Tuesday, July 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1536



তোর মায়ায় পর্ব-০৪

0

#তোর_মায়ায়❤
#Part_04
#Ariyana_Nur

নিলাভ চোখ মুখ শক্ত করে বলল….
—তোমার ঐ মহিলার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না।

আশু অবাক হয়ে বলল….
—কেনো???

নিলাভ কোন কথা না বলে হনহন করে চলে গেলো।

আশু তার যাওয়ার দিকে হা করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল….

— এর আবার কি হল???কেনো আমাকে আন্টির কাছে ক্ষমা চাইতে দিবে না ???

মাশিয়াঃকারন তিনিই ভাইয়াকে ব‍্যাকমেইল করেছিলো।

আশু অবাক হয়ে বলল….

—আপনার মা আপনার ভাইয়াকে ব‍্যালমেইল করছিলো???কোন মা কি তার সন্তানের সাথে এমন করে???

মাইশা নরম শুরে বলল…
—কেউ করে কিনা জানিনা তিনি করেছেন। কারন তিনি আমাদের সৎ মা।

আশু কিছু জিগ্যেস করতে নিয়েও থেমে গেলো।কেননা কারো পারর্সোনার বিষয়ে বেশি প্রশ্ন করা ওর ভালো লাগেনা।

______________________________

ব‍েলকনিতে দাড়িয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নিলাভ।চোখে জমে রয়েছে তার নোনা জল।কখন যেন টুপ করেই তা গড়িয়ে পরে।নিলাভ আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে দাড়িয়ে থেকে রুমে গিয়ে টেবিলে তার ডাইরী কলম নিয়ে বসল। নিলাভ ডাইরীটা খুলে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে লিখতে লাগলো….

—আমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে খুব মজা লাগছে তোমার তাই না??কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি??আমি যে তোমাকে খুজে পাচ্ছি না।না কি কখনো পাবো না??আমি যে তোমাকে খুব মিস করছি??তুমিও কি আমাকে মিস করছো???

কথাটা লিখে আনমনে মুচকি হেসে ফেলল।তারপর আবার লিখতে লাগলো….

—দেখলে আমি কেমন হয়ে গেছি।নিজেকে আমার এখন পাগল পাগল লাগে।তুমি পুরোই আমাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছো।তা না হলে আমার মত একজন লোকের জীবন এভাবে চলে বল???তুমি কি কখনো জানতে পারবে আমি তোমার জন‍্য কি কি পাগলামো করেছি???
আমার এই সুন্দর জীবনটা কি এভাবে এলোমেলো না করলে তোমার হতো না??

জানো সেদিন যখন ঐ মহিলার(নিলাভের সৎ মা) মুখে শুনেছি তোমায় পেয়েছে তখন যে আমি কি খুশি হয়েছিলাম তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।মনে হচ্ছিলো আমার কাছে পুরো দুনিয়ার সুখ চলে এসেছে।পর মুহূর্তে তার কথায় আমি বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েলাম।সে তোমাকে দিয়ে আমাকে ব‍্যাকমেইল করছে।আমি তোমাকে দেখতে চাইলে সে আমাকে কোন একটা রক্তাক্ত মেয়েকে দেখায়।রাগ করোনা প্লিজ…তখন আমি নিজের মধ‍্যে ছিলাম না।তাই তো তোমাকে চিনতে পারিনি।বললাম না তুমি আমাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছো।তাই তো সাত পাচ না ভেবে ঐ মেয়েটাকেই তুমি ভেবে এতো বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার যে কিছু করার ছিলো না।আমার কাছে তো আমার জীবনের চেয়ে তোমার জীবন মুল‍্যবান।তাই তো সেদিন…..
এতটুকু লিখে নিলাভ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ডাইরীর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো।

কি ভাবছেন বেচারা এমন দেবদাস হয়ে রয়েছে কেনো???আরে বেচারা তো কারো প্রেমে পরে হাবুডুবু খাচ্ছে।

নিলাভ নিজের পড়াশুনো শেষ করে কিছুদিনের জন‍্য তার এক অত্নীয়ের বাড়ি গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলো।একদিন দুপুর দিকে বাড়িতে ফেরার সময় দেখে মাঠের মাঝখানে কিছু ছোটছোট বাচ্চাদের সাথে একটা মেয়ে খেলছে।
মেয়েটি বাচ্চাদের সাথে খেলছে আর হাসছে। একটু পরপর নিজের ওরনা দিনে মুখের ঘাম মুখছে।
নিলাভের চোখ না চাওয়া শর্তেও ঐ মেয়েটার হাসিখুশি ঘামাক্ত চেহারায় আটকে গেলো।বেচারা একধ‍্যনে সেদিকে তাকিয়ে আছে।তার কোন হুস নেই।পাশের থেকে একজন লোকের কথা শুনে নিলাভ নিজেকে সাভাবিক করে তার সাথে কথা বলা শেষ করে মাঠের দিকে তাকাতেই নিলাভের চেহারা রং পাল্টে গেলো।কেননা মেয়েটি সেখান থেকে ছু মন্তর হয়ে গেছে।সাথে বাচ্চাগুলো।নিলাভ হতাশ হয়ে বাড়িতে চলে আসলো।বেচারার সেদিন রাতে আর ঘুম হয়নি।সারা রাত মেয়েটির ঐ হাসিমাখা চেহারা মনে করতে করতে কাটিয়ে দিয়েছে।

পরের দিন ঐ সময়ের আগেই নিলাভ আগের জায়গায় গিয়ে মেয়েটিকে দেখার জন‍্য দাড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষন পর মেয়েটি তার বিচ্ছু বাহিনী নিয়ে এসে খেলতে লাগলো।নিলাভ আজ সুযোগ বুঝে মেয়েটির অগচোরে কিছু ছবি তার ফোন বন্দি করে নিল।কিন্তু সাহস করে সামনে যেতে পারলো না।
পরের দিন নিলাভ আনেক সাহস করে মাঠে এসেই দাড়ালো।কিন্তু অনেক সময় চলে যাওয়ার পর মেয়েটির আসার খবর নেই।একটু পর বাচ্চারা এসে খেলতে শুরু করলো।নিলাভ একটা বাচ্চাকে মেয়েটির কথা জিগ্যেস করলে বাচ্চাটি বলে…
—ঐ আফু তো শহরে থাকে।এহানে কোন বাড়িতে যেন আইছিলো আমরা কেউ জানি না।আফুডা অনেক ভালো।প্রতিদিন আমাগো চকলেট কিন্না দিত আমগো লগে খেলতো।কালকেই আফুডা চইলা গেছে।

নিলাভ মেয়েটির নাম জিগ্যেস করলে বলে,ওরা তার নাম জানে না।সবাই মেয়েটিকে আফু বলে ডাকতো।
নিলাভ গ্রামে আর দেরি না করে সেদিন শহরে চলে আসে।

নিলাভের মা নিলাভের বন্ধুর মাধ‍্যমে মেয়েটির কথা জানতে পারে।তারপর লুকিয়ে ওর রুম থেকে মেয়েটির একটি ছবি জোগার করে নিলাভকে ব‍্যাকমেইল করে।যদি তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে না করে তাহলে ঐমেয়েটিকে মেরে ফেলবে।নিলাভ প্রথমে রাজি না হলে সে এডিট করে ঐ ছবিটা দেখায়।আর সাথে অন‍্য একটা রক্তাক্ত মেয়ের ভিডিও দেখায়।

__________________________________

রেস্টুরেন্টে অনেকক্ষন ধরে বসে আছে জিদান।পাশের টেবিল থেকে জিদানকে সাভাবিক ভাবে থাকার জন‍্য ফ্রেন্ডরা উৎসাহিত করছে।আর এদিকে তো বেচারার অবস্থা খারাপ।কেননা আজ সে সাহস জুগিয়ে তার প্রিয় মানুষটাকে নিজের মনের কথা বলবে বলে ঠিক করেছে।একটু পর একটি মেয়ে জিদান এর সামনে আসতে জিদান বসা থেকে দাড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।জিদান কিছু বলবে তার আগেই দূরে আরেজনকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিদানের সব শক্তি,সাহস ফুস হয়ে গেলো।বেচারার হাত পা কাপতে আর ঘামতে লাগলো।বেচারা আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে ঢপ করে বসে পরল।

জিদান এর কাহিনী দেখে ওর ফ্রেন্ড এর থেকে একজন মেয়ে সামনে এসে বলল….

—ঐ হারামী এমন রুগী মানুষের মত কাপাকাপি করতাছোস কেন???

জিদান অসহায় চোখে মেয়েটির দিকে তাকালে মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলল….

—তোর এই রংঢং বাদ দে।
তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল….
—হাই আমি মাশিয়া জিদানের ফ্রেন্ড।

সামনের মেয়েটি জোরপূর্বক হেসে বলল….
—আমি আফিফা….

মাশিয়া,আফিফাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে ওর পাশে বসে বলল….

—কিছু মনে করবেনা।এই গাধা এমনি।তোমার সামনে এসে সব হাওয়া ফুস হয়ে যায়।আর আমাদের সামনে সারাক্ষন তোমার গুনোগান করে।

আফিফা মুচকি হেসে বলল….

—সমস‍্যা নেই এর কাহিনী আমার জানা আছে।জানো আমাদের বাড়িতে বিয়ের পাকা কথা ঠিক হবার দিন ও তিনি যায়নি।বাড়ির লোকদেরকে পাঠিয়েছে।আজ মনে হয় তাহলে আপনাদের কথায় আমারকে এখানে আসার জন‍্য বলেছে।

—ঠিক বলেছো।আমরাই জোর করে ওকে দিয়ে তোমাকে এখানে আসার খবর দিয়েছি।আমাদের ও তো দেখতে হবে আমাদের ভাবি কেমন।

মাশিয়ার কথায় আফিফা কিছু না বলে মিষ্টি হাসলো।

(আফিফা হল মিথিলার চাচাতো বোন।জিদান ছোট থেকেই আফিফাকে পছন্দ করে।কিন্তু কখনো সাহস করে ওকে বলতে পারেনি।জিদান আফিফাকে পছন্দ করে এটা ওর বাড়ির সবাইকে জানালে তারা এক কথায় রাজি হয়ে যায়।আর তারপরে আফিফাদের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তারাও রাজি হয়ে যায়।কেননা জিদান ছেলে হিসেবে কোন অংশে খারাপ নয়।আজ জিদান আফিফাকে তার ফ্রেন্ডদের কথায় এখানে আসতে বলেছে)

মাশিয়া খেয়াল করে দেখলো জিদান বার বার পিছনে তাকাচ্ছে আর ঘাম মুছছে।এটা দেখে মাশিয়া রেগে বলল….

—ঐ মেয়ে মানুষের মত এমন করছিস কেন??আর ভাবি তোর সামনে।বার বার পিছনে কাকে দেখে এভাবে ঘামতাছোস??

—আরে ঘামবেইতো কেননা দুলামিয়া জানে যে,এখন তার ব‍্যান্ড বাজবে।

পিছন থেকে কথাটা কেউ বলল।মাশিয়া পিছনের মানুষটিক দেখার জন‍্য তাকাতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কেননা……

#চলবে…..

তোর মায়ায় পর্ব-০৩

0

#তোর_মায়ায়❤
#Part_03
#Ariyana_Nur

জিদান কিছু বলবে তার আগেই মুখের মধ‍্যে পানির ঝাপটা পরায় ধরফরিয়ে উঠে বসে সামনে তাকিয়ে আবাক হয়ে বলে….

—তুমি????

(বেচারা জিদান এতোক্ষন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল।তার ক্রাশ কে নিয়ে।বেচারার এই স্বপ্নের মধ‍্যে কে পানি ঢাললো🤔)

সামনের মানুষটি রাগি গলায় বলল….
—এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমাকে প্রথম দেখছো??

জিদান বিরবির করে বলল….
—আরে প্রথম দেখবো কেন।এই চেহারা কি আমি ভুলতে পারি।যে চেহার শুধু বাস্তবে না স্বপ্নেও দেখলে আমি ভয় পাই।

—কি বলছো বিরবির করে???(ভ্রু কুচকে)

—কিছু না।বলছি কেনো এভাবে আমার উপর পানি ফেলে আমাকে উঠালে।দেখো পুরো ভিজে গেছি।

—ভালো হয়েছে।সারাদিন তো পরে পরে ঘুমাও।এবার একটু কাজের কাজ করো।কালকে মিথিরা আসবে।সাথে আরো কিছু লোক আসবে তাই সকাল সকাল বাজার করে আনবে।কথাটা যেনো মনে থাকে।

—আমি কেনো???বাড়িতে কি কোন কাজের লোক নেই???

—আছে তার পরেও তুমি যাবে।

—আমি পারবো না।(মুখ ভার করে)

—কি বললে পারবে না।(চোখ রাঙ্গিয়ে)

—ঠিক আছে।সাকালে ডেকে দিও।

—ওকে।এবার ফ্রেস হয়ে নিচে আসো।

জিদান কিছু একটা ভেবে নরম সুরে বলল….
—আপু…..

ওর এই নরম শুরের ডাক শুনে জিদানের বোন জিনাত ভ্রু কুচকে বলল….
—এতো আবেগ না দেখিয়ে যা বলার বলে ফেলো।

জিদান লজ্জা মাখা মুখে বলল…
—বলছি কি কাল কি মিথি আপুর সাথে আ….

ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে জিনাত বলল….

—জ্বী ভাই সেও আসবে।তোমাকে আর মেয়ে মানুষের মত লজ্জা পেতে হবে না।
কথাটা বলে জিনাত মুচকি হেসে চলে গেলো।

(জিদান আর জিনাত দুইভাই বোন।জিদান খান।খান বাড়ির ছোট ছেলে।উচ্চতা ৬”গায়ের রং শ‍্যমবর্ন।দেখতে মাশাল্লাহ্।জিদান এর বড় বোন জিনাত।মিথিলা আর মিহান ওদের মামাতো ভাই-বোন।)

_____________________________

আশু মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বসে আছে।নিজের কাছে নিজেকে এখন খুব ছোট মনে হচ্ছে।ভুল করে হলেও সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।কিভাবে সে রাগের মাথায় এমন কাজ করে ফেললো ভাবতেই তার রাগে নিজের মাথা নিজেরি দেয়ালের সাথে বারি মারতে ইচ্ছে করছে।যাই কিছু হোক তার ওদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।ভুল যখন করেছে ক্ষমাতো চাওয়া উচিত।দুদিন ধরে নিজের ভুলের জন‍্য অনেক অনুতপ্ত করছে।তাই ও ঠিক করলো কালকে ও বাড়িতে গিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসবে।

আশু চন্চল,রাগি, একগেয়া টাইপের মেয়ে।যা বলবে তা করেই ছাড়বে।বেচারারীর এই রাগের জন‍্য সব সময় তার মার কাছে বকা শুনে।আর বাবা এসে মেয়েকে আদর করে মেয়ের মান ভাঙ্গিয়ে আরো বাদর বানিয়ে দেয়।কিন্তু এই সব কিছুর পরেও একটা কোমল হৃদয় আছে।

___________________________________

চৌধুরীর বাড়ির সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে আশু।ভয়ে ভয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে কলিংবেল চাপ দিলো।একটু পর একজন এসে দরজা খুলে জিগ্যেস করলো কাকে চাই।আশু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।আসলে তো সে এখানকার কাউকে চিনেই না।

সে যে তার ফ্রেন্ড দের দিয়ে খবর নিবে তার ও উপায় নেই।প্রথমতো তারা ওকে এখানে আসার কথা শুনলে আসতে দিবে না। দ্বিতীয়ত ও ওদের সাথে রাগ করে কোন যোগাযোগ করতে চাচ্ছে না।

কাজের লোককে দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে মাশিয়া সামনে এসে বলল….
—খালা…কে এসেছে???

