Wednesday, August 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1564



আঁধার ভিড়ে সন্ধাতারা পর্ব-২২+২৩+২৪

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২২

সকালে মেসেজের টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙে আরিয়ানের।শান্তিময় নিদ্রায় হঠাৎ ব্যাঘাতে মেজাজ খারাপ হয়ে আসে।চোখ খুলতেই নজরে আসে মায়ার ঘুমন্ত মায়াবী মুখশ্রী।তার দিকে মাথা খানিকটা কাত্
করে রেখেছে মায়া।ফলস্বরূপ মায়ার ঠোঁটগুলো তার ঠোঁটের সাথে একেবারেই ছুঁই ছুঁই অবস্থায় আছে।পরমূহুর্তেই মুখের বিরক্তিকর আভাস বদলে ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো আরিয়ানের।তার একটা হাত মায়ার গলার নিচ দিয়ে দেয়া।আরেকহাত মায়ার পেটের উপর রাখা যেটা মায়া শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
হাত বাকিয়ে আলতো করে মায়ার মুখের উপর আসা এলোমেলো চুলগুলো আঙ্গুলের ছোঁয়ায় সরিয়ে দেয় সে।অত:পর খুব সন্তর্পণে গলার নিচ থেকে হাতটা বের করে নিয়ে আসে।ঘুমের ঘোরে হাল্কা একটু নড়েচড়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরে মায়া।আরিয়ান একটা ফাঁকা ঢোক গিলে।মায়ার ঠোঁটের দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকায়।
হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠে।চোখেমুখে আবারো বিরক্তি খেলা করে।ফোনটা মায়ার পাশে রাখা।আরিয়ান দ্রুত মায়ার উপর দিয়ে ঝুকে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।ফোনের আওয়াজে পিটপিট করে তাকায় মায়া।আরিয়ানকে তার উপর দিয়ে ঝুকে থাকতে দেখে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে,
—“কি করছেন?”

মায়ার কন্ঠে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে ফোনটা সাইলেন্ট করে আরিয়ান।সে চাচ্ছিল মায়া যেন না উঠে।
সেই ঘুম ভেঙেই গেল তার।উপর থেকে সরে গিয়ে উঠে বসে সে।সেকেন্ডে ফোনের মেসেজগুলোয় একবার চোখ সে বুলিয়ে নেয়।মায়ার ধরে রাখা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে পরপরই আবার ঝুঁকে গিয়ে মায়ার একগালে হাত রেখে অপর গালে ঠোঁটের ছোয়াঁ দিয়ে বলে,
—“ঘুমাও তুমি।ব্রেকফাস্টের সময় হলে আমি ডেকে দিবোনে”।
বলে গায়ের কম্বল সরিয়ে উঠে পরে আরিয়ান।

—“এই সকালে কোথায় যাচ্ছেন?”

—“একটু কাজ আছে।”

ফোনটা টাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে কাবার্ড থেকে কিছু কাগজ বের করে দরজা আটকে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।
আরিয়ানের বেরিয়ে যাওয়ার পর অলস ভঙ্গিতে মাথার ব্যান্ডেজটায় হাত বুলায় মায়া।এখন আবার ব্যাথা করছে জায়গাটা।এরপর হাতটা নিজের অজান্তেই গালে চলে যায়।যেখানটায় একটু আগে চুমু খেয়েছে আরিয়ান।মায়া মুচকি হাসে।প্রথমবার তার গালে চুমু দিয়েছে উনি।এর আগে শুধু কপালেই ঠোঁট ছোয়াঁতো।হাহ্।এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় গেলো কে জানে?কোন ঝাঁমেলা হয়নি তো?
———–——–
নিচে নামতেই তন্ময় দ্রুত এগিয়ে এসে তার হাতে খবরের কাগজ দিয়ে বললো,
—“ভাই,দেখেন।”

আরিয়ান পেপারটা হাতে নিয়ে দেখল ফ্রন্ট পেইজেই তার আর মায়ার ছবি।একপাশে সে মায়াকে কোলে নিয়ে রেখেছে আর আরেকপাশে রাস্তায় যখন মায়াকে সে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো তখনের ছবি।
হেডলাইনে বড় বড় করে লেখা,”আরিয়ান খানের গোপন বিয়ে ফাঁস।”তার একটু নিচে তুলনামূলক ছোট্ট অক্ষরে লেখা-“কে এই মেয়ে?যাকে নিজের স্ত্রী বলছে আরিয়ান খান।প্রমান চাওয়ায় সাংবাদিককে প্রকাশ্য হুমকি আরিয়ান খানের”
তারপর বিশাল বিস্তৃতি নিয়ে প্রায় আধা-পেইজ জুড়ে লেখা হয়েছে।তেল-মশলা মিশিয়ে গতরাতের মূল ঘটনার সাথে আরো একটু রঙচঙ মেরে নিউজ ছাপানো হয়েছে।

আরিয়ানের সেগুলো পড়ার রুচি হয়না।তন্ময়ের দিকে পেপারটা এগিয়ে দিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,
—“বাইরে কারা এসেছে?”

—“দু’জন জার্নালিস্ট,মনে হচ্ছে নিউজ চ্যানেলের।”

আরিয়ান তাদের কাবিননামাটা তন্ময়কে দিয়ে বলে,
—“এটার ছবি চ্যানেলগুলোতে প্রকাশ করে দে”।আর বাইরে যারা এসেছে তাদের কেও দিয়ে দিস।”

তন্ময় মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উপরে উঠতে থাকে।ফোন বেজে উঠে আবারো।
না দেখেই বুঝতে পারছে কে ফোন করেছে।মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে ভারি গলায় একজনের কন্ঠ শোনা গেলো,
—“এসব কি শুনছি আরিয়ান?তুমি বিয়ে করলে?আমাদেরকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না?আমি,তোমার মামী কতটা কষ্ট পেয়েছি জানো?”

আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে বললো,
—“মামা শান্ত হও।আমি বলছি তোমাকে”।

—“কে?ওই মেয়েটা কে?আমাদের বললে কি আমরা অমত করতাম?শত বলেও তো তোমাকে বিয়ে করাতে পারিনি।আর এখন তুমি আমাদের না জানিয়েই,,,,”

আরিয়ান হতাশভাবে বলে,
—“মামা,আমাকে বলার সুযোগটা তো দিবে।”

—“কতদিন হয়েছে বিয়ের?এতদিনেও বলার সুযোগ হয়নি তোমার।আর এখন সবাই জানার পর আমাকে বলার জন্য সুযোগ খুঁজছো তুমি।”

—“বিয়ের একদিনও হয়নি মামা।মাত্র একরাত হয়েছে।”

—“মানে?”

অত:পর সবকিছু খুলে বলে আরিয়ান।নিজের মামার কাছে কোনকিছুই গোপন করার নেই তার।একদম প্রথম থেকে সবটা শোনার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পরে সজীব খানের।সব ছেড়ে রাশেদ চৌধুরির মেয়েকেই বিয়ে করতে হলো আরিয়ানের।গম্ভীর গলায় বলে,
—“তাই বলে তুমি রাশেদের মেয়েকে বিয়ে করলে?”

—“মায়া রাশেদ চৌধুরির মেয়ে এই পরিচয়টার থেকে সে আমার স্ত্রী এটাই কি যথেষ্ট নয়?”

—“আরিয়ান তুমি ভুলে যাচ্ছো,রাশেদ চৌধুরি তোমার মা-বাবার সাথে কি করেছিলো।

—“আমি কিছুই ভুলিনি মামা।তবে সেটার সাথে তো মায়ার কোন যোগসূত্র নেই।মায়া তো কিছু করেনি মামা।
বাবার কুকর্মের শাস্তিতো আমি মেয়েটাকে দিতে পারিনা।তাইনা?”

—“আমি কিছু জানিনা আরিয়ান।তুমি আজই মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে।তারপর এ বিষয়ে কথা হবে।”

আরিয়ান শক্ত কন্ঠে বলে,
—“এ বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই মামা।আর মায়ার সামনে এ বিষয়ে কোন কথা হবেনা।ও খুবই সহজ সরল একটা মেয়ে।আমি চাইনা ও এসব নিয়ে আপসেট হোক।তোমরা যদি আমার স্ত্রী হিসেবে ওর সাথে দেখা করতে চাও,তবে অবশ্যই আমরা আসবো।”

সজীব খান একটু শিথিল হয়।গলার স্বর নরম করে বলে,
—“তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি বুঝতে পারছি আরিয়ান।তোমার যদি ওকে পছন্দ হয় তবে আমাদের কোন সমস্যা নেই।তোমার পছন্দ নিশ্চয় খারাপ হবেনা।তুমি যা করেছো ভেবে চিন্তেই করেছো আমি জানি।”

আরিয়ান কোন উওর দেয়না।সজীব খান আবার বলে,
—“আজকে কি আসবে এই বাসায়?”

—“মায়াতো একটু অসুস্থ মামা।কাল সিঁড়ি থেকে পরে গিয়েছিলো।তবুও আমি আসার চেষ্টা করবো।”

—“আচ্ছা ঠিকাছে।রাখছি তাহলে?

—“আল্লাহ হাফেজ।”

ফোন রেখে ঘড়ির দিকে তাকায় আরিয়ান।দশটা বেজে গেছে।
রুমে যেতেই দেখে মায়া চোখ খুলেই শুয়ে আছে।আরিয়ান এগিয়ে গিয়ে ফোনটা বিছানায় রাখলো।
মায়া একহাতে ভর দিয়ে উঠে বসলো।
—“ইতিকে একটু ডেকে দিবেন?আমি চেন্জ করবো।একা তো পারবোনা।”

—“চেন্জ করবে?ব্যান্ডেজ তো খুলতে হবে তাহলে।ব্যাথা করছে হাতে এখনো?নয়তো ব্যাগটা খুলে দেই”

—“অতো ব্যাথা নেই।সমস্যা হবেনা।”

আরিয়ান পাশে বসে খুব যত্ন করে হাতের বাঁধা ব্যাগটা খুলে রাখে।যেটা দিয়ে গলার সাথে এটাচ্ করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো হাতটা।একটা বালিশ এনে কোলে রেখে তার উপর মায়ার ব্যান্ডেজ করা হাতটা রাখে।
।।
ইতির সাহায্য বহুকষ্টে জামা বদলে নেয় মায়া।

ব্রেক-ফাস্ট শেষে আবারো রুমেই এসে বসেছে মায়া।আরিয়ান অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে।মুখ লটকিয়ে বসে আছে সে।
মায়ার এমন চেহারা দেখে আরিয়ান বলে,
—“কি হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে?”

মায়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
—“আমাকে আপনার সাথে অফিসে নিয়ে যাবেন?”

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৩

আরিয়ান ভ্রু কুচকায়।পরণের কালো রংয়ের শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত উঠাতে উঠাতে বলে,
—“তুমি অফিসে যেয়ে কি করবে?”

মায়া এতক্ষন উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে ছিলো।মনের মতো উওরের জায়গায় পাল্টা প্রশ্নে কিছুটা হতাশ হলো সে।চোখে মুখে যথাসম্ভব অসহায়ত্ব ফুটিয়ে কাতর কন্ঠে বললো,
—“আমার ভালোলাগেনা বাসায়।একা একা লাগে।”

—“একা একা কোথায়?ইতি আছেতো।”

আরিয়ানের উওরটা বিশেষ পছন্দ হয়নি মায়ার।সে তড়িৎ গতিতে বলে,
—“আপনি নিয়ে যাবেন নাকি না?”

আরিয়ান উওর না দিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকায়।ধীরে সুস্থে হাতের ঘড়িটা পরে নেয়।চুলগুলো ব্রাশ করে।তাকে দেখে মনেই হচ্ছেনা মায়ার প্রশ্নটা আদৌ তার কানে গেছে।মায়া উশখুশ করে।কিছুক্ষন পর অধৈর্য হয়ে বলে,
—“আপনি কি আমার কথা শুনতে…”

তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরিয়ান ঘুরে গিয়ে তার বাহু ধরে উঠায়।নিজের পিঠ বরাবর দাড় করিয়ে পেছন থেকে দু”হাতে পেট জড়িয়ে ধরে।
মায়া বেকুব বনে যায়।হঠাৎ এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলোনা সে।মুহুর্তেই লজ্জা নেমে আসে সারা মুখে।

আরিয়ান তার কাঁধে নাক ঘঁষতে ঘঁষতে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“বাসায় ভালো লাগেনা নাকি আমাকে ছাড়া ভালো লাগেনা?”

মায়া কেঁপে উঠে।আধো আধো লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
—“সেরকম কিছু না।..ছাড়ুনতো।”

—“কেন ছাড়বো?”হুম?বলে মায়ার কানের একটু নিচে গভীরভাবে চুমু এঁকে দেয় আরিয়ান।”

মায়া লাফিয়ে উঠে।খিলখিলিয়ে হেসে দিয়ে বলে,
—“উফ্।সুড়সুড়ি লাগছে।মুখ সরান প্লিজ।

আরিয়ান মুখ উঠিয়ে ফেলে।মায়ার কাঁধের সরে যাওয়া ওড়না ঠি ক করে দিয়ে তাকে ছেড়ে দাড়ায়।
মায়া হাফ ছেড়ে বাঁচে।এখনো মনে হচ্ছে,ওখানে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে।ছোটবেলা থেকেই তার প্রচন্ড সুড়সুড়ি লাগে।আর স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে তো সবচেয়ে বেশি।

—“আসো,দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
বলে মায়ার হাত ধরে তাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।মায়ার মুখে হাসি ফুটে উঠে।তারমানে তাকে সাথে নিয়ে যাবে আরিয়ান।
———––——
আরিয়ানের কেবিনে আরিয়ানের পাশে আরেকটা চেয়ার রাখা হয়েছে।সেটাতেই দুই পা ভাঁজ করে আরাম করে বসে রয়েছে মায়া।তার মাথাটা আরিয়ানের হাতের বাহুতে হেলান দাওয়া।চোখ ল্যাপটপের স্ক্রীনে নিবন্ধ।আরিয়ান সেদিকে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে।অন্য কোনোদিকে যেন খেয়ালই নেই তার।মায়াও কিছু বলছেনা।মূলত আরিয়ানকে বিরক্ত করতে চাচ্ছেনা সে।

খানিক পরে পাশ থেকে ধোঁয়া উঠা কফির মগে হাতে নিলো আরিয়ান।তারপর মায়ার দিকে না তাকিয়েই মগটা একটু সামনে ধরে বললো,

—“খাবে?”

মায়া আপত্তি করে বললো,
—“নাহ্,আপনি খান।এঁটো হয়ে যাবে।”

আরিয়ান নির্বিকার ভঙ্গিতে মায়ার ঠোঁটে মগটা ঠেকিয়ে ধরল।মায়া মুখ খুলছেনা দেখে হাল্কা একটু চেপে ধরলো।এবার হা করলো মায়া।এক চুমুক খেয়ে বললো,
—“আপনি খাবেন না?”
আরিয়ান আবারো তাকে আরো এক চুমুক খাইয়ে দিয়ে বললো,
—“আবার আনিয়ে নিবো নে।তুমি খাও।”

চুপচাপ আরিয়ানের হাত থেকে কফি খেতে লাগলো মায়া।অর্ধেক খেয়ে বললো,
—“আর খাবো না”।

আরিয়ান মগ সরিয়ে নিলো।ল্যাপটপে কিছু একটা টাইপ করতে করতে মগের বাকি অর্ধেক কফিতে চুমুক দিতেই মায়া আৎকে বললো,
—“আরে এটা আমার এঁটোতো..”

—“তো?”

মায়া কিছু বলার জন্য মুখ খুলেও চুপ হয়ে গেল।আরিয়ানের এটা একটা অদ্ভুত ক্ষমতা।কথা দিয়েই মানুষকে চুপ করিয়ে দিতে পারে।অন্তত তাকে তো অবশ্যই।
মায়া কোন উওর দিচ্ছেনা দেখে আরিয়ান এক চুমুকে অবশিষ্ট কফিটা শেষ করে ধীর কন্ঠে বলে,
—“এই কফির স্বাদ আমার জন্য কি তা তোমার বুঝে আসবে না মায়াবতী।”
॥॥
হুট করে নক না করেই কেউ একজন কেবিনে প্রবেশ করে।মায়া চমকে তাকায়।সামনে একটা ছেলেকে দেখতে পেয়ে দ্রুত পা নামিয়ে ঠিক করে বসে সে।ছেলেটার পরণে ক্যাজুয়াল গেট-আপ। ব্লু কালার টি-শার্টের সাথে ব্ল্যাক জিন্স।উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নের সুদর্শন একটা ছেলে।কিন্তু ছেলেটা এমন নক না করেই ঢুকলো কেনো?দেখেতো ইম্পলোয়ি মনে হচ্ছেনা।
আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চোখ-মুখ শক্ত করে রেখেছে।রাগে হাতগুলো মুঠো করা।চোখ লাল হয়ে আছে।আরিয়ান কিছু বলার আগেই ছেলেটা মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে সহাস্যমুখে বললো,
—“ভাবি,নিশ্চয়ই?কেমন আছেন?”

মায়া টেবিলে রাখা হাত গুটিয়ে নিল।আরিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললো,
—“ভা..ভালো।”

ছেলেটা বাড়িয়ে রাখা হাতটা সরিয়ে নেয়।আরিয়ান শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
—“কোন সাহসে এখানে এসেছিস রাহাত?”

—“আহা,এতো রেগে যাচ্ছো কেন ভাইয়া?আমি তো আমার এই চিনির মতো মিষ্টি ভাবিটাকে দেখতে এলাম।মানতে হবে ভাইয়া,ভাবি ইস্ সো হ…

আরিয়ান সজোরে চেয়ার ছেড়ে উঠে রাহাতের কলার চেপে ধরে।
—“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট রাহাত।মামা-মামির দিকে তাকিয়ে তোকে কিছু বলিনা বলে এটা ভাবিসনা তোর সব কিছু সহ্য করবো।মায়ার ব্যাপারে একটা কথাও যদি তোর মুখ দিয়ে বের হয়…I swear,মামা-মামির ব্যাপারে ভুলে যাবো আমি।”

রাহাতও গর্জে উঠে বলে,
—“তুমি তাদের মনেই রেখেছিলা কবে?তাদের কথা ভাবলে তুমি অন্তত আমার সাথে ওই…।

ততক্ষনে তন্ময় চলে এসেছে।মায়া হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে।তন্ময় একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে দ্রুত রাহাত কে আরিয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
—“ওকে নিয়ে যা তন্ময়।আমি কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো।

তন্ময় মাথা নাড়ায়।রাহাত নিজেই ঝামটা মেরে তন্ময়কে ঠেলে দিয়ে।নিজের কলার ঠিক করে বলে,
—“আমিই যাচ্ছি।তারপর একটু হেসে হাত নাড়িয়ে বলে,”গুড বাই ভাবি।সি ইউ সুন।”

মায়া থতমত খেয়ে দাড়িয়ে থাকে।প্রতিত্তরে কিছু বলেনা।রাহাত-তন্ময় বেরিয়ে যেতেই আরিয়ান জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নেয়।ঢকঢক করে এক-গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে।
কিছুটা শান্ত হতেই মায়া তাকে জিজ্ঞেস করে,
—“উনি কে ছিলেন?”

—“আমার মামার ছেলে।”

—“ওহ্,আপনার মামাতো ভাই?”

—“নো,আমার ভাই না ও।ওর মতো একটা ছেলে কখনোই আমার ভাই হতে পারেনা।কখনো ওকে আমার ভাই বলবেনা।”

আরিয়ানের এমন রাগের কারণ বুঝলোনা মায়া।আর কিছু বলার সাহসও হলোনা তার।চুপচাপ বসে রইলো সে।
————––
গাড়ির পিছের সিটে আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে মায়া।আরিয়ান সযত্নে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।বাইরে গাঢ় সন্ধ্যা নেমে এসেছে।তন্ময় গাড়ি ড্রাইভ করছে।

গাড়ি থামে নির্জন জায়গায়।ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে।কোলাহল নেই কোনো।তন্ময় নি:শব্দে গাড়ি থামিয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান মায়াকে সিটে শুইয়ে দেয়।মেয়েটা গভীর ঘুমে আছে।
গাড়ির সব জানালা দরজা লক করে দিয়ে সেও নি:শব্দে বেরিয়ে যায়….

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৪

আধমরা অবস্থায় অন্ধকার রুমে পরে আছে একটা ছেলে।মুখ বাঁধা নেই।হাত পাও বাঁধা নেই।তবুও দু-দিন না খেয়ে থাকায় উঠার অবস্থা নেই তার।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হয়।ছেলেটা একবার তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে।শরীরে কোন শক্তি নেই।একটু পানি পেলে বেশ হতো।

দরজা খুলে প্রবেশ করে আরিয়ান।পেছনে পেছনে তন্ময় ঢুকে হাল্কা বাতির সবুজ লাইটটা জালিয়ে দেয়।
ঘরটা কেমন একটা ভয়াবহ রুপ ধারণ ধারণ করে।ছেলেটা বহুকষ্টে উঠে বসে।আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বলে,

—“কেমন আছো জার্নালিস্ট জীবন মাহমুদ?”

জীবন আধো আধো চোখে একবার তাকালো।মৃদু গলায় বললো,
—“এক..একটু…পা…পানি..

আরিয়ান একটু হেসে বললো,
—“তন্ময় ওকে পানি দে।ঠান্ডা পানি খাবে নাকি গরম পানি?

জীবন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।আরিয়ান এখন ও তার দিকে উওরের আশায় চেয়ে আছে।জীবন কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।আরিয়ান তার সামনে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসলো।তন্ময় কোথা থেকে যেন একটা ঠান্ডা পানির বোতল এগিয়ে দিলো।আরিয়ান সেটা হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বললো,

—“এখন চুপ যে?ওইদিন তো খুব কথা বলছিলে।আমাকে ছাপিয়ে মায়াকেও প্রশ্ন করছিলে।জঘন্য সব প্রশ্ন।
ভুলে গেলে নাকি জার্নালিস্ট জীবন?”

—“স্যা..স্যার,মাফ করে দেন স্যার।আমার…ভুল হয়ে গেছে।”

আরিয়ান চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,
—“কিন্তু আমি যে এতোটা উদার না।এতটা দয়ালু ও না।কি করা যায় বলোতো?আচ্ছা সেসব পরে,আগে তুমি পানি খাও।নাও,এ্যান্ড ডোন্ট ওয়ারি,এটায় কিছু মিশানো নেই”

বলে ছেলেটার হাতে পানি ধরিয়ে দিল আরিয়ান।জীবন হুড়মুড় করে পুরো পানির বোতল খালি করে ফেললো।অনেক বেশি পিপাসু ছিলো সে।এখন একটু অভয় লাগছে তার।
—“ধন্যবাদ স্যার।আমি আসলে সেদিন না বুঝেই…”

—“এই পৃথিবীতে সবাই বুঝেই সবকিছু করে জীবন।নিজের সার্থের জন্য,সবাই স্বার্থপর।সবাই।

আরিয়ান শব্দ করে হেসে,পরমূহুর্তেই চোখমুখ শক্ত করে ফেলে।জীবন আবারো ভয় পেয়ে যায়।আরিয়ানের গতিবিধি বুঝতে পারছেনা সে।
আরিয়ানের ইশারা করার আগেই তন্ময় দরজাটা ভিড়িয়ে বেরিয়ে যায়।সে জানে এখন কি হবে।
নিশব্দে হেটে সে গাড়ির পাশে এসে দাড়ায়।চাঁদ উঠেছে।চারদিকের অন্ধকার সেই আলোর কাছে ফিঁকে হয়ে গেছে।চাঁদের আলোয় গাড়ির কাঁচের ভিতর দিয়ে মায়াকে দেখা যাচ্ছে।মুখের উপর চুলের কারণে চেহারা দেখা যাচ্ছেনা মেয়েটার।তন্ময় মৃদু হেসে চোখ সরিয়ে নেয়।আরিয়ান মেয়েটাকে অতিরিক্ত ভালোবাসে।অতিরিক্ত বলতে ভয়ানকভাবে অতিরিক্ত।আরিয়ানের এই হিংস্র রুপটা মায়া যদি দেখতো তখন সে কি করতো?তার মতোই ভয় পেতো নিশ্চয়ই।আরিয়ান যখন হিংস্র হয়ে উঠে তখন সে নিজেই ভয় পেয়ে যায় আর সেখানে মায়া তো ভয়ে অজ্ঞানই হয়ে যেতো।মেয়েটা যে ভীতু!!দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে তন্ময়।সে কখনো ভাবেওনি আরিয়ান কাউকে এতোটা ভালোবাসবে।হাহ্।

জীবন ভয়ে কাঁপছে।আরিয়ানের হাতে একটা ধারালো ছুরি চকচক করছে।একদম নতুন বোঝাই যাচ্ছে।
আরিয়ান ছুড়িটায় নিজের আঙ্গুল স্লাইড করতেই আঙ্গুলের ডগা কেটে রক্ত বেরিয়ে এলো।আরিয়ান রক্তের দিকে তাকিয়ে বললো,
—“তোকে আমি কিছুই করতাম না বুঝলি?কিন্তু ওইয়ে তুই মায়াকে প্রশ্ন করেছিলি।আমি ওকে জোড় করিনা কিনা,একসাথে থাকি কিনা সেসব জিজ্ঞেস করছিলি।তুই জানিস মায়া কতটা কেঁদেছিলো?ডু ইউ হেভ্ এনি আইডিয়া?”

জীবন বুঝতে পারছে তার আর বাঁচার কোন চান্স নেই।তাই সে মুখ দিয়ে টু শব্দ টাও করলোনা।আরিয়ান বাঁকা হেসে গালের ভিতর দিকে সজোরে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিলো।চোখ বড় বড় হয়ে গেলো জীবনের।ছুড়িটা একটানে বের করে অপরপাশের গাল দিয়ে ঢুকিয়ে দিলো আরিয়ান।যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে চোখ বুজে এলো জীবনের।আরিয়ান আরেকটা ছুড়ি তার বুক বরাবর ঢুকিয়ে দিয়ে সরে এলো।তারপর সময় নষ্ট না করে ঘরের লাইট নিভিয়ে বেরিয়ে এলো।

——————
বাসায় এসে মায়াকে কোলে করেই রুমে নিয়ে আসলো আরিয়ান।বিছানায় সুইয়ে দেয়ার আগেই চোখ খুললো মায়া।কিছু বলার আগেই আরিয়ান তাকে বসিয়ে দিয়ে বললো,
—“গাড়িতে ঘুমিয়ে পরেছিলে মায়াবতী।তাই আর ডাকিনি।এখন যখন উঠেই গিয়েছো আমি ইতিকে ডেকে দিচ্ছি।চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।ঠিকাছে?”

