Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1594



কতোটা চাই তোকে পর্ব-০২

0

#কতোটা_চাই_তোকে💖
#Writer:—#TanjiL_Mim💖
#part:—02
.
.
🍁
“টপ টপ করে রক্ত পড়ছে কাব্য ভাইয়ার হাত থেকে আমি তা দেখে রীতিমতো ভয়ে ঘাবড়ে গেলাম’!!তারপর ভাইয়ার হাতের রক্ত দেখে কেন জানি না খুব কষ্ট হলো’!!তারপর ভাড়ি লেহেঙ্গা ধরে বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললামঃ

——–“এসব কি করছো তুমি ভাইয়া'”!!

“ভাইয়া কিছু বললো না,,শুধু অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আমার দিকে’!!আমি রীতিমতো ভাইয়ার চোখ দেখে ভয়ে আধমরা হয়ে যাচ্ছি’!!তারপরও এই মুহুর্তে ভয়টাকে উপেক্ষা করে ড্রয়ার থেকে স্যাভলন আর ব্যান্ডেজ বের করে ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললামঃ

———“ভাইয়া তোমার হাত ব্যান্ডেজ করে দেই রক্ত পড়ছে’!!

“ভাইয়া চেঁচিয়ে বললোঃ

———“তোকে এত দরদ দেখাতে হবে না আমার উপর’!” তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়’!!

“ভাইয়ার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলামঃ

——–“প্লিজ ভাইয়া আগে তোমার হাতটা ব্যান্ডেজ করে দেই’!!

“ভাইয়া আমার কথা শুনে কিছু বললো না’!!ভাইয়ার চুপ থাকাটা দেখে আমি একবুক সাহস নিয়ে ভাইয়াকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলাম’!!তারপর আস্তে আস্তে করে হাতটা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলাম’!!

.

“এদিকে কাব্য ভিতরে ভিতরে খুব খুশি হয়েছে মাইশার কাজে’!!কারন মাইশা তার জন্য ভাবে’!!এই প্রথমবার মাইশা সাহস করে নিজ ইচ্ছে তার হাত ধরেছে আর কাব্যের রেগে যাওয়ার কারনটা হলো বিয়ের অনুষ্ঠানে মাইশা একটা ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলেছিল’!!তখন থেকেই কাব্য প্রচন্ড বেগে রেগে ছিল মাইশার উপর’!!আর রুমে ঢুকে মাইশাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আরো রেগে যায় কাব্য’!!আমচকা কাব্য “আহ” করে শব্দ করে উঠে সাথে সাথে মাইশা কাব্যের হাতে ফু দিতে থাকে’!!

“ভাইয়ার হাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে ভাইয়া বলে উঠলামঃ

———“তুমি বিছানায় শুয়ে পরো ভাইয়া’!!

“আমার কথা শুনে ভাইয়া বলে উঠলঃ

———-“আর তুই’!!

———-“আমি ওই সোফাটায় ঘুমিয়ে পরছি’!!তুমি ঘুমাও’!!

———-“সোফায় ঘুমাতে হবে না বিছানায় ঘুমাবি তুই’!!

———“কিন্তু তুমি…….

———”কোনো কিন্তু নেই তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পর’!!(ধমক দিয়ে)

“ভাইয়ার ধমক শুনে আমি আর কিছু বললাম না’!!চুপ করে বিছানার মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে ঘুমিয়ে পরলাম’!!

“এদিকে কাব্য মাইশার কাজে মনে মনে হাসলো’ কিন্তু বাহিরে তা প্রকাশ করলো না’!!তারপর সেও গিয়ে ঘুমিয়ে পরল বিছানায়’!!

__________________________________________

_____________________

“সকালে……….

“শাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!প্রচন্ড বেগে বিরক্ত লাগছে আমার’!” শাড়ি পরতে পারছি না’!!পাক্কা ১ ঘন্টা যাবৎ ট্রাই করছি এই শাড়ি পরার কিন্তু কোনো ভাবেই শাড়ির কুঁচি দিতে পারছি না আমি’!!এদিকে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে কাব্য ভাইয়া না জানি কখন উঠে পরে’!!তাহলে তো আমার মান সম্মান সব চলে যাবে’!!এখন কি করবো’!!হর্ঠাৎই মাথায় ইউটুব আন্টির কথা মনে পরল’!!ব্যাস মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইউটুব আন্টিদের একটা ভিডিও দেখতে লাগলাম আমি’!!বেশ কিছুক্ষন পর কোনোরকমের কুঁচি দিলাম আমি’!!কিন্তু খুব একটা ভালো হলো না হয়তো’!!ধুর শালা এইভাবে বিয়ে হবে আগে জানলে কিভাবে শাড়ি পরতে হয় মায়ের কাছ থেকে শিখে নিতাম ধুর ভালো লাগছে না’!!একরাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে সোফায় বসে পরলাম আমি’!!এমন সময় কারো হাসির আওয়াজ শুনে সামনে তাকালাম’!!সামনে তাকাতেই অবাক আমি’!!কারন কাব্য ভাইয়া হাসছে’!!আশ্চর্য এভাবে হাসার কি আছে বুঝতে পারছি শাড়ি পড়া হয় নি তাই বলে এইভাবে হাসতে হবে নাকি’!!মেজাজটা আরো গরম হয়ে গেল’!!আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললামঃ

———-“এভাবে হাসার কি আছে শাড়িটাই তো পরতে পারি নি’!!কোনো ব্যাপার না এখনি মামুনির কাছে গিয়ে আমি শাড়ি পড়ে আসছি’!!এই বলে পা বাড়াতে নিয়েও আবার থেমে গেলাম’!!কেন জানি না একটু সংকোচ বোধ হচ্ছে’!!কালকে যা হলো’!!

.

“এদিকে কাব্য মাইশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হয়তো বুঝতে পেরেছে মাইশা কেন যাচ্ছে না’!!কাব্য কিছুক্ষণ মাইশার দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে গেল মাইশার দিকে’!!

.

“হর্ঠাৎ করে ভাইয়াকে এইভাবে কাছে আসতে দেখে ভয়ে ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!ভাইয়া আসতে আসতে অনেকটা কাছে চলে আসলো আমার’!!আমি চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি’!!ভিতরে ভিতরে বুক কাপছে আমার’!!!

“হর্ঠাৎই ভাইয়া বললোঃ

———“আমি পড়িয়ে দিচ্ছি…..

“ভাইয়ার কথা শুনে অটোমেটিক চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার’!!কি বলছে কি ভাইয়া……..

———-“তুমি শাড়ি পড়িয়ে দিবে আমায়……

——–হুম………

“হাজারো অনিচ্ছা থাকা সত্বেও এক প্রকার বাধ্য হয়ে শাড়ি পরতে হলো ভাইয়ার কাছে……….

“ভাইয়া কুঁচি ঠিক করে দিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে’!!আর আমি এখনো শকট মুডে দাঁড়িয়ে আছি কি করে পারলো ভাইয়া শাড়ি পরাতে’!!এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল আমার’!!উপরে আপুর নাম দেখে একরাশ অভিমান নিয়ে ফোনটা তুলে বললাম আমিঃ

———“তুমি খুব পঁচা আপু,, কেন করলে এমন আপু’!!কেন এত বড় মিথ্যা কথা বলালে আমাকে দিয়ে’!!এই বলে কেঁদে দিলাম আমি’!!

“আপু আমাকে এইভাবে কাঁদতে দেখে শান্ত গলায় বললোঃ

———-“শান্ত হয় মাইশা’!!আমি তোকে সব বলছি’!!

“আপুর কথা শুনে আমি নিজেকে শান্ত করে বললামঃ

———–“বলো কেন এমন করলে……..

“আপু এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললঃ

———–“তুই তো জানিস আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি’!!কিন্তু আব্বুর ভয়ে আমি তো ওর কথা বলতেই পারলাম না’!!তাই বাধ্য হয়ে এই মিথ্যা কথাটা বলতে হলো’!!আমার ক্ষমা করে দে বোন'”!!!

———–“কিন্তু এখন তোমার আরেকজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে সেটা……..

“আপু মুচকি হেঁসে বললোঃ

———–“আমি যাকে ভালোবাসি তাকেই বিয়ে করেছি বোন কারন ওই হলো রাসেল’!!আমার ভালোবাসার মানুষ’!!

“আপুর কথা শুনে আমি যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলাম’!!

———“বাহ এত সুন্দর নাটক করলা কালকে……

———“সরি মাইশা আমি জানি আমি যেটা করেছি সেটা হয়তো আমার করা উচিত হয় নি’!!কিন্তু বিশ্বাস কর এটা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না’!!

———-“সব বুঝতে পেরেছি কিন্তু তাই বলে আপু কাব্য ভাইয়ার সাথে আমি কি করে থাকবো তুমি বলো’!!তুমি তো জানো আমি ভাইয়াকে কতোটা ভয় পাই’!!ওনার মতো এতো রাগী, আর বদমেজাজি মানুষের সাথে থাকা যায় তুমি বলো……

———–“একটু কষ্ট করে নে’!!তবে আজ একটা কথা বলি আমার এই কাজের জন্য একদিন তুই আমায় ধন্যবাদ দিবি’!!!কারন কাব্য যে তোকে……….

“এতটুকু শুনতেই এমন সময় পিছন কাব্য ভাইয়া বলে উঠলঃ

———–“কার সাথে কথা বলছিস তুই……….

“হর্ঠাৎ করে ভাইয়া আওয়াজে ভয় পেলাম আমি’!!আমি আমতা আমতা করে বললামঃ

——–না মানে আপু’!!এই রে আপুর সাথে বলা কথাগুলো সব শুনে নিলো নাকি ভাইয়া’!!(মনে মনে)

———“তুই কি বলেছিলি রিয়াকে…..’!!এই বলে ভাইয়া সামনে এগোতে লাগলো আমার দিকে’!!যা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম আমি’!!

“এই রে সব শুনে ফেলেছে মনে হয়’!!এই ভেবে এক প্রকার দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি’!!আজকে আর যাচ্ছি না ভাইয়ার সামনে’!!এই ভেবে নিচে চলে আসলাম আমি’!!নিচে নামতেই দেখলাম………..
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে……………

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ’!!!আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে’!!]😊😊😊

#TanjiL_Mim💖

কতোটা চাই তোকে পর্ব-০১

0

#কতোটা_চাই_তোকে💖
#Writer:—#TanjiL_Mim💖
#part:—01

“কবুল বলার আগের মুহূর্তে আপু চেঁচিয়ে ভরা বাড়ির লোকের সামনে কাব্য ভাইয়াকে বলে উঠল আমি এ বিয়ে করতে পারবো না’!!আপুর কথা শুনে আমি সহ আমাদের পরিবারের সবাই অবাক চোখে তাকালাম আপুর দিকে’!!এসব কি বলছে আপু’!!আপুর কথা শুনে আব্বু গিয়ে আপুর সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ

——–“এসব কি বলছিস তুই “রিয়া”……

“আপু আব্বুর সামনে মাথা নিচু করে বলে উঠলঃ

——–“আব্বু এই বিয়ে করে আমি আমার ছোট বোনের মরা মুখ দেখতে পারবো না’!!

“আপুর কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল’!!মুহূর্তে আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসলঃ

——-“এসব কি বলছে আপু,,কাব্য ভাইয়াকে বিয়ে করলে আমার মরা মুখ দেখবে মানে’!!

“আপুর কথা শুনে আব্বু বলে উঠলঃ

——–“মানে কি বলতে চাইছিস তুই’!!

——–“আমি বলছি মাইশা কাব্যকে ভালোবাসে’!!ওকে না পেলে ও মরে যাবে’!!

“আপুর কথা শুনে আমি চরম প্রকার শকট খেলাম’!!চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম আপুর দিকে’!!এত বড় মিথ্যা কথাটা কি করে বললো আপু তাও আবার এমন সময় বিয়ের আসরে’!!এই মুহূর্তে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার’!!

”এদিকে আব্বু রিয়াকে বলছেঃ

———“তুই এইসব কি বলছিস’!!

———“আমি ঠিক বলছি আব্বু আর আমি এই বিয়ে করে আমার ছোট বোনটার জীবন নষ্ট করতে পারবো না’!!আমি এই বিয়ে করবো না’!!আব্বু আপুর কথা শুনে ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললোঃ

———“রিয়া যা বলছে তা কি সত্যি মাইশা’!!

“আব্বুর কথা শুনে পুরো শরীর কাঁপছে আমার,,আমার লাইফে দুজন মানুষকে আমি খুব ভয় পাই আর তাদের মধ্যে একজন হলো কাব্য ভাইয়া আর এই আব্বু’!!আর আজ কিনা এই ভাইয়াকে নিয়ে এত বড় মিথ্যা কথা বললো আপু’!!কেন করলো এমন আপু’!!এসব ভাবতে ভাবতেই আব্বু চেঁচিয়ে বললোঃ

———“কি হলো কথা বলছো না কেন??

“আব্বুর চেঁচানোতে আমি পুরো কেঁপে উঠলাম’!!আমি কাঁপা কাঁপা চোখ নিয়ে আপুর দিকে তাকালাম’!!আপুর দিকে তাকাতেই আপু চোখের ইশারায় বললো “হ্যা” বলতে’!!আমিও আপুর কথা মতো মাথা নাড়ালাম’!!আমি মাথা নাড়াতেই আব্বু ঠাসস করে আমার গালে থাপ্পড় দিয়ে দিল’!!আমি গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকালাম আব্বুর দিকে’!!আব্বু আমার আরেক গালে থাপ্পড় দিতে যাবে এমন সময় মামা এসে ধরলো আব্বুর হাত’!!আর মামা হলো কাব্য ভাইয়ার আব্বু’!!কাব্য ভাইয়া হলো আমার মামাতো ভাই’!!মামা আব্বুর সামনে এসে বললঃ

——–“এসব কি করছিস তুই তার চেয়ে বরং রুমে গিয়ে ভালো ভাবে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে দেই’!!আব্বু মামার কথা শুনে মেজাজ গরম হয়েই হন হন করে রুমের ভিতরে চলে গেল’!!আর মামা আমার কাছে এসে বললোঃ

———“চিন্তা করিস সব ঠিক হয়ে যাবে’!!এই বলে মামা আমার হাত ধরে নিয়ে গেল’!!সাথে কাব্য ভাইয়া আর আপুও’!!

“রুমের ভিতর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি, সাথে আছে কাব্য ভাইয়া, মামা-মামী,আপু,আম্মু আর আব্বু’!!এই মুহূর্তে শুধু মাথার ভিতর একটা প্রশ্নই ঘুরছে আপু কেন করলো এমন”!!আর আপু এগুলো করার জন্যই তখন আমায় সরি বলে ছিল’!!আপু নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি রুমে আসতেই আপু বলে ছিল মাইশা একটু পর যা হবে তার জন্য সরি বনু’!!তখন আপুর কথাটা বলার কোনো কারন বুঝতে পারি নি আমি’!!কিন্তু এখন সব বুঝতে পেরেছি আমি’!!

“এদিকে মামা আব্বুর হাত ধরে বললঃ

——–“দেখ যা হওয়ার হয়ে গেছে মাইশা যদি কাব্যের সাথে থাকতে চায় তাহলে আমরা কেন মানতে পারবো না’!!আর ভালোবাসা অন্যায় নয়’!!তাই আজকে কাব্যের সাথে মাইশার বিয়ে হবে’!!

“মামুর কথা শুনে বুকের ভিতর দক করে উঠল আমার’!!কাব্য ভাইয়াকে বিয়ে করতে হবে ভাবতেই ভয় লাগছে আমার’!!কিন্তু এখন কি বলবো আমি’!!আমি বলে দিবো আপু মিথ্যা কথা বলছে’!!এই ভেবে আব্বুকে কিছু বলতে যাবো এমন সময় আপু আমার কাছে এসে বললোঃ

———“তুই যদি এখন কাউকে কিছু বলিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি’!!আপুর কথা শুনে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকালাম আমি’!!আপুকে আমি খুব ভালোবাসি’!!তাই বলে আপু যাকে আমি ভয় পাই তার সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকবো’!!আর কাব্য ভাইয়াও বা কেন মেনে নিবে’ আমায়’!!সে তো আপুকে ভালোবাসে’!!

“এমন সময় মামু কাব্য ভাইয়াকে বললোঃ

——-“তোর কোনো আপওি আছে মাইশাকে বিয়ে করতে’!!

“মামুর এ প্রশ্নে উওরে ভাইয়া নিশ্চয়ই “না” বলবে কিন্তু আমায় অবাক করে দিয়ে “হ্যাঁ” বললো’!!আমি চরম প্রকার শকট’!!কি বললো ভাইয়া আমার বিয়ে করতে তার কোনো আপওি নেই’!!ভাইয়ার কথা যেন আমার কানে এখনো বাজছে’!!

“মামু সবাইকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো’!!যার ফলে সবাই মেনে নিলো আমায়’!!আর ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিতে কারো কোনো আপওি নেই'”!!!কে কি বলছে সব যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে’!!আমি পাথরের মতো শুধু সব শুনে যাচ্ছি’!!

__________________________________________

_____________________

“কনের বেসে সাজানো হলো আমায়’!!চোখের পানি যথা সম্ভব আঁটকে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমি’!!কি হওয়ার কথা ছিল আর কি হচ্ছে’!!অবশেষে কাজী আমায় কবুল বলতে বললো’!!আমি এখনো চুপ করে আছি’!!কি হচ্ছে না হচ্ছে বুঝতেই পারছি না’!!আমি যেন ভিতর থেকে পাথর হয়ে গেছি’!!কাজী কয়েকবার কবুল বলার পর অবশেষে কবুল বলে দিলাম আমি’!!সাথে সাথে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে ফেললো’!!

“এদিকে আপু ভিতরে ভিতরে প্রচুর পরিমান খুশি হয়েছে’!!আবার মাইশার সাথে এমন টা করার জন্য অনুতপ্ত হচ্ছে’!!এমন সময় রিয়ার মাথায় হাত দিলো আব্বু’!!তারপর বলে উঠলঃ

———“এখন তোর কি হবে রিয়া’!!

———“কিছু হবে না আব্বু আমার বোনের সুখের জন্য আমি সব করতে পারি’!!

“এমন সময় একজন মহিলা এসে আব্বুকে বললোঃ

——-“আপনি কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলবো”!!

——–“হুম বলুন”!!

———“আপনার এই বড় মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে আপনি চাইলে এখনি আমার ছেলে রাসেলের জন্য আপনার এই মেয়েকে আমি বউ বানিয়ে নিয়ে যেতে চাই”!!

“আব্বু কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে আপুর দিকে তাকালো তারপর বলে উঠলঃ

———-“তুমি কি বলো’!!

———-“আব্বু তুমি যা চাইবে তাই হবে’!!

“আব্বু আপুর কথা শুনে রাজি হয়ে গেল’!!তারপর ওই মহিলাও তার ছেলেকে সামনে আনলো আব্বুর’!!আপু ছেলেটি দেখে মুচকি হাসলো’!!তারপর ওই কাজীর কাছে গিয়েই আব্বু বললো আপুর বিয়ের কথা’!!সবাই সব শুনে প্রায় খুশি’!!তারপর আপুকে আর ওই ছেলেকে বিয়ে আসরে বসানো হলো’!!তারপর কাজী তাদের বিয়েও পড়াতে শুরু করলো’!!কিছুক্ষনের মধ্যেই কবুলের মাধ্যমে বিয়ে পড়ানো হয়ে গেল’!!!

“এতকিছু হয়ে গেল তারপরও আমি পাথরের মতোই বসে ছিলাম’!!যেন কোনোকিছুই কানে পৌঁছাচ্ছিল না’!!একজনের বিয়ে দিতে এসে দু-জনের বিয়ে হয়ে যাবে তা আমি ভাবতেও পারি নি’!!

“সবশেষে দু-বোনের একসাথেই বিদায় দেওয়া হলো’!!আমি এতটাই শকট ছিলাম যে আমার চোখ বেয়ে শব্দহীন পানি পরতে ছিল’!!গাড়িতে উঠতেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন করো উঠলো’!!আমি ঠলে পরলাম কারো উপর হয়তো কাব্য ভাইয়ার’!!আর কিছু মনে নেই সব অন্ধকার হয়ে গেল’!!আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম’!!

“জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে সাজানো ফুলের বিছানায় দেখতে পেলাম’!!মুহূর্তেই সবকিছু মনে পরতেই আমি চেঁচিয়ে কেঁদে দিলাম’!!এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলাম আমি’!!