খালাঃদেখো আম্মা একটা মাইয়া এখানে আসছে কিন্তু কইতে পারতাছেনা কার লগে দেখা করতে আসছে।

মাশিয়াঃআচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি।

মাশিয়ার কথা শুনে খালা চলে যেতেই মাশিয়া সামনে এসে আশুকে দেকে অবাক হয়ে বলল….
—আরে… তুমি এখানে???

আশু কাচুমাচু করে বলল….
—সরি আপু….আমার সেদিনের বিহেবিয়ারের জন‍্য।

—আরে তোমার সরি টরি পরে শুনবো আগে ভিতরে এসো।

মাশিয়া আশুর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে সোফায় আয়েশ করে বসে বলল….
—বল কি খাবে চা না কফি???

আশু মেয়েটাকে যত দেখছে ততো অবাক হচ্ছে।ও মনে মনে
বলছে এ দেখি আমার চেয়ে এক ধাপ উপরে।আশু নিজেকে সামলিয়ে বলল….

—না আপু আমি কিছু খাবো না।আমি আপনাদের কে সরি বলতে এসেছি।

—কেনো???

আশু মাথা নিচু করে বলল….
—সেদিন আমার জন‍্য আপনাদের বাড়িতে এতো কিছু হয়ে গেলো।আসলে তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না।তাই রাগের মাথায় আমি আন্টির সাথে মিস বিহের করে ফেলি।সরি….

—আচ্ছা একটা কথা বলবো???রাগ করবে না তো???

—জ্বী বলুন।

—আমার মনে হচ্ছে সেদিন তুমি ভুল করে এখানে চলে এসেছিলে।যদি তুমি আমাকে পুরো ঘটনাটা বল তাহলে আমি তোমাকে সাহায‍্য করবো।প্লিজ প্লিজ বলো….

আশু না চাওয়া শর্তেও সব মাশিয়াকে বলল।তার পর দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বলল….

—সব তো শুনলেন এবার বলুন তাদের কাছে ক্ষমা চাইলে আমাকে ক্ষমা করবে তো???দরকার পরলে আমি হাত জোর করে ক্ষমা চাইবো।

—তার আর দরকার নেই।
কথাটা বলে সামনের সিঙ্গেল সোফায় বসে পরে নিলাভ।নিলাভকে দেখে আশু ভয়ে ঘামতে থাকে।কেননা তার রাগ সম্পর্কে তার ধারনা হয়ে গেছে।যে রাগ রে বাবা।যদি মাথায় তুলে আছাড় মারে।তাহলে সে শেষ।

নিলাভ ওর দিকে তাকিয়ে ওর কাহিনী দেখে মুচকি হেসে বলল….
—ধন‍্যবাদ।

ওর কথা শুনে আশু হা করে নিলাভের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিলাভের মুখের কথাটা ওর হজম হলো না।নিলাভ আশুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাশি দিয়ে বলল….

—কেউ ধন‍্যবাদ দিলে ওয়েলকাম বা ইট্স ওকে বলতে হয়।এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে হয় না।

আশু নিলাভের কথা শুনে কাশতে লাগলো।মাশিয়া তারাতারি পানি এনে আশুর হাতে দিলে ও ঢকঢক করে একবারেই সব পানি খেয়ে ফেলল।তারপর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল….

—সরি….আমার সেদিনের ব‍্যবহারের জন‍্য।আসলে সেদিন আমি ভুল করে…

ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিলাভ বলল….
—আরে তুমি সরি বলছো কেন।ভুল করে হলেও সেদিন তুমি আমার উপকার করেছো।

আশু অবাক হয়ে বলল….
—মানে???

—মানে হল সেদিন যার সাথে আমার এঙ্গেজমেন্ট হচ্ছিল সেখানে আমি রাজি ছিলাম না।কেননা আমি আরেক জনকে পছন্দ করি।আর তাকে ছাড়া অন‍্য আরেকজনকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।

আশু অবাক হয়ে বলল….
—তাহলে সেদিন আপনি রাজি কেনো হয়েছিলেন???

মাশিয়াঃভাবির জন‍্য।

আশু কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল।নিলাভ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল….

—আসলে আমি যাকে পছন্দ করতাম তাকে কিডন‍্যাপ করে আমাকে ব‍্যাকমেইল করা হয়।যদি আমি সুইটির সাথে এঙ্গেজমেন্টে রাজি না হই তাহলে তাকে মেরে ফেলবে।তাই সেদিন আমি বাধ‍্য হয়ে রাজি হয়েছিলাম।

আশুঃতা না হয় বুঝলাম।কিন্তু ঐ আপুটা কেনো রাজি হয়েছিলো???সে তো আপনাকে পছন্দ করতো না।

—সেটা আমি জানি না।তুমি চাইলে আমি ঠিকানা দিতে পারি তুমি জিগ্যেস করে নিতে পারো।(মুচকি হেসে)

—তার আর দরকার নেই।(মুচকি হেসে)

মাশিয়া আশুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে ওদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুজছে।মাশিয়া ওর কাধে হাত রেখে বলল….
—কাউকে খুজছো???

—হুম।আপনারা তো মাফ করে দিলেন।কিন্তু ঐ আন্টিকে তো দেখছি না।তার সাথে সেদিন অনেক অন‍্যায় করে ফেলেছি।তাকেও তো সরি বলতে হবে।

আশুর কথা শুনে নিলাভের চেহারার রং পাল্টে গেলো।

#চলবে…..

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন‍্যবাদ)

তোর মায়ায় পর্ব-০২

0

#তোর_মায়ায়❤
#Part_02
#Ariyana_Nur

উল্টো করে লটকিয়ে বরফ গলা পানিতে মধ‍্যে একটি ছেলের মাথা চুবিয়ে রাখা হয়েছে।ছেলেটির মাথা ঠান্ডায় শিরশির করছে তারপরেও মুখে কিছু বলতে পারছে না।

তার সামনে দুটো ছেলে আর তিনটি মেয়ে বসে আছে।কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই।

পাশের থেকে একজন মেয়ে ভয়ে ভয়ে বলল….
—আশু….
বোন আমার এবার ছেড়ে দে ওকে।

আশু চোখ রাঙ্গিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল…

—মিথিলা আপু তুমি আবার এই ছাগলটার হয়ে কথা বলছো???দেখলে আজ এই ছাগলটার জন‍্য কি বিপদে পরেছি।আমার কথা না হয় বাদ দাও জিজু….
জিজুর বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি হতো???ভেবে দেখেছো???আর এই সব কিছু হয়েছে এই ছাগলটার জন‍্য।

মিথিলাঃদেখ বোন তুই তো আমার জন‍্যই সব করলি।এবার না হয় আমার কথা রাখতে এই ছাগলটাকে ছেড়ে দে???

আশুঃতুমি চুপ থাকো।বেশি কথা বললে তোমার বরকে কিন্তু উল্টো লটকিয়ে ঠান্ডা পানিতে চুবাবো।

আশুর কথা শুনে নিরব কাশতে লাগলো।কাশি থামিয়ে অসহায় চোখে আশুর দিকে তাকিয়ে বলল….

—শালিসাহেবা আমাকে কেনো শাস্তি দিবে???

—এহ আসছে… আমাকে কেনো শাস্তি দিবে।নিজে তো দুধে ধোয়া নিম পাতা।আপনার জন‍্যই তো সব হলো।

—দেখো বোন আমার কোন দোষ নেই।মিহানেরই ভুল হয়েছে।ও…

আশু তেড়ে এসে বলল….

—বাবা,মার মুখের উপর দিয়ে কথা বলতে পারবেন না তাহলে রিলশনে যাওয়ার আগে তাদের কে আগে বলতে পারেননি মা বাবা আমার একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে আমি তার সাথে রিলেশনে যেতে চাই।আরে রিলেশন তো ঠিক ছিলো ভিতুর ডিম আমার বোনকে বিয়ে করে আরেক মেয়েকে বিয়ে করতে গেছিলো।শুধু ভুল যায়গায় এন্টি নিয়েছিলাম বলে তা না হলে এই আশু কি জিনিস হারে হারে টের পাইয়ে দিতাম।

ওর কথা শুনে সবাই চুপ করে রইল।কারো মুখে কোন কথা নেই।কারন সবাই জানে একে এখন কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে।আর সত‍্যিতা বললে তো একজনের আরো ব‍্যান্ড বাজবে।

নিরব ভয়ে ভয়ে বলল….
—বোন ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনো।তারপরে না হয় তোমার যা হচ্ছে হয় বল।

নিরবের মুখে সব শুনে আশু রেগে সামনের একটা চেয়ারে লাথি মারলো।তারপরে উল্টো লটকানো ছেলেটিকে বলল…

—তোর তো মাথা ঠিকছিলো না।আজ সারা রাত বরফের পানিতে মাথা চুবিয়ে মাথা ঠিক কর তুই।

মিথিলা মনে মনে বলল….

আল্লাহ্ আমার এই বোনের কপালে এমন একজন পাঠিয়ো যে ওকে ওর রাগ,জিদ,ছেলেমানুষি সব কিছু দেখেই ওকে পছন্দ করবে আর ওকে সামলে নিবে।

আসল ঘটনা হলো,আজ মিথিলার বর নিরব এর ভাইয়ের বিয়ে ছিলো।মিথিলা আর নিরব পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে।মিথিলা আশুর ফ্রেন্ড মিহান এর বড় বোন।মিথিলাকে আশু নিজের বোনের মত মনে করে।মিহান ঘুমের ঘোরে ভুল করে নিরব এর ভাই এর জায়গায় শুনে নিরব এর বিয়ে।তারপর আশুকে ফোন দিয়ে বললে আশু সব প্লান করে কিভাবে বিয়ে ভাঙ্গা যায়।আশু এদিকে ওর সব ফ্রেন্ড দের নিয়ে প্লানিং করতে থাকে কিভাবে বিয়ে ভাঙ্গবে।আর ওদিকে মিহান কে বলে নিরব এর বাড়ির ঠিকানা জোগার করতে।সেখানেও মিহান ভুল করে রোডের ডান পাশের বাড়িকে রোডের বাম পাশের বাড়ি বলে।ব‍্যস আর কি লাগে….

মিথিলা ভয়ে ভয়ে আশুর সামনে এসে ওর কাধে হাত রেখে বলে….
—আমাদের লোক তো একটু পর সেখানে গিয়েছিলো।কি করে তুই এতোক্ষন ঐ লোকগুলোকে সামলালি????

ফ্লাসব‍্যাকঃ……..
হল রুমে থমথমে পরিবেশ।মেয়েটির মুখে ইংলিশ শুনে সবাই অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।আর ঐ বয়ষ্ক মহিলাটির তো মুখ হা হয়ে আছে।মেয়েটি কথা শেষ করে হাতের ফোনটি সজোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারল।সাথে সাথে ফোনটা ভেঙ্গে এদিক সেদিক ছড়িয়ে পরলো।কিছুক্ষন আগেও যে চেহারায় একটা বাচ্চা সুলভ,ইনোসেন্ট ভাব ছিলো তা রাগে পরিনতো হয়ে গেছে।মেয়েটির সাথের ছোট মেয়েটি সবার দিকে তাকিয়ে মেয়েটির হাত ধরে ফিসফিস করে বলল…

—মনি…
কি হয়েছে তোমার???এমন করছো কেন???
দেখো সবাই তোমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে।

মেয়েটি রাগে দাতে দাত চেপে ফিসফিস করে বলল….

—অনেক বড় ভুল হয়ে গেছেরে।এবার আল্লাহ্ আল্লাহ্ কর যাতে এই সিংহের গুহার থেকে বের হতে পারি।

মেয়েটি ছোট বাচ্চাটিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু একটা বলে।তারপরে মেয়েটি এবার চারোদিকে তাকিয়ে নিজেকে সান্ত করে গুটিগুটি পায়ে নিলাভের সামনে গিয়ে বলল….

—হু আর ইউ??আই মিন আপনার নাম কি???

মেয়েটির এমন প্রশ্ন শুনে নিলাভ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।নিলাভ মনে মনে বলে….

—বলে কি এই মেয়ে।এতোক্ষন সবার সামনে বলছিলো আমি ওর হাজব‍্যন্ড এখন আমাকেই প্রশ্ন করছে আমি কে???

ঐ বয়ষ্ক মহিলাটি এবার মেয়েটির সামনে এসে বলল….

—এতোক্ষন তো ওকে নিজের স্বামী বলছিলে এখন নিজেই চিনো না।কি শুরু করলে তুমি???

—উফ….
আন্টি আপনি কেনো এতো হাইপার হচ্ছেন???আরে আন্টি ..বেশি হাইপার হলে আপনার এই সুন্দর মেকআপ গুলো ঘেমে উঠে যাবে।তখন কি হবে ভেবে দেখেছেন???

—তোমাকে তো আমি….😡

—আরে আরে আন্টি রাগছেন কেন???আপনার চেহারায় না রাগ মানায় না।না রাগলে আপনাকে পুরো ববিতার মত আগে।আর রাগলে কি যেন কি যেন🤔ওহ্ মনে পরেছে…রিনা খানের মত লাগে।

মেয়েটি একা একা বকর বকর করে যাচ্ছে।থামার কোন নাম নেই।আর কেউ কিছু বলতে নিলে তাকে থামিয়ে জ্ঞান দেওয়া শুরু করছে।

নিলাভ মেয়েটির এই ছেলেমানুষী সর্য‍্য করতে না পেরে চিৎকার করে বলল….

—স্টপ….
এই মেয়ে কি শুরু করেছো তুমি???এখানে কি কমেডি শো চলছে???

মেয়েটি এবার নিলাভ এর সামনে গিয়ে এক হাত দিয়ে কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল…..

—আই এম সরি।জানি আমার এই সরি বলাতে কিছু হবে না।আমি যা ভুল করেছি তা সরিতে কাজ হবে না।তারপরেও বলছি সরি….দেখুন ঐ আপুটা কিন্তু আপনাকে পছন্দ করতো না।তাই তাকে বিয়ে করলে আপনার পস্তাতে হত।তার থেকে আমি আপনাকে বাচিয়ে দিলাম।আর আপনি যদি……

আর কিছু বলার আগেই সব লাইট আফ হয়ে গেলো।আর এই দিকে মেয়েটি লাইট আফ হতেই ছোট মেয়েটিকে নিয়ে পগার পার।

_________________________

কাঠ-ফাটা রোদের মধ‍্যে গাছের ছাড়ার নিচে দাড়িয়ে আছে আফিফা।তার সামনের একটা গাছের উপর বেশুরা আওয়াজে একটি কাক কা কা করে যাচ্ছে।আফিফা কাকটার উপর যতটুকু বিরক্ত না হচ্ছে তার থেকে বেশি বিরক্ত হচ্ছে সামনের মানুষটার উপর।কেননা আফিফাকে সে এখানে দাড় করিয়ে নিজে বাইকের উপর শুয়ে শুয়ে হিরোদের মত ভাব নিয়ে চাবির রিং হাতের মধ‍্যে ঘুরাচ্ছে।আফিফা বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বলল….