মায়া উপরনিচে মাথা নাড়ায়।আরিয়ান তার কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায়।
॥॥
মায়ার পরণে ঢিলেঢালা সাদা রংয়ের লং ফ্রক।ধবধবে ফর্সা গায়ে সাদা রংটা যেন একটু বেশিই মানিয়েছে।ইতি একটু আগেই তাকে রাতের খাবার খাইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেছে।যেহেতু তার ডানহাতে ব্যান্ডেজ তাই নিজে খেতে পারেনা।দুদিন যাবত ইতিই খাইয়ে দিচ্ছে।
এখন আর ঘুম আসছেনা।বিছানা ছেড়ে উঠে যায় মায়া।আরিয়ানের ঘরের কোঁণে একটা কাঁচের শোকেসের মতো আছে।সেটার মাঝের তাঁকে একটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি।একটা মেয়ে পাশে একটা লোক দাড়ানো।মেয়েটার কোলে একটা বাচ্চা।অদ্ভুত সুন্দর হাসি মেয়েটার।মায়া কাঁচ খুলে ছবিটা বের করে।
এরা নিশ্চয় আরিয়ানের মা-বাবা।আর কোলে আরিয়ান।মায়ার চোখ ভরে উঠে।এই সুন্দর পরিবারটাকে তার বাবা শেষ করে দিয়েছে।
সেসময়ই আরিয়ান পিছন থেকে বলে উঠে,
—“ওখানে কি করছো মায়া?”

মায়া চোখের জলটা মুছে নিয়ে পেছনে না ফিরেই বলে,
—“উনারা আপনার মা-বাবা তাইনা?যাদের সাথে আমার বাবা…”

আরিয়ান দ্রুত এগিয়ে যায়।মায়ার চোখে পানি না থাকলেও সে বুঝে মায়া কাঁদছিলো।ছবিটা নিয়ে সে একবার হাত বুলায়।তারপর সাবধানে ছবিটাকে জায়গামতো রেখে দিয়ে বলে,
—“আমার কাছে আব্বু-আম্মুর এই একটা ছবিই আছে,যেটা আমি সবসময়ই নিজের সাথে নিয়ে যেতাম।সেবার মামার বাড়িতেও সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম।এজন্যই এটা এখনো আমার কাছে আছে।বুঝলে?”

—“হুম”।মায়া কথা বাড়ায়না।কথা বললেই কেঁদে দিবে।আর আরিয়ানের সামনে কেঁদে তাকে রাগাতে চাচ্ছেনা সে।

______________
ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে আরিয়ান।একটা জরুরি বিষয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।মায়া রুমে।রাত হয়েছে কিন্তু মেয়েটার চোখে ঘুম নেই।ঘরের লাইট জ্বালানো।মায়া বসে আছে বিছানায়।

অনেকক্ষণ যাবত ফোনে কথা বলছে আরিয়ান।বিছানায় বসে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে মায়া।আরিয়ানের কথা বলার স্টাইলটা খুব সুন্দর।মায়া নিজে নিজেই হাসে।কিসব ভাবছে সে!
একসময় ধৈর্যহারা হয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যায় সে।আরিয়ানের কাছাকাছি গিয়ে দাড়লে আরিয়ান কথা বলতে বলতেই তাকে একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।মিনিটখানেক পরে ফোনটা কেটে দিয়ে বলে,
—“কি হলো?আজ ঘুমকাতুরে মায়াবতীর চোখে ঘুম নেই কেন?”

—“আপনি আমাকে ঘুমকাতুরে বলছেন কেন?।”

—“ঘুমকাতুরেই তো।এ পর্যন্ত কয়বার যে তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে নিয়েছে হিসাব নেই।অজান্তেই যে তুমি কতবার আমার বুকে ঘুমিয়েছো তা আর নাই বললাম।সেগুলো শুধু আমিই জানি”

বলেই হাসে আরিয়ান।মায়ার মুখের সামনে চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে হাত সরানোর সময় মায়া আৎকে উঠে তার হাত চেপে ধরে বলে,
—“আপনার হাত কাটলো কি করে?”

আরিয়ান কিছুক্ষন চুপ করে থাকে।মায়ার থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মৃদু হেসে বলে,
—“সে কেটেছে একভাবে।তোমার জেনে লাভ নেই।”

—“কিন্তু…”

আরিয়ান তার কথা এড়িয়ে বলে,
—“সামনে তাকিয়ে দেখো।”

মায়া সামনে তাকায়।বাগানে জেনি আর জ্যাক পাশাপাশি বসে আছে।জেনি নিজের শরীর চাটছে বসে বসে।নিজেদের ঘরের ভিতর নেই তারা,ছাড়া অবস্থায় আছে।জ্যাক বারবার চেটে দিচ্ছে জেনিকে।মায়া হেসে ফেলে।
আরিয়ান মায়ার হাসি দেখে বলে,
—“ওরা কিন্তু ভাই-বোন না।হাজবেন্ড-ওয়াইফ।দেখেছো জ্যাক কতো কেয়ার করে জেনির।”

—“কেয়ার করে না ছাঁই।বারবার বিরক্ত করছে জেনিটাকে।”

—“এটা তোমার বিরক্ত করা মনে হলো?”

—“তা নয়তো কি?”

আরিয়ান হুট করে দুহাতে মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে।পাশের দেয়ালের সাথে মায়াকে ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“আমারো তোমাকে খুব “বিরক্ত” করতে ইচ্ছে করছে মায়াবতী।”

মায়া আরিয়ানের বাহু খামছে ধরে।লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাথা নিচু করে রাখে।আরিয়ান ঘোরলাগা দৃষ্টিতে একবার দেখে মায়ার গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।ভালবাসার পবিত্র স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে তার মায়াবতীকে…

~চলবে~

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-১৮+১৯+২০+২১

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৮

“ভালোলাগা”শব্দটায় একটা সুপ্ত অনুভূতি মিশে থাকে।সেই সুপ্ত অনুভূতি টা যখন প্রকট আঁকার ধারণ করে
তখনই সেটাকে”ভালবাসা”বলে।ভালবাসার মানুষটার সবকিছুই তোমার ভালো লাগবে।আবার কারো প্রতি ক্ষুদ্র ভালোলাগাকে কেন্দ্র করেই তুমি তাকে ভালোবেসে ফেলবে।কি অদ্ভুত তাইনা!

সবে মাত্র মায়ার ভার্সিটি থেকে বেরোলো আরিয়ান।এতোদিন পড়াশোনা একপ্রকার বন্ধ ছিলো মায়ার।কয়েকদিন পর পরীক্ষা।আর দেরি করলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
সে নিজে প্রফেসর দের সাথে কথা বলে এসেছে।মায়ার নোট’স গুলো যেন তারাই তৈরি করে দেয়।প্রয়োজনীয় বইপত্রগুলো গাড়িতে রেখে উঠে বসলো।এখন আবার অফিসে যেতে হবে।

মায়ার রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে মায়া।আরিয়ান একটু কেঁশে উঠতেই মায়া পেছনে ফেরে।আরিয়ানকে দেখে একবার ঘড়ির দিকে তাকায়।সে অনেকক্ষন যাবত অপেক্ষা করছিলো।বলে,

—“আপনার এতো দেরি হলো কেন আজ?”

—“তোমার ব্যাপারে একটা জরুরি কাজে গিয়েছিলাম।”

—“আমার ব্যাপারে?…কি কাজ?”

আরিয়ান জবাব না দিয়ে একটু হাসে।তখনই তন্ময় ঢুকে।তার হাতে দুইব্যাগ বই।টেবিলে রেখে দিয়ে বেরিয়ে যায় সে।মায়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।তবে ঠোঁটের কোঁণে খেলা করছে মৃদু হাসির কণা।

—“তোমার বইখাতা।খোঁজ নিয়েছি আমি।একমাস পর পরীক্ষা।হেলাফেলা করলে সেমিসটার ড্রপ দিতে হবে।তোমার একটা বছর লস যাক আমি চাইনা।সেজন্যই কাল থেকে সিরিয়াসলি পড়তে হবে।ঠিকাছে?

—“কিন্তু…

—“নোটসগুলো তো?আগের সব নোটস কাল সকালে পেয়ে যাবে।আর নতুনগুলা রোজ সন্ধ্যায় এসে দিয়ে যাবে।ওকে?

মায়া মিষ্টি করে হাসে।দু’দিন যাবত সে ভাবছিলো আরিয়ানকে বলবে এই ব্যাপারে।কিন্তু বলেনি পাছে আরিয়ান রাগ করে এই ভয়ে।অথচ আজ আরিয়ান নিজেই সব ব্যবস্থা করে ফেললো।কিভাবে যে লোকটা সব আগে আগে বুঝে যায় ভেবে পায়না মায়া।
——————
আরিয়ানের ঘুমন্ত চেহারার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে মায়া।আরিয়ানের শক্ত বাহুডোরে আবদ্ধ সে।এতটা কাছাকাছি থাকে তারা তবুও মাঝে কেমন একটা দুরত্ব।অদ্ভুত একটা জড়তা!
মায়া হাত বাড়িয়ে আরিয়ানের গালে রাখে।তার গালে হাল্কা চাঁপদাড়ি সেগুলো বিঁধে বিধায় সে সরিয়ে চোখের পাপড়ির উপর হাত রাখে।আরিয়ানের পাপড়িগুলো তুলনামূলকভাবে বড়।সে একআঙ্গুলের ডগা দিয়ে নাড়াচাড়া করতেই আরিয়ান চোখ কুচকে ফেলে।ঘুমের মধ্যই ষ্পষ্ট কন্ঠে বলে,
—“কি করছো?”
মায়া ভ্রু কুচকিয়ে ফেলে।তার মানে উনি ঘুমায়নি।
—“আপনি জেগে আছেন?
—“উহু,আমিতো ঘুমাচ্ছি।”
—“ঘুমাচ্ছেন তো কথা বলছেন কিকরে?”

ফট করে চোখ খুলে আরিয়ান।মায়া লক্ষ্য করে তার চোখে এখন ঘুম নেই।তবে একটু আগে দেখে তো মনে হচ্ছিলো সে গভীর ঘুমে।
মায়া চোখের উপর থেকে দ্রুত হাত সরাতে গেলে আরিয়ান হাত ধরে ফেলে।ঠোঁটের কাছে এনে হাতের তালুতে উষ্ম স্পর্শ এঁকে দেয়।মায়ার মুখে লজ্জামাখা মৃদু হাসি ফুটে উঠে।
আরিয়ান একটু উঠে মায়ার উপর ঝুকে যেতেই মায়া চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।

আরিয়ান তার হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মায়ার গালে হাল্কা ছোয়াঁ দিয়ে বলে,

—“আমি ঘুমিয়েই ছিলাম।তুমিইতো জাগিয়ে দিলে।…তুমি কি জানো তোমার হাতে কতটা মোহময়ী সুবাস আছে?সেই হাত যদি আমার চোখে মুখে এভাবে বিচরণ করে তবে ঘুম না ভেঙে উপায় আছে বলো?

মায়া উওর দেয়না।তার শ্বাস ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে।আরিয়ানের তপ্ত নি:শ্বাস গুলো মুখের উপর ছড়িয়ে পরায় ক্ষনে ক্ষনে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।
আরিয়ান হঠাৎ মাথা বাকিয়ে তার চোখে চোখ রাখে।মায়ার হাতদুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে ধীরকন্ঠে বলে,

—“আচ্ছা,তোমার ভয় হয়না?এইযে আমার রুমে তুমি আমি একদম একা,এক বিছানায়।দরজা বন্ধ।বাতি নিভানো।তার উপর তুমি এতটা আবেদনময়ী।শত হলেও আমি একজন পুরুষ।তুমি ছোট মানুষ..আমাকে বাঁধা দিতে পারবেনা।এখন যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু করে ফেলি?

মায়া আরিয়ানের চোখে চোখ রাখে।আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে তার দিকে উওরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে।

—“আপনি কি ঘুমের ঘোরে কথা বলছেন?একটু থেমে আবার বলে”এ্যাই,আপনার জ্বর টর এলো নাতো আবার?দেখি..”বলে তার বিছানায় চেপে রাখা হাত উঠাতে চায়।কিন্তু আরিয়ান তা শক্ত করে ধরে রেখেছে।

—“আমি সম্পূর্ণ সজাগ মায়া।কোন ঘোরে নেই।তুমি আমার কথার উওর দাও।”

মায়ার ভয় লাগেনা।সে নিশ্চিত আরিয়ান তার সাথে মজা করছে।তার দৃঢ় বিশ্বাস আরিয়ান কখনোই এমন কিছু করবেনা তার সাথে।

—“আপনি ভয় দেখাচ্ছেন তাইনা?আমি জানি আপনি ওরকম না”

—“ভয় দেখাবো কেন?আমি শুধু সত্যিটা বলছি।এটা হতেই পারে,সবসময় আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রনে নাই রাখতে পারি।আফটার অল ইউ আর টু মাচ এট্রাকটিভ”।বলে মায়ার সারা মুখে চোখ বুলায় আরিয়ান।

মায়া অবিশ্বাসের কন্ঠে বলে,
—“এরকম মজা করছেন কেনো?আমার ভালো লাগছেনা।ছাড়ুনতো”।

আরিয়ান এমন ভাব করে যেন তার কথা শুনতেই পায়নি।সে চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে বলতে থাকে,

—“এরকম খোলা চুল,ঘুম ঘুম চেহারা,আর তোমার ঠোঁট গুলো তো জাস্ট…,গায়ে ওড়নাও নেই।আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ মায়া।ডু ইউ নো হাউ মাচ্ হট্ ইউ আর লুকিং?”

~চলবে~
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৯

মায়া এবার জোরে কান্না করে দেয়।আরিয়ান আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা।মায়ার হাত ছেড়ে দিয়ে তার উপর থেকে সরে গিয়ে শব্দ করে হেসে ফেলে।আরিয়ানের হাসি দেখে মায়ার কান্নার বেগ বেড়ে যায়।হেঁচকি তুলে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে সে।আরিয়ানের হাসি যেন থামছেই না।সে হাসতে হাসতেই উঠে বসে।
ব্যাঙ্গ করে বলে,

—“আমি মজা করছিলাম মায়া।ডোন্ট ক্রাই।”

মায়ার কান্না থামেনা।দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে সে।আরিয়ান এখনো হাসছে।সে শুধু একটু মজা করতে চাচ্ছিল।তবে তার অভিনয় মনে হয় একদমই ভালোনা।এজন্যই মায়া তার কথাগুলো বিশ্বাস করছিলোনা।
লাস্টে হয়তো একটু বেশিই বলে ফেলেছে।আরিয়ান বহু কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে মায়াকে টেনে তুলল।
পাশে বসিয়ে মাথায় পিছের দিকে হাত রেখে বললো,
—“আচ্ছা,আর কাঁদেনাতো।তুমিতো আমার কথাগুলো বিশ্বাসই করোনি।তো এভাবে কাঁদছো কেন?”

কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে মায়া।কোনরকম থেমে থেমে সে বললো,

—“আ..আপনি ওরকম..বি..বিশ্রিভাবে কেন..ক..কথা বলছিলেন?”

আরিয়ান ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।সে বুঝতে পারছে সে একটু অতিরিক্তই বলেছে।তার মায়াবতী খুবই নরম,কোমল।এসব কথা তার সইবেনা।

—“ভয় পেয়েছো?”

—“উহু,আমি..আমি জানি আপনি ওমন নন”

আরিয়ান শুধু এতটুকুই জানতে চেয়েছিলো যে মায়া তাকে কতটা বিশ্বাস করে।তার এসব বলার পরও মায়ার চোখে তার প্রতি কোনরকম ভয় দেখেনি।দেখেনি কোন অবিশ্বাস।ভাবতেই অন্যরকম ভালোলাগায় ছেঁয়ে যাচ্ছে ভেতরটা।

মায়ার মুখ থেকে হাত সরাতেই মাথা নিচু করে ফেললো মায়া।এখনো কাঁদছে সে।মায়ার হাতদুটোকে একহাতের মুঠোয় বন্দি করলো আরিয়ান।মায়ার হাতগুলো বাচ্চাদের মতো।আরিয়ানের একহাতেই তার দুইহাত এসে যায়।

মুখের উপর আসা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে আরিয়ান বললো,

—“এত বিশ্বাস করো কেন আমাকে?”

মায়া মাথা উঠিয়ে আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।তার কাঁদতে কাঁদতে লাল হয়ে যাওয়া চোখগুলো দেখে আরিয়ানের কোথাও একটা “ধক্” করে উঠে।তৎক্ষনাত সে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।

মায়া আবারো কয়েকফঁটা জল বিসর্জন দিয়ে উওর দেয়,
—“জানিনা”।

আরিয়ান তাকে কাছে টেনে একহাতে আগলে ধরে।মাথাটা বুকে চেপে দৃঢ় কন্ঠে বলে,
—“আর কাঁদবেনা।কান্না বন্ধ কর।”

বেশ খানিকটা সময় নিয়ে মায়ার কান্না থামে।ঘাসের উপর যেভাবে শিশির লেপটে থাকে ঠিক সেভাবেই আরিয়ানের প্রশস্ত বুকের সাথে মিশে থাকে সে।
আরিয়ান হঠাৎ ডেকে উঠে,
‘মায়া?’
‘বলেন’
‘আমি না হয় মজা করছিলাম।কিন্তু কথা গুলো কিন্তু সত্যি ছিলো।তোমাকে কিন্তু এখন খুবই…
এটুকু বলতেই মায়া চোখ রাঙিয়ে তাকায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
—“আপনি আবারো…।
আবছা আলোয় মায়ার এমন চাহনীতে নি:শব্দে হেসে ওঠে আরিয়ান।
——————
——————
সকালে নিজের রুমে ওয়ার্ক-আউট করছিলো আরিয়ান।জীম-ম্যাট বিছানো মেঝেতে।পাশে দুটো ডাম্বেল রাখা।
মায়া তখনো ঘুমে।আরিয়ানও ডাকেনি।কালরাতে এতো কেঁদে এখন ঘুমাচ্ছে!ঘুমাক!।

পুশ-আপ দিতে দিতে হঠাৎই থেমে যায় আরিয়ান।তার দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়ে যায় মায়ার সদ্য ভাঙা ঘুমঘুম চেহারায়।মায়া আধো আধোভাবে চোখ খুলছে।একহাত দিয়ে তার পাশে হাতরাচ্ছে।আরিয়ানকে খুঁজছে হয়তো।পাশে না পেয়ে ঝট করে চোখ খুলে মায়া।চারপাশে চোখ বুলাতেই আরিয়ানকে চোখে পরে।
ততক্ষনে মাথা নামিয়ে পুশ-আপে মনোযোগ দিয়েছে আরিয়ান।
তার পেটানো সুঠাম দেহ থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে।গায়ের চাদর সরিয়ে মায়া উঠে বসে।চোখ-মুখ ফুলে আছে তার।চোখ কচলিয়ে সামনে তাকাতেই আরিয়ানের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়।
একটা হাই তুলে মায়া বলে,

—“এই সকাল সকাল আপনি এসব করছেন কেন?”

—“এখন সকাল সকাল?সাড়ে দশটা বাজে”।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে মায়া।আসলেইতো বেলা হয়ে গেছে। বালিশের পাশ থেকে ওড়না নিতে যাবে তখনই বালিশের উপর রাখা আরিয়ানের ফোন বেজে ওঠে।ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকানোর আগেই আরিয়ানের দ্রুত ফোনটা নিয়ে নেয়।নামটা দেখে কপালে সুক্ষ ভাঁজ পরে।দাড়িয়ে যায় সে।গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে মায়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে,”তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও,আমি আসছি”।অত:পর ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায় সে।
মায়া মাথা ঘামায় না।হয়তো জরুরি কারো ফোন।

বিছানা থেকে নেমে সামনে যাবে তখনই নিচে রাখা ডাম্বেলে হোঁচট খায়।কোনরকম বিছানা ধরে পরা থেকে বেঁচে যায় মায়া।পায়ের ব্যাথায়”উফ” বলে আর্তনাদ করতেই পেছন থেকে আরিয়ানের কন্ঠ শুনে,

—“কি হলো?ব্যাথা পেয়েছো?”

মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।আরিয়ান ফোন কানের থেকে অনেকটা দুরে রেখে তার উপর একহাত রেখে দিয়েছে।যেন তাদের কথোপকোথন ওপাশের মানুষটা শুনতে না পায়।মায়া সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে,

—“না ঠিক আছি।আপনি যান,কথা বলুন”।

আরিয়ান তার পায়ের দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে কানে ফোন লাগিয়ে চলে যায়।মায়া ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে।আরিয়ান যে কেন তার এত কেয়ার করে?

––—–———
সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে আরিয়ান।এখন নিচে নামবে ব্রেকফাস্ট করতে।মায়া অপেক্ষা করছে।
দরজা খোলার আগমুহুর্তে তার কানে ভেসে আসে ইতির চিৎকার।অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে আরিয়ানের।
জলদি দরজা খুলে বাইরে যেয়ে দেখে সিঁড়ির কাছে কাঁপতে কাঁপতে দাড়িয়ে আছে ইতি।আরিয়ানকে দেখেই সে চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বললো,
—“স্যার,,,ম্যাম…

আরিয়ান এগিয়ে যেতেই দেখলো উঁচু সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পরে আছে মায়া।।মাথা থেকে বেয়ে যাচ্ছে লাল রক্তের ধারা…

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২০

আরিয়ান কোনরকম সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামল।পা যেন চলছে না তার।মায়া উপুর হয়ে পরে আছে।
দ্রুত হাটুগেড়ে বসে মায়াকে সোজা করে মাথাটা কোলের উপর নেয়।কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
চোখের উপর দিয়ে বেয়ে বেয়ে পরছে রক্ত।
আরিয়ান গালে টোঁকা দিয়ে ক্ষীণ স্বরে ডাকে,
—“মায়া?চোখ খুলো।মায়াবতী?তার কন্ঠে স্পষ্ট ভয় প্রকাশ পাচ্ছে।

মায়া উঠেনা।আরিয়ান তাকে বুকে টেনে নেয়।মায়ার রক্ত তার জামায় লেগে যায়।আচ্ছা,তার কম্পিত হৃদস্পন্দন কি মায়ার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে?মায়া কি বুঝতে পারছে তার অস্থিরতা,তার তীব্র অনুভূতির ভীত বহি:প্রকাশ?

তন্ময় সামনে এসে দাড়ায়।আরিয়ান তাকে কিছু বলার আগেই তন্ময় দ্রুত বলে,
—“গাড়ি বের করেছি ভাই।ম্যাম কে নিয়ে আসুন।”

মায়াকে যত্ন করে কোলে তুলে নেয় আরিয়ান।তন্ময় ছোট একটা শ্বাস ফেলে এগিয়ে যায়।ইতিকে ইশারা করে তার সাথে যেতে।ইতি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।তার সামনেই মায়ার এমন একটা বিপদ হয়ে গেল।যদিও তার
কিছুই করার ছিলোনা।সে যখন দেখলো ততক্ষনে অর্ধেক সিঁড়ি গড়িয়ে পরে গেছে মায়া।
————–
গাড়ি ড্রাইভ করছে তন্ময়।পিছের সিটে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বসেছে আরিয়ান।মায়ার পাশে জানালার ধারে ইতি বসে আছে।
মায়ার কপালে শক্ত করে রুমাল চেপে ধরে রেখেছে আরিয়ান।তবুও রক্ত থামছেনা।বাসার সিঁড়ি বেশ উঁচু।সেখান থেকে পরে গেছে তাই হয়তো ক্ষতটা বেশি।
আরিয়ান একবার মায়ার মুখের দিকে তাকায়।ফর্সা মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে।
মূহর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সে।মেয়েটাকে এত আগলে আগলে রাখার পরও কেন তার সাথেই এসব হয়?কেন ওর উপর দিয়েই সব বিপদ যেতে হয়?হাহ্!

—“তন্ময়,ড্রাইভ ফাস্ট।আর কতক্ষন লাগবে?”

—“এইতো ভাই,পৌছে গেছি।”

গাড়ি থামে হসপিটালের সামনে।রাস্তা ভর্তি মানুষ।আরিয়ান সেসব না ভেবেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।ঝুকে গিয়ে মায়াকে কোলে নেয়।আশেপাশের সবাই হা করে দাড়িয়ে থাকে।ভীড় জমায়।পাবলিক প্লেসে এভাবে গার্ড ছাড়া সচরাচর আরিয়ানকে দেখা যায় না।আর আজকে তো একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে আছে।
উৎসুক জনতার কেউ কেউ মোবাইল বের করে ভিডিও করে।
আরিয়ান সেসব তোয়াক্কা না করে হসপিটালের ভেতরে ঢুকে যায়।তন্ময় গাড়ি থেকে বের হয়ে ইতিকে নিয়ে কোনরকমে সবাইকে এড়িয়ে চলে আসে।তার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।কিছু একটা যে ঘটবে তার আভাস বেশ শক্তভাবেই পাচ্ছে সে।তবে আরিয়ানকে এখন এসব বলা যাবেনা।রাগের মাথায় কখন কি করে ফেলবে ঠি ক নাই।

——————
কেবিন থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসে।আরিয়ান দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায়।বাইরে থেকে শোরগোলের শব্দ আসছে।রাগে শরীর শিরশির করছে তার।যেখানে যাবে সেখানেই এই মিডিয়া।মানুষের পার্সনাল লাইফ নিয়ে কেন যে এত কৌতুহল তাদের!
সামনে নতজানু হয়ে দাড়িয়ে আছে একজন অল্পবয়সী ফিমেল ডক্টর।নাম মিতালী রহমান।সে ভীত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,

—“আপনার স্ত্রীর কপালে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে।ক্ষতটা বেশ গভীর।রক্তও বেরিয়েছে অনেক।ভয়ের কিছু নেই কিন্তু খুব দূর্বল উনি।আর বেসামালভাবে পরার কারণে ডানহাত মচকে গেছে।প্লা স্টার করে দেয়া হয়েছে।তবে সম্পূর্ণ ঠি ক হতে সময় লাগবে।জ্ঞান ফিরবে কিছুক্ষন পর।

মায়াকে স্ত্রী বলার পরেও আরিয়ান কিছু বলেনা।ইতিও চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।এতক্ষনে মায়ার প্রতি আরিয়ানের অনুভূতি সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত হয়েছে সে।

—“ওকে কি হসপিটালেই রাখতে হবে?বাসায় নিয়ে যেতে পারবোনা?”

