Sunday, July 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 138



বিয়ে থা পর্ব-০৪

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-০৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

কাঁচের জানালা দিয়ে উদাস মনে মেঘলা আকাশ দেখছেন মিথিলা বেগম। মনে তার নানানরকম চিন্তা। মেয়েটা তার কেমন আছে ভারতে?’

মিথিলার চুলের মুঠি টেনে ধরলো কেউ। মানুষটা কে তিনি জানেন। রমজান শেখ শক্ত করে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরলেন। মিথিলা বেগমের মনে হলো তার গালের সাথে দাঁত লেগে গাল ফুটো হয়ে যাবে। রজমান শেখ ধমকে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,

‘বাড়ির সবার পাসপোর্ট আমার ঘরের লকারে থাকে। চাবি কোথায় থাকে তা একমাত্র তুই জানিস। নিনীকা’কে পাসপোর্ট তুই বের করে দিয়েছিস তাই না?’

মিথিলা বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। কিন্তু তার ঠোঁটে হাসি। বললেন,

‘বেশ করেছি। আমার মেয়েকে আমি নরক থেকে মুক্তি দিয়েছি।’

রমজান শেখ দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

‘তোর মোবাইল কোথায়? মোবাইল দে।’

মিথিলা বেগম এবার শব্দ করে হাসছেন।

‘তুমি এতো বোকা রমজান। আমার মেয়েকে যাতে আর কোনো নরপিশাচ আঘাত করতে না পারে সেজন্য আমি নিজেই তাকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে মানা করেছি। নিজের কসম দিয়ে বলেছি আমি না বলা পর্যন্ত ও যাতে আমার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ না করে। কারণ আমি জানি তুমি ঠিকই আমার ফোন চেক করবে। গোয়েন্দা লাগিয়ে রেখেছো? বের করতে পারলে কিছু?’

রমজান শেখ সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় বসালেন গালে। মিথিলা বেগমের ঠোঁটের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো লাল রক্ত।

রমজান শেখ রাগে ফুসফুস করছেন। রেগে গেলে তার কিছু খেয়াল থাকে না। তখনই অল্প বয়সী কিশোরী কাজের মেয়েটি মিথিলা বেগমের রুমে এসেছে। হাতে তার হালকা নাস্তা ও ফলমূল। তার ম্যাডাম নাস্তা করেননি। কিশোরী মেয়েটি যদি জানতো তার এই আসাটা তার কাল হবে তবে কি সে পা ফেলতো এ ঘরে!

রমজান মেখ কিশোরী মেয়েটির হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। মিথিলা আঁতকে উঠলেন। টেনে ধরলেন রমজানের হাত।

‘মেয়েটাকে ছেড়ে দাও। ও বাচ্চা মানুষ। তুমি ওর উপর নিজের রাগ মিটাতে পারো না রমজান। আল্লাহর দোহাই লাগে বাচ্চা মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।

নরপশুদের মনে কখনো মায়া হয় না। কিশোরী মেয়েটিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো নিজের বেডরুমে। মিথিলা দিশা হারালেন। কিশোরী মেয়েটির নিয়ে আসা নাস্তার ট্রে টা নিচে পড়ে আছে। ফলমূল এর সাথে নিয়ে এসেছিল ছুরি। তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা হাতে তুলে নিয়ে ছুটলেন নরপিশাচের থেকে একটি বাচ্চা মেয়েকে বাঁচাতে।

রমজান শেখ যখন দরজা ঠেলে বেডরুমে ঢুকবেন, তখনই ঠিক তখনই তার বাহুতে কেউ আঘাত করলো। ব্যথায় ছুটে গেলো কিশোরীর হাত। সে মিথিলার দিকে ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে তাকালো। মিথিলা সিঁড়ির দিকে ঠেলে দিলেন।

‘পালা, নিজের বাড়ি যা। আর আসিস না। পালিয়ে যা মা।’

কিশোরী মেয়েটি ছুটলো। সদর দরজা পেরিয়ে বাগান, বাগান পেরিয়ে গেইট।

রমজান শেখের হাত থেকে গলগল করে রক্তের স্রোত বের হচ্ছে। পাপের রক্ত। মিথিলা ছুরি হাতে ছুটলেন নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে বসে রইলেন। নরপশু টা তাকে কি করবে তিনি জানেন না। তবে তার সাথে ভালো কিছু হবে না। মিথিলা মাথার চুল খামচে ধরে চিৎকার করে আল্লাহ কে ডাকলেন।

‘ তোমার কি দয়া হয়না খুদা? একটুও দয়া হয়না।’

রমজান শেখ আধঘন্টা পর দরজায় নক করলেন। মিথিলা তখন তরতর করে কাঁপছেন। অমানুষটা সার্ভেন্টদের ঢেকে এনে দরজা ভেঙে ঢুকলো। মিথিলাকে টেনে বের করলো ওয়াশরুম থেকে। তারপরের মুহূর্ত গুলো আরও অমানবিক, অমানুষিক। স্বামীর অধিকার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া লোকটার আঘাত সহ্য করতে না পেরে মিথিলা জ্ঞান হারালেন।

কিন্তু তাতে যায় আসে কি তার? সে তার নিজের কাজ শেষ করলো। বড় অবহেলিত ভাবে ফেলে গেলো মিথিলার ঠান্ডা শরীর।

রমজান শেখ চলে যেতেই পুরনো কাজের মহিলা এসে ঢুকলেন। জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হলেন তখন ফোন করলেন ডাক্তার কে।

ডাক্তার এলেন। জ্ঞান ফিরানোর ব্যবস্থা করলেন। বললেন,

‘রোগীর অবস্থা ভালো না, হসপিটালে এডমিন করুন। দরজার পাশে দাড়ানো সার্ভেন্ট ভয়ে ভয়ে বললেন,

‘যা করার ঘরেই করতে হবে। স্যারের হুকুম।’

ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তার ডাক্তারি জীবনে অনেকবারই এই বাড়িতে আসা হয়েছে। তবে বেশিরভাগই এসেছেন অত্যাচারীত হওয়া এই নারীটির চিকিৎসা করতে। লুকিয়ে অনেকবার বলেছেন একশান নেওয়ার কথা। কিন্তু নারীটা কিসের ভয়ে যেনো চুপসে থাকতো। সেটা কি? কেউ জানে না।


ধারা আহমেদকে ধ্রুব ফোন করলো আরও দুইদিন পর। তাও পাঁচ মিনিটের জন্যে। জানালো সে ভীষণ ব্যস্ত। আগামী ছ’মাস বাড়ি ফিরতে না-ও পারে।

ছেলের ফোন পেয়ে আর কিছু হোক বা না হোক ধারার অভিমান কমেছে। এতেই যেনো ফাহিম মাহবুব শান্তি পেলেন। এবার এই নারীকে ধীরেসুস্থে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলতে পারলেই হয়।

নিনীকা মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। দুদিন আগেই সে হোস্টেলে এসে উঠেছে। তার রুমমেটরা অনেক ভালো। সবাই অনেক মিশুক। সুমিত্রার সাহায্যে নিনীকা কয়েকটা টিউশনি পেয়ে গেছে। তার বাবা খারাপ হলেও টাকার অভাব বুঝতে দিতে চান-নি। কিন্তু নিনীকা বুঝেছে। পাপের টাকা ছুড়ে ফেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়েছে। আপাতত এই একলা দেশে তার সঙ্গী পড়াশোনা, টিউশনি ও সুমিত্রা।


কাঁদা মাটিতে বুটের গটগট শব্দ হচ্ছে শুধু। একদল সৈনিক হেঁটে চলেছে পাহাড়ের গা ঘেষে। হাতের পিস্তল ও বন্দুক গুলো সামনে তাক করে সতর্ক ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। তন্মধ্যে পড়লো একটি খাদ। ছোটখাটো খাদটি লাফ দিয়ে পেরিয়ে গেলো তারা। নিরব হঠাৎ ফিসফিস কন্ঠে ডাকলো,

‘মেজর।’

মেজর কালো চশমার আড়ালের চোখ দুটো ঘুরালেন কিঞ্চিৎ। নিরব হাতের এক আঙ্গুলের ইশারায় কিছু দেখালো। অতঃপর তারা নিঃশব্দে যেতে লাগলো সেদিকে।

কিছু সন্ত্রাসী সেখানে ঘাঁটি গেঁড়েছে। তাদের অ্যারেস্ট করেই ফিরে যাচ্ছে তারা গাড়ির দিকে। আবারও সেই ছোট খাদ। তারা লাফ দিয়ে পেরিয়ে গেলো সেটা। তারপর সড়কে এসে একে একে উঠে বসলো সেনাবাহিনীর সেই গাড়িতে।

সীমান্তে ক্যাম্প গেঁড়েছে সৈন্যরা। সন্ত্রাসীদের ব্যবস্থা করে তারা ক্যাম্পে এসেছে। শক্ত রুটি ও ভাজি খেয়ে কেউ ঘুমিয়ে কেউ জেগে পাড় করে দিলো রাত।

সকালের সূর্য উদয় হওয়ার পরই ঘুম ভাঙলো তাদের। মেজর বন্ধ করে রাখা পার্সোনাল মোবাইলটা বের করলেন। ফোন করলেন কাউকে। রিসিভ হতেই জিজ্ঞেস করলেন,

‘তার নামটা কি বাবা?’

ফাহিম মাহবুব চমকালেন না। তার ছেলে যদি এখন বলে যে আমার বউকে আমি এখনো দেখিনি তবুও তিনি চমকাবেন না। সহজ গলায় বললেন,

‘তার নাম নিনীকা শেখ।’

‘ওহ।’

ফাহিম মাহবুবের গলায় কৌতূহল,

‘হঠাৎ তার কথা জিজ্ঞেস করছো যে?’

ধ্রুব ক্যাম্প থেকে বের হয়ে পকেটে হাত গুজে ধারালো।

‘তার কিছু ছবি পাঠিয়ে দিও বাবা।’

‘পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু হঠাৎ তার কথা কেন?’

ধ্রুব নিজের চুলের ভাজে হাত ডুবালো,

‘আমি স্বপ্ন দেখেছি বাবা। লাল শাড়ি পড়া কেউ ছিল সে। আমার বউ। তার মুখের এক পাশ দেখা যাচ্ছে। সে আমাকে বার-বার বলছে তোমাকে আমার দরকার, তুমি এসো, তুমি এসো, একবার এসো। তুমি বুঝতে পারছো তো বাবা?’

‘বুঝতে পারছি।’ তোমার কি তার জন্য মন কেমন করছে?’

‘জানি না বাবা। সি ইজ এ চিটার। নিজের বিয়ে করা বরকে রেখে পালিয়ে গেছে। আমি তাকে মনে করতে চাই না।’

‘তাহলে তাকে দেখতে চাইছো কেন?’

ধ্রুবের হাতের পেশিগুলো ফুলে উঠছে। সে ভীষণ উত্তেজিত বোধ করলো।

‘আমার মনে হচ্ছে আমি যদি তাকে না দেখি তবে কিছু একটা আটকে যাবে বাবা। তাকে আমার দেখা উচিত।’

ফাহিম ফোন রাখলেন। এক মিনিট পর ধ্রুবের ফোনে শব্দ হলো। সে মেসেজ অন করলো। প্রথম ছবিটা দেখে সে হেঁসে ফেললো। একটা হনুমানের ছবি। দ্বিতীয় টা হাতির। তৃতীয় টা একটি হরিণের। চতুর্থ টায় তার চোখ আটকে গেলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। তার মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বের হলো, ‘ অলীক কন্যা। ’

তখন আরেকটি মেসেজ এলো। ফাহিম মাহবুব লিখেছেন,

‘ বয়স তো কম হলো না বাবা। নাতি-নাতনীর মুখ দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারো তো।’

ধ্রুব ফোন করলো। ফাহিম মাহবুব গম্ভীর স্বরে বললেন,

‘নাতি-নাতনীদের মুখ দেখাচ্ছো কবে?’

সে হাসলো। ফাহিম মাহবুব আফসোস করলেন,

‘বিয়ের দিন যদি হাসতে তাহলে হয়তো আমার সহজ সরল বউমা তোমার দজ্জাল চেহারা দেখে পালিয়ে যেতো না বাবা। বউমার সাথে দেখা হলে সবার প্রথমে হাসবে।’

ধ্রুব নিজেও গম্ভীর হলো,

‘তোমার কেন মনে হচ্ছে সে আমার জন্য পালিয়ে গেছে? অন্য কোনো কারণ ও তো থাকতে পারে।’

‘একদমই না। আমি শিওর তোমার রাক্ষসের মতো চেহারা দেখেই সে জান হাতে নিয়ে পালিয়েছে।

ধ্রুব ফোন রেখে দিলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো চতুর্থ ছবিটি। চারিদিকে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। বাতাসের তোপে ধ্রুব’র অগোছালো চুলগুলো কপালে লেপ্টে রয়েছে। চোখমুখে কি নিদারুণ মুগ্ধতা তার।

(চলবে)

[ আপনাদের কমেন্ট দেখে আমি অবাক, শিহরিত।

১) পাসপোর্ট ছাড়া ইন্ডিয়ায় কিভাবে গেলো।

আপনারা যে ওয়াশরুমে যান, এক কথায় বলেন ফ্রেশ। কিন্তু আপনি টয়লেট করছেন নাকি বসে থাকছেন সেটা তো বলেন না। কেন বলেন না?

ঠিক তেমনই। নিনীকা পাসপোর্ট নিয়ে ট্রেনের সিটে বসলো, চোখ বুজলো, ঘুমালো, মশার কামড় খেলো। ওয়াশরুমে গেলো। রাত গভীর হলো। এগুলো না বলে আমি বলেছি, সে ট্রেনে চেপে বসলো।

২) তিস্তা নদীর বর্ণনা দিয়ে নাকি সময় নষ্ট করেছি। ফালতু বলেছে।

আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি তারা বাসর দেখতে শুধু গল্প পড়ে। ঢলাঢলি তাদের পছন্দ। কিন্তু আপনাদের উদ্দেশ্যে বলবো গল্পে ঢলাঢলি দিবো না। সুতরাং আপনারা পড়া বাদ দিয়ে দিতে পারেন। এমন ফালতু গল্প পড়ার দরকার নেই।

৩) নিনীকা, নামটা নিয়ে অনেকের সমস্যা। আমি অন্যদের মতো পাঠকদের কথায় নাচতে পারি না। আমি যা ভেবে রেখেছি তাই হবে। পড়ার উদ্দেশ্য হলে পড়বেন নাহলে পড়বেন না। নামটা কতোটা সুন্দর যারা জানেনা তারা বুঝবেও না। আপনারা ময়ূরী, বিলকিস টাইপের নাম পছন্দ করলে আমার কিছু করার নাই।

সবশেষে আমি যেরকম ভেবেছি সে-রকমই লিখবো। আপনারা পড়তে না চাইলে পড়বেন না। কিন্তু এরকম টপিক নিয়ে কমেন্ট করে নিজেকে মূর্খ প্রমাণ করবেন না। ফেবুতে অনেক গল্প আছে যেগুলোতে ঢলাঢলি থেকে শুরু করে সব ওপেন দেওয়া। সুতরাং সেগুলো পড়ুন। আপনাদের রুচি দেখলে আমার গা জ্বলে। যদি কমেন্ট করতে হয় ভালো কিছু নিয়ে করুন। ভালো কিছু নিয়ে উপদেশ দিন। ]

বিয়ে থা পর্ব-০৩

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-০৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

অনেক সময় চেনা পরিচিত মানুষ গুলো কোনো কাজে আসে না। আবার অনেক সময় অচেনা অপরিচিত মানুষগুলো ও বিপদে পাশে দাড়ায়। সুমিত্রার সাথে নিনীকার পরিচয় হয় ফেসবুকে। টুকটাক আলাপ চলতে চলতে দুজনের মধ্যে একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন হয়। বুকের ভেতর প্রতিনিয়ত গুমরে মরা নিনীকা নিজের মনমতো বন্ধু পেয়ে শেয়ার করে একের পর এক দুঃখ কষ্টের কথা। সুমিত্রা ও নিজের দিক থেকে অনেক কিছু জানিয়েছে। দুজনের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। তাদের বন্ধুত্বের তিন বছর। যে মেয়েটিকে সে সামনাসামনি কখনো দেখেনি, কিন্তু নির্দ্বিধায় বলে দিয়েছে শতসহস্র লুকনো ব্যথার কথা। যে মেয়েটা তার অসময়ে তাকে সঙ্গ দিতে সবসময়ই থাকে। আগে ছিল ফোনের মাধ্যমে, এখন সামনাসামনি।

দুপুরের তীব্র রোদে চামড়া পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে দুজন খেয়ে বের হয়েছে। উদ্দেশ্য নিনীকাকে আশপাশ একটু ঘুরিয়ে দেখানো। দুজনই লেডিস টিশার্ট ও জিন্স পড়েছে। হাতে হাত রেখে হাঁটছে পথ দিয়ে। তাদের দেখতে কিশোরী লাগছে। মনে হচ্ছে তারা ছোটবেলার বন্ধু, একে অপরের সাথে আছে যুগের পর যুগ। হাঁটতে হাঁটতে অনেকে সুমিত্রাকে প্রশ্ন করেছে, ‘মেয়েটা কে রে সুমিত্রা?’

সুমিত্রার এক উত্তর, ‘আমার সখী।’

তারা একটি দোকান থেকে কোণ আইসক্রিম কিনলো। খেতে খেতে একটি টেক্সিতে চেপে বসলো। উদ্দেশ্য তিস্তা নদী।

শিলিগুড়ি ছোট্ট একটি শহর। শহর থেকে একটুূ দূরে গেলেই পাহাড় দেখা যায়। মন চাইলে পাকা রাস্তার উপর দিয়ে ট্যাক্সি চালিয়ে চলে যাওয়া যায় তিস্তার পাড়ে। তিস্তার পাড়ে গেলে মনে হবে, এই নদীর ওপারে বাংলাদেশও আছে।

নিনীকা সাতকাহনে পড়েছিল বৃষ্টি হলেই তিস্তার পানি বেড়ে যেতো। শিলিগুড়ির ভবনগুলোর একতলা দুইতলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে যেতো। সেই শিলিগুড়ির তিস্তা নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছে সে। এ যেনো এক অবিশ্বাস ঘটনা। সে দেখছে চোখ ভরে, মন ভরে দেখছে। উচ্ছ্বাসে হাত দিয়ে চেপে ধরেছে সুমিত্রার একটি হাত। সুমিত্রা হাসছে। দুঃখীনি নিনীকাকে এক টুকরো খুশি দিতে পেরে তার আনন্দ হচ্ছে।

নিনীকা দু-হাত দু’দিকে মেলে দিলো। একটু আকটু বাতাস গায়ে লাগছে। সে মনপ্রাণ ভরে শ্বাস টেনে নিলো। মস্তিষ্কে ঝং ধরা ব্যাথারা উধাও হয়ে গেলো। নিনীকা সবকিছু ভুলে তিস্তার অপরুপ প্রকৃতিতে হারিয়ে যেতে চাইলো। কানে ক্লিক করার শব্দ আসতেই সে তাকালো। সুমিত্রা হাসলো,

‘কিছু ছবি তুলে নিলাম তোর। শেষ কবে ফেসবুকের প্রোফাইল চেঞ্জ করেছিস বল তো?’

নিনীকা নিজেও হাসলো,

‘ভালো করেছিস। প্রোফাইল চেঞ্জ করা জরুরি। সাথে ক্যাপশনে লিখতে হবে ‘সাতকাহনের সেই তিস্তা নদী।’

‘জলপাইগুড়িতে তিস্তা নদীর উপর সেতু আছে। একদিন সব ঘুরাবো তোকে।’

তিস্তা নদীতে একটি নৌকা দেখা গেলো। সুমিত্রা ও নিনীকা ভাড়া নিয়ে নিলো সেটা। দুজন উঠে বসলো নৌকাতে। পানিতে ছলাৎছলাৎ শব্দ। মাঝি বৈঠা হাতে অভ্যাসগত ভাবে নৌকা নিয়ন্ত্রণ করছেন। নিনীকা পানিতে পা ডুবিয়ে বসলো। সুমিত্রা আঁতকে উঠলো,

‘পা তুল ইয়ার।’

নিনীকা খিলখিল করে হাসলো। গান ধরলো-

‘তিস্তা নদীর চিকন বালা রে
জলপাই ধরে ঝোকা ঝোকা।
ট্যাকা নাই’ও পয়সা’ও নাই’ও রে
কি দিয়া কিনিম মুই স্বাদের জলপাই?

আইসো বাহে উত্তরবঙ্গের গীত শুনিয়া যাও
তোমরা ভালো বাংলা গানের নামে কি জানি সব খাও
হামার ভাওয়াইয়া গান বাহে একেবারে সেরা সেরা
সরল কথা সুরে সুরে মন হবে দিশাহারা।
পালাটিয়া ভাওয়াইয়া বিয়া বাড়ির গীত
নদী ভাঙ্গন মরার খড়া হাড়কাঁপানো শীত
কইনা কান্দে যৌতুক ফান্দে বরের বাপে হাসে,
চেংড়ির বাপের ঘুম হারাম টাকার সর্বনাশে।

তিস্তা নদীর চিকন বালারে
জলপাই ধরে ঝোকা ঝোকা
হামাক যে না খাবা মনাইছে
স্বাদের পাকা ছেকো জলপাই। ‘

সুমিত্রা মুগ্ধ হলো। মনে মনে প্রার্থনা করল গান গেয়ে চলা মেয়েটির সব দুঃখ মুছে গিয়ে সুখের সূর্য উদয় হোক।

তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদীর নাম। জন্ম ভারতের সিকিম রাজ্যে ২৩ হাজার ফুট ওপরে হিমালয়ের পাহুনরি হিমবাহ থেকে। তারপর হিমালয় থেকে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে উত্তর সিকিম থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার হয়ে বাংলাদেশে পড়েছে। সেই তিস্তা এখনো বইছে। কোথাও উদ্দাম, কোথাও শ্লথ। কোথাও আবার চর। কোথাও আবার দুই কূল দেখা কঠিন।

এই তিস্তা সিকিমের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নেমেছে দার্জিলিংয়ের সমতল ভূমি সেবকে। তারপর এখান থেকে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার হয়ে বাংলাদেশে। তিস্তার দৈর্ঘ্য ৪১৪ কিমি। তিস্তা চলেছে সিকিমের ১৫১ কিমি, পশ্চিমবঙ্গের ১২৩ কিমি এবং বাংলাদেশের ১২১ কিমি পথ ধরে। এর মধ্যে আবার ১৯ কিমি পথ সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত ধরে প্রবাহিত হয়েছে। লাচেন, লাংচু, রোঙ্গিচু, রংপো, রঙ্গিত, লিশ, ঘিশ, চেল, নেওরা ও করলা তিস্তার উল্লেখযোগ্য উপনদী।

হিমালয়ের ৭ হাজার ৬৮ মিটার উচ্চতার কাংসে হিমবাহ থেকে সৃষ্টি এই তিস্তার। এখান থেকে লাচেন চু এবং লাচুং চু নামের দুটি নদীর ধারা সিকিমের চুংথান জনপদে নেমে একটি ধারায় তিস্তা নামে এগোতে থাকে। সেটিই আজকের তিস্তা নদী। তারপর এই ধারা চলে আসে সিকিমের রংপোতে। এখানে রংপো নদী মিশে যায় তিস্তার সঙ্গে। রংপো সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত।

রংপো সীমান্ত পার হয়ে সিকিমে ঢুকতে হয়। ভারতীয়রা নিজস্ব পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঢুকতে পারে। বিদেশিরা বিশেষ অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারে না। এই রংপো থেকে তিস্তা বাজার সেতু পার হয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে সিকিম থেকে দার্জিলিং জেলায় ঢোকে তিস্তা। তিস্তা সেতু থেকে এই নদী দার্জিলিংয়ের সেবকে সমতলে নামে। তিস্তা বাজার সেতু থেকে রংপোর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। আর শিলিগুড়ির দূরত্ব ৫০ কিমি। আবার সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের দূরত্ব ৬৪ কিমি। এই তিস্তা বাজার সেতু থেকে একটি পথ দার্জিলিং এবং অন্য একটি পথ গ্যাংটক গেছে। তবে এই তিস্তা রাজধানী গ্যাংটক ছুঁয়ে যায়নি। গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি আসতে সিমথনে এই তিস্তা পাহাড়ি পথ ধরে সেবকে নামে। সিমথন থেকে গ্যাংটকের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। সিমথন থেকে এই তিস্তা সেবক হয়ে জলপাইগুড়ি ছুঁয়ে কোচবিহারের পাড় মেখলিগঞ্জের ঝাড় সিংহাসন নামক স্থানে বাংলাদেশে ঢোকে তিস্তা। তারপর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এসে মিশেছে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে।

নিনীকা ও সুমিত্রা যখন বাড়ির পথে হাটা ধরলো তখন গোধুলি বিকেল। দুজন ফুচকা খেয়ে নিলো যাওয়ার পথে। বাড়ি যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। কাদম্বরী দেবি সুমিত্রাকে ঝাড়লেন অনেক। সেই দুপুরে বেরিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে। সুমিত্রার রুম হতে নিনীকা সব শুনতে পেলো। তার হঠাৎ করেই ভীষণ মন কেমন করলো। তার মা কেমন আছেন বাংলাদেশে?’

