Tuesday, July 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 147



আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ পর্ব-০৫

0

#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(৫)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)

(৭)
রাজিবুল অত্যন্ত ব্য*থা*য় আরো জোরে জোরে আ*র্ত*না*দ করতে শুরু করেছে। কিন্তু সেসবের কোনো প্রভাব রিজওয়ানের উপর পড়ছে না। রিজওয়ান রাগে হিসহিসিয়ে বললো….

—“তোরা হয়তো ভুলে গিয়েছিস এই বংশের সাথে তোদের রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। তোরা কেবল নামে মাত্র আমার জন্মদাত্রী বাবার সন্তান। আজ থেকে ১৭ বছর আগে আমার বাবা যদি শ্রদ্ধেয় নাটক*বা*জ সৎ মাকে বিয়ে করে তোদের সমেত এ বাড়িতে না আনতো তাহলে তোদের স্থান এখন রাস্তায় হতো। অন্যের বাসায়, জমিতে কা*ম*লা খেঁ*টে দিন এনে দিন খেয়ে দিন পার করতে হতো। সবেমাত্র মা হারা এই ছেলেটা সেইসময় তোদের নিজের পরিবার বলে মেনে নিয়েছিলো। তোদের মাকে নিজের মায়ের স্থানে বসাতে চেয়েছিলো আর তোদের নিজের বড় ভাইয়ের স্থানে। কিন্তু কথায় আছে পায়ের জুতো সবসময় পায়ে পড়লেই মানায়। পায়ের জুতোকে মাথায় তুলে মাথার তাজ বানাতে চাইলে সেটা অত্যন্ত বেমানান দেখায়। আমি এতো যাবৎ ধরে এই বিষয়টাকে বুঝেও না বোঝার ভান ধরে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এতে তোরা বড্ড পেয়ে বসেছিলি। এই বংশের, এই বাড়ির, এই সব সয়-সম্পত্তির কে আসল উত্তরাধিকারী সেটা তোরা ভুলে গিয়েছিলি। বাবার সামনে দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতার মতো স্বচ্ছ ভাবে নিজেদের তুলে ধরিস আর বাবার আড়ালে আমাদের সামনে নিজেদের আসল চেহারা বের করিস। অনেক লুকোচুরি খেলা হয়ে গিয়েছে। এবার সময় এসেছে তোদের আসল রূপ সম্পর্কে বাবার অবগত হওয়ার। খুব শীঘ্রই বাবা দেশে ফিরবেন। তারপর তোদের চোখে আঙুল দিয়ে তোদের আসল জায়গাটা তিনিই দেখিয়ে দিবেন।”

এই বলে রিজওয়ান রাজিবুলের হাত ছেড়ে ওকে স্বজোরে ধা*ক্কা দেয়। আকস্মিক এই ধা*ক্কা*র বেগ সামলাতে না পেরে রাজিবুল মুখ থু*ব*রে মেঝের উপর পড়ে যায়। অতঃপর রিজওয়ান মেহরিনের হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজেদের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে। শেফালি ছুটে যায় রাজিবুলের দিকে। রাজিবুল অত্যন্ত রাগে মেঝের উপর বাম হাত দিয়ে কয়েকবার বা*রি দেয়। শেফালি রাজিবুলের থেকে কিছুটা দূরে ভী*ত মুখশ্রী নিয়ে বসে রয়। উপস্থিত বাকিদের মুখে চিন্তা ও হ*ত*ভ*ম্ব*তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। শেহতাজ ঊষার হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায় নিজের রুমে। কিয়ৎক্ষণ পুরো পরিবেশ জুড়ে থ*ম*থ*মে ভাব বিরাজ করে। পরক্ষণেই ঊর্মিলা রফিকুলের গা ঘেঁ*ষে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললো….

—“কি গো এখন কি হবে! খোঁ*চা মে*রে মে*রে ঘুমন্ত সিং*হ কে তো জাগিয়ে দিয়েছি আমরা। এখন তার থা*বা থেকে আমরা নিজেদের বাঁচাবো কি করে?”

রফিকুল ওর প্যন্টের ডান পকেট থেকে সাদা রংয়ের পাতলা রুমালটা বের করে নিজের কপালে জমে আসা বিন্দু বিন্দু ঘামের কনা গুলো মুছতে শুরু করে। পরক্ষণেই সে কোনো প্রতিত্তুর না করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। ঊর্মিলা কেবল ফ্যল ফ্যল চাহুনি নিয়ে রফিকুলকে যেতে দেখে৷

(৮)
মেহরিনকে নিয়ে নিজেদের রুমে আসার পর রিজওয়ান বিছানায় বসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। মেহরিন বিছানার পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে রিজওয়ানের মুখোমুখি বসে ওর দিকে গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“এই পানিটুকু খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো।”

রিজওয়ান ওর ভ্রুযুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে নিয়ে মেহরিনের দিকে তাকায়। মেহরিন ইশারায় আবারও পানিটুকু খেতে বলে রিজওয়ানকে। রিজওয়ান বাধ্য ছেলের মতো মেহরিনের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি শেষ করে। মেহরিন ওর শাড়ির আঁচল দিয়ে রিজওয়ানের কপালে ও সম্পূর্ণ মুখশ্রীজুড়ে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামের কনাগুলো স্বযত্নে মুছে দিতে শুরু করে। রিজওয়ান একহাতে মেহরিনের কমোর জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের একেবারে কাছে টেনে নেয়। রিজওয়ানের আকস্মিক এমন কাজে মেহরিন কিছুটা ভ*র*কে গেলেও পরপরই নিজেকে সামলে নেয় সে। রিজওয়ান মেহরিনের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বললো…..

—“এতো ভালোবেসো না বউ। আমার যে হিং*সে হবে যখন আমার ভালোবাসার মাঝে কেউ ভাগ বসাবে। তখন নিজেকে সামলাবো কি ভাবে?”

মেহরিন অবাক স্বরে বললো….
—“ও মা…আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি। আর সারাজীবন শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যাবো। তোমার ভালোবাসায় আবার ভাগ বসাতে যাবে কে শুনি?”

—“দু’দিন পর যখন তোমার আর আমার মাঝে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে ছোট্ট কয়েকটি প্রাণ আসবে তখন তো তুমি তাদের যত্ন নিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়বে। ওরা তো তখন আমার একার জন্য বরাদ্দ করা ভালোবাসার ভিতরেই ভাগ বসাবে। তখন তো আমার হিংসে হবেই বলো!”

রিজওয়ানের এরূপ কথা শুনে লজ্জায় কুঁ*ক*ড়ে যায় মেহরিন। ঠোঁটে লজ্জাজনক হাসি দিয়ে রিজওয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো….

—“সেই চিন্তা তো সমান ভাবে আমারও করা উচিত। আমার একার জন্য তোমার মনে বরাদ্দ করা ভালোবাসায়ও তো তখন ওরা ভাগ বসাবে। তাহলে আমিও হিং*সে করবো কি!”

রিজওয়ান দু’হাতে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো….
—“আল্লাহর রহমতে আমাকে বাবা হওয়ার মতো কতো বড় সুখ দিবে তুমি আর তোমার ভালোবাসায় ওদের কি করে ভাগ বসাতে দিবো বলো! তোমার জন্য আমার মনে যে বিশাল জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে সেই জায়গায় কখনও কেও ভাগ বসাতে পারবে না বউ। ঐ নিষ্পাপ প্রাণ গুলোর জন্য তোমার জায়গার পাশে নতুন করে জায়গা তৈরি করে দিবো কেমন! ওখানেই ওদের জন্য সকল ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া বিরাজ করবে।”

মেহরিন হাসিমুখে বললো….
—“একই কাজ আমিও করবো।”

রিজওয়ান হাসিমুখে বললো….
—“তাহলে তোমাকে আদর দিয়ে মা হতে সাহায্য করার কাজ শুরু করে দি বলো!”

মেহরিন আরো বেশি লজ্জা পেয়ে বললো….
—“ইসসস..তুমি না একটা যা*চ্ছে তাই হয়ে যাচ্ছো দিনকে দিন।”

মেহরিন লজ্জা পেয়েছে বুঝে রিজওয়ান নিঃশব্দে হাসতে শুরু করে।

(৯)
সকাল ১১ টা….
মেহরিনের একমাত্র ননদ রুমি সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে মেহরিনকে ডাকতে ডাকতে বললো….

—“ছোট ভাবী…ও ছোট ভাবী…কোথায় তুমি! আজ আমার রুমে বেড টি দাও নি কেনো? ঘুম থেকে উঠে বিছানায় থাকাকালীন সময়েই গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস আমার সে কথা কি তোমার মাথায় নেই নাকি ইচ্ছে করেই আমার সকালটা নষ্ট করার জন্য এমনটা করেছো তুমি! ছোট ভাবী…ও ছোট ভাবী!”

রুমির চেঁচা-মেচি শুনে রিজওয়ান মেহরিনকে নিয়ে নিজেদের রুম থেকে বেড়িয়ে সিঁড়ির সাথে থাকা বারান্দায় রেলিং এর ধার ঘেঁ*ষে দাঁড়ায়। রিজওয়ান পূর্বেই মেহরিনকে কোনো কথা বলার জন্য বারণ করে দিয়েছিলো। যা বলার সে নিজেই বলবে রুমিকে। বাড়ির ছোট দুই সদস্য আর রাজিবুল ব্যতিত শেফালি, ঊর্মিলা আর রাহেলাও ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়। ঊর্মিলা শেফালির কানের কাছে নিজের মুখ কিছুটা এগিয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো….

—“যা বুঝতেছি দেবর মশাই এবার রুমিকে জ*ব্দ করে ছাড়বে।”

শেফালি কোনো প্রতিত্তুর করলো না। উপরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই রিজওয়ান কিছুটা উচ্চস্বরে বললো….

—“ক’টা বাজে এখন রুমি?”

রুমি চোখ ডলতে ডলতে মাথা তুলে উপরে রিজওয়ানের দিকে একপলক তাকায় ওর পাশেই মেহরিনকেও দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পায়। রুমি কিছুটা বি*র*ক্তি*র স্বরে বললো….

—“ক’টা বাজে সেটা ঘড়িতে দেখো। আমি কি ঘড়ি হাতে নিয়ে বসে আছি নাকি যে আমাকে জিজ্ঞাসা করছো! আর ছোট ভাবী..তুমি ওখানে সং*য়ের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো এখনও হ্যা! একে তো আমি বিছানা থেকে উঠার আগে আমার রুমে গ্রিন টি না দিয়ে সকালটাই মাটি করে দিয়েছো তার উপর তোমার সোহাগের স্বামীর আ*জা*ই*রা প্য*চা*লে আমার মাথা ধরে গেলো। আমি রুমে যাচ্ছি। ৫মিনিটের ভিতর যেনো আমার রুমে গ্রিন দিয়ে আসা হয়।”

এই বলে রুমি যেই না ওর রুমের দিকে পা বাড়াতে নিবে সেইসময় রিজওয়ান বারান্দা থেকে সরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বললো….

—“এক পা সামনের দিকে বাড়ালে তোর পা ভে*ঙে আমি তোকে নু*লো বানিয়ে দিবো রুমি।”

রিজওয়ানের এরূপ কথা শুনে রুমি থ*ম*কে গিয়ে অত্যন্ত অবাক দৃষ্টি নিয়ে রিজওয়ানের দিকে তাকায়। রিজওয়ান রুমির সামনে এসে দাঁড়িয়ে শুরুতেই কোনো কথা না বলে স্বজোরে রুমির বাম গালে একবার থা*প্প*ড় দেয়। থা*প্প*ড়*টি যে বেশ জোড়েই পড়েছে রুমির গালে তার জানান উপস্থিত প্রত্যেকের কান পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েই দিচ্ছে। ঊর্মিলা একহাতে নিজের মুখ চেপে ধরে। রাহেলা কেবল রাগে ফোঁ*স ফোঁ*স করা ব্যতিত এইমূহূর্তে কিছুই করতে পারছেন না। শেফালিও নিস্তব্ধ, নি*র্বা*ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহরিন ওর স্বামীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিচে আসার মতো সাহস জুগিয়ে উঠতে পারে না বলে উপরেই বারান্দায় রেলিং ঘেঁ*ষেই দাঁড়িয়ে রয়। রিজওয়ান রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললো…..

—“তোর আর আমার বাবা একজনই জন্য তুই আমার রক্তের সম্পর্কের বোন হোস। কোনোদিন আমাকে বড় ভাই হওয়ার খাতিরে নূন্যতম সম্মান দিস নি তুই। এ নিয়ে এতোগুলো বছর ধরে আমি তোকে কিছুই বলি নি। কিন্তু তার মানে এই না তুই আমার বউয়ের সাথেও অ*মানুষের মতো আচারণ করবি আর আমি আজীবন ধরে তা সহ্য করে যাবো। তোর থেকে মেহরিন ৩-৪ বছরের সিনিয়র আর সম্পর্কে তোর ছোট ভাবী হয়। তাকে তুই কাজের মেয়ের মতো হুকুম করিস তোর ঘুম থেকে উঠার আগে তোর রুমে বেড টি দিয়ে আসার জন্য! দু’দিন পর তোর বিয়ে হলে পরের বাড়িতে যাবি। এই হুকুমের গোলাম তখন যদি তুই নিজে হোস তখন তোর কেমন লাগবে? তোর ননদ যদি এভাবেই তোর সাথে নিম্ন আচারণ করে তখন কি তুই নাচতে নাচতে তার সকল হুকুম পালন করবি? হ্যা…!”

রিজওয়ানের বলা প্রতিটি কথা শুনে রুমি কেঁ*পে কে*পে উঠে। ওর দু’চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। রিজওয়ান আবারও বললো….

—“আজ থেকে তোর নিজের যাবতীয় কাজ তুই নিজে করবি। মেহরিন তোকে বিন্দুমাত্র সাহায্য করতে যাবে না। বাবা দেশে আসা মাত্র তোর জন্য ছেলের সন্ধান করতে বলবো আমি। আর খুব শীঘ্রই তোকে বিয়ে দিয়ে এ বাড়ি থেকে চিরতরের জন্য বিদায় করে দিবো। পরের বাড়িতে গিয়ে খাঁ*টা*স তোর এই জোর কতো খাঁ*টা*তে পারিস। এখন দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।”

রুমি আর একমুহূর্তে জন্য সেখানে না দাঁড়িয়ে কান্না করতে করতে নিজের রুমে যায়। রিজওয়ান শেফালি, ঊর্মিলা আর রাহেলার দিকে ক্ষি*প্ত দৃষ্টি নিয়ে একপলক দেখে পরপরই দৃষ্টি সরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে আবারও উপরে চলে যায়। রাহেলা দ্রুতপায়ে রুমির রুমের দিকে অগ্রসর হয়। ঊর্মিলাও রাহেলার পিছন পিছন সেদিকে যায়। শেফালি নিজরুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ পর্ব-০৪

0

#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(৪)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)

(৬)
সকালের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে বাড়ির বাকি সদস্যরা ডাইনিং রুমে আসতেই রিজওয়ান আর মেহরিনকে সেখানে বসে থাকতে দেখে অনেক অবাক হয়ে যায়। রাহেলা বেগম একপলক নিজের দুই ছেলে ও বউমাদের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে হ*ন*হ*নি*য়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে অগ্রসর হয়। টেবিলের অন্যপাশে রিজওয়ান আর মেহরিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রাহেলা রাগী স্বরে বললো…

—“এই ছোট*লোকের ঘরের ছোট*লোক মেয়ে-ছেলে! তোমাকে না সকালেই বলে দিলাম আজ সকালে তোমার আর তোমার সোহাগের স্বামীর খাবার খাওয়া বন্ধ! তারপরেও কোন সাহসে নিজের স্বামীকে নিয়ে আমার ডাইনিং টেবিলে এসে জায়গা দ*খ*ল করেছো হ্যা? সামান্যতম লজ্জাবোধ নেই নাকি তোমাদের মাঝে?”

মেহরিন ঘাড় বাঁকিয়ে রিজওয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিজওয়ান মেহরিনের ডান হাতের উপর নিজের বাম হাত রেখে আপন-মনে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। রাহেলা যে কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই এতোগুলো কথা তাদের উদ্দেশ্য করে বললো তার কোনো প্রভাবই যেনো ওর উপর পরে নি। মুখশ্রীর ধরণ এমন করে রেখেছে যেনো এখানেই কিছুই হয় নি। সবকিছু স্বাভাবিক-ই আছে। রিজওয়ানের এমন আচারণে রাহেলার রাগের মাত্রা এবার যেনো আকাশ ছুঁই হয়ে দাঁড়ায়। পরক্ষণেই রাহেলা ওপাশ থেকে সরে রিজওয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর সামনে থেকে খাবারের প্লেটটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালে রিজওয়ান নিজের হাত আলগা করে দেয় মেহরিনের হাতের উপর থেকে। মেহরিন তৎক্ষণাৎ বসা অবস্থাতেই রাহেলার হাত ধরে তার কাজে বাঁধা প্রদান করে শ্বাশুড়ির মুখশ্রী পানে নিজের শান্ত দৃষ্টি স্থির করে। রাহেলা ক*ট-ম*ট করা চাহুনি নিয়ে তাকায় মেহরিনের দিকে। বউ-শ্বাশুড়ির মাঝে বসে রিজওয়ান তার প্লেটে অবশিষ্ট খাবার টুকু খেয়ে আঙুলে লেগে থাকা তরকারীর ঝোল গুলো চেটে-পুটে খেয়ে চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে আস্তে করে ঢেঁ*কুর তুলে বললো…..

—“একটু আগে কি যেনো বলছিলেন! এই ডাইনিং টেবিল আপনার? কিন্তু আমি যতোদূর জানি এই ডাইনিং টেবিল বানানো হয়েছে আমার দাদা মশাইয়ের আমলে। দাদা মশাই নিজ অর্থ ব্যয় করে এই টেবিল ও চেয়ারগুলো বানিয়ে নিয়েছিলেন কোনো এক সূক্ষ্ম কারিগরের থেকে। আপনি এ বাড়ির বউ সেই সূত্রে এই বাড়ির প্রতিটি জিনিসের উপর আপনার অধিকার অবশ্যই আছে। কিন্তু আমি তো এ বাড়ির বংশধরদের মাঝে একজন। তাই আপনার থেকেও আমার অধিকারের জায়গা এই বাড়িতে আরো বেশি মজবুত। কি তাই নয় কি? আর রইলো আমার স্ত্রীর এখানে বসে আমাকে খাবার পরিবেশন করার বিষয় ও আপনার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার মতো সাহস দেখানোর বিষয়! সেগুলোর ও যথাযথ উত্তর আমার কাছে আছে। আমি এ বাড়ির বংশধর হওয়ার সুবাদে আমার স্ত্রীর ও এ বাড়িতে সব রকম বিষয়ে সাহস দেখানোর অধিকার আছে। আপনার স্বামী আমার জন্মদানকারী পিতা হন। তিনি এখনও প্রবাসে থেকে নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা রোজগার করছেন। আর তার রোজগারের টাকা তিনি দেশে পাঠালে তা দিয়েই পুরো সংসারের যাবতীয় খরচ সামলে যায়। এই যে টেবিল ভর্তি বাহারি রকমের সবজি, ডাল, ভাজি, মাছের তরকারী রান্না করা আছে। এগুলো সব আমার বাবার অর্থ ব্যয় করেই আনা হয়েছে। এখানে থাকা সব খাবারের উপর আমার ও আমার স্ত্রীর যথাযথ অধিকার আছে। সেখানে আপনি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কে শুনি? কেনো শুনবো আমরা আপনার কথা? আমাদের ভরপোষণ যদি আপনি বা আপনার ছেলেরা সামলাতো তখন এই জোর খাটানো হয়তো আপনার শোভা পেতো। কিন্তু এমন তো নয়! তাহলে কোন সাহস আর কোন লজ্জায় আপনি আমাদের উপর জোর খাটানোর চেষ্টা করেন শুনি? এখন তো দেখছি আপনার নিজের মধ্যেই সামান্যতম লজ্জাবোধ নেই।”

রিজওয়ানের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে মেহরিন ব্যতিত উপস্থিত সবার মুখই অবাকের পাশাপাশি পানসেটে বর্ণ ধারণ করেছে। মেহরিন অনেক পূর্বেই রাহেলার হাত ছেড়ে দিয়ে আবারও নিজের স্বামীর পাশে থাকা চেয়ারে বসে পড়েছে। রাজিবুল আর রফিকুল ও কোনো কথা বলার মতো শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। রাহেলা এই প্রথম পরিবারের ছোট-বড় সকলের সামনে লজ্জায়, অ*প*মানে জর্জরিত হয়ে গিয়েছেন এমন অনুভব করছেন। শেফালির একমাত্র ছেলে ৯ বছর বয়সী শেহতাজ নিজের ছোট্ট হাতটি দিয়ে আলতো ভাবে মুখ চেপে ধরে হাসি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ছোট হলেও শেহতাজ ভালো ও খারাপ ব্যবহারের মাঝে পার্থক্য বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে শিখে গিয়েছে। নিজের ছোট চাচ্চু আর চাচী মাকে সবসময় নিজের মা-চাচী-দাদীর কাছে অ*প*মান মূলক কথা শুনতে দেখতে শেহতাজের কখনই ভালো লাগতো না। সবার সামনে বাবা-মায়ের শা*স*ণের ভ*য়ে কিছুই বলতে বা করতে পারতো না সে। তবে সবার আড়ালে নিজের চাচীমার কাছে গিয়ে ঠিকই তার অশ্রুসিক্ত নয়ন থেকে অশ্রু মুছে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করতো। আজ প্রথম নিজের ছোট চাচ্চুকে তার দাদীর ও বাড়ির বাকি সদস্যদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার মতো কথা বলতে দেখে ভিষণ আনন্দ অনুভব হচ্ছে শেহতাজের। শেহতাজের পাশেই ঊর্মিলার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে ঊষা নিজের বড় আকৃতির চোখ জোড়া নিয়ে ওদের সবার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো জটিল ও কঠিন কথার বেশির ভাগই যে তার কাছে বোধগম্য হয় নি তা তার মায়াবী ছোট্ট মুখশ্রী দেখলেই বোঝা সম্ভব।

কিছুসময় ধরে পুরো বাড়ি জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। নীরবতার সেই দেওয়াল ভেঙে যায় রাহেলার কান্নার শব্দে। সবার দৃষ্টি স্থির হয় তার উপর। রাহেলা ধ*প করে মেঝের উপর বসে একহাতে কপাল চা*প*ড়া*তে চা*প*ড়া*তে ন্য*কা কান্না করতে করতে বললেন…..

—“হায় হায় রে এ আমার কি হলো! আমার কপালে এমনও দিন দেখা লেখা ছিলো ভাবতেই আমার কলিজা পু*ড়ে যাচ্ছে! হায় হায় রে! আমার দু-দু’টো সামর্থ্যবান যোগ্য ছেলে সামনে থাকতেও সতীনের ছেলের মুখে এতো এতো ক*টু কথা শুনতে হলো আমায়! তোদের আমি কখনও পেটে ধরেছিলাম বলে তো আমার মনে হয় না। যদি তাই হতো তাহলে নাড়ির টানে হলেও এতোসময় ধরে চুপচাপ থেকে নিজেদের জন্মদাত্রী মাকে অ*প*মা*নি*ত হতে দেখতে পারতি না। কা*পুরুষ জন্ম দিয়েছি আমি। সন্তান নামে ক*ল*ঙ্ক তোরা।”

নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে রাজিবুল আর রফিকুল এর শরীরের ভিতরে শীতল র*ক্ত কণা যেনো রাগে, ক্ষো*ভে টগ-বগ করে ফুঁ*ট*তে শুরু করে। রাজিবুল রাগ নিয়ে রিজওয়ানের হাতের ডানপার্শে এসে দাঁড়িয়ে একহাতে ওর গেন্ঞ্জির কলার্ট চে*পে ধরে টেনে বসা অবস্থা থেকে দাঁড় করিয়ে ডাইনিং এর জায়গা থেকে কিছুটা দূরে এনে দাঁড় করিয়ে মুখের উপর একবার স্ব*জোড়ে ঘুঁ*ষি প্রয়োগ করে। রাজিবুলের প্রয়োগ করা ঘুঁ*ষি*র আ*ঘা*তে রিজওয়ান এর ঠোঁটের একপাশ থেকে র*ক্ত ঝড়তে শুরু করে। শেহতাজ আর ঊষা এতে কিছুটা ভ*য় পেয়ে যায়। শেফালি, ঊর্মিলা আর রফিকুল ওদের মুখ দিয়ে ‘বেশ হয়েছে’ শব্দ উচ্চারণ করে ঠোঁটে পৈ*শা*চি*ক হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে। রাহেলা দুই হাতে নিজের দু’চোখের কর্ণিশে কেবল জমে আসা অশ্রু টুকু মুছে নিয়ে বাঁ*কা হাসি দেয়। মেহরিন দ্রুততার সাথে চেয়ার ছেড়ে উঠে রাজিবুল আর রিজওয়ানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে কিছুটা জোড়ের সাথে বললো….

—“ছাড়ুন আমার স্বামীকে। আমার স্বামীর শরীরে আঘাত করতেই আপনি সুপুরুষে পরিণত হবেন না মি.রাজিবুল।”

মেহরিনের এরূপ কথা শুনে রাজিবুল সহ সবাই আবারও অবাক ও রাগের পাশাপাশি কিছুটা বি*র*ক্ত ও হয়। রাজিবুল রিজওয়ানের কলার্ট ছেড়ে দিয়ে অত্যন্ত রাগ নিয়ে মেহরিনকে থা*প্প*ড় দেওয়ার জন্য উদ্দ্যত হলে সঙ্গে সঙ্গে রিজওয়ান রাজিবুলের হাত ধরে মো*চ*ড় দিয়ে ঘুরিয়ে ওর পিঠের সাথে শক্ত ভাবে চেপে ধরে কঠিন স্বরে বললো…

—“আমাকে মে*রে র*ক্তা*ক্ত করে দিয়েছিস কিছু বলি নি। কিন্তু আমার স্ত্রীর শরীরে আ*ঘা*ত করার জন্য উদ্দ্যত হওয়ার সাহস দেখালি কি করে! এতো যাবৎ ধরে চুপ থেকে তোদের সবার সব অ*ন্যা*য় সহ্য করে গিয়েছি জন্য একেবারে মাথায় চড়ে বসেছিস তোরা তাই না!”

মো*চ*ড়ে*র ব্য*থা*য় রাজিবুল মুখ দিয়ে আর্ত*নাদ বের করতে শুরু করলো। রাহেলা চিল্লিয়ে বললেন…..

—“রফিক বাপ আমার তোর ভাইরে বাঁচা এই জা*লি*মে*র হাত থেকে। আমার সোনার টুকরো ছেলের হাতটা ভে*ঙে ফেললো রে।”

মায়ের কথা শুনে রফিকুল রাগ নিয়ে রিজওয়ান আর রাজিবুলের দিকে অগ্রসর হতে নিলে রিজওয়ান আরো শক্ত করে রাজিবুলের হাত চেপে ধরে বললো….

—“আর এক পা ও যদি সামনের দিকে বাড়িয়েছিস তুই তাহলে সত্যি সত্যিই তোর ভাইয়ের হাত তার শরীর থেকে একেবারের জন্য আলাদা করার ব্যবস্থা করবো আমি।”

রিজওয়ানের এমন হু*ম*কি*তে থেমে যায় রফিকুল। শেফালি আর ঊর্মিলার মাঝে ভ*য়ে*য় সৃষ্টি হয়েছে কিছুটা। এই প্রথম রিজওয়ানের মতো শান্ত ছেলেকে এতোটা ভ*য়ং*কর রূপে দেখার বিষয়টা হজম করে নেওয়া ভিষণ বে*গ দায়ক হয়ে যাচ্ছে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ………

আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ পর্ব-০৩

0

#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(৩)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)

(৪)
মেহরিনের হাত ধরে রিজওয়ান ওকে সোজা নিজেদের রুমে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওর পায়ের কাছে দু’হাটু ভাঁজ করে বসে। রিজওয়ানের এমন কাজে মেহরিন কিছু বলতে নিলে রিজওয়ান মেহরিনের ঠোঁটের উপর নিজের ডান হাতের তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“চুপ করে বসো ওখানেই। নড়বে না, আর মুখ দিয়ে কোনো শব্দ তো একদম-ই উচ্চারণ করবে না।”

মেহরিন নিরব হয়ে যায়। রিজওয়ান মেহরিনের ঠোঁটের উপর থেকে নিজের আঙুল সরিয়ে ওর দৃষ্টির উপর নিজের দৃষ্টি স্থির করে আবারও বললো….

—“আমাকে ক্ষমা করে দাও বউ।”

মেহরিন দ্রুততার স্বরে বললো…
—“এভাবে ক্ষমাই চাইছো কেনো তুমি? তুমি তো কোনো অ*ন্যায় করো নি।”

—“সবথেকে বড় অ*ন্যায় আমিই করেছি বউ। আর সেটা আমি খুব ভালো ভাবেই আজ উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমার বাবা স্বয়ং তোমাকে আমার জন্য পছন্দ করেছিলেন। তোমার মা-বাবা সমতুল্য মামা-মামী আমার উপর ভরসা করে তোমাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আল্লাহ ও দশজন মানুষকে সাক্ষী রেখে আমরা বৈবাহিক বন্ধনে আবব্ধ হয়েছিলাম। আর একজন স্বামী হিসেবে আমার প্রধান দায়িত্বগুলো হলো তোমার খেয়াল রাখা, আল্লাহর উছিলা হিসেবে তোমাকে সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করা, তোমাকে সম্মান করা ও বাহিরের সকলের সামনে তোমার সম্মান অটুঁট রাখা। তোমার ভরণপোষণের দায়ভার বহন করা, তোমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা। আর এই শতভাগ দায়িত্ব গুলোর ভিতর আমি ৯৫% দায়িত্ব পালনেই ব্য*র্থ হয়েছি। আমি তো তোমার যোগ্য স্বামী হয়ে উঠতে পারি নি বউ। এ নিয়ে তোমার ভিতর নিশ্চয়ই অনেক খারাপ লাগা, অভিমান জমে আছে বলো!”

মেহরিন ওর ঠোঁটে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো….
—“শুধু ঐসব করলেই যে যোগ্য স্বামী হওয়া যায় তোমার এই ধারণা যে ভুল মহাশয়।”

রিজওয়ান কিছুটা অবাক স্বরে বললো…
—“মানে!”

—“এই যে তুমি বিয়ের পর থেকে এখন প্রায় ৪ মাস হতে চললো এই পুরো সময়টা ধরে আমাকে নিজের সবটা উজার করে ভালোবাসা দিয়ে এসেছো! প্রতিরাতে তোমার উন্মুক্ত লোমশ বুকে আমায় মাথা রেখে নিজের বাহুডোরে আগলে নিয়ে পরম শান্তিতে ঘুমাতে দিয়েছো! আমাকে না খাইয়ে কোনো এক বেলাও নিজে আগে খাও নি! সারাদিন কাজ করার পর ক্লান্তিতে যখন আমার মাথা ধরে যায় তখন আমি পুরোপুরি ভাবে ঘুমিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমার মাথা টিপে দিয়েছো! ঘোর জ্বরে যখন আমি আবোল-তাবোল ব*ক*তাম তখন খুব মনোযোগ সহকারে আমার বলা প্রতিটি কথা তুমি শুনেছো! আমার সর্ব শরীর যখন শীতে থ*র-থ*র করে কাঁপতো তখন তোমার শরীরের উষ্ণতা বিলিয়ে দিয়ে আমার শরীর উষ্ণ করেছো! আমার শরীরের কোনো অংশের ব্য*থা*য় যখন আমি নিরব হয়ে শুয়ে থাকতাম তখন তুমি তা আপনা-আপনিই বুঝে নিয়ে মাসাজ করে দিয়েছো! এতোকিছু করার পরেও কি করে তুমি নিজেকে অ*যোগ্য স্বামী বলে মনে করো শুনি? ক’জন নারী পায় তোমার মতো একজন ভালোবাসাময় যত্নশীল স্বামী? অনেক তো শোনা যায়…! ঘরে লক্ষ-কোটি টাকা আছে, চাওয়া মাত্র যেকোনো জিনিস নিজের সামনে হাজির করা সম্ভব এমনও কিছু দম্পতিদের বি*চ্ছে*দ হয়ে যাচ্ছে! এই বি*চ্ছে*দ গুলোর পিছনে আসল কারণ কি বলো তো? টাকা দিয়ে কখনও প্রকৃত সুখ কেনা যায় না। যদি দু’জন নারী-পুরুষের মাঝে প্রকৃত ভালোবাসা থাকে তাহলে তারা দিন এনে দিন খেয়ে কুঁড়েঘরে থাকলেও সুখে-শান্তিতে দিন পার করতে পারবে। আমার চাহিদা, ইচ্ছেগুলো ভিষণই সামান্য জানো! ছোটবেলায় সবেমাত্র বুঝতে শিখেছি তখন একসাথে একটা দূ*র্ঘট*নায় নিজের বাবা-মা’কে চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। তখন আমার কাছে পুরো দুনিয়া বি*ষা*ক্ত হয়ে যেতো যদি না আমার দিকে আমার মামা-মামী ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতেন। আমার মামার তো ছোট্ট একটা চা-পানের দোকান ছিলো। তিনি দৈনিক স্বল্প অর্থ আয় করতেন। তবুও জানো আমাদের তিন সদস্যের সেই ছোট্ট পরিবারে কোনো অভাব কিংবা ক*ষ্ট ছিলো না। বয়স ১০ পেরোনোর পূর্ব পর্যন্ত মামা আমাকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে ঘুম পাড়াতেন প্রতিরাতে। আর ১০ পেরোনোর পর থেকে সেই দায়িত্ব মামী সাদরে গ্রহন করেছিলেন। ঐ দু’টো মানুষের মুখশ্রী পানে তাকালে আমি আমার মরহুম মা-বাবার মুখশ্রী ভাসমান অবস্থায় দেখতে পারতাম। কি যে শান্তি কাজ করতো সবসময় হৃদয়জুরে তা ভাষায় বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তোমার পরিবারের মানুষগুলোর ভিতর বাবা আর দাদীমা ব্যতিত কেওই আমার এ বাড়ির বউ হওয়া নিয়ে যে খুশি নন তা বুঝতে আমার খুব সময় লাগে নি। গি*র*গি*টি*র মতো তাঁদেরকে নিজের চরিত্রের রং পরিবর্তন করতে দেখে ও প্রতিমূহূর্তে ক*টা*ক্ষ করে কথা শুনাতে দেখে প্রথমে হৃদয় চেঁ*রা য*ন্ত্র*ণা হতো এই কথা আমি অ*স্বীকার করবো না আজ। তবে এসবের সাথে ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করেছিলাম বটে। কিন্তু মাঝেমধ্যে নিজের এই চেষ্টা আর সহ্য করার মতো শক্তি যুগিয়ে উঠতে পারে না। অবাধ্য চোখজোড়া তাঁদের বাঁধ ভে*ঙে নোনাজলের বৃষ্টি ঝরিয়েই কেবল দম নেয়।”

এই বলে মেহরিন শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে। রিজওয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেহরিনের দিকে তাকিয়ে ওরা বলা সম্পূর্ণ কথাগুলো শুনলো। মেহরিনের বলা শেষ কথাগুলো রিজওয়ানের বুকে গিয়ে আ*ঘা*ত করে বসে। রিজওয়ান মেহরিনের দু’হাত নিজের দু’হাতের বাঁধনে আ*বদ্ধ করে বললো……

—“আমাকে ঘিরে তোমার মনের মাঝে অন্তত একটা বিষয় নিয়ে খারাপ লাগা আর অভিমান জমাট বেঁধে আছে অবশ্যই।”

মেহরিন রিজওয়ানের উপর নিজের শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। রিজওয়ান মেহরিনের হাতের উপরিভাগে নিজের কপাল ঠেকিয়ে ওর কোলের ভিতর নিজের মুখশ্রী আলতো ভাবে গুঁজে দিয়ে আবারও বললো…..

