Wednesday, July 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 148



ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১৫+১৬

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“ছেলেটির মস্তিষ্ক সচল হতেই গগন কাঁপানো চি**ৎ*কার দিতে চাইলো।কিন্তুু পারলো না;কারণ সামনে থাকা সুদর্শন অথচ ভ**য়ং**কর ব্যক্তিটি তার কন্ঠস্বরকে কন্ট্রোল করে রেখেছে।”

“ছেলেটির পা থেকে অনবরত র**ক্ত পড়তে থাকায়,একসময় ছেলেটি ছটফট করতে করতে সেখানেই জ্ঞান হারালো।এদিকে বাকি তিন জন ছেলে সামনের ব্যক্তিটির ভ**য়ং**কর লাল চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে, থরথর করে কাঁপতে থাকলো।অতিরিক্ত ভ**য়ে ওদের ৩জনের প্যান্ট নষ্ট হয়ে গেলো।
সামনে থাকা ব্যক্তিটি পৈ**শা**চিক হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’তোরা তো আজকেই শেষ।”

“এদিকে নীলাদ্রি তার সবচেয়ে পরিচিত মুখটির দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।নিহানকে এই মুহূর্তে এখানে ও কল্পনাও করতে পারে নি।নীলাদ্রি অতিরিক্ত দৌঁড়ানোর ফলে হাঁপিয়ে গেছে, তার ওপর নিহানকে এইভাবে একজনের পা কা**ট**তে দেখে সেখানেই জ্ঞান হারালো।”

“নিহান ইয়াশ এবং এহতিশাম কে ডেকে রেহানের মতো ছেলেগুলোর অবস্থা করতে বললো।ইয়াশ আর এহতিশাম আগেই সেখানে উপস্থিত ছিলো।তবে নীলাদ্রির আড়ালে।নিহান নীলাদ্রি কে কোলে তুলে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো।আর ইয়াশ এবং এহতিশাম ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে ছেলেগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।পৃথিবী থেকে ভ**য়ং**কর ভাবে বিদায় নিলো আরও ৪জন পাপিষ্ঠ।”

————-
“নীলাদ্রির ঘুম ভাঙলো সকাল সাড়ে ৯টায়।পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো, নিহান উল্টো দিকে ফিরে ঘুমাচ্ছে।নীলাদ্রি একটু অবাক হয়ে গেলো।কারণ, নিহান ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।হঠাৎ নীলাদ্রির চোখ জোড়া আটকে গেলো, রুমের চারিদিকে রজনীগন্ধায় ছড়ানো ছিটানো ফুলগুলো দেখে।”

“নীলাদ্রি ওর মাথায় হাত দিয়ে একটু চেপে ধরে চোখ বন্ধ করতেই,ওর গতকাল রাতের কথা সব মনে পড়ে গেলো।মনে পড়ে গেলো নিহানের হাতে থাকা ধা**রা**লো ছু**রি দিয়ে ছেলেটির পা কা**টা**র কথা।’ভেবেই নীলাদ্রির গা শিউরে উঠলো।”

“নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো, নিহান এখনোও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।নীলাদ্রি একবার নিজের শরীরের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো, সেই একই জামা এখনোও পড়ে আছে এবং শরীর টাও অক্ষত।এর মানে ছেলেগুলো ওর সাথে কিছুই করে নি।তার আগেই নিহান এসে ওকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। আজ মনের অজান্তেই ,নীলাদ্রি খুব খুশি হলো।গ্রাম্য ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, ‘মানুষ নিজের বেলা ১৬আনা;পরের বেলা ৪আনা।’আজ নীলাদ্রির বিপদে নিহান ঝাঁপিয়ে পড়েছে।একটা ছেলের পা কে**টে**ছে।তাতে নীলাদ্রির বিন্দু মাত্র খারাপ লাগলো না।কারণ, ছেলেগুলো ছিলো ন**র**পশুর চেয়েও অধম।কিন্তুু একই কাজ যদি নিহান অন্য কারো ক্ষেত্রে করতো; তাহলে হয়তো নীলাদ্রি আবারও নিহান কে ভ**য় পেতো,ভুল বুঝতো।অথচ আজ সেইরকম কিছুই হলো না।”

“নীলাদ্রি ভাবলো,’নিহান হয়তো ওর পালিয়ে যাওয়ার জন্য খুব রেগে আছে।আর হয়তো ঘুম থেকে উঠে নতুন কোনো পা**গলামি শুরু করবে।এইসব কিছু করার আগেই নীলাদ্রি নিহানের হাত-পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবে।আর কখনোও পালানোর কথা ভাববে না।’ভেবে নীলাদ্রি ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে জামা-কাপড় নিয়ে নিঃশব্দে ওয়াশরুমে চলে গেলো।”

“শাওয়ার নিয়ে নীলাদ্রি চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে গিয়ে,কিছুক্ষণ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর রুমে আসতেই দেখলো, নিহান সোফায় বসে পেপার পড়ছে।নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’অদ্ভুত বিষয় আজ লোক টার কি হলো?না আমার সাথে কথা বলছে,না রাগ করছে?আর না কোনো পা**গলামি করছে?এতো বড় অপরাধ করার পরেও কিছুই বললো না!উল্টো দেখি পায়ের ওপর পা তুলে পেপার পড়ছে!”

“নীলাদ্রির মনে আজ সকাল থেকেই অনুশোচনা কাজ করছে।তাই মনে সাহস যুগিয়ে নিহানের সামনে গিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এই যে শুনছেন,আ’ম সরি।আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।গতকাল রাতে আপনি না আসলে, আমার যে কি হতো আল্লাহ জানে।আমি আর কখনোও এই ভুল করবো না।আপনি আমায় শেষবারের মতো ক্ষমা করে দিন।’একাধারে কথাগুলো বলে থামলো নীলাদ্রি।নিহানের রিয়েক্ট দেখার জন্য উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিন্তুু নিহানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখলো না।নিহান এখনোও পেপারেের কাগজে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রি তো বেশ অবাক হলো।ভাবলো,’এই লোক কি এক রাতের মধ্যেই বোবা হয়ে গেলো নাকি?আমার কথাগুলো কি তার কানে পৌঁছায় নি?মনে হয় পেপার পড়ার ধ্যানে আছে।তাই আমার কথা শুনছে না।আমার বাবাকেও দেখতাম, পেপার পড়ার সময় কারো কথা কানে তুলতো না।পেপারের মধ্যেই ডুবে থাকতো।”

“নীলাদ্রি আবারও নিহানের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গলা খাঁকারি দিলো।এইবার নিহান নীলাদ্রির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সোফা থেকে উঠে পেপারটি বিছানায় ফেলে রুম থেকে চলে গেলো।এভাবে নীলাদ্রি কে ইগনোর করে চলে যাওয়াতে, ও অপমানিত বোধ করার বদলে বেশ অবাক হয়ে গেলো।”

“সকালে নীলাদ্রিকে মেইড এসে খাবার দিয়ে বললো,’ম্যাম নিহান স্যার বলেছে, আজ থেকে আপনাকে নিচে গিয়ে সবার সাথে লাঞ্চ আর ডিনার করতে।এখন আপনার শরীর টা দুর্বল তাই এখানেই ব্রেকফাস্ট করুন,দুপুরে সবার সাথে লাঞ্চ করবেন।”

“মেইডের কথা শুনে, নীলাদ্রি কি আকাশ থেকে পড়বে নাকি মাটি খুঁড়ে ভেতরে চলে যাবে বুঝতে পারলো না।কিছুক্ষণ মেইডের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’ওকে..আপনি এখন যেতে পারেন।’মেইড মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলো।এদিকে নীলাদ্রি নাস্তা করা বাদ দিয়ে,গালে হাত রেখে গভীর ভাবনায় ডুব দিলো। আজ সকাল থেকেই একের পর এক চমক পেয়ে যাচ্ছে।সামনে আরও কতো চমক বাকি আছে সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছে নীলাদ্রি।”

———–
“গতকাল রাত থেকে ইরা ইয়াশের সাথে একবারও কথা বলে নি।ইয়াশ ইরার সাথে অনেকবার কথা বলতে চেয়েছে।কিন্তুু ইরা ধমক দিয়ে ইগনোর করেছে।ইরাকে ইয়াশ নীলাদ্রির বাসায় ফেরার কথা বললে ও খুব খুশি হয়; কিন্তুু খুশিটা কারো কাছে প্রকাশ করছে না।কারণ, গতকাল রাতে নিহান ওকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে; সবার সামনে অপমান করেছে।সেটা ইরা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা।”

“ইরা বিছানায় শুয়ে কথাগুলো ভাবছে;তখনই ইয়াশ ওর থেকে একটু দূরত্বে বসে বললো,’ঘুঘু পাখি এভাবে আর রাগ করে থেকো না।তোমার চঞ্চলতা না দেখলে আমার একটুও ভালো লাগে না।প্লিজ তোতাপাখি একটু কথা বলো।”

” ইরা আজ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।হঠাৎ ইয়াশের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।ইয়াশ ইরার আরেকটু কাছে এসে বললো,’সোনা পাখি একটা কথা বলি,আমার না তোমার ওটা খেতে খুব ভালো লাগে।তোমার ওটা একটু নোনতা আবার কিছুটা মিষ্টিও। তবে আমার খুব ভালো লেগেছে।”

“ইয়াশের কথা শুনে ইরার মুখে এইবার কথা ফুটলো।শোয়া থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে, ইয়াশের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’কি বললেন আপনি?”

“ইয়াশ ইরার গলার দিকে তাকিয়ে বললো,’বলেছি তোমার ওটার স্বাদ একটু নোনতা হলেও, আমার খুব ভালো লেগেছে।”

“ইরা ইয়াশের দৃষ্টি বুঝতে না পেরে, ওর অন্য চিন্তা মাথায় এলো।তখনই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইয়াশের দিকে।দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’মোটু লু**চু একটা… দুইদিন যেতে না যেতেই আমার দিকে বা**জে নজর দেওয়া হচ্ছে?আর আজে-বা**জে কথা বলা হচ্ছে তাই না?দু**শ্চ*রিত্র বা**জে লোক;আপনারা দুই ভাই একইরকম।আমাদের দুই বান্ধবীর জীবনটাই বরবাদ করে দিলেন।’বলেই ইয়াশ কে ঠা**স করে একটা থা**প্প*র দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”

“ইয়াশ ইরার যাওয়ার পানে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে বললো,’যা বাব্বাহ!আমি তো কিছুদিন আগে রাতে ওদের বাসায় গিয়ে ওর ঘাড় থেকে র**ক্ত খেয়েছিলাম।আর পরে ওকে মেডিসিনও খাইয়ে দিয়েছি।সেটাই তো বলতে যাচ্ছিলাম।পুরো কথা না শুনেই থা**প্প**র মেরে চলে গেলো?অবশ্য ওর থা**প্প**রে তো আমি একটুও ব্যথা পাই নি।কারণ, ওতো জানেনা ভ্যাম্পায়ার রা মানুষের আ**ঘা**তে ব্যথা পায় না।’বলেই আশেপাশে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে জিহ্বায় কামড় দিলো ইয়াশ।ওর মনে পড়ে গেলো, এহতিশাম ওকে ইরার কাছে নিজের ভ্যাম্পায়ার রূপের কথা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে।তাহলে ভ্যাম্পায়ার কিং ওদের শাস্তি দেবে।কথাগুলো ভেবে ইরাকে খুঁজতে ইয়াশ রুমের বাইরে চলে গেলো।”

” শায়লা বেগম ডাইনিং টেবিলে দুপুরের খাবার সাজিয়ে রাখছিলেন,আর ইরা তাকে সাহায্য করছে।ইরা ইয়াশের সাথে খিটখিটে আচরণ করলেও, শায়লা বেগমের সাথে যথেষ্ট ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলে।সেই সময় নীলাদ্রি নিচে এসে দাঁড়াতেই, শায়লা বেগম আর ইরা দু’জনেই ভূত দেখার মতো নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে রইলো।নীলাদ্রি তাদের দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারলো, তারা এইসময় নীলাদ্রি কে এখানে আশা করেনি।”

“নীলাদ্রি এগিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসে হাসি মুখে বললো,’আপনার ছেলে আজ থেকে আমাকে আপনাদের সাথে নাস্তা সহ,লাঞ্চ এবং ডিনার করতে বলেছে।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে শায়লা বেগম এবং ইরার মুখমন্ডল হা হয়ে রইলো।সেটা দেখে মিষ্টি হাসলো নীলাদ্রি।শায়লা বেগম বললেন,’সত্যি কি তোমাকে নিহান এই কথা বলেছে?কিন্তুু গতকাল তো…

“শায়লা বেগম কে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে ইরা বলে উঠলো,’দেখ নীলাদ্রি বেস্টফ্রেন্ড হিসাবে তোর প্রতি আমার ভালোবাসা সীমাহীন।কিন্তুু গতকাল তুই এই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর, সব অপবাদ এসে পড়েছে আমার ওপর।তোকে নাকি আমি পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছি।এইসব কথা বলে নিহান আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে।আমি তার আচরণে বুঝতে পেরেছি,সে তোর ব্যাপারে যথেষ্ট পজেসিভ।তাই বলবো, দয়া করে আর আমাকে তোদের মধ্যে টানিস না,আর মাকেও না।কারণ, তিনিও তার ছেলের আচরণে যথেষ্ট ব্যথিত।”

“ইরার মুখে এহেন কথা শুনে নীলাদ্রির খুব খারাপ লাগলো।ওর পালানোতে যে ইরার ওপর দোষারোপ করা হবে;এটা নীলাদ্রি ভাবতেও পারেনি।নীলাদ্রি নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,প্লিজ ইরা আমার উপর রাগ করে থাকিস না।আমি ভাবতে পারিনি, যে উনি তোকে দোষারোপ করবে।আ’ম সরি দোস্ত। তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে।”

“এরইমধ্যে শায়লা বেগম বলে উঠলেন,’বুঝেছি তোমাদের দুই বান্ধবীর মধ্যে মান-অভিমান চলছে।এইসব নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আলোচনা করবে।এখন খেয়ে পেট শান্তি করে নাও।নিহানের অফিস থেকে আসার সময় হয়েছে।”

“শায়লা বেগমের মুখে নিহানের অফিসের ব্যাপারে শুনে, নীলাদ্রি বেশ অবাক হলো।ভাবলো,’সে অফিসে গেলো অথচ আমাকে একবার বলেও গেলো না?এই না বলেছিলো আমার সাথে সবসময় মিশে থাকবে,সারাদিন আমার সাথে সময় কাটাবে,তাহলে এখন দেখছি সবকিছু বিপরীত।’ভেবে নীলাদ্রি আনমনে খাবার খেতে শুরু করলো।”

“এদিকে ইয়াশ ইরার পাশে বসে, প্লেটে ভাত এবং মাগুর মাছের তরকারি বেড়ে খেতে শুরু করলো।ইয়াশ খাওয়া-দাওয়া করে উঠে যেতে নিলে ইরা বললো,’একি আপনি সবজি,ইলিশ মাছের তরকারি নিলেন না কেনো?”

”ইয়াশ মুচকি হেসে বললো,’ওগুলো আমার শরীরে তেমন কাজে লাগবে না।ওগুলো তোমার জন্য জরুরি, তুমি খাও সোনা।’বলেই তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে গেলো।”

“ইরা খেয়াল করলো,’শায়লা বেগম ও শুধু মাগুর মাছের তরকারি দিয়ে ভাত খেলেন।ভাতের পরিমাণ কম,পুরো প্লেট মাগুর মাছ দিয়ে ভরা ছিলো।কয়েক মিনিট পর এহতিশাম এসে চেয়ারে বসে, প্লেটে ভাত নিয়ে সেই মাগুর মাছের তরকারি নিয়ে খেতে শুরু করলো।’ইরা বেশ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘মা আপনাদের পরিবারে কি সবাই মাগুর মাছের তরকারি খুব পছন্দ করে?”

“হুমম আমরা সবাই র**ক্ত জাতীয় মাছ বা যেকোনো খাবার খেতে খুব পছন্দ করি।আমাদের পরিবারে সবার শরীরেই র**ক্তের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম।তাই সবসময় দুর্বলতা অনুভব করি।ডক্টর বলেছে র**ক্ত জাতীয় খাবার খেতে।”

“ইরা বললো,’তাহলে আপনারা সবাই প্রতিদিন এই খাবার গুলোর পাশাপাশি ২টা করে হাফ বয়েল ডিম খাবেন,এক গ্লাস করে দুধ খাবেন তাহলেই তো হয়ে গেলো।”

“শায়লা বেগম ইরার কথার প্রেক্ষিতে কি বলবে ভেবে পেলো না।তখনই এহতিশাম কথা ঘুরানোর জন্য গলা খাঁকারি দিয়ে শায়লা বেগম কে বলে উঠলো,’মা.. বাবা কি আজ রাতে বাসায় ফিরবে?নাকি ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং এর জন্য ইন্ডিয়া যাবে?”

“শায়লা বেগম ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,’আরে তোর বাবা বললো,৩দিন পর ইন্ডিয়া যাবে।তার সাথে নাকি নিহান ও যাবে।”

“এহতিশাম ‘ওহ’ বলে উঠে গেলো।এদিকে নীলাদ্রি এতক্ষণ ভাবনার জগতে বিচরণ করছিলো।যখনই শুনলো নিহান ইন্ডিয়া যাবে, তখনই ও মনে হয় ১২০ভোল্টেজের শকড খেলো।নিহান ওকে এই বাসায় একা রেখে ইন্ডিয়া যাবে।এটাও কি সম্ভব?”

“নীলাদ্রি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ইরার সাথে সোফায় বসলো।তারপর ইরাকে একে একে সব কাহিনী খুলে বললো।সবকিছু শুনে ইরার মুখ পুরো হা হয়ে গেলো।”

“নীলাদ্রি বললো,’এভাবে হা করে থাকলে তো মশা ঢুকে যাবে,মুখ বন্ধ কর।এইবার তোর কাহিনী বল।”

“ইরা এইবার মুখ মলিন করে ওর সাথে ঘটে যাওয়া সব কাহিনী বললো।সবকিছু শুনে নীলাদ্রির খুব খারাপ লাগলো।ভাবলো,’আমার বিষয় টা আমার মা পুরোপুরি জানে।কিন্তুু ইরার বিয়েটা এইরকম ক**ল*ঙ্ক মাথায় নিয়ে হবে, সেটা ভাবতেই তো অবাক লাগছে।’নীলাদ্রি ইরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’তুই চিন্তা করিস না দোস্ত। পাছে লোকে কিছু বলে।মানুষের কাজই হলো অন্যকে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা।একসময় দেখবি, মানুষ নতুন সমালোচনা নিয়ে মেতে উঠবে।তখন তোর কাহিনী মাটি চাপা পড়ে যাবে।আর আঙ্কেলের বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দে।আমি তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো।তবে ইয়াশ ছেলে টা খুব ভালো।তোর পুরো বিপরীত; একদম সহজ-সরল।হয়তো ও তোকে খুব ভালোবাসে।তাইতো খুব সহজেই তোকে বিয়ে করতে রাজি হলো।আর যদি ও তোকে চাপে পড়ে বিয়ে করতো,তাহলে ও বিয়ের পর বদলে যেতো।কিন্তুু আমার তেমন মনে হয় না।ছেলেটার সাথে খারাপ ব্যবহার করিস না।”

“নীলাদ্রির কথাগুলো শুনে ইরা ভাবলো,’সত্যি তো মটু টা বেশ ভদ্র।একদম আমার বিপরীত।তবে তাকে এতো সহজে আমি মানবো না।এই ইরা কে পেতে হলে তাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে।’ইরার ভাবনার মাঝেই সদর দরজা দিয়ে নিহান কে ঢুকতে দেখে, ইরা নীলাদ্রির থেকে দূরে সরে বসলো।”

“ইরার দৃষ্টি লক্ষ্য করে নীলাদ্রি সামনে তাকাতেই দেখলো নিহান দাঁড়িয়ে আছে।নীলাদ্রি ভাবলো,’এই মনে হয় আবারও সবার সামনে কোলে তুলে নিয়ে ওপরে গিয়ে পা**গলামি শুরু করবে।কিন্তুু ওর ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে,নিহান ধুপধাপ পা ফেলে ওপরে চলে গেলো।”

“সেটা দেখে ইরা চেহারায় আ**তং**ক নিয়ে বললো,’তোর আশিক বর এসে পড়েছে।আমার সাথে তোকে এভাবে দেখে কি না কি করে বসে আল্লাহ জানে।তোর সাইকো বর কে দেখলেই ভ**য়ে আমার আত্মা শুকিয়ে যায়।দেখেছিস, কিভাবে হনহন করে চলে গেলো?মনে হয় খুব রাগ করেছে।এইজন্যই বলেছিলাম,আমাদের সাথে কথা বলার দরকার নেই।সবসময় ১লাইন বেশি বুঝিস।যা গিয়ে তোর সাইকো বরের রাগ ভাঙা।”

“ইরা বলা মাত্রই নীলাদ্রি হনহন করে ওপরে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখলো, নিহান টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে;হয়তো অফিসের কাজ করছে।নীলাদ্রি এইবার মনে হয় বিস্ময়ের শেষ প্রান্তে চলে গেলো।নিহানের এহেন আচরণে অতিরিক্ত চিন্তায় ওর পুরো মুখ ঘামে ভিজে গেলো।নীলাদ্রি বিছানা থেকে তোয়ালে দিয়ে মুখের ঘাম মুছে আমতা আমতা করে বললো,’সরি আমি এমনিতেই ইরার সাথে একটু কথা বলছিলাম।আর বলবো না।’বলেই মনে মনে ভাবলো,’আমার মতো প্রতিবাদী একটা মেয়ে এই লোকটার কাছে বারবার সরি বলছি।সত্যি ভাবতে খুব অবাক লাগছে।”

“নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই নিহান ল্যাপটপ বন্ধ করে ধীর পায়ে নীলাদ্রির দিকে এগিয়ে গেলো।নীলাদ্রি ভাবলো,’এখনই হয়তো উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে।কি করি আমি?’এরইমধ্যে নিহান ওর খুব কাছে চলে আসলো।নীলাদ্রির বুকের মধ্যে দিড়িম দিড়িম আওয়াজ হচ্ছে।এই আওয়াজ টা যেনো নিহান স্পষ্ট শুনতে পেলো।নিহান আরেকটু কাছে আসতেই, নীলাদ্রি চোখ বন্ধ করে ফেললো।অনুনয়ের সুরে বলতে থাকলো,’প্লিজ প্লিজ এইবারের মতো আমায় ক্ষমা করে দিন।আমি আর কারো সাথে কথা বলবো না।’বলেই নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো,নিহান ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কয়েক সেকেন্ড পর নিহান নীলাদ্রির হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নীলাদ্রি তো এই কাহিনী দেখে পুরো বোকা বনে গেলো।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নীলাদ্রি তো এই কাহিনী দেখে পুরো বোকা বনে গেলো।”

“নিহান শাওয়ার নিয়ে প্রায় ১৫মিনিট পর বের হলো।নীলাদ্রি এখনোও থমথমে মুখ নিয়ে বিছানায় বসে আছে।নিহান সেটা দেখে বাঁকা হেসে ওর সামনে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,’আগামীকাল থেকে তুমি ইউনিভার্সিটিতে যাবে।সামনে তোমার ইনকোর্স এক্সাম আছে।এটা না দিলে ফাইনাল এক্সাম দিতে পারবে না।আর আমি তোমার সাথে যাবো না।তুমি তোমার বান্ধবীর সাথে যেতে পারো।আর হ্যা, আজ থেকে শুরু করে টানা ১০দিন পর্যন্ত আমি বাসায় থাকবো না।৩দিন অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকবো।তারপর ইন্ডিয়া যাবো।আশা করি তুমি নিজের খেয়াল রাখতে পারবে।আর হ্যা, চাইলে তোমার মায়ের সাথে দেখা করে আসতে পারো।আজ থেকে তুৃমি স্বাধীন।’বলেই রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।”

“একের পর এক শকড পেতে পেতে নীলাদ্রি মনে হয় হাঁপিয়ে গেলো।টি-টেবিলে থাকা পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।এইমুহূর্তে ঘুম না হলে ওর মাথা ঠান্ডা হবে না।”

“নীলাদ্রির ঘুম ভা**ঙলো মাগরিবের আযানের সময়।নীলাদ্রি ওজু করে মাগরিবের নামাজ পড়ে ইরার রুমের দিকে গিয়ে দেখলো, রুমের দরজা চাপানো।নীলাদ্রি দরজায় নক করতেই দেখলো,ইয়াশ দরজা খুলে দিলো।ইয়াশকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলাদ্রি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনার মুখের এই অবস্থা কে করেছে?আর আপনি কোমরে দড়ি বেঁধে রেখেছেন কেনো?”

” ইয়াশ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললো,’আপনার ওই দুষ্টু বান্ধবী ছাড়া কে করবে?দেখছেন না আমার মুখে কেমন কলমের কালি লাগিয়ে দিয়েছে।আর আমি যেনো তাড়াতাড়ি চিকন হয়ে যাই, তার জন্য কোমরে দড়ি বেঁধে দিয়েছে।আপনি বলুন এটা কে কি বলে?”

“নীলাদ্রি অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’এটাকে তো পুরুষ নির্যাতন বলে।কিন্তুু, ইরা আপনার মুখে কলমের কালি মেখে দিলো কেনো?”

“ইয়াশ মলিন স্বরে বললো,’আমি ওর জন্য একটা কবিতা লিখতে গিয়েছিলাম।দুই লাইন লেখার পর ও সামনে আসতেই,আমি ওকে কবিতা শোনাতে নিলেই ও হঠাৎ করে রেগে-মেগে আমার চেহারার ওপর কলম খুলে কালিগুলো ঢেলে দেয়।”

“পেছন থেকে ইরা কটমটিয়ে বললো,’আপনার কবিতা শুনে আপনাকে যে উগান্ডায় পাঠাইনি এটা আপনার ভাগ্য।আর ওই মোটা শরীর নিয়ে বারবার আমার কাছে ঘেঁষতে আসেন,তাই দূরে সরিয়ে দিয়েছি।স্লিম হয়ে আমার সামনে আসবেন;তখন দেখা যাবে।আমি আরেকবার যদি দেখি আপনার ওই ভুগিচুগি কবিতা নিয়ে আমার সামনে এসেছেন;তাহলে আপনার একদিন কি আমার একদিন।”

“ইরার কথাগুলো শুনে ইয়াশ নীলাদ্রি কে বললো,’দেখেছেন ভাবি আপনার বান্ধবী কতোটা ঝগড়ুটে?আমাকে স্বামী হিসাবে একটুও সম্মান করে না।”

“ইয়াশের বলা শেষ বাক্যটি মনে হয় নীলাদ্রির বুকে তীরের মতো বিধলো।ভাবলো,’আমিও তো আমার স্বামী কে সম্মান করিনা।সবসময় দূরে ঠেলে দেই।তাইতো সে আমার থেকে আজ অনেক দূরে চলে গেলো।যদিও সে আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছে।কিন্তুু সে আমাকে সত্যি ভালোবাসে; এটা তার আচার-আচরণেই বুঝতে পারি।’ ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনাকে এই অবস্থায় দেখে আমি খুব ভ**য় পেয়ে গেছি।আপনি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন প্লিজ।”

“নীলাদ্রি বলতেই,ইয়াশ ওয়াশরুমে চলে গেলো।নীলাদ্রি ইরার দিকে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো, ‘এভাবে ছেলেটার ওপর টর্চার না করলেও পারিস।সে তো আর নিহানের মতো না।তার আচার-আচরণ একদম স্বাভাবিক।সময় থাকতে মূল্যায়ন করতে শেখা উচিত।’কথাগুলো বলেই নীলাদ্রি নিচের দিকে দৃষ্টি দিলো।কথাগুলো নীলাদ্রি ইরাকে বোঝাতে গিয়ে হয়তো নিজেকেই বুঝিয়েছে।”

“ইরা নীলাদ্রি কে বললো,’আর বলিস না।এই মটু টা সবসময় অতিরিক্ত করে।কিছুদিন আগে ক্লাসে ওর কবিতা শুনে আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।আজ আবারও কবিতা শোনাতে এসেছে মটু কোথাকার।”

“নীলাদ্রি ধমকের স্বরে বললো,’ইরা মোটা ছেলে যদি তুই এতোই ঘৃ**ণা করিস,তাহলে ইয়াশ কে এই ব্যাপারে বুঝিয়ে বল।ওকে ডায়েট করতে বল।এতে ওর নিজের জন্যও ভালো হবে।আর হ্যা, এই মোটু শব্দ টা আর বলবিনা।শুনতে আনইজি লাগে।কারো উইক পয়েন্ট নিয়ে তাকে সেই কথা বললে সে খুব কষ্ট পায়।বিষয়টি আমি এতোদিন না বুঝলেও এখন বুঝেছি।তাই বলছি ছেলেটাকে একটু সময় দে।হুট করেই তো সবকিছু একবারে পাওয়া যায় না।ধৈর্য ধরতে হয়।আর ধৈর্যের ফল সবসময় মিষ্টি হয়।”

“নীলাদ্রির কথাগুলো শুনে ইরার মনটা হয়তো একটু পরিবর্তন হলো।তাই মিষ্টি করে হেসে বললো,’দোস্ত এরপর থেকে ওই মটুকে আর মটু বলবো না।”

“ইরার কথা শুনে নীলাদ্রি হাসবে না কাঁদবে ভেবে পেলো না।তবুও কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’এইমাত্রই তো মটু বললি।’

“ইরা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো,’সরি সরি আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।’
নীলাদ্রি ইরার সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলো।”

—————–
“সময় চির বহমান দেখতে দেখতে ১০দিন কে**টে গেলো।এই ১০দিনে নীলাদ্রির মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।নীলাদ্রি,ইরা এবং ইয়াশ ইনকোর্স এক্সাম দিয়েছে।ইরা ইয়াশ কে নিহান আর এহতিশামের এক্সাম না দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে, ইয়াশ বিষয়টি ‘জানিনা’ বলে এড়িয়ে গেছে।”

“এক্সামের আগে নীলাদ্রি ওর মায়ের বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করে এসেছে।তারপর ইরাদের বাসায় গিয়ে রাহাত আহমেদ কে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছে।নীলাদ্রির কথা শুনে রাহাত আহমেদ নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।আর বললেন,’তিনি খুব তাড়াতাড়ি ইরার সাথে দেখা করবেন।তবে এটা ইরাকে জানাতে বারণ করেছে।কারণ তিনি ইরাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।”

————–
“জোছনা রাত।নীলাদ্রি বেলকনিতে থাকা দোলনায় বসে, একমনে তাকিয়ে আছে আকাশে থাকা বড় থালার মতো চাঁদটির দিকে।চাঁদের আলোয় আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।এইমুহূর্তে মেঘের ভেসে বেড়ানোর সুন্দর দৃশ্যটি যদি ক্যাপচার করা যেতো দারুণ হতো।কিন্তুু কিছুদিন আগে নীলাদ্রি যখন ওর ব্যাগে ফোন খুঁজছিলো,তখন দেখলো ফোন নেই।ভাবলো,নিহান হয়তো ফোন টা অনেক আগেই নিয়ে গিয়েছে।ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়লো নীলাদ্রি।এই ১০দিন নীলাদ্রি নিজের ওপর পাহাড় সমান অভিমান করেছে।প্রতি রাতে নিহানের কথা ভেবে কান্না করে বালিশ ভিজিয়েছে।পরীক্ষা টা না থাকলে হয়তো ওর কান্নার গতিবেগ বেড়ে গিয়ে ম্যাট্রেস টাও ভিজে যেতো।এই কয়েকদিন নীলাদ্রি ওর বেশিরভাগ সময় বেলকনির দোলনায় বসে কাটিয়েছে।বারবার মনে করেছে নিহানের সেই পা**গলাটে কথাগুলো।মাঝে মাঝে একা একাই হেসে উঠেছে নীলাদ্রি।কথাগুলো ভেবে চোখের কার্নিশে পানি জমে গেলো,কিন্তুু পানিটা আর জমতে পারলো না।গাল বেয়ে টপটপ করে নিচে গড়িয়ে পড়লো।আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো,’আমি আপনাকে খুব মিস করছি নিহান।আপনার সেই পা**গলামি গুলো খুব মিস করছি।হয়তো আপনি আমাকে আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছেন।তাই এতোদিন নিজের মধ্যে একটা ক্ষো**ভ পুষে রেখেছিলাম।কিন্তুু আমার প্রতি আপনার এই অবহেলা আমি মানতে পারছিনা নিহান।আমি আমার মনের কথাগুলো আপনাকে জানাতে চাই নিহান।চলে আসুন প্লিজ।এই বাসায় এতোগুলো মানুষ থাকার পরেও, আপনার অনুপস্থিতি আমার জন্য বড্ড বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে।’কথাগুলো বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো নীলাদ্রি।কিন্তুু, আজ ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই।”

“নীলাদ্রি আনমনে গেয়ে উঠলো,

🎶কি করে বলবো তোমায়
আসোলে মন কি যে চায়,
কেন সে পালিয়ে বেড়ায়
তোমার থেকে…

কি করে বলবো তোমায়
কেন এ মন হাত বাড়ায়,
আবারও হারিয়ে সে যায়
তোমার থেকে…

তুমি জানতে পারোনি
কতো গল্প পুড়ে যায়,
তুমি চিনতে পারোনি
আমাকে হায়..🎶

————
“ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে পড়েছে নীলাদ্রি। শায়লা বেগমের কাছে শুনেছে, সকাল ১১টার মধ্যে বাসায় আসবে ইমতিয়াজ আহমেদ এবং নিহান।নীলাদ্রির মনে যেনো প্রজাপতিরা ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে।অনেকদিন পর মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে নীলাদ্রির।সকালে
ইরার রুমে গিয়ে ওকে নিজের রুমে ডেকে এনে, ওর সামনে কয়েকটা শাড়ি রেখে বললো,’দেখতো নিহান আমাকে কোন শাড়িতে দেখলে বেশি পছন্দ করবে?”

” ইরা দুষ্টু হেসে বললো,’কিরে বান্দরনি তুই কি তোর সাইকো বরের প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?”

“নীলাদ্রি মুখে লজ্জা মাখা হাসি নিয়ে বললো,’আর কতো ঘুরাবো বল।লোকটা আমায় সত্যি খুব ভালোবাসে।জানিস নারীরা কিসে আটকায়?”

“কিসে?”

“পুরুষের অপরিসীম ভালোবাসা ও যত্নে আটকায়।নিহান আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে ঠিকই।কিন্তুু পরবর্তীতে আমার কোনো অযত্ন করেনি।আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছে। কিন্তুু আমি আমার ইগোর কারণে সবসময় তাকে প্রত্যাখ্যান করেছি,পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।তাই সে খুব কষ্ট পেয়েছে।তাইতো আমায় রেখে এতো দূরে চলে গেছে।আর আমাকে চোখে আঙুল তুলে বুঝিয়ে গিয়েছে, সে আমার জীবনে কতোটা প্রয়োজনীয়।”

“আরে বাহ!আমার বান্ধবীর দেখি মাথায় বুদ্ধির জুরি নেই।আমাকে একটু বুদ্ধি ধার দে।এই বুদ্ধি দিয়ে ইয়াশ কে যদি একটু স্লিম বানাতে পারতাম; তাহলে কতো ভালো হতো।
নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,’কেনো তুই তো ইয়াশ কে ডায়েট চার্ট দিয়েছিস।ও সেটা ফলো করে না?”

” হুমম মাত্র দুই দিন হলো দিয়েছি।কিন্তুু হুট করে তো কেউ খাওয়া-দাওয়া কমাতে পারেনা।তবুও আমি চোখ রাঙিয়ে যতটুকু কন্ট্রোল করি।তবে ইয়াশ কে আমার এখন ভালো লাগে।ছেলেটা সত্যি খুব সহজ-সরল।আমি বলতে পা**গল।আচ্ছা শোন, তুই এই নীল শাড়িটা পর,আর তার সাথে হালকা মেকআপ,আর ম্যাচিং জুয়েলারি পর।এতেই তোকে দারুণ লাগবে।আমাদের আশিক দুলাভাই এমনিতেই পটে যাবে।আমি এখন যাই,দেখি গিয়ে আমার ভোলাভালা স্বামী কি করছে।’বলে ইরা চলে গেলো।”

“নীলাদ্রি ইরার কথা মতো সাজগোজ করে নিহানের জন্য অপেক্ষা করলো।আজ যেনো নীলাদ্রির অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না।নীলাদ্রি রুম থেকে বেরিয়ে সদর দরজার দিকে একমনে তাকিয়ে রইলো।সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, তবুও নিহান এলো না।নীলাদ্রি কে শায়লা বেগম তার কাছে ডেকে জোর করে খাইয়ে দিয়েছেন।নীলাদ্রি সেই একই সাজে নিহানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে।সন্ধ্যার একটু পরে হঠাৎ কলিংবেল বাজতেই, নীলাদ্রির ঘুম ভেঙে গেলো।নীলাদ্রি রুম থেকে বেরিয়ে উকি দিয়ে দেখলো,শায়লা বেগম দরজা খুলে দিয়েছেন।ইমতিয়াজ আহমেদ এবং নিহান বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো।নীলাদ্রি তৎক্ষনাৎ নিজের রুমে দৌড়ে চলে গেলো।বিছানায় বসে ঘোমটা টেনে মুচকি হাসলো।ভাবলো,’আজ নিহান কে পুরোপুরি চমকে দিবে।”

“নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো নিহান।নীলাদ্রি একটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো।ভাবলো,’নিহান ওর কাছে এসে ওকে এই রূপে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরবে।’কিন্তুু এইবারও নীলাদ্রির ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে, নিহান জামা-কাপড় নিয়ে হনহন করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নীলাদ্রি ঘোমটার আড়াল থেকে নিহান কে দেখছিলো।যখন নিহান চলে গেলো নীলাদ্রির চাঁদ মুখখানা মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।চোখের পানি মুছে ভাবলো,’আজ যেভাবেই হোক নিহানের অভিমান ভাঙাবো।’সাইকো টাইপ লোকদের যে আবার অভিমান থাকে এটা জানা ছিলো না নীলাদ্রির।ঘোমটা খুলে ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো নীলাদ্রি।”

“নিহান শাওয়ার নিয়ে নেভি ব্লু টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে বের হতেই, নীলাদ্রি নিহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।আকস্মিক ঘটনায় নিহানের হৃদস্পন্দন মনে হয় কয়েক সেকেন্ডের জন্য সেখানেই থমকে গেলো।নীলাদ্রির শরীরের উষ্ণ স্পর্শে,নিহানের বরফের মতো ঠান্ডা শরীরে যেনো আরও একবার শীতল স্রোতধারা বয়ে গেলো।নিহানের এই সুপ্ত অনুভূতিগুলো নীলাদ্রির বোঝার ক্ষমতা নেই।এ যেনো ২০৯বছরের সাধনার পর সুমিষ্ট ফলাফল।এই প্রথম নীলাদ্রি নিজে থেকে নিহান কে জড়িয়ে ধরলো।নিহানের মন যেনো আকাশে সেই মেঘেদের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে।কতোদিন পর এতো সুন্দর অনুভূতি হলো, এটা কাউকে ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না।মানুষ যখন কোনো লক্ষ্য পূরণ করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে অবশেষে সফলতা অর্জন করে,তখন সেই জিনিসটি তার কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান মনে হয়।না চাইতে পাওয়ার থেকে, সাধনা করে সফলতা অর্জন করার থেকে সুখকর কিছু পৃথিবীতে নেই।”

“আজ নিহানের মনেও সেই সফলতা অর্জনের আনন্দ বইছে।নিহান তার চোখজোড়া বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করে; নীলাদ্রির অর্ধনগ্ন পিঠে আলতো করে হাত রেখে হাস্কি ভয়েসে বললো,’ নীলাঞ্জনা এভাবে আমাকে বেশিক্ষণ জড়িয়ে ধরলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।তারপর দেখা যাবে
টিস্যুতে ঘর ভরে যাবে।তবুও তোমার সর্দি কমবে না।”

“এই রোমান্টিক মুহূর্তে নিহানের মুখে এমন কথা শুনে,অনেক দিন পর মন খুলে হাসলো নীলাদ্রি।নিহান কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেকি সুরে বললো,’কতোদিন যাবৎ আপনার মুখে এই নামটি শোনার জন্য অপেক্ষা করেছি জানেন?না আপনি তো কিছুই জানেন না।কারণ, আপনি তো আমাকে ছেড়ে অফিসের কাজে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিলেন।আপনি বলেছিলেন, সবসময় আমার সাথে থাকবেন।কিন্তুু আপনি আপনার কথা রাখেন নি।আমার প্রতি এটাই কি আপনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ?”

“নিহান নীলাদ্রির হাত ছাড়িয়ে একটু পেছনে সরে গিয়ে বললো,’আমি জানি তুমি আমায় জেদের বসে জড়িয়ে ধরেছো।এভাবে জড়িয়ে ধরলে সত্যি তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

“নীলাদ্রি মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’ভালোবাসার জন্য মানুষ সবকিছু করতে পারে।আমিও পারবো আপনার ঠান্ডা শরীরের সাথে মিশে থাকতে।আর এখন থেকে আমি আপনার যত্ন নিবো।সবসময় র**ক্ত জাতীয় খাবার খাওয়াবো।তাহলে ধীরে ধীরে দেখবেন আপনার র**ক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যাবে।কিন্তুু, আমি জানি যে র**ক্তস্বল্পতার রোগীরা শারীরিক ভাবে খুব দুর্বল থাকে।কিন্তুু, আপনি দেখছি একদম ফিট।আপনার এই ফিট থাকার রহস্য…..

“নিহান নীলাদ্রি কে আর কিছু বলতে দিলো না।নীলাদ্রি কে অবাক করে দিয়ে, নিহান ওকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে গেলো।তারপর ছাদের রেলিং এর ওপর বসালো।রেলিং এর ওপর বসে নীলাদ্রির তো ভ**য়ে আত্মা শুকিয়ে গেলো।নিহানের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,’আমার খুব ভ**য় লাগছে,প্লিজ আমি নামবো।যদি এখান থেকে পড়ে যাই?”

“নিহান নিজেও রেলিং এর ওপর বসে নীলাদ্রির হাত ধরে বললো,’এই যে আমি তোমার হাত শক্ত করে ধরেছি।তুমি পড়ে গেলে আমিও পড়ে যাবো।তবে চিন্তা করো না,তোমার শরীরে বিন্দু পরিমাণ আ**ঘা*ত লাগতে দেবো না।ভালোবাসি তোমায় নীলাঞ্জনা; পা**গলের মতো ভালোবাসি।”

“এতোদিন পর নিহানের মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটি শুনে অজানা ভালো লাগায় নীলাদ্রির শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।”

“শুনশান স্থানে নীরবতা ঘিরে ধরেছে দু’জন যুবক যুবতীকে।একজন মানবী; আর একজন মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার।চারিপাশ থেকে ভেসে আসা স্নিগ্ধ বাতাসে শরীরে অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে নীলাদ্রির।এইমুহূর্তে খুব করে প্রিয়জন কে কাছে পেতে মন চাইছে।”

“নীলাদ্রির আকাঙ্ক্ষা একটুও বুঝতে দেরি হলো না সামনে থাকা ব্যক্তিটির। সে ধীরে ধীরে নীলাদ্রির দিকে এগিয়ে গেলো।অতঃপর চুলগুলো সরিয়ে ওর ঘাড়ের কাছে এসে ঠোঁট জোড়া ছোঁয়াতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি।বুকের মধ্যে ধুকপুকানি যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। লজ্জামাখা মুখ নিয়ে ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বললো,’প্লিজ এতোটা কাছে আসবেন না।”

“সামনে থাকা ব্যক্তিটি মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো,’নীলাঞ্জনা তুমি চিন্তা করো না;আমি তোমার ঘাড় থেকে র**ক্ত চুষবো না।আমি শুধু তোমাকে গভীর ভাবে একটু আদর করবো।”

#চলবে…

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১৩+১৪

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“ইয়াশের কথা শুনে ইরা রেগে গিয়ে,’কিইইই?’বলেই ইয়াশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।”

“ইরার হঠাৎ আ**ক্র**মণে ইয়াশ পুরো বোকা বনে গেলো।ইরা ইয়াশের পেটে ওর নখের আঁ**চড় বসিয়ে দিলো।ইয়াশ এতে একটুও ব্যথা পেলো না।কিন্তুু ইরা কে ছাড়ানোর জন্য জোরে চেঁচিয়ে উঠলো।ইরা ইয়াশকে চেঁচাতে দেখে ওকে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললো,’এই মটু এতো জোরে কেউ চেঁচায়?একটু হলেই আমার কান তব্দা খেয়ে যেতো।”

“ইয়াশ উঠে বসলো; তারপর ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,’একদম আমাকে মটু বলবে না; তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।”

“কি করবেন আপনি?১০০বার বলবো মটু মটু মটু…”

“হাহাহাহা তুমি তাহলে এই মটুর পাতলু।মানে মটু-পাতলু।কি দারুণ জুটি তাই না?”