একদিন পরের ঘটনা। ধারা আহমেদের কথার অবাধ্য হয়ে ধ্রুব প্রথম বারের মতো বাড়িতে এলো না। ধারা বিস্মিত চিন্তিত হলেন। যে ছেলে মায়ের ডাককে কখনো উপেক্ষা করে না, সেখানে তিনি থ্রেড দিয়েছেন। অথচ তার ছেলে এলো না! চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কি তার এক মিনিটও সময় হয়নি? না আসতে পারলে অন্তত ফোন করে বলতে পারতো, যে মা আমি আটকে গেছি আসতে চাইলেও আসতে পারবো না। তিনি কি তখন রাগ করতেন? না। তিনি জানেন এইরকম পেশায় হুটহাট আসা যায় না। কিন্তু ধ্রুব তো সেটা করেনি। বরং মায়ের মনে দুঃখ দিয়েছে। ধারার অভিমান হলো নিজের ছেলের উপর। নাক টেনে ফাহিম মাহবুবকে ফোন করলেন তিনি।

ভদ্রলোক রিটায়ার্ড মানুষ। বিকেলে হাঁটতে বের হোন। গল্প করেন চেনা পরিচিত সবার সাথে। স্ত্রীর ফোন পেতেই তার চোখমুখ শুকিয়ে গেলো। প্রায় কেটে যাওয়ার মুহুর্তে তিনি রিসিভ করলেন।

ধারা নাক টেনে বললেন,

‘আমার বাচ্চাটা বদলে গেছে ফাহিম। সে তার মাকে প্রচন্ড দুঃখ দিয়েছে।’

ফাহিম মাহবুব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। এই মহিলা তো তাহলে দুঃখ কি সেটাই জানে না। বললেন,

‘হয়তো কিছুতে আটকে গেছে, বা নেটওয়ার্কের বাহিরে। দেখবে তোমার সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবে। আমি নিরবকে বলে দেখছি কোনো খোঁজ দিতে পারে কি না।’

‘ঠিক আছে।’

ফোন রেখে ফাহিম মাহবুব হালকা লাল রঙা আকাশের দিকে তাকালেন। তার চোখমুখ মুহুর্তেই উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। রঙধনু। সাতরঙের রঙধনুর দেখা মিলেছে আকাশে। তিনি ঝকঝকে দাঁত বের করে হাসছেন। বাচ্চাদের মতো খুশি হতে দেখা যাচ্ছে তাকে। মনে মনে প্রার্থনা করলেন,

‘আমার ছেলের জীবনটা রঙধনুর মতো রাঙিয়ে দিও সৃষ্টিকর্তা।’

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-০২

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-০২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে রমনীটি এদিক অধিক তাকাচ্ছে। তন্মোধ্যে তার দিকে ছুটে এলো কেউ। জড়িয়ে ধরে প্রায় চিৎকার করে বলল,

‘নিনীকা ইয়ার ওয়েলাম টু আওয়ার ইন্ডিয়া।’

নিনীকা হাতের ট্রলি ছেড়ে নিজেও আলিঙ্গন করলো। সুমিত্রা হাসতে হাসতে বলল,

‘ইশ আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই আমার সামনে। ফটো থেকে তুই বাস্তবে আরও বেশি গ্লু করছিস ডেয়ার। ইউ আর এ বিউটিফুল লেডি নিনীকা।’

নিনীকা গাল টেনে দিলো।

‘তুই ও বিউটিফুল সুমিত্রা।’

সুমিত্রা ট্রলি এক হাতে ধরে আরেকহাতে নিনীকার হাত ধরলো। টেক্সিতে করে তারা চললো সুমিত্রার বাড়িতে।’

সুমিত্রার বাড়ি শিলিগুড়িতে। সেই স্থান যাকে নিনীকা পড়েছে বইয়ের মধ্যে। সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন পড়ে ‘ডুয়ার্সের চা বাগান, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এসবের প্রতি অদ্ভুত টান জন্মেছিল তার। মনে মনে আশা করেছিল কখনো ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে প্রিয় লেখকের লেখায় পড়া জায়গা গুলোতে নিজের পায়ের ধুলো ফেলবে। নিনীকা টেক্সিতে বসে চারিপাশ দেখছে। সমরেশ মজুমদার যেরকম বর্ণনা দিয়েছিলেন তেমন নয়। সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেছে। যুগের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যায়। টেক্সি এসে থামলো সুমিত্রাদের বাড়ির সামনে। সুমিত্রা ভাড়া দিয়ে নেমে পড়লো। নিনীকাকে নিয়ে হাটা ধরলো বাড়ির পথে।

প্রথমে লম্বা একটি রাস্তা সড়কের সাথে। সেই রাস্তার শেষে একটি বাড়ি। মিত্র বাড়ি। সুমিত্রা ডোরবেল বাজালো। মিত্র বাড়ির গিন্নি কাদম্বরী দেবি দরজা খুলে দিলেন। যিনি সম্পর্কে সুমিত্রার মা। তারা ভেতরে ডুকলো। নিনীকা তাকে প্রণাম জানালো। তিনি বললেন,

‘আগে ফ্রেশ হয়ে নাও মায়েরা, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। ভোরের আলো তো ফুটে গেছে। পারলে গোসল করে নিও। এতোটা পথ এলে যে।’

নিনীকাকে নিয়ে সুমিত্রা নিজের ঘরে গেলো। আজ থেকে দু’বান্ধবী একসাথে থাকবে। দুজন গোসল করে যখন টেবিলে এসে বসলো তখন সকাল সাতটা। সুমিত্রার পরিবারের সবাই টেবিলে নতুন মানুষ দেখে বার-বার তাকাচ্ছে। কথা বলল সুমিত্রা।

‘ও হচ্ছে নিনীকা। আমার বাংলাদেশি বন্ধু। আজ থেকে আমার সাথে থাকবে। মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে গেলে হোস্টেলে সেটেল্ড হয়ে যাবে। এরকমই প্লান।’

সুমিত্রার ভাই সৌরভ খেতে খেতে প্রশ্ন করলো।

‘সে তো বুঝলাম। কিন্তু তার পরিবার তাকে একা ছাড়লো যে? বড় কেউ এসে দিয়ে যেতে পারতেন।’

‘আসলে দাদা ওর তেমন কেউ নেই। সেজন্য নিজে থেকে সব করতে হয়।’

খাবার টেবিলে নিনীকা টু শব্দ ও করলো না। তার হয়ে সব উত্তর সুমিত্রা দিচ্ছিল। নিনীকা খেত খেতে ভাবলো খুব শীগ্রই তাকে হোস্টেলে উঠে যেতে হবে। এভাবে অন্যের পরিবারে থাকাটা ভালো দেখায় না। যদিও সুমিত্রা তাকে প্রটেক্ট করছে কিন্তু সুমিত্রার পরিবার যদি সেটা ভালো চোখে না দেখে? তারা যদি জানতে পারে সে বিয়ে থা থেকে পালিয়ে এসেছে তাহলে নিশ্চয়ই তাকে খারাপ ভাববে। সে সুমিত্রার থেকে শুনেছে তাদের ধর্মের বিয়ের অনেক জটিল জটিল সম্প্রদায় আছে। যা নিনীকার ঝং ধরা মাথায় ধরবে না।

তার বিয়ের শাড়িটা খয়েরী রঙের ছিল। মাথার ওড়না গহনা সব সে আগেই ব্যাগে রেখে দিয়েছিল। যার কারণে তাকে দেখে মনে হয়নি সে বিয়ের কনে হতে পারে। এ যাত্রায় সে বেঁচে গেলো। কিন্তু নিজের নামটা অন্য কারো সাথে যে জুড়ে গেলো তা থেকে কিভাবে বের হবে সে?

খেয়ে দুজন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। নিনীকা বিছানায় শরীর ছাড়া মাত্রই ঘুমে তলিয়ে গেলো। অনেক ক্লান্ত সে।

*
বাড়ির নাম ‘বউ কথা কও।’ বাড়ির ভেতর বিশাল বাগান। সেখানে রয়েছে হরেক রকমের ফুল গাছ। বাড়িটা সারাক্ষণ ফুলের গন্ধে মো মো করে। ফাহিম মাহবুব এর বাবার বাবা ছিলেন ভীষণ বউ পাগল। সে-ই সময়ে তিনি যখন সৈনিক হোন তখনই তাকে বিয়ে করতে হয় অল্পবয়সী একটি মেয়েকে। সৈনিক লোকটার এতো অল্প বয়সী বউ পছন্দ ছিল না। কিন্তু কালের পরিবর্তনে তিনি এমন ভাবে সে-ই কন্যাটির মোহে ডুবেছিলেন যে সবার কাছ থেকে শেষ বয়স পর্যন্ত বউ পাগল সম্মোধন পেয়েছেন। তার ‘বউ পাগল’ হওয়ার একটি নিদর্শন হলো এই লাল সাদার ‘বউ কথা কও’ বাড়ি। তার বাবার বাবা তার বাবাকে বলে গিয়েছিলেন বাড়িটা যেনো সবসময়ই এমন থাকে। যুগের পর যুগ যখন উত্তরাধিকার আসবে সবাইকে যেন এটা বলে দেওয়া হয় যে ‘বউ কথা কও’ বাড়িটা তার তৈরি করা লাল সাদার বাড়িটাই যেনো থাকে। বাবার কথা মেনে ফাহিম মাহবুবের বাবা বাড়িটাকে তেমনই রেখেছেন। তারপর এলো ফাহিম মাহবুবের পালা। তিনি ঝং ধরা গেইট থেকে শুরু করে সবকিছু আগের মতো রঙ করে চকচক করেছেন শুধু। নিজ দায়িত্বে থেকে তার দাদা মশাইয়ের করে যাওয়া বাড়িটা আগের মতোই সাজিয়েছেন পুনরায়। বাড়িটিকে দেখে বুঝার উপায় নেই এটা ঠিক কতো যুগ আগের তৈরি করা। তবে বাড়িটার কারুকার্যে কিছু টা জমিদার জমিদার ভাইব রয়েছে। যার কারণে দূর থেকে অনেকে এটাকে জমিদার বাড়িও মনে করেন।

শান্তশিষ্ট বাড়ির আশেপাশে উড়ে এসে বসে নাম না জানা নানান রকম পাখি। শান্ত বাড়িকে অশান্ত করতে দুইপাশ থেকে ফুলের গাছের সাথে লেগে থাকা কালো রঙের গেইটির দরজা খুলে দিলো দারোয়ান। গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো একটি কালো গাড়ি। ড্রাইভার গাড়িটি পার্ক করে দরজা খুলে দিলেন। গাড়ি থেকে নেমে এলেন আভিজাত্যপূর্ণ শাড়ি পরিহিত মধ্যবয়সী একজন মহিলা। যার চোখে শোভা পাচ্ছে কালো চশমা। মুখে মেক-আপের দারুন সাজ। বয়স বুঝা দায়। ওপর পাশ থেকে বের হলো এক কিশোরী। তার পড়োনে দামী পোশাক। সে এ পাশে এসে মায়ের হাত ধরলো। মহিলা তার ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে হাসলেন। মেয়েকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘চলো বাচ্চা বাড়িতে চলে এসেছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবে। বেশি মাথা ব্যথা করছে সোনা আমার?’

মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘আগের থেকে একটু কম লাগছে মাম্মাম।’

শান্ত বাড়িটার দুই প্রাণ। ফাহিম মাহবুব সোফায় বসে ছিলেন। মেয়ে বউকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে হালকা করে ঢুক গিললেন। তন্মোধ্যে মেয়েটি ছুটে এলো তার বাবার কাছে। জড়িয়ে ধরে বলল,

‘আ’ম মিস ইউ পাপা।’

মেয়ের কপালে তিনি আদর দিলেন।

‘পাপাও প্রিন্সেসকে মিস করেছে বাচ্চা।’

‘আমি ফ্রেশ হয়ে তিন ঘন্টা ঘুমাবো। দ্যান তোমার সাথে আড্ডা দিবো। ওকে পাপা?’

‘ওকে প্রিন্সেস গো। রেস্ট নাও।’

মেয়েটি উপরে চলে গেলো। ফাহিম মাহবুব এবার নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন। যিনি এগিয়ে এসে বসেছেন তার পাশে। কাঁধে মাথা রেখে বললেন,

‘খুব কষ্ট হয়ে গেছে তোমার?’

ফাহিম মাহবুব হাসলেন।

‘তেমন হয়নি।’

মহিলা মন খারাপ করলেন।

‘জানি কষ্ট হয়েছে। তুমি তো আমার রান্না ছাড়া খাও না। বিশ দিন সার্ভেন্টের করা রান্না খেতে হয়েছে। তবে তোমার জন্য সুখবর, আমি এখনই ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে ঢুকবো। তুমি তখন তৃপ্তি করে খেও।’

ফাহিম মাহবুব স্ত্রীকে আগলে নিলেন। ভাবলেন সময় করে স্ত্রীকে তার অবর্তমানে হওয়া ঘটনা খুলে বলবেন। তার ভাবনায় জল ঢেলে তার স্ত্রী ধারা শুধালেন,

‘তোমার গুনধর পুত্রকে এক্ষুনি ইনফর্ম করো। আমি তাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ‘বউ কথা কও’ এ উপস্থিত দেখতে চাই।’

‘কিন্তু ও তো..

‘কোনো কিন্তু না। শেষ কবে বাড়িতে পা রেখেছিল সে? প্রায় ছয়মাস আগে। তুমি তাকে এক্ষুনি বলবে। যদি না আসে তো সারাজীবনের জন্য আমি তাকে ভুলে যাবো।’

ধারা বিচক্ষণ নারী। তিনি জানেন তার পুত্র মাতার এ দ্বারা কথা শুনে বাড়িতে পা রাখতে বাধ্য হবে।

ফাহিম মাহবুব পড়লেন মহা বিপদে। ফোন করলেন নিরবকে। নিরবকে নিজের সমস্যার কথা জানাতেই সে ভয় পাওয়া গলায় বললো,

‘স্যার তো সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছেন। আমি একটা কাজে সেনানিবাসে আছি। আপনি তো জানেন আমি স্যারকে কতো ভয় পাই। তাকে কি করে আমি বলবো যে স্যার আপনাকে স্যার স্মরণ করছেন ইমিডিয়েটলি।’

ফাহিম মাহবুব চোখমুখ কুঁচকে বললেন,

‘সে তো আমি জানিনা বৎস। তোমার স্যারকে বলার দায়িত্বটা তোমার। তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। কিভাবে যোগাযোগ করবে আমি জানি না। তবে তাকে জানিয়ে দিও তাহার মাথা মিসেস ধারা ফাহিম মাহবুব তাকে আসার জরুরি তলব করেছেন। সে যদি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এসে উপস্থিত না হয় তো বাপ বেটা দুজনের গর্দান অনিবার্য।

নিরব ফোন রেখে মহা চিন্তায় পড়লো। তাকে কেন সবসময়ই জল্লাদ স্যারের সবকিছুতে থাকতে হয়?

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-০১

0

#সূচনা_পর্ব
#বিয়ে_থা
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

‘মেজর ধ্রুব মাহবুব এর বউ বিয়ে থা করে বিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন স্যার!’

কথাটা চিৎকার করে বললো আর্মি অফিসার নিরব আয়মান। কথাটা শুনে অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ধ্রুবর বাবা বিস্মিত হয়ে গেলেন। অবাক চোখে তাকালেন প্রাণপ্রিয় বন্ধুর দিকে। কিন্তু বন্ধুর নিচু মস্তক দেখে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলেন না তিনি।

বিয়ে বাড়ির থমথমে অবস্থা৷ বিয়ে না করে পালিয়ে গেলে একটা কথা ছিল। কিন্তু বিয়ে করে কবুল বলে একজন বউ কিভাবে পালাতে পারে! বিষয়টা অবশ্যই চিন্তার। ধ্রুব মাথার পাগড়ি খুলে ছুড়ে ফেললো অদূরে। রাগে গজগজ করতে করতে নিজের বাবার দিকে তাকালো। প্রথমবারের মতো বাবার সাথে উচ্চ আওয়াজে কথা বললো।

‘আমি শুধুমাত্র তোমার কথাতে গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ রেখে বিয়ে করতে চলে এসেছি বাবা। তোমার পছন্দের পাত্রীকে না দেখে বিয়েও করে নিলাম। কিন্তু! তোমার পছন্দের বন্ধুর মেয়ে তো পালিয়ে গেছে। আমার সময় নষ্ট হলো বাবা। আমার ক্যারিয়ারে দাগ লেগে গেলো। সবাই আজ থেকে জানবে মেজর ধ্রুব মাহবুব এর বউ কবুল বলে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে গেছে!’

কন্যার পিতা কন্যার মাতার গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন। জনসম্মুখে বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বললেন,

‘তোর মেয়ের এতো বড় সাহস। আমার মান সম্মান সব শেষ করে পালিয়ে গেলো। কোন না কোন ছেলের সাথে ভেগেছে। তোর জন্য হয়েছে এসব। তুই কোথায় থাকিস? মাইয়ার খেয়াল রাখিস নাই কেন?’

ধ্রুব বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেলো। ধ্রুবর বাবা অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার ফাহিম মাহবুব হুংকার ছাড়লেন।

‘নিজের বউয়ের সাথে এ কেমন ব্যবহার তোর রমজান? আমি তোকে বন্ধু ভেবে তোর মেয়ের সাথে আমার ছেলের সম্মন্ধ করেছি। কিন্তু আমি জানতাম না তুই এতো কুৎসিত। যদি জানতাম তবে আজ আমাকে এখানে দাড়িয়ে থাকতে হতো না। যে মেয়ের বাবা এমন কুৎসিত আচরণ নিজের স্ত্রীর সাথে করতে পারে, তার মেয়ে ঠিক কিরকম হতে পারে তা সম্পর্কে ধারণা আমার হয়ে গেছে। না নিজে ভালো স্বামী হতে পেরেছিস আর না নিজের মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিতে পেরেছিস। আমি যদি তোর এই রুপটা আগে দেখতাম! নিজের ছেলের কাছে আমি আজ ছোট হয়ে গেলাম।’

নিরব পরিস্থিতি সামলাতে বলল,

‘স্যার আমি তো আপনার কথাতে ম্যাডামের ব্যাপারে সব খুঁজ খবর নিয়েছিলাম। তার কোনো বয়ফ্রেন্ড নামক কালসাপ ছিল না। আমার মনে হয় এটা অন্য কেস।’

ধ্রুব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘কি বলতে চাইছো তুমি?’

নিরব অসহায় কন্ঠে বলল,

‘সেটা তো জানি না স্যার। তবে ম্যাম অন্য কারো সাথে পালিয়ে গেছেন সেটা আমি বিশ্বাস করি না। তার কোনো বয়ফ্রেন্ড তো দূরে থাক কোনো ছেলে জাস্ট ফ্রেন্ডও নেই।’

এবার কথা বললেন কনের মা মিথিলা বেগম।

‘আমার মেয়ে কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে যেতে পারে না বেয়াইন। এতে অন্য কোনো কারণ আছে। আমি তো মা, ওকে খুব ভালো করেই চিনি।’

ধ্রুব কপাল চেপে ধরলো নিজের। আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্যি সে তার পালিয়ে যাওয়া বউয়ের নামটা জানে না। বিয়ে পড়ানোর সময় বললেও খেয়াল করা হয়নি। মেয়েটিকে সে দেখেওনি। তার বাবা ইমোশনাল ব্রেকমেইল করে রীতিমতো তাকে রাজি করিয়েছেন। নিজের নাম না জানা সদ্য বিবাহিত বউয়ের জন্য ধ্রুবর কৌতূহল হলো কিঞ্চিৎ। তার বউয়ের যদি কোনো বয়ফ্রেন্ড না থাকে তবে পালিয়ে গেলো কেন?’

কথা বলল, নিরব।

‘আমার মনে হয় ম্যাম স্যারকে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছেন।’

ধ্রুব গম্ভীর স্বরে বলল,

‘আমাকে ভয় পাবে কেন সে?’

‘আপনাকে দেখলেই তো আমার হাঁটু কাঁপে স্যার। ম্যামের না জানি কি কি কেঁপেছে।’

ধ্রুব চোখমুখ শক্ত করে দাড়িয়ে রইলো। পৃথিবীর ইতিহাসে গেঁথে গেলো প্রথমবারের মতো ‘ বিয়ে থা করে বউ পালিয়ে গেছে তাও তার মেজর স্বামীকে ভয় পেয়ে।’

*
রেলস্টেশনে লাল শাড়ি পরিহিত এক রমনী দাড়িয়ে আছে। হাতে একটি ট্রলি ব্যাগ। স্মার্টফোন বের করে সে বার-বার কাকে যেনো ফোন করছে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই ক্লান্ত কন্ঠে বলল,

‘আমি পালিয়েছি ইয়ার। এখন ট্রেনে চেপে বসবো। তুই সব ঠিকঠাক করে রেখেছিস তো?’

ওপাশ থেকে একটি মিষ্টি গলা শুনা গেলো।

‘চিন্তা করিস না। সব ঠিক করে রেখেছি। তুই ট্রেনে করে সোজা ইন্ডিয়া চলে আয়। আমি স্টেশনে তোকে রিসিভ করবো।’

কথা শুনে রমনীটি স্বস্তির শ্বাস নিলো।

‘ সিমটা বন্ধ করে দিতে হবে। তোর সাথে দেখা করে তারপর নতুন সিম কিনবো ইন্ডিয়ার। থ্যাংক ইউ সুমিত্রা।’

সুমিত্রিা ‘ঈশ্বর তোর সহায় হোন’ বলে ফোন রেখে দিলো।’

তীব্র সাহস নিয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে আসা মেয়েটি চেপে বসলো ভারত’গামী ট্রেনে।


দ্রুত বেগে গাড়ি ড্রাইভ করছে ধ্রুব। রাগে মাথা ধপধপ করছে তার। তার বউ তাকে ভয় পেয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু তার পিতা সেটা বিশ্বাস করেছেন। তার মতে তার ছেলের গোমড়ামুখো ও দজ্জালের মতো চেহারা দেখে তার একমাত্র বউমা পালিয়ে গেছে।

ধ্রুব ড্রাইভ করতে করতে স্টেশনে চলে এসেছে। তার বিবাহিত বউয়ের ফোনের লোকেশন লাস্ট এখানেই দেখা গেছে। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। ধ্রুব দাড়িয়ে দেখলো ট্রেনটি ধীরে ধীরে ছুটে চলে যাচ্ছে নিজের গন্তব্যের দিকে। তন্মধ্যে ট্রেনের জানলা দিয়ে লাল শাড়ি পড়া কাউকে দেখতে পেলো। মুখটা অস্পষ্ট। তার কেন যেনো মনে হলো এটাই তার বউ। ধ্রুব চিৎকার করলো,

‘এই মেয়ে। ‘

ধ্রুবর চিৎকার শুনলো না কেউ। ট্রেন ছুটে চলে গেছে ততোক্ষণে বহুদূর।

বলিষ্ঠ শরীর থেকে শেরওয়ানি খুলে ছুড়ে মারলো পেছনের সিটে। গায়ের সেন্টু গেঞ্জিটা ঘামে ভিজে চুপেচুপে হয়ে আছে। ধ্রুব সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেললো। তার বউ তার সামনে দিয়ে চলে গেলো সে আটকাতে পারলো না। নিজেকে এ-ই মূহুর্তে তার সহ্য হচ্ছে না। লজ্জায় নাক মুখ লাল তার। যতোবার মনে হচ্ছে তার বউ তাকে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছে ততোবারই তার লজ্জা লাগছে। জীবনের এ পর্যন্ত সে শুনে এসেছে হাজারো রমনীর ঘুম উধাও করার ক্ষমতা আছে তার। কিন্তু আজ এসে শুনলো বউও উধাও করার ক্ষমতা আছে।

ফাহিম মাহবুব একের পর এক ফোন দিচ্ছেন। ধ্রুব সেটা রিসিভ করলো না। বরং দ্রুত টাইপ করলো,

‘তোমার গুনধর বউমা সম্ভবত ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ফেলেছেন। আমি যাওয়ার আগেই ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করেছে। আর তাছাড়া ও আমি তাকে ঠিকঠাক চিনতে পারিনি। যাকে দেখেছি সে আধও তোমার বউমা কিনা আমি নিশ্চিত নই।’

ফাহিম মাহবুব থমথমে কন্ঠে বললেন,

‘নিজের বউকে চিনতে পারোনি কেমন স্বামী তুমি?’

ধ্রুব অকপটে জবাব দিলো,

‘তাকে আমি এই জনমে এখন পর্যন্ত দেখিনি যে দেখলেই চিনতে পারবো। ধেই ধেই করে জিজ্ঞেস করবো, ‘আপনি আমার বউ? ও মাই গড আপনি আমার বউ!

ফাহিম মাহবুব কল কেটে দিলেন। তার জল্লাদ ছেলে আপাতত বউ হারানোর সুখে উল্টাপাল্টা বকছে বলে ধারণা তার। ছেলেটা সবসময়ই মেয়েদের থেকে দূরত্ব রেখে এসেছে। তিনিই একটা গতি করতে এতো চেষ্টা করলেন। শেষে তীরে এসে তরী ডুবে তার একমাত্র ছেলের বউ পালিয়ে গেলো। এখন কিভাবে তিনি কি করবেন। ছেলেটা নিশ্চিত এবার নিরুদ্দেশ হবে। এমনিতেও বছরে একবার বাড়িতে পা ফেলে কি না সন্দেহ। তার উপর ছেলের মা দেশের বাহিরে। তাকে না জানিয়ে তিনি এতোসব করে ফেলেছেন। এসে যদি শুনেন তাহলে তাকে আস্তে রাখবেন না। সাথে দোষ তার ঘাড়ে পড়বে। তিনি কেমন মেয়ে পছন্দ করলেন যে কি না বিয়ে করে পালিয়ে গেলো! ফাহিম মাহবুবের মনে হলো ‘বিয়ে থা’র মতো গুরুতর সমস্যা জগৎসংসারে দুটো হতে পারে না।’

(চলব)

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৪৯ এবং শেষ পর্ব

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_অন্তিম_পর্ব

ওয়াসিমার উন্মুক্ত উদরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবসার। কিছুক্ষণ আগেই তাড়া হসপিটাল থেকে এসেছে তারা নিজেদের ফ্ল‍্যাটে না গিয়ে অরিকদের বাসায় ঢুকে। ঢুকতেই সকলে কি হয়েছে জানতে হামলে পরে
— কিরে কিছু বলছিস না কেনো??
অরিকের বিরক্তিমাখা স্বরে আবসারের ধ‍্যান ভাঙ্গে।
— কি বলব তুই মামা হবি নাকি চাচ্চু হবি ডিসাইড কর আমি আমার বউ নিয়ে বাসায় যাই। বলেই ওয়াসিমাকে টেনে নিয়ে নিজেদের বাসায় যায়। ওয়াসিমা তো লজ্জায় কোনো কথা বলতে পারছে না। তখন কোনো রকম বাসায় ওয়াসিমাকে পাজা কোলে তুলে ধীরগতিতে বেডে শুয়িয়ে দেয়। ওয়াসিমার পেটের অংশের কামিজ সরিয়ে সেখানে অজস্র চুমু দেয়। তখন থেকেই একদৃষ্টিতে তার উন্মুক্ত উদরের দিকে তাকিয়ে থাকে
তাদের এ নিরবতা অনেক্ষণ ধরেই চলছে। নিরবতা ভেঙ্গে ওয়াসিমা বলল — কি দেখছেন এভাবে??

