Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1473



শুধু তুই ২ পর্ব-১৯+২০

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৯
#Tanisha Sultana (Writer)

পুরো একঘন্টা সাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিধি। ভালো করে শরীর থেকে পানি না মুছে ড্রেস পড়ায় অনেকটা ভিজে গেছে জামাটা। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। চুল থেকেও টপটপ করে পানি পড়ছে।

আদি খাটের মাঝখানে গোল হয়ে বসে আছে। কখন নিধি বের হবে? একঘন্টা যাবৎ মেয়েটা বাথরুমে আছে। আবার সাওয়ারের আওয়াজ পেয়েছে আদি। একবার ভাবছি নক করবে আবার ভাবছে যা খুশি করুক আমার কি?

দরজা খোলার শব্দে আদি দরজার দিকে তাকায়। নিধিকে দেখে আদির বুকের ভেতর মোচর দেয়।

“এতো রাতে সাওয়ার কেনো নিলে?

” আপনাকে বলতে হবে?
চোখ মুখ শক্ত করে জবাব দেয় নিধি।

আদির মুখটা কালো হয়ে যায়। সত্যি ই তো আমাকে কেনো বলবে? আর আমিই বা প্রশ্ন কেনো করছি?

“আমাকে অবশ্যই বলতে হবে। কেনোনা তুমি আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য এতোরাতে শাওয়ার নিয়ে শরীর সাথে লেপটে থাকা ড্রেস পড়ে আমার সামনে এসেছো। যাতে আমি বেসামাল হয়ে কিছু একটা করে ফেলি। কিন্তু তোমাকে তো আমি আগেই বলেছি আমার তোমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নাই।

নিধির ভীষণ রাগ হচ্ছে।

” ইন্টারেস্ট নেই তাই সারাদিন ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকেন যদি ইন্টারেস্ট থাকতো তাহলে তো খেয়েই ফেলতেন

কথা গুলো বলে নিধি নিজেই লজ্জা পায়। আদি হা করে তাকিয়ে আছে। এই গাঁধ মেয়েটা এই কথাগুলো বললো আদির বিশ্বাস হচ্ছে না।

“কি বললা তুমি?

” শুনতে পান না কালা না কি?

“আর কয়েকঘন্টা পরে চলে যাবা। কোথায় একটু হ্যাপি মুডে থাকবা তা না এমন ধানিলংকা রুপ ধারণ কেনো করছো

নিধি কিছু না বলে সুয়ে পড়ে।

” এই এভাবে এখানে শোয়া যাবে না

“কেনো?

” আমার বালিশ ভিজে যাবে

“যাক

নিধি চোখ বন্ধ করে ফেলে।

” আমি কেনো এতো ভেঙে পড়ছি? এটা ঠিক না। আমি তো জানতাম আমাদের মিল হওয়া ইম্পসিবল। তাছাড়াও আমি তো সৌরভকে ভালোবাসতাম। নাহহ আমি ভেঙে পড়বো না। আমাকে স্টং থাকতে হবে। আমি এখন খুব তাড়াতাড়ি আদিকে মুক্তি দিয়ে দেবো।

এসব ভাবতে ভাবতে নিধি ঘুমিয়ে পড়ে। আদির চোখে ঘুম নাই। আদি বেলকানিতে চলে যায়। সিগারেট ধরায়।
“কাল নিধি চলে যাচ্ছে। কিন্তু ও তো কিছু দিনের জন্য যাচ্ছে। পৃতির বিয়ের পরেই ডিভোর্স পেপারটা নিধিকে দিয়ে সই করিয়ে আনবো। ঝামেলা শেষ।

আদি এসব ভাবছে আর একটার পর একটা সিগারেট ফুরচ্ছে।

তিনটার দিকে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। পাশে তাকিয়ে দেখে আদি নেই। নিশ্চয় আমি এখানে ঘুমিয়েছি বলে উনি এখান থেকে চলে গেছে।

নিধি উঠে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় গুছিয়ে নেয়। তারপর কিচেনে গিয়ে করলা ভাজি আর রুটি বানায়। ততখনে আদির বাবাও উঠে গেছে।

নিধি আদির বেলকনিতে গিয়ে দেখে আদি বসে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে।

” শুনছেন

নিধির ডাকে আদি একবার নিধির দিকে তাকায়। তারপর আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে

“হুমম

” বাবা আপনাকে খেতে ডাকছে

“বাবা আমার তোমার না। আংকেল বলে ডাকবা

নিধি মুখটা ছোট করে বলে

” হুমমম

নিধি আদি আর আদির বাবাকে খাবার বেরে দেয়। খেতে খেতে আদির বাবা বলে

“তাহলে তুমি কবে যাচ্ছ

” বিয়ের দিন চলে যাবো

“বোনের বিয়ে তোমার

” তো কি আমার কাজ বাদ দিয়ে ওখানে গিয়ে লাফালাফি করবো? আমার এইসবএ কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

আদির বাবা আর কিছু বলে না চুপচাপ খাওয়া শেষ করে।

আদির বাবা আর নিধি চলে যাচ্ছে। আদির বাবা আদিকে বলেছিলো কিছুটা পথ এগিয়ে দিতে কিন্তু আদি না বলে দিয়েছে। যাওয়ার সময় নিধি বারবার পেছন ঘুরে তাকায় এই আশায় হয়ত আদিকে একবার দেখতে পাবে। কিন্তু আদির দেখা মেলে না। তাই ছানাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে নিধি।

অফিসে বসে আছে আদি। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। বিরক্ত লাগছে। তখন বসের ছেলে রোহন আসে আদির কেবিনে

“হেই আদি

” তুমি

রোহন আদির সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসে

“বাবা বলছিলো তোমার বোনের সাথে দেখা করতে

এমনিতেই আদির রাগ ছিলো তারপর আবার নিধির কথা শুনে রাগটা দ্বিগুন বেরে যায়। তবুও রাগটা কন্ট্রোল করে বলে

” ও আমাদের বাড়িতে চলে গেছে

“ওহহহ কোনো বেপার না। আমিও যাচ্ছি তোমাদের শহরে। আসলে আমার কাজিনের বিয়ে। ওখান থোকে তোমার বোনের সাথে দেখা করে নেবো। আর তোমার বাবার সাথে পাকা কথাও বলে আসবো

আদির এবার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।

” আসছি

বলেই রোহন চলে যায়। হাতের কাছে থাকা কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে ফেলে আদি। তবুও রাগ করছে না। রাগে শরীর কাঁপছে। মনি আসে আদির কেবিনে

“আদি কি হয়েছে?

আদি চোখ বন্ধ করে বসে আছে চেয়ারে।

” কিছু না

“তাহলে এমন রেগে আছিস কেনো? আর এই গ্লাসটাই ভাংলি কেনো?

আদি এবার চোখ খুলে বলে

” বললাম তো কিছু না

মনি আদির পাশে চেয়ার টেনে বসে আদির হাতের ওপর হাত রাখে

“বেস্ট ফ্রেন্ড আমি তোর। আঠারো বছর যাবৎ একসাথে আছি। তোর চোখ দেখেই আমি তোর মন খারাপের কারণ বুঝতে পারি

” তাহলে বল আমার কি হয়েছে?
আদি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে

“নিধির সাথে ঝামেলা হয়েছে?

” ওর সাথে আবার সব ঠিকঠাক ছিলো কবে? ও তো নিজেই একটা ঝামেলা। তবে এখন খুব ভালো হয়েছে। নিয়ে গেছে বাবা ওকে।

“এখন তোর মেজাজ খারাপের কারণটা ক্লিয়ার হলো

” ওই গাঁধার জন্য আমার মন খারাপ না। বেঁচে গেছি আমি। আর ও আমায় প্রমিজ করেছে আর ফিরবে না। খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দেবে

“ওহহহ। ডিভোর্সের পরে আবার নিধির বিয়ে হবে

মনি মজা করে বলে। আদির মাথাটা একরু ঠান্ডা হয়েছিলো মনির কথা শুনে আবার আগুন জ্বলে ওঠে৷ চেয়ার ছেড়ে উঠে চেচিয়ে বলে

” হলে হোক। আমার কি? একটুও ফিলিংস নেই ওই গাঁধার প্রতি আমার।

“কুল কুল এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো?

” আমি একটুও রেগে নেই আমি
ফস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে আদি

মনি আদিকে আর একটু জ্বালানোর জন্য বলে

“রেগে নেই তাই চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে বাই চান্স যদি রেগে যেতিস তাহলে কি হলো

” একদম ওই গাঁধাটার মতো কথা বলবি না। ওর কথা শুনলেই
আদি থেমে যায়। মনি মুচকি হেসে বলে

“ওর কথা শুনলেই কি

” কিছু না

আদি বেরিয়ে যায়।

সারা রাস্তা নিধি একটাও কথা বলে নি। বাবা এটা সেটা অনেক কথাই বলেছে নিধি শুধু হ্যাঁ হুম বলেছে। ছানাকে কোলে নিয়ে নিধি নিজের বাড়ি ঢুকছে। শশুড়মশাইকে বলেছে দুইদিন নিজের বাড়ি থেকে তারপর যাবে আদিদের বাড়িতে। শশুড়মশাইও আপত্তি করে নি।

দুইবার কলিং বেল বাজানোর পরে নিধির মা দরজা খুলে। নিধিকে দেখে অবাক

“নিধি তুমি

নিধি মাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে।

” রাস্তার পাশে আমার লাগেজ আছে নিয়ে এসো

অন্য সময় হলে নিধির মা রাগ করতো। আমাকে কাজের লোক পেয়েছিস না কি এসব বলতো কিন্তু আজ কিচ্ছু বললো না। একটু মুচকি হেসে যায় লাগেজ আনতে।

নিধির বাবা রুমে বসে চা খাচ্ছিলো আর খবরের কাগজ পড়ছিলো। সকালে পড়া হয় নি। আজ নিরা আসবে বলে বাজার করতে গেছিলো। নিধি কোনো কথা না বলে ছানাকে একপাশে রেখে বাবার কোলের মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।

নিধির বাবা কিছুটা চমকে যায়

“মামনি তুমি

” শশুড়মশাই আজকেই নিয়ে এলো। আমি বললাম দুটোদিন তোমাদের কাছে থেকে তারপর ওবাড়িতে যাবো।

নিধির বাবা মুচকি হেসে নিধির মাথায় হাত বুলায়।

নিধির মা লাগেজ নিধির রুমে রেখে নিধির পাশে বসে পড়ে। এতোদিন পরে মেয়েকে পেয়ে বাবা মা দুজনেরই খুব আনন্দ হচ্ছে

“বলছি নিধি আদি আসলো না

আদি নামটা শুনে নিধির বুকের ভেতর কেমন একটা করে ওঠে। নিধির মা নিধিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে

” কি রে বল

নিধি চোখ বন্ধ করে বলে

“পৃতির বিয়ের দিন সকালে আসবে বেরি

” ১৮ দিন পরে
নিধির বাবা বলে।

“হুমম

তারপর নিধি বাবা মায়ের সাথে গল্প শুরু করে দেয়। কক্সবাজারে কি করেছে কোথায় কোথায় ঘুরেছে। রোদের কথাও বলে। এখন নিধির মুডটা মোটামুটি ভালো হয়ে গেছে।

আদি বাসায় এসে পৃতিকে ফোন দেয়। পৃতি রেডি হচ্ছিলো নিধিদের বাড়িতে যাবে বলে।

” হ্যাঁ ভাইয়া বল

“কি করছিস

” কিছু না। তুই এইসময় ফোন দিলি সব ঠিকঠাক তো

“হ্যাঁ সব ঠিকঠাক।

তখন পৃতিকে নিরা ডাক দেয়। বলে রোহন এসেছে। পৃতি ফোন কানে রেখেই বলে
” রোহন কে?
রোহন নামটা শুনে আদি চমকে ওঠে

“ওই ছেলেটা খুঁজে খুঁজে আমার বাড়ি ওবদি চলে গেছে। ওকে আমি খুন করে ফেলবো

আদি রেগেমেগে ফোন আছাড় মারে

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২০
#Tanisha Sultana (Writer)

আদি নিধির রুমের বেলকনিতে বসে আছে। মনটা ভালো নেই। নিধিকে মিছ করছে আবার করছেও না। কেমন একটা দোটানায় পড়ে গেছে আদি।
সৌরভ ফোন দেয় আদিকে

“বল

” শুনলাম নিধি চলে গেছে।

“চলে যায় নি। চলে যাওয়া মানে বুঝিস তুই? চলে গেলে আমাদের ডিভোর্স হয়ে যেতো। আমরা আলাদা হয়ে যেতাম। ও আমাদের বাড়িতে গেছে। আর সব সময় বউ সাথে রাখবে হবে এমনটাতো নয় তাই না?

আদি স্বাভাবিক ভাবেই কথা গুলো বলে। সৌরভ শব্দ করে হাসে। আদি হয়ত হয়ত হাসির কারণটা বুঝে।

” আদি তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর কোনো হ্মতি করতে আমার ভালো লাগবে না। নিধিকে ছেড়ে দে। ভালোবাসি খুব নিধিরাকে।

“ও আমার বউ

” দেখ তোর পাস্ট সম্পর্কে জানলে নিধিরা তোকে ঘৃণা করবে শুধু নিধিরা না তোর পরিবারও। আমি এটা চাইছি না

“ঘৃণা করার মতো কিছু নেই সৌরভ। ভালো বাসতাম আমি পরিকে। ও তো তোকে ভালোবাসতো আমি কি ওকে ঘৃণা করেছি

” তুই হয়ত ভুলে যাচ্ছিস পরি তোর গার্লফ্রেন্ড ছিলো আর পরি প্রেগন্যান্ট ছিলো। তোরা একবাড়িতে থাকতিস। আরও অনেক কিছু। বলবো না কি?

“স্টপ সৌরভ
আদি চেচিয়ে বলে।

” দেখলি তুই ভয় পাচ্ছিস। তুই ঠিক কিরকম টাইপের ছেলে নিধিরাকে বলতে বাধ্য করিস না।

আদি ফোন কেটে দেয়। কেনো সব সময় আমার সাথেই এমনটা হয়? কেনো আমি ভালো থাকার কোনো রিজন খুঁজে পায় না? আমি কি এতোই খারাপ?

আদি এসব মনে মনে বলে।

নিধি এখন রান্না করছে। পৃতি আর নিরা নিধির পেছন পেছন ঘুরছে। কড়াইতে তেল দিয়ে নিধি ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়

“পবলেম কি তোদের?

” বল না ভাইয়া তোর সাথে কি কি করেছে?

পৃতির প্রশ্নে নিধি হা হয়ে যায়।

“কি করবে?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিধি

” তুই বুঝতে পারছিস না
নিরা হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করে।

“না তো। তবে যদি তোরা রোমাঞ্চের কথা জিজ্ঞেস করিস তাহলে বলবো নিরামিষ ছেলেরা কখনো রোমাঞ্চ বুঝে না।

” বলিস কি

“হুমম। জানিস তো আপি মনের মধ্যে একজনকে রেখে আরেক জনের সাথে সংসার করাটা খুব কঠিন। ভীষণ কষ্ট হয়।
অনমনে বলে নিধি। নিরা আর পৃতি চুপ হয়ে যায়।

“আপি আমি থাকতে পারবো না রে আদির সাথে। এটা রিয়েল লাইফ ছিনেমা নয়। ছিনেমাতে এমনটা হয় একজনকে ভালোবেসে আর একজনে মেনে নেয়। আদিও আমার সাথে থাকতে চায় না আর আমিও চায় না। বিশ্বাস কর এতোদিন এক সাথে থাকার পরেও কখন এক মুহূর্তের জন্য আমার বা ওর মনে হয় নি আমরা বাকি জীবনটা এক সাথে কাটাবো। সব সময় ও চিন্তা করেছে কিভাবে আমি ওর থেকে দুরে যাবো আর আমিও তাই। প্লিজ আব্বুকে বোঝা। আমরা ভালো নেই। খুব কষ্ট আছি আমি। এভাবে বাঁচা যায় না আপি

নিধি নিরার হাত ধরে বলে। নিধির চোখে পানি চিকচিক করছে। নিরা নিধির গালে হাত দিয়ে বলে

” আমি দেখছি

নিরা আর পৃতি চলে যায়। এবার নিধির চোখের পানি গড়িয়ে পাড়ে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নিধি চোখের পানি মুছে ফেলে।

নিধি ঠিক করে নিয়েছে কাল ওবদি যা কিছু হয়েছে সব ভুলে যাবে। আর সেটাই চেষ্টা করছে। রান্না শেষ করে খাবারের পিক তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে নিধি। হাতে এক জায়গায় তেল ছিটে এসে কিছুটা পুরে গেছে সেটাও স্টোরিতে দেয়।

অফিস থেকে ফিরে করলা ভাজি আর ভাত রান্না করে গোছল শেরে আদি একটু ফেসবুকে যায়। সময়ের অভাবে ফেসবুকে যাওয়া হয় না। প্রথমেই নিধির স্টোরি চোখে পড়ে। পোড়া জায়গাটা দেখে আদির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। ফোন দিয়ে নিধিকে ইচ্ছে মতো বকতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আদি তা করলো না।
খাবারের পিক গুলো দেখলো। তারপর নিধি আর ছানার হাসিমাখা একটি সেলফি দেখলো। দুই ঘন্টা আগে আপলোড দিছে। কমেন্ট চেক করে দেখে। সৌরভ লিখেছে “ভালোবাসা” আর রোহন কমেন্ট করছে “আমার তুমি”

আদির এখন আর রাগ হলো না ওদের ওপর। রাগ হচ্ছে নিধির ওপর। ও যদি পিক আপলোড না দিতো তাহলে তো ওরা কমেন্ট করতে পারতো না।

আদি ফোনটা রেখে খেতে যায়।

এভাবেই পাঁচদিন কেটে গেলো। কাজের চাপ আর সৌরভের বলা কথা গুলো ভেবে প্রায় নিধিকে ভুলে আছে আদি। কথায় আছে “যখন মায়া বাড়িয়ে লাভ হয় না তখন মায়া কাটাতে শিখতে হয় ” আদি সেটাই করছে।

নিধি শশুড় বাড়ি এসেছে দুইদিন হলো। বিরক্ত লাগছে সব কিছু। এতোদিন একসাথে থাকলো মানবোতার খাতিরেও তো একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে কেমন আছো? আমাকে সব সময় ইডিয়েট বলে অথচ নিজেই একটা ইডিয়েট।

নিধি টিভি দেখছে। আজ পৃতির এংগ্রেসমেন্ট। বাড়িটা সাজানো হচ্ছে। পৃতি আর নিরা শাড়ি চুজ করছে। শশুড় শাশুড়ী আর ইমন কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।

শশুড়ের ফোন বেজে ওঠে

“আদি ফোন দিছে

আদি নামটা শুনে নিধির বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে।

” কেমন আছো?

“ভালো। তুমি?

” ভালো। আসবে কবে?

“কাল আসবো

” সত্যিই কাল আসবা

কাল আদি আসবে শুনে নিধির হার্ট বিট বেড়ে গেছে। মনে মনে ভীষণ খুশি লাগছে আবার খারাপও লাগছে। নিধি ওখান থেকে রুমে চলে যায়।
আদির খুব করে নিধির ভয়েস টা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু আদি নিধির ফোনে ফোন দেবে না। বাবার ফোনে ফোন দেওয়ার আগে আদি মনে মনে বলেছিলো যদি ইডিয়েটটা ফোনটা রিসিভ করতো। কিন্তু তা হলো না।

কিছুখন কথা বলে আদি ফোন কেটে দেয়।

“কাল উনি আসবে তাতে আমার কি? আমার তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দিতে হবে।

বিকেল বেলা নিধি গোলাপি লেহেঙ্গার পড়েছে পাতলা ওড়না। পেটের অনেকটা অংশ বেরিয়ে আছে। শুধু নিধি না সবাই এরকম লেহেঙ্গা পড়েছে। ভারি মেকাপ গহনাতে নিধিকে দারুণ লাগছে।
রোহন পৃতির হবু বরের কাজিন। পৃতির থেকেই নিধি ফেসবুক আইডি জেনেছিলো। সামনে থেকে নিধিকে দেখে নাই শুধু পিক দেখছে। আজ সামনে থেকে দেখবে ভাবতেই রোহনের মনটা নেচে উঠছে।

গেস্টরা সব এসে পড়েছে। রাফিনরাও (পৃতির বর) চলে এসেছে। নিধি এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখছ।

“তোকে তো আজ দারুণ লাগছে

পেছন থেকে ইমন বলে

” আমাকে আবার দারুণ লাগলো না কবে?
নিধি একটু ভাব নিয়ে বলে

“আজ ভাই দেখলে খেয়ে ফেলতো

” নিরামিষ রে। দেখেই বলতো এখানে ফটোশুট হচ্ছে নাকি মডেলিং? ছেলেদের ইমপ্রেস করার জন্য পেট বের করে রেখেছো ইডিয়েট ননসেন্স স্টুপিট গাঁধা

নিধি আদিকে নকল করে বলে

“এই তুই আমার ভাইকে কপি করছিস

” কি করবো বল সারাদিন এইসব শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে।

ইমন আর নিধি একসাথে হেসে ওঠে।

নিধির এখানে কেমন কেমন লাগছে এতো মানুষের মধ্যে। তাই একটু বাইরে যায়। বাইরে বেরিয়েই দেখতে পায় আদির দাদিমা নানু নিরা আর কয়েকজন মহিলা বসে গল্প করছে।

“এই যে ছোট নাতবউ এইহানে আসো

নিধি দাদিমার কাছে যায়

” বসো

বসে।

“এহন কও খুশির খবর কবে দিবা? বড় নাতবউরে তো কবে থিকা কইতিছি সে তো আমার কথা কানেই তুলে না।

নিধি একগাল হেসে বলে

” যেদিন তোমার নাতির সাথে আমার ফুলসজ্জা হবে তার কয়েকদিন পরেই খুশির খবর দেবো

সবাই তো হা হয়ে যায় নিধির কথায়

“তোমাগো ফুলসজ্জা হয় নাই
নানু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে

” না তো। তোমার নিরামিষ নাতি তো সারাক্ষণ খালি বলে হেই স্টুপিট এটা কেনো করলে? ওটা কেনো করলে? এসব বলেই সময় শেষ ভালোবাসার সময়ই পায় না

“আসুক একবার আমিও মজা বুঝামু
দাদি কিছুটা রেগে বলে

” হুমম আচ্ছা করে মজা বুঝিও। আমি এখন আসি কিউট দাদিমা

নিধি এক দৌড়ে আবার অনুষ্ঠানের ওই খানে যায়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।

“হেই নিধিরা নিধি
নিধি চমকে পাশে তাকায় দেখে লম্বা ফর্সা চাপ দাঁড়িওয়ালা একটা ছেলে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে

” জ্বি বলুন

“তুমি আদির বোন?

নিধি পড়লো ঝামেলায় কি বলবে বুঝতে পারছে না

” কি হলো বলো

“না মানে বোনের মতো

” বোনের মতো কি বোন তুমি আদির।

“হবে হয়ত

” আমি রোহন। যার সাথে তোমার বিয়ের কথা চলছে

“আমার বিয়ের কথা চলছে

” হ্যাঁ। দেখো সবাই কি সুন্দর ডান্স করছে তুমিও চলো

“না না থাক

” থাকবে কেনো যাও ডান্স করো

কারো কন্ঠ শুনে নিধি আর রোহন ওই দিকে তাকায়। নিধির চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে যায়। “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধা হয় ”
নিধি ভাবছে কোন দিকে দৌড় দেবে

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-১৭+১৮

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৭
#Tanisha Sultana (Writer)

একটা সাততলা বিল্ডিং এর সামনে আদি গাড়ি থামায়।

“এবার নিশ্চয় এই বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেবে। কিন্তু একটা প্রশ্ন আমাকে মারতে চাইলে তো বাসায় বিশ টিশ খাইয়ে মারতে পারতো। তা না করে এখানে মারার জন্য আনলো কেনো? না কি পাচার করে দেবে আমায়? আল্লাহ বাঁচাও

” ওই ভাবনা কুমারী নামো

আদির কথায় নিধি চমকে ওঠে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে

“এই বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেবেন বলে নিয়ে এসেছেন?

আদির খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে হেসে ফেললে এই গাঁধাকে বলদ বানানো যাবে না। তাই হাসি চেপে গম্ভীর মুখ করে বলে

” হুম অনেক জ্বালাইছো আমায় তাই তোমাকে খুন করে প্রতিশোধ নেবো

“প্রমিজ আপনার সব কথা শুনবো প্লিজ আমায় মেরে ফেলেন না

” ওকে। এখন আমার সাথে আসো। আর হ্যাঁ অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না

নিধি মাথা নেরে আদির পেছন পেছন যায়। লিফটে করে সাত তলায় যায়। আদি সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়। নিধি ঘুরে ঘুরে দেখছে।
“ওহহ এটা ওনার অফিস। উনি তাহলে আমাকে অফিস দেখাতে নিয়ে এসেছে। আমিও না শুধু শুধু ভয় পেলাম।

তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে আদি নেই

“এ বাবা উনি কোথায় গেলো? এখন কি হবে?

নিধি এবার আদি বলে ডাক দেয়। চারপাশের মানুষ জন সবার দৃষ্টি নিধির দিকে। মনি দৌড়ে আসে

” আরে নিধি তুমি? কার সাথে এলে?

“লাটসাহেবের সাথে। কিন্তু উনাকে খুঁজে পাচ্ছি না
নিধি ইনোসেন্ট ফেস করে বলে।

” আমার সাথে এসো

মনি নিধিকে নিয়ে যায়। আদির কেবিন দেখিয়ে দিয়ে মনি নিজের কেবিনে চলে যায়। নিধি হুরমুর করে ভেতরে ঢুকে

“আচ্ছা মানুষ তো আপনি। আমাকে ফেলেই চলে এলেন
নিধি কোমরে হাত দিয়ে বলে। আদি ফাইল দেখতে দেখতে বলে

” বলদের মতো এদিক সেদিক তাকিয়ে হাঁটলে এমনটাই হয়।

নিধি আদিকে ভেংচি কেটে চেয়ার টেনে বসে।

“কথায় কথায় ইডিয়েট স্টুপিট ননসেন্স গাঁধা বলদ এসব বলবেন না। আমার একটা সুন্দর নাম আছে। নাম ধরে ডাকবেন না হলে ওই বলে ডাকবেন।

” তোমার নামটা আসলে তোমার সাথে যায় না।

“কি বললেন আপনি?
নিধি রেগে বলে

” শুনতে পাও না কালা না কি?

“আমাকে আপনি নিধি বলে ডাকবেন

” সরি পারবো না

“ইডিয়েট

” একদম আমার ডাইলোক কপি করবা না

“কপি করি নি। আমি আজ থেকে আপনাকে এই নামেই ডাকবো।

” ডাইকো

নিধি রেগে জানালার কাছে যায়। জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকায়। মানুষ গুলোকে ছোট খুব ছোট দেখাচ্ছে। নিধি ছানার কথা মনে আসে। পেছন ঘুরে দেখে আদি নেই

“যাহ বাবা উনি আবার কোথায় গেলো?

নিধি দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজা খুলবে কি খুলবে না এটাই ভাবছে। একটু ভাবার পরে দরজা খুলে আর সৌরভের মুখোমুখি হয়। সৌরভ আদির কেবিনেই ঢুকতে যাচ্ছিলো। নিধি চোখ বড়বড় করে তাকায়। সৌরভও কিছুটা অবাক

” তুমি এখানে?

