Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1365



আমার শহরে তুমি পর্ব-১১

0

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১১
,,,,,,
,,,,,
ব্রেকফাস্ট শেষ সবার থেকে বিদায় নিয়ে রায়জাদা ভিলার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম।রক্তিম আগের মতেই মুখ গম্ভীর করে রেখেছে বুঝতে পারছিনা তার কী হয়েছে?আমি সাহস করে রক্তিমের হাতে হাত রেখে বললাম,
~কী হয়েছে?আপনার রাত থেকে দেখছি অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে।
রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত চাহনি দিয়ে বললেন,
~অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
রক্তিমের কথা শুনে আমার বুকটা হুহু করে উঠলো। কী এমন করেছে সে? আমি শুকনো ঢোক গিলে বললেন,
~কী করেছে আপনি?
রক্তিম গাড়ি থামিয়ে দিলেন রাস্তা একপাশে সে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~গতকাল বাবা ফোন করেছিলেন। বাবা বললেন যে এখনই হাসপাতালে আসতে আমিও ভয় পেয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম সেখানে গিয়ে দেখি বাবা আইসিইউয়ের সামনে বসে আছে।বাবা আমাকে দেখে বললেন তার বন্ধু রায়হান চাচ্চু শরীর ভালো না সে গুরুতর অসুস্থ।
এতটুকু বলে সে চুপ হয়ে গেলো।আমি শান্ত কন্ঠে বললাম,
~এতটুকু ব্যাপার হলে আপনি এতোটা চিন্তিত হতেন না।
রক্তিম গাড়ির সীটের সাথে হেলান দিয়ে দুচোখ বন্ধ করে বললেন,
~ বাবা আমার বিয়ে রায়হান চাচ্চুর মেয়ে রাহির সাথে ঠিক করেছিলেন।তারা ভেবেছিলেন আমি আমেরিকা থেকে ফিরে আসলে আমাদের বিয়ে করিয়ে দিবেন কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করে ফেলি।তাই বাবা গতকাল যখন রায়হান চাচ্চুকে এ কথা বলতে যাবেন তখনই খবর আসে রায়হান চাচ্চু হাসপাতালে ভর্তি আর অবস্থা খারাপ। বাবা সেখানে পৌছায় আর রায়হান চাচ্চুর সাথে দেখা করে। রায়হান চাচ্চু বাবাকে বলে যে সে আজই এই মূর্হূতে আমার আর রাহির আকদ করতে চান।বাবা মানা করতে যাবে কিন্তু ডক্টর বলেছে তাকে কোনো ধরনের প্রেসার দেওয়া যাবে না।তাই বাবা আমাকে ফোন করে সেখানে ডাকে আর বলে আমি যাতে রাহির সাথে আকদ করার অভিনয় করি।
রক্তিমের কথা শুনে আমি ঠান্ডা মাথায় বললাম,
~আপনি কী আকদটা করে ফেলেছেন?হ্যাঁ বা না।
রক্তিম ছলছল নয়নে বললেন,
~হ্যাঁ তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।প্লিজ অনেক চেষ্টা করেছি আমি।তোমার হয়তো মনে হবে আমি তোমাকে ধোঁকা দিতে চাই এমন কিছু না।অধরা
রক্তিমের দিকে ঝুঁকে তার গালে ঠোঁট ছুয়িয়ে আমি বললাম,
~যদি আপনি আমাকে ধোঁকা দিতেই চেতেন।তাহলে আজ আমাকে সত্যিটা বলতেন না।এই কারণেই আপনাকে মাফ করলাম কিন্তু রায়হান চাচ্চুকেও সময় হলে সব বলে দিতে হবে।আমার বরের উপর আমি কারোও অধিকার সহ্য করতে পারবো না।Got it.
এতটুকু বলে সরে আসলাম রক্তিম আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন সে হয়তো বিশ্বাস করতে পারছেনা।আমি তার গাল টেনে দিয়ে বললাম,
~এখন চলেন বাসায় না হলে আমার দেবর রাগ করবে তার একমাত্র ভাবী তার এতো বিশেষ দিনে বাসায় নেই।
রক্তিম সামনের দিকে তাকিয়ে আবার ড্রাইভ করা শুরু করলো।সে ড্রাইভ করছে আর বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তার এ অবস্থা দেখে আমার অনেক হাসি আসছে।কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে আমি জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে থাকলাম।

,,,,,
,,,,,
রায়জাদা ভিলায় আজ খুশির আমেজ হবেই বা না কেন এ বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ের তারিখ ঠিক হবে।সাহারা রায়জাদার খুশিতে মাটিতে পা পরছে না রাতকে সে বরাবরই অনেক ভালোবাসে আর রাত তার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করছে এর থেকে বেশি তার কিছুই চাই না।সাহারা রায়জাদা আয়নার সামনে দাড়িয়ে একেরপর এক ডিজাইনার শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ধরছে।সে নিজেকে পরিপাটি দেখতে চায় কিন্তু কথায় আছে মানুষের পরিচয় পোশাক দিয়ে নয় বরং তার ব্যবহার দিয়ে বোঝা যায়।সব গুলো শাড়ি শরীরে জড়িয়ে দেখেছে কিন্তু কোনোটাই তার পছন্দ হচ্ছে না।তাই বাধ্য হয়ে শেষের শাড়িটাই তার পছন্দ করতে হলো
তখনই ঘরে প্রবেশ করলো রাত। সাহারা রায়জাদা ছেলেকে দেখে বললো,
~রাত,সারা ও তার পরিবার কখন আসছে?
