Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1526



সোনার সংসার পর্ব-১২

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১২

সবাই সামনে তাকিয়ে দেখে সাদিয়া বউ সাজে দাঁড়িয়ে আছে।তার পাশেই হৃদয় সাদিয়ার লাগেজ হাতে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই যেন ভূত দেখার মত চমকে গেছে,শরীফও সাদিয়ার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।সাদিয়ার পড়নে লাল রঙের একটা কাতান শাড়ি,গায়ে বারি গহনা,আর হালকা সাজ,এতেই বেশ লাগছে সাদিয়াকে।সাদিয়া এসব দেখে হেঁসে বলে উঠল,,,

“বাব্বা সবাই আমাকে দেখে কী শক খেলে নাকি?এতটাই শক খেয়েছো যে চোখের পলকই ফেলছো না।”

সাদিয়ার কথায় সবার হুশ আসল,আর সাদিয়ার কথার সাথে হৃদয় তাল মিলিয়ে বলল,,,

“আরে না শক খায় নি কিন্তু তোমার উপর সবাই ক্রেরাশ খাইছে,তাই এভাবে তাকাইয়া আছে।”

“ততুমি এই সাজে এএএখানে কেন?” (শরীফের মা ভয়ে ভয়ে বলল)

“এত কথা বলতে পারব না,কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি সে হিসাব আছে আপনাদের কারো।তখন থেকে ত চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছেন।এবার ত তাড়াতাড়ি বরন করুন,খুব গরম লাগতাছে বাইরে।”

“এই মেয়ে ঠিক করে কথা বলো।আর তোমাকে বরন কেন করব?তুমি কী নতুন বউ যে বরন করব তোমাকে?” (শরীফের চাচি)

“অবশ্যই সে নতুন বউ,দেখছেন না বউ সাজে এসেছে।তাই কথা না বাড়িয়ে আমার ব বউকে বরন করুন।”(হৃদয়)

এতক্ষণ কে কী বলেছে তার কোন কথাই শরীফের বোধগম্য হয় নি,কিন্তু হৃদয়ের আমার বউ কথাটা তার কানে বারি খেলো।শরীফ আর কিছু না ভেবেই হৃদয়ের কাছে তেড়ে গিয়ে কলার চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলল,,,

” আমার বউ মানে?তুই কী বলতে চাইছিস,তুই সাদিয়াকে বিয়ে করেছিস?সাদিয়া তোর বউ?”

“আরে আমি এটা কখন বললাম!আমি ত বললাম সাদিয়া আমার ব বউ।”

“তুই আবারও সাদিয়াকে নিজের বউ বলছিস!”

কথাটা বলেই শরীফ রেগে হৃদয়ের নাকে একটা ঘুসি মারল,আর সেটা দেখে সাদিয়া শরীফকে টেনে অর পাশে দাড় করিয়ে শরীফের হাত চেপে ধরে বলল,,,

“হে খোদা আমার কপালে কী এই হাম্বা মার্কা জামাই লিখে রাখছিলা!”

“হাত ছাড়ো আমার,নয়ত খারাপ হয়ে যাবে।কত্ত বড় সাহস দেখছত,আমাকে ছেড়ে আমার বন্ধুকে বিয়ে করেছে আর বিয়ে করে আমার বাড়িতে এসে বলছে বরন করতে।এই মুহূর্তে তোমরা ডিভোর্স পেপারে সাইন করবে,নয়ত তোমাদের দুইজনকে মেরে এখানে পুঁতে ফেলব।”

“ঠাডাইয়া দুইটা থাপ্পড় লাগামু,তোমাদের ছেলেদের এই এক স্বভাব বরাবরই চৌদ্দ লাইন বেশি বুঝো।(দয়াকরে কেউ সিরিয়াসলি নিবেন না কথাটা।)এমন নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা কে বলছে তোমাকে হে?হৃদয় ভাইয়াকে আমি আমার বড় ভাইয়ের নজরেই দেখি।আর তুমি কী না ছিঃ ছিঃ ছিঃ।”

“কী বলতে চাইছো তুমি হে?আমি বোকা,আমি কিছু বুঝি না,ফিডার দিয়ে দুধ খাই আমি হে?হৃদয় দুইবার বলছে আমার ব বউ,এতে কী বোঝায় হে?”

“পুরো কথাটা না শুনেই তুলকালাম চালু করছত তুই,আরে আমি বলছি আমার বন্ধুর বউ,ব দিয়ে বন্ধু প্রকাশ করছি।মজা করে সংক্ষেপে বলছি,আর তুই আমাকে মারলি।আর জীবনে মনে থাকলে সংক্ষেপে কিছু বলব না।”

কথাটা বলেই হৃদয় ভাইয়া রুমাল দিয়ে নাক মুছল,আমি মুখ টিপে হাসছি।আর শরীফ ভ্যাবলার মত একবার হৃদয় ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে।আরেকবার আমার দিকে তাকাচ্ছে,আমি সেটা দেখে বলে উঠি,,,

“জি জনাব হাম্বা মার্কা জামাই হৃদয় ভাইয়া এটাই বলেছে,আপনি কী তা এখন বুঝতে পারছেন?”

শরীফ আমার কথা শুনে রাগি ভাবে আমার দিকে তাকাল,আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে বাড়ির ভিতরে ডুকি আর বলে উঠি শ্বাশুড়ি আম্মাকে,,,

“বরন ত করলেন না তাই একাই ডুকে গেলাম,কারন বাড়িটা ত আমারই শ্বশুর বাড়ি তাই না।যাই হোক আমি রুমে গেলাম,পরে কথা বলব।”

কথাটা বলে সিড়ি বেয়ে উপরে আসতে নিলেই শ্বাশুড়ি আম্মা রেগে বলে উঠে,,,

“এই মেয়ে তুমি আমার বাড়িতে ডুকেছো কোন সাহসে হে?আর এসবের মানে কী?যখন মন চায় চলে যাবে,আবার যখন মন চায় ফিরে আসবে!”

“এই যে শ্বাশুড়ি আম্মা,,,For your kind information এই বাড়িটা আপনার বাড়ি নয়।এটা আমার শ্বশুর বাড়ি,শ্বাশুড়ি বাড়ি না।আপনি আমার শ্বাশুড়ি,শ্বশুর ত নন।তাই আপনার বাড়ির কথাটা বলবেন না।আর আমার শ্বশুর বাড়ি আমার সংসার,আমার শ্বাশুড়ি বাড়ি ত নয়।তাই যা মন চায় তা করব।”

কথাগুলো বলে সাদিয়া উপরে চলে গেলো,আর সাদিয়ার শ্বাশুড়ি পুরাই কনফিউজড সাদিয়ার কথায়।শ্বাশুড়ি বাড়ি না শ্বশুর বাড়ি এসব ভেবে উনার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল তাই উনার জা কে বলল ঘরে দিয়ে আসতে।সাদিয়াকে উনি পরে দেখে নিবেন।
আর এইদিকে শরীফ পুরাই অবাক।এ কোন সাদিয়াকে দেখছে শরীফ,যে সাদিয়া আগে শত কষ্টের পরও মুখ দিয়ে কোন কথা বের করত না আর এখন যেন মুখ খুললেই আগুন বের হয়।শরীফকে এভাবে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিছন থেকে শরীফের কাঁধে হৃদয় হাত দিয়ে বলে উঠল,,,

“ভাই এত অবাক হইস না,কারন সামনে দিয়ে এমন আরো অনেক কিছু হবে সেটার জন্য অবাক হওয়াটা বাঁচাইয়া রাখ।”

শরীফের এবার কিছু মনে পড়ে যায় আর রেগে হৃদয় কে বলে উঠল,,,

“তুই সাদিয়াকে এখানে নিয়ে এসেছিস তাই না?কেন নিয়ে এসেছিস এখানে সাদিয়াকে?জায়গাটা অর জন্য একদমই সেফ নয় তুই কেন ওকে এখানে আনলি?”

“সাদিয়াকে হৃদয় নয় আমি এনেছি,আর তুই কী বলতে চাইছিস সাদিয়া এখানে সেফ নয় মানে কী শরীফ?”

পিছন থেকে সজীব কথাটা বলে উঠে,শরীফ এতটাই রেগে ছিল যে কী বলতে কী বলে ফেলেছে সেটা এখন খেয়াল হল।তাই শরীফ নিজেকে সামলে বলে উঠল,,,

“যে মেয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে পারে সেই মেয়েকে আমি ফিরে পেতে চাই না,কারন কখন কী করে বসে তার কোন ঠিক নেই তাই বলেছি সেফ নয় আমাদের জন্য!”

“শরীফ তুই কী বলছিস এসব,সাদিয়া মোটেও ওমন মেয়ে নয় আর সাদিয়া পালিয়ে গিয়েছিল মানে?” (হৃদয়)

“আমি বলছি পালিয়ে গিয়েছিল নাকি কেউ ওকে সরিয়ে ফেলেছিল!”

কথাটা সজীবের পাশে থেকে শরীফের ভাবি বলেছে,উনি উনার মেয়েকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিল তাই এতক্ষণ এখানে ছিল না।আর সজীব সাদিয়া আর হৃদয় কে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে উনার বউ আর মেয়েকে হসপিটাল থেকে নিয়ে এসেছে।শরীফের ভাবির কথাটা শুনে শরীফ কিছুটা গাবড়ে গেলো,,,তাই আমতা আমতা করে বলল,,,

“সরিয়ে ফেলছে মানে কককী বলতে চাইছেন ভাবি?”

“এটাই বলতে চাইছি যে সেদিন তোমার বিয়ের রাতে তুমি সাদিয়াকে এই বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলেছো।”

শরীফের ভাবির কথা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল,শরীফ সাদিয়াকে সরিয়ে ফেলেছিল মানে কী?শরীফের বিয়ের পরের দিন যখন সাদিয়াকে কেউ খুঁজে পায় নি তখন সবাই ভেবেছে সাদিয়া এই কষ্ট,যন্ত্রণা শয্য করতে না পেরে পালিয়ে গেছে।তার জন্য ব্যাপারটা কেউ ঘাটে নি কিন্তু এখন ত অন্য কিছুই শুনছে।

“শরীফ সরিয়ে ফেলেছে মানে?কেন করল শরীফ এমনটা?” (হৃদয়)

“ভাবি আপনি এএএসব কী উল্টাপাল্টা বলছেন?আআমি সাদিয়াকে সরিয়ে ফেলেছি মানে?”

“তুমিই ত সে,,,

শরীফের ভাবি আর কিছু বলবে তার আগেই শরীফের বড় ভাই বলে উঠল,,,

” তুমি থামো ঘরে যাও,স্বর্নাকে খাওয়াও গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কিছু খায় নি।আমি দেখছি এদিকটা।”

তারপরও শরীফের ভাবি কিছু বলতে চাইলে সজীব চোখ পাকিয়ে তাকায় তার জন্য উনি কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে যায়।শরীফও সুযোগ বুঝে সেখান থেকে চুপচাপ কেটে পড়ে কারন এখানে থাকলেই বড় ভাই আর ঐ মীরজাফর বন্ধুটা চেপে ধরবে।যার উওর শরীফ এখন দিতে চায় না তাই চুপচাপ চলে যায়।সেটা দেখে সজীব আর হৃদয় হেঁসে ফেলে একসাথে।

______________________________

আমি আমার রুমে চলে এলাম,এই রুমটাতে বিয়ের পর আমি আর শরীফ থাকতাম।আজ কতদিন পর এই ঘরে এলাম,ভেবেই চোখের কোনে পানি জমা হল।রুমটা এখনও আগের মতই গুছানো,এই রুমটাতে কত স্মৃতি জমা আছে।আমি রুমের প্রতিটা জায়গায় ছুঁয়ে দিচ্ছি,আমি যখন এসব ভাবনায় মশগুল তখন দরজা খোলার আওয়াজে আমি পিছন ফিরে দেখি শরীফ দাঁড়িয়ে আছে।আমি সাথে সাথে পিছন ফিরে চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে কিছু বলতে যাব তখনই ঠাস করে একটা থাপ্পড় পড়ে আমার গালে,আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।তারপর শরীফ আমাকে কিছু না বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।থাপ্পর দেয়ার পর কান্না পেলেও এখন খুব রাগ হচ্ছে,,,

“কী ভাব দেখেছো থাপ্পড় মারলি ত মারলিই কারনটা ত বলে যেতি।তবে না হয় মনকে বুঝ দিতাম যে এই কারনে মারলি। শালা হিটলার দেখে নিব তোকে।”

অন্যদিকে শরীফ ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,,,

“কেন ফিরে এলে এখানে?দূরে ছিলে সেখানেই ত বেশ ছিলে,কেন এখানে ফিরে এলে?”

