#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২২
,,,,,
,,,,,
ঘামে ভেজা শার্ট নিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো রক্তিম।এদিক সেদিক নজর বুলিয়ে কার্বাড থেকে শার্ট আর টাউজার নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে মাথা মুছতে মুছতে পুরো ঘরে অধরাকে খুজতে থাকে কোথাও না পেয়ে হতাশ হয়ে টাওয়াল রেখে চলে যায় দাদীমার রুমে সেখানে গিয়ে রক্তিম আরো বেশি হতাশ হয় কারণ অধরা সেখানেও নেই।রক্তিম এখন মনে মনে বলছে,
~কোথায় যেতে পারে মেয়েটা?
রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো তার মা রান্নাঘরে কী যেন করছে।সাহারা ছেলেকে এভাবে উঁকিঝুকি করতে দেখে মুচকি হেসে গলার স্বর উঁচু করে বলে,
~অধরা বাসায় নেই।বাবার বাসায় গিয়েছে রাতে হয়তো সেখানে থাকবে।
মায়ের এহেন কথা শুনে রক্তিমের মাথা পুরো হ্যাংঙ্গ হয়ে গেলো।অধরা বাসায় নেই আমাকে না বলে সে কীভাবে চলে গেলো আর আজ রাতে সে ফিরবেনা।কতোটা বেয়াদব মেয়ে একবার হাতের কাছে পাই তারপর বোঝাবো।এসব ভাবছে তখনই সাহারা ছেলের কাঁধে হাত রাখলো রক্তিম পিছনে ফিরে মাকে দেখে মুচকি হাসলো।সাহারা ছেলেকে বললো,
~অধরার বাসা থেকে ফোন এসেছিল যে তার বাবার একটু শরীর খারাপ হয়েছে তাই মেয়েটা তাড়াহুরা করে চলে গেলো।আর তোকে অনেকবার ফোন করেছে তোর ফোন বন্ধ আসছিল তাই আমি ওকে বললাম চলে যেতে
মায়ের কথা শুনে রক্তিমের সব অভিমান পানি হয়ে গেলো কিন্তু চিন্তাটা বেড়ে গেলো।অধরার বাবার শরীর কী বেশি খারাপ নাকি একবার দেখে আসতে হয় তাহলে।রক্তিম এই ভেবে মাকে বললো,
~মা,আমি অধরার বাসায় যাচ্ছি।
সাহারা ছেলের কথা শুনে অস্থির হয়ে বললেন,
~খেয়ে যা সারাদিন তো কী না কী খেয়েছিস?
মায়ের কথা শুনে রক্তিমের মনটা ভালো হয়ে গেলো কতবছর পর মা তাকে খাবার খাওয়ার অনুরোধ করলো।রক্তিমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো সে চেয়ার টেনে বসে পরলো তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
~ক্ষুধা লেগেছে মা,খাবার দেও।
সাহারা নিজের ছেলের মুখে এমন কথা শুনে চটজলদি তার প্লেটে খাবার তুলে দিলো।রক্তিম তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে তা দেখে সাহারার মনটা ভরে গেলো।রাতও তাকে ক্ষমা করে দিবে এই মনোভাব নিয়েই সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভার্সিটি থেকে বাসায় যেয়ে মাকে ফোন করে জানতে পারি বাবার শরীর ভালো না তাই আমি বাবার বাসায় চলে আসি।রক্তিমকে অনেকবার ফোন করেছি কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিল তাই রক্তিমকে না জানিয়েই চলে আসি আজ হয়তো বাসায় যাওয়া হবে না তাই আমার রুমের বিছানাটা ঠিক করছি হঠাৎ বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো কেউ বারবার শুধু বেল দিচ্ছি আমি রুম থেকে বের হয়ে দরজা খুলে দিলাম।
,,,,,
,,,,,,
আর দরজা খুলেই দেখতে পাই রক্তিম এসেছে তার হাত ভর্তি ফলের ব্যাগ বুঝা যাচ্ছে বাজার থেকে এসেছে।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রক্তিম বললো,
~তাকিয়েই থাকো তুমি idiot একটা।
তার ধমক খেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম সঙ্গে সঙ্গে মা পিছন থেকে বললো,
~এই বলদ জামাইকে দরজার সামনে দাড় করিয়ে রেখেছিস কেন?
রক্তিম আর মায়ের বকা খেয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম,
~আমাকে তোমরা বকছো কেন?
মা আমাকে সরিয়ে দিয়ে রক্তিমকে বললো,
~ভিতরে আসো বাবা,এই গাধীর কথায় কান দিয়ো না।
রক্তিম ভিতরে এসে ব্যাগ গুলো সাইডে রেখে মাকে বললেন,
~বাবা কোথায়?তার শরীর এখন কেমন?
মা বললো,
~এখন একটু ভালো আছে।বয়স হয়েছে তাই একটু আধটু সমস্যা হয়ে থাকে তিনি রুমেই আছে।
রক্তিম আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললো,
~এটা রুমে নিয়ে যাও।এতে আমার কাপড় আছে আগামীকাল কাজে দিবে আমি বাবার সাথে দেখা করে আসি।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে হনহন করতে করতে বাবার রুমে চলে গেলো আমি শুধু হা করে তাকিয়ে রইলাম কী মানুষরে বাবা?এমন করে কথা বলছে যেন তাকে আমি মার্ডার করে এখানে এসেছি এখন সে ভুত হয়ে এসে আমার সাথে এমন করছে।
এসব ভাবতে রুমে চলে আসলাম শপিং ব্যাগটা কার্বাডে রেখে চলে গেলাম মায়ের কাছে
মা চুলোয় মুরগীর রোস্ট বসিয়েছে রাতের খাবারের জন্য মেয়ের জামাই এসেছে তার জন্য তো সব ইস্পেসিয়াল করতে হবে।আর মেয়ে যে এখানে দাড়িয়ে আছে তার কোনো খেয়াল নেই।আমি মাকে বললাম,
~দেখেছো মা রক্তিম আমাকে কীভাবে বকা দিলো?
মা ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
~তোকে বকা দিবে নাতো আদর করবে।সবসময় গাধীর মতো কাজ করিস।
আমি রেগে বললাম,
~তুমি রক্তিমের সার্পোট করছো কেন?
মা বললো,
~সঠিকের সার্পোট করছি সবসময় তো তুই গাধীর মতো কাজ করোস।
আমি মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম রুমে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম আকাশের অবস্থা ভালো না যে কোন সময় বৃষ্টির আর্বিভাব হতে পারে।
আকাশটা পুরো মেঘে ডাকা একটু পর পর গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ করছে।আমার বারান্দায় দোলনা আছে আমি সেটায় বসে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম অনেক ভালো লাগছে এই আকাশটা দেখতে বৃষ্টিতে ভিজতে পারলপ আরো ভালো লাগতো।আমি দোলনা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই খেয়াল হলো রক্তিমও তো বাসায় আছে এখন কীভাবে যাবে।পরক্ষনেই মনে হলো রক্তিম তো ব্যস্ত তাই খেয়াল করবে না।যাবো আর আসবো এটা ভেবেই চুপিচুপি ফ্যাল্টের দরজা খুলে সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেলাম।বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে এ বাসার বাচ্চারাও বৃষ্টিতে ভিজতে ছাদে চলে এসেছে এদের মধ্যে অনেকেই আমাকে চেনে আমিও তাদের চিনি।ওই বাচ্চাদের মধ্যে একজনকে খুব ভালোমতো চিনি তার নাম পুতুল। আমি পুতুলকে দেখে জোড়ে চিল্লিয়ে বললাম,
~এই পুতুল কেমন আছো?
পুতুল চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকালো আমাকে দেখে সে দৌড়ে চলে আসে আর বলে,
~ ভালো আপু,কেমন আছো তুমি?
আমি বললাম,
~ভালো।আন্টি বৃষ্টিতে ভিজার পারমিশন দিয়ে দিলো?
পুতুল তার ফোকলা দাঁত দেখিয়ে ফিক করে হেসে বলে,
~আরে আপু মা কী আর জানবে আমি এখানে আছি?বৃষ্টিতে ভিজে এখনই চলে যাবো আর মা তো বাসায় নেই।
পুতুলের কথা শুনে মাথায় হাত আমি তার দিকে চোখ চোখ বড় করে বললাম,
~ওরে বাটপার কী চালাক তুমি?
পুতুল বললো,
~আপু তুমি আমাদের সাথে খেলবে?
আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম,
~আচ্ছা।
শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে তাদের সাথে কানামাছি খেলা শুরু করলাম।এই বৃষ্টিতে খেলার স্বাদ পেয়ে একদম ছোট বেলার মতো লাগছে
,,,,,,,
,,,,,,,
বাবার রুম থেকে বের হয়ে রক্তিম অধরার রুমে চলে গেলো।অধরাকে অনেকবার ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সে চলে গেলো শাশুড়ি মায়ের কাছে আর বললো,
~মা,অধরা কোথায়?
রক্তিমের কথা শুনে অধরার মা বললো,
~রুমে নেই।
রক্তিম বললো,
~নাহ
অধরার মা বললো,
~নিশ্চয়ই এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে চলে গেছে।
অধরার মায়ের কথা শুনে রক্তিমের আরো রাগ হলো এই অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজতে কেন গেলো?এই মেয়ে কে তো আজ ছাড়বোনা।
রক্তিম বললো,
~মা আমি আসছি।
বলেই ছাদের উদ্দেশ্যে চলে গেলে
বৃষ্টি অনেকটাই কমে গেছে তাই আমরা ছাদের ফ্লোরে বসে গল্প করছি বাচ্চারা কবিতা বলছে তো কেউ গল্প শুনাচ্ছে হঠাৎ কেউ রাগী গলায় বলে উঠলো,
~যদি আপনার বৃষ্টি বিলাস হয়ে থাকে তাহলে আমরা নিচে যেতে পারি।
এই কন্ঠ শুনে আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো।এতো আর কেউ নয় রক্তিম আমি পিছে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখলাম রক্তিম ছাদের দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে।পুতুল আর বাকি বাচ্চারা রক্তিমকে দেখে ভো দৌড় ওরা হয়তো মনে করেছে রক্তিম তাদের বলেছে।তাদের দৌড় দেখে আমিও একবার ভাবলাম দৌড় দেই পরে ভাবলাম এখন যদি পা ভেঙ্গে যায় তাহলে আরো অবস্থা খারাপ হবে।
রক্তিম আস্তে আস্তে আমার কাছে চলে আসলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে এতে রক্তিমের সাদা রঙ্গের শার্টটা ভিজে যাচ্ছে তার সামনের চুল গুলে সে হাত দিয়ে ঠিক করে। আমার একদম কাছে এসে বললেন,
~চুপচাপ রুমে যাবে কোনো কথা বললে কোলে নিয়ে নিবো।
তার কথা শেষ হতে দেরি আমার হাঁটতে দেরি হয়নি সোজা সিড়ি বেয়ে ফ্যাল্টে ডুকে একদম নিজের রুমে চলে গেলাম।মা আমাকে দেখেই বকা শুরু করেছেন আমি রুমে এসে শাড়ি নিয়ে যেই না ওয়াশরুমে ডুকতে যাবো তখনই দরজা বন্ধ করার আওয়াজ শুনে পিছে ঘুরে দেখি রক্তিম দাড়িয়ে আছে আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে বললেন,
~বৃষ্টিতে কেন ভিজতে গিয়েছো?
রক্তিমের শান্ত কন্ঠ আমার কাছে বড্ড অশান্ত মনে হচ্ছে।আমার জবাব না পেয়ে সে আমার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,
~আর কোনোদিন এরকম করবে না নাহলে খুব বড় শাস্তি পাবে।
এতটুকু বলে রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিলো আমি ওয়াশরুমে চলে আসলাম।অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গেছি
আমি শাড়ি পাল্টে ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে দেখি রক্তিম বিছানায় শুয়ে আছে মাথায় হাত দিয়ে আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছতে শুরু করলাম
রক্তিম তার চোখ খুলে দেখতে পেলো এক রমনী তার চুল শুকাতে ব্যস্ত। রক্তিমের এখন মন চাচ্ছে এই রমণীকে একবার ছুয়ে দিতে তাও নিবিড় ভাবে। এই রমণীর উপরে তার অধিকার আছে রক্তিমের এই আকাশপাতাল ভাবনায় দরজায় টোকা পরলো জারিফ বাহির থেকে বলছে,
~আপু,নাস্তা রেডি করেছে দুলাভাইকে নিয়ে চলে আসে মাগরিবের আযান সেই কবে দিয়েছে।
আমি জারিফের কথা শুনে বললাম,
~আসছি।
এতটুকু বলে বিছানার দিকে তাকালাম রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তাকে বললাম,
~চলেন নাস্তা করে আসি।
রক্তিম কিছি না বলে উঠে দাড়ালান আমিও তা পিছে পিছে হাঁটা শুরু করলাম।
,,,,,
,,,,,,
রাত আজ তার বাবার অফিসে গিয়েছিল নিজের কাজে ফোকাস করতে চায় সে তাই আজ থেকে কাজ শুরু করে দিলো সে।এইমাত্র বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসেছে রাত অনেক ক্ষুধা লেগেছে তখনই দাদীমা এসে রাতকে বললো,
~রাত দাদুভাই,প্লেটে খাবার নেও সেই যে সকালে বের হয়েছো এখন পর্যন্ত কিছু খাওনি
দাদীমার কথা শেষ হতেই সাহারা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসলো ছেলের প্লেটে খাবার বেড়ে রাতের সামনে দিয়ে দিলো।রাত চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো খাওয়ার মাঝেই দাদীমা বললো,
~রাত দাদুভাই,প্রথমদিন অফিসে কেমন কাটলে?
রক্তিম হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~ভালো কেটেছে দাদীমা অর্ধেক বেলা ছিলাম।কালকে থেকে সকালেই চলে যাবো
দাদীমা বললো,
~ঠিক আছে।
রাত খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলো তারপর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে চলে বারান্দায় একটা সিগারেট মুখে দিয়ে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে সেটায় সুখটান দিতে লাগলো।সাহারা ছেলের রুমে এসেছে কোথাও রাতকে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো রাতের অবস্থা।সাহার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~রাত আর কতোক্ষন মায়ের সাথে রাগ করে থাকবি?
রাত সিগারেট হাত থেকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো আর বললো,
~রাগ করিনি তোমার সাথে কীসের জন্য এসেছো তা বলো।
সাহারা বললো,
~তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি অনেক ভালো তোর দাদীমা পছন্দ করেছে কালকে আমাদের সাথে চল মেয়েটাকে দেখে আসবি?
রাত মেকি হেসে বললো,
~বিয়ে করবো না মা।
সাহারা বললো,
~এখন কী বিয়ে করবি নাকি এখন শুধু দেখবি
রাত বললো,
~তোমার এক ছেলে বিয়ে না করলে কী ক্ষতি হবে মা?
এভাবেও তোমার এই বাজে ছেলেকে কে ভালোবাসবে?
বলেই রাত একদম বাসা থেকে বের হয়ে গেলো গাড়ি না নিয়ে হাঁটা ধরলো রাস্তায় মনটা হালকা করতে হবে।
সাহারা ছেলের কথায় স্তব্ধ কী বলে গেলো তার ছেলে এতো কষ্ট দিয়ে ফেললো তার সন্তানকে ভাবতেই তার চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করলো।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২১
,,,,,,,
,,,,,,,
সেখানে গিয়ে দেখলাম রক্তিম হাঁটু গেড়ে বসে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে হাত দুটো হাঁটুর উপরে রেখে চোখ দিয়ে অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে।তার চোখ গুলো সামনের দিকে স্থির হয়ে আছে রক্তিমের এ অবস্থা আমার বুকে এক প্রলয় বয়ে আনছে।কীসের দুঃখ তার এতো যে এভাবে সে কান্না করছে রক্তিমের কাছে যেতে মন চাইছে কিন্তু পা দুটো চলছে না কেনজানি মনে হচ্ছে তাকে সামলাতে গেলে নিজেই দূর্বল হয়ে যাবে।কিন্তু যেতে তো হবে সামলাতে চাই আমি তাকে মানুষটার মনের কথা গুলো আজ শুনতে চাই এতো কীসের কান্না তার।সে কি জানে না তার কান্না আমাকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে তার চোখ থেকে বের হওয়া প্রতিটা অশ্রু আমার মনকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে।
নাহ আর ভাবতে পারলাম না দৌড়ে চলে গেলাম রক্তিমের কাছে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় রক্তিম হকচকিয়ে গেলো কিন্তু পরক্ষনে আমাকে তার দুটো হাত দিয়ে নিজের বাহুডরে আবদ্ধ করলেন রক্তিমের চোখের পানি দিয়ে আমার কাঁধ ভিজে গেলো।আমি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
~কী হয়েছে এভাবে বসে কান্না করছেন কেন?আপনার এতো কীসের কষ্ট আমি কী জানতে পারি।
রক্তিম কোনো কথা বলছেনা শুধু আমায় জড়িয়ে ধরে আছেন।আমি রক্তিমকে জড়িয়ে ধরা থেকে ছেড়ে দিলাম তারপর নিজেকে তার থেকে ছাড়িয়ে রক্তিমের মুখোমুখি হয়ে আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে তার চোখ মুছে দিলাম তার কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে সেগুলে মুছে দিয়ে বললাম,
~কী হয়েছে বলা যাবে?
রক্তিম আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,
~তুমি কী আমার ছেড়ে চলে যাবে? অধরা
রক্তিমের এহেন প্রশ্নে আমি শুধু অবাক না চরম পর্যায়ের একটা ধাক্কা খেলাম আমি রক্তিমের দিকে ফ্যালফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন এভাবে নীরবতা বজায় রেখে আমি নিজেকে সামলে নিলাম তারপর বললাম,
~আপনার কী হয়েছে তা আমি জানি না?কিন্তু এখন আপনি নিজের হুশে নেই তাই আমরা পরে কথা বলবো।এখন আপনি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরুন
রক্তিম তার হাত দুটো দিয়ে আমার গাল আকড়ে ধরে বললেন,
~তুমি কী রাতের কাছে চলে যাবে?
এবার আমার রাগ হলো ভীষন রাগ মনে চাচ্ছে রক্তিমকে নিজের রাগে নিঃশেষ করে দেই।পরক্ষনেই নিজেকে শান্ত করে আমি বললাম,
~রক্তিম আপনি অনেক চিন্তিত রাতের জন্য কিন্তু এই চিন্তায় আপনি আমাকে জড়িয়ে ফেলছেন যা একদম উচিত নয়।
এতটুকু বলে আমি রক্তিমের দিকে তাকালাম সে হয়তো আমার দ্বারা এ কথাটিই আশা করেছিল তাইতো তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠে।
রক্তিম তার চোখ মুখ ভালো মতো মুছে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
~অধরা,ভালোবাসার যন্ত্রণা অনেক বেশি যে একবার এটার স্বাদ পেয়েছে সে সারাজীবন এটার স্বাদ গ্রহন করতে চায়।তোমাকে অনেক ভালোবাসি অধরা হয়তো নিজের থেকেও বেশি আমার জীবনের প্রতিটি ধাপে শুধু তুমি।তুমি যদি আমার সাথে না থাকো আমি হয়তো নিজেকে শেষ করে দিবো আমি দুবছর আগের যন্ত্রণা আর সহ্য করতে চাই না।অনেক কাঠখর পুড়িয়ে তোমাকে আমি পেয়েছি হারাতে চাই না তোমায় আমি।
রক্তিমের এতোগুলে কথা যেমন আমার ভালো লেগেছে ঠিক তেমনি একটি লাইন আমার মাথায় ঘুরছে দুবছর আগে সে কোন যন্ত্রণা সহ্য করেছে।রক্তিমকে জিজ্ঞেস করবো না থাক এখন না সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলতে হয়।আমি আর রক্তিম ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে শুয়ে পরলো।আর আমি ভাবতে থাকলাম আজ কী থেকে কী হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারলাম না রাত কী নিজেকে সামলাতে পারবে?
,,,,,,,
,,,,,,,
রাত একটা নির্জন রাস্তায় দাড়িয়ে আছে দূর দূর পর্যন্ত কোনো গাড়ির দেখা নেই হবেই বা কী করে রাতঃ৩.৩০মিনিটে সব মানুষই মিষ্টি ঘুমে আচ্ছন্ন। রাতের নিজেকে আজ একা মনে হচ্ছে শুধু সারার দেওয়া কষ্টে তার মন পুড়ছে না তার মাও যে তাকল হারে হারে শেষ করে দিয়েছে।সারার তো মাত্র কয়েকদিন ধরে তার জীবনে কিন্তু তার মা তাকে এতো বড় প্রতারণা।
কিন্তু এতে তার মায়েরই বা কী দোষ সে নিজেই তে তার সব শেষ করেছে নিজের ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।এখন কিছুই করার নেই নিজের পাপের শাস্তি সে পাচ্ছে অধরাকে অপমান করার শাস্তি এতোটা ভয়ানক হবে তা সে জানতো না।আসলে কথায় আছে প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না সে তার প্রতিশোধ নিয়েই থাকে।অধরা কতোটা সুখে আছে রক্তিমের সাথে তা ওর মুখ দেখলেই বুঝা যায়।দিনশেষে অধরা সুখী হলো অথচ রাত তাকে ছেড়ে দিয়েছিল সুখের খোজে।
অধরার কাছে ক্ষমার কীভাবে চাইবে সে নাহ তাকে তো চাইতেই হবে পাশাপাশি রক্তিমের কাছেও তার মাফ চেতে হবে।আজ এইমূহূর্ত থেকে সব ভুলে নতুন ভাবে সব শুরু করতে হবে নিজের ভুল গুলো শুধরাতে হবে।এই ভেবে রাত গাড়িতে বসে পরে আজ থেকে সব নতুন করে শুরু করার প্রতিজ্ঞা করে।
সকালে রক্তিমের ঘুম ভাঙ্গতেই সে দেখে অধরা তার সাথে লেপ্টে আছে শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে তা দেখে রক্তিম হেসে মনে মনে বললো,
~এই মেয়েটা শাড়ি সামলাতে কবে শিখবে?
এইভেবে রক্তিম অধরার উম্মুক্ত পেটে হাত রাখলো।
আমার পেটে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে আমি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখি রক্তিম আমার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে।আমি রক্তিমকে দেখে মুচকি হাসি দিলাম সে আমার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলেন আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।আমার কপাল থেকে একটু নিচে নেমে নাকে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলেন আমি তাকে বললাম,
~সকাল সকাল এতো ভালোবাসা কেন?
রক্তিম হেসে বললেন,
~তোমাকে তো সারাদিনই ভালোবাসতে মন চায়।
আমি বললাম,
~আচ্ছা।কিন্তু এখন ছাড়েন আমাকে ভার্সিটিও যেতে হবে।
রক্তিম বললেন,
~হুমম আজ আমারও অনেক ক্লাস আছে।
বলেই ছেড়ে দিলেন আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম শাড়ি ঠিক করে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।
কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম রক্তিম মোবাইল নিয়ে বসে আছে আমি তাকে বললাম,
~ভার্সিটি কী যাওয়ার ইচ্ছা আছে?