— দেখছিনা বউ ভাবছি,, এতটুকু পেটে দুই দুইটা বেবী তুই কিভাবে ক‍্যারী করবি আমারতো এখনই চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে।। বেশ করুন স্বরেই বলল আবসার
আবসারের কথা শুনে ওয়াসিমা হাসে কিছু বলে না। তাদের কথোপকথনের মাঝখানে ধরাম ধরাম গেট বারির শব্দ আসে। বিরক্ত হয় আবসার বউয়ের সাথে একটু সময় কাটাচ্ছে সেটাও বোধহয় শান্তিতে করার মতো সুযোগ নেই।

— আরে গন্ডার আসছি আস্তে দরজা ভেঙ্গে যাবে।।
বলতে বলতে দরজা খুলে দেয়। তার পিছনে ওয়াসিমাও আসে
— কি কথা শুনাইলিরে বন্ধু কি কথা শুনাইলি,,
এমন খুশির খবর দিয়া পরানটা জুড়াইলি

— কাক কখনও কোকিল হয়না জানিস তো,, ছাড় তোর এই কাকের কন্ঠে গান শুনে আমার কানের পর্দা ফেটে গেলো

— আজকে তোর অপমানের বদলা নিলাম না আজকে আমি অনেক খুশী কংগ্রাচুলেশন দোস্ত আবসারকে জড়িয়ে ধরে বলল

— আমার পিচ্চিটা কবে যে বড় হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম
অরিকের কথা শুনে তাকে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয় ওয়াসিমা

— ইশশ তুমি কি গো আমার ভাবীটাকে এই অবস্থায় কাদাচ্ছো বলেই আরুও ওয়াসিমাকে জড়িয়ে ধরে
— আমরাও আছি
অরিকের পিছন পিছন পুরো সাখাওয়াত ফ‍্যামিলি হাজির সবাইকে খবরটা আরু দিয়েছে। আয়মান ভেনিসা তো পারেনা উড়ে উড়ে আসতে
সবাই অনেক খুশী সাথে করে মিষ্টির প‍্যাকেট হাজির পুরো বিল্ডিংয়ে ইতিমধ্যে মিষ্টি বিলানোর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।
এজাজ অফিসের সবাইকে মিষ্টি দিয়ে নিজের আনন্দের ভাগিদার করছে। আশেপাশে পাড়া প্রতিবেশী কেউই বাদ যাচ্ছে না।

_______________________

ইরফান আকলিমা দুইজন মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বসে আছে তাদের সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ কত বড় হয়ে গেছে সে মা হচ্ছে

— এখন আমি কোনো কথা শুনব না বউমা। এবার আমাদের সাথে যেতেই হবে
আলিয়া সাখাওয়াতের কথায় সবাই সেদিকে তাকায়। তাদের তাকানো দেখে এজাজ সাখাওয়াত বললেন — আমার ঘরের লক্ষিকে আমি দ্রুত আমার বাড়িতে নিতে চাই সেখানে সবার সাথে থাকবে সবাই তার খেয়াল রাখবে

— কেনো বেয়াই সাহেব আমরা কি আমাদের মেয়ের খেয়াল রাখতে পারিনা
ইরফান গম্ভীর কন্ঠে বলল

— আমি সেটা বলিনি বেয়াই সাহেব আপনার মেয়েটা আমাদের বাড়ির আলো তো তাই তাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি আমাদের সাথে
এজাজ সাখাওয়াতের নমনীয় কথা শুনে ইরফান কিছু বলল না।

— ওয়াও ভাবী সত‍্যি যাবে আমাদের বাসায়

— চলোনা ভাবী
আয়মান আর ভেনিসার বাচ্চাদের মতো আবদার শুনে ওয়াসিমার আবসারের দিকে তাকায়। দেখে আবসার চুপচান দেয়ালে হ‍্যালান দিয়ে দাড়িয়ে আছে ওয়াসিমা বুঝল আবসার যেতে দিবে না।

— আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারছিনা ভাইয়া আপু উনাকে জিজ্ঞেস করো।
আয়মান ভেনিসা এবার আবসারকে ঝাপটে ধরে। তাদের মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে আবসারকে রাজি না করিয়ে খ‍্যান্ত হবে না।

— না না না,, আমি সারাদিন অফিস করে এসে আবার বউয়ের দেখা পাবো না সেটা চলবে না।

— তুমি কি ভাবছ ভাইয়া তোমাকে বাসায় ঢুকতে দিব না আরে সেরকম না তোমাকেও থাকতে দিব সমস‍্যা নাই আমাদের বাসায় অনেক গুলা গেষ্ট রুম আছে সেখানেই থাকবে।
মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলল আয়মান

তার কথা শুনে সবাই হাসছে। আর আবসার বিরক্ত হচ্ছে
— কি নিজের বউ বাচ্চার সাথে থাকতে পারব না এখন তো আরও যাব না বলেই আবসার নিজের ঘরে চলে গেলো আয়মান ভেনিসাও তার পিছু গেলো।

— বিয়ান সাহেবা আরেকটি কথা

— কি কথা ভাই সাহেব

— আরু অরিক বাবাজি সহ আপনারাও আমাদের সাথে কয়েকটি দিন থেকে আসতেন যদি

— এখন তো হবে না বেয়াই সাহেব আমরা কিছু দিন পর একটু গ্রামে যাবো আমাদের জমিজমা সংক্রান্ত কিছু কাজ আছে। আপাতত অরিক আরুমা যাব পরে আমরা নাহয় একবার যেয়ে ঘুরে আসব।
ইরফানের কথায় রাজি হয় এজাজ সাখাওয়াত।।

পুরো একঘণ্টা প‍্যানপ‍্যানির পরে আবসার রাজি হয় সাখাওয়াত বাড়িতে যাওয়ার তার কোনো ইচ্ছাই নেই সেখানে যাওয়ার। সে যাচ্ছে শুধু অরিক আর আরু সহ সেখানে যাচ্ছে,,তার কাছে ঐ বাড়িটা মানেই তার দূর্বিষহ অতীত যেখানে আছে তার অজস্র কষ্ট।
এজাজ সাখাওয়াত সবাইকে নিয়ে রওয়ানা দেয় সাখাওয়াত বাড়ির উদ্দেশ্যে।

___________________

কয়েকদিন পরে সাখাওয়াত বাড়িতে ওয়াসিমা বেশ ভালোই আছে তানিয়া সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতের যত্নে। ওয়াসিমা এখন পুরো দমে কলেজে যাওয়া শুরু করেছে। পড়াশোনার চাপ তার উপর আবার প্রেগনেন্সিতে ঠিক মতো খেতে পারে না তাই বেশ ক্লান্ত থাকলেও আলিয়া সাখাওয়াত যেনো তাকে মাথা তুলে রাখে। ওয়াসিমার পরিস্থিতি দেখে আবসার আবার নিজের বাসায় যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছে। কারণ বর্তমানে ওয়াসিমার যা পরিস্থিতি তাতে তাকে নিয়ে আলাদা থাকার চেয়ে এখানেই থাকা ভালো। আবসারও যতটা পারে বাসায় থেকে ওয়াসিমার খেয়াল রাখে। সেই সাথে আয়মান ভেনিসা তো আছেই আর মাঝেমধ্যে আরু অরিক আসে ইরফান ও আসে। এর মধ‍্যে তারা কয়েকবার এসে ওয়াসিমাকে দেখে গেছে। ইরফানের ভালো লাগে না ওয়াসিমাকে প্রতিদিন না দেখতে পেয়ে।।
স্বামী সংসার সব নিয়ে ওয়াসিমা বেশ ভালোই আছে। কিন্তু একদিকে সমস্যা গোয়ার আবসার এখনও এজাজ সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতের সাথে কথা বলে না। তারপরেও তাদের আক্ষেপ নেই এই নিয়ে তারা দুইজন এইভাবেই বেশ ভালো আছে।

_________________________

পাচঁ বছর পর,,,,,,,,,
সাখাওয়াত বাড়িতে হইচই চলছে। পুরো বাড়িতে রমরমা অবস্থা সাথে আনন্দের ঢেউ কারণ আজকে ফাইনাল্লি ওয়াসিমা ইন্টার্নশিপ শেষ হয়েছে পুরো কলেজের মধ‍্যে টপ করেছে ওয়াসিমা। সেই সেরেমনিতে যাবে তারা,,,,,,,,

আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করছে পিছন থেকে একটা হাত এসে কোমরে গোজা কুচি এলোমেলো করতেই বিরক্ত হয় ওয়াসিমা তার হাতে আস্তে থাপ্পর মেরে বলে — আপনি আবার শুরু করেছেন,,

— কি করব বউ তোকে দেখলে আমার নিজের প্রতি কন্ট্রোল ছুটে যায়।

— দুই বাচ্চার বাপ হয়ে গেছেন তিন নাম্বার আসছে তারপরেও আপনার রোমান্স গেলো না

— উহু আমিতো একটা ফুটবল টিমের প্ল‍্যান করেছি

— মাফ করেন ভাই আপনার এইসব প্ল‍্যানে আমি নাই বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও আবসারের করা এলোমেলো শাড়ির কুচি ঠিক করছে। আবসার ওয়াসিমার কথা শুনে নিরাস হয় আবার তাকে ধরতে যাবে তার আগেই কারো শব্দ শুনে থেমে যায়

— মাম্মা দুই বাচ্চা এসে ওয়াসিমার সামনে দাড়ায়।
আনাবিয়া ওয়াহিদ,, আবসার ওয়াসিমার দুই জমজ সন্তান

— মাম্মা আমাকে কেমন লাগছে??

— না মাম্মা আগে বলো আমাকে কেমন লাগছে?
বলতে দেরী একজনের সাথে আরেকজনের মারামারি লাগতে দেরী নেই। ছেলে মেয়ের মারামারি দেখে আবসার সুযোগ বুঝে ওয়াসিমার গালে চুমু খেতেই ধমকে উঠল বাচ্চা দুইজন

— হেই পাপা ডোন্ট কিস মাই মাম্মা
দুইজন একসাথে বলে উঠল

— মাম্মা কি বাচ্চি তোদের মা আমার বউ

— আমাদের মাম্মা

— আমার বউ
দুই ছেলে মেয়ে ও বাপের ঝগড়ার মধ‍্যে ওয়াসিমা আলমারি থেকে পাঞ্জাবী বের করে আবসারের হাতে ধরিয়ে তাকে ঠেলতে ঠেলতে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। পিছন থেকে দুই বিচ্ছু খিলখিল করে হাসতে থাকে।
ওয়াসিমা চোখ গরম দিতেই দুইজন নিচে দৌড় দেয়। ওয়াসিমা জানে এই বিচ্ছুদল এখন যাবে আয়মানের কাছে।

ভেনিসা নিজের ভরা পেটটা নিয়ে আস্তে ধীরে নামছে। সে সাত মাসের প্রেগনেন্ট আরু ও অরিকের ঘর আলো করে এসেছে পুত্র সন্তান যে আনাবিয়া ও ওয়াহিদের থেকে ছয় মাসের ছোট।
ইতিমধ্যে অরিকরা এসে হাজির। অরিকের ছেলে আরভ চলে গেছে ওয়াহিদের কাছে।
ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে বেলা এগারোটায় তারা বের হবে এবং আজকে সবাই এখানেই থাকবে ।
পুরো বাড়িতে চোখ বুলায় এজাজ সাখাওয়াত তার বাড়িতে বর্তমানে কানায় কানায় সুখ ভর্তি।

_____________________

ট্রাফিক জ‍্যামে আটকে বসে আছে আবসার একটু আগেই তারা অনুষ্ঠান থেকে বের হয়েছে। বাড়ির উদ্দেশ্যে বিরক্তি ভঙ্গিতে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখে
নোংরা কাপড়ে একটা পাগলি কুকুরের মুখের খাবার নিয়ে দৌড় দিয়েছে।
আবসারের মহিলাটিকে চিনতে বিন্দুমাত্র কষ্টে হয়নি যে ঐ মহিলাটি তার জন্মধাত্রী ইরিনা।
সেদিকে একধ‍্যানে তাকিয়ে আছে আবসার কথায় বলেনা পাপ বাপকেও ছাড়ে না। তাদের জীবনের সকল কষ্টের মূলেই ছিলো এই ইরিনা জামান।

— কি হয়েছে কি দেখছেন জ‍্যাম ছেড়ে দিয়েছে গাড়ি স্টার্ট দেন
আবসার কিছু না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করে। স্বামীর মুখের দিকে তাকায় ওয়াসিমা। তার কাধে মাথা রাখে। আবসার পিছনে বসা তার দুই বিচ্ছুর দিকে তাকায়। দেখে তারা ঘুম তৎখনাত ওয়াসিমাকে জড়িয়ে ধরে ওয়াসিমা ফিক করে হেসে দেয়।
— হাসলেও লাভ নেই এই যে বক্ষ দেখছিস এই বক্ষপিঞ্জিরায় তুই এমন ভাবেই সারা জীবন বন্দীনি হয়ে থাকবি।

______সমাপ্ত________

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৬ ( অন্তিম পর্বের প্রথমাংশ )

ফার্মেসী থেকে বের হয়ে আবসার তাকায় অরিকের দিকে। ছেলেটা একটা কথাও জিজ্ঞেস করল না কিভাবে কাটল। আষয় বিষয় কিছুই জিজ্ঞাসা করল না কিন্তু কেনো??

— তুই কিছু জিজ্ঞাসা করলি না কেনো??

— কি জিজ্ঞেস করব,, সামনের দিকে তাকিয়ে বলল অরিক।

— অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারতি!!

আবসারের কথা শুনে হাসে অরিক তবে কিছু বলে না। অরিকের নিশ্চুপতায় আবসার ও কিছু বলে না দুই বন্ধু যায় নিজের গন্তব্যস্থল।

— তোরা কি এলিয়েন??? আবসারের প্রশ্নে যারপরনাই অবাক অরিক। অবাক স্বরেই বলল

— মানে

— আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তোরা এলিয়েন শুধু আমার শশুর মশাইটা বাদে। আবসারের কথা শুনে অরিক হাসে। তার হাসি দেখে ফুসে ওঠে আবসার।।
কিছু না বলে হনহন করে চলে যায় নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে। আবসার চায় অরিক ওয়াসিমা নিজেদের ক্ষোভ ঝারুক তার উপর। তার সাথে রাগ করুক। কিন্তু তারা দুই ভাইবোন চুপচাপ সব মেয়ে নিচ্ছে আর এতে আবসারের অনুতাপ আরো বেড়ে চলেছে। সে চায় অরিক তার সাথে ঝগড়া করুক ওয়াসিমার জন‍্য। কেনো তার বোনের সাথে এরকম করেছি তার কইফিয়‍‍্যৎ চাক কিন্তু না অরিক এমন ভাব করছে যেনো সে কিছুই জানে না। অথচ আবসার ভালো করেই জানে অরিক সব জানে কিন্তু কিছু বলে না।

________________________

আবসারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অরিক। সে বুঝেছে আবসার কি বলতে চায় তবুও না বুঝার ভান করে গেছে।
সেদিন তাদের বাসায় যখন আবসার ওয়াসিমার সাথে চিল্লাচিল্লি করেছিল তখন সব কিছুই শুনতে পায় অরিক। আবসার যে ওয়াসিমাকে সন্দেহ করেছিল সেটাও তারা শুনতে পায়। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। ঐ উড়ন্ত বার্তা তাদের কানে আসে। সেদিন রাগে যখন আবসারের কাছে কইফিয়‍্যৎ চাইতে গিয়েছিল সেদিন তাক আটকায় আকলিমা।
আকলিমা তাকে বুঝায় সব সময় রাগ ঝেড়ে ঝগড়া করে সমাধান মিলে না। শান্ত মস্তিষ্কে থেকেও কাজ হয়। এখন যেমন তোমার মাথা গরম আবসারের ও মাথা গরম দুইজনের মধ‍্যে কথা কাটাকাটি হবেই। এতে সম্পর্কে অবনতি আসবে। তোমার সাথে ওর তিনটি সম্পর্কে জড়িত। তাই এখন চুপ থাকো আর আবসার যখন নিজের অনুশূচনায় দগ্ধ হবে। ও তখন নিজেই সব ঠিক করবে সেটা হবে আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
তাই তো অরিক সব জেনেও চুপ থাকে। কিন্তু ইরফান চুপ থাকে না সে আবসারকে তাদের চরম সত্যিটা জানিয়ে দেয় যাতে আবসার অনুতপ্ত হয়ে। নিজের রাগের কাছে হেরে অনুতপ্ত হওয়া হলো সবচেয়ে বড় বিবেক দংশন ।

_______________

আবসার প্রতিদিন ওয়াসিমাকে খাইয়ে দিলেও আজকের তালিকা ভিন্ন। আজকে ওয়াসিমা আবসারকে খাইয়ে দিচ্ছে আবসারও যেনো তৃপ্তি করে খাচ্ছে ওয়াসিমার হাতে। খাওয়া দাওয়া শেষে আবসারকে ঘরে পাঠাতে চাইলেও পারেনা ওয়াসিমা ত‍্যাড়া আবসার ঠ‍্যাডার মতো দাড়িয়ে আছে। সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ওয়াসিমা। এই লোকটা এতো ত‍্যাড়া কেনো ভেবে পায়না ওয়াসিমা,,,,

— সব কাজ শেষ চলেন ঘরে ঔষধ খেতে হবে বলেই আবসারের আগে ঘরে ঢুকে। আবসারও ওয়াসিমার পিছু পিছু ঘরে ঢোকে

— নেন,, পাতা ছিড়ে ওষুধ গুলো দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
আবসার চুপচাপ খেয়ে নেয়। ওয়াসিমা পানির গ্লাসটা নিয়ে ঘুরতেই পিছনে থেকে আবসার তাকে পাজা কলে নেয়। হঠাৎই আবসারের এমন কান্ডে ভয় পেয়ে যায় ওয়াসিমা। খামচে ধরে আবসারের টিশার্টের কলার চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আবসার ওয়াসিমাকে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। বন্ধ আখি জোড়ায় ফু দেয়।
কেপে ওঠে ওয়াসিমা। আরো শক্ত হয় আবসারের টিশার্টের কলারের বাধন হঠাৎই তার মনে হয় আবসার ব‍্যাথা পেয়েছে। তার ব‍্যাথার হাতটাই ওয়াসিমার পিঠের নিচে ধরপরিয়ে উঠতে চায় ওয়াসিমা। আটকে রাখে আবসার বেশ শক্ত বাধন। যেনো ছেড়ে দিলেই পালাবে

— কি করছেন কাটা হাতে ব‍্যাথা পাবেন তো।।

— উহু পাবোনা বলেই মুখ ডুবায় ওয়াসিমার গলদেশে। চোখ বন্ধ করে নেয় ওয়াসিমা। কিছুক্ষণ পরেই নিজের কাধটা ভিজা অনুভব করে ওয়াসিমা আবসারের শরীরে হাত দিতে দেখে আবসার কেপে কেপে উঠছে। সে বুঝতে পারে আবসার কাদছে

— কান্না করেছেন

— হু। তুই এমন কেনো বউ কোনো অভিযোগ নেই অন‍্য কোনো মেয়ে হলে আমাকে ছেড়ে দিতো তবুও নিজের প‍্যাশন,, আশা,, আকাঙ্খা ছেড়ে দিতো না। এতো ভালো কলেজে চান্স পেয়েও আমার এককথায় পড়াশোনা ছাড়তে রাজি হলি। নিজের মুখে এখন পযর্ন্ত এবারও ভর্তির নাম পযর্ন্ত উচ্চারণ করলি না।
তোর এই শান্ত রুপ আমার সহ‍্য হচ্ছে না। তোকে সন্দেহ করার জন‍্য আমার সাথে ঝগড়া করতি অভিমান করতি। তাও করলি না। তোর না দেওয়া শাস্তি গুলোই তো আমার মনে তীরের মতো বিধছে বউ। কেনো কেনো নিজের অভিমান ঝাড়লি না????

আবসারের কথা শুনে তার অগোচরে মুচকি হাসে ওয়াসিমা। সে এটাই চেয়েছিল যে আবসার নিজের মনের জটিলতা মিটিয়ে তার কাছে আসুক। হ‍্যা সম্ভব হয়েছে আবসার নিজে থেকেই তাকে ভর্তি করিয়ে দিবে ওয়াসিমা এটাও জানে।

— হয়েছে আর কান্না করতে হবেনা। ভাবা যায় শক্ত পোক্ত আবসার সাখাওয়াত কান্না করছে তাও আবসার আঠারো বছরের এটা মেয়ের সামনে ,,”মজা করে বলে ওয়াসিমা।

— না ভাবার কি আছে এই আবসার সাখাওয়াত এই আঠারো বছর বয়সী মেয়ের সামনেই কাবু।
ওয়াসিমার নাকে নাক ঘসে বলে আবসার

তা দেখে হাসে ওয়াসিমা আবসারও মুচকি হাসি দিয়ে বলে — কাল সকালে রেডি থাকিস

— কেনো কোথাও যাবো???

— হু তোর ভর্তির জন‍্য যাব

— আমি যদি ভর্তি না হই _” আবসারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
ওয়াসিমার কথা শুনে আবসারের হাসি মুখে গ্রহণ লাগে সে নিচু স্বরে বলল
— আম সরি বউ। তুই তো আমার অতীতটা জানিস তাই যখন ঐ মহিলা কথা গুলো বলেছিল,,

— তখন আপনি ভেবে বসলেন আমার বয়স অল্প চোখে রঙ্গিন স্বপ্ন আবার ভালো মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েছি। ভবিষ্যতে যদি আপনার মা যেমন আপনার বাবাকে ছেড়ে গিয়েছে আমিও যদি চলে যাই।
ওয়াসিমার কথা শুনে আবসার কিছু না বলে উঠে বসে মাথা নিচু করে।।

— যদি যাওয়ার হতো আপনি যখন আমাকে বাপের বাড়ি রেখে মাসের পর মাস ঢাকা ছিলেন তখনই চলে যেতাম। সেই কিশোরী বয়স থেকে নিজের আবেগ কন্ট্রোল করা শিখেছিলাম আমি শুধুমাত্র একজনের জন‍্য আর সেই একজন কে জানেন আপনি।। তাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা আমি দুস্বপ্নেও ভাবিনি।

অনেক গুলো কথা বলে থামে ওয়াসিমা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বারোটা পার। তাই সে আবসারের দিকে পিঠ করে শুয়ে বলে — অনেক রাত হয়েছে ঘুমান কালকে আপনার অফিস আছে।।

— তো তুই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবি না??

— না ,, ফিতে কাটার মতো কেচত করে একবাক‍্যে শেষ করে।

আবসারের মুখখানা চুপসে যায়। সে চুপসানো চেহারা নিয়ে ওয়াসিমার পাশে শুয়ে তাকে তার দিকে ফিরায়।।

— এমন করে না বউ। তুই আমার ভালো বউ না ভর্তি হো লক্ষী পাখি আমি ওয়াদা করছি আর কোনো দিন এরকম কোনো কাজ করব না। যদি কোনো জিজ্ঞেস করার হয় তাহলে সরাসরি তোর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করব। তুই চাইলে এই বাসাও ছেড়ে দিব প্লিজ বউ আমার রাজি হয়ে যা।।

আবসারের কাতর স্বর শুনে ওয়াসিমা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল — আচ্ছা পরে দেখা যাবে এখন ঘুমান।।

— উহু

— তাহলে

— অনেক দিন ধরে বউকে কাছে পাইনা আমার এখন ভীষন প্রেম প্রেম পাচ্ছে।

— আমার এখন ভীষণ ঘুম ঘুম পাচ্ছে

— তুই ঘুমা আমি আমার কাজ করি বলেই আবসার নিজের কাজ বহাল রাখল। ওয়াসিমার চোখে ঘুম থাকলেও আবসারের স্পর্শের তীব্রতায় ঘুমাতে পারল না নিমিষেই এলোমেলো হয় ওয়াসিমা। প্রেম নেশায় মাতাল আবসার ডুব দেয় ওয়াসিমাতে।।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৭ ( অন্তিম পর্বের দ্বিতীয় অংশ )

ড্রয়িং রুমের সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে আবসার। সকাল থেকে এই পযর্ন্ত আবসার কয়েকবার বলেছে রেডি হতে ভর্তির জন‍্য যাবে কিন্তু সেদিকে ওয়াসিমার কোনো খবর নেই। সে দিব‍্যি নিজের মতো কাজ করতে থাকে। সকালের নাস্তা বানাতে ব‍্যস্ত। পরোটা তেলে ভেজে নিয়ে সবজি বাটিতে ঢালে। দুইজনের খাবার এক প্লেটে নিয়ে আবসারের সামনে বসে টুকরো টুকরো পরটা আবসারের মুখে দিতে থাকে। প্রথমে আবসার খেতে চায়নি কিন্তু ওয়াসিমার সাথে পারেনি। প্রথম যখন লোকমা মুখের সামনে ধরে আবসার মুখ সরিয়ে নিলে ওয়াসিমাও ঠ‍্যাডার মতো তার মুখের সামনেই ধরে রাখে খাবারের টুকরো অগত‍্যা না পেরে আবসার মুখে নেয় খাবার।
আবসার ভেবে পায়না এই মেয়ের এতো জেদ এতোদিন কই ছিলো। ফুসস করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে আবসার । এখন ওয়াসিমাকে বুঝাতে পারে একজনই। দুনিয়ার বাকি সবার কথা ফেলতে পারলেও নিজের বাবার কথা ফেলতে পারেনা। আবসার হাতে নিয়ে সময় দেখে আবসার নয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট। মোবাইলটা হাতে নিয়েই উঠে দাড়ায়। ওয়াসিমা ঘরের থেকে আবসারের ওষুধ গুলো আনতে আনতে দেখে আবসার বাহিরে যাচ্ছে,,,,,
— এখন কই যাচ্ছেন???