রাত বললো,
~২টায় পৌছে যাবে।
সাহারা রায়জাদা কার্বাড খুলে একটা বক্স বের করলো আর রাতের হাতে দিয়ে বললো,
~খুলে দেখ তো।সারার জন্য পার্ফেক্ট কি না?
রাত বক্স খুলে দেখলো অনেক পুরনো যুগের নেকলেস এই রকম গহনা দেখে সে ভরকে গেলো আর মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~মা,তোমার কী বুদ্ধি শক্তি লোপ পেয়েছে।সারার সামনে আমার মান সম্মান কিছু রাখবে না তুমি।এই রকম পুরোনো একটা নেকলেস তুমি সারাকে দিবে।
ছেলের কথায় সাহারা রায়জাদার হাসি হাসি মুখটা নিমেষেই চুপসে যায় সে রাতকে বলে,
~রাত,এটাতো অনেক এক্সপেন্সিভ আর তোর দাদীমা আমাকে এটা দিয়েছে আর তোর বউকে আমি দিবো।
রাত মায়ের কথায় আরো খেপে গেলো আর বললো,
~বুঝেছি,টাকা খরচ করতে চাওনা তাই আমার সারাকে এই থার্ড ক্লাস নেকলেস দিতে চাও।লাগবে না তোমার উপহার
কথা শেষ হতেই রাত হাতে থাকা বক্স বিছানায় ছুড়ে মেরে হনহন করে রুম থেকে চলে গেলো।সাহারা রায়জাদা ছেলের এমন ব্যবহার দেখে অবাক হলেন।একটা সামান্য বিষয় নিয়ে এতো রাগ কেন দেখালো মায়ের সাথে এমন উঁচু গলায় কীভাবে কথা বললো।
বাসায় পৌছাতেই দেখলাম সব সার্ভেন্ট কাজে লেগে গেছে।আমি দাদীমার রুমে গিয়ে তার সাথে দেখা করে নিজের রুমে চলে আসলাম আসলে রক্তিমের জন্য টেনশন হচ্ছে।কেনজানি মনে হচ্ছে তাকে আমি হারিয়ে ফেলবো এ কথাটি ভাবতেই আমার কান্না আসে। আমাদের বিয়ে যেভাবেই হয়ে থাকুক না কেন সে আমার স্বামী আর আমি আমার স্বামীকে কেউর সাথে দেখতে পারবো না।এসব ভাবছি হঠাৎ রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কী ভাবছো?
আমি মৃদ্যু হেসে বললাম,
~ভাবছি দেবরের বিয়ের তারিখ ঠিক হবে তাই ভাবিতো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারবে না তাই কী কী কাজ করবো নিজে কী পরবো তাই ভাবছিলাম।
রক্তিম আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,
~তুমি কী আনইজি ফিল করছো?
আমি অবাক হয়ে বললাম,
~আনইজি কেন ফিল করবো?
রক্তিম বললো,
~না মানে সারার পুরো পরিবার আজ আসবে তাই ভাবলাম আর কি।
আমি তার চুল একহাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে বললাম,
~রক্তিম ভুলটা আমার হলে অবশ্যই আনইজি ফিল হতো।আর সত্য কথা হচ্ছে রাত ঘৃনার পাত্র ভালোবাসার না।কিন্তু আমি চাই সে সুখে থাকে
রক্তিম আমার মুখ তার দুইহাতের বাধনে নিয়ে বললেন,
~তুমি যদি খুশি থাকো আমিও খুশি।আর শোন তোমার বইগুলো প্লিজ গুছিয়ে রাখো নয়তো এলোমেলো হয়ে যাবে।আমি নিচের কাজ গুলো দেখে আসি ডেকোরেশন ঠিকঠাক ভাবে হলো কী না?
আমি বললাম,
~ঠিক আছে।
রক্তিম আমার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।আমি আমার কাজে লেগে গেলাম সব বই গুলো গুছিয়ে রেখে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম সারার পরিবার এসে পরবে কিছুক্ষন পর।

,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,
রক্তিম নিচে এসে ডেকোরেশনের কাজ চেক করছে।তার বাবা রাহাত এসে বললেন,
~তুই কী রাগ করে আছিস?
