতে নাকি কি সব ভিডিও দেওয়া হয়েছে?
–নিরু:কিসের ভিডিও? আর আমিই বা কি করে জানবো?দেখতেই তো পাচ্ছিস নোট করছি।
–নীলা :হাত ধরে টানতে টানতে অফিস রুমের সামনে চলে আসে।হালকা ভীড় ঠেলে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখিয়ে বলে এসব কি?আচমকা এমন কিছু দেখে মাথা ঘুরে যায় নিরুপমার।সে কি দেখছে?আর সবাই ও দাঁড়িয়ে এসব দেখছে?

–প্রিন্সিপাল :ছিহ!কমপক্ষে নিরুপমার থেকে এটা আশা করি নি। কলেজের ফাস্ট গার্ল হয়ে কি-না,, আমার ছেলের সাথে এমন করলো?তারপর ধমক দিয়ে সবাই কে পাঠিয়ে দেয়।নিরুপমা দৌড়ে একটা রুমে চলে আসে।নিজের মুখ খামছি দিয়ে কান্না করতে থাকে।
–নীলা:কি করে হলো নিরু?এমন জঘন্য কিছু হতে পারে?
–এরমধ্যে রিফাত রুমের সামনে এসে বলে প্রিন্সিপাল স্যার তোমায় ডাকছে নিরু।তাড়াতাড়ি এসো।
–নিরু:দৌড়ে গিয়ে রিফাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলে আপনার বন্ধু কই রিফাত ভাই?এমনটা কিভাবে হলো?তারপর ফোন নিয়ে কয়েকবার কল করতেই রিসিভ হয়।
–প্রিন্সিপাল :কোথায় তুমি? অফিস রুমে এসো।তোমার সাহস তো কম নয় আমার ছেলেকে আবার ফোন করছো?
তারপর হাত থেকে ফোন টা পড়ে যেতেই ধপ করে বসে পড়লো নিরু।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়ছে।রিফাত তাড়া দিয়ে চলে গেছে।
–নীলা:রিহান ভাই কই?এমন একটা পরিস্থিতিতে ও তোকে খোঁজ করতে আসছে না??

–নীলা:স্যার যখন ডাকছেন তুই অফিসে যা নয়তো হিতে বিপরীত হবে।
–নিরু:আমি কি বলবো নীলা? স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে স্যারের ছেলের সম্পর্কে কিছু বলা যায়?
–নীলা:চিন্তা করিস না।আমি জানি তুই খুব ই ব্রিলিয়ান্ট ঠিক মোকাবিলা করতে পারবি।

–এদিকে রিহান অফিস রুমে এসে আরামে বসে আছে। তার এসব মজাই লাগছে।যে বাবা এতো দিন যে মেয়ের জন্য কান ঝালা পালা করে ফেলতো আজকেই তার বিরক্তি আসছে সে মেয়ের প্রতি।

************
–নিরু:কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, মে আই কামিং স্যার?
–প্রিন্সিপাল :এসো!
–নিরু ভিতরে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে যায় এখানে বসে আছে রিহান?তবে ভয়ে আর মাথা তুলতে পারে নি।
–প্রিন্সিপাল :তোমাকে অনেক ভালো জানতাম।আমরা কেউ তোমার থেকে এটা আশা করি নি।তুমি আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে জোর জবরদস্তি করতে পারলে?
–রিহান:শুধু আজকে না পাপা।আমাকে গত এক বছর যাবত বিরক্ত করে আসছে এই মেয়ে।আজ কাল তো কলেজে এলে একে এড়িয়ে থাকতাম। তবে আজকে আমি পারি নি।রিহানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে নিরু।

–স্যার:ছিহ্ নিরুপমা তোমার থেকে এটা আশা করি নি।অনেক জনে অনেক কথা বলে।নিরুপমা মাথা নুয়ে চোখের পানি ফেলছে।
–রিহান:চরিত্র নষ্ট মেয়ে,, আজকে তোমার জন্য আমাকে অপমানিত হতে হলো।নেক্সট টাইম এই কলেজে যেন না দেখি।আর আমি চাইবো এই মেয়ে কে যেন কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
–প্রিন্সিপাল :এমনটা হয় না।নিরুপমা একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট আর দুই তিন মাস পরেই ফাইনাল পরীক্ষা।তবে এটুকু বলবো তোমার আচরণে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।
–ম্যাম:আজকে বুঝলাম ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকলেই সারাজীবন সেরূপে থাকা যায় না।
তারপর নানা ধরনের অপমান জনক কথা শুনে #নৈশব্দে_নিরুপমা বেড়িয়ে আসে।

–অফিস থেকে বের হয়েই রিহান বন্ধুদের সাথে হাত মিলিয়ে বলে,, অবশেষে মিশন সাকসেসফুল।
–তৃণা:এটা কিন্তু ঠিক হলো না।একজন ভালো মানুষ কে ভালোবাসা দেখিয়ে আবেগ তৈরি করে এভাবে খারাপ বানিয়ে ছুঁড়ে ফেলাটা।
–সাগর:সেটা তোকে ভাবতে হবে না।
–রিহান:কষ্ট তো কম করতে হয় নি।ছয় মাস পিছনে ঘুরে ফাঁদে ফেলে তারপর ছয় মাসের প্রেম।বাপরে গোটা একটা বছর আমার অভিনয়ের মধ্যেই চলে গেলো।
–আমান:তবে যাই বলিস মেয়ে টার ক্যারিয়ার আর লাইফে একটা দাগ পড়ে গেলো।
–রিহান:এটাই তো চেয়েছিলাম।আমি এই মেয়ের জন্য পাপার কথা শুনেছি প্রতিনিয়ত।কলেজে আমাদের এড়িয়ে চলতো নিজের সস্তা এট্রিটিউড আমার সাথে দেখায়!ভাবা যায়?

–নিরু:আমি বাসায় যাবো নীলা।তবে যাওয়ার আগে প্লিজ একবার রিহানের সাথে দেখা করে যেতে চাই।
–নীলা:দরকার নাই।তুই আমার সাথে বাসায় চল।তোকে কতোবার বারণ করেছি রিহানের কথায় গলে যাস না।কিন্তু ফলস্বরূপ কি হলো?এই বাজে ভিডিও গুলা এই রিহানই করেছে এখন আমি শিউর।
–নিরু:চোখের পানি মুছে বলে তবে এগুলো সত্যি না।আমি কেমন আমি জানি আর রিহান ও জানে।হয়তো ভয়ে রিহান এমনটা বলেছে।রিহান এমন নয় বিশ্বাস কর,,একটুও এমন না।গত এক বছর যাবত আমি ওকে দেখছি।অন্য ছেলেদের মতো গায়ে পড়া স্বভাবের অশ্লীল সে নয়।সে সত্যি আমাকে ভালোবাসে।

–নীলা :বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে ভালোবাসলে কেউ অন্যের সামনে অপমান করতে পারে না।শুধু ভালোবাসলেই হয় না আগলে রাখতে জানতে হয়।নিরুর দুই গালে হাত দিয়ে ধরে বলে তুই ঠকে গেছিস নিরু,,বাজে ভাবে ঠকে গেছিস।

–এক হাতে চোখের পানি মুছে রিহান কে কল করে নিরু।দুই তিন বার রিং হওয়ার পর কল করে।
–রিহান:আবার কল করেছো?স্যার রা এতো কিছু বললো লজ্জা হয় নি?
–নিরু:কান্না করতে করতে বলে,, এখন আমি কি করবো রিহান।বাসা অব্দি এই নিউজ চলে গেলে কি জবাব দিবো?পড়াশোনা কিভাবে কন্টিনিউ করবো?তুমি তো জানো এমন কিছু না।তাছাড়া আমি এমন কিছু করি নি বরং তোমায় আটকাচ্ছিলাম।পিছন দিক থেকে খারাপ দেখা যায় মানলাম তবে খারাপ কিছু তো হয় নি।এতো বাজে ভাবে কে এমনটা করলো?
–রিহান:সেটা তোমার ব্যাপার।আর হে শুনো মরে যাও তুমি।নেক্সট আমার পিছনে লাগতে আসলে না বাকি ইজ্জত টুকুও ফিনিশ করে দিবো।কথা টা বলেই ফোন কেটে দেয়।

–রিফাত :সব কিছু ভালো হচ্ছে তো রিহান?তোর অপরাধ বোধ জাগছে না?মেয়ে টা যদি কোনো কিছু করে বসে?
–রিহান:তাহলে তুই বলে দে!এখন আমার কি করা উচিত?কোলে করে বাসায় নিয়ে বসিয়ে রাখা উচিত নাকি?
রিহানের এমন তাচ্ছিল্য কথায় রিফাত চুপ হয়ে যায়।
–এরমধ্যেই নীলা আর নিরুপমা কলেজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বাইরে আসে।
–একজন:প্রিন্সিপালের ছেলের সাথে প্রেম করার শখ না,,একদম ঘুচে গেছে।
–অন্যজন:আমি আগেই বুঝে ছিলাম এতো সুন্দর ছেলে কি-না,, নিরুর পিছনে ঘুরছে?যদিও মেয়ে টা ভালো তবে ফর্সা তো আর নয়।একেক জনের একেক কথায় চোখ টলটল করে উঠে।সেই ছোট বেলা থেকে আজ অব্ধি নিজের গায়ের রং কিংবা চেহারা নিয়ে কোনো কথা শুনে নি।কারণ তার আশে পাশে সব সময় ভালোবাসার মানুষ গুলোই থাকে।এমন টক্সিক মানুষের সাথে পরিচয়ই হয় নি।
নিরুপমা সব কিছু উপেক্ষা করে গেইটের সামনে আসতেই রিহানদের আড্ডা দেখতে পায়।এবং ওকে দেখে টিটকারি করার শব্দ টা ও কানে আসে।
–নীলা :বাদ দে,, বাসায় চল।
–নিরু:চোখ টা মুছে বলে,, বাদই দিবো তবে মন কে বুঝানোর জন্য হলেও আমার রিহানের সামনে দাঁড়ানো উচিত।নাহলে আমি শান্তি পাবো না অস্বস্তি হবে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হবে।

–নীলা কে পিছনে ফেলে কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে রিহানের সামনে দাঁড়ায়।
–রিফাত :নিরুপমা?আবার কেন?বাসায় চলে যাও সব ঠিক হয়ে যাবে।
–আমান:সবাই আরও তাচ্ছিল্য করবে এর থেকে ভালো বাসায় চলে যাও আর গিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
–নিরু:খুব সহজ?কই গত এক বছর আগে তো সবাই মিলে আপনাদের গড়ানো নাট্য মঞ্চে নিখুঁত ভাবে অভিনয় করে গেলেন।আমি তো কোনো সম্পর্কে যেতে চাই নি।আর কোনো অশ্লীলতা করি নি।তাহলে এতো বড় বদনাম কেন আমার জীবনে যুক্ত করে দিলেন?
–রিহান:বাব্বাহ!বদনাম হয়ে গেলো বুঝি?এখন কি করবে?মরে যাবে?এতো ভাব কোথায় রাখো?এমনিতেই তো ভাবে থাকতে যে কোনো ছেলে মানুষ সয্যই হয় না তারপর বড়লোক ছেলে পেয়ে ঠিকই তো গায়ে ঘা ঘেঁষে প্রেমে নেমে গেলে।কই? এখন কই গেলো ভাব?

–নিরুপমা :একজন কে ভালোবাসলে আদৌও এমন কুৎসিত ইঙ্গিত করা যায়?
–রিহান:সরি!ভালোবাসা সস্তা জিনিসে আসে না। একটু ভালো করে চেহারা টা দেখো,,আর তোমার ব্রিলিয়ান্ট মেধা ধুয়ে পানি খেও কেমন?
–নিরু:চোখের পানি মুছে জোর পূর্বক হেসে বলে বেশ।আমার বেঁচে থাকার রাস্তা টা সহজ করে গেলাম।তবে তুমি ভীষণ ভালো অভিনয় করতে জানো,,আমি মেধাবী হয়ে ও ধরতে পারি নি।প্রশংসা পাওয়ার মতো,,তারপর ভালো থেকো আমি না হয় তোমাদের সবার জীবন থেকে নৈশব্দে চলে গেলাম।
তারপর রিহানের মুখের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে চলে গেলো।এবং মনে মনে ঠিক করে নিলো এটাই হবে রিহানের সাথে তার শেষ দেখা।চুপচাপ সবার জীবন থেকে ছুটি নিয়ে আলাদা জায়গায় বসবাস করবে।
চোখ মুছতে মুছতে মাথা নুয়ে কলেজ ছেড়ে চলে যায়।

–রিহান:আমার ভালো লাগছে না আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।কালকে কলেজে আসবো না তোরা চলে আসিস।
–এদিকে নিরু ও নীলা কে নিয়ে রিকশায় চড়ে বাসায় চলে যায়।

*******
–আব্বু :সবটা কি সত্যি রিহান?
–রিহান:খাবারের প্লেট থেকে মাথা টা তুলে বলে কোনটা?
–আব্বু :নিরুপমা সত্যিই এমন করেছে?আমার তো এমন মনে হচ্ছে না।তাছাড়া সব কিছু চুপচাপ কোনো বাঁধা আপত্তি শব্দ ছাড়া মেনে নিলো।একজন খারাপ মানুষের পক্ষে আদৌও সম্ভব?
–রিহান:মাথা নুয়ে খাবার নাড়াচাড়া করে বলে তবে কি তুমি আমায় অবিশ্বাস করছো আব্বু?
–আব্বু :করা যেতেই পারে।কারণ আমি নিরুপমা কে ও বিশ্বাস করি।তুমি জানো সে আমাদের পরিবারে ও কতোটা আদরের।তোমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে,,আমি কিভাবে ওদের সামনে পড়বো?

–রিহান এবার রেগে উঠে দাঁড়ায়।তারপর চেয়ার ছেড়ে দূরে গিয়ে বলে,, তাহলে আমিই বরং বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।তোমরা সবাই মিলে ঐ মেয়ে কে নিয়ে থাকো।
–আম্মু :বেশি করছো রিহান।তাছাড়া তুমি অনেক কিছুই জানো না।
–রিহান:এতো জানতে পারবো না।একজন খারাপ মেয়ে কে সাপোর্ট করছো আ…এরপর আর কিছু বলতে পারে নি।ঠাস করে এক থাপ্পড় দিয়ে দেয় ওর আব্বু।
–আব্বু :বেয়াদব!তুমি বললেই কেন আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?তোমার কি মনে হয় আমি বোকা?একজন মেয়ে একজন ছেলের সাথে জবরদস্তি করতে পারে?এটা শুনতে ও কিন্তু হাস্যকর।যদি এমন সস্তা ক্লো দিয়ে মাথা খারাপ করতে চাও তাহলে বলবো আমি অতোটাও বোকা আর সহজ নই।তোমার আর নিরুপমার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো আমরা জানি।
–রিহান:যা জানার গিয়ে জানো।আমি আর এই বাড়িতেই থাকবো না।তোমরা বরং ঐ নিরুকেই ছেলে বানিয়ে নাও।
–আব্বু :থাকা লাগবে না।আমি এমনিতেই তোমার জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে আমি দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবো।যেদিন একজন ভালো মন মানসিকতার মানুষ হতে পারবে সেদিনই দেশে আসবে এর আগে নয়।