—“জি জি পারবেন।স্যালাইন চলছে তো।সেটা শেষ হোক তারপর সন্ধ্যার সময় বাড়িতে নিয়ে যেয়েন”।

—————
চোখ খুলতেই মাথায় ব্যাথা অনুভূত হয় মায়ার।গালের উপর কারো হাত রাখা।বেশ বুঝতে পারছে এটা আরিয়ানের হাত।হাল্কা করে হাতের আঙ্গুল নাড়াতেই ইতির কন্ঠ শুনতে পায় সে,

—“ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে স্যার।”

আরিয়ান এতক্ষন অন্যমনস্ক হয়ে ছিল।ইতির কথায় হুঁশ ফিরে তার।মায়া আধো আধো ভাবে তার দিকে চেয়ে আছে।আরিয়ান যেন প্রাণ ফিরে পায়।স্বস্তির নি:শ্বাস ছাড়ে আলতো করে মায়ার মাথায় হাত রাখে সে।ধীর গলায় বলে,
—“কেমন লাগছে এখন?ব্যাথা হচ্ছে বেশি?”

মায়া মৃদুভাবে দু’পাশে মাথা নাড়ায়।ব্যাথা হচ্ছে কিন্তু এতটাও বেশি নয়।আরিয়ানকে দেখেই বুঝতে পারছে সে খুব চিন্তায় ছিলো।তার টেনশন আর বাড়াতে চায়না সে।
হাতে দিকে তাকাতেই আৎকে উঠে মায়া।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকাতেই সে বলে,
—“ডোন্ট ওয়ারি।একটু ফ্যাকচার হয়েছে।ঠিক হয়ে যাবে।”
মায়া উঠতে চায়।তবে হাতে ভর দিতে পারছে না।স্যালাইন চলছে।আরিয়ান তাকে ধরে উঠায়।বুকের সাথে হেলান দিয়ে বসায়।ইতির সামনে মায়া লজ্জা পেলেও মুখে কিছু বলেনা।
ইতির দিকে তাকাতেই সে মুচকি হাসে।প্রতিউওরে মায়াও হাসে।আরিয়ান একহাতে ফোনে কিছু একটা করছে আর আরেকহাত মায়ার কোলের উপর রাখা।

কিছুক্ষন পর মিস.মিতালী কেবিনে প্রবেশ করে।মায়াকে আরিয়ানের বুকে দেখে একটু হাসে সে।
আরিয়ান খান কে না চেনে!রাগী,মেজাজী মানুষ সে।ভয়ে প্রেস মিডিয়ায়ও তার সম্পর্কে কোন বাজে ভুয়া নিউজ ছড়ানো হয়না।অথচ নিজের স্ত্রীর প্রতি কতোটা যত্নশীল সে।যদিও সে জানতো আরিয়ান অবিবাহিত।
কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখে তার আরিয়ানের স্ত্রী ছাড়া কিছু মনে হয়নি।আর যদি মেয়েটা তার স্ত্রী নাই হতো তাহলে নিশ্চয় তাকে স্ত্রী বলার পর আরিয়ান কোন রিয়েক্ট করতো।
ওতশত না ভেবে সে এগিয়ে যায়।স্যালাইনটা নামিয়ে দিয়ে বলে,
—“আপনার ক্যানেলাটা খুলে দেই।স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে।”

মায়া ভীত কন্ঠে বলে,
—“কিন্তু এটা খুললেতো ব্যাথা পাবো।”

আরিয়ান হুট করে মায়ার চোখে উপর হাত রেখে ইশারা করে খুলে ফেলতে।মিস.মিতালী হেসে খুলে ফেলেন সেটা।”উহ্”করে উঠে মায়া।আরিয়ান মুচকি হেসে চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়।মেয়েটা এতো ভয় পায়!!
___________
সব ফর্মালিটিস শেষ করে কেবিনে আসে আরিয়ান।ইতি আর মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
তন্ময় বারবার ফোন দিচ্ছে আরিয়ানকে।বাইরে নাকি সাংবাদিক দের ভীড়।আরিয়ানের মেজাজ প্রচন্ড গরম।
সমস্যাটা কি এদের?

বের হতেই এতো মানুষ দেখে চমকে উঠে মায়া।আরিয়ান তার পিঠের পিছ দিয়ে বাহু জড়িয়ে ধরে।আশ্বস্তভরা কন্ঠে বলে,
—“আমি আছিতো,ভয় পায়না”।

সাংবাদিকরা একটার পর একটা ছবি তুলছে।ক্যামেরার ফ্লাসে প্রচন্ড অসস্তি লাগছে মায়ার।মাথা নিচু করে আরিয়ানের পিঠের শার্ট খামছে ধরে আছে সে।
তন্ময় দ্রুত সামনে আসে।অস্থিরভাবে বলে,
—“ভাই আপনি ম্যামকে নিয়ে গাড়িতে বসুন।এদের কথায় কান দিয়েন না।রাগের মাথায় রাস্তায় সিন ক্রিয়েট হয়ে যাবে”

ভীড় ঠেলে সামনে যেতে পারেনা আরিয়ান।তার আগেই সাংবাদিকরা ঘিরে ধরে।একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“ইনি কে স্যার?”,আপনার গার্ল-ফ্রেন্ড?”,আপনারা কি গোপনে প্রেম করছেন?”,অবৈধ সম্পর্ক?”,
“এ কি আপনার রক্ষীতা?”

এ পর্যায়ে এসে রাগের সীমা ছাড়িয়ে যায় আরিয়ানের।তুমুলভাবে গর্জে উঠে সে বলে,
—“জাস্ট শাট আপ।সি ইজ্ মাই ওয়াইফ।আমার স্ত্রী “।

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২১

আরিয়ানের গম্ভীর কন্ঠের ভারি ধমকে মূহুর্তেই কোলাহল থেমে গেল।সাংবাদিকদের সাথে মায়াও খানিকটা চুপসে গেলো।আরিয়ানের ধমকে সে যারপরনাই ভয় পেয়েছে।পিনপতন নিরবতা ভেঙে একজন বলে উঠলো,

—“কিন্তু স্যার,আপনিতো আনম্যারিড।ইনি যে আপনার স্ত্রী প্রমান কি?এমন তো নয় আপনি কোন নারী কেলেঙ্কারি তে জড়াতে চাচ্ছেননা।এজন্য উনাকে স্ত্রী বলছেন।ম্যাম কিছু বলুন।আপনি কি উনার সাথেই থাকেন?আপনাকে কি উনি জোর করে…

মায়া লজ্জায় কুঁকরে যায়।এদের কথাবার্তার ইঙ্গিত বুঝতে পারছে সে।ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে মাথা নুইয়ে আরিয়ানের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকে।

সাংবাদিকটা আরো কিছু বলার আগেই আরিয়ান চোখ গরম করে আবারো ধমকে উঠে,
—“হাউ ডেয়ার ইউ!আপনার সাহস কি করে হয় ওকে কোন প্রশ্ন করার?আর এতোটা বাজে চিন্তাধারা কিভাবে আসে আপনাদের মাথায়।আরিয়ান খানের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট নিশ্চয় আপনাদের মুখ থেকে শুনতে হবেনা।আমি যখন বলেছি ও আমার স্ত্রী।তখন এই ম্যাটারটা এখানেই ক্লোজ হওয়া উচিত না?এটা নিয়ে আর একটা ওয়ার্ডও শুনতে চাচ্ছিনা আমি।রাস্তা ছাড়ুন।

আরিয়ানের উপর আর কিছু বলার সাহস পেলোনা কেউ।সাইড দিতেই দ্রুত হেটে মায়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিল আরিয়ান।দরজা আটকে নিজে গাড়িতে ঢোকার আগে যেই ছেলেটা মায়াকে প্রশ্ন করছিলো তার চেহারাটা একবার দেখে নেয়।অত:পর গাড়িতে বসে জানালার কাঁচ উঠিয়ে দেয় সে।
মায়ার সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে সজোরে গাড়ি টান দেয়।মাথায় আগুন জ্বলছে তার।রাগ নিয়ন্ত্রন সে কোনোকালেই করতে পারে না।
হঠাৎ ডুকড়ে কেঁদে উঠে মায়া।আরিয়ান সেদিকে তাকায় না।সে জানে মায়া কেন কাঁদছে।মায়ার কান্নার শব্দে রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে তার।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে সে রাগী কন্ঠে বলে,
—“মায়া,কাঁদবেনা।রাগ উঠে যাচ্ছে।স্টপ ক্রাইং”

আরিয়ানের ধমকে আরো জোরে কেঁদে দেয় মায়া।ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,

—“উনারা তো ঠি কই বলছিলো…আমরাতো…”

হুট করে ব্রেক কষে আরিয়ান।মাথা ঠি ক নাই তার।রাগে শরীর কাঁপছে।উঠে গিয়ে মায়ার দিকে ঝুকে সিটের দু’পাশে সজোরে বাড়ি মেরে বলে,
—“আমরাতো কি?হুম?কি আমরাতো?ওরা ঠি ক বলছিলো?কখনো জোর করেছি আমি তোমাকে?একসাথে থাকার পরও ফিজিক্যালি ইনভলভ্ হয়েছি কখনো?এখন চুপ করে আছো কেন?স্পিক আপ,ড্যাম ইট্।

—“আ..আমি সেটা ব..বলিনি…”

—“তো কি বলছো?বলো?কি বোঝাতে চাচ্ছো?”

মায়া একবার আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।রাগে যেন চোখ দিয়েই ঝলসে দিবে সে।ভয়ে মাথা নিচু করে সশব্দে ফুঁপিয়ে উঠে সে।

আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।মাথা কাত করে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নেয়।নিজের সিটে বসে স্টেয়ারিং এ হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে।মিনিট দুয়েক পর চোখ খুলে সে।এখনো মায়ার ফোঁপানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।শীতল গলায় বলে,

—“আমাদের বিয়ে হয়নি এটাইতো বলতে চাচ্ছো?”

মায়া উওর দেয়না।কেবল মৃদুভাবে উপর নিচে মাথা নাড়ায় ।মুখে কিছু বলতে ভয় লাগছে তার।আরিয়ান যদি আবার ধমকে উঠে।

আরিয়ান ফোনে কাওকে কিছু একটা মেসেজ করে ফোনটা গাড়ির সামনে রেখে বলে,
—“বেশ,আজকেই বিয়ে করবো আমরা”।

মায়া চমকে তাকায়।চোখে মুখে বিস্ময়।এখন বিয়ে করবে মানে?রাত হয়ে গেছে এখন হুট করে কিভাবে?
আরিয়ান তার চোখে চোখ রাখে।মায়ার কান্না তার সহ্য হয়না তবুও মেয়েটা তার সামনেই বারংবার কাঁদে।
সামনের দিকে দৃষ্টি স্হির করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে বলে,

—“চোখ মুছো মায়া।অযথা কাঁদবে না।তোমার চোখের পানির প্রতিটা ফোঁটা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।সেগুলো ঝরলেও শুধু আমার জন্য ঝরবে।অন্য কোন কারণে নয়।”
————–——
মাত্র প্লাস্টার করা হাত দিয়েই কোনরকম রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দেয় মায়া।মায়ার সাইন করার পর আরিয়ানও সাইন করে দেয়।রুমে শুধু পাঁচজন মানুষ।একজন উকিল,তন্ময়,ইতি,মায়া,আরিয়ান।
তন্ময় হাপাচ্ছে।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার।এতক্ষন বেশ দৌড়-ঝাপের মধ্য ছিলো সে।আরিয়ান-মায়া সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেও ইতিকে নিয়ে অন্য গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিল।পথিমধ্য হঠাৎই আরিয়ানের মেসেজ পায়,এখনই রেজিস্ট্রি পেপারের ব্যবস্থা করতে।সে এখনি মায়াকে বিয়ে করবে।
ব্যাস,আরিয়ানতো বলেই ক্ষান্ত।আর এই রাতের বেলা এসব মেনেজ করতে করতে সে ক্লান্ত।

রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়ে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসালো আরিয়ান।মায়া একেবারেই চুপচাপ।সে কি রিয়েক্ট করবে তার জানা নেই!তার কি আদৌ রিয়েক্ট করা উচিত?বিয়েটা তার সম্মতিতে হলো নাকি অসম্মতিতে সেটাই তো বুঝতে পারছেনা।তবে এতটুকু জানে,আরিয়ান যা করছে তার ভালোর জন্যই করছে।
______________
বাসায় ফিরে আগেই তাকে এতগুলো খাবার খাইয়েছে আরিয়ান।সে নাকি খুব দূর্বল।এখন নাকি বেশি বেশি খেতে হবে।এত খেয়ে এখন ক্লান্ত লাগছে মায়ার।ঘুম আসছে।বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে সে।আরিয়ান গেছে ওয়াশরুমে।শাওয়ার নিতে।সবকিছুই স্বাভাবিক।রোজকার মতো।শুধু এখন তারা বিবাহিত।আরিয়ানের বিয়ে করা বউ সে।এসব ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে বেরোয় আরিয়ান।শুধু টাওয়াল পরা সে।মায়া একবার তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।লজ্জা লাগছে তার।লাল হয়ে যাচ্ছে ফর্সা গালদুটো।
আরিয়ানের যে এতো রাগ আজ না দেখলে বুঝতোই

কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে আরিয়ান।টাউজার আর টি-শার্ট পরে বেরিয়ে আসে।
ঘরের লাইট নিভিয়ে মায়াকে সোজা করে শুইয়ে দেয়।কারণ কাত হলে মায়া হাতে ব্যাথা পাবে।তবে কথা বলেনা কোন।মায়াও নিশ্চুপ।
অত:পর মায়ার পাশে তার পেট জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে।কিছুক্ষন অতিবাহিত হতেই মায়া ধীর কন্ঠে অভিমানের স্বরে বলে,

—“আপনি আজ আমাকে ধমক দিয়েছেন।”
—“বেশ করেছি”।

আরিয়ানের এমন গা ছাড়া ভাবে অভিমানের পাল্লাটা আরো ভারি হলো মায়ার।মুখে কুলুপ এঁটে শুয়ে থাকলো সে।কিছুক্ষন পরই আরিয়ান তার গালে নাক ঘষে বললো,
—“তখন মাথা ঠিক ছিলনা মায়াবতী।রাগ হচ্ছিল খুব।তার উপর তুমি কাঁদছিলে।যেটা আমার সবচেয়ে অপছন্দের।তাই রাগের মাথায়…”

—“রাগের মাথায় আমার উপর চিল্লিয়ে দিলেন”।

আরিয়ান হেসে ফেলে।এই বাচ্চা মেয়েটার মায়াজালে সে কিভাবে যে ফেঁসে গেছে?

—“বাদ দাও সেসব।ঘুমিয়ে পরো।আর ঘুমের মধ্য নড়াচড়া করবেনা।হাতে বা মাথায় ব্যাথা পাবে কিন্তু।…
শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ডাকবে।ঠিকাছে?”

—“হু”।

মায়া পরম শান্তিতে আরিয়ানের বাহুডোরে ঘুমিয়ে পরে।সে জানে এই জায়গাটা তার জন্য নিরাপদ।একেবারেই নিরাপদ।কোন খারাপ কিছু তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা এখানে।কখনো পারবেনা।

~চলবে~

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-১৪+১৫+১৬+১৭

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৪

টানা দু-ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো আরিয়ান।অসহ্য লাগছে তার।কিছুতেই নেশা হচ্ছেনা,ঘুম আসছেনা।সেন্টার টেবিলে অর্ধেক খাওয়া ড্রিংক্সের গ্লাস রাখা।ঘড়ির কাঁটা প্রায় আড়াইটা ছুঁইছুঁই।
।একবার বিছানার দিকে তাকালো সে।খালি বিছানা দেখে একটা চাপা দীর্ঘ: শ্বাস বেরিয়ে আসলো।
কিছুক্ষন এপাশ-ওপাশ পায়চারি করেও লাভ হলোনা।মায়া হয়তো এতক্ষনে ঘুমিয়ে গিয়েছে।আচ্ছা,তাকে এই রুমে নিয়ে আসলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?খুব বেশিই অনুচিত হয়ে যাবে?ক্ষতি হলে হবে,সে তো অন্তত একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।কখনো কখনো একটু সার্থ:পর হওয়াই যায়।

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে আরিয়ান।তারমানে,সে দরজা লক করে ঘুমায়না।
বিছানার একদম মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে মায়া।মাথাটা বালিশে নেই।বালিশ থেকে অনেকটা নিচে।
নি:শব্দে হেটে গিয়ে তাকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিলো আরিয়ান।এতদিনে সে এতটুকু অন্তত জানে যে মায়ার ঘুম অনেক গাঢ়।সহজে ভাঙেনা।মেয়েটার পরণে হাল্কা গোলাপি রংয়ের ঢিলেঢালা লং ফ্রক।একটু বেশিই বাচ্চা বাচ্চা লাগছে ফ্রক পরায়।

নিজের বিছানায় মায়াকে শুইয়ে দিতেই একটা তৃপ্তি অনুভব করে আরিয়ান।অত:পর তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে সেও শুয়ে পরে।বুকের ভিতর জমা হওয়া সব চাপা কষ্ট,দীর্ঘ:শ্বাস যেন নিমিষেই উবে যায়।
মায়ার শরীর থেকে মিষ্টি একটা সুগন্ধ আসে সবসময়।আরিয়ান চেনে গন্ধটা।
মায়া এতটা কাছাকাছি থাকায় গন্ধটা যেন আরো তীব্রভাবে নাকে এসে লাগে।ঘোর ধরে যায়।
কিছু না ভেবে,মায়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে পরে আরিয়ান।
উচিত অনুচিত এর হিসেবটা তার মায়াময় অনুভূতির ভিড়ে আড়াল হয়ে যায়।
——————

সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্থায় পেয়ে থমকে গেল মায়া।এটা যে আরিয়ানের রুম বুঝতে অসুবিধা হলোনা।সে তো নিজের ঘরে ঘুমিয়েছিল।তবে?
একহাত দিয়ে শক্ত করে তার পেট জড়িয়ে ধরেছে আরিয়ান।সে আবার সেই হাতের উপরে ধরেও আছে।
পাশে মুখ ঘুরাতেই আরিয়ানের ঠোঁট তার গাল ছুয়ে গেল।নি:শ্বাস আটকে এলো।লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল মায়া।আড়িয়ান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।হাতটা একটু সরানোর চেষ্টা করতেই তাকে আরো কাছে টেনে নিলে আরিয়ান।অষ্পষ্ট কন্ঠে বললো,

—“মায়াবতী,নড়োনা প্লিজ।

মায়া থেমে গেল।প্রতিউওরে প্রতিবাদ করার মতো কিছু পেলোনা।লোকটা মাঝেমধ্য এমন অধিকারের স্বরে কথা বলে,মায়া নিজেই বোকা বনে যায়।যেমন এখন,সে বলতে পারছেনা তাকে ছাড়ার কথা।তার ইচ্ছেও করছেনা আরিয়ানের ঘুম ভাঙাতে।গরম নি:শ্বাস আছড়ে পরছে মায়ার মুখে,গলায়।মায়া ঠোঁট কামড়ে ধরে সেভাবেই সুয়ে থাকলো।বেশ অনেকক্ষন কেটে গেলেও আরিয়ান ঘুম থেকে উঠলোনা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় এগারোটা বেজে যাচ্ছে।অনেক বেলা হয়ে গেছে।ইতি নিশ্চয় তাকে খুঁজছে।তাকে রুমে না পেয়ে না জানি কি ভাবছে।

হঠাৎই দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ হলো।মায়া চমকে সেদিকে তাকালো।আরিয়ান চোখ না খুলেই বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,

—“কে?কি সমস্যা?”

ওপাশ থেকে তন্ময়ের অস্থির কন্ঠ ভেসে আসলো,
—“ভাই,মায়া ম্যাম রুমে নেই।পুরা বাসায়ও নেই…

আরিয়ান একবার মায়ার দিকে তাকালো।মেয়েটা অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছে।লজ্জা পাচ্ছে হয়তো।আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
—“ও আমার সাথে আছে।যা তুই”।

তন্ময়ের আর কোন কথা শোনা গেলনা।আরিয়ান মায়ার দিকে তাকালো।মায়া নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আরিয়ান একটু হাসে।মায়ার গালদুটো লজ্জায় লাল হয়ে আছে।মায়ার উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয় সে।মায়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।ঘাড় কাত করে আরিয়ানকে দিকে তাকায়।আরিয়ান তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো ফলে চোখাচোখি হয়ে যায়।

মায়া মৃদু কন্ঠে বলো,
—“আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কেন?”

আরিয়ান গায়ের চাদর সরিয়ে উঠে বসে।এত বেলা করে সে কখনোই ঘুমায়না।মায়া এসে তার সব নিয়ম ভঙ্গ করে দিচ্ছে।একটা ছোট হাই তুলে সে বলে,

—“তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছিলোনা মায়াবতী।”

আরিয়ানের সোজাসাপটা উওরে আবারো বোকা বনে যায় মায়া।কিছু বলতে পারেনা।সেও উঠে বসে।তার গায়ে ওড়না নেই।কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে আরিয়ানের দিকে তাকায় সে।আরিয়ান ততক্ষনে বিছানা ছেড়ে নেমে দাড়িয়েছে।

—“কি হয়েছে?আমি এনেছি বলে মন খারাপ?রাগ করেছো?”

মায়া দু’পাশে মাথা নাড়ায়।কেন যেন তার রাগ লাগছেনা।তবে লজ্জা লাগছে খুব করে।কথা পর্যন্ত বলতে পারছেনা।কোনরকম সে বলে,

—“আমার ওড়না…”

আরিয়ান মুচকি হেসে তার বালিশের পাশ থেকে তার ওড়না বের করে দেয়।মায়ার দিকে এগিয়ে দিতেই দ্রুত সেটা গায়ে জরায় মায়া।এলোমেলো চুলগুলো ঠি ক করে বলে,

—“এখন আমি বাইরে যাবো কিভাবে?”

আরিয়ান ভ্রু কুচকে বলে,
—“কেন?”

—“তন্ময় ভাইয়া,ইতি ওরা কি ভাববে?”

—“কি ভাববে?”

মায়া আমতা আমতা করে।তার শব্দ ভান্ডার যেন শূন্য হয়ে পরেছে।বলার জন্য কিছু খুঁজেই পাচ্ছেনা আজ।আরিয়ান তার দিকে দুষ্টু চাহনীতে চেয়ে আছে।সে কোনরকম আমতা আমতা করে বলে,
—“না,কিছুনা।”

—“তুমি রোজ এখানেই ঘুমাবে,আমার সাথে”।

মায়া চট করে তাকায়।আরিয়ানের কন্ঠে গভীর অধিকার প্রকাশ পাচ্ছে।সে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলে,

—“কেন?”

—“কারণ তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসেনা”

——————
আরিয়ান অনেকক্ষন আগেই অফিসে চলে গেছে।দেরি হয়ে যাওয়ায় ব্রেক-ফাস্টও করেনি।বাসায় আবারো একা হয়ে গেছে মায়া আর ইতি।আরিয়ান তাকে বাসার সব জায়গায় যেতে বলেছে।যাওয়ার আগে বলে গেছে নিজের রুমে বসে থাকতে বোরিং লাগলে যেন সারা বাসায় ঘুরে বেড়ায়।তাই সে আর ইতি বাড়ির সামনের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।হঠাৎই….

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৫

হঠাৎই মায়ার চোখ গেলো বাগানের এককোণে একটা ছোট্ট মতন ঘরের দিকে।সে ধীরপায়ে এগিয়ে গেল ওখানটায়।ইতিও তার পিছু পিছু গেল।ওখানে কিছু গার্ড দাড়িয়ে আছে।মায়া কাছে যেয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো,
—“এটার ভিতর কি?”

একজন গার্ড নম্রভাবে উওর দিলো,
—“ম্যাম এখানে স্যারের পোষা কুকুরেরা থাকে।”

মায়া ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো।কুকুর সে ছোট থেকেই ভয় পায়।ভীত কন্ঠে সে বললো,
—“কুকুরেরা মানে?কয়টা কুকুর উনার?”

গার্ডটা মায়াকে ভয় পেতে দেখে একটু হেসে বললো,
—“দুইটা।একজন মেল একজন ফিমেল।আপনি ভয় পাবেননা ম্যাম।ওদের ট্রেনিং দেয়া আছে।কামড়াবে না।ওরা স্যারের খুব প্রিয়।”

মায়া “ওহ্ আচ্ছা” মাথা নাড়ায়।সে বুঝতে পারছে আরিয়ানের খুব প্রিয় এরা দুজন।নেটের দরজার দিয়ে দেখা যাচ্ছে বড়বড় পশম কুকুর গুলোর।একজন ঘুমিয়ে আছে।আরেকজন তার পাশে বসে আছে।সাইজে সাধারণ কুকুরের তুলনায় অনেক বড়।
দুজন একইরকম দেখতে।আচ্ছা,আরিয়ান ওদেরকে আলাদা করে কিভাবে? মনের প্রশ্নটা মনেই রেখে দিলো
মায়া।আরিয়ান আসলে তাকে জিজ্ঞেস করবে ভেবে।
••••••••••
হলরুমের সোফায় পা তুলে বসে টিভি দেখছে মায়া।টিভিতে কার্টুন চলছে।মায়া মনোযোগী দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছে।মাঝে মাঝে এক দু’বার ঘড়ির কাঁটা লক্ষ্য করছে।আরিয়ানের ফেরার সময় হয়েছে তবুও আসছেনা কেন?