রক্তিম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
~রাগ করবো কেন?তুমি তো আর আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওনি তাই না।
ছেলের কথায় যে ব্যাপক অভিমান আছে তা রাহাতের বুঝতে বাকি রইলো না।বাবার এমন নিরবতা দেখে রক্তিম বললো,
~বাবা,তুমি যদি আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে তাহলেও এতো কষ্ট লাগতো না যতোটা এখন এই মূহুর্তে লাগছে।
রক্তিম কথা শেষ করে অন্যদিকে চলে গেলো।আর রাহাত সেখানে দাড়িয়েই তার ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।রাহাত মনে মনে ভাবছে
~আমি ভুল করেছি তো আমিই শুধরাবো।ছেলের চোখে আমার জন্য ঘৃণা সহ্য করতে পারবো না।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি সাহারা রায়জাদা আমার রুমে দাড়িয়ে আছে।হাতে একটা বক্স আমি তাকে দেখে ভ্রুকুচকে বললাম,
~আপনি এখানে কোনো বিশেষ কাজে এসেছেন নাকি?
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সাহারা রায়জাদা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
~এ বাড়ি আমার যখন যেখানে মন চাইবে সেখানেই আসবো।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~ভুল বললেন এই বাড়িটা আমাদের। সে যাই হোক আপনি এখানে কী কারণে এসেছেন?
আমাদের বাড়ি এ কথাটি শুনে সাহারা রাগে কটমট করে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
~তোমার শশুর তোমাকে এই বক্স টা দিয়ে পাঠিয়েছে আর আজকে এই গহনার সেটটাই পরবে।আর শোন তোমার ওই মিডেল ক্লাস সাজ সেজে এসো না।
সাহারা রায়জাদার কথা শেষ হতেই আমি উচ্চ শব্দে হেসে বললাম,
~যতই সুন্দর করে সেজেই আসি না কেন আপনাদের হাই সোসাইটির মতো হতে পারবো না কারণ আমি মনটা পরিষ্কার তাই আপনাদের সাথে যাবে না।
আমার কথায় সাহারা রায়জাদা আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলো।বিছানায় সেই বক্সটা রাখা আছে আমি একবার সেটার দিকে তাকিয়ে হাতে নিয়ে কাবার্ডে রেখে দিলাম।আয়নার সামনে গিয়ে মাথার টাওয়াল খুলে চুল ঠিক করতে থাকলাম।
রাত তার বারান্দায় দাড়িয়ে সারার ফোনে ট্রাই করছে কিন্তু যতোবার ফোন দিচ্ছে ততবারই বিজি বলছে। কয়েকদিন ধরে সারাকে ফোন করলেই বিজি পাওয়া যায় ব্যাপারটা ভালো ঠেকছেনা রাতের কাছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে চলে গেলো রেডি হতে
শাড়িটা ঠিকভাবে পরে চুল গুলো সেট করে নিলাম তখনই রক্তিম ঘরে প্রবেশ করলো তার মুখটা অনেকটাই মলিন। আমাকে দেখে সে মুচকি হেসে বললো,
~তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।তোমার নাকফুলটা কোথায়?
আমি নাকে হাত দিয়ে দেখি আসলেই নাকফুলটা নেই। আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,
~হয়তো ওয়াশরুমে খুলে রেখেছি।
বলেই ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলাম আসলেই সেখানেই রাখা।একটা সস্বতির নিশ্বাস ছেড়ে আমি নাকফুলটা হাতে নিয়ে বের হলাম রক্তিমকে বললাম,
~পেয়েছি ওয়াশরুমে ছিল।
বলতে বলতে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নাকফুলটা পরে নিলাম।তখনই মনে পরলো সেই বক্সের কথা আমি রক্তিমকে বললাম,
~আপনার বাবা গহনা দিয়ে গেছেন পড়ার জন্য।আর আপনি তো জানেন আমি
আমার কথা শেষ না হতেই রক্তিম বললো,
~তুমি পরবেনা আমি জানি।
রক্তিমের কথায় মুচকি হেসে বললাম,
~আগামীকাল থেকে ভার্সিটি যাবো।মনে যেন থাকে।
রক্তিম বললো,
~তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ ওয়েট করছে কালকে।
আমি ভ্রুকুচকে বললাম,
~কী সারপ্রাইজ?
রক্তিম বাঁকা হেসে বললেন,
~আগামীকাল দেখে নিও।
আমি আর কিছু বললাম না। আগামীকাল দেখা যাবে কী হয়।

,,,,,,,
,,,,,,,,
সারার পরিবার এসে পরেছে তাদের ওয়েলকাল অনেক সুন্দর ভাবে করা হলো।রাত অনেক এক্সসাইটেড কিন্তু সারাকে ততোটা এক্সসাইটেড দেখা যাচ্ছে না।সারার বাবা বললেন,
~রাহাত সাহেব,বিয়ের তারিখটা তাহলে ঠিক করা যাক?