“রাত ২ঃ০০টা’!!কাব্য রুমে ঢুকেই টেবিলের উপর থাকা কাঁচের গ্লাসটা চেপে ধরে ভেঙে ফেললো’!!আচমকা কোনো কিছু ভাঙার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেল আমার’!!তারপর উঠে যা দেখলাম তা দেখে ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠল আমার………..
!
!
!
#চলবে………………

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]🖤

#TanjiL_Mim💖

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৪৬ এবং শেষ পর্ব

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৪৬ (অন্তিম)
.
আয়াতের বিধ্ধস্ত চেহারা দেখেই তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে মাইশার মনে। দেয়ালে নিজের ভর দিয়ে শুকনো মুখে তাকিয়ে আছে সে মাইশার দিকে। পরনে শার্টেের উপরের বোতামদুটো খুলে রেখেছে।আয়াতের এরকম মুখ দেয়ে নিজেরই বেশ ভয় হচ্ছে মাইশার ।
ডাক্তার একপাশে বসে ব্যাগ থেকে কিছু মেডিক্যাল রিপোর্টস বের করলো।মাইশার আর আয়াতের রুমে সবাই উদগ্রীব হয়ে বসে আছে রিপোর্টস এ কি আছে তা জানার উদ্দেশ্যে।
.
সবার এরকম দৃষ্টি দেখে তার ভয় হচ্ছে। কোনো বড় রোগ হয়নিতো আবার।আয়াতের এমন অবস্থা দেখেতো আরও চিন্তার সাগরে ডুবে যাচ্ছে সে।
.
বিগত কয়েকদিন যাবৎ আগের মতই পুনরায় মাথা ব্যাথার সমস্যা শুরু হয়েছে মাইশার।কিন্ত এবার তার সাথে শরীরের দুর্বলতাটাও যেন বেশ চাড়া দিয়ে উঠেছে। না পারছে ঠিকমতো কিছু খেতে আর না পারছে তা হজম করতে। আর গতকাল তো মাথা ঘুরিয়ে বাগানে পড়েই গিয়েছিলো সে। প্রায় দুইঘন্টার মতো জ্ঞান ছিলো না মাইশার। আয়াত তখন অফিসে। মাইশার এ অবস্থা শোনামাত্রই সব কাজ কর্ম রেখেই ছুটে আসে বাড়ির দিকে।
.
ডাক্তার বাসায় এসে বললো হসপিটালে নিয়ে কিছু আল্ট্রাসনোগ্রাফির কিছু টেস্ট করতে হবে মাইশাকে। আর হসপিটাল থেকে আসার পর থেকেই আয়াত মাইশাকে খাট থেকে এককদমের জন্য উঠতে দেয়নি শুধু খাওয়া আর ওয়াশরুম যাওয়া ছাড়া।
.
–মি : আরহাম আয়াত?
ডাক্তারের আওয়াজ শুনে মাইশার ধ্যান ভাঙ্গে।আয়াত কিছুটা আশঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।
.
–ইয়েস ডক্টর? এনি প্রবলেম ইন হার রিপোর্ট?
.
–ভাবছি বিষয়টা আপনাদেরকে কিভাবে বলবো আর আপনারই বা কেমন রিয়্যাক্ট করবেন?
.
একথাটা শুনা মাত্রই মাইশা ভয়ার্ত চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত করুন চোখে তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।ডাক্তারের কথা শুনে যেন আয়াতের প্রাণপাখি উড়ে চলে গিয়েছে। খালামণি , খালুজান আর আরিয়াপুও এ নিয়ে শঙ্কায় আছে।আয়াত করুন গলায় বলে ওঠে…
.
–কেন ডক্টর? এমন কি হয়েছে ওর? ইজ এভরিথিং ফাইন?
.
আয়াতের এই কথাটা বলার সময় গলার স্বর কেমন যেন মিলিয়ে যাচ্ছিলো। বারবার জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিচ্ছে সে।
.
–কি হয়েছে আমার মামণিটার?
খালামণিও কিছুটা ভীতস্বরে প্রশ্ন করেছে।ডাক্তার সবার প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে আয়াতের দিকে। তারপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আয়াতকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে…
.
— সী ইজ প্রেগনেন্ট !
.
আয়াত কিছুক্ষণ অদ্ভুদ দৃষ্টিতে হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে থাকে ডাক্তারটির দিকে। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে…
.
— এ্যা ?
.
— এ্যা নয় বলো হ্যাঁ। ইউ উইল গোইং টু বি ফাদার।(ডাক্তার)
.
সবাই এই কথাটার অর্থ বুঝে খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেও আয়াতের মাথা এখনও হ্যাং করে আছে। বিষয়টা বুঝতে ওর পাক্কা ২ মিনিট লাগে। ডাক্তার দেবনাথ হাসতে হাসতে বলে ওঠে…
.
–এত শক পেলে চলবে ইয়াংম্যান? তোমার ওয়াইফের এ অবস্থা দেখে তো তোমার প্রাণপাখি উড়ে চলে গিয়েছিলো।এভাবে চললে কি হবে?
.
আয়াত এখন সম্পূর্ণ প্রতিক্রিয়াহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে না আছে কোনো অনুভূতি না আচ্ছে কোনো কথা। ধীরে ধীরে ওর মলিন ঠোঁটজোড়ায় হাসি ফুটে ওঠে।মাইশাও অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে। আনমনে নিজের ডনহাতটি তার পেটে নিয়ে যায়।এখানে একটি ফুটফুটে জীবন গড়ে উঠছে এটা ভাবতেই হাসি ফুটে ওঠে তার ঠোঁটজোড়ায়।
.
আয়াত এখন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে একই স্থানে।ঠোঁটে এখনো রয়েছে একচিলতে হাসি যা বরাবরই মাইশার মনে তোলপাড় করে দেয়।
.
–কি ব্যাটা ! শেষমেষ বাবা হয়ে গেলি।
আরিয়াপু খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলে ওঠে। পরিবারে নতুন কোনো সদস্য আসার আনন্দটাই অন্যরকম। সেখানে রয়েছে নতুন পরিচয়ে আবদ্ধ হবার এক অন্য সুযোগ ; পরিজন দেখা পায় নানা অদেখা অনুভূতির।যা সাধারনত ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব।❤
*
*
সবাই চলে যাওয়ার পর আয়াত দুর্বল পায়ে এগিয়ে হাটুগেড়ে বসে মাইশার কাছে।মাইশা কিছুটা আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে শুধুমাত্র আয়াতের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। আয়াত একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে সরু গলায় বলে ওঠে………
.
—মাইশু সত্যি ! জীবনে এতটা প্রতিক্রিয়াহীন কখনোই হইনি আজ যতটা হলাম।…………কেননা আমি কখনো এই পরিস্থিতির সম্মুখীনই হইনি। ডাক্তার যখন বললো যে তুমি প্রগনেন্ট ট্রাস্ট মি আমার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছিলো কথাটা।আমি নিজের স্বাভাবিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলাম।
আমাকেও কেউ বাবা বলে ডাকবে ! তার ছোট ছোট হাত ধরে আমি ঘুরে বেড়াবো সবজায়গায়। বাবার মতোই তাকে বানাবো ভবঘুরে………সবচেয়ে বড় কথা……..আমি আর তুমি বাবা-মা হতে চলেছি মাইশু !
.
একথাটা বলেই মাইশার পেটের কাছ থেকে কামিজ সরিয়ে গভীরভাবে নিজের ঠোঁটস্পর্শ করে আয়াত।মাইশা খনিকটা অনুভূতির জালে হারিয়ে সেই স্পর্শগুলো অনুভব করে। জীবনে এতটা চাঞ্চল্যতা কখনো পায়নি সে।আবার আয়াতের তখনকার প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে উঠলেই আনমনে হেসে উঠে সে।
.
আয়াত মাইশার দুহালে হাত দিয়ে নিজের কপাল মাইশার কপালের সাথে নিজের কপাল মিশিয়ে দেয়।দুজনেরই উষ্ণ নিঃশ্বাস একে অপরের মুখে পড়ছে।মাইশাকে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে আয়াত।মাইশা এবার হারিয়ে যাচ্ছে আয়াতের এমন উদ্ভট কার্যকলাপে।আয়াত মিহি কন্ঠে বলে ওঠে………
.
–তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি মাইশু । তুমিহীনা সত্যিই আমি পাগল হয়ে যাবো। হ্যাঁ আমি রাগী, জেদি , তোমার লুচুবাঘ ; তুমি যা বলবে সব টাইটেল আমি মেনে নিবো কিন্ত আমার থেকে কখনোই হারিয়ে যাবে না মাইশু। বলো কখনোই যাবে না ?
.
আয়াতের এমন কথা শুনে অভিমান হয় মাইশার।ক্ষোভে সে বলে ওঠে.
–আমায় তুমি এমন মনে করো?
.
একটা দুর্বল হাসি দেয় আয়াত। সে জানে তার মাইশুও তাকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসে ; আদ্রফের জায়গাটা হয়তো সে নিতে পারেনি কিন্ত মাইশার মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে ফেলেছে সে।এটা ভাবতেই প্রশান্তি ছেয়ে যায় দুজনের মনে।❤
*
*
*
কিছু মাস পর…….
.
ফজরের নামায পড়ে আয়াতের হাত ধরে আস্তে আস্তে ছাদে উঠছে মাইশা। ছাদের দরজাটা খুলতেই একরাশ স্নিগ্ন হাওয়া তার গায়ে ছেয়ে যায়।এটা দেখেই উৎফুল্ল ভর করে মাইশার মনে।
মাইশা এখন ৬ মাসে পা দিয়েছে।একটু গুলুমুলুও হয়েছে বটে। আর আয়াত তো বলেই দিয়েছে এই গুলুমুলু বউকেই ভালোলাগে তার। সে তো পারে না শুধু টুস করে কামড় দিয়ে খেয়ে ফেলতে। প্রেগনেন্সির পুরো সময়টা উত্তরায় পার করছে সে। মাইশার মূলত এটাই ইচ্ছা ছিলো। তাই আয়াত মাইশাকে কোনো বাঁধা দেয়নি।
.
ছাদের একপাশে বেঞ্চে বসে আনমনে আয়াতের কাধেঁ মাথা রেয়েছে মাইশা। কিন্ত তার দৃষ্টি পাশের ছাদটির দিকে যেদিকে আদ্রাফ থাকতো। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। যতবারই মাইশা ছাদে আসে ঠিক ততবারই মাইশা আপনমনে সেপাশে তাকিয়ে থাকে। কিন্ত আজ এর প্রবণতাটা একটু বেশি যা আয়াত ধরতে পেরেছে।
কেননা আজ আয়াতের কাধেঁ মাথা রেখে কোনো কথাই বলছে না সে।
.
–মাইশু !
.
আয়াতের গলার স্বর পেয়ে অস্ফূটস্বরে সে বলে ওঠে………
.
–হুম !
.
–প্রথম ভালোবাসা অনেকটাই অদ্ভুদ তাই না?
.
মাইশা মাথা উচুঁ করে তাকায় আয়াতের দিকে। আয়াত পূব আকাশে চেয়ে আছে।মাইশা আয়াতের বাহু আগলে আবারো কাধেঁ মাথা দিয়ে বলে ওঠে…….
.
–হ্যাঁ। কিন্ত শেষ ভালোবাসা তার থেকেও বেশি অদ্ভুদ। কেননা সেখানে একটা মায়া কাজ করে যা প্রথম ভালোবাসায় শুধু অনুভূতি ছাড়া আর কিছুই না।
.
—আয়াত নিশ্চুপ।
.
–আয়াত ! আমাদের বেবিটা অনেক কিউট হবে তাই না?
.
ইদানীং মাইশার বাচ্চা বাচ্চা প্রশ্নে প্রচুর হাসি পায় আয়াতের।তবুও সেসব উপেক্ষা করে বলে উঠে……
.
–অবশ্যই !
.
–আমি আমার বেবিকে অনেক আদর করবো। একটুও বকবো না। সবসময় তাকে ভালোবাসবো।
.
–আর বেবির বাবাকে?
.
থমকে যায় মাইশা। তারপর আয়াতের নাকে টুস করে একটা চুমু দিয়ে বলে ওঠে……..
.
–বেবির বাবাকেও অনেক ভালোবাসি।
.
পূব আকাশে সূর্যোদয়ের মাধ্যমে ভোরের নতুন উদ্যমতার সূচনা হতে চলছে। ছোট ছোট দোতল বাড়িগুলো ভেদ করে মুখে আছড়ে পড়েছে রৌদ্দুর।আয়াতের কালচে বাদামী চোখে সেই রশ্মিটা পড়ে এক অন্য আবেদন তৈরি করেছে।মাইশা আনমনে মনে ওঠে….
.
–আয়াত?
.
–হুম?
.
–আজ আদ্রাফের মৃত্যুবার্ষিকি।৫ বছর হয়ে এলো আজ।
.
আয়াত এবার বুঝতে পারলো মাইশার এত নীরব থাকার কারন।মাইশার অশ্রুসিক্ত চোখ দেয়ে সে বলে ওঠে…….
.
–আদ্রাফকে খুব মনে পড়ে ;তাই না?
.
–তা তো পড়েই। কিন্ত আমি ওকে অতীতেই রেখেছি। আমার অতীত সে। যা কখনোই ফিরে আসবে না। আর তুমি ! আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ; যা আমি কখনোই আলাদা রাখতে পারবো না।
.
আকাশের বুক চিরে আসা রৌদ্দুরের প্রতিটা রশ্মিই এখন আয়াতের নামে করেছে মাইশা। কেননা তার আধাঁরময় জীবনে আয়াত এসেছিলো এক প্রকার রৌদ্দুর হয়ে। যে অনুভূতির কোনো লিখিত প্রকাশ নেই……..শুধু রয়েছে একরাশ স্নিগ্ধতা।আয়াতের বুকে মিশে যায় মাইশা। তা দেখে আয়াত তার ভুবনভোলানো হাসি দিয়ে মাইশাকে আবারো ঘোরে ফেলে দেয়।সত্যি ! কপাল করেই সে আয়াতের মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছে সে। দুজনেরই দৃষ্টি পূব আকাশ থেকে আছড়ে পড়া রৌদ্দুরের দিকে। মাইশা আনমনে বলে ওঠে……..
.
~ভালোবাসার এ এক অলিখিত অনুভূতি
বন্দী স্মৃতির খামে
হৃদয়ের এক সুপ্ত কোণে
রৌদ্দুর তোমার নামে🍂~
.
.
.
~সমাপ্ত~

