Tuesday, July 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1379



তার শহরের প্রেম পর্ব-০৮

0

গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍

লেখিকাঃ- konika Islam sanju

part:08

রাত ২ টা বাজতে ৪ মিনিট বাকি,, খুদায় আয়াতের ঘুম ভেঙে যায়, এটা আয়াতের ছোট বেলার স্বভাব,,, না খেয়ে থাকতেই পারে না। তাই বাধ্য হয়ে নিচে নেমে আসে দেখে ড্রয়িং রুমে কে যেন বসে আছে?? আল্লাহ ভূত না তো। আয়াত শুনেছে রাত ২ টা থেকে নাকি ভূতের উত্তাপ শুরু হয়। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে সেই ছায়াটার কাছে যায় আর তখনই ছায়াটা আয়াতের দিকে ঘুরে। আর আয়াত চিৎকার দিয়ে বলে

— ভূত ভূত,,,,, আল্লাহ বাঁচাও আমাকে খেয়ে ফেলবে,, ঘাড় মটকে দিবে। আল্লাহ,, আর কিছু বলতে যাবে তখনই আয়ান আয়াতের মুখ চেপে ধরে বলে

— আমি আমি,,, চিৎকার করছিস কেন,,??আমি হাত সরিয়ে নিচ্ছি কিন্তু চিৎকার করবি না। আয়াত এখনো ভয়ে আছে,, তার মনে হচ্ছে ভূত আয়ানের কন্ঠে তার সাথে কথা বলছে। আয়ান মুখে থেকে হাত সরিয়ে নিতেই,, আয়াত পিছিয়ে যেতে যেতে বলে

—- ভূত তুই জানিস না এই বাসায় তোর থেকেও একটা বড় ভূত থাকে,,,,রাক্ষস,,,,বড় বড় চোখ,, দাঁত তার নাম আয়ান চৌধুরী,,, আর তোকে যদি দেখে তুই তার কন্ঠ নকল করছিস তোকে গিলে খাবে,,,।। আয়ান তো আয়াতের কথা শুনে অবাক+রাগ। আয়ান রেগে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে

—- ননসেন্স,,, একটা দিব কানের নিচে,,, রাতদুপুরে কিসব উল্টা পাল্টা বকছিস?? মাথা ঠিক আছে তো??

আয়াত এইবার সিউর হলো এটা আয়ান,, আর তখনই আয়ান ড্রয়িং রুমের লাইট জালায়। কিন্তু আয়াতকে দেখে আয়ানের ভিতরটা মুচর দিয়ে উঠে,, চোখগুলো ফুলে আছে,, নাকটা লাল। আয়াত বলে

— আপনি এখানে?? আয়ান বলে

— হ্যা আমি এখানে তো?? আয়াত বলে

— নাহ,, কিছু না। বলেই কিচেনে চলে যায়। ফ্রিজ খুলে দেখে,,, খিচুড়ি তুলে রাখা আছে,,, সাথে গরুর মাংস ভুনা,, আয়ান বলে

— আমিও খাবো,,, খুদা লেগেছে।

আয়াত মনে মনে ভাবছে,, সে এখনো খায়নি!? এইসব ভাবছে তখনই আয়ান,, আয়াত কে সরিয়ে বলে

— তোর খাবার বের করতে করতে ১০দিন লাগবে।

বলেই আয়াত কে সরিয়ে খাবার গুলো গরম করতে দিয়ে,, দেয়। আয়াত এখনো সেখানেই দাড়িয়ে আছে। আয়ান আয়াতের কাছে এসে টুপ করে কোলে নিয়ে পাশে থাকা ফাকা জায়গাটায় বসিয়ে দেয়,, আর আয়াতের গালে কিস দিয়ে বলে

— ওয়েট বেইবি,,,, আয়াত তো অবাকের শীর্ষ পর্যায় যেখান থেকে পরলে মৃত্যু নিশ্চিত। কি হলো!! আয়ান কি ড্রাংক??? কই তেমন কোন বাজে গন্ধতো পায়নি!! নাকি ঘুমের ঘোরে সব করছে??? তখনই আয়ান বলে

— খাবি না নাকি?? আয়াত বলে

— আপনার শরীর ঠিক আছেতো? আয়ান আয়াতের মুখের সামনে খাবর ধরে বলে

— কেন কি মনে হয়?? আয়াত বলে

— না মানে,, আয়ান বলে

— মানে টানে পরে হবে,, আগে খেয়েনে। আয়াতও খাবারটা খেতে লাগে,,, কিছু দিন যদি আর সে আয়ানের সাথে থাকে তাহলে,, নিশ্চয়ই আবার সেই৷ মায়াতে জড়িয়ে যাবে। আর এটা হয়তো আয়ান এর জন্য করেছে,, কারণ আয়াত বলেছে সে আর তার শহরে আসবে না। কথাগুলো মনে পরতেই চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরে। তা দেখে আয়ান বলে

—- চোখ দিয়ে আরেক ফোটা জল বের হলে। তোর চোখ খুলে ফ্রিজে রেখে দিব। আর মুখেরটা শেষ হতে এতো টাইম লাগে? আয়াতের হুশ আসতেই কয়েক বার খেয়ে বলে

—- আমার খাওয়া হয়ে গেছে,,, আয়ান বলে

— ওয়েট আগে আমি ফিনিস করি,,,, আয়াত একমনে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে,, কি সুন্দর মানুষটা,,,,, আয়াতকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান বলে

—- জানি আমি সুন্দর তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকিস না আমার লজ্জা করে। আয়াত আয়ানের কথায় হেসে দেয়।

__________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যায় আয়াত,,, সকালের আবহাওয়াটা তার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আজকে কালকের মতো বৃষ্টি না থাকলেও,, আকাশ কালো মেঘে ছায়া,, নিচে দেখে আলভিরা আর আরবি গাছে পানি দিচ্ছে। তা দেখে আয়াতও নিচে চলে আসে,,,,,, আয়াত ভাবে আলভিরার সাথে একটু দুষ্টামি করা যাক। তাই সে পানির পাইপে পা রাখে আর পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়,, আলভিরা বলে

—- এটার আবার কি হলো পানি আসে না কেন? যেই না পাইপটা নিজের দিকে ঘুরিয়েছে তখনই আয়াত পা সরিয়ে ফেলে আর সাথে সাথে পানি গিয়ে পরে আলভিরার মুখে। তা দেখে আরবি আর আয়াত হেসে দেয় বেচারি ভিজে-নেয়ে একাকার।।

আলভিরাও কম না সেও আরবিকে ভিজিয়ে দেয়,, তারপর শুরু হয় তাদের পানি খেলা,, আর আয়াত মানে মানে কেটে পরতে চাইলে আলভিরা ভিজিয়ে দেয় কিন্তু ভুলবশত পানিটা গিয়ে লাগে আয়ানের গায়ে,, সকাল সকাল জগিং করে বাসায় ফিরছে আয়ান আর আরিয়ান। আয়াত আর আলভিরা তো ভয়ে শেষ,,, আরবিকে আয়ান কিছু বলবে না সেটা সবাই জানে। আরিয়ান আয়ানের এই অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দেয়,, হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পরে,,, আয়ান সেটা দেখে আলভিরার হাত থেকে পাইপটা নিয়ে আরিয়ানকে ভিজেয়ে দেয়। আর আরিয়ান লাফিয়ে ওঠে দাড়ায় আর বলে

—- বিগ বি কি করছ!! ভিজে গেলাম,,, আরবিও কম কিসে সে সময় বুঝে আয়াতকে ভিজিয়ে দেয়,, সবাই মজা করছে,,,,, সবাই একসাথে কিছু ভালো সময় কাটিয়ে যে যার রুমে চলে যায়,, ফ্রেশ হয়ে খেতে আসে সবাই,,, কিন্তু আয়াত চুপচাপ বসে আছে। কিছু খাচ্ছে না,,, তা দেখে আয়ানের মা বলে

— কিরে,, কি হয়েছে?? আয়াত বলে

— না তেমন কিছু না,, আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না। আয়ান রেগে বলে

—- প্লেটে যদি একটু খাবার অবশিষ্ট থাকে তাহলে তো বুঝিসই,,,,, আয়াত ও কিছু না বলে খেতে লাগে। সেটা দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। আয়াত নিজের মতো চুপচাপ খাচ্ছে আসে পাশে কারো দিকে তাকাচ্ছেও না। তা দেখে আয়ান মনে মনে রাগ করছে একেতো চুলদিয়ে ফেস ঢাকা তার উপর একবার তাকাচ্ছে না অব্দি। আর আয়াতের মাথায় চলছে অন্য কিছু। ,,, ব্রেকফাস্ট শেষে যে যার মতো চলে,, যায়।

আরিয়ান,, আয়াত আর আলভিরা কলেজে পৌছে যায়। চারদিকে হৈ চৈ ছাত্র ছাত্রীদের আনাগোনা,,, সব মিলিয়ে অসহ্য লা গছে সব আয়াতের কাছে।

আয়রিয়ান আলভিরাও বকবক করছে,, আয়াত এবার আর সহ্য করতে না পেরে বলে

— দু’জনই চুপ,,, নয়তো পিটাব দুইটাকে। আলভিরা আর আরিয়ান চুপ হয়ে যায়।

_______

বিকেলে ছাঁদের দোলানয় আধো হয়ে শুয়ে শুয়ে গান শুনছে আয়াত,,, আর আরিয়ান,, আলভিরা আরবি ঝগড়া করছে।। আরিয়ান আলভিরার চুল টেনে ধরে বলে

— বাজে বকবি তো তোরে থাপ্পড় দিব। আলভিরা বলে

—- বাজে কি বকলাম সত্যি কথা বললাম তো তাই।। গিটার বাজাতে পারোনা তো বাজাও কেন? আরবি বলে

—- তোরা দুইটাই চুপ কর নয়তো,, তোদের বুড়িগঙ্গার পানিতে ফেলে দিয়ে আসব। আলভিরা বলে

—- তাহলে এত ভাব নেয় কেন?? আয়ান ভাইয়া কত সুন্দর করে গিটার,, বাজায়..। আয়াত ওদের কথা শুনে হাসছে,, সত্যি আয়ান খুব ভালো গিটার বাজায়৷ তখনই ছাঁদে আসে আয়ান। আয়ান এসেই আয়াতের পাশে বসে পরে আর বলে

—- আয়ান মানে আমাকে নিয়ে কি বলছিলি?

( তোকে নিয়া আর কি বলব! তুইতো তুই হুদাই আয়াতকে কষ্ট দিস) আলভিরা বলে

—- তুমি খুব ভালো গিটার বাজাতে পারো সেটাই বলছি। আয়ান বলে

—- বললেও কাজ হবে না,, হাতে ব্যাথা। আর আয়াত এটা তোর জন্য বলেই নিজের নিজের পেন্টের পকেট থেকে দুইটা কিট-কেট,, আর ডেয়ারি মিল্ক সিল্ক বের করে দেয়। চকলেট জিনিসটা বরাবরই পছন্দ করে। আয়ান চোখ দিয়ে ইশারা করে চকলেট নিতে। আর আয়াত তো হা হয়ে আছে,, মনে মনে ভাবছে

—- এতো জলদি কিভাবে ভালো হলো! নাকি তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তাই এত কিছু।আয়াত একটা চকলেট খুলে মাত্রই মুখে দিয়েছে৷ তখনই আলভিরা রাগ করে বলে

—- শুধু বউকে দিলে হবে? আমরা কি দোষ করেছি?

আয়ান বলে

—- তো তুই আর বউ কি এক নাকি? উপস্থিত সবাই অবাক,, সাথে আরবিও। আয়াত তো চকলেট মুখে নিয়ে মূর্তি হয়ে বসে আছে। আয়ান তা দেখে বলে

— তুই খাবি না? ওকে আমি খেয়ে ফেলি,, বলেই হাত থেকে চকলেট টা নিয়ে চলে যায়

চলবে

তার শহরের প্রেম পর্ব-০৭

0

গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍

লেখিকাঃ- konika Islam sanju

part:07

গোসল করে মাত্রই আয়াত রুমে এসে বসেছে,, আর ভাবছে একটু নিজের বাড়ি থেকে ঘুরে আসলে মন্দ হয় না,,,, অনেক দিন হলো মা বাবা,, কারো সাথে দেখা হয় না । তখনই দরজায় কেউ নক করে,,, আয়াত বলে

— দরজা খুলা আছে,,, ভিতরে আসে আরিয়ান,,,

আারিয়ান কে দেখে আয়াত বলে

—- কিছু লাগবে?? আরিয়ান আয়াতকে বলে,, তাড়াতাড়ি ছাঁদে চলো,,,,, আয়াত অবাক হয়ে বলে

— কেন??? আরিয়ান বলে

—- আরে চলোই না,,,, আয়াত বলে

— তুমি যাও আমি আসছি। কিন্তু আরিয়ান জিদ্দি কম না আয়াতের হাত ধরে বলে

—- এইবার চলো। বাধ্য হয়ে আয়াত যায় ,, ছাঁদে গিয়ে দেখে বৃষ্টি নেই আকাশ পরিষ্কার,,, আর আকাশ জুড়ে নিজের রঙে রাঙিয়ে দিচ্ছে সেই সাত রঙের রঙধনু টা।। আয়াত তো সেই খুশি,,, সাথে আয়ান আরবি,, আর আলভিও আছে।। তারা আগেই এসেছে।। আয়াত আরিয়ান কে বলে

—- ইয়ারর,,, ধন্যবাদ,,,, ঠান্ডা বাতাসে তাল মিলিয়ে উড়ছে আয়াতের কয়েকটা ভিজা চুল। আয়ান কিছু না বলেই, আয়াতের হাত ধরে নিচে নামতে লাগে । সবাই অবাক!! কি হলো আবার?? আয়াত বলে

—- আরে আরে কি করছেন টাকি?? আয়ান কিছু না বলেই সোজা আয়াতকে নিজের রুমে নিয়ে আসে,, আর দরজাটা লাগিয়ে বসিয়ে দেয় ড্রেসিং টেবিলের সামনে,, আয়ান আয়তের চুলগুলো হেয়ার ড্রাই দিয়ে ড্রাই করছে। আয়াত শুধু অবাক হয় আছে ,,,,,, হঠাৎ করে এমন পরিবর্তন৷ আয়াত আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ানও তার দিকে তাকিয়ে আছে,, চুল গুলো শুকানো হয়ে গেলে,,, আয়াত দাড়িয়ে যায়,,, আর যেতে চাইলে আয়ান আয়াতের হাত ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে নিয়ে আসে। আয়াতের হার্ট বেচারা লুঙ্গি ডান্স করছে।। হুট করেই আয়ান আয়াতের চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয়,,,, আয়াত এখনো আগের নেয় দাড়িয়ে আছে,, আয়ান আয়াতের কানে কানে ফিস ফিস করে বলে

—- তোমার চুলে দিব আমি বেলীফুলের মালা,,
তোমায় গান শুনাবো হোক না আমার গলা বেসুরা।
বুকুল ফুলের সাজে সাজাবো তোমায়,,তোমার করা অবহেলা গুলো বড্ড ,পুরায় আমায়,,,,আরিফা। এই দুইটা লাইন যেন যথেষ্ট ছিল আয়াতের অভিমানের পাহাড় ভেঙে গুরিয়ে দিতে কিন্তু না তখনই একটা কথা আয়াতের রাগকে দিগুণ বাড়িয়ে দেয় সেটা ছিল আরিফা কথাটা। এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় আয়াত। আর আয়ানকে বলে

—- আপনি কি হ্যা? কি মনে করেন আমাকে? আমি আরিফা না আয়াত,,,, আমার মাঝেও কেন আপনি আপনার প্রত্তান কে খুঁজে বেরান? বউ হিসাবে মানেন না,, মানলাম। আপনার টাইম চাই!! কিন্তু আপনি সেই প্রথম দিন থেকে নিজেকে বদলানোর একটু চেষ্টা করছেন? আরিফা আরিফা,, আমারতো মনে হয় পাঁচ বছর পর যদি বেইবি নিয়ে আরিফা আপু আপনার সামনে এসে দাড়ায় আপনি আমাকে ছাড়তে দুই মিনিট ভাববেন না। আর আমি পাগল কিছু দিন পরেত এভাবেই আমরা আলাদা হয়ে যাবো।

(আয়াত কান্না করে দেয় এবার আবার বলতে লাগে)

দোষ টা কি আমার?? বলতে পারেন? আপনি বলেছিলেন আরিফা আপু আমার থেকে রূপে সুন্দর,,,, মানলাম আমি আহামরি সুন্দর না কিন্তু লোক সমাজে মাথা নিচু না উচু করে বলতে পারবেন এটা আমার স্ত্রী,, কিন্তু না আপনি তো আমাকে ডিভোর্স দিবেন,, ওকে ফাইন তাই হবে। আর কোনো দিন বলবো না,,,, আমি। আপনার শহরের প্রেমে পরে ভুল করেছি। কারণ আপনি #তার_শহরের_প্রেম এর প্রেমে পাগল।

বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যাবে তখনই আয়ান রেগে আয়ানায় পান্ঞ্চ মারে সেটা দেখে আয়াত ভয়ে আতকে উঠে হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত পরছে , আয়াত তাড়াতাড়ি করে ফার্স্ট-এড বক্স বের করে,, আয়ান কে বিছানায় বসিয়ে দেয় আর বলে

—- এমনটা করার কি খুব দরকার ছিল??? বললামই তো আর আমি আপনার শহরের আশে পাশেও আসবো না। আয়ান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে

—- আয়াত,,, আয়াত চোখের পানি মুছে হাসি দিয়ে বলে

—- জানেন,, যখন আফিয়া আপুর বদলে আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়,, তখন অনেক খুশি ছিলাম,, ভেবেছিলাম খুব সুন্দর করে সব সাজিয়ে নিব,, হয়তো সময় লাগবে,, কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে,, কিন্তু সেটা যে ঠিক হওয়ার নয় জানতাম না,,,,,

_________

বেন্ডেজটা করেই আয়াত চলে যায় নিজের রুমে ।।। বালিশে মুখ চেপে ইচ্ছে মতো কাঁদছে আয়াত,, আয়ানও যে খুব ভালো আছে তা কিন্তু না,,, সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। সে যদি আরিফাকে লাইক করে তাহলে আয়াত কে নিয়ে কেন এতো ইনসিকিউর ফিল হয়!! কেন সে জেলাস ফিল করে তখনই আয়ানের রুমে আসে আরবি,,, আরবি দেখে আয়ানের হাত বেন্ডেজ,,, মেঝেতে কাচের টুকরো,,, আরবি বুঝতে পারে দুইজনের মাঝে আবার কিছু একটা হয়েছে।।। আরবি বলে

—– আয়ান,, তোর হাতে কি হয়েছে। আয়ান আরিবকে বিছানায় বসিয়ে দরজটা লাগিয়ে দিয়ে আসে আর বোনের কোলে মাথা রেখে কেঁদে দেয়। আর বলে

—- আপু দেখ,,, আমিতো চেয়েছিলাম আরিফাকে,, কিন্তু পেলাম আয়াতকে,,, আর আরিফার জিদ গুলো আমি সবসময় আয়াতের উপর ঢালি,,,, আজও মেয়েটাকে কষ্ট দিলাম,,, আমার কেন এত খারাপ লাগছে ওকে তো আমি অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারি না,, আরিয়ানের সাথেও না আর আমার তো কখনো আরিফাকে নিয়ে এমন ফিল হয়নি,,, জানিস আপু আজকে আয়াত কি বলেছে আমি নাকি ওর মাঝে আরিফাকে খুজে বেড়াই,,,ও নাকি আমার আশেপাশেও আসবে না। আমি কি করব কি হচ্ছে আমার সাথে হেল্প কর। আমি আর পারছি না। আরবি আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

—- কারণ টা যে তোকেই খুজতে হবে আয়ান,,, তোকে বুঝতে হবে,, কিন্তু সময় থাকতে,,, আয়ান চুপ হয়ে যায়। আয়ান বলে

— আমি কি আয়াতের উপর দূর্বল? আরবি হেসে দিয়ে বলে

—- সেটা আজকে জানলি?? আয়ান বলে

— এর মানে?? আরবি বলে

—- এর মানে খুব সোজা,, তুই ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছিস,, আর আরিফা ছিল তোর ভালোলাগা,,, জানিসতো সবাই এই দুইটা জিনিস গুলিয়ে ফেলে। আর তোরা একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আল্লাহর রহমতে তুই,, ঠিক পথেই হাটছিস এখন। আয়ান বলে

—- মানে আমি আয়াতকে লাভ করি আমি জানি না??!! আজব না।। আরবি আয়ানের মাথায় গাট্টা মেরে বলে

— দুইটাই আহাম্মক,,, নিচে খেতে চল। আয়ান বলে

—- ইয়ে মানে৷ 🙄 আয়াত? আরবি বলে

— যাচ্ছি,,,, ডাকতে। আয়ান বলে

—- মনে হয় না আসবে। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে,, মাঝ রাতে উঠবে খেতে তোমরা খাও আমি ওর সাথে😶😶😶 আরবি বলে

— তুমি ওর সাথে কি? আয়ান লাজুক হেসে বলে

—- কমু না আমার লজ্জা লাগে🙈🙈🙈 আরবি বলে

— তাই না?? আয়ান বলে

—- এক সাথে খাবো আমি ওর সাথে তোমরা যাও খেয়ে নাও। আরবি চলে যায়। আয়ান ভাবছে সত্যি কি সে আয়াতের প্রতি আসক্ত !!! আয়াতের কথা মনে পরতেই মুখে এক চিলতি হাসি চলে আসে।

_________

রাত ২ টা বাজতে ৪ মিনিট বাকি,, খুদায় আয়াতের ঘুম ভেঙে যায়, এটা আয়াতের ছোট বেলার স্বভাব,,, না খেয়ে থাকতেই পারে না। তাই বাধ্য হয়ে নিচে নেমে আসে দেখে ড্রয়িং রুমে কে যেন বসে আছে?? আল্লাহ ভূত না তো। আয়াত শুনেছে রাত ২ টা থেকে নাকি ভূতের উত্তাপ শুরু হয়। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে সেই ছায়াটার কাছে যায় আর তখনই ছায়াটা আয়াতের দিকে ঘুরে। আর আয়াত চিৎকার দিয়ে বলে

— ভূত ভূত,,,,, আল্লাহ বাঁচাও আমাকে খেয়ে ফেলবে,, ঘাড় মটকে দিবে। আল্লাহ,, আর কিছু বলতে যাবে তখনই আয়ান আয়াতের মুখ চেপে ধরে বলে

— আমি আমি,,, চিৎকার করছিস কেন??

চলবে

তার শহরের প্রেম পর্ব-০৬

0

গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍

লেখিকাঃ- konika Islam sanju

part:06

আয়াত আর আরিয়ান সবাই খেলায় মতে উঠেছে,,আর আয়ান সোফায় বসে বসে,, অফিসের কাজ করছে। আয়াত হঠাৎ করে বলে উঠে

—- আরিয়ান নো চিটিং।। আরিয়ান বলে

—- কোথায় করলাম,,, আয়াত বলে

—- আমি দেখেছি ,, তুমি চিটিং করেছো। আরিয়ান আয়াতকে চোখ মেরে বলে

—- আবার দেখল বইল,,,, আয়াত ঠাস করে আরিয়ানের পিঠে চাপর মেরে বলে

—- হবে ,, ফাইজলামি বাদ দাও । আয়ান এইসব দেখছে,, আর রাগে ফুসছে সে বলে

— এই সবের মানে কি?? এখান থেকে যাও সবাই আমি কাজ করছি। আয়ানের বাবা বলে

— তোমার সমস্যা হলে তুমি রুমে চলে যাও। আয়ান রেগে উঠে রুমে চলে যায়। আয়াত ওরা প্রায় রাত ১২ টা অব্দি খেলে আয়াত ক্লান্ত হয়ে,, যায়। তাই রুমে চলে যায় শুতে। যদিও কালকে ফ্রাইডে। আয়াত রুমে যেতে যাবে ঠিক তখনই কেউ একজন তার হাত ধরে টান দিয়ে তাদের পাশের রুমে নিয়ে আসে। রুমটা আয়াতের চিরচেনা,,,, আয়াত সামনে তাকিয়ে দেখে আয়ান আয়ানকে দেখে কেমন অচেনা অচেনা লাগছে,, আয়াতের,, কেমন চোখ গুলো লাল হয়ে আছে,, চুলগুলো উসক খুসক।৷ আয়াতের দুই বাহু চেপে ধরে বলে

—- কি শুরু করেছিস? আয়াত বলে

— কি করেছি আমি??? আপনাকে কিছু বলেছি??? আয়ান বলে

— জানিস না তুই?? দেখাই তো যাচ্ছে রামনীলা। আয়াত রেগে আয়ানের দুই হাত ঝাড়া দিয়ে বলে

— সমস্যা কি আপনার,, আমাকে নিয়ে আপনার মাথা ব্যাথা কেন এত? কি বুঝাতে চান?? আয়ান বলে

— আমার সমস্যা তুই আরিয়ানের সাথে এমন করিস কেন? এত লেগে থাকিস কেন ওর সাথে?? আয়াত বলে

—- আমার যা ইচ্ছা তাই করব,,, দরকার হলে,, ওর পিঠের সাথে আমার পিঠ এক সাথে করে সুপার গ্লু লাগিয়ে নিব৷ আপনার সমস্যা। আয়ান আয়াতের দুই চুয়াল ধরে বলে

—- তাহলে হাত কেটে নাটক কেন করলি? আয়াত আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে বলে

—- ভুল করেছিলাম একটা,, এমন মানুষের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিত চেয়েছিলাম যার লাইফে আমার থাকা না থাকাতে কিছু যায় আসে না। সব নিজের মন মতো। আর আপনার সাথে যেহেতু আমার ডিভোর্স হয়েই যাবে। তাহলে এত জোর কেন?আর কোন অধিকার খাটাচ্ছেন? আপনিতো আমাকে স্ত্রী হিসেবেই মানেন না।

আয়ান দূরে সরে যেতে লাগপ সত্যি তো কেন এমন করছে আয়ান,,সে জানে না। পাশে থাকা ফুলদানিটা সোজারে মেঝেতে ছুড়ে মারে,, চুল গুলো টেনে ধরে,, আবার আয়াতের কাছে এসে বলে

—তোকে যেন আর আরিয়ানের আশেপাশেও না দেখি। আয়াত নিজেকে ছাড়িয়ে দরজা খুলে যেতে যেতে বলে

— ১০০ বার যাবো,, কি করবেন আপনি? কিছু করার সাধ্য আছে? বলেই আয়াত চলে যায় আর আয়ান বলে

— চেন্ঞ্জ করলি!! আমিও দেখে নিব

_________

আজকে সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি আয়াত মন খারাপ করে বসে আছে ড্রয়িং রুমে,,, দুপুর হয়ে গিয়েছে। আরিয়ান,, আলভিরা আর আরবি এসে বসে পরে আয়াতের অন্য পাশে সাথে। আরিয়ান বলে

—- আয়ু ,,, আম্মুকে বলো খিচুড়ি খাবো সাথে ইলিশ মাছ ভাজা ।।। আয়াত বলে

— মন্দ হয় না,, কিন্তু তুমি আমাকে কেন বলতে বলছ? আরিয়ান একটা বোকা মার্কা হাসি দিয়ে বলে

— আমি বল্লে পিটাবে। কারণ সকাল থেকে আমাকে বোকে চলছে,,, কারণ আমার রুম এলোমেলো হয়ে আছে । আরবি বলে

—- তোর রুম দেখলে মনে হয় কোনো গরু-ছাগল বাস করে। আলভি হাসি দিয়ে বলে

—- ঠিক বলছ,,,, এটাতো গরু -ছাগলই। তখনই আয়ান এসে বসে পরে আয়াতের পাশে। তা দেখে আয়াত সরে গিয়ে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে পরে। আরিয়ান বলে

— ভাইয়া,,, আয়ান এক ভ্রু উচু করে বলে

—কি?? আরিয়ান ফিক করে হেসে দিয়ে বলে

—- তুমি টিশার্ট উল্টো পরেছে,, আয়াতও খেয়াল করে হেসে দেয়। আয়ান ধমক দিয়ে বলে

— চুপ এইটাই ইস্টাইল,,, আলভিরা বলে

—- হ্যা নতুন ইস্টাইল,, আবার হাসির রুল পরে যায়। কিন্তু আয়াত বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে,,, আহাম্মক নাকি!? এভাবে কেউ আসে,, যা খুশি করুক আমার কি?? শয়তানের হাড্ডি,,,, তখনই আরিয়ানের মা এসে বলে

—- আরিয়ান তোকে না রুম পরিষ্কার করতে বলেছি? আরিয়ান বলে

—- আম্মু,, আমি এইসব পারি বল? আরিয়ানের মা বলে

—- তুই পারিসনা তো একটা বিয়ে করে নিয়ে আয় না!! তারপর তোর সব কাজ করে দিবে,, আমি আর পারছি না,, বাপু।৷ এই আলভি (আলভিরা)তুই এখানে কি করিস যা গিয়ে আরিয়ানের রুমটা গুছিয়ে দিয়ে আয়৷ আলভিরা বলে

—- আমার ঠ্যাকা পারছে?? তোমার ছেলে পারে না নাকি? তখনই আয়াত বলে

—- বড় মা আমার না খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে,, একটু করে দিবা?? আরিয়ানের মা বলে

— আগে বলবিতো,,,এখনই যাচ্ছি। বলে চলে যায়,, আরিয়ান বলে

—- ধন্যবাদ আয়ু,,, তোমার জন্য বেঁচে গেলাম। আয়াত বলে

— এত কথা বাদ দিয়ে যাও রুম পরিষ্কার করে আসো। আরিয়ান বাচ্চাদের মতো ফেস করে বলে

— যেতেই হবে,, আলভিরা বলে

— না ঘুমিয়ে থাকো। আরিয়ান বলে

—- আমাকে যদি কেউ হেল্প করত!! আয়াত কিছু বলতে যাবে তখনই আয়ান বলে

— তুই যা আমি একটা সার্ভেন্টকে বলে দিচ্ছি। আরিয়ান চলে যেতেই আয়াত রান্না ঘরে যায়। আয়ানও পিছু পিছু রান্না ঘরে যায়। আলভিরা বলে

— আপু দেখ,, আয়ান ভাইয়া কেমন জেলাস ফিল করছে আরিয়ান ভাইয়ার থেকে,, আর কেমন কয়দিন ধরে আয়াত আপুর পিছনে পিছনে ঘুরঘুর করে। আরবি বলে

—- তাইতো দেখছি আল্লাহ হয়তো রহমত করেছে। আলভিরা হেসে দেয়। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে আয়ানের মা আর চাচাি রান্না করছে,, আর সার্ভেন্ট রা সব এগিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। আয়াতকে দেখে আয়ানের মা বলে

—- কিরে তুই এখানে,,, তোর কিছু লাগবে? আয়াত বলে

—- বসে থাকতে থাকতে অনেক ক্লান্ত আমি তাই খেতে এসেছি। আয়ানের মা মুচকি হাসি দিয়ে বলে

—- তাই,, তা কি খাবি শুনি? আয়াত বলে

—- আইসক্রিম,,, তখনই আয়ান এসে সোজা ফ্রিজ থেকে আইসক্রিমের বক্সটা নিয়ে চলে যায়। আয়াত বলে

— এটা কি হলো?? আয়ানের চাচি বলে

—- তাইতো,,৷ ছোট এটা কি হলো? আয়াত বলে

— ফুপি তোমার ছেলেকে ভালো হয়ে যেতে বলো। ভালো হইতে টাকা পয়সা লাগে না। আর লাগলে আমাকে বইল ২০ টাকা দিয়ে দিব। তাও জানি ভালো হয়ে যায়। কুদ্দুস আলী একটা। এই বলে কিচেন থেকে বেরিয়ে আসে আয়াত। আয়ানের মা আর চাচি আয়াতের কথায় হেসে দেয়।

আয়াত দেখে আয়ান,, আরবি আর আলভিরা একসাথে আইসক্রিম খাচ্ছে আর,,, মুভি দেখছে,,, আয়াত গিয়ে বসে পরে আলভিরার পাশে। আলভিরা বলে

— আপু আইসক্রিম খাও!! আয়াত বলে

—- নারে আলু (আলভিরা) জানো এই আইসক্রিম খাওয়া ভালো না,,, আমি খাবো না। আয়ান আইসক্রিম খেতে খেতে বলে

—- বিড়াল বলছে সে নাকি মাছ খায় না। আয়াত বলে

— আরবি আপু তোমার ভাইয়ের মুখ বন্ধ করতে বলো,, আমার পিছনে এতো লাগতে আসে কেন? আয়ান আইসক্রিম টা রেখে দাড়িয়ে বলে

—- ১০০ বার লাগবো ১০০০ বার লাগবো। দরকার হলে সুপার গ্লু দিয়ে লাগবো। তোর কি হ্যা৷ আয়াত সোফায় থেকে কুশনটা ছুড়ে মরে বলে

—- আপনার এই সোজা নাকটা আমি থেতলে দিব। শুধু কথায় কথায় নাক গলাতে আসে। আয়ান বলে

—- আমি কারো কথায় নাক গুলাই না।তোর মতো।

অন্য দিকে আরবি আর আলভিরা মুভি ওফ করে ওদের ঝগড়া দেখছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। মানে ফ্রিতে এন্টারটেনমেন্ট ,,,, আরবি বলে

—- ঝগড়ায় দম নাই তোর আয়াত,,, আরেকটু দম বারা। আয়াত বলে

—- ওকে আপু,, ঐ আপনি কি বললেন নাক গলান না,, আপনি তো হাত পা সব গলান তাই আর নাকটা দেখা যায় না,, এত বড় বড় দুইটা পা,, আবার আসছে নাক গলাতে। আয়ান বলে

— কেনরে হিংসা হয়? পনে চার ফিটের একটা বাচ্চা ডোরেমন,,,, আলভিরা বলে

—- ভুল বলছো ভাইয়া পিকাচু,, আজকে হলুদ পরছে আর রাগতো সেই কারেন্টে ঝটকা খাওয়ার মতো। আয়াত বলে

—- তোমার ভাই কি আয়রন ,,,,,, বিশুদ্ধ পানিকেও বিষাক্ত করে তুলবে নিজের বিষ দিয়ে এমন একটা ফাজিল নাগ।।। আয়ান বলে

—- আমি নাগ হলে তুই জেহরেলী নাগীন৷ আরবি বলে

— ওয়াও,,,এবার জমছে। তখনই রান্না ঘর থেকে আসে আয়ানের মা আর চাচি।।। বলে

— কি হয়েছে? আয়াত বলে

—- এই সব দোষ আয়রনের। আয়ান বলে

— সব দোষ এই ডোরেমন এর। আয়ানের মা বলে

— দুইটা যদি আরেকবার এমন বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস তো খবর আছে, আর আরবি তুই বসে বসে ওদের ঝগড়া দেখছিস। আরবি বলে

—– তো ফ্রিতে এন্টারটেইনমেন্ট কে মিস করবে,,, মাঝখানে তোমারা ভিলনে হয়ে এসে সব শেষ করে দিলে। আয়ানের চাচি বলে

