গল্পের নামঃ- #আমি_শুধুই_তোমার ❤️🍂
Writer:- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৭
নিচে ইভান কে সবাই অনেক বকে, আর ঐদিক ফারিদা। নিজের সব জামা কাপড় গুছিয়ে লেদারে ভরছে, আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে আর ইভানকে বকছে
—–হারামি বদ পুলা। বিয়ে হয়েগেছে তাও তার অন্য মেয়ের জন্য খারাপ লাগে,থাক তুই তোর মিরাকে নিয়ে। কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়া। সালা হুতুম পেঁচা, খচ্চর তোকে আমি ডিভোর্স দিবো, কান্না করতে করতে। তখনই ইভান রুমে আসে দেখে ফারিদা কান্না করছে আর নিজের জামা কাপড় দিয়ে লেদার ভরতি করেছে। ইভান গিয়ে ফারিদার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে।
—-কি করছো? এইসবের মানে কি? ফারিদা রেগে চিৎকার করে বলে
—-অন্ধ আপনি চোখে দেখেন না? আমি থাকবো না আপনার সাথে,আর আপনিও তো এই সম্পর্কে খুশি না। তাই বাবাকে বলে আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। ডির্ভোসের কথা শুনে বলে
—–কানের নিচে আরেকটা দিব,কে দিবে ডিভোর্স তোকে, তুই আমার সাথেই থাকবি। বলেই লেদার থেকে ফারিদার জামা কাপড় বের করে দেয়। ফারিদা বলে
—-সমস্যা কি আপনার কি চাই? ইভান বলে
—-আমার কোনো সমস্যা নেই বুঝতে পারছো?আর তুমি কোথাও যাবে না। আমি রেগে বলি
—-আমি যাবো। সব নতুন করে শুরু করবো। ইভান বলে
—-হ্যা আমার সাথে। আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
—-বিয়ের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই গায়ে হাত তুলেছেন, আর কিছু দিন পর তো আমাকে মেরেই ফেলবেন। ইভান হুংকার শুনিয়ে বলে
—-ফারিদা….আমি বলি
—-আওয়াজ নিচে। ইভান আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে যাই তার দেওয়া চেন আর দুল গুলো খুলে তার হাত দিয়ে দিলাম আর বললাম
—-আপনার মন মতো কাউকে পেলে তাকে দিয়েন। ইভান সেগুলো হাতে মুটকরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে বলে
—-এগুলো তোমার, পরলে পরো না পরলে ফেলে দাও। আমিও রেগে গিয়ে তার হাত থেকে সেগুলো নিয়ে নিলাম আর সাথে আমার লেদারটাও সেটা নিয়ে নিচে নামতে যাবো তখনই ইভান দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।আমি বললাম
—-সরুন।সে কিছু বলতে যাবে তখনই অংশ এসে হাজির আমার হাতের লেদাররা দেখে অংশ বলে
—-কোথাও যাবে ভাবি? আমি বললাম
—-অংশ আমাকে একটু আমাদের বাড়ি দিয়ে আসবে? অংশ বলে
—কেনো? আমি বললাম
—-পারবে কি না বল? অংশ আমার হাত থেকে লেদারটা নিয়ে নিলো। আমিও বের হয়ে গেলাম ইভানও এলো আমার পিছু পিছু। ইভানের মা-বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম
—-বাবা-মা, আমি আমাদের বাসায় যাবো। আমার শাশুড়ী মা বলেন
—-মারে ইভান রাগের মাথায় হাত তুলেছে মাফ করে দে। আমি রেগে গিয়ে বলি
—-কিসের এতো রাগ উনার, জানা নাই শুনা নাই তার রাগ। ইভান কিছু বলতে যাবে তখনই ইভানের বাবা বলে
—-মা তুই যা। যতদিন থাকতে ইচ্ছে করবে থাকবি। আমিও কথা বারালাম না চলে আসলাম বাবার বাড়ি আমাকে দেখে,মা-বাবা সবাই অবাক। তারপর মাকে সব খুলে বললাম মাও বললো ইভান রাগের মাথায় এসব করেছে, আমিও রেগেমেগে লেদারটা নিয়ে নিজ রুমে চলে আসলাম। রুমের দরজা জানলা লাগিয়ে একটা ঘুমের পিল নিলাম, এখন আমার ঘুমানোটা বেশ দরকার, তাই দিলাম এক ঘুম। ওপর দিকে ইভানের সম্পূর্ণ বাসা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এই কয়দিন রুমটাতে ফারিদার আভাস ছিল হাসিতে মেতে থাকতো আর এখন পিন পিন নিরবতা বিরাজমান। ইভানের মা ইভানের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে
—-তুমি মেয়েটাকে কেনো যেতে দিলে? ইভানের বাবা রাগী চোখে তাকিয়ে বলে
—-যাওয়াটা কি স্বভাবিক না, আর তোমার ছেলেই বা কেমন, আমরা মানি মিরা নরমাল না ওর মেন্টালেটি সমস্যা আছে কিন্তু সেটা তার ফারিদাকে জানানোর ই দরকার ছিল। আর মাঝ রাতে যদি তোমার রুমে কেউ নক করে তাহলে তোমার কেমন লাগবে? ইভানের চাচি বলে
—-হ্যা, ইভানের গায়ে হাত তুলা উচিত হয়নি। ইরিন ওরা সবাই চুপ। রাতের দিকে ফারিদার ঘুম ভাঙলো দেখে রাত ১০টা বাজে। সে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো দেখে তার বাবা মা আর ফারিন বসে আছে। সে গিয়ে তার বাবাকে বলে
—-আমি এখানে থাকলে কি তোমার সমস্যা হবে? মেয়ের এমন কথা শুনে আতঁকে ওঠে ফারিদার বাবা, সে বলে
—-কেনো তুই তো ভুল করিসনি। আমি বললাম
—-আমি কাল থেকে কলেজ জয়েন করবো। মা কিছু বলবে তার আগেই বাবা বলে
—-ওকে। আমি আর দাড়ালাম না চলে এলাম নিজের রুমে। এসে অনলাইনে ঢুকি আর আদিলা,নাহীদা কে কল করে জানিয়ে দেই আমি কলেজ জয়েন করছি। ওরা খুশি। আমিও দেখাবো তাকে ছাড়া আমি ভালোই থাকতে পারবো। রাতে ইভানের ঘুম আসছেনা। নিচে তাকে খেতে ডেকে যায় ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তার বাবার ভয়ে যায়।আর দেখে ইরিন সোফায় বসে বসে, ফারিদার সাথে কথা বলছে। ফারিদা বলে
—-কাল থেকে কলেজ জয়েন করব দোয়া কর। আর বাবা মা কে বলো আমি ভালো আছি। ইরিন বলে
—-ভাইয়াকে কিছু বলবো না? আমি বললাম
—-না, ভালো থেকো পরে কথা হবে। ইভান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে খেতে বসে কোনো রকম খেয়ে নিজ রুমে চলে আসে, কিন্তু এখানে এক একটা কোনায় রয়েছে ফারিদার ছোয়াঁ। ইভান ঠিক করে নিল কাল সে ফারিদার সাথে দেখা করে কথা বলবে আর সরিও বলবে। কিন্তু কালতো তার হসপিটালে যেতে হবে।তাই কালকে আর যাওয়া হবে না।
সময় কারো জন্য থেমে থাকেনি থাকবেও না, সময় চলে নিজের গতিতে,আর এই সময়ের সাথে বদলে যায় আপন পর সব,মানুষগুলোই। ফারিদার খুব মনে পরে তার হুতুম পেঁচার কথা কিন্তু রাগে সে প্রকাশ করে না। ইভানের সব ছবি সোশাল মিডিয়া থেকে কেটে দিয়েছে। আর এই একসপ্তাহে ইভান কম হলেও হাজার বারের উপরে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে কিন্তু ফারিদা রাগের বাসে তা একসেপ্ট করেনি। কেনেই বা করবে, আর মেসেজেও ইগনোর করে রেখেছে পড়ে ঠিকই কিন্তু রিপ্লাই দেয়নি। মুটামুটি পরীক্ষাার পিপারেশন নিচ্ছে ফারিদা সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা তারপর অনার্স। অনেক স্নপ্ন ডানা মেলতে শুরু করেছে।ইভান এবার তার সাপোর্ট করলেই হয়।
১ সপ্তাহ হয়েগেলো, ফারিদা ইভানের কোনো খুঁজ নেয়নি, সে ফারিদাদের বাসায়ও গিয়ে ছিল কিন্তু ফারিদা ছিল তার ফ্রেন্ডর বাসায়,তাই ফিরে আসে। আজ ইভানের ছুটি, সেই কখন থেকে কলেজের গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছে। তার প্রয়শীকে এক নজর দেখবে বলে। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এক পর্যায়ে ফারিদা চলে এলো। সাথে তার ২ বান্ধবী তারও সবটা জানে কারণ তারা অনেক ক্লোজ। ফারিদাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে, রেড এন্ঞ্জেল ড্রেসে বেশ মানিয়েছে তাকে।আর চুলগুলো মেডামে হাইলাইট করেছে। ফারিদা ইভানকে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ইভানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কলেজে ঢুকে যায় সে। ইভান চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে ফারিদার যাওয়ার পানে। এই একসপ্তাহে প্রায় হাজার বারের ওপরে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছে ফারিদাকে। অনেক নক দিয়েছে কিন্তু নো রিপ্লাই…। ১টার দিকে কলেজ ছুটি হয়েগেলো, ফারিদা গেটের বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথে….
গল্পের নামঃ- #আমি_শুধুই_তোমার❤️🖤
writer:-আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ-০৬
রাতের বেলা আমরা বেশ কিছু সময় আমরা ছাঁদে ছিলাম তারপর হালকা কিছু খেয়ে নিলাম।আর পায়েশটা ভালোই হয়েছে, সবাই ভালো বললো কিন্তু হুতুম পেঁচা টা কিছু বললো না। রাগটা আরো চেপে ধরেছে। আমি কালই বাবার বাড়ি চলে যাবো।ঐ সব ভাবছিলাম তখনই সে আমার কানে কানে বলে
—-পায়েশটা বেশ ভালো হয়েছে। এই কথাটাই আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো নিমেষেই সব রাগ মাটি হয়ে গেলো। আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম
—-ধন্যবাদ। সেও প্রতি উত্তরে মুচকি হাসি দিলো। কিন্তু আমাদের এই সুখ বেশিসময় স্হায়ী হলো না। মিরা এসে বলে মনে ইভানের হাত ধরে বলে
—-ইভান ভাইয়া চল আমরা আইসক্রিম খেতে যাই। কিন্তু ইভান নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে
—-দেখ মিরা এখন অনেক রাত হয়েছে আমরা ঘুমাতে যবো। বায়। মনে মনে তো খুশিই হয়েছিলাম সবে মাত্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি। ওমনি দরজায় কেউ নক করে পারেতো ভেঙে ফেলে। ইভান আর আমি চমকে যাই। কারো কিছু হলো না তো, দরজা খুলে দিকে মিরা দাঁড়িয়ে। দরজা খুলার সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ইভানকে আর বলতে লাগে
—–ইভান ভাইয়া আমি তোমার সাথে ঘুমাবো, আমার ঐ রুমে ভয় করছে। ইভান বলে
—–কেনো ইতি, নাতাশা (ফুপির মেয়ে) ওরা কোথায়,আর ছাড় আমাকে।আমার তা দেখে গা জ্বলছে। মিরা বলে
—-তুমিতো জানই আমি ওদের সাথে ঘুমাই না, একা ঘুমাই কিন্তু আজ আমার অনেক ভয় লাগছে। আমি এবার আর চুপকরে থাকতে পারলাম না বলেই ফেললাম
—–তোমার বুঝা উচিত, এখন ইভান বিবাহিত, আর সে মেয়ে না ছেলে। তোমার যদি এতই ভয় লাগছে ইতি ওদের রুমে গিয়ে নক করলেই পারতে। ইভান আমার দিকে চোখ পাকিয়ে আছে। সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে
—–বিয়ে করেছি জানি সেটা আমি, কিন্তু ও তোমার বড় সম্মান দিয়ে কথা বলো। মিরা এখানেই শুবে তুমি আর ও বিছানায় ঘুমাও আমি সোফায় শুয়ে পরছি। আমি আর পারলাম না কিছু না ভেবেই তাদের মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুম ত্যাগ করলাম। কান্না পাচ্ছে খুব কেন এমন করেন উনি? কি করেছি। এতটা ঠান্ডা বাইরে তারপরও আমি বাগানে এসে ঢের দাঁড়িয়ে আছি। মাঝে মাঝে হালকা হালকা বাতাসও বইছে। আর কিছু বলবো না আমি কি করে বলবো সে যে এমনটা করবে কে জানে? কিছু সময় পর আমি বাসায় চলে আসি দেখি ইভান ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে। আমি তাকে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম অন্য রুমে। রুমটা খুব বড় না হলেও বেশ সুন্দর দরজা লক করে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুমতো শুধু মুখের কথা এমনি ঘুমের ভাঙ ধরলাম। সকালে ঘুম থেকে আগে উঠে যাই ওপর থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি ইভান ড্রয়িং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে আছে। একটুপর তারও ঘুম ভাঙলো। আমি তাড়াতাড়ি সরে এলাম। নিজের রুমে গিয়ে দেখি মিরা আমার একটা শাড়ি পরছে একটা বেকলেস ব্লাউজ এর সাথে। শাড়িটা আমার বেশ পছন্দের ছিল কারণ সেটা আমাকে দিয়েছিল আমার শাশুড়ী মা। আমি মিরাকে বললাম
—–কারো কিছু পরতে হোলে আগে যে বলতে হয় তা কি আপনার জানা নেই। মিরা আমার দিকে তাকিয়ে বলে
—-তো কি হয়েছে? কি করবা তুমি?কিছু করতে পারবা? তখনই ইভান রুমে আসে দেখে মিরা শাড়ি পরেছে। সে ইভানকে দেখে তার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে
—- কেমন লাগছে আমাকে?
—–দেখ ভালো লাগছেনা যা। মিরা বলে
—-না আগে বলো তারপর। ইভান আমার দিকে তাকিয়ে বললো
—-অনেক ভালো লাগছে যা এবার।
আমি শুধু নিরব দর্শকের মতো চেয়ে দেখছি। এই ইস্টার জলসা আর ভালো লাগছে না তাই কার্বাড থেকে তোয়ালে নিয়ে একটা থ্রিপিছ নিলাম আর শাড়ি পরবো না। মিরাও চলে যায় আমি ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলাম দেখি ইভান বসে আছে। আমি কিছু বললাম না। ইভান এখন নিজের খারাপ লাগছে কালকে বেশি বেশি করে ফেলেছে এভাবে বলাটা উচিত হয়নি তার কিন্তু সরি যে বলবে সে সুযোগটা ফারিদা তাকে দেয়নি। ফারিদা নিচে যায় নাস্তা বানাতে সবাই একসাথে বসে আছে। তারপর যখন নাস্তা টেবিলে দেয়। নাতাশা বলে
—–ভাবি আজকে দুপুরে তোমার হাতের রান্না খাবো। কি বলিস,অংশ, ইরিণ,ইতি,মিরা,মেহেদী? সবাই বললো তারা আমার হাতের রান্না খাবে আমি আর না করতে পারলাম না। সেখানে ইভানও উপস্থিত ছিল। মিরা বলে
—-আমার জিরা ফাঁকিতে সমস্যা আছে। তাই আমার জন্য যাই করবা জিরা ফাঁকি দিবে না। আমিও কিছু বললাম না। ইভান আর আজকে হসপিটাল যাবে না কারণ সবাই একসাথে জোর করেছে তাই একদিন ছুটি নিলো কিভাবে কি করলো কে জানে। দুপুরে রান্না করলাম সবার জন্য পোলাও রোস্ট আর, মরগির মাংসের ভুনা। সাথে সালাদ আর লাচ্ছি বানালাম। আর মিরার জন্য তরকারিতে জিরা ফাঁকি দিলাম না তারপর গেলাম গোসল করতে। রুমে গিয়ে দেখি ইভান নেই হয়তো ওয়াশরুম। পানির আওয়াজ আসছে। কিছু সময় পর সে বললো
—ফরিদা তোয়ালে টা একটু দাওতো। আমি আর এবার রাগলাম না গিয়ে চুপচাপ তোয়ালেটা নিয়ে দরজায় নক করলাম। ইভান ভেবে ছিলো ফারিদা রেগে যাবে কিন্তু ফারিদা রাগে না। সে দরজাটা খুলে নিজের হাত বারিয়ে দেয় আমি তোয়ালে দিতে গেলে সে আমার হাত ধরে(কি ভাবছেন টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে যাবে ফারিদাকে ইহোজন্দীগিতে এমন করতে দিমু না🥴কারণ আমি এতো ভালো না😁) আমি সাথে সাথে হাতটা সরিয়ে নিলাম।
দুপুরে খাওয়ার সময় সব ঠিক ঠাকই ছিল কিন্তু হাঠাৎ করেই মিরা কাশতে শুরু করে, পানি খাওয়াতে কাজ হয় না। বেচারির চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। দেখেতো আমার নিজেরই খারাপ লাগছে। ইভান তো নিজের সোর্বচ্চো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একসময় অনেক কষ্টে ইভান সব কিছু ঠিক করে নেয়, মিরা এখন ঘুমাচ্ছে। বাসার সবাই শান্ত হয়ছে এখন। কি অবস্হা হয়েছে মেয়েটার। ইভান আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই একটা চড় বসিয়ে দিলো আমার গালে সবার সামনে। উপস্থিত সবাই অবাক। ইভান আমার গাল চেপে ধরে বলে
—–তুমি যে এতোটা নিচ আগে জানতাম না। একটা শাড়ি আর কাল রাতের কাহিনীর জন্য তুমি মিরার সাথে এমনটা করলে। আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আমার শাশুড়ী মা বলে
—–ইভান কি হচ্ছে টাকি?ফারিদা কি করেছে এখানে? ইভান বলে
—–মিরা যে সকালে বললো তার জিরা ফাঁকিতে সমস্যা তাহলে, ও যেনে শুনে এমনটা কেনো করল? ওর জন্য আজ মিরার এই অবস্থা,আরেকটু হলে মিরা মারাও যেতে পারতো। আমি বলি
—-বিশ্বাস করুন আমি।ইভান বলে
—-হয়েছে হয়েছে, তুমি এটা না করলেও পারতে। একটা শাড়িইতে যাও কালকে তোমার রুমে ভরে দিবো শাড়ি দিয়ে।কিন্তু নিজের চিন্তা ভাবনা ঠিক কর। আজ যদি মিরার কিছু হয়ে যেতো?