রাহাত বললো,
~অবশ্যই।
হঠাৎ সারা তার বাবার উদ্দেশ্যে বললেন,
~বাবা,এখন বিয়ের তারিখ বের করাটা ঠিক হবে না আমার শো রুমটাও এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি।তাই ভাবছিলাম আগে নিজের ক্যারিয়ারটা ঠিক করি তারপর না হলে বিয়েটা হোক।
রাত কিছু বলছেনা তার নিরবতা দেখে সাহারা রায়জাদা বললো,
~সারা তুমি কী বলছো?
সারা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~আন্টি প্লিজ try to understand. Raat say something i don’t want to marry now.
রাত তার নিরবতা কাটিয়ে বললো,
~সারা যেভাবে বলছে সেভাবেই হবে।
রাতের কথায় রাহাত রায়জাদা বললেন,
~তাহলে আর কথাই রইলোনা। তোমরা ভেবে চিন্তে আমাদের বিয়ের তারিখ জানিয়ে দিও।
সারার বাবা-মা আর কোনো কথা না বলে মেয়েকে নিয়ে চলে যান।সাহারা রায়জাদা রাতের কাছে গিয়ে বললেন,
~তোর কোনো মতামত আছে নাকি সারা যা বলবে তুই তাই করবি।
রাত মায়ের কথায় চেচিয়ে বলে,
~তোমার এতো কীসের প্রবলেম? বিয়ে পরেও হতে পারবে যত্তসব নাটক।
রাতের কথা শেষ হতেই রক্তিম রেগে বললো,
~মায়ের সাথে এটা কেমন ব্যবহার রাত?
রাত রেগে গিয়ে বললো,
~ভাই কোনো কথা বলবে না আজাইরা পাবলিক।
তারপর রাত বিড়বিড় করতে করতে উপরে চলে গেলো।পুরো ঘটনায় আমি নিরব দর্শক শুধু সবার কথা শুনে গেছি এখন ভাবার বিষয় সারা এখন বিয়ে কেন করতে চাইছে না।আমি আর এই ব্যাপারে ভাবলাম না নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাতঃ১০টা সারা আর রাতের নাটকের কারণে দুপুর থেকে রাত হয়ে গেলো।আমি রক্তিমের জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু তার কোনো খবর নেই।রক্তিমের অপেক্ষা করতে করতে আমি ঘুমিয়ে গেলাম
রক্তিম রুমে এসে দেখলো অধরা ঘুমিয়ে গেছে।রক্তিম সেদিকে তাকিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো,
~অধরা,তুমি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তাইতো আমাকে বিশ্বাস করেছো।আজ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশীর দিন তুমি আমাকে আপন করে নিয়েছো।আর কালকে আমি এমন সারপ্রাইজ দিবো তোমাকে হয়তে তুমি প্রথমে রাগ করবে কিন্তু মনে মনে খুশি হবে।

,,,,,,
,,,,,,
সকালে রেডি হচ্ছি ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রক্তিমকে অনেক খুশি লাগছে আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~কী হয়েছে এতো খুশি কেন আপনি?
রক্তিম ভ্রুকুচকে বললো,
~কেন তোমার জ্বলছে?
আমি ভেংচি কেটে বললাম,
~কেন জ্বলবে?আপনি কী কারো সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন।
রক্তিম শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
~রাহির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
রাহি নামটা শুনে মাথা আগুন উঠে গেলো।আমি রক্তিমের কলার ধরে বললাম,
~কী বললেন?আবার বলেন খবরদার যদি সেই মেয়ের সাথে দেখা করতে যান আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
রক্তিম আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
~শোনো ময়না পাখি,রাহি তোমার সাথে দেখা করতে চায় আর রায়হান চাচ্চুর শরীর এখন ভালো তাই আমরা তাকে সত্যিটা বলে দিতে চাই।
রক্তিমের কথা শুনে আমার অনেক খুশি লাগতে শুরু করলো।আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
~সত্যি।
রক্তিম মুচকি হেসে বললেন,
~তিন সত্যি। আর তোমার আসল সারপ্রাইজ এখন পর্যন্ত বাকি আছে তাই এখন ব্রেকফাস্ট করে ভার্সিটির জন্য রওনা দিতে হবে।
আমরা ব্রেকফাস্ট করে বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে কিন্তু রক্তিম আমার সাথে আসলেন না তার কী যেন কাজ রয়েছে তাই সে আমাকে একাই পাঠিয়ে দিলেন।
ভার্সিটি পৌছে সব ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে সব নোট সংগ্রহ করলাম তারপর ক্যাফে গিয়ে বসলাম আড্ডার মাঝে লিনা বললো,
~দোস্ত জানোস নতুন টিচার জয়েন হইসে। আগে ***** এই ভার্সিটিতে আসিলো এখন আমাদের ভার্সিটিতে আইসে।
আমি বললাম,
~ক্লাস করেছিস?