রক্তিম মোবাইল থেকে মুখ উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~অবশ্যই আমারতো যাওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু তুমি যদি চাও আমি কোথাও যাবো না।
আমি তার কথার জবাব দিতে যাবো তার আগেই নিচ থেকে বাবার উচ্চস্বরে বলা কথার আওয়াজ শোনা গেলো।রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~অধরা নিচে চলো।
আমি অপেক্ষা না করে রক্তিমের সাথে নিচে চলে আসলাম
,,,,,,,
,,,,,,
নিচে এসে দেখি বাবা সাহারা রায়জাদাকে কিছু বলছেন আর সে ছলছল নয়নে বাবার দিকে তাকিয়ে আছেন।বাবা বলছেন,
~সাহারা,তোমাকে আমার আশেপাশে যেন আমি না দেখি আর তোমার নবাবপুত্র কোথায় আছে? বাসায় কী ফিরবে? তোমার কারণে রাত এতোটা বিঘরে গেছে।আমার চোখের সামনে থেকে যাও তুমি।
বাবার এমন ব্যবহার দেখে রক্তিম বললো,
~বাবা,এমন করে কেন বলছো?মায়ের ভুল হয়েছে তাই বলে তুমিও সেই ভুল করবে।
বাবা রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~রক্তিম তোর মাকে আমার থেকে দূরে থাকতে বলবি নাহলে খারাপ হবে।
বাবা তার কথা শেষ করে যেই না রুমের দিকে পা বাড়াবে সেইসময়ই দাদীমা তার রুম থেকে বের হয়ে বললো,
~রাহাত বউমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন?এটা কী আমার শিক্ষা
দাদীমার কথা শুনে বাবা তার কাছে গিয়ে বললো,
~মা,তুমি জানো না এই মহিলা কী করেছে?
দাদীমা বললো,
~সব জানি কে কি করেছে তার জন্য তুমি বউমার সাথে এমন আচরণ করবে।সে ভুল করেছো তাই বলে কী তুমি তোমার মুখ সামলে কথা বলতে পারছো না।
দাদীমার কথা শুনে সাহারা রায়জাদা হু হু করে কেঁদে ফেললো আর বললো,
~মা আমি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
দাদীমা বললো,
~সবাই নাস্তার টেবিলে বসবে ৩০মিনিটে আর অধরা টেবিল সাজাও সার্ভেন্টরা নাস্তা রেডি করে রেখেছে।
রক্তিম রাতকে ফোন করো খবর নেও কোথায় আছে?
দাদীমার কথা শেষ হতেই সে রুমে চলে গেলো।আমি টেবিল সাজাতে শুরু করলাম ঠিক ৩০মিনিট পর দাদীমা সহ সবাই টেবিলে উপস্থিত রক্তিম বললো,
~দাদীমা,রাত ২০মিনিটে বাসায় পৌছে যাবে।
দাদীমা বললো,
~ঠিক আছে।বউমা রাতের জন্য মেয়ে খোজা শুরু করো রাতের বিয়ের কার্যক্রম শুরু করার এটাই উপযুক্ত সময়।
দাদীমার কথায় সাহারা রায়জাদা বললো,
~মা এখন কীভাবে রাত রাজি হবে না।
দাদীমা বললো,
~সারার বিরহে আমি আমার নাতীকে শেষ করতে পারবো না তাই একজন এমন মেয়ে প্রয়োজন যে তাকে গুছিয়ে রাখতে শিখাবে আর বিয়ে এখনই হবে না মেয়ে খুজে রাখাটা জরুরি।
দাদীমার কথা শেষ হতেই সবাই নাস্তা করা শুরু করলো।তখনই কলিংবেল বাজার আওয়াজ আসলো রক্তিম উঠে দরজা খুলে দিলো আর সাথে সাথে সাবিহা ভিতরে প্রবেশ করলো।সাবিহাকে দেখে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম তারপর তার কাছে গিয়ে বললাম,
~সাবিহা এতো সকালে তুমি?
সাবিহা হাসি হাসি মুখে বললো,
~ভাবি তোমার সাথে ভার্সিটি যাবো।
রক্তিম বললো,
~তোর ভাবি কী তোকে কোলে করে নিয়ে যাবে?
সাবিহা হি হি করে হেসে উঠলো আর বললো,
~ভাবির এখন তার বাবুকে কোলে নিবে আমাকে কেন নিবে?
সাবিহার কথায় আমি তার দিকে চোখ বড় করে তাকালাম।সাবিহা আমার অবস্থা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো আমি ওর হাসি দেখে নিজেও হেসে ফেললাম।
আমি সাবিহার পিছে তাকিয়ে দেখি রসত বাড়ির ভিতরে ডুকছে রাতকে দেখেই আমি রক্তিমের দিকে ইশারা করলাম।রক্তিম আমার ইশারা বুঝতে পেরে রাতের কাছে চলে গেলো রাত রক্তিমকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~ভাইয়া,Good morning.
রক্তিমও রাতের কথার জবাব দিয়ে বলে,
~Good morning.
রাত আর কোনো কথা না বলে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।উপরে যাওয়ার আগে একপলক সাবিহার দিকে তাকিয়ে চলে যায় আমি সাবিহাকে বললাম,
~আমি রেডি হবে।তুমি চলো আমার রুমে
সাবিহা খুশি হয়ে বললো,
~আচ্ছা চলো।
আমি আর সাবিহা রুমে চলে আসলাম সে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে পরলো আর আমি রেডি হতে শুরু করলাম
,,,,,,,
,,,,,,,
আমি, রক্তিম,সাবিহা বের হবো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে তখনই রাত এসে বললো,
~ভাইয়া আমিও আজ ভার্সিটি যাবো অনেকদিন যাই নি।
রক্তিম বললো,
~ভালো কথা চল।তোর মনটাও ফ্রেশ হয়ে যাবে
রাত বললো,
~Thanks ভাইয়া।আমাকে বুঝার জন্য
রাতের কথা শেষ হতেই সাহারা রায়জাদা হাজির সে রাতকে দেখে বললো,
~রাত তুই কোথায় যাচ্ছিস আবার?
রাত গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~যাচ্ছি এক জায়গায়।
বলেই সে বাহিরে চলে গেলো আমরাও রাতের পিছে পিছে বাহিরে এসে পরলাম তারপর গাড়িতে বসে রওনা হলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে পুরো গাড়িতে শুধু আমি আর সাবিহা কথা বলেছি।
ভার্সিটি পৌছে যে যার কাজে লেগে পরলাম।এতদিন কতোগুলো ক্লাস মিস হয়েছে।তাই সব গুলো নোট সংগ্রহ করতে করতে আমার শরীর বাবাজী শেষ।
সব গুলো ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গেটের বাহিরে দাড়িয়ে আছি আমি আর সাবিহা রক্তিমের কাজ আছে সে এখন যেতে পারবে না।তাই আমি সাবিহার গাড়িতে বাসায় যাবো হঠাৎ রাতের গাড়ি আমাদের সামনে এসে দাড়ালো।সে তার গাড়ির জানালার গ্লাস নিচে করে আমাকে বললো,
~ভাবি,ভাই আমাকে পাঠিয়েছে বাসায় পৌছে দেওয়ার জন্য।
রাতের মুখে ভাবি ডাক শুনে আমি হা হয়ে গেলাম তাই আমার কিছু বলার আগে
সাবিহা বললো,
~ভাবি তো আমার সাথে যাবে।
রাত বললো,
~সাবিহা তোমরা আমার সাথে যাবে।
সাবিহা আর আমি রাতের সাথে চললাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।আমাকে বাসায় দিয়ে রাত সাবিহাকে তার বাসায় দিতে গেলো
রাত আর সাবিহা গাড়িতে বসে আছে রাত ড্রাইভ করছে আর সাবিহা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে
রাত আড়চোখে সাবিহাকে দেখছে হঠাৎ রাত বললো,
~সাবিহা তোমার কী বয়ফ্রেন্ড আছে?
সাবিহা ভ্রুকুচকে বললো,
~আপনি জেনে কী করবেন?
রাত বললো,
~আন্টির কাছে বিচার দিতে পারতাম।
সাবিহা বললো,
~রাত ভাই আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
রাত বললো,
~কেমন ছেলে চাও তুমি?
সাবিহা বললো,
~এতো কিছু জেনে কী করবেন?আমার বাসা এসে পরছে।
সাবিহার কথা শেষ হতেই রাত গাড়ি থামিয়ে দিলো।
সাবিহা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরলো বাড়ির পথে রাত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২০
,,,,,,
,,,,,
আমি কান থেকে ফোন নামিয়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষন ভাবলাম,
~কী এমন সারপ্রাইজ দিতে পারে? সারা।নতুন কোনো অপমান করার প্ল্যান নাতো?যা হবার হবে আমি নিজেকে কিছুতেই দূর্বল করবো না।
ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুল ঠিক করতে লাগলাম।দরজা ঠেলে রক্তিম ঘরে প্রবেশ করলো তাকে অনেক চিন্তিত লাগছে আমি আয়নার দিকে তাকিয়েই তাকে প্রশ্ন করলাম,
~কী হয়েছে?সব ঠিক আছে তো?
রক্তিম বললো,
~অধরা,সারা আমাদের এতো especially invite করেছে এতে তোমার কোনো সন্দেহ হচ্ছে না?
আমি বললাম,
~যা হবার হবে কিন্তু আজ আমরা সারার বাসায় যাচ্ছি।
রক্তিম বললো,
~হুমম তাতো যেতে হবেই।
আমরা সবাই রেডি হয়ে সোফার রুমে ওয়েট করছি রাতের জন্য সে আসলেই আমরা রওনা দিবো।কিন্তু আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে না জানি সারা কী করবে?এই মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।কিছুক্ষনের মধ্যে রাত এসে হাজির সে আমাদের সবাইকে দেখে বললো,
~ওয়েট করানোর জন্য সরি।এখন আমরা রওনা দেই
কথা শেষ করে যেই না রাত বাড়ির বাহিরে পা রাখবে তখনই বাবা বললেন,
~রাত,আমি চাচ্ছি আজই তোমার আর সারার বিয়েটা ঠিক হয়ে যাক।আর তুমি যদি বিয়ের পর আলাদা থাকতে চাও এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।এভাবে দিন-রাত তোমরা একসাথে ঘুরো এটা ঠিক না
বাবার কথায় সাহারা রায়জাদা বললেন,
~কীসব আজেবাজে বলছেন?আমার ছেলে বাড়ি ছেড়ে কেন যাবে?
বাবা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~সাহারা,ছেলে বাসার বাহিরে থাকবে দেশের বাহিরে না যে দেখা করতে পারবে না।তাই আমি যা বলেছি তাই হবে।
বাবার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার মুখ চুপসে গেলো।তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ হয়তো সন্তান হারানোর ভয়।
রাত বাবার সব কথা শুনে বললো,
~ঠিক আছে বাবা,আমি আজই সারাকে বলবো।
বাবা কিছু না বলে বাসার বাহিরে চলে গেলেন।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রক্তিমের সাথে হাঁটা ধরলাম।
গাড়িতে বসে আমি ভাবছি সারা যাই করবে তাতো আমাকে ঘিরে হবে কিন্তু সে তো আমার বাসায় এসেও করতে পারতো আমাদের সবাইকে এভাবে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে কেন?
নাহ এসব আর ভাবা যাবে না মাথা ঠান্ডা রেখে সব কাজ করতে হবে নাহলে হিতে বিপরীত হতে সময় লাগবে না।সব যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দিতে হবে না আমার এতটুকু দোয়া রইলো সেখানে যাই হোক রক্তিমের মাথা যাতে ঠান্ডা থাকে।
রক্তিমের ডাকে আমি ভাবনার জগত থেকে বের হলাম।রক্তিম বললো,
~অধরা,কী ভাবছো?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~কিছু না।আর কতক্ষন লাগবে পৌছাতে?
রক্তিম বললো,
~এইতো পৌছে গেছি।৫মিনিট হয়তো লাগবে
আমি কিছু না বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
,,,,,,
,,,,,,
সারাদের বাসায় পৌছে দেখতে পাই সারার বাবা-মা আমাদের সবাইকে Welcome করার জন্য দাড়িয়ে আছেন।তারা আমাদের সাথে কুশলাদি করে বাসায় ডুকতে বললো আমরাও তাদের কথায় বাসার ভিতরে প্রবেশ করলাম।কোথাও সারাকে দেখতে পেলাম না তাই আমি সারা মাকে বললাম,
~আন্টি সারা কোথায়?
আন্টির মুখটা কালো হয়ে গেলো কিন্তু পরক্ষনেই হাসি হাসি মুখে বললেন,
~রুমে আছে চলে আসবে।
আমি কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসি দিলাম।সাহারা রায়জাদা আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
~এই গিফট গুলো আপনাদের জন্য।
আন্টি বললেন,
~এগুলো কেন এনেছেন?আমরা কী পর নাকি?
সাহারা রায়জাদা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
~আপনারা কেন পর হবেন?আপনারাই তো এখন রাতের সবচেয়ে আপন মানুষ।
কথাটা রাতের দিকে তাকিয়ে বললেন সাহারা রায়জাদা। হঠাৎ সারা বলে উঠলো,
~রাতের আপন মানুষ তো আপনিই বানিয়েছেন আন্টি।
আমরা তার কথা অনুসরণ করে সিড়ির দিকে তাকালাম।সারা সিড়ি দিয়ে নামছে আর এ কথা বলছে সারা আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,
~কেমন আছো অধরা?
আমি বললাম,
~ভালো।তুমি কেমন আছো?
সারা বললো,
~ভালো।আপনাদের সবাইকে এখানে দেখে অনেক ভালো লাগছে বিশেষ করে রক্তিম আর অধরাকে দেখে।আমি ভাবিনি তোমরা আমার বাসায় আসার জন্য রাজি হবে।ধন্যবাদ তোমাদের
রক্তিম হেসে বললো,
~সারা তুমি আমাদের পরিবারের অংশ এখন তাই তোমার কথাও আমাদের রাখা উচিত।
সারা বললো,
~ধন্যবাদ আমাকে এতোটা আপন করে নেওয়ার জন্য।
অনেকক্ষন আমরা আড্ডা দিলাম কিন্তু সারা বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছিল এমন মনে হচ্ছে কেউ আসবে তার জন্য ওয়েট করছে।আমি সারাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই আন্টি এসে বললেন,
~প্লিজ ডিনারটা সেরে তারপর কথা বলেন।
আমরা সবাই খাওয়ার টেবিলে বসে পরলাম।সারা সবাইকে সার্ভ করছে সারার এমন ব্যবহার দেখে আমি অনেক অবাক কারণ সারা এধরনের মেয়ে নয় যে মেহমানদের সার্ভ করে খাওয়াবে।আর সবচেয়ে আজব ব্যাপার সে রাতের সাথে একবারও কথা বলেনি।আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা কী হচ্ছে সারা কী চায় কোনো কিছুই ক্লিয়ার না মাথা ভো ভে করছে।এসব চিন্তা করতে করতে খাবার শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে হাত ধুয়ে সারার পাশে এসে দাড়ালাম আজ এই মেয়েটাকে অনেক অচেনা লাগছে।
আমরা সবাই সোফার রুমে বসে আছি তখন রাত বলে উঠলো,
~সারা,আমি তোমার শর্তে রাজি।আর বাবা আমাকে পারমিশন দিয়েছে বিয়ের পর আমরা আলাদা থাকতে পারবো।এখন তুমি বলো বিয়েটা কবে করছি আমরা?
সারা কোনো জবাব না দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।তার বাবা-মাও চুপ করে আছেন আমি তাদের নীরবতা দেখে বললাম,
~সারা এভাবে চুপ করে আছো কেন?কিছু তো বলো।
সারা আমার কথায় মাথা উঠিয়ে বললো,
~অনেক কিছু বলার আছে অধরা।কিন্তু শুরু কীভাবে করবো বুঝতে পারছি না।
সাহারা রায়জাদা বললেন,
~যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
তার কথা শুনে বাবা বললেন,
~সাহারা মেয়েটা কিছু বলতে চায় ওকে বলতে দেও।
সারা বললো,
~আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।
সারার কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না সারা কী বলছে?বিয়ে করবে না কেন?
,,,,,,,
,,,,,,,,,
সারার এহেন কথায় রাত অবাক হয়ে বললো,
~সারা বিয়ে কেন করবেনা?কী সমস্যা বলা যাবে?
সারা ঠান্ডা কন্ঠে বলা শুরু করলো,
~রাত আমি তোমাকে কোনোদিন ভালোবাসিনি।যা করেছি তা ঝোঁকের বসে করেছি ২বছর আগে যখন তোমার সাথে আমার দেখা হলো তোমার coolness,handsome look দেখে তোমার মোহে পরে যাই।কিন্তু পরে জানতে পারি তোমার সম্পর্ক অধরার সাথে গড়ে উঠেছে।
এতটুকু বলে সারা থামলো একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করলো,
~তাই আমি তোমার আশা ছেড়ে দিলাম কিন্তু একদিন তোমার মা আমার সাথে দেখা করে আর বলে
সারার কথার মাঝেই সাহারা রায়জাদা হুংকার দিয়ে উঠে আর বলে,
~এই মেয়ে একদম কোনো কিছু বানিয়ে বানিয়ে বলবে না।আমি তোমাকে চিনতাম পর্যন্ত না
সারা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
~চোর চুরি করে কোনোদিন স্বীকার করে না।তাই প্রুভ আছে কোনো দিন ভাবিনি এটার প্রয়োজন পরবে কিন্তু আজ পরলো।
সারার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার ভয় পেয়ে গেলো।
রক্তিম বললো,
~সারা কথা শেষ করো।
সারা আবার বলতে শুরু করলো,
~একদিন আন্টি আমার সাথে দেখা করে আর বলে রাত আমাকে ভালোবাসে কিন্তু অধরাকে কথা দিয়েছে বলে আমাকে তার মনের কথা বলতে পারছেনা।
আমি সেদিন আন্টির কথা শুনে অনেক খুশী হই।তারপর একটা প্ল্যান তৈরি করি আন্টির সাথে যেহেতু রাত আমার ফ্রেন্ড ছিল তাই আমি তাকে আমার বাসায় ইনভাইট করি রাত চলেও আসে।আমরা সেদিন অনেক enjoy করি।তারপর থেকে প্রতিদিন আমরা দেখা করতাম অধরা তার ব্যস্ততার জন্য সময় দিতে পারেনি সেই সময়টা আমি কাজে লাগিয়েছি একদিন সুযোগ বুঝে রাতকে আমি purpose করি আর রাত সেটা accept করে ফেলে।কারণ রাত অধরার কাছ থেকে কোনো importance পাচ্ছিল না তাই আমার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে তোলে।কিন্তু আমি এখন বুঝতে পেরেছি রাতকে আমি শুধু মোহে পরে আপন করতে চেয়েছিলাম ভালোবাসা তো অন্য কেউ ছিল।
সারা এতটুকু বলে চুপ হয়ে গেলো হঠাৎ পিছন থেকে বলে উঠলো,
~সারা এখানে কী হচ্ছে?
সারা সেই ব্যক্তিকে দেখে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সেই ব্যক্তিটিও তাকে জড়িয়ে ধরলো।রাত শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।সারা সেই লোকটির হাত ধরে ভিতরে নিয়ে এসে বললো,
~আমার ভালোবাসা হচ্ছে প্রতীক।ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল ৩বছর আগে আমরা ১বছর রিলেশনশিপেও ছিলাম কিন্তু আমি রাতের মতো কাউকে চেয়েছিলাম শুধুমাত্র টাকার জন্য। ৪মাস আগে প্রতীকের সাথে আমার আবার দেখা হয় মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে আমার মন জয়ী হয় আমি অনেক চেষ্টা করেছি তাই এমন শর্ত দিয়েছিলাম যাতে আন্টি বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় কিন্তু তাতেও কিছু হলো না তাই আজ সবটা বলে দিলাম।অধরা তোমার অপরাধী আমি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও
বলেই হুহু করে কেঁদে উঠলো প্রতীক তাকে জড়িয়ে ধরলো সে প্রতীকে বুকে মাথা রেখে কাঁদছে।
রাত সব শুনে কিছু না বলে সারাদের বাসা থেকে বের হয়ে যায় রক্তিম তার পিছে যেতে নিলে আমি তার হাত ধরে ফেললাম আর বললাম,
~রক্তিম ওকে একা ছেড়ে দেও ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা মানুষ একাই অনুভব করতে চায়।
রক্তিম আমার কথায় তার একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমায়
আমরা বাসায় চলে আসলাম।রক্তিম পুরো রাস্তায় কোনো কথা বলিনি বাসায় এসে আমরা রুমে চলে আসবো তখনই বাবা বললো,
~রক্তিম,তোর মাকে বলে দে এই কালো মন নিয়ে আমার রুমে যাতে এক পাও না দেয়।
বাবার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।বাবা তার দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে যায় আমি তাকে বললাম,
~আপনি দাদীর রুমে চলে যান।
তিনি আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন আমি কাছে যেতেই সে বললেন,
~আমাকে একটু রুমে দিয়ে আসবে।
আমি সাহারা রায়জাদার হাত ধরে তাকে দাদীমার রুমে দিয়ে আসলাম।দাদীমার পাশে তাকে বসিয়ে চলে আসলাম আমার রুমে এসেই আমি রক্তিমকে খুঁজতে লাগলাম হঠাৎ বারান্দা থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতেই সেখানে গিয়ে দেখলাম,
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৯
,,,,,,
,,,,,
সকালের শুভ্রতা চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে সূর্যের রোদে আলোকিত চারপাশ পাখিরা নিজের সুরে গান গাইছে।
মানুষ ব্যস্ত হয়ে গেছে নিজ নিজ কাজে।ছোট ছোট পাখি গুলো নীড় ছেড়ে এই খোলা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। সকালের এই সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় এই মিষ্টি রোদ গায়ে পরলেই আলাদা শিহরণ জেগে উঠে।
সকালের আলো জানালাভেদ করে ঘরে ডুকেই অধরার চোখে মুখে পরে আর মোবাইলের এর্লাম টাও বেজে উঠে।অধরা চোখ বন্ধ রেখেই মোবাইল বেড সাইড থেকে নিয়ে এর্লাম বন্ধ করলো।অধরা চোখ পিট পিট করে খুলে দেখলো রক্তিমের মাথা তার বুকে অধরা আসতে আসতে বুঝতে পারলো তার শরীর ওপর চাউলের বস্তার মতো ভারি কিছু আছে।সে ভালো মতো চোখ কচলে দেখলো রক্তিম তার উপর শুয়ে এরকম অবস্থা দেখে সে প্রথমে একটু অবাক হলেও গতকাল রাতের কথা মনে করতেই তার গাল লাল হয়ে গেছে।অধরা রক্তিমকে আসতে আসতে করে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু ফলাফল রক্তিম তাকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলছে।
আমার ঘুম ভাঙ্গতেই কাল রাতের কথা মনে পরে গেলো।গতকাল রাতটা কতো না সুন্দর ছিল রক্তিমকে আমার মনের কথা বলে দিয়েছি। রক্তিমও আমাকে নিজের করে নিয়েছে এসব ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে হঠাৎ ঘড়ির দিকে খেয়াল করে দেখলাম সকাল ১০টা আমি রক্তিমকে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করতেই রক্তিম আমাকে আরো নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।অনেক চেষ্টার পর আমি সফল হলাম রক্তিমকে খাটের অন্যপাশে শুইয়ে দিলাম ঠিকঠাক ভাবে রক্তিম আবারো উল্টো হয়ে শুয়ে পরলো।চুলগুলো হাত খোঁপা করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম তারপর একটা শাড়ি নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুম। শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পরে বের হয়ে আসলাম বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি রক্তিম এখনো উপুর হয়ে শুয়ে আছে।রক্তিমকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে সস্বতির নিশ্বাস ছাড়লাম আজ সারাদিনেও আমি তার পাশে ঘুরবো না।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছে সুন্দর করে খোঁপা করে রুম থেকে বের হয়ে সোজা চললাম রান্নাঘরে। নাস্তা তৈরি করতে করতে একবার রান্নাঘরের বাহিরেও চোখ বুলিয়ে নিলাম নাহ বাসার কেউ এখন পর্যন্ত উঠেনি।নাস্তার জন্য আলু ভাজি তৈরি করে আমি পরোটা বেলতে শুরু করলাম সার্ভেন্টরা যে যার কাজ করছে।নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে আমি চলে গেলাম দাদীমার রুমে সে ঘুমিয়ে আছে নিশ্চন্তে তার দিকে তাকাতেই ভাবতে লাগলাম একসময় আমরা এমন বুড়ো হয়ে যাবো তখন না থাকবে সৌন্দর্যের অহংকার না থাকবে কোনো অধিকার।ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলাম বাগানে রক্তিমদের বাড়ির পিছনের সাইডে ছোট একটি বাগান।বাগানে হেঁটে হেঁটে ফুল গাছ গুলো ছুয়ে দিচ্ছি কিছুক্ষন আগেই হয়তো পানি দেওয়া হয়েছে তাই একটু ভিজা ভিজা লাগছে।সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে নয়নতারা গাছটা সূর্যের রশ্মিটা একদম সেই ফুলে গিয়েই পরেছে উজ্জ্বলতা আরো বেড়ে গেছে।কিছুক্ষন সেখানে কাটিয়ে আবার বাড়ির ভিতরে ডুকে পরলাম।
বাসায় ডুকেই দেখি সাহারা রায়জাদা নাস্তার টেবিলে একা বসে আছে।হয়তো সবার অপেক্ষা করছে আমি গিয়ে টেবিলের পাশে দাড়ালাম তার প্লেটে খাবার দিবো তখনই সে বলে উঠলো,
~আমি পরোটা খাইনা। এতে আমার গ্যাসট্রিকের প্রবলেম হয়।
আমি বললাম,
~তাহলে কী রুটি বানিয়ে দিবো?
