Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 12



নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
#শেষ_পর্ব
-তামান্না

–রাফি:হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের উপর এনে ফেলে রিফাকে।হঠাৎ টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলায় ভয় পেয়ে যায় রিফা।
নেশা জড়া কন্ঠে বলে কেন আমায় বুঝো না?একটু বুঝলে আরও আগেই সুন্দর হতো।
–রিফা:মুখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলে,, তাহলে আপনি কেন আমার সামনে পাগলামি করলেন না?আগে কেন আসলেন না?তাহলেই তো মনে জুলুম করে আরেক জন আসতে চেষ্টা ও করতে পারতো না।
–রাফি:জোর পূর্বক হেসে বলে,, এসেছি আরও আগেই আবেগে পাগলামি তে না,, ভালোবাসায়।কিন্তু তুমি সেটা দেখতে পাও নি।
রিফা তড়িঘড়ি করে দূরে সরে দাঁড়ায়। রাফি আবার কাছে টেনে নেয়।
–রিফা:আপনার কি হয়েছে?এমন করছেন কেন?তাছাড়া আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনার দুশ্চরিত্র সম্পর্কে জানলে কষ্ট পাবে।
–রাফি :শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে আপাতত কষ্ট পাক।হুট করে কপালে চুমু খেয়ে বলে ভালোবাসি রিফু।প্রথম থেকে শেষ অব্ধি তোমাতেই আমি।
মজা করে বলে অবশ্য মাঝখানের এই ভুলের জন্য বেশি করে ভালোবাসা দিলেই ভুলে যাবো।রিফা হাসতে হাসতে কয়েক টা কিল মারে।

–নিরু গলা খাঁকারি দিয়ে বলে আসবো?তাড়াতাড়ি করে দুজনে সরে দাঁড়ায়।ভিতরে এসে মুচকি হেসে বলে,,হালালে আবদ্ধ করে তাড়াতাড়ি পেতে চাইলে নিচে আসেন হবু বর কনে।
–রিফা:এগিয়ে এসে বলে মানে?
–নিরু:মানে হলো রাফির আর ছুটি নেই তোমার ভাইয়ার ও শহরের বাইরে কাজ পড়ছে সুতরাং বিয়ে টা কালকেই হয়ে যাবে।কাবিন বিয়ে তারপর..
–রিহান :এগিয়ে আসতে আসতে বলে তারপর দুই মাস পর দুই ভাই বোন মিলে আবার বিয়ে করবো।
–রিফা:কিহ?আমি আবার বিয়ে করবো কেন? একটা বর হলেই হয়ে যাবে আমার।এতো বিয়ে করতে পারবো না বাবা!
রিফার কথায় সবাই হেসে ওঠে।
.
.
–রাত এগারোটায় বউ নিয়ে চলে যায় রাফি।তেমন বেশি আয়োজনে বিয়ে হয় নি।ঘরোয়া ভাবেই কাবিনের কাজটা শেষ করা হয়েছে।রিফার বিদায়ের পর,,সব কিছু গুছিয়ে রুমে আসে নিরু।
–কিন্তু রুমের ভিতর থেকে দরজা আটকানো।এমনিতেই পড়নে শাড়ী এবার ভীষণ গরম লাগছে।কয়েক বার দরজায় টোকা দেওয়ার পর দরজা খুলে দেয় রিহান।ভিতরে প্রবেশ করে দেখে রুমটা অন্ধকার।এগিয়ে গিয়ে লাইটটা অন করতে গেলে এক টানে কাছে টেনে নেয় রিহান।নিরু ভয় পেয়ে যায়।শাড়ীর কুচি খুলে গেছে।
–নিরু:ছুটাছুটির চেষ্টা করে বলে,,আর একটু হলে দুজনেই পড়ে যেতাম।কি হতো তখন?
–শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় রিহান।রিহানের এমন স্পর্শে স্তব্ধ হয়ে যায় নিরু।চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস নিতে থাকে।
–নিরু:ছছছাড়ুন শশশুতে যযযাই।
–রিহান :কোলে তুলে নেয় নিরুকে।তারপর এগিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।উঠে লাইট অন করতে এলে নিরু হাত ধরে আটকে নেয়।এমনিতেই লজ্জা লাগছে তারপর লাইট অন করলে তো লজ্জায় মরেই যাবে।

–রিহান শুতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিরু।বুকে মাথা গুজিয়ে বলে,,শুরুতেই এমন হলে কি এমন ক্ষতি হতো?
–রিহান :নিরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,, মাফ করে দিও।হয়তো এতটুকু হয়েছে বলে আজকের দিনটা এতো সুন্দর।সহজে সব কিছু হয়ে গেলে তৃপ্তির মজা পাওয়া যায় না।
আজকের দিনে লজ্জা দিও না বউ।পবিত্রতার আরও একটু ধাপ এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিবে কি?আমি যে বউয়ের তৃষ্ণায় কাতর হয়ে আছি আর কতো?
–নিরু:নিরু লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে আমি মানেই তো পুরোটাই আমার বরের।এতে এতো অনুমতির কিছু নেই।
–রিহান :হাসতে হাসতে বলে ব্যাপারটা বেশি লেট হয়ে গেলো না?ছোট বোনের বিয়ের দিন বড় ভাইয়ের বাসর হলো।
–নিরু লজ্জায় হাসে।

–তারপর সুন্দর একটা একটা সম্পর্কের আরও একটা নতুন তৃপ্তির স্বাদ নেওয়া হলো।নিরুর কপালে চুমু খেয়ে বলে,,আমি চাই আমার বউ সব সময় আমার উপর অধিকার খাটাক ভালো মন্দ চোখে চোখ রেখে মোকাবিলা করুক।আমি চাই না সব সময় #নৈশব্দে_নিরুপমা আমায় ত্যাগ করুক দূরত্ব বাড়াক।
–নিরু:হুম!আমি ও চাই আমার বর ভালোবেসে সব সময় আমায় নিরুপমা বলেই সম্বোধন করুক।তোমার মুখে নিরুপমা নাম শুনলে অদ্ভুত ভালো লাগে।
–রিহান :বুকের সাথে মিশিয়ে বলে আমার নিরুপমা।ভালোবাসা শব্দ টার সার্থক হলো আমাদের জীবনে।এতো দিন ভালো ছিলাম না,, শুনছো আমি আমার ভালোবাসা পেয়ে ভালো আছি।আমার সঙ্গী আজ আমার সাথে আষ্টেপৃষ্টে ভালোবাসাময় হয়ে আছে।
–নিরু রিহানের কথায় শুধু হাসে।প্রিয় ভালোবাসার পুরুষের বুকে মাথা রাখায় ভীষণ শান্তি।

——————————————— –এদিকে রাফিরা বাসায় পৌঁছে রাত সাড়ে এগারোটায়।রিফাকে নিয়ে বাইকে করেই ফিরে। পুরো চারপাশ ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।
–রাফি:শ্বশুর বাড়িতে প্রথম পা দিচ্ছো অনুভূতি কেমন?
–রিফা:মোটে ও না,,আমি শ্বশুরবাড়ি বহু এসেছি সুতরাং অনুভূতি নেই।
–রাফি:বিয়ে কয়টা হয়েছে তোমার?কতো বিয়ে করেছো যে শ্বশুর বাড়ি বহু এসেছো?
–রিফা:আরে ভাই!কয়টা না আমি বলতে চাচ্ছি এই বাসায় তো বহু এসেছি।
–রাফি:কে ভাই?কিসের ভাই? কেমন ভাই?
–রিফা:তুমি বরং এক কাজ করো আমাকে তাড়াতাড়ি করে শ্বশুর বাড়িতে রেখে চলে যাও।তোমার সাথে থাকলে আমার শুধু ঝগড়ায় হবে এর থেকে ভালো আমাকে রেখে তুমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে।
–রাফি :তাহলে বিয়ে কেন করলাম?বিয়েই তো করলাম বউকে জ্বালানোর জন্য।আর আমার এতো দিনের অপেক্ষার জন্য প্রতিশোধ তো নিতেই হবে।
–এবার রিফা বাইকের পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মাথাটা রাফির পিঠে রেখে বলে,, শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো নিতে পারবে প্রতিশোধ?
–মাথাটা তুলে লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখে রাফি মুচকি হাসছে।

–বাসায় পৌছানোর পর সব নিয়ম শেষ করা হলে রুমে দিয়ে আসে শ্বাশুড়ি।বাসায় মেয়ে মানুষ বলতে এই শ্বাশুড়িই আছে।রাফির কোনো ভাই বোন নেই।

–রুমে গিয়ে আগে দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নেয়।রাফি আগে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে।তারপর রিফা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে বলে,,তুমি চাকরিতে চলে গেলে কিভাবে থাকবো?এই বাড়িতে একটা মানুষ ও নেই তাছাড়া আন্টি ও তো আঙ্কেলের সাথে থাকে।আমি একা কিভাবে থাকবো?
–রাফি :তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চা নিয়ে নিলেই তোমার সঙ্গী হয়ে যাবে,,মজা করেই কথা টা বলে ।কথাটা শুনে নিরুর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়।চুপচাপ অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।

–রাফি:ঘুম পেয়েছে
–রিফা:নাহ মানে হ্যা।
–রাফি:উঠে রিফার দিকে ঝুঁকে বলে আজকের দিনে ও তুমি নিরবের শোকে আমাকে দূরে রাখবে?
–রিফা:ফট করে উঠে বসে।তারপর কান্না করে দেয়। রাফি হাত ধরতে গেলে ঝটকা মারে।কান্না করতে করতে বলে এটা কিন্তু কথা ছিলো না।

–রাফি:কানে ধরে বলে প্লিজ থামো আর হবে সরি।প্লিজ সরি।
–রিফার কান্নার গতি আরও বাড়ে।
–রাফি:এগিয়ে এসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে সরি বউ।তুমি তো জন্মের সময় থেকেই আমার বউ আর এমনটা হবে না।আমাদের ভাগ্য নাম সবটাই তো একসাথে জোড়ে পাঠিয়েছে উপর ওয়ালা।আমি তো তোমাকে রাগানোর জন্য এই কথাটা বললাম।প্লিজ আর হবে না। তারপর রিফা ঠাস করে বুকে এসে পড়ে ঝাপটায় ধরে।সম্পর্কে পূর্ণতা নেমে আসে নতুন জুটির।
.
.
–সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে গোসল শেষ করে রিহান কে নিয়ে বের হয় নিরু।প্রথমে বাবার কবর তারপর নীলা আর ওর বরের কবর জিয়ারত করে।তারপর গিয়ে উঠে রাফিদের বাসায়।ভোরে বের হওয়ায় এখানে আসতে তেমন বেলা হয় নি।
রিফার পছন্দের কিছু খাবার নিয়ে এসেছে।সাথে মেহমান বাড়ির জন্য কিছু উপহার।
–রাফির আম্মু :তোমাদের সকাল সকাল পেয়ে ভীষণ খুশি হলাম।তোমরা বসো আমি নাস্তা করে আনছি।
–নিরু:মোটেও না।রিফা কই আন্টি আজকে আমরা দুজনে রান্না করবো আপনারা খাবেন।
–আন্টি:আসলে অনেক রাত করে এসেছে তো তাই ওঠে নি এখনো।রাফি উঠে ছিলো আমিই রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি ঘুমানোর জন্য।
–নিরু:আমি ডেকে আনছি আপনি ড্রয়িং রুমে বসুন আজকে মেয়েদের হাতের রান্না খাবেন।রাফির মা হেসে বলে এখন আমার মিষ্টি দু দুটো মেয়ে হয়ে গেলো।নিরু ও প্রতি উওরে হাসে।

–নিরু কয়েকবার দরজায় টোকা দেওয়ার পর উঠে দরজা খুলে দেয় রাফি।নিরুকে দেখেই চমকে যায়।
–নিরু:কই আমার ননদিনী হুম?এতক্ষণ কেউ ঘুমায়?উঠতে হবে তো তারপর আবার রেস্ট নিবে না হয়।
–রাফি কিছু বলতে যাবে তারপর আগেই চোখ যায় রিফার দিকে।কালকে রাতে গরম থাকায় রাফির টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়েই শুয়ে ছিলো।লজ্জায় জোর পূর্বক হেসে কোনো রকমে কাপড় নিয়ে বের হয়ে যায়।গেস্ট রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিবে।

–নিরু:কি গো রিফা উঠো।অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর উঠে বসে।লজ্জায় নিজেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে গরম করছিল বেশি তা..।
–নিরু:হয়েছে।এবার ফ্রেশ হয়ে আসুন জলদি। সবার জন্য দুজনে মিলে নাস্তা টা করবো।

–নতুন দুটি সংসার নতুন প্রাণ নিয়ে সতেজ হলো।ওদের এই পৃথিবীর যাত্রা দীর্ঘতম হোক।সকল ভুল বুঝাবুঝি আর অভিমান শেষ হয়ে নতুন সম্পর্ক স্থাপন হোক।ভালোবাসা ভালো থাকুক।ভালোবেসে ভালো থাকার জন্যই তো জীবন সঙ্গী।

(সমাপ্ত)

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৭

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৭]
-তামান্না

–আমি চাই আমার নিরুপমা আমার রাগকে পাত্তা না দিয়ে,, আমার বদমেজাজে গরম পানি ঢেলে দিয়ে একেবারে ঠান্ডা করে দিক।আমি জানি আমার মতো পুরুষ কে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা আমার নিরুপমার আছে। শুধু সেটা একটু প্রয়োগ করুক আমার বউ।
নিরু এবার শান্ত মেয়ের মতো কান্না করে শব্দ ছাড়া।রিহান বুঝতে পারছে কারণ তারপর টিশার্ট পুরো টা ভিজে যাচ্ছে।

–এভাবেই এক সময় দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে।পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে পড়ে রিহান।

–নিরুর মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে কপালে চুমু খেয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এতো দিনের ছটফটানি নিমিষেই দূর করে দিতে পারে এই সুন্দর অনুভূতি।পৃথিবীর সব থেকে স্বস্তির আর আরামের অনুভূতির মধ্যে এটা একটা।শুয়ে শুয়ে অনেক কিছু ভাবতে থাকে রিহান।
এরমধ্যে নিরুর ঘুম ভেঙে যায়।রিহান ঘুমের ভান করে থাকে।চুপিচুপি উঠে বসে নিরু,,রিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে হাসি দিতেই দেখে তাকিয়ে আছে রিহান। লজ্জায় তাড়াতাড়ি করে উঠে যেতে নিলে রিহান একটানে নিজের উপর এনে ফেলে।
–রিহান :লজ্জা নারীর ভূষণ তবে স্বামীর সামনে অতো দরকার নেই।নিরু লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে।রিহান ঠাট্টার ছলে বলে,, আমি একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।
–নিরু:কি বিষয়?
–রিহান :সব সময় ভাবতাম যা লাজুকে বউ আমার ধরা কি সহজে দিবে?এখন দেখছি ধরা আসলেই দিচ্ছে না।
নিরু হালকা কিল দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।খানিকটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,, রিফা?ওর ব্যবস্থা?

–রিহান :উঠে দাঁড়িয়ে বলে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।বাসায় ফিরবো তবে আশা করি ফিফটি পার্সেন্ট কাজ এগিয়ে আছে।তারপর রাফির কাহিনি খুলে বলে।

–এদিকে সকাল থেকে মনমরা হয়ে আছে রিফা।ফোন টা ও বন্ধ।সে পণ করেছে এই ফোন আর ব্যবহার করবে না।নিজের উপর রাগ হচ্ছে কেন এমন বাজে ভাবে জড়ালো বাজে লোকের সাথে?