নিধি দরজার কাছ থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে

“না মানে ওনার সাথে এসেছি।

” বাবাহ তোমার বর তো দেখছি তোমাকে ছাড়া কয়েকঘন্টাও থাকতে পারে না। কি জাদু মন্ত করছো?

“সেরকম কোনো বেপার না

” তাহলে কাজের জায়গায়ও তোমাকে কেনো কি এসেছে?

“আমিও তো সেটাই ভাবছি। নিধি মনে মনে বলে।

সৌরভ ভেতরে গিয়ে বসে।

” এই যে নিধিরা এখানে এসে বসো। তুমি এখানে এসে ভালোই করেছো। এমনিতেও অনেকদিন তোমার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারি না। আজ সুযোগটা পেয়েছি।

নিধি দরজার দিকে উঁকি ঝুঁকি মারছে। আদি কেনো আসছে না সেটাই ভাবছে। সৌরভের একটা কথাও নিধির কানে যায় নি।

“ওই

সৌরভ এইবার একটু জোরে ডাকে। নিধি চমকে ওঠে।

” এখানে বসতে বলছি।

“আমি এখানেই ঠিক আছি।
নিধি আমতাআমতা করে বলে। সৌরভ উঠে নিধির কাছে যায়। নিধির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিতে যায় নিধি হাত সরিয়ে নেয়। তখন মনি আসে

” নিধি

সৌরভ মনিকে দেখে ফাইল হাতে নেয়।

“আদি একটু কাজে আটকে গেছে। তুমি আমার সাথে এসো।
সৌরভের দিকে তাকিয়ে
” তুই এখানে

“আদির কাছে এসেছিলাম। এই ফাইল গুলো চেক করাতে

” ফাইল গুলে আমাকে দে আমি দেখিয়ে নেবো

“হুমম

সৌরভ নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে মনির কাছে ফাইল দিয়ে বেরিয়ে যায়।

” উনি কখন আসবে আপু

“পাঁচ মিনিটে চলে আসবে

মনির সাথে যায় নিধি। পাঁচ মিনিট মনির কেবিনে বসে থাকার পরে আদি আসে।

” মনি আমি এখন চলে যাচ্ছি বাকিটা তুই সামলা

“ঠিক আছে

” চলুন গাঁধা

নিধি ধুমধাম করে উঠতে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় আদি কোমর জড়িয়ে ধরে। মনি মুচকি হাসে
নিধি আদির কাছ থেকে সরে গিয়ে রেগে বলে

“ধরলেন কেন আপনি আমাকে?

” না ধরলে পড়ে যেতা। আর পড়ে গেলে কোমর বা পা না ভাঙলেও নাটক করতা। পরে আমার তোমাকে কোলে নিতে হতো। কিন্তু তোমার মতো হাতিকে কোলে নেওয়ার কোনো শক আমার নাই তাই ধরলাম। ক্লিয়ার

আদি হাঁটা শুরু করে। নিধিও রাগে কটমট করতে করতে আদির পেছনে যায়।
অফিস থেকে বেরোনোর সময় আদির বসের সাথে দেখা

বস আদিকে দেখে জিজ্ঞেস করে

“হেই আদি কেমন আছো?

” এই তো স্যার আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?

“বেশ আছি। তো তুমি এখন চলে যাচ্ছ না কি?

” হ্যাঁ স্যার। আমার এদিকের কাজ শেষ

“ওহহহ
বসের এবার নিধির দিকে চোখ পড়ে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে

” আদি ও কে?
আদি নিধির দিকে তাকায়। নিধি দাঁত কেলিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। নিধি শিওর আদি এবার বলবে এটা আমার বউ। আর নিধি এটা নিয়ে আদিকে লেগপুল করবে।

“ও আমার বোন

আদির কথা শুনে নিধির হাসি বন্ধ হয়ে যায়।চোখ ছোটছোট করে আদির দিকে তাকায়। বস নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

” খুব মিষ্টি মেয়ে তো। ভাবছি তোমার বোনকেই আমার ছেলের বউ বানাবো

বসের কথা শুনে আদির কাশি উঠে যায়। নিধি দাঁত কেলিয়ে বসের দিকে তাকায়

“আংকেল আপনি এই বয়সে কতো স্মার্ট তার মানে আপনার ছেলে আরও কিউট। আমি রাজি বিয়েতে। এবার আপনি আমার ভাইইইকে বলে তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করেন

” হুমম তা তো করবোই। তোমাকেই আমি আমার রোহনের বউ করবো। আদি তোমার বাবার নাম্বার দাও

“স্যার বলছিলাম কি?

” আমি কিচ্ছু শুনতে চায় না। তোমার বাবার নাম্বার দাও। আমি আজকেই তোমার বাবার সাথে কথা বলবো। আর খুব তাড়াতাড়ি গিয়ে দিন তারিখ ঠিক করে আসবো। এতো কিউট মেয়ে হাত ছাড়া আমি করবো না

বসের সাথে না পেরে আদি ওর বাবার নাম্বার দেয়। নিধির খুব ভালো লাগছে আদিকে এমন ঝামেলায় পড়তে দেখে। আরও বলো বোন।

লিফটে আদি রাগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি খুশিতে গান গাইছে।
“মন যে করে এই উরুউরু

নাচতেও ইচ্ছে করছে কিন্তু এখানে তো আর নাচা যাবে না

“স্টপ
আদি ধমক দেয়। নিধি গান বন্ধ করে

” ওকে গান বন্ধ করলাম। জানেন আপনার না নোবেল পাওয়া উচিৎ।
আদি রাগী দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকায়
“ভাবছেন কেনো? আপনিই ফাস্ট পুরুষ যে কি না নিজের বসের ছেলের সাথে নিজের আপন বউকে বিয়ে দিচ্ছেন। আমি তো খুব খুশি। বসের ছেলের কি যেনো নাম বললো ওহহ রোহন। নাম শুনেই তো আমি প্রায় ক্রাশ খাইলাম। না জা নি ওনাকে দেখে আমার কি অবস্থা হবে।

আচ্ছা আপনি দেখেছেন ওনার ছেলেকে? নিশ্চয় অনেক হট

আদি নিধিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। নিধি ভরকে যায়।

” কককি করছেন

আদি নিধির খুব কাছে চলে এসেছে। আদির নিশ্বাস নিধির মুখে পড়ছে। নিধির খুব অসস্তি হচ্ছে। নিধি মাথা নিচু করে। আদি নিধির ঠুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে।

“রোহন খুব হট? তুমি ক্রাশ খাইছো তাই তো? খুব বিয়ে করার শখ?

নিধি কিছুই বলতে পারছে না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ঘামতে শুরু করে দিয়েছে নিধি। হাত পা কাঁপছে।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৮
#Tanisha Sultana (Writer)

“প্লিজ একটু সরে দারান না
নিধি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে। আদি আরও একটু কাছে চলে আসে। এখন আদি আর নিধির দুরত্ব ১ ইঞ্চিরও কম। নিধি একটু নরাচরা করবে সেই জায়গা টুকুও নাই

” কেনো? ভাল্লাগছে না? রোহন কতোটা হট হবে সেটা বোঝাচ্ছি।
আদির কথা গুলো নিধির মুখে বাড়ি খাচ্ছে। নিধির লজ্জা ভয় দুটোই একসাথে কাজ করছে। ফাস্ট টাইম কোনো ছেলের এতোটা কাছে নিধি। ভালো লাগছে নিধির আবার খারাপও লাগছে।

“সেটা আপনাকে বোঝাতে হবে না আমি রোহনের কাছ থেকেই বুঝে নেবো

নিধি থেমে থেমে বলে।
নিধির কথা আদির কান ওবদি পৌছায় না। আদির দৃষ্টি নিধির ঠোঁটের দিকে। হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছিলো বোধহয় নিধি। আবছা আবছা আছে। বাকিটা মুছে গেছে। ঠোঁট কাঁপছে নিধির। যা আদিকে আরও বেশি আসক্ত করছে।

” আমি কি কিছু করছি?

এইরকম একটা মুহুর্তে এইরকম কথা করলার মতো মনে হচ্ছে নিধির। চোখ তুলে আদির দিকে তাকায়

“এরকম কাঁপছো কেনো?

আদির এই কথাটা নিধির কাছে মাদক মাদক লাগছে। নিধি আবেগেই চোখ বন্ধ করে ফেলে।

আদি নিধিকে ছেড়ে দিয়ে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। নিধির এখন আদির দিকে তাকাতেই লজ্জা লাগছে। আদি মাথা চুলকায়।

আদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই লিফটের দরজা খুলে যায়। নিধি এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। আদিও পেছন পেছন বের হয়।

গাড়িতে উঠতে নিধির ভয় করছে। যদি আবার এমন করে। তাই নিধি গাড়ির দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আদি হনহনিয়ে গাড়িতে বসে

” তুমি যাবে না কি আমি একাই যাবো

নিধি কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বুকে থু থু দিয়ে গাড়িতে বসে। আদি ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। নিধির ভীষণ ভয় করছে। এই বুঝি এক্সিডেন্ট করলো

“দেখুন আমার এতো তাড়াতাড়ি মরার শক নাই।

” আমার আছে

“তো মরবেন একা মরেন আমাকে কেনো টানাটানি করছেন

” তোমার থেকে পাঁচ ইঞ্চি দুরে আমি টানাটানি কিভাবে করলাম

নিধি নিজের কপালে নিজের একটা চাপড় মারে। কথার কথা বলে একটা কথা আছে যেটা এই লোকটা বুঝে না।

আদি খুব জোরে গাড়ি ব্রেক করে। নিধি কিছুটা সামনে ঝুকে যায়। আর ভীষণ ভয় পায়। রাগী দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়

“গাড়ি ডাইভ করতে না পারলে বলবেন আমি পারি না। শুধু শুধু মানুষের সুন্দর জীবনটাকে এক্সিডেন্টমন করার জন্য গাড়ি ডাইভ করতে যান কেনো? যতসব আজাইরা মানুষ
শেষের কথাটা আস্তে করে বলে নিধি।

আদি দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলে

” কাল বাবা তোমায় নিতে আসবে। তুমি ঠিক আর ২০ ঘন্টা আছো আমার কাছে। আর আমি চাইছি না এই বিশ ঘন্টা তোমার সাথে মিছবিহেব করতে। সো কথা বার্তা সাবধানে বলো।

কাল আমি চলে যাবো। আমার তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমি কেনো খুশি হতে পারছি না। বুকের বা পাশে ফাঁকাফাঁকা লাগছে। আমি চলে গেলে কি লাটসাহেব আমাকে মনে করবে? হয়ত করবে না। পরির কথা ভাববে। আমাকে তো পছন্দই করে না।

নিধি পাশে তাকিয়ে দেখে আদি নেমে যাচ্ছে। নিধিও নামে। বিকেল হয়ে গেছে। নিধি গাড়ি থেকে নেমে অবাক। কারণ আদি ওকে সমুদ্রের নিয়ে এসেছে। সূর্যের আলোয় সমুদ্রের পানি চিকচিক করছে। আশেপাশে আরো অনেক মানুষ আছে।
আদি জুতো খুলে গাড়িতে রেখে পানির মধ্যে গিয়ে দাঁড়ায়। নিধিও আদিকে অনুসরণ করে। নিধি আদির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়

“তো আমি কাল চলে যাচ্ছি। আপনার কেমন লাগছে

” খুব ভালো লাগছে। অবশেষে ঘাড় থেকে বোঝা নামলো। যদিও পৃতির বিয়ে উপলক্ষে কিছু দিনের জন্য বাবা তোমাকে নিতে চাইছে। কিন্তু আমি মনে মনে প্রে করছি যাতে এটাই তোমার শেষ যাওয়া হয়।

“হুমমমমম আমিও আর আসবো না আপনি না চাইলে প্রমিজ।

আদি এক পলক নিধির দিকে তাকায়। কেনো জানি আদির নিধির কথা পছন্দ হলো না। হাজবেন্ড হয় আদি ওর। এতো সহজেই বলে দিলো আসবো না। বলতেও তো পারতো “কেনো আসবো না? আপনার বাড়ি তো আমারও বাড়ি সো আমি আসবো” এরকমটা কেনো বললো না

আদি এসব ভাবছে। নিধি আদির মুখের সামনে চুটকি বাজায়

“ওই হেলো ভাবনাকুমার। পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার মতো কিছু আবিষ্কার করবেন ভাবছেন না কি

নিধির কথায় আদি একটু হাসে। নিধিও হাসে।
অভিমান অভিযোগ দুজনের মনেই আছে কিন্তু প্রকাশ করবে না কেউ।
” আমাকে কপি করলে কেনো?

“আপনাকে কপি করলাম কই? আপনার ডাইলোক আপনাকে শোনালাম।

আদি আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
” ভালো

আদি আর নিধি পাশাপাশি হাঁটছে পানির মধ্যে দিয়ে। একটু পরপর ঢেউ আসছে। সূর্যটা ডুবে গেছে কিছুখন আগেই। চারপাশে হালকা হালকা অন্ধকার নেমে এসেছে। দুর থেকে একটা গানের সুর ভেসে আসছে

“ভাল্লাগে হাঁটতে তোর হাত ধরে”

নিধিরও আদির হাতটা ধরে হাঁটতে মন চাইছে। এই মুহূর্তে সৌরভ এখানে থাকলে নিধির অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আদির হাত ধরতে নিধির ভয় করছে। হয় বকবে না হয় এখানেই রেখে যাবে।
নিধি নিজের মাথায় গাট্টা মারে
“তুইও না নিধি কি সব ভাবিস। লাটসাহেব কখনোই তোর হাত ধরবে না। আর আমিও ধরবো না। কিন্তু তবুও হঠাৎ করেই এই অদ্ভুত ইচ্ছেটা হলো। যে ইচ্ছে কখনো পূরণ হওয়ার নয়। কাল চলে যাবো। হয়ত হয়ত না এটাই আমার শেষ রাত কক্সবাজারে।

আদি হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুরে চলে গেছে। নিধি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আদির দিকে অপলক তাকিয়ে ভাবছে। আদি আবার পিছিয়ে আসে

” ভাবনাকুমারী আবার এখানেও ভাবতে শুরু করে দিয়ে
আস্তে করে কথাটা বলে আদি। তারপর নিধির সামনে হাত নারিয়ে বলে

“সমুদ্র নিয়ে গবেষণা করা শেষ হলে আমরা যেতে পারি

নিধি সমুদ্রের পানির দিকে একবার তাকিয়ে বলে
” হুমম চলুন

সমুদ্রের কাছেই একটা হোটেলে যায় আদি নিধি। সমুদ্রের টাকটা মাছ ভাত খেয়ে বাসায় ফেরে।

বাসার দরজার খুলেই দেখে আদির বাবা বসে আছে

” বাবা তুমি? তোমার না কাল আসার কথা

“আজকেই এলাম। তিনটার ট্রেনে নিধিকে নিয়ে ফিরবো।

” ওহহ।

আদি রুমে চলে যায়। নিধি শশুড়মশাইয়ের সাথে কিছুখন গল্প করে বাবাকে নিধির রুমে শুতে দিয়ে আদির রুমে যায় নিধি।
দরজায় নক করে

“ভেতরে আসবো

” হুম আসো

আদি ফোনে গেমস খেলছিলো।

“আসলে বাবা আমার রুমে থাকবে তো আমি
নিধি আমতাআমতা করে বলে

” এখনে শুয়ে পড়ো

“আপনি

” একদিন নাহয় তোমার সাথে বেড শেয়ার করলাম
আদি ফোনে মনোযোগ দিয়েই বলে

নিধি আমতাআমতা করছে। আদি ফোন রেখে বলে

“কোনো বেপার না শুয়ে পড়ো

তবুও নিধি দাঁড়িয়ে আছে

” তাহলে যাও বেলকনি বা ছাঁদে ঘুমাও

সাথে সাথে নিধি শুয়ে পড়ে। আদিও নিধির পাশে লম্বা হয়ে শয়

“তো ইডিয়েট বাসায় গিয়ে সবার কাছে বলবেন আমি আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়েছি তাই তো

নিধি আদির দিকে ঘুরে

” করিয়েছেন তো

“তো বলতে হবে?

” হবে না? আব্বুকে জানাতে হবে না কতো ভালো ছিলাম।

“যাকে খুশি বলো ডোন্ট কেয়ার বাট কোনোভাবে আমার মা যেনো জানতে না পারে।

” আপনার মাকেই তো আগে বলবো
নিধি দুষ্টুমি করে বলে

“প্লিজ সব কিছুর জন্য সরি। আসলে আমি বুঝতে পারি নি কি করে তোমার থেকে মুক্তি পাবো তাই মিছ বিহেব করতাম। যদি জানতাম তুমি নিজে থেকেই আমাকে ছেড়ে দেবে তো কখনোই এমনটা করতাম না।

নিধির মুখটা কালো হয়ে যায়। একটা মানুষ ওর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কতো ছটফট করেছে। এতোটাই অপ্রিয় কি নিধি

” গড প্রমিজ আপনি না চাইলে আমি আর কখনোই আপনার কাছে ফিরবো না

আদি প্রশান্তির হাসি দেয়। নিধি আদির দিকে পেছন ঘুরে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে নিধির। চোখের পানি আটকে রাখা খুব কঠিন বেপার। নিধি যেটা পারে না।
নিধি উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সাওয়ার অন করে শব্দ করে কেঁদে ফেলে।

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-১৫+১৬

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৫
#Tanisha Sultana (Writer)

“অনেক নেচেছিস আর নাচতে হবে না

সৌরভ মুচকি হেসে বলে

” ডান্স শুরু করার আগেই তো তুই এসে হাজির হলি। তোর বউয়ের সাথে একটু নাচলে কি তোর বউকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো না কি?

নিয়ে যাবো না কি কথাটা শুনে আদির বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটানো শুরু হয়ে যায়। যদি সত্যিই সৌরভ নিধিকে নিয়ে যায়। নিধি তো ওকে ভালোবাসে। যেতেই পারে ওর সাথে।

আদি নিধির হাত ধরে টান দিয়ে খুব কাছে নিয়ে আসে। এক হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে বলে

“আদি নিজের জিনিস যত্ন করে রাখতে জানে
বলেই নিধির হাত ধরে টেনে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে যায়। মনিও দৌড়ে আসে ওদের কাছে

” ওকে এখানে কেনো নিয়ে আসলি?

আদি দেয়ালের দিকে মুখ করে কর্কশ গলায় বলে।

“ভাবলাম ও বাসায়,একা একা থাকব

মনির কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি চেচিয়ে বলে

” ফ্যাশন শো করতে এসেছে ও এখানে? নায়িকা হতে চায়?

আদির চেচানোতে মনি আর নিধি ভয় পেয়ে যায়।

“মনি তুই এখান থেকে যা
শান্ত গলায় বলে আদি।

” আদি ওর কোনো দোষ নেই আমিও

“যেতে বলছি তোকে এখান থেকে কথা কানে যায় না

মনি যেতে নেয় নিধি মনির হাত টেনে ধরে

” আমাকে নিয়ে যাও

“তুমি কোথাও যাবে না

মনি বেরিয়ে যায়। আদি ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। নিধির দিকে তাকিয়ে এগোতে থাকে

” ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো পাতলা
শাড়ি পড়বো না

আদি এগোচ্ছে নিধি পিছচ্ছে। নিধি দেয়ালে গিয়ে হালকা বাড়ি খায় পড়ে যেতে নেয় আদি ধরে।

“সৌরভ তোমার কোথায় কোথায় ছুঁয়েছে?

নিধি ভরকে যায়। আমতাআমতা করে বলে

” আআআআমি তো

“সাট আপ। খুব শক না ছেলেদের শরীর দেখানোর

আদি একটান দিয়ে নিধির শাড়ি খুলে দেয়। নিধি হাত দিয়ে শরীর আড়াল করে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে

” যাও এবার ঠিক আছে। যাও

আদি ধমক দিয়ে বলে। নিধি কেঁদেই যাচ্ছে। রাগে আদির শরীর কাঁপছে। আদি নিধির দুই গালে হাত দিয়ে বলে

“একদম কাঁদবে না। তুমি যেটা চেয়েছিলে সেটাই তো করলাম। এবার যাও

” সরি আমি ইচ্ছে করে পড়ি নি
নিধি কান্না করতে করতে বলে। আদি নিধিকে ছেড়ে দিয়ে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। নিধি কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে। আদি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।

“ওই উঠো
আদি নিধির হাত ধরে টেনে উঠায়। তারপর শাড়ি পাড়িয়ে দেয়। চোখের পানি মুচিয়ে দেয় রুমাল দিয়ে।

” নেক্সট টাইম এরকম শাড়ি পড়লে শাড়িসহ তোমাকে পুরিয়ে ফেলবো

নিধি মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। আদি মাথায় গাট্টি মারে বলে

“মাথায় ঢুকেছে

” হুমমম

“চলো

আদি নিধির হাত ধরে বাইরে যায়। দেখে মনি পায়চারি করছে। আদিকে দেখে আদির দিকে এগিয়ে আসে

” আমরা চলে যাচ্ছি তুই যাবি তো আয়

বলেই আদি হনহনিয়ে চলে যায়। আদি ডাইভ করছে আর নিধি আদির দিকে তাকিয়ে আছে

“আল্লাহ একটা মানুষের এতোগুলো রুপ থাকে। জাস্ট পাতলা শাড়ি পড়েছি বলে এতো কাহিনি। ভালোটালো বেসে ফেলেছে না কি আমাকে? আর বাসলেও কি আমি থাকবো না এই লাটসাহেবের সাথে। কথায় কথায় ধমক খাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।

” পবলেম কি?

আদি সামনের দিকে তাকিয়ে বলে। নিধি চোখ সরিয়ে বলে

“কিছু না

” সব সময় আমার দিকে তাকিয়ে হাসো কেনো? একদিন বলছি না আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবা না। তোমার প্রতি আমার কেনো ইন্টারেস্ট নাই

“তাই তো দেখলাম

” কি দেখলে

“ইন্টারেস্ট নাই

” সত্যিই কোনো ইন্টারেস্ট নাই। ভালোই লাগে না আমার তোমাকে

“আমারও আপনাকে ভালো লাগে না। আমি তো সৌরভকে ভালোবাসি

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আদি গাড়ি ব্রেক করে। নিধি কি বলেছে বুঝতে পেরে দাঁত দিয়ে জীভ কাটে। আদি ছোট ছোট চোখ করে নিধির দিকে তাকায়

” সৌরভকে ভালোবাসো?

“বাসলেই আপনার কি না বাসলেও আপনার কি?

” আমার কিছুই না। এতোই ভালোবাসলে বিয়ে কেনো করলে?

“আপনি আর আব্বু প্ল্যান করে বিচ্ছেদ ঘটালেন তাই

” আর ইউ শিওর আমি আর আংকেল প্ল্যান করে তোমাদের ব্রেকআপ করিয়েছি

“১০০% শিওর।

” গুড

আদি আবার ডাইভ শুরু করে দেয়।

“আজও বলবেন না কারণ টা

” গাজর কিনবে তো

নিধি আদির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

“হুমম

” একটা কথা কি জানো “সত্যি সেটা না যেটা আমরা বলি সত্যি সেটাই যেটা আমরা আড়াল করি”

নিধি আদির কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। আর বোঝার চেষ্টাও করছে না। কারণ এই মানুষটা খুব জটিল। তাকে বোঝার মতো সাধ্য নিধির নেই।
সৌরভের সাথে ব্রেকআপের পরে কয়েকদিন নিধি খুব কারণ জানতে চাইতো ইচ্ছে করতো কিন্তু কোনো উপায়ে কারণ জানতে পারে নি। এখন নিধিরও কারণ জানার ইচ্ছে মরে গেছে। হয়েছে হয়ত কোনো কারণ এ ব্রেকআপ। তাছাড়া একটা কথা নিধি খুব বিশ্বাস করে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।

আদি গাড়ি থেকে নেমে গাজর কিনে নিয়ে এসেছে কখন এটা নিধি বলতেই পারবে না। কারণ ও ভাবনার জগৎে ছিলো। আদি গাড়ি স্ট্রাট দেওয়ার পরে নিধির হুশ ফেরে

“গাজর এনেছেন

” হুমম

বাসায় ফিরে নিধি সোফা রুমে ঢুকে যায়। নিধিকে দেখে ছাড়া এক লাফে নিধির কাছে চলে আসে। নিধি ছানাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর গাজর খাওয়াতে থাকে।

আদি রুমে এসে ধাম করে দরজা বন্ধ করে দেয়। ফোনটা খাটে ছুড়ে মারে। এখনো আদির রাগ করছে না। পার্টির কথা মনে পড়লেই সৌরভের ওই নিধিকে ছোঁয়ার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আদি চোখ বন্ধ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। দুইহাতে মাথা চেপে ধরে আছে

“সৌরভের এই জঘন্য খেলাটা আমি খুব তাড়াতাড়ি শেষ করবো। ওই গাঁধাটা বেছে বেছে আর একটা বলদকেই ভালোবাসলো। ইডিয়েট একটা

নিধি চেঞ্জ করে দুই মগ কফি বানায়। এক মগ বানাতো কিন্তু আদিকে দেখেই নিধির কেমন কেমন লাগলো। মনে হলো ওনর মনটাও কফি কফি করছে।

নিধি কফির মগ হাতে নিয়ে আদির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা ভেতর থেকে লক করা। নাহলে ঠুস করে গিয়ে কফি রুমে রেখে আসতো। এবার নিধি গলা ঝেড়ে চেচিয়ে বলে

” কারো যদি কফি খেতে ইচ্ছে করে তো খেতে পারে আমি বেশি করে কফি বানিয়েছি

বলেই নিধি দৌড় দিতে নেয় আর আদি দরজা খুলে। নিধি ঢোক গিলে

“ডিরেকলি বললেই তো হয় কফি বানিয়েছি খেয়ে নিন

” এটা বললে তে আবার আপনি বলতেন হেই স্টুপিট আমাকে একদম কফি খাইয়ে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবে না। আমার তোমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

আদি নিধির হাত থেকে কফির মগটা নেয়

“ইডিয়েট একটা
বলেই আবার দরজা আটকে দেয়। নিধি বুকে থু থু নেয়

” আল্লাহ বাঁচছি
পরেরদিন নিধি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে করলা আর ভাত রান্না করে। আর নিজের জন্য নুডলস। ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে নুডলস খেয়ে আদির রুমের দিকে উঁকি দেয়।

আদি বিছানায় নেই। তাহলে গেলো কোথায়? নিধি এক পা এক পা রুমে ঢুকে খুব সাবধানে। আর যাই হোক ধরা পড়া যাবে না। ধরা পড়লেই বকা খেতে হবে। পুরো রুমের সব জায়গায় খুঁজে কিন্তু আদি নেই।
“গেলো কোথায়? বেরোতেও তো দেখি নি। তাহলে? হাওয়া হয়ে গেলো না কি?
নিধি আদির রুম থেকে বেরিয়ে পুরো বাড়ি খুঁজে কিন্তু কোথাও আদি নেই। নিধির এবার খুব ভয় করছে।
কেনো জানি মনে হচ্ছে ওখানেই আছে আদি। নিধি নিজের রুমের বেলকনিতে গিয়ে দেখে সত্যিই আদি করবটাকে পরিষ্কার করছে। তাজা ফুলের মালা কিনে এনেছে। নিধি এক দৃষ্টিতে আদিকে দেখছে।

” আজ ওনাকে আমার সব প্রশ্নের উওর দিতে হবে।

নিধিও কবরের কাছে যায়। আদির চোখে পানি দেখে নিধি থমকে যায়। বুকের বা পাশে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে নিধির।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৬
#Tanisha Sultana (Writer)

নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদি বলে

“তুমি এখানে কি করছো?