সাহারা রায়জাদা কোনো জবাব দিলেন না আমি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম সে পিছন থেকে বলে উঠলো,
~কোনো প্রয়োজন নেই তোমার বানানোর।আমি সার্ভেন্টকে বলে দিয়েছি সে বানিয়ে দিবে।তোমার সাথে কথা ছিল
আমি মনে মনে ভাবলাম,
~আমার সাথে ওনার আবার কীসের কথা?
মনের কথা মনে রেখেই আমি বললাম,
~কী কথা?
সাহারা রায়জাদা পানির গ্লাস থেকে একটু পানি পান করে বললেন,
~দেখো তোমার বিয়ে যেভাবেই হোক না কেন তুমি এ বাড়ির বউ তাই তোমার কিছু কর্তব্য আছে যা তোমার পালন করতে হবে।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~আমি অবশ্যই আমার কর্তব্য পালন করবো।
সাহারা রায়জাদা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
~রাত তোমার দেবর আর দেবরের শশুরবাড়িতে বড় ভাবির যাওয়াটা প্রয়োজন।সারার বাবা-মা চায় আমরা সবাই তাদের বাসায় আজ রাতের ডিনার করি তাই তোমার যাওয়াটা আমি আশা করছি।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~আমি অবশ্যই যাবো।
সাহারা রায়জাদা বললো,
~রক্তিমকে বলে দিও আজ রাতে যেন কোনো প্রোগ্রাম না রাখে।
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম।
,,,,,,,
,,,,,,
রক্তিম ঘুম থেকে উঠে শোয়া থেকে উঠে বসে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে অধরাকে খুজছে।ওয়াশরুমের দরজা বাহির থেকে বন্ধ আর বারান্দার দরজাও রক্তিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১.৩০ আজ ছুটির দিন তাই তার কোনো প্যারা নেই।রক্তিম বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অধরাকে দেখার জন্য সে মাথা মুছতে মুছতে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।অধরা দাদীমার রুমেই হবে তাই সে কোনো কিছু না ভেবে দাদীমার রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখে দাদীমা বসে আছে বিছানায় পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে কোথাও অধরাকে পেলো না।দাদীমা মাথা তুলে দেখলেন রক্তিম তার ঘরে উঁকিঝুঁকি করছে।দাদীমা রক্তিমের এ অবস্থা দেখে বললেন,
~কীরে,ভাই কিছু বলবি?
রক্তিম দাদীমার ঘরে ডুকে বললো
~তোমার প্রিয় অধরাকে খুজে পাচ্ছিনা কই আছে জানো নাকি?
দাদীমা মিটমিট করে হেসে বললেন,
~তোর বউ শাশুড়ীর সাথে মার্কেটে গিয়েছে।
রক্তিম হা হয়ে দাদীমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষন পর সে বললো,
~এ আমি বিশ্বাস করি না দাদীমা তুমি কী বলছো?
দাদীমা খিলখিল করে হেসে বললেন,
~তোর ছায়াছবির ডায়লগ শেষ হলে নাস্তা করে ঘরে যা।
রক্তিম বললো,
~এটা কীভাবে হলো এটাতো বলো?
রক্তিমের কথায় দাদী বললো,
~সারাদের বাসায় রাতে দাওয়াত দিয়েছে তাই তোর মা আর তোর বউ তাদের জন্য মার্কেটে গিয়েছে গিফট কিনতে।
রক্তিম বললো,
~আচ্ছা সকাল সকাল এতো বড় সারপ্রাইজ দেওয়ার কোনো মানে আছে।
এতটুকু বলে রক্তিম দাদীমার রুম থেকে বিড়বিড় করতে করতে বের হয়ে গেলো।তার এখন অধরার উপর অনেক রাগ লাগছে তাকে বলে গেলে কী হতো?
কতক্ষন ধরে পাগলের মতো অধরাকে খুজে যাচ্ছি।এসব ভাবতে ভাবতে রক্তিম টেবিলে বসে পরলো আর পরোটা প্লেটে নিয়ে চিবুতে লাগলো। হঠাৎ রাত সেখানে এসে রক্তিমকে বললো,
~ভাইয়া আজকে সারাদের বাসায় যাবো আমরা সবাই তোমায় আর অধরাকেও যেতে হবে।সারা তোমাদের especially invite করতে বলেছে।
রাতের কথা শুনে রক্তিমের চোখ তার কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম রক্তিমের এহেন অবস্থা দেখে রাত অবাক হয়ে বললো,
~কী হয়েছে?ভাইয়া তুমি ঠিক আছো।
রক্তিম বললো,
~সকাল থেকে তোরা যেমন করছিস কোন সময় আমার যেন হার্ট আট্যাক হয়ে যায়।
রাত ভ্রুকুচকে বললো,
~ভাইয়া এসব কেমন কথা?
রক্তিম বললো,
~অধরা যাবে কারণ মায়ের সাথে সে মার্কেট গিয়েছে সারাদের বাড়িট সবার জন্য কেনাকাটা করতে।আর অধরা যেখানে যাবে সেখানে আমি অবশ্যই যাবো।
রাত বললো,
~আমি তোমার কথা শুনে খুশি হলাম।
রক্তিম আর কিছু না বলে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
,,,,,,
,,,,,,
দুপুর ১.৩০মিনিট আমি আর সাহারা রায়জাদা শপিং থেকে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আসতেই সোফার রুমে চোখ পরলো সাবিহা এসেছে।সাবিহা বসে বসে রক্তিম রাত আর দাদীমার সাথে কথা বলছে আমার দিকে ওর চোখ পরতেই চেচিয়ে বললো,
~ভাবি এসেছে।
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আমি তার পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম,
~কখন এসেছপ আমার ননদীটা?
সাবিহা বললো,
~পাক্কা ১২টায় রাহাত চাচ্চুর সাথে এসেছি।
আমি বললাম,
~তোমাকে দেখে অনেক খুশি মনে হচ্ছে।কী খবর?
সাবিহা বললো,
~আমার এডমিশন তোমার ভার্সিটিতে হয়ে গেছে।তুমি এখন আমার সিনিয়র +ভাবি।
সাবিহার কথায় আমি অনেক খুশি হলাম তাকে বললাম,
~এতো অনেক খুশির খবর।সাবিহা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি বসো।
কথা শেষ করেই আমি ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে যেই উপরে যেতে নিবো রক্তিমের দিকে চোখ পরলো সে কটমট করছে রেগে আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে।
নির্ঘাত আমাকে শায়েস্তা করার প্ল্যান করছে।আমি এক হিসেবে দৌড়ে রুমের ভিতর চলে আসলাম যেই না রুমের দরজা লাগাতে যাবো তখনই রক্তিম দরজা ধরে ফেললো আমি তাকে দেখে শুকনো ঢোক গিললাম।রক্তিম আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিলো আর সে রুমে ঢুকে পরলো।রক্তিমকে দেখে আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো সে দরজা বন্ধ করে হাতগুলো তার বুকে গুজে দরজার সাথে হেলান দিয়ে আছে।আমি একবার তার দিকে তাকিয়ে মাথা আবার নিচু করে ফেললাম রক্তিম শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
~মিসেস অধরা,আপনার সাথে এখন কী করা যায়?
আমি তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে আছি।রক্তিম আমার জবাব না পেয়ে বললেন,
~তোমার অবস্থা দেখে একটা গান মনে পরছে।
মার দিয়া যায় ইয়া ছোড় দিয়া যায় বোল তেরে সাথ ক্যা সুলুক কিয়া যায়।
রক্তিমের এহেন কথায় আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও সাহস নিয়ে মাথা উঁচু করে বললাম,
~কী করেছি আমি?
রক্তিম কিছু না বলে আমার দিকে এক-পা দু-পা করে এগিয়ে আসতে থাকলো।তার এভাবে আগানো দেখে আমি পিছিয়ে যেতে থাকলাম একপর্যায়ে আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলো রক্তিম আমার একদম কাছে এসে আমার দুপাশে হাত দিয়ে আটকিয়ে দিলো।তারপর বললো,
~এখন কী হবে?
আমি অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।রক্তিম আমাকে বললো,
~আমি সকাল থেকে পাগলের মতো আপনাকে খুঁজেছি ওইটার প্রতিদান দিতে হবে।
আমি কাপাকাপা কন্ঠে বললাম,
~আমি কী বলিছি আমাকে খুঁজতে?
রক্তিম রাগী কন্ঠে বললো,
~আমার মুখের উপরে কথা বলা পছন্দ নয়।আমাকে একটু বলে গেলে কী হতো?
আমি বললাম,
~বলে তো যেতেই চেয়েছিলাম আপনি তো মটকা মেরে ঘুমিয়ে ছিলেন।
রক্তিম আমার কথা শুনে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই ঘরের দরজায় কেউ টোকা দেয়।রক্তিম পিছে ঘুরে তাকাতেই আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম সাবিহা দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~ভাবি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো খাবার টেবিলে দেওয়া হয়েছে।
আমি বললাম,
~আচ্ছা।
সাবিহা আরো কিছু বলবে তার আগেই শাড়ি নিয়ে ভো দৌড় ওয়াশরুমে।
,,,,,,
,,,,,,,,
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে সাবিহার সাথে আড্ডা দিতে দিতে বিকেল হয়ে গেলো।সাবিহারও চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেলো সে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাতের সাথে তাদের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলে গেলো।সাবিহাকে কিছুদিন থাকতে বলেছিলাম কিন্তু সে বললো পরে এসে থেকে যাবে মেয়েটা অনেকই মিশুক ভালো লাগে ওর সাথে সময় কাটাতে।
সন্ধ্যার সময় আমি রেডি হচ্ছি সারাদের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে হঠাৎ একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।আমি ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে বলে উঠলে,
~আমি সারা,
আমি বললাম,
~সারা তুমি ফোন দিয়েছো কোন বিশেষ কাজ?
সারা বললো,
~আজকে বাসায় আসবে তো?
আমি বললাম,
~জ্বী।
সারা বললো,
~তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
বলেই সে ফোন কেটে দিলো আমি কিছুই বলতে পারলাম না।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৮
,,,,,,,,
,,,,,,,,
রক্তিম তার কথা শেষ করে আমার চেয়ারের পাশে এসে দাড়ায় তারপর সেই আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
~দেখেন,আন্টি আপনার সাথে আমি এভাবে কথা বলতে চাইনি কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন।আর রইলো কথা আমার মায়ের আমি তাকে খুব ভালো মতো বুঝিয়ে দিবো।
রক্তিমের কথা শেষ হতেই আন্টির মুখমন্ডলের দিকে তাকালাম এমন মনে হচ্ছে আকাশের যতো মেঘ আছে তার মুখে এসে পরেছে।আন্টি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
~রক্তিম,তুমি ভুল ভাবছো আসলে আমি এভাবে বলতে চাইনি।
রক্তিম বললো,
~আর আমি এখন কিছু ভাবতে চাইছিও না প্লিজ আপনি রাহির বিয়ে enjoy করুন।
রক্তিমের কথা শেষ হতেই আন্টি মাথা নিচু করে চলে যাই।আন্টি চলে যেতেই রক্তিম আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললেন,
~তোমার পা কী ব্যাথা করছে?
আমি বললাম,
~না।
রক্তিম বললো,
~আন্টির কথায় মনে কিছু করে লাভ নেই কারণ এমন মানুষের কাজই এগুলো তাই অধরা মুখে হাসি নিয়ে আসো।আর সাবিহা কোথায়?এই মেয়েকে তো আমি
বলেই সে দাড়িয়ে পড়লেন তারপর ফোন বের করে সাবিহাকে ফোন করলেন।সাবিহা ফোন রিসিভ করতেই রক্তিমের ধমকে বললেন,
~এই মেয়ে কোথায় তুই?হি হি করতে থাক তুই তোর complain যদি না করেছি তোর মায়ের কাছে আমার নাম রক্তিম রায়জাদা না।৫মিনিটে অধরার কাছে আয়
কথা শেষ করেই ফোন কেটে দিলেন।আমি রক্তিমের ধমক শুনেই শুকনো ঢোক গিললাম।আসলেই সাবিহা ৫মিনিটে চলে এসেছে মেয়েটা যে দৌড়ে এসেছে তা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।রক্তিমকে দেখে সাবিহা ভয়ে ভয়ে আমার কাছে চলে আসে রক্তিম সাবিহার দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন,
~এখন যদি অধরাকে ছেড়ে এখান থেকে সেখানে যাস তোর বিয়ে করার শখ তোর বাবার কানে চলে যাবে।
রক্তিম তার কথা শেষ করে সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। আর তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলো সাবিহা কিছুক্ষন সেভাবে তাকিয়ে থেকে আমার দিকে ফিরে কাঁদো কাঁদো গলায়,
~তোমার বর ফাজিল দেখেছো কীভাবে ভয় দেখালো?
আমি সাবিহার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলাম।
,,,,,,
,,,,,,
বরযাত্রা এসে পরেছে সেখানেই এখন সবার আকর্ষণ সাবিহা আমাকে ছেড়ে যেতে পারছেন না কিন্তু মেয়েটা সেখানে যাওয়ার জন্য উশখুশ করছে।আমি সাবিহাকে বললাম,
~তুমি যাও সাবিহা।
সাবিহা বললো,
~একটুও না।
আমি আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম হঠাৎ রাতকে দেখলাম আমার দিকে আসছে রাত আমার এখানে এসে একবার সাবিহার দিকে তারপর আমার দিকে তাকালো।সাবিহা রাতকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
~রাত ভাই তুমি এখানে?
রাত বললো,
~ওইখান টায় অনেক ভীর তাই এখানে চলে আসলাম।
রাত কথা শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~অধরা,কালকের জন্য সরি i don’t want to hurt you.it’s just a accident.
রাতের কথা শুনে বললাম,
~it’s ok.আমি অসাবধানতার জন্য ব্যাথাটা পেয়েছি।
রাত আর কিছু না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।আমিও সাবিহার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম
আমার এখন বোর লাগছে রাহি আর অভিকে একসাথে কেমন লাগছে কে জানে?সবাই তাদেরই দেখতে ব্যস্ত।আমার আর সাবিহারই কপাল খারাপ। নাহ এভাবপ বসে থাকলে হবে না আমাকে রক্তিমের সাথে কথা বলতে হবে আমিও তো রাহি আর অভিকে দেখতে চাই।এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখ গেলো সামনের দিকে রক্তিম কারো সাথে কথা বলছে তাকে দেখেই আমি জোরে তার নাম ধরে ডেকে উঠলাম,
~রক্তিম রক্তিম।
রক্তিম আমার গলা শুনে আমার দিকে তাকালো আমি তাকে হাতের ইশারায় আমার কাছে আসতে বললাম।
রক্তিম আমার ইশারা বুঝতে পেরে এখানে চলে আসলো এসেই সাবিহাকে বললো,
~তুই যা ওখানে তোর প্রয়োজন।
সাবিহা যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ভাবীকেও নিয়ে যাই।একটু দেখে চলে আসবে তুমি তো আছোই নিয়ে আসবে আবার এখানে।
সাবিহার কথায় রক্তিম কিছুক্ষন ভেবে বললেন,
~ঠিক আছে।
রক্তিমের কথা শুনে ৩২টা দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম।রক্তিম আমার সেই হাসি দেখে বললেন,
~কবুল পড়াবে তাই যেতে দিচ্ছি।কবুল পড়ানো শেষ আপনি আবার এখানে এসে পরবেন।
এই কথা বলে তার হাত আমার সামনে এগিয়ে দিলেন।আমি হাসি বন্ধ করে তার হাতে হাত দিয়ে উঠে দাড়ালাম স্টেজের সামনে নিয়ে গেলেন আমাকে অভিকে কবুল বলতে বলছেন কাজী সাহেব অভি ২সেকেন্ডও সময় নেয়নি এক নিশ্বাসে কবুল বলে দেয়।রাহি একটু সময় নেয় কান্নাকাটিও অনেক করে শেষ পর্যন্ত সেও কবুল বলে দেয়।রাহির সাথে অভির বিয়েটা হয়েই গেলো রক্তিম এখনো আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন।আমি তার দিকে তাকাতেই সে বললো,
~অধরা,তুমি খুশি তো ওদের বিয়ে দেখে।
আমি বললাম,
~জ্বী।
রক্তিম কিছু না বলে সামনের দিকে তাকালো।আমি মনে মনে ভাবছি আজ আপনিও অনেক খুশি হবেন যখন আমার মনে কথা জানবেন। রাহি আর অভি যেমন নিজের ভালোবাসার পূর্ণতা পেয়েছে তেমনি আমার আর আপনার ভালোবাসারও পূর্ণতা পাবে।
বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলে আমি রাহি আর অভিকে অভিনন্দন জানিয়ে আবার নিজ জায়গায় এসে বসে পরি।মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২.৪০মিনিট কিছুক্ষন পর হয়তো বিদায় হয়ে যাবে।সাবিহাকে দেখলাম আমার কাছেই আসছে।আমার সামনে এসে মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। তার কান্না দেখে আমি ভয় পেলাম সাবিহাকে জিজ্ঞেস করলাম,
~কী হয়েছে?
সাবিহা বললো,
~আপুর বিদায় হয়ে যাবে এখনই।
সাবিহার কথা শুনে নিজেরই এখন কান্না পাচ্ছে।আমি সাবিহার সাহায্যে বাগান বাড়ির বাহিরে চলে আসলাম রাহি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে এই দৃশ্য দেখে নিজেরই খারাপ লাগছে।এই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম সময় নিজের মেয়েকে অন্যের ঘরে তুলে দেওয়া।আমি খেয়াল করালাম আমার চোখের পানি দিয়ে গাল দুটো ভিজে গেছে।রাহির নজর আমার দিকে পরতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম রাহি চলে গেলো তার নতুন জীবন শুরু করতে যেখানে তার ভালোবাসার মানুষ আছে। এখন রাহিরও একটা সংসার হবে সুখের সংসার অভির ভালোবাসায় যাতে সে খুশি থাকে এটাই দোয়া রইলো আমার।
,,,,,,
,,,,,,,
রক্তিম সব কাজ গুছিয়ে আমার কাছে এসে পরলো আমরা সবাইকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম বাসার উদ্দেশ্যে।বাবা আজ রায়হান চাচ্চুর সাথে থাকবে আর রাত অনেক আগেই চলে গেছে।আমি আর রক্তিম বাসায় ফিরছি একা রক্তিম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করছে।আমি তার দিকে আড়চোখে বার বার তাকাচ্ছি আর ভাবছি বাসায় গিয়ে কী থেকে কী করবো?রক্তিম আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,
~কিছু বলবে তুমি?
আমি বললাম,
~কী বলবো?
রক্তিম বললো,
~আমার মনে হলো তুমি কিছু বলবে।
আমি কিছু না বলে বাহিরের দিকে নজর দিলাম।রক্তিমের সাথে এখন কথা বলতেও অনেক লজ্জা লাগছে।এতো লজ্জা কেন রে ভাই আমার নিশ্চিত এমন লজ্জার কথা কেউ জানলে আমার উপরে সব পাবলিক হাসবে।বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মনোরম পরিবেশ রাতের নির্জন রাস্তা আশেপাশে কেউ নেই বাতাসের সো সো আওয়াজ আসছে।রাতের শহর আরো সুন্দর লাগছে আজকাল আমার আবার সবকিছুই সুন্দর লাগছে কারণ হয়তো এই যে আমার পাশে যে ড্রাইভ করছে,আমার বর রক্তিম।বাসায় পৌছে আমি গাড়ির দরজা খুলে বাসার ভিতরে ডুকে পরলাম একবার ভাবলাম দাদীর রুমে যাই তারপর ভাবলাম থাক রাত অনেক হয়েছে তিনি ঘুমিয়ে আছেন।তাই সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম রক্তিম এখনো আসেননি।আমি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলাম তারপর কার্বাড থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকলাম মুখে অনেকক্ষন পানি ছিটালাম আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবছি,
~আচ্ছা এতে এতো ভাবার কী আছে?আমারই তো বর তাকেই তো শুধু তিনটি ওয়ার্ড বলতে I love you।এতে লজ্জা পাওয়ার কী হলো?আমি একদম লজ্জা পাবো না এখন বাহিরে গিয়েই রক্তিমকে বলে দিবো।
শাড়ি চেঞ্জ করে বাহিরে এসে দেখি রক্তিম একহাত মাথায় দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন।আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে সে চোখ খুলে উঠে বসলো তারপর কার্বাড থেকে শার্ট আর টাউজার নিয়ে যেই না ওয়াশরুমে ডুকতে যাবে আমি তার হাত ধরে ফেললাম।
রক্তিম ভ্রুকুচকে তার মাথা একদিকে হেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~কী হয়েছে?
আমি শুকনো ঢোক গিলে তার হাত ছেড়ে দিয়ে বললাম,
~একটা কথা বলতাম আর কি।
রক্তিম আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে বললেন,
~বলো কী বলবে?