“ইরা এইবার নিজের কথার জালে নিজেই ফেসে গেলো।এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলো।শাওয়ার নেওয়ার পর ওর খেয়াল হলো, ওয়াশরুমে জামা-কাপড় নিয়ে আসে নি।ইরা ভাবলো,’এখন কিভাবে আমি জামা-কাপড় আনবো?রুমের এক কোণায় আমার জামা-কাপড়ের ব্যাগ দেখলাম।কিন্তুু ওই মটু টা যদি আমাকে এভাবে দেখে ফেলে কি হবে?ভেবেই ইরা তোয়ালে দিয়ে শরীর ঢেকে ওয়াশরুমের দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখলো, ইয়াশ বিছানায় বসে আছে।ইরার কিছুই করার নেই।তাই বাধ্য হয়ে ইয়াশ কে নরম কন্ঠে ডাকলো,’এই যে শুনছেন?”

“ইয়াশ শুনেছে;কিন্তুু সাড়া দিলো না।ও ভাবছে ইরা অন্য কাউকে ডাকছে।কারণ,ইরা তো ওকে এতো ভালোভাবে ডাকার প্রশ্নই আসে না।
ইয়াশের সাড়া-শব্দ না পেয়ে ইরা মনে মনে ইয়াশ কে ‘বয়রা’ বলে সম্বোধন করে আবার ডাকলো,’এই যে ইয়াশ শুনছেন?”

“ইয়াশ এইবার পেছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আমাকে ডাকছো?”

“তো কাকে ডাকবো?এই রুমে আপনি ছাড়া আর কে আছে শুনি?আচ্ছা শুনুন, ফ্লোরে আমার ব্যাগ থেকে একটা থ্রি-পিস নিয়ে আমাকে দিয়ে যান।আমি ওয়াশরুমে জামা-কাপড় নিতে ভুলে গেছি।”

“ইরার কথা শুনে ইয়াশের মনে লাড্ডু ফুটলো।খুশি মনে ইয়াশ ইরার ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় নিয়ে ইরা কে দিতে গেলো।ইরা অন্যদিকে তাকিয়ে জামা টান দিতেই,জামার বদলে ইয়াশের হাতে টান লাগলো।সাথে সাথে ইয়াশ হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে গেলো।এদিকে ইয়াশ ওয়াশরুমে ঢুকতেই, ইরা ইয়াশের সাথে ধা**ক্কা লেগে ইরা পড়ে যেতে নিলো।তখন ইরাকে ধরতে গিয়ে ইয়াশ এবং ইরা দু’জনেই বাথটাবে পড়ে গেলো।ইরা নিচে আর ইয়াশ উপরে।ইয়াশ এমন ওপরে থাকায় ইরার যেনো দম ফেটে যাচ্ছে।কোনোরকমে শক্তি যুগিয়ে ইরা দিলো চি**ৎ*কার।ইয়াশ সেটা শুনে তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।বাথটাবে পানি থাকায় দু’জনেই ভিজে গেলো।ইরা উঠে বসে সাপের মতো ফোঁসফোঁস করে বলে উঠলো,’আপনি ইচ্ছে করে এই কাজ টা করলেন তাই না?”

“ইরার প্রশ্নে ইয়াশের মুখ পুরো হা হয়ে গেলো।চোখজোড়া বড় বড় করে বললো,’আমি আবার কি করলাম?”

“ন্যাকামি করার জায়গা পান না?আপনি হলেন একজন শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট বন্য ইঁদুর।যখনই শুনেছেন আমি ওয়াশরুমে জামা-কাপড় নিয়ে আসিনি।ওমনি আপনার লোভ লেগে গেলো।কি ভেবেছেন,আপনার মতলব আমি কিছুই বুঝিনা?”

“ইরার কথা শুনে এতক্ষণে ইয়াশ ইরার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো, ইরা শরীরে একটা কালো রঙের তোয়ালে পেঁচানো।ইরা কে এই অবস্থায় দেখে ইয়াশ যেনো পা**গল প্রায়।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,’বিশ্বাস করো আমি এই অবস্থায় কোনোদিন কোনো মেয়েকে দেখিনি।আজ প্রথম দেখলাম,তুমি সত্যি খুব সুন্দর সোনাপাখি।আই লাভ ইউ।”

“একেই বাথটাবের ঠান্ডা পানিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে ইরা।তার ওপর ইয়াশের এই রোমান্টিক কথা ইরার কাছে বি**ষের মতো লাগছে।ইরা ইয়াশ কে কটমটিয়ে বললো,’আপনি যদি এখান থেকে না যান, তাহলে আমি চি**ৎ*কার করে সবাইকে ডাকবো।”

“ইয়াশ দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’এটা পুরো সাউন্ড প্রুফ রুম।তোমার চি**ৎ*কার কেউ শুনবে না।বাট ডোন’ট ওয়ারি সোনা।আ’ম ইনোসেন্ট বয়।তোমাকে বিয়ে করতে পেরেছি,এটাই আমার সৌভাগ্য। কিছুদিন পর তোমার মাথা টা ঠান্ডা হলে আমার কাছে এসে বললেই, আমি রাজি হয়ে যাবো।এখন আমি যাই সোনা,তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আমার আজকে আর ঘুম হবে না।’বলেই সেখান থেকে দ্রুত কে**টে পড়লো ইয়াশ।”

“ইয়াশ যেতেই ইরা ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে,ফ্লোর থেকে অর্ধভেজা জামা-কাপড় উঠিয়ে সেগুলো পড়ে বের হলো।”

“ওয়াশরুম থেকে বের হতেই;ইয়াশ ইরা কে বললো,’প্লিজ সোনাপাখি এখন কোনো সিনক্রিয়েট করো না।আমি জানি, তুমি এখনোও সবকিছু মানতে পারছোনা।কিন্তুু সিচুয়েশনটা বোঝার চেষ্টা করো।মা নিচে আমাদের জন্য ওয়েট করছে;প্লিজ নিচে চলো।”

“ইরা ভাবলো,’সব দোষ করেছে ইয়াশ।ওর বাবা-মা তো করে নি।তাই রাজি হয়ে গেলো।দু’জনে ডাইনিং রুমে পৌঁছাতেই মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো নীলাদ্রি এবং ইরার।”

“নীলাদ্রি ইরা কে ইয়াশের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’তুই এখানে?”

“ইরা যেনো আরও বেশি অবাক হলো।শাড়ি পরিহিত নীলাদ্রি কে দেখে একদম নতুন বউয়ের মতো লাগছে।ইরা পাল্টা প্রশ্ন করলো,’আমারও তো একই প্রশ্ন তুই এখানে কিভাবে এলি?”

“নীলাদ্রি বুঝে গেছে চাইলেও ইরার কাছ থেকে কিছু লুকাতে পারবে না।তাই মলিন মুখে বললো,’৪দিন আগে নিহান আমাকে বিয়ে করেছে।তোকে জানালে তুই আমাকে পঁচা নালায় চুবিয়ে মা**র*তি;তাই বলিনি।কিন্তুু তুই এখানে কেনো?”

“নীলাদ্রির কথা শুনে ইরা মনে হয় ঠা**স করে আকাশ থেকে পড়লো।কোনোভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,’গতকাল রাতে অ্যাক্সিডেন্টলি ইয়াশের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।তাই আমি এই বাড়িতে অবস্থান করছি।”

“ইরার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো নীলাদ্রি। ভাবলো,’আমাদের দুই বান্ধবীর কপালে কি তাহলে এই লেখা ছিলো?”

“নীলাদ্রি এবং ইরার কথার মাঝে শায়লা বেগম গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,’তোমরা কি শুধু কথা বলবে নাকি খেতে বসবে?”

‘গতকাল রাতে ইরাকে নিয়ে এই বাড়িতে আসার পর শায়লা বেগম মন ভার করে থাকলে,ইমতিয়াজ আহমেদ এবং ইয়াশ তাকে অনেক বোঝায়।আর পুরো ঘটনা বলে।তখন শায়লা বেগম বুঝতে পারেন,পুরোটাই পরিস্থিতির স্বীকার। তাই তিনি এখন স্বাভাবিক আচরণ করছেন।’

“শায়লা বেগমের নির্দেশে ইয়াশ,ইরা এবং নীলাদ্রি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলো।শায়লা বেগম নীলাদ্রি কে বললেন,’তুমি কি ইরা কে আগে থেকে চেনো?তোমাদের কথা-বার্তায় মনে হলো তোমরা পূর্ব-পরিচিত।”

“নীলাদ্রি ম্লান হেসে বললো,’হুমম মা ইরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
“শায়লা বেগম বেশ অবাক হয়ে বললেন,’তাই নাকি তোমরা দু’জন বান্ধবী?আরে বাহ!ভাগ্যক্রমে তোমাদের সম্পর্ক টা আরও গাঢ় হয়ে গেলো।এখন তোমরা দুই জা হয়ে গেছো।দু’জনে সবসময় মিলে-মিশে থাকবে।’বলেই তিনি সবার প্লেটে খাবার বাড়লেন।ইমতিয়াজ আহমেদ ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং থাকায় সকালেই নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে গেছে।নিহান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।তাই নীলাদ্রি সেই সুযোগে নিচে আসলো।ওই বদ্ধ রুমে নীলাদ্রির দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।তাই আজ শায়লা বেগমের সাথে খাওয়ার জন্য নিচে এলো।এহতিশাম এখনোও ঘুমাচ্ছে।তাই শায়লা বেগম আর ডাকেনি।”

“ইয়াশের খাওয়া শেষ।এদিকে ইরা গরুর মাংস দিয়ে ভাত মেখে মাত্রই মুখে দিলো,তখনই ওর বমি এসে পড়লো। নীলাদ্রি প্রথমে বিষয়টি খেয়াল করে নি।যখন দেখলো ইরার প্লেটে গরুর মাংস, তখন নীলাদ্রি বুঝে গেলো ইরার এমন করার কারণ।ইয়াশ ইরাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,’কি হলো সোনা?এমন করছো কেনো?নাও পানি খাও।’ইরা ঢকঢক করে পানি খেয়ে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’এটা কিসের মাংস?”

“পাশ থেকে শায়লা বেগম বললেন,’কেনো মামনি এটা তো গরুর মাংস ভুনা।”

“ইরা হা করে তাকিয়ে বললো,’গরুর মাংস ভুনা খেতে এইরকম?”

“ইরার রিয়েকশন দেখে নীলাদ্রি ঠোঁট টিপে হেসে বললো,’ইরা এই বাড়িতে সবার একটু গ্যাস প্রবলেম আছে।তাই তারা মশলা জাতীয় খাবার অ্যাভয়েড করে।আমি মেইড কে দিয়ে আমার জন্য আলাদা রান্না করিয়েছি।তুই আমার খাবার খা।’বলেই নীলাদ্রি ইরার প্লেটে মুরগির মাংসের তরকারি দিলো।ইরার খুব ক্ষুধা লেগেছিলো।তাই আর কথা না বাড়িয়ে খাবার খেয়ে নিলো।ইরা কে খাবার খেতে দেখে ইয়াশ তৃপ্তির হাসি দিলো।”

——————–
“এদিকে নিহান ঘুম থেকে উঠে নীলাদ্রি কে রুমে না দেখে,তড়িৎ গতিতে বেলকনি এবং ওয়াশরুম চেক করলো।কিন্তুু কোথাও নীলাদ্রি কে না পেয়ে নিহানের মাথা গরম হয়ে গেলো।নিহান রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে গেলো।ডাইনিং টেবিলে নীলাদ্রি কে সবার সাথে বসে খেতে দেখে, নিহান অগ্নিমূর্তির রূপ ধারণ করলো।তেড়ে গেলো নীলাদ্রির দিকে।চোখের পলকেই নীলাদ্রি কে সবার সামনে চেয়ার থেকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো ওপরে।ইরা তো এটা দেখে পুরো থ হয়ে গেলো।শায়লা বেগম এবং ইয়াশ নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তারা হয়তো আগে থেকেই এমন কিছু দেখার অপেক্ষায় ছিলো।”

“নিহান নীলাদ্রি কে রুমে নিয়ে গিয়ে ওকে বিছানায় বসিয়ে,দরজা আটকে দিলো।নীলাদ্রি সবেমাত্র খাবার খেয়ে হাত ধুয়ে উঠতে যাবে,তখনই এই অঘটন ঘটে গেলো।”

“নিহান ঘাড় কাত করে নীলাদ্রির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তার চোখ জোড়া লাল টকটকে।নীলাদ্রি ভেবেছিলো,’ নিহান এভাবে ওকে সবার সামনে কোলে নিয়ে আসার কারণে একটু প্রতিবাদ করবে।কিন্তুু নিহানের ঘাড় কাত করা, আর লাল চোখজোড়া দেখে নীলাদ্রির প্রতিবাদী মনোভাব ফুস করে উড়ে গেলো।শুকনো ঢোক গিলে নিচু স্বরে বললো,’আপনি ঘুমিয়েছিলেন।একা একা রুমের মধ্যে বোর হচ্ছিলাম।তাই একটু নিচে গিয়ে সবার সাথে নাস্তা করছিলাম।”

“নিহান এইবার এক লাফে নীলাদ্রির কাছে চলে আসলো।তার চুলগুলো এলোমেলো।ঘুম থেকে উঠেই নীলাদ্রি কে না পেয়ে খুঁজতে গিয়েছে।তাই চুলগুলো এখনোও এলোমেলো হয়ে আছে।নিহান কে দেখতে এখন সাদা চামড়ার পা**গলের মতো লাগছে।”

“নিহান নীলাদ্রির খুব কাছে এসে ওর চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে বললো,’এই চুলগুলো ভাবছি কে**টে আমার কাছে সযত্নে রেখে দেবো নীলাঞ্জনা।যেনো ভুলেও কেউ না দেখতে পারে।”

“নীলাদ্রির বুক কেঁপে উঠলো।আমতা
আমতা করে বললো,’আমি তো চুলগুলো ভালো করে বেঁধে গিয়েছি।তাহলে…..

” হুসসসস….একদম কথা বলবেনা।চুপ করে থাকো।আমি এই যাবো,আর এই আসবো।’বলেই নিহান টেবিলের ড্রয়ার থেকে কে**চি বের করে নীলাদ্রির কাছে আসলো।ওর চুলে হাত বুলিয়ে বললো,’এতো সুন্দর চুলগুলো কেনো অন্যকেউ দেখবে?উহুমম..আমি ছাড়া এই চুল দেখার অধিকার কারো নেই সুইটহার্ট।’বলে নিহান নীলাদ্রির চুল কা**টার জন্য কে**চি লাগাতে যাবে; তখনই নীলাদ্রি ছিটকে দূরে সরে গেলো।চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে দুই হাত জোর করে বললো,’দয়া করে আমার শখের চুলগুলো কাটবেন না।আমি প্রমিজ করছি,আমি এখন থেকে বাসায় সবসময় হিজাব পড়ে চলা-ফেরা করবো।আপনি ব্যতীত এই চুল কেউ দেখবেনা।”

“নীলাদ্রির অনুনয়ের সুরে কথা শুনে নিহান তৃপ্তির হাসি দিলো।এই ভেবে যে নীলাদ্রি ওর বশ্যতা স্বীকার করেছে।নিহান নীলাদ্রির ঘাড়ে আলতো করে চুমু দিয়ে পৈ**শা**চিক হাসি দিয়ে বললো,’সুইটহার্ট আজ থেকে এই রুম থেকে তোমার বের হওয়া পুরোপুরি বন্ধ।তুমি আমার খাঁচার পাখি।আজ থেকে এখানেই বন্দী থাকবে তুমি।দরকার হলে সবকিছু বাদ দিয়ে আমি তোমার সাথে সারাদিন সময় কাটাবো।আমি একাই তোমার জন্য এনাফ।তোমার আর কাউকে প্রয়োজন নেই।’বলে নীলাদ্রির মুখের সামনে মুখ নিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,’দেখো দেখো আমি কতো সুন্দর দেখতে।তুমি চাইলে এর থেকেও বেশি সুন্দর হয়ে দেখাতে পারবো।দেখবে তুমি?”

“নীলাদ্রি নিহানের পা**গলামো কথা শুনে ভ**য়ে কেঁপে উঠলো।কান্না করে বললো,’প্লিজ এইভাবে কথা বললে আমার খুব ভ**য় লাগে।দয়া করে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলুন।”

“নিহান এইবার নীলাদ্রির আরো কাছে এসে বললো,’কিভাবে কথা বলবো?ওহহ তুমি আরও সুন্দর করে কথা বলতে বলছো তাইতো?দাঁড়াও এখুনি খাতা আনছি।’বলেই নিহান তার ব্যাগ থেকে খাতা-কলম বের করে লিখলো,

‘নীলাঞ্জনা তুমি আমার সাধনা
তোমায় ছাড়া আমি বাঁচবো না,
তোমাকে আমি কারোর নজরে পড়তে দেবো না।
তুমি যে আমার ২০৯ বছরের আরাধনা….’

~মেহের আফরোজ~

“নিহান এগুলো লিখে নীলাদ্রির সামনে এসে বারবার সেটা পড়তে থাকলো;আর বললো,’দেখোতো এখন ঠিক আছে কিনা?এখন তো স্বাভাবিক ভাষায় বলছি।”

“নীলাদ্রি প্রতিত্তোরে কিছুই বলছে না।নিহানের এই ভুগিচুগি কবিতা নীলাদ্রির মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।ও তো নিহানের অঙ্গ-ভঙ্গি দেখে ভ**য় পেয়ে গেছে।”

“নীলাদ্রি নিহানের সামনে থেকে সরে যেতে চাইলো।কিন্তুু নিহান ওর দুই বাহু শক্ত করে ধরে বললো,’কি হলো সুইটহার্ট বোরিং লাগছে?আচ্ছা দাঁড়াও,আমি আরেক টা কবিতা বানাচ্ছি…

“নীলাদ্রি আর সহ্য করতে না পেরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,’দয়া করে আপনার এইসব পা**গলামি বন্ধ করুন।আমি আর নিতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে এভাবে মানসিক টর্চার করবেন না।”

“নিহান কিছু একটা ভেবে এইবার নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিকঠাক করে,চোখজোড়া স্বাভাবিক করে নীলাদ্রির মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো,’আমার দিকে তাকাও সুইটহার্ট;তাকাও বলছি।”

“নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো,এখন নিহানের চেহারা একদম স্বাভাবিক লাগছে।নীলাদ্রিকে তাকাতে দেখে; নিহান বাঁকা হেসে নীলাদ্রির দুই গালে হাত রেখে বললো,’এখন আমাকে সুন্দর লাগছে তাই না?আমি জানি।এখন নিশ্চয়ই তোমার আর বোরিং লাগবে না?এখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে আর আমিও তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো।তুমি চাইলে আমার সাথে খেলতেও পারো।আমি খুব ভালো ক্যারাম খেলতে পারি।আমি জানি,তুমিও ক্যারাম খেলতে খুব ভালোবাসো।আসো আজ আমরা সারাদিন ক্যারাম খেলবো।’বলেই নিহান ঝড়ের গতিতে স্টোর রুম থেকে ক্যারাম বোর্ড নিয়ে আসলো।তারপর নীলাদ্রি কে বললো,’নাও শুরু করো।”

“নীলাদ্রি মলিন মুখে বললো,’এখন আমার খেলার মুড নেই।প্লিজ জোর করবেন না।”
নীলাদ্রি বলতেই,নিহান ক্যারাম বোর্ড সরিয়ে ফেললো।তারপর নিহান নীলাদ্রির হাত ধরে বললো,’ওকে.. আমাকে বলো,তুমি কি করতে পছন্দ করো?”

“নিহান প্রশ্ন করতেই নীলাদ্রি চেঁচিয়ে বললো,’আমি এই রুমের মধ্যে থেকে বোর হচ্ছি।আমার স্থান পরিবর্তন করতে ইচ্ছে করে।একা থাকতে ভালো লাগে না।সবার সাথে মিশতে ইচ্ছে করে।”

“ব্যাস এটুকুই যেনো নীলাদ্রির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।নিহান নীলাদ্রিকে মুহূর্তের মধ্যে কোলে তুলে নিয়ে বেলকনিতে থাকা দোলনায় বসালো।তারপর ওর পাশে নিজেও বসে পড়লো।এমনভাবে নীলাদ্রির সাথে লেপ্টে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলো,যেনো নীলাদ্রি একটুও সরতে না পারে।তারপর নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’তোমার ওই রুমে বোরিং লাগছিলো;তাই এখানে নিয়ে এসেছি।তোমার সবার সাথে মিশতে ইচ্ছে করে।কিন্তুু আমি থাকতে সেটা কখনোই সম্ভব নয়।তাই আমি নিজেই তোমার সাথে মিশে বসে আছি।তুমি চাইলে আরও মিশতে পারবো।এইবার তুমি খুশিতো নীলাঞ্জনা?”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“তুমি চাইলে আরও মিশতে পারবো।এইবার তুমি খুশি তো নীলাঞ্জনা?”

“নীলাদ্রি আর কি বলবে।আজ ওর মুখের ভাষাগুলো ও মনে হয় কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে।তাই ও স্ট্যাচুর মতো সেভাবেই বসে রইলো।নিহান তো সেটা দেখে খুব খুশি হলো।নীলাদ্রির পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলো।তারপর বললো,’তুমি সুস্থ হবে কবে?আমার যে আর তর সইছে না।”

“নীলাদ্রি মনে মনে বললো,’আমি তো সুস্থই; কিন্তুু আপনাকে জানিয়ে কি নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনবো?কখনোই না।”

“নিহান আজ তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাদ্রির মনের কথা জেনে গেলো।সবকিছু জানতে পেরে নিহান যেনো আরও ভ**য়ং**কর রূপ ধারণ করলো।তার চোখ জোড়া পূর্বের ন্যায় লাল টকটকে হয়ে গেলো।হার্টবিট আগের ন্যায় বেড়ে গেলো।কপালের রগ গুলো গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করলো।বি**স্ফো**রিত নয়নে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’তুমি সুস্থ তাই না?এতোদিন আমাকে মিথ্যা কথা বলে ঘুরিয়েছো তাইনা?বাহ!তুমি তো দেখছি দারুণ ভাবে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারো।”

“নিহানের এহেন কথায় নীলাদ্রি হতবিহ্বল হয়ে গেলো।ভাবলো, ‘এই সাইকো লোকটা কিভাবে জানলো,যে আমি সুস্থ?আমি তো কথাটা মনে মনে বলছিলাম।নাকি আমি ভুলে মুখ ফসকে বলে ফেলেছি!উফফ আমার মাথায় এখন কিছুই আসছে না।মুখ দিয়ে সত্যি বললে এখনই তো ধরা খেয়ে যাবো।”

“নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই নিহান বাঁকা হেসে বললো,’এখন আর কথা বানিয়ে লাভ নেই।চলো শুভকাজ টা সেরে ফেলি।”

“নিহানের এহেন কথায় নীলাদ্রির বুকে দিড়িম দিড়িম আওয়াজ হতে লাগলো।নীলাদ্রি নিহানের কাছ থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকলো।নিহান সেটা দেখে ওকে আরও জোরে চেপে ধরলো।দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’একদম সাপের মতো মোচড়ামুচড়ি করবে না।এখন আমি যা বলবো সবকিছু মনযোগ দিয়ে শুনবে।”

” নীলাদ্রি নিহানের কোনো কথাই শুনবে না।কারণ নিহানের কথা শোনার পরপরই যদি ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে?’এটা ভেবেই নীলাদ্রির শরীর রি রি করে উঠলো।”

“নীলাদ্রির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। নিহানের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বললো,’আমি আপনার সব কথা শুনবো;তবে রাতে।আমি চাই আপনি আমার জন্য রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে আমাদের বাসরঘর সাজাবেন।তারপর আপনার মনের কথাগুলো সব বলবেন।তারপর আমরা ফুলসজ্জা করবো।”

“নিহান এইবার আর তার পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাদ্রির মন ঘাটলো না।নীলাদ্রির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনেই বেশ খুশি হয়ে গেলো।নীলাদ্রির গালে চুমু দিয়ে বললো,’ঠিকাছে আজ রাতে তোমার পছন্দ মতো বাসরঘর সাজানো হবে।এখন আমি তোমার জন্য খাবার আনছি।তুমি কিন্তুু এখান থেকে এক পাও নড়বে না।’নীলাদ্রি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।নিহান হাসি মুখে নিচে চলে গেলো।”

” নীলাদ্রি সেই সুযোগে ওয়াশরুমে গেলো।কয়েক মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে এসে আবারও বেলকনিতে গিয়ে দোলনায় বসলো।নীলাদ্রি বেলকনির সাথে ঘেঁষে থাকা আম গাছটির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ভাবলো,’হায়! আমার আম গাছ,তুমি না থাকলে আজ আমার পা**গলের হাত থেকে আর রক্ষা পাওয়া হতো না।তোমাকে অনেক গুলো থ্যাংকস।’বলেই মুচকি হাসলো নীলাদ্রি।”

“নিহান খাবার নিয়ে এসে বললো,’আজ আমরা এক প্লেটে খাবো।আর তুমি চাইলে আজ আমাদের বাসর ঘর টা বেলকনিতে সাজাবো।তোমার তো আবার রুমের মধ্যে বোরিং লাগে।”

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রি যেনো বোকা বনে গেলো।মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ছিঃ ছিঃ ছিহ! কি বলেন আপনি?আমরা বেলকনিতে বাসর করবো আর দেয়ালের ওইপাশ থেকে মানুষজন দেখবে?আপনার কি আক্কেল জ্ঞান সব গেছে নাকি?সবসময় তো বলতে থাকেন কেউ আমার দিকে তাকালে, আপনার নাকি ভালো লাগেনা।তাহলে এখন বলছেন বেলকনিতে বাসর করবেন?”

” নিহান নিজের কথায় নিজেই থ হয়ে রইলো।নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’সরি সুইটহার্ট এটা একদম আমার মাথায় ছিলো না।কি বলো তো,এতোদিন তোমায় কাছে পাইনি।তার ওপর আজ বলতে না বলতে তুমি রাজি হয়ে গেলে।সব মিলিয়ে আমি মনে হয় বেশামাল হয়ে গেছি।তাই আর কি এই বিষয় টা মাথায় ছিলো না।কিন্তুু তুমি তো রুমে বোরিং ফিল করো।”

“নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,’আপনার সাথে মধুচন্দ্রিমা করতে কখনোই বোরিং ফিল করবো না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান যেনো খুশিতে হাওয়ায় ভাসছে।নীলাদ্রির মুখের কাছে ওর গাল নিয়ে বললো,’আজ পর্যন্ত একবারও আমায় নিজে থেকে একটা কিস করো নি।রাতে তো যা হবার হবে।এখন একটা কিস করো প্লিজ।”

” নীলাদ্রি ভাবলো,’এমনিতেই মিথ্যা কথা বলে ধরা খেয়ে গেছি।এখন যদি চুমু দিতে রাজি না হই,তাহলে দেখা যাবে এখুনি যা হওয়ার হয়ে যাবে।এর থেকে চুমু দেওয়া অনেক ভালো।’ভেবে নীলাদ্রি এই প্রথম নিহানের গালে ওর ঠোঁট জোড়া ছোঁয়ালো।’তারপর নিচু স্বরে বললো,’প্লিজ এখন সরুন।আমার খুব লজ্জা লাগছে।”

“নীলাদ্রির ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে নিহান তো প্রায় শেষ।নিজেকে কোনোভাবে কন্ট্রোল করে বললো,’আপাতত এতটুকুতেই আমি খুব খুশি।তবে রাতে কিন্তুু তোমায় ছাড়ছিনা।’বলেই নীলাদ্রি কে খাইয়ে দিতে লাগলো।এবং নিজেও খেলো।”

“রাত ৯টা বাজে খাওয়া-দাওয়া করে নিহান বাইরে গেলো নীলাদ্রির জন্য ফুল কিনতে।নিহান যেতেই নীলাদ্রি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে কাভার্ড থেকে কয়েকটা জামা-কাপড় ব্যাগে ভরে,ওর জমানো কিছু টাকা নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো পালানোর সিদ্ধান্ত নিলো।তবে এইবার আর ওদের বাসার মতো সদর দরজা দিয়ে নয়।নিহানের রুমের বেলকনির সাথে ঘেঁষে থাকা আম গাছ বেয়ে পালাবে ভাবলো।”

” নীলাদ্রি আগে নিচে ব্যাগ ছুঁড়ে মারলো।তারপর আম গাছ বেয়ে হুড়মুড় করে নিচে নেমে গেলো।নিচে নেমে দেখলো বাড়ির সামনের গেট লক করা।আর সামনে দিয়ে যাওয়া রিস্ক হবে।তাই বাড়ির পেছন দিয়ে বের হওয়ার জন্য ছোট একটা গেট দেখলো।নীলাদ্রি খুশি মনে গেটের সম্মুখে পা বাড়াতেই, শুনতে পেলো কারো পায়ের আওয়াজ।নীলাদ্রি সতর্ক হয়ে আম গাছের পেছনে লুকালো।দেখলো এহতিশাম সেই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছে।বাড়ির পেছনের দিকটা অন্ধকার হওয়ায় এহতিশাম নীলাদ্রি কে দেখতে পায়নি।তাই এহতিশাম বাসার দিকে পা বাড়ালো।হঠাৎ কিছু একটা মনে করে পেছনে ফিরলো এহতিশাম।নীলাদ্রি আরও জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লো।এহতিশাম বড় বড় পা ফেলে বাসায় চলে গেলো।এহতিশাম যেতেই নীলাদ্রি দিলো ভো দৌড়।”

“নীলাদ্রি এলোমেলো ভাবে দৌড় দেওয়ার কারণে ওর স্লিপার টা ছিড়ে গেছে।নীলাদ্রি খালি পায়েই দৌঁড়াতে শুরু করলো।এদিকে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একসময় নীলাদ্রি একটা শুনশান একটা রাস্তায় চলে এলো।নীলাদ্রি ভাবলো, ‘আমি তো বাস স্ট্যান্ডের দিকে যেতে চেয়েছিলাম।এখানে কিভাবে চলে আসলাম?হয়তো এই জায়গার পথ না চেনার কারণে এমন টা হয়েছে।ধুর… পথে যদি একটা গাড়ি নিয়ে নিতাম, তাহলে না জুতা ছিড়তো;আর না পথ হারাতাম।’মনে মনে কথাগুলো বলে নীলাদ্রি এইবার হাঁটতে থাকলো।হাঁটতে হাঁটতে নীলাদ্রি একটা গলির মধ্যে ঢুকে গেলো।গলির সাইডে দেখলো,৩-৪জন যুবক বসে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।ফাঁকা গলিতে নীলাদ্রি কে দেখে ছেলেগুলো একে-অপরের দিকে তাকালো।নীলাদ্রি ছেলে গুলো কে দেখে বিপরীত দিকে হাঁটা ধরলো।ছেলেগুলো নীলাদ্রির পেছনে হাঁটা ধরলো।নীলাদ্রি ছেলেগুলোর পায়ের জুতার আওয়াজ পেয়ে হাঁটার গতিবেগ বাড়িয়ে দিলো।”

———————
“এদিকে ইরা সেই বিকাল থেকে নীলাদ্রির সাথে কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে।কিন্তুু, ইয়াশ ইরার পেছনে আঠার মতো লেগে আছে।কিছুক্ষণ আগে ইয়াশ ঘুমিয়েছে। সেই সুযোগে ইরা নীলাদ্রির রুমে উঁকি দিতেই;পেছন থেকে একটা রাশভারি পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,’তুমি এখানে কি করছো?”

“ইরা কন্ঠ টা চিনতে পারলো।ভ**য়ে ওর আত্মা মনে হয় অর্ধেক হয়ে গেলো।মনের বিরুদ্ধে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো, নিহান ইরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইরা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,’আআআসোলে আমি নীলাদ্রির সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”

“নিহান কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’নীলাঞ্জনার সাথে কারো দেখা করা নিষেধ। তুমি তোমার রুমে যাও।ভুলেও এই রুমের ধারে-কাছে যেনো তোমায় না দেখি।”

“ইরা নিহান কে মনে মনে ১০১টা গা**লি দিয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।নিহান রুমে ঢুকে নীলাদ্রি কে না দেখতে পেয়ে ওয়াশরুম,বেলকনি,ছাদে সব জায়গায় খুঁজলো। নীলাদ্রি কে কোথাও না পেয়ে নিহান ভ**য়ং**কর ভাবে গ**র্জ**ন করে উঠলো।ইরা সবেমাত্র ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাসে পানি খাচ্ছিলো, সেই মুহূর্তে নিহানের এমন ভ**য়ং**কর চি**ৎ*কার শুনে ইরার হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে ভে**ঙে গেলো।”

“নিহান নিচে এসে চিৎকার করে সবাইকে ডাকলো।নিহান ইরাকে থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,’তুমি নীলাঞ্জনাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছো তাইনা?”

“এতক্ষণে সবাই ডাইনিং রুমে হাজির হলো।ইয়াশ দেখলো নিহান ইরার দিকে র**ক্ত**চক্ষু নিক্ষেপ করেছে।ইমতিয়াজ আহমেদ এখনো বাসায় আসেনি।শায়লা বেগম বললেন,’কি হয়েছে বাবা এভাবে চি**ৎ*কার করছিস কেনো?”

“সেটা ইরাকেই জিজ্ঞেস করো।ও আমার নীলাঞ্জনা কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।'”

“নিহানের চিৎকারে ইয়াশের ঘুম ভেঙে গেছে।এখানে এসে নিহানের কথা শুনে,ও আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।’
এহতিশাম এসে নিহান কে বললো,’কি হয়েছে নিহান?”

“যা বলেছি শুনেছিস তো।নীলাঞ্জনা পালিয়ে গেছে, আর ওকে পালাতে সাহায্য করেছে ইরা।”

“নিহানের এমন মিথ্যা অপবাদে ইরার চোখে পানি চলে এসেছে।একেই ওর বাবা ওকে মিথ্যা দোষারোপ করেছে। এখন আবার নিহান করছে,যেখানে সকালের ওই ঘটনার পর থেকে নীলাদ্রির সাথে একবারও ইরার দেখা হয় নি।”

” ইরা নিহানকে বললো,’দয়া করে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিবেন না।আমি নীলাদ্রির সাথে তখন দেখা করতে গিয়েছিলাম।কিন্তুু রুমে ঢোকার আগেই আপনি এসে পড়েছেন।আমি এই সম্পর্কে কিছুই জানিনা।”

“এতক্ষণে ইয়াশের কাছে সবকিছু পরিষ্কার হলো।ইয়াশ নিহান কে বললো,’ভাইয়া ইরা হয়তো সত্যি কিছু জানেনা।তুমি আরেকটু ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে দেখো।”

” এহতিশাম বললো,’নিহান আমার মনে হয় একটু আগে নীলাদ্রি বাসা থেকে পালিয়েছে; আমাদের বাসার পেছনের গেট দিয়ে। আমি যখন ওইদিক দিয়ে আসছিলাম, তখন আম গাছ টা নড়তে দেখেছি।হয়তো নীলাদ্রি আমাকে দেখে ওখানে লুকিয়ে ছিলো।কিন্তুু, আমি বিষয়টি তখন খেয়াল করিনি।”

“এহতিশামের কথা শুনে নিহান যা বোঝার বুঝে গেছে।নিহান এক দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।তারপর তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে, নীলাদ্রির অবস্থান দেখে রহস্যময় হাসি দিলো।”

“এদিকে নীলাদ্রি বর্তমানে এলোমেলো পা ফেলে অজানা রাস্তায় দৌড়ে চলেছে।পিচঢালা রাস্তায় অনেকক্ষণ যাবৎ দৌঁড়ানোর কারণে ওর পায়ের চামড়া থেঁতলে গেছে।পা দিয়ে র**ক্ত বের হচ্ছে। তাতে নীলাদ্রির হুঁশ নেই।একসময় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে নীলাদ্রির পা রাস্তায় থাকা ইটের সাথে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলো।”

“এতক্ষণ ওর পেছনে দৌঁড়ানো যুবক গুলো অবশেষে নীলাদ্রির কাছে পৌঁছাতে পারলো।নীলাদ্রি কে ওরা ৪জন চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরলো।একজন বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো,’কি গো ফুলটুসি তুমি দেখছি অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় নাম দিলে ফার্স্ট হতে।হেব্বি দৌঁড়াতে পারো।নীলাদ্রির ওরনা রাস্তায় পড়ে গেছে।ওর জামা ঘেমে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।ফলে ওর শরীরের ভাজগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।ছেলেগুলো এমনভাবে লোলুপ দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে;মনে হয় কোনো সুস্বাদু খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।”

“নীলাদ্রি ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,’দয়া করে আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।আপনাদেরও তো ঘরে মা-বোন আছে।আজ যদি আমার জায়গায় আপনাদের বোন এখানে থাকতো,তাহলে কি এমন একটা কাজ করতে পারতেন?নিশ্চয়ই না।”

“ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো,’এইসব ডায়লগ পুরনো হয়ে গেছে সুন্দরী।তোমার ওই চাঁদ মুখ খানা দিয়ে সুন্দর কিছু বলো।যাতে আমাদের শরীরে কারেন্ট ধরে যায় ফুলটুসি।’বলেই ছেলে গুলো দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকলো,আর বিশ্রি ভাবে নীলাদ্রির শরীরের ভাজগুলো দেখতে থাকলো।নীলাদ্রি দুই হাত বুকের ওপর রেখে বললো,’আমি এই ঘটনা কাউকে বলবো না।দয়া করে আমাকে যেতে দিন।”

“একজন যুবক কু**টিল হেসে বললো,’ফুলটুসি তোমাকে ছেড়ে দেবো,তবে আমাদের স্যারের কাছে।আর আমরা এখন তোমাকে একটু টেস্ট করবো।অবশ্য তুমি ভা**র্জি*ন না হলেও সমস্যা নেই।স্যার বলেছে একটা খাসা মা***ল হলেই চলবে।তোমাকে দেখেতো খদ্দেরদের মাথাই নষ্ট হয়ে যাবে।যৌবনে যে তোমার দুধে আলতা শরীর টা টলমল করছে।অনেক দিন পর পুরাই ঝা**ক্কা*স একখান মা***ল পাইছি।’বলেই ছেলেটা বিশ্রি হাসি দিয়ে নীলাদ্রির দিকে পা বাড়াতে গেলেই,হঠাৎ করে দেখলো পা আর পায়ের জায়গায় নেই।শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে নিচে পড়ে আছে।ছেলেটির মস্তিষ্ক সচল হতেই গগন কাঁপানো চি**ৎ*কার দিতে চাইলো।কিন্তুু পারলো না;কারণ সামনে থাকা সুদর্শন অথচ ভ**য়ং**কর ব্যক্তিটি তার কন্ঠস্বরকে কন্ট্রোল করে রেখেছে।”

#চলবে….

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১১+১২

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“ফাঁকা ক্লাসে সিংহের ন্যায় গ**র্জন করে উঠলো নিহান।”

“রেহান এখনও নীলাদ্রির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কয়েক সেকেন্ড পর নীলাদ্রির গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি হলো জান?কিছু বলছো না কেনো?”

“গালে পুরুষালি শক্ত হাতের স্পর্শ পেতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি।রেহানের থেকে ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বললো,’স্যার আপনি খুব সুদর্শন পুরুষ।আর আপনাকে ক্যাম্পাসের সব মেয়েরাই পছন্দ করে;আমিও করি।কিন্তুু আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত,কারণ আমি বিবাহিত।২দিন হয়েছে নিহানের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কাউকে জানানো হয় নি।ভেবেছি এই পরীক্ষা শেষ হলে সবাইকে জানাবো।আ’ম সরি স্যার।আমাকে এখন যেতে হবে।নিহান নিশ্চয়ই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’বলেই নীলাদ্রি বাইরে যেতে নিবে,তখনই রেহান খপ করে নীলাদ্রির হাত ধরে ফেললো।নীলাদ্রি তার দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো স্যার?আবার আমার হাত ধরেছেন কেনো?আমি তো আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম।”

“রেহানের চোখজোড়া মনে হয় র**ক্তিম আভায় ছড়িয়ে গেলো।কপালের ওপর থেকে সিল্কি চুল গুলো সরিয়ে ডেভিল হেসে বললো,’এতোদিন যাবৎ তোমাকে ভালোবেসেছি,অবশ্যই ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়।তোমাকে পুরোপুরি নিজের করে পাওয়ার জন্য কতো স্বপ্ন দেখেছি আমি;আর তুমি ‘আ’ম সরি’ বললেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?হাহাহাহা কখনোও না ডার্লিং।বিয়ে করতে না পারি;তোমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করতে ঠিকই পারবো।’বলেই নীলাদ্রির হিজাব একটানে খুলে ফেললো রেহান।হিজাবে পিন থাকায় নীলাদ্রির গলায় আ**ঘাত লাগলো।নীলাদ্রি ‘উহহ’ শব্দ করে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললো।”

“এদিকে নীলাদ্রির হিজাব সরানোর পর বক্ষবিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠতেই, রেহান লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বললো,’ওয়াও সো হ**ট ফি…

“রেহান আর কথা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই গালে শক্ত হাতের ঘু**ষিতে,গাল থেকে গলগল করে র**ক্ত বেরিয়ে পড়লো।”

“নীলাদ্রি সেটা দেখে ভ**য়ে মুখ চেপে ধরলো।নিহান রেহানের শার্টের কলারে হাত দিয়ে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললো,’আমার কলিজার দিকে তুই কু**নজর দিয়েছিস।এর জন্য তোকে ভ**য়া*নক থেকে ভ**য়া*নক শাস্তি পেতে হবে।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।’
বলেই নিহান নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে ওর হিজাব দিয়ে বললো,এটা পড়ে নাও নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি কাঁপা কাঁপা হাতে কোনোরকমে হিজাব পড়লো।তারপর নিহান ওর হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।ক্যাম্পাসের সবাই টিফিন পিরিয়ডে ক্যান্টিনের আশেপাশে থাকায় বিষয়টি কারো দৃষ্টিগোচর হলো না।”

————–
“বাসায় গিয়ে নীলাদ্রি কে সরাসরি ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো নিহান।ওয়াশরুমে গিয়ে নীলাদ্রি কে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে, শাওয়ার ছেড়ে দিলো।নীলাদ্রি রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।ওর চোখজোড়া দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।এদিকে নিহান নীলাদ্রির পুরো শরীরে শ্যাম্পুর বোতল থেকে, পুরো শ্যাম্পু ঢেলে স্ক্রাবার দিয়ে ওর হাত-পা ঘঁষতে লাগলো; আর বিড়বিড় করে বলতে থাকলো,’ওই নর**পি**শাচ টাকে আমি ছাড়বো না।ও তোমার শরীরে হাত দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে।এর পরিণাম খুব ভ**য়া*নক হবে।’এভাবে বিড়বিড় করার পর একসময় নীলাদ্রির বক্ষবন্ধনীতে নজর পড়তেই নিহানের চোখজোড়া থমকে গেলো।নিহান তার চোখ জোড়া বন্ধ করে বললো,’এতো বড় গলার জামা কেনো পড়েছো তুমি?”

“নীলাদ্রি এতক্ষণ যাবৎ কেঁদে যাচ্ছিলো।হঠাৎ নিহানের এমন প্রশ্নে নীলাদ্রি কিছুটা ভড়কে গেলো।আমতা আমতা করে বললো,’আসলে দর্জি ওয়ালা কে আমার ছোট গলার জামার মাপে বানাতে দিয়েছিলাম।কিন্তুু, উনি এই জামা টার গলা একটু বড় বানিয়ে ফেলেছে।”

“নিহান রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’পুরুষ দর্জি নাকি মহিলা দর্জি দিয়ে জামা বানিয়েছো?”

‘মহিলা দর্জি দিয়ে বানিয়েছি।’

“নিহান এইবার আরো রেগে গেলো।ভাবলো,’একজন মহিলা দর্জি হয়ে কিভাবে এতোটা কেয়ারলেস হতে পারে?’ভেবে নিহান বললো,’নেক্সট টাইম আমি তোমার জামা-কাপড় বানিয়ে দেবো।প্রয়োজন হলে শিখে নেবো।কিন্তুু তুমি আর ভুলেও এই ধরনের জামা পরবে না।”

“নীলাদ্রি ভাবলো,’ছিঃ ছিঃ ছিহ! উনি আমার জামা বানালে তো আমার শরীর ফিতা দিয়ে মাপবে, আর সবকিছু জেনে যাবে।এই ভ**য়ে আমি ভুলেও পুরুষ দর্জির কাছে জামা বানাতে দেইনা।”

“নীলাদ্রির ভাবনা গুলো নিহান ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে শুনে ফেলেছে।নীলাদ্রির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’খুব ন্যারো মাইন্ডের তুমি।অলরেডি তোমার পুরো শরীরে আমার হাত অনেকবার বিচরণ করেছে।তবুও তোমার এতো লজ্জা?হাউ ফানি সুইটহার্ট!’ বলেই ওয়াশরুম থেকে বড় বড় পা ফেলে নিহান চলে গেলো।নিহান চলে যেতেই;নীলাদ্রি অবাক হয়ে ভাবলো,’এই লোক কি মাইন্ড রিডার?এতো দেখি আমার মনের কথাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বলে ফেলে।সাইকো টাইপ লোকদের মনে হয় এটা একটা বিশেষ গুণ।”

———-
“দুপুরে মেইড নীলাদ্রির পছন্দের খাবার দিয়ে গেছে।নীলাদ্রি মনে মনে নিহান কে খুঁজলো।কিন্তুু নিহান সেই যে বের হয়েছে তারপর আর কোনো খবর নেই।নীলাদ্রির খুব ক্ষুধা লেগেছে,তাই চুপচাপ খেয়ে নিলো।”

“সন্ধ্যায় নিহান বাসায় ফিরে রুমে এসে উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো।আজ আর নিহান নীলাদ্রির সাথে কোনো কথা বলছে না,দুষ্টুমি তো দূরের কথা।নীলাদ্রি বুঝতে পারলো, নিহান রেহান স্যারের বিষয়টি নিয়ে এখোনও খুব রেগে আছে।নীলাদ্রি নিহানের এই নীরবতা মেনে নিতে পারছে না।একেই নিহান কারো সাথে মিশতে দেয় না।আর নিহানের রুমেও কেউ আসে না।বাসায় এতো মানুষ থাকতেও,নীলাদ্রির নিজেকে কেমন বন্দিনী মনে হয়।তার ওপর নিহান ওর সাথে এখন কথা ও বলছে না।নীলাদ্রির মুখ কথা বলার জন্য নিশপিশ করছে।নীলাদ্রি বিছানায় বসে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এই যে শুনছেন,দুপুরে কিছু খেয়েছেন?”