নিধি হা হয়ে যায়। কারণ নিধি আদির পেছনে আর পা টিপে টিপে এসেছে একটুও শব্দ হয় নি তাহলে আদি বুঝলো কি করে?

আদি লাস্ট ফুলের মালাটা কবরের ওপর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে নিধি হা করে তাকিয়ে আছে

” মানে যখন তখন যেখানে সেখানে এমন পেঁচার মতো হা করে তাকিয়ে থাকো কেনো বলো তো? অবশ্য তুমি তো গাঁধা থাকতেও পারো। বাট আমার দিকে কেনো?

“না মানে আমি ভাবছি আমি আপনার পেছনে কোনো শব্দ না করে চুপিচুপি এসে দাঁড়ালাম তাও আপনি কি করে বুঝলেন

আদি নাক চুলকে বলে

” তোমার নিশ্বাসের শব্দে বুঝছি

“নিশ্বাসের তো কোনো শব্দ নেই

” তুমি জানো নিশ্বাসের শব্দ নেই? নিশ্বাসের শব্দ আছে।

নিধি ভাবছে আর নিশ্বাস ছেড়ে চেক করছে। কিন্তু কোনো শব্দ বুঝতে পারছে না।
আদি ওখান থেকে চলে যায়। নিধি ভাবা শেষ করে তাকিয়ে দেখে আদি নেই

“যাহহ বাবা চলে গেলো। আমি কোনো প্রশ্নই করতে পারলাম না। এখন বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলবে
কোন কবর? কোথাকার কবর? আমি কবে গেছিলাম?
ডিজগাস্টিং

নিধি রুমে চলে যায়। সোজা আদির রুমে যায়। আদি শুয়ে আছে উপুড় হয়ে

” এই যে শুনছেন
আদি নিধির দিকে তাকাতেই নিধি বলে

“থুক্কু শুনছেন না যাই হোক কথা ছিলো

আদি আবার আগের মতো শুয়ে বলে

” আই নিড রেস্ট

“নাহহ আমি এখনই কথা বলবো। শুনছেন? প্রশ্ন করছি আমি? ধুর

আদির কোনো সাড়াশব্দ নেই। এতো তাড়াতাড়ি কেউ ঘুমতে পারে। আল্লাহ নিধি রাগে ঠুসঠাস করে চলে যায়

কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়ে। বাড়ির সামনে থেকে রিকশা নেয়। চারপাশ ভালো করে দেখতে দেখতে যায় নিধি। আর মনে মনে ঠিক করে বাসায় ফেরার সময় সমুদ্র দেখে যাবে।

” মামা এখান থেকে সমুদ্র কতো দুর? নিধি রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে

“বেশি দুরে না। ওই যে বড়বড় বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে তার সামনেই

” ওহহ

ভার্সিটি পৌঁছে ভাড়া মিটিয়ে নিধি ক্লাস রুম খুঁজছে। এতো বড় ভার্সিটিতে নিধিদের ডিপার্টমেন্ট কোনটা নিধি বুঝতে পারছে না। ভার্সিটির মাঝখানে দাঁড়িয়ে শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছে।

“হেই মিছ

নিধি তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে

” বলুন

“আপনি কি কিছু খুঁজছেন?

” আপনাকে কেনো বলবো?

“যদি আমি হেল্প করতে পারি তো কেনো বলবেন না

” আপনি হেল্প করতে পারবেন তার কোনো গেরান্টি আছে

“আমি এই কলেজে প্রায় তিন বছর যাবৎ আছি। তো অলিগলি আমার চেনা

” আমি মেনেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট খুঁজছি

“ফাস্ট ইয়ার

” হুমম। আমিও

“তাহলে তো ভালোই হলো

” হুমম চলো সামনেই আমাদের ক্লাস রুম

নিধি ছেলেটার সাথে যায়।

একটু ঘুমিয়ে আদির মনে পড়ে আজ নিধির ভার্সিটিতে যাবে। ওকে দিয়ে আসতে হবে। তড়িঘড়ি করে উঠে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে নিধির রুমে যায়। নিধি নেই। ছানা ঘাস খাচ্ছে। আদিকে দেখে এক লাফে আদির পায়ের কাছে আসে। কাল আদি নিধির জন্য বই ব্যাগ কিনে এনেছিলো। আদি খুঁজে দেখে ব্যাগটাও নেই। তারমানে নিধি ভার্সিটিতে চলে গেছে। কিন্তু ও তো এখানকার রাস্তা ঘাট কিছুই চেনে না। তারওপর ওর কাছে টাকাও নেই।

আদি নিজের রুমে গিয়ে একটা শার্ট নিয়ে বেরিয়ে যায়। আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে আর নিধিকে খুঁজছে। নিশ্চয় হেঁটে হেঁটে কলেজে যাচ্ছে। এই মেয়েটা সত্যিই গাঁধা।
যত রাস্তা যাচ্ছে আদির রাগ ততো বাড়ছে। এই মেয়েটা এমন কেনো? আজ একবার পায় পা ভেঙে রেখে দেবো।

নিধি দিব্যি ক্লাস করছে। ওই ছেলেটার পাশে বসেছে নিধি। ছেলেটার নাম রোদ। ছেলেটাও রোদের মতো।
ক্লাস থেকে স্যার বেরিয়ে যাওয়ার পরে নিধি রোদকে বলে

“আচ্ছা তুমি কখনো সমুদ্রে গেছো

” আবার বাসায়ই তো সমুদ্রের পাশে

“তাই? তাহলে তো তুমি সব সময় ই সমুদ্র দেখো

” হুমম দারুণ লাগে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্য ডোবা ডোবা হলে সূর্যের লাল রংএ সমুদ্র দেখতে যা লাগে না

“কাল তুমি ছবি তুলে নিয়ে আসবে
নিধি উৎসাহিত হয়ে বলে।
রোদ মুখটা কালো করে বলে

” লাইভ আর পিক কি এক হলো?

“এক না
নিধি মুখটা কালো করে বলে।

” না তো। পিক দেখে তুমি সেই দৃশ্য দেখার ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে বাট মজাটা উপভোগ করতে পারবে না। এক কাজ করলে হয় না একদিন তুমি আমার সাথে গিয়ে দেখে আসলে। পরে আমি তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসবো

“আচ্ছা কিন্তু আজ না। কাল যাবো। তুমি কিন্তু আবার আমাকে বাড়ি দিয়ে আসবে

” ওকে

আদি আসতে আসতে নিধির ভার্সিটিতে চলে আসে। গাড়ি থেকে মানতেই দেখতে পায় নিধি একটা ছেলের সাথে হাসতে হাসতে আসছে।

“এই মেয়েটা না সত্যিই ইডিয়েট। এখানে এসেও নিকনিক শুরু করে দিছে।জীবনেও মানুষ হবে না।

আদি গিয়ে ওদের সামনে গিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়ায়। নিধি আর রোদও থেমে যায়

” আপনি

“তুমি ওনাকে চেনো? কে হয় উনি তোমার?
রোদ প্রশ্ন করে নিধিকে। আদি এবার ভ্রু কুচকে তাকায় নিধির দিকে। নিধি কি উওর দেয় তাই শোনার অপেক্ষা

” নিধি বলো। চুপ করে আছো কেনো? কে উনি? চিনো ওকে?

“উউনি আমার ভাই হয়
নিধি থেমে থেমে বলে। আদির মাথা গরম হয়ে যায়। বউ বলছে যে ভাই হয়। এটা মানা যায়।

রোদ হেসে বলে

” ওহহ তোমার ভাই তো আমারও ভাই। হেলো ভাইয়া আমি রোদ। নিধির ফ্রেন্ড

“গুড

বলেই আদি চলে যায়। নিধি রোদকে বিদায় দিয়ে আদির পেছন পেছন যায়। নিধি গাড়িতে গিয়ে বসে। আদিও বসে

” এভাবে কতোখন বসে থাকবো?
নিধি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে।

“যতখন আমি চাইবো
আদি শক্ত গলায় বলে।

” ধ্যাত

“ভাই হই আমি তোমার?

” তো কি হন? বউ হিসেবে তো আপনি মানেন না আমিও মানি না। কিছু দিন পরেই আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। ডিভোর্স মানেই ব্রেকআপ। আর ব্রেকআপের পরে তো সবাই ভাইবোন। তাই না

আদি জোরে গাড়ির ব্রেকে ঘুসি মারে।

“আপনার কান্ডকারখানা আমি ইদানীং বুঝতে পারি না। পেট দেখা গেলে রিয়েক্ট করেন। আমার সাথে কাউকে ডান্স করতে দেখলে জ্বলেন আবার ভাই বললেও ঝাড়ি মারেন। ব্যাপারটা কি বলবেন? ভালো টালো বাসেন না কি?

নিধি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে। আদি ভরকে যায়। সত্যিই তো এই মেয়েটার ছোট ছোট জিনিসে আমি এতো রিয়েক্ট কেনো করি? আদি এটাই ভাবতে থাকে।

নিধি আদির মুখের সামনে চুটকি বাজায়

” ওই হেলো কি হলো

“কিছু না

বলেই আদি গাড়ি চালানো শুরু করে।

” আপনি সব কথা এমব এড়িয়ে যান কেনো বলেন তো? জানেন এরকম কারা করে?

“কারা?

” চোর রা। চুরি করে মিথ্যা বলে

“তাহলে আমি চোর
আদি স্বাভাবিক ভাবে বলে।

” এটা কি হলো? চোর বললাম তাও রিয়াক্ট করলো না।
নিধি মনে মনে ভাবছে।

“যতদিন তুমি আমার সাথে আছো ততদিন তুমি আমার বউ। ডিভোর্সের পরে কি হবে না হবে সেটা পরে ভাববে। এখন কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে আমি তোমার হাজবেন্ড। বুঝলে

” আর আপনি?

“আমারটা তোমার ভাবতে হবে না সেটা আমি বুঝে নেবো

” হুম সেটা জানি। বাট আমি সবাইকে বলে বেড়ালাম আমি আদিল চৌধুরীর বউ। আর আপনি বললেন এই ইডিয়েটটাকে আমি চিনি না তখন তো আমাকে গনোধলাই খেতে হবে

“আর একটা কথা বললে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবো
আদি চোখ মুখ শক্ত করে বলে
নিধি মুচকি হেসে বলে

” আমার কাছে টাকা আছে। আপনি নামিয়ে দিলে নিধিরা নিধি ঠিক বাসায় পৌঁছাতে পারবে। এই রাস্তাটা আমার একদম চেনা হয়ে গেছে। তাই এখন আর আমি ভয় পায় না। আর আমি তো ডিসাইড করে ফেলেছি

আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে

“কিহহ

” কাল রোদের সাথে সমুদ্র দেখতে যাবো। সূর্য ডোবা দেখবো। রাতের বেলা চাঁদের আলোতে সমুদ্র দেখবো। সমুদ্রের মাছ খাবো সেলফি তুলবো উফফ কি মজা হবে

নিধির কথা শুনে আদি গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়

“এমা গাড়ি ঘুড়ালেন কেন? কোথায় যাচ্ছেন?

” তোমাকে রোদের কাছে দিয়ে আসবো

“আমি তো রোদের কাছে যাবো না। আমি আর একটাও কথা বলবো না। প্লিজ ভুল হয়ে গেছে সরি

আদি কানে হেডফোন দেয়। নিধি দাঁত দিয়ে নখ কাঁটছে।

” এবার কি হবে? ধুর আমিও না এতো কথা কেনো যেনো বলি। ধুর নিজের গালে নিজেরই চড় দিতে ইচ্ছে করছে। এবার সমুদ্রের পানিতেই চুবিয়ে মারবে আমায়

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-১৩+১৪

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৩
#Tanisha Sultana (Writer)

“চিল্লানি দিলা কেন? আদি চোখ মুখ শক্ত করে বলে

নিধি এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।

” কি হলো

আদির দমকে নিধি চোখ খুলে। আবার বন্ধ করে

“সার্কাস হচ্ছে

” আপনি প্লিজ কিছু পড়ে আসেন
নিধি চোখ বন্ধ রেখেই বলে। আদি এবার নিজের দিকে তাকায়। গালি গায়ে আদি

“আজিব তো। আমি কিছু পড়ে আসবো মানে? আর জীবনে কখনো কোনো ছেলেকে খালি গাঁয়ে দেখো নাই

” দেখছি বাট আপনার মতো দেখি নি

“দেখবাও না। গোটা দুনিয়ায় এক পিছ ই আছি
আদি ভাব দেখিয়ে বলে।
নিধি মুখ ভেংচি দিতে গিয়েও থেমে যায়।

” ভীষণ বিচ্ছিরি লাগছে আপনাকে। জিম করতে পারেন না

“আমি রেগুলার জিম করি

” তাও এমন বিচ্ছিরি বডি

“তোমার চোখ বিচ্ছিরি

” আপনার চোখও। আমার এতো সুন্দর হাসি আর ঠোঁটকে আপনি বিচ্ছিরি বলেছিলেন তার শোধ নিলাম

বলেই নিধি দরজা আটকাতে যায় আদি শক্ত করে দরজা ধরে

“তোমার অবস্থা দেখছি

নিধি এবার নিজের দিকে তাকায়। একটু একটু লজ্জা করলেও নিধি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে

” ভালোই আছি

“পাগল যে তুমি

” সাট আপ ইডিয়েট একটা

আদির ডাইলোক আদিকপই ফিরিয়ে দিয়ে নিধি দরজা অফ করে দেয়

গোছল শেষে ড্রেস চেঞ্জ করে নিধি খুড়িয়ে খুড়িয়ে রুমে আসে। আদি বেলকনিতে ছিলো। জামাকাপড় রোদে শুকতে দিতে হবে। কিন্তু নিধি আর হাঁটতে পারছে না। খাটে বসে পড়ে।

” শুনছেন

আদিকে ডাক দেয়। আদি রুমে আসে

“শুনছেন কি?

” শুনছেন মানে আপনাকে ডাকলাম

“আমার নাম নেই?

” মেবি আছে

“মেবি না। আমার নাম আছে। আদিল চৌধুরী

” আই নো

“নেক্সট টাইম থেকে আমার নাম ধরে ডাকবা

” স্বামীর নাম ধরে ডাকলে স্বামী তাড়াতাড়ি মরে যায়।৷ আর আপনি মরে গেলে আমার বাবা মা আমাকে গিলে খাবে

“কোথায় লিখা আছে এটা?

” ইতিহাসের শেষের পৃষ্ঠার আট পৃষ্ঠা পরের আগের দুই পৃষ্টার মাঝামাঝি।

“সাট আপ
নিধি কেঁপে ওঠে

” কথায় কথায় ধমক দেবেন না একদম। বাচ্চা একটা মেয়ে আমি যদি পিত্তি গলে মরে যায়

“ভালো মানুষ সহজে মরে না

” খারাপ মানুষ তাড়াতাড়ি মরলে তো আপনি এতোদিন

“আমি খারাপ

” খারাপের হোল স্কয়ার আপনি

“আর তুমি কি?

” গুড গার্ল

“ইহহহহহহ আইছে

” হুমমম আইছি

“ইডিয়েট ননসেন্স স্টুপিট গাঁধা

” ভাগ্যিস এই কয়টা ইংরেজি শিখছিলেন বিদেশ থেকে নাহলে সর্বনাশ হয়ে যেতো। আপনি কি করে মানুষকে বোঝাতেন যে আপনি বিদেশ থেকে এসেছি

“আমি এই জন্য তোমায় এইসব বলি?

” অবশ্যই হ্যাঁ। আমার না ভালো একটা ইংরেজি টিচার আছে। খুব ভালো ইংরেজি শিখায় ওনার থেকে আরও কয়েকটা শিখে নিয়েন ওয়ার্ড

“ইডিয়েট

“আমি জানি

” হুর

” আমার জামাকাপড় রোদে মেলে দিয়ে আসুন

নিধি আদির দিকে জামাকাপড় এগিয়ে দিয়ে বলে। আদি হাত ভাজ করে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলে

“এই বাড়িটা কার?

” আমাদের

“আমার

” আপনার মা বলেছে এখন আর আমার বলতে কিছু নেই সব কিছুই আমাদের। আপনার জিনিস আমার আর আমার জিনিস আপনার

“কটা

” সত্যি কথা বললেই কটা

“আমার বাড়ি এটা। আর আমার বাড়িতে থেকে আমার মুখের ওপর কথা বলবা না। আমি যে টা বলবো সেটাই শেষ কথা বুঝেছো

” হুমম বুঝলাম আপনি আমাকে হেল্প করবেন না

নিধি উঠে দাঁড়ায় খুঁড়িয়ে হাঁটতে যায় আদি হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিধি হা হয়ে যায়

“সব সময় গায়ে পড়ার ধান্দায় থাকো

নিধি ঠাস করে আদিকে সরিয়ে বলে

” পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করা যায় এতোদিন শুনতাম কখনো দেখি নি আজ দেখলাম। আমি একটু সব্ভশান্ত বলে যা খুশি তাই করবেন। আপনি তো মোটামুটি শিশু নির্যাতন করছেন। কথায় কথায় ধমক আর পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া। এভাবে থাকা যায়?

আদি মাথা চুলকে বলে

“তো চলে যাও

চলে যাও কথাটা শুনে নিধির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। নিধি মাথা নিচু করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেলকনিতে যায়। আকাশের দিকে তাকায়

” নাহহ ওনার সাথে ফ্রেন্ডশিপও করা যাবে না। উনি খুব খারাপ একটা মানুষ। আমি আর ওনার কথা ভাববো না। আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাববো। স্বামীর ঘর থেকে চলে গিয়ে বাবার ঘাড়ের ওপর চড়ে খাবো? সেটা আমি করবো না। কোনোরকম একটা জব পেলেই চলে যাবো। অনেক দুরে

নিধি একটা বড় করে শ্বাস নেয়।

দুপুরের রান্না হয় নি। আদি তখন বেরিয়ে গেছে। নিধি রান্না ঘরে যায়। আজকেও করলা ছাড়া আর কিছু নেই। নিধি করলাই রান্না করে। রান্না শেষে নিধি বাড়িতে ফোন করে। এতোদিন ফোন ছিলো না তারওপর বাবা মায়ের ওপর রাগ করে ছিলো বলে কথা হয় নি। বাবাকে বলে বিকাশে টাকা পাঠাতে।

এবার নিধি ফোনটা নিয়ে বের হয়। টাকা তুলতে হবে আর কিছু সবজি কিনতে হবে। কিচ্ছু চেনে না নিধি। বাসা থেকে বের হয়ে গেটের কাছে এসে নিধি কনফিউজড হয়ে যায়। দুই দিকে দুইটা রাস্তা গেছে তো নিধি কোন দিকে যাবে? অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেই বাম দিকে যাবে। হাতে টাকাও নাই যে রিকশা নেবে। তাই নিধি হেঁটেই যাচ্ছে কিন্তু কোনো দোকান আর পাচ্ছে না। অনেকটা হাঁটার পরে একটা বাজার পায় নিধি। নিধির খুশি আর দেখে কে।

বিকাশ করুন সাইনবোর্ড টাঙানো ওই দোকানে গিয়ে নিধি টাকা তোলে। দোকান থেকে বেরোনোর সময় দেখে দোকানের পাশে একটা লোকটা দুইটা খরগোশের ছানা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিধির আবার খরগোশ ভীষণ পছন্দের। লোকটার কাছে দাম জিজ্ঞেস করে ৩০০০ টাকা। নিধি সাত পাঁচ না ভেবে কিনে নেয়। তারপর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেয়। বাজার করার কথা ভুলে যায়।

বাসায় এসে নিধি শুধু ছানাটাকেই দেখে যাচ্ছে আর ভাবছে কি নাম দেওয়া যায়। পিক তুলে ফেসবুকেও পোষ্ট দেয়।

“তুই মেয়ে না ছেলে জানি না রে। কিন্তু তোকে আমি ছানা বলে ডাকবো আপাতত। পরে যখন মাথায় সুন্দর নাম আসবে তখন তোর ভালো একটা নাম দেবো।

নিধি ছানার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কতো কিউট দেখতে। ছানাও এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করছে।

আদি বাসায় এসে নক না করেই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার দরজা বন্ধ করতে যাবে তখন পায়ের কাছে নরম কিছু অনুভব করে। নিচের দিকে তাকিয়ে আদি চমকে দুই হাত দুরে সরে যায়

” এটা কি?

নিধি ছানার জন্য ঘাস আনতে গেছিলো বাগানে। রুমে ঢুকে বলে

“ও আমার বন্ধু ছানা।

ছানাও নিধিকে দেখে দৌড়ে নিধির কাছে যায়। নিধি কোলে তুলি ঘাস খাওয়াতে খাওয়াতে চলে যায়।

আদির মুড ভালো নেই তাই আর বেশি কিছু বলে না। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে করলা রান্না করছে। আদি একটু মুচকি হেসে তৃপ্তি করে খায়।

নিধি এতোখন ছানাকে নিয়ে মেতেছিলো বলে খুদার কথা ভুলে গেছিলো। এবার খিধায় পেট ব্যাথা করছে। আর করলা তো নিধি মরে গেলেও মুখে তুলবে না।

“ধুর বাজার থেকে কিছু কিনে আনলে এখন খেতে পারতাম।

ডিম ভাজার গন্ধ নাকে আসে নিধির

” কেউ কি ডিম ভাজি করছে

নিধি কিচেনে গিয়ে অবাক হয়ে যায়।

“আমি কি ঠিক দেখছি
নিধি চোখ ডলে আবার তাকায়

” আপনি রান্না করছেন

আদি নিধির দিকে না তাকিয়েই বলে

“হ্যাঁ তো? আগে তো আর নিধি ছিলো না পরি ছিলো। আর পরি তো নিধির মতো ধমক দিলে ভয় পেতো না

নিধি চমকে তাকিয়ে আছে আদির দিকে

” পরি

আদির এবার হুশ আসে ও কি বলছে। কথা ঘোরানোর জন্য বলে

“আমার জন্য এতো ভালো রান্না করলে তাই ভাবলাম তোমার জন্য ডিম ভাজি করে দেই

আদি ডিম প্লেট এ তুলে খাবার টেবিলে রাখে। নিধি এখনও ওখানে ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। পরি নামটা মাথা থেকে বের হচ্ছে না

” হেই স্টুপিট কি নিয়ে গবেষণা করছো?

“পরি

আদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

” কে পরি

“এখুনি বললেন আপনি?

” কখন বললাম? পরি নামটা তো আমিই এখন শুনলাম তাও তোমার মুখ থেকে। তা পরি কে?

নিধি একটু আদির দিকে তাকিয়ে খেতে বসে যায়। আদি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে

“ভ্যাগিস মেয়েটা গাঁধা নাহলে সব বুঝে যেতো

নিধি খাচ্ছে আর ভাবছে

” লাটসাহেব যতই কথা ঘুরাক না কেনো আমি জেনেই ছাড়বো পরি কে? আগেও তো সৌরভের কাছ থেকে পরি নামটা অনেক শুনেছি। কে এই পরি? আর লাটসাহেবের সাথে কেনো থাকতো? এই রহস্যের সমাধান করতে পারলে আমি আব্বুকে প্রমাণ দিতে পারবো আদি খারাপ ছেলে আর আব্বু আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। ইসসস কি বুদ্ধি আমার।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৪
#Tanisha Sultana (Writer)

“সব সময় এতো কি ভাবো বলো তো? পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার মতো কিছু আবিষ্কার করছো কি?

” পৃথিবীকে চমকাতে পারবো কি না জানি না তবে আমার আব্বুকে চমকে দিতে পারবো এমন কিছু আবিষ্কার করছি

“ওয়াও গাঁধারাও আজ কাল বুদ্ধি খাটাচ্ছে গ্রেট

নিধি খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে ধুতে বলে

” আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই

“আমারও। তবে কাজ করতে হবে এখানে থাকলে

” আর যদি না করি

“বাসা থেকে বের করে দেবো

” ওকে

বলেই নিধি রুমে চলে যায়। আদি প্লেট গুছাচ্ছে৷ নিধি আবার ফিরে এসে আদির হাত থেকে প্লেট নেয়

“আপনার কাজ করতে হবে না। আমি করে দিচ্ছি

আদি হাত ভাজ করে দাঁড়ায়।

” এই তো কাজ করবে না বলে চলে গেলে।

“কাজ করবো না বলেছি না কি? আমি তো এমনি গেছিলাম

” নটএভার কাজ করবে করো

আদি যেতে নেয়

“শুনুন

” তোমাকে না বলেছি এই যে শুনছেন, শুনুন, ওগো, হ্যাঁ গো এগুলো না বলতে

“ওগো হ্যাঁ গো কবে বললাম?

নিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। আদি আমতাআমতা করে বলে

” এখনো বলো নি কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বলতে

“ওভারস্মার্ট

” ইউ

“ঝগড়া করার মুড নাই।

” আমারও

“যা বলছিলাম খরগোশ কি খায়?

” কিহহহহহহ

“খরগোশ কি খায় আই মিন খরগোশদের খাবার কি?

” কেনো কি করবা

“ওই যে আমি একটা কিনেছি না ওকে খাওয়াবো

” গাজর আর ঘাস খায়

“আমাকে গাজর এনে দিবেন

” মনে থাকলে

আদি রুমে চলে যায়। নিধি ছানাকে কোলে করে আদির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কখন আদি বের হবে তার অপেক্ষা করছে। কিন্তু আদি বের হচ্ছে না

“ধুর বাবা পা ব্যাথা হয়ে গেলো। কখন বের হবে?

তখন আদি দরজা খুলে বের হয়। কোট সুট আর হাতে ব্যাগ নিয়ে। নিধিকে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

” তুমি এখানে?

“না মানে আপনার নাম্বার টা দেবেন প্লিজ

” আমার নাম্বার নিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করবে

“আরে না না জাস্ট রাতে আপনাকে ফোন দিয়ে গাজরের কথা মনে করয়ে দেবো

” লাগবে না

“যদি আপনার মনে না থাকে

” আমি তোমার মতো গাঁধা না

আদি দরজা পর্যন্ত যায় আবার ঘুরে তাকায়

“দরজা বন্ধ করে দিও

আদি বেরিয়ে যায়। নিধি দরজা বন্ধ করে দিয়ে ছানাকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে। বাগান থেকে আনা ঘাস খাওয়ায় ছানাকে।

তখন নিধির ফোন বেজে ওঠে

” হেলো

“কেমন আছো নিধিরা?

” সৌরভ আপনি? নাম্বার কই পেলেন?

“ভালোবাসি তো তাই ওপরওয়ালাই জোগাড় করে দেয়

” ওহহহ। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি

“হুম করো

” পরি কে?

সৌরভ কিছুটা চমকে ওঠে

“কোন পরি?

” সেই পরি যার সাথে আগে আদি থাকতো

“ঠিক বুঝলাম না

” হেয়ালি কইরেন না প্লিজ

“যদি বলি পরি আদির বউ ছিলো তাহলে কি তুমি আমার কাছে চলে আসবে

” বউ ছিলো

“আমি বলি নি। যদি হতো তাহলে কি তুমি আমার কাছে চলে আসতা

” যদি শব্দটা এখানে কেনো আসছে?

“পরি ছিলো খুব খুব ভালো একটা মেয়ে। আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। সব সময় হাসি খুশি থাকতো। সবাইকে মাতিয়ে রাখতো।

” আদির কি হতো?