*****************
–রিহান নিরু রাফি রিফা আর নিরব।সবাই মিলে উপস্থিত হয়েছে একটা রেস্টুরেন্টে।নিরব তো ভীষণ খুশি ভেবেছে রিফা রাজি করিয়ে ওদের এনেছে।রিহান আর নিরু খানিকটা দূরে অবস্থান করছে।ফোনে কিছু কথা বলছে এরপর সামনে আসবে।
–রাফি:তুই ওদের জন্য কেন রিফার দিকে হাত বাড়িয়েছিস?ওদের সামনে তো ভীতুর মতো চুপসে থাকিস,মেয়ে মানুষের দিকে নরম ভেবে চোখ তোলা তো?
–নিরব:তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই।রিফার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, কথিত প্রেমিককে নিয়ে কেন আসলা?রাফি শোন তোর চরিত্র সম্পর্কে জানা আছে।রিফা আমায় ভালোবাসে বলে হিংসা হচ্ছে তাই না?নিজে তো ধারে ও ঘেঁষতে পারলি না।
রাফি রাগে হাত মুষ্টি করে ফেলে।

–রিফা:তোমার সাথে সারাজীবন থাকবো তাই তো?
–নিরব:হুম অবশ্যই!
–রিফা:তাহলে শুরুতেই যদি আমার লোকের কথা সয্য না করতে পারো,, সারাজীবন কিভাবে থাকবো?
–নিরব:হাসার চেষ্টা করে বলে,,কোল বেবি।আর রাফি তো তোমার লোক নয়!
–রিফা:সেটা তুমি বললেই তো হবে না।আমার লোক কে সেটা আমি বলবো।
–নিরব:উঠে দাঁড়িয়ে রিফার হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, এতো ত্যাড়া কথা কই থেকে শিখলি?
–রাফি:ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে বলে,, দূরত্ব বজায় রেখে কথা বল।মেয়ে মানুষ কে সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখ।
–নিরব:এগিয়ে আসতে আসতে বলে লাগে?খুব লাগে?সুন্দরী হাত ছাড়া হয়ে গেলো বলে?আহা রে মা*ল টারে আমি পেয়ে যাবো,,আফসোস হচ্ছে?
–রিফা:ছি ছি ছি!এগুলো কোনো মানুষের ভাষা?
–রাফি :দুই তিন টা ঘুষি মারে।এক পর্যায়ে ভালোই হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।রিফা ভয়ে ওদের আটকাতে না পেরে কান্না করে দেয়।

–নিরব:তুই আমাদের মধ্যে আসিস না রাফি।জাস্ট কয়েক দিন আমার হাতে দে তারপর তোর হাতে দিয়ে দিবো।
আরও অনেক গুলো নোংরা ভাষা ইউজ করে।

–হিতে বিপরীত হওয়ার আগেই পুলিশ সহ এসে উপস্থিত হয় রিহান আর নিরু।
–নিরব:রিফার দিকে তাকিয়ে বলে ভাইয়ের মতো করলি তো?তোকে আমি দেখে নিবো।দেখবো জীবনে কিভাবে বিয়ে বসিস।
নিরু এগিয়ে গিয়ে রিফাকে জড়িয়ে ধরে।রিফা ভয়ে বাচ্চাদের মতো গুটিয়ে আছে।
–নিরব:পাগলের মতো হাসতে হাসতে বলে নিরু? আমি ফিরে আসলে তোর ভালো হবে না।শুধু সবুর কর তোর অস্তিত্ব মুছে দিবো।
–রিহান :হাতটা মুচড়ে কয়েক টা লাত্থি মেরে বলে আগে নিজের চিন্তা কর।পৃথিবীর বুকে রিহানের শেষ নিশ্বাস অব্দি তোর অস্তিত্ব সংকট হবে।নিরু আর রিফা আমার দুই পাশ ওদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর কল্পনা ও করবি না।আর রইলো রিফার বিয়ে তোকে আমি চ্যালেন্জ করলাম আগামী তিন দিনের ভিতর ওকে আমি বিয়ে দিবো।আর কানের ফিসফিস করে বলে,,আর আমার আর নিরুর অস্তিত্বের নতুন অতিথি আনার প্রসেসিং করবো।নেক্সট যেন মামা ডাক শুনতে পারিস ওখে?

–তারপর বিভিন্ন কথা-কাটাকাটির পর পুলিশ নিরবকে নিয়ে যায়।প্রমাণ স্বরুপ কিছু ভিডিও আর কল রেকর্ড জমা দেওয়া হয়।

–রাফি:রেগে বলে,, আমি আসছি।কালকে চলে যাবো।
–রিহান :কালকে কেন?তুই না বললি আরও দুই সপ্তাহ ছুটি আছে।
–রাফি:অন্য দিকে ঘুরে হাতটা মুষ্টি বদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলে,,আমার রাগ হচ্ছে রিহান।আমাকে যেতে দে নয়তো নিজেকে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে যাবে।
–রিহান :হাত ধরে টেনে বলে চল।তুই আজকে আমার সাথে আমার বাসায় থাকবি।তারপর জোর করে গাড়িতে উঠায়।

*********
–ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে বসে আছে।রিহান কিছু খাবার এনেছে সবাই এক সাথে খাবে বলে নিচে পাটি বিছিয়ে রেডি করছে।রিহানের আব্বু আম্মু রুমেই আছে।রেডি করে ওদের ডাক দিবে।এসে ফ্রেশ হয়ে খানিকটা রেস্ট নিয়ে এসেছে।
সোফায় এক কোণায় ভেজা চুল ছেড়ে মাথা হেলান দিয়ে বসে আছে রিফা।আর সামনাসামনি এই মাথায় বসে ফোন ঘাঁটছে রাফি।

–রাফি:এক কাজ কিন্তু বাকি রয়ে গেলো রিহান?
–রিহান :মাথা তুলে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে কি কাজ?
–রাফি:আসল কাজ টাই।নিরবের সাথে আরও একজন কে রেখে আসা উচিত ছিলো।সে যে দুঃখের সাগরে প্রেমিক বিহীন ভেসে যাচ্ছে।
–রিফা:সোজা হয়ে বসে।একবার আড় চোখে রাফিকে দেখে নেয়।নিরু এগিয়ে এসে বলে এমন করছেন কেন রাফি ভাইয়া?দেখতেই তো পাচ্ছেন মন খারাপ ওর।
–রাফি:কেমন করছি?মন ঠিক করার ব্যবস্থা করতে ভুল হয়ে গেছে সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছি।

–রিফা রাগে উঠে চলে যেতে নিলে রাফি বলে দেখলে যা বললাম তাই সত্যি।
–নিরু:এগিয়ে গিয়ে ধরে এনে বসায় ওদের সাথে।
.
.
–সবাই মিলে একসাথে বসে আছে।রিফা সোফায় বসে কার্টুন দেখছে পাশে সবাই।এরমধ্যে রিহান বলে।
–রিহান :এক সপ্তাহ হয়ে গেলো,,আমি বলেছিলাম তিন সপ্তাহের ভিতরে রিফার বিয়ে দিবো।
–আব্বু :হুম!ভালো পাত্র দেখে দিয়ে দেওয়ায় ভালো।
–রিহান :আমার কাছে ভালো পাত্র আছে আর সেটা তোমরা ও চেনো।
–রিফা এবার সোজা হয়ে বসে।মলিন চোখে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের মুখের দিকে।
–আম্মু :কে?
–রিহান :রাফি।আর রিফা কে খুব ভালো ও বাসে।
–রিফা:উঠে দাঁড়িয়ে কান্না করতে করতে বলে কখনোই না।আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না।আর রইলো রাফি ভাইয়ার কথা আমি একে বিয়ে করতে পারবো না।বিয়ের পর দাঁতে দাঁত চেপে বলে নিরইব্বা রে নিয়েই খোটা দিবে সারাক্ষণ।
রিহান নিরু সহ সবাই হেসে ওঠে।আর এদিকে মাত্রই বাসার ভিতরে প্রবেশ করেছিল রাফি।তাই রিফার প্রত্যেকটা কথা শুনে ফেলে।

–রাফি:খোঁটার কাজ করলে তো খোঁটা শুনতেই হবে।আচ্ছা মানুষ জন এতো বোকা আর গাধা কেন?নরমাল জিনিস বুঝতে পারে না?

–রিফা:রেগে কোনো কথা না বলে চলে যায় রুমে।

–রিহান :আমার প্রস্তাবে কি তুই রাজি?প্লিজ না করিস না।
–রাফি:হেসে বলে আগে রিফার সাথে কথা বলতে চাই সিরিয়াস মোডে।তারপর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,,তারপর রিকোয়েস্ট তুই নয় আমি করবো তোর কাছে।বাঁকা হেসে চলে যায় রিফার রুমে।

–রিফা রুমে এসে বসে বসে কান্না করছে।রাফি গলা খাঁকারি দিয়ে রুমে প্রবেশ করে।রিফা তাড়াতাড়ি করে উঠে চোখের পানি মুছে দাঁড়িয়ে থাকে।
–রাফি:তোমার রুমে এলাম।
–রিফা:জোর পূর্বক হেসে বলে,, স্বাগতম।
–রাফি:বিছানায় বসে চারপাশে তাকিয়ে বলে মন্দ না,চলবে।
–রিফা:কি চলবে? আর কিছু বলতে আসলেন নাকি?ভাইয়া রা কোথায়?
–রাফি:বলবো তো অবশ্যই।আর রইলো ভাইয়ারা,, ওরাই আমাকে পাঠিয়েছে এখানে।
–রিফা:একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের রুমে একা একজন ছেলেকে পাঠিয়ে দিলো?বাহ্ বাহ্ বেশ দায়িত্ব সচেতন মানুষ তো আমার পরিবার।
–রাফি:এক্সকিউজ মি!তুমি কি বলতে চাচ্ছো তোমার সাথে জোর পূর্বক রোমান্স করতে এসেছি?
–রিফা:ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।
–রাফি:উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,,আমি ও অলরেডি একজন কে ভালোবাসি আর সেটাই বলতে এসেছি।
রাফির এগিয়ে আসা দেখে রিফা ও পিছনে যাচ্ছিলো কিন্তু এই কথা শুনে থমকে দাঁড়ায়।চুপচাপ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ভীষণ ভয় হচ্ছিল।চোখ দিয়ে আপনা আপনি কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।অন্য দিকে ঘুরে চোখের পানি মুছে বলে আচ্ছা।
–রাফি:পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে শুধুই আচ্ছা?
–রিফা:কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে হুম সাথে শুভকামনা ও।
–রাফি:এদিকে তাকিয়ে বলো?আমার আবার মুখ না দেখে কথা বলতে ভালো লাগে না।
–রিফা:মাথা নুয়ে এদিকে ফিরে বলে বলুন।
–রাফি:বাহ্ বাহ্ বেশ তো বলুন?কিন্তু কথা তো আমি না আপনি বলবেন।
–রিফা:শুভকামনা রইলো।
–রাফি:হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের উপর এনে ফেলে রিফাকে।হঠাৎ টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলায় ভয় পেয়ে যায় রিফা।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৬

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৬]
-তামান্না

–রিহান :এগিয়ে গিয়ে পাশে শুয়ে এক টানে কাছে নিয়ে আসে।হঠাৎ করে এমনটা হওয়ায় ভয় পেয়ে যায় নিরু।যার ফলে শক্ত করে ঝাপটায় ধরে রিহানকে।
তারপর অনেকক্ষণ যাবত মোচড়া মুচড়ি করে নিরু।কিন্তু কোনো ভাবেই রিহান ছাড়ছে না।অন্ধকারে কথা ও বলছে না।তবে নিরুর কাছে পারফিউমের স্মেল টা পরিচিত লাগে।
–রিহান :চুপচাপ শুয়ে থাকো নড়েচড়ে কোনো কাজ হবে না।
–নিরু:ইচ্ছে মতো কিল দিয়ে ছুটার চেষ্টা করে। তারপর না পেড়ে কান্না করে দেয়।একদম নরম হয়ে পড়ে।
–রিহান :আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে শুনেছি অতিরিক্ত রাগ হলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে হয়।এতে রাগ কমে।

–নিরু:ছাড়ুন আমায়।আপনি আমাদের বাসায় এসেছেন কেন?আমার অনুমতি ব্যতীত আমাকে আবার স্পর্শ ও করছেন?
–রিহান :সে জবাব তোমাকে দিবো কেন?আমি তো তোমায় জড়িয়ে ধরি নি,আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি।
–নিরু:একদম ঠেলে তারপর উঠে দাঁড়ায়।ওড়না টা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।তারপর লাইট টা অন করে।
–রিহান :এগিয়ে গিয়ে নিরুর হাত ধরতে গেলে নিরু সরে দাঁড়ায়।আবার ও ধরতে গেলে সরিয়ে ফেলে হাত।মুচকি হেসে বলে,,রাগ কমবে কিভাবে?
–নিরু:অন্য দিকে ফিরে বলে, কমবে না।
–রিহান :সোফায় বসে। একটানে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলে,,এতো রাগ?
–নিরু:হুম!আজকে কিন্তু বড্ড বেশি গায়ে হাত দিচ্ছেন।
–রিহান :তাই!কোথায় হাত দিচ্ছি?
–নিরু:সেদিন সন্ধ্যা বেলা একা একটা মেয়ে কে বাসা থেকে বের করে দিলেন,,আজকে মাঝরাতে এসে এসব করছেন?কান্না করতে করতে বলে আপনি কি চান?
–রিহান :নিরুর চোখে চোখ রেখে বলে,, সেদিন আমি চোখের সামনে থেকে যেতে বলেছি বাসা থেকে নয়।তাছাড়া আমার বন্ধু তোমার বাসা অব্দি পৌঁছানো পর্যন্ত পিছন পিছন ছিলো।
–নিরু:বিছানায় বসে বলে,কথা শেষ হলে আসতে পারেন।
–রিহান :আমার শ্বশুর বাড়ি আমি থাকবো না যাবো সেটা আমি বুঝবো।বউ মানুষ কই জামাইয়ের সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকবা তা না শুধু তাড়িয়ে দেওয়ার ধান্দা।এতো নাক ছিটকানো বউ কেন তুমি?

–এদিকে নিরব অনেক বার চেষ্টা করে ও রিফার সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি।ভিতরে ভিতরে প্রচুর ভয় হচ্ছে হাত ছাড়া হয়ে গেলো না তো?এখনো নিরু আর রিহানের জীবন ধ্বংস করা হয় নি।

–রিফা ভাইয়ের কথায় নিরবের সাথে যোগাযোগ আজকে রাখে নি।তাছাড়া এখন এসব কখনোই নিরু বলতো না শুধু মাত্র নিরব বুঝিয়েছে বলেই জানিয়েছে।তাছাড়া ওদের সম্পর্ক ও বেশি দিনের না।
একা শুয়ে আছে রিফা হঠাৎ নোটিফিকেশনের শব্দে ফোন টা অন করে।তারপর রাফির আইডি থেকে একটা ভিডিও আসে। রাফি হলো রিহানের বন্ধু।ভিডিও টা অন করে এক প্রকার মাথা ঘুরে যায়।রিহান আর নিরবের সেদিনের ঝগড়ার ভিডিও সাথে কিছু গোপন কথা নিরবের মুখ থেকে।
ভিডিও টা দেখা মাত্রই চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ে।সম্পর্কে জড়িয়েছিল নিরবের ব্ল্যাকমেইল স্বরূপ পাগলামি দেখে।এটা ওটা নিয়ে ভয় দেখাতো ওকে ছাড়া বাঁচবে না।কোচিং কলেজ সব কিছুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় থাকতো।এক পর্যায়ে রিফা বাধ্য হয়ে সম্পর্কে জড়ায়।কখনো এর আগে রিলেশন করে নি রিফা।যেহেতু প্রথম প্রেম খানিকটা আবেগ ও জন্মায়।তবে কয়েক দিন পর থেকেই ওর মনে হতো নিরবের তার প্রতি আবেগ কম লাগছে।আচরণে পরিবর্তন চলে আসছে।কিন্তু মনে হলেও মনকে পাত্তা দিতো না।
রিফার প্রয়োজনে নয় নিরবের প্রয়োজন হলেই যোগাযোগ করতো।বাসায় জানানোর জন্য এটা ওটা বলে পাগল বানিয়ে ফেলতো।

–এক পর্যায়ে নজরে আসে রাফির।কয়েকবার মেসেজে ওকে নিষেধ ও করে নিরবের সাথে না মিশতে।রিফা কথা দিয়ে ভাইকে না জানাতে নিষেধ করে রাফিকে।
রাফি রিহানের রাগ সম্পর্কে অভিজ্ঞ হওয়ায় আর রিহান কে জানায় নি।এরপর ঠিক ঠাক প্রমাণ পেয়ে আজকে রিফাকে পাঠায়।

–ফোনে রিং হচ্ছে রিফা চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে।কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে রাফি কল করেছে।রিসিভ করে কানে ধরতেই রাফি বলে,, ঠিক আছো?
–রিফা:নিশ্চুপ!
–রাফি:কষ্ট পাচ্ছিস?সেদিন আমি ও ভীষণ কষ্ট পেয়েছি রিফু।সেই যখন ছোট্ট ছিলি তখন থেকে তোকে পছন্দ করতাম।রিহানের সাথে ছুতো ধরে তোদের বাসায় চলে যেতাম।যখন তুই ছোট্ট ছিলি কোলে ও নিতাম।যদিও আমি অতোটাও বড় ছিলাম না তবে তোর থেকে তো গুনে গুনে কয়েক বছরের বড়ো।আম্মু মাঝে মধ্যেই তোকে নিয়ে আসতো আমাদের বাসায়। তারপর বড় হলাম তুই বড় হলি তবে আমার নজরের বাইরে যেতে দেই নি।

–সময় বাড়লো রিহানের সাথে বন্ধুত্ব গাঢ় হলো,, আস্তে আস্তে ভয় ভীষণ বাড়ে।তোকে পছন্দ করি জানলে যদি রিহান বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়?এই প্রশ্ন সারাক্ষণ মনে ঘুরতো।
তুই জানতি ও না আমি তোকে সব জায়গায় পাহারা দিতাম।মাঝে মধ্যে তোর নজরে পড়ে গেলে কতো কাহিনি বলে কেটে পড়তাম।তারপর আমার চাকরি হলো সেখানে সময় দিতে গিয়ে তিন মাস পেড়িয়ে যায়।এখানে ওখানে আর খোঁজ রাখার সময় হয়ে উঠে নি।নিরব সম্পর্কে ও অবগত ছিলাম না।
একদিন ছুটিতে এলাম।অনেকদিন পর রিহানের সাথে দেখা।বসে আড্ডা দিলাম দুই বন্ধু।এক পর্যায়ে রিহান বলে বসে।
–রিহান:তুই আর রিফাত আমার সব থেকে কাছের বন্ধু,, ভাবছি বোন জামাই বানিয়ে তোর সাথে সম্পর্ক টা আর ও মজবুত করবো।কি বলিস?
এই কথা শুনার পর ভীষণ আনন্দ হলেও রিহানের সামনে প্রকাশ করি নি।তবে লজ্জা পেয়েছি রিহান বুঝতে পেরেছে।জানি না রিহান কেন প্রস্তাব দিয়েছিল,,হয়তো আমার মনের ধারণা কিছু টা হলেও বুঝতে পেরেছিল।

–বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলে,,তিন দিন আয়নার সামনে প্র্যাক্টিস করে তারপর সামনে গিয়ে ছিলাম তোর।নিজের সাথে যুদ্ধ করে অনুভূতি প্রকাশ করে ছিলাম।এর আগে আমার ভিতরের এই গোপন খবর কাউকে বলি নি।
তুই প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিলেও পরে সিরিয়াস ভেবে বলেছিলি,, অলরেডি রিলেশনে আবদ্ধ আছিস।
বিশ্বাস কর সেদিন এই শব্দ টা মনে হয়ে ছিলো পৃথিবীর সব থেকে যন্ত্রণা দায়ক শব্দ।

–সেদিন দ্বিতীয় বার উঠে তোর মুখের দিকে তাকায় নি লজ্জায়।তবে বাসায় এসে ভেবে মনে হলো তুই ভুলে আটকে আছিস।নিরব ভালো ছেলে নয় এবং রিহান নিরুর সাথে ও সম্পর্ক ভালো না।কয়েকবার তোকে বুঝালাম কাজ না হওয়ায় প্রমাণ জোগাড় করলাম।
এর ভিতরে রিহান কয়েকবার জিজ্ঞেস করে গেছে বিয়ের প্রস্তুতি কেমন বাসায় কথা বলবে কি না।আমি কথা কাটিয়ে ঘুরিয়েছি।
তবে যখন নিরবের সাথে তোর বিষয়ে কথা বলতে যাবে যখন আমায় বলেছিল রিহান। সেদিন অপরাধীর মতো ফেইসটা করে রেখেছিল আমার সামনে।

–রিফা:নিরব এতো বাজে আমার চোখে কেন পড়ে নি?
–রাফি:ধূলো দিয়ে রেখেছিল চোখে তাই।ভাবিস না আমি পছন্দ করি বলে মিথ্যা বলেছি।এগুলো সবটাই সত্যি রিফু।
–রিফা:কান্না করতে করতে বলে ,,বাজে একজন মানুষের জন্য আমি আমার পরিবারে অশান্তি ডেকে এনেছি ঝগড়া দূরত্ব তৈরি করেছি রাফি ভাই।কেন আমাকে নিরব এভাবে ব্যবহার করলো?আমি কি ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার মতো মানুষ?
–রাফি:সব জায়গায় ভালো কে কদর করতে জানে না।নিজের পিছনে সময় দিয়ে দেখো ঝাপটায় ধরে বুকে রাখার মানুষ আছে।তোমাকে ও কদর করার ভালোবাসার মানুষ আছে।শুধু মন থেকে কয়েক মাসের অধ্যায় টা মুছে ফেলো। নতুন বছরের মতো ক্যালেন্ডার পাল্টে কাল থেকে নতুন করে জীবন শুরু করো।
.
.
–রিহান:প্লিজ চলো বাসায় যেতে হবে এখন।
–নিরু:মাথা নুয়ে বলে,আমার কোনো বাসা নেই। লাগবে না বাসা।
–রিহান:এগিয়ে গিয়ে ফ্লোরে বসে নিরুর হাত ধরে বলে,,রাগ হলে ইচ্ছে মতো মারো একেবারে মেরে ফেলো তাও প্লিজ বাসায় ফিরে চলো।
–নিরু:অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলে বিয়ের আগে এমনটা কথা ছিলো না!
–রিহান:উঠে দাঁড়িয়ে নিরুকে ঠাস করে কোলে তুলে নেয়।তারপর লাইটটা বন্ধ করে বিছানায় চলে যায়।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।এভাবে শক্ত করে ধরে থাকায় নিরুর নিশ্বাস ফেলতে ও কষ্ট হচ্ছে।

–রিহান:ওকে নিজের থেকে খানিকটা আলতো করে ছেলে এগিয়ে গিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়।নিরুর নিশ্বাস ফেলতে আরও কষ্ট হয়।এবার বড় বড় করে নিশ্বাস ছাড়ে।রিহান ঘাড় থেকে আস্তে আস্তে নিচে নামতে গেলে কান্না করে দেয় নিরু।
রিহান নিরুর মুখে হাত দিয়ে বলে কি হয়েছে?তুমি কান্না করছো কেন?তোমার খারাপ লাগছে?
–নিরু:কান্না করতে করতে বলে,,যখন ইচ্ছে দূরে ঠেলে দিবেন আবার নিজের ইচ্ছায় ভালোবাসবেন এ কেমন আচরণ?
–রিহান:নিরুর চোখের পানি মুছে দিয়ে নিজের বুকের সাথে নিরুর মাথা টা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।বড় বড় করে নিজেও নিশ্বাস ফেলে।

–নিরু এখন যেন রিহানের পুরো হার্টবিটের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।এইটুকু বুঝতে পারছে দুজনেরই হার্টবিট বেড়ে গেছে।

–খানিকক্ষণ চুপ থেকে রিহান এভাবেই থেকে পুরো ঘটনা খুলে বলে।নরম গলায় বলে আমার মানুষ আমাকে বুঝার মানুষ তো তুমি নিরু।তুমি যদি আমার রাগ অভিমান না বুঝো কোথায় যাবো?
অভিমান আর রাগ হলে অধিকার দেখাতে হয়,, সব সময় নৈশব্দে চলে এলে সম্পর্কে ফাটল ধরে।আমি জানি আমরা দুজনেই দুজনকে ভীষণ ভালোবাসি।তাহলে কাছের মানুষের থেকে অনুভূতি লুকিয়ে দূরে থাকার কোনো মানে আছে?
লজ্জা ভয় এসব শব্দ প্রিয় এবং ভালোবাসার মানুষের জন্য নয়।নিরুর কপালে চুমু খেয়ে বলে,,

–আমি চাই আমার নিরুপমা আমার রাগকে পাত্তা না দিয়ে,, আমার বদমেজাজে গরম পানি ঢেলে দিয়ে একেবারে ঠান্ডা করে দিক।আমি জানি আমার মতো পুরুষ কে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা আমার নিরুপমার আছে। শুধু সেটা একটু প্রয়োগ করুক আমার বউ।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৫

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৫]
-তামান্না

–রিফা:এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে নিরুকে আগলে ধরে।নিরু এখনো স্তব্ধ হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে পারছে না ঠিক কি হয়েছে?বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তো এমন ছিলো না?চোখ দিয়ে আপনা আপনি কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।এমন দিন কেন বারবার ফিরে আসে? যা হজম করার ক্ষমতা উপর ওয়ালা দেয় নি এমন দিন কেন দেয়?কেন এমন পরিস্থিতি তে ফেলে।মনে মনে এই কথা গুলোই চিন্তা করে।

–রিহানের আম্মু এসে ডাকাডাকির পরে দরজা খুলে রিহান।নিরু রিফা রিহান ওর আব্বু সবাই উপস্থিত।থমথমে পরিবেশ।
–আম্মু :কি হয়েছে তোর?নিরুর সাথে এমন খারাপ ব্যবহার কেন করছিস?
–রিহান :নিশ্চুপ!
–রিফা:ককককি হয়েছে?
–রিহান :একদম চুপ।উঠে দাঁড়িয়ে বলে আমার আর ভালো লাগছে না।প্লিজ তোমরা আমায় ডিস্টার্ব করো না।আর রইলো এই মেয়ে নিরুর দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,, একে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলো।
–আম্মু :কি হচ্ছে কি?এগুলো কি ধরনের আচরণ রিহান?রাগ হয়েছে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করো।
–রিহান :অন্য দিকে তাকিয়ে বলে আমি নিরুর মুখ আজকের পর আর দেখতে চাই না আম্মু।আমি আর চাই না আর না।

–রিফা:এগিয়ে এসে ভাইয়ের পা ধরে বলে এমন করছো কেন ভাইয়া?দোষ করে থাকলে আমি করেছি আপুকে কেন শাস্তি দিচ্ছো?নিরুর দিকে তাকিয়ে বলে তুমি কেন কিছু বলছো না আপু?
–নিরু:অন্য পাশে এগিয়ে গিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে বলে,,আমি কেন কিছু বলবো?সব সময় আমার অবস্থান এভাবে না বুঝিয়ে দিলে ও তো হয়।সব থেকে ভালো হয় আমার গন্ডির বাইরে থাকলে এতে কষ্ট কম হয়।এগিয়ে গিয়ে শ্বাশুড়ির পাশে দাঁড়ায়।

–শ্বাশুড়ি :এমন করো না। রিহান রেগে বলেছে একটু পর সব ঠিক হয়ে যাবে।এগিয়ে গিয়ে রিহান কে জিজ্ঞেস করে নিরুর অন্যায় টা কি?
–নিরু:মাফ করবেন মা,আমি প্রতিবাদ করে কিংবা নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে আগ্রহী নই।আমি সব থেকে বেশি পছন্দ করি বিনা শব্দে জায়গা ত্যাগ করা।যেখানে আমার প্রয়োজন নেই সেখানে শব্দ ব্যবহার করেই বা কি হবে।অভিমানে মাথা নুয়ে আসছি বলে বের হয়ে যায়।রিহান একবার ও পিছনে ফিরে তাকায় নি।

–রিফা আর শ্বাশুড়ি পিছন পিছন আসলে ও নিরু শুনে নি কারো কথা।সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেই কতক্ষণ। দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির জন্য।কিছু নিয়ে আসে নি।ফোন টা শুধু,ফোনের কভারের ভিতরে কয়েক টা টাকা আছে এ দিয়েই হয়ে যাবে।

–রিহান জানালা দিয়ে নিরুপমা কে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।একবার ও কেন কিছু জিজ্ঞেস করলো না?তবে কি নিরব যা বলেছে তাই সত্যি? নাকি আগের মতোই সব সময় নিরু অভিমানে সবটা মেনে নৈশব্দে জায়গা ত্যাগ করলো?দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বলে, কোনটা সত্যি?আমি কি বিশ্বাস করবো,, কাকে বিশ্বাস করবো?পুরো রুমের জিনিস পত্র ছুড়ে ফেলে দেয়।

–একা রাতের শহরে কখনো চলাচল করা হয় নি নিরুর।তেমন একটা অভিজ্ঞতা ও নেই।আজকেই প্রথম,, ভীষণ ভয়েই ছিলো পুরো রাস্তা।তারপর আবার বোরখা হিজাব ছাড়া বের হওয়া।খানিকটা সময় লাগলে ও রিকশায় করেই আসে। মুরব্বি লোকের রিকশায় উঠে খানিকটা স্বস্তি পায়।পুরো রাস্তা কান্না করতে করতে এসেছে।কিভাবে রিহান পারলো এই সন্ধ্যা বেলা বাসা থেকে বের করে দিতে।একটা বার পিছনে তাকালো না?এখন বাসায় ফিরে কি জবাব দিবে আম্মু কে?

.
.
–রিফা:আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে নিরব!তারপর পুরো ঘটনা টা খুলে বলে। নিরব মনে মনে খুশি হলেও মুখে প্রকাশ করে নি।আর বলে ও নি যে রিহানের সাথে দেখা হয়েছে।
–নিরব:আচ্ছা!দেখছি সবটা কিভাবে সামাল দেওয়া যায়।রিহান হয়তো এখনো আমাকে ভুল জানে কিন্তু তুমি তো জানো আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।
–রিফা:কান্না করতে করতে বলে,, প্লিজ তুমি একটু নিজেকে প্রমাণ করো ওদের সামনে।তাহলে সব কিছু সহজ হয়ে যাবে।আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে।আমার জন্য অযথা ওদের মধ্যে সমস্যা হলো।এটা আমি সত্যি চাই না।
–রিহান :মনে মনে বলে,, কিন্তু আমি তো চাই।মুখে শয়তানি হাসি টেনে কল কেটে দেয়।

–এদিকে বাড়িতে ফিরে এসেছে আজকে দুই দিন।নিরু রুম আর খাওয়ার টেবিল ছাড়া একবার ও মায়ের মুখোমুখি হয় নি।কিছু জিজ্ঞেস করলে ও উওর দেয় না।রিহানদের বাসায় ফোন দিতে বললে নিষেধ করে দেয়।

–রাতে ছাঁদে বসে আছে একা।পূর্ণিমায় চারপাশ টা জ্বলজ্বল করছে।আকাশের দিকে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।কেন সে বারবার ভুল করে। রিহান তো কোনো দিন ও ভালোবাসে নি।যদি বাসতো তাহলে কখনো রাতের বেলা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলতো না।বাড়ি এসেছে আজকে দুই দিন একটা বার কল পর্যন্ত করলো না।আচ্ছা ভালোবাসলে কি এমন নিষ্ঠুর হওয়া যায়?মনে হাজারও প্রশ্ন জমে আছে।

–এদিকে নিশার ফোনে খোঁজ নেওয়ার জন্যই মাত্র কল করলো রিহান।রাগ জমলে ও মুছে তো ফেলবে না।হয়তো এখনো রাগ শেষ হয় নি তবে ভুলে ও তো যাওয়া যাবে না।
নিশা কলে রেখেই ছাঁদে আসে।ফোন টা হাতে রেখেই বোন কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
–কি করছো?
–নিরু:আনমনা হয়ে বলে,,আব্বুর সাথে কথা বলছি।
–নিশা:কি কথা বলছো?
–নিরু:জিজ্ঞেস করছি কেন আমাকে একা রেখে চলে গেলো?আব্বু যাওয়ার পর তো আমায় আর কেউ বুঝে নি।সাথে কেন নিয়ে গেলো না?আমার জন্যই তো সবার জীবনে অশান্তি।আমার জন্যই আজ তোরা বাড়ি ছাড়া,, আমার জন্যই তো নিরব ভাইয়া এতো কিছু করছে।কথাটা বলেই কান্না করে দেয়।
–নিশা:বোকা।তুমি জানো তুমি আছো বলেই আমাদের জীবন এতো সুন্দর।তুমি ভালো হয়ে জন্মেছো বলেই মন্দ লোক হাত বাড়ায়।ভালোদের লড়াই করেই বাঁচতে হয়।জীবনে যুদ্ধ না করলে বিজয়ের স্বাদ পাবে কি করে? ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে?
–নিরু:চোখের পানি মুছে বলে,,জানি না।তবে হয়তো নিরব ভাইয়া কিছু বলেছে,,কি বলেছে তাও জানি না।তবে এটুকু জানি আমি তার প্রিয় মানুষ নই।দূরের বলেই বের করে দিয়েছে।কথাটা বলেই তাড়াতাড়ি করে ছাঁদ থেকে নেমে আসে নিরু।

–নিশা:শাসনের সুরে বলে কি করেছো আবার? আমার বোনকে সহজ সরল পেয়ে শুধু কষ্ট দাও তাই না?
–রিহান :বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলে,,আবার ভুল করে ফেলেছি।আমার কি শাস্তি হওয়া উচিত বল তো?তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলে যে,,নিরব সেদিন বলেছে নিরুই রিফাকে ওর হাতে তুলে দিয়েছে নিজের সেফটির জন্য।প্রমাণ স্বরূপ নিরুর সাথে রিফা আর নিরবের ছবি দেখায়।
–নিশা:কিহ?তুমি বিশ্বাস করে নিলে?তোমার তো মিয়া শাস্তি স্বরূপ আজীবন বউ ছাড়া থাকা উচিত। আমি বাবা কোনো শত্রু পক্ষ নই আমার বোনের,, যে তোমার মতো অবিশ্বাসের বস্তার হাতে তুলে দিবো।

–রিহান :আপাতত রাখছি পরে কথা হবে।কলটা কেটে রিফার কাছে যায়।
–রিফা:কিছু বলবে,, এতো রাতে?
–রিহান :ভয় পাস না।আমি কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো উওর চাই।
–রিফা:ববববলো?
–রিহান :নিরবের সাথে পরিচয় কিভাবে?
–রিফা:ভয় পেলে রিহান আশ্বাস দিয়ে বলে কিছু বলবো না।তারপর বলে কোচিং করার সময় প্রায় দাঁড়িয়ে থাকতো।এটা ওটা বলে ডিস্টার্ব করতো।তারপর একসময় বান্ধবীর থেকে নাম্বার নিয়ে কল করে বিরক্ত করা শুরু করে।তবে নিরব প্রথম থেকেই জানতো আমি যে তোমার বোন।তারপর আস্তে আস্তে এভাবেই এটা ওটা বলে হাত কাটে পাগলামি করে অবশেষে সম্পর্কের শুরু।

–রিহান :মাথা নুয়ে বলে আর নিরু?ওর সাথে তুই নিরু একসাথে কখনো দেখা হয়েছে?
–রিফা:মাথা নেড়ে বলে নাহ।কখনো নামটা ও নেওয়া হয় নি আপুর।
–রিহান ফোন থেকে একটা ছবি বের করে বলে তাহলে তোদের সাথে বোরখা পড়া এই মেয়ে টা কে?
–রিফা:ও তো অনন্যা।আপুর মতো খানিকটা দেখা যাচ্ছে কিন্তু হাত দেখো,,আপু তো সব সময় চুড়ি পড়ে।কিন্তু তোমার এমনটা মনে হলো কেন ভাইয়া?
–রিহান :বোনের মাথায় হাত রেখে বলে এই কয়দিন বাসা থেকে বের হবি না,,আমি অবশ্যই তোর জন্য যা কল্যানকর তা করবো।যাকে নিয়ে সুখী হবি আমার বোনের তার সাথেই বিয়ে হবে।প্লিজ অবাধ্য হোস না।রিফা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