রক্তিমের এহেন কান্ডে আমি বাকরুদ্ধ এই ছেলেটা এখন আমাকে লজ্জা দিতে দিতে মার্ডার করবে।অসভ্য একটা এখন আমি কীভাবে বলি নিজের মনের কথা।রক্তিম আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন,
~কী হলো বলো তো কী বলবে।
রক্তিমের কথায় আমি হেসে বললাম,
~আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন তারপর বলছি।
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
~ওকে আমার বউ যেভাবে বলবে তাই করা হবে।
বলেই আমার গাল টেনে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।আমি বিছানায় পা গুটিয়ে বসে গালে হাত দিয়ে ভাবছি কীভাবে বলবো মুখ দিয়ে তো কথাই বের হচ্ছে না।
রক্তিম ওয়াশরুমে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে আছে সে বুঝতে পেরেছে তার প্রিয়তমা তাকে কী বলতে চায়।তাই তো সে অধরাকে সময় দিয়েছে যাতে অধরা তার লজ্জা কাটিয়ে নিজে রক্তিমের কাছে আসে।হয়তো আজই সেই রাত ভালোবাসি শব্দটা যখন অধরার মুখ থেকল শুনবে তখন হয়তো রক্তিম নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।এসব ভাবতেই রক্তিমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো রক্তিম শাওয়ার শেষ করে শার্ট আর টাউজার পরে মাথা মুছতপ মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে আর দেখে অধরা গালে হাত দিয়ে বসে আছে।রক্তিম মুচকি হেসে অধরার কাছে এসে টাওয়ালটা কোলে দিয়ে দেয় আর নিচে বসে পরে আর অধরাকে বলে,
~অধরা,মাথাটা মুছে দেও।
আমি ভাবনায় মসগুল তখনই রক্তিম আমাকে বললো মাথাটা মুছে দিতে।আমি টাওয়াল হাতে নিয়ে রক্তিমের মাথা মুছে দিতে থাকলাম তখনই রক্তিম বললো,
~এখনতো বলো কী বলতে চাও?
আমার হাত অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়
টাওয়ালটা বিছানার একপাশে রেখে মাথানিচু করে রাখলাম।এখন আমার কান্না পাচ্ছে আমি এতো অধম কেন?রক্তিম আমার পাশে বসে আমার গালে হাত দিয়ে মুখ তুলে বললেন,
~ভালোবাসি অধরা অনেক অনেক ভালোবাসি।
রক্তিমের মুখে এহেন কথা শুনে আমার বুকটা ধুকপুক শুরু করলো।
,,,,,,,
,,,,,,,
রক্তিম আমার নীরবতা দেখে বললেন,
~তোমার কাজটা আমি সহজ করে দিলাম তবুও তেমার মুখ থেকে সেই মনোরম কথাটা শুনতে পারলাম না।
কথা শেষ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে যেই না উঠতে যাবে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
~আমিও আপনাকে খুব খুব ভালোবাসি।
I love you Roktim Rayjada.
রক্তিমের মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে অধরা তাকে I love you বলেছে।রক্তিম আর কিছু না ভেবে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে মুখ গুজে ঠোঁট ছুয়াতে থাকলেন।
রক্তিমের স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে এ কেমন অনূভুতি মনের ভিতর অন্য এক শিহরণ কাজ করছে।রক্তিম আমার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার উপর ঝুঁকে বললেন,
~আজ কী তোমাকে আমি নিজের করে নিতে পারবো?
সেই অনুমুতি কী তুমি দিবে আমাকে।
আমি কিছু না বলে চোখ দিয়ে ইশারা করে সম্মতি জানাতেই রক্তিম মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমার চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।এই পানি সুখের নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ এই রাতটা যদি এখানেই থেমে যেতো।
আজ রাতে রক্তিম আর অধরা এক হয়ে গেলো এই রাতটা তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ রাত।রক্তিম যে আজ অধরাকে একদম নিজের করে পেলো তার ভালোবাসার জয় হলো।অধরার মান-অভিমান মিটিয়ে আজ সে অধরাকে পেয়েছে।
আজকের রাত তাদের জন্য সুখ নিয়ে এসেছে।আগামীকাল কী হবে কেউ জানে না আর তারা জানতেও চায় না সকল সমস্যা এখন তারা মিটিয়ে নিতে পারবে কারণ দুজনই এখন ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ কেউ তাদের আলাদা করতে পারবে না।রক্তিম আগলে রাখবে তার অধরাকে ভালোবাসা দিয়ে
রাতের এই নির্জনতায় দুজন ব্যস্ত তাদের ভালোবাসার শহর গড়তে।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৭
,,,,,,
,,,,,
আমি ছাদে গিয়ে পুরো অবাক এতো সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে যে আমার চোখ পুরো জুড়িয়ে গেছে।স্টেজে হলুদ গোলাপ দিয়ে সাজানো আর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা রাহির হলুদ সন্ধ্যা। অনেক সুন্দর লাগছে আর সবাই কে তো আরো সুন্দর লাগছে আমার চোখ যে অন্য একজনকে খুজছে সেই যে রক্তিমের সাথে দেখা হয়েছে এখন পর্যন্ত তার দেখা আমি পাইনি।
আশেপাশে তাকিয়ে শুধু খুজছি তাকে কিন্তু কোথাও তার দেখা পাচ্ছি না।হঠাৎ আমার কোমড়ে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি এই স্পর্শ চিনতে একটুও ভুল করছি না রক্তিমের স্পর্শ চিনতে আমার একটুও ভুল হয়নি।আমি চোখ তার দিকে তাকালাম রক্তিম আমার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে তাকে দেখে আমি তো আরেকদফা অবাক হলাম আকাশী রঙ্গের পাঞ্জাবিতে তাকে সেই লাগছে।রক্তিমকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি অভিমান সুরে বললাম,
~এখন এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?এতক্ষন কোথায় ছিলেন?
রক্তিম শীতল কন্ঠে বললেন,
~একটু ব্যস্ত ছিলাম।
আমি রক্তিমের হাত কোমড় থেকে সরিয়ে বললাম,
~আপনি রুমে নেই যে এমন অসভ্যতামি করছেন।
রক্তিম হালকা হেসে বললেন,
~আমার অসভ্যতামির কী দেখেছো?তোমাকে এতো সুন্দর লাগছে যে আমার অসভ্যতামি আরো বাড়বে।
রক্তিমকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই রক্তিমের বাবা এসে পরলেন তাকে দেখেই আমি রক্তিমকে দূরে সরিয়ে দিলাম।রক্তিমকে ইশারা করলাম সে পিছে ঘুরে দেখলো তার বাবা এখানেই আসছে।রক্তিম আমাকে বললো,
~তুমি এখানে বসো।আমি বাবাকে দেখে আসছি।
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।রক্তিম চলে গেলো আমি একটা চেয়ারে বসে মোবাইল টিপছি সাবিহা আমার সামনে এসে বললো,
~ভাবি অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।
আমি মুখ তুলে সাবিহার দিকে তাকালাম তার চোখেমুখে ভয় দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক বড় ঝামেলা হয়েছে।সাবিহাকে বললাম,
~কী হয়েছে?
সাবিহা আমার হাত ধরে বললো,
~চলো রাহি আপুর রুমে তারপর বুঝবে।
আমাকে টেনে সে নিচে রাহির রুমে নিয়ে গেলো।আমি রুমে ডুকতেই দেখি রাহি বিছানায় বসে কান্না করছে তার মেকআপের নাজেহাল অবস্থা।রাহির এ অবস্থা দেখে আমার বুকটা ধক করে উঠলো আমি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে বললাম,
~রাহি,কী হয়েছে কান্না করছে কেন?
রাহি আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললো,
~অধরা,আমি বাবা কে ছেড়ে কোথাও যাবো না।বাবা তো আমাকে ছাড়া কিছুই করতে পারে না।
রাহির কান্না দেখে নিজেরই কান্না আসছে কিন্তু কিছু করার নেই এটাই নিয়তি মানতে হবে।আমি রাহির পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম,
~এখন যদি তুমি এভাবেই কান্না করতে থাকো তাহলে রায়হান চাচ্চু দেখে কষ্ট পাবে।তুমি কী জানো সে এখন কতটা কষ্টে আছে?তার একমাত্র মেয়ে দূরে চলে যাবে কতোটা কষ্ট পাচ্ছে।
রাহি আমার কথা শুনে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে বললেন,
~আচ্ছা আর কাঁদবো না।কিন্তু মেকআপের কী হবে?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~এখনই সব ঠিক হয়ে যাবে।
কথাটি বলেই রাহিকে আয়নার সামনে বসিয়ে দিলাম। তারপর সাবিহা আর আমি মিলে রাহির মেকআপ ঠিক করলাম।পার্লারের মতো ততটা ভালো হয়নি কিন্তু চলবে।রাহিকে ঠিকঠাক করে বললাম,
~অভি কী আজ আসবে?
রাহি রাগী মুখে বললো,
~ওই গাধার আসার কোনো দরকার নেই।
আমি বললাম,
~ঝগড়া হয়েছে?
রাহি বললো,
~আর বলোনা অধরা আমি অভিকে বললাম যে বাবাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো?ওই গাধায় বলে তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকবো?ওর মা ওকে সঠিক নামে ডাকে গাধা।
আমি আর সাবিহা রাহির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলাম তারপর আমি হাসতে হাসতে বললাম,
~অভি ভাই গাধা হলে তুমি তো তার হবু বউ তাহলে তুমি গাধী।
রাহি আমার কথা শুনে চোখ চোখ বড় বড় করে বললো,
~একদম না।আমি কেন গাধী হতে যাবো।
রাহির কথায় আমরা হেসে উঠলাম।হঠাৎ রক্তিম দরজা ঠেলে রুমে ডুকে বললো,
~অধরা,রাহিকে নিয়ে আসো।আর এই সাবিহা কই থাকিস তুই তোকে আন্টি খুজছে।যা ভাগ
সাবিহা রক্তিমের কথা শুনে এক দন্ডও সেখানে দাড়ালো না ভো দৌড় দিলো।আমি রাহিকে নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে বের হলাম রুম থেকে
,,,,,,
,,,,,,
রাহিকে স্টেজে বসিয়ে আমি নেমে পরলাম।রাহিকে দেখতে অনেক ভালো লাগছে একদম হলুদ পরী কিন্তু কান্না করার ফলে চোখ দুটি ফুলে গেছে তবুও তাকে সুন্দর লাগছে।এক এক করে সবাই তাকে হলুদ লাগাচ্ছে আর আমি সেই মূহুর্তো গুলো নিজের মোবাইলে বন্দি করছি।এইসব করছি সেসময় আমাকে পিছে থেকে কেউ বলে উঠলো,
~এতো সুখ তোমার কপালে সইবে তো অধরা।
আমি কথাটা শুনে পিছে ফিরে দেখি রাত দাড়িয়ে আছে।রাতকে দেখে আমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো কিন্তু পাবলিক প্লেস তাই কিছু বলতে পারছিনা।আমি শুধু মুচকি হেসে বললাম,
~আপনাকে চিন্তা করতে হবে না আমার সুখের কথা।আপনি আপনার সুখ নিয়ে ব্যস্ত থাকুন
রাত তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
~আমার কথা এখন সহ্য হয় না আগে তো এই মুখের বাণী শোনার জন্য পাগল হয়ে যেতে।
আমি বললাম,
~সেইসময় ভুল করেছি বলে এখনও সেই একই ভুল করবো তাতো ঠিক না। ভুল মানুষ একবার করে বার বার না
আমার কথায় হয়তো রাত রেগে গেছে কিন্তু নিজেকে সামলে বললো,
~এতো আকাশে উড়ো না আবার মাটিতে পরে যাবে।
আমি বললাম,
~আমি মাটির মানুষ মাটিতেই থাকি।আকাশে আপনারা থাকেন সেখানে আমি কেনো নিজের পা দিবো
রাত কটমট করে চেয়ে বললেন,
~বেয়াদবি করো না।
আমি বললাম,
~আরে দেবরজী আপনি তো আমার সম্পর্কে ছোট কিন্তু বয়সে বড় আমি বেয়াদবি করছিনা কথার পৃষ্ঠে কথা বলছি।
রাত রেগে গিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতেই আমি পিছনে সরে যেতে নিলাম তখনই আমার শাড়ির সাথে আমার পা বেঁধে পরে যাই ফ্লোরে।পায়ে অনেক জোড়ে ব্যাথা লাগায় আমি জোড়ে চিল্লিয়ে উঠি,
~আহহ আমার পা।
আমার এ অবস্থা দেখে রাত ভয় পেয়ে যায়।আমার কন্ঠ শুনে রক্তিম এসে পরে সেখানে আমাকে এভাবে পরে থাকতে দেখে সে আমার কাছে এসে অস্থির কন্ঠে বললো,
~কী হয়েছে তোমার?
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে রক্তিম আমায় কোলে
তুলে নেয় আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে।রক্তিমের চোখ রাতের দিকে পরলো কিন্তু ওকে কিছু না বলে রক্তিম আশেপাশের মানুষ গুলো উদ্দেশ্য করে বললো,
~প্লিজ আপনারা প্রোগ্রাম enjoy করুন।এখানে তেমন কিছুই হয়নি
বলেই রক্তিম আমাকে নিয়ে ছাদ থেকে নিচে এসে পরেন তার পিছে পিছে রাত ও আসে।আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলেন তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
~কোন পায়ে ব্যাথা পেয়েছো?
আমি ডান পায়ের দিকে ইশারা করলাম।রক্তিম পা হাতল নিতেই আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো,
~ব্যাথা পাই তো।
রক্তিম আমাকে শুইয়ে দিয়ে পা একটা বালিশের মধ্যে রেখে আমাকে বললো,
~আমি ডক্টরকে ফোন দিচ্ছি।
একথা বলে যেই না রক্তিম পিছে তাকালো ওমনেই রাতের দেখা পেলো।রক্তিম রাতকে দেখে বললো,
~কী চাই এখানে অধরাকে ব্যাথা দিয়ে তোর শান্তি হয়নি যে এখন এভাবে সং সেজে দাড়িয়ে আছিস।
রাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বললাম,
~রাত আমাকে ব্যাথা দেয়নি বরং আমার শাড়িতে পা আটকিয়ে অসাবধানতায় পরে গেছি।
রক্তিম আর কোনো কথা না বলে ডক্টরকে ফোন করলো।
ডক্টর আসতে একটু সময় লাগবে তাই রক্তিম আমার পায়ে আইসপ্যাক ধরে রেখেছেন।ব্যাথাটা অনেক বেড়েছে আর সেই জায়গাটা ও লাল হয়ে গেছে।
কিছুক্ষন পর ডক্টর আসলেন তিনি চেক করে বললেন,
~পা টা শুধু মোচকে গিয়েছে আর কোনো সমস্যা হয়নি।এক-দুদিনে ঠিক হয়ে যাবে ব্যাথার জন্য কিছু medicine দিচ্ছি সেগুলো নিয়ম মতো নিতে হবে।পায়ে কোনো জোড় দেওয়া যাবে না বেশি হাঁটা-চলা করা যাবে না।
বলেই prescription টা রক্তিমের হাতে দিয়ে দিলো।ডক্টর যেতেই সাবিহা রুমে ডুকলো আমাকে দেখেই বললো,
~পা ঠিক আছে?আমি রাত ভাইয়ের থেকে শুনলাম তোমার এ অবস্থা।রাহি আপিকে বলিনি
রক্তিম গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~সাবিহা তুই অধরার কাছে বস আমি ঔষধ গুলো নিয়ে আসি।আর হ্যাঁ গাধীর মতো রাহিকে বলে দিস না এ কথা।
সাবিহা শুধু মাথা নাড়ালো।
,,,,,,,,
,,,,,,,,
রক্তিম রুম থেকে বের হতেই রাতের দেখা পেলো।রাতকে দেখেই ওর রাগ আরো বেড়ে গেলো রাত রক্তিমের কাছে এসে মাথানিচু করে বললো,
~সত্যি বলছি ভাইয়া,অধরাকে ব্যাথা দেওয়ার কোনো intention আমার ছিল না।pls believe me.
রক্তিম রাতের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~অধরার থেকে দূরে থাকবি।তুই যেমন আমার ভাই তেমনি অধরা আমার বউ দুজনই আমার কাছের মানুষ তাই আমি চাই না একজনের জন্য আরেকজন কে কষ্ট দিতে।I hope you understand.
কথা শেষ করে রক্তিম বাড়ির বাহিরে চলে গেলো।রাত এখনও মাথানিচু করে আছে আজ তার মনে অনুতাপের ঝড় বইছে হয়তো সে ভুল করেছে।
রাহির হলুদ আর আমার দেখা হলো না রক্তিমের কড়া নির্দেশ যাতে বিছানা থেকে এক চুলও না নামি।নাহলে রাহির বিয়ের দিন কেউ আমার দেখা পাবে না বজ্জাত লোক সবসময় এমন করে। সাবিহা বেচারি আমার সাথেই বসে আছে একটু আগে খাবার খেয়ে ঔষধ নিয়েছি তাই ব্যাথাটা একটু কমেছে।সাবিহা বসে বসে মোবাইল টিপছে রাত ১টা আমার ঘুম আসছে তাই আমি সাবিহাকে বললাম,
~সাবিহা,আমার ঘুম আসছে।তুমি রুমে চলে যাও তোমার ওতো রেস্টের প্রয়োজন।
সাবিহা বললো,
~না ভাবি,রক্তিম ভাই যদি জানে তাহলে অনেক বকবে।
আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম,
~রক্তিম কিছু বলবেনা।তুমি যাও
আমাদের কথার মাঝেই রুমে রক্তিম এসে হাজির এখনো তার মুখ গম্ভীর সে এসেই সাবিহাকে বললো,
~রুমে যা রাহি তোকে খুঁজছে।
রক্তিমের কথা শেষ করতেই সাবিহা বললো,
~আমি যাই ভাবি।তুমি রেস্ট নেও
সাবিহা চলে যেতেই রক্তিম ওয়াশরুম চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আমি বললাম,
~মুখ বেলুনের মতো ফুলিয়ে রেখেছেন কেন?
রক্তিম বললেন,
~তাতে তোমার কী?
বলেই আমার পায়ের কাছে বসে পা দেখতে লাগলেন।আমি পা সরিয়ে ফেললাম রক্তিম আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,
~সারাদিন তো আপনি হাঁটেন না উড়তে থাকেন।ট্রেনের মতো এখান থেকে ওখানে ট্রেন না প্লেনের মতো ফ্লাই করেন।
আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বললাম,
~আর হবে না এমন।
রক্তিম আমার গাল দুটো তার হাতে আবদ্ধ করে বললেন,
~আমি তোমাকে বকতে চাই না কিন্তু তুমি নিজের খেয়াল না রাখলে কে রাখবে।
আমি রক্তিমের হাত থেকে গাল ছাড়িয়ে আমার হাতগুলো তার গলায় আবদ্ধ করে বললাম,
~আপনি আছেন না।আমার খেয়াল রাখার জন্য so i don’t have any tension about myself mr.husband.
বলেই রক্তিমের গালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলাম।রক্তিম আমার এহেন কথায় হালকা হাসলেন তারপর আমায় জড়িয়ে ধরলেন।আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন আর বললেন,
~তুমি আসলেই একটা পাগলী।
আমি বললাম,
~আপনারই তো পাগলী।
রক্তিম আর কিছু না বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ভালোমতো শুইয়ে দিলেন তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন।তার ছোয়ায় আমার চোখে ঘুম এসে পরলো রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম।
রক্তিম অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বারবার তার পায়ের দিকে খেয়াল করছে।এক পর্যায়ে তার চোখেও ঘুমের নেমে আসে সেও ঘুমিয়ে পরলো তার প্রিয়তমাকে বাহুডরে আবদ্ধ করে।
,,,,,,,
,,,,,,,,,,
সকাল থেকেই রাহির রুমে শুয়ে আছি।রাহি এটা ওটা নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে ঘুম থেকে ওঠার পরই রক্তিম আমাকে নাস্তা করিয়ে ঔষধ খাইয়ে কাজে লেগে গেছেন।আমার সব কিছু সাবিহা গুছিয়ে দিচ্ছে রক্তিমের দেওয়া কালো শাড়িটা পরবো আজ।পা এখন অনেকটাই ভালো কিন্তু হাঁটতে গেলেই একটু ব্যাথা লাগে।তাই এখন হাঁটার চিন্তা বাঁধ দিয়েছি।রাতে অনুষ্ঠান আজ তো রক্তিমকে আমার মনে কথা বলেই ছাড়বো।যা হয়ে যাক এসব ভাবছি তখনই রক্তিমের বাবা রাহির রুমে উপস্থিত হলো।বাবাকে দেখে আমি উঠে বসলাম সে আমাকে দেখে বললো,
~অধরা মা,এখন কেমন আছো?
আমি বললাম,
~ভালো বাবা।
বাবা বললো,
~পায়ের ব্যাথাটা কমেছে?
আমি বললাম,
~জ্বী বাবা।
বাবা বললেন,
~ঔষধ ঠিক মতো নিয়ো।Take care
বলেই মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।বাবা চলে যেতেই আমি আবার টেনশন নিতে শুরু করলাম কীভাবে রক্তিমকে নিজের মনের কথাটা বলবো তাকে তো জানাতে হবে।আজ তো বাসায় ও চলে যাবো হ্যাঁ বাসায় পৌছেই আমি বলে দিবো।এখন বিয়ে Enjoy করবো রাহির বিয়ে বলে কথা সারাদিন এভাবেই মজা মাস্তিতে কেটে গেলো।রাহিকে সাজানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হলো সাবিহা আমাকে শাড়ি পরতে সাহায্য করলো।মোটকথায় আজকের পুরো সাজের credit সাবিহার আমাকে রেডি করে সাবিহা নিজে রেডি হতে চলে যেতে নিবে তখন আমি বললাম,
~সাবিহা, ধন্যবাদ
সাবিহা মুখ গোমড়া করে বললো,
~কীসের ধন্যবাদ?বর খুজে দেও তাহলেই হবে।
বলেই সে চলে গেলো হয়তো লজ্জা পেয়েছে।আসলেই এ মেয়েটা পাগলী
সব অনুষ্ঠান ছাদে আয়োজন করা হলেও বিয়ের অনুষ্ঠান রাহিদের বাগান বাড়িতে করা হয়েছে।রাহিদের বাসা থেকে মাত্র ১০মিনিটের রাস্তা হেঁটেই যাওয়া যায় কিন্তু আমার পায়ের জন্য রক্তিম strictly বলে গিয়েছেন যে গাড়ি দিয়ে রাহি যাবে সে গাড়িতে করেই যেন আমি আর সাবিহা চলে আসি।সাবিহাকে আমার খেয়াল রাখার জন্য সাথে সাথে থাকতে বলেছেন।
গাড়ি দিয়ে রওনা দিয়েছি রাহিদের বাগান বাড়ির উদ্দেশ্যে সেখানে পৌছে গাড়ি থেকে নেমে চোখ বুলালাম আশেপাশে লাল নীল বাতি গুলো খুব সুন্দর করে জ্বলছে মেহমানদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।আমি একটা চেয়ারে বসে আছি সাবিহা একটু পর পর আমাকে এসে দেখে যাচ্ছে।রক্তিমের দেখা আমি পাইনি একটুপর বরযাত্রা এসে পরবে আমি ফোন বের করে রক্তিমকে ফোন করলাম কোনো রেসপন্স নেই।
ফোন রেখে বসে আছি তখনই এক আন্টি এসে বললো,
~তুমি কী রক্তিমের বউ?
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
~জ্বী।
সেই আন্টি মুখ বাকিয়ে বললো,
~তোমার তো রাতের সাথে সম্পর্ক ছিল।তোমার শাশুড়ি সবই বলেছে তো কীভাবে এই বিয়েটা করলে?
আন্টির কথায় কষ্ট লাগলো ভীষনভাবে আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পিছন থেকে রক্তিম বলে উঠলো,
~যেভাবে আপনি রাজীব আঙ্কেল কে বিয়ে করেছেন তিন কবুল বলে তেমনি অধরাও আমাকে তিন কবুল বলেই বিয়ে করেছে।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৬
,,,,,,
,,,,,
হঠাৎ রক্তিম রুমে এসে বললো,
~অধরা,দেখো আমার পাঞ্জাবির বোতামটা ছিরে গেছে।এখন কী করবো?