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৪৪+৪৫

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৪৪
সকালের রৌদ্দুরটা মুখে পড়তেই মাইশা অনুভব করতে পারছে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে আয়াত। জানালার কমলা পর্দাটি ভেদ করে রৌদ্দুরের তীর্যক রশ্নিটা আসার কারনে ঘরে অন্যরকম এক মহল তৈরি হয়েছে। আয়াতের ঘুমন্ত মুখটা দেখে একপ্রকার প্রশান্তি ছেয়ে যায় মাইশার মনে। হালকা ধাক্কা দিয়ে আয়াতের বাহুডোর থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতেই আয়াত আরও গভীরভাবে তার গলায় মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
ঠোঁটটি হালকা প্রসারিত করে ফেলে মাইশা। আয়াতের কিছু কিছু আচরণ আছে যা সবার কাছে অতি সাধারন হলেও মাইশার কাছে তা অনেক ভালোলাগে। মিহি কন্ঠে সে বলে ওঠে,
.
–আয়াত?
.
আয়াতের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।মাইশা আবারও বলে ওঠে,
.
–আয়াত……..আমায় উঠতে হবে !”
.
–এখন না। প্রিন্স চার্মিং আরহাম আয়াত ইজ স্লিপিং উইথ হিজ বিউটিফুল মাইশুপাখি।
.
আয়াতের ঘুমুঘুমু কন্ঠ শুনে একটু কেপে ওঠে সে।নিজের গলায় আয়াতের নরম ঠোঁযুগলের স্পর্শ পেতেই সে বিছানার চাদর খামচে ধরে।মাইশা একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে যে….
–এখন যে আরহাম আয়াতের মাইশুর উঠে কাজ করতে হবে !
.
–কোনো কাজ হবে না।গতকাল হাত পুড়িয়ে ফেলেছিলে আজ আবার কি করে ফেলবে আল্লাহ জানে।
.
আয়াতের তীক্ষ্ণ কন্ঠ শুনে আর কোনো তর্কে জড়ায়না মাইশা।কিন্ত আয়াত তাকে উঠতে দিচ্ছে না এই ভেবে বিরক্তি চেপে বসে তার মাথায়।এমনিতেও আয়াতের জন্য গতরাত ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি এখন আবার সকালে দেরি করে ঘুম ভেঙ্গেছে আবার ঘুম থেকেও উঠতে দিচ্ছে না।
.
–আচ্ছা ! কোনো কাজ করবো না। কিন্ত উঠতে তো দাও।বাসায় মেহমান আসছে।
.
–দ্যান গিভ মি আ্য মর্নিং কিস।
.
চোখজোড়া বড় বড় করে ফেলে মাইশা।একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে ওঠে,
–এখন?
.
–এখন করবা না তো মর্নিং কিস মিডনাইটে করবা?
.
বুঝাই যাচ্ছে মাইশার ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেই একথাটা বলেছে আয়াত।কিন্ত আয়াতের কথা শুনে মাইশার প্রচুর হাসি পাচ্ছে।আসলেই তো মর্নিং কিস চেয়েছে তাহলে সে বোকার মতো কেন ওমন প্রশ্ন করলো।কোনোমতে হাসি দমিয়ে সে বলে …….
.
–আরে আমি তো ওটা বলতে চাইনি।
.
মাইশার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে আসে আয়াত।সরু গলায় বলে ওঠে……….
.
–তো কি বলতে চেয়েছো?
.
আয়াতের নজরকাড়া গহীন চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছে মাইশা।গলা থেকে একটা শব্দও বের হচ্ছনা তার।আয়াত এবার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ,
.
–বুঝেছি ! আমারই আদায় করে নিতে হবে।
.
একথা বলেই আয়াত মাইশার ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে উঠে যায়।মাইশার যেনো এখনও একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে।আয়াত ওয়াশরুমে যেতেই মাইশা উঠে চিল্লিয়ে বলে……….
.
–কই যাও তুমি? এতক্ষণ আমায় উঠতে দিলে না আর এখন নিজে আগে উঠে গোসলে যাচ্ছে। আমি আগে যাবো।
.
মাইশার মুখ ফুলানো দেখে একটা দুষ্টু হাসি দেয় আয়াত। নিজের উন্মুক্ত কাধে একটা টাওয়েল ঝুলিয়ে মাইশার খুব কাছে এসে বলে…….
.
–তুমি চাইলে দুজনে একসাথেই গোসল সারতে পারি। কি বলো?
.
আয়াতের ঠোঁট কামড়ানো দেখে মাইশার তো মুখ শুকিয়ে গিয়েছে।এই ছেলে চরম লেভেলের অসভ্য এটা ভাবতেই নরম গলায় বলে ওঠে…….
.
–থাক ! তুমিই আগে যাও।
.
–দ্যাটস লাইক আ্য গুড গার্ল।
.
একথা বলেই আয়াত বাথরুমে চলে যায়।মাইশা রাগে-ক্ষোভে মাইশা বলে ওঠে……..
.
–লুইচ্চার বদনা একটা। বদমাইশ কোথাকার !
.
.
.
পড়ন্ত বিকেল।বারান্দার এককোণে বসে আনমনে ফাগুনের হাওয়া উপভোগ করছে মাইশা।হাতে আছে সাদাত হোসেইনের একটি উপন্যাস ; নাম ”তোমার নামে সন্ধ্যা নামে”। বইটার প্রতিটা বাক্যে গভীরভাবে হারিয়ে ফেলেছিলো নিজেকে। আয়াত এখন অফিসে আছে বিধায় এত মনোযোগ দিয়ে বইটি পড়তে সক্ষম হয়েছে সে।
.
–ব্যাস্ত নাকি……….মাইশা?
.
বইটা দেখে নিজের মনোযোগ সরিয়ে পেছনে ফিরে সে। জেসমিন দাড়িঁয়ে আছে।আগের মতোই মুখে রয়েছে মিষ্টি হাসি।জেসমিনের হঠাৎ এভাবে রুমে আসাতে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে।বিনয় কন্ঠে বলে ওঠে…….
.
–না আপু। ব্যস্ত না দেখেই বই পড়ছিলাম।আপনি আসেন।
.
পাশের বেঁতের চেয়ারটিতে নীরবে বসে পড়ে জেসমিন।মাইশা একপাশে বইটি রেখে তার দিকে নজর দেয়।সাদা ফতুয়াতে এক প্রকার স্নিগ্ধতা ফুটে উঠেছে তার মুখমন্ডলে। জেসমিন হঠাৎ বলে ওঠে……
.
–আমার জানামতে আয়াত আর তোমার লাভ ম্যারিজ। আন্টি তো তাই বললো।অনেক ভালোবাসে তোমায় আয়াত তাই না?
.
জেসমিনের সরাসরি এমন প্রশ্নে একটু ঘাবড়ে যাচ্ছে সে।প্রশ্নের উত্তরটি মস্তিষ্কে সাজিয়ে মাইশা প্রতিউত্তর দেয়…….
.
–লাভ ম্যারিজ না আ্যরেন্জ ম্যারিজ এটা নিয়ে আমাদের কখনোই মাথাব্যাথা ছিলো না। সত্যিটা হলো এই আয়াত আমায় অনেক ভালোবাসে আর আমিও আয়াতকে অনেক ভালোবাসি।
.
সবশুনে একটা মলিন হাসি হাসে জেসমিন যা মাইশার চোখ এড়িয়ে যায় নি। কিছুক্ষণ নীরবতা কাটিয়ে সে বলে ওঠে…….
.
–তুমি যে আমায় দেখে আনইজি হচ্ছো এটা আমি ভালোমতোই জানি। কারন আমি ড্যাম সিউর যে আয়াত তোমায় সব বলেছে।তাই না?
.
এতক্ষণ মাইশা যতটা না অপ্রস্তুত ছিলো জেসমিনের এই কথায় আরও বেশি অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।বুঝাই যাচ্ছে তার সামনে বসা অপরূপ সুন্দরীএই প্রবাসী বাঙালী মেয়েটি সরাসরি কথা বলতে ভালোবাসে।একটা লম্বা বিরতি নিয়ে মাইশা বলে ওঠে.
.
–হুম।
.
–আমি এটাও জানি যে আয়াত তোমায় এটা বলেছে যে আমি অনেক জেদি টাইপ ব্লা ব্লা ব্লা , এন্ড আরও বলেছে যে তোমাদের মধ্যে ডিসট্যান্স করতে পারি।
.
–জ্বী বলেছে।
.
মাইশার একথাটা শুনতেই চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে জেসমিনের। তার চোখের জল আড়াল করার জন্য অন্যপাশে মাথা ঘুরিয়ে চোখজোড়া মুছে আবার তাকায় মাইশার দিকে।
.
— সিরিয়াসলি ! আয়াতের কাছে আমি এত লো মেন্টালিটির মনে হয়? আই নো দ্যাট আই প্রোপোজড হিম বাট হি ক্যান্ট আ্যক্সেপ্ট। তারপর? আর কিছু বলেছি তাকে? সে আমায় রিজেক্ট করেছে দ্যান আমি আমার রাস্তায় আর আয়াত আয়াতের রাস্তায়।
মানে আয়াত কিভাবে ভাবতে পারলো যে আমি এমন করতে পারবো?
.
মাইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে জেসমিনের দিকে। এই চরিত্রটিকে দেখে যেন অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে সে।
.
— ইউ আর টু মাচ লাকি মাইশা বিকজ ইউ ক্যান ফাইন্ড আ্য সাচ আ্য লাভলি পার্টনার। জানিনা আমি কখনো কি এমন কাউকে পাবো কি না !
.
মেয়েটি আসলেই খুব মিষ্টি প্রকৃতির। এতক্ষণ যেই চাপা সন্দেহটা মাইশা মনে আটকে রেখেছিলো জেসমিনের এভাবে ফ্র্যাংকলি কথা বলার জন্য তা অনেকটাই মিটে গিয়েছে। এখন আয়াতেরও এই ভুল ধারনাটি ভাঙাতে হবে।
.
পৃথিবীটা আসলেই অদ্ভুদ।মানুষ যা ভাবে তার অধিকাংশই সত্য হয় না।আর সম্পর্কগুলোও কেমন যেন হয় গোলমেলে; কিন্ত তার মাধুর্য অনেক। জেসমিনের বিষয়টাই দেখা যাক।আয়াত আর মাইশা যা ভেবেছিলো জেসমিন সেটাকে বাজিমাত করে এক নতুন সম্পর্কের সূত্রপাত করেছে ; চোখের সামনে হাজির করেছে নতুন অধ্যায়ের যার পরিসর খুবই অল্প । আর এই অল্প পরিসরের এই অধ্যায়টিই থাকবে আয়াত আর মাইশার অন্তিমের অপেক্ষায়।❤❤
.
~চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৪৫ (শ্রীমঙ্গলে মাইশায়াত)
.
বাস থেকে নেমেই মাইশা অনুভব করতে পারছে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।পূব আকাশে হালকা আলোর ঝলক দেখা যাচ্ছে আর তা খুবই সীমিত। শীতের তীব্রতা এত বেশি যে একটি ভারি সোয়েটারের ওপর পাতলা চাদরেও তা মানানো যাচ্ছে না। ফ্রেব্রুয়ারি মাসে এখানে যে এত ঠাণ্ডা পড়বে মাইশার মোটামুটি ছিলো তা ধারনার বাইরে।কোনোমতে নিজের শুষ্ক ঠোঁটযুগল হালকা নাড়িয়ে মাইশা বলে ওঠে,
.
–আয়াত! গতকাল রাতে তো হুট করে আমায় বাসে উঠিয়ে এখানে নিয়ে আসলে । এটা কোথায়?
.
–শ্রীমঙ্গল।
.
আয়াতের স্বতস্ফূর্ত উত্তরে শরীর হিমিয়ে ধরে মাইশার। গতকাল সায়েদাবাদ থেকে রাত ১০টায় বাসে উঠেছিলো আর এখন প্রায় ভোর সাড়ে পাঁচটা।আয়াতের মাথায় যে কি পরিকল্পনা চলছে এটা মাইশার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কোনমতে থমথমে গলায় মাইশা বলে ওঠে,
.
–ক..কি? শ্রীমঙ্গল? কিন্ত কেন?
.
–ঘুরবো তাই।
.
বাসটা অন্যরাস্তায় চলে গেলেও সে পথে করুন চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা।বিয়ের আজ এতদিন হয়ে গেলো কিন্ত আয়াতের ভবঘুরে স্বভাবটা মোটেও পরিবর্তন করতে পারলো না সে। তবে আয়াতের সাথে ঘুরতে যে মন্দ লাগে ব্যাপারটি কিন্ত তা না। আজকে তাদের এই প্রেমের অধ্যায়ে নতুন একটি স্মৃতি যুক্ত হবে এটা ভাবতেই কৌতুহল চেপে বসে তার মনে।
.
এই নির্জন আবছা অন্ধকার পথে মানুষজন কম। দু চারটি দোকান খুলতে দেখা যাচ্ছে।আয়াত আর মাইশা একটি খাবারের দোকানে গিয়ে হালকা পাতলা কিছু খেয়ে নিলো।তারপর অপেক্ষা করতে লাগলো আকাশ পরিষ্কার হওয়ার।
.
আকাশ পরিষ্কার হওয়া মাত্রই একটা সি এন জি ভাড়া করে দুজনে রওনা হলো বাইক্কা বিলের উদ্দেশ্যে।শ্রীমঙ্গলের চমৎকার একটি বিল হলো বাইক্কা বিল। নামটি অনেকের কাছে অনেক রকম লাগলেও এর তাৎপর্য অনেক। শীতের সকালে অনেক অতিথি পাখির আগমন ঘটে এই বিলে।রাস্তাটি খুব একটা ভালো ছিলো না তাই যেতে অনেক সময় লেগেছে ওদের। তাছাড়া এত পরিমাণ কুয়াশা ছিলো যে দু হাত এগোলেই কিছু দেখা যায় না।তাই সি এন জি টাও চলেছে খুবই ধীরে ধীরে।
.
প্রায় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট পর তারা পৌঁছে যায় তাদের কাঙ্খিত স্থানে।বেশ সকাল হওয়ার কারনে মানুষ একেবারে নেই বললেই চলে। আয়াতের হাত ধরে টিকেট কেটে এগিয়ে যাচ্ছে মাইশা সেদিকে।
.
যতই এগোচ্ছে ততই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে তার।কুয়াশামাখা পরিবেশে বিলের আবছা দৃশ্য চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে মাইশার চোখে। ক্ষণে ক্ষণে দেখা যাচ্ছে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি যার সূত্র বেশিরভাগই দুজনের অজানা। আয়াত আনমনে বলে ওঠে,
–মাশাল্লাহ !
.
আসলেই ।সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিকে অত্যন্ত নিপুণতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছে। গাছের প্রাণহীন পাতাগুলো ফাল্গুনের আমেজে নতুন পাতা সৃষ্টি করলেও এই কুয়াশা দেখে যে কেউই মনে করবে যে এটা পৌষ মাস। বিলের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে কিছুই দেখা যাচ্ছে না আর এটাই যেন এর সৌন্দর্যের প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.
–কেমন লাগলো মাইশা?
.
মাইশা এখনো উপভোগ করে যাচ্ছে এই দৃশ্যগুলি। মিহি কন্ঠে প্রতিউত্তরে সে বলে……..
.
–চমৎকার। বুঝাই যাচ্ছে পুরোই রিসার্চ করে এসেছো।
.
মাইশার একথা শুনে ঠোঁটে হাসির রেখা টানে আয়াত। বেশকিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে তারা বাইক্কাবিল ছেড়ে অন্য গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।যেই রাস্তাটা এতক্ষণ কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিলো ; সকালের মিষ্টি রৌদ্দুর পড়ে তা অবলীলায় সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। দূরে দূরে দেখা যাচ্ছে দিগন্তজোড়া বিস্তৃত চক যা আরও নিপুণতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছে এই পরিবেশটিকে।মাইশা এত গভীরভাবে এই প্রকৃতিগুলো কখনোই উপভোগ করেনি।কেননা কখনো তার এমন করে ঘোরার সুযোগই হয়নি।এই আয়াত নামের মানুষটি যেই থেকে তার জীবনে এসেছে , তখন থেকেই প্রকৃতির এক সুপ্ত সৌন্দর্য অনুভব করার মতো ক্ষমতা লাভ করেছে সে। কেন…….কিভাবে ; সেটাই তার অজানা।
.
এবার তারা চলে যায় লাউয়্যাছড়া জাতীয় উদ্যানে। এই জায়গাটিতে আছে বাইক্কা বিল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা পরিবেশ।মূলত গাছের অনন্য এক সম্মিলনের চমৎকপ্রদ প্রকাশ পেয়েছে এই স্থানটিতে।এভাবেই তারা এক এক করে গ্রান্ড সুলতান রিসোর্ট , চা বাগান , আরও অনেক স্থানে ঘুরে বেড়াতেই বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে নেমে গিয়েছে।
.
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে নেমেছে। ঢাকার বাস রাত আটটায় ছাড়বে তাই এখন একটি ছোট্ট টিলার ওপর বসে থেকে শ্রীমঙ্গলের এক লুকায়িত দৃশ্য দেখে চোখ জুরিয়ে নিচ্ছে দুজনে। পশ্চিম আকাশের সূর্যটি যেকোনো সময়ে টুপ করে ডুবে যাবে লাল পাহাড় নামক এক ছোট টিলার অতল গহ্বরে। আয়াতের কাধে মাথা দিয়ে রেখেছে মাইশা। নিজের দুহাত দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে রেখেছে আয়াতের বাহু।
.
সত্যি ! আয়াত ওর জীবনে এসেছে পর থেকেই জীবনকে অন্যভাবে উপভোগ করা শুরু করেছে মাইশা। একসময় আদ্রাফকে ভালোবাসতো সে। মনেপ্রাণে ভালোবাসতো। কিন্ত আল্লাহ তার ভাগ্য আদ্রাফের সাথে রাখেনি তাইতো সে চলে গিয়েছিলো না ফেরার দেশে।
আর তার আধাঁরময় জীবনে যেন আলোর উৎস হয়ে আসে আয়াত। যাকে ছাড়া এখন একমুহূর্তও থাকতে পারবে না সে।
.
–আয়াত? আমায় এতো ভালোবাসো কেন?
.
আমার কথা শুনে একটা উষ্ণ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আয়াত।তারপর ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে……..
.
–তোমার এই প্রশ্নটা যত সহজ তার উত্তর ততটাই কঠিন।এর অনেকগুলা কারন হতে পারে। এক হলো তোমায় দেখলেই কেন যেন মনে হয় তুমি শুধু আমার। দুই তোমার মায়াবী চোখ আর তিন হলো আদ্রাফের প্রতি তোমার ভালোবাসা।
.
মাইশা আর কিছু না বলে বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি হাসে। আয়াতের সাথে নিজেকে আরও গভীরভাবে মিশিয়ে বলে ওঠে.
–অনেক ভালোবাসি তোমায় আয়াত !
.
আয়াত এবার মাইশার দিকে ফিরে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসে ওকে। তাল সামলাতে না পেরে মাইশা আয়াতের মুখের সামনে পড়তেই থেমে যায়। আয়াত আলতো হাতে ওর মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুজেঁ ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মাইশার মায়াবী মুখমণ্ডলের দিকে। আয়াতের কালচে বাদামী চোখে অন্য এক নেশা দেখতে পারছে যাতে তলিয়ে যাচ্ছে মাইশা।
মিহি গলায় আয়াত বলে ওঠে……
.
–আমিও অনেক ভালোবাসি তোমায় মাইশু । শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমায় ভালোবেসে যাবো।
.
একথাটা বলেই আয়াত মাইশার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়।আশেপাশের প্রকৃতিটা এই পরিবেশটা আরও যেন মোহময় করে তুলেছে।বেশ কিছুক্ষণ পর মাইশার কপালের সাথে নিজের কপাল মিশিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। মাইশাও চোখ বুজে আয়াতের প্রতিটা স্পর্শ অনুভব করেছে।আর এভাবেই এই শ্রীমঙ্গলে তারা জানান দিলো তাদের সুন্দর এক অনুভুতির……….❤
.
.
.
~চলবে~

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৪২+৪৩

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৪২
.
সময়ও কেমন করে যেন চলে যায় অবিরাম স্রোতের ধারায়।কোথায় যায়, কখন কিভাবে চলে যায় তা মানুষ ধারনাই করতে পারে না।আয়াত আর মাইশার বিয়ে হয়েছে আজ ৯ মাস পূর্ণ হতে চলেছে।এই বিষয়টা ভেবেই ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে মাইশার।এখন প্রায় মধ্যরাত।তবুও ঢাকায় যেন বিন্দুমাত্র নীরবতার রেশ নেই।শুধু জনমানবের পরিমাণ কমে রাস্তাঘাটে যানবাহনের লাইটের প্রতিফলন অবলীলায় এক চমৎকার রূপ ধারন করেছে।
বারান্দায় গরম গরম কফির সাথে এই বিষয়টাই চরমভাবে উপভোগ করছে সে।আয়াত পাশের রুমে অফিসের কাজ করছে আর খাওয়া-দাওয়া করে বাকি সদস্যরা যার যার কাজে ব্যস্ত।মাইশাও এতক্ষণ খালামণির সাথে আনন্দ মজলিশে মেতে ছিলো কিন্ত এখন সে একাই নিশি শহরের সৌন্দর্য অনুভব করছে।
.
আয়াত ! এই নামটা এখন তার হৃদয়ের সাথে জড়িত । তার জীবনচক্র পাল্টে দিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে আয়াত।মাইশা কখনোই ভাবতে পারিনি যে আদ্রাফের মতো পুনরায় সে কাউকে মনে জায়গা দিতে পারবে।যাকে সে একবিন্দুও হারানোর কল্পনা করতে পারবে না।
.
হঠাৎ পেছন থেকে কোমড়ে কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘোর কাটে মাইশার।আয়াত তার কাধে নিজের থুতনি রেখে ক্লান্তি গলায় বলে ওঠে…..
.
”এখনো ঘুমাওনি যে?”
.
” তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
.
আলতো হাসে আয়াত।নিজের মুখটা মাইশার চুলে ডুবিয়ে নিতেই মাইশা চোখ বন্ধ করে নেয় আবেশে।আয়াত যতবারই ওর কাছে আসে ততবারই ওর অনুভূতিটা দমিয়ে রাখতে পারে না মাইশা।আয়াত চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে ওঠে……….
.
”শুধু কি আমার অপেক্ষাই করছিলে নাকি আমার কথা ভাবছিলে?”
.
”দুটোই।”
.
মাইশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় আয়াত।রুমের ডিমলাইটের আলোটা তীর্যকভাবে বারান্দায় মাইশার মুখে পড়ছে।আর এই বিষয়টা আয়াতের কাছে দারুন লাগে।ওর গালে আলতো করে নিজের হাত স্পর্শ করতেই মাইশা আয়াতের টিশার্টটি খামচে ধরে।আয়াত দুষ্টু হেসে বলে ওঠে…..
.
”এই গালটিতে তোমায় বিয়ের আগে কত যে থাপ্পড় মেরেছি তার কোনো ইয়াত্তা নাই।আর বিয়ের পরে এই গালে কিস করতে করতে গালটা এখন আমার থাপ্পড়ের জন্য কান্না করে।দেবো নাকি………?”
.
ভ্রু কুচকে ফেলে মাইশা।আয়াত এখনও মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে।কত সুন্দর একটা মোমেন্ট ছিলো আর আয়াত তার উল্টাপাল্টা কথা দিয়ে পুরাই বারোটা বাজিয়ে দিলো।রাগ করে আয়াতকে সরিয়ে সে রুমে যেতেই আয়াত তার হাত টেনে বারান্দার গ্রীলের সাথে মিশিয়ে ফেলে।
.
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মাইশা আয়াতের দিকে তাকাতেই তার দৃষ্টি আয়াতের চোখে আটকে যায়।আয়াতের কালচে বাদামী চোখযুগলের প্রখর দৃষ্টি মাইশার মুখশ্রীর দিকে ডুবে আছে।ওর চোখের বড় ঘন ঘন পাপড়িগুলো খুব করে টানছে মাইশাকে।আর ওর বামগালের তিলটা যতবারই ওর নজরে পড়ে ততবারই ভয়ঙ্কর কোনো কাজ করতে মন চায় তার।শুধু আয়াতের টিজ মারার কথা ভাবলেই আর এগোয় না সে।
.
”মাইশু……..”
.
আয়াতের এই একটা কথাই মাইশার রাগকে মুহূর্তেই পানির সাথে মিলিয়ে দেয়।কেননা মাইশার কাছে আয়াতের মুখে শোনা ডাকটি খুবই নিজের মনে হয় যার নুন্যতম ভাগ সে কাউকে দিতে পারবে না।একটু আগে আয়াত দুষ্টুমির স্বরে তাকে থাপ্পড় মারার কথা বললেও কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে তার দুষ্টু মুখ কিভাবে এতো গম্ভীর হয়ে গেলো তাই বুঝতে পারছে না মাইশা।
.
”একটা কথা বলার ছিলো তোমাকে……..”
.
”বলো?”
.
”কিভাবে বলবো …………বুঝতে পারছি না।”
.
” তোমার কি হয়েছে বলোতো? এই প্রথম তোমায় কথা বলার সময় এতো hesitate feel করতে দেখছি……..”
.
”আগামীকাল আম্মুর ফ্রেন্ডের ফ্যামিলি আ্যমেরিকা থেকে আসবে একথাটা আম্মু বললো না?”
.
”হ্যাঁ……খালামণিতো বললো।”
.
” ওই আন্টির একটা মেয়ে আছে ; জেসমিন নামের।যদিও আ্যমেরিকায় থাকতে আমরা ফ্রেন্ডসরা সবাই তাকে জেসি নামেই ডাকতাম।বিকজ…..আ্যমেরিকানরা অলয়েজ নামের শর্ট ফ্রমই ইউজ করতো।আমরা কিন্ডারগার্ডেন…..হাইস্কুল…..আন্ডারগ্রাজুয়েট……পোস্ট-গ্রাজুয়েট সবই একসাথে কমপ্লিট করি। সি ইজ নট মাই বেস্টফ্রেন্ড বাট উই আর বেস্ট ক্লাসমেট।”
.
”সবই তো বুঝলাম……..বাট আমায় এসব কথা বলার মানে?”
.
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় আয়াত।মাইশা বুঝতে পারছে না আয়াত থেমে গেলও কেন…..একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে হুট করে আয়াত বলে ওঠে………
.
”সী লাভস মি….”
.
মাইশার একথাটা বুঝতে প্রায় দুই মিনিট লাগে।এরকম অনেকবারই হয় অনেকের সাথে।কিছু কিছু কথা আছে যা ব্যক্তি ও পরিবেশের কাছে অপ্রাসঙ্গিক লাগে।সহজ কথাটাও তাই মানুষ সহজে বুঝতে বা মানতে চায় না।মাইশার ক্ষেত্রও ঠিক এক। নিজের প্রিয় ব্যাক্তিকে যখন অন্য কেউ মনে আকঁড়ে রাখে সবারই বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক লাগে যা বুঝা বা মানতে পারার সঙ্গে সংযুক্ত নয়।
.
তবুও মাইশা স্বাভাবিক গলায় বলে ওঠে…..
.
”সী ক্যান লাভস ইউ…….সে তোমায় ভালোবাসতেই পারে এটা অস্বাভাবিক না। কিন্ত সম্পূর্ণ ব্যাপারটা তো আমায় জানতে হবে।বলবে…….?”
.
আয়াত মাথা নাড়ায়।তারপর প্রতিউত্তরে বলে ওঠে……
.
”জেসি আর আমি বেস্ট ফ্রেন্ড না।আর না আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলও সেম ছিলও। বাট পারিবারিক আত্নীয়তার কারনে ওর সাথে ক্লাসে- ট্যুরে ইভেন ক্যাফেতেও মিট করতে হতো।
তখন আমরা সেন্ট ফ্রান্সিসকো তে থাকতাম।পোস্ট গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করার পর যখন আমারা বাংলাদেশের আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এমনি এক ফ্রেব্রুয়ারির রাতে সে আমায় প্রোপোজ করে………..”
.
” তুমি কি করেছিলে…….?”
.
”Accept করি নাই……বিকজ আমি কখনোই ওকে সেই চোখে দেখিনি । ইভেন আমার সন্দেহ ছিলো ওর লাভকে নিয়ে।আমার মতো জেসিও আ্যমেরিকায় বড় হয়েছে।বাট আমি আ্যমেরিকায় বড় হলেও ওদের কালচারকে যেভাবে ডিফেন্স করে আগলে নিয়েছিলাম জেসিকার ক্ষেত্রে তেমন না।ওর লাইফস্টাইল…….খাওয়া-দাওয়া……ল্যাংগুয়েজ এসেন্ট সবকিছুই আজ আ্য ট্রু আ্যমেরিকান টাইপ ছিলো।
.
তারপর তো আমি বাংলাদেশেই এসে পড়ি।এখন আমার চিন্তার বিষয় হলো ও কি এখনও বিষয়টি মাথায় রেখেছে?”
.
আয়াতের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ।মাইশা আবারও বলে ওঠে.
”কেন এমন চিন্তা হচ্ছে?”
.
”জেসিকা অনেক জেদি টাইপের মেয়ে মাইশা ! তাই…………”
.
বিনিময়ে আলতো হাসে মাইশা।আয়াতের টিশার্টের কলার চেপে নিজের কাছে নিয়ে এসে টুপ করে গালের ওই তিলটার ওপর চুমু খায় মাইশা।আশেপাশে মৃদু বাতাসের আনাগোনায় পরিবেশটা কেমন যেন চাঞ্চল্যতায় ভরে উঠেছে।
আয়াত নীরব চোখে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।
.
”যা হওয়ার দেখা যাবে এত চিন্তা করছো কেন? এমন তো না মেয়েটি তোমার প্রাক্তন প্রেমিকা।”(মাইশা)
.
”একটু আগে কি ছিলো ওটা…..?”
আয়াতের স্বতস্ফূ্র্ত প্রশ্নে থমকে গিয়েছে মাইশা।আয়াত বোধহয় হুট করে বিষয়টা মানতে কষ্ট হচ্ছে তাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।আয়াতের বুকে নিজের মাথা রেখে নিজের কন্ঠ নরম করে মাইশা বলে ওঠে………..
.
”কেনো জানোনা?”
.
ঠোঁটে স্মিত হাসি ফুটিয়ে তুলে আয়াত।সবকিছু তার কাছে যেন নবপ্রেমের ইন্দ্রজালের মতো লাগছে।এই মেয়েটা এখন বড্ড ভালোবাসে তাকে এ বিষয়ে কোনো ভ্রান্ত ধারনা নেই আয়াতের।মাইশাকে নিজের সাথে আরও গভীরভাবে মিশিয়ে আয়াত বলে ওঠে…
.
”ভালোবাসা বিষয়টা কখনো একজনের প্রতি সীমাবদ্ধ থাকে না।পরিস্থিতির দায়ে পড়ে অনুভূতিটাও বদলায় ; অনুভূতির মানুষটাও বদলায়।হয়তো তা সবসময় প্রকাশ পায় না।কিন্ত যখন প‍্রকাশ পায় যতই পরিস্থিতির দায়ে পড়ুক না কেন………….সে ভালোবাসা কখনোই বিচ্ছেদ হয় না।তা রূপ পায় একটি পরিপূর্ণতায়।❤”
.
.
~চলবে~