***************
–রাত বারোটা নিরুর ফোন বাজছে।আজকে পাশে নিশা নেই অথচ বিয়ের আগে একসাথে থাকতো।নিশা এখন মায়ের সাথেই থাকে।যদি ও নিরু একাই থাকতে চাচ্ছিলো।ফোন মিউট করে রাখায় প্রথমে বুঝতে পারে নি যে কল বাজছে। তবে দুই একবার রিং হওয়ার পর ফোনের আলোয় বুঝতে পারে।হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে রিহান কল করেছে।
দুই তিন বার কল কেটে দেয়।তারপর মেসেজ আসে কল রিসিভ করো।
এরপর আর কল আসে নি কারণ নিরু সুইচড অফ করে রেখেছে।

–এদিকে রিহান বাসার নিচে দাঁড়িয়ে কল করছিল।রিসিভ না করায় নিশাকে কল করে। তারপর নিশা দরজা খুলে দিলে ভিতরে আসে।
–নিশা:বর হিসেবে খুব বাজে তুমি।বউয়ের রাগ ভাঙাতে আসলে দুই দিন পর।বউ কিন্তু একা একা অপেক্ষা করছে বর গিয়ে ঝাপটায় ধরবে বলে।
–রিহান :কানটা মুলে বলে পাকা হয়ে গেছিস?গিয়ে দোয়া কর রাগটা যেন ভাঙাতে পারি ওকে?তারপর নিশা হাসতে হাসতে চলে যায়।

–রিহান চুপচাপ এসে দেখে দরজা খুলাই আছে। রুমে গিয়ে আগে দরজা টা আটকে নেয়।নিরু তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে বলে,, এতো রাতে আসলি কেন?আমি একাই ঠিক আছি।
–রিহান :এগিয়ে গিয়ে পাশে শুয়ে এক টানে কাছে নিয়ে আসে।হঠাৎ করে এমনটা হওয়ায় ভয় পেয়ে যায় নিরু।যার ফলে শক্ত করে ঝাপটায় ধরে রিহান।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৪

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৪]
-তামান্না

রিহান:সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একজন অপরিচিত মানুষের গলার শব্দ শুনতে পায়।কিছু একটা শুনে হাত থেকে ঠাস করে ফোন টা নিচে পড়ে যায়।
নিরু মাত্রই রুমে এসেছে।ফোন পড়ে যেতে দেখে মোবাইল টা হাতে নেয়।নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। কয়েকবার হ্যালো বলার পর কেউ একজন বলে নীলা আর রিফাত এক্সিডেন্ট করেছে,, দুজনেরই অবস্থা খুবই গুরুতর।বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম।আর যে ফোন করেছে সে হলো রিফাতের কাজিন নয়ন।

–নিরু ফোন টা টেবিলের উপর রাখতেই স্যান্সলেস হয়ে পড়ে যেতে নিলে রিহান ধরে ফেলে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজে ও বসে পড়ে নিচে।

–সবচেয়ে কাছের মানুষের মধ্যে একজন হলো রিফাত।তার এমন বাজে পরিণতি শুনে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।কেমন যেন ফাঁকা লাগছে।ফাঁকা বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিরুকে।

–বাসা থেকে মানবে না মানবে না করে কতো যুদ্ধ পেড়িয়ে গত সপ্তাহে ওদের বিয়ের কাবিন হলো। দুটি ভালোবাসার পরিণত হলেও একসাথে বাঁচা হলো না একজীবন।আফসোস ভালোবাসা এবং খাঁটি ভালোবাসা গুলো অকালেই ঝড়ে গেলো।অথচ চারপাশে এতো বিশ্বস্ত এবং খাঁটি মানুষ আজকাল পাওয়া যায় না।

–হঠাৎ করেই বুকটা কেঁপে ওঠে নিরুকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা ও করে না রিহান।মাথা সোজা করে দেখে সেন্স নেই,, তাড়াতাড়ি করে বিছানায় শুয়ায় পানি এনে চোখে মুখে দেয়।
নিরুর জ্ঞান ফিরতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিহান। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,তুমি যাবে হসপিটাল?তোমার বেশি খারাপ লাগছে?
–নিরু:প্রিয় মানুষ গুলো এমন কেন?খুব সহজেই ছেড়ে চলে যায়।ওদের ছাড়া আমাদের যে কষ্ট হয় বুঝে না কেন?আচ্ছা! ওরা কি নিজ ইচ্ছায় আমাদের ছেড়ে চলে যায়?

–রিহান:জীবনের আয়ু ফুরিয়ে গেলে কিভাবে থাকবে বলো?ওদের কিছু হবে না চলো তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো।তারপর দুজনে এভাবেই বেড়িয়ে যেতে নিলে রিহান এসে নামাজ পড়ার হিজাব টা দিয়ে বলে এটা পড়ে নাও।
.
.
–এক ঘন্টা পর হসপিটালে এসে পৌঁছায় রিহানরা এসে দেখতে পায় ওদের আত্মীয় স্বজনরা চলে এসেছে।সবাই কান্না কাটি করছে। ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে দুজনেই মা-রা গেছে।

–তারপর এখান থেকে সবাই রিফাতদের বাসায় চলে যায়।ওখানে দাফন দিতে দিতে পরদিন বিকেল হয়ে যায়।নিরুর বাড়ির মানুষ রিহানদের বাসার মানুষ সবাই এসেছে।
–রিহান:নিরু!এবার বাসায় চলো?ফ্রেশ হতে হবে তো!
–নিরু:নীলা রিফাত ভাইয়া অনেক আরামে আছে বলেন? পৃথিবীর সাথে আর যুদ্ধ করতে হবে না।
–রিহান:এগিয়ে এসে নিরুর মাথা ওর পেটে চেপে ধরে। নিরু বসে থাকায় আর রিহান দাঁড়িয়ে থাকায় এভাবেই ধরতে হয়েছে।নিশা আর রিফা ও এগিয়ে এসে অনেক কষ্টে ওকে নিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।

সারা রাস্তা নিরবে শুধু চোখের পানি ফেলেছে আর একটু পরপর হেঁচকি দিয়েছে।যতই সবাই বুঝাক মন কি আর মানে।প্রিয় মানুষ গুলোর শূন্যতা যে ভীষণ কঠিন।

*********-
–ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ আনমনা হয়ে বেলকনিতে বসে আছে নিরু।কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। নিশা আর রিফা রুমে আসে।এগিয়ে এসে নিরুর পাশে বসে।
–রিফা:কিছু করার নেই আপু।জীবনে সবচেয়ে চরম সত্যি মৃত্যু সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। প্লিজ তুমি একটু স্বাভাবিক হও।
–নিশা:বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে,,কষ্ট পেও না।
–নিরু:চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।জোর পূর্বক হেসে বলে,একদিন আমি ও হারিয়ে যাবো।আচ্ছা!যদি এমন অকালে হারিয়ে যাই কেমন হবে?
–রিহান :ভালোই হবে।নীলা আর রিফাতের মতো তোমার আর আমার জানাজা এক সাথে সবাই মিলে পড়ে যেতে পারবে।রিফা আর নিশা উঠে চলে যায়।

–নিরু এবার শব্দ করে কান্না করতে থাকে।রিহান এগিয়ে এসে পাশে বসে বলে,,মৃত্যু চিরন্তন সত্যি। তবে হয়তো অকালে ঝড়ে গেছে দুটি প্রাণ কিন্তু ভালো কিন্তু একটা হলেও উপর ওয়ালা করেছে।

“নিরু:যেমন?
–রিহান :ভেবে দেখো রিফাত আর নীলা যথেষ্ট কষ্ট করে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে।ওদের ভালোবাসা মনে গেঁথে যাওয়ার মতো।আজকে যদি একজন মা-রা যেতো তাহলে?তাহলে অন্য জন বেঁচে থাকলে ও জীবনের কোনো স্বাদ পেতো না।ভালোবাসা হারিয়ে গেলে বেঁচে থাকা সহজ না।এর থেকে ভালো দুজনের ভালোবাসার সমাপ্তি একসাথে থেকেই হয়েছে।হয়তো কষ্ট অনেক তবে মেনে তো নিতেই হবে বলো?
–নিরু:আমি যদি হঠাৎ করে মা-রা যাই?আমার জন্য তো কারো জীবনের স্বাদ চলে যাবে না?
–রিহান :নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে উঠে দাঁড়ায়। রুমে গিয়ে পাশে থাকা ফুলদানি টা ছুড়ে মারে ফ্লোরে।সাথে সাথে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

–নিরু চোখে পানি নিয়ে ও জোর পূর্বক হাসে।এর মধ্যে রুমে আসে মিরা।
–মিরা:আসার পর তো তোর বউয়ের সাথে কথায় হলো না রিহান।জানি তোদের ভীষণ মন খারাপ নিরুপমা কই?
–রিহান :সাবধানে পা কেটে যাবে।প্লিজ মিরা আমি মারতে পারছি না তুই একটু আমার হয়ে ফাজিল মেয়ের গালে দুটো থাপ্পড় দিয়ে দিছ তো।
–মিরা:চারপাশে তাকিয়ে বলে এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে?
–নিরু:বেলকনি থেকে এগিয়ে এসে সালাম দেয়। মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করে ভালো আছে কি না!

–মিরা:বাহ্ খুব মিষ্টি বউ পেয়েছিস তো।আসো আমার পাশে বসো।এগিয়ে গিয়ে মিরার পাশে বসে নিরু।সুন্দর করে ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে নম্র ভদ্র একটা মিষ্টি মেয়ে মাথা নুয়ে বসে আছে। আড় চোখে কয়েকবার দেখে নেয় রিহান।মনে মনে বলে মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।অথচ আমাকেই ভেজে ফেলে।

–মিরা:হাসতে হাসতে বলে ভাই!তোর বউ তুই সারাজীবন দেখতে পাবি চুরি করে নিয়ে যাবো না।
এবার রিহান লজ্জা পেয়ে যায়।এরমধ্যে কাজ করে যে আন্টি রুম পরিষ্কার করে দিয়ে যায়।

–মিরা:এতো সহজ সুন্দর বউ পেয়ে ও রাগ হয় কেমনে?একটু তো কন্ট্রোল করতে শিখ নিজেকে!
–রিহান:সহজ?তুই নিরুপমা কে সহজ বলছিস? তুই জানিস তোকে আর আমাকে ও সন্দেহ করতে ছাড়ে নি এই পাকা মেয়ে।

–নিরু এবার চোখ বড় বড় করে রিহানের দিকে তাকায়।মিরা হাসতে হাসতে বলে,,সত্যি নিরুপমা?
–নিরু:দ্রুত মাথা নেড়ে বলে না না।
–রিহান :আচ্ছা!তবে মনে মনে স্বস্তি নাও মিরা বিবাহিত মহিলা!তারপর হাসতে থাকে।
–মিরা:বিয়ে হয়েছে বলেই মহিলা হয়ে গেলাম?
–নিরু:দেখলা আপু কেমন সে?
–রিহান :তো!
–নিরু:মহিলা বলা হয় আম্মু চাচিদের বয়সী লোকদের।
.
.
কয়েকদিন পর,,
–রিফা:তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো ভাইয়া!
–রিহান :হুম!বলে ফেল,আমার সাথে কথা বলতে আবার কবে অনুমতি নিয়েছিস?
–নিরু ও খানিকটা চমকে যায়।যে মেয়ে সব সময় বকবক করে ভাইয়ের সাথে সে কিনা আজকে অনুমতি নিতে আসছে?
–রিফা:জানি তুমি রেগে যাবে।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি অনেক ভেবে দেখেছি।
–রিহান :ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বোনের দিকে তাকিয়ে বলে কি?
–রিফা:চোখ বন্ধ করে বলে আমি একজনকে ভালোবাসি ভাইয়া।
–নিরু:সাথে সাথে মুখ টা মলিন করে বলে,, কে সে?
–রিফা:আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই।রিহান একবার নিরুর দিকে তাকায় আবার বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,,আচ্ছা!পরিচয় করিয়ে দিস দেখি ভালো হলে সমস্যা নেই।

–রিফা:তুমি তাকে ভালো ভাবেই চেনো।কিন্তু বিশ্বাস করো ভাইয়া সে পাল্টে গেছে।আমাকে বলেছে কখনো বাজে কাজ,, ব্যবহার করবে না।

–রিহান :ভ্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে কে সে?
–রিফা:চোখ বন্ধ করে বলে নিরব ভাইয়া।সাথে সাথে মনে হলো একটা কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে।চোখ খুলে দেখে চেয়ার টা ছিটকে পড়ে আছে সাথে জিনিস পত্র ও।
–নিরু:প্লিজ!শান্ত হও তোমরা।রিফাকে দু’হাতে আগলে ধরে বলে মজা করে বলেছে হয়তো।
–রিহান:চিৎকার করে বলে,ওর সাহস হয় কি করে?রিহানের চিৎকারের শব্দ শুনে ওর আব্বু আম্মু ও চলে আসে।

–তারপর ছোট খাটো একটা ঝড় বয়ে যায় পুরো বাড়িতে।রিফা কান্না করতে করতে যে রুমে গিয়ে দরজা আটকে রেখেছে।নিরু সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছে খুলছে না।

********************************************–রিফার কান্ড দেখে দেখা করতে বাধ্য হলো রিহান।নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে।মুখোমুখি বসে আছে নিরব রিহান আর এক বন্ধু।

–রিহান :ঠান্ডা মাথায় বলে ,, তোর সাথে আমাদের শত্রুতা তুই এরমধ্যে রিফা কে কেন জড়াচ্ছিস?
–নিরব:কেন?ভুল হয়ে গেছে বুঝি?প্রিয় মানুষ গুলোতে হাত বাড়ালে কেমন লাগে?খুব কষ্ট হয় বুঝি?

–রিহান :দাঁতে দাঁত চেপে বলে সন্ধান পেলি কোথায়? তোর সাথে তো রিফার যোগাযোগ হওয়ার মতো সুযোগ সুবিধা নেই?

–নিরব:হাসতে হাসতে বলে,,নরম খেলোয়াড় ভেবেছিস?একেবারে পিষে দেবো।

একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়ে যায়।চারপাশের কয়েকজন এগিয়ে এসে থামায়।কিন্তু লাস্ট কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না রিহান।দুকদম পিছিয়ে পড়ে যেতে নিলে ধরে ফেলে ওর বন্ধু।
কোনো রকম তর্কে না জড়িয়ে চুপচাপ চলে আসে বাসায়।

–নিরু:কি হয়েছে?এমন অস্বাভাবিক লাগছে কেন তোমায়?নিরব ভাইয়া কি বলেছে?দেখা হয়েছে?আরও কিছু বলতে নিলে এর আগেই ঠাস করে থাপ্পড় মা’রে রিহান।ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দরজা আটকে ফেলে ভিতর থেকে।
–রিফা:এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে নিরুকে আগলে ধরে।নিরু এখনো স্তব্ধ হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে পারছে না ঠিক কি হয়েছে?বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তো এমন ছিলো না?চোখ দিয়ে আপনা আপনি কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।এমন দিন কেন বারবার ফিরে আসে? যা হজম করার ক্ষমতা উপর ওয়ালা দেয় নি এমন দিন কেন দেয়?কেন এমন পরিস্থিতি তে ফেলে।মনে মনে এই কথা গুলোই চিন্তা করে।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১৩

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৩]
-তামান্না

–নিরু:রিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে এতো হাইপার হচ্ছেন কেন?কে হই আমি আপনার?আমার হাত কেটে যাক মা-রা যাই আপনার কি?আপনার তো রূপবতী ধবধবে সাদা বালিকা রুপী নব্য প্রেমিকা আছে।আমি তো কুৎসিত আমার জন্য এমন করছেন কেন??
–রিহান :দুই হাতে নিরুর দুই বাহু চেপে ধরে বলে সেটা আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই।
–নিরু:মানুষ দেখছে ছাড়ুন!
–রিহান :দেখুক!তোমার পাড়ার মানুষজন যে তুমি কতোটা অসভ্য স্বামীর কথা অব্দি শুনো না।
–নিরু:আপাতত স্বামী স্ত্রীর কথা শুনছে না।রাগ করে চলে যাচ্ছে।
রিহান ছেড়ে দিয়ে কতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
–রিহান :বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলে বাসায় ফিরে চলো?
–নিরু:চলেন!
–রিহান :আমাদের বাসায়।
–নিরু:নাহ্।এক সপ্তাহ ছুটি দিয়েছেন আম্মু।
–রিহান :খানিকটা মন খারাপ করে বলে আচ্ছা।