“সেটা তোমার আদির কাছে জিজ্ঞেস করো

“ওকে

” লাভ ইউ

“লাইক ইউ বাট ডন্ট লাভ

নিধি ফোন কেটে দেয়।

” সৌরভ এমন ঘুরিয়ে কথা কেনো বললো? লাটসাহেবের বউ তো পরি কখনোই হতে পারে না। তাহলে কে? গার্লফ্রেন্ড?
ধুর এতো ভাবলে আমি পাগল হয়ে যাবো। আস্তে আস্তে জানতে হবে। তারাহুরো করলে হবে না। লাটসাহেবের সাথে তো আমি থাকবোই না। উনি আমার মতো এতো ভালো একটা মেয়েকে ডিজার্ভ করে না

নিধি জোরে একটা শ্বাস নেয়। কলিং বেল বাজে

নিধি দরজা খুলে দেখে মনি দাঁড়িয়ে আছে

“আপু তুমি ভেতরে আসো

মনি ভেতরে আসে।

” নিধি তারাতাড়ি এটা পড়ে আসো
নিধির হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলে

“কিন্তু কেনো?

” আজ আমাদের পার্টি আছে তাই তোমাকে নিয়ে যাবো

“আমি যাবো না

” বেশি কথা না বলে যাও

মনি ঠেলেঠুলে নিধিকে পাঠায় শাড়িটা পড়তে। মনি সুন্দর করে শাড়ি পাড়িয়ে দেয় নিধিকে। তারপর হালকা মেকাপ। সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে নিধিকে

“পারফেক্ট এবার চলো

” আপু এভাবে কি করে যাবো? এই দেখো পেট বেরিয়ে গেছে। এতো পাতলা শাড়ি

“আরে কিচ্ছু হবে না। এটা ফ্যাশন

মনি টানতে টানতে নিয়ে যায় নিধিকে। মনি ডাইভ করছে নিধি পাশে বসে আছে

” আপু ওনাকে বলে আসলাম না
নিধি আমতাআমতা করে বলে। মনি এক গাল হেসে বলে

“তোমার উনি ওখানেই আছে। যেখানে আমরা যাচ্ছি

নিধি চোখ বড়বড় করে তাকায় মনির দিকে। যে মানুষ জাস্ট ওড়না ছাড়া বের হলে বকে আজ তো নিধি পাতলা একটা শাড়ি পড়েছে না জানি আজ কি বলবে।
ভেবেই নিধি ঢোক গিলে।

” কি হলো?

“আজ উনি খুব বকবে আমাকে

” কেনো?

“এরম একটা শাড়ি পড়েছি

” কিচ্ছু বলবে না। আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানের সব মেয়েরা ছোট ছোট ড্রেস পড়ে তো তোমার লাটসাহেব তোমাকে কিছু বলবে না। তাছাড়া আমার ড্রেস দেখো

নিধি মনির দিকে তাকায়। হাতা কাটা একটা শর্ট ড্রেস পড়েছে। দারুণ লাগছে মনিকে।

একটা বড় বাড়ির সামনে মনি গাড়ি থামায়

“চলো

নিধি ঢোক গিলে মনির সাথে সাথে যায়। পুরো বাড়িটা লাল নীল বাতি বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। মনি নিধিকে নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় বসে

” নিধি একটু বসো আমি তোমার উনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি

মনি মুচকি হেসে চলে যায়। নিধি এবার সেলফি তুলায় ব্যস্ত হয়ে যায়। এতোখন সেলফি তুলতে পারে নি

“তুমি এখানে?

নিধি চমকে তাকিয়ে দেখে আদি।

” মনি আপু নিয়ে এসেছে। মাথা নিচু করে বলে নিধি।

“কি পড়েছো এটা তুমি? চোখ মুখ শক্ত করে বলে আদি।

” না মানে

“কি মানে মানে করছো? আদিল চৌধুরীর বউ তুমি। ভুলে যাও কেনো? তুমি জানো না এরকম শরীর দেখানো শাড়ি আমার পছন্দ নয়
কর্কশ গলায় বলে আদি।

নিধির এবার ভয় করছে। পাবলিক প্লেসে যদি ইডিয়েট ননসেন্স স্টুপিট গাঁধা বলে তো মানসম্মান থাকবে না

” কি হলো চুপ কেনো? ছেলেদের ইমপ্রেস করতে এসেছো তুমি এইরকম নাগীনি সাজ দিয়ে

“আদি বাহহ ভাবিকেও নিয়ে এসেছিস দেখি

সৌরভ শুভ আর রিয়াদ (আদির বন্ধু) ওরা পেছন থেকে বলে।

” ভাবি কেমন আছেন? রিয়াদ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে।

“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি

” ভালো

“আপনাকে কিন্তু আজ দারুণ লাগছে।
সৌরভ নিধির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে।

আদির গা জ্বলে যাচ্ছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে।

” আপনাকে কিন্তু আজ আমার সাথে ডান্স করতেই হবে ভাবববি
সৌরভ বলে।

“না না আমি ডান্স করতে পারি না

নিধি আদির দিকে তাকিয়ে বলে

” আরে আদিকে ভয় পাচ্ছ তো? আদি কিছু বলবে না। তাছাড়া বন্ধু বউ তো আমাদেরও অর্ধেক বউ
সৌরভ বাঁকা হেসে বলে। সৌরভের সাথে বাকিরাও তাল মেলায়। নিধি কি করবে বুঝতে পারছে না। আদি তো রেগে আগুন হয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে

সৌরভ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে

“তো চলো
নিধি আদির দিকে তাকিয়ে আছে। সৌরভ নিধির হাত ধরে ডান্সফ্লোরে নিয়ে যায়। মিউজিক অন করে। আদি অগ্নি দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। এক সেকেন্ডের জন্য ও দৃষ্টি সরাচ্ছে না।

সৌরভ টান দিয়ে নিধিকে কাছে নিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে

” আজ যেমন আদির সামনে দিয়ে তোমাকে নিয়ে এলাম ডান্স করার জন্য ঠিক তেমনি খুব তারাতাড়ি তোমাকে আদির সামনে দিয়ে নিয়ে যাবো বিয়ে করার জন্য। আজ আদি চুপ ছিলো সেদিনও চুপ করে থাকবে।

নিধি সৌরভকে সরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সৌরভের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। সৌরভের দৃষ্টি যায় নিধির পেটের দিকে।

আদির আর সয্য হচ্ছে না। মিউজিক অফ করে নিধির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

“আল্লাহ এবার আমার কি হবে? এই লাটসাহেব আমার সাথে এবার না জানি কি করবে?

সৌরভ নিধির হাত ধরে ছিলো আদি টান দিয়ে নিধির হাত আদির হাতের মুঠোয় নিয়ে যায়।

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-১১+১২

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১১
#Tanisha Sultana (Writer)

“আপনি
নিধি চোখ বড়বড় করে বলে। নিধির কন্ঠ শুনে সামনে থাকা লোকটা নিধির দিকে তাকায়।

” নিধিরা

সৌরভ একটু হেসে বলে।

“এডমিশন নিতে এসেছো? গুড। ওপর ওয়ালাও চায় সৌরভ নিধিরা সব সময় এক সাথে থাকুক

নিধি সন্দেহের সুরে বলে

” আপনাকে ফোন করেছিলো না কি?

“কে আদি না ওপরওয়ালা?

তখন নিধির মাথায় আসে আদি কই? নিধি আশেপাশে তাকায়। নাহহ কোথাও তো আদিকে দেখা যাচ্ছে না

” হেলো। কি হলো?

নিধি সৌরভের কথার উওর না দিয়ে হাঁটা শুরু করে। সৌরভ নিধির হাত ধরে

“আপনি আমার হাত কেনো ধরলেন? ছাড়ুন

নিধি হাত ছুটানোর চেষ্টা করে বলে।

” আমি তোমার হাত ছাড়ার জন্য ধরি নি

“সৌরভ আমার বিয়ে হয়ে গেছে। অন্য একটা ছেলের বউ আমি।

সৌরভ নিধির হাত ধরে টান দিয়ে কাছে নি আসে নিধিকে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে

” কেনো করলে আমার সাথে এমনটা? কি নেই আমার?

নিধি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে আর বলে

“প্লিজ ছেড়ে দিন

” এখন আমার ছোঁয়াও তোমার ভালো লাগে না তাই না

“সৌরভ ছেড়ে দে ওকে

আদির কন্ঠ শুনে নিধি আর সৌরভ আদির দিকে তাকায়। সৌরভ নিধিকে ছেড়ে দেয়। নিধি এক দৌড়ে আদির কাছে চলে যায়

” সৌরভ এটা ঠিক না

সৌরভ কিছু বলতে যায় আদি থামিয়ে বলে

“টই স্টুপিট টার সাথে তোর আগে কি সম্পর্ক ছিলো না ছিলো সেটা অতিত হয়ে গেছে। বর্তমানে নিধি তোর বেষ্টফ্রেন্ডের বউ। মানে তোর ভাবি। সম্পর্কে বউ সো সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে তো না কি। সম্মান দিলেই কিন্তু সম্মান পাওয়া যায়।

আদি নিধির হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে আবার থেমে যায়। পেছন ঘুরে বলে

” আর হ্যাঁ সৌরভ এমন কিছু করিস না যাতে তোর সাথে আমার রিলেশনটা নষ্ট হয়ে যায়। কেমন

আদি একটু হেসে চলে যায়।

নিধি হা করে আদিকে দেখছে। এই মানুষটা নিধিকে সম্মান দিতে বললো

“এমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো কেনো? জীবনে স্মার্ট ছেলে দেখো নাই

আদির কথা শুনে নিধি অন্য দিকে তাকায়। বিরবির করে বলে

” দুই সেকেন্ড ও হয় নাই ওনাকে নিয়ে একটু প্রশংসা করছিলাম মনে মনে এর মধ্যেই আসল চেহারাটা দেখিয়ে দিলো। লাটসাহেব একটা

“বিরবির করে কারা কথা বলে জানো?

নিধি উৎসাহিত হয়ে বলে

” নাহহহ তো

“চোর রা

বলেই আদি অফিস রুমে ঢুকে যায়। নিধি মনে মনে আরও কিছু গালি দিয়ে আদির পেছন পেছন ঢুকে।

মোটামুটি নিধিকে ভর্তি করানো শেষ। টিচাররা জিজ্ঞেস করে নিধি আদির কে হয়। নিধিও দাঁত কেলিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। আদি কি বললে শোনার জন্য। আদি পড়েছে ঝামেলায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না

” বলুন আমি আপনার কে হই?

নিধি আদিকে খোঁচা মেরে বলে। আদি অগ্নি দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে বলে

“বউ হয় আমার

বলেই আদি হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। নিধি এখনো বিশ্বাসই করতে পারছে না আদি এটা বললো। নিধি ও আদির পেছনে দৌড় দেয়।

আদিন কোনো দিকে না তাকিয়ে হাঁটছে। নিধি দৌড়ে আদির সমান সমান হয়

” আপনি এটা কি বললেন?

আদি থেমে যায়। নিধিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রেগে বলে

“কালা তুমি? শুনতে পাও না? কান কি পার্সে রেখে দিছো?

নিধি ঘাবড়ে যায়। থেমে থেমে বলে

” আআআমি
আদি নিধির আর একটু কাছে এসে বলে

“কি তুমি? এতো কথা কেনো বলো তুমি? পাগল করে দেবে আমায়। আমি পাগল হয়ে বেরিয়ে যাবো

নিধি ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কি এমন বললো যাতে এতোটা রেগে গেলো আদি

” সবাই দেখছে
নিধি আশেপাশে তাকিয়ে বলে।

“দেখছে দেখুক। বউ তো তুমি আমার তাই না

” আমি বলি নি আপনি বলেছেন
নিধি মুখটা নিচু করে বলে

“তুমি বলতে বাধ্য করেছো। লিসেন স্টুপিট আই হেট ইউ। আমি তোমাকে ভালোবাসি না। বুঝতে পেরেছো তুমি

নিধি আদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারপর দৌড়ে গাড়ির কাছে যায়। গাড়িতে বসে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

আদি দেয়ালে ঘুসি মারে। বউ শব্দটা আদি বলতে চায় না। এই শব্দে বিষ আছে এটা আদির ধারণা। তবুও আজ বউ শব্দটা বলতে হলো। আদি ভীষণ রাগ হচ্ছে। নিধির ওপর না নিজের ওপর এটাই বুঝতে পারছে না আদি।

আদিও গিয়ে গাড়িতে বসে। নিধি জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে

” ভালো আমিও আপনাকে বাসি না। কিন্তু কখনো আপনার সাথে বাজে বিহেব করি নি। আপনাকে আঘাত দিয়ে কথা বলি নি। ভাবতে পারেন আমার হয়ত রাগ নেই তাই। কিন্তু তা না। রাগ সব মানুষেরই আছে। আম্মু বলে যখন কোনো সমস্যার সমাধান ঠান্ডা মাথায় করা যায় তখন রাগারাগি করে সেই মানুষটাকে অপমান করার কোনো মানে হয় না। আমি কিন্তু আপনাকে কখনোই বলি নি যে আপনাকে ডিভোর্স দেবো না। যদি এটা বলতাম তো আপনার আমার সাথে বাজে বিহেব করার রিজন থাকতো।

নিধি একটা শ্বাস নেয়। তারপর একটু হেসে বলে

“মিস্টার আদিল চৌধুরী আমি ফেলনা না। আমার পরিবার বা আপনার পরিবার ভাবতো আমার আর আপনার বিয়ে হলে আমরা সুখী হবো। কিন্তু তারা তো জানে না আমাদের দুজনেরই আলাদা আলাদা ভালো থাকার পথ আছে।
আমি জানি সৌরভের সাথে আমার ব্রেকআপ টা আমার বা সৌরভের ইচ্ছেয় হয় নি। এটা আপনার আর আব্বুর ইচ্ছে ছিলো

আদি নিধির দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায়।

” রিলাক্স। আমি কারণ জানতে চাইবো না। কখনো আব্বুর কাছেই জানতে চায় নি। তো আপনার কাছেও জানতে চাইবো না। আমি বিশ্বাস করি একদিন আপনি বা আব্বু আমাকে সত্যিটা বলবেন। কেনো সৌরভের থেকে আমাকে আলাদা করা হলো?

“তুমি

নিধি হাত উঁচু করে আদিকে থামিয়ে দেয়

” এক্সকিউজ নিধিরা নিধি পছন্দ করে না। আর হ্যাঁ আপনার কাছ থেকে বউয়ের পরিচয় পেতে আমার বয়েই গেছে। এখন চুপচাপ আমাকে একটা ভালো দামী ফোন কিনে দেবেন। যদি টাকা না থাকে তো আমার আব্বুর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েন

নিধি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। আদি মুচকি হেসে গাড়ি স্টাট দেয়।

ফোনের দোকানের সামনে গাড়ি থামায়। নিধি এক দৌড়ে দোকানোর ভেতরে ঢুকে যায় আর ফোন চুজ করা শুরু করে। একটা ফোন নিধির খুব ভালো লাগে তো ফোনটা নিয়ে আবার দৌড়।

“এই ইডিয়েট আস্তে

কে শোনে কার কথা। আদি বিল দিতে যায়। নিধি ইচ্ছে মতো সেলফি তুলছে। সেই ফুলসজ্জার রাতে সেলফি তুলেছিলো। আর তোলা হয় নাই। আট এখানে আসার সময় তো ভুলে মোবাইল টা ফেলে এসেছে। এবার নিধির মাথায় আসে একটা সিমও তো কিনতে হবে। আদি গাড়িতে উঠছিলো নিধি আটকে দেয়। আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে

” আবার কি?

“সিম

আদি আবার দোকানে গিয়ে একটা সিম কিনে দেয়।

আদি ডাইভ করছে আর নিধি ফেসবুকে ঢোকার চেষ্টা করছে।

” ধুর

“কি হলো

” এমবি তো ভরলাম না।

“বাসায় WiFi আছে

নিধি খুশি হয়ে বলে

” সত্যি

“হুম

আদি নিধির হাসি মুখের দিকে এক পলক তাকায়।
মেয়েদের হাসিতেই না কি ছেলেদের সর্বনাশ। কথাটা আদি বিশ্বাস করে। কারণ এই কথাটার প্রমাণ আদি পেয়েছে। তাই এখন আর নিধির হাসি মুখটা আদির ভালো লাগে না। আদি মনে হয় নিধি সব সময় গুমড়ো মুখো হয়ে থাকুক।

” তোমার হাসিটা জঘন্য। প্লিজ আমার সামনে হাসবে না। আমার ভালো লাগে না

আদির কথা শুনে নিধির মুখের হাসি উড়ে যায়।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১২
#Tanisha Sultana (Writer)

“এই লোকটা মানুষ হবে না। লাটসাহেব একটা। আমার হাসি বাজে? তুই জানিস কতো ছেলে আমার এই হাসির জন্য আমার পেছনে ঘুরতো। সৌরভও এই হাসি দেখেই প্রপোজ করেছিলো

নিধি আদিকে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকায়। আদি দেখে ফেলে

” তুমি আমাকে কিস করলে কেনো?

নিধি যেনো আকাশ থেকে পড়লো। বলে কি লোকটা? পাগল হলো না কি?

“তোমার মতলবটা কি বলো তো? এই কিস করলে এখন আবার হা করে তাকিয়ে আছো। আমি জানি আমি খুব সুন্দর দেখতে তাই বলে সব সময় এমন চোখ দিয়ে গিলে খাবে

নিধি আরও বেশি অবাক হলো।

” আমি আপনাকে কখন কিস করলাম?

আদি গাড়ি থামায়।

“তুমি সত্যিই প্রতিবন্ধী। এইমাএ কিস করলে আর এখনি ভুলে গেলে।

” এক্সকিউজ মি আমি আপনাকে কিস করি নি। আমি নিধিরা নিধি কিস করবো তাও আবার আপনার মতো লাটসাহেবকে ভাবা যায়

“তাহলে কি করছো?

আদি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে। নিধি মাথা নিচু করে বলে

” ভেংচি দিছি

“ভেংচি এভাবে দেয়?
আদি গালে হাত দিয়ে বলে

” হুমমম

“কিন্তু আমি তো দেখলাম কিস করলে

” আমি আপনাকে ভেংচি দিছি। ঠোঁট বাঁকিয়ে ভেংচি দেয়

“কিসও তো ঠোঁট বাঁকিয়ে দেয়
আদি একটু বাঁকা হেসে বলে

” ভেংচি আর কিসের মধ্যে পার্থক্য আছে

“কি রকম

নিধি এবার ভরকে যায়। জাস্ট একটা ভেংচির জন্য এতো কথা।

” ভেংচি আর কিস তো আলাদা জিনিস। আমি রেগে গেছিলাম তাই ভেংচি দিছিলাম। আর কিস তো ভালোবাসলে দেয়

“ওহহহ। তো তুমি তো ভালোবেসেও দিতে পারো। রেগে গেছিলে তার কি প্রুভ আছে

আদি আবার ভ্রু কুচকে বলে

“আপনি কি জাবেন না কি আমি একাই চলে যাবো

নিধি গাড়ি থেকে নামতে যায় আদি হাত ধরে আটকে দেয়।

” তুমি ঠিক যে পরিমাণ গাঁধা তাতে তুমি গাড়ি থেকে নামলে হয় হারিয়ে যাবে নয়ত সৌরভের সাথে ধাক্কা খাবে হয়ত আবার গাড়িতে ফিরে আসবে। বাসায় পৌঁছাতে পারবে না। শুধু শুধু তোমার একটু কষ্ট হবে আর আমার তোমার পেছনে দৌড়াতে হবে। তো একটা কাজ করো আগে কক্সবাজারটা ভালো করে চেনো জানো তারপর একদিন রাগ করে গাড়ি থেকে নেমে চলে যেয়ো। আমি আর খুঁজতে যাবো না

নিধির রাগের পরিমাণ বেরে যায়

“আপনি আমাকে লেগ পুল করছেন

” লেগ পুল মানে টা জানো তুমি? আমি কিন্তু জানি না। আসলে ইংরেজিটা অনেকটা কম পারি তো

নিধি রেগে ফুসফুস করছে। আদি হো হো করে হেসে ওঠে। নিধি এবার ভ্রু কুচকে তাকায় আদির দিকে

“এখানে কি কোনো জোকার এসেছে

আদি হাসি থামিয়ে বলে

” সব সময় এরকম রেগে থাকবে। তোমায় খুব সুট করে। কেমন

“আপনি সব সময় হাসিখুশি থাকবেন। এই হাসিটা আপনাকে খুব সুট করে

” তোমার রাগের মধ্যেই আছে আমার ভালো থাকার মেডিসিন

আদি হাসতে হাসতে গাড়ি চালানো শুরু করে। নিধি অবাক হয়ে আদিকে দেখছে

“আমার রাগের মধ্যেই আছে এই লাটসাহেবের ভালো থাকার মেডিসিন। আমার হাসি কি এতোটাই বাজে? তবে হ্যাঁ ফাস্ট টাইম লাটসাহেবকে খিলখিল করে হাসতে দেখলাম।

” আবার তাকিয়ে আছো আমার দিকে

“আপনার চেহারায় মধু মধু একটা ফেবার আছে। খাইতে মন চায়। তাই তাকিয়ে থাকি

আদি গাড়ি জোরে ব্রেক করে। নিধি ভরকে যায়

” ইসস কি বলে ফেললাম

গাড়ি থামতেই নিধি দৌড়ে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে দৌড় দেয়। আর যা হওয়ার তাই। নিধি ঠাস করে পড়ে যায়। তবে এইবার পায়ে প্রচুর ব্যাথা পায়। ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে ওঠে। কবরটার সামনেই পড়ে যায় নিধি। আদি দৌড়ে আসে

“কমনসেন্স নাই তোমার? তুমি যে প্রতিবন্ধী সেটা তুমি ভুলে যাও কেনো? যেখানে দৌড় দিলেই তুমি উস্টা খাবে সেখানে দৌড়াতে যাও কেনো? ইডিয়েট।

নিধির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। পা ধরে আছে আদি এবার খেয়াল করে। নিধির কাছে হাঁটু মুরে বসে

” কি হয়েছে?

“ব্যাথা পেয়েছি

বলেই নিধি কেঁদে দেয়

” কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো

আদির কথায় নিধির কান্না বন্ধ হয়ে যায়।

“আমাকে ধরে উঠার চেষ্টা করো

আদির কথায় নিধি গাল ফুলিয়ে আদির দিকে তাকায়। কেমন নিরামিষ হলে এমন একটা কথা বলতে পারে। কোথায় বলবে নিধি আমি তোমাকে কোলে নেই তা না

” আবার তাকিয়ে আছো কেনো? তোমার পবলেম কি? সব সময় তাকিয়ে থাকো কেনো? বাই এনি চান্স তুমি কি আমার প্রেমে পড়ে গেছো

নিধি চমকে ওঠে। নিজে নিজেই উঠার চেষ্টা করে আবার পড়ে যায়। আদি কোলে তুলে নেয়। নিধি আদির গলা জড়িয়ে ধরে

“একদম অন্য ভাবে ধরবে না। নরমাল ভাবে ধরবে ওকে

নিধি ঠাস করে আদির গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। নিধি এটা কি করলো নিজেই জানে না। আদি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদি নিধির দিকে তাকায়। নিধি আদির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে

” আর কিছু বললে এর থেকেও বেশি কিছু হয়ে যাবে

আদি একবার কবরটার দিকে তাকায় তারপর নিধির দিকে।

“এটা ঠিক হলো

নিধি আদির ঠোঁট আঙুল দেয়

” এতো কথা বলেন কেন আপনি? একটু চুপ থাকতে পারেন না

আদি এক পা বাঁড়ায় আর আদির কানে ফেসে ওঠে কেউ বলছে

“তুমি বদলে গেছো আদি। এতোটা বদলে গেলে কি করে

আদি দাঁড়িয়ে যায়। আশেপাশে তাকায়

” কি হলো?

“তুমি খুব ভাড়ি তাই হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে

নিধি গাল ফুলিয়ে ফেলে। আদি নিধিকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে। নিধিকে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসিয়ে বরফ নিয়ে আসে

” এটা পায়ে লাগাও ব্যাথা করবে

বলেই আদি চলে যায়

“এটা কি হলো? উনি এভাবে চলে গেলো কেনো?

নিধি পায়ে বরফ লাগায়। আদি রুমে গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

” আমি কি করছি এটা? আমি নিধির প্রতি দুর্বল হতে পারবো না। এতে নিধিরও হ্মতি। কি করবো আমি

নিধি রেলিং এ ঘুসি মারে। কবরটার দিকে তাকায়।

🌹🌹

সকালে
নিধি সোফায়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। পায়ের ব্যাথাটা অনেকটা বেরেছে। আদি ঘুম থেকে উঠে দারজা খুলে দেখে নিধি ওখানেই ঘুমিয়ে আছে। আদি নিধির কাছে যায়

“এই স্টুপিট উঠো

নিধির কোনো সাড়াশব্দ নেই। আদি পানির বোতল এনে নিধির মুখের ওপর পানি দেয়। নিধি হুরমুর করে উঠে। আবার পায়ে ব্যাথা পায়।

” আহহহহহ

আদি নিধির পা ধরে

“গাঁধা কেনো তুমি? সব সময় এমন স্প্রিডে চলো কেনো? নিজের স্প্রিড কন্ট্রোল করতে পারো না

” বলদের মতো মুখে পানি দিলে তো এমন হবেই

“কিহহহহ আমি বলদ

” আমি গাঁধা

“হুমমম তুমি গাঁধা ইডিয়েট ননসেন্স স্টুপিট

” কথা বলবেন না আমার সাথে

“তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই আমার

” যান এখান থেকে

“আমার বাড়ি থেকে আমাকেই যেতে বলছো

নিধি কষ্টমষ্ট করে উঠে দাঁড়ায়। আদি হাত ধরে। নিধি হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর হাঁটার চেষ্টা করতেই আদির গাঁয়ের ওপর পড়ে যায়

” যেটা পারো না সেটা কেনো করতে যাও

আদির সাহায্যে নিধি রুমে আসে। খাটে বসে

“মনি আপুকে একটু ডেকে দেবেন

” কেনো?

“দরকার আছে

” আমাকে বলা যায় না

“নাহহ

” মনি অফিস গেছে

“ওহহহ

” আমাকে বলতে পারো

“চেঞ্জ করবো গোছল করবো

” হেল্প করছি

আদি নিধিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।

“আমি দরজার বাইরে আছি

” হুমম

নিধি দরজা আটকে সাওয়ার অন করে

“এই লাটসাহেবের মতিগতি আমি কিছুই বুঝতে পারি না। চায় টা কি উনি? এই ভালো তো এই খারাপ। তবে যাই হোক ক্রাশ খাওয়ার মতো জিনিস একটা। সৌরভের থেকে দেখতে ভালো বাট বিহেব করলার মতো।

আদি দরজায় নক করে

” তোমার ড্রেস। এবার ড্রেসটা নিয়ে আমাকে উদ্ধার করে।

নিধি দরজা খুলে ড্রেস নিতে যায়। আদি নিধির দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায়। নিধিও বুঝতে পেরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। নিধির চিৎকার শুনে আদি দুপা পিছিয়ে কানে হাত দেয়

“আমার কান শেষ।

আদি অগ্নি দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকায়। নিধির এবার কান্না পাচ্ছে। পায়ে ব্যাথার জন্য দৌড় ও দিতে পারছে না। এবার নিধি ভ্যাভ্যা করে কেঁদে ফেলে।

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-৯+১০

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৯
#Tanisha Sultana (Writer)

“এই গান আর কন্ঠটা আমার এতো চেনা কেনো মনে হচ্ছে? আদি তো এভাবে গিটার বাজাতে পারবে না ওর হাত কাটা। তাহলে কে? ভুত? কিন্তু ভুত কেনো গিটার বাজিয়েগান গাইতে যাবে। ভুতকে কি ভুতে ধরেছে না কি?