আরিয়ান বাড়িতে ঢুকে।মায়া উল্টোদিকের সোফায় বসে আছে বিধায় তাকে দেখতে পায়নি।টিভির সাউন্ড
অনেক জোরে দেয়া তাই ওর পায়ের শব্দও তার কানে যাচ্ছেনা।আরিয়ান সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে গলার জোর বাড়িয়ে ডেকে উঠে,
—“মায়া,রুমে আসোতো।”

মায়া চমকে পেছনে তাকায়।শুধু দেখতে পায় আরিয়ান সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছে।অদ্ভুত!!উনি এলো কখন?
টিভি বন্ধ করে উঠে দাড়ায় মায়া।ইতি একটু আগেই রুমে গিয়েছে।সে একাই বসে ছিলো।
উপরে উঠতে উঠতে দেখতে পায় তন্ময় চোখ মুখ কালো করে নিজের রুমে ঢুকছে।

মায়া আস্তে করে নক করে দরজায়।ভেতর থেকে আরিয়ান বলে,

—“তোমার নক করে ঢুকতে হবেনা মায়া,আসো”।

মায়ার ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলেও সে সেটাকে আড়াল করে ভেতরে ঢুকে।দেখে আরিয়ান আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঘড়ি খুলছে।তার দিকে তাকাতেই সে লক্ষ্য করে আরিয়ানের চোখজোড়া অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে।আৎকে উঠে সে।কিন্তু মুখে কিছু বলেনা।

আরিয়ান মুচকি হাসে।আজকাল মায়া কাছাকাছি থাকলেই কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগে তার।এইযে তার গায়ে এত জর।মাথাব্যাথায় চোখ পর্যন্ত খুলতে পারছিলোনা।আর এখন কতটা ভালো লাগছে।মাথা ব্যাথাও যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে।হয়তো এখনো মাথাব্যাথা করছে কিন্তু সে অনুভব করতে পারছেনা,মায়া কাছে থাকলে অন্যকিছু অনুভব করতে ইচ্ছে হয়না তার।তখন সে কেবল মায়াতেই মগ্ন থাকে।

—“কাছে আসো”।

গুটিগুটি পায়ে তার সামনে যেতেই কোমড় ধরে তাকে একদম কাছে টেনে নেয় আরিয়ান।কপালে উত্তপ্ত ঠোঁটের উষ্ম স্পর্শ দিলে কেঁপে উঠে মায়া।তড়িৎগতিতে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে আরিয়ানের গাল ছুঁয়ে দিতেই চোখ মুখে নিমিষেই অদ্ভুত ব্যাকুলভাবে ফুটে উঠে।অস্থিরতায় ভরা কন্ঠে বলে,

—“আপনার গায়ে প্রচন্ড জ্বর”

আরিয়ান মাদক মাখা নয়নে একদৃষ্টিতে তার দিকে থাকে।মায়ার চোখে মুখে তার জন্য অস্থিরতা দেখে মনে মনে একরাশ:প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়।চোখ বন্ধ করে ফেলে সে।মাথার ব্যাথাটা কি তাহলে আবারো হচ্ছে?

—“জানি মায়াবতী,এই জ্বরে আ..আমার কিছু হয়না।”

আরিয়ানের কন্ঠে কেমন যেন জড়তা।মায়া বুঝতে পারে আরিয়ান জরের ঘোরে এসব বলছে।জ্বরে যেন পুড়ে যাচ্ছে তার শরীর।মায়া তাকে জোর করেই বিছানায় বসিয়ে দেয়।

—“আপনি বসুন আমি ওষুধ নিয়ে আসছি।আপনার জ্বর বেড়ে যাচ্ছে”

আরিয়ান তার হাত ধরে ফেলে।থেমে থেমে বলে,
—“তুমি যেওনা মায়াবতী।তুমি থাকলেই হবে।আমার আর কিছু লাগবেনা।কিছুনা।”

—“আমি এক্ষুনি আসছি,একটু বসুন।”
মায়া দ্রুত বেরিয়ে যায়।মেডিসিন কোথায় রাখা থাকে জানেনা সে।তন্ময়ের রুমে যেয়ে নক করতেই দরজা খুলে তন্ময়।তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মায়া বলে,
—“ভাইয়া,উনারতো খুব জ্বর,জ্বরের ওষুধ কোথায় আছে?”

তন্ময় রাগ নিয়ে কিছু একটা বলতে চায়।কিন্তু বলতে পারেনা।মায়ার অস্থির চাহনী দেখে সে নরম কন্ঠে বলে,
—“চলুন,দিচ্ছি।”

একটু আগেই এ নিয়ে আরিয়ানের সাথে তার একপ্রকার রাগারাগি হয়েছে।অসুস্থ হলে কখনোই নিজের খেয়াল রাখেনা আরিয়ান।সামান্য ওষুধও খেতে চায়না।আজ যে প্রচন্ড জ্বর তবু শত বলেও ডাক্তারের কাছে নিতে পারেনি।এখন যদি মায়ার কথায় একটু ওষুধ খায় তাহলেই শান্তি।

——————
আরিয়ানকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে তন্ময়।মাথা কাত করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে আরিয়ান।মায়ার কথাতে ওষুধ খেয়েছে সে।তবে জ্বর এখনো কমেনি।
মায়া সুপের বাটি হাতে ঘরে ঢুকে।তন্ময় একটু সরে দাড়ায়।আরিয়ানের পাশে বসে পরে মায়া।একচামচ সুপ মুখের সামনে ধরে বলে,

—“হা করুন”।

আরিয়ান আধো আধো ভাবে তাকায়।মায়ার অন্যহাতটা শক্ত করে ধরে বিনাবাক্য মুখ হা করে।
মায়ার লজ্জা লাগে।তন্ময়ের সামনে এভাবে উনি এভাবে হাত ধরে রেখেছেন।তন্ময় না জানি কি ভাবছে।
মায়ার নত চেহারার দিকে তাকিয়ে তন্ময় বুঝে তার অসস্তি হচ্ছে।

—“আপনি তাহলে খাইয়ে দিন,কোন দরকার হলে আমাকে ডাক দিয়েন।”

মায়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।তন্ময় বেরিয়ে যায়।আরিয়ানকে পুরো বাটির সুপ খাইয়ে দিয়ে সস্তির নি:শ্বাস ফেলে মায়া।বাটিটা টেবিলে রেখে পানি খাইয়ে দেয়।এখনও তার হাতটা ধরে রেখেছে আরিয়ান।
আরিয়ানের পিঠের পিছে বালিশ দেয়া।সেটা সরিয়েই তাকে শুইয়ে দিতে হবে।
হাতটা ছাড়িয়ে তার দু’বাহু ধরে সে বলে,
—‘একটু সামনে আসুন,বালিশটা সরাবো।”
আরিয়ান আবছাভাবে তাকায়।লাল লাল মনিগুলোয় ঘোর লাগা চাহনী।হুট করে মায়ার দুই গালে হাত রেখে সে নেশাতুর কন্ঠে বলে,

—“ক্যান আই কিস অন ইওর লিপস্?”

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৬

কিছুক্ষন ভাবাবেগশুন্য হয়ে চেয়ে থাকে মায়া।চোখের পাতায় নেমে আছে একরাশ দম বন্ধকর অনুভূতি।সে জানে আরিয়ান জ্বরের ঘোরে এমন কথা বলছে তবুও তার লজ্জা লাগছে।এমন কথায় কার না লজ্জা লাগবে?সরাসরি ঠোঁটে চুমু খাওয়ার জন্য অনুমতি চাইছে?
আরিয়ান উওরের আশায় তাকিয়ে আছে সেই একই দৃষ্টিতে।সেই চাহনীতে গভীর তৃষ্ণা।
মায়া আমতা আমতা করে কিছু বলতে যায়।কিন্তু পারেনা।ততক্ষনে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মায়ার ঠোঁটে আলতোভাবে স্লাইড করছে আরিয়ান।
মায়া হাত ধরে আটকায়।গাল থেকে আরিয়ানের দুইহাত সরিয়ে নেয়।পিঠের বালিশ সরিয়ে আরিয়ানকে শুইয়ে দেয়।আরিয়ান কোন বাঁধা দেয় না।কোনরকম জোড়ও করেনা।সে হয়তো তার উওরটা পেয়ে গেছে।

আরিয়ানকে গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে উঠে যেতে গেলে তার হাত ধরে ফেলে আরিয়ান।চোখ বন্ধ অবস্থায় সে ধীর কন্ঠে বলে,

—“মায়াবতী,যেওনা..এখানেই থাকো।”

—“লাইটটা অফ করে দিয়ে আসি।আপনার ঘুম হবে না আলো থাকলে।”

আরিয়ান হাসে।ছেড়ে দেয় মায়ার হাত।জ্বরের উত্তাপে তার ফর্সা চেহারা লাল হয়ে আছে।নাকের ডগার জায়গাটা আর ঠোঁটগুলো অতিরিক্ত লাল।
ঘরে হাল্কা আলো জ্বালিয়ে দেয় মায়া।ওয়াশরুম থেকে মগে করে পানি এনে পাশের টেবিলে রাখে।রাতে যদি জ্বর না কমে তাহলে পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দিতে পারবে।
অত:পর আরিয়ানের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পরে।একহাত আরিয়ান নিজের বুকে চেপে ধরে রেখেছে।
অন্যহাতে সে নরম কোমল স্পর্শে আরিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

ভোরের দিকেও মায়ার চোখে ঘুম নেই।কপালে চিন্তার ছাপ।ওষুধ খাইয়েছে অনেকক্ষন হলো তবুও জ্বর কিছুতেই নামছেনা।উল্টা ক্রমাগত বেরে চলেছে।
জ্বরে কাঁপছে আরিয়ান।তার শরীরের তাপে মায়ার ও গরম লাগছে।ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে উঠে যায় মায়া।
এতরাতে তন্ময়কে ডাকতে কেমন যেন একটা অসস্তি হচ্ছে।তাই আর ডাকলোনা।ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিল।
ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা রুমাল নিয়ে মগের পানিতে ভিজিয়ে প্রায় একঘন্টা কপালে পানি দেয়ার পর জ্বর কিছুটা কমে এলো।আরিয়ানের এতক্ষন অচেতন ছিলো।জ্বর নেমে যেতেই শরীর ঘামে ভিজে গেলো।
মায়া গায়ের কম্বল সরিয়ে দিলো।
আরিয়ানের জ্বরের ঘোর কেটে যায়।চোখ মেলে তাকায় সে।তবে ঘুমের রেশ কাটেনি।মায়াকে তার পাশে বসে থাকতে দেখে বলে,
—“মায়া..তুমি..

—“আছি আছি আপনার কাছেই আছি।কোথাও যাইনি।”

আরিয়ান হেসে ফেলে।মায়ার বলার ধরণ শুনে প্রচন্ড হাসি পায় তার।নিশ্চিত সে জ্বরের ঘোরে উল্টা-পাল্টা বকছিলো।এই সমস্যা তার আছে।তবে আগে এসব শোনার মতো কেউ ছিলনা।একা একাই কথা বলতো।একা একাই জ্বর সেড়ে যেত।এসব নিয়ে মাথা ঘামাতোনা সে।

আরিয়ানকে একা একাই হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে মায়া।
—“হাসছেন কেনো?”

—“তোমাকে খুব জ্বালিয়েছি তাইনা?বিরক্ত হয়েছো?”

—“উহু,বিরক্ত হইনি”।

বাস্তবিকই মায়ার একফোঁটা বিরক্তিও আসেনি।বরং চিন্তা হচ্ছিলো।সারাটা সময় অস্থিরতায় কেটেছে।নিজে অসুস্থ হলেও কখনো এতোটা টেনশন হয়না তার।

আরিয়ানের শার্ট ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপটে আছে।মায়া ইতস্ততভাবে বললো,
—“শার্টটা খুলে ফেলুন।ঘেমে গেছেন।এভাবে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

আরিয়ান উঠে বসে।শার্টের তিনটা বোতাম খুলতেই মায়া চোখ নামিয়ে নেয়।আজকাল হুটহাট লজ্জা লাগে তার।খুব লজ্জা!

উঠে গিয়ে সে তোয়ালে নিয়ে আসে।আরিয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়।
—“শরীর মুছে নিন।”

আরিয়ান মায়ার নত মুখের দিকে তাকায়।তোয়ালেটা নিয়ে গা মুছতে মুছতে বলে,
—“এত লজ্জা পেয়োনা।কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করে দাও।”

মায়া কোন উওর দেয়না।টি-শার্ট বের করে দিলে সেটা পরে নেয় আরিয়ান।হাই তুলে মায়া।সারারাত ঘুম হয়নি।এখন ঘুম পাচ্ছে।
মায়া যেয়ে লাইট নিভিয়ে দেয়।আরিয়ান বালিশ ঠিক করতে করতে বলে,

—“দরজা খোলা মায়া।দরজা লক করে ঘুমাতে আসো।”

বিছানায় গা এলিয়ে ক্লান্তিতে দু’চোখ বন্ধ করে মায়া।তার চুলে পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আরিয়ান।
আজকে জ্বরের ঘোরেও লোকটা তার সাথে খারাপ কিছু করেনি।কোনরকম জোড় করেনি।নিজের নিয়ন্ত্রন হারায়নি।
••••••••••
সকালে আরিয়ানের রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই তন্ময়ের মুখোমুখি হয় মায়া।তাকে দেখেই তন্ময় প্রশ্ন করে,

—“ভাইয়ের জ্বর কমেছে?”

—“জি।এখন নেই জ্বর”।

—“কোথায় উনি?উঠেনি?”

—“উঠেছেন।,,,ওয়াশরুমে।”

—“ওহ্,আচ্ছা।বলে মায়াকে সাইড দিলো তন্ময়।মায়া মুচকি হেসে নিজের ঘরে চলে গেল।


আরিয়ান গলায় টাই বাঁধছে।অফিসে যাবে সে।মায়া বসে আছে তার সামনের সোফায়।সে বসে বসে মনোযোগ দিয়ে আরিয়ানের টাই বাঁধা দেখছে।আরিয়ান সন্দিহান কন্ঠে বলে,

—“আমাকে এভাবে কি দেখছো?”

—“আপনার টাই বাঁধা দেখছি।আপনাকে না।”

আরিয়ান হেসে দেয়।কাবার্ড খুলে একটা বক্স বের করে মায়ার সামনে একহাঁটু গেড়ে বসে।মায়ার বাম পা টেনে নিজের পায়ের উপর রাখতেই মায়া তাড়াহুড়ো করে বলে,
—“কি করছেন?”

আরিয়ান বক্স থেকে সেই পায়েলটা বের করে।যেটা সে নিজের বিছানায় পেয়েছিলো।খুব যত্ন করে রেখেও দিয়েছিলো।
চিরচেনা প্রিয় পায়েলটা এতদিন পর দেখে মায়ার মুখে খুশি উপচে পরে।ঠোঁটে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি।

—“আপনি এটা কোথায় পেলেন?জানেন আমি কত খুঁজেছি?ভেবেছিলাম হারিয়ে ফেলেছি।আপনার কাছে এলো কি করে?”

—“আমার বিছানায় পেয়েছিলাম।তোমার পায়ে ব্যান্ডেজ করার সময় ওইদিন ডক্টর ভুলে খুলে রেখেছিল।”

মায়া কন্ঠে দুষ্টুমি মেখে বলে,
—“আপনি রেখে দিয়েছিলেন কেন?”

—“কেন রেখেছিলাম?কারণ শুনতে চাও?”

—“হুম”

আরিয়ান ভ্রু উচিয়ে বাঁকা হাসে।পায়েলটা পরিয়ে দিয়ে মায়ার কানের সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“আমি কারণ বলতে শুরু করলে তুমিই লজ্জা পাবে মায়াবতী”।

~চলবে~

#আঁধার ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৭

ডাইনিং টেবিলে ব্রেক-ফাস্ট করার সময় হঠাৎই গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় মায়া।
তন্ময়-ইতি দুজনেই হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে।আরিয়ান দাড়াতেই পেছন থেকে কুকুরের ডাকে সেদিকে তাকায় সবাই।আরিয়ানকে দেখে কুকুর গুলো দৌড়ে তার পায়ের কাছে এসে মুখ ঘঁষছে থাকে।
মায়া ভয়ে সিটিয়ে যায়।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

—“ওদেরকে সরান প্লিজ,কামড়ে দিবে।”

আরিয়ান তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।কুকুরগুলো যেন খুশিতে লাফাতে থাকে।
—“Don’t be scared.ওরা কামড়াবে না।”

একটা কুকুর মায়ার দিকে আসতেই ছিঁটকে দু’কদম পিছিয়ে যায় মায়া।পা কাঁপছে তার।এমনেই সে কুকুড় প্রচন্ড ভয় পায়।তার উপর এদের আকৃতি এত বড়।গা ভর্তি লম্বা লম্বা সাদা পশম।দেখতে খুব সুন্দর।তবুও ভয় লাগছে মায়ার।
আরিয়ান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকায়।সে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে।ইতির দিকে তাকাতেই সে বলে,

—“ম্যাম কুকুর ভয় পান।শুনেছিলাম ছোটবেলায় একবার কুকুর ধাঁওয়া করেছিলো তাকে।কামড়ায়নি তবে খুব ভয় পেয়েছিলেন তখন।

আরিয়ান কাছে গিয়ে মায়ার বাহু জড়িয়ে ধরে।হাতের ইশারায় কুকুরগুলোরও বসতে বললেই তারা সুন্দরমতো পাশাপাশি বসে লেজ নাড়াতে থাকে।আরিয়ান নরম কন্ঠে বলে,

—“মায়া,,ভয় পায়না।চোখ খুলো।ওরা কিছু করবেনা।ট্রাস্ট মি!।

—“না প্লিজ,,,ওদেরকে নিয়ে যান।ভয় লাগছে।!

আরিয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে তন্ময়কে ইশারা করে।তন্ময় মাথা নাড়িয়ে কুকুর দুটোকে গার্ডেনে নিয়ে যায়।মায়া ধীরে ধীরে চোখ মেলে।আরিয়ান তাকে ছেড়ে দাড়ায়।নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলে,

—“খাবার শেষ করো।ওরা এখন আসবেনা।”

মায়া চুপচাপ খেতে বসে।তার কেন যেন মনে হচ্ছে আরিয়ান তার উপর রেগে আছে।গতকাল গার্ড বলেছিলো কুকুর গুলো আরিয়ানের খুব প্রিয়।তবে কি সে ভয় পাওয়ায় আরিয়ান রেগে গিয়েছে?কিন্তু সে কি করবে?তারতো সত্যিই খুব ভয় করছিলো।

খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে রুমে যেতে নিলেই আরিয়ান তার হাত টেনে ধরে।মায়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলে,

—“আসো আমার সাথে।”

মায়া আর কিছু বলেনা।আরিয়ানের পিছে পিছে গার্ডেনে এসে দাড়ায়।আরিয়ান তার হাত ধরেই সেই ছোট্ট ঘরটার সামনে নিয়ে যায়।।গার্ডরা দরজা খুলে দেয়।আরিয়ান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

—“ভয় পাবেনা ঠিকাছে?”

মায়া ফট করে বলে দেয়,
—“আপনি আমার সাথে রাগ করেছেন?”

আরিয়ান ভ্রু কুচকায়।হেসে দিয়ে বলে,
—“রাগ করবো কেন?”

—“আমি ওদের ভয় পেলাম তাই।ওরা তো আপনার খুব প্রিয়।”

আরিয়ান মৃদু হেসে বলে,
—“তুমিও আমার খুব প্রিয় মায়াবতী।প্রিয় মানুষের সাথে রাগ করা যায়না।আর তোমার সাথেতো একদমই না”।

মায়ার জানতে ইচ্ছে করে।”কেন তার সাথে রাগ করা যাবেনা?”কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারেনা।কেন?ওইয়ে লজ্জা।তার যে খুব লজ্জা লাগছে।

ভেতরে ঢুকেতেই কুকুরগুলো দাড়িয়ে লেজ নাড়াতে থাকে।মায়া একটু পিছিয়ে যায়।আরিয়ান তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।বলে,

—“আমি আছিতো।ওরা কামড়ালে কি আমি তোমাকে এখানে আনতাম বলো?”

মায়া উওর দেয়না।ভীত নয়নে কুকুর গুলোর দিকে চেয়ে থাকে।আরিয়ান হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,

—“ওর নাম জ্যাক আর ওর নাম জেনি।ওদের কে আমি নিয়ে এসেছিলাম প্রায় ৩ বছর আগে।তখন ওরা একদম বাচ্চা ছিলো।এখানেই বড় হয়েছে।খুব আদরের।বুঝলে?

মায়া মৃদু স্বরে বলে,
—“হু”।

একজন এসে মায়ার পায়ে মাথা ঘঁষতেই মায়া আরিয়ানের বাহু খামছে ধরে বুকে মুখ লুকায় মায়া।আরিয়ান তার চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে আশ্বস্ত করে বলে,

—“জ্যাক আদর নিতে এসেছে।মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।দেখো তোমার ভয় কেটে যাবে।”

মায়া ঘাড় বাকিয়ে তাকায়।কুকুরটা ক্রমাগত তার পায়ে মাথা ঘঁষছে।সে কাঁপা কাঁপা হাতে মাথায় আদর করতেই তার হাতে জিহ্বা দিয়ে চেটে দেয় জ্যাক।মায়া আৎকে ওঠে হাত সরিয়ে নেয়।আরিয়ান হেসে দিয়ে বলে,
—“জ্যাকও আদর করছে।পছন্দ হয়েছে তোমাকে”।

মায়ার ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে।জেনি এগিয়ে আসলে তার মাথায়ও আদর করে দেয় সে।ভয়টা কেটে গেছে।আরিয়ান হাতের ঘড়ির দিকে তাকায়।অফিসের জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে তার।

—“ভয় কমেছে?”

—“হুম”।

—“শিওর?আর ভয় পাবেনাতো ওদের?”

মায়া দু’দিকে মাথা নাড়ায়।আড়িয়ান হেসে তার কপালে গভীরভাবে চুমু খায়।সে চাচ্ছিলোনা মায়া কোনোরকম ভয়ে থাকুক।
তাও আবার তার কোন বিষয়ের জন্য।
________________
আরিয়ানের অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে।হাত নাড়িয়ে তাকে বিদায় জানায় মায়া।মনে মনে ভাবে,
“লোকটা এত ভালো কেন?”

~চলবে~

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-১০+১১+১২+১৩

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১০

মায়া যেন হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল।অশ্রুসিক্ত নয়নে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো সে রাশেদ চৌধুরির দিকে।রাশেদ চৌধুরি চোখ মেলাতে পারলোনা মেয়ের সাথে।নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরিয়ান মায়াকে আলতো হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

—“জানিস রাশেদ,সেদিন মায়ার উপর হামলা কে করেছিলো?…এই আজিজ।মায়াকে কিডন্যাপও করিয়েছিলো এই আজিজ।তোর মেয়ের উপর খারাপ নজর আছে ওর ঠি ক যেমন আমার মায়ের উপর তোর খারাপ নজর ছিলো।তোর কল রেকর্ডিং আমাদের কাছে দিয়েছে আজিজ।বিশ বছর আগে আমার বাবার সাথে একইভাবে তুই বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলি আর আজকে তোরসাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করলো আজিজ।

আরিয়ানের কথা শুনেও মায়া কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো না।সে তখন ব্যস্ত তিক্ত সত্য কথাগুলো কোনরকম হজম করে নিতে।
রাশেদ চৌধুরি চোখ বড়বড় করে আজিজের দিকে তাকালো।আজিজ কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে সে বুঝতে পারছেনা এসব আরিয়ান কিভাবে জানলো?সে তো শুধু কল রেকর্ডিং দিয়েছিলো।বাকি কথা আরিয়ান কি করে জানে?কপাল বেয়ে ঘাম পরতে লাগলো তার।কিছু না ভেবে সে দৌড়ে পালাতে যেতেই আরিয়ান শুট করে দিলো।পরপর গুলি করায় সেখানেই লুটিয়ে পরলো আজিজ।রক্তে ভেসে গেলো রাস্তা।মায়া চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো।

—“তোকে তো আমার বাবা শাস্তি দিতে পারেনি।কিন্তু তোর হয়ে আমিই আজিজকে শাস্তি দিয়ে দিলাম।”

এই প্রথম যেন নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে রাশেদ চৌধুরির।আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে সে দুই হাতজোর করল।ধরা গলায় বললো,

—“আমার মেয়েটাতো কিছু করেনি।ওকে কিছু করোনা তুমি।”

আরিয়ান একটু হাসলো।তারপর শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—“আমার মা ও কিন্তু নির্দোষ ছিলো কিন্তু তুই কি করেছিলি?”

রাশেদ চৌধুরি মাথা নিচু করে ফেললো।আরিয়ান তার নত চেহারার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যর হাসি হাসলো।মায়াকে নিজের আরো একটু কাছে টেনে নিয়ে বললো,

—“তোর মতো আমি কখনোই করবোনা রাশেদ।কুকুড় কামড়ালে তো কুকুড়কে আর কামড়ানো যায় না।”

মায়া একদৃষ্টিতে একবার তার বাবার দিকে তাকালো।আরিয়ান হাত উঠিয়ে বন্দুক তাক করে ট্রি গারে আঙ্গুল রাখলো।
রাশেদ চৌধুরি অনুরোধ করে বললো,

—“মায়া মা তুমি দেখোনা।চোখ বন্ধ করে রাখো।”

মায়া কথা শুনলোনা।চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে অনবরত।আরিয়ান তাকে ঘুরিয়ে একহাতে তার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।চোখের ইশারায় রাশেদ চৌধুরিকে কিছু একটা আশ্বস্ত করে শুট করে দিলো।
মায়া”বাবা”বলে আর্তনাদ করে উঠলো।আরিয়ান তাকে মাথা উঠাতে দিলো না।শক্ত করে ধরে রাখলো।
রাশেদ চৌধুরির মৃতদেহ পরে রইলো।আরিয়ান সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসলো।
ততক্ষনে তার বুকেই জ্ঞান হারিয়েছে মায়া।

——————
নিজের রুমেই মায়াকে যত্ন করে শুইয়ে দিলো আরিয়ান।শত চেষ্টা করেও মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু করার কথা চিন্তাও করতে পারনি সে।কিছু একটা যেন আটকে দিয়েছে বারবার।কান্নার করার ফলে চোখমুখ লাল হয়ে আছে মায়ার।ফর্সা চেহারার আরক্তিম আভা যেন তার সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরিয়ান ঝুকে তার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।সে জানে মায়ার এই অবস্থার জন্য সেই দায়ি।তবুও তার কিছুই করার নেই।বাবা-মার মৃত্যুর প্রতিশোধ তো তাকে নিতে হতোই।

রুম থেকে বের হতেই ইতির সাথে দেখা হলো।তন্ময়কে তার পাশেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

—“পাশের রুমে মায়ার জিনিসপত্র রেখে দে।আর কর্নারের রুমে ইতির থাকার ব্যবস্থা করে দে”

তন্ময় মাথা নাড়ায়।আরিয়ান গটগট করে নিচে নেমে যায়।ইতির হাত থেকে লাগেজ নিয়ে তন্ময়ও এগিয়ে যায়।তার পিছু পিছু যায় ইতি।
———–—–—
জ্ঞান ফিরেছে মায়ার।উদ্ভ্রানতের মতো কাঁদছে আর চিৎকার চেঁচামেচি করছে সে।
—“ম্যাম একটু শান্ত হন।এভাবে চিৎকার করলেতো..