—এমন একটা ভাব করছে মনে হচ্ছে কোন হিরো।হুহ….

সামনের লোকটি আফিফার কথা শুনে উঠে বসে চাবির রিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলল….

—হিরোই তো।তা আবার তোমার।তাই তো তখন ঐ বখাটে লোকগুলোর থেকে বাচালাম।

আফিফা মুখ ভেংচি কেটে বলল….

—হুহ কি আমার বাচিয়েছে।ঐ লোকগুলো তো আপনাকে দেখেই পালিয়েছে।তাহলে আপনি বাচালেন কোথায়???

—ওরা আমাকে দেখে কেনো পালিয়েছে তা কি তুমি বুঝতে পারছো না???

আফিফা লোকটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল….

—মনে হয় আপনি কোন ছিনতাইকারী তাই আপনাকে দেখে তারা পালিয়েছে।

—আমাকে দেখে তোমার ছিনতাইকারী মনে হয়😡

আফিফা লোকটিকে আরেকটু ভালো মত পর্যবেক্ষণ করে বলল….
—তাহলে কি আপনি সিরিয়াল কিলার???কথাটা বলেই ভ‍্যা ভ‍্যা করে কাদতে লাগলো।

সামনের লোকটি ওর এই কান্না দেখে জোরে ধমক দিয়ে বলল….

—চুপ…..
আর একটুও শব্দ করবে না।এই মেয়ে তোমার সম‍্যসা কি বলবে???আমার নাম নিয়ে লোকদের ভয় দেখিয়ে এখন আমাকেই চিনছো না।

আফিফা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল….
—আপনিই তাহলে বড় ভাই,গুন্ডা,বদমাশ জিদান???

জিদান কিছু বলবে তার আগেই মুখের মধ‍্যে পানির ঝাপটা পরায় ধরফরিয়ে উঠে বসে সামনে তাকিয়ে আবাক হয়ে বলে….
—তুমি????

#চলবে…..

তোর মায়ায় পর্ব-০১

0

#তোর_মায়ায়
#Part_01
#Ariyana_Nur

ওরে….আমার কি হবে গো….আল্লাহ গো…..আমারে উঠাইয়া নেও গো…..এই দিন দেখার আগে আমার মরন হলো না কেনো গো…..

কারো এমন মরা কান্না শুনে সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে এভাবে কান্না করছে। তার এক হাত দিয়ে একটা ৪/৫বছরের মেয়েকে ধরে রেখেছে।আরেক হাতে ছোট একটা ব‍্যাগ।

মেয়েটি আস্তে আস্তে স্টেজের সামনে এসে বলল….

—আপনে এইডা করতে পারলেন আমার লগে?আপনে আমারে হালাইয়া আইয়া এহানে আরেকজনরে নিজের কইরা নিতাছেন।আরে আমার কথা না হয় নাই ভাবলেন আপনের এই মাইয়াডার কথাডা তো ভাববেন।আপনের এই মাইয়াডারে নিয়া আমি কৈই যামু।আপনে আমার সাথে এমন কেমনে করতে পারলেন?এই বলে মেয়েটি আবার মরা কান্না জুরে দিল।

মেয়েটির এমন কান্না দেখে সবাই অবাক হয়ে স্টেজের উপর দাড়িয়ে থাকা নিলাভ চৌধুরীর দিকে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে রইলো।

নিলাভ চৌধুরী।চৌধুরী গ্রুপ এর ceoমিঃআদনান চৌধুরীর ছেলে।দেখতে মাশাল্লাহ্।বাকি পরিচয় পরে জানা যাবে।

আজ নিলাভ চৌধুরীর এন্গেজমেন্ট।নিলাভ চৌধুরীর মা মিসেস চৌধুরীর পছন্দের মেয়ে সুইটির সাথে ঘরোয়া ভাবেই আজ নিলাভের এন্গেজমেন্ট ছিল।নিলাভ স্টেজে উঠে যেই না আংটি পরাতে যাবে তখনি মেয়েটা সেখানে এন্টি নিল।

নিলাভ রক্ত চক্ষু করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু মুখে কিছু বলছেনা।

একজন মধ‍্য বয়ষ্ক মহিলা মেয়েটির সামনে এসে উচু গলায় বলল….

—এই মেয়ে কে তুমি???কি উদ্দেশ্যে এখানে এসেছো???
তুমি জানো তুমি কার সম্পর্কে কি বলছো???

মেয়েটিঃআপনে কেডা???হের কি লাগেন???

—আমি যেই হই না কেনো তুমি বল কে তুমি আর আমার ছেলেকে চিনো কি করে???

মেয়েটি মহিলাকে বড় একটা সালাম দিয়ে বলল….

—আম্মাগো…..
আমারে বাচান গো….আপনের পোলায় আমারে এমনে ধোকা কেমনে দিতে পারলো গো…..😭হেরে ছাড়া আমি বাচুম না গো….

মহিলাটি ধমক দিয়ে বলল….

—চুপ আর একটাও উল্টোপাল্টা কথা বলবে না।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো???দেখতেই মনে হচ্ছে ভিক্ষারির বাচ্চা।তোমার মত কালো,ক্ষেত,মূর্খ,আনস্মার্ট মেয়েকে আমার ছেলে কখনো বিয়ে করবে না।কোন উদ্দেশ্যে এখানে এসেছো সেটা বল?আর এই মেয়েটিকে কোথার থেকে ধরে নিয়ে এসেছো?এর সাথে তো আমার ছেলের কোনই মিল নেই।না চেহারায় না গায়ের রং এর।

মহিলাটির এমন কথা শুনে নিলাভ এর চেহারার রং পাল্টে গেলো।তার শরীরে রক্ত টগবগ করতে লাগলো।দুই হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে অনেক কষ্টে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে লাগলো।

মেয়েটি কিছুক্ষন মহিলাটির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল….

—কেন আম্মা???আমি কি মানুষ না।হ আমি দেখতে খারাপ লেহাপড়া পারিনা তাই বইলা কি আপনে আমারে এমনে কইবেন।মাফ করবেন আম্মা আমারে আর আপনেরে কিন্তু একজনই বানাইছে।তাই তার বানানো জিনিসেরে এভাবে ছোড করা ঠিক না।মানুষেরে ছোড কইরা,মনে কষ্ট দিয়া কথা কইলে আল্লাহ্ নারাজ হয়।আপনে লেহাপরা কইরাও এডা জানেন না।
আর একডা কথা,হের লগে মিল না থাকলেও আপনে লগে কিন্তু আপনের নাতীনের অনেক মিল আছে।চেহারায় মিল না থাকলেও গায়ের রং এ আছে।

মহিলাটি এবার রাগে অপমানে ফেটে পরল।কেননা বাচ্চা মেয়েটির গায়ের রং শ‍্যমবর্ন।আর মহিলাটি যে শ‍্যমবর্ন তা তার হাতপা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।মহিলাটি চেহারায় ইচ্ছেমত মেকআপ করে এনার্জি লাইট জ্বালিয়ে রাখলেও হাতপায়ে কিন্তু লোডসেডিং হয়ে আছে।

মহিলাটি ত‍েড়ে এসে বলল….
—কি বললে তুমি আমি কালো???কোন সাহসে তুমি আমাকে কালো বললে???

মেয়েটি মুখে হাত দিয়ে বলল….

—এ আল্লাহ্….
আমি এডা কহন কইলাম।আপনে কালা হইবেন ক‍্যান।আরে আপনি তো…আমগো গেরামে ঐ যে হেঝেক লাইড ধরায় না আপনের চেহারাডা তো হেই লাইডের মত।একে বারে ফকফোকা।

মেয়েটির এমন কথা শুনে নিলাভ এর বোন মাশিয়া মিটমিট করে হাসছে।আর হেঝেক লাইট শব্দটা শুনে নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল….

—আচ্ছা ভাবি হেজেক লাইট কি????

মাশিয়ার কথা শুনে মহিলাটি কটমট করে মাশিয়ার দিকে তাকাতেই মাশিয়া চুপ করে রইলো।

সুইটি স্টেজ থেকে ন‍্যকা কান্না করে বলল….
—পাপা আমি এই বিয়ে করবো না।আমার ইচ্ছে নেই কারো সংসার ভাঙ্গার সতীন হবার।

সুইটি স্টেজ থেকে নেমে মেয়েটিক জরিয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল….

—ধন‍্যবাদ আপু আমাকে এই বদরাগী,ডেভিল কে বিয়ে করা থেকে বাচানোর জন‍্য।আজকে যদি এন্গেজমেন্ট হয়ে যেত তাহলে আমাকে আধামরা করে হলেও আন্টি তার ছেলের বউ করতেন।

_____________________________

সূর্য ঠিক মাথার উপরে।রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা খুব কম।কাঠ ফাটা রোদের মধ‍্যে হেটে বাড়িতে যাচ্ছে আফিফা।একটু পর পর ওরনা দিয়ে মুখ মুছচ্ছে।হঠাৎ করেই একটা বাইক ওর সামনে এসে থাকাতেই ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো ও।বাইকের থেকেই দুজন লোক বত্রিশ পাটি দাত বের করে একজন আরেকজনকে বলছে….

—মামা দেখ ফুলবানু এই রোদের মধ‍্যে হেটে হেটে ঘেমে নেয়ে গেলো।

—ঠিক কইছো মামা।তা ফুলবানু তোমার বাড়ি কই চলো পৌছিয়ে দেই।তা নাম কি তোমার???

আফিফা ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কোন মানুষ না দেখে কাপাকাপা গলায় বলল….
—আপনারা আমার পথ ছাড়ুন।

—কেন গো ফুলবানু… চল আমরা তোমায় পৌছিয়ে দেই।তার আগে ঠিকানাটা দাও।

আফিফা কিছু একটা ভেবে বলল….
—আপনারা আমার পথ আটকিয়েছেন কেনো??আপনারা জানেন আমি কে???

—না গো ফুলবানু…জানিনা দেখেই তো জিগ্যেস করছি তুমি কে???
কথাটা বলে তারা দুজন আবার বত্রিশ পাটি দাত বের করে হাসতে লাগলো।

আফিফা কি বলবে নিজেও জানে না।একটু চুপ থেকে মাথায় যা এলো ফট করে তাই বলল….

—আপনারা এই এলাকার বড় ভাই,গুন্ডা,বদমাশ জিদান এর নাম শুনেছেন???

মেয়েটির মুখে জিদান নামটা শুনে লোকদুটো একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ঘারবে বলল….
—ভাই!!!ভাই আপনার কি লাগে???

আফিফা আমতা আমতা করতে করতে বলল….
—আমার…আমার…..আমার ভ…..

পিছন থেকে একটা কন্ঠে ভেসে আসলো….
—এটা তোদের ভাবি।

কথাটা শুনে লোকদুটো চমকে সামনে তাকিয়ে বড় সর একটা ধাক্কা খেলো।একজন অস্পষ্ট শুরে বলল…

—ভা…ভাই…আপনে এখানে????

_________________________

একে একে মেয়ের বাড়ির সবাই চুপ করে চলে গেলো।কেননা চৌধুরী বাড়ির কারো উপর দিয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।আর নিজেদের মেয়েই যখন বলেছে এখানে বিয়ে করবে না সেখানে কথা বাড়িয়েও কোন লাভ নেই।নিলাভ স্টেজে উপর স্ট‍্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।তার মুখে কোন কথা নেই।এদিকে ঐ বয়ষ্ক মহিলাটি রাগে সামনের থেকে একটা ফুলদানি তুলে দূরে ছুড়ে মেরে বলল….

—এই দুইটাকা ওয়ালা ভিক্ষেরী মেয়ের জন‍‍্য সবার কাছে আমি ছোট হলাম।সবাই এই ভিক্ষেরী মেয়েটার কথা বিশ্বাস করলো আমার কথা কেউ শুনলোই না।আর তুমি (নিলাভকে উদ্দেশ্যে করে)কেন বললে না এই মেয়েটাকে তুমি চিনো না।এতগুলো লোকের সামনে আমাকে আপমান করতে ভালো লাগলো তোমার।পেলে শান্তি আমাকে আপমান করে।এই ভিক্ষেরির মেয়েকে কেনো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বের করে দিলে না।এন্সার মি….(চিৎকার করে)

নিলাভ সামনের একটি ফুলদিনি দেয়ালে ছুড়ে মেরে বলল….
—স্টপ(চিৎকার করে)

নিলিভ এর চিৎকারে বাড়ির সবাই ভয়ে জরোসড়ো হয়ে গেলো।কেননা নিলাভ এর রাগ সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানে।ওর রাগ হলে যে কি করতে পারে তা সবার ধারনা আছে।

—তুমি এই মেয়েটার জন‍্য আমার সাথে উচু গলায় কথা বলছো।এই মেয়েটির জন‍্য??কি হয় তোমার যার জন‍্য তুমি আমাকে কথা শুনাচ্ছো??নাকি এই দুটাকার মেয়েকে নাটক করার জন‍্য এনেছো??

নিলাভ সামনের বড় একটা সোপিসে ঘুসি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলল।ওর হাত থেকে টপটপ করে রক্ত বের হচ্ছে।চোখদুটো আগুনের মত লাল হয়ে আছে।নিলাভের এমন রুপ দেখে মহিলাটি এবার ভয় পেয়ে গেলো।

নিলাভ গুটি গুটি পায়ে মেয়েটির সামনে এসে শান্ত শুরে বলল…
—হু…আর…ইউ????

নিলাভের কথা শুনে মেয়েটি ফেলফেল করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।নিলাভ এবার সামনের চেয়ারে একটা জোরে লাথি মেরে চিৎকার করে বলল…..

—এন্সার মি….হু…আর…ইউ???

কথাটা শুনে মেয়েটির মাথায় জেনো আকাশ ভেঙ্গে পরল।মেয়েটি আবাক হয়ে নিলাভের রাগে লাল হয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল।যেভাবে রেগে আছে মনে হচ্ছে কাচা চাবিয়ে খাবে।

বয়ষ্ক মহিলাটি ঝাঝালো গলায় বলল….

—তুমি ওর সাথে ইংলিশে কথা বললে বুঝবে তুমি কি বলছো।দেখলে না কথার কি ছিড়ি ছিলো।ঠিক মত তো শুদ্ধ ভাষায় কথাই বলতে পারে না। একে….

মহিলাটি আর কিছু বলার আগেই মেয়েটির ফোন বেজে উঠলো।মেয়েটি ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই তার চেহারার রং পাল্টে গেলো।মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বলল…..

—হোয়াট…..
আর ইউ কিডিং মি…..

#চলবে

প্রেম ২ পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

1

#প্রেম
#সিজন ২
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana (Writer)

মিষ্টিরা মিষ্টিদের দেশের বাড়ি চলে এসেছে। এখন থেকে মিষ্টির কলেজ মিষ্টির বাবার অফিস মা ভাইয়ের স্কুল অনেকটা দুর হয়ে যায় বলে ওরা ওখানে থাকতো। মিষ্টি মাএ একটা এক্সাম দিয়েছে। আর দেওয়া হবে না।

নিজের রুমে জানালার গ্রিল ধরে সামনের বাড়ির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি জীমের কথা ভাবছে। “জীম এখন কি করছে? চাকরিতে জয়েন করেছে তো? না কি পাগলের মতো খুঁজছে? জীম কি ওর রুমে এসে আমার রুমে উঁকি মারে? আমাকে না দেখতে পেয়ে সিগারেট মদ এগুলো খায় না কি আমার কথা ওর মনেই পড়ে না?