“নিহান প্রতিত্তোরে কিছুই বললো না।
নীলাদ্রি হতাশ হলো।কারণ,নিহান ওর সাথে ফ্রী হলেও নীলাদ্রি নিহানের সাথে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করে।তার একটাই কারণ,নীলাদ্রি এখনও নিহান কে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারছে না।বারবার শুধু চোখের সামনে নিহানের রেগে যাওয়া ভ**য়ং**কর মুখখানা ভেসে ওঠে।’ ভেবে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নীলাদ্রি নিহানকে আবারও বললো,’আপনি কি আমার ওপর এখনও রেগে আছেন?বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছে করে রেহান স্যারের কক্ষে যাইনি।আমি তো ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম;তখনই তিনি আমার হাত ধরে…

“নীলাদ্রি কে নিহান আর কিছু বলতে না দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’তোমার মুখে ওই জা***র এর নামে একটা কথাও শুনতে চাই না।তোমার মুখে আমি ব্যতীত অন্য কারো নাম শুনলেও, আমার হিংসা লাগে।তুমি শুধু আমার নাম নিবে,আর কারো নয়।আর এখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।তুমিও ঘুমিয়ে পরো।আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।’বলেই নীলাদ্রির কপালে আর ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিলো নিহান।নীলাদ্রি কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো।কেনো জানি এইমুহূর্তে নীলাদ্রির শরীরে নিহানের স্পর্শ অজানা ভালো লাগায় ছড়িয়ে গেলো।নীলাদ্রি একসময় ঘুমিয়ে গেলো।নিহান নীলাদ্রির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।তারপর ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে,নীলাদ্রির মাথায় হাত দিয়ে ওকে কয়েক ঘন্টার জন্য গভীরভাবে ঘুম পারিয়ে দিলো।যেনো নিহানের কাজে ব্যাঘাত না ঘটায়।”

———————
“এদিকে আজ ইউনিভার্সিটিতে ইরার সাথে দেখা না হওয়ায়,মনের দুঃখে ইয়াশ রুমের মধ্যে গরুর র**ক্তের ললিপপ মুখে দিয়ে হাঁটছে;আর কিছুক্ষণ পর পর পাঁয়চারি করছে।ওর মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।বারবার ইরার মায়াবী চেহারা টা একবার দেখতে মন চাইছে।ইয়াশ ভাবলো,’ইরার বাসায় যাবে।শুধু একবার দেখেই চলে আসবে।’যেই ভাবা সেই কাজ। ঝড়ের গতিতে ইয়াশ
ইরাদের বাসার সামনে চলে গেলো।”

“অপরদিকে আশিক জ্বীনের ভ**য়ে চিন্তা করতে করতে, ইরার গতকাল রাত থেকে জ্বর এসেছে।ওর বাবা ওর সেবাযত্ন করেছে।রাতে ইরার একটু ভালো লাগছিলো।তাই বসে বসে ফেইসবুকে ভূতের গল্প পড়ছিলো।ইরা ভূতে ভ**য় পেলেও, ভূতের গল্প পড়তে ওর খুব ভালো লাগে।এমন সময় ইয়াশ ইরাদের সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে ভাবলো,’আজ হিরোদের মতো সদর দরজা দিয়ে ইরার রুমে প্রবেশ করবো।”

“ইয়াশ দুষ্টু হাসি দিয়ে ওর পাওয়ার ব্যবহার করলো,আর এক চুটকিতেই দরজা ভেতর থেকে খুলে গেলো।ইরার বাবা রাহাত আহমেদ তার রুমে ঘুমাচ্ছেন।ইয়াশ নিঃশব্দে ইরার রুমের দরজার সামনে নায়কের মতো ভাব নিয়ে দাঁড়ালো।দেখলো,ইরা মোবাইল হাতে নিয়ে খুব কৌতূহল নিয়ে কিছু একটা পড়ছে।ইয়াশ ওর পাওয়ার ব্যবহার করে দেখলো,ইরা ভূতের গল্প পড়ছে।ইয়াশের এইমুহূর্তে একটু হিংসা লাগলো।কারণ ও নিজেই তো মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার।ও থাকতে কেনো ইরা এইসব ছোট-খাটো ভূতের গল্প পড়তে যাবে?”

“পরক্ষণেই ভাবলো,’ইরা তো ওর ব্যাপারে কিছুই জানেনা।তাই হয়তো এগুলোর ব্যাপারেই ওর আগ্রহ।নাহ!এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না।ইরাকে ওর প্রতি আকর্ষিত করতেই হবে।ইয়াশের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।ইয়াশ চুপি চুপি ইরার খাটের নিচে ঢুকে খাট নাড়াতে লাগলো।”

“একেতো ইরা ভূতের গল্প পড়ছে।তার ওপর এভাবে হঠাৎ খাট নড়তে থাকায় ইরা বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।ধীরে ধীরে খাট আরও জোরে নড়তে থাকলো।ইরা ভাবলো,’নিশ্চয়ই এটা আশিক জ্বীনের কাজ।’ইরা ভাবলো,’এইবার নিজেই আমি এই লু**চু আশিক জ্বীনের সাথে ফাইট করবো।নইলে আমার নাম ও ইরা না হুহহ।’ভেবেই ইরা গলার স্বর উঁচু করে বললো,’এই যে লু**চু,ছ্যাচড়া মার্কা,উগান্ডা শহরের আশিক জ্বীন ভালোয় ভালোয় বলছি এখান থেকে ভাগেন,তাড়াতাড়ি ফুটেন।নইলে আমিও কিন্তুু আপনার মাথা নাড়িয়ে চরকির মতো ঘুরাবো।”

“ইরার কথা শুনে ইয়াশ মিটিমিটি হেসে খাট নাড়ানো বন্ধ করে দিলো।”

“ইরা বেশ অবাক এবং খুশি হলো।ভাবলো,’আশিক জ্বীন ওর কথা শুনে ভ**য় পেয়েছে; তাই খাট নাড়ানো বন্ধ করে পালিয়েছে।’ভেবে ইরা বিজয়ের হাসি দিয়ে খাটের নিচে তাকাতেই, জোরে এক চি**ৎকার দিলো।রাত বাজে ১১টা।ঢাকা-শহরে রাত ১১টা মানে সন্ধ্যা। এখনও আশেপাশের প্রতিবেশীরা ঘুমায় নি।ইরার গগন কাঁপানো চি**ৎকার শুনে,ইরার বাবার ঘুম ভেঙে গেলো।এদিকে পাশের ইউনিটের প্রতিবেশী দরজা খুলে দেখলো, ইরাদের ঘরের দরজা খোলা।এদিকে ইয়াশ খাটের নিচ থেকে বের হয়ে ইরার মুখ চেপে ধরে বললো,’সরি জান্টু পাখি,ঘন্টু পাখি আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতোটা ভ**য় পাবে।”

“এতক্ষণে পাশের ইউনিট সহ,পাশের বিল্ডিং এর
প্রতিবেশীরাও ইরাদের বাসায় উপস্থিত হলো।তারা ভেবেছে, ‘ইরাদের বাসায় চোর ঢুকেছে।তাই সবাই ছু**রি,লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে দৌড়ে এলো।কারণ, অনেকদিন যাবৎ এই মহল্লায় চুরি হচ্ছে।তাই তারা ভাবলো, ইরা চোর দেখে ভ**য় পেয়ে চি**ৎকার করেছে।ইরার বাবা সহ আশেপাশের সবাই ইরার রুমে প্রবেশ করতেই, তাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো।”

“ইরার পাশে ইয়াশ কে বসে থাকতে দেখে, তাদের মধ্যে কানাঘুঁষা শুরু হয়ে গেলো।সবাই কানাকানি করে বলছে,’ইরা ওর প্রেমিক কে বাসায় ডেকে এনে ফ**ষ্টি*ন**ষ্টি করছে।সবাই ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো।”

“এদিকে রাহাত আহমেদ তো ইরার রুমে ইয়াশ কে দেখে, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।লজ্জায় তার মাথা নিচু হয়ে গেলো।”

“অপরদিকে ইরার পাশের ইউনিটের এক আন্টির মা গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছে।তিনি ইরার সাথে ইয়াশ কে দেখে নাক ছিটকালেন।তারপর পান চিবিয়ে,পানের পিক রুমের এক কোণায় ফেলে সবার সামনে সুর টেনে বলে উঠলো,’ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাহ!এতোদিন কইতাম আমাগো গেরামের মাইয়ারা তলে তলে টেম্পু চালায়।আর ঢাকা-শহরে আইয়া দেহি, এইখানের মাইয়ারা অকালে পাইক্কা ঝুনা ঝুনা হইয়া গেছে। ঘরের মধ্যে নাগর লইয়া ল*টর*প*টর করে ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাহ!”

“ওই বৃদ্ধ মহিলার মেয়ে পাশ থেকে বললো,’শুধু তো এটা না মা।ঢাকা-শহরের বেশির ভাগ মেয়েরা বিয়ের আগে প্রেমিককে নিয়ে লিভ-ইন রিলেশনশিপ করে।এর থেকে গ্রামের মেয়েরা অনেক ভালো।”

“বৃদ্ধ মহিলা বললো,’লিব রিলাশন হেইডা আবার কি?”

“পাশে থেকে একজন যুবক বললো,’আরে দাদি লিব রিলাশন না;লিভ-ইন রিলেশনশিপ।মানে বিয়ের আগেই ছেলে-মেয়েরা একই ঘরে থেকে সংসার করে।”

“বৃদ্ধ মহিলা তো এটা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,’ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাহ!এই মাইয়াগো লেইগাই তো দুনিয়াডা ভাইস্যা গ্যালো।’আশে-পাশের মানুষ গুলো আরও অনেক ধরণের কটুকথা শোনালো।”

“ইয়াশ তো ভ্যাবলার মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর তো কারো কথাই মাথায় ঢুকছে না।ইরা এইসব সহ্য করতে না পেরে বললো,’চুপ করুন আপনারা।না জেনে-শুনে এই ধরনের বা**জে কথা বলবেন না।এই ছেলেটাকে আমি ডাকিনি।সে কিভাবে আমার বাসায় আসলো, আমি নিজেও জানি না।”

“একজন বললো,’ঢং করছো কেনো?অবশ্য ধরা পড়লে সবাই ঢং করে অস্বীকার করে।তুমিই তো তোমাদের সদর দরজা দিয়ে তোমার প্রেমিক কে ঢুকিয়েছো।ভাগ্যিস, দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছো।নইলে, আমরা তো এই কাহিনী জানতেই পারতাম না।”

“ইরা কটমটিয়ে বললো,’আমি যদি তাকে ঘরে ঢুকিয়ে থাকি,তাহলে কেনো আমি চিৎকার করবো?”

“ইরা প্রশ্ন ছুড়ে দিলে কেউ কিছু বলতে যাবে, তখনই ঠা**স করে ইরার গালে থা**প্পর পড়লো।ইরা গালে হাত দিয়ে সম্মুখে তাকিয়ে দেখলো, রাহাত আহমেদ র**ক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে।”

“রাহাত আহমেদ তীব্র কন্ঠে বললেন,’আমার এতোদিনের অর্জিত মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলি।আরে দু**শ্চ*রিত্র মেয়ে, তোর জন্যই তো আমি এতোদিন বিয়ে করি নি।ভেবেছি, ঘরে সৎ মা আসলে তোর কষ্ট হবে।কিন্তুু তুই কি করলি?ঘরের মধ্যে ছেলে এনে…ছিঃ ছিঃ ছিহ!তোকে তো জন্ম দেওয়ার আগেই মেরে ফেলা উচিত ছিলো। তাহলে অন্তত এমন একটা জ**ঘন্য পরিস্থিতির স্বীকার হতে হতো না।”

“বিনা অপরাধে একটা মেয়ে যখন তারই আপন মানুষের কাছ থেকে এতোটা নি**কৃষ্ট কথা শোনে;তখন সেই মেয়ের মনের অবস্থাটা কি হয়, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।ইরা তো আজ পর্যন্ত একটা প্রেম ও করেনি।অথচ আজ ওকে এতোটা খারাপ পরিস্থিতির স্বীকার হতে হলো।আ**ত্ম*হ**ত্যা মহাপাপ না হলে, ইরা অনেক আগেই সেটা করে ফেলতো।ইরার এখন ইচ্ছে করছে, ইয়াশ ক্যাবলা কান্ত কে ক**ষিয়ে ১০টা থা**প্পর দিতে।কিন্তুু, এতো মানুষের মধ্যে সেটা সম্ভব নয়।”

“এরই মধ্যে মহল্লার এক স্থানীয় ব্যক্তি সিফাত সাহেব বলে উঠলেন,’রাহাত ভাই আগামীকাল হয়তো এইসব কাহিনী পুরো মহল্লায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়বে।জানেন তো,বাঙালিরা ‘ক’ বললে ‘কলিকাতা’ বুঝে নেয়।আর আমরা এই মহল্লার বদনাম কখনোই চাই না।তাই বলছিলাম,ছেলে-মেয়ে যেহেতু একটা দু**র্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।ওদের কে গা**লা*গা**লি করলে তো আর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবেনা।আমি কাজী ডাকার ব্যবস্থা করছি।আপনি এই ছেলের বাসায় ফোন করে তাদের কে এখানে আসতে বলুন।”

“রাহাত আহমেদ শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,’আপনারা যা ভালো বোঝেন করেন।আমি এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে ইচ্ছুক নই।”

” সিফাত সাহেব তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ২জন যুবক কে বললেন,’যা কাজীকে ডেকে নিয়ে আয়।এতো রাতে যদি সে আসতে না চায়।তাহলে আমার কথা বলবি।’দুজন যুবক মাথা নাড়িয়ে কাজীকে ডাকতে চলে গেলো।তারপর সিফাত সাহেব ইয়াশ কে বললেন,’তোমার বাবার ফোন নাম্বার দাও আমি কথা বলবো।”

“ইয়াশ তো ভ**য়ে কাচুমাচু হয়ে গেলো।এইমুহূর্তে ও চাইলে ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।বা চাইলে এই জায়গায় উপস্থিত সবার স্মৃতি মুছে দিতে পারে।কিন্তুু পরক্ষণেই ভাবলো,’এটাই সুবর্ণ সুযোগ।এটা মিস করলে যদি ইরা কে না পাই,তাহলে ভ্যাম্পায়ার জীবনটাই বৃথা যাবে।আর ইরা যেই রাগী মেয়ে,আমাকে তো পাত্তাই দেয় না।দেখা যাবে ওর পেছনে ঘুরতে ঘুরতে একসময় নিজেই পা**গল হয়ে যাবো।এর থেকে ভালো সুযোগের সৎ ব্যবহার করি।’ভেবেই ইয়াশ সিফাত সাহেব কে ইমতিয়াজ আহমেদের ফোন নাম্বার দিলো।সিফাত সাহেব ইমতিয়াজ আহমেদ কে ফোন দিয়ে সবকিছু বললো।”

“ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম ঘুমানোর জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছিলেন,এমন সময় ফোন আসায় ইমতিয়াজ আহমেদ ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিলেন।তারা দুজনেই ইয়াশের ঘটনা শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।শায়লা বেগম তো কান্না জুড়ে দিলো,কপালে হাত দিয়ে বললো,’এই মানব জাতির মধ্যে কি মায়াজাল আছে?যে ভ্যাম্পায়ার গুলো ওদের জন্য মরিয়া হয়ে যায়?আমার সহজ-সরল ছেলে ইয়াশ এমন কাজ কিভাবে করলো?”

“ইমতিয়াজ আহমেদ শায়লা বেগম কে বললেন,’তুমি দেখি মানবজাতির সাথে সাথে থাকতে থাকতে, তাদের মতো ছিচকাঁদুনে হয়ে গেছো।কান্না থামাও,আমি দেখছি কি করা যায়।’বলেই,ইরাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করলো।”

“ইমতিয়াজ আহমেদ ইরার রুমে ঢুকতেই দেখলেন,কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর জন্য বসে আছেন এবং তার মুখোমুখি বসে আছে ইয়াশ এবং ইরা।ইরা কান্না করতে করতে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে।মনে হয় এখুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।”

“সবাই ইমতিয়াজ আহমেদ কে দেখে বুঝে গেলো সে ইয়াশের বাবা।ইমতিয়াজ আহমেদ ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললেন,’ইয়াশ তোমার সম্পর্কে যেটা শুনেছি সেটা কি সত্যি?”

“ইয়াশ ভ**য় কে জয় করে নিচের দিকে তাকিয়ে ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়লো।ইমতিয়াজ আহমেদ ইয়াশের সম্মতি পেয়ে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,’তোমরা রাজি থাকলে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

“ইমতিয়াজ আহমেদের সম্মতি পেয়ে সবাই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠলো।কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।কাজী ইয়াশ কে কবুল বলতে বললে,’ইয়াশও নিহানের মতো হাসি মুখে ৮-১০বার কবুল বলে দেয়।কারণ, ইয়াশেরও নিহানের মতো এতোবার কবুল বলার ইচ্ছে ছিলো।আজ সে ভীষণ খুশি।এদিকে ইরা কে কবুল বলতে বললে, ইরা জলে টইটম্বুর চোখ নিয়ে ওর বাবার দিকে তাকালো।”

“রাহাত আহমেদ সেটা লক্ষ্য করে বললেন,’ভুলের মাশুল দাও।তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।”

“ইরা মনে খুব কষ্ট পেলো।কিন্তুু ওর এই কষ্টে কারো কিছু আসে-যায় না।বরং এইমুহূর্তে বিয়ে না করলে সবাই আরও অপমান করবে।ও কখনোও চায় না ওর জন্য ওর বাবা আর অপমানিত হোক।তাই নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে একাধারে ৩বার কবুল বললো।ইয়াশ এবং ইরার বিয়ে অবশেষে রাত ১টায় সম্পন্ন হলো।আশেপাশের সবাই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠলো।তারপর সবাই আরও কিছু কথাবার্তা বলে যে যার বাসায় চলে গেলো।”

“ইরার অনেকক্ষণ যাবৎ মাথা ঝিমঝিম করছিলো।তাই মাথায় পানি দেওয়ার জন্য যেই ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো,তখনই ইরা সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলো।ইয়াশ ইরাকে ধরে বসলো।ইমতিয়াজ আহমেদ বললেন, ‘অতিরিক্ত চিন্তায় হয়তো ওর প্যানিক অ্যা**টাক হয়েছে।চিন্তা করো না;ভালো মতো ঘুম হলেই ঠিক হয়ে যাবে।’বলেই তিনি রাহাত আহমেদ কে বললেন,’আপনি অনুমতি দিলে আজকেই বৌমাকে আমাদের ঘরে নিয়ে যেতে চাই।’
রাহাত আহমেদ ম্লান হেসে বললেন,’আপনার যা ইচ্ছে হয় করতে পারেন।তবে ওকে বলে দিবেন;আজ থেকে এই বাড়ির দরজা ওর জন্য চিরকালের জন্য বন্ধ থাকবে।”

” ইমতিয়াজ আহমেদ বেশ বুঝতে পারলেন,’তার মেয়ের এহেন কান্ডে রাহাত আহমেদ কতটা কষ্ট পেয়েছেন।প্রতিটি বাবা-মা সন্তান কে কষ্ট করে লালন-পালন করেন, যাতে বড় হয়ে তারা বাবা-মায়ের কষ্টের মর্যাদা রাখে।কিন্তুু কিছু ছেলে-মেয়েরা বাবা-মায়ের এই আবেগ কে শস্তা আবেগ মনে করে ভুল পথে পা বাড়ায়।’ভেবেই ইমতিয়াজ আহমেদ রাহাত আহমেদ কে বললেন,’আমি বুঝতে পারছি আপনি কতো টা কষ্ট পেয়েছেন।তবে আপনি চিন্তা করবেন না।আমার ছেলের কোনো আজে-বাজে নেশা নেই।ও আপনার মেয়েকে খুব সুখে রাখবে।আপনার মেয়ে আমারও মেয়ে হয়ে থাকবে।’রাহাত আহমেদ ইমতিয়াজ আহমেদের কথা শুনে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়লেন।”

———–
“ঘড়ির কাটায় রাত ৩টা বাজে।রেহান খান দুপুরে নিহানের হু**মকি শুনে, বেশ ভ**য় পেয়ে যায়।সেই সাথে নিহানের সেই র**ক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থাকা তার বারবার মনে পড়ছে।তাই রেহান বাসায় এসে তার বন্ধু আরিফ কে ফোন দিয়ে আজ রাতটা তার বাসায় কাটাতে চায়।রেহানের বন্ধু অফিসের কাজের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে।সে রেহান কে দারোয়ানের কাছ থেকে ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে গিয়ে লক খুলে থাকতে বলে।বন্ধুর বলা কথামতো, রেহান বিকালে ওই বাসায় চলে যায়।রাত ৩টা বেজে গেছে,তবুও রেহানের চোখে ঘুম নেই।বিছানায় শুয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রেহান ভাবলো,’নিহান আর নীলাদ্রি যদি প্রিন্সিপাল কে সব বলে দেয়,তাহলে আমার চাকরি নিয়ে টান পড়বে।এর থেকে ভালো আগামীকাল কলেজে গিয়ে, ট্রান্সফার লেটার দিয়ে অন্য কলেজে চলে যাবো।”

“রেহানের ভাবনার মাঝেই পাশের রুম থেকে একটা বাচ্চা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসলো।

“”Twinkle twinkle little star.
How I wonder what you are.
Up above the world so high.
Like a diamond in the sky.
Twinkle twinkle little star.
How I wonder what you are.”

বাচ্চা মেয়েটির ভয়ং**কর কন্ঠে কবিতা শুনে, রেহানের পুরো শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“বাচ্চা মেয়েটির ভ**য়ং**কর কন্ঠে কবিতা শুনে রেহানের পুরো শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।”

“রেহান বিছানা থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে রুমের দরজা খুলে, পাশের রুমের দরজার কাছে গিয়ে কান ঠেকালো।শুনলো, এখনও বাচ্চা মেয়েটি কবিতার সেই লাইনগুলো বারবার বলছে।রেহান বেশ অবাক হলো।ভাবলো,’আরিফ তো বলেছিলো ওর বাসায় কেউ নেই।তাহলে এই বাচ্চা মেয়ে কোথা থেকে আসলো?আর মেয়েটির কন্ঠ এতো ভ**য়ং**কর কেনো?’ভেবেই রেহান দরজা খুলতে চাইলো।কিন্তুু দেখলো, দরজা ভেতর থেকে লক করা।রেহান আবারও কান ঠেকালো।কিন্তুু এইবার কিছু শুনতে পেলো না।রেহান সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই,সেই বাচ্চা মেয়েটির কান্নার আওয়াজ পেলো।ধীরে ধীরে আওয়াজ টি আরও বাড়তে লাগলো।শুনশান বাড়িটিতে বাচ্চা মেয়েটির কান্নার আওয়াজ যেনো আকাশে থাকা কালো মেঘের ন্যায় ছড়িয়ে পড়লো।ঘরের দেয়াল গুলোও কাঁপতে থাকলো।প্রায় ৪-৫মিনিট যাবৎ এভাবেই কাঁপতে থাকলো।রেহান প্রথমে এটাকে ভূমিকম্প ভাবলেও পরে ভাবলো,’বাংলাদেশে তো এতক্ষণ ভূমিকম্প হলে সবাই মাটির নিচে তলিয়ে যেতো।”

“রেহান বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।সে তার রুমের দিকে পা বাড়াতেই,ক্যাচক্যাচ করে সেই রুমের দরজাটি খুলে গেলো।দরজা খোলার শব্দ পেয়ে রেহান আরও ভ**য় পেয়ে গেলো।তবে মনের মধ্যে কৌতূহল জাগলো,রুমের ভেতরে থাকা বাচ্চাটিকে দেখার জন্য।রেহান শুকনো ঢোক গিলে রুমের মধ্যে ঢুকতেই দেখলো, একটা সাদা ফ্রক পড়া মেয়েটি পেছন ফিরে পিয়ানো বাজাচ্ছে।পিয়ানোর আওয়াজটিও অন্যরকম।রেহান ধীরে ধীরে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো।রেহান মেয়েটার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে থাকতেই,মেয়েটি হঠাৎ করে তার দিকে তাকালো।রেহান মেয়েটির চেহারা দেখে সাথে সাথে চি**ৎ*কার দিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।রেহানের চি**ৎ*কারের শব্দ বাইরে গেলো না।হয়তো কেউ কন্ট্রোল করে রেখেছে।”

“রেহান ফ্লোর থেকে উঠে রুম থেকে বাইরে বের হতে নিলেই,দরজা ভেতর থেকে আটকে গেলো।রেহান এইমুহূর্তে পেছনে ফিরতে সাহস পেলো না।কারণ,সে বুঝতে পারছে পেছনে কেউ আছে।রেহান মেয়েটির দিকে তাকাতে ভ**য় পেলো।কারণ, মেয়েটির ফর্সা মুখে র**ক্তি*ম চোখ জোড়া থেকে অনর্গল সাদা পানীয় কিছু পড়ছে।কপালের রগ গুলো কালো হয়ে ফুলে আছে।ঠোঁট জোড়া কুচকুচে কালো।ঠোঁটজোড়ার দুই পাশ দিয়ে কালো পানীয় কিছু পড়ছে।মাথার এক পাশে চুল আছে,আরেক পাশে নেই।সবমিলিয়ে মেয়েটা কে দেখে রেহানের ভ**য়ে আত্মা শুকিয়ে গেলো।”

“রেহান কন্ঠে ভ**য় এবং আ**তং*ক নিয়ে বললো,’ককককে তুমি?ককককি চাও?”

“বাচ্চা মেয়েটি হঠাৎ করে রূপ বদলে দানবাকৃতির শরীর এবং মুখমন্ডল নেকড়ের বেশ ধারণ করে বললো,’তোর জান চাই।”

“রেহান পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে দেখলো, ভ**য়ং**কর একটি নেকড়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নেকড়েটির চোখজোড়া দিয়ে মনে হয় আগ্নেয়গিরির লাভা বের হচ্ছে।রেহান ভ**য় এবং বিস্ময়ের কন্ঠে বলে উঠলো,’কককককে তুমি?আআআমার সাথে এমন করছো কেনো?”

“রেহানের প্রশ্ন শুনে নেকড়েটি আবারও বাচ্চা মেয়েটির রূপ ধারণ করে ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বললো,’আমি তোর যম।আজকেই তোর শেষ দিন।’বলেই রেহানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।”

“রেহান বাচ্চা মেয়েটির সাথে পেরে উঠছিলো না।তাই টেবিলে থাকা ফুলদানি টি দিয়ে মেয়েটির মাথায় আ**ঘা*ত করতেই,মেয়েটি নিচে পড়ে গেলো।রেহান তড়িঘড়ি করে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলো।”

“বাচ্চা মেয়েটি সেটা দেখে বি**দ*ঘুটে হাসি দিয়ে রেহানের পেছনে দৌড়ালো,কখনোও সিড়ির কার্নিশ বেয়ে নাচতে নাচতে নিচে নামলো।রেহান সেদিকে না তাকিয়ে এক দৌড়ে স্টোর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।”

“বাচ্চা মেয়েটি ঝড়ের গতিতে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে রেহানের দিকে তাকিয়ে ভ**য়ং**কর ভাবে হাসতে থাকলো।মুহূর্তেই মেয়েটি রূপ বদলে একজন সুদর্শন পুরুষের রূপ ধারণ করলো।রেহান সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের কন্ঠে বলে উঠলো, ‘নিহান তুমি এখানে?”

“রেহানের প্রশ্ন শুনে নিহান গগন কাঁপিয়ে হাসি দিলো।সেই হাসি দেয়ালের সাথে প্রতিধ্বনি হয়ে আবার ফিরে আসছে।হাসি থামিয়ে নিহান রেহানের দিকে ওর র**ক্তি*ম চোখজোড়া নিক্ষেপ করে বললো,’হ্যা আমি এখানে।তুই আমার নীলাঞ্জনার দিকে কু**নজর দিয়েছিস।তাই আজ তোর প্রাণ বায়ুর এখানেই সমাপ্তি ঘটবে।”

“রেহান এতক্ষণে বুঝে গেছে, নিহান কোনো সাধারণ মানুষ না।রেহান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’তুমি কে?”

“নিহান বি**দ**ঘুটে হাসি দিয়ে বললো,’আমি ভ্যাম্পায়ার; ওরফে তোর যম।’বলেই রেহানের ওপর হা**ম*লে পড়লো।রেহান তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিহানকে আটকাতে চাইলো;কিন্তুু নিহানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না।যখন নিহান রেহানের ঘাড়ে কামড় দিতে যাবে;তখনই রেহান তার মাথা দিয়ে নিহানের মাথায় খুব জোরে আ**ঘা*ত করলো।নিহান একটু সরে যেতেই, রেহান উঠে সেই রুম থেকে বের হয়ে দরজা আটকে নিচে চলে গেলো।”

“রেহান নিচে গিয়ে মেইন দরজা খুলতেই দেখলো, সামনে দাড়িয়ে আছে বেশ বড় একটি বাদুড়।বাদুড়ের চোখ জোড়া থেকে আগ্নেয়গিরির লাভা বের হচ্ছে।রেহান মনে হয় সেই লাভায় পু**ড়ে ভ**স্ম হয়ে যেতে লাগলো।হঠাৎ পেছন থেকে আবারও পিয়ানো বাজানোর শব্দ কানে আসতেই, রেহান পেছনে ফিরে দেখলো, নিহান দাঁড়িয়ে আছে।রেহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’তততুমি এখানে কিভাবে এলে?তোমার রুমের দরজা তো বন্ধ করে এসেছিলাম?”

“নিহান আরও ভ**য়ং**কর ভাবে হাসতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বললো,’কি বলতো আমি না আমার শিকার নিয়ে খেলতে খুব ভালোবাসি।কি ভেবেছিস,তুই মাথা দিয়ে ধা**ক্কা দিবি আর আমি ব্যথা পেয়ে সরে যাবো?হাহাহাহোহো ওটা তো একটু অভিনয় করলাম।যাইহোক তোর মতো দূষিত মানুষের র**ক্ত খেয়ে রুচি নষ্ট করার ইচ্ছে আমার নেই।আমি আবার বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।তোকে খাবে আমার ভাই এহতিশাম।’বলেই বাদুড় টির দিকে তাকিয়ে বললো,’এহতিশাম আজ তোর জন্য স্পেশাল ডিনারের আয়োজন করেছি।খেয়ে অবশ্যই রিভিউ দিবি।”

“নিহান বলতেই এহতিশাম কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাদুড় থেকে মানুষের রূপ ধারণ করে, রেহানের দিকে তাকিয়ে তাকে লা**থি মে**রে ফ্লোরে ফেলে দিলো।তারপর বাসার ভেতরে এসে হাত দিয়ে ইশারা করলো,আর অটোমেটিক দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।”

“রেহান ফ্লোর ঘেঁষে উঠতে চাইলো,আর হাত জোর করে বলতে থাকলো,’আমার ভুল হয়েছে।আমি এইরকম কাজ আর কখনোও করবো না।আমাকে ক্ষমা করে দাও।তোমরা তো আমার স্টুডেন্ট।একদিন হলেও তোমাদের পড়িয়েছি।তাই শিক্ষক হয়ে তোমাদের কাছে রিকোয়েস্ট করছি;আমাকে ছেড়ে দাও।দরকার হলে আমি এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো।আর কখনোও বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবো না।”

“নিহান পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে বললো,’বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,’দুর্জন বিদ্যান হইলেও পরিত্যাজ্য।’নিশ্চয়ই এটা তুই পড়েছিস।তোর মতো নি**কৃ*ষ্ট মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।আজকেই হবে তোর শেষদিন।’বলেই
রেহানের বুকে নিহান সজোরে কয়েকটি লা**থি মে**রে এহতিশাম কে ইশারা করে বললো,’ওর এমন অবস্থা করবি,যেনো এখানে ওর চিহ্ন ও না থাকে।ও যেনো সারাজীবন নিখোঁজ হয়ে থাকে।’বলেই সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো।”

“এহতিশাম রেহানের দিকে তাকিয়ে বি**দ*ঘুটে হাসি দিয়ে বললো,’খুব বড় ভুল করে ফেলেছিস তুই।তাই তোর জীবন দিয়ে এই ভুলের মাশুল দিতে হবে।যদিও আমি অনেকদিন যাবৎ এমন ফ্রেশ র**ক্ত খুজছিলাম।জানিস,প্রতিদিন রাতের বেলা শিকার খুজতে বের হলে সব হেরোইন,ফেনসিডিল খোর সামনে পাই।এগুলোর দূষিত র**ক্ত খেতে খেতে আমার রুচিটাই নষ্ট হয়ে গেছে।কিন্তুু আমি জানি, তোর এইরকম বাজে নেশা নেই।তোর র**ক্ত টা একদম ফ্রেশ।তাই অনেকদিন পর খুব মজা করে খেতে পারবো।’বলেই এহতিশাম আসল ভ্যাম্পায়ারের রূপ ধারণ করলো।চোখের সামনে এমন দানবাকৃতির ভ**য়ং**কর ভ্যাম্পায়ার দেখে রেহানের চোখের মণি যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো।এহতিশাম রেহানের ওপর হা**ম*লে পড়লো।মুহূর্তের মধ্যেই রেহানের শরীরের সব র**ক্ত শুষে নিলো।তারপর অন্যান্য নেকড়ে ভ্যাম্পায়ারদের ডেকে, রেহানের দেহ খেয়ে ফেলতে বললো।ক্ষুধার্ত নেকড়ের দল রেহানের এমন তরতাজা প্রাণহীন দেহ দেখে খুশিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো।পৃথিবী থেকে ভ**য়ং**কর ভাবে শেষ বিদায় নিলো রেহান নামক মানুষটি।”

—————–
“ঘুমন্ত এক রমনীর পাশে বসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহান।নীলাদ্রির ঘন কালো লম্বা চুল গুলো বালিশের এক পাশে অবহেলায় পড়ে আছে।নিহান ওর চুলের কাছে গিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলো।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়া নারীটিকে এইমুহূর্তে নিহানের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।নিহান এখন নিজের কন্ট্রোলে নেই।ধীরে ধীরে ওর ওষ্ঠদ্বয় নীলাদ্রির ঘাড়ের কাছে চলে গেলো।ঘাড়ের কাছে যেতেই নিহানের খুব র**ক্তে*র তৃষ্ণা পেলো।নিহান চাইলেই নীলাদ্রির ঘাড় থেকে র**ক্ত চুষতে পারে এবং ওর যেনো ক্ষতি না হয় তার জন্য মেডিসিনও দিতে পারে।কিন্তুু ওই যে কিছু তিক্ত বিধিনিষেধ অতিক্রম করে, নীলাদ্রির শরীর থেকে র**ক্ত শুষে নেওয়া নিহানের পক্ষে সম্ভব নয়।নিহান দ্রুত নীলাদ্রির কাছ থেকে সরে গেলো।বেলকনিতে গিয়ে দেখলো, একটি কুকুর রাস্তার এক সাইডে হাটছে।নিহান মুহূর্তের মধ্যেই বাদুড়ের রূপে ঝড়ের গতিতে কুকুরটির কাছে গিয়ে দেখলো,কুকুটির শরীর বেশ চকচকে।হয়তো কারো পোষা কুকুর।নিহান মুহূর্তেই কুকুরটির ওপর হা**ম*লে পড়লো।আজ রাতে কুকুরের র**ক্ত খেয়ে নিহান তার ক্ষুধা নিবারণ করলো।”

“কিছুক্ষণ পর নিহান আবারও নীলাদ্রির কাছে ফিরে এলো।নীলাদ্রি এখনও নিহানের ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করার কারণে, গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।নিহান বাঁকা হেসে নীলাদ্রির গলায় হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,’সবসময় আমার থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকো।কিন্তুু এখন তুমি কিছুই করতে পারছোনা।কারণ,তোমার সবকিছুই এখন আমার কন্ট্রোলে নীলাঞ্জনা সুইটহার্ট।’বলেই নীলাদ্রির গলায় ওর ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া ছোঁয়ালো।ধীরে ধীরে নিহান নীলাদ্রির অজান্তেই ওর পুরো শরীরে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলো।”

“নীলাদ্রির ঘুম ভাঙলো সকাল ৯টা বাজে।পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো, নিহান ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।নিহানের ঠান্ডা শরীর নিয়ে এভাবে জড়িয়ে ধরায়, নীলাদ্রির শরীরে কাঁপুনি শুরু হলো।ওর নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।নীলাদ্রি মোচড়ামুচড়ি করতে থাকলো।এতে নিহানের ঘুম ভেঙে গেলো।নিহান ঘুমঘুম চোখে বললো,’উমম সুইটহার্ট সারারাত তোমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি।এখন একটু আরাম করে ঘুমাতে দাও।২৪ঘন্টার মধ্যে ২ঘন্টা ঘুমাতেই হবে; প্লিজ এমন করো না।’বলে নীলাদ্রি কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।”

“নীলাদ্রি তো পুরো হতবিহ্বল হয়ে গেলো।ঘনঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তুু পারছেনা,ওর শরীর মনে হয় ক্রমাগত অসাড় হয়ে গেলো।তাই ‘উমম’ শব্দ করতে থাকলো।এভাবে শব্দ করায় নিহানের ঘুম পুরোপুরি ভেঙে গেলো।নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো, ওর কষ্ট হচ্ছে।তাই নিহান নীলাদ্রি কে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো।”

“নিহান ছেড়ে দেওয়ার পর নীলাদ্রির মনে হলো, বাঘের খাঁচা থেকে মাত্র জান নিয়ে ছাড়া পেয়েছে।ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,’আমার শরীর টাকে কি আলুর বস্তা পেয়েছেন?যেভাবে শক্ত করে ধরেছেন মনে হয়,একটু হলে চিৎপটাং হয়ে যেতাম।”

“নিহান আড়মোড়া ভে**ঙে মুচকি হেসে নীলাদ্রির ঘাড়ে নাক ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,’রাতে যেভাবে শাড়ির আঁচল এলোমেলো করে ঘুমিয়েছিলে, তাতে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা দায় হয়ে পড়েছিলো।তাই সারা রাত তোমায় মন ভরে আদর করে কিছুক্ষণ আগে ঘুমালাম।আর তুমি মোটেও আলুর বস্তা না।তুমি তো আমার নরম তুলতুলে মিষ্টি একটা বউ।”

“নিহানের আদর করার কথা শুনে, নীলাদ্রি খুব ভ**য় পেয়ে গেলো।নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখলো শাড়ি আর শাড়ির জায়গায় নাই;ফ্লোরে পড়ে আছে।নিজেকে এমন অবস্থায় দেখে নীলাদ্রির মনে হয় মাথা ঘুরে গেলো।ফ্লোর থেকে শাড়ি উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে বললো,’অ**সভ্য,ই**তর,নোং**রা লোক; আপনাকে বলেছিলাম আমি অসুস্থ আর আপনি কি না…

“নীলাদ্রির কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে, নিহান ওর ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরলো।৩মিনিট পর নীলাদ্রি কে ছেড়ে বললো,’নেক্সট টাইম এভাবে ঠোঁট নেড়ে কথা বলবে না।তাহলে আমার নেশা ধরে যায়।”

“নীলাদ্রি এক ঝটকায় নিহানের থেকে সরে গিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,’চুমুখোর লু**চু মার্কা পুরুষ;সারাদিন শুধু আমার সাথে চুম্মাচুম্মি আর চিপকে থাকার ধান্দা করেন।আজ আমার যেই ক্ষতি টা করলেন;তার জন্য আপনাকে কখনো ক্ষমা করবো না।আমি আজকেই এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।’বলেই নীলাদ্রি বিছানা থেকে নামতে নিলে,নিহান এক ঝটকায় নীলাদ্রির হাত টান দিয়ে ওর বুকের ওপর ফেলে নীলাদ্রির চিবুকে হাত দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বলে উঠলো,’তুমি আমার বউ।তোমার সাথে আমি চিপকাচিপকি করবো না তো অন্য কেউ করবে?হাহ….এইসব ননসেন্স টাইপের কথা কিভাবে বলো আমার মাথায় আসে না।আর শোনো, গতকাল রাতে তোমাকে এইভাবে এলোমেলো ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে
আমি ঠিক থাকতে পারিনি।তাই একটু-আকটু মজা করেছি,চুমু দিয়েছি।স্বামী হিসেবে এতটুকু করতেই পারি।আর তোমার সাথে এখনোও ফুলসজ্জা করিনি।তুমি সুস্থ হলে, তোমার সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলে তারপর করবো।ততদিন আমার এই চুমুর টর্চার তোমাকে সহ্য করতে হবে।”

“নীলাদ্রি নিহানের বুক থেকে জোরাজোরি করে উঠে কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,’আপনি আমার কোথায় কোথায় চুমু দিয়েছেন?”

“হায় সুইটহার্ট !এখন তোমাকে ডিটেইলসে বলতে হবে?ওকে বলছি,প্রথমে তোমার চুলে,তারপর ঘাড়ে,গলায়,পুরো মুখে তারপর গলার একটু নিচে, তারপর…..

” আর কিছু বলতে দিলো না নীলাদ্রি।দুই হাত দিয়ে নিহানের মুখ চেপে ধরে বললো,’আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আপনি আমার সম্ভ্রমহানী করেছেন।আমি এর প্রতিশোধ নেবোই নেবো।নইলে আমার নাম পাল্টে রাখবো।’বলেই নীলাদ্রি ওয়াশরুমে চলে গেলো।নিহান সেদিকে তাকিয়ে হোহো করে হেসে উঠলো।”

————–
“সকাল সাড়ে ১০টায় ঘুম ভাঙলো ইরার।ঘুম ভাঙতেই দেখলো, ইরার মাথা শক্ত কিছুতে শুয়ে আছে।ইরা মাথা উচু করে দেখলো, ইয়াশ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে;আর ইরার মাথা ইয়াশের শক্ত বুকের ওপর।ইয়াশ কে দেখেই ইরার গতকাল রাতের কথা সব মনে পড়ে গেলো।মুহূর্তেই ইরার মন পাহাড় সমান ভারি হয়ে গেলো।ইরার একে একে মনে পড়তে লাগলো রাতে ইরার সাথে ইয়াশ কে দেখে প্রতিবেশীদের সেই নি**কৃষ্ট কটুক্তি।রাহাত আহমেদের ঘৃ**ণার দৃষ্টি।প্রতিটি কথা মনে করে, ইরা ইয়াশের বুকে মাথা রেখেই ডুকরে কেদে উঠলো।ইরার চোখের পানিতে ইয়াশের বুক ভিজে গেলো।”

“বুকের ওপর গরম তরলের অনুভব হতেই ইয়াশের ঘুম ভেঙে গেলো।ইয়াশ তাকিয়ে দেখলো ইরা হেঁচকি তুলে কাঁদছে।ইয়াশ বুঝতে পারলো,গতকাল রাতের কথা মনে করে ইরা কাদছে।ইয়াশ ইরাকে কি বলে স্বান্তনা দেবে ভেবে পেলো না।তাই ইরার পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে স্বান্তনার স্বরে বললো,’সোনাপাখি মন খারাপ করো না।যা হয়েছে আমাদের ভালোর জন্যই হয়েছে।নইলে তোমাকে পেতে আমার সারাজীবন অপেক্ষা করতে হতো।আর তোমার যেই তেজ।দেখা যেতো তুমি আমাকে রিজেক্ট করতে করতে পা**গলা গারদে পাঠিয়ে দিতে।যাইহোক,তোমাকে পেয়ে আমি অনেক হ্যাপি সোনাপাখি।তুমি চিন্তা করো না,আমি তোমার পা হতে মাথা পর্যন্ত সব ধরনের খেয়াল রাখবো।’বলে ইরার মাথায় চুমু দিলো।”

“ইরা এতক্ষণ গতকাল রাতের কথা মনে করে কান্না করার কারণে ভুলেই গেছিলো,যে ও ইয়াশের বুকে আছে।ইয়াশ ইরার মাথায় চুমু দিতেই ইরা মনে হয় শকড খেলো।তড়িৎ গতিতে ইয়াশের বুক থেকে মাথা সরিয়ে উঠে বসে বললো,’এই মটু ভুলেও আমায় ছোঁয়ার চেষ্টা করবিনা।তোর সাহস হলো কি করে আমার মাথায় চুৃুমু দেওয়ার?”