এই অনেক চিন্তা নিধির মাথায় ঘুরছে। অলরেডি ঘামতে শুরু করছে নিধি। এক দৌড়ে রুমে ফেরত আসে। আর ঠাস করে আদির সাথে ধাক্কা খায়।

” এবার নিধি তুই শেষ।

নিধি চোখ মুখ বন্ধ করে বকা খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বলে

“আই এম ভেরি সরি প্রচুর সরি। আমি দেখি নি। প্লিজ বইকেন না। আপনি বকলে আমার হার্ট খুব জোরে জোরে লাফায় মনে হয় বেরিয়ে যাবে

“আজ আর তোমায় বকবো না। জাস্ট একটা কোশ্চেন। তুমি কি চোখ দেখো না?
আদির শান্ত গলার প্রশ্ন শুনে নিধি চোখ খুলে। কিছুটা সাহস জুগিয়ে বলে

” ভুত দেখেছি

আদি ভ্রু কুচকে তাকায় নিধির দিকে। নিধি গলায় হাত দিয়ে বলে

“সত্যি দেখেছি। গান গাইছিলো।

আদি অনেক কষ্টে হাসি চেপে বলে

” হুমম আছে তো ভুত

নিধি ভয়ে শেষ। এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়

“কাঁদলে ভুত এখন তোমার কাছে চলে আসবে

ঠাস করে নিধি কান্না অফ করে।

” গুড গার্ল।

“আমি থাকবো না এখানে

” সত্যি। কাল আমি তোমাকে টিকিট কেটে দেবো

“কিন্তু

” এখানে ভুত আছে। তুমি থাকলে তোমার ঘাড় মটকাবে। মেয়েদের তো ভুত একদম পছন্দ করে না। সো তোমার চলে যাওয়াই ভালো

নিধি মাথা নারায়। তারপর কিছু একটা চিন্তা করে বলে

“ভুত শুধু মেয়েদের ঘাড় কেনো মটকাবে? আর আপনি ভয় পান না তাহলে আমি কেনো ভয় পাবো? আর ওটা যে ভুতই গান গাইছিলো তার কি প্রমাণ আছে? তবে একটা জিনিস খুব ভাবাচ্ছে আমাকে?

নিধি মুখে হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে। আদিও আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে

” কি?

“কোনো মানুষ হলে তো কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়তো কিন্তু ওই ভুত বা মানুষ যেই হোক গান কেনো গাইছিলো?

আদি হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে

” সেটা তো সেই বলতে পারবো

“কে?

নিধি একটু উঁচু হয়ে আদির সোজাসুজি দাঁড়িয়ে বলে

” ভুত

বলেই আদি বেলকনিতে যেতে নেয়। নিধি দৌড়ে আদির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

“প্লিজ আপনি যাবেন না

আদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে

” আমি যাবো

“আপনি যে ঘাড় ত্যারা সেটা আমি জানি

” কি বললে তুমি?

আদি চোখ মুখ শক্ত করে বলে। নিধি দাঁত দিয়ে জীভ কেটে বলে

“প্লিজ আপনি যাবেন না। আপনার ঘাড় মটকাবে

” মরলে আমি মরবো তাতে তোমার কি?

আদি কথায় নিধি শান্ত হয়ে যায়। সত্যিই তো আমার কি? কথাটা মাথায় আসে নিধির। আদির সামনে থেকে সরে যায়। আদি দুই পা হেঁটে আবার পিছয়ে নিধির কাছে আছে

“জীবনের রাস্তায় কারো হাত ধরে অনেকটা পথ এগিয়ে যাওয়ার পরে সেখান থেকে একা ফেরা বা অন্য কারো হাত ধরাটা বেশি কঠিন।

নিধি হা করে ভাবছে আদি কি বললো? নিধির মাথায় কিছুই ঢুকলো না

” আমি কিছু বুঝতে পারলাম না

নিধি অসহায় ফেস করে বলে

“আমি কখনোই তোমাকে এটেনশন দিতে পারবো না। আমার কাছে সৌরভ ঠিক যতটা দামী তার তিন ভাগের একভাগও তোমার দাম নেই আমার কাছে। জাস্ট কিছু কন্ডিশনের জন্য তোমাকে বিয়ে করেছি বা এখানে নিয়ে এসেছি। সব ধরনের সাহায্য তুমি পাবে আমার থেকে।

নিধি অনেকটা খুশি হয়

” হেল্প করবেন আপনি আমায়?

“হুমমম। বাট ডিভোর্স টা আমি এখনি দিতে পারবো না। জানোই তো বিয়ের ছয় মাস না হলে ডিভোর্স হয় না।

” আমি স্টাডি করতে চায়

“হুমম করো।

” তো এখানকার কোনো একটা ভার্সিটিতে আমাকে এডমিশন করিয়ে দিন

“ওকে দিবো।

” সত্যি

“হুম সত্যি

নিধি আদির গাল টেনে বলে

” আমার টুনুমুনু

বলেই নিধি দৌড়ে চলে যায়।

“কি বলে গেলো?

আদি ভাবনায় পড়ে যায়।

আদি আর নিধির জন্য দুইটা রুম। এক রুমে আদি থাকে আরেক রুমে নিধি। রাত প্রায় একটা ছুঁই ছুঁই। নিধির ঘুম আসছে না। তখন ঘুমানোর কারণে এখন ঘুম নেই।

নিধি ভাবছে সৌরভের সাথে রিলেশন হওয়ার দিনটার কথা।
নিরার বিয়েতে দেখে নিধি সৌরভকে। সৌরভ ই একমাত্র ছেলে ছিলো যাকে নিধির ভালো লাগতো। সারাক্ষণ সৌরভের দিকে তাকিয়ে থাকতো। সৌরভের সাথে আদি থাকতো তাই নিধি সাহস করে কথা বলতো না।

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে সৌরভ নিধিকে প্রপোজ করে। আর নিধি সাত পাঁচ না ভেবেই রাজি হয়ে যায়। খুব সুন্দর ছিলো সৌরভ নিধির প্রেমটা। নিধি তখন ইন্টারে পড়তো। সকাল নয়টা থেকে নিধির কোচিং ছিলো। প্রতিদিন আটটায় বাসা থেকে বের হতো। পুরো রাস্তা সৌরভের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে যেতো। দশটায় কোচিং শেষে আরও একঘন্টা ফোনে কথা বলে আবার এগারোটা থেকে আরেকটা প্রাইভেট পড়তো। তারপর আবার হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতো ফোনে কথা বলতে বলতে।

মাঝেমাঝে সৌরভের সাথে ফুসকা খেতে যেতো। কতো ভালো ছিলো সম্পর্কটা। কোনো কন্ডিশন ছিলো না। কোনো চাওয়া পাওয়া ছিলো না।

এসব ভেবে নিধি মুচকি হাসে। সেই দিন আর ফিরে আসবে না। সৌরভ ও আর আগের মতো হতে পারবে না। আমিও পারবো না।

” আচ্ছা যদি আমার বিয়ে না হতো। তাহলে কি আবার সৌরভ আমাকে এক্সেপ্ট করতো? না বলতো তোমার বাবা আমার সাথে এতো কিছু করার পরেও তুমি আমার সামনে কেনো এসেছো? আই হেট ইউ নিধি।

এসব শোনার আগেই আমার বিয়ে হয়ে গেছে এটাই ভালো। সৌরভের কাছ থেকে হেট হই শুনতে আমার প্রচন্ড কষ্ট হতো।

নিধি দীর্ঘ শাশ্ব ফেলে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল বেলা প্রচন্ড জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে নিধির ঘুম ভাঙে। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেখে রনোচন্ডি রুপ ধারণ করে আদি দাঁড়িয়ে আছে। আদির চেহারাটা দেখে নিধির ঘুম পালিয়ে যায়

“আআপনি

” তো কি তোমার সৌরভ থাকবে? আমি তোমাকপ এমনি এমনি আমার বাড়িতে রাখতে পারবো না।

“ওহহ ভাড়া দিতে হবে

” থাপ্পড়ে গাল লাল করে দেবো

আদির ধমকে নিধি দুই পা পিছিয়ে যায়।

“প্রতিদিন সকালে উঠে রান্না করবা। বসে বসে খেয়ে তো হাতির মতো হয়ে যাচ্ছ। এতো কাম কাজ করে ভুরি কমাও

বলে আদি হনহনিয়ে চলে যায়। নিধি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখে

” আমি মোটা? হাতি? আমার ভুরি আছে? আল্লাহ কেমন মিথ্যা কথা বলে। আমি মাএ ৩৯ কেজি। আর ওই লাটসাহেব আমাকে হাতি বললো

নিধিও রাগে গজগজ করতে করতে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে যায়। কালকে মনি তরকারি মাছ নিয়ে এসেছিলো যেগুলো রান্না করেছিলো। আজকে বাসায় করলা ছাড়া কিছু ই নেই।

নিধি এবার ভাত রান্না করে আর করলা ভাজি করে। আর ইলিশ মাছ করলা দিয়ে রান্না করে। এসবের একটাও নিধি খায় না। খাবার টেবিলে রেখে নিধি চেয়ারে বসে গালে হাত দিয়ে ভাবছে

“এসব আদি খেতে পারবে না। ইসস কি যে ভালো লাগছে আমার। আজ সারাদিন না খেয়ে থাকবে। আমি তো একটু পরেই নুডলস রান্না করে খাবো। আজ আমার জানের স্বামী না খেয়ে থাকবে। খুশিতে আমার নাচতে ইচ্ছে করছে।

আদি এসে চেয়ার টেনে বসে। নিজে নিজেই খাবার বেরে নেয়। নিধি দাঁত কেলিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। আদি করলা ভাজি আট তরকারি দিয়ে ভাত মেখে মুখে দেয়

নিধি বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। এবার আদি সাহেব বুঝবে নিধি কি জিনিস

আদি চোখ বড়বড় তাকায় নিধির দিকে। নিধি উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দেওয়ার পজিশন নেয়।

” 1 2 3 নিধি তুই এবার পালা। নাহলে লাটসাহেব তোকে এসব গিলিয়েই ছাড়বে।

নিধি দৌড় দিতে যাবে তখন আদি নিধির হাত ধরে

“এ বাবা এবার কি হবে? এবার নিধি তুই গেলি। লাটসাহেব তোকে এবার সব করলা খাওয়াবে

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১০
#Tanisha Sultana (Writer)

“বিশ্বাস করেন আমি জানতাম না আপনি করলা পছন্দ করেন না। জানলে রান্না করতাম না

নিধি চোখ মুখ খিঁচে বলে। আদি নিধির হাত ছেড়ে দেয়

” তোমায় কে বললো আমি করলা পছন্দ করি না?
আদি আবার টেবিলে বসে বলে। নিধি সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

“আপনি করলা পছন্দ করেন?

আদি বেশি করে তরকারি নিয়ে বলে

” ভীষণ পছন্দ করি। এবার থেকে প্রতিদিন তুমি আমার জন্য করলার তরকারি রান্না করবা

আদি খেতে থাকে। নিধি হা করে তাকিয়ে আছে। করলা কারো পছন্দের খাবার হতে পারে জানা ছিলো না নিধির।

নিধি ভেবেছিলো আদি না খেয়ে থাকবে কিন্তু হলো উল্টো এখন নিধির না খেয়ে থাকতে হবে প্রতিদিন। কান্না পাচ্ছে নিধির।

“তুমি হা করে তাকিয়ে আছো কেনো?

আদির কথায় নিধি আদির দিক থেকে চোখ ফেরায়।

” আমি করলা খায় না। কিছুটা রাগ নিয়ে বলে নিধি।

“তো? খাবার মুখে পুরতে পুরতে বলে আদি। নিধি চোখ পাকিয়ে তাকায় আদির দিকে।

” রাহ্মসীর মতো তাকিয়ে আছো কেনো? খাবে তো খাবার আছে

“আমি করলা খায় না। আর আপনার বাসায় করলা ছাড়া কিছু নেই সো৷ আমি এখন কি খাবো

নিধি দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে বলে। আদি কানে দেয়

” স্টুপিট। গাঁধার মতো চেঁচাচ্ছ কেনো? খেতে হলে করলা খাবে না হলে খাওয়া দরকার নেই

আদির এরকম সোজাসাপ্টা জবাবে নিধির রাগটা আরও বেরে যায়। হনহনিয়ে রুমে চলে যায়। পায়চারি করে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে

“তাই তো ভাবি কথার মধ্যে এতো তেতো গন্ধ আসে কোথা থেকে। করলা খেয়ে বড় হলে তো করলার মতোই কথা বের হবে। যতসব। আমাকে স্টুপিট বলা। স্টুপিট তুই তোর চোদ্দ গুষ্টি স্টুপিট। নেহাত আমি একটুখানি ভয় পায়। নাহলে দেখিয়ে দিতাম আমি কি।

আদি খাওয়া শেষ করে নিধির রুমে নক করে

” হেই স্টুপিট

এমনিতেই নিধি রেগে আছে তারপর স্টুপিট বলাতে নিধির আরও রাগ হয়

“কথায়ই বলবো না
নিধি খাটে গোল হয়ে বসে

” শুনতে পাও না? কালা না কি?

আদি আবার বলে। নিধি বালিশ ছুঁড়ে মারে দরজায়

“যদি ভার্সিটিতে যেতে চাও তো পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসো

ভার্সিটির কথা শুনে নিধি এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। কোনো রকম পেচিয়ে শাড়িটা পড়ে লাফিয়ে বের হয়। কারণ যেভাবে শাড়িটা পেঁচিয়েছে তাতে হাঁটা পসিবল না।

কোনোরকম লাফিয়ে রুমের বাইরে যায় আর ঠাস করে পড়ে যায়। নিধি একবার চারপাশে চোখ বুলায়

” যাক বাবা আজ লাটসাহেবের সামনে পড়ে যায় নি। আমি তো সব সময় মেপে মেপে পা ফেলে তারপরও খালি ওই লাটসাহেবের সামনে উস্টা খায়। মাঝে মাঝে আমিও ভাবি গোটা দুনিয়া রেখে আমি কেনো লাটসাহেবের সামনেই পড়ে যায়

“তুমি যে একটা ইডিয়েট আর প্রতিবন্ধী তাই পড়ে যাও

আদির কন্ঠ শুনে নিধি চমকে সামনে তাকায়। আদি হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি মনে মনে বলে

” যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধা হয়

আদি নিধির দিকে এগিয়ে এসে নিধির সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে। নিধি কিছুটা ভড়কে যায়। আদি নিধির ঠোঁটের দিকে চোখ রেখে কিছুটা মাতাল করা কন্ঠে বলে

“তোমাকে বলছি এলোমেলো শাড়িতে আমার সামনে আসবা না।

নিধি একটা ঢোক গিলে থেমে থেমে বলে

” আআসলে আমি তো শাড়ি পপপড়তে পারি না

আদি কিছু না বলে নিধির ঠোঁটের দিকেই তাকিয়ে আছে। নিধি অস্বস্তিতে পড়ে যায়। উঠবে যে তারও উপায় নেই

“তোমার ঠোঁটটা এতো বাজে দেখতে কেনো?

নিধি ঠাস করে ঠোঁটে হাত দেয়।
” বাজে দেখতে তাও দশ মিনিট ধরে তাকিয়ে আছেন। একটু সুন্দর হলে কি যে করতেন
মনে মনে বলে নিধি

আদি নিধির ঠোঁটের ওপর থেকে নিধির হাত সরিয়ে দেয়।

“ককি করছেন?

” টাচও করি নি
আদি সোজাসাপ্টা উওর দেয়।

“সত্যিই উনি তো টাচও করে নাই। তাও আমার এমন বাজে ফিলিংস আসছে কেনো? নিধি তুই সত্যিই একটা গাঁধা স্টুপিট।

আদি নিধির ঠোঁটে হাত দিয়ে লিপস্টিক মুছে দেয়। নিধি কেঁপে ওঠে। আদি উঠে সরে দাঁড়ায়। নিধি জোরে জোরে শ্বাস নেয়

” তাড়াতাড়ি করো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

“আআআমি তো

” আমড়া কাঠের ঢেকি সেটা আমি জানি। উঠে দাঁড়াও আমি হেল্প করছি

নিধি দেয়াল ধরে উঠে দাঁড়ায়। আদি পেছন ঘুরেই বলে

“আচল ঠিক করো

নিধি আচল ঠিক করে। আদি নিধির কুচি ঠিক করতে করতে বলে

” তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো। সব কিছু বুঝো তুমি। তাই একটা কথা বলছি ঠান্ডা মাথায়। আমি তোমাকে ভালোবাসতে চায় না। চাই না বলছি কেনো সেটার কারণ হলো। আমাদের মনটা তো আমাদের কন্ট্রোলে থাকে না। যেহেতু আমি একজন পুরুষ মানুষ তো তোমার ওই নাগিনী রুপ দেখে আমারও অনেক বাজে চিন্তা আসে মনে। তোমার তো লজ্জা জিনিসটা নেই। তো বলছি প্লিজ একটু ভালো ভাবে থাইকো। কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছো নিশ্চয়।

নিধি আদির কথা শুনে চোখে পানি চলে আসে। কেনো জানি বুকের বা পাশে ব্যাথা শুরু করে দেয়।
আদি নিধির হাতে কুঁচিটা দেয়

“তুমি তো সৌরভকে ভালোবাসতে তো তুমি নিশ্চয় ভালোবাসার মর্মটা বুঝো। আমি এখনো একটা মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসি। যদিও তাকে কখনো আমি পাবো না তবুও তার জায়গা কাউকে দিতে চায় না। তুমিও নিশ্চয় সৌরভের জায়গাটা কাউকে দিতে পারবে না।

আদি কয়েকপা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে

” ভার্সিটিতে যাচ্ছো কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে না। সো শাড়ি পড়ে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।

নিধি দাঁতে দাঁত চেপে বলে

“আমার ড্রেস নেই। সব শাড়ি

” তোমার রুমের কাবার্ড তো খুলে দেখো

আদি চলে যায়। নিধি এবার চোখের পানি আটকে রাখতে পারে না। টপটপ করে পড়ে।

“নাগিনী সাজ দিয়ে থাকি আমি? লজ্জা নেই আমার? এতো বড় কথা বললো আমাকে

নিধি রুমে চলে যায়। কাবার্ড খুলে দেখে কয়েকটা ড্রেস রাখা। নিধি কালো জিন্স আর সাদা টিশার্ট আর তার ওপরে লাল একটা শার্ট পড়ে। চুল গুলো খোলা।

আদি গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো। নিধি কে দেখে আদি ভ্রু কুচকে নিধির দিকে তাকায়।
” এই মেয়েটা মানুষ হবে না

“চলুন

নিধি গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে। আদি নিধির হাত ধরে

” আর কোনো ড্রেস পাও নি

নিধি হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

“আমার এই ড্রেসটাই ভালো লাগছে

” এসব ড্রেস আমার এখানে চলবে না
নিধি একটা ভেংচি কাটে

“যাও ওড়না নিয়ে আসো

” এই ড্রেসের সাথে ওড়না নিলে জাস্ট কাজের মেয়ে জরিনা লাগবে

“তো তুমি কি নিজেকে কারিনা কাপুর ভাবো না কি

” নাহহ। আমি নিধিরা নিধি।

“এতো কথা পছন্দ না। যাও

নিধি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে ছিট বেল্ট বাঁধে। আদি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়িতে বসে।

“ইডিয়েট

নিধি গাড়ির কাঁচের দিকে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করছে।

” কাঁচটা নামালে মন্দ হতো না
নিধি কাঁচটা নামিয়ে হাঁত ভাজ করে হাতের ওপর মাথা রেখে বাইরে দৃশ্য দেখছে। কক্সবাজার নিধি আগে কখনো আসে নি। এই প্রথম। পঁয়ত্রিশ ঘন্টা হয়ে গেছে কক্সবাজার এসেছে এখনো কোথাও ঘোরা তো দুর বাড়ির চারপাশটাই দেখা হয় নাই।

“আমাকে একটা ফোন কিনে দেবেন?

আদির দিকে তাকিয়ে বলে নিধি। আদি এক পলক নিধির দিকে তাকায়।

” সৌরভের সাথে কথা বলার জন্য

নিধি আবার বাইরে তাকায়। এই মানুষটার সাথে কথা বলাই ভুল।

“ঠিক আছে দেবো

নিধি খুশি হয়ে আদির গাল টেনে দিয়ে বলে

” আমার টুনুমুনু

আদি ঠাস করে গাড়ি ব্রেক করে। নিধি এবার বুঝতে পারে ও কি করেছে। কাচুমাচু হয়ে বসে নিধি। আদি চোখ ছোটছোট করে নিধির দিকে তাকায়

“সরি আসলে খুশি হয়ে এমনটা করেছি

” খুশি হলে গাল টেনে দিয়ে টুনুমুনু বলতে হয়

আদি অবাক হয়ে বলে। নিধি মাথা নিচু করে বসে আছে। নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছে নিধি।

“নামো

নিধি নামে। খুব সুন্দর একটা কলেজ। নিধির চোখ জুড়িয়ে যায়। আদি গাড়ি ছাইডে রাখতে যায়। নিধি ঘুরে ঘুরে কলেজটা দেখছে। নিধি আগে যে কলেজে পড়তো সেই কলেজের থেকেও এটা বেশি সুন্দর। কলেজের দুই পাশে ফুল গাছ। সেখানে নানা রকমের ফুল ফুটেছে। নিধি দৌড়ে দৌড়ে ফুল গাছ গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায়।

এদিকে আদি গাড়ি গাইড করে এসে দেখে নিধি নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও নেই

” আল্লাহ এখন এই গাঁধাকে আমি কোথায় খুঁজবো? আমারই ভুল হয়েছে ওকে নামিয়ে দিয়ে। এবার খুঁজো ইডিয়েট একটা

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-৭+৮

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)

“ভাবতেছি তোমাকে একটা প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেবো

আদি কপাল চুলকে বলে। নিধি তাড়াহুড়ো করে দাঁড়িয়ে বলে

” মন্দ হয় না। এমনিতেও আমার কাছে টাকা নাই। ভাতা করে দিলে তাও তো প্রতি মাসে টাকা পাবো

“নিজেকে প্রতিবন্ধী বলে পরিচয় দিতে তোমার ভালো লাগবে?

” হুমম লাগবে

“ইডিয়েট একটা

” আই নো

“যাও এখান থেকে

” না বললেও যাইতাম। লাটসাহেবের সাথে থাকার ইচ্ছে আমার নাই

মনে মনে বলে নিধি চলে যায়

বাড়ির কারো সাথে কথা বলে না নিধি। নিধির বোন মা অনেক চেষ্টা করে নিধির সাথে কথা বলার নিধি পাত্তাই দেয় না।

গাড়ি ডাইভ করছে আদি আদির পাশে বসে আছে মনি আর পেছনে নিধি। কক্সবাজার আদি মনি এক সাথে কাজ করে। পাশাপাশি ফ্লাটে থাকে দুজন।

আদি আর মনি কাজ নিয়ে অনেক কথা বলছে নিধি ঘুমিয়ে।

ছয় ঘন্টা পরে ওরা কক্সবাজার পৌছায়। নিধি তো ছয় ঘন্টায় ঘুমিয়েছে।

মনি মনির বাসায় চলে যায়। নিধি আর আদি ওদের বাসায়। আদির বাসায় ঢুকে নিধি হা হয়ে যায়। একটা ছেলের বাসা এতোটা গোছালো হতে পারে?

” হা করে না থেকে রুমে যাও

আদির কথায় নিধি ভেংচি কেটে রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়য় এখন আবার আরেক ঝামেলা। নিধির পিরিয়ড শুরু হয়ে গেছে।

“এবার কি করবো? এখানকার কিছুই তো চিনি না

নিধি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়। আদি কিচেনে কফি বানাচ্ছে

” শুনুন

“কান খোলা আছে

কাজে মন দিয়ে বলে আদি।

” আমি মনি আপুর বাসায় যাবো

আদি নিধির দিকে তাকায়। নিধি ওড়নায় গিট্টু দিচ্ছে আর খুলছে

“এখন মনি বাসায় নেই

” কোথায় গেছে

“সমস্যা কি তোমার?

” বলুন না

“মেবি মার্কেটে গেছে

” মনি আপুর নাম্বারটা প্লিজ দেন না

আদি নিধির কাছে আসে

“বলো

নিধি একটু পিছিয়ে যায়

” নাম্বার

“নাম্বার দিয়ে কি করবে সেটা জানতে চাইছি ইডিয়েট
আদি হাঁত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বলে

” কথা বলবো

“আর একটা কথা বলে চাপকে গাল লাল করে দেবো

আদি ধমক দিয়ে বলে। নিধি ভয় পেয়ে যায়

” পিরিয়ড

কাঁপা কাঁপা গলায় বলেই নিধি রুমে চলে যায়।

“এই মেয়েটা সত্যিই গাঁধা। এইটুকু বলার জন্য এতো তালবাহানা। ইডিয়েট একটা

আদি শার্ট চেঞ্জ করে বেরিয়ে যায়।
নিধি আদির বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ নিধির চোখ যায় বেলকনির ঠিক নিচে একটা কবরের দিকে। দুপুরের কড়া রোদে চিকচিক করছে কবরটা। কবরের চার পাশে ফুলের মালা।

” এটা কার কবর? এই বাড়ির মালিকের আপন কেউ হবে হয়ত? এই কবরের মালিক কে হয়ত কেউ একজন ভীষণ ভালো বাসে। তাই এমন সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে।

নিধি ভেবে মুচকি হাসে। আর ভাবে বিকেলে একবার কবরটার পাশে যাবে। তারপর আবার কবরের পাশে তাকিয়ে দেখে আরেকটা কবর। এই কবরটা ছোট। হয়ত কোনো ছোট বাচ্চার। নিধির মন খারাপ হয়ে যায়। কেনো জানি মনে হচ্ছে এই কবর দুটোর সাথে নিধির জীবনের অনেকটা আংশ জুড়ে আছে।

“এই যে নাও

আদির কথায় নিধি পেছনে ঘুড়ে দেখে আদি কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি প্যাকেটটা ধরে।

” এটা বলতে এতো কিসের লজ্জা কে জানে?

বলেই আদি চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে আসে

“দুপুরে আর রাতে তুমি বেলকনিতে আসবা না

বলে আদি চলে যায়

“এতোখনে পুরো ক্লিয়ার হলাম এই কবর দুটোর মধ্যে বিশাল রহস্য আছে

মনে মনে বলে নিধি ওয়াশরুমে যায়। আবার বেরিয়ে আসে ড্রেস নেওয়ার জন্য। লাগেজ খুলে দেখে কোনো ড্রেস নেই খালি পাতলা ছিলছিলে শাড়ি।

” এগুলো পড়বো আমি?

