Saturday, July 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1512



Gangstar In Love Part-03

0

#Gangstar In Love🖤🥀___ A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#Part;__03

অতীত 🍁🍁🍁…………………

বাংলাদেশ বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম।।আজ ঠিক ৬ বছর পর নিজ দেশে পা রাখলো আব্রাহাম। কতোই না স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার আজ সবগুলো যেন মনের দেয়ালে কড়া নারছে। সে প্রথমে দেশে আসতে না চাইলেও গতকাল রাতে তার বাবার অনেক জোড়াজুড়ি এবং তার বাপির অসুস্থতার কথা চিন্তা করে একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাকে দেশে ফিরতে হলো।। চোখের সামনে তার পুরনো সব স্মৃতি ভাসছে মরে পড়ে যাচ্ছে তার পরিবার কিভাবে তারই আপনজন দের বিশ্বাসঘতকতার শিকার হয়েছিল।। ভিতর থেকে এক লম্বা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো আব্রাহামের। হঠাৎ করেই আব্রাহামের ফোনে Call আসে কথা বলতে লাগলো সে। কিন্তু কোথা থেকে হুট করে একজন দৌড়ে এসে আব্রাহাম কে আস্টে-পৃস্টে জড়িয়ে ধরে। এমন কান্ডে আব্রাহাম অবাক হলো ঠিকই কিন্তু তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এইটা কে,,,,,,,,,,

আব্রাহাম ও তাকে জড়িয়ে ধরলো।।

অয়ন; Welcome back ভাই Welcome back☺️( কিছুটা emotional হয়ে) ……

আব্রাহাম; 😊😊🤗🤗

অয়ন; কেমন আছিস ভাই আমার। কতো দিন পর তোকে নিজের সামনে দেখছি আমাদের কথা কি তোর মনে পড়ে না। I missed you ভাই I really missed You……

আব্রাহাম; I also missed you তোদের কাছ থেকে দূরে থেকেছি মানলাম কিন্তু এমন একদিন ও নেই যে তোর আর বাপির কথা আমার মনে পরেনি।। এইতো দেখ আমি এসে গেছি এখন আর তোদের থেকে দূরে কোথাও যাবো না।। পাগল এবার তো ছাড় আমায় আর কেমন আছিস বল

অয়ন; এতোদিন ভালো ছিলাম না, হ্যাঁ তবে এখন তুই এসে পড়েছিস না বিন্দাস আছি এখন। তোর কি অবস্থা তাই বল

আব্রাহাম; তোদের পেয়ে ভালো না থেকে কি পারা যায়। Btw আমি যে ঠিক কটার Flight এ আসছি তা তো আমি বাপি কে জানাইনি তুই কি করে জানলি।। আর Airport থেকে আমায় Pick করতে আসলেও শুধু তুই কেন বাপি কোথায় বাপি আসে নি

অয়ন; হাহাহা ডুড,, আমি তোমার আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর ভাই এতো টাও বোকা ভেবো না। আর আমি বাপি কে বলিনি যে তুমি কখন আসছ। আমি ভাবলাম যে Airport এসে তোমাকে Surprise দিবো পরে তোমাকে এখান থেকে Pick করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বাপি কে Surprise দিবো।। কি বল দারুণ Idea না(কিছুটা ভাব নিয়ে)

আব্রাহাম; হয়েছে হয়েছে এখন চল(অয়নের মাথায় গাট্টা মেরে) বাড়িতে যাওয়া যাক। রাশেদ গাড়ি বের করো

অয়ন; Let’s go home,, dude

আব্রাহাম এবং অয়ন গাড়িতে উঠে পড়লো।। গাড়ি যাচ্ছে আপন গতিতে। আর গাড়ির মাঝে দুই ভাই এর খুনসুটি তো আছেই

(( অয়ন আহমেদ,, আব্রাহামের খালাতো ভাই। আব্রাহামের বাবা-মা, চাচা-চাচি, অয়নের বাবা-মা, সবাই একসাথে একই পরিবারে থাকতো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একদিন এক car accident এ অয়নের বাবা-মা মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকে আব্রাহামের বাবা আবির আহমেদ চৌধুরী অয়নের সব দায়-ভার নেয়।। তিনি কখনোই আব্রাহাম আর অয়নের মাঝে কোন পার্থক্য করেন নি। আব্রাহাম আর অয়ন তার কাছে সমান। অয়ন ও আবির আহমেদ কে বাপি বলে ডাকে সেই ছোট থেকেই। আব্রাহাম পড়াশুনার জন্য বাইরে চলে গেলেও অয়ন তার বাপি কে ছেড়ে যেতে চায়নি। অয়ন পড়াশুনা শেষ করে তার বাপির Business এই Join করে))

বেশ কিছুক্ষন পর আব্রাহাম আর অয়ন বাড়ি পৌছে গেলো। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে চোখের Sunglass খুলে বাড়িটা কে দেখছে ছয়-ছয় টা বছরেও বাড়ি পরিবর্তন হয় নি ঠিক যেমনটি আগে ছিলো এখনও ঠিক তেমনই।। আব্রাহাম মন ভরে দেখতে লাগলো বাড়িকে। তার বাপি-ভাই এর সাথে এই বাড়িতে হাজারো হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

অয়ন; এতো বছর পর ফিরে এসে কি এখান থেকেই বাড়িকে দেখবি নাকি ভিতরেও যাবি (আব্রাহামের পিঠে চাপড় দিয়ে)

আব্রাহাম; হুমমম চল ভিতরে যাই

অয়ন; এই দাঁড়া দাঁড়া,

আব্রাহাম; আবার কি হলো

অয়ন; আমি কিন্তু বাপি কে কিছুই বলি যে তুই কখন আসছিস,, So It’s surprise ok

আব্রাহাম; ওকে বাবা ওকে বুঝতে পেরেছি

অয়ন আব্রাহাম ধীরে ধীরে ভিতরে প্রবেশ করলো কিন্তু তারা নিজেই অবাক কেননা ভিতরে কোন প্রকার কোন আলো নেই পুরো বাড়ি অন্ধকার। আব্রাহাম কিছুটা ভরকে গেলো। তার মনে হতে লাগলো কিছু ঘাবলা রয়েছে। অয়নের আড়ালে পকেটে থাকা Gun টা মাত্রই হাতে নিল আব্রাহাম। আব্রাহাম যেই না ঘরের মাঝখানে এসে দাড়ালো ঠিক তখন পুরো ঘরের আলো জলে উঠলো উপর থেকে বেলুন ফেটে চিকচিক করা কাগজ পরতে লাগলো,, এবং উপর থেকে পার্টি স্প্রে দিতে লাগলো ✨✨✨✨🎈🎈🎈🎈🎉🎉🎉🎉🎉🎊🎊🎊🎊🎊।।।। অয়ন তো অবাকের উপরে অবাক।।

আবির আহমেদ(আব্রাহামের বাবা) ; Welcome home dear,, welcome home 😍😍

আব্রাহাম; বাপিইইইইইইই।।। ( দৌড়ে গিয়ে দুইহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আব্রাহাম তার বাপি কে) কেমন আছো তুমি বাপি

আবির আহমেদ; আমি ভালো থাকলেই বা কি আর খারাপ থাকলেই বা কি কে নেয় তার বুড়ো বাপির খোজঁ,,

আব্রাহাম; বাপি এমন করে কেন বলছো বলতো,, দূরে গেলেই কি ভুলে গেলাম নাকি আমি এসে পড়েছি আর যাচ্ছি না তোমাদের ছেড়ে।।

অয়ন; আর আমি তো কেউ না তাই না, সবাই ভুলে গেলো আমাকে ☹️(মন খারাপ করে)

আব্রাহাম; আরে ছাগল আয় আয় তোকে কেও কি করে ভুলতে পারে (এই বলেই তারা হেসে দিলো এবং তিনজনই একে উপরকে জড়িয়ে ধরলো)

অয়ন; But wait, বাপি এটা কি হলো?

আবির আহমেদ; কি আবার হলো?

অয়ন; আমরা আসছি তা তুমি কি করে জানলে আমি তো তোমায় বলিনি।। আমি ভাবলাম ভাই কে নিয়ে এসে তোমাকে এক ধামাকা Surprise দিবো কিন্তু এখন তো দেখি আমরা নিজেই উল্টো Surprised হয়ে গেলাম…….

আবির আহমেদ; হাহাহাহা,, তোরা কি ভেবেছিস তোরা আমাকে কিছু না বললে আমি কিছুই জানতে পারবো না।। না তা কি করে হয় আমার ছেলেটা এতো বছর পর বাড়িতে এলো আমার কাছে এলো আর আমি জানবো না। তুই কখন আব্রাহাম কে airport থেকে pick করতে গিয়েছিস আমি তাও জানি তো আমি ভাবলাম এই সময়ে কিছু একটা plan করি তোদের Surprise করবো বলে।। তো করে ফেললাম

আব্রাহাম; ওয়াহহহহহ, বাপি হো তুমহারি জেসি। Love you বাপি উম্মমাহহহ😍😘

আবির আহমেদ; আরে হয়েছে হয়েছে এবার যা তোরা হাত-মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে আয় আমি তোদের জন্য আজ তোদের Favourite খাবার রান্না করেছি তারাতারি যা

আব্রাহাম অয়ন দুইজনই চলে গেলো যার যার ঘরে।। ঘরে গিয়ে আব্রাহাম দেখতে লাগলো,, নাহ কোন রকম কিছুই পাল্টে নি সব আগের মতোই রয়েছে।। কিছুক্ষণ পর আব্রাহাম অয়ন দুইজনই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো,,, নিচে গিয়ে দেখলো অয়ন বাপি সবাই খাবার টেবিলে বসে আসে

আব্রাহাম; কি সবাই দেখি একদম পুরো রেডি হয়ে অপেক্ষা করছো ( শার্টের হাতা Flod করতে করতে সিড়ি দিয়ে নেমে)

আব্রাহাম; তো আজকে খাবারে কি রয়েছে,, হমমমমমমমম,,,, Smells good

আবির আহমেদ; সব তোমার পছন্দের আমি নিজে রান্না করেছি

আব্রাহাম; কিহহ,, বাপি তুমি না অসুস্থ,, তুমি আবার এই অসুস্থ শরীর নিয়ে রান্নাঘরে গিয়েছো Chief দের বললেই তো পারতে

আবির আহমেদ; একদম না আমি সুস্থ আছি৷ যাকে বলে একদম ফিট।। আর তুই এসেছিস আমি নিজে তোকে রান্না করে খাওয়াবো chief কে কেন বলব শুনি!!

আব্রাহাম; বাপি তুমিও না,, তোমার সাথে আমি আর পারি না

আবির আহমেদ ; আরে এখন রাখ এইসব তোর জন্য রেধেছি মাংস ভুনা এই নে

আব্রাহাম; কেন যে শুধু শুধু তুমি এইসব করতে গেলে বাপি

অয়ন ; আরে তোমারা বাবা-ছেলে রাখো তো আমাকে দাও আমি খাই

আব্রাহাম; আরে পেটুক কোথাকার, আর কতো খাবি এতো খাস তবুও তো একচুল মোটা হলি না

অয়ন; ভাইই একদম আমার খাবার নিয়ে কিছু বলবি না, আমার খাবার আমার প্রাণ,, বেচেঁ আছি যতো দিন খেয়ে যাবো তোত দিন😋😋

আব্রাহাম; তুই এভাবে খেতে থাকলে তো একদিন এই পৃথীবিতে খাবারের অভাব পড়ে যাবে

অয়ন; এই ভাই দেখ তুই কিন্তু আমার লেগ পুল করছিস

আব্রাহাম; হ্যাঁ, যা আমি Always করি 😁

অয়ন; তবে রে,,,,

(এই বলে দুই ভাই খাবারের টেবিলেই যুদ্ধে লেগে পড়লো)

আবির আহমেদ; (রান্নাঘর থেকে তেড়ে এসে) এই এই তোরা আবার শুরু করে দিলি আহা থামবি তোরা এখন এইসব রেখে খা তো…….

অবশেষে দুই ভাই যুদ্ধ রেখে খেতে বসলো।। খেতে খেতে অয়ন হঠাৎ বলে উঠলো

অয়ন; ভাই, আমি ভাবছিলাম যে চলনা আজ কোথাও থেকে ঘুরে আসি মাত্রই তো দেশে আসলি কিছু দিন পর বাপির Company (Chowdhury group and industries) তে Join করবি তো চলনা এই কয়েকদিনে কিছুটা ঘুরে আসা জাক এতে সময় ও কাটবে আর enjoy ও হবে কি বলিস

আব্রাহাম; Not bad ( খেতে খেতে) তো চল আজকেই যাওয়া জাক।। বাপি তুমি কি বলো?

আবির আহমেদ; আমি আর কি বলবো যা দুই ভাই মিলে ঘুরে আয় ভালো লাগবে তবে বাবা সাবধানে থাকিস প্লিজ

অয়ন; আরে বাপি তুমি চিন্তা করো না তো,, আব্রাহাম ভাই কে সাবধানে থাকতে হবে না in fact ভাই বের হলে এই পুরো শহরকে সাবধানে থাকতে হবে বুঝলে

সবাই একসাথে হেসে উঠলো। খাওয়া শেষ করে যে যার যার ঘরে এসে পড়লো।।।

বিকেল বেলা;;;;;……🍁🍂

( কালো জিংস্, কালো শার্ট, তার উপর Brown কালার জেকেট,, হাতে দামি watch,, সেই নিলাভ চোখজোড়া,, মাথার চুলগুলো এলোমেলো ভাবে কপালে পড়ে রয়েছে আর পায়ে Dark black colour shoes আর ঠোঁটে সেই বাকাঁ হাসি পুরাই হিরো লাগছে আব্রাহাম কে দেখে

অয়ন ও বা কম কিসে white colour pant,, red colour shirt,,এবং উপরে red colour জেকেট দুইজন কেই দারুণ লাগছে)

আব্রাহাম; অয়ন, অয়ন,, এই অয়ন

অয়ন; কি হলো এভাবে চিল্লাছিস কেন?

আব্রাহাম; চিল্লাবো না মানে আমাদের না বের হওয়ার কথা তো তৈরি হয়েছিস তুই?

অয়ন; আরে হে হে আমি রেডি চল যাওয়া যাক

আব্রাহাম; হুমমমম।

দুইজনই তাদের বাপির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো,, Ash কালারের গাড়িতে করে তারা যেতে লাগলো।। যেতে যেতে তারা এক Highway এর উপর এসে দাড়ালো। খোলা আকাশ মুক্ত বাতাসে মন যেন জুড়িয়ে গেলো

অয়ন; কি ভাই এখানে নামবি,,

আব্রাহাম ; হ্যাঁ চল নামি কথাও একটু বসা যাক

এই বলে তারা গাড়ি সাইড করে একটা জাইগায় দাড়ালো

অয়ন; কিছু খাবি?
আব্রাহাম; এই নে ( Beer এর এক বড়ো জার সামনে এনে) যতো ইচ্ছা
অয়ন; ওয়াহহহহহ 👏👏এই না হলো আমার ভাই Always ready
আব্রাহাম; Yeap (কিছুটা ভাব নিয়ে)

কিছুক্ষন পর হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামতে লাগলো। আব্রাহাম-অয়ন দৌড়ে একটা coffee shop এর ভিতরে দিয়ে দাড়ালো। আব্রাহাম প্রায় কাক ভেজা হয়ে গেছে তাই সে তার কাপর ঝাড়তে বেস্ত

আব্রাহাম; ধুর ছাই এটা কি হলো,,

অয়ন; 😑😑😑😑

আব্রাহাম কাপর ঝাড়তে ঝাড়তে সামনে তাকালো
কিন্তু সামনে তাকাতেই যেন তার দুনিয়া থমকে গেলো,, চারপাশের কোন হুশ নেই তার সে এক পলকে সামনে তাকিয়ে আছে।। সামনে এক মেয়ে ক্রিম কালার চুড়িদার পরে বৃষ্টি তে ভিজছে,, ভিজছে বললে আসলে ভুল হবে সে বৃষ্টি কে উপভোগ করছে দুইহাত মেলে দিয়ে।। চুল গুলো ভিজে পানি পরছে, মুখে ছিটেফোঁটা পানি লেগে আছে, হাতে থাকা চুরি গুলো ভিজে গেছে।। আর মেয়েটি মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এ যেন এক নেশা লাগানো মূহুর্ত আর সেই নেশাতে আটকা পরে গেছে আব্রাহাম।। কোন ভাবেই নিজের চোখ সরাতে পারছে না সে।

অয়ন; ভাই ভাই
আব্রাহাম;………………………….
অয়ন; আরে এই ভাইইইইইইইই (চিল্লিয়ে)
আব্রাহাম; (অয়নের চিল্লানীতে হুশ ফিরে তার) আরে কি কি হয়েছে এভাবে ষাড়েঁর মতো করে কেন চিল্লাছিস 😤

অয়ন; কিইই আমি চিল্লাচ্ছি তাও ষাড়েঁর মতো। আর তুই কি তুই কি কখন থেকে এক দৃষ্টি তে কই তাকিয়ে রয়েছিস কি দেখছিস এতো।। কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস তুই?
আব্রাহাম; কই কই না কোথাও না তো। আচ্ছা কি হয়েছে বল
অয়ন; বলছি যে বৃষ্টি থেমে গেছে চল এবার যাওয়া যাক
আব্রাহাম; হুমম তাই চল

দুইজনেই চলে গেলো। কিন্তু আব্রাহাম ডুবে রয়েছে সেই মেয়েটির মায়া ভরা চেহারাতে,, এক আলাদা সৌন্দর্য এক আলাদা নেশা ছিলো তার মুখে যা থেকে আব্রাহাম কোন ভাবেই কেটে আসতে পারছে না।। এভাবেই সারা রাস্তা আব্রাহাম সেই মেয়েটির কথা ভেবে ভেবে এসেছে
একসময় বাড়িতে এসে পড়লো তারা,, তারপর সবাই সবার রুমে চলে গেল।
🌹
🌹
🌹
🌹
🌹
🌹
🌹………………………….