“ইরার এহেন কথায় ইয়াশ শোয়া থেকে উঠে বসে মাথায় হাত দিয়ে বললো,’ছিঃ ছিঃ ছিহ!স্বামীকে এভাবে কেউ তুই করে বলে?আগে যা বলার বলতে, এখন তো আমি তোমার স্বামী।এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবে বুঝেছো সোনা।আর গতকাল রাতে তুৃমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে,তাই ওই অবস্থায় আমার শশুর বাবার অনুমতি নিয়ে তোমাকে পার্মানেন্টলি এই বাসায় নিয়ে এসেছি।”

“তুৃমি তো অসুস্থ ছিলে তাই বাসর করতে পারিনি।আজ রাতে রুম টাকে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে মজা করে বাসর করবো কেমন সোনা?’ইরার গালে এক হাত রেখে কথাগুলো বললো ইয়াশ।”

“ইরা এক ঝটকায় ইয়াশের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,’আপনার মতো মটুর সাথে আমি করবো বাসর?হাহ..সেটা কল্পনাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়।আমার পছন্দ স্লিম বডির ছেলেদের।আপনার মতো এমন ফুলকপি কে না।”

“ইরার মুখে বার-বার ‘মটু’ শব্দটি শুনে ইয়াশের বেশ খারাপ লাগলো।মন খারাপ করে বললো,’তুমি আমায় মটু বললে আমার খুব খারাপ লাগে।এভাবে কারো স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যঙ্গ করে কথা বলা উচিত নয়।সৃষ্টিকর্তা চাইলে তোমারও এমন স্বাস্থ্য হতো।”

“ইরা মুখ ভেং**চি কে**টে ঝগড়ুটে স্বরে বললো,’জ্বি না।আমি আপনার মতো সারাদিন এমন খাই খাই করি না।আপনি তো সময় পেলেই খাওয়া শুরু করেন।অনেকে আবার রোগ-ব্যধি বা বংশগত কারণে মোটা হয়ে যায়।কিন্তুু আপনি খাওয়ার কারণে মোটা হন।তাই আপনাকে আমি পছন্দ করি না।আপনি এইমুহূর্তে এই রুম থেকে ফুটেন।”

“ইরার এলোমেলো চুল,চোখের কাজল লেপ্টে চোখের নিচ পুরো কালো হয়ে গেছে।এই মুহূর্তে ইরাকে দেখে ইয়াশের কালো পেত্নীর কথা মনে পড়ে গেলো।তার ওপর ইরা যেভাবে গমগম করে কথা বলছে, এতে ইরাকে সত্যিকারের পেত্নীর মতো লাগছে।ইয়াশ মিটিমিটি হেসে ইরাকে বললো,’সোনাপাখি তুমি জানো এইমুহূর্তে তোমাকে দেখতে কেমন লাগছে?”

“ইরা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,’আমি জানি আমাকে সুন্দর লাগছে।সেটা আবার নতুন করে বলতে হবে না।”

“ইয়াশ দুষ্টু হেসে বললো,’হুহহ..মোটেই না।তোমাকে এই মুহূর্তে তাল গাছে থাকা কালো পেত্নী বুড়ির মতো লাগছে।”

“ইয়াশের কথা শুনে ইরা রেগে গিয়ে,’ কিইইই?’বলেই ইয়াশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।”

#চলবে…

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-৯+১০

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“ইরা কে কাশতে দেখে,ইয়াশ ওর পিঠে হাত বুলাতে লাগলো।ইয়াশের স্পর্শ পেয়ে;ইরা বি**স্ফো**রিত নয়নে ইয়াশের দিকে তাকালো।”

“ইরার এভাবে তাকানো দেখে,ইয়াশ বললো,’কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার? বুকে নাকি পিঠে?”

“ইরা রেগে গিয়ে এক ঝটকায় ইয়াশের হাত সরিয়ে বললো,’হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মাই বডি?”

“ইরার এহেন কথায় ইয়াশ তো পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,’আমি আবার কি করলাম?তোমার তো কাশতে কাশতে অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।তাই তোমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম,যাতে তোমার কষ্ট না হয়।আজকাল দেখি মানুষের উপকার করলেও ধমক খেতে হয়।সত্যি মানবজাতি বড়ই অদ্ভুত প্রাণী।”

“ইরা রেগে গিয়ে বললো,’এই মটু একদম আমাকে নিয়ে টিটকারি করবেন না।তাহলে আপনার ঠ্যাং ভে**ঙে ল্যাংড়া করে দেবো।”

“এই ঝগড়ুটে টকটকি এতো ঝগড়া কার কাছ থেকে শিখেছো?তোমার মনে কি ঝগড়ার ডিকশনারি আছে নাকি?সবসময় দেখি ওঁৎ পেতে থাকো,কখন আমি কিছু বলবো;আর তুমি টেপ রেকর্ডার চালিয়ে দেবে।যাইহোক, আমার গানের সুরে কবিতা টা কেমন লাগলো বললেনা তো?”

“একেই তো ইরা ইয়াশের গান শুনে পানি খেতে গিয়ে বিষম খেলো, তার ওপর এখন আবার গা জ্বালানোর মতো প্রশ্ন করছে।’ইরা এইবার তেঁতে উঠে ইয়াশের কাছে এগিয়ে বললো,’আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তাই না?দাঁড়ান খাওয়াচ্ছি আপনাকে হাবুডুবু।’বলেই ইয়াশের পায়ের কাছে গিয়ে জোর করে জুতা খুলতে লাগলো।”

“এদিকে পায়ে ইরার হাতের স্পর্শ পেয়ে,ইয়াশের সুড়সুড়ি লাগলো।এমন হওয়াতে ইয়াশ তো হেসেই কু**টি*কু**টি হয়ে যাচ্ছে।ইরা সেটা দেখে আরও বেশি রেগে গেলো।এক পর্যায়ে ইরা ইয়াশের পা মচকে দিলো।”

“কিন্তুু অদ্ভুত ব্যাপার হলো,তখনও ইয়াশ কোনো রকম চি**ৎকার করলো না।উল্টো খিলখিল করে হাসতে লাগলো।ইরা তো এই কাহিনী দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।ইয়াশের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো,ইয়াশের পা ঠিক হয়ে গেছে।’এমনিতেই গতকাল রাত থেকে আশিক জ্বীনের চিন্তায়, ইরার অবস্থা নাজেহাল।তার ওপর চোখের সামনে ইয়াশের অদ্ভুত রকমের হাসি দেখে ইরা নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।”

“ইরাকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে ইয়াশ তো পুরো বোকা বনে গেলো।ইয়াশ ইরাকে ফ্লোর থেকে টেনে বেঞ্চে বসিয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বলতে থাকলো,’,কি হয়েছে জানু?এভাবে পড়ে গেলে কেনো?চোখ খোলো সোনাপাখি।’ইয়াশ এভাবে ইরাকে কিছুক্ষণ যাবৎ ডাকলো।কিন্তুু ইরার কোনো সাড়াশব্দ নেই।”

“হঠাৎ ক্লাসে এহতিশাম প্রবেশ করে ইরার এই অবস্থা দেখে,ইয়াশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’এই মেয়েটির কি হয়েছে?”

“ইয়াশ এহতিশাম কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।তারপর এহতিশাম কে সব বুঝিয়ে বললো।ইয়াশের কথা শুনে এহতিশাম গম্ভীর কন্ঠে বললো,’আরে মাথা মোটা মেয়েটা তোর পা অটোমেটিক ঠিক হওয়াতে ভ**য় পেয়ে গিয়েছে।তাই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।এখনোও ক্লাসে কেউ আসে নি।এক কাজ কর,ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে ওর মাথা থেকে কিছুক্ষণ আগের স্মৃতি মুছে দে।তারপর পানির ছিটা দে।তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।আর হ্যা, ওর সামনে নিজেকে এভাবে প্রকাশ করবিনা।তাহলে ভ্যাম্পায়ার কিং খুব রেগে যাবে।’বলেই এহতিশাম বেঞ্চে বসে আবারও বইয়ের মধ্যে মুখ গুজলো।”

“ইয়াশ আশেপাশে তাকিয়ে, ইরার মাথায় হাত দিয়ে ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে কিছুক্ষণ আগের স্মৃতি মুছে দিলো।তবে ওর গাওয়া ফানি গান টা মুছলো না।কারণ,এটা যে খুব যত্ন করে ইরার জন্য বানিয়েছে।তারপর ইরার চোখে-মুখে পানির ছিটা দিতেই, ইরা কয়েক সেকেন্ড পর পিটপিট করে তাকালো।কোনোরকমে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমার কি হয়েছিলো?”

“ইয়াশ কিছু বলতে যাবে; তখনই সব স্টুডেন্ট ক্লাসে ঢুকে গেলো।ইয়াশ আর কিছুই বলতে পারলো না।চুপচাপ ওর বেঞ্চে গিয়ে, ব্যাগ থেকে ডুমুর ফল বের করে খেতে লাগলো।কারণ, ইরার সাথে এতক্ষণ বিতর্ক করতে করতে ওর অনেক ক্ষুধা লেগে গেছে।”

————-
“এদিকে দুপুর ২টায় ঘুম ভাঙলো নীলাদ্রির।নীলাদ্রি ঘড়ি দেখে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকলো।কয়েক সেকেন্ড পর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো রুম পুরো ফাঁকা।নীলাদ্রি ভাবলো,’আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি,তবুও সাইকো লোকটা আমায় ডাকলো না কেনো?ওই অদ্ভুত লোকটা কোথায় গেলো?ইশশ! তার বাবা-মা আমাকে নিয়ে কি না কি ভাববে আল্লাহ জানে।অথচ আমাদের মধ্যে তো কিছুই হয়নি।”

“হঠাৎ নীলাদ্রি ওয়াশরুমের ভেতর থেকে পানির আওয়াজ পেলো।নীলাদ্রি বুঝতে পারলো, যে নিহান ভেতরে আছে।নীলাদ্রি বিছানা থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠতে যাবে, তখনই দেখলো নিহান একটা হালকা পিংক কালারের তাওয়াল জড়িয়ে বের হয়েছে।নীলাদ্রির প্রথমেই নজর গেলো নিহানের সিক্স প্যাক বডির ওপর।নীলাদ্রি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো।যেকোনো মেয়ে এইরকম বলিষ্ঠ শরীর দেখলে আকৃষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। নীলাদ্রি আনমনে এভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।তখনই নিহান চুটকি দিয়ে নীলাদ্রি কে বললো,’এভাবে লোভীদের মতো তাকিয়ে না থেকে বুকে আসো,চুমু দাও।গতকাল রাতে তোমাকে চুমু দিতে দিতে আমি বেশ হাপিয়ে গেছি।’তারপর ঢং করে একটু নিঃশ্বাস ছাড়লো নিহান।”

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রির গতকাল রাতের সব কথা মনে পড়তেই ও শিউরে উঠলো।মুখে রাগী ভাব নিয়ে বললো,’আপনি একজন অ**সভ্য, ছোট**লোক,কা**পু**রু**ষ….

“নিহান নীলাদ্রির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বাঁকা হেসে বললো,’কতবার বলেছি নতুন কিছু প্র্যাক্টিস করো।এগুলো শুনতে শুনতে একঘেয়ে হয়ে গেছি।ভাবছি, তোমাকে গা**লির পাশাপাশি চুমুর ট্রেনিং দিবো।গতকাল রাতে এতো আদর করলাম,কিন্তুু তোমার কোনো রেসপন্স পেলাম না।একটা মানুষ এতোটা ঘুম কাতুরে কিভাবে হয় আমার মাথায় আসে না।যাইহোক, ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে নিচে যাবে।বাবা-মা ওয়েট করছে।আর হিজাব পড়ে মুখ ঢেকে নিচে যাবে।”

“নীলাদ্রি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেনো?নিচে গেলে হিজাব পড়ে মুখ ঢেকে বের হতে হবে কেনো?”

‘কারণ, তোমার ওই গোলাপি ঠোঁট জোড়া এখন টকটকে লাল হয়ে আছে।বাবা-মায়ের নজরে পড়লে, তুমি নিজেই লজ্জা পাবে।’

“নীলাদ্রি একমুহূর্তও সেখানে না দাড়িয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো। আয়না থেকে কালো কাপড় টি সরিয়ে ঠোঁটের দিকে তাকাতেই হকচকিয়ে গেলো।ভাবলো,’একি হয়েছে আমার ঠোঁটের?ওই সাইকোটা মনে হয় কোনোদিনও মেয়েদের ঠোঁটে চুমু দেয় নি।তাইতো আমাকে জোর করে বিয়ে করে, বাসর না করতে পেরে সব ঝাল ঠোঁটের ওপর মিটিয়েছে।উফফ… এই সাইকো লোকটাকে ইচ্ছে করে দুই হাত দিয়ে উপরে উঠিয়ে আবার নিচে ফেলে দেই।কিন্তুু আমার মুখে জোর থাকলেও,শরীরে তো জোর নেই।’ভেবেই শাওয়ার ছেড়ে পুরো শরীর স্ক্রাবার দিয়ে ঘষতে লাগলো।”

“ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নীলাদ্রি তাওয়াল দিয়ে ওর চুলগুলো মুছতে মুছতে বেলকনি তে যেতে নিলে,নিহান ওর হাত টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে ওর ঘাড়ে অনবরত চুমু দিতে লাগলো।নীলাদ্রি তো পুরো শকড খেলো।নীলাদ্রি প্রথমে নিহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য অনেক মোচড়া-মুচড়ি করলো।কিন্তুু কাজ হলো না।নিহানের চুৃুমুর পরিমাণ আরও বেড়ে গেলো।এদিকে নীলাদ্রির খুব অস্বস্তি হতে লাগলো।তাই বুদ্ধি করে ওর হাতের কনুই দিয়ে নিহানের পেটে ঠেলা মারতেই নিহান একটু পিছিয়ে গেলো।”

“নীলাদ্রি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,’আপনি কি এইসব চুম্মাচুম্মি আর ঘেঁষাঘেঁষি ছাড়া কিছুই পড়তে পারেন না?গতকাল রাত থেকে আমাকে দেখলেই বারবার হা**মলে পড়েন কেনো?অসহ্য।”

“নিহান দুষ্টু হেসে নীলাদ্রির দিকে একটু ঝুকে বললো,’হুমম সুইটহার্ট আমি তো অনেক কিছুই পারি।কিন্তুু তুমি তো অসুস্থ তাই কিছু করতে পারছিনা।কিন্তুু তোমাকে দেখলেই আমি আর নিজের মধ্যে থাকিনা।কন্ট্রোললেস হয়ে যাই।এতে আমার কি দোষ বলো?তার ওপর কালো শাড়ি আর ব্লাউজ পরিহিত অর্ধনগ্ন পিঠে বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা দেখে খুব হিংসা হচ্ছিলো।তাই সেগুলো শুষে নিলাম।এখন আর একটুও পানি নেই।তুমি চাইলে চেক করতে পারো।আর তাছাড়া তুমি আমার বউ।তোমার সাথে সবকিছু করার অধিকার আমার আছে।এগুলো তো জাস্ট ট্রেইলার।মধুচন্দ্রিমা এখোনও বাকি আছে সুইটহার্ট।”

“নিহানের এহেন কথায়, নীলাদ্রির মুখের ভাষাগুলো মনে হয় বহুদূরে পালিয়ে গেলো।নীলাদ্রি কি বলবে এই লোককে?দেখা যাবে কোনো ভালো কথা বলতে গেলেও, আরেক টা ঠোঁট কা**টা টাইপ কথা বলে নীলাদ্রি কে লজ্জায় মেরে ফেলবে।এর থেকে নীরব থাকাই শ্রেয়।নীলাদ্রি নিহানের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো।”

“নিহান বুঝতে পেরেছে নীলাদ্রি লজ্জা পেয়েছে।তাই মুচকি হেসে গলার স্বর উঁচু করে বললো,’নীলাঞ্জনা আবার ওয়াশরুমে গেলে কেনো?ভুলেও কিন্তুু পিঠে পানি লাগাবে না।তাহলে আবারও একই কাজ হবে,এমনকি তার থেকেও ডাবল হবে।”

“নীলাদ্রি ওয়াশরুম থেকে নিহানের কথাগুলো শুনে, এক দৃষ্টিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো।মূলত নীলাদ্রি নিহানের এইসব কথার থেকে বাঁচতেই এখানে এসেছে।কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুমের দরজা খুলে দেখলো, নিহান রুমে নেই।এটা দেখে খুশি তে লাফিয়ে উঠলো নীলাদ্রি।সাথে সাথে রুমে ঢুকে বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো নিহান সেখানেও নেই।বুঝতে পারলো হয়তো নিচে গেছে।”

——————
“ইমতিয়াজ আহমেদ,শায়লা বেগম এবং নিহান ডাইনিং টেবিলে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।ইমতিয়াজ আহমেদ নিহান কে বললেন,’নীলাদ্রি কে সবকিছু বলেছো?”

“না বাবা এখনও হয়তো সেই সময় টা আসে নি।একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।আমি ভেবেছি, ওকে আরও কিছুদিন সময় দেবো।ধীরে ধীরে যখন আমাদের সাথে মিশে যাবে,তখন বললেও ততটা ভ**য় পাবে না।”

“নিহানের পাশ থেকে শায়লা বেগম বললেন,’নিহান একদম ঠিক কথা বলেছে।যেহেতু ওরা মানবজাতি,তাই ওদের সাথে আমাদের আকাশ-পাতাল তফাৎ।ওকে আরও সময় দেওয়া প্রয়োজন।তারপর যদি সবকিছু শুনে আমাদের কথা ও না মানে,তখন কি করবি নিহান?”

“মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে তুলে নিহানের কাটকাট জবাব,’ওকে তো মানতেই হবে।আর যদি না মানে তাহলে হয় ও ম**রবে,নইলে আমি ম**রবো।”

“নিহানের এহেন কথায় শায়লা বেগম মুখ মলিন করে বললেন,’সামান্য একজন দুর্বল মানবীর জন্য তুই নিজের জীবন দিয়ে দিবি নিহান?”

“ও সামান্য নয় মা।ও আমার কাছে অসাধারণ একজন মানবী।ওকে হারিয়ে যুগ যুগ ধরে পা**গলের মতো আমি দেশ-বিদেশে ঘুরেছি।অবশেষে আমার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে।ওকে কখনোও হেয় করে কথা বলবে না।আর ও তোমাদের সাথে খাবে না।ওর খাবার মেইড কে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেবে।’বলেই নিহান হনহন করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলেই,নীলাদ্রির সাথে ধা**ক্কা লাগলো।”

“নিহানের বলিষ্ঠ শরীরের সাথে ধা**ক্কা লেগে নীলাদ্রি কপালে খুব ব্যথা পেলো।নিহান সামনে তাকিয়ে দেখলো, হিজাব পড়ে মুখ ঢাকা এক রমনী কপালে হাত দিয়ে ‘উহ’ শব্দ করছে।”

“নিহান বুঝতে পারলো,নিহানের বুকের সাথে ধা**ক্কা লেগে নীলাদ্রি ব্যথা পেয়েছে।নিহান নীলাদ্রি কে কোলে তুলে নিয়ে সরাসরি ওপরে চলে গেলো।নীলাদ্রি কে খাটে বসিয়ে ওর হিজাব খুলে দিয়ে, পা**গলের মতো ওর কপালে চুমু দিতে লাগলো।আর বিড়বিড় করে বলতে থাকলো,’খুব ব্যথা পেয়েছো নীলাঞ্জনা?আমার এই শক্ত বুক তোমায় ব্যথা দিয়েছে?দেখবে আমি এই বুক টাকে কিভাবে শাস্তি দেই?’বলেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো একটা ফল কা**টার ছু**রি। মুহূর্তের মধ্যেই সেটাকে হাতে নিয়ে শার্ট খুলে বুকে দিলো এক টান।চোখের পলকেই সবকিছু হয়ে যাওয়ায়, নীলাদ্রি আর কিছুই করতে পারলো না।সামান্য ব্যথা পাওয়ায় নিহান যে এমন একটা অদ্ভুত কাজ করে বসবে, সেটা নীলাদ্রির কল্পনারও বাইরে ছিলো।নীলাদ্রি নিহানের বুকের দিকে তাকিয়ে আরও অবাক হয়ে গেলো।ভাবলো,’কি অদ্ভুত!বুকের চামড়া কে**টে কিছুটা মাংস বেরিয়ে এসেছে,অথচ একটুও র**ক্ত বের হচ্ছে না।কিন্তুু নিহান ব্যথায় ছটফট করছে।কারণ, নিহান একজন ভ্যাম্পায়ার;সে নিজেই নিজেকে আ**ঘাত করছে।নিহান চাইলেই তার পাওয়ার ব্যবহার করে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যেতে পারে।কিন্তুু সে নীলাদ্রির প্রতিক্রিয়া দেখতে চায়।তাই আরও ছটফট করতে থাকলো।নীলাদ্রি তো সেটা দেখে বেহুশ প্রায়।দ্রুত নিহানকে ধরে বিছানায় বসিয়ে বললো,’ফাস্ট এইড বক্স কোথায়?আমাকে বলুন,আমি এনে দিচ্ছি।”

“নিহান তার হাত দিয়ে কাভার্ডের দিকে দেখিয়ে দিলো।নীলাদ্রি দ্রুত কাভার্ড থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নিহানের কাছে গেলো।বক্সটি খুলে স্যাভলন দিয়ে প্রথমে ক্ষত স্থানটি পরিষ্কার করলো।তারপর ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।একবার ক্ষুদে ডাক্তারি করতে গিয়ে জেনেছিলো যখন কারো কে**টে গিয়ে ক্ষত হবে।তখন প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফ্রিজে থাকা এক টুকরো বরফ আক্রান্ত স্থানে লাগালেই র**ক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।কিন্তুু নিহানের শরীর থেকে তো কোনো র**ক্ত পড়ছে না।তবুও নীলাদ্রি এক দৌড়ে ফ্রিজ থেকে বরফের টুকরো এনে নিহানের বুকের ক্ষত স্থানে চেপে ধরে বললো,’এখন কি একটু আরাম লাগছে?”

“নিহানের শরীর এমনিতেই বরফের মতো ঠান্ডা, তার ওপর নীলাদ্রির এই বরফ টুকরো নিহানের কাছে কিছুই লাগছেনা।কিন্তুু নীলাদ্রির নিহানের কষ্ট নিয়ে এমন চিন্তিত প্রতিক্রিয়া এবং এভাবে নিহানের বুকে হাত রাখায় নিহানের বেশ ভালো লাগছে।নিহান ব্যাপারটি আরও ভালোভাবে অনুভব করার জন্য, চোখ বন্ধ করে ওর পাওয়ার ব্যবহার করে ব্যথা কিছুটা কমিয়ে; নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’নীলাঞ্জনা এই বুকে একটা চুমু দিতে পারবে?”

“এই অবস্থায় নিহানের মুখে চুমুর কথা শুনে, নীলাদ্রির এইবার মাথা ঘোরানোর উপক্রম হলো।নিহানের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবলো,’এতো ব্যথা নিয়ে,একটা মানুষের মনে এই টাইপের কথা কিভাবে আসে?আমি হলে তো এতক্ষণে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে, সারা বাড়ি মাথায় তুলতাম।কিন্তুু উনি তো মনে হয় কোনো সাধারণ মানুষ নয়
নিশ্চয়ই তার কোনো মানসিক রোগ আছে।বিষয়টি নিয়ে আমাকে রিসার্চ করতে হবে।’ভেবেই নিহানের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,’এই চুমুটুমুর কথা পরে হবে।আর আপনি কি র**ক্ত জাতীয় খাবার খান না?এইরকম একটা ক্ষত হলো,,অথচ আপনার বিন্দুমাত্র র**ক্ত বের হলো না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান হাসবে না কাদবে বুঝতে পারলো না।কারণ, ভ্যাম্পায়ারদের প্রধান এবং জাতীয় খাবার হলো র**ক্ত।আর ভ্যাম্পায়ার রা আ**ঘাত পেলেও তাদের শরীর থেকে র**ক্ত ঝড়ে না।তাই ভ্যাম্পায়ারদের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা থাকে।’কিন্তুু এটা তো নীলাদ্রি কে বলা যাবে না।তাই নিহান ম্লান হেসে বললো,’কি বলোতো এইসব র**ক্ত জাতীয় খাবার আমার একদম ভালো লাগে না।তাই বেশি খাই না।এখন তুমি এসে গেছো,তাই এখন থেকে প্রতিনিয়ত খাবো।”

“নীলাদ্রি বুদ্ধিমতী ভাব নিয়ে বললো,’এখন থেকে ডুমুর ফল খাবেন।এই ফলটি খেলে শরীরে সবচেয়ে বেশি র**ক্ত বৃদ্ধি পায়।আপনার ভাই ইয়াশ তো দেখি এই ফল খায়।কিন্তুু আপনি তো দেখছি অ্যানিমিয়া রোগীকেও হার মানাবেন।আর এমন পা**গলামি কেউ করে?যদি ক্ষত টা আরও গভীর হতো, কি হতো ভেবে দেখেছেন?”

“নিহান নীলাদ্রির কথা শুনে ওর গালে হাত রেখে হাস্কি ভয়েসে বললো,’ওহ মাই কুইন ইউর ওয়ার্ড’স আর অ্যাজ সুইট অ্যাজ ইউ আর।”

————-
“কিছুক্ষণ আগে মেইড এসে দুপুরের খাবার নিহানের রুমে দিয়ে গেছে।
নীলাদ্রি খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে প্রথমে নাক-মুখ কুচকে ভাবলো,’গরুর মাংস ভুনা তে না আছে তেল,না হলুদ, না মরিচের গুঁড়া।কালার টাইতো কেমন অন্যরকম।এরা কি রান্নাও করতে জানেনা!এদিকে নিহান অলরেডি খেয়ে ফেলেছে।নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো খাচ্ছো না কেনো?”

” নীলাদ্রি প্রতিত্তোরে কিছুই না বলে গরুর মাংস দিয়ে ভাত মেখে সবেই এক লোকমা মুখে দিয়েছে,তখনই ওর বমি এসে পড়লো।একেই গতকাল রাত থেকে না খেয়ে আছে,তার ওপর এমন ম্যাটম্যাটে খাবার খেয়ে ওর ভেতর থেকে বমি চলে আসলো।কোনোরকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে এক গ্লাস পানি খেয়ে বললো,’এই ধরনের খাবার আপনারা কিভাবে খান?এটার মধ্যে কি আদা-রসুন বাটা,মরিচের গুঁড়া, হলুদের গুঁড়া কিছুই দেয় নি?কি ধরণের মেইড রেখেছেন যে রান্না ও করতে পারেনা?”

“নীলাদ্রির এমন রিয়েকশন দেখে নিহান অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’তোমায় কি করে বলবো, যে ভ্যাম্পায়ারদের চিরশ**ত্রু হলো রসুন।”নিহান বুদ্ধি খাটিয়ে বললো,’ইয়ে মানে গুঁড়া মরিচ,আদা-রসুন বাটার তরকারি খেলে আমার একটু গ্যাস প্রবলেম হয়।তাই আমার মতো আমাদের পরিবারের সবাই এটি অ্যাভয়েড করে।তুৃমি চাইলে নিজের মতো রান্না করে খেতে পারো।”

“নীলাদ্রি আর কি বলবে।বাটিতে থাকা পায়েস খেয়ে মন জুড়ালো, কিন্তুু পেট জুড়ালো না।”

“নিহান খাওয়া-দাওয়া করে নীলাদ্রি কে বললো,’সুইটহার্ট আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যাবো।তুমি এই রুম থেকে ভুলেও বের হবে না।আর কেউ আসলে তাদের সাথে কথা ও বলবে না।আমি নিজের ব্যক্তিগত সম্পদকে কারো সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করিনা।”

“নীলাদ্রি এতক্ষণে বুঝে গেছে নিহানের মাথার নিউরনগুলো ওলট-পালট হয়ে গেছে।তাই তাকে বলেও কোনো লাভ নেই।তাই অগত্যা মাথা নেড়ে সায় জানালো।”

“নিহান কে বাইরে যেতে দেখে, সিতারা বেগম ওর রুমে এসে নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরলেন।আকস্মিক এভাবে জড়িয়ে ধরায় নীলাদ্রি কিছুটা হতভম্ব হলো।ওর মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,’কি হয়েছে মা?এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলে যে?”

“আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি মা।তোর অসম্মতি তে এই ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া উচিত হয় নি।’নীলাদ্রি বললো,’এখন আর এইসব বলে লাভ নেই মা।আমি জানি তুমি পরিস্থিতির স্বীকার।”

“সিতারা বেগম বললেন,’আমি চাইলে পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করতে পারতাম।কিন্তুু তোর বাবা গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট করার পর,মামলা-মোকদ্দমা করেও কোনো লাভ হয়নি।কারণ,যার জন্য অ্যাক্সিডেন্ট করেছে সে ছিলো প্রভাবশালী ব্যক্তি।আইন আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য নয়।”

“নীলাদ্রি নিজের আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,’ উফফ মা ওইসব পুরনো কথা বাদ দাও প্লিজ।আর শোনো,আমার মনে হয় নিহানের মাথায় কোনো সমস্যা আছে।আই থিংক সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম।এমন একটা মানুষের সাথে থাকা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব না।তাই আমি এখান থেকে পালিয়ে যাবো ভাবছি।তারপর…

” নীলাদ্রির কথা আর শেষ হতে পারলো না।তার আগেই পেছন থেকে একটা পুরুষালী তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর ভেসে এলো,’আমাকে একা রেখে কোথায় পালিয়ে যাবে নীলাঞ্জনা?আমি ম**রে গেলেও তোমার পিছনে প্রেতাত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াবো সুইটহার্ট।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“আমি ম**রে গেলেও তোমার পেছনে প্রেতাত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াবো সুইটহার্ট।”

“নিহানের তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর শুনতেই, সিতারা বেগম এবং নীলাদ্রি পেছনে ঘুরে তাকালো।নীলাদ্রির তো ভ**য়ে গলা শুকিয়ে গেলো।ওপরে ও জেদি ভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে নিহানকে ও প্রচন্ড ভ**য় পায়।”

“নিহান দরজার সামনে আসতেই, ওদের কথা গুলো শুনতে পেয়ে এই কথাটি বলেই রুমে ঢুকলো।সিতারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’শাশুড়ি মা আপনার মেয়ে এখন আমার স্ত্রী।ওকে আগেও যেমন ভালোবেসেছি।এখনও তেমন ভালোবাসবো।আপনি এইসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।তাহলে আপনার প্রেশার লো হয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে। কোনো বিপদ-আপদ তো আর বলে কয়ে আসে না।তাই না শাশুড়ি মা?”

“নিহানের কথায় হয়তো কিছু একটা ছিলো।নীলাদ্রি ভাবলো,”যা করার আমাকে একাই করতে হবে।এর মধ্যে মা কে জড়ানো যাবে না।’তাই নীলাদ্রি ওর মাকে বললো,’মা তুমি তো অসুস্থ তাই এখন একটু অন্যরুমে গিয়ে রেস্ট করো।”

“সিতারা বেগম ম্লান হেসে বললেন,’গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত আমি অনেক রেস্ট করেছি।তাই এখন আর রেস্ট করবো না।যেহেতু তোদের বিয়ে হয়ে গেছে।তাই আমি আজ আমার বাসায় চলে যাবো।”

“নিহান সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো,’সে কি মা এটা কি শুধু আমাদের বাড়ি?এটা আপনারও বাড়ি।আপনি এখানে আরও ৭ ঘন্টা থেকে যাবেন।এতো তাড়াতাড়ি আপনাকে আমি যেতেই দেবো না।”

“নীলাদ্রি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো নিহানের দিকে।ও ভেবেছিলো, নিহান সিতারা বেগম কে আরও ৭ দিন থেকে যাওয়ার জন্য বলবে।আর সে কি না মাত্র ৭ঘন্টা থেকে যেতে বলছে?অবশ্য তার বলাটাই স্বাভাবিক।কারণ,সে তো পা**গল।আর পা**গলে কি না বলে ছাগলে কি না খায়।”

“নীলাদ্রির ভাবনাচ্ছেদ ঘটলো সিতারা বেগমের কথায়।তিনি নিহানকে বললেন,’বাবা সব বাবা-মায়ের কাছেই তার মেয়েরা রাজকন্যা।মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও আমার মেয়েকে আমরা সাধ্যমতো সবকিছু দিয়েছি।তোমাকে বলবো না ওকে রাজরানী করে রাখতে।তবে ওর গায়ে কখনোও হাত তলো না।ও আ**ঘাত খুব ভ**য় পায়।তোমার কাছে এতটুকু অনুরোধ আমার।”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’আমি যতদিন থাকবো,ততদিন নীলাঞ্জনার গায়ে হাত কেনো,কেউ চোখ তুলে তাকাতেও পারবে না।আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন মা।’বলেই নিহান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”

“নিহানের এতটুকু কথায় সরলমনা সিতারা বেগমের চোখজোড়া খুশিতে চকচক করে উঠলো।উনি নিহানের কথার ভঙ্গিতে বুঝতে পারলেন,যে নিহান তার কথা রাখবে।অথচ কিছুক্ষণ আগে যে নীলাদ্রি নিহানের ব্যাপারে এতো কথা বললো,সেগুলো প্রায় ভুলেই গেলেন।সিতারা বেগম নীলাদ্রির দিকে হাসি-মুখে তাকিয়ে বললেন,’মা নীলাদ্রি আমরা চোখে যা দেখি সেটা সবসময় সঠিক হয় না।আর চোখে যেটা দেখিনা সেটাই সঠিক হয়।হতে পারে ছেলেটা তোর অসম্মতিতে তোকে বিয়ে করেছে।কিন্তুু ছেলেটার চোখে তোর জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি।তোর বাবা ও আমাকে এমন ভাবেই ভালোবাসতো।তাই এখন থেকে তুই ওর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবি।”

“নিহানের কথার মর্মার্থ সিতারা বেগম না বুঝলেও,নীলাদ্রি বুঝেছে।কিন্তুু নীলাদ্রি ওর অসুস্থ মা কে এইসব বিষয়ে জড়াতে চাইছে না।তাই মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’তুমি চিন্তা করো না মা।তোমার মেয়ে এখন ছোট নেই,আমি সবকিছু সামলে নেবো।তুমি শুধু দোয়া করবে।আর হ্যা, বাবার পেনশনের টাকা গুলো কিন্তুু জমিয়ে রেখো না।নিয়মিত ওষুধ কিনে খাবে।মনে রেখো আগে আমি থাকলেও,এখন কিন্তুু তোমাকে একাই সংগ্রাম করতে হবে।তাছাড়া তুমি তো বললেও, এখানে এসে থাকবে না।তাই নিজের খেয়াল নিজে রাখবে।”

“নীলাদ্রি এমন ভাবে ওর মায়ের সাথে কথা বলছে যেনো কোনো বাচ্চাকে কথাগুলো বলছে।সিতারা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর সিতারা বেগমকে নিহান তার বাড়িতে পৌঁছে দিলো।”

——————-
“রাতে নীলাদ্রি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ দেখছিলো,আর আনমনে হাসছিলো।ওর কাছে মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখতে খুব ভালো লাগে।মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি একটুখানি ছুঁয়ে দেখতে পারতো।”

“হঠাৎ পেছনে এসে নিহান দাঁড়ালো।নিহানের উপস্থিতি টের পেলো না নীলাদ্রি।সেতো ধূসর রঙা মেঘ দেখতে ব্যস্ত।নিহান মেঘে ঢাকা আবছা দৃশ্যমান চাঁদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শক্তি আহরণ করলো।তারপর নীলাদ্রির শাড়ির ফাঁক দিয়ে কোমরে হাত দিয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।তারপর নীলাদ্রির ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে টুপ করে কয়েকটা চুমু দিয়ে বললো,’কি শ্যাম্পু ব্যবহার করো তুমি?”

“নীলাদ্রি এখন আর বাঁধা দিলো না।কেনো জানি এই মেঘ মালায় নিহানের আলতো স্পর্শ ওর ভালো লাগছে।আকাশের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে;একটু মেকি সুরে বললো,’বলবো না এটা সিক্রেট।আর আপনি আমার কোমর ছাড়ুন আমার সুড়সুড়ি লাগছে।”

“নিহান কোমর থেকে হাত সরিয়ে দুই হাত দিয়ে নীলাদ্রি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,’একটা গান শুনবে নীলাঞ্জনা?তুমি তো গান খুব ভালোবাসো।তাই তোমার জন্য একটা গান শিখেছি।”

“গানের কথা শুনলে নীলাদ্রির আর হুশ থাকে না।মনে মনে ভাবলো,’এই লোক আবার গান ও পারে!ভাবতেই অবাক লাগছে।’নীলাদ্রি নিহানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,’হুমম শুনবো।’

“নিহান মুচকি হেসে শুরু করলো,

🎶লাল ফিতে সাদা মোজা সু স্কুলের ইউনিফর্ম,
ন’টার সাইরেন সংকেত সিলেবাসে মনোযোগ কম,
পড়া ফেলে এক ছুট ছুট্টে রাস্তার মোড়ে,
দেখে সাইরেন মিস করা দোকানীরা দেয় ঘড়িতে দম,
এরপর একরাশ কালো কালো ধোঁয়া,
স্কুল বাসে করে তার দ্রুত চলে যাওয়া ।

এরপর বিষন্ন দিন বাজেনা মনোবীণ,
অবসাদে ঘিরে থাকা সে দীর্ঘ দিন,
হাজার কবিতা বেকার সবই তা ।
তার কথা কেউ বলে না,
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা ।

সন্ধ্যা ঘনাতো যখন পাড়ায় পাড়ায়,
রক থাকতো ভরে কিছু বখাটে ছোড়ায়,
হিন্দি গানের কলি সদ্য শেখা গালাগালি
একঘেয়ে হয়ে যেত সময় সময় ।

তখন উদাস মন ভুলে মনোরঞ্জন,
দাম দিয়ে যন্ত্রনা কিনতে চায়,
তখন নীলাঞ্জনা প্রেমিকের কল্পনা,
ও মনের গভীরতা জানতে চায় ।

যখন খোলা চুলে হয়তো মনের ভুলে,
তাকাতো সে অবহেলে দু’চোখ মেলে,
হাজার কবিতা বেকার সবই তা।।
তার কথা কেউ বলে না,
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা ।🎶”

————–
“নিহানের কন্ঠে এতো সুন্দর একটি গান শুনে নীলাদ্রি বেশ অবাক হয়ে গেলো।নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’বাহ!আপনার কন্ঠ তো দারুণ। নচিকেতার এই গানটি আমার ভীষণ প্রিয়।যখন আকাশ মেঘলা থাকতো, কেনো জানি তখন খোলা চুলে বেলকনিতে গিয়ে এই গানটি শুনতাম।গানটি যদিও বেশ আগের।কিন্তুু আমার কাছে খুব ভালো লাগে।আমি আবার পুরনো দিনের গানগুলো একটু বেশি পছন্দ করি।ওই গানগুলো শুনলে মনের মধ্যে অন্যরকম একটা ভালো লাগার অনুভূতি হয়।এটা কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না।জানেন আমার এই গানটির মধ্যে কোন দু’টি লাইন বেশি প্রিয়?”

‘কোনটা?’

‘নীলাদ্রি মুচকি হেসে দুই লাইন গাইলো,
‘যখন খোলা চুলে হয়তো মনের ভুলে
তাকাতো সে অবহেলে দু’চোখ মেলে।’

‘আনমনেই গান গেয়ে,অনেক কথা বলে যাচ্ছিলো নীলাদ্রি।আর নিহান মুগ্ধ হয়ে নীলাদ্রির বাচন-ভঙ্গি দেখছিলো।হঠাৎ নীলাদ্রির খেয়াল হলো,মাত্র একটা গান শুনেই ও নিহানের সাথে হেসে-খেলে কথা বলছে।ভাবলো,’ছিঃ ছিঃ ছিহ!আমি এতোটা নি**র্লজ্জ হলাম কি করে?এই সাইকো টা আমায় জোর করে হু**মকি দিয়ে বিয়ে করেছে।তারপর গতকাল রাত থেকে কতোটা খারাপ ব্যবহার করেছে।আর আমি নাকি একটা গান শুনেই পটে গেলাম।’ভেবেই নীলাদ্রি নিহানের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে কটমটিয়ে বললো,’এই যে আপনি কি নিজে কে খুব চালাক মনে করেন?ভেবেছেন,একটা গান শুনিয়ে আমায় পটাবেন।হুহহ..মোটেও না।আমার মনের প্রাচীর অনেক শক্ত।আজ পর্যন্ত আপনার থেকেও অনেক সুদর্শন ছেলেরা আমার মনে জায়গা পায় নি।আর আপনি তো অনেক দূরের কথা।”

“নিহানের মাথা গরম করার জন্য নীলাদ্রির এতটুকু কথাই যেনো যথেষ্ট ছিলো।নিহান নীলাদ্রি কে কোলে তুলে নিয়ে সোজা রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর ওর ওপর উঠে নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কর্কশ কন্ঠে বললো,’নেভার কম্পেয়ার মি টু এনিওয়ান এলস,মাইন্ড ইট।”

“একে তো নিহান নীলাদ্রির ওপর পুরো ভর ছেড়ে দিয়েছে।তার ওপর ইংরেজিতে ডায়লগ দিচ্ছে।নীলাদ্রির এখন নিঃশ্বাস ছাড়তে খুব কষ্ট হচ্ছে।ও নিহান কে হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে।আর মনে মনে বলছে,এই গন্ডারের মতো শরীর নিয়ে আমার মতো একটা পিঁপড়ার গায়ে পড়তে কি একটু খারাপ ও লাগছেনা?ভেবেই ‘ উহহ’ শব্দ করে উঠলো।”

“নিহান বুঝতে পারলো, নীলাদ্রির কষ্ট হচ্ছে তাই সে সরে গেলো।নীলাদ্রি উঠে বসলো।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’ওই মিয়া কি খান আপনি?এতো বড় হাতির মতো শরীর টা কে নিয়ে আমার উপর উঠতে আপনার লজ্জা লাগে না?আরেকটু হলে তো দম বন্ধ হয়ে ম**রেই যেতাম।”

“নিহান দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’ওকে নেক্সট টাইম উঠলে বেশি ভর দেবো না সুইটহার্ট।”

“নীলাদ্রি নিহানের অঙ্গ-ভঙ্গি বুঝতে পেরে বললো,’আচ্ছা আপনি এইরকম ঠোঁট কা**টা স্বভাব কার থেকে পেয়েছেন বলেন তো?আপনার বাবা কে দেখে তো এমন মনে হলো না।এহতিশাম আর ইয়াশ ও যথেষ্ট ভদ্র। কিন্তুু আপনি এইরকম কেনো?আপনার মন এবং মুখ দুটোই নি**র্লজ্জ।”

“নিহান এইবার হো হো করে হেসে উঠলো।হাসি থামিয়ে নীলাদ্রির হাত ধরে উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে বললো,
‘প্রথমত, আমার পুর্বপুরুষেরা ছিলো ব্রিটিশ।হতে পারে তাদের থেকেই এই স্বভাব পেয়েছি।কিন্তুু চরিত্রহীন হই নি।আমি শুধু এক তোমাতেই আসক্ত।’
‘দ্বিতীয়ত, এহতিশাম আর ইয়াশ কে আগে থেকেই তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে নিষেধ করে দিয়েছি।’
‘তৃতীয়ত,তুমি আমার মুখ আর মন কে নি**র্লজ্জ না বলে;আমার আপাদমস্তক সহ পুরো আমি টাকেই যদি নি**র্লজ্জ বলতে,তাহলে আমি আরও বেশি খুশি হতাম।

‘যাইহোক, আমি তোমার জন্য বিরিয়ানি এনেছি।আপাতত এটা খেয়ে নাও।আগামীকাল থেকে তোমার পছন্দের খাবারের কথা আমাকে বলবে।আমি মেইড কে বলে দেবো।আর হ্যা, ভুলেও মেইডের সাথে কথা বলতে যাবে না।’

“নীলাদ্রি চোখ-মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি আমার সবকিছুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছেন।আমি এটা করলে দোষ, ওটা করলে দোষ।আর আপনি সবকিছু করবেন সেটা একদম ঠিক।এটাকে বলা হয় মানসিক নির্যাতন।”

“নিহান নীলাদ্রির চিবুকে হাত দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,’যেদিন আমার মতো করে আমাকে ভালোবাসতে পারবে,তখন তোমারও আমার মতো এমন অনুভূতি হবে সুইটহার্ট।এখন তুমি কিছুই বুঝবে না।কারণ,তুমি তো আমাকে ভালোই বাসো না।’বলেই নিহান রুম থেকে বের হয়ে ছাদে চলে গেলো।”

“এতো গরমের তীব্রতা কাটিয়ে অনেক দিন পর আকাশ ভেদ করে ধরনীতে বারিধারা শুরু হলো।মেঘের গর্জনের সাথে বৃষ্টির গতিবেগও প্রতিযোগিতা দিয়ে নেমেছে।কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধরনীর মাটি শীতল হয়ে গেলো।এ যেনো সৃষ্টিকর্তার অনন্য নিয়ামত।নিহান বৃষ্টিতে ভিজছে।কিছুক্ষণ পর পর গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করে বজ্রপাত হচ্ছে।বজ্রপাত ভ্যাম্পায়ার রা সহ্য করতে পারে না।তাই নিহান চুপচুপে ভেজা জামায় নিচে নেমে, রুমে ঢুকে কাভার্ড থেকে ব্লু টি-শার্ট এবং ট্রাউজার নিয়ে সরাসরি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।”

“নীলাদ্রি বিরিয়ানি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে,মাত্রই শোয়ার প্রস্তুুতি নিচ্ছিলো, এমন সময় নিহান কে ভেজা জামা-কাপড়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে দেখে বুঝতে পারলো নিহান বৃষ্টিতে ভিজেছে।নীলাদ্রি ভাবলো,’এই শীতল বৃষ্টির পানিতে যদি এই গরম সাইকোর মাথা টা একটু ঠান্ডা হতো,তাহলে কতোই না ভালো হতো।’ভেবে কম্ফোর্টার গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।হঠাৎ করে ওর মনে পড়লো,সামনের সপ্তাহে এক্সাম আছে।নীলাদ্রির কাছে নোটস নেই।কিভাবে কি করবে?ও তো বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বই ও নিয়ে গেছিলো,যেনো পরীক্ষার সময় হাজির হতে পারে।কিন্তুু ক্লাসমেটদের থেকে নোটস নেওয়ার কথা ভুলে গেছিলো।আগামীকাল যেভাবেই হোক ইউনিভার্সিটিতে যেতে হবে।কিন্তুু ওই উগান্ডা দেশের লোককে কিভাবে বোঝাবে, সেই চিন্তায় নীলাদ্রির কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো।”

“এরইমধ্যে নিহান ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই; নীলাদ্রি হাসি-মুখে নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’আহারে আপনি এমন বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেন কেনো?যেই হারে বজ্রপাত হচ্ছে, যদি আপনার কিছু হয়ে যেতো?”