পুরো লাগেজ তন্ন করেও কোনো থ্রি পিছ বা সুতি শাড়ি পায় না নিধি। মন খারাপ করে লাল আর ক্রিম কালার মিশ্রিত একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।

ছোট হাতার ব্লাউজ। প্রায় দশ মিনিট নিধি শাড়ি পড়ার ট্রাই করে। বাট পারে না। পরে বেরিয়ে আসে।

আদি খাটে বসে গেমস খেলছিলো। নিধি কোনো দিক খেয়াল না করে আয়নার সামনে যায় শাড়ি পড়বে। আজ নিধি শাড়ি পড়া শিখবে আর শাড়ি পড়ে হাঁটতেও শিখবে।

আদি একদৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন নেশা নেশা লাগছে। ভেজা লম্বা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। এলোমেলো শাড়ি। সব মিলিয়ে আদি একটা ঘোরেন মধ্যে আছে।

খাট থেকে উঠে নিধির কাছে যায়। ব্লাউজের ফিতা বেঁধে দেয়। নিধি অবাকের সাথে ঘাবড়েও গেছে

“কককি করছেন

আদি নিধির ঠোঁটে আঙুল রাখে

” কোনো কথা না

নিধি চুপ করে যায়। আদি নিধিকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে থাকে। নিধি চোখ বন্ধ করে আছে। আদি নিধির কুচি ঠিক করে দিয়ে নিজেই গুঁজে দেয়। নিধি কেঁপে ওঠে। আদির ছোঁয়ায় নিধির অদ্ভুত এক ফিলিংস হচ্ছে।

“বাকিটা আমি পারবো।
চোখ বন্ধ করে নিধি।

আদি এবার আচলে হাত দেয়। নিধি বড়বড় চোখ করে আদির দিকে তাকায়। আদি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আঁচল ঠিক করে দেয়। কিন্তু কিছুতেই পেট ঢাকতে পারছে না। এতোটাই পাতলা শাড়িটা।

তারপর অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়

“একদম এই রকম ভেজা চুল এলোমেলো শাড়িতে এসে আমাকে ইমপ্রেস করতে আসবা না। তাহলে ভালো হবে না

নিধি মুচকি হেসে বলে

” আমি ইমপ্রেস করতে আসলেই আপনাকে ইমপ্রেস হতে হবে এটা তো কোথাও লেখা নেই

নিধির কথায় আদি বড়সড় চোখ করে নিধির দিকে তাকায়

“ভালোই তো মুখে কথা ফুটেছে

” হুমমম। কথা আগে থেকেই জানতাম কিন্তু থাপ্পড় খাওয়ার ভয়ে বলতাম না।

“এখন ভয় করছে না

নিধি আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে হবে

” পুরো হিরোইন হিরোইন লাগছে আমায়।

“হিরো আলমের বউয়ের মতো লাগছে

” হিরো আলম তো বিয়ে করে নাই

“করছে

” তাও ভালো লাটসাহেবের বউয়ের মতো লাগছে না

“মুখে মুখে তর্ক করতে শিখে গেছো

” তর্ক করতে আগে থেকেই পারতাম শুধু করতাম না। আম্মু বলে পাগলদের সাথে তর্কে জড়ালে না কি ভালো মানুষও পাগল হয়ে যায়

বলেই নিধি দাঁত দিয়ে জীভ কাটে

“হে খোদা আমি কি বেশি বলে ফেললাম। এবার কি হবে

আদি ভ্রু কুচকে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে।

“আমি পাগল

আদি নিধির দিকে এগোতে এগোতে বলে। নিধি পিছিয়ে যাচ্ছে

” আআআপনি এগোচ্ছেন কেনো?

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে নিধি

“তুমি পিছিয়ে যাচ্ছ তাই।

” সরি আমি আসলে এমন কিছু বলতে চায় নি

“সরি টু আমিও আসলে তোমার সাথে কি করতে চায় নি

” দেখুন

“এমনিতেই অনেক কিছু দেখে ফেলেছি

নিধি চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে যায়। লোকটা আসলেি অসভ্য সাথে বদমাইশ। নিধি ঠাস করে পড়ে যেতে নেয় আদি কোমর জড়িয়ে ধরে।

” হাঁটতে শেখো। সব সময় তো আর আমি থাকবো না

“আমি হাঁটতে পারি

নিধি মুখ বাঁকিয়ে বলে।

আদির ফোন বেজে ওঠে। নিধিকে ছেড়ে ফোন রিসিভ করে

” হেলো

ওপাশ থেকে কিছু কথা বলে আদি ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে। নিধি কেঁপে ওঠে। হনহনিয়ে আদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

“কি এমন হলো যার জন্য এতো রেগে গেলো। যাই হোক আমার কি?

নিধি আয়নায় নিজেকে দেখে একটু সাজলে মন্দ হয় না। নিধি কাজল নেয় লাল টকটকে লিপস্টিক নেয়। চুলগুলো আঁচড়িয়ে নেয়। বাহহ পারফেক্ট।

এরপর নিধি কিছু সেলফি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। এটা নিধির একমাত্র কাজ সেলফি তুলে পোষ্ট দেওয়া। একটু পরে কেউ দরজায় নক করে

” এই সময় আবার কে আসলো? লাটসাহেব হলে তো চাবি দিয়ে আসতে পারতো। তাহলে কে?

নিধি ভয়ে ভয়ে গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খোলার পরে সামনের মানুষটাকে দেখে নিধির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।

“এবার নিধিকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৮
#Tanisha Sultana (Writer)

“আআআপনি এখানে?

সৌরভ নিধিকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে।

” বফ তোমার বাড়িতে এসেছে। কোথায় তাকে ওয়েলকাম জানাবে তা না বলছো এখানে কেনো? ইটস নট ফেয়ার নিধিরা

নিধি কি করবে বুঝতে পারছে না। হাত কচলাচ্ছে। ভীষণ ভয় করছে নিধির।

“দেখুন

সৌরভ নিধির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে

” ওয়াও। ইউ আর লুকিং সো হট। কই আগে তো এরকম সুন্দর করে সাজুগুজু করো নি। একদিনে আদির জন্য এতো সাজ। আর দুই বছর আমার সাথে থেকেও কখনো এতোটুকু লিপস্টিকে দেখি নি তোমায়

নিধির এই সৌরভকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ আগের সৌরভ তো নিধির দিকে ভালো করে তাকিয়ে কথা বলতো না। আর এ কতো নাজে কথা বলছে

“আপনি প্লিজ চলে যান

” সব সময় আমিই কেনো চলে যাবো বলতে পারো নিধিরা? প্রেম তো আর একা একা করা যায় না। দুজনেই প্রেম করলাম। বাট প্রথমে তোমার বাবা রিকোয়েস্ট করলে তোমায় মুক্তি দিতে। তুমিও নিখোঁজ হয়ে গেলে। ভালোবাসতে না তাহলে মনটা নিয়ে কেনো খেললে নিধিরা বলো?

সৌরভ চোখ মুখ শক্ত করে চিৎকার করে বলে

“প্লিজ আস্তে কথা বলুন

” নিধি কে এসেছে

মনি নিধিদের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলে। সৌরভকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়

“তুই

সৌরভ একটু হাসার চেষ্টা করে বলে

” এতোদিন তো আমি আদি এই বাসাতেই থাকতাম।

“হুমম বাট এখন আদি বিয়ে করেছে।

” হুমম জানি।

“তাহলে

” আসতে বারণ

কিছুটা রেগে বলে সৌরভ।

“সেটা কোথায় বললাম। নিধি আদি কোথায়?

” একটু আগে বেরিয়েছে

“কোথায় গেছে?

” ঠিক জানি না

তখনই আদি আসে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। সৌরভ মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি আদির দিকে তাকিয়ে আছে। মনি এগিয়ে গিয়ে বলে

“কি রে কোথায় গেছিলি

” একটা জরুরি কাজ পরে গেছিলো

আদি এক নজর নিধির দিকে তাকায়

“তোরা এখানে?

” আমি এসেছিলাম তোদের দেখতে।

“ওহহ

বলেই আদি রুমে চলে যায়।

” নিধি চলো আমি আর তুমি রান্নাটা সেরে ফেলি। নিশ্চয় তোমাদের রান্না বা খাওয়া কোনোটাই হয় নি

“হুমম। সৌরভদা খেয়ে যাবেন প্লিজ

সৌরভ নিধির দিকে এক নজর তাকায়। নিধি আর মনি রান্না ঘরে যায়।

রান্না শেষে নিধি রুমে গিয়ে দেখে আদি শার্ট খুলে বসে আছে। পেছনে বেশ খানিকটা কেটে গেছে। হাতে ছুড়ির ধারালো অংশ। হাত থেকে টপটপ রক্ত পড়ছে। নিধি দৌড়ে আদির কাছে যায়

” এটা আপনি কি করছেন? ছাড়ুন।

নিধি আদির হাত থেকে ছুড়ি ফেলে দেয়।
আদি নিধির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে

“প্রথমেই বলেছি আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা একদম করবে না

” এক্সকিউজ মি নিধিরা নিধির কাউকে ইমপ্রেস করার জন্য সাজুগুজু করার প্রয়োজন হয় না। আর সবচেয়ে বড় কথা। আপনাকে আমার ২% ও ভালো লাগে না যে ইমপ্রেস করবো। বিয়ে হয়েছে আমাদের। তবুও আমি কখনো আপনার কাছ থেকে কিছু এক্সপেক্ট করি না।

আদি দেয়ালে ঘুসি মারে। নিধি আদির হাত ধরে

“পাবলেম কি আপনার?

” আমি একা থাকতে চায়

নিধি আদির হাতের রক্ত পরিষ্কার করতে থাকে

“এটেশন পাওয়ার জন্য করছো

নিধি আদির হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে

” কি মনে করেন নিজেকে? হিরো দাদা কোনো সুপারম্যান যে আপনার এটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করবো? আমি বরাবরই একটু ইমোশনাল। কারো কষ্ট সয্য করতে পারি না। জাস্ট তাই এসেছিলাম। আপনার এটেনশন বা আপনাকে ইমপ্রেস কখনোই আমি করতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি জোর করে পাগলামি করে শুধু পাগল উপাধি পাওয়ার যায় ভালোবাস না

“বড্ড বেশি কথা বলো তুমি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি।

” কথা না বললেও আপনি বকেন আর কথা বললেই বকেন। এনিওয়ে আপনার পিঠে অনেকটা কেটে গেছে

“তোমার ভাবতে হবে না

” হবে। আপনি এখন আমার দ্বায়িত্বে আছেন। তো যখন আমরা বাসায় ফিরবো তখন যদি বাসার সবাই দেখে আপনার একটা হাত নাই বা পা নাই তাহলে তো সবাই বলবে। নিধি তুই আদির খেয়াল রাখিস নি। তখন আমি কি বলবো। জাস্ট এই জন্যই আপনার পিঠে আমি এখন মলম লাগিয়ে দেবো। অন্য কোনো কারণ নেই

আদি হা করে নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা কি সেই নিধি যাকে আদি বিয়ে করছিলো? দেখতে সভ্যশান্ত কিন্তু এতো কথা বলতে পারে।

নিধির আদির দিকে তাকিয়ে বলে

“আমি কিন্তু আপনাকে ইমপ্রেস করতে আসি নি। এখন যদি আপনি আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য তাকিয়ে থাকেন তাহলে আমি থানায় মামলা করবো

আদি চোখ সরিয়ে নেয়। নিধি আদির পিঠে মলম লাগায়
” সৌরভ এসেছে। ওর জন্য এতো সাজ। বাহহহ গুড। তুমি চাইলে আমি ধুমধাম করে সৌরভের সাথে তোমার বিয়ে দেবো

নিধির রাগ হয়

নিধি ভেবেছিলো এখন কেউ আসবে তাই একটু সেজে ছিলো। কিন্তু একটু সাজার জন্য যে সবাই এতোকিছু গবেষণা করবে এটা নিধির ভাবা ছিলো না।
ঠাস করে মলম রেখে নিধি চলে যায়

আদি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে আর রাগে গজগজ করছে নিধি। মনি বলে

“নিধি কি হয়েছে?

নিধি ঠাস করে ভাতটা নামিয়ে বলে

” কি মনে করে ওই লাটসাহেব? সব সময় আমার সাথে এমন করবে। আমি কি জোর করে ঘাড়ে চেপে বসেছি না কি?

মনি মুচকি হেসে নিধির কাঁধে হাত রাখে

“আদি এরকমই। কাঁটায় ভরা আদির জীবনটা

” কেনো?

“যাও আদিকে ডেকে নিয়ে এসো

নিধি যাওয়ার সময় সৌরভের মুখোমুখি হয়

” নিধিরা

“পথ ছাড়ুন

” চেনো না আমাকে? অচেনা আমি? এমন বিহেব কেনো করো? মানছি বাবার চাপে বিয়ে করছো। তাহলে এখন বাবা নেই আমি আছি

“পাগলামি করছেন কেনো?

” পাগল তুমি করেছো আমাকে নিধি।

“আমি এমনটা করতে চায় নি

” চুপচাপ আমার সাথে চলে যাবে তুমি। অনেক দুরে চলে যাবো আমরা।

সৌরভ নিধির হাত ধরে বলে
নিধি হাত ছাড়িয়ে নেয়

“আমাকে যেতে হবে।
নিধি চলে যায়। সৌরভ নিধির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে

নিধি আদির রুমের বাইরে জোরে চিৎকার করে বলে

” আমি কাউকে ইমপ্রেস করতে আসি নি। মনি আপু বলেছে এই বাড়িতে একটা বিড়াল থাকলে তাকেও ডেকে আনতে। আমি ডাকতে এসেছি। কারো খেতে ইচ্ছে হলে চলে আসতে পারে

নিধির কথা শেষ হলে সামনে তাকিয়ে দেখে আদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি দৌড় দিতে যায় আদি হাত ধরে

“আমি বিড়াল

” আপনি বিড়াল? কই মানুষের মতোই তো দেখা যায়। বেড়াল হলেন কবে?

“সাটআপ। ইডিয়েট একটা।

নিধি কেঁপে ওঠে

” আআমি ভয় পায় নি

একটু সাহস সঞ্চয় করে বলে নিধি

“আচ্ছা। আদি বাঁকা হেসে বলে
আদি নিধিকে রুমে নিয়ে যায়

” ককি করছেন?

“সত্যি সত্যি ভয় পাও না কি টেস্ট করছি

রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। নিধির হাত পা কাঁপছে। আদি নিধির দিকে এগোচ্ছে। নিধি যেখানে ছিলো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে

” দেখুন এভাবে এগুলো আমার ভয় করে না। কারণ আমি জানি আপনি একটা কিসও করবেন না। সো আমি দাঁড়িয়ে আছি আপনি এগোন

আদি দাঁড়িয়ে যায়।

“ওভারস্মার্ট

আদি বিরক্তি নিয়ে বলে নিধিকে

” গাঁধা ইডিয়েট বলদ ননসেন্স স্টুপিট ওভারস্মার্ট। এসব আমি জানি। এবার ভাবুন নতুন কোনো নাম দেওয়া যায় কি না

“ইডিয়েট

বলেই আদি চলে যায়। নিধি জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিধিও যায়।

খাওয়া শেষে মনি আর সৌরভ চলে যায়। নিধি রুমে এসে টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে।

গানের শব্দে নিধির ঘুম ভাঙে। গানের সুরটা কোথা থেকে আসছে দেখার জন্য নিধি বেলকনিতে যায়। দেখে কবরের পাশে বসে কেউ গিটার বাজাচ্ছে আর গাইছে

” এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই
তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চায়
মেঘলা হয়ে যাক আরও পাঁচটা বারো মাস
কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস
শুধু তুই শুধু তুই আমি চাইছি না কিছুই

“কে গাইছে গানটা?

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-৫+৬

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana (Writer)

“উমমমমমমমমমমমম

” সাট আপ। কিসের উমম করছো? গাঁধা একটা
দাঁত কটমট করে বলে আদি।

নিধি হাতের দিকে ইশারা করে

“উমমম

” আবার
ইচ্ছে করছে পুকুরে চুবিয়ে রাখি

নিধি এবার নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আদির হাত মুখ থেকে সরায়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
“বললেই হতো হাত সরান। এতো নাটক করার কি আছে? ড্রামা কুইন একটা

আদির কথা শুনে নিধি দাঁত কটমট করে আদির দিকে তাকায়

” গাঁধা আমি না আপনি। এইটুকু সেন্স নেই যে মুখে হাত দিয়ে রাখলে কি করে কথা বলবো। ইচ্ছে করছে বলি কিন্তু
না নিধি না কোনো কিন্তু না। এই লাটসাহেবকে তুই একটুও ভয় পাবি না। বি পজিটিভ নিধি। বলে দে। নিজেকে প্রমাণ কর যে তুই গাঁধা না

নিধি মনে মনে নিজেকে নিজে বাহবা দিচ্ছে।

“টমেটোর মতো গাল ফুলিয়ে নিজেকে ছাগল প্রমাণ করছো

আদির কথায় নিধি যতটুকু সাহস সঞ্চয় করেছিলো সেটুকু ফুস করে বেরিয়ে যায়।

নিধি দুই কানে দুই দিয়ে ধরে

” বিশ্বাস করুন আমি তখন ইচ্ছে করে পড়ি নি। আপনার মুখে লিপস্টিক থাকার জন্য প্লিজ আমাকে দায়ী করবেন না। আমি ইনোসেন্ট

“ইডিয়েট

নিধির কান্না পাচ্ছে। সারাক্ষণ গাঁধা ইডিয়েট ননসেন্স এগুলো শুনতে কার ভালো লাগে। কতো সুন্দর নাম আমার নিধিরা নিধি। নাম ধরেও তো ডাকতে পারে। নাম ধরে ডাকলে তো আবার সম্মান ফুরিয়ে যাবে। এরকম পাগলের সাথে থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাবো

নিধি মনে মনে ভাবছে।

” কান খুলে শুনো

“বলেন

” আমার থেকে সব সময় দুরে দুরে থাকবে। একদম আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবা না। তার ফল ভালো হবে না। তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আর ফিউচারেও থাকবে না

“সেম টু ইউ

” কিছু বললে

“নাহহহ শুনলাম কান খুলে। মনে থাকবে। ওইদিকে দরজা

নিধি বিরক্তির একটা হাসি দিয়ে বলে।

” লাইফটাকে সার্কাস বানিয়ে ছাড়বে ডিজগাস্টিং

আদি বেরিয়ে যায়। নিধি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে

“ইহহহহ ডিজগাস্টিং। লাটসাহেব কোথাকার। আমাকে যে হার্টের রুগী বানিয়ে দিলো তার বেলায় কিছু না। ইহহহহ আমার প্রতি ইন্টারেস্ট নাই। আমারও আপনার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। দুনিয়ায় কি ছেলের অভাব না কি। ডিভোর্স দিয়ে দেবো আপনাকে

এবার সাওয়ার অন করে আর নিধির মনে পড়ে ড্রেস রুমে রেখে এসেছে। ঠাস করে সাওয়াব বন্ধ করে দৌড়ে বেরতে যায় ড্রেস আনতে। তারপর যা হওয়ার তাই। শাড়িতে বেঁধে ঠাস করে পড়ে যায়।

আদি চুল ঝাড়ছিলো কিছু পড়ার শব্দে পেছনে তাকায়। দেখে শাড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে নিধিরা নিধি বসে আছে

” কমনসেন্স নাই তোমার? প্রতিবন্ধী তুমি? হাঁটতে শিখো নাই? যেখানে সেখানে ধাপ ধাপ উষ্টা খাও।

নিধি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে

“আমি তো

” আমি তো কি? দুই মিনিটও আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবা না তাই তো?

নিধি একা একা উঠার চেষ্টা করে আবার পড়ে যায়

“ড্রামা করা শেষ?

আদি নিধি এক হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।

” এবার পড়ে গেলে আম গাছে ঝুলিয়ে রাখবো

নিধি খাটের দিকে এগোতে নেয়

“ওদিকে কোথায় যাচ্ছো? পড়ে গিয়ে কি মাথা উল্টো হয়ে গেছে না কি?

” ড্রেস আনতে

“যাও আমি দিচ্ছি

নিধি মেপে মেপে পা ফেলে যায়

” আস্ত একটা লাটসাহেব

“লাটসাহেব কে?

নিধি চমকে পেছনে তাকায়। নিধির ড্রেস হাতে আদি ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি থেমে থেমে বলে

“ইয়ে মানে আমি

” তোমার ড্রেস। দয়া করে এখান থেকে চেঞ্জ করে বেরিয়ো ননসেন্স

ড্রেস দিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে আদি চলে যায়।
আদি বের হয়ে দেখে মনি দাঁড়িয়ে আছে

“তুই

” দেখতে আসলাম তোর বউয়ের হইয়েছে না কি

“আস্ত একটা গাঁধা। পাগল করে দেবে আমায়

মনি আদির কাছে এসে আদির গালে হাত দিয়ে বলে

” কতোটা বদলে গেছিস তুই। নিধিই পারবে তোকে মানুষ করতে। আমি তো

আদি মনির হাত সরিয়ে দেয়

“ও তো নিজেই মানুষ না। আমাকে কি করে মানুষ করবে?

নিধি চেন্জ করে বের হয়। দেখে আদি আর মনি কথা বলছে। নিধিকে দেখে মনি হাসি মুখে এগিয়ে আসে নিধির দিকে

“ভালোই তো আঁচলে বেঁধেছো আমার নিরামিষ বেষ্টুকে।

নিধি মাথা নিচু করে হাত কচলাচ্ছে। আসলে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না

” মনি তোর বরাবরের স্বভাব চার লাইন বেশি বোঝা। সেরকম কোনো বেপার না। প্রতিবন্ধী তো তাই সব সময় পড়ে যায় আর তুই অন্য কিছু মিন করিস। যেটা আমার বিরক্ত লাগে

আদির কথায় মনি সামান্য রাগ করার ভান করে বলে

“আজিব তো। আমি সব সময় ঠিকটা দেখি আর ঠিক তাই মিন করি। তুই আমাকে ভুলটা বোঝাতে চাস। বাট মনি তো আর বোকা না। নিধি তোমাকে তোমার বরের বেপারে একটা সিক্রেট বলবো

নিধি ভ্রু কুচকে আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করে

” কি বলো?

মনি আদির দিকে তাকায়

“বলবো

আদি বিছানায় বসে বলে “এজ ইউআর উইশ”
মনি মুচকি হাসে। নিধি এখনো অধিক আগ্রহে মনির দিকে তাকিয়ে আছে।

“বলেই দেই

” হুম আপু বলো

“গাঁধাকে বলে কোনো লাভ নেই। এতো বোঝেই কম।
নিধির রাগ হয়। এমনিতে যা খুশি বলুক কিন্তু অন্য মানুষের সামনে এরকম বললে কেমন লাগে। এর কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।

নিধি মন খারাপ করে ” হুম” বলে। মনি নিধির কাঁধে হাত রেখে বলে

“যাওয়া যাক

মনি নিধিকে নিয়ে যায়।
সন্ধায় বউভাতের রিসেশন শেষ। নিধির প্রচুর গরম লাগছে। একেতে ভারি লেহেঙ্গা তারপর গহনাগাঁটি আবার পাশেই আদি বসে ফোন দেখছে। ভালো করে নড়াচড়াও করতে পারছে না নিধি। মেহমান গিজগিজ করছে। নিধির ওর মা বাবাকে সেই কখন একবার দেখেছিলো আর তাদের পাত্তা নেই। পৃতি ইমন নিরা মনি কেউ এদিকে আসছে না।
মনে মনে দোয়া করছে কখন এখান থেকে উঠতে পারবে।
আদি একবার নিধির দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দেয়।

” বলছিলাম কি

“না শুনলে জানবো কি করে কি বলছিলে। তাছাড়া আমি কারো মনের কথা বুঝতে পারি না। চেষ্টাও করি না।
আদি ফোনে চোখ রেখই বলে

” আমি রুমে যাবো
নিধি অসহায় ফেস করে বলে। আদি ফোন থেকে চোখ সরিয়ে নিধির দিকে তাকায়

“তো আমি এবার তোমায় কোলে নেবো কি?
আদি বিরক্তি নিয়ে বলে।
নিধির খুব রাগ হয়।

” মানলাম বিয়ে তে ওনার মন নেই। আমারও তো মত নেই। আমিও থাকতে চায় না ওনার সাথে। কিন্তু তাই বলে সব সময় বাঁকা কথা বলবে?৷ মনে হয় উনি পেটে থাকতে ওনার মা বাঁকা কথা বলতো
নিধি বিরবির করে বলছে। নিধি এবার উঠে দাঁড়ায়

“শোনো

নিধি আদির দিকে তাকায়। আদি ফোন পকেটে রেখে পকেটে হাত গুঁজে বলে

” আজকে বিছানায় পানি ঢাললে তোমাকে ছাঁদে রেখে আসবো। আর না হলে হাত পা বেঁধে বস্তায় ভরে পানিতে ভাসিয়ে দেবো মাইড ইট

বলে আদি চলে যায়।

“এতো ভয় দেখানোর কিছু নেই। আজ আমি এমনিতেও পানি ঢালতাম না। আজ তো অন্য প্লান আছে।

নিধি রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় তখন নিরা আসে

” কোথায় যাচ্ছিস

“চেঞ্জ করতে

“পরে চেঞ্জ করিস। এখন যা আদির ফ্রেন্ডরা এসেছে ওদের সাথে পরিচিত হ। মেহমান কমলে চেঞ্জ করবি। চল

” ধুর। লাটসাহেব তো ওনার বন্ধুদের সামনে আমাকে গাঁধা ইডিয়েট ননসেন্স বলবে

“গাঁধার মতো কাজ করলে তো বলবেই

” তুই আমার বোন তো

“নাহহ তোকে কুড়িয়ে এনেছিলাম

” তাই মনে হয়

“যা খুশি মনে কর। এবার চল

নিরা নিধিকে টেনে নিয়ে যায়। আদি দুটো ছেলের আর একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। দুটো ছেলের মধ্যে একজন বলে

“ব্রো আমাদের ভাবিকে দেখাবি না?
তখন নিরা নিধিকে নিয়ে আসে

” এই তো তোমাদের ভাবিকে নিয়ে এসেছি।

নিধি ওদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। কারণ নিধির এক্স বফ এখানে।

“তুমি

নিধির এক্স সৌরভ বলে। আদি একবার সৌরভের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার নিধির দিকে। নিরা প্লাস বাকি দুজনও ওদের দিকে তাকিয়ে আছে
নিধির গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এবার যা হবে তা থেকে আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। লাটসাহেব ডিভোর্স দিয়ে দেবে। আব্বু বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আম্মু চুল ছিড়বে। আল্লাহ বাঁচাও। লাস্ট বারের মতো

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana (Writer)

“” তুই ওকে কি করে চিনিস? না মানে আমরা তো অলওয়েজ একসাথে থাকতাম ইভেন এখনও থাকি। তো তুই ওকে চিনিস আর আমরা জানি না। এটা কি করে পসিবল

আদি চোখ ছোট ছোট করে সৌরভকে জিজ্ঞেস করে

” হুম সেটাই। আমাদের তো কখনো বলিস নি।
মুন্নি (আদির ফ্রেন্ড) বলে

“আমরা এক দুনিয়ায় এক দেশের এক জেলার মানুষ। তো চিনতে পারিই। অবশ্য তোদের বলতেই যাচ্ছিলাম তার আগেই

নিধি বড়বড় চোখ করে সৌরভের দিকে তাকায়। সৌরভ চুপ হয়ে যায়

“হুমমম চিনতেই পারে। বাট কি করে চিনে?

নিরা বলে।

” বল নিধি ওকে কি করে চিনিস?

নিধি হাত কচলাচ্ছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। সবার সামনে বলে দেবে সৌরভ আমার এক্স? এটা শুনে সবার রিয়াকশন কেমন হবে? আদি কি আমাকে তাড়িয়ে দেবে? দিলেই বা আমার পবলেম কি? আমি তো এই লাটসাহেবের সাথে থাকতেও চায় না।

“ও সৌরভকে কিভাবে চিনে এটা জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। একটা মানুষ আর একটা মানুষকে চিনতেই না। বিষয়টা নরমাল। এটাকে তুমি এতো ইস্যু কেনো করছো ভাবি আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না।

আদির কথা শুনে নিধি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
সৌরভ চোখ ছোটছোট করে নিধিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। একটুও পাল্টায় নি নিধি। আগের মতোই ভয় পায়। লাস্ট সৌরভের সাথে নিধির কথা হয়েছিলো তিন মাস পনেরো দিন পরে।

” কেমন আছো নিধিরা?