রক্তিমের কথায় আমি তার পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই উপরের দুটি বোতাম নেই।রক্তিম বার বার পাঞ্জাবির দিকে তাকাচ্ছে আবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।রক্তিমকে এখন পুরো বাচ্চাদের মতো লাগছে যে বাচ্চার এখন খেলতে যাওয়ার নেশা লেগেছে কিন্তু ভাঙ্গা ব্যাট নিয়ে যেতে পারছে না।রক্তিমের অবস্থা দেখে আমি মুচকি হেসে কার্বাডে সামনে চলে আসলাম কার্বাড খুলে একটা প্যাকেট বের করে রক্তিমের হাতে দিয়ে বললাম,
~পান্জবীটা চেঞ্জ করে নিন।
রক্তিম একবার তার হাতের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে বললো,
~এটার ভিতরে কী?
আমি বললাম,
~ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে নিন।আর আমি রেডি হবো প্লিজ তাড়াতাড়ি করেন
কথা শেষ করে কার্বাড খুলে হাতের শাড়ি নিয়ে পিছনে ঘুরে দেখি রক্তিম নেই ওয়াশরুমে চলে গেছে।রক্তিমরে জন্য এই গিফটা কয়েকদিন আগেই কিনেছিলাম কিন্তু কীভাবে দিবো তাই ভাবছিলাম যাক এখন কাজে লেগে গেলো মনটা ভালো লাগছে ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখি রক্তিম আমার দেওয়া হালকা ক্রীম কালারের পাঞ্জাবিটা পরে বের হলেন।রক্তিমকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে ইশ কারো যাতে নজর না লাগে।রক্তিম আমার সামনে এসে দাড়াতেই আমার ধ্যান ভাঙ্গলো রক্তিমের মুখে অমায়িক হাসি লেগে আছে।রক্তিম আমার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,
~এই গিফটা কবে কেনা হলো?
আমি রক্তিমের প্রশ্ন শুনে একটু বিব্রতবোধ করলাম তারপর আমতা আমতা করে বললাম,
~এই তো তিনদিন আগে।
রক্তিম বললো,
~দেওনি কোনো?
রক্তিমের শীতল কন্ঠের আওয়াজ শুনে আমার বুকের ধুকপুক বেড়ে গেলো।আমি নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বেশ অভিমান নিয়ে বললাম,
~আপনার কাছে আমার জন্য সময় আছে?এই কয়েকদিন ভালো মতো কথা পর্যন্ত বলেন নি।
অধরার অভিমান মাখা কথা শুনে রক্তিম হাসলো।তার প্রিয়তমা যে তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আকুল ছিল সেটা সে বুঝতে পেরেছে।রক্তিম অধরাকে আরেকটু কাছে টেনে বললো,
~সব অভিমান শেষ করে দিবো আর মাত্র তিনদিন তারপর এই রক্তিম শুধু তার অধরার।
রক্তিমের এহেন কথায় আমি লজ্জাবতী গাছের মতো নুয়ে পরলাম।রক্তিম আমার কানের পিছে চুল গুলো গুজে দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
~বিয়ের পর তো আমরা হানিমুনে যাই নি।রাহির বিয়েটা শেষ হলেই তোমাকে নিয়ে চলে যাবো পাহাড়ে কী বলো?
রক্তিমের মুখে এসব কথা শুনে আমার কান গরম হয়ে গেলো।লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেলো আমি রক্তিমকে বললাম,
~পরেরটা পরে এখন আমাকে রেডি হতে দিন। রাহির বাসায় যেতে হবে।
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও।আমাদের বের হতে হবে
বলেই সে মোবাইল হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলো আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,
~বিয়ের দিন আপনি যেমন বলেছিলেন আমার চোখে আপনার সর্বনাশ তেমনি আজ আমি বলছি আপনার চোখে আমার সর্বনাশ।ভালোবেসে ফেলেছি আপনায় রক্তিম খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে সেটা জানিয়ে দিবো।
এই মনে নিভৃতে যতনে রয়েছে আপনার বসবাস।বড্ড বেশি অভ্যাসে পরিণত হয়েছেন আপনি আমার এই অভ্যাসটাকে আমি সারাজীবন আগলে রেখে এই পৃথিবীতে বাচঁতে চাই।ভালোবাসি প্রিয় আমার মনের গহীনে আপনার বসবাস অন্ততকালের জন্য রয়ে গেলো।
,,,,,
,,,,,
রাহিদের বাড়িতে খুশির ঢেউ বইছে কেনই বা না হবে এই বাসার একমাত্র মেয়ের বিয়ে।রক্তিম কোনো কাজে ঘাটতি রাখেনি একদম একজন বড় ভাই যেমন নিজের ছোট বোনের জন্য সব করে থাকে সে তেমনটি করছে।কোথায় কী প্রয়োজন সে সবটা সামলে নিচ্ছে রাহির পছন্দসই সব করার চেষ্টা করছে।এই কাজের মাঝেই রক্তিমের মনে ভাবনা জাগলো
~রাহি যেমন নিজের বিয়ে এতো enjoy করছে।তার যেমন মনের সব ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে তেমনটি হয়তো আমার অধরারও ছিল হয়তো আমার জন্য তা পূরণ হয়নি।
এটা ভাবতেই রক্তিমের চোখ অধরাকে খুজতে শুরু করে।ছাদের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে যে দেখে এতে রাগে রক্তিমের মাথায় আগুন উঠে গেলো।অধরা একটা ছেলের সাথে দাড়িয়ে হি হি করছে তাদের মধ্যে কী কথা হচ্ছে বুঝতে পারছে না সে।অধরা অনেকটাই মিশে গেছে হয়তো সেই ছেলেটির সাথে।
রক্তিম হাতের কাজ কাউকে বুঝিয়ে দিয়ে ছুটলো বউয়ের কাছে তার মনের প্রাণ পাখিরা ঝটপট করছে।
রাহির বাসায় এসে আমি রাহি রুমে যাই তাকে রেডি হতে সাহায্য করি তারপর তাকে নিয়ে ছাদে চলে যাই।রক্তিমের কাজ আসলেই অসাধারণ আমি রাহিকে স্টেজে বসিয়ে রক্তিমকে খুজতে শুরু করি হঠাৎ একটা ছেলের সাথে আমার ধাক্কা লেগে যায়।আমি সেই ছেলেটির দিকে মাথা উঠিয়ে বলি,
~সরি ভাইয়া দেখতে পাইনি।
সেই ছেলেটি বললো,
~ইট’স ওকে আপুনি।আমারও খেয়াল ছিল না
ছেলেটি আমার সমবয়সী হবে।ছেলেটি আবার বললো,
~আপুনি তোমার নামটা কী?
আমি হেসে বললাম,
~অধরা।
ছেলেটি ভ্রুকুচকে বললো,
~রক্তিম ভাইয়ের বউ।
আমি বললাম,
~আপনি কীভাবে জানেন?
ছেলেটি বললো,
~রাহি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ও বলেছে সব রক্তিম ভাইয়ের ব্যাপারে।
আমি বললাম,
~আপনার নাম?
ছেলেটি বললো,
~রাতুল।
আমি হেসে বললাম,
~ওওও।
হঠাৎ পিছন থেকে রক্তিম বলে উঠলো,
~অধরা,এখানে কী করছো?
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি রক্তিম হাঁপাচ্ছে হয়তো দৌড়ে এখানে এসেছে।আমি ঘাবড়ে গিয়ে তার কাছে গিয়ে বললাম,
~কী হয়েছে আপনার?
রক্তিম রাতুলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~আপনি কে?আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
রাতুল হেসে বললেন,
~রক্তিম ভাই আমি রাহির বন্ধু।
রক্তিম বললো,
~ওহ।
রাতুল বললো,
~আপনার আর অধরা ভাবির কথা অনেক শুনেছি।আজ দেখাও হয়ে গেলো।
রাতুলের কথা শুনে রক্তিম সস্বতির নিশ্বাস ছাড়লো।রাতুলকে বললো,
~ফাংশন কেমন enjoy করছো?সব ঠিকঠাক হয়েছে তো?
রাতুল বললো,
~খুব ভালো হয়েছে।আমি একটু রাহির সাথে দেখা করে আসি
বলেই রাতুল চলে গেলো।রাতুল যেতেই রক্তিম অধরার দিকে তাকতেই দেখতে পেলো অধরা কোমড়ে হাত দিয়ে তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।অধরা রাগী চোখ দেখে রক্তিম ভয় পেয়ে ঢোক গিললো
আমি রক্তিমের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম,
~আপনি এভাবে এখানে কী করছেন আর হ্যাঁ আপনার না অনেক কাজ তাই ২মিনিটও আমার সাথে দাড়িয়ে ছবিও তুললেন।
রক্তিম তার ৩২টা দাঁত বের করে আমাকে বললেন,
~সরি ময়নাপাখি এখন তো অনেক সময় আছে চলো ছবি তোলা যাক।
আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলে আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম,
~আপনি আমার কাছে এসেছেন কেন?ওই যে রাহির বোনের কী যেন নাম?ওহ হ্যাঁ মনে পরেছে সাবিহা তার কাছে যান।ভালো লাগবে
আমার কথা শুনে রক্তিম আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন,
~কী যে বলো?তুমি আমার বউ তোমার কাছে আসবো না তো কার কাছে আসবো।আর ওরা তো মেহমান প্লিজ লক্ষ্মীটি রাগ করো না।
কথা শেষ করেই আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো ক্যামেরা ম্যানের সামনে আর তাকে বললো,
~সুন্দর করে আমাদের ছবি তুলবেন।বুঝেছেন
অনেক ছবি তোলার পর আমাকে ডেকে উঠলো রাহি।আমি রক্তিমকে বলে রাহির কাছে চলে যাই রাহির দুটো হাতেই মেহেদী দিয়ে রাঙ্গানো আমি এখন পর্যন্ত মেহেদী লাগাইনি।আমাকে দেখে রাহি বললো,
~অধরা,তুমি মেহেদী কেন লাগাওনি?
আমি বললাম,
~এখনি লাগাবো।
রাহি বললো,
~নাহ এখনই লাগাতে হবে।
আমি মেহেদী লাগাতে বসে পরলাম।মেহেদী দেওয়া শেষে রাহি মেহেদী দেখে বললো,
~সব ঠিক আছে কিন্তু রক্তিমের নাম নেই।
আমি বললাম,
~তার দরকার নেই।
রাহি বললো,
~কেন দরকার নেই। আলবাত দরকার আছে তুমি ওর বউ তোমার হাতে ওর নামের মেহেদী থাকবে।
রাহি মেহেদী আর্টিস্ট কে ডেকে আমার হাতে রক্তিমের নাম লিখে দিলেন।
,,,,,,,
,,,,,,,
মেহেদীর পর সবাই নাচ-গানে ব্যস্ত হয়ে গেলো। অভি ভাই এসেছিলেন কিছুক্ষন থেকে চলে গেছেন তাদের বাসায়ও প্রোগ্রাম চলছে।আমি এক কর্নারে দাড়িয়ে আছি সবাই গানের তালে পা চালাচ্ছে আমও সবাইকে দেখছি তো কখনো রাহির ফোন দিয়ে ভিডিও করছি।রক্তিম আগামীকাল হলুদের ফাংশনের জন্য সমালোচনা করছেন।এখানে আমি দাড়িয়ে এইসবের মজা নিচ্ছি ভিডিও করে রাখছি যাতে রক্তিমকে দেখাতে পারি।এভাবেই আনন্দ উল্লাসে অনুষ্ঠান শেষ হয় রাত ৩টায় আমরা আজ রাহির বাসায় থাকবো।রাহির রুমে এখন আমি বসে আছি ফ্রেশ হয়ে এসেছি সেই কখন হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি মেহেদী একদম লাল হয়ে গেছে রক্তিম লেখা জায়গাটি তো একদম টকটক করছে লাল হয়ে ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে আমার ধ্যান ভাঙ্গলো আমি তাকিয়ে দেখি রাহি ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে।রাহিকে দেখে আমি বললাম,
~আগামীকাল আবার হলুদ তুমি এখন ঘুমিয়ে পরো।নাহলে কালকে খারাপ লাগবে
রাহি বললো,
~আসলেই ১৫দিন কীভাবে কেটে গেলো কাল হলুূদ পরশু বিয়ে। টেনশনে হচ্ছে বাবার জন্য একা কীভাবে থাকবে?
আমি বললাম,
~সব হয়ে যাবে কোনো টেনশন করো না।
রাহি আমার কথা হালকা হাসলো তখনই দরজায় কেউ নক করলো রাহি বললো,
~ভিতরে আসেন।
দরজা ঠেলে রক্তিম ডুকলো আমাকে দেখে বললো,
~চলো রুমে।
আমি যেই না উঠতে যাবো তখনই রাহি আমার হাত ধরে চোখ টিপ মেরে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আজ অধরা আমার সাথে থাকুক।
রাহির কথা শুনে রক্তিমের মাথায় হাত এ মেয়ে বলে কী সারাদিন বউকে পাই নি এখন আমার বউ নিয়ে টানাটানি।রক্তিম বললো,
~রাহি,অধরা এখানে থাকলে তুমি অভির সাথে কথা বলবে কীভাবে?তখন তো লজ্জা পেতে হবে।
রাহি বললো,
~কিছু হবে না।
রক্তিম বললো,
~তোমার কিছু হবে না আমার অনেক কিছু।
বলেই আমার হাত ধরে রুম থেকে নিয়ে আসলেন রাহির হাসির আওয়াজ আসছে।রক্তিম আমাকে রুমে এনে দরজা লক করে বললেন,
~দেখেছো কেমন ফাজিল মেয়ে।
আমি কিছু না বলে মুচকি হেসে হাতের দিকে তাকালাম তারপর দুহাত রক্তিমের সামনে মেলে বললাম,
~দেখেন তো কেমন হয়েছে?
রক্তিম আমার কাছে এসে আমার হাত দুটোকে ধরে নিজের মুখের সামনে এনে ঠোঁট ছুয়ালেন রক্তিমের এহেন ব্যবহারে আমার শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো।
রক্তিম হাত ছেড়ে আমাকে কাছে টেনে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,
~খুব সুন্দর হয়েছে।আমার নামটা তোমার হাতে অনেক সুন্দর লাগছে।
কথা শেষ করে আমার চুল গুলো সরিয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে তার ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলেন।রক্তিমের আচরণ স্বাভাবিক না সে আমার অনেক কাছে চায় তা আমি বুঝতে পারছি কিন্ত এখন সঠিক সময় না আমি রক্তিম কে বললাম,
~রক্তিম ফ্রেশ হয়ে আসেন।
আমার কথায় তার কর্ণপাত হলো না।আমি রক্তিমকে বললাম,
~রক্তিম,আপনি অনেক টার্য়াড পাশাপাশি আমিও প্লিজ ফ্রেশ হয়ে আসেন।
রক্তিম আমার ঘাড় থেকে মুখ তুলে বললেন,
~ফ্রেশ হয়ে আসছি।তুমি শুয়ে পরো
রক্তিম চলে যেতেই আমি ঘনঘন শ্বাস নেই তার স্পর্শ এখন সহ্য করার মতো না মনে হয় এখনই জান চলে যাবে।এসব ভাবতে ভাবতে আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম অনেক্ষন পর রক্তিম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আমার পাশে এসে শুয়ে পরলেন তারপর আমাকে কাছে টেনে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে জড়িয়ে ধরেন।আমিও তাকে জড়িয়ে ধরলাম পরম আবেশে আর মনে মনে বলি খুব তাড়াতাড়ি আমি আপনার হবো রাহির বিয়ের রাতেই আপনাকে মনের কথা জানাবো।
,,,,,,
,,,,,,,
পরেরদিন সকাল থেকেই রাহিদের বাসায় বিয়ের আমেজ আবার শুরু।রাহির সব ফ্রেন্ডরা কাল রাতে চলে গিয়েছিল কিন্তু আজ সকালেই আবার চলে এসেছে।রাহির কাজিন বলতে হাতে গোনা ৪জন রক্তিম আবারও ব্যস্ত হয়ে পরছেন কাজে আমি রাহির ঘরে বসে আছি সব মেয়েরা ওর রুমেই হামলা করেছে।তখনই রাহির এক বোন যার নাম সাবিহা সে আমাকে বললো,
~তুমি অনেক লাকি।রক্তিম ভাইয়ের মতো একজন লাইফ পার্টনার পেয়েছো।
সাবিহার কথা শুনে তার পাশে বসা মিলি বললো,
~অধরা ভাবি তুমি কী জানো সাবিহা কিন্তু রক্তিম ভাইয়ের উপর ক্রাশ খেয়েছে।
আমার পুরো শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম,
~সাবিহা যতই ক্রাশ খেয়ে থাকো না কেন রক্তিমের উপর আধিপত্য আমার।
রাহি আমার কথা শুনে বললো,
~একদম ঠিক কথা।যেমন অভির উপর আমার আধিপত্য আর সাবিহা একদম আমার অভিকে দেখে লুচুগিরি করবে না।নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না got it.
রাহির এমন কথায় সাবিহা মাথা নিচু করে ফেললো এতে ওর দোষ নেই দোষ ওর বয়সের।এই বয়সেই মানুষ আবেগটাকে ভালোবাসা বুঝে ফেলে আমি সাবিহার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
~সাবিহা,তুমি ছোট মানুষ তোমার কাছে এখন সবই ভালোলাগাকে ভালোবাসা লাগবে তার মানে এই নয় তুমি কোনো ভুল করে ফেলবে জীবন একটাই সুন্দর করে পরিচালিত করবে।
সাবিহা মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~বুঝেছি ভাবি।কিন্তু তোমার বর যেমন তোমায় ভালোবাসে তেমনি একটা বর আমার লাগবে দেবে খুজে?
আমি হেসে সাবিহার নাক টেনে দিয়ে বললাম,
~ওরে ননদিনী অবশ্যই খুজে বের করবো।
আমার কথায় সবাই হেসে উঠলো সাবিহা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
সবার সাথে আড্ডা মেরে রুমে আসতেই দেখি রক্তিম কী যেন খুঁজছে? আমাকে দেখে সে বললো,
~অধরা,আমার শার্ট কোথায় দেখো আমি ঘেমে কী হয়েছি?আর ডোকোরেশনের ব্যাটা সব উল্টাপাল্টা কাজ করেছে।আবার গিয়ে সব ঠিক করতে হবে আর তুমি খাওয়া দাওয়া করেছো নাকি হি হি করতে করতে দিন শেষ।
রক্তিমের কথা শুনে মনে হচ্ছে বেজায় রেগে আছে।এদিকওদিক হাঁটছেন আর ফোস ফোস করে নিশ্বাস নিচ্ছেন।আমি রক্তিমের সামনে গিয়ে দাড়ালাম সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~কী হয়েছে?
আমি কোনো কথা না বলে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।আমার এহেন কান্ডে রক্তিম অবাক হলো কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামলে আমার জড়িয়ে ধরে তারপর বলে,
~আমি ঘেমে একেকার আর এ অবস্থায় তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছো।
আমি বললাম,
~তো কী হয়েছে?
রক্তিম হেসে বললো
~কিছু হয়নি।আমাকে একটা শার্ট দেও তো ফ্রেশ হবো
আমি তাকে ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে শার্ট আর প্যান্ট বের করে দিলাম সে মুচকি হেসে ওয়াশরুম চলে গেলো।
সন্ধ্যায় রাহিকে রেডি করে নিজে রেডি হতে শুরু করলাম আজ সব মেয়েরা বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি আর ছেলেরা আকাশী রঙ্গের পাঞ্জাবি। শাড়ি পরে নিলাম চুলে বেলীফুল আর হালকা টাচ আপ করে ছাদে চলে গেলাম ছাদে যেতেই আমি
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৫
,,,,,,,
,,,,,,
অবশেষে আমার আর রাহির পছন্দ সই ব্রাইডেল লেহেঙ্গা দেখা পেলাম।সেই দোকানে ডুকে পরলাম আমরা সেই লেহেঙ্গাটা রাহি নিজের গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো অভিকে ডেকে বললো,
~এই দেখেতো কেমন লাগছে?
অভি একদম অভিজ্ঞদের মতো চোখ করে বললো,
~একদম পার্ফেক্ট।লাল রঙ্গটা তোমায় বেশ মানায়
রাহি লজ্জা মাখা হাসি দিলো।আমি বললাম,
~বিয়ের লেহেঙ্গা তো হলো কিন্তু আরো অনেক কিছু কিনতে হবে।
রক্তিম বললো,
~এখনো আরো কেনাকাটা বাকি আছে দিনের বাজে ১টা।সারাদিন এভাবেই ঘুরতে হবে
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
~তাহলে চলে যান এসেছেন কেন?
রক্তিম বললো,
~আচ্ছা রাগ করোনা। আমি তো এমনেই বললাম এখন খাওয়া দাওয়া করে তারপর আবার বের হয়ে যাই মিশনে।
সবাই তার কথায় সহমত পোশন করলো।আমরা খাওয়ার পর আবার শপিংয়ের জন্য বের হয়ে গেলাম।আমাদের শপিং শেষ হলো রাত৭.৩০টায় সবার জন্যই মোটামোটি শপিং করা শেষ এখন আমরা বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিবো তখনই রক্তিম অভিকে বললেন,
~তোমরা চলে যাও।আমাদের একটু কাজ আছে।
রাহি মজার সুরে বললো,
~সারাদিন বউকে পাওনি তাই এখন বউকে নিয়ে ঘুরবে।Good very good.
বলেই সে হো হো করে হেসে উঠলো আর এখানে আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।রক্তিম তার ৩২টা দাঁত বের করে বললো,
~After all i am a best husband.
অভি রক্তিমের কথা শুনে বললো,
~আমার বিয়েটা হয়ে নিক তারপর বুঝবেন কে best husband.
রাহি তাদের কথায় ফোরন কেটে বললো,
~হয়েছে তা বুঝা যাবে নে পরে।অভি এখন চলো বাবা ওয়েট করছে
অভি রাহির কথায় সহমত পোষন করলো তারা গাড়িতে উঠে পরলো আমরা তাদের বিদায় জানালাম। রাহি আর অভি চলে গেলো আর আমি রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~এখন বলেন আপনার কথা।
রক্তিম বললো,
~দেখো রাহির জন্য সব কেনাকাটা শেষ তো এখন শুধু তোমারটা বাকি আর শপিং মল বন্ধ হতে এখনও সময় আছে।তো এখন তোমার পালা
আমি ক্লান্ত স্বরে বললাম,
~রক্তিম আমি অনেক ক্লান্ত।আজ থাক আগামীকাল আবার আসবো নে আমরা।
রক্তিম বললো,
~তোমার কোনো কিছু করতে হবে না।আমি সব সিলক্টে করে রেখেছি তুমি শুধু confirm করবে।
বলেই আমার হাত ধরে আবার শপিং মলে নিয়ে গেলেন।একটা শাড়ির দোকানে ডুকে সেখানের এক ছেলেকে রক্তিম ডাক দিলো।সেই ছেলেটি রক্তিমকে দেখে বললো,
~স্যার, আপনি কী শাড়ি গুলো আবার দেখবেন?