—“উনি কোথায়?কোথায় উনি?উনাকে আসতে বলো আমার কাছে।কিভাবে পারলেন উনি আমার সামনেই বাবাকে…।”বলতে বলতেই উচ্চস্বরে কেঁদে দিলো মায়া।

দরজা খুলে প্রবেশ করলো আরিয়ান।একটা কাজে বেরিয়েছিলো।আসতেই শুনলো মায়া এমন করছে।সে অবশ্য জানতো,মায়া কখনোই স্বাভাবিক আচরণ করবেনা তার সাথে।সেই হিসেবে প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে সে।মায়ার চিৎকার উপেক্ষা করে ইতিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—“তুমি যাও ইতি।ওকে আমি দেখছি…।

নি:শব্দে বেরিয়ে গেলো ইতি।আরিয়ান ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো।মায়ার দিকে এগিয়ে আসতেই মায়া চিৎকার করে বললো,
—“কাছে আসবেন না।একদম কাছে আসবেননা বলছি।”

আরিয়ান জানে মায়া এখন নিজের মধ্য নেই।তার রাগ হলোনা।ধীরপায়ে মায়ার সামনে গিয়ে বসলো সে।
ধরতে গেলেই মায়া ছিঁটকে তার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,

—“ধরবেননা আমাকে।আপনি একজন খুনি।বাবাকে খুন করেছেন।”

—“মায়া রাগ উঠিয়োনা আমার।কিছুই জানোনা তুমি।”

—“কি জানবো?আপনিতো আমার সামনেই..।আবার কান্না করে দিলো সে।

আরিয়ান শক্ত করে তার দু হাত নিজের একহাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখলো।আরেকহাতে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“আর একফোঁটা পানি যদি বের হয় মায়া।আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”

মায়ার চোখ আবারও ভিজে এলো।আরিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারো তার পানি মুছিয়ে দিলো।মায়া হঠাৎ ই শান্ত হয়ে গেলো।কেন হলো সে নিজেও জানেনা।
নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো,

—“হাত ছাড়ুন।ব্যাথা পাচ্ছি।”

আরিয়ান তার হাত ছেড়ে দিলো।মায়ার একগালে হাত রেখে বললো,
—“আমার কথাগুলো শোনো।তারপরও যদি তোমার মনে হয় আমি ভুল কিছু করেছি তখন ঠি কাছে আমি মেনে নিবো।কিন্তু কিছু না জেনে তো তুমি এমন কিছু বলতে পারোনা।”

মায়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।হাতের উল্টোপিঠে দিয়ে সে চোখ মুছে বললো,
—“বলুন”।

আরিয়ান নরম কন্ঠে বললো,
—“তার আগে একটা প্রশ্নের উওর দাও।তোমার মা কিভাবে মারা গিয়েছিলো তুমি জানো?”

মায়া একটু অবাক হলেও বললো,

—“বাবা বলেছিলো,আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে।”

—“তোমার মা তোমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়নি।তোমার বাবা নিজ হাতে তোমার মাকে খুন করেছে।”

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১১

মায়া দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,
—“কি সব বলছেন?বাবা কেন মাকে মারতে যাবে?”

আরিয়ান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,
—“কারণ রাশেদের তখন আমার মাকে প্রয়োজন ছিলো।তোমার মা ছিল তার পথের কাঁটা তাই সেটাকে উপড়ে ফেলতে ও একমিনিটও ভাবেনি।”

মায়া কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই আরিয়ান তার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে থামিয়ে দিয়ে বললো,
—“আমার কথা শেষ হবে তারপর তুমি কথা বলবে।তার আগে না।ঠিকাছে?

মায়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।আর কোন উপায় নাই তার কাছে।আরিয়ান বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে,

—“২০ বছর আগে,আমার বাবা আদনান খান ছিলেন তখনকার মিনিস্টার।তার পি.এ ছিলো রাশেদ।মিনিস্টার হওয়া সত্তেও তার কোন শত্রু ছিলনা।অতিরিক্ত ভালো মানুষ ছিলেন বলেই রাশেদের ষড়যন্ত্র সে বুঝতে পারেনি।মিনিস্টারের পি.এ হওয়ার তাগদে সে নানা দুর্নীতি করলেও আমার বাবা তাকে বারবার ক্ষমা করে দিতেন।তখন ছিলো ইলেকশনের সময়।বাবা ছিলেন খুব ব্যস্ত।কৌশলে একদিন বাবার ব্যাংকের সব টাকা রাশেদ নিজের এ্যাকাউনটে ট্রান্সফার করে ফেলে রাশেদ।তারপর ইলেকশনের ঠি ক তিনদিন আগে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে।বাবা নাকি লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেয়।সেই বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণও দেখায় সে।সবসময় মানুষের ভালোর জন্য কাজ করে যাওয়া আমার বাবাকেই সবাই দোষী সাব্যস্ত করে।প্রচন্ড অপমানিত হন তিনি।জনগন থু থু করে তার উপর।ফলস্বরূপ রাজনীতি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয় বাবাকে।
আমার বয়স ছিলো ৮ বছর।আমি ছিলাম তখন আমার মামার বাসায়।তাই আমাকে আর ওখান থেকে না এনে সন্ধ্যাবেলা মাকে নিয়ে সরকারি বাসা থেকে বেরিয়ে যায় বাবা।বাবার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়েও ক্ষান্ত হয়নি রাশেদ।তার লোভাতুর দৃষ্টি ছিলো মায়ের উপর।পথিমধ্য বাবার গাড়ি থামিয়ে মায়ের সামনেই তাকে মেরে ফেলে সে।তারপর জোর করে মাকে তুলে নিয়ে যায় নিজের বাসায়।তোমার বয়স হয়তো তখন ছয় সাত মাস হবে।মায়ের চিৎকার চেঁচামেচি তে তোমার মা এসে বাঁধা দিতেই একপর্যায়ে তাকেও শুট করে দেয় রাশেদ।
তখন রাশেদের মাথায় চলছিলো শুধু আমার মাকে পাওয়ার নেশা।শত কাকুতি মিনতি করেও ছাড়া পায়নি আমার মা।সারারাত নিজের স্বামীর খুনির নিকট শারিরীক নির্যাতন সহ্য করে সে।মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পরে পরেরদিনই কাঁচের টুকরা দিয়ে হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করে মা।
মামা সেদিন নিজের বোনকে বাঁচানোর জন্য ছুটে গিয়েছিলো রাশেদের বাসায়।কিন্তু পারেনি।রাশেদের এত লোকের সাথে পেরে উঠেনি সে।বস্তুত তার সামনেই তোমার মাকে শুট করে রাশেদ।

আমি তখন ছোট ছিলাম কিন্তু অবুঝ ছিলাম না।একটু বড় হবার পর মামার কাছেই এসব শুনি আমি।তখন থেকেই প্রতিশোধের নেশা জেগে উঠে আমার মাঝে।আর আজকে ঠি ক একইভাবে রাশেদ চৌধুরিকে শাস্তি দিতে পেরেছি আমি।ঠিক যেভাবে আমার বাবার সম্মান সে নষ্ট করেছিলো তেমনি ওর সম্মানও ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি।এখন তুমি বলো আমি কি ভুল কিছু করেছি?

মায়া ছলছল নয়নে আরিয়ানের দিকে তাকায়।লোকটার লাল লাল চোখগুলোই বলে দিচ্ছে তার সবগুলো কথা সত্যি।আর এগুলো বিশ্বাস না করারো কোন কারণ নেই মায়ার কাছে কারণ তার সামনেই তার বাবা সব স্বীকার করেছে।নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে তার এত খারাপ একটা লোকের মেয়ে সে।ছিহ্!আর আরিয়ান তার জন্য কত করছে।তার তো উচিত মায়াকেও মেরে ফেলা।কিন্তু সে তার কত যত্ন করছে।ভাবতেই আরো কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।

—“আমি জানি রাশেদ চৌধুরি তোমার বাবা ছিল।আর এটাও সত্য যে,ও নিজের মেয়েকে সত্যিই খুব ভালোবাসতো।কিন্তু আমারতো কিছু করার ছিলো না।নিজের বাবা-মায়ের করুণ মৃত্যুটাতো আমি এত সহজে
ভুলতে পারতাম না।তাইনা?

মায়া মাথা নিচু করে মৃদু স্বরে উওর দেয়,
—“সরি”।

আরিয়ানের ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।মায়ার চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে তার মাথা উঁচু করে।মায়া চোখ মেলাতে পারেনা তার সাথে।নিজের বাবার কৃতকর্মের জন্য লজ্জা লাগছে তার।

—“তুমি সরি বলছো কেন?আমি কি একবারও তোমাকে দোষী করেছি?যা করেছে তোমার বাবা করেছে তুমিতো করনি।”

মায়া উওর দেয়না।নিজেকে খুব নোংরা মনে হচ্ছে তার।আরিয়ান উঠে দাড়ায়।
—“ইতিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পরো,অনেক ধকল গেছে তোমার উপর দিয়ে।”

—————–
রাত দেড়টা..
আরিয়ানের বিছানায় অগোছালোভাবে ঘুমাচ্ছে মায়া।পাশেই বালিশে হেলান দিয়ে আধ সোয়া হয়ে বসে আছে আরিয়ান।তার দৃষ্টি মায়ার মুখের দিকে।দৃষ্টি দিয়েই যেন তাকে অনুভব করছে সে।মেয়েটার মধ্য না আছে কোন অহংকার না আছে কোন মারপ্যাঁচ।একদম সহজ সরল সাধারন।বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।বিরবির করে ঘুমের মধ্যই কিছু একটা বলছে মায়া।আরিয়ান একদম কাছে ঝুঁকে শোনার চেষ্টা করে।
কিন্তু কিছু বুঝতে পারেনা।ভ্রু কুচকে আলতো করে মায়ার ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিতেই বিরবির করা থেমে যায়।
তবে আরিয়ানের নি:শ্বাস মায়ার মুখের উপর পরতেই একটু নড়ে উঠে সে।আরিয়ান দ্রুত সরে যায়।
রাতে আরো একদফা কান্নাকাটি করে বহু কষ্টে ঘুমিয়েছে মেয়েটা।এখন উঠে গেলে মনে হয়না আর ঘুমাবে।
তাই ঘুমটা ভাঙাতে চায়না সে।

মাঝে একটা বালিশ আর একটু দুরত্ব রেখে ওপরপাশেই শুয়ে পরে আরিয়ান।
মাঝরাতে বুকের উপর কিছু একটা অনুভব হতেই ঘুম ভেঙে যায়।চোখ মেলে তাকায় আরিয়ান।তার বুকে মাথা রেখে গুটিশুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে মায়া।এক পা তার পায়ের উপরে উঠানো।পাশে তাকিয়ে দেখে মাঝখানে রাখা কোলবালিশ লাথি মেরে বিছানার নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে মায়া।আরিয়ান নি:শব্দে হাসে।একহাতে মায়াকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও হাত সরিয়ে নেয়।মেয়েটা নাহয় ঘুমের ঘোরে এমন করছে কিন্তু সে তো জেগে আছে।সামান্য জড়িয়ে ধরা থেকেও যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়…

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১২

মায়ার ঘুম ভাঙে দেরি করে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো রুমে সে একা।ঘরের জানালা লাগানো।পর্দাও টেনে দেয়া।হাল্কা আলো জ্বলছে।আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে সব।আরিয়ান রুমে নেই।ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে।হয়তো উনি শাওয়ার নিচ্ছে।বড় একটা হাই তুলে উঠে বসে মায়া।কালরাতে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছে তার একদমই খেয়াল নেই।ঘড়ির দিকে তাকায় কিন্তু আবছা আলোয় সময়টা বুঝতে পারেনা।ঘুমঘুম ভাবটা কাটানোর জন্য দু হাতে চোখ কচলায়।তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে আরিয়ান।মায়াকে বসে থাকতে দেখে ব্যালকনির কাঁচের দরজার সামনের পর্দা সরিয়ে দেয়।
আলোকিত হয়ে যায় ঘর।মায়া মুখ তুলে তাকায়।এতক্ষন সে বুঝতেই পারেনি আরিয়ান রুমে এসেছে।
আরিয়ানের পরণে ব্ল্যাক টাউজার।গলায় টাওয়াল ঝোলানো।জিম করা বডিতে বিন্দু বিন্দু পানির কণা।
আরিয়ান গলার টাওয়ালটা নিয়ে চুল মুছতে মুছতে সামনের আয়না দিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

—“ঘুম হয়েছে ঠি কমতো?”

আয়না দিয়েই আরিয়ানের দিকে তাকায় মায়া।চোখে চোখ পরতেই দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে।আরিয়ানকে শার্ট ছাড়া দেখে কেন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে তার।কোনরকম আমতা আমতা করে বলে,

—“জি হয়েছে”।

আরিয়ান একটা ধুসর রংয়ের টি-শার্ট পরে নেয়।বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নেয়ার জন্য কাছে আসতেই মায়া দ্বিধাগ্রস্ত কন্ঠে বলে,

—“আমি একটু ফ্রেশ হতাম।”

আরিয়ান ফোনটা নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে বলে,
—“ওহ হ্যাঁ।কাল এখানে ঘুমিয়ে ছিলে তাই আর ডাকিনি।পাশের রুমে তোমার সব জিনিসপত্র রাখা আছে।আসো।”

——————
মায়ার রুমের দরজাটা হাল্কা একটু ফাঁক করে ইতি।আঙ্গুল দিয়ে একটু টোঁকা দিয়ে বলে,
—“ম্যাম আসবো?”

—“আসো আসো।কই ছিলা তুমি?”

ইতি একটু হেসে ভেতরে ঢুকে।মায়া তখন চুল আঁচরাতে ব্যস্ত।
—“ম্যাম,আরিয়ান স্যার আপনাকে ব্রেক ফাস্ট করতে নিচে যেতে বলেছেন।উনি অপেক্ষা করছেন।”

মায়া ভ্রু কুচকায়।আরিয়ান তার জন্য অপেক্ষা করছে কেনো?তবুও কোন প্রশ্ন না করে ইতিকে বলে,

—“চুল বাঁধবো কি দিয়ে?কোথায় কি রাখা আছে কিছুই তো জানিনা।”

ইতি মুচকি হেসে ড্রয়ার থেকে চুলের কাঁটা বের করে দিয়ে বলে,
—“আমিই সব গুছিয়ে রেখেছি ম্যাম।চিন্তা করবেননা।”

মায়া চুলগুলো খোঁপা করে বেঁধে নেয়।নিচে নেমে দেখে আরিয়ান আর তন্ময় ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।
সামনে খাবার সাজানো অথচ উনারা খাচ্ছেনা দেখে বুঝতে পারছে তার জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে।
ইতি চেয়ার টেনে দিলো তাকে।আরিয়ানের কাছের চেয়ারে বসে পরলো মায়া।ইতি বসলোনা।তার পাশে দাড়িয়ে রইলো।অন্য সময় হলে মায়া ভাবত ইতি হয়তো আগে খেয়ে নিয়েছে।কিন্তু এখানে তো নিশ্চয় এমনটা হয়নি।

—“বসো ইতি।”

ইতি ইতস্তত করে বললো,
—“না ম্যাম,আমি পরে খেয়ে নিবোনে।”

মায়া চোখমুখ কুঁচকে তাকায়।আরিয়ান বলে,
—“এখনি খেয়ে নাও”।

ইতি আর না করেনা।বসে পরে মায়ার পাশে।
একমনে খেয়ে চলেছে আরিয়ান।খাওয়ার সময় কথা পছন্দ না তার।মায়া খেতেখেতেই এটা ওটা বলছে।তন্ময় সেগুলোর জবাব দিচ্ছে।তন্ময় ভেবেছিলো আরিয়ান হয়তো রেগে যাবে।কারণ খাওয়ার সময় সে কোন জরুরি কথা বললেও আরিয়ান রেগে যায়।অথচ আজকে মায়া এত কথা বলছে তার কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।মায়াকে একবারও কথা বলতে নিষেধও করছেনা। মনে মনে হাসে তন্ময়।কিন্তু মুখে কিছু বলেনা।

হঠাৎই গলায় খাবার আটকে যায় মায়ার।শব্দ করে কেঁশে উঠে সে।মায়ার সামনের গ্লাসে পানি ঢালা ছিলনা।তন্ময় দ্রুত পানি ঢালতে নেয়।তার আগেই আরিয়ান নিজের গ্লাসের পানি খাইয়ে দেয় মায়াকে।পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদু ধমকের স্বরে বলে,

—“খাওয়ার সময় এত কথা বললেতো গলায় আটকাবেই।”

অর্ধেক পানি খাইয়ে গ্লাসটা নামিয়ে রাখে আরিয়ান।মায়ার কাশি থেমে গেছে ততক্ষনে।চোখে পানি চলে এসেছে।আরিয়ান পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছিয়ে দেয়।ইতি আর তন্ময় শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে।
দুজনের ঠোঁটেই চাঁপা হাসি।
আরিয়ান রুমালটা পকেটে ঢুকিয়ে ঠিক হয়ে বসে।গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“চুপ করে খাও।”

মায়া মুখ বাঁকা করে বিরক্তির স্বরে বলে,
—“ধ্যাত্,বকছেন কেনো?এরকম রোবটের মতো বসে বসে খাওয়া যায় নাকি?”

তন্ময় মুখ টিপে হাসে।সে নিশ্চিত অন্য কেউ এই কথাটা বললে আরিয়ান তাকে বিনাবাক্য শুট করে দিত।আরিয়ান রাগি দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
খাওয়া শেষে যখন পানি খাবে তখন তন্ময় দ্রুত বলে,
—“পানি চেন্জ করিয়ে দিচ্ছি ভাই”।কারণ সে জানে আরিয়ান শুধু ওই গ্লাসেই পানি খায়।

—“প্রয়োজন নেই”। বলে মায়ার খাওয়া অর্ধেক পানিটা খেয়ে উঠে পরে আরিয়ান।গটগট করে হেটে উপরে চলে যায়।
——————
বিকেলবেলা নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে আছে মায়া।তার পাশে ইতি।আবারো মন খারাপ লাগছে তার।
না চাইতেও বাবার কথা মনে পরছে।ভাবতেই অবাক লাগছে এই পৃথিবীতে তার সব থেকেও কিছু নেই।আপনজন বলতে ইতি ছাড়া কেউ নেই।আরিয়ান যে তাদের নিজের বাসায় রাখছে এটাইতো ঢের বেশি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া।

—“আপনাদের মধ্য কেমন সম্পর্ক?”

মায়ার ধ্যান ভাঙে।ইতির কথার বুঝতে না পেরে সে বলে,
—“মানে?”

—“মানে গতরাতে না আপনি আরিয়ান স্যারের রুমে ঘুমালেন?”

—“হ্যাঁ,তো?”

—“তো?সেটাই বলছি।বুঝতে পারছেন না।”

মায়ার বোধগম্য হয় বিষয়টা।বিচলিত কন্ঠে সে বলে,
—“তুমি যা ভাবছো।সেরকম কিছু না।”

ইতি আর কিছু বলেনা।তবে তার চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছে মায়ার কথাটা সে খুব একটা বিশ্বাস করেনি।
মায়াও চুপ করে যায়।চোখ বন্ধ করে ভাবে,”মূলত তার কাছেও এই প্রশ্নের উওর নেই।তার আর আরিয়ানের মধ্য আসলে কিসের সম্পর্ক?।”

~চলবে~।

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৩

অফিস থেকে ফিরেছে আরিয়ান।রাতের খাবার কখনোই খায়না সে।তাই রোজকার মতো সিগারেট হাতে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে।
চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার।বাড়ির সামনের লাইটগুলোও তার নির্দেশে এসময় বন্ধ করে দেয়া হয়।অন্ধকার খুব পছন্দের আরিয়ানের।তার এক সমুদ্র আঁধারে ঢাকা নি:সঙ্গ জীবনে এই যান্ত্রিক আলো গুলো একেবারেই বেমানান,অনর্থক লাগে।একবার মায়ার খোঁজ নিয়েছিলো।শুনেছে মেয়েটা নাকি সারাদিন রুমেই ছিলো।বের হয়নি।
শূন্য শূন্য লাগছে তার।কালরাতে মায়া ছিলো সাথে।সারারাত শান্তি মত ঘুম হয়েছে।আশ্চর্যজনক হলেও কালকে কোনরকম নেশাও করেনি।তবুও ঘুমটা হয়েছে একদম মনের মত।আবারও সিগারেটে টান দেয় আরিয়ান।পুরো ব্যালকনি গুমোট ধোঁয়ায় ভরে গেছে।অ্যাশ-ট্রে তে জমা হয়েছে অনেক গুলো আধপোড়া সিগারেটের অংশবিশেষ।আরিয়ানের অবচেতন মন বারবার মায়াকে খুব করে কাছে চাইছে।সেই চাওয়াটাকেই সিগারেটের ধোঁয়ায় সাথে উড়িয়ে দেয়ার নির্মল প্রচেষ্টা করছে সে।

দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ হয়।আরিয়ান ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার তাকায়।তার রুমের দরজা লক করা না।কিন্তু কারো নক না করে প্রবেশ করার অনুমতি নাই।তন্ময় এসেছে ভেবে জোর গলায় সে বলে,
—“দরজা খোলাই আছে…কাম ইন”।

ধীরপায়ে আরিয়ানের রুমে প্রবেশ করে মায়া।ঘরের আলো নিভানো।কোনরকম পা ফেলে সামনে এগোয় সে।
ব্যালকনিতে প্রবেশ করার সময় অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেয়ে ধুম করে মাথায় বাড়ি খায়।”উফ”বলে কঁকিয়ে উঠতেই আরিয়ান সচকিত হয়ে পেছনে ফিরে।অবয়ব দেখে বুঝতে পারছে এটা মায়া।

—“তুমি এখানে?”

—“আপনাকে ডাকতে এলাম।রাতে খাবেননা?”

—‘তন্ময় বলেনি?আমি রাতে খাবার খাইনা।”

তার দিকে এগিয়ে এলো মায়া।যেই হাতে সিগারেট ধরা সেই হাতের কব্জি ধরে মুখের সামনে এনে বললো,
—“তো কি খান?এসব ছাইপাঁশ?ফেলুন এটা।ইশ্ কি বিশ্রি গন্ধ!!।

সিগারেট পুড়ে ধোঁয়া উড়তেই হাত ছেড়ে একটু দুরে সরে যায় মায়া।একটু কেঁশে বলে,
—“ওটা ফেলে চলুন,খাবেন”।

আরিয়ান জোরে একটা টান দেয় সিগারেটে।প্রায় শেষের দিকে ওটা।মায়ার দিকে না তাকিয়েই সে বুঝতে পারে মায়া তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

—“তুমি যাও মায়া।রোজকার অভ্যাস আমার।রাতে আমি কখনোই খাইনা।তুমি খেয়ে নাও”।

জেদ চেপে বসে মায়ার।তন্ময় কে সে জোর গলায় বলে এসেছিলো সে আরিয়ানকে রাতে খাইয়ে ছাড়বে।
তন্ময় তাকে ঠাট্টার স্বরে বলেছিলো,”সে নাকি জীবনেও পারবেনা”।

মায়া একদম আরিয়ানের কাছাকাছি এসে দাড়ায়।একহাত বাড়িয়ে সিগারেটটা নিতে গেলেই আরিয়ান হাত উঁচু করে ফেলে।আরিয়ান তার থেকে বেশ লম্বা হওয়ায় হাতের নাগাল পায়না সে।

—“দিন ওটা।আপনি এখন খেতে না গেলে আমিও সিগারেট খাব।”

আরিয়ান তার দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
—“পাগলামি করোনা।যাও।”

মায়া আরিয়ানের এককাঁধে হাতের ভর দিয়ে পা উঁচু করে।আরেকহাত উপরে বাড়াতেই তার সম্পূর্ণ ভর যেয়ে পরে আরিয়ানের উপর।ব্যালেন্স রাখতে আরিয়ান একহাতে তার কোমড় পেচিয়ে ধরে।উঁচু হয়ে যাওয়ায় মায়ার গরম নি:শ্বাসগুলো আরিয়ানের গলার সামনে পরছে।ক্ষনে ক্ষনে নিজের নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছে সে।

—“হাত নামান বলছি।আমি খাবোই”

—“এসব তুমি খেতে পারবেনা মায়া।জেদ করোনা!।

একরকম ধস্তাধস্তি করেই সিগারেটটা নিয়ে নেয় মায়া।যদিও ঠি ক মতো সেটা ধরতেও পারেনা সে।আনাড়িভাবে কাঁপা হাতে সেটা মুখে দিতে নিলেই আরিয়ান দ্রুত বলে উঠে,

—“ওটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে মায়া।ঠোঁট পুড়ে যাবে।”

আরিয়ানের বলতে দেরি কিন্তু মায়ার ছেঁকা খেতে দেরি হয়না।গোলাপি ঠোঁটে জলন্ত ছেঁকা খেতেই আর্তনাদ করে উঠে সে।আরিয়ান তার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে ব্যালকনির লাইট অন করে দেয়।একহাতে ঠোঁট চেপে ধরে চোখ ছোট ছোট করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে মায়া।
আরিয়ান এগিয়ে আসে।

—“আপনার জন্য আমার ঠোঁটটা পুড়ে গেল।”

আরিয়ান তার হাত সরিয়ে দেয়।গোলাপি ঠোঁটগুলো রক্তিম লালবর্ণ ধারণ করেছে।ঘোর লেগে যায়।একটা শুকনো ফাঁকা ঢোক গিলে সে।
আরিয়ান মুখ ক্রমশ এগিয়ে গালে হাত রেখে বিরবির করে বলে,
—“আমি তোমাকে সিগারেট খেতে বলিনি,তুমিই তো জেদ করলে,তবে আমার দোষ দিচ্ছো কেন?।”

মায়া উওর দেয়না।প্রচন্ড অসস্তি হচ্ছে তার।দুরত্ব কেবল এক ইন্চি পরিমাণ হলেও আরিয়ান ঠোঁট মেলায় না।
ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
—“এই ঠোঁটে কেবল ঠোঁটের ছোঁয়াই মানায় মায়াবতী।পোড়া সিগারেটের ছোয়াঁ নয়।”

মায়া শিঁউরে উঠে।শরীরের পশম কাঁটা দিয়ে উঠে।আরিয়ানের কথার মানে বুঝতে অসুবিধা হয়না তার।ঝট করে মাথা নামিয়ে সে চাপা স্বরে বলে,
—“খেতে চলুননা প্লিজ।”

—————
ডাইনিং টেবিলে বসে ঠোঁটে বরফ ঘঁষছে মায়া।ছেঁকা টা যে বেশ ভালোভাবেই লেগেছে এখন বুঝতে পারছে।
প্রচন্ড জ্বলছে যে!আরিয়ান খাচ্ছে তার পাশের চেয়ারে বসে।
তন্ময় মুখে বিস্ময় নয়ে সোফায় বসে আছে।তার ভালো লাগছে আবার অবাকও লাগছে।আরিয়ান যত যাই হোক রাতের খাবার খায়না।মদ,সিগারেট খেয়েই রাত পার করে।আর আজকে মায়া বলতেই খেতে চলে এলো।মায়া তার দিকে ঠাট্টার দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করলে সে হেসে ফেলে,”মেয়েটার আসলেই অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।”

আরিয়ান খাওয়া শেষ করে বলে,
—“এখনও জ্বলছে?”

