Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1472



একটা পরীর গল্প পর্ব-০৩

0

#একটা_পরীর_গল্প
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#পর্ব_০৩

ভাতের সঙ্গে গরুর মাংস আর ইলিশ মাছ ভেজে দীপ্তির হাত দিয়ে খাবারগুলো পাঠিয়ে দিলাম অভীক ভাইয়ার ঘরে। আমি আর ওঘরে যাবো না বলে মনস্থির করে নিয়েছি। লোকটা আমাকে একদমই সহ্য করতে পারে না। বউ হয়ে বোধ হয় সবথেকে বড় ভুলটা করেছি আমি। আগে শুধু কথা দিয়ে মারতো আর এখন খাটিয়ে মারে। এই তো সেবার যখন এসেছিলো। আমি ঘরে বসে পড়ছিলাম। উনি সন্তর্পণে এসে আমাকে পেছন থেকে বেঁধে ফেললো গামছা দিয়ে। আমি চিৎকার দেওয়ার মতো শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম ভয়ে। কিন্তু পরক্ষনেই উনি নিজেই নিজের হাতে গামছা পেচিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন। আমি তড়িৎগতিতে উঠে দাড়াই। এগিয়ে যাই ওনার দিকে। তখনই উনি চিল্লিয়ে বলেন।

– ” বাচাও, বাচাও এই ভুতটা আমাকে বেঁধে, মেরে ফেললো। ”

সাথে সাথে ঘরে ঢুকে পড়লেন আব্বু। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম উনি আব্বুর উপস্থিতি টের পেয়েই এমন করেছেন। আব্বু আমাকে দেখে তো সেই বকা, আমি কেন ওনাকে ভয় দেখিয়েছি? আমি তো জানতাম উনি ভুতে ভয় পায় তবুও এমন কেন করেছি? হ্যান ত্যান।আর উনি নীরব দর্শকের মতো কথা গিলছেন। আব্বুর হ্যাঁ’তে হ্যাঁ আর না’তে না মেলাচ্ছেন।যেহেতু আমি ছোটবেলায় ডানপিটে ছিলাম তাই এই মিথ্যুকের কথা সবাই বিশ্বাস করতো। সবাই ভাবতো এ সত্যবাদী যুধিষ্ঠির কার্বনকপি। আব্বু চলে যেতেই উনি মুখ ভেঙচি দিয়ে বলেন।

– ” কি রে কালো ভুত। কেমন লাগলো? জোস না? ”

আমি ঠোট উল্টিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম।
– ” এর শোধ আমি ঠিক নেবো। একে তো পরের বাড়ির ছেলে তারওপর অতিথি। সেজন্য এবারের মতো ছেড়ে দিলাম তোমাকে। ”

উনি বরাবরের মতো ভ্রু কুচকে তাকান।
– ” তুই কি ছাড়বি আমাকে? কখনও আমাকে ধরার সাহস কিংবা সুযোগ পেয়েছিস? যে ছাড়ার কথা আসছে। তোর মতো লিলিপুটকে আমি একহাতে তুলে আছাড় দেওয়ার শক্তি রাখি। আর উনি নাকি আমাকে ছেড়ে দেয়। কাইল্যা,গাইয়্যা, বাইট্টা। ”

আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে দীপ্তি খাবারের থালা নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির। আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম ‘ কি হয়েছে? ‘। ও মুখ কালো করে বললো।

– ” ভাইয়া নাকি এঁচড়ের তরকারি খেতে চেয়েছে তোর কাছে। তুই এসব পাঠালি কেন? ভাইয়া খাবেন না। ”

– ” না খেলে, খাওয়া লাগবে না। এখন রান্না করবে কে? সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। বাড়িভর্তি মানুষ, সবাইকে খাওয়াতে ব্যস্ত। এমন মুহূর্তে উনি আবার ঢং শুরু করেছেন। ”

– ” আচ্ছা আমি রান্নায় তোকে সাহায্য করছি। তুই শুধু খাবার নিয়ে ঘরে যা। এটুকু তো পারবি? ”

– ” তুই কি সাহায্য করবি রে? দে এই খাবার। এগুলোই গিলবে উনি। কিচ্ছু রান্না করতে হবে না। গিয়ে দেখ মিষ্টি কোথায়। ও বোধ হয় সারাদিন না খেয়ে আছে। ”

দীপ্তি চলে গেলো মিষ্টিকে খুজতে। আমি খাবারের থালা হাতে আবার আসলাম ঘরে। আমাকে আসতে দেখে উনি উঠে বসলেন। পাঞ্জাবির হাতা কনুই অবধি গুটিয়ে হাত ধুয়ে নিলেন। আমি থালা সামনে এগিয়ে দিয়ে কঠোর স্বরে বললাম।

– ” আমি অসুস্থ। বাকি সবাই ব্যস্ত। সুতরাং এই মুহূর্তে এগুলো ছাড়া অন্য পদের খাবার রান্না করে আপনার গালে তুলে দেওয়া অসম্ভব। ”

অভীক ভাইয়া কিছু একটা ভেবে খেতে শুরু করলেন। আমি পাশেই বসে আছি। মাঝে মাঝে গ্লাসে পানি ঢেলে দিচ্ছি। উনি খাওয়া শেষ করে আবারও শুয়ে পড়লেন। আমি আগ্রহসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। যদি একবার আমার খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করে এই আশায়। কিন্তু উনি জিজ্ঞেস করা তো দূরে আমার দিকে একবার তাকালেনও না। আমি হতাশ হয়ে প্লেটগুলো গুছিয়ে উঠে দাড়ালাম। দরজা দিকে পা বাড়াতেই উনি বলে উঠলেন।

– ” খেয়েছিস? নাকি চেয়ারম্যানের ছেলের চিন্তায় উপোস আছিস? হ্যাঁ উপোস থাকলে থাক, যদি ব্যাটা ফিরে আসে। আমার ঘাড় থেকে তোকে নামানোর বেস্ট উপায় ও। ”

আমি আহত দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম। উনি চোখ বুজে শুয়ে আছেন।কেন জানি না খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। কিন্তু কেন? উনি কি বললো না বললো তাতে তো আমার কিছু আসে যায় না। কবুল বলার পর থেকে কেমন একটা নতুন অনুভূতির সম্মুখিন হচ্ছি বারবার। মনে হচ্ছে যা হচ্ছে সেটাই আমার নিয়তি, আমিও এটাই চাই। কিন্তু অভীক ভাইয়া তো সেটা নাও চাইতে পারে। কেন অভীক ভাইয়ার অনিচ্ছাকে আমি সমর্থন করতে পারছি না? ঘর থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে চলে আসলাম। আম্মু এসেছে ভাত নিতে। আমাকে দেখে আম্মুর চোখে পানি টলমল করতে লাগলো। আমি এগিয়ে যেতেই আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরেন। কপালে গভীরভাবে চুঁমু খেলেন।

– ” খেয়েছিস? ”

আমি ‘না’সূচক মাথা নাড়লাম। আম্মু একটা প্লেটে ভাত বেড়ে তরকারি দিখে মাখিয়ে আমার মুখের সামনে এক লোকমা তুলে ধরলেন। আমি তৃপ্তি নিয়ে খেতে শুরু করি। খাওয়ার মাঝে বলে উঠি।

– ” আম্মু অভীক ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিলো কেন সবাই? উনি তো ছোট থেকেই আমায় অপছন্দ করেন।”

– ” তোর বাবা আর অভীকের বাবা জানেন। এবিষয়ে কারোর মতামত তারা নেননি। ”

– ” তোমার মত ছিলো? ”

– ” থাকবে না কেন?অভীক এতো ভালো ছাত্র তারওপর পড়াশোনার পাশাপাশি গানও গায়। দেখতে শুনতে ভালো। ওকে না করার সাধ্য আছে কার? ”

আম্মু একটু থেমে আবার বলে উঠলেন।
– ” এবার নিজেকে একটু স্বাভাবিক কর পরী। তোর এমন চুপচাপ, নিশ্চুপ স্বভাব দেখতে কারোরই ভালো লাগে না। ”

আম্মুর কথায় চমকে তাকালাম আমি। নিজেকে স্বাভাবিক করবো বলতে কি বোঝালো আম্মু? আমি তো স্বাভাবিকই আছি। বরং এই কথাটা অভীক ভাইয়াকে বললেই বেশি মানাতো।কেউ যদি অস্বাভাবিক হয়ে থাকে তাহলে উনিই সেই অস্বাভাবিক প্রাণীটি। আমি খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। খেয়াল করলাম বাড়িতে আর কেউ নেই। বিয়েবাড়ি ফাঁকা ব্যাপারটা একটু সন্দেহজনক বৈ’কি? আমি সন্দিহান চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম।

– ” বাড়িতে কেউ নেই কেন? ”

আম্মু অকপটে উত্তর দিলো।
– ” অভীক মানা করেছে তাই। ”

আমি সরাসরি তাকালাম আম্মুর দিকে। আম্মু প্রসঙ্গের মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করে বললেন।

– ” ওর নাকি বেশি মানুষ পছন্দ না, অস্বস্তিবোধ করে। সেজন্য বাড়ি খালি রাখতে বলেছে। তাছাড়া তুই তো আছিস, দীপ্তি, মিষ্টি, শিমুল, অনা তোর বাকি ভাইবোন সবাই তো আসা যাওয়া করছেই।”

– ” অভীক ভাইয়ারা ফিরে যাবেন কবে? ”

– ” অভীক গ্রামটা ঘুরে দেখতে চায়। তাই কয়েকদিন এখানে থেকে তারপরেই ফিরবে। তুই ওকে নিয়ে কাল সকালে বের হোস তো। যেখানে যেতে চায় নিয়ে যাস। ”

আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালাম। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে ঘন কালো অম্বুদে ছেয়ে যায় নীলাভ আকাশ।বুনো ভারী হাওয়ায় ধুলাবালি উড়ছে। বৃষ্টি নামবে বোধহয়। আমি উঠান থেকে একটা টুল উঠিয়ে রান্নাঘরে রাখলাম। এরপর মোম আর লম্ফ নিয়ে ঘরে ঢুকি। হারিকেন খুজে পাচ্ছি না আমি। তাই আপাতত এগুলো দিয়েই কাজ চালাতে হবে। আমাদের বাড়ির ঘরগুলো গোলাকৃতি সারির। আমার ঘরের ডানপাশে দীপ্তি এবং বামপাশের ঘরে অনারা থাকে। কিন্তু আজ ওরা সবার সাথে একঘরে থাকবে বলে পাশের ঘরদুটো ফাঁকা থেকে গেলো। আমার ঘরের ঠিক পেছনেই বাঁশবাগান। বাতাসে, বাঁশে বাঁশের সংঘর্ষে তুমুল শব্দ হতে শুরু করে। বিদ্যুৎ চলে যায় মুহূর্তেই। আমি ঘরে এসে একটা মোম জ্বালিয়ে জানালা বন্ধ করে দিলাম। অভীক ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে তখনও। টিনের ওপর বৃষ্টির ঝমঝম তালের সঙ্গে বজ্রপাতে কড়া শব্দ কানে যেতেই আমি বারান্দার চৌকিতে এসে বসি। ঘন বর্ষনে সবটা ঝাপসা হয়ে আসছে। উঠানে পানি জমতে শুরু করেছে। হাঁস মুরগির কোলাহলে মনে হচ্ছে দু-জাতির মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছে।একে একে সবাই এসে বারান্দায় বসলো। কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই অভীক এসে আমার সামনে দাড়ায়।

– ” ঘরের মোম নিভে গিয়েছে। ম্যাচবক্স কোথায়? মোম জ্বালিয়ে দিয়ে যা। ”

কথাটি বলেই অভীক ঘরে চলে যায়। আমিও ঘরে ঢুকি। আমি ঘরে ঢুকতেই অভীক দরজা লাগিয়ে দেয়।

– ” আমাকে একা ঘরে ফেলে রেখে বাইরে কি করছিলি পরী? ঘরে থাকতে সমস্যা কি? ”

আমি কিছু না বলে মোম জ্বালাতে লাগলাম। জানালার ফাঁক দিকে বাতাস এসে বারবার আলো নিভিয়ে দিতে লাগলো। পুরো ঘরটা আঁধারে নিমজ্জিত। কোনোকিছুই ঠিক করে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ আমার মনোযোগ মোমের থেকে সড়ে গিয়ে কারোর ধীরপায়ে এগিয়ে আসার উপস্থিতির দিকে গিয়ে ঠেকলো। আমার একদম কাছাকাছি এসে কন্ঠটি বলে উঠলো। ‘ জ্বলতে যখন চাচ্ছে না, তখন বৃথা চেষ্টা করছিস কেন? মাঝে মাঝে আলোর থেকে কালোই ভালো। এতে করে আলোর মর্ম বোঝা যায়, যে অন্ধকারকে সবাই ভয় পায়, তাকে জানা যায়, চেনা যায়। ‘ এমন মিহি কন্ঠ শুনে আবেশে চোখ বুজে আসে আমার। হাত থেকে মোম পড়ে যায়। কানে শুধু বৃষ্টির ঝমঝম বোল ভেসে আসছে। অভীক আমার হাত ধরে খাটের কাছে নিয়ে গেলো। এই প্রথম অভীক আমার হাত এতো যতনে ধরেছেন। না কোনো ব্যাথা দিয়েছেন আর না কোনো খারাপ কথা বলেছেন। আমাকে খাটে বসিয়ে উনি নিজেও বসলেন আমার পাশে। আমি এক অজানা ভয়ে শঙ্কিত হতে লাগলাম।।দাদী বলেছেন ‘ বিয়ের রাতে বর যদি কাছে আসে বা শরীরে হাত দেয় তুই কিছু বলবি না। এটা স্বাভাবিক। ‘ কিন্তু আমার ভেতরে এক অস্বস্তিবোধ রীতিমত মনের দরজায় কড়া নাড়ছে। অভীক ভাই আমার হাতে হাত রাখলেন।

– ” ভাইয়া অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না তো। আলোটা জ্বালাতে দেন আমাকে। ”

ঠিক তখনই হাতে এক তীব্র ব্যাথা অনুভব করি। উনি খুব জোরে চিমটি দিয়ে উচ্চস্বরে হাসছেন। আমি হাত ডলতে ডলতে প্রায় কেঁদেই ফেলি। ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত।

– ” বলেছিলাম না অভীক কোনো ঋণ রাখে না। আজ সুদে আসলে তোকে ফেরত দিলাম, সেই চিমটি। ”

আমার কানে ভেসে আসলো এক বিদঘুটে হাসির শব্দ। মাথাটা ঝিম ধরে আসে। চোখের সামনেটা আগের থেকেও বেশি অন্ধকার হতে শুরু করে। হাত-পা নিস্তেজ হতে শুরু করলো। ঢলে পড়লাম অন্ধকারের অতল গভীরে।

তখন মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। কানে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির আওয়াজ আসতেই আমার চেতনা ফিরে আসে। আমি নড়ার চেষ্টা করতেই টের পেলাম কারোর পেশিবহুল হাতের বন্ধনিতে আবদ্ধ আমার সর্বাঙ্গ। তার ভারী পায়ের ভাজে আমার ছোট ছোট পা গুলো যেন বের হওয়ার জন্য ছটফট করছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। নাকে ভেসে আসছে সেই মিষ্টি মধুর ঝাঝালো ঘ্রাণ। তারমানে আমি অভীক ভাইয়ার বুকের ওপর? না জানি ঘুম থেকে উঠে লোকটা আমায় এভাবে দেখে আর কি কি শোনায়। আমি নিজের সবটুকু জোর দিয়ে সড়ে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার নড়াচড়ার পর উনি আরও শক্ত করে চেপে ধরেছেন আমাকে। আমার গলা থেকে অস্ফুট স্বরে ভেসে আসলো দুটি শব্দ

– ” আমার পা।”

সাথে সাথে ওনার পা আলগা হয়ে আসে। আমি পা সড়িয়ে নিতেই উনি ঘুমকাতুরে কন্ঠে বললেন।

– ” কি রে পরী। তোদের বাড়ি কি একটা কোলবালিশও নেই? আমার কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসেনা। সুতরাং নড়াচড়া বন্ধ কর। আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দে ”

মনে হচ্ছে আমার দম তখন বন্ধ হয়ে আসছে। একে তো রাক্ষসের মতো গায়ের জোরে চেপে ধরে আছে আমাকে, আবার আমার ঘুম হারাম করে আমাকেই বলছে ‘ আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দে।’ কিন্তু একদিক থেকে ভালোই লাগছে, পুরোনো সেই ভয়টা এখন আর করছে না। শুনতে পাচ্ছি না সেই বিদঘুটে শব্দগুলো। কিন্তু এভাবেই বা আর কতক্ষণ? আমি মৃদু স্বরে বললাম।

– ” বলছি একটু ঢিলা করে ধরে ঘুমান। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ”

এতোক্ষন উনি আমার হাতের ওপর হাত রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। এ কথা বলায় উনি হাত ছেড়ে কোমর জড়িয়ে ধরে, ঘাড়ে মুখ গুজে শুয়ে পড়লেন। এতক্ষন দম বন্ধ হবে হবে করছিলো এখন মনে হচ্ছে দম আটকেই গিয়েছে। আমি হাত দিয়ে ওনার হাত সড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলেন। এ কি জ্বালা। বিয়ের আগেও শান্তি দেয়নি, পরেও দিচ্ছে না। এই প্রাণী বোধ হয় মরার পরও আমায় শান্তি দেবে না।

– ” আরে ভাই ওদিক গিয়ে ঘুমান তো। আমাকেও ঘুমাতে দিন। ”

উনি ঘোরলাগা কন্ঠে বিরক্তির সুরে বললেন।
– ” বড্ড বিরক্ত করিস তুই। যা ছেড়ে দিলাম তোকে। আমাকে টাচও করবি না আর। ”

উনি হাত সড়িয়ে নিলেন। আমি একটু দূরত্ব রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু দূরে গিয়ে মনে হচ্ছে আমি কোথাও পড়ে যাচ্ছি। কেউ ধাক্কা মারছে আমাকে। আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসি ভাইয়ার দিকে। গা ঘেসে শুয়ে পড়বো ঠিক সে মুহূর্তে উনি বলে উঠলেন।

– ” একা যখন থাকতে পারবি না তখন ফালতু জেদ করিস কেন? একহাত আমার হাতের ওপর রেখে ঘুমা। ভয় লাগবে না। ”

ভাইয়ার কথা শুনে স্তব্ধ আমি। উনি বুঝলেন কি করে আমার ভয় লাগছে? নাকি আমার আচরণেই টের পেয়েছেন? হয়তো তাই। আমার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে উনি আবার আমার দিকে ফিরে শুয়ে ওনার হাতের ওপর আমার মাথাটা রাখলেন।

– ” দয়া করে ঘুমা, তোর ভাঙা খাটে, তুই যেভাবে নড়ছিস তাতে আমার ঘুমের দফারফা হয়ে গেলো। একটা ভালো খাট এনে রাখতে পারিসনি? তুই’ও যেমন ভাঙাচোরা তোর খাটও তেমন। দুটোতেই টাচ করতে মড়মড়, ভ্যা ভ্যা শব্দ হয়। ”

চলবে?

[ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ ]

একটা পরীর গল্প পর্ব-০২

0

#একটা_পরীর_গল্প
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#পর্ব_০২

বিগত একঘন্টা যাবৎ আমি অভীক ভাইয়ার পা টিপে যাচ্ছি। উনি কপাল বরাবর এক হাত উঠিয়ে, আরেক হাত ঘাড়ের নিচে রেখে আরামসে ঘুমাচ্ছেন। হাত ব্যাথায় শীতল হয়ে আসছে। মনে চাচ্ছে না আর একমুহূর্তের জন্যও ওনার পায়ে নিজের হাত রাখি। হাত উঠিয়ে দুহাতে ঘর্ষন করে আবার পায়ে হাত রাখতে যাবো ঠিক এই মুহূর্তে উনি বলে উঠলেন।

– ” কি রে পা টিপছিস নাকি সুড়সুড়ি দিচ্ছিস। কোনো কাজই দেখছি ঠিকমতো পারিস না। যা তো সড় পা মেলতে দে। আবার খানিকক্ষণ পর এসে টিপে দিস। বুঝতে পারছি আমার পা দেখে তুই হিংসায় জ্বলছিস। তোর নিজের তো এতো সুন্দর, মসৃণ পা নেই। যা এখান থেকে। ”

মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। আগে খুঁত ধরতো মেনে নিতাম কিন্তু এখন খুঁত ধরার পাশাপাশি উঠতে বসতে খোঁটাও দিচ্ছে। এই মানুষটা একেবারে অসহ্যকর। আমি দরজার সামনে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই খুলছে না। বেশি টানাটানি করলে আবার কাঠের দরজা থেকে মড়মড় শব্দ হবে তখন সবাই ছুটে আসবে। না, না কিছুতেই এটা করা যাবে না। যে খাঁটাশ ব্যাটা ঘরে আছে। কেউ আসলে নির্ঘাত বানিয়ে বানিয়ে আমার নামে নালিশ করবে তখন সব বকা আমায় খেতে হবে। তার থেকে আমি বরং ঘরটা গুছিয়ে ফেলি। বুইড়ার বাড়ির মানুষ এসে আমার ঘরের দফারফা করে ছেড়ে দিয়েছে।

আমি ঘর গুছিয়ে জানালার কাছে এসে বসি। মাথা থেকে ওরনা নামিয়ে নিচে রাখলাম। ভারে, গরমে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। অসহনীয় মাথা ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে। এখন একটু ঘুমের দরকার ছিলো। কিন্তু সে উপায় কোথায়? পুরো বিছানা দখল করে শুয়ে আছে খাঁটাশটা। রাক্ষসের মতো মস্ত শরীর পুরো বিছানায় লেপ্টে আছে। চোখ বুজে বিছানার পায়ার মাথা লাগিয়ে দিলাম।

আটবছর আগের কথা, তখন আমার বয়স মাত্র সাত বছর। সবে তৃতীয় শ্রেণীতে উঠেছি। দীপ্তি তখন সবে শব্দ লেখা শিখেছে। তেমন মেধাবী না হলেও যথেষ্ট ভালো ছিলাম পড়াশোনায়। আমার গায়ের রং কালো নয়, শ্যামলাও নয় আবার সাদা ফর্সাও নয়। মোটামুটি ফর্সা বললেই চলে। শুনেছি ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম আমি। গাছে চড়ে বেড়ানো, পুকুর থেকে মাছ তোলা, ফল চুরি,ডাব চুরি সবকিছুতেই অল্পবয়সে বেশ অভিজ্ঞ হয়ে গিয়েছিলাম। সময়টা ডিসেম্বর মাস। স্কুল বন্ধ হওয়ায় আমরা দুবোন এবং আমার মোট কুড়ি জন ‘তো’ ভাই বোন মিলে খেলছিলাম আমাদের স্কুল মাঠে। মাঝে মাঝে খুব হাসি পেতো আমার চাচাদের নাম বলতে গিয়ে। আট, আট’টা চাচার নাম বলা কি চারটিখানি ব্যাপার? তারওপর আরও তিনটা ফুফু। সবার নাম মুখস্থ করতে গিয়েই আমার পড়াশোনা আমিও চিনি না, আমার টিচারও চেনে না। টিচার এসেই বলতো তোমার ওমুক দেখতে ভাই আমার ছাতা ধরে টেনেছে, ওমুক বোন পেয়ারা চিবিয়ে তার খোসা ছুড়ে মেরেছে। তখন আমারও প্রশ্ন থাকতো কোনজন,কেমন দেখতে,চুল কেমন, ফর্সা না কালো? এভাবে বেশ ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু ১২তারিখ। ডিসেম্বর মাসের ১২তারিখ আমার ওপর শনিদেবের কুদৃষ্টি পড়ে যায়। আমি আর দীপ্তি আলের পাশ ঘেসে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ হোচট খেয়ে দুজনেই ভেজা সুরকি অর্থাৎ ইটের গুড়োর ওপর পড়ে যাই। সারা শরীর সুরকিতে মাখামাখি হয়ে গেলো। আমি একদলা সুরকি দীপ্তির গায়ে ছুড়ে মারতেই বেয়াদব মেয়ে আমার গায়ে কয়লার গুড়ো ছুড়ে মারে। ব্যাস কালিতে কালিমাময় হয়ে গেলো আমার মুখমন্ডল। আমি গাল ফুলিয়ে দীপ্তির দিকে তাকাতেই ও ভয়ে দৌড়।

আমি উঠে রাস্তার ধারে আসলাম। মটরের থেকে পানি নিয়ে মুখ ধুলাম। কিন্তু কালি উঠছেই না।।বরং আরও লেপ্টে যাচ্ছে। রাগ করে রাস্তার ওপর উঠে চলে আসলাম। একবারে বাড়ি গিয়ে মুখ ধৌত করবো। রাস্তার ধার ঘেসে হাটছি এমন সময় আমার পাশে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো। এই প্রথম আমি শহুরে গাড়ি দেখছি। চারচাকার সাদা গাড়ি। গাড়ির কাঁচ সড়িয়ে একজন ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন।

– ” সোনামনি আলতাফ রহমানের বাড়ি কোনদিকে বলতে পারবে? ”

আমার আব্বুর নাম বলায় আমি চটজলদি উত্তর দিলাম।
– ” হ্যাঁ। আমাদের বাড়ি এই রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে বামদিকে। ”

ভদ্রলোক আমার কথায় ভ্রু কুচকে তাকালেন। আমি লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললাম ওরনা দিয়ে। তিনি মুচকি হেসে আমাকে কাছে ডাকলেন। আমি কাছে যেতেই উনি দরজা খুলে বেড়িয়ে এসে আমাকেও গাড়ির ভেতর নিয়ে বসালেন। আমি এখনও ওরনা দিয়ে নিজের মুখ আড়াল করে আছি। হঠাৎ চুলের বেনীতে টান পড়তে আমি পেছনে ফিরে তাকাই। পেছনের সিটে একটা সাদা ধবধবে ছেলে বসে আমার চুল টানছে। ওর পাশে ছোট একটা মেয়ে। মেয়েটাও ধবধবে সাদা। ছেলেটা আমার চুল টানতে টানতেই উচ্চস্বরে হেসে বললো।

– ” আব্বু দাদীর কাছে গল্পে শুনেছি গ্রামে কালো কুচকুচে পেতনি থাকে। এটা কি সেই পেতনি? ওকে গাড়িতে তুললে কেন? ওর ছোঁয়া লাগলে আমার মিষ্টিও কালো হয়ে যাবে। ”

ছেলেটা কথা শুনে সেদিন খুব রাগ হয়েছিলাম। ছেলেটার হাতে জোরে চিমটি দিয়েছিলাম। ব্যাথায় কেঁদে ফেলেছিলো ও। মুখে বলেছিলো ‘ আমাকে চিমটি দেওয়ার ফল তুই পাবি কালো ভুত। অভীক কোনো ঋণ রাখে রাখে। সুদে আসলে এই ব্যাথার দাম উসুল করবো আমি। ‘ তবে কি অভীক ভাইয়া বিয়েটা সেই দাম উসুল করার জন্য করেছে? আমার তন্দ্রাভাব নিমিষে কেটে গেলো। আমি উঠে গিয়ে অভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভাইয়ার ঘুমন্ত মুখ দেখলেই কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। চোখের ঘনপাপড়ির আড়ালে বাদামী চোখের অধিকারী ব্যক্তিটি একজন গায়ক। বেশ কয়েকটা এলবামে গান গেয়েছেন উনি। দীর্ঘ দু’বছর পর দেখার সুযোগ পেলাম ওনাকে। এখনও আগের মতোই ধবধবে সাদা রয়েছেন, বুকে পশমভর্তি। কথিত আছে যাদের বুকে পশম বেশি তারা দয়াবান হয়, তাদের মায়া বেশি থাকে। কিন্তু এই খাঁটাশ সব বাণী মিথ্যা করে দিয়েছে। শুধু খাঁটাশ বলেও শান্তি হয়না ব্যাটা এক নাম্বারের খচ্চর। কিন্তু এই খাঁটাশটার মায়াবী মুখ বরাবরই আমার ভালোলাগে। যখন ঘুমিয়ে থাকে কিংবা নিশ্চুপ থাকে তখন মনে চায় সারাটা দিন বসে বসে তার শুভ্র মুখমন্ডল অবলোকন করি। তার গলার নিচে গাঢ় কালো একটা তিল আছে। মুখে চাপদাড়ি, হাতে সবসময় ঘড়ি পড়ে থাকেন। এটা নাকি তার ইউনিক বৈশিষ্ট্য। যতসব আজগুবি কথা। তার হাতের ওপর দুটো মশা এসে বসেছে। আমি মশা মারার জন্য সন্তর্পণে এগিয়ে গেলাম তার দিকে। মশা মারার জন্য হাত তুলবো এমন সময় উনি চোখ মেলে তাকালেন। ভয়ে টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ি অভীক ভাইয়ার বুকের ওপর। ভাইয়া নিজেও হকচকিয়ে যায়, দুহাতে আগলে ধরেন আমাকে। তার বুকের ওপর গিয়ে পড়ে আমার নয়নযুগল, অধরযুগল এবং নাক। নাকে ধাক্কা খায় তার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ। কোনো পার্ফিউম নয়, একটা তীব্র মধুর ঝাঝ। তিনি ধমকের সুরে বললেন।

– ” গেলো বুকের পাঁজরগুলো বোধ হয় গেলো। হাতি পড়েছে বুকের ওপর পাঁজর কি আর আস্তো থাকে? ”

আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে দাড়াই। চোখে মুখে অস্বস্তির ছাপ। কিন্তু উনি আমাকে হাতি বললেন? আমার ওজন কতো আর ওনার কতো? দু’দিন আগে মেপেছিলাম ৪৮। আর ওনার তো ৭৫এর নিচে না। তবুও বরাবরের মতো এবারও আমাকে কটাক্ষ করলেন। আমি মুখ ভেঙচি দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লাম। উনি বিরক্তির সুরে বলে উঠলেন।

– ” আমার দিকে একধ্যানে মোটেও তাকিয়ে থাকবি না। আমি ঘুমাতে পারি না। চোখ দিয়ে তো গিলে খাচ্ছিলি আমাকে। আমি জানি যে আমি সুন্দর তাই বলে ঘুমন্ত মানুষের শরীরে নজর দিবি?লাজলজ্জা বলে কিছু নেই দেখছি তোর। ”

আমি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হতবাক হয়ে চেয়ে আছি ওনার দিকে। উনি জানলেন কি করে আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। উনি কি মানুষের চেহারা পড়তে পারেন? নাকি উনিও জেগে ছিলেন? পরীক্ষা করার জন্য গলায় তেজ ঢেলে বললাম।

– ” আমার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই? যে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো? আমি আপনার দিকে তাকাইনি। তাছাড়া আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন আপনি বুঝবেন কি করে কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে কিনা? ”

উনি চোখমুখ খিচে আমার দিকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাকালেন। ক্ষিপ্ত সুরে কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। গলার স্বর পাল্টে ব্যাঙ্গ করে বললেন।

– ” আগে জানতাম তুই কোনো কাজের না। এখন দেখছি তোর ঘটেও গ ব র ছাড়া কিছু নেই। এটা জানিস না তুই? যে একজন ঘুমন্ত মানুষ ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়, কেউ যদি তাকে চোখ দিয়ে গিলে খায় তখন তার ঘুম স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভেঙে যায়। ”

আমি ওনার দিকে আড়চোখে তাকালাম। উনি কি আদৌ সত্য বলছেন নাকি জেগে ছিলেন এতক্ষণ। উনি কাত হয়ে আমার বিপরীত পাশে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমিও নিজের ভাবনায় মগ্ন হলাম।আচ্ছা গ্রামের মানুষগুলো এমন হয় কেন? মেয়েরা কৈশরে পদার্পণ করলেই তাদের বিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সবক্ষেত্রে অবশ্য এ বচন সত্য নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন দেখা যায়। আমি পড়তে চেয়েছিলাম। বাড়ির সবাই রাজি ছিলো কিন্তু ওই বুড়ো, না বুড়ো ঠিক নয় যদি বয়স বিবেচনা করা হয় তবে ওনাকে বুড়ো বললে সেটা অগ্রহণীয়। তবে আমার মতে উনি বুড়োই, আমার থেকে আঠারো বছর বেশি বয়সী পুরুষ নিসন্দেহে, আমার মতে, বুড়ো। দশবছর অবধি ঠিক ছিলো তাই বলে আঠারো বছর? তবে বুড়ো নামটা আমার দেওয়া নয়। দীপ্তির দেওয়া। ওর থেকে বিশ বছরের বড় সে, সেজন্য। অনেকের অনেক ভিন্ন মত থাকতে পারে, থেকেছেও তবে আমার মত অনুসারে আমি ওনাকে বুড়ো বলে ঘোষনা করে দিয়েছি, এখন এই তকমা বদলানো যাবে না। তারওপর ওনার দুটো বাচ্চাও আছে। অভীক ভাই না থাকলে যে আমার কি দশা হতো, কিন্তু এই খচ্চর এমন এক প্রাণী যার কাছে শুকরিয়া আদায় করাও বৃথা। তবে বয়সের দিক থেকে যদি ভাবি তাহলে হয়তো ইনি ঠিকঠাকই আছেন। আমার থেকে আট বছরের বড়। প্লাস, মাইনাস করে ইকুয়াল বানানো যায়।

কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর উনি উঠে বসেন। আমার দিকে ভাবলেশহীন চাহুনিতে তাকিয়ে কথায় টান দিয়ে বলেন।

– ” কি রে তোদের বাড়ির মানুষ কিপ্টা নাকি অতিথিপরায়ণ নয়। আরে যেভাবেই হোক, বিয়েটাতো হয়েছে, হ্যাঁ হয়তো আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছেন তাতে আমার আপত্তি থাকলেও আমি তো কিছু বলছি না। তোকে দয়া করে বউ এর স্বীকৃতি দিয়েছি। কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেও তো আমাকে একটু খাবার দিতে পারে ওরা। সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছি। ”

আমার মাথা ঘুরছে এই লোকের কথা শুনে। এমনি সময় চুপচাপ থাকেন আর এখানে আমায় একা পেয়ে আমার কানের পোকা বের করে দিচ্ছে।আচ্ছা কানে কি পোকা থাকে? আমি ঠিক জানি না, কারোর জানা থাকলে বলবেন আমাকে। এর খোঁটা শুনতে শুনতে আমার পেটের ভাত চাল হবার উপক্রম।

– ” আপনি বসুন আমি দীপ্তিকে ডাকছি। ”

উনি ক্ষিপ্ত সুরে বললেন।
– ” দীপ্তিকে ডাকবি কেন? তুই নিজে গিয়ে নিয়ে আয়। একটু নড়তে চড়তে শেখ। কাজ না করে করে, আজ তোর এই অবস্থা। অকর্মার ঢেকি। শোন সব খাবার গরম করে আনবি। আমি বাসি, ঠান্ডা খাবার খেতে পারিনা। প্রয়োজনে রান্না করে আনবি। ”

আমি অতিষ্ট হয়ে উঠলাম ওনার অহেতুক কথাবার্তায়। এমনিতেই বিয়েবাড়ি থেকে বর কিভাবে উধাও হলো সেটা বুঝতে পারছি না তারওপর এই ননস্টপ ভাঙা রেডিও বেজেই চলেছে। মন চাচ্ছে পঁচাবাসি খাবার ফুসলিয়ে খাইয়ে দেই। আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি আবার চেচিয়ে উঠলেন।

– ” কি রে বর পালানোর শোকে কি আমায় না খাইয়ে মারবি? তোর বর পালিয়েছে তাতে আমার কোনো ফল্ট নেই। তাছাড়া যে বর তার জন্য আবার এতো চিন্তা। খেতিস তো সতীনের খুন্তির ছ্যাকা, কথার বিষ। তার জন্য এতো ব্যাকুলতা? কোনো চক্কর টক্কর ছিলো নাকি? ”

আমি অসহায় দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম। উনি এই মুহূর্তে আমাকে যা বলছেন এটা যদি আমি বাইরে গিয়ে বলি নিঃসন্দেহে উনি পাল্টি খাবেন। অন্ততো এ’কবছরে ওনাকে এতটুকু আমি চিনতে পেরেছি। কিন্তু ওনার প্রতিটা কথা কেন জানি না বিষের জ্বালার অনুভূতিতে কাঁপিয়ে তুলছে আমাকে। ওনার মুখ থেকে এধরনের কথা আমার কর্ণ, মন কোনোটাই শুনতে চায় না। কিছুতেই না। উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন উত্তরের অপেক্ষায় । অগত্যা আমি জানালা দিয়ে দীপ্তিকে জোরে ডাকলাম। দীপ্তি ভয় পেয়ে ছুটে এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই তৎক্ষনাৎ বেড়িয়ে যাই আমি। অভীক তখনও তার ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দরজার পানে।

চলবে?

একটা পরীর গল্প পর্ব-০১

0

একটা_পরীর_গল্প
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#সূচনা_পর্ব

কিছুক্ষণ পরেই আমার বিবাহ। খুব ধুমধাম করে আমার বাবা-মা আমার বিবাহ দিচ্ছেন এক ৩৩ বছর বয়সী বুড়োর সঙ্গে।

বিবাহের আয়োজন দেখে আমার সারা শরীর ঘিনঘিন করছে। বুড়োর চৌদ্দগুষ্টির মানুষ এসে গিজগিজ করছে আমার চারপাশে। একে তো গ্রীষ্মের তীব্র তাপ অপরদিকে ঘরভর্তি মানুষের ভিড়ে, তপ্ততায় সিদ্ধ হবার মতো অবস্থা আমার। ভারি কাতানের শাড়ির এক কোনা উঁচু করে নিজেই নিজের মুখে হাওয়া দিচ্ছি। সারা শরীর ঘেমে চপচপ করছে। এমন বিরক্তিকর অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে যে আমিও পড়তে পারি সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। এক মহিলা এসে আমার পাশ থেকে বুড়োর বোনকে ডেকে নিয়ে গেলো। হঠাৎ করেই যেন ধীরে ধীরে ঘর ফাঁকা হতে থাকে। আমি বিষ্মিত হবার ভান করে গম্ভির মুখে বসে থাকি। আসলে খুশিই হয়েছিলাম। অসহ্য লাগছিলো সবটা, কিন্তু মুখে সে কথা বলার জো কোথায়? কিছুক্ষণ পর আমার বোন দীপ্তি এসে আমাকে খবর দিলো।

– ” আপু, আপু তোর বর নাকি পালিয়ে গিয়েছে। কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। বেশ হয়েছে বুইড়া ব্যাটার শখ দেখে বাঁচি না। ”

আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক বিয়েটা তাহলে হবে না। কিন্তু পরক্ষনেই এক অজানা চিন্তা ঝেকে বসলো মাথায়। বিয়ে যদি না হয় তাহলে তো আমার বদনাম হয়ে যাবে। পরে তো কেউ বিয়ে করবে না আমাকে। তারপর ভাবলাম, বিয়ে না করে না করুক। তাতে আমার কি? কিন্তু চিন্তার বিষয় এটাই যে, যে বুড়োটা টানা একমাস ধরে ঘুরলো আমার বাবার পেছনে, শুধুমাত্র আমাকে বিয়ে করার জন্য বাবার জমিগুলোও অন্যায়ভাবে দখল করলো সেই চেয়ারম্যানের ছেলে বিয়ের দিনই হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলো কিভাবে? কোথাও তো গন্ডগোল আছেই। আমি দীপ্তিকে বাইরে পাঠিয়ে দিলাম খবর আনার জন্য। কিছুক্ষণ পর দীপ্তি হন্তদন্ত হয়ে কোথা থেকে যেন ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছি। দীপ্তি মধুর সুরে বললো।

– ” বর এসে গেছে আপু। এবার বিয়েটা হবে। ”

কথাটা আমার কর্ণগোচর হতেই আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। এমন একটা সাংঘাতিক, মারাত্মক খারাপ, বাজে খবর দিতে গিয়ে দীপ্তির এতো উল্লাস দেখে আমার গা জ্বলে গেলো। তেতে উঠে বললাম।

– ” আমার কপাল পুড়লো আর তোর আমোদ হচ্ছে? ”

দীপ্তি আমার গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি কন্ঠে বলে উঠলো।
– ” আরে ওই বুড়োর সাথে নয় তোর বিয়ে তো অভীক ভাইয়ার সাথে হবে আপু। ”

‘ তোর বিয়ে তো অভীক ভাইয়ার সাথে হবে ‘ কথাটা আমার কর্ণধারে পৌছাতেই আমি লাফিয়ে উঠি। অভীক ভাই মানে আব্বুর সেই শহুরে বন্ধুর গম্ভির ছেলে। যে মিনিটে মিনিটে আমার খুঁত ধরে, আমাকে বিনা কারনে ঝারে, প্রত্যেকটা কাজ তিনবারের নিচে করায় না, মাসে একবার কথা বললেও তার মুখে সবসময় নিমপাতার তেতো রসের মতো বুলি থাকে। কয়েকবার তো আমার চুল ধরে টেনেছে, এমনকি বাবার কাছে মিথ্যা বলে আমাকে মারও খাইয়েছে। সেই অভীক ভাইকে বিয়ে করতে হবে? এর থেকে তো বুড়োটাই ভালো ছিলো। দীপ্তি আবার বলে উঠলো।

– ” জানিস আপু ভাইয়া তো কিছুতেই বিয়ে করবে না। বলে কিনা গ্রামের গাইয়া মেয়ে, খ্যাত, আনস্মার্ট মেয়েকে কখনই নিজের বউ বলে মানবে না। কিন্তু চাচ্চু যে ধমক দিলো, উনি ভয়েই সুড়সুড় করে রাজি হয়ে গেলো। ”

আমি অবাক হলাম দীপ্তির কথা শুনে। উনি আর ভয়? হঠাৎ বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষন করলো কিভাবে বোধগম্য হলো না আমার। আমি নির্ভীক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম জানালাই বাহিরের পানে। উঠানে কয়েকটা রাজহাঁস ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আধাঘন্টার মধ্যে যেন পুরো গ্রাম খালি হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোনো শব্দ নেই, নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে পুরো বাড়িটা। দীপ্তি আবার কোথা থেকে ছুটে এসে আমার মাথায় ঘোমটা টেনে দিলো।

– ” আপু কাজীসাহেব আসছেন। ভাইয়া কবুল বলে দিয়েছে। এবার তোর পালা। দেখ একদম ত্যাড়ামি করবি না ঝটপট কবুল বলে দিবি। নাহলে কিন্তু পরে খুব মারবো তোকে ”

কাজী সাহেব আসলেন। যথারীতি তার বক্তব্য শেষ করলেন। আমার স্থির চাহুনি আমার শাড়ির ওপর থাকা একটা আংটিতে। অভীক ভাইয়ার আংটি যেটা গত পাঁচবছর আগে আমার জন্মদিনের উপহার হিসাবে আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সোনার আংটির উপর সাদা পাথরটা চিকচিক করছে। কানে ভেসে আসলো কাজীসাহেবের কর্কশ ধ্বনি ‘ বলো মা কবুল ‘। আমি নিজের অজান্তেই চটজলদি বলে দিলাম কবুল। সবাই আমার ব্যবহারে মুখ টিপে হাসলো। নিজের কাজে নিজেই হকচকিয়ে যাই। যাকে পছন্দ করিনা তাকে বিয়ে করার সময় এমন অকপটে কবুল বললাম? আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে দাদি বলে উঠলেন।

– ” এই দীপ্তি বাইরে যাইয়্যা তোর আব্বারে ক পরী কবুল কইছে। ”

দীপ্তি খুশিতে নাচতে নাচতে বাইরে চলে যায়। একে একে সবাই চলে গেলো। কেন গেলো বুঝলাম না। ঠিক এই মুহূর্তে আমাকে একা রেখে বাইরে যাওয়ার কোনো উপযুক্ত কারন খুজে পেলাম না আমি। কিন্তু হঠাৎ একজনের আগমনে, বিষ্ময়ে আমার চোখ চড়কগাছ। অভীক ভাইয়া এসেছেন। সারা শরীর ঘেমে একাকার। পাঞ্জাবি ভিজে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছে। কপালে বিন্দু বিন্দু মুক্তার ন্যায় ঘামগুলো উনি দ্রুততার সাথে রুমাল দিয়ে মুছে ফেললেন। তারপর দ্রুতগতিতে এসে আমার পাশে রাখা জগ থেকে ঢকঢক করে পানি গিলে একটা চেয়ার টেনে বসলেন। আমার হাত-পা কাঁপছে ভয়ে। এখুনি বুঝি উনি আমাকে ঝারি দিবে, বলবে ‘ তোর জন্য আমার জীবন শেষ হয়ে গেলো, তোর মতো মেয়েকে বিয়ে করতে হলো আমাকে, তোর বর চলে গিয়েছে বলে সবাই আমাকে ধরে বেধে বিয়ে দিয়ে দিলো, আমার অন্য গার্লফ্রেন্ড আছে ব্লা ব্লা ব্লা। ‘ কিন্তু উনি কিছুই বললো না। শীতল চোখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। এখনও আমার মুখের সামনে একহাত ঘোমটা। আমি ঘোমটার আড়াল থেকেই ওনাকে দেখছি। উনি থমথমে গলায় বললেন।