সৌরভের প্রশ্নে নিধি চমকে ওঠে।

“ভভভালো

” আরে তুতলাচ্ছো কেনো? ভয় পাও

“ও একটু না পুরোটাই ভীতু

আদি নিধির দিকে তাকিয়ে বলে

” কিছু মেয়েদের এইরকম ভয় পাওয়াটা আমার দারুণ লাগে। প্রেমে পড়ার মতো

“আমি আসছি

বলেই নিধি ওই স্থান থেকে চলে যায়। আদির কিছুটা খটকা লাগলেও আদি এই মুহুর্তে এসব নিয়ে ভাবতে চায় না। যা ইচ্ছে করুক এই মেয়েটা আমার কি? এটা বলেই আদি একটা শ্বাস নেয়।

নিরা নিধির পেছন পেছন চলে যায়। সৌরভ নিধির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এক্সকিউজমি বলে আদিও ওখান থেকে চলে যায়।
রুমে গিয়ে ধপাস করে বসে পড়ে নিধি

” হায় খোদা এ আবার কোথা থেকে উদয় হলো। এতো সবাইকে বলে দেবে এখন কি করবো? আর বলে দিলে দিক। আমার কি? প্রেম করছি ওর সাথে। এটা লুকোনোর কি আছে?

“ঠিকি তো প্রেম করলে লুকোনোর কি আছে? ঢাকঢোল পিটিয়ে বলে বেড়াও সবাই কে

আদি দাঁতে দাঁত চেপে বলে। আদির কন্ঠে নিধি ঘাবড়ে যায়।
” যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধা হয়”

“আসলে

” আই ডোন্ট মাইন্ড। তোমার প্রতিই আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তো তোমার এই পারসোনাল লাইফের প্রতি আমার কেনো ইন্টারেস্ট থাকবে। যা ইচ্ছে করো। তাছাড়া আমারও গার্লফ্রেন্ড ছিলো।

“আপনার মতো লাটসাহেবের সাথে আবার কোন মেয়ে প্রেম করছিলো

নিধি বিরবির করে বলে

” কিছু বললে

“নাহহহ

আদির ফোন বেজে ওঠে।

” মনে হয় আপনার এক্স ফোন দিছে

“এক্স না পেজেন্ট। আমাদের এখনো ব্রেকআপ হয় নি

বলে আদি ফোন রিসিভ করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

” এখনো ব্রেকআপ হয় নি।

রুমে এসে নিধি চেঞ্জ করে। এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে। একগাট্টি গহনা পড়ে থাকা যায় না কি? বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় নিধি

” এখন এক কাপ কফি হলে মন্দ হতো না

ভেবে মুচকি হাসে নিধি। আবার মনে পড়ে এখন কফি পাবো কই। আবার নিধির মুড অফ হয়ে যায়। নিধি ভাবতে থাকে আদির সাথে প্রথম দেখা হওয়ার দিনের কথা।

নিরার গায়ে হলুদের দিন। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো। নিধি হলুদ শাড়ি আর কাঁচা ফুলের গহনা পড়ে ছিলো। আদিদের বাড়িতে এসেছিলো আশিককে হলুদ দিতে। বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় নিধি আদিদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভিজছিলো আর লাফাচ্ছিলো। তখন আদি গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসতে যায় আর নিধি আদির গাড়ির সামনে গিয়ে পড়ে ঘুড়তে ঘুড়তে।

“ইডিয়েট দেখে চলতে পারো না? ব্যেঙের মতো লাফাচ্ছো কেনো?

নিধি শুধু আদির দিকে তাকিয়ে ছিলো।

” অচেনা অজানা মেয়ের সাথে কেমন বিহেব করছে।

আদি ভেবেছিলো নিধি হয়ত খুব ব্যাথা পাইছে তাই নিধিকে কোলে তুলে ভেতরে নিয়ে যায়। ভয়ে নিধি ঙ্গান হারিয়ে ফেলে।

হুশ ফিরতে নিধি দেখে নিধি আদির রুমে সুয়ে আছে। পাশে আদির মা বাবা আশিক পৃতি। নিধি চোখ খুলছে দেখে আদি বলে

“গাঁধা তুমি? রাস্তার মধ্যে ধেইধেই করে লাফাচ্ছিলে কেনো? কমনসেন্স নেই তোমার?

আদির মা আদিকে চুপ থাকতে বলছিলো।
সেই দিন থেকেই নিধি ভেবে রেখেছিলো আর কখনো আদির সামনে যাবে না।

এসব ভেবে নিধি দীর্ঘ শাশ্ব ফেলে।
“এই মেয়ে

নিধি পেছনে তাকিয়ে দেখে শাশুড়ী।

” জ্বী বলুন

“ছয়টার ট্রেনে আদি কক্সবাজার যাচ্ছে তুমি জানো?

নিধি মাথা চুলকে বলে

” না

“কেমন বউ তুমি

” আসলে আপনার ছেলে বলে নি।

“লাগেজ গুছিয়ে নাও

” ওনারটা?

“নাহহহ তোমারটা

বলেই শাশুড়ী চলে যায়।

” আমি কক্সবাজার? তাও আবার ওই লাটসাহেবটার সাথে। কি করে থাকবো? উনি তো আমাকে মেরে গুম করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেবে। আম্মু আব্বু কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না। নিধিরা নিধি নিখোঁজ।

এসব ভেবে নিধি ধপাস করে খাটে বসে পড়ে। নিরা আসে

“তুই বসে আছিস কেনো?

” আপি প্লিজ আমি যাবো না

অনুনয়ের সুরে বলে নিধি। নিরা নিধির দুই গালে হাত দিয়ে বলে

“বিয়ের পরে স্বামীই মেয়েদের সব হয়। আদি খুব ভালো ছেলে একটু বুঝ ওকে।

নিধি নিরার হাত ছাড়িয়ে বেলকনিতে চলে যায়। খুব কান্না পাচ্ছে নিধির।আম্মু আব্বু বোন সবাই নিধির বিরুদ্ধে চেলে গেছে। নিধিকে কেউ আর পাত্তা দেয় না। কেউ নিধির কথাও বুঝতে চায় না। নিধিরও যে একটা মন আছে এটা কেউ ভাবে না। সবাই কেনো এটা ভাবে আমি আদির সাথে থাকলে ভালো থাকবো?

চোখের পানি আটকাতে পারে না নিধি। টপটপ করে পানি পড়ছে।
কখন যে বেলকানিতেই নিধি ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারে নি।

রাত তিনটার সময় শাশুড়ীর ডাকে নিধির ঘুম ভাঙে। বেলকনি থেকে রুমে এসে দেখে আদি হাত পা ছড়িয়ে নিশ্চিতে ঘুমচ্ছে। নিধি দরজা খুলে

” এতোখনে ঘুম ভাঙলো? কটা বাজে খেয়াল আছে? আদিকে ডাকো।

বলেই শাশুড়ী চলে যায়।

“আমি ডাকবো লাটসাহেবকে? আমাকে তো এক ধমকে বসিয়ে দেবে। নাহহ বাবা পারবো না। কিন্তু না ডাকলে শাশুড়ী তো বকা দেবে

” ভোর তিনটা বেজে গেছে। কারো ওঠার তাড়া থাকলে উঠতে পারে

চিল্লিয়ে বলেই নিধি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আদি হুরমুর করে উঠে বসে

“ডাকার স্টাইল ই বলে দেয় এই মেয়েটা কতো বড় ইডিয়েট প্লাস গাঁধা।

নিধি ওয়াশরুমে গিয়ে বুকে থু থু নেয়

” একটুর জন্য বেঁচে গেছি। নাহলে আজকে লাটসাহেব আমাকে বৃন্দাবন পাঠিয়ে দিতো

“হেই ইডিয়েট ওপেন দা ডোর

আদি দরজায় নক করে বলে। নিধি চমকে ওঠে

” কথা কানে যাচ্ছে না।

“পপপপাঁচ মিনিট

” ধুর

আদি বিরক্ত হয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
নিধি কান পেতে দেখে আদির কোনো সাড়াশব্দ নেই। একটু একটু করে দরজা খুলে উঁকি দেয়। নাহহ আদি নেই। এবার নিধি পা টিপে টিপে বেরিয়ে লাগেজটা নিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

ঠিক পাঁচ মিনিট পরে আদি এসে দেখে ওয়াশরুমের দরজা খোলা। কাবার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে আদি ওয়াশরুমে যায়।

এবার নিধি রুমের বাইরে গিয়েও বিপদে পড়েছে। কোথায় যাবে? কার রুমে যাবে? এসব ভেবে আবার রুমে ফেরত আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নেয়।

তারপর আবার তাড়াহুড়ো করে বেরোতে যায় আর লাগেজে বাড়ি খেয়ে ধপাস করে পড়ে যায়

“ওহহ আল্লাহ গো

কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে আদি বেরিয়ে আসে। দেখে ওর গুনোধর বউ পড়ে আছে। আদি চোখ মুখ শক্ত করে তাকায় নিধির দিকে

“এইবার যে কি বলবে আল্লাহ জানে? আল্লাহ বাঁচাও

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-৩+৪

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)

আজ নিধির বিয়ের দিন। লালটুকটুকে বউ সেজে নিধি নিজের রুমে বসে আছে। নিধির সাথে নিরা পৃতি (আদির বোন) ইমন (আদির কাকাতো ভাই) আরও অনেকেই আছে। নিধির বিরক্ত লাগছে। এতো কষ্ট হয় বিয়েতে জানলে আগেই পালিয়ে যেতো নিধি। এক ঘন্টা ধরে বসে আছে।

কাজিসহ কয়েকজন মুরিব্বি ঢুকে নিধির রুমে

“বলো মা কবুল

নিধি একবার সবার দিকে তাকায়। নিধির বাবা ইশারায় কবুল বলতে বলে। নিধি এবার বলে ওঠে

” আগে লাটসাহেব কে কবুল বলতে বলেন। আমি আগে কবুল বললে বলবে
ননসেন্স তুমি আগে আগে পাকনামি করে কবুল বললা কেন? ইডেয়েট একটা। গাঁধা তুমি। আমি বাপু এতো বকা খেতে পারবো না

নিধির কথা শুনে কাজিসহ উপস্থিত সবাই হা হয়ে যায়। এই মেয়ে বলছে কি?
নিধি সবার দৃষ্টি বুঝতে পেরে বলে

“সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে? আমাকে কি জোকার মনে হচ্ছে?

” গাঁধা তুই এতো পাকনামি করছিস কেনো? ইমন নিধির মাথা গাট্টা মেরে বলে।

“লাটসাহেব আগে কবুল বলেছে এখন তুমি বলো

কাজি মুচকি হেসে বলে। নিধি একটু ভেবে কাজির কানে ফিসফিস করে বলে

” বলছিলাম কি আমি যদি কবুল না বলি তাহলে কি বিয়েটা হবে না

কাজিও ফিসফিস করে বলে

“বিয়েটা হয়েই গেছে কবুল তো জাস্ট সবাইকে শোনানোর জন

নিধি মুখটা কালো করে বলে ” ওহহ”
কাজি নিধির বাবাকে চোখ মারে।কাজিকে নিধির বাবাই এসব বলতে বলেছে। আসলে নিধি যে এমন কিছু বলবে সেটা নিধির বাবা আগেই আন্দাজ করেছিলো।

অবশেষে নিধি কবুল বলে দেয়। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে।
সবাই চলে যায় শুধু নিরা পৃতি সাগর নিধির মা থাকে।

নিধি এবার ভ্যাঁ ভ্যা করে কেঁদে ফেলে। সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়

“একি রে কবুল বলার সময় মেয়েরা কাঁদে আর তুই কবুল বলার পরে কেনো?
ইমন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

নিধি কাঁদতে কাঁদতে বলে

” বাসর ঘরে লাটসাহেব আমাকে বকবে এটা ভেবে কাঁদছি। না জানি কি করবে আমার সাথে। এটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে

“পরে কাঁদিস। এখন কাঁদলে তোকে পেতনির মতো লাগবে তখন তুই সেলফি তুলবি কি করে? আর লাটসাহেব অনেক কিছু করবে এটা ঠিক কিন্তু বকবে না

নিধি কান্না অফ করে নিরার দিকে তাকায়

“এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?

“নিরা এই গাঁধার সাথে কথা বলিস না। হতে পারে এটা আমার মেয়ে কিন্তু দিন দিন একটা বলদ হয়েছে

এটা নতুন কিছু না। নিধির মা সব সময় ওকে গাঁধা বলে।
বিদায়ের সময় নিধি কারো সাথে কথা বলে নি কাঁদেও নি। কেনো কথা বলবে? মা ওই ভাবে বলদ বললো। নিধির বাবা মা খুব কেঁদেছে। বলদ হোক ছোট মেয়ে তো।

আদির পাশে গাড়িতে বসে আছে নিধি। একেতে ভারি লেহেঙ্গার তারপর পাশে একটা লাটসাহেব সব মিলিয়ে নিধির বিরক্ত লাগছে। আদি এক মনে ফোন দেখে যাচ্ছে। না জানি ফোনে কি আছে।

নিধি একটু উঁকিঝুঁকি মারছে দেখার জন্য আদি ফোনে কি করছে। বিষয়টা আদি খেয়াল করে

” হোয়াট

আদির কন্ঠে নিধি চমকে সোজা হয়ে বসে। আদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

“তুমি এভাবে উঁকি মারছিলে কেনো?

” কবে? কোথায়? কখন?

“একটা থাপ্পড় মারলে সব মনে পড়ে যাবে। তুমি জানো এভাবে কারো পারসোনাল জিনিস দেখতে নেই

” কিন্তু আমি তো

“তুমি তো কি? কোনো এক্সকিউজ দেবে না। আর তোমাকে বিয়ে করেছি বলে একদম মাথায় চড়ে বসবে না। বউ বউয়ের মতো থাকবে।

” সেম টু ইউ

নিধি বিরবির করে বলে।৷ নিধির কথা আদি শুনে ফেলে।

“একদম ভুলে যাবে না তুমি আমার বাড়িতে থাকবে। সো আমার কথা শুনে চলবে

” আমার বয়েই গেছে। ইচ্ছে তো করছে লাথি মেরে গাড়ি থেকে ফেলে দেই কিন্তু আফসোস ওতো সাহস নিধিরার নেই।৷ ধুর
নিধি মনে মনে বলে

“এই তুমি ভেংচি দিলে কেনো?

আদির কথায় নিধি আকাশ থেকে পড়ে।

” কখন ভেংচি দিলাম

“এখন

” ঝগড়া করতে একটা রিজন লাগে তো আপনি রিজন পেলেন না তাই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে এসেছেন

“কি বললে তুমি আমি ঝগড়া করছি

আদির কথা শুনলে নিধিরও কথার উওর দিতে ইচ্ছে করবে। আর উওর দিলেই চড় খেতে হবে। কথায় কথা বাড়ে তাই নিধি কানে হেডফোন গুঁজে নেয়। এখন লাটসাহেবের যত ইচ্ছা কথা বলুক।

নিধি কানে হেডফোন নেওয়ায় আদি বেশ বিরক্ত হয়। একেতে এই মেয়েকে সয্য হয় না তার ওপর চ্যাটাং চ্যাটাং কথা। জাস্ট বিরক্তিকর।

চল্লিশ মিনিট জার্নির পরে নিধি শশুড় বাড়ি পৌঁছায়। শাশুড়ী বরণ করে ঘড়ে তুলে নিধিকে। আদি হন হন করে নিজের রুমে যেতে নেয় আদির মা আটকে দেয়

” কি মা এখন রুমেও যেতে পারবো না
বিরক্তি নিয়ে বলে আদি

“পারবে জাস্ট পাঁচ মিনিট

” কেনো?

“আমি বলছি তাই। আশিক ওকে নিয়ে যাও

আশিক আদিকে নিয়ে যায়। পৃতি আর নিরা নিধিকে আদির রুমে দিয়ে আসে।

” তোমরা যাচ্ছো কেনো?

“তো আমরা কি করবো?
নিরা জিজ্ঞেস করে

” বসো না গল্প করি

“ভাইয়া আসছে ওর সাথে গল্প করিস
পৃতি চোখ মেরে চলে যায়

” সব পাগল

নিধি ঘুরে ঘুরে রুম দেখছে। অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে রুমটা।

“কয়েকটা ছবি তুললে মন্দ হয় না

নিধি আরামসে ছবি তুলতে থাকে।

এখন কথা হলো এই রুমে কোনো সোফা নেই। তো নিধি ঘুমাবে কোথায়? ওই লাটসাহেবের বেডে ঘুমতে গেছে হাজারখানিক ঝাড়ি খেতে হবে। এবার নিধি রুমে রুমে ঘুমানোর মতো একটা জায়গা খুঁজে। অবশেষে পেয়ে যায়। বেলকনিতে একটা দোলনা আছে। নিধি একটা বালিশ আর চাদর নিয়ে বেলকনির দোলনায় শুয়ে পড়ে।
নিধির মাথায় সয়তানির বুদ্ধি আসে

” একটা কাজ করলে কেমন হয়? যদি লাটসাহেব ঘুমতে না পারে

নিধি চট করে উঠে এক জগ পানি নিয়ে আদির বিছানার সামনে যায়। শয়তানির একটা হাসি দিয়ে পানি ঢেলে দেয়

“আমাকে বকা দেওয়ার মজা বুঝো মিস্টার লাটসাহেব। এবার তুমি শান্তিতে ঘুমাও আমার নিরামিষ জামাই
নিধি বেলকানিতে গিয়ে শুয়ে পড়ে। দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায়।

আদি রুমে এসে দেখে নিধি নেই

” গাঁধা টা আবার কোথায় গেলো? যেখানেই যাক আমার কি? আমি শান্তিতে ঘুমাবো এখন।

আদি চেন্জ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে আর অনুভব করে বিছানা ভেজা৷ লাফ দিয়ে উঠে

“স্টুপিট একটা। বিছানায় পানি ঢেলেছে। একে তো আজ আমি পানিতে চুবিয়ে মারবো

আদি হনহনিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। নিধি ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আদি নিধিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় আর নিধির ওড়না দিয়েই নিধিকে বাঁধে খাটের সাথে

” এবার থাকো তুমি এখানে। আমার পেছনে লাগার শাস্তি এটা

আদি বেলকনিতে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

ভেজা ভেজা অনুভবে নিধি চোখ খুলে। দেখে হাত বাঁধা খাটের সাথে। নিধির লেহেঙ্গার ভিজে গেছে

“আমি এখানে কেনো? লাটসাহেবের জন্য আমি তো এসব করেছিলাম। আবার আমি ফেসে গেলাম। এবার এই ভেজা খাটে আমাকেই থাকতো হবে। সত্যিই আমি একটা গাঁধা

নিধির এবার কান্না পাচ্ছে। ওই লোকটা এতো বাজে কেনো? সব সময় কোনো না কোনো ভাবে কষ্ট দেবেই।
নিধির ঠান্ডা লাগছে

” শুনছেনন লাটসাহেব থুক্কু আদিদদদদ শুনছেন

নিধির ডাক আদি শুনতে পাচ্ছে তবুও সাড়া দিচ্ছে না। এই মেয়েটার বোঝা উচিৎ বাঁদরামি করার ফল এমনটাই হওয়া উচিৎ।

“বিশ্বাস করুন আর এমনটা করবো না

আদি এবার বলে

” সত্যি তো

“পাক্কা প্রমিজ
এবার থেকে সাবধানে কাজ করবো। তোকে তো আমি জব্দ করবোই আদি হনুমান
আস্তে করে বলে নিধি

আদি বেলকনির দরজা খুলে আসে। নিধির হাত খুলে দেয়।

” নেক্সট টাইম এমন করলে পুকুরে চুবিয়ে রাখবো

নিধি খাট থেকে নামে।

“আমি ঘুমাবো কোথায়?

মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করে

” আমার মাথায়। গাঁধা একটা। বিছানায় পানি না ফেললে শান্তিতে ঘুমতে পারতাম। এবার থাকো তুমি বসে। আমি তো দোলনায় ঘুমবো

“আমি কিন্তু আগে দোলনায় ঘুমিয়েছিলাম

” কোনো প্রমাণ আছে

“না তো

” তাহলে এখন আমি ঘুমবো। যদি প্রমাণ করতে পারো তো তোমাকে ঘুমতে দেবো

আদি হাই তুলতে তুলতে বেলকনিতে চলে যায়। নিধি এবার কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে

“এই ছিলো আমার কপালে। একটা আস্ত হনুমানকে বিয়ে করেছি। পালিয়ে গেলেও ভালো হতো। এবার করবো কি?

নিধি ড্রেস জন্য করে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana (Writer)

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই আদির ঘুম ভেঙে যায়। দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেয়ে তরিঘরি করে ওঠে।
“শান্তিতে একটু ঘুমতেও দেবে না

চাদর বালিশ নিয়ে আদি রুমে আসে। দেখে নিধি ফ্লোরে দিব্বি ঘুমিয়ে আছে। নিধিকে দেখে মনে হচ্ছে কতো শান্তিতে ঘুমচ্ছে। ফ্লোরে মানুষ কি করে ঘুমতে পারে ভেবে পাচ্ছে না আদি।

” এই মেয়েটা এলিয়েনের থেকে কম কিছু না। আস্ত একটা গাঁধা।

আদি ঠাস করে বিছানায় বালিশ আর চাদর রেখে নিধির কাছে যায়

“হেই গাঁধা ওঠো

নিধি একটু নড়েচড়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে

” প্লিজ আম্মু আর পাঁচ মিনিট ঘুমতে দাও

আম্মু শুনে আদি চোখ বড়বড় করে। বিয়ের পরের দিন বউ আম্মু বলছে।

“স্টুপিড ওঠো আমি তোমার আম্মু না

নিধি হুরমুর করে ওঠে। চোখ ডলে তাকায় আদির দিকে। আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। নিধি হদই তুলতে তুলতে ওয়াশরুমে চলে যায়। আদি ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।

নিধি ফ্রেশ হয়ে জিন্স টপ পড়ে রুম থেকে বের হয়। কিচেনে আদির মা নিরা পৃতি রান্না করছে

” গুড মর্নিং

সবাই নিধির দিকে তাকায়। বাড়ি ভর্তি মানুষ। নতুন বউয়ের এমন ড্রেসআপ দেখে আদির মা নিধির ওপর কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়। নিরা নিধির কাছে গিয়ে বলে

“এটা কি পড়েছিস তুই?

নিধি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে বলে

” আমি তো এসবই পড়ি। তবে আমি জানি আজ এসব পড়া একদম ঠিক হয় নাই। কিন্তু কি করবো? আমি তো শাড়ি পড়ে এক পাও হাঁটতে পারি না। আর থ্রি পিছ তো আমার নেই। তাই বাধ্য হয়ে এটা পড়েছি

শাশুড়ী নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। নিধি শাশুড়ীর কাছে গিয়ে মাথা নিচু করে বলে

“আন্টি আপনি মেবি আমার ওপর রাগ করেছেন

শাশুড়ী কাজে মন দিয়ে বলে

” আমার জা শাশুড়ী ওনারা এইভাবে তোমাকে দেখলে অনেক কথা শোনাবো তো পৃতির একটা ড্রেস পড়ে আসো

নিধি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে পৃতির সাথে যায়। আম্মু বারবার করে বলে দিয়েছে শাশুড়ীর মুখের ওপর কথা না বলতে। তাই নিধি সব মেনে নিচ্ছে।

পৃতির কাছ থেকে নীল রং এর একটা থ্রি পিছ নিয়ে নিজের রুমে আই মিন আদির রুমে যায় চেঞ্জ করতে। আদি শাওয়ার নিয়ে বের হয় আর নিধি রুমে ঢুকে। আদির নিধির দিকে চোখ পড়তেই

“এই তুমি কি বাচ্চা?

নিধি চমকে ওঠে। কারণ নিধি ভেবেছিলো রুমে আদি নেই

“বাচ্চাদের মতো ড্রেসআপ কেনো তোমার? তুমি কি হ্যাঁ

নিধি কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। এই লাটসাহেবের সাথে তর্ক করার চেয়ে নিরব থাকাটাই শ্রেয়। এটা নিধির মনে হয়।

” দিন দিন মেয়েটার সাহস বেড়ে যাচ্ছে। আমার কথার উওর দেয় না। স্টুপিট ইডিয়েট ননসেন্স।

আদি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ড্রেসিং টেবিলের কাছে যায়। ড্রেসিং টেবিল টা ওয়াশরুমের পাশে। নিধি ড্রেস চেঞ্জ করে ওড়না ঠিক করতে করতে বের হয় আর আদি পেছতে যায় দুইজনে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। আদি নিচে নিধি ওপরে। আদির ঠোঁটের সাথে নিধির ঠোঁটটা হালকা ছোঁয়া লাগে। এটাকে ঠিক কি নাম দেওয়া যায়? কিস না হয় এক্সিডেন্ট। দুজনই একটা ঘোরের মধ্যে আছে।

পৃতি নিধিকে ডাকতে এসে দেখে এই অবস্থা।

“নিধি

পৃতির ডাকে আদি ঠাস করে নিধিকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

” স্টুপিট দেখে চলতে পারো না? সারাক্ষণ স্প্রিডে ছুটে কেনো? গাঁধা একটা

আদি চলে যায়। নিধি হা করে তাকিয়ে ছিলো আদির দিকে। পৃতি হাত বাড়িয়ে দেয়। নিধি হাত ধরে ওঠে। পৃতি মুচকি হাসছে

“তুই হাসছিস কেনো?

” এরকম রোমান্টিক ছিন দেখে কে না হাসবে

“এটাকে রোমান্টিক বলে?

নিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে

” হুমমৃ। এবার চল

পৃতি নিধিকে নিয়ে যায়।

খাবার টেবিলে বসে সবাই হাসছে মিটমিট করে। নিধিরও হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসছে না। আদি বেপারটা খেয়াল করছে।

“আমাকে কি তোমাদের জোকার মনে হচ্ছে?

আদির কথায় সবাই হাসি থামায়। আর এক সাথে মাথা নারায় মানে না

” তাহলে হাসছো কেনো?

“দাভাই তোর ঠোঁটে
আশিক ইমনের হাত চেপে ধরে আর ইমন চুপ হয়ে যায়

” আমার ঠোঁটে কি?