#চলবে,,,

সোনার সংসার পর্ব-১১

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১১

এয়ারপোর্টের সামনে দাড়িয়ে আছি,পাশেই বাবা দাঁড়ানো।আমি ভয়েভয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছি,বাবা আমাকে ভিতরে ঢোকার জন্য বললে আমি পা টিপেটিপে ভিতরে যাচ্ছি আর বারবার পিছনে তাকাচ্ছি।দেখছি বাবা গেছে কী না,এভাবে কিছুক্ষণ পর আমি ভিতরে চলে গেলাম।তখন উঁকি মেরে দেখি বাবা এখনও দাঁড়িয়ে আছে।আমি একটা জায়গায় লুকিয়ে পড়ি,এভাবে কিছুক্ষণ পর দেখি বাবা চলে গেছে।বাবা চলে গেছে দেখে আমিও এয়ারপোর্টের ভিতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসি।আমি বেরিয়ে আসার পরই একটা গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে পড়ি।সেটা দেখে পাশে থেকে সজীব ভাইয়া আর হৃদয় ভাইয়া হেঁসে উঠে,,,

“আপনারা হাসছেন!আমার এদিকে ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা আর আপনারা হাসছেন,,This is not fair☹️.”

“কী করব বলো তুমি যেভাবে দৌড়ে গাড়িতে উঠলে।” (হৃদয় ভাইয়া বলেই হেঁসে উঠল আবার)

“ঠিক বলেছিস তুই আমারও খুব হাসি পাচ্ছে।”

বলেই দুজনে আবার হেঁসে উঠল,আমি গাল ফুলিয়ে বসে আছি।কিন্তু হঠাৎ করে চাচ্চুর কথা মনে পড়ল,ততক্ষণাৎ আমি চাচ্চুকে ফোন দেই।একবার বাজতেই চাচ্চু ফোন রিসিভ করে,চাচ্চু ফোন রিসিভ করেই বলে উঠে,,,

“কী রে তুই ঠিক মত সবটা করতে পেরেছিস ত?ঐদিকে সব ঠিক আছে ত?”

“হে চাচ্চু সব ঠিক আছে,তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না,শুধু বাবা কল দিলে একটু মেনেজ করে নিও।”

“আচ্ছা ঠিক আছে সেটা না হয় দেখব।কিন্তু তুই একদম সাবধানে থাকবি,আর কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবি।”

“ঠিক আছে চাচ্চু এখন রাখি,গাড়িতে আছি আবার পরে কল দিব।”

“আচ্ছা ভালো থাকিস,নিজের খেয়াল রাখিস।”

আমি আচ্চা বলে ফোনটা কেটে দিলে সজীব ভাইয়া বলে উঠল,,,

“অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে,তুমি আবার ফিরে যাচ্ছো আমার ভাইয়ের জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে।”

“ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই ভাইয়া,আমি ত যাচ্ছি আমার সংসারটাকে আবার সোনার সংসারে পরিনত করতে।আমার ভালবাসার মানুষটাকে আবার ফিরে পেতে।আপনি আমাকে সাহায্য করছেন তার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।সেদিন আপনার সাথে দেখা না হলে হয়ত ব্যাপারটা এত সহজ হত না।”

“তোমরা এবার ধন্যবাদ দেয়ার চাকরি বন্ধ করে আমাকে বলো ত সজীব ভাইয়া সবটা জানল কীভাবে যে তুমি ফিরে যাবে?আর তোমার চাচ্চুর ব্যাপারটাই বা কী কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।”

“তবে শুনুন,,,চারদিন আগে হসপিটালে আপনার সাথে কথা বলে আমি শরীফকে দেখতে যাই আর ফেরার পথে কেউ আমার হাত ধরে পিছন থেকে আটকায়।আমি তখন পিছন ফিরে দেখি সজীব ভাইয়া আমাকে আটকিয়েছে।তখন আমি কিছু বলতে নিলে ভাইয়া বলে উঠল,,,

” তুমি এখানে কী করছো?তোমার না ক্লাস মিস হয়ে যাচ্ছে!তবে তুমি এখন এখানে কী করছো সাদিয়া?”

“আআআসলে আআআমি একটু কাজে এসেছি ভাইয়া।”

“তুমি কেন এভাবে নিজেকে আড়াল করছো সাদিয়া?আমি সবটাই বুঝতে পারছি যে তুমি এখানে শরীফকে দেখতেই এসেছো তবে কেন তুমি আবার ফিরে যাচ্ছো?প্লিজ ফিরে এসেছো আমার ভাইয়ের জীবনে,তুমি ফিরে এলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে।”

“আআমাকে একটু সময় দিন ভাইয়া,আমার সময় চাই।আমি এখন আসি।”

“ঠিক আছে যাও,তবে মনে রেখো তোমার প্রতি আমার ভাইয়ের ভালবাসা মিথ্যা নয়।”

আমি তখন আর কিছু না বলে ফিরে আসি।তারপর সেদিন সারাদিন ভাবি কী করব?ফিরে যাব নাকি যাব না,তারপর সেদিন রাতে আমার চাচ্চুর সাথে কথা হয়৷ আমি উনাকে সবটা বুঝিয়ে বললে উনি আমাকে ফিরে যেতে বলে।আর বাড়িতে সবটা জানালে বাবা কখনও মেনে নিবে না।তাই চাচ্চু প্ল্যান করে চাচ্চুর কাছে যাওয়ার নাম করে আমি ঐ বাড়িতে যাব।তাই এয়ারপোর্ট থেকে এভাবে পালাতে হল।আর এসবই সজীব ভাইয়াকে আমি ফোনে জানিয়েছি।কারন সজীব ভাইয়ার সাহায্যে আমি ঐ বাড়িতে খুব সহজেই যেতে পারব।তাই সজীব ভাইয়াকে সবটা জানানোর প্রয়োজন ছিল।আর আপনার ফোন নাম্বার আমার কাছে ছিল না তাই আপনাকে জানাতে পারি নি।তার জন্য সজীব ভাইয়াকে বলেছি উনি যাতে আপনাকে নিয়ে আসে এখানে তারপর আমিই আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলব।আপনি প্লিজ রাগ করবেন না ভাইয়া,আপনাকে এখন সবটা জানালাম বলে।

“আরে না রাগ কেন করব?তুমি একদম ঠিক কাজ করেছো সাদিয়া।আমি তোমার পাশে আছি,যেকোন কাজে লাগলে আমাকে বলবে আমি করব।” (হৃদয়)

“ধন্যবাদ ভাইয়া।”

___________________________

শরীফ রাগে ফুঁসছে,হসপিটাল থেকে আজই ফিরেছে।আর ফিরেই সবার আগে সাদিয়ার খোঁজ নেয়ার জন্য ভার্সিটি আসে,কিন্তু এসে সাদিয়াকে সারা ভার্সিটি খুঁজে ফেলে কিন্তু কোথাও সাদিয়ার দেখা পায় না।তারপর শরীফ কাউকে ফোন দিলে জানতে পারে সাদিয়া অস্ট্রেলিয়া তার চাচ্চুর কাছে চলে গেছে।এটা ভেবেই শরীফ রাগে ফুঁসছে,,,

“দূরে থেকেছো মেনে নিয়েছি,এড়িয়ে চলেছো মেনে নিয়েছি,কষ্ট দিয়েছো মেনে নিয়েছি,ঘৃনা করেছো সেটাও মেনে নিয়েছি,তারপরও তোমাকে চোখের দেখা দেখেছি।কিন্তু তুমি এই শহর থেকে দূরে গিয়ে একদম ঠিক করো নি।আমার চোখের আড়াল হয়ে একদম ঠিক করো নি তুমি।এর ফল তোমাকে পেতে হবে সাদিয়া,আমি আসছি অস্ট্রেলিয়া তোমার কাছে।আমার চোখের আড়াল হওয়ার শাস্তি দিতে।”

কথাগুলো বলে শরীফ রেগেমেগে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে চলল,পাগলের মত ড্রাইভ করছে,পারলে উড়েই চলে যায় অস্ট্রেলিয়া সাদিয়ার কাছে।(বেচারা ত জানে না তার বাড়িতে যাচ্ছে সাদিয়া🤭।)

_________________________________

শরীফ বাড়িতে এসে আলমারি থেকে কাপড় গুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে ব্যাগে ফেলছে।ব্যাগে ফেলছে কম মাটিতে পড়ছে বেশি,(বুঝি না বাপু এত রাগের কী হইল আজিব😏)।
তখন শরীফের রুমে তার মা আর চাচি প্রবেশ করে।শরীফকে এভাবে ব্যাগ গুছাতে দেখে শরীফের মা অস্থির হয়ে বলে উঠে,,,

“কাপড় কেন গুছাচ্ছিস?কই যাবি তুই?”

শরীফ কিছু না বলে তার কাজ করেই যাচ্ছে, সেটা দেখে শরীফের চাচি গিয়ে শরীফের হাত ধরে বলল,,,

“কই যাবি তুই,এভাবে কাপড় গুছিয়ে কী করবি?”

শরীফ এবার অর চাচির থেকে হাত সরিয়ে রেগে বলে উঠল,,,

“জাহান্নামে যাচ্ছি,যাবে তোমরা!”

“এসব কেমন কথা শরীফ,এভাবে কেন কথা বলছিস তুই।মা হই আমি তোর আমাকে অন্তত বলে যা কই যাচ্ছিস।”

“মা হয়ে ত মায়ের মত কোন কাজ করো নি।কাজ গুলো ত করেছো একদম রিনা খানের মত(🤣)।তাই তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না কই যাব।”

কথাগুলো বলেই শরীফ ব্যাগ গুছিয়ে,পাসপোর্ট,ভিসা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর শরীফের পিছনে অর মা কাঁদতে কাঁদতে আসছে উনার সাথে শরীফের চাচিও আছে।শরীফের মা শরীফকে আটকানোর জন্য অনেক কান্নাকাটি করছে কিন্তু শরীফ সেটা না মেনেই বেরিয়ে যাচ্ছে।তখন কেউ একজন বলে উঠল,,,

“বাড়িতে বউ এসেছে,আমাকে বরন ত করো কেউ।”

কারো এমন কথা শুনে শরীফ,শরীফের মা আর চাচি সেদিকে তাকায়।তখন তারা সামনে যা দেখে তাতে তারা তিনজনই ৪৪০ ভোল্টেজ শক খেলো🥱।

#চলবে,,,

সোনার সংসার পর্ব-১০

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১০

রেস্টুরেন্টে হৃদয় ভাইয়ার সামনে বসে আছি,শরীফকে দেখার জন্য হসপিটালে পৌঁছানোর পরই হৃদয় ভাইয়ার সাথে দেখা।তখন উনি কিছু না বলেই আমাকে এই রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।

“ভাইয়া কিছু বলার থাকলে বলুন নয়ত আমি আসি,আমি শরীফের কাছে যাব।”

“একটু পরে যাও তোমার সাথে আমার কথা আছে।”

“ভাইয়া আপনি একটু অপেক্ষা করুন না হয় আমি শরীফকে দেখেই চলে আসব।আমার এখানে এভাবে ভালো লাগছে না।শরীফ কেমন আছে কিছু জানি না,আমার মনটা বড্ড ছটফট করছে।প্লিজ ভাইয়া যেতে দিন আমাকে।”

“শরীফ এখন ভালো আছে তুমি ওকে নিয়ে চিন্তা করো না।কিন্তু তোমাকে কথাগুলো বলা আমার খুব দরকার নয়ত খুব বেশি দেরি হয়ে যেতে পারে।”

আমি কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলাম,,,

“আচ্ছা ভাইয়া বলুন,একটু তাড়াতাড়ি বলবেন প্লিজ।আপনার কথা শুনে আমি শরীফকে দেখতে যাব।যতক্ষণ না নিজের চোখে দেখব ততক্ষণ শান্তি পাব না আমি।”

“ঠিক আছে,আমি আজ যা বলব তার জন্য হয়ত তুমি কষ্ট পেতে পারো কিন্তু আমাকে আজ সবটা বলতে হবে।আজ সেসব না জানালে তোমাদের মধ্যেকার দুরত্বটা হয়ত কমবে না।আর আমি সেটা চাই না,আমি চাই আমার বন্ধু সুখে থাকুক।তাই আজ মনের সাথে যুদ্ধ করে তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম সবটা জানাতে কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো তাই তোমাকে হসপিটালে পেয়ে যাই।”

“কী কথা ভাইয়া যার জন্য আপনি এত চিন্তিত?”