– ” ঘোমটার নিচ থেকে আমাকে দেখার প্রয়োজন নেই। গলায় তো ঝুলে পড়েছিস এখন আর এতো আদিক্ষেতার কি প্রয়োজন। ঘোমটা খুলেই দেখ তোর জন্য আমার কেমন নাজেহাল অবস্থা হয়েছে। ”

ওনার কথায় আমার গা-পিত্তি জ্বলে গেলো। আবুল্লারে কি আমি বলছিলাম আমাকে বিয়ে কর? বিয়ে করে উদ্ধার কর? বাপের ভয়ে নিজেই সুড়সুড় করে বিয়ে করে এসে এখন আমাকে কথা শোনাচ্ছে? এতো বড় সাহস। কিন্তু উনি তো একদিক থেকে আমাকে সাহায্যই করেছেন। সুতরাং এখন যা বলছেন বলুক। এইটুকু হক তো উনি নিজেই আদায় করেছেন। আমাকে কিছু বলতে না দেখে উনি নিজেই আমার ঘোমটা উঁচু করে ধরলেন। সঙ্গে সঙ্গে দরজায় দ্রিম করে আওয়াজ হলো। দীপ্তির উচ্চহাসির শব্দ ভেসে আসছে কানে। অভীক ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকালেন দরজার দিকে। বিরক্তির সুর টেনে বললেন।

– ” তোর বোন দরজা আটকালো কেন? খোলাই থাকতো। লোকে এসে দেখতো আমার মতো নিষ্পাপ সুদর্শন যুবককে কোন পেতনির গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বস্তুত একটা প্রবাদ আছে না? বাঁদরের গলায় মুক্তার মালা? ”

আমি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলাম। উনি অপ্রত্যক্ষ ভাবে আমাকে বাঁদর বলছেন? তবুও চুপ করে বসে রইলাম। উনি এবার ধপ করে আমার পাশে শুয়ে পড়েন। আমি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলাম। কিন্তু পরক্ষনেই উনি চট করে উঠে বসলেন। গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে, জানালা বন্ধ করে দিলেন। আমি বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। কি করতে চাচ্ছেন উনি? উনি ম্লান মুখে বললেন।

– ” এই তোর ঘরে বডি স্প্রে বা পার্ফিউম আছে? তোর গায়ের বিশ্রি ঘামের গন্ধে বমি আসছে আমার। কিছু ব্যবহার করিস না নাকি? তোকে, তোর এই অবস্থা নিয়ে নাকি আমাকে সারাজীবন কাটাতে হবে। এটা ভেবেই তো গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছে করছে। ”

এবার রাগে ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা আমার। আমি উঠে গিয়ে শো-কেস থেকে পার্ফিউম এনে ওনার হাতে দিলাম। মুখে বললাম।

– ” সেইম টু ইউ। ”

উনি আমার কথায় ফোস করে উঠলেন। তাতে আমার কি? তখন থেকে আমাকে যা নয় তা বলছেন। আমি কি সেধে সেধে গিয়েছিলাম ওনাকে বিয়ে করতে? কাল রাতেও তো উনি জানিয়েছেন আমার মতো কালা মাইয়্যার বিয়েতে নাকি উনি আসবেন না। আমার শরীরে যে বাতাসের ছোঁয়া লাগবে সেটার ছোঁয়া ওনার শরীরে লাগলেই নাকি উনি কালো হয়ে যাবেন। কিন্তু দেখ সকালেই ড্যাংড্যাং করতে করতে চলে এসেছেন। উনি বিছানার ওপর বসে আমার দিকে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। এরপর সটান বিছানায় শুয়ে পড়লেন। ক্লান্ত স্বরে বললেন।

– ” আমার পা টা টিপে দে তো। তোর বিয়েতে খাঁটতে গিয়ে পা’টা ব্যাথায় ঝিম ধরে আছে। তোর বরকে খুজতে খুজতে গিয়ে এই দিগন্তের ঝলসানো রোদে পুড়ে কয়লা হতে হতে বেঁচে গিয়েছি। ”

আমি সরু চোখে তাকালাম ওনার দিকে। উনি পাঞ্জাবি খুলে পাশে রাখছেন। ওনার গলার দিকে তাকাবো ঠিক এমন মুহূর্তে উনি বলে উঠলেন।

– ” এই আমার বুক, গলা, মুখ এগুলোর দিকে নজর দিস না। তাহলে আমিও তোর মতো কালো ভুত হয়ে যাবো। তুই বরং পায়ের কাছে গিয়ে বস। আমার পা ব্যাথা করছে অনেক। পা টিপে দে। ”

আমি ঠোট উল্টিয়ে উত্তর দিলাম।
– ” আপনার গলা ব্যাথা করে না? ”

উনি বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকালেন। পরক্ষনেই বললেন।

– ” অনেক কিছুই তো ব্যাথা করে। তোকে কি আর সবটা বলা যায়? এই মনে কর তোর বাপে ধরে বেধে আমাকে মেয়েদের মতো স্যালোয়ার টাইপ কি একটা পায়জামা পড়িয়ে দিয়েছে পাঞ্জাবির সাথে ম্যাচিং করে তাতে ভেতরের অনেক কিছুতেই টান লাগছে। ব্যাথার কথা নাহয় বাদই দিলাম। কিন্তু তোকে এগুলো বলে কি লাভ? ”

আমি কিছুক্ষণ ওনার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। ভাবলেশহীন চেহারা, শুভ্র মুখশ্রীর আড়ালে একটা নির্লজ্জ, বেহায়া, অসভ্য টাইপের ছেলের নাম কি করে ‘জুহায়ের মাহতাব অভীক’ রেখেছেন চাচ্চু ভেবে পাইনা। ছোটবেলায় ওনার চরিত্রের কোনো নমুনাই কি কারোর চোখে পড়েনি? পড়বেই বা কি করে? এখন অবধি তারা কেউ জানেনই না যে তাদের ছেলের এই হাল। পরিবারের সামনে এতোটা ভদ্র সেজে ঘোরেন আর বাইরে? এমন দুমুখো মানুষরূপী কালনাগ’ই আমার কপালে ছিলো? ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলি ওনার আড়ালে, নীরবে, খুবই সন্তর্পণে।

চলবে?

শুধু তুই ২ পর্ব-৩২ এবং শেষ পর্ব

0

#শুধু তুই ২
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana (Writer)

আদি দুপুরেই চলে গেছে। নিধি খুব খুশি। কারণ এখন সৌরভের বেপারে জানতে পারবে। বাবাকে দিয়ে সিম কিনিয়ে আনে নিধি। সৌরভকে কয়েকবার ফোন দেয় কিন্তু রিসিভ করে না। নিধির এবার চিন্তা হচ্ছে। সৌরভ যদি কক্সবাজার থেকে যায়। তাহলে তো আদির সাথে দেখা হবে। আর আদির বিপদ। কি করবে এবার নিধি ভাবছে। আবার আদিকেও কল করতে পারবে না। আদি জিজ্ঞেস করবে সিমটা কার। আর নিধি আদিকে কখনোই মিথ্যা বলতে পারে না।

অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় সৌরভের বাড়ি যাবে। রেডি হয়ে পার্স নিয়ে বের হবে তখন টিভির নিউজের দিকে নজর যায়।

“আজ সকাল আটটায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে শেখ সৌরভ। পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নেমেছিলো সে।

সৌরভ মরে গেছে শুনে নিধির চোখ থেকে পানি গাড়িয়ে পরে। খাবাপ হোক মানুষ তো। এতোদিনে পরিচিত। একটা বছর রিলেশনশিপ এ ছিলো। সৌরভ কখনো নিধিকে নিধি বলে ডাকতো না নিধিরা বলতো। কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সব কিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব না। সৌরভ বেঁচে থাকলেও পারতো। হয়ত সুধরে যেতো। নতুন করে জীবন শুরু করতো।

নিধি চোখের পানি মুছে রুম থেকে বের হয়। বাবার ফোন থেকে আদিকে কল ল
করে কিন্তু আদি কল রিসিভ করছে না। নিধির ুবার ভীষণ টেনশন হচ্ছে। একটা সময় আদির ফোন আর ফোন ঢুকছে না। বন্ধ বলছে। হয়ত নিধি এতোবার কল করেছে তাই বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও নিধি চেষ্টা করছে।

বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো আদির কোনো খবর নেই। নিধি দরজা বন্ধ করে রেখেছে। নিধির মা খেতে ডেকেছে নিধি বলেছে খিদে নেই।

রাত বারোটার দিকে নিধি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে।

সকাল বেলা দরজায় নক করার শব্দে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেখে আদি দাঁড়িয়ে আছে। নিধি আদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। আদি নিধির মাথায় হাত বুলায়

” কাঁদছো কেনো?

“আপনি কেনো আমার ফোন তুললেন না?
হেঁচকি তুলে বলে নিধি।
আদি নিধিকে ধরে রুমে এনে খাটে বসিয়ে দেয়। আদি ফ্লোরে নিধির সামনে হাঁটু মুরে বসে।

” কাল সৌরভকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে কবর দিতে দিতে অনেক রাত হয়ে গেছিলো।

নিধি চুপ হয়ে যায়।

“জানো সৌরভকে না পরির পাশেই কবর দিয়েছি। চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছি। বাড়িটা বিক্রি করতে বলেছিলো বাবা কিন্তু আমি এটা করবো না। আমি আর কখনোই কক্সবাজার যাবো না
আদির চোখে পানি টলটল করছে।

” সৌরভ পরি এদের নাম আমার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চায় আমি।
আদি চোখ মুছে
“চলো আমাদের বাড়িতে যাবো।

” এখনই

“হুমমম

আদি আবার চুপ হয়ে যায়। উঠে খাটে বসে।

” সৌরভ মেরেছিলো পরিকে। কেনো জানো? পরির পেটের বাচ্চা ছিলো পরির আর পরি বলেছিলো তোমাকে আর আমাকে এটা বলে দেবে তাই সৌরভ পরিকে মেরে ফেলে। এতোটা জঘন্য ছিলো সৌরভ।

নিধি আদির কাঁধে হাত রাখে।
“বাদ দিন এসব কথা।

” হুমমম। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি

আদি ফ্রেশ হতে যায়। নিধিও রান্না ঘরে চলে যায় আদির জন্য খাবার বানাতে। গিয়ে দেখে নিধির মা আগেই খাবার রেডি করে বসে আছে

“কি রে তুই এলি আদি বাবা কোথায়? খাবে না

” আসছে।
নিধি টেবিলে তাকিয়ে দেখে সব কিছু করলার আইটেম

“আম্মু এতো করলা

” আদির জন্য

“আর আমি খাবো কি?

” এগুলোই খাবি।

“তুমি তো জানো আমি করলা খেতে পারি না

” অভ্যাস করতে হবে।

নিধি গাল ফুলিয়ে টেবিলে বসে। নিরা নিধির বাবা আর আদিও চলে আসে। সবাই মিলে গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ করে।
দুপুরের দিকে ওরা বাড়িতে চলে আসে। নিধি সব সময় আদির পেছন পেছন থাকে। আদিকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে।

আজ পৃতির গায়ে হলুদ। সকাল সকাল নিধি উঠে কোনটা শাড়ি পড়বে আদি কোনটা পানজাবি পড়বে সব ঠিক করে রাখে। তারপর গোছল করে রান্না করতে যায়। কোমরে ওড়না গুজে রান্না করছে। নিরা চেয়ার টেনে নিধির পাশে বসে আছে। নিধি নিরাকে কোনো কাজই করতে দিচ্ছে না।
রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে আদিকে ডাকতে যায়। আদি এখনও ঘুমচ্ছে।

“এই যে উঠুন অনেক বেলা হলো তো

আদি নরেচরে শয়। নিধি আদির কাছ থেকে কোলবালিশ নিয়ে যায়। তাও আদি উঠে না। ধাক্কায় তাও খবর নাই

” ও গো শুনছো? উঠো না গো

আদি লাফ দিয়ে উঠে বসে। নিধি ভ্রু কুচকে তাকায়
“এতোখন উঠলেন না কেনো?

আদি নিধিকে টেনে বুকে নিয়ে বলে
” এতোখন তো মিষ্টি করে ডাকো নাই

নিধি মুচকি হাসে
“চলুন খুব খিদে পেয়েছে।

” হুমম পাঁচ মিনিট

আদি পাঁচমিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর আদি আর নিধি এক সাথে খেতে যায়।

বিকেল বেলা হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। আদি নিজে হাতে নিধিকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। সাজিয়ে দেয়। পুরো হলুদ অনুষ্ঠানে আদি নিধি এক সাথেই ছিলো।

ভালোভাবেই পৃতির বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়।

আট বছর পরে
অফিসে আদির চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে পাঁচ বছরের পিচ্চি মেয়ে আরিহা। আদি মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।

“বাপি আইসক্রিম খাবো
চকলেট মুখে পুরতে পুরতে বলে। আদি টেবিলের ওপর তাকায় কিছুখন আগে বলেছে আপেল খাবে এনেছে। তারপর জুস তাও এনে দিয়েছে। চকলেট জিরস চকোফান সব কিছুই আনা হয়ে গেছে। বাকি ছিলো আইসক্রিম সেটাই এবার আনতে হবে

” মামনি এতো কিছু আনিয়েছো কিচ্ছু তো খেলে না। এখন আবার আইসক্রিম।

“তুমি আমার কোনো কথা শুনো না। মামনির কলেজে গেলে ওখানের আংকেলরা আমাকে এতো এতো সব এনে দেয়
গাল ফুলিয়ে বলে আরিহা।

আদি ফোন করে আইসক্রিম ও আনতে বলে। কিছুখনে আইসক্রিম ও চলে আসে।

” সরি সরি লেট হয়ে গেলো
নিধি তারাহুরো করে আদির কেবিনে ঢুকতে ঢুকতপ বলে।
আদিকে এরকম দাঁড়িয়ে কাজ করতে আর আরিহার সামনে এতো খাবার দেখে নিধি ফিক করে হেসে ফেলে।

“এবার স্বীকার করো তোমার মেয়ে আমাকে জ্বালায়।

” আমার মামনি গুড গগগগার্ল
আদি বলে।

নিধি আরিহার পাশে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
“সেটাই তো। বাপ মেয়ে মিলে আমাকে একটু ও জ্বালাও না

” তুমি বলতে চাইছো আমরা তোমায় জ্বালাই
আদি রেগে বলে।

“স্টপিট। তোমারা একদম ঝগড়া করবে না। আমি ঘুরতে যাবো বলে সকাল থেকে কিউট কিউট সেজে বসে আছি আর তোমরা আমাকে নিয়েই যাচ্ছো না

” এখনি নিয়ে যাবো মামনি
আদি বলে

আরিহা চেয়ার থেকে নেমে আদির ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়। তারপর আদি আর নিধির হাত ধরে টান দিয়ে বলে
“চলো

মেয়ের বায়না আদিকে আর পায়কে চলে যায় ঘুরতে।
নিধি এখন একটা কলেজের শিক্ষিকা। আদিও নতুন একটা জব নিয়েছে। নিরার একটা ছেলে হয়েছে যে আরিহার থেকে দুই বছরের বড়।

সমাপ্ত

শুধু তুই ২ পর্ব-৩১

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৩১
#Tanisha Sultana (Writer)

নিধি আদির কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে
“রোহন ভাইয়া আমি বিবাহিত। আদি আমার হাজবেন্ড। সেদিন আদির সাথে ঝগড়া হয়েছিলো তাই ও বলেছিলো আমি ওর বোন। প্লিজ আমাদের মধ্যে থার্ড পারসন হবেন না।

রোহন চুপ করে আছে। নিধি লাউড স্পিকারে দেয়।
নিধি একবার আদির দিকে তাকিয়ে বলে
” রোহন ভাইয়া চুপ করে আছেন কেনো কিছু বলেন?

রোহন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে

“এই সত্যি কথাটা বলতে এতোদিন লাগলো? আমি আগেই সব জানতাম। শুধু তোমার মুখ থেকে শুনতে এইরকম করতাম।

নিধি নিশ্বদে একটু হাসে।আদিও হাসে

“সরি রোহন
আদি অপরাধীর মতো বলে

” আরে ভাই মনের কথা বুঝতে এতো সময় লাগলে হবে? আগলে রেখো নিধিকে। কাল অস্ট্রেলিয়া চলে যাবো। হয়ত আর কখনো দেশে ফেরা হবে না।

“বিয়ের পরে যেতেন

” সত্যি বলতে তোমার সামনে যেতে চাইছি না। আর বিয়েতে তোমাকে আদির সাথে দেখে আমার খারাপ লাগবে। ভালোবাসা তুমি ভালোবাসা হয়েই থাকবে। ভালো থেকো।

রোহন ফোন কেটে দেয়। নিধি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এই কয়দিনে এতো ভালোবেসে ফেললো কেমনে?
আদি পেছন থেকে নিধিকে জড়িয়ে ধরে

“আমার ভাবনাকুমারী ভাবনায় আমি না থেকে অন্য কেউ থাকলে আমার ভালো লাগে না। ভালোবাসতেই পারে তা নিয়ে এতো ভাবতে হয় না।

নিধি ভাবনায় বিভোর থেকেই বলে
” হুমম

আদি নিধির ঘাড়ে গভীর ভাবে চুমু দেয়। নিধি আদির হাত খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আদি নিধির গালে নাক ঘসে বলে

“নিধি আমার বেবি চায়

নিধি চমকে আদির দিকে তাকায়
” এখনই বেবি
আদি নিধিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে

“এতো চমকালে কেনো?

” আমি এতো তাড়াতাড়ি বেবি নিবো না। দুই তিন বছর পরে।

“নাহহ আমার এখনি চায়।

নিধি মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। নিধির এখন বেবি নেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। পুরো লাইফ ক্যারিয়ার সব পড়ে আছে। আর এখন বেবি নিলে তো সব সময় বেবি নিয়ে থাকতে হবে।

” নিধি আই নিড ইউ। ভালোবাসতে চায় তোমায়। তুমি কি

নিধি লজ্জায় লাল নীল হয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরে। আদিও মুচকি হাসে।

❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️

রাতে
নীরার শরীর আরো খারাপ হয়ে যায়। কিচ্ছু খেতে পারছে না। নিধির বাবা এসেছে নিরাকে আর নিধিকে নিতে। ড্রয়িং রুমে বসে আছে নিরা নিধি আদির বাবা মা নিধির বাবা ইমন পৃতি আকাশ।
নিধির বাবার অনেক করে বলার পরে আদির বাবা রাজি হয় নিরা আর নিধিকে যেতে দিতে। নিধিকে জামাকাপড় প্যাক করতে বলা হয়েছে। দুদিন থাকবে ওখানে।
নিধি রুমে যায়। আদি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
নিধি একটা ব্যাগে জামাকাপড় ভরছে

“না গেলে হয় না?
আদি আসহায় ফেস করে বলে।
নিধি জামাটা খাটের ওপর রেখে আদির পাশে বসে বলে

” যেতেই হবে। দুদিন পরেই চলে আসবো

“দুইদিন

” হুমমম

আদি নিধির ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দেয়।
তারপর নিধির গালে হাত দিয়ে বলে
“আমারও কয়েকটা শার্ট প্যান্ট গুছিয়ে নাও

নিধি অবাক হয়ে বলে
” কেনো?

“আমিও যাবো

” মানে?

“শশুড়বাড়ি যাবো
বলেই আদি চলে যায়। নিধি আদির জামাও প্যাক করে।

আদি ডাইভ করছে নিধি পাশে বসে আছে। আর পেছনে বসেছে নিধির বাবা আর নিরা।

নিধির আদির ওপর রাগ হচ্ছে। সবার সামনে বলে দিলো ” আমি নিধিকে ছাড়া দুইদিন থাকতে পারবো না। আমিও যাবো ওর সাথে ” সবাই মিটমিট করে হাসছিলো।।নিধির তো ইচ্ছে করছিলো মাটির সাথে মিশে যেতে। দুইদিনে কি মরে যেতো। যতসব

আদি নিধির মুখ দেখে বুঝতে পারছে ভাবনাকুমারী রাগ করেছে। আদি একহাতে ডাইভ করছে আর একটা হাত দিয়ে নিধির হাত ধরে। নিধি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আর রাগী দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকাচ্ছে। আদি মনের সুখে শিশ বাজাচ্ছে আর গাড়ি ডাইভ করছে।

“গাড়িতেও শান্ত হয়ে বসতে পারছো না? এতো নরাচড়া করছো কেনো?

বাবার ধমকে নিধি শান্ত হয়ে বসে। মনে মনে আদিকে প্রচন্ড বকা দিচ্ছে। আর আদি মিটমিট করে হাসছে।

বাড়িতে এসেই নিধি হনহনিয়ে রুমে চলে যায়। নিঅি মায়ের সাথেও কথা বলে না। আদি পেছনে ব্যাগ নিয়ে আসে। নিরা তো এসেই সোফায় বসে পড়ে। প্রচন্ড ক্লান্ত ও। নিধির মা আদিকে দেখে চমকে ওঠে। আদি আসবে এটা উনি স্বপ্নেও ভাবে নি। হা করে তাকিয়ে আছে আদির দিকে।

নিধির বাবা মায়ের কাছে গিয়ে ধাক্কা দেয়।
” জামাই প্রথমবার আমাদের বাড়িতে এলো আর তুমি তাতে আপ্যায়ন না করে হা করে তাকিয়ে আছো
রাগী কন্ঠে বলে আদির বাবা। নিধির মা নরেচরে দাঁড়ায়।

“আরে আদি বাবা এসো না এসো
আদি মুচকি হাসে
” কেমন আছেন আন্টি

“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

” ভালোই। আমি রুমে যাচ্ছি

আদি নিধির রুমে যায়।
নিধি হাত কচলাচ্ছে আর পায়চারি করছে। মনে মনে ঠিক করেছে আদি সরি না বলা পর্যন্ত আদির সাথে কথা বলবে না।
আদি রুমে এসে ব্যাগটা রাখে। নিধি আদিকে দেখে ঘুরে দাঁড়ায়। আদি বুঝতে পেরেও কিছু বলে না। লম্বা হয়ে সুয়ে পড়ে।
যদিও এখন তবুও প্রচন্ড গরম।
“ইডিয়েট একগ্লাস ঠান্ডা ফ্রিজের পানি লেবু আর চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে নিয়ে এসো।

নিধি না শোনার ভান করে সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে। গাল টা আগে থেকেই ফুলা ছিলো। এখন আরও একটু বেশি করে ফুলায়।

আদি একহাতের ওপর ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বলে
” কথা কানে যাচ্ছে না? শরবত চেয়েছি আমি
কিছুটা জোরে বলে আদি।

“আম্মু আমাদের বাড়িতে গেস্ট এসেছে সে লেবুর শরবত খাবে
চেচিয়ে মাকে বলে নিধি।

” আমি তোমার কাছে চেয়েছি
কিছুটা রেগে বলে আদি।

“আমাকে সরি না বললে আমি কারো সাথে কথা বলবো না
নিধি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলে।

” ওহহ এই বেপার। আমার হবু বেবির মামনি আমার ওপর রাগ করেছে।

“এটা বুঝতে এতোখন লাগলো?