রাতে;;;;……
বিছানাতে শুধু এপাশ ওপাশ করছে আব্রাহাম। চোখে তার ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই। চোখে ভাসছে তো শুধু সেই বৃষ্টি ভেজা মেয়েটির মুখখানা৷ সেই মেয়েটি যে মূহুর্তের মধ্যেই আব্রাহাম কে গভীরভাবে আঘাত করে গিয়েছে।। মনের গহিনে আঁচড় কেটে গেছে,, ঘুম আসছে না কোন ভাবেই আব্রাহাম উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে, সিগারেট জালিয়ে সিগারেট টানতে লাগলো সে আর সেই মেয়েটির কথা ভাবতে লাগলো।। মেয়েটি চোখের পলকে এসে আব্রাহামের সারারাতের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে চলে গেছে। এভাবেই রাত কাটিয়ে দিলো আব্রাহাম

পরেরদিন সকালে🌞🌞🌞…………………………………..
🍁
🍁
🍁
🍁
🍁
🍁
🍁
🍁
🍁

চলবে ~~~~~~~~~~~

Gangstar In Love Part-02

0

#Gangstar In Love🖤🥀__ A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#Part;__02

🥀🥀🥀

আব্রাহাম আইরাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আর এদিকে আইরাত একাধারে কান্না করেই যাচ্ছে বেচারি অনেক ভয় পেয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে বলল

আব্রাহাম; কান্না থামাও জান,
আইরাত; (কান্না করেই যাচ্ছে)
আব্রাহাম; Baby girl, কান্না থামাতে বলেছি
আইরাত; (কান্না করছে তো করছেই)
আব্রাহাম; কি হলো কথা বললে কানে যায় না কান্না থামাতে বলছি না (রেগে চিল্লিয়ে)
আইরাত ভয় পেয়ে কান্না থামিয়ে দিলো

আব্রাহাম; Baby girl just 5 min সময় দিচ্ছি তোমাকে এর মধ্যে তারাতারি করে তৈরি হয়ে নাও,, আর যদি আমি ফিরে এসে দেখেছি যে এখনও তুমি রেডি হওনি তাহলে আমি তোমাকে নিজ হাতে রেডি করিয়ে দিতে বাধ্য হবো তাতে তোমার মত থাকুক আর নাই বা থাকুক I Don’t care Got it (এই বলে আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতের কপালে ছোট্ট একটা kiss দিয়ে চলে গেলো)

কিছুক্ষণ পর রুমে একটা মেয়ে প্রবেশ করলো মেয়েটির বয়স তেমন একটা হবে না ১৭-১৮ এমন হবে আইরাত মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো

আইরাত; কে তুমি?
রুবিনা (মেয়েটির নাম); ম্যাম আমি রুবিনা, স্যার আমাকে পাঠিয়েছে আপনাকে রেডি করানোর জন্য
আইরাত মনে মনে; আজব তো আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে তৈরি হতে পারবো না লোক লাগবে পাগল ছাগল মানুষ যত্তোসব
রুবিনা; ম্যাম, প্লিজ আপনি তারাতারি করে রেডি হয়ে নিন নইতো স্যার অনেক রেগে যাবেন
আইরাত মনে মনে; (কি মানুষ রে বাবা সবাই দেখছি এর লোকের ভয়ে ভীত হয়ে থাকে) হ্যাঁ হ্যাঁ চলো

আইরাত আর রুবিনা যাচ্ছে। আইরাত শুধু হা
করে পুরো বাড়ি দেখছে আসলে একে বাড়ি না বলে কোন এক রাজমহল বললে খুব বেশি একটা বেমানান হবে না পুরো বাড়ি জুড়ে শুধু রাজকীয় জিনিস পত্র বাড়িটাকে দেখেই বুঝা যায় যে এখানে যে থাকে সে খুবই শৌখিন প্রকৃতির। যেতে যেতে আইরাত একটি দরজা দেখতে পেল দরজাটি দেখে আইরাত ভ্রু কুচকালো এবং অবাক হয়ে রুবিনা কে জিজ্ঞাসা করলো

আইরাত; রুবিনা এইটা কিসের দরজা?
রুবিনা; ম্যাম এটা হচ্ছে বাড়ির পিছনের দরজা
আইরাতের পিছনের দরজার কথা শুনেই টনক নরলো
আইরাত; ওহ আচ্ছা, তো এখানে দিয়ে কেও যাতায়াত করে না বুঝি?
রুবিনা; ম্যাম, বেশি একটা প্রয়োজন ছাড়া কেউ এইদিক দিয়ে আসে না।

আইরাত আর রুবিনা একটি রুমের সামনে এসে দাড়াঁলো আইরাত রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো রুমটি অসম্ভব সুন্দর সম্পূর্ণ রুম সাদা রঙের তার উপর নানা ধরনের কারুকাজ করা রাজকীয় আসবাবপত্র দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়

রুবিনা; ম্যাম, এইদিকে।
আইরাত একটি ড্রেসের পেকেট নিয়ে Changing room এ ঢুকলো

আইরাত বসে বসে ভাবতে লাগলো যে এভাবে হাতের উপর হাত রেখে বসে থাকলে তো আর চলবে না তাকে এখান থেকে যে করেই হোক বের হতে হবে দরকার পরলে পালাতে হবে কিন্তু বের হতেই হবে তখনই হুট করে আইরাতের মাথায় একটি বুদ্ধি আসলো বুদ্ধি না আসলে শয়তানি বুদ্ধি। আইরাত তার আনা ড্রেসটি পানি দিয়ে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিলো তারপর রুমের দরজা হালকা খুলে মাথা বের করে রুবিনার উদ্দেশ্য বলল,,,,,,,,,,,

আইরাত; রুবিনা,রুবিনা
রুবিনা; জি ম্যাম বলুন
আইরাত; রুবিনা আসলে আমার জামাটা পুরোপুরি ভিজে গেছে আর আমি এটা পরতে পারবো না তুমি কি প্লিজ আমাকে অন্য আর একটা ড্রেয়া এনে দিবে!
রুবিনা; অবশ্যই ম্যাম, আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি আনছি
আইরাত; হুমমম……..

রুবিনা চলে গেলো, আইরাত ভাবতে লাগলো এইতো সুযোগ তাকে এখনই কিছু একটা করে এখান থেকে বের হতে হবে। আইরাত Changing room থেকে বেড়িয়ে এলো। আইরাতের মনে হলো বাড়ির সেই পিছনের দরজার কথা সে খুব সহজেই পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ আর বেশি দেরি না করে আইরাত বাড়ির পিছনে যেতে লাগলো। সেখানে গিয়েই দেখতে পেল বেশ বড়োসড়ো একটি দরজা। আইরাত খুব ভয় পাচ্ছে এক দোটানার মধ্যে পরে গেছে আইরাত যাবে কি যাবে না। আব্রাহাম যে Dangerous তাকে যদি একবার ধরতে পারে তাহলে কিয়ামত বাধিয়ে দিবে।

আইরাত; আইরু আইরু আইরু ধৌর্য ধর,, সাহস কর তুই পারবি তোকে পারতেই হবে নাহলে যে এই নরক থেমে বের হতে পারবি না তুই পারবি আইরু

খুব সাহস নিয়ে আইরাত কাপা কাপা হাতে দরজা খুলল, দরজা খুলে বেরিয়ে আসল,, বাড়ির আসে-পাশে তাকিয়ে ভালো মতো দেখে নিল,, না কাউকেই দেখা যাচ্ছে না এই সুযোগ

আইরাত কোন কিছুই না ভেবে দৌড় দিল, দৌড়াতে দৌড়াতে একটা সময় সে মেইন রাস্তায় এসে পড়ল হাপাতে লাগলো আইরাত। আইরাত তো ভয়ের চোটে আসে-পাশে না দেখেই পালিয়েছে কিন্তু এখন তো আর এক ঝামেলায় পড়তে হলো তাকে। এখানের ঠিক কোনকিছুই তো সে চিনে না

আইরাত; হায় আল্লাহ একি ঝামেলায় পড়লাম আমি তো কিছুই চিনি না এখানের ওই পাগল টা আমাকে কথায় তুলে এনেছে আমি বাড়ি যাবো( কান্না কান্না ভাব) নাহ থেমে পড়লে চলবে না একদমই।। আমাকে যেতে হবে নইতো ওই Psycho দেখে ফেললে আমি শেষ। ( এই বললে আইরাত আবার দৌড়ে যেতে লাগলো)

এইদিকে রুবিনা নতুন আরও একটি ড্রেস নিয়ে এসে দেখে যে রুমের দরজা খোলা পুরো রুমের কোথাও আইরাত নেই রুবিনা দৌড়ে বাড়ির পিছনে গেলো গিয়ে দেখলো যে বাড়ির পিছনের দরজা খোলা রুবিনার মাথায় আকাশ ভেংে পড়লো

রুবিনা; হায় আল্লাহ একি আইরাত ম্যাম তো পালিয়েছে স্যার যদি একবার জানতে পারে যে ম্যাম নেই তাহলে কেলেংকারী বাধিয়ে দিবে








আব্রাহাম;; ঠাসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসস (সামনে থাকা কাচের টেবিল টা জোড়ে এক আছাড় দিয়ে,, আব্রাহাম পুরোই হিংস্র হয়ে গিয়েছে পাগলের মতো আচরণ করতে লাগলো সে)

আব্রাহাম; Useless fellow, সব সব কটা অপদার্থ এতো গুলা bodyguard থাকা সর্তেও বাচ্চা একটি মেয়ে এখান থেকে পালালো কিভাবে বলো Speak up damn it ( আরও একটি কাচের টেবিলে জোড়ে লাথি দিয়ে)

আব্রাহামের ঠিক সামনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সব Bodyguard এবং রুবিনা আব্রাহামের ভয়ে সবাই চুপসে গেছে

রুবিনা; সসস্যার, মেডাম কিভাবে কখন বের হলো কিছুই বুঝতে পারি নি আম মেডাম কে রেখে ড্রেস আনতে গিয়েছিলাম। এসেই দেখি মেডাম ঘরে নেই এবং বাড়ির পিছনের দরজা খোলা

আব্রাহাম; (কিছুটা চিন্তিত হয়ে) আইরাত বাড়ির পিছনের দরজার কথা কিভাবে জানলো কেননা আইরাত এই প্রথম এই বাড়িতে এসেছে তাহলে তো ওর সেই দরজার বেপার এ কিছু জানার কথা না

রুবিনা; স্যার, আআআসলে আমি যখন মেডামকে নিয়ে Changing room এ যাচ্ছিলাম তখন মেডাম সেই দরজাটা দেখে ফেলে তখন আমি বলি যে মেডাম ওটা বাড়ির পিছনের দরজা,, Really very sorry sir আমি বুঝতে পারি নি যে মেডাম এমন কিছু করে ফেলবে sorry sir

আব্রাহামের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু তবুও সে কিছু বলল না পাশে থাকা Gun টা হাতে নিয়ে শূন্যে শুলি করে হনহন করে চলে গেলো

আব্রাহাম; রাশেদ( Bodyguard),, গাড়ি নিয়ে জলদি বের হও। আর এক মিনিট ও আমি দেরি করতে চাই না। আমি জানি আইরাত বেশি দূরে জেতে পারিনি,, কারণ সে এখানের কোন কিছুই তেমন ভালো করে চিনে না।। আমার আইরাতকে চাই যে কোন মূল্যে At any cost বের হও Fast……

এই বলে আব্রাহাম কালো রঙের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো,, আব্রাহামের রাগে সারাশরীর কাপছে সে নিজেও জানে না যে সে আইরাত কে একবার পেলে কি করবে তার থেকে দূরে যাওয়ার ভাবনা মাথায় কি করে আসলো তার,,

আব্রাহাম; Baby girl, তোমাকে একবার পাই আমার কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সাহস একদম সারাজীবনের জন্য ঘুচিয়ে দিবো Just wait and watch…….

আর এইদিকে আইরাত দৌড়াতে দৌড়াতে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এবার আস্তে আস্তে হাটটে লাগলো কিছুদুর যেতেই কিছু বখাটে ছেলে আইরাত কে লেখলো

১ম ছেলে; মামা, দেখ দিন দুপুরে সুন্দরী পরি
২য় ছেলে; ঠিক বলেছিস একে পেলে ভাগ্য খুলে জাব একদম
৩য় ছেলে; চল যাওয়া যাক,,
৪র্থ ছেলে; হ্যাঁ হ্যাঁ চোল।

এই বলে বখাটে ছেলে গুলো আইরাতের দিকে এগুতে লাগলো আইরাত তা খেয়াল করে ভয় পেয়ে দ্রুত হাটটে লাগলো

১ম ছেলে; কি গো ফুল্টুসি, একবার এদিকে আসো না একা একা কথায় যাচ্ছো, দরকার পড়লে আমরা এগিয়ে দিই

২য় ছেলে; আরে আরে এভাবে চলে গেলে হয় জানু আমাদের একা ফেলে জেও না

৩য় ছেলে; (এবার আইরাতের হাত ধরে ফেললো) ডারলিং শুন না চলো আমাদের সাথে

৪র্থ ছেলে; চলে এস বাবু

আরো নানা ধরনের বাজে বাজে কথা তারা আইরাতকে বলতে লাগলো। আইরাত তো ভয়ে কান্না করেই দিয়েছে

আইরাত; প্লিজ আমাকে যেতে দিন,, আমি আপনাদের বোনের মতো প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন,, যেতে দিন আমাকে (কান্না করতে করতে)

কিন্তু তারা আইরাতকে ছেড়ে দিতে নারাজ।। তাদের মধ্যে থেকে একটি ছেলে যেই না আইরাতের ওরনার দিকে হাত বাড়াতে যাবে ঠিক তখনই আব্রাহাম এসে ছেলেটির হাত ধরে ফেললো এবং এক ঘুষি দিলো। ঘুষি টা এতোই জোরে ছিল যে ছেলেটির নাক থেকে মূহুর্তেই গলগল করে রক্ত বের হয়ে লাগলো।। আব্রাহাম হিংস্র বাঘ হয়ে গিয়েছে ফর্সা মুখখানা মূহুর্তের মধ্যেই লাল বর্ণ ধারন করে ফেলেছে হাত শক্ত করে মুঠিবদ্ধ করে ফেললো,, চোখ দিয়ে যেন রক্ত ঝরছে আগুন বের হচ্ছে আর সেই আগুনেই সবাইকে পুড়িয়ে দিবে।। আব্রাহাম ছেলে গুলোকে বেধরক ভাবে পেটাতে লাগলো। প্রথম ছেলেটিকে ইচ্ছা মতো লাথি ঘুষি দিতে লাগলো মার‍তে মারতে একদম আধা মরা করে দিলো,, ২য় ছেলেটির নাক বরাবর ঘুষি দিলো জার ফলে ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো আব্রাহাম ছেলেটির মুখ রাস্তায় ঘষে নিয়ে যেতে লাগলো যার জন্য ছেলেটির মুখ থেকে একদমই চামড়া উঠে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে গেল ৩য় ছেলেটি অথাৎ যে ছেলেটি আইরাতের ওরনাতে হাত দিয়েছিলো আব্রাহাম সেই ছেলের হাত ভেংে দিলো ৪র্থ ছেলেটিকে লাথি দিতে দিতে মুখে থেকে রক্ত বের করে ফেললো আব্রাহামের রাগ যেন থামার নামই নিচ্ছে না সব কিছু ধ্বংস করে দিতে লাগলো সে।।। আইরাত তো ভয়ে একদম পাথর হয়ে গিয়েছে কানতে কানতে হিচকি উঠে গিয়েছে আইরাতের।।

আব্রাহাম; জানোয়ারের বাচ্চারা তদের সাহস হয় কি করে আমার কলিজার দিকে চোখ তুলে তাকানোর এক একটাকে জানে মেরে ফেলবো,, তোরা তোরা আমার আইরাতের দিকে আমার জানের দিকে নজর দিয়েছিস তদেরকে মেরে আমি তোদের মাংস রাস্তায় কুকুরদের খাউয়াব 😡😡😠😠