“বলব আজ আমি সব বলব,কিন্তু তুমি কথা দেও আমার কথাগুলো শোনার পর তুমি শরীফকে কিছু বলবে না।”

“জি ভাইয়া আপনি বিশ্বাস করে বলতে পারেন।”

তারপর হৃদয় ভাইয়া বলতে শুরু করে,,,

“শরীফ বিয়ে করে নি,শরীফ তোমাকে খুব ভালবাসে
শরীফ তোমাকে ঠকায় নি সাদিয়া,শরীফ তোমাকে এত কষ্ট দিয়ে শরীফ নিজেও ভালো নেই।এখন হয়ত তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে বিয়ে করে নি আর তোমাকে এখনও ভালবাসে তবে কেন তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না,আর কেনই বা তোমাকে সত্যিটা জানায় নি?এসবের উওরের পিছনে একটা বড় কারন আছে যেটা শরীফ ছাড়া কেউ জানে না।আর তুমি কখনও মা হতে পারবে না এটার জন্য শরীফ তার পরিবারকে দায়ী করছে।কিন্তু কেন এভাবে দায়ী করছে সেসব শরীফ আমাকে কিছু বলে নি।আমি এর বেশি কিছুই জানি না,কিন্তু এর পিছনে নিশ্চয়ই খুব বড় একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।যেটা শরীফ ব্যাতীত আর কেউ জানে না,আর শরীফ কেন এসব করছে সেটা একমাত্র তুমিই জানতে পারবে।তোমাকে এসব জানানোর পিছনে আমার তিনটা কারন রয়েছে,প্রথম কারন হল তুমি সত্যিটা না জেনে নিজে কষ্টে আছো,আর দ্বিতীয়ত শরীফকে ভুল বুঝে ঘৃণা করছো যেটা শরীফ একদমই মেনে নিতে পারছে না।সেটা শরীফ মুখে প্রকাশ না করলেও আমি বুঝতে পারি।আর তৃতীয় এবং সর্বশেষ কারন হলো তোমাকে এভাবে সবটা না জানিয়ে দূরো রাখার কারন উদঘাটন করা,আর শরীফ কেন তার পরিবারকে দায়ী করছে সেটার রহস্য ভেদ করা।”

ভাইয়ার কথাগুলো এতক্ষণ মন দিয়ে শুনলাম কিন্তু একটা কথাতে বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে,আমার মা না হওয়ার পিছনে শরীফ তার পরিবারকে দায়ী করছে কেন?তবে কী তারা আমার মা হওয়ার ক্ষমতাটা নষ্ট করে দিয়েছে কোন ভাবে?না এমনটা হতে পারে না,কেউ কীভাবে কারো এত বড় ক্ষতি করতে পারে।এমন কিছুই হয় নি,শরীফের পরিবার আমাকে মেনে নিতে না পারে কিন্তু অর পরিবার এমন কিছু করতে পারে না।মাথা কাজ করছে না,শরীফ কেন আমাকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না আর কেনই বা শরীফ তার পরিবারকে দায়ী করছে আমি মা হতে পারব না বলে?এত কেনর উওর আমি কীভাবে পাব?কী করব আমি?কিছু বুঝতে পারছি না।

“সাদিয়া তুমি ঠিক আছো?”

ভাইয়ার কথায় নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,,,

“হহে ভাইয়া ঠঠঠিক আছি আআমি।”

“সাদিয়া এখন তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়ো না প্লিজ,এখন তোমাকে শক্ত হতে হবে।শক্ত হয়ে সবকিছু খুঁজে বের করতে হবে।আর তার জন্য তোমাকে শরীফের জীবনে ফিরে যেতে হবে।”

ফিরে যেতে হবে কথাটা শুনে আমি ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকালাম।আমি ফিরে যাব মানে?

“আপনি কী বলছেন এসব?”

“হে আমি ঠিকই বলছি,তোমাকে এই কেনোর উওর পাওয়ার জন্য তোমাকে শরীফের আর শরীফের কাছাকাছি থাকতে হবে।যাতে তুমি সব কেনোর উওর পেতে পারো।এতে হয়ত শরীফের পরিবার তোমাকে অনেক কষ্ট দিবে কিন্তু তারপরও ত তুমি সত্যিটা খুঁজে বের করতে পারবে।তাই বড় ভাই হিসেবে আমার পরামর্শ রইল তোমার কাছে,ফিরে যাও শরীফের বাড়িতে তবে সব উওর পেয়ে যাবে তুমি।এখন বাকিটা তোমার হাতে,আমি আসি।আমার কথাগুলো একটু ভেবে দেখো।”

কথাগুলো বলে ভাইয়া চলে যায়,আমি ঠায় বসে রয়েছি সেখানে।ভাইয়ার কথাগুলো মাথায় ঘুরছে,কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না।এই কেনোর উওর খুঁজতে গিয়ে যদি সব এলোমেলো হয়ে যায়।কিচ্ছু ভাবতে পারছি না আমি,আমি কী করব কিছু মাথায় আসছে না।মন একবার বলছে এই রহস্যর জট খুলতে আরেকবার বলছে খুলিস না সব এলোমেলো হয়ে যাবে।

মাথায় হাত দিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে থেকে এসবই ভাবছি হঠাৎ করে আশরাফুল চাচ্চুর কথা মাথায় আসে।আশরাফুল চাচ্চু আমার বাবার ছোট ভাই।আর চাচ্চু তার কাজের জন্য দেশের বাইরে থাকে তাই চাচ্চু এসব কিছু জানে না।চাচ্চুকে এসব জানালে নিশ্চয়ই কোন না কোন সাজেশন দিতে পারবে।চাচ্চু আমাকে খুব ভালো বুঝে,আর খুব ভালবাসে আমাকে।চাচ্চুই পারবে আমাকে এই দোটানা থেকে বের করতে।তাই কিছু না ভেবেই চাচ্চুর নাম্বারে ডায়াল করি,ফোন বেজে যাচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না।তাই বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে দিলাম,বড় করে কয়েকটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।কিছুক্ষণ পর আমি সফল হই,আর তখন শরীফের কথা মাথায় আসে।ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ছুটলাম শরীফকে দেখার জন্য।

_________________________________

শরীফ কারো সাথে ফোনে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে,ওপাশ থেকে কিছু শোনা যাচ্ছে না,,,

“আমি ঠিক আছি এখন,এমনটা করার পিছনেও একটা বিরাট বড় কারন রয়েছে।”

“——-”

“সেই কারনটা না হয় অজানাই থাক।আপনি একটু দেখে রাখবেন ওকে।”

“———–”

“সময় হলে আমি কথা বলে নিব।আপনি কিছু বলবেন না এখন।”

“———”

“আচ্ছা রাখছি এখন,খেয়াল রাখবেন একটু।”

কথাটা বলেই শরীফ ফোনটা কেটে দেয়,ফোনটা কেটে বাঁকা হেঁসে বলে উঠল,,,

“শোন রে কুজন আমি বলি যে তোরে,চাঁদ ভেবে আগুন নিয়ে খেলে নে রে।”

বলেই অট্টো হাসিতে মেতে উঠল শরীফ।আর সবটাই এতক্ষণ বাইরে থেকে সাদিয়া দেখেছে।শরীফের কথা বলার ভাব ভঙ্গি দেখে কিছুই বুঝল না কিন্তু শেষের গানের লাইন গুলোতে সাদিয়া রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে।সাদিয়া কিছু না বলে ফিরে আসতে নিলেই কেউ অর হাত ধরে টান দেয়।

#চলবে…

সোনার সংসার পর্ব-০৯

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৯

ভার্সিটি আসার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম তখন বাবা এসে বলল,,,

“ভার্সিটিতে একা যেতে পারবে তুমি?”

“জি বাবা পারব।তুমি কী কোথাও যাবে?”

“হে আমার একটু কাজ আছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট তাই বলছি তুমি আজ একাই চলে যাও।”

“ঠিক আছে বাবা।”

“তোমার চোখমুখ এমন কেন লাগছে?শরীর খারাপ লাগছে!”

“নননা আআমি ঠিক আছি,রাতে ভালো ঘুম হয় নি তাই হয়ত এমন লাগছে।”

“আচ্ছা সাবধানে যেও,আমি আসি।”

“আচ্ছা বাবা।”

বাবা চলে যায়,আমিও রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হই।ভার্সিটিতে আসতে অনেকটা লেট হয়ে যায়,আমি তাড়াহুড়ো করে গেট দিয়ে ডুকতে গেলে একজন পথ আগলে দাঁড়ায়।আমি তার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়াই,কারন আমার সামনে শরীফের বড় ভাই সজীব দাঁড়িয়ে আছে।আমি নিজেকে সামলে ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিলাম,,,

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।কেমন আছেন আপনি?”

“ভালো আর থাকতে দিলে কোথায়!”

“মানেহ?”

“তোমার জন্য আমার ভাইটা হসপিটালে ভর্তি। পরিবারের একটা মানুষও ভালো নেই।”

“শরীফ হসপিটালে মানে?”

“হে হসপিটালে গতকাল বাড়িতে গিয়ে নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝড়িয়ে এখন হসপিটালে ভর্তি।একটাবার চলো না আমার ভাইটার কাছে,খুব ভালবাসে তোমাকে।এখন শরীফের পাশে তোমাকে খুব দরকার,প্লিজ চলো একটাবার।”

শরীফের অসুস্থতার কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে।কাল আমার কথাগুলো হয়ত খুব কষ্ট দিয়েছে তাই এমন করেছে।কালকে আমার ওভাবে বলা হয়ত একদমই ঠিক হয় নি।কিন্তু আমি ত ভুল কিছু বলি নি,তবে কেন করল ও এমন।শরীফ কেমন আছে এখন?এসব ভেবে মন চাচ্ছে এক ছুটে শরীফের কাছে চলে যাই।মনে মনে শুধু একটা দোয়াই করে যাচ্ছি শরীফের যাতে কিছু না হয়,ও যাতে সুস্থ হয়ে উঠে।মনে মনে এমন হাজার ভাবনা ভাবার পরও সেটা প্রকাশ করলাম না।নিজেকে আর কারো কাছে দুর্বল করব না।আমাকে শক্ত হতে হবে,পরে আমি চুপচাপ গিয়ে একবার দেখে আসব না হয়।তাই নিজেকে সামলে বলে উঠলাম,,

“এখন ত আমাকে দরকার পড়ার কথা নয়।আপনার ভাইয়ের নতুন বউ আছে তাকে বলুন আমি যেতে পারব না।আমার ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি আসছি।”

বলেই আসতে নিলে সজীব ভাই তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠল,,,

“এখন আমার ভাইয়ের থেকে তোমার ক্লাস করাটা জরুরি হয়ে গেলো।এই তোমার ভালবাসা আমার ভাইয়ের প্রতি,মা ঠিকই বলে তুমি আমার ভাইয়ের যোগ্য নও।”

“আপনার মা কী বলল না বলল সেটা আমার দেখার বিষয় নয়,আর এখন আমার ক্লাস করাটাই জরুরি আপনার ভাইয়ের থেকে।যখন আমার সবচেয়ে খারাপ সময়ে আপনার ভাইকে পাশে দরকার ছিল আপনার ভাই তখন কী করেছে আমাকে ছেড়ে আরেকটা বিয়ে করেছে।আমাকে একা করে দিয়েছে।এখন আমার প্রতি এত ভালবাসা দোখাচ্ছে কেন?তার নতুন বউয়ের প্রতি বলুন ভালবাসা দেখাতে।আমার কাছে না এসে তার নতুন বউয়ের কাছে গিয়ে বলুন তার পাশে থাকতে।”

“আমার ভাই বিয়ে করে নি।”

কথাটা শুনে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলাম আমি।আমি অবাক হয়েই ভাইয়াকে বলে উঠলাম,,,

“বিয়ে করে নি মানে?”

“হে বিয়ে করে নি,বিয়ের দিন সারাদিনও বাড়িতে ছিল না।আমার ভাই তোমাকে সত্যি খুব ভালবাসে তাই তোমাকে ঠকিয়ে বিয়েটা করতে পারে নি।”

কথাগুলো বলতে গিয়ে ভাইয়ার চোখে পানি ছলছল করছিল।আমি না চাইতেও আমার চোখে পানি চলে এলো,শরীফ তবে বিয়ে করে নি।কথাটা ভেবেই মনের ভিতর খুশির জোয়ার বয়ে গেলো।কিন্তু শরীফ আমাকে এতদিন সত্যিটা কেন বলে নি?আমি সত্যিটা না জেনে কত কষ্ট দিয়েছি শরীফকে।কিন্তু শরীফ আমাকে কেনই বা এখনও ফিরিয়ে নেয় নি?কী কারন আছে এর পিছনে!
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ভাইয়া বলে উঠল,,,

“তোমাকে কিছু বলার মত নেই আমার,আসছি আমি।”

বলেই ভাইয়া চলে গেলো,আমি হাঁটু গেড়ে সেখানেই বসে পড়লাম,অঝোর দারায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আমার শরীফ তবে বিয়ে করে নি,আমার স্বামী আমারই আছে।আমার সোনার সংসার ভেঙ্গে যায় নি।ভাবতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠল,কিন্তু পরক্ষণেই মনটা কালো মেঘের ছায়ারা ভর করল।শরীফের শরীর ভালো না,নিজেকে আঘাত করেছে।আমার জন্য আজ শরীফের এ অবস্থা,আমাকে শরীফের কাছে যেতে হবে।আমি অপরাধী শরীফের কাছে,আমাকে যেতে হবে শরীফের কাছে।কথাগুলো ভেবে চোখের পানি মুছে ছুটলাম সজীব ভাইয়ার পিছন পিছন।আমি ত জানি না শরীফ কোন হসপিটালে আছে,ভাইয়া নিশ্চয়ই এখন হসপিটালে যাবে।তাই উনাকে ফলো করতে লাগলাম।

___________________________

হসপিটালের বেডে শরীফ শুয়ে আছে,সারারাত ঘুমের ঔষধের জন্য ঘুমিয়ে ছিল।বেশি আঘাত না পাওয়ায় আর তাড়াতাড়ি হসপিটালে আনায় বেশি কিছু হয় নি।একটু আগেই জ্ঞান ফিরেছে তার।জ্ঞান ফেরার পর থেকে বাসার কারো সাথে কথা বলে নি।কথা বলবেই বা কেন?তার পরিবারের জন্য আজ তার ভালবাসা তার থেকে দূরে।শরীফের কেবিনে প্রবেশ করল তার বন্ধু হৃদয়,এসেই শরীফকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করল,,,

“এমন পাগলামি কেন করলি তুই?যদি তোর কিছু হয়ে যেত তখন কী হত তুই বুঝতে পারছিস।”

“——-”

“তুই এমন চুপ করে থাকলে সাদিয়াকে তোর থেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিব।”

শরীফ এবার গম্ভীর হয়ে বলে উঠল,,,

“আর কত দূরে পাঠাবি আমার থেকে?এমনিতেই আমাদের মাঝে দুরত্বটা এতটাই বেড়ে গেছে যে সাদিয়া আমাকে ঘৃণা করছে।”

“ঘৃণা করাটা কী জায়েজ নয়?তুই ত ঘৃণা করার মত পথ করে দিয়েছিস,সত্যিটা ওকে কেন বলছিস না?আর ওকে ফিরিয়েই বা আনছিস না কেন?”