” আজিব না বললে বুঝবো কি করে?

“ভালোবাসলে ঠিকই বুঝতেন। ভালোবাসেন না তো।

” কইছি তোমারে

“সব কথা মুখে বলতে হয় না

” এতো কটা কেনো তুমি?
বিরক্ত হয়ে বলে আদি

“আমি কটা? কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে নিধি।

” হুম
আদি আরাম করে শুয়ে বলে।

“ঠিক আছে। আমি কটা তো? কথা বলতে হবে না কটার সাথে।

গাল ফুলিয়ে বেলকনিতে চলে যায় নিধি।
নিধির মা আদির জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসে।

” বাবা নিধি কই?

আদি শরবতে চুমুক দিতে দিতে বলে
“বেলকনিতে

নিধির মা বেলকনিতে চলে যায়।

” বলছিলাম আদি বাবা কি খায় বল তো

“আদি আবার তোমার বাবা হলো কবে থেকে?
অবাক হয়ে বলে নিধি

” বেশি কথা বলিস না। জামাইদের বাবা বলতে হয়।

“করলার জুস বানিয়ে দাও। তারপর করলা ভাজি ভর্তা আর করলা দিয়ে মাছ রান্না করো।

” এগুলো তুই খাবি?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিধির মা

“আরে না তোমার জামাই

” ওহহ

“আম্মু তোমার ফোনটা কোথায়?

” রুমে। কেনো বলতো?

“এমনিতেই। যাও না রান্না করো। ওনার হয়ত খুব খিদে পেয়েছে।

নিধির মা চলে যায়।৷ নিধি এখনো বেলকানিতে দাঁড়িয়ে আছে।
” ধুর আদিটা সাথে না এলে কতো ভালো হতো। এই দুইদিনেই সৌরভের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারতাম। এখন হলো আরেক ঝামেলা।
নিধি মনে মনে বলছে।

“বউ এদিকে আসো
আদি ভেতর থেকে ডাকে। নিধি যায়

” বলুন

“সরি

” হুমমম

“রাগ করো না প্লিজ
আদি ইনোসেন্ট ফেস করে এক কানে হাত দিয়ে বলে। নিধির রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। নিধি মুচকি হাসে।

” হইছে

নিধি আদির পাশে বসে। আদি নিধির কোলে মাথা দেয়।
“মাথায় হাত বুলিয়ে দাও
নিধি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

সকাল বেলা নিরাকে ডাক্তার দেখে গেছে। নিরা প্রেগন্যান্ট। সবাই তো ভীষণ খুশি। নিধির তো খুশির কোনো সীমাই নেই। ও খালামনি প্লাস কাকিমনি হবে ভাবা যায়। সব সময় নিরার কি লাগবে না লাগবে সেই খেয়াল রাখছে নিধি। আর বেচারা আদি একা একা রুমে বসে আছে। ব্রেকফাস্ট করার সময় একঝলক নিধিকে দেখেছিলো।
নিধি নিরার রুম ভালো করে পরিষ্কার করে মায়ের সাথে রান্নায় সাহায্য করে ক্লান্ত হয়ে রুমে আসে। গোছল করবে বলে।
আদি এতোখন ফোনে গেমস খেলছিলো নিধিকে দেখে ফোন রেখে নিধির দিকে তাকায়। নিধি কাবাড থেকে জামাকাপড় নিয়ে গোছল করতে যায়। গোছল সেরে বেরিয়ে আয়নার সামনে চুল মুছছে

” আমি যে তোমাদের বাড়িতে এসেছি তুমি কি সেটা ভুলে গেছো?

নিধি আদির দিকে তাকিয়ে বলে
“ও মা ভুলে কেনো যাবো?

” তো সারাদিন একবারো খোঁজ নিলা না।

“সরি বিজি ছিলাম।

” হুম তা তো থাকবেই আমি তো ঘুর্ণিঝড়ে উড়ে এসেছি

“সরি বললাম তো

” এখনই আমাকে কক্সবাজার চলে যেতে হবে

“কিহহ
কিছুটা চমকে বলে নিধি।

” হুমম অফিসের জরুরি কাজে।

“আসবেন কবে?

” পৃতির বিয়ের দিন রাতে।

“তিন দিন

” হুমমম

“ওহহহ

নিধি আদির সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” না গেলে হয় না

“না হয় না যেতেই হবে। মনি একা পারবে না

” ওহহহ

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-২৯+৩০

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৯
#Tanisha Sultana (Writer)

“কথা বলছো না কেনো নিধি? বিয়ে করবে আমায়? রানীর মতো করে রাখবো তোমায়। কখনো তোমায় রাগাবো না। তোমার ভালো লাগে না এমন কিছু আমি কখনোই করবো না। সব সময় হাসিখুশি রাখবো তোমায়। কখনো কোনো বিপদ আসলে আমিএকাই তার মোকাবিলা করবো।

নিধি হাত কচলাচ্ছে। আদি অধিক আগ্রহে তাকিয়ে আছে নিধি কিছু বলবে তার অপেক্ষায়। কিন্তু নিধি কিছু বলছে না বলে আদির বিরক্ত লাগছে।
নিধি জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে

” আই লাইক ইউ বাট ডোন্ট লাভ।

রোহন উঠে দাঁড়ায়।

“আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো না। তাই তো তোমায় বিয়ের প্রপোজাল দিলাম আমি। বিয়ের পরেও ভালোবাসা যায়। তোমার যত সময় লাগবে আমি দেবো বাট সেটা বিয়ের পর। এখন আমার তোমায় লাগবেই। আই নিড ইউ

নিধি এখন পড়েছে মারাক্তক বিপদে। কি করবে বুঝতে পারছে না।

” রোহন তুমি চিন্তা করো না নিধি তোমাকে বিয়ে করবে

পেছন থেকে নিধির শশুড়মশাই বলে। নিধি আর আদি চমকে ওঠে। রোহন খুশি হয়।

“কিন্তু আংকেল ও তো কথাই বলছে না।

আদির বাবা রোহনের পিঠ চাপড়ে বলে

” আমার নিধি মা নার্ভাস তো তাই কিছু বলছে না। নিধি যাও রুমে যাও

“বাবা বলছিলাম

” তোমার কিছু বলতে হবে না। রুমে যাও

নিধি আদির দিকে এক নজর তাকিয়ে রুমে চলে যায়। আদিও নিধির পেছন পেছন যেতে নেয়

“কোথায় যাচ্ছো?
আদি বাবার কথায় দাঁড়িয়ে যায়।

” রুমে যাচ্ছি
বলে আদি হনহনিয়ে চলে যায়।

“রোহন বসো
রোহন বসে। আদির বাবার সাথে গল্প করতে থাকে।

নিধি রুমে গিয়ে পায়চারি করছে। নিচে কি হচ্ছে কিছুই জানে না। আদির বাবা করতে চাইছে কি নিধি বুঝতে পারছে না। মাএ ভুল বোঝাবুঝির পালা শেষ করে দুজনের কাছাকাছি আসার সময় এসেছে এখনই নতুন ঝামেলা এসে জুটেছে। ভাল্লাগে না।

আদি রুমে এসে ধাম করে দরজা বন্ধ করে দেয়। মাথা চেপে ধরে খাটে বসে পড়ে।

” কি হয়েছে?

আদি রেগে বলে
“কি হয়েছে তুমি জানো না?

নিধি দুপা পিছিয়ে যায়
” আআআমার কি দোষ

“তোমার কোনো দোষ নেই। দোষ তো আমারই

নিধি ঠাস করে আদির পাশে বসে বলে
” এতোদিনে ঠিক কথা বলেছেন আপনি।

আদি গরম চোখে নিধির দিকে তাকায়। নিধি চুপসে যায়

“আমার কি দোষ বলো

” না না আআআপনার কোনো দোষ নেই
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে নিধি।

“বলতে বলছি
কর্কশ গলায় বলে আদি।

” না মানে আপনি যদি না বলতেন আমি আপনার বোন তাহলে এসব কিছু হতোই না
মাথা নিচু করে বলে নিধি।

“আর তুমি যে রোদকে বলেছিলে আমি তোমার ভাই

” রোদ আর রোহন এক হলো

“প্রথমে তো একই মনে হচ্ছিলো
বিরবির করে বলে আদি।

” এখন কি হবে? ইনোসেন্ট ফেস করে বলে নিধি।

“কি আর হবে তোমাকে রোহনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো।

” ওহহ
নিধি ছোট করে বলে।

“ওহহ মানে কি? আদি অবাক হয়ে বলে।

” আমাকে রোহনের সাথে বিয়ে দেবেন

আদি নিধিকে খাটের সাথে চেপে ধরে

“খুব শক না রোহনের সাথে বিয়ে করার।

” না মানে আপনিই তো বললেন

“আমি বলছি বলেই তুমি বলবা।

” ভুল হয়ে গেছে

“মেরে ফেলে দেবো একদম। তুই আমার বুঝলি

” হুমমম

আদি নিধিকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে।

“আআআপনার দাঁড়িতে আমার শুরশুরি লাগছে

আদি মাথা উঁচু করে নিধির দিকে তাকায়। এইরকম একটা রোমান্টিক মোমেন্টে এরকম কথা।

” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

আদি হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করে দুরে গিয়ে শয়।

নিধি আদির একটু কাছে এসে বলে

“কি হলো

আদি খাটের মাঝে গোল হয়ে বসে বলে

” পবলেম কি তোমার? দুরে গেলে বলে কি হলো? কাছে আসলে আবার তোমার আমার দাঁড়িতে পবলেম হয়। আবার নিরামিষ বলো। করবোটা কি?

“এরকম একটা চিন্তিত পরিবেশে রোমাঞ্চ আসে আপনার?

দরজায় নক করে আদির বাবা
” আদি দরজা খুলো

নিধি উঠে দরজা খুলে দেয়। আদির বাবা হনহনিয়ে রুমে ঢুকে। আদি সুয়ে ছিলো উঠে বসে

“তুমি আর নিধি এক রুমে থাকবা না

” কেনো?

“তোমরা তো ভাই বোন তাই না

” ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত আমি আর নিধি একরুমেই থাকবো। আর এটা নিয়ে কোনো আমি শুনবো না

আদির এরকম লাগাম ছাড়া কথা শুনে নিধি লজ্জায় লতিয়ে যাচ্ছে। বাবা সামনে কেউ এভাবে বলে

আদির বাবা নিধির দিকে তাকায়।
নিধি মাথা নিচু করে আছে
“তুমি ওর রুমে থাকবা না

” ও আমার সাথেই থাকবে
আদি নিধির হাত ধরে টান দিয়ে খাটে বসিয়ে বলে।
“না মানে আমি

” একটা কথা বললে চাপকে গাল লাল করে দেবো
আদির ধমকে নিধি চুপ হয়ে যায়। আদির বাবা বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

“ছি বাবাকে কেউ এভাবে বলে

” বাবা তাহলে এরকম একটা কথা বললো কেনো?

“ধুর

নিধি কাবাড থেকে ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করতে যায়। আদি বেলকনিতে চলে যায়।

নিরার শরীর খারাপ। সকাল থেকেই বমি হচ্ছে কিচ্ছু খেতে পারছে না। শাশুড়ী পৃতির জন্য গহনা কিনতে যাবে তো রান্নার দায়িত্ব নিধি ওপর পড়েছে। নিধি রান্নাটা ভালোই পারে।
কিচেনে গিয়ে একমনে নিধি ভাবছে কি রান্না করবে। দুপুরে সবাই কই মাছ ডাল করলা ভাজি খেয়েছে। তাহলে রাতের জন্য নতুন কোনো আইটেম বানালে মন্দ হয় না। করলা ভাজি কিছুটা বেচে গেছিলো সেটা নিধি ফ্রিজের নরমালে রেখে ছিয়েছে রাতে আদিকে খেতে দেবে বলে। বেচারা আদির তো আবার করলা ছাড়া আর কিছু মুখে রোচে না।

অনেক ভেবে নিধি ফ্রিজ থেকে খাসির মাংস বের করে। আর অনেক খুঁজে বাসমতী চাল পায়। ব্যাস নিধি এবার বিরিয়ানি বানাবে। কিন্তু কথা হলো ফ্রিজে দই নেই। দই ছাড়া তো বিরিয়ানি বানানো যাবে না। যদি মজা কম হয়। কোমরে গোঁজা ওড়না ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে দোকানে যায় দই আনতে।
দই কেনা শেষ করে রিকসার জন্য দাঁড়িয়ে আছে নিধি। তখন দেখতে পায় সৌরভ বড় গাড়ি নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে আর ফোনে কথা বলছে। সৌরভকে দেখে বেশ চিন্তিত লাগছে। নিশ্চয় কাউকে মেরে টেরে এসেছে। তবে নিধি এবার নিশ্চিত পরির খুনটা সৌরভ করেছে। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া মুখ খোলা যাবে না। নিধির এবার একমাত্র কাজ সৌরভের মুখ থেকে সত্যিটা শোনা। পৃতির বিয়ের পরেই নিধি কাজে লেগে পড়বে। এক বছরের পুরনো কেছ একটু নরা দিলেই পুরোটা বেরিয়ে আসবে। আর তাই নিধি চাইছে না পৃতির বিয়েতে এসব কোনো প্রভাব পড়ুক।

এসব চিন্তা মাথা থেকে বের করে নিধি রিক্সায় ওঠে। চটপট বাড়িতে ঢুকে মেইন দরজা বন্ধ করে দিয়ে পা টিপেটিপে রান্না ঘরে যায়। রান্না ঘরে গিয়েই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। কেউ দেখে নি। দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করতো সাথে বকা ফ্রী।

নিধি এবার মাংসটা ভালোভাবে মেখে ঢেকে রেখে দেয়। একঘন্টা পরে রান্না করবে। এই ঘন্টা কি করবে ভাবছে। খরগোটা থাকলে ওকে ঘাস খাওয়াতো কিন্তু ওটাও হারিয়ে গেলো। নিধি মন খারাপ করে রুমে এসে দেখে আদি উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমচ্ছে। একদম নিশ্পাপ বাচ্চাদের মতো। দেখলেই গাল দুটো টেনে দিতে ইচ্ছে হয়।

নিধি অনেক খুঁজেও একটাও সিম পায় না ফোনে ঢোকানোর মতো। ছিম না থাকলে সৌরভের সাথে যোগাযোগ করবে কি করে? আর প্রমাণ পাবে কি করে? আদিকে বললে আদি কিছুতেই ছিম দেবে না। অন্য কোনো উপায় ভাবতে হবে। অন্য কারো কাছ থেকে ছিম আনতে হবে। নিধির আবার স্মার্ট কার্ড নাই। স্মার্ট কার্ড ছাড়া এযুগে ছিম কেনা যায় না।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৩০
#Tanisha Sultana (Writer)

নিধি মনে মনে বুদ্ধি বের করে ফেলে। কাল একবার বাবার বাড়ি যাবে আর সেখান থেকে বাবাকে দিয়ে সিম কিনিয়ে নিয়ে আসবে।

“ওই ভাবনাকুমারী কি ভাবো?
আদি ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে।

নিধি আদির দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার নখ মুখে নিয়ে বলে
” ভাবছিলাম সৌরভ
আদি আবার চোখ বন্ধ করছিলো নিধির কথায় লাফ দিয়ে বসে।
“সৌরভ

নিধি চমকে ওঠে।
” কি বলতে যাচ্ছিলাম আমি
এখন গোয়েন্দার মতো পিছু লেগে থাকবে আর আমার পেট থেকে কথা বের করেই ছাড়বে। কিন্তু আমিই নিধিরা নিধি আমি কিচ্ছু বলবো না। হুমম

আদি হাত ধরে টান দিয়ে নিধিকে খাটে বসায়।

“বলো সৌরভকে নিয়ে কি ভাবছিলে।

” কককোথায় সৌরভ বললাম? আমি কখন সৌরভ বলছি

আদি দাঁত কটমট করে নিধিকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। একহাতে নিধির কোমর জড়িয়ে আর একহাত চুল ধরে

“আমাকে কপি করা

” এরকম করেন কেন? বাচ্চা মেয়ে আমি
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে নিধি

আদি গাল টেনে বলে
“আমার সোনা বাবুটা তোমার ভাষায় টুনুমুনু। বলো বেবি কি ভাবছিলে

” আমাকে আপনার বাচ্চা মনে হয়। চোখ পাঁকিয়ে বলে নিধি।

“তুমিই তো বললে তুমি বাচ্চা

” একদম আমি বাচ্চা না। ঠিক সময় আমাকে কাছে টেনে নিলে আমিও এতোদিন দুই বাচ্চার মা হয়ে যেতাম।
গাল ফুলিয়ে বলে নিধি।
আদি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে।
“আমাদের বিয়ের মাএ পাঁচমাস। এর মধ্যে দুইবাচ্চার মা কি করে হতে?

নিধিও তাই ভাবছে। সত্যিই তো এটা কখনোই পসিবল না। তুমি নিধি হারবে না। মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল কারনে পিঠে গুঁজে বলে

” আমার তো টুইন বেবি হবে। তো হতোই তো

আদি বুঝতে পারে নিধির কাছে ভালো কোনো যুক্তি নেই।

“তুমি চাইলে এখনই তোমাকে বেবি দিতে পারি নিবা
দুষ্টু হেসে বলে আদি।

” হুমম সেই। আপনার বাবা চায় না আপনি আমার ধারেকাছে থাকেন আর আপনি বেবির কথা বলছেন। আপনাকে তো বাড়ি থেকে বের করবেই সাথে আমাকেও

আদি নিধির ঘাড়ে থুতনি রেখে বলে
“আমার হাত ধরে না হয় বাড়ি ছাড়লে। হ্মতি কি তাতে? দুজনে একসাথে পথে পথে ঘুরবো। ভালোবাসবো। ছোট্ট একটা কুড়োঘরে থাকবো। আমি মাঠে গরু চরিয়ে বাসায় ফিরবো আর তুমি যত্ন করে আমাকে খায়িয়ে দেবে। ইন্টারেস্টিং না বেপারটা

আদি নিধির চুলে মুখ গুজে বলে। নিধি সরে যেতপ নেয় আদি শক্ত করে ধরে।

” ররান্না করবো আমি
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে নিধি।

আদি নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে

“নিরামিষ কে? আমি না তুমি?

নিধি আদির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
” রান্না টা শেষ করে আসি তারপর আমিষ কতো প্রকাশ ও কি কি? দেখাবো কেমন

নিধি আদির নাক টেনে গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। আদি গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে
“পাগলি একটা

কিচেনে গিয়ে বিরিয়ানি চুলায় দেয়। মনোযোগ দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করছে আর পরির কথা ভাবছে।
“মেয়েটার কেমন ভাগ্য। যখন সে একটা নতুন মানুষকে দুনিয়ায় আলো দেখাতে গেলো তখন সেই মরে গেলো। আর নিষ্পাপ শিশু সেও চলে গেলো। কিন্তু আমি শিওর বাচ্চাটা আদির না। আমি আদির বিয়ে করা বউ এতোদিন একসাথে থাকলাম তাও এখনো আমাকে একটা কিসও করে নাই। কপালে চুমু দিতে গিয়েও পারমিশন নেয়। সে এতো জঘন্য একটা কাজ করতেই পারে না। খুব বড় একটা রহস্য আছে। আর সব প্রশ্নের উওর আছে সৌরভের কাছে।

ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে দেখে বিরিয়ানি হয়ে গেছে। দারুণ একটা গন্ধ বেরিয়েছে। নিধি চামচে করে একটু বিরিয়ানি নিয়ে ফু দিচ্ছে। একটু ঠান্ডা হলে খেয়ে দেখবে কেমন হয়েছে। বিরিয়ানি ঠান্ডা হওয়ার পরে মুখে দেবে তখন হঠাৎ করে ইমন এসে নিধির থেকে চামচ কেড়ে দিয়ে পুরোটা খেয়ে ফেলে। নিধি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলে

” সবটা খেয়ে নিলি কেন?

ইমন আরও একটু বিরিয়ানি নিতে নিতে বলে

“ফাটাফাটি হয়েছেরে খেতে। তুই এতো ভালো রান্না করতে পারিস আগে তো জানতাম না

নিধি একটু ভাব নিয়ে বলে
” আমি আরও অনেক কিছু পারি

“নিধি দুটো প্লেট নিয়ে আয়

” কেনো?

“আমি আর তুই খাবো

” কেউ দেখে নিলে কি বলবে?

“কি বলবে?

” বলবে কেমন বউ রে বাবা। রান্না শেষ করে আগে আগে খেতে বসেছে। তাও আবার ফ্রেশ না হয়েই

“কেউ দেখলে তো বলবে। যা তো

নিধি দুটো প্লেট নিয়ে আসে। ইমন বিরিয়ানি নেয় তারপর কিচেনের ফ্লোরে বসে দুজনে আরামসে বিরিয়ানি খায়।
আদি তখন নিধিকে খুঁজতে কিচেনে আসছিলো। নিধি আর ইমনকে এমন লুকিয়ে খাওয়া দেখে ভিডিও করে। খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে উঠে দেখে আদি পকেটে হাত ঢুকিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। নিধি চমকে ওঠে
” আআআপনি

নিধির কথা শুনে ইমনও উঠে দাঁড়ায়।

“সবাইকে বলে দিলে কেমন হয়?