এবার আমি রেগে যাই আর পারবো না সহ্য করতে যেটা করেনি সেটার দোষ কেন আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিবে।
—-এই একদম বাজে বকবেন না। আর আমি না আপনি নিচ। কিভাবছেন টাকি আমাকে খেলার পুতুল আমি। বিয়ের রাতে বলেন বপনি সোফায় শুন বিছানায় না বিয়েটা আমার অমতে হয়েছে,মানলাম। বিয়ে আপনার অমতেই হয়েছে। আর কালকে রাতের কাহিনীটা কি সামান্য ব্যাপার ছিল? মাঝ রাতে মিরা গিয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরে বলে আমার ভয় করছে। আমি খারাপ কি বলেছিলাম এটাইতো এখন আমরা বিবাহিত আমাদের প্রাইভেছি বলতে কিছু আছে? ওকে সরি আমার ভুল হয়েগেছে। কিন্তু আমি খাবারে কিছু মিক্স করিনি। আর আমি ওপরের দিকে পা বাড়াই। আমার শাশুড়ী মা বলে
—-মারে শুন মাথাটা ঠান্ডা কর। আমি বলি
—প্লিজ মা , আমার শশুড় মসাই বলে।
—-ওকে যেতে দাও। মা তুমি যাও। আমি আর দাড়ালাম না কান্না করতে করতে। ওপরে আসছিলাম তখনই একটা সার্ভেন্ট ইভানের কাছে ভয়ে ভয়ে গিয়ে বলে
—-স্যার মাহিরা মেম কিছু করেনি। আমি দেখলাম যে সে জিরা ফাঁকি দেয়নি, তাই আমি দিয়ে দিয়েছি। তখনই ইভানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে আর মনে পরে একটু আগের কথা কতগুলো মানুষের সামনে সে ফারিদার গায়ে হাত তুলেছে। তখনই ইভানের বাবা গিয়ে একটা চড় লাগিয়ে দেয় ইভানের গালে।ইভানের বাবা বলে
—–নিজেদের ঝগড়া নিজেদের রুমে মিটাবি,আর আমি যেখানে এতো বছরেও তোর মায়ের গায়ে হাত তুলিনি আর তুই বিয়ে করে সেরে পারলিনা। যারা মেয়েদের গায়ে হাত তুলে তারা পুরুষ না কাপুরুষ, আর তুই আমার ছেলে হয়ে কিভাবে হাত তুললি? ইভান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে, আমি আর পারলাম না দৌড়ে চলে এলাম রুমে। তার মনে আমার জন্য ভালোবাসা আছে কিন্তু তার সেটা আমি কাছে থাকলে সে কোনোদিন ও ভালোবাসি বলবে না বলবে না #আমি_শুধুই_তোমার না বলুক আর বলতে হবে না। আর রাগটাও আছে রুমে গিয়ে নিজের বেগ গুছিয়ে নিলাম। বিকেলেই চলে যাবো
—-এর মানে আপনি শিখার করছেন আপনি হুতুম পেঁচা, কি যে শান্তি লাগছে। ফারিদার কথায় ইভান বোকে বনে গেলো, এই মেয়ের সাথে কথায় পাড়া যাবে না বাপু,বড্ড চালাক। ইভান আমাকে উদ্দশ্যা করে বলে
—-তো আপনি কলেজ জয়েন করবেন কবে থেকে। কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার মাথায় আস্ত একটা বাস এসে ঠুস করে পরলো। পরলো বললে ভুল হবে আমাকে চাপা দিলো চলিত ভাষায় (বিদ্রঃ ফারিদা সাধু ভাষা কম পরে), এখন সাথ-নিভানা-সাথীয়ার মধ্যে যেই ধূমতানা মিইজিকটা বাজতো আমার মনে হচ্ছে ঠিক আমার সাথে ঠিক তেমনই। আমি বিয়েতে রাজী হলাম কেনো? এই কলেজে কে তো ডির্ভোস দিয়ে দিবো ভাবছিলাম, আর এই উনিতো তার শতীনের কাছে আমাকে দিয়ে আসতে চায়। আমার স্বপ্ন ছিল বিয়ে হচে সংসার করবো ১০/১২ টা বাচ্চা কাচ্চা হবে ওদের মানুষ করবো। কিন্তু এই নিরামিষ নামক হুতুম পেঁচার আমার সুখ দেখে সইলো কই। আমি বললাম
—–জানিনা বলেই রুমের লাইট ওফ করে সোফার দিকে পা বাড়াতেই সে এসে আমেকে বলে।
—–সোফায় শুলে উগান্ডায় পাঠাবো, বিছানায় শুবেন চলেন। আমি তার দিকে সুরু চোখে তাকিয়ে বলি
—-আপনিতো চাইতেন,তো সমস্যা কই? আমি এখানেই শুতে পারবো। সে বলে
—-ওকে পারলে শুয়ে দেখান বলেই, ওয়াশরুমের দিকে গেলো। আর এক মগ পানি নিয়ে হাজির আমি এক দৌড়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে বললাম
—-আমিতো মজা করছিলাম, তুমি আমার কিউট হুতুম পেঁচা, নিরামিষ পাতী হাঁস, আমার তারছিড়া হাসবেন্ড, প্লিজ এই ঠান্ডার সময় আর পনি দিয়ে গোসল করতে আমি চাই না। ইভান ফারিদার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে সে ভেবে পাচ্ছে না, এটা আদর করে ডাকা ছিল নাকি ইডিরেক্টলি অপমান করা। ইভান কিছু না বলে চলে গেলো আর পানিটা রেখে চলে আসে। আবার বৃষ্টি শুরু বাইরে ঝড়,, বতাস বইছে তীব্র গতিতে। বাতাসের কারণে বলকনির দরজাটা খুলে যায় আমি যাই ওটা লাগতে কিন্তু দরজা লাগানোর সময় ভুলবসত আমার হাত কেটে যায়। আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে
—–আহহহহ্ আম্মু। আমার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে ইভান, আমি তাকিয়ে আছি আমারা কাটা হাতটার দিকে, সে কিছু সময় আমার হাতটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
—-গাধাঁ নাকি তুমি? দেখ কাজ করতে পারোনা, পারো তো শুধু নাচতে।৷ তার মুখে তুমি ডাকটা আমার ভালোই লাগছে কিন্তু বকাটা আমার পেটে হজম হলোনা। আমরা আবার সব কিছু হজম হয়না। আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম
—-ইচ্ছে করে করিনি, বোকা দিবেন না বলে দিলাম। সে আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে
—-দরকার নেই আমি নিজেই করতে পারবো। বলে যেতে নিলে সে আমাকে অবাক করে দিয়ে কোলে তুলে নিল আর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে
—-যেটা Ask করছি সেটা বলো। আমি তাকে বললাম কোথায় তারপর সে সটা নিয়ে এসে আমার কাছে বসলো, তুলোয় সেভলন লাগিয়ে নিয়ে জোরে জোরেই আমার হাতের রক্ত গুলা পরিষ্কার করতে থাকে এর মানে সে বেশ রেগে আছে, তারপর হাতে বেন্ডেজ করে দিয়ে, বক্সটা জায়গা মতো রেখে এসে লাইট ওফ করে শুয়ে পরে। কি রাগরে বাবা, হুতুম পেঁচারা বুঝি রাগও করে? হ্যা আমারটা করে। আজকে জানলাম। যাই হোক দিলাম এক ঘুম। তারপরের দিন সকাল সকাল ওঠে সে কোন রকম খেয়ে আমাকে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। কি অদ্ভুত তাই না, আমাদের জীবন যেমন আল্লাহর ওপর নির্ভর কিছুটা ডক্টর এর ওপরও যেমন, একটা ভুলের কারণে রুগীর জীবনও যেতে পারে আবার তাদের কারণে অনেক রুগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে নিজ আপন মানুষদের কাছে। সারাটাদিন কাটলো আমার এটা ঐটা করে। ইরিনে আর অংশের সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে গেলো। বাড়ির সবাইতো আমাকে পছন্দ করেই এনেছে। গিয়েছিলাম রান্না ঘরে মা বললো যে বিকেলে কিছু বানাতে আমার রান্না করতে হবে না। ভাবা যায় এগুলা? মানে কেমনে আমিতো ভাবছিলাম আমার শাশুড়ী মা হবেন রিনা খানের মতো, এতো দেখি কত ভালো। আর ইভানের চাচির কথা না বললেই না সেও আমাকে বেশ পছন্দ করেছেন। কিন্তু সারাদিনে আর হুতুম পেঁচার খবর নাই, বললে কি হবে ব্যস্ত মানুষ ডক্টর বলে কথা। ওপর দিকে রাগে ফুলছে ইভান আর ভাবছে
—কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা বর কে একটু ফোন করে বলবেতো আপনি কিছু খেয়েছেন, না খেলে সময় করে খেয়ে নিয়েন আবার আমাকে বলে আমি নাকি নিরামিষ নামক হুতুম পেঁচা ?বাসায় যাই দেখাবো মজা
বিকেলের দিকে রান্না ঘরে যাই, কি রান্না করব ভাবতে ভাবতে আমার দিন পার ইয়ে মানে বিকেল পার। যাই হোক সব কিছু বাদ দিয়ে পায়েশ বানালাম। ইরিনের কাছ থেকে জেনেছি তার পায়েশ নাকি খুব পছন্দের। তার জন্যই আমার এত কষ্ট এবার তার কাছে ভালোলাগে আমি আমার জীবনকে ধন্য মনে করব। কিন্তু তার আসার এখনও কোনো নাম গন্ধ কিছু নেই।
ছাঁদটা সাজানো হচ্ছে রাতে বারবিকিউ পার্টি হবে। আর সন্ধ্যার দিকে ইভানের খালতো ভাই বোন আর ফুপির ছেলে মেয়ারা এসেছে । সবাই একসাথে বসে গল্প করছি আর সামনেই চিকেন রেডি করছে আম্মু আর কাকিমা। সবার সাথে আমার ভাব হলেও মিরা মানে আমার খালা শাশুড়ী মেয়ে আমাকে তেমন একটা পছন্দ করেনি । গাড়ির আওয়াজে আমি দৌড়ে রেলিঙের কাছে গেলাম দেখি আমার উনি এসেছেন। মানে আমার হুতুম পেঁচা, পাতী হাঁস। আমি আম্মুকে বলে নিচে গেলাম আর দরজটা খুলে দিলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমি ভাবছি কি হলো এটা? আমিও তার পিছন পিছন রুমে গেলাম। সে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো, এমন করছেন কেন উনি? আমিও কিছু না বলে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সে আসার পর তাকে বলি
—চলেন খাবেন। সে আমরা দিকে তাকিয়ে বলে
—-আমার খবর না রাখলেও তোমার হবে। সারাদিনে একটা ফোন পর্যন্ত করোনি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি সে আমার তাকানো দেখে বলে
—–কি হয়েছে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছো কেন?আমার কি নতুন কান আর চোখ গজিয়েছে নাকি? আমি হাসি দিয়ে বললাম
—-না আপনাকে এভাবেই কিউট লাগে, আর আমার ফোনে তো আপনার নম্বর সেভ করা নাই কিভাবে কল দিব বলেন? ইভান বলে
—-ঠিক আছে ঠিক আছে। বাসার আর সবাই কই? তাদের কাছে চাইলেই পারতে। আমি বললাম
— ছাঁদে বার্বিকিউ পার্টি করবে সবাই চলেন। আপনার আন্টি আর ফুপিও এসেছে।সে বলে সে যাবে না, আর আমাকে ওল্ট বকে দিলো। আমি এবার রেগে যাই আর বলি
—একে তো নিজে লেট করে আসছেন, আবার আমাকেই বকছেন? আর আমার কাছে আপনার নম্বর ছিলা না আর আমি নতুন তাই কারো কাছে চাইতেও পারিনি, আপনি কি করছেন বসে বসে কোন ক্ষতের ধান কাটছেন যত্তসব।
বকে তাকে ফেলেই চলে আসি। কালকে থেকে শুরু করছে এমন করা। ছাঁদ গিয়ে বসে পরলাম, কিন্তু কিছু সময় পর সেও চলে এলো সে আমার পাশে বসতে চাইলেি, মিরা বলে
—-ইভান ভাইয়া তুমি আমার পাশে বস। আমিও কিছু বললাম না দেখি কি করে, বসুক যেখানে ইচ্ছা এই মেয়ের কোলে গিয়ে বসুক যত্তসব। আমি মন খারাপ করে বসে রইলাম, সবাই একসাথে বলে ট্রুথ আর ডেয়ার খেলার কথা, তারপর চমরা সবাই খেলি। আমার পালা যখন আসে আমি বলি আমি ট্রুথ নিব মিরা আমাকে প্রশ্ন করে
—-এই মেয়ে তুমি এই পর্যন্ত কয়টা প্রেম করছো? কথাটা শুনে আমার গা জ্বলে যায়। আমি নিজেকে শান্ত করে উত্তর দেই
—-একটাও না। আর একটা কথা মিরা হয়তো আমি আপনার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু সম্পর্কে বড় তাই ভাবি ডাকলে খুশি হব। আমার কথায় মিরা বেশ লজ্জা পায় আর সবাই মুখ টিপে হাসছে। সে আমার দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে ইশারায় সরি বলে। বলুক আমার কি আমিতো বেশ রেগে আছি তখনও বকা দিছে আর এখন বসছে এই মিরা প্যারার সাথে। কিছু সময় পরই হুতুম পেঁচার বারি চলে আসলো। সে ডেয়ার পিক করলো, সবাই বললো তাকে গান গাইতে কিন্তু সেও শর্ত দিলো আমাকেও গাইতে হবে তার সাথে। আমি রাজি না হলেও পরে সবার জোরাজুরিতে রাজি হই, অংশ নিচে গিয়ে গিটার নিয়ে আসে আর দিয়ে দেয় ইভানের হাতে। ইভান গিটার নিয়ে গাইতে লাগে
—-লক্ষ্মী সোনা রাগ করে না একটু,হাসো প্লিজ ভাললাগেনা আর হবে না করছি যে প্রমিজ।
ভেংচি দিয়ে ফারিদাও তাল মিলালে
—একটু পরে ভাঙবে প্রমিজ এটাই তোমার স্বভাব তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসার অভাব। ইভান মুচকি হাসি দিয়ে বলে
—সারাটাদিন ছুটাছুটি কার জন্য বলে? তাইতো তোমায় সময় দিতে একটু দেরি হলো? (বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
গল্পের নামঃ- #আমি_শুধুই_তোমার❤️🖤
writer:-আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৪
বিকেলে বৃষ্টি হওয়ার ফলে এখন বেশ ঠান্ডা লাগছে। আর বিকেলের সেই সময়েরটা কথা ভেবে ব্লাসিং করছি,দিনটা সুন্দর করে আমার ডায়রির পাতায় লিখে রাখবো, কিন্তু এটা কেমন হলো শুনেছি ছেলেরা নাকি আগে কিস করে কিন্তু আমি মেয়ে হয়ে, তো কি হইছে মেয়েরা ছেলেদের থেকে কোনো দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই, যা করছি ভালো করছি। আমার পাতী হাঁস আমার হুতুম পেঁচা আমারইতো সব একটা কিসই তো করছি এনিয়ে এতো ভাবার দরকার নাই, কিন্তু এখন আমার কালা গরম পানি ইয়ে মানে ব্লাক কফি খেতে ইচ্ছে করছে। তাই ড্রয়িং রুম থেকে দৌড়ে গেলাম কিচেনে, আর বানাতে লাগলাম আমার কফি। আহহ কি যে সুন্দর সুবাস, যাই হোক কফি তো বানালাম সবার জন্য সবাইকে দিয়েও আসলাম, শুধু বাকি আমি আর আমার উনি, মানে আমার নিরামিষ নামক হুতুম পেঁচা টা। যাই হোক লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে রুমে গেলাম দেখি ফোনে কি যেন করছে, আমাকে দেখে ফোনটা রেখে দিয়ে আমার দিকে মনযোগ দিলো ব্যাপারটা আমার ভালোই লাগছে, আমি কফির মগটা তার দিকে এগিয়ে দেই কিন্তু সে বলে
—–আপনি আবার কিছু মিশিয়ে নিয়ে আসছেন? আমি দুইদিকে মাথা নারালাম যার মানে না সে তাও ভ্রু কুচকে লো না না খা হুতুম পেঁচা তোর পেটে সহ্য হবে না এইসব, সকালে তিতা করল্লা খাওয়াইছি বলে এখনও খাওয়াবো। আমি আমার কফির মগে চুমুক দিলাম উনি হুটকরেই আমার মগটা হাতে নিয়ে বলে।