“ও আমাকে ঘৃণা করুক,আমি ওকে সারাজীবন ভালবেসে যাব,অর আশেপাশেই থাকব।”

“তারপরও সত্যিটা বলে ওকে ফিরিয়ে আনবি না তুই?”

“না।”

“কিন্তু কেন?কেন এসব করছিস তুই।যাকে এত ভালবাসিস তাকে কেন দূরে রেখে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস আর নিজেকে এভাবে কষ্ট দেয়ার কী মানে?”

“তুই বড্ড বেশি কথা বলছিস,যা ত এখান থেকে।আর তোর ফোনটা দিয়ে যা।”

“ফোন দিয়ে কী করবি তুই?”

“হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গব,দিলে দে না দিলে যা এখান থেকে।”

“রাগ করছিস কেন?বলেছি কী দিব না?”

“ত ফোন দে আর এখান থেকে ভাগ।”

হৃদয় একটা ভেংচি কেটে ফোনটা শরীফকে দিয়ে বের হয়ে গেলো।শরীফ ফোনটা হাতে নিয়ে বাঁকা হাসল।

#চলবে…

সোনার সংসার পর্ব-০৮

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৮

শরীফ গালে হাত দিয়ে সাদিয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে,সাদিয়া এবার রেগে চিৎকার করে বলে উঠল,,,

“হাতের পুতুল পেয়েছেন আমাকে?যখন যেভাবে চাইবেন সেভাবেই নাচাবেন।আপনি আজ আমার শয্যের সীমা পেরিয়ে গেছেন।আপনার কী মনে হয় না আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ!এখন কোন অধিকারে আমাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবী করছেন।এতই যদি ভালবাসেন তবে কেন আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করলেন?একটা বাচ্চাই কী একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ঔষধ?ভালবাসার কী সেখানে কোন মূল্য নেই?
আপনি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল।আপনাকে ভালবাসা আমার জীবনে ভুল,আপনার সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিজের পরিবারকে কষ্ট দেয়াটা হল আরেকটা ভুল।এতই ভালবেসেছিলাম যে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।নিজের পরিবারের কথা ভাবি নি,চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে পালিয়েছিলাম আপনার সাথে সুখে সংসার করব বলে।আর আপনি কী করলেন?আপনি আমার স্বপ্নের সোনার সংসারটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছেন।নিজের পরিবারের জন্য আমাকে ছেড়ে দিলেন!আরে যখন সবচেয়ে বেশি আমার আপনাকে প্রয়োজন ছিল তখন আপনি আমাকে একা ফেলে চলে গিয়েছেন।শুধু তাই নয় আরেকটা বিয়েও করেছেন।আর এখন যখন নিজেকে সামলে নিয়েছি,আপনাকে ছাড়া থাকতে শিখেছি তখন কেন আমার জীবনে এসেছেন?আমার সুখটা কী আপনার শয্য হচ্ছে না।”

শরীফের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সাদিয়ার দিকে।সাদিয়ার চোখ দিয়ে আজ পানি পড়ছে না।সাদিয়ার চোখ দিয়ে পানি না পড়লেও তার চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যাচ্ছে কতটা কষ্ট,যন্ত্রণা রয়েছে ঐ চোখে।সাদিয়া এবার শান্ত কন্ঠে বলে উঠল,,

“আপনি প্লিজ আপনার জীবনটা গুছিয়ে নিন,আমাকেও আমার জীবনটা গুছিয়ে নিতে দিন।আমি ভুলে যাব আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল কখনও।”

কথাগুলো বলে সাদিয়া আর দাঁড়ায় না বেরিয়ে যায় হসপিটাল থেকে।সাদিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শরীফ মনে মনে বলে উঠল,,,

“তোমার একটা কথাও ভুল নয়,সবই সত্যি বলেছো তুমি।তুমি তোমার জায়গায় ঠিক আর আমি আমার জায়গায়।অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে যা আজ তোমার কথাতে স্পষ্ট।এবার আমি আমার জীবনটা গুছিয়ে নিব।”

কথাগুলো বলে শরীফও চলে যায়,আর আলামিন এতক্ষণ সবটা হ্যাবলার মত তাকিয়ে থেকে দেখেছে।আলামিন পুরাই বোকা বনে গেছে তাদের কথায়।এতক্ষণে সবটা অর কাছে ক্লিয়ার,আর কাল মার খাওয়ার কারনটাও এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে।

কতক্ষণ আগে,,,

শরীফ সাদিয়ার কাছে গিয়ে সাদিয়ার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আর রেগে বলে উঠে,,,

“ছেলেদের সাথে এত মিশতে কে বলেছে তোমাকে?এই ছেলের সাথে এত কীসের কথা তোমার?”

সাদিয়াও রেগে যায় খুব তাই সাদিয়াও রেগে বলে উঠে,,,

“আপনার সাহস কী করে হল আমার গায়ে হাত তোলার?আর আমি কী করব না করব সেটা কী আপনি আমাকে বলে দিবেন?”

“হে আমিই বলব,আমার কথাতেই তোমার চলতে হবে।কারন তুমি আমার স্ত্রী।”

ব্যাস সাদিয়ার রাগ হতে আর কী লাগে তাই ঠাস করে তখন শরীফের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।তারপর কী হয়েছে সবাই জানেন।

__________________________

শরীফ বাড়িতে এসে সারা বাড়িতে কেরোসিন তেল ফেলছে।শরীফের চোখ আগুনের মত লাল হয়ে আছে,বাড়ির সবাই শরীফকে থামাতে চাইছে কিন্তু কারো বাঁধাই মানছে না শরীফ।একসময় শরীফের বড় ভাই এসে একটা চড় বসিয়ে দেয় শরীফের গালে।শরীফ থেমে যায় আর তখন শরীফের বড় ভাই বলে উঠে,,,

“এসব পাগলামি করার মানে কী?বাড়িটা কী জ্বালিয়ে দিবি নাকি?”

“সব শেষ করে দিব আমি,সব শেষ করে দিব।আজ তদের জন্য আমার সাদিয়া আমার থেকে দূরে।তদের জন্য আজ আমার সাদিয়া এত কষ্টে আছে।তদের জন্য আমার আর সাদিয়ার সোনার সংসার ভেঙ্গে গেছে।তদের জন্য আমার সাদিয়া আজ মা ডাক থেকে বঞ্চিত,সবকিছুর জন্য তরা দায়ী।”(রেগে চিৎকার করে)

“মানেহ কী বলছিস তুই এসব?”

“ঠিকই বলছি আমি,তরা খুনী।তরা সবাই খুনী,আমি থাকব না এ বাড়িতে।চলে যাব আমি আমার সাদিয়ার কাছে,সাদিয়াকে ছাড়া একেকটা দিন আমার জাহান্নামের শাস্তির মত লাগছে।”

কথাগুলো বলে শরীফ বের হতে নিলেই শরীফের মা পথ আগলে দাঁড়ায় আর বলে উঠে,,,

“আর এক পা বাইরে বের হলে আমার মরা মুখ দেখবি তুই।ঐ মেয়ের কাছে যেতে দিব না আমি তকে,তুই যদি ঐ মেয়ের কাছে যেতেই চাস ত আমাকে কবর দিয়ে যা।আর যদি সেটা না চাস ত চুপচাপ রুমে যা।আজ তুই বেছে নিবি তুই কাকে চাস,মা নাকি বউ?”

শরীফ একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিলো,যেটার মানে কেউ বুঝল না,কিন্তু পরক্ষণেই সবার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠল।শরীফের হাত থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে একটা ফুলদানি দিয়ে হাতে আঘাত করেছে।শরীফকে এই অবস্থায় দেখে অর মা এগিয়ে আসতে নিলে বলে উঠল,,,

“একদম আসবে না আমার কাছে।তুমি আমার মা হয়ে আমার থেকে আমার ভালবাসা কেড়ে নিয়েছো।আমার সুখ কেড়ে নিয়েছো,আসবে না তুমি আমার কাছে।”

“শরীফ কী করলি তুই এটা?” (উত্তেজিত হয়ে শরীফের বাবা বলল)

শরীফ আবারও তাচ্ছিল্য হাসল,তারপর বলে উঠল,,,

“আমাকে তোমার বউ বলেছে যেকোন একজনকে বেছে নিতে,হয়ত বউ নয়ত মা।কিন্তু আমি কোনটাই পারব না,তাই নিজেকেই শেষ করে দিব আমি।”

কথাটা বলে শরীফ আবারও ফুলদানি দিয়ে মাথায় আঘাত করে।তখন শরীফের বড় ভাই আর বাবা গিয়ে আটকায়,অনেক কষ্ট করে শরীফকে থামায় তারা।অনেক রক্ত ঝড়ছে সবাই অস্থির হয়ে গেছে শরীফকে এই অবস্থায় দেখে।

#চলবে…

সোনার সংসার পর্ব-০৭

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৭

নীরব নির্জন মাঠে বসে আছে শরীফ,রাতের অন্ধকারে হাতের সিগারেটটা জ্বলজ্বল করছে।শরীফের পাশেই বসে আছে শরীফের বন্ধু হৃদয়,দুজনেই চুপচাপ বসে আছে।কেউ কোন কথা বলছে না,হৃদয়ের মনে অনেক প্রশ্নরা উঁকি দিচ্ছে কিন্তু সাহস করে সেটা জিজ্ঞেস করতে পারছে না।বেশ অনেকক্ষণ পর হৃদয় নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠল,,,

“তখন ছেলেটাকে ওভাবে মারলি কেন?”

“——-”

হৃদয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বলে উঠে,,,

“তুই ঠিক কী করতে চাইছিস বল ত,এভাবে ত না নিজে শান্তিতে আছিস না কাউকে শান্তি দিচ্ছিস!সত্যিটা সামনে কেন আনছিস না তুই?এভাবে আর কতদিন চলবে?দেখ দোস্ত এসব খেলা বাদ দিয়ে সবটা সবাইকে জানা আর জীবনটা সাজা নতুন করে।তোর এই উদ্ভট কাজ-কর্ম আর ভালো লাগছে না।একদম টিনেজারদের মত ছেলে মানুষী করছিস।”

শরীফ বাঁকা হাঁসল,তারপর বলে উঠল,,,

“এখনও সময় হয় নি,সময় হলে সব করব।”

হৃদয় চুপ করে গেলো,ও জানে শরীফকে হাজার বললেও অর কথা শুনবে না।তাই সবটা আল্লার হাতে ছেড়ে দিয়ে মন ভরে দোয়া করল,যাতে সবটা ঠিক হয়ে যায়।

___________________★★★__________________

রুমে বসে একা একাই হাসছি কিছুক্ষন আগের কথা মনে করে,,,

কিছুক্ষণ আগে👇

বাড়িতে ঢোকার পর বাবা বলে উঠে,,,

“তোমার ফ্রেন্ড যে অসুস্থ সেটা একটা ফোন করে জানালে কী হত?আমরা কত চিন্তায় ছিলাম সেটা কী তুমি জানে?”

আমি বাবার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম,আমার ফ্রেন্ড অসুস্থ বলে আমার আসতে দেরি হয়েছে,এই কথা কে বলল বাবাকে?আমি যখন এসব ভাবছি তখন আবার বাবা বলে উঠল,,,

“তোমার ফ্রেন্ড এখন কেমন আছে?”

“জজি ববাবা ভভালো আছে।”

“যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও,রাশিদা অর জন্য চা পাঠিয়ে দাও রুমে,খুব টায়ার্ড লাগছে ওকে।”

বাবার কথা শুনে মা আর আমি দুজনেই অবাক,বাবা এতদিন আমার সাথে ঠিক করে কথা বললেও আগের মত কেয়ারটা করত না।কিন্তু আজ এত কেয়ার করছে বলে মা আর আমি দুজনেই অবাক,বাবা আমাদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,,,

“এতে অবাক হওয়ার কী আছে?ভুল কিছু কী বলেছি আমি?”