–খাওয়া দাওয়া শেষ করে বের হয়ে যায় শ্বাশুড়ির থেকে বিদায় নিয়ে।যাওয়ার আগে একবার ও নিরুর সাথে কথা বলে নি।
.
.
–এভাবেই বাবার বাড়ি তে এক সপ্তাহ কেটে যায়। রিহান ফোন ও করে নি একবার আসে ও নি।তবে মায়ের সাথে কথা হয়েছে নিরুর।আজকে শ্বশুর শ্বাশুড়ি রিফা ওদের বাসায় বেড়াতে আসবে।এবং নিরু কে নিয়ে যাবে।নিরুর মা ও এখন সুস্থ।

–নিশা:রিহান ভাইয়ার সাথে কি ঝগড়া হয়েছে?
–নিরু:তার সাথে কবেই বা ভাব ছিলো?
–নিশা:এতো প্রশ্ন করলে বাচ্চাদের ব্রেণ নষ্ট হয়ে যায় জানিস না?প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন নয় উওর চাই।
–নিরু:মন খারাপ করে বেলকনির গ্রিল ধরে বাইরে তাকিয়ে বলে,, তুই আম্মু আর আব্বুর মতো কেউ আমাকে বুঝে না।রিহান সে তো প্রশ্নই আসে না।
–নিশা:সমাধান করা যায় না?
–নিরু:চমকে গিয়ে পিছনে ফিরে ভয় পাওয়ার কন্ঠে বলে তুই কি ডিভোর্সের কথা বলছিস?আমি আমার জীবন থাকতে এসবে যেতে পারবো না।
–নিশা:বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে বোকা।বাবা মায়ের বড় সন্তান যে বোকা থাকে তা তোকে দেখে শিউর হলাম।সমাধান মানেই কিন্তু বিয়োগ নয়।বিয়োগে বিচ্ছেদ আর সমাধানে শান্তি।মিলন বুঝলি।আমি বলছি প্রকাশ কর কাছে টেনে নে দেখবি সুখ কাকে বলে।

–রিফা:ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলে শুনে ফেলেছি। বুঝলে ভাবি,তোমার বিচ্ছু বোনকে বরং বিয়ে দিয়ে দাও বেচারি সুখের সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকতে চাচ্ছে।
–নিশা:বোনকে ছেড়ে দিয়ে বলে বাজে চিন্তা ভাবনার লোকজন কোথাকার।খারাপ লোক সর।
–নিরু:হয়েছে এবার থামো।কখন এলে?আব্বু আম্মু কোথায়?
–রিফা:বিয়াই বিয়াইনরা বসে আড্ডা দিচ্ছেন।

–নিশা:ভাইয়া আসে নি?
–রিফা:চোখ টিপ দিয়ে বলে বাসায় কাজিন এসেছে একা রেখে আসতে চায় নি।আমার মামাতো বোন ভাইয়ার সাথে বন্ডিং ভালো তাই আড্ডা দিচ্ছে।
–নিশা:কি বলিস?দেখতে কেমন রে?একা একটা বাড়ি তে ছেলে মেয়ে, একা কিভাবে রেখে এলি?
ইশ আমার তো ভয় করছে একটা মাত্র বোনের জামাই বল।
–নিরু:তোরা থামবি।রাগ দেখিয়ে চলে যায়।

–এদিকে রিহান ইচ্ছে করেই দূরত্ব তৈরি করেছে। অফিসের কাজেই ব্যস্ত রেখেছে নিজেকে। মামাতো বোন এসেছে বাসায় বেড়াতে সাথে ওর বর।বর হলো ওদের খালাতো ভাই। দুজনেই রিহানের ক্লাসমেট এবং বন্ধু।সুতরাং ভীষণ ভালো সম্পর্ক।
নিরুদের বাসায় অনেক বার যেতে বলেছে কিন্তু মাহিন(বর)একটু অফিসের কাজে ট্যুরে যাবে তাই মিরা(বউ)কে নিয়ে বের হবে।বিকেলে মিরা বাসায় চলে আসবে আর মাহিন ট্যুরে চলে যাবে।মাহিন ফিরে এলেই মিরা কে নিয়ে নিজেদের বাসায় ফিরবে এই কয়দিন মিরা ওর ফুপ্পির বাসাতেই থাকবে।

–নিরুরা বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।এসে দেখে কেউ নেই।তারপর রুমে চলে যায়।। পুরো রুম খুব সুন্দর ভাবে গুছাতে থাকে। পুরো রুম এলোমেলো হয়ে আছে।
–রিফা :কি করছো?
–নিরু:তোমার খাচ্চোর ভাই কি অবস্থা করে রেখেছে দেখো!
–রিফা:ওহ আচ্ছা!এখানে মিরা আপু ভাইয়া আড্ডা দিয়েছে এই কয়দিন।বাসায় ফিরে নি আপুর সাথে বাইরে আছে।
–নিরু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার কাজ করতে থাকে।এই মিরা টা কে দেখতে হবে তো।আচ্ছা এটাই কি তার বালিকা প্রেমিকা নাকি?কিছু একটা ভেবে বলে।

–নিরু:আচ্ছা রিফা তোমার মিরা আপুর বয়স কেমন দেখতে কেমন গো?
–রিফা:কোনো রকম হাসি আটকে রেখে বলে,, ভাইয়ার বয়সীই তবে ধবধবে ফর্সা।চেহারা কাটিং ভালোই।
–নিরু:ওঁরা প্রতিদিনই বাইরে বের হয়?
–রিফা:হ্যাঁ!কলিং বেলের শব্দে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় রিফা।
.
.
–রিহান :খাবারের প্যাকেট গুলো ড্রয়িং রুমে রেখে বলে খাবার নিয়ে এসেছি সবার জন্য।নিরু রান্না ঘরে থেকে সবটা শুনে।
–রিফা:এতো রাত হলো যে?
–রিহান :হয়েছে এমনি।সর বলে রুমে চলে যায়। মিরা আগেই চলে গেছে।
–রিফা:ফিসফিস করে বলে বউ কিন্তু চটে আছে।
–রিহান :ফিসফিস করে বলে কেন?
–রিফা:মেয়ে নিয়ে রাত বিরাতে ঘুরছো বলে।তারপর মিটিমিটি হাসতে থাকে।রিহান ও মুচকি হেসে চলে যায়।

–এদিকে রেগে রেগেই খাবার গুলো খুলে রাখে।রিহানের চেহারা খানা দর্শন করার জন্য রুমে আসে।
–রিহান :ফর্মাল ড্রেস আপেই শুয়ে আছে।নিরুকে দেখে চমকে যাওয়ার ভান করে বলে, তুমি? তুমি কখন এলে?
–নিরু:সেটা না জানলে ও চলবে।বউ তো আর চারপাশে কম অভাব পড়ছে না!
–রিহান :সেটাই তাহলে তুমি আসলে কেন?আমি তো বলিনি তোমায় প্রয়োজন।
–নিরু:তেড়ে গিয়ে শার্টের কলার টা ধরে বলে এখন তো প্রয়োজন হবেই না।বিয়ে করার সময় তো তা মনে হয় নি।তারপর আবার হঠাৎ করেই নরম গলায় বলে,আসলে আমারই ব্যর্থতা।মায়ায় জড়াতে পারি নি।আমি শুধু কলঙ্ক বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছি ভালোবাসা নয়।হুট করে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।রিহান স্তব্ধ হয়ে গেছে।পাঁচ মিনিট এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো।

–নিরু কতক্ষণ দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে।তারপর চোখ মুছে বের হয়ে আসে রুম থেকে।

–মাথায় লম্বা করে ঘুমটা টেনে চুপচাপ সবাই কে খাবার বেড়ে দেয়।সবাই খেতে বসেছে রিহান ও।তবে মিরা রুম থেকে বের হয় নি।
–শ্বাশুড়ি :নিরু ও বসে পড়ো একসাথে খেয়ে ফেলি সবাই।
–নিরু:আমি খাবো না।ভালো লাগছে না আম্মু।
–রিহান উঠে হাত ধুয়ে চুপচাপ চলে যায়।
–শ্বশুর :এর আবার কি হলো?
–নিরু:খাবার রুমে দিয়ে আসবো আব্বু।

–সবাই খেয়ে চলে গেলে সুন্দর করে গুছিয়ে খাবার প্লেটে নিয়ে রুমে আসে নিরু।অন্য দিকে ঘুরে আছে রিহান চুপচাপ প্লেট টা রেখে বলে খাবার রেখে গেলাম। রিহান এদিকে ফেরার আগেই বেড়িয়ে যায় নিরু।
নিরু আজকে রিফার সাথে থাকবে বলে ওর রুমে চলে এসেছে।
–রিফা:ঝগড়া হয়েছে তোমাদের?
–নিরু:বিছানায় শুতে শুতে বলে, নাহ্।ভালো লাগছে না নিশাকে ভীষণ মিস করছি তাই তোমার সাথে থাকতে চলে এসেছি।তারপর শুয়ে শুয়ে দুজনে অনেক গল্প করে।

–এদিকে রিহান অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে কিন্তু নিরু ফিরে আসছে না দেখে উঠে খুঁজে।কোথাও না পেয়ে রিফার রুমে আসে।এসেই লাইট অন করে ফেলে।
আচমকা লাইটের আলোয় উঠে বসে রিফা আর নিরু।
–রিহান:এই রুমে কি করছো নিরু?
–নিরু:ঘুমুতে এসেছি।
–রিহান:তুই একটু বাইরে যা রিফা আমার ওর সাথে কথা আছে।
–নিরু:তুমি বাইরে যাবে না রিফা।আর আপনি আপনার রুমে যান।
–রিহান:জোরে ধমক দিয়ে রিফাকে বলে, কিছু বলেছি আমি?
–রিফা:যেতে যেতে বলে,,কার ঝাঁজ কার উপর। ভাই তোদের ব্যাপারে হুদাই আমি ধমক খাচ্ছি কিন্তু মোড ভালো হলে একটা ট্রিট দিয়ে দিও।রিহান চোখ গরম করে তাকাতেই দৌড়ে বের হয়ে যায় রিফা।

–রিহান:রুমে চলো?
–নিরু:এই রুমে থাকবো।
–রিহান:বেশ!তাহলে আমি রিফাকে বলে দিচ্ছি আমার রুমে ঘুমিয়ে পড়ুক।
–নিরু:আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না।
–রিহান:বিছানায় বসে নরম ভঙ্গিতে বলে আচ্ছা! তুমি কি চাও?
–নিরু:কিছু চাই না!
–রিহান:তাহলে আলাদা রুমে আসলে কেন?যত যাইহোক স্বামী স্ত্রী আলাদা রুমে থাকলে শয়তান সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে।রাগ অভিমান সব করার অধিকার তোমার আছে কিন্তু আলাদা থাকার নেই।সেটা আমি দিবো না কখনো।
–নিরু:প্লিজ আর কথা বাড়িয়ো না তো।যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।তোমার থেকে আমি কোনো অভিনয় নিতে পারি না রিহান।কথাটা বলেই কান্না করতে করতে বসে পড়ে।

–সব সময় রিহান কে তুমি বলে ডাকলে ও সেই ঘটনার পর থেকে আপনি বলেই সম্বোধন করে নিরু।তবে অনেক দিন পর আবার নিরুর মুখ থেকে তুমি এবং নিজের নাম শুনে ভালোই লাগে।
–রিহান :কান্না করো না উঠো!
–নিরু:খানিকটা চিৎকার করে বলে,, ভালো লাগছে না বলছি তো!
–রিহান :রুমে চলো ভালো লাগবে।নিরুর হাতটা ধরে বলে চলো!
–নিরু:এক ঝটকায় হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে, আমায় ছুবেন না।
–রিহান :আচ্ছা!তাহলে কাকে পাঠাবো তোমায় ছুয়ার জন্য।
–নিরু:নির্লজ্জ পুরুষ।খারাপ লোক।তারপর হনহন করে রুমে চলে যায়।
–রিহান :হাসতে হাসতে বলে বোকা বউ আমার।
.
.
–রিহান :উঠো খেয়ে ঘুমাবা।
–নিরু:খাবো না।
–রিহান :আরে খাও!বিয়ে তো আরেক টা করতেই হবে।রোগা কাউকে কি আর তখন কেউ বিয়ে করবে?
–নিরু:আমার জন্য আপনার না ভাবলে ও চলবে।
–রিহান :উঠো তো বলেই এক টানে বসায় দেয়।তারপর জোর করে মুখে খাবার তুলে দেয়।মুখে দিলে ও এভাবেই বসে থাকে।চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়তে থাকে।এক পর্যায়ে হেঁচকি উঠে।রিহান তাড়াতাড়ি করে পানি এনে দিলে ও দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুমে বমি করে দেয়।

–রিহান ও অস্থির হয়ে যায়।নিরুর পিছনে যেতে নিলেই ওর ফোন বেজে ওঠে।তাকিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার।

–রিহান:সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একজন অপরিচিত মানুষের গলার শব্দ শুনতে পায়।কিছু একটা শুনে হাত থেকে ঠাস করে ফোন টা নিচে পড়ে যায়।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১২

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১২]
-তামান্না

–রিহান:শায়েস্তা না মেরে ফেলবে। সাথে সাথে মুখটা মলিন হয়ে যায় নিরুর।মৃত্যু শব্দ টা ভীষণ যন্ত্রণার নিজের বাবা আর নানু নানার মৃত্যুতে বুঝে গেছে।ভালোবাসার মানুষ বলতে এরাই ছিলো এখন কয়েক জন আছে।ওঁরা ও থাকবে না ভাবতে ও পারে না নিরু।
কোনো কথা না বলে মন খারাপ করে চলে আসে।চুপচাপ বেলকনিতে চলে যায়।
–কিছুক্ষণ পর রিহান চুপচাপ এসে নিরুর পিছনে দাঁড়ায়।
–রিহান:তুমি কি চাচ্ছো এখনই ফোন করে নিয়ে আসবো নিরবকে?নাহ মানে আমাকে মে’রে ফেলার জন্য।আচমকা এসে রিহানের গলার শব্দ পেয়ে ভয় পেয়ে যায়।বুকে থুতু দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,আপনাকে কেন মারবে?এরচেয়ে ভালো এসে আমাকেই বরং মেরে দিয়ে যাক।

–রিহান:এমা তোমাকে কেন মারবে? আর আমি দিবো কেন?আমি তো তোমায় ভালোবাসি।তুমি তো আর আমায় ভালোবাসো না।এতে তো তোমারই লাভ।
–নিরু:কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাইরে তাকিয়ে বলে ভালো তো আমি নিজেকে ও বাসি না।বরং ক্ষতিটা আমারই হোক।
–রিহান:তোমার কেন নিজেকে ভালোবাসতে হবে? তোমাকে ভালোবাসার জন্য তো আমি আছি তাই না!
–নিরু একবার পিছনে ফিরে রিহানের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।তারপর আবার ঘুরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, আপনার মতো সুদর্শন যুবকের মুখে কুৎসিত মানুষ কে ভালোবাসা মানায় না।আপনি বরং সাদা ধবধবে নতুন একজন বালিকার প্রেমে পড়ুন এতে মনের খায়েশ মিটবে।

–রিহান :স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলে,, আর?
–নিরু:পছন্দ হওয়ার মতো কথাটাই বললাম!
–রিহান :হুম!আর আসলেই তো তুমি অসুন্দর তোমায় কেন ভালো বাসতে যাবো?সেদিন সত্যিই বলেছি।রিহানের এমন কথা শুনে পিছনে ছলছল চোখে ঘুরে তাকায় নিরু।
রিহান কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।ইচ্ছে করেই নিরুকে হার্ট করার জন্য কথা টা বলে রিহান।আর দূরত্ব নয় কাছে আসার জন্য খানিকটা আঘাত কিংবা কষ্ট দেওয়া দরকার।মানুষ ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে সুতরাং ব্যথা দেওয়া টা ও জরুরি।

–আজকে রাতে আর রিহান নিরুর রুমে ফিরে আসে নি।গেস্ট রুমে থেকে গেলেও নিরু জানে না রিহান বাসায় আছে কি না!