—-আমি এটা খাবো আপনি আমারটা খান। এর মানে আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি বেটা ওফফ সরি হুতুম পেঁচা ভয়ে ছিল যাইহোক খাও, শুনেছি খাওয়াটা খেলে নাকি মহব্বত বাড়ে, দেখি আমাদের ব্যাপারটা কি হয়। আল্লাহ তুমি এই নিরামিষটাকে হেদায়েত দান করো,
(সবাই আমিন বলেন😑😑 নয়তো আল্লাহ ফারিদার দোয়া কেমতে কবুল করব) ইভান কফির মগটা নিয়ে কফি খাচ্ছে আরকে হাত দিয়ে ফেসবুক স্ক্রলিং করছে, মাঝে মাঝে ফারিদাকে দেখছে। ফারিদা এত সময় খুশি ছিল যখন দেখে ইভান ফোন নিয়ে বসে আছে তখনই তার মাথায় আস্ত একটা তাল গাছ ভেঙে পরে। কি খারাপ মনে মনে তারিফ করতে না করতেই সে নিজের রূপ দেখানো শুরু করছে। হারামি বিয়ের পর বউয়ের সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলিসনি,এখন এত সুন্দর একটা মূহুর্ত তাও সে ফোন নিয়ে বসে আছে। ধূর, আর বললেও কি হবে এতো নিরামিষ নামক হুতুম পেঁচা, তাই এর মনের মধ্যে ফিলিংস বলতে কিছু নেই। ফাউল একটা, মনেতো চাচ্ছে গ্লাসের কফি তার মাথায় ঢেলে দেই। বেয়াদবের আছারি একটা। ইভান জানতো যে ফারিদা এবার কিছু মিক্সড করেনি কিন্তু সে চাচ্ছিল ফারিদার খাওয়া কফিটা খেতে তাই এতো নাটক আর এখন সে বুঝতে পারছে ফারিদা তার সাথে গল্প করতে চায়, কিন্তু সে নিজে থেকে কিছু বলবে না। ফারিদা কফি শেষ করে বলে
—-আপনার খাওয়া হয়নি? ইভান কফিটা একদম চেটেপুটে শেষ করে তারপর কফির মগটা এগিয়ে দেয় ফারিদার দিকে। ফারিদা বলে
—-গ্লাসটা রাখছেন কেনো? এটাও ব্লান্ড করে দেই খেয়ে ফেলেন। বলেই চলে যায় আর ইভান তো হা হয়ে আছে কি বললো ফারিদা সেটাই বুঝার চেষ্টা করছে। ইভান একা একা বোর ফিল করছে, ফারিদাও সেই কখন গেলো। সে যায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে, অনেক কসমিটিক হয়ার বেন, হিজাব পিন, ৩/৪ ফাউন্ডেশন, কানসিলার,কাজল আরো কতো কি। ইভান একটা ফাউন্ডেশন নিয়ে দেখতে থেকে তখনই ফারিদা রুমে আসে দেখে ইভান কি যেনো করছে তার জানটুস গুলোর সাথে। ফারিদা জলদি গিয়ে ইভানের হাত থেকে সেটা নিয়ে বলে
—–এই আপনি কি করছেন এগুলার সাথে। ইভান বলে
—–ভাবছি দেশে আর কয়দিন পর আটা ময়দার অভাব পরবে। যেই হার আপনারা আটা ময়দা মাখো। ফারিদা ভেংচি কেটে বলে
—–আপনি মেবি নকল করে ডাক্তারি পাশ করছেন। ইভান বলে
—-কেনো, আপনার এমন মনে হওয়ার কারণ? ফারিদা ফাউন্ডেশন টা রাখতে রাখতে বললো
—-যেখানে আপনি মেকাপকে আটা ময়দা বলেন সেখানে তো এটাই প্রমাণ হয় আপনি কিছু পারেন না। বলে ফারিদা দৌড় দেয় ইভান বলে
—-তবে রে। সেও ফারিদাকে ধরার জন্য তার পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলো শেষে যখন ফারিদা রুমে দরজা খুলে যায় কিন্তু বাইরে যাবার আগেই ইভান ফারিদাকে ধরে ফেলে আর দরজার সাথে চেপে ধরে। At the moment। ফারিন দরজা খুলে ফেলে সে এসেছিল তাদের খেতে ডাকতে। আর এমনি ফারিদা ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে যায় আর ফারিদাকে পরতে দেখে ফারিন সাইড হয়ে যায় আর ফারিদা পরে যায় আর তার উপর ইভান। ফারিদা কোমড়ে হালকা ব্যাথা পায়। ইভান আর ফারিদা মটেও এই পরিস্থিতিতে পরবে ভাবেনি। ফারিন এইদিক ঐদিক তাকিয়ে বলে
—-সরি সরি। আম্মু খেতে ডাকছে। বলেই নিচে নেমে চলে গেলো। ইভান উঠে দাড়ায় আর ফারিদাকেও তোলে। তারপর দুজনই নিচে যায় কিন্তু বিকেলের নাশতা, তারপর কফি খাওয়াতে এখন ফারিদা আর ইভান দুনজনেরই পেট ভরা। তাও কোনো রকম খেয়ে নিলো। আর ফারিন তো মুখ টিপে হেঁসে চলছে। ইভান ফারিনকে উদ্দেশ্য করে বলে
—-কি শালিকা এতো মুচকি মুচকি হাসির কারণ কি? ফারিন দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে
—-আরে জিজু, আমি রোজ আর জ্যাকের কথা ভাবছি কি রোমান্টিক জুটি তাই না? ইভান খেতে খেতে বলে
—-টাইটানিক দেখছো? ফারিন হেচকেচিয়ে বলে
—-আরে না, আমি তো আমাদের স্কুলের পাশে কলেজের বড় আপু আর ভাইয়ার কথা বলছি। ফারিন আর কিছু বললো না খাওয়াতে মনযোগ দিলো। ইভান বলে।
—-জ্যাক বেশ তো নামটা।
ফারিদা আর না পেরে হুহু করে হেসে দিল। সবাি খাওয়া বাদ দিয়ে ফারিদার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিন বলে
—আপু তোর কি হয়েছে হাসছিস কেন ভূতটুত ধরছে নাকি তোকে? ইভান বলে
—-হ্যা আমারও তাই মনে হয় কালকে ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পরও হাসছিল। কি ভয়ংকর হাসি। আল্লাহ। ফারিদা তো অবাক সে কি এমন করলে!! সে রাগী চোখে ইভানের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলে, একবার ওপরে চলেন তারপর বুঝাচ্ছি মজা। তখন আর ফারিদা কিছু বলে না ইভান কে। খাওয়া শেষে ইভান রুমে প্রবেশ করে ওমনি ফারিদা দরজা বন্ধ করে ইভানের কাঁধে ভাওও বলে ঝাপিয়ে পরে। কিন্তু ইভান কিছু বলে না। তাই সে বলে
—–ভয় পান নাই? ইভান বলে
—-না আমি জানি আমার একটা বাদুর বউ আছে। ফারিদা ইভানকে বলে
—-আমি বাদুর হলে আপনি হুতুম পেঁচা। এখন শাস্তির জন্য তৈরি তো? ইভান মুচকি হাসি দিয়ে বলে
—-কি শাস্তি? ফারিদা কিছু না বলে তার ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি, আর বেশ কয়েকটা কিলিপ আর রাবার বেন নিয়ে আসে। তা দেখে ইভান বলে
—/নো। ফারিদা বলে
—-yess। ইভান না বলে কিন্তু ফারিদার জোরা জড়িতে সে আর পারলোনা তার মাথায় উৎপত্তি ঘটে ছোট ছোট তিনটা তাল গাছের তারপর কিছু কচ্ছপের। ফারিদা ইভানের মাথায় তিনটা ঝুটি করে আর কিলিপ লাগিয়ে দেয়। আর বলে
—কত কিউট লাগছে, ওয়েট পিক তুলবো, নড়লে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে দিব খাবরদার। ইভান নিজের বউকে এই কয়দিনে ভালোই চিনেছে এটা তার জন্য ব্যাপার না। তারপর ফারিদা বেশ কেয়কটা পিক তুলে নিল আর ফেসবুক আপলোড করে দিলো। আর ইভানকে বলে
—–এই যে আপনার ফেসবুক আইডির নাম কি? হুতুম পেঁচা তারপর নিরামিষ সব দিয়ে খুঁজেছি পায় নাই। ইভান বলে
—-আমি হুতুম পেঁচা, নিরামিষ? কালকে রিমোট নেওয়ার সময় কি যেনো বলছিলেন, ও হ্যা আমাকে একটু টাইম দেন আমি এইসবের জন্য প্রস্তুত না। ফারিদা আমতা আমতা করে বলে
—–যাই হোক ঘুমান। বলেই আমি উঠতে যাবো তখনই ইভান আমার হাত ধরে ফেলে…..
গল্পের নামঃ- #আমি_শুধুই_তোমার❤️
লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০২+০৩
খাবার টেবিল বসে পরলাম আরেক জালায়, সবার সাথে একসাথে বসে খেলেও বার বার পায়ে বারি খাচ্ছে কিছু একটা, আর আমার হুতুম পেঁচা একমনে খেয়ে চলছে, আর ভাই সরি আরে আমার পাতী হাঁস ইয়ে মানে হাসবেন্ড একটু নিজের বউয়ের দিকেও তাকা দেখ খাচ্ছে কিনা ঠিক মতো? তা না সে আনমনেই খেয়ে চলছে। তখনই আমার শাশুড়ী মা এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে
—-কিরে মা তুই তো মুখে কিছুই তুলেছিস না, খাবার ভালো হয়নি নাকি? আমি মাথাটা নিচু করে বললাম
—-না মা,খাবার অনেক ভালো হয়েছে। শাশুড়ী মা বলে
—-তাহলে খেয়েনে জলদি, একটু পর পার্লার থেকে লোক আসবে তোকে সাজানোর জন্য। আমিও খেতে লাগলাম হুট করে আবার পায়ে এসে কিছু একটা বারি লাগে আমি চমকে যাই ফলে আমার হাতে থাকা চামচ টা নিচে পরে যায়। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছি,আমি
—-সরি, বলে নিচে থেকে চামচটা উঠাতে যাই তখনই দেখি আমার হুতুম পেঁচা নিজের পা আমার পায়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসছে। হটাৎই সেটা সে পাশকাটিয়ে নিয়ে যায় এর মানে উনিনা তাহলে কে করছে এমনটা? তখনই আমার ননদ ইরিন বলে
—-কি গো ভাবি কি হয়েছে? আমি উঠে বসলাম আর বললাম
—কিছু না। ইরিন বলে
—-চামচটা তো নোংরা হয়েগেছে,এক কাজ করি আমি সার্ভেন্টকে বলি। তখনই আমি বলি
—এই না থাক, আমার খাওয়া হয়েগেছে, আর খাবো না। তখনই আমার হুতুম পেঁচা আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। কি খারাপ বাছাধন আজকেই তো তুমি আমাদের বাড়িতে যাবে তখন দেখাবো মজা, যাই হোক তার কিছু সময় পরই আমি আমাদের রুমে চলে আসলাম। সাথে আমার ননদ ননদীরাও আসলো, ইরিন বাদে সব গুলোই বেশি বুঝে অসম্ভব পাকনা এক-একটা। তখনই রুমে প্রবেশ করে ইভান, ইভানকে দেখে ওরা সবাই চলে যায়। সেও নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে আমার দিকে এগুতে থাকে, আল্লাহ আমার হার্ট বেচারা তো মনে মনে লন্গি ডান্স করছে, মানে লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে আসার অপক্রম, আর আমার জানি কি হলো আমি হুট করে দাঁড়িয়ে যাই, সে আমার কাছে আসতে আসতে একবারে কাছেই চলে আসে, আর আমি তখনই বলি
—-প্লিজ, আমাকে আরেকটু টাইম দেন, আমি এখন এইসবের জন্য প্রস্তুত না। সে আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার পাশে থাকা ড্রয়োর থেকে টিভির রিমোট টা নিয়ে টিভি ওন করে, ধূর ধূর আমি কি সব ভাবছিলাম এই হুতুম পেঁচা দ্বারা কিচ্ছু সম্ভব না কিচ্ছু না, হুতুম পেঁচাটা আমার দিকে তাকিয়ে বলে
—-ফরিদা আপনি কিসের কথা বলছেন?কিসের জন্য প্রস্তুত না। তার মুখে আবার ফরিদা শুনে বলি
—-চোখে সরিষা ফুল দেখছিতো তাই, যত্তসব হুতুম পেঁচার মতো কথা বার্তা। এই বলে ব্যস্ত হয়ে পরলাম নিজের ফোন নিয়ে। ওপর দিকে ইভানের ভয়ংকর হাসি পাচ্ছে, সে আর না পেরে রুমের বাইরে চলে এসে হুহু করে হেসেদিলো, মেয়েটার বাচ্চামোর মতো কথা গুলো বেশ ভালোলাগে তার আর তাছাড়া রেগে যখন চোখগুলো ছোট করে ফেলে তখন তাকে অনেক কিউট লাগে তার কাছে। আর এখন ইভান যা করল যেনে শুনেই করেছে। ২ টার দিকে ফারিদা কে সাজাতে আসলো, আজকে ফারিদাকে পরানো হয়েছে, হুয়াট কালারের মধ্যে গোল্ডেন ইস্টন বাসানো শাড়ি, কিন্তু ইস্টনের কারণে শাড়িটা প্রচুর ভারি,কেরি করতে সমস্যা হচ্ছে ফারিদার, ঠোঁটে ডার্ক কালারের লিপস্টিক মুখে ভাড়ি মেকাপ, সম্পূর্ন ডানা কাটা পরি মতো লাগছে।
ইভানও কম না সাদা কালের পাঞ্জাবি গলার দিকে হুয়াইট + গোল্ডেনের ইস্টন দিয়ে কারুকাজ করা।চুলগুলো স্পাইক করা, হাতে ব্রেন্ডের ওয়াচ। সেই লাগছে ইভানকে ফারিদা তো শুধু ইভানকে দেখে চলেছে। ইভান কথা বলছে অনেকের সাথে হাগ করছে আর মাঝে মাঝে আর চোখে তাকিয়ে দেখছে ফারিদাকে। আর ফারিদা চরম বিরক্ত হচ্ছে কারণ সবাই তার সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত কখনো বলছে এইদিকে তাকাও কখনো ঐদিকে ফারিদাকে নিজেকে এখন বিশ্বের ৮ম আশ্চর্যতম বস্তু মনে হচ্ছে। একটু পর ইভান এসে বসলো তার পাশে, এখন আর তার কোনো প্রকার খারাপ লাগছেনা। ক্যামারা মেন এসে তাদের পিক তুলতে লাগলো এক এক ইস্টাইলে, তারপর তারা অনুষ্ঠান শেষে ফারিদা আর ইভান সবাইকে বিদায় দিয়ে চলে আসে, অংশ ও সাথে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু কোনো এক কারণে তা হয়ে উঠেনি ।
ফারিদা আজকে খুব খুশি কারণ নিজের বরের সাথে সে আজ অনেক পিক তুলেছে। ফারিদা মুচকি হাসতে হাসতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিলো, আর ইভান ফারিদাকে মুচকি হাসতে দেখে সে ঠিকই বুঝতে পারলো এই হাসির কারণে সে নিজে, কিন্তু ইভান তো ইভানই৷, সে লাফ দিয়ে খাটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়তে লাগে
—-লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, আমি তো আজকের কথাগুলো ভেবে ব্লাসিং করছিলাম, ঠিক তখনই আমার হুতুম পেঁচা বিছানার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়তে লাগে লা হাউলা, কি হলো আবার উনার, আমি বললাম
—-কি হয়েছে এমন করছেন কেনো? নিচে নামেন। সে এমন একটা কথা বলে যা শুনে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না সে বলে
—–এই দুষ্ট পত্নী দূরে হয়ে যা,আর আমার ফরিদাকে রেখে যা। কি সব বলছে? আমি বললাম
—-কি বলছেন আপনি? আজব!!!ভূত পেত্নী কি বলছেন। উনি একটু চুপ করে থেকে বললো
—-ওও এর মানে ফরিদা আপনাকে পেত্নী তে ধরেনি?তাহলে ওয়াশরুম থেকে আসার সময় হাসছিলেন কেনো? এবার আমি বুঝতে পারলাম সে কেনো এমন রিয়াক্ট করছে। আমি আস্তে করে সফায় গিয় বসে বলি
—-আপনাকে ডক্টর কে বানিয়েছে? আমাকে একটু বলবেন? সে একটু ভাব নিয়ে বললো
—–ডক্টর হতে গেলে অনেক পড়তে হয় বুঝছেন। আমি বললাম