নিধি তারাহুরো করে বলে
” প্লিজ প্লিজ বইলেন না

“ভাই বলিস না প্লিজ
দুইজনের ইনোসেন্ট ফেস দেখে আদির হাসি পাচ্ছে। মুখ চেপে হাসি আটকায় আদি।

” বলবো না যদি

“যদি
নিধি আর ইমন একসাথে বলে

” এই গাঁধাটা আমাকে খাইয়ে দেয়।

নিধি হা করে তাকিয়ে আছে।
“এই নিধি খায়িয়ে দে

নিধি বিরিয়ানি প্লেটে সার্ভ করে। আদির মুখের সামনে ধরে
” আমি এখানে খাবো না।

“তাহলে

” রুমে গিয়ে খাবো
রুমের কথা শুনে নিধির মুখটা কালো হয়ে যায়। নিশ্চয় আমাকে জ্বালানোর জন্য এই কথা বলছে। নিধি বিরক্ত হয়ে বলে
“চলুন

নিধি আগে আগে হাটছে আর আদি পিছে পিছে। আদি আবার শান্ত ভাবে হাঁটছে না। নিধির চুল টানছে আবার শুরশুরি দিচ্ছে। নিধি এক দৌড়ে রুমে চলে যায়। আদিও তাই। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
” দরজা বন্ধ করলেন কেনো?
নিধি খাটে গোল হয়ে বসে বলে

“খাওয়ার সময় কেউ ডিস্টার্ব করলে আমার পেট ভরে না।
বাঁকা হেসে বলে আদি

” তারাতাড়ি খান না প্লিজ। আপনার খাওয়া শেষ হলে আমি আপির রুমে যাবো। না জানি আপি কি করছে। সকাল থেকে তো খালি বমি করছে। কি হলো? আমি তো টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছি। তার থেকেও বড় কথা আব্বু যদি আপিকে নিতে আসে তো আমাকেও নিয়ে যাবে। পৃতির বিয়ের দুই দিন বাকি। দুইদিন ওই বাড়িতে থাকতে হবে। আপনাকে ছাড়া

কথাটা বলেই নিধি থেমে যায়।

“আমাকে ছাড়া থাকলে কি হবে?

নিধি মুখ টা ছোট করে বলে
” কিছু না

আদি নিধির পাশে বসে নিধির হাত ধরে বলে
“তুমি কখনো আমার ওপর বিরক্ত হবে না প্লিজ। তুমি বিরক্ত হলে আমার এখানে (বুকের বা পাশে হাত দিয়ে) খুব ব্যাথা করে।

নিধি মুচকি হেসে বলে
” হুমমম

“কি হুমম

” হবো না

“কি?

” বিরক্ত

“লাভ ইউ
নিধি আদির ঠোঁটে আঙুল রাখে

“লাভ ইউ শব্দটা প্রেমিক প্রেমিকারা বলে। এই শব্দটার মধ্যে ধোঁকা শব্দটা আছে। ভালোবাসি বলতে হয়।

” একই তো

“এক না। ভালোবাসি ভেতর থেকে আসে। মন থেকে। আর লাভ ইউ আর পাঁচটা কথার মতো মুখ দিয়ে বের হয়। এতে কোনো ফিলিং নেই।

” ওহহহ মাই গড।

“তাহলে বলেন

” ভালোবাসি

“আমিও মারাক্তক।
এবার হা করেন
আদি হা করে নিধি খাইয়ে দেয়। আদি এক দৃষ্টিতে নিধিকে দেখছে আর খাচ্ছে মাঝেমাঝে কামর দিচ্ছে নিধির হাতে। নিধি চোখ গরম করে তাকায় আদি কানে হাত দিয়ে সরি বলে।
খাওয়া শেষে আদির ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে রোহন নামটা দেখে আদি অগ্নি দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকায়।

” যাহহ বাবা আমি কি করলাম? এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো?

“তোর নাগর তোকে ফোন দিছে। নে কথা বল।

নিধির দিকে ফোন এগিয়ে দেয়। নিধি একটা ঢোক গিলে। মনে মনে ইচ্ছে মতো রোহনের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-২৭+২৮

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৭
#Tanisha Sultana (Writer)

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই আদির ঘুম ভেঙে যায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সোফায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে নিধি। সূর্যের হালকা আলো চোখে মুখে পড়েছে নিধির। খুব মায়াবী লাগছে। আদি উঠে নিধির কাছে যায়। ফ্লোরে হাটু মুরে বসে। নিধির মুখের ওপর পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দেয়।

“প্রেম তো জীবনে একবারই আসে। মনও তো একটাই। তাহলে মন কেনো ওর কথা ভাবে। পরিকে এখন আর মনেই পরে না। তাহলে কি আমি নিধিকে ভালোবেসে ফেলেছি?

মনে মনে ভাবছে আদি।
এবার থেকে আমার মন যা চায় তাই করবো। কাউকে ভয় পাবো না। বলে দেবো সব কিছু নিধিকে। সব শোনার পরে যদি নিধির মনে হয় আমার সাথে থাকা যায় না তাহলে আমি ওকে আটকাবো না

আদি নিধির কপালে একটা গভীর চুমু দেয়। তারপর নিধিকে কোলে নিয়ে খাটে খাটে শুয়িয়ে দেয়।
কাবাট থেকে ড্রেস নিয়ে গোছল করে নেয়।

গোছল সেরে বেরিয়ে দেখে নিধি এখনও পাশবালিশ জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমচ্ছে। আদি মুচকি হাসে। চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পৃতি আর ইমনকে ডাকে।

” বলো ভাইয়া কি বলবে?

“পৃতি স্টুপিট মানে ননিধিকে একটু শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিস প্লিজ

ইমন আর পৃতি হা করে তাকিয়ে আছে আদির দিকে।
” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? আদি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে

“না মানে কি বললে বুঝলাম না। পৃতি অবাক হয়েই বলে

” না বোঝার কি আছে? ও তো শাড়ি পড়তে পারে না।আর সাজতেও পারে না। আর তুই তো সাজুগুজুতে এক্সপার্ট। তাই তোকে বললাম।

“কিন্তু হঠাৎ নিধিকে সাজাবো কেনো?

” এতো প্রশ্ন করিস না প্লিজ। পরে সব বলবো

পৃতি চুপ করে যায়।

“আর আমি কি করবো? ইমন জিজ্ঞেস করে।

” তুই একটু বল তো আমাদের এইদিকে ভালো কোনো জায়গা আছে যেখানে যাওয়া যাবে

“অনেক জায়গা আছে। সব জায়গায়ই যাওয়া যায়। নিষিদ্ধ তো কোনো জায়গা নেই।

আদি ইমনের মাথায় একটা গাট্টি মেরে বলে

” আমি নিধিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলছি

“এ্যাঁ
পৃতি ইমন একসাথে বলে। আদি রাগী দৃষ্টিতে তাকায় ওদের দিকে। ইমন কাশি দিয়ে বলে

“আছে

” বল কোথায়?

ইমন আদিকে বলে। আদি ওদের ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে যায়। নীল শাড়ি চুড়ি কিনে নিয়ে আসে। রুমে এসে দেখে নিধি রুমে নেই। বাথরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ আসছে। নিশ্চয় নিধি গোছল করছে। আদি খাটের ওপর রাখে প্যাকেটটা তারপর আবার বেরিয়ে যায়।

নিধি গোছল সেরে বেরিয়ে দেখে পৃতি খাটের মধ্যে গোল হয়ে বসে একটা প্যাকেট খুলছে। নিধি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে

“তুই এখানে? আর কিসের প্যাকেট তোর হাতে

” তোর না জানলেও চলবে

নিধি ভ্রু কুচকে তাকায় পৃতির দিকে

“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?

” তোর হবুবর গিফট দিছে তাই তুই আমাকে দেখাবি না?

পৃতি হালকা হেসে বলে

“তোকে পড়াবো

” মানে

“একটু পড়ে দেখ তো কেমন লাগে।

” তোর জিনিস আমি পড়বো কেনো?

“আমি বলছি তাই

নিধি হাজার বার বারণ করার পরেও পৃতি জোর করে নিধিকে শাড়ি পাড়িয়ে সাজিয়ে দেয়। সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়

” তোর মতলবটা কি বলবি? নিধি সন্দেহ করে বলে
পৃতি নিধিকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে বলে

“হয়ত তোর ভাগ্য খুলছে

” মানে?

তখন ইমন আসে।

“কি রে হলো তোর?
নিধির দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে
” কি লাগছে রে তোকে পুরাই মাখন। আদি ভাই তোকে দেখলে বলবে ইউআর লুকিং সো বিউটিফুল

“নিরামিষরা এগুলো বলে না রে। উনি আমাকে দেখে বলবে তোমাকে না কতোবার বলেছি এরকম পেট বের করে শাড়ি পড়বা না। ইডিয়েট একটা। একদম আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবা না। তোমার প্রতি আমার কেনো ইন্টারেস্ট নাই

তিন মিলে হেসে ওঠে।
ইমন আর পৃতি নিধিকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। নিধি বিরক্ত নিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে আদি বসে আছে। নীল শার্ট পড়া।

” বিশ্বাস করেন আমি এটা পড়তে চায় নি। পৃতি জোর করে পড়িয়েছে।
নিধি ভয় প্লাস নার্ভাস হয়ে বলে।

“ঠিক আছে। আমিই পড়াতে বলেছি।
আদি ফোন দেখতে দেখতে বলে

” এ্যাঁ
নিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

আদি ফোন রেখে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

“কোথায় যাচ্ছি আমরা?

“গেলেই দেখতে পাবে

” ওহহ

নিধি আর কিছু বলে না।৷ কিছুখন দুজনই চুপ

“আচ্ছা নিধি একটা বলি

” হুমম বলেন

“আমি পরিকে ভীষণ ভালোবাসতাম। মারাক্তক। পরি সব সময় ভুল করতো আর আমি ওর ভুল গুলোর পরোয়া না করে শুধু ওকে নিয়ে ভাবতাম। ও মারা যাওয়ার পরেও কখনো আমি ওকে দুই সেকেন্ডের জন্য মনের আড়াল করতে পারতাম না।

নিধির মন খারাপ হয়ে যায়। নিজের স্বামীর মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনলে যে কারোর খারাপ লাগবে।

” ওহ

নিধি মুখটা ছোট করে বলে।
“তুমি সৌরভকে কতোটা ভালোবাসতে?

” ভালোবাসা তো পরিমাপ করা যায় না। ফ্রেন্ডরা সবাই প্রেম করতো বলেই আমি সৌরভের প্রপোজাল এক্সেপ্ট করেছিলাম। মারাক্তক বা প্রচন্ড ভালো বাসতাম না। জাস্ট আমি আমার ফ্রেন্ডদের যতটা ভালোবাসতাম ততোটাই সৌরভকেও বাসতাম

“ওহহহ

” সৌরভের সাথে তোমার রিলেশন ব্রেকআপ হওয়ার পেছনে আমার কোনো হাত নেই। কোনো একটা ঝামেলায় মারামারি হয়েছিলো সেখানে সৌরভ একটা ছেলেকে ভীষণ মেরেছিলো সেটা তোমার বাবা দেখেনিয়েছিলো। আর সৌরভও তখন পালিয়ে ছিলো পুলিশের ভয়ে। তাই তোমাদের ব্রেকআপ হয়েছে

আদির কথা শুনে নিধি চমকায় না। কারণ নিধিও এই কথা জানতো। সেই ছেলেটি যে মারা গেছে এটাও নিধি জানতো।

একটা ফাঁকা জায়গায় আদি গাড়ি থামায়।

“এখানে কেনো নিয়ে আসলেন?

” কিছু কথা বলতে চায় তোমায়। আমার কথা গুলো শোনার পরে যদি তোমার মনে হয় আমার সাথে তুমি থাকবা তো মিটে গেলো আর যদি তোমার মনে হয় নাহহ আমার মতো ছেলের সাথে থাকা যায় না তাহলে চলে যেতে পারো।

“আগে বলুন তো কি কথা।

আদি চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে

” নিধি আই লাভ ইউ

নিধির মুখ আপনাআপনি হা হয়ে যায়। কি বলছে উনি? আদি নিধির হাত ধরে বলে

“আমি জানি তোমার মনে হচ্ছে এই ছেলেটা মনে হয় পাগল। একটু আগে বললো একটা মেয়েকে মারাক্তক ভালো বাসতো এখন আবার আমাকে বলছে। কিন্তু বিশ্বাস করো এমনটাই হয়েছে। তুমি আমার লাইফে আসার পরে পরির কথা তেমন মনে পড়ে না। মাঝেমধ্যে মনে পড়ে। ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। আমার চিন্তা ভাবনা, মনে বাইরে সব জায়গায় #শুধু তুই।

নিধি এখনো হা করে আছে।

” আপনি আমাকে নিধি বলে ডাকলেন?

নিধির কথায় আদি চোখ ছোটছোট করে তাকায় নিধির দিকে

“আমি এতোকিছু বললাম আর তুমি শুধু এটুকু শুনলে?

” আর কি বলছেন? নিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে

“তুমি শুনো নাই

” নাহহহ তো

আদি হাসবে না,কি কাঁদবে বুঝতে পারছে না

“কালা তুমি? কানে শুনো না? মন কই থাকে? এতোকিছু বললাম কানে ঢুকলো না?
রেগে বলে আদি।

“আবার বলেন?

আদির ইচ্ছে করছে নিধির গলা টিপে ধরতে। কিন্তু এই মুহূর্তে সবটা নিধিকে বলা প্রয়োজন তাই এরকম কিছু করবে না।

” এখন যা যা বলবো মন দিয়ে শুনবে ওকে

“ওকে বলেন

” আই লাভ ইউ। ডু ইউ লাভ মি

নিধি ভ্রু কুচকে তাকায় আদির দিকে

“দেখুন মজা করার মুড নাই

নিধি গাড়ি থেকে মানতে যায় আদি হাত টেনে ধরে

” সত্যি বলছি।
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে আদি। নিধির মায়া হয় আদির এমন ফেস দেখে।

“পরি সৌরভ ওদের ব্যপারটা ক্লিয়ার করুন তারপর আমি বলবো।

আদি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৮
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমার যখন আট বছর বয়স তখন আমার বাবার ওপর মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। বাবা না কি একটা মহিলাকে খুন করেছিলো। সেই মহিলাটি না কি বাবার প্রেমিকা ছিলো। পুলিশ বাবাকে ধরে নিয়ে গেছিলো। পৃতির তখন সবে পনেরো দিন বয়স। আকাশ ভাইয়া একটু বড়। খুব বাজে ভাবে আমাদের দিন কাটে। দাদু কাকা সরকারি চাকরি করতো। তাদেরকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এমনও অনেক দিন গেছে যে দিন আমরা খেতে পায় নি। পৃতিকে একটু দুধ খাওয়ানোর টাকাও ছিলো না। এভাবে এক বেলা খেয়ে আবার কতোদিন না খেয়ে আমাদের দিন কাটতো। চার বছর পরে বাবা জেল থেকে ছাড়া পায়। আর আমাদের দিন ঘুরতে থাকে।
বিশ বছর পরে আবার আমার সাথে সেই সেম ঘটনা ঘটে। পরি আমি মনি সৌরভ আমরা কক্সবাজারে এক অফিসেই জব করতাম। সৌরভ খুব রিকোয়েস্ট করে বলে পরিকে আমার বাড়িতেই রাখতে। তো আমি রেখেদেই। ভালোই কাটছিলো আমাদের দিন। একদিন হঠাৎ করে এসে পরি বলে ও প্রেগন্যান্ট। খুব বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম আমি। পরি শুধু বলতো তুমি আমাকে সত্যিই ভালোবাসলে কখনো কোনো প্রশ্ন করো না। তবুও আমি প্রথম প্রথম জিজ্ঞেস করতাম কিন্তু পরে আর করি নি। মেনে নিয়েছিলাম পরিকে। বাড়িতে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেই। সিদ্ধান্ত নেই বাকি জীবনটা কক্সবাজারে পরির সাথেই কটাবো।

পরির তখন নয় মাস চলে। আমি অফিসে গেছিলাম। সৌরভ ফোন করে বললো বাড়ি আসতে। আমি ছুটে বাড়ি ফিরে দেখি পরির পেটে ছুড়ি বিধে আছে। ছটফট করছে পরি। আমি ছুড়িটা ছাড়িয়ে পরিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায় তখন সৌরভ আমাকে বলে আমি না কি পরিকে খুন করেছি। ফোনে ভিডিও করে রাখে। আমাকে হাসপাতালে যেতে দেয় না।

আদির চোখ ছলছল করছে। নিধি তো কেঁদেই ফেলেছে। আদি চোখ মুছে বলে

“আমি থানা পুলিশ খুব ভয় পায়। তুমি আমাকে হেংলা বলতে পারো। আমার পরিবার যদি এই কথাটা জানতে পারে ভেঙে পড়বে। আর সৌরভ সব সময় আমাকে হুমকি দেয়। একটা বছর ধরে এইরকম একটা অভিযোগ মাথায় নিয়ে ঘুরছি। না পারছি কাউকে বলতে আর না পারছি কাউকে বলতে।

নিধি আদির হাতের ওপর হাত রাখে। আদি নিধির দিকে তাকায়

” তুমি আমার সাথে থাকতে না চাইলে আমি তোমাকে জোর করবো না

নিধি ভেংচি কেটে বলে

“আপনি জোর করতে পারেন না কি?

” যে থাকতে চায় না তাকে তো আর জোর করে রাখা যায় না।

“বউ আমি আপনার। আমার ওপর আমার থেকেও বেশি অধিকার আপনার। ছিনেমাতে দেখেন না। অবশ্য আপনি ছিনেমা দেখবেন কি করে আপনি তো নিরামিষ।

” আমি নিরামিষ?
কিছুটা রেগে বলে আদি

“অবশ্যই। নিরামিষ না হলে কেউ এইভাবে প্রপোজ করে।

” তাহলে কিভাবে প্রপোজ করে?

“জানেন না?

” নাহহ

“আপনার ফোনটা দেন?
হাত বাড়িয়ে বলে নিধি।

” কেনো?

“দিতে বলছি দেন না

আদি ফোন বের করে দেয়। নিধি প্রপোজ করার ভিডিও বের করে আদির সামনে ধরে। আদি দেখে

” এভাবে প্রপোজ করতে হয়।

“কোথায় লিখা আছে?

” কোথাও লেখা নাই বাট এটাই নিয়ম

“ভালোবাসার কথা গুছিয়ে বলাটা ইমপটেন্ট। ফুল দিয়ে রিং দিয়ে এগুলো তো পোলাপান ইমপ্রেস করার জন্য করে।

” আপনিও আমাকে ইমপ্রেস করুন না হলে প্রপোজ এক্সেপ্ট হবে না
নিধি একটু ভাব দেখিয়ে বলে

“শিওর

” হুমম পাক্কা শিওর

“ওকে

আদি গাড়ি থেকে নেমে নিধির পাশে গিয়ে দরজা খুলে হাত বারিয়ে দেয়। নিধি আদির হাত ধরে বের হয়। পায়ের ওপর নরম কিছু অনুভব করে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে ফুলের পাপড়ি। নিধি আদির দিকে তাকায়

” কেমন?

“এখনই বলবো না

” ওকে

নিধি আদির হাত ধরে হাঁটতে থাকে। পেছন থেকে গান বেজে ওঠে
“ভাল্লাগে হাঁটতে তোর হাত ধরে
ভাবনা তোর আসছে দিন রাত ভরে
এলোমেলো মনটাকে কি করে যে আর রাখে
কেনো আমি এতো করে তোকে চায়

পারবো না আমি ছাড়তে তোকে
পারবো না ছেড়ে বাঁচতে তোকে
হয়ে যা না রাজি এক বার”

হাঁটতে হাঁটতে নদীর পারে চলে যায়। গাঁধা ফুল দিয়ে সাজানো একটা নৌকা। চারপাশে বেলুন দিয়ে সাজানো।
নিধি আর আদি নৌকায় ওঠে।

“এবার এন্সার দাও

” কিসের?
নিধি না জানার ভাব করে বলে।

“প্রপোজ করলাম তার।

” তার আগে আপনি আমাকে বলেন আমাকে কেমন লাগছে?

আদি নিধির দিকে ভালো করে তাকায়। পেটের কাছে গিয়ে আদির চোখ আটকে যায়। ধবধবে ফর্সা পেট। বাতাসে নীল শাড়িটা পেট থেকে সরে গেছে। সম্পূর্ণ পেটটা বেরিয়ে গেছে।

নিধি আদির মুখের সামনে তুরি বাজায়

“হেলো বলেন

আদি নিধির পেটের দিকে চোখ রেখেই বলে

” হট

নিধি হালকা লজ্জা পায়।

“সত্যি বলতে তোমার ঠোঁট আর পেট বারবার আমাকে ঘায়েল করে দেয়।

” তাহলে বলতেন কেনো আমার প্রতি আপনার কোনো ইন্টারেস্ট নেই
ঠোঁট উল্টে বলে নিধি
আদি নিধিকে টান নিয়ে কোলে বসায়।

“তোমার প্রতি দুর্বল হতে চাইতাম না তাই বলতাম। কিন্তু তুমি তো ছাড়লে না। আসক্ত করেই ছাড়লে।

নিধি মুচকি হাসে।

” তো এবার বলো

“কি বলবো?

” আমি যা জিজ্ঞেস করেছি?

“আপনি আবার কি জিজ্ঞেস করলেন?
ভ্রু কুচকে বলে নিধি।

” এখানে এসে থেকে তো একটাই কথা জিজ্ঞেস করছি। কিছুটা রেগে বলে আদি।

“মনে নাই। মুখ বাঁকিয়ে বলে নিধি।
আদি এবার নিধির দুই গালের দুপাশে হাত দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে চিৎকার করে বলে
” আই লাভ ইউ। ডু ইউ লাভ মি

নিধি ছিটকে দুরে সরে যায়। কানে হাত দিয়ে রেগে বলে

“কালা মনে হয় আমাকে আপনার। আস্তে বললেও তো শুনতাম। কানটা গেলো আমার।

” এতোখন ধরে বলছিলাম শুনলে না।

নিধির ইচ্ছে করছে আদিকে কাঁচা গিলে খেতে।
“বলো

” বলছি

“হুমম তারাতাড়ি

” আই

“তারপর

নিধি চোখ বন্ধ করে বলে

” লাভ

আদি এক্সসাইটেড হয়ে বলে

“নেক্সট

” মি

আদির মুখটা কালো হয়ে যায়। নিধি খিলখিল করে হাসে৷ আদি রেগে নৌকা থেকে নেমে যায়।

“আই লাভ ইউ আদি

চিৎকার করে বলে নিধি। আদি থেমে যায়। নিধিও নৌকা থেকে নেমে যায়। আদির সামনে দাঁড়ায়।

” ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি খুব

আদি নিধিকে জড়িয়ে ধরে বলে

“হইছে আর বলতে হবে না।

” কেনো ভালোবাসি শোনার শক মিটে গেলো না কি?