—“উহু,কমে গেছে।”

—“পাগল নাকি তুমি?এরকম কেও করে?”

—“আপনি প্রথমে আমার কথা শুনলেই পারতেন।আমার আর এমন করা লাগতোনা।”

আরিয়ান দীর্ঘ:শ্বাস ফেলে উঠে যায়।মায়াও আর কিছু বলেনা।
——————
বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে মায়া।বারবার সেই শ্বাসরুদ্ধকর সময়ের কথা মনে পরছে।আরিয়ানের কথাগুলো কানে বাঁজছে।আরিয়ান আজ তাকে মায়াবতী বলে সম্মোধন করেছিলো কেন?কোন বিশেষ কারণে?

~চলবে~

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-৮+৯

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৮

দুই হাতে মাথা চেপে লকআপে বসে আছে রাশেদ চৌধুরি।চোখদুটো বন্ধ করে যথাসম্ভব ঠান্ডা মাথায় কিছু একটা চিন্তা করছে ।হঠাৎ জুতার শব্দে মাথা তুলে তাকায় সে।ভাবে আজিজ এসেছে তাকে ছাড়িয়ে নিতে।কিন্তু তার বদলে আরিয়ানকে দেখে দ্রুত উঠে সামনে এগিয়ে যায়।।ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,
—“এসব কিছু তুই করেছিস তাইনা?আমাকে ফাঁসিয়েছিস?

আরিয়ান দু’হাত পকেটে গুঁজে দাড়ায়।ব্যঙ্গাত্তক কন্ঠে বলে,
—“আমি তোকে ফাঁসাইনি রাশেদ।শুধু তোর নোংরা সত্যিটা জনগনের সামনে নিয়ে এসেছি।

রাশেদ চৌধুরি রাগে গজগজ করে।
আরিয়ান আবার বলে,

—“তুই ই বল তোর বিরুদ্ধে করা একটা অভিযোগও কি মিথ্যা?নিজেকেই জিজ্ঞেস করে দেখ।

রাশেদ চৌধুরি হিংস্র চোখে তাকিয়ে থাকে আরিয়ানের দিকে।দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে বলে,
—“তুই কি ভেবেছিস আমাকে আটকে রাখা এত সহজ?কয়েক ঘন্টার মধ্যই জামিন হয়ে যাবে আমার।টাকা দিয়ে এই পৃথিবীতে সব হয় সব।একবার শুধু বের হই।তোর এই নীতিকথা তখন নিজেকেই শোনাস।

আরিয়ান তাচ্ছিল্যর স্বরে হেসে বসে,
—“বের হয়ে কি করবি তুই?ইলেকশনে তোকে দাঁড়াতে দিবে ভেবেছিস?মিনিস্টার পদ থেকে বহিষ্কার করার পর তোর থাকার বাড়িটা থেকেই তোকে বের করে দিবে।আর সেখানে তুই টাকার গরম দেখাচ্ছিস?হাউ ফানি।

—“খুব বড় ভুল করছিস তুই আরিয়ান।খুব বড় ভুল।আমার সাথে শত্রুতা করার পরিণাম তোর জন্য ভালো হবেনা।”বলেই জেলের লোহার শিঁকগুলোতে জোরে বাড়ি মারে রাশেদ চৌধুরি।

দু কদম পিছিয়ে ভয় পাওয়ার অভিনয় করে আরিয়ান।মুহুর্তেই চোখ মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটে ওঠে তার।
কাঠ কাঠ কন্ঠে সে বলে,

—“তুই খুব বোকা রাশেদ।খুব বেশিই বোকা।আমাকে এখনো চিনতে পারলিনা।কি আর করার?আমিই চিনিয়ে দেই।
বলে পকেট থেকে একটা ছবি বের করে আরিয়ান।রাশেদ চৌধুরির সামনে ধরে বলে,”চিনতে পারছিস?”

রাশেদ চৌধুরি চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।ছবিটা দেখে মুহুর্তেই চমকে উঠে সে।শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।কোনরকম তোতলাতে তোতলাতে সে বলে,

—“এই..এই ছবি তো..তোর কাছে..কি করে এলো?এর সাথে..তো..তোর কি সম্পর্ক?কে তুই?”

আরিয়ান বাঁকা হেসে বলে,
—“ভয় পেলি?আর আমি কে এতটুকু বোঝার ক্ষমতা তোর আছে আশাকরি।”

রাশেদ চৌধুরি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।এতবছর আগের স্বৃতি আবারো তার সামনে।মাথায় কিছু ঢুকছেনা তার।

রাশেদ চৌধুরির এমন চেহারার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসে আরিয়ান।ছবিটা সন্তর্পণে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে।তারপর ক্ষোভ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

—“তুই যেমনটা করেছিলি ঠি ক তেমনটাই তোকে ফিরিয়ে দিব।বি রেডি।”

আর একমিনিটও সেখানে দাড়ায়না আরিয়ান।গটগট শব্দ তুলে বেরিয়ে যায়।রাশেদ চৌধুরি ভীত চোখে দাড়িয়ে থাকে।তাহলে কি তার পরিণতিটাও হবে ঠি ক ততটাই ভয়াবহ?

—————
—“বাবা এমনটা কখনোই করতে পারেনা ইতি।আমি কখনোই এসব বিশ্বাস করিনা।”

—“কিন্তু ম্যাম পুলিশতো বাড়িতেই প্রমান পেয়েছে।”

—“তো তুমি কি বলতে চাচ্ছো?এসব বাবা করেছে?হ্যাঁ বলো?উওর দাও।”
চিৎকার করে উঠে মায়া।

—“ম্যাম আপনি শান্ত হন।এতটা স্ট্রেস নিয়েন না প্লিজ।”

শব্দ কান্না করে দেয় মায়া।তার বাবা এরকম নোংরা কাজে জড়িত থাকতে পারে ভাবতেই পারছেনা না সে।কান্না গুলো আটকে যাচ্ছে গলায়।বাড়ির বাইরে আবার হইচই শোনা যাচ্ছে।সাংবাদিকরা এসেছে মনেহয়।
কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায় মায়ার।ইতি খুব সাবধানে পানির সাথে ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে খাইয়ে দেয় তাকে।কিছুক্ষনের মধ্যই ঘুমে ঢলে পরে সে।ইতি তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
চোখমুখ পানি দিয়ে মুছিয়ে দিয়ে গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে দীর্ঘ: শ্বাস ফেলে।

রাশেদ চৌধুরির নোংরা খেলার শিকার সে ও হয়েছিলো।দু’বছর আগে তাকেও বিক্রি করার জন্যই নিয়ে এসেছিলো রাশেদ চৌধুরি।কিন্তু সেদিন কোন ঝামেলা হওয়ায় একদিনের জন্য এ বাড়িতে রাখা হয়েছিলো তাকে।সেদিন রাতেই ভাগ্যক্রমে মায়ার চোখে পরে যায় সে।দয়া হওয়ায় মায়াই রাশেদ চৌধুরিকে বলে তাকে এ বাসায় কোন কাজ দিয়ে দিতে।তখন থেকেই সে এখানে আছে।মায়ার কাছে সে অনেক কৃতজ্ঞ।
তবে রাশেদ চৌধুরির ভয়ে সে কখনো এই ব্যাপারে কিছু বলেনি মায়াকে।

——–——
গ্লাসে ড্রিংক নিয়ে বসে আছে আরিয়ান।পরপর দুই বোতল ড্রিংক শেষ করেছে সে।তবুও নেশা হচ্ছেনা।
গ্লাসের ড্রিংকটা এক চুমুকে শেষ করে শব্দ করে কাঁচের গ্লাসটা টেবিলে রাখে আরিয়ান।
আরো একগ্লাস ঢালতে গেলে তন্ময় এসে থামিয়ে দেয় তাকে।বোতলটা ছুড়ে ফেলতেই সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।আরিয়ান ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বলে,

—“কি সমস্যা?ভাঙলি কেন?যা আরেক বোতল নিয়ে আয়”

—“আপনি আর কত খাবেন এগুলা?সকাল থেকে কিছু খাননি।এখন বোতলের পর বোতল এসব খেলে হবে?”

—“কি করবো বল?ওই রাশেদ চৌধুরি….”

—“আপনি অসুস্থ হলে রাশেদ চৌধুরিকে শাস্তি দিবেন কি করে?আর মাত্র একটা দিন।তারপরই তো এতদিনের ক্ষোভ মেটাতে পারবেন।এত বছর অপেক্ষা করেছেন আর একটা দিন পারবেননা?”

—“তুই…তুই জ্ঞান দিচ্ছিস আমাকে…?একটু থেমে গলার স্বর নামিয়ে সে আবার বলে,আচ্ছা মায়ার কোন খবর নিয়েছিস?মেয়েটাকি খুব কান্নাকাটি করছে?

তন্ময় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নরম গলায় বলে,
—“ভাই আপনার কন্ঠ জড়িয়ে আসছে।দয়া করে একটু রেষ্ট নেন।একা আর কতদিকে সামলাবেন?”

আরিয়ান নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকায়।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তার।সোফায়ই মাথা এলিয়ে দেয় সে।চোখ বন্ধ করতেই মায়ার হাস্যজ্জল মুখটা ভেসে উঠে।
তন্ময় যেয়ে ঠি ক করে শুইয়ে দেয় তাকে।সার্ভেনট দিয়ে কাঁচগুলো পরিষ্কার করিয়ে দেয়।আরিয়ানের ঘুমন্ত মুখটায় দিকে তাকিয়ে মাথার নিচে একটা বালিশ দিয়ে দেয়।সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে,আরিয়ান মায়ার প্রতি দুর্বল।একটু হলেও দুর্বল।নয়তো শত্রুর মেয়ের প্রতি কে এতটা কেয়ার করে?”
তন্ময় নিজেও জানেনা এর ভবিষ্যত কি।এখন শুধু কালকের অপেক্ষা।সব তাদের প্ল্যানমতো হলেই হয়।

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৯

সকাল এগারোটা…
জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে রাশেদ চৌধুরি।তবে ইলেকশনের নমিনেশন থেকে বাদ করে দেয়া সহ,মিনিস্টার পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে।চূড়ান্ত অপমানিত আজ সে।থানার বাইরে প্রেস মিডিয়ার ভীড়।বের হতেই একঝাঁক প্রশ্নের সম্মুখীন হলো সে।কোনরকম সেগুলো এড়িয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলো।তারপাশে বসলো আজিজ।
গাড়ির দরজা ভালোকরে লক করে দিয়ে রাশেদ চৌধুরিকে বললো,
—“স্যার,এখন কি করবেন?বিকাল পাঁচটা নাগাদ বাড়ি সিলগালা করে দিবে।এরপর?”

কোনরকম চিন্তা না করেই রাশেদ চৌধুরি ফটাফট বললো,
—“বিকালের আগেই আমরা রওনা দিয়ে দিব।ময়মনসিংহে যেই বাসাটা আছে সেখানেই উঠব।আমার সব ব্যাংকের টাকা ক্যাশ করে বের করে ফেলার ব্যাবস্থা করো।”

—“আচ্ছা স্যার।”

—“এই কল রেকর্ডিং কিভাবে ফাঁস হলো আজিজ?আরিয়ানের হাতে কিভাবে গেল এটা?”

—“জানিনা স্যার”(অস্পষ্ট কন্ঠে বললো আজিজ)।

রাশেদ চৌধুরি একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।হঠাৎ যে এতকিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি সে।
মাথায় এখন শুধু মায়ার চিন্তাই ঘুরছে।আরিয়ানের চোখে কাল যা ক্ষোভ দেখেছে তাতে স্পষ্টই নিজের ধ্বংসটা দেখতে পেয়েছিলো সে।তার কিছু হয়ে গেলে মায়ার কি হবে?এই পৃথিবীতে একমাত্র নিজের মেয়েকে সে সত্যিকারের ভালোবাসে।সবদিকে সে প্রচন্ড নিকৃষ্ট হলেও পিতা হিসেবে তার তুলনা হয়না।
মনে মনে দীর্ঘ:শ্বাস ফেলে সে।মায়াকে একটা নিরাপদ জায়গাঁর ব্যবস্থা করে দিলে সে নিশ্চিত হতে পারতো।
——–—–—–—
গাড়ির শব্দ শুনেই দৌড়ে নিচে নামলো মায়া।চোখ মুখ ফোলাফোলা।রাশেদ চৌধুরিকে দেখেই সে “বাবা”বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।স্বস্নেহে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো রাশেদ।
নিচু গলায় বললো,
—“কাঁদেনা মা।আমি এসে পরেছিতো”।

—“জানো বাবা,ওরা কিসব বলছে তোমার নামে?আমিতো জানি তুমি কখনো খারাপ কাজ করতে পারোনা।তাইনা বাবা?”

রাশেদ চৌধুরি মায়ার প্রশ্নের উওর দেয়না।মায়াকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,
—“আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে মা।বিকেলেই রওনা দিব।তুমি নিজের সবকিছু দ্রুত গুছিয়ে নাও।”

—“কেনো বাবা?”

—“আমি পরে তোমাকে বলবো।এখন যাও সব গুছিয়ে নাও।ঠিকাছে?”

মায়া সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়।বাবার চেহারায় এমনিই চিন্তার ছাপ এখন আরো প্রশ্ন করে সে ঝামেলা বাড়াতে চায়না।চুপচাপ নিজের ঘরে এসে পরে।ইতি সব গুছিয়ে দিতে থাকে।
মায়া উদাস মনে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।কেমন একটা দোটানার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে।
নিজের বাবাকে সে কিভাবে অবি শ্বাস করবে?অথচ সব প্রমান তার বাবার বিরুদ্ধেই।হাহ্।আর ভাবতে ইচ্ছা করছেনা।যা হচ্ছে নিশ্চয়ই ভালোর জন্যই হচ্ছে।বাড়িটা আজ কেমন যেন নির্জীব।ভালো লাগছেনা তার।

—“ম্যাম?”

ইতির ডাকে পিছে ফিরলো মায়া।মলিন হেসে বললো,
—“বলো ইতি।”

—“আপনার সব গুছিয়ে দিয়েছি।আধঘন্টা পরেই তো বের হবেন।

—“হু।”

—“সাবধানে থাকবেন ম্যাম”

—“সাবধানে থাকব মানে?তুমিও যাবে আমার সাথে।”

—“সেটা কি আর হয় ম্যাম?আমি সামান্য সার্ভেনট।তাছাড়া বড়স্যার রাগ করবেন”।

—“ফালতু কথা বলোনা।আমি বলবো বাবাকে।ইট’স ফাইনাল।”

ইতি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।মায়া মেয়েটা এতো ভালো কেনো?একদম বাবার উল্টো।হয়তো মায়ার মা অনেক ভালো ছিল।

———––——
গাড়ি চলছে উদ্যম গতিতে।নির্জন রাস্তা।চারিদিকে স্তব্দ একটা ভাব।গাড়ি ড্রাইভ করছে আজিজ।পাশের সিটে বসেছে রাশেদ চৌধুরি।চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।এই পরিস্থিতিটা তার খুব চেনা।খুব কাছের একজনকে এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে দেখেছে সে।অজানা ভয় হচ্ছে,তার পরিণতিওকি আজকে সেরকম হবে?
পিছনের সিটে মায়া আর ইতি।গাড়ির জানালা খুলে রেখেছে মায়া।সাঁই সাঁই করে বাতাস ঢুকছে।

হঠাৎই ব্রেক কষলো আজিজ।রাশেদ চৌধুরি বিচলিত গলায় বললো,
—“কি হলো আজিজ?গাড়ি থামালে কেনো?”

আজিজ সামনে ইশারা করলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো একটা কালো রংয়ের গাড়ি একদম তাদের গাড়ির বরাবর দাড়িয়ে আছে।
মায়া এতক্ষন চোখ বন্ধ করে ছিলো।গাড়ি থেমে যাওয়ায় চোখ খুললো সে।ততক্ষনে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে রাশেদ চৌধুরি।সাথে আজিজও।মায়া জানালা দিয়ে একবার বাইরে তাকিয়ে দেখলো কালো কাপড় পরা বন্দুকধারী অনেকগুলো লোক দাড়িয়ে আছে।সে ভীত কন্ঠে বললো,
—“কি হয়েছে ইতি?এরা কারা?”

—“আমিতো জানিনা ম্যাম।আপনি ভয় পেয়েননা”।

কালো রংয়ের গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো আরিয়ান।আপাদমস্তক কালো পোশাক তার।হাতে একটা রিভলবার ঘোরাচ্ছে সে।
রাশেদ চৌধুরি দ্রুত আজিজের বললো,
—“গাড়ি থেকে আমার বন্দুকটা দাওতো আজিজ।”

আজিজ দিলোনা।ঠায় দাড়িয়ে রইলো।রাশেদ চৌধুরি ভ্রু কুচকালেন।আরিয়ান বাঁকা হেসে বললো,

—“বন্দুক দিয়ে করবি রাশেদ?তাছাড়া আজিজ তোকে বন্দুক কোথ থেকে দিবে?তোর পুরা গাড়ি খুঁজেও কোন অস্ত্র পাবিনা এখন।”

রাশেদ চৌধুরি চমকালেন।চোখে মুখে অবিশ্বাস নিয়ে আজিজের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—“আজিজ?তুমি?”

আজিজ একগাল হেসে বললো,
—“উনারা অনেক টাকা দিয়েছেন স্যার”।

রাশেদ চৌধুরি গর্জে উঠে বললেন,
—“আজিজ!!..ইউ রাসকেল”।

আরিয়ান একটু এগিয়ে এসে বললো,
—“আহা…ওকে ধমকাচ্ছিস কেন?ও তো তোর মতোই টাকার পাগল।এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি?আর হ্যাঁ,মিলিয়ে দেখ ওকে যেই গাড়িটা দিলি সেটা কিন্তু তোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।তাই নয় কি?”

আরিয়ানের নির্দেশে দুজন লোক এসে রাশেদ চৌধুরির মাথায় বন্দুক ঠেকালো।ট্রিগারে চাপ দিতে গেলেই হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো আরিয়ান।
বাবার মাথায় বন্দুক ঠেকালো দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারলোনা মায়া।ইতির মানা করা সত্তেও গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো সে।বাবাকে এই অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে বললো,
—“বাবা?কে এরা?কি করছে এসব?”

রাশেদ চৌধুরি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
—“তুমি ভেতরে গিয়ে বসো মা।”

মায়া তার কথা শুনলোনা।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো তার।সামনে তাকিয়ে আরিয়ানকে দেখে আরো একদফা অবাক হলো সে।
আরিয়ান একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।এই মেয়ের চোখের পানি কেন যেন সহ্য হয়না তার।

—“মেয়ের চোখে তো নিজেকে একদম দেবদূত বানিয়ে রেখেছিস।আজ অন্তত ওর ভুলটা ভাঙিয়ে দে।বলে দে কতোটা জঘন্য তুই”।

মায়া আরিয়ানের মুখে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো।সর্বপ্রথম সে ভাবলো,”আরিয়ান তার বাবাকে তুই করে বলছে কেন?বাবা কোন প্রতিবাদ করছেনা কেন?”তার সরল মনে এতো প্যাঁচ ঢুকলোনা।তবে এতটুকু বুঝলো যে আরিয়ান লোকেরাই রাশেদের মাথায় বন্দুক ধরে রয়েছে।সে কান্নামাখা কন্ঠে বললো,

—“আপনি কি বলছেন এসব?বাবাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।”

কয়েকজন তার দিকে এগিয়ে ধরতে নিলেই আরিয়ান তাদের থামিয়ে দিয়ে বললো,
—“ওর গায়ে হাত দিবিনা কেউ।পিছিয়ে যা।”

রাশেদ চৌধুরি চোখমুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে।মায়া দৌড়ে গিয়ে আরিয়ানের কাছে গেল।আরিয়ানের একবাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,
—“কেন করছেন এমন?ওদেরকে বলুননা বাবাকে ছেড়ে দিতে।বাবা কিছু করেনি তো।”

আরিয়ান তাকালোনা মায়ার দিকে।মায়ার হাতটাও সরালোনা বাহু থেকে।রাশেদ চৌধুরিকে উদ্দেশ্য করে ভয়ংকর কন্ঠে চিৎকার করে বললো,

—-“বল,তুই করিসনি এসব জঘন্য কাজ?অসহায় মেয়েদের নিয়ে নিয়ে দেহব্যাবসা করাসনি?…..বিশ বছর আগে আমার বাবার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে নির্মমভাবে মারিস নাই?আমার মাকে… আর বলতে পারলোনা আরিয়ান।গলা ধরে এলো তার।নিজেকে সামলে নিয়ে সে বললো,”আজকেও বলবি তুই নির্দোষ?কিছুই করিস নাই তুই?কিছুই না?

—“হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি।সব করেছি আমি।সব করেছি।”

~চলবে~

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-৬+৭

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৬

সকালে বাগানে বসে পত্রিকা হাতে নিয়ে বাঁকা হাসলো রাশেদ চৌধুরি।কালকের হামলার ব্যাপারে কোন আর্টিকাল বের হয়নি।এজন্য অবশ্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।দিতে হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।দুই সপ্তাহ পর ইলেকশন তার আগে কোন কাহিনী না হওয়াই ভালো।এসবের চক্করে তার হাত থেকে ক্ষমতা চলে গেলে।তার ভাবনার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হয় আজিজ।দাঁত বের করে হেসে বলে,

—“স্যার,আজ রাতে বিশজন মেয়ে আনবে।আপনি একটু যাচাই বাছাই করে দিতেন…

—“কি যে বলো আজিজ!ওই নোংরা জায়গায় আমি যাবো?তুমি ম্যানেজ করে নিও।আর এতো যাচাই বাছাইয়ের কি আছে?যাদের জন্য কাস্টমার বেশি রেট ধরবে তাদের নিয়ে নিবে”।

আজিজ মনে মনে বলে,”ওই নোংরা জায়গায় যাবেনা।আবার ওখানের টাকা গুনে গুনে পকেট ভর্তি
করতে ভুল হয়না।হুহ্।কিন্তু বাইরে সে মাথা নাড়ায়।মুখে বলে,
—“আর বাকিদের?”

রাশেদ চৌধুরি বিশ্রিভাবে ব্যঙ্গ করে বলে,
—“আমাদের হিসাব টাকা দিয়ে।বাকিদের কোন গতি না হলে বাঁচিয়ে কি লাভ?”সেগুলা রিজেক্ট জিনিস।

রাশেদ চৌধুরির ইঙ্গিত বুঝতে পারে আজিজ।সেও বিশ্রিভাবে হাসে।রাশেদ চৌধুরি চায়ে চুমুক দেয়।
আজিজ বাগানের এককোণে তাকায়।মায়া দাড়িয়ে আছে সেখানে।একজন বডিগার্ডকে গাছে উঠিয়েছে সে।
হয়তো ফল পেড়ে দেয়ার জন্য।হাত উঁচিয়ে কিছু একটা নির্দেশ করছে সে।পরণের কামিজ উঠে কোমড়ের কিছু অংশ বেরিয়ে আছে।সেদিকেই লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকায় আজিজ। দৃষ্টিতে উপচে পরছে খারাপ বাসনা।
কথায় আছেনা,”তুমি যা করবে ঠি ক তাই ফিরে আসবে তোমার কাছে।”
———————
একটা কল রেকর্ডটিং বাজিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছে আরিয়ান।চোখের ভ্রু কুচকানো।ঠোঁটে রহস্যময় হাসি।
রেকর্ডিং টা শেষ হতেই “ইয়েস”বলে আনন্দসুচক অনুভূতি প্রকাশ করে সে।তন্ময় ও হাসে।এই জিনিসটার পিছনে কম ঘুরেনি তারা।

—“এটাইতো চাচ্ছিলাম তন্ময়।Finally we got it.”

—“জি ভাই”।

—“এবার শুধু রাশেদ চৌধুরি দেখবে।এই নোংরা খেলা শুরুতো করেছিলো সে কিন্তু এর শেষ করবো আমি।ইলেকশনের আর দুই সপ্তাহ বাকি না?”

—“জি”।

আরিয়ানের চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব।হাতের দু আঙ্গুল দিয়ে ভ্রু ঘষে সে বলে,
—“রেকর্ডিংটা সাবধানে রাখিস।কারো হাতে যেন না পরে।”

তন্ময় মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান চোখ বন্ধ করে।চোখগুলো জ্বালা করছে বেশ।পুরনো সৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।মুখে তার ধ্বংসাত্তক নেশা।হিংস্রক থেকেও হিংস্রময় ভাব।
———————
আম গাছের নিচে আমের পশরা সাজিয়ে ফেলেছে মায়া।তবুও তার চোখেমুখে বিরক্তি।সে যেই বড় আমটার কথা বলছে সেটাতো দিতেই পারছেনা লোকটা।হাত উঠিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করে বলে,
—“আরে আর বেশি দুরে নাতো।আপনি হাতটা একটু বাড়ান।”

—“ম্যাম?”

পিছন থেকে হঠাৎ ডাকে চমকে উঠে মায়া।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে একজন বডিগার্ড দাড়িয়ে আছে।দৃষ্টি নিচের দিকে।
একে এর আগে দেখেনি সে।হয়তো নতুন এসেছে।তাই মিষ্টি স্বরে বলে,
—“জি বলেন”।

বর্ডিগার্ডটা মাথাটা আরে একটু নুইয়ে দ্বিধা ভরা কন্ঠে বলে,
—“ম্যাম,হাতটা নামান।আপনার জামা উঠে আছে।”

সাথে সাথে হাত নামিয়ে ফেলে সে।কোনরকম কিছু বলার আগেই লোকটা সরে যায়।ভীষণ লজ্জা পেয়েছে মায়া।

ইতি ভিতরে গিয়েছিলো।মায়ার জন্য পানি আনতে।পানি হাতে এগিয়ে আসতেই মায়াকে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“কি হয়েছে ম্যাম?”