—পড়তে পড়তেন আপনার ব্রেনের ৪২০ নম্বর তাড়টা ছিড়ে গেছে, আপনাকে ডক্টর দেখানো উচিত,কালই আপনাকে নিয়ে পাবনা মেন্টাল হসপিটালে যাবো। ইভান বুঝতে পারেনি ফারিদা এমন কিছু বলবে। ইভান কিছু বলতে যাবে তখনই ফারিদার ছোট বোন ওদের রুমে নক করে নিচে খেতে যেতে বলে। খাওয়ার মাঝখানে ইভান ফরিদাকে বলে (মানে ফারিদা না, কাজের মেয়ে)
—-ফরিদা তোমার হাতের রান্নাটা খুব ভালো। ফারিদা বলে
—-আমি কখন রান্না করলাম। ফারিদার ছোট বোন ফারিন পানি খাচ্ছিল ফারিদার কথা শুনে সব পানি মুখ থেকে ছিটে গিয়ে পরলো ফারিদার মুখে আর জামায়। কারণ সে বসেছিলা ফারিদার বরাবর। আর খাবার গুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। আর সবাই আমার মুখের দিকে একবার আর একবার তাকাচ্ছে ফারিনের দিকে। ফারিন আমাকে বলে
—-সরি,ফরিদা। আর সবাই একসাথে জোরে হেসে দেয় আমার এতটাই খারাপ লাগেছে খাবার ছেড়ে চলে
এলাম, আর এভাবেও আসতে হতো আমার জামা কাপড় চেন্জ করতে হবে। তাই সেটা পাল্টে নিলাম দেখি ইভান বিছানায় শুয়ে আছে আর গেমস খেলছে আমি তার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে এলাম বেলকনিতে, যদিও গাড়ির আওয়াজে ভরপুর তাও ভালোই লাগছে পরিবেশটা, যাই হোক আমি আর তাকে জালাবো না। রুমে গিয়ে আলমারি থেকে আরেকটা ব্লাইনকেট আর একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলাম, সে কিছু বলতে যাবে তখনই আমি রুমের লাইট ওফ করে দেই। কথাই বলবো না তোর সাথে হুতুম পেঁচা। ইভান বুঝতে পারলো বেশি বেশি হয়েগেছে বউ তার রাগ করছে। সকালে যখন আমার গুম ভাঙে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। কিন্তু আমারতো মনে আছে আমি সোফায় শুয়ে ছিলাম। এখানে কিভাবে এলাম আর এটা আমি কি জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি চোখ খুলে দেখি আমি আমার পাতি হাঁস মানে আমার হুতুম পেঁচাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। আমার মতে এই নিরামিষ নামক প্রানী তো ইহোজন্দীগিতে আমাকে এখানে আনবে না তাহলে কি আমি একাই চলে আসছি রাতে…. যাই হোক এখন আমাকে উঠতে হবে এই হুতুম পেঁচা উঠার আগে….আমি ওঠতে যাবো তখনই…
চলবে
❤️❤️ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে❤️❤️
গল্পের নামঃ- #আমি_শুধুই_তোমার 🍂❤️
লেখিকাঃ-আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ-০৩
চোখ খুলে দেখি আমি আমার পাতি হাঁস মানে আমার হুতুম পেঁচাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। আমার মতে এই নিরামিষ নামক প্রানী তো ইহোজন্দীগিতে আমাকে এখানে আনবে না তাহলে কি আমি একাই চলে আসছি রাতে…. যাই হোক এখন আমাকে উঠতে হবে এই হুতুম পেঁচা উঠার আগে….আমি ওঠতে যাবো তখনই…আমার পাতী হাঁস মানে আমার হাসবেন্ড ফাজিল হতুম পেঁচা টা আমাকে জড়িয়ে ধরে, ঘুমের ঘোরে তাই এমন করছে নয়তো এই নিরামিষ আমাকে জড়িয়ে ধরবে, জীবনেও না। যাই হোক এখন আমাকে উঠতে হবে, তাকে হালকা ধাক্কা দেয়াতেই সে জেগে যায় এইরে, এখন আমার কি হবে? আমাকে তো জ্বালিয়ে মারবে। সে দেখে আমি তার দিকে ঝুকে আছি। হুতুম পেঁচা টা সেটা দেখে ধরপরিয়ে ওঠে বসে, আর আমার দিকে তাকিয়ে বলে
—–আমার মতো নীরহ অবলা একটা ছেলেকে পেয়ে আপনি এর সুযোগ নিবেন ভাবিনি আমি, কি করে পারলেন এমনটা করতে, আমি এখন সমাজে মুখ দেখাবো কি করে? ইভানের কথা শুনে আমি আমার মধ্যে নেই এইটা কি আদেও পুরুষ নাকি? আমি উনাকে থামিয়ে বলি
—–wait wait বাজে বোকা বন্ধ করেন, কিছু করেনি আমি, ওল্টো আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন,তাই আপনাকে সড়াতে গিয়ে এমনটা হয়েছে। ইভান আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে বলে
—–সত্যি তো? আপনি আমার ভার্জিনিটি লুটে নেননি? আমি এবার রেগে গিয়ে পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে ইচ্ছে মতো উনাকে মেরে বললাম
—–তোকে আমি মেরেই ফেলবো, হাঁদারাম, হুতুম পেচাঁ তুই জীবনে ভালো হবি না। এক চোট বকে ব্লাইনকেট তার মুখে ছুরে দিয়ে চলেগেলাম ফ্রেশ হতে। আর ঐদিকে ইভান কিছু সময় চুপ করে থেকে হেসে দিল আর বলতে লাগলো
—-কি পাঁজি, যাই হোক, আমারই তো বউ,কিন্তু আমি ডক্টর না হয়ে এক্টিং করলে বেশি ফেমাস হতাম। বলে আবার শুয়ে পড়লো আর রাতের কথা ভাবতে লাগলো।
রাতে ফারিদার ঘুমানোর পর ইভান গিয়ে ফারিদাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে আসে, সারা রাত একপ্রকার নির্ঘুমে কাটিয়ে দেয়। কারন সে শুধু দেখেছে তার ফারিদাকে। এক পর্যায়ে সেও ঘুমিয়ে পরে। সকালেও ইভান ফারিদার আগেই ওঠে ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ভালোবাসর পরশ একে দেয়। তারপর নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে ফারিদার গালে আঁকিবুঁকি করতে থাকে, আর তখনই ফারিদা জেগে যায়, আর ইভান ঘুমের ভাঙ করে, ফারিদার সব কথাই সে শুনেছে আর নিজের হাসিটাও অনেক কষ্ট চেপে রেখেছিল সে। কিছু সময়ের মধ্যেই ফারিদা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে, পরনে তার লাল টুকটুকে শাড়ি গলায় আর কানে ইভানের দেয়া দুল আর চেন,আর ভেজা চুলে অসম্ভব ভয়ংকার রকম সুন্দর লাগছে ফারিদাকে। ইভান ওয়াশরুমের দরজা খুলার আওয়াজে উঠে বসে আর ফারিদাকে এই রূপে দেখে, মনে মনে বলে
—-রেড রোজ। ইভানকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারিদা বলে
—-কি হয়েছে? ইভান চোখের ইশারায় না করে, তারপর নিজেকে সামলে ওয়াশরুমে চলে যায়। আর ঐদিকে চলছে ফারিদার মাথায় অন্য চিন্তা। সে নিচে চলে যায় দেখে ফরিদা আর তার মা সব প্রায় করেই ফেলেছে, ফারিদা বলে,
—-মা আজ কফিটা আমি বানাবো। ফারিদা কফি বরাবরই ভালো বানায় টুকটাক রান্নাও পারে। তাই আর তার মা আপত্তি জানালো না। আর ফারিদা বাঁকা হাসি দেয়, খাওয়া শেষ সবাই যে যার মতো, ফারিদার মা গেছে তার বাবাকে ভার্সিটির জন্য তৈরি হতে সাহায্য করতে। আর ফারিন ব্রেকফাস্ট করেই স্কুলের জন্য বেরিয়ে গেছে। আর ফরিদাকে পাঠিয়েছে বাগানে পানি দিতে। আর ফারিদা কিচেনে যায় কফি বনাতে, সে আগেই ফ্রিজ থেকে করল্লা বের করে সেটা ব্লান্ডারে ফিটে নিলো, তার সেটার জুসটাকে অনেক সুন্দর ভাবে মিশিয়ে দিলে ইভানের কফির গ্লাসে। আর তার বাবারটা দিয়ে আসে তাদের রুম।
ফারিদা ইভানের সামনে গিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে কফির মগটা বারিয়ে দেয়৷ ইভানের কেনো যেনো এই হাসিটা ভালো ঠেকছে না। সে সটা নিলেও খেতে চায় না, ফারিদা বলে
—-ভয় লাগছে? তাহলে আমারটা নিন। নিজের কফির মগ এগিয়ে দিয়ে। ইভান কিছু বললো না তার কফির মগটা মুখে দিতেই, ফেলে দিলো ফ্লোরে, আর মগটা রেখে দৌড়ে গেলো ওয়াশরুমে, মুখ সম্পূর্ণ তিতাতে ভরে গেছে, আর ঐদিকে ফারিদা বিজয়ের হাসি দিয়ে মনে সুখে কফি খেতে খেতে নিচে গিয়ে ফরিদাকে বলে রুমটা পরিষ্কার করে দিতে। আর ইভান বেচারার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যাবার উপক্রম, সেও বললো এর
—পরিনাম, তোমাকে ভুগতে হবে। কিছু সময় পর ইভান নিচে নামতে নামতে ফারিদার আম্মু কে দেখে বললো
—-আম্মু আমি বাহিরে যাচ্ছি দুপুরে এসে লান্ঞ্চ করব। আর ফারিদা কোথায়? ফারিদার আম্মু বলে
—–হয়তো ওর বাবার লাইব্রেরিতে, তুমি যাও বাবা আমি বলে দিব। ইভান চলে যায় তার প্লান মোতাবেক ঠিক ঘন্টা ২য়েক পর ফিরে আসে কিন্তু ফারিদা এখনো তার বাবার লাইব্রেরিতেই বই পরছে, অনেক গল্প প্রমিক সে। ইভান এসে রুমে চলে এলো। মূলত সে গিয়েছিল বাজারে ডার্ক ব্লু রং কিনতে,আর জামাই হিসেবে কিছু বাজারও করেছে, আর সেটা তার শাশুড়ী মার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এসেছে। এসে সে ফারিদার তাওয়ালেতে রংটা লাগিয়ে দেয় আর তোয়ালেটাও ব্লু কালারের কারো বুঝার সাধ্য নাই, ইভান ঐটাকে অনেক সুন্দর করে নিয়ে রেখে দেয়। আর মনের সুখে চলে যায় গোসল করতে যা আজকে হুটকরেই গরম পরেছে । ফারিদা ২টার দিকে লাইব্রেরি থেকে বেড়িয়ে আসে। আর গরমের কারণে সে আবার হাত মুখ ধূয়ে আসে। আর ইভান বিছানায় শুয়ে শুয়ে ললিপোপ খাচ্ছে আর ফোন টিপছে মাঝে মাঝে ফারিদাকে দেখছে। ফারিদা তো অবাক সকালের জন্য সে সরি বলেনি তাও ইভান কিছু বললোনা আর এতোটা সময় হওয়ার পরও তার খুঁজ নেয়নি,হয়তো রেগে আছে। হয়তো একটু বেশি বেশি করে ফেলেছে, এগুলো ভাবতে ভাবতে সে তোয়ালে দিয়ে নিজের মুখ মুছতে লাগলো, আর ইভানের হাসি চওড়া হতে লাগলো। এক সময় ফারিদা ড্রেসিল টেবিলের সামনে আসে মাঝাঘসি করার জন্য, প্রথমে সে খেয়াল না করলেও একটু পর যখন আয়নায় নিজের মুখের এমন অবস্থা দেখে, সে জোরে চিৎকার দেয়, কিন্তু রুম সাউন্ড প্রুফ হওয়াতে সেটা বাইরে যায়না। আর ঐদিকে ইভানা বিছানয় গড়াগড়ি খাচ্ছে আর বাচ্চা দের মতো হাসছে। ফারিদা বলে
—-এটা আপনার কাজ তাই না? ইভান কোনো মতে বলে
—-ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়, বলেই হসতে লাগলো ফািরদা বলে
—-আপনি একটা অজগন্য। বলেই আবার পা বাড়ালো ওয়াশরুমের দিকে আর ঐদিকে ইভানের হাসি তো থামছে না। কোনো রকম রং গুলো উঠেছে মুখে এখনো নীলচে ভাবটা আছে,যাই হোক এখন আর কিছু বলবো না পরে শোধ তুলবো তোমার থেকে হুতুম পেচাঁ এইটার। আজ বিকেলে আবার আমারা ফিরে যবো। দুপুরের খাওয়া দাওয়া পর একটু ঘুমাই, আম্মু আর ফারিন অনেক জিঙ্গেস করেছিলো মুখ এমন নীল কেন,আমি কথা ঘুরিয়ে ফেলেছি। এবার অবশ্য আমি বিছানায়ই শুই, সেও এসে আমার পাশে শুয়, তাই দেখে আমুি আমার পাশবালিশ টা মাঝখানে রেখে দেই। যাই হোক বিকেলের দিকে নামলো ঝুম বৃষ্টি হয়তো সকালে এর জন্যই এত গরম ছিল। বৃষ্টিকারণে তাই আর আজ আমাদের যাওয়া হলো না। রুমে এসে দেখি ইভানমুখ ভারি করে বসে আছে। আমি তার পাশে গিয়ে বসে বললাম
—-কি হয়েছে? সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে
—-ভালো লাগছেনা মাথাটা প্রচুর ধরেছে। আমি বললাম
—কেনো মাত্রই তো ঘুম থেকে উঠলেন। ইভান এখন কিভাবে বলে রাতে তার ঘুম হয়নি আর এখন ফারিদার রুমে পায়চারি করতাতেও তার ঘুম ভেঙে গেছে। ইভান কিছু বলে না ফারিদা বলে
—-আপনি যদি চান আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারি। ইভান যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো সে ফারিদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো ফারিদাও খুব যত্নে নিজের হুতুম পেঁচার সেবা করতে লাগলে। প্রায় ঘন্টা খানিক পর। সে জোরে জোরে ইভানের মাথার চুল ধরে টান দিলো ইভান
—-আম্মু বলে ওঠে বসে। ফারিদা ৩২ পাটি দাঁত বের করে বলে,
—-Revange নিলাম। ইভান বলে
—-তারপরেও ধন্যবাদ। তখনই দরজায় নক করে ফারিন ফারিদা গিয়ে দেখে ফারিন এসেছে পিছনে ফরিদা ফরিদার হাতে ট্রে সেখানে বিকেলের নাশতা আর চিপস আর চকলেট, আর ফারিনের হাতে লুডু। ফারিদার আর বুঝতে বাকি রইলো না ফারিন এখন লুডু খেলতে এসেছে। ইভানেরও এখন ভালোলাগছে সেও এড হলো, ইভান অনেকবার ফারিদাকে ছাড় দিয়েছে, আর শেষে ফারিদা জিতে যায়। আর সেই খুশিতে সে ইভানকে জড়িয়ে ধরে কিস করে দেয়। আর ফারিন লজ্জায় দৌড় দিয়ে বাইরে চলে যায়। ফারিদা যখন বুঝতে পারলো এইদিক ঐদিক তাকিয়ে
—-সরি বলে সেও দৌড়। ইভান কিছু সময় চুপ করে থেকে মুচকি হাসি দিল, আর বললো
ফুলসোজ্জা ঘরে বসে আছি, রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। কিন্তু অস্বস্থি লাগছে এই ভাড়ি লেহেঙ্গা আর মুখের সাজ গয়না নিয়ে। পারিবারিক ভাবে আমাদের বিয়ে হয় ছেলের মা আমাকে দেখতে আসেন আর পছন্দ করে যান। তারপর আমার বর, ননদ আর অনে আত্মীয় -স্বজন গিয়ে আমাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসেন। শুনেছি উনি নাকি একজন ডক্টর প্রাইভেট হসপিটালের। আর বাবা মার বেশ পছন্দ হয়েছে। আমার পরিবারটা খুব ছোট মানে আমি বাবা, মা, ছোট বোন এখানে থাকি। আর আমার দিদুন,চাচা-চাচি, তাদের মেয়ে ছেলে মানে আমার চাচাতো ভাই বোন থাকে গ্রামে।আমার বাবা একজন ভার্সিটির principal। আর আমি হলাম ফরিদা ইবনে মাহিরা। ইন্টার ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। আমার বিয়েটা বেশ ধুমধাম করেই হয় সব বান্ধবী রা ইচ্ছে মতো মজা করেছি।