মিষ্টি এসব ভাবছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে মিষ্টির। এটাই কি ভালোবাসা? ভালোবাসার মানুষটা এতো দুরে আছে তবুও প্রতিনিয়ত তাকেই অনুভব করছে।

” মিষ্টি

মিষ্টি চোখের পানি মুছে মায়ের দিকে তাকায়

“হ্যাঁ মা বলো

” খেতে আসো

“খাবো না

” তোমার বাপি ওয়েট করছে

“পাঁচ মিনিট আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি

মিষ্টি ফ্রেশ হয়ে খেতে যায়। মিষ্টির বাবা খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে। এটাই বাবার ভালোবাসা। সন্তান যত বড়ই অন্যায় করুক সে ঠিক হ্মমা করে দেয়।

মিষ্টি খেতে বসে। খাবার গলা দিয়ে নামছে না। তবুও পানি দিয়ে গিলে খায়। বাবা মা ভাই এখন আর তেমন কথা বলে না মিষ্টির সাথে।

রুমের প্রায় অর্ধেক জিনিস ভেঙে ফেলেছে জীম। পাগলের মতো বিহেব করছে।

” আমার টাকায় কেনা জিনিস ভাঙলে মিষ্টি ফিরে আসবে না

জীম হাতে ফুলদানি নিয়েছিলো ভাঙার জন্য তখন বাবা কথাটা বলে। জীম ফুলদানিটা রেখে দেয়।

“তুমি মিষ্টির জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো। ভালো স্টুডেন্ট হয়েও মিষ্টি এখন এক্সাম দিতে পারছে না তোমার জন্য। খুব কি দরকার ছিলো নিষ্পাপ মেয়েটার নামে এতো বড় অপবাদ দেওয়ার? কেনো করলি এমন?

” আমি এসব করি নি। ভালোবাসি মিষ্টিকে ওর নামে বদনাম কি করে দেবো?

চিৎকার করে বলে জীম।

“জব পেয়েছিস। মন দিয়ে জব কর। মিষ্টিকে ভুলে যা। ও তোর জন্য না। আমি চায় না তোর জন্য মিষ্টির আরও বড় কোনো হ্মতি হোক।

জীমের বাবা চলে যায়।
জীম দরজা বন্ধ করে বেয়ারের বোতলটা হাতে নেয়। অনেকদিন খাওয়া হয় না। মিষ্টি ওর জীবনটাকে সাজিয়ে দিয়েছিলো। বখাটে জীমটা মিষ্টির জীম হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু এখন আবার জীম বেয়ারের বোতল হাতে নিলো। নেশা না কি কষ্ট ভোলায়। তাই এবার জীম এটাই করবে।

” যে আমার মিষ্টির নামে বাজে বদনাম দিয়েছে কসম খোদার তাকে আমি খুন করবো। একবার শুধু খুঁজে বের করি।

জীম বেয়ার আর সিগারেট নিয়ে বেলকানি দিয়ে মিষ্টির রুমে যায়। মিষ্টি পড়ার টেবিলে বসে খায়।

মিষ্টি কানে হেডফোন গুঁজে জীমের গাওয়া

“তুমি আমার কাছে ফুটফুটে ওই রাতের সুখ তারা
তাই রাত জাগিয়া মনের সুখে দেই যে পাহারা…
তুমি আমার কাছে শিশির ভেজা সোনালি সকাল
তোমায় এক পলক দেখিলে আমি হয়ে যায় মাতাল…..

এই গানটা শুনছে। একদিন বিকেল বেলা জীম মিষ্টিকে নিয়ে নদীর পারে ঘুড়তে গেছিলো। তখন মিষ্টিকে গানটা শুনিয়েছিলো। মিষ্টি রেকর্ড করেছিলো।

” মিষ্টি

বাবার ডাকে মিষ্টি হেডফোন খুলে।

“বাপি কিছু বলবে

মিষ্টির বাবা মিষ্টির পাশে বসে বলে

” হুমম বলো না

“আনি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি

বিয়ের কথা শুনে মিষ্টির মুখটা কালো হয়ে যায়। চোখ দুটো ভরে আসে।

” যে বদনাম তুমি ঘাড়ে নিয়েছো সেই বদনাম থেকে মরার আগে বেরতে পারবে না। ছেলেটা ভালো। সব জেনেও তোমায় বিয়ে করতে চায়। আমার খুব পছন্দ ছেলেটাকে। আশা করি তোমার কোনো বলার নেই। বাপিকে বিন্দু মাএ ভালোবেসে থাকো তো দ্বিতীয় বার এমন কিছু করো না যাতে তোমার বাপি মরে যায়

বাপি চলে যায়। মিষ্টি ওয়াশরুমে গিয়ে সাওয়ার অন করে চিৎকার করে কাঁদে।

“কি করবো আমি? আমি যে ভীষণ ভালোবাসি জীমকে। ওকে ছাড়া অন্য কারো সাথে কি করে থাকবো আমি? বাপি কেনো আমাকে বুঝতে পারছে না? কার কাছে বলবো? কে বুঝবে আমায়

একঘন্টা গোছল করে মিষ্টি ড্রেস চেঞ্জ করে। ফোনটা হাতে নেয়। ওই বাড়ি থেকে আসার পরেই ফোন অফ করে দিয়েছিলো। সিম অন করে। সাথে সাথে জীমের অজস্র মেসেজ কল আসে। মিষ্টি জীমকে ফোন দেয়। জীম মিষ্টির ছবি হাতে নিয়ে মদ খাচ্ছিলো। মিষ্টি ফোন পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে ফোন রিসিভ করে

” ওই ফুলটুসি কোথায় তুই? তুই জানিস না আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারি না। দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি। আমি তোর ওই পিক ভাইরাল করি নি রে। আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না রে। মরে যাবো। প্লিজ ফুলটুসি চলে আয়

“জীম শান্ত হয়ে আমার কথা শুনেন

” কি করে শান্ত হবো। তিনদিন তোকে দেখি না।

“আজ দেখা করবো

” এখুনি। কোথায় আসবো বল

“বিকেলে। আমি এড্রেস মেসেজ করে দেবো।

” দুই ঘন্টা দেরি হবে তোকে দেখতে। আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না রে।

“বাঁচতে হবে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।

” কিন্তু আমার জীবনটা থেমে গেছে। সময় যাচ্ছে না। এই তিনদিন মদ আর সিগারেট ছাড়া কিচ্ছু খায় নি। গোছলও করি নি। সেইদিন যে শার্ট প্যান্ট পড়ে তোকে কলেজে দিয়ে এসেছিলাম এখনো সেগুলোই পড়ে আছি। আমার প্রতিটা স্পন্ধনে তোর নাম লেখা

মিষ্টি আর কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। মিষ্টি লর কান্নার আওয়াজ পেলে জীম আরও পাগলামি করবে। তাই দাঁতে দাঁত চেপে কান্না কাটকাচ্ছে মিষ্টি।
মিষ্টি ফোন কেটে দেয়। মিষ্টির বাবা আড়াল থেকে কথা শুনে ফেলে। উনি ইফাদকে ফোন দেয়। সবটা বলে

“আংকেল আপনি চিন্তা কইরেন না। ওই জীমের গল্প আমি আজকেই শেষ করবো।

একটা পার্কে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে জীম মিষ্টি। তিনদিন দেখেনি জীম তার প্রেম কে। জীম হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে। মিষ্টিও কাঁদছে।

মিষ্টি জীমকে ছাড়িয়ে একটা গাছের নিচে বসে। জীমের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বলে

” একি অবস্থা হয়েছে আপনার?

জীম মিষ্টির হাতটা ধরে বলে

“আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

মিষ্টি হাত ছাড়িয়ে নেয়।

” অসম্ভব বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। সব সম্ভব

“এই ফুলটুসি তুই কি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য এখানে এসেছিস

” হুমমম

“বললেই হলো। আমি যেতে দেবো না তোকে। আমার #প্রেম তুই। তোকে ছাড়া বাঁচবো কি করে?

চিৎকার করে বলে জীম।

” আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। তাই তো শেষ বার আপনাকে দেখার জন্য এখানে আসতে বলেছি। জানি আমাকে ভুলতে পারবেন না। কিন্তু আমি আপনার জন্য না। আমি আপনার প্রেম হয়েই থাকতে চায়। বাপি আমার বিয়ে ঠিক করেছে

জীম হো হো করে হেসে ওঠে

“সব মেয়েরাই যাওয়ার সময় এই ডাইলোকটা দেই। যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে তোকে নিয়ে বাঁচবো আর যদি মরে যাই তাহলে তোকে নিয়েই মরবো। কিন্তু তোকে ছাড়ছি না। চল এখন তুই আমার সাথে যাবি

জীম মিষ্টির হাত ধরে টানে। মিষ্টি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। মিষ্টির বাবা আর ইফাদ পিস্তল হাতে নিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ায়। মিষ্টি বাপিকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।

” জানতাম এখনি ভিলেন আসবে। সরে যাও তোমরা

“আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও জীম।

জীম মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলে

” ছাড়বো না।

জীম মিষ্টির বাবা আর ইফাদ হাতাহাতি করছে। জীমকে মারছে। মিষ্টি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। চিৎকার করে ছাড়তে বলছে কিন্তু ছাড়ছে না। জীমের শরীর হ্মতবিহ্মত হয়ে গেছে।

“আআআআআআআআআআআআআআআআআ

মিষ্টির চিৎকারে ইফাদ আর বাবা জীমকে মারা বন্ধ করে। ইফাদের হাত ফসকে গুলি বেরিয়ে মিষ্টির মাথায় লাগে। মিষ্টি পরে যায়। মিষ্টির বাবা আর ইফাদ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়ে গেলো। জীম উঠে মিষ্টির কাছে যায়

” ওই ফুলটুসি। কিচ্ছু হবে না।

মিষ্টি জীমের হাত ধরে অস্পষ্ট সরে বলে

“খুব ভালোবাসি আপনাকে

মিষ্টি চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। ইফাদ আর মিষ্টির বাবা মিষ্টিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। জীমও ওদের পেছনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যায়।

করিডোরে বসে মিষ্টির বাবা মা পাগলের মতো কান্না করছে। ইফাদও কাঁদছে। মিষ্টিকে পাওয়ার জন্য এতো লড়াই। জীম মিষ্টির সম্পর্ক টাও ভেঙে দিলো। সেই মিষ্টিই যদি চলে যায় তাহলে কার জন্য এতোকিছু করলো।
জীম অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

ডাক্তার দরজা খুলে বের হয়। জীম ভেতরে যায়। ইফাদ দৌড়ে আসে

” মিষ্টি কেমন আছে?

ডাক্তার মাথা নিচু করে বলে

“সি ইজ নো মোর

ইফাদ ঠাস করে বসে পড়ে।

” আমি মিষ্টিকে মেরে ফেললাম। মেরে ফেলেছি আমি। আমার জন্য হয়েছে সব

চিৎকার করে কাঁদছে ইফাদ। মিষ্টির বাবার তো হুশ নেই।

জীম চুপচাপ মিষ্টির পাশে বসে। সাদা চাদর দিয়ে মিষ্টিকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
জীম মিষ্টির শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। মিষ্টির কপালে শেষ ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে জীম।

এখন আর কোনো ঝামেলা হবে না। কেউ মিষ্টিকে অপবাদ দিতে পারবে না। আর কখনো মিষ্টি বই নিয়ে বসবে না। কেউ আর মিষ্টিকে বলবে না “তোমার এখানে না থাকাই ভালো” কেউ অপমানও করতে পারবে না।

শেষ বারের মতো গোছল করিয়ে সাদা কাফনে মুরিয়ে খাটিয়ায় শুয়িয়ে রাখা হয়েছে। পুরো গ্রামের সবাই কাঁদছে। যেই মানুষ গুলো আজ সকালেও মিষ্টিকে দেখলে ছি ছি করতো তারাও কাঁদছে। আজব দুনিয়া।

জীমের বাবা মা জীমের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো শান্ত ভাবে মিষ্টিকে দেখে যাচ্ছে।
প্রেম এমনই হয়।

“আমার মিষ্টি কতো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। অথচ আমার ভেতরটা জ্বলে পুরে যাচ্ছে। আমিও মৃত্যুর গন্ধ পাচ্ছি। হয়ত খুব তাড়াতাড়ি জীমও মিষ্টির কাছে চলে যাবে।

একবছর পরে

হাসপাতালের বেডে সুয়ে আছে জীম। সিগারেট আর মদ খাওয়ার জন্য ভেতরের সব নষ্ট হয়ে গেছে।
মিষ্টির বাবা জীমকে দেখতে এসেছে।

” জীম

জীম মিষ্টির বাবার দিকে তাকায়

“শশুড় মশাই আপনি

” তুমি কেমন আছো?

“মিষ্টি ছাড়া কি জীম ভালো থাকতে পারে? ছন্নছাড়া। তবে খুব তাড়াতাড়ি আমিও ভালো থাকবো। আমার ফুলটুসির সাথে থাকবো। আবার আমরা প্রেম করবো। সেখানে কেউ আমাদের আলাদা করবে না। ওখানে ইফাদ আর কোনো বাপি থাকবে না। আমি ওই দিনটার অপেক্ষায় আছি।

মিষ্টির বাবা চোখ দিয়ে পানি পড়ছে

” কাঁদবেন না। এটা হওয়ার ই ছিলো। আফসোস আগে করতে হয় পরে না। তবে শেষ বার আমার একটা কথা রাখবেন?

মিষ্টির বাবা জীমের হাত ধরে বলে

“কিহহ বলো

” আমার বাবা মাকে একটু দেখে রাইখেন।বোনটাকে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েন। এসব আমার করার কথা ছিলো আমি আমার হাতে তো সময় নেই।

সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে জীম মিষ্টির কবরের কাছে যায়। কবরের ওপরে একটা বেলি ফুলের মালা দেয়

“খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না ফুলটুসি। তোমার চলে যাওয়াটা আমি সয্য করে নিয়েছি। আর দিন গুনেছি কবে তোমার কাছে যাবো। তোমার ডান পাশে আমার জায়গা হবে। দেখো দিনটা চলে এসেছে। আমি আসছি। আবারও প্রেম করবো আমরা। ভালোবাসি বলবো। সব সময় তোর সাথে থাকবো আমি। তোর লম্বা চুল গুলো এলোমেলো করে দেবো। তুইও শোধ নিবি। আমরাও ভালো থাকবো মিষ্টি। কেউ আর তোর নামো বদনাম দেবে না। আমি খুব তাড়াতাড়ি আমার প্রেমের কাছে আসছি

জীম কথা বলতে বলতে মিষ্টির কবরের পাশে শুয়ে পড়ে। মিষ্টিকে মনের কথা বলতে বলতেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। জীম মিষ্টির প্রেমের কাহিনি শেষ হয়।

_______________সমাপ্ত ____________

প্রেম ২ পর্ব-০৭

0

#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)

“মারামারি কেনো করলেন?

” ওরা আমায় মারতে আসছিলো

“কেনো?