“ভালোবাসি শুনতে ভালো লাগে না ভালোবাসতে ভালো লাগে

নিধির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে আদি। নিধি লজ্জা পায়।

সূর্য মাথার ঠিক ওপরে এসেছে। চারদিকে এতোখন মিষ্টি সকালের বাতাস বইছিলো এখন রোদের আলো পোখর হয়ে আসছে। পার্ক বা নদীর পার সাধারণত বিকেল বেলাতে ভালো লাগে।
আদি আর নিধি এতোখন নৌকায় পা ডুবিয়ে বসেছিলো। এখন রোদের তাপে এখানে বসা যাচ্ছে না।

” আদি এবার বাড়ি যাওয়া উচিৎ

“হুম চলো

গাড়িতে গিয়ে বসে দুজন। আদি এক হাতে ডাইভ করছে অন্য হাত দিয়ে নিধির হাত ধরে আছে।

” নিধি আমার ওপর তোমার কোনো অভিযোগ নেই?

“ছিলো তো অনেক অভিযোগ ছিলো। কিন্তু যখন আপনি আমাকে নিধি বলে ডাকেন সব অভিযোগ অভিমান ভালোবাসাতে পরিণত হয়।

” তাহলে তোমাকে আর নিধি বলে ডাকবো না

“কেনো?

” নামটা তোমার সাথে যায় না। গাঁধায় ঠিক আছে। আর নাহলে স্টুপিট ননসেন্স ইডিয়েট

“আপনি তাহলে গাঁধার বর
নিধির কথায় আদি থমথমে খেয়ে যায়।

” নাহহহ মানে

“আপনি আমাকে গাঁধা বললে আমিও আপনাকে গাঁধার বর বলবো

” প্রচন্ড কথা বলতে শিখে গেছো

“আপনার থেকেই

এরকম টুকটাক ঝগড়া করতে করতে বাড়িতে এসে পৌছায়।

” তুমি ভেতরে যাও আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি

নিধি ভেতরে যায়। দরজার সামনে যেতেই মাথার ওপরে গোলাপের পাপড়ি পড়ে। নিধিতো অবাক। নিধির সামনে রোহন হাঁটু মুরে বসে বলে

“কিভাবে মনের কথা বলে মানুষ জানি না। কাউকপ কপি করা আমার ক্যারেকটার না। তাই আমি আমার মতো করে তোমাকে মনের কথা বলতে চায়। তোমাকে প্রথম দেখাতেই আমার ভালো লেগে যায়। সেই ভালো লাগা আস্তে আস্তে ভালোবাসাতে পরিণত হয়েছে। এখন তোমাকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। অনেক ভালোবাসি তোমায়। ইউল ইউ ম্যারি মি
নিধির সামনে একটা রিং বাড়িয়ে দিয়ে বলে।

নিধি পেছনে তাকিয়ে দেখে আদি রক্ত চোখে তাকিয়ে আছে।

” আল্লাহ বাঁচাও
নিধি মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-২৫+২৬

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৫
#Tanisha Sultana (Writer)

“বড্ড বেশি কথা শিখে গেছো তুমি
চোখ মুখ শক্ত করে বলে আদি

” হুমম শিখে গেছি। কিছু মানুষের সাথে চলতে হলে কথা শিখতে হয় নাহলে তারা ছুড়ে ফেলে দেবে।

আদি নিধির দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।

“এমনটা কেনো করলেন আদি বলবেন?

” জানি না

বলেই আদি গাড়ি গিয়ে বসে। নিধিও গাড়িতে বসে।

“সত্যি সেটা না যেটা আমরা মুখ দিয়ে বলি সত্যি সেটাই যেটা আমরা আড়াল করি” এই কথার মানেটা যেদিন তুমি বুঝতে পারবে সেদিন সব প্রশ্নের উওর তুমি নিজেই খুঁজে পাবে।

“আর আমি যদিন সত্যিটা জানতে পারবো সেদিনই হবে আপনার সাথে আমার শেষ দেখা তার আগে নয়

আদি সামনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। নিধির ভীষণ রাগ হচ্ছে। কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।

একটু পরে ইমন আর পৃতি চলে আসে। আদি আর নিধিকে চুপচাপ থাকতে দেখতে ওদের আর বুঝতে বাকি নেই এখানে ছোটমট একটা ঝড় হয়েছে। ওরা কিছু না বলে চুপচাপ গাড়িতে বসে।

আদি ফুল স্পিডে ডাইভ করছে। নিধি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে

” ভাইয়া একটু আস্তে ডাইভ কর না প্লিজ। তুই তো জানিস আমি ভয় পায়
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে পৃতি।

“জীবনে সব কিছু প্রয়োজন আছে। তোর জন্য তো আর দুই ঘন্টার রাস্তা দশ ঘন্টায় যাবো না
কর্কশ গলায় বলে আদি।

পৃতির মন খারাপ হয়ে যায়। আদি কখনোই ওর সাথে এরকম বিহেব করে নি। ও ভয় পেলে একহাতে জড়িয়ে আস্তে ডাইভ করতো সেই ভাই আজ এরকম বিহেব করলো। পৃতির চোখে পানি এসে যায়।

আদিরও খারাপ লাগছে। এভাবে বলতে চায় নি ও। কিন্তু মাথা ঠিক নেই। তাই এমন বলে ফেলেছে।

” পৃতি মন খারাপ করিস না। আসলে কি হয়েছে বল তো একজনের সাথে ডিল করেছিলো আমাকে তার সাথে বিয়ে দেবে আই মিন তার কাছে আমাকে সপে দেবে কিন্তু আমি রাজি হয় নি তাই আমার ওপর রাগটা তোর ওপর ঢাললো

আদি গাড়ি থামায়।

“আমি পারি না ডাইভ করতে। হয়েছে

” এখানে ডাইভ নিয়ে কথা হচ্ছে না
নিধি নিচু সুরে বলে

“তুমি বেশি কথা কেনো বলো?

” তাহলে কি করবো? বিয়ে করে নেবো সৌরভকে? তারপর আবার আপনার যখন মনে হবে না নাহহ এখন সৌরভ না অন্য কাউকে খুঁজতে হবে। আপনি তো আমাকে সম্পত্তি পেয়েছেন। যে বেশি দাম দেবে তার কাছেই বেঁচে দেবেন

আদি ঠাস করে নিধির গালে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড়টা একটু বেশিই জোরে হয়ে যায়৷ গালে পাঁচটা আঙুলের দাগ বসে যায়। ইমন আর পৃতিও চমকে ওঠে। আদি এমন কিছু করবে এটা ওরা চিন্তাও করে নি।

নিধির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আজ ওবদি কেউ ওকে জোরে ধমকও দেয় নি সেখানে আদি থাপ্পড় মারলো।

আদির গিলটি ফিল হচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না। কারণ আদি জানে সরি বললে থাপ্পড়টা ফিরে আসবে না। আদির দিকটা কেউ বুঝতে পারছে না। আদি কাউকে বলতেও পারছে না। ভেতরে ভেতরে একা একাই পুরছে।

“দেবো না আমি ডিভোর্স। আরও মারেন মেরে ফেলেন। তবুও ডিভোর্স দেবো না।

হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে নিধি।

বাড়ি ফিরে নিধি রুমে চলে যায়। কাউকে কিছু বলে না। আর ওদেরও বলতে না করে। পৃতি ইমনেরও মন খারাপ।

রুমে এসে নিধি বেলকনির দরজা বন্ধ করে বসে আছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। দুরে একটা গাছে এক জোড়া পাখি বসে আছে। মনে হচ্ছে একটা পাখি আরেকটা পাখিকে কিছু বলছে। হয়ত ঝগড়া করছে নয়ত ভালোবাসার কথা বলছে। একটু পরে ছেলে পাখিটা তার ডানা দিয়ে মেয়ে পাখিটাকে আকড়ে ধরেছে।
এতো কষ্টের মধ্যেও নিধির মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

” নিধি তোর খরগোশটা হারিয়ে গেছে। বাবা মা অনেক খুঁজেও পাচ্ছে না।

নিরা দরজার বাইরে থেকে বেলকানির দরজায় নক করে বলে।
খরগোশ টা হারিয়ে গেছে বলে আবার নিধির চোখে পানি চলে আসে।

“কি রে শুনতে পাচ্ছিস তুই

কিছুখন ডাকাডাকি করে যখন নিরা নিধির কোনো সাড়াশব্দ পেলো না তখন চলে গেলো।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে। সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিম দিকে অনেকটা ঢলে পড়েছে। রোদটা একদম নিধির মুখে এসে পড়ছে। বৈশাখ মাসের রোদ। নিধি হাত দিয়ে রোদ আড়াল করার চেষ্টা করছে।
দুইঘন্টা ধরে বসে আছে এখানে নিধি। দরজা খুলে নি। আজ আর খুলবে না বলে জেদ ধরেছে।

আদি ওদের বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে চলে গেছিলো। মাএ বাসায় আসলো আদি। পৃতি বলেদিয়েছে নিধি বাসায় এসে থেকেই বেলকানির দরজা বন্ধ করে বসে আসে।

আদি কান ধরে বলে

” সরি বোন মাথা ঠিক ছিলো না তাই তোকে ধমক দিছি

পৃতি অভিমান মাখা হাসি দিয়ে বলে

“ইটস ওকে।

আদি পৃতিকে জড়িয়ে ধরে।

” ভাইয়া নিধি সকাল থেকেই কিচ্ছু খায় নি কফি ছাড়া।

“হুমম দেখছি

আদি রুমে গিয়ে বেলকনির দরজায় দুবার টোকা দেয়। কোনো সাড়াশব্দ নেই। তারপর গোছলটা সেরে নেয়। আসলে নিধির সাথে কথা বলতে লজ্জা করছে। এভাবে মেয়েটার গায়ে হাত না তুললেও পারতাম।

নিধি ঘুমিয়ে পড়েছে।
আদি আবার দরজায় কড়া নারে

” দরজা খুলো প্লিজ

কোনো সারা নেই

“ওই স্টুপিট দরজা খুলো। আমি জামাকাপড় রোদে দেবো। বেলকানিটা তোমার না

নিঊি ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে। আদি নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। এ কি হয়েছে মেয়েটার। চোখ মুখ ফুলে গেছে এলোমেলো চুল।

নিধি আদিকে পাশ কাটিয়ে রুমে গিয়ে খাটে শুয়ে পড়ে। আদি জামাকাপড় মেলে দিয়ে এসে নিধিকে ভালো করে সুয়িয়ে দেয়।

ঘুমিয়ে গেলে নিধিকে ফুটপাতে রেখে আসলেও নিধি টের পাবে না। পৃতিকে বলে আদি খাবার নিয়ে আসে রুমে। তারপর নিধিকে ধরে বসিয়ে মুখে খাবার দেয়। ঘুমের মধ্যেই নিধি খাবার চিবিয়ে গিলতে থাকে। নিধি একদম খিদে সয্য করতে পারে না।
একটু একটু করে পুরো খাবারটাই আদি নিধিকে খাইয়ে দেয়। তারপর পানি খাইয়ে আবার সুয়িয়ে দেয়।

আদিরও খুব খিদে পেয়েছে। ও সকাল থেকে কিছু খায় নি। তাই নিজেও খেয়ে নেয়।

রুমে এসে দেখে নিধি উপুর হয়ে শুয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে দুই তিন ঘন্টার মধ্যে ঘুম ভাঙবে না। আদি নিধির পাশে শুয়ে নিধিকে টেনে বুকের মধ্যে নেয়। নিধিও আদির বুকে মাথা রেখে আদিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আদি মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিছুখনের মধ্যেই আদিও ঘুমিয়ে পড়ে। যদিও কোনোদিন বিকেল বেলাতে আদির ঘুম আসে না কিন্তু আজ নিধি নামক ইডিয়েটের পাল্লায় পড়ে ঘুমিয়ে গেলো।

কারো গরম নিশ্বাস মুখে পড়তেই নিধির ঘুম হালকা হয়ে যায়। নিধি আসলে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করে। নিজেকে কারো বুকে আবিষ্কার করে নিধি। চোখ খুলে আদির মুখটা দেখতে পায়। আদির ঠোঁটটা নিধির নাকের ওপর। নিধি নড়াচড়া করতে গিয়েও পারে না কারণ আদি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। নিধির নিশ্বাস ভাবি হয়ে আসছে।
নিধির মনে হচ্ছে মানুষের মন দুইটা। একটা মন বলছে এভাবেই থাকি না আরও কিছুখন। আর একটা মন বলছে আদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দুচারটা কথা শুনিয়ে দিতে।
নিধি কোনটা করবে এটা ভাবছে আর আদির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আদি এবার একটু নরেচরে উঠে আদির মুখটা নিধির ঘাড়ের ওপর রাখে।

এবার নিধি পড়লো আরেক ঝামেলায়। এতোখন তো ভালোই ছিলো। নিধি এবার আদিকে ধাক্কা দিয়ে সরে যায়।

আদির ঘুমটা আগেই ভেঙে গেছে। নিধি জেগে আছে বলে শব্দ করে নি। আর ইচ্ছে করেই ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়েছে যাতে নিধি উঠে যায়।

আদি ঘুমচ্ছে বলে নিধি ওয়াশরুমে চলে যায়। লম্বা একটা সাওয়ার নেয়। দিনে গোছল করা হয় নি। গোছল সেরে সাদা টিশার্ট আর সাদাকালো মেশানো স্কার্ট গলায় সাদা পাতলা ওড়না জড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়।

আদি এক চোখ খুলে দেখছিলো নিঊি বের হচ্ছে কি না। নিধিকে দেখে দুচোখই খুলে ফেলে। উঠে বসে। নিধির এরকম রুপটা আদিকে মাতাল করে দিচ্ছে। নিধি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল শুকচ্ছে। আদি আস্তে আস্তে উঠে এসে নিধির সামনে দাঁড়ায়। নিধিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিধির চুল মুছিয়ে দেয়।

“গিল্টি ফিল হচ্ছে তাই সরি বলতে এসেছে রাইট

আদি নিজের কাজ করতে করতে বলে

” না। বোনের প্রতি দায়িত্ব পালন করছি

নিধি আদির হাত ধরে সরিয়ে দেয়

“আপনার সাথে কথা বলতে আমার ইগোতে বাঁধে। নিজেকে ছোট ছোট মনে হয়। মনে হয় নিজেকে অপমান করছি। সো প্লিজ আমার থেকে দুরে দুরে থাকেন। আই জাস্ট হেট ইউ

নিধির কথা শুনে আদি চোয়াল শক্ত করে ফেলে। দেয়ালের সাথে চেপে ধরে নিধিকে।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৬
#Tanisha Sultana (Writer)

“বিশ্বাস করুন আপনার এমন হুটহাট রেগে যাওয়া আমার কাছে চলে আসা এতে আমি একটুও ভয় পায় না। সো দয়া করে আমার থেকে দুরত্ব বজায় রাখুন

আদির চোখে চোখ রেখে বলে নিধি। আদি হা করে নিধির কথা শুনছে। যে মেয়েকে একটা ধমক দিলে ভয় পেয়ে যেতো সেই মেয়ে বড়বড় কথা বলছে। মানা যায়।
আদি নিধির ঠোঁটটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে শান্ত গলায় বলে

” এবার কথা বলো

নিধি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। ঠোঁট ধরে রাখলে কথা বলবে কি করে?

“কথা বলতে পারছো না তাই না? আমার মুখের ওপর বড়বড় কথা বললে ঠিক এই ভাবেই সুই সুতো দিয়ে ঠোঁট সেলাই করে দেবো। তখন আর কথা বলতে পারবে না। তো তুমি নিশ্চয় চাও না আমি এমনটা করি

নিধি আদিকে জোরে ধাক্কা মারে। আদি দুপা পিছিয়ে যায়

” আমিও ঠিক এই ভাবেই আপনাকে ধাক্কা দিয়ে মুখ থেকে সুতো খুলে কথা বলতে পারবো। সত্যি কথা বলতে আমি এখন আপনাকে পরোয়াই করি না। আমার কাছের মানুষদের দলে আপনাকে রাখি না। আপনার থাকা না থাকা কথা বলা না বলা আমার কাছে সমান।

আদি দেয়ালে ঘুসি মারে।

“তাহলে চলে যাচ্ছো না কেনো? দরজা খোলা আছে চাইলেই চলে যেতে পারো। যাও চলে
আদি অনেকটা চিৎকার করে বলে

“যাবো তো অবশ্যই। আপনার সাথে থাকার কোনো ইন্টারেস্ট নাই আমার। কিন্তু আপনা কথায় সৌরভকে বিয়ে আমি করবো না

আদি দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বলে

“আবার এক কথা।

” বলবোই আমি

“সবটা হয়েছে তোমার জন্য। তোমার সাথে আমার বা সৌরভের দেখা না হলে এসব কিচ্ছু হতো না। আমার পরি মারা যেতো না। আমাকে এভাবে প্রমাণ লুকানোর জন্য আশ্রয় খোঁজার জন্য সৌরভের পেছনে ঘুরতে হতো না।

আদির কথা শুনে নিধি হা হয়ে যায়। পরি মারা গেছে। আমার জন্য হয়েছে? কিন্তু কি করে?

আদি বোকা হয়ে যায়। রাগের মাথায় কিসব বলছে।

” কি বললেন আপনি?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিধি।

“আমার কাটা ঘায়ে সবে চামড় ধরেছে তুমি প্লিজ আবার নুনের ছিটা দিয়ে সেটাকে তাজা করে দিও না।

আদি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিধি এখনও ভাবছে ঘটনা কি? কোনোটার হিসাবই নিধি মেলাতে পারছে না।

দশটা বাজে। সবাই খেতে বসেছে। শাশুড়ী নিধিকে ডেকে গেছে। আদি কোথায় গেছে কেউ জানে না। নিধি খেতে যায়। নিধি চুপচাপ খাচ্ছে।

” নিধি তোমার গালে থাপ্পড় কে মেরেছে?
শাশুড়ীর প্রশ্নে চমকে ওঠে নিধি। এতোই জোরে থাপ্পড় মেরেছিলো যে এখনও দাগটা স্পষ্ট। নিধি গালে হাত দেয়। সবার দৃষ্টি নিধির দিকে।

“আজকে শপিং থেকে আসার সময় ভাইয়া ওকে থাপ

পৃতি বলতে যায় নিধি থামিয়ে বলে

” ইমন থাপ্পড় দিছে

ইমনের কাশি উঠে যায়। পৃতি চোখ গুলো রসগোল্লার মতো হয়ে যায়।
সবাই ইচ্ছা মতো বকা দেয় ইমনকে। তারপর কান ধরিয়ে উঠবসও করায়। ইমন তো হেব্বি রেগে গেছে। নিধির দিকে তাকাচ্ছেও না।

খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। নিধি ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছে ইমনকে সরি বলবে আর আদি আসার অপেক্ষা করছে। ইমন নিধিকে দেখে মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নেয়

“ইমন ভেবি সরি
নিধি এক কানে হাত দিয়ে বলল।

” তুই মিথ্যে কেনো বললি
রাগ করে বলে ইমন

“কি করবো বল? সত্যিটা বললে তো ওকে সবাই বকতো। এমনিতেই রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। খুব সরি রে।

” ইটস ওকে।

“একটু হেসে বল

ইমন বত্রিশটা দাঁত কেলিয়ে বলে

” সরি

ইমন এক হাতে নিধিকে হালকা জড়িয়ে ধরে।

“এতোটা ভালো হতে নেই রে নিধি।

” হুমমম

ইমনের সাথে কিছুখন গল্প করে নিধি রুমে যায়। রাত বারোটা বেজে গেলো এখনও আদি আসছে না। ফোনে ছিমটাও নেই যে ফোন করবে।

“দুরে কোথাও আছি বসে হাত দুটো দাও বাড়িয়ে

তুমি এলে রংধনু রং খুঁজে পায় তুমি এলে মেঘরাও বৃষ্টি ঝড়ায়”

“গানটা গাইছে কে?

নিধি সুরটাকে অনুসরণ করে বেরিয়ে যায়। যেতে যেতে ছাদে চলে যায়। ছাঁদের দোলনায় বসে কেউ গানটা গাইছে। নিধি ধীর পায়ে লোকটার কাছে যায়। গানটা শেষ হতেই

” তুমি এখানে?

পেছনে না তাকিয়েই বলে আদি। নিধি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। প্রমান করতে চাইছে যে নিধি এখানে নেই। আদির মনের ভুল

“তুমি যখন ছাঁদে পা রেখেছোআমি তখনই বুঝে গেছি। তোমার গায়ের ঘ্রাণ, নিশ্বাসের শব্দ আমি বুঝতে পারি। তো তুমি যদি ভাবো যে আমি নি শব্দে দাঁড়িয়ে থাকবো আর আদি ভাববে মনের ভুল। এটা কখনোই হবে না

নিধি এবার আদির পাশে বসে। আদি গিটার সাইডে নামায়।

আকাশ থালার মতো চাঁদ উঠেছে। অন্য দিনের তুলনায় আজ চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর। চাঁদের আলো নিধির চোখে মুখে পড়েছে। অপূর্ব অদ্ভুত সুন্দর লাগছে নিধিকে। ডান লাগে চাড়ের দাগটা চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

” আপনি এখানে?

“আমি মাঝেমধ্যেই এখানে আসি।

” ওহহ

“তুমি এখানে?

” আকাশ দেখতে এসেছি।

আদি নিধির ডান গালে হাত দেয় যেখানে থাপ্পড়ের দাগ পড়েছে গেছে। হাত বুলিয়ে দেয়।

“সরি

” ইটস ওকে। আমি রাগ করি নি। রাগ তো তাদের ওপর করে যারা আমাদের আপন কিন্তু আপনি আমার কেউ না।

আদি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিধির কোলে মাথা রেখে সুয়ে পড়ে। নিধি কিছুটা চমকালেও কোনো রিয়েক্ট করে না।

“কি জানতে চাও বলো?
আদি চোখ বন্ধ করে বলে।

” আপনি কেনো আমাকে সৌরভের সাথে বিয়ে দিতে চান

“আমি তোমাকে সৌরভের সাথে বিয়ে দিতে চায় না। ইভেন আমি এটাও চায় না যে তুমি সৌরভের সাথে কথা বলো। কিন্তু আমি এটাও চায় না যে তোমার আর আমার সম্পর্কটা থাক। আমি সাথে তুমি ভালো থাকবে না।

নিধি চোখ বন্ধ করে আদির কথা শুনছে।

” আমি এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে গেছি। না তোমাকে ছাড়তে পারছি না তোমার সাথে থাকতে পারছি। তার ওপর সৌরভ অনবরত বলে যাচ্ছে পুলিশকে সব বলে দেবে। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো আমি পরিকে মারি নি। ওকে বাঁচাতে গিয়ে ওর খুনি হয়ে গেলাম।

নিধি চোখ খুলে ফেলে। পরি মরে গেছে। বলছে কি উনি?