লিনা বললো,
~নাহ আজকে থেকে স্যার ক্লাস নিবো।
আমি বললাম,
~চল তাহলে যাই নতুন স্যারের ক্লাস করে আসি।
আমি আর লিনা ক্লাসে বসে আছি তখনই ক্লাসরুমে যেই ব্যক্তি প্রবেশ করলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না

চলবে।।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-১০

0

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১০
,,,,
,,,,,,
ভিতরে ডুকে আমি আরো বেশি খুশি হয়ে গেলাম কারণ বড় খালামনি সোফায় বসে আছে আমি তাকে দেখেই বললাম,
~খালামনি তুমি কবে এসেছো?আর কেমন আছো?বাসায় সবাই কেমন আছে?
খালামনি হেসে বললেন,
~এতো প্রশ্ন একসাথে কীভাবো জবাব দিবো
খালামনির কথা শুনে বললাম,
~আরে খালামনি এতোদিন পর তোমায় দেখেছি তাই একটু এক্সাইটেড হয়ে গেছি।
আমার কথায় খালামনি বললো,
~হুম বুঝতে পেরেছি।সব ঠিক আছে, আমিও ভালো আছি আর গতকাল বিকেলে এসেছি আজ চলে যাবো।
আমি মলিন মুখে বললাম,
~আজই চলে যাবে।
খালামনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
~হ্যাঁ মা ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম।আজকে ডাক্তার দেখিয়ে চলে যাবো বুঝিসই তো বয়স হয়েছে আর বাড়ি থেকে দূরে থাকতে মন চায় না।
আমি মৃদু হাসলাম খালামনি অবাক চোখে আমার পিছনে তাকিয়ে বললো,
~জামাই বাবাজি দাড়িয়ে আছো কেন?আসো বসো।
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি রক্তিম হ্যাবলার মতো দাড়িয়ে আছে।খালমনির কথায় তার ধ্যান ভাঙ্গে আর বলে,
~অসুবিধা নেই।আসলে আপনারা কথা বলছিলেন তাই আর কী?
খালামনি হেসে বললেন,
~বসো বাবা।তুমি কেমন আছো?
রক্তিম সোফায় বসে বললো,
~ভালো। আপনি কেমন আছেন?
খালামনি মলিন হেসে জবাব দিলো,
~ভালো আছি।বুড়ো বয়সে আর যতোটুকু ভালে রেখেছে আল্লাহ পাক এটাই যথেষ্ট।
খালামনির কথায় রক্তিম কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসি দিলো।মা এসে খালামনির উদ্দেশ্যে বললো,
~আপা চলে রুমে যাই কতক্ষন ধরে বসে আছো।
খালামনি কিছু না বলে ধীর পায়ে হেঁটে মায়ের সাথে রুমে চলে গেলেন।মা খালামনিকে রুমে দিয়ে এসে আমার কাছে এসে বললেন,
~রক্তিমকে নিয়ে তোর রুমে যা।এখানে কতোক্ষন বসে থাকবে।
মায়ের কথায় রক্তিমের কাছে গিয়ে বললাম,
~চলেন আমার রুমে গিয়ে বসেন।
রক্তিম শয়তানি হাসি দিয়ে উঠে দাড়ালো তারপর আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
~রুমে গিয়ে একটু রোমান্স হয়ে যাক।
রক্তিমের কথায় তার দিকে একটি হাসি দিয়ে বললাম,
~রোমান্স করতে মন চায় তাহলে একটা কাজ করেন আরেকটা বিয়ে করেন।সেই বউয়ের সাথে রোমান্স করেন কী বলেন?
রক্তিম আমার কথায় বললেন,
~এক বউই সামলাতে জান যায় আর আসে আবার আরেক বউ না বাবা না।
রক্তিমের কথায় রাগী কন্ঠে বললাম,
~এখানে কিছু বলবো না রুমে চলেন তারপর বুঝাবো।
রক্তিম বললো,
~আরে রাগ করছো কেন?আমি তো এভাবেই বললাম
তার কথায় আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
~আপনার কী আমাকে জ্বালাতে অনেক ভালো লাগে?