—- অনেক হয়েছে এখন জানি কোন আওয়াজ না পাই বলে চলে যায় । আয়াত বলে

— I will see you…আয়ান বলে

—- তুই নির্লজ্জ,, বখাটে মেয়ে,, আমার মতো সুন্দর মাসুম ছেলেকে একা পেয়ে টিজ করছিস। আয়াত যেতে যেতে বলে

—- যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা,,, আপনাকে মাসুম বললে,, মাসুম শব্দটাকে অপমান করা হবে।। ওকে বায়,,

আয়ান মনে মনে খুশি হোক না ঝগড়া কিন্তু আজ অনেক দিন পর আয়াত তার সাথে একটু কথা তো বলেছে।

চলবে

তার শহরের প্রেম পর্ব-০৫

0

গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍

লেখিকাঃ- konika Islam sanju

part:05

সবাই একসাথে বসে নাশতা করছে,,, শুধু আয়ান নেই। একটু পরই ফরমাল লুকে নিচে নেমে আসছে। অসম্ভব রকম হেন্ডসাম লাগছে আয়ানকে। কিন্তু আয়াতের কাছে অসহ্য লাগছে। আয়ান দেখে আয়াত আর আরিয়ান কিছু নিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে। আরিয়ান বলে

— জানো আজ ভাইয়া অফিসে জয়েন করবে। আয়াত বলে

—- তাতে আমার খাতা ছিড়া গেলো,,, আরিয়ান আয়াতের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়। আয়ানের বাবা বলে

—- কি এমন কথা হচ্ছে তোমাদের আমিও শুনি। আলভিরা বলে

—- সে সব পরে হবে,, আগে ভাইয়া এটা বলো তোমার কেমন লাগছে অফিস জয়েন করছ? আয়ান বলে

—- ভালো,, দোয়া করিস,, তারপর একে একে সবার থেকে দোয়া নেয়। আলভিরা বলে

— আয়াত আপ্পি কে বললে না? আয়াত আপেলের পিস খেতে খেতে বলে

—- আমার দোয়া তার লাগবে না,, তোমরা সবাই দিয়েছ তাতেই তার যথেষ্ট,, আর যদি এতেও না হয় তাহলে অনলাইন থেকে লোক ওর্ডার করে দোয়া করে যেতে বল। এটা বলেই আয়াত খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে যায়। আর আয়ান তো রাগে ফুসছে। আয়ানের চাচি বলে

—- মেয়েটা না খেয়েই চলে গেলো। আয়ান বলে

—- ও না খেয়ে চলেগেলো সেটা দেখছ বড় মা,,, আমাকে যে এত গুলো কথা শুনালো?? আয়ানের মা মুচকি হাসি দিয়ে বলে

— তাতে তোর কি?? আর কিছু দিন পরেতো আলাদা হয়ে যাবি!! আরবি বলে

—- আয়াত ভুল কি বলেছে?? অফিসটা বাবার নিজের আর এখানে তার কোনো ইন্টারভিউ নিবেনা যে ভয় হবে,, চাকরি হবে কি হবে না,,,,, অন্য কোম্পানি হলে কথা ছিল। আয়ান খাবার ছেড়ে উঠে যেতে চাইলে আয়ানের বাবা বলে

—- চুপচাপ খাবার শেষ কর,,,.। আয়ানের চাচা বলে

—- অফিসে গিয়ে এমন এটিটিউড নিয়ে কাজ করলে হবে না,, আয়ান৷ ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। আয়ান শুধু বলে

—- হুমমমম।

_____________

নতুন কলেজ পাশেই আরিয়ানদের ভার্সিটি,,,, আর একটু দূরেই একটা মেলার আয়োজন করা হয়েছে,, আরিয়ান বলে

—- আলভিরা আর আয়ু,, শুনো ছুটির পর তোমরা চাইলে মেলায় ঘুরতে যাবো, আর ক্লাসটা মন দিয়ে কর,,, যাই। বলেই চলে যায়,, আয়াতের বেশ লাগছে কলেজটা আশেপাশে সবাই অনেক মিশুক।৷ ক্লাস শেষ করে মাঠে এসে দাড়িয়ে আছে আলভিরা আর আয়াত কারণ আরিয়ান এখনো আসেনি। তখনই একটা ছেলে এসে আয়াতকে বলে

—- হেই মিস,,, নাম কি? আয়াত বলে

—- আয়াত,,,, আলভিরা বলে

—- আপনার কি দরকার?? ছেলেটা বলে

—,, কারণ আছে,,সেকেন্ড ইয়ার মানে সিনয়র,, আচ্ছা আয়াত তোমার নাম্বার টা দিবে?? আয়াত বলে

—- দিনদুপুরে নেশা করেছেন? চেনা নাই জানা নাই!! ছেলেটা বলে

— হ্যা তোমার নেশা। প্রথম দেখায় দিল ঘায়েল,, । আয়াত বাঁকা হাসি দিয়ে বলে

—- I am not cigarette that you,, you will smoke and throw way,, I am drug baby,, that will you’ll beg for,,,, এখন সামনে থেকে দূরহ নয়তো জুতা পেটা করব। ছেলেটা বলে

— কুল কুল,, আয়াত নিজের জুতা হাতে নিয়ে বলে

— তোর কুলের মায়রে বাপ। আর ছেলেটা দৌড়ে পালায়। তখনই আসে আরিয়ান,,, ছেলেটাকে যেতে দেখে বলে

—- কি হয়েছে? সব ঠিক আছে?? আলভিরা বলে

—- আরে আপুকে প্রপোজ করতে আসছিল আপু ধুয়ে দিয়েছে৷। আরিয়ান বলে

— বাহ-বাহ,,,, বেশ ভালো। আয়াত বলে

— মেলায় যাবো না?? আরিয়ান বলে

— হুমম যাবো তো,, আয়ান ভাইয়া কল দিয়েছিল সেও আসছে। ড্রাইভার চাচ্চু গাড়ি নিয়ে গিয়েছে। আয়াত বলে

— তাহলে চল বাসায় চলে যাই। তখনই আয়ান আসে আর বলে

—- চলচল,,, তারপর এক রকম না চাওয়া সত্ত্বেও আয়াত যায়। চারদিকে হইচই,,, ইশশশ কি বিচ্ছিরি ব্যাপার,, আয়াত বার বার পিছনে পরে যাচ্ছে। তা দেখে আরিয়ান আয়াতের হাত ধরে নেয়। সেটা আয়ানের চোখের আড়াল হয়নি। একটু আগাতেই,,, আলভিরা বলে

—- ভাইয়া ফুচকা খাবো। আয়ান বলে

— এগুলো খাওয়া ভালো না।।। আয়াত বলে

— আরিয়ান আমি ফুচকা খাবো। আরিয়ান বলে

— আমিও খাবো,, চল। আয়ান বলে

— এইসব খেলে পেট খারাপ হবে। আয়াত একটু খুচা মেরে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

— সবার পেটে সব সয় না,, আরিয়ান আমারটায় ঝাল মেডিয়াম। আয়ান বলে

— আমিও খাবো। আরিয়ান মুচকি হাসি দেয় আর বলে

— মামা,,চার পেলেট ফুচকা দুইটায় ঝাল কম। আর দুইটায় মিডিয়াম। এত ভির হঠাৎ করে কারো সাথে ধাক্কা লাগে আরিয়ানের ফুচকার পেলেট টা পরে যায়। তা দেখে আলভিরা বলে

— আরেক পেলেট দিতে বলি?? তখনই আয়াত ইচ্ছে করে আয়ানকে দেখিয়ে দেখিয়ে আরিয়ানের দিকে ফুচকা ধরে,, আরিয়ানও কিছু সময় ভেবে সেটা খেয়ে নেয়। আয়ান রেগে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে

—- অনেক হয়েছে,, বাসায় চল। আয়াত বলে

—- আরিয়ান কারো সমস্যা হলে তাকে চলে যেতে বলো।। আমিতো ঘুরব,,, চুড়ি কিনব,, কুলফি খাব। নাগরদোলায় দোলব। চল। আয়ান তো রাগে ফুসছে এবার আরিয়ান হাত ধরার আগেই আয়ান আয়াতের হাত ধরে ফেলে। সেটা দেখে আয়াত অবাক হয়। কিন্তু একটু পরই আয়ানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পাশের চুড়ির দোকানে চলে যায় । দেখে অনেক সুন্দর সুন্দর রেশমি চুড়ি,, আয়াতের চোখ আটকে যায় দুই মোঠ চুড়িতে,, লাল আর নীল। আলভিরাও দুই মোঠ চুড়ি কিনে আরবি আর তার জন্য । আরিয়ান বলে

— আয়াত,,, লাল আর নীল চুড়ি গুলো তুমি নাও তোমার হাতে বেশ মানাবে।। আয়াত বলে

— আমিও তাই ভাবছি। আয়ান বলে

—, আলভিরা তুই ,, পাশে থেকে কালো চুড়িটাও নিয়ে নে। আয়াত ভাবে

—- এই খাচ্চরটা আবার চুড়ি দিয়ে কি করবে যা খুশি করুক আমার কি। তারপর অনেক ঘুরে। কুলফি খেতে খেতে আর গল্প করতে করতে মেলেয়া থেকে বের হচ্ছে আয়াতরা। একটু আগাতেই আরিয়ান বলে

—- ভাইয়া তোমরা এখানে দাড়াও,, আমার একটা ফ্রেন্ড আমাকে ডাকছে,, আসছি। আয়াত তো নিজের মতো দাড়ি আছে। আয়ান দেখে আয়াতের ঠোঁটের পাশে কুলফি লেগে আছে। তা দেখে কি মনে করে,, সে আয়াতের সামনে দাড়িয়ে নিজের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে কুলফিটা পরিষ্কার করে দেয়। আলভিরা তো অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর আয়াত তো অবাক। আয়াতের মনে পরে যায়। তাদের ফার্স্ট নাইটের কথা,, কেমন অদ্ভুত। সে আয়ানের থেকে দূরে সরে যায়। আরিয়ান আসতেই সবাই বাসায় ফিরে যায়। আয়াত ভিষণ ক্লান্ত তাই ফ্রেশ হয়ে সোজা নিচে চলে যায়। তারপর সবাই ঠিক করে ক্রাম খেলবে। আয়াত, আরিয়ান, আলভিরা আর আয়ানের বাবা। তারপরে আরবি,, আরিয়ানের বাবা,,আর যে ফার্স্ট এবং সেকেন্ড হবে সে। আয়াত গুটি আনতে রুমে চলে আসে,, রুম থেকে বের হতেই

কারো সাথে ধাক্কা লাগে আর হাতের গুটি গুলো পরে যায়,,,, আয়াত তাকিয়ে দেখে আয়ান,, সম্পূর্ণ সাদা পরে আছে। পেন্ট গেন্ঞ্জি,, তা দেখে আয়াত বলে

— সাদা মূলা। আর গুটি গুলো তুলে নিয়ে যায়। আয়াত যেতেই আয়ান বলে

— কি বললে!! সাদা মূলা,,, আর হাসিতে ফেটে পরে। আয়ান একটা জিনিস খুব লক্ষ করছে সেটা হলো।। কিছু দিন যাবৎ সে আয়াতের উপর একটু দূর্বল হয়ে পরেছে,, কিন্তু পরে ভাবে,, হয়তো তারই ভুল। আর চলে যায়

চলবে!!

তার শহরের প্রেম পর্ব-০৪

0

গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍

লেখিকাঃ- konika Islam sanju

part:04

প্রচুর আচার খেতে ইচ্ছে করছে আয়াতের হস
পিটালে ৭দিন থেকে আর সেই খাবার খেয়ে মুখের টেষ্ট একদম নষ্ট হয়েগেছে।। তাই কিছু না ভেবেই কিচেনে চলে আসে,,, জারটা বেশ উপরে রাখা,, চেয়ার দিয়েও জারটা নাগাল পেলো না আয়াত,, তাও সে চেষ্টা করতে থাকে। এক হাতে ব্যাথাটা এখনো অনেক । তখনই আয়ান কিচেনে আসে পানি নিতে,, আর দেখে আয়াত আচারের জারটার জন্য একরকম যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে,,, আয়ান বলে

—– পোনে চার ফিটের ডোরেমন দের কাম্য নয় এই জার নামানো সাইড দে আমি নামিয়ে দিচ্ছি।

আগের আয়াত হলে ঠাস ঠাস কথা শুনিয়ে দিত,, কিন্ত না সে আর এখন আর আয়ানের সাথে ঝামেলা করতে চায় না। সে নিজের চেষ্টা চলাতে থাকে,, আয়ান গিয়ে সোজা কোলে তুলে নেয় আয়াতকে,,, সময়িক ব্যাপারে আয়াত অবাক,,, এটা কি আয়ান নাকি অন্য কেউ,, আয়ান,, আয়াত কে চেয়ারে বসিয়ে জারটা ওর হাতে দিয়ে চলে যায়। আর আয়াত এখনো জার হাতে বসে আছে।।। তখনই কিচেনে আসে আরিয়ান। আয়াতকে এভাবে আচারের জার হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখে বলে

—- কি হয়েছে আয়ু?? আয়াতের ঘোর কাটলে বলে

—- না না কিছু হয়নি তেমন,, আসলে ঐ আর কি,, আচার খাবো ভাবছিলাম জার ওপেন হচ্ছিল না,,,,,,,,আরিয়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলে

—-আমার কাছে দাও,, আমারও ঝাল ঝাল কিছু খেতে ইচ্ছে করছে,,, ।। আয়াত খুশি হয়ে বলে

—- চল মুভি দেখি আর আচার খাই,,ঘুম আসছে না । আয়াতের কথায় আরিয়ানও রাজি হয়ে যায়। তারপর ডানিং টেবিলে বসে পরে সামনে আরিয়ানে ফোন দুজন একসাথে বসে বসে আচার খাচ্ছে আর মুভি দেখছে। রাত তখন ১২/৪০ নাগাত। আয়ান আবার আসে কিচেনে কারণ সে পানি না নিয়েই চলে গিয়েছিল,,,,, পরে ফিরে এসে আয়াত আর আরিয়ানকে দেখে থমকে যায়,,,, কেন জানি সহ্য হচ্ছে না। দুজনেই বেবি বস মুভি দেখছে আর হাসছে। সেটা দেখে আয়ান তাদের সামনে গিয়ে বলে

—- কি হচ্ছে এখানে?? আয়ানকে দেখা মাত্র আয়াত আরিয়ানকে বলে

—- আরিয়ান তুমি থাকো আমি যাই,,, ঘুমাবো। কালকে থেকে তো কলেজ যাবো ওয়েট কর কেমন? আয়াত এই বলে চলে যায়,,, আয়ান এখনো সেখানে দাড়িয়ে আছে আর আয়াতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। সত্যি মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে নয়তো কেউ এতটা ইগনোর করতে পারে না। ঐ দিনের পর থেকে আয়াত আয়ানের সাথে কথা বলে না,, ইভেন বাসার সবাইও। আরিয়ানও আয়ানকে বলে

— গুড নাইট বিগ-বি।

__________♪♪♪♪♪

সেদিন আয়াত বেচে যায়,,,সময় মতো হসপিটালে নেওয়াতে। আয়াত চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে উপরে সাদা ছাঁদ,,, হাত ব্যাথায় মুভ করতে পারছিল না,,,পানি তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গেছে,,, ধীরে ধীরে উঠে বসতে যাবে,, তখনই পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ানের মা,, আর চাচাি,,, আরবি আর আলভিরা,, সোফায় ঘুমানো। ইশশ শুধু শুধু তার জন্য অন্যরা কষ্ট পাচ্ছে,, । তখনই আলভিরার ঘুম ভেঙে যায় দেখে আয়াত উঠে বসছে তাড়াতাড়ি করে গিয়ে বলে

—- আপু কি হয়েছে? কি লাগবে তোমার,, আয়াত খুব কষ্টে বলে

— পানি খাবো।। তাদের কথায় আয়ানের মা জেগে উঠে
,,, আয়াতের সেন্স ফিরতে দেখে আয়ানের মা আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

—- কিরে এখন কেমন লাগছে।জানিস কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,, এমনটা কেউ করে? তখনই আরবি এসে একটা চড় বসিয়ে দেয় আয়াতের গালে।। আয়ানের চাচি বলে

— কি শুরু করলি!! আরবি বলে

— বড় মা তুমি চুপ কর,,, কি মনে করে নিজেকে!! ওর যদি কিছু হয়ে যেত!!! কার জন্য এইসব করছে!! যে তাকে চায় না। নিজেকে সট্রং করতে হবে। আমার দিকটা দেখে না তিন বছরের সংসার ত্যাগ করেছি কই আমি ভেঙে পরেছি!! বেশ তো আছি,,,। আয়াত কান্না করছে। আরবি বলে

— এখন থেকে আয়াত আমাদের সাথে থাকবে,, আর এই ছয় মাসে যদি আয়ান ভালো না হয় তাহলে ওদের ডিভোর্স হওয়াটাই উত্তম,, কারণ আয়াত বেটার কাউকে ডিসার্ভ করে তোমার ছেলের থেকে। আর সুস্থ হলে কলেজ যাবি,, আরিয়ান ভার্সিটির সাথেই কলেজ সেখানে যাবি তুই আর আলভিরা । আর এর উপর আমি কোনো কথা চাই না।

বলেই কেবিন রুম থেকে চলে যায়,,,,,, তারপর একে একে সবাই আয়াতকে বুঝায়। পরে সবাইকে আয়াত বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে,,শুধু আরিয়ান আছে, কারণ সবাই রাত জাগা,,, আলভিরাকে দিয়ে নিজের ফোনটা আনিয়েছে। কয়টা বাজে দেখতে ফোনটা হাতে নিতেই ফোন স্কিনে ভেসে ওঠে তার আর আয়ানের রিসিপশনের একটা পিক,,, আয়ান কেমন একটা বার দেখতে আসলো না,, কি করে হতে পারে এমন একটা মানুষ রেগে ফোনটা সজোরে মেঝেতে ছুড়ে মারে,, আর সেই আওয়াজ শুনে আরিয়ান দৌড়ে কেবিনে আসে।। দেখে আয়াত বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আর ফোনটা মেঝেতে পরে আছে। আরিয়ান বলে

—- কি হয়েছে আয়াত?? কোনো সমস্যা!! আয়াত বলে

—- না কিছু না,,এমনি, । আরিয়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলে

—- আয়ান ভাইয়াকে মিস করছ? আয়াত মুখ ফিরিয়ে বলে

—- আমি কাউকে মিস করি না যার আমার থাকা না থাকাতে কিছু যায় আসে না তার জন্য আমি কেন মন খারাপ করব!! আরিয়ান আয়াতের পাশে বসে৷ হাতটা ধরে বলে

—- তুমি আমার বোনের মতো,,, তুমি জানো ভাইয়া কত বার কল দিয়েছে,, আর আসতে পারেনি দিদুনের জন্য,, বুঝইত বয়স হয়েছে তার । আয়াত বলে

—- দেখ আমি তাকে আসতে বলিনি,,, আর আমার ভালো লাগছে না,,, তখনই দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করে,, কেউ। আয়াত দেখে আয়ান। চুলগুলো ভেজা এখানো,, শার্টের হাতাও ঠিক নেই, হয়তো শাওয়ার নিয়ে আর লেট করেনি,, আয়ান তাকিয়ে আছে আরিয়ানের হাতের দিকে,,, আরিয়ান তা দেখে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলে

— তোমরা কথা বলো। আমি বাইরেই আছি কিছু লাগলে বলো। আয়ান বলে

—- এখন আমি আছি তোর লাগবে না। আরিয়ান একটা হাসি দিয়ে চলে যায়। আয়াত বেডে শুয়ে পরে,, আর চোখ বুজে নেয়। আয়ান দেখে মেঝেতে আয়াতের ফোনটা পরে আছে। ইশশশ কি হাল করেছে মেয়েটা একদিনেই। আয়ান ধীরে ধীরে আয়াতের পাশে বসে বলে

—- আয়াত আই এম সরি,,,, প্লিজ মাফ করে দে আমার এভাবে বলাটা উচিত হয়নি,,, কিন্তু না আয়াতের কোনো রেসপন্স নেই। তখনই একটা নার্স কেবিনে আসে আর বলে

—- আপনি বাইরে জান পেসেন্ট কে কিছু সময় আগে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।৷ আয়ান মন খারাপ করে চলে যায় । আয়ান যেতেই চোখ মেলে তাকায় আয়াত,,মনে মনে বলে

না আর না,,, অনেক হয়েছে। এভাবে ভেঙে পরলে চলবে না। আজকে থেকে সে দূরে চলে যাবে আয়ান নামক মানুষটার থেকে,, তাকে নিয়ে আর ভাববে না। নিজেকে সময় দিবে এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে আয়াত,,

___________

প্রায় ৭ দিন পর আয়াত বাসায় ফিরে হসপিটাল থেকে,,,, তার বাড়িতে এখনো জানানো হয়নি,, আয়াত নিজেই বারণ করেছিল। গাড়িতে উঠার সময় আয়াত পরে যেতে চাইলে আয়ান ধরতে আসে কিন্তু তার আগেই আরিয়ান আয়াতকে ধরে ফেলে। আয়ানের কেন জানি সেইসব সহ্য হচ্ছিল না। আয়াত বাসায় আসে,,, ,, দিদুন আয়াতকে দেখে কান্না জুড়ে দেয়,, আর আয়ান এসেই রুমে চলে যায়। আয়ান ভাবে আয়াত তো রুমে আসবেই তখন না হয়,,, কথা বলে সব ঠিকানা করে নিবে। কিন্তু রুমে আসে আরবি। আরবিকে দেখে আয়ান অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে বলে

—- তুই এখানে??? আরবি বলে

—- আয়াতের,, জামা-কাপড় কোথায়!!! আয়ান অবাক হয়ে বলে

— কিন্তু কেন? আরবি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে

— তোর না জানলেও চলবে,, আলভিরা রুমে আয়। বলেই কাবার্ড খুলে জামা গুছিয়ে লাগেজে ভরে। আয়ান এইবার কিছুটা রেগেই বলে

—-কি হচ্ছে এই সব? আলভিরা বলে

— তোমার জন্য গুড নিউজ আয়াত আপ্পি আমাদের সাথে থাকবে বলেই চলে যায়। আয়ানের এতে খুশি হওয়ার কথা কিন্তু তার কোনো রিকেয়শন নেই।

সারাদিনে আর আয়াতের দেখা মিলেনি আয়ানের,,সব শেষে কিচেনে গিয়ে দেখে,,, আয়াত জার এর জন্য লাফালাফি করছে।। আয়ানের এইসব বিরক্ত লাগছে,, বিশেষ কর আয়ত আর আরিয়ানের,, ব্যাপারটা

চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে,,, ♥️♥️

তার শহরের প্রেম পর্ব-০৩

0

গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍

লেখিকাঃ- konika Islam sanju

part:03

আয়াত ছবি তুলে আয়ানকে পাগল করে দিয়েছে। ক্যামেরা মেন তো প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছে। আয়ান আয়াতের কানে কানে বলে

—- দেখ,,, এখন ইস্টপ যা,,, যা ছবি তুলেছিস তোর নাতি নাতনিও দেখে শেষ করতে পারবে না। আয়াত বলে

—- দেখুন আমি কোনো ভেজাল চাই না,,,, খুব সুন্দর করে সেজেছি,, আয়ান বলে

—- সুন্দর না ছাই,,, পেত্নীর মতো লাগছে। আয়াত বলে

—- আয়রনের (আয়ান) বাচ্চা চুপ করে পিক তুলেন নয়তো,,, আবার আপনাকে বিয়ে করব,,, আয়ানও দাঁত চেপে চেপে সব সহ্য করে। বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ। আয়ানের না চাওয়া সত্ত্বেও যেতে হচ্ছে আয়াতদের বাড়ি৷ সারাদিন ক্লান্তির ফলে আয়াত ঘুময়ে যায়, আয়ানের কাঁধে। আয়ান বিরক্ত হয়ে আয়াতের মাথাটা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে দেয়,,, আয়াত আবার সেই আয়ানের কাঁধে ঢলে পরে,,, কিছু বলতেও পারছে না সহ্য করতেও পারছে না। আয়াতের ঘুম ভাঙলে দেখে সে বাসায় পৌঁছে গিয়েছে,, সবাই স্বাভাবিক থাকতে চাইলেও কেউ পারছে না। আয়ান রুমে ঢুকে দেখে আয়াত বিছানায় বসে আছে চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো। আয়ান রেগে বলে

—- এমন সং সেজে বসে থাকার মানে কি!!!আয়াত রেগে বলে

—- কেন জানেন না!! আর এটা আমার রুম,, যেমন খুশি বসে থাকব,, দরকার হলে গরাগরি খাবো আপনার কি হুমমমম!!! আয়ান বলে

—– আজ কাল জবান তোর বেশি চলে,,,, আয়াত বলে

—- মাই জবান ইজ মাই জবান নট ইউর জবান,, আপনার এত সমস্যা কেন? আয়ান বলে

— আর একটা কথা বলবি,,, রুম থেকে বেড়িয়ে যাবো। আয়াত রেগে গিয়ে উঠে দাড়ায় আর বড় বড় কদম রেখে আয়ানের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে

—- আপনি একটা,,, আপনি একটা বন হাতি।।। যা খুশি করেন,, আর এত সমস্যা হলে বিয়ে কেন করেছেন?? আয়ান তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে

— সেটা তুই ভালো করেই জানিস,,,, আমি তোকে না আরিফাকে লাইক করি। আয়াত এবার রেগে গিয়ে বলে

—- আরিফা আপুর মধ্যে কি এমন আছে যা আমার মাঝে নেই!!! কোন দিক দিয়ে কম্তি!! আপনার কি চাই হ্যা,,,নিজের বউ থাকতে,,,, আরেকটা মেয়ের কথা ভাবেন কি করে!!! আর এই সব দোষ আরিফার কেন যে গেলো,,,,, অসহ্য,, সাথে সাথে একটা চড় বসিয়ে দেয় আয়ান আয়াতের গালে। আয়াত চুপ গালটা গরম হয়ে গেছে,, চোখ দিয়ে পানি পরছে।।।৷ আয়ান বলে

—- সমস্যা তুই!! কারণ তুই আরিফা না,,, তোর আর আরিফার মাঝে অনেক তফাত,, সে তোর মতো লাফায় না,,, বড় গলায় কথা বলে না। আর নিজেকে বউ দাবি করলেই কেউ বউ হয়না নিজের লিমিটে থাকবি। বিয়েটা আমি চাপে পরে করেছি। নয়তো তোর মতো মেয়েকে কেই বা বিয়ে করবে!! আরিফার সাথে নিজেকে তুলোনা করিস,, ওর নোখের যোগ্যতা তুই রাখিস!!! আর রূপের কথাতো বাদেই দেই,, তোর ওর মতো দুধে আলতা গায়ের রং,, লম্বা চুল,, নীলমণির চোখ কোনটা আছে তোর!!! আয়াত আর কিছু শুনতে চায় না তাই সোজা রুমে থেকে বেড়িয়ে আসে আর চলে যায় ছাঁদে,,,,, রাত অনেক হয়েছে সবাই ঘুমে,, আয়াত মেঝেতে বসে চিৎকার করে কান্না করছে,, কিছু সহ্য হচ্ছে না তার। আয়ান রেগে দরজায় নক দিয়ে বলে

—– এমন নাটক করার মানে কি!! কি বুঝাতে চাস নিচে আয়। আয়াত তখন কান্না করছে,, আয়ান রেগে চলে যায় । আয়াত কান্না করতে করতে বলে

—– কেন পরলাম “তার শহরের প্রেম” এর মায়ায়,, কেন, ,,,,,৷ সবইতো ঠিকঠাক ছিল,, আরিফা আপুর সাথে বিয়েটা হলেও পারতো,, হয়তো আমার কষ্ট হত তবে এতটা না,,,,,, একসময় ঠিক সামলে নিতাম নিজেকে কিন্তু এখন,, সে আমার হয়েও অন্যের নাম জপে।।। সারা রাত নির্ঘুমে কান্না করতে করতে কাটিয়ে দেয় আয়াত ভরের আযান কানে আসতেই নিচের দিকে পা বাড়ায়।।। রুমে গিয়ে দেখে আয়ান ঘুমচ্ছে,, কেমন নিষ্পাপ লাগছে তাকে। কিন্তু কালকের কথা মনে পরতেই আয়াত মন খারাপ করে চলে যায়। জামা বদলে সে নামাজ পরে নেয় মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে। সে চুপচাপ বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়,, ব্যস্ত শহর,,, ব্যস্ত মানুষের আনাগোনা হঠাৎ করেই সব কেমন অন্ধকার অন্ধকার লাগছে কোনো রকম দোলনা টায় বসে সে। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে। তীব্র রোদ চোখে পড়তেই ঘুম থেকে উঠে বসে আয়াত ,,, তাকিয়ে দেখে সে বিছানায়,, সে তো বারান্দায় ছিল। পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ান ফোনে কিছু করছে। আয়াতের দিকে তাকিয়ে থমকে যায় আয়ান,,, চোখ মুখ ফুলে একাকার,, চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। আয়ান বলে

—- সরি আসলে কাল রাতে বেশি বেশি,, আয়াত কিছু না বলেই ওয়াশরুমে চলে যায়,, কান্না আসছে তার। আর অন্য দিকে আয়ান বলে

— এত রাগ,, যা খুশি করুক আমার কি!! পরপর দুইদিন কেটে যায়,, আয়াত আয়নের সাথে কথা বলে না এক রুমে থাকলেও যে যার মতো। রাতে সোফায় ঘুমায় আয়াত আর আয়ান বেডে। আজ সকালে সবাই একসাথে নাশতা করছে। তখনই আয়ান ডাকে

— আয়াত,,,।। আয়াত খুশি হয়ে যায় হয়তো নিজের ভুলটা বুঝতে পারছে আয়ান,, কিন্তু না আয়ান বলে

—- দেখ তোকে আমি ভালে রাখতে পারবো না,, তাই আমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ করা উচিত।। সবার গলায় খাবার আটকে যায়,, আয়ানের বাবা বলে

—- এইসবের মানে কি আয়ান!! আয়ান বলে

—- বাবা তুমি বেশ ভালে করেই জানো,, আমি বিয়েটা কেন করেছি। আর ডিভোর্স হলেই ভালো থাকব আমরা দুজন। আয়াত সাথে সাথে খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে যায়,,, তা দেখে আলভির আর আরবিও পিছু পিছু আসে আয়াতের। কিন্তু রুমে আসার আগেই মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয় আয়াত।। সেটা দেখে আলভিরা বলে

—- আপু দরজা খুলো,, এই আপু।। আরবি বলে

— আয়াত দরজা খুল,,সব ঠিক হয়ে যাবে। এই আয়াত।।। সবাই খাবার ছেড়ে চলে আসে আয়ান বলে

—- আবার!!! আয়ানও যায় আয়ান গিয়ে বলে

—- আয়াত এইসব নাটক আর ভালো লাগছে না বেরহ রুম থেকে। তোর আর আমার জন্য এটাই ঠিক। আয়ানের বাবা বলে

—-চুপ,,৷ আরিয়ান (চাচাতো ভাই),, রুমের ডুবলিকেট চাবিটা নিয়ে আয়। আরিয়ান বলে

—- জ্বি চাচ্চু,,, রুমের ডুবলিকেট চাবি এনে দরজা খুলে যা দেখে সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে। আয়াতের হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত পরছে,, পাশেই পরে আছে ফলকাটার সেই ধারালো ছুরি। রক্তে লেপ্টে আছে তার হাত,, আলভিরা আর আরবি তো কান্নাই করে দিয়েছে। আয়ানের মা গিয়ে তারাতাড়ি করে বলে,,

—- কেউ রুমাল কিছু দাও,, আয়ানের চাচি নিজের শাড়ির আচল ছিড়ে তারাতাড়ি হাত বাঁধে আয়াতের। আয়নের চাচা হসপিটালে কল দেয়,, আর আয়নের বাবা বলে আরিয়ান জলদি গাড়ি বের কর। আয়ানের সম্পূর্ণ শরীর মনে হচ্ছে জমে বরফ হয়ে গেছে। সে জানতো আয়াত তার জন্য পাগল,, কিন্তু এমন কিছু করবে ধারনার বাইরে ছিল।। আয়ানের বাবা বলে

— তোর জন্য মেয়েটা এই অবস্থা,,,৷ আজ যদি ওর কিছু হয় তোকপ জেলে দিব। তখনই আরিয়ান দৌড়ে আসে আর বলে

—- চাচ্চু তাড়াতাড়ি আসো,, এই বলে আয়াতকে কোলে তুলে নিল। আয়ান এখনো সেই জায়গায় ঠাই দাড়ানো,,, আরবি আয়ানের কাছে গিয়ে বলে

—- এক জন তোকে ছেড়ে যেতে দুইবার ভাবেনি,, আর অন্য জনকে তুই ছাড়ার কথা বলতেই, সে দুনিয়ার মায়া ছাড়তে চেয়েছে ,,, আজ যেমন আয়াত তোর জন্য কাতরাচ্ছে,, সেইদিন বেশি দূরে না যখন তুই ওর পিছু ঘুরবি তুই ওর জন্য পাগল,, থাকবি এই চেনা শহরেই তোদের দেখা হবে,,, মাথায় নাড়া দিয়ে উঠবে হাজারো স্মৃতি কিন্তু হয়তো তোরা আর এক থাকবি না।। বলেই চলে যায়।।

চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে।।।

তার শহরের প্রেম পর্ব-০২

0

গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍

লেখিকাঃ- konika Islam sanju

part:02

সেই কখন থেকে গোসল করে বাথটাবের পাশে বসে আছে আয়াত,,,, ধূর ভালো লাগে না বেটা আয়রন সেই কখন থেকে আটকে রেখে দিয়েছে ওয়াশরুমে।এখনো খুলে নেই মারা টারা গেলো নাকি আরিফা আপুর দুঃখে,, এই যে শুনছেন??? কোথায় গেলো!! এই,যে । কোন দজ্জালের পাল্লায় পরলাম!!!

নিচে বসে বসে খাবার খাচ্ছে আয়ান ( নায়করে নাম আয়ন থেকে চেন্ঞ্জ করে আয়ান রাখা হলো) তখনই আয়নের মা বলে

—- কিরে আয়ান,, আয়াত ঘুম থেকে উঠেনি?? আয়ান,,,, জুস খেতে খেতে বলে

—- তাই বল নতুন বউ এভাবে পরে পরে ঘুমায়??? আয়ানের দিদুন বলে

—- চুপ কর আয়ান,, মেয়েটার দিক টাও তো বুঝতে হবে,,,, সে কি প্রস্তুত ছিল কালকের জন্য!! সব দোষ তো ঐ আরিফার। আয়ানের বাবা বলে

—- আহহহহহ মা বদা দাও না। আয়ানের কাকি মা বলে

—- হ্যা মা বদাদেন,, আসল কথা হচ্ছে আয়ানের জুটি আমাদের আয়াতের সাথে ছিল,,, । আয়ান খাবার ছেড়ে উঠে বলে

—- আমার খাবার হয়ে গেছে,,, আর উপরে চলে যায়,, দেখে আয়াত দরজা ধাক্কাচ্ছে,,,

—- এই যে দরজাটা একটু খুলুন না,, এই যে শুনেছেন?? ধূর কোথায় গেলো,,, একদম ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। দরজার সাথে লেগে কথাটা যেই না বললো,, তখনই আয়ান দরজা খুলে দেয়,, আর আয়াত সোজা গিয়ে পরে আয়ানের উপর। আয়ান মেঝেতে পরে যায় আর আয়াত তার উপর ভিজা চুলে লেপ্টে আছে আয়াতের মুখ,,, আয়ান চোখ-মোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। আয়ান বলে

—- ঐ লোহার বস্তা উঠ তোর মতো মুটি আমার উপর পরেছে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আয়াত রেগে গিয়ে সেভাবেই আয়ানকে বলে

—- কি বললেন?? আমি মুটি?? মাত্র ৫০ কেজি,,, আর পানি?? ৬৫/৭০ কেজি আপনার ওজন তাহলে কালকে আমি কি ভাবে নিয়েছি,,,, আমার উপরে কিভাবে পরেছিলেন কালকে। আয়ান আয়াতকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে উঠে বলে

—- এক মুনের উপরে,,, আবার নিজেকে চিকন বলে,,, এই শুন কথা কম বলবি,,, এত কথা বলিস কেন? আয়াত রেগে উঠে দাড়িয়ে বলে

— দেখুন আমাকে তুই তুই করে বলবেন না,, আমি আপনার বিয়ে করা বউ একটু সম্মান দিয়ে বলবেন।নয়তো। আয়ান এক ভ্রু উচু করে আয়াতের দিকে আগাতে আগাতে বলে

—- নয়তো কি??? আয়ানকে আগাতে দেখে আয়াত পিছাতে লাগে,,,, আয়ান বলে

— নয়তো কি!! বল।। পিছাতে পিছাতে একবারে বেডের কাছে চলে এসেছে,, তখনই আয়ান সামনে আসলে,,আয়াত পরে যেতে চাইলে ,, আয়াত আয়ানের টিশার্ট ধরে আর দুজন সোজা গিয়ে পরে বেডে।। তখনই রুমে আসে আয়ানের বোন আলভিরা,,, আর চাচাতো বোন আরবি, দরজা,,, আয়ান রাগে লক করতে ভুলে যায়, আরবি বলে

—- সরি সরি,,, আমরা কিছু দেখেনি দেখেনি,, আসলে আয়ান ভাইয়া তোমাকে আর ভাবিকে নিচে খেতে যেতে বলেছে,,, বাবা অনেক রাগ করেছে ভাইয়া খাবার ছেড়ে এসেছে তাই,, তোমরা নিচে আস আমরা যাই,,, বলেই চলে যায়। আয়াত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,,, কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতের ঘি,, যা ভাবছে তা কিছুই হয়নি,,, আহাম্মকের দল!!!

__________________

আয়াত তাড়াতাড়ি করে উঠে বলে

— সব দোষ আপনার কি ভাবলো ওরা!! আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

—- যা খুশি ভাবুক আমার কি!! আয়াত বলে

— আপনার কি মানে?? আপনার কিছু যায় আসে না? আয়ান উঠে বসে বলে

—- দেখ তুইও ভালো করে জানিস আমাদের মাঝে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই আমি আরিফা কে লাইক করি। আয়াত রেগে আয়ানের টিশার্ট ধরে নিজে কাছে নিয়ে এসে বলে

—- দেখুন বাজে বকবেন না,, আমারা বিয়ে নামক এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ,, আর আরিফা আপু যে আপনাকে মাঝ পথে ফেলে চলে গিয়েছে তাও কেন তার কথা বলছেন,,, আর বিয়ের পর অন্য আরেকজনকে নিয়ে ভাবা মানে পরকিয়া,, বুঝছেন!?? আয়ান রেগে নিজের টিশার্ট ছাড়িয়ে বলে

—- বেশি বুঝিস না,,, ।। আয়াত রেগে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে চুলগুলো চিরুনি করতে করতে বলে

—– দেখুন আমি অবলা নারী না,, আপনার সাথে আমার বিয়ে হেয়েছে তাই,, বলছি আপনি আমার,, আর এখন আমার খুদা লেগেছে,, নিচে আসুন খেতে,, এই বলে দরজার কাছে যেতেই আয়ান বলে

— এত যে নিজেকে বউ বউ বলে দাবি করছিস তা জানিসনা নতুন বউদের এমন চেটাং চেটাং কথা বলতে নেই, আর তুই একা নিচে যাবি!! মানুষ কি ভাববে? আয়াত বিরক্ত হয়ে বলে

—- তা আপনিও তো হাসবেন্ড তাই না??? তা সেই হাসবেন্ড হয়ে আমার কোন মহৎ কাজটা করেছেন? নিজেতো খেয়ে এসেছেন কম বেশি আর আমি?? সে খবর আছে? থাকবে কি করে!! আয়ান রেগে উঠে বলে

—- নিচে চল আমি দেখব তুই কত খেতে পারিস। আয়াত বলে

—- আপনার মতো হাসবেন্ড যে পাবে তার কপাল পুরা,, এখন আপনি এটাও দেখবেন আমি কেমন খাই??? আয়ান বলে

—- তোর মতো বাচাল আমি দুইটা দেখিনি যা সর। বলেই নিচে যেতে লাগে,, আয়াতও সেম আয়ানের পিছু পিছু যেতে লাগে,, নিচে নেমে চেয়ার টেনে বসে আয়াত,,, তা দেখে আয়ানের দাদিমা বলে

—- কি গো নাত বউ ঘুম হলো!??? আয়াত বলে

—- হুমম দিদুন। আয়ান বলে

—- আম্মু বাবা কাকা কেথায়??!! আয়ানের মা আয়াতকে ব্রেকফাস্ট দিতে দিতে বলে

—- তোর কাজে রেগে আছেন দুজনই,,, তুই বাড়ির ছেলে তা তোর বাবা-কাকাইকে তো জানিসই কেমন তারা। আয়ানের চাচি বলে

—- আহহহহহ ছোট বাদ দে তো,,, আয়াত তোমার কিছু লাগবে?? তখনই আরবি বলে

—- হেহে,, ভাইয়াই তো আছে,,, তাই না ভাইইইইইয়া!!! আয়ান আয়াত আর আরবির দিকে রাগী চোখে তাকায় তা দেখে আলভির গান গায়

—- Nazar Thi Paini Hui Bechaini
Aankhon Aankhon Mein Shaitani Ho Gayi
Saiyaan Ne Dekha Aise
Main Pani Pani Ho Gayi,,,,, আলভিরার গান শুনে আয়ানের গলায় খাবার আটকে যাওয়ার অবস্থা । আর অন্য দিকে আয়াত আয়নের কান্ড দেখে মনে মনে বলে

—– তোর ভাই একটা খচ্চর,, আমাকে বাথরুমে আটকে রাখে,,, আর তোর এই ভাইয়ের জন্য বিশুদ্ধ পানিতেও আয়রন জমে যাবে,,,কি খবিশ মার্কা হাসবেন্ড,, তখনই আয়াতের পায়ে কেউ খুব জুড়ে পা রাখে,,, হঠাৎ এই কাজে আয়াত ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে লাফিয়ে ওঠে,,,, সে তা দেখে সবাই বলে

—– কি হয়েছে!! কি হয়েছে??? আয়াত খেয়াল করে দেখে আয়ান ঠোঁট চেপে চেপে হাসছে। তা দেখে আয়াত বলে

—- আর বল না,, একটা বিশাল বড় দত্য আমার পায়ে পা রেখেছে,,।। আলভিড়া বলে

—- সেই দত্য টার নামি কি আয়ান রাহমান নাকি ভাবি?? আয়াত হেহে করে হাসি দিয়ে বলে

—- তুমি দেখি খুব বুদ্ধি মান। আয়ান পানি খাচ্ছিল আয়াত আর আলভিরার কথা শুনে মুখ ফসকে পানি বেড়িয়ে আসে আর সেটা গিয়ে পরে আরবির উপর,, সবাই মুখ চেপে হাসছে,,, আয়ান বেশ লজ্জা পাচ্ছে। তা দেখে আয়াত মনে মনে বলে

—- ভাবটা এমন করছে যে সে নতুন বউ,,, আরে আমি নতুন বউ তোর বউ তুই লজ্জা পাবি কেন? পাবো তো আমি,,, কিন্তু আমার তো লজ্জা লগছে না,, আমার তো তাকে দেখে সেই শান্তি লাগছে। আয়ানের মা বলে

—– আয়াত রুমে যা,, রিসিপশনের জন্য তোকে পার্লার থেকে লোক আসবে সাজাতে,, আর আয়ান তুইও যা,,, ।। আয়ান বলে

—- আমি কি করব!! আয়ানের দিদুন বলে

—- একটু টাইম দে,,, দুজন দু’জন কে বুজ। আয়ান বলে

—- অকে কি বুঝব,,, আয়ানের মা বলে

—- তোরা এখন থেকে একে অন্যর সাথে থাকবি তো,, আয়ান বলে

— বুজছি,, আয়াত উপরে আয়। আয়াত রাগে ফুসছে রুমে তুই বলে আলাদা হিসাব সবার সামনে তুই বলার কি আছে??! রুমে প্রবেশ করতেই আয়তা আয়ানকে বলে

—- দেখুন আমাকে আপনি সবার সামনে তুই তুই করে বলবেন না নয়তো আমিও,, আপনাকে তুই তুই করে বলবো। আয়ান আয়াতের মাথায় গাট্টা মেরে বলে

—- ছোট ছোটর মতো থাকবি। আয়াত বলে

—- আমি এখন কলেজে পরি,, কিছু দিন পর ১৮+ হয়ে যাবো,, বুজছেন। আয়ান আয়াতকে বেঙ্গ করে বলে

—- ১৮+ হয়ে যাবো,,, হাপ যাহ ভাগ,,

চলবে??

তার শহরের প্রেম পর্ব-০১

0

গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍
লেখিকাঃ- konika Islam sanju
part:01

চাচাতো বোনর জায়গায় বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছি,,, আজ আয়ন ভাইয়া আর আরিফা আপুর বিয়ে ছিল,, কিন্তু বিয়ের ঠিক কিছু সময় আগেই আরিফা আপু হাওয়া,,, মানে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে। আর তার বদলে বুলির পাঠা হতে হয়েছে আমার। এতে অবশ্য আমার বিন্দু মাত্র আফসোস নেই কারণ আয়ন ভাইয়ার প্রতি আমি বরাবরই ক্রাশিত,, একবার বলেছিলাম,,,,যে তাকে আমি লাইক করি,,

তখন সবে মাত্র ক্লাস টেনের ছাত্রী ছিল আয়াত,,, সারাদিন স্কুল করে বিকেল ৫ টা নাগাত বাসায় ফিরি,,, তখনই দেখি ড্রয়িং রুমে আড্ডায় মতে ছিল, আয়ন ভাইয়া,,, সাদী ভাইয়া,আরিফা আপু,, আরো অনেকে,,, তারপরের দিন ছিল আরিফা আপুর জন্মদিন। আর আমারও ছিল পরীক্ষার ব্যাপক চাপ,,,,সামনেই বোর্ড পরীক্ষা,,, আপুর জন্মদিনের দিন জানতে পারি,,, আয়ন আর আরিফা আপুর বিয়ে,,, আরিফা আপুর অর্নাস কম্পিলিট হলেই তাদের বিয়ে। মানে এক বছর পর। কথাটা শুনা মাত্র মনটা ভেঙে গিয়েছিল। নিজের সেই অবাধ্য অনুভূতি গুলোকে আর দমিয়ে রাখতে পারেনি। সেদিন রাতে ছাঁদে দাড়িয়ে আয়ন ভাইয়া দাড়িয়ে সিগারেট টানছিল,,,,,,তখনই আমি ছাঁদে যাই,,,,, আয়ন ভাইয়া আমাদের বাসায় আসলে,,, এক মাত্র এই ছাঁদেই বেশি পাওয়া যায়,,, আমাকে দেখে সিগারেট টা ফেলে বলেছিল

—- কিরে তুই এখানে?? কিছু না ভাবেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম

—- আই লাভ ইউ ভাইয়া,, তুমি বিয়েটা ভেঙে দাও। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আমি তোমাকে লাইক করি । আয়ন ভাইয়া আমাকে ছাড়িয়ে বলে

—- পাগল হয়েগিয়েছিস? আমার আর আরিফার বিয়ে ঠিক,, আমি আরিফাকে লাইক করি। আর তুই এইসবের কি বুঝিস? বেশি পেকে গিয়েছিস না,,, কানের নিচে দুইটা পরলে ঠিক হয়ে যাবি। মামা-মামী কে বলব??? সেদিন অনেক ভয় দেখিয়ে পাঠিয়ে দেয়,,, কিন্তু আমি আর আমার অবাধ্য মন সব মানতে নারাজ ছিলাম। পরীক্ষার রেজাল্ট ও আহামরি ভালো হয়নি।।। ভাইয়ার প্রতি আরো দূর্বল হয়ে যাই৷ বিয়েটা যেন আমি মানতেই পারছিলাম না। অনেক কল্পনা জল্পনা করেও কোনো রাস্তা পেতাম না,, হঠাৎ করে আরিফা আপুই সেটা তৈরি করে দেয়।

_________
।আয়াতের অতীতের ভাবনায় ছেদ ঘটে যখন রুমে কেউ প্রবেশ করে,,, দেখে আয়ন হাতে বিয়ারের বোতল।

আয়াত মনে মনে বলে আল্লাহ বাঁচাও যেই রাগ এই ব্যাটার এই বোতল ভেঙে আমার পেটে ঢুকিয়ে না মেরে দেয়। রক্ষা কর আল্লাহ রক্ষা কর। আয়াত মনে মনে এইসব বলছে,,, অনেক সময় হওয়ার পরও আয়াত কোনো সারা শব্দ পায়না। তাই ঘোমটা তুলে দেখে আয়ন কোথায়,,, চোখ মেলে তাকাতেই দেখে আয়ন তার সামনে দাঁড়ানো। কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বোতলটা সাইডে রেখে,,, আয়াতের দিকেই আগাচ্ছে,,, ভয়ে আয়তাের হার্ট বেচারা লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে,,,

এখন না বলে এইটা আমার প্লান আমি আরিফা আপুকে পালাতে বলছি,, আর দুই চারটা চড় বসিয়ে দেয় গালে। কিন্তু না অবাকে করে আমার ঠোঁটে লেগে থাকা লিপস্টিক টা নিজের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে মুখটা কাছে নিয়ে বলে

—- আই লাভ ইউ। বলে কি!! আমাকে লাভ করে,,, ওএমজি,,, ভাবা যায়,,, খুশিটা আর বেশি সময় থাকল না আমার মুখে। আয়াতের কপালে চুমু দিয়ে বলে

—- আই লাভ ইউ আরিফা। মুহূর্তেই মেজাজটা বিগরে যায়৷ ভুলেই গিয়েছিলাম বেটা আয়রন (নিক নেম আরকি) নেশায় নিজের মধ্যে নেই। আমি কিছু বলতে যাব তখনই আমার উপর ঢলে পড়ে। আল্লাহ এইবার বাঁচাও আমাকে,, নয়তো এই লোহার বস্তার ভারে নিশ্চিত মারা পরব। মাবুদ। কোন রকম নিজেকে আয়নের থেকে ছাড়িয়ে নেয় আয়াত,,,, বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস ফেলে বলে

—– কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম আমি!!! তারপর নিজের মাথার দোপাট্টা টা খুলে ফেলে, আয়াত,, তারপর আয়নের পরনের সেরয়ানি,,, আর পায়ের জুতা। জুতা খুলতে গিয়ে আয়তা নাক ছিটকে বলে

—- ইয়াকককক ছিঃ,,, কি বাজে গন্ধ। তারপর খুজে পারফিউম মেরে দেয় আয়নের পায়ে। তারপর একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে লাগেজ থেকে জামা কাপড় দিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে,, সুতির একটা থ্রিপিস পরে ওযু করে বেড়িয়ে আসে। নিজের পছন্দের মানুষটাকে পেয়েছে তাই চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানায় আয়াত।।।। ভাবতেই পারেনি যে আয়াত আয়নকে পাবে। আয়াত হলো আয়নের বড় ফুপির বড় ছেলে,,, তাদের কাজিনদের মধ্যে তাকে সবাই চকোলেট বয় বলত। কিন্তু আয়াতের কাছে ছিল সে আয়রন,, কারণ বরাবরই সে দূর দূর করত। আজকে সে শুধু বারবার বলছিল আল্লাহ একটা মিরাকেল করে দাও,, সে ভাবতেই পারেনি এমন কিছু হবে,, আরিফা চলে যাবে৷ যখন বউকে আনতে যাওয়া হয় দেখে একটা চিরকুট লেখা

বাবা – মা আমাকে খুজ না,, আমি ভালোই আছি বিয়েটা আমি করতে পারব না সেটা বলার সাহস আমার কাছে ছিল না,,, তাই তোমাদের অমতেই পালিয়ে গেলাম,, সৌরভের সাথে,,, ভালো থেকে ইতি
আরিফা❤️

__________
আপুর চিঠি পাওয়ার পর বাসায় তখন হরতগল লেগে যায়,, পরে সবার মতে আয়ন আর আমার বিয়েটা হয়। এখন থেকে আয়নই বলব ভাইয়া আর বলব না কারণ এখন সে আমার পাতী হাস ইয়ে মানে,, হাসবেন্ড। দেখ কি বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। তখন তো আমার কপালে একটা কিস করেছিল যদি আরিফা আপু ভেবে,, কিন্তু আমকেইত করেছে,, আমি এবার কার ঋন রাখি না। একটু ভয় ভয় লাগছে যদি জেগে যায়?! জাগুক আমারই তো হাসবেন্ড।

এই লম্বা নাকটা,,, এই ঘন কালো বড় পাপড়ি ওয়ালা চোখ গুলা আনার,, এই মানুষটাই আমার ভাবতেই কেমন কেমন ফিল হচ্ছে। ইশশশশ মনে হচ্ছে আজকের দিনটা ছিল আমার লাইফের বেস্ট ডে যদিও চাচা চাচির জন্য খারাপ লেগেছে। কিন্তু আমি খুশি৷ খুব খুশি।

ধীর পায়ে আয়নের দিকে এগিয়ে যায় আয়াত।।।। কোপালে সিল্কি চুলগুলো লেপ্টে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে মাথায়। ইশশ আয়াত তাড়াতাড়ি করে এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দেয়।

আর ওড়না টা দিয়ে আয়নের মাথার ঘাম গুলো মুছে দেয়। তারপর আয়নের দিকে ঝুকে একটা কপালে কিস করে,,, আয়ন একটু নড়েচড়ে উঠে,, আয়াত ঘাবড়ে গিয়ে উঠতে চাইলে আয়ন ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরে আয়াতকে।

কি থেকে কি হয়ে গেলো?!!!! এখন কি হবে,, যে ভাবেই হোক আমার এখান আয়নের বাহুডোর থেকে বেড় হতে হবে,, যদিও ইচ্ছে নেই। কিন্তু ঘুমাতে সমস্যা হবে। আয়তারে বাজে অভ্যাস আছে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরলে ঘুম আসে না। এত চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না। পরে বাধ্য হয়ে সেখানেই শুয়ে থাকি ঘুমও আসছে না। কি করি কি করি!!! এইসব ৬/৯ ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যাই তাও জানিনা।

____________ ♪ ♪ ♪ ♪

সকাল ৭ টায় ঘুম ভাঙে আয়নের মাথাটা সম্পূর্ণ ধরে আছে। বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে তখনই বুকে ভারি কিছু অনুভব করে। তাকিয়ে দেখে তার বুকে মুখ গুজে শুয়ে আছে এক যুবতী। এক চিলতি হাসি চলে আসে ঠোঁটের কোনে । কিন্তু যখনই মনে পরে এটা আরিফা না আয়াত সাথে সাথে,, তাকে বালিশে নামিয়ে দেয় ।।। কিছু সময় চোখ বুঝে মাথার চুলগুলো টেনে ধরে। পাশে শুয়ে থাকা আয়াতের দিকে চোখ বুলিয়ে কাবার্ড থেকে জামা কাপড় নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে দেখে আয়াত উঠে হাই তুলছে,, এলো মেলো চুল,, ফোলা মুখ,, আয়াত আয়নকে দেখেই নিজের মুখ বন্ধ করে নিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে

—– গুড মর্নিং। আয়াত রেগে তার হাতের তোয়ালেটা আয়াতের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে

—- গুড মর্নিং মাই ফুট। আয়াত তোয়ালাটা নিয়ে গলায় পেচিয়ে,, আয়নের সামনে এসে বলে

—- খরুশ একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হয়?, আয়ন নিজের চুল গুলো হেয়ার ড্রাই দিয়ে ড্রাই করছিল,, সাথে সাথে নিজের হাতে থাকা হেয়ার ড্রাই টা আয়াতের মুখের দিকে ধরে,,, বেচারি তাড়াতাড়ি নিজের মুখ হাত দিয়ে দূরে সরে যায় আর বলে

—- আপনি এমন কেন? এখন আমি আপনার বিয়ে করা বউ। দেখ নিব আপনাকে,,, মি.আয়ন। আয়ন বলে

— কি বললি তুই? আয়াত রেগে বলে

—- কানে কম শুনতে পান? আল্লাহ সব ছেড়ে একটা বয়রাকে আমার বর বানালা!!! শুনতে পান নাই কি বলছি?? আয়ন বলে

—- না আরেক বার বল!দেখ কি করি! এক ভ্রু উচু করে,, দাঁত চেপে চেপে আয়াত তোয়ালেটা নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে বলে

—- বলেছি আপনাকে আমি দেখে নিব,, এর বদলা আমি ঠিকই নিব। আয়ান গিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে বলে

—- তোকে বউ মানে কে?? আর এটা তোর শাস্তি বেশি বেশি বউ সাজার জন্য,, সারাদিন এই বাথরুমে কাটাবি তুই,,, বলেই বেড়িয়ে যায়,,, আয়াত ভাবে,,আয় কি কখনোই তাকে স্ত্রী হিসেবে মানবে না?? কি হবে এখন “! যাক আগে গোসলটা সেরে নেই পরে দেখা যাবে

চলবে?

শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

1

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক-এ রহমান
শেষ পর্ব

“কতদিন এই চোখ গুলো তাকিয়ে থাকে না প্রিয় কোনো চোখের দিকে। অবাক হয়ে দেখে না কারো মুগ্ধকরণ হাসি। যে হাসির মাঝে নিজের সমস্ত সুখ খুজে পেয়েছিলো। এক পাহাড় স্বপ্নের জন্ম হয় না কতদিন। তোমার ঐ শীতল কন্ঠের মাদকতায় এক সমুদ্র প্রেম হাতছানি দিয়ে ডাকে না আর। ওই চোখের শীতল চাহুনিতে আর তোমার ছোঁয়ায় হাজারও অগ্নি দাবানল শান্ত হয়ে ছেয়ে যায় না হিম শীতলতায়। কোন একদিন আসবে যেদিন তুমি সামনে দাঁড়াবে। সেদিন চোখ জুড়ে থাকবে নতুন করে পাওয়ার উচ্ছ্বাস। শরীর জুড়ে থাকবে শুভ্রতার ছড়াছড়ি। আর তোমার কাছে থাকবে নীল বেদনা। সেই শুভ্রতা আর নীল মিলে তৈরি করবে কতো ভয়ানক প্রহর। কিন্তু আমি বিচলিত হব না। গুছিয়ে নিবো সবটা। আবার নতুন করে গড়ে তুলবো সেই প্রেমপ্রহর। শুভ্র_নিলের_প্রেমপ্রহর!”

–আপু?

শুভ্র রঙের কাগজটা পুনরায় সেই বিশেষ ঢঙ্গে ভাজ করে ডাইরির পাতায় রেখে দিলো ঈশা। শুভ্র রঙের পাতায় নীল রঙের কালির সেই লেখা চিরকুট হয়তো কোন একদিন পৌঁছাবে কাঙ্ক্ষিত মানুষটার কাছে। পুরো ডাইরির প্রতিটা পৃষ্ঠার ভাঁজে একটা করে এরকম শুভ্র কাগজে লেখা নীল কালির চিরকুট রয়েছে। ঈশা ইভান কে উদ্দেশ্য করে লিখেছে সব কিন্তু দেয়া হয়নি।
–ও আপু?

ইরার আওয়াজ শুনে ঈশা তার দিকে তাকিয়ে নরম কণ্ঠে বলল
–কি হয়েছে?

ইরা এগিয়ে এলো। ঈশার হাতে থাকা ডাইরিটার দিকে তাকিয়ে বলল
–সবাই এসেছে। তোমাকে ডাকছে।

ঈশা ডাইরিটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল
–তুই যা আমি আসছি।

ইরা কিছুক্ষন ডাইরিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কোন কথা না বলে নিশব্দে বেরিয়ে গেলো। ইভানের ডাইরিটার উপরে হাত বুলিয়ে আলমারিতে তুলে যত্ন করে রেখে দিলো ঈশা। ভারি দীর্ঘশ্বাসটা চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। ভালো করে নিজেকে দেখে নিলো। ৫ বছরে নিজের চেহারার ঠিক কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে? ম্লান হাসল। চেহারার পরিবর্তন না হলেও বাস্তবতা যে তার জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। জীবনের এই পরিবর্তনের জন্য তার অপরাধ ঠিক কতটুকু সেটাই বুঝতে পারছে না আজও। অনেক হিসেব মেলাতে চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু পারেনি। কারন তার জীবনের হিসাব তো অন্য কেউ মিলে দিতো। ভাবনার মাঝেই উচ্চ শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো। খানিকটা চমকে সেদিকে তাকাল। স্ক্রিনে ইফতির নামটা জ্বলজ্বল করছে। ফোনটা হাতে তুলে নিলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে রিসিভ করে ফেলল। ঈশা ‘হ্যালো’ উচ্চারণ করতেই ওপাশ থেকে ইফতি বলল
–মার শরীরটা ভালো না। তোমার কথা বারবার বলছিল। তুমি কি একবার আসবে আপু?

ইফতির শেষের কথাটা খুব অসহায় শোনালো। ঈশার চোখ ছলছল করে উঠলো। চোখের পানি উছলে পড়তে নিলেই চোখ বন্ধ করে ফেলল। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু ধারা। ইফতি বুঝতে পারলো ঈশা কাঁদছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
–মাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে। আমি রাখছি।

–শোন ইফতি।

ঈশার বিচলিত কণ্ঠ শুনে ইফতি থেমে গেলো। নরম কণ্ঠে বলল
–বলো।

–আমি আসছি।

ঈশার কথা শুনে ইফতির চোখ ছলছল করে উঠলো। সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে টলমলে চোখে হেসে বলল
–সত্যি আসবে?

–আমি এসে বড় মাকে ঔষধ খাওয়াবো।

ইফতি আর কথা বলতে পারলো না। ফোন কেটে কেদে ফেলল। ৫ বছর পর ঈশা এই বাড়িতে আসবে। সত্যিই খুব খুশির খবর। ইফতি চোখের পানি মুছে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
–মা আপু আসছে।

ইভানের মা শব্দ করে কেদে ফেলল। ইফতি তাকে শান্তনা দিলো না। কারন এটা যে তার মায়ের কাছে কত বড় খুশির খবর সেটা সে ভালো করেই জানে। আর এই কান্না খুশির কান্না।

ঈশা ঘর থেকে বের হয়ে এলো। বাইরে সোফায় সবাই বসে আছে তার অপেক্ষায়। বের হয়েই সবাইকে দেখে মনটা উতফুল্য হয়ে উঠলো তার। কত বছর পর সবার সাথে দেখা। ঈশা এগিয়ে যেতেই ইলু উঠে এসে জড়িয়ে ধরল। নিজের আবেগ সামলাতে না পেরে কেদে ফেলল। ঈশা জড়িয়ে ধরে তাকে শান্তনা দিতে বলল
–তুমি এখনও কাদছ। তোমার মেয়ে তাহলে কি করবে?

ঈশার কথা শুনে গম্ভীর পরিবেশে প্রান আনার চেষ্টায় সায়ান বলে উঠলো
–আর বল না। এই মা মেয়েকে সামলাতে আমার যে কি কষ্ট হয়ে যায়। একবার মা কাদে তো আরেক বার মেয়ে।

তার কথায় এবার সবাই হেসে দিলো। ইলু কান্না থামিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। সায়ান থেমে গেলো। তার মুখভঙ্গি দেখে আবার সবাই হেসে দিলো। ঈশা ইলুকে বলল
–তোমরা একটু বসো। আমি আসছি।

ইরিনা নিজের ৬ মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল
–আসছি মানে? কোথায় যাচ্ছিস?

ঈশা একটু এগিয়ে দরজা অব্দি গিয়ে সহজ ভাবে বলল
–বড় মার কাছে।

সবাই তার দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকাল। ঈশা কারো দিকে না তাকিয়েই বাইরে যেতে পা বাড়াতেই ইরিনা বলল
–আমরাও তোর সাথে ঐ বাড়ি যাব ঈশা।

ঈশা থেমে গেলো। একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে ছোট্ট করে বলল
–আসো।

সবার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। ঈশা নিজের কথা শেষ করে বাইরে পা বাড়াল। সবাই ঈশার পিছু পিছু চলে গেলো। বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল চাপল। ইফতি দরজা খুলেই ঈশাকে দেখে এক গাল হেসে দিলো। সবাইকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সে। ঈশার সাথে যে সবাই আসবে সেটা হয়তো কল্পনাও করেনি। ঈশা ইফতির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মাথা বাড়িয়ে ভিতরে তাকাল। ইফতি বুঝতে পেরে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো। সেই চিরচেনা পরিবেশ। ৫ বছরে তেমন কোন পরিবর্তন নেই। ঈশা একটা শ্বাস টেনে ভিতরে পা রাখল। গা শিরশির করে উঠলো তার। ভিতরে ঢুকেই চারিদিকে চোখ চালিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–বড় মা কোথায়?

ইফতি ধরা গলায় বলল
–ঘরে।

তার গলা শুনেই ঈশা ঘুরে তাকাল। চোখ ছলছল করছে। অতি কষ্টে কান্না চেপে রেখেছে। ছেলে মানুষের কাদতে নেই তাই হয়তো নিজের চোখের পানিটা অনবরত পলক ঝাপটে আড়াল করার চেষ্টা করছে। গড়িয়ে পড়তে দিলে ক্ষতি কি? এটা তো খুশির কান্না। এতদিন পর সবাই একসাথে হওয়ার খুশি। চোখ ফিরিয়ে ঈশা ঘরে গেলো। ইভানের মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। তিনি এখন আর চলাফেরা করতে পারেনা। ঈশা গিয়ে পাশে বসতেই চোখ খুলে ফেলল। ঈশাকে দেখে জোরে কেদে উঠলো। ঈশা এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে হেসে বলল
–ছোট বাচ্চার মতো কাদছ কেন? তুমি তো অনেক স্ট্রং।

ইভানের মা কাপা কাপা গলায় বলল
–কতদিন পর আসলি বল তো? আমাদের কথা মনে পড়ে না তাই না?

ঈশা হেসে দিলো। অমায়িক হাসি। বলল
–তোমাদের সবাইকে অনেক মিস করেছি বড় মা।

ইভানের মা কাদ কাদ কণ্ঠে বললেন
–তুই আর যাস না কোথাও মা। এখানেই থেকে যা।

–আমি কোথাও যাব না বড় মা। আমি একবারেই চলে এসেছি।

ঈশার কথা শুনে ইফতি হেসে বলল
–সত্যি আপু? তুমি আর যাবে না?

ঈশা মাথা নাড়িয়ে বলল
–আমার পড়ালেখা তো শেষ। আর গিয়ে কি করবো। এখন থেকে বাসাতেই থাকবো।

ঈশার কথা শেষ হতেই সবাই একে একে ঘরে ঢুকে পড়ল। ঈশা দরজার দিকে তাকিয়ে বলল
–দেখ বড় মা তোমার সাথে কে দেখা করতে এসেছে।

ইভানের মা ঘাড় ঘুরিয়ে সবাইকে দেখে কেদে ফেলল। সবাই এগিয়ে এসে তার চার পাশে দাড়িয়ে গেলো। সবার চোখেই পানি। ইভানের মা কাদতে কাদতে বললেন
–তোরা কেউ আর এই বাড়িতে আসিস না। সেই যে ইভান আর ঈশা চলে গেলো তারপর থেকে কেউ আমার কাছে আসে না।

ইভানের নাম শুনে ঈশার বুকের ভিতরে হাহাকার করে উঠলো। সবাই কথা বলায় ব্যস্ত। ঈশা ধির পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। ইভানের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এই ঘরে তারা দুজন একসাথে কত সময় কাটিয়েছে। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিছনে ঘুরেই ইফতিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো
–তোর ভাইয়া কি একদমই বাসায় আসেনা? ফোনও করে না?

ইফতি মন খারাপ করে বলল
–ফোন করে। প্রতিদিন একবার মার খবর নেয়। সে তিন বছর আগের কথা বাবা মারা যাওয়ার পর একদিন থেকে গেছে। তারপর আর আসেনি।

ঈশা কিছু বলল না। ইফতি বলল
–তোমরা চলে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে রেখেছি। দুই একদিন পর বুয়া পরিষ্কার করে। দরজা খুলে দিবো? তুমি ঢুকবে?

ঈশা না সুচক মাথা নাড়াল। বলল
–না থাক। বড় মাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে।

–আমি খাইয়ে আসলাম আপু। মা ঘুমাচ্ছে। সবাই সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। চল।

ঈশা আর ইফতি সোফায় গিয়ে বসলো। সেই আগের মতো প্রাণহীন বাড়িটা হঠাৎ করেই প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো। কত খুনসুটি চলছে। মন খুলে সবাই হাসছে। আর সেই হাসির শব্দে থেমে থেমে পুরো বাড়ি কেপে উঠছে। এর মাঝেই সায়ান আনমনে বলে উঠলো
–ইভান কে খুব মিস করছি।

কথাটা শেষ হতেই সবাই ঈশার দিকে তাকাল। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সে। সায়ান বুঝতে পারলো তার এই সময় ইভানের কথাটা বলা ঠিক হয়নি। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–সরি ঈশা। আমি আসলে…।

ঈশা মৃদু হেসে বলল
–ইটস ওকে ভাইয়া। আমি চা বানিয়ে আনছি।

বলেই রান্না ঘরে চলে গেলো। সবাই আবার নিজের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ঈশা রান্না ঘরে গিয়ে নিজের চোখের পানি ছেড়ে দিলো। এতদিনের জমানো কষ্টটা আজ বেরিয়েই এলো। নিজেকে আটকাতে পারলো না।

সেদিনের সব কথা ঈশার কানে এসেছিলো। সবটা শুনে ইভানের বাবা মা প্রথমে আপত্তি করলেও পরে সন্তানের সুখের কথা ভেবে কোন কথা বলেনি। আর ইভান সেদিন ঈশাকে বলেছিল এরপর আর কোনদিন এই বাড়িতে এই নিয়ে কোন কথা উঠবে না। ঠিকই এরপর কোন কথা উঠেনি। ঈশারও ট্রিটমেন্ট চলছিলো। সব মিলে তাদের জিবন ভালভাবেই কাটছিল। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শুরু হয়ে গেলো মানুষের জল্পনা কল্পনা। নানা কথার ভাঁজে ঈশা অস্থির হয়ে উঠেছিল। সেদিনের ইভানের মায়ের কথা গুলো ঈশা ভালভাবে বুঝতে পারছিল। সমাজের কাছে জবাবদিহি করা আসলেই সহজ ব্যপার না। ইভান অতি বিচক্ষণতার সাথে সবটা সামলে নিয়েছিলো। ঈশার পাশে ঢাল হয়ে দাড়িয়ে সবার কথার উত্তর দিতো। কিন্তু তার অসহায়ত্ব ঈশার চোখ এড়ায় নি। সবার কথার তিক্ততায় ঈশা হাপিয়ে উঠেছিল। জীবনটা বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। আত্মীয় স্বজনের কথার তোড়ে ইভান দিনদিন অসহায় হয়ে উঠছিল। সেই বা আর কতদিকে সামলাবে। ইভান ঈশাকে কথা দেয়ার পরেও বারবার এই বিষয় নিয়ে কথা উঠছিল। যেই বাড়িতে আসছিলো সেই এসব নিয়ে কথা বলছিল। ইভানের অপরাধ বোধ দিনদিন বেড়েই চলেছিল। ঈশা ইভানের অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তাকে এই যন্ত্রণাময় জীবন থেকে মুক্তি দিতে। তাই খুব সাহস করে ইভান কে বলেছিল সে পড়ালেখা শেষ করতে দেশের বাইরে যেতে চায়। ঈশার এই সিদ্ধান্তটা ইভানের জন্য কতটা কষ্টের ছিল সেটা হয়তো কারো বোঝার ক্ষমতা নেই। কিন্তু ইভান কোন কথা বলে নি। সবটা ঈশার উপরে ছেড়ে দিয়েছিলো। কারন ঈশা ইভান কে খুলে না বললেও তার এই সিদ্ধান্তের পিছনের কারণটা ইভানের জানা ছিল। এই জীবনটার উপরে ঈশা যে অতিস্ট হয়ে উঠেছিল সেটা বুঝতে পেরেই ইভান কোন কথা বলেনি। ঈশাকে বারবার তার জীবনের কঠিনতম অপ্রিয় সত্যটার মুখোমুখি হওয়া থেকে বাচাতে না পারার শাস্তি হিসেবে দূরত্বটা মেনে নিয়েছিলো। নিজের অসহায়ত্তের শাস্তি। ঈশা যেদিন বিদেশে চলে যায় ইভান নিজেই তাকে এয়ারপোর্টে দিয়ে এসেছিলো। শুধু বলেছিল
–আমি কথা দিয়েছিলাম তোমাকে তোমার অক্ষমতার কথা তোমার সামনে কোনদিন উঠবে না। কিন্তু পারিনি রাখতে। তাই সেটার শাস্তি হিসেবে এই দূরত্বটা মেনে নিলাম। শুধু একটাই চাওয়া থাকবে তোমার কাছে। আমার আমানত তোমার হাতে তুলে দিলাম। খেয়াল রেখো। এমন ভাবে খেয়াল রেখো যেদিন আমি চাইব সেদিনই ঠিক যেমন তোমার হাতে দিয়েছিলাম ঠিক তেমনই পাই যেন। তার যদি কোন ক্ষতি হয় আমি তোমাকে কোনদিনও মাফ করবো না। মাথায় রাখবে।

আর নিজে সেদিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে বাড়িতে ঈশা থাকবে না সেই বাড়িতে ইভানও থাকবে না। ঐ ঘরে ঈশার সমস্ত জিনিস নিজের মতো করেই সাজানো আছে এখনও। ইভানের কড়া নির্দেশ কেউ যেন কোন পরিবর্তন না করে। ঈশার যদি কোনদিন মনে হয় সে একবারেই আবার চলে আসবে সেদিন ইভানও তার বাড়িতে আসবে। ইভানের বাবা মা শত চেষ্টা করেও তাকে আটকাতে পারেনি। অন্য শহরে নিজের মতো করে জীবন গুছিয়ে নিয়েছে সে। তবুও যেই শহরে তার প্রিয়তমার অস্তিত্ব নেই সেই শহরে নিজের বিচরণ বন্ধ করে দিয়েছে। এই ৫ বছরে ইভান ঈশার সাথে কোন যোগাযোগ না করলেও ঈশার খোজ খবর ঠিকই নিয়েছে। ঈশার সাথে যোগাযোগ না করার প্রধান কারন হল সে যদি কোনভাবে ঈশার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে আর ঈশাকে আবারো জোর করে তার সাথে থাকতে তাহলে হয়তো ঈশার কষ্টটা আবারো তাকে দেখেতে হবে। ঈশা ভেঙ্গে পড়বে আবারো। ইভান সেটা সহ্যও করতে পারবে না। তাই দূরে থেকেই ভালবেসেছে তাকে।

বাইরে থেকে ডাক আসতেই ঈশা ভাবনার জগত থেকে বের হল। চায়ের কাপ গুলো সবার হাতে হাতে দিলো। নিজের কাপটা হাতে নিয়ে সোফায় বসতে যাবে ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো। ঈশা কাপটা রেখে দরজা খুলতে গেলো। দরজা খুলে আকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ঈশার বুকের ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। ইভান নিস্পলক ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের মাঝে এক অন্য রকম প্রশান্তি। ঈশা জানতনা ইভান আসবে। কিন্তু ইভান জানে ঈশা এসেছে। কোন কথা বলার আগেই ইরা দৌড়ে এসে ঈশাকে সরিয়ে দিয়ে ইভান কে জড়িয়ে ধরে বলল
–ভাইয়া তুমি এতো দেরি করলে কেন? কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমার। কতক্ষন আগে বলেছ তুমি বের হয়েছ।

ঈশা নিজের চোখের পানি লুকাতে ঘুরে দাঁড়ালো। কিছুতেই নিজেকে আটকাতে পারছে না। এতো বছরের আবেগ চোখ বেয়ে ঝরেই পড়ছে। ইভান মুচকি হেসে বলল
–রাস্তায় একটু কাজ পড়ে গিয়েছিলো রে। সরি।

ইরা হেসে ভিতরে আসতে বলল। ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে ভিতরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। ইরার তার বোনের উপরে এক রাশ অভিমান। ইরা ভাবে তার জীবনে ভাইয়া আর আপুর এতো বছরের অভাবটার এক মাত্র কারন তার বোন। তার বোন চাইলেই এরকম কিছু হতই না। সবাই ইভান কে দেখে অনেক খুশি। ইভান ভিতরে গিয়ে সবার সাথে কথা বলতেই ব্যস্ত। কিন্তু ঈশা সেই জায়গায় দাড়িয়েই কাঁদছে। ইভান সবার সাথে ব্যস্ত থাকলেও তার মন মস্তিষ্ক সব কিছু ঈশার কাছে পড়ে আছে।

————-
সময় নির্দেশক যন্ত্রটা বড্ড চঞ্চল। একবার ছুটতে শুরু করলে তার কোন অবসর নেই। সকাল পেরিয়ে গোধুলি বেলা। ছাদে দাড়িয়ে নিকোটিনের পোড়া ধোঁয়া ছাড়ছে ইভান।

–আবার কবে থেকে সিগারেট খেতে শুরু করেছো?

ঈশার কথা শুনে ঘুরে তাকাল। একটু অপ্রস্তুত হয়ে সিগারেট টা ফেলে দিলো। কোন উত্তর দিলো না। ঈশা আবার বলল
–উত্তর দিচ্ছ না যে?

ইভান মাথা নিচু করেই বলল
–মাঝে মাঝে খাই।

মাথা তুলে ঈশার মুখে অবিশ্বাসের হাসি দেখে বলল
–এতো বছরে সব পরিবর্তন হলেও বিশ্বাসটা একই রকম থেকে গেছে।

ঈশা সহজ ভাবে বলল
–অজুহাতটাও তো একই আছে।

ইভান গভির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। আবেগি কণ্ঠে বলল
–কেমন আছো?

ঈশা হাসল। বলল
–তুমি তো সবই জানো। তবুও কেন জিজ্ঞেস করছ?

ইভান রেলিঙ্গে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। হাত গুজে বলল
–জানি। কিন্তু তোমার কাছ থেকে জানতে ইচ্ছা করছে দূরে গিয়ে ঠিক কত ভালো থাকতে পেরেছ।

ঈশা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–খোঁটা দেয়ার অভ্যাসটা এখনও আছে।

ইভান মৃদু হেসে বলল
–কিছুই তো পরিবর্তন হয়নি। না তুমি না আমি। আর না আমাদের ভালবাসা। শুধু কিছু দিনের দূরত্ব ছিল।

ঈশা কোন উত্তর দিলো না। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান বুঝতে পারলো ঈশার চোখে পানি। ঠোটের কোনে ক্ষীণ হাসি নিয়ে বলল
–কাদতে ইচ্ছা করলে আমার বুকে মাথা রেখে কাদতে পারো। আমি এখনও বেঁচে আছি ঈশা। আর জতদিন বেঁচে থাকবো আমার ভালবাসা আবেগ সব কিছুই তোমার জন্য।

ঈশা কাপা কাপা গলায় বলল
–তুমি আবার চলে যাবে?

ইভান চুপ করে থাকলো। উত্তর না পেয়ে এবার ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। কিন্তু নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। চোখের পানি গাল বেয়ে পড়ল। ইভান ছোট্ট করে বলল ‘না’।

ঈশার মনের মাঝে অদ্ভুত রকমের ভালো লাগা ছুয়ে দিলো। সত্যিকারের ভালোবাসা শুধু ভালোবাসার মানুষটিকে সুখী করতে চায়; তার থেকে কোনো প্রতিদান আশা করে না। সেটা ইভানের নিঃস্বার্থ ভালবাসা দেখেই বোঝা সম্ভব। ঈশা ইভানের দিকে তাকাতেই আবারো চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল। ইভান মুচকি হেসে বলল
–তুমি কি জানো আজ আমি এতো সহজ এতো স্বাভাবিক কেন? আমার আর কোনো কিছুই হারানোর ভয় নেই যা হারানোর ভয় সব সময় করতাম তা আজ হারিয়ে গেছে।

ঈশার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। সে ঠোট চেপে কেদেই যাচ্ছে। ইভান স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–আমার মনে হয় আমার শাস্তির মেয়াদ শেষ। কিন্তু আমি তবুও তোমাকে জোর করবো না। তোমার যেদিন মনে হবে সত্যিই আমার শাস্তি পাওয়া শেষ। এখন যা হচ্ছে তা অন্যায়। সেদিন তুমি আমার কাছে আসবে। আমি অপেক্ষা করবো।

ঈশার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। ইভান হাসি মুখে আবার বলল
–কোনো মন খারাপের বিকেলে যদি ইচ্ছে করে তোমার সাথে ঘুরতে যেতে যেখানে রাস্তা এসে থেমে গেছে। তুমি কি যাবে আমার সাথে?

কথাটা শুনে ঈশা থেমে গেলো। এটা তার ডাইরির শেষ পাতায় রাখা চিরকুটে লেখা আছে। ইভান কিভাবে পেলো সেটা ভেবেই আশ্চর্য হয়ে গেলো। ঈশা প্রশ্ন করেই বসলো
–তুমি কিভা…।

শেষ করার আগেই ইভান বলল
–সব বিষয়ে এতো কৌতূহল ভালো না কিন্তু।

ঈশা হেসে ফেলল। ইভান মুচকি হেসে আবার বলল
–যাবে? যেখানে কষ্টের নীল রঙের সাথে শান্তির শুভ্র রঙ মিশে নতুন করে রচনা করব আমরা আমাদের প্রেমপ্রহর। শুভ্র_নিলের_প্রেমপ্রহর!

সমাপ্ত

(বাস্তবতা আর গল্পের মাঝে কোন মিল নেই। যদিও বা বাস্তবতা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েই আমি গল্পটা লিখেছি। তবুও এখানে বাস্তবতার কোন মিল নেই। শেষ টা পাঠকরা কতটুকু ধরতে পেরেছেন আমি জানিনা। এখানে আমি শেষটা অসমাপ্ত রাখতে চেয়েছি। তাদের শেষ পরিনতি দেখাতে চাইনি। অনেকটা ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’। পাঠক মনে একটা আকাঙ্ক্ষা থাক না ক্ষতি কি। বাস্তবতার জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দুজন প্রেমিক যুগলের বিয়ের পরের জীবনটা অতিশয় কষ্টে ভরপুর হয়ে উঠেছে। ইভান যতটা সহজ ভাবে নিয়েছিলো বিষয়টা তাদের পরিবেশ ঠিক ততটাই জটিল করে তুলেছে। নিজেদের এই অসহায়ত্ব আর কষ্টে ভরা জীবন থেকে পালিয়ে যেতেই ঈশার দূরে থাকার সিদ্ধান্ত। আর ইভান বারবার এই অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচাতেই ঈশার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। আমি ইভান কে নিঃস্বার্থ প্রেমিক হিসেবে দেখাতে চেয়েছি। যার ভালবাসার মানুষের কাছে থেকে কোন প্রত্যাশা নেই। শুধু ভালো রাখার চাহিদা আছে। শেষটা হয়তো অনেকের কাছেই ভালো লাগবে না। আমি তার জন্য খুবই দুঃখিত। এতদিন ধৈর্য ধরে গল্পটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ সবাইকে।)

শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর পর্ব-৩০

0

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক- এ রহমান
পর্ব ৩০

সময়টা রাত ১১ টা। মাথার উপরে ঘড়ঘড় শব্দে ফ্যান চলছে। জানালার পর্দা বাতাসে উড়ছে। বারান্দার দরজাটাও খোলা। সেদিক দিয়েই মৃদু আলো এসে অন্ধকার ঘরটাকে আলোকিত করেছে। ঈশা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে বিছানায়। ইভান এখনও বাইরে। তখন ইভান ঈশার কথোপকথনের এক পর্যায়ে একটা ফোন আসে। ইভান বেশ কিছুক্ষন কথা বলে জরুরী ভিত্তিতে বাইরে চলে গেছে। আর বলে গেছে কখন আসবে ঠিক জানে না। তবে এসে ঈশার সাথে জরুরী কথা বলবে। অনেক জরুরী কথা আছে। ঈশা ঠিক তখন থেকেই ভাবছে ইভান কি কথা বলবে। ঈশার কাছ থেকে আবার কোন ভুল হয়ে যায়নি তো। না বুঝেই কিছু না কিছু করেই ফেলে সে। আর যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। মনটা কেমন যেন লাগছে। বুঝতে পারছে না কিছুই। ইভানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে হালকা চোখ লেগে এলো তার। কতক্ষন ওভাবে শুয়ে ছিল সেটা বলতে পারেনা। ঘুম ভাঙল ঘাড়ে কারো উষ্ণ নিশ্বাস পড়ায়। চোখ মেলেই বুঝতে পারলো কেউ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। খানিকবাদেই বুঝতে পারলো মানুষটা কে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। একটু নড়তেই ইভান চোখ বন্ধ করেই বলল
–ঘুম ভেঙ্গে গেলো?

ঈশা ইভানের হাত সরিয়ে উঠে বসলো। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
–তুমি কখন এসেছ? আমাকে ডাকো নি কেন?

ইভান সোজা হয়ে শুয়ে মাথার নিচে এক হাত রেখে বলল
–তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকি নি। তোমার ঘুম ভাঙ্গাব কেন?

ঈশা ঘুমু ঘুম চোখে ইভানের দিকে তাকাল। তখনই মনে পড়ে গেলো ইভান জরুরী কথা বলতে চেয়েছিল। মৃদু সরে বলল
–সরি। আমি ঘুমায়ে গেছিলাম। তুমি আমাকে জেগে থাকতে বলেছিলে।

ইভান উঠে বসলো। ঈশার দিকে তাকিয়ে হাসল। গালে হাত রেখে বলল
–এটা কেমন কথা। ঘুম পাইলে ঘুমাবে না? আমি জেগে থাকতে বলেছি বলে কি ঘুম পাইলেও জেগে থাকবে?

ঈশা উত্তর দিলো না। তাকিয়েই থাকলো। ইভান মুচকি হেসে বলল
–কি ভাবছ?

ঈশা উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করলো
–তুমি খাবে না?

ইভান পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে হেলে ঈশাকে টেনে বুকের মধ্যে নিয়ে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
–আমি ইলহাম ভাইয়ার কাছে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে খেয়ে এসেছি। তুমি খেয়েছ?

ঈশা মাথা নাড়ল। বাড়িতে কেউ নেই তাই ঈশা আর ইফতি একসাথে খেয়েছে। ইভান বলেই গিয়েছিলো তাকে খেয়ে নিতে। ইভান ঈশার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
–ঈশা।

ঈশা ‘হুম’ বলতেই ইভান বলল
–আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে কেমন।

ঈশা মাথা নাড়ল। ইভান একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–ইলহাম ভাইয়ার সাথে আমি তোমার বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। ভাইয়া বলেছে তোমার ট্রিটমেন্ট শুরু করতে। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ততই ভালো।

ঈশা চুপচাপ শুনল। কোন উত্তর দিলো না। ইভান চুপ করে থাকা দেখে বলল
–আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?

ঈশা মাথা তুলে তাকাল। একটু দূরে সরে চোখ নামিয়ে কাতর কণ্ঠে বলল
–কি হবে এসব করে?

ইভান কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। স্বাভাবিক ভাবে বলল
–কিছু হওয়া না হওয়া কি আদৌ আমাদের হাতে আছে ঈশা? আমি তো তাই জানি যে এসব কিছুই আমাদের হাতে নেই। তাই বলে কি চুপ করে বসে থাকবো।

ঈশা উত্তর দিলো না। তার চোখ ছলছল করে উঠলো। আবারো সেই পুরনো ক্ষত দগদগে হওয়ার ভয়টা এবার তীব্র হল। সবাই জানলে কি হবে? ট্রিটমেন্ট শুরু হলে সবাই জেনে যাবে বিষয়টা। তখন কে কি ভাববে। মাথার মধ্যে সব চিন্তা কেমন অগোছালো হয়ে গেলো। চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠলো মাথার ভেতরে। ইভান ঈশার হাত আলতো করে ধরে কোলের উপরে রেখে বলল
–এভাবে না ভেবে অন্য ভাবেও তো ভাবা যায়। সব কিছু তো আর আমাদের হাতে থাকে না জান। কিছু কিছু বিষয় ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিতে হয়।

ঈশাকে চুপ করে থাকতে দেখে ইভান উঠে দাঁড়ালো বিছানা থেকে। জানালার কাছে গিয়ে বাইরে আকাশে তাকিয়ে বলল
–তোমাকে এভাবে দেখলে নিজেকে খুব অসহায় লাগে। আমি বলেছিলাম তোমাকে কোনদিন কষ্ট পেতে দিবো না। জীবনের সব সুখ দিতে চাই। কিন্তু আমি ব্যর্থ। সব সুখ দিতে পারলেও জীবনের সব থেকে বড় সুখ থেকে তুমি বঞ্চিত থাকবে।

ইভানের কথা গুলো ঈশার কষ্টটা আরও বাড়িয়ে দিলো। সব থেকে বেশী কষ্ট হচ্ছে ইভানের গলার আওয়াজ শুনে। সে বুঝতে পারছে ইভান প্রকাশ না করলেও ভিতরে ভিতরে কতটা অসহায়। ঈশা চোখের পানি ফেলে উঠে গেলো ইভানের কাছে। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা ঠেকাল। ইভান কোন কথা বলল না। ঘুরেও দাঁড়ালো না। ঈশা কাঁদছে। ইভান বুঝতে পারছে কিন্তু সে থামাতে চেষ্টা করছে না। বেশ কিছুক্ষন পর ঈশা অভিমানী কণ্ঠে বলল
–আমি কাদছি বুঝতে পারছ না?

ইভান সামনে তাকিয়েই মৃদু সরে বলল
–পারছি।

ঈশা আবারো বলল
–তাহলে থামাচ্ছ না কেন?

ইভান অভিমানী কণ্ঠে বলল
–থামাব কেন? তোমার সব কষ্ট তো দূর করার ক্ষমতা আমার নাই। তাই এই চোখের পানিটাও মুছে দেয়ার অধিকার আমার নাই। মাঝে মাঝে সৃষ্টি কর্তার উপরে খুব অভিমান হয়। কেন আমার পাখির সব কষ্ট দূর করে দেয়ার ক্ষমতা আমার হাতে দিলো না। কেন তাকে এমন কষ্ট দিলো যেটা আমার উপস্থিতিও নিঃশেষ করে দিতে পারেনা। নিজেকে খুব নিকৃষ্ট মনে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় এতো ভালবাসা দিয়ে কি হবে? সারাজীবন তোমার একটা কষ্ট থেকেই যাবে। তুমি ভিতরে ভিতরে জলে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। আর আমি শুধু দেখবো। আমার কিছুই করার থাকবে না। আমি কতটা অসহায়!

ঈশা ইভান কে ছেড়ে দিলো। জোরে কেদে ফেলল। কাদতে কাদতে বলল
–এরকম বল না প্লিজ। তোমার তো কোন দোষ নেই। তাহলে তুমি কেন ব্যর্থ হবে? আর তোমার যদি সত্যিই কিছু করার থাকত তাহলে কি তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট পাইতে দিতে?

ইভান ঘুরে দাঁড়ালো। পিছনে হেলানি দিয়ে দাঁড়ালো হাত গুজে। শান্ত কণ্ঠে বলল
–বোঝ? মানো না কেন?

ঈশা চোখ তুলে তাকাল। ইভান হাত বাড়িয়ে ঈশাকে বুকে টেনে নিলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
–কাদিও না প্লিজ। ট্রিটমেন্ট করার পর সব ঠিক হয়েও যেতে পারে। যদিও বা এখনই কিছু বলা সম্ভব না। তবুও আমরা তো আশা ছাড়তে পারিনা তাই না?

ঈশা মাথা নাড়ল। ইভান ঈশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
–সব সময় মনের মধ্যে আশা রাখবে। দেখবে জীবনটা অনেক সুন্দর। অনেক দিন বাঁচতে ইচ্ছা করবে।

ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। ইভান একটু হেসে বলল
–সারা রাত কি আমাকে দেখেই পার করে দিবে? ঘুমাতে হবে না?

ঈশা হাসল। ইভান বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিলো। জানালা বন্ধ করে ঈশাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ল। ঈশা কিছু একটা ভেবে বলল
–ট্রিটমেন্টের কথা তো সবাইকে জানাতে হবে।

ইভান সময় না নিয়েই সহজ স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–জানাবো। প্রবলেম কোথায়?

ঈশা ভীত কণ্ঠে বলল
–যদি অন্যভাবে নেয় সবাই?

ইভান একটু বিরক্ত হল। বলল
–অন্য ভাবে নেয়ার কি আছে? এটা কি তোমার দোষ? তুমি কোন অপরাধ করেছ? নাকি আমি করেছি?

ঈশা একটু ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–কারো দোষ না। এখন ঘুমাও।

ইভান ঈশার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। সে ভাবছে কাল তার বাবা মা চলে আসলেই তাদেরকে সবটা খুলে বলবে। তারপর ট্রিটমেন্টের কথাও বলবে। তারা নিশ্চয় বুঝবে বিষয়টা।

—————
সবাই বেশ চিন্তিত মুখে বসে আছে। ঈশার কান্নার আওয়াজ বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে। প্রচণ্ড পেট ব্যথায় কাতর সে। কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। ব্যাথার বেগ বেড়েই চলেছে। ইভান হাত ধরে বসে আছে পাশে। সেও বিচলিত হয়ে পড়েছে। কি করবে মাথায় ঢুকছে না। এভাবে সহ্যও করতে পারছে না। নিজেকে কেমন এলোমেলো লাগছে। সারাদিন ভালোই ছিল ঈশা। ইভানের বাবা মা সকালেই চলে এসেছে। একদম যোগ্য বউয়ের মতো সব দায়িত্ব পালন করে সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কাউকে কিছু না জানালেও ব্যথা ধিরে ধিরে বেড়ে যায়। আর তখন সহ্য করতে না পারায় চিৎকার শুরু করে। তখনই সবাই ছুটে যায় তার ঘরে। ব্যথা কমছে না বলে ইভান ইলহাম কে ফোন করে আসতে বলে।

কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ইভানের মা দরজা খুলে দিলো। ইলহাম কে দেখে বিচলিত কণ্ঠে বলল
–তুই এসেছিস বাবা। দেখ না মেয়েটার সন্ধ্যা থেকে কি হয়েছে। কেমন অস্থির হয়ে গেছে।

ইলহাম ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
–এটা খুব স্বাভাবিক বড় মামি। এরকম হবেই। এর জন্যই ট্রিটমেন্ট টা তাড়াতাড়ি শুরু করতে হবে।

ইভানের মা কিছু না বুঝেই জিজ্ঞেস করলো
–কিসের ট্রিটমেন্ট আর এরকমই বা কেন হবে?

ইলহাম উত্তর না দিয়েই ঈশার কাছে গেলো। ঈশাকে ভালো করে দেখে নিয়ে ইনজেকশন দিলো। ইভান কে উদেশ্য করে বলল
–কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে। আর ও ঘুমিয়ে পড়বে। সারা রাত ঘুমাক। ডাকার প্রয়োজন নেই।

ইভান কোন কথা বলল না। ঈশার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইলহাম ইভান কে বাইরে আসতে বলল। দুজন বাইরে এসে সোফায় বসে পড়ল। ইলহাম বলল
–খুব তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট শুরু করা দরকার। এটা এখন প্রায় সময়ই হতে থাকবে। আর জতদিন যাবে ব্যথা আরও তীব্র হবে।

ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
–তুমি সব ব্যবস্থা করো ভাইয়া।

ইলহাম মাথা নাড়তেই ইভানের মা আবার প্রশ্ন করলো
–তোরা কি নিয়ে কথা বলছিস আমাকে বলবি?

ইলহাম ইভানের দিকে তাকাল। তার তাকানোর মানে ইভান বুঝতে পেরে বলল
–মা জানে না কিছু।

ইলহাম আর সময় নষ্ট না করে উঠে বলল
–আমার কাজ আছে। যেতে হবে। আর তুই কাল ঈশাকে নিয়ে আমার ক্লিনিকে আয়। সব টেস্ট আবার করাতে হবে।

ইভান মাথা নাড়ল। ইলহাম চলে গেলো। ঈশার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হয়। ইভানের বাবা এসে সোফায় বসে বলল
–মেয়েটার এখন কি অবস্থা?

ইভান মৃদু সরে বলল
–ঠিক আছে এখন।

ইভানের মা চিন্তিত হয়ে বলল
–ইভান কি হয়েছে ঈশার? কোন বড় সমস্যা?

ইভান একটু সময় নিয়ে সবটা তার বাবা মাকে খুলে বলল। সবাই মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনল। ঘরটাতে পিন পতন নিরবতা চলল বেশ খানিকটা সময়। এর মাঝেই ইভানের মা বলে উঠলো
–এই কথাটা লুকানো উচিৎ হয়নি। ট্রিটমেন্ট করেও যদি কিছু না হয় তাহলে তখন কি করবি?

ইভান গম্ভীর গলায় বলল
–বাচ্চার বিষয়টা স্বামী স্ত্রীর একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার মা। এটা নিয়ে অন্য কারো কথা বলা শোভা পায় না।

ইভানের মা হতাশ গলায় বললেন
–অন্য কেউ? কাকে অন্য কেউ বলছিস তুই? আমি তোর মা ইভান। ভালো মন্দ এসব নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার আছে। সন্তানের ভালো মন্দ ভাবার দায়িত্ব প্রতিটা বাবা মায়ের।

–অবশ্যই আছে। আর আমি কোন অধিকার নিয়ে কথাও বলিনি। তুমি এসব নিয়ে ভাবতেই পারো। আমি তোমার ভাবনা আটকাতে পারবো না। কিন্তু আমার মনে হয় বিয়ের পরে কিছু বিষয় সন্তানদের উপরেই ছেড়ে দিতে হয়। তাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে একটা কথা আছে। সেটার সিদ্ধান্ত একান্ত তাদের হওয়া উচিৎ মা।

ইভানের মা গম্ভির গলায় বললেন
–এটা কোন সিদ্ধান্ত নয় ইভান। তোরা বাচ্চা নিয়ে ভাবতে যদি সময় নিস তাহলে সেটা হতো সিদ্ধান্ত। তোদের যদি চিন্তা ভাবনা অন্য কিছু থাকতো তাহলে আমি ব্যাক্তিগত ভেবে সেটা নিয়ে কথা বলতাম না। কিন্তু এখানে পুরো বিষয়টা উলটা। ভাবার কোন অবকাশ নাই। সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো কিছুই নেই। আর যেটা একেবারেই নেই সেটা এখন আর কোন স্বামী স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয় হয়ে ঘরের চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ থাকবে না। বাইরে বেরিয়ে আসবে।

কথাটা শুনে ইভান হাত গুটিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল
–আমি কারো কেয়ার করিনা। আমি আমার জীবনে সুখী থাকলে কার এতে কি যায় আসে সেটা দেখা আমার কাজ নয়।

ইভানের মা ছেলের মুখের দিকে কিছুক্ষন বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকলেন। থম্থমে গলায় বললেন
–স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের সুতো হল বাচ্চা। সারাজীবন এই সম্পর্ককে আঁকড়ে ধরে রাখে এই বাচ্চা। বাচ্চা ছাড়া সম্পর্ক আর সুতো ছাড়া ঘুড়ির মধ্যে কোন তফাত নেই। সুখ এতো সহজ নয়। মুখে হাজার বার সুখী শব্দটা উচ্চারণ করলেই আর নিজেকে সুখী দেখাবার চেষ্টা করলেই সুখী হওয়া যায়না। সেভাবে তুমি বাইরের মানুষকে দেখাতে পারবে সুখী। কিন্তু নিজে কি আসলেই সুখী হতে পারবে? বাচ্চা ছাড়া যে অপূর্ণতা তোমাদের জীবনে নেমে আসবে সেটা কিভাবে সামলাবে? তাছাড়াও বছরের পর বছর সংসার করার পর যখন বাচ্চার মুখ দেখতে পাবে না তখন সমাজ প্রশ্ন করবে। সেসবের উত্তর তোমরা দিতে পারবে? আজ আমার সাথে যুক্তি তর্কে টিকে গেলেও সমাজের যুক্তি তর্কে কিভাবে টিকবে সেটা কি ভেবেছ?

ইভানের মুখে কাঠিন্য ভাব চলে এলো। গম্ভির গলায় বলল
–আমি কোন সমাজের তোয়াক্কা করিনা। কে কি বলল সেসব নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আর সব থেকে বড় কথা হল এই বিষয়টাতে আমাদের কোন হাত নেই। ঈশারও কোন দোষ নেই। তার যদি কিছু করার থাকত তাহলে কি ঈশা চুপ করে থাকত? কোন মেয়েই এই বিষয়টা সহজে মানতে পারেনা মা। ঈশাও পারেনি। ওকে মানাতে আমার কম কষ্ট করতে হয়নি। এখন আমি কোন ভাবেই চাইনা পুরনো ক্ষতটা আবার দগদগে হয়ে উঠুক।

–এসব আবেগের কথা ইভান। আমি বলছিনা ঈশার দোষ আছে। এটা তার দুর্ভাগ্য। তাকে মেনে নিতেই হবে। কিন্তু বিয়ের আগে তোমার এই বিষয়টা আমাদের জানানো উচিৎ ছিল। এতো বড় একটা বিষয় এভাবে চেপে গিয়ে তোমরা ঠিক করনি।

ইভান মায়ের দিকে গভির দৃষ্টিতে তাকাল। আজ তার মাকেই তার কাছে অচেনা লাগছে। কি অদ্ভুত! সমাজের ভয়ে আজ একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে এভাবে তার দুর্বলতা নিয়ে আঘাত করতেও ভাবছে না। ইভান বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–শুধু ঈশার দুর্ভাগ্য না মা। ঈশার ভাগ্য আমার সাথে জড়িয়ে আছে। তাই আমার ঠিক ততটাই দুর্ভাগ্য। আর যদি একান্তই বাচ্চা দরকার হয় তাহলে আমরা এডপ করবো। এতে তো কোন সমস্যা নেই।

ইভানের মা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললেন
–নিজের বাচ্চা আর অন্যের বাচ্চার মধ্যে পার্থক্য আছে ইভান। তোমার আগেই এই বিষয়টা ভাবা উচিৎ ছিল।

ইভানের মায়ের শেষের কথাটা ইভানকে পুরই ভেঙ্গে দিলো। তার মা যে আজ এমন কথা বলবে সেটা তার মাথাতেই আসেনি। ইভান উঠে দাঁড়ালো। কঠিন গলায় বলল
–ঈশা তোমার কাছে কোন অভাগি মেয়ে হতে পারে। তোমার কাছে তোমার ছেলের বউ হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে আমার সব কিছু। ঈশা আমার জীবন। ঈশাকে কিছু বলা মানে আমাকে বলা। ঈশাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা মানে আমাকে কষ্ট দেয়া। আর আজ তুমি আমাকে অনেক বেশী কষ্ট দিয়ে ফেলেছ মা। এখন তুমি বুঝবে না। কিন্তু যখন বুঝবে তখন আক্ষেপ ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

ঈশার মা অসহায় কণ্ঠে বলল
–আমি কোন খারাপ কথা বলিনি ইভান। আমার কথাটা বুঝতে চেষ্টা করো। আমি তোমাদের ভালো চাই।

ইভান উঠে দাড়িয়ে বলল
–আমি জানি মা। কিন্তু সব ভালো সব সময় সবার জন্য ভালো হয়না। তোমার কাছে যেটা ভালো সেটা আমার কাছে ভালো হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। তুমি এটা ভেবে থাকলে ভুল করবে। আর হ্যা যদি এতে ঈশার কোন দোষ থাকত তাহলে হয়তো আমি তোমার ভালো মন্দ বিচার করার কথা গুলো শুনতাম। কিন্তু যেখানে আমার ঈশা অসহায় সেখানে কারো ভালো মন্দ বিচার করার অধিকার নেই। শোনা তো দুরের কথা।

ইভান পা বাড়াতেই ইভানের বাবা বলল
–এখন এসব কথা থাক। আমরা এসব নিয়ে পরে কথা বলবো। এখন মেয়েটা কেমন আছে আপাতত সেটাই জানা জরুরী।

ইভান ধরা গলায় বলল
–এসব নিয়ে আর কোন কথা হবে না। এখানেই শেষ। আর যদি কোন কথা হয়েই থাকে তাহলে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে যেই বাড়িতে ঈশার এই অক্ষমতাকে নিয়ে কথা বলার সুযোগ আছে সেই বাড়িতে আমি থাকতে পারবো না। কারন এটা নিয়ে কথা বলা মানে ঈশাকে অপমান করা। আর ঈশাকে অপমান করা মানে আমাকে অপমান করা।

চলবে………