“কি বলছেন আপনি?

আদি কথা বলছে না। নিধি আদির গায়ে হাত দিয়ে চমকে ওঠে। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।

” এবার কি করবো? ওনাকে রুমে নেবো কি করে?

নিধি কয়েকবার আদিকে ডাকে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। আদির ফোন থেকে ইমনকে ফোন করে নিধি। ইমনের সাহায্যে আদিকে রুমে নেয় নিধি। মাথায় জলপট্টি দেয় আর ভাবে

“কি বললো আদি? আদিকে ফাঁসানো হচ্ছে। আর সৌরভের হুমকিতে আদি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইছে যাতে সৌরভ মুখ না খুলে। কিছুটা আদি বললো এখন বাঁকিটা আমি সৌরভের থেকে জানবো।

ঘুমের ঘোরেই আদি নিধির হাত জড়িয়ে ধরে।

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-২৩+২৪

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৩
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমার ওড়না দিন

আদি নিধির ওড়না গলায় পেচিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে আবার নিধির দিকে এগোতে থাকে

” আআপনি এগোচ্ছেন কেনো?

“তুমি পিছচ্ছ কেনো?

” দেখুন

“দেখাও

” আমি অন্য জনের হবু বউ

“তো

” তো আমার সাথে এমন অসভ্যতামি করতে পারেন না

নিধি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। পেছনে যাওয়ার আর জায়গা নেই। আদি দেয়ালের দুই পাশে হাত রেখে নিধির দিকে ঝুকে বলে

“টার্চ করছি আমি তোমাকে?

নিধি মাথা নিচু করে বলে

” নাহহ

“কিন্তু এখন করবো

নিধি ফট করে আদির দিকে তাকায়।

” দাদিমার খুশির খবর লাগবো। তোমার আফসোস আমি নিরামিষ। তাই ভাবলাম আজ একটু আমিষ হই

“আমাদের কিন্তু ডিভোর্স হবে

” হয় নি তো

নিধি একটু সাহস সঞ্চয় করে বলে

“আমি জানি আপনি আমাকে কিছুই করবেন না। জাস্ট এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন। কিন্তু বুঝতে পারছেন না কেনো আমার হার্ট বিট পাঁচশো তিপ্পান্ন হয়ে গেছে। যে কোনো মূহুর্তে বেরিয়ে আসবে

” তোমার হার্ট কি চাইছে আমি তোমাকে টার্চ করি

নিধি বোকা হয়ে যায়। দ্রুত মাথা নারে মানে না

“আমার হার্ট চায় রোহন আমাকে

আদি নিধির ঠোঁটের ওপর আঙুল রাখে

” এখানে আমি আর তুমি আছি রোহন কোথাও নেই।

নিধি আদির চোখের দিকে তাকায়। আজ আদির চোখে নিধি কোনো রাগ বা বিরক্ত দেখতে পাচ্ছে না। ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে। নিধি আদির চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। অদ্ভুত সুন্দর আদির চোখ দুটো।
আদি নিধির ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে নিধির এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দেয়

“আমি তোমার কপালে একটা কিস করতে চায়

নিধির বিরক্ত লাগছে। কপালে কিস করবে তার পারমিশন চাইছে। নেকা

” করবো কি?

নিধি বিরক্তি নিয়ে বলে

“ইচ্ছা

আদি গভীর ভাবে নিধির কপালে একটা চুমু দেয়। তারপর নিধির কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
নিধির আজ আদিকে অদ্ভুত লাগছে। এই আদিকে অচেনা লাগছে। এই কি সেই আদি যে সারাক্ষণ স্টুপিট গাঁধা ইডিয়েট ননসেন্স এগুলো বলতো

” বন্ধু হবে আমার? যার কাছে আমি আমার সব কিছু শেয়ার করতে পারবো। যার সাথে প্রাণ খুলে হাসতে পারবো। যার কাছে আমি আমার ভয়ংকর অতীত টা নির্ভয়ে বলতে পারবো। আমাকে বুঝবে। কখনো ঠকাবে না। যাই হয়ে যাক অলওয়েজ আমাকে বিলিভ করবে। হবে এরকম বন্ধু?

কপালে কপাল ঠেকিয়েই বলে আদি।

“আমি কখনোই তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না। সারাজীবন তোমার হাজবেন্ড হয়ে থাকতে পারবো না। আমাদের আলাদা হওয়াটা খুব দরকার। কিন্তু হ্যাঁ আমি তোমার জন্য কিছু ফিল করি। কিছুটা মায়া কাজ করে তোমার প্রতি। কিন্তু সেটা ভালোবাসা না। ভালোবাসা সম্ভব নয় তোমাকে। আর আমিও জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না। তুমি খুব ভালো মেয়ে। অনেক ভালো ছেলে ডিজার্ভ করো তুমি। সৌরভ বা আমি তোমার যোগ্য না।
তবে হ্যাঁ আমি যতদিন বেঁচে থাকবো তোমার সাথে যোগাযোগ রাখতে যায়। আমার কষ্ট তোমার সাথে ভাগ করে নিতে চায় বন্ধু হয়ে। ইউ নো হোয়াট ভালোবাসার থেকে কিন্তু বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি গভীর আর পবিত্র হয়।

আদির কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে নিধি। কিরকম রিয়াকশন দেওয়া উচিৎ নিধির জানা নেই। তোমাকে ভালোবাসি না কথাটা বারবার কানে বাঁজছে নিধির।
” আমিও তো ওকে ভালোবাসি না। তাহলে ওর মুখ থেকে ভালোবাসি না কথাটা শুনে আমার ভেতরটা এমন জ্বলে যাচ্ছে কেনো?
নিধির চোখের কোনো পানি চিকচিক করছে৷
আদি নিধিকে ছেড়ে দিয়ে খাটে
গোল হয়ে বসে। নিধি আদির আড়ালে চোখের পানি মুছে ফেলে।

“এখানে বসো না

নিধি আদির পাশে বসে। আদি নিধির কোলে মাথা রেখে শয়। নিধি প্রথমে চমকালেও পরে স্বাভাবিক হয়
আদি চোখ বন্ধ করে বলে

” মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না প্লিজ

নিধি বাধ্য মেয়ের মতো চুলে বিলি কেটে দিতে থাকে।

“আমার কথায় কি তোমার খারাপ লেগেছে? বা কোনো কথায় হার্ট হয়েছো?

নিধি একটু হেসে বলে

” না

“তোমাকে আমি কেনো আটকে রাখলাম জানি না। তুমি আমার লাইফে আসার পরে থেকেই আমি হুটহাট অনেক কাজ করে ফেলি যেগুলো আমি করতে চায় না। পরে রিয়েলাইজ করি এটা করা আমার ঠিক হয় নি।

” হুমমম

“জানো তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি কারণে অকারণে তোমাকে বকি কিন্তু তুমি গাঁধার মতো কেনো বকলাম কারণ খুঁজতে থাকো। প্রতিবাদ করতে পারো না। বেপারটা ভালো লাগে। এরকমকি থাকবা শুরু আমার সামনে অন্য দের সামনে না ওকে

” আপনার সামনেই ওরকম থাকবো না। প্রতিবাদ করবো

“আমিও চাপকে গাল লাল করে দেবো

” আর আমি বিছানায় পানি ঢেকে দেবো

“সেখানে তোমাকেই বেঁধে রাখবো আমি

” লাটসাহেব একটা

“গাঁধা

” কথাই বলবো না

“আমি মাঝেমধ্যে চিন্তা করি। তোমার মুখের মধ্যে কি বেলুন আছে না কি? কথায় কথায় ফুলে যায়

” হুমম আছে তো

“সেটাই

” আমি এখন বাইরে যাবো

“নাহহহহ

” প্লিজ

“বললাম তো

” আপনার জন্য করলা নিয়ে আসবো প্লিজ

“যা খুশি করো

নিধি দরজা খুলে বাইরে যায়।

“আমি এই পিচ্চিটাকে ভালোবেসে ফেলছি। কিন্তু এই কথাটা কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। আমার জীবনটা স্বাভাবিক হলে সৌরভ পরি এই দুটো মানুষ না থাকলে আমিও ভালো থাকতে পারতাম।

আদি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

নিধি কিচেনে যায়। নিরা আর শাশুড়ী লুচি বানাচ্ছে। পৃতি পা ঝুলিয়ে আচার খাচ্ছে আর ইমনের সাথে ঝগড়া করছে।

” তুমি এখানে?
শাশুড়ী গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করে নিধিকে।

“না মানে সাহায্য করতে আসলাম

” না না তোকে কিছু করতে হবে না। তুই আদির কাছে গিয়ে বসে থাক
ইয়ারকি মেরে বলে নিরা। নিধি কটমট চোখে তাকায় নিরার দিকে।

“এখানে তোমার কোনো কাজ নেই। তুমি বরং পৃতি আর ইমনের সাথে গিয়ে পৃতির বিয়ের কেনাকাটা করে আসো

” আমি

“তোমাকেই তো বলছি

” হুমমম

“আর শোনো

” হুম আন্টি বলো
আদির মা আটা মাখা বাদ রেখে নিধির দিকে তাকিয়ে বলে

“মেয়েদের জীবন একটা বিয়েও একটা। নিজের স্বামীকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করো। ভালোবাসা দাও তবেই ভালোবাসা পাবে। গাঁধার মতো না থেকে একটু চালাক হওয়ার চেষ্টা করো। স্বামীকে ইমপ্রেস করো

নিধি শাশুড়ীর কথা মন দিয়ে শুনছে। আজ শাশুড়ীও গাঁধা বলবো

” আমি তোমার সাথে আছি। তোমাকে হেল্প করবো

নিধি মুচকি হাসে

নিধি রুমে এসে দেখে আদি ঘুমচ্ছে। তাই কোনো শব্দ না করে নীল একটা থ্রি পিছ পড়ে বেরিয়ে পড়ে শপিংএর জন্য।

ইমন ডাইভ করছে পৃতি আর নিধি নানারকমের গল্প করছে। নিধির ফোন বাজচ্ছে। নিধি ফোন রিসিভ করে

“কেমন আছো নিধিরা?

” সৌরভ আপনি

“হুমম আমি

” বিজি আছি

“জাস্ট পাঁচ মিনিট

” বলুন

“নিধিরা লাভ ইউ

” আর

“আদি তোমাকে আমার সম্পর্কে যা বলেছে মিথ্যা। আমি কাউকে খুন করতে পারিই না

” আদি ও আমায় কিছু বলে নি

“বলবে

” ওহহহ

“বললে তুমি বিশ্বাস করবা না।

নিধি ফোন কেটে দেয়। সৌরভ কি বলছে নিধির মাথায় ঢুকছে না। খুন করেছে কে? আর কাকে? নিধি ফোন বন্ধ করে দেয়।
” কি রে তোর প্রাক্তন কি বললো
ইমন জিজ্ঞেস করে

“কি যেনো খুন খুন বললো। বাদ দে তাড়াতাড়ি চল

আদি ঘুম থেকে উঠে ইডিয়েট বলে ডাকে। কিন্তু নিধির খবর নেই।
রান্নাঘরে যায়

” মা স্টুপিটটা কই?

“শপিংমলে গেছে

” ওহহহ

আদি রুমে এসে পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে।

শপিংমলে গিয়ে দেখে রাফিন আর রোহন দাঁড়িয়ে আছে। নিধির মুখটা কালো হয়ে যায়। রোহন একগাল হেসে এগিয়ে আসে

“হাই নিধি

” হেলো

সবাই মিলে দোকানে যায়। রোহন একটার,পর একটা ড্রেস দেখিয়ে যাচ্ছে নিধিকে। নিধির বিরক্ত লাগছে তবুও কিছু বলতে পারছে না।

“নিধি এই ড্রেসটা একবার পড়ে আসো তো

রোহন ড্রেসটা নিধির হাতে ধরিয়ে ঠেলেঠুলে নিধিকে চেঞ্জিং রুমে পাঠিয়ে দেয়।

” ধুর কপাল আমার। কোথা থেকে সব সময় উড়ে উড়ে চলে আসে। জামাই পাত্তা দেয় না বন্ধু হতে চায় আর অন্য ছেলে হয়ে আসে প্রেম করতে। আজব

কেউ নিধির হাত ধরে টান দিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যায়। নিধি ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার দিতে যায় কিন্তু লোকটা মুখ চেপে ধরে

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৪
#Tanisha Sultana (Writer)

“একদম শব্দ করবা না
আদি নিধির মুখের ওপর থেকে হাত সরায়। নিধি জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলে

” আপনি

“তো কি রোহন থাকবে?
আদি কিছুটা রেগে বলে

” তা বলি নি

“না বললে ভালো। রোহন ড্রেস দিলো আর তুমি নাচতে নাচতে সেটা পড়তে যাচ্ছ

” পাড়বো না কেনো? এতো সুন্দর ড্রেস

“তুমি পড়বা না
চোখ মুখ শক্ত করে বলে আদি।
নিধি একটু মজা নেওয়ার জন্য বলে

” পড়বো

“এখান থেকে এক পা নড়লে পা ভেঙে দেবো

” ভালো তো আর বাসেন না তাহলে এতো অধিকার দেখান কেনো?
নিধি কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলে।
আদি নিধির মুখের দিকে একবার তাকায়

“ভালোবাসি আর না বাসি তুমি এখনো আমার বউ। ডিভোর্সের পড়ে যা খুশি কইরো কিচ্ছু বলবো না।

” তখন আপনি বললেও শুনবো না।

“কেনো?

” তখন আপনার অধিকার থাকবে না।

আদি নিধির হাত থেকে জামাটা নেয়। আর এক হাতে নিধির হাত ধরে রোহনের সামনে যায়

“নিধি ড্রেসটা পড়োনি যে
হাসিমুখে বলে রোহন

” এই ড্রেসটা ও পড়বে না

আদির কথায় সবাই আদির দিকে তাকায়। নিধি তো চোখ বড়বড় করে তাকায়। ইশারায় আদিকে চুপ থাকতে বলছে

রোহন সবার দিকে একবার তাকিয়ে। নিধির দিকে দুপা এগিয়ে গিয়ে বলে

“কেনো? ড্রেসটা কি তোমার পছন্দ হয় নি?

নিধি সাথে সাথে বলে

” না না ড্রেসটা খুব পছন্দ হয়েছে। ভীষণ ভালো লেগেছে। আমি পড়বো তো ড্রেস

আদি নিধির দিকে তাকায়। নিধি কথা ঘুরিয়ে ফেলে

“আআসলে ড্রেসটা আমি পড়বো না। খুব টাইট হয়। পড়া যায় না

রোহন হেসে বলে

” ওহহ এই বেপার। আমি ভাবলাম কি না কি। জানো আদি আমি এই প্রথম কোনো ভাইকে এতো কেয়ারিং দেখলাম। সারাক্ষণ বোনের সাথে সাথে ঘুরে। বোনের হাত ধরে রাখে। বোনের কোনটা ভালো লাগে না লাগে মুখ দেখেই বুঝতে পারে। আমার তো মন চায় তোমার আর নিঊির একটা পিক তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে একেই বলে ভাই-বোনের ভালোবাসা।

রোহনের কথা শুনে আদি নিধির হাত শক্ত করে ধরে। নিধি ব্যাথা পায়। আদি শক্ত কন্ঠে বলে

“ও আমার বোন নঅ

তখন নিধি বলে

” রোহন ওই ড্রেসটা কেমন দেখেন তো

রোহন ড্রেস দেখতে যায়। আদি আগুন দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকায়

“এভাবে তাকিয়েন না আমি ভষ্য হয়ে যাবো

” রোহনকে বলতে দিলা না কেন?

“আমার বিয়েটা ভাঙা কি খুব জরুরি? আপনিও থাকবেন না আবার ওকেও ডিসকোয়ালিফাই করে দিচ্ছেন। আপনি কি চান আমি চিরকুমারী থাকি।

আদি দাঁত কটমট করে বলে

” কয়ডা লাগে তোমার

“বাজারে যত ভালো আছে

আদি বড়বড় চোখ করে নিধির দিকে তাকায়। নিধি দাঁত কেলিয়ে বলে

” ড্রেস
বলেই পৃতির কাছে চলে যায়।

ইচ্ছে মতো ড্রের কিনেছে পৃতি আর নিধি। আদি তাড়া না দিলে আরও কিনতো। কিন্তু আদির বকা খাওয়ার ভয়ে তাড়াহুড়ো করেছে। গাড়িতে ড্রাইভিং ছিটে বসে আছে আদি। নিধি আর পৃতি সব জামাকাপড়ের ব্যাগ রোহন আর ইমনকে দিয়েছে। গাড়িতে সব কিছগ ওঠানোর পরে। নিধি গিয়ে আদির পাশে বসে। পৃতি রাফিনের সাথে কথা বলছে দুরে দাঁড়িয়ে। ইমন গাড়ির পেছনের ছিটে বসে চোখ বন্ধ করে আছে। আসলে ওদের শপিং বয়াগ টানতে টানতে ও ক্লান্ত।

“আমার লাইফকে সাবধানে নিয়ে যেয়ো

বলেই রোহন চলে যায়। আদি তো এমনিতেই বম হয়ে আছে। তারপর রোহনের মুখে লাইফ শুনে বম ফাটার যোগ্য হয়ে গেছে।
ঠাস করে গাড়িতে লাথি মারে। নিধি ভয়ে কেঁপে ওঠে। ইমন সবে একটু ঘুমের মতো আসছিলো ও ধরফরিয়ে ওঠে

” ধুর দিলি তো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে

ইমন মনে মনে আদিকে একটু বকে আবার চোখ বন্ধ করে। পৃতি গাড়িতে ওঠে। আদি ডাইভ করা শুরু করে

“নিধি ভীষণ টায়ার্ড হয়ে গেছি কোনো একটা কফিশপে বসে কোল্ড কফি খেলে মন্দ হয় না বল

” ঠিক বলেছিস তুই

“ভাইয়া ভালো একটা কফিশপ দেখে গাড়ি থামাও

আদি কিছু বলে না। এখানে তো রোহন নেই কফি খাওয়া যেতেই পারে।

” পৃতি তোর বিয়ের কোনো রিচুয়েলসে স্টুপিট টাকে ইনভলভ করবি না

“কিন্তু কেনো? আমার বিয়ে আর নিধি এনজয় করবে না

” না করবে না। বিয়েটা তোর ওর না। তাছাড়া ছেলে দেখলেই তো বিরিং শুরু হয়ে যায়। মা আছে কাকিমা দাদিমা সবাই আছে। ওর কোনো প্রয়োজন নেই।

পৃতি মন খারাপ করে বলে ওকে

একটা কফিশপে আদি গাড়ি থামায়। ইমন এতোখন ঘুমিয়েছে। এতো কোলাহলের মধ্যেও আর একটু সময়ের জন্য মানুষ ঘুমতে পড়ে এটা ইমনকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস ই করতো না। নিধি গাল ফুলিয়ে আছে। পৃতি মনের আনন্দে সেলফি তুলছে।

ইমন আর পৃতি এক পাশে বসে। নিধি বাধ্য হয়ে আদির পাশে বসে। এমনিতেও আদিকে এখন নিধির সয্য হচ্ছে না

কফি অর্ডার দেয়। ইমন আর পৃতি বিয়ে নিয়ে অনেক প্লান করছে। আদি ফোন দেখছে। নিধির একা একা বরিং লাগছে। এদিকে কফিও আসছে না। নিধি পার্স থেকে ফোন বের করে চালু করে। আর সাথে সাথে এতোগুলো মেসেজ আসে।

“তোমাকে এতো মেসেজ কে দেয়? নিশ্চয় রোহন

বলেই আদি নিধির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। মেসেজ চেক করে দেখে সৌরভের মেসেজ। আদি এক এক করে সব মেসেজ পড়ে। আদি মোটামুটি ঘামতে শুরু করে দিয়েছে।

” কে মেসেজ দিছে ভাইয়া
পৃতি জিজ্ঞেস করে।
আদি পৃতির কথার উওর না দিয়ে তারাহুরো করে মেসেজ ডিলিট করে। নিধির ফোন থেকে ছিম খুলে নেয়। নিধি হা করে দেখছে লোকটা করতে চাইছে টা কি?

ফোনটা নিধির হাতে দেয় আদি

“এএতো ছেলেদের সাথে কিসের কথা?

” আপনি ছিমটা খুলে নিলেন কেনো? আর এভাবে ঘামছেন কেনো? এতো নার্ভাসই বা কেনো? কাহিনি কি?
নিধি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।

নিধির এরকম প্রশ্নে আদি আরও বেশি ঘামতে শুরু করে। মাথা চেপে ধরে বসে। নিধি বিচলিত হয়ে বলে

“আর ইউ ওকে

আদি মাথা নারায় মানে ঠিক আছে। ইমন ওয়েটারকে তারা দিয়ে কফি আনায় সাথে আদির জন্য ঠান্ডা পানি। আদি ঠকঠক করে এক নিশ্বাসে পুরো পানিটা খেয়ে ফেলে।

” সবাই আমার দিকে এরকম হা করে তাকিয়ে আছো কেনো?