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন
পর্ব:৪৩
.
সোফার এককোণে চুপচাপ বসে সামনে বসা সুন্দরী মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে মাইশা।মেয়েটার পরনে হলদে কুর্তি যা ওর ফর্সা গায়ে চরমভাবে ফুটে উঠেছে।মেয়েটার চুল কালো হলে মেয়েটাকে দেখতে আরও সুন্দর লাগতো কিন্ত চুলটাতে একটা লালচে ভাব আছে যার কারনে মেয়েটা কি আদৌ বাঙালি বিষয়টা মানতে বেশ কষ্ট হবে।
.
এটাই তাহলে জেসমিন……অর্থাৎ জেসি।মেয়েটির মধ্যে সুমিষ্ট একটা ভাব আছে।মুখে সবসময়ই যেন একটা মিস্টি হাসি ঝুলে আছে।তার পাশেই বসে আছে ওর বাবা-মা।সবার সাথে আলাপচারিতা চালাতে চালাতে আয়াত মাইশার কাধ আগলে বলে ওঠে……..
.
” আঙ্কেল-আন্টি মিট মাই ওয়াইফ মাইশা জামান নূর।”
.
মাইশা বিনিত কন্ঠে তাদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
.
”আসসালামু আলাইকুম !”
.
”ওয়ালাইকুম আসসালাম মামণি কেমন আছো?”(আন্টি)
.
”জ্বী আলহামদুলিল্লাহ।”
.
”আমার সাথেও পরিচিত হয়ে নাও মিসেস আরহাম আয়াত ! আমি জেসি। নাইস টু মিট ইউ……….”
.
মাইশা একটু সংকোচ নিয়ে তাকায় মেয়েটার দিকে।জেসি তাকে মিসেস আরহাম আয়াত বলে সম্বোধন করেছে তাই মনে হয়।মেয়েটার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বেশ ভাবিয়ে তুলছে মাইশাকে।মিহি কন্ঠে সেও বলে ওঠে……
.
” সেম টু ইউ…….”
.
”প্লিজ ইগ্নোর মাই বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ।সরি টু সে , বাংলা আমি ওতটাও ভালো বলতে পারি না।”
জেসির এভাবে স্বতস্ফূর্তভাবে কথা বলা মাইশার তার সম্পর্কে আগাম ধারনাই পাল্টে দিয়েছে।মাইশা হয়তো ভেবেছিলো মেয়েটি একটু ইগোস্টিক টাইপ হবে।কিন্ত না। মেয়েটি যথেস্ট মিষ্টভাষী আর সুশীল।কাপড়-চোপড়ে বাঙালীত্বের ছাপ না থাকলেও একপ্রকার শালীনতা আছে।কেন যেন মেয়েটিকে বেশ ভালোলাগছে মাইশার কাছে।
.
”যতটুকু পারো ওতটুকুই বুঝলে হবে।তাছাড়া এমন না যে তুমি বাংলাদেশে এসেছো দেখে তোমায় বাংলাই বলতে হবে।”(মাইশা)
.
”আ্যকচুয়ালি এই ফার্স্ট আমি বিডিতে আসলাম।এন্ড তাই বাংলাতে কথা বলার জন্য কিউরিসিটি জাগছে আমার মধ্যে।”
.
তাদের কথার মাঝে আরিয়াপু হঠাৎ বলে ওঠে,
”এখন এসব কথা থাক।আঙ্কেল-আন্টি-জেসি তোমরা অনেক জার্নি করেছো।এখন রেস্ট নাও কেমন?”
.
জেসি প্রতিউত্তর দেয়…”ওকে।”
.
.
.
বাড়িতে মেহমান আসলে রান্না করাতে অন্য এক আনন্দ আছে।অন্যান্য যেকোনো সময় তা তিক্ত লাগলেও এসময় একঘেয়েমিগুলো কেমন যেন দূর হয়ে যায়—-একথাটা মাইশা চরমভাবে বিশ্বাস করতো।কিন্ত আজ মাইশার রান্নাঘরে মোটেও ভালো লাগছে না।তার মন পড়ে আছে জেসি নামের ওই রহস্যময়ী মেয়েটার দিকে।
.
আজ শুক্রবার বলে আয়াত অফিসে যায় নি।আর এখন খালুর সাথে নামাজ পড়তে গিয়েছে সে।মাইশা ভাবছে ওই মেয়েটা আয়াতকে ভালোবাসতো; বাট আয়াত তাকে রিজেক্ট করেছে……….তবুও এত স্বতস্ফূর্তভাবে আয়াতের সাথে, মাইশার সাথে কথা বললো কিভাবে? তাকে দেখলে মনেই হবে না যে সে কখনো আয়াতকে প্রোপোজ করেছিলো।
.
মেয়েটার মধ্যে অজানা কারনেই অন্যরকম একটা সৌন্দর্য আছে যা পরিপূর্ণ বাঙালী যুবতির মতো।এগুলো কি আদৌ মাইশার ভ্রান্ত ধারনা নাকি অন্যকিছু এই বিষয়টাই বুঝে উঠতে পারছে না সে।
.
রান্নায় অসাবধানতার কারনে হাতে গরম ফ্রাইপ্যানের স্পর্শ পেয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে মাইশা।হাতের তালুতে লালচে দাগ পড়ে গিয়েছে মাইশার।আরিয়াপু আর খালামণিও তার কাছে এসে দেখতে থাকে কি হয়েছে ওর।প্রচণ্ড জ্বলার কারনে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে মাইশার।
.
ইতিমধ্যে জেসি আর আন্টিও রান্নাঘরে এসে পড়েছে।জেসি ব্যস্ত কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”কি হয়েছে ওর?”
.
”হাত পুড়ে গিয়েছে।”(আরিয়া)
জেসমিন বুঝতে পেরেছে প্রচণ্ড জ্বলছে মাইশার হাতে।কিছু একটা ভেবে সে বলে ওঠে…….
.
”হোয়ার ইজ দ্যা ফার্স্ট এইড কিট?”
.
সবাই এবার জেসমিনের দিকে তাকায়।জেসমিন হতভম্ব হয়ে বলে ওঠে….
.
”এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই।হোয়ার ইস দ্যা কিট……..ফার্স্ট এইড বক্স কোথায়?”
.
”কাবার্ডে………”
আরিয়া ইশারা করে দেখিয়ে দিতেই জেসমিন তড়িঘড়ি করে কিটটা নিয়ে এসে মাইশার কাছে হাটুমুড়ে বসে পড়ে।তারপর খুব যত্ন করে বার্ন ক্রিম লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে থাকে।মাইশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে জেসমিনের দিকে।
.
জেসমিনের সম্পর্কে তার যেই ভ্রান্ত ধারনাগুলো ছিলো সবগুলো কেমন যেন হারিয়ে যাওয়াতে ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে সে।তার চোখে স্পষ্ট মাইশা নিজের জন্য ব্যাথা অনুভব করতে পারছে যেন ব্যথাটা জেসমিনের হাতে হয়েছে। কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যা কিছুটা অবাঞ্ছিত; কিছুটা গোলমেলে ; যার হয়তো কোনো ব্যাখ্যা নেই , কিন্ত এর অনুভূতির তাৎপর্যতা অনেক বেশি।❤
.
.
.
বাড়িতে এসে মাইশার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছে আয়াত।মাইশা তো বুঝে গেছে আয়াতের ধমকের থেকে এবার আর নিস্তার নেই তার। বেডরুমে মাইশার কাছে বসে ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে………
.
–হাতে কি হয়েছে তোমার?”
.
মাইশার তো জান যায় যায় অবস্থা।
.
— কিছু বলেছি আমি…..হাতে কি হয়েছে?
.
–রান্না করতে গিয়ে হাতটা বাই মিসটেক পুড়ে গিয়েছে।
.
–সরিয়াসলি! কে বলেছে তোমায় রান্না করতে? মনটা কি তখন চৌরাস্তায় ফেলে আসছিলে? তোমায় আমি বারবার বারণ করেছি রান্নাঘরে যেতে বাট তুমি তো আমার কথা শুনবে না। আমার কথাটা শুনলে কি এমন ক্ষতি হয় তোমার একটু বলবে?(উচ্চস্বরে)
,
আয়াতের ধমকের স্বরে কেপে ওঠে মাইশা।যদিও সে আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো আয়াত এমন কিছুই করবে।কেননা মাইশাকে ব্যাথা পেতে দেখলেই আয়াত একটু সেন্টিমেন্টাল হয়ে যায়……..কেননা মাইশার এই ছোটখাটো দুর্ঘটনা তার যে নির্ঘুমের কারন হয়ে দাঁড়ায়।টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে মাইশার চোখ বেয়ে।আয়াত এবার শান্ত হয়ে বসে।তার প্রগাঢ় কন্ঠস্বর নরম করে বলে……..
.
”এইযে এখন শুরু হবে তার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল। এখন তো চাইলেও ধমকাতে পারবো না।”
.
মাইশার হাতটাতে আলতো করে নিজের হাত স্পর্শ করে।মলিনভাবে বলে ওঠে……..
.
”অনেক জ্বলছে?”
.
–তোমার কথা শুনে আরও বেশি কান্না পাচ্ছে।
.
–তো বকবো না।আমার কথা অমান্য করলে তোমার তো আবার ভালো লাগে না।কতবার তোমায় বলেছি একটু মনোযোগ দিয়ে কাজ করো যাতে কোনো দুর্ঘটনা না হয় কিন্ত তুমি? আমায় কষ্ট না দিলে কি হয় তোমার?(তীক্ষ্ণ গলায়)
.
মাইশা বুঝে গেছে এই মশাই আজ সারাদিন তার উপর রাগ ঝাড়বে।মাইশা এবার আলতো করে আয়াতের ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁট দিয়ে আকড়ে ধরে।আয়াত মাথা এবার যেন হ্যাং হয়ে আছে মাইশার হঠাৎ এমন করাতে।কিছুক্ষণ পর মাইশা তার কাছে নরম গলায় বলে ওঠে……
.
”সরি !প্রমিজ আর এমন হবে না।”
.
”আমার ধমক থেকে বাঁচার জন্য ভালোই রাস্তা বের করেছো , তাই না?”
.
ভ্রু নাচিয়ে বলে ওঠে আয়াত।মাইশা তার কাছ থেকে সরে আসতেই আয়াত তার বাহু করে নিজের কাছে নিয়ে আসে।আয়াত দুষ্টু হেসে বলে ওঠে……
.
”মাইশু অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছিলাম।কিন্ত এখন তোমায় দেখে কেমন জানি প্রেম প্রেম পাচ্ছে। কি করতে পারি বলোতো?😁”
.
.
.
~চলবে~