” আগে আমি ওদের মারছিলাম তাই

“এখন আমাকে ছুঁয়ে কথা দেন আর কখন মারামারি করবেন না

” ঠিক আছে করবো না

“আমায় ছুঁয়ে বলতে হবে

” বললাম তো

মিষ্টি জীমের হাতটা নিজের হাতে রাখে।

“এখন বলেন আপনি আর কখনো কারো গায়ে হাত তুলবেন না। যদি তুলেন সেই দিন ই হবে জীম মিষ্টির শেষ দেখা

” কথা দিলাম

“গুড বয়

মিষ্টি জীমের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে।

” এটা কি হলো

“আপনিও একদিন দিছিলেন

” শোধ নিলি

“বলতে পারেন।

” খুব ভালোবাসি তোকে। খুব তাড়াতাড়ি একটা জব নিবো তারপর তোকে বিয়ে করবো

“হুমম

” পারবো তো

মিষ্টি জীমকে জড়িয়ে ধরে বলে

“অবশ্যই।

এরকম খুনশুটি দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসায় কাটছে জীম মিষ্টির দিন। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় জীম মিষ্টিকে দিয়ে আসে আবার আসার সেময় নিয়ে আসে। রাতের বেলা দুইজনে চুপিচুপি দেখা করে। মিষ্টির এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আজকে। সারা রাত পড়েছে মিষ্টি। জীমকে বলে দিয়েছে এক্সামের কয়েকদিন বেশি কথা বলবে না। জীম এখনো কোনো জব টব পায় নি। কিন্তু প্রাণ পণ চেষ্টা করছে জব পাওয়ার কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

বাবার সাথে পরিহ্মার হলে যায় মিষ্টি। জীম বাইক নিয়ে মিষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু মিষ্টি যায় নি। এতে জীমেরও কোনো অভিমান হয় নাই। কারণ প্রতিদিন তো জীমের সাথেই যায় আজ নাহ গেলো বাবার সাথে।

এক্সাম শেষে জীমের সাথে বাড়ি ফেরে। বাসায় ঢুকতেই মিষ্টির বাবা মিষ্টিকে ডাকে। মিষ্টি বাপির সামনে দাঁড়ায়। মিষ্টির বাবা ঠাস ঠাস মিষ্টির গালে দুটো চড় মারে

” ছি মিষ্টি ছি। তুমি এতো নোংরা হয়ে গেছো? সারাদিন ওই বখাটের সাথে ঘুড়ে বেড়াও আবার রাতে নিজের রুমে ছি

মিষ্টির চোখ দিয়ে ঝড়ঝড় করে পানি পড়ছে। মিষ্টির মা আর ভাইও কাঁদছে। মিষ্টির বাবার চোখেও পানি

“আমি গর্ব করে বলতাম আমার মিষ্টির মতো মেয়ে হয় না। আমার মিষ্টি তার বাবা মা ভাইকে ভীষণ ভালোবাসে। সেই মিষ্টি এই প্রতিদান দিলো তার। বিশ্বাস ভাঙলে তুমি? আমাকে তোমার জন্য অফিস থেকে ছি ছি করছে। হাসাহাসি করছে মিষ্টি

” বাবা আমি জীমকে ভালোবাসি

মিষ্টির বাবা আবার থাপ্পড় মারে। মিষ্টি ছিটকে পড়ে যায়।

“আমিও তোমাকে ভালোবাসি মিষ্টি। তাই এখনো তোমাকে মেরে ফেলি নি। আর আজ স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। যদি আমাদের সাথে থাকতে চাও তো জীমকে ভুলে যাও আর যদি জীমকে বেঁছে নাও তো ওই যে দরজা। বেরিয়ে যেতে পারো।

মিষ্টি বাবার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে

” বাপি আমার দুজনকেই চায়। জীমকে কি করে ভুলবো

“তুমি কি চাও এবার আমাকে পুলিশ অফিসারের পদ ত্যাগ করতে হোক? জীমকে ভালোবাসো ঠিক আছে ওর হাত ধরে পালিয়ে যেতে এরকম নোংরামি করার কি খুব দরকার ছিলো

বাবার কথা গুলো মিষ্টির শরীরে তীরের মতো বিধছে। এসব কি বলছে বাবা? বাবার মুখ থেকে এরকম কথা শুনতে হবে মিষ্টি তা জীবনেও কল্পনাও করে নি

বাবা রুমে চলে যায়। মিষ্টির মা মিষ্টির কাছে বসে

” এটা তুমি কি করলে মিষ্টি। চারপাশের লোকজন আমাদের ছি ছি করছে। জীম আর তোমার ঘনিষ্ঠ ছবি তুলে সেগুলো ভাইরাল করে দিয়েছে। তোমার বাবার অফিস থেকে উনি এসব দেখে এসেছে আর ওনাকে অনেক কথা শোনাচ্ছেন। আমিও স্কুলে যেতে পারছি না।

“কিন্তু মা আমি এসবের কিছুই জানি না

” তুমি তো এখন জীমের ভাবনায় বিভোর। ডাটা অন করো বিউজফিল্ডে দেখতে পাবে

মিষ্টি রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। দেখে সেখানে মিষ্টিকে নিয়ে জীম যেদিন ছিনেমা হলে গেছিলো আর ঠোঁটের ওপরে হাতে কিছ করছিলো। সেখানে হাত দেখা যাচ্ছে না পেছন থেকে তোলা তো বাজে একটা সিন। তারপর বাইকে। রুমে। কপালে কিস জড়িয়ে ধরা। সব বাজে বাজে মুহুর্তের ছবি। আর ক্যাপশনে বড়বড় করে লেখা “কমিশনার আবির চৌধুরীর মেয়ে সাথে বখাটে রাইয়ান রহমান জীম এর অবোধ্য সম্পর্ক ”

মিষ্টি ফোনটা আছাড় মারে চিৎকার করে কাঁদে।

“এটা কেনো হলো আমার সাথে? জীম কেনো করলো এমন?
মিষ্টির ফোনে ফোন আসে। মিষ্টি রিসিভ করে

” হ্যাঁ তিথি বল

“কি দেখছি এসব আমি মিষ্টি? এসব কি? তুই জীমের সাথে ছি।

” তিথি আমি কিচ্ছু করি নি রে

“আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু তোদের এরকম ছবি কে তুলল? জীম আর তুই ছাড়া তো কেউ থাকতি না। তাহলে কি জীম এমনটা করলো

মিষ্টি চমকে ওঠে যেমনটা উঠেছিলো যেদিন জীমকে প্রথম নিজের রুমে দেখেছিলো। তিথি হেলো হেলো করে যাচ্ছে কিন্তু মিষ্টি কথা বলছে না।
” জীম করেছে এমনটা। জীম ছাড়া আর কে করবে? আমার জীমনটা শেষ হয়ে গেলো। #প্রেম আমায় শেষ করে দিলো। এতো বড় অপবাদ নিয়ে বাঁচবো কি করে আমি?

মিষ্টি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।

বিকেলের দিকে জীম ইন্টারভিউ দিয়ে বাসায় আসে। আজ ইন্টারভিউ অনেক ভালো হয়েছে। চাকরি হয়ে যাবে কনফার্ম। জীমের যে কি খুশি লাগছে। এবার মিষ্টির বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। মিষ্টির বাবা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। মেনে নেবে জীমকে। ধুমধাম করে জীম মিষ্টির বিয়ে হবে। কতো ভালো হবে। কতো সুন্দর হবে জীম মিষ্টির জীবন।

“পুতুলের মতো করে সাজিয়ে রাখবো আমি আমার ফুলটুসিকে। লম্বা চুল গুলো নিজে হাতে আঁচড়ে দেবো। ভালোবাসার ঘড় বাঁধবো আমরা।

এসব ভেবে জীম ফ্রেশ হতে যায়।

মিষ্টিদের বাড়িতে কিছু মহিলা আসে অনেক কথা শুনিয়ে যায়। মিষ্টিদের এখান থেকে চলে যেতে বলে। এখন আবার নতুন শব্দ এড করেছে সেটা হলো মিষ্টি প্রেগন্যান্ট।

এসব শুনে মিষ্টির নিজেকে নিজের শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু না আত্মহত্যা মহা পাপা। এটা করা যাবে না।

সারাদিন মিষ্টির বাবা মা ভাই আর মিষ্টি কিছুই খায় নি। মিষ্টির বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মাও তাই। মিষ্টি বাবা পাশে এসে বসে

” বাপি চলো না আমরা এখান থেকে অনেক দুরে চলে যায়।

মিষ্টির বাবা মুখ তুলে মিষ্টির দিকে তাকায়।

“ছোট বেলায় তুমি মরে গেলো হয়ত আমাদের এই দিনটা দেখতে হতো না

মিষ্টি আর কিছু বলার সাহস পায় না।

” আমার জন্য হয়েছে এসব। সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। পাপি আমি। কেনো প্রেম করলাম। কেনো ভালোবাসলাম। যদি ভালো না বাসতাম তাহলে এসব কিছু হতো না।

এসব ভাবতে ভাবতে মিষ্টি রুমে চলে যায়।

সারাদিন দৌড় ঝাপ করার জন্য জীম খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই আর মিষ্টির সাথে দেখা করতে যেতে পারে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে মিষ্টির রুমে চলে যায়। কিন্তু মিষ্টি নেই। কোথাও মিষ্টি নেই। খাটের ওপর একটা চিরকুট রাখা। জীম সেটা খুলে

“আমার জীম
আমি জানি তুমি আমাকে খুঁজে না পেলে ভেঙে পড়বে। কষ্ট পাবে। সবার বিরক্তির কারণ এখন আমি হয়ে গেছি। কলেজে এক্সার দেওয়ার জন্য গেছিলাম টিচাররা বললো আমি যেনো আর কলেজে না যায়। বাবা বললো আমি ছোট বেলাতে মরে গেলেই ভালো হতো। এখন আপনি হয়ত বলবেন এরকম রিলেশন তো আমি হাজারটা করি। আমি কি করবো বলেন তো। আমার লাইফটা শেষ হয়ে গেছে। আমি আপনাকে দায়ী করছি না। আপনি পুরুষ মানুষ তাই আপনার ওপর এরকম হাজারটা অভিযোগ আসলেও কেউ সিরিয়াসলি নেবে না। সমাজ আপনাকে কলঙ্ক দেবে না। কিন্তু আমার হ্মেএে বিষয়টা অন্য। তাই অনেক দুরে চলে গেলাম। অনেক দুরে। বাপি মা ভাইকে নিয়ে নতুন সুখের আশায় ছুটছি। দয়া করে খুঁজবেন না আমায়। নতুন করে জীবন সাজান। আপনি কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে কথা দিছেন কখনো মারামারি করবেন না। আমি জানি আপনি জব পেয়েছেন। মন দিয়ে কাজ করেন। ফিউচার ব্রাইট করতে হবে তো।

ইতি
মিষ্টি

চিরকুট পড়ে জীম বসে পড়ে।

” এটা হতে পারে না। আমার মিষ্টি আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। আমি খুঁজে বের করবো মিষ্টিকে।করবোই।

চলবে

প্রেম ২ পর্ব-০৬

0

#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana (Writer)

ইফাদ তুলির বাবা মায়ের সাথে খেতে বসে গেছে৷ তুলির হাত পা কাঁপছে এই বুঝি বলে দেবে আজ তুলি কোচিং এ যায় নি। বাবা নিশ্চয় খুব বকবে। কোথায় গেছিলাম জানতে চাইবে। কি বলবো আমি? জীমের কথা বলে দিবো। বাবা তো জীমকে খুব বকবে। কি করবো আমি

“মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছো কেনো খেতে বসো

বাবার কথায় মিষ্টি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। জোর পূর্বক একটু হেসে টেবিলে বসে। ইফাদ আড়চোখে মিষ্টির দিকে তাকায়।
ইফাদ আর মিষ্টির বাবা অনেক কথা বলছে কিন্তু মিষ্টির কোনো দিকে খেয়াল নেই। মনটা জীমের কাছে পড়ে আছে। জীমের অনুপস্থিতিতেও মনে হচ্ছে জীম আশেপাশে আছে। খাচ্ছে আর জীমের কথা ভাবছে মিষ্টি

“মিষ্টি কি ভাবছো তুমি?

ইফাদ জিজ্ঞেস করে। মিষ্টি চমকে ইফাদের দিকে তাকায়। ইফাদ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি?
মিষ্টি মাথা নারায়। মানে কিছু না।

খাওয়া শেষে মিষ্টি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
” এটা কি হচ্ছে আমার সাথে? সারাহ্মণ লেজ ছাড়া বাঁদর টার কথা কেনো মনে পড়ছে। তাহলে কি আমি সত্যিই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। ধ্যাত আমিও কিসব ভাবছি।

পাঁচদিন হলো জীম মিষ্টির সামনে যায়। যদিও সামনে পড়ে যায় হাই হেলো ছাড়া আর কোনো কথা বলে না। মিষ্টি হারে হারে টের পাচ্চে জীমের শূন্যতা। সারা জীমের কথায় ঘোরে মিষ্টির মাথায়।

“চোখে চোখে এতো কথা
মুখে কেনো বলো না…..
এতো আশা তবু ভাষা মন কেনো পেলো না
একি খেলা বলো না
কেনো করো প্রিয়া বলো ছলনা…….

গানের সুরে মিষ্টি বেলকনিতে চলে যায়। জীম জীমের বেলকনিতে বসে গান গাইছে। মিষ্টি মুচকি হাসে। গান শেষে জীম দেখে মিষ্টি হাসছে

” ওই ফুলটুসি

মিষ্টি তাকায়

“বলেন লেজ ছাড়া বাঁদর

” ভালোবাসি

মিষ্টি আনমনেই বলে ওঠে

“আমিও

” কিহহহ

জীম লাফ দিয়ে উঠে বসে বলে। মিষ্টি এতোখনে বুঝতে পারলো কি বলেছি

“না মানে কিছু না

” আমি শুনে ফেলেছি

“আমি কিছু বলি নি

” আমিও শুনেছি

“ধ্যাত

মিষ্টি রুমে চলে যায়। জীম নাচতে নাচতে ডিনার করতে যায়।

” লেজ ছাড়া বাঁদর এভাবে লাফাচ্ছেন কেনো?

“আহহ সব সময় ছেলেটার পেছনে না লাগলে হয় না

” তোমার ছেলেকে বলো একটু ভালো হতে

জীম বাবা মায়ের মাঝখানে বসে

“আমি ভালো হয়ে গেছি অলরেডি

” এ্যাঁ

“ইয়াহ বাবা। কাল থেকে কাজ করবো

” মাটি কাটবা

“রাইয়ান রহমান জীম মাটি কেনো কাঁটবে? বিশ্ব জয় করবে
” তুমি ঠিক আছো
জীমের বাবা জীমের কপালে হাত দিয়ে বলে।

“একদম পারফেক্ট আছি। মা খেতে দাও

জীমের মা খেতে দেয়। জীম এটিটিউটের সাথে খাবার খেয়ে রুমে চলে আসে। জীমের বাবা তো হা। হলো কি এর।

মিষ্টি বই পড়ছিলো। মিষ্টির ভাই আসে

” আপি বল

“বাপি ডাকছে?