রক্তিম বললো,
~আপনার ম্যাডামকে সব গুলো শাড়ি দেখান তো।
ছেলেটি বললো,
~sure sir.এদিকটায় আসেন
আমরা সেই ছেলের পিছে পিছে চলে আসলাম।ছেলেটি অনেক গুলো শাড়ি আমার সামনে রেখে দিলেন সব শাড়ি গুলোই অনেক সুন্দর। রক্তিম বললো,
~দেখো তোমার এখান থেকে কোনটা ভালো লাগে।
আমি সব গুলো শাড়ি দেখে ২টি শাড়ি আমার হাতে নিলাম।একটা কালো কালার,আরেকটি হালকা গোলাপী। কালো শাড়িটি আমার গায়ে জড়িয়ে নিলাম রক্তিম আমার পিছে দাড়িয়ে বললো,
~এই শাড়িটা ধন্য হয়েছে তোমার হাতের ছোয়া পেয়ে।
আমি রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~হয়েছে আপনার এখন এ দুটি প্যাক করে চলেন বাসায়।পা ব্যাথা করছে
রক্তিম তাড়াতাড়ি করে পেমেন্ট করে শপিং ব্যাগ হাতে নিলো।আমরা শপিং মল থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম রক্তিম পিছনের সীটে শপিং ব্যাগ রেখে দিলো তারপর গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন।রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~আজ শপিং মলে সারাদিন কাটিয়ে আপনার কেমন লাগলো?
আমি বললাম,
~ভালো কিন্তু পা অনেক ব্যাথা করছে।
রক্তিম বললো,
~বাসায় গিয়ে গরম তেল দিয়ে মালিশ করলে চলে যাবে।
এভাবেই কথা বলতে বলতে আমরা বাসায় পৌছে গেলাম কিন্তু বাসার ভিতরে ডুকতেই অনেক চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে বেশি আওয়াজ আসছে
সাহারা রায়জাদা আর রাতের।
,,,,,,,
,,,,,,,
আমি আর রক্তিম তাড়াতাড়ি বাসার ভিতরে চলে গেলাম সেখানে গিয়ে দেখি সারা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।সারার পাশেই রাত দাড়িয়ে সাহারা রায়জাদার সাথে গলা উঁচু করে বলছে,
~সারা যা বলছে তাই করবো।তুমি এতে নাক গলাবে না সারা যদি চায় বিয়ের পর আমরা এখানে থাকবো না তাহলে থাকবো না।
রাতের কথা শুনে সাহারা রায়জাদা রেগে গিয়ে বললেন,
~তুই কী বলছিস?সারার জন্য তুই এ বাসা ছেড়ে চলে যাবি?
রাত বিরক্তি নিয়ে বললো,
~মা এসব মেলোড্রামা করবে না।আর শোনো আমরা তো আর তোমাদের ছেড়ে দিচ্ছি না ছুটির দিনে তোমাদের সাথেই থাকবো।
রাতের কথা শেষ হতেই সারা বললো,
~রাত তোমার সিদ্ধান্ত তুমি জানিয়ে দিও।আর শোনো আগামীকাল ঢাকার বাহিরে যাবো বাবার সাথে so don’t worry.
সারা কথা শেষ করেই বাহিরে চলে গেলো আমাদের দেখে সারা কিছু না বলেই চলে যায়।
রক্তিম আমার হাতে ব্যাগ দিয়ে রাতের কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বললো,
~রাত কী হয়েছে মা এমন করছে কেন?
রাত রক্তিমের হাত সরিয়ে বললো,
~ভাই খুবই সিম্পল ব্যাপার আমি আর সারা বিয়ের পর এই বাসায় থাকবো না।কিন্তু মা scene create করছে।
রক্তিম তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে রাতের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।রক্তিম বললো,
~রাত এ ব্যাপারে এখন আর কোনো কথা হবে না।বাবা আসার পর সব কথা হবে।এখন তুমি রুমে যাও
রক্তিমের কথায় রাত উপরে চলে গেলো।রক্তিম মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
~মা চিন্তা করো না বাবা রাতকে বুঝিয়ে বলবে
তুমি রেস্ট নাও।
রক্তিমের মা সেখান থেকে তার রুমে চলে গেলো।
আমি রক্তিমের কাছে গিয়ে বললাম,
~আপনি কোনো টেনশন নিয়েন না সব ঠিক হয়ে যাবে।
রক্তিম বললো,
~তাই যেন হয় আল্লাহ তাদের ভালো রাখুক।
আমি আর রক্তিম রুমে এসে পরলাম।আমি একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম
আমাকে বের হতে দেখে রক্তিম তার কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকলেন।আমি শপিং ব্যাগ গুলো কার্বাডে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম কিছুক্ষন পর মনে হলে কেউ আমার পা ধরে রেখেছে।আমি ভয় পেয়ে চোখ খুলে দেখি রক্তিম তেল দিয়ে আমার পা টিপছে।
রক্তিমকে দেখে আমার ভয় তো দূর হলো কিন্তু লজ্জাটা বেড়ে গেলো।আমি শোয়া থেকে উঠে বসে যেই না পা সড়াতে যাবো রক্তিম আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো,
~একদম লড়বে না।আর খাবার না খেয়ে শুয়ে পরেছো কেন?
আমি কাঁচুমাচু মুখ করে বললাম,
~আমার ঘুম পাচ্ছিল তাই।
রক্তিম বললো,
~খাবার এনেছি খেয়ে নেও।
আমি বললাম,
~পা ছাড়েন।
রক্তিম আমার পা ছেড়ে দিলেন আমি বিছানা থেকে উঠে প্লেটে খাবার নিয়ে রক্তিমের পাশে বসে খাবারের লোকমা তার মুখের সামনে ধরলাম।রক্তিম বললো,
~খিদে নেই।তুমি খাও
আমি বললাম,
~আমারও খিদে নেই।
রক্তিম হালকা হেসে খাবারটা মুখে পুরে নিলেন।আমিও খাবার খেতে লাগলাম খাবার খাওয়া শেষে আমি সব গুছিয়ে রুমে এসে দেখি রক্তিম রুমে নেই তাই বারান্দায় চলে গেলাম সেখানে গিয়ে দেখি রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তার চোখের কোণা বেয়ে পানি পরছে।রক্তিমের চোখে পানি দেখে আমার বুকটা ধক করে উঠলো কেনজানি অনেক খারাপ লাগছে আমি দেরি না করে রক্তিমের পাশে দাড়িয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
~কী হয়েছে?আপনার চোখে পানি কেন?
রক্তিম আমার উপস্থিতি টের পেয়ে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
~তুমি চোখে বেশি দেখো প্রিয়তমা।আমার চোখে পানি কোথা থেকে আসবে
আমি বললাম,
~মিথ্যা বলতে পারেন না তবুও বলেন কেন?
রক্তিম হেসে তার দুহাত দুদিকে প্রসারিত করে বললেন,
~একটু বুকে আসো তো।
আমি রক্তিমের বুকে মাথা রাখলাম সে দুহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
~অধরা,আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া তুমি।
আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রক্তিমের বুকে মাথা রেখে দাড়িয়ে আছি।রক্তিম বললো,
~চলো অধরা আমরা শুয়ে পরি সারাদিন তোমার উপর অনেক ধকল গিয়েছে।
আমি বললাম,
~শুধু আমার উপর ধকল গিয়েছে আপনি তো উড়ে উড়ে শপিং করেছেন।
রক্তিম আমার কথা শুনে আমাকে তার বুক থেকে উঠিয়ে বললেন,
~আচ্ছা বাবা আমিও অনেক টার্য়াড।
রক্তিমের কথা শেষ হতেই আমরা রুমে এসে শুয়ে পরলাম।সারাদিনের ক্লান্তি এসে ভর করলো আমার চোখে।
,,,,,,,
,,,,,,,
ভার্সিটির জন্য বের হতে চেয়েও হতে পারলাম না।কারণ রাহি ফোন দিয়েছে তার বিয়ের ডেট ফিক্সিড হবে আজ আর তার পাশাপাশি আজই অভিরা আংটি বদল করতে চায়।রাহির কথায় আমি টেনশনে পরে গেলাম এতো তাড়াতাড়ি এসব কীভাবে হবে।রক্তিম আমাকে বললো,
~অধরা,Don’t worry.সব কিছু ঠিকঠাক মতো হয়ে যাবে।আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলবো আর শোনো তুমি শুধু রাহিকে কীভাবে রেডি করবে তা চিন্তা করো
আমি ভার্সিটি থেকে আসছি।
আমি বললাম,
~এটা আবার কেমন কথা?আপনি আমাকে একা ছেড়ে চলে যাবেন।
রক্তিম আমার কাছে এসে বললেন,
~কোনো চিন্তা করো না।রাহিকে আমি সব ডেকোরেশনের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি।রাহি পছন্দ করেছে সব গুলো আর সে হিসেবেই সব সাজানো হবে।খাবারের মেনুও রেডি আর রাহির পার্লারের ও সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।তুমি কোনো টেনশন নিয়ো না আর আমার সাথেই তুমি চলো আমি তোমাকে রাহির বাসায় ড্রপ করে দিবো।
রক্তিমের কথা শুনে আমি অবাক এতটুকু সময়ে সে সব করে ফেললো।রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।চলো আমাদের লেইট হচ্ছে।
আমার ধ্যান ভাঙ্গলো তার কথায় আমি রক্তিমের সাথে হাঁটা ধরলাম।
রক্তিম আমাকে রাহির বাড়িতে ড্রপ করে সব কিছু চেক করে সে চলে গেলো।রাহি আর আমি এখন ডিসকাস করছি কীভাবে তাকে সাজানো যায়।পার্লারের লোকেরা এসে পরেছে রাহি অনেক নার্ভাস হয়ে আমাকে বললেন,
~অধরা সব ঠিকঠাক ভাবে হবে তো?
আমি বললাম,
~Be positive everything will be alright.
রাহি মলিন হেসে আবারো সাজগোজে ব্যস্ত হয়ে পরলো।রাহিকে রেডি করাতে করাতে ২টা বেজে গেলো।অভিরাও চলে এসেছে আমি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি রেডি হয়নি শাড়ি পড়তে পড়তেই ১২টা বাজছে।অনেকক্ষন চেষ্টা করে শাড়িটা ফাইনালি পরতে পেরেছি হঠাৎ আমার রুমের দরজা ঠেলে রক্তিম ভিতরে এসে পরলো তাকে দেখে আমার চোখ কপালে সাদা রঙ্গের পাঞ্জাবিতে তাকে তে মাশাআল্লাহ লাগছে।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রক্তিম বললো,
~কী দেখছো এভাবে?
রক্তিমের কথায় লজ্জা পেয়ে আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।রক্তিম মুচকি হেসে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার মুখ তার দুহাতে আবদ্ধ করে বললেন,
~খুব সুন্দর লাগছে।
বলেই আমার নাকে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলেন।হঠাৎ পিছন থেকল রাহি বললো,
~তোমরা রোম্যান্সই করতে থাকো আর আমি singel মরবো।
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি রাহির কাছে গিয়ে বললাম,
~কী হয়েছে?
রাহি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
~শাড়িটা অনেক ডিস্টার্ব করছে।
রক্তিম বললো,
~আমি সব চেক করে আসছি।বাবারা মনে হয় চলে এসেছে।
বলেই সে চলে গেলো আর আমি রাহির শাড়ি ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম শাড়ি ঠিক করে দিতেই রাহি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~অনেক ভয় করছে। আমি জানি আমার love marriage কিন্তু তবুও আমার ভয় করছে।অধরা তুমি বুঝতেই পারছো আমার অবস্থা
আমি রাহির হাতে হাত রেখে বললাম,
~কোনো ভয় নেই নতুন সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছ তাই এমন লাগছে।
রাহি কিছু না বলে বিছানা বসে রইলো।কিছুক্ষন পর রক্তিম এসে বললো,
~অভিরা চলে এসেছে।অধরা নিচে চলো
আমি যেতে নিবো তার আগে রাহি আমার কানের কাছে এসে বললো,
~অধরা প্লিজ অভির একটা পিক আমাকে পাঠিয়ে দিও।
আমি কিছু না বলে মুচকি হেসে রক্তিমের সাথে নিচে চলে আসলাম।অভির পরিবারের সাথে কুশলাদি করে অভির কাছে চলে গেলাম তাকে গিয়ে বললাম,
~এই যে রাহির হবু বর আপনাকে দেখার জন্য রাহি অনেক বেকারার হয়ে আছে।তাই বলছি নিজের একটা ভালো ছবি এখনই তুলে তাকে পাঠিয়ে দিন।
আমার কথা শুনে অভি লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকে বললো,
~আচ্ছা ভাবি।
আমি সেখান থেকে চলে আসলাম খাবার টেবিলে সবাইকে খাবার সার্ভ করা হচ্ছে আমিও সাহায্য করছি।হঠাৎ আমার চোখ পরলো রক্তিমের দিকে বেচারা ঘেমে টেমে একাকার হয়ে গেছে পাঞ্জাবির দুটো বোতম খোলা। এখনই এই অবস্থা বিয়ের সময় কী হবে?
আমি রক্তিমের সামনে চলে আসলাম আমাকে দেখে রক্তিম ভ্রুকুচকে বললো,
~তুমি বাবুর্চি খানায় কী করছো।গরম এখানে অনেক ভিতরে যাও আমি সব হ্যান্ডেল করতে পারবো।
আমি তার কথার জবাব না দিয়ে হাতে থাকা টিসু দিয়ে তার কপালের ঘাম মুছে দিলাম তারপর বললাম,
~আপনি কিছু খেয়েছেন?
রক্তিম বললো,
~খাওয়ার সময়ই তো পেলাম না।সব কাজ শেষ হলে খেয়ে নিবো।
আমি বললাম,
~আপনার বোন থাকলে অনেক ভাগ্যবতি হতো আপনার মতো ভাই পেয়ে।
রক্তিম কিছু না বলে শুধু মলিন হাসলো।হয়তো সে এই কথাটি আশা করেনি।
,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,
সময় এসে পরেছে আংটি বদলের তাই আমি গিয়ে রাহিকে নিয়ে আসি।রাহি এখন অনেকটাই নরমাল আমি রাহিকে নিচে নিয়ে আসলাম অভির পাশে বসিয়ে দিলাম।আমি গিয়ে রক্তিমের পাশে দাড়ালাম।রায়হান চাচ্চু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন বাবা গিয়ে তাদের দুজনকে দোয়া করে দিলেন।সাহারা রায়জাদা আর রাত আসেননি।এখন আংটি বদল করার পালা অভি রাহির হাতে আংটি পরিয়ে দিলো।রাহি কাঁপাকাঁপা হাতে আংটি পরিয়ে দিলো তারপর রাহিও অভিকে আংটি পরিয়ে দিলো।বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হলো মাত্র ১৫দিন পর তাদের বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলো।রক্তিমের কোনো আপত্তি নেই আমিও খুশি হলাম।হঠাৎ রাহি আমাকে আর রক্তিমকে টেনে নিয়ে স্টেজে দ্বার করিয়ে বললো,
~এখন তোমরা ছবি তুলবে।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রাহি বললো,
~কোনো কথা শুনতে চাই না।
বলেই আমার হাত রক্তিমের হাতে দিয়ে দিলো।রক্তিম আমাকে কাছে টেনে নিলো এভাবেই অনেক ছবি তোলা হলো।এতো সুন্দর মূহুর্ত গুলো ক্যামেরায় বন্দী হয়ে গেলো সকল কাজ সম্পন্ন করে আমি আর রক্তিম বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম রাত ৯টায়।
রক্তিম অনেক টায়ার্ড তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে বার বার মাথায় হাত দিচ্ছে হয়তো মাথা ব্যাথা।
এই মানুষটি এমন কেন নিজের প্রতি কোনো খেয়াল নেই সকলের জন্য তার কাছে টাইম আছে কিন্তু নিজের জন্য নেই।
বাসায় পৌছে আমি রক্তিমকে ফ্রেশ হতে পাঠালাম।আমি অন্য রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রক্তিম বিছানার কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আমি গিয়ে রক্তিমের চুল টেনে দিতে লাগলাম।রক্তিম চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~তুমি রেস্ট করো। এগুলো..
তার কথা শেষ হওয়ার আগে আমি রক্তিমের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললাম,
~চুপচাপ ঘুমিয়ে পরেন।
রক্তিম আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলেন।কিছুক্ষন পর রক্তিম ঘুমিয়ে গেলে তাকে ঠিক ভাবে শুইয়ে আমিও শুয়ে পরলাম।
অনেক ব্যস্ততার মাঝে কিছুদিন কেটে গেলো।রাহির বিয়ের ৩দিন বাকি এ ৩দিনে অনেক প্রোগ্রাম হবে।তার আয়োজন সব রক্তিম করবে এই কয়েকদিনে রক্তিমের প্রতিটি কাজ আমাকে শুধু মুগদ্ধ করেছে।রক্তিমের প্রতি আলাদা একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে এসব ভাবতে ভাবতে আমার নজর ঘড়ির দিকে পরলো সন্ধ্যা ৬টা।রাহির আজ মেহেদীর অনুষ্ঠান+সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ও।
হঠাৎ রক্তিম রুমে এসে বললো,
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৪
,,,,,,,
,,,,,,,
আমি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখি পুরো রেস্টুরেন্ট খুব সুন্দর করে সাজানো।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রেস্টুরেন্টে আমি আর রক্তিম ছাড়া কেউ নেই।রক্তিম আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?
আমি বললাম,
~খুব সুন্দর।
রক্তিম মুখটা মলিন করে বললো,
~আমি জানি বেশি একটা ভালো হয়নি।আসলে আমার বাজেটে যা ছিল তাতে এতটুকুই হতো।
আমি তার মুখে আঙ্গুল দিয়ে রক্তিমকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
~আপনি এগুলো আমার জন্য করেছেন।এখানে বাজেট বেশি হোক বা কম হোক এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
কথা শেষ করতেই আমি আঙ্গুল সরিয়ে নিলাম।রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~তুমি খুশি তো আমিও খুশি।
রক্তিম টেবিলের সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~মিসেস অধরা আপনি এই চেয়ারে বসে এই চেয়ারটিকে ধন্য করুন।
রক্তিমের কথায় আমি হেসে উঠলাম। সেই চেয়ারে বসে পরলাম রক্তিম আমার ঠিক সামনের চেয়ারে বসে পরলেন।রক্তিম বসতেই আমাকে বললেন,
~মহারাণী আপনার সবচেয়ে প্রিয় খাবার আপনার সামনে পেশ করা হলো।
রক্তিমের কথা শেষ হতেই একজন ওয়েটার তার হাতে দু প্লেট ফুচকা নিয়ে আসলেন।আর আমার সামনে রেখে সে চলে গেলেন আমি অবাক হয়ে বললাম,
~ফুচকা তাও আবার চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কীভাবে?
রক্তিম বললো,
~রক্তিমের দ্বারা সব সম্ভব। তুমি এতো কথা বলো নাতো খাওয়া শুরু করো।
আমি ফুচকার প্লেট সামনে টেনে খাওয়া শুরু করলাম আর রক্তিম আমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছেন।আমি ফুচকা মুখে দিয়ে বললাম,
~কী দেখছেন এভাবে?
রক্তিম বললো,
~আমার বউকে।
আমি তার কথা পাত্তা না দিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।ফুচকা খাওয়া শেষ হতেই রক্তিম বললো,
~মন ভরেছে আপনার।
আমি ৩২টা দাঁত বের করে বললাম,
~ফুচকা এমন একটা খাবার পেট ভরে যায় কিন্তু মন ভরে না।
রক্তিম বললো,
~এতো তাড়াতাড়ি মন ভরলে চলবেও না।কারণ আরো সারপ্রাইজ বাকি আছে।
আমি বললাম,
~আবার কী সারপ্রাইজ?
রক্তিম কিছু না বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন তারপর কোথায় যেন চলে গেলেন। ফিরে আসলেন হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে আমার দিকে শপিং ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
~দেখো তো তোমার পছন্দ হয় নাকি?
আমি শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে সেটার ভিতরে হাত দিয়ে কিছু একটা বের হয়ে আসলো সেটা হচ্ছে ফটোফ্রেম।আমার ছবি রংতুলি দিয়ে আঁকা। এই স্কেচটা দেখে আমি অবাক হয়ে রক্তিমের দিকে তাকালাম।রক্তিম আমার তাকানো দেখে বললো,
~আমিই এঁকেছি কেমন হয়েছে?
আমি ফ্রেমটা হাতে নিয়ে ভালো মতো দেখতে লাগলাম আমি একটা শাড়ি পরে আছি চুল গুলো খোলা আর ঠোঁটে মুচকি হাসি।আমার জবাব না পেয়ে রক্তিম হতাশ হয়ে বললেন,
~আসলে আমেরিকা থাকতে আমি একটা আর্ট ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখান থেকেই শিখেছি।হয়তো ভালো হয়নি আমার কল্পনায় তুমি এরকম ভাবেই এসো থাকো।
আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
~খবরদার আমার স্বামীর এতো সুন্দর ট্যালেন্টকে যদি খারাপ বলেছেন।
রক্তিমের ঠোঁটের কোণে একটা প্রাপ্তির হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।তার এই অমায়িক হাসিটা দেখে আমার অনেক ভালে লাগছে আমি বললাম,
~শুধু কী আমারই ছবি এঁকেছেন নাকি অন্য কোনো মেয়েরও ছবি এঁকেছেন?
আমার এহেন প্রশ্নে সে একটু ইতস্তত বোধ করছেন।রক্তিম আমতা আমতা করে বললেন,
~একজনের একেঁছি।
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
~কে সেই মেয়ে?
রক্তিম বললো,
~আমার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের।
আমি হতবাক হয়ে বললাম,
~আপনার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের ছবি আপনি একেঁছেন কেন?
রক্তি বললো,
~আমার বন্ধু তার গার্লফ্রেন্ডকে ইমপ্রেস করার জন্য আমাকে বলে একটা ছবি একেঁ দিতে।
আমি বললাম,
~আপনি একেঁ দিলেন ছবি?
রক্তিম বললো,
~বিশ্বাস করো আমি নিজ ইচ্ছায় করিনি।
এতটুকু বলে রক্তিম মাথা নিচু করে তার বন্ধুর গোষ্ঠী উদ্ধার করছে।তার অবস্থা দেখে আমি মিটমিট করে হাসছি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে জোরেই হেসে উঠলাম।রক্তিম আমার হাসির শব্দ শুনে মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন আর অবাক হয়ে বললেন,
~তুমি হাসছে কেন?
আমি হাসি বন্ধ করে বললাম,
~এই যে আপনাকে জব্দ করতে পেরে।
বলেই আবার হেসে উঠলাম।রক্তিম এবার একটু রেগে বললেন,
~আমায় নিয়ে মজা করা হচ্ছে।
আমি বললাম,
~হ্যাঁ কোনো সমস্যা?
রক্তিম বললো,
~অনেক সমস্যা তুমি এভাবে হাসলে অনেক সুন্দর দেখা যায়।আর আমি যদি এই সৌন্দর্য দেখে উল্টা-পাল্টা কিছু করে ফেলি তখন আমায় বলতে পারবে না।
রক্তিমের কথায় হাসি বন্ধ করে বললাম,
,,,,,
,,,,,
~অসভ্যলোক সবসময় বাজে কথা।আর রাহিরা কখন আসবে?
রক্তিম বললো,
~রাহিরা আজ দেখা করতে পারবে না কারণ অভির অনেক জরুরি কাজ আছে।আগামীকাল আমাদের বাসায় আসবে তারা।
আমি বললাম,
~তাহলে চলেন বাসায় যাওয়া যাক।
রক্তিম বললো,
~এতো তাড়া কেন আপনার আরো তো সারপ্রাইজ বাকি আছে।
আমি বললাম,
~আর কী বাকি আছে?