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৪০+৪১

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৪০+৪১
.
”তুমিই তো বলছিলে আজ বাসর হবে তাই?এমনিতেও আমার কোনো প্রবলেম নাই।গতকাল না হয় নেশায় তুমি আদর করেছিলে আজ নাহয় সজ্ঞানে করবা? কি বলো? ফুলের ব্যবস্থা করবো?”(চোখ টিপ দিয়ে)
.
.
আয়াতের উচ্ছাসী কন্ঠশুনে মাইশার চোখ বেরিয়ে যাওয়ার মতো উপক্রম।একটা ছেলে যে ঠিক কতটা লাগামহীন হতে পারে এই আয়াতকে না দেখলে মাইশা হয়তোবা তা ধারনাই করতে পারতো না।আয়াতের পাশ থেকে উঠে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে সে আয়াতের দিকে।তারপর বিরক্তিসুরে বলে ওঠে……
.
”সবকথার উল্টা মনে করো কেন? এই ব্যাটা! আমি কি একবারও বলেছি যে আজ আমাদের বাসর হবে?”
.
মাইশার মুখে ব্যাটা কথাটি শুনে চোয়াল শক্ত করে ফেলে আয়াত।এমনিতেও মাইশার ইন্ট্যারন্যাশনাল ওয়ার্ডগুলো শুনে অতিষ্ট সে।আর এখন এই ব্যাটা ট্যাগটা নিতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তার।
.
একলাফে খাট থেকে উঠে আয়াত মাইশার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।অনেকটাই কাছে।মাইশা এতে একটু ভড়কে পিছনে চলে যায়।আমতা আমতা করে সে বলার চেষ্টা করে…..
‘.
”মা-মা-মানে আমি ব-বলতে চ-চেয়েছি আজ নুহাশ ভাইয়ার বা-বাসর হবে। আর তুমি তো আমাদের বাসর থেকে ফু-ফুল পর্যন্ত চলে গেলে ”
.
আয়াত ক্ষিপ্ত হয়ে বলে………
.
”এটা সুন্দর করে বললেই তো হয়।তোমার কুটনীতিমার্কা হাসি যে তোমার ভাইয়ের বাসরের জন্য ছিলো তা-কি আমি জানতাম? আর কেমন বোন তুমি?নিজের ভাইয়ের বাসরে ড্রিস্টাব করার ভয়ঙ্কর প্ল্যান করছো?”
.
”আমার ভাই ! আমার ভাইয়ের বাসর ! আমার যা মন চায় তাই করবো? তোমার কি?”
.
আয়াত ঠোঁট কামড়ে মাইশার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।সরু কন্ঠে বলে……
”ভাইটা তোমার হলেও ওই ভাইয়ের বোনটাতো আমার বউ।এখন মানুষ যদি দেখে আমার বউ অন্যের বাসরে হাতছানি করছে তাহলে তারা তো ভাববে যে এই মেয়ের মাথায় কোনো সমস্যা আছে।”
.
ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে মাইশা আয়াতের দিকে।তার কথাটা বুঝতে পেরে ক্ষেপে কিছু বলতে যাবে আয়াত তখন বলে ওঠে……
.
”দুপুরে তো বাবার নাম করে ভেগে গিয়েছিলে তুমি।এখন এর শাস্তি হিসেবে তোমার সাথে কি করা যায় বলোতো?”
.
মাইশা এবার শেষ ! কোনোমতে দাঁত কেলিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে…
.
”আরে ! ওটাতো আমি দুষ্টামি করছিলাম।এই কথাটাও কি মনে ধরে রাখতে লাগে আয়াত !”
.
”তুমি যতই আমারে আদুরে গলায় ; হেসে হেসে কথা বলোনা কেন ; শাস্তি তো তোমায় এই আরহাম আয়াত থেকে পেতেই হবে।এখন আমি অনেক ক্লান্ত।খালু আর বাবা মিলে আমায় মদনপালের মতো খাটিয়েছে তাই তুমি চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো আমার মাথা টিপে দিবে।”
.
একথা বলেই খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে আয়াত।তার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বড্ড ক্লান্তি ভর করেছে তার শরীরে।আয়াত চোখ বুঝে বলে ওঠে……
.
”কি হলো মাইশু ! তাড়াতাড়ি আমার মাথা টিপে দাও।যত জলদি তুমি কাজ শুরু করবে তত তাড়াতাড়িই তোমার ছুটি।”
.
মাইশা কিছুক্ষণ করুন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেও সে বুঝতে পেরেছে এই ছেলে এখন একটুও তার কথার খেলাফ হবে না।তাই আয়াতের পাশে বসে সে আস্তে করে তার চুলে নিজের আঙ্গুল গুঁজে মাথা টিপতে থাকে।এমন করতে করতে ২০ মিনিট , ৩০ মিনিট হয়ে এলো কিন্ত আয়াত কিছুতেই মাইশাকে ছাড়ছে না।মাইশার তো এখন মন চাচ্ছে এই চুলগুলো টান মেরে ছিঁড়ে ফেলতে।
.
সময় এখন প্রায় সাড়ে বারোটা । বাড়ির কোলাহলটা আস্তে আস্তে কমে এসেছে।আয়াত এখনও ঘুমায়নি।চোখ বন্ধ করে মাইশার স্পর্শ তার চুলে অনুভব করছে সে।মাইশার আয়াতকে এভাবে আড়চোখে দেখতে কেন যেন অনেক ভালোলাগছে।কিন্ত সে জানে না কেন আয়াতকে এভাবে লুকিয়ে দেখছে।আয়াত ওর হাজবেন্ট; সে হিসেবে ওর তো চোখাচোখি আয়াতকে পর্যবেক্ষণ করার কথা।হঠাৎ আয়াত বলে ওঠে……
.
”মাইশু……….! ”
.
মাইশা আয়াতের দিকে মনোনিবেশ করে।আয়াত এখনো চোখযুগল বুজে আছে।আয়াত মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”আচ্ছা এমন যদি হয় যে আদ্রাফ ফিরে এসেছে তবে আমায় কি তুমি ছেড়ে চলে যাবে?”
.
আয়াতের চুল থেকে নিজের হাতের বিচরণ থামিয়ে দেয় মাইশা।বুকটাতে কেমন যেনো ছোটখাটো একটা সাইক্লোন বয়ে গেলো মাইশার। আয়াতের হঠাৎ এমন প্রশ্ন বেশ ভাবিয়ে তুলেছে তাকে। মাইশার প্রতিউত্তর না পেয়ে আস্তে করে চোখ খুলে আয়াত। মাইশার দৃষ্টি অন্যদিকে।মনে মনে ছোটখাটো এক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
.
”কি হলো মাইশা? উত্তর দাও।”
.
”হঠাৎ……..এ প্রশ্ন? ”
.
বেশ শান্তভাবেই পাল্টা প্রশ্ন করেছে সে আয়াতের কাছে।কিন্ত মনে চলেছে ব্যাকুল অশান্তি তার ওর নীরবতার ভীড়েও স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে আয়াত।আয়াত এক অদ্ভুদ হাসি দিয়ে বলে,
.
”ভয় হয় তোমায় নিয়ে।বারবার মনে হয় এই বুঝি আমার থেকে দূরে চলে গেলে।আদ্রাফ আর তোমার ভালোবাসাকে যথেষ্ট সম্মান করেছি আমি।তবুও কোনো এক কারনে আদ্রাফকে হিংসে হতো আমার।প্রচুর হিংসে হতো।শুধু ভাবতাম , কি আছে ওর মধ্যে ?
যার জন্য তোমার মনে নিজের জায়গা করতে এতো কষ্ট হলো আমার।আমি কখনোই ওর মতো হতে চাইনি।কিন্ত আমি চেয়েছি আদ্রাফ যেমন তোমার ভালোবাসা পেয়েছিলো ; আমিও যেন সেই ভালোবাসার ভাগীদার হই।তাইতো ভয় লাগে…..আদ্রাফ যদি ফিরে আসে তবে তুমি কি আমায় ছেড়ে চলে যাবে?”
.
আয়াত এই কথাগুলো বলার সময় বারবার থেমে যাচ্ছিলো।যেন মাইশাকে হারানোর কথা ভাবলেই তার অনুভূতির অবসান ঘটে যাবে।
.
মাইশা নীরবে আয়াতের প্রতিটা কথা শুনে যায়।বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা কাটানোর পর সে উত্তর দেয়……..
.
”আদ্রাফ আর কখনোই ফিরে আসবে না আয়াত। আদ্রাফের ফিরে আসার যদি ১ পার্সেন্ট চান্স থাকতো; তুমি আর আমি কখনোই এক হতে পারতাম না। আদ্রাফ আর প্রথম ভালোবাসা ; আমার প্রথম অনুভূতি।যা চাইলেও কখনো ভুলা সম্ভব না। আর তুমি? আমার অন্তিম অধ্যায় ; আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ যা আমি কখনোই দূরে রাখতে পারবো না। ”
.
আয়াত নিশ্চুপ।
.
”তোমায় আমি কখনোই ছেড়ে থাকতে পারবো না আয়াত।কিন্ত প্লিজ এই বিষয়টা আদ্রাফের সাথে জুড়িয়ে দিও না। কেননা তার উত্তর আমার নিজের কাছেই নেই।”
.
আয়াত উঠে বসে মাইশাকে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে।নিজের মুখটা আস্তে করে গুঁজে দেয় মাইশার গলায়।মাইশাও এর কোনো প্রতিক্রিয়া করে না।আয়াতের পিঠে নিজের হাত নিয়ে যেতেই আয়াত যেন তাকে আরও আকড়ে ধরে।
পুরো পরিবেশটিতে বিরাজ করছে পিনপন নীরবতা।কিন্ত নীরবে থেকেই দুজনে যেন তাদের অনুভূতির আদান-প্রদান করছে।যেই অনুভূতির কোনো লেখ্য রূপ নেই ; শুধু রয়েছে অসামান্য প্রকাশময় ভালোবাসা।
.
.
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
.
.
গতরাতে নুহাশের বাসর হওয়া সত্বেও সে সাত-সকালে উঠে সবার সাথে আলাপচারিতা চালাচ্ছে আর আয়াত মশাই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।স এ নিয়ে সবার যেন হাসি-ঠাট্টার শেষ নেই।মাইশা তো বেচারা মাইনকা চিপায় পড়ে গিয়েছে।না পারছে বসতে তো না পারছে সরে আসতে।শেষমেশ মাইশা আয়াতকে ডাকতে রুমে গেলে আয়াত কম্বল মুড়ি দিয়ে বলে……….
.
”আরে মাইশা ! নুহাশ ভাই জেগে গিয়েছে দেখে বলে এখন আমারও উঠতে হবে? দরকার হলে নুহাশ ভাইকেও আমার সাথে ঘুমাতে বলো । তবুও আমায় আর ডাক দিও না প্লিজ।”
.
মাইশা আয়াতের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে যখন নিচে গিয়ে এই উত্তর দেয় সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠে।আরিয়াপুতো টিজ করে বলে ওঠে…….
.
”হায়রে হায়! বাসর সাজালাম নুহাশের ; সকালে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আয়াত……….ব্যাপারটা বুজলাম না।”
.
মাইশার তো এখন মন চাচ্ছে গলা ফাটিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাদতে। কিন্ত এখন কষ্ট করে তার অনুভূতিটা একটা মেকি হাসি দিয়ে ধামাচাপা করে রাখলো আর মনে মনে বলে উঠলো….
.
”মিঃ আরহাম আয়াত ! আমি এর রিভেঞ্জ অবশ্যই নেবো।”
.
.
.
আজ বাসায় ফিরে যাচ্ছে মাইশা আর আয়াতসহ সবাই।আয়াতের অফিস থাকার কারনে নুহাশের রিসেপশন অনুষ্ঠানে কেউ থাকতে পারলো না।মাইশার একটু খারাপ লাগলেও আয়াতের কথা ভেবেই ফিরে যেতে হচ্ছে তাকে।
তাছাড়া মাইশার মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে বলে এমনিতেও তাড়াতাড়ি যেতে হবে মাইশাকে।তাদের পথসঙ্গী হিসেবে আনান আর পৃথাও অংশ নিচ্ছে।ইনায়া আর সামাদ অন্য রাস্তা দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যাবে।
দেখতে দেখতেই যে ফিরে আসার প্রহর এগিয়ে আসবে এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে মাইশার।উত্তরায় সেই ৪ বছর ছাড়া জীবনের বড় একটা অংশ বেইলী রোডের এই বাসাটিতে কাটিয়েছিলো সে।আর এখন সেই বাড়িতেই অতিথি হিসেবে আসতে হয় তাকে।কত অদ্ভুদ তাই না?
.
সবাইকে বিদায় জানিয়ে নিজেদের আয়াতদের বাসার দিকে অগ্রসর হচ্ছে গাড়িটি।সামনে বসে ড্রাইভ করছে আয়াত আর পেছনে বসে গল্প-মজলিশে ব্যস্ত পৃথা আনান আর মাইশা।
.
মাইশার এখন প্রচন্ড খারাপ লাগছে।এমনিতেও সকালে খালিপেটে ছিলো বলে এখন গাড়িতে বমি বমি লাগছে তার।ব্যগ থেকে এক বোতল পানি বের করে ঢকঢক করে এক লিটারের পানি শেষ করে সে। পানিটা খাওয়ার পরপরই ভালো হতে থাকে তার শরীর।বমি বমি ভাবটাও একটু করে কেটে যাচ্ছে।আয়াত বিষয়টা লক্ষ করে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই বলে…….
.
”কোনো সমস্যা হচ্ছে মাইশা?”
.
”তেমন কিছু না ! একটু বমি বমি লাগছিলো?”
.
”বলিস কি মাইশা……এমন হবে কেন?”(পৃথা)
.
”কে জানে?”(মাইশা🙄)
.
”আচ্ছা তোর কি আচার খেতে ইচ্ছে করছে?”
.
আনানের কথা শুনে ভ্রু কুচকে মাইশা ওর দিকে তাকায়।আনান উৎসুক চোখে উত্তর শোনার জন্য বসে আছে।মাইশা মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”মানে…….আচার খেতে ইচ্ছে করবে কেনো?”
.
”আমার সন্দেহ সঠিক কিনা তার বিচার করছি।বমি বমি ভাব…..তো প্রেগনেন্টে হওয়ার লক্ষণ।তাই আচার ……..”
.
আনানের এই কথাটা বলতেই দেরি ওকে থাপ্পড় মারতে মাইশার এক সেকেন্ডও দেরি হলো না।আনান গালে হাত দিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।পৃথা মোবাইল চালাতে চালাতে মিনমিনিয়ে বলে…
.
”তোর মতো হাদারামের সাথে এমনই হবে…….”
.
মাইশা ক্ষিপ্ত গলায় আনানকে বলে;
”আরে গাধআআ……বমি করলেই প্রেগনেন্টের লক্ষণ এই মহৎ কথা কে বলেছে তোরে? তুই কি বাংলা সিনেমার কাহিনী শুরু করেছিস? একবার ভার্সিটির ট্যুরে মনে আছে তুইও বাসে বমি করেছিলি ? তাহলে ওটার মানে কি এই; তুই ছেলে হয়েও প্রেগনেন্ট……?গবেট কোথাকার………….!”😫
.
.
.
~চলবে~

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৩৮+৩৯

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৮
.
নিজেদের রুমে মুখোমুখি বসে আছে মাইশা আর আয়াত।মাইশার আয়াতের দিকে তাকাতে বেশ সংকোচ কাজ করছে তাই নিজের হাত জোড়া আনমনে ঘষাঘষি করে যাচ্ছে চোখের দৃষ্টি নত রেখে।আয়াত তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।এদিকে বরযাত্রী কনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অলরেডি বের হয়ে গিয়েছে আর আয়াত তাকে এভাবে ওখানে থেকে নিয়ে আসলো কেনো এটা ওকে বেশ ভাবাচ্ছে।
.
নীরবতা কাটিয়ে আয়াত হঠাৎ বলে ওঠে…..
”এভাবে ইগ্নোর করছো কেন?সকালে তোমায় যে কোনো অস্বস্তিতে পড়তে না লাগে তাই তোমার ওঠার আগেই আমি চলে গিয়েছি।কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি চেষ্টা করেছি তোমার সাথে কথা বলতে আর তুমি? বারবার আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো । কেন?”
.
কেন কথাটি একটু চিল্লিয়ে বলে ওঠে মাইশা। মাইশা এতে একটু কেঁপে ওঠে।আয়াত হঠাৎ এভাবে রেগে যাচ্ছে কেন?মাইশাকে বিচলিত হতে দেখেআয়াত পুনরায় শান্ত হয়ে যায়।মাইশার একটু কাছে এসে ওর হাতজোড়া নিজের হাতজোড়ায় বন্দী করে নরম সুরে বলে ওঠে,
.
”গতরাতের কথা ভেবেই কি আমায় ইগ্নোর করছো?”
.
মাইশা নীরব।
.
”বলো?”
.
মাইশা এবার প্রতিউত্তর দেয় ;”হ্যাঁ।”
.
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আয়াত। সকালে উঠে প্রথমে তার মনে ভয় কাজ করছিলো যে মাইশা বোধহয় ওকে ভুল বুঝবে।কিন্ত ঔষুধে এত বেশি পরিমাণ এলকোহল ছিলো না যতটা কোনো নেশাজাতীয় কোনো দ্রব্যে থাকে।তাই গতরাতের প্রতিটা ঘটনাই মাইশার মনে আছে।আয়াত বুঝতে পারছে এর জন্যই মাইশা মনে মনে অনুশোচনা বোধ করছে।কেননা গতকাল তাদের মধ্যে সবকিছুই অনিশ্চিতভাবে হয়েছিলো।
মাইশার গালে আলতো করে নিজের হাত রাখে আয়াত।এতে মাইশা চোখ তুলে তাকায় আয়াতের দিকে।আয়াতের ঠোঁটে রয়েছে স্মিত হাসি যাতে আয়াতের সৌন্দর্য আরও গভীরভাবে ফুটে উঠেছে।ওর কালচে বাদামী চোখগুলো প্রকাশ করছে অসীম ভালোবাসা।আয়াত হাল্কা করে নিজের ঠোঁট নাড়িয়ে বলে ওঠে……
.
”এত ভাবার কিছুই নাই মাইশু !বিশ্বাস আছে না আমার উপর?”
.
”হুম…”
.
”তাহলে……….? এত ভাবাভাবির কি আছে?………..এমন তো না এখনো আমায় মানতে পারোনি বা আদ্রাফকে ভুলতে পারোনি।একটি সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস।এই বিশ্বাসটাই আমার উপর রেখো কেমন?”
.
আয়াত কথা বলছিলো তখনি বাহিরে থেকে ভেসে আসে আরিয়াপুর গলা।
”মাইশা…….আয়াত?কতক্ষণ রুমে থাকবি?আমরা তো বেরিয়ে যাচ্ছি।”
আরিয়াপুর কথা শুনে দুজনেরই ধ্যান ভাঙ্গে।এতক্ষণ যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো দুজনে।আয়াতের প্রতিটা কথার মধ্যে অন্যরকম একটা আকর্ষণ অনুভব করতে পারে মাইশা যেই অনুভূতিটা অবর্ণণীয়।মুচকি হেসে এবার মাইশা রুমের থেকে বের হয়ে নিচে নেমে আসে আর আয়াতও তার পিছে পিছে নামে।
সবাই তাদের দুজনের জন্য অপেক্ষা করছিলো।আনান আর সামাদকে ট্রাকে করে যেতে দেখে খুব হাসি পায় মাইশার।হঠাৎ আয়াত তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠো……
.
”গতরাতে মাতাল হয়ে ওদের সামনে আমার মান-সম্মানের হালুয়া বানিয়েছো তুমি।কি মনে করেছো আমি ভুলে গিয়েছি? ওই বাড়িতে আগে যেয়ে নেই ; তারপর বুঝবে আরহাম আয়াত কি জিনিস ! আমায় লুচুবাঘ আর ধলা কুদ্দুস বলার শাস্তি আমি দেবোই।”
.
একথা বলেই আয়াত শিস বাজাতে বাজাতে গাড়িতে উঠে পড়ে।আয়াতের কথা শুনে হিম ধরে গিয়েছে মাইশার গায়ে।আল্লাহই জানে কি করবে সে !
.
.
চলবে।।

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৯
.
মাইশাকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে আয়াত তার একহাত মাইশার পেছনের দেয়ালটিতে রেখে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।আয়াতের নিশ্বাস মাইশার মুখ বরাবর বারি খাচ্ছে আর বেচারা মাইশা তো না পারছে এখানে থাকতে না পারছে এখান থেকে যেতে।কিছুক্ষণ আগেই নুহাশের নিকাহ সম্পন্ন হয়েছে আর সবাই এখন বর-কনেকে নিয়ে ব্যাস্ত।আয়াতের ভয়াবহ কথাগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য মাইশা কনে বাড়িতে সারাদিন আয়াতের থেকে ১০ হাত দূরে দূরে ছিলো । কিন্ত এখন সবাই ব্যস্ত বলে আয়াত সুযোগের সৎ ব্যবহার করে ভেন্যুর একেবারে নীরব কোণে নিয়ে যায় মাইশাকে।
.
মাইশার তো এখন ”ছেড়ে দে জামাই কেঁদে বাচি”এর মতো দুর্লভ অবস্থা।আয়াতের কালচে বাদামী চোখে অন্যরকম এক মাদকতা আছে । যা মাইশা কখনোই উপেক্ষা করতে পারে না।ওই নজরকাড়া চোখজোড়ার দিকে তাকালেই হাজারো অনুভূতির সংমিশ্রণ তার চোখের সামনে উপস্থিত হয়।কোনোমতে আমতা আমতা করে মাইশা বলার চেষ্টা করে…..
.
”ওদিকে সবাই কথা বলছে আ-আমায় এ-এখানে আনলে কেন?”
.
মাইশার কথার ধরন দেখে আয়াত আলতো হাসে।তারপর নিজের ঠোঁটজোড়া জিহবা দিয়ে হালকা ভিজিয়ে মাইশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ওঠে,
”মনে আছে গতকাল আমায় কি কি বলেছিলে?”
.
লজ্জায় লাল-নীল-বেগুনি হয়ে যাচ্ছে মাইশা।নেশার ঘোরে আয়াতকে যে কি কি বলেছে তা সম্পূর্ণ মনে না থাকলেও আংশিক মনে আছে ওর।আর আয়াতের ঠোঁট নাড়ানোর সময় তার কানের লতিতে বারবার ছুঁয়ে দিচ্ছিলো যার কারনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে মাইশার শরীরে।এতে একটু কেঁপে ওঠে মাইশা।আয়াত আবারো তা দেখে বলে ওঠে……
.
”আজ আমরা একসাথে এতদিন থাকছি তবুও তোমার কাঁপাকাঁপির অভ্যাসটা আর গেলো না।সত্যি ! মাথা ঠিক রাখতে পারি না আমি।”
.
মাইশা এবার চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
”আয়াত খালু আসছে।”
,
হুড়মুড়িয়ে মাইশাকে ছেড়ে দেয় আয়াত।এমনিতেও বাবাকে বড্ড ভয় পায় সে।আয়াত মাইশাকে ছেড়ে দিতেই মাইশা দেয় এক ভৌ দৌঁড় । আয়াত কিছুক্ষণ গোল গোল চোখে ওপানে তাকিয়ে থাকলেও পরে সে বুঝতে পারে মাইশার কুটনামি।মাইশাতো পৃথা আর ইনায়ার কাছে আসতেই সেই লেভেলের হাঁপাতে থাকে।যেন বড় এক রাক্ষসরাজের কাছ থেকে ছাড় পেলো সে।
ইনায়া মোবাইল চালাতে চালাতে বলে…..
.
”কিরে…? হাপানি রোগ হলো তোর?”
.
” কস কি ইনায়া ! যে জামাইরে লুচুরাঘ বলতে পারে; জামাইয়ের ধারপাশ দিয়ে গেলে ওই জামাই যেকোনো কিছু করতে পারে। বুঝস না?(ইনায়াকে চোখ টিপ দিয়ে বলে পৃথা)
.
”তোদের ভিত্তিহীন কথা হইসে?”(মাইশা)
.
”(সত্যি বললেই তা ভিত্তিহীন হয়ে যায়)”মিনমিন করে বলে ওঠে পৃথা।
.
.
আজ বেশ সুন্দরমতোই নিকাহ সম্পন্ন হয়েছে।সামাজিক অনুষ্ঠান জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।আর বিয়ে শুধু দুটো মানুষের মধ্যেই হয় না ; দুটো পরিবারের মধ্যেও হয়।হাসি-আনন্দ, উচ্ছাস-ভালোবাসা………জীবনের মাধুর্য স্মৃতি হয়ে দাঁড়ায় এই উৎসবগুলো।যথাসম্পন্নভাবে সকল রীতিকার্য সাধন করে কনেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে সবাই।
নুহাশ ভাইয়ার বউয়ের নাম রেহানা।দেখতে যেমন মিষ্টি………কথাবার্তায়ও রয়েছে সুমিষ্ট ভাব।ঠোঁটে যেন সর্বদাই একধরনের প্রশস্ত হাসি বজায় রাখে সে।নুহাশের মতোই বড্ড শান্তশিষ্ট স্বভাবের।সবাই এককন্ঠে বলেছে , ”ওদের আল্লাহ একে অপরের জন্যই বানিয়েছে।”
.
তাদেরকে বাসরঘরে ঢুকিয়ে রীতিমতো টাকা আদায় করে রুমে বসে উচ্ছাসে টাকা গুণছে মাইশা।বড় ভাইয়ের বাসরে টাকা আদায় করার মতো আলাদাই এক আনন্দ আছে।কিন্ত ওর মনে এক অন্য দুষ্টু পরিকল্পনাই চলছে।আয়াত সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে মাইশাকে এমন দুষ্টু হাসি হাসতে দেখে একটু ভড়কে যায়।
.
আলমারি থেকে টিশার্ট নামিয়ে পড়তে পড়তে বলে……..
”এমন কুটনীতিমার্কা হাসি হাসছো কেন?”
.
”আজ বাসর হবে তাই !”
.
আয়াতের যেন মাথায় আকাশ পড়ার মতো অবস্থা।মাইশার কাছে গিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলে……
”এই মাইশু ! আবারো ওই ঔষধ খেয়ে মাতলামি করছো নাকি?”
.
”মানে?”
.
”তুমিই তো বলছিলে আজ বাসর হবে তাই?এমনিতেও আমার কোনো প্রবলেম নাই।গতকাল না হয় নেশায় তুমি আদর করেছিলে আজ নাহয় সজ্ঞানে করবো? কি বলো? ফুলের ব্যবস্থা করবো?”(চোখ টিপ দিয়ে)
.
.
চলবে।।