–খাওয়া দাওয়া শেষ হলে রুমে এসে অপেক্ষা করে নিরু।চিন্তায় কিছু খেতে ও পারে নি।কেউ জানে ও না রিহান কোথায়।নিরু প্রায় অর্ধেক রাত অব্দি অপেক্ষা করে, ইচ্ছে করছিল ফোন করে জানতে তবে করে নি।
মনে পড়ে তারপর অপমান করা পরিস্থিতি চারপাশ মানুষের তাচ্ছিল্য,, যা আজকে নিজের মুখে স্বীকার করেছে রিহান,, সবটা মন থেকেই করেছে তাহলে!
বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি মুছে শুয়ে পড়ে।মনে মনে বলে নতুন করে মায়ায় জড়াবে না।এমনি যা জন্মেছে তা মৃত্যু ব্যতীত মুছে ফেলা সম্ভব নয় সুতরাং এর পরিধি আর বাড়তে দেওয়া যাবে না
.
.
–সকাল সকাল মায়ের ফোন পেয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ি মায়ের বাসায় পাঠায় নিরুকে।নিরুর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে একা নিশা সামলাতে পারছে না।সারা রাত রুমে না ফেরায় নিরু ভেবেছে রিহান বাসায় ফিরে আসে নি।
তাই আর বলা হয় নি রিহান কে না বলেই চলে আসে।শ্বাশুড়ি বলে দিয়েছেন এক সপ্তাহ থেকে আসতে।

–নয়টায় ঘুম থেকে ওঠে জানতে পারে নিরু বাসায় নেই।রিহানের প্রচুর রাগ হয়।ওর বউ ওর থেকে অনুমতি না নিয়ে বাসায় চলে গেলো? ঠিক ঠাক ভাবে শায়েস্তা করেই ছাড়বে।
রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়।যাওয়ার সময় মা বলে দিয়েছে যেন নিরুদের বাসায় চলে যায়।

–নিরু বাসায় এসে নিজের হাতে রান্না করে মা আর বোনকে খাওয়ায়।মায়ের জ্বর হয়েছে।তাছাড়া শরীর ও ভীষণ দূর্বল।এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে নিয়েছে।আসার পর থেকে হাজার টা প্রশ্ন রিহান কে বলে এসেছে কি না। আসে নি কেন? নিরু কোনো রকম কথা কাটিয়ে নিয়েছে।বড় সন্তান ভীষণ আদুরে সুতরাং বাবা মায়ের এক্সপেকটেশন ও থাকে বেশি।
এতো দিন এই বাসায় অভ্যস্ত হলেও আজকে কেন জানি ভালো লাগছে না নিরুর।ফাঁকা লাগছে।মনে হচ্ছে শূন্যতায় ছেয়ে গেছে চারপাশ।

–শ্বাশুড়ির খোঁজ ফোনে নিয়ে নিয়েছে রিহান।তারপর অফিসের কাজ শেষ করে কিছু কেনাকাটা করে হাত ভরে নিয়ে চলে যায় শ্বশুর বাড়ি।
এতো রাতে কলিং বেলের শব্দে ভ্রু কুঁচকে আসে নিরুর।নিশাকে মায়ের পাশে বসিয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।রিহান কে দেখে হঠাৎ ভয় পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি পিছন দিকে ঘুরে ওড়না টেনে মাথায় কাপড় দিয়ে নেয়।বাসায় থাকায় মাথায় কাপড় ছিলো না।পিছনে ফিরেই বুকে থুতু দিয়ে সামনে ঘুরে তাকায়।নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনি এতো রাতে?
–রিহান:সোফায় ব্যাগপত্র গুলো রেখে আবার গাড়ির কাছে চলে যায় পিছন পিছন নিরু ও আসে।নিরু হাতে কিছু দিয়ে বাকি গুলো নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
–নিরু:এতো কিছু আনতে গেলেন কেন?
–রিহান :টাকা বেশি হয়েছে তাই!সরো বলে মিতার রুমে চলে যায়।

–নিরু:ফাজিল লোক।এই বাজে লোকের মোড মনে হয় না আমার জীবনে বুঝা হবে।

–মিতা:রিহান কে রুমে নিয়ে যা নিরু।ওকে কাপড় দে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।তারপর রিহান কে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।রিহান এসেই ওয়াশরুম থেকে পা ধুয়ে ধুপ করে শুয়ে পড়ে।

–নিরু:রাতে থেকে যাবেন?
–রিহান :হেসে তুমি চাচ্ছো?
–নিরু:আমি চাওয়ার কে?রাতে বাসায় না ফিরলেই বা আমার কি?
–রিহান :তাই তো!
–নিরু:তারপর কি করবেন?
–রিহান :বিয়ে তো করে নিয়েছি আপাতত রোমাঞ্চ করবো।
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
–রিহান :ভয় পাই না।তারপর উঠে নিরুর হাত থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

************** ************* **************
–রাত এগারোটা নিরু মাত্রই নুডলস রান্না করে রুমে এলো।রিহান রাতে খানা খায় নি।মা ও খানিকটা সুস্থ নিশা পাশে আছে।তবে রুমে এসে দেখে ফোনে কথা বলছে রিহান।ভীষণ হাসিখুশি ভাবে কথা বললেও ভীষণ আস্তেই কথা বলছে।
–রিহান:সরি!আজকে আসতে পারবো না রাতে। অফিসের কাজে বাইরে আছি।এবার কথা টা জোরেই বলে।যেন নিরু শুনতে পারে।

–নিরু:মনে মনে কালকে রাতে তাহলে অন্য কোথাও ছিলো?
–রিহান :ফোন টা রেখে পিছনে ঘুরে চমকে যাওয়ার ভান করে বলে তুমি কখন এলে?
–নিরু:আজকে রাতে যেতে পারছেন না সেই দুঃখ প্রকাশের এক মিনিট আগে।আর আপনার পায়ে কেউ বেঁধে রাখে নি সুতরাং যেতে পারেন।
–রিহান :হাসার চেষ্টা করে এগিয়ে এসে নুডলস এর বাটি হাতে নিয়ে বলে,,থাক!আজকে রেস্ট করুক।খুব সুন্দরী একটা অল্প বয়সী বালিকা গায়ের রং ধবধবে সাদা পেয়েছি।তুমি মনে হয় সেদিন মন থেকেই দোয়া করে ছিলে তাই এতো তাড়াতাড়ি পেয়েছি।ধন্যবাদ।তারপর খেতে বসে।

–নিরু:গম্ভীর কন্ঠে বলে,, বিয়ে করে নিন।
–রিহান :হাসতে হাসতে বলে অনুমতি দিচ্ছো?
–নিরু:সে অধিকার নেওয়ার প্রয়োজন নেই। হারামে না থেকে খানিকটা আরামের জন্য হলেও বিয়ে করে নিন।
–রিহান :বিয়ে করে কি করবো?
–নিরু:ড্রয়িং রুমের কর্ণার র্্যাগে সাজিয়ে রাখবেন।
–রিহান :তাহলে তো আগে তোমাকে রাখতে হয়।
–নিরু:খানিকটা মন খারাপ করে বলে আমি কি আর আপনার বউ নাকি?আমি ধবধবে সাদা বালিকা নই যে সাজিয়ে রাখলে ঘরটা সুন্দর লাগবে।
–রিহান :তাহলে তুমি কে?
–নিরু:আমি নিরুপমা।
–রিহান :বাটিটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলে মিসেস রিহান।এরপর সোজা লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।
.
.
–সারারাত ঘুম হয়নি নিরুর।ওর রুমের সোফাটা ও অনেক ছোট তাই শুতে পারে নি।রিহান বুঝতে পেরে ওকে নিয়ে ছাঁদে বসে আড্ডা দেয়। অবশ্য নিরু বলেছিল রুমে এসে শুয়ে থাকতে তবে রিহান শুনে নি।
ভোরের আজানের শব্দে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে রিহান।নিরু নামাজ শেষ করে গেস্ট রুমে খানিকটা জিরিয়ে চলে আসে রান্না ঘরে।নতুন জামাই একটু ভালো মন্দ তো করতেই হয়।আম্মু ও যখন অসুস্থ দায়িত্ব টা আপাতত নিরুই নিয়ে নিয়েছে।

–রান্না শেষ করতে করতে বেলা বারোটা বেজে গেছে।এরমধ্যে নাস্তা করে আম্মু আর নিশাকে দেওয়া হয়েছে তবে রিহান কে ডাকলে ও ওঠে নি।বেচারা শুয়েছেই মাত্র কতক্ষণ।
সব কিছু গুছিয়ে সালাত কাটতে গিয়ে হাত কেটে যায় নিরুর।খানিকটা বেশিই কেটে গেছে।এমন বেখেয়ালি তো কখনোই হয় নি।তারপর রক্ত থামছে না দেখে ভয় পেয়ে যায়।চিৎকার করতেই আম্মু আর নিশা বের হয়ে আসে।রিহান ও মাত্র ই উঠলো শব্দ শুনে রুমের বাইরে এসে দেখে নিরু কান্না করছে।তাড়াতাড়ি করে ওকে ধরে রুমে নিয়ে যায়।

–নিরু চুপচাপ বসে আছে।আপাতত সবাই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
–রিহান:দাঁড়িয়ে অন্য দিকে ঘুরে চোখের উপর হাত রেখে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
–নিরু:এএএএমন কককককরছেন কককেন?
–রিহান :দাঁতে দাঁত চেপে কি করছিলে রান্না ঘরে?এতো সুন্দর ভাবে হাতটা কাটলে কেন?
–নিরু:ভয়ে উঠে দাঁড়ায়।মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলে রান্না করছিলাম।আম্মু তো অসুস্থ।
–রিহান এগিয়ে আসতে আসতে বলে কার জন্য?
নিরু পিছিয়ে যেতে যেতে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।আমতা আমতা করে বলে, আপনার জন্য।আপনি এভাবে এগুচ্ছেন কেন?
–রিহান :দেয়ালের দুই পাশে হাত রেখে বলে,, আমি কি রাক্ষস?নাকি তোমার মনে হয় জীবনে কিছু খাই নি?
নিরু ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।রিহান পাশে রাখা মগটা ফ্লোরে আছাড় মেরে ওয়াশরুমে চলে যায়।তারপর কোনো রকম কাপড় পাল্টে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

–নিরু দৌড়ে পিছন পিছন এসে বলে কোথায় যাচ্ছেন?এই দুপুরে কেউ বের হয়?তাছাড়া খাওয়া দাওয়া ও করেন নি।খেয়ে যান।
–রিহান :তাই তো!আমি তো কয়েক হাজার বছরের অভুক্ত আমাকে খাওয়ানোর জন্য হাত পা পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।
–নিরু:রিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে এতো হাইপার হচ্ছেন কেন?কে হই আমি আপনার?আমার হাত কেটে যাক মা-রা যাই আপনার কি?আপনার তো রূপবতী ধবধবে সাদা বালিকা রুপী নব্য প্রেমিকা আছে।আমি তো কুৎসিত আমার জন্য এমন করছেন কেন??

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১১

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১১]
-তামান্না

–নিরু রান্না শেষ করে রুমে এসে শুয়ে আছে।ভয় হচ্ছে সব কিছু ঠিকঠাক হলো তো?রিফা তো বললো হয়েছে। রিহান ও বাসায় নেই কোথায় গেছে বলে ও যায় নি।শ্বশুর বাড়িতে যতই বিশ্বস্ত মানুষ থাকুক না কেন।স্বামী ছাড়া কি থাকা যায়? স্বামী বিহীন শ্বশুর বাড়ি তে কেমন জানি এতিম এতিম লাগে।

–রিহান বাসায় পৌঁছে সবাই কে ড্রয়িং রুম অব্দি নিয়ে এসে তুলে দেয় মা আর আর বোনের দায়িত্বে আড্ডা দেওয়ার জন্য।গোসল করতে হবে তারপর আবার বউয়ের মুখ টা ও তো পরিদর্শন করতে হবে।
–রুমে এসে দেখে শাড়ী পড়ে ঘোমটা টেনে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে নিরু।ভিতরে প্রবেশ করে ফেললে ও আবার বেরিয়ে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দেয়।
–নিরু:পিছনে ফিরে বলে,, এমন করার কি আছে আপনার ই তো রুম।
–রিহান :ভিতরে প্রবেশ করে আলমারি থেকে কাপড় বের করে বলে,, নাহ মানে হাত দিয়ে দূরত্ব দেখিয়ে বলে,,ঘরে দূরত্বশীল বউ থাকলে অনুমতি লাগে।কথাটা শেষ হতে দেরি হয় নি এর আগেই ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ।

–রিহান ওয়াশরুমে যেতেই রুমে রিফার সাথে নিশা আর নীলা দৌড়ে এসে নিরুকে ঝাপটায় ধরে।
–নিরু:অবাক হয়ে বলে তোমরা এখানে?কখন এলে?
–রিফা:হাসতে হাসতে বিছানায় বসে বলে,, তোমার প্রাণপ্রিয় বর তোমার হাতের শ্বশুর বাড়ি তে প্রথম রান্না খাওয়াতে গিয়ে নিয়ে এসেছে।সাথে মন ভালো করার বিষয়টা ও সাইডে রেখেছে আরকি।

–নিশা হাসতে হাসতে রিফার পাশে বসে বলে,, বুড়ি হয়ে যাচ্ছে মেয়ে টা ওকে ও একটা জামাইয়ের ব্যবস্থা করে দে না আপু!নিশার কথায় সবাই হাসলে ও রিফা বালিশ নিয়ে দৌড়াতে থাকে।
–এরমধ্যে রিহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওদের কান্ড দেখে বলে কি হয়েছে?
–নিশা:তোমার বোন কে জামাই দিচ্ছি না দেখে মারছে আমায়!
–রিহান:কেন?তুই কি রিফার জামাই নিয়ে নিছিস নাকি??ছিছিছি এটা করতে পারলি?
এবার সবার হাসির শব্দ আরও বেড়ে যায়।নিশা রিফা নীলা বিরবির করতে করতে বের হয়ে যায়। রিহান তোয়ালে টা হাতে নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে নিরুর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,, হাসলে কিন্তু আগের থেকে ও দারুণ লাগে। রিহানের কথা শুনে হাসি বন্ধ হয়ে যায়।তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে আঁচল টা মাথায় টেনে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

–নিরু:রুমের বাইরে এসে হাসি আটকে রেখে বলে এই লোকের সামনে বেশিক্ষণ থাকলে মনে হয় না রাগ আমার থাকবে।

–সবাই মিলে একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করার জন্য আজকে সব কিছু গুছিয়েছে নিরু। সবাই কে সুন্দর ভাবে খাবার সার্ভ করে।অনেক দিন পর এতো উৎসাহ এবং হাসোজ্জল চারপাশ দেখে দারুণ লাগছে নিরুর।সবাই খাওয়া শুরু করলে রিহান বলে,,তুমি ও বসে পরো নিরু একা খেতে ভালো লাগবে না।

–শ্বাশুড়ি :বসে পড় একসাথে দারুণ লাগবে।
–শ্বশুর :অনেক দিন পর সবাই একসাথে খেতে বসলাম এতো সুন্দর আনন্দ হয় না বহুবছর।নিরুর বাবা বেঁচে থাকতে সবাই একসাথে হতাম আর নিরু রিহান পাশে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতো।আর নিশা ছোট ছিলো ঘুম পাড়িয়ে খেতে আসতো মিতা।
নিরুর এসব কথা শুনে ভীষণ লজ্জা লাগছে।রিহান আর ও একসাথে থাকতো ভাবা যায়?রিহান মুখ টিপে হাসছে আর খাচ্ছে সাথে বাবা মা শ্বাশুড়ির কথা শুনছে।
অবশেষে সবাই কে জোরে জোরে হাসতে দেখে নিরু ও হাসি আঁটকে রাখতে পারে নি।রিহান মুচকি হাসলে ও শব্দ করে হাসছে না।বউয়ের সাথে আগেই বোধহয় রোমান্স ভালো ছিলো পাশাপাশি থাকা হতো।হাত ধরা হতো ঝগড়া ও হতো আর বড় হয়ে রোমান্সের র ও হচ্ছে না।

–সারাদিন মিতা নিশা নীলা সবাই থাকে।সন্ধ্যা বেলা সবাই চলে যায়।কালকে আবার নিরুরা যাবে।বিয়ের পর এই সময়টাই যেতে হয় এটা নিয়ম।
–সারাদিন সবার সাথে থাকলে ও সন্ধ্যার পর রুমে আসে নিরু।খুব ভালো কেটেছে আজকের দিন।শাড়ী পাল্টে আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়।রিহান এখনো রুমে আসে নি।রিফা ও নিজের রুমে আছে।শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও সারাদিন ভীষণ খুশি ছিলেন।

–রিহান বাইরে গেয়েছিলো আসার সময় ফুসকা নিয়ে এসেছে।এসে কাউকে পায়নি আর রিফা এসব পছন্দ করে না আব্বু আম্মু তো না-ই।নিরুর আবার সব সময় এসব পছন্দ। কতো বকেছে ওকে তারপর ও অভ্যাস পাল্টায় নি।তাই আজকে নিয়ে এসেছে।রুমে এসে দেখে নিরু উপন্যাস নিয়ে বসেছে।লাইব্রেরি রুমে অনেক গুলো উপন্যাসের বই রাখা আছে তাছাড়া আরও অনেক বই আছে কিছু নিজে সাজেস্ট করে কেনা কিছু রিভিউ দেখে আর কিছু নিরুর কথায় কেনা হয়েছিল।
নিরুর সামনে ফুসকার প্যাকেট টা রেখে রিহান লাইব্রেরি রুমে চলে যায়।নিরু দেখলে ও হাতে নেয় নি।

–রিহান:ফিরে এসে বলে,,কেউ চাইলে খেতে পারে আমরা এসব খাই না।
–নিরু:বইয়ের দিকেই তাকিয়ে বলে,,কেউ অতোটাও রাক্ষস নই যে উড়া উড়া বললেই লম্বা জিহ্বা বের করে খেতে বসবে।
–রিহান:হাসতে হাসতে সোফায় বসে বলে, তোমার জিহ্বা লম্বা নিরু?না মানে কখনো দেখিনি তো!
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে বলে মিল দেওয়ার ধান্দা!
–রিহান:হয়েছে!তবে খেতে পারো তোমার জন্যই আনলাম।
–নিরু:হাতে নিয়ে বলে কতো টাকা?একসময় দিয়ে দিবো!
–রিহান:উঠে দাঁড়িয়ে রাগ দেখিয়ে বলে কয়েকশো কোটি!এরপর আর দাঁড়ায় নি বের হয়ে যায়।নিরু পিছন থেকে বলে, দিয়ে দিবো আমার বরের থেকে নিয়ে।ফিসফিস করে বলে বরের থেকে নিয়ে বরকে দিবো হাহাহা।

*********
–রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই শুয়ে পড়লে রিফা ভাইয়ের রুমে আসে। ঘুম আসছে না তার।
–রিফা:ভাবি চলো আমরা আজকে একটু লুডু খেলি।
–নিরু:ফিসফিস করে বলে তোমার ভাইয়া কে বলো!এসব খেলায় মজার মানুষ না থাকলে জমে না।
–রিহান:ছোট মানুষের সাথে এসব খেলি না লুডু হচ্ছে বড়দের খেলা।ছোট মানুষ ছোট ব্রেণ দেত!
–নিরু:মোটেও না রিফা।তুমি বলে দাও যে এসব বলছে আমি তার সমবয়সী।মোটেও ছোট মানুষ না।
–রিহান:গুনে গুনে আমি তিন মাসের বড় হুম।

–রিফা দুজনকে থামিয়ে বসে।নিরু বসে মাথায় ওড়না সুন্দর করে দিয়ে বালিশে হাত গুঁজে বসে আছে।
রিহান একটু পরপর নিরুকে দেখছে।রিফা বুঝতে পারলে ও নিরু বুঝতে পারছে না।রিফা সারাক্ষণ মিটিমিটি হাসে।অবশেষে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রিহান মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, ফাজিল বের হ।রিফা হাসতে হাসতে বলে,,এনজয় ব্রো হাহাহা হাহাহা!