কি যে গরম লাগছে, আহহহ কি আর বলবো। আর পারছিনা ধূর এতো লেট কেউ করে। আমি বাপু আর পারবো না এই ভারি লেহেঙ্গা গয়না পরে থাকতে। তাই আলমারি থেকে একটা সুতির শাড়ি নিলাম , যেটা আমার ননদ আর কিছু আত্মীস্বজন মিলে কিছু সময় আগে গুছিয়ে রেখে গেছে। কিন্তু তার আগেই আমার নজর যায় সোফার সামনে টি-টেবিলে আমর ফোনটা রাখা। আমাকে আর পায়কে, বউ সাজার শক ছিলো সেই ছোট থেকে আজকে সেজেছি ছবিতো তুলবই। আমি ও ছবি তুলতে লাগলাম কখনো ঘোমটা দিয়ে কখনো খুলে,কখনো আবার পাউট করে। একটা টিকটকও করে নেই। গিয়ে দাড়ালাম ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে, গরমের মাথা খেয়ে টিকটক করতে লাগলাম, তখনই দ্বার খুলে কেউ রুমে আসে। পিছনে ফিরে দেখি আমার বরটা। তাকে দেখার সাথে সাথে আমার হার্ট বিট বেরে গেলো। আর ছোট একটা এট্যাকও খেলাম। কি সুন্দর লাগছে তাকে গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানিতে। এতো সুন্দর কেনো উনি??উনার নামটাও বেশ সুন্দর ইভান রহমান , উনাকে আমি একবারই দেখেছি, যেদিন সে আমাকে দেখতে এসেছিল। আমি ফোনটা রেখে ধীরে পায়ে তার সামনে দাড়ালাম আর আম্মু বলে ছিল তাকে সালাম করতে, তাই আমি সালাম করতে গেলে সে আমাকে ধরে ফেলে বলে।
—-দেখুন, আমার এই সব ভালো লাগে সো নেক্সট টাইম এমনটা না করলেই খুশি হবো। যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
আমি তো হা হয়ে তাকিয়ে আছি বলে কি সে?? যাই হোক নিজের হা করা মুখটা বন্ধ করে শাড়িটা নিয়ে পা বারালাম ওয়াশরুমের দিকে। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সে বিছানার ফুলগুলো পরিষ্কার করে শুয়ে পরেছে। আমার কি?! আমিও যখন শুতে যাবো সে হুট করে উঠে বসে বলে
—-দেখুন বিয়েটা আমার অমতে হয়েছে,মানে পরিবারের চাপে । তাই আমার সময় লাগবে। তো আপনি দয়া করে সোফায় ঘুমান.। এবার আমার রাগে গা জ্বলছে। আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে একটু জোড়েই বলি
—-দেখুন সেটা আমার দেখার বিষয় না। আর আপনি ছেলে হয়ে মেয়েদের মতোন কথা বলছেন কেনো?আর আমি বিছানায় ঘুমাবো। আপনার সমস্যা হলে ঐখানে গিয়ে ঘুমান যত্তসব ফাউল কথা বার্তা। ধূর এই ছিলো কপালে। বকতে বকতে গায়ে চাদর টেনে লেম্প টা ওফ কিরে দিলাম। কি দিনকাল আসলো আল্লাহ।
ধূর রাত ঘুমও আসছেনা, তাই পাশে থাকা টেবিল লাইটা ওন করে দিলাম। আর উনাকে দেখ মরার মতো ঘুমাচ্ছে। ঘুমাও বাছা এইদিন দিন না আমারও দিন আসবে উফফ ভালোলাগছে না, কি যে করি,,আমার ফোনটাই এখন আমার সঙ্গী। তখন তার সাথে কথা বলে ফোনটা সেই টি-টেবিলেই রেখে দিয়েছি, সেটাই নিয়ে এসে বসি। কি আর করব তখন কার ছবি দেখছি। ওয়াও আমাকে আজ সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে। যাই হোক এটাতো কথার কথা। যার জন্য এত কিছু তারই খবর নাই। তার দিকে তাকিয়ে দেখি কত কিউট বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে আছে, ভাবা যায় সেই আর ২ দিন পর আমার বাচ্চার বাবা হবে। ইশশশশশ ভাবতেই লজ্জা লাগছে। যাই হোক ফোনের ফ্লাসটা ওফ করে তার কেয়েকটা পিক তুলে নিলাম চুল গুলো হাত দিয়ে হালকা ছুয়ে দিলাম।হুহ সে না মানুক আমিতো মানি আমরা একটা পবিত্র বন্ধনে অবদ্ধ কিন্তু সে এটাও তো বলেনি সে বলেছে তার টাইম চাই, চাদর মুড়ি দিয়ে দিলাম এক ঘুম।
সকালের সূর্য মামা নিজের সূর্যের আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে চারদিকে, আর সেই আলো কাচের জানলা ভেদ করে এসে পরছে ইভানের মুখে,ধীরে ধীরে সে চোখ খুলে আর তার বুকে ভারি কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে, সে দেখে তার বউ মানে ফারিদা তার বুকে ঘুমাচ্ছে, কাল রাতে ইভান এমন ব্যবহার করেছিল যেনে শুনে কারণ তার ইচ্ছে বিয়ের পর বউয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম করবে ।তারপর আবার দু’জনে একসাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে {বিদ্রঃ দুনটাই তারছিড়া) ইভান ফারিদার মাথায় একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলে
—–ফরিদা, ফরিদা এই ফরিদা,,উঠেন। ফারিদার ঘুম ভাঙলো ইভানের ডাকে কিন্তু তার ইভানের মুখে তার নাম ফরিদা শুনে সে রেগে যায় আর ইভানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে
—–এই মিয়া আপনার বিয়েতে যদি সম্মতি নাই ছিল আমাকে বলতেন আমি না করে দিতাম, এমন উটকো ঝামেলা করার কি দরকার ছিল। আর ফরিদা ফরিদা কি করছেন? আমার নাম ফারিদা ইবনে মাহিরা বুঝলেন ফরিদা না!!! ফরিদা হলো আমাদের বাসার কাজের মেয়ে। ইভান দুষ্টামি করে বলে
—-তাইতো ভাবি ঐদিন দেখলাম একজনকে আর কাল বিয়ে করলাম আরেকজন কে, ফারিদার এবার চোখে জল চলে এলো। সে কিছু না বলে। চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ইভান তো হেসে কুটিকুটি, একটা উচিত শিক্ষা ও দিয়েছে কাজের মেয়ে বলে কি সে মানুষ না নাকি। ইভান যদিও জানে ফারিদা সেভাবে বলে নাই তাও,,, তখনই দরজায় নক করে ইভানের বোন,চাচাতো ভাই আর অন্য কিছু অত্মীয়। ইভান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ইভানের ছোট বোন ইরিন বলে
—-ভাইয়া ভাবি কোথায়,তাড়াতাড়ি তাকে তৈরি হতে হবে নিচে কিছু মেহমান এসেছে তাকে দেখতে। ইভান বলে
—তোরা যা ফারিদা ফ্রেশ হচ্ছে তারপর, আমি ফ্রেশ হয়ে তোদের পাঠিয়ে দিবো ওকে? সবাই চলে গেলেও ইভানের চাচাতো ভাই অংশ যায়নি। সে ইভানের দিকে তাকিয়ে তার ৩২ পাটি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে
—-আমাকে একটু ভিতরে যেতেদে আমিও দেখি আমার এতো কষ্ট করে সাজানো ফুলগুলোর তোরা কি অবস্থা করেছিস? বলেই ভিতরে ঢুকতে আসলে ইভান বলে
—-থাপ্পড়ামু তোরে ফাজিল পুলা যা ভাগ বলতাছি। অংশ যেতে যেতে বলে
—-বুঝিনা সব তোমার দরজা লাগানোর ধানদা,আর কালকে রুমে ঢুকার আগে টাকা নিয়ে কিপ্টামি করছ, আমারও দিন আসবো মনে রাইখো। এটা বলে সে চলে৷ যায় আর তখনই ফারিদা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে, ইভান তা দেখে বলে
—-ফরিদা তুমি তৈরি হয়ে নিন আপনাকে অনেকে দেখতে এসেছে নিচে। ফারিদা রেগে গিয়ে বলে
—-দেখুন আমার নাম ওরিদা ফরিদা না আমার নাম ফারিদা বুঝলেন,নয়তো মাহিরা ডাকবেন। ইভান বলে
—-ওকে ফরিদা। ফারিদার হাতের তোয়ালেটা ইভানের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বকবক করতে করতে সে চলে গেলো বলকনির দিকে। আর ইভান একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে
—-বউ জ্বালাতে এতো মজা লাগে জানলে,আরো ৫ বছর আগে বিয়ে করতাম,যাই হোক কি যে শান্তি লাগছে…Modd ahiqakana hain sobha gali jana hain tune kesa jado hain kiya. গান গাইতে গাইতে ইভান ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে…. আর ঐ দিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মন খারাপ করে ফারিদা তখনই। দরজায় নক করে ইভানের বোন ইরিন। ফারিদা মাথায় ঘুমটা দিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয় তখনই ইরিন এসে জড়িয়ে ধরে বলে।
—-ভাবি তাড়াতাড়ি চলো, তোমাকে তৈরি করিয়ে দেই। তারপর আবার তোমার খাওয়া দাওয়া অনেক কিছু বাকি। বলেই সবাই একসাথে সাজাতে লাগলো ফারিদাকে। তখনই ইভান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে সবাই ফারিদাকে সাজতে আসছে।ইভান চুলগুলো মুছতে মুছতে বললো।
—-দেখ কালকের মতো মাহিরাকে সাদা ভূত বানাবি না আমিতো বাবা রাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বুঝলি।আর যদি আজকেও এমন করিস এক একটার পিঠে এমন তাল ফালাবো কিডনি ব্লক হয়ে যাবে। এই বলে সে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো
আমি তো শুনে অবাক কি কালকে আমাকে সাদা ভূতের মতো লেগেছে? আমাকে দেখে সে ভয় পেয়েছে? আল্লাহ তুমি আর আমার মতো মাসুম ১৯ বছরের বড় বাচ্চার উপর ঝুলুম করো না। তুমি দরি ফালাও আমি উপরে ওঠে যাই নয়তো মাটি ফাঁক করো আমি ভিতরে ঢুকে যাই। নয়তো এই হতুম পেঁচার পিঠে তাল ফালাও, ওরা সবাই হুহুহু করে কিছু সময় হাসলো তারপর ইরিন আমাকে বললো
—–ভাবি গো কিছু মনে করো না, ভাইয়ার বরবরই সাজ পছন্দ না। আসো তোমাকে হালকা সাজিয়ে দেই, তারপর আমার মুখে হালকা পাউডার আর ঠোঁটে গোলাপি কালারের হালকা লিপস্টিক, আকাশি কলারের শাড়িতে সাজটা ভালোই মানিয়েছে, সাজ শেষে বের হতে যাবো ঠিক তখনই ইভান ঘরে এসে বলে
—-যাহ তোদের কাজ শেষ। আমার যেতে চাইলে বলে
—-তোরা যা ওকে রেখে যা, কাজ আছে আমি ওকে পরে নিয়ে আসছি। সবাই মিটমিট করে হাসি দিয়ে চলে যায়। আমি কিছু না বলে বিরক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম সে আলামারি থেকে ২ টা বক্স নিয়ে আসলো সেখান থেকে একাটা চেন কিন্তু খুব সুন্দর পাথার গুলো চিকচিক করছে সে সেটা নিয়ে আমাকে পরিয়ে দিলো। আরেকটা থেকে ছোট দুইটা কানের দুল কিন্তু বেশ সুন্দর সেগুলো পরিয়ে দেয়। সে আমার কানে কানে বললো
—–কালকে রাতে দিতে ভুলে গিয়ে ছিলাম আজ দিয়ে দিলাম৷ রাগ করো না ফরিদা। শেষের কথাটা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম
—লাগবেনা আমর এগুলো,যে দিন আমার নাম সুন্দর করে উচ্চারণ করতে পারবেন ঐদিন দিয়েন। সে আমার কথার পাত্তা না দিয়ে আমার হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে পরলেন বমিতো অবাক এখন কিছু বলতে ও পারবো না, যত যাই হোক এই হতুম পেঁচাই আমার হাসবেন্ড, অসহ্যের গোডাউন একটা.. তারপর নিচে গিয়ে বসলাম সবাই আমাকে দেখে মনে হয় পছন্দই করেছে, কিন্তু তখনই একজন মহিলা বলে ওঠে,
—-মেয়ের গায়ের রং কালো, এমন ফর্সা ছেলের সাথে কালো মেয়ে যায় নাকি? তার কথাটা শুনে আমার মন খাররপ হয়ে যায়।কারণ উনি যেভাবে বলছেন মনে হয় আমি একদম কালো কুচকুচে কিন্তু আমাকে সবাই বলে আমার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। ইভান আমার পাশেই বসে ছিলেন সে সেই মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন
—–এটা আমার বউ,আমি নিয়ে খাবো,তাতে আপনার সমস্যা টা কোথায় আন্টি? আর আমার মাতে ও কালো না ওর গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, আর আমার বেশি ফরসা রঙের মেয়ে ভালো লাগেনা আমার । না ওদের সাজলে সুন্দর লাগে না অন্য কিছু করলে,কিন্তু যারা শ্যামবর্ণ ওদের চোখে কাজল দিলেই সুন্দর লাগে,যেমন – আমার বউ,বোন ইরিন। আর আপনিও কি খুব বেশি ফর্সা? ইভানের কথা শুনে সবাই অবাক আমিও বেশ অবাক কিন্তু আমার শাশুড়ী মা আর শশুড় মুচকি হাসছে, এর মানে তারা তাদের ছেলের কথায় একমত।ইভান আবার বলে
—–যারা যার এমন কথাই বলতে চান তার, সুন্দর ভাবে সামনে থাকা দরজটা দিয়ে বেড়িয়ে যান। ইভানের চাচি এসে বলে
—–বাদ দে ইভান, অনেকর স্বভাবই এমন। ইভান আর কিছু বলেনা কিন্তু আমি অনেক খুশি যে না আমার হুতুম পেঁচা রুমে যাই করুক বাহিরে নিজের স্বামী হওয়ার দায়িত্ব ঠিকই পালন করছে……
#প্রাক্তন
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২৮/ শেষ পর্ব
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। নিজেকে সামলে নিলাম । ভাবতে লাগলাম কী হতে চলেছে। চুপচাপ হয়ে রইলাম। জানতাম কিছু একটা রহস্য আছে৷ আর আমি কলেজ থেকে বের হলেও আমার পিছু নিবে সে। তবে কিছু মানুষ অতি চালাকি করতে গিয়েই ধরা পড়ে। যেমনটা এখন হয়েছে। রোটিনের ক্লাস গুলো শেষ করে কলেজ থেকে বের হওয়ার আগে সোহানকে কল দিলাম। সোহান কলটা ধরে বলল
– কী রে কী করছিস৷ একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই কল দেওয়ার সময় হয়ে উঠে নি।
– কল দেওয়ার সময় হয়ে উঠে নি তাহলে এখন কল ধরেছিস কী করে? যাইহোক তোর পরিচিত কোন ফ্রেন্ড পুলিশ, একটু নম্বরটা দে। একটু কল দিব৷ আর এতদিন বলেছিলি না আমি পাগল। আজকে বুঝবি পাগলামির কারণ।
সোহান কিছুটা অবাক হয়ে বলল
– কেন কী হয়েছে আবার। খুলে বল।
– সময় মতো খুলে বলব৷ নম্বরটা দে।
সোহান কথা না বাড়িয়ে আমাকে নম্বরটা দিয়ে বলল
– আমি ওকে বলে দিবনে তুই কল দিবি। যা সমস্যা খুলে বলিস। তবে আমাকে বলা তোর উচিত।
– বলব সময় করে।
ফোনটা রেখে দিলাম। তারপর সোহানের দেওয়া নম্বরে কল দিলাম। পুলিশ অফিসার সাজ্জাদ কলটা ধরলেন। উনি কলটা ধরতেই আমি আমার পরিচয় দিলাম। সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। উনি আমার কথা শুনেই বললেন
– আপনি কী নিশ্চিত উনি আপনাকে ফলো করবে?