—“২মাস আগে যখন তোমার মামা-মামী তাদের সাধ্যানুযায়ী জামা-কাপড় ও খাবার নিয়ে এখানে এসেছিলেন তখন পরিবারের সবাই মিলে তাঁদের যাচ্ছে তাই বলে অ*প*মান করেছিলো। সেদিন তুমি ছলছল দৃষ্টি নিয়ে কেবল আমারই দিকে চেয়ে ছিলে। আশা নিয়ে ছিলে হয়তো আমি তাদের ক*ষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে অন্তত দু’টো প্র*তি*বাদ মূলক কথা বলে ওদের সবার মুখ বন্ধ করে দিবো। কিন্তু তোমার আশা সেদিন অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে। আমার নিরবতা আর পরমুহূর্তে নিরবে স্থান ত্যগ করা তোমার মনের ভিতর যে কড়া ভাবে দা*গ কেটেছিলো তা আমি বুঝতে পেরেছি খুব ভালো ভাবেই। এই য*ন্ত্র*ণা যে আমাকে প্রতিমূহূর্তে দ*গ্ধ করে দিয়ে যাচ্ছে বউ। এ থেকে আমি এবার মুক্তি পেতে চাই। আমাকে সুরুপুষ হতে সাহায্য করবে তো তুমি বলো! আমি তোমাকে আর তোমার মামা-মামীকে আর কখনও অ*সম্মানিত হতে দিবো না। নিজেকে পুরোপুরি ভাবে সবদিক দিয়ে তোমার যোগ্য করে তুলে দেখাবো। তোমার সকল ভরণপোষণের দায়ভার বহন করবো। কেবল ভালোবাসার দিক থেকে নয় আর্থিক স্বচ্ছলতার দিক থেকেও তোমাকে সুখের মুখ দেখাবো। সকল অ*ন্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উচিত জবাব দিয়ে অ*হং*কারীদের মুখ বন্ধ করে দিবো। থাকবে তো বউ তুমি আমার পাশে!”

মেহরিন এর চোখ খুশির নোনাজলে টইটম্বুর হয়ে এসেছে ইতিমধ্যেই। মেহরিন নিজের দু’হাত রিজওয়ানের দু’গালে রেখে ওর মাথা নিজের কোলের উপর থেকে তুলে ধরে। রিজওয়ানের দু’চোখ জুরে নিষ্পাপ ও অনুতপ্ততার ছাপ ফুটে আছে। মেহরিন তা দেখতে পারছে। মেহরিন কিছুটা নিচু হয়ে রিজওয়ানের কপালে একবার ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বললো….

—“শেষ নিঃশ্বাস না পড়া পর্যন্ত আমি তোমার পাশে তোমার ছায়াসঙ্গিনী ও জীবনসঙ্গিনী হয়ে থাকবো ইনশাআল্লাহ।”

রিজওয়ান মেহরিনের হাতের তালুতে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে বললো….
—“আজ থেকে মা-রুমি কিংবা ভাবীদের ভিতর কেও যদি তোমাকে ক*টা*ক্ষ করে একটা কথাও শোনায় তাহলে কোনোরূপ ভ*য় বা চিন্তা না করে নিজের মতো করে প্রতি*বাদ করবা তুমি। মনে রেখো এই বাড়িতে ওদের সবার যেমন অধিকার আছে সমান অধিকার তোমারও আছে। কেও যদি তোমার অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে তবে তাদের হাত ভে*ঙে গুঁ*ড়ি*য়ে দিতে দু’বার ভাববে না তুমি। আজ এই মূহূর্ত থেকে না তুমি কারোর অ*ন্যায় সহ্য করবা আর না আমি সহ্য করবো। আল্লাহর রহমত হলে খুব শীঘ্রই আমার কোথাও না কোথাও একটা স্বল্প আয়ের হলেও চাকরি হয়েই যাবে দেখো। তখন আমরা পুরোপুরি ভাবে স্বাধীন হয়ে যাবো। আমাদের উপর তখন ভুলেও কেও নিজেদের ক্ষ*মতা খাঁ*টা*নোর চেষ্টাও করতে আসবে না৷”

মেহরিন ওর দু’চোখ দিয়ে খুশির নোনাজল ফেলতে ফেলতে হাসিমুখে বললো…..

—“ইনশাআল্লাহ।”

রিজওয়ান বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মেহরিনকে দু’হাতে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

(৫)
নিজ রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধছে শেফালির স্বামী রাজিবুল। সেইসময় শেফালি রাগে গ*জ-গ*জ করতে করতে রুমে প্রবেশ করে ধ*প করে বিছানায় বসে কিছুটা উচ্চস্বরে বললো….

—“সারাদিন শুধু অফিস আর কাজ নিয়েই পড়ে থাকো। বাড়িতে কি কি হচ্ছে না হচ্ছে সে খেয়াল তো রাখার সময় তোমার হাতে নেই।”

রাজিবুল নিজের কাজ করতে করতেই বললো….
—“সকাল সকাল আবার কি হলো!”

—“তোমার সৎ ছোট ভাই আজ তোমাকে আর রফিকুল ভাইকে খোঁ*টা দিয়ে যতোগুলো কথা শুনালো বাপরে বাপ।”

—“আরে হয়েছে টা কি সেটা তো বলবে নাকি!”

—“তোমার ছেলের তো রোজ সকালে দুধ দিয়ে হরলিক্স বানিয়ে খাওয়ার অভ্যাস। মেহরিন-ই প্রতিদিন সেই দায়িত্ব পালন করে। আজ বেশ বেলা হয়ে যাওয়ায় আমি মেহরিনকে ভালো ভাবেই বললাম সে যেনো হরলিক্স বানিয়ে শেহতাজকে নিয়ে আসে। ওমা সেইসময় কোথা থেকে রিজওয়ান এসে হাজির হয়। আর বলে ‘আমার স্ত্রী তো তোমাদের দাসী-বা*ন্দি নয় যে তোমাদের ফাই-ফরমাস খাঁটবে। নিজের ছেলের যখন হরলিক্স খাওয়ার অভ্যাস তখন নিজেই বানিয়ে খাওয়াও। যদি নিজে বানাতে না পারো তাহলে একজন কাজের লোক রাখো। তোমাদের স্বামীরা তো করে স্বল্প আয়ের চাকরি। বাবা আয় না করলে তোমরা নিজেদের তিনবেলার খাবারটুকুও সেই আয় দিয়ে সামলাতে পারতে না, সংসারের বাকি খরচ সামলানোর হিসাব তো দূরের বিষয়।’ এমন আরো অনেক তু*চ্ছ-তা*চ্ছি*ল্য করে কথা শুনালো গো তোমাদের দু’জনকে। আমার তো রাগে শরীর জ্ব*ল*ছিলো ওর বলা কথা গুলো শুনে। এগুলো কি মানা যায় নাকি! তুমি কি এর কোনো বিহীত করবে না রাজিব?”

রাজিবুল ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নিজের মানিব্যাগ আর ঘড়িটা নিয়ে বললো…..

—“এখন অফিসের জন্য লেইট হয়ে যাচ্ছে। খেতে দাও। রাতে বাসায় ফিরে এর একটা উপযুক্ত বিহীত অবশ্যই করবো।”

এই বলে রাজিবুল চেয়ারের উপর থেকে নিজের ব্যগটা কাঁধে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। শেফালি বসা অবস্থা থেকে উঠে বাঁকা হেসে বললো….

—“রাতে একটা বড়-সড় জমজমাট নাটক হবে তাহলে।”

এই বলে শেফালিও রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ………

আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ পর্ব-০২

0

#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(২)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)

(২)
নিজ রুমে পায়চারি করছিলো রিজওয়ান। কিয়ৎক্ষণ পর হাতের ডানপার্শে দেওয়ালের সাথে ঠেকানো ড্রেসিং টেবিলের দিকে চোখ যায় রিজওয়ানের। আয়নায় পড়া নিজের প্রতিচ্ছবির উপর দৃষ্টি স্থির করতেই ওর প্রতিচ্ছবি যেনো ওকেই চিৎকার করে বলছে….

—“তুই একটা কাপুরুষ। যদি আসলেই পুরুষ হইতি তাহলে নিজের সৎ মা-বোন, দু’ভাই-ভাবীদের কাছে নিজের ভালোবাসার মানুষ, নিজের সবথেকে প্রিয় ছায়া ও জীবনসঙ্গিনীকে অকারণে ছোট হতে দিতি না। নিজের সম্মান ও নিজের নির্দোষ স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করার ক্ষমতা যে রাখে না সে পুরুষ নামে ক*ল*ঙ্ক। কাপুরুষ তুই… কাপুরুষ… কাপুরুষ…. কাপুরুষ…।”

রিজওয়ান আর সহ্য করতে না পেরে দু’হাতে নিজের মাথার দু’পাশ চেপে ধরে ধ*প করে বিছানায় বসে পরে। কিয়ৎক্ষণ পর রিজওয়ান ওর মাথা থেকে হাত সরিয়ে বিছানার দু’পাশের চাদর দু’হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরে দৃষ্টি মেঝের উপর স্থির করে বললো….

—“নিজের চোখের সামনে কিংবা আড়ালে আর কোনো অ*ন্যা*য় আমি হতে দিবো না। অনেক হয়েছে। বাবার কথা চিন্তা করে পরিবারের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দিনের পর দিন ধরে ওদের সবার করা অ*ন্যা*য়, অ*বি*চার, অ*প*মান মূলক করা মুখ বুঝে সহ্য করেছিলাম। অ*ন্যা*য় যে করে আর অ*ন্যা*য় যে সহে দু’জনেই তো সমান ভাবে অ*প*রাধী হয়। তাই এবার প্র*তি*বাদ করার উপযুক্ত সময় এসে গিয়েছে।”

এই বলে রিজওয়ান বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

(৩)
রান্নাঘরের নলকূপের পাশে আলগা হয়ে বসে সেখানে জমে রাখা সব এঁ*টো প্লেট-বাটি, কালির পাতিল ও কড়াই পরিষ্কার করছিলো মেহরিন। সেইসময় মেহরিনের বড় জা শেফালি রান্নাঘরে প্রবেশ করে রাগী স্বরে বললো…

—“তোমাকে কি প্রতিদিন আমায় নিয়ম করে বলে দিতে হবে যে আমার ছেলেকে স্কুলে যাওয়ার আগে দুধ গরম করে হরলিক্স বানিয়ে ওর রুমে দিয়ে আসতে হবে! বলি আমার ছেলের জন্য কেনা দুধ আর হরলিক্সের টাকা তোমার স্বামী দেয় নাকি যে বারবার ভুলে যাওয়ার না*ট*ক করো!”

সেইসময় শেফালির পিছন থেকে ঊর্মিলা রান্নাঘরে প্রবেশ করে ক*টা*ক্ষে*র স্বরে বললো….

—“আরে বড় ভাবী…তুমি কি ভুলে গিয়েছো যে ওর স্বামী একজন বেকার। আমাদের স্বামীদের ক*ষ্ট করে উপার্জন করা টাকায় ওরা বসে বসে খেয়ে সংসারের অন্ন ধ্বং*স করে।”

ওদের দু’জনের এরূপ কথাগুলো শুনে মেহরিনের দু’চোখ আবারও নোনাজলে ভিজে আসে। একবার ঢোক গি*লে শাড়ির আঁচল দিয়ে ওদের আড়ালেই চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে হাত ধুয়ে মেহরিন উঠে দাঁড়ায়। সেইসময় রিজওয়ান রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাগী স্বরে বললো….

—“তোমার ছেলের প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দুধ দিয়া হরলিক্স খাওয়ার অভ্যাস যখন তখন তুমি নিজ হাত বানিয়ে ওকে খাওয়াতে পারো না নাকি বড় ভাবী! আমার স্ত্রীকে কেনো তোমাদের সবার ফাই-ফরমাশ খাঁটতে হবে শুনি? আর আমি বেকার এটা যেমন সত্য তেমনি তোমাদের দু’জনের কাপুরুষ স্বামীদের রোজগার করা টাকায় আমি বা আমার স্ত্রীর খাওয়া-পড়া চলে না এটাও সত্য। আমার বাবা এখনও সুস্থ ও জিবীত আছেন। প্রবাসে তিনি এখনও নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাজার হাজার টাকা রোজগার করছেন। তার রোজগার করা টাকার ৮০ ভাগ তো তিনি বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আর তার পাঠানো ঐ টাকাগুলো দিয়েই যে পুরো সংসারের যাবতীয় খরচ চলে সেটাও আমি খুব ভালো করেই জানি। আজ বাবার আয় করার ক্ষমতা না থাকলে তোমাদের স্বামীরা যে কয়টা টাকা রোজগার করে তা দিয়ে তো শুধু তোমাদের নিজেদের তিনবেলার খাবারের জোগান দিতেই হিমশিম খেতে। আমাদের ভরণপোষণ সামলানোর হিসাব তো দূরের বিষয় হয়ে দাঁড়াতো।”

মেহরিন আর রিজওয়ানের বিয়ের এখনও ৪মাস পূর্ণ হয় নি। বিয়ের পর এই প্রথম নিজের স্বামীকে অ*ন্যা*য়ে*র প্রতি*বাদ করতে দেখে মেহরিনের চেহারায় অবাক ভাব স্পষ্ট ফুটে আছে। রিজওয়ানের এমন প্রতি*বাদ মূলক কথাগুলো শুনে শেফালি আর উর্মিলা যেনো কোনো কথা বলার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছে না। ওদের দু’জনের চেহারার ধরণ পানসেঁটে বর্ণ ধারণ করেছে। কিয়ৎক্ষণ পর রিজওয়ান আবারও বললো….

—“আজ এই মূহূর্ত থেকে আমার স্ত্রী এই বাড়ির বাড়তি কোনো সদস্যের জন্য কোনো কাজ করবে না। যদি নিজেদের কাজ নিজেরা করতে না পারেন আপনারা তাহলে কোনো কাজের লোকের সন্ধান করে নিয়েন। আর হ্যা মিনিমাম লজ্জা বা সম্মান বোধ থাকলে তাদের বেতনটা নিজেদের স্বামীদের পকেট থেকে দিয়েন। মেহরিন এক্ষুণি আমার সাথে রুমে চলো তুমি।”

মেহরিন স্বামীর বলা একবাক্যে দ্রুতপায়ে এগিয়ে আসে। অতঃপর রিজওয়ান মেহরিনের হাত ধরে ওকে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে উপরে নিজেদের রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে। শেফালি আর ঊর্মিলা এখনও আগের স্থানেই ঠায় দাঁড়িয়ে ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়।
.
.
.
.
মেহরিনের শ্বশুড় মশাই শরীফ সাহেব একজন প্রবাসী। দীর্ঘ ২৫ বছর হলো মালেশিয়াতে একটা কোম্পানির আন্ডারে চাকরি করছেন তিনি৷ মেহরিন ওর দাদী শ্বাশুড়ির থেকে শুনেছিলো এই লম্বা সময়ের মাঝে ৩-৪বার ১-২মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন তিনি। বড় ছেলে রাজিবুল ও মেজো ছেলে রফিকুল ঊর্মিলা আর শেফালির সাথে প্রেমের সম্পর্কে আবব্ধ হয়ে শরীফ সাহেবের দেশে অনুপস্থিত থাকাকালীন সময়েই বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ হয়েছিলেন। শরীফের মনে এ নিয়ে খারাপ লাগার শেষ ছিলো না।

রিজওয়ানের যখন ৯ বছর বয়স তখন ওর জন্মদাত্রী মা রূপালী বেগম ক্য*ন্সা*রে আ*ক্রা*ন্ত হয়ে মা*রা গিয়েছিলেন। শরীফ রিজওয়ানের ও সাংসারিক খরচ সামলানোর কথা চিন্তা করে ১৩ ও ১৫ বছর বয়সী দুই ছেলে রাজিবুল ও রফিকুলকে মেনে নিয়ে ডিভোর্সী রাহেলা বেগমকে ২য় বার বিয়ে করে নিজ বাড়িতে এনেছিলেন। আর রিজওয়ানের দায়ভার রাহেলার হাতে তুলে দিয়ে ২মাস এর মধ্যেই তিনি আবারও মালেশিয়া চলে গিয়েছিলেন। রাহেলা তখন আবারও গর্ভবতী হয়েছিলেন। আর ১০মাস পর তার কোলজুড়ে কন্যাসন্তান রুমি আসে। মেহরিনের বাবা-মা মা*রা গিয়েছিলেন ওর বয়স যখন ৭ তখন একটা রোড এ*ক্সি*ডে*ন্টে। তখন থেকে মেহরিন ওর বড় মামা আজহারুল উদ্দিনের বাড়িতে থেকে-পড়েই বড় হয়েছে। আজহারুলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের অল্প বয়স থেকে পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়ায় কোনোভাবেই বাচ্চা কন্সিভ হতো না।

বিয়ের পর ১০ বছর ওভাবেই ক*ষ্ট ও আ*ফ*সোসের সাথে পার করেছিলেন আজহারুল দম্পতি। এর মাঝেই তাদের সংসারে সন্তানের শূন্যতা কাটিয়ে পূর্ণতার আলো ফুটিয়ে দিয়েছিলো মেহরিন। আজহারুলের ছোট্ট একটা পান ও চায়ের দোকান ছিলো। এই দোকান থেকে আয়কৃত সামান্য অর্থ দিয়েই দিন এনে দিন খেয়ে তাদের তিনজনের সংসার দিব্বি চলতো। মেহরিন ওর গরীব মামা-মামীর বড্ড আদরের ছিলো সবসময়। মেহরিন ছোট থেকেই পড়াশোনার দিক থেকে অনেক ভালো ও মেধাবী ছিলো। তাই আজহারুল নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হলেও মেহরিনের পড়ার খরচ চালিয়ে ওকে একের পর এক পড়াশোনার উচ্চধাপে উঠিয়ে দিতে পিছপা হন নি। শরীফ ৬মাস আগে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। বয়স তখন তার ৫৫ ছুঁই ছুঁই। আবারও বিদেশের মাটিতে পা রাখার পূর্বে তার গভীর ভাবে ইচ্ছে হয়েছিলো নিজে তার ছোট ছেলের জন্য বউ পছন্দ করবেন আর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছোট ছেলেকে তার পছন্দের মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসবেন।

এরপর শরীফ ঘটককে বলেছিলেন একজন ভালো মেয়ের সন্ধান করতে। মেহরিনের বয়স যখন ১৯ ছুঁই ছুঁই তখন সবেমাত্র উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে পড়াশোনার আরো উচ্চধাপে উঠার জন্য বড় কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলো সে। তখন ওর মামা-মামীর কাছে একজন ঘটক রিজওয়ানের সাথে ওর বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিলেন। রিজওয়ানের বয়স তখন মাত্র ২৪ বছর, বেকার সে। খোঁজ-খবর নেওয়ার পর মেহরিনের মামা-মামী জানতে পারেন রিজওয়ানের পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা যথেষ্ট উচ্চমানের। তাই মেহরিনকে যদি রিজওয়ানের পরিবার পছন্দ করেন তাহলে তারা এই সম্বন্ধে আর বাঁধা প্রদান করবেন না। মামা-মামীর খুশি ও তাদের শারিরীক অবস্থার কথা চিন্তা করে মেহরিনও দ্বিমত পেষণ করে নি, শুধু বলেছিলো ছেলেপক্ষের যদি তাকে পছন্দ হয়ে যায় তাহলে মেহরিন যে অনেকদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় এই ইচ্ছের কথা যেনো ওর মামা-মামী ছেলেকে ও ছেলেপক্ষের অভিভাবককে জানিয়ে দেয়। ঘটকের থেকে খবর পেয়ে শরীফ তার মা আমেনাকে নিয়ে মেহরিনকে দেখার জন্য ওদের বাড়িতে এসেছিলেন। প্রথম দেখেই মেহরিনকে তাদের পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো। আজহারুল মেহরিনের পড়াশোনা করার ইচ্ছের কথা শরীফকে বলেছিলেন আর তিনি হাসিমুখে তা মেনে নিয়েছিলেন।

এরপর শরীফ বাসায় ফিরে ছোট ছেলে রিজওয়ান ও পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে মেহরিনকে আবারও দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্বামীর সামনে সরল-সোজা রূপ নিয়ে থাকার কারণে রাহেলা এ বিষয়ে কারোর সামনে দ্বিমত পেষ করতে পারেন নি। তাই বাধ্য হয়ে শরীফের সাথে মেহরিনকে দেখার জন্য ওর বাড়িতে এসেছিলেন রাহেলা ও তার ২ছেলে-বউমা ও ১ মেয়ে মিলে। মেহরিনের পরিবার ও তাদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সবকিছু জানার পর রাহেলা সহ বাকিরা ভিতর থেকে যেনো তেলে-বেগুনে জ্ব*লে পু*ড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন। তবুও কেও মুখ ফুটে এই সম্বন্ধ নিয়ে একটা টু শব্দও পেষ করতে পারেন নি।

মেয়ের পরিবারের থেকে দামী দামী আসবাবপত্র, মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নেওয়ার বিষয় নিয়ে শরীফ সাহেবের ঘোর অমত ছিলো। বরং মেহরিনকে নিজের কেনা স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে রিজওয়ানের সাথে বিয়ে দিয়ে নিজের বাড়িতে আনার ইচ্ছেটা খুব দ্রুতই পূরণ করেছিলেন শরীফ। বিয়ের ৩দিন পর মেহরিনকে ওর শ্বশুড় বাড়ি থেকে কাছাকাছি হয় এমন একটা ভালো কলেজে অনার্সে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন শরীফ। সবকিছু বেশ ভালোই চলছিলো। মেহরিন আর রিজওয়ানের বিয়ের ১০দিনের মাথায় শরীফ আবারও মালেশিয়াতে চলে যান। তখন থেকে মেহরিন তার শ্বশুড় বাড়ির প্রতিটি মানুষের আসল রূপ গুলো সম্পর্কে একটু একটু করে অবগত হতে শুরু করেছিলো। শ্বশুড় মশাইয়ের দেওয়া বিয়ের সকল গয়নার মালিকানা লাভ করে মেহরিনের বড় দুই জা ও ননদ রুমি। স্বামীর কম বয়স ও বেকারত্ব এবং নিজের পরিবার গরীব হওয়া মেহরিনের জন্য যেনো কাল হয়ে দাঁড়াতে শুরু করলো। রাহেলা মেহরিনকে উঠতে বসতে ক*টা*ক্ষ করে কথা শুনাতে শুরু করেছিলেন। যার ফলে মেহরিনকে বাধ্য হতে হয়েছিলো পড়াশোনা ছাড়তে। আর শ্বশুড় মশাইকে এ নিয়ে মি*থ্যেও বলতে হয়েছিলো। যে মেহরিনের নিজেরই এখন আর ইচ্ছে করে না পড়াশোনা করার। শরীফ অনেকবার বুঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু মেহরিন চেয়েও কিছু করতে পারে নি।

আজহারুল উদ্দিন ও মনোয়ারা বেগম এর জীবনের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল ছিলো মেহরিন। মেহরিনকে বিয়ে দেওয়ার পর ওনারা দু’জনেই ওকে ভিষণ ভাবে মিস করছিলেন। আজহারুল দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ ছিলেন। চাইলেই মেহরিনের শ্বশুড় বাড়িতে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তার ছিলো না। অনেক ক*ষ্ট করে ২মাস সময় নিয়ে কিছু টাকা জমাতে সক্ষম হয়েছিলেন আজহারুল। সেই টাকা দিয়ে আজহারুল মেহরিনের শ্বশুড় বাড়ির সকল সদস্যদের জন্য তাঁতে বুণনকৃত শাড়ি, জামা, পান্ঞ্জাবি আর এক হাড়ি রসগোল্লা কিনে স্ত্রী মনোয়ারাকে সাথে নিয়ে মেহরিনের শ্বশুড় বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানে আসার পর মেহরিনের সামনেই ওর শ্বাশুড়ি, ভাসুররা , জায়েরা ও ননদ মিলে তাদের খুব বা*জে ভাবে অ*প*মান করেছিলেন। মেহরিন সেদিন ওর স্বামী রিজওয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো এই আশা নিয়ে হয়তো সে কিছু বলবে। কিন্তু রিজওয়ান নিঃশব্দে স্থান ত্যগ করেছিলো। রাহেলা মেহরিনের মামা-মামীর আনা সব কাপড় গুলো উঠোনের উপর ফেলে পা দিয়ে পা*ড়ি*য়ে ন*ষ্ট করেছিলেন। তার এমন কাজে আজহারুল ও তার স্ত্রীর দু’চোখ অ*প*মানে, লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলো। মেহরিন আর সহ্য করতে না পেরে সবার সামনেই ওর মামা-মামীকে নিজের কসম দিয়ে বলেছিলেন তারা যেনো আর কখনও এ বাড়ির ছায়াও না মা*রে*ন। ভেবে নেন যেনো তাদের মেহরিন মা*রা গিয়েছে। শত ক*ষ্ট বুকের উপর পাথর চা*পা দিয়ে মেহরিনের মামা-মামী চলে গিয়েছিলেন সেখান থেকে। এরপর মেহরিন আর কখনও তার মামা-মামীর সাথে দেখা করতে বা যোগাযোগ করতে পারে নি। সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করতে করতে মেহরিন আর রাফসানের দাম্পত্য জীবনের পায় ৪মাস হতে চলেছিলো।

আর আজ হুট করেই রিজওয়ানের এমন পরিবর্তন মেহরিনকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে যেনো।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

আমি তোমারি সনে বেঁধেছি আমারো পরাণ পর্ব-০১

0

#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙
#সূচনা_পর্ব
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)

১)
—“বলি, এ ঘরের নবাব*জা*দীর চোখ থেকে সাধের ঘুম ফু*রা*নোর সময় কি এখনও হয় নি! বে*কার স্বামীর সোহাগে মোড়ানো চাদর থেকে বেড়িয়ে যে বাড়ির ক*র্মঠ বাকি দুই ছেলে ও পরিবারের সবার জন্য সকালের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে সেই খেয়াল কি আছে তাঁর?”

সৎ ছোট ছেলে রিজওয়ান ইয়াসির আর ছোট ছেলের স্ত্রী মেহরিনের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় জোড়ে জোড়ে ক*ড়া না*ড়তে না*ড়তে উপরোক্ত কথাগুলো বললেন রাহেলা বেগম। ফজরের নামাজ পড়ার পর বাড়ির সবার জন্য খাবার তৈরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে যখন রুমের বাহিরে যেতে নিয়েছিলো মেহরিন সেইসময় মেহরিনের স্বামী রিজওয়ান ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে আদুরে স্বরে বলেছিলো…..

—“আজ আর কিছুসময় আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকো প্লিজ মেহু, বুকের ভিতরটা আজ ভিষণ অ*শান্ত হয়ে আছে, এই অ*শান্ত বুকে তুমি মাথা রাখলে ভিষণ শান্তি অনুভব হয় আমার।”

স্বামীর এমন আদুরে স্বরে করা আবদার ফেলতে পারার সাধ্য মেহরিন করে উঠতে না পারায় রিজওয়ানের বুকের বাম পার্শে মাথা রেখে চোখ বুঝেছিলো সে। পরম তৃপ্তির মাঝে কখন যে পুরোপুরি ভাবে চোখ লেগে গিয়েছিলো মেহরিনের তা সে খেয়াল করে নি। দরজার বাহির থেকে শ্বাশুড়ির কঠিণ কন্ঠে তি*ক্ত কথাগুলো রিজওয়ান আর মেহরিনের কর্ণপাত হতেই তৎক্ষণাৎ শোয়াবস্থা থেকে উঠে বসে ওরা। মেহরিন দ্রুততার সাথে বিছানা থেকে নেমে পরণের এলোমেলো হয়ে থাকা শাড়ির ভাঁজ গুলো সমান করতে করতে দরজার দিকে অগ্রসর হয়। দরজা খুলতেই রাহেলার রাগী মুখশ্রী চোখে পড়ে মেহরিনের। রাহেলা রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললেন….

—“বাপের বাড়ি থেকে আসার সময় ১০-২০ জন কাজের লোক আনতে পারেন নি জ*মি*দা*র*নী! তাহলে আর আপনাকে সকালবেলা এতো ক*ষ্ট করে স্বামীর আলিঙ্গন ছেড়ে উঠতে হতো না।”

রাহেলার এরূপ কথায় মেহরিন ল*জ্জা*য় ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে মাথা নিচু করে ফেলে। রাহেলা আবারও রাগী স্বরে বললেন….

—“সং*য়ের মতো এভাবে মাথানত করে দাঁড়িয়ে থেকে আর কতো সময় ন*ষ্ট করবেন আপনি নবাব*জা*দী! ”

মেহরিন বিনাবাক্যে স্থান ত্যগ করে। রিজওয়ান নিরবে বিছানায় বসে নিজের বউকে তার সৎমায়ের মুখ ঝা*ম*টা সহ্য করতে দেখে শুধু। বে*কার হওয়ায় চেয়েও মুখ ফুটে একটা টু শব্দ সে বের করতে পারে না সে। রাহেলা ভেং*চি কে*টে স্থান ত্যগ করলেন। মেহরিন রান্নাঘরে এসে কোণায় থাকা টিউবওয়েল চেড়ে চোখে-মুখে পানি দেয়। অতঃপর শাড়ির আঁচল দিয়েই পানিটুকু মুছে নিয়ে সানসাইটের উপর উপুর করে রাখা ভাতের বড় সিসার পাতিলটা নামিয়ে মাটির চুলার একপার্শে রাখে। সানসাইটের উপর উপুর করা লাল রংয়ের প্লাস্টিকের পানির বালতিটা নিয়ে টিউবওয়েল থেকে একবালতি পানি নিয়ে চুলার অন্যপার্শে রেখে চুলার মুখ বরাবর বসে চুলায় আগুন ধরায়। পরক্ষণেই বসাবস্থা থেকে উঠে চুলার উপর পাতিলটা বসিয়ে বালতির পানিটুকু ঢেলে দেয়। পাশ থেকে বড় গামলাটা হাতে নিয়ে রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বাহিরটা একপলক দেখে। এখনও বাড়ির অন্যসদস্যরা ঘুম থেকে উঠে নি। শ্বাশুড়ি মাকেও আশেপাশে দেখতে না পেয়ে মেহরিন কিছুটা সংকোচবোধ নিয়েই রান্নাঘরের অন্যপার্শের কর্ণারে রাখা চালের ড্রামের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বাড়ির ১০জন সদস্য হিসাব করে গুণে গুণে ১০ পট চাল গামলায় ঢেলে নিয়ে ড্রামের মুখ বন্ধ করে টিউবওয়েলের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সেইসময় রাহেলা হৈ হৈ করে রান্নাঘরে প্রবেশ করে বললেন…..

—“যেই না একটু চোখের আড়াল হয়েছি ওমনি ঘরের অন্ন ধ্বং*স করতে নিজে নিজেই ড্রাম থেকে বেশি পরিমাণে চাল নিয়ে রান্না বসাতে যাচ্ছিলেন দেখছি নবাব*জা*দী! বলি এতো সা*হস পান কোথায় থেকে আপনি!”

শ্বাশুড়ি মায়ের এরূপ কথায় মেহরিন ঐস্থানেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরে ধীরকন্ঠে বললো…..

—“বেশি নেই নি আম্মা! আসলে রান্না বসাতে দেড়ি হয়ে গিয়েছিলো আপনাকেও দেখছিলাম না আশেপাশে তাই ভাবলাম আর দেড়ি না করে নিজেই উঠিয়ে দেই একবেলা। আর আপনি প্রতিদিন সকালে ১০ পট চাল রান্নার জন্য দেন আজও তাই আমি ১০ পট ই নিয়েছিলাম।”

রাহেলা ধ*ম*কের স্বরে বললেন…..
—“ছোট*লো*কের ঘরের ছোট*লোক কোথাকার আজকাল আমার মুখে মুখে প*ট*র প*ট*র করে কথা বলা শিখে গিয়েছে খুব। আজ যে জ*মি*দা*র*ণীর মতো ঘুম থেকে উঠতে বেলা গড়িয়ে ফেলেছো তার জন্য তোমার নসিবে শা*স্তি জু*ট*বে না নাকি! এমনি এমনিই ছেড়ে দিবো ভেবেছিলে!”

মেহরিন এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শা*স্তি*র বিষয়টা তার কাছে নতুন কোনো বিষয় না। কারণ এ বাড়িতে আসার পর থেকে এমন একটা দিন কাটে নি যে দিনে মেহরিনের হিসাবে না ধরলেও চলে এমন সামান্য ভু*ল গুলোকে অনেক বড় করে দেখে রাহেলা তাকে ক*ঠি*ন থেকে ক*ঠি*ন তম শা*স্তি দিয়েছেন। রাহেলা দ্রুত কদমে মেহরিনের কাছে এসে ওর হাত থেকে চালের গামলাটা কে*ড়ে নিয়ে ড্রামের কাছে গিয়ে সবগুলো চাল ঢেলে পুনরায় মেপে মেপে ৮পট চাল নিয়ে আবারও মেহরিনের কাছে এসে গামলাটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন…..

—“আজ সকালবেলা তোমার আর তোমার সোহাগের স্বামীর খাওয়া ব*ন্ধ। এখানে ৮পট চাল আছে আজ এতোটুকুই রান্না হবে। এর বেশি একটা চালও আজ হাঁড়িতে ফুটবে না।”

মেহরিন ছলছল দৃষ্টি নিয়ে হাতে ধরা গামলায় রাখা চালগুলোর দিকে একপলক দেখে রাহেলার দিকে তাকালেন। রাহেলা মেহরিনের নোনাজলে ভরপুর দৃষ্টিকে অ*গ্রা*হ্য করে সানসাইটের নিচে বিছিয়ে রাখা সবজিগুলো থেকে বেছে বেছে কিছু সবজি ডালায় নিতে নিতে বললেন…..

—“আজকে তোমাদের সকালে খাওয়া ব*ন্ধ মানে ব*ন্ধ কথাটা ভালো ভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নাও। যদি সকলের খাবার খাওয়ার পরও ভাত-তরকারী বেছে যায় তাহলে সেগুলো আমি নিজ দায়িত্বে আঙিনায় বসা কু*কু*র-বিড়ালগুলোকে দিয়ে দিবো।”

রাহেলার এরূপ কথায় মেহরিনের দু’চোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে শুরু করে। মেহরিন ঠোঁট চে*পে কান্না নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে টিউবওয়েলের কাছে গিয়ে আধবসা হয়ে চালগুলো ধুঁয়ে পরিষ্কার করে চুলোর সামনে এসে ডাবু দিয়ে পাতিল থেকে পানির পরিমাণ কমিয়ে গামলায় থাকা চালগুলো ঢেলে দিতে শুরু করে। পানি ট*গ-ব*গ করে ফু*টছে। তাই চালগুলো পাতিলে দিতে গিয়ে মেহরিনের হাতে পানি গুলো ছি*ট*কে ছি*ট*কে এসে লাগছে। বুকের ভিতরে চা*পা য*ন্ত্র*ণা*র সামনে শরীরের এই সামান্য য*ন্ত্র*ণা মেহরিনের কাছে তু*চ্ছ মনে হয়। মেহরিন দীর্ঘ*শ্বাস ফেলে মনে মনে বললো…..