” চল

মিষ্টি বই বন্ধ করে ভাইয়ের হাত ধরে বাবা মায়ের রুমে যায়

“বাপি ডাকছিলে

” হুমম সোনা। আমার পাশে বসো

মিষ্টি বাবার পাশে বসে। বাবা মিষ্টির মাথায় হাত বুলায়

“কাজের চাপে তোমায় সময় দিতে পারি না। বাট অলওয়েজ মিস করি

মিষ্টি বাবার কোলে মাথা রেখে বলে

” আমিও মিস করি

“এখন থেকে আর কাজ কাজ করবো না। আগে আমার ছেলে মেয়ে তারপর কাজ

” এতো আদর বাদ দাও। মেয়ের বিয়ের পরে কি করবে? (মা)

“আমার মেয়েকে ভালো আর ভদ্র ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে

মিষ্টি ভাবে

” বাবা কি জীমকে মেনে নেবে? না কি আলাদা হয়ে যেতে হবে জীমের থেকে? পারবো তো? আমি এরকম কেনো ভাবছি সব ঠিক হবে

“মামনি আজ আমার সাথে ঘুমাবে

” নাহ বাপি। অনেক পড়া বাকি কমপ্লিট করতে হবে

“ওকে।

মিষ্টি রুমে এসে দেখে জীম বসে আছে

” আপনি

“এতোখন কোথায় ছিলি?

” বাপির কাছে

“এবার বরের কাছে থাকবি

” মানে কি?

জীম দরজা বন্ধ করে দেয়।

“ভালোবাসিস কিন্তু স্বীকার কেনো করিস না

” আমার আর আপনার মেচিং হয় না

“কে বললো?

” জানি আমি

“তাহলে কি? চলে যাবো? ভুলে যাবো তোকে?

মিষ্টি কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জীম মিষ্টির কাছে গিয়ে থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে

” ওই বল

“জানি না

” তুই যা বলবি তাই করবো

“ভালো হতে পারবেন? সিগারেট মদ ছাঁড়তে পারবেন

” নাহহহ

“কেনো?

“যখন তুই ছিলি না তখন এগুলো ছিলো আমার সাথে। আবার যখন ফিউচারে তুই থাকবি না তখনও এগুলোই থাকবে আমার সাথে। মদ সিগারেট আমাকে কখনো ধোঁকা দেবে না। কিন্তু তুই দিতেই পারিস। ইনফেক্ট দিবি। কারণ আমার ফিউচার ব্রাইট না।

মিষ্টি কিছু না বলে শক্ত করে জীমকে জড়িয়ে ধরে। জীমও মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে

” এই মিষ্টি

“হুম

” আমি কিন্তু সিগারেট মদ খায়

“চলবে

” ক্যারেকটারলেস

“চলবে

” অল্পতেই রেগে যায়

“চলবে

” আমার ফিউচার অন্ধকার

“তাও চলবে। আমার জীমকে চায়। শুধু জীমকেই

” লাভ ইউ ফুলটুসি

“লাভ ইউ টু লেজ ছাড়া বাঁদর।

“এভাবে আর কতোখন

মিষ্টি জীমকে ছেড়ে দেয়। একটু লজ্জা পায়

” এতে লজ্জার কি হলো

মিষ্টি বই বের করে পড়ার টেবিলে বসে। জীম বই বন্ধ করে দেয়

“এটা কি হলো

” যখন আমি তোর সাথে থাকবো তখন বই দুরে থাকবে

“আমার কাছে বই প্রিয়

” আমার থেকেও

“আপনার কাছে যদি সিগারেট আমার থেকেও বেশি প্রিয় হয় তবে আমার কাছেও বই বেশি প্রিয়

” বলতে পারলি এটা

“কেনো পারবো না। আমার লাইফে আগে আপনি ছিলেন না বই ছিলো ফিউচারে আপনি নাও থাকতে পারেন বাট বই থাকবে

” আমার কথাই আমাকে ফেরত দিচ্ছিস

“কমন সেন্স

” থাক তুই তোর মতো

জীম রেগেমেগে চলে যায়।

“যাহহ বাবা এই ছেলেটা এমন কেন?

মিষ্টি জীমকে ফোন দেয় জীম ফোন কেটে ফোন বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে জীম মদ গিলছে

” কি এমন বললাম আমি? এভাবে কথায় কথায় রাগ করলে রিলেশন টিকবে কি করে?

মিষ্টি জীমের চিন্তা মাথা থেকে বের করে বই নিয়ে বসে।

সকালে কলেজের জন্য তৈরি হয়ে মা বাবাকে বাই বলে বেরিয়ে পরে মিষ্টি। বাড়ির গেটের কাছে গিয়ে দেখে জীম বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি কোনো কথা না বলে মুচকি হেসে বাইকে ওঠে।

জীম মিষ্টিকে কলেজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

“আজ কলেজে যাবো না

” তো

“ছিনেমা দেখতে যাবো

জীম বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে মিষ্টির দিকে তাকায়

” এভাবে তাকানোর কি আছে

“তুই বললি?

” হুমমম

“আসলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো তো তাই

🙄

“কিন্তু আমি ছিনেমা হলে যাবো না

” কেনো

“কাজ আছে আমার

” কি কাজ

“তোকে কেনো বলবো?

মিষ্টির মন খারাপ হয়ে যায়। ছোট করে বলে

” ওহহ

জীম মিষ্টিকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে একটুও দেরি করে না
মিষ্টিকে বাইও বলে না। চলে যায়। মিষ্টির এবার কান্না পাচ্ছে। জীম এমন বিহেব কেনো করছে?

মন খারাপ করে কোচিং এ যায় মিষ্টি। আজ তিথি আসে নি। ফাস্ট ছিটে বসেছে মিষ্টি

“মিষ্টি

” হুমম স্যার

“মুড অফ

” না

“তাহলে

” এমনিতেই ভাল্লাগছে না

ইফাদ মিষ্টির কপালে হাত দেয়

“আই এম ওকে স্যার

“ঠিক আছে

ইফাদ পড়ানো শুরু করে। ক্লাস শেষ করে মিষ্টি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ইফাদ অনেক করে বলে মিষ্টিকে ডপ করে দেবে কিন্তু মিষ্টি যাবে না। অবশেষে বাস চলে আসে। মিষ্টি বাসে উঠে পড়ে। মিষ্টি ভেবেছিলো জীম আসবে। কিন্তু আসলো না।

বাসায় ফিরে মিষ্টি জীমের রুমে উঁকি মারে দেখে লাইট অফ। এবার মিষ্টির রাগ হয়। বাবা গলা শুনে মিষ্টি রুম থেকে বের হয়

” বাবা কি হয়েছে

“আর বলো না। পাশের বাসার জীম আছে না এতো বেয়াদব একটা ছেলে বলার বাহিরে

জীম নামটা শুনে মিষ্টির বুকের ভেতর ধক করে উঠে

” কেনো বাপি কি করেছে?

“রাস্তায় মারপিট করছিলো।দুইটা ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জীমও আঘাত পেয়েছে। একটু প্রমাণ পায় ছেলেটাকে আমি লকাবে পুরবো। গুন্ডা একটা

” ওহহহ

“একদম ওই ছেলেটার সাথে কথা বলবা না। কাল তাজকে দেখলাম ওর সাথে ফুটবল খেলছে। আমি তাজকেও না করে দেবো। মনে থাকবে

” হুমমম

“যাও পড়তে বসো

মিষ্টি রুমে চলে যায়। কেনো জানি খুব কান্না পাচ্ছে। জীম আঘাত পেয়েছে এটা শুনে জীমকে দেখতে ইচ্ছে করছে।

এবার জীমের রুমে আলো জ্বলে। মিষ্টি বেলকনিতে চলে যায়। দেখে জীম শার্ট খুলে পিঠে দেখার চেষ্টা করছে কতোটা কেটেছে। মিষ্টি দেখতে পায় অনেকটা কেটে গেছে।

জীম যেমন করে মিষ্টির রুমে আসে মিষ্টিও এবার বেলকনি দিয়ে লাফিয়ে জীমের রুমে যায়। কিছু পড়ার শব্দে জীম পেছনে তাকিয়ে মিষ্টিকে দেখে

” তুই এখানে

মিষ্টি হরহর করে রুমে ঢুলে জীমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়

“কাঁদছিস কেনো?

” আপনি এমন কেনো? খুব খারাপ আপনি। খুব খারাপ

জীম মিষ্টির মাথায় হাত বুলায়

“এতো অভিমান কেনো? বাপি গুন্ডা বলেছে তার জন্য না কি আমার সাথে মিশতে না করছে তার জন্য

মিষ্টি জীমকে ছেড়ে বলে

” আপনি কি করে জানলেন

“কমন সেন্স। তোর বাপি আমাকপ যে ভাবে বলেছে তাতেই আমার বোঝা হয়ে গেছে সে শুধু তোকে না আমার বাবা কেও বলবে

” আমার অভিমান আপনার অঘাতের জন্য। আপনি গুন্ডা এটা জেনেই আমি ভালোবেসেছি। আজ যদি আপনি আমার সাথে থাকতেন এসব কিচ্ছু হতো না

“শিওর

” হুমমম

“আমি তোর সাথে থাকলেও এটা হতো তার জন্যই তোর সাথে ছিলাম না

” বুঝলাম না

“বুঝতে হবে না। মলম লাগিয়ে দে

” আগে বলেন

“খুব ব্যাথা করছে

মিষ্টি পরম যত্নে জীমের পিঠে মলম লাগিয়ে দেয়।

চলবে

প্রেম ২ পর্ব-০৫

0

#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana (Writer)

এবার জীম মিষ্টিকে একটা পার্কে নিয়ে আসে।

“এখানে চারপাশে তাকিয়ে দেখো শান্তি খুঁজে পাবে। অবশ্য তুমি তো ক্লাস রুমে শান্তি পাও তো এখানে নাও পেতে পারো।

” এটা কোনো জায়গা হলো। আগেও এসেছি বাপির সাথে। একদম ভালো লাগে না

জীম মিষ্টিকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বসে

“তোমার প্রিয় খাবার কি?

” চকলেট আইসক্রিম বার্গার স্যান্ডউইচ এগুলো

“ফুসকা চটপটি?

” এসব খেতে বাপি বারণ করছে। এগুলো হেলদি খাবার না।

“আচ্ছা। চলো আজ তোমায় ফুসকা খাওয়াবো

” না আমি খাবো না
জীম মিষ্টির কথায় পাত্তা দেয় না

“মামা বেশি করে ঝাল দিয়ে দুই প্লেট ফুসকা দাও তো

জীম পাশে থাকা ফুসকাওয়ালাকে বলে।

” আমি ঝাল খায় না

“আজ খাবি

” পাগল আপনি

“হুমম

ফুসকাওয়ালা ফুসকা দেয়। মিষ্টি হাতে নিয়ে বসে আছে। জীম একটা ফুসকা নিজের মুখে পুরে বলে

” জীবনে সব কিছুর দরকার আছে। সব পরিস্থিতির সাথে পরিচিত থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে বাবা মায়ের কথার বাইরেও যেতে হয়। নিজের মতো করে লাইফটাকে এনজয় করতে শিখতে হয়। তবেই তো জীবনের আসল মজাটা উপলব্ধি করা যায়

“আমার এসবের দরকার নেই

” অবশ্যই আছে। আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হলে

“এক্সকিউজ মি আমি কখনোই আপনার গার্লফ্রেন্ড হতে চায় নি। প্রেম ভালোবাসা এসব আমার জন্য না। আমার জন্য শুধুই বই। আমার ফিউচার ব্রাইট করা একমাএ উদ্দেশ্য। আমি জীবনে কিছু করতে চায়। তাছাড়া আপনার মতো একটা বখাটে ছেলের সাথে আফরা ইবনাত মিষ্টি কখনোই ভালোবাসতে পারে না। আপনার তো কোনো ফিউচার প্লানই নাই। গাঁজা খোর একটা। আপনার সাথে আমার যায় না

জীম একটু হাসে। তারপর একটা ফুসকা মিষ্টির মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে

” মন থেকে তাকিয়ে দেখ এই বখাটে টাকেই ভালোবেসে ফেলবি

মিষ্টি ঝালে শেষ। কোনোরকমে ফুসকাটা গিলে ফেলে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ঠোঁট নাক লাল হয়ে গেছে। পানি পানি করছে। জীম মধু খাইয়ে দেয়। ঝাল কমে যায়। আসলে আসার সময়ই জীম মধু নিয়ে এসেছিলো।

“আমি এখুনি বাসায় যাবো

” আমি না চাইলে যেতে পারবি না

“হুমম সেই জন্যই নিয়ে যেতে বলছি।

একটা মেয়ে আসে

” জীমমম

“তুমি

” তুমি এখানে। কাল মিট করার কথা ছিলো তুমি আসলে না কেনো? জানো কতো খারাপ লেগেছে আমার

মেয়েটা অভিমানের সুরে বলে। মিষ্টি তাকিয়ে দেখছে

“সরি বেবি বিজি ছিলাম

” আজ ফ্রি আছো

“কাল মিট করবো।

” ঠিক আছে। কল কিন্তু রিসিভ করবা

“ওকে

” লাভ ইউ

“লাভ ইউ টু

মেয়েটা চলে যায়। মিষ্টি অবাক হয়ে জীমের দিকে তাকিয়ে আছে

” হোয়াট

“এটা আপনার গার্লফ্রেন্ড?

” হুমমম

“তাহলে আমাকে কেনো প্রপোজ করলেন?

” ও আমার গার্লফ্রেন্ড ভালোবাসার মানুষ না

“এক ই তো

” এক না। প্রেম আর ভালোবাসার মধ্যে অনেক পার্থক্য। ও আমার টাইমপাস আর তুই ভালোবাসা

“আমি বাসি না

” ওহহ রিয়েলি

“ইয়াহহ

” যদি ভালো না বাসিস তাহলে আমার সাথে এখানে কেনো আসলি? আমি তোকে এতো বিরক্ত করার পরেও তুই কেনো তোর বাপির কাছে কমপ্লেন করলি না? আমাকে ভয় পাস বলে

মিষ্টি বোকা বনে যায়। সত্যিই তো কেনো কোনো স্টেপ নিচ্ছে না মিষ্টি

“এতো ভাবতে হবে না। তুই আমাকে ভালোবাসিস কি না জানি না বাট তোর আমাকে ভালো লাগে মারাক্তক ভালো লাগে

” ইম্পসিবল। আপনার মতো ক্যারেকটার লেছ বখাটে ছেলেকে কখনোই আমার ভালো লাগতে পারে না

“ঠিক আছে। ভালো না লাগলে আর কি করার। জোরই করতে হবে। চল

মিষ্টি বাইকের বসে আছে। জীমকে মিষ্টির একটু হলেও ভালো লাগে। কিন্তু মিষ্টি সেটা স্বীকার করবে না

“একটা কথা বলি

” বল

“সবাইকে তুমি করে বলেন আর আমাকে তুই কেনো?

” সবাই তো আর তুই না

মিষ্টি আর কিছু বলে না।

জীম মিষ্টিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। একটা কথাও বলে না। মিষ্টি রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে তারপরই বাবা মা ভাই চলে আসে। ওদের সাথে একটু আড্ডা দেয়। তারপর মায়ের সাথে রান্না করতে যায়। মিষ্টির ইচ্ছে আজ খিচুড়ি রান্না শিখবে। মিষ্টির মা ও আর না করে না।

রান্না করতে গিয়ে গরম পাতিলে মিষ্টির হাত লেগে যায় বেশ খানিকটা পুরে যায়। মিষ্টি আড়াল করে ফেলে। মা দেখতে পেলে ব্যস্ত হয়ে পড়বে আর বাপি দেখলে মাকে বকবে। সব মিলিয়ে একটা অশান্তির সৃষ্টি হবে। তাই আড়াল করে যায়।

রান্না শেষে রুমে এসে গোছল করে টুল টেনে বেলকনিতে বসে। হাতের পোরা জায়টা দেখতে থাকে। এখনো জ্বলছে।

জীম রুমে এসে দেখে মিষ্টি গভীর মনোযোগ দিয়ে হাত দেখছে।

“নিশ্চয় হাত কেটেছে। নাহলে এভাবে দেখবে কেনো?