ইমন সাথে সাথে বলে

“কিছু না।

” আজিব তো

“আদিদদদদদ

সবাই ডাক অনুসরণ করে ওই দিকে তাকায়। নিধি মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে। হাতা কাটা হাঁটু ওবদি ড্রেস। উঁচু জুতো প্রচন্ড ফর্সা।
মেয়েটাকে দেখে সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আদি মেয়েটার কাছে যায়

” মনি তুই

“সারপ্রাইজ
মেয়েটা হেসে বলে। তারপর হো হো করে হাসে

” কি হলো

“বউকে ভালোবেসেছিস ঠিক আছে তাই বলে

” মানে

“তোর ঠোঁটে লিপস্টিক

আদি ঠোঁটে হাত দেয়। নিধির দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে রুমে চলে যায়
মনি সবার সাথে কথা বলছে।

নিধি মনিকে দেখেছে

” এই আপুটা কতো কিউট, স্মার্ট, কতো সুন্দর করে কথা বলে। একদম পারফেক্ট। ইস যদি ওনার মতো হতাম। ওনার কাছ থেকে টিপস নেবো।
তারপর আবার আদির কথা মনে পড়ে।
“আজ তো লাটসাহেব আমাকে কাঁচা গিলে খাবে

” তুমি নিধিরা নিধি রাইট
মেয়েটা নিধির কাছে এসে বলে।

নিধি হাসিমুখে বলে

“হুমম

” আমি আদির বেস্টফ্রেন্ড মনি রহমান। কাল আসার কথা ছিলো আমার কিন্তু আসতে পারি নি। তাই আজকে চলে এলাম

“খুব ভালো করেছো

” তোমার বরের অনেক সিক্রেট আছে যা তোমাকে বলবো আমি। যদিও তোমার বর শুনলে আমাকে ভীষণ বকবে। জানো আমি একটা কথা ভাবছি। নিরামিষ আদি হঠাৎ আমিষ হলো কি করে? আমি তো ভেবেছিলাম বউয়ের থেকে দুরে থাকবে তাতো দেখি

“নিরামিষ নিরামিষই আছে। এরপখে আমিষ হওয়া ইম্পসিবল।
নিধি মনে মনে বলে

” বড় মা খেতে দাও খুব খিদে পেয়েছে
মনি টেবিলে বসতে বসতে আদির মা কে বলে। আদির মা খেতে দেয়।

এবার তো নিধির রুমে যেতে হবে। কিন্তু রুমে গেলেই হাজার খানি বকা খেতে হবে।

“আমি কেনো ভয় পাবো? আমার তো কোনো দোষ নেই। আমি কি ইচ্ছে করে পড়েছি না কি? আমাকে যদি লাটসাহেব কথা শোনাতে আসে তাহলে আমিও চুপ করে থাকবো না।
নিধি নিজেই নিজেকে বাহবা দিয়ে দু পা এগিয়ে যায়। আবার পিছিয়ে আসে

” যদি থাপ্পড় দেয় তখন? আমার তো হাত পা কাঁপছে করবো কি?

“নিধিরা এনি পবলেম?

মনি জিজ্ঞেস করে। নিধি বেখালে উওর দেয়

” খালি কি পবলেম? ওই লাটসাহেব তো আমাকে মরিচ লবন দিয়ে গিলে খাবে

“লাটসাহেব কে?

শাশুড়ীর কথায় নিধি ঘোর কাটে। পেছনে তাকিয়ে দেখে সবাই অধিক আগ্রহে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। নিধি আমতাআমতা করে বলে

” না মানে আমি রুমে যাবো

বলেই নিধি দৌড়ে চলে যায়। একটু পরেই নিধিকে পার্লারে নিয়ে যাবে। তাই এখনি নিধিকে গোছল করে নিতে হবে। দরজা পর্যন্ত এসে নিধি দাঁড়িয়ে যায়।

“আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও প্লিজ। লাটসাহেব না মানুক তুমি তো জানো আমার কোনো দোষ নেই। আমি ইনোসেন্ট। মিঠাইয়ের মতো এইবার একটু হেলেপ করো।

পা টিপে টিপে নিধি রুমে ঢুকে। চারপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও আদি নেই। বিছানার ওপর আদির শার্ট রাখা।
” নিশ্চয় বেলকনিতে আছে। এই তো সুযোগ। এই ফাঁকে গোছল করে আমি বেরিয়ে যাবো। কিন্তু গোছল করে পড়বো কি?
একটা শাড়ি নেয় নিধি। গোছল শেষে কোনোরকমে পেচিয়ে বের হবে তারপর অন্য ব্যবস্থা। আবার ভাবে এই ড্রেসটা তো একটু আগেই পড়েছি। এটা খুলে শাড়ি পড়ে গোছল করি তারপর এটা পড়বো। যেই ভাবা সেই কাজ। কোনো রকম পেচিয়ে শাড়ি পড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে পেছন ফিরে দেখে আদি গালি গায়ে শাওয়ারের নিচে। আদিকে এই অবস্থায় দেখে নিধি চিৎকার দেয়। আদি মুখ চেপে ধরে

“একদম চেঁচাবে না

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-১+২

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer)

আদিল চৌধুরী নামটা শুনলেই বুক ধরফর করে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে,কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়। এই লোকটা নিধির জাত শক্র। এখন না কি এই লোকটার সাথেই নিধিকে শপিং এ যেতে হবে। ভাবা যায়। আর পৌরসু এই লোকটাকেই বিয়ে করতে হবে। কে জানে কি আছে কপালে।

“পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে যাও। আদি গাড়িতে অপেক্ষা করছে।

বাবার কথা নিধি অসহায় ফেস নিয়ে বাবার দিকে তাকায়।

” যদি কোনো তাল বাহানা করো তো তোমার রাতে খাওয়া বন্ধ।

বাবার কথা শুনে নিধির কান্না পাচ্ছে।

“আমার যে পরিমাণ হাত পা কাঁপছে এই হাত পা কন্ট্রোল করতেই তো দশ মিনিট লেগে যাবে। পাঁচ মিনিটে কি করে রেডি হবো

নিধির এসব ভাবনার মাঝেই গাড়ির হর্ণ বেজে ওঠে। নিধির বাবা চলে যায়। নিধির মা একটা লাল গাউন বের করে দেয়

” এইটা চট করে পড়ে আয়।

“মা বলছিলাম কি

নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই নিধির মা নিধির হাতে একটা মেকাপ বক্স হাতে ধরিয়ে দেয়

” একটু ভালো করে সাজুগুজু করে যাবি। আদির মতো স্মার্ট মর্ডান ছেলের সাথে শপিং এ যাবি বলে কথা

“স্টুপিট ইডিয়েট ননসেন্স এসব ধমক খাওয়ার জন্য আজ কাল সাজুগুজু করে যেতে হয় আমার জানা ছিলো না।

নিধির মা নিধির কথা বুঝতে পারে না। নিশি ড্রেসটা পড়ে। আর হালকা একটু লিপস্টিক ব্যাস সাজ কম্পিলিট।

গাড়িতে বসে বোর হচ্ছে আদিল।

” কখন থেকে বসে আছি। এই মেয়েটা কি আসবে না কি আসবে না? ইডিয়েট একটা। ধুর

নিধি দৌড়াতে দৌড়াতে আসে আর ভাবছে

“নিশ্চয় আমাকে আজ মেরে গুম করে দেওয়ার জন্য শপিং এ নিয়ে যাচ্ছে। বিদায় পৃথিবীর। ফেসবুকে একটা পোষ্ট দেয়। মরে গেলে তবুও পোলাপান গুলো বলবে
নিধিরা নিধি মরার আগে শেষ পোষ্টটা ছিলো
” বিদায় পৃথিবীর ”
নিধি পোষ্ট করে আদির দিকে তাকিয়ে দেখে আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

“গাড়িতে বসার জন্য ইনভাইড করতে হবে না কি?

আদির কথায় নিধি চট করে গাড়ির দরজা খুলতে যায় কিন্তু পারে

” ইয়ে মানে বলছিলাম কি

“কি বলছিলে

” খুলতে পারছি না

নিধি আসহায় ফেস নিয়ে গাড়ির দরজা দেখিয়ে বলে। আদি খুলে দেয়। নিধি গাড়িতে বসে আদির দিকে তাকায়। আদিও লালা একটা শার্ট পড়ে এসেছে।

“বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে কপি করে এই সেম কালারের ড্রেস পড়ি নি। আম্মু বললো এটা পড়তে তাই পড়েছি (গলায় হাত দিয়ে বলে) সত্যি

” আমি কি তোমাকে কিছু বলছি
আদি ভ্রু কুচকে বলে

“না মানে বলেন নাই কিন্তু বলতেন। তাই আমি আগে ভাগে বলে দিলাম

” ওভারস্মার্ট

আদি গাড়ি স্টার্ট দেয়।
“আজ বকলো না কেনো? আগে তো ড্রেসের একটা সুতোর সাথে ওনার শার্টের মিল থাকলে তুলকালাম বাধিয়ে দিতো। এখন এখন ভালো।
নিধি মনে মনে ভাবছে

” নিধি তোমার নাম রাইট

আদি গাড়ি ডাইভ করতে করতে বলে

“হুমমম
” এহহহহহ এমন ভাব করছে যেনো জানেই না। ছোট বেলায় কি মারটাই না মারতো আমাকে। হনুমান একটা। বিদেশে গিয়ে নামটাও ভুলে গেছে। অবশ্য ওনার নামটাও মেবি ভুলে গেছে। আর না হলে ভুলে যাওয়ার ভান করছে। না হলে বোঝাবে কি করে আমি বিদেশে গিয়ে অনেক বড়লোক প্লাস অহংকারী হয়ে গেছি। যতসব

নিধি মনে মনে আদিকে ঝাড়ছে।

“কোন ক্লাসে পড়ো?

” অনার্স ফাস্ট ইয়ার

“গুডডড

” হহ

“হ কি শব্দ? জ্বী ইয়েস হ্যাঁ এসব বলতে হয়। জানো না? যতসব

(” আইছে পন্ডিত আমারে শেখাতে। আরে তোর আগেই এসব শিখেছি আমি। যদিও প্রতিবাদ করার সাহস আমার নাই। কিছু বলতে গেলেই যদি চড় মেরে দেয়। না বাবা চুপ করেই থাকে।)

“আমার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো

” ইয়াহহ

“বিয়েটা তুমি ভেঙে দাও

” আসলে হয়েছে কি আমি না দুইমাস আগে একটা প্রেম করছিলাম। তো বাবা জেনে গেছিলো। দুইদিন না খাইয়ে রেখেছিলো।

“তো

” তো এখন যদি কোনো রিজন ছাড়া আমি বিয়ে ভাঙার কথা বলি তো বাপি আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটাবে

“ওহহহ

” বলছিলাম কি আপনি ভেঙে দিন না

“আমার কাছে যদি উপায় থাকতো তো তোমাকে নিয়ে এখন বের হতাম না

নিধি মুখটা কালো করে বলে

” ওহহ

“আমার নিজের জীবনেরই ঠিক ঠিকানা নাই তারওপর আবার বউ। লাইফটা এবার শেষ আমার

” আপনি কি মাফিয়া দলের লিডার না কি?
কথাটা বলেই নিধি জীভ কামড়ে ধরে।

“ইস এটা আমি কি বললাম এবার আমার এতো সুন্দর গালে দুই না চার পাঁচটা থাপ্পড় পড়বে। দাঁত গুলোও পড়ে যাবে।
নিধি দুই গালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছে। অনেকখন হয়ে গেলো তবুও গালে থাপ্পড় পড়লো না দেখে নিধি আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে

” না মানে আমি আসলে

আমতাআমতা করে বলে নিধি।

“কারেক্ট। রিজন পেয়ে গেছো তো তোমার বাবাকপ এটাই বলো।

নিধি ভাবে

” এটা বললে যদি বাবা বিশ্বাস না করে আর আমাকে

“কি হলো? তোমার বাবাকে ফোন করো আর এটা বলো। দেখবে বিয়ে ভেঙে গেছে

” বলছিলাম কি? বাবা যদি বিশ্বাস না করে

“এতো নেগেটিভ ভাবো কেনো তুমি? পজিটিভ কিছু নেই তোমার মাথায়। ননসেন্স। ফোন করো

নিধি ফোন বের করে বাবাকে কল করে

” হুম নিধি বলো কি হয়েছে?

“বাপি আদি মাফিয়া দলের লিডার।

” তুমি এখন আমার সামনে থাকলে চাপকে গাল লাল করে দিতাম। হিরের টুকরো ছেলেকে মাফিয়া বানিয়ে দিলে। আজ বাড়ি আসো তুমি। দেখাচ্ছি মজা

নিধির বাবা ফোন কেটে দেয়। আদি চোখ ছোটছোট করে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে নিধি গাল ফুলিয়ে বসে আছে।

“এই লোকটার জন্য জন্ম থেকেই বকা খেয়ে আসছি। অসভ্য লোক একটা। কথাই বলবো না এর সাথে। নিধি ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকে দেখে ৭৮ টা কমেন্ট হয়েছে আর সবাই আল দ্যা বেস্ট বলেছে।

” মানে বুঝলাম না। আমার কোনো পোষ্টই পোলাপান সিরিয়াসলি নেয় না। ভাবছি সবাই সেড রিয়েক্ট দেবে বলবে কি হয়েছে তা না। ধুর কেউ ভালোবাসে না আমাকে

নিধি এসব ভাবনায় ব্যস্ত। সায়ান পাঁচ মিনিট ধরে গাড়ি থামিয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। নিধির আদির দিকে চোখ পড়তেই আদি ভ্রু নাচায় মানে “কি ভাবছো” নিধি মাথা নাড়ায় মানে “কিছু না”

নিধি গাড়ি থেকে নেমে আদির সামনে যায়

“আইডিয়া

আদি অতি উৎসাহিত হয়ে জানতে চায় ” কি”

“আপনি আপনার বাবাকে বলবেন নিধি ভালো মেয়ে না। অনেকগুলো ছেলের সাথে এফেয়ার আছে। কি যেনো বলে কি যেনো বলে ওহহ প্লেগার্ল টাইপের মেয়ে

” ধুর

আদির ধুর শুনে নিধির মুখের হাসি উড়ে যায়। মুখটা ছোট করে বলে

“কেনো?

“তোমার বাপি যেমন তোমাকে থাপড়ে গাল লালা করতে চাইছে আমার বাবাও সেম কথা বলবে

“ওহহহ

” তুমিও যেমন স্টুপিট তোমার বুদ্ধি গুলোও তেমন স্টুপিট। ননসেন্স

নিধি মনে মনে আদি বকতে বকতে হাঁটছে

“আমি না স্টুপিট তুই। কতো ভালো আইডিয়া ছিলো একবার তো ট্রাই করতে পারতো। নাহহ তা করবে না। যদিও প্লেনে কাজ হওয়ার সম্ভবনা ০% তারপর ধমক তো খেতো। এই হনুমানটা ধমক খেলে আমার যে কি ভালো লাগতো

” এই যে মিস শপিং মলের গেট এটা৷ বাই এনি চান্স আপনি কি অন্য কোথাও যাচ্ছেন

আদির কথায় নিধি তাকিয়ে দেখে সত্যিই ভুল পথে যাচ্ছে

“আমি সত্যিই গাধা

শপিং মলে ঢুকে আদি নিধিকে তাড়া দিচ্ছে তাড়াতাড়ি করার জন্য। নিধির আবার একটা ভালো গুন একটা ড্রেস চুজ করতে একঘন্টা লেগে যায়।

” পাঁচ মিনিট সময় দিলাম এর মধ্যে ড্রেস চুজ করতে না পারলে এখানেই বেঁধে রেখে যাবো

আদির ধমকে হাতে যে ড্রেসটা ছিলো ওইটাই প্যাকিং করে দিতে বলে নিধি।

“ধুর যার জন্য এই গাঁধাটাকে শপিং করাতে নিয়ে এলাম তাই তো হলো না। বিয়ে ভাঙার কোনো রিজনই তো খুঁজে পাচ্ছি না। এবার আমাকে এই গাঁধার গলায় মুক্তোর মালা হতে হবে। কপাল আমার
সায়ান বিরবির করে বলছে।

” এর সাথে আমি থাকবো কি করে? এ তো প্রথম দিনই আমার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে ছাড়বে। আল্লাহ বাঁচাও। যে করেই হোক বিয়েটা ভাঙতে হবে। নাহলে নিধি আর নিধি থাকবে না হার্টের রুগি হয়ে যাবে। আল্লাহ বিয়ে ভাঙার একটা রিজন দেখাও প্লিজ
নিধি বিরবির করে বলছে।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana (Writer)

“বববলছিলাম কি?

” তুতলানোর কিছু নেই ক্লিয়ার করে বলো

আদি মন দিয়ে ডাইভ করতে করতে বলে।

“আমার খিদে পেয়েছে
চোখ বন্ধ করে বলে নিধি। এই বুঝি ধমক দিবে বলবে ” এতো খাই খাই করো কেন? খাইতে খাইতে তো ড্রাম হয়ে যাচ্ছ। কোনো খাওয়া টাওয়া হবে না।
কিন্তু নিধির ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে আদি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায়। নিধি চোখ খুলে দেখে আদি নামছে।

“নামার জন্য কি ফুলের বিছানা বিছাতে হবে

নিধি চট করে নামে। এই লোকটা কখনোই কোনো কথা সোজা করে বলতে শেখে নি। থাকবো কি করে এর সাথে আল্লাহ জানে। হনুমান একটা।

” খাবার অর্ডার করো

নিধি ওর পছন্দ মতো খাবার অর্ডার দেয়।

“আপনি

” জাস্ট এক গ্লাস ঠান্ডা পানি।

ওয়েটার চলে যায়।

“খালি পানি খাবে কেনো? নিশ্চয় ওনার কাছে টাকা নেই বেশি। তার ওপর আমি এতো গুলো খাবার অর্ডার দিলাম তাই হয়ত পানি খেতে চাইছে। যাক বাবা ভালোই হলো। লোকটা এখন আমাকে পেটুক ভাববে আর বিয়েটা ভেঙে দেবে। আহা আহা কি যে ভালো লাগছে।

নিধির ভাবনার মাঝেই খাবার চলে আসে। নিধি হাপুসহুপুস খেতে থাকে। আদি পানির গ্লাস হাতে নিয়ে হা করে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে

” রাহ্মস না কি মেয়েটা? এতো এতো খাবার খাচ্ছে। ওহ গড। একে বিয়ে করলে তো একে খাওয়াতে খাওয়াতে আমি শেষ হয়ে যাবো। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। কপাল খারাপ

নিধির চোখ আদির দিকে পড়তেই আদি চোখ ফিরিয়ে নেয়। গ্লাসের পানি শেষ করে এক নিশ্বাসে

“তাড়াতাড়ি গিলেন প্লিজ

নিধি আদিকে ভেংচি দিয়ে বেশি বেশি করে খাবার মুখে দিতে থাকে। আর তারপর যা হওয়ার তাই। খাবার গলায় আটকে যায়। আদি পানি এগিয়ে দেয়

” এভাবে রাহ্মসের মতো খাওয়ার কি আছে? খাবার তো পালিয়ে যাচ্ছে না

“যাহহ বাবা নিজেই তাড়াতাড়ি খেতে বললো এখন নিজেই বলছে। মিথ্যে বাদি কোথাকার। গিরগিটি তো মিনিটে মিনিটে রং বদলায় আর এই বিদেশি লাটসাহেব সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলায়। কিন্তু আফসোস এই কথা ওনাকে শোনানোর সাহস নিধিরা নিধির নেই। তাই মনে মনে বলছে হচ্ছে। আজব কপাল আমার

” আমাকে চোখ দিয়ে না গিলে খাবার গিলো

আদির কথায় নিধি আদির থেকে চোখ ফেরায় আর খাওয়ায় মন দেন।

খাওয়া শেষে আবার গাড়িতে এসে বসে। প্রায় সন্ধা হয়ে গেলে। রাতটা পোহালেই কাল গায়ে হলুদ। সময় যেনো ঝড়ের গতিতে ছুটছে।

“নিধিরা

” বলুন

“প্লিজ ডু সামথিং

” সেম টু ইউ

“কার পাল্লায় পড়লাম ধুর

আদি রেগে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয়। নিধির বিরক্ত লাগছে তাই ফোন থেকে গান চালায়।

” এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই
তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চায়………
মেঘলা হয়ে যাক আরও পাঁচটা বারো মাস
কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস…….
শুধু তুই শুধু তুই
আর চাইছি না কিছুই……

নিধি মন প্রাণ দিয়ে গান শুনছে। আদি কখন থেকে গাড়ি থামিয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে সে খেয়াল নিধির নেই

“এই যে ননসেন্স আপনার বাড়ি চলে এসেছি। আপনার সাথে এখানে সারা রাত বসে থাকার ইচ্ছে আমার নেই

নিধি গান বন্ধ করে গাড়ি থেকে নামে

” থ্যাংক্স আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে মেরে গুম করে দেবেন। কিন্তু মারলেন না তার জন্য এতোগুলো থ্যাংকু

বলেই নিধি দৌড়। নিধি যে কি করে কথা গুলো বললো তা নিধি নিজেও জানে না।

আদি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে

“কি বলে গেলো? কিছুই তো বুঝলাম না

নিধি নিজের রুমে এসে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়
” আজকের মতো বেঁচে গেছি।

নিধিকে রুমে ঢুকতে দেখে নিধির মা আর বোন নিরা নিধির রুমে ঢুকে

“নিধি আমার দেবর কি কিনে দিলো তোকে দেখি
(নিরা আদির বড় ভাই আশিকের বউ)

” ঘোড়ার ডিম কিনে দিছে যতসব

বলেই আলমারি থেকে একটা ড্রেস নিয়ে নিধি চেঞ্জ করতে যায়। নিরা আর মা শপিং ব্যাগ খুলে দেখে কি কিনছে।

আজ আদি আর নিধির গায়ে হলুদ। নিধিদের বাড়িতেই দুজনের গায়ে হলুদের ব্যবস্হা করা হয়েছে। আদি একটা হলুদ পানজাবি পড়েছে আর নিধি হলুদ শাড়ি। নিধি শাড়ি পড়ে একদম হাঁটতে পারে না। তো শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে নিজের রুমে।

“এখন কি করবো? আমি তো এক পা হাঁটতে গেলেই ধপাস করে পড়ে যাবো। বাগান পর্যন্ত যাবো কি করে? এতো এতো মেকাপ আর ফুলের গহনার বোঝা নিয়ে আমি এতোদুর যাবো কি করে?

আদিকে আদির মা বলে

” আদি নিধি কই

“আজিব তো আমি জানবো কি করে?

” মেবি ওর রুমে আছে যাও ওকে নিয়ে আসো

“মানে কি? এতো এতো মানুষ থাকতে আমিই কেনো যাবো ওকে আনতে

” আমি বলছি তাই

“ডিজগাস্টিং লাগছে এসব আমার। জাস্ট এই বিয়ের ঝামেলা মিটে যাক আমি বিদেশে চলে যাবো। একেতো একটা বলদ মেয়ের সাথে বিয়ে দিচ্ছ

“নিধির মতো ভালো মেয়ে তুমি আর দুটো খুঁজো পাবে না

” খুঁজতে চায়ও না

“কথা বাড়িও না যাও

” ডিজগাস্টিং

রাগে গজগজ করতে করতে আদি নিধির রুমের দিকে যায়। আসলে সবাই ইচ্ছে করেই নিধিকে একটা ঘরে রেখে এসেছে।

নিধি লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে

“বাঁদরের মতো লাফাচ্ছ কেনো?

আদি চোখ মুখ শক্ত করে বলে। আদির কন্ঠে নিধি চমকে ওঠে

” এই লাটসাহেব এখানে কেনো? কি বলবো এখন আমি? ধমক গুলো যা দেবে না। আল্লাহ হেলেপ

“কথা কানে যাচ্ছে না

” ইয়ে মানে আমি শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারি না

চোখ বন্ধ করে বলে নিধি। আদির সামনে কথা বলতে গেলেই নিধির হার্টবিট বেড়ে যায়।

“তো

আদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

” তো লাফিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি

“ওহহহহ গড এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আমি। শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারো না তো লেহেঙ্গার বা ড্রেস কিছু একটা পড়তে। তা না করে এখন এমন ড্রামা করার মানে কি? এক মিনিট এক মিনিট তুমি কি ভাবছো সিনেমার হিরোদের মতো আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবো?? এসব ভেবে থাকলে ভাবনার জগৎ থেকে বের হও।

” ভাবে কি এই লোকটা নিজেকে? শাহরুখ খান না কি সালমান খান কোনটা? বিদেশি ইঁদুর। লাটসাহেব একটা। ওনার কোলে উঠতে আমার বয়েই গেছে। সব সময় দুই অহ্মর বেশি বুঝে। নিরামিষ ইডিয়েট
নিধি মনে মনে বলে।

আদি নিধির বেডের ওপর থেকে একটা লেহেঙ্গার নেয়। লেহেঙ্গারটা নিধি কিনেছিলো হলুদে পড়ার জন্য কিন্তু আদির মা শাড়ি দিয়ে শাড়ি পড়তে বলেছিলো তাই শাড়ি পড়েছিলো।

“এটা পড়ে আসো আর চলো।

” কিন্তু

“আমার সময়ের অনেক দাম। তোমার এই ফালতু কথা শুনে সময় নষ্ট করতে চায় না

নিধি লেহেঙ্গারটা নিয়ে চলে যায়। দশ মিনিটে নিধি লেহেঙ্গার পড়ে বের হয়

” একটা লেহেঙ্গার পড়তে দশ মিনিট সময় লাগিয়ে দিলে। টাইম মেইনটেইন করতে শিখো। দুই মিনিটের কাজ দশ মিনিটে করলে। ভেরি গুড। এর সাথে না কি আমাকে সারাজীবন থাকতে হবে। পাগল হয়ে যাবো আমি

নিধির খুব রাগ হচ্ছে। এই লোকটা এমন কেন? কিন্তু কিচ্ছু বলার সাহস নেই। এখন থেকে এই লাটসাহেব ধমক দেবে ওখান থেকে বাবা মা আর আপি। এদের ওপর যে কি কালো জাদু করেছে বিদেশি হনুমান টা আল্লাহ জানে

নিধি জোরে জোরে হেঁটে চলে যায়। আদিও পেছন পেছন যায়। আদি আর নিধিকে এক সাথে আসতে দেখে সবাই মুচকি হাসে।

ভালো ভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়। এবার নিধি কিছুটা হলুদ নিয়ে রান্না ঘরে যায়। হলুদে লঙ্কা গুড়ো মিশিয়ে আদিকে হলুদ লাগিয়ে দেবে

“কাল থেকে এতো এতো অপমান করেছো মিস্টার লাটসাহেব এবার আমি সব কিছুর প্রতিশোধ নিবো। নিদিরা নিধিকে তুমি চেনো না। এইবার দেখবা চান্দু নিধি কি জিনিস

শয়তানির একটা হাসি দিয়ে নিধি ভালো করে হলুদ আর লঙ্কা গুড়ো মিক্স করে। তারপর

” বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়….

গানটা গাইতে গাইতে আদিকে খুঁজছে। আদি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে

“এবার পেছন থেকে গিয়ে হলুদ লাগিয়ে আমি দৌড় দেবো। এখান দিয়ে দৌড়ে সোজা রুমে চলে যাবো আর দরকা বন্ধ করে দেবো। কেউ ডাকলে বলবো আমি চেঞ্জ করছি। কেউ বুঝতেও পারবে না কাজটা আমি করেছি। উফ কি টেলেন্ট আমি। আমার জন্যই আমি প্রাউড ফিল করছি

নিধি নিজেকে নিজে বাহবা দিয়ে এক পা একপা করে এগোতে থাকে। যখনই আদির মুখে হলুদ লাগাতে যাবে আদি পেছন ঘুরে আর হলুদের বাটি নিধির পায়ের ওপর পড়ে। নিধির পা জ্বলে যাচ্ছে
ভয় প্লাস পায়ের জ্বালায় নিধির কান্না চলে আসে। আদি শয়তানির একটা হাসি দিয়ে বলে

” আমাকে জব্দ করতে এসেছিলে? কথায় বলে না অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়। এতোদিন বিশ্বাস করতাম না কিন্তু আজ হাতে নাতে প্রমাণ পেলাম। নেক্সট টাইম এমন কিছু করার সাহসও দেখাবা না

আদি চলে যায়। নিধির এবার নিজের ওপর নিজের রাগ হচ্ছে

“গাঁধা আমি একটা। একটা কাজও ঠিক করে করতে পারি না। সব সময় গন্ডগোল করি আর আমি নিজেই ফেঁসে যায়। আল্লাহ গো পা টা কি যে জ্বালা করছে।

নিধি রুমে গিয়ে পায়ে বরফ দেয়।

চলবে