— আসতেছি!!

— ওষুধ আছে খাওয়ার পর ভুলে গেলেন নাকি বিরক্তি ঝেরে বলল ওয়াসিমা।।
আবসার উত্তর না দিয়েই সিড়ি বেয়ে চলে যায় চার তলায়। নক করে শশুরালয়ের ফ্ল‍্যাটে। সকাল সকাল আবসারকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ইরফান। কিন্তু আকলিমা একটু অবাক হয়েছে কারণ বিগত কয়েকদিন ধরেই আগে বাসায় ঢুকার আগে এদিকে একবার উকি দিয়ে যেতোই। কিন্তু ইদানীং আসে না আকলিমাও কিছু বলল না গেট থেকে সরে দাড়াল

— আম্মু আরু কোথায়??

— বউমা তার ঘরে পড়তে বসছে
আবসারের ইস্তত লাগছে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
— কিছু বলবে আব্বু??

— হ‍্যা আসলে ওয়াসিমা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে চাচ্ছে না। ওকে যদি একটু মানিয়ে নিতেন ভর্তির জন‍্য। আবসারের কথা শুনে আকলিমা কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। এককাপ চা এনে ইরফানের হাতে দিল।

— আব্বু আমার সাথে যদি একটু যেতেন ওয়াসিমাকে রাজি করতে “” বেশ ইস্তত ভাবেই বলল আবসার। তার কেমন জানি লাগছে বলতে এই কথা গুলো।
ইরফান আকলিমার দিকে তাকায় আকলিমা চোখের ইশারায় সম্মতি দিলে রাজী হয় ইরফান।

— আচ্ছা বসো আমি চা টা শেষ করি।।
মাথা নাড়িয়ে বসে পড়ে। এরমধ্যেই আকলিমা একটা বাটি এনে আবসারের হাতে দিয়ে বলে — গতকাল একটু পায়েস করেছিলাম। ইদানিং তো তুমি আসোনা আব্বু তাই তোমার জন‍্য উঠিয়ে রেখেছি ভেবেছিলাম একটু পরেই যেয়ে দিয়ে আসব ওয়াসু কাছে।
ভালোই হয়েছে তুমি এসে গেছো।

আবসার মাথা নিচু করে বাটি হাতে নেয়। কাপা স্বরে বলে — ইদানীং বেশ চাপের মধ্যে যাচ্ছি আম্মু।

— আমি বুঝেছি আব্বু তুমি খাও তো আমি দেখি আরুর কি অবস্থা পরসু মেয়েটার পরীক্ষা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে একেবারে,, একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে যায় আরুর ঘরের দিকে।

ইরফান চা খাওয়ার ফাকে ফাকে আবসারকে দেখছে। আবসারও খাওয়ার ফাকে ফাকে শশুরকে দেখছে।
তাদের এখন “” চোখে চোখে কথা হবে মুখে কেনো বলোনা,,,
এই পরিস্থিতি চলছে। দুইজন একসাথে যার যার পাত্র খালি করে।

— চলো ” বলেই ইরফান আগে যায় তার পিছু পিছু আবসার যায়। ইরফানের বেশ ভালো লাগছে গোয়ার আবসারের এই চুপসানো মুখখানা দেখতে। সে মনে মনে হেসে নেয় কিছুক্ষণ,,

— শা*লা হাতি খাদে পরলে চামচিকাও লাথি মারে বিড়বিড় করে বলে আবসার
— উফফস ভুল হয়ে গেলো এইতো তার শশুর। তার প্রান প্রিয় অর্ধাঙ্গীনির জন্মদাতা তার থেকে দুই চারটা লাথি খাইলে দোষ নেই। পরেই আবার ভাবল — আবসার তুই কি সত্যিই শশুরের পায়ের লাথি খেতে চাস। না না না কখনও না। আবসার বউ বিরহে তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে

শেষের কথাটা একটু জোরেই বলল আবসার। তা শুনে ইরফান জবাব দিল — সেই আগে থেকেই তোমার মাথা খারাপ। তুমি আজ স্বীকার করলে এই যা।

আবসার দাতে দাত চেপে চুপ থাকে। এখন শশুরকে রাগান্বিত করা ঠিক হবে না তাই চুপ থাকে।

— আমার আম্মটা কই রে,, ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল ইরফান। বাবার কন্ঠস্বর শুনে ঘর থেকে বের হয় ওয়াসিমা চিন্তিত আদল খানা

— কি হয়েছে আম্মা?? চিন্তিত লাগছে ।

— একটু উনি গেলো কোথায় যেনো এখনো আসছে না।

— ঐ তো আসছে,, ” মাত্রই ঘরে ঢুকা আবসারকে দেখিয়ে বলল

— আপনি কোথায় গিয়েছিলেন ওষুধ খাওয়ার ইচ্ছা নেই নাকি ।।

— দাও ওষুধ
ওয়াসিমা কোনো কথা না বলে ঘরে থেকে ওষুধ এনে আবসারের হাতে দিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপরে থাকা জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে দেয়। আবসার চুপচাপ ওষুধ শেষ করে।

— আব্বু তুমি বসো আমি চা আনি।

— না আম্মা চা লাগবে না তুমি আমার কাছে বসো
ওয়াসিমা ভ্রু কুচকে বসে ইরফানের কাছে। ওয়াসিমার হাত ধরে বলল — ভর্তি বিষয়ে কি ভাবলে আম্মা ??

— আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। ভাইয়ার কলেজেই ভর্তি হবো।
আবসার ওয়াসিমার কথা শুনে হা। তলে তলে এই মেয়ে এতো চলে গেছে। এরমধ্যেই ইরফান বলল — তোমার ডাক্তারী পড়ার স্বপ্ন

— পরব না

— এইটাই তোমার শেষ ইচ্ছা। মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বোধক সম্মতি দেয় ওয়াসিমা। তার প্রেক্ষিতে ইরফান আর কিছু বলে না আবসারের দিকে আড়চোখে তাকায়।
বাপ মেয়ের কথোপকথনে আবসারের মটকা গরম। অনেক হয়েছে চিউ চিউ করে কথা এবার আবসার নিজের মতো স্টেপ নেবে। তাই কোনো কথা না বলে ঝট করে ওয়াসিমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ঘরে। ওয়াসিমা কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘরে প্রবেশ করে আর ইরফান ও বুঝতে বুঝতে আবসার ঠাসসস করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।

— বোরকা পর

ওয়াসিমাও তাও ঠ‍্যাডার মতো দাড়িয়ে থাকে। ওয়াসিমার আপাদমস্তক জরিপ করে আবসার সুতির গোল জামা সাথে প্লাজো সব মিলিয়ে খারাপ লাগছে না। আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমার গায়ের ওড়নাটা নিয়ে হিজাবের মতো পেচিয়ে দেয়। সেই অবস্থায় টেনে নিয়ে যায় যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে বের হয়।

— এই আবসার আমার মেয়েটাকে এভাবে গরুর মতো টানতে টানতে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো??

— আপনার মেয়েকে হাটে বিক্রি করতে
আবসার কথা শুনে ইরফান ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকায়। ওয়াসিমার দিকে তাকালে সে ইশারায় বলে — এখন কিছু বলতে না।।

___________________

সি এন জিতে বসে আছে আবসার ওয়াসিমা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের সামনে আসতেই সি এন জি থামে। আবসার নামলেও ওয়াসিমা নামে না আবসার আর কিছু না বলে টেনে নামায় তাকে।
ভর্তির সকল কার্যক্রম নিজেই শেষ করে। সাথে কবে নাগাত ক্লাস সময় সুচি সব জেনে আসে।

সকল কার্যক্রম শেষ হতে দুপুর হয়। আজকে শেষ দিন তাই একটু বেশী ভীর। আবসার সেখান থেকে বের হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে কারণ বাসায় কিছু রান্না করা নেই। আবসারের প্রচুর খিদে পেয়েছে। খাবার অর্ডার করে দুইজন নিজের মতো খেতে থাকে এর মাঝে কেউই একটা বাক‍্য বিনিময় করেনি।

খাওয়ার ফাকে ফাকে আবসারের দিকে তাকায় ওয়াসিমা। আবসারের ক্লান্ত মুখে প্রশান্তির ছাপ সে ভাবছে শেষ হাসিটা আবসার হেসেছে। উহু শেষ হাসিটা ওয়াসিমা হেসেছে যেই আবসার বলেছিল তার আর ডাক্তারী পড়ার মধ‍্যে যেকোনো একটা বেছে নিতে সেদিনই ওয়াসিমা মনে মনে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে। আবসারই তাকে নিজের ইচ্ছায় নিজের তাগিদে তাকে ডাক্তারী পড়াবে। হয়েছেও তাই ওয়াসিমা বেশী কিছু করেনি আবসারকে নিরব আঘাত করেছে। তার মনে অনুকম্পা জাগ্রত করেছে।

#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৮ ( অন্তিম পর্বের তৃতীয় অংশ )

হায়াৎ লেখে কপালে,” মরণ লেখে পায়ে।
যার যেখানে মরণ লেখা যায়।

এই প্রচলিত কথাটি দিলরুবা সাখাওয়াতের সাথে মিলে গেছে। সে কিছুদিন আগেই স্বামীর ভিটেয় যাওয়ার জন‍্য হাসফাস করলে এজাজ ও এহসান তাকে সেখানে নিয়ে যায়। তারপরের দিন আবার সে বায়না করে ঢাকা যাবে এবং এক্ষুনি যাবে। তৎক্ষণাৎ তাকে ঢাকায় নিয়ে আসলে। দিলরুবা সাখাওয়াত ভিলায় যায়না। সে যায় আবসার ওয়াসিমার সেই ছোট্ট ফ্ল‍্যাটটিতে। সেখানেই দুই দিন কাটায় ওয়াসিমও নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে দাদী শাশুড়ির খেয়াল রাখে তার যত্ন করে। আজ সকাল থেকেই দিলরুবা সাখাওয়াতের শরীরটা বেশ খারাপ তবে আরুর পরীক্ষা আছে বলে তিনি কাউকে কিছু জানায়নি। আরুকে পরীক্ষার হলে অরিক নিয়ে যায়। আরু যাওয়ার পরপরই দিলরুবা সাখাওয়াতের শরীরের আরও অবনতি হতে থাকে। ওয়াসিমা তার জন‍্য দুধ নিয়ে যেতেই দেখে দিলরূবা সাখাওয়াত বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় ছটফট করছে।।
ওয়াসিমা দ্রুত তার কাছে যায়। দুইদিন ধরে এজাজ ও আলিয়াও এখানে থাকছে সারাদিন ও রাতে চলে যাচ্ছে। আয়মান ভেনিসা নিচে আরুদের বাসায়। ওয়াসিমা চিৎকার করে শশুরকে ডাকে

— কি হয়েছে আম্মা
দিলরুবা সাখাওয়াত এজাজের কথার জবাব দেয়না। কাপা স্বরে ওয়াসিমাকে বলে আবসারকে ফোন দিতে।

— উনাকে ফোন দিয়েছি দাদী আপনি এবার চলেন হাসপাতালে যাই।

— নারে নাত বউ আমি হাসপাতালে যাব না আমার আবসার আসলেই ওর সাথে দেখা কইরা যামু গা।।

— ঠিক আছে যাবেন এখন আপাতত হাসপাতালে চলেন
দিলরুবা সাখাওয়াত তাও যাওয়ার জন‍্য রাজী হয় না। এর মধ‍্যে আয়মান ভেনিসা আকলিমা ইরফান ও এহসান তানিয়া চলে এসেছে সবার মধ‍্যে আরু, আবসার, অরিক মিসিং আরু পরীক্ষার হলে ঢুকার একঘণ্টা পার হয়ে গেছে আর কিছুক্ষণের মধ‍্যেই তার পরীক্ষা শেষ হবে। তাই আকলিমা অরিককে বলে দিয়েছে আরু পরীক্ষার হল থেকে বের হলেই দ্রুত বাসায় পৌছাতে দিলরুবা সাখাওয়াতের অবস্থা বেশী ভালো না।
অরিক জানায় সে দ্রুত পৌঁছনোর চেষ্টা করবে। এর মধ‍্যে আবসারও উপস্থিত হয় দিলরুবা সাখাওয়াত ইশারায় আবসারকে কাছে ডাকে। একহাতে আবসারের হাত অন‍্য হাতে ওয়াসিমার হাত ধরে ওয়াসিমার উদ্দেশ্যে বলল — আমার এই দাদু ভাইটা ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করেছে নাত বউ তোমাকে বিয়ে করে একটু সুখের নাগাল পেয়েছে। তুমি এখন যেমন ওকে আগলে রাখো ভবিষ্যতেও তেমন আগলে রেখো এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ।

— আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব দাদী আপনি চিন্তা করবেন না। এখন চুপ করে রেষ্ট নেন তো

ওয়াসিমার কথা শুনে হাসে দিলরুবা।
— রেষ্ট নেওয়ার অনেক সময় পাবো এখন তো আমার রেষ্টের সময়।
আবসার ঘামছে অনেক ঘামছে সে এরকম সিচুয়েশন কোনোদিন ফেস করে নাই তার মনে হচ্ছে এখানে সে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে কিন্তু উঠে দাড়ানোর মতো শক্তি নাই। পা গুলো একস্থানে জমে গেছে মনে হয়।
ওয়াসিমা আবসারের অবস্থা দেখে তার মাকে ইশারায় কিছু বললে আকলিমা আবসারকে একগ্লাস পানি দেয়। ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসে পানিটা খায় আবসার।
ঘন্টা পেরোয় দিলরুবা সাখাওয়াতের অবস্থা খারাপ হয়। আরও কিছুক্ষণ পরেই আরু আসে।
মুখ দিয়ে কথা বের হয়না দিলরুবা সাখাওয়াতের কোনো রকম ঠোট নাড়িয়ে ভালো থেকো বলেই শেষ নিঃশ্বাস ত‍্যাগ করে।
কান্নার রোল পড়ে যায় আলিয়া তানিয়া এমন ভাবে কান্না করছে যেনো নিজের মা মারা গেছে।।

______________________

দিলরুবা সাখাওয়াতের মৃত দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাদের পৈতৃক কবরস্থানে। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত মসজিদে এলাহি ভাবে জানাজা দিয়ে তাকে মাটি দেওয়া হয়। তারা সবাই বতর্মানে সাখাওয়াত ভিলায় আছেন। এখানেই চারদিন থেকে সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন। আরু ওয়াসিমা ভেনিসা মিলে সকল কিছু সামলায়। ভেনিসার বাবা মাও এসে পরেছে।।

এলাহি ভাবে দিলরুবা সাখাওয়াতের মিলায়তনের আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামের সকল এতিম বাচ্চাদের দাওয়াত করা হয়েছে। তাদের গ্রামে মোট দুইটা মসজিদ। দুইটা মসজিদেই খাবার দেওয়া হয়েছে। কুরআন খতম দেওয়া হয়েছে।
এই চারদিনে সবাই মোটামুটি নিজেদের সামলে নিয়েছে। এজাজ সাখাওয়াত একটু বেশীই ভেঙ্গে পরেছে ভিতরে ভিতরে তার চোখ লাল হয়ে আছে।
সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ আগামীকাল সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।

________________________

কেটে গেছে একমাস যে যার কর্মস্থলে ব‍্যস্ত ওয়াসিমার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আরুও একটা সরকারি কলেজের শিক্ষিকা হিসেছে জয়েন করেছে। আয়মান আর অস্ট্রেলিয়া যায়নি সে বর্তমানে সাখাওয়াত কোম্পানি সামলাতে ব‍্যস্ত ভেনিসা পুরো দমে গৃহীনি। এই ব‍্যস্ত জিবনের মাঝে এই তিন জুটি প্রতি শুক্রবার নিজেদের মতো কাটায়। আবসারের ব‍্যবসায়টাও একটু বড় হচ্ছে
ধীর গতিতে।

আজকে শুক্রবার ওয়াসিমা ভীষণ ব‍্যস্ত সবাই দাওয়াত করেছে আবসার ছোট খাটো একটা পারিবারিক গেট টুগেদার প্রতি সপ্তাহেই হয়। সকাল থেকে ওয়াসিমার শরীরটাও খারাপ ইদানীং অবশ‍্য খারাপই যাচ্ছে কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে মাথা ঘুরানিতে পরেই যাবে ওয়াসিমা।
রান্নাঘরের সিংক থেকে পানি নিয়ে মাথায় পানি দেয় ওয়াসিমা। পানি দিতেই মাথা হালকা লাগে ওয়াসিমা এখন খিদেটা মাথা চারা দিয়ে উঠেছে অথচ একটু আগেই সে আর আবসার সকালের নাস্তা সেরেছেন।

ফ্রিজ খুলে ওয়াসিমা সেখানে হাতরে কিছু চকোলেটস পায়। সেগুলো নিয়ে খাওয়া শুরু করে। আকলিমা এসেছিল মেয়েকে সাহায্য করতে সারা সপ্তাহ ক্লাস আবার নিজের সংসার সামলে মেয়েটা গতকাল অসুস্থ হয়ে পরেছিল।

— আম্মু এভাবে চকোলেট খাচ্ছো কেনো??

— জানিনা আম্মু অনেক খুদা লাগছে। খেতে খেতে বলল ওয়াসিমা

— কেনো সকালের নাস্তা করনি। আর নাস্তা না করে এইসব হাবিজাবি খাচ্ছো,,

— খেয়েছিতো আম্মু। আবার খুদা লাগছে।
মেয়ের কথায় সন্দিহান নজরে তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।।
খাওয়া শেষে ওয়াসিমা দাড়াতেই টের পায় তার বমি বমি ভাব হচ্ছে এখন ওয়াশরুমে না গেলে সে ফ্লোর ভাসিয়ে দিবে। দৌড়ে ঘরে ঢুকে ওয়াশরুমে দৌড় দেয়। ভিতরে থেকে ওয়াসিমার বমির শব্দ আসতেই আবসার সেদিকে দৌড় দেয়। যেয়ে দেখে ওয়াশরুমের বেসিনে ওয়াসিমা গরগর করে বমি করছে।

— এই ওয়াসু কি হয়েছে?? ওয়াসিমার পিঠে মালিশ করতে করতে বলল।
বমি শেষে ওয়াসিমা মুখ ধুয়ে উঠে দাড়াতেই চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায়। ঢলে পরে আবসারের বুকে।।
ওয়াসিমাকে এভাবে অজ্ঞান হতে দেখে আবসারের তো পাগল পাগল অবস্থা। সে দ্রুত ওয়াসিমাকে কোলে তুলে ঐ অবস্থায় বেড়িয়ে যায়। আবসার হটকরিতায় আকলিমাও তার পিছু পিছু আসে।
— ওয়াসিমার কি হয়েছে আব্বু ওরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ??

— জানিনা আম্মু একটু আগে বমি করল। বমি করার পরপরই অজ্ঞান হয়ে গেছে আমি ওকে নিয়ে হাসপাতাল যাই আপনি আব্বুকে নিয়ে আসেন। বলেই একটা সিএনজি ডেকে সেটাতে উঠে পরে।

অরিক যখন হাসপাতালে ঢুকে তখন আবসার ডাক্তারের কেবিনের সামনে পায়চারি করছে। অরিক সামনে দাড়াতেই একজন নার্স বের হয় আবসারের হাতে একটা প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেয়। আর বলে এই টেষ্ট গুলো করাতে। আর ওয়েট করতে সে ওয়াসিমাকে নিয়ে আসছে।

ওয়াসিমার জ্ঞান ফিরেছে শুনে সবাই সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
আবসার রিসিপশনের থেকে টেষ্টের বিল দিয়ে আসতে আসতেই ওয়াসিমাকে আকলিমা নিয়ে যায় টেস্টের জন‍্য ।

— এখন কেমন লাগছে হুম

— ভালো

— ডাক্তার কি বলল??

— বলেছে রিপোর্ট আসলেই বলবে।
দশ মিনিট পর রিপোর্ট আসলে এবার আবসার ওয়াসিমা একসাথে ঢোকে কেবিনে।
ডাক্তারের সামনে দূরুদুরু বুকে বসে আছে আবসার। আবসেরের অবস্থা দেখে ওয়াসিমা মিটমিট করে হাসে। সে নিজের সম্পর্কে অবগত কিন্তু আবসারকে বলছে না তার আবসারের এই দুশ্চিন্তা ভরা চেহারা দেখতে ভালো লাগে।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৪৫

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৫

টলমল পায়ে নিজেদের বাসায় ঢুকল আবসার। ওয়াসিমা রান্নাঘরে রয়েছে রাতের রান্না করবে তার প্রিপারেশন করছে। এর মধ‍্যেই কারো পায়ের আওয়াজ আসলে রান্নাঘর থেকে বের হতে নিলেই দেখে আবসার ঘরে ঢুকছে। পিছন থেকে ওয়াসিমা ডাকলেও সাড়া দেয় না। ওয়াসিমাও পিছন পিছন ঘরে ঢুকতেই দেখে আবসার ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা ঠাসসস করে বন্ধ করে দিয়েছে। ওয়াসিমার আর কিছু না বলে চলে যায় নিজের কাজে উদ্দেশ্য আবসারের জন‍্য কিছু বানাতে বিকেল বেলা ইরফান রহমান এসেছিল তখন ওয়াসিমা বাবার জন‍্য মালাই চা করেছিল। সেখান থেকে একটু আবসারের জন‍্য রেখেছিল,, সেই চায়ের সাথে আরও হালকা খাবার বানায়।

ওয়াশরুমে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছে আবসার। আজকে তার নিজের প্রতি অনেক রাগ লাগছে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে। তার কানে এখনো বাজছে ইরফান রহমানের বলা কথাটা “” আমার মেয়েটা তোমায় সেই চৌদ্দ বছর বয়স থেকে ভালোবাসে আবসার। তখন আমি নিজের মেয়েকে তোমার থেকে দূরে রাখতে তাকে বলি তুমি তার মোহ,, আবেগ। তবে আমার মেয়েটা মানেনি আবসার সে সেদিন দৃঢ় স্বরে বলেছিল না — আব্বু ঐ আবসার ভাইকে আমি সত্যিই ভালোবাসি।
ইরফান অবাক হয়েছিল ঐটুকু মেয়ের এমন কন্ঠস্বর শুনে। কিন্তু সে চায়নি আবসারের সাথে তার মেয়ের কোনো আলাপ হোক বা অন‍্য কিন্তু। তাই সে মেয়েকে আটকানোর জন‍্য বলল,,,,

— এটা তোমার সাময়িক মোহ আম্মা যেটা সময়ের সাথে কেটে যাবে।

কিন্তু কাটেনি সময়ের সাথে বৃদ্ধি পায় সেই আবেগ ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়। সেই দূরন্ত মেয়েটা ছেলেদের থেকে দূরে থাকা শুরু করে পড়া ছাড়া খুব একটা বাহিরেও যায়না। নিজের আবেগ জমিয়ে রাখে মনের সিন্দুকে যার এক অংশ জেনেছিল ইরফান আর বাকীটা ওয়াসিমা নিজের মনে তালা দিয়ে বন্দী করেছিল।

প্রায় আধা ঘন্টা শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে থেকেও তার মাথা ঠাণ্ডা হচ্ছে না। রাগের ঠেলায় হাত মুঠো করে ওয়াশরুমের আয়নায় ঘুসি মারে। গরগর করে রক্ত পরে হাত থেকে কিন্তু আবসারের সেদিকে কোনো ধ‍্যান নেই। সেতো নিচের অনুতাপের অনলে আছে। যেই মেয়েটা সেই কিশোরী বয়স থেকে তাকে ভালোবাসল সেই মেয়েটাকে বাহিরের মানুষের কথায় সন্দেহ করল আবসার।
মেয়েটা যেদিন মেডিকেলে চান্স পায়। সেদিনও সে ওয়াসিমার সাথে ভালো করে কথা বলে নি। মেয়েটা সারাদিন মলিন মুখে ছিলো। সেদিকে তাকিয়ে ও আবসার কিছু বলেনি। ছিহ নিজের ভালোবাসার উপর ঘৃণা আসল তার। যদি ভালোবাসার মানুষকে বিশ্বাসই না করতে পারলে তো কিসের ভালোবাসা।। সে সার্থপর হয়েছিল নিজের জন‍্য নিজের ভালো থাকার জন‍্য ওয়াসিমার তার প্রয়োজন ছিলো তাই তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেই তাকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল।।
কারো ডাক শুনে ঘোর ভাঙ্গে আবসারের ভালো করে শুনে বুঝতে পারে এই কন্ঠটার মালিকে তার একমাত্র বউ ওয়াসিমা

— কি হয়েছে আপনার এখনো ওয়াশরুমে আছেন??শুনছেন আপনি। দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল ওয়াসিমা।
আবসারের উত্তর না পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো ওয়াসিমা আবার আবসার কিছু হলো নাকি তাই দ্রুত আরো জোরে দরজা ধাক্কায়। তাও খোলে না আবসার।

— শুনছেন গেটটা খুলেন না।
ওয়াসিমার ডাক শুনে চোখ বন্ধ করে আবসার ইশশ কি করুন স্বর। এই ডাক উপেক্ষা করার মতো মন মানসিকতা আবসারে নেই। সেই শক্তিও নেই। দ্রুত ভেজা কাপড় ছেড়ে কোমরে টাওয়াল জড়িয়ে গেট খুলে।

— আপনি ঠিক আছেন এতো দেরী হলো কেনো। আমি এখনই ভাইয়ার কাছে যেতাম। দরজা ভাঙ্গার জন‍্য। আবসারের কপাল মুখ হাতরে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলল ওয়াসিমা। আবসার তাকায় ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে রয় কোনো কথার উত্তর দেয়না। এইযে মেয়েটার পিচ্চু পিচ্চু হাত দামরা আবসারের মুখমন্ডলে ছড়িয়ে আছে। তার আবসারের মনে শান্তির জোগান দিচ্ছে।।
আবসারকে কিছু না বলতে দেখে ওয়াসিমা এবার একটু জোরেই বলল
— কি হয়েছে আপনার?? আপনি শুনছেন আমার কথা

— আই লাভ ইউ বউ
আবসারের কথায় বিরক্ত হয় ওয়াসিমা এই লোক কি পাগল হয়ে গিয়েছে সে জিজ্ঞাসা করছে কি আর এই লোক বলছে কি। আর এতোদিন পর এই লোকের ভালোবাসার কথাটা বলতে বলেছে কেউ না বললেই হতো একেবারে নাতি নাতনি নিয়ে বুড়ো বয়সে শুনতো তার ভালোবাসার প্রকাশের কথা।

— মাথা খারাপ হয়েছে আপনার। আমি জিজ্ঞাসা করছি কি হয়েছে আপনার এসেই গোসলে গেলেন আবার এতোক্ষণ লাগিয়ে শাওয়ার ছেড়ে ছিলেন আর আপনি কি বলছেন।

— তি আমো বউ

— এটা আবার কি কথা

— ইউ আমু তে ওয়াইফি

— এগুলো কি বলছেন আপনি। এবার আবসারের কথায় বেশ বিরক্তি হয় ওয়াসিমা। তাই কিছু না বলে যেতে নিলেই পিছন থেকে হাত টেনে আটকায় আবহার। টেনে আনে নিজের বক্ষে ওয়াসিমা মাথাটা চেপে ধরে নিজের বক্ষে সেভাবেই বলল — এই যে এই বক্ষে তুই বন্দীনি কোথাও যেতে পারবি না।।

— কি হয়েছে আপনার এমন করছেন কেনো?? আবসারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল

— অ আই নি শুভ্র বউ

“- এগুলো কি বলছেন আপনি। আমি যাই টেবিলে নুডুলস রইল খেয়ে নিয়েন চুলায় আমার রান্না আছে।

আবসার বেডের পাশে থাকা টেবিলের দিকে তাকায় সেখানে ঢাকা দেওয়া একবাটি নুডুলস আছে। প্লেটটা ধরার জন‍্য হাত বাকা করতে নিলেই হাতে তীক্ষ্ম ব‍্যাথা অনুভব হয় আবসারের। চোখ বন্ধ করে ফেলে এতক্ষণ ব‍্যাথা অনুভব না হলেও এখন হচ্ছে। সে কাটা হাতটা নিয়ে ঐভাবে বসে থাকে। ওয়াসিমা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে নুডুলসের বাটি ঐ অবস্থায় আছে আর আবসার হাত কোলে নিয়ে বসে আছে। ওয়াসিমা কাছে গিয়ে হাতের দিকে তাকাতেই আতকে ওঠে। পরিমরি অবস্থায় হাতের কাপটা কোনো রকম টি টেবিলে রেখে আবসারের হাত ধরে.,, হাতের উপরের অংশ অনেকটা থেতলে গেছে

— এই আপনার হাতে কি হয়েছে হ‍্যা। এতো বাজে ভাবে কেটে গেছে কিভাবে
ওয়াসিমার কন্ঠে অস্থিরতা টের পায় আবসার। তাকিয়ে থাকে তার দিকে মেয়েটা কেমন অস্থির হয়ে আছে তার জন‍্য। ওয়াসিমার এই অস্থিরতা আবসারের অনুকম্পা আরো বাড়ায়। হাসফাস করতে হাত ছাড়িয়ে নেয়।।

— কি হয়েছে আপনার এমন করছেন কেনো। এসেছেন থেকে কেমন আজব বিহেব করছেন হাতে ব‍্যাধা কিভাবে পেয়েছেন কেনো কখন থেকে জিজ্ঞেস করছি সেটাও বলছেন না,, ওয়াসিমার কান্নাভেজা কথা শুনে আবসার নিরুত্তর। সেটা আরো পোড়ায়। সে আর কিছু না বলে হাতের ড্রেসিং করতে থাকে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেওয়ার পর অরিককে ফোন করে। অরিক বোনের কান্নাকাটি শুনে দ্রুত আসে গেট খুলে ভাইয়ের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায়। অরিক বোনকে থামায়। ওয়াসিমাকে নিয়ে তাদের ঘরে যায়।
— ভাইয়া আমি হালকা পরিষ্কার করে দিয়ে ব‍্যান্ডেজ করে দিয়েছি। এখন একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও তো।।

অরিক আবসারের দিকে তাকায় মনে হচ্ছে সে এই দুনিয়ায় নেই তাই তাকে ডাক দিলো -” আবসার

— হু

— চল
বলেই আবসারের হাত টেনে নিয়ে যায়। গোয়ার আবসারও যেনো আজকে কেমন হয়ে গেছে সব সময় ত‍্যাড়ামিটা আজকে নেই। সেদিকে অবাক নজরে তাকিয়ে রয় ওয়াসিমা। তার মনে হচ্ছে আবসার কিছু নিয়ে চিন্তিত কিন্তু কি নিয়ে তবে কি আবারও কিছু বলেছে কেউ তাকে নিয়ে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তাচ্ছিল্যের হাসল ওয়াসিমার তার ভালো লাগছেনা মন চাচ্ছে কোথাও গিয়ে নিরিবিলি একটু কান্না করে মনটা হালকা করতে সেটাও পারবে না। কারণ এই ফ্ল‍্যাটের প্রত‍্যেকটা জায়গায় মাইক্রো চিপ আছে যা দ্বারা আবসার তার ভয়েস রেকর্ড শুনতে পারবে। সেদিন জুলিয়ানার ব‍্যাপারটাও আবসার এভাবেই জেনেছিল এটা পরে ওয়াসিমা বুঝতে পারে। কিন্তু তাও কিছু বলে নাই আবসারকে কি বলবে তার নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে এতোটা লয়াল থাকার পরেও লোকটা তাকে সন্দেহ করে।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪২

রাত তিনটায় যখন ওয়াসিমার ঘুম ভাঙ্গল। তার কানে কারো মৃদু চিৎকারের আওয়াজ গেলো। সাথে নিজের উপর ভারী কিছু আভাস পেলো। সে তড়াক করে বস্তুটিতে তাকায়। আবসার তার গলায় নাক ডুবিয়ে গভীর নিদ্রায় শায়িত। কিন্তু মৃদু চিৎকার আরো একটু বাড়তেই ওয়াসিমা বুঝতে পারল কেউ কাউকে ডাকছে কিন্তু আওয়াজটা সুস্পষ্ট না কারণ তাদের ঘর আয়মানের ঘর উপরে এক কর্নারে। খুব চেচামেচি ছাড়া শোনা যায়না। রাত দেখেই ওয়াসিমা শুনতে পায়। এমনিতেই ওয়াসিমার ঘুম প্রচন্ড পাতলা সে গভীর ঘুমে থাকলেও কান সজাগ থাকে।

গভীর ঘুমে থাকায় বলিষ্ট দেহী আবসারকে সরাতে কসরত করতে হয় ওয়াসিমার কিন্তু ঘুম পাগল আবসারের ঘুম ভাঙ্গে না। ওয়াসিমা বের হয় ঘর থেকে। বেড়িয়ে আসার আগে পিছন ফিরে আবসারকে একপলক দেখে যায়। কাটায় কাটায় দশ মিনিট পর এই লোকের ঘুম ভাঙ্গবে কারণ সে ঘুমে মাতাল তালে ঠিক। ঠিক হাতরে যখন ওয়াসিমাকে না পাবে উঠে যাবে তাই তাকে ডাকার তাড়াও নেই।

ওয়াসিমা যত নিচে নামে আওয়াজটা জোরালো হয় এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কোথা থেকে আওয়াজ আসছে। এজাজ ও আলিয়ার ঘর নিচেই তাদের ঘরে আলো জ্বালানো দেখে সেদিকে যায় ওয়াসিমা। দরজায় টোকা দেয়,,,,

সাথে সাথে দরজা খুলে দেয় আলিয়া। ওয়াসিমাকে দেখে অবাক হলেও পরক্ষণেই তাকে টেনে নেয় ঘরের ভিতরে। পাগল স্বরে বলে — ওয়াসু মা দেখো তো আবসারের বাবা কথা বলছে না। তার শরীর কেমন নিস্তেজ হয়ে আছে।

শাশুড়ির কথা শুনে আবাক ওয়াসিমা কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত শশুরের কাছে যায় পালস চেক করে। যেটা খুব ধীরে গতিতে চলছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে ওয়াসিমা। সে আলিয়ার কথা শুনে ভেবেছিল অন‍্য কথা যা বর্তমানে তার মস্তিষ্কেও আনতে চাচ্ছে না।

— মা বাবার কি প্রেশার মাপার যন্ত্র আছে??
ওয়াসিমা বলতেই বেডের পাশের ড্রয়ার থেকে যন্ত্রটি বের করে দিলো।
ওয়াসিমা প্রেশার মেপে দেখে প্রেশার অনেক হাই। প্লাস এজাজের নাকি ডায়বেটিস ও আছে।

— মা আপনি বাবার হাত পা ম‍্যাসাজ করতে থাকেন আমি আসছি বলেই দৌড়ে চলে যায় রান্নাঘরে।
হাফ গ্লাস পানির মধ‍্যে দুইটা লেবুর রস মিশিয়ে নেয় । চামচ দিয়ে পানিটা মিশিয়ে নাড়তে নাড়ত রান্নাঘর থেকে বের হতেই পরে আবসারের সামনে। তাকে পাশে কাটিয়ে চলে যায়। শশুর শাশুড়ির ঘরে আবসারও তার পিছু নেয় দেখে আলিয়া কান্না করতে করতে এজাজ সাখাওয়াতের হাত মাসাজ করছে।

— কি হয়েছে বাবার ওয়াসু??
আবসার তৎক্ষণাৎ পা মাসাজ করতে করতে বলে। ওয়াসিমা চামচের সাহায্যে এজাজের মুখে অল্প অল্প করে পানিটা খাওয়ায়। পানিটা খাওয়াতে খাওয়াতে বলল

— জানিনা আপনি ডাক্তারকে ফোন করেন। আর নাহলে ইমারজেন্সি হাসপাতালে নেওয়ায় ব‍্যবস্থা করেনা।।
আলিয়া সাখাওয়াত কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। সমানে কান্নাকাটি করছে।।
তাদের হুরোহুরির মাঝে বাড়ির সবাই জেগে ওঠে। তানিয়া এহসান দৌড়ে আসে। এহসান তৎক্ষণাৎ তার পরিচিত ডাক্তারকে ফোন দিলে সে জানায় সে ঢাকার বাহিরে আছে। এজাজকে যেনো দ্রুত হসপিলাইজড করা হয় সে ফোন দিয়ে সব ঠিক করে দিচ্ছে। এর মধ‍্যে প্রায় অনেক খানি লেবু পানি খাইয়ে ফেলেছে ওয়াসিমা।
তাদের ব‍্যস্ততায় নব দম্পতি আয়মান ভেনিসাও জেগে ওঠে।

ইতিমধ্যে অ‍্যাম্বুলেন্স আসলে আবসার এহসান তাকে নিয়ে যায়। আলিয়া সাখাওয়াত যেতে চাইলে তাকে নিয়ে যাওয়ার মতো যায়গা না থাকায় সে বাড়ির গাড়িতে করে যায়। দিলরুবা সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতকে নিয়ে আয়মান হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

— এখন কি অবস্থা ছোট খোকা?? বৃদ্ধা বয়সে ছেলের এই অবস্থা মানতে পারছে না দিলরুবা সাখাওয়াত।

— ইমারজেন্সিতে নিয়েছে আম্মা এখনো কিছু বলে নাই।। আল্লাহ্ ভরসা ভাইজানের কিছু হবে না।।

এহসানের বুকে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে দিলরুবা সাখাওয়াত। আলিয়া সামনের বেঞ্চিতে বসে আছে। আবসার তার সামনে গেলে তার হাত ধরে কান্না করে দেয় আলিয়া সাখাওয়াত। আবসারের একটু অস্বস্তি হলেও নিজের হাতটা সরিয়ে নেয় না। কান্না করতে দেয় আলিয়া সাখাওয়াতকে।

কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার বেরিয়ে আসে। তার সামনে যায় এহসান
— কি হয়েছে ডাক্তার?? ভাইজানের অবস্থা এখন কেমন??

— বড় বাচা বেচে গেছে। প্রশার অনেক হাই হয়ে গেছিলো এর একটু হলেই ঘুমের মধ‍্যে হার্ট অ‍্যাটাক করত। কেউ মনে হয় অনাকে প্রাথমিক হিসেবে লেবু পানি খাইয়েছে কে সেটা??

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই একে অপরের দিকে তাকায়।
— কেনো ডাক্তার কেনো সমস্যা??

— নো মি.. এহসান। কিন্তু পানিটা এই সময় খুবই প্রয়োজন হয়। বিপদের সময় অনেকের জানা থাকলেও এই কাজ গুলো করে না তাই আর কি বললাম। ঐ লেবু পানিটা পেশেন্টের জন‍্য অনেক ইফেক্টিভ তাই বলেছি। মানতে হবে তার তাৎক্ষণিক বুদ্ধি প্রখর।।

— ভাইজানের এখন কি অবস্থা??

— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো কালকেই নিতে পারেন বাট আমার মতে একটা এনজিওগ্রাম করে নিলে ভালো হয়। বলেই ডাক্তার চলে যায়।

আলিয়া সাখাওয়াত থম মেরে বসে আছে। এই মেয়েটির কাছে আলিয়া আজকে অনেক বড় ঋণি হয়ে গেলো।।
এহসান বাড়িতে ডাক্তারের বলা কথা গুলো বলতেই জানতে পারল ঐ কাজ গুলো ওয়াসিমা করেছে।
আবসারের গর্বে বুকট ফুলে উঠল ছত্রিশ ইঞ্ছি ছাতিটা আটত্রিশ ইঞ্চি হয়ে গেলো।
তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। আবার ধপ করে নিভে গেলো নিজের বিগত দিনের কর্ম কান্ডের কথা ভেবে। আটত্রিশ ইঞ্চি ছাতিটাও ফুসস হয়ে গেলো।।

______________________

এজাজ সাখাওয়াতকে পরের দিন বাড়িতে আনা হয়েছে। সে মোটামুটি সুস্থ শুধু হাই প্রেশার ছাড়া আর কোনো রোগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার খেয়াল রাখতে বলেছে যাতে তাকে কোনো ভাবে উত্তেজিত না হতে দেয়। তাহলে ভবিষ্যতে হার্ট অ‍্যাকটাক হতে পারে।

আজকে আয়মান আর ভেনিসা। ভেনিসার বাবার বাড়ি যাবে। এজাজ সাখাওয়াতকে বাসায় নিয়ে আসার পরপরেই তার সাথে দেখা করে চলে যায় তারা।।
আজকে আসবার ও ওয়াসিমার চলে যাওয়ার কথা থাকলে তারা যেতে পারে না। এহসানরা এখন থেকে এখানেই থাকবে। দিলরুবা সাখাওয়াত যেতে দেয়নি। আবসারকেও আটকায় কিন্তু গোয়ার আবসার কি কারো কথা শুনে সে তার গোয়ারতামি বজায় রেখে থাকবে না জানিয়ে দেয়। আর ওয়াসিমারও এখানে থাকার ইচ্ছা নেই। তার এই চাকচিক‍্য ভালো লাগে না। তার ঐ দুই কামরার ফ্লাটেই তার ভালো লাগে এসি বিহীন ঘর হলেও সেখানে আলাদা একটা প্রশান্তি বিরাজমান। তা সে এই আভিজাত্যে পায়না। কিন্তু অসুস্থ শশুর রেখেও যেতে মন চাচ্ছে না।।

_________________________

— আসি আয়মান ভেনিসা এই গরীব ভাইয়ের বাসায় একদিন ঘুরে এসো দাওয়াত রইল।।
আয়মান আজকে শশুর বাড়ি থেকে ফিরে আসলেই আবসার যাওয়ার তাড়া দেয়।

— তুমি থেকে যেতে ভাইয়া। দুই ভাই একসাথে থাকতে পারতাম করূন স্বরে বলল আয়মান। তার কষ্ট লাগছে। নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে যেই আদর ভালোবাসা আবসারের পাওয়ার কথা ছিলো সেটা সে পেয়েছে শুধু তার মায়ের ছলচাতুরির কারণে। গতকাল তার শশুর শাশুড়ি তাকে জানায় আবসার কিভাবে এই পযর্ন্ত এসেছে। তার মম কিভাবে ঐ টুকু ছেলের শেষ আশ্রয়স্থল কেড়ে নিয়েছে। তার তাকে বুঝিয়েছে যেনো কোনোদিন আবসারের সাথে খারাপ ব‍্যবহার না করে। সাথে ভেনিসাকেও বুঝিয়েছে বাকি পড়াশোনা এখানেই করার জন‍্য।।
আয়মানের ঘৃণা করছে নিজের মায়ের চেহারা দেখতে।।
সেতো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে কয়েকটি দিন দাদুমের সাথে কাটিয়ে আবার অস্ট্রেলিয়া ব‍্যাক করবে তার মাকে বুঝাবে যার জন‍্য এতোকিছু করল সেই এখন তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ,,,,,

“” এজাজ ঘরের থেকে সব শুনলেও কিছু বলল না তার আর কিছু বলার নেই। একটা সময় আসে তখন নিজের কর্ম কান্ড গুলো ভেবে আফসোস করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। এই তো গতকাল কেমন হইহুল্লোর ছিলো জমজমাট ছিলো চারিদিকে সুখে ছলক ছিলো। আজ তার এই বিশাল বাড়িটা কেমন নিস্তেজ। হাতে গনা সাতজন মানুষ থাকলেও ভেনিসা আয়মান নিজের মতোই থাকে কারো সাথেই কথা বলছে না। শুধু মনে চাইলে তার দাদুমের সাথে কথা বলছে আর কারো সাথে কথা বলছে না।।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৩

বিবেক হলো আত্মার সেই আয়না যা মানুষের জীবনের ভুল গুলো পূর্ণারুপে দেখা দেয়
__জর্জ ব‍্যানক্রফট

আজকে বিবেকের তাড়নায় আলিয়া এজাজের ভুল গুলো চোখের সামনে আয়নার মতো সচ্ছ।।
আয়মান চলে গেছে আজকে দুই দিন। এজাজ যেনো আরো মুছরে গেছে। তার শারীরিক আরো একটু অবনতি হয়েছে। আলিয়া দ্রুত ডাক্তারকে কল করলে সে এসে দেখে যায় এবং টেনশন করতে বারন করেন।
পুত্রের এই কাতরতা মেনে নিতে পারেন না দিলরুবা সাখাওয়াত সে মানসিক ভাবে বেশ ভেঙ্গে পরেছে।। এইতো কিছু দিন আগেই ইরফান ও আকলিমা তার সাথে দেখা করে গেছে। এবং তাকে কয়েকটি দিন তাদের সাথে থাকার আহ্বান করে এসেছেন ।। দিলরুবা সাখাওয়াত যাবে না সে বর্তমানে গ্রামে যাওয়ার জন‍্য পাগল হয়ে গেছে।। তার ইচ্ছা তার মৃত্যুর কিছু দিন আগ পযর্ন্ত সে তার স্বামীর ভিটেয় কাটাতে চায় যেখানে সে বধূ রুপে পা রেখেছিল।।

_____________

আবসার মাথা নিচু করে বসে আছে মাথায় হাজারো চিন্তা চলেছে।। আবসাররা ঐ বাসা ছেড়েছে প্রায় অনেক দিন এর মধ‍্যে ওয়াসিমাকে একবারও তার ভর্তি সংক্রান্ত কোনো জিজ্ঞাসা করতে দেখা যায় নি,,, আবার সব যেনো সাভাবিক হয়েও অস্বাভাবিক কিন্তু কেনো??? জানা নেই আবসারের।। সেদিন ঐ বাসা থেকে আসার পরে রাতে বেশ রোমান্টিক ভাবেই ওয়াসিমার রাগ ভাঙ্গায় ওয়াসিমাও তাকে ক্ষমা চায় এরপর সব ঠিক চলছে কিন্তু এর মধ‍্যে তোতা পাখির মতো কথা বলা ওয়াসিমা যেনো হারিয়ে গেছে।।

— নাহ এইভাবে চলতে পারে না,, ওর সাথে সামনা সামনি বসে কথা বলতে হবে।।
ভেবেই আবার অফিসের একাউন্টস দেখতে লেগে পরে পাচঁটার দিকে অরিক আসলে সে আজকে চলে যাবে। সামনে বড় একটা অর্ডার আছে সেটার জন‍্য কর্মচারিদের অভার টাইম করাচ্ছে।। আল্লাহর রহমতে আবসারের কারখানাটা একটু বড় হয়েছে।। আগে পচিঁশ জন কাজ করলেও এখন ত্রিশ জন কর্মচারী কাজ করে।।

____________________

আছরের নামাজ শেষে হিজাবটা খুলে মাত্র বসেছে ওয়াসিমা এর মধ‍্যেই বেল বাজে,,

— এখন কে এসেছে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলতে বলতে মেইন গেটের সামনে দাড়িয়ে হোল দিয়ে দেখে আবসার।। আবসারকে এই সময় দেখে অবাক ওয়াসিমা আবসার কখনও এই সময় আসে না যদি আসার হয় একেবারে আটটার দিকে আসে।। সে আর না ভেবে গেট খুলে দেয়

— কি হয়েছে আপনার এই সময়, শরীর ঠিক আছে তো?? আবসারের কপালে হাত দিয়ে বলে
ওয়াসিমার এই উদ্বিগ্ন মায়া বাধানো ছোয়াটা আবসার অনেক দিন পর পেলো এইতো তার বউ তোতা পাখির মতো কথা বলছে।।

— কিছু হয়নি এমনিতে চলে আসলাম। কেনো এসে কি খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম??

— আপনার বাসা আপনি আসবেন নাতো কে আসবে??
ওয়াসিমার স্বরে তাচ্ছিল্য নাকি আনুরাগ বুঝল না আবসার।। শুধু তার দিকে ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে থাকল। আবসারের নজর থেকে বাচতে ওয়াসিমা রান্নাঘরে চলে যায় উদ্দেশ্য হালকা নাস্তা বানাবে। প্রতিদিন সে একা থাকে কিছু বানায় না আকলিমা কিছু নিয়ে আসে নাহলে সে যায় আকলিমার কাছে।।

— ওয়াসু একটা কথা ছিলো!! নাস্তার প্লেট নিয়ে আসতেই আবসার বলল

— কি কথা বলেন,, আবসার বলতে নিলেই তার ফোনটা বেজে ওঠে হাতে নিয়ে দেখে তার ছোট মিয়া মানে এহসান সাখাওয়াতের ফোন।।

— আসসালামু আলাইকুম ছোট মিয়া

— ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবাই সাখাওয়াত ভিলায় একটু আসতে পারবে আম্মা তোমাদের ডেকে পাঠিয়েছে।।

— কোনো জরুরি ছোট মিয়া কাল আসি??

— না এখনই আসলে ভালো হয় বলেই ফোন কেটে দিলো।

— রেডী হো
ওয়াসিমা চলে যায় রেডী হতে। বিরক্ত হয় আবসার আজকেও কোনো কথা বলতে পারল না।।
— ধুরর ভালো লাগে না বলেই দুই হাত দ্বারা চেহারা ঘসে।।
ওয়াসিমা বোরকা পরে আসতেই আবসার সু কেবিনেটের উপর থেকে তালা চাবি নিয়ে নেয়। দরজা আটকে যায় চার তলায় সেখান থেকে আরুকে নিয়ে চলল সাখাওয়াত ভিলার উদ্দেশ্যে।।

_________________

দিলরুবা সাখাওয়াতকে ঘিরে আছে সবাই। সে বেডে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে

— আরু মনি এখানে আয়
দাদীর মিষ্টি ডাকে অবাক হয় আরু। ছোট থেকে এই পযর্ন্ত সে দাদীর ভালোবাসা পায়নি যার পুরোটাই আয়মান পেয়েছে। আবসার এখানে ছিলো না সে আরুকেও কাছে টেনে নেয়নি। যারপরনাই পুরো আদর ছিলো আয়মানের জন‍্য বরাদ্দ। আরু এই ফ‍্যামিলিতে শুধু বাবা ও মায়ের আদর ছাড়া আর কারো আদর ভালোবাসা কোনোটাই পায়নি। সেই হিসেবে সেও আবসারের মতো কপাল পোড়া। সে পরিবারের মধ‍‍্যে থেকেও সব কিছু থেকে বঞ্চিত আর আবসার না থেকে বঞ্চিত।
— কিরে আপা মনি বসবি না

— হু বলেই আরু দিলরুবা সাখাওয়াতের কাছে বসে পরে।। দিলরুবা সাখাওয়াত তার হাত জোরা নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।

— আমার একটা ইচ্ছা বলতে পারো শেষ ইচ্ছা রাখবে! আশাবাদী নয়নে তাকিয়ে বলল

— আমি চেষ্টা করব দাদু

— আবসার আয়মানকে ফোন করে তুমি ওকে বাংলাদেশে কয়েকদিনের জন‍্য আসতে বলো। আমি জানি ওর তোমার সাথে যোগাযোগ আছে
আবসার কিছু না বলে আয়মানকে ফোন করে হোয়াটস অ‍্যাপে। সবার সামনে দাড়িয়েই কথা বলে আয়মানের সাথে কথা বলার সময় সবাই চুপ থাকে। আয়মান প্রথমে আসতে চায়নি তবে আবসারের জোড়াজুরির ফলে রাজী হয় সে সামনের সপ্তাহে আসবে।।

— আমি চাই কিছুদিন পুরো পরিবার সহ আমাদের গ্রামের বাড়িতে কাটাতে। মরার আগে অন্তত আমার পুরো পরিবারকে একসাথে দেখতে চাই।।
দিলরুবা সাখাওয়াতের মুখে মৃত্যুর কথা শুনে আরু তার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। সেদিকে তাকিয়ে হাসে দিলরুবা সাখাওয়াত এই যে মেয়েটাকে আদর করে একটু কাছে ডেকেছে এতেই যেনো মেয়েটা গলে গিয়েছে। তার অভিমানের বরফ গলে পানি হয়ে গেছে।।

অবশেষে সবার মত অনুযায়ী কথা ফাইনাল হয় পরসু আরুর পরীক্ষার পরে সবাই আলম নগর যাবে।

____________________

— তোমরা যাও আমার কলেজে পরীক্ষা আছে আমি আপাতত যেতে পারব না।

— কিন্তু দাদীযে এতো করে বলল

— আমার এতে কিছু করার নাই আমি যেতে পারব না বলেই অরিক হাতের ল‍্যাপটপ নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। সেদিকে তাকিয়ে আরু দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। একে এখন তার শাশুড়ি ছাড়া আর কেউ রাজী করাতে পারবে না। তাই আরু চলল শাশুড়ির কাছে
আকলিমা নিজের ঘরে বসে কাপড় ভাজ করছিল তখন আরু দরজায় নক করে আরু
— দরজা খোলা

— আসব আম্মু

— বউমা আসার জন‍্য আবার অনুমতি নেওয়া লাগে নাকি এসো বসো।।

— আম্মু আমি একটা কথা বলতে এসেছি

— হ‍্যা বলো নিজের কাজ করতে করতে বলল

আরু দিলরুবা সাখাওয়াতের ইচ্ছের কথা বলল। সব শুনে আকলিমা বলল — তিনি মুরুব্বি মানুষ তার ইচ্ছার মূল‍্যায়ন করা উচিৎ। আর তোমার শশুর ও অনেক দিন ধরে গ্রামে যেতে চাচ্ছে। তোমার পরীক্ষার জন‍্য যাওয়া হচ্ছে না তাই ভাবছি তোমার পরীক্ষার পর সবাই একসাথে যাব। আর অরিকের সাথে আমি কথা বলবনি।।

আকলিমার কথা শুনে আরু খুশি হয় সে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল — সত্যিই আম্মু তাহলে আমি সব গোছানো শুরু করি

— হ‍্যা কিন্তু পরীক্ষা তো সামনে সেদিকে মনযোগ দাও।।
আরু খুশী হয়ে মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। সেদিকে তাকিয়ে আকলিমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে ভাবছে এইবার গ্রামে গেলে আর আসবে না। কয়েকটি দিন অরিক আরু নিজেদের মতো সংসার সামলে নিক।।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪৪

— ঐ তোর পাগলীবোনকে সামলা তো ভাল্লাগছে না। কি একটা লাগিয়ে রাখছে সে তার দাদির সাথে গ্রামে যাবে।।

— কেনো কি হয়েছে??

— কাল রাতে আমাকে ধরে দাদি নাকি সহ পরিবার গ্রামে যেতে চেয়েছে। সেও যাবে। আমি বলেছি আমার কলেজের এক্সাম শুরু হবে সামনে তোর বোন মানতেই রাজী না। গিয়ে আম্মুকে বিচার দিয়েছে এখন আম্মু আমার পিছনে লেগেছে। আমি বললাম এখন হবে না বেশি দিন থাকতে পারব না বৃহস্পতিবার যাব শুক্রবার থেকে শনিবার এসে পরব। তাও ওর চলছে না।। তার থেমে আবসারকে জিজ্ঞাসা করে — তুই কি যাবি??

— নাহ! আমার এখন যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। ওয়াসুর ভর্তি আবার মালের শিপমেন্ট এই সপ্তাহেই দিতে হবে পারব না। আর আরুর কথা চিন্তা করিস না আমি বুঝিয়ে বলব
এই প্রথম দাদুর আদর পেয়েছে তো তাই আবেগে বলছে। কিন্তু আমি তো জানি তারা কেমন আমি তাদের একবিন্দুও বিশ্বাস করিনা। তারা এখন আমাকে সাখাওয়াত ভিলায় নেওয়ার চেষ্টায় আছে। যাতে তাদের ব‍্যবসায় সামলাতে পারি আয়মান তো নিজের মতো চলে গেছে অস্ট্রেলিয়া
শান্ত স্বরে বলল আবসার। অরিক বুঝল আবসার রেগে যাচ্ছে তাই বলল

— তো তুই যাবি না তোর বইন এতো পাগল হইছে কেনো??

— কালকে ওর সাথে একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে তাই রাজি হইছে।। আবার আয়মান আসছে ওরাও যাবে

— তুই না গেলে আমরাও যাব না। যাই হোক কি কি ফাইল না বাকি আছে দে।।

— মনে হয় তো কলেজ থেকে সোজা চলে এসেছিস একটু রেষ্ট নে,,,,

— আরে লাগবো না তুই দেতো। আবসার আর কিছু না বলে পেনডিং থাকা ফাইল গুলো দিয়ে দেয়।।

কাজের ফাকে দুই বন্ধু একসাথে লাঞ্চটাও করে নেয়।। তাদের ইচ্ছা দ্রুত কাজ শেষ হলেই আজকে একটু আড্ডা মারা যাবে। কারণ বহুদিন পর তাদের ভার্সিটি লাইফের বন্ধুমহল ঢাকায় এসেছে। ওরা সবাই অবশ‍্য অরিকের বন্ধুমহল বলা চলে কারণ আবসার কারো সাথে খুব একটা কথা বলতো না তবে তার বহুত শাগরেদ আছে।। যারা একসময় ছাত্র নেতা আবসার ভাই বলতে পাগল ছিলো। এর মধ‍্যে কিছু কিছু এখনো আছে।

___________________

রাত দশটা দুই বন্ধুই ডিনার করে ফিরেছে। দুইজনের মাথায় দুই রকমের চিন্তা একজনের মাথা চিন্তা চলছে আরুকে কিভাবে না যাওয়ার জন‍্য আটকায়। আরেকজনের মাথায় চিন্তা চলছে। কিভাবে ওয়াসুর ভর্তি সংক্রান্ত ব‍্যাপারে কথা বলবে। সে কোন মুখে বলবে তার মনে অনুশূচনা চলছে এখনো যে সে কিভাবে তার বউকে অবিশ্বাস করল।। সে এটা এখনো মেনে নিতে পারছে না। আর ওয়াসুকে ভর্তির ব‍্যাপারটা বলতেও পারছে না ঐদিকে আবার ভর্তির শেষ সময় সামনের সপ্তাহে। কি করছে ভেবে পায়না আবসার।। চার তলায় লিফ্ট থামতেই অরিক চলে গেলো। অরিক বেরিয়ে যেতেই আরেকজন ঢুকল সেদিকে তার খেয়াল নেই। অরিককেও অনেকটা ঘোরের মধ‍্যেই বিদায় দিয়েছে।
পাচঁ তলায় নামতে নিতেই কেউ তার হাত পিছনে থেকে ধরল। চমকে যায় আবসার পিছনে তাকিয়ে দেখে ইরফান তার হাত ধরে আছে।। আবসার কিছু বলতে নিলেই তাকে বলতে না দিয়ে বলল
— তোমার সাথে আমার কথা আছে
এই প্রথম ইরফানের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনল আবসার সাথে অবাকও হলো। তাই অবাক স্বরেই বলল — কিন্তু এখানে কিভাবে কথা বলবেন।

— আমরা এখন ছাদে যাচ্ছি
ইরফানের কন্ঠস্বর এমন দৃঢ় ছিলো গোয়ার আবসার ও আজ কিছু বলল না।
নয় তলায় নামে দুইজন। ইরফান এগিয়ে হাতে চাবি খানা দিয়ে তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে তার পিছনে আবসারও প্রবেশ করে।

___________________

— এখানে বসো
আবসার ইরফানের মুখোমুখি বসলে ইরফান আবার বলতে শুরু করল — আমার একটা মেয়ের খুব শখ ছিলো। অরিক হওয়ার পর আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। প্রায় পাচঁ বছর পযর্ন্ত এই চেষ্টা চালিয়ে গেলাম কিন্তু সফল হলাম না পরে হাল ছেড়ে দিলাম।।
“” বলেই দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করল — অরিকের যখন দশ বছর তখন। আকলিমা কন্সিভ করে সেদিন মনে হয় আমি প্রথম বাবা হচ্ছিলাম এমন ফিলিংস হচ্ছিলো। কিন্তু সত মাস পরেই আকলিমার একেকটা সমস্যা দেখা দিলো শরীরে রক্ত কম। পানি কম ইত্যাদি ডাক্তার তো একবার বলেই দিয়েছিল যে বাচ্চাটা মনে হয় বাচবেনা কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়েছিলাম। তখন আল্লাহ্ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকালেও আট মাসের প্রিম‍্যাচুর হয় আমার মেয়েটা। সেটা নিয়ে কত দৌড়াদৌড়ি করেছি এই হাসপাতাল থেকে ঐ হাসপাতালে। মেয়েটাকে নিয়ে রাস্তায় হেটেছি আর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আল্লাহর কাছে নিজের সন্তানের হায়াৎ কামনা করেছি।।
সেদিন আমার মেয়েটাকে বাচাতে পারলেও ডাক্তার বলেছিল ওর মধ‍্যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে তবে সিয়োর না।

একসাথে অনেক গুলো কথা বলে হাপিয়ে উঠল ইরফান। কিছুক্ষণ থেমে দম নিতে থাকল। আবসার থম মেরে বসে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না ইরফানকে দেখে মনে হচ্ছে এই ঘটনা এখনই তার সাথে হয়েছে। তার চোখ জোড়া লাল টকটকে মনে হচ্ছে অশ্রু আটকে রেখেছে। আবসারের ভাবনার মাঝখানে ইরফান আবার বলা শুরু করল,,,
— নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে মেয়েটাকে আগলে রাখলাম। তখন আকলিমা অসুস্থ ওয়াসুর খুব একটা দেখবাল করতে পারতাম না। আমারও একুল ওকুলে কেউ ছিলো না। কি করব দিশেহারা হয়ে চাকরি ছেড়ে দিলাম উঠলাম বাবার রেখে যাওয়া ভিটে মাটিতে বেশ কিছু শতাংশ জমি রেখে গিয়েছিল আমার জন‍্য বাবা মা। সাথে আমিও কিছু কিনেছিলাম সেখানে চাষাবাদ শুরু করলাম। পাশাপাশি মেয়ে ও তার মায়ের খেয়াল রাখতে শুরু করলাম।।
এইযে আমার শান্তশিষ্ট ওয়াসুকে দেখছ না সে ছোট বেলায় মোটেই এরকম ছিলো না প্রচুর দুরন্ত ছিলো এই ডাল থেকে ঐ ডাল পাখির মতো উড়ে বেড়াতো। তবে বেশ লক্ষি ছিলো সবার সব কথা মানত একবার আমাদের গ্রামে একটা মেয়ে ডায়রিয়া হয়ে মারা যায় তখন গ্রামে ডাক্তার না থাকায় মেয়েটা মারা যায়। মেয়েটার নাম ছিলো মিনু। ওয়াসু তাকে মিনুবু ডাকত,,,, ওর মৃত্যু দেখে ওয়াসু বলেছিলো সে ডাক্তার হবে। ছোটকাল থেকেই ওর শুধু ডাক্তারী খেলনার উপর আকর্ষণ ছিলো। মিনুর মৃত্যুর পর সেটা আরো প্রখর হয়। তারপরেও দূরন্তপনা কমাতে পারিনি। তাকে থামায় কে জানো???

ইরফানের প্রশ্নে আবসার তার দিকে তাকায় প্রশ্নাত্বক নজরে। তা দেখে ইরফান হাসে

— সে ছেলেটা তুমি ছিলে!!
আবসারের নজর প্রশ্নাত্বক নজর বদলে আদল জুড়ে ছড়িয়ে পরে অবাকতার রেশ। সে বুঝতে পারে না ছোটবেলা থেকেই ওয়াসিমা তার থেকে দূরে দূরে ছিলো। সে যখন মাষ্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বেড়াতে গেছিলো তখন একঝলক ওয়াসিমাকে দেখে থমকে গিয়েছিল কিন্তু বিশেষ পাত্তা দেয় নি পরে তার তিনমাস পরে যখন গিয়েছিল তখনই ষোড়শী ওয়াসিমাকে দেখে সাতাশ বছর বয়সী আবসার থমকে গিয়েছিল। সাদা ড্রেস দুই কাধে দুই বেনী সব মিলিয়ে আবসার হৃদ স্পন্দন থমকে গিয়েছিল। সেই পিছলে পরেছিল আবসার আর উঠতে পারেনি। ঢাকায় এসেও শান্তি মিলেনি একদন্ড সারাদিন কাজে কর্মে গেলেও রাতটা প্রেয়সীকে দেখার জন‍্য হৃদয় ছটফট করত কিন্তু সে তাকে আটকে রেখেছিল। সময় নিয়েছিল ওয়াসিমার আঠারো হওয়ার তবে সে সেখানেও ব‍্যর্থ হয় সতের বছর বয়সেই জড়িয়ে ফেলে নিজের সাথে।। তার জেদের কাছে হার মেনেই তো আবসারের কাছে বিয়ে দিয়েছিল ইরফান কিন্তু এখন কি বলছে ওয়াসিমার দূরন্ত কন্ট্রোল করার পিছনে সে দায়ী কিন্তু কিভাবে?? বুঝতে পারছে না আবসার।

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৯

আবসার পুরো বাড়ি খুজেঁ ও ওয়াসিমার দেখা পায়না। রাতে ওয়াসিমা কোন ঘরে ঘুমিয়েছে সেটাও জানে না। তাই বেশ কয়েকটা করে উকি ঝুকি মেরেছে তাতেও সন্ধান মিলেনি। মেয়েটা যেনো গায়েব হয়ে গেছে। ওয়াসিমা যেনো তার সাথে চোর পুলিশ খেলছে “”
শেষে না পেরে ফোন দিয়েছে তাও রিসিভ করছে না,,,
— শিট ড‍্যাম,, রাগ করেছিস রাগ ভাঙ্গানোর মতো সুযোগ তো না দিবি না তা করবে কেনো উধাও হয়ে বসে আছে ।

সিড়ির একদিকে দাড়িয়ে আছে আবসার তার পিছনে বেশ বড়সর একটা পিলার আছে। সেখানে দাড়িয়ে ওয়াসিমা আবসারের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। তার বেশ হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসাও যাবে আর ঐ শুকনো মুখ দেখে মায়াও লাগানো যাবে না। নাহলে এই লোকের শিক্ষা হবে না– মানুষের কথা শুনে নিজের বউকে সন্দেহ করা এইবার বুঝো ঠেলা “” বিড়বিড় করে বলে আবসারের অলক্ষ‍্যে অন্ধকার দিয়ে চলে যায় তাদের ঘরে। যেখানে ভেনিসা ওয়াসিমা ও তার কয়েকজন বান্ধবীকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। সবাই এতোক্ষণ বসে গল্প করছিল। কিন্তু ওয়াসিমার রাতে পানি খাওয়ার অভ‍্যাস। তাই পানি আনতে গিয়েছিল সেখানে আবসারের অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে তার।

— কি হয়েছে ভাবী মিটমিট করে হাসছ কেনো???

— কিছুনা আপু এমনি,, হাসি থামিয়ে বলল ওয়াসিমা।

— ওহ তো আমি ঘুমাই কাল অনেক কাজ বলেই একবার ফোনের দিকে অভিমানি চোখে তাকাল। যেনো কোনো কিছু ইগনোর করার চেষ্টা।

____________________

আবসার যখন ঘরে ঢুকল তখন বেডের একসাইটে আয়মান বসে আছে। ফুল এসির নিচে বসেও কলকল ঘামছে সে।
আবসার তার পা থেকে মাথা পযর্ন্ত তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখে পরনে ফুল স্লিভ গোল গলার টিশার্ট ট্রাউজার। তার পোশাক আশাক দেখে মনে শীতকাল এসে পরেছে।

— আয়মান তুমি কি আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছো

আবসারের কথা শুনে কেপে ওঠে আয়মান। কোনো রকম পিছনে ফিরে তাকায়। অন‍্য মনস্ক হয়ে কিছু ভাবছিল আয়মান। আবসারের সাথে কিভাবে কথা শুরু করবে। কি বলবে আবসার তার সাথে কথা বলবে কিনা এই বিভিন্ন হাবিজাবি।

— নননা লজ্জা পাবো কেনো?? হাত দিয়ে ঘাড়ের ঘাম মুছতে মুছতে বলল।

— ওও তা এই গরমেও এরকম টিশার্ট পরে বসে আছো কেনো। “” পরোক্ষণে কিছু ভেবে আবার বলল — ও মাই গড আয়মান তুমি কি গে?? দাদীর চাপে পরে বিয়েটা করছ। যদি করে থাকো তাহলে বলব ভুল করছ,, বলেই আয়মানে অলক্ষ‍্যে মুচকি হাসল।

— না না ভাইয়া তুমি আমাকে ভুল ভাবছ। আর দাদুম কোনো চাপ দেয় নি বিয়ের জন‍্য আমি ভেনিসাকে ভালোবেসেই বিয়ে করছি,, একটানা বলে থামল আয়মান।

— ওহ বাচালে ভাই আমি ভাবলাম কি?? মাঝপথে থেমে গেলো
আয়মান আবসারের কথা থেমে যাওয়া দেখে তার দিকে মুখ তুলে তাকায়। তাকিয়ে দেখে আবসার ঠোট চেপে হাসছে,,,

— তুমি আমার খিল্লি উড়াচ্ছো ভাইয়া
মেয়েদের মতো অভিমান স্বরে বলল আয়মান

— তো কি করব ঘরে এসে দেখি তুমি মেয়েদের মতো লজ্জা পাচ্ছো। যেনো তুমি নতুন বউ বলেই শব্দ করে হেসে দেয়।

আবসারের হাসি শুনে আয়মান গাল ফুলিয়ে পরে নিজেও হেসে দেয়। হাসি থামিয়ে আয়মান বলল

— আসলে আমি কিভাবে তোমার সাথে কথা শুরু করব সেই চিন্তায় ছিলাম সেই কারণে একটু নার্ভাসে কি পোশাক পরেছি সেই দিকে খেয়াল করিনি।

— নো নো ইটস ওকে বলেই আয়মানে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে বারান্দার দিকে পা বারায়।

— কি হয়েছে ভাইয়া আমার সাথে ঘুমাবে না একই বেডে??

— আমি তো গে না আয়মান। আমার বউ আছে কয়দিন পরে আল্লাহ্ দিলে একটা বাচ্চার বাবাও হবো। আমি ঐরকম না তুমি বিশ্বাস করো।

— ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু আমি সেরকম না। আমারও বিয়ে হচ্ছে ইনশাআল্লাহ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তুমিও বড় বাবা হয়ে যাবা বুঝছ।

— হু বুঝেছি তাইতো নিজের হবু বউ ছেড়ে আমার ঘরে পরে আছো। মুখ বেকিয়ে বলল আবসার।

এতক্ষণে আয়মান বুঝল আসল কাহিনী কোথায়।
— ওও তাহলে বউয়ের সাথে থাকতে না পারায় আমার ভাইয়ের রাগ হয়েছে???

— বুঝেছ যেহেতু এখন একটু আমার বউয়ের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দাও। বেচারা আমি বউটার বিরহে শুকিয়ে যাচ্ছি ” করুন চেহারা করে বলল

— কি করতে হবে ভ্রু উচু করে বলল আয়মান

— কিছু না একদম সহজ ভেনিসাকে ফোন দাও,, আবসারের কথা শুনে আয়মান ভেনিসাকে কল দেয় কিন্তু অপর পাশ থেকে কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়না।

— কি হয়েছে??,

— নো রেসপন্স

— শিট বলেই হাতটা ঘুসি মারার মতো ঝাড়া দিলো।

দরজার অপর প্রান্ত থেকে দুই ভাইয়ে খুনসুটি সবটাই লক্ষ্য করেছে দিলরুবা সাখাওয়াত। সে চায় এই দুই ভাই যেনো মিলে মিশে থাকে। যেনো আপন না হয়েও পরম আপন।

_________________

ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে ভেনিসা আয়মানের ফোন কেটেছে একটু আগে পরপর পাচঁটা মিসড কল স্ক্রিনে ভেসে উঠছে।
সে উঠায়নি। সে ভেবেছে এবার ফোন দিলে উঠাবে। কিন্তু আয়মান তাকে নিরাশ করে আর ফোন দেয়না। একটু আগে অভিমান কমে এলেও সেটা আবার গাঢ় হয়
— বা**লের বয়ফ্রেন্ড তুমি। কোথায় গার্লফ্রেন্ড ফোন ধরছে না দেখে সারারাত অনবরত ফোন দিতেই থাকবে। তা না করে পাচঁ বার কল দিয়ে খাল্লাস। কোন কুলক্ষণে যে এই ছেলের প্রেমে আমি পরেছিলাম বিড়বিড় করে নিজেকে আরো কয়েকটা গালি দিলো।
সকাল হলে এই ছেলেকে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে মনে মনে পণ করে ঘুমিয়ে গেলো।

_____________________

বারান্দায় হতবম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে আরু। বারান্দা ও ঘরের সাথে লাগোয়া দরজাটা বন্ধ অরিক তাকে ঘরে থেকে বের করে দিয়েছে। তার ভুল ছিলো অরিকের ফোন না ধরা।
ঠোট উল্টে কাদোকাদো মুখে দাড়িয়ে থাকে আরু সে জানে অরিক পাচঁ পরেই তাকে ঘরে নিয়ে যাবে। অরিক তাকে মাঝে মধ‍্যে এমন উদ্ভট শাস্তি দেয়। সেদিন তো অরিক ডাকলে আরু দশ মিনিট পরে আসলে তাকে আরো দশ মিনিট মুরগি বানিয়ে রেখেছিল,, ছি ছি ছি,, কি লজ্জা কি লজ্জা।
কান্নাকাটি করেও শাস্তি থেকে মওকুফ মিলেনি সেদিন পরে আবার নিজেই যত্ন করে আদর দিয়ে মান ভঞ্জন করেছিল।

গেট খোলার শব্দে বাস্তবে ফিরে আরু। অরিক তাকে কিছু না বলেই কোলে তুলে নেয়।
আরুকে বিছানায় শুইয়ে দেয় ধীরে খুব ধীরে। আরুর উপর নিজের ভর ছেড়ে ঠোট ডোবাতে নিলে আরু মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

— এখন আসছে সোহাগ করতে
আরুর অভিমান টের পায় অরিক — তো কি করব ভুল করেছ শাস্তি দিয়েছি,, আরুর নাকে আলতো কামড় দিয়ে বলল — শাস্তি আমার কল না ধরার

— এই জন‍্যই কলেজ টিচারকে বিয়ে করতে নেই তারা কথায় কথায় বউকে শাস্তি দেয়।।

আরুর কথা শুনে হাসে অরিক — এই টিচারকে বিয়ে করার জন‍্যই নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়েছিলেন মহাশয়া।

— নিজে যে ধোকা দিয়ে বিয়ে করেছেন তার বেলা,,,

— কেউ তোকে ধোকা দেয়নি নিজে যদি ব/ল/দ হোস তাহলে কি আর করা।
বিয়ের সময় যখন কাজী আমার নাম আমার বাবার নাম সহ সব বলেছিল তখন ধ‍্যান কই ছিলো ব/ল/দী।

— এই একটা কথার খোটা আর কত দিবেন

— আজীবন বলেই আরুর ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দেয়। আরুও ভেসে যায় স্বামীর ভালোবাসায়। সাড়া দেয় অরিকের মাতাল করা স্পর্শে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪০

সকাল সকাল কাজে লেগে গেছে সবাই। বিয়ে বাড়িতে হাজার কাজ রয়েছে। তাও বাচা গেছে শুধু হলুদের অনুষ্ঠানটি বাসার ছোট্ট পরিসরে করা হবে কাছের আত্মীয়দের নিয়ে।
সেজন্য লনে স্টেজ সাজানো হচ্ছে। বাড়ির মেয়েরাও সকাল সকাল কাজে লেগে পরেছে।

পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে। চারিদিকে হইচই সবাই হলুদের প্রিপারেশন নিচ্ছে। হলুদের ড্রেস কোড ঠিক করা হয়েছে,, ছেলেদের ল‍্যাভেন্ডার কালারের পাঞ্জাবী আর মেয়েদের সাদা আর ল‍্যাভেন্ডার সংমিশ্রণের শাড়ী।

কিন্তু এর মধ‍্যে আয়মান, আবসেরের অবস্থা খারাপ দুই ভাইয়েরই প্রেরসীরা তাদের পাত্তাই দিচ্ছেনা। ভেনিসা আয়মানকে ইগনোর করলেও। ওয়াসিমার তো দর্শন পাওয়াও মুশকিল বলা চলে। আবসার রাগে দাতে দাত চেপে বসে আছে এতোগুলো মানুষের মধ‍্যে কিছু বলতেও পারছে না কিন্তু যখন তখন ফেটে যেতে পারে সেটার কোনো গ‍্যারান্টি নেই।
এর মধ‍্যে অরিক আছে আরামে। তার জন‍্য বর্তমানে শশুর বাড়ি মধুর হাড়ি। শত ব‍্যস্ততার মাঝেও আলিয়া তানিয়া ও দিলরুবা সাখাওয়াতের হাত থেকে নিস্তার পাইনি। তাকে জামাই আদর নামক অত‍্যাচার করিয়ে ছেড়েছে।

— আল্লাহ্ এই বাড়িতে আমি আর আসব না খাইতে খাইতে জীবনডাই বেদনাময় হইয়া গেলো হল রুমের সোফায় বসতে বসতে বলল

অরিকের সুখ সহ‍্য হলোনা আবসারের সে ঝাঝিয়ে উঠল তাই ঝাঝালো স্বরেই বলল,,,,
— একটু চুপ থাকতে পারিস না

— আমি কি করলাম ইয়ার???

— তুই কি করবি করেছে তো তোর প্রানের বোন

— সেটা তোরাই বোঝ মুখ বেকিয়ে বলে নিজের ঘরে চলে গেলো অরিক বতর্মানে এখানে থাকা মানে আবসারের রোসানলে পড়া। যা অরিক চায়না। কারণ কথায় কথা বাড়ে,,,

_________________

সারা সকাল হইচই করা বাড়িটা এখন কেমন নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে। আলিয়া সাখাওয়াত মাথা নিচু করে অনবরত কেদে যাচ্ছে। এজাজ সাখাওয়াত সোফায় বসে আছে নিস্তব্ধ চেহারায়।

আয়মান হাটু ভেঙ্গে বসে আছে তাকে জড়িয়ে ভেনিসা কত কথাই না বলছে তার একটাও আয়মানের কানে যাচ্ছে না।

ছেলের অবস্থা দেখে আলিয়া সাখাওয়াতের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আয়মান দৌড়ে আসল আলিয়া সাখাওয়াতের কাছে তার সামনে দাড়িয়ে বলল

— মম মম ও মম উনি কি বলছে হ‍্যা বলতো,,, আআমি নাকি নাযায়েজ সন্তান। আমি নাকি তোমার পাপের ফসল এগুলো কি বলছে মম। তুমি কিছু বলছো না কেনো মম “” চিৎকার করে ওঠে বলল

আয়মানের কাতরতা শুনে সবার চোখে পানি আসলেও পৈশাচিক হাসছে আলিয়া সাখাওয়াতের বড় বোন আর তার মেয়ে লিমা।

— কিছু তো বলো মম। বলো আমি আমার ড‍্যাডের সন্তান বলোনা,,, কারত স্বরে বলেই হাটু গেরে বসে পড়ল। তা দেখে শব্দ করে কেদে দিলো আলিয়া সাখাওয়াত। ছেলের দিকে তাকিয়ে কথা বলার মতো সৎ সাহস তার নেই কি বলবে তিনি,, যে তুই আমার জীবনের একটা রাতের করা ভুলের মাশুল। উহু তার জীবনের ছিল ছিলনা সেদিন তো তাদের বিয়েও হয়েছিল তাহলে ভুল হলো কিভাবে চোখের পানি মুছে বড় বোনের সামনে দাড়ায় আলিয়া সাখাওয়াত

— এখানে দাড়িয়ে আমার চরিত্রে আঙ্গুল তুললে সত‍্য মিথ্যা কত কথাইতো বললে। এই যে এতো গুলো কথা বললে আপা। তার একটাও কি সত‍্যি আপা???

আলিয়া সাখাওয়াতের প্রতিবাদি কন্ঠে ভরকে যায় তার বড় বোন আম্বিয়া

— ততুই কি বলতে চাস আলিয়া??

— কেনো আপা আয়মানের বাবার সাথে আমার যখন লুকিয়ে বিয়ে হয় সেখানে সাক্ষী হিসেবে তুমিই তো ছিলে

— তোমার এর আগে আরেকটি বিয়েও হয়েছিল?? দিলরুবা সাখাওয়াতের কথায় তার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে আবার আম্বিয়ার দিকে তাকায়

— আমার বিয়ের একসপ্তাহের মাথায় যে উনি রোড এক্সিডেন্ট করে মারা যায় সেটাও তো তুমি জানতে তাই না আপা।

আলিয়ার কথা শুনে আম্বিয়া কিছু বলতে পারল না চুপ করে রইল।
— তুমি আমার বড় আপা। আমাদের মায়ের পর তোমাকেই সেই সম্মানটা আমরা দুই ভাই বোন দিতাম। নিজের সার্থ হাসিলের জন‍্য এতো বড় একটা মিথ্যা বললে।
তাচ্ছিল্যের সাথে বলে পিছন ফিরে এজাজের সামনে দাড়ায়
— আমার অনার্স পড়া কালীন নাজমুলের সাথে পরিচয় সেখান থেকেই প্রেম ভালোবাসা তারপর দুইজনই পরিবার থেকে লুকিয়ে বিয়ে করি। কারণ তার পরিবার আমাকে মানতে রাজী নয়। সেই বিয়ের সাক্ষী হিসেবে শুধু আপাই জানত আমাদের বিয়ের কথা। বিয়ের একমাসের মাথায় নাজমুলের রোড অ‍্যাক্সিডেন্ট হয় তখন আমি মাত্র সাত দিনের অন্তর্সত্তা। তখন বিগবেদিকে হারিয়ে সন্তান রক্ষার জন‍্য তোমার হাত ধরি। কারণ সমাজ আমাদের বিয়ের কথা জানত না। আর না আমার কাছে কোনো প্রমান ছিলো এই বাচ্চার পিতৃ পরিচয়ের। তাই,,,

— আমাকে ব‍্যবহার করলে,,, আলিয়াকে বলতে না দিয়ে বলল।
এজাজের কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো আলিয়া সাখাওয়াত। এজাজ আর কিছু না বলে আয়মানের সামনে দাড়ায়। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল — তুমি আমার ছেলে এর জন‍্য কোনো রক্তের বন্ধন লাগবে না আর নাই বা কোনো পরিচয়। তুমি সাখাওয়াত বাড়ির ছোট ছেলে এই কথাটা যেনো সবাই নিজের মাইন্ডে গেথে নেয়… শেষের কথাটা আম্বিয়া ও লিমার উদ্দেশ্যে বলল।

— ড‍্যাডহ বলেই এজাজকে জড়িয়ে ধরল আয়মান।
— রাশেদ ও ইলা তোমাদের কি কোনো আপত্তি আছে এই বিয়েতে??

— আমরা সব কিছু জেনেই এগিয়েছি ভাইজান
রাশেদের কথা শুনে সবাই অবাক হয়। আবার রাশেদ বলল — খালাম্মা আমাদের সব কিছুই জানিয়েছে শুরু থেকেই

— আম্মা আপনি সব জানতেন অবাক হয়ে বলল আলিয়া

— হ‍্যা জানতাম প্রথমে মানতে না চাইলেও পরে মেনে নিয়েছি। এবং এই কথাটি আমাকে তোমার বোনই জানায়। আমার বিশেষ পাত্তা না পেয়ে সে তোমার কাছে তোমাকে ব্ল‍্যাকমেইল করতে থাকে অথচ এজাজ বাদে এই পরিবারের প্রত‍্যেকেটা সদস্য জানত এই বিষয়ে।

— আবসার,,,

— হ‍্যা
আলিয়া তাকায় আবসারের দিকে। এই ছেলেটা সব জেনেও চুপ ছিলো।

আলিয়া সাখাওয়াতের চোখের দৃষ্টি বুঝে আবসার। কিন্তু কথা অন‍্যদিকে ঘুরানোর জন‍্য বলে
— যাই হোক অনেক ফ‍্যামিলি ড্রামা হলো এখন অনুষ্ঠানটা শেষ করি। একটা ভালো কাজ কর্ম চলছিল তা শেষ করি,,,

আবসার কথায় তাল মেলায় আবার শুরু হয় হলুদের অনুষ্ঠান।

— দাড়াও
দিলরুবা সাখাওয়াতের কথায় সবার আনন্দে আবার ভাটা পরে। তার দিকে প্রশ্নাত্তক দৃষ্টিতে তাকায়
— আগে এই কুচক্রী দুটোকে বিদেয় করার ব‍্যবস্থা করা হোক আগে

দিলরুবা সাখাওয়াতের কথায় সবাই তাল মিলিয়ে বলল — হ‍্যা হ‍‍্যা
মাঝখানে আরু চঞ্চল পায়ে হেটে এসে বলল
— এদের পুলিশে দেই কি বলো দাদী

পুলিশের কথা শুনে দুই মা মেয়ে ভয় পেয়ে যায়। মানে মানে সেখান থেকে কেটে পরে। আরু আবার পিছন ফিরে তাদের কিছু বলতে যাবে। তাকিয়ে দেখে তার নেই। ফিক করে হেসে দেয় তার সাথে সবাই হেসে দেয়। এতোক্ষণ যে এখানে দুঃখের ঝড় বয়ে গেলো তার রেশ কারো মনেই রইল না। শুধু অভিমান আছে আবসারের মনে বাবার ভালোবাসা না পাওয়ার।
আর এজাজের মনে ক্লেশ নিজের ছেলেকে কষ্ট দেওয়ার জন‍্য বাবা হিসেবে সে ব‍্যর্থ । আর আলিয়ার মনে অনুশুচনা আবসারকে নিজের পরিবারের থেকে দূরে সরানোর জন‍্য।

তবে সকলের অগোচরে দিলরুবা সাখাওয়াত হাসে। সে চেয়েছিল আয়মানকে আলিয়া সাখাওয়াতের থেকে দূরে রাখার। কিন্তু তার ভরা পরিবার আনন্দ হাসি দেখে সেটা পরিবর্তন করে ফেলে তাই আলিয়ার বড় বোনকে নিষেধ করে কোনো ভেজাল না করতে কিন্তু দিলরুবা সাখাওয়াতের কথা না শুনে আম্বিয়া হিংসাত্মক হয়ে সবার সামনে আংশিক সত্য ও বাকিটা মিথ্যা বলে চালায়। সে জানত না এখানে উপস্থিত কয়েকজন বাদে বাকিরা সবকিছুই জানত। তাহলে হয়তো এদিকে পা বাড়াতো না।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪১

আজকে আয়মানের বিয়ে। সকাল থেকেই নানা কাজের জন‍্য প্রায় সকলেই ব‍্যস্ত বিয়েটা যতই কমিউনিটি সেন্টারে হোক আরো নানান কাজ থাকে। তাদের হলুদ তেল ইত্যাদি দিয়ে গোসলের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে। বিশাল লনের একদিকে ভেনিসার গোসলের ব‍্যবস্থা হয়েছে। আবার বাড়ির ছাদের দিকে আয়মানের গোসলের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে।

— আন্টি হলুদ, তেল, দুধ, নিয়েছি আর কি কি নিবো??

— আমাকে কি শাশুড়ি হিসেবে মানা যায় না আম্মু। মানলাম সৎ শাশুড়ি কিন্তু শাশুড়ি তো।। সেই হিসেবেই মা না ডাকো তানিয়ার মতো মামনি ডেকো।।

আলিয়া সাখাওয়াতের কথায় তার দিকে তাকায় ওয়াসিমা। তার নিস্তেজ চেহারা দেখে মায়া লাগল ওয়াসিমা সে দ্রুত নিজের সমর্থনে বলল — না না মামনি সেরকম কিছু না,,,

— তাহলে আম্মু মামনিই ডেকো
আলিয়া সাখাওয়াতের কথায় ওয়াসিমা মাথা নাড়ায়। কাল রাত থেকে আলিয়া সাখাওয়াত একটু সময়ের জন‍্য দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। তার কেমন জানি লাগছিল। অস্থির লাগছিল তার পূর্বের কর্ম চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। তাই সারারাত ছটফট করেছে। এজাজ পাশে থাকলেও তার দিকে ফিরেও তাকায়নি। সেটা দেখে ফিকরে কেদেঁ ওঠে আলিয়া। দীর্ঘ পচিঁশ বছরের সংসারে এই প্রথম এতো অবহেলা পলো আলিয়া।

— আলিয়া একটা কলসিতে ভরে পানি নিয়ে নিও ইসমাত আরার কথায় ঘোর ভাঙ্গে আলিয়ার।

— জ্বি খালাম্মা
বলেই কলসিতে পানি ভরে। সকল মহিলারা মিলে ছাদে ওঠে আয়মানকে গোসল দেওয়ার জন‍্য।

______________________

সকাল বেলা আবসার বাসায় ছিলো না সে আর এহাসান কমিউনিটি সেন্টারে গিয়েছিল। কাজ কতদুর এগিয়েছে সেটা দেখার জন‍‍্য ইরফান আর অরিক অন‍্য একটা কাজে বাইরে গিয়েছিল। এজাজ ঘর থেকেই এখনো বের হয়নি তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে সে এই বাড়ির মেহমান।

বাইরে থেকে আসতেই তাদের নাস্তা বেরে দিলো তানিয়া সাখাওয়াত। খেতে খেতে চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে ওয়াসিমাকে খুজেঁ আবসার।

— আয়মানকে নিয়ে সবাই ছাদে গিয়েছে
তানিয়া সাখাওয়াতের কথায় সেদিকে তাকায় আবসার।
— তোমরা নাস্তা বাকিটা নিজেরা নিয়ে নাও আমি ছাদে যাই। তানিয়ার কথা শুনে এহসান সাখাওয়াত মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা সম্মোধন দিতেই তানিয়া চলে যায়।

আবসার যখন ছাদে যায় তখন আয়মানের গোসল শেষ। আবসার উকি ঝুকি মেরে ওয়াসিমাকে খুজতে থাকে। পেয়েও যায়। আজকে ওয়াসিমা একটা শাড়ি পরেছে। সী গ্রিন কালারের একটা শাড়ি। মাথায় ঘোমটা দেওয়া। প্রথমে না চিনতে পারলেও পরে ওয়াসিমা পিছনে ঘুরে দুধের বাটি হাতে নেয় তখন দেখতে পায়। রোদের আলোতে নাকের ঘামটা চিকচিক করেছে ঢোক গিলল আবসার। আজকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে তার বউকে
— এই মেয়েটা আমার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে নেশা জাগানো সাজ সাজে।।
বিড়বিড় করে বলে ঘরে যায়। এখন অপেক্ষা ওয়াসিমা কখন রেডী হতে ঘরে আসে।

গোসল টোসল শেষে ভেনিসা চলে গেছে পার্লারে তার সাথে গিয়েছে আরু। ভেনিসা অনেকবার ওয়াসিমাকে বললেও সে যায় না। তাই ভেনিসা আরু ও ভেনিসার দুই বান্ধবী চলে যায় পার্লারে।
যাওয়ার আগে তাদের পইপই করে বলে দিয়েছে দ্রুত ফিরতে এমনিতেই সকাল দশটা বেজে গেছে। বাদ জুমা বিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

____________________

দুপুর দুইটা বাজে বরযাত্রী সহ আয়মান আসে কমিউনিটি সেন্টারে। ভেনিসার পক্ষ থেকে তার বান্ধবীরা ও আরু গেট ধরেছে
— এই আরু তুই না আমার বোন গেট ধরেছিস কেনো??

— ওরা বেচারী ভিনদেশের ওরা কিছুই পারেনা তাই গেট আমি ধরেছি।।

— তো তুই তো বর পক্ষ এদিকে আয়,,, বিরক্তি স্বরে বলল আবসার।।

— না ভাইয়া আজকে আমি মেয়ে পক্ষ। অ‍্যাই ওয়াসু আজকে আমাকে একবারও ছেলে পক্ষের সাথে দেখেছিস

— নাহ একবারও না

— এখন কোনো কথা নাই চুপচাপ আমাদের ডিমান্ড পূরণ করো। আরুর সাথে ভেনিসার বান্ধবীরাও তাল মেলায়।

— তো কত টাকা চাই আপনার বিয়াইন সাহেবা??

— এইতো পঞ্চাশ হা… সামনে অরিককে দেখে থেমে যায়। এই কাজটা আবসারই করেছে। অরিক সেন্টারে আগে থেকেই পৌঁছে যায় তখন আরুরা গেট ধরেনাই। তাই আবসার এখন অরিককে ফোন করে আনে

— কত চাই বিয়াইন সাহেবা পঞ্চাশ টাকা ওকে। আয়মান ওদেরকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে দাও।

— না না মানব না। আমরা কষ্ট করে এতো আয়োজন করলাম তার বেলা।
অরিক আবসার টেবিলের দিকে তাকায়। সেখানে শরবত মিষ্টি রয়েছে।

— একগ্লাস শরবতের দাম দশ টাকা আর একটা মিষ্টির দাম বিশ টাকা। মোট ত্রিশ টাকা সেখানে আমরা উদার মনের মানুষ তোদের আরো বিশ টাকা বাড়িয়ে দিলাম তাই না।

অরিকের কথা শুনে সবাই মিটমিট করে হাসছে। এখানে শুধু বাড়ির ছোটরাই আছে।

— আরু তাড়াতাড়ি ওদের ছার কাজী সাহেব তাড়া দিচ্ছে। এহসান পিছন থেকে বলল

— আমাদের ডিমান্ড তোমার জামাইকে পূরণ করতে বলো
এহসান এমন ভাবে চলে গেলো যেনো আরু কি বলছে যেনো কানেই শুনেনি।

— এই নেও তোমার পঞ্চাশ টাকা একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলে টেবিলে রাখা কেচিটা নিয়ে নিজেরাই ফিতে কেটে শরবত মিষ্টি নিয়ে খেয়ে নেয়। আরুর এই অন‍্যায় সহ‍্য হয় না তাই কিছু বলতে নিলেই অরিক শাষায়,, আরুর কানে কানে বলে — তোমার মুরগী হওয়ার ভিডিওটি এখনো আমার কাছে আছে। লাগবে নাকি??? বাকা হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে চলে যায়। আরু মুখটা ফাটা বেলুনের মতো করে রাখে।

— থাক মন খারাপ করো না আপু

— তোমার ভাই একটা খাটাশ ভাবী। আরু জোরে বলতে নিয়েও আস্তে বলে পাছে যদি অরিক শুনে ফেলে। তাহলে আজ রাতে তার মুরগী হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না।

বিরষ মুখে আরু খামটা নাড়তেই দেখে বেশ ভারী খামটা। সেখা খুলে দেখে এক হাজারের কত গুলো নোট গুনে দেখে সেখানে মোট পঞ্চাশ হাজার টাকাই আছে ফিক করে হেসে দেয় আরু।
মনে মনে ভাবে তাকে বোকা বানানোর মজা আজকে অরিককে বুঝাবে

______________________

তিন কবুলের মাধ্যমে আয়মান ও ভেনিসার বিয়ে শেষ হয়। সবাই মুনাজাতে নব দম্পতির জন‍্য দোয়া করতে ব‍্যস্ত। দোয়া শেষে সুন্নত হিসেবে খেজুর দেওয়া হয়। তারপর দুপুরের খাওয়া শুরু হয়।
বিদায় পালা শেষ করে ভেনিসার বাবা মা তার এক আত্মীয়র বাড়িতে চলে যায় তাদের সাথে।
সব মিলিয়ে আসতে আসতে সন্ধ‍্যা সাতটা বেজে যায়। আলিয়া নব বধূকে বরণ করে তুলে।

রাত দশটায় তাকে বাসর ঘরে দেওয়া হয় আরু বাদে কারো বাসর আটকানোর আগ্রহ না থাকায় সে কিছু করতে পারে না। ওয়াসিমাকে টানলে সেও বলে সারাদিন কাজ করে সে ক্লান্ত তার পায়ের গোড়ালি জোরা ব‍্যাথা করছে এখন যেতে পারবে না বলেই ঘুমিয়ে যায়।

রাত এগারোটায় আবসার ঘরে ঢোকে বিরষ মুখে। তার ঘরেই আসতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তাই না এসেও উপায় নেই। কিন্তু এসে বেডের দিকে নজর যেতেই চমকে যায় আবসার। ওয়াসিমা এলোমেলো অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে বিছানার মাঝখানে।
সস্থির নিঃশাষ ছাড়ে আবসার যাক আজকে অন্তত বউকে বুকে নিয়ে ঘুমাতে পারবে। কালকে বাসায় গিয়ে নাহয় আদরে আদরে বউয়ের অভিমান ভাঙ্গানো যাবে।

________________________

রাত এগারোটায় বাসর ঘরে ঢুকে আয়মান। ভেনিসা দিলরুবা সাখাওয়াতের শিখানো অনুযায়ী আয়মানকে সালাম দেয়। আয়মানও সালামের উত্তর নেয়

— ভেন্যু তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
আয়মানের গম্ভীর স্বরে ভরকে যায় ভেনিসা। কি এমন কথা বলবে যা এমন গম্ভীর স্বরে বলতে হবে????

#চলবে

বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৬

— ও আপনার বাচ্চাকে মারেনি আন্টি!!

— তো কি আমার বাচ্চা মিথ‍্যে বলছে??

— অ‍্যাই বাচ্চা তোমাকে কি ওয়াসু মেরেছে?? রুমার উদ্দেশ্যে বলল আবসার

আবসারের কথা শুনে বাবার বুক থেকে মাথা উঠায় রুমা।

— হ‍্যা ওর কারনেই তো আমি ব‍্যাথা পেয়েছি।

— দেখেছো এবার ঝাঝালো স্বরে বলল কোকিলা মোদি
তার কথার উত্তর না দিয়ে রুমার দিকে তাকিয়ে বলল — তোমাকে ও হাত দিয়ে মেরেছে?? বলেই সবার অগোচরে মুচকি হাসল। এবার বাকী কাজটা ঐ ন‍্যাকা রানী করবে আবসার জানে।

— আরে না। হোয়েছে কি মাম্মা ওতো হাত দিয়ে মারেনি আমাকে!!

— তো অবাক স্বরে বলল কোকিলা মদি।

— দেখো আমি তোমাকে দেখাই বলে আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল — আবসার বেবী তুমি একটু ওকে তোমার পিছনে রাখো তো।
রুমার কথা মতো আবসার ওয়াসিমাকে নিজের পিছনে রেখে তার সামনে দাড়ায়।

— রাতে অনেক জোড়ে বেল বাজতে ছিলো। আমি ঘুমে গেট খুলি আবসারকে দেখেই অনেক খুশী হই তাকে জড়িয়ে ধরতে যেতেই আবসার বেবী এই মেয়েটাকে আমাদের মাঝখানে রাখে এই মেয়েটার থুতনিতে আমার কপালে লাগে আমি,,, আহহ,, ব‍্যাথা পাই কপালে হাত দিয়ে বলল।

রুমা এইটু আগের কাহিনীটা হুবহু ব‍্যাখ‍্যা করল। রুমার কান্ড দেখে কোকিলা মদির মাথায় হাত সে ভেবেছিল কি আর হয়েছে কি??
আর ওয়াসিমা থুতনিতে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে মাথা ঘুরিয়ে আবসারের দিকে তাকায়। আবসার মিটমিট করে হাসছে। তার হাসিতে বিরক্ত লাগে ওয়াসিমার।
নিজের মেয়ের বোকামি লুকানোর জন‍্য ব‍্যাপারটা ঘুরায় কোকিলা মদি,,,

— তো আবসার এখানে কি জন‍্য এসেছিলে???গম্ভীর স্বরে বলল কোকিলা মদি
কোকিলা মদির কথা শুনে মিটমিট করে হাসতে থাকা আবসারের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।

— ও হ‍্যা!! আন্টি সেদিন আপনি কি বলেছিলেন?? আমার বউ ডাক্তারী পড়ছে। অল্প বয়সী মেয়ে ভবিষ্যতে আমাকে ছেড়ে অন‍্য দিকে মন চলে যাবে ব্লা ব্লা,,,

— তো একটা কথাও মিথ‍্যা বলিনি আমি!!

— সেটা আমিও জানি তাই কিছু প্রুভ করতে এসেছি।।

— কি??

— একটু আগে তুমি যেই কথাটা বলেছ সেটা আবার একটু রিপিট করতো বউ পাখি,, ওয়াসিমার উদ্দেশ্যে বলল। আবসারের কথা শুনে অবাক ওয়াসিমা এখন এই বাহিরের লোক গুলোকেও প্রমান করতে হবে তার সম্পর্কের ভিত।

— তুমি কি আমার জন‍্য নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিতে পারবে??

— অবশ্যই কেনো পারব না। যে আমাকে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। যে প্রথমে আমার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করলেও পরবর্তীতে কিছু কুচক্রী মানুষের কথা শুনে যার বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে গেছে। তার জন‍্য এইটুকু করতে পারব না,,, হাসতে হাসতে বলল ওয়াসিমা। এই হাসিতে কি ছিলো বুঝতে পারল না আবসার তাচ্ছিল্য নাকি অপমান। তবে আবসার না বুঝতে পারলেও কোকিলা মদির কাছে কথা গুলো অপমানই লাগলো।

— আপনার আমার কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে সেগুলো আমাকে বলতেন আমি আপনার সন্দেহ দূর করতাম। নাকি আমি সত্যি কথা বলতাম সেই বিশ্বাস টুকুও নাই। যাই হোক ধন‍্যবাদ আন্টি একটা সুন্দর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন‍্য শেষের কথা গুলো কোকিলার দিকে তাকিয়ে বলল।

ওয়াসিমা আর কিছু না বলে নিজের বাহু থেকে আবসারের হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।

— আমার ফ‍্যামিলি গসিপ থেকে দূরে থাকবেন আন্টি আর কোনো দিন যদি এই বিল্ডিংয়ে কারো কাছে আমার কোনো ফ‍্যামিলি ম‍্যাটার নিয়ে গসিপ করতে দেখি তাহলে খবর করে ছাড়ব আপনার। আপনি আমাকে চিনেন না এই বাড়ি ছাড়া করতে আপনাকে আমার দুই মিনিট লাগবেনা। এন্ড আই মিন ইট। বলেই চলে গেলো।

________________

প্রতিবেশী আত্মীয়ের পরে আমার আমাদের চারপাশে আরো কিছু লোক হলো প্রতিবেশী। এরা আমাদের ভালো কাজে যেমন হিংসা করে খারাপ কাজে তেমন বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পরে তাদের কারণেই। বেশ রসিয়ে রসিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করে।
প্রতিবেশীদের কষ্টের ব‍্যাপারে -“” হযরত আবু হুরায়রা (র.) থেকে বর্ণিত -” রাসূল (স.) বলেছেন — যে ব‍্যক্তি আল্লাহ্ ও কিয়ামতে বিশ্বাস রাখে,, সে যেনো তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। “” অন‍্য হাদীসে বলেছেন,,, ঐ ব‍্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।

________________

এই কথা গুলো আমরা অনেকেই জানি কিন্তু মানি কজন কেউ না কারো ফ‍্যামিলি ম‍্যাটারে গীবত করাই যেনো প্রতিবেশীদের অন‍্যতম কাজ।
তার মধ‍্যে কিছু প্রতিবেশী এমন ও আছে যারা অন‍্যের ভালো দেখতে পারে না,, তার অন‍্যতম উদাহরণ হচ্ছে : রুমার মা কোকিলা উরফ ডুবলিকেট বাড়িওয়ালি।

সে আবসারকে নিজের মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ করে। ন‍্যাকা রানী রুমাও তাকে বেশ পছন্দ করে। শ‍্যাম বর্ণা পুরুষ চওড়া কাধ পেটানো শরীর যেকোনো মেয়ের জন‍্য আর্কষনীয় হতে পারে। আবসারের বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ না জানলেও এটুকু জানে আবসার বেশ বড় বাড়ির ছেলে। বাবা মায়ের সাথে রাগ করে এখানে থাকে আবার কিছু দিন আগে বিয়েও করেছে। সেটাই তাদের হিংসাত্মক আক্রমণের কারণ,, সে চেয়েছিল তার মেয়ের সাথে কোনোভাবে আবসারের গলায় ঝুলাতে তার প্রচেষ্টা ছিলো অনেক। ধনী ঘরের সন্তান তার মেয়ে রাজার হালে থাকবে। কিন্তু কঠোর আবসার একদিন তাদের এমন ভাবে শাষায় যা দেখে তারা মা বেটিতে আর সাহস করেনি আবসারের কাছে যাওয়ার।
তবে আবসার ওয়াসিমাকে এখানে আনার কয়েকদিন পরেই ওয়াসিমাকে আবসারের সাথে হাসতে হাসতে ঢুকতে দেখে জ্বলছিল তারা। তাই তাদের অগোচরে ওয়াসিমার খোঁজ খবর নিতে থাকে। একদিন ওয়াসিমাকে কোচিংয়ের সামনে ফাহাদের সাথে কথা বলতে দেখে ” সেই ব‍্যাপারটা বেশ মশলাদার করে আবসারের সামনে উপস্থাপন করে। সেদিন তার কথায় আবসার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করলেও। ওয়াসিমার ভর্তি পরীক্ষার দিন একটু সন্দেহ হয় কিন্তু তারপরও কিছু বলে না। তবে সেদিন ওয়াসিমার মেডিকেলের রেজাল্ট নিয়ে আসার সময় তার কানে খুব ভালোভাবে বিষ ঢালে আর এমন ভাবে ইফ্লুয়েন্স করে যেনো আবসার তার কথা ভাবতে বাধ‍্য হয়। কোয়েন্সিডেন্স ভাবে সেদিনি ফাহাদ ওয়াসিমার ফোনে কল করে তাকে শুভকামনা জানানোর জন‍্য। সেটাই আবসারের বিশ্বাসের ভিত্তকে নড়বড়ে করে দেয়।
কিছু কিছু মানুষ কথাগুলো এমন ভাবে বলে যা একটা সুস্থ সবল সম্পর্কও ভাঙতে বাধ‍্য হয়। অতি সর্তক অথবা চালাক মানুষও সেই জালে পরতে বাধ‍্য হয়।

___________________

আবসার সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ওয়াসিমা আগেই অন‍্য ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আবসারও কিছু বলে না তাকে নিজেকে সামলানোর জন‍্য সময় দেয়।
সে জানে এটা ওয়াসিমার জন‍্য অপমানিত হওয়া। তার চারিত্রিক দিক গুলোর দিকে আঙ্গুল তোলা।

কিন্তু সে কি করবে?? তার অতীতের ঘটনা গুলো এবং সিচুয়েশন গুলো তাকে ওয়াসিমাকে সন্দেহ করতে বাধ‍্য করে। সে ভাবে সে সামান্য একজন কাপড় ব‍্যবসায়িক আর ওয়াসিমা হলো ভবিষ্যত ডাক্তার। যদি পরবর্তীকালে সে আফসোস করে তার ডিসিশন নিয়ে। ফাহাদ ও তো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের টিচার সে যদি তাকে তার থেকে দূর করতে চায়। আবসারের মতো মানুষ যদি মানুষের কথায় তাকে সন্দেহ করে। তাহলে ওয়াসিমাতো সদ‍্য আঠারো শেষ করে উনিশে পা দেওয়া একটি মেয়ে।
সেতো তখন ফাহাদের সাথে তার উজ্জল ভবিষ্যত দেখবে। ঐ সবাই বলে একজন ডাক্তারের সাথে আরেকজন ডাক্তারকেই মানায়। তাইতো সে এই কয়দিন নিজের সাথে লড়াই করেছে কিন্তু ওয়াসিমাকে বলতে যেতেও পারেনি।

তবে ওয়াসিমার আজকের কথায়। তার এককথায় আবসারের বিশ্বাসটাকে আরো মজবুত করে তুলেছে। সে এখন ওয়াসিমার সামনে ভর্তির বিষয়ে কিছু বলবেনা। সে দেখতে চায় ওয়াসিমা আসলেই ডাক্তারি পড়া ছাড়তে রাজি হয়েছে কিনা।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিয়ায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৭

রাতে দেরিতে ঘুমানোর ফলে বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙ্গল আবসারের। অভ‍্যাসবশত ওয়াসিমাকে খুজলে পায় না। তাকে খুজতে খুজতে বাইরে আসলে ও পায়না। তখন তার মনে পরে ওয়াসিমা কাল রাতে অন‍্য ঘরে ঘুমিয়েছিল,, সে দ্রুত ঐ ঘরের দরজায় নক করে

— ওয়াসু,, ও বউ পাখি ”

আবসারের আদুরে ডাক শুনে ওয়াসিমার হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে সে থেমে যায় সে কোনো মতেই আবসারের মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না। আবসারের মুখোমুখি হওয়া মানে তার ভালোবাসার অপমান করা। সেই হয়তো আবসারের মনে তার প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি করতে ব‍্যর্থ ছিলো ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল। তার ধ‍্যান ভাঙ্গল আবসারের ডাকে। অনেক্ষণ ধরেই আবসার তাকে ডেকেই চলেছে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলো না বলা ভালো ওয়াসিমাই উত্তর দিলো না।

অনেক্ষণ দারজা ধাক্কিয়ে চলে যায় আবসার। ঘরে যেয়ে ফ্রেশ আবার ওয়াসিমার ঘরের দরজায় টোকা দিতেই কেউ মেইট গেটের বেল বাজায়।

আবসার গিয়ে দরজা খুলতেই নজরে আসে আকলিমাকে
— আসেন মা

— ওয়াসু কোই আব্বু। মেয়েটাকে সকাল থেকে ফোন করে চলেছি কল ঢুকেই না। ওর ফোন কই??

— মা ওর ফোন মনে হয় সমস‍্যা হয়েছে আমি দেখছি বলেই আবসার ঘরের দরজা সামনে দাড়িয়ে আঙ্গুল উচু করে নক করার আগেই ওয়াসিমা গেট খুলে বের হয়। আবসারের দিকে না তাকিয়ে সোজা তার মায়ের কাছে যায়। সে তার বাবা মাকে তাদের সমস্যার ব‍্যাপারে কোনো ধারনা দিতে চায় না কারণ আকলিমা সহ‍্য করতে পারবে না।

— কি হয়েছে আম্মা আমার?? ওয়াসিমার শুকনো চেহারায় হাত বুলিয়ে বলল।

— কিছু না আম্মু এমনিতে কালকে ঠাণ্ডা লেগেছে তাই এরকম লাগছে।
ওয়াসিমার কথা বিশ্বাস করে। আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল — আমাদের বাসায় একটু চলো!!

— কোনো মা??

— একটু কাজ আছে বলেই ওয়াসিমার হাত ধরে তাকে নিয়ে যায়। আকলিমার এভাবে ওয়াসিমাকে নিয়ে যাওয়া আবসারের মনে ভীতি সৃষ্টি কর। সেও কালবিলম্ব না করে চলে যায় তাদের পিছু পিছু।

_____________________

সকাল সকাল আরেকটা সারপ্রাইজ যে আবসারের জন‍্য অপেক্ষা করছে সেটা আবসার জানত না তার সামনে বসে আছে ইসমাত আরা ও দিলরুবা সাখাওয়াত। দুইজনেই খোশগল্পে মেতে আছে। আর তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরু এখন যোগ দিলো আবসার। দুই ভাই বোন একে অপরকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল ঘটনা কি??

ইসমাত আরা উঠে নাতিকে জড়িয়ে ধরে। নানের জড়িয়ে ধরায় আবসার তার দিকে তাকায়। আবসারও তাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পরে দিলরুবা সাখাওয়াত এসে জড়িয়ে ধরে। এটা আবসারের কথা অকল্পনীয় যেনো। সে কিছুক্ষণের মধ‍্যেই নিজের টিশার্টটা বুকের কাছে ভেজা ভেজা পায়। বুঝতে পারে দিলরুবা সাখাওয়াত কাদছে
— আমাকে ক্ষমা করে দে ভাই। আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম তুই কিছু করিস নি কিন্তু কিছু বলার আগেই এজাজ তোকে মারা শুরু করল। তুই নিজের ডিফেন্সে কিছু বলিস নি তাই আমার আরো রাগ হয়েছিল। আমি তোকে পরে ফিরিয়ে আনতে যেয়ে পাইনি। বলেই অঝোরে কাদতে শুরু করল।

— দাদীর কথায় আবসারের এতো দিনের ভুল ভ্রান্তি সব ভেঙ্গে যায়। সে বুঝতে পারে সেদিন তার জন্মদাতা বাদে কেউই তাকে বুল বুঝেনি। সবাই তার প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছে। আর সে ভেবেছিল যে কেউ তাকে বিশ্বাস করেনি।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নান ও দাদীকে একসাথে। তার খুব ভালো লাগছে।

— আমার একমাত্র উত্তরাধিকার আমার বাড়িতে থাকবে না তাহলে সাখাওয়াত ভিলার কোনো প্রয়োজন। সেই বাড়িতে যেকোনো অনুষ্ঠানই ফিকে হয়ে যায়।

— এতোই যদি আদর বুড়ি এতোদিন তাহলে কিছু বলোনি কেনো?? মুখ বেকিয়ে বলল আরু।

— কাউকে শিক্ষা দেওয়ার জন‍্য আর আমার ছেলেকে নিজের জীবনের ব‍্যর্থতা বুঝানোর জন‍্য। আমি দিলরুবা সাখাওয়াত নিজের ভুল যেমন ছেড়ে দেই না তেমন কেউ অন‍্যায় করলে তাকেও ছেড়ে দেইনা। ওর সাথে সেরূপ আচরণের কারণ হলো সেদিন প্রতিবাদ না করে মার খেয়ে বের হয়ে যাওয়া।।

আরু হা করে তাকিয়ে আছে দিলরুবা সাখাওয়াত এর দিকে ডেঞ্জারাস মহিলা।

— মাছি ঢুকে যাবে হা টা বন্ধ করো। বলেই অরিক আরুর হা করা মুখটা বন্ধ করে দেয়। আরু বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই সবাই একজোট হেসে দেয়।

অনেক ফ‍্যামিলি ড্রামার পর ঠিক হলো আরু ও অরিক এবং আবসার ও ওয়াসিমা যাবে সাখাওয়াত বাড়িতে।

________________________

দীর্ঘ সময় পর আরু ও আবসাররা সাখাওয়াত বাড়িতে ফিরে দুই ভাই বোনের চোখেই পানি। সবাই যখন আরুকে অবহেলা করত তখন কোনো কারণ ছাড়াই তার খারাপ লাগত সবার প্রতি অভিমান জন্মায় কিন্তু যখন সত্যি জানে তখন তার অভিমান ফুসস তবে অদেখা আবসার ভাইকে কখনও ঘৃণা করতে পারেনি।। কিন্তু পরে সত্যিটা জানার পর সে পরিস্থিতিকে মেনে নেয়।

উপর থেকে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আয়মান দেখল তার দাদুম একটা ছেলেকে আদর করে খাওয়াচ্ছে।
দুপুরে লাঞ্চ করছিল সবাই বসে। আজকে আয়মান একটু দেরী করে ফেলেছে। নামতেই দেখে আজকে তার জায়গাটা অন‍্য কারো দখলে। সে তার দাদুমের দিকে তাকায়। কিন্তু দিলরুবা সাখাওয়াত নির্বিকারভাবে আবসারকে গালে তুলে খাওয়াচ্ছে

— হোয়াট হ‍্যাপেন্ড দাদুম আমার জায়গায় তুমি যাকে তাকে বসিয়ে খাওয়াচ্ছ
আয়মানের কথা শুনে আবসার কিছু বলতে নিলে তাকে থামায় দিলরুবা।

— এতো যে সে না আয়মান। ও এই বাড়ির বড় ছেলে। তোমার এই বাড়িতে যতটা অধিকার আছে তার থেকে বেশী অধিকার বেশী আছে ।।

দাদুমের গম্ভীর কথায় খারাপ লাগে আয়মানের কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ খালি চেয়ারে বসে পড়ে। সে জানত তার একটা ভাই আছে কিন্তু কখনও দেখা হয়নি।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে একটা ভাত ঘুম না দিলেই নয়। তাই সবাই যে যার রুমে রেষ্ট নিতে চলে যায়। দিলরুবা সাখাওয়াত নিজে আবসারের রুমটা গুছিয়ে রাখে।

ওয়াসিমা আবসারের পুরো রুমে চোখ বুলায়। আভিজাত্য ভরপুর এই ঘরটা তার মনের ঝড় থামাতে পারছে না। তার বুকের ভেতরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
সে আর কিছু না ভেবে ডিভানে শুয়ে পরে ঐ নরম গদি তার জন‍্য না সে মধ‍্যবিত্ত মানুষ অল্পতেই সন্তুষ্ট।

আবসার ঘরে ঢুকে পুরো রুমে চোখ বুলায়। এখন ওয়াসিমার সাথে তার কথা বলা জরুরি। সারা সকাল কথা বলার জন‍্য উশখুশ করেছে কিন্তু সময় ও সুযোগ কোনোটাই পায়নি। ওয়াসিমাকে খুজে না পেয়ে বের হতে নিলেই চোখ যায় তার রুমের বারান্দার দিকে ওয়াসিমার ওড়নার এক কোণার অংশ।
ধীর পায়ে আবসার সেদিকে যেতেই দেখে। ডিভানে আরামছে ঘুমিয়ে আছে ওয়াসিমা তাকে বেশ মিষ্টি লাগছে। অবিনস্ত চুল গুলো মুখের উপর পরেছে।
আবসার আস্তের উপর তাকে কোলে নেয়। বেডে শুয়িয়ে নিজেও তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। প্রায় চার দিন পর আবসারের আরামের ঘুম আসে।

________________

নিজের ঘরে বসে রাগে ফুসছে আয়মান। হঠাৎই যেনো তাকে তার দাদুম দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

মাথায় কারো ছোঁয়া পেয়ে। হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয় আয়মান

— তুমি এখানে কি করছ মম
বিরক্তি কন্ঠে বলল

— আমার ছেলের কাছে আমি আসতে পারি না??

— নো মম ইয়‍্যু কান্ট আমি বড় হয়েছি আমার প্রাইভেসি বলতে একটা কথা আছে।

আয়মানের কথা শুনে আলিয়া সাখাওয়াতের চোখ জোড়া ছলছল করছে। এই ছেলের জন‍্য সে কত কি না করেছে। আর এই ছেলে সেদিন লিমাকে বিয়ে করার কথা বলতেই রেগে যায়। সেই আর এখন পযর্ন্ত আছে।

— বড় বউ আমার নাতিকে আমি মানিয়ে নিচ্ছি তুমি যাও। হাতে খাবারের থালা নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল দিলরুবা সাখাওয়াত। তখন রাগ করে আয়মান না খেয়ে চলে আসে তাই আলিয়া তাকে খাওয়াতে আসলে পাত্তা পায় না। তাই দিলরুবা সাখাওয়াত আসে। দাদুমকে দেখে মুখ ঘুড়িয়ে বসে আয়মান। তা দেখে হাসে দিলরুবা সাখাওয়াত।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৮

মাগরীবের আযান শুনে আবসারের ঘুম ভাঙ্গে। উঠে ওয়াসিমাকে পায়না। বিড়বিড় করে নিজেকে কতক্ষণ গালি দিলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামল নামাযে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন এহসান ও ইরফান একসাথে নামাযে যাওয়ার জন‍্য বের হচ্ছে। নিজের শশুরকে দেখে অবাক হয়,,,

— ছোট মিয়া তোমরা কখন আসলা??

— এই তো ছয়টার দিকে।

— ওও

— তো চল একসাথে নামাজটা সেরেই আসি,, বলেই আবসারের পিঠে হাত দিয়ে নিয়ে গেলো। এর মধ‍্যে ইরফান একটা কথাও বলল না।

ওয়াসিমা রান্নাঘরে দাড়িয়ে আবসারের যাওয়া দেখে নিজেও দ্রুত ঘরে গেলো নামাজ পরতে। এতক্ষণ সে একাই রান্নাঘরে দাড়িয়ে ছিলো মাগরিবের নামাযের সময় কম দেখে। আযানের সাথে সাথে নামাযে সবাই চলে গেলেও ওয়াসিমা যায়না। সে আবসারের যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলো।

বিয়ের বাড়িতে হাজার কাজ। তাই আকলিমা বাদে বাকি সবাই রান্নাঘরে আছে। আকলিমা ইসমাত আরা ও দিলরুবা সাখাওয়াতের কাছে বসে গল্প করছে।
এহসান ও ইরফান নামাজ শেষ করে আসলেও আবসার অরিকের সাথে দেখা করতে গিয়েছে কারখানায়। কারখানায় কোনো কাজে অরিক আটকে গেছে তাই আরু আকলিমা ও ইরফানকে পৌঁছে দিয়েই আবার চলে গেছে বাড়ির ভিতরেও ঢুকে নাই।

_____________________

রাত আটটায় ভেনিসা সহ তার পরিবার ও আয়মান ও ভেনিসার কাছের কিছু বন্ধু উপস্থিত হয়। বিয়েটা যেহুতু এই বাড়ি থেকে হবে তাই ভেনিসারা সবাই আজকেই সাখাওয়াত ভিলায় উপস্থিত হয়। তাদের বাংলাদেশের কিছু আত্মীয় কালকেই আসবে একেবারে হলুদের সময়। দুই পক্ষের হলুদ একসাথে হবে। তাই সবার মাঝে আনন্দটাও বেশী।

সাখাওয়াত বাড়িতে আজ চাদেঁর হাট বসেছে। ভেনিসা ইতিমধ্যে ওয়াসিমা ও আরুর সাথে বেশ ভালো আড্ডা জমিয়ে ফেলেছে। ভেনিসার মা ইলা ও বাবা রাশেদ ও সবার সাথে মিশে গেছে।
এজাজ সাখাওয়াত বিজনেসের কাজের জন‍্য একটু ঢাকার বাইরে গিয়েছিল। একটু আগেই পৌছায়। ঢুকেই নিজের বাড়ির হল রুমের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

এরকম একটা দৃশ্য তার কাছে বিরল সে ভাবতেই পারেনি এরকম দৃশ্য কোনো দিন দেখবে বেচে থাকতে। বিশাল বড় হল রমের একপাশে। ছোটদের মানে ওয়াসিমা আরু ও ভেনিসা আর তার বন্ধুদের আড্ডা চলছে। অন‍্যদিকে বড়দের গল্প চলছে। আরেকদিকে ইসমাত আরা,, কায়সার ও দিলরুবা সাখাওয়াতের দখলে তারা তিনজন এমন ভাবে গল্প করছে যেনো কত দিন পর দুই বান্ধবী একসাথে হয়েছে।
এজাজ জানত তার আম্মা সিলেট যাচ্ছে আবসারের নানা নানিকে দাওয়াত দিতে কিন্তু এমন কিছু হবে সে ভাবতে পারেনি।

কথা বলতে বলতে হঠাৎই দিলরুবা সাখাওয়াতের নজর যায় তার বড় ছেলের দিকে। দিলরুবা সাখাওয়াত বুঝতে পারে ছেলের মনোভাব। ধীর পায়ে উঠে যায় তার কাছে। তার সাথে ইসমাত আরা ও কায়সারও উঠে দাড়ায় তারা নিজেদের ঘরে চলে যায় বিশ্রাম নিতে। মনে মনে তারাও কিছু ঠিক করে নেয়। এবং সেই বিষয়ে দিলরুবার সাথে কথা বলবে ঠিক করে।

— কি দেখছিস বড় খোকা??

— আমার দুয়ারে আসা এক মুঠো সুখ দেখছি আম্মা। এই সবার মধ‍্যে আমার ছেলেটাকে দেখছি না ওকি আসেনি?? দিলরুবা সাখাওয়াতের দিকে প্রশ্নাত্তক ভাবে তাকিয়ে বলল।

— এসেছে খোকা একটু অফিসের কাজে গিয়েছে।

— এখন ওর কি প্রয়োজন ঐ ছোট্ট কারখানাটা চালানোর ও তো সাখাওয়াত গ্রুপ অব কোম্পানিতে জয়েন করতে পারে।

— আস্তে আস্তে হবে খোকা একটু সবুর কর!! এখন যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নে।।

— না আম্মা এই সুখটুকু আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চাই। আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। আমার বাড়ির এই আনন্দ উচ্ছ্বাসে।

এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে হাসে দিলরুবা।
সেদিকে কর্ণপাত না করে নিজের মতো করে বেয়াই বিয়ানের সাথে আলাপ আলোচনা করে ঘরে গেলো এজাজ। তার পিছু পিছু আলিয়া ও আসল।

আলমারি থেকে তোয়ালে বের করতে করতে হেসে ওঠে। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে আলিয়া কি সুন্দর হাসি এই হাসিরই তো প্রেমে পড়েছিল আলিয়া। অনেক দিন পর স্বামীকে হাসতে দেখে ভালো লাগল আলিয়ার।

— নাস্তা এখানে নিয়ে আসব??
পিছন থেকে আলিয়ার কথা শুনে সদিকে তাকায় এজাজ।
— হু না আমি নিচে আসছি। তোমার আর কষ্ট করে নিয়ে আসতে হবে না।।

এজাজ ওয়াশরুমে ঢুকতেই আলিয়া নিচে নেমে আসে চলে যায় রান্নাঘরে। সেখানে গিয়ে ওয়াসিমাকে দেখে অবাক হয় উকি মারে ড্রয়িং রুমে না সবার মোটামুটি নাস্তা করা শেষ তাহলে। তাই ওয়াসিমাকে জিজ্ঞাসা করল — তুমি এখানে কি করছো??

— আঙ্কেল এসেছে তার জন‍্য নাস্তা রেডি করছি।।

আলিয়া অবাক হয় মাঝে মাঝে ওয়াসিমাকে দেখে। নিশ্চিত আবসারের বিষয়ে সব জানে এবং আলিয়ার কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জানে। কিন্তু দেখো এই মেয়ের কথায় কোনো রাগ নেই তেজ নেই কি সুন্দর বিনয়ের সাথে কথা বলে তার সাথে কথা বলছে। সেরকম ওয়াসিমার বাবা মায়েরও। দেখেই মনে হয় তারা মন ভালো মানুষ সহজ সরল।

____________________

রাতে ডিনারের একটু আগে আবসার ও অরিক সাখাওয়াত ভিলায় আসে। অরিকের হাতে ফলমূল মিষ্টির প‍্যাকেট আরু এগিয়ে এসে সেগুলো হাতে নেয়। এবং অরিককে নিয়ে যায় তাদের ঘরে ফ্রেশ হতে

— নিজের বাড়িতে এসে দেখি তোমার পাত্তাই পাওয়া যায়না “” ঝাঝালো স্বরে বলল অরিক।
অরিকের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে

— কি হয়েছে আপনার??

— কি হবে আর হলে তো কানতোই বলে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আরু ভাবতে ভাবতে ফোনে হাত দিয়ে দেখে বিশটা মিসড কল অরিকে নাম্বার থেকে।

— ওও এই জন‍্যই সাহেব রাগ করেছে
বলেই ফিক করে হেসে দিলো। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করল শশুর শাশুড়ি,, স্বামীর এতো ভালোবাসা তার কপালে লেখার জন‍্য।

— নে আরু এখন রাতে এই মহাশয়ের রাগ ভাঙ্গানোর প্রস্তুতি নে বিড়বিড় করে বলতে বলতে ঘরে থেকে বের হলো।

,,,,,,,,, সবাই একসাথে খেতে বসেছে পুরো টেবিলে চেয়ারে ভরপুর। বাড়ির বউরা খাবার বেড়ে দিচ্ছে তার মধ‍্যে হবু বধূ ভেনিসাও বাদ যাচ্ছে না। তবে তার মধ‍্যে ওয়াসিমা একা রান্নাঘরে। আবসার চারিদিকে চিরুনি তল্লাশি করে ও পায়না ওয়াসিমাকে।
সবাই খাচ্ছে আর একে অপরের সাথে টুকটাক গল্প করছে। তবে এই সবার মধ‍্যে দুইজন বিবস মুখে বসে আছে একজন হলো আবসার অন‍্যজন হলো আয়মান।
আবসার বসে আছে প্রতিরাতে সে তার বউয়ের সাথে টুকটাক রোমান্স করতে করতে তাকে খায়িয়ে দেয়। আজকে এই জনগণের কারণে পারছে না অন‍্যদিকে আয়মান বসে আছে সে বিকাল থেকে ভাই মানে আবসারের আশায় বসে আছে আর আবসার আসল একটু আগে এখন যেই জায়গায় রাতে জেগে একটু হবু বউয়ের সাথে আলাপ করবে সেই জায়গায় এখন ভাইয়ের মান ভাঙ্গানো লাগবে।

— আজকে আবসার ও আয়মান দুইজন একসাথে আবসারের ঘরে ঘুমাবে।।
দিলরুবা সাখাওয়াতের এই ঘোষণা শুনে আবসার হৃদয়টা লাফিয়ে ওঠে “” এটা কোনো কথা বউ ছাড়া থাকতে হবে এখন। দূর ভালো লাগেনা বিড়বিড় করে বলে। দিলরুবা সাখাওয়াতের কথার তীব্র বিরোধীতা করে বলে উঠল — আয়মান নতুন মানুষের সাথে ঘুমাতে নিশ্চয়ই কমফোর্টেবল না আর আমাকে ও খুব একটা চিনেও না তা কিভাবে হয় দাদি??

— সেটা আজ রাতে দুইভাই একসাথে শুলেই চেনা জানা সব হয়ে যাবে বলেই খাওয়া শেষ করে উঠে দাড়ায়।

— শা*লা আমি আছি আমার জ্বালায় বউটা সারাদিন রাগ করে একটা কথাও বলেনি আমার সামনে পযর্ন্ত আসেনি আর এখন এই গ‍্যারাকল,, দূর ভালো লাগে না।

#চলবে