জীম এগিয়ে যায়। দেখে হাত পুরে গেছে। জীম মিষ্টির হাত ধরে। মিষ্টি চমকে তাকায়

” হাত পুরলো কিভাবে?

“রান্না করতে গিয়ে

জীম মলম নিয়ে আসে। তারপর মিষ্টির হাতে মলম লাগাতে লাগাতে বলে

” কি রান্না করলি

“খিচুড়ি

” যা আমার জন্য নিয়ে আয়

“এখন

” হুমম যা

মিষ্টি আমতাআমতা করছে

“‌যেতে বলছি

মিষ্টি যায়। লুকিয়ে খিচুড়ি নিয়ে আসে। জীম ততোখনে মিষ্টির রুমে চলে এসেছে। মিষ্টির খাটে বসে আরাম করে

” এই যে নিন

মিষ্টি জীমের সামনে খাবারের প্লেট নামায়। দরজা বন্ধ করে দেয়। জীম মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করে। প্রচন্ড ভালো হয়েছে খিচুড়ি টা। পরম তৃপ্তিতে জীম খাবারটা শেষ করে। মিষ্টি তাকিয়ে দেখছে

“কেমন হয়েছে?

” আমার জান রান্না করলো সেটা কি খারাপ হতে পারে

মিষ্টি মুচকি হাসে। জীম হাত ধুয়ে মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে

“সকালেও তুই আমাকে প্রচন্ড ভয় পেতিস কিন্তু এখন ভয় পাচ্ছিস না কেনো?

মিষ্টি নিজেও বিষয়টা ভেবে দেখেছে। সত্যিই এখন আর জীমকে ভয় করে না। কিন্তু কেনো?

জীম মিষ্টির হাত ধরে টান দিয়ে মিষ্টিকে পাশে বসিয়ে দেয়

” বল

“এমনিতেই

” মিষ্টি মিথ্যে বলা ভালো না তোর বাবা তোকে বলে নি?

“আমি মিথ্যা বলছি না

” ভয় করে না

“সত্যি বলতে এখন আর ভয় করে না

” তাহলে

“আপনি তো লেজ ছাড়া বাঁদর ভয় কেনো পাবো

বলেই মিষ্টি খিলখিল করে হেসে ওঠে। জীম মুগ্ধ নয়নে দেখে।
” প্রেমে পড়লে না কি প্রেমিকার হাঁচি ও গানের সুরের মতো মনে হয়”
জীমেরও সেই অবস্থা হয়েছে।

“যদিও আমি মানি কারো প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হওয়া পতনের লহ্মণ তবুও কেনো জানি বারবার নেশায় পড়ে যায়

জীমের কথা মিষ্টি হাসি বন্ধ করে।

” একটা কথা বলবো

“বল

” নাহহ কিছু না

“কিছু। বল

” পরে বলবো

“এজ ইউআর উইস

” মিষ্টি

মিষ্টির বাবা দরজায় নক করে ডাকে। মিষ্টি চমকে ওঠে

“বাপি এসেছে প্লিজ যান

” জানন

“চলে যেতে বলছি

” ভাবছি শশুড় মশাইয়ের সাথে কথা বলে যাবো

জীম খাটে সুয়ে বলে

“প্লি প্লিজ প্লিজ যান

” যেতে পারি একটা শর্তে

“কি

” প্রতিদিন একঘন্টা সময় আমাকে দিতে হবে

“ইম্পসিবল

” যাবো না

“ঠিক আছে

” আমার কিউটি ফিউচার বউ

জীম ঠাস করে মিষ্টির কপালে একটা চুমু দিয়ে বেলকনি দিয়ে লাফিয়ে চলে যায়। মিষ্টি বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে চুল ঠিক করে দরজা খুলে

“এতোখন লাগলো

” সরি বাপি ওয়াশরুমে ছিলাম

“ইটস ওকে সোনা। খেতে আসো

” তুমি যাও আমি এখুনি আসছি

“ওকে

বাপি চলে যায়। মিষ্টি বেলকনির দরজা বন্ধ করতে যায়।

” এই যে ফুলটুসি

মিষ্টি তাকিয়ে দেখে জীম বেলকনির দরজায় দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

“আপনি

” কখন সময় দিবি সেটা তো বললাম না। তাই আবার এলাম

“😡

” প্রতিদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় আধঘন্টা আর কলেজে যাওয়ার সময় আধঘন্টা। এই হলো একঘন্টা। আর রাতে তো ফ্রি

“কিন্তু আমার কোচিং আছে

” কিচ্ছু করার নাই ডার্লিং। প্রেম করতে গেলে তো পড়ালেখা একটু কমিয়ে দিতেই হবে। তাই না সুইটহার্ট

জীম মিষ্টির কথা না শুনে চলে যায়

“এবার কি করবো? এই পাগল কে কি করে বোঝাবো। লেজ ছাড়া বাঁদর একটা। লাইফটা শেষ করে দেবে।

মিষ্টি খেতে চলে যায়। খেতে গিয়ে মিষ্টির মেজাজবিগড়ে যায়। সব বিরক্ত এক সাথে।

চলবে

প্রেম ২ পর্ব-০৪

0

#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana (Writer)

রাত বারোটা বেজে আট মিনিট। মিষ্টি বই পড়ছে। মলি মিষ্টির পাশেই ঘুমচ্ছে। হঠাৎ একটা গানের শব্দ ভেসে আসে

“ভালো যদি তুমি আমাকে
ছুটে চলে আসো না….
দুরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে……

“গানটা নিশ্চয় লেজ ছাড়া বাঁদর গাইছে। খুব ভালো গান করে। গান নিয়ে এগোলে ফিউচারে অনেক ভালো একটা পজিশনে যেতে পারবে

মিষ্টি উঠে বেলকনিতে যায়। দেখে জীম গিটার বাজাচ্ছে আর গান গাইছে। মিষ্টি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে।
জীমের মিষ্টির দিকে চোখ পড়তেই গান বন্ধ করে দেয়। মিষ্টিও চমকে জীমের দিকে তাকায়

” ওই ফুলটুসি এদিকে আয়

মিষ্টি এদিক সেদিন তাকিয়ে জীমের কাছে যায়। জীম একটু সরে বসে মিষ্টিকে বসার জায়গা দেয়। মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছে

“বস

” নাহহ আমি এভাবেই ঠিক আছি

জীম মিষ্টির হাত ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়।

“আই লাভ ইউ ফুলটুসি

মিষ্টি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।

” আমি কিছু বলছি

“হুমম

” কি হুম

“আমি শুনছি

” তো এন্সার

“দেখুন ক্যারিয়ার সুন্দর করতে গেলে এসব প্রেম ভালোবাসা ঠিক না। আমি এসব নিয়ে ভাবতে চায় না। আমার কাছে সব থেকে আগে বাপির ড্রিম। বাপি কষ্ট পাবে এমন কিছু আমি করবো না।

” তাহলে তুই আমার সাথে প্রেম করবি না

“আমার

” ইয়েস ওর নো

“বলছিলাম কি

” এন্সার মি

জীম ধমক দিয়ে বলে ওঠে। মিষ্টি ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে। জীম মিষ্টির দুই বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলে

“তোর ওই আসলে নকলে শোনার টাইম জীমের নেই। জীম সোজাসাপ্টা কথা পছন্দ করে এবং বলে। তো তুই সোজাসুজি বল

ভয়ে মিষ্টির হাঁত পা কাঁপছে আর চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি পড়ছে

” ডু ইউ লাভ মি

মিষ্টির গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। জীম মিষ্টির কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে

“চুপ করে থাকা সম্মতির লহ্মণ

মিষ্টি ভয়ের সাথে এবার অস্বস্তিতে পড়েছে। জীমের নিশ্বাস মিষ্টির চোখে মুখে পড়ছে। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে মিষ্টির সারা শরীরে। অদ্ভুত ভালো লাগা। এই ভালো লাগার সাথে মিষ্টি আগে কখনো পরিচিত হয় নি।

মিষ্টি চোখ তুলে জীমের দিকে তাকায়।

” ফুলটুসি

“হুমমম

জীম চোখের পানি মুছে দেয়।

” বলছিলাম

“বল

” আপনি তো ভালো গান করেন তো গান নিয়ে এগোলে ক্যারিয়ার ব্রাইট হবে

“ক্যারিয়ার ফিউচার এসব নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই। আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। জীমনটা দুইদিনের আর এই দুইদিনের জীবনে ক্যারিয়ার গড়াটা বেশি ইমপটেন্ট না। ইমপটেন্ট ভালো থাকাটা। অবশ্য তুই এটা বুঝবি না

” হুমম

“হুমমম। চল কাল তোকে নতুন এক জগৎএ নিয়ে যাবো

” কোথায়?

“গেলেই দেখতে পাবি। বাইরের জগৎটা যেটার সাথে তুই পরিচিত না

” ওহহহ

“যাহহ রুমে যা। অনেক রাত হলো

মিষ্টি চলে যায়।

” সবাই ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত আর আমি ক্যারিয়ার শেষ করতে।

জীম একটু হাসে

জীম মিষ্টিকে কড়া করে বলে দিয়েছে মিষ্টি যেনো আক কলেজ ড্রেস না পড়ে। মিষ্টি নিজের বাসায় আসে। আজ রাতে বাবা মা ভাই আসবে। মিষ্টির খুব ভালো লাগছে। বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করবে তখন জীম এসে হাজির। দরজায় হাত দেয়। মিষ্টি চমকে ওঠে। জীম বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়

“আআপনি

” হুমম আমি

“কেনো?

” কোন ড্রেসটা পড়বি সেটা চুজ করে দিতে এলাম

“প্লিজ আপনি যান

” তোর মনে হয় তুই বললেই আমি চলে যাবো

“আমি তো চেঞ্জ করবো

” আমি দেখবো

মিষ্টি চোখ বড়বড় করে তাকায়। জীম পাত্তা না দিয়ে মিষ্টির রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে। মিষ্টিও পেছন পেছন আসছে

“দেখুন

জীম থেমে গিয়ে বলে

” বিয়ের পরে দেখবো। এখন দেখার ইচ্ছে নেই। কিন্তু তুই যদি জোর করে দেখাতে চাস তো আমি দেখতেই পারি

মিষ্টি আবারও লজ্জায় পড়ে যায়। কি একটা কথা বললো যেটাতে নিজেই লজ্জায় মরছে।

“কি বেপার তুই এমন টমেটো হচ্ছিস কেনো?

” টমেটো

“তা নয়ত কি? লজ্জায় তো একদম টমেটো + স্ট্রবেরি হয়ে গেছিস। তবে পবলেম নেই দুটোই আমার খুব প্রিয়
মিষ্টি চুপ হয়ে যায়। আবার কিছু বলে লজ্জা পাওয়ার ইচ্ছে মিষ্টির নেই।

জীম মিষ্টির রুমে গিয়ে আলমারি খুলে লাল একটা গাউন বের করে

” এটা পড়ে আয়

“আমি এটা পড়বো না

” বুঝেছি আমার পড়িয়ে দিতে হবে।

জীম মিষ্টির দিকে এগোতে নিলেই মিষ্টি গাউন হাত থেকে নিয়ে নেয়

“না আমি নিজেই পড়ে নিচ্ছি

” গুড গার্ল

মিষ্টি গাউন নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। চেঞ্জ করে এসে দেখে জীম মেচিং কানের দুল চুড়ি বাঁচচ্ছে।

“আমার ইমপটেন্ট ক্লাস আছে

” হুম তো

“কলেজে যাবো

” আমি যেতে না দিলে যেতে পারবি না

“আপনি করতে চাইছেন কি?

” হলে যাবো তোকে নিয়ে

“হল কি?

” ছিনেমা হল

“ওখানে কেনো?

” ছিনেমা দেখতে

“আমি ছিনেমা দেখি না

” এবার থেকে দেখবি। শুধু ছিনেমা কেনো আরও অনেক কিছু করবি

“🤨

” আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো তোকে আমার মতো হতে হবে। আমার মতো বলতে হাজারটা ছেলের সাথে কথা বলা না। আমার যা ভালো লাগে তোকে তার সাথে পরিচিত হতে হবে। যেমন ছিনেমা দেখা লং ডাইভে যাওয়া এরকম অনেক কিছু। আমার প্রেম দিয়ে আমি তোকে চেঞ্জ করে নেবো

“আমি কিন্তু আপনাকে এক্সেপ্ট করি নি

” আমি তো এক্সেপ্ট করতে বলিও নি

“উফফফফ

” দমক দিলেই তুই কেঁদে ফেলিস তাই আপাতত ধমক দিতে চাইছি না তবে বাধ্য করলে চড়ও দিতে পারি

মিষ্টি জীমের দিকে একটু তাকিয়ে কানের দুল চুড়ি পড়তে থাকে। চুল গুলো না আঁচড়িয়েই বাঁধতে যায় জীম দেয় না। খুব যত্ন করে মিষ্টির চুল গুলো আঁচড়ে দেয়

মিষ্টির মুখের কাছে মুখ নিয়ে আয়নায় দেখতে দেখতে বলে

“পারফেক্ট

মিষ্টি সরে যায়।
জীমের বাইকের পেছনে বসে আছে মিষ্টি। বিরক্তি ভয় সব একসাথে কাজ করছে। এভাবে কখনো অন্য ছেলের সাথে বাইকে বসবে তা মিষ্টি কখনো কল্পনাতেও ভাবে নি। ইফাদ আর বাবা ছাড়া আর কোনো ছেলের সাথে কখনো কথাই বলে নি। সেখানে অন্য ছেলের বাইকে। বাবা দেখলে মিষ্টি কি করবে? এসব ভাবতে ভাবতে জীম বাইক থামায়

” নামো

মিষ্টি নামে। জীম বাইক দাঁড় করিয়ে নিজেও নামে।
“চল

” এটা কোন জায়গা

“ছিনেমা হল

” আমি যাবো না প্লিজ

“কোলে নিতে চাচ্ছি না আপাতত

মিষ্টি হাঁটা শুরু করে। জীম দুটো টিকিট কিনে ভেতরে যায়। ভেতরে গিয়ে মিষ্টির ভয় বাড়তে থাকে

” এখানে তো কেউ নেই

“কে বললো

” আমি দেখছি তো। আর অন্ধকার কেনো?