“নীলাদ্রির কন্ঠে মিষ্টি কথা শুনে;নিহান বেশ অবাক হয়ে নীলাদ্রির কপালে হাত দিয়ে বললো,’নাহ!জ্বর তো নেই।হঠাৎ এতো পরিবর্তন হলো কিভাবে?কিছু চাও নাকি?”

“নীলাদ্রি আর কথা ঘুরালো না।ফিচেল হেসে বললো,’আসোলে সামনের সপ্তাহে পরীক্ষা আছে।তাই আমার ক্লাসমেটদের থেকে কিছু নোটস নেওয়া লাগতো।তাই বলছিলাম,আমি আগামীকাল ইউনিভার্সিটিতে যেতে চাই।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান প্রথমে রেগে গেলেও;পরক্ষণেই ডেভিল হেসে বললো, ‘ওকে যেতে দেবো,তবে ক্লাসে গিয়ে আমার সাথে বসতে হবে।আর সবাইকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা জানাতে হবে।বলো, রাজি আছো?”

“নীলাদ্রি ভাবলো, ‘এ আর এমনকি!কিন্তুু ইরা জানলে তো ওর আর রক্ষা নেই।তাই আমতা আমতা করে বললো,’আমি প্রমিজ করছি,এই সাপ্তাহিক এক্সাম টা শেষ হলে সবাই কে জানিয়ে দেবো।নইলে, আমরা যেহেতু ক্লাসমেট হওয়া শর্তেও বিয়ে করেছি;এটা নিয়ে সবাই হাসি-ঠাট্টা করবে।আর আমার খুব মন খারাপ হবে।মন খারাপ হলে আমার পরীক্ষা ভালো হবে না।তাই একটু বোঝার চেষ্টা করুন। তবে ক্লাসে আমি আপনার সাথেই বসবো।”

“নিহান কিছু একটা ভেবে ‘ওকে’ বলেই নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরলো।তারপর নিহানকে আর কে পায়।নীলাদ্রির সারা মুখে, গলায়, ঘাড়ে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো।বেচারি নীলাদ্রি আর কি করবে।কাজ হাসিল করার জন্য সবকিছুই চোখ-মুখ বুজে সহ্য করছিলো।তাছাড়া নিহান ওর স্বামী।চাইলেও বাধা দিতে পারবে না।অবশ্য নীলাদ্রিরও বেশ ভালো লাগছিলো।এমন একটা হ্যান্ডসাম বর নিজে থেকে এইরকম ভাবে কাছে আসলে, কার না ভালো লাগবে।নীলাদ্রি বেশ উপভোগ করছিলো।কিন্তুু, ওর কঠোর মন ওর শরীরকে রেসপন্স করতে দিচ্ছিলো না।যার কারণে, বেচারা নিহান একাই আদর করতে থাকলো।অপরপক্ষ থেকে আদর ফিরিয়ে দেওয়া হলো না।”

——————
“সকালে নাস্তা করে নিহান এবং নীলাদ্রি ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।নীলাদ্রি ক্লাসে ঢুকে দেখলো,ইরা আসে নি।নীলাদ্রির একটু মন খারাপ হলো।কিন্তুু নিহান কে কিছু বুঝতে দিলো না।নিহান এবং নীলাদ্রি আজ এক বেঞ্চে একসাথে বসলো।সেটা দেখে ক্লাসের সবাই আড়চোখে তাকালো।এহতিশাম এবং ইয়াশ একসাথে বসলো।ইয়াশ ইরাকে ক্লাসে না দেখে খুব মিস করতে লাগলো।আর এহতিশাম তো বইয়ের মধ্যেই ডুবে আছে।”

“ক্লাসে সহকারী অধ্যাপক রেহান খান ঢুকতেই,সবাই সালাম দিলো।রেহান স্যারের চোখ জোড়া প্রথমেই নিহান এবং নীলাদ্রির দিকে গেলো।সে অপলক দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রি বইয়ের পৃষ্ঠা ওলট-পালট করছিলো, তাই খেয়াল করেনি। কিন্তুু নিহানের নজরে ঠিকই পড়েছে।”

“টিফিন পিরিয়ডে সবাই ক্যান্টিনে চলে গেলো।নিহান নীলাদ্রির সাথে লেপ্টে বসে আছে।এমন সময় নীলাদ্রি নিহান কে বললো,’আমার খুব পানি তৃষ্ণা পেয়েছে।ব্যাগে পানির বোতল নেই।আপনার ব্যাগেও মনে হয় নেই।এক কাজ করবেন,আমার জন্য ক্যান্টিন থেকে একটা পানির বোতল নিয়ে আসবেন?”

“নিহান নীলাদ্রি কে হাসি মুখে বললো,’ওকে সুইটহার্ট আমি যাবো আর আসবো।তুমি কিন্তুু এখান থেকে নড়বে না।”

“নিহান এমন ভাবে কথা বলছে, মনে হয় নীলাদ্রি কে ছোট বাচ্চাদের মতো ট্রিট করছে।নীলাদ্রি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।নিহান ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনের দিকে যেতেই,নীলাদ্রি মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’ইশশ..হিটলারের বংশধর যা বলবে আমার নাকি তাই শুনতে হবে।তোর এইরকম সাইকো ভালোবাসার খ্যাতা-পুড়ি।”বলেই ক্লাস থেকে বের হয়ে ওয়াশরুমে গেলো।কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে যেই না ক্লাসে ঢুকতে যাবে, তখনই নীলাদ্রির হাত টান দিয়ে লাইব্রেরির কক্ষে নিয়ে এলো রেহান খান।”

“রেহান খান তার জন্য বরাদ্দ কক্ষটির দরজা আটকে, নীলাদ্রির দিকে বাকা হেসে বললো,’নীলাদ্রি জান,আমি এভাবে তোমার হাত ধরাতে কি তুমি খুব অবাক হলে?”

“নীলাদ্রি শুধু অবাক হয় নি।তার থেকেও বেশি হয়েছে।যে টিচার কিনা সবসময় মুড নিয়ে চলে;সে কিনা এভাবে ওকে টেনে এনেছে?কিন্তুু কেনো?”

“মি.রেহান খান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,’এই ইউনিভার্সিটিতে আমি ২বছর যাবৎ জয়েন করেছি।নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তুমি যখন গান গেয়ে স্টেজ থেকে নিচে নামছিলে, তখন অ্যাক্সিডেন্টলি তোমার সাথে আমার ধা**ক্কা লাগে।কেনো জানিনা, সেদিন থেকেই আমার একটা হার্টবিট মিস হয়ে গেছে।আমার মতো গম্ভীর মানুষটাও সেদিন তোমার প্রেমে পড়ে গেছে।ব্যাপার টা বেশ সিনেমাটিক তাইনা?আজ পর্যন্ত অনেক মেয়ের সাথেই আমার ধা**ক্কা লেগেছে,কিন্তুু কখনোও হার্টবিট মিস হয়নি।কথাগুলো শুনে, তোমার কাছে খুব অবাক লাগছে তাই না?আমার কাছেও তাই।তারপর থেকে আমি সবার অগোচরে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।তোমার সর্বাঙ্গে আমার চোখের বিচরণ করতাম।এক কথায় তোমার প্রতি ভ**য়ং**কর ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ি।এখন হয়তো বলতে পারো, এতোদিন কেনো তোমায় মনের কথা বলিনি?অ্যাজ আ টিচার হিসাবে আমার একটা রেসপন্সিবিলিটি আছে।ভেবেছিলাম,এক্সাম টা হয়ে গেলে তোমায় বলবো।কিন্তুু, আজ তোমায় নিহানের সাথে বসতে দেখে আমি কন্ট্রোললেস হয়ে গেছি।তাই তোমাকে এখানে আনলাম।”

“রেহান খান একাধারে কথাগুলো বলেই,নীলাদ্রির দুই বাহু ধরে বললো,’তুমি আমার জীবনের অপ্সরা নীলাদ্রি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।উইল ইউ এক্সেপ্ট মাই লাভ?’
রেহান খানের এহেন কথায় নীলাদ্রি যেনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।”

“এদিকে নিহান এসে নীলাদ্রি কে ক্লাসে না পেয়ে এদিক সেদিক খুৃঁজে বেড়াচ্ছে।খুঁজে না পেয়ে নিহান ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করলো।যখন নীলাদ্রির বর্তমান অবস্থান জানতে পারলো, তখন নিহান যেনো রাগে বেশামাল হয়ে গেলো।ফাঁকা ক্লাসে সিংহের ন্যায় গ**র্জন করে উঠলো।”

#চলবে…

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-৭+৮

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নিহান নীলাদ্রি কে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আমরা আজ রাতেই বিয়ে করবো নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের এহেন কথায় নীলাদ্রি হকচকিয়ে গেলো?শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আজ বিয়ে করবেন মানে?আপনি কি একবারও আমার মতামত ভালো করে জানতে চেয়েছেন?আর আপনি বললেই আমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবো?হাহ!আমি বেঁচে থাকতে, আপনার মতো সাইকো লোককে কখনোই বিয়ে করতে রাজি হবো না।”

“নিহান ডেভিল হেসে বললো,’ওহ…তাই নাকি সুইটহার্ট?আমাকে তোমার পছন্দ নয় বুঝি?বুঝেছি তোমার ওই রেহান স্যার কে পছন্দ;তাই না?ওকে ফাইন,আগামীকাল তোমার সামনে তার দ্বি-খ**ন্ডিত দেহ পাবে।”

“নীলাদ্রি চোখ-মুখ কুঁচকে মনের মধ্যে একরাশ ঘৃ**ণা নিয়ে চি**ৎকার করে বললো,’আমি আপনার মতো জ**ঘন্য ব্যক্তিকে বিয়ে করবো না।ম**রে গেলেও বিয়ে করবো না।শুনেছেন আপনি?আপনার যা করার করে নিন।”

“নীলাদ্রির তেজি কন্ঠে কথাগুলো শুনে নিহানের চোখ জোড়া লাল হয়ে গেলো।ওর এখন ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তুু, নিহান কে এই অবস্থায় দেখলে, নীলাদ্রির প্যানিক অ্যা**টাক হতে পারে।নিহান সেটা কখনোই চায় না।তবে নিহান চাইলেই নীলাদ্রি কে হিপনোটাইজ করতে পারে,কিন্তুু নিহান সেটাও চাইছে না।নিহান চাইছে, নীলাদ্রি মন থেকে ওকে বিয়ে করতে রাজি হোক।কিন্তুু নীলাদ্রি তো নাছোড়বান্দা।ও কিছুতেই নিহান কে বিয়ে করতে রাজি হবে না।’নিহানের মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো।নিহান বাঁকা হেসে ভাবলো,’বাহ!মানুষের মস্তিষ্ক খেয়ে আমার ব্রেইন টা অনেক সক্রিয় হয়েছে।সত্যি মানুষের বুদ্ধির জুরি নেই।’ভেবেই নীলাদ্রির দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’নীলাঞ্জনা তুমি কি তোমার মায়ের মৃ**ত্যু দেখতে চাও?”

“নিহানের মুখে মায়ের মৃ**ত্যুর কথা শুনে নীলাদ্রি কন্ঠে আ**তংক নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘মায়ের মৃ**ত্যু মানে?”

“নিহান নীলাদ্রির দিকে একটু ঝুঁকে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’সুইটহার্ট আমি আমার হবু শাশুড়ি মায়ের ইনহেলার এহতিশামের কাছে দিয়ে এসেছি।আর সে এখন আমাদের বাসায় অবস্থান করছে।তার তো শ্বাসকষ্টের সমস্যা।ইনহেলার তার শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য অপরিহার্য। কিন্তুু দেখো ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!তোমার জন্য তোমার মায়ের এখন কষ্ট হবে।তারপর সে ধীরে ধীরে মৃ**ত্যুর দিকে ধাবিত হবে।”

“নীলাদ্রি নিহানের কথাগুলো শুনে দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বললো,’চুপ করুন।আপনি একজন মানুষ রূপী জা*****র।আপনার মধ্যে কোনো মায়া-দয়া নেই।আপনি আমাকে বিয়ে করার জন্য আমার মায়ের অসুস্থতার সুযোগ নিচ্ছেন।ছিহ!ধিক্কার জানাই আপনার মতো ন**র**প***শু কে।”

“নীলাদ্রির এইসব গা**লা*গা**লি শুনে নিহান অন্যদিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।নিহান এমনভাবে পৈ**শা**চিক হাসি দিচ্ছে,মনে হয় সে আগে থেকেই জানতো,নীলাদ্রি তার কথাগুলো শুনে এইরকম ভাবে রিয়েক্ট করবে।নিহান নীলাদ্রির কথা গায়ে মাখলো না।কারণ, নীলাদ্রির জেদ সম্পর্কে নিহানের থেকে ভালো কেউ জানেনা।কিন্তুু, নিহানের জেদের কাছে নীলাদ্রির জেদ তুচ্ছ।”

“নিহান নীলাদ্রির দুইবাহু ধরে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,’তোমার গা**লা*গা**লি কি আরও বাকি আছে?নাকি তোমার ভান্ডারে যতটুকু ছিলো তা শেষ হয়ে গেছে?শেষ হয়ে গেলে বলতে পারো,আমি তোমায় হেল্প করবো।আমি অনেকগুলো বাঙালি গা**লি শিখেছি।ওগুলো শুনতে আরও ভালো লাগবে।”

“নীলাদ্রি এইবার অবাকের শীর্ষে পৌঁছালো।ওর মস্তিষ্কে শুধু একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, ‘একটা মানুষ কিভাবে এতোটা নি**র্লজ্জ হতে পারে!নীলাদ্রি যে ভাষাগুলো নিহান কে বললো,তার জায়গায় অন্য কেউ হলে নীলাদ্রির সাথে এতক্ষণে হয়তো খারাপ কিছু করে ফেলতো।কিন্তুু নিহান ক্ষেত্রবিশেষে রা**গী হলেও,এইমুহূর্তে তাকে একদম শান্ত,নম্র,ভদ্র মানুষ বললেও কম হবে।”

“নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই ওর গালে ঠান্ডা ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই, কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো।নীলাদ্রি ওর চোখজোড়া বড় বড় করে বললো,’আপনি একজন চরিত্র**হী**ন পুরুষ।বিয়ের আগে একটা মেয়েকে এভাবে চুমু দেওয়া মোটেও ভালো মানুষের কাজ নয়।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান হো হো করে হেসে উঠলো।শুনশান নীরব স্থানে নিহানের হাসির শব্দ গুলো বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে।নিহান কয়েক সেকেন্ড পর হাসি থামিয়ে বললো,’তোমাকে শুধু চুমু কেনো; তোমার সাথে এইমুহূর্তে বাসর করার অধিকারও আমার আছে।তুমি আগেও আমার ছিলে, আর সারাজীবন আমার হয়ে থাকবে।এনিওয়ে কান্না করতে করতে তোমার গাল একদম লবনাক্ত হয়ে গেছে।চুমু দিয়ে জিহ্বায় নোনতা স্বাদ অনুভব হলো।তবে আমার এতে সমস্যা নেই, তোমার শরীরের নোনতা স্বাদ ও আমার ভালোই লাগে।আফটার অল তুমি আমার জীবনের স্পেশাল মানবী।”

“নীলাদ্রির মস্তিষ্কের নিউরনগুলো মনে হয় কিছুক্ষণের জন্য অচল হয়ে গেলো।হঠাৎ করেই নীলাদ্রি ওর মুখে পানির ছিটা পড়তেই হকচকিয়ে গেলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো, নিহানের হাতে পানির বোতল।নিহান হাসি মুখে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’গাল টা সত্যিই খুব নোনতা হয়ে গেছে।তাই পানি ছিটিয়ে দিলাম।বলেই নীলাদ্রির গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললো,’এখন একটুও নোনতা লাগছেনা।”

“নীলাদ্রি এইবার নিহানকে কষিয়ে একটা থা**প্পড় দিলো।নিহান নীলাদ্রির দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’তোমার সাহস হলো কি করে আমার গালে থা**প্পড় দেওয়ার?”

“নীলাদ্রি চেঁচিয়ে বললো,’আপনার জন্য এর থেকেও বেশি শাস্তি প্রযোজ্য ছিলো।কিন্তুু আফসোস!আমার হাতের কাছে এই মুহূর্তে কিছু নেই।তাহলে সেটা দিয়েই আপনার মাথা ফাটিয়ে ফেলতাম।”

“নিহান মনে হয় নীলাদ্রির কথা শুনে খুব মজা পেলো।একে তো নীলাদ্রি ওকে থা**প্পড় মে**রে, ওর মনে ক্রোধ সৃষ্টি করেছে।তার ওপর এখন আবার হু**মকি দিচ্ছে।কিন্তুু, নীলাদ্রি জানেনা যে, ভ্যাম্পায়ারদের এইসব ছোটোখাটো আ**ঘাতে কিছুই হয় না।বরং এতে ওরা আরও হিং***স্র হয়ে ওঠে এবং অপরপাশের ব্যক্তিটির ঘাড়ে বা**ইট করে তাকে মে**রে ফেলে।ভ্যাম্পায়ার রা তখন ব্যথা অনুভব করে,যখন তাদের স্বজাতি ভ্যাম্পায়ার দ্বারা আ**ঘাত পায়।কিন্তুু নিহানের এই মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।তাই নিহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নীলাদ্রি কে আরেকটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বললো,’বাসর রাতে তো আমাকে আর গা**লি দেওয়ার সময় পাবে না।তখন তোমার ঐ গোলাপি ঠোঁট যুগল আমার দখলে থাকবে।তাই এখন একটু গা**লি দিয়ে নাও।”

“নীলাদ্রি এইবার বি**স্ফো*রিত নয়নে নিহানের পানে চেয়ে বললো,’আপনি একটা অ**সভ্য,ন**র*প**শু,জা*****র,নি**র্লজ্জ, বে**হায়া,কা****পুরুষ।”

“নিহান এইবার নিজের দুই কান চেপে ধরে বললো,’উফফ স্টপ নীলাঞ্জনা।এই একই গা**লি বারবার শুনতে শুনতে আমি বোরিং হয়ে যাচ্ছি। নতুন গা**লি দাও।তুমি দেখছি গা**লি টাও ভালো করে জানো না।রেগে গেলে এইভাবে কেউ শুদ্ধ ভাষায় গা**লি দেয় নাকি?সত্যি তুমি খুব বোকা নীলাঞ্জনা।’ ব্যাঙ্গাত্ব-স্বরে কথাগুলো বলে মিটমিট করে হাসছে নিহান।”

“নীলাদ্রি সেটা দেখে আরও তেঁতে উঠে নিহানের শার্টের কলারে হাত দিতে যাবে,তখনই নিহান ওর হাত ধরে গম্ভীর স্বরে বললো,’অনেক পা**গলামী করেছো,আর নয়।তুমি দেখছি খুবই নির্দয় এবং স্বার্থপর মানুষ।তোমার মায়ের যেকোনো সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে।তুমি সেটা চিন্তা না করে, শুধু নিজের কথা ভেবে চলেছো।রিয়েলি শেইম ইউ নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রির এখন ওর মায়ের কথা মনে পড়লো।মায়ের কথা মনে পড়তেই,নীলাদ্রির চোখজোড়া জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো।নিহান বিষয়টি বুঝতে পেরে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’এইসব ন্যাকা কান্না বাদ দিয়ে চুপচাপ আমার সাথে চলো।এইসব কান্না পরেও করা যাবে।সামনে আরও কান্না করার জন্য পানি জমিয়ে রাখো।সব শেষ হয়ে গেলে,তখন কাঁদতে খুব কষ্ট হবে।আর তুমি এতোদিনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছো,তোমার কষ্ট আমি একদম সহ্য করতে পারি না নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি এইমুহূর্তে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।রোবটের ন্যায় সে্ গাড়িতে বসে রইলো।একজন নারী মানসিক ভাবে যতোই শক্তিশালী হোক না কেনো,শারীরিক ভাবে পুরুষের থেকে কখনোই বেশি শক্তিশালী হতে পারবে না।নিহান চাইলেই নীলাদ্রির সম্ভ্রম ছিনিয়ে নিতে পারে।’ভেবে নীলাদ্রি আরও বেশি নীরবতা পালন করতে থাকলো।এইমুহূর্তে নিহানকে দেখে ওর সত্যি খুব ভ**য় লাগছে।কারণ,নিহানের সুন্দর মুখস্রিতে লাল আভা ছড়িয়ে আছে।যেটা দেখে নীলাদ্রির শরীর ক্রমাগত শি**উরে উঠছে।নিহান মুচকি হেসে, আবারও ওর ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া আলতো করে নীলাদ্রির গালে স্পর্শ করতেই;কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি। কিন্তুু কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।সে যেনো এক জ্যান্ত কাঠের পুতুলে পরিণত হয়েছে।”

“সেটা লক্ষ্য করে নিহান ড্রাইভিং সিটে গিয়ে পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকলো,’আমি তো এটাই চাইছিলাম।আমার কথা তুমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।আর এতো কম সময়ে তুমি সব বুঝেও গেলে।এই না হলে আমার নীলাঞ্জনা।’বলেই নিহান গাড়ি স্টার্ট দিলো।”

“প্রায় ১ঘন্টার পথ পারি দিয়ে ওরা বাসায় পৌঁছালো।বাসার গেটের সামনে সি এন জি থামিয়ে নিহান এক সাইডে গিয়ে, ওর বাটন ফোন দিয়ে ইয়াশ কে ফোন করে বললো,’এই গাড়িটা যার থেকে ভাড়া নিয়েছে; তার কাছে যেনো পৌঁছে দেয়।আর আজ রাতের জন্য নিহান বিয়ে উপলক্ষে বাসায় আগে থেকেই বিভিন্ন প্রাণীর র**ক্ত এনে রেখেছে,সেটা দিয়েই ওরা পার্টি করবে।”

“নিহানের কথা শুনে ইয়াশ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,’ভাইয়া আমি কিন্তুু সন্ধ্যা থেকে না খেয়ে আছি;তুমি তো জানো আমি ক্ষুধা একদম সহ্য করতে পারি না।আজ কিন্তুু আমি সবার থেকে বেশি খাবো।”

“ইয়াশের কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে বললো,’সবসময় তো তোরই ঘরের মধ্যে খাওয়ার রাজত্ব চলে।আজকেও সমস্যা হবে না।আর শোন আশে-পাশের প্রতিবেশীদের জন্য স্পেশাল খাবারের আয়োজন করবি,খাবারের আইটেমের মধ্যে গরুর মাংসের বিরিয়ানি, খাসির মাংসের কাচ্চি আর মুরগির শাহী কোরমা, স্পেশাম মালাই দই এবং খাবারের সাথে অবশ্যই স্পেশাল লেমন জুস দিবি।এই গরমে সাধারণ মানুষের জন্য এটা খুব প্রয়োজনীয় পানীয়।এখন আমি যে কাজ গুলো করতে বললাম,ঝটপট সেটা করে ফেল।আর হ্যা, অবশ্যই কাজী কে নিয়ে আসবি।আর কাজীর দিকে ভুলেও নজর দিবি না বুঝেছিস?”

“ইয়াশ মুচকি হেসে বললো,’ ওকে ভাইয়া,তুমি আমাকে যতোটা পেটুক মনে করো ;আমি কিন্তুু ততোটাও নই।আমি আর এহতিশাম ভাইয়া একরকম পরিমাণে খাই।”

“নিহান মুচকি হেসে ফোন কেটে দিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো সুইটহার্ট এখনোও রোবটের মতো বসে আছো কেনো?বাসায় তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।তুমি নামবে নাকি আমি কোলে করে নিয়ে যাবো?অবশ্য তোমার মতো পাটকাঠি কে উঠাতে আমার তেমন কষ্ট হবে না।”

“নীলাদ্রি এতক্ষণ পর রুঢ় কন্ঠে বলে উঠলো,’চলা-ফেরা করার জন্য আল্লাহ আমার হাত-পা দিয়েছেন।আমি একাই যেতে পারবো।’বলেই গাড়ি থেকে নেমে নিহানদের বাসার সদর দরজা খুলে সোজা বাসার মধ্যে ঢুকে গেলো।বাসায় ঢুকেই নীলাদ্রির চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো।
নিহানদের বাসার হল রুমের দেয়ালগুলোর রং পুরো কালো।দেখলেই কেমন গা ছমছম করে ওঠে।নীলাদ্রি ভেতরে ঢুকতেই আশে-পাশের প্রতিবেশীরা বলাবলি করে উঠলো,’এটা কি নতুন বউ?একি মেয়েটা এখোনও সাজে নি কেনো?”

“তাদের কথা শুনে শায়লা বেগম মুচকি হেসে বললেন,’আমার বৌমাকে আমি নিজের হাতে সাজিয়ে দেবো।তার পাশ থেকেই সিতারা বেগম মলিন হেসে মাথা নাড়লেন।”

“নীলাদ্রি প্রথমে ওর মায়ের কাছে গেলো,জিজ্ঞেস করলো,’মা এহতিশাম কি তোমাকে ইনহেলার দিয়েছে?”

“সিতারা বেগম বেশ অবাক হয়ে বললেন,’ইনহেলার তো আমার কাছেই ছিলো।এহতিশাম কেনো দেবে?”

“মা-মেয়ের কথার মাঝেই শায়লা বেগম নীলাদ্রির কাঁধে হাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বললেন,’মা আজ তোমায় আমি নিজের হাতে সাজিয়ে দেবো।দেখেছো তুমি কতো ভাগ্যবতী?তোমার শাশুড়ি নিজের হাতে তোমায় বিয়ের কনে সাজাবে।”

“শায়লা বেগমের কথা শুনে নীলাদ্রি ওর মায়ের দিকে তাকাতেই,সিতারা বেগম চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালেন,’তারা যা বলে তাই যেনো শোনে।’নীলাদ্রি বুঝে গিয়েছে যে ওরা মা-মেয়ে দুজনেই চিতা বাঘের ফাঁদে পড়েছে।কথা না শুনলে যেকোনো সময় আ**ক্রমণ করবে।’ভেবেই নীলাদ্রি শায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে মাথা নাড়লো।”

“শায়লা বেগম নীলাদ্রি কে সুন্দর করে বিয়ের কনে সাজিয়ে দিলেন।মেরুন রঙের বেনারসিতে গোল্ডেন কালার স্টোন বসানো।মাথায় লাল রঙের দোপাট্টা।হাত ভর্তি মেরুন রঙের চুড়ি।হালকা গহনা,এবং মুখে হালকা মেকআপ,ঠোঁটে মেরুন রঙের লিপস্টিক,নাকে নোজ পিন,কানে ঝুমকা,চুলগুলো খোপা করে কাঠগোলাপের গাজরা লাগিয়ে দিলো শায়লা বেগম।তারপর নীলাদ্রির চিবুক ধরে বললেন,’বাহ!কতো সুন্দর লাগছে তোমায়।আজ আমার নিহান তো তোমার থেকে একদমই চোখ সরাতে পারবে না।আমার ছেলেটা তোমায় এই রূপে দেখে পা**গল হয়ে যাবে।”

“নীলাদ্রি মনে মনে বললো,’আপনার ছেলে তো পা**গলই।নতুন করে পা**গল হওয়ার কি আছে!’বলেই হঠাৎ কেনো জানি নীলাদ্রির বধু বেশে নিজেকে খুব দেখতে ইচ্ছে করলো।যতো যাই কিছু হোক না কেনো নিজেকে বধু সাজে সব মেয়েরই একবার না একবার দেখার সাধ জাগে।নীলাদ্রির ও তাই হলো।ও হন্যে হয়ে আয়না খুজতে লাগলো।শায়লা বেগম সেটা খেয়াল করে বললেন,’কিছু খুজছো মামনি?

“নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করলো ,’আয়না কোথায়?”

” শায়লা বেগম ম্লান হাসি দিয়ে বললেন,’এই ঘরে আয়না নেই।তবে নিহানের ওয়াশরুমে আয়না কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা আছে।তুমি সেখানে গিয়ে আয়না দেখে আবার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিও।”

“শায়লা বেগমের এহেন কথায় নীলাদ্রি বেশ অবাক হলো।তবে নিহানের রুমের কথা শুনে ও বেশ রে**গে গেলো।তাই ব্যাগ থেকে নিজের ফোন বের করে ক্যামেরা অন করে; নিজেকে বউ সাজে দেখে বেশ চমকে গিয়ে ভাবলো,’সত্যি তো বধু বেশে আমাকে দেখতে অসাধারণ লাগছে।’
মনে মনে নিজেই নিজের প্রশংসা করলো নীলাদ্রি।”

“এদিকে মেহমানের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হয়েছে।এখন কাজীসহ সবাই নিচে হল রুমে বসে আছে।নীলাদ্রি এবং নিহান মুখোমুখি বসে আছে।নীলাদ্রি নিহানের দিকে একবারও তাকায় নি।অপরদিকে নীলাদ্রি কে বউয়ের সাজে দেখে নিহান বেহুশ প্রায়।তার মন চাইছে, এখুনি নীলাদ্রির গালে,ঠোঁটে টুপ করে কয়েকটা চুমু দিতে।কিন্তুু এতো মুরব্বিদের সামনে এগুলো করা ঠিক হবে না।’ ভেবে দুই হাত এক করে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো।”

“কাজী সবকিছু পড়ে নিহানকে কবুল বলতে বললেই, নিহান ৮-১০বার কবুল বলে ফেললো।সবাই তো সেটা দেখে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হলো।এদিকে কাজী সাহেব নীলাদ্রি কে কবুল বলতে বললে, নীলাদ্রি নিচের দিকে তাকিয়ে থম মেরে বসে রইলো।ও হয়তো মনে মনে পণ করেছে।আজ কিছুতেই কবুল বলবে না।”

#চলবে…

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নীলাদ্রি নিচের দিকে তাকিয়ে থম মেরে বসে রইলো।ও হয়তো মনে মনে পণ করেছে;আজ কিছুতেই কবুল বলবে না।”

“নীলাদ্রিকে চুপ করে থাকতে দেখে কাজী সাহেব আবারও বললেন,’মা বলো কবুল।”

“নীলাদ্রি তখনও চুপ করে রইলো।এদিকে নীলাদ্রির এই নীরবতা দেখে নিহানের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।নিহান সবার ভিড়ে র**ক্তিম দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো কবুল বলছো না কেনো?”

‘নীলাদ্রি এখনও চুপ।’

“সিতারা বেগম নীলাদ্রির কাঁধে হাত রেখে বললেন,’মা কবুল বল।’

“নিহান নীলাদ্রির শীতল চাহনি দেখে বুঝে ফেললো,’এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে কবুল বলবে না।’
নিহান বাঁকা হেসে নীলাদ্রির পাশে বসে; ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,’তখন কিন্তুু ইনহেলার টা এহতিশামের কাছে দেইনি।এখন কিন্তুু তোমার মায়ের ইনহেলার আমার কাছেই আছে।তুমি চাইলে দেখাতে পারি।আর তুমি যদি এখানে কোনোরকম সিনক্রিয়েট করো,তাহলে কিন্তুু আমার আরও ভ**য়ং**কর রূপ দেখবে।আর আমায় পুলিশের ভ**য় দেখিয়ে লাভ নেই।এখানে যে কয়জন উপস্থিত আছে; সবাই পুলিশের স্ত্রী,ভাই,বোন,বাচ্চা।সবাই আমায় খুব বিশ্বাস করে।তুমি চেঁচিয়ে এইসব কথা বললেও, কেউ বিশ্বাস করবে না।উল্টো তোমার এবং তোমার মায়ের অপমান হবে।আর তোমার মায়ের এমনিতেই শ্বাসকষ্ট এবং লো প্রেশার।বেচারি আন্টি তোমার জন্য চিন্তায় চিন্তায় পরপারে পাড়ি জমাবে।তুমি কি এটাই চাও?তাহলে আমি রাজি আছি।”বলেই ডেভিল হাসি দিলো নিহান।”

“নীলাদ্রির মা ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নেই।ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আত্মীয়-স্বজনরা ধীরে ধীরে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে।মায়ের কিছু হয়ে গেলে নীলাদ্রি কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা।’ভেবেই বি**স্ফো**রিত নয়নে নিহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে;এক নিঃশ্বাসে তিন বার কবুল বলে দিলো।”নীলাদ্রি কবুল বলা মাত্রই সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সিতারা বেগমের চোখজোড়া দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে লাগলো।সবাই ভাবলো,তিনি হয়তো একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে কান্না করছে।তাই সবাই তাকে স্বান্তনার বাণী শোনালো।”

“এদিকে নীলাদ্রির চোখ জলে টইটম্বুর হয়ে আছে।কিন্তুু এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে না।ও হয়তো চোখের পানিগুলো কে জোর করে আটকে রেখেছে।হঠাৎ সবাই হাসি-মুখে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।”

“সবাই চলে যাওয়ার পর সোফায় নীলাদ্রি এবং নিহান কে একসাথে বসানো হলো।সেটা দেখে ইয়াশের মনে লাড্ডু ফুটলো।ভাবলো,’ইশশ! ওই টকটকি যদি আমার বউ হতো,তাহলে আমরাও এইরকম ঘেঁষাঘেঁষি করে একসাথে বসতে পারতাম।কিন্তুু ওই টকটকি তো আমাকে দেখলেই তেলাপোকা দেখার মতো লাফিয়ে ওঠে।’ভেবেই ইয়াশের মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।ভাবলো,’আজ তো টকটকির বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেলো।এতো খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।এক কাজ করি একটা প্যাকেটে করে টকটকির জন্য খাবার নিয়ে যাই।যতোই হোক বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা।’ভেবেই ইয়াশ ইরার জন্য প্যাকেটে কিছু খাবার নিয়ে ঝড়ের গতিতে ওদের বাসায় গিয়ে ইরার রুমে উপস্থিত হলো।”

“রাত ১১টা বাজে।ইরা বিছানায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো।এমন সময় ইয়াশ ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে অদৃশ্য হয়ে গেলো।তারপর ইরার বিছানার পাশে থাকা টি-টেবিলে আস্তে করে প্যাকেট টি রাখলো।”

“কয়েকমিনিট পর ইরা ম্যাগাজিন রেখে টি-টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখলো, সেখানে খাবারের প্যাকেট।ইরা তো বেশ অবাক হলো।আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।ইরা বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।ওর মনে পড়ে গেলো ওর ঘাড়ে দু’টো’ দাঁতের দা**গের কথা।ইরা ভাবলো,’ছোটবেলায় শুনেছি,জ্বীনেরা নাকি স্বপ্নে বা সামনাসামনি মজাদার খাবার দিলে সেটা খেতে হয় না।খেলে সারাজীবনের জন্য ওই মানুষটি কে জ্বীনেরা বশ করে ফেলে।এতোদিন সেটা মুখে মুখে শুনলেও আজ দেখছি বাস্তবে ঘটছে।মনে হয় আমার ওপর কোনো আশিক জ্বীনের নজর পড়েছে।তাই তো আমাকে হরেক রকমের মজাদার খাবারের লোভ দেখিয়ে বশে আনতে চাইছে।হাহাহা আমি খুব সাহসী মেয়ে আমি এই খাবারে হাত ও লাগাবো না।’মনে মনে কথা গুলো বলে।ইরা সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললো,’এই যে অদৃশ্য আশিক জ্বীন।তোমার এই খাবার আমি খাবো না।তোমার খাবার তুমি খাও।আমাকে এতো সহজে পটাতে পারবেনা।’বলেই মুখ ভেং**চি কে**টে আবারও ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে পড়তে থাকলো।”

“ইয়াশ অদৃশ্য অবস্থায় ইরার কথাগুলো শুনে মন খারাপ করলো।কয়েক মিনিট পর ভাবলো, ‘যদিও দুই ঘন্টা আগেই আমি মজা করে র**ক্ত খেয়েছি।কিন্তুু এখন আমার আবারও ক্ষুধা লেগেছে।ইরা কে তো আর জোর করে খাওয়াতে পারবো না।এর থেকে ভালো আমি নিজেই খেয়ে ফেলি।’বলেই ইয়াশ টি-টেবিলে রাখা খাবারের প্যাকেট খুলে গপগপ করে নিঃশব্দে খেয়ে ফেললো।’তারপর ইরার দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে বাসায় চলে গেলো।”

“ইরা ম্যাগাজিন বন্ধ করে টি-টেবিলের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।দেখলো খাবারের প্যাকেট পুরো ফাঁকা।ভাবলো,’জ্বীন টা কি আমার কথা শুনে সত্যি খাবারগুলো খেয়ে নিলো?হাউ ইজ ইট পসিবল?”

“ইরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, রাত সাড়ে ১২টা বাজে।ভাবলো,’এখন নীলাদ্রি ঘুমিয়ে গেছে।আগামীকাল সকালে ফোন দিয়ে সব বলতে হবে।’ভেবেই ইরা ওর রুম থেকে বেরিয়ে;ড্রয়িং রুমের সোফায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো।”

————-
“নিহানের রুমে বিছানার এক কোণে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে নীলাদ্রি।মাথার দোপাট্টা দিয়ে চেহারা কিছুটা ঢাকা রয়েছে।নিহান নিজের জন্য হাতে এক গ্লাস ডুমুর ফলের জুস এবং নীলাদ্রির জন্য এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে ঢুকে;নীলাদ্রির দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো।নীলাদ্রি নিহানের উপস্থিতি টের পেয়ে, আরও গুটিসুটি হয়ে বসলো।এসির মধ্যেও নীলাদ্রি ঘেমে গিয়েছে।”

“নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে;ওর মুখের সামনে এক গ্লাস দুধ দিয়ে বললো,’এটা একটানে খেয়ে নাও।সারাদিন তোমার ওপর অনেক ধকল গিয়েছে।এটা খেলে এনার্জি ফিরে পাবে।”

“দোপাট্টা হালকা উচু করে নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো,’আমার ক্ষুধা লাগেনি।আমি এটা খাবো না।”

“নিহান নীলাদ্রির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘খাবে নাকি জোর করে খাওয়াবো?এইসব ছলাকলা এখানে চলবে না।রুটিন মতো খেতে হবে।আমার সাথে থাকতে হলে তোমার আরও শক্তির প্রয়োজন।”

“নীলাদ্রি চোখ পাকিয়ে বললো,’মানে?”

‘মানে সামনে আমাদের বাচ্চা হবে;তখন তুমি যদি হেলদি না হও,তাহলে বেবির ক্ষতি হবে।’

“নীলাদ্রি নিহানের কথা শুনে কটমটিয়ে বললো,’আপনাকে আমি স্বামী হিসাবে মেনে নিলেতো বাচ্চা হবে!”

‘হাহাহা আমি অলরেডি তোমার স্বামী হয়ে গেছি,এখন তোমার মানা না মানায় আমার কিছুই আসে-যায় না।তুমি নিজের ইচ্ছেতে এই বিয়েতে রাজি হয়েছো নীলাঞ্জনা।’

“নিহানের এহেন কথায় তেঁতে উঠলো নীলাদ্রি।দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’আমি মোটেও আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হই নি।আপনি আমার মা কে আর আমাকে হু**মকি দিয়ে রাজি করিয়েছেন।আর এখন এতো বড় মিথ্যা কথা কিভাবে বলছেন আপনি?”

“নিহান মুচকি হাসলো।কারণ,নীলাদ্রির রাগী মুখ খানা দেখার জন্যই কথাটা বলেছে।ভেবেই নীলাদ্রির কাছে এসে ওর দুই বাহু ধরে বললো,’তোমার সাথে এইসব বিষয় নিয়ে ঝগড়া করার ইচ্ছে আমার নেই।আজ রাত কে বলা হয়, ‘সোহাগ রাত।’আজ রাতে আমি তোমায় আদর-সোহাগে ভরিয়ে দেবো।আজ রাত আমাদের জন্য স্পেশাল রাত।তাই অযথা বকবক করে সময় নষ্ট করো না।এখন তোমাকে আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।তোমাকে কথাগুলো না বললে আমার এবং তোমার দু’জনের জন্যই সমস্যা হবে।তাই আমার কিছু কথা মনযোগ দিয়ে শুনবে।’বলেই নীলাদ্রির কাঁধে হাত দিতেই;নীলাদ্রি বিছানা থেকে নেমে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বললো,’খবরদার আমার গায়ে হাত দিবেন না।”

“নিহান এইবার রে**গে গিয়ে নীলাদ্রির দিকে তার লাল চোখ জোড়া দিয়ে তাকালো।তারপর ওর হাত ধরে কঠোর কন্ঠে বললো,’সমস্যা কি তোমার?আমার কথা শুনছো না কেনো?আজ তোমাকে আপন করে নিতে চাইছি।আর তুমি বারবার বাঁধা দিচ্ছো কেনো?”

“নীলাদ্রি নিহানের আচরণে বুঝে ফেললো, যে নিহান যেটা বলছে সেটা না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না।কিন্তুু নীলাদ্রি তো কখনোই রাজি হবে না; তাই নীলাদ্রির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।নীলাদ্রি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,’ আসলে প্রতিমাসে মেয়েদের যেই সমস্যা টা হয়;আমারও আজ সেই সমস্যা হয়েছে।প্লিজ এখন কিছু করবেন না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’কি বলছো তুমি?তোমার প্রয়োজনীয় সবকিছু এনেছো?নাকি আমি এনে দেবো?”

” নীলাদ্রি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বললো,’হুমম সবকিছু এনেছি।এখন একটু ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবো।হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।”

“নিহান চাইলে তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাদ্রি সত্যি বলছে নাকি মিথ্যা কথা বলছে;সবকিছু জানতে পারতো।কিন্তুু, নীলাদ্রির করুণ চাহনি দেখে নিহান আর কিছুই বললো না।সে নীলাদ্রির হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,’ফ্রেশ হয়ে এসে আমার পাশে ঘুমাবে।ভুলেও নিচে ঘুমাতে যাবে না।এইসব মেলোড্রামা আমার পছন্দ নয়।”

“নীলাদ্রি ভাবলো,’আপনার পাশে ঘুমালে সমস্যা নেই।আপাতত এতো বড় বিপদের হাত থেকে তো রক্ষা পেলাম; এতেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই।”ভেবেই নিহানের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে, ওর ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রায় ১ঘন্টা পর নীলাদ্রি ফ্রেশ হয়ে বের হলো।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো, নিহান চোখ বন্ধ করে আছে।নীলাদ্রি ভাবলো নিহান ঘুমিয়ে গেছে।ভেবেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।নীলাদ্রি তোয়ালে দিয়ে ওর চুলগুলো মুছতে মুছতে বেলকনির দিকে গেলো।কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মন ভরে নিঃশ্বাস নিলো নীলাদ্রি। তারপর রুমে ফিরে এসে নিহানের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’মানুষ এতো সুন্দর কিভাবে হয়?”