মায়া হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নেয়।একচুমুক পানি খেয়ে মুচকি হেসে বলে,
—“কিছু হয়নি”।

হঠাৎই ইতি বলে উঠে,
—“আচ্ছা আরিয়ান স্যার কি আপনার পূর্ব পরিচিত?”

—“আরিয়ান কে?”

ইতি অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
—“কাল রাতে যিনি আপনাকে বাঁচিয়েছিলো”।

মায়ার বোধগম্য হয় বিষয়টা।লোকটার নাম তাহলে”আরিয়ান”।নামটা দুই তিনবার মনে মনে উচ্চারণ করে সে।মৃদু হেসে বলে,

—“নাহ্,বেশি দিনের পরিচিত না,দেখনা নামটাই জানিনা।

—“খুব কেয়ার করছিলো আপনার।এমনিতেতো উনাকে সবাই ভয় পায়।”

—“কেন ভয় পায় কেন?”

—“উনি খুব রাগী যে।”

মায়া অবিশ্বাসের চোখে তাকায়।রাগী?কই তার সাথেতো কখনো রাগ দেখায়নি আরিয়ান।সে তো তাকে ভয় পায়না।বরং সব ভয় চলে যায়।মনে হয়,উনি থাকলে ভয় কিসের? বাবার পর বোধহয় সে তাকেই সবচেয়ে বিশ্বাস করে।খুব বেশি বিশ্বাস করে….

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৭

বড় একটা শপিংমলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মায়া।তার পাশাপাশি হাঁটছে ইতি।মাসের একটা দিন সে আসে নতুন জামাকাপড় কিনতে।আরো যা যা প্রয়োজন হয় তার সেগুলো কিনতে।রাশেদ চৌধুরিও এসবে কখনো মানা করেনা।তার তো মা নেই যে তার জন্য জামাকাপড় পছন্দ করে কিনে আনবে। সে জন্য মায়াকেই আসতে হয়।
তবে আজকের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন।সবসময় এখানে আসলে তার সাথে থাকে কয়েকজন ছদ্দবেশী দেহরক্ষি।যেহেতু পাবলিক প্লেস তাই কেউ তাকে চিনেনা।তাই বিপদের শঙ্কাটাও থাকে কম।
সবসময় আশপাশ ঘিরে অনেকগুলো লোক থাকলেও আজকে তার সাথে আছে শুধু ইতি আর আর একজন বডিগার্ড।বলা বাহুল্য,এটা সেদিনের লোকটাই যে তাকে জামা নিয়ে সতর্ক করেছিলো।

মায়া ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার দেখে।বেশ ভালো বডিগার্ডটা।এদিক উদিক তাকাতে তাকাতে তাদের পিছে পিছে হাঁটছে।দু’হাতে শপিং ব্যাগ।কি বলে যে বাবাকে মানিয়েছে মায়া নিজেও জানেনা।তবে মনটা আজকে ফুরফুরে লাগছে।সবসময় মনে হয় সে একটা জালে বন্দি।যেখানে শান্তিময় নি:শ্বাস নেয়ার সুযোগটাও নেই।

এসব ভাবতে ভাবতেই বেরিয়ে এলো তারা শপিংমল থেকে।প্রায় একঘন্টা ঘুরে ঘুরে সব জিনিস কিনে নিয়েছে
মায়া।লোকটা যেয়ে ব্যাগগুলো গাড়িতে রেখে দিলো।তারপর তার দিকে ফিরে বললো,

—“ম্যাম,কিছু খাবেন?

মায়া চমকায়।কেউ কখনো তাকে এভাবে কিছু বলেনা।সবাই শুধু দায়িতই পালন করে যায়।মায়া কিছু বলার আগেই ইতি বললো,
—“ম্যাম সেই দুপুরে খেয়েছে।এখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো।যান আপনি কিছু নিয়ে আসেন।

লোকটা চলে যেতেই তাদের একদম সামনে একটা গাড়ি থামলো।আর ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলে হ্যাচকা টানে মায়াকে ভিতরে বসিয়ে দিলো।
—————–
রাশেদ চৌধুরির বাসার সামনে তুমুল ভীড়।সাংবাদিকরা জড়ো হয়ে আছে।পুলিশের গাড়ি দাড়িয়ে আছে দুইটা।বাড়ির ভেতর কঠিনমুখে দাড়িয়ে আছে রাশেদ।তার পাশে আজিজ।পুরো বাড়ি সার্চ করা হচ্ছে।ওলোট পাল্ট করা হচ্ছে সবকিছু।

—“অফিসার,আপনি আমাকে এভাবে হেনস্তা করতে পারেন না।ইউ ডোন্ট হ্যাভ দ্যাট রাইট”।

—“I have that right মি.চৌধুরি।আপনার বিরুদ্ধে প্রমান পেয়েছি আমরা।”

—“আমার ক্ষমতা সম্পর্কে ভুলে যাবেন না কিন্তু…আপনাকে চাকরি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করতে আমার দুই মিনিটও লাগবেনা”

—“এই ক্ষমতার গরম আর কয়দিন?আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন কয়দিন পরই ইলেকশন।জনগন যে পরিমাণে ক্রুদ্ধ আপনার উপর।পরিণতিটা আন্দাজ করতে পারছেন তো?বলেই হাসে অফিসার সজীব।

—“তোকে তো আমি…?”

-“কাম ডাউন মি.চৌধুরি।একজন সিনিয়র অফিসারকে তুইতুকারি করার অপরাধে কিন্তু আপনাকে জেলে ভরতে আমারো দুইমিনিট লাগবেনা”।

পরিস্থিতি বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আজিজ কাঁচুমাচু করেদ্রুত বলে,
—“স্যার,শান্ত হন।মাথা গরম করেননা।”

রাশেদ চৌধুরি জোরে একটা নি:শ্বাস নেয়।মাথা রীতিমত ঘোরাচ্ছে তার।
তখনই একজন কনস্টেবল আসে।অফিসার সজীবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“স্যার,এদিকে আসুন।”

অফিসার সজীব রাশেদ চৌধুরির দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে একটু হাসে।রাশেদ চৌধুরির মাথায় আগুন ধরে যায়।অহংকারে যার মাটিতে পা পারেনা,তাকে আজ একটা সামান্য অফিসার তিরস্কার করছে।
———–—–—
মায়া হতভম্ব হয়ে চিল্লিয়ে বলে,
—“আপনি?”

আরিয়ান একটু কাছে যেয়ে মায়ার সিটবেল্ট বেঁধে দেয়।

—“কি করছেন?আমি বাসায় যাবোতো।”

আরিয়ান নিজের সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে,
—“তুমি এখন আমার সাথে যাবে।”

মায়া অবাক হয়।আরিয়ানের কন্ঠে অধিকার প্রকাশ পাচ্ছে।সে মানা করার মতো কিছু খুঁজে পায় না।
আমতা আমতা করে বলে,
—“কিন্তু..

জানালায় ঠকঠক আওয়াজে সেদিকে তাকায় মায়া।হাতে খাবারের প্যাকেট আর কোকের বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে বডিগার্ডটা।মুখে হাল্কা হাসি।আরিয়ান ঝুকে গিয়ে মায়ার পাশের জানলাটা খুলে দেয়।খাবারটা হাতে নিয়ে বলে,

—“তুমি ইতিকে নিয়ে চলে যাও আমি ওকে সময়মতো পৌছে দেবো।”

মায়া কিছু বলার আগেই আরিয়ান জানলার কাঁচ উঠিয়ে দেয়।মায়ার হাতে খাবারের প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে নিজের সিটে বসে।

—“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো?”

মায়া দুইদিকে মাথা নাড়ায়।যার অর্থ”নাহ্”।

আরিয়ান একটু হাসে।মেয়েটা কত সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলে।এই সরলতায় সে বিমোহিত।

আরিয়ান জানে রাশেদ চৌধুরির বাসায় এখন তুলকালাম অবস্থা।সেইসব ঝামেলা থেকে মায়াকে দুরে রাখতেই সে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে।বডিগার্ড ছেলেটা তারই পাঠানো।সেদিনের হামলার পর মুলত মায়ার খেয়াল রাখার জন্যই তাকে পাঠিয়েছে সে।কারণ তার দৃঢ় বিশ্বাস হামলাকারীরা বাড়ির ভিতরেই আছে।

গাড়ি থামে নদীর ধারে।জায়গাটা বেশ সুন্দর।লোকজনের আনাগোনাও কম।প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় চারদিকের আলোটাও কমে এসেছে।মায়ার হাত ধরে তাকে গাড়ি থেকে নামায় আরিয়ান।এগিয়ে যায় নদীর দিকে।
মায়া মুগ্ধ নয়নে চারপাশে দেখছে।আজ পর্যন্ত সে কখনো এরকম জায়গায় আসেনি।আর এরকম একা একা তো নয়ই।প্রাণ ভরে শ্বাস নিলো সে।নিজেকে মুক্ত পাখি মনে হচ্ছে।প্রচন্ড খুশিতে মুখে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে।
আরিয়ান আড়চোখে তাকায়।মায়াকে এই প্রথম হাসতে দেখছে সে।তার মুখেও মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।অল্পতেই কেউ এতটা খুশি হতে পারে?নদীর ধারে যেয়ে দাড়ায় তারা।সুর্য ডুবে যাচ্ছে।তার সোনালি আভা পরেছে নদীতে।সেই আভা যেন মায়ার চোখে মুখেও।তার বাম হাত আরিয়ানের হাতে আবদ্ধ।সেই হাত হাল্কা ঝাঁকিয়ে সে বলে,

—“আপনি জানেন আমি কখনো এরকম জায়গায় ঘুরতে আসিনি।কখনোই প্রকৃতির এতটা সৌন্দর্য উপভোগ করিনি।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”

আরিয়ান তার বাহু জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়।চুলের ভাঁজে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।মায়া লজ্জা পেলেও কিছু বলেনা।চুপ করে আরিয়ানের সাথে লেপটে থাকে।তার স্বৃতির পাতায় জমা হচ্ছে একরাশ স্বরণীয় প্রহর।

—————
বাসায় ঢুকেই মায়া লক্ষ্য করে ভয়াবহ নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে,সার্ভেনটরা সবাই বাসা পরিষ্কার করছে।সবকিছু কেমন ওলোট পালোট।হলরুমে লাগানো বড় টি ভিতে নিউজের শব্দ কানে আসছে।

“কল রেকর্ডিং ফাঁস।বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র,মাদকদ্রব্য উদ্ধার।নানা দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রমান স্বরুপ
সন্ধ্যায় নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরিকে”…

~চলবে~

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-০৫

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৫

অন্ধকার রুমে ভয়ে জমে আছে মায়া।একটা ছায়ামুর্তি যে তার দিকেই এগিয়ে আসছে বেশ বুঝতে পারছে সে।
গটগট পায়ের শব্দ তুলে ক্রমশ কাছে এসে ধারালো কিছু চেপে ধরে তার গলায়।ফুঁপিয়ে উঠে মায়া।
লোকটা কর্কশ কন্ঠে বলে,
—“একদম শব্দ করবিনা।চুপচাপ আগে চল।”বলেই বিশ্রিভাবে হাসে লোকটা।মনে মনে ভাবে,এরে আজকে নিতে পারলে তার আর কোনোদিন টাকার অভাব হবেনা,মায়ার বিনিময়ে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পাবে সে,এজন্যইতো এতো প্ল্যান,হামলা।
মায়া একপা আগে বাড়াতেই হঠাৎ গুলির শব্দে আৎকে উঠে।সঙ্গে সঙ্গেই পিছনের লোকটা লুটিয়ে পরে।।মায়া পিছনে তাকায়।লোকটা মরে গেছে।অন্ধকারেও সে বুঝতে পারে পায়ের নিচে তাজা রক্ত।মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।
সামনে তাকানোর আগেই কেউ একজন একহাতে কোমড় পেচিয়ে তাকে বুকে টেনে নিয়ে অস্থির কন্ঠে বললো,

—“ইউ ওকে?কোথাও লাগেনিতো?”

কন্ঠটা চেনে মায়া।এটা আরিয়ান।চরম ভরসায় দু’হাতে আরিয়ানকে জাপটে ধরে মায়া।এতটা জোরে ধরেছে যেন আরিয়ানের শার্ট ভেদ করে নখ গেঁথে যাচ্ছে পিঠে।আরিয়ান কিছু বলেনা।মেয়েটার শরীরের কাঁপুনিই জানান দিচ্ছে ঠি ক কতটা ভয় পেয়েছে সে।বন্দুক হাতেই সে মায়ার পিঠে আলতো করে হাত রাখে।মায়ার ভেজা চুলের পানিতে ভিজে যায় হাত।ঘর তখনো অন্ধকার।এমনকি সারা বাড়িই অন্ধকার।গোলাগুলির শব্দ থেমে গেছে।
আরিয়ান আস্তে করে বলে,
—“আমি একটু বাইরেটা দেখে আসি?”

মায়া কান্নামিশ্রিত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
—“না,প্লিজ..যাবেন না।”

—“আচ্ছা যাবোনা।…কাঁদেনা।”

বন্দুকটা পকেটে ঢুকিয়ে ফোন বের করে তন্ময়কে কল দিতে গেলেই লাইট জ্বলে উঠে।দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখে সারাবাড়িতেই আলো চলে এসেছে।সেসময় তন্ময় হুড়মুড় করে ঢুকে।আরিয়ানের বেষ্টনীতে আবদ্ধ মায়াকে একনজর দেখে।তারপর চোখ যায় ফ্লোরে পরা লোকটার মৃতদেহের দিকে।আরিয়ান বাইরের পরিস্থিতি জিজ্ঞেস করে।তন্ময় ধীর কন্ঠে বলে,

—“পুলিশ এসেছে ভাই।গেস্টরা সব চলে গেছে।কিন্তু হামলাকারীরা জীবিত নাই কেও।সব মরে গেছে।তাদের লাশ নিয়ে যাচ্ছে।”

আরিয়ান ইশারায় রাশেদ চৌধুরির কথা জিজ্ঞেস করে।তন্ময় তার কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

—“হসপিটালে নিয়েছে।হাতের পাশ ঘেঁষে গুলি লেগেছে।সেটা একসিডেন্টলি।গুরুতর কিছু নয়।বোঝাই গেছে তাকে মারার উদ্দেশ্য ছিলোনা লোকগুলোর।”

আরিয়ান মাথা নাড়ায়।সে নিজেও বুঝেছে লোকগুলো মায়ার জন্যই এসেছিলো।কারণ লোকগুলো কাওকেই গুলি করেনি বা কোন ক্ষতি করেনি।যখন সবাই গুলির শব্দে আতঙ্কিত তখন ওদের মধ্যর কয়েকজনকে উপরের দিকে ছুটতে দেখেই তাদের পিছে দৌড়ে এসেছিলো সে।আসতে আসতেই পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়।তখনই বুঝেছিলো সবার অগোচরে মায়ার ক্ষতি করাই তাদের মুল উদ্দেশ্য।কিন্তু এত সিকিউরিটির মধ্য তারা ঢুকলো কিভাবে সেটা আসলেই ভাবার বিষয়।
কয়েকজন এসে লোকটার লাশ নিয়ে যায়।তন্ময় তাদের সাথেই বাইরে যায়।
আরিয়ান মায়ার দিকে তাকায়।মেয়েটা এখন শান্ত।চুলের পানিতে পিঠের জামা ভিজে একাকার।সে কোমড় থেকে হাত সরায়।বাহু ধরে আলতো হাতে ছাড়িয়ে নেয়।বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিপুণভাবে পর্যবেক্ষন করে।
ফর্সা চেহারা ভয়ে রক্তিম আভা ধারণ করেছে,চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পরে সারা মুখে শুভ্রতা ছড়িয়ে দিচ্ছে,লাল জামায়,ভেজা চুলে অসম্ভব আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটাকে।
আরিয়ান হাত বাড়িয়ে মুখের সামনের চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দেয়।মায়ার ঠোঁট কাঁপছে।হয়তো ভেজা জামায় ঠান্ডা লাগছে।আরিয়ান পাশের তোয়ালেটা হাতে দিয়ে বলে,
—“চুল মুছে নাও।ভিজে যাচ্ছো।ঠান্ডা লেগে যাবে।”

মায়া একবার তোয়ালেটা দেখে।তারপর মাথা উঠিয়ে আরিয়ানের চোখে চোখ রেখে বলে,
—“বাবা কোথায়?”

আরিয়ান নির্দিধায় তার গালে হাত রাখে।একটু আশ্বস্তভরা কন্ঠে বলে,
—“তোমার বাবা আছে।ব্যস্ত হয়তো।চিন্তা করোনা।”

মায়া চোখ নামিয়ে নেয়।আরিয়ান গালে রাখা হাত সরিয়ে ফেলে।মেয়েটার নামের মতো তার চেহারাও রয়েছে অদ্ভুত মায়া।

হঠাৎ ইতি দৌড়ে আসে।এতক্ষন সে নিচে ছিলো।পুলিশের ভয়ে উপরে আসার সাহস হচ্ছিলো না।
রুমে এসে আরিয়ানকে দেখে কিছুটা দমে গেলেও অস্থিরভাবে বলে,

—“ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?”

মায়া তার দিকে তাকিয়ে উপর নিচে মাথা নাড়ায়।আরিয়ান ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“ওর ড্রেস চেনজ করে মাথা মুছিয়ে দাও।

তারপর ইতির কাছে এগিয়ে এসে ধীর গলায় বলে,”রাশেদ চৌধুরির কথা ওকে বলোনা।প্যানিক হয়ে যাবে।আর ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিও।She will be okay.

ইতি মাথা নাড়ায়।অত:পর বাইরে বেড়িয়ে যায় আরিয়ান।ইতি দরজা আটকে দেয়।


মাঝরাতে বাড়ি ফিরে রাশেদ চৌধুরি।হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।এসেই আগে মায়ার রুমে যায়।মেয়েকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দেখে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে।তবুও একটা চিন্তা থেকেই যায়।কোনরকম শব্দ না করে বেরিয়ে আসেন।দরজার বাইরেই দাড়িয়ে ছিলো তার পি.এ আজিজ।তিনি বের হতেই সে হেসে বলে,

—“মায়া ম্যাম ঠি ক আছেন স্যার।আমার মনে হয়না তারা ম্যামের ক্ষতি করতে এসেছিল।আপনি ভুল ভাবছেন”।

রাশেদ চৌধুরি চোখ গরম করে তাকায়।আজিজের মুখের হাসি দপ করে নিভে যায়।কাঁচুমাচু করে সে।

—————
গাড়ি ড্রাইভ করছে তন্ময়।পাশের সিটে চোখ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে বসে আছে আরিয়ান।রাত অনেক গভীর।ফাঁকা রাস্তায় ফুল স্পিডে চলছে গাড়ি।রাশেদ চৌধুরির বাসা থেকে বেরিয়ে একটা জরুরি কাজে গিয়েছিলো তারা।সেখান থেকে ফিরতেই দেরি হয়েছে।প্রকৃতিতে পিনপতন নিরবতা।
সেই নিরবতা ভেঙে তন্ময়ই বললো,

—‘ভাই?’

তাকালো না আরিয়ান।চোখও খুললো না।সেভাবেই বললো,
—‘বল’।

—‘অন্য কেউ হলেও এমনটাই করতেন?’

—‘কেমনটা?’

—‘রাশেদ চৌধুরির মেয়েকে যেভাবে বাঁচালেন।যেভাবে উনাকে আগলে রেখেছিলেন’

—‘হয়তো করতাম’।

—‘আমার মনে হয় না’।

—‘তাহলে তোর কি মনে হয়?’

—‘সেটা আপনি ভালোকরেই বুঝতে পারছেন।’

আরিয়ান হাসে।বিরবির করে বলে,
—“মেয়েটা খুবই সহজ সরল।ওর বাবার নোংরা দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারবেনা।বুঝলি?

—‘এটা আমার প্রশ্নের উওর নয়’।

—‘তোর প্রশ্নের উওর আমার কাছে নেই।’

তন্ময় আর কিছু বলেনা।আরিয়ান দু”আঙ্গুলে কপাল চেপে ধরে।মাথা ব্যাথা করছে তার।মাথার ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছু বিষয়,”সারাবাড়িতেই এতো সিকিউরিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে ঢুকে পরলো হামলাকারীরা?মায়াকে মারার উদ্দেশ্য হলে লোকটা কেন তার গলায় ছুড়ি ধরে ছিলো?ডাইরেক্ট মেরে ফেললেইতো পারতো।তারমানে তাদের মায়াকে কিডন্যাপ করার উদ্দেশ্য ছিলো।নিশ্চিত সে জানে মায়া রাশেদ চৌধুরির দূর্বলতা।তাকে ব্যবহার করেই কোনোকিছু করতে চায়।কিন্তু কে সে?

~চলবে~

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-০৪

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪

সকালে ঘুম ভাঙতেই লম্বা একটা হাই তুলে উঠে বসলো মায়া।তার একপাশে চেয়ারে বসে বিছানায় মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে একটা মেয়ে।মেয়েটার নাম ইতি।দুবছর ধরে এ বাসায় আছে সে।প্রায়সময় মায়ার সাথেই থাকে।
কাল রাতেও তার সাথেই ছিলো।যদি তার কিছু প্রয়োজন হয় এজন্য।মায়া কতবার বলেছে সোফায় ঘুমিয়ে যেতে।যদি তার কিছু প্রয়োজন হয়ে সে ডাক দিবে।কিন্তু না সে বসেই থাকবে যদি ঘুম গভীর হয়ে যায় আর সে কি ডাক না শুনে?একটু হাসে মায়া।সেই তো ঘুমিয়েই গিয়েছে।
হাঁটুর ব্যাথা নেই যে তা নয়।তবে সহ্য করার মতো।হাঁটতে অসুবিধা হবেনা তার।বিছানা থেকে নামতে নিলে বিছানা একটু নড়ে ওঠায় ধরফড়িয়ে মাথা তুলে তাকালো ইতি।চোখগুলো বড় বড় করে বললো,
—“আপনি কখন উঠলেন ম্যাম?আমাকে ডাকলেন না কেন?আপনি ব্যাথা পেলে বড়স্যার আমাকে মেরেই ফেলবেন।”

মায়া ইতির চেহারা দেখে হেসে দিলো।হাসতে হাসতেই বললো,
—“তুমি এতো ভয় পাও কেনো ইতি?শান্ত হও,ঠি ক আছি আমি”।

—“আপনার জন্য কোনদিন জানি বড়স্যার আমাকে এই বাসা থেকেই বের করে দেন”।

—“বাবা এতো নিষ্ঠুর না”।

ইতি উঠে দাড়ালো।মায়াকে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ইতির সাথেই নিচে নেমে আসলো মায়া।
রাশেদ চৌধুরি সোফায় বসে ফোনে কথা বলছিলেন।মায়াকে দেখে ফোনটা কেটে দিয়ে বললো,
—“তুমি নিচে নামতে গেলে কেনো?বললাম না,ঘরেই নাস্তা খেয়ে নিতে”।

মায়া টেবিলে বসতে বসতে বললো,
—“আমি তোমাকে ছাড়া নাস্তা করিনা।জানোইতো”।

রাশেদ কথা বাড়ালো না।চুপচাপ খেতে বসে গেলো।খাওয়া শেষে মায়া মিষ্টি করে হেসে বললো,
—“বাবা,আমি একটু বাগানে যাই?”
রাশেদ চৌধুরি মানা করার আগেই আবার বললো,”কোনরকম ছোটাছুটি করবোনা।প্রমিস।”।
——————
বাগানে ঘোরাঘোরি করছে মায়া।রাশেদ চৌধুরি ফোনে কথা বলছে একটু দুরে দাড়িয়ে।সেসময় গেটে আসলো কেউ।সিকিউরিটি গার্ডের হাতে একটা বাক্স দিয়ে গেলো।মায়া উৎসুক দৃষ্টিতে বাক্সটার দিকে তাকিয়ে আছে।
বেশ সুন্দর করে কাগজে মুড়িয়ে একটা ফিতা দিয়ে বাঁধা।মনে হচ্ছে কেউ গিফট পাঠিয়েছে।
একজন বডিগার্ড এগিয়ে গিয়ে বাক্স টা নিয়ে আসতেই সে হাত বাড়িয়ে বললো,
—“আমাকে দিন।”

—“ম্যাম,এটা বড়স্যারের জন্য।”

—“বাবা তো ফোনে ব্যস্ত।আপনি আমাকে দিন।আমি দেখি।”

—“কিন্তু ম্যাম..?

মায়া দীর্ঘ:শ্বাস ফেলে উচ্চস্বরে ডাকলো,
—“বাবা?আমি এটা খুলে দেখি?

রাশেদ চৌধুরি একবার ফিরে তাকিয়ে হাত নেড়ে সম্মতি দিতেই বডিগার্ডটা তার হাতে দিয়ে দিলো বাক্সটা।
সেটা খুলতেই গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে সে।নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে একটা কাঁটা মাথা।
ভয়ে হাত-পা প্রচন্ড গতিতে কাঁপছে মায়ার।রাশেদ চৌধুরি দ্রুত এগিয়ে আসে।মাথাটার দিকে কিছুক্ষন স্তব্দ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তার অনেক বিশ্বস্ত লোক ছিলো মনির।তাকে নাকি এত নিশংসভাবে মেরে ফেললো আরিয়ান?
মায়াকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।সোফায় বসেও থরথর করে কাঁপতে থাকে সে।শ্বাস ঘন হতে থাকে।ইতি দ্রুত পানি খাওয়ায় তাকে।মায়া এসব ভয় পায় প্রচুর।গুলির আওয়াজ,কাঁটাছেড়া এমনকি রক্তেও ফোবিয়া আছে তার।কিছুক্ষন পর একটু স্বাভাবিক হয় সে।শুধু একটা জিনিসই মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে,মানুষ কতটা নিশংস,নির্মম,পাষাণ হলে এমনটা করতে পারে?যে এই কাজটা করেছে সে নিজে কতটা ভয়ংকর ভাবতেই ভয় করছে মায়ার।
—————
অফিসে বসে নিজের কেবিনে ফাইল দেখছিলো আরিয়ান।পাশে ধোঁয়া উঠা কফির মগ।সেটাই বারবার চুমুক দিচ্ছে।চোখদুটো লাল হয়ে আছে।
তরুণ বয়সে সফল বিজন্যাসম্যান হওয়ার সুবাদে বেশ নামখ্যাতি আছে তার।রাজনৈতিক অবস্থানও বেশ দৃঢ়।
পিনপতন নিরবতা অফিসে।তার ভয়ে তটস্থ থাকে সবাই।দরজায় নক হওয়ার শব্দে মাথা না তুলেই সে বলে,
—“কাম ইন”।

তন্ময় ঢুকে।আরিয়ান একচোঁট তাকিয়ে আবার কাজে ব্যসত হয়ে পরে।তন্ময় ঠায় দাড়িয়ে থাকে।
আরিয়ান বলে,
—“কিছু বলবি?”