“ছিনেমা হল অন্ধকারই থাকে

” কিন্তু

“বসো

জীম মিষ্টিকে বসিয়ে নিজেও বসে। এবার মিষ্টি চারদিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখে অনেক মানুষ আছে এখানে। মিষ্টিদের সামনে একটা কাপল বসেছে। kabir sing এর একটা মুভি হচ্ছে। মিষ্টি অনইজি ফিল করছে। জীম ছিনেমা দেখছে মন দিয়ে।
মিষ্টিরও ভালো লাগছে। মিষ্টির তেমন ছিনেমা দেখা হয় না। সারাক্ষণ তো বই নিয়েই বিজি থাকে।

” কেমন লাগছে

জীম ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে

“হুমমম

” এটা আমার জগৎ। আজ সারাদিন আমি তোকে আমার পৃথিবীর ঘুরে দেখাবো

মিষ্টি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ছিনেমায় হিরো হিরোইনকে লিপ কিস করছে। জীম মিষ্টির দিকে তাকায় মিষ্টি জীমের দিকে। মিষ্টি ঢোক গিলে আবার সামনে তাকিয়ে দেখে সামনের কাপলরাও সেম

“থাকবো না আমি এখানে

মিষ্টি উঠে দাঁড়ায়। জীম টান দিয়ে বসিয়ে দেয়

” প্লিজ থাকবো না এখানে

“কেনো?

” বাজে জায়গা এটা

“এটা হতেই পারে। কমন বেপার। আরও অনেক কিছু হয়।

” মানে

জীম মিষ্টির দিকে এগোতে নিলেই মিষ্টি ঠোঁটে হাত দেয়। জীম মুচকি হেসে হাতের ওপরই কিস করে। মিষ্টি এবার কান্না করে দেবে এমন অবস্থা

“এই এই একদম কান্না করিস না প্লিজ তাহলে পাবলিক আমাকে গনোধোলাই দেবে। ভাববে তোর সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করছি

” সরুন আমি যাবো

“আর একটু দেখি না মুভিটা জোশ

মিষ্টি জীমকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বেরিয়ে যায়। জীমও পেছন পেছন যায়। ছিনেমা হলের বাইরে গিয়ে মিষ্টি বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এতোখন প্রায় দম আটকে ছিলো। ওি ছেলেটা সত্যিি লেজ ছাড়া বাঁদর। নাহলে এরকম একটা বাজে জায়গায় কেউ আসে। ছি

” আপনার জগৎ টা জঘন্য। আমার জগৎটা ভালো। ছি এরকম নোংরা জায়গায় কখনো কোনো ভালো মানুষ আসে না। জারা আপনার মতো লেজ ছাড়া বাঁদর তারাই আসে।

“তাই বুঝি

মিষ্টি নিজে নিজেই বলছিলো। তখন জীম শুনে ফেলে আর বলে। মিষ্টি চমকে পেছনে তাকায়

” আমার জগৎটা আমার কাছে বেস্ট। এবার নেক্সট

“আমি বাসায় যাবো

” অবশ্যই তবে আমি যখন চাইবো

“আপনি

” চলো ফুলটুসি

জীম মিষ্টির হাত ধরে হাঁটা শুরু করে।
“আল্লাহ এই পাগলের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। এ করতে চাইছে টা কি? বাপি যদি জানতে পারে মেরে ফেলবে আমাকে। এখন একে কে বোঝাবে

মিষ্টি মনে মনে বলতে থাকে

চলবে

প্রেম ২ পর্ব-০৩

0

#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)

মিষ্টির মাথার ওপর দিয়ে গেছে সব। জীম আসলে কি বললো মিষ্টির বুঝতে পবলেম হচ্ছে। “ইনডিরেকলি প্রপোজ করলো কি” এটাই মাথায় আসছে মিষ্টির। কিন্তু না এসব ভাবা যাবে না। পড়ায় মন দিতে হবে।
সব চিন্তা ঝেড়ে মিষ্টি আবার পড়ায় মন দেয়।

কিছু জরুরি কাজে মিষ্টির বাবা মাকে ঢাকার বাইরে যেতে হবে দুইদিনের জন্য। এখন পাবলেম হচ্ছে মিষ্টি কোথায় থাকবে। একা একা এই বাসায় তো মিষ্টি থাকতে পারবে না। না রান্না পারে না নিজের চুল নিজে আঁচড়াতে পারে। কিছুই পারে না। মিষ্টি মিষ্টির বাবা মা আর ভাই বসে আছে। মন দিয়ে ভাবছে সবাই।
তাজ বলে ওঠে

“আইডিয়া

সবার মনোযোগ তাজের দিকে। কি সলিশন বের করলো এই এগারো বছরের পিচ্চিটা?

” বলো

মা উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করে

“আমাদের পাশের বাসায় নতুন মানুষ এসেছে। খুব ভালো তারা। আপির সবার একটা আপিও আছে। তো ওই আপিকে আপুর কাছে রেখে গেলে কেমন হয়

তাজের এই চটপটে হয়ে এতো সুন্দর একটা সলিশন দেখে বাবা মা সহ মিষ্টিও প্রচুর অবাক হয়।

“চিনি না জানি না একটা আপুর সাথে আমি কি করে থাকবো?

মিষ্টি মুখটা ছোট করে বলে।

” আজিব তো জাস্ট আটচল্লিশ ঘন্টা থাকতে পারবে না? যখন তুমি বড় ভার্সিটিতে পড়বে তখন তো মাসের পরে মাস অচেনা মানুষদের সাথে থাকতে হবে।

বাবার কথায় মিষ্টি একদম চুপ। সত্যিই তো সারাজীবন তো আর বাবা মায়ের আচল ধরে থাকা যাবে না।

জীম, জীমের বাবা মা বোন একসথে খেতে বসেছে। জীমের বাবা জীমের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে। জীম বিরক্ত হয়ে খাচ্ছে

“পবলেম কি শান্তিতে কি খেতেও দেবে না

” আমি আমার এতো কষ্টের টাকায় তোমাকে বাইক কিনে দিয়েছি সেই বাইক আমি কাল অন্য একটা ছেলের কাছে কেনো দেখলাম?

জীম জানতো বাবা এমন একটা কথায় বলবে। আসলে এটা নতুন কিছু না। তিন মাস হয় বাইকটা কিনে দিয়েছে আর এই তিন মাসে মোটমাট আট বার ফ্রেন্ডরা ওর বাইকটা ধরেছে আর বাবা এই প্রশ্নটা করেছে।

জীম মুখে রুটি পুরে বলে

“একটা মাইয়ার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে ভুলে বাইকটা ফেলে এসেছিলাম তাই ওরে নিয়ে আসতে বলছি।

জীমের এমন সোজাসাপ্টা কথায় জীমের বাবার রাগ হয়। বাবাকে শোনাচ্ছে মেয়ের পেছনে দৌড়ানোর কথা। জীমের মা বোন ওদের ঝগড়ায় বেশ এনজয় করছে

“লেজ ছাড়া বাঁদর একটা। নিলজ্জ কোথাকার। মেয়েদের পাশে শুধু দৌড়াতেই হবে কেউ পটবে না।

” অভিশাপ দিয়ো না তো। যদি থাকে নসিবে তাহলে মেয়েসহ মেয়ের বাবা,মা এসে কলিং বেল বাজাবে

জীমের কথা শেষ হওয়ার আগেই কলিং বেল বেজে ওঠে। জীম লাফ দিয়ে সরে যায়। জীমের বাবা মা বোন তো অবাক

“বিশ্বাস করো বাবা এই মাইয়ারে আমি চিনি না। আমি নিশ্পাপ।

” আগে দেখি মেয়েটা কেমন। যদি ভালো হয় তো বেঁচে গেলি নাহলে চাপকে গাল লাল করে দেবো

জীমের বাবা দরজা খুলতে যায়। । জীম মা আর বোন উঁকি মারছে দেখার জন্য কে? জীম আল্লাহ করছে। না জানি কে এসেছে? যদি কোনো হিরো আলমের বউ টাইপের কেউ আসে তাহলে?
এসব ভেবে জীম ঘামতে শুরু করেছে।

“আরে পুলিশ অফিসার যে ভেতরে আসুন

হাসিমুখে বলে জীমের বাবা। পুলিশ শুনে জীম চমকে তাকায়। দেখে মিষ্টি, বাবা মা আর তাজ এসেছে। মিষ্টিরা বসে।

” এই প্রথম আমার ছেলেরে নিয়ে গর্ববোধ হচ্ছে। একটা পুলিশের মেয়ে পটিয়েছে। অবশ্য আমার ছেলে তো। এই মেয়েরেই ছেলের বউ বানাবো। আগে ছেলেটারে বুকে জড়িয়ে ধরতে হবে

জীমের বাবা মনে মনে বলছে
জীম দাঁত দিয়ে নখ কাঁটছে আর ভাবছে
” এই মেয়েটা এখানে? নিশ্চয় বাপির কাছে কমপ্লেন করেছে আমার নামে। ওরে আজ আমি দেখিয়ে দেবো আমি কি জিনিস?

জীমের বোন মলি মায়ের কানে বলে

“তোমার ছেলে তো জটিল একটা মেয়ে পটিয়েছে। প্রাউড ফিল করছি

” কার ছেলে দেখতে হবে না😎

“আসলে আমরা দুইদিনের জন্য চিটাগং যাবো। মিষ্টির এক্সাম তাই ওকে নিতে পারবো না। আমার মেয়েটা আবার একটাথাকতে পারবে না। অভ্যাস নেই। তো বলছিলাম আপনার মেয়ে যদি রাতে ওর সাথে থাকতো

মিষ্টির মা বলে। জীম বলে ওঠে

” আমি থাকবো ওর সাথে। আমি ভয় পায় না। বোন ও তো ভয় পায়। একদম সেভ করে রাখবো

জীমের বাবা চোখ বড়বড় করে বলে

“জীমম
জীম একটু হাসার চেষ্টা করে মাথা চুলকিয়ে বলে

” নাহহ আমি থাকবো না। আমিও তো ভয় পায়। বোনই থাকবে।

জীমের মা বলে

“কোনো বেপার না। দুটোদিন মিষ্টি আমাদের বাড়িতেই থাকুক।

” হুুমমম থাকুক না। আমাদের এখানে থাকলে ভালোই হবক

জীম বলে ওঠে। সবার নজর জীমের দিকে। জীম এটা বুঝতে পেরে বলে

“মা আমি আসছি

” দাঁড়াও

মিষ্টির বাবা বলে। জীম দাঁড়িয়ে যায়

“তোমাকে সেদিন পুলিশ স্টেশনে দেখছিলাম না।

” না আংকেল আমি না

“আমার তো মনে হচ্ছে

” সত্যি আংকেল আমি না। আসছি আমি কাজ আছে

জীম চলে যায়। মিষ্টি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বাঁদর একটা।

পরেদিন শুক্রবার। মিষ্টির বাবা মা চলে গেছে। মা বাবাকে বাই বলে মিষ্টি জীমদের বাড়িতে ঢুকতে গেলেই কেউ হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে যায় মিষ্টিকে। মিষ্টি খুব ভয় পেয়ে যায়।মিষ্টির একটা গুন ভয় পেলে গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।

জীম মিষ্টিকে রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি কাঁপছে।

” কাঁপছিস কেনো?

জীম মিষ্টিকে বসায়।

“এতো ভয় পাস কেনো তুই? আমি তো তোকে বকি না তাহলে? রিলাক্স

” আআআআপনি আমাকে এখানে আনলেন কেনো?

“বলবো

” হুমমম

“বলি

” হুমম

“থাক না বললাম

মিষ্টি জীমের দিকে তাকায়। জীম মিষ্টির গালে হাত দেয়

” তোকে দেখার পর থেকে আর কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি। কারো ফোন তুলি নি। কারো সাথে মিট করি নি

“কেনো?

” সেটা তো তুই বলতে পারবি। কেনো এমন হয়? তুই কি জাদু করছিস আমাকে?

মিষ্টি চোখ বড়বড় করে জিমের দিকে তাকায়।

“বিশ্বাস করেন আমি জাদু করি নি ইনফেক্ট পারিও না

” কিন্তু আমার তো মনে হয় তুই পারিস

“সত্যিই পারি। বিলিভ মি

জীম ফিক করে হেসে ওঠে। মিষ্টি বোকার মতো তাকিয়ে আছে। মিষ্টি বুঝতে পারছে এখানে ও হাসার মতো কি বললো?

জীম কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিষ্টি বলে

” আমি যাবো

“হুমম যাবি তো। আমি কি তোকে আটকে রাখবো না কি?

মিষ্টি কিছু বলে না।

” শোন আমার তোকে ভালো লাগে। #প্রেম করবো তোর সাথে

মিষ্টি কিছু বলতে যায়

“আমি কিন্তু তোকে প্রপোজ করি নি বা তোর মতামতও চায় নি। জাস্ট তোকে জানালাম। আমি জানি তুই আমাকে চিনিস না জানিস না আমাকে তোর ভালোও লাগে না কিন্তু বিশ্বাস কর এতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। আমার তোকেই চায়

” দেখুন আপনি

“হুমম বুঝেছি।

” কি

“তুই অনেক এক্সকিউজ দিবি। বাট জীম কিছুই শুনবে না। দরকার হলে তোর বাবার কাছে প্রপোজাল দেবো৷ তোর বাবা রিজেক্ট করলে কি করবো জানি না।
মিষ্টি হাত কচলাচ্ছে। এই ছেলেটা এমন কেন?

“আমার বলা শেষ এবার যেতে পারিস

মিষ্টি একটু জীমের দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে যায়। জীম মুচকি হাসে।

রাতে মিষ্টি বাবার সাথে কথা শেষ করে একটু ফেসবুকে ঢুকে। রাইয়ান রহমান জীম নাম দিয়ে সার্চ দেয়। জীমের আইডিতে ঢুকে। দেখে তিনদিন আগে একটা গান আপলোড দিছে। কেনো জানি মিষ্টির গানটা শুনছে ইচ্ছে করলো। গানটা অপেন করলো

” প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পড়েছি
তোর মাঝে যেনো হারিয়ে গেছি”

এই গানটা। গানটা মিষ্টির দারুণ লাগে। পারফেক্ট সিঙ্গার বলে মনে হচ্ছে মিষ্টির জীমকে

“বাঁদরটা ভালোই গান করে।

মিষ্টি মুচকি হাসে। মলি মিষ্টিকে খেতে ডাকে। মিষ্টি খেতে যায়। দেখে জীম বাবা মা বসে আছে। মিষ্টি জীমের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে।

” তো লেজ ছাড়া বাঁদর আপনি এই সময় বাড়িতে

জীমের বাবা খেতে খেতে বলে

“বিয়ে করবো এই কথা বলার জন্য বাড়িতে এসেছি। যতসব

” খান তো বাবার হোটেলে কোন মেয়ে বিয়ে করবে আপনাকে? চেহারে তো বাঁদরের মতো

“ঝগড়া করার মুড নাই

মিষ্টি ফিক করে হেসে ওঠে। জীমের বাবা আর জীম মিষ্টির দিকে তাকায়। মিষ্টি যখন বুঝতে পারে ওর দিকে সবাই তাকিয়ে আছে হাসি থামিয়ে বলে

” সরি আসলে লেজ ছাড়া বাঁদর নামটা শুনে হাসি পেলো

“ইটস ওকে মামনি। তুমিও ওকে এই নামে ডাকবা

” হুমম লেজ ছাড়া বাঁদর

এবার সবাই হেসে ওঠে জীম ছাড়া। জীম মিষ্টির হাসি দেখতে ব্যস্ত।

“ফুলটুসি। হাসলে ওকে এতো সুন্দর লাগে। নতুন করে আবার প্রেমে পড়ে গেলাম। এই মেয়ের সব কিছুি প্রেমে পড়ার মতো। আমার ফুলটুসি

জীমও মুচকি হাসে।

চলবে