“এই পৃথিবীতে সবাই সুন্দরের পূজারী।রাস্তা-ঘাটে কোনো সুন্দর নারী বা পুরুষ দেখলে একবার না একবার নজর পরবেই।সেটা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক।অনেকে বলে, যার মন সুন্দর সেই প্রকৃতপক্ষে সুন্দর।এই কথাটা ১০০% সঠিক।কিন্তুু প্রতিটি মানুষ কিন্তুু প্রথমে সৌন্দর্য দেখেই প্রেমে পরে।কারণ প্রথম দেখায় কারো মন পড়া যায় না।একসময় ধীরে ধীরে সেই মানুষটি বিপরীত দিকের মানুষটিকে পছন্দ করতে শুরু করে।”

“আমরা অনেকেই গায়ের রং ফর্সা হলেই, তাকে সুন্দরের উপাধি দেই।কিন্তুু এটা সম্পূর্ণ ভুল।শ্যামলা বা কালো রঙের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও অনেক সুন্দর চেহারা আছে।যেটা আমাদের চোখে পড়ে না।মূলত ফর্সা হলেই তাকে সুন্দর বলা উচিত না।যদি বাহ্যিক ভাবে কোনো ব্যক্তির সৌন্দর্য বর্ননা করা হয়,তাহলে অবশ্যই ব্যক্তিটির চেহারার গঠন সুন্দর হতে হবে।যেমন,নিহানের জোড়া ভ্রুর নিচে চোখ
দুটো ভাসা ভাসা,চোখের পাপড়িগুলো বেশ কালো এবং ঘন,সরু নাক,হালকা লাল রঙের পাতলা ঠোঁট জোড়া দেখলেই একবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে।সেই সাথে তার সিক্স প্যাক বডি ;সব মিলিয়ে একদম ‘প্রিন্স চার্মিং’ বলা যায়।”

“নীলাদ্রি খেয়াল করলো, বেলকনি থেকে আসা চাঁদের আলো সরাসরি নিহানের মুখের ওপর পড়ছে।এইমুহূর্তে নিহান কে চাঁদের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না।নীলাদ্রি আরেকটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলো, ‘নিহানের মুখে চাঁদের আলো পড়াতে নিহানের সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।মনে হয় নিহান চাঁদের আলোকে গ্রাস করে নিচ্ছে।”

“নীলাদ্রির ভাবনাটি সঠিক হলেও,অবুঝ মেয়েটি বিষয়টি নিয়ে ভাবলো না।কারণ সে জানেনা, যে ভ্যাম্পায়ার রা চাঁদের আলো থেকে শক্তি আহরণ করে।”

“নীলাদ্রি এভাবে কিছুক্ষণ নিহান কে নিয়ে ভাবার পর, বেলকনি থেকে নিচে ধুপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ পেয়ে ওর ধ্যান ভাঙলো।নীলাদ্রি দ্রুত বেলকনিতে গিয়ে আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো, সেখানে কেউ নেই।হঠাৎ নীলাদ্রি বেলকনি থেকে নিচে তাকাতেই দেখলো,’একটা কুচকুচে কালো বিড়াল দৌড়ে নিহানদের বাগানের দিকে গিয়ে চোখের পলকেই আড়াল হয়ে গেলো।এটা দেখে নীলাদ্রি তো ভ**য়ে শেষ।এতো রাতে আবছা অন্ধকারে ওইরকম একটি কালো বিড়াল কে দৌড়াতে দেখলে;যে কারো হার্টবিট বেড়ে যাবে।নীলাদ্রি ছোটবেলা থেকেই হরর মুভি থেকে ১০ হাত দূরে থাকে।নীলাদ্রি ওর বাবার সাথে মাঝে মাঝে যখনই হরর মুভি দেখতো,’তখনই ও আর ওয়াশরুমে যেতে পারতো না।ভাবতো, ভেন্টিলেটর দিয়ে ভূত ওকে দেখবে।নীলাদ্রির এই ভ**য় কাটতেই এক সপ্তাহ লেগে যেতো।”
“নীলাদ্রি আর কিছু ভাবতে পারলো না।দৌঁড়ে গিয়ে বিছানার এক পাশে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে কাঁপতে লাগলো।অপরদিকে সেই কালো বিড়াল টি গাছের আড়াল থেকে মানুষের চেহারার আকৃতি ধারণ করে বি**দ*ঘু**টে হাসি দিলো।”

“নীলাদ্রি বিছানায় আসতেই নিহানের ঘুম ভেঙে গেলো।ভ্যাম্পায়ার রা সাধারণত কম ঘুমায়।২৪ঘন্টার মধ্যে ওরা মাত্র ২-৩ঘন্টা ঘুৃমায়।নিহানের ঘুম এখন পুরোপুরি ভেঙে গেছে।নিহান নীলাদ্রি কে এভাবে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে ওর কাছে এগিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।নীলাদ্রির শরীরে পুরুষালী ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই,নীলাদ্রি ভ**য়ে যেই না চি**ৎকার দিতে যাবে;তখনই নিহান ওকে ঘুরিয়ে ওর ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিলো।প্রায় ৫মিনিট পর নিহান নীলাদ্রি কে ছাড়লো।”

“নীলাদ্রি মনে হয় কয়েক সেকেন্ডের জন্য ট্রমায় চলে গিয়েছিলো।নিহান তার ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া দিয়ে নীলাদ্রির ঠোঁট এতো জোরে চেপে ধরেছিলো, যে নীলাদ্রির ঠোঁট র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।নীলাদ্রি ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।নীলাদ্রির ওই ঠোঁট জোড়া দেখে নিহানের আবারও নেশা ধরে গেলো।নীলাদ্রি কে কিছু ভাবতে না দিয়েই আবারও নিহান ওর ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরলো।এইবার আর নীলাদ্রি সহ্য করতে পারলো না।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিহান কে ধা**ক্কা দিলো।কিন্তুু, নিহান কে এক বিন্দুও নড়াতে পারলো না।কারণ,নিহান একজন মানুষ রূপী শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার।নীলাদ্রির শক্তি ওর কাছে পিঁপড়া দৌড়ানোর মতো লাগছে।এভাবে প্রায় ১০মিনিট ধ**স্তা*ধ**স্তি করার পর নিহান নীলাদ্রি কে ছাড়লো।”

“নীলাদ্রি তো রে*গে*মে*গে ফা**য়ার হয়ে গেলো।নিহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝাঁ**ঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,’মেয়ে মানুষ দেখলেই শুধু গায়ে পড়তে মন চায়?যান না যান ওই প**তি**তালয়ে যান।সেখানে আমার থেকেও অনেক রূপবতী কা**মুক নারী পাবেন।তার ওপর গিয়ে, আপনার ওই বরফের মতো ঠোঁট দিয়ে মন ভরে নির্যাতন চালাবেন।একদম আমার ধারে-কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করবেন না।তাহলে কিন্তুু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।’অতিরিক্ত রে**গে গিয়ে নীলাদ্রি মনে হয় ওর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।তাই নিহান কে একাধারে কথাগুলো বলে সাপের মতো ফোঁ*স**ফোঁ*স করছে নীলাদ্রি।”

“এদিকে নীলাদ্রির মুখে প**তি**তালয়ে যাওয়ার কথা শুনে নিহানের তো মাথা ১০০ তে ১০০ গরম হয়ে গেলো।অতিরিক্ত রেগে গিয়ে সিংহের ন্যায় গ**র্জন করতে লাগলো।নীলাদ্রি নিহানকে এভাবে গ**র্জন করতে দেখে খুব ভ**য় পেয়ে গেলো।নিহান নীলাদ্রির দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে থেকে ওর দুই বাহু শক্ত করে ধরে; পৈ**শা**চিক হাসি দিয়ে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘তুমি আমায় প**তি**তালয়ে যাওয়ার কথা কেনো বললে?হাউ ডেয়ার ইউ ইডিয়ট?আমি শুধু তোমার,বুঝেছো তুমি?আমার হাত তোমার শরীরের সর্বাঙ্গে বিচরণ করার অধিকার আমার আছে।তুমি কি ভেবেছো, তোমার এইসব
নোং**রা কথা শুনে তোমাকে আমি ছেড়ে দেবো?হাহাহাহা কখনোও না।তুমি আমার বহু যুগের সাধনা।ভালোবাসি তোমায়;পা**গলের মতো ভালোবাসি।এই কেনো তুমি আমার ভালোবাসা বুঝতে চাও না?আমি এতো যুগ যুগ ধরে তোমার জন্য ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি;কিন্তুু তুমি দেখছি তার কোনো মূল্যই দিচ্ছো না।অবশ্য ভালোবাসার কোনো মূল্য হয় না।তবে আজ রাতে তোমাকে মূল্য দিতে হবে।’বলেই নীলাদ্রি কে কোলে করে ঝড়ের গতিতে ছাদে নিয়ে গেলো।”

“পূর্নিমা রাতে চাদের আলো এইবার দুইজন কপোত-কপোতীকে ঘিরে ধরেছে।চাঁদের আলো পড়তেই, নিহানের মুখস্রি আগের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে গেলো।নিহান কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো।চাদের আলো থেকে শক্তি গ্রহণ করার পর; নিহানের মাথা কিছুটা ঠান্ডা হলো।তারপর নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে ওর পেটে হালকা করে স্লাইড করতে করতে বললো,’এই ব্লু কালার নাইটি তে তোমায় অসাধারণ লাগছে নীলাঞ্জনা।খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তুু তুমি তো অসুস্থ; তাই তখন তোমাকে একটু লিপ কিস করেছিলাম।কিন্তুু তুমি কি করলে?আমাকে উল্টা-পাল্টা কথা বলে রাগিয়ে দিলে।”

“এদিকে নিহানের কথাগুলো মনে হয় নীলাদ্রির কানেই ঢুকছে না।ও তো একটু আগে নিহানের ঘাড় কাত করে ভ**য়ং**কর দৃষ্টিতে তাকানোর কথা ভুলতেই পারছেনা।”

“নীলাদ্রির আতং**কিত চেহারা দেখে নিহান তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে ওর মনের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলো।আর সফলও হলো।নিহান বুঝতে পেরেছে, নীলাদ্রি তার আচরণে বেশ ভ**য় পেয়ে গেছে।”

“নিহান বাঁকা হেসে ভাবলো,’তোমাকে আরও ভ**য় পেতে হবে।একটু আগে যেই বা**জে কথাটি বলেছো,তার জন্য তোমাকে সারা রাত লাভ টর্চার করা হবে নীলাঞ্জনা।’ভেবেই নিহান নীলাদ্রির নাইটির ফাক গলিয়ে তার হাত নীলাদ্রির পুরো পেটে বিচরণ করতে থাকলো।ধীরে ধীরে নিহানের ঠান্ডা হাত নীলাদ্রির পেটের ওপরে উঠতেই নীলাদ্রি খপ করে তার হাত ধরে ফেললো।’অনুনয়ের সুরে বললো,’প্লিজ আপনি আমার সাথে এখন কিছু করবেন না; আমি প্রস্তুত নই।”

“নিহান বাঁকা হেসে ভাবলো,’এইজন্যই তো তোমায় এভাবে স্পর্শ করছিলাম।এখন খেলা জমবে।’ভেবেই নীলাদ্রির পেট থেকে হাত সরিয়ে ওর গালে আলতো করে
হাত দিয়ে স্লাইড করে বললো,’সুইটহার্ট আজ সারা রাত আমরা এই ছাদে পূর্নিমার চাঁদ গায়ে মাখবো।আর তুৃমি সারা রাত ঘুমাতে পারবে না।আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।ভুলেও যদি দু’চোখের পাতা এক করেছো,তাহলে তোমার কোনো বাঁধা আমি শুনবো না।”

“নিহানের এহেন কথা শুনে নীলাদ্রি পড়লো বিপাকে।ভাবলো,’আমি তো এমনিতেই ঘুম কাতুরে।তার ওপর সারাদিন যে পরিমাণে ধকল গিয়েছে। আমি কিভাবে সারা রাত জেগে এই তার-ছেঁড়া সাইকোটার দিকে তাকিয়ে থাকবো?অবশ্য সাইকোটা যেই সুন্দর। দেখলেও মন ভরে না।তবুও এই লোক আমার জীবন নষ্ট করেছে।কিছুতেই আমি তার কথা শুনবো না।’পরক্ষণেই ভাবলো,’যদি লোকটা আমার অসুস্থতার ব্যাপারে মিথ্যা বলা টের পেয়ে যায়,তাহলে তো আমি শেষ।নাহ যতো কষ্টই হোক আজ আমায় এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।আচ্ছা সাইকোটার কি চোখে ঘুম নেই?যেভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে মনে হয় নিশাচর প্রানী।ইতর,নির্লজ্জ,বেহায়া লোক।মনে মনে এইরকম অসংখ্য গালি নিহান কে দিয়ে নীলাদ্রি অসহায় মুখ করে বললো,’দেখুন আমি ঘুমাতে খুব ভালোবাসি।আমি বেশি হলে আর মাত্র এক ঘন্টা কষ্ট করে জেগে থাকতে পারবো।কিন্তুু, তারপর চোখ তো আর আমার কন্ট্রোলে থাকবে না।এক কাজ করবেন,আমি ঘুমিয়ে গেলে আপনি আমার চোখ দুটোকে আঙুল দিয়ে খুলে রাখবেন।”

“নিহান এতক্ষণ তার পাওয়ার দিয়ে নীলাদ্রির মনের কথাগুলো শুনে অন্যদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিলো।যখন শুনলো,নীলাদ্রি সারা রাত জাগতে পারবে না; তখনই নীলাদ্রির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘যখনই দু’চোখের পাতা এক করবে,তখনই ফুলসজ্জা হয়ে যাবে।তখন চাইলেও আমায় ফেরাতে পারবে না।”

“নিহানের হুমকি মূলক বানী শুনে নীলাদ্রি অসহায় মুখ করে মাথা নেড়ে বললো,’ওকে।আমি সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।”

‘নিহান মুচকি হেসে বললো, ‘ইওর টাইম স্টার্ট’স নাউ।’

“নীলাদ্রি কিছুক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।নিহান ও অপলক দৃষ্টিতে তার প্রিয়তমা কে দেখতে থাকলো।নিহান এমন ভাবে নীলাদ্রি কে দেখলো,যেনো ওর আপাদমস্তক কোনো ফিতা দিয়ে ইঞ্চি ইঞ্চি করে মাপছে।নীলাদ্রি তো খুব অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলো।এভাবে ২ঘন্টা কাটার পর, নীলাদ্রি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।নিহানের বুকে আপনা-আপনি ঢোলে পড়লো।নিহান ঘুমন্ত নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আবারও তার ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া এমন মিলিয়ে দিলো।মনে হয়,যেনো কতো যুগের না পাওয়ার তৃষ্ণা মিটাতে লাগলো।”

——————-
“সকাল ৭টা থেকে ইরা নীলাদ্রির নাম্বারে ক্রমাগত কল করে যাচ্ছে।কিন্তুু নীলাদ্রি ফোন রিসিভ করলো না।কারণ নীলাদ্রি ওর ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলো।আর বর্তমানে নীলাদ্রি এখন নিহানের বুকে মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।”

“এদিকে ইরা নীলাদ্রি কে ফোনে না পেয়ে ওদের বাসার দিকে ছুটলো।নীলাদ্রির বাসার দরজায় আসতে দেখলো, দরজায় বড় একটা তালা ঝুলানো।ইরা বেশ হতাশ হয়ে ইউনিভার্সিটির দিকে রওনা দিলো।ভাবলো,’নীলাদ্রি বান্দরনি কে একবার পাই; তখন ওর চুল ছিড়বো।আমাকে বিপদে রেখে কোথায় চলে গেলো মেয়েটা?’ভাবতে ভাবতেই ইউনিভার্সিটিতে চলে গেলো।ইরা ক্লাসে ঢুকে দেখলো এহতিশাম আর ইয়াশ এসেছে।কিন্তুু আজ নিহান আসে নি।ইরা বেশ অবাক হলো।তারপর ইরা পেছনের বেঞ্চ ফাঁকা পেয়ে সেখানেই বসে পড়লো।এহতিশাম মনযোগ দিয়ে বই পড়ছে।আর ইয়াশ মনযোগ দিয়ে ইরা কে দেখছে। ৩টা ক্লাস হওয়ার পর, টিফিন পিরিয়ডে সবাই ক্যান্টিনের দিকে ছুটলো।নীলাদ্রি না থাকায় ইরার খুব মন খারাপ ছিলো।তাই ও গাল ফুলিয়ে বেঞ্চে বসে রইলো।”

“ইরা কে ক্লাসে একা দেখে, ইয়াশ যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।ইয়াশ গুটিগুটি পায়ে হেঁটে গিয়ে ইরার পাশে বসে বললো,’হাই টকটকি।”

“নির্জন ক্লাসে ইয়াশের কন্ঠ পেয়ে, ইরা বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।ইয়াশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’এই ছেলে এভাবে কেউ কাউকে ভ**য় দেখায়?”

“কই আমি তোমাকে ভ**য় দেখালাম?আমি তোমায় শুধু ‘টকটকি’ বলে ডেকেছি।আচ্ছা শোনো, আমি গতকাল সারা রাত জেগে তোমার জন্য একটা কবিতা বানিয়েছি।আমি জানি, তুমি গান খুব পছন্দ করো।তাই কবিতাটি তোমায় গানের সুরে শোনাতে চাই।”

“এই তীব্র গরমে ইয়াশের কথা শুনে ইরার শরীরে আরও গরম লাগতে শুরু করলো।ইরা ভাবলো,’দেখি মটু টা আমার জন্য কি এমন কবিতা বানিয়েছে!এমনিতেই মনটা খুব খারাপ।এই মটুর কবিতা শুনে মন টা যদি একটু ভালো হয়।’ভেবেই ইরা ওর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে বললো,’আচ্ছা শোনান আপনার গানের সুরে কবিতা।”

“ইয়াশ হাসি মুখে শুরু করলো,

“ওগো আমার ইরাবতী
তোমার প্রেমে পাগল আমি,
তুমি কি জানো না তা?
আমার কথা অবিশ্বাস করলে
কেটে ফেলবো তোমার পা,

রাত-বিরেতে ঘুরে আমি
জীব-জন্তুুর র**ক্ত খাই,
এই পৃথিবীর বিনিময়ে
তোমায় আমি চাই।”

ক্রেডিট বাই ~মেহের আফরোজ~

———
“ইরা ইয়াশকে গানের সুরে কবিতা বলতে বলে,বোতলের ছিপি খুলে সবেমাত্র পানি খাচ্ছিলো।ইয়াশের মুখে এমন গান শুনে ইরা বিষম খেলো।তাই শেষের ৪ লাইন শুনতে পেলো না।ওর কাশি উঠে গেলো।ইরাকে কাশতে দেখে,ইয়াশ ওর পিঠে হাত বুলাতে লাগলো।ইয়াশের স্পর্শ পেয়ে;ইরা বি**স্ফো**রিত নয়নে ইয়াশের দিকে তাকালো।”

#চলবে….

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-৫+৬

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।]

“ইয়াশের কথা শুনে নিহান তার ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা র**ক্ত হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে, সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।”

“নীলাদ্রি এবং ইরা দু’জনে ক্লাস শেষ হলে ইউনিভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো।নীলাদ্রি ফুচকাওয়ালা কে বলছিলো,’মামা আজকের তেঁতুল টা মনে হয় অন্য তেঁতুলের থেকে একটু বেশি টক,তবে খেতে বেশ ভালো লাগছে।ফুচকাওয়ালা ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বললো,’হুম।আজকে আপনাদের ক্যাম্পাসের একজন ছেলে এই তেঁতুল গুলো দিয়ে বলেছে, আপনাদের যেনো এই তেঁতুলের টক বানিয়ে দেই।”

“নীলাদ্রি তো বেশ অবাক হলো।কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কে দিয়েছে?আপনি কি তাকে চেনেন?”

” ফুচকাওয়ালা বললো,’উমমম ছেলেটার নাম জানি না।তবে দেখলে চিনতে পারবো।ছেলেটার গায়ের রং বিদেশীদের মতো ফর্সা।আর বেশ লম্বা-চওড়া।”

“ইরা নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’বুঝেছি তোর আশিক দিয়ে গেছে।সে তো আবার তোর ব্যাপারে সবকিছু জানে।”

“নীলাদ্রি বাকি ফুচকাগুলো না খেয়ে, দোকানদার কে টাকা দিয়ে চলে গেলো।ইরাও নীলাদ্রির পেছনে এসে বলতে থাকলো,’আমার মনে হয় এই ছেলেটা তোকে অনেক আগে থেকেই চেনে।নইলে, এতোটা জোর দিয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।”

“নীলাদ্রি ইরাকে বললো,’হুম ঠিকই বলেছিস।আর নিহান যে আমাকে অনেক পছন্দ করে, সেটাও আমি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।নইলে, বারবার কেনো এতোটা অধিকার খাটিয়ে কথা বলবে।তবে আমি সেইম এইজ রিলেশনে বিশ্বাসী নয়।”

“ইরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কেনো?সেইম এইজ রিলেশনশিপকে তো আজকাল বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।সমবয়সীরা একে-অপরের মনের কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারে।যেটা বয়সের গ্যাপ হলে বুঝতে পারে না।আমি তো সেইম এইজ রিলেশনশিপ বেশি পছন্দ করি।”

“নীলাদ্রি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’তুই ঠিক বলেছিস।সেইম এইজে রোমান্স, একে-অপরকে বুঝতে পারা এগুলো ঠিক থাকলেও স্যাক্রিফাইস টা থাকে না।যেটা বয়সের ডিফারেন্স হলে থাকে।বেশিরভাগ সমবয়সী প্রেমিক-প্রেমিকারা একে-অপরকে কথায় কিভাবে হারাবে,হেয় করবে সেই চিন্তা করে।অবশেষে তার শেষ পরিণতি হয় ব্রেকআপ বা ডিভোর্স। কিন্তুু বয়সের ডিফারেন্স হলে যেকোনো একজন স্যাক্রিফাইস করে।আর তাদের বেশিরভাগ কাপলগুলো বাহির থেকে দেখতে বেমানান মনে হলেও,ঘরের ভেতরে তারা খুব সুখে-শান্তিতে দিন কাটায়।আমি মনে করি ভালোবাসার অপর নাম স্যাক্রিফাইস।একে-অপরকে স্যাক্রিফাইস না করলে সেই সম্পর্ক কখনোও সুখের হয় না।”

“নিহান কে দেখলে তো মনে হয় আমাদের থেকেও ছোট।ওর স্কিন দেখেছিস?কতোটা ফ্রেশ।আমাদের দেশের ছেলেদের স্কিন এতোটা ফ্রেশ নয়।একটু হলেও স্পট থাকবে।নিহান কে দেখলে মনে হয়, তার বয়স ২০বছরের বেশি হবে না।যদিও আজকাল যুগের ছেলেদের দেখলে বয়স বোঝা যায় না।নিহানকে আমার অপছন্দ নয়;তবে তার সাথে রিলেশনশিপ সম্ভব না।আমার এইসব সমবয়সীদের ঝ**গড়াঝা**টি একদম পছন্দ নয়।এখন হয়তো, আমার কথা শুনে একদল সময়বয়সী রোমান্টিক কাপল এসে আমাকে রামধো**লাই দিবে।কিন্তুু, আমি কথাটা সবাইকে বলিনি।সবাই এক নয়।তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার মতামত হলো, আমি যদি কাউকে বিয়ে করি; সে আমার থেকে কমপক্ষে ৫-৬বছরের বড় হতে হবে।এর থেকে বড় হলেও সমস্যা নেই।”

“এতক্ষণ ইরা নীলাদ্রির কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনছিলো।নীলাদ্রির কথা শেষ হতেই ইরা বললো,’সৃষ্টিকর্তা যদি তোর ভাগ্যে সমবয়সী একজন কে লিখে রাখে তাহলে কি করবি?”

‘তাহলে আর কি করার মেনে নেবো।সৃষ্টিকর্তা যেটা করেন, বান্দার ভালোর জন্যই করেন।’

“ইরা ফিচেল হেসে বললো,’সত্যি গুরুমা আপনার থেকে এই জ্ঞানের বাণী আহরণ করতে পেরে, আমার জীবন ধন্য হলো।এই শিষ্য কে আপনি দোয়া করে দিন, যেনো আপনার মতো হতে পারি।”

“ইরার কথা শুনে নীলাদ্রি উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।”

———
“বাসায় গিয়ে নীলাদ্রি দেখলো, ওদের ডাইনিং রুমে দুইজন মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলা দাঁড়িয়ে সিতারা বেগমের সাথে কথা বলছে।”

“নীলাদ্রিকে দেখে শায়লা বেগম এগিয়ে এসে মিষ্টি করে হেসে বললেন,’বাহ!মামনি তুমি তো দেখছি ন্যাচারাল বিউটি।এইজন্যই তো আমার ছেলে নিহান তোমাকে এতোটা ভালোবাসে।”

“শায়লা বেগমের মুখে নিহানের নাম শুনে, নীলাদ্রি মনে হয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।নীলাদ্রি ইমতিয়াজ আহমেদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সে নিহানের বাবা।সিতারা বেগম নীলাদ্রি কে বললেন,’নীলাদ্রি মা তুই রুমে গিয়ে বিশ্রাম কর।আর তারা তোকে দেখতে এসেছে।তাদের ছেলের নাকি তোকে খুব পছন্দ হয়েছে।তাদের ছেলে নিহান একটি ভালো কোম্পানি তে চাকরি করে।নিচু স্বরে সিতারা বেগম নীলাদ্রি কে কথা গুলো বললেন।”

” নীলাদ্রি সিতারা বেগম কে কিছু না বলেই, চুপচাপ ওর রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে নীলাদ্রি আরেকদফা অবাক হলো।দেখলো, ওর বিছানার এক কোণে নিহান বসে আছে।নীলাদ্রি ভেতরে ঢুকতেই নিহান উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’নীলাঞ্জনা এতক্ষণ বাইরে কি করছিলে?তোমার জন্য কতক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছি, সেটা কি তোমার জানা আছে?’নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো,’আপনি আপনার বাবা-মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় কেনো এসেছেন?”

“নিহান বাকা হেসে বললো,’উফফ এতো ন্যাকা সাজো কেনো তুমি?একটু আগেই তো আন্টি তোমাকে সবকিছু বললো।তবুও আমার মুখ থেকে আবারও শুনতে ইচ্ছে করছে বুঝি?ওকে বুঝিয়ে বলছি,’আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য এসেছি।আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি এই বাসা থেকে বের হবে না।আমাদের আগামীকাল বিয়ে হবে।তারপর আমরা হানিমুনে যাবো।তারপর তুমি ইউনিভার্সিটিতে যাবে।”

“নিহানের মুখে বিয়ের কথা শুনে নীলাদ্রি মনে হয় ১২০ভোল্টেজের শকড খেলো।ভাবলো, ‘একটু আগেই তো ইরা কে বড় বড় ডায়লগ ছেড়ে আসলাম।এখন যদি ইরা জানতে পারে, আমি নিহান কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।তাহলে ও তো আমায় পঁচা নালায় ডুবিয়ে মা**রবে।’ভেবেই নীলাদ্রি নিহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘দেখুন আমি সবসময় সরাসরি কথা বলতে পোছন্দ করি। তাই আপনাকে বলছি,এই বিয়ে আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।কারণ,আমি সেইম এইজ রিলেশনশিপ বা বিয়ে পছন্দ করি না।আপনি আর আমি যেহেতু সমবয়সী তাই আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।”

“নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে ওর চুলের খোপা খুলে দিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলো।নীলাদ্রি হঠাৎ এইরকম হওয়াতে চমকে গেলো।নিহানের দিকে তাকিয়ে তেজি স্বরে বললো,’এটা কি ধরণের অ**সভ্যতা হচ্ছে?আপনি আমার রুমে এসে আমার চুলে হাত দেওয়ার সাহস পেলেন কিভাবে?এখুনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।”

“নিহান এইবার নীলাদ্রির হাত ধরে ওকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ওর কাঁধে চিবুক রেখে হাস্কি ভয়েসে বললো,’তোমার শরীরের সেই ঘ্রাণ এখনোও আগের মতোই আছে,শুধু বদলে গেছে তোমার মন-মানসিকতা।আমি চাইলে এখনই তোমাকে আপন করে নিতে পারি,সেই অধিকার আমার আছে।কিন্তুু, কিছু তিক্ত নিয়মের কারণে তোমার থেকে আমার এতোটা দূরত্বে থাকতে হচ্ছে। তবে চিন্তা করো না বিয়ের রাতেই তোমাকে নিজের করে নেবো।আর কখনোও তোমায় হারিয়ে যেতে দেবো না নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের কোমল স্বরে কথাগুলো শুনে, নীলাদ্রির শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।নীলাদ্রির নিঃশ্বাস ক্রমাগত ঘন হতে লাগলো।নিহান নীলাদ্রির ঘাড়ে ওর ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করলো।এই মুহূর্তে নিহানের নীলাদ্রির ঘাড়ে বা**ইট করতে ইচ্ছে করছে।ওর ভ্যাম্পায়ার সত্তা যেনো আবার নতুন করে জেগে উঠছে।কিন্তুু, নীলাদ্রি যে ওর সাধনা।কিভাবে তার ঘাড় থেকে সে র**ক্ত শুষে নিবে।কিন্তুু নিহানের যে খুব র**ক্তের তৃষ্ণা পেয়েছে।নিহান যেই র**ক্ত পছন্দ করে সেই র**ক্তই নীলাদ্রির শরীরে বইছে।নীলাদ্রির র**ক্তের গ্রুপ B+ পজিটিভ।এটা নিহানের প্রিয় র**ক্ত।তার অন্যতম কারণ হলো,’ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, B+পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের প্রাণীর মস্তিষ্ক ভীষণ তীক্ষ্ণ হয়।তাদের চিন্তা ও বুঝতে পারার সক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশ ভালো হয়ে থাকে।তাদের পেরিটোনিয়াল এবং টেম্পোরাল লোব বেশি সক্রিয় হয়ে থাকে।সেই সঙ্গে তাদের স্মৃতিশক্তিও বেশ প্রখর হয়ে থাকে।’
নিহান বিভিন্ন ব্লাডগ্রুপ নিয়ে পড়াশোনা করে এই বিষয়ে জেনেছে।তখন থেকেই এই র**ক্ত তার ভীষণ প্রিয়।যদিও নিহান অন্য গ্রুপের র**ক্ত ও পান করে।”

“নীলাদ্রি কে সে যতোই ভালোবাসুক না কেনো,তার অস্তিত্বে ভ্যাম্পায়ারের বসবাস। সে কোনোভাবেই তার অভ্যাসগুলোকে পরিবর্তন করতে পারবেনা।কারণ, এটা যে তার অস্তিত্বে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।যদিও নিহান মানুষের র**ক্ত খুব একটা পান করে না।কারণ,মানবজাতি কে ওর কাছে সবচেয়ে দুর্বল প্রাণী মনে হয়।কিন্তুু পশুর র**ক্ত নিহান প্রতিনিয়ত পান করে।নিহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, নীলাদ্রিদের বেলকনির ওপর একটি দোয়েল পাখি বসে আছে।নিহান পাখিটির দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে,ঝড়ের বেগে গিয়ে পাখিটিকে ধরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে খেয়ে ফেললো।”

“নীলাদ্রি এতক্ষণ ওর চোখজোড়া বন্ধ করে অজানা অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিলো।ওর এই অনুভূতির কারণ ও নিজেও জানেনা।নীলাদ্রি অনুভব করলো নিহান ওর কাছে নেই।ও চোখজোড়া খুলতেই দেখলো, নিহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে লেগে আছে হাসির ঝলক।নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি বেলকনিতে কি করছেন?”

“নিহান মুচকি হেসে ওর কাছে এসে বললো,’কেনো তোমার শরীরে আমার করা স্পর্শ ভালো লাগছিলো বুঝি?আবার করবো?”

“নিহানের মুখে ঠোঁটকা**টা টাইপ কথা শুনে নীলাদ্রি রেগে গিয়ে বললো,’এই ছেলে আপনি এতো নি**র্লজ্জ কেনো?মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়,কিছুই দেখি জানেন না।আপনাকে আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমার সাথে বিয়ে নিয়ে জোরাজুরি করলে কিন্তুু খুব খারাপ হবে।আমি রেগে গেলে কতোটা ডে**ঞ্জারাস হতে পারি,সেটা আপনার ধারণারও বাইরে।”

“নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে ওর হাত ধরে, হাতের উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে বললো,’আজকের দিনটা ভালো করে এনজয় করে নাও।আগামীকাল থেকে সবকিছু আমার কথামতো চলবে নীলাঞ্জনা।আর শোনো আমি তোমার সমবয়সী নই।আমি তোমার থেকে ৫বছরের বড়।’বলেই নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।নীলাদ্রি ড্যাবড্যাব করে নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।ক্ষনিকের জন্য ওর মস্তিষ্ক যেনো ফাঁকা হয়ে গেলো।”

#চলবে…

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নীলাদ্রি ড্যাবড্যাব করে নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।ক্ষণিকের জন্য ওর মস্তিষ্ক যেনো ফাঁকা হয়ে গেলো।”

“নিহান নীলাদ্রির রুম থেকে বের হওয়ার পর ডেভিল হেসে ভাবলো,’আমার সত্যিকারের বয়স জানলে,এইমুহূর্তে তুমি হয়তো অজ্ঞান হয়ে যেতে; তাই তোমার কাছে বয়স টা লুকিয়ে রাখলাম।তবে একসময় সত্যি আমি তোমার থেকে ৫বছরের বড় ছিলাম।আফসোস!তুমি সব ভুলে গেছো।”

“ইমতিয়াজ আহমেদ,শায়লা বেগম এবং নিহান সিতারা বেগমের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো।তাদের বিদায় দিয়ে সিতারা বেগম চোখের পানি মুছে নীলাদ্রির রুমে গিয়ে দেখলেন, নীলাদ্রি বিছানায় বসে বেলকনির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।”

“সিতারা বেগম তার মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন।তিনি নীলাদ্রির কাঁধে হাত রেখে বললেন,’নীলাদ্রি তুই এখনোও ফ্রেশ হোস নি কেনো?”

“নীলাদ্রি ওর মায়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বললো,’মা আমি এই বিয়েতে রাজি না।তুমি আমার সম্মতি ছাড়া কেনো ওদের কে মতামত জানিয়েছো?”

“সিতারা বেগম অশ্রুভেজা নয়নে বললেন,’একদিন তো সব মেয়েকেই শশুর বাড়ি যেতে হবে।তাছাড়া তোর বিয়ের বয়স অনেক আগেই হয়েছে।তোর বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো আরও আগেই তোকে বিয়ে দিতো।আর নিহান ছেলেটাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে।ওর সাথে বিয়ে হলে তুই খুব সুখী হবি মা।”

“নীলাদ্রি ওর মায়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’তাই বলে হুট করে আগামীকাল কেনো বিয়ে হবে?তাদের সম্পর্কে তুমি কতোটুকু জেনেছো?তাদের বাসায় গিয়েছো তুমি?তাদের বাসার আশেপাশের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খোঁজ খবর নিয়েছো?নাহ!তুমি কিছুই জানো না।আমার তো মনে হচ্ছে, আমি তোমার কাছে বোঝা হয়ে গেছি।তাই আমাকে একজন অচেনা অজানা লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে তোমার ঘাড় থেকে বোঝা নামাতে চাইছো।”

“সিতারা বেগম নিজের চোখের জল আর দমিয়ে রাখতে পারলেন না।তিনি কান্না করে নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরে বললেন,’তুই কখনোই আমার কাছে বোঝা নয় নীলাদ্রি।আমি সবসময় তোর ভালো চাই।আমার কাছে আমার এবং তোর সম্মান টা সবচেয়ে বড়।তোর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এই বাসায় তুই আর আমি একা থেকেছি।আজ পর্যন্ত আমাদের কেউ খারাপ কথা বলতে পারে নি।আমি চাই না সামনেও এই নিয়ে কেউ আমাদের আজেবাজে কথা বলুক।দয়া করে আমার থেকে এখন কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবি না।নিহানের সাথে বিয়ে হলে ধীরে ধীরে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।’বলেই সিতারা বেগম সেখান থেকে চলে গেলেন।”

“নীলাদ্রি এতক্ষণে বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে, যে নিহান এবং তার পরিবার নিশ্চয়ই ওর মা কে ভ**য় দেখিয়েছে।নীলাদ্রি যথেষ্ট প্রতিবাদী মেয়ে।অন্যায়ের কাছে সে কখনোই মাথা নত করে না।কিন্তুু, এই মুহূর্তে তার প্রতিবাদী রূপ জাগ্রত হলে সিতারা বেগমের ক্ষতি হতে পারে।কারণ,নীলাদ্রি নিহানের বাবা-মায়ের বেশভূষা দেখে বুঝতে পেরেছে তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি।’ভেবেই নীলাদ্রি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো।নীলাদ্রি বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।নিহান কে ও কিছুতেই বিয়ে করবে না।ও নিহান কে পছন্দ করলেও, বিয়ে করার জন্য কখনোই পছন্দ করেনি।তাছাড়া নিহানের খাপছাড়া স্বভাব নীলাদ্রির বরাবরই অসহ্য লেগেছে।নিহান ছেলে হিসেবে সুদর্শন।তবে সুদর্শন হলেই যে তাকে বিয়ে করতে হবে, এমন কোনো কথা নয়।কারণ,নিহানের আচরণ গুলোতে নীলাদ্রির মনে হয়েছে ছেলেটা মানসিকভাবে অসুস্থ।নইলে এভাবে কেউ কাউকে জোর করে বিয়ের জন্য মানসিক টর্চার করতে পারে না।তাছাড়া নিহানের কথাগুলো আরও অদ্ভুত টাইপের।’ভেবেই নীলাদ্রি ওর ব্যাগ থেকে খাতা আর কলম বের করলো।

“নীলাদ্রি কলম হাতে নিয়ে লিখতে শুরু করলো,’মা আমি বড় হয়ে বোঝার পর থেকে, তোমার সব কথা শোনার চেষ্টা করেছি।আমি জানি,নিহানের পরিবার তোমাকে এই বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্য বাধ্য করেছে।তার কারণ টা তুমি আমার কাছে লুকিয়ে গেছো।অবশ্য তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।তবে আমি নিহান কে বিয়ে করতে পারবো না।আমি এই বাসা থেকে চলে যাচ্ছি।তোমার ওষুধ গুলো টেবিলের ওপর রেখে যাচ্ছি।ঠিকমতো ওষুধ খাবে।আর চিন্তা করো না।সময় হলে আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসবো।আশা করি আমি চলে যাওয়ার পর নিহান তোমার কোনো ক্ষতি করবে না।কারণ, এতোদিনে তাকে আমার এতোটাও অমানুষ মনে হয় নি।আর একটা কথা বলতে চাই,কেউ চাইলেই হুট করে কাউকে মেনে নিতে পারে না।সেখানে আমাকে জোর করে সবাই বিয়ের আসরে বসাতে চাইছো।এখন সেই আগের যুগ নেই যে আমি এইসব জোরাজুরি সহ্য করবো।যুগ পাল্টে গিয়েছে;সাথে মানুষের মন ও পাল্টে গিয়েছে।দু’টি মনে জোড়া না লাগলে কখনোই কাউকে হুট করে আপন করে নেওয়া যায় না।আমার মনে হয়, নিহান নামের মানুষটিকে বিয়ে করে আমি কখনোই সুখী হবো না।তাই আমি এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার ওপর রাগ করে থেকো না।তোমার মেয়ে আবার তোমার কাছে ফিরে আসবে।”

“নীলাদ্রি আর কিছু লিখতে পারলো না।ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে চিঠির পাতায় পড়ছে।নীলাদ্রি কাভার্ড থেকে সব জামা-কাপড় নিয়ে সেগুলো ব্যাগে ভরে,আর সাথে কিছু টাকা নিয়ে চুপিচুপি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো।”

“রাস্তায় গিয়ে একটি সি এন জি ভাড়া করে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ১বছর আগে ফেইসবুকে ওর একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।সেখান থেকেই ওরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়।একবার নীলাদ্রিদের বাসায় মেয়েটি বেড়াতে এসেছিলো।তারপর নীলাদ্রি কে ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে।তাই আজ বিপদের সময় নীলাদ্রি ওদের বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

“এদিকে নিহান বাসায় আসার পর থেকে তার মন ছটফট করছে নীলাদ্রি কে দেখার জন্য।কতো বছর ধরে এই একটি মুখ দেখার জন্য সে অপেক্ষা করেছে।অপেক্ষার প্রহর সহজে শেষ হয় না।নিহানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।নিহানের নীলাদ্রি কে আবারও দেখতে ইচ্ছে করছে।যেই ভাবা সেই কাজ।নিহান আবারও নীলাদ্রিদের বাসায় গেলো।সিড়ি বেয়ে উঠতেই দেখলো, নীলাদ্রিদের বাসার দরজা হালকা চাপানো।নিহান মনে মনে খুব খুশি হয়ে ভাবলো,’আমাকে আবারও এখানে দেখে নীলাঞ্জনা সারপ্রাইজড হয়ে যাবে।’ভেবেই গুটিগুটি পায়ে নীলাদ্রির রুমে ঢুকেই, নিহান থমকে গেলো।”

“সামনে তাকিয়ে দেখলো,’সিতারা বেগম তার হাতে নীলাদ্রির লেখা চিঠি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।তার চোখজোড়া ফুলে আছে,হয়তো অনেক কেঁদেছে।নিহান এগিয়ে গিয়ে বললো,’আন্টি নীলাঞ্জনা কোথায়?”

“সিতারা বেগম নিহানের দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে, তার দিকে চিঠিটা এগিয়ে দিলো।পুরো চিঠিটা পড়ে নিহানের তো পুরো মাথা আগুন হয়ে গেলো।নিহান র**ক্তিম দৃষ্টিতে সিতারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনার মেয়ে কাজ টা মোটেও ঠিক করেনি।’বলেই নিহান তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে দেখলো,’নীলাদ্রি কোথায় আছে।নীলাদ্রি এখনও ঢাকার মধ্যেই অবস্থান করছে।’দেখেই নিহান ডেভিল হাসি দিয়ে, সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো।নিচে নেমে এহতিশাম আর ইয়াশকে ফোন দিয়ে কিছু কথা বলে;বিড়বিড় করে আওড়ালো,’আমি আসছি নীলাঞ্জনা,একটু অপেক্ষা করো সুইটহার্ট।”

“অপরদিকে সি এন জি গাজীপুরের কাছাকাছি আসতেই, হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে গেলো।ড্রাইভার নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’আপা আমার গাড়িতে মনে হয় কোনো সমস্যা হয়েছে।এখান থেকে গ্যারেজ অনেক দূরে।যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে।আপনার হয়তো ততক্ষণে দেরি হয়ে যাবে।একটা কাজ করি এই অর্ধেক ভাড়া টা আপনি রেখে দিন,আর আমি আপনাকে অন্য একটা সি এন জি তে উঠিয়ে দিচ্ছি।’নীলাদ্রিও লোকটির কথায় মাথা নাড়লো।”

“লোকটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা খালি সি এন জি দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে থামতে বললো।লোকটি ইশারা করতেই সি এন জি চালক গাড়ি থামালো।লোকটি নীলাদ্রিকে গাজীপুরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বললো।সি এন জি চালক নীলাদ্রির দিকে একবার তাকিয়ে ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়লো।”

“ড্রাইভার লোকটি হাসিমুখে নীলাদ্রির কাছে এসে বললো,’আপা আপনি ওই সি এন জি তে উঠুন।আমি তাকে সব বুঝিয়ে বলেছি।আপনি তাকে শুধু ভাড়া মিটিয়ে দিবেন,তাহলেই হবে।”

“নীলাদ্রি গাড়ি থেকে নেমে অপরপাশের সি এন জি চালকের দিকে একবার তাকালো।ধরণীতে তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে।এই গুমোট অন্ধকারে লোকটির চোখজোড়া ভালো করে দেখতে পেলো না নীলাদ্রি।লোকটি মাথায় কালো রঙের টুপি, আর মুখে মাস্ক পড়ে আছে।নীলাদ্রি আর ঘাটলো না।ওর গন্তব্যে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারলেই হয়।
নীলাদ্রি ওর ব্যাগ নিয়ে সি এন জি তে উঠে পড়লো।নীলাদ্রি উঠতেই,লোকটি ঝড়ের গতিতে সি এন জি চালাতে লাগলো।নীলাদ্রি তো এটা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।তাই লোকটিকে বললো,’এই যে শুনুন এতো জোরে গাড়ি চালাবেন না।গাড়ির স্পিড কমিয়ে চালান।আমার এতো তাড়াহুড়ো নেই।”

‘সি এন জি তে থাকা লোকটি গাড়ির স্পিড স্লো করে, মাথার টুপি এবং মাস্ক খুলে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,’তোমার তাড়া না থাকলেও আমার যে বড্ড তাড়া আছে নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি আবছা অন্ধকারে নিহানের কন্ঠ শুনে এবং চেহারা দেখে ভ**য় পেয়ে গেলো।ওর শরীরের শিরা-উপশিরায় মনে হয় ১২০ভোল্টেজের শকড লেগেছে।নীলাদ্রি ওর হাত দিয়ে চোখ জোড়া কচলে আবারও নিহানের দিকে তাকালো।দেখলো সত্যি স্বয়ং নিহান ওর সামনে বসে আছে।নিহান একটি নিরিবিলি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে,ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে ব্যাকসিটে এসে, নীলাদ্রির পাশে বসলো।তারপর নীলাদ্রির গালে আলতো করে স্লাইড করতে করতে বললো,’কি ভেবেছিলে? তুমি চাইবে আর আমার কাছ থেকে এতো সহজে পালিয়ে যেতে পারবে?হাহাহোহোহো ইওর আইডিয়া ইজ কমপ্লিটলি রং নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের এতো কাছাকাছি আসাতে নীলাদ্রি ভ**য়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু করেছে।ও আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, এখানে কোনো জনমানব নেই,আশেপাশে কোনো বাড়ি-ঘর নেই।গাড়ির মধ্যে শুধু দুইজন নর-নারী বসে আছে।একজনের চোখে তার প্রিয়তমার জন্য অপরিসীম ভালোবাসা রয়েছে।আরেকজনের চোখে বিপরীত মানুষটির জন্য ভ**য় এবং অসীম ঘৃ**ণা ফুটে উঠেছে।”

“নীলাদ্রি নিহানের হাত ওর গাল থেকে সরিয়ে বললো,’প্লিজ আমার জানামতে আমি বা আমার মা আপনার কোনো ক্ষতি করিনি।আর আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইলেও, আপনার মতো এমন অদ্ভুত মেন্টালিটির মানুষকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়।তাই দয়া করে আমার পিছু ছাড়ুন।যদি কোনো ভুল করে থাকি তার জন্য আমায় ক্ষমা করে দিন।’বলেই নিহানের পায়ে নীলাদ্রি হাত দিলো।”

“নীলাদ্রির নরম হাতের স্পর্শ পেতেই, নিহানের পুরো শরীর মনে হয় কারেন্ট হয়ে গেলো।’নিহান নীলাদ্রির হাত ধরে হাস্কি ভয়েসে বললো,’সেই একইরকম ভাবে আবার আমাকে ছুঁয়ে দিলে নীলাঞ্জনা।এইবার তো নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ছে।ইচ্ছে করছে সব বিধি-নিষেধ অগ্রাহ্য করে তোমাকে নিজের করে নেই।’বলেই নীলাদ্রি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।নীলাদ্রি নিহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলো।”

“নীলাদ্রি নিহানের পিঠে ওর নখের আঁচড় বসিয়ে দিলো।কিন্তুু, এতে নিহান একটুও নড়লো না বরং আগের থেকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এদিকে নীলাদ্রির দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলো।তার অন্যতম কারণ হলো, নিহানের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা।এভাবে জড়িয়ে ধরায় নীলাদ্রির মনে হচ্ছে,ও কোনো ডিপ ফ্রিজের মধ্যে অবস্থান করছে।যার ফলে নীলাদ্রির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।নীলাদ্রি এইবার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে করুণ স্বরে বলে উঠলো, ‘আমার খুব ঠান্ডা লাগছে। আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ।’নীলাদ্রির করুণ কন্ঠস্বর শুনে নিহান হুঁশে এলো।নিহান নীলাদ্রি কে ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আমরা আজ রাতেই বিয়ে করবো নীলাঞ্জনা।”

#চলবে…

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-৩+৪

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নিহান ওদের কৌতূহলী চেহারা দেখে রহস্যময় হাসি দিলো।”

“ইরা নিহান কে বললো,’এমন কোনো নিউজ তো টিভিতে দেখিনি।আপনি কিভাবে জানলেন?”