রক্তিন বেবি ফেস করে বললো,
~জ্বী অনেক ভালো লাগে।
রক্তিমের এমন ফেস দেখে আমার অনেক হাসি পাচ্ছে কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম,
~এখন রুমে চলেন।
বলেই আমি হাঁটা ধরলাম রক্তিম আমার পিছে পিছে রুমে চলে আসলেন।রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম মনে হচ্ছে অনেকদিন ধরে দেখিনা রুমটা একদম গোছানো হয়তো মা গুছিয়ে রাখে।এই কয়দিন অনেক মিস করেছি মাকে।শুধু মাকে না সবাইকেই অনেক মিস করেছি এসব ভাবছি তখনই রক্তিমের কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গলো,
~অধরা,তোমার বই গুলো আজ মনে করে গুছিয়ে রেখো সব নিয়ে যেতে হবে। যখন থেকে বিয়ে হয়েছে তুমি বই তো ধরেই দেখো না।এগুলো চলবে না পড়াশোনা করতে হবে এখন থেকে রোজ আমার কাছে পড়তে বসবে।
আমি ভেংচি কেটে বললাম,
~হহু আপনার কাছে কে পড়তে বসবে।আপনি শুধু বকা দেন আমি আপনাকে ভালো মতো জানি পড়ার সময় রাক্ষস হয়ে যান।
রক্তিম চোখ বড় বড় করে বললেন,
~আমি রাক্ষস হয়ে যাই দাড়াও তোমাকে বুঝাচ্ছি এই রাক্ষস কী কী করতে পারে।
কথা শেষ করেই যেই না সে আমাকে ধরতে যাবে আমি দৌড়ে তার থেকে সরে যাই।রক্তিম আমাকে ধরতে না পেরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~এখন কেন পালাচ্ছো?
আমি বললাম,
~কে পালাচ্ছে?আমি তো শুধু জায়গা চেঞ্জ করেছি একজন শিক্ষক হয়ে মিথ্যা বলেন লজ্জা করে না।
রক্তিম এবার রেগে গিয়ে একটু এগিয়ে এসে খপ করে আমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
~কী যেন বলছিলে?
আমি ভয়ে ঢোক গিলে বললাম,
~যা বলেছি আপনি শুনতে পাননি।
রক্তিম আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
~হুম শুনেছি কিন্তু দূর থেকে এখন কাছের থেকে শুনতে চাই।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~যা বলার বলে ফেলেছি আর বলতে পারবো না।
রক্তিম অধরার এ অবস্থা দেখে মিটমিট কর হাসছে আজ তার বউকে জব্দ করা যাচ্ছে তাই অধরার কানের সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
~তুমি মাথা নিচু করে আছো কেন?

,,,,,,,,
,,,,,,,,
রক্তিমের এমন কথা শুনে আমার কান আরো গরম হয়ে গেলো।রক্তিম কী বুঝতে পারছে না আমার লজ্জা করছে।তাও সে এমন করছে অসভ্য মানুষ আমি মাথা উচু করে তার দিকে তাকাতেই আমার লজ্জাবোধ আরো বেড়ে গেলো আজব তো এতো লজ্জা কেন পাচ্ছি আমি।রক্তিম আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমার মাথা তার বুকের সাথে লেপ্টে আছে।আমি রক্তিমে হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি এই শব্দগুলো আমার কাছে খুব ভালো লাগছে কেন জানি মনে হচ্ছে প্রতিটি হার্টবিটের শব্দে আমার নাম লিখা।আমি পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমার মনে হচ্ছে আমি আজীবন এ শব্দ গুলো শুনে কাটিয়ে দিতে পারবো।
রক্তিমের অনেক ভালো লাগছে অধরাকে এভাবে বুকে জড়িয়ে রাখতে।তার এতে অনেক সুখ সুখ লাগছে সে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছে কারণ তার ভালোবাসা আজ তার বুকে আছে।মনের ভিতর উথাল-পাতাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে অধরা কী এই আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে হয়তো হ্যাঁ কারণ অধরা তার বুকে পরম আবেশে মাথা রেখে আছে।হয়তো এখানেই অধরা তার শান্তি খুজে পাচ্ছে দুজনই একটা ঘোরের মধ্যে আছে হঠাৎ কেউ বলে উঠলো,
~আমি কিছু দেখিনি।
কারো কন্ঠ শুনে আমার ধ্যান ভাঙ্গলো আর সাথে সাথে আমি রক্তিমের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তাকে মৃদ্যু ধাক্কা দিতেই সে আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি দরজার দিকে চোখ পরতেই দেখি আরিফ দাড়িয়ে আছে তাকে দেখেই আমি মুখে হাসির রেখা টেনে বললাম,
~ভাই ভিতরে আয়। কেমন আছিস?আর জারিফ কোথায়?