–নিরু:রিহান পাশের রুমে চলে যাওয়ার সময় বলে ধন্যবাদ।এতো সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য।
–রিহান:আহা এই ধন্যবাদ দিবে বলে কাছের মানুষের সাথে ভালো সময় কাটালাম বুঝলে!
–নিরু:সোজা কথা বেশি সুন্দর কঠিন এবং জটিল হলেও।এমনিতেই ঘুরানো পেচানো কথা সোজা করতে লাগে কষ্ট সোজা করার পর মানে বুঝতে পেরে লাগে আরেক কষ্ট।
–রিহান:হেসে আবার থেমে বলে,,নিরব পাগল হয়ে গেছে আমাদের ক্ষতি করার জন্য সুতরাং খুব সাবধান।
–নিরু:যার যার কর্মফল ঠিক তাকেই ভোগ করতে হবে করুক না।
–রিহান:কর্মফল যেন পায় সেজন্যই তো সাবধানে থাকতে হবে।তাছাড়া সে কতোটা হিংস্র তা তো তুমি জানো।ইদানীং বুদ্ধি ব্রেণ আরও খেয়ে ফেলেছে আর মানুষ নেই।

–নিরু:বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,বাড়ি ছাড়া করেছে আমাদের ইজ্জত নিয়ে খেলেছে আর কি বা ক্ষতি করবে?
–রিহান:আমাকে,,একেবারে মেরে ফেলার ফন্দি নাকি আঁটছে।ওর টার্গেট আমি এবং একমাত্র আমি।আর সে খবর আমার কাছের একজন ওর সাথে মিশে জানিয়েছে।
–নিরুর বুকটা কেঁপে ওঠে।বুকে হাত দিয়ে বলে,, এতো জঘন্য?এখন কি করা উচিত?বড় বড় করে নিশ্বাস নিতে থাকে।
–রিহান:এতো হাইপার হচ্ছো কেন?এতো সহজ নাকি?একটা ধ্বংস স্তুপের ও শেষ ধ্বংস আছে আর সেটা আমার হাতেই ধ্বংস হবে।নিরবের বিকৃত মন আমি উপরে ফেলবো।আমি জানি ও কতোটা আমার লাইফের ক্ষতি করেছে।
–নিরু:সে খুব খারাপ তার সাথে লাগতে যাওয়া টা ও বোকামি।নিজের চাচা চাচি চাচাতো বোনকে পর্যন্ত ছাড় দিতে জানে না।

–রিহান:ফোন হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বলে তোমার ই তো ভালো আমার ক্ষতি হলে,,আমি তো আর তোমার কেউ না।কথাটা বলে লাইব্রেরি রুমে চলে যায়।
–নিরু ফুঁসতে ফুঁসতে পিছন পিছন এসে বলে এতোই যখন কিছু না তবে বিয়ে কেন করলি? আমি পিছন পিছন এসে বলি নি বিয়ে কর আমায় বিয়ে কর।
–রিহান:ইশশ! ভুল হয়ে গেছে।আর একটু অপেক্ষা করলে বোধহয় শুনতে পেতাম তাই না?
–নিরু:এরচেয়ে ভালো নিরব ভাইয়াই ঠিক আছে শায়েস্তা করুক।
–রিহান:শায়েস্তা না মেরে ফেলবে। সাথে সাথে মুখটা মলিন হয়ে যায় নিরুর।মৃত্যু শব্দ টা ভীষণ যন্ত্রণার নিজের বাবা আর নানু নানার মৃত্যুতে বুঝে গেছে।ভালোবাসার মানুষ বলতে এরাই ছিলো এখন কয়েক জন আছে।ওঁরা ও থাকবে না ভাবতে ও পারে না নিরু।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-১০

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১০]
-তামান্না

এরপর রিহান মাথা তুলে বসে।এবং একবার আড় চোখে নিরুকে ও দেখে নেয়।যা দেখে আপনা আপনি মুখ টা ঠিক হয়ে যায়।খানিকটা স্বস্তি ফিরে আসে।ফটাফট সবাই মিলে এক সাথে ছবি তুলে অনেকক্ষণ।
বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই নিরুপমার কান্নার শব্দ ভেসে ওঠে।নিশা দৌড়ে এসে বোন কে জড়িয়ে ধরে। এক মিনিটের ভিতরে পুরো বাসায় একেক করে সবাই কান্না করতে থাকে।নিশা আর নিরুর কান্না কোনো ভাবেই থামাতে পারছে না।

–অতঃপর বিদায় নিয়ে যেতে হয় নতুন গন্তব্যে।যেখানে অপেক্ষা করছে অনিশ্চিত নিয়তি পরিস্থিতি এবং চারপাশ।ভালো হলে তো খুশির শেষ নেই।তবে খারাপ হলে গোটা জীবন শেষ হয়ে যায়।একটা খারাপ সম্পর্কে পুরুষের থেকে ও বেশি কলঙ্ক বহন করতে হয় একজন মেয়ে কে।এতে যে পক্ষেরই দোষ থাকুক না কেন।পুরুষ মানুষের কোনো কলঙ্ক থাকে না তারা সব সময় শুদ্ধই থাকে।অবশ্য সমাজের চোখে।

–রিহান চুপচাপ বসে আছে নিরুর পাশে।ড্রাইভারের পাশে রিফা আর কেউ নেই এই গাড়ি তে।নিরু কান্না করেই যাচ্ছে।রিহান কিছু বলতে ও পারছে না।ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে শক্ত করে আকড়ে ধরতে তার প্রিয়তমা স্ত্রী কে।কিন্তু ভাগ্য এতো সুন্দর আর সহজ যে রাখে নি।

***********
–বিয়ে বাড়ি হলেও বাসাটা একদম ফাঁকা।কোনো মেহমান সাজসজ্জা রুম কোনো কিছুই নেই।রিহান নিয়ম শেষ করে যে রুমে গেছে আর বেরই হয় নি।নিরুকে ও কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে নি।তবে নিরুর অভিমান হচ্ছে রিহান আসছে না দেখে।
–সবাই মিলে একসাথে খাবার খায় রাতের।তখন রিহান ও উপস্থিত ছিলো তবে মাথা তুলে একবার ও তাকায় নি।নিরু বিয়ের শাড়ি পাল্টে থ্রি পিছ পড়ে আছে।মাথায় লম্বা করে ঘুমটা।
–রিফা:ভাইয়ার কি মন খারাপ?এভাবে মনমরা হয়ে আছো কেন?
রিফার কথায় নিরুর বুকটা কেঁপে ওঠে।মন খারাপ হয়ে যায় আরও।
–রিহান :মাথা তুলে জোর পূর্বক হেসে বলে,, তেমন টা না।মাথা টা ধরে আছে,,একটু রেস্টের প্রয়োজন।কথাটা বলেই হাত ধুয়ে উঠে চলে যায়।

–খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিরুকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে শ্বাশুড়ি।কিছু জামা কাপড় শাড়ি আর গয়না তুলে দেয় ওর হাতে।নিজ হাতে গহনা আর শাড়ী পড়িয়ে তারপর রিফাকে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেয় অন্য কিছু বলে নি।যদিও ওনাদের ও মন খারাপ এমন টা হওয়ায়।
–রিফা:ভাইয়া আসবো?
–রিহান:তাড়াতাড়ি করে উঠে দরজা খুলে স্বাভাবিক হয়ে বলে আয়!আর নিরুপমা কে কোন রুমে থাকতে দিয়েছিস?সব কিছু হাতের কাছে আছে তো?
–রিফা:নিরুকে নিয়ে রুমে চলে আসে।হাত থেকে জিনিস পত্র গুলো বিছানায় রেখে বলে,, আম্মু বলেছে ভাবি আজ থেকে এই রুমে থাকবে আর তুমি গেস্ট রুমে।অবশ্যই তাড়াতাড়ি মন জয় করে যেন এই রুমে আসতে পারো সেই দোয়ায় করবে।কথাটা বলেই রিফা রুম থেকে বের হয়ে যায়।

–রিহান:ওয়ালেট ফোন আর ব্লুটুথ টা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিলে…।
–নিরু:দরকার নেই।অযথা এতে আব্বু আম্মুর চিন্তা বাড়বে।আপনি এখানেই থেকে যান আমি লাইব্রেরি রুমের সোফায় ঠিক মানিয়ে নিবো।
–রিহান:আচ্ছা!তবে আমি লাইব্রেরি রুমে চলে যাচ্ছি তুমি বরং এখানেই থেকে যাও।তারপর পাশের রুমে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলে,, রুম সাজাতে আমিই বারণ করেছি।সমস্যা নেই তুমি যা চাও না তা হবে না।আমি যথেষ্ট মানিয়ে নিতে পারবো।

–রিহান পাশের রুমে গিয়ে দরজা আটকে ফেলতেই নিরু বসে পড়ে বিছানায়। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে করছে নিয়ম পরিস্থিতি পৃথিবী সব ছেড়ে চলে যেতে।
লাইট টা অফ করে এভাবেই কাপড় না পাল্টে শুয়ে পড়ে।প্রিয় মানুষের গায়ের গন্ধ মিশে আছে বিছানায় পুরো রুমটায়, কেমন যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।অর্ধেক রাত অব্দি কান্নাই করে।আজ কে ভীষণ আব্বু কে মনে পড়ছে।আব্বু মা-রা যাওয়ার সময় যেমন কষ্ট হয়েছিলো আজ কে ও সেই রকম কষ্ট হচ্ছে।
একা একটা বিছানায় কখনো শুয়া হয় নি হয়তো পাশে আম্মু নয়তো নিশা থাকতো।তাই আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে।
**********
–রিহান ভোরে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়।এসব আর ভালো লাগছে না সুতরাং যেতে হবে এসব থেকে দূরে।ব্যবসার অযুহাত দেখিয়ে দূরে থাকবে কয়েক দিন।সারারাত না ঘুমুতে পাড়ায় চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।চুপচাপ রুমে এসে দেখে নিরু শুয়ে আছে।এদিকে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
একটা ভালো টিশার্ট আর পেন্ট ওয়ালেট ফোন আর হাতে ঘড়ি।গায়ে কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ।
আস্তে করে এগিয়ে আসতে নিলে আচমকা উঠে বসে নিরু।রিহান ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিরু কাপড় টাও চেঞ্জ করে নি।সাজ গহনা সব কিছু এখনো শরীরেই।চোখ নামিয়ে বিছানার পাশে থাকা ড্রয়ার থেকে নিজের আইডি কার্ড নিয়ে বের হয়ে আসে।
কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে এসে বলে,,তোমাকে ছুটি দিয়ে যাচ্ছি।ফিরবো না আপাতত তবে তোমার বিশ্রাম শেষ হলে জানিয়ে দিও।আসছি বলে আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায় নি।

–নিরু চুপচাপ বিছানায় হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে তা না করে কি না রিহান দূরত্ব টানছে?কিন্তু দূরত্ব যে সংসার সম্পর্ক মজবুত নয় বরং নষ্ট করে দিবে।
মিনিট পাঁচেকের ভিতরে রিহান রুমে ফিরে আসে।সোফায় হেলান দিয়ে হাত রেখে বসে আছে।
–রিফা:ভিতরে আসবো?
–নিরু:হাত দিয়ে চোখ মুছে বিছানা থেকে নেমে বলে আসো।
–রিফা:তুমি কি গো ভাবি?বিয়ের পরদিন বরকে ছেড়ে দিচ্ছো অমঙ্গল ডেকে আনার জন্য?কথা গুলো বলতে বলতে রুমে ঢুকে মুখ টা হা হয়ে যায়। কপালে হাত দিয়ে বলে এখনো কাপড় ও চেঞ্জ করো নি?তাড়াতাড়ি যাও,কিছু নিয়ম আছে।আর হ্যা শাড়ী পড়ে নিও আলমারি তে রাখা আছে।একেবারে গোসল করে দুই জন বর বউ মিলে একসাথে নিচে আসবে।আর তোমাদের দেখে আমাদের চোখ দুটো জুড়াবে।

–রিহান :চুপ!আমি তোর বড় নাকি তুই আমার বড়?সেই কখন থেকে ভাষণ শুনে যাচ্ছি।
–রিফা:ভেংচি কেটে বলে এহহ বুঝে না কিছু আবার আসছে!এরপর আর পায় কে সোজা এক দৌড়ে বাইরে।

–নিরু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রিহানের দিকে। রিহান জোর পূর্বক হেসে বলে,, যেতে দেয় নি তো!তোমার শ্বাশুড়ি আর ননদ কান্না কাটি জুড়ে দিয়েছে।ফিসফিস করে বলে কই বউ কেঁদে ভাসাবে তা না।
–নিরু:আচ্ছা!মুখে আচ্ছা বললেও মনে মনে বেশ খুশিই হয়েছে।

**********
–শ্বাশুড়ি :আমাদের বংশের নিয়ম বিয়ের পরদিন নতুন বউকে নিজ হাতে রান্না করে সবাই কে খাওয়াতে হয়।তোকে কিছু করতে হবে না নিরু আমি মরিয়মের মাকে সব রান্না করে ফেলতে বলেছি।সব সময় তো সে-ই রান্না করে।
–নিরু:এগিয়ে এসে শ্বাশুড়ির ঘা ঘেঁষে বলে আমি পারবো।তুমি শুধু রেসিপির নাম টা ফটাফট বলে দাও।
–রিফা:আর সাহায্য করার জন্য আমি আছি তো।তারপর নিরুকে জড়িয়ে ধরে।আজকে ভীষণ মিস করছে নিশাকে।মেয়ে টা নিরুকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।মন খারাপ এটা ওটা সবটাই জুড়ে থাকতো নিরু।একটু আগে ও মা বোনের সাথে কথা হয়েছে নিশা ভীষণ কান্না করেছে।

–নিরু রিফা রান্না ঘরে আড্ডা দিতে দিতে রান্না করছে।নতুন গিন্নী রা রান্না করছে তার আভাস ড্রয়িং রুম থেকেই পাওয়া যাচ্ছে।রিহান হাসতে হাসতে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবে ওদের ও আসতে বলেছে দুপুরে,, নিশা আর শ্বাশুড়ি কে ও নিয়ে আসবে।তাহলে নিরু এবং ওদের পরিবার সবাই খুশি হবে।

–এদিকে মিতা নিশাকে নিয়ে শুয়ে আছে।বাচ্চা মেয়েটার ভীষণ মন খারাপ।পুরো বাড়িটাই একদম ফাঁকা হয়ে গেছে।দুই বোন মিলে সারাদিন কতোই না খুনসুটি করতো।স্বামী মা-রা যাওয়ার পর আজকের মতো মন খারাপ কোনো দিন হয় নি।
রিহান বন্ধুদের নিয়ে সাথে নীলাকে ও নিয়ে সবাই এক সাথে চলে আসে নিরুদের বাড়িতে।কলিং বেলের শব্দে মিতা চোখ টা মুছে দরজা টা খুলে দেয়।রিহান কে দেখে অনেক টাই অবাক হয়ে যায়।
–রিহান:হা করে আছো কেন?ছেলেকে ঘরে আসতে বলবে না?
–মিতা:এবার কান্না করে দেয় রুম থেকে দৌড়ে চলে আসে নিশা,দুজনকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রিহান।মুখে হাসি রেখে বলে,, যখন ইচ্ছে করবে মেয়ের কাছে চলে যাবে এখানে নিয়ে আসবে,,মন খারাপ করছো কেন?শুধু মেয়ের পিছন পিছন আমাকে ও রেখো।
–মিতা:হাসতে হাসতে চোখের পানি মুছে দিয়ে সবাই কে ভিতরে নিয়ে বসায়।

–মিতা:তোমরা বসো আমি নাস্তা আনছি বলে ভিতরে চলে যায়।

–নিশা:আপুকে আনলে না কেন?
–রিহান:আপু কিন্তু এখন আমার সম্পত্তি মাঝে মধ্যে খানিকটা সুযোগ দিতে হবে নাকি?
–নিশা:হাসতে হাসতে বলে কাগজ পত্র ঠিক হলেও আশা করি সম্পত্তির মধ্যে খানিকটা ময়লা ঝড়া পাতা জমে আছে,, পরিষ্কার করার কাজে লেগে পড়ো।
–রিহান:তোমার কি মনে হয় পরিষ্কার করা যাবে?
–নিশা:অবশ্যই!সুন্দর এবং নরম মনের মানুষের মনে রাগ জমে থাকে না তবে অভিমান জন্মে আর সেটা ভালোবাসা দিয়ে দূর করা যায়।

–নীলা :নিশার কানটা টেনে দিয়ে বলে,বেশি পাকা হয়ে গেছিস তাই না?
–নিশা:হাসতে হাসতে বলে,,বেশি না একটু।বড়দের থেকে শিখেছি।সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।

–সবাই মিলে আড্ডা দেয় অনেকক্ষণ।রিহান শ্বাশুড়ির সাথে রুমে বসে আড্ডা দেয়।
–মিতা:খারাপ ব্যবহার করেছে নিরু?
–রিহান:নাহ্।তবে দূরত্ব অনেক অনেক।
–মিতা:বুঝিয়ে বলবো?
–রিহান:থাক!জোর করে কোনো কিছু স্থায়ী হয় না।এরচেয়ে ভালো আমি না হয় ভালোবেসে আগের নিরুকে ফিরিয়ে আনবো।আগের নিরু হলেই হবে কোনো কমতি থাকবে না।
–মিতা:দোয়া করি সব কিছু তাড়াতাড়ি করে ঠিক হয়ে যাক।
–রিহান:এতো কিছু জানি না।তুমি এখন আমাদের সাথে যাবে।
–মিতা:এখন?এখন কিভাবে যাবো বাবা?
–রিহান :হাত ধরে টেনে দাড় করিয়ে বলে,, তোমার মেয়ে প্রথম বার রান্না করছে শ্বশুর বাড়ি তে আর সে খাবার তুমি খাবে না তা কি করে হয়?