ছেলেগুলো প্রায় মরেই গেছে তখন আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকালো আব্রাহামের রক্তবর্ণ চোখ দেখে কলিজা কেপে উঠলো আইরাতের আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো গাড়ির কাছে

আব্রাহাম; রাশেদ, এই জানোয়ারদের এখান থেকে নিয়ে দূরে কোন নর্দমায় ফেলে দিয়ে আসো আর এই জায়গা দেখে এমন মনে হয় যেন এখানে কিছুই হই নি Is that clear?!
রাশেদ; yes sir

আব্রাহাম আইরাতকে জোড় করে নিয়ে গড়িতে বাসালো আব্রাহাম পারছে না রাগে এখনই এখানে আইরাতকে কিছু করে দিতে

আইরাত; প্লিজ প্লিজ ছাড়ুন আমাকে আমি বাড়ি জাবো আমি থাকতে চাই না আপনার সাথে প্লিজ হাত ছাড়ুন আমি ব্যাথা পাচ্ছি

কিন্তু আব্রাহাম তো নাছোড়বান্ধা ছাড়ার কোন নামই নেই তার। আব্রাহাম এক ধমক দিয়ে আইরাতকে চুপ করে বসিয়ে দিলো। গাড়ি একসময় একটি অনেক বড়ো বাংলোর সামনে এসে দাড়ালো। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে আইরাতকে টেনে গাড়ি থেকে বের করলো।। টানতে টানতে আইরাতকে একটি রুমে এনে ছুড়ে মারলো আব্রাহাম জার ফলে আইরাতের হাতে থাকা চুড়ি কয়েকটা ভেংে হাত কেটে গেলো ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে গেলো আইরাতের। আব্রাহাম পাশের ফুলদানি নিয়ে ফ্লোরে দিল এক আছাড়।। মূহুর্তেই ফুলদানি ভেংে চুরমার হয়ে গেলো।। আইরাত আৎকে উঠলো

আব্রাহাম; (আব্রাহাম ছুটে এসে আইরাতের চুলের মুঠি ধরে বললো) আমার কাছ থেকে দূরে পালানোর খুব শোখ তোর তাই না,,দেখলি তো কি হলো। আজ যদি আমি ঠিক সময়ে না আসতাম তাহলে কি হলো ভাবতে পারছিস তুই (প্রচুর রেগে+ চিল্লিয়ে) কেন বুঝিস না যে তকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি কেন কাছে থাকতে চাস না তুই আমার বল বল

আইরাত কোন কথা বলছে না শুধু কান্না করে যাচ্ছে একসময় আইরাত বলে উঠলো

আইরাত; 😭😭😭 আআআমি আমি ভালোবাসি না আপনাকে আমি মুক্তি চাই আমাকে এই নিরক থেকে যেতে দিন দয়া করে আমি ভালোবাসি নন

আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না আইরাত আব্রাহাম তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো,, আইরাতের যেন দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো চোখ দিয়ে অঝরে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে লাগলো তার একটা সময় আব্রাহামের Kiss গুলো কামরে পরিনত হতে লাগলো অনেক চেষ্টা করেও আইরাত ছাড়া পেল না আব্রাহাম উন্মাদের মতো কামড়িয়ে যাচ্ছে আইরাতের ঠোঁট জোড়ায়,, ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁট গুলো।। অতিরিক্ত ভয়ের ফলে আইরাত এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। কিছুক্ষন পর আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দাড়ালো এবং বুঝতে পারলো যে আইরাত অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে আব্রাহাম আইরাতের পাশেই শুয়ে পড়লো এবং আইরাতের মিস্টি মায়াভরা চেহারার দিকে অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো

আব্রাহাম; কেন জান কেন বুঝ না তুমি আমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি কেন বুঝ না তুমি তুমি ছাড়া যে আমার পুরো পৃথীবি অন্ধকার তুমিই আমার সব কিছু তুমিই আমার অস্তিত্ব তোমাকে আঘাতও দিব আমি আবার আমিই সেই আঘাতে মলম লাগিয়ে দিব,, তুমি আমার শুধুই আমার,, তুমি আমার হলে আমার আর আমার না হলে তুমি কারোর না (কিছুটা রেগে কথা টা বলল আব্রাহাম) I love you baby i need you badly আব্রাহাম আবারও চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিতে লাগলো আইরাত কে 😍😍😍😍😘😘😘😘😘😘😘😘💋💋💋💋💋💋💋💋💋💋💋💋💋💋😘😘😍❤️❤️🌹🌹

এবার আব্রাহাম ডুব দিলো সেই অতীতে এবং ভাবতে লাগলো

চলবে~~~~~~~❣️

Gangstar in love Part-01

0

#Gangstar in love🖤🥀___A Psycho Love Story””
#writer; Tamanna Islam
#Part __ 01

অন্ধকার ঘরে হাত-পা-চোখ বাধাঁ অবস্থায় পড়ে আছে আইরাত কান্না ভয় সবকিছু একসাথে জড়ো করে রেখেছে তাকে প্রানপণে চেষ্টা করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য,, হাত-পা বাধাঁ থাকতে থাকতে এখন ব্যাথা করছে তার। কিন্তু এক পর্যায়ে ছুটাছুটি করে যখন বুঝলো কোন লাভ নেই তখন শান্ত হয়ে বসে পড়লো। হঠাৎ কারো দরজা খোলার শব্দ কানে এলো আইরাতের ধীরে ধীরে কেউ একজন তার কাছে আসতে লাগলো ভয়ে আইরাত এককোণে জড়োসড়ো হয়ে চেপে গেলো লোকটি এসেই আগে আইরাতের বাধঁন খুলে দিতে লাগলো। পিটপিটিয়ে চোখ খুললো আইরাত সামনে থাকা লোকটি আইরাতকে দেখে এক বাঁকা হাসি দিলো। আইরাত সামনে তাকিয়ে দেখলো লম্বাচওড়া কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু অন্ধকার ঘর আর হুডি পড়ে থাকার ফলে স্পষ্ট তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না,, কথা যেন আইরাতের মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না সব কথা একসাথে গলায় এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তবুও কিছুটা সাহস জোগাড় করে আইরাত সামনে থাকা লোকটি কে জিজ্ঞাসা করলো,,,,,,

আইরাত; ককককে আআআআপনি?

……………………………………

আইরাত; কককি হলো কথা ববববলছেন ননা কেন কককে আপনি কি চাই আপনার আআর কেনোই ববা আমাকে এখানে তুতুতুলে এনেছেন পপ্লিজ আআমাকে যযযেতে দিন🥺 (এই বলে আইরাত দৌড়ে সামনে যেতে নিলেই লোকটি খোপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেলে,,একটানে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে নেয়,,আকস্মিক এমন কান্ডে আইরাত একদমই অবাক হয়ে গেলো, ছাড়া পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেও ছাড়া পেলো না সেই বিশালদেহির সাথে পেড়ে ওঠার জো তার নেই,, আইরাতের চোখ দিলে অনবরত পানি ঝড়ছে বেশ কিছুক্ষন পর লোকটি আইরাতকে ছেড়ে দিলো ছাড়া পেয়ে আইরাত বেশ দূরে চলে গেল হাপাতে লাগলো) আইরাত এবার চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,,

আইরাত; অসভ্য লোক কোথাকার, কে আপনি কেন এনেছেন আমাকে এখানে যেতে দিন প্লিজ
এবার লোকটি হুট করেই আইরাতের সামনে এসে পড়লো এবং কানের কাছে আস্তে করে বলতে লাগলো

লোকটি; Baby Girl, এতো ভয় পাচ্ছো কেন বলতো এতো ভয় পেলে তো আমাদের Crazy love story শুরু হওয়ার আগেই The end হয়ে যাবে আর আমি অসভ্য হাহাহা অসভ্যের তো কিছু করলামই না আরও অনেক অসভ্যতামি সহ্য করতে হবে তোমাকে এই অসভ্যের আর যদি কথা হয় আমি কি চাই তবে বলবো “তোমাকে, শুধুই তোমাকে চাই আমার” বড্ড বেশিই যে ভালোবাসি তোমাকে “” এবার লোকটি আইরাতে কে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দুইহাত প্রসারিত করে বলতে লাগলো

“Baby Girl, এটা আমার #আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর রাজত্ব আর তুমি এই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর বন্দিনী এখানে তোমাকে কেউ ক্ষতি করা তো দূরে থাক চোখ তুলে তাকাতেও পারবে না কারন তাকে তাকানোর সুযোগ টাই আমি দিবো না তার আগেই তাকে আমি দুনিয়া থেকে বিদায় পরেকালের টিকিট ধরিয়ে দিবো আর কেও তোমাকে একটি ফুলের টোকা পর্যন্ত দিতে পারবে না তোমাকে যা করার আমি করবো তোমাকে আঘাতও করবো আমি, কস্টও দিবো আমি, আর ভালোবাসবো ও এই আমি তুমি এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে অনেক দূরে দূরে থেকেছি আর তুমিও অনেক পালিয়ে বেড়িয়েছো আমার কাছ থেকে আর এক মূহুর্তের জন্যেও আমি পারবো না জান❣️”” আমি খাবার আর কাপড় আনছি খেয়ে রেডি হয়ে নাও আমরা এখান থেকে বের হবো।। এই বলে আব্রাহাম চলে যেতে নিলে কিছুদূর যেতেই আবার থেমে পড়ে হালকা পিছনে ফিরে আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে “এখন কি Hug তুমি করবে নাকি আমি করবো আমি যদি করি তাহলে কিন্তু Hug এর সাথে সাথে আরও অনেক কিছু করে দিবো sooo,,, (এই বলে বাকাঁ হাসি দিল) আইরাত ভাবলো প্রথম দেখাতেই যা করলো এখন যদি আবার আসে না জানি কি কি করবে এই ভেবে আইরাত ধীরে ধীরে আসতে লাগলো,, আব্রাহাম তার পিছনে আইরাতের উপস্থিতি টের পেয়ে একটানে আইরাতের কমোর ধরে কাছে এনে শক্তভাবে জোড়িয়ে ধরলো আর আইরাতের তো প্রানপাখি যায় যায় অবস্থা,, কিছুক্ষন পর আব্রাহাম চলে গেলো। (( আইরাত ধোপ করে নিচে বসে পড়লো এবং ভাবতে লাগলো যে কি থেকে কি হয়ে গেল বেশ ভালোই তো নিজের মতো চলছিলো সে হুট করেই ঝড়ের গতিতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল,, রোজকার মতোই বাবা-মাকে বিদায় দিয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলো আইরাত কিন্তু কোন রিক্সা না পাওয়ার ফলে হেটে হেটেই যেতে লাগলো কিছুদূর গেতেই কোথাথেকে একটা গাঢ় কালো রঙের গাড়ি সামনে এসে থামলো এবং হুডি পরা একজন গাড়ি থেকে নেমে আইরাতের সামনে কি যেন একটা স্প্রে করলো তারপর আর কিছুই খেয়াল নেই তার আর যখন আইরাতের জ্ঞান ফরলো তখন সে নিজেকে এক অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করলো))
.
.
.
.
.
.
.
এবার আসি পরিচয়ে ( আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আমেরিকার নাম করা টপ বিজনেসমেনদের মধ্যে একজন দেশেও তার বিজনেস রয়েছে এতো দিন তা বাবা দেখাশুনা করে আসছিলেন কিন্ত বাবা এখন অবসর হতে চায়,, আব্রাহাম সাথে আন্ডারওয়াল্ডের মাফিয়াও কিন্তু সেটা সবার অজানা বেশকিছুদিন আগেই দেশে ফিরেছে আব্রাহাম, আব্রাহাম দেখতে কোন হলিউডের হিরো থেকে কম না লম্বা ৬’২, জিম করা বডি, নীলাভ চোখ, চুল গুলো হালকা বড়ো বড়ো উপরে স্টাইল করে কাটা,, সরু নাক-ঠোঁট, আর সাথে চাপ দাড়ি মেয়েরা আব্রাহামের এক ইশারাতে মরতেও রাজি,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,আর নুজাইফা বিনতে আইরাত দেখতে মাশাআল্লাহ পুরাই পুতুল হাইট ৫’৫ চোখ গুলা বড়ো বড়ো চিকন নাক পুরু ঠোঁট তবে তার ঠোঁটের ঠিক নিচে একটা ছোট তিল রয়েছে যা তার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ,, চুল গুলো মিডিয়াম সাইজের না বেশি বড়ো না বেশি ছোট আইরাত এবার ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী বাবা মার একমাত্র মেয়ে আদরের দুলালি সারাক্ষন বাসা মাথায় করে রাখে অনেক দুষ্টমি করে,, চুপ করে থাকার মতো মেয়ে আইরাত না))





কিছুক্ষন পর আব্রাহাম এক হাতে খাবার আর এক হাতে বেশ কিছু ড্রেসের পেকেট নিয়ে ফিরে এলো এসে দেখলো আইরাত হতাশভাবে বসে রয়েছে আব্রাহাম আইরাতকে দেখে হালকা ভ্রু কুচকালো এবং সামনে গিয়ে বললো

আব্রাহাম; Hay Baby girl, what happened এভাবে বসে রয়েছ কেন এখন নাও তারাতারি করে খাবার গুলো খেয়ে যে কোন একটা ড্রেস পরে ফেলো (এই বলে আব্রাহাম আইরাতেএ মুখের সামনে খাবার ধরলো) আইরাতের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আর এই দিকে এই ছেলে আইরাত ঠাস করে আব্রাহামের হাত থেকে খাবারের প্লেটটা ফেলে দিলো এবং চিল্লিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আইরাত; খাবো না আমি খাবো না আপনাকে সহ্য হচ্ছে না আমার। আমি বাড়ি যাবো সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে শুনেছেন আপনি থাকবো না আমি এখানে আমি বাড়িতে ফিরে যাবো

ব্যাস এইটুকুই আব্রাহামের মাথা গরম করার জন্য যথেষ্ট ছিলো মাথার রগগুলো ফুলে উঠলো চোখ দিয়ে যেন লাভা বের হচ্ছে আব্রাহামের এমন লুক দেখে আইরাত আঁতকে উঠলো,, আব্রাহাম এক ঝটকায় উঠে এসে আইরাতের চুলের মুঠি ধরলো এবং কাছে এসে বললো
আব্রাহাম; কি বললি তুই আর একবার বল আবার যদি আমি তর এই মুখে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনেছি তো জানে মেরে ফেলবো তোকে তুই আমার শুধুই আমার আমার থেকে কোত্থাও যেতে পারবি না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোকে আমার কাছেই থাকতে হবে আমাকে সহ্য করতে হবে।। আইরাত ব্যাথায় কাতরাচ্ছে চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্ত আব্রাহাম ছাড়ঁে না আইরাত এক সময় ব্যাথায় কান্না করে দিলো আইরাতের চোখের পানি দেখে আব্রাহামের হুশ ফিরলো এবং তারাতারি করে আইরাতকে ছেড়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আইরাত কান্না করেই যাচ্ছে

আব্রাহাম; কেন জান কেন আমাকে রাগিয়ে দাও বলতো আমি আমার রাগ সামলাতে পারিনা কেন বুঝতেছ না তুমি আমাকে প্লিজ আমাকে আর রাগিয়ে দিও না নইতো কিছু না কিছু উলটা-পাল্টা একটা করে ফেলবো I love you baby girl i love you more then everything 😘😘😘,,,,,,,,,,,,,,
*
*
*
*
*
*
*
চলবে🌹🌹🌹🌹🌹

অপ্রিয় সে পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

1

#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্ব:২০

ফোন হাতে নিয়ে রূপমের অসংখ্য কল দেখে ঘাবড়ে গেলো রিমু। কোনো অঘটন ঘটেছে ভেবে সাথেসাথে কল ব্যাক করলো। এদিকে সারারাত জেগে কান্নাকাটি করে ভোরের দিকে চোখ লেগে এসেছে রূপমের। চার পাঁচটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে শান্তি মতো ঘুমাচ্ছে এখন।
রায়হান খান কোনো একটা দরকারে রূপমকে ডাকতে এসে বেশ কয়েকবার দরজায় সজোরে ধাক্কালো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ডাকাডাকির পরও যখন রূপম দরজা খুললো না তখনই অজানা আতঙ্ক ভর করলো রায়হান খানের মনে। রূপম বরাবরই অনেক সময়ানুবর্তী একটা ছেলে। সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠা তার অন্যতম একটা অভ্যেস। রূপমের ঘুম অনেক পাতলা। একটু শব্দেই ঘুম ভেঙে যায় তার। এতবেলা অবধি ঘুম তারউপর এতবার ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় রায়হান খানের মনে খটকা লাগলো। তিনি মোটামুটি সবাইকেই জড়ো করলেন।

সবার মধ্যে একপ্রকার গুঞ্জন চলছে। রিমুর বাবা মা দুজনের কারো মুখের দিকেই তাকানো যাচ্ছে না৷ শুধুমাত্র তাদের দোষে তাদের মেয়ে আজ ঘরছাড়া। আদরের ছেলেটাও কেমন ঝিমিয়ে গিয়েছে। মা বাবা হিসেবে তারা চরম ব্যার্থ। বিষয়টা হারে হারে টের পাচ্ছেন তারা।

রূপমের দরজায় ধাক্কাধাক্কি, চিল্লাচিল্লি করেও যখন লাভ হলো না সবাই একপ্রকার হাল ছেড়ে দিলো। সবাই মিলে দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিলো।

এদিকে রূপমের নাম্বারে ফোন দিয়ে যাচ্ছে রিমু। কল হচ্ছে কিন্তু রেসপন্স নেই। রিমুও খানিকটা ঘাবড়ে গেলো। বাড়ির কেউও ফোন ধরছে না। আহানাকে বলে রিমু বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। কিছুক্ষণ পরে পৌঁছানোর পরে সবার একটা কান্নার রোল কানে এলো রিমুর। বুকটা ধক করে উঠলো তার। রূপমের ঘর থেকে আওয়াজ আসছে দেখে সে ছুট লাগালো সেদিকে। কী বিদ্ধস্ত অবস্থা সবকিছুর। দরজা ভাঙা। রূপমকে ঘিরে সবার কান্নাকাটি। রিমু পেছন থেকে ডাক দিলো সবাইকে। রিমুকে দেখে রায়হান খান ছুটে আসলেন তার কাছে। এসেই শক্ত করে হাত চেপে ধরলেন।

মা আমার ছেলেটা অনেক ভালোবাসে তোকে। নিজের অনিচ্ছায় অনেক ভুল করেছে সে। মাফ করে দে মা। আমরাও তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি। মাফ করে দে। মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়। আমরাও তার উর্ধ্বে নই।

রিমু জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো রূপম ভাইয়ের কী হয়েছে?