আরিফ আমতা আমতা করে বললো,
~আপু আমি না কিছু দেখি নি। তুমি কিছু মনে করো না।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে রক্তিম বললেন,
~আরে শালা সাহেব এতে এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।একদিন আপনারও বিয়ে হবে।
রক্তিমের কথায় আরিফ মাথা নিচু করে মুচকি হেসে রুমের ভিতরে ঢুকে বললেন,
~দুলাভাই বিয়ের কথা বলবেন না লজ্জা লাগে।
রক্তিম হো হো করে হেসে বললেন,
~লজ্জাবোধ টা বোনের কাছ থেকে পেয়েছো।
রক্তিমে কথায় আমি তার দিকে রাগী চোখে তাকালাম রক্তিম আমার তাকানো দেখে মিটমিট করে হেসে বললেন,
~তো আরিফ আমার আরেকটা শালা বাবু কই?
আরিফ বললো,
~আপনার জন্য উপহার আনতে গেছে।একটু পর চলে আসবে।
আমি রক্তিম আর আরিফকে রুমে রেখেই মায়ের কাছে চলে আসলাম। মা রান্নাঘরে কাজ করছে আমি মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম মা বললো,
~সব ঠিক আছে তো মা?ওই বাসার কেউ তোকে কিছু বলেনি তো?
মায়ের যে চিন্তা হচ্ছে তা আমি ভালোমতো জানি তাই মাকে বললাম,
~কেউ কিছু বলে না রক্তিম আমাকে সব সময় আগলে রাখে তাই কেউ কিছু বলতে পারেনা।
মা আমার কথা শুনে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন,
~আমি তো জানতাম রক্তিম অনেক ভালো ছেলে।তুই কী আবার রক্তিমকে জ্বালাস নাকি?একদম কোনো জ্বালাতন করবিনা ছেলেটাকে।
মায়ের কথায় রাগ উঠে গেলো কিন্তু মাকে তো কিছু বলতে পারবো না শুধু মনে মনে বললাম,
~আমি কী জ্বালাবো সেই তো আমাকে জ্বালিয়ে ছাড়খার করে দেয়।
মা আমাকে চুপ দেখে বললেন,
~কীরে কী ভাবিস?
আমি বললাম,
~কিছু না।আমি একটু রুম থেকে আসছি
মা বললো,
~ঠিক আছে।
আমি রুমে চলে গেলাম সেখানে গিয়ে দেখি আরিফ আর রক্তিম কথায় মসগুল আমি বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম কতোদিন এখানে দাড়িয়ে দূর আকাশ দেখা হয় না আজকের আকাশটা দেখতে অনেক সুন্দর। ভাবছি আগামীকালকে সারা আর রাতের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে কিন্তু সাহারা রায়জাদা ভয় পাচ্ছে আমাকে নিয়ে যাক ভয় পাওয়া ভালো।
রক্তিমের আড্ডা শেষ হলো আরিফের সাথে।আরিফ রুম থেকে বের হতেই রক্তিমের ফোনটা বেজে উঠলো সে ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো তার বাবা ফোন করেছেন। রক্তিম একটু অবাক হলো সে ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে তার বাবা বলে উঠলো,
~তুমি এখন কোথায়?
রক্তিম বললো,
~আমি তে অধরাকে নিয়ে তার বাসায় এসেছি।
রক্তিমের বাবা বললো,
~এখনই ****** হাসপাতালে পৌছাও।আর শোনো অধরাকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।
রক্তিম একটু ভয় পেয়ে বললো,
~বাবা,হাসপাতালে কেন? দাদীমা ঠিক আছে।
রক্তিমের বাবা বললো,
~মা ঠিক আছেন।তুমি তাড়াতাড়ি এসো।
বলেই ফোন কেটে গেলো অজানা ভয়ে রক্তিমের গলা শুকিয়ে আসছে। রক্তিম বসা থেকে উঠে দাড়ালো তারপর অধরাকে নাম ধরে ডাক দিলো,
~অধরা,অধরা।
রক্তিমের ডাক শুনে আমি বারান্দা থেকে রুমে চলে গেলাম। রক্তিম আমাকে দেখে বললো,
~অধরা অনেক জরুরি কাজ পরেছে তাই একটু বাহিরে যাচ্ছি।চলে আসবো
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে রুম থেকে বের হয়ে আসেন আমি তার পিছে পিছে বাহিরে গেলাম রক্তিম দরজার সামনে গিয়ে আবার আমার দিকে ফিরে আমার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে বের হয়ে গেলেন।

,,,,,,,
,,,,,,,,,