– একদম নিশ্চিত। আপনি চাইলে আসতে পারেন। এমন ভাবে আসবেন যেন টের না পাই।
– ঠিকানাটা দিন।
অফিসার সাজ্জাদকে ঠিকানা টা টেক্সট করে দিলাম। আধা ঘন্টার মধ্যেই উনি চলে আসলেন। আমি কলেজ থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলাম। তখন বাইকটা খুঁজতে লাগলাম আশেপাশে তবে পাচ্ছিলাম না। ভাবতে লাগলাম সে কী কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে নাকি চলে গেছে। দোটানা নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। গাড়িটা চলতে শুরু করল। পেছনে বাইকটাও। বুঝায় যাচ্ছে এ বাইকটা আমার গতিবিধি লক্ষ্য করছে। অফিসার সাজ্জাদকে কল দিলাম। উনি আশ্বস্ত করলেন উনি পেছনেই আছেন৷ আমি বাইকের বর্ণনা দিলাম। উনি খুব কৌশলে বাইকটা ধরে ফেললেন। সাথে সাথে চাচাকে গাড়ি থামাতে বললাম। কী ভেবেছিলেন লোকটা অরন্য? না মোটেও না। লোকটা অরন্যের মতো পোশাক পরে আমাকে ফলো করত। আমার মনে দ্বিধা দ্বন্ধ সৃষ্টি করত। লোকটা ছিল সালমান। নাফিসার প্রাক্তন৷ সেদিন নাফিসা এতকিছু বলার পর আমি মেনে নিতে পারছিলাম না নাফিসা খুন করেছে৷ তবে এটা মনে হয়েছিল অরন্য বেঁচে আছে৷ কিন্তু আমার ধারণা আজকে পাল্টে গেল৷ কারণ আমি যখন ছেলেটাকে লক্ষ্য করে দেখলাম সেটা সালমান ছিল। যেহেতু সালমান আর অরন্যের গড়ন একরকম ছিল তাই বুঝতে পারি নি। আমি নাফিসার কাছে যাওয়ার পর থেকেই সে আমার গতিবিধি লক্ষ্য করছিল আমি কী করি না করি৷ নাফিসা বলেছিল সালমান লন্ডন চলে গেছে তবে নাফিসা জানত না সালমান দেশেই ছিল।
সালমানকে অফিসার সাজ্জাদ যখন কড়াভাবে জিজ্ঞেস করল তখন সালমান জানায় নাফিসার সাথে টাকা নিয়ে বেশ কিছুদিন ঝামেলা হচ্ছিল৷ কাবিনের ৩০ লাখ টাকার পুরোটা চেয়েছিল সালমান নিতে। তাই নাফিসার সাথে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু নাফিসা সেটা মানতে চায় নি। সেদিন নাফিসার সাথে তার অনেক ঝামেলা হয়। টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি আরও অনেক কিছুই। এক কথায় বলতে গেলে নাফিসা সালমানকে অনেক বেশিই অপমান করেছিল। যেটা সালমান সহজে নিতে পারছিল না। নাফিসা চলে যাওয়ার পর সালমান বুঝতে পারছিল না কী করবে৷ এমন সময় সে অরন্যকে দেখতে পেল। তার মাথায় নতুন বুদ্ধির সংযোজন হলো। কেউ জানত না অরন্য থাকে কোথায়। তবে অরন্য থাকত আরেকটা নতুন বাসা ভাড়া করে। সালমান সেদিন কাকতালীয় ভাবে অরন্যকে দেখে তার পিছু নেয়। বাসাটা ভালো করে চিনে নেয়। তারপর প্ল্যান করে৷ চিন্তা করল একমাত্র অরন্যকে খুন করলেই সে নাফিসাকে ফাঁসাতে পারবে। যে প্ল্যান সে কাজ। সেদিন সকাল বেলা সে অরন্যের রুমের দরজা নক করে। অরন্য দরজা খুলতেই সালমান চোখে মুখে অজ্ঞান হওয়ার স্প্রে করে। তারপর যখন অরন্য নিস্তেজ হয়ে পড়ে তাকে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যার পর এসিড দিয়ে সারা শরীর পুড়িয়ে দেয় যাতে করে চেহারা সহজে বুঝা না যায়। এরপর স্যুটকেসে ভরে নাফিসার বাড়ির পাশেই লাশটাকে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে লাশ শনাক্ত করার পর ময়না তদন্ত করলেও সেটা টাকা দিয়ে পরিবর্তন করে নাফিসাকে পুরোপুরি ফাঁসিয়ে দেয়। এবং নাফিসার কাছে বলে সে লন্ডন চলে এসেছে। নাফিসাও বোকার মতো তা বিশ্বাস করে সন্দেহের তীর তার দিক থেকে সরিয়ে নেয়। ফলে কোনোভাবেই প্রমাণ হয়নি সালমান অরন্যকে খুন করেছে।
সালমানের উদ্দেশ্য তো হাসিল হয়েছে। এতে সালমানও ফাঁসার আর কোনো চান্স ছিল না৷ তবে বিপত্তি ঘটে তখন যখন সালমান জানতে পারে আমি নাফিসার সাথে দেখা করতে গেছি। সে ভেবেছিল আমি কিছু একটা করে বসে কী না। এতে যদি সে ফেঁসে যায়। কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সে আমার গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। এমনভাবে লক্ষ্য করত যাতে করে আমি ওকে কোনোভাবেই সন্দেহ না করতে পারি বরং উল্টা যেন নিজেই পাগল প্রমাণিত হই। আর সেজন্য অরন্যের ব্যবহার করা জামা কাপড় পরে এমনভাবে আসত সেটা শুধু আমিই দেখতে পেতাম৷ যাইহোক তার এ কাজটায় তার সকল খেলা ধুলোই লুটিয়ে দিয়েছে৷ অবশেষে সে ধরা পড়েছে। খুনের কথা স্বীকারও করেছে৷ এ নোংরা খেলাটা যেন বন্ধ হলো। সালমান আপাতত অফিসার সাজ্জাদের অধীনে আছে।
সন্ধ্যায় সব ঘটনার অবসান ঘটিয়ে বাসায় আসলাম। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভবতে লাগলাম। দুনিয়া কত অদ্ভুত আমরা ভাবী এক হয় আরেক। জীবনের ছন্দগুলো একটু বেশিই এলোমেলো। ভেবেছিলাম অরন্য বেঁচে আছে তবে বুঝিনি সেটার পেছনে এত নাটক আছে। অরন্য কী কখনও জানত নাফিসার প্রাক্তনের হাতেই তার খুন হবে। একটা লোভ অহংকার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিল। নাফিসাকে সে বিয়ে করেছিল লোভে পড়ে অহংকারে ডুবে গিয়ে। আর নাফিসা সেও অরন্যকে বিয়ে করেছিল লোভে। নাফিসার জন্য অরন্য আমাকে ছেড়েছিল আর তার মাধ্যমেই নিজের জীবন হারাল। আর নাফিসা সালমানের জন্য অরন্যকে ছেড়েছিল আর তার জন্যই মিথ্যা জেলের মামলায় ফাঁসলো। কথায় আছে যে যতটুকু করে তার জন্য ততটুকুই বরাদ্ধ থাকে। অরন্য যেমনটা করেছিল তার পরিণতিও তেমনটায় হয়েছে। আর নাফিসা জেল থকে ছাড়া পেলেও একটা বড় শিক্ষা পাবে। বুঝতে পারবে লোভে পরে কারও ক্ষতি করে জীবন সুন্দর করা যায় না। বাকি রইল আবির। আবিরের দোষটা ছিল আমাকে নিয়ে খেলা। জেনে শুনে মনটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। সেও শাস্তি পেয়েছে।
বাকি রইলাম আমি৷ যে কী না অরন্যকে ভালোবাসতাম পাগলের মতো। তার জন্য সব কিছু বিসর্জন দিতে একটা সময় চেয়েছিলাম। বিনিময়ে কষ্ট ছাড়া কিছু পাইনি৷ তার সাথে বিয়ে হয়েছিল তবে সেটা প্রকাশ করার মতো কোনো উপায় পাইনি। নিজের সন্তানকে শেষ করে দিতে হয়েছিল। সেদিনের পর থেকে জমে থাকা ঘৃনা তাকে দ্বিতীয়বার মানতে বাঁধা দিয়েছিল৷ তবুও মেনে নিতাম যদি না সে আবিরকে দিয়ে নোংরা খেলা না খেলত। তার ভুলগুলো ক্ষমা চেয়ে আমার কাছে আসত। কিন্তু এমন কিছু কাজ করেছে যেটা আমাকে আরও বেশি আঘাত করেছে৷ দুই বার ঠকেছি একবার আরন্যকে পাগলের মতো ভালোবেসে আর দ্বিতীয়বার আবিরকে ভালো না বাসলেও বিশ্বাস করে।
যখন ঠকতে ঠকতে নিঃশ্ব হয়ে গেছি। নিজের গতি হারিয়ে ফেলেছি। কী করব বুঝতে পারিনি। তখন বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সোহান। আমাকে কোনো নোংরা খেলার গুটি বানাই নি৷ বরং এতকিছু জানার পরও বিয়ে করে নিজের স্ত্রী এর সম্মান দিয়েছে৷ যেদিন কবুল বলেছি এর পর থেকেই ওকে আমি আপন করে নিয়েছি৷ ভালোবাসতে হয়তো পাগলের মতো পারিনি৷ তবুও তাকে ভালোবাসার চেষ্টা করেছি৷ তার বুকে মাথা রেখে স্বস্তি খুৃঁজেছি৷ সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে মানুষটা আমাকে ভালোবেসেছে৷ ভাগ্যিস নতুন কোনো খেলায় জড়ানোর আগে আজকে সে খেলার সমাপ্তি ঘটেছে৷ অরন্য ওপারে ভালো থাকুক৷ ও আমার মোনাজাতে থাকবে। ওর দিয়ে যাওয়া স্মৃতি আমার সাথেই থাকবে তবে নতুন পরিচয়ে।
আনমনা হয়ে এসবেই ভাবছিলাম। কিছুটা অস্থির লাগলেও আজকে নিঃশ্বাস গুলো বেশ স্বস্তিতে ফেলছিলাম৷ এর মধ্যে সোহান আসলো। পাশে দাঁড়াল। আমার কাঁধে হাত রেখে বলল
– কী ভাবছিস?
আমি সোহানের দিকে ফিরে বললাম
– আসলি কখন?
– মাত্রই। তোকে ভুল বুঝার জন্য সরি। বুঝতেই পারিনি সালমান এমন একটা কাজ করবে৷ পুলিশ সালমানকে জেলে নিয়েছে। আর নাফিসাকে ছেড়ে দিয়েছে। নাফিসা আমাকে কল দিয়েছিল বলেছে তাকে ক্ষমা করে দিতে। তোর এ উপকার কোনোদিনও সে ভুলবে না। এখন থেকে জীবনটা সুন্দর করে গুছা। আজকের পর থেকে তোর জীবনে আর কোনো কালো ছায়া নামবে না। এতদিনের পাওয়া যন্ত্রণা সবটা সুখে পরিণত হবে। আর একটা কথা বলি মানুষ চিনে রাখ। তুই বিয়ের স্ট্যাটাস দেওয়ার পর তোরেই কিছু কলিগ বান্ধবী কাছের লোক আজকে আমাকে তোর অতীত নিয়ে মেসেজ করেছে। সব জেনে বিয়ে করেছি কী না। এরাই তোর ক্ষতি করতে চাইবে। সবাইকে চিনে রাখিস আমার মোবাইলটা নিয়ে দেখে। আর এখন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকিস না। একটু বিশ্রাম নে। রাত ১১ টার উপর বাজে। আজকে অনেক ধকল গেছে তোর উপর। তবুও স্বস্তি তো মিলেছে। এটাই অনেক।
সোহানের কথায় কিছু বলতে পারছিলাম না। দুনিয়ায় কিছু সুপার হিউম্যান থাকে আর সেটা অতি নগন্য। তার মধ্যে একজন হলো সোহান। আমি চুপ করে ওর দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি। সোহান আমাকে ধরে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল
– কোনোদিন তোরে কষ্ট পেতে দিব না৷ যা পেয়েছিস সবটা সুখে পরিণত করে দিব।
এর মধ্যেই টুকটুকি উপস্থিত হলো।।টুকটুকিকে দেখেই দুজনেই সরে পড়লাম। টুকটুকি আমার কাছে আসলো। আমি ওকে নিয়ে খাটের উপর বসালাম। ওর গালে সহস্র চুমু একে দিলাম।
সেদিনের পর দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর কেটে যায়। সালমানের শাস্তি হয়। মৃত্যু দন্ড হয়নি তবে কারাদন্ড হয়েছে। নাফিসা মাঝে মাঝে কল দিয়ে খুঁজ নেয়৷ চিনে রেখেছিলাম সেসব মানুষকে যারা বিয়ের স্ট্যাটাস দেওয়ার পর সোহানকে আমার নামে যা তা বলেছিল। পুত্র সন্তানের মা হই। কেউ জানে না বাচ্চাটা অরন্যের। সবাই জানে বাচ্চাটা আমার আর সোহানের। যেসব মানুষ গুলো আমাকে যা তা বলত আজকে তাদের মুখ বন্ধ। তারায় আমার প্রশংসা করে।।তারায় তাদের মেয়ের জন্য সোহানের মতো ছেলে খুৃঁজে।৷ আর সোহান সে কোনোদিনও আমার অতীত নিয়ে কথা তুলে নি। কেউ তুললেও সেটা এড়িয়ে গিয়েছে। নিজের মতো করে আমাকে সাজিয়ে নিয়েছে। তার ভালোবাসায় আমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। টুকটুকি ক্লাস ফোরে পড়ে। আর ছেলেটা ক্লাস প্লে তে। দুটো সন্তান আর স্বামীর সোহাগ নিয়ে আমার সুখের সংসার বেশ ভালো চলছে৷ যে সংসারে নেই কোনো কুটিলতার ছায়া, সেখানে আছে শুধু অকৃত্রিম ভালোবাসা। আজকে অবশ্য আরেকটা বিশেষ দিন কারণ আজকে জানতে পারি আমার ঘরে আরেকজন নতুন অতিথি আসবে। আরেকটা কথা আমাদের সম্বোধনটাও তুই থেকে তুমিতে চলে এসেছে। যদিও মাঝে মাঝে তাকে মজা করে তুই বলি। কারণ সে আগে আমার বন্ধু তারপর আমার স্বামী। তুই থেকে তুমিতে আসার গল্প গুলো একটু বেশিই সুন্দর এবং সাবলীল হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় কিছু কিছু মানুষের ভালোবাসা পাবার জন্যই হয়তো কেউ কেউ #প্রাক্তন হয়ে যায়।
বিঃদ্রঃ
১)প্র্যাগনেন্ট অবস্থায় বিয়ে জায়েজ কী না জানা নেই। এখতেলাফি বিষয় অনেক ফতোয়া আছে৷ যেগুলো আমি বা আপনি দিতে পারব না। তবে গল্পটা ইসলামিক কোনো গল্প না। সামাজিক কিছু বিষয় তুলে ধরে সংযোজন বিয়োজনের মাধ্যমেই গল্পটা সাজানো হয়েছে। সমাজে এমন বিয়ে অনেক হয়েছে। বর মারা গেছে স্ত্রী প্র্যাগনেন্ট দেবর বিয়ে করেছে। আরও শত শত কাহিনি/উদাহরণ আছে প্র্যাগনেন্ট অবস্থায় বিয়ের। সুতরাং সামাজিক সে রকম একটা কাহিনিই ধরে নিবেন৷ সাধারণ এ গল্পে ইসলামিক জটিল বিষয় গুলো না জেনে টেনে এনে তর্কাতর্কি করবেন না।
২) এটা গতানুগতিক কোনো রোমান্টিক গল্প ছিল না। রোমান্টিক থৃলার গল্প বলা যায়। যারা প্রতি পর্বে সাসপেন্সের জন্য বিরক্ত হয়েছেন তাদের জন্য করার কিছু নেই। এরকম গল্পে সাসপেন্স থাকবেই।
৩) অনেকেই ভাবছেন নায়িকা আবির অরন্যের পর কেন সোহানকে বিয়ে করেছে। একজনের বাচ্চা পেটে নিয়ে আরেকজনকে বিয়ে কীভাবে করল। সেক্ষেত্রে বলব যত কঠিন অতীতেই হোক না কেন আমার মনে হয়েছে অতীত কে আকঁড়ে ধরে না থেকে বর্তমানকে সুন্দর করে গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে চলায় শ্রেয়। তাই এরকম ইন্ডিং দেওয়া। কারণ ভুল অন্যায় আবির আর অরন্য করেছে সেটার শাস্তি তো একপাক্ষিক ভাবে নায়িকাকে দিতে পারি না।
৪) অনেকে ভাবছেন গল্পটাতে ছেলেদের খারাপ বানানো হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি পুরো গল্পটা গভীরভাবে উপলব্ধি করলে বুঝা যাবে যে অরন্য আর আবির চরিত্রের মধ্যে ছেলেদের খারাপ দিক তুলে ধরলেও সোহান চরিত্রের মাধ্যমে ছেলেদের দায়িত্বশীলতা,যোগ্য স্বামী হওয়া,যোগ্য পিতা,যোগ্য ছেলে হওয়ার দিকটা খুব সুণিপুণভাবে ফুটে উঠেছে।
৫) গল্পটাতে অপ্সরা চরিত্রের মাধ্যমে আমি এটাই তুলে ধরতে চেয়েছি৷ জীবনে বাঁধা আসবেই। ক্ষণে ক্ষণে আশার আলো দেখে নিরাশ হতে হবে। হয়তো কেউ পাশে থাকবে না নিজের পরিবারও না। তবে মনোবল হারানো যাবে না৷ একমাত্র দৃঢ় মনোবলেই সুখের ধার প্রান্তে নিয়ে যাবে। তাই স্বাবাভিক কিছু বিষয়ে নিজেকে শেষ না করে জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত গিয়ে দেখুন সমাপ্তিটা কেমন হয়।
পরিশেষে বলব গল্পে অনেক ভুল ত্রুটি রয়েছে সেগুলো ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন৷ বানানের অসংগতি ভাষার সংমিশ্রণ রয়েছে সেগুলো স্বাভাবিক ভাবে নিবেন৷ হয়তো আবারও নতুন কোনো গল্প নিয়ে হাজির হব। সবাই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগল।
আমিও বসা থেকে হুট করে উঠে হন্তদন্ত হয়ে বাইরে আসলাম। আমাকে বাইরে আসতে দেখে সোহানও বাইরে আসলো। আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল
– কী রে হুট করে বাইরে আসলি কেন? কী হয়েছে? কাউকে কী দেখেছিস?