—“ওনাদের কাছে রাস্তার কু*কু*র-বেড়ালদের সম্মানও আমার আর আমার স্বামীর সম্মানের থেকে বেশি।”

রাহেলা মেহরিনের একপার্শে সবজির ডালাটি রেখে বললেন….
—“দ্রুত হাত চালিয়ে রান্নার কাজ শেষ করুন জ*মি*দা*র*নী। আপনার ঢি*লা*মীর জন্য সময় দুই সেকেন্ড মিলিয়ে একসেকেন্ড কা*টবে না!”

এই বলে রাহেলা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন। মেহরিন পাতিলের উপর ঢাকনা দিয়ে সবজি কাটার কাজে মনোনিবেশ করলো।
.
.
.
রান্নার পর্ব শেষ করে ডায়নিং টেবিলে সব খাবারগুলো সাজিয়ে রেখে মেহরিন ওর সামনে থাকা দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো সময় তখন সকাল ৭টা বেজে ৩০ মিনিট। যেদিন থেকে রান্নার দায়ভার মেহরিনের উপর এসে পড়েছে সেদিন রাহেলা বেগম বলেছিলেন সকালের রান্না ৮টার পূর্বেই শেষ করতে হবে ওকে। অবশ্য গত দিনগুলোতে দুই ভাসুর-জায়ের রুম ব্যতিত পুরো বাড়ি পরিষ্কার করে ৭টা ২০ এর মধ্যেই রান্নার কাজ শেষ হয়েছে মেহরিনের। যদিও পুরো বাড়ি পরিষ্কার করা বাকি এখনও কিন্তু আজও সে ৮টার অনেক পূর্বেই রান্না শেষ করেছে। তবুও আজ সকালে তার আর তার স্বামীর খাবার খাওয়া ব*ন্ধ থাকবে। নিজের জন্য চিন্তা মেহরিন করে না। কিন্তু ওর স্বামীরও দিনের শুরুটা না খেয়ে করতে হবে ভেবেই ওর ভিষণ খা*রা*প লাগছে। নিজ হাতে বাহারি রকমের খাবার সে রান্না করলো তবুও এই খাবার গুলো থেকে এক টুকরো আলু উঠিয়ে নেওয়ার ক্ষ*ম*তা মেহরিনের নেই। মেহরিনের ভাবনায় ছে*দ ঘটে ওর মেজো জা ঊর্মিলার কথায়….

—“খাবারের দিকে ওভাবে হা করে চেয়ে আছো কি জন্য হ্যা! শুনলাম শ্বাশুড়ি মা আজ সকালে তোমাদের খেতে বা*রণ করেছেন! তাই মনে মনে ব*দ*দোয়া করছো নাকি! যেনো এই খাবারগুলো খেয়ে আমাদের সবার শরীর খা*রা*প হয়!”

ঊর্মিলার এরূপ কথা শুনে মেহরিন শান্ত দৃষ্টি নিয়ে ঊর্মিলাকে একপলক দেখে শুধু। ঊর্মিলার বলা কথাগুলোর কোনো প্রতিত্তুর করার মতো শব্দ মেহরিন খুঁজে পায় না। পরক্ষণেই মেহরিন ঊর্মিলার উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রান্নাঘরের ভিতরে চলে যায়। সকাল থেকে কম তি*ক্ত পরিস্থিতির ও কথার সম্মুখীন হতে হয় নি তাকে। ওদের আশেপাশে থাকা মানে নিজ হাতে ওদের সামনে রাস্তা খুলে দেওয়া যেনো ওরা স্বযত্নে কথা দিয়ে ওর বুকের ভিতরটা ক্ষ*ত-বি*ক্ষ*ত করে দিতে পারে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#অন্তিম_পর্ব_১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নিহানের কোনো পাওয়ার এখানে কাজে লাগবেনা।”

“এহতিশামের শেষের কথাটি শুনে, নীলাদ্রি অসহায় ভঙ্গিতে এহতিশামের দিকে তাকালো।করুণ স্বরে বললো,’আপনারা সবাই অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার;সবাই বহুরূপী।গতকাল থেকে আমার ওপর একটার পর একটা মেন্টালি টর্চার করা হচ্ছে।দয়া করে আমার সাথে এইরকম জোরাজুরি করবেন না।এভাবে চলতে থাকলে আমি ম**রে যাবো।দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন।আমি অনেক দূরে চলে যাবো।ভুলেও আর আপনাদের সামনে আসবো না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে এহতিশামের মুখে কু**টিল হাসি ফুটে উঠলো,মুহূর্তের মধ্যেই নীলাদ্রির হাত টান দিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,’কে বলেছে তুমি ম**রে যাবে?আমি তো তোমায় ম**রতে দেবো না।নিহান তোমাকে হয়তো ২০৯বছর যাবৎ ভালোবেসেছে।কিন্তুু আমি তো তোমাকে এই জন্মে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি।নিহান মানুষের মনের মতো নিজের মনে ভালোবাসার অনুভূতি তৈরি হওয়ার জন্য মানুষের মস্তিষ্ক খেয়েছে;আমিও খেয়েছি।সেদিন রাতে যখন তোমরা এক হতে যাচ্ছিলে, সেদিন আমার গায়ে মনে হয় আগুন ধরে যাচ্ছিলো।তাইতো আমি বুদ্ধি করে ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে, নিহান কে লিওনসেলের কথা মনে করিয়ে দেই।আমি কিছুতেই তোমাদের মিলন দেখতে পারছিলাম না।”

“এহতিশামের মুখে বিশ্রী কথাগুলো শুনে নীলাদ্রির গা গুলিয়ে আসছে।এহতিশাম কে দেখলে কেউ বলবে না,যে এই সুদর্শন গম্ভীর মানুষটার আড়ালে এতো নি**কৃ*ষ্ট ব্যক্তিত্ব লুকিয়ে আছে।একদিকে নীলাদ্রি এহতিশামের নি**কৃ*ষ্ট চরিত্রের ব্যাপারে ভাবছে,আরেক দিকে এহতিশাম তার ঠান্ডা শরীর নিয়ে এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরাতে; নীলাদ্রির নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।কয়েক সেকেন্ড পরপর হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠছে নীলাদ্রি।হঠাৎ এহতিশাম নীলাদ্রিকে ছেড়ে দিয়ে ওর দুই গালে হাত দিয়ে বললো,’নিহানকে লিওনসেল সজ্ঞানে তোমাকে রাজি করিয়ে ভ্যাম্পায়ার বানাতে বললেও, আমার আর ইয়াশ কে এমন কোনো শর্ত আরোপ করে নি।যেহেতু তুমি মানবী বলে আমি তোমার সাথে মিলিত হলে তুমি ম**রে যাবে,তাই আমি এই কাজ ভুলেও করবো না।তুমি আমার রাজ্যের রানী হবে।তোমার ঘাড়ে এখন আমি বা**ইট করে সেই র**ক্ত তোমায় খাওয়াবো।তাহলেই তুমি ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে।হাহাহাহাহা তারপর তুমি চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যাবে।তবে তোমাকে বিয়ে করার পর, লিওনসেলের শর্ত অনুযায়ী আমি আর ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে যেতে পারবো না।তবে আমার কাছে লিওনসেল কে জব্দ করার জন্য একটা প্ল্যান আছে।যদি সেটাতে সফল না হই,তাহলে আমরা পৃথিবীতেই বসবাস করবো।আমি এখন মানবজাতির সাথে মিশতে মিশতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।আর আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া তো তুমি।তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে বিয়ে করার পর, তোমার আর আমার চির সুখের মিলন হবে।সার্থক হবে আমার এতোদিনের কঠোর পরিশ্রম। তুমি আর আমি পুরো শহরে ঘুরে ঘুরে মানুষ এবং পশু-পাখির র**ক্ত পান করবো।আমরা সারাজীবন বেঁচে থাকবো।”

“জানোতো,যেদিন ইয়াশ এবং ইরা ঝগড়া করছিলো,আর তুমি ওদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে।সেদিন নীল শাড়িতে তোমায় অনেক বেশি সুন্দর লাগছিলো।আমি মোহে পড়ে যাচ্ছিলাম।তাই মোহ টা কা**টানোর জন্য ওদের কে শাসন করার নাম করে, সেখানে গিয়ে তোমাকে দেখছিলাম।তুমি যাতে কোনোভাবে আমার অনুভূতি বুঝতে না পারো,তাই একটু অভিনয় করে তোমাকে নিহানের কাছে গিয়ে ওকে সময় দিতে বলেছি।উফফ.. জানো সুইটহার্ট ওই মোমেন্ট টা আমার জন্য অনেক কষ্টকর ছিলো।কিন্তুু আমার শক্ত ব্যক্তিত্ব কে টিকিয়ে রাখার জন্য আমি অভিনয় টা করতে বাধ্য হয়েছি।বাই দ্য ওয়ে তুমি কিন্তুু সত্যি অনেক হ**ট।দারুণ রোমান্স করতে পারো তুমি।’ঠোঁট বাঁকিয়ে কথাটি বলে ডেভিল হাসলো এহতিশাম।”

“নীলাদ্রি এহতিশামের নোং**রা চাহনি এবং বিশ্রী হাসি দেখে, নিজের রাগ কে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এহতিশাম কে কষিয়ে একটা থা**প্পড় দিলো।এহতিশাম নিজের গালে হাত দিয়ে;নীলাদ্রির দিকে কয়েক সেকেন্ড র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বি**দ*ঘুটে হাসি দিয়ে বললো,’তোমার নরম হাতের ছোঁয়ায় আমার শরীরে কারেন্ট ধরে গেলো সুইটহার্ট।তুমি হয়তো ভুলে গেছো যে,ভ্যাম্পায়ার রা মানুষের আ**ঘা*তে ব্যথা পায় না।এনিওয়ে আমি চাইলেই তোমাকে হিপনোটাইজ করে তোমার ঘাড়ে বা**ইট করতে পারবো।কিন্তু তাতে আমি বেশি মজা পাবো না।তোমার ওই ভ**য়ার্ত মিষ্টি মুখ টা দেখতে আমার দারুণ লাগছে।এখন আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই,শুভ কাজে দেরি করতে নেই।’
বলেই বাঁকা হেসে নীলাদ্রির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো এহতিশাম।”

“নীলাদ্রি পেছনে যেতে যেতে বিছানায় বসে পড়লো।এহতিশাম হা করে তার চোয়ালের ওপর দুই পাশের ক্যানাইন দাঁত জোড়া বের করলো,এহতিশামের চোখজোড়া লাল টকটকে হয়ে গেলো।নিহান এবং এহতিশামের চেহারা যেহেতু প্রায় একই রকম।তাই নীলাদ্রির সেদিন রাতে নিহানের সেই ভ**য়ং**কর রূপে কবুতরের র**ক্ত খাওয়ার দৃশ্য মনে পড়ে গেলো।নীলাদ্রির মস্তিষ্কের প্যাঁচানো নিউরনগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গেলো।নীলাদ্রির দাঁতে দাঁত লেগে আসলো।তৎক্ষণাৎ এহতিশাম নীলাদ্রির হাত ধরে ওর ঘাড়ে বা**ইট করতে নিলে, হঠাৎ করে ঘাড়ে শক্ত একজোড়া হাতের আ**ঘা*ত লাগতেই গগন বিদরী চি**ৎ*কার দিয়ে ওঠে এহতিশাম।এহতিশাম নীলাদ্রির হাত ছেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।ফলে নীলাদ্রিও বিছানায় পড়ে যায়।”

“নিহান নীলাদ্রির কাছে এসে ওকে ধরে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,’তোমার মনে আছে নীলাঞ্জনা।এক রাতে তোমাদের বাসায় তোমার রুমের বেলকনি থেকে একটা কালো ছায়া প্রবেশ করেছিলো?সেটা আমি ছিলাম।’তোমায় বলেছিলাম, ‘তোমাকে আমি আমার রানী করে নিয়ে যাবো নীলাঞ্জনা।তুমি আমার ছাড়া আর কারো হতে পারবে না।আজ সে কথাটাই রাখবো।’বলেই রহস্যময় হাসি দিলো নিহান।”

“নীলাদ্রি গলা কা**টা মুরগির মতো ছটফট করছে।নিহান দেখলো, নীলাদ্রির শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।নিহান তৎক্ষণাৎ ওর ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দিয়ে, নীলাদ্রিকে ভালোভাবে শ্বাস নিতে সাহায্য করে।একটি শ্বাসযন্ত্র বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সেট হলো এমন সরঞ্জাম; যা একজন ব্যক্তিকে একটি প্রতিকূল পরিবেশে শ্বাস নিতে দেয়। যেখানে শ্বাস নেওয়া অন্যথায় অসম্ভব, কঠিন, ক্ষতিকারক বা বিপজ্জনক হতে পারে বা একজন ব্যক্তিকে শ্বাস নিতে সহায়তা করে।”

“নীলাদ্রির মস্তিষ্ক পুরোপুরি সক্রিয় না থাকায়, নিহানের উপস্থিতি ও বুঝতে পারেনি।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নীলাদ্রির চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো।নিহান ওকে পরম যত্নে বিছানায় শুইয়ে দিলো।”

“এদিকে নিহান তার শক্তিশালী হাত জোড়া দিয়ে এহতিশামের ঘাড়ে এতো জোরে আ**ঘা*ত করেছে, যে এহতিশাম ফ্লোরে বসে চোখজোড়া বন্ধ করে চোখ-মুখ কুঁচকে বারবার ‘উহহ’ শব্দ করছে।নিহান সেটা দেখে তৃপ্তির হাসি দিয়ে এহতিশামের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,’কি ভেবেছিলি?তুই তোর পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাঞ্জনা কে আটকে রাখবি?আর তোর পাওয়ারের কারণে আমি কিছুই জানতে পারবো না?উপসস..তুই মনে হয় ভুলে গিয়েছিস, যে ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল আমাকে তোদের সবার থেকে বেশি পাওয়ার দিয়েছে।প্রথমে আমার সিম্পল পাওয়ার টা সত্যি কাজে লাগেনি। নীলাঞ্জনা কে যেখানে আমি দেখেছিলাম,সেখানে গিয়ে পাইনি।তখন আমি আবারও পাওয়ার ব্যবহার করি, কিন্তুু কোথাও নীলাঞ্জনা কে দেখতে না পেয়ে আমি খুব অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম।তখনই আমার মনে পড়লো ভ্যাম্পায়ার কিং আমাকে স্পেশাল পাওয়ার দিয়েছিলো।ব্যাস এই ঘোর বিপদে এই প্রথম সেই বিশেষ পাওয়ার টিকে কাজে লাগাই।আর যখন দেখলাম, আমার নীলাঞ্জনা তোর কাছে আছে।তখন নিজের চোখজোড়া কে বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।আরে তোর অস্তিত্বে হয়তো বা ভ্যাম্পায়ার সত্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।কিন্তুু তোকে তো আমি আর ইয়াশ খুব ভালোবেসেছিলাম।নিজের আপন ভাইয়ের থেকে কোনো অংশে কম দেখিনি।জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এবং কঠিনমুহূর্ত গুলোতে তোর ওপর ভরসা করে তোকে পাশে রেখেছি।আর তুই কিনা এতোটা নি**কৃ*ষ্ট ভাবে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলি?আরে তুই্ তো ঘরের শত্রু বিভীষণ।যাইহোক,শত্রুকে বাঁচিয়ে রাখতে আমি কস্মিনকালেও পছন্দ করিনা।তাই আজ তোর ভ্যাম্পায়ার জীবনের এখানেই সমাপ্তি হবে।”

“নিহানের কথাগুলো শুনে এহতিশামের মুখে কু*টিল হাসি ফুটে উঠলো।ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে এহতিশাম তার পাওয়ার ব্যবহার করে, ব্যথা কমানোর জন্য ভ্যাম্পায়ারদের স্পেশাল ওষুধ খেয়ে ফেললো।”

“সেটা দেখে,নিহান তার চোয়ালের ওপরের দুই পাশের ক্যানাইন দাঁত জোড়া বের করলো।তার চোখজোড়া টকটকে লাল হয়ে আছে।মনে হয় এখুনি র**ক্ত গড়িয়ে পড়বে।পানির মধ্যে মানুষের মুখ ডুবিয়ে রাখলে যেমন আওয়াজ হয়।নিহান ঠিক তেমনই গড়গড় করে ভ**য়ং**কর ভাবে গ*র্জন করছে।
সেটা দেখে এহতিশাম শ**য়**তানি হাসি দিয়ে নিজেও একই রূপ ধারণ করলো।একজন সাধারণ মানবী কে নিয়ে দুই মেরুর দুই ভ্যাম্পায়ারের ভ**য়ং**কর যুদ্ধের গ**র্জন এইমুহূর্তে নীলাদ্রি যদি সজ্ঞানে শুনতে পেতো ,আর দুই ভাইয়ের এমন ভ**য়ং**কর রূপ একসাথে দেখতো,তাহলে হয়তো এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতো।”

“নিহান এহতিশামের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।এহতিশামও কম না।সে তার সর্বশক্তি দিয়ে নিহানের সাথে লড়াই করতে থাকলো।নিহান এহতিশামের শরীরে ধারালো নখ দিয়ে একের পর এক আ**চড় দিয়ে ক্ষ**ত-বি**ক্ষ**ত করতে থাকলো।নিহান এহতিশাম কে বারবার বা**ইট করার চেষ্টা করলো।একই ভাবে এহতিশাম ও নিহান কে বা**ইট করার চেষ্টা করলো।কিন্তুু তারা কেউ কারো থেকে কম নয়।একজন মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার হয়েও তার মধ্যে আছে স্পেশাল পাওয়ার।আরেকজনের অস্তিত্বে মিশে আছে ভ্যাম্পায়ার সত্তা।এরা যেনো একে অপরের সমান প্রতিদ্বন্দ্বী।নিহান এহতিশামের মেইন পয়েন্টে লা**থি দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো।ব্যথায় এহতিশাম আ**র্তনাদ করে উঠলো।ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে আবার স্পেশাল পাওয়ার ব্যবহার করে সুস্থ হয়ে গেলো।এহতিশাম এইবার আসল ভ্যাম্পায়ারের রূপ ধারণ করে ভ**য়ং**কর ভাবে গ**র্জন করে নিহানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।নিহানও একই রূপ ধারণ করলো।দুইজন দু’জনের শরীরে বা**ইট করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।অথচ দু’জনেই অপারগ।অবশেষে এহতিশাম নিহানের এক হাত পেছনে নিয়ে মুচড়ে দিলো।এতে নিহান কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লো।বসে পড়লো ফ্লোরে।এহতিশাম এবং নিহান আবারও মানুষ রূপে ফিরে এলো।নিহান সুস্থ হওয়ার জন্য যখনই তার স্পেশাল পাওয়ার ব্যবহার করতে যাবে;তখনই এহতিশাম পৈ**শা**চিক হাসি দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে বললো,’তোরা কোথায় আছিস?আমার সবচেয়ে বড় শত্রু এসে গেছে।ওকে বিনাশ করার সময় এসেছে।’বলতেই সেখানে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একদল শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার হাজির হলো।”

“নিহান ভ্যাম্পায়ারগুলোর দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’তোমরা তো ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেলের সাথে থাকতে,এখানে কি করছো?”

“হাহাহাহা..’বি**দ**ঘুটে হাসি দিলো এহতিশাম।ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’ওরা তো এখন আমারই দাস।ওদের কে বলেছি,’ আমরা সবাই সম্মিলিত হয়ে ওই কাঠখোট্টা,বদমেজাজি ধুরন্ধর ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল কে মে**রে ফেলবো।তবে তার আগে তোকে আর ইয়াশ কে মে**রে ফেলবো।আমার পথের মধ্যে আমি কোনো বিষাক্ত কাঁ**টা রাখতে পছন্দ করি না।আর তোরা আমার ভাই ও না।তোদের বাঁচিয়ে রেখে আমার কোনোই লাভ হবে না।আর তোর নীলাঞ্জনা?হাহাহোহো ওর আশা ছেড়ে দে।তোকে নৃ**শং**স ভাবে মা**রার পর, আমি ওকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ফেলবো।তারপর ওর সাথে মন ভরে রোমান্স করবো।জানিস তোর জন্য না আমার খুব কষ্ট হয়।তোর অর্ধাঙ্গিনী কে তুই গতজন্মেও পেলি না,আর এই জন্মেও না চু চু চু।আচ্ছা বাদ দে তোর চার আঙুলের কপালে হয়তো এটাই লেখা ছিলো।’বলেই এহতিশাম ভ্যাম্পায়ারগুলোর দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই, ওরা নিহানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।”

“নিহান কে ওরা ক্ষ**ত-বি**ক্ষ**ত করে ফেললো।বেচারা নিহান যখন মৃত্যু পথযাত্রী, ঠিক সেই সময় সেখানে অকল্পনীয় ভাবে হাজির হলো ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল।আর তার সাথে হাজির হলো ইমতিয়াজ আহমেদ, শায়লা বেগম এবং ইয়াশ।লিওনসেল তার শক্তিশালী পাওয়ার ব্যবহার করে ভ্যাম্পায়ারগুলোর ওপর বিষাক্ত তীর ছুঁড়লো।বিষাক্ত তীরের আ**ঘা*তে মুহূর্তের মধ্যেই ভ্যাম্পায়ারগুলো কাতরাতে কাতরাতে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।নিহান অর্ধমৃত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে রইলো।লিওনসেল এহতিশামের দিকে র**ক্ত*চক্ষু নিক্ষেপ করে বললেন,’বিশ্বাসঘাতক অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার তুই।তোকে তো জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই মে**রে ফেলা উচিত ছিলো।”

“এদিকে ইয়াশ তো নিজের চোখ জোড়া কেই বিশ্বাস করতে পারছে না।ওর মুখের ভাষাগুলো মনে হয় কেউ আটকে রেখেছে।”

“লিওনসেল আবারও বলে উঠলেন,’তোদের পৃথিবীতে মানবজাতির সাথে বসবাস করতে পাঠানোর আগে আমি বলেছিলাম,ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে আমি সবসময় তোদের কার্যাবলির দিকে নজর রাখবো।কিন্তুু তুই হয়তো সেটা কালের পরিক্রমায় ভুলে গিয়েছিস।তোকে কিছু এক্সট্রা পাওয়ার দিয়েছিলাম, আর তুই সেটার অপব্যবহার করেছিস।শুধু তুই না..তোর সাথে সাথে ওই ভ্যাম্পায়ারগুলোও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।আজ এখানেই তোর মতো অভিশপ্ত,বিশ্বাসঘাতক দাম্ভিক ভ্যাম্পায়ারের ভ**য়ং**কর মৃ**ত্যু হবে।”

“লিওনসেলের কথা শুনে ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম কেঁদে দিলেন।যতোই হোক এহতিশাম তো তাদেরই সন্তান।ইমতিয়াজ আহমেদ এহতিশাম কে বললেন,’তুমি এতোটা জ**ঘন্য কাজ করবে, সেটা কখনো ভাবতে পারিনি।আজ তোমার ভুলের মাশুল আমাদের সবাইকে দিতে হবে।’শায়লা বেগম এহতিশাম কে বললেন,’তোর এই নি**কৃ**ষ্ট রূপের কথা আগে জানলে; হয়তো আগেই তোকে মে**রে ফেলতাম।”

“এহতিশামের দাম্ভিক বি**ভৎস চেহারাটি মুহূর্তের মধ্যেই বাচ্চাদের মতো হয়ে গেলো।এহতিশাম অসহায় মুখ করে নিচু স্বরে বললো,’বাবা-মা আমায় ক্ষমা করে দাও।আমি ভ্যাম্পায়ার কিং এর রাজত্ব এবং নীলাদ্রির মোহে পড়ে অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি।বিশ্বাস করো আমি নিজেকে শুধরে নেবো।আমার দ্বারা এই ভুল আর কখনো হবে না।”

“এহতিশাম বলতে বলতে লিওনসেল ওকে ধ্বংস করার জন্য বিড়বিড় করে কিছু পড়তে থাকলেন।ঠিক তখনই এহতিশাম ওর পাওয়ার ব্যবহার করে লিওনসেল কে বিষাক্ত তীর দিয়ে আ**ঘা*ত করতে নিলে, পেছন থেকে নিহান ওর পিঠে বিষাক্ত তীর দিয়ে আ**ঘা*ত করে।মুহূর্তের মধ্যেই এহতিশাম ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে কাতরাতে কাতরাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।”

“লিওনসেল সেটা দেখে নিজের সেই শক্তিশালী বিষাক্ত তীরটি নিজের পেটেই ঢু**কিয়ে দেয়।আকস্মিক ঘটনায় সেখানে থাকা সবাই লিওনসেলের দিকে অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে থাকে।লিওনসেল ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে।ইমতিয়াজ আহমেদ, শায়লা বেগম,ইয়াশ এবং নিহান লিওনসেলের কাছে আসতেই, লিওনসেল চোখজোড়া বন্ধ করে কিছু একটা পড়ে তার হাতে একটি ছোট বোতল আবিষ্কার করলেন।তারপর সেটা নিহানের হাতে দিয়ে বললেন,’এতে আছে বিশেষ পানীয়;যেটা খেলে তুমি আর ইয়াশ আগের মতো স্বাভাবিক মানুষ রূপ ধারণ করবে।আমি মানবজাতিকে দেখতে পারতাম না। কারণ আমিও জঙ্গলে একবার পশু শিকার করতে গিয়ে, এক মানবীর প্রেমে পড়েছিলাম।তাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমার রাজ্যের রানী বানিয়েছিলাম। কিন্তুু সে আমার আরেক ভ্যাম্পায়ার বন্ধুর সাথে প্রেম করে, আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে।তারপর তাকে আমি এই বিশেষ পানীয় পান করিয়ে আবার মানবী বানিয়ে, মানবজগতে পাঠিয়ে দেই এবং কিছুদিন পর সে স্বাভাবিক ভাবে মৃ**ত্যুবরণ করে। তখন থেকে আমি মানবজাতিকে ঘৃণা করি।তারা বড়ই বিশ্বাসঘাতক এবং ছলনাময়ী।তাই তোমাকে এতোগুলো বছর কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে আবদ্ধ করে কঠিন শাস্তি দিয়েছি।আজ থেকে তোমরা দুই ভাই এই অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ারদের দুনিয়া থেকে মুক্ত।আর সেই সাথে সারাজীবনের জন্য মুক্ত হবে আমার এবং আমার ভ্যাম্পায়ার রাজ্য।আমি সবচেয়ে শক্তিশালী বিষাক্ত তীর দিয়ে নিজেকে আ**ঘা*ত করেছি, যাতে আমার সাথে বাকি সব ভ্যাম্পায়ারগুলোও বিনাশ হয়ে যায়।আজ নিজের জীবন উৎসর্গ করে, পুরো পৃথিবীকে ভ্যাম্পায়ার নামক অভিশপ্ত জিনিস থেকে মুক্ত করে গেলাম।’বলতে বলতে ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেলের চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেলো। নিঃশ্বেষ হয়ে গেলো ভ্যাম্পায়ার কিং; সেই সাথে বিনাশ হয়ে গেলো পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্য।ভ্যাম্পয়ার কিং লিওনসেল,ইমতিয়াজ আহমেদ(কোর্টন),শায়লা বেগম(জেসিকা),এহতিশাম(ফ্রেডো) সহ সকল ভ্যাম্পায়ার মুহূর্তের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেলো।সেখানে শুধু পড়ে রইলো নিহান,নীলাদ্রি এবং ইয়াশ।”

———–
“সময় ও স্রোত কারো জন্য থেমে থাকে না।কে**টে গেলো ১মাস।সময়ের সাথে সাথে নিহান,নীলাদ্রি,ইয়াশ এবং ইরার জীবন টাও বদলে গেছে।”

“নিহান এবং ইয়াশ সেদিন ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেলের দেওয়া পানি পান করেছিলো।তারপর তারা সেখানেই জ্ঞান হারায়।প্রায় এক ঘন্টা পর যখন জ্ঞান ফিরলো।তখন তারা দেখলো তাদের মাথা খুব ব্যথা করছে।নিহান এবং ইয়াশ তাদের পাওয়ার ব্যবহার করে মাথা ব্যথা কমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তুু অদ্ভুত ভাবে তাদের পাওয়ার কোনো কাজে লাগছে না।কয়েক সেকেন্ড ভাবার পর নিহান এবং ইয়াশ দুজনেই বুঝে গেলো,যে তারা এখন আর ভ্যাম্পায়ার নেই।তারা এখন স্বাভাবিক মানুষ।তারা দু’জনেই দু’জনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।নিহান ইয়াশ কে প্রায় ২ঘন্টা সময় নিয়ে অতীতের সব ইতিহাস বললো।ইয়াশ তো সবকিছু শুনে মনে হয় ১২০ভোল্টেজের শকড খেলো।তারপর নিহান ঘুমন্ত নীলাদ্রি কে নিয়ে বাসায় চলে গেলো।”

“ওই ঘটনার পর নীলাদ্রি টানা ৪দিন নিহানের সাথে খুব প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা বলেনি।তবে নিহান কে খুব সেবা-যত্ন করেছে।কারণ, ভ্যাম্পায়ার দল নিহানের শরীরের অনেক জায়গায় গুরুতর আ**ঘাত করেছে।নিহান এবং ইয়াশ নীলাদ্রি এবং ইরা কে সবকিছু বুঝিয়ে বলে।ইরা ৭দিন ঘরের দরজা বন্ধ করেছিলো।শুধু নীলাদ্রি ব্যতীত কারো সাথে কথা বলতো না।ইরা এই পুরো পরিবার সম্পর্কে ভ্যাম্পয়ারের কথা শুনে একরকম ট্রমায় চলে গিয়েছিলো।প্রথমে নীলাদ্রি ওদের কথা বিশ্বাস করেনি।কিন্তুু পরবর্তীতে নিহান এবং ইয়াশের চালচলন,গতিবিধি সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিশ্বাস করেছে।কারণ,নিহান এবং ইয়াশ দুজনেই শাক-সবজি,ডিম,দুধ,রসুন থেকে শুরু করে মশলা জাতীয় খাবার মোটামুটি সবকিছুই খায়।তারা দিনের বেলা সূর্যের আলোতে প্রখর রোদে ছাতা ছাড়াই বের হয়।বাসায় প্রতিটি রুমে আয়না লাগানো হয়েছে।নিহান এবং ইয়াশ দুজনেই আয়নাতে নিজেদের কে দেখতে পায়।নিহানের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক মানুষের মতোই।আর নিহান স্বাভাবিক মানুষের মতোই রাতে ঘুমায়।এগুলো সবকিছুই নীলাদ্রি লক্ষ্য করেছে।তারপর ইরা কে বলেছে।”

“ইরার খুব মন খারাপ ছিলো।তখন নীলাদ্রি ইরার কাছে গিয়ে বললো,’সরি দোস্ত সেদিন তোকে রেখেই আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম।আসোলে তখন আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না।নিহান আমার সাথে যেই কাহিনী করেছে।তাতে আমি এক প্রকার ট্রমায় চলে গিয়েছিলাম।আমি ইয়াশ কে তোর সাথে এমন ভ**য়ং**কর আচরণ করতে দেখিনি।আর তখন আমার ধ্যান-জ্ঞান ছিলো কিভাবে নিহানের কাছ থেকে পালাবো।যখন পালিয়েছি তখন রাস্তায় বসে তোর কথা মনে পড়েছে।আমার স্বার্থপরের মতো তোকে এভাবে রেখে আসা উচিত হয়নি।”

“ইরা মিষ্টি করে হেসে বললো,’ডোন্ট ওয়ারি দোস্ত।আমি কিছু মনে করিনি।তোর জায়গায় থাকলে আমিও এইরকম কিছুই করতাম।কারণ, তুই নিহানের আচরণে প্রথম থেকেই শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিদ্ধস্ত ছিলি।আর ইয়াশ আমার সাথে কখনোই খারাপ আচরণ করে নি।আসোলে আমরা সবাই পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম।এখন এইসব বাদ দিয়ে আমার মন ভালো করার জন্য কিছু একটা বল।ইয়াশ বেচারা সবসময় আমার আশেপাশে ঘুরতে থাকে।কিন্তুু ওর সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করলেও বলতে পারিনা।”

” নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,’তোকে একটা মজার ঘটনা বলি,’২দিন আগে আমি ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করছিলাম।ওই সময় ইয়াশ কে দেখি হাঁপাতে হাঁপাতে বাসায় ঢুকেছে।আমি কৌতূহল নিয়ে ওর হাঁপানোর কারণ জিজ্ঞেস করতেই,ও ভ**য়ার্ত মুখ করে বললো,’রাস্তায় নাকি কয়েকটা পা**গলা কুকুর কে একসাথে দেখেছিলো।ওরা ইয়াশের দিকে তেড়ে আসতেই বেচারা ইয়াশ টানা ১৫মিনিট দৌড়ে বাসায় এসেছে।বিশ্বাস কর ওর এই অবস্থা দেখে দুঃখের মধ্যেও আমার হাসি পাচ্ছিলো।’বলেই নীলাদ্রি হেসে দিলো।আর ইরা তো হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।”

“তখনই ইয়াশ দরজার সামনে এসে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এহেম এহেম..আমি কি ভেতরে আসতে পারি?মহারানীর হাসির শব্দ কতদিন পর শুনতে পেলাম।”

“ইরা ইয়াশ কে দেখে, বিছানা থেকে উঠে স্বাভাবিক ভাবে বসলো।নীলাদ্রি ইয়াশ কে দেখে ইরার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,’এইবার বেচারা কে একটু পাত্তা দে ইয়ার।ছেলে টা মনে হয় খুব তৃষ্ণার্ত হিহিহি।’বলেই নীলাদ্রি সেখান থেকে চলে গেলো।”

“ইয়াশ ইরার কাছে এসে ওর থেকে কিছুটা দূরত্বে বসে বললো,’ঘন্টু পাখি এখনও কি আমাকে দূরে সরিয়ে রাখবে?”

” ইরা কটমটিয়ে বললো,’ঘন্টু পাখি কি?”

“ঘন্টু পাখি মানে ঘুঘু পাখি।ওটা নিক নেইম দিয়েছি।”

“ওহহ আচ্ছা ওইসব নামে আমাকে ডাকবেন না।আমাকে সোনাপাখি নামে ডাকবেন।আপনার মুখে এই নাম টা শুনতেই আমার বেশি ভালো লাগে।”

“ইয়াশ ভাবলো,’এই তো সুযোগ পেয়েছি।ইরাবতীর মনটা মনে হয় ফুরফুরে। সময় কে কাজে লাগানোর এটাই মোক্ষম সুযোগ।’ভেবে ইয়াশ ইরার একেবারে কাছে ঘেঁষে বসলো।ইরা নড়লো না।ওর কাছে ভালোই লাগছে।ইরা মিটমিটিয়ে হাসছে।সেটা দেখে ইয়াশ বললো,’একটা কবিতা শুনবে সোনাপাখি?”