মা ফিক করে হেঁসে বলে উঠল,,,

“না ভুল কিছু বলো নি,তুমি কী ভুল কিছু বলতে পারো?আমার মনে হচ্ছে আজ চাঁদটা উল্টোদিকে উঠেছে।”

মা কথাটা বলেই হেঁসে উঠল,মার সাথে আমিও তাল মেলালাম কিন্তু পরক্ষণেই বাবার চোখ রাঙানো দেখে দুজনেই চুপ করে গেলাম।তখন মা বলে উঠে,,,

“তুই রুমে যা আমি চা নিয়ে আসছি।”

কথাটা বলে মা এক মুহূর্তও দাড়ায় নি একপ্রকার দৌড়েই রান্নাঘরে চলে যায়।আমি ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে রুমে চলে এলাম,এখন এটা নিয়েই হাসছি আমি।কিন্তু হঠাৎ করে মনে হল বাবা কীভাবে জানল আমার ফ্রেন্ড অসুস্থ তার জন্য দেরি হয়েছে আসতে।মা আসলে জিজ্ঞেস করব নে,হয়ত মা কিছু জানে।এটা ভেবেই ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম।ফিরে এসে দেখি মা চা আর ফ্রেন্স ফ্রাই নিয়ে এসেছে।আমি মুখ মুছতে মুছতে মাকে বলে উঠলাম,,,

“মা বাবা কীভাবে জানল আমার ফ্রেন্ড অসুস্থ ছিল?”

“তোর এক বান্ধবী নাকি বলেছে উনাকে,আজ উনার কাজ করতে করতে দেরি হয়ে গেছিল তারপর কলেজে গিয়ে দেখে তুই নেই।তখন আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করছিল তখন তোর কোন বান্ধবী নাকি বলল।”

এখন আবার নতুন চিন্তা উদয় হলো যে কোন বান্ধবী বলছে বাবাকে।পান্না,তাবাসসুম ত আমার সাথে ছিল ওদের ত বলার মত কোন রাস্তা দেখছি না।তবে কী তামান্না বলেছে কথাটা বাবাকে?দেৎ এত চিন্তা করতে ভালো লাগে না,কাল ভার্সিটি গিয়েই জিজ্ঞেস করব কেউ কিছু বলছে কী না।
তারপর মন থেকে সমস্ত প্রশ্ন ঝেড়ে ফেলে চা খাওয়ায় মনযোগ দিলাম,কিন্তু পরক্ষনেই সব চা মুখ থেকে ফেলে দিলাম।মার দিকে তাকিয়ে দেখি মা আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে,আমি নিজেকে সামলে মাকে বলে উঠলাম,,,

“এটা কী চা নাকি কফি?”

“কফি হতে যাব কেন?চা চোখে দেখিস না তুই,চা কোনটা কফি কোনটা সেটার তফাৎটা কী বুঝিস না,হাম্বি একটা।” (রেগে)

“তুমি খেয়ে দেখো ত এটা কী?”

বলেই কাপটা মার দিকে এগিয়ে দিলাম মা এক চুমুক খেয়ে বলে উঠল,,,

“নির্ঘাত এটা আরাফাতের কাজ,যখন চা বসিয়েছি তখন তোর বাবা বলল কফি করতে ত চা,কফি দুটোই করলাম তারপর সেখানে উপস্থিত তোর গুনধর ছোট ভাই আরাফাত।আমি একটু বাইরে এসেছিলাম তখন হয়ত এই কান্ডটা করেছে।”

আমি মাকে কিছু না বলে রাগে ধাপ ধুপ পা ফেলে ছুটলাম আরাফাতকে খুঁজতে।শয়তান পোলা জানে আমি কফি খাই না,কেমন শয়তানিটা করল শয়তানটা।আজ খালি হাতে পাই তোর হচ্ছে।আমি সারা বাড়ি খুজেও আরাফাতকে পেলাম না,রান্নাঘরে গিয়ে দেখি উনি হু হা করছে,হয়ত জ্বাল লাগছে।তাই পানি গ্লাসে ডালছে খাবে বলে।আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে,আমি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে অর দিকে এগিয়ে যাই।
আরাফাত মুখে পানির গ্লাস ধরলে আমি অর সামনে গিয়ে জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকি,বেচারা মুখে পানি দিতে গিয়েও দিল না হেঁসে ফেলল।আমি তখন হাসি বন্ধ করে ফেলেছি,আমি হাসি বন্ধ করাতে আবার পানি মুখে দিতে নিলেই আবারও হেঁসে উঠি আমি।এবারও আরাফাত হেঁসে উঠে,আমি আবার হাসি থামিয়ে রাগি লুকে অর দিকে তাকাই,আরাফাত ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে আবার পানি খেতে যায়,আমি আবারও হেঁসে উঠি।এবার আরাফাত রেগে বলে উঠে,,,

“দেখ আপু একদম এরকম করবি না,পানি খেতে দে আমাকে।নয়ত এই পানি দিয়ে তকে গোসল করাব।”

আমি অর কথাকে কোন পাত্তা না দিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা আপেল নিয়ে বসে চিবুতে থাকি,আরাফাত সেটা দেখে আবারও পানি খেতে নিবে।তখন আমি আবারও হেঁসে ফেলি,এবার আরাফাত খুব বেশি রেগে যায় আর বলে,,,

“আপপপু তুই কী শুরু করলি,যা এখান থেকে।পানি খেতে দে,তোর হাসির জ্বালায় পানি খেতে পারতাছি না।এদিকে জ্বালে জিহ্বা জ্বলে যাচ্ছে।”

“আমি কী তকে আটকে রাখছি পানি না খেতে,খেতে মন চাইলে খা না।”

“সামনে এভাবে কেউ হাসলে কী পানি খাওয়া যায় নাকি,এখন পানি খেতে নিলে আমারও হাসি পেয়ে যাবে।তখন বিষম খাব,যেটা আমি একদম চাই না।তুই এখান থেকে যা ত।”

“আমার চা পাল্টে কফি দেয়ার সময় খেয়াল ছিল না সেসব,এখন শাস্তি ভোগ কর।”

“বইন আমার তোর দুইটা পায়ে ধরি আর এমন হইত না।আমি আর এমন দুষ্টুমি করব না কথা দিতাছি,এবার আমাকে একটু পানি খেতে দে।”

আমি এবার চেয়ার থেকে উঠে ডাইনিং টেবিল থেকে এক মগ পানি নিয়ে অর উপরে ঢেলে দৌড়ে সিরির দিকে যাচ্ছি তখন আরাফাত হুংকার ছেড়ে বলে উঠল,,

“মমমমমমমা🔈🔈”

আমি একবার ফিরে তাকিয়ে বলে উঠি,,,

“শুনলাম আজ নাকি গোসল করিস নি তাই গোসল করিয়ে তোর উপকার করলাম।তাই রাগ না দেখিয়ে একটা ধন্যবাদ দে।”

“দাড়া তোকে ধন্যবাদ দিতাছি।”

বলেই আরাফাত আমাকে তাড়া করতে লাগল,আমিও দৌড়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেই।আর হাসতে থাকি,আজ অনেক দিন পর এভাবে হাসলাম।হাসলে সত্যিই খুব ভালো লাগে☺️।অনেক মানসিক রোগের ঔষধ এই হাসিটা।

______________________________________

সকালে,,,

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আলামিন তার পাশেই সাদিয়া বসে মার্কার দিয়ে আলামিনের হাতের ব্যান্ডেজে অর নাম লিখছে,আলামিন এসবে খুবই বিরক্ত।সাদিয়া সকালে জানতে পারে আলামিন হসপিটালে,তখন সাথেসাথেই হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয় আর আসার পর আলামিনের থেকে সবটা শোনার পর কিছুক্ষণ হাসলো।

“তুই আমার শত্রু আজ থেকে, আমি মাইর খাইলাম আর তুই একটু কান্নাকাটি করবি তা না এমন ভাব ধরছিস যেন কিছুই হয় নাই।তুই আমার আশেপাশে আসবি না,যা এখান থেকে।”(আলামিন)

“তোর মত বন্ধু যাতে শত্রুরও হয় রে,তোর মত বেস্টু পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।তরে ত এত সহজে ছাড়ছি না রে।”

“হ তোর হাতে মাইর খাই প্রতিদিন,যা ভাগ এখান থেকে।”

“হসপিটাল কী তোর শ্বশুরের যে তুই বললি আর চলে যাব।”

“হ আমার শ্বশুরের তোরে যেতে বলছি যা এখান থেকে।”

“দোস্ত হসপিটালের মালিকের না একখান মাইয়া আছে,মাইয়া না যেন পুরাই ড্রাম।তোর উপরে যদি পড়ে না রে ভাই তোর প্রতিদিনি হসপিটালে ভর্তি হতে হবে।”

কথাটা বলেই আমি হু হা করে হেঁসে উঠি,আর আলামিন রাগে ফুসছে।একে ত কাল অকারনে শরীফ আলামিনকে মারল,তার উপর এই মেয়ে মজা করতাছে।আলামিনের ইচ্ছে করছে এই মাইয়াটার সাথে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধুত্তে ব্রেকআপ করতে।

“মিস্টার আলামিন কেমন আছেন আপনি?”

পুরুষালি কারো গলার আওয়াজ পেয়ে আমি হাসি থামিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি শরীফ দাঁড়িয়ে আছে।হাতে কিছু ফুল,আর মুখে বাঁকা হাসি,শরীফকে দেখেই কালকের কথা মনে পড়ে গেলো যে কাল কী কী বলেছি এখন ত মনে হচ্ছে আমাকে এক ডিলে আল্লার পেয়ারা বান্দা করে দিব।
আর এইদিকে আলামিনও ভয়ে ঘামছে,এই বুঝি আলামিনকে আবার মারতে আসল,আর এবার সোজা উপরে যাওয়ার টিকেট কেটে নিল।
সাদিয়া আর আলামিনের এমন ভয় পাওয়া দেখে হাসল শরীফ,ওদের এমন ভয় পেতে দেখে শরীফের খুব হাসি পাচ্ছে।কিন্তু এখন হাসলে চলবে না,তাই শরীফ নিজের হাসিটা চেপে রেখে সাদিয়া আর আলামিনের দিকে যাচ্ছে।

#চলবে…

সোনার সংসার পর্ব-০৬

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৬

শাহজাহান সাহেব পাগলের মত তার মেয়েকে খুঁজে চলেছে,পুরো ভার্সিটি খুঁজেছে তারপরও তার মেয়ের কোন সন্ধান পাচ্ছে না।দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যাচ্ছে তার জন্য উনার চিন্তাটা বেড়েই চলেছে।
আজ উনার অফিসের কাজ করতে একটু লেট হয়ে যায়,তাই একটু দেরি হয়ে যায় মেয়েকে নিতে আসতে।
ভার্সিটিতে পৌঁছে সাদিয়ার নাম্বারে কল দেয় কিন্তু রিং হয়ে যাচ্ছে কেউ ফোন তুলছে না।উনি ভয় পেয়ে যায়,
আশেপাশের সবাইকে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কেউ বলতে পারছে না উনার মেয়ে কোথায়?উনি ব্যার্থ হয়ে গাড়িতে একটা লাথি মেরে উপরের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠে,,,

“হে খোদা আমার মেয়েকে তুমি সুস্থ রেখো,অর যাতে কোন বিপদ না হয়।অনেক কষ্টের পর মেয়েটাকে ফিরে পেয়েছি,আমার মেয়েটা যাতে ভালো থাকে।তুমি আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।”

___________________★★★___________________

পাক্কা আড়াই ঘন্টা ধরে একই ভাবে বসে আছি,আর হিটলারটা আরামের ঘুম ঘুমাচ্ছে।এবার আমার পা আর কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে,তাই আস্তে করে শরীফের মাথাটা বালিশে রাখতে গেলে শরীফ একটু নড়েচড়ে ঘুমের ঘোরেই বলে উঠে,,,

“সাদিয়া প্লিজ ঘুমাতে দাও,পাক্কা একটা মাস ঠিক করে ঘুমাতে পারি না তোমার জন্য,প্লিজ ঘুমাতে দাও।”

আমি শরীফের কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলাম,আমার জন্য এক মাস ঘুমাতে পারছে না মানে!নিজের মনে প্রশ্নটা চেপে না রেখে উনাকে ধাক্কা দিয়ে প্রশ্ন করে উঠলাম,,,

“আমার জন্য একমাস ঘুমাতে পারছেন না মানে কী?”

আমার কথাশুনে উনি বেশ বিরক্ত হল,সেটা উনার চোহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।উনি আমার প্রশ্নের কোন উওর না দিয়ে উনি চোখ বন্ধ রেখেই রেগে বলে উঠল,,,

“আরেকটা কথা বলবে ত মাইর খাবে,চুপ করো একদম নড়বে না ঘুমাব আমি।”

রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে,তাই উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাড়ালাম।উনি চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালেন,আমি উনার তাকানোতে পাত্তা না দিয়ে রেগে বলে উঠলাম,,,

“কী পেয়েছেন আপনি আমাকে হে!ভুল করে বলটা আপনার মাথায় লেগেছে বলে কী যা ইচ্ছে তাই করবেন আপনি।আপনি কী বুঝতে পারছেন আপনার এসব কাজে আমার ভিতরে কতটা রক্তক্ষরণ হচ্ছে।ঘরে বউ ফেলে রেখে আরেকটা বিয়ে করলেন,বিয়ে করেছেন ভালো কথা সুখে সংসার করুন না।আমি ত আপনার জীবনে পথের কাটা হয়ে দাঁড়াই নি।আপনার জীবনে ত আমি নাক গলাচ্ছি না।তবে কেন বারবার আপনি আমার সামনে এসে আমার সাথে এমন অসভ্যতা করছেন।কেন এসব করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন,মেনেই ত নিয়েছিলাম আপনি আমার নন।তবে কেন আবার এসব করছেন?এসব করে কী বুঝাতে চাইছেন আপনি?”