আমি আশেপাশে খু্ঁজতে লাগলাম। আশেপাশে দেখে লক্ষ্য করলাম কেউ নেই। ভাবুক গলায় সোহানকে উত্তর দিলাম
– মনে হয়েছিল অরন্য বের হয়েছে রেস্টুরেন্ট থেকে।
আমার কথায় বিরক্ত হওয়ার কারণ থাকলেও সোহান তেমন বিরক্ত হলো না৷ আমাকে ধরে বলল
– তুই একটু বেশিই ভাবছিস। এখানে কেউ নেই। অরন্যকে দেখলে সে কী উধাও হয়ে যাবে? মৃত মানুষকে নিয়ে এত চিন্তা করা ঠিক হচ্ছে না। বাবুর উপর প্রভাব পড়বে। সে কখন থেকে একটা কথায় বলে যাচ্ছিস। একটু নিজেকে সামলে নে। আমি জানি তোর সাথে যা হয়েছে এতকিছুর পর নিজেকে সামলানো অনেক কঠিন। তবে নিজের সন্তানের জন্য হলেও নিজেকে সামলে নে। আমাদের জীবন তো সবসময় আমাদের মতো করে চলে না৷ তোর যেটা হচ্ছে সেটা অত্যাধিক চিন্তা থেকে। সিজোফ্রেনিয়া রোগ এটা। যাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করা হয় তাকে বাস্তবে দেখেছে বলে মনে হয়। এজন্যই বলেছিলাম একজন মানসিক ডাক্তার দেখাই। তুই তো রাজি না। তবে একটু নিজেকে সময় দে। যেটা হয়েছে সেটা মানতে শিখ। আমার একটা ভুল হয়েছে নাফিসার কাছে নিয়ে গিয়ে। নিয়ে গিয়েছিলাম তোকে একটু স্বস্তি দেওয়ার জন্য। উল্টা নাফিসা তোকে অশান্ত বানিয়ে দিল। যাইহোক যা হবার তো হয়েছেই এখন চল আইসক্রিম খাওয়া যাক। বাসায় টুকটুকি তোর জন্য অপেক্ষা করছে। আমার মেয়েটার দিকে তো তোর লক্ষ্য রাখতে হবে৷ তাকে তোর আদর থেকে বঞ্চিত করিস না।
সোহানের কথা শুনে আমার যেন বোধদয় হলো। সত্যিই তো বিষয়টা নিয়ে আমি একটু বাড়াবাড়ি করছি। আর সোহান আমার স্বামী এটাও আমাকে দেখতে হবে। কোনো স্বামীই তার স্ত্রী এর প্রাক্তনকে সহ্য করতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। অরন্যকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমি সোহানের সাথে একটু অন্যায় করে ফেলতেছি। যেটা একদম অনুচিত। আমি নিজেকে সামলালাম। সোহানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম। তারপর হালকা সুরে বললাম
– তুই যা বলিস তাই হবে। সত্যিই হয়তো এটা আমার মানসিক রোগ না হয় এমনটা হত না। চল আইসক্রিম খাই। মাথা এলোমেলো লাগছে।
সোহান আমার মাথার চুলে আঙ্গুল দিয়ে হালকা মেসেস করে বলল
– পাগলি একটা।
বলেই দুজন রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম পুনরায়। আইসক্রিম ততক্ষণে চলে আসলো। সোহান আর আমি আইসক্রিম টা খেতে লাগলাম। আমি যত চেষ্টা করছি সোহানের দিকে মনোযোগ দিতে ততই মনোযোগ যেন অরন্যের দিকে যাচ্ছিল। নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হচ্ছিলাম। তবুও সামলে নিয়ে দুজন আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে বাসায় আসলাম।
বাসায় আসতেই টুকটুকি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– মা কোথায় গিয়েছিলে?
আমি টুকটুকিকে কোলে তুলতে চাইলে সোহান বাঁধা দিল। সোহানের দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললাম
– কোলে নিতে বাঁধা দিচ্ছিস কেন?
– টুকটুকির বয়স ৫ বছর। ও একটু হেলদি বাচ্চা। এখন কোলে না তোলায় ভালো। আদর কর এমনিতে কর। রিস্ক নিস না কোনো। এ বাচ্চার কিছু হলে আমার মনকেও আমি শান্ত করতে পারব না আর তুই ও আরও ভেঙ্গে পড়বি। আমি চাই না এমন কিছু হোক। সবদিক দিয়ে তুই সাবধানে থাক।
সোহানের কথা গুলো শুনে আমার চোখের কোণে জল জমে গেল। একটা মানুষ এত নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে কী করে। আমি টুকটুকিকে কোলে তুললাম না। ওর গালে কয়েকটা চুমু দিয়ে রুমে নিয়ে গেলাম। ওর জন্য আনা চকলেটটা ওর হাতে দিলাম। ও আমার পাশে বসে হাজারটা প্রশ্ন করতে লাগল। কোথায় গিয়েছিলাম তাকে কেন নিই নি। আমি হেসে হেসে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম। এর মধ্যে সোহানের মা এসে বলল
– মা মেয়ের ভালোবাসা যেন এভাবেই অটুট থাকে। আরেকটা নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাই।
আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম। মা আমার লজ্জা দেখে হালকা হেসে চলে গেল। আমি টুকটুকির সাথে এদিকে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। টুকটুকিকে গোসল করালাম দুপুরের খাবার খাওয়ালাম তারপর ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। মাথাটা বেশ ব্যথা করছে। টেবিলে হাত রেখে হাতে কপাল ঠেকিয়ে চেয়ারে বসলাম। সোহান হাতে করে তেলের বোতল এনে আমাকে ডেকে বলল
– চল উঠ। মাথায় তেল দিয়ে দিই ভালো লাগবে।
আমি উঠতে চাচ্ছিলাম না। তবুও সে জোর করে আমাকে বসিয়ে মাথায় তেল দিয়ে মেসেস করতে লাগল। মাথার ব্যথাটা যেন আস্তে আস্তে কমছিল। আমি সোহানকে বললাম
-ব্যাথাটা অনেকটায় কমেছে।
– কে তেল দিয়ে দিছে দেখতে হবে তো। চল খাবি।
দুজন একসাথেই খেলাম। মা কল দিয়ে বলল সোহানকে নিয়ে বাসায় যেতে তবে এখন কেন জানি বাসায় যেতে মন চাচ্ছিল না, তাই না করে দিলাম। মাকে বললাম সোহান ব্যবসার কাজে ব্যস্ত পরে আসব। মা ও আর বাড়াবাড়ি করল না। দিন গড়িয়ে রাত নামল সোহানের হাতে মাথা রেখে শুয়ে আছি। সোহান আমার ঘাড়ের গন্ধ নিচ্ছিল। ওর বুকে মাথা রেখে যেন অনেকটা স্বস্তি মিলছিল। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– সবসময় এভাবে থাকিস। তোকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। কখনও ছেড়ে চলে যাবি না।
আমি হালকা হেসে বললাম
– বেশি ভালোবাসাও ভালো না রে। একটু কম বাসিস। যাতে কখনও হারিয়ে গেলেও সহ্য করে নিতে পারিস।
– এমন বলিস না। আমি কখনও তোকে হারাতে চাই না। ভীষণ ভালোবাসি তোকে।
আমি আর কিছু বললাম না। তার বুকে মাথা লুকালাম।
পরদিন সকালে উঠেই তৈরী হলাম কলেজে যাওয়ার জন্য। সোহান আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলল
– আমি গাড়ি রেখে যাচ্ছি। তুমি গাড়ি করে চলে যাও। একটা কাজে শহরের বাইরে যাব। রাতের মধ্যেই চলে আসব।
আমিও সোহানের দিকে তাকালাম। তার গালে ঠোঁটের আলতো স্পর্শ দিয়ে কানের কাছে গিয়ে বললাম
– তাড়াতাড়ি চলে এসো। অপেক্ষায় থাকব।
সোহান হালকা করে আমাকে বুকের মধ্যে ঝাঁপটে ধরে বলল
– সে তো আসতেই হবে। প্রিয়তমা যে অপেক্ষা করবে। আচ্ছা আজকে আমরা কত সাবলীল ভাবে তুমি করে বললাম তাই না।
হালকা হাসি টেনে বললাম
– আস্তে আস্তে আরও সাবলীল হয়ে যাবে। যা তো তুই এবার।
সোহান বের হয়ে গেল। আমিও তৈরী হয়ে টুকটুকিকে নাস্তা খাইয়ে দিয়ে মায়ের কাছ থেকে বলে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম। ড্রাইভার চাচা গাড়ি চালাচ্ছে। হুট করে গাড়ির আায়না দেখে মনে হলো অরন্য আমাকে বাইক চালিয়ে অনুসরন করছে। তবে এবার উত্তেজিত হলে চলবে না৷ এটা আমার কল্পনা নাকি বাস্তব সেটা আগে নিশ্চিত হতে হবে। আমি ড্রাইভার চাচাকে বললাম
– চাচা দেখেন তো আয়নায় কোনো ছেলেকে দেখছেন কী না কালো শার্ট পরা বাইক চালাচ্ছে।
চাচা আয়নায় তাকিয়ে বলল
– হ্যাঁ দেখতে পারছি। কালো হ্যামলেট ও পরেছে তাই না?
– হ্যাঁ চাচা।
তার মানে এটা আমার কল্পনা না। শার্ট টা অরন্যের সেটা আমি ভালো করেই চিনি। চাচাকে বললাম
– চাচা গাড়িটা একটু থামান।
চাচা গাড়িটা থামাল। সে বাইকটা গাড়িটা থামতেই গাড়িটা পার করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। বাইকের নম্বরটা আমার খুব ভালো করে চেনা। এটা যে অরন্যের বাইক বুঝতে আর বাকি রইল না। এবার আমি নিশ্চিত এটা অরন্য। চাচাকে বললাম কলেজের দিকে যেতে। আমি সিউর অরন্য আমার পিছু নিবে। চাচা গাড়ি স্টার্ট করে কলেজের দিকে যাচ্ছে। সে বাইকটা এক মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকে পুনরায় আমার পিছু নিল। চাচা কলেজের সামনে এসে বলল
– চলে এসেছি।
আমি গাড়ি থেকে নামলাম। নামতেই বাইকটা থেমে গেল। দেখেও না দেখার ভান করে কলেজে ঢুকলাম। কলেজে ঢুকতেই কলিগরা বলতে শুরু করল
– হুট করে বিয়ে করলে বিয়ের দাওয়াত কিন্তু পেলাম না।
আমি এক গাল হেসে বললাম
– দিব। একটু সমস্যার জন্য দেওয়া হয়নি।
– দাওয়াত যেন পেয়ে যাই। যাইহোক কংগ্রাচুলেশনস। আর ফেসবুকে এখনও সিনগেল কেন। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেন্জ করো।
সত্যিই তো আমি সিনগেল না, তাহলে ফেসবুকে সিনগেল দিব কেন। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে সোহানের সাথে ট্যাগ করে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিলাম। হুট করে বিয়ের স্ট্যাটাস দেওয়ায় সবাই একটু চমকালো বটে।
আর এদিকে লক্ষ্য করলাম অরন্য নীচে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও হ্যামলেট পরা। তবুও আমাকে নিশ্চিত হতে হবে। ওর একটা ছবি তুলে রাখতে হবে। আমি নীচে গেলাম। কৌশলে অরন্যের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এক পাশে এসে তাকে ভালো করে লক্ষ্য করলাম। লক্ষ্য করার পর শুধু একটু না অনেকটায় চমকালাম আশ্চর্য ও হলাম।
– অপ্সরা বিশ্বাস করো আমি অরন্যকে খুন করিনি। আমি ওকে কেন খুন করতে যাব। অরন্য আমাকে কাবিনের ৩০ লাখ টাকাও দিয়ে দিছে৷ আর সবচেয়ে বড় কথা ও কোথায় ছিল সেটাই তো আমি জানতাম না। আমাকে কে ফাঁসিয়েছে জানি না। আমার হাতের ছাপেই বা কীভাবে গেল বুঝতে পারছি না৷ আমি এতটা নির্দয় না যে অরন্যকে মেরে ফেলব। অরন্যের সাথে তো আমার কোনো শত্রুতা নেই। সেদিন সালমানের সাথে আমার রাস্তায় দেখা হয়৷ তার সাথে ঝামেলা হয়, বেশ কথা কাটাকাটি হয়ে আমি বাসায় চলে আসি।
সালমান রাতে কয়েকবার কল দেয়। আমি আর ধরিনি। রাতেই সালমান লন্ডন চলে যায়। আর অরন্যের লাশও পরদিন পাওয়া যায়। প্রথমে ভেবেছিলাম সালমান খুন করেছে তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট বলতেছে অরন্যের খুন হয়েছে সকাল দিকে। তখন সালমানের উপর আমার সন্দেহ চলে যায়। কারণ সালমান রাতের ফ্লাইটেই লন্ডনে চলে গিয়েছিল। তবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। যে জায়গায় আমি অরন্যের খোঁজ খবরেই পাচ্ছিলাম না সেখানে আমি অরন্যকে খুন করব কীভাবে? সালমানকে টেক্সট করেছিলাম৷ সে উত্তরে বলল আমাকে আর কোনো সাহায্য সে করবে না। সে আর কোনোদিন দেশে আসবে না। তারও ধারণা আমিই অরন্যকে খুন করেছি। আমি একা হয়ে পরি। আমি জানি না আমার হাতের ছাপ অরন্যের গলায় কী করে গেল। অপ্সরা আমার যা শাস্তি হওয়ার তো হবে৷ হয়তো এটা প্রমাণ করতেও পারব না আমি অরন্যকে খুন করিনি তবুও তোমাকে বললাম। কারণ শাস্তি হওয়ার আগে একটা মানুষ অন্তত জানুক আমি তাকে খুন করেনি।
আমি নাফিসার কথা শুনে একটু তীক্ষ্ণ গলায় বললাম
– সত্যিই কী খুন করো নি? নাকি কোনো নাটক করছো?
– অপ্সরা আমার শাস্তি যা হওয়ার সেটা নির্ধারিত হয়েই আছে। এখন নাটক করে লাভ নেই। তোমার বন্ধু আমি না যে এসব বললে তুমি আমাকে সত্য উদঘাটনে সাহায্য করবে তবুও বলছি কারণ মনের শান্তির জন্য। আমি নিজেও জানতাম না অরন্য কোথায় ছিল। আমি আবারও বলছি অরন্যকে আমি খুন করেনি। আমাকে কেউ এ নোংরা খেলার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। কেন জানি না মাঝে মাঝে তোমাকেও সন্দেহ হয়।
নাফিসার এ দোটানা বলে দিচ্ছে সে অরন্যকে খুন করেনি৷ নাহয় সন্দেহের তীর আমার দিকে ছুড়ত না। একটা মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে পড়ে তখন সে এমন অনেক কিছুই ভাবে। তবে এটা নাফিসার নাটকও হতে পারে। আবার মনে হচ্ছে আমি অরন্যের মতো কাউকে দেখলাম তাহলে সেটা কে ছিল? সেটা কী আদৌ আমার কল্পনা ছিল নাকি কোনো বাস্তবতা। সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। নাফিসাকে হালকা গলায় বললাম
– তুমি একজন মানুষের গলায় হাত না দিলে তো ছাপ পাওয়ার কথা না। সেটা কী করে সম্ভব?
নাফিসা পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলল
– আমিও সেটার মানে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমার হাতের ছাপ কী করে গেল। আমি তো এতটা জঘন্য না। একটা ছেলেকে খুন করে তার শরীর এসিড দিয়ে পুড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করব। সত্যিই আমি জানি না।
বেশ অবাক সুরে বললাম
– অরন্যের লাশ কী এসিড দিয়ে পুরানো অবস্থায় ছিল?
নাফিসা ভাঙ্গা গলায় বলল
– আমি লাশ দেখেনি৷ তবে বলা হয়েছে আমি নাকি অরন্যকে গলা টিপে মেরে লাশ গুম করার জন্য পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছি। জানি না কে করেছে এমন। তবে আমাকে যে মুখ্য গুটি বানিয়ে চাল চেলেছে সেটা বুঝতে পারছি৷ পুলিশ নাকি ব্যাপারটা অদন্ত করছে৷ তবে তাদের উপর আমার কোনো ভরসা নেই। তদন্ত করার পরও হয়তো আমাকেই দোষী বলবে৷ আমাকেই শাস্তি দিবে। আচ্ছা তুমি আমার সাথে দেখা করতে এসেছো কেন?
নাফিসার কথাগুলো শুনার পর আমার বিয়ের সংবাদটা ওকে দিতে পারলাম না। কেন জানি মনে হচ্ছে নাফিসা যা বলছে সত্যি। হয়তো অরন্য মরেনি৷ হয়তো মরেছে তবে সেটার দোষ নাফিসার না৷ তাই এ মুহুর্তে নাফিসাকে বিয়ের সংবাদ দিতে গেলে অনেকটা কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতো হয়ে যাবে। তাই নাফিসাকে ব্যাপারটা চেপে গেলাম। তেমন কোনো উত্তর না দিয়ে বললাম
– তুমি থাকো। আমি আসছি। পরে কথা হবে। হয়তো দেখা করার সুযোগ আর হবে না। এসেছিলাম এমনিতেই।
কথাটা বলেই চলে আসলাম। হাজারটা প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। নাফিসার সাথে দেখা করতে আমি একা গিয়েছিলাম। সোহান বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে বের হতে দেখেই বলল
– এত দেরি হলো কেন বের হতে? আরেকটু হলে তো চিন্তায় পড়ে যেতাম।
– কিসের চিন্তা শুনি? নাফিসা তো জেলের মধ্যে থেকে আমাকে কিছু করবে না৷ চল বাসায় যাওয়া যাক।
– তুই কী ডিস্টার্ব কোনো বিষয় নিয়ে?