ইমন পৃতি নিধি তাকিয়ে ছিলো আদির দিকে।

নিধি এখনো সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। আদিকে নার্ভাস হতে দেখে নিধি নিশ্চিত যে কিছু একটা হয়েছে।

আদি কয়েক চুমুকেই কফি শেষ করে ফেলে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে

“আমি গাড়িতে আছি তোমরা শেষ করে এসো।

কাউকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে আদি চলে যায়। নিধি এক চুমুকে সবটা শেষ করে আদির পেছনে দৌড় দেয়। ইমন আর পৃতি খাচ্ছে ধীরেসুস্থে। নিধি ওদের বলে গেছে ওরা যেনো তাড়াতাড়ি না যায়।

” সৌরভ আমি তোকে বলেছি আমি নিধিকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো তারপরও তুই এইসব কেনো শুরু করছিস।

“দিচ্ছিস না তো তুই ডিভোর্স।

” পৃতির বিয়েটা হয়ে যাক তারপর আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেবো। তুই বরং ডিভোর্স পেপার রেডি কর।

“আমি আপনাকে ডিভোর্স দেবো না

আদি চমকে পেছনে তাকায়। নিধি হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।

” ততুমি

“হ্যাঁ আমি। কি মনে করেন আপনি আমাকে খেলার পুতুল। যখন খুশি খেললেন তো খেলা শেষ ফেলে দিলেন। কখনো আপনার মনে হলো সৌরভ আমার জন্য পারফেক না তো বাবার সাথে মিলে ব্রেকআপ করিয়ে দিলেন। এখন আপনার মনে হচ্ছে আমি আপনার পারফেক্ট না তাই আপনি সৌরভের সাথে মিলে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছেন আর সৌরভের সাথে মিলে প্লানিংও করে ফেলেছেন আমাকে এখন সৌরভের সাথে বিয়ে দেবেন। এবার আমি আপনাকে ছাড়ছি না। আমি কখনোই আপনাকে ডিভোর্স দেবো না। বলে দেবেন সৌরভকে আর নিজের মাথায়ও ঢুকিয়ে নেন।

” তুমি বুঝতে পারছো

“আমার লাইফ রিক্স আছে। আপনার অনেক শক্রু। তাই তো। আই ডোন্ট কেয়ার। আপনার সৌরভের আর পরির কি রহস্য আছে সেটা তো আমি খুঁজে বের করবোই। আর আপনাকেও ছাড়ছি না।

চলবে

শুধু তুই ২ পর্ব-২১+২২

0

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২১
#Tanisha Sultana (Writer)

“উনি এখানে কি করছে? উনার তো কাল আসার কথা তাহলে আজ কেনো এলো? আসছে আসুক আমার কি? আমার যেমন ড্রেস পড়তে ইচ্ছে হয়েছে আমি তেমন ড্রেস পড়েছি তাতে ওনার কি? কিছু বলতে আসলে আমিও অনেক কথা শুনিয়ে দেবো। এখন আর আমি গাঁধা নেই। এই পাঁচ দিনে চালাক নিধি হয়ে গেছি
নিধি মনে মনে কথা গুলো ভাবে।

রোহন হেসে এগিয়ে যায় আদির দিকে

” আরে আদি তুমি এসেছো ভালোই হয়েছে। এবার তুমিই তোমার বাবাকে বলে দাও। আমার কিন্তু নিধিকে প্রচুর না মারাত্মক ভালো লেগেছে।

“এইরকম একটা ইডিয়েট কে তোমার ভালো লাগলো?
আদি চোখ মুখ শক্ত করে নিধির দিকে তাকিয়ে বলে

” একদম আমার ফিউচারকে ইডিয়েট বলবা না। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে

“দরদ উতলে পড়ছে। আর স্টুপিটটাকে দেখো কেমন ইনজয় করছে
আদি মনে মনে বলে

“হুমম আমি মাএ আসলাম ফ্রেশ হই রেস্ট নেই তারপর তোমার বেপারটা দেখছি

আদি নিধিকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে যায়। সবার সাথে কথা বলে রুমে যায়। আদি যখন এসে গেছে তখন আদি ফ্রেশ হয়ে আসবে তারপর আংটি পড়ানো হবে। নিধি রোহন আর ইমনের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছে

” নিধি

শাশুড়ীর ডাকে নিধি শাশুড়ীর কাছে যায়

“কিছু বলবেন

” যাও দেখো আদির কিছু লাগবে না কি

“ওনার কিছু লাগলে তো উনি ডাকতোই তাই না

” আমি যেতে বলছি

নিধি অসহায় ফেস করে যায়। রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢোকার সাহস নেই নিধির।

“ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

আদির কন্ঠে নিধি চমকে ওঠে। উনি কি করে জানলো আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি

” ওখানে দাঁড়িয়ে গবেষণা না করে ভেতরে এসো

নিধি গুটিগুটি পায়ে ভেতরে যায়। মাথা নিচু করে আদির সামনে দাঁড়ায়। আদি হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে

“আপনি জানলেন কি করে আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম

” তোমার নিশ্বাসের শব্দ আমি শুনতে পায়। বলেছিলাম তো

“এ আবার কেমন মানুষ? নিশ্বাসের শব্দ এতোদুর থেকে কি করে শুনতে পায়? নিশ্চয় কোনোভাবে টের পেয়েছিলো এখন হেয়ালি করে মিথ্যা বলছে
নিধি মনে মনে বলে

” কাকে ইমপ্রেস করার জন্য এমন সেজেছো?

“হবু বরকে
নিধি লাজুক হেসে বলে

” হবু বর আবার কে?
আদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

“রোহন

” রোহনকে একটু বেশিই পছন্দ দেখছি। দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি

“হুমমম। ওর চাপ দাঁড়ি গুলো আমাকে প্রতিনিয়ত ওর দিকে টানে। ইচ্ছে করছে এখনই বিয়ে করে ফেলি

আদি নিধির হাত মুচড়ে ধরে।

” আহহ ব্যাথা পাচ্ছি তো

“আমি তোমার বিয়ে করা বর। আর আমাদের ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত অন্য ছেলের নাম মুখে আনলে মুখ ভেঙে দেবো
শক্ত কন্ঠে বলে আদি

” কোথাও পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি

আদি হাতটা আরও শক্ত করে মুচড়ে ধরে

“পবলেম কি তোমার? ফেসবুকে পিক আপলোড কেনো দিছিলা? এমন ড্রেস কেনো পড়ছো? ঠোঁটে লিপস্টিক কেনো লাগাইছো? ছেলেদের দেখলে নিকনিক বেরে যা

নিধি আদির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে

” তাতে আপনার কি?

আদি থমথমে খেয়ে যায়। সত্যিই তো ও এসব কেনো বলছে।

“আমার যা ইচ্ছে করবো। আপনি তো আর আমার লাইফে পারমানেন্টলি থাকছেন না। তো আমি এখন থেকেই নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছি। এখন এতেও যদি আপনার পবলেম থাকে তাহলে আমার কিচ্ছু করার নাই।

নিধি যেতে নেয় আদি নিধির হাত ধরে। রুমাল দিয়ে নিধির ঠোঁটের লিপস্টিক হালকা করে দেয় চুল গুলো ছেড়ে দেয়। ওড়নায় পিন দিয়ে ভালো করে পেট ঢেকে দেয়। তারপর নিধিকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে নিধির কাঁধে থুতনি রেখে বলে

” আমি থাকবো কি থাকবো না সেটা পরের বেপার। এখন যদি তোমার খুব সাজতে মন চায় তো আমার সামনে সাজুগুজু করে পেট বের করে থাকবা। ওকে

নিধি কি বলবে বুঝতে পারছে না। লোকটার হলো কি? পাঁচদিনে এতো পরিবর্তন। আদির নিশ্বাস নিধির কাঁধে পড়ছে। কেমন কেমন লাগছে। নিধি চোখ বন্ধ করে বলে

“আমি রোহ
আদি নিধিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিধির মুখ চেপে ধরে

” ওই নামটা আর একবারও মুখে আনবা না। আর যদি আনো তো হাত পা বেঁধে এখানেই রেখে দেবো

শান্ত গলায় বলে আদি। নিধি তো অবাক। এটা সেই আদি তো? এতো ভালো বিহেব হলোটা কি?

“কি হলো হা করে তাকিয়ে আছো কেনো?

নিধি চোখ বন্ধ করে ফেলে।

” চলো

“না মানে এইভাবে আমি যাবো না

” কেনো?

“এভাবে গেলে সবাই বলবে আমার এতো লিপস্টিক কোথায় গেলো। চুলের এই অবস্থা কেনো? তো আমি কি বলবো?

” যা সত্যি তাই বলবা

“আমি এটা বলতে পারবো না

” এতোখন ভালো করে কথা বলেছি বলে এটা না যে এখন ধমক দেবো না

নিধি কপাল কুচকে তাকায় আদির দিকে। এই মুহূর্তে আদিকে নিধির গিলে খেতে ইচ্ছে করছে।

“চলো

আদি নিধির হাত ধরে নিয়ে যায়। নিচে নামতেই দাদিমা আদির কান টেনে ধরে।

” আহহ দাদিমা লাগছে

“লাগুক বেশি করে লাগুক। সারাদিন বউকে বকো একটুও ভালোবাসোস না। এখনও তোদের ফুলসজ্জাও হয় নাই অপদার্থ কোথাকার

আদি কান ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে

” এসব কে বলেছে?

নিধি হাত ইশারায় না করছে বলতে কিন্তু কে শোনে কার কথা

“তোর বউ বলেছে। আমি কিচ্ছু শুনতে চায় না এক মাসের মধ্যেই আমার নাতির ঘরে পুতি দেখতে চায়

আদি কটমট চোখে নিধির দিকে তাকায়। নিধি এক দৌড়ে পালায়

” কথা কানে গেলো? বউকে আদর সোহাগে রাখতে হয়।

“হুমমম

আদি কোনোরকমে ওখান থেকে কেটে পড়ে।

রাফিন পৃতিকে আংটি পড়াবে। তো পৃতির একা নার্ভাস লাগছ। তাই পৃতি গিয়ে নিধিকে নিয়ে আসে। পৃতির পাশে নিধি আর রাফিনের পাশে রোহন। আদি একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে। আদির ইচ্ছে করছে নিধিকে এখান থেকে টেনে নিয়ে যেতে কিন্তু পারছে না। হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে।

আংটি পড়ানো শেষ। সবাই খেতে বসেছে। নিধি নিরার জন্য জায়গা রেখে বসে। ওই জায়গায় কোথা থেকে রোহন এসে বসে পড়ে। আদি খাওয়ানোর দায়িত্বে আছে। একপাশে রোহন আরেক পাশে ইমন। দুইজনের কথার জন্য নিধি খেতেও পারছে না। আবার কিছু বলতেও পারছে না। আদি খাবার দিচ্ছে সবাইকে আর আড়চোখে দেখছে নিধিকে।
খাওয়া শেষে উঠতে গিয়ে নিধি রোহনের সাথে ধাক্কা খায়। রোহনকে সরি বলে চলে যায়। রোহনের মনে তো লাড্ডু ফুটছে।

নিধি একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে রোহন চলে না যাওয়া পর্যন্ত এখান থেকে এক পা নড়বে না। সারাক্ষণ চুইংগামের মতো লেগে আছে। ভাল্লাগে না।

” এখানে কি করছো?
নিাদি চমকে তাকিয়ে দেখে আদি। বুকে থু থু দেয়

“না মানে এমনি

” এরকম ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে নিশ্চয় রোহনকে ইশারা করেছিলে এখানে আসতে। নিরিবিলে প্রেম আলাপ করতে

“বাহহহ আপনি তো ভালোই বুঝেন। সত্যিই তাই
এবার প্রস্থান করুন

” আমার বাড়ি এটা

“তো কি মাথা কিনে নিয়েছেন না কি? কদিন পরেই তো চলে যাবো। এবার গেস্ট মনে করে একটু সম্মান করুন

চলে যাবো কথাটা বারবার আদির কানে বাড়ি খাচ্ছে। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। যাকে ছাড়া পাঁচদিন থাকতে পারলো না চলে এলো তাকে ছাড়া বাকি জীবনটা কি করে থাকবে?

” দাদিমাকে কি বলেছো?

“যা সত্যি তাই

” ফুলসজ্জা করার খুব শক

“হুমম বাট আপনার সাথে না

” ওহহহ রোহন বা সৌরভের সাথে

“ওরা আপনার থেকে ১০০% ভালো

” রুমে চলো একবার। তারপর রোহন আর সৌরভের নাম মুখে আনার পরিণাম দেখাবো

“ভয় পায় না

” দেখা যাবে

ইমন দৌড়ে আসে

” ভাই নিধি রোহনের বাবা নিধি আর রোহনের কথা বাবাকে বলেছে

ইমনের কথা শুনে আদি নিধি ঢোক গিলে

“তারপর

” বাবা তোদের এখনি যেতে বলে

“আজ একটা ছোটমট না না বড়সড়ো ঘুর্ণিঝড় হবে। আল্লাহ জানে কপালে কি আছে

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana (Writer)

“একদম সব আমার দোষ দিবা না। বলবা মজা করে বলছিলাম। আমি তোমার খুব যত্ন করছি বলবা। বেশি কিছু বললে তোমার খবর আছে।

” ইহহহহহহ আইছে। মিথ্যা কথা আমি বলতে পারি না
নিধি হাত ভাজ করে বলে

“মিথ্যা বলতে বলছি না কি? শুনো আমি এখনো তোমার বিয়ে করা স্বামী সো পতির পূর্নেই সতির পূর্ণ বুঝলে। কি কি বলবা আমি বলে দিচ্ছি

নিধি ভ্রু কুচকে তাকায় আদির দিকে

” এভাবে না তাকিয়ে আমার কথা মন দিয়ে শুনো। বলবা আদি আমাকে রান্না করে খাইয়েছে

“কবে?

” বলবা তুমি। কটামানি করবা না। তারপর বলবা প্রতিদিন আমি তোমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসছি।

“ঠাটা পড়া মিথ্যা কথা।

” দিয়ে আসি নি তোমায়?

“মাএ একদিন।

” তাও তো দিছি

“একদিনের কথা বলবো।

” তারপর তোমায় সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখিয়েছি

“মানুষ এতো ভালো গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারে আল্লাহ। আপনার মুখে তো ঘা হবে। আর আমার কাছে যা জিজ্ঞেস করবে সত্যি বলবো পারলে এক অহ্মর বানিয়ে বলবো

“তোমাকে আমি

” কিচ্ছু করতে পারবেন না

নিধি ভেংচি কেটে চলে যায়। নিধির বাবা মা নিরা আশিক পৃতি ইমন আদির বাবা মা দাঁড়িয়ে আছে। নিধি আর আদিও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে

“নিধি তোমার বোন?
শান্ত গলায় বলে আদির বাবা

” বাবা হয়েছে কি। আমি ইডিয়েট কে নিয়ে অফিসে গেছিলাম তো বসকে মজা করে

“যেটা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে সেটা বলো শুধু।
ধমক দিয়ে বলে আদির মা
আদি মাথা নিচু করে বলে

” না

“তাহলে বোনের পরিচয়ে কেনো থেকেছো? বউয়ের জন্য পাএ খুঁজছো? বিয়ে দিতে চাও তুমি তোমার বউকে?
ধমকে বলে আদির বাবা।

” আংকেল আমি কিছু বলবো

সবাই নিধির দিকে তাকায়। আদিও তাকিয়ে আছে। কি বলবে নিধি?

নিধি একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বলে

“আমাদের এই বিয়েটা আপনার ছেলে মানে না। থাকতে চায় না আমার সাথে। আর আমিও। ডিভোর্স চায় আমরা দুজনই। যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে জোর করে থাকা যায় না। আমাকে বউ বলতে আপনার ছেলের ইগোতে বাঁধে তাই বোন বলে পরিচয় দিয়েছে। প্রথম প্রথম আমার সাথে ঠিক করে কথা বলতো না কুকুরের মতো বিহেব করতে। কারণ উনি ভেবেছিলেন আমি হয়ত অধিকার খাটাবো ডিভোর্স দেবো না। কিন্তু পরে যখন আমি ডিভোর্সে রাজি হয়েছি তখন একটু স্বাভাবিক হয়েছে।

এক নাগারে কথা গুলো বলে দম নেয় নিধি। সবাই তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। আদি অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে আছে।

” উনি পরি আপুকে ভালেবাসে।

“পরি
আদির মা বলে

” হুমম পটি নামের একটা মেয়কে ভালোবাসে

পরি নামটা শুনে আদি চমকে ওঠে।

“আংকেল আমি আর এই সম্পর্কে থাকতে চায় না। পৃতির বিয়ের পরে আমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দেবেন।

” ঠিক আছে। আমারই ভুল হয়েছে তোমাদের বিয়েটা দিয়ে। আমি এবার আমার ভুল শুধরে নেবো। রোহন তোমার জন্য পারফেক্ট। পৃতির বিয়ের পরে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোমার আর রোহনের বিয়ে দেবো।

আদির বাবা নিধির মাথায় হাত রেখে বলে।

“আর একটা কথা আন্টি আমি আমার বাবা মায়ের সাথে থাকতে চায়। যেখানে আমাদের সম্পর্কের কোনো মুল্য নেই সেখানে আমার থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে। পৃতির বিয়ের দিন না হয় আসবো

আদির মা গম্ভীর মুখে বলে

” আমার ছেলের সাথে তোমার ডিভোর্স এখনও হয় নি। তবে তুমি যদি এখানে থাকতে না চাও তো যেতে পারো

“থ্যাংক্স আন্টি
আম্মু আব্বু চলো। বলেছিলে না আব্বু তুমি আমাকে বেস্ট ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছো। যে আমাকে ভীষণ ভালো রাখবে। সী

নিধির বাবা মাথা নিচু করে বলে

” সরি সোনা। আমি বুঝতে পারি নি

“এখন বুঝে নাও। সবাই আমাদের যেটা বলে সেটা সত্যি না যেটা বলে না সেটাই সত্যি।

নিধির বাবা নিধির হাত ধরে বলে

” আমার ভুল হয়েছে তোমার মতের বিরুদ্ধে তোমার বিয়ে দিয়ে। আমি ভেবেছিলাম মানিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু এবার যাওয়ার হয়ে গেছে। আমি নিজে তোমার ডিভোর্স দেওয়াবো

নিধি আদির দিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি দেয়।
বাবা মায়ের হাত ধরে যেনে নেয়

” তুমি কোথাও যাবে না

আদি চেচিয়ে বলে। নিধি দাঁড়িয়ে যায়। আদি নিধির হাত ধরে

“তুমি এখানে থাকবে আমার সাথে

” আদি ওর হাতটা ছেড়ে দাও
আদির বাবা শক্ত কন্ঠে বলে

“ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত ও আমার কাছে থাকবে। ডিভোর্সের পরে চলে যাবে। আর আমি আমার অধিকারে আটকাচ্ছি ওকে।

” আমি থাকতে চায় না। যখন আপনার যেটা মনে হবে তখন সেটাই করবেন। আমার কেনো ইচ্ছে নেই

নিধি আদির হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে

“তুমি এখানে থাকবে মানে থাকবে। আর একটা কথা বললে হাত পা বেঁধে রেখে দেবো

আদি নিধির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। নিধির হাতটা ছেড়ে মাথা চেপে ধরে বসে পড়ে

” এমনটা কেনো করলেন? কতো ইমোশনাল ড্রামা করে ডিভোর্সের কথাটা বললাম। আজ আমি চলে গেলে দুইদিন পরে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিতাম ঝামেলা শেষ হতো।

আদি চুপ করে আছে

“কথা কেনো বলছেন না? পবলেম কি আপনার? চান টা কি?

” আমার একটা প্রশ্নের উওর দিতে পারবা

আদি শান্ত গলায় বলে

“এইরকম একটা সময়ে আপনি আমাকে প্রশ্ন করবেন? মানে আপনি ঠিক আছেন তো? আমি টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছি আবার কিভাবে ডিভোর্সের বেপারটা মেনেজ করবো।

” ওটা আমি মেনেজ করে দেবো

“সত্যি কবে?

নিধি খুশি হয়ে আদির পাশে বসে।

” তুমি পরি নামটা কোনে বললে? আর আমি পরিকে ভালোবাসি এটা তুমি কি করে জানলে?

“তারমানে আপনি সত্যিই পরি নামের কাউকে ভালোবাসেন? আমি তো আন্দাজে ঢিল মেরেছিলাম।

” তুমি সত্যিই একটা ইডিয়েট

“আই নো। পারলে নতুন কোনো নাম দেন

” রোহনের সাথে বিয়ে করার জন্য দেখি উঠে পড়ে লেগেছো

“লাগবো না? ওরকম একটা হট ছেলেকে হাত ছাড়া করা যায় না কি?

” আমি হট না

নিধি আদির দিকে তাকিয়ে বলে

“আপনি তো গরম

গরম আর হটের মধ্যে ডিফারেন্স কি?

” গরম হলো গ্রীষ্মকালে পড়ে। মানুষ ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে যায়। সাধারণত মানুষ গরমকে পছন্দ করে না। আর হট হলো কিউটের বিপরীতে শব্দ। কিউট বলে অনস্মার্টরা আর হট বলে আমার মতো কিউটিপাই রা।

“কটা কাকে বলে জানো

” না তো

“তোমাকে বলে

” ডিজগাস্টিং কাকে বলে জানেন

“না

” আপনাকে বলে। ইসস আজ আম্মু আব্বুর সারা চলে যেতাম কতো ভালো হতো। আটকে রেখে দিলেন। তারপর রুমে এনে দরজাটাও বন্ধ করে দিলেন। যদিপ আমি জানি আপনি ভীষণ না মারাত্মক নিরামিষ একটা কিসও করবেন না। কিন্তু পাবলিক তো বিশ্বাস করবে না। সবাই বলবে না জানি আদি নিধির মধ্যে কি হয়েছে। নিধির প্রায় প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে। ভাবুন যদি এই কথাটা আমার রোহন সোনা জানতে পারে কতো হার্ট হবে। আমার বেবিটা তো কষ্ট পাবে

“আমি নিরামিষ

” সন্দেহ আছে?

“একদম আমি নিরামিষ না

” পরির কাছে নিরামিষ না হলেও আমার কাছে

“পরি টা কে?

” আপনার কি যেনো হয়?

“কি হয়?

” এখনো শিওর না শিওর হয়ে বলবো।

“তুমি সত্যি ননসেন্স

” ছোট বেলা থেকে

“তুমি তো আগে চুপচাপ থাকতে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারতে না এমন ভাব ধরে থাকতা। তাহলে হঠাৎ এমন কটা হয়ে গেলা কেমনে?

” ভাজা মাছ সত্যিই আমি উল্টে খেতে পারি না। তবে প্রচুর কথা বলতে পারি। ভাবলাম কদিন পরে তো চলেই যাবো তাই

নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি নিধিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নিধি তো হা।

“রোহন জানলে কিন্তু আমার বিয়ে ভেঙে যাবে

নিধি শান্ত গলায় বলে। আদি নিধিকে ছেড়ে দেয়

” তাহলে আমিষ হয়ে গেলে রোহন তোমার দিকে তাকাবেও না

আদি বাঁকা হেসে বলে

“দেখুন

” হুম দেখবো তো

আদি টান দিয়ে নিধির ওড়না নিয়ে নেয়।
“এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না
নিধি পিছতে পিছতে বলে

চলবে