সাদিয়ার মুখে অসভ্যতা কথাটা শুনে শরীফের রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল,শরীফ এক ঝটকায় সাদিয়ার হাত ধরে বেডে ফেলে সাদিয়ার উপর উঠে নিজের সমস্ত ভার সাদিয়ার উপর ছেড়ে দেয়।আর সাদিয়ার হাত দুটো বেডের সাথে চেপে ধরে রেগে বলে উঠল,,,

“অসভ্যতা করছি আমি তোর সাথে?বিয়ে করা বউ তুই আমার,তোর সাথে যা খুশি তাই করব।তোর উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার,পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আমরা।আর তুই সেটাকে অসভ্যতা বলছিস,অসভ্য যখন বলেছিস এবার দেখবি অসভ্যতা কাকে বলে?”

কথাটা বলেই উনি আমার গাড়ে মুখ গুজতে নিলে আমি উনার থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকি সেটা দেখে উনি আরো শক্ত করে চেপে ধরে,গাড়ে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।আমি এবার কেঁদেই ফেলি,আমার কান্নার আওয়াজ শুনে উনি আমার দিকে তাকায়।আমি সেটা দেখে ইনোসেন্ট ফেস করে কেঁদেই বলে উঠি,,,

“সরি,ভুল হয়েছে আমার।আমি আর এভাবে বলব না,প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।”

শরীফ আমার গাড়ে কামড়ের জায়গাটায় একটা চুমু দিয়ে বলে উঠে,,,

“কেঁদে দিলে তাই বেঁচে গেলে,নয়ত আজ দেখতে অসভ্যতা কত প্রকার ও কী কী!নেক্সট টাইম এসব বলার আগে কামড়টার কথা ভেবে নিও।”

তারপর উনি আমার উপর থেকে উঠে যায় আর আমি সেই সুযোগে উঠে একদম দরজার কাছে চলে আসি,তারপর কী মনে করে পিছন ফিরে বলে উঠে,,,

“আপনি অসভ্য,অত্যন্ত অসভ্য আপনি।নয়ত ঘরে বিয়ে করা নতুন বউ রেখে প্রাক্তন বউয়ের সাথে এমন অসভ্যতামি করতে পারতেন না।”

কথাটা বলেই আমি এক দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসি,দৌড়ে বেরিয়ে আসার সময় পিছন ফিরে একবার তাকাতেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে আমার।শরীফও আমার পিছন পিছন দৌড়ে আসছে,আমি সেটা দেখে আমার দৌড়ের স্পীড বাড়িয়ে দেই।শরীফ সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“সাদিয়া দাঁড়াও বলছি,নয়ত আমি ধরতে পারলে একটা মাইরও মাটিতে পরবে না,আমাকে অসভ্য বলা!আজ তোমাকে খালি হাতের কাছে পাই দেখে নিও কী অবস্থা করি আমি ”

আমি ভয়ে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে দৌড়ে যাচ্ছি,একবার পিছনে তাকাই আরেকবার সামনে তাকাই।এভাবে দৌড়ে আসার সময় ঠাস করে একটা ধাক্কা খাই কারো সাথে।ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই নিচে,আর যার সাথে ধাক্কা খাই সেও নিচে পড়ে যায়।সেটা দেখে শরীফ দাঁড়িয়ে যায়,আর ভ্রু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকায়।আমি রেগে সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গেলেই আমি অবাক হয়ে যাই পরক্ষণেই মুখে আমার হাসি ফুটে উঠে,আমি হাসিমুখেই বলে উঠি,,,

“আলামিন,,,গোস্ত।(কেউ ভাববেন না বানান ভুল,গোস্তই বলেছি🤭)

” সাদিয়া,,,দোস্ত।”

“অরে গোস্তরে তুই এখানে কেমতে কী?কিমুন (কেমন) আছত গোস্ত।”

“তরে দেখিয়া ভালা হইয়া গেছিগা।”

“শয়তান পোলা,এখনও গানের তেরোটা বাজানো ছাড়লি না।”

“😡”

“😜”

“তুই শয়তান,আমি না।”

“জি নট (না) আমি না।তুই শয়তান,তোর বউ শয়তান,তোর নাতিপুতিরাও শয়তান।”

“দেখ সাদিয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু,আরেকবার শয়তান বললে তরে পঁচা পানিতে চুবা দিমু আমি।”

“তুই আমাকে চুবা দিতে আসলে কী তরে ছেড়ে দিব আমি।তরে উস্টা মাইরা মঙ্গল গ্রহ থেকে ঘুরিয়ে আনব।”

আমরা দুজন ফ্লোরে বসে থেকেই ঝগড়া করছি।আলামিন আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।এক কথায় বেস্ট ফ্রেন্ড,আমরা দুইজন কথা বলি কম আর ঝগড়া করি বেশি।এখনও তাই করছি,আর এখন সবটা শরীফ দাড়িয়ে দেখছে আর রাগে ফুসছে।কিন্তু আমাদের সেদিকে কোন ধ্যানই নেই।হঠাৎ কিছু একটা ভাঙ্গার আওয়াজে আমাদের ধ্যান ভাঙ্গে আমরা তাকিয়ে দেখি শরীফ একটা নার্সের হাত থেকে কিছু ঔষধ ফেলে দিয়েছে।আমার ত ঝগড়া করতে করতে কিছু মনেই ছিল না,আমি আর কিছু না ভেবে আলামিনকে রেখেই উঠে ভো দৌড়।আলামিন একবার আমার দিকে দেখছে আরেকবার শরীফের দিকে দেখছে।শরীফ জানে আমার একজন ছেলে বেস্ট ফ্রেন্ড আছে কিন্তু তাকে কখনও চোখের দেখা দেখে নি।আর আলামিনও শরীফকে চিনে না।তাই কেউ কাউকে চিনতে পারছে না।
শরীফ কিছু না ভেবেই আলামিনের কাছে গিয়ে ধামধুম কয়টা মাইর দেয়,আলামিন জানতে চাইছে কেন মারছে কিন্তু শরীফ কিছু না বলে মেরেই চলেছে।কিছুক্ষণ মারার পর হসপিটালের কয়েকজন এসে শরীফকে থামায়।ততক্ষণে আলামিনের শরীরের কিছু জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে।কিন্তু শরীফ কী থামার মানুষ নাকি তারপরও তেড়ে যাচ্ছে আলামিনকে মারতে।একটু পর হৃদয় ভাইয়া এসে শরীফকে টেনে একপাশে নিয়ে যায়।আর আলামিনকে কয়েকজন মিলে একটা কেবিনে নিয়ে যায়।

____________________★★★___________________

ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ডুকছি,কারন আজ বাড়িতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আর আজ ফোনটাও নিয়ে যাই নি যে বাড়িতে কল দিয়ে জানাব কই আছি।বাড়িতে নিশ্চয়ই সবাই খুব চিন্তায় আছে,আর এখন আমাকে বাড়িতে ডুকতে দেখলে সবাই খুব রাগারাগি করবে।সেটা ভেবেই খুব ভয় করছে।বাড়িতে ডুকে দেখি বাবা সোফায় বসে টিভি দেখছে আর মা বাবার পাশে বসে সবজি কাটছে রাতের রান্নার জন্য।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল ওদের দেখে একদমই মনে হচ্ছে না চিন্তায় আছে।আমাকে দেখে বাবা যা বলল তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

#চলবে…

সোনার সংসার পর্ব-০৫

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৫

শরীফ আমার কোলে মাথা দিয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।আর আমার ইচ্ছে করছে বজ্জাত বেটার চুলগুলো টেনে ছিড়তে।কোন দুঃখে যে আজ ক্রিকেট খেলতে গেলাম,ভেবেই কান্না পাচ্ছে আমার।

❤ফ্ল্যাশব্যাক❤

আমরা সবাই তাকিয়ে দেখি শরীফ মাথায় হাত দিয়ে অর বেস্ট ফ্রেন্ড হৃদয় ভাইয়ার উপর ডলে পড়েছে,আর হৃদয় ভাইয়া রুমাল দিয়ে শরীফের কপালে ধরে রেখেছে।মনে হচ্ছে কেটে গেছে তাই রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য এই পদ্ধতি,আমার সেটা দেখার পর এক মুহূর্তের জন্য পৃথিবীটা থমকে গেছিল।আমি কিছু না ভেবেই হাতের ব্যাটটা ফেলে দিয়ে শরীফের কাছে দৌড়ে যাই।আর উত্তেজিত হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে থাকি,,,

“কী হয়েছে তোমার?এই কথা বলো তুমি,বলো আমাকে কী হয়েছে তোমার?চোখ কেন খুলছো না তুমি?তুমি কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?”

“সাদিয়া তুমি শান্ত হও,শরীফের মাথায় বলটা খুব জোড়েই লেগেছে তাই জ্ঞান হারিয়েছে।” (হৃদয়)

“দেখি কতটা কেটে গেছে?”

আমি উত্তেজিত হয়ে কথাটা বলে শরীফের কপাল থেকে রুমালটা নামাতে গেলেই হৃদয় ভাইয়া বাঁধা দেয়,,,

“আরে ধরো না,শরীফকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।তুমিও এসো আমার সাথে।লেখিকা-সাদিয়া সিদ্দিক মিম”

কথাটা বলে আমাকে কোন সুযোগ না দিয়েই উনি শরীফকে পাঁজা কোলে করে গাড়িতে উঠায়।আমিও তার পিছুপিছু গেলে তাবাসসুম বলে উঠে,,,

“তুই কী উনাকে চিনিস?”

“আরে এটাই ত অর হাসবেন্ড,আর এখন এসব কথা বাদ দে আর চল হসপিটালে।মনে হচ্ছে অনেকটা কেটে গেছে তাই ত ওমন জ্ঞান হারাল।” (পান্না)

আমি এবার কেঁদেই দিলাম আর কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলাম,,,

“প্লিজ তাড়াতাড়ি চল,যত দেরি হবে ততই ক্ষতি।”

“হুম চল আমরাও আসছি।” (পান্না)

“তরা যা,আমার বাড়িতে যেতে এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।আমার মা এমনিতেই বকাবকি করে পড়াশোনার করার জন্য।ত এখন যেতে দেরি হলে আবার অশান্তি হবে,তুই প্লিজ কিছু মনে করিস না।আর চিন্তা করিস না ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।আমি ফোন দিলে ধরে জানাস।” (তামান্না)

আমরা সবাই মাথা নেড়ে সায় জানালে তামান্না চলে যায়।আর আমরা সবাই মিলে গাড়িতে উঠলাম,হৃদয় ভাইয়া ড্রাইভ করছে,উনার পাশে তাবাসসুম,আর পিছনে জানালার পাশের সিটে শরীফের মাথাটা সিটে এলিয়ে দিয়েছে।আমি শরীফের পাশে বসে অর মাথাটা আমার কাঁধে টেনে নিলাম,একহাতে অর মাথা আগলে ধরেছি আরেক হাতে অর হাত আকড়ে রেখেছি।যাতে পড়ে না যায়,আর আমার পাশে পান্না বসেছে।আমি শরীফের মাথার রুমালে হাত দিলে হৃদয় ভাইয়া বলে উঠল,,,

“রুমালটা সরিও না,ওটা চেপে ধরে রাখো যাতে রক্ত না পড়ে।”

আমিও উনার কথায় সায় জানিয়ে রুমালটা ধরে রাখলাম।অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে।আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে আর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে,মনে মনে আল্লাহর কাছে বলছি,,,শরীফের কিছু যাতে না হয়,ও যাতে সুস্থ হয়ে উঠে আর একটু পরপর শরীফের দিকে তাকাচ্ছি।মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে,চুলগুলো উসকো খুসকো,মুখের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলো কেমন বড় হয়ে গেছে।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পান্না খোঁচা দিয়ে বলে উঠল,,,

“এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে তোর তাকানোতে উনি ভালো হয়ে উঠবে।”

বলেই পান্না ফিক করে হেঁসে উঠল,পান্নার দিকে চোখ কটমট করে তাবাসসুম তাকাতেই পান্না চুপ হয়ে গেলো।আমি ওদের কথা পাত্তা না দিয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,,,

“আর কতক্ষণ লাগবে ভাইয়া?”

“এইত এসে পড়েছি।”

বলেই গাড়িটা থামিয়ে ভাইয়া দৌড়ে ভিতরে গিয়ে কয়েকজনকে ডেকে এনে শরীফকে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে গেলো,আমরাও দৌড়ে তাদের পিছন পিছন যাচ্ছি।শরীফকে একটা কেবিনে নিল,আমি তাদের পিছন পিছন যেতে চাইলে হৃদয় ভাইয়া বলে উঠল,,,

“রিসিপশনে কিছু কাজ আছে তোমরা প্লিজ সেটা করো আমি এদিকটা দেখছি।”

“আপনি খুব আজব একটা লোক,অর হাসবেন্ডের এই অবস্থা অর মনের অবস্থা এখন ঠিক কেমন আপনি কী বুঝতে পারছেন?লেখিকাঃসাদিয়া সিদ্দিক মিম কোথায় আপনি যাবেন তা না করে ওকে বলছেন।”(পান্না)

” আরে আমি সেটা বুঝতে পারছি বলেই ত বললাম যেতে,নয়ত সাদিয়া এখানে বসে কান্নাকাটি করবে আর ডাক্তারদের কাজ করতে সমস্যা হবে।”(হৃদয়)

“হে উনি ঠিকই বলেছে চল এখন।” (তাবাসসুম)

আমি যেতে চাইলাম না ওদের সাথে,কিন্তু অরা আমাকে জোড় করেই নিয়ে এলো।কিছুক্ষণ পর আমরা সকল কাজ সেরে কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালে হৃদয় ভাইয়া বলে উঠে,,,

“সাদিয়া তুমি এবার শরীফের কাছে যাও,শরীফের জ্ঞান ফিরেছে।”

কথাটা শুনে যেন দেহে প্রান ফিরে এল,আমি দৌড়ে কেবিনে ডুকে যাই।পান্নারা ডুকতে গেলে হৃদয় ভাইয়া আটকে দিয়ে বলে উঠে,,,

“আপনারা কী কাবাবে হাড্ডি হতে যেতে চাইছেন?ওদের এখন একটু একা থাকতে দেয়া উচিত।”

“কাবাবে হাড্ডি হব না এলাচি হব সেটা কী আপনি বলবেন নাকি,তখন থেকে দেখে যাচ্ছি সবকিছুতে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন।আমার ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না,সত্যি করে বলুন ত আপনি ঠিক কী করতে চাইছেন।”

সন্দেহ করে পান্না বলল,পান্নার কথা শুনে হৃদয় কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো,কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল,,,

” আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন,আপনার পাশেও ত একজন রয়েছে সে ত এত কিছু বলছে না।এক নাম্বার বাঁচাল মেয়ে আপনি।”

“কীহ,আমি বাঁচাল?তুই বাঁচাল,তোর বউ বাচাঁল,তোর চোদ্দ গুষ্ঠী বাঁচাল।”(রেগে পান্না বলে উঠল)

“এই মেয়ে তুমি আমাকে তুই তুকারি করে কেন বলছো?আরেকবার তুই করে বলে দেখো পাবনা মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসব।আর একদম গোষ্ঠী নিয়ে কথা বলবে না বলে দিলাম,আরেকবার গোষ্ঠী তুলে কথা বললে মুখ একদম সেলাই করে দিব।”

তাবাসসুম এসব দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে উঠল,,,

“বইন চুপ কর,হসপিটালে এত চিল্লাপাল্লা করিস না।তবে কাবাবের হাড্ডি,এলাচি সব কয়টাকে উস্টা মাইরা বের করব।প্লিজ চুপ কর,আর আপনিও চুপ করুন প্লিজ।”

তাবাসসুমের কথা শুনে দুইজন দুইজনকে ভেংচি কেটে দুইদিকে চলে গেলো।

________________________________________

আমি চোখের পানি মুছে নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে কাঁপা কাঁপা পায়ে কেবিনে ঢুকছি,শরীফ আধশোয়া হয়ে বসে আছে।মাথায় ব্যান্ডেজ করা,শরীফের দৃষ্টি আমার উপরেই।লেখিকা-সাদিয়া সিদ্দিক মিম আমি শরীফের চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেই,ঐ চোখের দিকে তাকালেই আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারব না।আমি শরীফের একটু কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালে শরীফ বলে উঠল,,,

“এখানে আসো।”

আমিও ভালো মেয়ের মত শরীফের পাশে গিয়ে দাঁড়াই,তখন শরীফ আমার হাত ধরে টেনে শরীফের পাশে বসায়।আমি দূরে গিয়ে বসতে চাইলে শরীফ গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,,,

“একদম দূরে যাবে না,এখানেই বসো।”

আমি দূরে গেলাম না,অর পাশেই বসলাম।তারপর অর হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নরম গলায় বলে উঠলাম,,,

“এখন কেমন আছেন?”

শরীফ কোন উওর দিল না,এক ধ্যানে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে,আমি হাতটা সরালে শরীফ আমার দিকে তাকায় তখন আমি আবারও বলে উঠলাম,,,

“জিজ্ঞেস করছি কেমন আছেন?”

শরীফ এবার রেগে বলে উঠল,,,

“বল দিয়ে আঘাত করে এখন বলো কেমন আছি?তোমার নামে আমি কেস করব।”

আমি হালকা ভয়ে পেয়ে অপরাধীদের মত মাথা নিচু করে বলে উঠলাম,,

“I am so sorry,,,আমি আপনাকে দেখি নি,আর আমি ইচ্ছে করে মারি নি।”

“Sorry দিয়ে কাজ হবে না,তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।”

শাস্তি পাওয়ার কথাটা শুনে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,তারপর নিজেকে সামলে শরীফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,,,

“কককী শাস্তি?”

“আমি একটু ঘুমাব,,,”

শরীফকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি এক লাফে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে উঠলাম,,,

“বেশ ত ঘুমান না,আমরা কেউ আপনাকে বিরক্ত করব না।আর কাউকে বিরক্ত করতেও দিব না,আমি বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছি।আপনি ঘুমান,এখন আমি আসি।”

কথাটা বলে এক পা বাড়াতে নিলেই শরীফ ধমকে বলে উঠল,,,

“একটা থাপ্পড় লাগাব,আমার পুরো কথা না শুনেই ধেইধেই করে উনি বাইরে যাচ্ছে,চুপচাপ এখানে বসো।”

আমি বাচ্চা ফেস করে শরীফের দিকে তাকালাম যাতে কোন শাস্তি না দেয় কিন্তু আমার কপাল কী এত ভালো,আবারও ধমকে বলে উঠল,,,

“বসতে বলেছি আমি?”

আমি কেপেঁ উঠলাম,তারপর গুটিগুটি পায়ে শরীফের থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে বসলাম সেটা দেখে শরীফ টেনে এনে অর পাশে বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল,ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটল যে আমার বুঝতে পাক্কা দুই মিনিট লেগেছে।বুঝতে পারার সাথেসাথে শরীফকে সরাতে চাইলাম,,,

“কী করছেন আপনি?ছাড়ুন আমাকে।”

শরীফ ছাড়ল না,শরীফ আরো আকড়ে ধরে আমার পেটে মুখ গুজে নেয় আমি পুরো ফ্রিজড হয়ে আছি।

“একটা কথা বলবে ত পুলিশের হাতে তুলে দিব,মার্ডার কেসে।আমি ঘুমাব আর আমি যতক্ষণ ঘুমাব ততক্ষণ তুমি এখানে থেকে আমাকে পাহারা দিবে।এটাই তোমার শাস্তি,এই শাস্তি মেনে নিলে ভালো নয়ত পুলিশের হাতে তুলে দিব।আর হে ঘুম থেকে উঠে যাতে তোমাকে এখানেই পাই নয়ত জেলের আসামী বানাব।”

তারপর আমি আর কিছু বললাম না,গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে আছি।আর ক্রিকেট খেলার গুষ্টি উদ্ধার করছি বকে।

❤ফ্ল্যাসব্যাক এন্ড❤

#চলবে…

সোনার সংসার পর্ব-০৪

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৪

আমি যেন জেলের আসামি এমন ভাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘিরে ধরেছে আমাকে।যেন চোখের আড়াল হলেই জেল থেকে পালাব।আমার ডান পাশে রয়েছে তাবাসসুম,পান্না আর বাম পাশে তামান্না।ভার্সিটিতে পা রাখার সাথেসাথেই তিনজন মিলে এক প্রকার টেনে এনেছে ভার্সিটির পিছন দিকটায়।আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি ওদের মনে কী চলছে তাই একটু হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,,,

“তরা এভাবে আমাকে এখানে নিয়ে এলি কেন?”

“কেন তাকিয়ে আছি আপনি বুঝতে পারছেন না!” (তাবাসসুম)

“তুই বিবাহিত আর গতকাল সারাদিন আমাদের সাথে থেকে একবারও বলার প্রয়োজন বোধ করলি না।তুই বিবাহিত কথাটা বললে কী তোর জামাইকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম হে?” (পান্না রেগে বলে উঠল)

“তুই কী কিছু বলবি নাকি মাইর খাবি!” (তামান্না)

“তরা প্লিজ শান্ত হ,আমি কয়দিন পর তদের এমনিতেই সব বলতাম।”

আমার কথাশুনে তিনজনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠল,,,

“ওওও কয়দিন পর।”

আমি মনে মনে ভাবছি ওদের কথাগুলো বলা ঠিক হবে কী না?এভাবে নিজের জীবনে ঘটা সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার কথা ওদের বলব কী বলব না সেটা নিয়ে কনফিউজড।পরে ভাবলাম অরা ত আমার ফ্রেন্ডই সো বলাই যায়।তাই ওদের সবটা খুলে বললাম,সবটা বলতে গিয়ে চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।আমি চোখের পানি মুছে ওদের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম সবার চোখই ছলছল করছে।আমি হালকা হেঁসে বলে উঠলাম,,,

“আরে তরা কাঁদছিস কেন?আমার কপালে এটা হওয়ার ছিল তাই এটাই হয়েছে।এসব নিয়ে এখন আর ভাবি না,এখন জীবনকে নতুন রঙ দিয়ে সাজাব।অতীত ভেবে কেন ভবিষ্যৎ নষ্ট করব আমি,তরা প্লিজ এভাবে থেকে আমাকে কষ্ট দিস না।”

আমার কথাটা বলার পরপরই তিনটে মিলে আমাকে জড়িয়ে ধরল,আমাকে জড়িয়ে ধরে পান্না বলে উঠল,,,

“এতটুকু একটা মেয়ে হয়ে কীভাবে এত যন্ত্রণা শয্য করছিস তুই?আমি হলে ত মরেই যেতাম।”

“মৃত্যুটা একমাত্র পথ নয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার,ভুলে যাস না মৃত্যুর পরও আরেকটা জীবন আছে।এই জীবন আর কতদিনের বেশি গেলে ৮০/৯০ বছর কিন্তু বাকি সারাজীবন কাটাতে হবে সেই মৃত্যুর পরের জীবনে।আর এই পৃথিবীর কষ্ট যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আত্মহত্যার মত মহাপাপ করে মৃত্যুর পরের জীবনটা কেন নষ্ট করব বলতে পারিস।তাই নিজের মনকে শান্ত করে পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া শিখতে হবে।”

আমার কথাশুনে তাবাসসুম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠল,,,

“একদম ঠিক বলেছিস,আমাদের উচিত যত খারাপ পরিস্থিতিই হোক না কেন তার মুখোমুখি হয়ে সমস্যা সমাধান করা।”

“তুই ঠিক পথটাই বেছে নিয়েছিস সাদিয়া,তোর জন্য গর্বিত আমরা।”(তামান্না)

আমি এবার পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠলাম,,,

” বইনেরা আমার এত পাম দিস না,পাম দিলে ফুলে বেলুন হয়ে যাব।তারপর হাওয়ায় উড়ে যাব,তখন আমাকে খোঁজার জন্য তদেরকে হেলিকপ্টার নিয়ে ঘুরতে হবে।আর তার জন্য অনেক অনেক টাকা লাগবে,আর টাকার জন্য চাকরি করতে হবে।আর চাকরি পেতে হলে পড়াশোনাটা ভালো করে করতে হবে,তাই এখন ক্লাসে চল।”

পুরো কথাটা একদমে বলে ওদের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম সবকয়টা আমার দিকে হা করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তখন আমি সব কয়টাকে একটা করে চিমটি দিয়ে হুসে আনলাম।তখন তাবাসসুম বলে উঠল,,,

“বইন তুই এত কথা কেমনে বলছ?কাল অবধি তকে দেখে ত মনে হয় নাই তুই এত কথা বলতে পারছ!”

আমি হেঁসে বলে উঠলাম,,,

“আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া!এখন চল ক্লাসে যাই।”

তারপর তিনজন ঠেলাঠেলি করে দুষ্টুমি করতে করতে ক্লাসে চলে এলাম।

ভার্সিটির ছুটির পর একটু লেট করেই বের হলাম সবাই।চারজন বের হতে গিয়ে দেখি ভার্সিটির মাঠে কতগুলো বাচ্চা ক্রিকেট খেলছে পান্না তখন বলে উঠল,,,

“দোস্ত দেখ ক্রিকেট খেলতাছে পোলাপানরা চল একটু খেলে আসি,আমার ক্রিকেট খেলতে খুব ভাল্লাগে।”

পান্নার সাথে তাল মিলিয়ে তামান্নাও বলে উঠল,,,

“হে দোস্ত চল একটু খেলে আসি,অনেকদিন হয় খেলি না।”

আমি মুচকি হেসে বলে উঠলাম,,,

“হে চল একটু হাত,পা চালিয়ে দেখিয়ে দেই মেয়েরাও ক্রিকেট খেলতে পারে।”

অতঃপর সবাই মিলে বাচ্চাদের ওখানে গেলাম,তাবাসসুম বলে উঠল একটা বাচ্চা ছেলেকে,,,

“বাবু আমাদের কী খেলায় নিবে?”

বাচ্চাটা চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠল,,,

“আমার নাম বাবু নয়,আমার নাম নাদিম।”

আমি বাচ্চাটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার গালে হাত দিয়ে বললাম,,,

“খুব সুন্দর নাম,আমাদের কী খেলায় নিবে?”

“না তোমরা অনেক বড়,তোমাদের সাথে আমরা পারব না।তাই খেলব না আমরা তোমাদের সাথে।”

বাচ্চাটার কথাশুনে আশেপাশের সব বাচ্চারা সহমত পোষন করল,তখন পান্না সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,,,

“আমাদের খেলায় নিলে তোমাদের সব্বাইকে চকলেট কিনে দিব।”

পান্নার কথাশুনে মনে হল কথাটা বাচ্চাদের মনে ধরেছে।তখন নাদিম নামের সেই বাচ্চাটা বলে উঠল,,,

“ঠিক আছে নেও ব্যাট।”

কথাটা বলেই নাদিম ব্যাট আমার হাতে দিল,আমি ব্যাট হাতে নিয়ে পজিশন মত দাঁড়ালাম আর বলে উঠলাম,,,

“সবাই পজিশন মত দাড়াও আমি ব্যাট করব।”

সবাই সেটা মেনে নিয়ে পজিশন মত দাঁড়াল,আর বল করবে তাবাসসুম।তাবাসসুম আমাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল যে আমি রেডি আছি কী না?আমিও চোখে ইশারা করে বলে উঠলাম রেডি তুই বল কর। অতঃপর তাবাসসুম বল করছে আর আমি ব্যাটিং করছি কতক্ষন খুব ভালো করেই খেলা হল,কিন্তু আমার কপাল কী এত ভালো নাকি যে সব ভালো হবে,আমি বলে আঘাত করার একটু পরপরই খুব জোরে একটা চিৎকার করার আওয়াজ হল,আমার সবাই হালকা ভয় পেলাম।আমরা আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি ঠিক কী হয়েছে,হঠাৎ করেই চোখ আটকে যায় একটা জায়গায়।সেটা দেখে রীতিমতো সবার চোখ চড়ক গাছ,যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলাম না আমরা কেউ।বাচ্চাগুলো ত কিছু না ভেবেই ভৌ দৌড়।

#চলবে…

(মৃত্যু একমাত্র পথ নয় কোন মানসিক/শারীরিক কষ্ট, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার।পৃথিবীতে সব সমস্যারই সমাধান রয়েছে,তাই মনকে শক্ত করে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে নিজেকে প্রস্তুত করুন।)

সোনার সংসার পর্ব-০৩

0

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৩

বাড়িতে ঢোকার পরপরই শক্ত হাতের এক থাপ্পড় পড়ল আমার গালে।চোখে পানি নিয়ে বাবার দিকে তাকালাম,বাবা তখন হুংকার ছেড়ে বলে উঠল,,,

“বলে ছিলাম তোকে ঐ ছেলেটার সাথে আর অর পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ না করতে।বলেছিলাম আমি তকে?”

আমি ভয়ে কিছু বলছি না,আসলে ছোট থেকেই বাবাকে খুব ভয় পাই।বাবা একটা ধমক দিলেই চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়ে।কখনও গায়ে হাত তুলে নি,আজই প্রথম আমার গায়ে হাত তুলল।

“কথা কেন বলছিস না,বল তকে মানা করেছিলাম ঐ ছেলের সাথে কথা বলতে।”

এবার সাদিয়ার মা বলে উঠল,,,

“তুমি চুপ করবে,সাদিয়াকেও কিছু বলতে দেও।নিজের মত সব ভেবে বসে থেকো না,জেলের আসামীকেও কথা বলার সুযোগ দেয়।”

“রাশিদা তুমি তোমার মেয়ের হয়ে আর একটা কথাও বলবে না।সবসময় মেয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলো তুমি।তোমার মেয়েকে আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম তারপরও তোমার মেয়ে কোন সাহসে ঐ ছেলের সাথে কথা বলেছে!”

“সাদিয়া তুই ঘরে যা,আমি আসছি তোর সাথে কথা আছে।”

মায়ের বলার পরও আমি মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি,তখন মা আবারও বলে উঠল,,,

“তকে ঘরে যেতে বলেছি ত আমি এখনও দাড়িয়ে আছিস কেন?আরেকটা থাপ্পড় খেতে মন চাইছে নাকি হে,যা ঘরে যা।”

আমি মার কথা শুনে চলে আসছিলাম তখন একটু শুনতে পেলাম বাবা মাকে বলছে,,,

“তোমার মেয়েকে বলে দিও ২য় বার যাতে এই সাহস না করে।২য় বার এমন করলে আমার বাড়িতে তোমার মেয়ের আর ঠাই হবে না।”

বাবার কথা শুনে আর দাড়ালাম না চলে আসলাম নিজের রুমে।বাবা আমাকে ভার্সিটি থেকে আনতে গিয়েছিল কিন্তু তখন শরীফের সাথে কথা বলার সময় দেখে ফেলেছিল।সারা রাস্তায় কিছু বলে নি কিন্তু বাড়িতে ঢোকার পরপরই বাবা থাপ্পড় মারে।

আমি ঘরে এসে খাটে বসে কাঁদছিলাম তখন কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখি ফরহাদ।আমি চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,,,

“কী রে তুই কখন স্কুল থেকে আসলি আর আরাফাত কই?”

ফরহাদ আমার কথার কোন উওর না দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠল,,,

“তরা মেয়েরা নিজেদের এত দুর্বল প্রমান কেন করিস?”

“মানেহ?”

ফরহাদ এবার রেগে বলে উঠল,,,

“মানে হল তুই সবকিছু এভাবে চুপচাপ কেন মেনে নিচ্ছিস?তর সাথে করা অন্যায়ের প্রতিবাদ কেন করছিস না?খালি বসে বসে চোখের পানি কেন ফেলছিস?চোখের পানি যত ফেলবি তত তকে সবাই দুর্বল ভেবে আঘাত করবে।বাবা যখন তোর গায়ে হাত তুলল তখন বাবার চোখে চোখ রেখে বলতে পারলি না সত্যিটা কী?তা না করে তুই চোখের পানি ফেলছিস।ঐ শরীফ যখন তকে রেখে আরেকটা বিয়ে করল তখনও চোখের পানি ফেলেছিস।চোখের পানি দিয়ে কী করতে পারলি তুই?পারলি কী বিয়েটা আটকাতে নাকি তোর সোনার সংসারটা ভাঙ্গা থেকে আটকাতে?”

আমি এবার অবাক দৃষ্টিতে ফরহাদের দিকে তাকালাম,আমি ত ফরহাদ কিংবা আরাফাতকে বলি নি যে শরীফ আরেকটা বিয়ে করেছে।এ কথা ত শুধু আমি মা আর বাবা জানি কিন্তু ও জানল কীভাবে?ফরহাদ আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে চোখে পানি নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠল,,,

“ছোট হতে পারি অবুুঝ নই,সব জানি আমি।আমি ছোট বলে আমার কথাগুলো হাওয়ায় উড়িয়ে দিস না আপু।আমার কথাগুলো একটু চিন্তা করিস যে আমি ঠিক বলছি কীনা ভুল বলেছি?”

ফরহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল।আমি এবার চোখে পানি নিয়ে অর দিকে তাকালাম,,,

“আপু দেখ আমরা তকে ভালবাসি খুব ভালবাসি তকে।তোকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে আমাদের কারো ভালো লাগছে না।তুই কী মুভ অন করতে পারবি না আপু?তুই কী প্রমান করতে পারবি না যে মেয়েরা দুর্বল নয়?যারা তকে দুর্বল ভেবে তকে এমন যন্ত্রণা দিয়েছে তাদের কে তুই দেখিয়ে দিতে পারবি না তুই দুর্বল নস।”

ফরহাদ যা বলেছে তা একটা কথাও মিথ্যা নয়,নিজেকে যত দুর্বল করব তত সবাই আঘাত করবে।আমাকে নিজের জন্য না হলেও আমার পরিবারের জন্য নিজেকে সামলাতে হবে।আমার এতটুকু ছোট ভাইটা যা বুঝতে পারল আমিই সেটা বুঝতে পারলাম না।তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেকে আর দুর্বল করব না,ঘুরে দাঁড়াব আমি।জীবনটা নতুন করে সাজাব আমি,আর আমার মত কোন মেয়ের যাতে সংসারটা না ভাঙ্গে তাদের সাহায্যের জন্য নিজেকে তৈরি করব।প্রমান করব মেয়েরা দুর্বল নয়,মা না হওয়াটা কোন দুর্বলতা নয়।সমাজে একটা ছেলের বাবা হওয়ার অক্ষমতা থাকলে যেমন তাদের কোন সমস্যার মুখে পড়তে হয় না তারা যেমন মাথা উঁচু করে বাঁচে তেমনি মেয়েরাও মাথা উঁচু করে বাঁচবে।এটা আমার নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করলাম।

আমি চোখের পানি মুছে হাসিমুখে ফরহাদকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,,,

“তোর আপু প্রমান করবে তোর আপু দুর্বল নয়।তোর আপু মুভ অন করবে,দেখিয়ে দেবে তাদেরকে যারা মেয়েদের দুর্বল ভেবে তাদের উপর অত্যাচার করে।আমি জীবনটা নতুন করে সাজাব,অতীত ভেবে আর নিজেকে কষ্ট দিব না।”

তারপর কিছু একটা ভেবে আরেকবার বলে উঠলাম,,,

“কিন্তু তুই এটা বল ত যে তুই কীভাবে জানলি যে শরীফ বিয়ে করেছে?”

ফরহাদ এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার টেনে ভাব নিয়ে বলে উঠল,,,

“It’s Secret.”

আমি ফরহাদের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে ফেললাম তখন ফরহাদ আমাকে বলে উঠল,,,

“আপু তুই হাসলে না তকে পুরো পেত্নী লাগে।”

আমি ফরহাদের কথা শুনে রেগে ফরহাদের কানে ধরতে গেলাম,তখনই ফরহাদ দিল ভো দৌড়।ওকে আর পায় কে,আমি অর কাহিনি দেখে হালকা হেসে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।

____________________________________

রাতের খাবার খেয়ে ফরহাদ,আরাফাতের রুমে গেলাম।গিয়ে দেখি দুটোতে মিলে জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে আছে।এমনিতে সারাদিন ঝগড়া করেই পার করবে কেউ কারো কাছে ঘেসবে না আর এখন দেখো কীভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।আমি ওদের কয়টা পিক তুলে রুমে চলে আসলাম।ফোনটা রেখে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম,আজ কেন যেন ফরহাদের কথাগুলো শুনে মনটা হালকা লাগছে।বেশ কিছুক্ষন পর রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে এসএমএস দেয়া যাতে লেখা,,,

“ভেঙ্গে গেছো?তবে নতুন করে গড়ো,এমন ভাবে গড়বে যাতে কেউ আর ভাঙ্গতে না পারে।”

কথাগুলো কিছুই মাথায় ডুকল না,আমি সেই নাম্বারে ফোন দিলাম বন্ধ বলছে।এভাবে কয়েকবার ফোন দেয়ার পর হঠাৎ করেই কলটা ডুকল আর সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ হল।আমি উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলাম,,

“কে আপনি?আর এই এসএমএস টা দিয়ে কী বুঝাতে চাইলেন আপনি?”

“——–”

এমন চুপ থাকাটা আমার আর শয্য হল না তাই রেগে বলে উঠলাম,,,

“আরে আজব লোক ত আপনি,কথা কেন বলছেন না?”

আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে লোকটা ফোনটা কেটে দিল,তাতে রাগটা আবার মাথায় উঠল।রাগে ফোনটা বেডে ফেলে বড় করে শ্বাস নিয়ে রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি।তখনই আবার এসএমএস আসার আওয়াজ হল,আমি ফোনটা নিয়ে দেখি সেই নাম্বার থেকে এসএমএস।এবার তাতে লেখা,,,

“রাগটা সঠিক জায়গায় দেখাও কাজে লাগবে।”

রাগে ইচ্ছে করছে ঐ লোকটার মাথার চুল ছিড়তে,এত রহস্য আর ভাল্লাগছে না।আর কিছু না ভেবে একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ভালো ঘুম হওয়ার জন্য।কারন এখন ঠিক করে ঘুমাতে পারি না বারবার ঐ শরীফ আহনাফের কথা মনে পড়ে আর সারারাত কষ্টে ছটফট করে কাটাতে হয়।কিন্তু আমি আর কষ্ট পেতে চাই না তাই ঘুমের ঔষধ খেয়ে পাড়ি দিলাম ঘুমের দেশে।

____________________________________

অন্ধকার রুমে গিটারে টুংটাং আওয়াজ করে কেউ একজন গাইছে,,,

“তোমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে।”

এতটুকু গেয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে উঠল,,,

“কষ্টের ফল মিষ্টি হয়,এখন যত কষ্ট করার করো তোমার সুখের দিন গনিয়ে আসছে।” (অচেনা)

#চলবে…