আমি সেহানের দিকে তাকিয়ে তার হাতটা ধরে বললাম
– নাহ! তেমন কিছু না। চল গাড়িতে উঠা যাক। অনেক দিন আইসক্রিম খাওয়া হয় না৷ চল আমাদের কলেজের সামনের দোকানটা থেকে আইসক্রিম খেয়ে আসি।
সোহান আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে হেসে দিয়ে বলল
– তোর কী মনে হয় এত বছর পরও সে দোকান আছে? কবেই সে দোকান ভেঙ্গে গেছে। চল একটা রেস্টুরেন্টে বসি৷ সেখানে গিয়ে আইসক্রিম খাব নে।
– চল তাহলে।
বলেই গাড়িতে উঠলাম। আমি সামনের সিটে হেলান দিয়ে বসলাম। সোহান গাড়ি চালাচ্ছে। আমি হুট করে সোহানকে বললাম
– আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নাফিসা অরন্যকে খুন করেনি৷ তার কথা শুনে এমনেই মনে হচ্ছে। আর আসার সময়ও কেন জানি না মনে হলো অরন্যকে রাস্তায় দেখেছি। আমি যে শার্ট টা অরন্যকে গিফট দিয়েছিলাম সে শার্ট টা পরেই রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল।
আমার কথা শুনে সোহান হুট করে গাড়িটা ব্রেক কষল। গাড়িটা থামাতেই আমি ওর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– এসব কী আবোল তাবোল বলতেছিস? সকালে অরন্যকে তুই কীভাবে দেখবি৷ একটা মৃত ব্যক্তি কী ফিরে আসা সম্ভব? আর নাফিসা তো মিথ্যাও বলতে পারে। আমরা কী সবাইকে চিনি? মানুষকে চেনা কী এত সহজ? এত কাহিনির পর ও এখনও মানুষ চিনলি না। আর তোকে একটা মানসিক ডাক্তার দেখাতে হবে। অরন্যের ভূত তোর মাথায় চেপেছে এটা নামাতে হবে৷ আর অপ্সরা আমি তোর স্বামী। আমার সামনে প্রাক্তনকে নিয়ে বললে আমার হিংসা হয়। একটু তো বুঝবি।
– সোহান মশকরা করিস না। আমি কেন জানি না বিষয়টাতে নাফিসা কে দোষ দিতে পারছি না। কোনো রহস্য তো লুকিয়ে আছেই। অরন্যকে ঘিরে এমন কিছু আছে যেটা আমি বা তুই জানি না।
– আমার বাল আছে। তোর এসব প্যাচাল থামাবি? আজকেই তোকে মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। ঠিক মতো কাউন্সিলিং করলে ঠিক হয়ে যাবে সব।
বেশ রাগী গলায় উত্তর দিলাম
– তোর কী আমাকে পাগল মনে হয়?
সোহান আমার গালটা টেনে তার কাছে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল
– তোকে আমার পাগলি মনে হয়। মানসিক ডাক্তার শুধু পাগলদের দেখায় না। এই যে তুই মৃত একটা মানুষকে দেখছিস। যেখানে সমস্ত রিপোর্ট বলে দিচ্ছে এটা অরন্যের লাশ। তার পরিবারও শনাক্ত করেছে সেখানে তুই বলছিস ও বেঁচে আছে৷ অপ্সরা নিজেকে সামলে নে। অতীতে এখনও ডুবে আছিস। এ অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। পেটে একজন আছে তার কথা ভাব।
আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম
– তার কথায় ভাবতে গিয়েই তো এত ভাবছি। এ অতীত যে পিছু ছাড়ে না।
– তুই ছাড়লেই ছাড়বে। তুই যে ধরে আছিস তাই।
– বাদ দে। আইসক্রিম খেলে মাথা ঠিক হবে। মাথায় হয়তো জং ধরে গেছে। গাড়ি স্টার্ট দে।
সোহান চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে রেস্টুরেন্টে চলে আসি। রেস্টুরেন্টে গিয়ে আইসক্রিম অর্ডার করে দুজনেই অপেক্ষা করতে লাগলাম। সোহান হাসতে হাসতে বলে উঠল
– আগে তো আমার আইসক্রিমে থুথু মিশিয়ে দিতি যাতে করে দুটোই তুই খেতে পারিস। এখন থুথু মিশালেও সমস্যা নেই আমি খেতে পারব।
বলেই হুহু করে হেসে দিল। আমি হালকা করে হাসলাম। আগে কত দুষ্টই না ছিলাম আমি। হাসতে হাসতে পাশ ফিরে তাকাতেই মনে হলো অরন্যকে দেখেছি। সে উঠেই বাইরের দিকে চলে গেল। আমিও বসা থেকে হুট করে উঠে হন্তদন্ত হয়ে বাইরে আসলাম।
সোহান কী আমার সাথে নাটক করল? কারণ ক্যালেন্ডার টা হাতে নিতেই কিছু ছবি মেঝেতে পড়ল। মনে হয়েছিল ছবিগুলো হয়তো সোহানের কোনো গোপন ছবি যেগুলো ক্যালেন্ডারে এভাবে রেখেছে। প্রথমে এমন কথাটায় মনে চলে এসেছিল। ক্যালেন্ডার হাতে নিতেই ছবিগুলো উল্টো হয়ে পড়েছিল তাই। পরক্ষণেই অবিশ্বাসের চাদর টা মন থেকে সরে গেল, যখন ছবি গুলো মেঝে থেকে তুলে উল্টো করে ধরে নিজের চেহারাটায় দেখলাম। ছবিগুলো বেশ পুরনো নবম,দশম শ্রেণী এবং কলেজে থাকা অবস্থায় তুলা। ৮-১০ টা ছবি তুলে রাখা আছে। প্রতিটি ছবির পেছনে সেদিনের ঘটে যাওয়া কাহিনি ছোট করে বর্ণণা করা আছে। বেশ ভালোই লাগল বিষয়টা দেখে। অন্তত কেউ একজন তো আমাকে ভালোবাসে। তার মনের গহীনে তো অপ্সরা নামটা রয়েছে। আমি চুপ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর ছবিগুলো যথাস্থানে রেখে খাটের কোণে এসে বসলাম। ভেতরটা বেশ প্রশান্তি লাগছে। মনটাতেও বেশ স্বস্তি লাগছে। নিজের জীবনের মোড় হয়তো ঘুরবে। হয়তো এত দিনের কষ্ট সব সুখ হয়ে পরিণতি পাবে আবার না ও পেতে পারে। তবে নিজেকে সেভাবেই গড়ে নিয়েছি যাতে করে ভালো খারাপ যাই হোক মেনে নিব আমি। অরন্যকে একটু একটু মনে পড়লে ও সেটা দমিয়ে নিচ্ছিলাম বারবার। অরন্যের শাস্তি কামনা করেছিলাম তবে মৃত্যু না। সৃষ্টি কর্তার লীলা ছিল ভিন্ন তাই সে আজ ওপারে। দোয়া করি সে যেন জান্নাতবাসী হয়।
বেশ কিছুক্ষণ একা বসে রইলাম। টুকটুকিরও পাত্তা নেই। একা বসে থাকতে তেমন ভালো লাগছে না। টুকটুকিকে খুঁজে বের করে ওর সাথে একটু সময় কাটালে মনটা সিক্ত হবে। তাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। দরজার দিকে পা বাড়াতেই লক্ষ্য করলাম সোহানের মা এসেছে। সোহানের মা আমার দিকে তাকিয়ে বেশ হালকা গলায় বলল
– একটু বসো ঐখানে, কথা আছে।
মনের ভেতরটা হালকা কম্পিত হলো। মনে হলো উনি বলবেন, এ বিয়েতে উনি রাজি না কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে উনি বলে উঠলেন
– তোমার মা বাবার সাথে কথা বললাম উনারা সন্ধ্যায় আসবেন। আর আজকেই তোমার আর সোহানের বিয়ে দিতে চাই। অনেক ঝামেলা গেল আর নতুন কোনো ঝামেলা হওয়ার আগেই সব শেষ করতে চাই। একটা অনুগ্রহ রাখবে শুধু, আমার ছন্নছাড়া ছেলেকে ছেড়ে কখনও কোথায় যেও না। ওর জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে দিও। বড় ছেলের পরিণতি যেন ছোট ছেলের না হয়।
উনার কথা শুনে আমি চাপা কন্ঠে জবাব দিলাম
– আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না আমি এমন কিছুই করব না যাতে করে সোহান কষ্ট পায়। আর আমি সোহানকে ততটুকুই দেওয়ার চেষ্টা করব যতটুকুতে সে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারে। না পাওয়ার যন্ত্রণা কত প্রখর আমি জানি। এমন কিছু হবে না। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
উনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
– এখন থেকে মা ডেকো। আর একটু তৈরী হও। সন্ধ্যায় কাজী আসবে বিয়ে পড়াতে। একটু তো নিজেকে গুছাও সাজগোজ করো। কাউকে আপাতত বলতে চাচ্ছি না বিয়ের ব্যাপারটা। বিয়ে হওয়ার পর সবাইকে জানাব।
আমি লজ্জা মাখা মুখে মাথা নেড়ে গেলাম। আড়চোখে দরজায় তাকিয়ে দেখলাম সোহান দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সোহানের হাসি দেখে লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললাম। মা সোহানের উপস্থিতি টের পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সোহান এবার আমার কাছে আসলো। আমি সোহানের দিকে তাকালাম। এ প্রথম ওর দিকে তাকাতে বেশ লজ্জা লাগছে। ওর উপর খবরদারি করতে লজ্জা লাগছে। মনে হচ্ছে আমি সত্যিই নতুন বউ। সোহান আমার অবস্থা দেখে আমার হাতটা ধরে তার কাছে এনে বলল
– আজ একটু সুন্দর করে সাজবি। সরি সাজবে। তোকে যেন সরি তোমাকে হবে। তোমাকে যেন পরীর মতো লাগে। কপালে লাল টিপ দিবি। ধুর তুমি করে ডাকতে পারব না তুই করেই ডাকব কেমন।
আমি মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বললাম আচ্ছা। সোহান আমার হাতটা টেনে তার কাছে আনল। টকুটকি এর মধ্যে উপস্থিত হতেই সোহান হাতটা ছেড়ে দিল। আমি টুকটুকিকে কোলে নিয়ে সোহানের কানে কানে বললাম
– আমিও তোরে ভালোবাসি।
বলেই রুম থেকে প্রস্থান নিলাম। টুকটুকির সাথে কিছুক্ষণ খেলে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। তারপর গোসল করতে গেলাম। ভালো করে গোসল করলাম। চুলগুলো বেশ যত্ন করে শ্যাম্পু করেছি। আজকে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে যন্ত্রণার পর যেন স্বস্তি মিলছে। নিজেকে বেশ পরিপাটি করে ফেললাম।
দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। বাবা, মা সবাই আসলো। মা আমার কাছে এসে বলল
– মারে অভিমান করেছিলাম তোর ভবিষ্যতের কথা ভেবে। ক্ষমা করে দিস। তোরে আল্লাহ দু হাত ভরে দিছে। সোহানের মতো ছেলে পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। আল্লাহ তোকে তাই দিছে।
বাবাও এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– ক্ষমা করে দিস তোকে ভুল বুঝার জন্য।
তাদের প্রতি রাগটা বেশিক্ষণ করতে পারলাম না। ভাই আর ভাবী এসেও ক্ষমা চেয়ে নিল। একটা বিয়ে যেন সমস্ত পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দিল। অথচ এরাই গতকাল পর্যন্ত আমার মুখ দেখতে চায়নি। কষ্টটা চেপে গেলাম শুধু। কাজী আসলো। দুই পরিাবর একসাথে বসলো। আমি আজ লাল বেনারসি পরেছি। হাতে লাল চুড়ি। কপালে লাল টিপ। যে সাজটা সাজতে চেয়েছিলাম চার বছর আগে কিন্তু ব্যর্থতার গ্লানি সেদিন আটকে দিয়েছিল সব। আজকে সে একই সাজটা সেজেছি। যেন অনেক কষ্টের পর প্রাপ্তি।
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করল। আমাকে কবুল বলতে বলল। কবুল বলার সময় বেশ জোর গলায় কবুল বললাম। তিনবার কবুল বলেই কেঁদে দিলাম। আজকে আমি নতুন জীবনে পা দিয়েছি। একজনের সন্তান আমার পেটে আরেকজনের বউ আমি হব। কেউ না জানুক আমি আর সোহান সবটা জানি। সোহানও কবুল বলল। দুজনের সুখ চেয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হলো।
বিয়ের পর আমাকে নিয়ে বসানো হলো সোহানের রুমে। মা,বাবা রাতের খাবার খেয়ে বাসায় চলে গেল। যাওয়ার আগে আমাকে মন ভরে দোয়া করে গেল। টুকটুকি বেশ কয়েকবার রুমে এসে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে গেল। মা কয়েকবার রুমে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কিছু লাগবে কী না। আমি মাথা নেড়ে না করলাম। অথচ সোহানের পাত্তা নেই। যার জন্য বসে আছি সে কই। ঘড়ির কাটায় রাত এগারটা বাজে। এখনও সোহান আসলো না৷ বেশ রাগ লাগছে ওর উপর। বিড়বিড় করে সোহানকে বকতে লাগলাম। এর মধ্যেই সোহানের আগমণ ঘটল। হাতে খাবারের প্লেট। আমার পাশে এসে বসে বলল
– বিড়বিড় করে আমাকেই বকছিস তাই না?
– তো কী করব? তোকে বকব না তো আদর করব?
সোহান খাবারের প্লেটটা বিছানার পাশে রেখে আমার কানের কাছে এসে বলল
– আমি তোর স্বামী ভুলে যাস না। আমাকে বকবি কেন আদর করবি।
আমি সেহানের কথা শুনে একটু জোরেই হেসে দিলাম। ও আমার হাসি দেখে গাল টেনে বলল
– এবার খা। এখনও তো খাসনি। পেটে একজন না খেয়ে আছে সেটার খবর কী আছে।
আমি সেহানের চোখের দিকে তাকালাম। এত ভালোবাসা আর মায়া এ চোখে। সত্যি বলতে সুপার হিরো আছে। তবে তাদের সংখ্যা কম। আর এ অল্প সংখ্যার মধ্যে সেহান একজন যে কী না নিরদ্বিধায় সবটা মনে নিয়েছে। তার ভালোবাসার কাছে সব হেরে গেছে। আমি সেহানকে নম্র সুরে বললাম
– তুই খাওয়ায়ে দে। নাহয় খাব না।
সোহান প্লেটে ভাত মাখতে মাখতে বলল
– হা কর খাইয়ে দিই। আরেকটা সুখবর দিই।
আমি মুখে ভাত নিয়ে চিবুতে চিবুতে বললাম
– কী?
– কালকে নাফিসার সাথে জেলে দেখা করার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের বিয়ের খবরটা ওকে দিব।
– এতকিছুর দরকার কী ছিল?
– তোর কষ্টটা দেখেছে তোর সুখটা যেন দেখে তাই। আমি তোকে আর কষ্ট পেতে দিব না।
আমি খাবার চিবুতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম এ মানুষটা বুঝে আমি কিসে ভালো থাকব। বলার আগেই যেন সব বুঝে ফেলে। আমি সোহানের কাঁধে মাথাটা রেখে বললাম
– আর খাব না।
সোহান হালকা ধমক দিয়ে বলল
– এখনি সব শেষ করবি।
আমি কাঁধ থেকে মাথা তুলে বললাম
– তুই খেয়েছিস।
– তোকে খাইয়ে খাব।
– টুকটুকি কোথায়?
– মায়ের সাথে।
– এখানে নিয়ে আয়।
– আজকে আনতে চাচ্ছি না। আমি অনেক রোমান্টিক সেটা তো তোকে বুঝাতে হবে। টুকটুকিকে এনে সে বুঝানোতে ব্যাগরা দিতে চাই না।
সোহানের কথাটা শুনেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। সোহান ভাতের ধলা মুখে দিতে লাগল আমি খেতে লাগলাম। খাওয়া শেষে অবশিষ্ট যেটুকু প্লেটে ছিল সেটা সোহান খেয়ে নিল।
তারপর সোহান ঠিক আমার পাশে এসেই শুয়ে আমার মাথাটা তার হাতে রাখল। আমার কানের কাছে এসে বলল
– তুই খুশি তো?
আমি হালকা করে তার কানের কাছে গিয়ে বললাম
– অনেক খুশি।
পরদিন সকালে উঠেই সোহানকে নিয়ে নাফিসাকে দেখতে গেলাম। যাওয়ার পথে কেন জানি না আমার মনে হলো আমি অরন্যকে দেখেছি। তবে মনের ভুল বা মানসিক রোগ থেকেও সেটা হতে পারে। কারণ সারাদিন একই চিন্তা মানসিক ভাবে আহত করে তুলে। আর সে মরে গেছে তাকে দেখার তো প্রশ্নই আসে না।
নাফিসার কাছে যেতেই সে আমাকে দেখে বেশ অবাক হলো। আমি কিছু বলে উঠার আগেই সে গড় গড় করে কয়েকটা কথা বলল যা শুনে আমি নতুন রহস্যের গন্ধ পেলাম। সে সাথে মনে প্রশ্ন জাগল আদৌ কী অরন্য মরেছে? নাকি পুরোটা একটা ফাঁদ। কারণ নাফিসা বলল