“নিহান উত্তরে বললো,’সবেমাত্র একটা-দুইটা নিউজ পেপারে বের হয়েছে; খুব তাড়াতাড়ি টিভিতেও দেখাবে।”

“নীলাদ্রির কৌতুহল যেনো এখনও কমছে না।নিহান কে দেখার পর থেকেই,ওর কাছে ছেলেটাকে বেশ অদ্ভুত লাগে।কেমন রহস্য করে কথা বলে ছেলেটা।’নীলাদ্রির ভাবনার মাঝেই ক্লাসে টিচার আসলো।নীলাদ্রি এবং ইরা সহ সবাই এই ক্লাস টিচারের ওপর ফিদা।সহকারী অধ্যাপক রেহান খান দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা এই অধ্যাপকের স্মার্টনেস এবং পার্সোনালিটির ওপর ফিদা।কিছু কিছু মেয়েতো তাকে সরাসরি প্রপোজ ও করেছে।কিন্তুু সে রিজেক্ট করে দিয়েছে।এদিকে অধ্যাপক রেহান ক্লাসে ঢুকতেই নীলাদ্রি এবং ইরা সহ বাকি মেয়েরা তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রির সেই অপলক চাহনি দেখে হিংসায় জ্ব**লে-পু**ড়ে যাচ্ছে নিহান।ওর চোখজোড়া ক্রমাগত র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করছে।নিহানের যদি হার্টবিট থাকতো তাহলে হয়তো পাশ থেকে ওর হৃদস্পন্দন স্পষ্ট শোনা যেতো।নীলাদ্রির এভাবে তাকিয়ে থাকা নিহান সহ্য করতে না পেরে,ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করলো।অধ্যাপকের দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকাতেই,কিছুক্ষণের মধ্যেই তার র**ক্তবমি হতে শুরু করলো।ক্লাসের সবাই বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।মেয়েরা হৈ চৈ শুরু করলো।এদিকে ছেলেরা মি.রেহান কে গিয়ে ধরে লাইব্রেরিতে নিয়ে গেলো।ওরা ডক্টর কে ফোন করলো।”

“ইরা সবার সাথে অনেক আগেই ক্লাস থেকে বের হয়ে গেছে।নীলাদ্রি যখনই বের হতে যাবে,তখনই ও খেয়াল করলো পেছন থেকে কেউ ওর হাত টেনে ধরেছে।নীলাদ্রির মনে হলো, ওর হাতে কোনো বরফ জাতীয় জিনিস লেগে আছে।”

“নীলাদ্রি পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিহান ওর হাত ধরে আছে।নীলাদ্রি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি এভাবে আমার হাত ধরলেন কেনো?”

“নিহান বাকা হেসে বললো,’নেক্সট টাইম ওই অধ্যাপকের দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে না।তাহলে সেটা তার জন্য মোটেও ভালো হবে না।”

“নীলাদ্রি বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌছালো।নিহানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি কি মানুষ নাকি অন্যকিছু্?উনি আমাদের অধ্যাপক।তার দিকে তাকিয়ে ক্লাস করবো না তো আপনার দিকে তাকিয়ে ক্লাস করবো?আর লোকটার র**ক্তবমি হয়েছে, তাই দেখতে যাচ্ছিলাম।আমি তো আপনার মতো নির্দয় ব্যক্তি না, যে একজনের বিপদের কথা জেনেও এভাবে ঘাপটি মেরে বসে থাকবো।আমার হাত ছাড়ুন।”

“নিহানের এই মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ছে।ইচ্ছে করছে নীলাদ্রির ঘাড়ে বাইট করতে।হঠাৎ এহতিশাম নিহানের হাত ধরে বললো,’নিহান নীলাদ্রিকে ছেড়ে দে।”
বলেই নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘নীলাদ্রি তুমি নিহানের কথায় কিছু মনে করো না।ও একটু অন্যরকম স্বভাবের।ধীরে ধীরে সবকিছু জানতে পারবে।”

“নিহান নীলাদ্রির হাত ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে একটু ঝুঁকে বললো,’দ্বিতীয়বার যেনো ওই অধ্যাপকের দিকে তোমাকে তাকাতে না দেখি।আমার কথা অমান্য করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি এইবার রেগে উড়নচণ্ডী হয়ে বললো,’হেই লিসেন,আমার যার
দিকে মন চায় তার দিকে তাকাবো।আপনি আমাকে এইসব বলার কে?”

“নিহান দুষ্টু হেসে বললো,’খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে নীলাঞ্জনা।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।” বলেই ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।”

“এহতিশাম ওদের কথোপকথন নীরব দৃষ্টিতে দেখছিলো।আর ইয়াশ এইসব বিষয়ে সময় নষ্ট না করে ডুমুর ফল খাচ্ছিলো।এহতিশাম ইয়াশের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো,’সারাদিন শুধু খাই খাই করিস।গতকাল রাতে এতোগুলো র**ক্ত খেয়েও কি তোর মন ভরে নি?”

“ইয়াশ মলিন চোখে তাকিয়ে বললো,’কি এমন খেয়েছি?ওদের র**ক্তে যেই বি**ষাক্ত পদার্থ ছিলো।ওটা খেয়ে আমার রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি।তাই তো এখন এটা খেয়ে পেট ভরছি।”

“এহতিশাম আর কিছুই বলার ভাষা খুজে পেলো না।ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে নিহানের পিছু ছুটলো।”

“আজ বাইরে খুব বেশি রোদ পড়ে নি।তবুও নিহান ছাতা হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে দাড়িয়ে ছিলো।
নীলাদ্রি এবং ইরা অধ্যাপক কে নিয়ে আলোচনা করতে করতে ইউনিভার্সিটির বাইরে আসতেই দেখলো, নিহান ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।ইরা নীলাদ্রি কে বললো,’এই ছেলেটা পা**গল নাকি?এখন তো রোদও নেই,আর বৃষ্টি আসারও সম্ভাবনা নেই;তাহলে এভাবে ছাতা মাথায় দিয়ে দাড়িয়ে আছে কেনো?”

“নীলাদ্রির এমনিতেই নিহানের আচরণে মাথা গরম ছিলো।ইরার কথা শুনে কটাক্ষ করে বললো,’তুই যা ভাবছিস তাই।এই ছেলেটার কেমিস্ট্রি নিয়ে অতিরিক্ত ঘাটাঘাটি করার কারণে পুরো মাথাটাই গেছে।দেখিস না ক্লাসে টিচার কোনো প্রশ্ন করলে কেমন গড়গড় করে উত্তর দেয়।”

“ইরা মাথা নেড়ে বললো,’ঠিক বলেছিস।আচ্ছা এখানে দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই,বাসায় চল।’বলেই ওরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”

“নিহান সেদিকে তাকিয়ে ভাবলো,’তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার রানী করবো নীলাঞ্জনা।তারপর ওই অধ্যাপক কেনো;কারো দিকেই তুমি চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।শুধু একবার আমার হয়ে যাও।তারপর বুঝবে আমি কি?”

—————
“রাতে নীলাদ্রি চেয়ারে বসে খাতায় আঁকিবুঁকি করছে আর ভাবছে,’বারবার আমার কেনো ওই বাদুড়গুলোর কথা মনে পড়ছে?আর ওই কালো ছায়ার কথা টা আমি ভুলতেই পারছিনা।কালো ছায়া টা আমায় নীলাঞ্জনা বলে ডাকলো কেনো?ওটা নিশ্চয়ই জ্বীন ছিলো।কারণ জ্বীনেরা সবকিছুই জানে।বিষয়টি মায়ের সাথে শেয়ার করলে, মা চিন্তা করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।এর থেকে ভালো হবে ইরাকে বিষয়টি শেয়ার করি।’ভেবেই নীলাদ্রি ইরাকে ফোন দিলো।একবার রিং হতেই ইরা ফোন রিসিভ করে বললো,’কিরে বান্দরনি রাত ১১টায় আমার কথা মনে পড়েছে?আকাশে তো চাঁদ দেখছি না।ওওওহ বুঝেছি চাঁদ আমার ফোনের অপরপাশে আছে।’বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।”

“নীলাদ্রি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’দেখ আমি তোর সাথে মজা করতে ফোন করিনি।খুব সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ফোন করেছি।”

“নীলাদ্রির গম্ভীর কন্ঠে কথাগুলো শুনে ইরা বেশ এক্সাইটেড হয়ে বললো,’হুমম এখন আমি সিরিয়াস মুডে আছি।কি বলবি বল।”

“নীলাদ্রি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গতকাল রাতের সেই কালো ছায়ার ঘটনা টা পুরোপুরি বললো।
ইরা তো এগুলো শুনে বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।আমতা আমতা করে বললো,’ককককিরে কি বলছিস তুই?ঢাকা-শহরে জ্বীন আসবে কোথা থেকে?এই তুই তোদের ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে রাখিস তো?আমি শুনেছি ওয়াশরুমে বদ জ্বীন থাকে।যারা ওয়াশরুমের দরজা খুলে রাখে, তাদেরকে নাকি বদ জ্বীন আকর্ষণ করে।”

“নীলাদ্রি ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি ওয়াশরুম থেকে এসে সবসময় দরজা লাগিয়ে রাখি।তাছাড়া এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।”

“ইরা ভীতু কন্ঠে বললো,’আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, তোর পেছনে কোনো দুষ্টু জ্বীন পড়েছে।এক কাজ কর, আগামীকাল ক্লাস মিস দিয়ে আমার এক পরিচিত কবিরাজ আছে তার কাছে যাবো।তার নাম মন্টু মোল্লা।উনি তোকে দেখলেই বলে দিতে পারবে তোর পেছনে কোন জ্বীন পড়েছে।’
নীলাদ্রি ইরার কথায় কবিরাজের কাছে যেতে রাজি হলো।”

———–
” পরের দিন নীলাদ্রি এবং ইরা হাজির হলো সেই কবিরাজের বাসার সামনে।বাসায় প্রবেশ করে দেখলো ওদের মতো অনেক মানুষ সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ওদের কে ডাকা হলো।ওরা ভেতরে ঢুকতেই কবিরাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ওহে জোড়া কন্যা আমার থেকে দুই হাত দূরত্বে ওই দস্তরখানায় বসে পড়ো।”

“নীলাদ্রির তো কবিরাজ কে দেখে বিষম খাওয়ার মতো অবস্থা হলো।কবিরাজ কে দেখে মনে হয় ওদের বয়সী।তার চুলগুলো স্পাইক করা,মুখে ছোট ছোট দাড়ি।আসন করে বসলেও, তার গঠন দেখে মনে হচ্ছে বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী।নীলাদ্রি ইরার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,’এটা কি সত্যি কবিরাজ?নাকি অন্যকেউ?আমরা ভুল জায়গায় আসি নি তো?”

“ইরা হেসে নিচু স্বরে বললো,’আরে এটা আসল কবিরাজ।আমার চাচাতো বোন কে জ্বীনে ধরেছিলো।তখন সে অন্য জায়গায় থাকতো,সেখানেই দেখিয়েছিলাম।পরে আমি চাচির কাছ থেকে তার ফোন নাম্বার রেখে দেই।আর এটা হলো ডিজিটাল যুগ।এই যুগের কবিরাজরা একটু স্টাইল করেই চলে বুঝলি।অতশত না ভেবে চল গিয়ে বসি।”

“ওরা কবিরাজের থেকে দুই হাত দূরত্বে বসতেই কবিরাজ চোখ বন্ধ করে বললো,’বলো তোমাদের কার কি সমস্যা?’

‘ইরা নিচু স্বরে কবিরাজ কে সবকিছু বললো।’

“কবিরাজ চোখজোড়া খুলে একবার নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’এই মেয়ে নিশ্চয়ই খোলা চুলে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলো।তাই তার রূপ এবং চুলের সুগন্ধি পেয়ে বদ জ্বীন পিছু নিয়েছে।সমস্যা নেই এগুলো দূর করা আমার হাতের মোয়া।আজ রাতেই সব সমাধান হবে।তবে তার জন্য আমার কিছু জিনিসপত্র লাগবে।তাই কিছু টাকা লাগবে।”

“ইরা জিজ্ঞেস করলো,’কতো টাকা?”

“কবিরাজ বললো,’আপাতত ৩ হাজার টাকা হলেই হবে।বাকিটা আগামীকাল সকালে দিলেই হবে।”

“নীলাদ্রি আগেই জানতো কবিরাজের কাছে আসলে টাকা লাগবে; তাই ও ব্যাগে ৫ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলো।”

“নীলাদ্রি কবিরাজ কে ৫ হাজার টাকা এগিয়ে দিতেই কবিরাজ তার ডান হাত উঠিয়ে বললো,’আমার পি এর কাছে দাও।”

“নীলাদ্রি ভাবলো,’যেমন দেখতে স্মার্ট, তেমন কথায় ও স্মার্ট।এমন কবিরাজ জীবনে প্রথম দেখলাম।’এর মধ্যেই কবিরাজের পি এ এসে হাজির হলো।নীলাদ্রি তার কাছে টাকাগুলো দিলো।”

‘কবিরাজ ওদেরকে আগামীকাল সকাল ১০টায় এসে হাজির হতে বললো।ওরা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।’

“এইদিকে নীলাদ্রি কে ক্লাসে না দেখে নিহানের মাথা গরম হয়ে গেলো।ও ইউনিভার্সিটির বাইরে চলে আসলো।আশেপাশে ওর ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে বোঝার চেষ্টা করলো নীলাদ্রি কোথায়। অবশেষে বুঝতেও পারলো,নীলাদ্রি ওর থেকে ১০মিনিটের দূরত্বে অবস্থান করছে।নিহান বাতাসের গতিতে সেখানে পৌঁছালো।রাস্তা দিয়ে কবিরাজ কে নিয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছিলো নীলাদ্রি এবং ইরা।হঠাৎ নীলাদ্রি ওর কাঁধে কারো ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া অনুভব করলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো নিহান র**ক্তিম দৃষ্টি নিয়ে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রি নিহানকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি এখানে?”

“নিহান গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ‘আজ ক্লাস মিস করলে কেনো নীলাঞ্জনা?’

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নিহান গম্ভীর কন্ঠে বললো,’আজ ক্লাস মিস করলে কেনো নীলাঞ্জনা?”

“নীলাদ্রি কথা বলার আগেই ইরা বলে উঠলো,’আমরা ক্লাস মিস করলে আপনার কি?আমরা আপনার কাছে কোনো কৈফিয়ত দিবো না।”

“ইরার কথা শুনে নিহান বাকা হেসে বললো,’ইয়াশ সত্যি বলেছে।তুমি একটা টকটকি।তোমার মুখ দিয়ে কি মিষ্টি কথা বের হয় না?এনিওয়ে তোমার মুখ থেকে কথা শোনার আগ্রহ আমার নেই।আমি নীলাঞ্জনার কাছে উত্তর জানতে চাইছি।’বলেই নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেনো?”

“নীলাদ্রি কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’আমি আপনার কাছে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নেই।আর হ্যা, কথায় কথায় এভাবে আমার গায়ে হাত দিবেন না।”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’ওহ মাই সুইটহার্ট তোমার গায়ে আমি ছাড়া আর কে হাত দিবে?তোমার শরীরে শুধু একবার না হাজার বার হাত দেওয়ার অধিকার আমার আছে।কারণ তুমি আমার…

“নিহানের কথা শেষ করতে না দিয়েই, ইরা কটাক্ষ করে বললো,’এই যে আশিক এইসব নাটক অন্য কোথাও গিয়ে করুন।আমাদের নীলাদ্রি ওইরকম মেয়ে নয়;যে আপনি সিনেমার কয়টা মিষ্টি মিষ্টি ডায়লগ ছাড়বেন,আর আমার বান্ধবী পটে যাবে।’এখন আমাদের পথ ছাড়ুন,আমরা বাসায় যাবো।”

“নিহান ইরার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হেসে বললো,’আমার নীলাঞ্জনা কে আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না।ওর মনে কখন কি চায় সব আমার জানা আছে।আর তোমাকে লাস্ট টাইম ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমার আর নীলাঞ্জনার মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হতে আসবে না।নীলাঞ্জনা আমার সাধনা,আমার জীবন,আমার রাজ্যের রানী।”

“নিহানের কথাগুলো শুনে ইরা এইবার হেসে কুটিকুটি হয়ে গেলো।তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,’মাত্র দুই দিনের পরিচয়ে এতো অধিকার দেখাচ্ছেন?শুনুন নীলাদ্রি আমার ছোটবেলার বান্ধবী। আমরা একসাথে বড় হয়েছি;এমনকি স্কুল,কলেজ,ইউনিভার্সিটিতেও একসাথেই পড়েছি।আর আপনি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে বলছেন আমার থেকে নীলাদ্রি কে আপনি বেশি চেনেন?সত্যি আজকের দিনের সেরা জোকস ছিলো এটা।আর আপনার মতো ছাতাওয়ালা লোককে আমার বান্ধবী বিয়েও করবে না।আপনি কেমন মানুষ যে রোদ নেই,বৃষ্টি নেই তবুও ছাতা মাথায় দিয়ে হাটেন!”

“ইরার কথা শুনে নিহানের ইচ্ছে করছে ওর ঘাড়ে বাইট করে সব র**ক্ত শুষে নিতে।কিন্তুু এইসব করলে নীলাঞ্জনা খুব কষ্ট পাবে।আর এখনও নীলাঞ্জনা কে বাস্তবের মুখোমুখি করার সময় আসে নি।’নিহান ওর চোখজোড়া বন্ধ করে, আবার খুলে ইরার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,’তুমি কি জানো তোমার বান্ধবীর প্রিয় ফুল কি?”

“ইরা অট্টহাসি দিয়ে বললো,’অবশ্যই জানি।ওর প্রিয় ফুল হলো সূর্যমুখী ফুল।”

‘উহুমম ওর আরেকটি প্রিয় ফুল আছে সেটা তুমি জানো না।’

“নীলাদ্রির মুখ থেকে এতক্ষণে কথা বের হলো।ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,’কি ফুল?’

‘নিহান বাঁকা হেসে বললো,’কাঠগোলাপ।”

“নীলাদ্রি এইবার অবাকের শীর্ষে পৌছালো।কারণ, ওর এই ফুলটিও বেশ পছন্দের;তবে কাউকে এই বিষয়ে কখনো বলা হয় নি।এমন কি ইরাকে ও না।তাহলে এই লোকটি কিভাবে জানলো?”

“নীলাদ্রি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি কিভাবে জানলেন?”

“নিহান প্রশ্ন টি শুনে বেশ মজা পেলো।মুচকি হেসে বললো,’তোমার আপাদমস্তক সবকিছু আমার মুখস্থ নীলাঞ্জনা। সময় হলে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।’বলেই সেখান থেকে সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।”

” নীলাদ্রি এবং ইরা দু’জনেই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো নিহানের যাওয়ার পানে।সেদিন আর ওরা কিছুই আলোচনা করলো না।দু’জনেই নিহান কে নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুব দিয়েছে।”

——————-
“রাত সাড়ে ১০টা।আহমেদ ভিলাতে ভাঙ**চুরের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো ইমতিয়াজ আহমেদ এবং তার স্ত্রী শায়লা বেগমের।”

“তারা লক্ষ্য করলো ডাইনিং রুম থেকে ভা**ঙচুরের আওয়াজ আসছে।তারা বিছানা থেকে নেমে ডাইনিং রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো, নিহান ডাইনিং টেবিলে থাকা গ্লাসগুলো ভেঙে ফেলেছে।আর ভয়ং**কর ভাবে গ**র্জন করছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে এখুনি ও ভ্যাম্পায়ারের রূপ ধারণ করবে।ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম উভয়েই বেশ ভ**য় পেয়ে গেলেন।তারা দু’জনেই তড়িঘড়ি করে নিহানের কাছে আসলেন।শায়লা বেগম বললেন,’কি হয়েছে নিহান বাবা?এভাবে ভা**ঙচুর করছিস কেনো?”

“নিহান র**ক্তিম দৃষ্টিতে শায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি আমার নীলাঞ্জনা কে খুজে পেয়েছি মা।”

“নিহানের কথা শুনে ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম দু’জনেই বেশ অবাক হয়ে গেলেন।ইমতিয়াজ আহমেদ উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,’কি বলো?কিভাবে খুঁজে পেয়েছো তাকে?”

“নিহান ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,’ আমি এক বছর যাবৎ যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি;সেখানেই।”

“নিহানের কথা শুনে ওর বাবা-মায়ের মুখমন্ডল যেনো খুশিতে চকচক করে উঠলো।শায়লা বেগম হাসি মুখে বললেন,’এতো খুশির সংবাদ। অবশেষে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হতে চলেছে।কিন্তুু,তুমি হঠাৎ ভা**ঙচুর করছো কেনো?”

“নিহান কন্ঠে তেজি ভাব নিয়ে বললো,’সে আমাকে চেনে না।এমনকি, আমার সাথে ভালোভাবে কথাও বলতে চায় না।সে অন্য পুরুষদের দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটায়।এটা আমার মোটেও সহ্য হচ্ছে না।আমি তাকে খুব শীঘ্রই এ বাড়িতে বিয়ে করে নিয়ে আসতে চাই।”

“নিহানের কথা শুনে ইমতিয়াজ আহমেদ বললেন,’সেতো ভালো কথা।ওর বর্তমান বাসার ঠিকানা আমাকে দাও।আমি আগামীকাল ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।”

“নিহান ওর বাবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, ‘সে আমাকে বিয়ে করতে কিছুতেই রাজি হবে না।কিন্তুু, তাকে ছাড়া আমি আর একমুহূর্তও থাকতে পারছি না।তাই আমি একটা প্ল্যান করেছি;সে অনুয়ায়ী তোমরা কাজ করবে।তাহলেই আমরা আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবো।’বলেই নিহান ওর বাবা-মাকে প্ল্যানের ব্যাপারে সবকিছু বললো।নিহানের কথা শেষ হতেই ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগমের মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো।”

—————
“ভোর সাড়ে ৫টায় ঘাড়ের কাছে ঠান্ডা কিছুর অনুভব হতেই চোখ মেলে তাকালো ইরা।শোয়া থেকে উঠে বসে চারিদিকে তাকালো।দেখলো রুমে কেউ নেই।ভাবলো,’আমার ঘাড়ে ঠান্ডা কিছুর অনুভব হলো কেনো?’ভেবেই ঘাড়ে হাত দিয়ে তরল কিছু অনুভব করলো।ইরা হাত সামনে আনতেই দেখলো হাতে র**ক্ত লেগে আছে।এটা দেখেতো ইরার প্রায় বেহুশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো।দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দেখলো, ওর ঘাড়ে দু’টো দাঁতের দা**গ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ইরা এই দা**গ দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলো।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভেজাতেই কেমন যেনো নোনতা স্বাদ পেলো।আয়নার দিকে তাকিয়ে জিহ্বা বের করে দেখলো, জিহ্বায় সাদা কিছু লেগে আছে।”

“ইরা ভাবলো,’আমি তো গতকাল রাতে ব্রাশ করে ঘুমিয়েছিলাম;তাহলে মুখে এইরকম স্বাদ অনুভব হচ্ছে কেনো?আর এতো নোনতা লাগছে কেনো?আর আমার ঘাড়ে এই দাঁতের দা**গ কিভাবে এলো?”

“ইরা রুমের চারিদিকে আবারও ভালো করে তাকিয়ে দেখলো, রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করা।বেলকনির দরজা সহ জানালাও ভেতর থেকে লক করা।তাহলে কিভাবে কি হলো?কিছুই ওর মাথায় আসছে না।ইরা ওর বাবার সাথে এতোটা ফ্রি না। ওর মা বেঁচে থাকলে হয়তো কথাগুলো তার সাথে শেয়ার করতো।’ভেবেই ইরা মোবাইল হাতে নিয়ে নীলাদ্রির নাম্বারে ডায়াল করলো।দুইবার রিং হতেই নীলাদ্রি ওর ফোন রিসিভ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বললো,’কিরে ইরা এতো সকালে ফোন করলি কেনো?”

“ইরা কন্ঠে আ**তংক নিয়ে নীলাদ্রি কে সবকিছু বললো।ইরার মুখে এহেন কথা শুনে নীলাদ্রির ঘুম পাখিরা উড়ে গেলো।ভ্রু কুচকে বললো,’কি বলছিস এসব?আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।আচ্ছা শোন আজ তুই হিজাব পড়ে ইউনিভার্সিটিতে আসবি,নইলে তোকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।আর আজ ১০টায় তো আমাদের কবিরাজের কাছে যাওয়ার কথা।তাই প্রথম দু’টো ক্লাস মিস দিতে হবে।তারপর ওরা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।”

” সকাল ১০টায় নীলাদ্রি এবং ইরা কবিরাজের বাসার সামনে হাজির হতেই দেখলো, সেখানে অনেক মানুষের ভিড়।ওরা সেখানে গিয়ে দেখলো, কিছু মানুষ কবিরাজের নাম নিয়ে অকথ্য ভাষায় গা**লাগা**লি করছে।কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করেছে।নীলাদ্রি কবিরাজের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো, সেখানে বড় একটা তালা ঝুলছে।নীলাদ্রি এবং ইরা এতক্ষণে বুঝতে পারলো ঘটনা কি ঘটেছে।”

“নীলাদ্রি ইরার দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’নে তোর ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল কবিরাজ সবার টাকা নিয়ে পালিয়েছে।কতো কষ্ট করে টিউশনি করে ৩হাজার টাকা দিয়েছি।শেষমেশ কাজের কাজ কিছুই হলো না।’ইরা ভীতু দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’সরি দোস্ত আমি বুঝতে পারিনি যে সে এমন ব**জ্জাত ভন্ড কবিরাজ।”

“নীলাদ্রি ম্লান হেসে বললো,’কি আর করার! এই মাসে মায়ের জন্য ১৫দিনের ওষুধ কিনতে হবে।আর বাকি টাকা ছাত্রীর মায়ের কাছ থেকে অ্যাডভান্স চেয়ে নেবো।’বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়লো।”

“ইরার মনের ভেতর খুব অপরাধবোধ কাজ করছে।আজ যদি ইরা এই কবিরাজের কাছে ওকে না নিয়ে আসতো,তাহলে এই দিন দেখতে হতো না।মনে মনে কবিরাজকে ইচ্ছেমতো গা**লি দিয়ে নীলাদ্রিকে বললো,’আমাদের ইউনিভার্সিটিতে যেতে হবে,নইলে আজকের ক্লাস টা মিস হবে।’ তারপর নীলাদ্রি এবং ইরা
ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।ওরা ক্লাসে গিয়ে দেখলো আজ নিহান,এহতিশাম এবং ইয়াশ ক্লাসে নেই।ইরা বেশ অবাক হয়ে বললো,’ওই তিন ভাইয়ের দল আজ ক্লাসে আসে নি,স্ট্রেঞ্জ!”

“এদিকে গতকাল রাত থেকে কবিরাজ মন্টু মোল্লা কে হাত-পা বেঁধে একটি রুমের মধ্যে ফ্লোরে ফেলে রাখা হয়েছে।মন্টু মোল্লা অনেকক্ষণ চিৎকার করেছে।কিন্তুু বাহির থেকে কোনো আওয়াজ আসেনি।একসময় কবিরাজ ক্লান্ত হয়ে গেলো।তখনই দরজায় ক্যাচক্যাচ শব্দ হতেই মন্টু মোল্লা সেদিকে তাকিয়ে দেখলো, নিহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নিহান বড় বড় পা ফেলে রুমে প্রবেশ করলো।নিহানের পেছনে এহতিশাম এবং ইয়াশও এলো।নিহান একটি চেয়ারে বসে ইয়াশ কে বললো,’ইয়াশ এই ভ**ন্ড কবিরাজের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দে।”

“ইয়াশ নিহানের কথামতো কবিরাজের কাছে গিয়ে তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিলো।মন্টু মোল্লা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।নিহান তার দিকে একটু ঝুঁকে তেজি কন্ঠে বললো,’নীরিহ মানুষগুলো কতো কষ্ট করে টাকা জমিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করতে তোর কাছে আসে।আর তুই তার সুযোগ নিয়ে তাদের টাকা নিয়ে পালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াস।আর তোর সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো,তুই আমার নীলাঞ্জনাকে মিথ্যা কথা বলে ওর থেকে টাকা নিয়েছিস। আজ তোকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।’বলেই নিহান ধীরে ধীরে তার ভ্যাম্পায়ারের রূপ ধারণ করতে থাকলো।নিহানের লাল চোখজোড়া,বাদুড়ের মতো মুখমন্ডল,নেকড়ের মতো শরীর, আর সামনে বের হয়ে আসা দু’টো বড় দাঁত দেখেই মন্টু মোল্লা অজ্ঞান হয়ে যেতে নিলে, নিহান তার ঘাড়ে বাইট করে দেয়।এতোটা জোরে বাইট করে যে মন্টু মোল্লার ঘাড় থেকে অনবরত র**ক্ত ঝরতে থাকে।”

“সেটা দেখে এহতিশাম আর ইয়াশ লোভ সামলাতে পারে না।ইয়াশ নিহানের কাছে এসে বলে,’ভাইয়া তুমি তো A+ পজিটিভ র**ক্ত পান করো না।আমি আর এহতিশাম ভাইয়া করি।তাই ওকে আমাদের হাতে ছেড়ে দাও।রাতে তোমাকে পশুর B+ পজিটিভ রক্ত এনে দেবো।’ ইয়াশের কথা শুনে নিহান তার ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা র**ক্ত হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে, সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।”

#চলবে…

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-০২

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“জন্মসনদেও এই নাম দেওয়া হয়নি।আর কেউ ওকে এই নামে ডাকেও না।তাহলে এই লোক কিভাবে ওর নাম জানলো?”

“নীলাদ্রির ভাবনার শেষ হতেই নিহান বলে উঠলো,’তোমার নামটা কিভাবে জানলাম সেটা নিয়ে এতো গবেষণা না করলেই নয়?”
“নীলাদ্রি পিলে চমকালো।ভাবলো,’আমি যে এই কথাটা ভাবছিলাম; সেটা এই লোক কিভাবে জানলো?”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’আমাকে নিয়ে হাজারবার ভাবার সময় তুমি পাবে।এখন এইসব ভাবনা বাদ দিয়ে আমার কথা শোনো।তুমি এই ক্লাসের টপার ছিলে।আমি মনে করি এখনোও তুমি টপার আছো।হয়তো কিছু কারণে তুমি এইবার চতুর্থ স্থান অধিকার করেছো।কিন্তুু সমস্যা নেই পরেরবার দেখবে তুমি আবারও টপার হবে।আমি তোমায় সাহায্য করবো।নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে এহতিশাম বললো,’তুমি চাইলে আমরা বন্ধু হতে পারি।তাছাড়া আমরা তো একই ক্লাসে পড়ি।’ইয়াশ এগিয়ে বললো,’জানেন আমাদের কোনো মেয়ে বন্ধু নেই।আপনি যদি আমাদের বন্ধু হন তাহলে খুব খুশি হবো।”

“ওদের কথা শুনে নীলাদ্রি কিছু বলতে যাবে,তার আগেই ইরা এসে বললো,’এই যে তিন ভাইয়ের দল; আপনারা জানেন না যে ছেলে আর মেয়ে কখনোও বন্ধু হতে পারেনা?ছেলে আর মেয়ে একসাথে চলাফেরা করলে ওদের মাঝে তৃতীয় জন হয় শ**য়তান।আর সেখানে আপনারা তিনজন এসেছেন আমার বান্ধবীর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে।আমি সেটা কখনোই মানবো না।’কাটকাট গলায় কথাগুলো বলেই ইরা নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’চল এখান থেকে।আমি থাকতে তোর কোনো বন্ধু লাগবে না।আর ছেলে বন্ধু তো অনেক দূরের কথা।’বলেই নীলাদ্রি কে টেনে নিয়ে গেলো।ওদের যাওয়ার দিকে নিহান,এহতিশাম এবং ইয়াশ হা করে তাকিয়ে রইলো।ওরা সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাসে চলে গেলো।”

“নীলাদ্রি এবং ইরা আজ আর ক্লাস করলো না।ওরা ইউনিভার্সিটির বাইরে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে।এমন সময় ইয়াশ এসে ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,’হেই মিস টকটকি তোমার কথায় এতো ঝাঁঝ কেনো?”

“ইরা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’আগে বলুন টকটকি মানে কি?”

“ইয়াশ হেসে উত্তর দিলো,’টকটকি মানে টক।অর্থাৎ তোমার কথায় এতো টক কেনো?”

‘ইরা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’একদম আমাকে এই নাম ধরে ডাকবেন না।আমার নাম হলো ইরা।”

“ইয়াশ মুখ ভেংচি কেটে বললো,’নামের মতো তোমার চেহারাটাও বেশ মিষ্টি। কিন্তুু তুমি মনে হয় তেঁতুল বেশি খাও।তাই তোমার কথাগুলো এইরকম টকটকি।”

“ইরা এইবার তেঁতে উঠে বললো,’দেখুন আমার মুখ ছোটাবেন না।তাহলে কিন্তুু…

‘তাহলে কি?’

‘ইরা এবার রাগে গরগর করে বলতে লাগলো,’এই মটু আপনি কথায় এতো পটু কেনো?আপনাকে এতো কথা কে শিখিয়েছে?চুপচাপ পড়ালেখা করে এখান থেকে চলে যাবেন।আমাদের ধারে-পাশেও যেনো আপনাকে না দেখি।”

“ইরার কথা শেষ হতেই সেখানে হাজির হলো নিহান।নীলাদ্রি নিহান কে দেখে বললো,’দেখুন না আপনার ভাই আর আমার বান্ধবী মিলে কিসব ঝগড়াঝাটি করছে।রাস্তায় মানুষজন দেখে কি ভাবছে বলুন তো?
প্লিজ আপনার ভাইকে আপনি নিয়ে যান।আমি আমার বান্ধবী কে ম্যানেজ করছি।’নীলাদ্রির কথা শুনে
নিহান কিছুটা অপমান বোধ করলো।তারপর ওর লাল চোখজোড়া দিয়ে ইয়াশের দিকে তাকাতেই,ইয়াশ শুকনো ঢোক গিলে বললো,’সরি ভাইয়া।এই টকটকির সাথে আমি আর কথা বলবো না।”

“ইয়াশের মুখে আবারও ‘টকটকি’ নাম শুনে ইরা এইবার তেড়ে যেতে নিলেই, নীলাদ্রি ওর হাত ধরে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে যায়।”

———–
“নীলাদ্রি এবং ইরার বাসা কাছাকাছি হওয়াতে ওরা এক রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করে।নীলাদ্রি বিকালে টিউশনি করে;বাসায় ঢুকে সিতারা বেগম কে জড়িয়ে ধরে ওর রেজাল্টের কথা জানালে,তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে,’আমাকে নিয়ে তুই অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করিস।তাই হয়তো পরীক্ষা ততোটা ভালো হয় নি।এখন থেকে আরও মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবি।দেখবি তুই আবারও আগের মতো ভালো রেজাল্ট করবি।’বলেই তিনি নীলাদ্রি কে বসতে বলে খাবার আনতে গেলেন।মা ও মেয়ে মিলে খাবার খেলো।”

“রাতে নীলাদ্রি পড়তে বসেছে এমন সময় বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঝড়ো বাতাস শুরু হয়েছে।নীলাদ্রি বেলকনির কাছে গিয়ে দরজা আটকাতে গিয়ে দেখলো,একটি কালো ছায়া ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।নীলাদ্রি সামনে তাকিয়ে দেখলো, কোনো মানুষ নেই,তাহলে এই কালো ছায়া কোথা থেকে আসলো?কালো ছায়াটি ওর আরো কাছে এসে ওর ঘাড়ের কাছে থাকা চুলগুলো সরিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,’তোমাকে আমার ভালো লেগেছে নীলাঞ্জনা।আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।তুমি তো আমার সেই নীলাঞ্জনা যাকে আমি ২০৯বছর যাবৎ খুজছি।তোমাকে আমি আমার রানী করে নিয়ে যাবো নীলাঞ্জনা।তুমি আমার ছাড়া আর কারো হতে পারবে না।যদি আমি ছাড়া অন্য করো বিষয়ে চিন্তাও করো, তাহলে আমি তোমার ভেতর ঢুকে গিয়ে তোমাকে গ্রাস করে নেবো।”

“ছায়াটির কন্ঠ এতোটা ভয়ং**কর ছিলো যে নীলাদ্রি সেখানেই ‘মা’ বলে জ্ঞান হারালো।”

“রাত ৩টায় জ্ঞান ফিরলো নীলাদ্রির।চোখ জোড়া খুলে দেখলো ওপরে ফ্যান ঘুরছে।মাথায় হাত দিয়ে আশেপাশে তাকালো।দেখলো ওর মাথার কাছে ওর মা বসে খাটের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে।নীলাদ্রির রাতের কথা মনে পড়তেই গাঁ ছমছম করে উঠলো।ভাবতে লাগলো,’ওই ছায়াটা কি ছিলো?কোনো দুষ্টু জ্বীন নয়তো?নাকি কোনো মানুষ মজা করেছে?কিন্তুু এখানে তো আমার সাথে তেমন কারো কথা হয় না।কারো বাসায় যাওয়া ও হয় না।তাহলে কে এসেছে?’নীলাদ্রি আর ভাবতে পারলো না।ওর মাথা ঝিমঝিম করছে।বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করলো,কিন্তুু শরীর সায় দিলো না।তাই আবারও ঘুমের রাজ্যে পারি দিলো।”

———————
“ক্যাম্পাসের মাঠের এক কোণে হাতে পেপার নিয়ে বসে আছে ইরা।ছোটবেলা থেকেই যেকোনো ক্রাইমের ওপর ইরার খুব ইন্টারেস্ট।আজ সকালে খবরের কাগজে এই তরতাজা নিউজটি পড়ে, পেপারের পাতাটি ছিড়ে ব্যাগে ভরে নীলাদ্রি কে দেখাতে এনেছে।নীলাদ্রি ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রথমে ক্লাসে গেলো।ক্লাসে গিয়ে ইরা কে দেখতে না পেয়ে মাঠের দিকে গেলো।গিয়ে দেখলো ইরা পেপারের কাগজ হাতে নিয়ে বসে আছে।নীলাদ্রির মনে একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।নীলাদ্রি চুপচাপ ইরার পেছনে গিয়ে ‘ভোওওওও’ করে আওয়াজ করতেই ইরা চি**ৎকার দিয়ে উঠলো।সেটা দেখে নীলাদ্রি হেসে কুটি কুটি হয়ে গেলো।”

“ইরা বুকে বার কয়েক থুথু দিয়ে বললো,’বান্দরনি এমনিতেই সকাল থেকে খুব ভ**য় পেয়ে আছি।তার উপর এভাবে তুই ভ**য় দেখালি।দেখিস আমিও সুযোগ বুঝে তোকে ভ**য় দেখাবো।’বলেই নীলাদ্রির দিকে কাগজটি ছুড়ে দিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে ক্লাসে চলে গেলো।”

“নীলাদ্রি কাগজটিতে চোখ বুলাতেই ওর চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।এরা সেই বখাটে ছেলেগুলো যারা সেদিন রাতে নীলাদ্রির পিছু নিয়েছিলো।কি বিভ**ৎস ভাবে ৫জন কে খু**ন করা হয়েছে।কারো চোখ নেই,কারো ঠোঁট নেই,কারো হাত নেই।নীলাদ্রি তড়িঘড়ি করে পেপারের লেখা পড়তে লাগলো।দেখলো ঘটনা টা গতকাল রাতে ঘটেছে।ওদের পাশে ই**য়াবা পাওয়া গেছে।আর সবচেয়ে বড় অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ওদের সবার ঘাড়ে দু টি দাঁতের দা**গ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ‘নীলাদ্রির গতকাল রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো।কি থেকে কি হচ্ছে সবকিছুই ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। নীলাদ্রি আর পড়তে পারলো না।কাগজটি দুমড়ে-মুচড়ে সেখানেই ফেলে ক্লাসে চলে গেলো।”

“এদিকে নীলাদ্রির যাওয়ার পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো নিহান,এহতিশাম এবং ইয়াশ।নিহান কাগজটি হাতে নিয়ে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাগজটি কু*টিকু*টি করে ছিড়ে ফেললো।তারপর ওরা তিনজন ক্লাসে চলে গেলো।”

“ক্লাসের মধ্যে চেহারায় ভীতু ভাব নিয়ে বসে আছে নীলাদ্রি। ওর পাশেই বসে নীলাদ্রির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে ইরা।নীলাদ্রির সেদিকে কোনো ধ্যান নেই।সেতো এখন ভাবনার জগতে বিচরণ করছে।কিছুক্ষণ পর ইরা কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,’ওই মাইয়া ওমন কইরা ভেটকাইয়া চাইয়া আছোস কেন?”

“অন্যসময় হলে ইরার মুখে আঞ্চলিক ভাষায় কথা শুনে নীলাদ্রি হেসে দিতো।কিন্তুু, এই মুহূর্তে সে রোবটের মতো ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,’আচ্ছা মানুষ কি মানুষের ঘাড় থেকে র**ক্ত চুষে নেয়?”

“নীলাদ্রির অদ্ভুত প্রশ্নে ইরার চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।ভ্রু কুচকে বললো,’কিসব অদ্ভুত টাইপ প্রশ্ন করছিস?মাথা টা গেছে নাকি?ওওওওহ বুঝতে পেরেছি,ওই পেপারে খবরটা পড়ে এগুলো ভাবছিস তাই না?হাহাহা আরে ধুর পা**গলি ওরা তো বখাটে ছিলো।রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের প্রতিনিয়ত উত্য**ক্ত করতো।তাছাড়া ওরা দোকানে গিয়ে অনেক বেশি চাঁদা তুলতো,যেটা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে ছিলো।তাই হয়তো কেউ প্রতিশোধ নিতে এভাবে ওদের মে**রেছে।”

” নীলাদ্রি ইরার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বললো,’তাই বলে প্রতিটি মানুষের ঘাড়ে এভাবে দাঁত বসিয়ে দেবে?”

“নীলাদ্রির কথা শেষ হতে না হতেই;পাশের বেঞ্চ থেকে নিহান রহস্য করে বলে উঠলো,’জানো তো বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে র**ক্তচোষা বাদুড়ের উপদ্রব অনেক বেড়েছে।”

“নিহানের এহেন কথায় নীলাদ্রি এবং ইরা দু’জনেই হকচকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি জানলেন কিভাবে?”