রক্তিম মুচকি হেসে বললেন,
~ওয়েটার ম্যাডামের ফেভরেট চকলেট আইসক্রিম পেশ করা হোক।
সাথে সাথে ওয়েটার আইসক্রিম নিয়ে হাজির সে টেবিলে সেটা রেখে চলে গেলো।আমি রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~সবই জানা আছে তাহলে।
রক্তিম বললেন,
~নিজের প্রিয় মানুষের সব কিছু জানা উচিত।কারণ সেই প্রিয় মানুষটিকে আগলে রাখার দায়িত্ব আমাদের থাকে।আর আমি আমার প্রিয় মানুষটিকে অনেক খুশি দেখতে চাই এইযে এগুলো দেখে তোমার মুখে যে হাসি ফুটেছে এটাই আমার জন্য অনেক।
রক্তিমের প্রতিটি কথায় আমি নিজেকে খুজে পেয়েছি।মানুষটি আমায় অনেক ভালোবাসে হয়তো নিজের থেকেও বেশি আমায় ভালোবাসে।তার কথা গুলো একদম তীরের মতো এসে আমার মনে বিঁধেছে। এরকম একজনকেই তো আমি আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়েছিলাম।হঠাৎ আমার ধ্যান ভাঙ্গলো রক্তিমের কথায় সে বলছে,
~অধরা চলো তোমার জন্য বাহিরে একটা সারপ্রাইজ ওয়েট করছে।
আমি বললাম,
~ আরো সারপ্রাইজ আছে।
রক্তিম বললো,
~হ্যাঁ।আজ আমরা সারাদিন ঘুরবো প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে।
রক্তিমের কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। রক্তিম আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টের বাহিরে এনে দাড় করালেন হঠাৎ একটা নতুন রিকশা আমার সামনে এসে দাড়ালো।রক্তিম হেসে সেই রিকশাচালক কে বললেন,
~মামা,সব ঠিক তো?
রিকশাচালক বললেন,
~জে বাবা,সব ঠিক আসে।
রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~অধরা আজ আমরা রিক্সায় চড়ে ঘুরবো।
বলেই রক্তিম রিকশায় উঠে বসলেন তারপর আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,
~অধরা আসো।
আমি তার হাত ধরে রিকশায় উঠে বসলাম।রক্তিম আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন,
~মামা আগে বাড়ান।
রিকশা চলতে শুরু করলো আমি বললাম,
~আপনার গাড়ি?
রক্তিম বললো,
~ড্রাইভার চাচাকে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
আমি বললাম,
~ওওও।
রক্তিম বললো,
~অধরা,দেখো আজকের ওয়েদারটাও কতো সুন্দর।
আমি চারপাশ দেখে বললাম,
~আসলে অনেক সুন্দর।
শীতল হালকা বাতাস বইছে।আমার শরীরে এক আলাদা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে রক্তিম আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন।আমি তার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলাম আর পরম আবেশে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।এতো ভালো কেন লাগছে আমার মনের ভিতর অজানা একটা অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে।বুকটা ঢিপঢিপ করছে।রক্তিম আমাকে বললো,
~ভালো লাগছে অধরা?
আমি মুখে হাসির রেখা টেনে বললাম,
~অনেক ভালো লাগছে।আপনি এতো কিছু প্ল্যান করেছেন তাও এতো নিখুঁতভাবে ভালো না লেগে কী থাকা যায়।
রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~চা খাবে অধরা?লেবু চা?
আমি বললাম,
~মন্দ হয় না খাওয়া যায়।
রক্তিম রিকশাচালককে বললেন,
~মামা,চায়ের দোকান দেখলে থামিয়েন কেমন?
মামা বললেন,
~সামনেই আছে। এক্কেবারে কড়া চা বানায় খাইয়া দেহেন।
রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে
কিছুক্ষন পর রিকশা থামলো একটা চায়ের দোকানের সামনে রক্তিম রিকশা থেকে নেমে চায়ের দোকানের দিকে চলে গেলেন।তিনকাপ চা হাতে নিয়ে সে ফিরে আসলেন এককাপ চা মামাকে দিলেন।মামা চা হাতে নিয়ে অন্যদিকে চলে যেতে নিলে রক্তিম বললো,
~মামা কোথায় যান?
মামা বললেন,
~আরে বাবা এইহানেই আছি।আসলে চায়ের লগে আড্ডা না দিলে হয় না।
এই বলে সে চলে গেলেন রক্তিম আমার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বললেন,
~নেও তোমার চা।
আমি চা একটু একটু ফু দিয়ে খাচ্ছি।রক্তিম আমাকে বললেন,
~চা খাওয়া শেষ করে আমরা এক জায়গায় যাবো।
আমি বললাম,
~আচ্ছা।
চা শেষ করে আমরা আবার চলতে শুরু করলাম এখন আমার হাতে আছে বুট আমি একটু করে মুখে দিচ্ছি আবার রক্তিমের হাতেও দিচ্ছি।রিকশা থেমে গেলো আমি আশেপাশপ তাকিয়ে দেখি জায়গাটা অনেক সুন্দর একদম গাছ-পালায় পরিপূর্ণ একদম শান্তশিষ্ট পরিবেশ।রক্তিম আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,
~আসো যাওয়া যাক।
আমি রক্তিমের হাত ধরে রিকশা থেকে নেমে পরলাম তার হাত ধরেই হাটা শুরু করলাম।একটু এগিয়ে গিয়েই দেখতে পেলাম বাচ্চারা খেলছে কেউ কেউ গল্প করছে।আমরা একটা খালি জায়গায় বসে পরলাম।রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
~দেখেছো আকাশটা কতো সুন্দর একদম তোমার মতো।
আমি বললাম,
~হ্যাঁ আকাশটা অনেক বড়ও একদম আপনার মনে মতো।
রক্তিম হাসলেন তারপর বললেন,
~অধরা,তুমি পিচ্চি থেকে বড় হয়েছো।কিন্তু এখনো সেই পিচ্চি অধরার মতোই কথা বলো।
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
~আমি পিচ্চির মতো কথা বলি?
রক্তিম আমার গাল দুটো টেনে বললেন,
~হ্যাঁ
আমি রেগে গিয়ে রক্তিমের বুকে ঘুষি দিতে থাকি।রক্তিম হাসতে হাসতে আমার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
~রাগ করে না আমার ময়না পাখি।
রক্তিমের কথায় আমি মুখ অন্যদিকে করে ফেললাম।রক্তিম আমাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন আমি সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,
~করছেন টাকি এটা পাবলিক প্লেস।
রক্তিম আমাকে বললেন,
~৫মিনিটে কেউ দেখবেনা।অধরা আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে খুশীর দিন।
,,,,,,,,
,,,,,,,,,
সারাদিন ঘুরে বাসায় আসতে আসতে আমাদের সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হলো।বাসার ভিতরে ঢুকতেই একটা নিরবতা গ্রাস করলো সারাদিনের ক্লান্তি এসে ভর করলো আমরা শরীরে রুমে গিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলাম। রক্তিম আমাকে বাসায় দিয়ে একটা কাজে জন্য বের হয়েছেন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নাকে ভূনা খিচুরি আর ইলিশ মাছ ভাজার সুগন্ধ চলে আসলো আমি সামনে তাকিয়ে দেখি রক্তিম টি-টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে।আমি রক্তিমের কাছে গিয়ে বললাম,
~সবার সাথেই তো ডিনার করতে পারতাম?
রক্তিম বললো,
~বাসায় কেউ নেই।বাবা ঢাকার বাহিরে,মা কিটি পার্টিতে,দাদীমা ফুপির বাসায় আর রাত কোথায় আমি তা জানি না।ফোন ট্রাই করেছি ফোন রিসিভ করে নি
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
~ওওও।
রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~রাত ১০টা বাজে খাবার খেয়ে নেও।
আমি বললাম,
~ফ্রেশ হয়ে আসেন একসাথে খাই।
রক্তিম কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলেন কিছুক্ষন পর শাওয়ার নিয়ে বের হলেন মাথা মুছতে মুছতে সে আমার পাশে বসে পরে আমি প্লেটে খাবার তুলে রক্তিমের সামনে দিলাম।রক্তিম বললো,
~সারাদিন আমি এতো কাজ করেছি এখন আমার হাত ব্যাথা করছে একটু খাইয়ে দিবে।
আমি ইতস্তত করে বললাম,
~ঠিক আছে খাইয়ে দিচ্ছে।
আমি প্লেট হাতে তুলে খাবার রক্তিমের মুখের সামনে তুলে ধরলাম।রক্তিম আমার হাত থেকে খাবার মুখে তুলে নিয়ে পরম তৃপ্তিতে খাবার চিবুচ্ছে। আমিও সেই একই প্লেট থেকে খাবার খেয়ে নিলাম খাবার খাওয়া শেষ করে সব গুছিয়ে বিছানার কাছে এসে দেখলাম রক্তিম মোবাইলে কি যেন দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।আমি ভ্রুকুচকে রক্তিমকে জিজ্ঞেস করলাম,
~কী দেখে হাসছেন?
রক্তিম মোবাইল আমার দিকে ঘুরিয়ে দেখালেন।আজকের তোলা কিছু ছবি আমি একটু এগিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রক্তিমের পাশে বসে পরলাম।ছবি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে।আজকের দিনটি আসলেই অনেক স্মরনীয় হয়ে থাকবে মনে রাখার মতে একটা দিন ছিল আজ।রক্তিম আমাকে বললো,
~পা ব্যাথা করছে?
আমি বললাম,
~না।কিন্তু ঘুম অনেক আসছে।
রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
~ঘুমাও।
আমি বললাম,
~রোজ রাতে এভাবে জড়িয়ে কী মজা পান?
রক্তিম হালকা হেসে বললেন,
~শান্তি লাগে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে তার বুকে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে নিলাম।চলে গেলাম স্বপ্নের রাজ্যে যেখানে এখন রক্তিমের বসবাস
,,,,,,,,
,,,,,,,,,
সকালের রোদ চারপাশ আলোকিত করে তুলছে।
সকল মানুষরা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত তেমনি অধরাও রান্নাঘরে সকলের জন্য নাস্তা বানাতে ব্যস্ত আজ রাহি আর অভিও এখানে আসবেন নাস্তা করেই তারা বেরিয়ে পরবেন শপিংয়ের জন্য। তাই অধরা নিজেই নাস্তাটা তৈরি করছে সব কাজ শেষ করে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল ৯.২০।
আমি সকালের নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে সোজা চলে গেলাম রুমে।সেখানে গিয়ে দেখি রক্তিম মটকা মেরে ঘুম আসছে রক্তিমের সামনে গিয়ে তার কানের কাছে গিয়ে চিল্লিয়ে বললাম,
~ঘরে চোর এসেছে ঘরে চোর এসেছে।
তাও রক্তিম উঠলোনা বরং সে আরমোড়া ভেঙ্গে আবার ওদিক ফিরে শুয়ে পরলো।এবার আমি জগের সব পানি তার মাথায় ঢেলে দিলাম রক্তিম ধরপরিয়ে উঠে বসলেন।আমার দিকে সে রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছেন আমি ক্যাবলা কান্তের মতো হেসে বললাম,
~উঠে পরেছেন যাক ভালো হলো যান ফ্রেশ হয়ে আসেন।
আমার কথা শুনে রক্তিমের রাগ মনে হয় সাত আসমানে চড়ে বসলো সে রাগে চিল্লিয়ে বললো,
~স্টুপিড মেয়ে আমাকে ভিজালে কেন?
আমি বললাম,
~আরে ঘরে মনে হয় ফুটো হয়েছে তাই পানি পরছে।
রক্তিম বললো,
~আমরা কী টিনের ঘরে থাকি যে ফুটো হবে?
আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
~আমার মনে হয় লিকেজ হয়েছে।
বলেই দেই এক ভো দৌড় আমার পিছে রক্তিমও দৌড় দেয় আমরা রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসি।রক্তিম আমার পিছে দৌড়াচ্ছে আর বলছে,
~দেখো অধরা চুপচাপ নিজেকে সারেন্ডার করো নাহলে খবর আছে।
আমি বললাম,
~কোনো দিন ও না।
যেই না অন্যদিকে যেতে নিবো তখনই রক্তিম আমাকে ধরে বললেন,
~এখন কই যাবে?
আমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে বলে উঠে,
~লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো তোমরা?
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিলো আমি পিছনে ঘুরে দেখি রাত দাড়িয়ে আছে।রাতের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট আমি সেখান থেকে চলে আসতে নিবো তখনই রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~রাত, আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি এতে লজ্জার কী আছে আর এখানে কেউ ছিলো না। so don’t create a scene.
রক্তিমের কথায় রাত আরো রেগে গেলো সে কিছু বলতে যাবে তখনই ডোর বেলের আওয়াজ আসে।আমি বললাম,
~রাহি আর অভি এসেছে মনে হয়।
বলেই দরজার সামনে এসে তা খুলে দিলাম সত্যিই রাহি আর অভি এসেছে। রাহি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন আছো?
আমি বললাম,
~ভালো।
রাহি আর অভি ভিতরে আসলেন রক্তিম তাদের সাথে কুশলাদি করে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।
সকাল ১০.২০ আমরা সবাই শপিং মলের জন্য রওনা দিলাম।সবাই বলতে আমরা চারজন রাহি,অভি,রক্তিম,আমি।
শপিং মলে পৌছেই রাহি আর আমি নেমে পরলাম যুদ্ধ করতে।প্রত্যেকটা দোকান ঘুরে দেখছি অবশেষে আমার আর রাহির পছন্দ সই একটা ব্রাইডাল লেহেঙ্গার দেখা পেলাম।
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১২ + ১৩
,,,,,,,
,,,,,,,
আমার সামনে এখন দাড়িয়ে আছে আমার নতুন টিচার আর সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নয় স্বয়ং রক্তিম রায়জাদা।তাকে দেখে আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলাম লিনা আমার অবস্থা চিন্তিত হয়ে বললো,
~দোস্ত,তুই ঠিক আছিস?কী হয়েছে?
আমি মাথায় হাত দিয়ে লিনার দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম,
~দোস্ত,আমার সব শেষ।
লিনা বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ রক্তিম গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
~আমার ক্লাসে অযথা কথা বল যাবে না।যদি আপনাদের কথা আমার পড়ানো থেকেও জরুরি তাহলে বের হয়ে যেতে পারেন।
রক্তিমের কথায় লিনা ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেলো।রক্তিম তার পরিচয় পর্ব শেষ করে ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন।আর আমি মনে মনে তার গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগলাম।
~কেমন বজ্জাত লোক সারপ্রাইজের নামে আমাকে হার্ট অ্যাটাক দিয়ে দিলো।খচ্চর লোক একবার বাসায় পাই তখন কাঁচা খেয়ে ফেলবো আপনার ইগনোর লেভেল আমিও দেখবো।
~এমন ভাব করছে আমাকে চিনে না যাক ভালো আমিও দেখে নিবো।আপনি তো শুধু এখানে ইগনোর করবেন।আর আমি বাসায়ও আপনাকে ইগনোর করবো দেখা যাক কে জিতে।
এতটুকু ভেবে বাঁকা হেসে ক্লাসে মনোযোগ দিলাম।
রক্তিম ক্লাস নিচ্ছে আর ভাবছে অধরা এতো ঠান্ডা ভাবে রিয়েক্ট করছে কেন নিশ্চয় এই মেয়ে মনে মনে ফন্দি আটছে।আমিও কম না এই খেলা তো মাত্র শুরু দেখা যাক কী হয়।
ক্লাস শেষ হলে আমরা ৫-৬ জন মাঠে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছি হঠাৎ সাকিব আমার ক্লাসমেট বললো,
~অধরা,তোমার রক্তিম স্যারের ক্লাস কেমন লাগলো?
আমি বললাম,
~ভালোই।
সাকিব বললো,
~আমারও স্যারের ক্লাস ভালোই লেগেছে।সে প্রতিটি টপিক একদম নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে।
রক্তিমের প্রশংসা শুনতে অনেক ভালো লাগছে।সে যতই রাক্ষস হোক না কেন তার পড়ানো মাশআল্লাহ।
লিনা বললো,
~স্যার কিন্তু দেখতেও মাশআল্লাহ।
লিনার কথায় আমার সব ভালো ভাবনায় জল পরে গেলো।লিনা রক্তিমের এতো প্রশংসা করবে কেন?এতে লিনার কোনো দোষ নেই সব দোষ ওই বিটকেলের এতো ফিটফাট হয়ে ভার্সিটি আসার কী দরকার যত্তসব।আমাকে বোরখা ছাড়া বাইরে বের হতে দিবে না আর নিজে হিরো সেজে থাকবে বেয়াদব ব্যাটা।লিনা আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললো,
~দোস্ত, তুই কী ভাবছিস?
আমি লিনার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম,
~এতো মাশআল্লাহ বলে লাভ নেই।স্যার বিবাহিত
লিনা অবাক হয়ে বললো,
~তুই কীভাবে জানিস?
আমি ওর প্রশ্ন শুনে আমতা আমতা করে বললাম,
~শুনেছি কারো কাছ থেকে।তুই এতো গোয়েন্দা গিরি করছিস কেন?
লিনা বললো,
~এতো রাগ করছিস কেন?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো।আমি ভ্রুকুচকে ম্যাসেজ অন করতেই দেখি রক্তিম ম্যাসেজ করেছে,
~ক্লাস শেষ করে ভার্সিটির বাহিরে অপেক্ষা করবে আমরা একসাথে বাসায় যাবো।
তার ম্যাসেজ দেখে আমি কোনো রিপ্লায় দিলাম না।আর তার সাথে কোনো ক্রমেই আজ বাসায় যাবো না যেভাবে একা একা এসেছে সেভাবেই একা একা যাবে।
ভেবেই মজা লাগছে রক্তিম হুতুম পেঁচার মতো আজ আমার অপেক্ষা করবে হি হি হি।এসব ভাবতেই আমি উচ্চস্বরে হেসে দিলাম আর আমার হাসি দেখে সবাই আমার দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে।আমি হাসি বন্ধ করে বইয়ের দিকে নজর দিলাম
,,,,,,,
,,,,,,
ভার্সিটির বাহিরে গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে রক্তিম কিন্তু কোথাও অধরাকে দেখতে না পেয়ে তার মাথায় চিন্তার ভাজ ফুটে উঠে।তাই রক্তিম গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে তো ভার্সিটির গেইটের দিকে কিন্তু অধরাকে সে দেখতে পারছে না।এভাবেই অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর রক্তিম তার ফোন বের করলো তখনই তার ফোনে ম্যাসেজ আসে। অধরার ম্যাসেজ এসেছে সে লিখেছে,
~আমি ঠিকঠাক মতো বাসায় পৌছে গেছি।আপনিও চলে আসেন তাড়াতাড়ি রায়হান চাচ্চুর বাসায় যেতে হবে।
অধরার ম্যাসেজ দেখে রক্তিমের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।এতোক্ষন ধরে ওয়েট করছি আর এই ম্যাডাম বাসায় গিয়ে এসির হাওয়া খাচ্ছে।একবার শুধু হাতের কাছে পাই তারপর বুঝাবো কতো ধানে কতো চাল।
ফাজিল মেয়ে এগুলো ভেবেই রক্তিম গাড়িতে উঠে বসে তারপর রওনা দেয় বাসার উদ্দেশ্যে।
আমি শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছি আর মিটমিট করে হাসছি। আর ভাবছি তাড়াতাড়ি করতে হবে যদি রক্তিম এসে পরে তাহলে আমার খবর আছে তাই আমি নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম তখনই আমি কারো সাথে ধাক্কা খাই।তাই আমি বললাম,
~সরি,আসলে আমি দেখতে পাইনি।
বলতে বলতে আমি মাথা উঁচু করে দেখি রাত আমার সামনে দাড়িয়ে আছে সে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।আমি রাতের পাশ কেটে যেতে নিবো তখনই সে বলে উঠলো,
~এভাবে হাঁটা চলা করলে তো ধাক্কা লাগবেই।
আমি বললাম,
~আমি সরি বলেছি।আমার ভুল হয়েছে তা মেনেছি কোনো কাপুরুষের মতো নিজের ভুলকে এড়িয়ে যাইনি।
বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম এই ব্যক্তির সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে।
আমি চলে আসলাম দাদীর রুমে এখান থেকে আজ বের হবো না সিংহের থাবায় পরার সম্ভাবনা আছে।
দাদীমা আমাকে দেখে বললেন,
~কীরে তুই একা বিড়বিড় করছিস কেন?
দাদীমার কথায় আমি হেসে বললাম,
~ওই এমনেই।
দাদীমা হেসে বললেন,
~পাগলী মেয়ে।
রক্তিম বাসায় এসে রুমে চলে যায় আজ সে এই ফাজিল মেয়েকে ছাড়বে না।রক্তিম বিড়বিড় করতে করতে রুমে গিয়ে দেখে অধরা কোথাও নেই।রক্তিমের রাগ সাত আসমানে উঠে গেলো।রক্তিম শার্ট খুলতে খুলতে নিজে নিজেই বলছে,
~নিশ্চয় দাদীর রুমে লুকিয়েছে।যেখানেই লুকান সুন্দরী আপনাকে আজ আমি ছাড়ছিনা।আমাকে রোদে দাড় করিয়ে নিজে ড্যাংড্যাং করে বাসায় চলে আসা।আজ মজ বুঝাবো
রক্তিম একটা শার্ট আর টাউজার নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।ফ্রেশ হয়ে এসে মাথা মুছতে মুছতে হাঁটা ধরলো দাদীর রুমের দিকে। রুমের কাছাকাছি পৌছে সে দাদীমা আর অধরার হাসির আওয়াজ আসছে।
রক্তিম হালকা কেশে রুমে ডুকতেই দেখে অধরা ঘুমের ভান করে পরে আছে।দাদী রক্তিমে দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো,
~দেখনা মেয়েটা কতো ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই আমার ঘরেই ঘুমিয়ে পরলো এখানেই থাকুক এখন ঘুম থেকে উঠলে তোর কাছে পাঠিয়ে দিবো।
রক্তিম ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
~আমার বউকে আমার এখনই প্রয়োজন। তাই এখনই নিয়ে যাচ্ছি।ঘুমিয়ে গেছে তো কী হয়েছে?কোলে করে নিয়ে যাবো।
আমি রক্তিমের কথা শুনেও কিছু বলছিনা মটকার মতো পরে আছি।আজ যদি এ চোখ খুলি রক্তিম আমাকে সারাজীবনের জন্য চোখ বন্ধ করিয়ে দিবেন।আমি সেভাবেই শুয়ে রইলাম।
রক্তিম হাতের টাওয়াল রেখে অধরাা কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো। অধরাও চোখ বন্ধ করে আছে রক্তিম তাকে নিয়ে হাঁটা ধরলো রুমের উদ্দেশ্যে
,,,,,,
,,,,,,,
রুমে পৌছে রক্তিম অধরাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।রক্তিম অধরার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো কতক্ষন এভাবে থাকতে পারবে তা আমিও দেখবো।রক্তিম অধরার দিকে ঝুঁকে তার গালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো তারপর আস্তে আস্তে সারা মুখে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো যেই রক্তিম অধরার ঠোঁটের দিকে যেতে নিবে তখনই অধরা চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো আর বললো,
~অসভ্য মানুষ লজ্জা করে না ঘুমন্ত মেয়ের সুযোগ নিতে।
রক্তিমের এমন আচরণে আমি আর ঘুমের নাটক ধরে রাখতে পারলাম না তাই চিৎকার করে উঠলাম।রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।তার এভাবে আগানো দেখে আমি পিছাতে শুরু করলাম একপর্যায়ে আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়।রক্তিম আমার একদম কাছে এসে দুই সাইডে তার হাত রেখে আমাকে বন্ধি করে দিলো।আমি মুখ তুলে তাকাতে পারছিনা রক্তিমের গরম নিশ্বাস আমার মুখে পরছে।আমার বুকে কেউ মনে হয় ধিরিম ধারিম ঢোল বাজাচ্ছে নীরবতা আমাদের দুজনের মাঝেই কাজ করছে রক্তিম সেই নীরবতা ভেঙ্গে বললো,
~আমি কী কাউকে বলেছিলাম যে ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমার জন্য ওয়েট করতে?