“কি? আবার কবিতা?না না না আপনার ওই জগাখিচুড়ি মার্কা কবিতা আমি শুনবো না।তাহলে আমি আবার অজ্ঞান হয়ে যাবো।”

“না না বিশ্বাস করো এইবারের কবিতা টা একদম তোমার মনের মতো হবে।আমি নিজে সারারাত জেগে তোমার জন্য এই স্পেশাল কবিতাটা বানিয়েছি।”

“ওকে শুরু করুন আপনার স্পেশাল কবিতা।”

“ইয়াশ ইরার ডান হাত ধরে ওর মুঠোয় নিয়ে শুরু করলো,

“আমার প্রাণের ইরাবতী
তোমায় আমি ভালোবাসি,
তাইতো আমি বারেবারে
তোমার কাছে ছুটে আসি।

আমার জন্য মজার রান্না
করবে তুমি রোজ,
মজা করে চেটেপুটে
করবো আমি ভোজ।”

“ইরা শেষের লাইনগুলো শুনে কটমটিয়ে বললো,

“ভালোবাসতে নেইতো মানা
করো না কভু টাল-বাহানা,
ডায়েট চার্ট দেখে আমি
রান্না করবো রোজ,
আমার কথা না শুনলে
নেবো না তোমার খোঁজ।”

“ইয়াশ এইবার ইনোসেন্ট মুখ করে বললো,

“ওগো আমার প্রিয়তমা
আমায় তুমি একলা করে
যেওনা কভু দূরে,
শুনবো আমি তোমার কথা
থাকবো চুপটি করে।

তোমার প্রেমে পাগল হয়ে
যাবো তেপান্তর,
প্রেম যমুনায় ভাসবো মোরা
হবো দেশান্তর।”

“ইরা এইবার ইয়াশের বুকে মাথা রেখে মিষ্টি করে হেসে বললো,

“ওগো আমার প্রিয়তম
আমায় তুমি ভালোবাসো
সবই আমি জানি,
তাইতো আমি তোমার বুকে
থাকবো চিরদিনি।”

~মেহের আফরোজ~

“ইরা বলেই ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’কেমন হলো আমার কবিতা?”

“ইয়াশ বড় বড় চোখ করে বললো,’তুমি এতো সুন্দর করে কবিতা বলতে পারো ওয়াও।”

“হুমম আমি আরও কিছু পারি করবো?”

‘কি পারো?’

“ইরা ইয়াশের ঠোঁট জোড়ায় আকস্মিক ভাবেই ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।প্রায় ৩মিনিট পর ইরা ইয়াশকে ছেড়ে বললো,’কেমন লাগলো?”

“ইয়াশ হা করে কয়েক সেকেন্ড ইরার দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,’তুমি কি চিনি খেয়েছো?এতো মিষ্টি লাগলো কেনো?”

“ইরার মনে পড়লো,ও কিছুক্ষণ আগে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে খেয়েছে।
মুচকি হেসে বললো,’হুমম মিষ্টি খেয়েছি।”

“ইয়াশ বললো,’ কতো কষ্ট করে ডায়েট করে ৭কেজি ওজন কমিয়েছি।এখন আবার এতো মিষ্টি খেলে তো আবার মোটা হয়ে যাবো।তখন তুমি আবার আমায় মটু বলে ডাকবে।”

“ইরা কটমটিয়ে বললো,’দেখুন আমি এখন ঝগড়া করার মুডে নেই;রোমান্টিক মুডে আছি।এটাই কিন্তুু সীমিত সময়ের জন্য সুযোগ।এই সুযোগ মিস করলে কিন্তুু আর পাবেন না।”

“ইরার কথা শুনে ইয়াশ কে আর কে পায়।সে তো এই সুবর্ণ সুযোগের অপেক্ষায় এতোদিন প্রহর গুণছিলো।চোখজোড়া বন্ধ করে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে, ইয়াশ ইরার ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরলো।ইয়াশ ইরার পুরো মুখে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিয়েছে।তখনই ইরা বললো,’এই আপনি চুমু দেওয়ার সময় এতো শব্দ হয় কেনো?”

‘মানে?’

“মানে আমার মতো সাইলেন্ট কিস দিবেন।এভাবে চুমুতে শব্দ হলে পরবর্তীতে বাচ্চা হলে, বাচ্চা ঘুমালে আপনার চুমুর শব্দে জেগে যাবে।”

“ইয়াশ গোলগোল চোখ করে বললো,”সাইলেন্ট কিস মানে?এইরকম শব্দ এই প্রথম শুনলাম।”

” উফফ… সাইলেন্ট কিস মানে হলো নীরব চুমু।”

“আসুন দেখিয়ে দেই।’বলেই ইরা নিঃশব্দে ইয়াশের ঠোঁটে চুমু দিলো এবং পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলো।ইয়াশ মিষ্টি করে হসে বললো,’এইবার বুঝেছি।’বলেই ইরার সাথে তাল মেলাতে লাগলো।ইরাও তাল মেলাতে থাকলো।একে-অপরের সর্বাঙ্গে দু’জনের স্পর্শ গভীর থেকে গভীর হতে থাকলো।ধীরে ধীরে দুই নর-নারী ভেসে যেতে থাকলো অগভীর প্রেম সায়রে।”

———–
“এদিকে পড়ন্ত বিকেলে নিহান কালো রঙের ডায়েরির পাতায় মনযোগ দিয়ে কিছু একটা লিখছে।নীলাদ্রি রুমে এসে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’কি লিখছেন?”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’আমার মনের সব অনুভূতি মিশিয়ে তোমার জন্য একটা কবিতা লিখছি।”

“নীলাদ্রি এতোদিনের সকল মান-অভিমান এক পাশে রেখে, নিহানের পাশে এসে বসলো।কৌতূহল নিয়ে বললো,’আমার জন্য কি কবিতা লিখছিলেন?প্লিজ এখুনি আবৃত্তি করে শোনান।”

“আরে এখনও তো লেখা শেষ করিনি।আমাকে ৫মিনিট সময় দাও।পুরোটা লিখে তারপর শোনাই।”

“নীলাদ্রি মেকি সুরে বললো,’উহুমম আমি এখনই শুনবো।যতটুকু লিখেছেন ততটুকুই শুনবো।শুরু করুন।”

“কতোদিন পর নীলাদ্রি নিহানের এতোটা কাছে এসে বসেছে। নিহানের খুব ভালো লাগছে।সেদিনের পর থেকে নিহান আর নীলাদ্রি কে জোর করেনি।একদম নীরব হয়ে গেছে।হয়তো তার মনের মধ্যে অন্য কিছু চলছে।নিহান মুচকি হেসে নীলাদ্রির ডান হাত ধরে তার বুকের বাম পাশে রেখে, নীলাদ্রির দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

“২০৯বছর সাধনার পরে
ফিরে পেয়েছি তোমায়,
এই বুকের বা পাশে
হাত রেখে কথা দাও
কখনো ছেড়ে যাবে না আমায়।

ভয় হয় আবার কি আগের মতো
যাবে আমায় ভুলে?
শুধু একবার আমায় ‘ভালোবাসি’
কথাটি বলো না মনটা খুলে..”

~মেহের আফরোজ ~

“নীলাদ্রি নিহানের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বললো,’কি হলো থেমে গেলেন কেনো?ভালোই তো লাগছিলো।বলতে থাকুন।”

“নিহান মুচকি হেসে বললো, ‘এতটুকুই লিখেছি।বাকিটা তো তুমি লিখতে দিলে না।আচ্ছা আমার শেষ লাইনটির উত্তর টা কি এখন পাবো নীলাঞ্জনা?”

“লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে নীলাদ্রি বললো,’কেনো ২বার তো বলেছি।”

“উহুমম এখন আবারও শুনতে চাই।”

“নীলাদ্রি এইবার নিহানের অর্ধখোলা শার্ট ভেদ করে বের হওয়া লোমশ বুকে মাথা রেখে আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো,’ভালোবাসি নিহান।খুব বেশি ভালোবাসি আপনাকে।সেদিন আপনাকে ওই বিপদের মুখে ফেলে যেতে আমি বাধ্য হয়েছিলাম।তার জন্য আ’ম স…

“নিহান নীলাদ্রির ঠোঁটজোড়ায় আঙুল দিয়ে বললো,’উহুমম পুরনো টপিক বাদ দাও।সেদিন তুমি তোমার জায়গায় ঠিক ছিলে আর আমি আমার জায়গায় ঠিক ছিলাম।তোমার জায়গায় আমি থাকলে একই কাজ করতাম।কারণ কেউ সুস্থ মস্তিষ্কে সৃষ্টির সেরা জীব থেকে অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার জীবন বরণ করতো না।আর সেদিন তুমি এই কাজ টা না করলে আমি এবং ইয়াশ আজ স্বাভাবিক মানুষ হতে পারতাম না।তার জন্য তোমায় অনেক ধন্যবাদ।”

“নীলাদ্রি এখনও পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না।কারণ এই পৃথিবীতে একই চেহারার ২জন মানুষ অবশ্যই হয়। এদের বলা হয় ডোপেলগ্যাঙ্গার (Doppelganger)। এই ধরনের মানুষের মধ্যে কোনো জৈবিক সম্পর্ক থাকে না। কিন্তু তবুও তাঁদের দেখতে এতটাই একরকম হয় যে, মনে হয় যেন জমজ। কিছু সংস্কৃতিতে ডোপেলগ্যাঙ্গারকে বলা হয় ইভিল টুইন, ভুতুড়ে বা অলৌকিক ধরা হয়।”

“কিন্তুু এই মুহূর্তে নিহানের সাথে এইসব বিষয়ে বিতর্ক করে সুন্দর রোমান্টিক মুহূর্ত টাকে নষ্ট করার ইচ্ছে ওর নেই।কারণ এই সাইকো মানব টাকে যে ও খুব ভালোবেসে ফেলেছে।এই মানষ টা কে না পেলে হয়তো ও সারাজীবন একাই কা**টিয়ে দিতো।’ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’জানেন আমি নিজের একটা নাম রেখেছি।”

‘কি?’

“সঞ্জনা।”

‘এটা কখন রাখলে?”

“ওম্মা নিজের একটা নিক নেইম না থাকলে কি হয়?সবার কাছে আমি নীলাদ্রি,নিজের কাছে আমি সঞ্জনা,আর আপনার কাছে আমি আপনার নীলাঞ্জনা।”

‘হাহাহা নাইস নেইম।’বলেই নিহান নীলাদ্রি কে বললো,
আমি তো তোমাকে একটি কবিতা শোনালাম; এইবার তুমি তোমার মিষ্টি কন্ঠে আমাকে একটি গান গেয়ে শোনাও।”

“নীলাদ্রি একটু ভেবে বললো,’উমম.. ওকে তবে আমি একা গাইবো না।দু’জনে একসাথে গাইবো।আগে আপনি শুরু করুন।”

“নিহান নীলাদ্রির মাথা বুকে নিয়ে শুরু করলো,

🎶অনেক সাধনার পরে আমি
পেলাম তোমার মন,
পেলাম খুঁজে এ ভুবনে
আমার আপনজন।

তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয় আমাকে
আমি ভালোবাসি ভালোবাসি
ভালোবাসি তোমাকে।

বিধাতা আমাকে তোমার জন্যে
গড়েছে আপন হাতে
জীবনে মরনে, আঁধারে আলোতে
থাকবো তোমার সাথে..(২)

তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয় আমাকে
আমি ভালোবাসি ভালোবাসি
ভালোবাসি তোমাকে।
অনেক সাধনার পরে আমি
পেলাম তোমার মন
পেলাম খুঁজে এ ভুবনে
আমার আপনজন।🎶

” গান শেষ করে নীলাদ্রি এইবার মেকি সুরে বললো, ‘এখন কি আমাকে একটু আদর করবেন প্রিয়?আপনার হাতের সেই মনোরঞ্জন করা ছোঁয়া পেতে খুব মন চাইছে।”

“নিহান বাঁকা হেসে বললো,’মন থেকে বলছো?”

” হুমম।”

“নিহানের চোখজোড়া অনেক আগেই আটকে গেছে নীলাদ্রির মেরুণ রঙের শাড়ি ভেদ করে মেদহীন ফর্সা পেটে।কিন্তুু এতোদিনের ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা কিভাবে ভেস্তে যেতে দিবে নিহান?ধৈর্যের ফল যে বরাবরই মিষ্টি হয়, সেটা আবারও প্রমাণ পেলো নিহান।সেদিন ১০দিনের জন্য নিহান কোনো মিটিং করতে ইন্ডিয়া তে যায় নি।বেলকনির সাথে ঘেঁষে থাকা আম গাছের ডালে বাদুড়ের রূপে বসে থেকে, অপলক দৃষ্টিতে নীলাদ্রি কে দেখে কাটিয়েছে।”

“কথাগুলো ভেবে নিহান ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করে ভাবলো,’নিজে থেকে আবদ্ধ হলে আমার কারাগারে।আর তোমাকে ছাড়ছিনা নীলাঞ্জনা।’ভেবেই আর একমুহূর্তও সময় নষ্ট করলো না নিহান।নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়া খুব যত্নের সহিত আঁকড়ে ধরলো।শাড়ির ফাঁক গলিয়ে নীলাদ্রির পুরো শরীরে গভীর থেকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে থাকলো।নিহানের অবাধ্য ছোঁয়ায় বেশামাল হয়ে গেলো নীলাদ্রি।উ**ন্মা*দের মতো নিহানের শার্ট খুলে সর্বাঙ্গে আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো।আজ দুটি মন এবং শরীরের মধ্যে একে-অপরের প্রতি বহুদিনের ভালোবাসার প্রতিযোগিতা চলছে।অবশেষে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই পূর্ণতা পেলো নিহানের ২০৯বছরের সাধনা।নিহানের কাছে তার নীলাঞ্জনার সাথে দ্বিতীয়বার ফুলসজ্জা হলেও,নীলাদ্রির কাছে এটাই সূচনা।”

#চলবে…

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#অন্তিম_পর্ব_২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

নিহানের কাছে তার নীলাঞ্জনার সাথে দ্বিতীয়বার ফুলসজ্জা হলেও,নীলাদ্রির কাছে এটাই সূচনা।দুই মেরুর দুইজন নর-নারীর চিন্তার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য হলেও, দুটি মন এবং দুটি শরীর মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলো।থাকলো না কোনো বাঁধা,রইলো না পিছুটান।দু’জনেই অতল প্রেম সায়রে এক জোড়া গা ভাসিয়ে দিলো।”

——
“সুখ-দুঃখ মিলিয়ে কে**টে গেলো ৫টি বছর।নীলাদ্রির মা সিতারা বেগম কে নীলাদ্রি বুঝিয়ে এই বাসায় নিয়ে এসেছে। কারণ, তিনি এখন বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকেন।তাই নীলাদ্রি তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।”

“নিহান এবং নীলাদ্রির একটি কন্যা সন্তান হয়েছে।ওর বয়স ৪বছর।নিহান এবং নীলাদ্রি ওদের নামের সাথে মিলিয়ে মেয়ের নাম রেখেছে ‘নীহাদ্রি।”

“ইয়াশ এবং ইরার জমজ সন্তান ছেলে ও মেয়ে হয়েছে।ওরা দু’জনের নামের সাথে মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছে ঈশান এবং মেয়ের নাম রেখেছে ইরিন।ওদের ২জনের বয়স ৩বছর।”

——–
“নীহাদ্রি কয়েকটি স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ শিখেছে।নীহাদ্রি খেয়াল করেছে ওর মা-বাবা প্রতিদিনই কালো ডায়েরি তে কিছু লিখে টেবিলের ড্রয়ারে রাখে।নীহাদ্রি রুমে বসে খেলছিলো।হঠাৎ কথাটা মনে পড়তেই ও টেবিলের ড্রয়ার খুলে কৌতূহল নিয়ে ডায়েরি টি খুলে পড়তে থাকলো।কিন্তুু এতো কঠিন লেখা নীহাদ্রি পড়তে পারছেনা।ও পাতা উল্টাতে থাকলো।একসময় শেষের পৃষ্ঠায় গিয়ে শেষ লাইনটিতে চোখ বুলিয়ে অনেক কষ্টে পড়লো,’আমাদের ভালুপাসার নাম হলো ভ্যাম…আর পড়তে পারলো না।”

“তখনই সেখানে নিহান এবং নীলাদ্রি এসে হাজির হলো।নীহাদ্রির হাতে ডায়েরি দেখে নিহান ওর কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,’তুৃমি এই ডায়েরি নিয়ে কি করছো মামনি?”

“নীহাদ্রি ডায়েরির পাতার শেষের লেখাটি দেখিয়ে বললো,’পাপা আমি এটা পড়তে পারছিনা।প্লিজ বলো না এখানে কি লেখা আছে?”

“নিহান এবং নীলাদ্রি দু’জনেই লেখাটি দেখে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।তারপর দু’জন দু’জনের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বললো,’আমাদের ভালোবাসার নাম হলো,”#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন”

“নীহাদ্রি কি বুঝলো কে জানে।বাবা-মা কে হাসতে দেখে ও চকলেট খাওয়া পোকায় ধরা অর্ধ দাঁত বের করে খিলখিল করে হেসে উঠলো।

“অবশেষে কুচকুচে কালো ডায়েরিটির মধ্যে চিরদিনের জন্য আবদ্ধ হয়ে রইলো রহস্যময়,রোমাঞ্চকর,ভালোবাসাময় ‘#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন’ গল্পটি।”

“#সমাপ্ত”

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-২৩

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নীলাদ্রি এক দৌড়ে সদর দরজা খুলে অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটতে থাকলো।”

“এদিকে ইরা দুপুর থেকে ভাবছে নীলাদ্রির সাথে দেখা করবে।লাঞ্চের সময় ইরা অনেকক্ষণ নীলাদ্রির জন্য অপেক্ষা করেছে।কিন্তুু নীলাদ্রি নিচে আসে নি।ইরা নিহানের জন্য নীলাদ্রির রুমে যেতেও ভ**য় পাচ্ছে।অনেক ভেবে সব ভ**য় কে জয় করে নীলাদ্রির রুমের কাছে গিয়ে উঁকি দিলো ইরা;দেখলো রুম পুরো ফাঁকা।নিহানকে রুমে না দেখতে পেয়ে খুব খুশি হলো।।ইরা ভাবলো,’নীলাদ্রি হয়তো ছাদে গেছে।’ইরা ধীর পায়ে ছাদে গিয়ে নিহানকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।নিহান বসে বসে ঘনঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে।নিহানের চারিদিকে বৃত্তের মতো রসুন বিছিয়ে দেওয়া।ইরা বিস্ময়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছালো।ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।ইরা আশেপাশে তাকিয়ে নীলাদ্রি কে খুঁজতে থাকলো।কিন্তুু কোথাও নীলাদ্রি কে না দেখে নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’কি হয়েছে আপনার?আপনার চারিদিকে এতো রসুন কেনো?আর আপনি এমন করছেন কেনো?”

“নিহান নিভু নিভু চোখে ইরার দিকে তাকিয়ে তার দুর্বল হাত দিয়ে ইশারা করে, রসুন গুলো সরিয়ে ফেলতে বললো।ইরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে না পারলেও,নিহান বারবার ইশারা করাতে বুঝে ফেললো।ভাবলো,’নিশ্চয়ই এই রসুনের জন্য নিহানের কোনো সমস্যা হচ্ছে।ইরা তৎক্ষনাৎ রসুন গুলো এক করে পাশে থাকা ঝুড়িতে ভরে, দৌড়ে গিয়ে কিচেনে রেখে আসলো।তারপর এক গ্লাস পানি নিয়ে ছাদে গিয়ে নিহান কে দিলো।নিহানের শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমে এসেছে।নিহান গ্লাস নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পানি খেয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে অর্ধ-বৃত্ত আকৃতির চাঁদ থেকে হা করে শক্তি আহরণ করলো।”

” ইরা তো এইসবের কিছুই বুঝতে পারলো না।এদিকে ইরা কে ছাদের দিকে ছুটে যেতে দেখেছিলো ইয়াশ।তাই ইয়াশও ইরার পিছু পিছু ছাদে গিয়ে নিহানের এই অবস্থা দেখে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,’ভাইয়া কি হয়েছে তোমার?”

“নিহান ক্লান্ত ভঙ্গিতে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’নীলাঞ্জনা আবার পালিয়ে গেছে।”

” ইয়াশ তো এটা শুনে পুরো থ হয়ে গেলো।ইরা গোলগোল চোখ করে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,’ নীলাদ্রি কখন পালিয়েছে?কেনো পালিয়েছে?”

“নিহান ইয়াশ কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো, ইরা কে নিয়ে যেতে।’
ইয়াশ বিষয়টি বুঝতে পেরে ইরাকে বললো,’সোনাপাখি এখান থেকে চলো।ভাইয়ার হয়তো খুব খারাপ লাগছে।ভাইয়া একটু রেস্ট করুক।তুমি চিন্তা করো না, ভাইয়া ভাবি কে ঠিক খুঁজে বের করবে।”

” ইরা ইয়াশ কে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,’গতবার নীলাদ্রির বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছিলো।তাহলে আজ কি বলবেন আপনি?ওহহ আপনি তো ভোলাভালা পুরুষ মানুষ।আপনার ভাইদের মুখের ওপর কিছুই বলতে পারেন না।আর আমাকে আপনি কেনো নিশ্চিন্তে থাকতে বলছেন?এই অবস্থায় কেউ কিভাবে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে?’বলেই নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনার চারিদিকে এতো রসুন বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে কেনো?আর আপনার এখানে বসে এতো কষ্ট হচ্ছিলো কেনো?তাছাড়া কি হয়েছে নীলাদ্রির?ও কেনো আবার পালিয়ে গেলো?”

“ইরার চি**ৎ*কার চেচাঁমেচিতে সেখানে হাজির হলো, শায়লা বেগম এবং ইমতিয়াজ আহমেদ।শায়লা বেগম বললেন,’কি হয়েছে এখানে?এতো চি**ৎ*কার চেচাঁমেচি হচ্ছে কেনো?”

“নিহান আহত মন নিয়ে শায়লা বেগম কে বললো,’মা নীলাঞ্জনা আবার আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।”

“কি বলছিস?কোথায় গিয়েছে নীলাদ্রি?'(উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ইমতিয়াজ আহমেদ।)”

“নিহান ইরার সামনে কিছুই বলতে চাইছে না।তাই ইয়াশ কে আবারও ইশারা করলো।ইয়াশ এইবার ইরার হাত শক্ত করে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।”

“ইরা রেগে গিয়ে,’আরে..আরে কি করছেন?আমার হাত এতো শক্ত করে কেনো ধরেছেন?উফফ হাতে ব্যথা পাচ্ছি।ছাড়ুন আমায়।”

“ইয়াশ ওর হাতের বাঁধন কিছুটা আলগা করে, জোর করে ইরা কে নিচে নিয়ে গেলো।রুমে গিয়ে ইয়াশ দরজা আটকে দিয়ে বললো,’তোমাকে কতবার করে বললাম,নিচে চলো।কিন্তুু তুমি শুনলে না কেনো?”

‘কেনো?শুনবো কেনো?আমার বান্ধবী কেনো পালিয়ে গেছে, সেটা আমি জানতে চেয়েছি।এটা জানতে চাওয়া কি আমার অন্যায়?বাই দ্য ওয়ে আপনার মুখে দেখছি বেশ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা ফুটেছে।আমাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলছেন কেনো?আমি আপনার সাথে ইদানীং ভালো আচরণ করি দেখে কি সাহস বেড়ে গেছে?”

“ইয়াশ নিচু স্বরে বললো,’সরি সোনা তুমি তো ব্ল্যাক মাম্বার থেকেও বিষধর,সেটাতো আমি ভুলেই গেছিলাম।আর হবে না।আসলে নিহান ভাইয়া তোমার সামনে কথা বলতে আনইজি ফিল করছিলো।সেটা বুঝতে পেরে তোমাকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছি।”

“আমার সামনে কথা বলতে কেনো আনইজি ফিল করছিলো?আপনি জানেন আমি ছাদে গিয়ে দেখলাম,উনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা।তার চারিদিকে রসুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।তখন আমি রসুন সরিয়ে ফেলেছি।তারপর তার শ্বাসকষ্ট কমেছে। আজ আমি না গেলে কি হতো বলুন তো?আচ্ছা আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, রসুনে তার কি সমস্যা বলুন তো?”

” ইয়াশ কি বলবে;রসুন তো ওদের শত্রু।ইয়াশ মিনমিন করে বললো,’সোনা তোমার এখন ঘুমের প্রয়োজন।তোমার মাথাটা মনে হয় অতিরিক্ত গরম হয়ে গেছে।কেমন যেনো ধোঁয়া ধোঁয়া গন্ধ পাচ্ছি।প্লিজ একটা ঘুম দাও।আসো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

“আপনার কি আক্কেল দাঁত নেই নাকি?মনে হয় এখনও ওঠে নি।যদিও আমার এখনও আক্কেল দাঁত ওঠেনি।তবুও আপনার থেকে অনেক বেশি আক্কেল-জ্ঞান আমার আছে।আমার বান্ধবী পালিয়ে গেছে, আর আপনি আমায় ঘুমাতে বলছেন?মানে এটা কোনো কথা হলো?”

“ইয়াশ বুঝে গেছে ইরাকে এভাবে মানানো যাবে না।তাই ইয়াশ বাধ্য হয়ে নিজের ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে ইরার দিকে তাকাতেই, ইরার চোখে ঘুমঘুম ভাব চলে এলো।ইরা দাঁড়ানো অবস্থায় টলতে লাগলো।ইয়াশ ইরা কে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো।ধীরে ধীরে ইরা ইয়াশের বুকে ঘুমিয়ে পড়লো।ইয়াশ ইরাকে শুইয়ে দিয়ে ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’সরি সোনা আমি নিরুপায়।তুমি খুব জেদি মেয়ে।আমার কোনো কথাই শুনতে চাও না।তাই নিজের পাওয়ার ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম।এখন তুমি কয়েক ঘন্টা শান্তিতে ঘুমাও।আমি নিহান ভাইয়ার কাছে গেলাম।’বলেই ইয়াশ সেখান থেকে চলে গেলো।”

“শায়লা বেগম এবং ইমতিয়াজ আহমেদ নিহান কে স্পেশাল ওষুধ খাইয়ে সুস্থ করেছেন।নিহানের মস্তিষ্ক অতিরিক্ত রাগে বেশামাল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।সুস্থ হওয়ার পর থেকেই কয়েক সেকেন্ড পরপর ভ**য়ং**কর ভাবে গ**র্জন করে উঠছে।ইমতিয়াজ আহমেদ বললেন,’নিহান তুমি ঠান্ডা হও।এখন তুমি সুস্থ হয়েছো।এখন তুমি তোমার পাওয়ার ব্যবহার করে নীলাদ্রির বর্তমান স্থান চিহ্নিত করো।’নিহানের মুখে পৈ**শা**চিক হাসি ফুটে উঠলো।নিহান তার পাওয়ার ব্যবহার করে চোখজোড়া বন্ধ করে দেখলো,নীলাদ্রি ওদের বাসা থেকেও প্রায় ১ঘন্টা দুরত্বে একটা রাস্তার পাশে বসে আছে।নীলাদ্রির চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।”

“নিহান চোখজোড়া খুলে ডেভিল হেসে মনে মনে বললো,’তুমি যতো দূরেই যাও না কেনো সুইটহার্ট,আবার আমার নীড়েই তোমাকে ফিরে আসতে হবে।আজ তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে চিরদিনের মতো আমার করে নেবো।”

“এদিকে নীলাদ্রি অনেকক্ষণ যাবৎ রাস্তার এক সাইডে বসে ভাবছে,’ওই লোকটার সাথে তাহলে আমার ওই গলিতে দেখা হয়েছিলো?তারা তিন ভাই ভ্যাম্পায়ার?আবার তাদের মা-বাবাও ভ্যাম্পায়ার?এর মানে এতোদিন আমি ভ্যাম্পায়ারদের সাথে ছিলাম?ভাবা যায়?এইজন্যই তো তারা সবসময় র**ক্ত জাতীয় খাবার খায়।ছিহ!কি বিশ্রী ভাবে কুকুরের ঘাড় থেকে র**ক্ত খাচ্ছিলো।দেখেইতো আমার গা গুলিয়ে আসছিলো।নিহানের শরীর এতো ঠান্ডা।আর ওই বখাটে ছেলেগুলো?পেপারে দেখেছিলাম, ওই ছেলেগুলো কে কতো নৃ**শং**স ভাবে মে**রেছে।উফফ..শিট আমি তো ইরার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।ইরা কে তো ওই ভ্যাম্পায়ারদের বাসায় ফেলে এসেছি।ইশশ ওকেও যদি নিয়ে আসতাম।কিন্তুু এতক্ষণে হয়তো ওই সাইকো ভ্যাম্পায়ার নিহান কে সবাই ওই অবস্থায় দেখে ফেলেছে।নাহ আমি কিছুতেই তার কাছে ফিরে যাবো না।আমি মানুষ নিহান কে ভালোবেসি,কোনো র**ক্ত চোষা ভ্যাম্পায়ার কে না।বেচারি ইরার কি হবে?ইরা কে ইয়াশ ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ফেলবে না তো?এখন আমিই বা কি করবো?আমি তো বাসা থেকে কিছুই আনি নি।কত কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে এখানে এলাম।মায়ের কাছে গেলে তো সেখানেও ওই পি**শাচ টা আমায় ধরে ফেলতো।এক টাকাও আমার কাছে নেই।কার কাছে হেল্প চাইবো?কেউ যদি আবার সুযোগ নেয়?আজকাল কাউকে তো বিশ্বাসও করা যায় না।আপনজনেরাই ধোকা দেয়।সেখানে তো…

“নীলাদ্রি আর ভাবতে পারছে না।হঠাৎ করেই ওর মাথা ঘুরে উঠলো।মাথায় হাত দিয়ে চোখজোড়া খুলে রাখতে চাইলো।কিন্তুু না..আজ চোখজোড়াও হয়তো ওর সাথে বেইমানি করছে।একসময় নীলাদ্রির চোখ জোড়া আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেলো।”

—————–
“ঘুটঘুটে অন্ধকার একটি রুমে ঘুমিয়ে আছে নীলাদ্রি।হঠাৎ চোখে পানির ছিটা পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো নীলাদ্রির।মাথায় হাত দিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।নীলাদ্রি খুব কষ্ট করে উঠে বসলো।হাত দিয়ে চোখজোড়া কচলে ভালো করে তাকাতেই দেখলো,ওর সামনে লাল টকটকে ভ**য়ং**কর দুটি চোখ লাইটের মতো জ্বলজ্বল করছে।অন্ধকারের মধ্যে ঘুম থেকে উঠে চোখের সামনে লাল টকটকে চোখজোড়া দেখে ভ**য়ে বি**ক*ট চি**ৎ*কার দিলো নীলাদ্রি।তখনই কেউ ওর মুখ চেপে ধরে বললো,’উহুমম এভাবে চি**ৎ*কার করে না সুইটহার্ট।তাছাড়া চি**ৎ*কার করলেও, তোমার চি**ৎ*কার এই চার দেয়ালের বাইরে যাবে না।”

“পুরুষালি কন্ঠস্বর টা নীলাদ্রির বড্ড চেনা চেনা লাগছে।কিন্তুু অতিরিক্ত ভ**য় এবং ডিপ্রেশনে থাকার কারণে, কিছুই ধরতে পারছে না।কিন্তুু সামনে থাকা ব্যক্তিটির বরফের মতো ঠান্ডা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরায়, নীলাদ্রির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।নীলাদ্রি মুখ দিয়ে ‘উমম’ শব্দ করছে।সামনে থাকা ব্যক্তিটি নীলাদ্রির কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পেরে ছেড়ে দিলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পুরো রুম আলোকিত হয়ে গেলো।নীলাদ্রি ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বড় বড় চোখ করে বললো,’এহতিশাম আপনি এখানে?”

“মুহূর্তের মধ্যেই হোহো করে ভ**য়ং**কর শব্দে হেসে উঠলো এহতিশাম।এহতিশামের হাসির আওয়াজে মনে হয় রুমের চার দেয়াল কেঁপে উঠলো,সেই সাথে তীব্র কম্পন হলো নীলাদ্রির শরীরে।হাসি থামিয়ে এহতিশাম বিছানায় বসে থাকা নীলাদ্রির কাছে এসে ওর দুই বাহু ধরে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’কেমন সারপ্রাইজ দিলাম সুইটহার্ট?”

“নীলাদ্রি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে এহতিশামের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,’সসস..সুইটহার্ট মানে?আআআ..আপনি আমাকে সুইটহার্ট ডাক..ডাকছেন কেনো?”

“নীলাদ্রির কথা শুনে এহতিশামের চোখজোড়া আরও লালচে বর্ণ ধারণ করলো।মনে হয় চোখজোড়া থেকে এখুনি র**ক্ত বেরিয়ে আসবে।এহতিশাম চোখ-মুখ শক্ত করে কঠোর ভঙ্গিতে বললো,’কেনো আমি সুইটহার্ট বললে দোষ কি?নিহান যখন সুইটহার্ট বলে, তখন খুব ভালো লাগে তাই না?”

‘মানে?ককক..কি বলতে চাইছেন আপনি?’

“দেখো নীলাদ্রি এইসব মেলোড্রামা করে তোতলানো বন্ধ করো।শুনতে খুব বিরক্ত লাগছে।আমি জানি তুমি খুব সাহসী মেয়ে।আর সাহসী মেয়েদের কন্ঠে এমন তোতলানো কথা বেমানান।আমার মতো স্পষ্ট ভাষায় কথা বলো।আর হ্যা, আজ তোমায় যে কথা গুলো বলবো মনযোগ দিয়ে শুনবে।তারপর হয় এসপার হবে;নইলে ওসপার হবে।এনিওয়ে বলছি।”

“এহতিশাম শুরু করলো,’বাংলাদেশে যখন আমাদের ১বছর পূর্তি হলো সেদিন আমি,নিহান এবং ইয়াশ প্ল্যান করে রাতে পশু শিকার করতে বের হলাম।আমরা তোমাদের বাসা থেকে একটু দূরের একটি গলিতে একটি চকচকে কুকুর দেখতে পেলাম।আমরা খুশি হয়ে কুকুরটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম; আর ৩জনে মিলে কুকুরের ঘাড় থেকে র**ক্ত খেলাম।ঠিক তখনই তুমি এসে সেখানে হাজির হও।তখন আমরা তিন জন তোমার দিকে তাকাই।আমি জীবনে অনেক সুন্দরী নারী দেখেছি।আমার ভালোও লেগেছে।কিন্তুু ভ্যাম্পায়ারদের মন অনেক কঠিন হয়।আমি জানি, নিহান তোমাকে তার ভ্যাম্পায়ার হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে।তাই নতুন করে আর বললাম না।তো সেই রাতে যখন তোমায় প্রথম দেখলাম;মনের অজান্তেই অচেনা-অজানা মানবীর দিকে চোখজোড়া পুরোপুরি আটকে গেলো।কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো আমার শরীরে।নিহানের কাছে আমি তোমার আগের জন্মের কাহিনী সব শুনেছি।আর আমার বাবা-মা নিহান এবং ইয়াশ কে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে নিয়ে আসাতে,ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল আমাদের অভিশাপ দিয়ে মানবজাতির সাথে বসবাস করতে পাঠিয়ে দেয়।আর সাথে জুড়ে দেয় কিছু তিক্ত শর্ত।দীর্ঘ ২০৯বছর যাবৎ আমরা অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছি।আমি জানি,নিহান তোমাকে এগুলোও বলেছে।আসোলে আমি তোমাদের সম্পর্কে সবকিছুই জানি।হাহাহাহা কিভাবে জানি শুনবে সুইটহার্ট?”

“নীলাদ্রি রোবটের ন্যায় এহতিশামের দিকে তাকিয়ে আছে।বেচারি সজ্ঞানে একের পর এক শকড নিতে পারছেনা।২দিন যাবৎ একের পর এক চমক পেয়েই যাচ্ছে।নীলাদ্রির ছোট্ট মস্তিষ্কের এতো চাপ নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।মনে হয় মাথা ফেটে যাবে।নীলাদ্রি কোনো কথা না বলে স্ট্যাচুর মতো এহতিশামের দিকে তাকিয়ে আছে।নীলাদ্রির এই শান্ত রূপ দেখে এহতিশামের ঠোঁটের কোণে শ**য়**তানি হাসি ফুটে উঠলো।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বললো,’তুমি খুব সুন্দর দেখতে।যদিও আমি অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছি।কিন্তুু তবুও কেনো জানিনা তোমাকে আমার খুব ভালো লেগে যায়।সেদিন রাতে ওই বখাটে ছেলেগুলো যখন তোমার পিছু নিয়েছিলো, সেদিন আমরা ওদের ওপর হা**মলা করি।নিহান সাধারণত মানুষের শরীর থেকে র**ক্ত কম খায়।কিন্তুু আমি আর ইয়াশ খাই।সেদিন সেই ছেলেগুলোকে আমি নিজে হাতে শাস্তি দিয়েছি।নিহান তো ওদের শরীরের কয়েকটি জায়গায় ক্ষ**ত-বি**ক্ষ**ত করে চলে গেছিলো।আর আমি কি করেছি জানো?আমি ওদের শরীর থেকে হাত,চোখ,ঠোঁট সবকিছু আলাদা করেছি।সেই সাথে ওদের ঘাড়ে অনেকগুলো বা**ইট করেছি।তারপর ওদের দূষিত র**ক্তগুলো আমি আর ইয়াশ মিলে পরম যত্নে শুষে নিয়েছি।নিহান এবং ইয়াশের কারণে, আজ আমরা অভিশপ্ত হয়ে মানবজাতির সাথে বসবাস করছি।তাই শুরু থেকেই নিহানের প্রতি আমার চাপা ক্ষোভ ছিলো।কিন্তুু আমি সেটা কখনোই প্রকাশ করিনি।শুধু একটা সুবর্ণ সুযোগের অপেক্ষা করেছি।অবশ্য নিহানকে এখন আমি মনে মনে ধন্যবাদ জানাই।কারণ, মানবজাতির সাথে না মিশলে তো তোমাকে পেতাম না।”

“জানো,আমি যখন জানলাম তুমি সেই মানবী; যে কি না নিহানের আগের জন্মের স্ত্রী।এটা শুনে আমার মাথা টা খুব গরম হয়ে গেছিলো।কিন্তুু পরক্ষণেই ভাবলাম,’তুমি তো এই জন্মে ওর স্ত্রী না।চাইলেই তোমাকে পেতে পারি।’তাই নিজের মস্তিষ্ক সবসময় ঠান্ডা রাখতে হবে।নিহান তোমার সব খোজ- খবর নিয়ে আমাকে বলে।আমিও ঠান্ডা মাথায় ওর সাথে তাল মেলাই।ইউনিভার্সিটিতে নিহান তোমার দিকে যখন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো,তখন আমার খুব মেজাজ খারাপ হতো,হিংসা হতো।আমি বইয়ের মাঝে মুখ গুজে থাকার ভান করে, সবার আড়ালে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।তোমাকে আর ইরাকে যেই মন্টু কবিরাজ ধোকা দিয়েছিলো,তাকেও সেই বখাটে ছেলেগুলোর মতোই শাস্তি দিয়েছি।খু**বলে-খু*বলে খেয়েছি ওর শরীর।যখন নিহান আমাকে বললো,’ও তোমাকে বিয়ে করবে।তারপর তোমাকে সবকিছু বলে তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানাবে।তখনই আমার ইচ্ছে করছিলো ওকে মাটিতে পি**ষে ফেলি।কিন্তুু নাহ! তৎক্ষণাৎ আমার মাথায় দারুণ একটা প্ল্যান এলো।আমি জানতাম, তুমি কখনোই নিহান কে মানবে না।আর লিওনসেলের শর্ত অনুযায়ী নিহান তোমাকে হিপনোটাইজ করে, বশে এনে ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারবে না।তাই নিজের সূচালো বুদ্ধি কে কাজে লাগালাম।তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমি নিহান কে সবদিক থেকে সাহায্য করলাম।নিহানের কাছে আমি সবচেয়ে মহৎ ভাই হয়ে থাকলাম।তারপর তোমাকে যেদিন রেহান বা**জে ভাবে হ্যা**রাজ করেছিলো।সেদিন নিহান আমাকে পুরো বিষয়টি বললে, আমি ওকে রেহান কে ভ**য়ং**কর ভাবে মা**রার আইডিয়া দেই।বেচারা নিহান তোমার প্রেমে এমনিতেই মরিয়া।তাই ওর কাছে আমার আইডিয়া টা খুব ভালো লাগে।তারপর রেহানের বন্ধুর বাসায় গিয়ে রেহানকে খুব ভ**য়া**নক ভাবে হ**ত্যা করি।”

“তোমার শরীরে হাত দেওয়ার অপরাধে রেহানের শরীর থেকে সব র**ক্ত শুষে নিয়ে, নেকড়ে ভ্যাম্পায়ারদের দল দিয়ে ওর পুরো শরীর নিশ্চিহ্ন করে দেই।তারপর যেদিন তুৃমি আরেকবার পালিয়ে গেলে,সেদিনও তোমাকে উত্যক্ত করা ৪জন বখাটে যুবকদের আমি ক্ষ**ত-বি**ক্ষ**ত করে খেয়ে ফেলি।ইয়াশ খুব সহজ-সরল।তাই ওকে কখনোই এইসব বিষয়ে জড়াইনি।তবে ইয়াশ যদি কোনোভাবে তোমার প্রতি আমার দুর্বলতার ব্যাপারে জেনে যেতো, তাহলে ওকেও আমি শেষ করে ফেলতাম।”

“ওহহ সুইটহার্ট আরেক টা কথা তোমাকে মনে করিয়ে দেই,তোমার মনে আছে যেদিন তোমাকে নিহান বিয়ে করে এনেছিলো, সেদিন রাতে বেলকনিতে তুমি একটা কালো কুচকুচে বিড়াল দেখেছিলে?হাহাহা সেই বিড়াল টা আমি ছিলাম।তুমি আমাদের বাসায় আসার পর থেকে প্রতি রাতে, আমি বিড়ালের রূপে বেলকনি থেকে তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখ খানা মন ভরে দেখতাম।তবে নিহান সেটা কখনোই জানতে পারেনি।আর আজও জানতে পারবে না।কারণ,আমার পাওয়ার ব্যবহার করে তোমাকে আমার খাঁচায় বন্দী করেছি।নিহানের কোনো পাওয়ার এখানে কাজে লাগবে না।”

#চলবে…

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-২১+২২

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“জ্ঞান ফেরার পর চোখের সামনে যা দেখলাম, সেটা দেখে আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।”

“আমার চোখের সামনে শতশত ভ্যাম্পায়ার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আর তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সবচেয়ে বড় দানবাকৃতির ভ্যাম্পায়ার।তার বেশভূষা দেখে বুঝতে পারলাম,সে হয়তো এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কিং।
তার খুব নিকটে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমার বর্তমান বাবা-মা।আমি আর সিন্ডি(ইয়াশ) পাশাপাশি বসে আছি।কিন্তুু সিন্ডি আমার সাথে কোনো কথা বলছিলো না।সেই জায়গাটিতে চারিদিকে এতো পরিমাণে গাছ-পালা ছিলো, যে দিন না রাত সেটা বোঝার উপায় ছিলো না।হঠাৎ কারো বি**ক*ট চি**ৎ*কারে পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্য মনে হয় কেঁপে উঠলো।সামনে তাকিয়ে দেখলাম,ভ**য়ং**কর চি**ৎ*কার করা ব্যক্তিটি হলো ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল।তিনি মা-বাবার দিকে তাকিয়ে চি**ৎ*কার করে বললেন,’তোমরা অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার।তোমার পুরো পরিবার আজ থেকে অভিশপ্ত।আমি তোমাদের বলেছিলাম,মনুষ্য জগতে গিয়ে তাদের শরীর থেকে র**ক্ত পান করে তাদের মে**রে ফেলবে।কিন্তুু তোমরা দুইজন আমার কথা অমান্য করে, ওই মানবসন্তানদের ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমার ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে এনেছো।এর জন্য তোমাদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি পেতে হবে।আজ থেকে এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে তোমাদের বহিষ্কার করা হলো।আজ থেকে তোমরা পৃথিবীতে গিয়ে মানবজাতির সাথে বসবাস করবে।আর তাদের সাথেই বাকিটা জীবন অতিবাহিত করবে।ভ্যাম্পায়ার হয়ে মানবজাতির সাথে জীবন অতিবাহিত করার কষ্ট তোমরা হারে হারে টের পাবে।”

“আমার বাবা-মা লিওনসেলের কাছে মাথা নত করে বললেন,’দয়া করে আমাদের এই শাস্তি দিবেন না।এছাড়া অন্য যেকোনো শাস্তি আমরা মাথা পেতে নেবো।আমরা মানবজগতে গিয়ে কিভাবে জীবিকানির্বাহ করবো?আমরা তো এই সম্পর্কে কিছুই জানিনা।আর তাদের ভাষাও জানিনা।”

“লিওনসেল দাম্ভিক স্বরে বললেন,’এটাই তো তোমাদের জন্য মহাশাস্তি।আমার কথা অমান্য করার জন্য এটাই তোমাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তি।তোমরা ওদের সাথে মিশতে মিশতে একসময় ওদের মতোই জীবন-যাপন করতে পারবে।এইমুহূর্তে এখান থেকে প্রস্থান করো।নইলে তোমার পুরো পরিবারকে ধ্বং**স করতে আমার একটুও সময় লাগবে না।”

“কোর্টন(ইমতিয়াজ আহমেদ) চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন,’আমাদের ওপর দয়া করুন আপনি।এখানে থাকতে হলে আপনি যেই শর্ত দিবেন, সেটাই আমরা মাথা পেতে নেবো।”

“বাবার কথা শুনে লিওনসেলের হয়তো একটু মায়া হয়েছিলো।তিনি হঠাৎ আমার দিকে তাকালেন,তারপর আমার কাছে এসে বি**দ**ঘুটে হাসি দিয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,’তোমরা মানবজাতি খুব সুন্দর এবং অত্যন্ত দুর্বল।কিন্তুু তোমাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।ওরা ওদের ভুলের শাস্তি পাবে।সেই সাথে তুমিও পাবে।তবে তোমাকে যেহেতু আমার খুব পছন্দ হয়েছে,তাই আমি তোমাকে স্পেশাল পাওয়ার দেবো।যেটা তোমার দুই ভাইকে দেবো না।তুমি কঠিন বিপদের মুহূর্তে সেই স্পেশাল পাওয়ার ব্যবহার করতে পারবে।’আর হ্যা,তোমাকে একটা শর্ত দিচ্ছি,’তোমার অর্ধাঙ্গিনী কে তুমি মনুষ্য জগতেই খুঁজে পাবে।সে অপূর্ণ অবস্থায় মারা গেছে।পৃথিবীতে তোমার সাথে থাকার বিশেষ ইচ্ছেটি তার পূরণ হয়নি।তাই তার আবার পুনর্জন্ম হবে।আর তোমার সাথে একদিন তার দেখা হবে।তবে এর জন্য তোমাকে কঠিন থেকে কঠিনতম সাধনা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে।পৃথিবীতে যাওয়ার পর তুমি তাকে বিভিন্ন দেশে গিয়ে খুঁজবে।হয়তো তাকে পেতে তোমার হাজার বছরও লেগে যেতে পারে।তবুও তুমি একদিন তাকে পাবে।আর তারপর তুমি তার ওপর আমার দেওয়া বিশেষ পাওয়ার গুলো ব্যবহার করতে পারবেনা।তাকে তুমি সজ্ঞানে সবকিছু বুঝিয়ে আবারও বিয়ে করবে।আর তার সাথে মিলনের আগ মুহূর্তে তাকে তোমার অতীত,বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সবকিছু বলবে।তারপর তাকে রাজি করিয়ে তার ঘাড় থেকে র**ক্ত পান করে, সেই র**ক্ত তুমি তাকে পান করাবে।তারপর ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমার রাজ্যে নিয়ে আসবে।আর হ্যা,তোমার পুরো পরিবার যে ভ্যাম্পায়ার সেটা মানবজাতি যেনো কখনোই জানতে না পারে।তাহলে তোমাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।আমি এই রাজ্য থেকেই তোমাদের যাবতীয় কার্যাবলির দিকে নজর রাখবো।এই শর্তগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করতে পারো, তাহলে তোমাকে আমার ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের পরবর্তী রাজা বানাবো।”

“ভ্যাম্পায়ার কিং যখন আমাকে পরবর্তী রাজা বানানোর কথা বললো,তখন অন্য ভ্যাম্পায়ার গুলো আমার দিকে হিংসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো।যদিও আমি লিওনসেলের ভাষা বুঝিনি।কিন্তুু ওদের ঈর্ষান্বিত দৃষ্টি ঠিকই লক্ষ্য করেছি।পরে মা-বাবা আমায় সবকিছু বুঝিয়ে বলে।তারপর লিওনসেল আমার মাথায় হাত দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে কিছু একটা পড়লেন,আর আমি নিজের ভেতরে অদৃশ্য কিছু শক্তি অনুভব করলাম।তখন থেকে আমরা পৃথিবীতে এসে মানবজাতির সাথে বসবাস শুরু করি।”

“প্রথম দিকে পৃথিবীতে মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে জীবন-যাপন করতে আমাদের খুব কষ্ট হতো;কিন্তুু পরবর্তীতে আমরা তাদের সাথে মিশতে শুরু করি।আমাদের যেহেতু এক্সট্রা পাওয়ার ছিলো,তাই প্রতিটি দেশে গিয়ে তাদের ভাষা শিখতে আমাদের ৩দিনের বেশি সময় লাগতো না।আমি,ফ্রেডো(এহতিশাম) এবং ট্রোডো(ইয়াশ) বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে ১-২বছর থাকতাম।আর প্রতিটি দেশে গিয়ে রূপ বদলে বিভিন্ন স্কুলে,কলেজে ভর্তি হতাম।এভাবে মানবজাতির সাথে থেকে আমাদের পড়াশোনাও কমপ্লিট হয়ে যায়।পৃথিবীতে মোট ২০৬টি দেশের মধ্যে ১২০টি দেশে তোমায় ২০৮বছর যাবৎ পা**গলের মতো খুঁজেছি।অবশেষে ১২১তম দেশে এসে তোমাকে পেয়েছি।এখানে এসে আমার নাম রাখি নিহান,ফ্রেডোর নাম রাখি এহতিশাম এবং ট্রোডোর নাম রাখা হয় ইয়াশ।বাবা-মা তাদের নাম রাখেন, ইমতিয়াজ আহমেদ এবং শায়লা বেগম।”

“বাংলাদেশে আমাদের যেদিন ২০৯বছর পূর্তি হলো।সেই উপলক্ষে আমি,এহতিশাম এবং ইয়াশ তিনজনে মিলে প্ল্যান করি রাতে শহরের অলি-গলিতে ঘুরে খুব তরতাজা সুস্থ- সবল পশুর খোঁজ করবো।আর তারপর আমরা সেটার র**ক্ত খুব মজা করে খাবো।যেই ভাবা সেই কাজ।আমরা বাদুড়ের রূপ ধারণ করে রাত ১১টার দিকে আমাদের বাসা থেকে একটু দূরের গলিতে ঢুকে দেখতে পাই, চকচকে একটি কালো কুকুর গলির এক সাইডে বসে আছে।কুকুরটা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলো।আমরা সেটা দেখে খুব খুশি হই।আমাদের থেকেও বেশি খুশি হয় ইয়াশ।কারণ ও খুব ভোজন প্রিয়।কাল বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি কুকুরটির ওপর।যখন আমরা পরম তৃপ্তির সাথে কুকুরটির ঘাড় থেকে র**ক্ত শুষে নিচ্ছিলাম,তখনই সেখানে এসে হাজির হলে তুমি।এহতিশাম তোমাকে চেনেনা।আর ইয়াশ যেহেতু আগের সব স্মৃতি ভুলে গিয়েছিলো,তাই ও তোমায় চিনতে পারিনি।কিন্তুু আমি…..আমি চিনেছি আমার ২০৯ বছরের চির সাধনা কে।তোমার সেই রূপ লাবণ্য সেই আগের মতোই আছে।পুনর্জন্ম হয়েছে তোমার।তুমি আমার নিনা।তোমাকে দেখার পর আমি কুকুরটির ঘাড় থেকে মুখ তুলে, অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তোমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার দীর্ঘ ২০৯বছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছিলাম।এই অনুভূতি বোঝানো বড় দায়।কিন্তুু ক্ষণকালের ব্যবধানে সেই তৃষ্ণা মেটাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো ৪-৫জন যুবকদল।”

“আমার মনটা ক্ষণিকের মধ্যেই বিষাক্ত হয়ে উঠলো।আমি,এহতিশাম এবং ইয়াশ মিলে উড়ে গেলাম ওদের পানে।ক্ষ**ত-বি**ক্ষ**ত করলাম ওদের দেহ।আর তুমি সেখান থেকে চলে গেলে।তারপর সেই জায়গায় এসে তোমাকে পেলাম না।তোমাকে না পেয়ে আমি যেন আবার অসহায় হয়ে গিয়েছিলাম।তখনই আমার বিশেষ পাওয়ারের কথা মনে পড়লো।আমি আমার পাওয়ার ব্যবহার করে তোমার বসবাসের স্থান জানার চেষ্টা করলাম,আর সফলও হলাম এবং সেই সাথে জানলাম ছোটবেলা থেকে তোমার সব জীবনবৃত্তান্ত।তবে সবচেয়ে মজার বিষয়টি ছিলো,যখন জানতে পারলাম গত এক বছর যাবৎ আমরা তিন ভাই যেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি;কাকতালীয় ভাবে তুমিও সেই একই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছো।এই বিষয়টি সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিলো।তবে আমার জন্য খুব সুবিধা হয়েছিলো।কষ্ট করে আর ইউনিভার্সিটি পাল্টাতে হয় নি।”

“এক বছর যাবৎ তুমি ক্লাসে অনিয়মিত ছিলে,নইলে হয়তো আগেই আমাদের দেখা হয়ে যেতো।যাক ধৈর্যের ফল সবসময় মিষ্টি হয়;কথাটা ১০০%সত্যি।আর সেটা আমি তোমাকে পেয়ে বুঝেছি নীলাঞ্জনা।তোমাকে আমি আবারও বিয়ে করেছি।আমি জানি পূর্বের স্মৃতি তোমার কিছুই মনে নেই।কারণ তোমার নতুন ভাবে জন্ম হয়েছে;হয়তো বা কখনো মনে হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।কিন্তুু আমার…আমার সব কিছু মনে আছে।তোমার সেই মিষ্টি হাসি,চঞ্চলতা,ভোরবেলা আমায় ‘ভালোবাসি’ বলে জড়িয়ে ধরা,ফুলসজ্জার রাতে পা**গলের মতো আমার সর্বাঙ্গে গভীরভাবে আদর করা সব..সবকিছু আমার হৃদ-মাঝারে খুব শক্তভাবে গেঁথে রেখেছি। আগের জন্মে তুমি আমার নিনা হয়েছিলে,আর এই জন্মে তুমি আমার নীলাঞ্জনা।ভালোবাসি তোমায় পা**গলের মতো ভালোবাসি নীলাঞ্জনা।”

“এতোদিন তোমার সাথে কথাগুলো বলার জন্য মনটা দোটানায় ভুগছিলো।কিন্তুু তোমাকে যে দ্বিতীয়বার আমি হারাতে চাইনা।তাহলে আমার ২০৯বছরের সাধনা সব বিফলে যাবে।সেই সাথে আমিও হারিয়ে যাবো চিরদিনের জন্য।আমি জানি, তুমি আমার ওই ভ**য়ং**কর রূপ দেখে খুব ভ**য় পেয়েছো।কিন্তুু আমি যদি কথাগুলো তোমায় মুখে বলতাম,তাহলে তুমি বিশ্বাস করতে না।তাই তোমাকে স্বচক্ষে দেখিয়েছি।আমি জানি তুমি ভীষণ ভ**য় পেয়েছো।কিন্তুু আমার যে কিছুই করার ছিলো না।’বলেই নিহান নীলাদ্রির গালে হাত রেখে বললো,’জানো নীলাঞ্জনা সেদিন ফুলসজ্জার রাতে যখন আমরা একে-অপরের ভালোবাসায় মত্ত ছিলাম,ঠিক তখন আমার লিওনসেলের সেই তিক্ত বিধিনিষেধের কথা মনে পড়লো।তখনই মনটা আমার বিষিয়ে উঠেছিলো।কিন্তুু ওই মুহূর্তে তোমার সেই অনুভূতি মাখা মায়াবী চেহারা দেখে,আমার ভেতরে জমে থাকা বিষন্নতা গুলো তুলে ধরতে পারিনি।সেদিন আমি অফিসে যাইনি,ছুটে গিয়েছিলাম সেই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে।কিন্তুু লিওনসেল আমায় সেই তিক্ত শর্তের কথাগুলো বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে বলে।আমাদের ভালোবাসা যদি সেই রাতে পূর্নতা পেতো, তাহলে তুমি সাথে সাথে মা**রা যেতে।’কথাটি বলতে গিয়ে নিহানের গলা কিছুটা আটকে গেলো।তারপর ঢোক গিলে আবার বলতে শুরু করলো,’কারণ ভ্যাম্পায়রদের সাথে মানবজাতির মিলন হলে মানুষ মা**রা যায়।তার অন্যতম কারণ হলো ভ্যাম্পায়ার এবং মানবজাতি ২জন দুই মেরুর।তবে ভ্যাম্পায়ার যদি মিলনের আগমুহূর্তে সেই মানুষটির ঘাড়ে বা**ইট করে,র**ক্ত শুষে নিয়ে ভ্যাম্পয়ারের মুখ থেকে লালা মিশ্রিত র**ক্ত সেই মানুষটিকে খাইয়ে দেয়;তাহলে সেও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে। তখন আর মিলন হলেও সমস্যা হবে না।আমি চাইলেই হিপনোটাইজ করে
তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারতাম।কিন্তুু ধুরন্ধর লিওনসেলের শর্তের জন্য আটকে গিয়েছি।’বলেই নিহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’যাইহোক এখন রাত ৪টা বাজে।আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে;তবে তার আগে শুভ কাজটা সেরে ফেলি।তোমার ঘাড়ে আমি এখন বা**ইট করবো।আর আমার মুখ থেকে সেই র**ক্ত তোমায় খাওয়াবো।তারপর তুমিও আমার মতো ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে।তারপর আমরা দ্বিতীয়বারের মতো মিলিত হবো।প্রেম সায়রে ভেসে যাবো দুজন।সুমিষ্ট ভাবে সফল হবে আমার ২০৯বছরের দীর্ঘ সাধনা।’বলেই নিহান নীলাদ্রির দিকে তাকাতেই দেখলো, নীলাদ্রি ছু**রি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিহান ছু**রি*টির দিকে তাকিয়ে বললো,’সুইটহার্ট ছু**রি দিয়ে আমায় মে**রে ফেলবে নাকি হুমম?”

“নীলাদ্রি অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছু**রি টা নিহানের পেট বরাবর তাক করে বললো,’আপনি একজন ঠকবাজ, প্রতারক।আপনি আমাকে নিজের কন্ট্রোলে আনার জন্য এই ধরণের উদ্ভট টাইপের গল্প গুলো সাজিয়ে বলেছেন।এই ধরনের কুসংস্কার কথা আমি বিশ্বাস করি না।”

“নিহান বিস্ময়ের দৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’এতক্ষণ যাবৎ এতোগুলো কথা তোমায় বলার পর,বলছো আমি উদ্ভট কথা বলছি?তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছো না?কেনো করছো না?আনসার মি।”

“নীলাদ্রি চোখজোড়া বন্ধ করে নিজের মনে কিছুটা সাহস যুগিয়ে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো,’পুনর্জন্ম একটি ধর্মীয় মতবাদ যা প্রধানত হিন্দুধর্ম, জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম সহ অনেক ধর্মের মানুষ এটি বিশ্বাস করে। এছাড়া ইহুদি ধর্মেও আত্মার পুনর্জন্ম নামে একটি বিশ্বাস রয়েছে। মোক্ষ বা মুক্তি বা ঈশ্বরের সাক্ষাত অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত পুনর্জন্মের এই ধারা চলতে থাকে এবং মোক্ষ প্রাপ্তির মাধ্যমে এই জন্মান্তরের সমাপ্তি ঘটে। জন্মান্তরবাদ বিশ্বাসের আরেকটি দিক হচ্ছে, এই বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতিটি জীবন একই সাথে একটি পরকাল এবং পূর্বকাল। এই বিশ্বাস মতে, বর্তমান জীবন হল পূর্বজন্ম বা কর্মের ফল অনুযায়ী আত্মার কখনো সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। আত্মাকে একটি নিত্য সত্তা হিসাবে দেখা হয়।”

“মানুষের পুনর্জন্ম হওয়ার আক্বিদা হিন্দুদের মূল প্রথা ছিল। এটি কোন মুসলমানদের আক্বিদা নয়। যারা এই আক্বিদা পোষণ করবে তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। কারণ এর দ্বারা কিয়ামত, কবর, হাশর, পুলসিরাত, জান্নাত ও জাহান্নামকে অস্বীকার করা হয়ে থাকে। যদি পুনর্জন্ম হওয়ার দ্বারাই বান্দার শাস্তি ও পুরস্কার নিহিত হয়, তাহলে কিয়ামতের কোন প্রয়োজন নেই। বরং পৃথিবী টিকে থেকেই পাপ পুণ্যের ফলাফল প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে।”

“পুনর্জন্ম আকিদাপন্থীদের মতে ভাল কাজ করলে মৃত্যুর পর সে ভাল পরিবারে ভাল অবস্থায় জন্ম নিবে। আর খারাপ করলে পরজন্মে খারাপ প্রাণী হয়ে জন্ম নিবে। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ ইসলাম ধর্মের মতে পৃথিবী ধ্বংসই হবে পাপ পুণ্যের পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের জন্য। এই বয়ানের মধ্যে দিয়ে ইসলাম এককভাবে স্বতন্ত্র, মৌলিকত্ব বজায় রেখেছে। প্রথম উদ্ভাবিত আদিম মতবাদকে উপেক্ষা করে ইসলাম বলছে; মানুষের রূহ বেহেশতে ছিলো। শাস্তিস্বরূপ আমরা পৃথিবীতে অবস্থান করছি।
একজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর সে প্রথমে কবরের জগতে থাকে, তারপর তাকে কবরের জগতেই আবার শাস্তির জন্য জীবিত করা হবে। হাশরের ময়দানে সে দেহসহ উঠবে। হিসাব নিকাশ হবে। তার আমল অনুযায়ী সে হয়তো জান্নাতে যাবে নতুবা জাহান্নামে যাবে। তাই পুনর্জন্মের আক্বিদা ইসলাম বিরোধী। মুসলিম ধর্মে বলা হয়েছে—মৃত্যুর পর আত্মা বেহেস্তে বা দোজখে যাবে। সুখ অথবা দুঃখ নির্ধারণ করবে আল্লাহর শেষ বিচারের দিন কেয়ামত পর্যন্ত। সহস্র বছর ধরে যত মানুষ মারা গেছে, সব ধর্মের সব মানুষের বিদেহী আত্মারই পুনরুত্থান হবে শেষ বিচারের দিনটিতে। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মতে, আমাদের সচেতনতার বাইরেও দৃশ্যমান পৃথিবী গড়ে উঠতে পারে। আর এই ব্যাপারে পদার্থবিজ্ঞানীরাও একমত পোষণ করেন।”

“আপনার প্রশ্ন হতে পারে, পুনর্জন্ম কি সত্যি হয়? যদি হয়ও তাহলে কোন এক জীবের এক জন্ম থেকে আরেক জন্মে যাওয়ার ভিত্তিটা কি? কি সেই জিনিস যা কোন একজনকে একটা জন্ম থেকে অপর একটা জন্মের দিকে নিয়ে যায়। এইটা বুঝতে হলে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকতেই হবে। একটা মানুষ কীভাবে তৈরি হয়, সেই যান্ত্রিক প্রযুক্তির কথা বলছি। একজন মানুষের সব থেকে বাইরের পরিধিটা হলো ভৌত বা পার্থিব শরীর। যোগ বিদ্যায় সবকিছুকে শরীর হিসেবে দেখা হয়, কারণ, আমাদের পক্ষে এইভাবেই বুঝতে সহজ হয়।”

“শরীর তিনিটি মাত্রা বা ডাইমেনশন অথবা তিনটি স্তরের রূপে থাকে। যেমন পার্থিব শরীর বা ফিজিক্যাল বডিকে বলা হয় অন্নময় কোষ। অন্নময় কোষ মানে খাদ্য। এইটা হলো খাদ্যজাত শরীর বা ফুড বডি। পরেরটাকে বলা হয় মনোময় কোষ, যার অর্থ হলো মানুসিক শরীর বা মেন্টাল বডি। তৃতীয়টিকে বলা হয় প্রাণময় কোষ বা প্রানীক শরীর বা এনার্জি বডি। পার্থিব শরীর, মানুসিক শরীর ও প্রানীক শরীর এই তিনটি ডাইমেনশনই হলো ভৌত বা ফিজিক্যাল। জীবনের এই তিনটি ডাইমেনশনই কর্মের ছাপ বহন করে চলে। কার্মিক গঠন যদি ভেঙ্গে ফেলা যায় তখন আত্মা বলে কিছুই থাকেন না, প্রত্যেকটা জিনিস সবকিছুর মধ্যে বিলীন হয়ে যায়।”

“মহা-সমাধি বা মহানির্মান বলতে যা উল্লেখ করা হয় তা হলো, মানুষ ধীরে ধীরে বুঝেতে সক্ষম হয় যে মূল চাবিকাঠিটা কোথায়, এবং কার্মিক কাঠামোটা তারা এমন ভাবে ভেঙ্গে ফেলে যাতে সত্যি সত্যি অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি মোটেও সহজ নয়। একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি- ‘যখন কেউ মারা যায়, আমরা বলি সেই লোকটা আর নেই, এইটা সত্য নয়। সেই ব্যক্তিটা আজ আর সে রকমভাবে নেই যেরকমভাবে আমরা তাকে জানতাম। কিন্তু সে অবশ্যই আছে। এখন যদি কার্মিক কাঠামোটা একশভাগ বিনষ্ট করে সে মারা যায় তাহলেই, তার অন্তিম প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটবে। এইটাকেই মুক্তি বা মহা-সমাধি বলা হয়েছে। জীবন ও জন্ম মৃত্যুর প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া। মুক্তি মানে হলো শরীর ও মনের কাঠামো থেকে মুক্তি হয়ে যাওয়া। এই শরীর তো মাটির তৈরি, পৃথিবীরই একটা অংশ যা আমরা ধার করেছি। অণু-পরমাণু সহ অবশ্যই আমাদের সবকিছু শোধ করতে হবে। তাই একমাত্র কর্মের দ্বারা সময়ের সদ্ব্যবহারই আমাদের সকল মুক্তির পথ খুলে দিতে পারে।’আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।”

“নীলাদ্রির একাধারে বলা কথাগুলো শুনে নিহান উচ্চশব্দে হো হো করে হেসে উঠলো।তারপর নীলাদ্রিকে বললো,’দেখো ঐ দিকে কি যেনো আছে…

“নীলাদ্রি অবাক হয়ে নিহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই, নিহান বাঁকা হেসে তড়িৎ গতিতে নীলাদ্রির হাত থেকে ছু**রি টা নিয়ে নিলো।আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলো নীলাদ্রি।চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,’ছু**রি টা আমায় দিন বলছি।একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।আপনি সাধারণ মানুষ না।আপনি খারাপ কিছু।’কিন্তুু আমি হলাম, ‘আশরাফুল মাখলুকাত;সৃষ্টির সেরা জীব।’আমি কিছুতেই আপনার কাছে ধরা দেবো না।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে ওর কাছে এগিয়ে যেতে থাকলো আর বলতে থাকলো,’তোমার লেকচার যেহেতু শেষ।তাহলে এখন আমরা মূল কাজটি শুরু করি।আর এই ছু**রি দিয়ে তুমি আমায় আ**ঘা*ত করলেও আমার কিছুই হবে না।কারণ ভ্যাম্পায়ার রা মানুষের আ**ঘা*তে মা**রা যায় না।আর ধরাতো তোমায় দিতেই হবে সুইটহার্ট।আজ আমার হাত থেকে কোনোভাবেই তুমি নিস্তার পাবে না।তোমাকে তো আমার করেই ছাড়বো।’ বলেই নিহান খপ করে নীলাদ্রির হাত ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।”

#চলবে…

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“তোমাকে তো আমার করেই ছাড়বো।’বলেই নিহান খপ করে নীলাদ্রির হাত ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।”

“নীলাদ্রি গলা কা**টা মুরগির মতো ছটফট করতে থাকলো,কিন্তুু নিহানের কাছ থেকে কিছুতেই ছুটতে পারছে না।নিহান ডেভিল হেসে নীলাদ্রির গালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।হাস্কি ভয়েসে বললো,’সুইটহার্ট তুমি একটা শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ারের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করে খামোখা নিজের এনার্জি লস করছো।উফফ তুমি বড্ড বোকা।তবে আগের জন্মে খুব বুদ্ধিমতী ছিলে।আমি ইশারা করতেই, কতো সুন্দর করে আমায় আদর করতে।কিন্তুু এখন একদম ন**টি হয়ে গেছো।সমস্যা নেই, আমার শীতল ছোঁয়া দিয়ে তোমাকে হ**টি বানিয়ে ফেলবো।আর ইউ রেডি সুইটহার্ট?”

“নীলাদ্রি সাপের মতো ফোঁসফোঁস করতে থাকলো।হঠাৎ ওর মাথায় উপস্থিত বুদ্ধি এলো।ভাবলো,’ নিহান কে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবে।নীলাদ্রির মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো।মুহূর্তের মধ্যেই নীলাদ্রি নীরব হয়ে গেলো।’নিহানের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,’আমার নিঃশ্বাস টা বন্ধ হয়ে আসছে।প্লিজ আমায় ছাড়ুন।আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলি।”

“নীলাদ্রির ভালোবাসার মোহে বেশামাল নিহান ওর কুটিল বুদ্ধি ধরতে পারলো না।আর নিজের পাওয়ার দিয়ে নীলাদ্রির মনের কথাও জানলোনা।নীলাদ্রির কোমল কন্ঠস্বর শুনে,নিহানের হৃদয় মুহূর্তেই পুলকিত হয়ে গেলো। নীলাদ্রিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিয়ে নীলাদ্রির হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বললো,’জানোতো নীলাঞ্জনা যারা জন্ম থেকেই ভ্যাম্পায়ার হয়,তাদের মন অনেক শক্ত হয়।তাদের মধ্যে দয়া-মায়া খুব কম থাকে।তবে কিছু কিছু ভ্যাম্পায়ার ব্যতীত।আমি যেহেতু আগে মানুষ ছিলাম,তারপর ভ্যাম্পায়ার হয়েছি;তাই আমার মধ্যে এখনও কিছুটা মায়া কাজ করে।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো,আমার বর্তমান বাবা-মা আমার ব্রেইন থেকে আগের স্মৃতিগুলো মুছে দেয়নি।জানো তো আমার এই পৃথিবীতে তুমি ছাড়া কেউ নেই।আমার নিজের বাবা-মায়ের মা**রা যাওয়ার খবর শুনে আমি মনে হয় ভেতর থেকে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিলাম।মাঝে মাঝে ভাবতাম,ভ্যাম্পায়ার কিং যদি একবার বলতো যে আমার বাবা-মায়েরও পুনর্জন্ম হবে;তাহলে আমি তাদেরকেও খুঁজে বের করতাম।’বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নিহান।”

“নীলাদ্রির কাছে নিহানের বলা কথাগুলো অসহ্য লাগছে।তবুও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে।নীলাদ্রি মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে ভাবলো,’একবার শুধু আপনাকে বুঝিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই,তারপর আমি ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করে শেষবারের মতো পালাবো।আপনি আর আমার চিহ্ন ও খুঁজে পাবেন না।দরকার হলে বনে-জঙ্গলে গিয়ে লুকিয়ে থাকবো।বন্য পশুরা আমাকে ছিঁড়ে খেলেও আপনার মতো বদ্ধ পা**গল,অদ্ভুত সাইকোর কাছে ধরা দেবো না।”

“ভেবেই নীলাদ্রি মেকি হাসি দিয়ে বললো,’শুনুন আজ আমি আপনার সম্পর্কে এতো কিছু জেনে অলরেডি শকড খেয়েছি মনে হয়।যাইহোক,এক রাতে এতো প্যারা নিলে কখন না জানি হার্ট অ্যাটাক করে ফেলি।এখন ভোর হয়ে গেছে।তাই এই শুভ কাজ টা এখন না করে,ভাবছি আগামীকাল রাতে আমি নববধূ রূপে সাজবো।তারপর আপনার সাথে সাথে আমিও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবো।যদিও ভ্যাম্পায়ারে আমি বিশ্বাসী না।তবুও আপনি নিশ্চয়ই আমার কাছে এতোগুলো কথা মিথ্যা বলবেন না।আর তখন এতো মিসবিহেভ করার জন্য সরি।”

“নিহান নীলাদ্রির নমনীয় কন্ঠে কথাগুলো শুনে খুব খুশি হয়ে গেলো।নীলাদ্রির অর্ধনগ্ন পিঠে তার ঠান্ডা হাত বুলিয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’তোমার এতোটা কাছে থাকলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার জন্য খুব কষ্ট হয়ে যায়।আচ্ছা তোমাকে আরেকদিন সময় দিলাম সুইটহার্ট।আর হ্যা, এখন থেকে আগামীকাল রাত পর্যন্ত তুমি আমার সাথে এই চিলেকোঠার রুমে থাকবে।ভুলেও বের হবে না।তুমি ভ্যাম্পায়ার হওয়ার পর,আমি একবারে তোমাকে নিয়ে আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে চলে যাবো।আর সেখানেই আমরা দ্বিতীয়বারের মতো ফুলসজ্জা করবো।”

” নীলাদ্রি নিহানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে; হাই তুলে চোখ ছোট ছোট করে বললো,’হুমম আপনি যা বলবেন তাই হবে।কিন্তুু এখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।প্লিজ এখন আর কিছু শুনতে পারবো না।আমাকে একটু ঘুৃমাতে দিন।”

“ওকে তুমি ঘুমাবে তবে আমার বুকে।আর যদি কথা না শোনো তাহলে আমি তোমার বুকে ঘুমাবো।”

” না না না আমিই আপনার বুকে ঘুমাবো।আপনি শুয়ে পড়ুন।”

“নীলাদ্রি বলতেই, নিহান বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো।নীলাদ্রি মুচকি হেসে নিহানের বুকে শুয়ে পড়লো।”

“সকালে শায়লা বেগম,ইমতিয়াজ আহমেদ,এহতিশাম,ইয়াশ এবং ইরা ডাইনিং রুমে বসে গল্প করছে।ইরা ইয়াশের সাথে বেশ হাসি মুখে কথা বলছে।ইরা আর ইয়াশকে হাসি-খুশি দেখে এহতিশাম একবার আড়চোখে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ইয়াশ তোর সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কথা আছে।খাওয়া শেষ হলে আমার রুমে আসবি।’বলে এহতিশাম হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো।”

“ইয়াশ খাওয়া-দাওয়ার পর এহতিশামের রুমে গিয়ে বললো,’ভাইয়া তুমি আমায় ডেকেছো কেনো?”

“ওহহ তুই এসেছিস?আচ্ছা তোর আর ইরার মধ্যে কি সবকিছু হয়ে গেছে?”

“ইয়াশ বোকার মতো তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো,’কি হয়ে গেছে ভাইয়া?”

“এহতিশাম চোখের মণি ঘুরিয়ে বললো,’উফফ তুই একটা গাধা।আমি বলছি যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক টা হয়, ওটা কি তোদের মধ্যে হয়ে গেছে?”

“এহতিশামের কথা শুনে ইয়াশ এইবার বুঝতে পেরে বেশ লজ্জা পেলো।লাজুক হেসে বললো,কি যে বলো না ভাইয়া।তেমন কিছু এখনোও হয় নি।তবে ইরা আমার সাথে এখন খুব ভালো ব্যবহার করে।কিন্তুু তুমি হঠাৎ পার্সোনাল প্রশ্ন করছো কেনো?”

“তুই তো জানিস কারো পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলাতে আমার একদম ভালো লাগে না।কিন্তুু বড় ভাই হিসাবে আমার সব দিকে খেয়াল রাখা উচিত।ভ্যাম্পায়ার কিং এর শর্ত গুলো তোর মনে আছে তো?ইরা কে তোর ভ্যাম্পায়ারের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছিস?ও রাজি হয়েছে?”

“ইয়াশ চিন্তিত মুখ করে বললো,’না তো এখনোও বলি নি।ওর মন জয় করতে এখনোও আমার অনেক সময় লাগবে।ভাবছিলাম, ওর মুখে ভালোবাসার কথা শুনে তারপর বলবো।আর যদি একেবারেই রাজি না হয়।তাহলে ওকে হিপনোটাইজ করে ভ্যাম্পায়ার বানাবো।আর ভ্যাম্পায়ার কিং তো আমাদের কোনো বিধিনিষেধ দেয় নি।এতটুকু তো আমি করতেই পারবো।”

“এহতিশাম মুচকি হেসে বললো,’বাহ বাহ!তোর তো দেখছি অনেক বুদ্ধি হয়েছে।”

“ইয়াশ মাথায় হাত দিয়ে বললো,’হিহিহি ওই আরকি একটু আকটু বুদ্ধি হয়েছে।আচ্ছা ভাইয়া আমি রুমে গেলাম।নইলে ইরা আবার প্রশ্ন শুরু করবে।”

“আচ্ছা যা।আমি এখন অফিসে যাবো।নিহান হয়তো যাবে না।”

“ইয়াশ এহতিশামের রুম থেকে বেরিয়ে, নিজের রুমে চলে গেলো।”

“এদিকে ইরা শায়লা বেগমের সাথে সোফায় বসে গল্প করছে।গল্পের এক পর্যায়ে ইরা জিজ্ঞেস করলো,’আচ্ছা মা এই বাড়িটা এমন কালো রঙের কেনো?অন্য রং ও তো করাতে পারতেন।আর মা আপনাদের বাসায় আসার পর থেকে কোথাও আয়না দেখতে পেলাম না।কারণ টা কি জানতে পারি?শুনেছি শুধু নিহানের ওয়াশরুমে নাকি একটা আয়না আছে।সেটাও নাকি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।”

“শায়লা বেগম মিষ্টি করে হেসে বললেন,’কালো রং আমাদের খুব প্রিয়।তাই পুরো বাড়ির দেয়ালের রং কালো করিয়েছি।আর নিহান এবং এহতিশাম এই বাড়িতে আয়না আনতে নিষেধ করেছে।কেনো করেছে সেটা জানিনা।তবে জিজ্ঞেস করলে বলে,ওদের নাকি আয়না দেখতে ভালো লাগে না।”

“ইরা শায়লা বেগমের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আপনার নিজেকে কখনোও আয়নাতে দেখতে ইচ্ছে করে না?”

“ইরার প্রশ্নে শায়লা বেগম কি বলবে ভেবে পেলো না।
তখনই সদর দরজার বাইরে কলিংবেল বেজে উঠলো।শায়লা বেগম ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে তড়িঘড়ি করে দরজা খুললেন।দরজা খুলতেই,একজন ভদ্রলোক বললেন,’আসসালামু আলাইকুম আমার নাম রাহাত আহমেদ।আমি ইরার বাবা।”

“দরজার বাইরে থেকে দীর্ঘদিনের চিরচেনা কন্ঠটি কর্ণগহ্বরে যেতেই, ইরা বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে মিষ্টি করে হেসে উঠলো ইরা।ইরার মন যেন আনন্দে নেচে উঠলো।সেইদিনের পর থেকে এই প্রথম রাহাত আহমেদের কন্ঠ শুনলো।ইরা দৌড়ে গিয়ে রাহাত আহমেদ কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বললো,’বাবা তুমি এসেছো?আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।”

“রাহাত আহমেদ মুচকি হেসে বললেন,’তোকে সারপ্রাইজ দিলাম রে মা।আর সবকিছুর ব্যবস্থা করেছে নীলাদ্রি।এখন ভেতরে আসতে দিবি না?আমার ১০মিনিট পর অফিসে চলে যেতে হবে।”

“ইরা রাহাত আহমেদ কে ছেড়ে দিলো।শায়লা বেগম হেসে বললেন,’আসুন বেয়াই সাহেব।আপনি আগে জানিয়ে আসলে খুব ভালো হতো।”

“ইরা রাহাত আহমেদের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলো।তারপর বললো,’বাবা কতোদিন পর তুমি এখানে এসেছো।কোথায় তোমার সাথে মন ভরে একটু গল্প করবো।কিন্তুু সেটা না করে তুমি এখনই চলে যাবে?উমম প্লিজ বাবা আজ তুমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নাও।”

“না মামনি আজ ছুটি নিতে পারবো না।এমনিতেই তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে হলো; তাই দেখে গেলাম।আরেক শুক্রবার তোদের বাসায় আসবো।’শায়লা বেগম ঝটপট যতটুকু পারলেন, ততটুকু নাস্তা রাহাত আহমেদের সামনে রাখলেন।এরইমধ্যে ইয়াশ সেখানে এসে দেখলো, রাহাত আহমেদ সোফায় বসে ইরার সাথে গল্প করছে।এটা দেখে ইয়াশ বেশ খুশি হয়ে সেখানে গেলো।রাহাত আহমেদ কে সালাম দিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করলো।ইরা বললো,’বাবা নীলাদ্রির সাথে দেখা করে যাবে না?ওকে ডাক দেই।একটু দাঁড়াও।”

” না মা।আর ৫মিনিট দেরি হলে অফিসের বাস পাবো না।আর হ্যা, তোরা সবাই কিন্তুু আমার বাসায় যাবি।’বলেই রাহাত আহমেদ শায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,’বেয়ান আমার বাসায় আপনাদের সপরিবারে দাওয়াত রইলো।”

“শায়লা বেগম সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে সম্মতি জানালেন।তারপর রাহাত আহমেদ চলে গেলেন।”

————-
“এদিকে নীলাদ্রি অনেক আগেই উঠে গেছে। রাতে নীলাদ্রি অনেক কষ্ট করে নিহানের ঠান্ডা বুকের ওপর শুয়েছিলো।আধাঘন্টা পর নিহান যখন ঘুমিয়ে গেলো, তখন নীলাদ্রি বালিশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।সকাল সকাল নীলাদ্রির ঘুম ভেঙে গেলেও, বিছানায় শুয়ে মোচড়ামুচড়ি করছে।”

“নিহানেরও ঘুম ভেঙে গেলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো, নীলাদ্রি চিন্তিত মুখ নিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে।নিহান নীলাদ্রির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’কখন উঠেছো সুইটহার্ট?”

“নীলাদ্রি হকচকিয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,’এই তো কয়েক মিনিট আগে উঠলাম।”

” নিহান মুচকি হেসে নীলাদ্রির দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে,ওর ঠোঁট জোড়ায় চুমু দিতে চাইলো।নিহান কে এগিয়ে আসতে দেখে, নীলাদ্রির গতকাল রাতে নিহানের কবুতর ভাগ করে র**ক্ত খাওয়ার কথা মনে পড়ে গেলো।নীলাদ্রি অস্ফুটস্বরে বললো,’না না না এখন না প্লিজ।”

“নিহান ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেনো?এখন তো আর ফুলসজ্জা করবো না।জাস্ট লিপ কিস করবো।”

“আআআ..আসোলে আমি তো ব্রাশ করিনি,আর আপনিও ব্রাশ করেন নি।এই অবস্থায় এগুলো কেমন আনইজি লাগবে।”

“নীলাদ্রির কথা শুনে নিহান হো হো করে হেসে উঠলো।বললো,’ওকে তুমি ফ্রেশ হও।আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

“নীলাদ্রি নিচু স্বরে বললো,’আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।আমি কি নিচে গিয়ে আমাদের জন্য খাবার আনবো?”

“নীলাদ্রির নিচে যাওয়ার কথা শুনে নিহান চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,’একদম তুমি নিচে যাবে না।আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।’বলেই নিহান বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ৫মিনিটে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো।নীলাদ্রি উঠে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই দেখলো, নিহান খাবার নিয়ে এসেছে।নিহান এবং নীলাদ্রি দু’জনেই ব্রেকফাস্ট করলো।”

“কিছুক্ষণ পর নিহান নীলাদ্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আর ওর চুলগুলো পেচিয়ে আবার ছেড়ে দিচ্ছে।”

“হঠাৎ নীলাদ্রি বলে উঠলো,’আচ্ছা আপনি বলেছিলেন, ভ্যাম্পায়ারদের জীবনী-শক্তি সম্পর্কে আমাকে বলবেন।আমি তো এদের সম্পর্কে কিছু জানিনা।আমাকে একটু বলবেন?”

“নিহান মুচকি হেসে বললো,’হুমম অবশ্যই বলবো।’বলেই নিহান শুরু করলো,
“ভ্যাম্পায়ারের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে র**ক্তচোষা। এটি মূলত পৌরাণিক বা লোককথার একটি প্রানী যা জীবিত প্রাণীর র**ক্ত খেয়ে বাঁচে।
ভ্যাম্পায়ারদের শরীর স্ফীত, গায়ের রং আরক্তিম, নীলচে লাল অথবা কালো; এই বৈশিষ্ট্যগুলি ভ্যাম্পায়ারদের সাম্প্রতিক র**ক্তপানের দ্যোতক।”

“হাজার হাজার বছর আগে থেকেই ভ্যাম্পায়ারের মিথ প্রচলিত আছে মানবসমাজে। ভ্যাম্পায়ার আসলে কি? কিভাবে তাদের জন্ম হল? বাস্তবে কি ভ্যাম্পায়ার আসলেই আছে?আমি জানি তোমার মনে এমন হাজারো প্রশ্ন বাসা বেঁধেছে।এইরকম বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবো আজ।ভ্যাম্পায়ার কি?”

“হলিউডের মুভি-সিরিজগুলো দেখলে মনে হতে পারে ভ্যাম্পায়ার হচ্ছে কোন রূপসী নারী, যার জন্তুর মতো বড় বড় দাঁত রয়েছে। পুরুষ মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভুলিয়ে ভালিয়ে র**ক্ত চুষে খাওয়াই এদের কাজ।”

” তবে এই ভ্যাম্পায়াররা শুধুমাত্র রাতেই বের হয়। দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে, কারন সূর্যের আলো এরা সহ্য করতে পারে না।সূর্যের আলোতে ওদের শরীর ঝলসে যায়।তাই যে ভ্যাম্পায়ারগুলো পৃথিবীতে মানুষরূপে বসবাস করে তারা বাইরে বের হলে সবসময় ছাতা মাথায় দিয়ে বের হয়।তবে বেশিরভাগ সময় তারা রাতে বের হয়।ভ্যাম্পায়ার রা আয়না দেখতে পারেনা।কারণ আয়নার সামনে দাঁড়ালে তাদেরকে দেখা যায় না।তাই আমাদের বাসায় আয়না নেই।”

” ভ্যাম্পায়ারদের এভাবে উপস্থাপনের পেছনে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস।
চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় ভ্যাম্পায়ারে বিশ্বাস প্রচলিত ছিলো। ইহুদীদের পৌরাণিক কাহিনীতে “লিলিথ” নামে একটি চরিত্র রয়েছে। তাকে বলা হয় সকল অশুভ জীবের মাতা, অর্থাৎ যত ডেমন আছে- সবই এসেছে লিলিথের গর্ভ থেকে। লিলিথ রাতের বেলা অপরূপা সুন্দরী নারীর বেশে পুরুষদের ঘরে প্রবেশ করতো। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সাথে মিলিত হতো। কিন্তুু লিলিথের সাথে মিলন শেষে কোনো পুরুষ বেঁচে থাকতো না। লিলিথ তখন সেই পুরুষদের র**ক্ত পান করতো এবং গর্ভবতী হতো। তার গর্ভে জন্ম নিতো অজস্র অশুভ জীব।গ্রিক মিথলজিতেও ভ্যাম্পায়ারের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রাচীন গ্রিসে বিশ্বাস করা হতো, রাজা বেলাসের মেয়ে লামিয়া ছিল দেবরাজ জিউসের গোপন প্রেমিকা।জিউসের স্ত্রী হেরা দেবী যখন জেনে যায় লামিয়ার কথা।তখন লামিয়ার সকল সন্তানকে সে হ**ত্যা করে ফেলে।প্রতিশোধস্বরূপ লামিয়া ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায় এবং রাতের বেলা শিশুদের র**ক্ত পান করতে শুরু করে।”

“মধ্যযুগে ইউরোপে ভ্যাম্পায়ারের ভীতি এত প্রবল ছিল যে, লা**শকে হৃৎপিণ্ড বরাবর ফেঁ**ড়ে দেয়া হতো, কারণ বিশ্বাস করা হতো যে, এতে ভ্যাম্পায়ার হয়ে লা**শ ফেরত আসতে পারে না। সে সময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডাইনি কিংবা ভ্যাম্পায়ারের সন্দেহে প্রচুর মেয়ে মানুষকে হ**ত্যার প্রমান পাওয়া গেছে। ২০০৬ সালে ভেনিসের কাছে ১৬ শতকের একটি কবরে মুখে ইট দেয়া একটি মহিলার মৃ**তদেহ পাওয়া যায়।ধারণা করা হয় যে ভ্যাম্পায়ার মনে করে তাকে হ**ত্যা করা হয়েছিলো।র**ক্তচোষা বৈশিষ্ট্যের জন্যে এদের বলা হয় ভ্যাম্পায়ার বাদুড়। এরাও রাত্রিবেলা বের হয়। দিনের আলো সহ্য করতে পারেনা বলে গুহা, পরিত্যক্ত কুয়া, ফাঁপা গাছের গুড়ি কিংবা পোড়ো বাড়িতে আশ্রয় নেয়।এরা গরু, ছাগল এমনকি সুযোগ পেলে মানুষের শরীর থেকেও র**ক্ত চুষে খায়। তবে বাংলাদেশে ভ্যাম্পায়ার বাদুড় নেই বললেই চলে।ভ্যাম্পায়ার বাদুড় মূলত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চলে দেখা যায়।”

“ভ্যাম্পয়াররা চাঁদ থেকে শক্তি আহরণ করে।তবে তাদের প্রধান খাবার যেহেতু র**ক্ত;তাই টানা ২দিন যদি তারা র**ক্ত না খেতে পারে তাহলে মা**রা যায়।এছাড়াও ভ্যাম্পায়ারদের কিছু স্পেশাল পাওয়ার আছে।তারা মানুষের মনের খবর জানতে পারে,এমনকি কোনো মানবজাতি যদি তাদের আ**ঘা*ত করে, তাহলে তাদের কিছু হয়না।তবে তাদের স্বজাতি ভ্যাম্পায়ার আ**ঘা*ত করলে, তারা ব্যথা অনুভব করে।ভ্যাম্পায়ারদের শরীরে র**ক্ত নেই।তাই তাদের শরীর সবসময় বরফের মতো ঠান্ডা থাকে। তারা বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করে।কিন্তুু বজ্রপাত একদম সহ্য করতে পারেনা।”

“ভ্যাম্পায়ারদের চির শত্রু হলো রসুন।অনেক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে রসুনের অসাধারণ ক্ষমতায় বিশ্বাস করে: প্রাচীন মিশর থেকে রোমানিয়া পর্যন্ত , রসুন একটি প্রাকৃতিক পোকামাকড় প্রতিরোধক, একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য পূর্বপ্রাকৃতিক মন্দের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ভ্যাম্পায়ারদের বিরুদ্ধে রসুন নিরাময় ক্ষমতা প্রয়োগ করে।তাই আমাদের বাসায় রসুন জাতীয় কোনো খাবার খাওয়া হয় না।আর আমাদের খুব কাছে রসুন আনা হলে আমরা সহ্য করতে পারিনা।”

—————–
“নিহানের মুখে ভ্যাম্পায়ারদের বৈশিষ্ট্যগুলো শুনে নীলাদ্রি বেশ অবাক হলো, আর সাথে খুশিও হলো।আর সবচেয়ে বেশি খুশি হলো ভ্যাম্পায়ারদের সবচেয়ে দুর্বল পয়েন্টের কথা শুনে।ওর মাথায় ঝটপট একটা আইডিয়া আসতেই, বিশ্বজয়ের হাসি দিলো নীলাদ্রি।”

“সারাদিন নিহান নীলাদ্রির সাথে এভাবেই লেপ্টে রইলো।
রাত ৯টায় নিহান নীলাদ্রিকে কালো রঙের শাড়িটি পড়তে সাহায্য করলো।আর ওকে নিজে হাতে জুয়েলারি পড়িয়ে দিলো।হালকা মেকআপে নববধূর মতো সেজেছে নীলাদ্রি।নিহান নীলাদ্রির সাথে ম্যাচিং করে কালো রঙের শেরওয়ানি পড়লো।নিহান নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরতেই,নীলাদ্রি বললো ‘আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসি?’
নিহান হাসি মুখে মাথা নাড়লো।নীলাদ্রি ওয়াশরুমে চলে যেতেই, নিহান চিলেকোঠার রুম থেকে বের হয়ে ছাদের কর্ণারে দাঁড়িয়ে আকাশে থাকা অর্ধ-বৃত্তের মতো চাঁদ থেকে শক্তি আহরণ করলো।”

“নীলাদ্রি এই সুযোগ টাই খুজছিলো।বাঁকা হাসি দিয়ে রুম থেকে চুপি চুপি বের হয়ে, এক দৌড়ে সিড়ি থেকে নিচে নেমে কিচেনে চলে গেলো।কিচেনে গিয়ে দেখলো কেউ নেই।নীলাদ্রি খুব খুশি হলো।কিচেনের এক সাইডে ঝুড়িতে থাকা রসুনগুলো নিয়ে এক দৌড়ে ছাদে চলে গেলো।নীলাদ্রির উপস্থিতি টের পেতেই নিহান পেছনে তাকিয়ে দেখলো, নীলাদ্রি নিহানের চারপাশে বৃত্তের মতো রসুন গুলো বিছিয়ে দিয়েছে।নিহান তো সেটা দেখে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।”

“নিহান কাশতে শুরু করলো,নিহান অনেক কষ্টে নীলাদ্রি কে বললো,’এটা কি করছো নীলাঞ্জনা? প্লিজ এগুলো সরাও, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”

“নীলাদ্রি ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করে বললো,’এতোদিন আমাকে খুব জ্বালিয়েছেন।আপনাকে কিছুই বলিনি।কারণ আপনার মতো এমন অদৃশ্য পাওয়ার আমার ছিলো না।আপনি আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করলেও, আমি মানুষ নিহান কে ভালোবেসেছি। আর সারাজীবন তাকেই ভালোবেসে যাবো।কিন্তুু আপনার এই ভ্যাম্পায়ার রূপকে না।আমি হলাম সৃষ্টির সেরা জীব; আশরাফুল মাখলুকাত।আমি কখনোই জেনেশুনে এই পাপ কাজ করবো না।আমি কিছুতেই ভ্যাম্পায়ার হবো না।আপনি এই গন্ডির মধ্যেই পড়ে থাকুন।আপনার আর আমার এই পৃথিবীতে হয়তো মিলন হলো না।তবে যদি বেঁচে থাকি, তাহলে পরকালে আপনাকে মানুষ রূপে চাইবো।’বলেই ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়লো নীলাদ্রি।এই মুহূর্তে কালো শাড়ি পরিহিত, নীলাদ্রির খোলা চুলে ফর্সা মুখস্রিতে ঐ চোখজোড়ার অগ্নিদৃষ্টি দেখলে; যে কেউ ওকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলে আখ্যায়িত করতো।”

“নিহানের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলো। খুব কষ্ট করে বললো,’এএএএ..এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে আমি ম**রে যাবো নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রির হয়তো কিছু কানে ঢুকলো না।একবারও নিহানের অসহায় মুখটির দিকে তাকালো না।ও দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।হল রুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো, সেখানে কেউ নেই।নীলাদ্রি এক দৌড়ে সদরদরজা খুলে অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটতে থাকলো।”

#চলবে…

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১৯+২০

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“দু’জনের কবিতা মূলক টক-ঝাল ঝগড়াতেই পুরো বিকাল টি কে**টে গেলো।”

“সন্ধ্যায় নীলাদ্রি নিহানের জন্য গরুর মাংস ভুনা আর রুটি নিয়ে এসে টি-টেবিলে রাখলো।নিহান বিছানায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো।এমন সময় তার নাকে রসুনের গন্ধ যেতেই নিহান কাশতে শুরু করলো।
নীলাদ্রি তো নিহানের কাশি দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি হয়েছে আপনার?মুখে কিছু গিয়েছে?”

” নিহান কাশির জন্য কথা বলতে পারছেনা।নাক মুখ কুঁচকে অনেক কষ্টে বললো,’এখানে রসুনের কিছু এনেছো?”

“নীলাদ্রির তো কিছুই মাথায় আসছেনা।বললো,’নাতো আমি রসুনের কিছুই আনি নি।”

“নিহানের চোখ আটকে গেলো টি-টেবিলে থাকা গরুর মাংস ভুনার দিকে।নিহানের আর বুঝতে বাকি রইলো না, যে গরুর মাংস ভুনাতে নীলাদ্রি রসুন বাটা দিয়েছে।”

“নিহান কাশতে কাশতে খুব কষ্টে বললো,’প্লিজ ওটা সরিয়ে ফেলো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।প্লিজ নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি নিহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলো, নিহান গরুর মাংস ভুনার বাটি দেখাচ্ছে।নিহান কে এতো কাশতে দেখে নীলাদ্রি তৎক্ষনাৎ বাটি টা কিচেনে গিয়ে রেখে আসলো।কিচেন থেকে দৌড়ে এসে দেখলো, নিহান পানি খাচ্ছে আর ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।নীলাদ্রি নিহানের কাছে এসে তার বুকে হাত বুলিয়ে বললো,’খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার?রসুনে আপনার কোনো সমস্যা আছে?”

“নিহান ক্লান্ত ভঙ্গিতে বললো,’হুমম রসুনের গন্ধে আমার শ্বাসকষ্ট হয়।”

“নীলাদ্রি মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।রসুনের গন্ধে যে কারো শ্বাসকষ্ট হয়,এটা ও প্রথম শুনলো।কারণ অনেকের রসুন খেলে শ্বাসকষ্ট,অ্যালার্জি হয়।কিন্তুু রসুনের গন্ধে হয়;এটা ও প্রথম জানলো।নিহান কে বললো,’আপনাকে কি ডাক্তার এই কথা বলেছে,যে রসুনের গন্ধে শ্বাসকষ্ট হয়?আমি তো জানি রসুন খেলে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়।আবার শ্বাসকষ্ট হলে অনেক সময় রসুন খুব কাজে লাগে।যেমন: হাফ কাপ দুধে রসুন দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করলে শ্বাসকষ্ট দূর হয়।”

“নিহান নীলাদ্রির কথায় কি বলবে ভেবে পেলো না।এখন তার কাছে একটু ভালো লাগছে।তাই কথা ঘুরানোর জন্য বললো,’আমার শ্বাসকষ্টের জন্য কি তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবে নীলাঞ্জনা?”

“নিহানের বোকা টাইপ কথা শুনে নীলাদ্রি অবাক না হয়ে পারলো না।নিহানের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,’এটা কি ধরনের কথা বললেন?আপনার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হলেও আমি আপনার পাশেই থাকবো।তবে আমি দোয়া করি, আপনাকে যেনো আল্লাহ এমন কোনো কঠিন রোগ না দেয়।এই ধরনের উল্টাপাল্টা কথা কখনোও বলবেন না।”

“নিহান মুচকি হেসে নীলাদ্রির গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললো,’ভালোবাসি তোমায়,পা**গলের মতো ভালোবাসি।”

” ব্যাস এই একটি কথাই নীলাদ্রি কে ঘায়েল করতে যথেষ্ট।নীলাদ্রি হঠাৎ করেই নিহানের ঠোঁট জোড়ায় ওর ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিলো।আকস্মিক ঘটনায় নিহান পুরো হতবিহ্বল হয়ে গেলো।নীলাদ্রির উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে নিহান ও তাল মেলাতে লাগলো।একসময় নিহান নীলাদ্রি কে বিছানায় বসিয়ে নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে বাইট করলো।নীলাদ্রি তো পা**গল প্রায়, নীলাদ্রিও সমান তালে নিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর ঠান্ডা ঠোঁটে কা**মড় দিলো।নীলাদ্রির নিহানের ঠান্ডা ঠোঁটের স্পর্শে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তুু তার থেকেও বেশি ভালো লাগছে।নীলাদ্রি নিহানের টি-শার্ট খুলতে চাইলো। কিন্তুু ওই মুহূর্তে নিহানের আবারও লিওনসেলের সেই শর্ত গুলো মনে পড়লো।একদিকে অবাধ্য অনুভূতি, অপরদিকে অতীতের সেই তিক্ত শর্ত।কোন দিকে যাবে নিহান?কিন্তুু সাময়িকের এই অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিয়ে, নিহান কিছুতেই নীলাদ্রিকে সারাজীবনের মতো হারাতে পারবে না।তাই দ্বিতীয়বারের মতো আবারও নীলাদ্রির ডাকে সাড়া দিলো না নিহান।বুকের মধ্যে সীমাহীন কষ্ট চেপে রেখে নীলাদ্রির হাত সরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বললো,’এখন না নীলাঞ্জনা।”

“নিহানের প্রত্যাখ্যানে নীলাদ্রি এইবার অবাক না হয়ে পারলো না।মনের মধ্যে থাকা চাপা কষ্ট গুলো প্রকাশ করে বললো,’যখন আপনি আমাকে চাইতেন; তখন আমি ধরা দেইনি।আর আজ আমি আপনাকে চাইছি অথচ আপনি আমাকে ইগনোর করছেন।আপনি কি প্রতিশোধ নিতে চাইছেন?”

“নীলাদ্রির সাথে বিতর্ক করার মুড নিহানের নেই।নিহান কয়েক সেকেন্ড কিছু একটা ভাবলো।তারপর বাঁকা হেসে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’উহুমম তোমার থেকে আমি কেনো প্রতিশোধ নেবো নীলাঞ্জনা?তুমি আমার রাজ্যের রানী।তাই তোমাকে চিরদিনের জন্য আমার সাথে থাকার ব্যবস্থা করবো।তাই একটু সময় চাইছি।”

“অদ্ভুত তো!আমি তো আপনার সাথেই আছি।আর মৃ**ত্যু*র আগ পর্যন্ত আপনার সাথেই থাকবো।”

“নীলাদ্রির সহজ-সরল স্বীকারোক্তি শুনে নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে, নীলাদ্রির ঠোঁটের বা**ইট করা জায়গায় আলতো করে চুমু দিলো।হাস্কি ভয়েসে বললো,’নীলাঞ্জনা আজ রাতে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।রেডি থেকো সুইটহার্ট। আর হ্যা, তুমি রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো; আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।আমার রাতে আসতে লেট হবে।”

“নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করলো,’কি কাজ আছে আপনার?আজ তো ছুটির দিন।ছুটির দিনে কিসের কাজ?”

” পুলিশদের মতো জেরা করছো কেনো তুমি?আমি কি বাইরে যেতে পারি না?নাকি সেটাও তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?”

“নিহানের এইরকম ত্যাড়া টাইপ কথায় নীলাদ্রি খুব কষ্ট পেলো।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,,’একদিনেই পুরনো হয়ে গেলাম তাইনা?”

“এই যে আমার বিকালে বলা কথার সাথে তোমার কথাগুলো পুরোপুরি মিলে গেলো।তোমরা মানবজাতি মনে হয় এইরকমই।কিছু হলেই তোমাদের মন বেঁকে যায়।লিসেন,তুমি কখনোই আমার কাছে পুরনো ছিলেনা;আর না কখনো থাকবে।এখন এইসব কথা বলার সময় নেই আমার।আমি যাচ্ছি নীলাঞ্জনা।আর হ্যা, নিজের খেয়াল রেখো।’বলেই নিহান চলে গেলো।নীলাদ্রি করুণ দৃষ্টিতে নিহানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।মনের মধ্যে আবারও চাপা ক্ষোভ তৈরি হলো।সাথে তৈরি হলো হরেক রকমের প্রশ্নের ঝুড়ি।”

———————
“এদিকে সন্ধ্যার একটু পরে ইরা ঘুমিয়েছে।রাত ৯টা বেজে গেছে এখনোও উঠছে না।তাই ইয়াশ ইরার কাছে এসে বসলো।ইরার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ভাবলো,’আমার ইরা দেখতে কতোটা সুন্দর।ইশশ.. ওর গালে যদি একটা কিস করতে পারতাম,তাহলে মনে হয় আমার ঠোঁট জোড়া ধন্য হয়ে যেতো।কিন্তুু আমি ওর কাছে আসলেই তো, তেলাপোকা দেখার মতো লাফিয়ে ওঠে।এখন তো ইরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।এখন একটা সুযোগ নেয়াই যায়,যতোই হোক আমারই বিয়ে করা বউ।’ভেবেই ইয়াশ ইরার গালে আলতো করে একটা চুমু দিলো।ইয়াশের তো একটা চুমু দিয়ে মন ভরে নি; তাই ইয়াশ ইরার ঠোঁট জোড়ায় খুব আস্তে করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।ইশশ আজ ইয়াশের ঠোঁট জোড়া ধন্য হলো।ইয়াশ হাসি মুখে চোখজোড়া বন্ধ করে আনমনে গেয়ে উঠলো,

“🎶ঘুম ঘুম চোখে দেখি আমি তোকে
কি যে ভালো লাগে বোঝাতে পারিনা
তুই নে বুঝেনে, রেখে মাথা রেখে
আমার এই বুকে, বলতে পারিনা।

তোর থেকে চোখ যেন ফেরাতে পারিনা
এই পৃথিবীতে তুই তোরই তুলনা,
তোর থেকে চোখ যেন ফেরাতে পারিনা
এই পৃথিবীতে তুই তোরই তুলনা।

ঘুম ঘুম চোখে, দেখি আমি তোকে
কি যে ভালো লাগে, বোঝাতে পারিনা
তুই নে বুঝেনে, রেখে মাথা রেখে
আমার এই বুকে, বলতে পারিনা।”🎶

” ইয়াশের কন্ঠে গান শুনে ইরার ঘুম ভেঙে গেলো।ইয়াশকে গান গাইতে দেখে ইরা মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।ইরার চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।ইরা এবং নীলাদ্রি দু’জনেই গান পাগলী।মানুষের কন্ঠ যেমনই হোক না কেনো,যদি গানের সুর,তাল,অনুভূতি গুলো একদম পারফেক্ট থাকে; তাহলেই তাদের গান শুনতে বেশি ভালো লাগে।ইরা ইয়াশের কন্ঠে গান শুনে অবাক না হয়ে পারলো না।মনে মনে বললো,’ইয়াশ এতো সুন্দর করে গান গাইতে পারে?হাউ ইজ ইট পসিবল?যেমন অসাধারণ গানের গলা,তেমন তার পারফেক্ট সুর।”

“ইরা কে ভালোভাবে পটানোর জন্য এই গান টাই মনে হয় যথেষ্ট ছিলো।ইরা মনে মনে বললো,’এমন একজন সুন্দর কন্ঠের অধিকারী আমার স্বামী?ওয়াও ইয়াশ কবিতা যতোটা খারাপ আবৃত্তি করে।গান ঠিক ততোটাই ভালো গায়।’
আহা বেচারা ইয়াশের যে মাত্র একটা গান গেয়েই ভাগ্য খুলে যাবে সেটা ইয়াশ জানতো না।”

” ইরা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,’জাস্ট অসাম,মাইন্ডব্লোয়িং এন্ড মেলোডিয়াস ভয়েস আপনার।”

“ইয়াশ চোখ জোড়া খুলে ইরার দিকে হা করে তাকিয়ে বললো,’কি বললে তুমি?আবার বলো।”

“ইরা হেসে ইয়াশের হাত ধরে বললো,’খুব সুন্দর কন্ঠের অধিকারী আপনি।দারুণ গেয়েছেন।আপনার কবিতা যতোটা জঘন্য।গান ঠিক ততটাই সুন্দর।যাইহোক আমি খুব খুশি।থ্যাংক ইউ এতো সুন্দর করে গান গেয়ে শোনানোর জন্য।”

” ইয়াশ এমনিতেই মোটা;তার ওপর ইরার এভাবে হাত ধরা এবং প্রশংসা শুনে ইয়াশ ফুলে বেলুন হয়ে গেলো।ইয়াশের ইচ্ছে করছে বাদুড়ের রূপ ধারণ করে এখুনি আকাশে উড়ে বেড়াতে।ইয়াশ ইরা কে বললো,’সত্যি সোনা তুমি আমার গান পছন্দ করেছো?আচ্ছা আরেক টা শোনাই।’বলেই,ইয়াশ চোখ বন্ধ করে আবারও গাইলো,

🎶চলো না ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে…
আবার এলো যে সন্ধ্যা
শুধু দু’জনে….🎶

“ইয়াশ গাইছে আর ইরা ওর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।”

——————-
রাত ১০টায় মন খারাপ করে রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে নীলাদ্রি।রাত ১২টার দিকে হঠাৎ কিছু একটার শব্দ পেয়ে ওর ঘুম ভেঙে গেলো।পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো, নিহান বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নীলাদ্রি মনে মনে বললো,’সে কখন এলো?আর এখনই বা কোথায় গেলো?নীলাদ্রি আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে নিহানের পিছু নিলো।দেখলো নিহান ছাদের দিকে যাচ্ছে।নীলাদ্রি নিঃশব্দে নিহানের পিছু পিছু ছাদে গেলো।”

“নিহান ছাদের কর্ণারে গিয়ে খাঁচায় থাকা দু’টি কবুতর বের করলো।নীলাদ্রি ছাদে না গিয়ে দরজার আড়াল থেকে এক জোড়া চোখ দিয়ে দেখতে থাকলো।ওর কিছু মাথায় আসছে না।ভাবলো,’এই জোড়া কবুতর এখানে কিভাবে এলো?আর নিহান এগুলো দিয়ে কি করবে?’ভেবেই নিহানের দিকে তাকাতেই, নীলাদ্রির চোখ জোড়া থমকে গেলো।নিহান মুখ হা করে চোয়ালের উপরে দুই পাশের ক্যানাইন দাঁত দুই টা বড় করলো।তার চোখ জোড়া টকটকে লাল,মনে হয় এখুনি র**ক্ত পড়বে।নিজের চোখকে আজ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না নীলাদ্রির।নিহান একটি কবুতর মুখের ওপরে রেখে মুহুর্তের মধ্যেই দুই ভাগ করে র**ক্ত গুলো খেয়ে ফেললো।একই ভাবে আরেকটি কবুতরের র**ক্তও খেলো।নীলাদ্রির তো এগুলো দেখে নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেলো,মাথা ঘুরে উঠলো।নিজের মাথায় হাত দিয়ে স্থির হওয়ার চেষ্টা করলো;কিন্তুু পারলোনা।নিহানের ফর্সা মুখস্রি দিয়ে যখন ক্যানাইন দাঁত জোড়া বেরিয়ে এলো,আর যখন মুখের ওপর কবুতর টি ধরে দুই ভাগ করে তাজা র**ক্ত গুলো পান করলো;তখনই নীলাদ্রির গা গুলিয়ে এসেছে।নীলাদ্রি হয়তো এখনই বমি করে দিবে।আর নীলাদ্রির উপস্থিতি নিহান যদি টের পেয়ে যায়,তখন কি হবে ভাবতে পারছে না নীলাদ্রি।তাই দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।সিড়ি বেয়ে তড়িঘড়ি করে নামতে গিয়ে স্লিপ কেটে পড়ে গেলো।নীলাদ্রি পায়ে খুব ব্যথা পেয়ে ‘উহহ’ আওয়াজ করেই আবার মুখ চেপে ধরলো।তারপর পা ব্যথা নিয়েই সিড়ি বেয়ে নেমে দ্রুত রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমের ভান ধরলো।নীলাদ্রি এই ঘটনা যে দেখেছে, সেটা কিছুতেই নিহান কে বুঝতে দেবে না।”

“এদিকে নিহান রুমে এসে হাঁটাহাঁটি করছে আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে।নীলাদ্রি চোখ বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করছে,কিন্তুু কিছুই শুনতে পেলো না।নীলাদ্রি একটু পিটপিট করে তাকাতেই ওর শিরা-উপশিরার র**ক্ত চলাচল মনে হয় কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো, নিহান ওর সামনে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নিহানের চোখ জোড়া টকটকে লাল,ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি,ক্যানাইন দাঁত দুটো বের করা।মনে হয় হরর মুভিতে থাকা আত্মা ওর সামনে বসে আছে।ডিম লাইটের নিভু নিভু আলোতে নিহানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, নীলাদ্রি জোরে চি**ৎ*কার দিতে চাইলো; কিন্তুু পারলো না।মনে হয়, ওর কন্ঠস্বর কেউ কন্ট্রোল করে রেখেছে।নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে, নীলাদ্রির মুখের কাছে এসে ফ্যাশফ্যাশে কন্ঠে বলে উঠলো,

“Twinkle twinkle little star
How i wonder what you are…”

“নীলাদ্রি ভ**য়ে কথা বলতে পারছেনা।ওর ঠোঁট জোড়া মনে হয় কেউ সুপার গ্লু দিয়ে আটকে রেখেছে।নীলাদ্রির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।নিহান সেটা বুঝতে পেরে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।নীলাদ্রি শোয়া থেকে উঠতে পারছে না।নিহান নীলাদ্রির মাথা উচু করে, বাচ্চাদের মতো করে নীলাদ্রি কে পানি খাইয়ে দিতে লাগলো।এভাবে পানি খাওয়াতে নীলাদ্রির বিষম উঠলো।নীলাদ্রি কাশতে থাকলো।কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো নীলাদ্রির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।নিহান নীলাদ্রির পিঠে হাত বুলিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,’নীলাঞ্জনা তোমার ভ**য় লাগছে?চিন্তা করো না, আমি তোমার সব ভ**য় দূর করে দেবো।ভালোবাসি তোমায়,পা**গলের মতো ভালোবাসি।”

“নিহানের ‘ভালোবাসি’ কথাটি এখন আর নীলাদ্রির কর্ণগোচর হচ্ছে না।ও তো নিহানের ভ**য়ং**কর চেহারা টি কল্পনা করছে।নীলাদ্রি ঠকঠক করে কাঁপছে।নিহান নীলাদ্রির ভয়েস আর কন্ট্রোল করলো না।নীলাদ্রি হঠাৎ করেই কথা বলে উঠলো,’ প্লিজ আআআমায় ছা…ছাড়ুন।আমার খু..খুব কষ্ট হচ্ছে।আপনার শরীর ব…বরফের মতো ঠান্ডা।”

“নিহান ডেভিল হেসে বললো,’কেনো তুমিই তো গতকাল বললে,’ভালোবাসার জন্য মানুষ সবকিছু করতে পারে।গতকাল তো আমার ঠান্ডা শরীরের সাথে খুব ভালোভাবে মিশে ছিলে।আজ ভালোবাসা হাওয়া হয়ে গেলো?’নীলাদ্রি নিহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে।কিন্তুু নিহানের মতো শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ারের কাছে, নীলাদ্রির শক্তি পিঁপড়ার মতো।নিহান নীলাদ্রি কে নিজে থেকেই ছেড়ে দিলো।তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’আমার এই রূপ দেখতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে নীলাঞ্জনা?”

“নীলাদ্রি পিটপিট করে একবার নিহানের দিকে তাকিয়ে,জোরে চি**ৎ*কার দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো।রুমটি সাউন্ডপ্রুফ হওয়ায় নীলাদ্রির চি**ৎ*কারের ছিটেফোঁটা শব্দও বাইরে গেলো না।নিহান নীলাদ্রির হাত ধরে বললো,’তাকাও সুইটহার্ট,তাকাও আমার দিকে। আমি তোমায় তাকাতে বলছি।তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাই না সুইটহার্ট?অথচ ভালোবাসার মানুষের এমন রূপ দেখে এভাবে পাল্টে গেলে?উহুমম ইট’স নট ফেয়ার সুইটহার্ট।”

” নীলাদ্রি ওর চোখ জোড়া বন্ধ রেখে বললো,’না..আমি তাকাবো না আপনার দিকে।আপনি মানুষ নয়।আপনি ভূত বা খারাপ জ্বীন।আ…আপনি আমাকে ধোঁকা দিয়েছেন।আমি মানুষ নিহানকে ভালোবেসেছি।কোনো জ্বীন-ভূতকে ভালোবাসি নি।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।আমার কাছ থেকে সরে যান।আমার খুব ভ**য় লাগছে।”

“নীলাদ্রির মুখে ভ**য়ের কথা শুনে, নিহান উত্তেজিত হয়ে আবারও নীলাদ্রি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।নীলাদ্রির এইবার দম ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো।হেঁচকি তুলে কান্না করে বললো,’আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ।আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা; খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।”

“নিহান এইবার তার হাতের বাঁধন একটু আলগা করে বললো,’না না না কিছুতেই ছাড়বো না;ছাড়লেই তুমি চলে যাবে।২০৯বছর পর তোমাকে পেয়েছি।আর তোমাকে হারাতে পারবো না।তোমার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি।আজ সবকিছু তোমায় বলবো।তারপর তোমাকে আমার মতো বানিয়ে ফেলবো।তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না।একদম না..ভুলেও ছোটাছুটি করার চেষ্টা করবে না।তাহলে কিন্তুু তোমার ঘাড়ে বা**ই*ট করে দেবো।ছাদে দেখেছো তো,কবুতর দু’টোকে কিভাবে খেয়েছি?না না না তুমি ভ**য় পেয়ো না।তোমার পুরো র**ক্ত আমি খাবো না; শুধু একটু বা**ইট করবো।কিন্তুু…কিন্তুু তার আগে তোমাকে আমার সব কথা শুনতে হবে।তোমাকে আমার কথায় রাজি হতে হবে নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রির শরীরে কাঁপন শুরু হলো।নিহান বিষয়টি বুঝতে পেরে নীলাদ্রি কে ছেড়ে দিয়ে ওর ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠান্ডা ঠোঁট জোড়া ছোঁয়ালো।তারপর নীলাদ্রি কে জোর করে শুইয়ে দিয়ে, ওর শাড়ির ফাঁক গলিয়ে নিজের হাত ওর পুরো পেটে বিচরণ করতে থাকলো।আর বিড়বিড় করে বলতে থাকলো,’তুমি যতোদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তোমার শরীর,মন সবকিছু শুধু আমার বুঝেছো তুমি?কি হলো বুঝেছো?”

” নীলাদ্রি একবারও নিহানের দিকে তাকায় নি। ও চোখজোড়া বন্ধ করে এখনও হেঁচকি তুলে কান্না করছে।একপর্যায়ে নীলাদ্রি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,’আপনি কোনো স্বাভাবিক মানুষ না।আপনি একটা…

“নিহান নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আঙুল দিয়ে বললো,’হুসসস…আমি কোনো স্বাভাবিক মানুষ না।আমি হলাম মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নিহান নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আঙুল দিয়ে বললো,’হুসসস..আমি কোনো স্বাভাবিক মানুষ না।আমি হলাম মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার।”

“নিহানের মুখে ‘ভ্যাম্পায়ার’ নামটি শুনে, নীলাদ্রির চোখের মণি যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।ও আগে ভ্যাম্পায়ারের বিষয়ে শুনেছে,কিন্তুু সবসময় কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়েছে।কিন্তুু পৃথিবীতে ভ্যাম্পায়ারের অস্তিত্ব যে সত্যি আছে, সেটা ওর জানা ছিলো না।কখনোও এইসব বিষয় নিয়ে আগ্রহ ও প্রকাশ করেনি।তার ওপর বাংলাদেশের মাটিতে ভ্যাম্পায়ারের বসবাস;এটাতো অবিশ্বাস্য।নীলাদ্রি পিটপিট করে নিহানের দিকে তাকালো।দেখলো, নিহানের চেহারা এবং চোখজোড়া একদম স্বাভাবিক।নীলাদ্রি অতিরিক্ত কান্না করার কারণে, ওর গালে লবনাক্ত পানির দাগ পড়ে গেছে।নিহান তড়িঘড়ি করে বাটিতে পানি এনে; রুমাল দিয়ে নীলাদ্রির পুরো চেহারা মুছিয়ে দিয়ে বললো,’এখন আমাকে দেখে ভ**য় পাচ্ছো নাতো?”

“নীলাদ্রি কিভাবে বলবে যে চোখের সামনে এমন ভূতের মতো একটা মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার কে দেখে, নীলাদ্রির প্রাণ বায়ু ছুটে যাওয়ার জন্য রাস্তা খুঁজছে।কিন্তুু নীলাদ্রি পথ হারা পথিকের ন্যায় নিহানের দিকে তাকিয়ে;মনে কিছুটা সাহস যুগিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।আমি আপনার কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছি না।প্লিজ আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা।জানিনা আপনি আমাকে কিভাবে চেনেন।কিন্তুু আমি আপনাকে ইউনিভার্সিটিতেই প্রথম দেখেছি।আপনি জ্বীন-ভূত,ভ্যাম্পায়ার যাই হন না কেনো; আমার পেছনে আর লাগবেন না।ছোটবেলা থেকে ভূত-প্রেতে আমি ভীষণ ভ**য় পাই।জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমি যে এমন কিছুর সম্মুখীন হবো;কখনোও কল্পনাও করতে পারি নি।প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন, আমি আপনার সামনে আর কিছুক্ষণ থাকলে;ভ**য়ে হার্ট অ্যাটাক করে মা**রা যাবো।”

“নীলাদ্রির মুখে মা**রা যাওয়ার কথা শুনে, নিহানের চোখজোড়া আবারও লাল টকটকে হয়ে গেলো।নীলাদ্রির দুই বাহু শক্ত করে ধরে বললো,’একদম এই ধরণের আজে*বা**জে কথা বলবে না।তুমি বাঁচবে..আমার সাথে হাজার বছর বাঁচবে।’বলেই বিছানা থেকে নেমে নীলাদ্রিকে কোলে তুলে সিড়ি বেয়ে ছাদে নিয়ে গেলো।আকাশে থাকা অর্ধ নৌকা আকৃতির চাঁদের দিকে তাকিয়ে নীলাদ্রির সামনেই, নিহান হা করে চাঁদের থেকে শক্তি আহরণ করলো।নীলাদ্রি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে এই দৃশ্যটি দেখলো।নীলাদ্রিকে নিহান আবারও কোলে তুলে নিয়ে ছাদের চিলেকোঠার রুমটিতে নিয়ে গেলো;নীলাদ্রি কে বিছানায় বসালো।নীলাদ্রি রুমটি দেখে অবাক হয়ে গেলো।পুরো রুমটি রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।খাটের চারিদিকে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ শেপের মধ্যে লেখা, ‘Nihan+Nilanjana”

“নীলাদ্রি কে এভাবে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে, নিহান কাছে এসে নীলাদ্রির গলার নিচে জেগে থাকা বিউটি বোনে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’আমাদের বাসর ঘর সাজানো কেমন হয়েছে নীলাঞ্জনা?”

“নীলাদ্রি কয়েক মিনিটের জন্য সবকিছু ভুলে পুরো রুমটিতে চোখ বুলিয়ে দেখছিলো।যখন নিহান ওর বিউটি বোনে চুমু দিলো, তখনই নীলাদ্রি চমকে গেলো।ওর মস্তিষ্ক সজাগ হতেই,নিহানের কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বললো,’ছোঁবেন না আমায়।তাহলে আমি কিন্তুু….

“নিহান বড় বড় পা ফেলে নীলাদ্রির খুব কাছে এসে ওর হাত শক্ত করে ধরে বললো,’তাহলে?তাহলে কি করবে শুনি?আমাকে মে**রে ফেলবে?নাকি আবার পালিয়ে যাবে?’বলেই ডেভিল হাসি দিলো।তারপর নীলাদ্রির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো,’না তুমি আমায় মা**রতে পারবে,আর না কোথাও যেতে পারবে সুইটহার্ট।তোমার যে কোনো রাস্তাই খোলা নেই।আর এতো সুন্দর করে বাসরঘর সাজিয়েছি তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়।আজ সারা রাত জেগে আমরা গল্প করবো।তারপর তোমার আর আমার মধুচন্দ্রিমা হবে।আজ আমাদের মধ্যে কোনো বাঁধা থাকবেনা নীলাঞ্জনা।মন-প্রাণ উজার করে ভালোবাসবো তোমায়।আজ তোমায় শোনাবো, তোমার আর আমার ভালোবাসা এবং বিষাদময় অতীত কাহিনী।আর সেই সাথে শোনাবো, ভ্যাম্পায়ারদের জীবনী-শক্তি।”

“নীলাদ্রি অবাক হয়ে বললো,’আপনার আর আমার জীবন কাহিনী মানে?”

” হুমম তোমার আর আমার জীবন কাহিনী।আজ আমি বলবো;তুমি শুধু শুনবে।”

“হঠাৎ নিহানের মুখে স্বাভাবিক কন্ঠে কথাগুলো শুনে, নীলাদ্রি এখন নিহান কে বেশি ভ**য় পাচ্ছে না।ওর নিহানের কথাগুলো শোনার জন্য কৌতূহল জাগলো।নীলাদ্রি নিহানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই, নিহান নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বলতে শুরু করলো।”

—————
অতীত…
” উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের একটি রাষ্ট্র পানামা। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দেশটি পূর্বে কলম্বিয়ার অধীন ছিল। পানামার রাজধানীর নাম পানামা সিটি। পানামাতে আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর এর সংযোগকারী পানামা খাল অবস্থিত।২০৯ বছর আগে পানামা রাষ্ট্রের ছোট একটি শহরে আমরা বসবাস করতাম।আমি যখন ২২বছরের তাগড়া যুবক;তুমি তখন ১৭বছর বয়সী চঞ্চলা কিশোরী।আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিলো এবং তোমার মা-বাবার সাথে আমার মা-বাবার সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো।যার ফলে মাঝে মাঝে আমার তোমাদের বাসায় আসা-যাওয়া হতো।আমি আর ইয়াশ হলো জমজ ভাই।ইয়াশ আমার থেকে ৫মিনিটের ছোট।সেই সময় আমার নাম ছিলো অ্যাড্রিয়ান এবং ইয়াশের নাম ছিলো সিন্ডি।আর তোমার নাম ছিলো ন্যান্সি;তবে তোমায় আমি ভালোবেসে ‘নিনা’ বলে ডাকতাম। যেদিন তুমি ১৬বছর পেরিয়ে ১৭বছরে পদার্পণ করেছো।সেদিন তোমার জন্মদিনে, আমি তোমায় আমার ভালোবাসার অনুভূতি গুলো জানাই।তুমি সেদিন মিষ্টি করে হেসে উত্তরে বলেছিলে, তোমাদের বাসার পেছনে খুব ভোরবেলা যেনো অপেক্ষা করি।”

“আমি বুঝে গেছিলাম, যে তুমিও আমাকে পছন্দ করো;তবুও কেমন যেনো দোটানায় ভুগছিলাম।সেদিন তোমার হ্যা বা না এর চিন্তায় সারারাত আমার ঘুম হয় নি।তোমার কথামতো তার পরের দিন ভোর বেলা তোমাদের বাসার পেছনে, তোমার জন্য অপেক্ষা করি।কিছুক্ষণ পর তুমি এসে আমাকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরে, তোমার মনে জমে থাকা আমার জন্য ভালোবাসার সেই মিষ্টি অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করো;যে তুমিও আমায় আগে থেকেই পছন্দ করো।আমি সেদিন বেশ অবাক হয়েছিলাম।যেখানে আমি তোমার হ্যা বা না উত্তরের জন্য দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছিলাম,সেখানে তুমি নিজেই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার মনের কথাগুলো জানাও।আমি খুব খুশি হয়ে সেদিন তোমার গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দেই।”

“বর্তমান সময়ে দক্ষিণ আমেরিকায় এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও,সেই সময় এগুলো ছিলো মানুষের চোখের কা’**টা।কোনো নর-নারী প্রেম করলেও খুব সাবধানে দেখা করতো।আর যদি একবার ধরা পড়ে যেতো, তাহলে তাদের সেই শহর থেকে বের করে দেওয়া হতো।আর সেখানে আমি তোমাকে চুমু দিয়েছিলাম।আমাদের সেই সুন্দর প্রেমময় দৃশ্যটি, গোলগোল চোখজোড়া দিয়ে ক্যাপচার করে রেখেছিলো পাশের প্রতিবেশী ডারলিন আন্টি।সে আমার এবং তোমার মা-বাবার কাছে বিচার নিয়ে যায়।যেহেতু তোমার এবং আমার বাবা-মায়ের বন্ডিং বেশ ভালো ছিলো।তাই তারা প্রথমে একটু রাগ করলেও,পরবর্তীতে সবাইকে বুঝিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে।এতো কঠোর নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হওয়ার পরেও, এতো সহজে যে তোমায় পেয়ে যাবো সেটা যেনো আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছিলো।হয়তো অতি সহজে তোমায় পেয়েছি বলে,আজ তোমাকে পাওয়ার পথটি অনেক কঠিন হয়ে গেছে।’বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নিহান।”

“নীলাদ্রি রোবটের ন্যায় নিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ যেনো চোখজোড়া কে নীলাদ্রি কিছুতেই বন্ধ হতে দেবে না।যেভাবেই হোক খুলে রাখবে।নিহান সেদিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে আবারও বলতে শুরু করলো।”

“সেদিন ছিলো ভরা পূর্নিমার রাত।আকাশে উঠেছিলো থালার মতো চাঁদ।সন্ধ্যার একটু পরে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমার সাথে তোমার বিয়ে হয়।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে যাও।ফুলসজ্জা রাতে তোমার হাত ধরে বলেছিলাম, এই হাত কখনোও ছাড়বো না।তুমিও আমায় জড়িয়ে ধরে বলেছিলে, পৃথিবীতে যতো বাঁধা-বিপত্তি আসুক না কেনো;তুমি আমার হাত কখনোই ছাড়বে না।সেই রাতটি ছিলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটি রাত।তোমার সর্বাঙ্গে আমি গভীরভাবে ছুঁয়েছিলাম।তুমিও সেদিন উদ্ভ্রান্তের ন্যায় আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলে আমার সর্বাঙ্গ।সেই রাত টি যে আমার জীবনে কতোটা স্পেশাল ছিলো;তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না।এই সুপ্ত অসম্ভব সুন্দর অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে আমি অপারগ।রাত পেরিয়ে ভোর হলো।খুব ভোরে উঠে আমরা সূর্য ওঠার দৃশ্য দেখলাম।সেই দিনটি যে তোমার সাথে আমার শেষ দিন হবে সেটা আমি বুঝতে পারিনি।বুঝতে পারলে হয়তো, তোমাকে আমার বুকের বা পাশে জাপটে ধরে রাখতাম।”

“আমি সিন্ডি(ইয়াশ) কে তোমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম।তোমার ক্ষেত্রে বরাবরই আমি বড্ড হিংসুটে ছিলাম।সেদিন বিকেলে তুমি আমার কাছে আবদার করলে,তুমি পানামা জঙ্গলে গিয়ে বন্য পাখি শিকার করবে।আর সেই পাখি দিয়ে পিকনিক করার প্ল্যান করলে।পানামা জঙ্গলটির বর্তমান নাম হলো ‘ড্যারিয়ান গ্যাপ।’এই দুর্গম জঙ্গলটিতে রয়েছে বিষাক্ত সাপ আর ভ**য়ং**কর নানারকম প্রাণী।আমি এই বিষয়ে ভালো করে কিছুই জানতাম না।তবে তুমি বলেছিলে, তুমি নাকি এর আগেও সেখান থেকে বন্য পাখি শিকার করেছো।
আমি সেদিন তোমাকে সন্ধ্যাবেলা যেতে নিষেধ করেছিলাম,দিনের বেলা যেতে বলেছিলাম ।কিন্তুু তুমি বায়না ধরলে তুমি সন্ধ্যা বেলায় সেখানে যাবে।আমি তোমার কথাটা ফেলতে পারিনি।আর সেটাই ছিলো আমার জীবনের করা সবচেয়ে বড় ভুল।সেদিন সন্ধ্যায় আমাদের সাথে সিন্ডি(ইয়াশ) ও যোগ দেয়।ও আমাকে অনেক রিকোয়েস্ট করে বলে, তোমার সাথে ভুলেও কথা বলবে না।শুধু আমাদের পেছনে আসবে।ওর নাকি বন্য পাখি শিকার করার অনেক শখ।আমিও রাজি হয়ে যাই।”

“আমরা ‘ড্যারিয়ান গ্যাপ’ জঙ্গলে সন্ধ্যার পরে পৌঁছাই।দুর্গম জঙ্গলটিতে প্রবেশ করতে না করতেই, অজানা কারণে ভ**য়ে আমার গা ছমছম করে ওঠে।জঙ্গলটি জুড়ে ছিলো ভ**য়ং**কর দানবাকৃতির গাছ।মনে হচ্ছিলো এখুনি আমাদের ওপর হা**মলে পড়বে।আমার মনে হচ্ছিলো এই জঙ্গলটির নাম ‘ভুতুড়ে জঙ্গল’ হলে বেশি ভালো হতো।কেমন একটা গা ছমছম করা রহস্যময় পরিবেশ ছিলো।পাখিরা তখন নীড়ে ফিরে এসেছে।মাঝে মাঝে কিছু বন্য প্রাণীর ভ**য়ং**কর গ**র্জন কর্ণগহ্বরে ভেসে আসছিলো।তুমি খুশি মনে ধনুক নিয়ে বন্য পাখি খোঁজার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকো।আমি এবং সিন্ডি ও বন্য পাখি খুঁজতে থাকি।আমি তোমার কাছাকাছি ছিলাম।অন্ধকার হয়ে যাওয়াতে আমি দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরাতেই, বি**কট একটি চি**ৎ*কারে আমার কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়।সেই চি**ৎ*কার টি আর কারো ছিলো না,স্বয়ং তোমার ছিলো।আমি তোমার দিকে তাকিয়ে দেখি;তুমি চোখ জোড়া খোলা রেখেই মাটিতে শুয়ে আছো।আমার মাথায় যেনো সেদিন আকাশ ভেঙে পড়েছিলো।হাত-পা অসার হয়ে যাচ্ছিলো।মস্তিষ্কের নিউরনগুলো স্থির হয়ে গেছিলো।আমি হাটু গেড়ে তোমার পাশে বসে তোমায় ‘নিনা’ বলে ডাকতে থাকি।কিন্তুু তুমি কোনো সাড়াশব্দ করোনি।তুমি ছিলে নীরব নিস্তব্ধ।আমার হাত থেকে দিয়াশলাই জঙ্গলে থাকা শুকনো পাতায় পড়ে নিভু নিভু আগুন জ্বলে ওঠে।সেই আগুনের আবছা আলোয় তোমার র**ক্ত মাখা মুখস্রি দেখে আমার পৃথিবী যেনো সেখানেই থমকে গেছিলো।আমি তোমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে গগন কাঁপিয়ে চি**ৎ*কার করে উঠি।আমার চি**ৎ*কারে মনে হয়, সদ্য নীড়ে ফেরা পাখিরাও ভ**য় পেয়ে গেছিলো,এমনকি চারিপাশ থেকে ভেসে আসা হিং**স্র পশুদের গ**র্জনও থেমে গেছিলো। হঠাৎ পেছন থেকে সিন্ডির(ইয়াশের) চি**ৎ*কার ভেসে আসে।আমি পেছনে তাকাতেই দেখি, শুকনো পাতার ওপর সিন্ডির নিথর দেহ পড়ে আছে।আর ওর ঘাড় থেকে পরম যত্নে র**ক্ত শুষে নিচ্ছে ২টি বাদুড়।তারপর দুটো বাদুড় সিন্ডির মুখের মধ্যে মুখ লাগিয়ে ওদের মুখের র**ক্তগুলো ঢুকিয়ে দিলো।মুহূর্তের মধ্যেই আকাশ থেকে বারিধারা নেমে এলো।পৃথিবী ধীরে ধীরে বরফের ন্যায় ঠান্ডা হতে থাকলো।কিন্তুু ঠান্ডা হলো না আমার শরীর এবং মস্তিষ্ক।আমি বাদুড় দু’টির দিকে এগিয়ে যেতেই, ওরা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।হয়তো সেখানেই চিরজীবনের জন্য আমার মানবসত্তার সমাপ্তি ঘটলো।নিঃশব্দে আমার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো।”

“যখন আমি চোখজোড়া খুললাম,তখন দেখলাম আমি শুয়ে আছি কোমল ঘাসের ওপর।মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসতেই দেখলাম, আমার সামনে দাড়িয়ে আছে অসংখ্য দানবাকৃতির দেহ এবং নেকড়ের মতো ভ**য়ং**কর চেহারার ভ্যাম্পায়ার।আর আমার পাশেই ঘুমিয়ে আছে আমার ভাই সিন্ডি(ইয়াশ)।সিন্ডিকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।সিন্ডির ঘুমন্ত চেহারা টা মানুষের মতো ছিলো;কিন্তুু ওর শরীর টা নেকড়ের মতো ছিলো।আমি খুব ভ**য় পেয়ে যাই।সামনের দিকে তাকিয়ে বলি,’কে তোমরা?আমাকে কেনো এখানে নিয়ে এসেছো?আআ..আমার নিনা কোথায়?”

“আমার পাশ থেকে একজন বলে ওঠে,’আমাদের ভ্যাম্পায়ার জগতে তোমাদের স্বাগতম।তোমরা দুই ভাই এখন আমাদের মতো ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছো।আমরা তোমাদের র**ক্ত পান করে,সেই র**ক্ত তোমাদের খাইয়েছি।আর তোমার সাথীর জন্য দুঃখ করে লাভ নেই।সে ম**রে গেছে।কিন্তুু আমরা তাকে মা**রিনি।তাকে মেরেছে আমাদের আরেক ভ্যাম্পায়ার দল।শুধু তাই নয়,তোমাদের মা-বাবা ওই জঙ্গলে তোমাদের খুঁজতে এসেছিলো।তখন সেই ভ্যাম্পায়ারদের দল তাদের কেও মে**রে ফেলেছে।আমরা খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম; তাই আমরা ওই জঙ্গলে গিয়েছিলাম পশু-পাখির র**ক্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে।সেখানে তোমাদের কে দেখে, আমার আর আমার স্বামীর খুব পছন্দ হয়।কারণ আমাদের একটি ছেলে আছে।ওর নাম ফ্রেডো(এহতিশাম)।আমাদের ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল বলেছেন,আমরা এক সন্তানের বেশি নিতে পারবো না।কারণ আমাদের খাবারের(র**ক্তের) চাহিদা অনুযায়ী, পৃথিবীতে মানুষ এবং পশু-পাখির সংখ্যা খুব নগন্য।তাই তোমাদের কে দেখে আমাদের খুব ভালো লেগেছে।আমরা আমাদের পাওয়ার ব্যবহার করে তোমাদের সম্পর্কে সবকিছু জেনেছি।তোমাদের দু’জনের বয়স ২২বছর।আর তোমরা কখনো এর থেকে বাড়বে না।তোমরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সারাজীবন এইরকমই থাকবে।কারণ এই বয়সেই তোমরা ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছো।আর তোমরা চাইলে যেকোনো রূপ ধারণ করতে পারবে।ভ্যাম্পায়ারদের নির্দিষ্ট ভাষা আছে।সেটা তোমাদের শিখিয়ে দেবো।তোমার ভাইয়ের সব স্মৃতি আমরা মুছে ফেলেছি।ওকে এখন যা বোঝাবো ও তাই বুঝবে।কিন্তুু তোমার স্মৃতি মুছে ফেলি নি।কারণ,পৃথিবীতে তোমার একজন সাথী ছিলো।আমাদের খুব মায়া হয়েছে তোমার জন্য।হয়তো আমরা ঠিক সময় উপস্থিত হলে তোমার সাথী কেও ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ফেলতাম।কিন্তুু আমাদের ভ্যাম্পায়ার দল ওর শরীর থেকে পুরো র**ক্ত শুষে নিয়েছে।যার ফলে ও মা**রা গিয়েছে।আমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের শরীর থেকে পুরো র**ক্ত পান করিনি।অল্প র**ক্ত পান করে, আমাদের মুখ থেকে সেই র**ক্ত তোমাদের খাইয়েছি।আর আমাদের মুখের লালাযুক্ত র**ক্ত তোমাদের মুখে প্রবেশ করায়,তোমরা ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করেছো।আমি জানি,তুমি সবকিছু তে খুব কষ্ট পেয়েছো।কিন্তুু আমাদের কিছু করার ছিলো না।আমাদের ভ্যাম্পায়ার জগৎ টাই এইরকম।আজ থেকে আমরা দুইজন তোমার মা-বাবা।আমার নাম জেসিকা(শায়লা বেগম),আর তার নাম কোর্টন(ইমতিয়াজ আহমেদ)।আজ থেকে আমাদের ৩ছেলে।ফ্রেডো(এহতিশাম),এড্রো(নিহান),
ট্রোডো(ইয়াশ)।”

“তাদের কথাগুলো শুনে আমি নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।আমার শরীরও তাদের মতো ভ**য়ং**কর দানবাকৃতির রূপ ধারণ করেছে।আমি নিজেকে এই রূপে কিছুতেই মানতে পারলাম না।গগন বিদরী চি**ৎ*কার দিয়ে বললাম,’আমাকেও মে**রে ফেলতেন,কেনো বাঁচিয়ে রেখে এই অন্যরকম দুনিয়ায় নিয়ে এলেন?’বলেই আমি আবার গগন বিদরী চি**ৎ*কার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
জ্ঞান ফেরার পর চোখের সামনে যা দেখলাম, সেটা দেখে আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।”

#চলবে….

ভ্যাম্পায়ারের প্রেমকথন পর্ব-১৭+১৮

0

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৭(ধামাকা পর্ব)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“আমি তোমার র**ক্ত চুষবো না।আমি শুধু তোমাকে গভীরভাবে একটু আদর করবো।”

“নিহানের বিড়বিড় করে বলা পুরো কথাটি নীলাদ্রি শুনতে পেলো না।শুধু ‘র**ক্ত’ শব্দটি শুনলো।”

“নীলাদ্রি নিহানকে বললো,’আপনি কি আমাকে র**ক্ত নিয়ে কিছু বললেন?”