রূপম ঘুমের ঔষধ খেয়েছে কয়েকটা। বেড সাইটে খালি পাতা দেখলাম ঔষধের।

ওহ্ আচ্ছা বলে রিমু বাড়ি থেকে বের হলো। সবাই কয়েকবার ডাকলে বললো, চার পাঁচটা ঔষধ খেলে কেউ মরে না। তার খেয়াল রাখুন। আর অহেতুক জ্বালাতন বন্ধ করুন আমাকে।
আপনাদের ছেলে আমার অপ্রিয়, অপ্রিয় এবং শুধুই অপ্রিয়।

রাস্তার ধার দিয়ে আনমনে হেঁটে চলছে রিমু। তার এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এ কোন রূপমকে দেখছে রিমু? রূপমের এসব পাগলামি রিমুকে দূর্বল করে দিচ্ছে। তার স্থানে যেকোনো মেয়ে হলেই হয়তো দূর্বল হত। কিন্তু এখন রূপমের কাছে ফিরলে তার স্থানটা কেমন হবে? তার আত্মসম্মান ইগো এসবের কী হবে? ইগো বিসর্জন দিয়ে সে কী ফিরবে রূপমের কাছে? ভালোবাসা দিয়ে সুন্দর একটা সংসার গড়বে? না কি দূরেই থেকে যাবে রূপমের?অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে রাস্তাতেই জ্ঞান হারালো রিমু।

হুট করে ঘুম ভেঙে যায় রূপমের। মাথার উপরে কান্নাকাটির শব্দে তার ভীষণ খারাপ লাগা শুরু করলো। একই জীবনে প্রথমবার এতগুলো ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় রূপমের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠছে। মাথাটা অসহ্যরকম ভারী হয়ে আছে আর চোখদুটো অসম্ভব রকমের লাল। তাকে জাগতে দেখেই সবাই ব্যাস্ত হয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করলো। রূপমের ভীষণ খারাপ লাগায় হাতের ইশারায় সবাইকে চুপ করতে বলে লেবু পানি চাইলো। খানিক ভালো বোধ করতেই রূপম মুখ খুললো।

আমি রিমুকে অসম্ভব ভালোবাসি৷ তাকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক আমার জন্য। আমার জীবনে তাকে ভীষণ করে চাই। কাল রাতে অনেক বার ফোন দিয়েছিলাম তাকে। সে রিসিভ করে নি৷ আমার ভীষণ খারাপ লাগছিলো। ঘুম আসছিলো না। কিছুদিন আগে ডক্টরের কাছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে যাওয়ার তিনি কিছু ঘুমের ঔষধ সাজেস্ট করেন। যেগুলো পরবর্তীতে খাওয়া হয়নি আমার। তাই আজকে সেগুলো বের করে খেয়েছি ঘুমের জন্য। এখন নিজের উপরই অনেক রাগ লাগছে৷ কেন করলাম এরকম ফালতু কাজ।

সবটা শুনে রায়হান খান ধরা গলায় বললেন, “রিমু এসেছিলো বাবা! কিন্তু তারপর সে চলে গেলো। ওকে দেখে স্পষ্ট বুঝেছি অন্তত যাইহোক সে আর ফিরবে না তোর জীবনে। স্বাভাবিক হয়ে যা বাবা। তোকে এভাবে দেখতে মোটেই ভালো লাগছে না আমাদের। ”

রিমু এসেছিলো কথাটা শুনে রূপমের মুখে যে হাসির রেখা ফুটে উঠেছিলো পরের বাক্য শুনেই কর্পূরের মতো মিলিয়ে গেলো সেটা।

রূপমের ভগ্ন দশা সবাইকেই পীড়া দিচ্ছে সমানভাবে। তবে কারোরই আজ কিছুই করার নেই। শুধুমাত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া।

সেদিনের পর অতিবাহিত হয়ে তিনমাস বারো দিন। রূপম সবকিছু ভুলে গিয়ে পাগলের মতো পড়ে আছে রিমুর পেছনে। এদিকে রিমুর পারছেনা রূপমের ভালোবাসা থেকে পালিয়ে বাঁচতে। যখনই ভাবছে রূপমের কাছে সে আসবে ঠিক তখনই অতীতের কথাগুলো তাকে বিরত রাখছে।

আজ তেমনই এক দিন। রিমু টেবিলে বইখাতা রেখে চেয়ারে বসে মনযোগ দিয়ে বই পড়ছে। সামনেই তার মিডটার্ম। তারপর ফাইনাল দিয়ে লেখাপড়ার পর্ব চুকিয়ে একটা চাকরীর ব্যাবস্থা করতে পারলেই হলো। রিমু টিউশানি করানো শুরু করেছে। চারটা বাচ্চাকে পড়িয়ে যা পায় তাতে তার মাস সুন্দর চলে যায়। আহানার সাথেই থাকে সে। সাদিয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। বাকি বন্ধুদের সাথে সব ঠিক ঠাক।

সাদিয়া ঋষি চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এখন ইউকে তে আছে। হানিমুন পর্ব বলা চলে। ঋষি নিজে এসে রিমুকে দাওয়াত দিয়েছিলো। কিন্তু যায়নি রিমু।

রূপমের নম্বর থেকে ফোন আসছে রিমুর ফোনে। রিমু ফোন সাইলেন্ট করে বইয়ে মনযোগ দিলো। দীর্ঘ দু-ঘন্টা পরে বই থেকে মুখ তুলে ফোন হাতে নিলো সে। রূপম তখনও ফোন দিয়েই যাচ্ছে। একটা মানুষের এতো ধৈর্য হয় কীভাবে সেটাই মাথায় আসেনা রিমুর। এ কয়েকমাসে রূপমের সম্পূর্ণ আলাদা রূপ দেখেছে সে। রিমু না পারতে ফোন ধরলো। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি। নেটওয়ার্ক সমস্যা। রিমু বাজে নেটওয়ার্কের মধ্যে থেকেই রূপমের কথা শুনতে পেলো।

এই রিমু! কোথায় রে তুই? একটু বের হবি? তোকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে আমার। চিন্তা করিসনা তোকে ভিজতে হবে না। আমি গাড়ি নিয়েই বাইরে আছি। তুই শুধু দরজা পর্যন্ত বের হ। আজকে বুকটা কেমন ফাঁকাফাঁকা লাগছে রে। তোকে দেখার জন্য মস্তিষ্কের নিউরনে আন্দোলন চলছে। হৃদপিণ্ডটা এতো জোরে জোরে বিট করছে কেন বলতো? মনে হচ্ছে ফেটেই যাবে। আমার সারা বুকে একপ্রকার শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা তোকে দেখার পরই মিটবে। তুই একবার আয় লক্ষ্মীটি।

রিমু বরাবরের মতোই পাত্তা দিলোনা রূপমের কথাকে। ততক্ষনে তারও একপ্রকার শূন্য শূন্য লাগছে। রূপমকে আর ফেরাবে না সে। আপন করে নেবে এবার। রূপম শুধু আর একটিবার বলুক।

কিন্তু রূপম এবার আর তার কাছে আসতে বললো না। কিংবা একবারও বললো না দেখা দিতে।

রিমু রে! আমিও তো মানুষ বল? আমারো তো অনুভূতি আছে। বুঝলাম তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু ভালোও তো বাসি। কেন জানি আজকে ভীষণ অদ্ভুত লাগছে। মনে হচ্ছে তোকে দেখতে না পারার তীব্র হাহাকার বুকে পুষেই তোর থেকে অনেক দূরে চলে যেতে হবে। আমার কেন এরকম মনে হচ্ছে বলতো? তোকে গ্রহণ করতে হবে না আমাকে। কিন্তু আমি সবসময় তোর কাছেই থাকতে চাই। তোর থেকে দূরে গিয়ে আমি ভালো থাকবো না রে৷ নিজের মনকে বুঝাবো তুই কাছেই আছিস আমার। আমি তোকে জ্বালাবো না আর। আগের মতো হয়ে যাবো। তারপরও এসব ভালো লাগছে না আমার। কেমন একটা অদ্ভুত বাজে অনুভূতি আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে। আমি যাই রে। ভালো থাকিস। সাবধানে থাকিস।

রিমুর বুকটা সমানে মোচড় দিয়ে উঠছে। রূপম এভাবে কেন বললো? এভাবে তো বলেনা কখনো। রিমু প্রতিত্তোর করার সুযোগ পেলো না। রূপম ফোন কেটে দিয়েছে। পাল্টা ফোন দিলোনা রিমু। কাল সে নিজে যাবে রূপমের কাছে। সবকিছু মিটিয়ে তাকে আপন করে নেবে।

সকাল ৮ টা। সারাদেশের পত্র পত্রিকায় ঝড় উঠেছে। দেশের বিশিষ্ট গায়ক রূপম খান খুন হয়েছেন৷ মাঝরাস্তায় কেউ তাঁর গাড়ি থামিয়ে ২৯ টি ছুরি চালিয়েছে তার বুকে। বৃষ্টির পানিতে ভিজেছেন তিনি সারারাত। দেশের মন্ত্রী, মিনিস্টার সবাই শোক প্রকাশ করেছেন। জরুরি বিভাগ গঠন করা হয়েছে খুনিদের সম্পর্কে জানার জন্য। সারাদেশে এখন উত্তাল। রূপম খানের ফ্যান ফলোয়ার, আত্মীয়, স্বজন সবাই পাগলের মতো কাঁদছে। কেউ কাউকে স্বান্তনা দেওয়ার অবস্থায় নেই।

রিমুর ঘুম ভাঙে বেলা বারোটায়। আহানা তার দেশের বাড়িতে যাওয়ায় সে এখন একা। সারারাত কারেন্ট না থাকায় রিমুর ফোনও বন্ধ রয়েছে। কারেন্ট এসেছে এখন। রিমু ফোনটা চার্জে দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে টিভির সামনে বসলো। আজ সে কীভাবে সাজবে সেই চিন্তা করছে৷ রূপমের কাছে যেতে হবে না তার? টিভি অন করতেই একটা খবরের চ্যানেলে চোখ আটকে গেলো তার। হাতে থাকা গরম চায়ের কাপটা থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে তার পায়ে পড়ে গেলো। তবে গরম চা পায়ে পড়ায় তার কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। সে এখন অনুভূতিহীন স্তব্ধ পাথরের ন্যায় আছে। কী বলছে এরা? রূপম মারা গিয়েছে? কেউ তাকে খুন করেছে? রূপম আর এই পৃথিবীতে নেই? তাহলে রিমু কার জন্য আজ সাজবে? নিজের মনকে এতো বুঝিয়ে কী লাভ হলো? কার সাথে ভালোবাসার সংসার গড়বে রিমু?

রিমুর বাসার কলিংবেল বেজেই চলেছে৷ কোনো রকমে টলতে টলতে রিমু দরজা খুললো। সাজ্জাদ আহানা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো রিমুকে৷ তারাও এতদিনে রিমুর সাথে হওয়া সব ঘটনার স্বাক্ষী। রিমু কাল দুজনকেই জানিয়েছে আজ তার প্ল্যানের কথা।

রিমু কাঁদছে না। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না। সাদিয়া সাজ্জাদের ফোনে ফোন করেই ডুকরে কেঁদে উঠলো৷ সে রিমু রূপমের সব খোঁজখবর নিতো৷ রূপমের সাথে তো ভাই বোনের এক অসাধারণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো। রিমু সাজ্জাদের হাত থেকে ফোন নিয়ে হ্যালো বললো। দুই বান্ধবীই চুপচাপ।
রিমু শক্ত গলাতেই বললো তোকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে রে। কেন যে সেদিন বলেছিলাম তোর মুখ দেখতে চাইনা। সাদিয়া, সাজ্জাদ, আহানা হু হু করে কাঁদছে। রিমু চুপচাপ। এরপর একসময় হুট করেই পিনপতন নিরবতা চারিপাশে।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে রূপমের। সবার মধ্যে হাহাকার। পাগলপ্রায় দশা। রিমু বাড়ি ফিরেছে। শেষ বারের মতো সে দেখেনি রূপমকে। এই না দেখার আক্ষেপ নিয়ে সল ধুঁকে ধুঁকে শেষ হতে চায়। রিমুকে দেখতে পেয়েই সবার আরো কান্না। সবাই তাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাঁদছে। রিমু স্বান্তনা দিচ্ছে সবাইকে।

রাত দশটা। আরিয়ান জেলে। সেই খুন করেছে রূপমকে। তবে খুন করার সময় বিশাল বিশাল ভুল করেছে। মার্ডারের সময় তার পকেট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র পড়ে যায়। পুলিশ খুব দ্রুত ইনভেস্টিগেশন করে সবটা খুঁজে বের করে। আরিয়ানও স্বীকার করে নেয় সবটা। খুনির সর্বোচ্চ শাস্তিই এখন সবার কাম্য।

রূপমের বিছানায় শুয়ে আছে রিমু। রূপমের একটা ছবির দিকে তাকাতেই সে হু হু করে কেঁদে উঠলো। রাতের আঁধারে কেউ তার কান্না শোনার মতো নেই। রূপমের ছবি বুকে জড়িয়ে রিমু কাঁদছে।

আপনি আমার অপ্রিয়ই রয়ে গেলেন রূপম ভাই। যখন আপনাকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখলাম তখন আমার থেকে বহুদূরে সরে গিয়ে আমার স্বপ্নকে ভেঙেচুরে আপনি আমার অপ্রিয়ই রয়ে গেলেন। বিরবির করে কান্না একসময় গগনবিদারী চিৎকারে পরিণত হলো। আপনি আমার “অপ্রিয় সে ” রূপম ভাই। আপনি আমার” অপ্রিয় সে”।

সমাপ্ত।

গল্পটার শুরু থেকে শেষ অবধি যারা পাশে ছিলেন সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা। সবার মতামত আশা করছি। দোয়া রাখবেন ❤

অপ্রিয় সে পর্ব-১৯

0

#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্বঃ১৯

রাত ১ টা বেজে ৫৫ মিনিট। রূপমের চোখে ঘুম নেই। দেয়ালের সাথে লাগোয়া বেডে শুয়ে আছে সে। হাতের মুঠি শক্ত করে একের পর এক দেয়ালে আঘাত করেই যাচ্ছে জোরে জোরে।। দ্রিম দ্রিম একটা শব্দে ছেঁয়ে গেছে পুরো রুম। এভাবে আর কিছুক্ষণ চলতে থাকলে তার হাত থেকে রক্ত পড়া শুরু করবে। যে অনুপাতে সে নিজের হাতে আঘাত করছে তাতে বিষয়টা অসম্ভব নয়৷

কেন আমি সহজভাবে উপস্থাপন করলাম না নিজেকে? যেসব কাজ বুঝিয়ে করা সম্ভব হতো সেসব কাজ ট্যারামি করে কেন রিমুর মনে নিজের স্থানটা হারালাম? এরকম বোকামি কেউ করে না কি? কী দরকার ছিলো নিজেকে বাজে ভাবে উপস্থাপন করার? ভালো ভাবে করলেই তো পারতাম। কেন করলাম না তখন? আর এখন অন্তর জ্বালায় জ্বলতে হচ্ছে আমাকে। আমি তো ভালোবাসি রিমুকে। ম্যাচিউরিটির অভাবে সম্পূর্ণ লেইম কারণে তার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। বুঝদার হওয়ার পরে যখন তাকে ভীষণ করে চাইছি তখন তাকে পাওয়া পায় আমাবস্যার চাঁদের মতো। বিড়বিড় করছে রূপম। অনুতাপের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে। তবে সময় পেরিয়ে সে তার ভুলটা বুঝতে পারলো। এখন এই ভুল বুঝতে পারার মূল্য কী পাবে সে রিমুর কাছে? সে অনন্ত যাইহোক ইচ্ছে করে তো আঘাত করে নি রিমুকে। নির্বুদ্ধিতা, ইমম্যাচিউরিটি মানুষের জীবনের বেঁচে থাকার আশা নষ্ট করে দিতে পারে বিষয়টা এখন বোধগম্য হচ্ছে রূপমের।

দেয়ালে আঘাত করতে করতে রূপমের হাতের অবস্থা বেজায় বাজে। শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে আঘাত করলেও তার ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে না। মনকষ্ট যখন বেশি হয় তখন শারীরিক কষ্টকে তুচ্ছ মনে হয়। হারিয়ে যাবার পর মানুষ মূল্য বোঝে সবকিছুর। রিমু এখন বদলে গেছে, নিজেকে দূরে রাখতে চাইছে আর এখনই রূপমের ইচ্ছে হচ্ছে শক্ত করে রিমুকে জড়িয়ে ধরে বাকি জীবনটা শান্তি মত
কাটাতে। রাত দু’টো। রূপম ফোন হাতে নিয়ে রিমুর নাম্বারে ফোন দিলো। একবার, দুবার, তিনবার এভাবে পঁচিশ বারের মতো রিমুর নাম্বারে ফোন দিলো রূপম। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স নেই। এতো রাতে মানুষ ঘুমাবে এটাই স্বাভাবিক। রিমুও ঘুমাচ্ছে তাই ফোন ধরছেনা বিষয়টা মাথায় এসেছে রূপমের। তবে এতোবার ফোন দিলে যে কারোরই ঘুম ভাঙার কথা। তবে কী ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছে রিমু? সে যাই হোক রূপম ফোন দিয়ে গেলো ক্রমাগত। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে সে বন্ধ ঘরে বালিশে মুখ গুঁজে নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।

এই রিমু! ফিরে আয় না রে একটিবার। সত্যি বলছি সব শাস্তি মাথা পেতে নেবো। তুই যা শাস্তি দিতে চাস দিস। যেভাবে পারিস কষ্ট দিস। কিন্তু আমার কাছে থেকে। বালিশে মুখ গুঁজেই রূপম এসব বলে কাঁদছে। এতো করুণ কন্ঠের আকুতি রিমু শুনলে সে কী পারবে এতো নিষ্ঠুর হয়ে থাকতে? রিমু হীন জীবনটা কেমন যেন অনর্থক লাগছে রূপমের কাছে। তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। মরার কথা ভাবতে গিয়েও রূপমের মনে হচ্ছে রিমুর সান্নিধ্য পাওয়ার পর তার যা খুশি হোক। কিন্তু রিমুকে পেতেই হবে তার। একবারের জন্য হলেও রিমু তার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিক তাকে৷

সাদিয়া আর ঋষি সারারাত ধরে কথা বলছে। এক টপিক থেকে আরেক টপিকে। কথা যেন ফুরাতেই চায় না। কথার একপর্যায়ে ঋষি বলে ওঠে আচ্ছা সাদিয়া আমাকে কেমন লাগে?

সাদিয়া ঝটপট উত্তর দেয়, ” একদম ভালো লাগে না। ”

বাচ্চাদের মতো কন্ঠ করে সাদিয়ার বলা, ” একদম ভালো লাগে না ” কথাটা ঋষির বুকে ঝড় তুলে দেয়৷ বারবার তার মনে হতে থাকে মেয়েটা এতো সুন্দর করে কথা বলে কীভাবে? অথচ কথাটা একদমই স্বাভাবিক। আহামরি বিশেষত্ব নেই।

ঋষি বোধহয় প্রেমে পড়েছে। ভালোবেসে ফেলেছে সাদিয়াকে। তাই তো সাদিয়ার বলা অতীব সাধারণ কথাটা মধুর মতো ঠেকলো তার কাছে।

ঋষি ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করে এই অল্প কদিনেই আপনি আমার অনেক প্রিয় হয়ে গিয়েছেন।

সাদিয়া উ জাতীয় ভেঙচি কাটার শব্দ করে বলে আর আপনি দিনদিন অপ্রিয় হচ্ছেন আমার। ঋষি মনঃক্ষুণ্ন হয়। তবে সেটা প্রকাশ না করে বলে আজ অপ্রিয় তো কী হয়েছে? কাল হয়তো প্রিয় হয়ে যাবো৷

উহুম আপনি কখনোই আমার প্রিয় হতে পারবেন না। আজীবন অপ্রিয়ই থাকবেন। নাতী নাতনীদের সঙ্গে গল্প করার সময় বলবো, জানিস তোর দাদু আমার ” অপ্রিয় সে ” কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অপ্রিয় সম্মোধন টা আক্ষরিক অর্থে অপ্রিয় বোঝাতে ব্যাবহৃত হয়না। সবার সামনে তাদেরকে অপ্রিয় বলেই বরং বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। কারণ তারা হয় সবচেয়ে প্রিয়। তাদের ধারেকাছে আসার ক্ষমতাও কারো থাকে না। এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত। একান্তই ব্যাক্তিগত। কথাগুলো এক ধ্যানেই বলতে থাকে সাদিয়া। এদিকে ঋষির মনে হচ্ছে সে বোধহয় দুনিয়াতেই নেই। অলীক স্বপ্নে ভাসছে। এই সাদিয়াটা কী বলছে এগুলো? সুখানুভূতি দিয়ে খুন করার তালে আছে না কি? কষ্ট করে যে জিনিস পাওয়া যায় তার কদর না কি সবচেয়ে বেশি হয়। তবে এতো সহজে যেটা পাওয়া যায় সেটা যে স্বর্গীয় অনুভূতি দেয় সেটাকে কীভাবে প্রকাশ করবে ঋষি?

এতক্ষণ আপনমনে কথাগুলো বললেও কিছুক্ষণ পরে সম্বিত ফিরে পায় সাদিয়া। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার। কীসব বলে ফেললো সে। জ্বিবে কামড় দেয় সে। আস্তে করে দিতে গিয়ে কামড়টা জোরেই বসে যায়। সে ধুর বলে চেঁচিয়ে উঠতেই উদ্বিগ্নতা দেখা যায় ঋষির গলায়। মধ্যরাতে সূচনা হয় এক নব প্রেম কাহিনীর। দুজনের অজান্তেই।

ঋষি তার নাতী নাতনীর কী নাম দেবে সেসব নিয়ে সাদিয়াকে জ্বালাতন করছে। এদিকে সাদিয়ার রাগে ফোসফাস করাটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে ঋষি।

এই যে কী শুরু করলেন? নিজের লিমিটে থাকেন। আর কীসের নাতী নাতনী?

ঋষি বুঝলো সাদিয়া ভাঙবে তবু মচকাবে না। কথার মার প্যাঁচে দুজনেই প্রবেশ করলো নতুন দুনিয়ায়।

কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে গিয়েছে সাদিয়া। খানিকক্ষণ পরে ফোন কেটে দিলো ঋষি। তারপরই ডায়াল করলো রূপমের নাম্বারে। রূপমকে সবটা জানাতে না পারলে মোটেই শান্তি পাবে না ঋষি। আর সে খুব ভালো করেই জানে রূপম বিষয়টা শুনলে ভীষণ খুশি হবে।

ফোনের রিংটোন বাজতেই লাফিয়ে উঠলো রূপম। রিমু কল ব্যাক করেছে ভেবেই আনন্দে নাচানাচি করার জোগাড় রূপমের। অনন্ত যাইহোক একটু তো কথা বলতে পারবে সে। কিন্তু ফোন স্ক্রিনে ঋষির নাম দেখে ভীষণ হতাশ হলো রূপম। সাথে তার মেজাজটাও বিগড়ে গেলো চরম পর্যায়ে। ধুর বাল বলে সে রিসিভ করলো ফোন। তারপর অকথ্য ভাষায় ঋষিকে গালিগালাজ করে কেঁদে ফেললো।

কিচ্ছু বুঝতে না পারে ঋষি কী করবে সেটাও বুঝতে পারছে না।

এই রূপম কী হয়েছে তোর? এভাবে কান্নাকাটি করছিস কেন? সব ঠিক ঠাক আছে তো? আর গালিই বা দিলি কেন? এতো রাতে ফোন দিয়ে আমি কী ডিস্টার্ব করে ফেললাম তোকে? সরি রে। কিছু কথা জানানোর ছিলো।

ঋষির কথা শুনে ভাবান্তর হলো না রূপমের। সে বাচ্চা ছেলেদের মতো করে কাঁদতে লাগলো।

এইবার ঋষি চটে গেলো।

এই মাইয়া মাইনসের মতো ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কান্না থামাবি? কী হইছে কস না ক্যান? কাহিনী করো মিয়া? এরপর লাগাতার গালি।

ঋষি চটে যাবে বুঝেনি রূপম। তৃপ্তির সামনে কান্নাকাটি করলে সে তো শুধু স্বান্তনা দেয়। কিন্তু ঋষি তো ছেলে। তারউপর বেস্টফ্রেন্ড। গালিগালাজ শোনা লাগবে এটাই তো নরমাল।

আমি রিমুকে হারিয়ে ফেলছি ঋষি। সম্পূর্ণ নিজের দোষে ওকে হারিয়ে ফেলছি। এখন ওকে ছাড়া থাকবো কী করে? তুই বল! বলনা রে! কথাগুলো বলতে বলতেই হেঁচকি তুলে কান্না।

রূপমের বলা প্রত্যেকটা কথা তীরের মতো বিঁধলো ঋষির বুকে। অপর পক্ষের কান্নাকাটি যেকারো পক্ষেই বিব্রতকর এবং কষ্টদায়ক। তা সে ছেলে কিংবা মেয়ে যেই কাঁদুক না কেন। ছেলেদের কান্না তো আরো বেশি মারাত্মক।

এই রূপম কান্না থামাবি তুই? কী শুরু করলি? তোর যে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করা স্বভাব এজন্যই হয়তো রিমু আসছে না তোর কাছে।

রিমু তো কখনো আমার চোখের জ্বল দেখেনি ঋষি। দেখলে কী পারতো আমাকে ফেরাতে? তুই বল পারতো?

হ্যাঁ পারতো। কারণ তোর কারণে তাকে অনেক কাঁদতে হয়েছে। তাই না পারাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঋষির ঠোঁটকাটা জবাব ভেঙে দিলো রূপমকে।

ফোনটা কাট ঋষি। তোর সাথে এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

ঋষি বুঝলো এমন মানসিক অবস্থায় এতটা কড়া কথা শোনানো ঠিক হয়নি। তাই নিজের মন্তব্য পাল্টালো সে।

আরে রিমু ফিরবে তো। মেয়ে মানুষের মনে অনেক দয়া। আগাগোড়া তাদের মায়া, দয়া, ভালোবাসা দিয়ে মোড়ানো। তোর এতো কষ্ট দেখে ফেরাবে না দেখিস।

এই মিথ্যা স্বান্তনা শুনে রূপম ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হেসে বললো, ” স্বান্তনা টা শুরুতে দিতে হতো। এখন আর মিথ্যা স্বান্তনায় প্রশান্তি আসবে না। অবশ্য মিথ্যা স্বান্তনা না দিয়ে ঠিকই করেছিস। সত্যি অনেক বেশি তিক্ত হয়। আর এটা যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা সম্ভব ততই মঙ্গল। তবে সত্য তিতা হলেও পরবর্তীতে এই সত্যই সাহস জোগায়। রিমু বোধহয় ফিরবে না রে। আমিও জানিনা কী করবো। ভালো থাক। ”

কথাগুলো বলেই খট করে ফোন রেখে দিলো রূপম। হতবুদ্ধি ঋষি আফসোস করতে লাগলো বন্ধুর মন ভেঙে দেওয়ার জন্য। তার জীবনের সুখসংবাদটাও এই প্রথম রূপমকে জানাতে পারলো না সে। কে জানে সামনে কী হবে।

চলবে,,,

অপ্রিয় সে পর্ব-১৮

0

#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্ব: ১৮

আহানাকে জড়িয়ে ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়লো রিমু। তার ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। আহানা তাকে স্বান্তনা দিতে গেলেই রিমু বলে উঠলো, ” আমি আর পারছিনা আহানা। আমি কী করবো তুই বল। ছোট থেকে আমার সাথে যা যা হয়েছে সেগুলো আমি মেনে নিবো কী করে। এদিকে সাদিয়াকে কীভাবে বশ করলো রূপম খান সেটাই বুঝতে পারছি না। বন্ধুত্বের মধ্যে অহেতুক ঝামেলা আমার বিন্দুমাত্র পছন্দ হচ্ছে না। নিজের অজান্তেই কষ্ট দিলাম মেয়েটাকে। আমি সত্যিই বাজে আচরণ করে ফেলছি। ”

আহানা ধমক দিলো রিমুকে। তুই কেন বাজে আচরণ করবি রিমু? তুই যা করছিস সেটা করা একদমই স্বাভাবিক। নিজেকে অহেতুক ব্লেম করা বন্ধ কর। তোর সাথে ছোট থেকে যা যা হয়েছে তাতে তো এগুলো কমই হয়ে গেলো। আর সাদিয়াই বা কেন রূপম ভাইকে সাপোর্ট করছে? মানলাম কোনো একটা কারণে তার মনে হয়ে রূপম খান তোকে ভালোবাসে৷ মনে হতেই পারে। তাই বলে যে তোকেও পাল্টা ভালোবাসতে হবে এমন কথা কী লেখা আছে কোথাও? এতদিনের সব অন্যায় হোক বুঝে কিংবা না বুঝে। ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় সব এতো সহজেই মাফ পাওয়ার যোগ্য? রূপম ভাই কী শুধু একমাত্র মানুষ যে তোকে মন থেকে ভালোবাসে? অন্য কেউ বাসে না? তবে সাদিয়া কেন সেই সঠিক মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে না বলে রূপম রূপম বলে চিল্লাচ্ছে? তুই একটু বেশিই আবেগী। যেসব মানুষদের জন্য বাঁশ খাবি তাদের জন্যই পাগল হবি আবার। এখানে তোরেই বা ব্লেম করি কীভাবে? মানুষের স্বভাবই তো এমন। যাদের কাছে বেশি যন্ত্রণা পায় তাদের জন্যই মরিয়া হয়ে ওঠে সমস্ত আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে। এসব বাদ দিয়ে ক্যারিয়ারে ফোকাস কর। মাথা থেকে আজাইরা চিন্তা ভাবনা সরিয়ে ফেল। আর যদি নাও সরাতে পারিস তবে দয়া করে আমার সামনে এসব আজাইরা আবেগ দেখাতে আসবি না।

রিমু বুঝলো আহানার মেজাজ গরম হয়ে গেছে। তাই কান্না থামিয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

রিমুর ফোনটা বেজে যাচ্ছে ক্রমাগত। তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ফোন রিসিভ করলো রিমু। রূপম ফোন দিয়েছে। রিমু সালাম দিয়ে এমন আচরণ করলো যেন অপরিচিত কেউ ফোন দিয়েছে।

রূপম বলতে লাগলো, ” তোর সাথে দেখা করতে চাই রিমু। আহানার বাসার সামনে আছি বের হ তাড়াতাড়ি। ”

নিরুত্তর রইলো রিমু।

কী ব্যাপার? তুই কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না? তোর সাথে কথা বলাটা জরুরি আমার। দেখ তুই আমার উপরে ভীষণ বিরক্ত এটা আমি জানি। আমার উপর তোর এই ঘৃণা, রাগ, বিরক্তি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তোর জীবনকে নরক বানিয়েছি আমি। আমার ইন্টেনশন ছিলো না এসবের। বা ইচ্ছে করে তোকে আঘাত করার। আমি করতে চেয়েছি একটা হয়ে গেছে আরেকটা। আমি তোর কাছে আগে মাফ চাইলেও এখন চাচ্ছি না। কারণ আমি জানি মাফ পাওয়ার যোগ্যতা নেই আমার। তোকে আমার সাথে কথা বলতে হবে না। কিচ্ছু করতেও হবে না। আমি জ্বালাবও না তোকে। শুধু তুই একটিবার বের হ রিমু। প্লিজ!

কী ব্যাপার সেলিব্রেটি রূপম খান? আপনি আমার মতো সাধারণ একটা মেয়ের পিছনে ধরনা দিচ্ছেন কেন? আর এতো আজাইরা সময় আপনি কবে থেকে পেলেন? আমার জানামতে আপনি ভীষণ ব্যাস্ত একজন মানুষ। আর শোনেন। আমি আপনার সাথে কস্মিনকালেও দেখা করতে আগ্রহী নই। কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন। আমি যথেষ্ট মনযোগী শ্রোতা। খুব মন দিয়ে ভীষণ যত্ন সহকারে আপনার কথা শুনতে রাজি আছি।

রিমু প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। তোর সাথে সামনাসামনি কথা বলতে চাই আমি। প্লিজ বের হ একটিবার।

বাপরে এতো করে রিকুয়েষ্ট করছেন। কাহিনী টা কী? আচ্ছা আমি আসছি। আমি আবার মানুষের এতো আকুতি ফেলতে পারিনা। তাও আবার যদি হয় এমন সেলিব্রেটি।

রূপম বুঝলো রিমু সব কথা গুলো তাকে বিদ্রুপাত্মক ভাবে বলছে। অবশ্য সে এসব কিছুরই যোগ্য। তারপরও রূপম খুশি হলো এটা ভেবে যে সামনাসামনি থেকে সে কথা বলতে পারবে রিমুর সাথে।

রিমু ফোন কানে রেখেই গায়ে একটা ওড়না পেঁচিয়ে বাড়ির বাহির হলো। এতো অনুরোধ তার ফেলতে ইচ্ছে হলোনা। রূপমের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। রিমু হাত নাড়ালো। বাইরে থেকে গাড়ির ভেতরের কিছু বোঝা না গেলেও ভেতর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। আর রিমু জানে রূপম আহানার দরজার দিকেই এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। রূপম গাড়ি থেকে বের হলো। তার শরীরে ব্ল্যাক কালারের একটা হুডি। মাথা ঢাকা টুপি দিয়ে। মুখে মাস্ক, চোখে সানগ্লাস।

রূপমের গেট আপ দেখে খানিকটা হাসি পেলো রিমুর। আবার খানিকটা কষ্টও পেলো সে। এই গরমের মধ্যে ছেলেটাকে হুডি পরে ঘুরতে হচ্ছে। সেলিব্রেটি বলে কথা। কোনো ভক্ত দেখলেই তো ঝাঁপিয়ে পরবে প্রিয় ব্যাক্তিত্বের মুখ দর্শনে। তাই এমন সাজ। রিমু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। যে মানুষটা হাজার হাজার মানুষের এতো প্রিয়। তাকেই সহ্য করা সম্ভব নয় রিমুর জন্য। একজন মানুষ কখনোই সবার প্রিয় হতে পারে না।

রূপম গাড়ি থেকে বের হয়েই রিমুর কাছাকাছি চলে এলো। আহানার বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা ধরে হাঁটলেই একটা শিশু পার্ক আছে। রূপম ভাবলো সেখানে গিয়েই কথা বলবে।

রিমু গাড়িতে উঠে আয়। পার্কটাতে গিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আর তোকে বেশ খানিকটা সময় দিতে হবে আমাকে। পারবি তো?

হ্যাঁ পারবো। আর পাঁচ মিনিটের রাস্তা আমি গাড়িতে যেতে পারবোনা। আপনি বরং গাড়ি নিয়ে যান আমি একাই আসছি হেঁটে।

রিমুকে আর কোনো জবাব না দিয়ে রূপমও হাঁটতে শুরু করলো রিমুর সাথে। রূপমের মনে হলো, এই পথ যদি অনন্তকালের জন্য চলতো। তবে তার চেয়ে সুখী বোধহয় আর কেউ হতো না।

পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে রিমু। বেঞ্চটার সামনেই একটা আমগাছ। আম গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রূপম।

রিমু! আস্তে করে ডাকলো রূপম।

জি। যা বলার বলুন। আমি শুনছি। কী এমন জরুরি কথা যেটা না বলতে পেরে হাসফাস করছেন আপনি।

মাথাটা অর্ধনমিত করে রূপম বললো আমি তোকে ভালোবাসি রে।

তাতে আমি কী করতে পারি? রিমুর কড়া জবাব।

তোকে কিছু করতে হবে না। আমি তোকে ভালোবাসি শুধু এটাই জানি। দেখ রিমু ছোট থেকে তোর সাথে যা যা করেছি সবকিছুর উদ্দেশ্য আমার দৃষ্টিতে। আই রিপিট। আমার দৃষ্টিতে ভালো ছিলো। এই যেমন তোর চুল কাটা। আমি জানি এটা তোর দূর্বলতা। এখানে আঘাত করায় তুই মানসিক আঘাত পেয়েছিস। কিন্তু আমি তোর চুল কাটানোর ব্যাবস্থা করেছিলাম যাতে চুলের কারণে ঠান্ডা বাঁধিয়ে তুই বড় সড় অসুখ না বাঁধাস। বিষয়টা আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো ছিলো। কিন্তু এটা তোর মানসিক স্বাস্থ্যহানী করেছে। এছাড়া আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো তোর ভালোর জন্য করতে গিয়ে পক্ষান্তরে তোর খারাপই করে ফেলেছি। আমি তো জীবনের অনেক সুন্দর সময় নষ্ট করেছি। আমার অনিচ্ছায়। এখন তোর বাকি জীবনটা আমি আলোয় রাঙিয়ে দিতে চাই। তুই কি দিবি আমাকে সেই সুযোগটা? আজীবন তোর কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো।

রিমু থামিয়ে দিলো রূপমকে। আমি বুঝতে পারলাম আপনি আমার ভালো করতে গিয়ে পক্ষান্তরে খারাপ করে ফেলেছেন। কিন্তু খারাপ তো হয়েইছে আমার তাইনা? সেসব কী পারবেন ফিরিয়ে দিতে? কিছু জিনিস কখনোই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আমার বাকি জীবনটা আমি নিজের আলোয় আলোকিত করতে চাই। সেখানে আপনার ভূমিকা কখনোই কাম্য নয় আপনার। আমি শ্রদ্ধভরে আপনার প্রেম প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলাম। আর কিছু বলার আছে কী আপনার?

রূপমের চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। জ্বালা করছে তার দুটো চোখ। মনে হচ্ছে দু এক ফোঁটা এখনই টুপ করে ঝড়ে পড়বে। সানগ্লাসের আড়ালে থাকায় তার চোখদুটো কারো দৃষ্টিগোচর হলো না।

রূপম মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো, “রিমু, ও রিমু। মাফ করে দে না রে। ”

রিমু কর্ণপাত করলোনা রূপমের কথায়। আপনার আর কিছু বলার না থাকলে আমি উঠতে চাই। বাসায় যাবো। আপনি চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন। অতিথি আপ্যায়ন ভালোই করবো।

রিমু গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রূপম চেঁচিয়ে বললো, ” রিমু! ভালোবাসি তো। ”

চলবে,,,,

অপ্রিস সে পর্ব-১৭

0

#অপ্রিস সে
#সানজিদা সন্ধি
# পর্বঃ১৭

আহানা তার ছোট্ট কিচেনে রান্না করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। রিমু আর সাদিয়াও তার সাথে গেলো। রিমু হাতে হাতে সাহায্য করছে আর সাদিয়া চুপচাপ বসে আছে।

একসময় অন্য মনস্ক হয়ে সাদিয়া বলে উঠলো, ” জানিস রিমু? রূপম ভাইকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। কত ভালো মানুষ তিনি। যদিও তার কারণে তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস! কিন্তু বিশ্বাডলস কর। সে অনেক ভালো। ”

সাদিয়ার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রিমু বলে উঠলো, ” বুঝলাম! তাহলে অন্যের দালালী করতে এসেছিস। আমার খোঁজ নিতে নয়। ”

দালালী শব্দটা কেমন জানি ঠেকলো সাদিয়ার কাছে। সে সচকিত হয়ে বললো, ” রিমু তোর শব্দচয়ন বাজে ঠেকলো আমার কাছে। তোর মধ্যে আচরণ গত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। আগের নম্র আচরণ টাই কাম্য তোর কাছে।

রিমু আরো রেগে বললো, ” এখন আমার কথা কেন ভালো লাগবে তোর কাছে? আমার সাধারণ কথাবার্তাও তোর কাছে বিরক্তিকর, ভন্ড মনে হবে৷ কী বলতো অন্যের দালালী করতে এসেছিস তো তাই!”

বারবার দালালী দালালী বলাতে সাদিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে কথা না বাড়াতে চেয়ে উঠে যেতে ধরলো।

রিমু তার পথ আটকে বললো, ” কী রে দালালীতে সুবিধা করতে না পেরে বুঝি চলে যাচ্ছিস? আহারে। শোন কারো হয়ে আমার সামনে সাফাই গাইতে আসবি না। আর আপাতত আমি তোর মুখটাই দেখতে চাচ্ছি না দয়া করে দেখাতে আসিস না। ”

এতক্ষণ রাগ লাগলেও এবার মনে প্রচন্ড রকম আঘাত পেলো সাদিয়া।

সে নম্র ভাবে বললো, ” রিমু আমি তোর সাথেই দেখা করতে এসেছিলাম। কারো দালালী করতে নয়। আর তুই না বুঝে না শুনে যা নয় তাই বললি। কথাবার্তা বুঝে শুনে বলা উচিত। এটার উপর অনেক কিছু নির্ভরশীল। সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে অযৌক্তিক কথার কারণে আবার সুন্দর সম্পর্ক গড়তেও পারে সুমিষ্ট কথার কারণে। আজকে তুই অনেক বেশিই বলে ফেললি। আমার মুখ দর্শন করতে চাইছিস না ঠিক আছে। আমি দেখা দেবো না। কিন্তু কোনো একদিন এমনও হতে পারে আমার মুখ দেখতে চাইবে অনেক করে। কিন্তু পাবিনা। ভালো থাকিস। অযৌক্তিকতায় আজ মনে কষ্ট দিয়ে ফেললি।” কথাগুলো বলে এক মুহুর্তের জন্যেও দাঁড়ালো না সাদিয়া। পেছন থেকে আহানা ডাকলো তাকে বেশ কয়েকবার। কিন্তু পিছু ফিরে তাকালো না সাদিয়া।

বাসায় ফিরে ঋষির ফোন পেলো সে। রিসিভ করতেই ঋষি জিজ্ঞেস করলো, ” রিমুর সাথে কথা হয়েছে আপনার? ”

সাদিয়া ধরা গলায় বললো, ” হু। ” তার গলাটা শুকিয়ে এসেছে। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে গলাতেই আটকে আছে। তবে এখন তৃষ্ণা মেটাতে পানি পান করলে আরো বেশি তেষ্টা পাবে তার।

ঋষি সাদিয়ার কন্ঠস্বর শুনে জিজ্ঞেস করলো, ” এনি প্রবলেম? ”

সাদিয়া এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো একজন সল্প পরিচিত মানুষের সামনে। যেখানে তার কান্না দেখা বা শোনার সুযোগ খুব কম মানুষেরই হয়েছে। নিজের ভেতর জ্বলে পুড়ে গেলেও কাউকে জানতে দেয়না সে। অথচ আজ প্রিয় বান্ধবীর আচরণ তাকে এতটাই মর্মাহত করেছে যে সে সামলাতেই পারছে না নিজেকে।

হুট করে সাদিয়ার কান্না শুনে বিব্রত হলো ঋষি। সাথে তার ভীষণ কষ্টও হচ্ছে। সে বুঝতে পারছেনা কেন সে এমনটা অনুভব করছে। একজন সল্প পরিচিতার কান্নায় এমন কী আছে যা তাকে প্রভাবিত করছে? এর সাথে তো শুধুমাত্র ফ্ল্যাট করাই উদ্দেশ্য ছিলো ঋষির। কোনো ভাবে সে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়ছে না তো?

ঋষি শান্ত হতে বললো সাদিয়াকে। তারপর ধীরে ধীরে সবটা জানতে চাইতেই সাদিয়া বললো, ” বন্ধুত্বে মান অভিমান। ”

মানুষ মাত্রই কৌতুহল প্রবণ। ঋষিও এর ব্যাতিক্রম নয়। কৌতুহল বশত সে জানতে চাইলো কী নিয়ে মান অভিমান হয়েছে।

সাদিয়া প্রশ্নটা শুনে বিরক্তবোধ করলেও সহজভাবে জবাব দিলো, ” বন্ধুদের মাঝে অনেক কিছু নিয়েই মান অভিমান হয়। আবার ঠিকও হয়ে যায়। এসব বন্ধুমহলেই সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। এসব নিয়ে বাহিরে আলোচনা করা পছন্দ নয় আমার। কিছু জিনিস একান্তই থাক!”

ঋষি মুগ্ধ হলো সাদিয়ার কথায়। মেয়েটার ব্যাক্তিত্ব আছে বলতে হবে। তারপরও বললো কিছু জানানোর মতো হলে নির্দ্বিধায় জানাতে পারবেন। আমি অপেক্ষায় থাকবো। এবার আর কাঁদিয়েন না। কষ্ট হচ্ছে আমার।

সাদিয়া কৌতুহলী হয়ে বললো, ” আমার জন্য কষ্ট? তাও আবার পাবেন আপনি? ”

মুহুর্তেই গলার স্বরে তার পরিবর্তন এলো। খানিকটা কৌতুকের স্বরেই বললো সাদিয়া, ” আপনি তো ফ্ল্যাটিং এর কোনো র্যাংক থাকলে সেখানে ফার্স্ট হতেন। এতো ভালো ফ্ল্যাটিং শিখেছেন কার কাছে?

ঋষি গলা খাকাড়ি দিয়ে বললো, আমার শুদ্ধতম অনুভুতি গুলোকে ফ্ল্যাটিং মনে হচ্ছে? এটা কী ঠিক?

সাদিয়া বললো, ” আসলে কী বলুন তো! আপনি এখন ঠিকঠাক ফ্ল্যাটিংটা শিখতে পারলেন না। আফসোস। ”

ঋষি খানিকটা চকমক করে বললো, ” শিখতে পারিনি এখনো তাতে কী? একদিন ঠিক শিখবো। ”

রিমু রেগে বললো, ” আর শিখে কাজ নেই।”

রূপমের কিছুই ভালো লাগছে না। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে সে দেখলো রেহনুমা আর রিয়াজুল করিমের মুখ থমথমে হয়ে আছে। মেয়ে বাড়িতে না থাকাতে দুজনেই মুখই থমথমে।

রূপম সবার সামনেই তাদের সরি বললো তারপর বললো, ” আমার জন্য এত বাজে কিছু হবে এ যেন কল্পনাতীত ছিলো আমার জন্য। কিন্তু চোখের সামনে এত কিছু নিতে পারছিনা আমি। কোনক্রমেই পারছিনা। সবাই আমাকে মাফ করে দিন।

রিমুর বাবা বললো, ” শুধুমাত্র নিজেকে দোষী করা বন্ধ কর রূপম। আমাদের দোষও অনেক আছে। আমরা রিমুকে অবহেলা করেছি। সেখানে তোর দোষ কী করে থাকতে পারে? আমার কী পুতুল না কি যে আমাদের ভালো মন্দ বিচারের ক্ষমতা নেই? তুই যেভাবে নাচাবি সেভাবেই নাচবো? মোট কথা আমাদের স্বদিচ্ছার অভাব ছিলো মেয়েকে আগলে রাখার। সেখানে তুই কোনোভাবেই দ্বায়ী হতে পারিসনা। ”

রূপম বললো, ” আর স্বান্তনা দিও না চাচ্চু।
এতো স্বান্তনার ভার বইতে পারছিনা আমি। এতো করুণা, দয়া কী করে নিবো আমি? ইচ্ছে করছে মরে যাই। রূপমের মতো শক্ত ছেলেটার মুখে এমন কথা সবাইকে মর্মাহত করলো।

রূপম খাবার টেবিলে বসেই রিমুকে ফোন দিয়ে বললো সে খেয়েছে কী না! রিমু আবার ছোট বড় বেশকিছু কথা শুনিয়ে দিলো। রিমুর কথার ধরণ শুনে সবাই বিরক্ত বোধ করতে লাগলো। রূপমের ইচ্ছে হলোনা পূণরায় রিমুর সাথে যোগাযোগ করতে। কারণ তার কথাবার্তা কেমন কেমন যেন হয়ে গেছে কদিনেই। কিন্তু যোগাযোগ না করলেও শান্তি পাবে না রূপম।

সে কঠোর ছিলো তখনই ভালো ছিলো। যেই নিজের আবেগ অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিলো অমনি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করলো। এজন্যই বোধহয় নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত রাখাই ভালো। নিজের ভালোর জন্য।

রূপম কিছু না খেয়েই উঠে গেলো। সে খুব ভালোই বুঝতে পারলো দিন দিন সে ডিপ্রেশনে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিজেকে ডিপ্রেশনে ফেলার মানেই নেই তার। বেশ কয়েকদিন ধরে মন মতো গান গাওয়া হয়নি রূপমের। বলা চলে সুযোগ পায়নি। রূপম তার প্রিয় গিটারটা হাতে নিয়ে টুং টুং সুর তোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু সে কিছুতেই পারছেনা ঠিকমতো সুর তুলতে। এভাবে আরো বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন দেখলো কোনো লাভ হচ্ছে না তখনই সে বেলকনিতে উঠে এলো। একটুখানি স্বস্তির আশায়। বেলকনিতে বেশ কয়েকটা লতা বাহারের গাছ আছে। পাতা বাহারও আছে বেশ কয়েকটা। রূপম হাত দিয়ে স্পর্শ করলো সেগুলো। তার মনে হলো রিমুর সাথে দেখা করাটা দরকার তার। ভীষণ রকমের দরকার।

চলবে,,,

অপ্রিয় সে পর্ব-১৬

0

#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্বঃ১৬

সকালে উঠে রিমুর ঘরের সামন দিয়ে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো রূপমের। রিমুর ঘরের দরজায় তালা লাগানো। রূপম বুঝলো রিমু ভোরেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। সে দৌঁড়ে গ্যারেজে গেলো। যা ভেবেছিলো তাই স্কুটি নিয়েই বেরিয়ে পড়েছে রিমু। রূপম রিমু রিমু করে দুই তিনবার ডেকে উঠলো এটা জানা সত্ত্বেও যে রিমু বাড়িতে নেই। মনের স্যাটিসফেকশনের জন্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনের স্যাটিসফেকশনের জন্য মানুষ অযৌক্তিক কিছু কাজ করে থাকে। যেমন কারো বলা কথা একবার শোনার পরেও আরেকবার জিজ্ঞেস করে মনের খোঁড়াক মেটানোর জন্য। রূপমের ডাকাডাকি শুনে সবাই একপ্রকার জড়ো হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কী হয়েছে?” রূপম বললো, ” রিমু বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে।” সবাইকে কিছুটা আশাহত দেখা গেলো। যেখানে সবাই চাইছে এত বছরের অন্যায় গুলো মিটিয়ে রিমুকে আপন করে নিতে সেখানে রিমু দূরে দূরে চলে যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে। সবার মুখে কালো মেঘ যেন নেমে এলো। রূপম তার ঘরে এসেই রিমুকে ফোন করলো। একবার, দুবার, তিনবারের বেলায় ফোন রিসিভ হলো। শুরুতেই রূপম ধমকে বলে উঠলো, ” আমি তোকে বাড়ি থেকে যেতে নিষেধ করেছিলাম আর তুই চলে গেলি? তাও আবার যাওয়ার আগে কাউকে জানালিও না? কার কাছে যাচ্ছিস, কোথায় থাকবি। যদি উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে যায়? রিমু দায়সারাভাবে বললো, ” এতো কাহিনী করার কী আছে? মনে হচ্ছে আমি আহামরি কেউ। যার কিছু হওয়া না হওয়ায় কিছু যাবে আসবে? রূপম বিরক্ত হয়ে বললো, ” রিমু সবসময় ট্যারামি ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগছে ভীষণ। যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দে সরাসরি। ” রিমু বললো আমার জানামতে আমি আপনাকে নিজে থেকে বিরক্ত করিনি। আপনি যেচে বিরক্ত হতে এসেছেন। আর যেসব কথা আপনার কাছে ট্যারামি মনে হচ্ছে সেসব আমার কাছে অতীব সাধারণ মনে হচ্ছে। আর ট্যারামির উদ্দেশ্যে আমি কিছু বলিনি। এগুলো আমার স্বাভাবিক কথা। যে যেভাবে নেবে আরকি! আর কী যেন বললেন? বিরক্ত লাগছে আপনার? বিরক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই তো এতোটা দূরে সরে এলাম। আপাতত আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার। আমি আমার এক বান্ধবীর কাছে আছি। আমার জীবন নিয়ে আপনাকে একটুও ভাবতে হবে না। ইভেন আপনাদের কাউকেই হবে না ভাবতে। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় মত্ত আছি। রিমুর কথা কথাগুলো তীরের ন্যায় রূপমের হৃদয় ভেদ করে চলে গেলো। স্তব্ধ রূপম অসহায় হাসি হেসে বললো,” বাহ্ অনুপম ভক্ত। বেশ বললি! গুছিয়ে নে নিজের জীবন। শুভকামনা তোর জন্য। ” রিমু ফোন কাটতে উদ্যত হলো। গলার স্বর আস্তে করে বললো, ” এবার তবে রাখি?”
রূপমও হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে রেখে দিলো ফোনটা। এখন সবকিছু অনর্থক মনে হচ্ছে রূপমের কাছে। রূপমের অ্যাসিসটেন্ট তমাল বারবার ফোন করছে তাকে। রূপম ফোনটা সুইচ অফ করে অস্থির হয়ে গেলো। তার খারাপ থাকা আরো বেশি করে বাড়লো বোধহয়।

কালকের রাতের পরে বাড়িতে এসে দুদণ্ড শান্তি পায়নি সাদিয়া। রিমু যে তাকে ভুল বুঝেছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই তার। সে তো রিমুর ভালো ভেবেই গিয়েছিলো সেখানে।
কিন্তু এই ভালো ভাবা যে রিমুর অপছন্দও হতে পারে এটা কেন ভাবেনি সাদিয়া? রিমুর ফোনে বেশ কয়েকবার ট্রাই করেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। সাদিয়া রূপমকে ফোন দিলো। কিন্তু রূপমের ফোনও সুইচ অফ। রেগে গিয়ে ফোন মেঝেতে আছাড় দিতে গিয়ে সাদিয়া ভাবলো ঋষিকে মেসেজ দিলে হয়তো কী হয়েছে জানতে পারবে। ঋষিকে মেসেজ দিয়েও সাদিয়া কিছু জানতে পারলো না। এখন তার প্রচন্ড অস্থির লাগছে। সবকিছু ভেঙে চুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

খানিক বাদে ফোন অন করে রূপম তমালকে ফোন ব্যাক করলো। তমাল জানালো কদিন পরে একটা শো এ জাজ হওয়ার জন্য ভীষণ অনুরোধ এসেছে। রূপম সরাসরি রিজেক্ট করে দিলো প্রস্তাব। তার যে মানসিক অবস্থা তাতে এ সময়ে কোনোকিছুতেই সে মনযোগ দিতে পারবে না । তমালের সাথে কথা শেষ করতে না করতেই ঋষির নম্বর ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। রূপম ফোন ধরতেই ঋষি। উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলো ফোন কেন অফ ছিলো? আর রিমুর কী অবস্থা? রূপম আহত গলায় বললো, ” রিমু বাড়ি ছেড়েছে। ” ঋষি আশাহত হয়ে বললো, ” সবার কারণে বদলে গেলো মেয়েটা। তারই বা কী দোষ! তার সাথে যা ঘটেছে তা তো আর খুব সুখকর কিছু নয়। যে কারণেই হোক তার সুখ বিনষ্ট হয়েছে তোদের কারণে। এবার তোদের সুখহীনতায় ভোগার কারণ সে-ই হবে। মিলিয়ে নিস কথাটা।”

ঋষি সাদিয়ার কাছে ‘অপ্রিয়’ হওয়ার পরেও প্রয়োজনে ঋষিকেই টেক্সট করতে হচ্ছে সাদিয়াকে। কোনো ভাবে যদি সে রূপমের সাথে যোগাযোগ করে রিমুর খোঁজটা দিতো তাকে। ঋষির কথা ভাবতে ভাবতেই সে নক দিলো সাদিয়াকে। ঋষি বললো, ” রূপমের নম্বর খানিক আগে খোলা পাওয়ায় ঋষি ফোন করেছিলো তাকে। আর রিমু রূপমের অবাধ্য হয়েই বাড়ি ছেড়েছে। কথাটা শুনে আরো বেশি খারাপ লাগলো সাদিয়ার। ক্যাম্পাসের কাছেই তার বাসা। রিমু কী একবারও পারতো না সাদিয়ার কাছে চলে আসতে? আর এতো বড় সিদ্ধান্ত সে সাদিয়াকে ছাড়া নিলো কীভাবে? সাদিয়া তাদের চেনা জানা বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলো আহানার বাড়িতে আছে রিমু। আহানা কাল রাতের বিষয়ে সম্পৃক্ত না হওয়াতেই রিমু তার কাছে গেছে। আহানার বাড়ির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে নিলো সাদিয়া।

কালকের রাতের পর থেকেই কিছু ভালো লাগছে না রিমুর। রূপম তাকে প্রপোজ করবে এটা চিন্তা করা অসম্ভব তার কাছে। তবে কাল রিমুর সমস্ত ভাবনাকে ওলোট পালোট করে দিয়ে রূপম তাকে প্রপোজ করে বসলো। এটা কী সত্যি না কি মিথ্যা এটাই এখনো বুঝতে পারছে না রিমু। সবটা তার কাছে গোলক ধাঁধার মতো মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে বোধহয় কোনো সংশয়ের চোরাবালিতে আটকে গেছে।এখান থেকে উদ্ধার হওয়া ভীষণ জরুরি। তবে রূপম তাকে ভালো বাসুক বা না-ই বাসুক তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না। এসবে সে কখনো ফিরেও চাইবেনা। আহানার বাসার কলিংবেল বেজে উঠতেই আহানা ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে বললো, ” রিমু একটু গিয়ে দেখ কে এসেছে! ” আহানা একটা বাসায় নিয়ে একা থাকে। রুম মেটের ঝামেলা নেই বলে রিমুকে সে নির্দ্বিধায় ডাকতে পেরেছে। রিমু তার ভীষণ প্রিয় একটা মেয়ে। এই মেয়েটার জন্য আহানা সবকিছু করতে পারে। রিমু দরজা খুলে দেখলো সাদিয়া এসেছে। সাদিয়া ভেতরে ঢুকেই রিমুকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর এক হাতে রিমুকে আগলে অন্য হাতে কান ধরে সরি বলতে লাগলো। অভিমানো মুখ ঘুরিয়ে নিলো রিমু। সে কখনোই ভাবেনি তারই বন্ধু বান্ধব তার অজান্তেই রূপমের সাপোর্টে যাবে। রিমু সাদিয়ার মুখোমুখি হয়ে সরাসরি বললো আমি কখনো ভাবিনি সাদিয়া তোরা রূপম ভাইয়ার পক্ষে যেতে পারিস। সব কিছু জানার পরেও তোরা কী করে পারলি? সাদিয়া বললো, ” রূপম ভাই তোকে ভীষণ ভালোবাসে রিমু। তুই যে সত্যিকারের ভালোবাসা পাস সে কারণেই। রিমু কপালে ভাজ ফেলে বললো আমার ভালোবাসার দরকার নেই। এতদিন অবহেলা পেয়ে পেয়ে ভালোবাসা সহ্য হবে না আর। সাদিয়া রিমুকে বললো এখনও অনেক কিছুই তুই জানিসনা রিমু। অনেক কথা অজানা আছে তোর। যেদিন জানবি সেদিন হয়তো অবাক হবি। ততদিন অবধি যেন ঠিক থাকে সবকিছু এই দোয়া করি। আর আমার এতদিনের ভালোবাসা বুঝি একদিনের ভুলের জন্য শেষ হয়ে যাবে? মাফ করে দে না রে রিমু। রিমু কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো সাদিয়াকে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দুই বান্ধবীকে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে দেখে আহানা অভিমানী সুরে বললো, “বাহ্ আমাকে ছাড়াই? কে আমি?” সাদিয়া আর রিমু তাকেও জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

চলবে,,

অপ্রিয় সে পর্ব-১৫

0

#অপ্রিয় সে
#পর্বঃ১৫
#সানজিদা সন্ধি

রূপমের মুখ থেকে “ভালোবাসি” কথাটা শুনে বুকটা ভীষণ মুচড়ে উঠলো রিমুর। ভালোবাসি শব্দটা রিমু আগেও অনেক শুনেছে। অনেকে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। কিন্তু রিমু কখনোই কিছু অনুভব করেনি। রূপমের কথায় ঘোর কাটলো রিমুর। সে বললো, ” কী ব্যাপার? কিছু বলছিসনা যে?”

রিমু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, ” আজকেই আমার বিয়ে ভাঙলো আর আজকেই আমাকে নিয়ে মজা করা শুরু করলেন? আর কতো রূপম ভাই? এবার তো মুক্তি দিন আমাকে। আমি আর ছাঁয়াও দেখতে চাইনা আপনার। আর হ্যাঁ সাদিয়া, সাজ্জাদ তোরা কী করছিস এখানে? শেষ অবধি তোরাও মজা নিতে চলে এলি? বাহ্! সুন্দর তো বিষয়টা। ঋষি ভাইয়া, রিংকি আপু তোমরাও? কেন একটা মেয়েকে সম্পূর্ণ শেষ করে দেওয়া পর্যন্ত কী শান্তি নেই তোমাদের?

রিমুর কথা শুনে সবাই প্রায় সমস্বরেই বললো, ” রিমু ভুল বুঝিওনা। রূপম সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে।”

রিমু ঠান্ডা গলায় বললো, ” আপনারা দুদিনেই বোধহয় রূপম ভাইকে খুব বেশি চিনে ফেলেছেন। আমি তার সাথে এত বছর ধরে আছি আর আমি জানবোনা সে আমাকে ভালোবাসে না কি অপছন্দ করে? শোনেন এসব আজগুবি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করুন। আর রূপম ভাই দোহাই লাগে মুক্তি দিন আমাকে। ”

মুক্তি শব্দটা আনন্দের প্রতিক। তবে এই শব্দটাই আজ ভীষণ ভারী লাগছে রূপমের কাছে। সে মিনমিনিয়ে বললো, ” এতো কঠিন কাজ তুই আমাকে কীভাবে দিলি রিমু? আমি কী অত শক্তিশালী না কি যে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে মুক্তির স্বাদ, আনন্দ দিতে পারবো? তুই বড় পাষাণ রিমু। ভীষণ পাষাণ। এতো কঠিন কাজ কেউ কাউকে দেয়? এতো ভয়ানক আবদার কেউ করে কারো কাছে?”

রূপমের কথাগুলো কারো কান অবধিই পৌঁছালো না। তৃপ্তি রিমুকে বললো, ” দ্যাখো রিমু। রূপম সত্যি ভালোবাসে তোমাকে। আমি ওর বেস্টফ্রেন্ড আর আমি জানবোনা বলো?”

রিমুর কন্ঠস্বর কঠিন হয়ে এলো। চোখমুখ শক্ত করে সে বললো, ” তৃপ্তি আপু একটা কথা বলি। মিস্টার রূপম খান আমাকে ভালোবাসে এ কথাটা আমার কাছে পুরো হাস্যকর লাগলো। সে আমাকে কখনো ভালোবাসেনি। ভালোবাসতে পারে না। আর যদি ধরেও নেই সে আমাকে ভালোবাসে তাতে আমি কী করতে পারি? আপনার কী মনে হয় আমার জীবন থাকতে আমি কখনো তাকে গ্রহণ করবো? আপনি আমার স্থানে হলে কখনো গ্রহণ করতেন তাকে? একটা মানুষ দিনের পরে দিন আমাকে কষ্ট দিয়ে এসেছে আর আজ একটা প্রপোজেই সব কিছু মাফ? জীবন এতো সহজ না কি? গায়ে হলুদের দিন সে আমার কাছে চিরকুট পাঠিয়েছিলো বিয়ে করবেনা বলে। সেই কথাটা যখন সবাইকে জানালাম সে অস্বীকার করলো চিরকুট দেওয়ার কথা। আপনি ভাবতে পারছেন আমার মানসম্মান কতটা বিঘ্নিত হয়েছে? ”

রিমুর কথা শুনে রূপমের গলা ধরে আসছে। মনে হচ্ছে সে এক্ষুনি কেঁদে দিবে সবার সামনে। কিন্তু রূপম একটা ঢোক গিলে কান্না চাপালো। সে বললো, ” রিমু তোকে সাজরত অবস্থায় দেখতে আমার ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিলো। কিন্তু তুই সাজলি না হলুদে। বিষয়টা আমার খারাপ লাগায় আমি ওই চিরকুট তোকে দেই টেনশনে ফেলার জন্য। পরে তুই যখন আমার কাছে এসে কলার চেপে ধরেছিলি তখন আমার রাগ হয়েছিলো বলে অস্বীকার করেছিলাম সব। রেগে গেলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। বড় বড় মাপের মানুষ ভুল করে ফেলে। কতো কাহিনী হয়ে যায়। আর আমি তো একজন সাধারণ মানুষ। রাগ সামলানো আমার পক্ষে কষ্টকর ছিলো। ”

রূপমের কথা শেষ হতে না হতেই রিমু বললো, ” সামান্য টেনশনে ফেলার জন্য আপনি এত বড় কথা বলেছিলেন আমায়? এগুলো কোনো স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে? আপনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। পাবলিক ফিগার আপনি অথচ আপনার এমন ব্যাবহার। শোনেন এরপর থেকে কোনো কাজ করতে গেলে হাজার বার ভাববেন। কোনো কথা মুখ থেকে বের করার আগে একটু ভেবে চিন্তে নেবেন। বলে না? ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না! বিষয়টা ঠিক সেরকমই। নয়তো কোনো ভুল কাজ হয়ে গেলে অনেক বেশি পস্তাবেন আপনি। ”

রূপম জবাব দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না। তার নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কেন এই অঘটনটা ঘটালো সে? এখন তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আল্লাহ কী তবে তাদের জোড়া ঠিক করে রাখেনি? নয়তো একটা ভুলের কারণে রিমু তার থেকে আরো বেশি দূরে সরে যাচ্ছে।

রূপমের চোখে চোখ পড়লো রিমুর। সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো রিমু। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো রূপমের চোখটা বুঝি লাল হয়ে আসছে। কিন্তু কেন হলো এমনটা?

রিমু আর কথা না বাড়িয়ে নিচে যেতে নিলেই রূপম হেঁচকা টানে রিমুকে সামনে দাঁড় করালো। রিমুর হাতটা শক্ত করে ধরেছে সে। যেন কিছুতেই ছাড়বেনা। কিন্তু তার চোখ ভীষণ অসহায়। রিমু জোর গলায় বললো, ” হাত ছাড়ুন রূপম ভাই। আপনাকে তো একদিন বলেইছিলাম আমার এসব একদম পছন্দ নয়। তবে কোন সাহসে আর কোন অধিকারে হাত ধরলেন৷ ”

রূপম আস্তে করে বললো, ” ভালোবাসি রে। ভালোবাসার অধিকারে হাতটা ধরেছি। আজীবন তোর শাস্তি মাথা পেতে নিবো। প্লিজ দূরে সরিয়ে দিসনা আমায়। মরে যাবো রে। এই রিমু প্লিজ।”

রিমু অসহায় বোধ করতে লাগলো এমন পরিস্থিতিতে। কে জানতো কোনোদিন এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে তাকে৷ জীবন কাকে কখন কোন পরিস্থিতিতে দাঁড় করাবে কেউ জানে না। রিমু হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। রূপমের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সে কেঁদে দিবে। রিমু জোরগলায় কিছু বলতে পারলোনা। হাজার হোক মেয়ে মানুষের মন। মায়া, ভালোবাসা, দূর্বলতা দিয়ে ভরা।

রূপম রিমুর চোখে চোখ রাখলো। এদিকে রিমু চোখ সরিয়ে অন্য পাশে চেয়ে আছে। নিচ থেকে সবার ডাক আসলো। রূপম একটু অন্য মনস্ক হতেই রিমু হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো।

রূপম ধপ করে ছাঁদে বসে পড়লো। বুকের পা পাশে তার চিনচিনে অনুভূতি হচ্ছে। মরে যেতে পারলে বোধহয় শান্তি পেতো সে।

সবাই নির্বাক। কারো মুখে কোনো কথা আসছে না। তৃপ্তি রূপমের কাছে এগিয়ে এসে
বললো, ” রূপম সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে শেখ। আর ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয় ঠিক সময়ে। অসময়ে কিছু করে লাভ নেই। এখন চোখের জল ফেলা ছাড়া তোর কিছু করার নেই। ধৈর্য ধরে থাক৷ মেয়েকে যতো কষ্ট দিছিস তার হাজার গুন ভালোবেসে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা কর৷ আল্লাহ তোর সহায় হোক৷

তৃপ্তি আর সাজ্জাদ ছাঁদ থেকে নেমে গেলো। ঋষি রূপমের পিঠে আলতো করে চাপড় দিলো৷ রূপম ঋষির হাত চেপে বাচ্চা ছেলেদের মতো কাঁদতে থাকলো। ছেলেরা সহজে কাঁদেনা। তাদের কান্না সহ্য করা অনেক বেশি কষ্টকর।

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সবাই। রিমু সবার মধ্যে বলে উঠলো আমি হোস্টেলে উঠবো আগামী কালকে। জানানো উচিত বলে মনে হলো। তাই জানালাম। রূপমের বুক পূনরায় মোচড় দিয়ে উঠলো৷ এটা কী বললো রিমু? সে বাড়িতে থাকবেনা কেন?

রূপম বললো, ” তোর কোথাও যাওয়া হবে না। এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার যেন কথা না শুনি কোন। এটাই প্রথমবার বলার সাহস দেখালি আর এটাই যেন শেষবার হয়। ”

রিমু রূপমের কথার জবাব দিলোনা৷ চুপচাপ নিজের খাবার খেতে লাগলো। রূপম বললো বড় অবাধ্য হচ্ছিস ফল কিন্তু ভালো হবে না।

আরিয়ান সারা ঘরে ভাঙচুর করছে। আর চিৎকার করে বলছে তোর ফল ভালো হবে না রূপম খান।

চলবে,,,,

অপ্রিয় সে পর্ব-১৪

0

#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্বঃ ১৪

ঋষি, রূপম, তৃপ্তি, সাদিয়া,সাজ্জাদ, রিংকি সবাই মিলে রূপমকে আইডিয়া দিচ্ছে কীভাবে প্রপোজ করা যায়। সাদিয়া আজ রূপমের ব্যবহার দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে । রূপম এতো মিশুকে এটা সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। যেই রূপমের প্রতি সবসময় ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাতো সে, সেই রূপমের প্রতিই আজকে একটা প্রশান্তি ভাব আসছে। কিন্তু রূপমের এতবছরের করা ভুলগুলোর শাস্তি হিসেবে রূপমকে জলন্ত অগ্নিকুণ্ডের উপর রেখে যদি পোড়াতে পারে তাও বোধহয় শান্তি মিলবে না।

সাদিয়া রূপমকে জিজ্ঞেস করলো, ” আচ্ছা রূপম ভাই আপনিও কী তথাকথিত প্রেমিকদের মতো রিমুর বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে তাকে ভালোবেসেছেন? আমার তো সেটাই মনে হয়। ”

রূপম বললো, ” সাদিয়া এখন যদি আমি তোমাকে বলি আমি রিমুকে কেন ভালোবাসি জানিনা। শুধুমাত্র ভালোবাসি এটাই জানি তবে কী তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে? বোধহয় না। তবে তুমি বিশ্বাস করো বা না করো সত্যি সবসময় সত্যিই থাকবে। যেই জিনিসটা আমি চেষ্টা করলেও অপরজনকে বোঝাতে পারবো না। সেই জিনিসটা বোঝানোর চেষ্টাই করিনা।”

সাদিয়া নিরুত্তর রইলো। রূপম বললো, ” যদি কখনো কাউকে ভালোবাসো তবে কোনো কিছুর পরোয়া না করে বলে দিও। শুদ্ধতম ভাবে। যাতে অপর মানুষটার মনে তোমার প্রতি বিন্দুমাত্র ভুল ধারণা না থাকে। এতে কী হবে জানো? তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে যদি না পাও কোনো কারণে তবে তোমাকে ভালোবাসা প্রকাশ না করতে পারার ব্যার্থতা নিয়ে মানসিক যন্ত্রণা পেতে হবে না। ”

সাদিয়া ছোট্ট করে শুধু হু বললো।

ঘুম থেকে উঠে রিমু সিদ্ধান্ত নিলো সে চলে যাবে বাসা থেকে। তারপর হোস্টেলে গিয়ে উঠবে। রিমুর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হতে আরো এক বছর লাগবে। রিমুর বাসা থেকে ভার্সিটি যেতে মিনিমাম ২০ মিনিট লাগে। তাই সে বাসা থেকেই যাতায়াত করতো। কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে এখানে থাকলে বুঝি সে বাঁচতে পারবেনা। আর একবার যদি সে বাড়ি থেকে বের হয় তবে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে ফিরবে না। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো এই বিষয়টা তার জন্য অনেক বেশি কষ্টকর হবে। তারপর ভাবলো, মানুষ চাইলো যেকোনো কিছু করতে পারে। রিমু প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসপত্র ব্যাগে গোছাতে শুরু করলো। রিমুর রুমটা প্রচন্ড এলোমেলো হয়ে আছে। বিয়েতে তার জন্য কেনা সমস্ত জিনিসপত্র তার রুমে স্তুপ আকারে রয়েছে। সবকিছু গুছিয়ে সে গোসলে ঢুকলো। এখন গোসল না করতে পারলো মরেই যাবে সে।

এদিকে রিমুকে কীভাবে প্রপোজ করা যায় তার সমস্ত প্ল্যান সাজিয়ে ফেলেছে সবাই। রূপম রিংকি কে বললো, ” যা তো! গিয়ে দেখ রিমু কী করছে।”

রিমু তখন গোসল করে সবে বেড়িয়েছে। হাঁটুর
নিচ অবধি থাকা চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে।

রিংকি সবার কাছে ফিরে গিয়েই ছোট খাটো চিৎকার দিলো একটা। উচ্ছসিত হয়ে বললো, ” ইশ রিমু আপুর চুলগুলো কতো সুন্দর। আমি তো পুরাই ফিদা তার চুলে!”

রিংকির কথা শুনে রূপম একটু গলা খাকাড়ি
দিলো। তারপর সবার উদ্দেশ্য বললো, ” সেবার রিমু ক্লাস এইটে। পুরাই কিউট একটা বাচ্চা। নিজেকে সামলাতে পারে না তখনও।কীভাবে নিজের যত্ন নিতে হয় সেটাও তার জানা নেই। কিন্তু তার লম্বা চুলের প্রচন্ড রকমের শখ। জুন- জুলাই মাস তখন। প্রচন্ড গরম। রিমু সকালবেলা গোসল করে স্কুলে যেত। লম্বা চুল হওয়ায় শুকাতো না বলাই বাহুল্য। ভেজা চুল, হিজাব পড়া অবস্থায় গরমে মাথা ঘেমে যেত। সাথে মাথা হিজাব দিয়ে আবদ্ধ থাকায় বাতাস পেতোনা ঠিকঠাক। সবকিছু মিলিয়ে সে ভীষণ ঠান্ডা লাগিয়ে বসলো। টানা আঠারো দিন বিছানায় পড়ে। সবাই বলেছিলো চুল কেটে ছোট করতে। কিন্তু সে কী করবে না কি? তাই যখন সে এক্সামে ফেল করলো তখন আমি তার চুল কেটে দিলাম। যেই মেয়ে নিজের যত্ন নিতে পারে না তার কাছে লম্বা চুল মানে নিজেরও ক্ষতি, চুলেরও ক্ষতি। এই চুল কেটে দেওয়ায় সে আমার থেকে দূরে দূরে থাকতো। আফসোস ছিলোনা আমার। অন্তত এই লম্বা চুল সামলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে তো পড়বে না।”

সাদিয়া, সাজ্জাদ চমকে গেলো। এই চুল কাটার বর্ননা দিয়ে রিমু অনেকক্ষণ কেঁদেছিলো তাদের কাছে। তখন ভীষণ রাগ হয়েছিলো রূপমের প্রতি। আজ কেন যেন রাগটা আসছে না। বরং মনে হচ্ছে যা করেছে ভালোর জন্যই করেছে।

রূপম আবার বলতে লাগলো, ” আগের দিনগুলো কতো সুন্দর ছিলো। জানো রিমু না ম্যাথে কাঁচা ছিলো। টেনেটুনে পাশ মার্কস আসতো তার। সে চাইলেই পরিশ্রম করে ভালো রেজাল্ট করতে পারতো। কিন্তু তার মধ্যে সেরকম ইচ্ছে কমই দেখেছি আমি। রিমুর মডেল টেস্টের সময়কার ঘটনা। যেই পরীক্ষায় ফেলের পরে ওর চুল কেটে দেওয়ার ব্যাবস্থা করেছিলাম আমি। সারাবছর ম্যাথ না করে ওর প্রিপারেশন জিরো। তবে সে জানতো সে পাশ করবেই। খুব টেনেটুনে হলেও করবে। সে যখন ম্যাথ করছিলো তখন আমি পিকনিকের অ্যারেঞ্জ করি বাড়িতে। যাতে তার পরীক্ষা খারাপ হলে দোষটা তার ঘাড়ে না পড়ে। এর আগের পরীক্ষাগুলোতে ভালো মার্কস না পাওয়ায় চাচ্চু খানিকটা বকাঝকা করেছিলো তাকে। আর বলেছিলো এবার ভালো মার্কস তুলতে না পারলে যেন কথা না বলে। রিমু কথা দিয়েছিলো চাচ্চুকে। কিন্তু অসুস্থতা সহ নানান ঝামেলায় তার ম্যাথটা করা হয়ে ওঠেনি ভালো মতো। যখন সে ফেল করলো তখন আমি বলেছিলাম চাচ্চুকে পরীক্ষার আগের দিন এসব গানবাজনা হওয়ায় রিমুর সমস্যা হয়েছিলো। পরীক্ষার টেনশন, আর উচ্চ শব্দে যে কেউই অসুস্থ হবে এটা স্বাভাবিক। এবারের বিষয়ে তার দোষ নেই। যা বলার আমাকে বলো। সেবার চাচ্চু আর কিছু বলেনি।”

কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিলো সবাই। সবটা শুনে সাদিয়া ডিসাইড করলো অন্তত আর যাই হোক কখনো কোনো বিষয়ের দুপিঠ না জানা পর্যন্ত সে জাজ করবে না। যেকোনো বিষয়ের দুটি দিক থাকে। বিষয়টা নিয়ে মানুষদের মধ্যে একেক জনের একেক রকম মন্তব্য থাকে। তাই সবটা জানার পরেই বিচার করা ঠিক হবে। তাছাড়া সবসময় চোখের সামনে যা দেখতে পাওয়া যা তা যে সত্যি হবে এমনটা তো নয়। ঘটনার পেছনেও অনেক ঘটনা থাকে। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হয় ধৈর্য নিয়ে সবটা জেনে তারপর মন্তব্য করা।

কথা অন্য দিকে যাচ্ছে দেখে ঋষি বললো, ” তবে তুই ওর ভালোর নাকি খারাপের জন্য কাজগুলো করেছিস সেগুলো কী সে জানে? তুই যে কারণেই করিসনা কেন তোর জন্য সে কষ্ট পেয়েছে। তাই তোকে শাস্তি পেতেই হবে। ”

রূপম মুচকি হেসে বললো, ” দুনিয়ার সব শাস্তি পেলেও যেন সে আমার হয়। ”

সাদিয়া বললো, ” ভালোবাসায় পূর্ণতা এতটাই জরুরি কি? যেসব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না সেগুলো কি ভালোবাসা নয়? দেখুন সে আপনার হবে কী না সেটাতো সৃষ্টিকর্তাই জানে একমাত্র। আপনাকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় তিনি আপনার জোড়া ঠিক করে রেখেছেন। তাই ধৈর্য ধরে থাকুন। ”

সাদিয়ার কথা শুনে ঋষি তার দিকে খানিকটা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে দেখতে বাচ্চা বাচ্চা হলেও বয়স অনুযায়ী তার ম্যাচিউরিটি অসাধারণ।

সবাই সিদ্ধান্ত নিলো একটু পরই রিমুকে ছাঁদে ডেকে আনা হবে। রিমু এখনো জানে না বাসায় সাদিয়া, সাজ্জাদ এসেছে। বা তার সাথে আজ কী হতে পারে। সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি রেডি হয়েছে।
রিমু শুনতে পেলো রিংকি ছাঁদের উপর থেকে তাকে ডাকছে জোরে জোরে। বিষয়টা কিছু বুঝলোনা সে। তবে কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে ভেবে ছাঁদের দিকে ছুটে গেলো। প্রতিদিন রাতের বেলা ছাঁদ আলোকিত থাকলেও আজ ঘুটঘুটে অন্ধকার। রিমু তার হাতে থাকা ফোনের ফ্লাশলাইট অন করে উপরে রিংকি, রিংকি বলে উঠতে থাকলো। ছাঁদের দরজা খুলে রিমু তার সামনে কতগুলো মানুষের অবয়ব দেখতে পেলো। কিছুক্ষণের জন্য তার আত্মা কেঁপে উঠলো। এমন পরিস্থিতিতে যে কেউই ভয় পাবে। রিমু ফ্লাশলাইটটা তাদের মুখের দিকে দিয়ে দেখতে যাবে অমনি শব্দ করে আতশবাজি ফুটে উঠলো। ” I LOVE U RIMU ” আকাশের ভেসে ওঠা এই লেখাটা দেখে রিমুর মনে হলো কিছুক্ষণের জন্য তার হৃদ স্পন্দন মনে হয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে। এরপর পরই আলোকিত হয়ে উঠলো পুরো ছাঁদ। রিমুর সামনে সাদা পাঞ্জাবি পড়ে রূপম দাঁড়িয়ে। তার হাতে অনেক গুলো গোলাপ। পাশে অনেকগুলো পরিচিত মুখ। রিমু কী করবে বুঝলোনা। সাদা পাঞ্জাবিতে শুভ্র লাগছে রূপমকে। চাপ দাঁড়ি সংবলিত এই ছেলেটাকে এই অবস্থায় কেউ দেখলে নিঃসন্দেহে থমকে যাবে। রিমুর বুঝলো তার হাত পা কাঁপছে। এর মধ্যেই রূপম তার সামনে এসে দাঁড়ালো। অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে বললো, দেখ হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করতে পারবোনা। হাঁটুতে অনেক ব্যাথা। এসব তথাকথিত প্রপোজে যদিও আমি বিশ্বাসী নই তবুও এভাবেই করলাম , ” শোন রিমু! আমি তোকে ভালোবাসি!”

চলবে,,,,,