রক্তিমের শান্ত কন্ঠে বলা কথাটা আমার মনে তীরের মতো লাগলে কারণ এটা ঝড় আসার পূর্ব লক্ষন।
আমি কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি রক্তিম এবার একটু চেচিয়ে বললো,
~আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।Answer me damn it.
রক্তিমের ধমকানো শুনে আমি একটু কেঁপে উঠলাম।রক্তিমও সেটা বুঝতে পেরে বললেন,
~কেন আমাকে না বলে বাসায় চলে আসলে?
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
~বেশ করেছি।আপনিও তো আমাকে না বলে আমার ভার্সিটিতে টিচার হিসেবে জয়েন করেছেন।
অধরার এমন বাচ্চামী দেখে রক্তিমের হাসি পেলো কিন্তু সে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,
~এখন আমার ক্যারিয়ার আমি কীভাবে গড়বো তাও তোমাকে জানাতে হবে।
রক্তিমের কথা শুনে আমি কোনো জবাব দিলাম না।রক্তিম আমার কানের পিছে চুল গুলো গুজে বললেন,
~আর কোনোদিন এমন করবে?
আমি ভয়ে মাথা দুদিকে নাড়িয়ে না বললাম।রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
~যাও দাদীমার কাছে।
আমি দৌড়ে দরজার সামনে এসে কিছু একটা ভেবে আবার চেচিয়ে বললাম,
~বেশ করেছি ১০০বার এমন করবো।
বলেই দৌড় লাগাই।রক্তিম অধরার এহেন কান্ডে হো হো করে হেসে উঠলো।আর আনমনে বলে উঠলো,
~বোকা মেয়ে।
সন্ধ্যায় আমি পা টিপে টিপে রুমে আসলাম ডানে বামে ভালো মতো চেক করে নিলাম।দেখে নিলাম যে কোথাও সে রাক্ষসটা নেই তো নাহ নেই।আমি খুশি মনে কার্বাড খুলে একটা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম তারপর শাড়িটা পরে বাহিরে এসে আয়নার সামনে দাড়িয়ে হিজাব বাঁধলাম তারপর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে নিলাম।দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো রক্তিম আমাকে একনজর দেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমি ভেংচি কাটলাম আর বললাম,
~ব্যাটা খচ্চর এভাবে তো সারদিন বলতে থাকে অধরা তোমাকে সুন্দর দেখা যাচ্ছে কিন্তু আজকে একবারও বললোনা।কীভাবে বলনে আজ সে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত রাহির সাথে যে দেখা করতে যাবে।
বিড়বিড় করতে করতে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে পরলাম।রক্তিম ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে আমাকে দেখে বললো,
~আমরা একটুপরই বের হবো।
আমি কিছু নাবলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
,,,,,,
,,,,,,
আমরা এখন রায়হান চাচ্চুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিচ্ছি।রক্তিম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আমি জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে ব্যত হঠাৎ রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~অধরা,বাহিরে এমন কী আছে যে?এতো মনোযোগ দিয়ে দেখছো।
আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~বাহিরে আপনার মতো হুতুম পেঁচা নেই।
রক্তিম হালকা হেসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন।
কিছুসময় পর আমরা রায়হান চাচ্চুর বাসায় পৌছে গেলাম।বাড়ির ভিতরে ঢুকেই বুঝতে পারছি তারা অনেক শৌখিন মানুষ কারণ তাদের সোফার ঘরটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। সোফার ঘরে প্রবেশ করতেই একজন সুন্দরী মেয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে তার মুখে এক অমায়িক হাসি লেগে আছে।আমি যদি ভুল না ভেবে থাকি এই মেয়ের নামই রাহি।
রক্তিম আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
~ও হচ্ছে রাহি।
রাহি আমাদের সামনে এসে কুশলাদি করে আমাকে দেখে বললো,
~তুমিই অধরা রাইট।
আমি মুচকি হাসলাম রাহি রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~রক্তিম বাবাকে আমি সব বুঝিয়ে বলতে চাই কারণ আমি অভিকে বিয়ে করতে চাই।আর অভি আজ আমাদের বাসায় আসবে।সুতরাং আজই সব কিছু করতে হবে।
আমর রাহির কথা শুনে ডিসকো ড্যান্স করতে মন চাইছে যাক সতীন রাস্তা থেকে সরে গেলো।
রাহি বললো,
~ওইতো অভি চলে এসেছে।
রাহির কথায় আমি পিছন ঘুরে দেখি একজন সুদর্শন যুবক আমাদের দিকে হেঁটে আসছে।রক্তিম একটু আগে বেড়ে অভির সাথে হ্যান্ডশেক করলো।তারপর তারা ভিতরে চলে আসলো অভি আমার সাথে কুশলাদি করলো।রাহি বললো,
~বাবা উপরে আছে।তোমরা বসো আমি বাবাকে ডেকে নিয়ে আসছি।
আমরা সোফায় বসে পরলাম। একটুপর রাহি একজনকে হুইলচেয়ারে করে নিয়ে আসলেন।সেই বয়স্ক ব্যক্তিটি রক্তিমকে দেখে একগাল হেসে বললো,
~কেমন আছো?
রক্তিম হেসে বললো,
~ভালো।আপনি কেমন আছেন চাচ্চু?
রায়হান চাচ্চু বললেন,
~ভালো।তোমার সাথে এরা কারা?
রাহি বললো,
~বাবা,এই মেয়েটা হচ্ছে অধরা রক্তিমের বউ।
রায়হান চাচ্চু বিস্ফোরিত চোখে তাকালো রাহির দিকে আর বললো,
~এ কেমন মজা রাহি?
রাহি বললো,
~বাবা,রক্তিম আমেরিকা থেকে এসেই অধরাকে বিয়ে করেছে আর অধরাকে সে ভালোবাসে।সেদিন হাসপাতালে সে বাধ্য হয়ে আমার হাতে আংটি পরিয়ে দেয়।আর বাবা আমি অভিকে ভালোবাসি তাকেই নিয়ে করতে যাই।
রায়হান চাচ্চু বললেন,
~রাহাত কোথায়?
রক্তিম বললেন,
~প্লিজ চাচ্চু এটাতে বাবার কোনো ভুল নেই।
রায়হান চাচ্চু বললেন,
~না বাবা,এতে আমার ভুল কোনো কিছু না ভেবে তোমাদের বিয়েটা আমি ঠিক করেছি আর রাহাত তো আমাকে অনেকবার নিষেধও করেছে কিন্তু আমি শুনিনি।আর রাহি তোর বিয়ে অভির সাথেই হবে তুই চিন্তা করিস না।
বাবার কথা শুনে রাহির চোখ চকচক করতে লাগলো। সে খুশি হয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে রায়হানও মেয়ের খুশিতে খুশিতে।রক্তিমকে উদ্দেশ্য করে রায়হান বললো,
~তোমার আর তোমার বউকে আমার মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব নিতে হবে কী পারবে না অধরা।
আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়ি।রায়হান চাচ্চুর বাসা থেকে ডিনার করে বাসার জন্য বের হয়ে যাই।
তখনই তুমুল জোড়ে বৃষ্টি নামে আমি জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছি আর রক্তিম গাড়ি ড্রাইভ করছে।
আমি রক্তিমকে বললাম,
~চলেন না বৃষ্টি বিলাস করি।
রক্তিম বললো,
~বৃষ্টি বিলাস করলে সর্দি বিলাস হয়ে যাবে।
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম
আরেকটি পর্ব দেওয়া হলো কারণ আমি আগামীকাল গল্প দিতে পারবোনা।😢😢
#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৩
,,,,,,
,,,,,,
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
~নিরামিষ জানি কোথাকার।আপনি আসলেই রাক্ষস শুধু শুধু আমি আপনাকে আমি এ নামে ডাকি না।
রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~আর তুমি রাক্ষসের বউ রাক্ষসনী।
রক্তিমের কথায় রাগ করে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম সে আপনমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে এই মানুষটা আমার মনের কোনো ইচ্ছা বুঝে না। বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো আমি গাড়ি থেকে নামতে যাবো রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~বৃষ্টি বিলাস করবে না?
আমার চোখ খুশিতে চিকচিক করতে লাগলো।রক্তিম বললো,
~ছাদে চলো।
আমি গাড়ির দরজা খুলে বের হলাম হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি গুলোকে ছুয়ে দিলাম,বৃষ্টির পানি আমার পুরো শরীরকে ছুয়ে দিলো।রক্তিম আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন আমি তার দিকে চোখ বড় করে তাকালাম আর বললাম,
~ছাড়েন আমাকে। আমার পা আছে আমি হেঁটে যেতে পারবো।
রক্তিম বললো,
~হুশ।আমি জানি তোমার পা আছে আমার মন চেয়েছে তোমায় কোলে নিতে আবার ড্যাংড্যাং করতে পা পিছলে পরে যাবে।
রক্তিমের কথায় আমি লজ্জা পেলাম সে আমায় কোলে নিয়েই বাসার ছাদে চলে গেলো।ছাদে পৌছে রক্তিম আমাকে নিচে নামিয়ে দেয়। আমি রক্তিমের থেকে ছাড়া পেয়ে দৌড়ে ছাদের মাঝখানে চলে আসলাম দুহাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করছি।
রক্তিম তার প্রেয়সীকে দেখতে ব্যস্ত বৃষ্টির পানি গুলো তার প্রেয়সীর পুরো শরীরকে ছুয়ে দিচ্ছে।সে যদি বৃষ্টির পানি হতো তাহলে সে তার প্রেয়সীকে ছুয়ে দিতে পারতো।এখন তো এই বৃষ্টির পানিকে হিংসা করতে মন চাইছে।রক্তিম ধীর পায়ে অধরার পিছে এসে দাড়ালো।তার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস গুলো অধরার কাধে গিয়ে পরছে।
কারো গরম নিঃশ্বাস আমার কাধে পৌছাতেই আমি পিছন ঘুরে তাকাই বৃষ্টির জন্য চোখ পিটপিট করে তাকালাম।রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে এই তাকানো স্বাভাবিক লাগছে না।এতে রয়েছে ভালোবাসা যেই না আমি একটু পিছে যেতে নিবো সেই সময়ই আমার পা পিছলে গেলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।আমার কোমড়ে কারোও শীতল স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে তাকালাম।রক্তিম আমার কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে।তার নিশ্বাসের প্রতিটি শব্দ আমার কানে বাজছে।আমার বুকটা ঢিপঢিপ করছে এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে।রক্তিম আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
~হয়েছে বৃষ্টি বিলাস এখন রুম বিলাসও করে নেওয়া যাক।
আমি মাথা নাড়িয়ে তাকে হ্যাঁ বলতেই আমাকে কোলে নিয়ে নেয় রক্তিম।তারপর সে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় রুমে পৌছে রক্তিম আমাকে ওয়াশরুমের সামনে দ্বার করিয়ে দেয় আমার একটা শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিস হাতে দিয়ে সে বললো,
~যাও চেঞ্জ করে আসো।
তাড়াতাড়ি করে ঢুকে গেলাম ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমের দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে আমি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছি।আজকাল এগুলো যে কী হচ্ছে আমার সাথে বুঝতেই পারছিনা।কিছুক্ষন এভাবে থেকে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পরে নিলাম তখনই ওয়াশরুমের দরজায় করাঘাত করলো রক্তিম আর বললো,
~আর কতো লেট করবে আমার এখন ঠান্ডা লাগছে প্লিজ তাড়াতাড়ি করো।
আমি চটজলদি দরজা খুলে বের হয়ে বললাম,
~সরি,আসলে আমি
আমার পুরো কথা শেষ করতে পারলাম না তার আগেই রক্তিম বললো,
~তুমি পরে তোমার লেট করার কারণ বলো আগে আমি চেঞ্জ করে নেই।
বলেই সে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো আর আমি বিছানা বসে পরলাম পা দুটো হঠাৎ ব্যাথা করছে হয়তো আজ অনেক দিন পর ভার্সিটিতে ভাগাভাগী করেছি তার কারণেই হচ্ছে।
,,,,,
,,,,,
কিছুক্ষন পর রক্তিম ফ্রেশ হয়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~তোমার কী কোনো প্রবলেম হচ্ছে?
আমি বললাম,
~না।
রক্তিম বললো,
~তাহলে পায়ে এভাবে হাত বুলাচ্ছো কেন?
আমি বললাম,
~পা ব্যাথা করছে।
রক্তিম হালকা রেগে বললো,
~আরো করো দৌড়াদৌড়ি ভালো লাগবে।এখান থেকে সেখানে সবসময় ওনার দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।ফাজিল একটা
আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
~আমাকে কেন বকছেন পা ব্যাথা কী আমি ইচ্ছে করে এনেছি।
রক্তিম আর কিছু না বলে আমার পায়ের সামনে বসে পায়ে হাত দিতে নিবে তখনই আমি পা সরিয়ে ফেললাম আর তাকে বললাম,
~এতটুকুর জন্য পা ধরে মাফ চাইতে হবে না।আপনাকে এভাবেই আমি মাফ করে দিলাম।
আমার কথা শুনে রক্তিম আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
~স্টুপিট মেয়ে।আমি তোমার পা ধরে কেন মাফ চাইবো?তোমার পায়ের কোথায় ব্যাথা করছে তা দেখতে চেয়েছি।
রক্তিমের কথায় জিহ্বা দাঁত দিয়ে কেটে বললাম,
~আমার ভাবনায় ভুল হয়েছে।সরি
রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
~তোমার দ্বারা কিছু হবে না অধরা।
রক্তিমের এহেন কথায় আমি বোকার মতে বলে ফেললাম,
~তাহলে আপনার বাচ্চা গুলো কার দ্বারা হবে?আপনি কী আরেকটা বিয়ে করবেন বাচ্চার জন্য।
নিজের কথায় নিজে ফেসে এখন অন্য দিকে মুখ করে রেখেছি আর রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কিছু না বলে সে আমার পা দুটো কাছে টেনে টিপে দিতে থাকলো আর বললো,
~একদম ঠিক কথা বলেছো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।তো মিসেস অধরা আপনার কয়টা বেবি নেওয়ার প্ল্যান আছে?বাবা হিসেবে আমি জানতে চাই।
আমি মাথা নিচু করে আছি তা দেখে রক্তিম মিটমিট করে হাসছে কিন্তু নিজেকে বেশিক্ষন কন্ট্রোল করতে না পেরে সে জোরে হেসে দেয়।রক্তিমের হাসির শব্দ শুনে আমার আরো বেশি লজ্জা করছে তার থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে কাঁথা মোড়া দিয়ে শুয়ে পরলাম। রক্তিম এখনো হাসছে তার হাসি যেন থামার নাম নিচ্ছে না।
আমি কাঁথা মুখ থেকে সরিয়ে বললাম,
~আজব তো এতে এতো হাসার কী হলো?আরেকবার যদি হি হি করেছেন তাহলে আর আপনার সাথে থাকবো না এক কাপড়ে দাদীমার রুমে চলে যাবো।
রক্তিম হাসি বন্ধ করে আমাকে কাঁথা সরিয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে শুয়ে পরলেন আর বললেন,
~থাক আমার বউ আমার কাছেই থাক।
আমি আর কোনো কথা না বলে তার বুকে গুজে শুয়ে পরলাম।ভালো লাগে রক্তিমের সাথে থাকতে সে যখন আমার আশেপাশে থাকে তখন মনে হয় আমি কোনো অন্য দুনিয়ায় চলে গেছি।পরম আবেশে নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো ভালোবাসার মানুষ দুটি তারা এখন ব্যস্ত আছে তাদের নিজ নিজ স্বপ্নে।
এক রুমে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত আরেক রুমে একাকীভাবে নিদ্রাহীন অবস্থায় নিজ বারান্দায় বসে আছে রাত।ফোন হাতে নিয়ে সেই দূর আকাশে তাকিয়ে আছে সে কতোবার সারাকে ফোন করলো রাত কিন্তু সেই একই কথা একজন সুন্দর কন্ঠের নারী বার বার বলছে,
~এই নাম্বাটি ব্যস্ত আছে অনুগ্রহ করে আবার ট্রাই করুন।
এই বাক্যটি শুনতে শুনতে ত্যক্ত রাত।বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে আচ্ছা সে যখন সারকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতো তখন কী অধরারও এতোই খারাপ লাগতো।
হয়তো হ্যাঁ। পরক্ষনেই নিজের মনকে শাসায় রাত অধরা তার মাকে অপমান করেছে একটা অভদ্র মেয়ের সাথে সে কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না।
,,,,,,,
,,,,,,,
সকালে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।তখনই রাহাত বললো,
~রায়হানের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।এই মাসেই সে তার মেয়ের বিয়ে সেরে ফেলতে চায়।তোমরা তো জানো রাহির মা নেই আর রায়হানের ও তার ছোট ভাই ছাড়া আর কেউ নেই।তাই রায়হান চায় রক্তিম আর অধরা বিয়ের সব দায়িত্ব পালন করুক।রায়হান অনেক খুশি হবে বাকিটা তোমাদের ইচ্ছা সময়ের উপর নির্ভর করে।
বাবার কথাশ আমি বললাম,
~অবশ্যই বাবা,আমরা বিয়ের সব দায়িত্ব নিতে চাই।
রক্তিম বললো,
~জ্বী বাবা আমারও একই মত আছে।
আমাদের কথা শুনে বাবা বললেন,
~বেশ তো তোমরা রাহি আর অভির সাথে আজই দেখা করো তারা কীভাবে সব কিছু করতে চায়।তা জেনে নিও।আর অধরা তোমার সাথে রাহি কথা বলতে চায় তাই সে তোমাকে ফোন করবে তখনই জেনে নিও কখন তারা দেখা করতে চায়।
আমি বললাম,
~জ্বী বাবা।
ব্রেকফাস্ট শেষ করে বাসার বাহিরে এসে দেখি রক্তিম ড্যাশিং লুক নিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে হাটা শুরু করি।গাড়ির সামনে এসে যেই আমি গাড়ির পাশ কাটিয়ে যেতে নিবো তখনই রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~কোথায় যাওয়া হচ্ছে?একা একা।
আমি বললাম,
~যেখানেই যাই এতে আপনার কী?
রক্তিম হেসে বললো,
~আমারই তো সব।আচ্ছা ম্যাডাম আপনার আর আমার পথ একই৷ আমরা কী একসাথে সেই পথ পাড়ি দিতে পারি।
রক্তিমের এমন মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমি গলে যাওয়ার মেয়ে আমি না।আমি বললাম,
~কী দরকার আছে বলেন একই পথ একসাথে পাড়ি দেওয়ার?
রক্তিম বললো,
~আলবাত আছে অনেক দরকার আছপ বউ হও তুমি আমার আর কোনো নাটক দেখতে চাইনা গাড়িতে বসো।
কথা শেষ হতেই সে আমার হাত টেনে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন তারপর গেইট লক করে
নিজে ড্রাইভিং সীটে বসলেন আমি বললাম,
~গতকাল তো একদম মুড দেখাচ্ছিলেন।আজ কী হলো মাস্টার মশাই।
আমার এহেন কথা শুনে রক্তিম বললেন,
~আজও মুড দেখাবো কিন্তু সঠিক জায়গায় গিয়ে।
রক্তিমের কথায় আমার মেজাজ খারাপ লাগছে তাই জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম ভার্সিটির কাছে আসতেই আমি বললাম,
~গাড়ি থামান।
রক্তিম বললো,
~কেন?
আমি বললাম,
~কেউ দেখলে নানান কথা রটিয়ে দিবে।
রক্তিম বললো,
~তুমি আমার বউ কোনো সমস্যা হবে না।
আমি বললাম,
~সবাই তো আর জানে না আমি আপনার বউ।
রক্তিম কিছুক্ষন ভেবে বললেন,
~অধরা আমরা একটা পার্টি থ্রো করি যেখানে আমি সবাইকে জানাবো তুমি আমার বউ।
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
~যা ইচ্ছা করেন আমাকে এখানে নামিয়ে দেন।
রক্তিম গাড়ি থামিয়ে দেন আমি গাড়ি থেকে নেমে পরলাম সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম রক্তিম পিছন থেকে ডাকদিলেন।আমি পিছে ঘুরতেই সে বললেন,
~ভার্সিটির পর রাহি আর অভি সাথে দেখা করতে হবে।তাই আপনি আবার ড্যাংড্যাং করতে করতে বাসায় চলে যেয়ে না।
রক্তিমের কথা শুনে আমি বললাম,
~আমিই মনেই রাখবো আপনি আবার মুড দেখাতে গিয়ে ভুলে যেয়েন না।
বলেই চলে আসলাম সেখান থেকে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকেই লিনার সাথে দেখা হলো আমি আর লিনা ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম আমরা দুজন কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ একজন যুবক এসে আমার সামনে এসে দাড়ালো আমি তার আগমনে একটু বিচলিত হলেও নিজেকে ঠিক করে নিলাম।
সেই যুবকটি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আসলে আপনাকে এভাবে ভয় দেখাতে চাইনি কিন্তু একটা জরুরি কাজ ছিল তাই আপনাদের পথ আটকালাম।Kindly can you tell me where is principal room?
আমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই লিনা বলে উঠলো,
~আগে গিয়ে বাম দিকে চলে যান।
যুবকটি মুচকি হেসে বললেন,
~Thanks Ladies.
বলেই সে চলে গেলো।আমি লিনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~এই উজবুকটা আবার কে রে?
লিনা বললো,
~কে জানে?
আমরা সে বিষয় নিয়ে ঘাটালাম না ক্লাসে চলে আসলাম।সব গুলো ক্লাস করে আমি ভার্সিটির বাহিরে অপেক্ষা করছি রক্তিমের তখনই মোবাইলে ম্যাসেজ আসলো রক্তিম বলেছে,
~আজ সকালে যেখানে ড্রপ করেছিলাম সেখানে চলে আসো।
আমি চলে আসি সে জায়গায় রক্তিম গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমি রক্তিমের কাছে গিয়ে বললাম,
~চলেন যাওয়া যাক।
রক্তিম বললো,
~গাড়িতে উঠে বসো।
আমি গাড়িতে বসলাম রক্তিম ড্রাইভ করা শুরু করলো।কিছুক্ষন পর রক্তিম একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালেন। রক্তিম গাড়ি থেকে নামলেন আমিও গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালাম হঠাৎ রক্তিম আমার চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলেন।আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,
~কী করছেন?চোখে কাপড় কেন বেঁধেছেন।
রক্তিম বললেন,
~হুসস।একদম কথা বলবে না আমার হাত ধরে আসতে আসতে ভিতরে চলো।
রক্তিম আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন কিছুসময় পর আমার চোখের কাপড় সে খুলে দিলো।আমি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলাম