Sunday, July 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 139



বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৩

সময় ও স্রোত কারো জন‍্য অপেক্ষা করে না। তাইতো কেটে গেছে একমাস আজকে ওয়াসিমার মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। তাই গতকাল রাত থেকেই তার হাসফাস লাগছে ঠিক মতো খাওয়াও হয়নি। প্রতিদিনের মতো আবসার খাইয়ে দিলেও কিছু খেতে পারেনি। সকাল সকাল সারা ঘরে পায়চারি করছে। সারা সকাল আবসার সামলাতে পারলেও একটু আগেই আর কি জরুরি কাজ পরে যাওয়ায় না চাইতেও যেতে হয়।

অন‍্যদিকে,,,,
আরুর ও বিসি এস সামনে সেও নাওয়া খাওয়া বাদ পড়ছে। আকলিমা কোন দিকে সামলাবে তা বুঝতে পারছেনা। তাই তাকে আস‍্যস্ত করে ইরফান আসে মেয়ের কাছে

— আসব মা

— আসোনা আব্বু। মেয়ের ঘরে আসতে অনুমতি নিতে হয় নাকি আসো ( বলেই বাবার হাত ধরে তাকে ঘরে ঢুকায় ওয়াসিমা )

— কি হয়েছে আম্মু?? মুখটা একদম চুপসে গেছে কেনো ।

— রেজাল্টের টেনশন আব্বু ( ঠোট উল্টে বলল )
তোমাদের জামাই অনেক আশা নিয়ে আছে এই পরীক্ষা নিয়ে এখন যদি পাশ না করতে পারি তাহলে সে অনেক কষ্ট পাবে।

ইরফান মেয়ের কথায় হাসে। যেই মেয়েটার প‍্যাশন ছিলো ডাক্তার হওয়া সেই মেয়ে এখন নিজের চিন্তা না করে তার স্বামীর চিন্তা করছে।

— কয়টা বাজে রেজাল্ট আউট হবে আম্মু

— তা বলতে পারি না কিন্তু উনি বলেছে যে উনি দেখে আমাকে জানাবে। কিন্তু এখনো আসল না কেনো বুঝতে পারছিনা বারোটা বেজে গেছে।

— আচ্ছা আল্লাহ ভরসা যা হবার হবে। তুমি এতো চিন্তা করোনা এখন গোসল করে নামাজ পরে নাও। তারপর খাবে কাল রাত থেকে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করোনি। ( ওয়াসিমার মাথার চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে বলল )
বাবার কথা কোনোকালে ফেলতে পারত না ওয়াসিমা আজকেও পারল না তাই ওয়ারড্রোব থেকে কাপড় নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।

কিছুক্ষণ পড়ে বের হয়ে ইরফানকে দেখতে পায়না ওয়াসিমা। ঘরে থেকে বের হতে নিলেই আবসার ঘরে প্রবেশ করে,,,, কিন্তু আবসারের লটকানো চেহারা দেখে ওয়াসিমা চিন্তিত হয়। তাই চিন্তিত স্বরেই জিজ্ঞেস করে — কি হয়েছে আপনার এরকম লাগছে কোনো

— ডাক্তার হওয়া তোর ছোট থেকে স্বপ্ন তাইনা

— হ‍্যা আব্বু যখন আমাকে খেলনা কিনে দিতো আমি বেশীর ভাগ সময় ডাক্তারের খেলনা কিনতে চাইতাম। আবসার অসুস্থ হলে হাসপাতাল গেলে দেখতাম ডাক্তাররা এপ্রোন পরে গলায় স্থেটোস্কোপ ঝুলিয়ে রাখতো। তার দেখে আমার ভীষন ভালো লাগত। তখন মুগ্ধ চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।

— কোনো ছেলে ডাক্তারের তাকিয়ে থাকতি তোর চোখ আমি উপরে ফেলব বলে দিলাম

— খচ্চর কোথাকার তাকলেই বা কি বতর্মানে তারা আমার বাবার সমান। বদমেজাজি লোক ( সম্পূর্ণ বিরক্তি ঢেলে দিয়ে বলল )

ওয়াসিমার কথা শেষ হতেই তাকে নিজের কোলে বসায় আবসার
— আমি যদি বলি তোর ঐ বাবার বয়সী লোকদের দিকে তাকানো ও আমার সহ‍্য হয়না তাহলে কি করবি?? তোর নজর শুধু তিন পুরুষের উপর থাকবে _ বাবা,, ভাই,, স্বামী এই তিনজন ছাড়া আর কাউকে আশে পাশে অ‍্যালাউ করব না। এতে তুই আমাকে “” পসেসিভ ভাবিস ইয়া রেড ফ্ল‍্যাগ ভাবিস আই ডোন্ট কেয়ার।।।

আবসারের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় ওয়াসিমা। বিয়ের এতো মাস পরে আবসারের এই রকম কথা শুনল। শান্ত কন্ঠেও যে কাউকে এরকম থ্রেড দেওয়া যায় তা সে জানত না।

— কি ভাবছিস

— আমার মনে হচ্ছে আমি আজ অন‍্য আবসারকে দেখছি। যার চোখে ইনসিকিরিটি ভরপুর কি হয়েছে আপনার??

— কিছুদিন পরে তো তুই মস্ত বড় ডাক্তার হবি। বাংলাদেশের সুনাম ধন‍্য হাসপাতালে ডাক্তারী পড়বি। তখন এই লোকের কথা মনে থাকবে। তোর বয়সী মেয়েদের এখনো বিয়ে হয়নি অথচ তুই আরো এক বছর আগেই বিবাহিত ট‍্যাগটা হাতে নিয়ে ঘুরছিস। তাও আবার নিজের থেকে এগারো বছর বড় একটা লোকের সাথে তখন থাকতে কষ্ট হবে তাইনা। তুই মস্ত বড় ডাক্তার হবি তোর সাথে সামান্য কাপড়ের ব‍্যবসায়িকের সাথে মানাবে।

— আমি যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েছি। সেটা সরাসরি বললেই পারতেন ( বলেই হালকা হাসল )
হাসিটা অনুরাগ না তাচ্ছিল্য বুঝা গেলো না। তবে আবসারের কোল থেকে চুপচাপ উঠে গেলো সে কোনো কথা বলল না বা নিজের পক্ষের কোনো সাফাই গাইল না।
ওয়াসিমা চলে যেতেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আবসার বসে পড়ল আজকের কথা গুলো সে বলতে চায়নি।

_____________________

ওয়াসিমা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতেই দেখে ড্রয়িং রুমে সবাই হইহুল্লোর করছে। নিজেকে কোনো রকম শান্ত করল। তার ভিতর থেকে কান্না আসছে। এতো দিনের সংসারে তাকে এই বুঝলো লোকটা ঠোট কামড়ে কান্নাটা গিলে ফেলল।
ভালোবাসার মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাটাও নেই ঐ লোকটা তার কিশোরী বয়সে আবেগ। যা সে ভেবেছিল সময়ের সাথে ভুলে যাবে তা ইরফান রহমানই তাকে বলেছিল।

হ‍্যা ওয়াসিমাও তাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসত। অরিক আবসার যখন ছুটিতে বাসায় আসত ইন্ট্রোভার্ট ওয়াসিমা লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখত তার সামনেও যেতো না। সেবার যখন আবসার ছুটিতে বেড়াতে আসলে ওয়াসিমা সামনে না যেয়ে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো শক্ত সামর্থ‍্য দেহের শ‍্যাম পুরুষকে। সেই সময় ইরফানের নজরে পরেছিল ওয়াসিমা ইরফান তাকে জিজ্ঞাসা করলে। বাবার কাছ থেকে কিছুই লুকোয়নি ওয়াসিমা চৌদ্দ বছরের ওয়াসিমা বন্ধুত্ব সুলভ আচরণের কারণে বাবাকে সবটাই বলেছিল। যে সে আবসারকে পছন্দ করে তাকে ভালোবাসে। তখন ইরফান তাকে বলেছিলো — এটা তার সাময়িক মোহ তার আবেগ কিছুদিন পরে সেটা কেটে যাবে।

সেদিন ওয়াসিমা বলেছিলো — আর যদি না কাটে তাহলে

— তাহলে আমি নিজে তোমার আর আবসারের বিয়ের কথা বলব। ( মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেছিল )
কিন্তু শর্ত ছিলো তার বয়স আঠারো হওয়ার পযর্ন্ত যদি এই অনুভূতি এরকম থাকে তাহলেই সম্ভব। সেই থেকে ওয়াসিমা ক্লাসের সব ছেলেদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। ঐটুকু বয়সে বোরকা ধরল। খুব একটা সাজত না এলোমেলো ভাবে স্কুলে যেতো। তাকে সবাই গেয়ো আনস্মার্ট ভেবে কাছে আসত না।
নাহলে ওয়াসিমার মতো মেয়ে কোনো দিনও আবসারের সাথে বিয়ের পরপর এতো তাড়াতাড়ি মিশে যেতে পারত না। কোই তখন তো জিজ্ঞাসা করেনি -” ওয়াসু তোকে আমার পছন্দ কিনা??

— কি হয়েছে মা এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো। অরিককে ফোন করেছি মিষ্টি নিয়ে আসছে। সাথে তানিয়া আপা ও এহসান ভাইকেও। ( ওয়াসিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ইরফান )
এর মধ‍্যে আকলিমা এসে মেয়ের কপালে চুমু খায়

— শুভ কামনা আম্মু ( মায়ের কথায় হালকা হাসে ওয়াসিমা

— আমার আব্বুজান কই ( চিল্লিয়ে ডাকল আকলিমা )
ভিতর থেকে আবসার আসে ওয়াসিমার দিকে একনজর তাকিয়ে। আকলিমার দিকে তাকায়

— অনেক অনেক ধন‍্যবাদ আব্বু। আমার মেয়েটার ইচ্ছার এতো গুরুত্ব দেওয়ার জন‍্য ( আবসারের হাত ধরে বলল )

আবসার আকলিমার হাত জোড়া নিজের হাতে নিয়ে বলল — আম্মু তোমার মেয়েটা আমার কলিজা আর আমার একটা মাত্র বউ তার ইচ্ছা পূরণ করব না তো কার ইচ্ছা পূরণ করব। পাশের বাসার ভাবীর।

— বজ্জাত ছেলে ঠ‍্যাং ভেঙ্গে দিব আমাদের মেয়ে ছাড়া অন‍্য কারো দিকে তাকালে ( ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল এহসান সাখাওয়াত )

আরু এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল — কংগ্রাচুলেশন ভাবী

ওয়াসিমা হালকা হাসল। সবাই তার অ‍্যাচিভমেন্ট নিয়ে আনন্দিত তবে যে অ‍্যাচিভমেন্টটা পেয়েছে তার মুখে বিষাদের হাসি। অনেক্ষণ ধরেই ইরফান খেয়াল করেছে ওয়াসিমা রেজাল্টে তার যেই খুশীটা হওয়ার কথা সে সেরকম খুশী নেই তার চেহারায়। আবসারও একটু মন মরা কি হয়েছে এই দুইজনের মধ‍্যে।

আবসার আবার তার মেয়েকে কিছু বলেনি তো এইবার যদি এরকম কিছু হয় তাহলে ঐ আবসারের কাছে আর তার মেয়েকে রাখবে না। এই মেয়েটা তার কলিজা। সারা দুনিয়া একদিকে মেয়ে আরেকদিকে। একটু পরেই উল্লাস দ্বিগুন করতে অরিক মিষ্টি নিয়ে হাজির। এসেই ঘন্টা খানেক ওয়াসিমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো।

— কি গো ভাবী সাহেবা কিছুদিন পরেই তো তুমি ডাক্তার হয়ে যাবা তখন কি আমাদের কথা মনে থাকবে। ভাবা যায় কি র্দুদান্ত রেজাল্ট প্রথম দশ জনের মধ‍্যে আছো ( ঠাট্টার স্বরে বলল আরু )

— কিছুদিন পরে তুমিও তো বিসি এস ক‍্যাডার হয়ে যাবা তখন তুমিও আমাদের ভুলে যাবা ভাবী

— উহু নিজের সত্তাকে কি কেউ ভুলে যেতে পারে

— তেমনি নিজের অর্ধাঙ্গকে ও কেউ ভুলতে পারে না বলেই মিষ্টি প্লেটে সাজিয়ে চলে যায় রান্নাঘর থেকে।
তার যাওয়ার দিকে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল আরু। আজকে ওয়াসিমার গলার স্বরে অন‍্যকিছু ছিলো।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৪

মাগরীবের নামাযের পরে সবাই যখন হইহুল্লোর করতে করতে নাস্তা করতে ব‍্যস্ত তখন হঠাৎই বাড়ির বেল বেজে ওঠে।

— এই সময় আবার কে আসল। আরু মা দেখতো কে এসেছে। ( রান্নাঘর থেকে বলল আকলিমা )
বর্তমানে সবার অবস্থান চার তলায় অরিকদের ফ্ল‍্যাটে। আরু গেট খুলে অবাক হয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা ব‍্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে আছে

— ভিতরে আসতে দিবে না মামনি
স্তরে পায়ে আরু গেট ছেড়ে সরে দাড়ায়।

— আসতে পারি
কারো কন্ঠস্বর শুনে এহসান ও ইরফান সামনে তাকায়।
— ভাইয়া আসো আসো ( এহসান সামনে গিয়ে এজাজ সাখাওয়াতের হাত টেনে আনে। পিছে পিছে আসে আলিয়া সাখাওয়াত

— আসো বসো ভাই ভাবী,( আলিয়া ও এজাজকে বসতে বলল )

আকলিমা সন্ধ‍্যার নাস্তা নিয়ে এসে এজাজ ও আলিয়াকে দেখে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান ও তার দিকে তাকাতেই দুইজনের চোখাচোখি হয়। একে অপরকে জিজ্ঞেস করে ইশারায় কি হয়েছে। যারা আজ পযর্ন্ত ছেলের শশুর শাশুড়ির খোঁজ খবর আজ পযর্ন্ত নেয় নাই আজ হঠাৎই তারা কি উপলক্ষ্যে।

— আমরা জানি আপনারা বেশ অবাক হয়েছেন। অবাক হওয়ারই কথা ছেলের বিয়ের প্রায় দেড় থেকে দুই বছর চলল আজ পযর্ন্ত সেই ভাবে কোনো দেখা সাক্ষাত আমাদের হয়নি। একটু শক তো হবেন তাইনা,,,
( আকলিমা ও ইরফানের উদ্দেশ্যে বলল এজাজ )

— তা তো অবশ্যই একটু শক তো লেগেছে ( কোনো রকম মুখে হাসির রেখা টেনে বলল ইরফান )

— তা ভাই বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান চলছিল নাকি খাবার দাবারের এলাহি ব‍্যবস্থা ( টেবিলে রাখা খাবারের দিকে তাকিয়ে বলল )

— হ‍্যা ভাই আসলে আমাদের মেয়েটা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে তাই ছোট খাটো আনন্দ উল্লাস আর কি।

— আলহামদুলিল্লাহ্ তাহলে একটা ডক্টর বউমা পাচ্ছি তাই না

এজাজ সাখাওয়াতের কথায় সবাই অবাক কিছু দিন আগে পযর্ন্ত যে লোক ওয়াসিমাকে দেখতে পারত না। আবসারের থেকে ওয়াসিমাকে সরানো জন‍্য জুলিয়ানার সাথে মিলে জঘন্যতম চাল চেলেছে। তার হঠাৎই সুর চেঞ্জ হয়ে যাওয়ায় সবাই অবাক বইকি অনেক বেশী অবাক।
এতক্ষণ ইরফান ও এজাজের কথোপকথনের মাঝে সবাই চুপ থাকলেও এবার এহসান বলে উঠল -” কিছু বলবে ভাইজান??

— হ‍্যা বলতেই তো এসেছি।

— কি??

— আগামী শুক্রবার আয়মানের বিয়ের দিন ধার্য করেছিলাম। তোমাদের এঙ্গগেজমেন্টের সময় দাওয়াত দিয়েছিলাম তোমরা যাওনি। এবার অন্তত তোমাদের উপস্থিতি চাই। তাই দাওয়াত দিতে এসেছি
এহসানকে বলে আবারও বলা শুরু করল — ইরফান ভাই বিয়াই হিসেবে আমরা খুব একটা পরিচিত না। আমার ছোট ভাইয়ের সাথে যেই সম্পর্কটা আপনার আছে সেটা আমার সাথেও হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু হয়নি তাতে দোষটা অবশ‍্য আমারই ( ইরফানের উদ্দেশ্যে বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল )

— আম্মু আমাকে কড়া করে এককাপ কফি দেন তো আর এখনো নাস্তাই পে,,,, ( ঘরের থেকে বের হতে হতে বলল আবসার কিন্তু সামনে তাকিয়ে অবাক হলো )

— উনারা এখানে কি করছে ( চিৎকার করে বলে উঠল আবসার )

আবসারের চিৎকার শুনে ঘরের সবাই বেশ ভয় পায় না জানি এখন দুই বাপ ছেলের মধ‍্যে কি হয়???

— আমি এখানে একটা জরুরী কাজে এসেছি কাজটা শেষ হলেই চলে যাব ( গম্ভীর কন্ঠে বলল এজাজ সাখাওয়াত )

— আপনাদের এখানে কোনো কাজ নেই। আপনার এখন আসতে পারেন ( বলেই হাত উচু করে সামনের গেটের দিকে দেখায় )

ইরফান আকলিমাকে ইশারা করে আবসারকে সামলানোর জন‍্য

— আব্বু থামো। এনারা এখন আমাদের মেহমান তাই আপাদত চুপ থাকো ( আবসারের হাত ধরে বলল )
আকলিমার কথা শুনে আবসার তার দিকে তাকায়। সে তার দিকে অনুরোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে আর কিছু বলে না কারণ মায়ের আদর কি সেটা আবসার তানিয়া ও আকলিমার কাছ থেকেই পেয়েছে তাই সে আর কিছু না বলে চুপচাপ আবার ঘরে চলে যায়।
আবসার চলে যেতেই ইরফান আবার বলা শুরু করল — ভাই আমার ছোট ছেলে আয়মানের বিয়ে তারই দাওয়াত দিতে এসেছি আমি আন্তরিক ভাবে আপনাদের বলছি আপনারা আইসেন। ( এজাজ হাতের কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বলল। ইরফান কার্ডটা নেয় )

— আমরা চেষ্টা করব ভাই সাহেব

— উহু চেষ্টা না আপনাদের আসতেই হবে ( জোড় দিয়ে বলল )
ইরফান একবার আকলিমার দিকে তাকায় সে হ‍্যা বলতেই ইরফান ও হ‍্যা বলে দেয়। এইসব কিছুতে তানিয়া,,, আরু,,, একদম চুপ ছিলো কিন্তু এবার আরু মুখ খুলল — আম্মু তোমাদের ছেলেকে ফোন দাও সে বললেই পরে হ‍্যা বলো

— দরকার নেই আরু মা আমরা যা বলব তাই হবে।

— কিন্তু বাবা সেদিনের ঘটনা,,,,

— আরু চুপ করো ( ধমক দিলো এহসান ) রাগে আরু চলে গেলো কিচেনে।

এজাজ আজ বুঝতে পারে আবসার আরু কেউই তাদের পছন্দ করে না। করার কথাও না তারা দুইজন সব সময় তাদের থেকে অবহেলাই পেয়েছে।

— আজকে তাহলে আসি বিয়াই। তবে একটা আবদার আমার বউমাটাকে একটু দেখি

— ভাই সাহেব আসলে দুই ভাই – বোন একটু বাইরে গেছে।

— আচ্ছা তাহলে আর দেখা হলো না আমরা উঠি আজ চলো আলিয়া ( বলতে বলতে উঠে দাড়ায় এজাজ সাখাওয়াত )

— এটা কিভাবে হয় ভাই আজ প্রথম আমাদের বাড়িতে এসেছেন ডিনার না করে যেতে দিব না

— আরে না আপা আমাদের একটু কাজ আছে

— সেটা অন‍্য সময় করিয়েন আজকে আমাদের সাথে ডিনার করেই যেতে হবে।
এজাজ অনেক বললেও আকলিমা রাজী হয়না। সাথে এহসান ও তানিয়ও অনেক জোড় করে তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা ডিনার করেই যাবে।
তারা ডিনার করবে শুনে দুই বিয়ান রান্নার কাজে লেগে পড়ল। তানিয়া আরুকে ঘর থেকে টেনে বের করল — এতো কিসের জেদ হ‍্যা। তোর শাশুড়ি সন্ধ‍্যা থেকে একা একা কাজ করছে তুই হাত গুটিয়ে বসে আছিস। কি একটা পরীক্ষা পরীক্ষা করে সংসারের সব কাজ থেকে বিরতি নিয়ে নিয়েছিস।
আরু আর কি করবে মা আর শাশুড়ির সাথে রান্নার কাজে হাত লাগায়।

এর মধ‍্যে ওয়াসিমা ও অরিক পৌঁছে যায়। অরিক ওয়াসিমা তাদের সালাম দিয়ে আলাপ করে

— ঘুরা হয়েছে আম্মু ( এহসান বলল )

— জ্বী বাবাই

— ভাইজান তোমার বউমা ( এজাজ সাখাওয়াতকে উদ্দেশ্য করে বলল )

— আসসালামু আলাইকুম
এজাজ সালামের উত্তর নিয়ে ওয়াসিমার কাছে উঠে আসে।

— মাশাল্লাহ্ আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।
ওয়াসিমা কিছু বলল না শুধু হাসল।
— তা মামনি কোথায় গিয়েছিলে

— এই একটু সামনেই বা,,,, ( কথাটা শেষ করার আগেই আবসার ডাক দেয় )

— ওয়াসু

— জ্বী

— দুই মিনিটের মধ‍্যে ঘরে ঢুকবি নাহলে খবর আছে ( ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলল )
তার চিৎকার শুনে কেপে উঠল ওয়াসিমা। এজাজ সাখাওয়াতের দিকে তাকালে সে যাওয়ার ইশারা করল। ওয়াসিমাও ধীর পায়ে চলে যায় ঘরে।

— কিছু বলবেন ( ঘরে ঢুকে বলল ওয়াসিমা )

— সারা বিকেল কই ছিলি তুই

— কেনো বাসায়ই তো ছিলাম

— আমি যে ঘরে বসে ছিলাম তোর ওয়েট করছিলাম তা কি তুই জানিস না। ( চিল্লিয়ে বলল )

— জানি না আপনের আজকে কি হয়েছে। সকাল থেকে এমন কেনো করছেন। জানিনা আমি কোনো ভুল করেছি নাকি যদি করেও থাকি মাফ করে দেন তাও আমার আম্মু আব্বুর সামনে এভাবে চিল্লাইয়েন না। তারা খারাপ ভাববে। ঠোট কামড়ে কান্না আটকাতে আটকাতে বলল। এক ফোটাও কান্না করবেনা সে কেনো করবে যে তাকে বুঝে না তাকে বিশ্বাস করেনা তাকে কোনো কিছু বলার নেই ওয়াসিমার। আবসারের দিকে একপলক তাকিয়ে চলে যায় বারান্দায়। ঘর থেকে বাহির হয়না কেননা সে জানে এখন ঘর থেকে বের হলে আবসার আরো ক্ষেপে যাবে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৫

সম্পর্কে যখন শীতলতা আসে তখন দুইজনের মধ‍্যে একজনকে সেই চেষ্টা করেই দেখতে হয়। যদি চেষ্টার ফলে কোনো সম্পর্ক বেচে যায় তাহলে আল্লাহ্ ও খুশী হয়।
আজ সেই প্রচেষ্টা করতেই ওয়াসিমা বারান্দায় বসে আছে আবসারের আশায়। আজ দুই দিন আবসার অনবরত ওয়াসিমাকে এভোয়েড করে চলেছে কিন্তু কেনো সেটা ওয়াসিমার জানা নেই। তার ভুল কি সেটাও জানা নেই।
ঐ দিন ওয়াসিমা কথা গুলো বলার পর আবসার রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। সেই আসা আসে রাত তিনটা সবাই ভাবে হয়তো এজাজ সাখাওয়াতকে দেখে রেগে গিয়েছে তাই তখন কেউ আমলে না নিলেও। তার পরের দিনেই সে টের পায় আসলে রাগটা তো তার উপর কিন্তু কেনো ভেবে পায় না ওয়াসিমা।

রাত একটা নিচ থেকে আবসারকে ঢুকতে দেখেই বারান্দা থেকে সরে যায় ওয়াসিমা। ঘরে এসে লাইটটা বন্ধ করে দেয়।

গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে আবসার নিজেদের ফ্ল‍্যাটে তাকাতেই অন্ধকার বারান্দা দেখতে পায়। বুঝতে পারে ওয়াসিমা ঘুমিয়ে গেছে তাই লাইট বন্ধ। সে জানে তার বউটা যে বড্ড ঘুম কাতুরে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় লিফ্টের দিকে।

বাসায় পৌছে নিজের কাছে থাকা চাবিটা দিয়ে লক আনলক করে ভিতরে ঢুকে। হাতে ব‍্যাগটা সোফায় রেখে শার্টের হাতের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে ফ্রিজের দিকে এগিয়ে যায়। ঘরে আলো গুলো জ্বালায় না। ফোনের ফ্লাশের সাহায্যে এগিয়ে যায়। এক বোতল ঠাণ্ডা পানি নিয়ে চেয়ারে বসে ঢকঢক করে গিলে ফেলে। পানিটা পেটে যেতেই খিদেটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সে দেখতে পায় টেবিলে খাবার ঢাকা দেওয়া।
আবসার রান্নাঘর থেকে একটা প্লেট এনে ভাত নিয়ে খাওয়া শুরু করে।
ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে আবসারের কর্ম কান্ড দেখে ওয়াসিমার কান্না চলে আসে। এখন নিজেকে থামাতে পারে না ঠোট কামরে রাখে যাতে শব্দ না হয়। এইতো দুইদিন আগে পযর্ন্ত আবসার রাতে তাকে রেখে কোনো মতেই খেতো না। আবসারের এককথা ছিলো — সারাদিন তো থাকিনা একাই থাকিস রাতটুকু আমার বউয়ের জন‍্য থাক।
বিয়ের শুরু থেকে আদর পেতে পেতে অভ‍্যস্ত ওয়াসিমা। আবসারের এই দুইদিনের দূরত্ব সহ‍্য করতে পারছে না। সে দৌড়ে ঘরে চলে যায় গিয়ে ঢোকে ওয়াশরুমে।

ওয়াসিমা যেতেই আবসার খাওয়া থামিয়ে দেয়। এতক্ষণ মেয়েটাকে দেখানোর জন‍্য জোর করে মুখে ঢুসলেও এখন কোনো ভাবেই। এই ভাতের লোকমা সে মুখের সামনে নিতে পারছেনা। রান্নাঘরে যেয়ে হাত ধুয়ে। থালাটা নিয়ে থালায় থাকা ভাত গুলো একটা পরিত্যক্ত বাটিতে ঢালে। সেগুলো নিয়ে চলে যায় নিচে। সেখানে বাড়ির কেয়ার টেকারের একটা কুকুর আছে। তাকে খাবার গুলো দিয়ে সোজা উপরে চলে যায়।

আবসার ঘরে ঢুকতেই লাইট জ্বলে ওঠে। সামনে দাড়ানো ওয়াসিমা। আবসার তার দিকে তাকাতেই বলে ওঠে
— আমার দোষ কি??

— কিসের কথা বলছিস??

— আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো?? আমি কোনো ভুল করে থাকলে আমাকে বলেন আমি তা সুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব। তাও আমার সাথে এরকম কইরেন না। আপনি যা করতে বলবেন করব।

— আমার কথা মতো সব করবে!!

— হ‍্যা বলেন আমার দোষ ভুল যা আছে সুধরে নিব।

— সত্যি বলছিস তো!!

— হ‍্যা

— মেডিকেলে পড়ার আশা ছেড়ে দিতে হবে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বাতিল করতে হবে।

আবসারের কথা শুনে ওয়াসিমা স্তব্দ চোখে তাকিয়ে আছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না এই লোকটাই তো তাকে পড়াশোনা করার জন‍্য একদিন ও ওয়েট না করে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা এনেছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না এই লোকটাই তো পরীক্ষার আগে যখন রাত জেগে পড়তো তখন তার সাথে বসে থাকত। না বুঝলেও যেগুলো মুখস্ত পড়া থাকত সেগুলো ধরতো।

ওয়াসিমার দিকে তাকায় আবসার বুঝতে পারে তার বিষয়টা এখনো হজম হয়নি। কিন্তু তার মাথায় চলছে অন‍্য পরিকল্পনা।

দুই দিকেই নিস্তব্ধ রাতের শুনশান রাস্তার কুকুরের আওয়াজ ও ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ আসছে। ওয়াসিমার বুকটা দুরু দুরু করছে।
প্রায় দশ মিনিট ধরে ওয়াসিমা একই স্থানে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। আবসারও একই স্থানে দাড়িয়ে আছে।

___________________

— ঠিক আছে ছেড়ে দিব মেডিকেলের পড়া। আমি পড়াশোনা করব না আমার এতোদিনের প‍্যাশন স্বপ্ন সব ছেড়ে দিলাম আপনার জন‍্য।
সেই একই স্থানে দাড়িয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল ওয়াসিমা। কথা গুলো বলতে যেন তার কন্ঠনালিটা চেপে গেছিলো। তার মনে হচ্ছিলো কেউ তার কন্ঠস্বর কেড়ে নিচ্ছে।

ওয়াসিমার কথা শুনে আবসারের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর তার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় গেটের বাহিরে। তাদের ফ্লাটের মেইন গেটের সামনে দাড়িয়ে দরজার নবটা লক করে। আবার সিড়ি বেয়ে নিচে নামে।
তার মনে ঝড় বইছে। আবসার তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। এই লোকটার জন‍্য নিজের শখ আহ্লাদ নিঃশেষ করে দিলো। এখন আবার তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?????

ওয়াসিমা ভাবছে আবসার তাকে নিয়ে বুঝি চার তলায় তার বাবা মায়ের কাছে দিয়ে আসবে। কিন্তু চার তলা বেয়ে তিন তলায় নামতেই ওয়াসিমার টনক নড়ল। সে আবসারের দিকে তাকায়। আবসার সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তার হাত ধরা অবস্থায় তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আবসারের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে ও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তারপরও হাটছে।

সিড়ি বেয়ে তিন তলায় নেমে কেয়ার টেকারের বাসায় কলিং বেল দেয় আবসার।
এই বাড়ির বাড়িয়ালা বাংলাদেশে থাকে না। সে মালোয়েশিয়ার একজন প্রবাসী। ফুল ফ‍্যামিলি সহ সেখানেই থাকে তাই নিজের ফুফাতো বোনকে এখানে থাকতে দিয়েছে। ভাড়া উঠানো সহ যাবতীয় কাজ সেই করে।
সেই কেয়ার টেকার মহিলা নিজেকে এই বাড়ির বাড়িওয়ালা বলে সবাইকে পরিচয় দেয়। শুধু পুরাতন ভাড়াটিয়ারা জানে সে এই বাড়ির কেয়ার টেকার।
কেউ যদি তাকে ভুলেও তিন তলার আন্টি বা অন‍্য কিছু বলে ডাকে তাহলেই তার মাইন্ডে লাগে। এই জন‍্য সবাই তাকে বাড়িওয়ালি আন্টি ডাকে।

পাচঁ মিনিট ধরে আবসার অনেক্ষণ যাবৎ অনবরত বেল বাজিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সাড়া শব্দ পাচ্ছে না। তারপরও থেমে নেই আবসার সে যেনো পন করে নিয়েছে যে আজকে যেকোনো মূল‍্যে এদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে ছাড়বে।

— আরে আসছি!!! ” ঘুম ঘুম স্বরে বিরক্তি ঢেলে গেটটা খুল তথাকথিত বাড়িওয়ালির মেয়ে রুমা। তবে যতটা বিরক্তি নিয়ে গেটটা খুলেছিল তাকে বর্তমানে ততোটা বিরক্ত দেখা গেলো না।

— হেই আবসার বেবী,,, বলেই আবসারের গলায় ঝুলতে নিলেই আবসার তার সামনে ওয়াসিমাকে রাখে। ৪ ফুট ১১” ইঞ্চির রুমার কপাল পাচঁ ফিট দুই ইঞ্চির থুতনিতে বাড়ি খায়।
ওয়াসিমার থুতনিতে লাগার দারুন সেই ভালোই ব‍্যাথা পায় কিন্তু ঐ যে ন‍্যাকা রানীর সামনে ওয়াসিমার ব‍্যাথা কিছুই না।

কপাল ডলতে ডলতে ন‍্যাকা রানী “‘ ন‍্যাকা কান্না করতে করতে নিজের বাবা মায়ের ঘরে যায়। তার উদ্দেশ্য তার মায়ের কাছে ওয়াসিমার নামে বিচার দেওয়া।

ঐ দিকে ওয়াসিমা ভ‍্যাবলার মতো দাড়িয়ে আছে। কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না। মেয়েটা কে?? তার সামনে আসতেই তাকে তাদের সামনে দাড় করিয়ে দিলো। আবসার এখনো তার দুই বাহু ধরে দাড়িয়ে আছে,, ওয়াসিমা একবার আবসারের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। কারণ আবসার সামনে তাকিয়ে আছে।

সামনের দিকে তাকাতেই দেখে একজন মোটা কোকিলা মোদি টাইপ মহিলা তাদের দিকে তেড়ে আসছে।

-” এই আবসার তোমার বউয়ের সাহস কি করে হয়ে আমার মেয়েকে মারার। দেখোতো আমার সুইট বাচ্চার মাথাটা কিভাবে ফুলে গিয়েছে।

এই কোকিলা মদির কথা শুনে ওয়াসিমার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। সে গোল গোল করে তাকিয়ে দেখল সেই ন‍্যাকা রানী তার বাবার বুকে ফুপিয়ে যাচ্ছে।

— এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় আমার মেয়েকে মারার??
ওয়াসিমার সামনে আঙ্গুল নাচিয়ে বলল। আঙ্গুল নাচাতেই আবসার তার আঙ্গুল নামিয়ে বলল

— ও মারেনি তো আন্টি!!

— তো আমার বাচ্চাটা কি মিথ‍্যে বলেছে। এটা কখনই হতে পারে না আমার রুমা কখনই মিথ্যে বলতে পারে না।

তার কথা বলার কনফিডেন্ট দেখে ওয়াসিমার মনে হচ্ছে সে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল সাথ বিভানা সাথিয়ার শুটিং দেখছে।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিয়ায় তুই বন্দীনি পর্ব-৩০+৩১+৩২

0

#বক্ষপিঞ্জিয়ায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩০

জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে ওয়াসিমা। অবিনস্ত চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে।

রাত এগারোটা আবসার ধীর পায়ে ঘরে ঢুকলে কোথাও ওয়াসিমাকে পায় না। ওয়াশরুমে চেক করলেও দরজা খোলাই পায় বাহির থেকে। চিন্তিত হয় আবসার প্রতিদিন রাতে খাবার টেবিলে বা ড্রয়িং রুমেই বসে থাকে তাহলে আজকে কোথায় গেলো। তাই চিন্তিত স্বরেই ডাকতে থাকল,,,,,,

— ওয়াসু,, ওয়াসু,,

— জ্বী ( বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে )

— কিছু হয়েছে ( ওয়াসিমা মুখ দুই হাতের তালুতে নিয়ে বলল )

— কিছু হয়নি। আপনি কখন আসলেন??

— একটু আগেই কলিং বেল দেইনি। এক্সট্রা চাবি দিয়েই খুলেছি,,,,,,
আবসারের কথা শুনে ওয়াসিমা মাথা নাড়ায়। কোমর ছাড়ানো চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে বলল -” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি খাবার গরম করছি।

আবসার ওয়াসিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াসিমার শান্ত স্বাভাবিক কন্ঠস্বরে ও যেনো আজকে অস্বাভাবিক ঠেকছে -” কি হয়েছে ভাবতে ভাবতে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে খালি গায়ে তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে খাবার টেবিলে বসে আবসার। চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে। ওয়াসিমা কিছু না বলে চুল মুছতে শুরু করে। ওয়াসিমার এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো আবসারের বেশ লাগে। চুল মুছে পাশে বসতেই আবসার ওয়াসিমার মুখের সামনে লোকমা ধরে ওয়াসিমাও বীনা বাক্যে খেয়ে নেয়

দুইজন চুপচাপ খাওয়া শেষ করে। কিন্তু ওয়াসিমা এই নিশ্চুপতা আবসারের মনে ভয় সৃষ্টি করে। প্রতিদিনই তো অফিস থেকে আসলে তোতা পাখির মতো সারাদিনের সব কথা উগরে দেয়। আজ কি হয়েছে???

ওয়াসিমা টেবিল গুছানো শুরু করলে আবসারও হাতে হাতে সব এগিয়ে দেয়। প্রতিদিন ওয়াসিমা বাধা দিলেও আজ কিছুই বলল না। বেশ অবাক হয় আবসার।
ঘরে ঢুকে আবসার ওয়াশরুমে ঢুকলে ওয়াসিমা শুয়ে পরে

— কি হয়েছে বউ পাখির ( ওয়াসিমাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে বলল )

— কিছুনা আপনি সারাদিন অফিস করে এসেছেন ক্লান্ত নিশ্চয়ই ঘুমান।

— ঘুমাব তো অবশ্যই তুই আগে বল কি হয়েছে ( ওয়াসিমাকে জোড় করে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল )

— জুলিয়ানা মার্টিন কে। উনার সাথে আপনার সম্পর্ক কি??

— তুই মিস জুলিয়ানার কথা কিভাবে জানলি ( অবাক স্বরেই বলল )

— কিভাবে জেনেছি সেটা বিষয় না। উনি কে?? সেটা বিষয় ( দৃঢ় স্বরে বলল ওয়াসিমা )

ওয়াসিমার দৃঢ় স্বর শুনে যারপরনাই অবাক আবসার। এই ওয়াসিমাকে সে চিনেনা। তার ওয়াসিমা তো কোমলমতি নম্র ভদ্র।

— তুই কি জানতে চাস ( শোয়া থেকে আবসার উঠে ওয়াসিমাকেও উঠায় )

— অবৈধ সম্পর্ক হারাম। আপনার যদি তাকে ভালো লাগে তাহলে এরুপ অবৈধভাবে মেলামেশা না করে। তাকে বিয়ে করে ফেলেন আমি আপনাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিলাম আর যদি তাতেও না হয় তাহলে তালাকের ব‍্যব,,,,,,
আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই — ঠাসসস করে থাপ্পরের শব্দ পাওয়া যায়।

থাপ্পড়ের চোটে ওয়াসিমা বসা থেকে পড়ে যায়

— অনেক বড় কথা বলে ফেলেছিস। কোনো কিছু না জেনে না বুঝে কিছু বলা তোর উচিৎ হয়নি ( ওয়াসিমার বাহু চেপে হিসহিসিয়ে কথা গুলো বলে ঘর বের হয়ে যায় )

ওয়াসিমা সেখানেই শুয়ে কান্না করে দেয়।
কোনো অচেনা অজানা মেয়ে এসে যদি তার কাছে তার স্বামীর দাবি করে সে কিকরে ঠিক থাকতে পারে।

আজ সকালে আবসার যাওয়ার পর ওয়াসিমা ঘর গুছাচ্ছিল। তখন কলিং বেল বেজে ওঠে ওয়াসিমা ভাবে তার আম্মু এসেছে তাই সে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করেই দরজা খুলে দেয়। তবে সামনে অচেনা কোনো রমনীকে দেখে ভরকে যায় তাকে মৃদু স্বরে সালাম দেয় তবে অপরদিকে থেকে কোনো উত্তর আসে না তাই সে জিজ্ঞেস করে
— কাকে চাই??

— এটা কি আবসারের বাসা ( মেয়েটির ভাঙ্গাচুরা বাংলা শুনে ওয়াসিমা ভ্রু কুচকে তাকায়। আর তার আপাদমস্তক দেখে বুঝতে পারে এই রমনীটি বিদেশীনি )

— জ্বী,, কিন্তু আপনি কে?

— হাই আম জুলিয়ানা মার্টিন। আই অ‍্যাম আবসারস ফিয়‍্যন্সে

— মানে আপনি ওনার কি হোন

— আবসারের সাথে আমার প্রায় দুই বছর ধরে রিলেশন। তার সাথে আমার একটু ঝগড়া হয়েছে তাই সে ফোন রিসিভ করছিল না। তুমি ওকে একটু ডেকে দাওনা।

— উনি বাসায় নেই।

— তুমি আবসারের কি হও??

— ওনার ওয়াইফ

-” মানে আবসার বিয়ে করেছে তাহলে আমার সাথে কেনো এতোদিন নাটক করল ( বলেই কান্নার ভান করল আড়চোখে ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দেয় )

— উনার সাথে যে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা আমি বিশ্বাস কেনো করব?? ( দুই হাত বুকে বেধে বলল গম্ভীর কন্ঠে বলল )

— হেয়ার ইজ দ‍্যা প্রুফ ( বলেই কিছু ছবি ওয়াসিমার সামনে রাখে। যেখানে আবসার আর জুলিয়ানার বেশ ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি পাওয়া যায় )

— এই ছবির মাধ‍্যমে কিছুই প্রমান হয়না। আপনার যদি সৎ সাহস থাকে তো কালকে সকাল নয়টার মধ‍্যে আসবেন উনাকে পাবেন। এখন আপনি আসতে পারেন ( হাত উচু করে গেটের দিকে দেখিয়ে বলল )

জুলিয়ানা এইটুকু মেয়ের দৃঢ়তা দেখে অবাক সে ভেবেছিল অল্প বয়সী মেয়ে সহজেই কাজ হয়ে যাবে কিন্তু হয় উল্টো। এই পুচকে মেয়ের অপমান সহ‍্য হলোনা তার সে আর কিছু না বলে হনহন করে চলে যায়।
জুলিয়ানা যাওয়ার পর গেট লাগিয়ে। দরজা ঘেসে বসে পরে ওয়াসিমা। একনজরে তাকিয়ে থাকে টি টেবিলে থাকা ছবি গুলোর উপর।

তখন থেকেই মনে ঝড় নিয়ে সারাদিন কোনো রকম পার করে ওয়াসিমা।

__________________

কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে যায় ওয়াসিমা টের পায়না।
হঠাৎই রাত তিনটার দিকে তার ঘুম ভাঙে। ঘুমঘুম চোখে পাশ ফিরে হাতরে আবসারকে খোজে।
হাতরে না পেয়ে তরাক করে চোখ খুলে তাকায় তখন তার রাতের কথা মনে পড়ে যায়।
সে আবার হাটুতে মুখ গুজে কান্না করে দেয়। কান্না করতে করতে তার হঠাত মনে হয় আবসার এখনো বাসায় আসেনি। তাই সে উঠে ফোন নিয়ে আবসারকে ফোন দিতে থাকে।

___________________

ছাদে বসে আছে আবসার । ওয়াসিমার ফোন দেখেও তোলার প্রয়োজন মনে করে না। সে অপেক্ষায় আছে সকাল হওয়ার প্রথমে ঐ জুলিয়ানাকে শিক্ষা দিবে তারপর তার বউ পাখিকে তাকে অবিশ্বাসের ফল ভোগ করতে হবে। ভেবেই আবার ফোনের দিকে তাকায়। ওয়াসিমা অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে কোনো থামাথামি নেই। আবসার ফোন উঠানোর জন‍্য হাত এগিয়ে নিয়েও থেমে যায় — সে ফোন ধরে না

বর্তমানে তার অবস্থা নাজেহাল প্রান প্রিয় বউয়ের কাছে যেতেও পারছেনা। আবার অভিমান নিয়ে থাকতেও পারছেনা। মনটা বট্ট ছটফট করছে ওয়াসিমার কাছে যাওয়ার জন‍্য

এখন তার হুমায়ূন আহমেদের পরিচালিত শ্রাবণ মেঘের দিন ঐ ছবিতে যে সোনার কন‍্যা গান আছে সেটার কিছু লাইন মনে পরছে যেখানে মাহফুজ সাহেব গেয়েছিলেন “” সবুজ বরণ লাউ ডগায় দুধ সাদা ফুল ধরে,,
“” ভুল করা কন‍্যার লাগি মন আনচান করে “”

-” – আমার মন আনচান করে -“-

এখন তারও এরকম তার “-” ভুল কন‍্যার লাগি মন আনচান করছে “-”
সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩১

ভোরের দিকে আবসার যখন ঘরে ঢুকে তখন ওয়াসিমা মাত্র নামাজের সালাম ফিরিয়েছে। ওয়াসিমার দিকে একপলক তাকিয়ে প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে আবার চলে যায়। ওয়াসিমা পিছন থেকে অনেকবার ডাকলেও শুনে না।

ওয়াসিমা আবার হুহু করে কেদে দেয়। সে বুঝতে পারছে না জেনে, না বুঝে সে একটা ভুল করে ফেলেছে। এখন এই রাগী সাহেবের রাগ ভাঙ্গাবে কিভাবে।
সেই চিন্তায় তার মাথা ব‍্যাথার উপক্রম।

____________________

আয়েশী ভঙ্গিতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলো জুলিয়ানা। হঠাৎই বাহুতে কোনো শক্ত পক্ত হাতের খামচিতে ঘুম হালকা হয়ে গেলো সে ভ্রু কুচকে পিটপিট করে তাকাতেই দেখল। একজন বিশাল দেহী মানবী তার দিকে ঝুকে আছে।
ভয় পেয়ে যায় জুলিয়ানা। হুরমুর করে উঠতে ঐ মানবীর হাতে এক থাপ্পড়ে বিছানা থেকে নিচে পড়ে যায় জুলিয়ানা। ঠোটের কোণটাও কেটে যায়

ঠোটের কোণ চেপে সামনে তাকাতেই দেখে আবসার। চেয়ারে বসে মুচকি হাসছে,,,,,,,

— হাই ( হাত নাড়িয়ে বলল ), অ‍্যা ভেরী গুড মর্নিং মাই লাভলি ফিয়য়‍্যন্সে ( টেনে বলল কথাটা )

আবসারের কথা শুনে ভরকে যায় জুলিয়ানা। সে বুঝতে পারে আবসার সব জানতে পেরেছে তারপরও নিজের সাইড নিয়ে বলল — হোয়াট অ‍্যা ইয়‍্যু সেয়িং এ.এস

— কেনো বুঝতে পারছেন না মিস জুলিয়ানা। আপনার সাথে আমার দুই বছরের রিলেশন আপনি আমার অ‍্যা গ্রেট ফিয়‍্যন্সে তাইনা ( মুখটা বাকিয়ে বলল )
আবসারের কথা শুনে এদিক সেদিক তাকায় জুলিয়ানা দেখে সেই বিশাল দেহী মানবী তার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে।
আবসার মহিলাটিকে ইশারা করতেই মহিলাটি জুলিয়ানার চুলের মুঠি ধরে আবসারের সামনে আনে। ব‍্যাথায় কুকরে ওঠে

— ওপেন ইয়োর আইস মাই লাভলি ফিয়‍্যন্সে
জুলিয়ানা তাকাতেই দেখে হিংস্র আবসারকে। রাগে কপালের শিরা গুরো দৃশ্যমান

— খুব বড় ঝুকি নিয়ে ফেলেছিস। আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছিস তুই কি ভেবেছিস আমি জানি না যে তুই আমার বাড়িতে গিয়েছিস। আমার ওয়াসুর দিকে হাত বাড়ানো হাতটা কেটে টুকরো টুকরো করতে দুইবার ভাবব না।

— তোমার ওয়াইফ বর্তমানে তোমার উপর অবিশ্বাস করে আছে তাকে কিভাবে মানাবে ( বাকা হেসে বলল )

— আমার বউ আমার চিন্তা তুই নিজের চিন্তা কর,,, ( ভাবলেসহীন ভাবে বলল ) গার্লস টেক হিম এন্ড ট্রিট হিম ওয়েল বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আবসার রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে ঐ মহিলাটির মতো বিশাল দেহী আরো দুজন মহিলা ঘরে ঢুকে

— প্লিজ লিভ মি! ( পিছাতে পিছাতে বলল )
যেতে যেতে চর থাপ্পড়ের শব্দ পায় আবসার। সাথে জুলিয়ানার গগন কাপানো আর্দনাত।

_____________________

— মিষ্টার এজাজ সাখাওয়াত ( আবসার সাখাওয়াত ভিলার হলে দাড়িয়ে চিল্লিয়ে ডাকে এজাজ সাখাওয়াতকে )
এহসান সাখাওয়াত ও তানিয়া সাখাওয়াতকেও আবসার সাথে নিয়ে এসেছে।

— এটা ভদ্র ফ‍্যামিলির বাড়ি এখানে আওয়াজ উচু নয় নিচু করে কথা বলবে ( সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলল এজাজ )

— আপনাদের সাথে আর যাই হোক শান্ত ভাবে কথা বলা যায় না

— কি হয়েছে আবসার ( রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আলিয়া সাখাওয়াত জিজ্ঞাসা করে )
আবসার তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার এজাজ সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল -” স্টে অ‍্যাওয়ে ফ্রোম মাই লাইফ এন্ড মাই ওয়াইফ

— যদি না থাকি কি করবে?( দুই হাত বুকে গুজে ছেলের সামনে দাড়িয়ে বলল এজাজ ) সাখাওয়াত বাড়ির বড় ছেলে তুমি তোমাকে সামান্য মধ‍্যবিত্ত মেয়ের সাথে জীবন কাটানোর কোনো প্রয়োজন নেই। মেয়েটাকে ছেড়ে দাও যদি প্রয়োজন হয় তো কিছু টাকা দিয়ে দাও। মিস জুলিয়ানা তোমাকে ভালোবাসে তার সাথে তুমি সুখে থাকবে। ( এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। তানিয়া ও এহসান ঘৃনায় মুখ ঘুড়িয়ে নেয় )
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবসার ঘর কাপিয়ে হেসে ওঠে। যেনো এজাজ সাখাওয়াত কোনো সলিড জোক্স বলেছে,,,

— বড় ছেলে হ‍্যা বড় ছেলে। এই বড় ছেলেকে যখন কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করে এই আপনি মারতে মারতে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তখন এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো যখন মায়ের অবহেলা পেয়ে একটু আদরের জন‍্য আপনার কাছে গিয়েছিলাম আপনি আমাকে দূর দূর করতেন । কোথায় ছিলো এই টান হ‍্যা যখন ঐ টুকু বয়সে না খেয়ে তিনদিন ট্রেন স্টেশনে বসে ছিলাম। ছ‍্যাহ আপনাদের এই ভালোবাসা থু থু ছিটাই ( বলেই এক খাবলা থু ফ্লোরে ফেলল )
মধ‍্যবিত্ত তাই না ঐ মধ‍্যবিত্ত ফ‍্যামিলির লোকেরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে আমাকে আমার নানা নানির কাছে সেফলি পৌছে দিয়ে তার ছেলে অরিক আমার সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন‍্য আমাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করার জন‍্য দিনের পর দিন ঐ অচেনা শহরে ঐ টুকু বয়সে আমার সাথে ছিলো। হ‍্যা কোথায় ছিলো এই টান । ( আবসারের প্রচুর রাগ উঠতেছে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক পায়চারি করল তাও কমছে না উপায় না পেয়ে হাটু ভেঙ্গে ফ্লোরে বসে সর্বশক্তি দিয়ে ফ্লোরে এক ঘুসি মারে হালকা চির ধরে টাইলসে আবার আরেকটি ঘুসি মারতেই টাইলসটা ভেঙ্গে যায় গরগর করে রক্ত বের হয় আবসারের হাত থেকে। হাতটা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়ায় )

— দূরে থাকবেন আমার পরিবারের থেকে। আপনারা আমার কেউ না। ( বলেই হনহন করে বেড়িয়ে যায় সাখাওয়াত ভিলা থেকে এহসান একবার বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবসারের পিছু পিছু দৌড় দেয় )

আবসারের যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এজাজ সাখাওয়াত। আজকে আবসার তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে চরম সত‍্যিটা বলে দিয়েছে।। হ‍্যা আবসার যা বলেছে তা এক বর্ণ মিথ্যা না তাইতো কোনো প্রকার প্রতিবাদ করতে পারেনি। ধীর পায়ে নিজের ঘরে চলে যায়। তানিয়া সাখাওয়াত কিছু না বলে বের হতে নিলে পিছন থেকে ডাকে আলিয়া সাখাওয়াত,,,,,,

— তানি তুই কি আমার সাথে রাগ করেছিস??

— না ভাবী রাগ করব কেনো। আমরা কোনো কিছু নিয়ে রেগে নেই। আজ আসি হ‍্যা ছেলেটা অনেক রেগে বেড়িয়ে গেছে না জানি কোনো অঘটন ঘটায়।

____________________

পার্কে বেঞ্চিতে বসে আছে আবসার উদাস চোখে ঝলসানো রোদ্দুর মাখানো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ জ্বালা করছে তাও তাকিয়ে আছে কিছুক্ষণ পর কেউ পাশে বসলে চোয়াল শক্ত করে পাশে তাকাতেই শান্ত হয়ে যায় আবসার। ক্রন্দনরত ওয়াসিমা আবসারের কাটা হাত ড্রেসিং করছে আর ফু দিচ্ছে। এমন ভাবে ফু দিচ্ছে যেনো ব‍্যাথাটা আবসার না সে পেয়েছে অথচ আবসার নির্বিকারভাবে বসে আছে।

কাপা কাপা হাতে ড্রেসিং করেই। প্রথমে ওয়াসিমা মুখ খুলল -” আম সরি আমাকে মাফ করে দেন আমি বুঝতে পারিনি।
আমার স্বামীকে তার বাগদত্তা বলায় আমার রাগ হয়েছিল তাই তখন ঐ কথা গুলো বলেছি। আমি ভুল করেছি আমাকে,,,, ( কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গেছে )
আবসারের আর সহ‍্য হলোনা সে ওয়াসিমার মাথাটা বুকে জড়িয়ে নেয়।

— হুসসসসস কাদে না বউ পাখি আমি রেগে নেই। আমি জানি আমার বউটা আমাকে বিশ্বাস করে তাইতো ঐ সময় তাকে কড়া কথার জবাব দিয়েছে।

— আপনি কিভাবে জানলেন ( আবসারের বুক থেকে মাথা তুলে অবাক স্বরে বলে )

— ইটস ম‍্যাজিক ওয়াইফি ( হালকা হেসে বলল )
ওয়াসিমা কিছু না আবার আবসারের বুকে মুখ গুজে দেয়। আবসার ওয়াসিমার মাথা হাত বুলিয়ে কথা বলতে থাকে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩২

ওয়াসিমা আবসার বাসায় এসে সোজা চার তলায় ওয়াসিমার বাপের বাড়িতে যায়। কারণ অরিক তাকে ফোন দিয়ে সেখানেই যেতে বলেছে।
তারা ঘরে ঢুকতে দেখে তানিয়া ও এহসান মাথা নিচু করে বসে আছে। আকলিমা রহমান কান্না করছে আর ইরফান রহমান থমথমে মুখে বসে আছে। ওয়াসিমা আবসার একে অপরের দিকে তাকায় চোখের ইশারায় অরিককে জিজ্ঞেস করে “” কি হয়েছে “”। অরিক কাধ নাড়ায় সে কিছু জানে না।

— কি হয়েছে আম্মু ( আকলিমাকে জিজ্ঞাসা করল ওয়াসিমা )
আকলিমা কিছু না বলে মেয়ের বাম গালে হাত বুলায়। মেয়েটার গালে পাচঁ আঙ্গুলের দাগ পরে গেছে। এই ছেলে মেয়ে দুইটা তার বড়ই লক্ষি এই পযর্ন্ত কোনো বিচার বা কোনো প্রকার অভিযোগ আসে নাই কারো কাছ থেকে। সেই মেয়েকে আবসার থাপ্পড় মেরেছে এটা আকলিমা মেনে নিতে পারছেনা কিন্তু কি হয়েছে না জেনেও কিছু বলা ঠিক না,,,,,,

— আব্বু ( আবসারকে উদ্দেশ্য করে বলল আকলিমা )
আকলিমার ডাক শুনে তার পায়ের কাছে হাটু গেরে বসে আবসার। পাশে ওয়াসিমা বসে আছে

— কি হয়েছে মা

— আমার মেয়েটা আমার অনেক আদরের আব্বু। তুমিও আমার কম আদরের না। আমি আমার অরিকের মতোই তোমাকে ভালোবাসি। তবে কোনো দিন যদি মনে হয় ওয়াসু তোমার কাছে বিরক্তির কারণ বা তার সাথে থাকা যায় না তাহলে নির্ধিদায় আমাদের বলবে। আমার মেয়েটার দ্বারা কোনো ভুল হলেও তাকে বুঝিয়ে বলো। ( আবসারের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল )

আকলিমার কথা শুনে আবসার কিছু ধারনা করতে পারে। তাই সে আকলিমার হাত জোড়া নিজের মুঠোয় ভরে ওয়াসিমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবসার আকলিমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
— মা তোমার মেয়েটা আমার অক্সিজেন। মানুষ সব কিছু ছাড়া বাচতে পারলেও। অক্সিজেন ছাড়া কোনো দিনও বাচতে পারেনা কালকে ওকে আমি ভালো মতোই জিজ্ঞেস করেছিলাম। যে কি হয়েছে ?? কিন্তু ও এমন একটা কথা বলেছে যা আমার সহ‍্য হয়নি তাই রাগের ঠেলায় হাত উঠে গেছে আমার এর জন‍্য আমি কোনোদিন ওকে সরি বলব না। এটা ওর প্রাপ‍্য ( শেষের কথাটা ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বলল )
তাদের কথা শুনে ওয়াসিমা গাল ফুলায়।

— তোমাদের বাসার টি টেবিলে কিছু ছবি পেয়েছি সেগুলো বিষয়ে কিছু বলবে ( পাশ থেকে ইরফান গম্ভীর স্বরে বলে উঠল )

— ঐগুলো সব মিথ‍্যা শশুর আব্বা সব কিছুই এডিট করা
ইরফান আর কিছু বলে না সে জানে আবসার এরকম কিছুই করেনি। কিন্তু ঐ যে মনের খটকা তাই একটা মেয়ের বাবা হিসেবে তার ভয়টা জায়েজ আছে।

— ওকে ওকে অনেক হয়েছে শোক পালন করা এখন সবাই নাস্তা করি। এখন সকাল এগারোটা বাজে কারোই খাওয়া হয়নি ( ডাইনিং টেবিলে খাবারের বাটি রাখতে রাখতে বলল )
আরুর কথা শুনে সবাই হালকা হাসল। আবসার ওয়াসিমা গেলো ঘরে হাত মুখ ধুতে। আকলিমাও হাতে হাতে আরুকে সাহায্য করতে থাকল। কাজ করতে করতে দুই শাশুড়ি বউ গল্প করছে। সেদিকে অপলক তাকিয়ে থাকে তানিয়া,,,,

সে জানে টাকা পয়সার উর্ধে হলো মানুষের মন মানুষিকতা। সেই দিক দিয়ে ইরফান ও আকলিমার মন অনেক ভালো। তাদের মতো মানুষ বর্তমানে খুব কমই পাওয়া যায়। আজকে তো আবসারের কথা শুনে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরো বেড়ে গেলো।

— আসেন আপা ভাই নাস্তা করবেন আমাদের সাথে ( আকলিমার কথায় তানিয়ার ঘোর ভাঙ্গে )

— আসেন আপা আজকে আপনার মেয়ের হাতের রান্না খেয়ে দেখেন। আমাদের আরু মা খুব ভালো রান্না করে ( ইরফান ডেকে বলল )

— ভাই সাহেব এই প্রথম মেয়ের হাতে রান্না খাব তা কিকরে না করতে পারি

এহসানের কথা শুনে ইরফান হেসে উঠল। তার হাসি দেখে এহসানও হাসে।

ওয়াসিমা ও আবসার ফ্রেশ হয়ে আসতেই সবাই খেতে বসে।
এইতো জীবন কখনও হাসি কখনও কান্না এই নিয়েই তো জীবন।
কাল রাত থেকে সকাল পযর্ন্ত আবসার ওয়াসিমার ভারী গেলেও বর্তমানে তারা আনন্দে আছে। সুখ দুঃখে একে অপরের সাথে থাকাই তো একজন সঙ্গীর দায়িত্ব।।।

_________________

রকিং চেয়ারে বসে আছে এজাজ সাখাওয়াত। আজকে আবসার তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে তার ভুল গুলো।
হ‍্যা সে দোষী। তার জীবনে কোনো ডিসিশন সে ঠিক মতোই নিতে পারেনি এটা তার ব‍্যর্থতা। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল এজাজ। এর মধ‍্যেই নিচে থেকে চিল্লাচিল্লি শুনতে পেয়ে সে নিচে নামে,,,,,

— কি হয়েছে আলিয়া ( সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করে )

আয়মান কথা বন্ধ করে বাবার দিকে তাকায়। তার কাছে যায় — দেখো ড‍্যাড মম কি বলে??

— কি হয়েছে আলিয়া
আলিয়া মাথা নিচু করে ফেলে সে কি বলবে স্বামীকে। লোকটা তো তার বোনের মেয়েকে দেখতেই পারে না। তার মতে মেয়েটা চরম বেয়াদব,,,,

— মম কি বলবে আমি বলছি। ভেনিসার হঠাৎই সেমিষ্টার শুরু হয়ে যাওয়ায় সে অষ্ট্রেলিয়া চলে গেছে। এই জন‍্য আমি বিয়েটা একমাস পোষ্টপন্ড করেছি সেটা আম্মুকে বলতেই সে বলল বিয়েটা একমাস পরে করো ঠিক আছে কিন্তু তার বড় বোনের মেয়ে ড‍্যাম লিমাকে বিয়ে করতে বলে।

আলিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। এজাজ সাখাওয়াতের দিকে তাকানোর মতো সাহস তার নেই।

— আয়মান এগুলো কি বলছে আলিয়া???

— আমি বড় আপাকে কথা দিয়েছি

— তোমার সাহস কিকরে হয় আমার ছেলের জিবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ( চিৎকার করে বলল )

এজাজ সাখাওয়াতের চিৎকারে আলিয়া সাখাওয়াত কেপে ওঠে কান্না করে দেয়।

— চুপ একদম চুপ। আর আয়মান গত পরসু এঙ্গগেজমেন্ট গিয়েছে এখন বিয়েটা যত দ্রুত সম্ভব করে নেয়া উচিত। তুমি এইবার ভেনিসা সহ ওর বাবা মাকে ও নিয়ে আসতে বলো। ( আয়মানের দিকে তাকিয়ে বলল )
এজাজ কথাটা বলেই নিজের ঘরে চলে যায়। আয়মান ও বাহিরের দিকে চলে যায়।
তারা যেতেই চেয়ারে ধপ করে বসে পরে আলিয়া সে কি করবে ভেবে পায়না। লিমার সাথে যদি তার আয়মানের বিয়ে না দেয় তাহলে তার বড় আপা তার লুকায়িত চরম সত‍্য প্রকাশিত করবে। কি করবে দিশেহারা হয়ে যায়।

দিলরুবা সাখাওয়াত উপর থেকে সবটাই দেখে। তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে জানত লিমা আরো কয়েক বছর আগে লিমার সাথে আয়মানের বিয়ের কথা বলেছে। তাইতো তার ফুপাতো বোনের নাতনিকে আয়মানের পিছে লাগিয়েছে। তাকে দিয়ে আয়মানের মন জয় করিয়েছে।

তার ভ্রক্ষেপ হতো না যদিও ভেনিসা তাকে ছেড়ে দিতো কিন্তু। নাটক করতে করতে ভেনিসাও তাকে ভালোবেসে ফেলে তাইতো তাকে বিয়ে করার জন‍্য উঠে পরে লাগে। এতে দিলরুবা সাখাওয়াতের কোনো সমস্যা নেই। ভেনিসা ভালো মেয়ে। বিদেশে থাকলেও বাংলাদেশের সংস্কৃতি ভুলে যায়নি। সে মার্জিত ভাবেই চলা ফেরা করে। তাইতো আয়মান দ্রুতই তার প্রেমে পরে।।

— বড় বউ আমার দাদু ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তুতি কেমন চলছে। সামনের মাসেই বিয়ে। আমি কিন্তু ভেনিসা দাদুমনি আসলে আর দেরী করব না। ( চলেই নিজের মতো চলে গেলো )

তার কথা গুলো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে। হাতে আর একটা মাস আছে যে করেই হোক এই বিয়েটা আটকাতে হবে। নাহলে তার সংসার ভাঙ্গবে এই বয়সে এসে সংসার ভাঙ্গার মতো লজ্জা সে বহন করতে পারবেনা।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-২৭+২৮+২৯

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৭

বাসের জানালা ঘেসে বসে আছে ওয়াসিমা। পাশেই আবসার বসে প্রান প্রিয় বউয়ের অভিমানী চেহারা লক্ষ্য করছে। সে বুঝতে পারছে ঐ সময় হঠাৎই তার রিয়েক্ট করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু সেও বা কি করবে ঐযে কথায় বলে না -” চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় পায় “। আবসারের ও সেই অবস্থা জীবনের সেই নির্মম মুহূর্ত গুলো মনে পড়ে যায়। তাইতো ভয় পায়।

কিছুক্ষণ পরে বাসায় পৌছায় তারা। ওয়াসিমা গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকে আবসার রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে গেটের সামনে আসে, দেখে ওয়াসিমা দাড়িয়ে -” তুই বাসায় যা আমি একটু অফিস যাব ( ওয়াসিমার মাথা আলতো চুমু দিয়ে বলল )

ওয়াসিমাও চুপচাপ মাথা নাড়ায়। আবসার চলে যেতে নিলেই পিছন থেকে হাত ধরে ওয়াসিমা আবসার ফিরে তাকালে তাকে বলল — আপনিও কিছু খেয়ে নিয়েন।

— আচ্ছা! আর আমি একেবারে বিকালে আসব দুপুরে আম্মুর সাথে খেয়ে নিস

— আপনি আসলেই খাব। আপনি তাড়াতাড়ি আইসেন
ওয়াসিমার নির্ভেজাল আবদারে আবসার মাথা নাড়িয়ে হ‍‍্যা বোধক সম্মোধন দিয়ে চলে যায়। ওয়াসিমা তাকিয়ে থাকে আবসারের যাওয়ার দিকে। সে যতই অভিমান করুক না কেনো স্বামীর প্রতি যত্ন নিতে ভুলে না। কিছুক্ষণ সেভাবেই দাড়িয়ে বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুকে পরে ওয়াসিমা। নিজেদের ফ্ল‍্যাটে এসে কলিং বেল বাজায়।

ভিতরে ঢুকে দেখে এহসান সোফায় বসে দেয়ালে টানানো টিভির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত মুখে বসে আছে। সাথে তানিয়া সাখাওয়াতেরও একই অবস্থা।

— কি হয়েছে মামনি ( ঘরে ঢুকেই তাদের চিন্তিত দেখে বলল )

— কিছু না মা তোমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে

— আলহামদুলিল্লাহ্ মামনি চাচ্চু তোমরা খেয়েছো সকালে। সরি গো আমি তোমাদের একটুও খেয়াল রাখতে পারিনি।

— ধুর পাগলী মেয়ে। মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হয় আর আকলিমা আপা আমাদের খেয়াল রেখেছে অনেক।

-” আম্মু কই গো মামনি

— তাদের ফ্ল‍্যাটে গিয়েছে গোসল করে নামাজ পরে আসবে। এখন তুইও যা ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নে ভাত খাবি সকালে কিছুই খাসনি

ওয়াসিমা কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো।
-” এটা কি হলো এহসান। ভিক্টোর হঠাত করে মিসিং হলো কিভাবে??

— তাতো জানিনা তানিয়া। আমার জানামতে তার অনেক শত্রু আছে তারাই কেউ হয়তো কিছু করেছে।
এহসানের কথা শুনে চুপ থাকে তানিয়া তার কেনো জানি মনে হচ্ছে কোনো বিপদ আবার আসছে নাতো।

____________________

নিজের কেবিনে বসে আছে আবসার। সামনের চেয়ারে অরিক বসা তাদের দুইজনের দৃষ্টি টেবিলের ল‍্যাপটেপ চালিত খবরে। যেখানে প্রত‍্যেকটা চ‍্যানেলে প্রকাশিত হচ্ছে ” টিউলিপ হসপিটাল ” এর মালিক মিষ্টার ভিক্টোর কাল রাতে নিজের বাসা থেকে কিডন‍্যাপ হয়েছে। কিন্তু এখন পযর্ন্ত কোনো রেসকেউ এমাউন্টের জন‍্য কিডন‍্যাপারের কল আসে নাই।
এটা সত্যি কিডন‍্যাপিং নাকি নিজস্ব কোনো শত্রুতা।

স্ক্রিন থেকে নজর সরিয়ে আবসারের দিকে তাকায় অরিক। অরিকে তাকানো দেখে আবসার তার দিকে তাকিয়ে বলল — হোয়াট আমার কি রুপ বাড়ছে নাকি??

— না কিন্তু অনেক দিন পর ভার্সিটি লাইফের সেই ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ আবসার সাখাওয়াতকে দেখছি তো তাই।

অরিকের কথা শুনে মুখ বাকিয়ে হাসে আবসার।

— যাই হোক ভিক্টোর কোথায়

— আছে ( উদাসীন ভাবে বলল আবসার ), আর যাই হোক এই রাজনীতি বিষয়ে কোনো কথা ওয়াসুর সামনে উঠাস না।

আবসারের কথা শুনে অরিক মাথা নাড়ে যে সে বলবে না।

___________________

চিন্তিত মুখে পায়চারি করছে ফাহাদ গতকাল থেকে তার বাবা উধাও আর এখন এই মহিলা তাকে বলছে,,

— আপনি কাল কোথায় ছিলেন

— আমি কালকে দানিশকে হোষ্টেলে দিয়ে আসতে গিয়েছিলাম ( ক্রন্দনরত ইরিনা বলল )
কিছুদিন আগেই ভিক্টোর ফিরে এসেছিল। তার কাছে মাফ চায় সব কিছুর জন‍্য। কূল হারানো ইরিনাও ভিক্টোরকে মাফ করে দেয় এবং দুইজনে বিয়ে করে আবার আগের মতো সংসার শুরু করে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছু বুঝতে পারছে না সে।

— হ‍‍্যালো ইন্তপেক্টর সাহেব কোনো খবর পেলেন।
ইন্সপেক্টর তারেকের সাথে হাত মিলিয়ে বলল ফাহাদ।

— নো মি. ফাহাদ আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো কিডন‍্যাপারের কল না আসলে কিছু বলা যাচ্ছে না। আর আপনি কাল কোথায় ছিলেন??

— আমি এখানে থাকিনা ইন্সপেক্টর আমি আগারগাঁও একটা ফ্ল‍্যান ভাড়া নিয়ে থাকি।

— আমি এই বাসার দারোয়ানের সাথে কথা বলেছি তিনি বলছেন আপনি কাল রাত আটটার দিকে এখানে এসেছিলেন।

অফিসারের কথা শুনে ফাহাদ হালকা ঘাবড়ে যায়। তবে তাকে বুঝতে না দিয়ে আবারও বলল — আমি এসেছিলাম কিন্তু বাসায় উঠিনি নিচে দাড়িয়ে কথা বলেই চলে গিয়েছিলাম তা বলেনি।

অফিসার হালকা হেসে মাথা নেড়ে বলল -” শুনলাম আপনাকে নাকি টিউলিপ হসপিটালে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

— আমি নিজেই ঐ হাসপাতাল ছেড়েছি অফিসার ( গম্ভীর স্বরে বলল ফাহাদ )

— উনি কি আপনার নিজের মা ( পিছনে বসে থাকা ইরিনার দিকে ইশারা করে বলল )

— নাহ

— কিছু মনে করবেন না ডক্টর ফাহাদ। পুলিশ তো আমাদের কাজই হলো সব কিছু খতিয়ে দেখা ( অফিসারটি হালকা হেসে বলল )

— নো ইটস ওকে। এটা আপনার ডিউটি

__________________

দুপুর গরিয়ে বিকাল চারটা এখনো আবসার আসেনি। ওয়াসিমা খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই খেয়ে নিয়েছে। তানিয়া সাখাওয়াত ও এহসান সাখাওয়াতকে আজকে যেতে দেয়নি ওয়াসিমা বলেছে তাদের কাছে কিছু দিন থাকতে। তারাও না করেনি ওতো বড় বাড়িতে একা থাকতে তাদের ভালো লাগে না।

দুই বন্ধু কথা বলতে বলতে লিফ্টের বাটন চাপ দিলো একজন পাচঁ তলায় আরেকজন ছয় তলায়। অরিক দুপুর দুইটার দিকে নিজের ক্লাস শেষ করে আবসারের কাছে যায় বর্তমানে তারা সেখান থেকেই ফিরছে।
পাঁচ তলা আসতেই অরিক নেমে যায়। কলিংবেল বাজায় না। কারণ ইরফান ও আকলিমা দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু ঘুম দেয়।
ড্রয়িং রুম পেরিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে নজর পরতেই দেখে আরু খাবার টেবিলে বসে আছে। হাতে বিসি এস এর বই

— ঘরে না বসে এখানে বসে পড়ছিলে কেনো??

— তোমার জন‍্য ওয়েট করছিলাম। তুমিতো প্রতিদিন দুইটার মধ‍্যেই আসো আজকে এতো দেরী??

— হ‍্যা একটু অফিস গিয়েছিলাম আবসার একা আর কতটুকু সামলাবে। ওয়াসিমাকে নিয়ে যাওয়া দিয়ে আসা আবার ব‍্যবসায় আমার শেয়ার থাকলেও সবদিকটা সে একাই সামলায় তাই আমি মাঝেমধ‍্যে যাই এই আর কি।

— হু ফ্রেশ হয়ে এসো খাবার দিচ্ছি
অরিক কিছু না বলে চলে যায় ঘরে। তার যে বড্ড খিদে পেয়েছে

ওয়াসিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আবসার আবার ফাকে নিজেও খাচ্ছে। ওয়াসিমা অনেক বললেও কাজ হয় না তার এককথা আমি তো প্রতিদিন দুপুরে থাকি না যে দেখব কি খাস না খাস তাই এখন আমি খাওয়াই দিচ্ছি খা।

খাওয়া শেষে ওয়াসিমা এটো বাসন গুলো নিতে গেলে আবসারও তাকে সাহায‍্য করে।

— আপনি ঘরে যান আমি আসছি মাত্র একটা প্লেট ধুতে আর কি কষ্ট।
আবসার কিছু না বলে টেবিলের খাবারের বাটি গুলো একে একে ফ্রিজে রাখতে শুরু করে। ওয়াসিমাও এই ঘাড়ত‍্যাড়া লোকের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় না।

ঘরে যেয়ে আবসার শুতে নিলেই বাধা দেয় ওয়াসিমা — একটু পরেই আসরের আযান দিবে এখন শোয়া যাবে।

আবসার একটাই লম্বা হাই দিয়ে বিছানায় বসে।

-” আপনি বারান্দায় বসেন আমি আপনার জন‍্য চা আনছি ঘুম চলে যাবে।
আবসার বারান্দায় বসে। বারান্দাটা সুন্দর করে সাজিয়েছে ওয়াসিমা আবসারকে দিয়ে একটা দোলনা আনিয়েছে বর্তমানে সে এই দোলনায় বসা। একটু পরে ওয়াসিমা লাইট সুগারের এককাপ কফি আবসারের হাতে দিয়ে পাশে বসে। কফি খেতে খেতে দুজন এদিক সেদিক কত কিছুর গল্প করে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৮
( এলার্ট ১৮+ )

মাঝরাতে হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে গেলো ওয়াসিমার। পাশ হাতরে আবসারকে খুজলেও পায়না। ওয়াশরুমের দরজায় তাকায় সেটাও বাইরে থেকে বন্ধ। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা বাজে

— এই কোথায় গেলো লোকটা বলেই ঘর থেকে বের হয়। পুরো ডাইনিং এরিয়া ফাকা হঠাৎই ডাইনিং এর পাশে ব‍্যালকনির কথা মনে পড়ল সেখানে গিয়ে দেখে আবসার ফোনে কথা বলছে আর পায়চারি করছে

— কি হয়েছে আপনার ওয়াসিমার কন্ঠ শুনে ভরকে যায় আবসার তারপরেও নিজেকে শান্ত রেখে বলল — কিছু না তুই হঠাত উঠলি কেন??

— ঘুম ভেঙ্গে গেলো উঠে দেখি আপনি ঘরে নেই তাই আপনাকে খুজতে খুজতে এসেছি এখানে। আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কিছু কি হয়েছে??

— উহু চল তুই শুয়ে পড়বি ( ওয়াসিমার কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তাকে ঘরে নিয়ে আসে। ওয়াসিমাকে বুকে জড়িয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে,, আনমনে ওয়াসিমার মাথায় হাত বুলায়। ঘুম কাতুরে ওয়াসিমা কিছুক্ষণের মধ‍্যেই পৌছে যায় ঘুমের কোলে )

ওয়াসিমার ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়তে দেখে আবসার উঠতে যেয়েও উঠে না । এতক্ষণ তার অশান্তি লাগলেও এখন তার শান্তি লাখছে। কারণ তার সুখ পাখি তার বক্ষে আছে। পকেট থেকে ফোন নিয়ে কাউকে মেসেজ করেই ফোন রেখে ঘুমের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু ঘুম আসে না এদিক সেদিকের চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করছে।
যায় জন‍্য তার বাল‍্যকাল নষ্ট হলো তাকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দিবে আবসার উহু কক্ষণো না সে এতটাও মহান না।

তার ভাবনার মাঝেই আযানের প্রতিধ্বনি শুনা যায়। ঘোর ভাঙ্গে আবসারের কখন যে ফজরের সময় হয়ে গেলো সে বুঝতেও পারল না। বুকের মাঝে ঘুমিয়ে থাকা ওয়াসিমাকে ধীমে স্বরে ডাকতে থাকে

— ওয়াসু ও বউ পাখি,,
আবসারের আদুরে ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ওয়াসিমার সে পিটপিট করে তাকাতেই আবসার বলল-“- আযান দিয়েছে নামাজ পড়তে হবে না!

নামাজের কথা শুনে তড়াক করে উঠে বসে ওয়াসিমা। দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিতে নিলেই থামায় আবসার

— আস্তে আস্তে যা পড়ে যাবি তো
মাথা নাড়িয়ে চলে যায় । আবসার উঠে অন‍্য ওয়াশরুমে থেকে বাশি জামা কাপড় বদলে ওযু করে বের মসজিদের উদ্দেশ্যে।

আবসার নামাজ শেষ করে এসে দেখে ওয়াসিমা কুরআন তিলাওয়াত করছে। আবসার ঢুকতেই তার দিকে তাকায়

— আজকে এতো দেরী করলেন যে নামাজ থেকে আসতে??

— একটু হাটতে গিয়েছিলাম ( স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বলল )
আবসারের নির্মল হাসিতে মন প্রান জুড়িয়ে যায় ওয়াসিমার
— চা দিব

— এককাপ কড়া কফি চাই। মাথা ব‍্যাথা করছে।
কিছুক্ষণ পরে ওয়াসিমা কফি নিয়ে আসে। দেখে আবসার গভীর ঘুমে তাকে জাগায় না। নিশ্চুপ ভাবে ঘরে সব পর্দা গুলো টেনে দিয়ে লাইটটা বন্ধ করে গেট চাপিয়ে চলে যায় রান্নাঘরে।

ওয়াসিমা বুঝতে পারছে আবসার সারারাত ঘুমায় নি। কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে ছিলো কিন্তু বিষয়টা কি সেটা বুঝতে পারছে না। সে এটাও বুঝতে পারছে লোকটা তার কাছ থেকে লুকাচ্ছে কিন্তু কি??

__________________

ব্রেকিং নিউজ ” টিউলিপ হসপিটাল ” এর কর্ণধার মি. ভিক্টোরের লাশ তার বনানীর আরেকটি ফ্ল‍্যাটের মধ‍্যে পাওয়া গেছে। এবং এও জানা গেছে হাসপাতালে মানব সেবার নাম করে সেখান হিউম্যান ট্রাফিকিং সহ ওরগ‍্যান ট্রিফিকিংয়েও তিনি জড়িত ছিলেন। সবার অগোচরে সে তার হাসপাতালে গরিবদের সাহায্য করার নাম করে এই কাজ করত
বর্তমানে ” টিউলিপ হাসপাতাল ” সিজ করে দেওয়া হয়েছে। আর মি. ভিক্টোরের সকল সম্পত্তি সরকারের আন্ডারে নেওয়া হয়েছে।
এই খবর পুরো দেশবাসীকে নাড়িয়ে দেয়। সবাই ইরিনার ফ্ল‍্যাটে হামলা চালায় এবং পুলিশকে ভিক্টোরের লাশ নিয়ে যেতে দেয় না।

বহু কষ্টে লাঠিচার্জের পর পুলিশ বাহিনীরা ভিক্টোরের লাশ পোস্টর্মটেমের জন‍্য নিয়ে যায় তারা।

ইরিনার অবস্থা শোচনীয় তার থাকার কোনো স্থান নেই। কাল প্রথমে ভিক্টোরের নিখোঁজ তারপর তার আত্মহত্যা সব মিলিয়ে তার অবস্থা কাহিল। কিন্তু তার মাথায় এটা আসছেনা ভিক্টোর আত্মহত্যা কেনো করল। সে এমন একজন ব‍্যাক্তি অন‍্যকে মারবে কিন্তু নিজে মরার চেষ্টা করবে না।

ফাহাদ হাসপাতালে আছে সে তার বাবার লাশ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে তার মস্তিষ্ক এটা ধারন করতে পারছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো।

কিছুদিন আগেই সে হাসপাতালের আড়ালে এই অসৎ কর্মকাণ্ডের সম্পর্কে জানতে পারে। তখন থেকেই সে আর ” টিউলিপ ” বসে না।
তার চিন্তা এটা যা এতো বছরে কেউ পারেনি তা এখন কে করেছে। তার সাথে কি তার বাবার পুরোনো কোনো শত্রুতা আছে।

সকাল দশটায় ঘুম ভাঙ্গে আবসারের। সে আজ খাবার টেবিলে না বসে সোফায় টিভি ছেড়ে সেখানে বসে খায় আর সংবাদ দেখতে থাকে।

আবসারের মুখে ফুটে ওঠে কুটিল হাসি,,,,,
চায়ের কাপ রাখতে রাখতে আবসারকে একা একা হাসতে দেখে ওয়াসিমা ভ্রু কুচকে তাকায়

— কি হয়েছে এভাবে হাসছেন কেনো
ওয়াসিমার কথার উত্তর দেয় না তাকে হ‍্যাচকা টানে নিজের কোলে বসায়। ওয়াসিমাও আবসারের গলা জড়িয়ে ধরে

— অরিক আর আরুর বিয়ের রিসিপশনে আমরা আবার বিয়ে করলে কেমন হয়? ( ওয়াসিমার গলায় নাক ঘসতে ঘসতে বলল )

— সত্যিই ( উচ্ছ্বসিত স্বরে বলল ওয়াসিমা )

— হু আমারো তো ইচ্ছা করে আমার এই পিচ্চি বউকে লাল টুকটুকে শাড়িতে বউ সাজে দেখার।

আবসারের কথা শুনে লজ্জা পায় ওয়াসিমা। লজ্জায় মুখ লুকায় আবসারের বক্ষে। আবসারও বুঝতে পেরে আলতো হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে।

— একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

— ভবিষ্যতে কোনো দিন অনুমতি নিবি না যা জিজ্ঞাসা করার সরাসরি করবি!!

“- আপনি কি নিয়ে টেনশনে ছিলেন সকালে,,

— কিছু না যা নিয়ে টেনশন করছিলাম তা মিটে গেছে।
মাথা নাড়ায় ওয়াসিমা হঠাৎই কিছু মনে পরতে আবার মাথা উঠায় — হঠাৎই বিয়ের কথা উঠালেন যে

— আমি না অরিক কয়েকদিন ধরেই বলছিল। আমি তোর মেডিক্যাল এক্সামের জন‍্য ওয়েট করছিলাম। তাতো শেষ

— আপনি আর কোনো ইউনিভার্সিটির ফর্ম উঠালেন না কেনো?

— কারণ আমি জানি আমার বউ ইনশাআল্লাহ মেডিক্যালেই চান্স পাবে

— এতো বিশ্বাস

— এর থেকে বেশী বিশ্বাস,,
কথার মাঝেই আবসারের মুড অন‍্য দিকে ঘুরে যায়। সে হাত গলিয়ে দেয় ওয়াসিমা কামিজের ভিতরে । কথার মাঝখানে আবসারের অবাধ‍্য স্পর্শে কেপে ওঠে ওয়াসিমা

— ককি করছেন ( কাপা স্বরে বলে ওয়াসিমা )

— আদর করছি। অনেক দিন ধরে বউ পাখিকে আদর করিনা আমার প্রান প্রিয় বউটা আদরের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে দেখছিস না।

— অসভ‍্য লোক সরেন সকাল সকাল শুরু কইরেন না ( বলেই উঠতে নিলেই আবসার আবার হ‍্যাচকা টানে কাছে আনে )

— এখন কোনো ডিস্টার্ব করবি না ” লেট মি লাভ ইউ ” বউ
( বলেই আর কোনো কিছুর সুযোগ না দিয়ে ওয়াসিমাকে কোলে তুলে চলল নিজের ঘরে )

ওয়াসিমাকে খাটে ফেলে তার ওষ্ঠ জোড়া দখল করে নিলো এক হাতে তার গায়ের ওড়না ফেলে অন‍্য হাতে তার ঘাড় ধরে কাছে এনে চুম্বন গভীর করে।
ওয়াসিমার দম বন্ধ হয়ে আসতেই মুখ ঘুড়িয়ে নেয় ওয়াসিমা। নেশাক্ত আবসার তা নিতে ততপর হতেই ওয়াসিমা তার ঠোটে হাত দিয়ে আটকায়

— দম বন্ধ হয়ে আসছে
আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমা গলায় মুখ ডুবায়। আবসারের মাতোয়ারা স্পর্শে ওয়াসিমা নিমিষেই এলোমেলো হয়ে যায়।

আবসারের উম্মাদনা বাড়ে সেই সাথে বাড়ে গভীরে ছোয়া। ওয়াসিমাও ভেসে যায় আবসারের উম্মাদনায়।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৯

“” কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ “” এই কথাটা আজ হাড়ে মজ্জায় টের পেয়েছে ইরিনা।
আজ সে সর্বহারা হয়ে পথে পথে ঘুরছে স্বামীর লাশটাও একঝলক দেখার সুযোগ পায়নি। ফাহাদ তাকে দেখতে দেয়নি।
হঠাৎই পানি পিপাসা লাগলে এক সাইডে বসে পড়ে পা দুটো আর চলে না। নিজের বাবার বাড়িও যেতে পারবে না কারণ অনেক আগেই তারা তাকে পরিত্যক্ত করেছেন।
সে তাদের কাছে ঘৃণ্য আর মৃত তাইতো এতো বছরেও অন্ততপক্ষে মেয়ের খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করেনি। তার মতো মেয়ের জন‍্য এরকম করাই ঠিক তার জায়গা অন‍্য কোনো মেয়ে হলে নিজের সোনার সংসার নষ্ট হতে দিতো না। তাইতো তার বাবা মা তার সাথে উচিৎ কাজই করেছে।

ইরিনার মাথায় এখন অন্য চিন্তা। এই বিষাক্ত পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে সে তার ছেলে দানিশকে এখান থেকে দূরেই রেখেছে সব সময়। এখন দানিশের পড়াশোনার খরচ হোষ্টেল খরচ কিভাবে বহন করবে সে।

অনেক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর আবার উঠে দাড়ায় ইরিনা। হাটতে হাটতে সাখাওয়াত বাড়ির সামনে এসেই থেমে যায়। পুরো বাড়িটা আলোয় ঝলমল করছে। হড়েক রকমের মরিচ বাতি ও ফুল দিয়ে সাজানো বাড়ির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

এই বাড়িটাতে একসময় তার সংসার ছিলো। এই বাড়িতে পা রেখেছিলেন সে এজাজ সাখাওয়াতের হাত ধরে। বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও এজাজ সাখাওয়াত তাকে খুব ভালোবাসতেন। তার খুব সুখের সংসার ছিলো। বান্ধবীর মেয়ে আনায় দিলরুবা সাখাওয়াত ও তাকে একটু বেশি ভালোবাসত। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত আবসারের জন্ম সে চায়নি তবে মাতো তাই আস্তে ধীরে তার প্রতি মায়া চলে আসে। এরপর সব কিছু ভালোই চলছিল।
সেই সুখের সংসারে গ্রহণ হিসেবে এসেছিল ভিক্টর। ভিক্টোরের মোহে পরে সে নিজের হাতে সব ধ্বংস করেছে । হ‍্যা এটা সত‍্যি ভিক্টোরের মৃত‍্যুতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে ভাবছে দুনিয়ায় আরো একটু পাপের বোঝা কমল।

— আমাকে একটু পানি দিবে মা??

কেউ পানি চাওয়ায় পিছনে ফিরে তাকায় আবসার ওয়াসিমা। সন্ধ‍্যা বেলা আবসার ওয়াসিমাকে নিয়ে বের হয় অনেক দিন দুইজন একসাথে কোথাও ঘুরে না তাই। আবসারই জোড়াজুড়ি করে নিয়ে এসেছে।

একটা ফুচকার দোকান দাড়িয়ে ছিলো। সেখানে এক কর্ণারে বসে ছিলো তারা। পিছন থেকে কারো ডাকে ফিরে তাকায়,,,
আবসার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহিলাটির দিকে। আভিজাত্যের ভরপুর এই মহিলাটি তার জন্মধাত্রী তাকে কিভাবে ভুলবে এই মহিলার জন‍্যই তার জীবন ছিলো বিভীষিকাময় যা তাকে প্রতি রাতে তাড়িয়ে বেড়াতো। কথায় বলে না মা মড়লে বাপ হয় তালই “” কিন্তু তার ব‍্যাপারে হয় উল্টো তার মা তাকে ত‍্যাগ করার পরপরই এজাজ সাখাওয়াতের ভালোবাসা থেকেও সে বঞ্চিত হয়।

— আন্টি আপনার মুখ শুকনো লাগছে কিছু খাবেন ( ওয়াসিমার কথায় ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে আবসার )

— না গো মা আমাকে একটু পানি দিলেই চলবে।
তার কথা শুনে ওয়াসিমা একটা নতুন পানির বোতল আর একটা বার্গার কিনে নেয়
— হ‍্যা এই নেন ( বলেই ওয়াসিমা একটা পানির বোতল আর একটা খাবারের প‍্যাকেট ইরিনার হাতে ধরিয়ে দেয় )
ইরিনা প্রথমে ইস্তোত বোধ করলেও পরে ওয়াসিমার জোরাজুরির কারণে নেয়।

— ওয়াসু হয়েছে?

— হ‍্যা এই আসছি ( বলেই আবসারের দিকে এগোয়। এতক্ষণ আবসার সামনের দিকে বসে ছিলো তার ইচ্ছে ছিলো না ঐ মহিলার চেহারা দেখার তাই ওয়াসিমা তাকে খাবার দিতে গেলে সে যায় না। )

সারা রাস্তা চুপচাপ ওয়াসিমার হাত ধরে বসেছিল আবসার। এখন তার বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না তার মনটা অশান্ত হয় আছে।
হাটতে হাটতে কখন যে বাসায় প‍ৌছে যায় তারা বুঝতে পারেনা আবসার।

হাটার ফাকে ফাকে ওয়াসিমা নিজের স্বামীকে অবলকন করেছে ওয়াসিমা। একটু আগেও সে ঠিক ছিলো নির্লজ্জ আবসার রাস্তাতেও তাকে লজ্জা দিতে ভুলেনি। কিন্তু এখন কি হলো??
তার উজ্জল মুখে এমন আধার নেমে আছে কেনো। সে কি কোনো কিছু নিয়ে ডিস্টার্ব?? এর মধ‍্যে আরুর কল আসলে ওয়াসিমা তার সাথে কথা বলে রেখে দেয়। আবসারের সেদিকে খেয়াল নেই,,,
— শুনেন,,

— হু,,

— আরু আপু ফোন করেছে এখন মামনিদের বাসায় যেতে বলেছে।

— তাহলে কি এখন বাসায় ঢুকবি না?

— না পরে দেরী হয়ে যাবে এখনই চলেন। ওয়াসিমার কথা মতো আবসার মাথা নাড়িয়ে একটা সি এন জি ঠিক করে। এখন বাসে যাওয়ার মতো মন-মানসিকতা তার নেই।

____________________

ওয়াসিমারা যখন তানিয়াদের বাসায় তখন সবাই চা নাস্তার সাথে আড্ডায় ব‍্যস্ত।
— এই যে আমার মা এসে পড়েছে!

— কি হয়েছে আম্মু হঠাৎই ফোন দিয়ে এখানে ডাকাইলা??

— কিছু নারে মা তোদের আর অরিকদের ওয়ালিমার আলোচনা করছিলাম আকলিমার কথা শুনে ওয়াসিমা কিছু বলল না।
মুরুব্বিরা সবাই আবার নিজেদের কথায় ব‍্যস্ত হয়ে পড়ল। সেই ফাকে আবসার একপলক সবার দিকে তাকিয়ে চলে যায় নিজের বরাদ্দ করা রুমে। ওয়াসিমাও আবসারের পিছু পিছু ঘরে যায়।
যেয়ে দেখে আবসার বারান্দায় গ্রিলে হাত রেখে একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াসিমা কিছু না বলে আস্তে করে স্বামীর বক্ষে মিশে যায়।
আবসার জড়িয়ে ধরে ওয়াসিমাকে চোখ বন্ধ করে প্রশান্তি অনুভব করে। এই মেয়েটাকে কিছু বলতে হয় না তার প্রত‍্যেকটা মুভমেন্টের উপর তার কড়া নজর রয়েছে।

______________________

বিয়ের সাজে সেজেছে সাখাওয়াত বাড়ি। এতো আয়োজনের কারণ বাড়ির পুত্র বধূর বরণ উদ্দেশ্যে। গতকাল আয়মান আর ভেনিসা এসেছে বাংলাদেশ এবং দুই দিন পর তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে।

— বড় বউ সব মেহমাদের কাছে কার্ড পৌছে গেছে

— জ্বি আম্মা

— আর ইভেন্ট ম‍্যানেজমেন্টের লোকজন কখন আসবে। বাড়ির ভিতরে সাজাতে হবে না শুধু বাইরে সাজালে হবে!

— আম্মা ওরা কাল সকালেই এসে নিজেদের কাজ শুরু করবে।

— হ‍্যা সাখাওয়াত বাড়ির উত্তরাধিকারের বিয়ে সেখানে কোনো প্রকার ক্রুটি চাইনা আমি বলেই লাঠি হাতে ঠকঠক পায়ে চলে যায়।

আলিয়া সাখাওয়াত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে মানতে পারছে না ঐ বিদেশীনিকে। কিন্তু ছেলে আর শাশুড়ির বিরুদ্ধে যাওয়ার উপায় তার কাছে নেই। ভেনিসাকে না মেনে নিলে তার ছেলে হারাতে হবে। সেই ভয়ে না চাইতে সব করতে হচ্ছে।
কালকে তার বাপের বাড়ির লোকজন আসবে তখন কি হব তার বোনের মেয়ের সাথে। সে এতো কিছু করতে চায়নি কারণ তার বোনের মেয়ে লিমা একপ্রকার পাগল আয়মানের জন‍্য এখন সে যদি এসে শুনে আয়মান বিয়ে করেছে তখন কি তান্ডব যে করে সেটা ভেবেই তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।

— মিনু এককাপ চা দিস তো ( বাড়ির কাজের বুয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল আলিয়ার ভাই তারেক ও তার স্ত্রী বসে পড়ে
— কি ভাবছিস আপা

— হু কিছু না বড় আপা কাল আসবেরে

— হ‍্যা আপা আমি তো তাই জানি। প্রথমে আপা আসতে চায়নি কিন্তু পরে আবার রাজি হয়ে গেলো সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না।

আলিয়া সাখাওয়াত তার ভাই তারেকের কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পরে।

তার চিন্তিত মুখ দেখে তারেকের স্ত্রী তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল
— এতো ভাববেন না আপা এতে তো আপনার দোষ নেই ছেলে নিজের পছন্দে বিয়ে করলে আপনার কিছুই করার নেই তাইনা।

তার কথা শুনে আলিয়া সাখাওয়াত কিছু না বলে উঠে চলে যায় নিজের ঘরে।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-২৪+২৫+২৬

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৪

সকাল সকাল মায়ের ডাকে আরুর ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে সকাল ছয়টা বাজে। বিরক্ত হলো আরু বিরক্ত স্বরেই বলল
— কি হয়েছে মা এতো সকাল সকাল ডাকছ কেনো

— বাসায় চল এখানে আর এক মূহুর্ত না ( গম্ভীর কন্ঠে বলল তানিয়া সাখাওয়াত )

— কেনো আর হঠাৎই বা এতো সকালে যাব কেনো কি হয়েছে

তানিয়া কোনো কথা না বলে আরুকে উঠিয়ে ওয়াশরুমে পাঠায় ফ্রেশ হতে। কিছুক্ষণ পরে আরু বেড়িয়ে আসতে তানিয়া নিজেই তোয়ালে দিয়ে তার মুখ মুছে তোয়ালেটা ফেলে আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে গেটের কাছে নিয়ে যায়।
আরু যেতে যেতে পুরো ফ্ল‍্যাটে নজর বুলায় কাউকে দেখতে পারছে না। এমনিতে শুক্রবার সবাই একটু দেরিতে ওঠে তাই এখন কাউকে আশা কারাটাও বোকামি বই কিছু না।

আরুরা বেড়িয়ে যেতে ঘর থেকে বের হয় ওয়াসিমা।

_________________

সকাল সকাল আরুদের বাসায়। আয়োজনের ধুম পরেছে দিলরুবা সাখাওয়াত নাস্তা সেরেই চলে এসেছেন সাথে এজাজ সাখাওয়াত। এজাজ সাখাওয়াত এসেই ভাইয়ের সাথে কাজে হাত মিলায়। বিয়েটা যতই ঘরোয়া ভাবে হোক তাদের ও তো কিছু কর্তব্য আছে কিছু কাছের আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়েছে আরুর মামা বাড়ির থেকেও লোকজন এসেছে।

সব মিলিয়ে সকাল দশটার মধ‍্যেই আরুদের বাসায় হুলস্থুল কান্ড বয়ে চলছে। তবে এইসবের মাঝে আরুর মনে ঝড় উঠছে কারণ বাসায় আয়োজন দেখে সে বুঝেছে আজকে তার বিয়ে,,,

সে দ্রুত ফোন নিয়ে ঘরে যায় কল লাগায় ওয়াসিমাকে। অনেক্ষণ ধরে ওয়াসিমাকে অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু ফোন ধরার কোনো নাম গন্ধ নেই

— প্লিজ ভাবী পিক আপ দ‍্যা ফোন বলতে বলতে ফোন করছে আর পাইচারি করছে। কিন্তু তার কাজে বিগ্ন ঘটাতে আগমন ঘটে তার মামাতো বোন তানহার

-” কি আপ্পি বিয়ের কনে ফোন নিয়ে বসে আছো বলেই আরুর হাতের ফোনটা কেড়ে নেয়।

— তানু ফোনটা দে বলছি আমি ইম্পর্ট‍‍্যান্ট কাজ করছি বলেই ফোনটা নিতে গেলে তানহা হাত সরিয়ে ফেলে। এভাবে ফোন কাড়াকাড়ির মধ‍্যে তানিয়া সাখাওয়াত ও আরুর মামি ঘরে প্রবেশ করে। আরুকে একটা শাড়ি দিয়ে আরুকে বলল — এটা পরে পাচঁ মিনিটের মধ‍্যে রেডি হও,,
আরু কিছু বলতে নিলেই তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে তিনি গম্ভীর স্বরে বলল — এখন কোনো কথা শুনব না তোমার বাবার মান সম্মানের ব‍্যাপার। আর বাকিটা তুমি চিন্তা করো!

চলে যায় তারা। আরু শাড়িটার দিকে তাকায় শাড়ি সহ প্রয়োজনীয় সব জিনিস আছে,,

— এই আপ্পি তাড়াতাড়ি রেডি হও হলুদের সময় হচ্ছে তো।
তানহার ডাকে ধ‍্যান ভাঙ্গে আরুর সে আর কিছু না বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। শাড়িটা পরে বেড়িয়ে আসতে তানহা তাকে হালকা সাজিয়ে দেয়। তার কিছুক্ষণ পরেই তাকে হলুদের জন‍্য নিয়ে যাওয়া হয়। তবে যাওয়ার পথে ওয়াসিমাকে দেখে সেদিকে যেতে নিলে তানহা যেতে দেয় না। সে টেনে তাকে ছাদের অন‍্য প্রান্তে নিয়ে যায় যেখানে ছোট করে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।

— কংগ্রাচুলেশন আপু ( আরুর গালে হলুদ ছোয়াতে ছোয়াতে বলল ওয়াসিমা )

— ভাবী আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে আরু ওয়াসিমার হাত ধরে বলল

-” হ‍্যা সব কথাই হবে পরে আপাদত আমার অনেক কাজ আছে। ওয়াসিমাকে কোথা থেকে ডাক দিলে সে সেখান থেকে চলে গেছে। আরু একরাশ হতাশা নিয়ে বসে থাকে

_________________

আরুকে হলুদ দিয়েই ওয়াসিমা চলে যায় তাদের বাসায় এই দিকে অনেক মানুষ থাকলেও। তাদের বাসায় কেউ নেই শুধু তার আম্মু আর তার বড় খালা তার নানার বাড়ির থেকে দাদার বাড়ির থেকে কেউ আসেনি। সবাইকে বলা হয়েছে হঠাৎই শর্ট নোটিশে দাওয়াত দেওয়ায় কেউ আসতে পারে নি। তাই তারা ওয়াদা করেছে ওয়ালিমার সময় তারা আবার করে সব অনুষ্ঠান করবে

বাদ জুম্মা বিয়ের কার্যক্রম শুরু হবে তাই সবাই আযানের সাথে সাথেই বেড়িয়ে পরে।

— কিরে শা*লা বিয়ে করবি একটু হাসবি তো

-” আমি তোর মতো না যে থ্রেট দিয়ে বিয়ে করব আর আমার বোন যতটা শান্ত তোর বোন ততটা না সে তো জানেনা যে বিয়েটা আমার সাথে হচ্ছে। যদি জানে তাহলে আমাকে কি যে করবে

-” কি আর করবি বাসর রাতে বিড়াল না মেরে বউয়ের হাতে দুই চারটা কিল ঘুসি খাবি। আবসারের কথা শেষ হতেই পিছন থেকে ইরফান বলল — অসভ‍্য ছেলে এই আকলিমা এই ছেলেকে চুপ করতে বলোতো এখানে যে শশুর শাশুড়িরা বসে আছে সে চিন্তা কি আছে??

— শশুর আব্বা বিয়ে সবাই করেছে বাসর সবাই করেছে আপনি এতো রিয়‍্যাক্ট করছেন কেনো ( অরিকের দিকে তাকিয়ে চোখ মারে। অরিক শশুর জামাইয়ের যুদ্ধে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে,, সব সময় সবাই বউ শাশুড়ির যুদ্ধ দেখেছে আর তারা শশুর জামাইয়ের যুদ্ধ দেখে ইরফান রহমান যেমন আবসারের কথা শুনে ক্ষেপে যায়। আবসারও তেমন আরো ইরফান রহমানকে রাগিয়ে আরো মজা পায়।

_________________

আরু পাথরের মতো শক্ত হয়ে বসে আছে। সামনে কাজী সাহেব সহ আরো কিছু সাক্ষী দাড়ানো অনেক্ষণ ধরে তাকে কবুল বলার জন‍্য বলা হচ্ছে কিন্তু সে মুখে দিয়ে এখন পযর্ন্ত একটা শব্দ উচ্চারণ করেনি।

পাশ থেকে এহসান সাখাওয়াত হাতে চাপ দিলেই। বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে কোনো রকম কবুল শব্দটা উচ্চারণ করে।

— আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠল সবাই একসাথে আরুর কান্নার জোর আরো বেশী হলো।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করেই বিদায়ের তোড়জোড় শুরু করা হলো। আরুর সেই যে কান্নাকাটি শুরু হয়েছে এখনো থামে নি তার সাথে তানিয়া সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতও যোগ দিয়েছে আরু কান্না করতে করতে দিলরুবা সাখাওয়াতের সামনে দাড়ায়।

দিলরুবা সাখাওয়াত কিছু না বলে শুধু তার মাথায় হাত বুলায়। আরু এতো কান্নার মাঝেও অবাক নয়নে তাকায় তার দাদীর দিকে। এই প্রথম দিলরুবা সাখাওয়াত আরু মাথায় স্নেহের পরশে হাত বুলায়।
অবশেষে বিদায় নিয়ে আরু চলল শশুর বাড়ি নিজের দুঃখের জন‍্য তার পাশে বসা স্বামীর দিকেও তাকায় নি। আরুর এই নিরবুদ্ধিতায় বিরক্ত মনে মনে আরুকে আহাম্মক বলে আক্ষায়িত করল।

বিকাল পাচঁটার মধ্যেই তারা পৌছে যায় বাসায়। আর নির্বোধ আরু নিজের দুঃখে এতোটাই ভেসে রয়েছে চেনা বাসাটাও চিনতে পারছে না।

আরুর এই নির্বোধের মতো কাজের ফয়দা লুটল ওয়াসিমা সে তার আম্মুকে মানা করে দিলো আরুকে বরণ করতে সে তার খালামনিকে দিয়ে আরুকে বরণ করে।

ওয়াসিমার খালা যখন আরুকে বরণ করে তখন আরু আরো জোরে কান্না করা শুরু করে। আরুর এই মরা কান্নায় সবাই মিটমিট করে হাসলেও বিরক্ত লাগছে অরিকের সে গগন কাপানো এক ঝাড়ি দেয় আরুকে

— কখন থেকে দেখছি মরা কান্না শুরু করেছ এখানে কেউ মরেছে নাকি। আম্মু এই আহাম্মকে ওদের বাড়িতে পাঠিয়ে দাও বলেই হনহন পায়ে ভিতরে চলে যায়।

— কি ভাবী সাহেবা কেমন লাগল সারপ্রাইজ আরুকে এক সাইডে জড়িয়ে ধরে বলল

আর আরু হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার হতবাক দৃষ্টি দেখে আকলিমা এগিয়ে আসে

-“- কি আম্মু আমাদের ছোট্ট নতুন সংসারটা কি তোমার পছন্দ হয় নাই। ভিতরে আসছ না যে

আরু কিছু না বলে ওয়াসিমার হাত ধরে ধীর পায়ে প্রবেশ করে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৫

বাসর ঘরে বসে আছে আরু। উহু ঘরটা বাসর ঘরও বলা চলে না কারণ ঘরে ফুলের ছিটেফোটা নাই। ছিমছাম ঘর মাঝারী সাইজের ঘরে প্রয়োজনী সকল ফার্নিচার রাখা আছে।
সামনের দেয়ালে টানানো দেয়াল ঘড়ির দিকে নজর পরল। ঘড়িতে এখারোটা বেজে দশ মিনিট

আরুর চিন্তা হলো অরিক এখনো আসছে না কেনো। সেই যে তাকে রেখে গেলো তারপর ফ্রেশ হয়ে আবসারের সাথে গেছে কারখানায় কি যেনো কাজ পড়ে গেছে তাই।
অরিক যাওয়ার পর আরুর সময়টা বেশ ভালোই কাটে ভারী বেনারসি ছেড়ে হালকা মনিপুরি তাতের একটা শাড়ি পরে নেয়। তবে সন্ধ‍্যাটা তার বেশ ভালোই কাটে বাবা মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে। ওয়াসিমা ও আকলিমার সাথে মাগরিবের নামাজ পরে। আকলিমা বেগম সন্ধ‍্যার হালকা নাশতা বানায় সেগুলো চায়ের সাথে উপভোগ করা। সব মিলিয়ে ভালোই যায় সময়টা রাত দশটার দিকে যখন আবসার আসে তখন ওয়াসিমা আরুকে হালকা সাজিয়ে ঘরে পৌছে দিয়ে চলে যায়।
তার বাসর ধরার ইচ্ছা থাকলেও কিছু করার নেই সে জানে তার ভাইয়ের বর্তমান মনে অবস্থা ভালো নেই।

________________

ওয়াসিমা ঘরে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে যায় খাটটা ফুল দিয়ে সাজানো। কোনো কৃত্রিম আলো জালায়নি। চারিদিকে সুগন্ধি মোম বাতির আলোয় বেশ ভালো আলোকিত হয়ে আছে,,

এই হালকা আলোতেই ঘরটা বেশ সুন্দর লাগছে। ফুলের আর মোম বাতির গ্রান মিশে অদ্ভুত একটা গ্রান তৈরী হয়েছে। যা এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলছে।

ওয়াসিমার পুরো ঘর দেখার ফাকে কখন যে আবসার রুমে প্রবেশ করে টের পায়না ওয়াসিমা।
আবসারের পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে তার ঘোর ভাঙ্গে। কিন্তু ইরফানের ভাষ‍্য মতে অসভ‍্য বেয়াদব আবসার কি থেমে থাকে??

তার হাত গলিয়ে দেয় ওয়াসিমার শাড়ি ভেদ করে উন্মুক্ত উদরে।
বিয়ের দুই মাস পরেও ওয়াসিমা আবসারের ছোয়ায় নুয়ে পরে লাজুকপাতার মতো। অসভ‍্য আবসার তা টের পেয়েও আরো এলোমেলো ছোয়া দিতে থাকে ওয়াসিমাকে। ওয়াসিমার কন্ঠনালী ভেদ করে কোনো কথা বের হয় না আবেশে সে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

-” বিয়ের পর বাসর কথা হয়নি আজ জমিয়ে বাসর করব
আবসার ফিসফিসিয়ে কথা শুনে তড়াক করে চোখ খুলে তাকিয়ে সামনে ফিরে। আবসারের দুই কাধে হাত রেখে বলল — মানে আপনি কি বলছেন

— হু বিয়ের পর এরকম ফুলের সাজানো ঘরে বাসর করা হয়নি আজকে তোর ভাইয়ের বাসর ঘর দেখে আমারও বাসর করার ইচ্ছা জাগল।
তবে আমি বিড়াল কিন্তু আগেই মেরেছি কি বলিস ( চোখ মেরে বলে )

“- ছি নির্লজ্জ চুপ থাকেন। ওয়াসিমা লজ্জায় হাসফাস করতে করতে বলে

-” এই যে তোর লাজুক রাঙ্গা আদল আমাকে ঠিক থাকতে দেয় না। বলেই ওয়াসিমাকে কোলে তুলে ধীর পায়ে বেডের কাছে যায়। তাকে আলতো করে শুয়ে দিয়ে নিজের পুরো ভার ছেড়ে দেয় ওয়াসিমার উপর গলদেশে মুখ ডুবিয়ে দিতেই আবসার চুল খামচে ধরে ওয়াসিমা। সেখান মুখ উঠিয়ে। অধর জোড়া মিলিতে করে তাল মেলায় ওয়াসিমা সেও তো স্বামীর ভালোবাসা নিতে উন্মুখ।

__________________

ঘড়ির কাটা বারোটার ঘরে যেতে অরিক ঘরে ঢোকে। খাটে বসা আরু দিকে একপলক তাকিয়ে ওয়ারড্রোব থেকে কাপড় নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। আরু তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। একটু পর অরিক বের হয়ে আলমারি থেকে একটা চাদর নিয়ে খাটের পাশে যায় আরু তখনও ভাবছে এই বুঝি অরিক তার সাথে কথা বলবে কিন্তু অরিক তাকে কিছু না বলে চুপচাপ একটা বালিশ নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।

ঝকঝকে বারান্দার ফ্লোরে চাদর খানা বিছিয়ে বালিশ রেখে শুয়ে পরে অরিক। ভিতর থেকে সবই দেখে আরু। তার কান্না আসছে ঠোট কামড়ে কান্না আটকে বারান্দার দরজার সামনে দাড়ায়

— তুমি ঘরে যাও খাটে ঘুমিয়ে পড় আমি এখানে ঘুমাব। আমার সাথে যেহুতু এক বিছানায় থাকতে তোমার সমস‍্যা

— আপনি খাটেই ঘুমান আমি এখানেই ঠিক আছি। আপনি বড় ঘরের মেয়ে ফ্লোরে শোয়ার মতো অভ‍্যাস নেই তাইনা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল

আরু বসে ঝাপিয়ে পড়ে অরিকের বুকে — তুমি যতবার বলবে ততোবার মাফ চাইব। তুমি চাইলে তোমার পা ধরে মাফ চাইব তারপরও আমার সাথে এরকম করো না আমি প্রতিনিয়ত জ্বলছি। এই জ্বলন সহ‍্য হয়না

হঠাৎই আরুর কর্মকাণ্ডে ভরকে যায় অরিক। আরুকে ধরতে নিয়ে ধরে না

— যে অন‍্যকে জ্বালায় তার তো জ্বলার কথা না সে নিজেই তো অনল,,

— ঐ সময় শুধু আমার মাথায় ভাইয়ে কথাই এসেছে আমি দিগবেদিকে শুণ্য হয়ে আমার ভাইকে পারিবারিক একটু সুখ দিতে উঠে পরে লেগেছিলাম

— তাই আমাদের ভালোবাসার বলিদান দিলে। এই তখন তোর মাথায় এটা ছিলো না যে ঐ পরিবারের আবসার ফিরবে কিনা আর তুই আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর আমার কি পরিণতি হতে পারে একবার ভেবে দেখেছিলি।
( আরুর কথা মাঝেই অরিক তার বাহু ধরে তার মুখের সামনে এনে শক্ত কন্ঠে বলল )

— যাই হোক তোর যা মনে হয় তুই তাই করছিস এখন কইফিয়ত কেনো দিচ্ছিস। চাই না তোর কইফিয়ত বলেই আরুকে হালকা ধাক্কায় ছেড়ে দেয়।
আরু সেখানে বসেই কান্না করতে থাকে। অরিকের ধাক্কায় থাইয়ের সাথে লাগে কপালে ব‍্যাথা পেলেও সেটা আমলে নেয় না। বতর্মানে তার শারীরিক ব‍্যাথার চেয়ে মনের ব‍্যাথাটাই বেশী।
আরুর কান্না শুনে অরিকের মনে তুফান বইছে সে চাইছে আরুকে ঝাপটে ধরে বুকের মধ‍্যে চেপে কান্না থামাতে কিন্তু কোথাও এক মন বাধা দিচ্ছে সে বলছে — না অরিক এই মেয়েটা তোকে সর্বোচ্চ কষ্ট দিয়েছে তাকে এতো সহজে ক্ষমা করবি না।

আবার অন‍্য মন বলছে — ভালোবাসার মানুষকে যদি ক্ষমাই না করতে পারো তাহলে কিসের ভালোবাসলে ” অরিক শেম অন ইউর লাভ ”

অরিক দুই সত্তার চাপাচাপিতে দ্বিতীয় সত্তার কথাই শুনল -” সত্যিই তো ভালোবাসার মানুষকে ক্ষমা যদি নাই করতে পারো তাহলে কিসের ভালোবাসা। আর যদি সে অনুতপ্ত হয় তাহলে তো আরো দ্রুত ক্ষমা করা উচিৎ।

অরিক কিছু না বলে ক্রন্দনরত আরুকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলায়। স্বামীর আহ্লাদ পেয়ে আরু আরো আহ্লাদী হয় অরিকে টিশার্ট খামচে ধরে ডুকরে কেদে ওঠে অরিকের বুকে আরো মুখ গুজে
অরিক আরু মুখ উঠায় বুকের কাছ থেকে চোখের পানি মুছে কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খায়।

— শুসস কাদে না আরু পাখি। আমি রেগে ছিলাম না অভিমান করে ছিলাম তুমি যদি এসে একটি বার ভালোবার দাবী নিয়ে দাড়াতে আর সব অভিমান গায়েব হয়ে যেতো।

অরিকের কথা শুনে আরো জোড়ে কান্না করে দেয় আরু। মনে মনে ভাবে -” এই লোকটা এতো ভালো কেনো তাকে এতো ভালোবাসে কেন। এতো সহজে তার ভুল গুলো ক্ষমা করে দিলো। কাদতে কাদতে যে কখন ঘুমিয়ে গেলো সে নিজেও টের পেলো না।

বুকে ঘন ঘন নিঃশ্বাস পরতেই অরিক বুঝতে পারে আরু ঘুমিয়ে গেছে। সেভাবেই ঘুমন্ত আরুকে কোলে তুলে নেয়। বিছানায় শুয়িয়ে শরতে নিলেই আরু তার টিশার্ট খামছে ধরে অরিক ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারে না। কথায় আছে না ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে জাগিয়ে দেওয়া যায়। জাগিয়ে থাকা মানুষকে নয়। অগত‍্যা অরিক উপায় না পেয়ে সেই বালিশেই আরুকে বুকে জড়িয়ে পাড়ি দেয় ঘুমের দেশে। অরিকে অলক্ষ‍্যে আরুর ঠোটের কোণে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৬

কেটে গেছে দুই মাস আজকে ওয়াসিমার মেডিক্যাল এন্ট্রান্স এক্সাম। তাইতো সকাল থেকেই সবাই তাদের ফ্ল‍্যাটে হাজির।
বারোটার দিকে পরীক্ষা তাই দশটার দিকেই বের হয়ে যাবে।
আরুও আই এল টি এস পড়াটা বাদ দিয়ে দিয়েছে। অরিক অনেকবার না করেছে তার সাফ কথা — তোমার যেটা করতে মনে চায় সেটাই করো আমার বা আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না।

আরু নিজের ইচ্ছাতেই উচ্চ শিক্ষার জন‍‍্য বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই সে পরিস্থিতির থেকে দূরে যাওয়ার জন‍্যই সেখানে যেতে চেয়েছিল এখন তার প্রয়োজন নেই। তাই সে মাষ্টার্সে ভর্তি হয়েছে পাশাপাশি ঘরে বসেই টুকটাক বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাতে তানিয়া ও এহসান সাখাওয়াত ও সমর্থন দিয়েছে।

___________________

— এই ওয়াসু আর কতক্ষণ মা

— এই তো আম্মু রেডি হিজাবের পিন লাগাতে লাগাতে বলল ওয়াসিমা

— চল ( একসাথে তিনজন বলল )
ওয়াসিমা বাবা, স্বামী ও ভাইয়ের দিকে তাকায়।

— তোমরা সবাই যাবা

— হ‍্যা আম্মা কোনো সম‍স‍্যা
ইরফান ভ্রু কুচকে বলল

— না আব্বু কোনো সমস্যা নেই কিন্তু একজনের সাথে এতোজন গেলে কেমন দেখায় না ( বোকা হেসে বলল ওয়াসিমা )

— কিন্তু আম্মাজান তুমি তো জানো তোমার প্রত‍্যেক পরীক্ষার প্রথম দিন আমি তোমাকে দিয়ে আসি
আড়চোখে আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল ইরফান।

— প্রত‍্যেক পরীক্ষায় গিয়েছেন এবার যাওয়া লাগবে না আমি নিয়ে যাচ্ছি ( শশুরের কথার প্রতিবাদ করে বলল আবসার )

-“- প্রত‍্যেক বার আমি যাই এই বারও আমি যাব ( ওয়াসিমার হাত ধরে বলল )
আবসার ও কম যায়না সে ওয়াসিমার অপর হাত ধর বলল — এবার আমিই নিয়ে যাব দেখি আপনি কিভাবে আটকান। বলেই ওয়াসিমাকে নিজের দিকে টান দেয় ইরফান ও ত‍্যাড়ামি করে বলল -” নিয়ে যাব তো আমিই

— আমি

— না আমি
দুইজনের টানাটানিতে ওয়াসিমার মনে হচ্ছে হাত জোড়া ছিরে পড়ে যাবে সে করুন নয়নে অরিকের দিকে তাকায় যার অর্থ -” ভাই আমাকে বাচাও ”

— চুপ চুপ চুপ একদম চুপ তোমাদের কারোই নেওয়া লাগবে না আমি ভাইয়ের সাথে চলে যাচ্ছি বলেই জোর করে তার হাতে ছাড়িয়ে অরিকের হাত ধরে হনহন করে চলে যায়।

— আম্মাজান দাড়াও আমি আসছি বলেই ইরফান পিছনে পিছনে যায়। তার পিছনে আবসার ও দৌড় মারে।

এতক্ষণ ঘরে থাকা সবাই তাদের শশুর জামাইয়ের দিকে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। গম্ভীর আবসার যে কারো সাথে এরকম ঝগড়া করতে পারে তা এহসান ও তানিয়া সাখাওয়াত জানত না। কিন্তু আরু আর আকলিমাকে দেখে মনে হচ্ছে এগুলো তাদের কাছে নতুন না। আকলিমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রান্নাঘরে যায়,, সকালে মেয়েটা কিছু মুখে দেয়নি তাই আবসারও মুখে দেয়নি। আকলিমা জানে পরীক্ষা দিয়ে এসেই খাওয়া খাওয়া করে পাগল করে ফেলবে। তাই দ্রুত রান্না চাপায়।

— এই আরু এই কোন আবসার কে দেখলাম

— এটাই সত‍্যি মা আমিও প্রথমে অবাক হয়েছিলাম পরে বুঝতে পারি এই শশুর জামাইয়ের সম্পর্ক সাপে নেউলে তারা একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকতে পারে না প্রতিদিন ভাবীর জন‍্য তাদের দুইজনের মধ‍্যে খুটিনাটি লাগতে থাকেই। তা আমরা সবাই উপভোগ করি আম্মু যাও আটকাতে যায় তোমার জামাই তো আরো এককাঠি উপরে সে তাকে আটকাতে দেয় না। আরু হাসতে হাসতে জবাব দেয়।

আরুর কথা শুনে তানিয়া ও এহসান সাখাওয়াতের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে। তারা বুঝতে পারে তাদের ছেলে মেয়ে দুটো আল্লাহর রহমতে ভালোই আছে।

______________________

সকাল সকাল সাখাওয়াত বাড়িতে সবাই নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে। সবাই চুপচাপ এর মধ্যেই এজাজ সাখাওয়াত মুখ খুলল

— আয়মান তুমি দেশে এসেছো আজ দুইমাস এখন পযর্ন্ত অফিস জয়েন করছো না কেনো

— ওহ পাপা আমি এখন কোনো অফিস টফিস জয়েন করতে পারব না। আর আমার এ দেশে থাকার কোনো ইচ্ছাই নেই আমি তো মমকে বলেও দিয়েছি আমি আবার অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাব ( বিরক্ত সহকারে বলল আয়মান )

আয়মানের কথা শুনে এজাজ সাখাওয়াত অবাক দৃষ্টিতে তাকায় আলিয়া সাখাওয়াতের দিকে।
আলিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে তাদের কথা শুনে দিলরুবা সাখাওয়াত হাসে কিছু বলে না।

— কেনো দাদু ভাই বাংলাদেশ কি ভালো লাগছে না আর তুমিই তো সাখাওয়াত গ্রুপ অব কোম্পানির একমাত্র উত্তরাধিকার তুমি ছাড়া কে দেখাশোনা করবে এসব।

— না দাদুম আমি সেখানে ভেনিসাকে রেখে এসেছি। তাকে সেখানে রেখে আমার বাংলাদেশে থাকা পসিবল না।

— প্রয়োজন পরলে তাকেও নিয়ে আসো

— সত‍্যি দাদুম
উচ্ছ্বাস স্বরে বলে আয়মান। দিলরুবা সাখাওয়াত মাথা নাড়ায়। দুই দাদি নাতির কথা শুনে এজাজ ও আলিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

— আমু তুই বিয়ে করেছিস। আর আম্মা আপনিও জানতেন

— ইয়েস মম এতো অবাক হওয়ার কি আছে। আর দাদুমকে আমি কাল বলেছি তাই কেউ জানত না
আয়মানের খাওয়া শেষ হতেই সে উঠে যায়।

আয়মানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আলিয়া শাশুড়িকে প্রশ্ন করল — আম্মা আপনি সব জেনেও কিছু বলেননি কেনো??

— তোমার কানে হয়তো কোনো সমস‍্যা হয়েছে বড় বউমা একটু আগেই তো দাদুভাই বলল আমাকে কালই সব জানিয়েছে

— না আম্মা আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না আপনার কথা আমি বুঝতে পেরেছি আপনি শুরু থেকেই সব জানতেন
আলিয়ার কথার মাঝখানে এজাজ বাধা দিয়ে বলল — আলিয়া মুখ সামলে কথা বলো আম্মা বলছে না সে কিছু জানত না আগে থেকে

— না এজাজ আম্মা আগে থেকেই সব জানতো আম্মাকে বলতে বলো ঝাঝিয়ে বলল আলিয়া।

— যদি আগে থেকেই সব জানি তো তুমি কি করবে আমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না।
বলেই হাসি দিয়ে চলে গেলো তার হাসিতে তাচ্ছিল্য নাকি উপহাস বুঝা গেলো না। দিলরুবা সাখাওয়াত নিজের ঘরে চলে গেলো এজাজ সাখাওয়াত ও নিজের কাজে চলে গেলো। তবে আলিয়া সাখাওয়াত নিজের স্থানে স্থির ভাবে দাড়িয়ে আছে সে বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। সেতো তার বোনকে কথা দিয়ে রেখেছে তার আয়মানের জন‍্য তার বোনের মেয়ে লিমাকে আনবে।

— আপা এখন কি করবি। তুই তো লিমার বাইরে সেটেলড হওয়ার ইচ্ছা দেখে আয়মানকেও বাইরে যাওয়ার কথায় রাজি হয়েছিলি। এখন বড় আপাকে কি বলবি

— জানিনা আমি কিচ্ছু জানি না ভাই বড় আপা লিমাকে নিয়ে কাল আসছে বলেই চেয়ারে বসে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে।

_____________________

পরীক্ষার হল থেকে বের হতেই পিছন থেকে কেউ ডাক দিলো ওয়াসিমাকে। পিছন থেকে ডাক দেয়ায় বিরক্ত হলো ওয়াসিমা পিছনে ফিরে দেখে তার কোচিংয়ের ফাহাদ স‍্যার। সে খুব একটা ক্লাস নিতো না সপ্তাহে একটা ক্লাস নিতো। হঠাত তাকে ডাক দেওয়ায় অবাকই হয় বইকি

— আপনার এক্সাম কেমন হয়েছে মিস ওয়াসিমা

— মিস না স‍্যার মিসেস ওয়াসিমা হবে। আর পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো হয়েছে।

— ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পাবে তো

-“- সেটা আল্লাহ্ ভরসা স‍্যার এখন আমি আসি বলেই পিছন ফিরতে দেখে আবাসার অগ্নি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াসিমার পিছনে থাকা ফাহাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াসিমার হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়ে যায়।
ওয়াসিমা ব‍্যাথা পেলেও কিছু বলে না চুপ করে থাকে।

— কি বলছিলো ঐ লোকটা
মাঠের এককোণে ফাকা জায়গাই দাড় করিয়ে বলল -” কি জিজ্ঞেস করেছিল ঐ লোকটা

— সে আমাদের কোচিংয়ের স‍্যার পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চেয়েছিল ( ছলছল চোখে বলল )

ওয়াসিমার ছলছল চোখ দেখে আবসারের হুশ আসে সে ওয়াসিমার হাত ছেড়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-২১+২২+২৩

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২১

স্নিগ্ধ সকালের আলোয় ঘুম ভাঙ্গে ওয়াসিমার সে আড়মোরা ভাঙ্গতেই বুঝতে পারে সে আবসারের বাহু বন্ধনে বন্দীনি ঘুমের ঘোরেও হলে আবসার তাকে শক্ত আলিঙ্গনে বন্দীনি করে রেখেছে আবসারের থেকে নজর সরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সকাল সাতটা বাজে এরমধ্যেই আবার ঝনঝনিয়ে আবসারের ফোন বেজে ওঠে।

ফোনের রিংটোনে আবসারের ঘুম হালকা হয় অন‍্য হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে দেখে অরিক ফোন করেছে

— শা*লা কই গায়েব হয়ে বসে আছিস আমার বোনটাকে নিয়ে সকাল বেলা তোর বাসায় এসে দুয়ারের সামনে বসে থাকা লাগছে

— আরো একঘণ্টা বসে থাক আমি আসতেছি আর দারোয়ানকে ফোন দিয়ে বলছি আমি চেয়ার দিয়ে যেতে শুধু আমার শশুর শাশুড়ি বসবে চেয়ারে তুই যদি বসিস তোর বা*ম নিয়ে ভবিষ্যতে বসতে পারবি না বলেই অরিককে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয়।

ওয়াসিমাকে আরো একটু নিজের সাথে চেপে ধরতেই __ আমাকে কি ভর্তা বানানোর ইচ্ছা আপনার আর আপনি আমার ভাইয়ার সাথে এইরকম ভাবে কথা বলতে পারেন না ( চোখ ছোট ছোট করে গাল ফুলিয়ে বলল )

আবসার ওয়াসিমা ফুলা ফুলা গালে কতগুলো চুমু দিয়ে বলে — তোর ভাইয়ের আগে সে আমার বন্ধু আর বন্ধুর সাথে সব করা যায় বুঝিয়াছেন মহাশয়া

— জ্বী মাননীয় এবার আমাকে ছাড়েন আম্মু আব্বু এসে মনে হয় বাইরে বসে আছে

-” উহু আরো কিছুক্ষণ থাকো

— বললেই হলো ছাড়েন তো বলেই ছাড়াতে নিলে আরো জাপটে ধরে আবসার।
অনেকক্ষণ পরে বহু কষ্টে আবসারের থেকে ছাড়া পায় তখন ঘড়ির কাটা আটটা পার হয়ে গেছে।

সে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বের হয় ঘর থাকে রান্নাঘরে উকি দিতেই দেখে তানিয়া সাখাওয়াত বাসন মাজছে

— মামনি আমি করি

— উঠে গেছো মা তোমার কিছু করা লাগবে না আমি সব রেডি করে নিয়েছি নাস্তা আমাদের সহ বেয়াই বেয়ানের জন‍্য টিফিন ক‍্যারিয়ারে নিয়ে নিয়েছি তোমাদের ফ্ল‍্যাটে গিয়ে সবাই একসঙ্গে খাব।
ওয়াসিমা তার কথা শুনে একটা মিষ্টি করে হাসি দেয়। সবাই বেড়িয়ে পরে ওয়াসিমাদের বাসার উদ্দেশ্যে এহসান সাখাওয়াত ও আজকে অফিস যায়নি। বাসে বসে জানালার ধারে উদাসীন ভাবে তাকিয়ে আছে আরু হিজাবের এক অংশ বাতাসে উড়ছে আগে আরু হিজাব না পরলেও বর্তমানে ওয়াসিমাকে দেখে দেখে সেও হিজাব পড়া শুরু করে তার ভালো লাগে পরতে। আজ অনেক দিন পর আরু তার প্রিয়তমের দেখা পাবে তাকে দেখে তৃষ্ণা মিটাবে। সেদিন লাবনীর ব‍্যাপারটা মিটমাট হয়ে যাওয়ার পর থেকে অরিকের একদন্ড দেখা পায়নি আরু। অবশ‍্য প্রতিদিন একবার করে ফোন দেয় সে কিন্তু অরিক ফোন রিসিভ করে না। আরু ভেবে পায়না কিভাবে অরিকের মান ভাঙ্গাবে,,,

________________

বিরক্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে আছেন ইরফান
— এর মতো বেয়াদব আমি আজ পযর্ন্ত দেখিনি সেই কখন থেকে বসে আছি এখনো আসার নাম গন্ধ নেই,,

— ছেলেটা যদি বাসায় আসতে না আসতেই ওর সাথে লেগে যাও না তাহলে আজকে তোমাকে আমি ডাইনিংয়ে শোয়াব বলে দিলাম।

স্ত্রীর থ্রেড মূলক বার্তা শুনে চুপ হয়ে গেলেন ইরফান কিন্তু তার আদলের বিরক্তি ভাবটা গেলো না সে ভ্রু জোড়া কুচকে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে

বিশ মিনিট পর ওয়াসিমারা পৌছায় তাদের বাসায়। ওয়াসিমা বাবাকে দেখেই দৌড়ে যায় ঝাপটে ধরে বাবাকে। ইরফান সাহেব মেয়েকে স্নেহের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলায় বাবার আদর মাখা পরশে ওয়াসিমা ঝরঝরিয়ে কেদেঁ দেয়। পিছন থেকে আকলিমা আর অরিক একসাথে বলল — হো আমরা তো কেউনা চাইলে পাইনা। বাবাকে পেয়ে গেছেনা তাই আমাদের ভুলেই গেছে চলো আম্মু আমরা চলে যাই

ওয়াসিমা হালকা হেসে তাদের জড়িয়ে ধরে তারাও ওয়াসিমাকে দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। পারিবারিক এই মিলন মেলা এখানকার প্রত‍্যেকরই ভালো লাগছে।

— আসসালামু আলাইকুম ভাই সাহেব ভালো আছেন ( এহসান সাখাওয়াত ইরফান সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল )
ইরফান সালামের উত্তর নিয়ে নিজেও সালাম দেয় ঐ দিকে তানিয়া, আকলিমা নিজের মতো পরিচয় হয় গল্প শুরু করেছে।
— এবার বাকি গল্প ঘরের ভিতরে ঢুকেও করতে পারি ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল অরিক।
অরিকের কথা শুনে সবার হুশ আসে যে তারা বাইরে বসেই গল্প করছে
সবাই হেসে দেয় আবসার গেট খুলে দিলে সবাই ভিতরে ঢুকে

— মাহতারাম / মাহতারমা সবার সাথে পরে কথা হবে আগে আমাকে একটু নিদ্রা যাবার ব‍্যবস্থা করে দিন বলেই ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বলল — বনু আমাকে একটু ঘুমানোর জায়গা করে দে

-” চলো ভাইয়া আমি বিছানা ঠিক করে দিচ্ছি বলেই অরিককে নিয়ে পাশের রুমে চলে যায় ওয়াসিমা।
সবাই সোফায় বসে গল্প করছে আবসার চলে যায় নিজের ঘরে

— তা ভাই আমাদের অরিক বাবা কি করে

— ভাই আমার ছেলেটা সরকারি কলেজের টিচার ওর জন‍্যই ঢাকায় আসা এখানেই একটা সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে ট্রান্সফার হয়েছে

— ও তা বেশ ভালো বিয়ে সাদী দিবেন না মাশা-আল্লাহ আপনাদের স্টাবলিশ ( বললেন তানিয়া সাখাওয়াত )

— হ‍‍্যা আপা সেই চিন্তাতেই আছি আমার বড় আপা তার মেয়ের জন‍্য প্রস্তাব দিয়েছে আমরা যদি অরিক রাজী হয় তাহলে তাকেই আনব

আকলিমার কথা শুনে আরুর বুকটা ধক করে উঠল সে কিছুতেই মানতে পারল না অরিকের সাথে অন‍্য কারোর বিয়ের কথা।
তার কান্না আসছে কিন্তু এখানে কান্নাকাটি করা যাবে না আবার বড়দের পাশে থেকে উঠতেও পারছেনা।

রান্নাঘরে দাড়িয়ে ওয়াসিমা আরুর মুখের এক্সপ্রেশন পুরোটাই খেয়াল করেছে সে মনে মনে কিছু ভেবে হালকা হেসে নিজের কাজ করতে থাকে। ওয়াসিমাদের ছোট্ট ডাইনিং টেবিলে জায়গা হবে না দেখে সবাই সোফায় বসেছে আবসার টেবিলের চেয়ার গুলো এনে টি টেবিলের সামনে রাখে যেখানে দুইটা টি টেবিলে নাস্তার ছড়াছড়ি।
সবাই নাস্তা শুরু করলেও আরু কিছু মুখে দিতে পারছে না। সেটা আবসার ওয়াসিমা লক্ষ‍্য করে আবসার ওয়াসিমার দিকে তাকালে ওয়াসিমা হাসি বিনিময়ে করে আবসার চারপাশে একবার তাকিয়ে দেখে সবাই নিজের খাওয়ায় ব‍্যস্ত সে আলতো করে ওয়াসিমার হাত ধরে ওয়াসিমা আবসারের দিকে তাকাতেই তাকে চোখ মারে।
খুব জোরে বিষম লাগে ওয়াসিমার আবসার দ্রুত পানি দেয় পানি খেলেও কাশি থামে না কাশতে কাশতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে আকলিমা ওয়াসিমার মাথায় ফু দেয় আর পিঠে মাসাজ করে বলে — এখনো বড় হলি না বাচ্চাদের মতো খাস কি এতো তাড়া যে গবগব করে গিলতে হবে

— আমার মেয়েটার কি দোষ আশে পাশের মানুষেরা যদি বেয়াদবের মতো আমার মেয়েটাকে জ্বালায় তাহলে তার কি

ইরফান সাহেবের কথা শুনে ওয়াসিমা লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে চা বানানোর বাহানায় দ্রুত উঠে পরে। আবসার ওয়াসিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তার পিছু নেয় খাবারের থালা নিয়ে। তারা যেতেই আকলিমা ইরফান সাহেবকে চোখ রাঙ্গানি দেয়

— কি যা সত‍্যি তাই বলেছি তোমার প্রান প্রিয় মেয়ের জামাই আমার মেয়েটাকে একদন্ড শান্তিতে থাকতে দেয়না।

আকলিমা আফসোসের নিঃশাস ছাড়ে আর বাকীরা মিটমিট করে হাসতে থাকে। তানিয়া সাখাওয়াতের ভালো লাগল ওয়াসিমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করে সে মনে মনে একটা পরিকল্পনা করে ফেলল এখন আবসারের সাথে কথা বললেই হয়ে যাবে। তাদের আবসারের প্রতি যে ভালোবাসা বিশ্বাস নিশ্চয়ই তারা আবসারের কথা ফিরিয়ে দিবে না।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২২

— আমি পারব না মামনি। তোমাদের স্ট‍্যাটাসের সাথে অরিকদের স্ট‍্যাটাস আলাদা আমাদের আরুর সাথে তার বিয়ের কথা কিভাবে বলো।

— মানে বাবাই তুই কি আমাকে কখনো দেখেছিস ঐ লোক দেখানো স্ট‍্যাটাসের বড়াই করতে

— তুমি করনা বলে তোমার মেয়ে করবে না এমন কথা তো কোথাও নেই।

— মানে তোর কথার কিছুই আমি বুঝলাম না

— তুমি আরুকে যেয়ে জিজ্ঞেস করো তাহলেই সব উত্তর পেয়ে যাবে। আবসারের কথা শেষ হতেই তানিয়া কোনো কথা না বলে অন‍্য ঘরে যায়। আরু বিছানায় বসে উদাসীন ভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে কারো ছোয়ায় সেদিক থেকে নজর সরিয়ে নেয়
— কি হয়েছে আম্মু
তানিয়া সাখাওয়াত কোনো কথা না বলে তাকে হিড়হিড় করে টেনে আবসারের ঘরে নিয়ে যায় আবসারের সামনে আরুকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে — এগুলো কি বলছে বাবাই আরু

— কি হয়েছে আম্মু ভাই কি বলেছে। ভাইয়া কি হয়েছে আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল

— তুমি কি কখনো স্ট‍্যাটাসের তুলনা করেছে কারো সাথে। তানিয়ার কথা শেষ হতেই আরু মাথা নিচু করে ফেলে
— এখন মাথা নিচু কেনো সত‍্যি করে বলোতো কি হয়েছে এমন কিছু নিশ্চয়ই হয়েছে যা আমরা জানি না অথচ তোমরা দুই ভাই বোন জানো

— আমি বলছি মামনি। আরু যখন প্রথম আমাকে আনতে সিলেট যায় তখন তার অরিকের সাথে দেখা হয় সেই প্রথম দেখাতেই অরিক তাকে পছন্দ করে। আমাকে বললে আমি মানা করে দেই কিন্তু সে হার মানেনি সে আরুর পিছনে লেগে থাকত আরু যখনই আসত তখনই আরুর পিছু পিছু ঘুরত। একবার তো আরুকে প্রোপোজ করে বসে আরু ফিরিয়ে না দিলেও মানা করেনি তারপরেও অরিক হাল ছাড়ে নি। এক সময় আরু একসেপ্ট করে নেয় অরিকের প্রোপোজাল ভালোই দিন কাটল। হঠাৎই একদিন আরু সিলেট আসে অরিককে ডাকে সেদিন আমাদের মাষ্টার্সের শেষ পরীক্ষা তাই আমিও যাই ওর সাথে কিন্তু আরু জানত না —,,,,,”–

-” হঠাৎই এতো ইমারজেন্সি আসলে যে
পার্কে বসে থাকা আরুর সামনে বসে হাপাতে হাপাতে বলল অরিক আবসার তখন পিছনেই মাত্র সে অরিকের সামনে আসতে নিবে তখনই আরুর কথা শুনে থেমে যায়

— আমি রিলেশনটা আর রান করতে চাচ্ছি না

— মানে এসব কি বলছ তুমি অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করল অরিক,,

— হু যা বললাম তাই সত্যি তোমার সাথে আমার কোনোভাবেই যায় না আমাদের স্ট‍্যাটাস আলাদা তোমাদের স্ট‍্যাটাস আলাদা তোমরা মধ‍্যবিত্ত তোমার ফ‍্যামিলিতে আমি কখনও সুখী হবো।

-” রিলেশনের এতোদিন পর স্ট‍্যাটাসের কথা মনে পরল। যাই হোক আমি অনেক পরিশ্রম করব দিনরাত হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে তোমার সব আবদার পুরোন করার চেষ্টা করব অনুনয় স্বরে বলেই আরুর গালে হাত দিতে নিলেই আরু সরে যায়।

-” একবার কথা বললে কথা কানে যায়না নাকি বলেছি না তোমার জীবনের ধরন আলাদা আমার জীবনের ধরন আলাদা সো স্টে অ‍্যাওয়ে ফ্রোম মি ওকে বলেই পিছন ফিরে পা বাড়াতে নিলেই অরিক তার হাত পিছন থেকে ধরে

— এমন করো না আরু জান আমার সাথে আমি মরে যাব প্লিজ আমি নিঃশেষ হয়ে যাব। কান্না করতে করতে বলল অরিক সেইদিন প্রথম আরু অরিককে কান্না করতে দেখেছিল পিছন ফিরে একবার অরিকের অশ্রুসিক্ত আদলে চেয়ে আবার সামনের দিকে ফিরে বলল — আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না আমার অন‍্য একজনের সাথে সম্পর্ক আছে তাকে আমি ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করব তার সাথে আমার সব দিক দিয়েই মিলে বলেই চলে গেলো। অরিক মাটিতে বসে চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিলো আরু চলে যেতেই অরিকের কাছে আবসার আসে। সেদিন থেকেই দুষ্টু অরিক শান্ত শীষ্ট হয়ে গেলো আবসার দশটা কথা বললে একটার উত্তর দিতো খাওয়া দাওয়ার ঠিক নেই আবসার প্রতি বেলা জোর করে খাওয়াতো। সারারাত বসে বসে কান্না করতো এইসব মেনে নিতে না পেরে আবসার তাকে নিয়ে অরিকের বাড়ি আসে। সেখান থেকে আরুর সাথে কথা বলার জন‍্য সাখাওয়াত বাড়ি যায় সেখানে গিয়েই জানতে পারে এইসব তাকে দিলরুবা সাখাওয়াত করতে বলেছে বিনিময়ে আবসারের জন‍্য সাখাওয়াত বাড়ির দরজা খোলা সারাজীবনের জন‍্য।

আবসারের কথা শেষ হতেই তানিয়া সাখাওয়াত ঠাসস করে থাপ্পর মারে আরুর গালে। আরু অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকায়,,,

— আম্মু

— তুমি যা করার নিজেই করলে হ‍্যা একবারও আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না,, আরু ঝাপটে ধর তানিয়া সাখাওয়াতকে অনবরত কান্না করতে থাকে আর বলতে থাকে -” ঐ লোকটাকে আমি অনেক ভালোবাসি আম্মু তাকে কষ্ট দিতে চাইনি আম্মু আমিও তো তাকে ছাড়া ভালো ছিলাম না তার পাশে তাও ভাই ছিলো আমার পাশে কাউকে পাইনি আর কাউকে বলতেও পারিনি। তানিয়া সাখাওয়াত বুঝেন মেয়ের পরিস্থিতি সে আবসারের দিকে তাকায়

— আমি কথা বলে দেখব মামনি কিন্তু এই বিষয়ে
অরিককে জোর করতে পারব না।
তানিয়া সাখাওয়াত মাথা নাড়িয়ে চলে যায় আরুকে নিয়ে। তারা যেতেই ওয়াসিমার ফোন আসে
-” মামনি কি বলল

— কি বলবে আর আরু জোরালো ভাবে একটা থাপ্পর পেয়েছে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল

-” ইয়া আল্লাহ্ মামনি আপুকে মেরেছে নাকি

-” আমি পারলে আরো দুই একটা মারতাম অরিকের সেই কষ্টের দিন গুলো দেখেছি আমি ওকেও ততটুকু কাদাব আমি বুঝেছিস। যাই হোক তোদের আসতে আর কতক্ষণ

— আর আধ ঘন্টা

— হু তাড়াতাড়ি আয় আমি রাখছি বলেই কেটে দেয় কলটা।
অরিকের জন‍্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে এই কথাটা আবসার আর ওয়াসিমার প্ল‍্যান ছিলো তারা এই ভাবে আরুকে জেলাস ফিল করিয়ে কথা বের করতে চেয়েছিল কিন্তু বিকেলে তানিয়া সাখাওয়াতের ইঙ্গিতে তাদের রাস্তা আরো সহজ হয়।
তাইতো সবাই যখন অরিকদের ফ্ল‍্যাটের জন‍্য মালামাল পত্র কিনতে বের হয় তখন আবসার থেকে যায় আর তানিয়া সাখাওয়াত থাকে আবসারকে তার মনের কথাটা বলতে যা আরু আর অরিকের বিয়ের ব‍্যাপারে।

_______________________

রাতের দিকে সবাই খাবারের টেবিলে বসলেও আরু নিজের ঘরেই থাকে।
আবসার সবার দিকে তাকায় দেখে সবাই চুপচাপ খাওয়াতে ব‍্যস্ত তার মনে হয় এটাই সঠিক সময়

— আম্মু আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে আপনারা সবাই খাবারের পরে একসাথে বসবেন

— কি কথা বাবাজি

-” সেটা নাহলে তখনই বলি। আবসারের কথার উত্তরে আকলিমা মাথা নাড়িয়ে আবার খাওয়া শুরু করে কিন্তু ইরফান সাহেব আবসারের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে আবসারও তার দিকে তাকিয়ে চোখ মারে

— বেয়াদব ছেলে বিড়বিড় করে বলে আবার নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই একসাথে বসে আছে আবসার কি বলে জানার জন‍্য এর এহসান ও তানিয়া জানলেও। আকলিমা আর ইরফান শুধু ধারনার মধ‍্যে আছে কিন্তু যাকে নিয়ে কথা সেই এখনো বাসায় আসে নাই ওয়াসিমা ফোন করেছিল বলল সে আসছে পাঁচ মিনিটের মধ‍্যে। একটু পরে কলিং বেলের শব্দ দরজা খুলল ওয়াসিমা

— এতো দেরী হলো ক‍্যান ভাই

— আজকে তো আবসার কারখানায় যায়নি তাই আমি গিয়েছিলাম সব গুছিয়ে আসতে আসতেই একটু দেরী হয়ে গেলো বলেই ওয়াসিমা মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে ঘরে ঢোকে।

— আম্মু তোমরা এখনো এখানে কেনো চলো ঘরে যাই ভিতরে আকলিমা আর ইরফানকে দেখে বলল।

— রিক এখানে বস

— কিছু বলবি আবসার

— হ‍্যা সবাই চাচ্ছে তোর আর আরুর বিয়ের দিতে।
আবসারের কথা শুনে বসা থেকে দাড়িয়ে যায় অরিক যাওয়ার আগে শুধু এইটুকুই বলল — সম্পর্ক হয় সমানে সমানে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৩

__ঘোর অমানিশায় ডুবে আছে আকাশ। প্রতিদিন আকাশে ছোট ছোট তারা রুপালি থালার মতো চাদঁ থাকলেও আজকে আকাশ কেমন থম মেরে আছে।

— আজকে আমার মতো তোমার ও মন খারাপ আকাশ “” ও আকাশ তুমি জানো সে তার পরিবার আজকে আমার সাথে তার বিয়ের কথা বলেছে। তুমি বলোতো তাকে সব ভুলে কিভাবে মেনে নেই,, যে আমাকে এতো কথা শুনানোর পরেও বেহায়ার মতো তাকে ফোন দিতাম সেটাও সে ইগনোর করত তাও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু সে যেদিন আমার বাবা মা তুলে গালি দিয়েছিল আমার আম্মু আব্বুর শিক্ষায় আঙ্গুল তুলেছিল সেই দিন থেকে মনস্থির করেছিলাম আর যাই হোক ঐ মেয়ের কাছে আর কোনোদিন ফিরে যাব না। ( আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলতে থাকে অরিক )

— মানুষ মাত্রই ভুল ভাইয়া
ওয়াসিমার কথা শুনে পিছনে তাকায় অরিক। ওয়াসিমা ভাইয়ের পাশে ভাতের থালা নিয়ে ভাত মাখিয়ে মুখের সামনে ধরে। অরিক নিঃশব্দে ওয়াসিমার হাতে খেয়ে নেয় এতক্ষণ চুপচাপ থাকলেও এখন মনে হয় খিদেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে,,

— তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো ভাইয়া

— এটা আবার কেমন কথা ওয়াসুমনি। তোকে আমি কতটা ভালোবাসি তুই জানিস না দুনিয়ার সব একদিকে তুই আরেকদিকে

— তাই বলে তোমার বন্ধু বলাতে এক কথায় তার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজী হয়েছো

— কথাটা সেরকম না ওয়াসুমনি। আবসার তোকে অসম্ভব ভালোবাসে যার সাক্ষী আমি তোকে পাওয়ার জন‍্য ছটফট করেছে আর আমি জানতাম আবসার তোকে সুখে রাখবে

— আচ্ছা ভাইয়া তোমাকে বাবা যদি কখনো বলত আমার নিজের বোন আর বন্ধুর মধ‍্যে কাউকে বেছে নিতে তুমি কি করতে
( প্রশ্নটি করেই ওয়াসিমা হাতের লোকমাটা অরিকের মুখে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায় )
ভাত মুখে নিয়ে অরিক চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে উত্তর তার জানা কিন্তু বলতে পারছে না -” সে অবশ্যই তার বোনকে বেছে নিতো হ‍্যা বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ায় তার কষ্ট হতো কিন্তু সে জানে সে তার বোনকেই বেছে নিতো যাকে সন্তানের মতো লালন করেছে তাকে কিভাবে ছেড়ে দিতো।

— বললে না ভাইয়া আর ভাত চিবাও গালে গুতো দিয়ে বলল ওয়াসিমা “‘ অরিক চুপ থাকলে আবার বলা শুরু করল — তুমি যেমন নিজের বোনকে বেছে নিতে আরু আপুও কিন্তু সেই কাজটা করেছে সে ভেবেছে তার দুঃখী ভাইটাকে যদি একটু পরিবারের সুখ দেওয়া যায়। তাহলে সে সর্বরকম চেষ্টা করবে তাই তোমাকে ছাড়তে দ্বিতীয়বার ভাবেনি।
অরিক মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে ওয়াসিমা হাতে খালি থালাটা নিয়ে দাড়িয়ে পরল যাওয়ার আগে সে শুধু অরিককে একটা কথাই বলল -” ভেবে দেখো ভাইয়া

“- মানলাম তোর কথাই ঠিক তারপরেও ওর কি উচিৎ ছিলো সব কিছু ঠিক হওয়ার পর একবার জানানো সবকিছু। সে কি একবারও চেষ্টা করেছে আমার সাথে যোগাযোগ করার,,,

— তা ঠিক আপু সেটা করেনি কিন্তু সে যদি করত চেষ্টা তুমি তাকে ক্ষমা করে তার কথা শুনতে

— আজকে শুনতাম না কালকে শুনতাম না কিন্তু একদিন ঠিকই শুনতাম কই তার দিক থেকে তো কোনো রকম প্রচেষ্টা আমি দেখিনি কখনও।

অরিকের কথা শুনে ওয়াসিমা ভাবে আসলেই তো আরুর কেনো প্রচেষ্টা কারোর চোখেই পরেনি ।

— আর বসে না থেকে ঘরে যাও ঘুমিয়ে পরো। আর ভাবী হিসেবে আমি আরু আপুকেই চাই আব্বু আম্মু মামনিদের হ‍্যা বলে দিয়েছে। বলেই ওয়াসিমা চলে হ‍্যা ইরফান আর আকলিমা বিয়ের জন‍্য রাজী হয়েছে তারা জানে অরিক আরুকে অনেক ভালোবাসে। অরিক বর্তমানে না করলেও পরে ঠিক হয়ে যাবে তাইতো তারা আর দেরী করতে চায়নি সামনের শুক্রবার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ঘরোয়া ভাবে আকদ করে পরে দুইজনের মান অভিমান ঠিক হলে ধুমধাম করে ওয়ালিমা করবে।

__________________

দরজার নব ঘুরিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে আবসার এক কাত হয়ে শুয়ে আছে। ওয়াসিমা পাশে শুতেই তরাক করে তাকে ঝাপটে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে পরে। ওয়াসিমা প্রথমে ভয় পেলেও পরে শান্ত হয়

-” আপনি কখনও শোধরাবেন না

-” উহু বলেই আরো শক্ত বাধনে বাধে
ওয়াসিমাও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ‍্যে।

নিস্তব্ধ নগরীতে সবাই ঘুমিয়ে পরলেও পেচার মতো জেগে আছে দুটি নর-নারী। ছাদের দেয়ালের কার্নিশ ঘেসে দেয়ালে হ‍্যালান দিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে তার মনে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে অর্ধেক আনন্দ অর্ধেক কষ্ট কোনটা প্রকাশ করবে ভেবে পায়না।

অন‍্যদিকে,,
আরু ঘরের জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে সে বিয়ের ঠিক হয়েছে এই কথাটা জানে না। সে জানে অরিকের সাথে তার সেই খালাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে সবাই তাকে তাই বলেছে। অরিক চাইছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি করতে তাই সবাই সামনের শুক্রবার বিয়েটা ঠিক করা হয়েছে।
আরুর এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে সে অরিককে ভালোবাসে তার অন‍্যকারো সাথে বিয়ে হতে পারে না না
— ভাবী আমাকে সাহায্য করতে পারবে। আমি এখনই ভাবীর কাছে যাব বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলেই থেমে যায় আরু এখন রাত আর গিয়েই বা কি বলবে — যে তোমার ভাইকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি এতো কষ্ট দিয়েছি যে সে আমার হাত পা ধরতেও দ্বিধাবোধ করেনি। না না আমি বরং কাল সকালেই বলল হ‍্যা ভেবেই থেমে যায় অথচ আরু জানতো না কাল দিনটা তার বেশ ভারী যাবে।

______________

— আম্মা কাল আয়মান আসছে আলিয়া সাখাওয়াত রাতে সবাইকে খাবার দিতে দিতে বলল

— সেটা আসারই কথা তাকে ভালো লেখা পড়া করানো এবং তার ভালো ভবিষ্যতের জন‍্যই তো সব করা তাইনা।

— আমি এভাবে কিছু বলিনি আম্মা

— সে যাই হোক বড় খোকা আমি কালকে ছোটর বাড়িতে যাব আরুর বিয়ে তো তাই তোকে মনে হয় ফোন করেছিল।

— হ‍্যা আম্মা আমি তোমাকে সকাল সকাল দিয়ে আসব,,

— আরুর বিয়ে কই আমাকে কিছুতো বললে না কথার মাঝখানে আলিয়া সাখাওয়াত বলল

— হ‍্যা আমি আর আম্মা সকালে যাব তুমি যদি যাও তো রেডি থেকে ওহ তুমি আবার কিভাবে যাবে কালতো আবার আয়মান আসছে।

এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে আলিয়া সাখাওয়াত কিছু বললেন না আজকে তার শাশুড়ির কথাও বেশ অন‍্যরকম লাগল সে কি কিছু জানতে পেরেছে নাকি।
তার ভাবনার মাঝেই দিলরুবা সাখাওয়াতের খাওয়া শেষ হয়ে যায় সে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে নিজের ঘরে যায় যেতে যেতে সাখাওয়াত ভিলার চারিদিকে তাকায়। তার সর্বপ্রথম ভুল তানিয়াকে না মানা। দ্বিতীয় ভুল ইরিনাকে এজাজের বউ করে আনা তৃতীয় ভুল ছিলো সেদিন আলিয়ার সব কথা শুনে প্রতিবাদ না করা তাকে বিশ্বাস করা।
এবার থেকে আলিয়া বুঝবে যার জন‍্য করবে চুরি সেই বলবে চোর — অন‍্যের ছেলের জন‍্য কুয়ো খুরলে সেই কুয়োতে নিজেই পরতে হয় এবং সেই দ্বিতীয় কুয়োটা খুরেছে দিলরুবা সাখাওয়াত নিজে খুড়েছে ভেবেই হালকা হাসল দিলরুবা সাখাওয়াত।

— কাল আয়মান কখন আসবে খেতে খেতে বলল এজাজ সাখাওয়াত

— বলল তো সকাল ফ্ল‍্যাইট ল‍্যান্ড করবে

— হু আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো

— তুমি যাবে না

— কালকে আম্মাকে এহসানের বাড়িতে ছাড়তে যাব এককাজ করো তোমার ছোট ভাইতো আমাদের সাথে থাকে এখন তাকেই নাহয় বলো এয়ারপোর্ট যেতে বলেই উঠে পরে।
আলিয়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ইদানীং এজাজ কেমন যেনো তার থেকে দূরে দূরে থাকে কেনো কিছু ভেবে পায় সব যেনো এক ঝটকায় এলোমেলো হয়ে গেছে।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-১৫+১৬+১৭

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৫

কোচিং সেন্টারের সামনে দাড়িয়ে আছে আবসার ওয়াসিমা কোচিং সেন্টারটা তাদের বাসার থেকে পায়ে হেটে দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত সকাল দশটায় ওয়াসিমার ক্লাস তাই আবসার তাকে নিয়ে আসে তাকে কোচিং সেন্টারে পৌঁছে দিয়েই চলে যাবে অফিসে সে

— মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করবি ওয়াসিমার মাথার হিজাব ঠিক করতে করতে বলল আবসারের কথা শুনে ওয়াসিমা হালকা হেসে মাথা নাড়ায়। আবসার ওয়াসিমাকে ক্লাসে পৌঁছে দিয়ে ম‍্যানেজারের সাথে কথা বলে আসে।
ক্লাসের মধ‍্যে বসে আছে ওয়াসিমা সে একাই বেঞ্চিটাতে বসে আছে এখানে মোটামুটি সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে নিজেদের মত গল্প করছে অচেনা জায়গায় ওয়াসিমার একটু খারাপ লাগে কিন্ত কিছু করার নেই সব পরিবেশে মানিয়ে নীতে হবে তাই ভেবেই চুপচাপ বসে থাকে এর মধ‍্যেই ক্লাসে শিক্ষক প্রবেশ করেন সবাই দাড়িয়ে তাকে সালাম দেয়

— আজকে তোমাদের প্রথম ক্লাস তাই আজকে কোনো ক্লাস নয় একটু পরিচিত হব একজন আরেকজনের সাথে পড়াশোনা করতে আসলে পরিচিত হলে বন্ধুত্ব হলে তোমাদের এবং আমাদের ভালো লাগবে। একে একে সবাই পরিচিত হয় সবার শেষে আসে ওয়াসিমার পালা আসে

— আসসালামু আলাইকুম আমি ওয়াসিমা ইস্তত স্বরেই বলল সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে ওয়াসিমার দিকে তাই তার অস্বস্তিটা আরেকটু বেড়ে যায় কিন্তু এসবের মাঝে একজন ব‍্যক্তি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে সেই দিকে তার ধ‍্যান নেই সে মাথা নিচু করে স‍্যারের সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে বসে পড়ে।

______________________

— আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন আসেননি কেনো
আবসার অফিসে ঢুকতে না ঢুকতেই কোথা থেকে জুলি এসে তাকে কথাটি বলল। জুলির কথায় বিরক্ত হয় আবসার তাকে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে নিতেও থেমে যায় অতঃপর গম্ভীর স্বরে বলল — আমি এই কম্পানির একজন এমপ্লই আমার সকল কাজের জবাব এম ডি স‍্যারের কাছেই দিব আর হ‍্যা এরকম হুটহাট আমার কেবিনে আসবেন না কোনো কিছুর দরকার হলে আপনার পি একে পাঠাবেন এখন আপনি আসতে পারেন বলেই আবসার নিজের মতো ফাইলে মুখ গুজে।
জুলি অনিমেষ আবসারের দিকে তাকিয়ে থাকে সে হেরে যাবার পাত্রী না সে যেকোনো ভাবেই আজকে আবসারকে নিজের মনের কথা জানাবেই
— আবসার আমি আজকে একটা জায়গা যাব তুমি একটু আমার সাথে যাবে প্লিজ তুমি গেলে অনেক হেল্প হবে অনুনয় ভঙ্গিতে বলে

— আমার অনেক কাজ জমা আছে মিস জুলি আমি প্রায় একসপ্তাহ পরে অফিস এসেছি অনেক কাজ জমা আছে শক্ত কন্ঠে বলল আবসার তারপরেও মিস জুলি যাচ্ছেনা দেখে আবার আবসার বলল — আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে বেতন দেয় না মিস আমি এখন কাজ করব আপনি আসুন। আবসারের কথা শুনে জুলি নিরাস হয়ে চলে যায়
মিস জুলি চলে যেতেই আবসার পিয়নকে ডাক দেয়

— আসব স‍্যার

— হ‍্যা আমার কেবিনের দরজা সহ পুরো ফ্লোর ভালো করে পরিষ্কার করবে বলেই আবসার বের হয়ে যায় কেবিন থেকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে — ব্লাডি স্ল‍্যাটার্ন সে কি ভেবেছে আমি তার উদ্দেশ্য জানিনা হিপোক্রিট গার্ল মনে মনে কিছু ভেবে সে ক‍্যান্টিনের উদ্দেশ্যে যায়।

_____________________

সাখাওয়াত ভিলার আলিশান ড্রইংরুমে বসে আছে এজাজ সাখাওয়াত একটু পরেই ইরিনা সিড়ি দিয়ে নামে সে এজাজ সাখাওয়াতের সামনে বসতেই তাকে এজাজ সাখাওয়াত গম্ভীর স্বরে বলল — কিছু নোটিশ পেয়েছিলেন আপনি

— হ‍্যা এবং সেই নোটিশের পরোয়া আমি করি না আইনত এখনো আমি তোমার স্ত্রী সেই হিসেবে তোমার সকল সম্পত্তির অংশীদার আমি এবং আমাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার অপরাধে আমি তোমাকে জেলেও দিতে পারি বলেই ইরিনা জামান হাসল। যেটা এজাজ সাখাওয়াতের কাছে গা জ্বালানো হাসি মনে হলো।
তিনি কিছু না বলে হাসল তার হাসির বিনিময়ে হাসি মুখেই বলল — যার জন‍্য এতো কিছু সেই তো এখন নেই
এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে হাসি মিলিয়ে গেলো ইরিনার। এজাজ সাখাওয়াত ইরিনার শুকনো মুখে তাকিয়ে তার ফোন বের করে কিছু দেখায়। যা দেখে ইরিনা সাথে সাথে দাড়িয়ে যায় ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে।সে এজাজ সাখাওয়াতের ফোনে একটা ছেলের গতি বিধী লক্ষ্যে করে কিছু ভিডিও ক্লিপস।
তার ভয়ার্থ মুখের দিকে তাকিয়ে এজাজ সাখাওয়াততের হাসিটা আরো চওড়া হয়

— সত‍্য কখনো লুকিয়ে থাকে না আকাশ চন্দ্র সূর্যের মতো প্রকাশিত সত‍্য যেটা হাজার চেষ্টা করলেও লুকানো যায় না আপনি কি ভেবেছেন আপনার যে একটা অবৈধ ছেলে আছে সেটা কেউ জানতে পারবে না।
এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনেও দমে যাওয়ার পাত্রী সে না তাই ঝাঝালো স্বরে বলল — তোমার কাছে কি প্রমান আছে এই ছেলেটা আমার ছেলে

— প্রমান আপনার চোখ যা মাতৃ স্নেহে জলজল করছে তারপরেও যদি আপনি বলেন যে এই ছেলেটা আপনার ছেলেটা না তাহলে তার আশে পাশেই আমার লোকজন ঘুরঘুর করছে মেরে ফেলি তাকে কি বলেন কে মরল কে বাচল তাতে তো আপনার কিছু যায় আসে না তাই না বলেই ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কল ডায়াল করে ইরিনা দৌড়ে এসে এজাজ সাখাওয়াতের হাতে থেকে ফোন নিয়ে জোরে আছার মারে ফ্লোরে ফোনটা দু টুকরো হয়ে যায়।

— চু চু এবার করো দেখি ফোন

— আপনি ভাঙবেন তবু মচকাবেন না বলেই ব্লেজারের পকেট থেকে আরেকটি ফোন বের করে

ইরিনা সেটাও নিতে গেলে হাত সরিয়ে দেয় এজাজ — আমি ফোন না দিলেও আধ ঘন্টা পর আপনার ছেলে বুম
তার কথা শুনে ইলিনা ধপ করে বসে পরে এই সুযোগে এজাজ তার সামনে ডিভোর্স পেপার রাখে ইরিনাও নিঃশব্দে সাইন করে দেয়।

ডিভোর্স পেপারে হাত বুলায় এজাজ এইতো তার মুক্তির সনদ। কাবিন নামা নামক একটা কাগজে সাইন করে এই মহিলাটি তার জীবনে দুর্বিষহ করতে দুবার ভাবেনি এইভাবেই তালাক নামায় সাইন করে সে মুক্তি পেয়েছে এখন সব ঠিক করার পালা এই মহিলার জন‍্য যত সম্পর্ক ভেঙেছে সব জোড়া লাগাবে সে একটু কষ্ট হবে কিন্তু সে হাল ছাড়বে না ভেবেই উঠে দাড়ায় যাওয়ার আগে ইরিনাকে দুই দিনের মধ‍্যে বাড়ি খালি করতে বলে যায় সে এই বাড়িতে নতুন ভাবে কাজ করাতে চায় পরসু দিনই লোকেরা এসে কাজ শুরু করবে।

এজাজ সাখাওয়াত যাওয়ার পরে নিঃশব্দে উঠে নিজের ঘরে চলে যায় ইরিনা।

____________________

ওয়াসিমা ছুটির পরে বাইরে আসতেই দেখে তার জন‍্য আরু দাড়িয়ে সেও আই এল টি এস করার জন‍্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে যেটা ওয়াসিমার কোচিং সেন্টারের দুই তলায়

— আপু তুমি এখনো বাসায় যাওনি আরো আগে না তোমার ছুটি হয়েছে

— না ভাবী যাইনি দুজন তো এক বাসায় যাব তো ভাবলাম একসাথেই যাই

— তাও এতক্ষণ দাড়িয়ে ছিলে শুধু শুধু

— সমস‍্যা নেই চলোতো বলেই ওয়াসিমার হাত টেনে নিয়ে যায় দুই ননদ ভাবী হাটতে হাটতে বাসার দিকে এগোয়

— একটা কথা বলি আপু
— হ‍্যা বলোনা জিজ্ঞেস করার কি আছে হাসি মুখে আরু বলল। ওয়াসিমা তাকায় তার দিকে তার মনে হচ্ছে হাসিটা নকল

— তুমি কি আমার ভাইয়াকে আগে থেকেই চিনতে

— হ‍্যা চিনতাম তো ভাইয়ার বন্ধু হিসেবে সিলেটে অনেকবার দেখা হয়েছে

— শুধু এইটুকুই সন্দিহান ভাবে বলল ওয়াসিমা

— হহ‍্যা কোনো রকম ভাবে বলল আরু
কিন্তু ওয়াসিমার কথাটা বিশ্বাস হলোনা সে সিলেটে থাকাকালীন দেখেছে অরিক আর লাবনীকে দেখে কেমন উদাসীন থাকত।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৬

আবসার যখন বাসায় ফিরে তখন সন্ধ‍্যা প্রায় ওয়াসিমা মাগরিবের নামাজ শেষ করেই রান্না চরিয়েছে এক চুলায় আরেকটি চুলায় হালকা কিছু খাবারের ব‍্যবস্থা করছে এর মধ‍্যেই কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেয়। ক্লান্ত আবসার হাতে বাজার নিয়ে দাড়িয়ে আছে বাজার দেখে ওয়াসিমার চোখ কপালে

— এতো বাজার কালকেই না বাজার করলেন ( আবসারের হাতের থেকে কিছু ব‍্যাগ নিতে নিতে বলল )

— কালকে মা বাবা আসবে সাথে অরিক তাই বাজার করলাম পরসু থেকে এইটু ব‍্যস্ত থাকব বাসায় কখন আসব ঠিক নেই তাই কয়েকদিনের বাজার একসাথে করে রাখলাম সোফায় বসতে বসতে বলল আবসার
ওয়াসিমা কিছু না বলে ব‍্যাগ গুলো ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে রেখে রান্নাঘরে চলে যায় আবসারের জন‍্য শরবত করতে। আবসার এর মধ‍্যে কিছু ব‍্যাগ আলাদা করে আরুকে ডাক দেয়

— কখন আসছো ভাইয়া ঘরের থেকে বের হতে হতে বলল আরু

— একটু আগেই এসেছি এটা নে হাতে থাকা ব‍্যাগটা আরুকে দিয়ে বলে

— কি এতে

— এই পযর্ন্ত তো তোকে কিছু দেইনি আজ ভাবলাম কিছু দেই ভাইয়ের সাধ‍্য মতো দুই সেট থ্রি পিছ আছে আবসারের কথা শুনে আরু কিছু না বলে তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে
— এই কাপড় গুলো আমার কাছে অমূল্য ভাইয়া বলেই হু হু করে কান্না করে দেয় আরু
ওয়াসিমা রান্নাঘর থেকে আবসারের জন‍্য শরবত এনে দেখে আরু আবসারের বুকে কাদছে আর আবসার তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে

— কি হয়েছে আপুর কাদছে কেনো
আরুকে কান্না করতে দেখে বলল ওয়াসিমা তার কথা শুনে আরু আবসারের বুক থেকে মাথা উঠায় চোখ মুখ মুছে হাসির রেখা টেনে ওয়াসিমার চিবুকে হাত রেখে বলল — খুশিতে ভাবী তুমি আমাদের দুই ভাই বোনের জন‍্য সুখের চাবি কাঠি তুমি আসতে সব আস্তে আস্তে কেমন ঠিক হচ্ছে।
ওয়াসিমা আরুর কথার আগা মাথা কিছু বুঝে না তাই সে আবসারের দিকে তাকায় আবসার হালকা হাসে

— খুশী হোক আর যাই হোক আপু এখন না কেদেঁ এই কান্না জমিয়ে রাখো আরুর হাতে পাস্তার বাটি ধরিয়ে দিয়ে বলল। পাস্তার বাটি দেখে আরু ওয়াসিমাকে বলে — ভাবী একা একা করতে গেলে কেনো আমি বলিনি আমি আসছি।

— সে রাতের রান্না আর কালকের রান্নার সময় করো এখন এটা খাও আর আপনার জ ( বলে সামনে তাকাতেই দেখে আবসার নেই ঘরে চলে গেছে ভেবে আরুকে খেতে বলে ঘরে চলে যায় সাথে করে আবসারের জন‍্যও একবাটি পাস্তা নিয়ে যায় )
ঘরে ঢুকে আবসারকে পায়না সে ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসতেই বুঝে সে ওয়াশরুমে আছে সে ট্রেটা বেডের সাইটের টেবিলে রেখে আবার রান্নাঘরের যায় কিছুক্ষণ পরে আবসার বেড়িয়ে এসে ওয়াসিমাকে ঘরে না দেখে বিরক্ত হয় সে ইচ্ছে করেই তখন ঘরে চলে আসে যাতে ওয়াসিমাও তার পিছু পিছু ঘরে আসে কিন্তু দেখো এই মেয়ে এসে আবার চলে গেছে তাই সে কর্কশ শব্দে ওয়াসিমাকে ডাকল — ওয়াসু কই তুই ওয়াসু

আবসারের হাক ডাক শুনে আরু দ্রুত রান্নাঘরে আসে — ভাবী তুমি ঘরে যাও আমি দেখছি

— এই তো আপু ভাত গর দিয়েই যাই ভাতের মার ছাড়াতে বলল ওয়াসিমা
— আরে তুমি যাও তো বলেই ওয়াসিমাকে রান্নাঘর থেকে ঠেলে বের করে দেয় ওয়াসিমা চলে যায় নিজের ঘরে
— কি হয়েছে আর আপনি এখনো শরবতটা খাননি
আবসার কি না বলে তার পাশে বসতে বলে ওয়াসিমা আবসারের পাশে বাবু হয়ে বসে আবসার অর্ধেকটা শরবত নিজে খেয়ে বাকিটা ওয়াসিমা সামনে ধরে ওয়াসিমাও বীনা বাক্যে খেয়ে নেয় কারণ জানে বলেও লাভ হবে না তারপর দুজনেই একসাথে পাস্তা খেতে শুরু করে

— আপনি জানলেন কিভাবে কালকে আব্বু আম্মু আসবে

— অরিক ফোন দিয়েছিল ওর ট্রেনিং শেষ আবার ঢাকার মধ‍্যে একটা কলেজে ট্রান্সফার হয়েছে তাই আমি আমাদের বাসার বিল্ডিংয়ে একটা ফ্লাট ভাড়া করে রেখেছি চার তলায়

— সত‍্যি আবসারের কথায় উচ্ছসিত কন্ঠে বলল
আবসার কিছু বলে না শুধু মাথা নাড়ায় — আলমারিতে কতগুলো শাড়ি আছে সাথে কিছু থ্রি পিছ আর দুইটা বোরখা এনেছি বাইরে গেলে অবশ্যই বোরকা পরে বের হওয়া চাই।
খেতে খেতে মাথা নাড়ায় ওয়াসিমা — আমি আর খাব না এবার আপনি খান আমার রান্না চুলায় আমি যাই
আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমাকে বক্ষে মিশিয়ে নেয়

— বেশী কিছু করতে হবে না তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করে একটু রেষ্ট কর আর সারাদিনে পড়তে বসেছিলি। আর কোচিং কেমন লেগেছে

— হ‍্যা কোচিং ভালোই লেগেছে কিন্তু একা একা আনইজি ফিল হয় আর কোচিং থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই বিকালে ঘুম আসেনি তখন পড়তে বসেছিলাম।

— এইতো লক্ষী বউ বলেই আবসার ওয়াসিমার কপালে দীর্ঘ চুম্বন করে
আবসার ছেড়ে দিলে ওয়াসিমা চলে যায়। আবসার ও নিজের কাজে ব‍্যস্ত হয়ে পরে তার সাখাওয়াত গ্রুপ এন্ড কম্পানি ছাড়ার ইচ্ছা আছে সে আর চাকরি করতে চায় না নিজের প্রচেষ্টায় ব‍্যবসা দাড় করানো ইচ্ছা আছে তাই চাকরির পাশাপাশি একটু একটু করে নিজের পুজিঁ জমা করছে যাতে ব‍্যবসায় মূলধন হিসেবে ব‍্যবহার করতে পারে। সেই হিসেবে ছোট খাটো ব‍্যবসা সে আর অরিক মিলে শুরু করছে। মূলধনটা অবশ‍্য দুইজনের সমান কিন্তু অরিক আপাতত চাকরিটা ছাড়তে পারছে না সরকারি চাকরী বললেই তো আর ছাড়া যায় না।

_____________________

সাখাওয়াত ভিলায় নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে এই বাড়ির প্রত‍্যেকটা ফার্নিচার চেঞ্জ করা থেকে শুরু করে সব কিছুর পরিবর্তন করা হচ্ছে বাড়ির কাজের বুয়া থেকে শুরু করে দারোয়ান পরিবর্তন হয়েছে পুরো বাড়িতে সিসিটিভি ক‍্যামেরা ইনস্টল করা হয়েছে সব মিলিয়ে বর্তমানে কেউ দেখলে বলতেই পারবে না এটা আগের সাখাওয়াত ভিলা যেটা তারা দশ বছর আগে ছেড়ে চলে গিয়েছে এই বাড়ির বড় বড় তিনটা ঘর বাড়ির তিন ছেলে মেয়েদের জন‍্য তৈরি করা হয়েছে এজাজ সাখাওয়াত ভেবেই রেখেছে আবসারকে আর ভাড়া বাড়িতে থাকতে দিবে না তানিয়া বললে হয়তো আবসার এখানে এসে থাকবে তখনই এজাজ সাখাওয়াত ধীরে সুস্থে ছেলের অভিমান ভাঙ্গাবে। দিলরুবা সাখাওয়াত তো বলে দিয়েছে তারা যেদিন বাড়িতে যাবে সেদিন যেনো মিলাদের আয়োজন করা হয়।

সেদিন এজাজ সাখাওয়াত চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ইরিনা সাখাওয়াত বাড়ি ছাড়ে কারণ সে বর্তমানে কোনো ঝামেলা চাচ্ছে না তার ছেলের সেফটি তার কাছে আগে তখন মনে পড়ে আবসারও তো তার ছেলে কিন্তু সে তো কোনোদিন তার মা হয়ে পারেনি নাকি হওয়ার চেষ্টা করেনি । তার নামে একটা ফ্ল‍্যাট আছে বনানীতে সেখানেই গিয়েছে সাথে করে তার ছেলেকেও আসতে বলবে এখনতো কোনো লুকোচুরি নেই । কিন্তু ইরিনার চিন্তা অন‍্য জায়গাই এজাজ তার ছেলের খবর কোথায় পেলো এবং আজ কদিন ভিক্টোরের কোনো খোজ নেই সে কোথায় ভেবেই ফোন লাগায় ভিক্টরকে
ফোন দিতেই ওপাশ থেকে মধুর স্বরে রমনীটি বলল — আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মূহুর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না
তারপরও অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে ইরিনা

— তুমি এর জন‍্য পস্তাবে ভিক্টর আমি ভালো হলেও খারাপি কিন্তু ভুলে যাইনি আমি একবার হদিশ পাই তোমার ভেবেই মুখে কুটিল হাসি দিলো ইরিনা।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৭

রাত বারোটা ওয়াসিমা খাবার টেবিলে বসে আছে অপেক্ষায় আবসারের গত একসপ্তাহ ধরে আবসার খুব ব‍্যস্ত সেই সকালে যায় আর আসে রাতের বারোটা একটা বাজে। আবসারকে যাবে বাইরের খাবার না খেতে হয় সেই জন‍্য ওয়াসিমাও ভোরের দিকে নামাজ পরে আর শোয় না সকালের নাস্তা সহ আবসারের দুপুরের খাবারটাও প‍্যাক করে দিয়ে দেয়। তার সাথে আরুও উঠে হাতে হাতে সব কাজ এগিয়ে দেয়।

নিজের দক্ষতায় ছোটখাটো একটা কারখানা চালু করেছে আবসার রেডিমেড কাপড়ের কারখানা সেটা সেটআপ করতেই তার দিন পার হচ্ছে অলরেডি অনেক কিছু করে ফেলেছে কিছু কর্মী ও নিয়োগ দিয়েছে পাশাপাশি কিছু বেকার যুবকদের ও কাছে লাগিয়েছে সব মিলিয়ে স্টার্টিংটা ভালোই হয়েছে।

ঠিক বারোটা দশে কলিং বেল বেজে উঠলে ওয়াসিমা গিয়ে গেট খুলে দেয়

— আসসালামু আলাইকুম ( দরজা খুলেই হাসি মুখে সালাম দেয় ওয়াসিমা এটা সে প্রতিদিনই করে যেদিন সে দরজা খুলে সেদিনই সালাম দেয় )

আবসার সালামের উত্তর নিয়ে ওয়াসিমার ললাটে চুমু খায় ভিতরে ঢুকে সোফায় হাত পা ছাড়িয়ে বসে পরে ওয়াসিমা ফ‍্যান ছেড়ে প্রিড বাড়িয়ে দেয় ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি দিলে আবসার ঢকঢক করে পানিটা গিলে ফেলে
— ফ্রেশ হয়ে নেন ভাত দিচ্ছি
আবসার কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে চলে যায় ওয়াসিমা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে — লোকটার কি হয়েছে কোনো সময় তো এতো শান্ত আচরণ করে না মনে মনে ভেবে চলে যায় রান্নাঘরে খাবার গরম করতে। খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখে আবসার ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মাথা মুছছে
ওয়াসিমা খাবার রাখতেই আবসার নিঃশব্দে পাশে বসে পড়ে ওয়াসিমা তাকে খাওয়ানো শুরু করে। গত একসপ্তাহ ধরে এরকমই চলছে সারাদিনের ক্লান্তির পরে আবসারের আর শরীর চলে না তখন ওয়াসিমা খাইয়ে দেয়।
আবসার পাশাপাশি ওয়াসিমাও খায় এভাবেই দুজন নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে

— প্লেট বাটি ঘরেই থাক তুই ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে আয়
এতক্ষণে আবসারের এটা দ্বিতীয় কথা। ওয়াসিমা হাত ধুয়ে আসতেই আবসার তাকে বসিয়ে তার কোলে মাথা রাখে

— কি হয়েছে আপনার আবসারের মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওয়াসিমার প্রশ্নের জবাব দেয় না নিজের মতো বলল

— কালকে এক জায়গাই যাব সকাল সকাল রেডি থাকিস

— আপনার কালকে অফিস নেই

— হু আছে খুব একটা চাপ নেই তাই যাব আর অরিকরা কবে আসছে কিছু বলেছে সেদিন আসল না কেনো

— সেবার তো আসতে পারেনি ভাইয়া যেই র্ফাস্ট ইয়ার স্টুডেন্টদের প্রাইভেট পড়াতো তাদের তো পরীক্ষা হুট করে তো আসা যায় না ওদের ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা শেষ হলেই একেবারে আসবে

— কিন্তু আমি তো একমাসের ভাড়া এডভান্স দিয়ে দিছি

— পরসু আম্মু আব্বু আসবে তারাই থাকবে সমস্যা কি
— হুম বলেই ওয়াসিমার পেটে মুখ গুজে শিরশির করে ওঠে ওয়াসিমার সর্বাঙ্গ নড়াচড়া করতেই ধমকে ওঠে আবসার — ঘুমাতে দে এতো নড়িস কেনো

— অসভ‍্য বিড়বিড় করে বলল কিছুক্ষণের মধ‍্যেই আবসারের গভীর নিঃশ্বাসের মাধ‍্যমে বুঝল আবসার ঘুমিয়ে গেছে। ওয়াসিমা তাকিয়ে থাকে ঘুমন্ত আবসারের দিকে লোকটার আদলে অজস্র মায়া। সে শুনেছে মেয়েরা মায়াবী হয় কিন্তু ছেলেরাও যে মায়াবী হয় সেটা সে আবসারকে না দেখলে জানত না। আরো কত কিছু ভাবতে ভাবতে বেডের হেড বোর্ডের সাথে হ‍্যালান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে সে নিজেও

___________________

আসসালাতু খইরুন মিনাননার – অর্থ ( ঘুম থেকে নামাজ উত্তম ) মুয়াজ্জিনের আযানের সুর কানে যেতেই ঘুম ভাঙ্গে ওয়াসিমার এটা তার রোজকার সময় কাজ তাই আজো ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে

— আযান দিয়েছে নামাজ পরবেন না বলেই ওয়াসিমাকে মিহি স্বরে ডাকতে শুরু করে নিভু নিভু চোখে তাকায় আবসার নিজের অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করে এবং তরাক করে উঠে পরে

— ঘুমের পরে আমাকে শুয়িয়ে দিতে পারিস নি বসে বসে নিশ্চয়ই পা ব‍্যাথা হয়েছে আর এভাবে ঘুম হয়েছে ওয়াসিমার গালে হাত দিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞাসা করে আবসার।

— আমি ঠিক আছি আপনি চিন্তা করবেন না এখন উঠুন নামাজ পরতে হবে না আবসারের হাতের উপর হাত রেখে বলে ওয়াসিমা। আবসার মাথা উঠে যায় ওয়াশরুমে একেবারে ওযু করে বের হয় আবসার বের হলে ওয়াসিমাও যায় সে বের হলে দুইজন একসাথে নামাযে দাড়ায় আজকে আবসার আর মসজিদে যায়নি

— কয়টার দিকে বের হবেন
নামাজ শেষে জায়নামাজ রাখতে রাখতে ওয়াসিমা জিজ্ঞেস করল
— এগারোটার দিকেই বের হবো আমি যেতাম না কিছু ছোট মিয়া অনেক জোর করল তাই

— চাচ্চুরাও যাচ্ছে সেখানে
মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বোধক সম্মোধন করে আবসার
— আচ্ছা আপনি ঘুমিয়ে পরেন আমি আরু আপুকে ডেকে নিয়ে আসি
— হু কিন্তু এখন আবার রান্না করতে যাস না

— কেনো ব্রেকফাস্ট করা লাগবে না আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল

— হু কিন্তু আজকে দেরী করলেও সমস‍্যা নেই আরুকে ডেকে দিয়েই সোজা ঘুম দিবি আমি বসছি তুই আয়
ওয়াসিমা কিছু না বলে চলে যায় আরুকে ডাকতে

আরু দরজা খুলতেই তাকে নামাজের কথা বলে চলে যায় ওয়াসিমা আরুও ঘুমের তালে কথা না বাড়িয়ে চলে যায় ওযু করতে।
ওয়াসিমা ঘরে আসতেই দেখে আবসার মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে ওয়াসিমা পাশে শুতেই তাকে ঝাপটে ধরে আবসার গলায় নাক ঘসে ওয়াসিমা বুঝে যায় আবসারের মতলব

— আপনার না ঘুমে ধরছে
— উমম ঘুমনা এখন তোকে লাগবে বলেই অধর জোড়া মিলিয়ে দেয় পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তার এলোমেলো গভীর ছোয়া।

_________________________

সাখাওয়াত ভিলায় হুলস্থুল কান্ড আবসার ওয়াসিমা আরু বেলা বারোটায় এসে পৌছায় সাখাওয়াত ভিলায় তারা আসতেই আবসারের নাকে আসে তানিয়া সাখাতের হাতের সরিষার তেলের তেহারির গ্রান।
আরুকে ভিতরে পাঠিয়ে সদর দোরগোড়ায় দাড়িয়ে থাকে তারা

— বাড়ির ছেলে এতো দেরিতে আসলে চলে কোথায় তাড়াতাড়ি এসে হাতে হাতে কাজ করবে তানা মেহমানদের মতো আসছ গম্ভীর স্বরে বলল এজাজ সাখাওয়াত
আবসার কোনো জবাব দেয় না কিন্তু পাশ থেকে ওয়াসিমা মৃদু স্বরে সালাম দেয় সালাম শুনে এজাজ ওয়াসিমার দিকে তাকায় এজাজ সেও হাসি মুখে সালামের উত্তর নেয়

— কেমন আছো আম্মাজান
— আলহামদুলিল্লাহ্ আপনি
— আল্লাহ্ যেমন রেখেছেন বলেই আবসারের দিকে তাকায় এর মধ‍্যেই এহসান সাখাওয়াত আসে — কিরে বাবাই সকালে আসার কথা এখন আসছিস

— ছোট মিয়া কালকে অনেক রাত করেই অফিস থেকে এসেছি প্লাস ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে হাসি মুখে উত্তর দেয়

— আচ্ছা আয় আয় বউমাকে নিয়ে দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে আয় নিজের বাড়িতেও ঢুকতে ইস্তত বোধ করতে হয় বলেই আবসারের হাত ধরে টান দেয়। কিন্তু এক পাও নড়ে না আবসার

— না ছোট মিয়া আমি বাইরে লনে আছি আর মিলাদ কখন শুরু হবে লোকজন কাউকে কিছু বলনি

— না বেশী কাউকে কিছু বলিনি ঐ আরুর মামার বাড়ির লোকেরা আর ভাইয়ার শশুর বাড়ির লোকেরা আর মিলাদ বাদ যোহর শুরু হবে তুই ভিতরে আয় তো বলেই আবারো ভিতরের দিকে টানে তাকে

— উহু না ছোট মিয়া আমি বাইরে লনে বসছি হুজুর আসলে আমাকে ডেকে দিও

— তুই বাইরে বস বউমা আসুক

— থাক ওর যাওয়া লাগবে না আমি আর ওয়াসু লনে বসি তোমরা ফ‍্যামিলি প্রোগ্রাম কন্টিনিউ করো বলেই ওয়াসিমাকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় পিছন থেকে তানিয়া সাখাওয়াত আলিয়া সাখাওয়াত এজাজ সাখাওয়াত সব কিছুই দেখে আবসারের যাওয়ার দিকে থেকে নজর সরিয়ে আলিয়া সাখাওয়াতের দিকে তাকায় এজাজ সাখাওয়াত তিনি কিছু না বলেই আলিয়ার পাশ কাটিয়ে ধীর পায়ে চলে যায় ভিতরের দিকে ।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-১৮+১৯+২০

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৮

ওয়াসিমাকে বুকে জড়িয়ে থরথর করে কাপছে আবসার তারা লনের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে এখানে বসা মাত্রই আবসারের কাপুনি টের পেয়েছিল ওয়াসিমা তাকে ডাক দিতেই আবসার তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় শক্ত করে যেনো ছেড়ে দিলেই কেউ ছিনিয়ে নিবে। ওয়াসিমাও কিছু না বলে চুপচাপ মিশে থাকে তার বক্ষে সে বুঝতে পারছে আবসারের বাবা মায়ের সাথে তার একটা তিক্ত স্মৃতি রয়েছে কিন্তু কি সেটা তাকে জানতে হবে কিন্তু কার কাছ থেকে জানবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না ।
তার ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে ডাক আসে এহসান সাখাওয়াতের
— বাবাই মাওলানা সাহেব এসে পরেছে তুমি কি আসবা

— হু হু ছোট মিয়া আমি আসছি বলেই উঠে দাড়িয়ে আবার পরতে নিলে ওয়াসিমা কোনো রকম ধরে ফেলে ইশারায় রিল‍্যাক্স হতে বলে

— এক থেকে দশ পযর্ন্ত গননা করে লম্বা একটা শ্বাস নিন
আবসার ওয়াসিমার কথা মতোই কাজ করল তারপর উঠে দাড়ায় ওয়াসিমাও হাসি মুখে আবসারের হাত ধরে দাড়ায়।
পিছন থেকে সবটাই লক্ষ্য করেছে এহসান সাখাওয়াত তার মুখে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি

— যাক কেউতো একজন এসেছে যে আমার জনম দুঃখী বাবাইকে সামলাতে পারবে মনে মনে ভেবেই চলে যায়
ওয়াসিমা আবসার দরজার সামনে থেকেই মিলাদে সামিল হয় আরু কোথা থেকে দুইটা চেয়ার জোগাড় করে আবসার ওয়াসিমাকে বসতে দেয় আবসার না বসলেও ওয়াসিমাকে জোড় করে বসিয়ে দেয় কিন্তু নাছোড়বান্দা ওয়াসিমা বসে না অগত‍্যা আবসারও বসে পরে প্রায় আধা ঘন্টা পরে মিলাদ শেষ হয়। এর পরে আসে খাবার দাবারের পালা মাওলানা সাহেবরা এখানে খাবেননা তাদের জন‍্য মসজিদে এক ড‍্যাগ বিরিয়ানি পাঠানো হয়েছে তাই তাদের কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করা হলো এবার শুধু রইল ফ‍্যামিলির লোকজন সেখানে আবসার কিছুতেই সামিল হবে না তাই চলে আসতে নিলেই পিছন থেকে তানিয়া সাখাওয়াত ডাক দেয়

— পাচঁ মিনিট একটু মেইন দরজার সামনে দাড়া বাবাই আমি আসছি
আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় মেইন গেটের সামনে। তানিয়া সাখাওয়াত ঝটপট একটা বাটিতে তেহারি আর কিছু সালাদ সহ সবজি নিয়ে একটা ব‍্যাগে ভরে আরুর মামাদের উদ্দেশ্যে বলে — ভাই ভাবী খাওয়া হয়েছে

— হ‍্যারে তানি আমাদের শেষ তুই খেয়েছিস শুনলাম আবসার এসেছে কই সে

— আছে ভাই চলো আমার বাসায় যাবা এখানে আর থাকা লাগবে না
তানিয়া সাখাওয়াতের কথা শুনে তার ভাই ভাবী বিনা বাক‍্যে বাসা থেকে বের হয় সবার থেকে বিদায় নিয়ে সবাই আর কিছুক্ষণ থাকতে বললেও তারা থাকেনা।

— আম্মা ভাইয়া ভাবী আমরা তাহলে যাই

— মানে তোমরা কোথায় যাবে অবাক স্বরে বলল আলিয়া সাখাওয়াত

— আমাদের বাসায় তানিয়া হাসি মুখে বলে

— মানে এটা তোমাদের বাসা না এই এহসান তানিয়া কি বলছে গম্ভীর স্বরে ভাইকে জিজ্ঞেস করল এজাজ সাখাওয়াত

— ভাইয়া আমাদের আগেই পরিকল্পনা ছিলো আমরা এই বাসায় থাকব না আমি আমার নিজের বাসায় থাকব

— এটা কি আপনার নিজের বাড়ি না এহসান ভাই
আলিয়া সাখাওয়াতের কথা শুনে এহসান হাসল কিছু বলল না

— যাই হোক ভাই আসি মেয়েটা বাইরে দাড়িয়ে আছে আসি আম্মা বলেই এহসান সাখাওয়াত তার মায়ের কপালে চুমু খায়
দিলরুবা সাখাওয়াত কিছু না বলে চুপচাপ ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। চলে যায় এহসান ও তানিয়া তাদের যাওয়ার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় তিনি

— বড় বউ আয়মান দাদু ভাই আর এখন ভীন দেশে পরে থাকবে কেনো তাকে আসতে বলো এই ব‍্যবসায় সহায় সম্পত্তি এখন থেকে তো তাকেই সামলাতে হবে বলেই জোড় কদমে চলে যায় পড়ে আলিয়া সাখাওয়াত আর এজাজ সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতের বাপের বাড়ির লোক।

___________________

তানিয়া সাখাওয়াত এহসান সাখাওয়াত বাইরে বের হয়ে দেখে তার ভাই ভাবী আবসারের সাথে আলাপচারিতা করে ফেলেছে ওয়াসিমার সাথেও পরিচয় হয়েছে

— চলো হাসি মুখে বলল তানিয়া সাখাওয়াত

— আচ্ছা মামা আমরা আসি বাই ছোট মিয়া এহসান সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে বলেই ওয়াসিমার হাত ধরে যেতে নিলেই পিছন থেকে আবসারের হাত ধরে তানিয়া সাখাওয়াত

— এতোটাই অভিমান যে মামনির সাথেও কথা বলা যায় বাবারে আমরা জানি আমাদের দোষটা অনেক বেশী আমি তোমার কাছে মাফ চাই বাবাই প্লিজ বলেই হাত জোর করতে নিলেই তাকে থামিয়ে দেয় আবসার

— তুমি আমার মামনি তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই কিন্তু তুমিই আমার সাথে কোনো কথা বলতা না অনেক চেষ্টা করার পরেও বললা না তাই তো আমিও হাল ছেড়ে দিলাম

— তুই যেহেতু মামনির উপর রেগে নেই তাহলে আজকে মামনির বাসায় চল

— না মামনি এই বাসার প্রত‍্যেকটা কোনা আমার জন‍্য যন্ত্রণাদায়ক প্লিজ এই বিষয়ে অন্তত কিছু বলো না

— এই বাসা নারে বাবা আমাদের নিজের বাসা তোর চাচ্চুর আলাদা নিজের বাসা বলেই হালকা হেসে আবসারের দিকে তাকিয়ে থাকে আশা ভরা নয়নে। আবসার কিছুক্ষণ ভাবে তারপর হ‍্যা বলে দেয় আবসারের রাজী হওয়াতে সবাই বেশ খুশী হয় তারা সবাই একসাথে রওনা দেয় মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে সেখানে এহসান সাখাওয়াতের নিজস্ব বাড়ি আছে। দোতলায় দাড়িয়ে নিচের সবকিছুই নজরে পরে এজাজ সাখাওয়াতের।

ঢাকা শহরের দীর্ঘ জ‍্যাম কাটিয়ে এহসান সাখাওয়াতের মোহাম্মদপুরের বাসায় পৌছায় সবাই তখন দুপুর চারটা তানিয়া সাখাওয়াতের ভাই ভাবী খেয়ে আসলেও তারা কেউই খেয়ে আসেনি তাই তানিয়া সাখাওয়াত দ্রুত রান্নাঘরে যেয়ে খাবার গরম করে তার পিছু পিছু আরুও যায়
দুই মা মেয়ে মিলে হাতে হাতে সব গুছিয়ে টেবিলে খাবার দেয়
খাবার টেবিলে বসে আবসার একপলক সবার দিকে তাকিয়ে নিজের প্লেটে মনোনিবেশ করে কত বছর পর সে তার মামনির হাতের রান্না খাচ্ছে তার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল।

ওয়াসিমা নিবিড় চোখে আবসারের সব গতিবিধি লক্ষ‍্য করছে এই রকম মনমরা সে দেখেনি বিশেষ করে ঐ বাড়িতে তার আরো অবাক লাগছে আবসার তার বাবা মায়ের থেকে খুব দূরে দূরে থাকে কোনো কথার জবাব দেয় না কিন্তু কেনো

— তেহারি মজা হয়নি মা

— জ্বী চাচী মা অনেক মজা হয়েছে

— তাহলে খাচ্ছো না কেনো
তার কথা শুনে ওয়াসিমা আর কিছু না ভেবে খাওয়া শুরু করে তানিয়া সাখাওয়াত ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে সে ওয়াসিমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবে অবশ্যই দিবে এই দুঃখী ছেলেটার জীবনে এই মেয়েটাই যে একমাত্র সুখ পাখি
কোনো ভাবে সে অন‍্য কারো কাছ থেকে অন‍্য ভাবে শুনলে ভুল বুঝতে পারে।

অনেক দিন পর আবসারকে খুব খুশী দেখা গেলো সে আরুর মামা ও এহসান সাখাওয়াতের সাথে সাচ্ছন্দে গল্প করছে। আজকে তারা এখানেই থাকবে তানিয়া সাখাওয়াত যেতে দেয়নি। বর্তমানে সবাই মাগরিবের নামাজ শেষে গল্প করছে আর নাস্তা করছে ওয়াসিমা তানিয়া সাখাওয়াতের সাথে রান্নাঘরে আছে সে বাড়ীর বউ হিসেবে বসে বসে খেতে পারে না তাই তার পিছু পিছু রান্নাঘরে দাড়িয়ে আছে কিন্তু তানিয়া তাকে কিছু করতে দিচ্ছে না

— একটা প্রশ্ন করি চাচীমা
ওয়াসিমার কথা শুনে তানিয়ার হাত থেমে যায়

— আবসার আমাকে মামনি ডাকে তুমি আমার আবসারের বউ তুমিও আমাকে মামনি ডাকলে খুশী হবো ওয়াসিমা চিবুকে হাত রেখে অন‍্য হাত তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৯

— বউ হিসেবে আমিই প্রথমে পর্দাপন করেছিলাম সাখাওয়াত বাড়িতে আরুর বাবার সাথে পালিয়ে বিয়ে হয়েছিল আমাদের ভাই ভাবীর সংসারে বোঝা হিসেবে ছিলাম তাই আমি চলে যেতেই তারা যেনো হাফ ছেড়ে বাচল। বিয়ের পর যখন সাখাওয়াত বাড়িতে উঠলাম মানতে চাইল আমার শাশুড়ি আমার স্বামী আমাকে নিয়ে চলে আসতে নিলেই সে মেনে নেয় । সে তার ছেলেদের জন‍্য উচ্চ বংশের থেকে মেয়ে আনতে চেয়েছিলেন তারপরেও আমার ঠাই হয় সাখাওয়াত বাড়িতে কারণ তিনি ছেলে হারাতে নারাজ। তারপর থেকে আমার উপর অনেক বিষয়ে অত‍্যাচার করতে শুরু করেন এহসান সব দেখেও চুপ থাকে কারণ সে তখন মাষ্টার্সের ছাত্র চাকরী বললেই তো আর হয়ে যায় না। তখন শাশুড়ির সারাদিনের অত‍্যাচার রাতে স্বামীর বুকে অশ্রু দিয়ে ব‍্যক্ত করতাম লোকটা আমাকে বুঝত কিন্তু কিছু বলার ছিলো না তার।
বিয়ের একবছর এভাবেই কাটল সমস‍্যা শুরু হলো তখন যখন আমি সন্তানস্বম্ভবা হলাম। আমার শাশুড়ি মানতে চাইল না ছোট ছেলের থেকে সংসারের প্রথম সন্তান তারপরও শত বাধা বিপত্তির মধ‍্যে জন্ম দিলাম আমার সন্তানকে জানো মা আমার এইটুকু ছেলেটা জন্মের তিন দিনের মাথায় মারা গেলো। সন্তান শোকে আমি পাগল পারা তাই হয়তো তার মায়া জন্মেছিল আমার উপর সে আমাকে সামলায় সাহস জোগায় আস্তে ধীরে আমিও সুস্থ হলাম এর পরে থেকেই শাশুড়ির সাথে আমার সখ‍্যতা হয় একদিন হঠাৎই আম্মা বলল বড় ভাইকে বিয়ে করাবে পাত্রী তার বান্ধবীর মেয়ে। বড় ভাই নাকচ করলিও শুনল না আম্মা বিয়ে তিনি দিবেই। ধুম লাগল বড় ভাইয়ের বিয়ের আম্মার বান্ধবীর মেয়ের সঙ্গে।

যথারীতি নিয়ম মেনে বিয়েও হলো কিন্তু বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই তাদের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হলো প্রথম প্রথম অশান্তি তাদের ঘরের চার দেয়ালে থাকলেও তার বাইরে এলো যখন আবসারের জন্মের খবর আসে ইরিনা জামানের প্রেগনেন্সির বিষয়ে আমরা সবাই জেনে যাই বিশেষ করে আম্মা অনেক খুশী হয়। সবাই তাকে বাচ্চাটা রাখতে বলে কিন্তু সে রাজী না তার এক কথা সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে এর মধ‍্যেই সে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে নিজের জীবন নষ্ট করতে পারে না সেদিন সবার বিপক্ষে গিয়ে ইরিনা বাচ্চাটাকে এবোর্শন করাতে যায় এবং জানতে পারে বাচ্চা এবোর্শন করাতে হলে তার লাইফ রিক্স আছে তাই নিজের জীবনের ক্ষতি করে সে আর বাচ্চাটা এর্বোশন করে না আস্তে ধীরে তিনিও মেনে নেয় সব কিছু আবার ভালোই চলছিল কিন্তু ঝড় নেমে আসে আবসারের প্রথম জন্ম দিনের পর সেখানে তার পরিচয় হয় ভিক্টরের সাথে যিনি ইরিনার প্রাক্তন প্রেমিক ছিলো তখন এজাজ ভাইয়ের বিজনেস পার্টনার। সেখান থেকেই পুরোনো প্রেম আবার জেগে ওঠে বাসায় ঘন ঘন ভিক্টরের আসা যাওয়া আম্মার নজরে পরল সে ভিক্টরকে আসতে না করলে সেদিন ইরিনা যাচ্ছে তাই বলে অপমান করে আম্মাকে এবং বাড়ী থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এতো অপমান আম্মার সহ‍্য হলোনা সে অসুস্থ হয়ে পরল সেদিন বাড়িতে কোনো পুরুষ ছিলো না যে তাকে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাই অনেক কষ্টে দারোয়ানের মাধ্যমে। সেদিনই আম্মাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসি অতিরিক্ত টেনশনে প্রেশার হাই হয়ে গিয়েছিল। তার পরের দিন এজাজ ভাই ও এহসান অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফেরে
এজাজ ভাই বাসায় আসলে তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বুঝায় আরো অনেক কথাই ভুল বুঝায় কিন্তু কি সেটা আমরা জানি না

সে রাতের বেলা আম্মাকে দেখতে আসে তখন আম্মা তার কাছে সব বলতে নিলেই বড় ভাই বলল — আম্মা ও তানিয়া না ও ইরিনা তানিয়ার সাথে যেটা করতে পেরেছ ওর সাথে পারবেনা তাই ভালো হয় তুমি নিজের মতো চুপচাপ থাকো তার কথা শুনে আম্মা শুধু একটা কথাই বলেছিলো — আমি আমার স্বামীর ভিটেয় যাব

পরের দিন আম্মা চলে গেলেন গ্রামে তার সাথে একটা কাজের লোক পাঠানো হলো আম্মা যাওয়ার পর ইরিনা আরো বিশৃঙ্খলা শুরু করল আমি বা এহসান কেউ কিছু বলতে পারতাম না। ছেলেটার খোঁজ খবর নেওয়াও বন্ধ করে দিলো সারাদিন কান্না করত ছেলেটা শেষমেষ না পেরে আমার কাছে রাখতে লাগলাম এভাবেই কেটে গেলো পাচঁ বছর। ভিক্টর তো প্রতিদিন আসত এজাজ ভাইও মনে মনে সন্দেহ করতে লাগল খারাপ কাজ আর কতদিন লুকিয়ে রাখবে প্রকাশিত হবেই একদিন

আমার আজো মনে পরে একটা মা কি রকম পশু হতে পারে নিজের সার্থের জন‍্য
সেদিন আবসার স্কুল থেকে এসে দেখে ভিক্টর আর ইরিনা একসাথে ঘরে ঢুকে গেট বন্ধ করছে কেউ বাসায় ছিলো না আমি আর এহসান গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে তাই ছেলেটা একাই বাসায় আসে সেই কথাটি আবসার বড় ভাই আসলে তাকে বললে বড় ভাই ইরিনাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সরাসরি না করে দেয়। তখন ভাই স্ত্রীকে বিশ্বাস করে আবসারকে বুঝায় যে মিথ্যে বলা ভালো না আবসার কিছু বলল না কারণ তার এজাজ ভাইয়ের সাথেও যথেষ্ট দূরত্ব ছিলো সারাদিন অফিস থেকে আসলেই ভাবীর এটা সেটা নিয়ে বিচার শুরু হতো তাই সে আবসারকে সব সময় শাষনের উপর রাখত।
তার পরের দিন যখন সবাই অফিসে গিয়েছিল আমি কোনো একটা কাজে ঘরে ঢুকতেই আমাকে ভিতরে রেখে বাহির থেকে দরজা আটকে দেয় সেদিন ইরিনা আবসারকে অমানুষের মতো মারে ছেলেটাকে ওর চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘর থেকে বের হতেই দেখি দরজা বাহির থেকে বন্ধ। প্রায় একঘণ্টা পরে ছেলেটার চিৎকার কমে আসে আমাকেও সারাদিন ঘর বন্দি রাখায় না খাওয়া তার উপর কয়েক দিন ধরেই শরীর অসুস্থ ছিলো সব মিলিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরলাম

যখন জ্ঞান ফিরল তখন রাত আটটা পাশে এহসান বসা হুরমুর করে উঠেই প্রথমে আবসারের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি গম্ভীর স্বরে জবাব দিলো — আগে নিজের কথা চিন্তা করো এই অবস্থায় এতো চিন্তা করা ঠিক না

— মানে তুমি এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলছ কেনো আবসার কই ছেলেটা ঠিক আছে তো ভাবী যে এতো খারাপ সেটা আজ বুঝতে পারলাম

— কালকে আমরা অন‍্য বাসায় যাচ্ছি আমাদের প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র গুছিয়ে নাও বলেই বের হয়ে গেলো আর কিছুক্ষণ পরে ফিরল খাবারের থালা নিয়ে

— আমি এখন খাব না

— সারাদিন না খাওয়া ছিলে নিজের খেয়াল নাই রাখো যে আসছে তার খেয়াল তো রাখতে পারো

এহসানের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করে সেদিন অনেক দুঃখের মাঝেও সুখ পেয়েছিলাম মা হওয়ার সুখ।
তার পরের দিনেই আমরা সাখাওয়াত বাড়ি ছাড়ি একটা ভাড়া বাসায় উঠি ঠিকই কিন্তু মন থেকে আবসারের দুশ্চিন্তা সরাতে পারিনি সারাদিন মন মরা হয়ে থাকি এই ভাবে এহসান আমাকে দেখতে না পেরে একসপ্তাহ পরে নিয়ে আসে আবসারকে সেদিন আবসারকে দেখে অঝোরে কেদেঁছিলাম একসপ্তাহে ছেলেটা কেমন জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছিল শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিলো গায়ে অজস্র মারের দাগ আমাকে দেখেই বুকে ঝাপিয়ে পরেছিলো তাকে বুকে নিয়ে একসপ্তাহের হাহাকার মিটে গেলো। পরে এহসানের থেকে জানতে পারলাম ছেলেটা এই একসপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। আবসারকে আমি আমার কাছেই রাখতে লাগলাম।
খালি বাড়িতে ইরিনার বেহায়াপনা আরো বৃদ্ধি পেলো যা এজাজ ভাইয়ের চোখেও পরল এই নিয়ে আরো অশান্তি শুরু হলো বড় ভাই ঘরে আসা বন্ধ করে দিলো ঢাকা থেকে চলে গিয়ে চট্টগ্রামের অফিসে অফিস করতে লাগল। সেখানেই তার পরিচয় হয় আলিয়ার সাথে তিনি বর্তমানে বড় ভাইয়ের স্ত্রী।
সঙ্গীহিন এজাজ ভাইকে ভাবী সাপোর্ট করে আস্তে আস্তে সেও তার প্রতি দূর্বল হয়ে তাকে বিয়ে করে নেয়। প্রায় একবছর সব গোপনে থাকলেও এজাজ ভাই আম্মার অসুস্থতার খবর পেয়ে গ্রামে আসলে তার কোনো খোজ খবর না পেয়ে বড় ভাবী গ্রামের বাড়িতে ওঠে ছোট্ট আয়মান তখন তার কোলে আমার আরুর ছয় মাস।
আমরা সবাই একটা ধাক্কা খাই । না পারতে তাকে থাকতে দেয় আম্মা কথা হয় আমিও গ্রামে থাকব এভাবেই কেটে যায় তিন বছর আমরা সবাই সব কিছুতে আবসারকে প্রায়োরিটি দিতাম বেশী সেটা ভাবীর সহ‍্য হতোনা কিন্তু কিছু বলতে পারত না। সেবার ঈদে সবাই আমরা একসাথে হই সাখাওয়াত বাড়িতে সবাই যাওয়া বন্ধ করে দেই ঈদের আমেজে সবাই খুশী আমি রান্নাঘরের ব‍্যস্ত থাকায় আবসার আরুকে গোসল করিয়ে দেয় সেটা নিয়ে বড় ভাবী হাঙ্গামা শুরু করে আমার যে আবসার —-“” বলতেই থেমে যায় তানিয়া সাখাওয়াত।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২০

তানিয়া সাখাওয়াত থেমে যেতেই ওয়াসিমার জোরালো কান্নার শব্দ পায়।
তার মাথা হাত বুলিয়ে দেয় তানিয়া মনে মনে ভাবে আবসারের দুঃখী কপালে সুখ হিসেবে ওয়াসিমা আল্লাহর প্রদত্ত।

— এখনই এতো কাদলে চলে আম্মু এখনো তো আরো কথা বাকী আছে,

— আর শোনার মতো শক্তি আমার বাকী নেই মামনি আমার মনে হচ্ছে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে বলেই থেমে যায়। আবার বলে — এমন কেনো হচ্ছে মামনি

— এটাই তো বন্ধনরে মা স্বামী স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন যাকে বলে যার উপর বিশ্বাস রেখে তুমি তোমার বাবা মাকে চিরচেনা ঘর ছেড়ে এসেছো। জানোতো আমরা মেয়েরা মাটির মতো তাদের যেকোনো আকারে গড়া যায় এই যেমন কোনোকালে না দেখা আমিও বর্তমানে তোমার আপন তার কোলে মাথা রেখে নির্দিধায় কথা বলতে পারছ।
তানিয়া আবার বললেন :
— এখন কান্নাকাটি থামাও তো এতো মায়াবী মুখে অশ্রু বেমানান বলেই ওয়াসিমা চোখ জোড়া নিজের হাতে মুছে দেয়।
এর মধ‍্যেই কলিং বেল বাজে — এখন আবার কে আসল ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বলে বর্তমানে বাসায় কেউ নেই আরুও নেই তার আজকে একটা ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে তাই সে বেড়িয়ে যায়! ওয়াসিমা আজকে ক্লাসে যায়নি কাল তার ক্লাস টেস্ট আছে তাই তার কোচিং চলাকালীন তানিয়া সাখাওয়াত তাদের সাথে থাকতে রাজী করায় আবসারকে।

আবসার প্রথমে গাইগুই করলেও তানিয়া সাখাওয়াতের জেদের কাছে হেরে থেকে যায় তারা। তাই ওয়াসিমাও সবাই যাওয়ার পরে জেদ ধরে আবসারের ব‍্যাপারে সব শুনবে বলে তানিয়া সাখাওয়াতের কাছে বসে পরে।

অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও তানিয়া সাখাওয়াত কে আসতে না দেখে ওয়াসিমা ঘর থেকে বের হয়,

— কে এসেছে মামনি
বলেই সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়

-” দাদী বিড়বিড় করে বলে
দিলরুবা সাখাওয়াত ঘরের চারিদিকে দেখছে চোখ ঘুরিয়ে তিন তলার পুরোটা ফ্লোরেই তানিয়া নিজের মতো বানিয়েছে পাচঁটা রুম ড্রইংরুম ডাইনিং রুম কিচেন আবার প্রত‍্যেকটা রুমের সাথে এটাচ ওয়াশরুম বারান্দা প্রত‍্যেকটা ঘরই ছিমছাম ভাবে সাজানো তার ভালোই লাগল,,,,,,

-“- বসেন আম্মা

— হু বসছি তা তোমাদের গুনধর কি এখানেই আছে গম্ভীর স্বরে বলল দিলরুবা সাখাওয়াত।

— জ্বী আম্মা কাল মেয়েটার পরীক্ষা আর খালি বাসায় থাকার অভ‍্যাস নেই তো তাই আজ রেখে দিয়েছি কাল আবসারের শশুর শাশুড়ি আসলেই ওরা চলে যাবে ”

— সেই আবার শশুর বাড়ির লোকদের নিজের কাধে বসিয়ে খাওয়াবে তা ছাড়া আর কি কাজ আছে ওর মা বাবা ভাই বোন মনে হয় চোখেই পরে ওর

— আমি এতিম এই পৃথিবীতে যেখানে আমার জন্মটাই ভুল বলা হয় সেখানে অন্তত আমার কোনো আত্মীয় থাকার কথা না আর আমার জন‍্য ঐ লোক গুলো কি তা আমি তোমাদের বোঝাতে পারব না তোমরা আমার আপন হলেও আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছো আর ঐ লোক গুলো আমার পর হয়েও আমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে আশ্রয় দিয়েছিল ,, পিছন থেকে আবসার বলল

— তা সেই ঋণ পরিশোধ করতেই কি তাদের মেয়েকে বিয়ে কথা তাদের মতো মধ‍্যবিত্ত ঘরের মেয়েকে বিয়ে কথা
দিলরুবা সাখাওয়াতের কথা শুনে মুচকি হেসে বলল -” এই মধ‍্যবিত্ত জন‍্যই তুমি আজ ছেলের কামাই খেতে পারছ এনেছিলে না বড় ঘরের মেয়েকে কি হলো উল্টো সব ধ্বংস করে দিলো এখন আমি যদি বলি সকল নষ্টের মূলে তুমি তাহলে।

আবসারের কথা শুনে তানিয়া সাখাওয়াত হাসিটা আরো বিস্তৃত হয়। আর আবসারের সাথে কথায় না পেরে চুপ মেরে যান দিলরুবা সাখাওয়াত কিন্তু তার মন যানে আজ তিনি কতটা খুশি।

— আম্মা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে এসেছেন নাহলে বসেন আমি ভাত দেই খেয়ে যান

-” আমি খেয়ে এসেছি ছোট বউ এহসান কই

-“- আপনার ছেলেতো অফিস গিয়েছে তার আন্ডারে একটা প্রোজেক্ট ছিলো সেটা হ‍্যান্ড ওভার না করতে পারলে চাকরিটা ছাড়তে পারছে না

— এহসান সেখানে চাকরি করে না বউ সে ঐ কম্পানির উত্তরাধিকার
তার কথার উত্তরে তানিয়া আর কিছু বলল না

— মামনি খেতে দাও খুদা লেগেছে
— হ‍্যা বাবাই তুই হাত মুখ ধুয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি বলেই তিনি রান্নাঘরে চলে গেলেন ওয়াসিমা ও তানিয়া সাখাওয়াতের পিছু পিছু চলে যায়

— মামনি তুমি দাদীকে নাস্তা দাও আমি উনার খাবার গরম করি
তানিয়া হালকা হেসে দিলরুবা সাখাওয়াতের জন‍্য চা বসায় আদা দিয়ে রং চা। আর সাথে হালকা কিছু খাবার।
আবসার হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে বসতেই ওয়াসিমা খাবার বেড়ে দিতে লাগল তানিয়া শাশুড়ির জন‍্য চায়ের ট্রে নিয়ে যায় ড্রয়িং রুমে

— তুই খেয়েছিস

— হ‍্যা আমি আর মামনি একসাথে খেয়েছি আপনি যে আসবেন জানাননি তো

— হ‍্যা কাজ দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই এসে পরেছি বলতে বলতে ওয়াসিমার মুখের সামনে ভাতের লোকমা ধরে

— আমি খেয়েছিত আপনি খান বলেই ড্রয়িং রুমের দিকে ইশারা করে

— একটু খেলে কিছু হবে না বলেই আবরো হা করতে ইশারা করে
এবার আর কিছু বলে না ওয়াসিমা চুপচাপ ভাতের লোকমাটা মুখে নেয়

একদৃষ্টিতে সামনের দিকে দিলরুবা সাখাওয়াতকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানিয় সাখাওয়াত পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আবসার ওয়াসিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। তারপর আবার শাশুড়ির দিকে তাকায় তানিয়া দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল দিলরুবা সাখাওয়াতের অধর জোড়ায়

— মাশা-আল্লাহ দুজনকে বেশ মানিয়েছে তাইনা আম্মা

-” হু বউ তোমার শশুর ছিলো এইরকম আমারে প্রতিবেলা গালে তুলে খাওয়াই দিতো।
তানিয়া দেখল দিলরুবা সাখাওয়াতের মুখে হাসি থাকলেও নয়ন জোরা চিকচিক করছে মনে হচ্ছে পলক পরলেই পানি গড়িয়ে পরবে। তানিয়া কিছু বললেন না তিনি জানেন আবসার তার শাশুড়ির কতটা জুরে আছেন সে ওয়াসিমাকে হেয়ো শুধু এই কারণেই করে যাতে আবসার তার জবাব দেয় কারণ সে এইটুকু অন্তত বুঝেছে ওয়াসিমা দিলরুবা সাখাওয়াতের মুখের উপর কোনো জবাব দিবে না অথবা আবসারই দিতে দেয় না কে জানে।
সে শুধু চায় আল্লাহ্ তায়ালা তার ছেলেটাকে এই মেয়েটার সাথে সুখে রাখুক তারা ভালো থাকুক।

________________________

নিস্তব্ধ বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরছে আলিয়া সাখাওয়াত বাড়ি তার কাছে যেনো গলার কাটা এতো বড় বাড়িটা সুচের মতো বিধছে তিনি আরো ভয়ে আছে যখন এজাজ সাখাওয়াত অফিস থেকে এসে দেখবে দিলরুবা সাখাওয়াত নেই তখন তিনি তান্ডব শুরু করবেন তখন সে কি করবেন দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিতে গেলে ফিরে এসে দিলরুবা সাখাওয়াতকে পায় না পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুজলেও পায়না ইদানীং কেমন যেনো হয়ে গেছে এজাজ সাখাওয়াত আগে সে এই আফসোসে থাকত যে আলিয়াকে একটা সুখী পরিবার দিতে পারেনি কিন্তু যেদিন থেকে সে জেনেছে যে সেদিন আবসারের কোনো দোষ ছিলো সেই সবার কাছে আবসার আর আরুর বিষয়টি ভুল ভাবে উপস্থাপন করেছে সেই সবাইকে বুঝিয়েছে যে আবসার আরুকে খারাপ ভাবে ছুয়েছে তার সাথে জবরদস্তি করতে চেয়েছে তার কাজ আরো সহজ হয়েছিল আরুর কান্নাকাটি করা দেখে তাইতো সেদিন কেউ কিছু না বললেও এজাজ তাকে মারতে মারতে বের করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে সাথে এটাও বলেছিল তার জন্মটাই ভুল তাদের জন‍্য অভিশাপ।

সেইযে যায় ছেলেটি আর ফেরে না তারপর আরু ইন্টারে যখন পরে তখন ফিরিয়ে আনে এরপর থেকে আসলেও সেখানে খুব একটা থাকত না ঢাকায় থাকত বেশী। তারপর আবসার নিজেই সাখাওয়াত গ্রুপ অব কোম্পানিতে জয়েন হয়।

#চলবে
ভুলক্রুটি ক্ষমা প্রার্থী।

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-১২+১৩+১৪

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১২

স্নিগ্ধ সকাল চারিদিকে হালকা কুয়াশার ছড়াছড়ি রাতে দেরী করে ঘুমানোর ফলে অরিক এখনো ঘুমে আছে অথচ তার বলিশের পাশে অনবরত ফোন বেজে চলেছে সেদিকেও খেয়াল নেই সে বেহুশের মতো ঘুমি আছে আর ঐ দিকে আরু লাবনী চিন্তায় বেহাল দশা।

— আপু তুমি এখানে বসো আমি ভাইকে ডেকে নিয়ে আসি বলেই লাবনীকে নিজের ঘরে বসিয়ে সে যায় আবসারদের ঘরের কাছে সেখানে গিয়ে নক করে

ভোর ছয়টা ওয়াসিমার আযানের সময় ঘুম না ভাঙ্গলেও কিছুক্ষণ আগেই তার ঘুম ভাঙ্গে সে গোসল করেই নামাজ পরে নেয় আবসারকে অনেক ঠেলাঠেলি করলেও উঠে না। নামাজের মাত্র সালাম ফিরিয়েছেন এর মধ‍্যেই দরজায় নক করার শব্দ আসে। ওয়াসিমা মুনাজাত শেষ করেই জায়নামাজ ভাজ করতে করতে গেট খুলতে নজরে আসে আরু নাক চোখ লাল মনে হচ্ছে বহু কষ্টে কান্না আটকানোর প্রচেষ্টা।

— কি হয়েছে আপু তোমার এই অবস্থা কেনো চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে ওয়াসিমা।

— ভাবী অরিক ভাইকে কোথাও খুজে পাচ্ছি না পুরো হোটেলে খুজে এসেছি কোথাও পাইনি

— ফোন দিয়েছিলে কোনো রকম কান্না আটকে বলে ওয়াসিমা

— হু রাত থেকে এই পযর্ন্ত অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছি সে ধরছে না এভার আরু কেদেই ফেলল আরুর কান্না দেখে ওয়াসিমাও কান্না আটকাতে পারে না সেও শব্দ করে কেদে দেয়। দুই রমনীর কান্না শুনে আবসারের ঘুম ভেঙ্গে যায় সে আড়মোরা ভেঙ্গে উঠে বসে হাতরে ওয়াসিমাকে খুজে এখনো চোখ খুলে তাকায়নি।

— ওয়াসু
আবসারের ডাক শুনে ওয়াসিমা আরুর কান্নার বেগ আরো বাড়ে কান্নার শব্দ শুনে সে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আরু গেটের ঐ পাশে আর ওয়াসিমা গেটের এই পাশে দাড়িয়ে কান্না করছে। তাদের কান্না দেখে ভরকে যায় আবসার তাড়াতাড়ি উঠে সে যায় তাদের কাছে — কি হয়েছে হ‍্যা দুইজন এই ভাবে কান্না করছিস কেনো নিজের দুই বাহুতে আরু ও ওয়াসিমাকে জড়িয়ে ধরে চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে আবসার

— ভাইয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না নাকি রাত থেকেই হেচকি তুলে বলল ওয়াসিমা
ওয়াসিমার কথা শুনে আবসার সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে তাহলে এরা এতক্ষণে এর জন‍্যেই কাদছিলো
— ঐ শা*লার জন‍্যে এতোক্ষণ দুইজন মরা কান্না জুড়ে দিলে
— আমার ভাইয়া গায়েব আর আপনি হেয়ালি শুরু করেছেন রাগে ফুসে ওঠে ওয়াসিমা
ওয়াসিমার কথা শুনে আবসার তাদের হাত ধরে আরুর ঘরের সামনের ঘরে এসে দাড়ায় একটু পরেই একটা ওয়েটার এসে তাকে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে যায় সে কার্ড সোয়াইপ করে ঘরে প্রবেশ করেই উল্টো দিকে শুয়ে থাকা অরিকের পশ্চাৎ বরাবর ঠাসস করে একটা লাথি মারে। আবসারের লাথি খেয়ে অরিক বিছানা থেকে পরে যায়
— ও মাগো শা*লা আমার শান্তি কি তোর সহ‍্য হয়না নাকি একটা শান্তির ঘুম দিয়েছিলাম বিরক্তি ঝেরে তাকিয়ে দেখে ওয়াসিমা আরু তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

— কি হয়েছে বনু বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলে অরিক
এর মধ‍্যেই কোথা থেকে লাবনী এসে ঝাপটে ধরে অরিককে। অরিক হাত দুটো স‍্যারেন্ডারের মতো করে উচু করে রাখে।
আরুর অগ্নি দৃষ্টি অশ্রুসিক্ত হয় সে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায় আরু বেরিয়ে যেতেই আবসার তার দিকে তাকিয়ে হেসে অরিকের দিকে তাকায় অরিক আরুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লাবনীকে দ্রুত নিজের থেকে সরায়।

— নিজের সীমার মধ‍্যে থাকো তোমার সাথে হেসে কথা বলি তার মানে এই না যে সব সময় চিপকে থাকবে আমার সাথে কঠোরভাবে বলেই অরিক চলে যায় ওয়াশরুমে লাবনীও মাথা নিচু করে নিজের ঘরে চলে যায় আর ওয়াসিমা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে একবার অরিকের দিকে একবার লাবনীর যাওয়ার দিকে কিন্তু তার মাথা ঘুরছে আরুর দৃষ্টিতে কিছু তো ছিলো যা সে দেখতে পায়।

— এতো ভেবে সময় নষ্ট করিস না সময় হলে সব জানতে পারবি

— সেই সময় আসতে আসতে আমি পাগল হয় যাব
আবসার ওয়াসিমাকে কোলে তুলে নিজেদের ঘরে চলে আসে কাউকে এখন ডাকে না ঘরে এসে দেয়াল ঘড়িতে দেখে আটটা বাজে সে তাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও শুতে নিলেই তাকে আটকায় ওয়াসিমা — এখন না শুয়ে ফজরের নামাজটা পরে নেন

— ফজরের সময় তো শেষ বউ

— যদি কোনো কারণে ফজরের সময় না উঠতে পারি তাহলে ঘুম থেকে উঠেই ফজরের নামাজ আদায় করা উচিৎ ওয়াসিমার কথা শুনে আবসার আর কিছু না বলে চলে যায় ওয়াশরুমে একেবারেই গোসল করেই বের হয়ে নামাজে দাড়ায়।

ওয়াশরুমে বসে হাটুতে মুখ গুজে কান্না কান্না করছে তার কারণেই তো তার ভালোবাসা আজ অন‍্য কারো সে কি করত তখন যে তার কিছুই করার ছিলো না।
অনেক্ষণ পরেই বের হয় ওয়াশরুম থেকে এর মধ‍্যেই ফোন বেজে ওঠে তার হাতে নিয়ে দেখে তানিয়া সাখাওয়াত ফোন দিয়েছে আরু ধরে সালাম দেয় তানিয়া সালাম‍ের উত্তর দেয়

— আরু মা রাগ করেছিস মায়ের সাথে
— উহু রাগ করিনি আম্মু

— কেমন আছিস মা

— ভালো গতকাল আমরা শ্রমঙ্গল এসেছি এখান থেকে ঘুরে কাল ভাইয়া কোথায় নেয় জানিনা

— আরু তোর কি কিছু হয়েছে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞাসা করে তানিয়া

— উহু জায়গা পরিবর্তন হয়েছে তো তাই একটু ঠাণ্ডা ভাব এসেছে

— আরু তুমি না মাস্টার্স কারার জন‍্য বাইরের কান্ট্রিতে যেতে চেয়েছিলে

— হ‍্যা আম্মু কিন্তু তোমাদের ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা নেই আমার আর আমি চলে গেলে তোমাদের খেয়াল কে রাখবে

— আমাদের চিন্তা করতে হবে না তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে আমার আমি চাই তুমি হায়ার স্টাডিজের জন‍্য যাও দেশের বাইরে পরে সময় বুজে এখানের সব গুছিয়ে আমরাও চলে আসব বলে কল কেটে দেয়।
আরু তার মায়ের কথা শুনে অবাক আরু গ্র‍্যাজুয়েশন করতে চেয়েছিল বাইরে থেকে তখন তারা কেউ যেতে দেয় নি কিন্তু এখন হঠাৎই ডিসিশন চেঞ্জ হওয়ায় একটু অবাক সে তারপর তার জন‍্য ভালোই হয়েছে সে এই সবকিছুর থেকে দূরে থাকতে পারবে অরিকের পাশে কাউকে দেখা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

____________________

— আম্মা আমি আমার মেয়েকে এখন বিয়ে দিতে চাইনা আর ও বাহিরে যাবে উচ্চতর শিক্ষার জন‍্য যাবে আর এটা আমার মেয়ের স্বপ্ন

— না মেয়ে মানুষের এতো কিসের পড়া সেই তো শশুর বাড়িতে যেয়ে হাড়ি খুন্তি নারা লাগবে

— আপনিও তো শুরু থেকেই হাড়ি খুন্তি নেরেছিলেন আমাদের আব্বা মারা যাওয়ার পর থেকে ব‍্যবসায়িক দিকেই আপনাকে বেশী দেখা যেতো তাহলে তো আপনার ও ব‍্যবসায় সামলানোর উচিত হয়নি

— আমার বিষয়ে আলাদা তখন তোমার আব্বা বেচে ছিলেন না

— আমার ভাবতেই কষ্ট হয় আম্মা আপনি একজন উচ্চ শিক্ষিত মহিলা বলেই চলে যায় এহসান সাখাওয়াত। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসে ওঠে দিলরুবা সাখাওয়াত আজ সে আরুর বিয়ের কথা উঠাতেই এহসান এক কথায় না করে দেয় সে এখন মেয়ের বিয়ে দিবে না কারণ আরু এখন বিয়ে করতে চায়না সে আরো পড়তে চায়। এবং এহসান সাখাওয়াত ও চায় তার মেয়ে নিজের পায়ে দাড়িয়ে তার মায়ের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিক যে সে মেয়ে বলে অবহেলিত না সে একাই তার বাবা মায়ের খেয়াল রাখতে পারে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৩

কেটে গেছে একসপ্তাহ আজকে ওয়াসিমারা নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবে সেখানে দুই দিনে থেকে সবাই আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে ওয়াসিমাকে আবসার একা রাখবে না প্লাস কোনো হোস্টেলেও রাখবেনা তাই তার সাথে আকলিমা রহমান ও ইরফান রহমানও যাবে এই কথাই হয়েছে তাদের অরিকও কিছু দিন পর ট্রন্সফার নিয়ে চলে আসবে ঢাকায়। এই একসপ্তাহ আরু বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে অরিক লাবনী আলাদা ঘরে ঘুমালেও অরিক আরুকে দেখিয়ে দেখিয়ে লাবনীর সাথে ভালোই ঘুরেছে যখনই আরু সরে যেতো সেও লাবনীর থেকে সরে যেতো লাবনী বুঝতে পারে আরিক আরুকে অনেক ভালোবাসতো ইভেন এখনো ভালোবাসে।

— লাবনী তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে কাল তোমার বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে ও তুমি তো আমাদের সাথে থাকবে শুধু তোমার বাবা মাকে আসতে বলবে তাহলেই হবে

অরিকের কথা ভাবনা ভাঙ্গে লাবনীর সে কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নাড়ায় এমনিতেও তার কিছু ভালো লাগছে না কেমন দম বন্ধ লাগছে মনে হচ্ছে সে মারা যাবে নিঃশ্বাস না নিতে পারলে। কেমন ভয় লাগছে সবটা জানার পরেও সবার কি রিয়‍্যাকশন কি হবে

__________________

দীর্ঘ ঘন্টা জার্নির পর আলম নগর পৌছায় তারা ওয়াসিমা অরিককে বাসায় পৌছে দিয়ে আবসার আরুকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওয়াসিমা অনেক বললেও তাকে আর ঐ বাড়িতে নেয় না আবসার শেষে বাধ‍্য হয়ে ওয়াসিমা বাপের বাড়িতেই থেকে যায়।
সকাল সকাল বাড়িতে পৌছাতেই আলিয়া সাখাওয়াত সামনে পরে সে তাদের কাছে আসতেই আবসার তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে তাই আলিয়া সাখাওয়াত আরুর সাথেই কথা বলল — ঘুরাঘুরি কেমন কেটেছে আরু

— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো বড় মা আমি আসি সারারাত জার্নি করেছি তো শরীর ম‍্যাচম‍্যাচ করছে বলেই আরু চলে যায় নিজের ঘরে সে ফ্রেশ হয়ে এসেই যায় তার বাবা মায়ের ঘরে তাদের সাথে কথা আছে

বিকেলের দিকে আরুকে নিয়ে আবসার আসে ওয়াসিমাদের বাড়িতে সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলো লাবনীর বাবা মা দাদী সহ পুরো পরিবার আকলিমা রহমান তাদের আপ‍্যায়নে ব‍্যস্ত আশে পাশে উকি ঝুকি দিয়েও যখন ওয়াসিমাকে পায়না তখন রান্নাঘরে উকি মেরে দেখে ওয়াসিমা মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাজতেছে সে আর কিছু নি ভেবেই সবার সাথে পরিচয় হয় সবাই হাসি মুখে কথা বলছে।

এর মধ‍্যে অরিক এসে উপস্থিত সাথে একটা ছেলে যে অরিকের বয়সী হবে অরিক হাসি মুখে লাবনীর বাবা মায়ের সাথে পরিচয় হয় সবাই হাসি খুশী থাকলেও একজন থাকতে পারতেছে না সে হলো লাবনী। সে ভয়ে হাত দুটো মুঠোয় করে ক্রমাগত ঘষছে

— আঙ্কেল আন্টি আপনাদের সাথে আমার একটা জরুরী কথা আছে হঠাৎই অরিক লাবনীর বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলল

— কি কথা বাবা বলেন লাবনীর বাবা হাসি মুখে উত্তর দেয়
অরিক কিভাবে বলবে বুঝতে পারতেছে না সে চুপ করে আছে

— আঙ্কেল অরিক আর লাবনীর বিয়ে একটা ধোকা অরিককে ইস্তত করতে দেখে আবসার অকপটে বলে দিলো

— মানে অবাক কন্ঠে বলল লাবনীর বাবা মা

— আসলে আন্টি অরিক লাবনীকে বিয়ে করতে চায়নি কিন্তু আমার শশুর শাশুড়ি ক্রমাগত তাকে প্রেশার দেয় বিয়ে করার জন‍্য কারণ তারা তাদের চঞ্চল ছেলের কষ্ট আর সহ‍্য করতে পারছিল না তাই তারা ভাবলেন অরিককে বিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু অরিক বিয়ে করতে রাজী না শেষে তার মা নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে তখন না পারতে অরিক বিয়ের জন‍্য রাজী হয় তখন তার বিয়ে ঠিক হয় লাবনীর সাথে

— এর সাথে তোমার কথার সম্পর্কে কি বুঝলাম না বাবা আবসারের কথার মাঝেই লাবনীর বাবা বলল

— লাবনীও চায়নি বিয়েটা করতে সেটা নিশ্চয়ই আপনি জানতেন লাবনীর মাকে উদ্দেশ্যে করে কথা বলল আবসার। আবসারের কথা শুনে লাবনীর বাবা দাদী তার দিকে অবাক হয়ে তাকায়
তাদের তাকানো দেখে লাবনীর মা মুখ নামিয়ে নেয়।

— আমার আর ওয়াসিমার বিয়ের পরেই যখন আমি লাবনী ঘরে যাই তখনই তাকে অসুস্থ থেকে বিষন্ন লাগছিল তাকে জিজ্ঞেস করলেও সে বলতে চায়না কিন্তু তার বান্ধবী আমাকে সব বলে কোনো রকম সংক্ষেপে বলে যে সে তারই কলেজের একজনকে পছন্দ করে কিন্তু আন্টিকে বলায় সে ছাফ না করে দেয় কারণ সে এখনো চাকরী পেয়ে উঠেনি। তখনই আমি বুদ্ধি করে কাজীকে সরিয়ে ডুবলিকেট কাজী আনি এর পর যাই হয় সবই নকল ইভেন তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারও নকল আপনারা হয়তো খেয়াল করেননি অরিক একবারও কবুল বলেনি হয়তোবা টেনশনে আর এখানে আমার একটা উদ্দেশ্য ছিলো যেটা পুরোন হয়েছে আর মেয়টাও আরেকজনকে ভালোবেসে অন‍্যজনের সাথে বিয়ের নাটক করতে পারছেনা তাই

— তাই তুমি আমার মেয়ের জীবনের সাথে এইভাবে খেললে ইরফান ভাই আমার আপনাদের থেকে অন্তত এইরকম কোনো আশা ছিলো না লাবনীর বাবা আবসারের কথা শেষ না হতেই ঝাঝালো স্বরে বলে উঠল

— আমি জানতাম না ভাই এরকম কিছু জানলে
ইরফানের কথা শেষ না করতে দিয়ে আবসার আবার বলল — অরিক আমি আর লাবনী ছাড়া আর কেউ এই বিষয়ে কিছু জানত না আঙ্কেল আর আপনি একবার ভাবেন তো বিয়েটা হলে চার চারটে জীবন নষ্ট হয়ে যেতো আপনার মেয়েও পারত না সুখী হতে তাই আমি এই পথ অবলম্বন করেছি জানি পথটা ভুল কিন্তু তখন যদি লাবনী পালিয়ে যেতো আপনাদের মান সম্মান থাকত সেতো পালিয়ে যাওয়ার সব ব‍্যবস্থা করে ফেলেছিল।
আবসারের কথা শুনে নরম হয় লাবনীর বাবা সে নরম স্বরেই বলল — এখন কি করব বাবা আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে এটা আত্মীয়দের মধ‍্যে জানাজানি হয়ে গেছে

— আমার কাছে একটা উপায় আছে

— কি

— ওকে আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে দিন

— কিন্তু ছেলেটা বেকার মাঝখানে বলল লাবনীর আম্মু

— তুমি চুপ থাকো ছেলে শিক্ষিত আল্লাহ্ চাইলে চাকরী অবশ্যই হবে আর নাহলে আমি সাহায্য করব ব‍্যবসা করবে যেখানে আমার মেয়ে সুখী সেখানেই আমার সুখ বলতে লাবনী তার বাবাকে ঝাপটে ধরল তার বুকে মুখ গুজে কান্না করে দিলো।

— আম সরি বাবা আমি বুঝতে পারিনি আমার পক্ষে তাকে বিয়ে করা সম্ভব ছিলো না তাই আবসার ভাইয়ের কথাই শুনেছি তখন

— হুশ কাদে না মা আমাকে বলতে যদি আমি অবশ্যই তোমার দিকটা দেখতাম লাবনীর মাথা হাত বুলায়
এতসবের মাঝখানে সবাই এতক্ষণে নিরব দর্শক ছিলো কিন্তু এবার লাবনীর দাদি মুখ খুলল — কিন্তু ছেলের কোনো কিছু না জাইননা তো এমনেই মাইয়া কারো হাতে তুইললা দিতে পারি না এই ছেরা তোমার নাম কি

— জ্বি রাহাত

— কোথায় থাক বাড়িতে কে কে আছে

— আমার কেউ নেই আমি অনাথ বলেই মাথা নিচু করে ফেলল রাহাত
রাহাতের কথা শুনে লাবনীর মা দাদি দেনামনা করতে লাগল লাবনীর বাবা রাহাতের দিকে তাকায় যে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে লাবনীর দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে যেনো একটু ছোয়া লাগলেই কেদে দিবে।

— বিয়ে হবে এই মুহূর্তে হবে আবসার বাবা আপনি কাজী ডাকেন বলেই রাহাতের দিকে তাকায় তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — আমার মেয়েটা আমার বাড়ির রাজকন্যা বাবা সে ভুল করলে একটু সুধরে নেওয়ার চেষ্টা করো
লাবনীর বাবার কথা শুনে রাহাত তাকে জড়িয়ে ধরে — আল্লাহ্ চাইলে এই দেহে প্রান থাকা পযর্ন্ত আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তাকে ভালো রাখার।
তাদের মিলন দেখে সবাই সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুক্ষণের মধ‍্যে কাজী আসলে লাবনী আর রাহাতের বিয়েটা হয়ে যায় এবং লাবনীরা অরিকদের বাড়িতেই রাতে খাওয়া দাওয়া করে বিদায় নেয়।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৪

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর এই শহরে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব‍্যস্ততম শহর। গুলিস্থানে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে এসে থামে বাসটি দীর্ঘ আড়াই ঘন্টার পরে তারা গুলিস্থানে পৌছায় এখান থেকেই মোহাম্মদপুর যাবে তারা সেখানে মাঝারী সাইজের দুই বেডের একটা ফ্লাটেই থাকত আবসার আপাতত ওয়াসিমাকে নিয়ে সেখানেই উঠবে সাথে করে আরুকেও নিয়ে এসেছে কারণ ওয়াসিমা প্রথম প্রথম একা থাকতে কষ্ট হবে আরেকটা কারণ হলো আরু সাইন্সের ছাত্রী আর আবসার কমার্সের ছাত্র যতই ব্রিলিয়ান্ট হোক না কেনো সে ওয়াসিমার গ্রুপ সাবজেক্ট বুঝতে হলে তার কিছু সময় প্রয়োজন কিন্তু ওয়াসিমার জন‍্য সেই সময় টুকুও অনেক মুল‍্যবান তাই তার আর দেরী করতে চায়নি সিলেট থেকে আসার পরের দিনই চলে এসেছে ঢাকা শহরে এবং আবসার তার পরিচিত একজন লোকের দ্বারা বাসার কাছাকাছি ওয়াসিমার জন‍্য একটা মেডিক্যাল এডমিশন কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।

ছিমছাম একটা ফ্লাট ড্রইংরুমে একটা সোফা সেট আর ডাইনিং রুমে চার চেয়ারের একটা ডাইনিং টেবিল পাশাপাশি দুইটা রুম দুই রুমে খাট একটা পড়ার টেবিল এবং একটা আলমারি আছে কিন্তু আবসারের রুমে আলমারির পাশাপাশি একটা ওয়‍্যারড্রোব আছে। ওয়াসিমা ঘুরে ঘুরে দেখছে পুরো ফ্লাটটা তার বেশ পছন্দ হয়েছে এই বাসাটা আবসার বাহিরে গেছে খাবার আনতে কারণ তারা সেই সকালেই ব্রেকফাস্ট করে বের হয়েছে আকলিমা খাবার রান্না করে দিতে চাইলে আবসার না করে দেয় কারণ সেখানে সে একাই থাকত দুইচারটা প্লেট বাদে আর কিছু থাকার কথা না তাই আবসার বাজারের গেছে বাসার জন‍্য কিছু কিনতে বিকেল বেলা ওয়াসিমাকে সহ প্রয়োজনীয় সব মালামাল কিনবে।

_________________________

টিবি ফ্রিজের শোরুমের সামনে দাড়িয়ে ওয়াসিমারা সন্ধ‍্যা হতেই ঘরের জিনিস পত্র কেনার জন‍্য বেরিয়ে পরে তারা প্রয়োজনীয় সকল হাড়ি পাতিল সহ আরো কিছু কিনে আবসার ওয়াসিমা এবং আরুকে বাসায় পৌছে দিয়ে আবার বের হয় হাটতে হাটতে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসে তার কেমন সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে হবেই না কেনো তার সুখ পাখিযে তার কাছে আছে ফোনের কর্কশ শব্দে আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে ফোনের দিকে তাকায়।

— তুমি এখনো আসলেনা ক‍েনো তোমার না সন্ধ‍্যায় আসার কথা ছিলো

— আমি বাসে আছি মি. সাখাওয়াত দশ মিনিটের মধ‍্যে পৌঁছে যাব

— বাসে কেনো আসবে বাড়ির গাড়ি আছেনা তোমার সাথে

— এতো কথা এখন বলতে চাচ্ছি না আমি আসছি দশ মিনিট ওয়েট করুন বলেই ফোনটা কেটে দেয় আবসার সে টের পেলো এতক্ষণের সুখানুভূতী হঠাত গায়েব হয়ে গেলো তা বিষাদে পরিণত হলো।

ড্রইং রুমে বসা এজাজ সাখাওয়াত ও এহসান সাখাওয়াত। এর মধ‍্যেই এহসান সাখাওয়াত জিজ্ঞাসা করলেন — কি বলল আবসার

— আসছে সংক্ষিপ্ত শব্দে শেষ করে কথাটি বলল
এহসান ভাইয়ের মনোভাব বুঝে কিছু বলে না চুপচাপ থেকে রান্নাঘরে চলে যায় তার জন‍্য কিছু রান্না করতে আজকে সেও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে
প্রায় দশ মিনিট পরে তাদের বাসার কলিং বলটি বেজে উঠল এজাজ সাখাওয়াত উঠতে উঠতে এহসান সাখাওয়াত দরজা খুলে দেয়

— বাবা আমার বলেই জড়িয়ে ধরল আবসার ও হাসি মুখে আলিঙ্গন করল
— কেমন আছো ছোট মিয়া

— ভালো বাবা তুই না ছোট বেলায় কত সুন্দর ছোট পাপা ডাকতি এখন ডাকিস না কেনোরে বাবা

— বাবা পাপা এই শব্দ গুলো আমার জন‍্য নিষিদ্ধ সেটা কিন্তু তোমার পরিবারের লোকজনই করেছিল। আবসারের কথা শুনে আর কিছু বলল না এহসান মুখে কোনো রকম হাসির রেখা টেনে তাকে ভিতরে প্রবেশ করতে বলে।

— তুই না বউমাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিস শুনলাম

— হু ছোট মিয়া ওর ইউনিভার্সিটি অ‍্যাডমিশন কোচিং করাতে হবে তাই এনেছি

— তাহলে এখানে না এনে ভাড়া বাসায় উঠেছ কেনো এই বিল্ডিংয়ের যেকোনো একটা অ‍্যাপার্টমেন্টে উঠলেই তো পারতে

— আমার সাধ‍্য মতোই কাজ করি আমি আমি সামান‍্য বেতন ভুক্ত কর্মচারী আমার এতো বড় আলিশান বাসায় ঘুম আসবে না কথায় আছে না ছেড়া কাথায় শুয় লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা ঠিক না।
আবসারের কথা প্রেক্ষিতে আর কিছু বলার খুজে পেলো না দুই ভাই তাই চুপ থাকল তারা

— এই নিন বলেই হাত বাড়িয়ে একটা পেন ড্রাইভ এগিয়ে দেয়

— এটা দিয়ে কি হবে

— অনেক কিছুই এটার মধ‍্যে তার ছেলের কিছু ভিডিও ক্লিপ আছে যা দেখালেই আপনি আপনার মুক্তির সনদ পেয়ে যাবেন

— ভিক্টর এজাজ সাখাওয়াত বলে উঠল। এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসে আবসার

— তার কথা চিন্তা করতে হবে না সে এখন নিজের রঙ্গিন দুনিয়ায় আছে আর সে সাখাওয়াত বাড়ি ছেড়ে তার নিজস্ব ফ্ল‍‍্যাটে উঠেছে ঐ বাড়িতে এখন ইরিনা জামান একা থাকে। কথার মাঝখানে এহসান সাখাওয়াত আবসারের জন‍্য কফি আর কিছু খাবার নিয়ে আসে সাথে আবসারের প্রিয় সেমাই যেটা এহসান সাখাওয়াতের হাতে রান্না করা যা একসময় আবসারের খুব পছন্দ ছিলো

— আমি এখন উঠি ছোট মিয়া বাসায় আরু আর ওয়াসুকে একলা রেখে এসেছি বলেই দাড়ায় আবসার

— বাবা তোর জন‍্য সেমাই রান্না করেছি আমি নিজের হাতে তুই না পছন্দ করতি

— আমি এখন সেমাই খাইনা ছোট মিয়া মিষ্টি আমার সহ‍্য হয়না

— ছোট বেলার অনেক অভ‍্যাসই দেখি তোমার বদলে গেছে বলল এজাজ সাখাওয়াত

— যেখানে নিজের জীবনটাই বদলে গেছে সেখানে অভ‍্যাস বদলানো খারাপ কিছু না অন‍্য দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল আবসার

— আমাদের একটা ভুলের ক্ষমা কি করা যায়না

— আমার জন্ম নেওয়াটাই তো ভুল ছোট মিয়া বলেই আবসার চলে যায়
তার যাওয়ার দিকে এজাজ সাখাওয়াত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আজ চোখের সামনে তার সকল কর্মকাণ্ড ভেসে উঠছে — ভাইজান
এহসান সাখাওয়াতের ডাকে তার ধ‍্যান ভঙ্গ হয়

— তোমার সাথে কথা আছে

— কি কথা এহসান সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে

— আমি তানিয়া আরু সহ চলে যাচ্ছি

— মানে কি বলছিস কোথায় যাবি

— আরু কানাডাতে টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে সেখানে যাব

— হ‍্যা যাবে কিন্তু পড়তে যাবে আবার মাষ্টার্স করে চলেও তো আসবে

— আরু একা না সাথে আমরাও যাব আর আসব কিনা সেটা জানিনা উদাসীন ভাবে বলল এহসান সাখাওয়াত

— কেনো কোথাও যাওয়া হবে না আর এতো বড় ব‍্যবসা আমি একা সামলাতে পারব না কোনো ডিসিশন নেওয়ার আগে আমার সাথে আলোচনা করেছিস গম্ভীর স্বরে বলল এজাজ সাখাওয়াত

— কোনো সমস্যা হবে না আর আয়মান তো কিছু দিন পরেই চলে আসছে তখন তুমি আর আয়মান মিলেই ব‍্যবসায় সামলে নিও আরেকটি কথা তোমাদের ব‍্যবসায়ের থেকে একটা টাকাও নিব না তুমি তো জানো আমার ছোট খাটো নিজস্ব একটা রেস্টুরেন্ট আছে একটা ছয় তলা বাড়িও আছে যেগুলো আমি নিজের টাকায় কিনেছিলাম সেগুলোই বিক্রি করে দিব চিন্তা করোনা কোনোদিনও তোমাদের সম্পত্তিতে দখলদারি বসাতে আসব না তোমরা চাইলে লিখিত দিতে পারি বলেই এহসান সাখাওয়াত নিজের ঘরে চলে যায় আর এজাজ সাখাওয়াত শুণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
তার মনে হচ্ছে সব ঠিক হতে নিয়েও কেনো কোনো কিছুই ঠিক হচ্ছে না তার ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে ওঠে তার দেখে
আলিয়া সাখাওয়াত কল দিয়েছে ফোনটা ধরে এজাজ ওপাশ থেকে সালাম দেয় আলিয়া সাখাওয়াত সে উত্তর নেয়

— তুমি কিছু শুনেছ এহসান ভাই কিছু বলেছে

— হু একটু আগেই শুনেছি

— তুমি কিছু বললে না

— কি বলব একসময় তোমার ইনসিকিরিটি ফিল করার কারণে আবসারের সাথে জেনেও যে কাজটা করেছ সেই কাজের মূল‍্য এখন আমি আমার ভাই হারিয়ে দিচ্ছি আমার বড় সন্তান হারিয়ে দিচ্ছি শান্ত স্বরে বলল এজাজ সাখাওয়াত ফোনের ওপাশে শব্দ করে কেদে উঠল আলিয়া সাখাওয়াত। তার কান্নার শব্দ শুনে ফোন কেটে দিল এজাজ সাখাওয়াত তার এই কান্না এখন বিরক্ত লাগছে। কয়েকদিন আগেও যার কান্না তার হৃদয়ে তোলপাড় করত আজকে তার কান্না বিরক্ত লাগছে ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলল এজাজ সাখাওয়াত।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-১০+১১

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব১০

শ্রীহট্ট সিলেটের ঐতিহাসিক নাম ১৪ শতকে ইয়েমেনের সাধক পুরুষ হযরত শাহজালাল সিলেট জয় করেন এবং ইসলাম প্রচার করেন সেই থেকে সিলেটের নাম রাখা হয় জালালাবাদ কিন্তু ইসলাম প্রচারের শুরুতে বাধা হয় হযরত শাহজালাল এবং তার সাহাবীদের আটকে রাখার জন‍্য শিলা বা পাথর দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল তাদের পথ তখন আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে তিনি বলেন শিলা – হাট ( যার অর্থ পাথর সরে যা )
তৎক্ষণাৎ পাথর সরে রাস্তা তৈরী হয়েছিল সেই শিলা হাট থেকেই সিলেট নামের উৎপত্তি। আবার বলা যায় সিলেটে প্রচুর পরিমানে শিলা বা পাথর আছে যা এই জেলার অন‍্যতম একটি সৌন্দর্য।
এবং সিলেটে প্রচুর দর্শনার্থী স্থান আছে যা আমাদের দেশের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে।
সকাল আটটা বাস থেকে নামে আবসাররা। সারারাতের দীর্ঘ জার্নিতে সবাই ক্লান্ত কিন্তু তাদের বেশী কষ্ট করতে হয়নি কারণ আবসারের নানা ভাই তাদের জন‍্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে সে নিজেই আসতে চেয়েছিল কিন্তু আবসার না করে দেয় কেননা তারা দুজন বয়স্ক মানুষ পুরো বাড়িতে দুজন কাজের লোক ছাড়া আর কেউ থাকেনা তাই তাদের কষ্ট দিতে চায়নি। এমনিতেও আবসার এখানে আসতে চায়নি কিন্তু তার নানি ইসমাত আরা অনেক জোরাজুরি করেছে ইভেন সেও ভাবল ওয়াসিমাকে কিছু দিন পরেই মেডিক্যালের কোচিং করানোর জন‍্য ঢাকায় যেতে হবে তারপর আবার ব‍্যস্ততা শুরু তাই একটু রিফ্রেশমেন্টের জন‍্য এখানে আসা এখান থেকে ঘুরে ফিরে গেলেও মনটা ভালো থাকবে। আরেকটি মেইন কারন হলো সে তার বউয়ের সাথে খুব একটা সময় কাটাতে পারছে না তাই এই পথ অবলম্বন করা।

আবসারের নানা বাড়ি থেকে দুইটা গাড়ি পাঠানো হয়েছে একটা আবসার নিজে চালিয়ে যাবে আরেকটা ড্রাইভার সহ আরু লাবনী আর অরিক যাবে।
আরু ড্রাইভারের পাশে বসেছে আর পিছনে অরিক লাবনী বাস থেকে নেমে প্রায় একঘণ্টা পরে সবাই বিশাল বড় অট্টালিকার সামনে।
অরিক আরু অবাক না হলেও ওয়াসিমা অবাক হয়েছে সে একবার বাড়ির দিকে তাকায় আরেকবার আবসারের দিকে তাকায় নিজের মনের কথা চেপে না রাখতে পেরেই বলল — এটা কার বাড়ি আমরা এখানে এসেছি কেনো

— ধৈর্য্য ধরো উত্তর পেয়ে যাবে। আবসারের কথা শেষ হতেই ভিতর থেকে আসে ইসমাত আরা সাথে কায়সার সাহেব
তাদের দেখেই ওয়াসিমা সালাম দেয় — ভাল আছেন নানু মনি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে ওয়াসিমা ইসমাত আরা জড়িয়ে ধরে ওয়াসিমাকে আর কায়সার সাহেব জড়িয়ে ধরে আবসারকে। সবার সাথে আলাপচারিতার পরে সবাইকে রুম দেখিয়ে দেওয়া হয় যে যার রুমে চলে যায় বিশ্রাম নেওয়ার জন‍্য সারারাত জার্নি করে এখন বিশ্রাম না নিলেই নয়।

________________________

ঘরের প্রতিটা কোনা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে ওয়াসিমা তার মনে সন্দেহের বীজ রোপণ হয়েছে এতো বড় দেখে মনে হচ্ছে বেশ পুরোনোকালের এবং তাদের দেখেও মনে হচ্ছে তারা বেশ প্রভাবশালী অর্থবীত্তের কোনো অভাব নেই তাহলে আবসাররা গ্রামে ঐ রকম দোতলা একটা বাড়িতে থাকে কেনো। ওয়াসিমার ভাবনার মাঝেই আবসার ওয়াশরুম থেকে বের হয় চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ভাবুক ওয়াসিমাকে দেখে আবসার বুঝল ওয়াসিমা কনফিউসড তাই তার ভাবনা তারাতে বলল — এভাবে দাড়িয়ে না থেকে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নে সারাদিন ভাবার সময় পাবি বলেই নিজে গেঞ্জি পরে ঘর থেকে বের হয়।

— আমি আগে
— না আমি আগে অরিক আর লাবনী নিজেদের ঘরে ওয়াশরুমে কে আগে যাবে সেই বিষয় নিয়ে মারামারি করছে
— দেখো লাবনী আমি অনেক ক্লান্ত আমি আগে যাব
— তো আমিও তো ক্লান্ত এমনিতে আপনার জন‍্য সারারাত আমি বাসের মধ‍্যেও শান্তি পাইনি
— কেনো আমি কি করেছি তোমার সাথে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করল অরিক
— কি করবেন সারারাত খরত খরত করে নাক ডেকেছেন
নাক তাও আবার আমি কবে থেকে হোস্টেলে থেকে যখন পরেছে তাখন তার বিচ্ছিরি ঘুমের প্রশংসা সবাই করলেও কেউ এই নাক ডাকার আরোপ দিতে পারেনি এর মধ‍্যেই দরজা লাগানোর শব্দে বুঝল মেয়েটা তাকে বোকা বানিয়েছে তাই সে দরজা জোড়ে বারি দিয়ে বলল — এক মাঘে শীত যায় না মনে রেখো

— পরের চিন্তা পরে বর্তমানে যা পেয়েছি সেটাই উপভোগ করি ভিতর থেকে বলে লাবনী অরিক বিড়বিড় করতে করতে বারান্দায় যায়।
সেখানে গিয়ে দেখে আরু ভেজা চুলে বারান্দায় উদাসীন ভাবে দাড়িয়ে আছে চোখটাও হালকা ভেজা। ভেজা চোখের পাপরিতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয় অরিক এই মেয়েটা এখন তার জন‍্য নিষিদ্ধ।

— জীবন কতটা অদ্ভুত তাইনা অরিক ভাই একটা সময় সাহসের অভাবে কিছু করতে পারিনি এখন যখন সাহস করলাম যার জন‍্য করলাম সেই আমার না আমি তাকে এখন চাইলেও পাব না

— এই জন‍্যই বলা হয় সময় থাকতে মূল্য দিতে হয় বলেই হালকা হাসল অরিক হাসিটা তাচ্ছিল্য নাকি বেদনা বুঝা গেলো না কিন্তু অরিকের এই হাসিটা আরুর কাছে তাচ্ছিল্যই মনে হলো তার কান্না আসছে সে দৌড়ে ঘরে চলে গেলো বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে লাগল
— কেনো আল্লাহ্ কেনো আমার কপালে কি একটু ভালোবাসা নেই যে আমাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসত তাকে কেড়ে নিলে আমার থেকে আমার কি দোষ বলতে পারো আল্লাহ্ আমি সেটার প্রায়শ্চিত্ত করতে রাজী তারপরও তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় আরু টের পায় না

বারান্দায় দাড়িয়ে অরিক ডুবে যায় পাচঁ বছর আগের স্মৃতিতে আবসার মারফত অরিক আরুকে দেখতে পায় পাচঁ বছর আগে তারা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত তারা সিলেটে হোস্টেলে থেকে পড়ত আবসারের নানা বাড়ি এখানে হলেও আবসার সেখানে খুব একটা যেতো না সেটা কেনো অরিক জানে কিন্তু একবার আরু আবসারের সাথে দেখা করতে সিলেট আসে সেই প্রথম দেখাতেই চঞ্চলতায় ভরপুর আরুকে তার পছন্দ হয়েছিল পরে সময়ের সাথে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয় ভালোবাসায় সেটা আবসারও জানত আবসার সাখাওয়াত পরিবারের কারো ব‍্যাপারে কিছু বলত না তাই সেও সেই বিষয়ে জেনেও কিছু বলেনি। এরপর অরিক ভালোবাসার প্রকাশ করে আরু সেদিন কিছু না বললেও মুচকি হেসেছিল যেই হাসিতে ছিলো ভালোবাসার আহ্বান অরিকও বুঝেছিল আরুর না বলা ভালোবাসা সেই সাথে আরো একজন বুঝেছিল সে হলো দিলরুবা সাখাওয়াত সে কখনও আরুকে দেখতে পারত না কারণ সে সব সময় আবসারের সাপোর্টে কথা বলে তাই সেও আরুর ভালোবাসার পথে বাধা হয়ে দাড়ায় তাকে অরিককে ছেড়ে দিতে বাধ‍্য করে যা আজো পযর্ন্ত কেউ না জানলেও আবসার আর আরু জানে কিন্তু আবসার কিছুই বলেনি কেনো বলেনি। কিন্তু তারপর থেকেই আরুর দিলরুবা সাখাওয়াতের প্রতি আরো ঘৃণা জন্মায় এবং সেই সাথে হয়ে ওঠে সাহসী আগে মুখের উপর কিছু বলার সাহস না থাকলেও তা বর্তমানে আছে এবং তার বিপরীতে কাজ করে সব সময়।
সেই আরু অরিককে ভালোবাসলেও তার কাছে ফিরে যাওয়ার মতো মুখ তার ছিলো না কারণ সেই অরিককে বলেছিল সে তাকে ভালোবাসে না অন‍্য কাউকে ভালোবাসে তাই ভালোবাসার সুখের জন‍্য অরিক ও দূরে চলে আসে।

— শুনেন
লাবনীর কথা শুনে ভাবনা কাটে অরিকের সে তার দিকে ফিরে তাকায়
— যান ফ্রেশ হয়ে আসুন
অরিক বীনা বাক‍্যে চলে যায় ওয়াশরুমে অরিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লাবনী অবাক এই লোকটা রাগ করল নাকি।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১১

শ্রীমঙ্গলের গ্র‍্যান্ড সুলতান রিসোর্ট চারিপাশে সবুজে ঘেরা চা পাতার বাগান গুলো যেনো আরো সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানী ও বলা হয় সেখানেই আবসাররা এসেছে আজ একদিন গতকাল রাতেই চলে এসেছে আবসার সবাই না করলেও সে থাকেনি তখন কায়সার সাহেব ও ইসমাত আরা বেগম ছলছল চোখে বিদায় দিয়েছে তাদের।
আবসারের কর্মকাণ্ড ওয়াসিমা কিছু বুঝতে পারে না নিজেদের লোকদের সাথে এতো কি অভিমান যে তাদের সাথে দুদন্ড বসে কথা বলা যায় না কি হয়েছে কিছু তো একটা হয়েছে ভেবেই অরিকের দিকে তাকায় ওয়াসিমা অরিককে খুব একটা অবাক হতে দেখেনি আবসারের কাজে সে এমন ভাব করত যেনো আবসার এটা করবে এরকম প্রত‍্যাশাই সে করেছে।
আরুকে দেখেছে ফ‍্যামিলির লোকদের খুব একটা পছন্দ করে না বিশেষ করে দিলরুবা সাখাওয়াতকে সে দুই চোখে সহ‍্য করতে পারে না আর কিছু ভাবতে পারে না ওয়াসিমা যতই ভাবে মনে হচ্ছে ততই গোলক ধাধার মধ‍্যে আটকে যাচ্ছে।

কারো গভীর হাতের ছোঁয়ায় ঘোর কাটে ওয়াসিমার সে তাকায় তার কাঙ্খিত ব‍্যাক্তির দিকে আবসার হাসি মুখে তাকিয়ে আছে আবসারকে হাসতে দেখে ওয়াসিমাও মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করল — ঐভাবে তাকিয়ে হাসছেন কেনো

— দেখছি ফিসফিসিয়ে বলে হাত গলিয়ে দেয় ওয়াসিমা কোমরে শিরশির করে ওঠে ওয়াসিমার সর্বাঙ্গ সে কোনো রকম কাপা স্বরে বলে — কি দেখছেন

— আমার সুখ আমার শুভ্রবউকে বলেই ওয়াসিমাকে ঝাপটে ধরে আবসার যেনো বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখতে পারলে ভালো হতো কিন্তু আবসার তা পারে না হাতের বাধন আরেকটু শক্র হতেই ওয়াসিমা ব‍্যথায় শব্দ করে উঠল। ওয়াসিমা ব‍্যাথাদায়ক শব্দ শুনে আবসার হাতের শক্ত বাধন ঢিলে করলেও ছেড়ে দেয়না ওয়াসিমাও মিশে থাকে আবসারের বক্ষে।

____________________

ইরিনা সোফায় বসে অপেক্ষা করছে ভিক্টরে আজ দুদিন ভিক্টোর বাসায় আসে না এই বিশাল অট্টালিকায় সে একাই আছে বতর্মানে সারাদিন সার্ভেন্টরা কাজ করলেও তারা রাত আটটার মধ‍্যেই চলে যায়। প্রথম দিকে ইরিনা আর ভিক্টোরই না করত সেই প্রচলন এখনো আছে সোফার হ‍্যান্ডেলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে ইরিনা পুরো বাড়ি অন্ধকার এর মধ‍্যেই ফাহাদ বাসায় ঢুকে পুরো বাসা অন্ধকার দেখে সোজা নিজের ঘরে যেতে নিয়েও অন্ধকারে কারো অয়ভব দেখে ভরকে যায় কে হতে পারে ভেবেই ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে দেখে ইরিনা হাতের মধ‍্যে মাথা গুজে ঘুমিয়ে আছে সে নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকায় রাত দেড়টা বাজে এখন তো তাদের নিজের ঘরে থাকার কথা এখন তিনি এখানে কি করছেন ভেবেই ইরিনাকে হালকা স্বরে ডাক দেয় — মিস ইরিনা

— হু ঘুম কন্ঠেই জবাব দেয় সে
— নিজের ঘরে যেয়ে ঘুমান এখানে বসে আছেন কেনো
— তোমার বাবা এখনো বাসায় ফিরেনি ফাহাদ ইভেন সে গত দুই দিন যাবত বাসায় আসছে না ইরিনার কথা শুনে ফাহাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সে জানে ভিক্টোর বর্তমানে কোথায় আছে কিন্তু বলতে ইচ্ছা করল না কিভাবে বলবে কি বলবে যে আমার বাবার আপনার উপর থেকে মোহ অনেক আগেই সরে গেছে এখন সে তাদের হাসপাতালের নতুন ডাক্তার সোনিয়াকে নিয়ে ব‍্যস্ত সে বর্তমানে নতুন শরীরে নিজের চাহিদা খুজতে ব‍্যস্ত কিভাবে বলবে সে পারবে না বলতে তাই কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিল কিন্তু পিছন থেকে ইরিনা আবার ডাক দিলো — খেয়ে এসেছো ফাহাদ
ইরিনার কথা শুনে পিছনে ফিরে তার দিকে তাকায় তার চোখে মুখে ক্লান্তি বিরাজ করছে উহু কর্মের ব‍্যস্ততার ক্লান্তি না জীবনের ক্লান্তি যা তিনি বর্তমানে বয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

— আমি খেয়েই এসেছি আপনি শুয়ে পরুন বলেই ফাহাদ চলে গেলো পিছনে রেখে গেলো একজন হেরে যাওয়া নারী যে আজ জীবন চলার পথে হেরে বসে আছে তা বহু আগে হলেও উপলব্দি বতর্মানে করছে।

_____________________

কৃতিম আলো নিভানো হয়েছে ঘরে অনেক আগেই বর্তমানে কিছু মোম বাতিও শেষের পথে নিভু নিভু আলোয় জ্বলছে আর বেসামাল আবসার ডুবে আছে ওয়াসিমাতে। ক্লান্ত ওয়াসিমার গলায় মুখ ডুবিয়ে আছে আবসার হঠাৎই আবসার গলায় কামড় দিতে — আহ শব্দ করে উঠল ওয়াসিমা
— কমড়াবেন না প্লিজ ব‍্যাথা পাচ্ছি
— পরবর্তীকালে ঠিক হয়ে যাবে বউ আর আস্তে আস্তে সহ‍্য হয়ে যাবে

— ছাই হবে এই আপনি উঠুন তো আমি ব‍্যাথা পাচ্ছি আপনি অনেক ভার

— তাহলে এতক্ষণে কিভাবে সহ‍্য করেছ বউ নাকি আদরের তাড়নায় টের পাওনি বাকা হাসি দিয়ে বলে আবসার।
আবসারের কথা শুনে ওয়াসিমা লজ্জায় তার বুকে মুখ লুকায় আবসারও হালকা হেসে ওয়াসিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়

— আমার একটা আবদার রাখবি বউ
আবসারের কথা শুনে তার দিকে তাকায় ওয়াসিমা কেমন যেনো করুন স্বরে কথাটা বলল আবসার

— কি আবদার আপনার আমার সাধ‍্যে থাকলে অবশ্যই রাখব

— আমাকে একটা বাচ্চা উপহার দিবি বউ ছোট ছোট হাত পা যে এলোমেলো ভাবে আমাদের দুইজনের মাঝে ঘুমাবে যাকে আমরা আদর করব।
আবসারের কথা শুনে তার দিকে তাকায় ওয়াসিমা আবসারও অনেক আশা নিয়ে ওয়াসিমার দিকে তাকায়। ওয়াসিমাকে চুপ থাকতে দেখে আবসার আবার বলল — আমি জানি সামনেই তোর ম‍েডিক‍্যাল লাইফ শুরু হবে এর মধ‍্যেই বাচ্চা হওয়াটা বেমানান কিন্তু আমি চাই আমার একটা সন্তান হোক যার ছোট বেলাটা আমি উপভোগ করব তাকে নিজের হাতে লালন পালন করব তোর কিছু করতে হবে না তুই শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা করবি আর আমার খেয়াল রাখবি তাতেই হবে জানিস একটা সুস্থ পরিবেশ সুস্থ জীবন আমার অনেক দিনের আশা। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা গুলো পূর্ণ করব আমাদের সন্তানের মাধ‍্যমে।

— সন্তান হলো আল্লাহর প্রদত্ত অশেষ রহমত আল্লাহ্ চাইলে অবশ্যই আমরা বাবা মা হব আবসারের বক্ষে মিশে থেকে ফিসফিসিয়ে বলে।
ওয়াসিমার কথা শুনে আবসারের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
সে ত্বরিত গতিতে ওয়াসিমাকে নিচে ফেলে তার উপর নিজের ভর দিয়ে তার গলায় মুখ ডুবায় ওয়াসিমা খামচে ধরে আবসারের মাথার চুল এই খামচে ধরাটা আবসারকে যেনো আরো বেসামাল করে তোলে সে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে থাকে ওয়াসিমার গলায় চোখে মুখে একসময় ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দেয় ডুবে যায় ওয়াসিমার মধ‍্যে আবসার যেখানে না বললেও ভালোবাসা অবস্থান যা ওয়াসিমা টের পায়।

রাতের আকাশটা একটু বেশী সুন্দর বারান্দায় দাড়িয়ে লাবনী একাই দাড়িয়ে আছে রাত কটা বাজে তার কাছে হিসেব নেই ফোনটাও ঘরে রেখে এসেছে। চিন্তায় এদিক ওদিক পায়চারি করছে অরিক এখনো ঘরে আসেনি গতকাল রাতেও ঐ লোকটা ঘরে আসেনি কেনো বলতে পারেনা লাবনী। লাবনী দেখেছে অরিক তার সাথে টুকটাক কথা বললেও দূরে দূরেই থাকে কিন্তু কেনো নাকি সে তাকে এখনো মানতে পারেনি চিন্তিত ভাবে ঘরে পৌছায় লাবনী ওড়নাটা নিয়েই ঘর থেকে বের হয় আবসার আর ওয়াসিমার ঘরে যেতে নিলেও সে যায় না চলে যায় আরুর কাছে সেখানে গিয়ে আরুর ঘরের দরজা নক করে

— কি হয়েছে আপু কিছু বলবেন সদ‍্য ঘুমে ভাঙ্গা আরু জিজ্ঞাসা করে লাবনীকে

— আসলে ওনার নাম্বার আছে তোমার কাছে
— কার আপু
— অরিকের লাবনী ইস্তত করে বলল তার স্বামীর নাম্বার তার কাছে নেই এটা কেমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। লাবনীকে ইস্তত করতে দেখে আরু আর কিছু বলে না তার মোবাইল থেকে নাম্বার বের করে দিয়ে দেয় লাবনীকে।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৭+৮+৯

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৭

পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয় ওয়াসিমা গেট পেরিয়ে বের হতেই অরিক পেছন থেকে ডাকে

— ওয়াসু মনি
ভাইয়ের ডাকে পিছনে ফিরে ওয়াসিমা — কিছু বলবা ভাইয়া

-” হুম তুই অফিস রুমে একটু বস ভাইয়া কাজ শেরে একসাথে বাসায় যাব

— কেনো ভাইয়া প্রতিদিন তো রিক্সা ঠিক করে দাও আমি তাতেই চলে যাই তো আজকে কি হয়েছে

— আজকে শেষ পরীক্ষা তাই ভাইয়া নিয়ে যাই বলেই ওয়াসিমাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে অরিক অফিস রুমে যায় সেখানে তার কিছু কাজ শেষ করেই ওয়াসিমাকে নিয়ে বের হবে।

ওয়েটিং রুমের বেঞ্চে বসে মাথা দেয়ালে হ‍্যালান দিয়ে বসে আছে এর মধ‍্যেই আবসারের ফোন আসল ওয়াসিমা রিসিভ করেই সালাম দিলো ঐ পাশ থেকে সালামের উত্তর নিয়ে জিজ্ঞাসা করল — পরীক্ষা শেষ হয়েছে

— হু
— বাসায় পৌছেছিস
— না ভাইয়া বসতে বলেছে ভাইয়া নিয়ে যাবে
— ওহ তো বাসায় যেয়ে ফোন দিবি কথা আছে
— হু বলে আবার সালাম দিয়ে ওয়াসিমা কেটে দিলো খুব সাধারণ ওয়াসিমা একটা সাধারণ জীবন চেয়েছিল যেখানে কোনো ঝুট ঝামেলা নেই কিন্তু তার কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে কোনো জটিলতায় জড়িয়ে যাচ্ছে কেমন যেনো সব খাপছাড়া মনে হচ্ছে আবসার তাকে বিয়ে তো করল কিন্তু তার কাজ সম্পর্কে কিছু জানেনা ইভেন তাকে এখন পযর্ন্ত বাপের বাড়িতে রেখেছে অথচ তার পরীক্ষার হল থেকে তার শশুর বাড়ি কাছেই খুব দ্রুত যাতায়াত করা যায় অথচ সে বাপের বাড়ি থেকে আসে যায়। আবসারও সেই যে পরীক্ষার প্রথম দিন এসে দেখা করে গেছে এর মধ‍্যে শুধু আরু ছাড়া আর কেউই আর একটা খোঁজ খবর নিলো না শশুর বাড়ী কি আসলেই এরকম ভেবে পায়না ওয়াসিমা।

_____________________

নিজের কেবিনে বসে কাজ করতেছিল হঠাৎই সেখানে বীনা অনুমতিতে মিস জুলি প্রবেশ করে গরগর করে আবসারকে জিজ্ঞাসা করে — মি. এ এস তুমি নাকি অফিস থেকে লিভ নিচ্ছো ওয়ান উইকের ( জুলিয়ানার ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা শুনে বিরক্ত মুখে সে তার দিকে তাকায় )

— আই থিংক কারো কেবিনে প্রবেশ করতে হলে নক করতে হয় এই ম‍্যানারটা অন্ততপক্ষে আমি আপনার থেকে আশা করেছিলাম এন্ড আমি কি করব না করব তার কইফিয়ত তো আপনাকে দিতে বাধ‍্য নই রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠল আবসার।

আবসারের কথাটা জুলির মাইন্ডে লাগলেও কিছু বলল না সে ঠাণ্ডা স্বরেই বলল — একচুয়ালি আমি বাংলাদেশে এসেছি অনেক দিন হলো তুমি প্লিজ আমাকে একটু বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দেখাবে

— আম সরি মিস মার্টিন আমার কাজ আছে আপনি আপনার পি এ কে বলেন বলেই নিজের মতো কাজ করতে লাগল। জুলিয়ানা আবসারের দিকে তাকিয়ে রয় অপলক আর কি করলে এই লোকটা তাকে নোটিশ করবে এই আবসারের জন‍্য সে দিনের পর দিন বাংলাদেশে পরে রয়েছে বাংলা ভাষা শিখেছে পুরোপুরি না পারলেও মোটামুটি বাঙ্গালী পোশাক পরার চেষ্টা করে এতো কিছু করার পরেও আবসার তার দিকে ফিরেও তাকায় না কেনো ভেবে পায় না জুলিয়ানা।

— মিস মার্টিন আপনার আর কিছু বলার আছে থাকলে বলতে পারেন নাহলে যেতে পারেন। আবসারের কথায় ধ‍্যান ভাঙ্গে জুলিয়ানার সে আর কিছু না বলে চুপচাপ চলে যায় নিজের কেবিনে

_____________________

— ভিক্টর ইদানীং দেখেছি তুমি খুব রাত করে বাসায় ফিরো

— উফফ এতো বকবক করো নাতো এই একদম বউয়ের মতো অ‍্যাক্টিং করবি না বউ না তুই আমার
বলেই সামনের রমনীটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে নিজের ঘরে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রমনীটি
একটু পরেই বাড়ির সদর দরজা দিয়ে আরেকজন পুরুষ প্রবেশ করে বেশ সুদর্শন হাতে সাদা এপ্রোন তাকে দেখেই এগিয়ে যায় রমনীটি হাসি মুখেই সুধায় — এসে পড়েছ বাবা ফাহাদ

— আপনাকে আমার খেয়াল করতে হবে না মিস ইরিনা বলেই চলে যায় ফাহাদ
ফাহাদের যাওয়ার দিকে ক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে আছে ইরিনা — একবার শুধু সব সম্পত্তি আমার ছেলের নামে করি তারপরেই তোর কিচ্ছা খতম করব দাত কিড়মিড় করতে করতে বলে ইরিনা।

_____________________

সাখাওয়াত গ্রুপ অব কম্পানিতে তোড়জোড় চলছে আজকে প্রায় বিশ বছর পরে কম্পানির আরেকজন মালিক তার নিজস্ব চেয়ারম্যান পদ গ্রহন করবে
একটা ব্লাক কালারের গাড়ি অফিসের সামনে থামে গাড়ি থেকে নামে এজাজ সাখাওয়াত। সে নামতেই এহসান সাখাওয়াত তাকে জড়িয়ে ধরে — ভাইজান স্বাগতম

এজাজ সাখাওয়াত আলিঙ্গন ভেঙ্গে অফিস ভাবনটির দিকে তাকায় তার বাবার কষ্টের অর্জিত এই ব‍্যবসা তার বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের মা সামলায় তারপর তারা বড় হওয়ার পর তারা দুই ভাই মিলেই সামলায় অথচ মাঝখানে সব শেষ করে দিয়েছে এক কাল সাপীনি নারী। হ‍্যা গুরুজনরা ঠিকই বলে একজন নারী চাইলে সব কিছু করতে পারে একজন ব‍্যাক্তির জীবন সঙ্গীনি হিসেবে থেকে তাকে উচ্চতার শিখরে নিয়ে যেতে পারে আবার অন‍্য দিকে কোনো পুরুষের ধ্বংসের জন‍্য শুধু একজন নারীই যথেষ্ট।

____________________

সাখাওয়াত ভিলায় রাতের খাবার খাচ্ছে সবাই সেখানে আলিয়া সাখাওয়াত শুধু ভাতের প্লেট নাড়াচাড়া করছে তানিয়া সাখাওয়াত পাশে তাকিয়ে দেখে আলিয়া সাখাওয়াত কিছু ভাবছে

— আপা আপা
তানিয়ার ডাকে ঘোর ভাঙ্গের তার — কি হয়েছে তানিয়া

— খাচ্ছো না কেনো কখন থেকে নাড়াচাড়া করেই যাচ্ছো খাও টেনশন করো না ভাইজান ঠিক আছে তোমাকে কল করেছিল

— হুম তানিয়া কথা হয়েছে সে ঠিক মতো পৌঁছে গেছে আবার আজকে সকালে অফিস ও জয়েন করেছে

— তাহলে চিন্তা করোনা আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যাবে মনে রেখো আল্লাহ্ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা
আলিয়া সাখাওয়াত তানিয়া সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে খাওয়া শুরু করে তাদের দেখে দিলরুবা সাখাওয়াতের চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল তার ভাগ‍্য আসলেই আল্লাহ্ তায়ালা ভালো লিখেছেন নাহলে এই বয়সে এসে দুইটা ছেলেই তার বাধ‍্য আবার ছেলের বউ দুইটাও ভালো তাদের মিল দেখে মানুষ ভাবে দুই বোন তারা।

— বড় বউমা কালকে আবসার আসবে

— জ্বী আম্মা কালকে এসেই পরসু দিন ওর নানী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবে আবসার রাতের বাসে উঠেছে কাল সকালে এসে পৌঁছে যাবে

— ঐখানে যাওয়ার কি দরকার অন‍্য কোথাও যাক এর মধ‍্যে শুনলাম আয়মান দাদুভাই ও আসবে তাকে ও নিবে

— আয়মান এখন আসবে না আম্মা এই বছরটা গেলেই আসবে
দিলরুবা সাখাওয়াত আর কিছু বলে না চুপচাপ নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে যায় চেয়ারের পাশ থেকে লাঠি নিয়ে ঠকঠক শব্দ পায়ে নিজের ঘরের দিকে যায়।
তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি মারে আরু বিড়বিড় করে বলে শয়তান বুড়ি বিড়বিড় করে বললেও তানিয়া সাখাওয়াত শুনে ফেলে সে চোখ রাঙ্গায় মেয়ের দিকে আরু মায়ের চোখ রাঙ্গানিতে চুপসে যায় কিছু না বলে চুপচাপ খেতে শুরু করে।

— তোমায় আলিঙ্গন করার জন‍্য এই বুক তৃষ্ণার্ত শুভ্রময়ী আসছি আমি আমার তৃষ্ণা মিটাতে জানিতো আমার শুভ্রময়ীর মনে অভিমান জমে আছে ভালোবাসা দিয়ে সব মিটিয়ে নিবো।
বাসে জানালার পাশের সীটে বসে আবসার নিজের শুভ্রময়ীর কথা ভাবছে আর ভাবছে কিভাবে তার মান ভঙ্গন করবে

অপরদিকে ওয়াসিমা বারান্দায় বসে চাদ দেখছে আর আবসারের নামে অভিযোগ জমা করছে যার সাক্ষী এক মাত্র তার মন ও আকাশ।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৮

আকাশে থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে সারারাত হালকা বৃষ্টি থাকলেও ভোরের দিকে তার প্রলেপ বেড়ে যায় চারিদিকে আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে আবসারের কানে আযানের ধ্বনি যেতেই ঘুম ভাঙ্গে তার বাস এখনো চলছে এতক্ষণ তো বাস চলার কথা না আরো আগে পৌঁছে যাওয়ার কথা ভেবেই সুপারভাইজারকে ডাক দেয়

— বাস এখনো চলছে কেনো এটা তো চারটার মধ‍্যে পৌঁছে যাওয়ার কথা

— আরে ভাই বাইরে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই একটুপ দেরী হইছে আরকি এইতো আর দশ মিনিটের মধ‍্যেই বাস থামব বলেই লোকটি চলে যায়
আবসার তাকায় বাইরের দিকে তার বৃষ্টির পানির ঝাপটা ভালো লাগছে ঠিক দশ মিনিট পরেই বাসটা থেমে যায় সব শেষেই আবসার নামে বৃষ্টির বেগ হালকা কমলেও যেই বৃষ্টি আছে এই বৃষ্টির মধ‍্যে বের হলেই নিশ্চিত ভিজে যাবে তারপরও নেমে গেলো আবসার একটু সামনে যেতেই অটোরিকশা স্ট‍্যান্ড পেলেও অটো পেল না তাই অগত‍্যা অরিককে ফোন দিলো ছাউনির নিচে দাড়িয়ে।

— আমি বাস স্ট‍্যান্ডে দাড়িয়ে আছি এসে নিয়ে যা বলেই কল কেটে দিলো।
ঘুম ঘুম চোখে অরিক ফোনের দিকে তাকিয়ে একবার বাইরের দিকে তাকায় বাইরে বৃষ্টির ঠাণ্ডা পেয়ে একটা জম্পেস ঘুম দিয়েছিল নামাজ পরতেও আজকে মসজিদে যায়নি সেই এখন যাওয়াই লাগবে তাই কোনো রকম মুখ ধুয়েই ছাতা নিয়ে বের হয় সামনের বাড়ি থেকে অটো ড্রাইভার করিমকে উঠিয়ে তাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরে।
আধ ঘন্টা পর আবসারকে নিয়ে বাসায় আসে তারা বাসায় আজকে এখনো কেউ উঠেনি কালকে শুক্রবার তাই সবাই ঘুম। আবসার কিছু না বলে সোজা ওয়াসিমার ঘরে যায় অরিক আবসারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে — শা*লা অকৃজ্ঞ

পাতলা একটা নকশিকাঁথা গায়ে দিয়ে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে ওয়াসিমা লম্বা কেশরাশি গুলো ছড়িয়ে আছে আবসার আস্তে করে চুল গুলো গুছিয়ে একপাশে রেখে কাথার ভিতর ঢুকে নিজের জায়গা করে নেয়।
সারারাতের জার্নি প্লাস ক্লান্ত থাকায় আবসার সহজেই ঘুমিয়ে যায়

_______________

সকাল সাতটা ওয়াসিমা নড়তে নিলেই বুঝতে পারে সে কারো বাহু বন্ধনে আবদ্ধ ওয়াসিমার বুক ধরফর করে উঠল সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আবসারের ঘুমে ব‍্যাঘাত ঘটায় সে মুখ কুচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল
— উমম ঘুমাতে দে শুভ্রময়ী বলেই ওয়াসিমার ঘাড়ে মুখ গুজে আবারও ঘুম দেয়

আবসারের কন্ঠ শুনে ওয়াসিমা সস্তি পেলেও তার ঘাড়ে মুখ গুজতেই সর্বাঙ্গ কেপে ওঠে ওয়াসিমার সে কাপা স্বরে কোনো রকম বলে — আমাকে ছাড়েন আমি উঠি

— উহু বলেই আবসার আরো ঝাপটে ধরে এর মধ‍্যেই তাদের নক করার শব্দ আসে

— এবার ছাড়েন না দেখি কে এসেছে
আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমার দিকে বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকাতেই দেখে আরক্ত মুখে নজর নিচু করে রেখেছে

— বেশী লজ্জা পাস না তাহলে সকাল সকালেই শুরু করে দিব আমার রোমান্স
বলেই ওয়াসিমাকে ছেড়ে দেয় ওয়াসিমা উঠে গেট খুলে কথা বলেই বাইরে চলে যায় আবসার ও আর ঘুমায় না উঠে চলে যায় ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে অরিককে খোজার উদ্দেশ্যে বের হয় অরিককে খুজতে খুজতে আবসার ছাদে চলে যায়।
বর্তমানে আকাশ মেঘলা হলেও বৃষ্টি নেই তাই ইরফান রহমান ছাদের চারিদিকে জমে থাকা পানি গুলো পরিষ্কার করছিল গত কালই তিনি টিভিতে সংবাদ দেখেছে বৃষ্টির কারণে গরম কমলেও বাড়তে পারে এডিস মশা তাই সবাইকে নিজের আঙ্গিনায় জমে থাকা পানি পরিস্কার করার আহ্বান করেছে। ইরফান রহমান ভয়ে আছে ওয়াসিমাকে নিয়ে ওয়াসিমার একবার ডেঙ্গু হয়ে মরা মরা অবস্থা তাই তিনি আগে থাকতেই সচেতন থাকছে।

আবসার ছাদে প্রবেশ করেই অরিককে না পেলেও ছাদের কর্নারে কাউকে দেখে
— কে ওখানে
আবসারের ডাকে ইরফান রহমান পিছন ফিরে তাকায় আবসারকে দেখেই মুখটা এমন করে যেনো তার সামনে তিতা জাতীয় কোনো অখাদ্য কুখাদ‍্য রেখেছে
আবসার তাকায় ইরফান রহমানের দিকে তার পরনে লুঙ্গি আর সাদা সেন্টু গেঞ্জি আবসার তাকানো দেখে ইরফান নিজের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে সে জামাইয়ের সামনে বেফাঁস কাপড় পরে আছে তাই একটু লজ্জা পায়। আবসার ইরফান সাহেবের লজ্জা দেখে মুখ বাকিয়ে হাসে
— আজকাল দেখছি বুড়ো লোকেরাও দেখি মেয়েদের মতো লজ্জা পেতে থাকে

— অসভ‍্য ছেলে মুখে লাগাম দাও আমি বর্তমানে শশুর হই তোমার

— তা শশুর মশাই রাতে ঘুম ভালো হয়েছে তো আপনি কিন্তু যথেষ্ট ইয়াং আছেন চাইলে আমার একটা শালা অথবা শালী আনার ব‍্যবস্থা করতে পারেন

— বেয়াদব অসভ‍্য ছেলে মুখে লাগাম নেই এই জন‍্যই আমি এই ছেলের কাছে আমার বাচ্চা মেয়েটার বিয়ে দিতে চাইনি রাগে কটমট করে বলতে বলতে ছাদ থেকে বেরিয়ে যায় ইরফান রহমান। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবসার হাসে লোকটাকে তার জ্বালাতে বেশ ভালোই লাগে সে সচারচর কারো সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া না করলেও শশুরের সাথে করে। তাদের প্রথম সাক্ষাতে কথা মনে করেই আবসার হেসে উঠল যাকে বলে প্রান খোলা হাসি যেই হাসিতে শব্দ না থাকলেও আছে স্নিগ্ধতা।
দরজার সামনে দাড়িয়ে ওয়াসিমা পুরো ঘটনাই দেখল সে অবাক ঐ মুখচোরা গম্ভীর লোকটা কেমন তার বাবাকে রাগিয়ে দিয়ে নিজে কি সুন্দর হাসছে

— বাবার সাথে কি আপনার আগে থেকেই পরিচয়

— হুম আবসার হাসি মুখে উত্তর দেয়

— কবে থেকে আর কিভাবে

— সে অনেক কথা এখন বলোতো অরিক কই

— ভাইয়া তো ঘুমিয়ে আছে আসেন ঘরে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করবেন

— আমি হাত মুখ ধুয়েই বের হয়েছি চল আগে অরিককে জাগিয়ে নেই বলেই আবসার অরিকের ঘরের উদ্দেশ্যে যায় ওয়াসিমাও তার পিছু পিছু নামে কিন্তু সে যায় রান্নাঘরের দিকে সেখানে আকলিমা সহ পাশের বাড়ির করিমের বউ আছে তাকে সাহায্য করার জন‍্য।

___________________

ইরিনা স্তব্দ চোখে হাতে ধরে রাখা কাগজের দিকে তাকিয়ে আছে যেখানে স্পস্ট ভাষায় লেখা গুলো জলজল করছে তালাক নামা সাথে সাখাওয়াত ভিলা এক সপ্তাহের মধ‍্যে ছাড়ার লিগ‍্যাল নোটিশ
ডিবোর্স পেপার দেখে ভিক্টর কিছু না বললেও লিগ‍্যাল নোটিশ দেখে ভিক্টরের রাগের পারদ মাথায় চড়ে যায় সে বসে থাকা ইরিনাকে টান দিয়ে উঠিয়ে ঠাসস করে থাপ্পড় মারে রাগে হিসহিসিয়ে বলে — এই তুই না বলেছিলি এই বাড়ির অর্ধেক তোর নামে তাহলে এজাজ সাখাওয়াত তোর নামে লিগ‍্যাল নোটিশ পাঠায় কিভাবে হ‍্যা

— আমি তার স্ত্রী সুত্রে এই বাড়ির মালিকানা পেয়েছি ভিক্টর
ভিক্টরের থেকে দ্বিগুণ চেচিয়ে বলে ইরিনা

— এই এই আওয়াজ নিচে আমাকে এজাজ পাস নাই যে তোর রাগের ধারধারি বলেই ইরিনার চিবুক চেপে ধরে
— আমি ব‍্যাথা পাচ্ছি ভিক্টর ছাড়ো চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে ভিক্টর তবুও ছাড়ে না

— আর তুই যদি ঐ ডিবোর্স পেপারে সাইন করেছিস না তাহলে আমি তোকে দিন তারা দেখিয়ে আনব মনে রাখিস স্ল‍্যা*টানা কোথাকার বলেই ইরিনাকে ধাক্কা মেরে সেখান থেকে চলে যায়।
মুখে হাত দিয়ে শব্দ করে কেদে দেয় ইরিনা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না এতদিন সব ঠিক থাকলেও ইদানিং ভিক্টর তাকে একদমি দেখতে পারে না কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে সেদিন তো হাটু বয়সী একটা মেয়ের সাথে ফোনের ম‍্যাসেঞ্জারে চ‍্যাট করতে দেখেছে।
সে বুঝতে পারছে তার মোহ কেটে যাচ্ছে ভিক্টরের।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৯

সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করেই ওয়াসিমা ও আবসার নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায় ওয়াসিমাদের বাসা থেকে যেতে আধ ঘন্টার রাস্তা বাইকে বা অটোতে। প্রায় পয়ত্রিশ মিনিট পর তারা পৌছায় সেখানে আবসার ওয়াসিমাকে দেখে সবাই এগিয়ে আসে সবাই ড্রয়িং রুমেই ছিলো আবসার কাউকে কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে যায় ওয়াসিমা আবসারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে সে ভেবে পায়না লোকটা তাদের বাসায় নরমাল বিহেব করলেও এখানে কেমন গম্ভীর মনে হয় একটা কথাও মেপে মেপে বলে।

— কেমন আছো মা
আলিয়া সাখাওয়াতের কথায় তার দিকে তাকায় ওয়াসিমা তাদের সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে।
— ভাবী কোথা থেকে আরু এসেই ওয়াসিমাকে ঝাপটে ধরে ওয়াসিমা পরতে নিলেও সামলে নেয়

— ভালো আছ আপু

— হু খুব ভালো আমি অনেক খুশী ভাবী জানো আমরা ফাইনাল্লি অনেক দিন পর বিশেষ করে আবসার ভাইয়ের সাথে

— কেনো আপু আমরা কোথাও যাচ্ছি
— হ‍্যা তুমি জানো না
— নাতো উনি কিছু বলে নি
— ও আচ্ছা এখন চলো তো বলেই ওয়াসিমাকে নিয়ে যায় নিজের সাথে
— এই আরু মেয়েটা মাত্র আসল একটু রেস্ট নিতে দে পিছন থেকে তানিয়া বলল আরু কি আর করো কথা শুনে সে চলল ওয়াসিমাকে নিয়ে নিজের ঘরে।

আবসার ঘরে ঢুকেই গোসলে ঢোকে প্রায় অনেক্ষণ পরে গোসল থেকে বের হয়ে ঘরে ওয়াসিমাকে না পেয়ে তাকে ডাকতে ডাকতে বের হয় আবসার
— ওয়াসু ওয়াসু
— ওয়াসিমা তো আরুর কাছে আলিয়া সাখাওয়াত এসে বলল। এর মধ‍্যেই আবসারের ডাক শুনে আরুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে
— ডেকেছেন
— হু কোথায় গিয়েছিলে
— আমি তো আরু আপুর সাথেই ছিলাম
আবসার আর কিছু না বলে চুপচাপ ওয়াসিমার হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায় পিছন থেকে আলিয়া সাখাওয়াত তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে ছেলেটার বড্ড অভিমান এই পরিবারের প্রতি

— বড় বউমা শুনলাম বড় দাদু ভাই বউ সহ এসেছে কই
দিলরুবা সাখাওয়াত নিজের ঘর থেকে বের হতে হতে বলল
— এসেছে আম্মা আপনি তো আপনার নাতি চিনেন সে মেয়েটাকে একটু সময়ের জন‍্যও একা ছাড়ে না

— কেনো একা ছাড়বেনা তার বউকে কি কেউ খেয়ে ফেলবে নাকি আর ঐ মেয়েটাই কেমন সারাদিন স্বামীর পিছু ঘোরা ছাড়া আর কিছু পারে না নাকি গলা ছেড়ে চিল্লাচিল্লি করে বলে দিলরুবা সাখাওয়াত।

— থামেন মা ছেলেটা খুব একটা বাড়িতে আসে এখন অশান্তি করবেন না দয়া করে

— আমি অশান্তি করছি নাকি সে নিজের মন মর্জি মতো চলছে হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসল আবার সে না থাকলে তার বউকেও তার শশুর বাড়িতে রাখে কেনো

— থামেন আম্মা আলিয়া সাখাওয়াত অনেক কষ্টে দিলরুবা সাখাওয়াতকে শান্ত করে নিজের সাথে নিয়ে যায়। দিলরুবা সাখাওয়াতকে শান্ত করে ঘর থেকে বের হতেই সামনে পরে তানিয়া ও আরু

— বড় আম্মু তুমি তাকে কিছু বললা না ক‍্যান সে যাতা আমার ভাইয়ের ব‍্যাপারে বলে গেলো এই তোমাদের আশকারা পেয়েই সে এতো কিছু বলার সাহস পায় সব সময় দেখি আমার বন্ধু বান্ধবীদের দাদী দাদারা অনেক আদর করে কিন্তু আমার আর ভাইয়ের ভাগ‍্য দেখো ঐ মহিলা আমাদের সহ‍্যই করতে পারে না আমি নাহলে মেয়ে কিন্তু আবসার ভাই সেতো ছেলে তাকে ক‍্যানো ভালোবাসে না বলতে পারো ও তুমি কেনো বলবা তোমার ছেলেকে তো সে ঠিকই ভালোবাসে আদর যত্ন করে তোমরা সবাই সার্থপর

কথা শেষ হতে না হতেই তানিয়া আরুর গালে থাপ্পর মারে আরু গালে হাত দিয়ে নিজের মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে চলে যায়।
তানিয়া সাখাওয়াত আরুর পিছনে যেতে নিলেই তাকে থামায় আলিয়া সাখাওয়াত

— থাক তানিয়া বাচ্চা মানুষ
— না ভাবী সে বাচ্চা না একুশ বছর হয়েছে তার পরের সংসারে যেতে হবে এরকম মুখ চালালে তো সংসার করতে পারবে না।
আলিয়া জাকে ঠাণ্ডা করার জন‍্য তাকে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়

________________
ছলছল নয়নে ওয়াসিমা বসে আছে আবসারের সামনে সে বার বার উঠে ঘর থেকে বের হতে চেয়েছে কিন্তু আবসার বার বার তাকে আটকেছে শেষে না পেরে ছলছল চোখে বসে আছে সে

— এক ফোটা পানি চোখ থেকে পরলে আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন বলেই বেরিয়ে যায় ঘর থেকে আর যাওয়ার আগে ওয়াসিমাকে শাষিয়ে যায় যেনো ঘর থেকে একপা বাইরে রাখলে তার খবর করে ছাড়বে।
আবসার নিজের ঘর থেকে বের হয়ে সোজা আরুর ঘরের সামনে যায় এতক্ষণে তারা বাহিরের সব কথাই শুনেছে

— আরু
বালিশে মুখ গুজে কান্না করছিল আরু ভাইয়ের কথা শুনে উঠে গেট খুলে দেয়
— দশ মিনিট সময় দিলাম এর মধ‍্যেই যা যা লাগে গুছিয়ে রেডি হ আর কান্নাকাটিও বন্ধ কর সে আমাদের কেউ না তার কথা আমাদের কাছে কোনো ম‍্যাটার করে না ওকে বলেই আরুর চোখের পানি মুছে দেয় আরুও মাথা নাড়ায় আরুর সাথে কথা শেষ করে বের হতেই মুখোমুখি হয় আলিয়া সাখাওয়াতের তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই আলিয়া সাখাওয়াত বলে — তুমিও কি তাই ভাব আমাকে সার্থপর

আবসার আলিয়া সাখাওয়াতের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে চলে যায় আবসারের শান্ত ভাব যেনো আলিয়ার কান্না যেনো বাড়িয়ে তোলে সে শাড়ির আচল মুখে গুজে আবার নিজের ঘরে চলে যায়।

দশ মিনিট পরেই আবসার আরু ও ওয়াসিমাসহ বেরিয়ে যায় বাসা থেকে বাস স্ট‍্যান্ডে আসতেই দেখে সেখানে আগে থেকে অরিক আর লাবনী উপস্থিত ওয়াসিমা ভাবীকে দেখে তার কাছে যায় কুশল বিনিময় করে বিয়ের পর এই প্রথম লাবনীর সাথে দেখা তার আরু সাথেও পরিচয় করায় অরিক বোনকে পাশে ডাকে
— ভাইকে না বলে চলে এলি কেনো আবার একটু আগে আবসার ফোন করে বলল ইমার্জেন্সি লাবনীকে নিয়ে আসতে
ভাইয়ের কথা শুনে ওয়াসিমা তাকায় আবসারের দিকে
— আরে তিনটা মেয়ে নিয়ে রাতের বেলা এতো পথ জার্নি করা ঠিক হবে না তাই ভাবলাম তুই ও বাসায় আছিস আর আজকের দিনটা ওয়েস্ট করতে চাইনি
আবসারের কথা বিশ্বাস করে অরিক কিন্তু আরুর দিকে তাকিয়ে দেখে তার মুখটা ভার করে রেখেছে

— এই যে বিয়াইন সাব ভাব নিয়েন না এতো সুন্দর বিয়াই কি দেইখাও দেখেন না

— আপনার মতো পেচা মুখো বিয়াই কি ভুলতে পারি আমি আরু হাসি মুখে বলল
আরুর কথা শুনে অরিক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবসার এসে বাসে উঠার তাগাদা দেয়।

বাসে উঠার পরেও আরু অরিক একে অপরের সাথে দুষ্টুমি করছে আর লাবনী তাদের দিকে তাকিয়ে জ্বলছে আর পুরির মতো ফুলছে।
বাস ছাড়তেই যে যার সীটে বসে পড়ে আরুর বাসে উঠেই ঘুমানোর অভ‍্যাস সে নিজের মতো কানে হেডফোন গুজে চোখ বন্ধ করে আছে।

— আপনার বিয়াইন সাহেবার সাথে রসের আলাপ শেষ হয়েছে দাতে দাত চেপে বলল লাবনী

— এভাবে দাত চেপো না দাত ভেঙে গেলে পরে আমারই সমস্যা সবাই আমাকে বুড়ির বর বলে ডাকবে আমার মতো এতো হ‍্যান্ডসাম একটা ছেলেকে বুড়ির বর বলে ডাকাটা রীতিমতো অপমান হয়ে যাবে না

— আপনি ঐ হ‍্যান্ড মানে হাত আর সাম মানে কিছু ঐ হাত আর কিছুই আছে আপনার মধ‍্যে দেখতে লাগে চোরের মতো হ‍্যান্ডসাম আসছে হু বলেই মুখ ভেংচি মারে লাবনী অরিক তো অবাক এই মেয়ে রীতিমতো তাকে অপমান করছে।

#চলবে