#চলবে

Dark Mystery পর্ব-০৯

0

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_9
#Sabrina_Summa

মাহির মিস সিক্রেটকে কল করছে। সময় প্রায় ১০ টার কাছাকাছি। তিনবারের বেলায় রিসিভ করলো মিস সিক্রেট।
মিস সিক্রেট : প্রবলেমটা কি?
মাহির আতঙ্কিত কন্ঠে বললো, ” প্লিজ হেল্প মি। আমাকে কিডনাপ করা হয়েছে। প্লিজ কাম হেয়ার কুইকলি। ”
মিস সিক্রেট : মিথ্যেটাও ভালো করে বলতে পারো না। তোমাকে কিডনাপ করা হলে কিডনাপার তোমাকে ফোন দিয়ে রেখে দিবে না?
মাহির : আ’ম সিরিয়াস। প্লিজ হেল্প মি।
মিস সিক্রেট : ওকে, জায়গার নাম বলো।
মাহির জায়গার নাম বলতেই মিস সিক্রেট “ওয়েট ফর মি ” বলে কল কেটে দিলো। কল কাটতেই মাহির চেয়ারের উপর পা তুলে একটা শয়তানি হাসি দিলো৷ কিছুক্ষণের মাঝেই মিস সিক্রেট চলে এলো। ভিতরে প্রবেশ করতেই মিস সিক্রেট বিরক্তিতে ভ্রু কুচকালো৷ বিড়বিড় করে বললো, ” বরিং পরিবেশ। এই ঝাপসা আলো আর ভালোই লাগে না।”
মাহিরকে চোখে পড়তেই বললো, ” তাহলে তোমার বডিগার্ড তোমাকে কিডনাপ করেছে! ”
মাহির হেসে বললো, ” আরে না। এইটা তো একটা ফাঁদ ছিল তোমাকে আনার। ”
মিস সিক্রেট বিরক্ত হয়ে বললো, ” তা তো আমি জানতামই। দেখো নি ইরফানকে নিয়ে আসি নি। এখন বলো এত আদর যত্ন করে ডাকার কারণ কি? ”
মাহির : তুমি বাবাকে বলেছো আমি একটা মেয়েকে বাসায় নিয়ে গেছি?
মিস সিক্রেট : হ্যাঁ, ভুল কি বলেছি!
মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীকে এ কথা জানাতো না। তবে তার খুব খারাপ লেগেছে ইরফানের কাছে এটা জেনে যে অজ্ঞান হওয়ার সময় মাহির এত কাছে থাকার পরও তাকে পরার সময় ধরেনি। সে কি ইচ্ছা করে পড়েছিল! তার জায়গায় যদি সুপ্তি থাকতো তাহলে কি মাহির সুপ্তি কে ধরতো না! মূলকথা, সুপ্ত একটা রাগ থেকেই তার এ কাজ করা ।
মাহির এতক্ষণ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু শেষে আর না পেরে মিস সিক্রেটের পায়ে শুট করলো।
সাথে সাথে মিস সিক্রেট বসে পড়লো। রাগে নিজের গান দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মাঝে ৬ টা শুট করলো মাহির ও তার বডিগার্ডের পায়ে। তবে তা একটুর জন্য লাগলো না।
মাহির তিরস্কার করে বললো, ” গুলি খেয়ে শুট করা ভুলে গেলে নাকি?”
মিস সিক্রেট তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ” ভাগ্য ভালো তোমাদের। রাগ হলেও মারা ইচ্ছেটা নেই। না হয় মিস সিক্রেটের নিশানা কখনো মিস হয় না। ”
এরই মাঝে বাহিরে এ্যাম্বুলেন্সের শব্দ পাওয়া গেল। তাই সকলেই বাহিরে চলে গেলো।
মাহির গাড়িতে উঠতে উঠতে একটা নার্সকে বললো, ” ওকে হসপিটালে নিয়ে যাও। পেমেন্ট করা আছে। ”
মিস সিক্রেট প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে চলে গেল। অপারেশন করে গুলি বের করা হলো। ভাগ্য ভালো গুলি হাড়ে লাগে নি। এখন রক্ত দেওয়া হচ্ছে
বাহিরে ইরফানসহ অনেক বডিগার্ড পাহাড়া দিচ্ছে। এ্যাম্বুলেন্সে উঠার সময়ই ইনফর্ম করে দিয়েছিল ইরফানকে৷ অনেকদিন পর মাহির কল করলো সুপ্তিকে। প্রথম কলেই রিসিভ করলো সুপ্তি। এতে অবশ্য কিছুটা অবাক হলো মাহির।
তবুও স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো, ” সেই রাতের পর তো আমার সাথে কথা বা দেখা করছো না। কেমন আছো তুমি? ”
সুপ্তি চিৎকার করে বললো, ” জুতা মেরে গরু দান করছেন! ”
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” মানে! আমি কি করলাম। ”
সুপ্তি : কিছু না।
বিরক্তি নিয়ে কল কেটে দিলো।
কারো পায়ের আওয়াজ শুনে মাস্ক আর হুডির টুপিটা পড়লো। শ্বাস নেওয়াতে কষ্ট হওয়ায় খুলেছিল ৷

মাহফুজ চৌধুরী কেবিনে প্রবেশ করে বললো, ” কেমন আছো তুমি? ”
মিস সিক্রেট কেবিন বেডে হেলান দিয়ে বললো, ” আপনার ছেলে ভালো থাকতে দিলো কোথায়! ” মাহফুজ চৌধুরী : ভর্তি তো আমার ছেলেই করিয়েছে।
মিস সিক্রেট : গুলিটাও তো আপনার ছেলেই করেছে। মাহফুজ চৌধুরী অবাক হলেন। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানতো না।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ” আমার ছেলেকে আমি শাস্তি দিবো। প্লিজ তুমি কিছু করো না। ”
মিস সিক্রেট সোজা হয়ে বসে বললো, ” এখনো তাই বলবেন! ”
মাহফুজ চৌধুরী ভয়ার্ত স্বরে বললো, ” তাছাড়া কি বলবো! মারতে বলবো? নিজের ছেলেকে মারার পারমিশন দিবো? ”
মিস সিক্রেট তিরস্কার করে বললো, ” আপনার জন্যই আপনার ছেলে এখনো বেঁচে আছে। না হয় মিস সিক্রেটের দিকে গুলি চালানোর শাস্তি বুঝে যেতো। ”
তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো, ” টেনশন করবেন না। আমি আপনার ছেলেকে মারবো না। ”
মাহফুজ চৌধুরী : আমি জানি মিস সিক্রেট নিজের কথার নড়চড় করে না। আজ যাচ্ছি। ভালো থেকো। তাশরিফকে বাসায় গিয়ে আমি দেখছি। ( রেগে )
মিস সিক্রেট : ওকে, যান।
মাহফুজ চৌধুরী ও তার বডিগার্ড চলে যেতেই একজন ডক্টর দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, ” ম্যা আই কাম ইন ম্যাম। ”

#চলবে.,.

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৫

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৫
সায়না বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি পরেছে, হাত ভর্তি দোলনচাঁপা ফুল আরেক হাতে একটা কেক৷ গেটের সামনে আসতেই দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো, কাকে চাই?
“ডাক্তার অনিকেত মাহমুদ।”
” স্যার তো এই এপার্টমেন্টে ছেড়ে চলে গেছেন৷”
“আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো?”
” আপনাকে মিথ্যে কেন বলবো!সত্যি স্যার নতুন এপার্টমেন্টে উঠেছেন৷”
“সেটা কোথায় বলতে পারবেন?”
” নাহহ ম্যাডাম সেটা তো জানিনা৷”
“সায়না হতাশ হলো। চোখের কাজল খানিকটা লেপ্টে গেলো চোখের জলে। কেকটা রিকশায় রেখে কল করলো অনিকেতকে। সায়না বুঝতে পারলো অনিকেত তার নাম্বার দু’টো ব্লক করে দিয়েছে।”
” কই যাবেন ম্যাডাম?”
“রামপুরা নতুন বাজার।”
” রিকশা চলছে আপন গতিতে। সায়না ভেবে পাচ্ছে না কোথা থেকে ঠিকানা জোগাড় করবে। হঠাৎ মনে পরলো জিয়ানের কথা। সাত পাঁচ না ভেবে অসাধ্য সাধন করেই বসলো৷ জিয়ানকে কল করে বলে,অনিকেতের ঠিকানা বলো তো।”
“জিয়ান অবাক হয়ে বলে,তোর থেকে কমছে কম ১৩/১৪ বছরের বড় হবে ভাই বলে সম্বোধন কর।”
” ভাইয়া না ওই আবাল ডাক্তারকে ছ্যাইয়া বানাবো ঠিকানা দাও।”
“কিন্তু?”
“কোন কিন্তু মিন্তু নাই না দিলে এখন আমি গাড়ির নিচে ঝাপ দিবো।”
“দাঁড়া দিচ্ছি হোয়াটসঅ্যাপ চেক কর। বাপরে বোন আমার জুলিয়েট হয়ে উঠেছে।”
” তোমার বন্ধুকে বলে দিও বিয়ে আমি তাকেই করবো৷ যতই উড়ুক ঘাড় ধরে আমার আঁচলেই বাঁধবো। চুল বেঁধে নেই৷ আমিও যাবো আপনার সাথে।”
“ঠিক আছে চলো তবে বাসায় কাউকে বলবে না আমরা তোমাদের বাসায় যাচ্ছি।”
“কেনো আমরা কি চুরি করতে যাচ্ছি?”
” বেশি কথা না বলে রেডি হও।”
নিচে এসে সবার সাথে খেতে বসলো নয়না৷
নাজিম চৌধুরী নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,”আম্মাজান আপনি আমার সাথে দেখা করলেন না কেনো?”
“নয়না হতভম্ব হয়ে গেলো!তার বাবাও তাকে আম্মু ডাকে সব সময়। নয়নার চোখের কোন ভিজে উঠলো”
” নাজিম সাহেব মুচকি হেসে বলেন,আম্মাজান আমি আপনার শ্বশুর না আমি আপনার ছেলে মনে থাকবে তো?”
“নয়না বলল জ্বি আংকেল।”
” আঙ্কেল না বাবা বলবা।”
“জাহিন আড় চোখে নয়নার দিকে বার কয়েক দৃষ্টি দিলো৷ মনে মনে বলে,মেয়েটা অদ্ভুত রকমের মায়াবী!”
” মিতা বেগম জিজ্ঞেস করলো,তোমরা রেডি হয়ে খেতে বসেছো কোথাও যাচ্ছো নাকি?”
“জিয়ান বলল,হ্যা আম্মু ওর জন্য শপিং করবো।”
” খাওয়া শেষ হতেই নাজিম চৌধুরী জিয়ানের হাতে হাজার টাকার এক বান্ডিল ধরিয়ে দিয়ে বলে,আমার আম্মাজান আমার টাকায় শপিং করবে। নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে,আম্মাজান যা ইচ্ছে কিনবেন। আপনার জন্য আপনার ছেলের টাকা অফুরন্ত।”
“সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নয়না,আর জিয়ান বের হয়ে আসলো। গেটের সামনে এসে রিকশা ডাকলো।
“নয়না বলে,এতোগুলা গাড়ি থাকতে রিকশা কেন!”
” সুন্দরী বৌয়ের সাথে রিকশা ভ্রমণ করার মজা কি আর গাড়িতে পাওয়া যায়? বৌ পাশাপাশি ঘেঁষে বসবে,রিকশার ঝাঁকিতে আমার বাহু চেপে ধরবে। এই ফিলিংস কি গাড়িতে পাওয়া যাবে বাটার মাশরুম।”
“রিকশায় উঠে বসলো দু’জন হুট তোলা রিকশায় দু’জন গা ঘেঁষে বসে আছে। নয়নার মনে হচ্ছে এটা কোন সিনেমা! তার পাশে বসে থাকা হ্যান্ডসাম ছেলেটা হিরোর থেকে কোন অংশে কম না, রয়েল ব্লু রংয়ের শার্ট ফরমাল প্যান্ট। শার্টের হাতা ভাজ করে রাখা, চুলগুলো স্পাইক করা,হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। উফফ কি মারাত্মক সুদর্শন এক যুবক তার পাশে বসে আছে!”
” জিয়ান নয়ান হাত নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে বলে,তুই হাতে রাখলে হাত, পাড়ি দিবো আমি সুদীর্ঘ পথ, তুই পাশে থাকলে রাঙিয়ে দেবো গোধুলির বিকেল।”
“নয়নার ভালো লাগছে মূহুর্তটা সব কিছু যেনো স্বপ্নের মত লাগছে।”
” বৌ তুমি কিছু বলছো না কেন?”
“আপনি আমাকে ভালোবাসেন?”
” জিয়ান নয়নার এমন প্রশ্নে থমকে গেলো।”
“সব প্রশ্নের উত্তর হয়না। কিছু প্রশ্নের উত্তর অনুভব করে নিতে হয় প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।”

🌿

তালুকদার বাড়ির পরিবেশ থমথমে।
মিজান তালুকদার, মাহবুব তালুকদার, লতা বেগম, নীলাঞ্জনা সবাই একত্রে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
” নয়না বাসায় ঢুকেই বাবা বলে,মাহবুব তালুকদারকে জড়িয়ে ধরলো।”
“জিয়ান সবাইকে সালাম করে বসলো একটা সিঙ্গেল সোফায়।”
” নীলাঞ্জনা জিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো হ্যান্ডসাম এতো রিচ একটা ছেলেকে সে হাতছাড়া করলো! আফসোস করছে মনে মনে।”

“বাবা এখানে কি হচ্ছে?নয়নার প্রশ্নের উত্তরে মিতা বেগম বললেন, তোমার স্বামীর কুকীর্তির বিচার সভা৷”

“নয়না ভ্রু কুঁচকে বলে,জীবনে নিজের মেয়ের কুকীর্তির বিচার করলেন না আর আসছেন পরের ছেলের বিচার করতে! বাহহহহ সো নাইস!”
“জিয়ান নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল,সুনয়না একদম চুপ করে থাকো। আঙ্কেল এবার বলুন আমাকে কেনো ডেকেছেন?”
” মাহবুব তালুকদার নরম স্বরে বলল,দেখো বাবা এভাবে তোমাকে নিয়ে বসা আমাদের উচিত না কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে এতো বড় এলিগেশন আনার পরে আর উপায় পেলাম না।”
“আঙ্কেল আপনি যা বলতে চাইছেন নির্দ্বিধায় নিজের ছেলে ভেবে বলে ফেলুন।”
“তুমি পরশু রাতে নীলাঞ্জনার সাথে ছিলে? নীলাঞ্জনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেছো?”
” নয়না বলল এসব কি বলছো বাবা! পরশু রাতে তো আমরা বিচে ছিলাম।”

“মিতা বেগম ফুঁসে উঠে বলে,এইটুকু মেয়ে কি পাঁকা পাঁকা কথা! তুই চুপ কর একদম।”

“আঙ্কেল দেখুন আমি এমন একজন মানুষ যে একবার কিছু ছেড়ে দিলে দ্বিতীয়বার তার দিকে দৃষ্টিও দেইনা। থুতু ফেলে যেমন দ্বিতীয়বার ফেরত নেয়না আমিও কিছু মানুষকে থুতুর মত ফেলে দেই চিরজীবনের জন্য।”
“নীলাঞ্জনা বলল,তুমি মিথ্যে কেন বলছো রেজা? তুমি এখনো আমাকে চাও সেটা বলো তাহলেই সমস্যা শেষ।”
“জিয়ান নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে,জিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে কপালের রগ ফুলে উঠেছে চোখ লাল হয়ে গেছে।”
“নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে নীলাঞ্জনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুমি যদি সম্পর্কে আমার বড় বোন না হতে তাহলে এতোক্ষণে তোমার গালে দুই চারটা থাপ্পড়ের দাগ থাকতো। তোমার নিজের চরিত্রে সমস্যা তাই অন্যকেও তেমন মনে করে। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,যেটা তুমিও জানো তবুও বলছি যে তোমার মত মেয়েকে কোলে তুলে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে সে হলো আমার দেবর জাহিন চৌধুরী। সো এসব আষাঢ়ে গল্প বলে লাভ নেই৷ আমার হ্যাসবেন্ড তোমার মত মেয়েদের দিকে ফিরেও তাকায় না।”
“নয়না বড্ড বেশি বলছিস তুই! আমার আর রেজার মাঝখানে আসবি না।”
“নয়না জিয়ানের হাত ধরে বলে,উঠুন।”
” জিয়ান সেভাবেই বসে আছে৷”
“নয়না চিৎকার করে বলে,উঠতে বলেছি তো। যেখানে আমার হ্যাসবেন্ডের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়, যেখানে বাড়িতে ডেকে এনে আমার হ্যাসবেন্ডকে অপমান করা হয় সেই বাড়িতে আর এক মূহুর্তের জন্য থাকবো না।সারাজীবনের জন্য এদের আমি ত্যাগ করবো।”

” জিয়ান তার ষোড়শী বৌয়ের দিকে অপলক দৃষ্টি মুগ্ধ নেত্রে তাকিয়ে আছে। তার বাচ্চা বৌটা তার সম্মানের জন্য লড়াই করছে! জীবনে যা হারায় তা হারানোই যেনো মঙ্গল। নয়ত এমন অর্ধাঙ্গিনী কোথায় পেতাম!”

“জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,শান্ত হও সুনয়না৷ আমি তোমার বাবার সাথে একটু কথা বলবো৷”
” কিছু বলতে হবে না। আমার বাবার কাছে তার ভাইয়ের মেয়েই সব৷ থাকুক সে তাদের নিয়ে৷”

“জিয়ান মাহবুব তালুকদারকে উদ্যোগ করে বলল,আঙ্কেল এই বাড়িতে শুধুমাত্র আপনি জানেন আমার জমজ ভাই আছে।আর নীলাঞ্জনাও জানে। ওর মত মেয়ের কাছে এসব করা আহামরি কিছুই না। কারন লজ্জা, বা মানসম্মান কোনটাই নেই ওর। আমি আর নয়না পরশুদিন চট্টগ্রাম ছিলাম। আপনাকে হোটেলের নাম বলছি আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আজকের মত আসি আঙ্কেল। আম্মা ফিরলে নয়নাকে নিয়ে অন্যদিন আসবো।”

“জিয়ান নয়না বের হয়ে গেলো৷

“মিজান তালুকদার মাথা নিচু করে বসে আছে,তার চোখ দুটো অশ্রুত টইটম্বুর পুরুষ না হয়ে মহিলা হলে এতোক্ষণ চিৎকার করে কান্না করতো। মিজান তালুকদার লজ্জিত কন্ঠে বলল,ভাই আমাকে ক্ষমা করে দিও কথায় আছে বাপ ভালো তার ছেলে ভালো, মায়ের গুণে ঝি। আমার মেয়ের মধ্যে এই অসভ্য মহিলার ছায়া দেখতে পাচ্ছি। ঠিক তার মায়ের মত হয়েছে। মানুষ নিজে খারাপ হলেও সন্তানকে ভালো পরামর্শ দেয় আর এই রাক্ষসী মহিলা মেয়েটাকেও শেষ করে ছাড়লো। সাথে আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিলো।”

#চলবে