—“আপনি না সকালে জরে পুড়ে যাচ্ছিলেন।আজ অফিসে না আসলেও হতো।”

আরিয়ান এক ভ্রু উচিয়ে বলে,
—“আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস?এতো সাহস?”

তন্ময় বিরক্তি নিয়ে পাশে থাকা সোফায় বসে পরে।আরিয়ান তাকায়।এই ছেলেটাই একমাত্র যাকে কিনা সে
সবচেয়ে বিশ্বাস করে।সবাই তাকে স্যার স্যার ডাকলেও তন্ময় তাকে ভাই ডাকে।ছোট ভাইয়ের কম কিছুনা তন্ময় তার জন্য।

—“আই এম ফাইন তন্ময়।এই সাধারণ জর তোর ভাইকে পুড়ানোর ক্ষমতা রাখে না”

——————
দুইদিন পর…
রাশেদ চৌধুরির বাসায় আজ রাতের পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে।মিনিস্টার হওয়ায় বিভিন্ন উপলক্ষে মাঝেমধ্যেই এমন পার্টির আয়োজন করা হয়।বড় বড় নামকরা মানুষ আসবে।আরিয়ানও আসবে।তাদের অভ্যন্তরীণ শত্রুতার কথা তো আর দুনিয়া জানেনা।তাই তাকে ইনভাইট না করলে মিডিয়ায় ঝড় উঠবে।

এই দিন গুলো মায়ার জন্য হয় সবচেয়ে বিরক্তিকর।বাবার কড়া নির্দেশে থাকে রুম থেকে বের হওয়া যাবেনা।
রুমের বাইরে ঘিরে থাকে কড়া নিরাপত্তা।

লাইটিং করা হয়েছে পুরো বাগান।বাড়ির ভেতরেও।সন্ধ্যার থেকেই রুমে বন্দি হয়ে আছে মায়া।এসময়টা যেন কাটেইনা তার।নিচে কোলাহল শোনা যাচ্ছে।সব গেস্টরা হয়তো চলে এসেছে।একা রুমে পায়চারি করছে সে।হঠাৎ ভাবনা এলো,আজকে কি ওই লোকটাও এসেছে?হয়তো এসেছে।তার তো আর জানার উপায় নেই।দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে মায়া।অশান্তি লাগছে খুব।আলমারির থেকে একটা লাল রংয়ের জামা বের করে শাওয়ার নিতে চলে যায়।শাওয়ার নিয়ে যদি একটু হাল্কা লাগে।
একঘন্টা পর বেরিয়ে আসে।ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করায় পুরো শরীর বরফ ঠান্ডা হয়ে আছে।আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের জামাটা ঘুরেফিরে দেখে।এই জামাটা তার অনেক বেশি পছন্দের।নিজে নিজেই হাসে মায়া।পেঁচানো তোয়ালেটা খুলে নিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছতে থাকে।হঠাৎ গুলির আওয়াজে থেমে যায় তার হাত।আবারো গুলির আওয়াজ হয়।তোয়ালেটা রেখে আধভেজা চুল নিয়েই সে দরজা খুলে।বাইরে অনেকগুলো বডিগার্ড দাড়িয়ে আছে।সবার হাতেই বন্দুক।মায়াকে দেখে তারা মাথা নিচু করে।একজন এগিয়ে এসে ব্যস্ত গলায় বলে,
—“ম্যাম আপনি ভেতরেই থাকেন প্লিজ।”

মায়া আতংকিত কন্ঠে বলে,
—“নিচে কি হচ্ছে?বাবা কোথায়?”

—“কেউ হামলা করেছে বোধহয়।আমরা তো এখানে তাই বড়স্যারের কথা বলতে পারছিনা।আপনি রুমে থাকুন ম্যাম।ভয় পাবেন না”

মায়ার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।কয়েকজনের দৌড়ে আসার শব্দ হয় নিচ থেকে।

—“ম্যাম প্লিজ রুমে যেয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিন।প্লিজ ম্যাম।”

মায়া ভেতরে যেয়ে ধুম করে দরজা লক করে দেয়।ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে তার।তার রুমের বাইরেই গোলাগোলির শব্দ হচ্ছে।জোরে জোরে শ্বাস নেয় মায়া।হঠাৎ রুমের লাইট অফ হয়ে যায়।দরজা ভাঙার শব্দ আসে কানে…

~চলবে~

[কি মনে হয়ে আপনাদের?কমেন্টে জানাবেন]

আধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-০৩

0

#আধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩

রাশেদ চৌধুরি দ্রুতপায়ে সামনে যেয়ে দাড়ায়।তন্ময় নেমে মায়ার পাশের গাড়ির দরজা খুলে দেয়।বাবাকে দেখে মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে মায়ার।আরিয়ান আড়চোখে একবার দেখে আবার ফোনের দিকে দৃষ্টি দেয়।রাশেদ চৌধুরি কে দেখে এমনেই তার রাগ মাথায় চড়ে গিয়েছে বস্তুত এই মুহূর্তে সে কোনো তর্কে জড়াতে চাচ্ছেনা।
গাড়ির ভিতরেই মাথা ঢুকিয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাশেদ।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

—“তুমি ঠি ক আছো মা?”

বাবার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে মায়া।একহাতে বাবাকে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে,
—“আমি ঠি ক আছি বাবা।কিছু হয়নি তো।”

রাশেদ মায়াকে ছেড়ে দেয়।গাড়ি থেকে বেরোনোর জন্য একহাত ধরে বলে,
—“বের হয়ে আসো।”

মায়া বেরোতে নিলেই তার অপরপাশের হাত ধরে টেনে নেয় আরিয়ান।মায়া অপ্রস্তুত হয়ে পরে।তার একহাত টেনে ধরেছে রাশেদ চৌধুরি আর আরেকহাত ধরেছে আরিয়ান।মাঝখানে ফেঁসে গিয়েছে সে।
অত:পর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে বলে,

—“আপনি কি এখন বাবার সামনেও আমাকে কোলে তুলে নিবেন?বলে হাতটা ছাড়ানোর জন্য একটু নাড়াতেই আরো শক্ত করে তা আবদ্ধ করে নেয় আরিয়ান।
মায়া আরো অপ্রস্তুত হয়ে পরে।উনি চাচ্ছেটা কি?এরমধ্যই রাশেদ চৌধুরি বলে,
—“কি হলো মা?বের হও।

মায়া অধৈর্য হয়ে অনুরোধের স্বরে বলে,

—“আমি পারবো হাঁটতে।ব্যাথা নেই তো এখন।…ছাড়ুন”।

আরিয়ান পাত্তা না দিয়ে তন্ময়কে কিছু একটা ইশারা করে।তন্ময় মাথা নাড়িয়ে রাশেদ চৌধুরিকে বলে,

—“আপনার মেয়ে ইনজুরড।হাঁটতে পারবেননা এখন।ফিমেল কাউকে ডেকে বলুন ধরে নিয়ে যেতে।”

রাশেদের মাথায় যেনো বাঁজ পরে।মায়ার গালে হাত রেখে তাড়াহুড়ো করে বলে,
—“কিভাবে?কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?”
মায়া কিছু বলবে তার আগেই উনি পাশে দাড়ানো বডিগার্ডদের কিছু একটা ইশারা করে।দু’সেকেন্ডর মাথায় সেখানে তিনজন ফিমেল সার্ভেনট হাজির হয়।
রাশেদ চৌধুরি একটু সরে দাড়ায়।মেয়েগুলা তাকে ধরতে আসতেই মায়া আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে মৃদু গলায় বলে,

—“এবারতো হাতটা ছাড়ুন”।
আরিয়ান বাঁধন আলগা করে দিতেই দ্রুত হাতটা ছাড়িয়ে নেয় মায়া।গাড়ি থেকে বের হওয়ার আগমুহূর্তে সে বলে,
—“ধন্যবাদ”।
আরিয়ান তার দিকে তাকায়না।সামনে তাকিয়েই ভরাট গলায় বলে,
—“সাবধানে থেকো”।
তন্মধ্য আর কোনো কথা হয়না।মায়া ভেতরে চলে যায়।তার পিছু পিছু রাশেদ চৌধুরিও চলে যায়।তন্ময় গাড়ির দরজা আটকে দেয়।আরিয়ান আবারো ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।শুধু তন্ময় বসার পর বলে,
—“গোডাউনে চল।গুপ্তচরের মুখ থেকে গুপ্তধন বের করে আসি।”

তন্ময় অগোছালো ভাবে হাসে।না জানি আজ কি হতে চলেছে!!
————–—
পরণের জামা পাল্টে নিয়েছে মায়া। ডক্টর ডেকে পায়ের ব্যান্ডেজও চেনজ করে দেয়া হয়েছে।কোনরকম চলাফেরার অনুমতি নাই তার।বাবা তাকে গতকালের ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।তাই সেও কিছু বলেনি।
নিজের বেডে শুয়ে আছে মায়া।আবারো সেই বন্দি জীবন।আগে তো যাও পুরা বাসায় ঘোরাফিরা করতো এখন পা না সাড়া পর্যন্ত বিছানায়ই থাকতে হবে।যদিও বাসা থেকে বের হলেও একরকম বন্দীই থাকে সে।সবসময় সাথে থাকে এতগুলা বডিগার্ড।বন্দুক নিয়ে যেভাবে আশেপাশে ঘিরে থাকে একরকম ভয়ই করে তার।তারউপর কাল যা হলো বাবা তো মনে হয়না তাকে আগামী তিনমাসের মধ্যেও বেরোতে দিবে।
ভার্সিটিতে পরে সে।সব পড়াশোনা বাসার মধ্যই।রোজকার নোটস বাসায় দিয়ে যাওয়া হয়।পরীক্ষা ছাড়া খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ভার্সিটি যাওয়া হয়না।দীর্ঘ-শ্বাস ছাড়ে মায়া।তারও ইচ্ছা করে মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়াতে।নির্দিধায় এখানে-সেখানে যেতে।কিন্তু পারেনা।বাবার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে সে।
বাবা ছাড়া আর কেইবা আছে তার?চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে মায়া।চট করে মাথায় একটা বিষয় আসে,”আচ্ছা,লোকটার নাম টাইতো সে জানেনা।যতদূর মনে হলো বাবা তাকে চিনে।তারমানে সে সেরকম কেউই হবে।বাইরের দুনিয়া থেকে তাকে সর্বদাই দুরে রাখে বাবা।”


একটা কাঠের একটা চেয়ার টেনে বসে আরিয়ান।রুমটায় ভ্যাপসা ভাব।দেয়ালে পুরোনো রক্তের দাগ।আরিয়ান তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“মুখ খুলে দে।শুনি কি বলতে চায়?”

সামনে পড়ে থাকা ব্যক্তিটাকে মুখের কাপড়টা নামিয়ে দেয় তন্ময়।লোকটা হাঁপাতে হাঁপাতে দম নেয়।আরিয়ান হাসে।ভয়ংকর হাসি।
পাশে থাকা বড়ছুড়িটা তুলে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
—“শেষ একটা সুযোগ দিচ্ছি।নিজ মুখে স্বীকার কর তুই রাশেদের পাঠানো গুপ্তচর।”

লোকটা কোনরকম বলে,
—“আমি..আমি..কারো লোক না।আমি কিছু করিনি।আমাকে ছেড়ে দেন।”

আরিয়ান গর্জে ওঠে। ছুড়িটা যেয়ে লোকটার হাতের বাহুতে ঢুকিয়ে দেয়।কলকল করে রক্ত পরতে থাকে।তন্ময় চোখ বন্ধ করে আবার খুলে।ছুড়িটা বের করে ফেলেছে আরিয়ান।
সোজা বুকে মারতে গেলেই লোকটা বলে উঠে,
—“আমি রাশেদ চৌধুরির লোক।রাশেদ চৌধুরিই পাঠিয়েছে আমাকে।”

পায়রে উপর পা তুলে শান্ত হয়ে বসে আরিয়ান।সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“কেন পাঠিয়েছে?আমাকে মারতে?”

হাতের বাহু চেপে ধরে রক্ত আটকানোর চেষ্টা করছে লোকটা।আরিয়ানের প্রশ্নের উওরে অষ্পষ্ট স্বরে সে বলে,
—“..জি”।

—“ওহ্,আচ্ছা”।বলে কিছুক্ষন শান্ত থেকে হাতের ছুড়িটা দিয়ে একটানে লোকটার মাথা ছিন্ন করে দেয়।তন্ময় কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।আরিয়ানের শার্টে রক্তের ছিঁটা আসে।একপাশে মাথাটা পরে থাকে লোকটার।
আরিয়ান উঠে দাড়ায় শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত ওঠাতে ওঠাতে বলে,
—“কাল সকালে এটা সুন্দর মতো পাঠিয়ে দিবি রাশেদের বাসায়।”

আরিয়ান বেরিয়ে যায়।লোকটার দেহটা একবার দেখে নিয়ে তন্ময়ও বেরিয়ে যায়।দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে সে।লোকটা তার যোগ্য শাস্তিই পেয়েছে।
—————
শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পরে বেরিয়ে আসে আরিয়ান।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছিলো তখনই দেখতে পায় বিছানায় কিছু একটা আলোর রিফলেক্ট পরে জলজল করছে।ভ্রু কুচকে সেদিকে এগিয়ে যায় আরিয়ান।জিনিসটা হাতে নিতেই দেখে একটা সাদা পাথরের পায়েল।এটাতো কাল মায়ার পায়ে দেখেছিলো।মায়া তো নিশ্চয়ই এটা খুলে রাখেনি।হয়তো কাল যখন ডাক্তার মহিলা ব্যান্ডেজ করেছে তখন খুলে রেখেছে আর পড়ায়নি।পায়েলটা হাতে নিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যায় আরিয়ান।একটা বক্স খুলে সেটা রেখে দেয় খুব সযত্নে…

~চলবে~

আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-০২

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২

আরিয়ান বিস্ময়ে ভ্রু উচায়,ঘাঁড় হাল্কা কাত করে তীর্যক কন্ঠে বলে,
—“তুমি রাশেদ চৌধুরির মেয়ে?”

মায়ার ঘুম পাচ্ছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে চারটা অর্থ্যাৎ প্রায় ভোড় হয়ে গেছে।একবার চোখ কচলে সে উওর দেয়,
—“জি”।

আরিয়ান চোখজোড়া বন্ধ করে।রাশেদের মেয়ে আছে সে জানে।তবে রাশেদ নাকি সবসময় ওর মেয়েকে এইসব থেকে দুরে রাখে।জনসম্মুখে কখনো ওর মেয়েকে আনেনা।হয়তো ভাবে তার হাজারো শত্রুর ভিড়ে,হাজারো পাপের অভিশাপে যদি মেয়েকে হারিয়ে ফেলে।হতে পারে,এই মেয়েই তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা।তাই এ নিয়ে সে ও বেশি মাথা ঘামাতোনা।তার শত্রুতা রাশেদের সাথে।ওর মেয়ের সাথে তো নয়।আর তার মতে,”দুর্বলতায় কেবল দুর্বল ব্যক্তিরাই আঘাত করে।দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জেতার চেয়ে হেরে যাওয়াও শ্রেয়।”

মায়া ছোট্ট করে একটা হাই তুলে মুখের সামনের চুলগুলো ঘাড়ের পিছে দিয়ে দেয়।ছেঁড়া জামাটা সে খেয়াল করেনি।ফলস্বরূপ উন্মুক্ত হয়ে যায় ফর্সা কাঁধ।চোখ খুলে সর্বপ্রথম আরিয়ানের দৃষ্টি যায় সেদিকে।স্হির হয়ে যায় মনিগুলো।মায়া আবারো হাই তুলে।ঘুমঘুম চোখগুলোতে চোখ পরতেই চট করে ওঠে দাঁড়ায় আরিয়ান।লাইট নিভিয়ে দিয়ে বলে,

—“ঘুমিয়ে পড়ো,আমি এখানেই আছি”।

মায়া মাথা নাড়িয়ে শুয়ে পড়ে।ঘুম পেলে তার হুঁশ থাকেনা।কিছু সময়ের মধ্যই গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে যায় সে।
আরিয়ান ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।ভোরবেলা বেশ স্নিগ্ধ পরিবেশ থাকে।আজকের ভোরটা যেন একটু বেশিই স্নিগ্ধ।কিছুক্ষন ফোন ঘাটাঘাটি করে একটা চিরপরিচিত নাম্বারে কল দেয় সে…
—————
মেয়ের চিন্তায় পাগলপ্রায় রাশেদ চৌধুরি।কাল সন্ধ্যা থেকে নিঁখোজ তার মেয়ে।কোন জায়গায় খোঁজ করা বাদ দেয়নি।অতিরিক্ত অনুরোধের কারণেই মেয়েকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলো সে।সঙ্গে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছিলো।একটা জরুরি কাজে আটকে গিয়েছিলো নয়তো সে নিজেই যেতো মেয়ের সাথে।এখন আফসোস হচ্ছে কেন সে গেলোনা?

সচরাচর মেয়েকে বাইরে যেতে দেয়না রাশেদ।কখন কোন শত্রু কি করে ফেলবে!মেয়েকে একরকম লুকিয়েই রাখে সে।কাল খুব অনুরোধ করছিলো বান্ধবীর বাসায় যাবে তাই মেনে গিয়েছিলো সে।মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারেনি।সব ঠি কঠাকই ছিলো তবে সন্ধ্যার দিকে ফোন দিয়ে দেখে মায়ার ফোন অফ।এমনকি তার সাথে পাঠানো বডিগার্ডদের ফোনও অফ।তখনই ভয়টা জেঁকে বসে তার।তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে।যেখানে মায়া গিয়েছিলো সেখান থেকে ফেরার পথের রাস্তায়ই গাড়িতে ড্রাইভার ছিলো মৃত অবস্থায়।আর বডিগার্ডরা গাড়ির বাইরে তবে তারাও মৃত ছিলো।মায়া ছিলোনা সেখানে।

হঠাৎ কল আসায় চমকে উঠে সে।ভাবনায় ভাঁটা পরে তার।অতি প্যানিকে নাম্বার না দেখেই ফোন তুলে সে।
ওপাশের মানুষটার কথা না শুনেই ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,

—“হ্যালো,কে?কি হয়েছে?”

রাশেদের এমন উদ্বিগ্ন কন্ঠে বেশ মজা পেলো আরিয়ান।তথাপি একটু ব্যঙ্গ করে বললো,
—“নাম্বার টা দেখে তো ফোনটা তুলবি।কখন কে ফোন দেয় একটু নজরে রাখা উচিত।”

আরিয়ানের কন্ঠ শুনে রাগে ফেটে পড়ে রাশেদ চৌধুরি।এসময় নিশ্চয় তার সাথে রসিকতা করতে ফোন দেবেনা আরিয়ান।তার সকল ধ্যান-ধারনা কেবল একটা দিকেই ইঙ্গিত করে তাহলো,”তাদের শত্রুতার জের ধরে,আরিয়ানই মায়াকে কিডন্যাপ করেছে।”তীব্র জেদ নিয়ে সে চিৎকার সমতুল্য কন্ঠে বলে,
—“মায়া?মায়া তোর কাছে?তুই কিডন্যাপ করেছিস মায়াকে?”

মেয়ের জন্য চিন্তাটা রাশেদ চৌধুরির কন্ঠেই প্রকাশ পাচ্ছে।তাচ্ছিল্যর স্বুরে হাসে আরিয়ান।তারপর যথেষ্ট গাম্ভীর্য রেখে বলে,

—“প্রথমটা ঠি কই ধরেছিস।হ্যাঁ,তোর মেয়ে আমার কাছেই আছে।…তবে দ্বিতীয় ধারণাটা ভুল…

আরিয়ানের কথার মাঝেই গর্জে উঠে রাশেদ।
—“আমার মেয়ের গায়ে যদি একটা আঁচরও পরে তুই দেখিস আরিয়ান।পরিণাম ভালো হবেনা।আমি..।

—“ওই চুপ,তোর কি মনে হয় তোর মেয়েকে আমি রেপ করবো?নিজের মতো ভাবিস সবাইকে?দিনে যে হাজারটা মেয়ের জীবন নষ্ট করিস,খেলনার বস্তু মনে করিস তখন খেয়াল থাকেনা?ওরাও কারো সন্তান?…।

—“ওইসবের সাথে আমার মেয়ের কোন তুলনা হয়না।”

পাশে রাখা একটা কাঁচের শো পিস সজোরে আছাড় মারে আরিয়ান।ঘৃনায় গা ঝাঁ ঝাঁ করছে তার।ঘাড় ঘুড়িয়ে কাঁচের দরজার ভেতর দিয়ে একবার মায়াকে দেখে নেয়।তার আওয়াজে আবার ঘুম ভেঙে গেল নাকি ওর।নাহ্,মায়া গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে।হাত বাড়িয়ে দরজাটা সম্পূর্ণ আটকে দিয়ে পুনরায় বলে সে,

—“আরিয়ান খান তোর মতো কাপুরুষ নয় যে মেয়েদেরকে শত্রুতার মাঝে টেনে আনবে।আজকে আমি না বাঁচালে তোর মেয়ের অবস্থা কি হত সেটা আর বলার প্রয়োজন বোধ করছিনা।একটা শ্বাস ফেলে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে আরিয়ান তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,তোর মেয়ের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই।কাল পৌছে যাবে বাসায়”।বলেই খট করে ফোনটা কেটে দেয়।

রাশেদ চৌধুরি ধপ করে সোফায় বসে পরে।তার সবচেয়ে বড় শত্রু হওয়ার পরও সে জানে আরিয়ান কেমন।
একবার যখন আরিয়ান বলেছে তার মেয়ের কোনো ক্ষতি হবেনা;মানে হবেনা।তার সিদ্ধান্তে সবসময় অনড় থাকে আরিয়ান।এজন্যই শত্রু হিসেবেও আরিয়ানকে পছন্দ তার।এ যেন বাঘে বাঘে লড়াই।

রুমে যায় আরিয়ান।একদৃষ্টিতে মায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।ভাবে,রাশেদ চৌধুরির মতো জঘন্য একটা লোকের মেয়ে এতটা ইনোসেন্ট কিভাবে হতে পারে?কি নিষ্পাপ,মায়াবী হয়ে ঘুমিয়ে আছে।

————
সকালে ঘুম ভাঙে মায়ার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে সে।
তখনই রুমে প্রবেশ করে আরিয়ান।তার পরণে ফর্মাল গেট-আপ।মায়াকে বসে থাকতে দেখে সে এগিয়ে যায়।
প্যাকেট থেকে ওড়নাটা বের করে মায়ার কোলের ওপর রেখে হাল্কা কেঁশে বলে,
—“পড়ে নাও”।

মায়া কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে তাকায়।এতটা সময় সে এই অবস্থায় ছিলো অথচ তার খেয়ালই নেই।এত গাধা কেন ও!লোকটা না জানি কি ভাবছে।লজ্জায় লাল হয়ে দ্রুত ওড়নাটা গায়ে জড়ালো।আরিয়ান তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঘড়ি পরছে।এলোমেলো চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে বিছানা থেকে নেমে এক পা ফেলতে নিলেই হাঁটুর ব্যাথায় ককিয়ে উঠে মায়া।পরে যেতে নিলেই শক্ত হাতে তাকে ধরে ফেলে আরিয়ান।একহাত কোমড়ে আর একহাত হাতের বাহুতে।তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ধমকে উঠে বলে,
-“একা উঠতে গেলে কেনো?জানোনা পায়ে ক্ষত?স্টুপিড!!

আরিয়ানের রাম ধমকে ফুঁপিয়ে উঠে মায়া।এত জোরে ধমক তো দুরের কথা কখনো কেউ তাকে বকেওনি।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে তার।

—“Why are you crying?ব্যাথা হচ্ছে বেশি?…মায়া উওর না দেয়ায় আবারো উঁচু গলায় বলে,কথা বলছোনা কেন?

মায়া কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
—“আপনি আমাকে বকছেন কেন?”

আরিয়ান হতভম্ব হয়ে যায়।সামান্য ধমকানোয় মেয়েটা এভাবে কাঁদছে।এই মেয়ে কি আসলেই এতোটা বোকাসোকা নাকি অভিনয় করছে।রাশেদ চৌধুরির মেয়ে এতোটা ভালো কি করে হয়?
গলার স্বর নামিয়ে সে বলে,

—“আচ্ছা,ফাইন।বকবোনা আর।এবার কান্না বন্ধ কর।

মায়া কান্না থামিয়ে দেয়।আরিয়ান জুতো বের করে নিচে রাখো।ইশারায় মায়াকে পরে নিতে বলে।বিনাবাক্য মায়া জুতো গুলো পরে নেয়।সাইজ একটু বড় তবে ভালো হয়েছে ব্যান্ডেজে লাগছে না।পকেটে ফোনটা আর রিভলবার টা ডুকিয়ে কাছে এসে আচমকাই মায়াকে কোলে তুলে নেয় আরিয়ান।মায়া ব্যালেন্স রাখতে হুট করে দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে আরিয়ানের।সচকিত হয়ে বলে,

—“কি করছেন?”

আরিয়ান হাঁটতে হাঁটতে বলে,
—“হাঁটতে পারবেনা এখন।আর এতো প্যানিক হওয়ার কিছু নেই।কালও তোমাকে কোলে করেই এনেছি।উড়ে উড়ে আসোনাই।”

মায়া চুপ হয়ে যায়।কথার পিঠে বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না।তবে অসস্তি হয় তার।ঘোর অসস্তি।
আরিয়ান এসে গাড়িতে বসিয়ে দেয় তাকে।নিজেও তার পাশে বসে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে।তন্ময় বসেছে ড্রাইভারের পাশে।আরিয়ান আর মায়াকে দেখে মুচকি হাসে সে।আরিয়ান তখন ফোনে ব্যস্ত।
জামাকাপড় টেনে ঠি কঠাক হয়ে বসে মায়া।তাকিয়ে থাকে জানালার বাইরে।তার ভাগ্য অনেক সহায় এতো ভালো মানুষের কাছে এসেই সাহায্য চেয়েছিলো সে।

দীর্ঘক্ষন পর গাড়ি থামে রাশেদ চৌধুরি বাড়ির সামনে।রাশেদ চৌধুরি ইশারায় দরজা খুলে দিতে বলে।একটানে গাড়ি ঢুকে যায় তাদের বাড়ির ভেতর।আড়িয়ান বাঁকা হাসে…..

চলবে…