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৩৫+৩৬+৩৭

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৫
.
”কার ক’দিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে আমি তো এখনো কিছুই করিনি।”
আয়াতের একথা শুনেই চোখ বড়বড় করে ফেলে মাইশা। আয়াতের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে সে।বুঝতে পেরেছে যে রাগের বশে কেমন একটা বোকামিমূলক কথা বলে ফেলেছিলো। তাই আয়াতের কলার থেকে নিজের হাতের বাঁধন আলগা করতেই করতেই মাইশা বলে,
.
”আ-আমি স-সেটা বলতে চ-চাইনি।”
.
”তো একথা বললে যে? বাচ্চা কি আসমান থেকে টপকে পড়বে যেদিকে আমি কিছুই করি…….”
.
আয়াতের মুখ চেপে ধরে মাইশা।আয়াতের লাগামহীন কথা শোনার মতো আর বিন্দমাত্র সাহস নেই তার।এই ছেলে যা ভয়ঙ্কর এই অসময়ে উল্টাপাল্টা কথা বলতে দুদন্ডও ভাববে না ও। মাইশা করুন কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
” আরে আমি রাগের বশে ও কথা বলে ফেলেছি আর তুমি কোন কথাকে কোন দিতে নিয়ে যাচ্ছো?”
.
আয়াত তা শুনে দুষ্টু চোখে মাইশার দিকে তাকায়।তারপর মাইশার হাতের তালুতে চুমু দিতে থাকলেই সাথে সাথে আয়াতের ঠোঁট থেকে নিজের হাত সরিয়ে সরে আসতে নিলেই আয়াত মাইশার কোমড় চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।আয়াত অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে আছে। আর মাইশা এখন বিভ্রান্ত হয়ে আয়াতের চোখের থেকে নিজের চোখ সরিয়ে আনমনে ঠোঁট কামড়াতে থাকে। আয়াত তা দেখে ঠোঁট টা হালকা প্রসারিত করে ফেলে। মাইশার বিভ্রান্ত হয়ে ঠোঁট কাভড়ানোটা বরাবরই পছন্দ আয়াতের।
.
মাইশার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে আয়াত বলে ওঠে……
.
”এখন আমার মুখ আটকিয়ে দিলে চলবে না। আমায় লুতুপুতু ট্যাগ দেয়ার আগে মনে করা উচিত ছিলো তোমার। আমার জানামতে আমি এমন কিছুই করিনি তবে তুমি যখন বলছো তবে তো করতেই হবে…….কিন্ত তা করবো তোমার সাথে।”
.
আয়াতের ফিসফিসানো কথা শুনে কাপাঁকাপি শুরু হয়ে যায় ওর।সে এখন ভাবছে যে কেন তখন আয়াতকে টেনে নিয়ে আসতে গিয়েছিলো।
.
” আমাদের লাভ ম্যারেজ হয়েছিলো তাই না?”
.
”কই ন-না-না তো?”
.
”হায় হায় ! বলো কি ? তুমিই তো তখন তাকে বললে আমাদের লাভ ম্যারেজ হয়েছিলো।আমি কিন্ত মেনে নিয়েছি মাইশুপাখি।”
.
মাইশা এবার বুঝে গিয়েছে এই ছেলে ওই কথাগুলোকে কেন্দ্র করে সেকেন্ডে সেকেন্ডে তাকে টিজ করবে।তবে আয়াতের কাছ থেকে সে ছুটে আসছে না। আয়াতের লাগামহীন কথাগুলো মাঝে মাঝে তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলেও ওর প্রতিটি মুভমেন্ট চোখে আটকে যায় মাইশার।আয়াত আস্তে করে তার কোমড় ছেড়ে দিতেই দূরে সরে যায় মাইশা।আয়াতের ঠোঁটে নেশাময় হাসি ফুটিয়ে দেয়ালে হেলানরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে মাইশা।যতবারই আয়াতের কাছে সে যায় ততবারই মনে অদ্ভুদ অনুভূতির সামনে পড়ে যায় সে । যার বিস্তর ধারনা হয়তো তার কাছে নেই।সে এখান থেকে চলে যেতে নিলেই আয়াত পেছন থেকে বলে ওঠে ,
.
”মাইশু”
,
পেছনে ঘুরে মাইশা। ফ্লাইং কিস দিয়ে মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”ভালোবাসি…..”
মুচকি হাসে মাইশা। একটু জোরে মাইশাও বলে দেয়….
.
”আমিও………”
বলেই সে ঝড়ের গতিতে অদৃশ্য হয়ে যায় এখান থেকে।হয়তো লজ্জার সংমিশ্রনের কারনে ; অথবা হয়তো অনুভূতির সম্মুখ হওয়ায়।
.
.
****************
.
আজ নুহাশ ভাইয়ার গায়ে হলুদ।সকাল থেকেই তোরজোড় চলছিলো। সন্ধ্যায় লোকজনের সমাগমে তা যেন আরও নির্লিপ্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে। আজ সকাল থেকেই আয়াতের সাথে দুদন্ড কথা বলতে পারেনি মাইশা। বাড়ির জামাই হওয়ার আগে সেও পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য ; তাই হয়তো কাজের ভারটাও সমানতালে তাকে বহন করতে হচ্ছে।
এইতো কিছুক্ষণ আগে আয়াত কোথা থেকে এসে আলমারি থেকে পাঞ্জাবি নিয়ে চলে গেলো আর মাইশাকেও বললো রেডি হতে। ঘটনাটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যাওয়ায় মাইশার প্রথমে বুঝতে সমস্যা হলেও বর্তমানে এসব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সে। সে জানে আয়াতের সাথে থাকতে হলে আজীবনই এমন কাজকর্ম চলতে থাকবে।
.
একটি কাচা হলুদ রঙের লেহেঙ্গা যার মধ্যে কলাপাতা রঙের নকশা করা ; এই ড্রেসটি পড়ে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে যাচ্ছে সে।কথাটি আসলেই সত্য যে আয়নার সামনে যেকোনো মেয়েরই সুপ্ত ভাবভঙ্গির গুণটি বেরিয়ে আসে।মাইশাও তেমনি একবার নিজেকে চুলছাড়া দেখছে ; তো একপাশে রেখে আবার খোঁপা করে দেখছে। অবশেষে সে তার হাল্কা কোকড়ানো চুলগুলো খোঁপা করে চারিপাশে বেলী ফুল আটকে দেয়।
.
আয়ানাতে নিজেকে দেখে ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে মাইশা। কেন জানি আজ আবার আদ্রাফের কথা মনে হচ্ছে তার।আদ্রাফের খুব ইচ্ছে ছিলো তাদের বিয়ে হলে এভাবে একদিন সাজিয়ে দেবে মাইশাকে।যদিও এখন এগুলো কেবল অতীতের এক পরিত্যাক্ত স্মৃতি।
.
দরজায় টোকা পড়তেই ধ্যান ভাঙ্গে মাইশার।দরজাটা খুলতেই আয়াত ঘরে প্রবেশ করে। যেই না ব্যতিব্যস্ত আয়াত ঘরে প্রবেশ করে মাইশা দেখে অমনি থমকে যায় সে। নিজের ভারসাম্য হারিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে অবাক চোখে দেখতে থাকে মাইশাকে।
.
মাইশা বোকার মতো তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে। আয়াতের চোখে-মুখে বিস্ময়ের হাসি। বুকে হাত দিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।নেশাকাতুর গলায় বলে ওঠে…….
” আমায় পাগল না করলে তোমার কি ভালোলাগে না? এই সাজে কি আমায় পাগল করতে চাও?”
.
আয়াতের কন্ঠ শুনে অজানা এক শিহরণ বয়ে যায় মাইশার মনে। আয়াতের গলা অনেক দুর্বল শোনাচ্ছে। চোখে-মুখে রয়েছে অজানা এক অনুভূতির সংমিশ্রণ।
.
”ট্রাস্ট মি মাইশু……তোমায় এই সাজে মারাত্নক থেকেও মারাত্নক হহহট….(জিভ কেটে)….আমি মিন মারাত্নক লেভেলের সুন্দর লাগছে।”
.
”হয়েছে-হয়েছে-আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড না যে পাম মারতে হবে।”
.
আয়াত ঠোঁট কামড়ে মাইশার দিকে এগিয়ে আসতেই কানের কাছে ঝুঁকে বলে ওঠে….
.
”তা তো জানি। গার্লফ্রেন্ড না বলেই তো মন চাচ্ছে ঠেসে তোমায় ধরে একটা চুমু খাই।আফটার অল এখন তো আমি আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যাচ্ছি। ”
.
দূরে সরে আসে মাইশা।ভ্রু কুচকে তাকায় আয়াতের দিকে। আয়াত মুখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মাইশা আমতা আমতা করে বলে ওঠে…..
.
”আ-আ-আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
.
কথাটা শুনতেই আয়াত কিছু বলে না।আস্তে করে বলে ওঠে…….
.
”এমনিতেও তোমার ভাইয়ের বিয়ের কাজে আমি আধমরা হয়ে গেছি এখন তো তোমার সাথেও ঘুরতে ঘুরতে পুরোমরা হয়ে যবো। যা লাগছে তোমাকে…..কেউ তো হলদে পাখি মনে করে টুপ করে খাঁচায় আটকে নিবে।”
.
.
.
চলবে***
.
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৬
.
হলুদ অনুষ্ঠানের অনন্য আবহাওয়ায় গমগম করছে সারা পরিবেশ।একপাশে সুন্দর গান চলছে তো একপাশে সামাজিক আলাপচারিতা চলছে।এসময় অপরিচিত কেউ থাকলেও তাকে কাছের মানুষের মতোই সাদরে গ্রহণ করে নিতে হয়।ইতিমধ্যে নুহাশ ভাইয়াকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সারিয়ে নেয়ার কারনে তার অবস্থা বেহাল।এই মাঘ মাসে কোন পাগল ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে এটা ভাবতেই পুরো বিয়ের বাড়ি মাথায় উঠিয়ে দিয়েছে সে।এখন চুপচাপ ভদ্র এক ছেলের মতো স্টেজে বসে আছে সে ; শুধু মাঝে মাঝে হাচি দিচ্ছে ….ভাবা যায়?
.
মাইশা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নুহাশ ভাইয়ার পাশে চুপচাপ বসে পড়ে।ভাই-বোন হলেও অন্যান্য ভাইবোনের মতো খুনসুটি তাদের মধ্যে নেই।তাদের মধ্যে কখনো কি ঝগড়া হয়েছিলো এ নিয়েও মাইশার মনে সন্দেহ জাগে।কেননা জ্ঞান হয়ার পর থেকে সে কখনো তার ভাইয়ের সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনি।
তবে তার ধারনা তাদের সম্পর্কে অন্যরকম এক মায়া-মমতা ছিলো; ভালোবাসার অন্য এক টান ছিলো যা অন্য ভাইবোনদের খুঁনসুটিময় সম্পর্কের তুলনায় অনেক বেশি।
.
কিন্ত এখন নুহাশকে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে তার।এমনিতেও মাঘ মাস ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার মতো সময় না তার ওপর সবাই মিলে এই বেচারাকে এত অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাতে বাধ্য হয়েই সর্দি নিয়ে স্টেজে বসে আছে সে।
.
কোনোমতে হাসি আটকে মাইশা নুহাশের কানে ফিসফিসিয়ে বলে….
.
”খুব ঠান্ডা লাগছে ভাইয়া? কম্বল আনবো?”
.
নুহাশ করুন চোখে মাইশার দিকে তাকায়।আবার একটা হাচি দিয়ে সে বলে ওঠে….
”এটা তুই বলতে পারলি মাইশা? এমনিতেও আম্মু আর খালামণির জ্বালায় এই ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে লাগছে আর এখন তুই মশকরা করছিস?”
.
”আচ্ছা তো তুমিই বলো এখন কি করবো?”
.
”তোর কিছুই করতে হবে না বোন ! যা ঘটার ঘটেই গেসে।তুই ওদিকে গিয়ে আয়াতের সাথে পারলে সামাল দে।খালু তো ওরে কাজ করিয়ে করিয়ে আধমরা বানিয়ে ফেললো।”
.
আয়াতের নাম শুনতেই মুখে বিরক্তিভাব প্রকাশ করে মাইশা।এখন সে কিছুতেই আয়াতের কাছে যাবে না।আয়াতের কাছে গেলেই কখন কোন ভয়ঙ্কর কাজ করে বসবে আল্লাহই জানে !
.
.
এক নীরব পাশে চেয়ার নিয়ে পৃথা আর সামাদের সাথে বসে মাইশা গল্প করে চলছে।কিছুক্ষণ আগেই নুহাশ ভাইকে হলুদ লাগিয়ে এখানে বসলো সে। আয়াত বেচারা একমুহূর্তও বসতে পারছে না।এই ডেকোরেশনের দিকটা সামাল দিচ্ছে তো আবার এদিকে সবার সাথে আলাপচারিতা চালাচ্ছে।
মাইশাও ওকে এভাবে ব্যস্ত দেখে একটু মায়া লাগলেও পরে ভাবে….আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।মাইশা নিশ্চিত যে আয়াত একটু ফুরসত পেলেই মাইশাকে আবার জ্বালাতে এসে পড়বে।
.
কথাটা ভাবতেই দেরি আয়াতের মাইশার পাশে বসতে এক সেকেন্ডও দেরি হলো না।আয়াত মাইশার পাশের চেয়ারটিতে হেলান দিয়ে বসে একনাগাড়ে দেড় লিটার বোতলের পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।আয়াতকে বসতে দেখেই পৃথা আর সামাদ আস্তে করে কেটে পড়ে।আয়াত পানি খেয়ে বিক্ষিপ্ত চোখে তাকায় মাইশার দিকে।মুখে রয়েছে ক্লান্তির ছাপ।হাল্কা চাপ দাড়িতে হলুদ পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় বেশ চমৎকার লাগছে আয়াতকে।
আয়াতের দৃষ্টি উপেক্ষা করার জন্য মাইশা অন্যদিকে তাকাতেই আয়াত বলে ওঠে……..
.
”তোমার ভাই বিনামজুরের হাওলাদার পেয়েছে।কই ভাবছিলাম নিজের বিয়েতে ধুমধাম করে আনন্দ করবো….বিয়ের অনুষ্ঠান তো হলোইনা ! উল্টো মানুষের বিয়েতে হাওলাদারের কাজ করতে হয়েছে।”
.
আয়াতের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয় মাইশা।আয়াত ভ্রু কুচকে তাকাতেই মাইশা হাসি দমিয়ে বলে
”সরি……”
আবারও মিনমিনিয়ে বলে ওঠে;” যে যেই কাজের যোগ্য তারে সেই কাজই করতে দেয়া হয়েছে।”
.
”কিছু বললা?”
.
‘হুম…না ! কিছুনা !”
.
আয়াতকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কিছু লোকজন ডাকতেই মুখে বিরক্তিভাব প্রকাশ করে আয়াত।দুই মিনিটও হয়নি আবারও ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে তারা। ধিক্কার গলায় সে বলে ওঠে,
”এই ব্যাটাগুলো একমিনিটও শান্তিতে বউয়ের সাথে কথা বলতে দিবো না।”😫
,
,
হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষ।আত্নীয়-স্বজন অনেকে যাওয়া শুরু করেছে।গমগম করা হলুদের মূল কেন্দ্রটিতে চেয়ারগুলো ভাজ করে একপাশে গুছিয়ে রাখছে ডেকোরেটররা।মাইশাও ক্লান্তিমুখে ওর আম্মুর কাধে মাথা দিয়ে চোখ বুজে আছে। আবারো মাথাব্যাথা করছে তার।ওর খালামণি এই বিষয়টা খেয়াল করতেই সেদিন যেই ট্যাবলেটটা খেতে দিয়েছিলো সেই ট্যাবলেটটা আবার খেতে দেয় তাকে।
সেটা খাওয়ার পর মাইশা ওর বন্ধুদের কাছে যায় সাহায্য করার জন্য।প্রায় ১০ মিনিট ওর চোখের সামনে সবকিছু ঘোলাটে হতে থাকে।এমন মনে হচ্ছে যে সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় দেখছে সে।
.
ইনায়া অবাক কন্ঠে বলে ওঠে….
.
”কি হয়েছে তোর?”
.
মাইশার কেন যেন মনে হচ্ছে সে নিজের মধ্যে নেই।উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করতেই আনান বুঝে গিয়েছে আর কোনো কাহিনী নয় ! এই মেয়ের নেশা চড়েছে। আয়াত ডেকোরেটরদের কাজ ভালোমতো বুঝিয়ে এদিকে আসতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।মাইশা আয়াতকে দেখতেই তার বুকে মিশে গিয়ে আবোল-তাবোল কথা বলতে থাকে।
.
”কি হয়েছে ওর?”(সন্দিহান গলায় বলে আয়াত)
.
”বুঝলাম না ভাইয়া…..কিছু একটা খেয়ে নেশা হয়ে গেছে ওর।”(সামাদ)
.
”কিন্ত এখানে তো আ্যলকোহল জাতীয় কোনো ড্রিংক ছিলো না…….মাইশা!(গালে হাত দিয়ে)কি খেয়েছো তুমি?”
.
”মাথাব্যাথা করছিলো টাই ট্যাবলেট খেয়েছি।”(নেশাজড়ানো গলায় বলে ওঠে)
.
আয়াত বুঝে গিয়েছে মাইশা আ্যলকোহলযুক্ত কোনো ট্যাবলেট খেয়েছে আর অনেকের তা অল্প পরিমাণ খেলেও নেশা হয়ে যায় যেমনটা মাইশার হয়েছে।আয়াত আর কিছু না ভেবে কোলে তুলেনেয় মাইশাকে।মাইশা এবার চিল্লিয়ে বলে ওঠে…..
.
”এই লুচুবাঘ ! আমায় ছেড়ে দাও।আমি এখন আকাশে উড়বো।”
.
এই কথা বলে মাইশা আয়াতের বুকেপিঠে কিলঘুষি দিতে থাকলেই হাসিতে মেতে ওঠে মাইশার দস্যু বন্ধুগুলো।আয়াত এবার ভাবতে থাকে আজ বোধহয় মাইশা সারারাতই এভাবে জ্বালিয়ে মারবে আয়াতকে।
(বেচারা আয়াত!)
.
.
.
চলবে।।।

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৭
.
ভারক্রান্ত অবস্থায় সোফায় বসে মাইশার উদ্ভট আচরনগুলো দেখে যাচ্ছে আয়াত।মাইশা আনমনে আয়নার সামনে গুণগুণ করে গান গাচ্ছে তো কিসব ভাবভঙ্গি করছে যেগুলো সজ্ঞানে থাকলে মাইশা কল্পনাও করতে পারতো না।এমনিতেও নুহাশের হলুদের অনুষ্ঠানের কাজ করে আয়াত শেষ এবার মাইশার পাগলামি সামলানোর কথা ভেবেই কপাল দিয়ে ঘাম ছুটছে তার।মাইশা ড্রসিংটেবিল থেকে হলুদের বাটিটা নিয়ে আয়াতের কাছে আসে।তারপর ঝাপসা গলায় বলে ওঠে….
”আমায় হলুদ লাগিয়ে দাও।”
.
আয়াত চোখজোড়া ছোট করে ফেলে মাইশার এ কথা শুনে।
”কেন?”
.
”আমরা দুজন মিলে এখন হলুদের অনুষ্ঠান করবো।”
.
”কিভাবে?”
.
”তুমি আমায় হলুদ লাগাবে আর আমি তোমায় হলুদ দেবো ব্যাস !”
মাইশা একথাগুলো কোনোরকম বলে আয়াতের দিকে বাটিটা এগিয়ে দেয়।আয়াত এবার হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না।মাইশা আবারো ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে….
”কি হলো হলুদ লাগিয়ে দাও আমাকে !”
.
আয়াত হলুদের বাটি থেকে হালকা হলুদ নিয়ে লাগিয়ে দেয় মাইশার গালে।মাইশা এতে মুখে একটি মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তুলে।
”এবার আমি দিবো।”
এ বলেই মাইশা আয়াতের কোলে বসে তার ডান গালটি আয়াতের বাম গালে মিশিয়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়।আয়াতের মাথার ফিউজ যেনো এবার উড়ে গিয়েছে মাইশার এহেন কান্ডে।মাইশার নরম গালের স্পর্শ হঠাৎ এভাবে নিজের গালে অনুভব করতেই থমকে গিয়েছে সে।মাইশা এবার হাল্কা সরে এসে আয়াতের মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে যায়।দুজনের মুখের নিঃশ্বাস ক্রমাগত একে অপরের কাছে বারি খাচ্ছে।আয়াত এবার মাইশাকে সরিয়ে বারান্দার কাছে দাঁড়ায়।ক্রমাগত নিঃশ্বাস ফেলছে সে।এমনিতেও মাইশাকে দেখলে ওর মাথা ঠিক থাকে না এইবার তো সত্যি সত্যি পাগল বানিয়ে ছাড়বে তাকে।
.
মাইশা কটাক্ষ চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে…
”এই ব্যাটা ! দূরে সরে গেলি কেনো? এমনি তো সারাদিন ফেবিকলের মতো আমার সাথে চিপকে থাকিস।আর এখন আমি তোর কাছে আসছি আর তুই দূরে সরে গেলি……..খালামণি !😭”
.
মাইশার কথা শুনে ওর হাত অটোমেটিক্যালি কপালে চলে যায়।কি ওষুধ খেয়েছিলো যাতে এত হাইডোজের আ্যলকোহল ছিলো? আর এই খেয়ে কি থেকে কি বলে যাচ্ছে তার কোনো হুশঁ নেই !মাইশা এবার রাগ করে বলে,
.
”তুমি অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছো।তুমি শুধু আমায় বিরক্ত করো।একটুও ভালোবাসো না।আমিও এখন আদ্রাফের কাছে চলে যাবো।আর ফিরে আসব না !”
.
আয়াত এবার মাইশার কাছে গিয়ে বুকে মিশিয়ে নেয় তাকে।মাইশা নেশার ঘোরে কথাটা বললেও কথাটি ওর একেবারে বুকে গিয়ে লাগে।মাইশা চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো আয়াতের বুকে মিশে আছে।তার কাছে মনে হচ্ছে আদ্রাফের স্মৃতি এককোণে আবদ্ধ করে সামনে এগোনোর জন্য এর থেকে নিরাপদ স্থান আর নেই।আয়াত স্তব্ধ কন্ঠে বলে ওঠে…..
.
”কে বলেছে তোমায় ভালোবাসি না? অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।হয়তো আমার ভালোবাসা আর আদ্রাফের ভালোবাসা এক না তাই ভুলেও ওর সাথে আমার তুলনা করবে না।ওর জায়গা আমি চাই না।আমি আমার জায়গা চাই।”
.
”তবে কি তুমিও চলে যাবে আদ্রাফের মতো?”
মলিন হাসে আয়াত। মাইশার মাতালকন্ঠ শুনে অদ্ভুদ এক অনুভূতি হচ্ছে ওর।
”আল্লাহ না চাইলে কখনোই যাবো না।এখন এসব কথা বাদ ! চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।নেশার ঘোরে কি আবোল-তাবোল বলছো একটুও হুঁশ নেই তোমার।পরে সকালে উঠে তুমি আমায় কথা শুনাবে।”
.
মাইশাকে খাটে শুয়িয়ে দিলে সাথে সাথেই মাইশা আয়াতের পাঞ্জাবির কলার চেপে তাকে পাশে শুয়িয়ে বুকে মাথা রাখে।আয়াত নীরবে তার কাজ দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে।এই মেয়ে এখন উল্টাপাল্টা কাজ করে আয়াতকে পাগল বানাবে আর পরে আয়াতকে দোষারোপ করে এটা ভাবতেই আয়াত তাকে সরিয়ে দিতে নিলেই মাইশা নিজের শরীরের সম্পূর্ণ ভর আয়াতের উপর ছেড়ে তার বুকে মুখ গুঁজে দেয়।ব্যাস ! আয়াতের সম্পূর্ণ বডি এখন মাইশার আবদ্ধে।মাইশা চোখ বুজে বলে ওঠে……
.
”আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে একেবারে নারী নির্যাতন মামালা করবো।বলবো যে এই ধলা কুদ্দুস (আয়াতকে মাইশা ধলা কুদ্দুস বলসে দেখে আবার রাগ করো না পাঠকবাসী😅)আমারে খালি ধুমধাম কইরা মারে।”
.
মাইশার কথা শুনে আয়াতের এবার শ্বাস বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।এতোদিনের জমা সব শোধগুলো এবার মনেহয় একসাথে তুলবে মাইশা।এবার যে সে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটাই ভেবে কূল পাচ্ছে না ।মাইশা এবার মুখ তুলে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে….
.
”ওই বুইড়া মোড়লটা আমাদের বিয়ে দিয়ে ভালোই করেছে।প্রথমে অনেক কান্না পেলেও এবার মন চাচ্ছে খুশির ঠেলায় ওই বুইড়ারে একটা পাপ্পি দিয়ে আসি।”
.
এবার আয়াত আর হাসি আটকাতে পারছে না।মাইশার এক একটা কথা শুনতেই বিদ্যুতের ঝটকা খাচ্ছে সে।কোনোমতে সে করুন গলায় বলে ওঠে,
”আর না মাইশু প্লিজ এবার ঘুমিয়ে পড়ো।”
.
এটা বলেই থেমে যায় আয়াত।হঠাৎ পরিবেশে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। আয়াতের গলায় মুখ ডুবিয়ে মাইশা এবার বলে ওঠে…..
.
”আয়াত?”
.
”হুম?”
.
”আমায় একটু ভালোবাসবে?”
.
চুপ হয়ে গিয়েছে আয়াত।মাইশার মিহি কন্ঠ উপেক্ষা করার মতো শক্তি তার এখন নেই।মাইশার চুলে নিজের হাত বুলিয়ে বলে ওঠে……
”এখন না মাইশা ! তুমি এখন সজ্ঞানে নেই।সজ্ঞানে থাকলে কিছুতেই একথাটা বলতে না তুমি।”
.
”প্লিজ আয়াত! আমার না কেন যেন দমবন্ধ লাগছে।আমি এখন কেমন আছি জানিনা কিন্ত আমার এখন তোমাকে চাই আয়াত।খুব করে চাই।আদ্রাফের স্মৃতি উপেক্ষা করে সামনে এগোতে চাই।আমার সঙ্গী হবে না?”
.
আয়াতের দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে থাকে সে।কেউ বলবেই না এতক্ষণ এই মেয়ে আয়াতকে জ্বালিয়ে মারছিলো।কেননা তার চোখে এখন আকুল ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্খা আছে।মাইশা এবার এগিয়ে আসতে থাকে আয়াতের ঠোঁটযুগলের দিকে।আয়াতের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।এই মাইশাকে এখন কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারবে না সে।ধীরে ধীরে সে তার প্রয়সীকে নিয়ে হারিয়ে যায় এক অজানা রাজত্বে।
.
❤❤❤❤❤❤❤❤❤
.
চলবে।

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৪
নুহাশ ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে আজ প্রায় ৪ মাস পরে নিজের বাসায় পা রেখেছে মাইশা।খালামণি, আরিয়াপু , খালুজান, আয়াত সবাই এসেছে।পুরো বাড়িতেই খুশির আমেজে ভরপুর। আগামীকাল গায়ে হলুদ হবে তাই আজই সবাই এখানে এসেছে।মাইশার আম্মু বাড়ির একাজ ওকাজ করতে ব্যাস্ত।মাইশার আব্বুর সাহায্য করার জন্য আনান আর সামাদও এসেছে।মাইশা ওর আব্বুর কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে বলে ওঠে,
.
”কেমন আছো আব্বু?”
.
মাইশার আব্বুর চোখে জল থাকলেও মুখে এক তৃপ্তির হাসি। তার কাছে এখনো মনে হচ্ছে এইতো কিছুদিন আগেই মাইশার ছোট ছোট হাতগুলো আকড়ে বিকেলে অসীম পথে ঘুরে বেড়িয়েছিলো দুজনে। আর আজ সেই মেয়েই কত বড় হয়ে গিয়েছে।মাইশার মাথায় নিজের হাত বুলিয়ে বলে,
.
”ভালো আছি মামণি? তুমি ভালো আছো তো?”
.
”মাইশাকে নিজের মেয়ের মতো রেখেছি রহমান।চিন্তা করো না ও অনেক ভালো আছে।”(খালু)
.
”দেখেছো…..বাবার কাছে গিয়ে সব ভুলে গেছে মেয়েটা।আমিও তো আছি”
অভিমানি গলায় বলে ওঠে মাইশার আম্মু।একথা শুনে মাইশা মুখে হাসি ফুটিয়ে তাকেও জরিয়ে ধরে।
সবার সাথে দেখাসাক্ষাৎ শেষ করে নিজের ঘরে আসে মাইশা। এই ঘরে নাকি প্রতিদিনই ওর আব্বু আসে একথা ভেবেই মনে এক অজানা প্রশান্তি ছেয়ে যায় তার। একপাশে সুন্দর করে বুকশেল্ফে নানা ধরনের বই সাজানো আছে; পাশেই রয়েছে পরিত্যাক্ত পড়ার টেবিল।মাইশা আসবে বলে হয়তো কলাপাতা রঙের একটি বিছানার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে আম্মু।এসব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে করতে হঠাৎ পেছন থেকে একটি সুর ভেসে আসে ,
.
”বাড়িতে মা-বাবা-ভাইকে পেয়ে মনে হয় জামাইকে ভুলে গিয়েছো…..তাই না?”
.
আয়াত দরজায় দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে একথা বলে ওঠে। মাইশার দিকে চোখের দৃষ্টি তার প্রখর।মাইশা কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে আয়াতের দিকে। এই বাসায় এসেছে সর্বোজোড় আধঘন্টা হয়েছে আর আয়াত তাকে এই কথা বলে দিলো।ব্যাগ থেকে আলমারিতে কাপড় রাখতে রাখতে সে বলে ওঠে,
.
”আয়াত , সত্যি তুমি মনে হয় পাগল হয়ে গেছো।তোমাকে ভুলে যাবো কেন? দেখো….তোমার কথা অলয়েজ আমার মাথার উপর দিয়ে যায় তাই কথার অর্থ আমি জানিও না আর জানার চেষ্টা করবো না।”
.
আয়াত মাইশার কথা শুনে কোনো react করে না।ওর দিকে তাকিয়ে চুইংগাম চাবাতে চাবাতে বলে……
.
”তোমার ইঁদুরে মাথায় তা ঢুকবেও না। বাই দ্য ওয়ে ইন্জয় ইউরসেল্ফ এলোন। আই উইল কাম ব্যাক সুন।”
.
আয়াতের কথাগুলো বুঝতে তার পুরো দুই মিনিট লাগলো।এই ছেলেটা আসলেই তার এক্সপেক্টেশনের বাইরে। যখনই সে ভাবে আয়াত এখন এমন করবে তখনই আয়াত তার পরিকল্পনাকে আগুনের সাথে ধুলিস্যাৎ করে অন্য কিছু করে বসে যা মাইশার ধারনার বাইরে।
.
************
.
কনেপক্ষের কিছু লোকজন আজ বাজার করে নিয়ে এসেছে মাইশাদের বাসায়।মাইশা ভিন্নগ্রহের প্রাণীর মতো সোফায় বসে ইনায়া আর পৃথার সাথে এমন দৃশ্য উপভোগ করছে। বিয়ে বাড়িতে যে এত নিয়মকানুন থাকে তা মাইশার মোটামুটি ধারনাতে ছিলো কিন্ত অজানা কারনে এসব কিছু অনেক অদহভুদ লাগছে ওর কাছে। যদিও নুহাশদের পক্ষ থেকে বাজার আনার ক্ষেত্রে একটু দ্বিমত করেছিলো কিন্ত কনেপক্ষদের এমন নিয়ম থাকার কারনে তারা বিনিময়ে কিছু বলেনি।
আয়াতও নুহাশের সাথে দাঁড়িয়ে মেহমানদের সাথে কথা বলছে ; কখনো আবার একাজ-ওকাজ করতে ব্যাস্ত। মাইশা হঠাৎ খেয়াল করে একটি মেয়ে আয়াতের কাছে এসে কথা বলছে।মেয়েটির কথায় কখনো কখনো আয়াত হেসে উঠছে তো কখনো আয়াতের কথায় মেয়েটি হেসে পাড়লে আয়াতের গায়ের ওপর পড়ে যাচ্ছে।ইনায়া এবার মাইশার কানে কানে বলে……
.
”মাইশু দেখছিস ……ওই শাকচুন্নিটা মনে হয় আয়াত ভাইকে পটানোর চেষ্টা করছে।”
.
মাইশা ইনায়ার কথার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
.
”মেয়ে মানেই কোনো সুন্দর ছেলে পেলে তাকে পটাবে? এখন আমার জামাই সুন্দর হলে আমি কি করবো? অন্য মেয়েদের মতো গলা ফাটিয়ে বলবো যে ; এজন্যই সুন্দর ছেলে আমি বিয়ে করতে চাই না ; কি বলবো?”
.
মাইশার এ কথা শুনে ইনায়া আর পৃথা দুজনেই চোখ বড় বড় করে ফেলে।মাইশার কপালে গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
”এই তুই ঠিকাছিস? এমন আজব আজব কথা বলছিস কেন?”
.
”কেন কি হয়েছে?”(মাইশা)
.
”আরে গাধাআআআ ! তোর জামাইকে ওই মেয়েটা পটাতে চাইছে আর তুই দিব্যি বসে আছিস? ছেলেমানুষ এত ভালো হয় না।এদেরকে যতই সুযোগ দিবি ততই এরা ছাড় পেয়ে যায়।”
.
ইনায়ার এ কথাটা মনে ধরে মাইশার।আয়াতকে সে অবিশ্বাস করছে এমন না ; শুধু ওই মেয়েটার জন্য insecure feel হচ্ছে। এতক্ষণ কিভাবে আরামসে বসে চিপস খাচ্ছিলো সে?
.
কিছু একটা ভেবে আয়াতের কাছে যায় সে। তারপর ন্যাকা সুরে বলে ওঠে….
.
”আয়াত বেবি ! কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি আর তুমি এখানে কথা বলছো?”
.
মাইশার এরকম কথা শুনে রীতিমতো বিস্ময়ের ধাপে পৌছে যায় আয়াত।মাইশার কপালে-গলায় হাত বুলিয়ে বলে…
.
”আর ইউ ওকে মাইশা?নেশা-টেশা করেছো নাকি?”
.
আয়াতের হাত ধরে বলে ওঠে,
”একটুও না বেবি ! (মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মাইশা বলে) তুমি কে আপু?”
.
”আমি কনের বোন।তুমি বোধহয় জিজুর বোন তাই না?”
.
”হুম। আর এটা আমার লাভলি হাজবেন্ট।”
.
মাইশার একথা শুনে মেয়েটি একটু অবাকচোখে আয়াতের দিকে তাকায়।বোধহয় তার ক্রাশকে একমুহূর্তেই শুকনো বাঁশ বানিয়ে ফেলেছে মাইশা।একটু মলিন কন্ঠে বলে ওঠে…
.
”ওহ্, তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো না।”
.
”বলো কি আপু? আমাদের তো লাভ ম্যারেজ।”
.
আয়াত যেন ধাপে ধাপে অবাকের নতুন সিড়িতে পা রাখছে।মাইশার এবার আয়াতের হাত টেনে তাকে ড্রইংরুমের এককোণে নিয়ে আসে।তারপর আয়াতের সবুজ পাঞ্জাবীর কলার চেপে কড়া গলায় বলে ওঠে….
.
”বিয়ে হয়ে গিয়েছে ক’দিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে আর এখনো অন্য মেয়েদের সাথে লুতুপুতু না করলে ভাল্লাগেনা ?”
.
”কার ক’দিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে আমিতো এখনো কিছুই করিনি?”
.
.
#চলবে

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-২৯+৩০+৩১

0

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২৯
.
চোখটা পিটপিট করে খুলতেই প্রথমে চোখ যায় সিলিয়ে আস্তে করে চলমান ফ্যানটার দিকে। মাথাটা তার এখনো ঝিম ধরে আছে।কাঁপাকাপা হাতে নিজের হাতটি নাড়াতে চাইলেই নাড়াতে পারেনা আয়াত।পাশে তাকিয়ে দেখে তার হাতে স্যালাইন এর সরু পাইপটি লাগানো।আয়াত মনে করার চেষ্টা করছে সে এখানে এলো কি করে।পরক্ষণেই হাইওয়েতে সেই দুর্ঘটনার কথাটি মনে পড়ে যায়।
.
আয়াত বুঝতে পেরেছে এখন কোনো হসপিটালে আছে সে।হঠাৎই তার চোখ যায় পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা আরিয়াপুর দিকে।সে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।বোঝাই যাচ্ছে অনেক ক্লান্ত সে।আয়াত মিহি কন্ঠে ডাক দেয়…..
.
”আরিয়াপু?”
.
পাতলা ঘুম দেওয়ার কারনে আয়াতের মিহি কন্ঠ শুনেই ঘুম কেটে যায় আরিয়ার।তারপর সোফা থেকে উঠে আয়াতের কাছে গিয়ে বলতে থাকে….
.
”আয়াত?…তুই ঠিকাছিস…?”
.
আয়াতকে ধরিয়ে আস্তে করে উঠিয়ে বসায় সে।আরিয়া উদ্বিগ্ন গলায় বলতে থাকে…
.
”নুহাশ……আম্মু….খালামণি-আঙ্কেল,,,, তাড়াতাড়ি আসো ,আয়াতের জ্ঞান ফিরেছে।”
,
একথা শুনেই আস্তে আস্তে সবাই ভিতরে আসতে থাকে।আয়াতের চোখ তখনও মাইশাকে একপলক দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে।তখনই আয়াত খেয়াল করে আয়াতের আব্বু মাইশাকে আস্তে করে নিয়ে আসছে।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে মাইশা।আয়াতের আম্মু ছেলেকে ধরে ব্যাকুল কন্ঠে বলে ওঠে…..
.
”বাবা….তুই ঠিকাছিস?এখন কেমন লাগছে তোর?”
.
”আরে…..আম্মু , কি হবে আমার?দেখোনা আমি ঠিকাছি।”
.
”থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফালায় দিবো ব্যাটা….তোর জন্য সবাই কত চিন্তা করতেসে আর তুই এখনো মশকরা করছিস?”(নুহাশ)
.
মলিন হাসে আয়াত। আয়াত জানে আল্লাহর করুনাতেই এখন সে ঠিক আছে।নইলে যেভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো ; বাঁচার চান্স খুবই কম ছিল।আয়াত আবার মাইশার দিকে তাকায় মাইশা নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে।পারলে তো সে এখনই আয়াতের বুকে ঝাঁপিয়ে হুহু করে কেদে দিবে কিন্ত কোনো এক কারনে সে এগোতে পারছে না।
.
ডাক্তার আসলেই সবাই আয়াতকে ছেড়ে ডাক্তারের দিকে দৃষ্টি দেয়।ডাক্তার কিছুক্ষণ তার কন্ডিশন দেখে আর চেকাপের ভিত্তিতে বলে ওঠে……
.
”He is absolutely fine now, মাথায় আর বুকের কাছে সামান্য একটু ইন্জুরি হয়েছে ইনশাল্লাহ দু’তিনদিনের মধ্যেই ব্যাথাটি সেরে যাবে।তবে উনার এখন সম্পূর্ন বেড রেস্টের প্রয়োজন। তার সুস্থতার ওপর ডিপেন্ড করে তা একদিনও হতে পারে আবার এক সপ্তাহও হতে পারে।আজ উনাকে রিলিজ করে নিন।টেক কেয়ার অফ ইউরসেল্ফ ইয়াং ম্যান (আয়াতকে উদ্দেশ্য করে)
.
.ডাক্তার চলে যাওয়ার পরেই সবাই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে আয়াতকে রিলিজ করানোর জন্য।তাই কেবিনে এখন শুধু বসে আছে মাইশা আর আয়াত।যেই না সবাই কেবিন থেকে চলে গেল অমনি মাইশা দরজাটা লাগিয়ে আয়াতের কাছে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে আয়াতের বুকে।বাচ্চাদের মতো হু হু করে কাঁদতে থাকে সে।
.
এদিকে আয়াতের তো নাজেহাল অবস্থা।এমনিতেও বুকে অনেক ব্যাথার কারনে ব্যান্ডেজ করা অংশটি অনুভব করতে পারছে সে।আবার মাইশার এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়াতে ব্যাথার জন্য মুখ থেকে ”উহ” করে একটা প্রতিধ্ধনি বের হয়।
.
মাইশা তবুও নড়াচড়া করে না।আয়াতের বুকে লেপ্টে থাকে।আয়াতের ব্যাথা করলেও বুকের খালি জায়গাটাতে মাইশাকে অনুভব করতেই ব্যাথাটাকে নিমিষেই আনন্দে পরিণত করে ফেলে সে।মুখে এখনো রয়েছে একরাশ বিস্ময়।
.
” এভাবে কাঁদছো কেন….মাইশা? আমি তো আর মরে যাইনি…”
.
”মরার তাহলে খুব ইচ্ছা ছিল না?আমি বারবার বলেছি আয়াত হাইস্পীডে গাড়ি চালিয়ো না।কিন্ত আমার একটা কথাও তুমি শুনো?আমি তোমায় ভালোবাসিনা বলে আমায় শাস্তি দিতে চাচ্ছো তাই না?এজন্যই আদ্রাফের মতো তুমিও আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলে….”
.
”আমি……”
,
”খবরদার…..আর একটা কথাও না।অনেক রাগ না আমার উপর?এক কাজ করো মেরে ফেলো আমায় । তবুও আদ্রাফের মতো হারিয়ে যেয়ো না প্লিজ….আয়াত আমি তাহলে আর বাঁচতে পারবো না।”
.
একথা বলে আয়াতের সারামুখে নিজের ঠোঁটের স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে সে।আয়াত এখনো বিস্ময়ে বসে আছে।মেয়েটিকে এতটা পাগলামি করতে কখনোই দেখেনি সে।মাইশার এই ম্যাচুরিটির ভীড়েও কখনো যে বাচ্চাদের মতো পাগলামি লুকিয়ে ছিলো আয়াত তা কখনোই জানতো না।
.
.
ব্যাস্ত সড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়িটি।সামনের সিটে নুহাশ ড্রাইভ করছে আর পাশে বসে আছে মাইশা।পেছনেই বসে আছে আয়াত আর আরিয়াপু।আয়াত আরিয়াপুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে…
.
”আপু…মাইশা কি এমনই ছিলো চুপচাপ ছিলো?”
,
আরিয়া বড় বড় চোখ করে তাকায় আয়াতের দিকে।যেনো বড় কোনো ভুল কথা বলে ফেলেছে সে।আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে….
.
”আগে আমি জানতাম শুধু তুই পাগল…কিন্ত তোর সঙ্গে যে তোর বউকেও পাগল বানিয়ে ফেলবি তাকি জানতাম?মাইশা যখন থেকে জানছে যে তোর এক্সিডেন্ট হইসে হসপিটাল পুরা মাথায় তুলে ফেলসিলো।তুই বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা….পুরাই হাইপার হয়ে গিয়েছিলো সে।পরে আব্বু না পেরে ওকে কষে দুইটা থাপ্পড় মারে।”
.
”শ্বশুড় হয়ে নিজের ছেলের বউকে মারলো?”
.
”ছেলের বউ হয়ার আগে মাইশা খালামণির মেয়ে।আর তাছাড়া মাইশাকে কেউ থামাতে পারছিলো না।আব্বু থাপ্পড় দেয়ার পরপরই একেবারে শান্ত হয়ে এককোণায় বসে থাকে ও।পুরাই অবস্থা খারাপ ছিলো।পরে আব্বুই ওর কাছে গিয়ে আগলে নেয় ওকে।”
.
আয়াত এই সবকিছু নীরবে শুনতে থাকে।কারন সে জানে মাইশার এরকম করার কারন।আদ্রাফের মতো ওকেও হারানোর ভয় জেঁকে বসেছিলো মাইশার মনে।তবে এখন সেও কি তার অব্যাক্ত অনুভূতি আয়াতের সামনে প্রকাশ করতে চলছে?
.
.
*****
”খালামণি আজ থেকে আমি আয়াতের সাথেই থাকবো।”
.
একথা শুনে খাবার ছেড়ে সবাই নজর দেয় মাইশার দিকে। আর আয়াত তো কাশতে কাশতে খাবার মাথায় তুলে ফেলেছে।
.
”কিন্ত বাবা….তোমাদের তো হঠাৎ করে বিয়ে হয়েছিলো।আমরা বলছিলাম কি বড় করে অনুষ্ঠানটি….”
.
”না খালামণি….বিয়ে তো বিয়েই।একজন মানুষকে কয়বার বিয়ে করতে বলো তুমি?আমার পরীক্ষাও শেষ তাছাড়া অনুষ্ঠান হলে হবে কিন্ত এখন আমি আয়াতকে কিছুতেই একা ছাড়বো না।প্লিজ খালামণি।”
.
দুষ্টু হাসি হাসে আয়াত। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়ে গেলো।মাইশাকে চোখ টিপ মারতেই মাইশা চোখ ঘুরিয়ে নেয়।বিড়বিড় করে বলে ওঠে….
.
”লুচুবাঘ কোথাকার।মরে গেলেও এর লুচ্চামি কমবো না।”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন
পর্ব:৩০
.
জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আছড়ে পড়ছে সকালের মিষ্টি রৌদ্দুর।রৌদ্দুরের অগোছালো রশ্মিটা চোখে পড়তেই চোখ কুচকে ফেলে মাইশা।আড়মুড়িয়ে অন্যদিকে কাঁত হয়ে শোয়ার চেষ্টা করে সে।কিন্ত আফসোস ! আয়াত এতো জোড়ে তাকে জরিয়ে ধরে আছে যে ঠিকমতো নড়াচড়াও করতে পারছে না সে।কেউই বলবে না যে এই ছেলে অসুস্থ, শরীরের জোর যেন এখনো মাইশার থেকে বহুগুনে বেশি।
.
মাইশা এবার আয়াতের কাছ থেকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নিতে চায় নিজেকে।কিন্ত আয়াত যেন আরও নিবিড়ভাবে মিশে যায় তার সাথে।মাইশা চোখ তুলে তাকায় আয়াতের ঘুমন্ত চেহারার দিকে।তার ফর্সা মুখে বড় বড় চোখের পাপড়িগুলো যেন তার কাছে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ লাগছে।তার ভাবতেই এখন অবাক লাগে যেই ছেলেটাকে তার সবচেয়ে অসহ্য লাগতো….যে সারাদিন তাকে অতিষ্ঠ করে তুলতো সেই এখন তার স্বামী ; যার ভালোবাসায় কোনো খুঁত নেই।
.
মাইশা আয়াতের কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট বুলিয়ে নেয়।আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতেই আয়াত তার একহাত নিয়ে আরও কাছে নিয়ে আসে মাইশাকে।চোখটা বন্ধ থাকলেও মুখে এক মুচকি হাসি।
.
”আমার মতো মাসুম বাচ্চাকে একা পেয়ে তুমি আমার সুযোগ নিতে চাচ্ছো। This is not fair মাইশুপাখি !”
.
ভ্রু কুচকে ফেলে মাইশা।আয়াত যে জাগনা ছিল তার এটা ধারনাই ছিলো না।কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়ে গিয়েছে যে।কেননা সে জানে….আয়াতের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে এখন ; আয়াত এবার যেই কথাগুলো বলবে সেগুলো ভাবতেই নুইয়ে যাচ্ছে সে।
.
”তুমি? আর মাসুম বাচ্চা? আমি তোমার সুযোগ নিচ্ছি…তো কিভাবে?”
.
চোখটা খুলে মাইশার দিকে তাকায়।মাইশার ভ্রু কুচকানো আর বিব্রতকর চেহারা দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে….
.
”এইযে আমার কপালে কিস করে…..কিস করসো তো করসোই শুধু কপালে করলে কেন?ঠোঁটেও করতে…..”
,
এবার তড়িঘড়ি করে আয়াতের ওপর থেকে উঠে পড়ে সে।এই ছেলে চরম মাত্রার অসভ্য।এখন এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে মাইশাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে সে।মাইশা ওয়াশরুমে যেতেই আয়াত বলে ওঠে……
.
”মাইশা?”
,
মাইশা পেছনে ঘুরে আয়াতের দিকে তাকায়।খাটে হেলান দিয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলে ওঠে….
”আজকে হলুদ রঙের ড্রেস পড়বে।তোমায় এই রঙে দেখতে অনেক ভালোলাগে…..”
.
আয়াতের এই ছোট ছোট মিষ্টি আবদারের মুখে কখনোই পড়েনি সে। এটাই হয়তো কবুল বলার ক্ষমতা।প্রিয় মানুষের মুখে ছোট ছোট ভালোলাগার কথা শুনে অজান্তেই ভালোলাগে সবার মনে।মাইশাও তার ব্যাতিক্রম কোনো কিছু না।মাইশা হয়তো এখনো আয়াতকে মুখ ফুটে বলেনি। কিন্ত সে যে আয়াতকে নিজের মনে জায়াগা দিয়েছে এটা আয়াত আর মাইশা দুজনেই জানে।আর এটাই মাইশার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
.
.
আয়াতের ধমক খেয়ে দুপুরের দিকে ড্রইংরুমে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মাইশা।আয়াত একপাশে পায়ের ওপর পা তুলে আপেল খাচ্ছে।ডানহাতের জয়েন্টে হাল্কা ব্যাথা থাকার কারনে আয়াত এখনো হাতটা ঠিকমতো নাড়াতে পারেনা।এদিকে মাইশা রান্নাঘরে খালামণির সাথে রান্না করতে গিয়েছিলো বলে আয়াতের কড়া ধমক খেয়ে এখন চুপচাপ বসে আছে।আয়াত সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে টিভি ছেড়ে ”Chennai Express” মুভি দেখছে।
.
ওই তামিল ছেলেগুলোর হাতের ওই ভয়াবহ রূপের তলোয়ারগুলো দেখে মাইশারও মনে চাচ্ছে শাহরুখ খানের রিপ্লেসমেন্টে এই আরহাম আয়াতকে রাখতে।কিন্ত কিছুক্ষণ পরে নিজের মাথায় গাটি মেরে বলে এসব কি আবোল-তাবোল ভাবছে সে….।
.
”আমায় মার্ডার করার কথা ভাবা বন্ধ করে আমার সেবার কথা ভাবো।কি মনে করো রান্নাঘরে যাইতে দেইনাই দেখে কোনো কাজ করতে দিবো না?এখন লক্ষী মেয়ের মতো আমার রুমটা গুছিয়ে আসো।You no what অগোছালো রুম আমি মোটেও পছন্দ করি না।”
,
মাইশা অসহায় চোখে আয়াতের দিকে তাকায়।আয়াত ওর দিকে না তাকিয়ে দীপিকার শাহরুখ খানকে লাথ্থি মারার সিন দেখে হাসতে হাসতে বলে ওঠে…..
.
”তোমায় অসহায় ফেস এখন আমার কিছুই করতে পারবে না।জলদি যাও মাইশু,…..আরও কাজ করতে হবে।”
.
একরাশ বিরক্তি নিয়ে মাইশা উঠে সোফা থেকে রুমে যেতে যেতে বলে ওঠে….
.
”শাহরুখ খানের লাথ্থি খাওয়ার সিন দেখে হাসি উড়াচ্ছিস ব্যাটা? মনটাতো চাচ্ছে তোরেও উষ্টা মাইরা ফালায় দেই।”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩১
.
আয়াতের চড়ের ভয়ে টানা এক ঘন্টা ঘর পরিষ্কার করে নিজেকে এখন বেঁদের মেয়ে জোছনা মনে হচ্ছে মাইশার।আয়াত যতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুক না কেন ; কোনো কিছুই সে গুছিয়ে রাখে না।আর এই সুযোগে মাইশাকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নিলো বলে মাইশার মন চাচ্ছে আয়াতকে উষ্টা মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দিতে। কিন্ত মন যা বলে সবসময় তা করা যায় না।তাই ক্লান্তির কারনে এক লাফে বিছানায় শুয়ে পড়লো সে।
.
.
হাল্কা হাল্কা ঘুম ভর করতেই মাইশা তার ঠান্ডা শরীরে উষ্ণ কোনো কিছু অনুভব করতে পারতেই।কিন্ত চোখ খুলতে তার মোটেও মন চাচ্ছে না।যখন দেখলো সে তার দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা বিরক্তি নিয়ে চোখ খোলে সে।কিন্ত চোখ খোলতেই যখন সে আয়াতকে দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
.
আয়াত কোলবালিশের মতো তাকে জরিয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে আছে।মাইশা আস্তে করে সরে আস্তে নিলেই আয়াত ধমকের স্বরে বলে ওঠে…..
.
”সবসময় পালাই পালাই না করলে ভালোলাগে না তোমার।কই একটু বউকে আদর করবো কিন্ত যেই দারোগা বউ আমার কপালে জুটেছে জীবনেও আদর করতে পারবো না?”
.
”হুহ…যখন কাজ করাইসো তখন মনে ছিলো না?”
.
”কেন?কাজ না করালে আদর করতে দিতে?”(ভ্রু নাচিয়ে)
.
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মাইশা।হুটহাট আয়াতের এমন কাজকর্মে আর কথাবার্তায় কি প্রতিক্রিয়া করা উচিত মাইশার তা অজানা।আয়াত তা দেখে লম্বা একটা শ্বাস নেয়।মাইশার কোমড় জরিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে…..
.
”ভালোবাসো আমায়?”
.
মাইশা মিহি কন্ঠে বলে, ”হুম।”
.
”তো? এত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ো কেন? আমি কখনোই তোমায় বলবো না আমায় জোর করে মেনে নাও….”
.
”এমন কিছুই না আয়াত।”
.
বিনিময়ে মুচকি হাসে আয়াত। আয়াতের মুচকি হাসিটা বরাবরই মাইশার প্রিয়। আয়াত যখন হাসে ডান গালে সুন্দর একটি ভাঁজ পড়ে যা আয়াতের ছোট ছোট চাপ দাঁড়ির ভীড়ে আরও মারাত্নক লাগে।পড়ন্ত দুপুরে আয়াতের এই হাসিটা দেখে ক্লান্তির বিন্দুমাত্র রেশ এখন দেখা যাচ্ছে না মাইশার মনে।আয়াত হঠাৎ দুষ্টু হেসে বলে ওঠে…..
.
”আল্লাহর কসম মাইশা…আমি যদি বড় কোনো ভুল করে ফেলি না তার দায়ী শুধুমাত্র তুমি হবে।”
.
আয়াতের কথা শুনে বোকার মতো ভাবতে থাকে ওর কথার মানেগুলো।আয়াত তারপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে….
.
”পেটের কাছে কামিজটা ঠিক করো।”
.
সাথে সাথে আয়াতকে সরিয়ে নিজের জামা ঠিক করে নেয়।আয়াত বামহাতে ভর দিয়ে মাইশাকে দেখে যাচ্ছে।মাইশা রাগী চোখে তাকাতেই আয়াত উঠে আলমারি থেকে একটা রেড চেক শার্ট আর গ্রে জিন্স বের করে।
.
”শার্ট-প্যান্ট বের করলে কেন?”
.
”বাইরে যাবো তাই……”
.
”আয়াত , এখন না। তুমি এখনো ঠিক হওনি।হঠাৎ বাইরে যাচ্ছো কেন?”
.
”যেতেই হবে। ইমপর্টেন্ট কাজ আছে।তাছাড়া সমস্যা হবে না।নুহাশ ভাইয়ার সাথেই যাচ্ছি। ক্যাফেতে ওয়েট করবে আমার জন্য।”
.
মাইশা পরে আর কিছু বলে না। তারকাছে এখনো সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।আয়াতের কাজকর্ম বরাবরই তার মাথার উপর দিয়ে যায়।তাই এ ব্যাপারে বৃথা মাথা ঘামলো না সে।
,
,
সন্ধ্যের দিকে আরিয়াপুর সাথে বসে মাইশা গল্প করতে ব্যাস্ত।খালামণি রান্নাঘর থেকে চা বানিয়ে সবেমাত্র এদিকে এসেছে।খালামণিদের সাথে ড্রইংরুমের পাশের ছোট বাগানটি থেকে ঠান্ডা হাওয়া এসে পরিবেশটা মোহময় করে তুলেছে।সাথে রয়েছে গরম গরম দুধ চা।রাত এখনো সম্পূর্ণ নামেনি দেখে আকাশের লালচে আভাটা এখনো জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ মাইশার মোবাইলে একটা কল আসে।মাইশা দেখে আয়াতের কল। আগের দুইবারের মতো এবার আয়াতের নাম্বার সেভ করতে ভুলেনি সে।ফোন রিসিভ করতেই ভেসে আসে আয়াতের একরোখা কন্ঠ….
.
” মাইশা ! একটু রেডি হয়ে বাহিরে আসো তো।আমি তোমার জন্য বাইরে ওয়েট করছি…..জলদি।”
.
”আচ্ছা…..কিন্ত………..”
.
কল কেটে দেয় আয়াত। মাইশা বুঝতে পারছে না এই সন্ধ্যার সময় এমন কি কাজের জন্য রেডি হয়ে বাইরে যেতে বলছে আয়াত?
.
.
সন্ধ্যে নেমে রাত হয়েছে।গাড়িটি আয়াতের বাসার সীমান্ত থেকে অনেক দূরে।গাড়ি ড্রাইভ করছে নুহাশ।আয়াতের ডান হাতে এখনো ব্যাথা আছে বলে সে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে না।মাইশা রাস্তাটা চিনতে পারছে । উত্তরার রাস্তা এটি। সেই চিরচেনা জায়গার কথা স্মরণ হতেই বুকটা ধক করে ওঠে মাইশার।তার চোখের সামনে আদ্রাফের প্রতিটা স্মৃতির কথা ভেসে উঠছে।
কাঁপাকাঁপা গলায় মাইশা নুহাশের কাধে হাত দিয়ে বলে ওঠে…..
.
”ভা-ভাইয়া____আ-আমরা ওদিকে যাচ্ছি কেন? তুমি জানো না ওখানে আমি যেতে চাই না ?”
.
”relax মাইশা…..কেন যাচ্ছি আস্তে আস্তে সবই জানতে পারবে।”(আয়াত বলে)
আদ্রাফের কথা ভাবতেই চোখযুগল চিকচিক করে ওঠে তার।তাই আস্তে করে আয়াতের কাঁধে নিজের মাথা এলিয়ে দেয়।আয়াত তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।মাইশাকে এতটা দুর্বল কখনোই দেখতে চায় না তাই সাহস করেই তার অতীতের সম্মুখীন তাকে নিয়ে যাচ্ছে আয়াত।
.
মাইশাদের উত্তরার সেই বাড়িটির সামনেই গাড়ি থামায় নুহাশ।সবাই গাড়ি থেকে নেমে আসে।আজ প্রায় ৪ বছর পরে মাইশা এই বাড়ির সামনে দাঁড়ালো মাইশা।দোতলায় আদ্রাফের বারান্দার সাথে কাছাকাছি থাকা নিজের ঘরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। আগে তো কত রাত আদ্রাফের গান শুনে নির্ঘুমে রাত কাটিয়েছে তা অগণিত।কিন্ত এখন এসব কিছু শুধু অতীতের তুচ্ছ স্মৃতি।
.
”এখানে এসেছি কেন আমরা?”
.
”চলো আমার সাথে।”
.
আদ্রাফরা আগে যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতো এর সামনে আসতে খনিকটা অবাক হয় মাইশা। মনে চলছে তার অবাধ প্রশ্নের খেলা।দরজায় কলিংবেল বাজাতেই যে দরজা খুলে তাকে দেখে বিস্ময়ের আরও এক ধাপ উপরে উঠে যায় সে।মিহির আপু দাঁড়িয়ে আছে।
আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে সে। উজ্জলতাটাও অনেকাংশে কমে গিয়েছে। মিহির বলে ওঠে…….
.
”কেমন আছো মাইশা?”
.
.
#চলবে