“নিহান একটু বিস্ময়ের ভঙ্গিতে বললো,”সেকি তোমরা জানো না?দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অনেক বাদুড় বাংলাদেশে এসে পড়েছে।কারণ বাংলাদেশেী প্রানীদের র**ক্ত নাকি ওদের খুব তৃপ্তি দেয়।তাই তো ওরা ধীরে ধীরে এখানে বসতি গড়ছে।”

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রি এবং ইরার চোখজোড়া রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেলো।যে কেউ দেখলে ভাববে নিহানের দিকে দুই জোড়া রসগোল্লা তাকিয়ে আছে।’নিহান ওদের কৌতুহলী চেহারা দেখে রহস্যময় হাসি দিলো।”

#চলবে…

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-০১

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“অমাবস্যা রাত।রাত সাড়ে ১১টায় পিচঢালা রাস্তায় ফেইরি লাইটের আলোতে বড় বড় পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে ২২বছর বয়সী একজন তরুণী;তার নাম নীলাদ্রি।কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে,হাতে রয়েছে ব্যাগ ভর্তি ওষুধ।তাকে অনুসরণ করে দ্রুত পা ফেলে চলেছে ৪-৫জন বখাটে যুবক।”

“পেছনে থাকা যুবক গুলোকে দেখে তরুণী আরও দ্রুত হেটে চলেছে।এক পর্যায়ে দৌড়াতে শুরু করলো।যুবক গুলোও দৌড়াতে আরম্ভ করলো।ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বলে উঠলো,’আজ মেয়েটাকে বাগে পেয়েছি;কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।’বলেই শ**য়তানি হাসি দিলো যুবকটি।”

“নীলাদ্রি দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় ওদের বাসার গলির সামনে চলে এলো।গলির কাছে আসতেই নীলাদ্রি সামনের দিকে তাকিয়ে ভ**য় পেয়ে গেলো।কারণ,ওর সামনেই আছে একটি কুকুরের র**ক্তাক্ত দেহ।কুকুরটির ঘাড় থেকে অনবরত র**ক্ত পড়ছে;আর সেগুলো পরম তৃপ্তি নিয়ে শুষে নিচ্ছে ৩টি বাদুড়।”

“চোখের সামনে এভাবে র**ক্তাক্ত অবস্থায় কুকুরটিকে দেখতে পেয়ে,আর তার সামনে ৩টি বাদুড় দেখতে পেয়ে নীলাদ্রির চোখজোড়া আরও বড় বড় হয়ে গেলো।নীলাদ্রি আর এক পা ও আগাতে পারলোনা।ওর পা জোড়া সেখানেই থমকে গেলো।কপাল পেয়ে দরদর করে ঘাম পড়তে লাগলো।”

“এদিকে যুবক গুলো এতক্ষণে সেখানে এসে হাজির হতেই,সামনে থাকা বী**ভৎস কাহিনীর সম্মুখীন হলো।ওরাও খুব ভ**য় পেয়ে গেলো।যুবকদের পায়ের ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ পেতেই বাদুড় গুলো ওদের দিকে তাকালো।এবং ওদের সামনেই দেখতে পেলো নীলাদ্রি চেহারায় আ**তংক নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।বাদুড় গুলো পাখা মেলে যুবকগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।তখনই হুশে আসলো নীলাদ্রি।ও ভেবেছে বাদুড় গুলো ওর দিকে আসছে।ভ**য়ে চোখজোড়া বন্ধ করে সেখানেই বসে পড়লো নীলাদ্রি।”

“এদিকে যুবকদল বাদুড় গুলোকে এগিয়ে আসতে দেখেই দৌড়ে পালিয়ে গেলো।নীলাদ্রি কয়েক সেকেন্ড পর পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো সেখানে কেউ নেই। গলির রাস্তা পুরোটা ফাঁকা।নীলাদ্রি আর একমুহূর্তও দেরি করলো না।শুকনো ঢোক গিলে বসা থেকে দাড়িয়ে, এক দৌড়ে ওর বাসার গেটের ভেতরে এসে হাঁপাতে লাগলো।এদিকে গেটের সামনে এসে দেখলো দারোয়ান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নীলাদ্রি দারোয়ান কে আর ডাক দিলো না।সিড়ি বেয়ে তিন তালায় উঠে ওদের ঘরের দরজায় ঠকঠক করতে লাগলো।ভেতর থেকে নীলাদ্রির মা সিতারা বেগম কাশতে কাশতে দরজা খুলে দেখলেন, নীলাদ্রির চেহারা থেকে শুরু করে পুরো জামা-কাপড় ঘামে ভিজে জুবুথুবু হয়ে আছে।”

“সিতারা বেগম কিছু বলার আগেই, নীলাদ্রি ওর মায়ের জন্য আনা ওষুধ গুলো ডাইনিং টেবিলে রেখে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে হাঁপাতে লাগলো।মাথার উপরে ফ্যান চলছে; অথচ নীলাদ্রির ঘাম ঝড়ে পড়া যেনো আরও দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলেছে।নীলাদ্রি কাভার্ড থেকে জামা-কাপড় বের করে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।প্রায় আধাঘন্টা পর শাওয়ার নিয়ে বের হলো নীলাদ্রি। এখন ওর কাছে বেশ ফ্রেশ লাগছে।এদিকে সিতারা বেগম নীলাদ্রির রুমে প্রবেশ করে বললেন,’কি হয়েছে তোর?এভাবে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে এলি কিভাবে?রাস্তায় কি কুকুর ধাওয়া করেছে?”

“মায়ের প্রশ্ন শুনে নীলাদ্রির মস্তিষ্কে আবারও সেই কুকুরটির র**ক্তাত দেহ ভেসে উঠলো,তার সাথে ভেসে উঠলো র**ক্ত চোষা ৩টি বাদুড়ের প্রতিচ্ছবি।নীলাদ্রি আবারও ঘামতে লাগলো।সিতারা বেগম নীলাদ্রির কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,’নিশ্চয়ই তোকে কুকুর ধাওয়া করেছে।এতো রাতে তোকে ওষুধ আনতে পাঠানো আমার একেবারেই উচিত হয় নি।কিন্তুু কি করবো বল?শ্বাসকষ্টের সাথে কাশিটাও সমান ভাবে বেড়ে চলেছিলো।তাই তোকে বাধ্য হয়ে যেতে বলেছি।কিন্তুু তোকে এতো রাতে বাইরে পাঠিয়ে আমিও খুব টেনশনে ছিলাম।

“মায়ের কথা শুনে এতক্ষণে নীলাদ্রির ওর মায়ের শ্বাসকষ্টের কথা মনে পড়লো।নীলাদ্রি ওর মায়ের ওষুধ গুলো এক মাসের টা একসাথে কিনে রাখে।কিন্তুু এই মাসে পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকায়,মাসের শেষে ওষুধ গুলো কিনতে ভুলে গিয়েছিলো।যার ফলে রাতে সিতারা বেগমের শ্বাসকষ্টের সাথে কাশি ও বেড়ে যায়।নীলাদ্রি তাই এতো রাতে বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হয়।আর নীলাদ্রি কে দেখতে পেয়েই এতোদিন রাস্তা-ঘাটে উ**ত্যক্ত করা ছেলেগুলো হা**মলে পড়তে চায়।কিন্তুু আকস্মিক ঘটনা ঘটায় সবকিছু গোলমাল হয়ে যায়।’কথাগুলো ভেবে নীলাদ্রি ওর মায়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ওষুধগুলো খেয়েছো মা?”

” সিতারা বেগম হাসি মুখে উত্তর দিলেন,’হুমম খেয়েছি।তাইতো এখন তোর সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছি।”

“নীলাদ্রি ওর মাকে বিছানায় বসালো,তারপর তার কোলে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে বললো,’মা আমার মাথাটা খুব ব্যথা করছে।একটু মাসাজ করে দাও প্লিজ।’
সিতারা বেগম মুচকি হেসে পরম যত্নে নীলাদ্রির কপালে মাসাজ করে দিলেন।একসময় নীলাদ্রি ঘুমিয়ে গেলো।নীলাদ্রির মাথা বালিশে রেখে, ওর পাশে সিতারা বেগমও শুয়ে পড়লেন।”

——————-
“সকাল ১০টায় ইউনিভার্সিটিতে উপস্থিত হয় নীলাদ্রি। ওর পেছনে এসে ওর মাথায় গাট্টা মেরে ইরা বললো,’কিরে বান্দরনি এতো দেরি করে আসলি কেনো?তোকে না বলেছিলাম সাড়ে নয়টায় এখানে থাকবি।”

“নীলাদ্রি ইরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’আরে আমি তো গতকাল রাতে মহাবিপদে পড়েছিলাম।তাই কাল রাতে খুব মাথা ব্যথা করছিলো।সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।”

“ইরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি বিপদে পড়েছিস শুনি?’
‘নীলাদ্রি ইরার দিকে তাকিয়ে ভ**য়ার্ত মুখ নিয়ে পুরো ঘটনাটা বললো।”

“পুরো ঘটনা শুনে ইরাও শুকনো ঢোক গিললো।কন্ঠে আ**তংক নিয়ে বললো,’বলিস কি?শহরের বুকে বাদুড় কিভাবে এলো?তাও আবার র**ক্ত চোষা বাদুড়?বাদুড় তো বেশিরভাগ গ্রামে থাকে।”

“নীলাদ্রি শুকনো মুখে বললো,’আমিও সেটাই ভাবছি।”

“ইরা বুঝতে পেরেছে নীলাদ্রি খুব ভ**য় পেয়েছে।তাই ওর ভ**য় কাটাতে হাসি মুখে বললো,’আচ্ছা ক্লাসে চল।আজ আমাদের অনার্স থার্ড ইয়ারের রেজাল্ট দিবে।আমি তো খুব এক্সাইটেড।মনে হচ্ছে তুই ফার্স্ট হবি,আর আমি সেকেন্ড হবো।”

“ইরার কথা শুনে নীলাদ্রি মুখ ভেংচি কেটে বললো,’তোর এই চাপা বন্ধ করে ক্লাসে চল।সারা মাসে ১০দিন ক্লাসে এসে আবার বড় বড় কথা বলিস।আমরা কেউ ফার্স্ট, সেকেন্ড হবো না।যদিও প্রতিদিন কোচিং করেছি,আর পরীক্ষাও বেশ ভালো হয়েছে।কিন্তুু, কেনো জানি মনে হচ্ছে এইবার আমি ফার্স্ট হতে পারবো না।”

“ইরা চোখ পাকিয়ে বললো, ‘হয়েছে সকাল সকাল কুফা টাইপের কথা না বলে ক্লাসে চল।’বলেই ওরা দু’জন হাত ধরে
ক্লাসে গেলো।”

“ক্লাসে গিয়ে ওরা মাঝের বেঞ্চে বসলো।কিছুক্ষণ পর ক্লাসে টিচার এসে রেজাল্ট ঘোষণা করার জন্য তার হাতে একটি কাগজ নিলো।নীলাদ্রি এবং ইরা সহ সবাই কৌতূহল নিয়ে টিচারের দিকে তাকিয়ে আছে।ক্লাস টিচার হাসি মুখে বললেন,’অনার্স থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সামে এইবার ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হয়েছে ৩জন ছেলে স্টুডেন্ট।বিষয়টি একদমই মিরাক্কেল।যেখানে প্রতিবার মেয়েরা এগিয়ে থাকে।’বলেই তিনি হাসি মুখে তিনজনের নাম বললেন,’ফার্স্ট নিহান আহমেদ,সেকেন্ড এহতিশাম আহমেদ এবং থার্ড ইয়াশ আহমেদ।আরও একটি মজার ব্যাপার হলো এরা ৩জন আপন ভাই।তারা চলতি বছরের শুরুতে এসে এখানে ভর্তি হয়েছে।’বলেই তিনি হাসিমুখে ডান সারিতে সামনের বেঞ্চে বসে থাকা তিনজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,’কংগ্রাচুলেশনস ফর ইউর গ্রেট জার্নি।”

“টিচারের কথা শুনে তিন ভাই হাসি মুখে দাড়িয়ে একসাথে বলে উঠলো,’থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার।প্লিজ প্রে ফর আজ।”

“তারপর টিচার নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললেন,’তুমি এইবার চতুর্থ স্থান অধিকার করেছো নীলাদ্রি।মনে হচ্ছে তোমার পড়াশোনার প্রতি মনযোগ কমে গেছে।নেক্সট টাইম বি কেয়ারফুল, ওকে?”

“নীলাদ্রি দাড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো,’ওকে স্যার।’তারপর টিচার কিছু লেকচার দিয়ে চলে গেলো।”

“এদিকে বেঞ্চে বসে থাকা তিনজন সুদর্শন পুরুষদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে ক্লাসের সাবাই তাকিয়ে আছে।ওরা তিনজন বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্লাস থেকে বের হয়ে বাইরে মাঠে চলে গেলো।ওরা চলে যেতেই সবাই ওদের মেধা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য শুরু করলো।”

“অপরদিকে দুই গালে দুই হাত দিয়ে থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে ইরা।নীলাদ্রি বুঝতে পেরেছে ইরার মন খারাপের কারণ।তাই ও ইরার গাল থেকে হাত সরিয়ে বললো,’দেখ তোকে আগেই বলেছিলাম আমরা কিছুই হতে পারবো না।কারণ, আমরা এই এক বছর নিয়মিত ক্লাস করিনি।কোচিং করলেও, ক্লাস করাটা বেশি জরুরি ছিলো।একদিকে তোর মা মারা গিয়েছে।সেজন্য তোর মানসিক অবস্থা খারাপ।আরেকদিকে আমার মা অসুস্থ হয়ে গেছে।সবমিলিয়ে আজকের এই অবস্থা। দেখবি নেক্সট টাইম আমরা ওদের থেকে এগিয়ে থাকবো।তবে এটা মানতে হবে ছেলেগুলো সত্যি খুব ব্রিলিয়ান্ট।”

“টিফিন পিরিয়ডে নীলাদ্রি এবং ইরা ক্যাম্পাসের ভেতরে মাঠের এক সাইডে ঘাসের ওপর বসে কথা বলছিলো।এমন সময় একটি পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,’হেই মিস নীলাদ্রি।”

“নীলাদ্রি এবং ইরা দু’জনেই পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিহান,এহতিশাম এবং ইয়াস দাড়িয়ে আছে।নীলাদ্রি ওদেরকে দেখে বেশ অবাক হলো।নীলাদ্রি ওদের বেশ খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।’ওদের তিন ভাইয়ের চেহারা প্রায় একরকম লাগে।ওদের গায়ের রং ধবধবে ফর্সা।মনে হয় ব্রিটিশদের বংশধর।খুব সহজেই চোখে পড়ে।কিন্তুু নীলাদ্রি এবং ইরা নিয়মিত ক্লাস না করায় হয়তো ওদের চোখে পড়েনি।ওদের কে হঠাৎ করে কেউ দেখলে ভাববে,ওদের জন্ম কয়েক সেকেন্ড আগে পরে হয়েছে।কিন্তুু ওদের কে যারা সূক্ষ্মভাবে দেখবে তারা চিনতে পারবে।কারণ, ইয়াশ একটু গুলুমুলু, এহতিশাম এর স্বাস্থ্য ইয়াশের থেকে একটু কম।আর নিহান কে দেখলে মনে হয় সে জিম করে।তার বডি ফিটনেস একদম পারফেক্ট।’কথাগুলো ভেবেই নীলাদ্রি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।হঠাৎ ওর নিহানের চোখজোড়ায় নজর পড়লো।নিহানের চোখজোড়া দিয়ে মনে হয় লাল আভা বের হচ্ছে।নীলাদ্রি ধীর পায়ে নিহানের দিকে এগিয়ে গেলো।এক হাত দূরত্বে আসতেই দেখতে পেলো নিহানের চোখের মণি একদম স্বাভাবিক।নীলাদ্রি বেশ অবাক হলো।দূর থেকে দেখলো একরকম;কাছে এসে দেখলো অন্যরকম।তাহলে কি এটা ওর মনের ভ্রম?”

“নিহান নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’এভাবে চোখ দিয়ে তাকালে তো নজর লেগে যাবে নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের মুখে নীলাঞ্জনা নামটি শুনে চমকে উঠলো নীলাদ্রি। কারণ, এই নাম টা ওর বাবা-মা ছাড়া কেউ জানেনা।জন্মসনদেও এই নাম দেওয়া হয়নি।আর কেউ ওকে এই নামে ডাকেও না।তাহলে এই লোক কিভাবে ওর নাম জানলো?”

#চলবে…

চড়ুই নীড়ে বসবাস পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0

#চড়ুই_নীড়ে_বসবাস
#আলো_রহমান(ফারজানা আলো)
#শেষ_পর্ব
.
আজ বিন্তুর গায়ে হলুদ। গোটা বাড়ি সেজেছে লাল নীল বাতিতে। সন্ধ্যা হলেই বাতিগুলো জ্বালানো হবে। উঠোনের মাঝে একটা স্টেজের মতো সাজানো হয়েছে। তার চারদিকে ফুল লাগানো হয়েছে স্বয়ং শর্মিলির তদারকিতে। পুরো উঠোনে তিরপল দিয়ে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। হুট করে বৃষ্টি এলে যাতে কোনো বিপদ না হয়। অমিত কোথা থেকে যেন একটা ক্যামেরা এনেছে। সেটা দিয়ে দুপুর থেকেই ছবি তুলতে আরম্ভ করেছে সে। শিরিন ব্যস্ত বিন্তুর পোশাক আর অলংকার গোছানোর কাজে। ফুলের গহনা আনতে একজনকে পাঠানো হয়েছিল। সেগুলো এখনো এসে পৌঁছায় নি। শিরিন চোখমুখ কুঁচকে উঠোনে গেল। কতগুলো বাচ্চা ছোটাছুটি করছে চারদিকে। শিরিন চারপাশে চোখ বুলালো। অমিতকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সে ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে গেল। অন্তু একটা ফুলের মালা নিয়ে দৌড়ে দোতলায় উঠছিল। শিরিন খপ করে ওকে ধরে বলল,
“এই অন্তু। তোর অমিত ভাইকে দেখেছিস?”
অন্তু অনাগ্রহ নিয়ে উত্তর দিলো,
“আমি কি জানি? রান্নাঘরে গিয়ে দেখো।”
“ও রান্নাঘরে কি করছে?”
“আমি জানি না। তুমি গিয়ে দেখো, আপা। আমি নিজের জন্য ফুলের গয়না বানাচ্ছি।”
অন্তু কথা শেষ করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। শিরিন বিরক্ত হলো। বিয়ের কনের গয়না এখনো আসে নি, সে নিয়ে কারোর মাথাব্যথা নেই। আর এদিকে সবাই ব্যস্ত নিজেদের সাজগোজ নিয়ে। যত্তসব! শিরিন রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলো। সেখানে এখন পুরি ভাজা হচ্ছে। সায়লা আর শর্মিলি দুজনেই সেখানে আছেন। শর্মিলি চেঁচিয়ে বলছেন, “মিষ্টি কোথায়? এখনো মিষ্টি কেন আসে নি? কে গেছে মিষ্টি আনতে?”
রান্নাঘরের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে অমিত। শুধু শুধু দাঁড়িয়ে নেই, ছবি তুলছে। তার হাতে ক্যামেরা। শিরিনের বিরক্তি দ্বিগুণ হলো। সে কপাল কুঁচকে সেদিকে এগিয়ে গেল। অমিতকে নিচু আওয়াজে বলল,
“বাইরে এসো।”
তারপর অমিতকে এক প্রকার টেনেই নিয়ে এলো বাইরে। অমিত উৎসাহ নিয়ে বলল,
“কী সুন্দর সুন্দর ছবি যে তুলেছি, শিরিন! তুমি ভাবতে পারবে না।”
শিরিন ধমকের সুরে বলল,
“চুপ করো। আছাড় মেরে তোমার ক্যামেরা ভেঙে ফেলবো আমি। যত্তসব! বিয়েবাড়িতে এত কাজ! আর তুমি পরে আছ ছবি তোলা নিয়ে। কবে আক্কেল হবে তোমার? এরকম করলে বাবা কখনো তোমাকে ভরসা করবেন?”
অমিত থতমত খেয়ে বলল,
“রাগ করছো কেন? ভুলটা কি করেছি?”
শিরিন চোখ বুজে বড় করে শ্বাস নিলো। যথাসম্ভব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
“বিন্তুর জন্য যে ফুলের গয়নাগুলো অর্ডার করা হয়েছিল, সেগুলো এখনো আসে নি। তুমি কি দোকানটা চেনো?”
অমিত হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,
“হু। আনবো?”
“হ্যাঁ, দ্রুত যাও। আধঘন্টার মধ্যে ফিরবে।”
অমিত হেসে বলল,
“কোনো চিন্তা করো না। আমি এই যাব, আর এই আসবো।”
অমিত বেরিয়ে গেল। শিরিন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সকাল থেকে রুনিকে কোথাও দেখে নি শিরিন। সে ঘরে একা একা বসে আছে। বলে দিয়েছে যাতে তার ঘরে কেউ না যায়। শিরিনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরলো। গতকাল রাতে বিন্তুর ব্যাপারে আপাকে সবটা জানানো কি ভুল হয়েছে? কি চলছে রুনির মনে? কি করতে চাইছে ও?
________________________________
বিন্তু ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আজ বৃষ্টি নেই, আকাশে মেঘও নেই। আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। সূর্য প্রায় ডুবুডুবু। একটু পরেই তাকে সাজানো হবে। যদিও তার সাজার ইচ্ছা নেই। তার খুব ইচ্ছা করছে ছাদে আরাম করে বসে এক কাপ চা খেতে। কিন্তু এখন চা পাওয়া সম্ভব নয়। রান্নাঘরে ভীষণ ব্যস্ততা। অবশ্য চাইলে দোতলায় মামীর রান্নাঘরে ঢুকে এক কাপ চা বানিয়ে নেওয়া যায়। আজকের দিনে মামী নিশ্চয়ই তাকে বকবে না। বিন্তু একবার ভাবলো, যাবে। পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত বদল করলো। তার চা বানিয়ে নিতে ইচ্ছা করছে না। বিন্তু ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে ছাদের একপাশে গিয়ে পা ছড়িয়ে বসলো। হুট করেই ছাদের দরজা খোলার শব্দ হলো। দরজা দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকলো বর্ণিল। বিন্তু হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বর্ণিলের চোখমুখ বিধ্বস্ত। সে ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে গেল বিন্তুর দিকে। কাতর গলায় বলল,
“আমার সাথে একটু কথা বল, বিন্তু। শুধু দুটো মিনিট।”
বিন্তু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। বর্ণিলের চোখেমুখে আকুলতা। বিন্তু শীতল গলায় প্রশ্ন করলো,
“কিসের কথা? আর তুই এখানে কেন? তোকে কে বলল আমি ছাদে?”
বর্ণিল তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিলো,
“কে বলবে? তুই জানিস না আমার ঘর থেকে এই বাড়ির ছাদ স্পষ্ট দেখা যায়? তোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি ছুটে এসেছি, বিন্তু।”
বিন্তু তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। বিদ্রূপ করে বলল,
“হঠাৎ ছুটে আসতে হলো কেন?”
বর্ণিল ব্যথিত গলায় বলল,
“বিন্তু, তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি নিজের ভুলগুলো বুঝতে পেরেছি।”
বিন্তু নির্লিপ্তভাবে জবাব দিলো,
“ক্ষমা করেছি। এবার তুই আসতে পারিস।”
বর্ণিল দিশেহারা বোধ করলো। বিন্তুর নির্লিপ্ততা তাকে আঘাত করলো। সে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে ধীরে ধীরে বলল,
“বিন্তু, এই বিয়েটা ভেঙে দে। আমি নিজে তোর বাড়ির সবার সাথে কথা বলবো। আমার মা আমাকে আর আটকাতে পারবে না। আমি তোকে এখনো ভালোবাসি।”
আচমকা এমন কথায় বিন্তু বুকের ভেতর কেমন একটা চাপ অনুভব করলো। এক মুহুর্ত অপলক তাকিয়ে রইলো বর্ণিলের দিকে। তারপরই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। বর্ণিল কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বিন্তুর হাসি থামছে না। বিন্তুর হাসির শব্দ যতই কানে আসছে, ততই বর্ণিলের চোখে জল জমছে। সে অস্ফুটে বলল,
“প্লিজ! থাম!”
বিন্তু কোনোমতে হাসি থামালো। তারপর কঠিন গলায় বলল,
“আমি তোকে ঘৃণা করি, বর্ণ। প্রচন্ড ঘৃণা করি। তুই এই মুহূর্তে আমার সামনে থেকে চলে যা। আর কখনো নিজের মুখ আমাকে দেখাবি না।”
বর্ণিল হতবিহ্বল হয়ে বলল,
“ক্ষমা কর, বিন্তু। ক্ষমা কর। আমি ভুল শুধরে নিতে চাই। আর একটা সুযোগ দে আমাকে। একটা সুযোগ! প্লিজ!”
বিন্তু কাঠ কাঠ গলায় বলল,
“লালন শাহ্ এর একটা কথা আছে না? সময় গেলে সাধন হয় না। সত্যিই হয় না, বর্ণ। কিসের সুযোগ চাইছিস তুই? সুযোগ পেলে কি তুই আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে পারবি? সুযোগ চাইতে লজ্জা করছে না তোর?”
বর্ণিল মাথা নিচু করে ফেললো। মৃদু গলায় বলল,
“করছে, বিন্তু, খুব লজ্জা করছে। কিন্তু…. কিন্তু আর উপায় নেই আমার। আমি কিছুতেই তোর এই বিয়ে মানতে পারবো না। তোকে যে আমি বিয়ে করেছিলাম!”
বিন্তু তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। বলল,
“তালাকও দিয়েছিস।”
বর্ণিলের মনে হলো অপমান আর লজ্জায় তার মাথাটা কাটা পরেছে। সে আহত গলায় বলল,
“আমি মাকে ভয় পেতাম, বিন্তু। আমি….আমি তখন চেয়েও পারি নি….।”
বর্ণিল কথা শেষ করতে পারলো না। সে কেঁদে ফেলেছে। বিন্তু বিরক্ত গলায় বলল,
“প্লিজ! তোর এসব কান্নাকাটির নাটক আমার ভালো লাগছে না। তোরা মা ছেলে কি চাস? আমার জীবনটা একেবারে শেষ করে দিতে? আমি বিয়ে করছি, নতুন করে জীবন গোছাতে চলেছি, সেটা সহ্য হচ্ছে না, এই তো?”
বর্ণিল কান্নাভেজা গলায় বলল,
“তেমনটা নয়, বিশ্বাস কর। আমি……।”
তার কথা শেষ হতে দিলো না বিন্তু। তার আগেই অস্ফুটে বলল, “উফ! অসহ্য!” তারপর হনহন করে বর্ণিলকে পাশ কাটিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেল সে। বর্ণিল মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো ছাদের কোণায়। তার দৃষ্টিতে শূন্যতা, চোখেমুখে ক্লান্তি, পুরো শরীরে ব্যর্থতার ভার। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো বর্ণিল। তার দৃষ্টিসীমা জুড়ে শুধুই শূন্যতার অস্তিত্ব।
_______________________________________
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। রুনি ঘর অন্ধকার করে বসে আছে। বাইরে রঙিন বাতি জ্বলছে। নানা রঙের আলো জানালা দিয়ে তার ঘরে ঢুকছে। সে মনে মনে পরিকল্পনা করছে বিন্তুকে এই বিয়ে থেকে বাঁচানোর। বিন্তুকে কি সাজাতে শুরু করা হয়েছে? তার একবার নিচে যাওয়া উচিত। রুনি চোখ বন্ধ করে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো। তার বড় ক্লান্ত লাগছে। ঝনাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো। রুনি চোখ খুলে তাকালো। বাইরে থেকে আসা রঙিন আলোয় বিন্তুকে চেনা যাচ্ছে। বিন্তু ছোট ছোট পা ফেলে পুতুলের মতো হেঁটে রুনির সামনে গিয়ে বসলো। বিন্তুকে সাজানো হয়েছে। ওর গায়ে হলুদ রঙের শাড়ি, শাড়িতে বেগুনি রঙের পাড়। গা ভর্তি গোলাপ ফুলের গয়না। রুনি মৃদু হাসলো। বিন্তুর গালে হাত রেখে বলল,
“খুব সুন্দর লাগছে রে তোকে, বিন্তু।”
বিন্তু মুচকি হাসলো। জানতে চাইলো,
“ঘর অন্ধকার করে বসে আছ কেন, বড় আপা?”
“এমনি রে। মাথাটা ধরেছে তো। তাই।”
বিন্তু এবারে রুনির হাত চেপে ধরলো। আবদারের সুরে বলল,
“নিচে চলো, আপা। সকাল থেকে ঘরে বসে আছ। আমার গায়ে হলুদে থাকবে না? এসো না!”
রুনি শান্ত হয়ে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর বিন্তুর দিকে আরও কিছুটা এগিয়ে এলো। শীতল গলায় বলল,
“পালিয়ে যা, বিন্তু।”
বিন্তু স্তব্ধ হয়ে গেল। কথা বলতে পারলো না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো রুনির মুখের দিকে। রুনি অস্থিরতা নিয়ে বলল,
“হা করে চেয়ে থাকিস না। তুই তো বলেছিলি, এই লোকটাকে দেখলেই তোর দম বন্ধ হয়ে আসে। কি করে সংসার করবি? বিন্তু, সারাজীবনের জন্য এই কষ্টটা তুই মাথা পেতে নিস না, বোন। ওই বাড়ির লোকগুলোকে তো আমি দেখেছি। তোকে ওরা শান্তিতে থাকতে দেবে না। তুই চলে যা। আমি তো আছি। এদিকে সব সামলে নেবো।”
বিন্তু অস্ফুটে বলল,
“কোথায় যাব?”
“যেখানে খুশি যা। শুধু দুটো দিন কাটিয়ে আয়। তারপর সব ঠিক করে দেবো আমি। আমার উপর ভরসা রাখ।”
বিন্তু নীরবে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর মৃদু হেসে বলল,
“আমার ব্যাপারে সবকিছু তুমি শুনেছ, আপা?”
রুনি শক্ত গলায় বলল,
“হ্যাঁ, শুনেছি। তাতে কি হয়েছে? অতীতে কিছু ভুল হয়েছে তোর। সেজন্য কি এখন তোর পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু থাকবে না? নিজের অপছন্দের একটা ছেলেকে বিয়ে করতে হবে? তোর কি ভালোভাবে বাঁচার অধিকার হারিয়ে গেছে?”
বিন্তু জানতে চাইলো,
“কার থেকে জেনেছ?”
রুনি ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো,
“শিরিন বলেছে। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। তুই আমার কথা শোন। দেরি করিস না। কোনো বান্ধবীর বাসায় চলে যা। অথবা আমার বাড়িতে যা। আমি তোর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যা, বিন্তু।”
বিন্তু নিচু গলায় বলল,
“মামাকে সবাই অপমান করবে, আপা।”
রুনি প্রায় চিৎকার করে বলল,
“বিন্তু! তুই কেন বুঝতে পারছিস না? তোর সারাজীবনের ব্যাপার! আর তোর হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন কি বাবাকে খুব সম্মান করে? তোকে বউ করে নিয়ে গিয়ে বাবাকে উদ্ধার করছে, এমন কথা তো সারাক্ষণই শুনিয়ে চলেছে।”
বিন্তু নিঃশব্দে হাসলো। বড় বোনের গায়ে হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলল,
“তুমি কিছু ভুল বলছো না। কিন্তু আমার কথাটা একবার শোন তুমি।”
রুনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“বল তোর কথা।”
“আপা, দুই বছর আগে যখন সব জানাজানি হলো তখন বর্ণর মা খুব অপমান করেছিল মামাকে। মামা মামী আমার জন্য অনেক সয়েছেন। সেই ঘটনার পরেও আমাকে ফেলে দেন নি। বরং তারপরেও আমার জীবনটা গুছিয়ে দিতে চেয়েছেন। হ্যাঁ, হয়তো নিজের মতো করে চেয়েছেন। কিন্তু চেয়েছে তো, আপা! মামী তো আমার মাকেও কিছু জানতে দেন নি। এতকিছুর পরেও আমাকে যেদিন দেখতে আসার কথা, সেদিন আমি নির্বোধের মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। মামাকে অপমানিত হতে হলো। যদি আজও আবার আমি এই বিয়েটা থেকে পালিয়ে যাই, তাহলে তো আবার মামা মামীর অসম্মান হবে। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সবাই ছি ছি করবে। তাছাড়া এই সবকিছু আয়োজনে অনেক খরচাপাতি করেছেন মামা। আমি কি করে পালিয়ে যাই? এটা অকৃতজ্ঞতা হবে না, বড় আপা? তুমিই বলো।”
রুনি অপলক তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। তার চোখ হঠাৎ ঝাপসা হয়ে এলো। সে হুট করে বিন্তুকে বুকে টেনে নিয়ে বলল,
“তোর খুব ভালো হবে, বিন্তু। খুব ভালো হবে।”
বিন্তু ফিসফিস করে বলল,
“কাঁদিয়ে দিলে তো। আমার চোখের কাজল লেপ্টে গেল সব।”
রুনি হেসে ফেললো। মনে মনে প্রার্থনা বাক্য উচ্চারণ করলো। “হে আল্লাহ! এই মেয়েটাকে তুমি রক্ষা করো।”
হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন খায়রুল সাহেব। আচ্ছন্নের মতো বললেন,
“রুনি, ঘরে একটু আলো জ্বালিয়ে দে তো মা। আলো জ্বালিয়ে দে।”
রুনি তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়ালো। ঘরে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে চিন্তিত মুখে বাবার দিকে তাকালো। খায়রুল সাহেব অস্থির হয়ে পায়চারি শুরু করলেন। বিরবির করে বলতে লাগলেন,
“বিন্তুও তো এখানেই আছে। মা রে, একটা ঘটনা ঘটে গেছে।”
রুনি এগিয়ে গেল। বাবার হাত ধরে বসিয়ে দিলো চেয়ারে। বলল,
“শান্ত হও, বাবা। কি হয়েছে? ঠান্ডা মাথায় বলো।”
খায়রুল সাহেব হতবিহ্বল হয়ে বললেন,
“মা, রুনি। যা, তোর ফুপু আর মাকে ডেকে আন। শিরিনকেও আসতে বল। যা, মা। জলদি যা।”
রুনি কিঞ্চিৎ ভয় পেলো। শীতল গলায় বলল,
“বাবা, কি হয়েছে?”
খায়রুল সাহেব ধমকের সুরে বললেন,
“আহ্! কেন কথা বাড়াচ্ছিস? যা বলছি কর, মা।”
রুনি দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেল। বিন্তু মূর্তির মতো বসে আছে। তার চোখেমুখে ভয়। খায়রুল সাহেব ভাগ্নির দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলেন। ভরসা দিয়ে বললেন,
“চিন্তা করিস না। আমি আছি।”
.
দশ মিনিটের মাথায় সবাই রুনির ঘরে একত্রিত হলো। অন্তুও ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। ইতোমধ্যে বাইরে আত্মীয় স্বজনরা কানাকানি শুরু করেছে। অনুষ্ঠান বাড়িতে পরিবারের সবাই দরজা বন্ধ করে দিয়ে কি এমন কথা বলছে? সায়লা অস্থির হয়ে পড়েছেন। ভয়ে আর দুশ্চিন্তায় উনার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। শর্মিলি অধৈর্য হয়ে বললেন,
“থম মেরে কেন বসে আছ, রুনির বাবা? কেন ডেকেছ বলবে তো।”
খায়রুল সাহেব কথা বললেন না। পকেট থেকে নিজের মোবাইল ফোন বের করে সেটা স্ত্রীর দিকে এগিয়ে দিলেন। শর্মিলি ভ্রু কুঁচকে ফোনটা হাতে নিলেন। ফোনের স্ক্রিনে ছোট্ট একটা এসএমএস। সেখানে লেখা,
“খায়রুল সাহেব, আপনি আমাদের জানিয়েছেন আপনার ভাগ্নির আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। অল্প বয়সে ভুল করে একটা বিয়ে করেছে, তারপর আপনারা তাকে ফিরিয়ে এনেছেন। এসব আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে আপনাদের মেয়েটির আগের ঘরে দুই বছরের সংসার ছিল। সে সন্তান সম্ভবাও হয়েছিল। এতকিছু জানার পরে আমাদের ছেলের সাথে এরকম একটি মেয়ের বিয়ে দেওয়া আর সম্ভব নয়। আমরা এই বিয়েটা দিচ্ছি না। ক্ষমা করবেন।”
শর্মিলি থমথমে মুখে বললেন,
“সত্যিই কি ওদের বাড়ি থেকে এটা পাঠিয়েছে?”
খায়রুল সাহেব শান্ত গলায় বললেন,
“হ্যাঁ। এসএমএস পাওয়ার পরে আমি ফোন করেছিলাম ওদের বাড়িতে। একই কথাই বলা হয়েছে। কথাটা হাবিবের বড় চাচা নিজে বলেছেন।”
সায়লা অস্থির হয়ে বললেন,
“কি বলেছেন, ভাইজান? উনারা কি বলেছেন? কি পাঠিয়েছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
শর্মিলি শীতল গলায় বললেন,
“শান্ত হও, সায়লা। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায় নি। তোমার মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে।”
সায়লা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। শর্মিলি এত সহজে কথাটা কি করে বলে ফেললো? রুনি মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। শর্মিলি ফোনটা সায়লার দিকে এগিয়ে দিলেন। একে একে সবাই এসএমএসটা পড়লো। সায়লা ধীরে ধীরে বিন্তুর দিকে এগিয়ে গেলেন। সজোরে বিন্তুর গালে চড় বসিয়ে দিলেন। চড়ের আঘাতে বিন্তুর চশমা ছিটকে দূরে গিয়ে পরলো। রুনি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বিন্তুকে নিজের কাছে টেনে নিলো। তাড়াহুড়ো করে বলল,
“ফুপু, ওকে তুমি মারবে না।”
সায়লা হিসহিসিয়ে বললেন,
“মারবো না! মারবো না তো কি করবো? এসব কি লিখেছে ওরা? কি করে এসেছে ও?”
বিন্তুর চোখে পানি এসে গেছে। সায়লা মুখে আঁচল দিয়ে কাঁদছেন। খায়রুল সাহেব ঠান্ডা গলায় বললেন,
“এসব কিছু তো কেউই জানতো না, রুনির মা। উনাদের কে জানালো এসব?”
শর্মিলি ক্লান্ত গলায় বললেন,
“বলেছে কেউ না কেউ। সেটা জেনে আর কি হবে?”
শিরিন বলে উঠলো,
“আমরা ছাড়া বর্ণিল আর ওর মা বাবা জানে। ওরাই হয়তো বলেছে। বিন্তুর বিয়ে হোক, সেটা হয়তো চায় নি। বিন্তুর ভালো সহ্য হয় নি ওদের।”
শর্মিলি অস্বাভাবিক শান্ত আছেন। চেঁচামেচি করছেন না, রাগও করছেন না। উনি শান্তভাবেই বললেন,
“বিন্তুর খারাপের জন্যই কেউ করেছে, এমন কেন ভাবছিস, শিরিন? ওর ভালোর জন্যও তো কেউ করতে পারে।”
শিরিন ভ্রু কুঁচকালো। সায়লা আঁতকে উঠে বললেন,
“বর্ণিল! মানে কি? আমি বুঝতে পারছি না। কেউ আমাকে কিছু বলছো না কেন?”
শিরিন এগিয়ে এসে ফুপুর হাত ধরলো। কোমল গলায় বলল,
“ফুপু, তুমি শান্ত হও। আমি বুঝিয়ে বলবো।”
শর্মিলি পাশের চেয়ারে বসলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“হ্যাঁ, সায়লা। শান্ত হও। যা হয়েছে ভালো হয়েছে। ওদের বাড়ির লোকজন আমারও পছন্দ ছিল না।”
সায়লা উতলে আসা কান্নাটাকে কোনোমতে চাপা দিয়ে বললেন,
“লোকজন আজেবাজে কথা বলবে, ভাবি। বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন! আমার মেয়েটার আর বিয়ে হবে না।”
রুনি এগিয়ে গেল। বাবার হাত ধরে বলল,
“বাবা, সবাইকে আমি সামলাবো। কেউ কোনো বাজে কথা বলবে না। তুমি আমার সাথে এসো। মা, তুমিও এসো।”
শর্মিলি মাথা নাড়িয়ে বললেন,
“তোরা যা। আমি আসছি।”
রুনি বাবাকে নিয়ে এগিয়ে গেল। শর্মিলি বিন্তুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
“মন খারাপ করিস না, বিন্তু। শোক পালন করার মতো কিছু হয় নি। আল্লাহ যা করেছেন, ভালো করেছেন। তুই খুশি থাক। চাইলে বাইরে থেকে বেড়িয়ে আয়।”
বিন্তু থতমত খেয়ে বলল,
“বাইরে যাব?”
“চাইলে যাবি। কিন্তু জলদি ফিরে আসবি।”
ভেজা চোখেও বিন্তুর মুখে হাসি ফুটলো। সে মামীকে খপ করে জড়িয়ে ধরলো। আনন্দিত হয়ে বলল,
“থ্যাংক ইউ, মামী। তুমি আমাকে বাঁচালে!”
শর্মিলি বিরক্তি দেখিয়ে বললেন,
“ঢং করবি না তো। একদম জড়িয়ে ধরে আহ্লাদ করবি না, বিন্তু। যা তো, যা।”
বিন্তু হেসে ফেললো। চোখ মুছে সে ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল। অন্তু পিছনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে,
“আপা, দাঁড়াও। আমাকে নিয়ে যাও।”
বিন্তু কথাটা শুনতে পেলো কিনা বোঝা গেল না। সে কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের আড়াল হয়ে গেল। সায়লা অস্ফুটে বললেন,
“ও যে সত্যি চলে গেল রে, শিরিন!”
শিরিন হেসে বলল,
“যেতে দাও, ফুপু। তোমাকে আমি সব বুঝিয়ে বলছি। কিন্তু তুমি ওকে বকতে পারবে না। এমনিতেই মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। এসো, তুমি বসবে এসো।”
.
বিন্তু যখন উঠোন পেরিয়ে বেরিয়ে গেল তখন উঠোনে দাঁড়িয়ে রুনি সবাইকে বলছে, ছেলের আচরণ ভালো নয় তাই বিয়েটা হচ্ছে না। বিয়ের আগেই ছেলের স্বভাব চরিত্র জানা গেছে, এ তো ভালো কথা। তাদের মেয়ের জীবনটা নষ্ট হলো না। এমন পরিবারে বিয়ে হওয়ার চেয়ে বিয়ে ভেঙে যাওয়াই তো ভালো। সকলেই রুনির কথায় সায় দিলো। রুনি হাসিমুখে সকলকে খেয়ে যেতে বলল। সব কথা বিন্তুর কানে আসে নি। সে দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। রাস্তায় বেরিয়েই সে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করলো। আকাশে স্পষ্ট চাঁদ। কেন সে ছুটছে, সে জানে না। কোথায় যেতে চায়, তাও জানে না। তার কেবলই মনে হচ্ছে তাকে ছুটে যেতে হবে। সে নদীর বাঁধ ধরে ডাকবাংলোর দিকে এগিয়ে চলেছে। মুক্তি! বহুদিন পরে যেন সে মুক্তি পেয়েছে! হঠাৎ কারোর সাথে সজোরে ধাক্কা লাগলো বিন্তুর। দ্রুতবেগে ছুটছিল বলে হঠাৎ ধাক্কায় সে পরে যাচ্ছিলো। কিন্তু পরে যাওয়ার আগেই কেউ তাকে ধরে ফেললো। বিন্তু হাঁপাতে হাঁপাতে চোখ তুলে তাকালো। চোখের পানিতে তার দৃষ্টি ঝাপসা। বিন্তু খেয়াল করলো তার চশমাও নেই। যে বলিষ্ঠ হাত জোড়া তার দুই বাহু ধরে ছিল, সেই হাতের অধিকারী এবার কথা বলল। বিস্মিত স্বরে বলল,
“বিন্তু! আপনি? আপনি এই সময় এখানে? আজ তো…আজ তো আপনার গায়ে হলুদ!”
কন্ঠস্বর কানে যেতেই বিন্তু তাকে চিনলো। এ গলা পল্লবের। তার মুখে হাসি ফুটলো। সে অস্ফুটে বলল, “পল্লব সাহেব! আপনি এসেছেন?” পল্লব মৃদু গলায় বলল, “হ্যাঁ। কিন্তু আপনি এখানে?” বিন্তু উত্তর দিলো না। অনুভূতির আতিশয্যে এক মুখ বিস্তৃত হাসি নিয়েই সে ডুকরে কেঁদে উঠলো। হুট করে পল্লবের বুক স্পর্শ করলো বিন্তুর কপাল। পল্লব তাকে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। চাঁদের আলোয় পৃথিবী ভেসে যেতে শুরু করলো।
.
#সমাপ্ত।
[কিছু মানুষের জীবন চড়ুই পাখির মতো। অন্যের বাড়িতে তাকে বাসা বাঁধতে হয়। সেই বাসা চিরস্থায়ী হয় না। ক্ষণে ক্ষণে তাকে বাসা বদলাতে হয়।]
________________________