“নিহান রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’হুমম বলেছি তো।তোমার সাথে আমার র**ক্তের সম্পর্ক না হলেও, গভীরভাবে আত্মার সম্পর্ক আছে।’বলেই নিহান নীলাদ্রির ঘাড়ের দিকে আবারও এগিয়ে গেলো।”

“এইবার আর নীলাদ্রি নিহানকে বাঁধা দিলো না।কারণ, এখন যে নীলাদ্রি নিহান কে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছে।ভালোবাসার মানুষটিকে কিভাবে ও ফেরাবে।তার ওপর ওদের সম্পর্ক বৈধ।নীলাদ্রিও নিহানের সাথে তাল মেলাতে শুরু করলো।একসময় নিহান নীলাদ্রি কে রেলিং থেকে কোলে করে নামিয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।নীলাদ্রি কে বিছানায় বসিয়ে নিহান বিপরীত দিকে ফিরে একটা ওষুধ খেলো।নীলাদ্রি কে বিছানায় বসাতেই নীলাদ্রি বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পড়লো।আজ ওর লজ্জাদের যদি কিছুক্ষণের জন্য বিদায় দিতে পারতো; তাহলে হয়তো ওর অনুভূতি গুলো নিহানের কাছে সুন্দর ভাবে প্রকাশ করতে পারতো। এই সুদর্শন পুরুষের প্রেমে তো নীলাদ্রির মন আগেই পড়তে চেয়েছিলো।কিন্তুু তিক্ত কিছু ঘটনার কারণে নীলাদ্রির কঠোর ব্যক্তিত্ব, বারবার ওকে নিহানের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।আজ নিহান কে নীলাদ্রি কোনোভাবেই বাঁধা দেবে না।সবকিছু উজার করে নিহান কে ভালোবাসবে।একদিকে লজ্জা আরেকদিকে ভালোবাসার অনুভূতি, সবকিছু মিলিয়ে নীলাদ্রির অবস্থা টালমাটাল।নীলাদ্রি বালিশে মুখ গুজে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে।নিহান বিষয়টি লক্ষ্য করে মুচকি হেসে, নীলাদ্রির অর্ধনগ্ন পিঠে হাত দিতেই, কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি।নিহানের হাতের ছোঁয়া গুলো আরও গভীর হতে লাগলো।নীলাদ্রির পাশে শুয়ে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওর সর্বাঙ্গে হাত বিচরণ করতে থাকলো।নিহানের প্রতিটি স্পর্শে নীলাদ্রি যেনো অজানা এক ভালো লাগায় হারিয়ে যেতে লাগলো।নীলাদ্রি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।নিহানের ঠোটঁজোড়ায় নিজের ঠোটঁজোড়া ডুবিয়ে দিলো।কিন্তুু নীলাদ্রির কাছে আজ নিহানের শরীর এবং ঠোঁটজোড়া ঠান্ডা লাগছে না। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার মতোই লাগছে।কিন্তুু এইমুহূর্তে নীলাদ্রি সেই ধ্যানে নেই।সেতো নিহানের সাথে গভীর চুম্বনে মত্ত রয়েছে।দু’জনের ঠোঁটজোড়া হয়তো আজ প্রতিযোগিতায় নেমেছে।একসময় খুব হাঁপিয়ে গেলো নীলাদ্রি।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে নিহানের টি-শার্ট একটানে খুলে ফেললো।নিহানের সারা শরীরে গভীর থেকে গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো।ওদের মিলনের সাক্ষী হতে হয়তো আকাশ থেকে বারিধারা নামলো।বেলকনি থেকে ঝুম বৃষ্টির আওয়াজ যতো তীব্র হলো, নিহান এবং নীলাদ্রির আলিঙ্গন ততো গভীর হতে থাকলো।কম্ফোর্টারে দুই মেরুর দুইজন নর-নারী আলিঙ্গনরত অবস্থায় আছে।নীলাদ্রির পুরো শরীরে নিহানের চুমুর বর্ষণ বইছে।যখনই ওদের ভালোবাসা পুরোপুরি ভাবে পূর্নতা পাবে,তখনই নিহানের সেই তিক্ত বিধিনিষেধের কথা মনে পড়ে গেলো।নিহান নীলাদ্রি কে ছেড়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলো।ফ্লোরে পড়ে থাকা টি-শার্ট টি পড়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।নীলাদ্রি এতক্ষণ পরম সুখের জোয়ারে ভাসছিলো।হঠাৎ নিহানের এহেন আচরণে ভড়কে গেলো নীলাদ্রি।নিহানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’কি হলো?এভাবে উঠে গেলেন কেনো?”

“নিহান নীলাদ্রির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো।নীলাদ্রির শরীরের তীব্র অনুভূতিগুলো এখনো জাগ্রত।এইমুহূর্তে নীলাদ্রি কে দেখে নিহানের খুব মায়া হলো।ইচ্ছে করছে সবকিছু উজার করে ভালোবাসতে।এতো প্রতীক্ষার পর নীলাদ্রির সম্মতি পেয়ে, নিহান সবকিছু ভুলে নীলাদ্রি কে আপন করতে যাচ্ছিলো।কতো বড় ভুল করতে যাচ্ছিলো সে।আজ যদি সত্যি তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতো; তাহলে আবারও নীলাদ্রি কে হারিয়ে ফেলতো।নাহ!সেটা আর কিছুতেই হতে দেবে না নিহান।ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নীলাদ্রির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,’নীলাঞ্জনা তুমি ১০মিনিট অপেক্ষা করো।আমি যাবো আর আসবো।প্লিজ কোনো প্রশ্ন করো না।’
নিহানের অসহায় মুখ টি দেখে নীলাদ্রির খুব মন খারাপ হলো।ভাবলো,’এই ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তে নিহান এইসব কি বলছে?”

“নীলাদ্রি ফ্লোরে থাকা শাড়িটি উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে বললো,’এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবেন আপনি?”

“নিহান নীলাদ্রির এই অসহায় মুখটি দেখতে পারছেনা।জীবনসঙ্গী কে এতো যুগ যুগ পর নিজের এতো কাছে পেয়েও, তার সাথে গভীরভাবে মিশতে না পারার কষ্ট গুলো নিহান নীলাদ্রি কে বোঝাতে পারবেনা।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীলাদ্রির গালে হাত দিয়ে বললো,’ফিরে এসে সব বলেবো।’বলেই আর একমুহূর্তও সেখানে অপেক্ষা করলো না নিহান।রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।আজ বজ্রপাত হচ্ছে না।নিহান একটু নিশ্চিন্ত হলো।তড়িৎ গতিতে নিহান ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করলো।ঝড়ের গতিতে ছুটে গেলো ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে।কিন্তুু এই রাজ্যের অংশে মোটা দাগ অতিক্রম করে নিহানের ভেতরে প্রবেশ করা নিষেধ।তাই কয়েক ইঞ্চি দূরে দাড়িয়ে, নিহান ভ্যাম্পায়ারদের ভাষায় ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল কে ডাকলো।
নিহান ডাকতেই লিওনসেল সেখানে এসে নিহান কে দেখে বললো,’আমি জানতাম একদিন তুৃমি আসবে।এখন বলো কেনো এখানে এসেছো?”

“নিহান অসহায় ভঙ্গিতে বললো,’আপনি এই পর্যন্ত যতোগুলো শর্ত দিয়েছেন, আমি সব শর্ত মেনে চলেছি।নিজেকে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছি।কিন্তুু আজ সে আমাকে অতি আপন করে চাইছে।আমি কিভাবে তাকে ফিরিয়ে দেবো?আমি জানি, আপনার কাছে সেই বিশেষ ওষুধ আছে; যেটা খেলে স্ত্রীর সাথে মিলন করলে তার কোনো ক্ষতি হবে না।আমি আর তাকে হারাতে চাইনা।”

“নিহানের কথা শুনে ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল গগন কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন।তার হাসির আওয়াজে বাকি ভ্যাম্পায়ারগুলো সেখানে হাজির হলো।লিওনসেল নিহানকে বললো,’এড্রো (নিহানের ভ্যাম্পায়ার নাম) তোমার পুরো পরিবার ২০৯ বছর যাবৎ অভিশপ্ত অবস্থায় রয়েছে।তোমাদের কে পৃথিবীতে থাকা মানবজাতির সাথে মিশতে বলেছি;তোমরা মিশেছো।তোমার অর্ধাঙ্গিনী কে অবশেষে তুমি খুজে পেয়েছো।কিন্তুু তোমাকে বলেছিলাম তোমাদের মিলনের আগ মুহূর্তে, তাকে তুমি তোমার নিজের আসল পরিচয় জানাবে।তোমার অতীত,বর্তমান সবকিছু তাকে বলবে।তারপর তাকে তুমি ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমাদের জগতে নিয়ে আসবে।তোমাকে আমি সব ধরনের শক্তি দিয়েছি।যেটা তোমার বাবা-মা,তোমার দুই ভাই কে দেইনি।কিন্তুু তুমি এখন তোমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য পথ্য চাইছো?হাহাহাহা কেনো তোমার তাকে সবকিছু বলতে সমস্যা কোথায়?নাকি আবার তাকে হারিয়ে ফেলার ভ**য় পাচ্ছো?”

“নিহান অসহায় মুখ করে বললো,’আপনি আমার মন সম্পর্কে অবগত।তাই আপনাকে নতুন করে বলার কিছু নেই।আমি তাকে অনেকবার বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তুু প্রতিবার সে আমাকে বাঁধা দিয়েছে।কিন্তুু আজ যখন সে নিজে থেকে আমার কাছে এসেছে,তখন আমি সবকিছু ভুলে গিয়ে তাকে আপন করতে চেয়েছিলাম।কিন্তুু আপনার দেওয়া শর্তগুলো মনে পড়তেই, আমি তাকে প্রত্যাখ্যান করে আপনার কাছে ছুটে এসেছি।আমার সত্যি খুব ভ**য় হচ্ছে।দীর্ঘ ২০৯ বছর সাধনা করার পর তাকে আবারও পেয়েছি।আর কোনোভাবে তাকে হারাতে চাইনা।আপনি আমাকে সব ধরনের ক্ষমতা দিয়েছেন ঠিকই।কিন্তুু আমার স্ত্রীর ওপর সেই বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে নিষেধ করেছেন।আমি চাইলেই তাকে হিপনোটাইজ করে আমার বশে এনে, সবকিছু বলে ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারতাম।কিন্তুু আপনি সেটাও নিষেধ করেছেন।তাকে সজ্ঞানে এগুলো বললে সে কোনোভাবেই আমার কথা মেনে নেবে না।আবারও দূরে সরিয়ে দেবে।আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি।আপনি বলেছেন, আমি আপনার শর্ত পূরণ করলে আপনি আমায় এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের পরবর্তী কিং বানাবেন।কিন্তুু আমি এইসব কিছু চাই না।আমি শুধু আমার স্ত্রী কে চাই।দরকার হলে কষ্ট হলেও আমি মনুষ্য জগতে সারাজীবন থাকবো।তবুও আমি তাকে আবার হারাতে পারবো না।আমার প্রতি তার এই প্রগাঢ় অনুভূতি গুলো আমি কিছুতেই নষ্ট করতে চাই না।তাই আপনার কাছে ছুটে এসেছি।আজ আমার একটি কথা অন্তত রাখুন।”

“ভ্যাম্পায়ার কিং লিওনসেল এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিহানের কথাগুলো শুনছিলো।নিহানের কথা শেষ হতেই তিনি রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন,’আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না।তুমি আর কখনোই এই ওষুধ পাবে না।তবে ফ্রেডো (এহতিশামের ভ্যাম্পায়ার নাম) এবং ট্রোডো(ইয়াশের ভ্যাম্পায়ার নাম)পাবে।যদিও ট্রোডো তোমারই ভাই।কিন্তুু ফ্রেডোর অস্তিত্বে মিশে আছে ভ্যাম্পায়ার সত্তা।এখন এখান থেকে প্রস্থান করো, নইলে তোমায় আ**ঘা*ত করতে বাধ্য হবো।আমি তোমাকে সব ধরনের শক্তি দিয়েছি।এতোদিন যেহেতু সেগুলোর সদ্বব্যবহার করেছো।আশা করি শর্তগুলো পরিপূর্ণ ভাবে পালন করে, তোমার স্ত্রীকে নিয়ে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে প্রবেশ করবে।অন্যথায় আবার এখানে এলে তোমাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।’কথাগুলো বলেই ভ্যাম্পায়ার কিং সেখান থেকে চলে গেলেন।আজ বহু বছর পর নিহানের চোখ জোড়া বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।বারবার নিজেকে দোষারোপ করছে।কেনো সেদিন রাতে দুই ভাই মিলে নীলাঞ্জনার সেই অদ্ভুত আবদার রাখতে গিয়েছিলো?সেদিন যদি নীলাঞ্জনার এই আবদার টা না রাখতো; তাহলে হয়তো এতোকিছুই হতো না।হয়তো ওরা এই পৃথিবীতেই থাকতো না।”

“একরাশ বিষন্নতা নিয়ে নিহান ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে চলে এলো।পৃথিবীতে এখনও ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।নিহান প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ ছাদে ভিজছে;সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।কিভাবে নীলাদ্রি কে সবকিছু বোঝাবে?নীলাদ্রি কি ওর সব কথা আদৌ বিশ্বাস করবে? নাকি নিহান কে আবারও পা**গল বলে আখ্যায়িত করে দূরে সরে যাবে?”

“নিহানের শরীর আবারও বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে।নীলাদ্রির যাতে নিহানের শরীরের সাথে মিশতে কষ্ট না হয়;তাই তখন সেই ওষুধ টি খেয়েছিলো।কিন্তুু এখন সেটার পাওয়ার চলে গেছে।সেই সাথে চলে গেছে নিহানের আত্মবিশ্বাস।’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিহান ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো।”

“এদিকে বিছানায় শুয়ে নিহানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে নীলাদ্রি কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়ে পড়েছে।নিহান ভাবছিলো, রুমে ঢুকে নীলাদ্রি কে কি জবাব দেবে?কিন্তুু নিহান রুমে ঢুকতেই, এলোমেলো অবস্থায় ঘুমন্ত নীলাদ্রিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।নিহান জামা-কাপড় নিয়ে নিঃশব্দে ওয়াশরুমে চলে গেলো।চেঞ্জ করে বের হয়ে দেখলো, এখনোও নীলাদ্রি ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।তবে ওর শাড়িটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে গেছে।ফলে নীলাদ্রির অর্ধনগ্ন শরীর টি চুম্বকের মতো টানছে নিহান কে।নিহান নীলাদ্রির কাছে বসলো।তার ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার ব্যবহার করে, নীলাদ্রির মাথায় হাত দিয়ে গভীরভাবে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।তারপর নীলাদ্রির ফুলে থাকা ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিলো।এলোমেলো হয়ে থাকা শাড়িটি সুন্দর করে ঠিক করে দিলো।তারপর চুপটি করে নীলাদ্রির পাশে শুয়ে পড়লো।কিন্তুু আজ আর নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরলো না।কারণ নীলাদ্রির অনুভূতি মিশ্রিত সেই তপ্ত শরীরে নিহান স্পর্শ করলে,নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।ফলে আবারও নীলাদ্রি কে হারিয়ে ফেলবে।নিহান নিজেকে খুব কষ্ট করে কন্ট্রোল করে অপরপাশে ফিরে শুয়ে পড়লো।প্রিয়তমা কে এতোটা কাছে পেয়েও নিজের করতে না পারার কষ্ট টা যে কতোটা বেদনাদায়ক; আজ নিহান সেটা হারে হারে টের পাছে।ভ্যাম্পায়ারদের ঘুম কম;তাই নিহান ও সারা রাত ঘুমাতে পারলো না।যেই রাতটি গভীর ভালোবাসায় ভরপুর হওয়ার কথা ছিলো,সেই রাতটি কে**টে গেলো বিষন্নতায়।ভোরের দিকে নিহান তার চোখজোড়া বন্ধ করলো।”

———–
“সকাল ৯ টার দিকে ঘুৃম ভাঙলো নীলাদ্রির।আড়মোড়া ভেঙে, হাই তুলে নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঘুমিয়ে আছে।নীলাদ্রির গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।নিহানের সাথে ওর রোমান্টিক মুহূর্ত গুলো মনে পড়তেই লজ্জা পেলো নীলাদ্রি।হঠাৎ মনে পড়লো,’ নিহান তো কোথাও চলে গেছিলো।১০মিনিটের কথা বলে ১ঘন্টা হওয়ার পরেও আসেনি।আর নীলাদ্রিও সেই অবস্থায় ঘুমিয়ে গেছে।’ভেবে নীলাদ্রি মুখ টা মলিন করে নিহানের দিকে তাকালো।একবার ভাবলো, ‘নিহান কে ঘুম থেকে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করবে।’পরক্ষণেই ভাবলো,’এতো সুন্দর করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তিকে জাগানো ঠিক হবে না।’তাই নীলাদ্রি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো।”

“নীলাদ্রি নিচে নামতেই দেখলো, ডাইনিং রুমে সোফায় বসে ইরা এবং ইয়াশ কিছু একটা নিয়ে টানাটানি করছে।নীলাদ্রি ভ্রু জোড়া কুচকে সেখানে গিয়ে দেখলো, ইরা ইয়াশের কাছ থেকে ললিপপ নেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তুু ইয়াশ কিছুতেই ইরাকে ললিপপ দেবে না।কারণ এটা গরুর র**ক্তের ললিপপ।নিহান এবং নীলাদ্রির বিয়েতে আনা গরু,মুরগি এবং খাসির র**ক্ত সংগ্রহ করে ইয়াশ এই ললিপপ গুলো বানিয়েছে।আজ সকালে সোফায় বসে ইয়াশ সেটাই খাচ্ছিলো।তখনই সেখানে হাজির হয় ইরা।ইয়াশের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বলে, ‘আপনার কিন্তুু সুগার জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত না।তবুও কেনো খাচ্ছেন?”

“ইয়াশ বুদ্ধি খাটিয়ে অসহায় মুখ করে বললো,’ঘুঘুপাখি এটা তো সুগার ফ্রী ললিপপ।স্পেশাল ভাবে অর্ডার করে বানিয়েছি।”

“ওওও আচ্ছা তাহলে ওটা আমাকে দিন।আমি আগে খেয়ে চেক করবো;তারপর আপনি খাবেন।আপনার কথা আমি মোটেও বিশ্বাস করিনা।’বলেই ইরা ইয়াশের কাছ থেকে ললিপপ নিতে গেলে, ইয়াশ সেটা সরিয়ে ফেললো।তারপর শুরু হয়ে গেলো দু’জনের মধ্যে ললিপপ নিয়ে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ।নীলাদ্রি এই কাহিনী দেখে চেচিয়ে বললো,’এই টম এন্ড জেরির বংশধর তোরা এখন থামবি?নইলে ওই ললিপপ কিন্তুু আমার পেটে যাবে।”

#চলবে….

#ভ্যাম্পায়ারের_প্রেমকথন
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নীলাদ্রি এই কাহিনী দেখে চেঁচিয়ে বললো,’এই টম এন্ড জেরির বংশধর তোরা এখন থামবি?নইলে ওই ললিপপ কিন্তুু আমার পেটে যাবে।”

“ইয়াশ নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো,’ভাবি প্লিজ আপনার এই টিকটিকির মতো লাফিয়ে পড়া বান্ধবীর হাত থেকে আমায় বাঁচান।”

“নীলাদ্রি কটমটিয়ে বললো,’আমার বান্ধবী মোটেও টিকটিকি না বরং আপনি একটা উইপোকা।ইরা কে ললিপপ টা দিলে কি হয়?”

“নীলাদ্রির সঙ্গ পেয়ে ইরা খুব খুশি হলো।ইয়াশের হাত একটু আলগা হতেই, ইরা খপ করে ললিপপ টা নিয়ে সাথে সাথে মুখে দিলো।ইয়াশ তো এটা দেখে হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো।”

“ইরা ললিপপ মুখে দিয়ে সাথে সাথে বের করে ওয়াক ওয়াক শুরু করলো।এক দৌড়ে বেসিনের কাছে গিয়ে বমি করে দিলো।নীলাদ্রি দৌড়ে গিয়ে ইরার পিঠে হাত বুলাতে লাগলো।ইয়াশ পানির গ্লাস নিয়ে এসে ইরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’ময়না পাখি পানি খেয়ে নাও।আমি আগেই বলেছিলাম এটা সুগার ফ্রী ললিপপ।তোমার তো এগুলো খাওয়ার অভ্যাস নাই।আমি তোমাকে দোকান থেকে মিষ্টি ললিপপ এনে দেবো।”

“ইয়াশের কথা শুনে ইরা অগ্নিদৃষ্টিতে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি মানুষ নাকি অন্যকিছু?এতোটা জ**ঘন্য ললিপপ আপনি কিভাবে খান?ছিহ!আপনার রুচি টা যে এতোটা খারাপ সেটা আমার জানা ছিলো না।”

“তোতাপাখি এইরকম করে বলোনা প্লিজ। আমার রুচি খারাপ হলে তোমাকে পছন্দ করতাম না।”

“আমি কি খাওয়ার কোনো জিনিস যে আপনি রুচির কথা বলছেন?”

“ইয়াশ এবং ইরার ঝগড়া দেখে নীলাদ্রির মাথা ঘুরে যাচ্ছে।তখনই সেখানে এসে হাজির হলো এহতিশাম।এহতিশাম এসে গম্ভীর কন্ঠে বললো,’এখানে কি হচ্ছে?”

“এহতিশামের গম্ভীর কন্ঠ শুনে, ইরা এবং ইয়াশের ঝগড়া থেমে গেলো।”

“নীলাদ্রি বললো,’ওরা দুইজন সবসময় এভাবে ঝগড়া করে।ভাগ্যিস আপনি এসেছেন।এখন ঝড় থেমে গেছে।”

“এহতিশাম ইয়াশ কে বললো,’মায়ের শরীর টা আজ দুর্বল।মা ঘুমাচ্ছে।তোদের চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভেঙে গেছে।তুই জানিস না রাতে আমার ঘুম হয় না?রুমে গিয়ে যতো ইচ্ছে ঝগড়া কর।”

“ইয়াশ এহতিশাম কে খুব ভ**য় পায়।ইয়াশ আমতা আমতা করে বললো,’সরি ভাইয়া এইরকম ভুল আর হবে না।’বলেই ইরার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলো।”

“এহতিশাম নীলাদ্রিকে বললো,’নীলাদ্রি নিহান এতোদিন পর বাসায় এসেছে।কোথায় তুমি ওকে সময় দেবে;সেটা না করে তুমি এখানে ওদের তামাশা দেখছো।উপরে যাও;আমি মেইড কে বলছি তোমাদের জন্য খাবার পাঠাতে।’বলেই সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।”

“এহতিশামের এহেন কথায় নীলাদ্রি পুরো বোকা বনে গেলো।ভাবলো,’এই দুই ভাইয়ের থেকে এই লোকটা সবচেয়ে আলাদা। কেমন অদ্ভুত ভাবে কথা বলে।অবশ্য এই পরিবারের সবাইকে আমার কাছে রহস্যময় লাগে।’ভেবে নীলাদ্রি ওপরে চলে গেলো।”

“এদিকে ইয়াশ ইয়ারফোন কানে দিয়ে গান শুনছে।ইরা এই বাসায় আসার পর থেকে সবসময় বোরিং ফিল করে।এই বাসায় কোনো টিভি নেই।তার ওপর ইরার মোবাইল টাও হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে গেছে।ইরা এই বাসায় আসার পর থেকে আয়না ও দেখতে পারেনি।ইয়াশের কাছে জিজ্ঞেস করলে,ইয়াশ ক্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে থাকে।ইরা এমনিতেই ইয়াশের ওপর বিরক্ত।তার ওপর ইয়াশের এইরকম বোকা চাহনি ইরার কাছে আরও বিরক্ত লাগে।ইরা বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে কালো স্ক্রিনে নিজের চেহারা টা দেখে,ইয়াশের পাশে গিয়ে বসে একটা ইয়ারফোন কানে দিয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসে চেঁচিয়ে উঠলো।
ইরার চি**ৎ*কারে ইয়াশ বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।ইয়ারফোন কান থেকে সরিয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে বললো,’আবার কি হয়েছে সোনা?আমি কোনো ভুল করলাম?”

“ইরা কোমরে দুই হাত দিয়ে বললো,’আপনাকে আমি অনেক সহজ-সরল ভেবেছিলাম;কিন্তুু যেমন টা আপনি দেখান,তেমন টা আপনি না।”

“কেনো?”

“আপনি এই লু**চু হাশমির ওই লু**চু গানটা শুনছিলেন।আর এখন আবার বোকা সাজছেন?”

“লু**চু হাশমি মানে?”

“ওরে আমার হাদারাম লু**চু হাশমিকে চেনে না।এই লু**ই**চ্চা ব্যাটার বিখ্যাত লু**ই**চ্চা গানটি শুনে এখন আবার অভিনয় করছেন।বাহ বাহ!আপনাকে তো অস্কার দেওয়া উচিত।”

“ইয়াশ বললো,’বিশ্বাস করো সোনা আমি জানিনা তুমি কি বলছো।এই গান গুলো আমি দোকানে গিয়ে মেমোরি তে ভরে এনেছি।আমি আজ পর্যন্ত কোনো গানের ভিডিও দেখিনি।তুমি তো দেখেছো আমাদের বাসায় টিভি নেই।আর নিহান ভাইয়া এবং এহতিশাম ভাইয়া আমাকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে।বিশ্বাস করো আমি খারাপ কিছু দেখিনা।”

“ইরা কটমটিয়ে বললো,’ওরে আমার ভাইয়ের চামচা রে…ঠিকাছে এখন আমি বললাম,আজ থেকে আপনার ফোন চালানো পুরোপুরি বন্ধ।’আপনি আমার কথা শুনবেন?”

” হুমম তুমি বললে শুনবো।এই নাও ফোন।”

“ইরা তো বেশ অবাক হয়ে গেলো।ভাবলো,’এতো দেখি সত্যি সত্যি ফোন দিয়ে দিলো!’ভেবে ইরার মন টা একটু নরম হলো।ম্লান হেসে বললো,’থাক দিতে হবে না।আমি আপনার কথা বিশ্বাস করলাম।আর আজ আমি মেমোরির গান গুলো চেক করে দেখবো।যেগুলো খারাপ লাগবে সেগুলো ডিলিট করে দিবো ওকে?”

“ইয়াশ হাসি মুখে বললো,’ওকে।”

————–
“কিছুক্ষণ আগে মেইড এসে নীলাদ্রির রুমে খাবার দিয়ে গেছে।নিহান এখনোও ঘুমাচ্ছে।আসোলে নিহান ঘুমের ভান ধরে আছে।নিহান উঠলেই তো নীলাদ্রি গতকাল রাতের কথা জিজ্ঞেস করবে।ভ্যাম্পায়ার রা মিথ্যা বলতে পছন্দ করে না।কিন্তুু নিহান এখন মনে মনে মিথ্যা কথা সাজাচ্ছে।”

“নীলাদ্রির খুব ক্ষুধা লেগেছিলো।ভেবেছে, নিহান উঠলে একসাথে খাবে।কিন্তুু অতিরিক্ত ক্ষুধায় পেট মামা ডাকাডাকি করাতে, নীলাদ্রি ওর খাবার খেয়ে নিলো।তারপর বেলকনিতে গিয়ে দোলনায় বসলো।”

“নিহান পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো নীলাদ্রি বেলকনিতে বসে আছে।নিহান ধরফরিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গেলো।লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো।নীলাদ্রিকে গতকাল রাতের ব্যাপারে বলার জন্য মনে মনে নিহান অনেক কথা সাজিয়েছে।ভেবে নিহান বেলকনিতে গিয়ে নীলাদ্রির পেছনে দাঁড়ালো।আজ বাইরে বেশ রোদ উঠেছে।তাই বেলকনিতে আসতেই, নিহানের গায়ে সূর্যের প্রখর আলো লাগাতে তার শরীর টা মনে হয় পুড়ে যেতে লাগলো।নিহান তড়িঘড়ি করে রুমে গিয়ে নীলাদ্রি কে ডাক দিলো,’নীলাঞ্জনা রুমে আসো প্লিজ।”

“নিহানের কন্ঠ পেয়ে নীলাদ্রি রুমে এসে বললো,’ওহহ।আপনি উঠেছেন?তাড়াতাড়ি নাস্তা করুন।আপনি ঘুমিয়েছিলেন,আমার খুব ক্ষুধা লেগেছিলো তাই আপনাকে রেখেই খেয়ে ফেলেছি।এরপর থেকে একসাথে খাবো।নীলাদ্রি গতকাল রাতের কথা প্রায় ভুলে গেছে।”

“নিহান চুপচাপ নাস্তা খেয়ে নিলো।তারপর নীলাদ্রির হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে বললো,’আ’ম সরি গতকাল রাতের রোমান্টিক মুহূর্ত টা নষ্ট করার জন্য।গতকাল রাতে বাবা বলেছিলো, তার একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল অফিস থেকে নিতে।কিন্তুু আমি ভুলে গিয়েছিলাম।বৃষ্টির মধ্যে অফিসে গিয়ে আসতে আসতে লেট হয়ে গেছে।”

“নিহানের কথাটা নীলাদ্রির কাছে কেমন ভিত্তিহীন মনে হলো।কারণ,ওই চরম মুহূর্তে কারো এই ধরণের কথা কিভাবে মনে পড়ে!’ভেবে নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,’ইট’স ওকে।রোমান্স করার জন্য অনেক সময় পড়ে আছে।আপাতত আসুন আমরা গল্প করি।আপনার সাথে এখন পর্যন্ত আমার ভালোভাবে কথা বলা হয়ে ওঠেনি।তাই ভেবেছি, আজ আমরা অনেক গল্প করবো।”

“নিহান বেশ খুশি হয়ে বললো,’আচ্ছা আগে তোমার মনের কথা গুলো বলো।তারপর আমি বলবো।”

“নীলাদ্রি শুরু করলো,’আমি ছোটবেলা থেকেই নীরব স্বভাবের মেয়ে।যদিও আমার ভেতরে অনেক চঞ্চলতা বিদ্যমান।কিন্তুু আমি সেটা কারো কাছে প্রকাশ করতে ভালোবাসি না।আমার ইচ্ছে ছিলো আমার সকল চঞ্চলতা গুলো আমার লাইফ পার্টনার কে দেখাবো।বাবা গাড়িতে এক্সিডেন্ট করে মা**রা যাওয়ার পর মা খুব একা হয়ে যায়।আমার ভেতরের চঞ্চলতা গুলো সেখানেই দমে যায়।ভেবেছিলাম, প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর আমার থেকে বয়সে একটু বড় কাউকে বিয়ে করবো।কিন্তুু ঝড়ো হাওয়ার মতো হঠাৎ করে আমার জীবনে আপনি এসে পড়লেন।তারপর তো যা হওয়ার হলো।এখন আমার ইচ্ছে আমি পড়ালেখা কমপ্লিট করবো।কিন্তুু জব করবো না।মন দিয়ে আপনার সাথে সংসার করবো।আর এতোদিন আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য সরি।আসোলে আপনি যদি আমার প্রতিটি কাজে এভাবে সিনক্রিয়েট না করতেন, তাহলে আমিও এমন টা করতাম না।আপনি যেদিন আমাকে রেখে ইন্ডিয়া চলে গেলেন।সেদিন থেকে আপনাকে আমি মিস করতে শুরু করেছি।আপনার থেকে দূরত্বের কারণে, আপনার প্রতি আমার অবচেতন মনের অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে।আমি আপনার জন্য মনে হয় উ**ন্মা**দ হয়ে গেছিলাম।কিন্তুু এতো মানুষের ভিড়েও কারো কাছে আমার মনের কথা গুলো মুক্ত ভাবে প্রকাশ করতে পারিনি।কিন্তু এখন আমি আপনাকে…

” নিহান বাঁকা হেসে বললো,’এখন তুমি আমাকে কি?”

“নীলাদ্রি লাজুক হেসে বললো,’আপনি তো সবকিছুই জানেন।আমি আর নতুন করে কি বলবো?”

“উহুমম নতুন পুরাতন সবকিছু বলার জন্য সৃষ্টিকর্তা তোমায় কন্ঠস্বর দিয়েছেন।যদি কথা বলতে না পারতে,সেটা অন্য বিষয় ছিলো।আমরা মনের ভাষা প্রকাশ করার জন্যই তো মুখে বিভিন্ন বাচনভঙ্গিতে কথা বলি।তুমি তো দেখি বাংলা ব্যাকরণে খুবই কাঁচা।আচ্ছা বাদ দাও..এখন আসল কথা বলো,’তুমি আমাকে কি?”

“নীলাদ্রি লাজুক হেসে বললো,’আমি আপনাকে ভালোবাসি নিহান।খুব ভালোবাসি।”

“নীলাদ্রির মুখে ২বার ‘ভালোবাসি’ কথাটা শুনে নিহানের শরীরে মনে হয় শীতল স্রোতধারা বয়ে গেলো।মুহূর্তেই নিহানের মন পুলকিত হয়ে গেলো।নীলাদ্রি কে জড়িয়ে ধরে বললো,’আমিও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।যুগ যুগ ধরে ভালোবাসি নীলাঞ্জনা।”

“নীলাদ্রি লজ্জামাখা মুখ নিয়ে নিহানের কাছ থেকে সরে গিয়ে বললো,’আপনারা পুরুষ রা বড় ছলনাময়ী,এখন আমিতো নতুন তাই এতোটা ভালোবাসেন; যখন পুরনো হয়ে যাবো তখন তো আমার ভালোবাসা আপনার কাছে ফিকে হয়ে যাবে।”

“নিহান নিজের চিবুকে হাত দিয়ে বললো,’তা কিভাবে ফিকে হবে শুনি?”

“নীলাদ্রি মুচকি হেসে অভিনয় করে বলে উঠলো,

“ওহে নারী প্রেমের জলে ডুব দিওনা
এতো প্রেম নয়,যেনো বিষাক্ত ছলনা
প্রেম হলো কাঁঠালের আঠা,
প্রথম প্রথম লাগে বড় মিঠা
ক’দিন পরে পুরনো হলে,
লাগবে তোমায়
করলার থেকেও তিতা…”

~মেহের আফরোজ~

“নিহান নীলাদ্রির কবিতা শুনে নীলাদ্রির মতোই অভিনয় করে বললো,

“ওহে পুরুষ নারীর মোহে অন্ধ হয়ে
করো না তাকে বিশ্বাস,
ক’দিন পরে সুযোগ বুঝে
ছিনিয়ে নেবে নিঃশ্বাস,
নারীর মতো ছলনাময়ী
এই জগতে নাই,
মনের দুঃখে ইচ্ছে করে
বনবাসে যাই।”

~মেহের আফরোজ~

“নিহানের বিতর্কিত কবিতা শুনে নীলাদ্রি খুব অপমানিত বোধ করে কটমটিয়ে বললো,’আপনার মতো সন্দেহবাদী পুরুষদের মনের মধ্যে এই টাইপের সন্দেহবাদী কবিতাই ঘুরপাক খায়।”

“নিহান পাল্টা জবাব দিলো,’তোমার মতো অবিশ্বাসী নারী থাকলে পুরুষদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কষ্ট হয়ে যাবে।স্বামী কাজে একটু ব্যস্ত থাকলেই বলবে,’আমি পুরনো হয়ে গেছি তাই আমায় আর সময় দাওনা ব্লা ব্লা ব্লা…

“নিহানের কথা শুনে নীলাদ্রিও একের পর এক টেপরেকর্ডার চালু করে দিলো।দু’জনের কবিতা মূলক টক-ঝাল ঝগড়াতেই পুরো বিকাল টি কে**টে গেলো।”

#চলবে….