–নিরু রান্না শেষ করে রুমে এসে শুয়ে আছে।ভয় হচ্ছে সব কিছু ঠিকঠাক হলো তো?রিফা তো বললো হয়েছে। রিহান ও বাসায় নেই কোথায় গেছে বলে ও যায় নি।শ্বশুর বাড়িতে যতই বিশ্বস্ত মানুষ থাকুক না কেন।স্বামী ছাড়া কি থাকা যায়? স্বামী বিহীন শ্বশুর বাড়ি তে কেমন জানি এতিম এতিম লাগে।

#চলবে

নৈশব্দে নিরুপমা পর্ব-০৯

0

#নৈশব্দে_নিরুপমা
[৯]
-তামান্না

–নিরু:আমি রিহানের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।
–রিহানের আব্বু :আচ্ছা!তোমরা কথা বলে আসো তবে উওর টা কিন্তু হ্যাঁ – ই চাই!নিরু কিছু বলে নি চুপচাপ উঠে আগে আগে ছাঁদে চলে যায়।

–রিহান:বলো?
–নিরু:বিয়ে হবে?
–রিহান:সত্যি?খুশি হয়ে বলে,, সত্যি বলছো?
–নিরু:আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, বিয়ে হবে কি না?
–রিহান:এটা কেমন কথা?তুমি বিয়ে টা হোক চাও না?
–নিরু:যেহেতু ইচ্ছে সিদ্ধান্ত সবটাই বড়রা নিয়েছে বিয়ে করে সংসার টা আমি তাদের সাথেই করতে চাই।আপনার সাথে নরমাল স্বামী স্ত্রীর মতো নয়।
–রিহান:হোয়াট?
–নিরু:এরপর যদি না করতে চান আমার কিছু করার নেই।তবে আপনার সাথে সংসার এক রুম এক বিছানা আমি ভাবতে ও পারছি না।কারণ ঠকে যাওয়া মানুষের মনে আশঙ্কা থাকে বেশি,, ঠকে যাওয়ার।বিশ্বাস টা সহজে আগের মতো স্থাপন হয় না।

–রিহান:খানিকটা থেমে এবং ভেবে বলে,, যাইহোক আমি এতো কিছু চাই না।তুমি আমাকে বিয়ে করছো এটাই না হয় আমার হয়ে থাকুক বাকি সব তোমার ইচ্ছে।আর উপর ওয়ালা চাইলে সবকিছু অবশ্যই সহজ হবে।তুমি অন্য কারো হবে না এটা তো নিশ্চিত থাকবো।
–নিরু:এভাবে বিরক্তি আসলে ছেড়ে দিতে পারবেন আমার কোনো বাঁধা কিংবা আপত্তি থাকবে না।আমি আমার মতামত জানালাম বাকি দায়িত্ব আপনার,,কিভাবে সবাই কে ম্যানেজ করবেন।
–রিহান:বিয়ে টা তো করছো?
–নিরু:শুধু মাত্র বড়দের ওয়াদা পালনের লক্ষ্যে।আমার কাছে আমার দৃষ্টিতে আপনি বলতে সেদিন কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনোর মতো চরিত্রের।ভালো এবং বিশ্বস্ত ভাবার মতো কোনো কারণ কিংবা ঘটনা এখন অব্ধি আমার চোখে পড়ে নি। নিরুপমা সব সময় একরকম আছে তবে খানিকটা চালাক হয়েছে।বুঝতে শেখেছে মানুষ,, এখন মানুষ পড়তে পারে তবে অতো সময় কই?তাই পড়া বা দেখার ঝামেলায় না গিয়ে সোজা এড়িয়ে চলে।

–রিহান:আমার বর্ণনা আমি মুখে নয় কাজে দেখাতে চাই যেন ছেড়ে যাওয়ার বদলে ঝাপটায় ধরতে বাধ্য হও।
–নিরুপমা এবার তাচ্ছিল্যের মতো হেসে বলে,, আপাতত আপনি আপনার দিকটা সহজ করুন।না করতে পারলে দায়ভার আপনি নিয়ে সমাপ্ত করবেন বলে আশা করি।
–রিহান:সে গুড়ে বালি।সিদ্ধান্ত নড়চড় হচ্ছে না শিউর থাকো।বাকিটা আমার ব্যাপার ওকে?এরপর আর রিহানই দাঁড়ায় নি।আগে আগে নিচে নেমে আসে।কোনো রকম একটা অজুহাত দেখিয়ে বের হয়ে যায়।রাতে নিরু আর ওর সম্পর্কে কথা বলবে বলে যায়।আপাতত বাদ দিয়ে নিশ্চিত থাকতে বলে।

–নীলা :আমি নিরুর বাসায় দরকারে এসেছি আম্মু।চলে আসবো সন্ধ্যার আগে।
–আম্মু :এই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।তোর বাবা রাগারাগি করছে তোর উপর।
–নীলা:ফোন টা ঘুরিয়ে অন্য কানে নিয়ে বলে,, আমি বলেছি তো গ্রাজুয়েশন শেষ না করে এসবে আমি নেই।তারপর ও কেন এভাবে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছো আম্মু?
–আম্মু :তোর আব্বু বাসায় এসে না পেলে অশান্তি করবে,, তাড়াতাড়ি চলে আয়।ছেলে তোকে এমনিতেই পছন্দ করেছে এবার বাড়ির লোক দেখে ডেট ঠিক করবে।তারপর তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা বলে কল কেটে দেয়।নীলার ভীষণ ভয় হচ্ছে।হাত পা কাঁপছে।হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিজে একটা সিদ্ধান্ত নিবে তার ও তো রাস্তা নেই।রিফাত তো হ্যা না কিছুই কখনো বলে নি।বাইরে এসেছিল কথা বলার জন্য।এখানে দাঁড়িয়েই নিরু কে টেক্সট করে বের হয়ে যায়।একটা রিকশা নিয়ে নেয়।যদিও রিকশায় করে বাসায় যেতে সময় লাগবে অনেক বেশি,, সি এন জি করে গেলে তাড়াতাড়ি হয়।কিন্তু ইচ্ছে করছে না অনেক গুলো মানুষের সাথে বসে যেতে।অস্বস্তি হবে যে।

–খানিকটা ভেবে রিফাতের নাম্বারে কল করে।কিন্তু বারবার রিফাত ও কল কেটে দিচ্ছে।ভীষণ রাগ হচ্ছে।
তারপর পাঁচ মিনিট পর রিফাত কল ব্যাক করে।
–নীলা :রিসিভ করেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।রিফাত ফোন রিসিভ করেই কান্না করে দেওয়ার মানে বুঝতে পারছে না।
–রিফাত:এই নীলু?কি হয়েছে?এভাবে বোকার মতো কান্না করছো কেন?
–নীলা :হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে বিয়ে দিতে চাচ্ছে সবাই।ছেলে পক্ষ আসছে।
–রিফাত:বাসায় ফিরলে কখন?তুমি না রিহানদের বাসায় গেছো?
–তারপর নীলা পুরো ঘটনা বলে।রিফাত তাদের কলেজ মাঠে নেমে পড়ার জন্য নীলাকে বলে কল কেটে দেয়।রিহান রিফাত আমান সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো বসে।

******
–রিফাত:দুই টা তাজা গোলাপ সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে,, এতো কিছু জানি না শুধু জানি আজকে তোমার বিয়ে হবে না।তেজি রগচটা মেয়ে টা আমার সামনে ভীতু হয়ে যাওয়া,, আমার কথা মেনে চলা আর দেখতে অসম্ভব সুন্দরী না হওয়ার পরে ও আমি তোমায় ভালোবাসি।তুমি যদি রাজি হও তোমার বাবা মা কে রাজী করার দায়িত্ব আমি নিবো।
অতিরিক্ত বিলাসবহুল জীবন দিতে পারবো কি না জানি না তবে ভালোবাসার কোনো কমতি থাকবে না।এবার আর চুপচাপ থাকতে পারে নি নীলা।রিফাত কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।রিফাত ও সুন্দর করে আগলে রাখে নীলাকে আর মুখে প্রাপ্তির হাসি।

–এদিকে রিহান আড্ডা দিয়ে অনেক রাত করে বাসায় ফিরে আসে।বাসায় আসতেই ওর আব্বু আম্মু ডেকে জিজ্ঞেস করে।
–রিহান:মাথা নুয়ে মন খারাপ করে বলে,, একটু সুযোগ চাই আব্বু আম্মু।আমাদের উপর যদি ছেড়ে দাও আমি অবশ্যই জয়ী হবো।সম্পর্ক টা একটু স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ দিও।তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলে।তবে নিরুকে জানাতে বারণ করে।খুব আত্নবিশ্বাসের সাথে পারবে বললে ও রিহানের মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে রিহান নার্ভাস।তবে ওদের ভিতরে কথা বলাটা ও যুক্তিসঙ্গত নয়।চাপিয়ে জোর করে তো আর সব হয় না।

–রিহান:খানিকটা থেমে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বলে,, বিয়ে টা কম আয়োজন কম মানুষের শেষ করো আব্বু।এরপর না হয় করা হবে।তারপর নিজের রুমে চলে আসে।

*******
–রিহান :নিরুর ফোনে মেসেজ পাঠায়,,বিয়ে নিয়ে আর কোনো প্ল্যান থাকলে জানাতে পারো।
–নিরু:খানিকটা ভেবে বলে,,,কম মানুষ অল্প আয়োজন আর রাতের বিয়ে।
–রিহান:লুকিয়ে করতে চাচ্ছো?
–নিরু:হুম!আমি চাই এই শহর আকাশ বাতাস মানুষ সবাই না জানুক আমাদের পরিণেয় কথা।কেননা এটা কোনো সুস্থ এবং ভালো সঙ্গীর পরিণয় নয়।
–রিহান:তারপর?
–নিরু:বিরক্ত হলে কিংবা মোড পরিবর্তন হলে মুক্তি দিয়ে চলে যেতে পারেন।
–রিহান:তোমাকে স্পর্শ করতে পারা পৃথিবীর সবচেয়ে অনিশ্চয়তা,,আমি মেনে নিয়েই এগুচ্ছি।তোমার শরীরের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই তবে জড়িয়ে ধরার গাল, হাত স্পর্শ করার লোভ অবশ্যই আছে।তবে তুমি না চাইলে এই এটা ও হবে না,,এতে যতই কষ্ট আমার হোক।

–নিরু:কোনো দরকারী কথা থাকলে বলতে পারেন।আর আপনার স্পর্শ করা চিন্তা ভাবনা সব কিছু প্ল্যান মাফিক হয় সেটা সেদিন ই বুঝতে পেরেছি।কমপক্ষে জোর করে আমার সামনে নিজেকে প্রমাণ করতে আসবেন না প্লিজ।এতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।এরপর আর কোনো রিপ্লাই আসে নি।
হয়তো দুই প্রান্ত থেকেই দুজনে কষ্ট পাচ্ছে।

–আজকে রাতেই বিয়ে।ঘরোয়া ভাবে কম আয়োজন আর কম মানুষের সাথেই শেষ করবে। নীলা সকাল সকাল এসে পড়েছে।নিরুকে বাসন্তী আর খয়েরী রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে।যেহেতু ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে তাই বাসার সামনে বাগানেই করা হচ্ছে।
–নিশা:এই রঙে তোমায় দারুণ লাগছে আপু।
–নিরু:আপনার কাছে ঠিক কোন রঙে আমায় দারুণ লাগে না বলবেন আপা?
–নীলা:আমাদের প্রিয় মানুষ সব রঙেই আমাদের কাছে সুন্দর,, তাই না নিশা?
–নিশা:হুম।

–রিফা:নিরুকে ভিডিও কল করে।নিশা রিসিভ করে সুন্দর করে দেখাচ্ছে নিরুকে।শাড়ী পড়ে বসে আছে আর একেক করে সবাই হলুদ দিচ্ছে। রিফা নিজের দিকের ক্যামেরা টা অফ করে সাউন্ড মিউট করে ভাইকে দেখায়।
–রিহান:কি?
–রিফা:দেখো তোমার হবু বউকে কতো কিউট লাগছে।ইশশ কেন যে ছেলে হলাম না,,নয়তো আমিই বিয়ে টা করে ফেলতাম।করুন গলায় বলে,, ভাগ্য আমার সহায় হয় নি!
–রিহান:মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, তবে ভালোই হয়েছে।সামনে আরও ভালো হলেই হয়ে যাবে।তারপর খপ করে ফোন টা নিজের কাছে নিয়ে নেয়।বিশ মিনিট পর্যন্ত নিজের কাছে রাখে।আর সব কিছু বসে বসে দেখে।নিরুর ব্রু কুঁচকে থেকে হলুদ মুখে নেওয়া আর পানি দেওয়া মাথায় নিয়ম কানুন সবটাই বসে দেখে।এক পর্যায়ে একজন নিরুর লম্বা চুল গুলো খুলে দিতেই মাটি পর্যন্ত পড়ে।মোড়াতে বসে থাকার পরে ও মাটি তে পড়ে খানিকটা জমে আছে।নিরুর এতো লম্বা চুল এর আগে দেখার সৌভাগ্য হয় নি।

–অথচ যখন রিহান বলতো আমার লম্বা চুল পছন্দ তখন নিরু এমন করতো যেন ওর চুল অনেক ছোট।এতো ঘণ লম্বা চুল কখনো বলে নি।

–এক পর্যায়ে কোনো সাড়া শব্দ ভিডিও কলে সামনে আসা না পেয়ে কল কেটে দেয় নিশা।

–তারপর একদম নরমাল ভাবে একটা কাতান শাড়ী আর দোপাট্টা সাথে কিছু গহনা আর হালকা সাজে সাজানো হয়।বিয়ের দিন এটুকু না হলে তো আর হয় না।
–নীলা :কানে কানে বলে,,বিয়ের পরে পিটিয়ে সোজা করে ফেলবি রিহান ভাই কে।যেন বাকি জীবনে কারো পাতা ফাঁদে পা না ফেলে।নিরু আর কিছু বলে নি।শরীর হাত পা কাঁপছে।না জানি কি অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে।

–রিহান সাদা শেরওয়ানি দামী ব্রান্ডের ঘড়ি আর কড়া ঘ্রাণের পারফিউম দিয়ে এসেছে।চুপচাপ ড্রয়িং রুমে মাথা নুয়ে বসে আছে।মেহমান বলতে বন্ধু বান্ধব আর বাইরের তিন চারজন লোক আর কেউ না।মন খারাপ করেই বসে আছে।সবাই হাসাহাসি এটা ওটা বলছে রিহানের কান পর্যন্ত যেন পৌঁছাচ্ছেই না।তারপর আবার একটু পরপর ঘাম মুছছে।

–নিরুকে এনে পাশে বসালে ও মাথা তুলে নি রিহান।
–রিফাত:একটু মুখ টা তুলে বস না ছবি তুলি।
–আমান:রিহান তুই কি নার্ভাস? এতো ঘামছিস কেন?আমানের কথায় বন্ধুরা সবাই একসাথে হেসে ওঠে।
এরপর রিহান মাথা তুলে বসে।এবং একবার আড় চোখে নিরুকে ও দেখে নেয়।যা দেখে আপনা আপনি মুখ টা ঠিক হয়ে যায়।খানিকটা স্বস্তি ফিরে আসে।ফটাফট সবাই মিলে এক সাথে ছবি তুলে অনেকক্ষণ।

#চলবে