রক্তিম চলে গেছে অনেকক্ষন হলো মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে কেন রক্তিম চলে গেলো।আমি মাকে বুঝিয়ে দিয়েছি দুপুরের খাবারের সময়ও হয়ে গেলো কিন্তু রক্তিম আসলো না আমি অনেকবার ফোন ট্রাই করলাম সে রিসিভ করলোনা।দুপুরের খাবারের পর আবার ফোন ট্রাই করলাম এবার সে রিসিভ করলো আর রক্তিম বলে উঠলো,
~অধরা,আমি চলে আসবো।আর আমি ঠিক আছি।
আমি বললাম,
~আপনি কোথায় আছেন?আমার অনেক টেনশন হচ্ছে
রক্তিম ভেজা ভেজা গলায় বললো,
~এসে পরবো।
এতটুকু বলে ফোন কেটে দিলো।আমার মনটা অনেক কু ডাকছে কোন অঘটন ঘটেনি তো।
রক্তিম ফোন রেখে ভাবলেশহীন ভাবে হাসপাতালের করিডোরে দাড়িয়ে আছে। রক্তিম ভাবছে এই কয়েকঘন্টায় কী হয়ে গেলো সে অধরাকে কীভাবে মুখ দেখাবে সেও তো রাতের মতোই কাজ করছে।
কিছুক্ষন আগে যখন সে হাসপাতালে আসে আর দেখে তাদের ড্রাইভার দাড়িয়ে আছে। রক্তিম দৌড়ে ড্রাইভারের কাছে গেতেই ড্রাইভার বললো,
~স্যার,বস আপনারে ভিতরে যাইতে কইছে। বস ৩য় তালায় আছে।
রক্তিম আর অপেক্ষা করলো না সে অনেক দ্রুত হাঁটতে লাগলো।লিফটের অপেক্ষা না করে সে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো ৩য় তলায় উঠে রক্তিম দেখতে পেলো তার বাবা আইসিইউয়ের সামনে দাড়িয়ে আছে। তার চোখে মুখে কান্না ছাপ বাবার এ অবস্থা দেখে রক্তিম বাবার কাছে চলে গেলো।রাহাত রায়জাদা রক্তিমকে দেখে বললো,
~রক্তিম তুই এসেছিস।দেখ তোর রায়হান চাচ্চুর অবস্থা অনেক খারাপ।
বাবার কথায় রক্তিম আইসিইউয়ের দিকে তাকালো।রায়হান তার বাবার অনেক কাছের বন্ধু এক হিসেবে তার ভাই। রক্তিম বাবাকে শান্তনা দিয়ে বললো,
~বাবা,তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
ছেলের শান্তনায় রাহাত রায়জাদার মন হালকা হলো না।ছেলের হাত ধরে বললো,
~রক্তিম তোকে একটা কথা বলার ছিলো।
রক্তিম বললো,
~বলো বাবা।
রাহাত রায়জাদা একটা ঢোক গিলে বললো,
~তোর আমেরিকা যাওয়ার পর আমি তোর বিয়ে রায়হানের মেয়ে রাহির সাথে ঠিক করে রেখেছিলাম।আমরা ভেবেছিলাম তুই আসার পর বিয়ে পরিয়ে দিবো কিন্তু তুই অধরাকে বিয়ে করে ফেললি তাই আমি ভাবলাম এই কথাটা রায়হানকে জানিয়ে দেই।আজ যখন আমি তাকে এই খবরটা জানাতে যাবো তার আগেই খবর আসলো রায়হানের হার্টে ব্লক ধরা পরেছে সে হাসপাতালে ভর্তি।
রাহাত এতটুকু বলে ছেলের দিকে তাকালো রক্তিম তার বাবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।রাহাত আবার বলা শুরু করলো,
~ডক্টর বলেছে ওকে কোনো প্রেসার দেওয়া যাবে না।আর একটু আগে রায়হানের জ্ঞান ফিরেছে সে চা এখনই রাহির সাথে তার আকদটা হয়ে যাক।
তাই আমি চাই তুই একটা অভিনয় করবি যে তুই রাহিকে বিয়ে করতে প্রস্তুত আর এখানেই তুই ওর হাতে আংটি পরিয়ে দিবি।আর শুধু বিয়ের ব্যাপার না এখানে আমার নতুন একটা ব্যবসা শুরু করেছি সেটার অর্ধেক টাকা রায়হান দিয়েছে এখন যদি তুই এই অভিনয় না করিস আমার পথে বসতে হবে।
রক্তিম অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর রক্তিম বললো,
~বাবা,তুমি কী বলছো?এটাতে ধোঁকা আর আমি অধরার সাথে প্রতারণা করতে পারবো না।আর তুমি রায়হান চাচ্চুকে সব বুঝিয়ে বলো তাহলেই হবে
রাহাত বললো,
~কোনো প্রতারণা হবে না তুই তো আর সত্যি সত্যি বিয়ে করবি না।আর রায়হানের বাসায় সবাই জানে যে তোর বিয়ে হয়েগেছে শুধু রায়হান ছাড়া।আর তোর চাচ্চুকে কিছু বুঝাতে পারবো না প্লিজ বাবা আমার সাহায্য কর।
রক্তিম বললো,
~আজ না জানুক কাল তো জেনে যাবে।তখন কী করবে?
রাহাত ছেলের কথায় বললো,
~তোকে আমার কসম তুই এই অভিনয় করবি।আর শোন তোর বিয়ের খবর তো আর কেউই জানে না কোনো সমস্যা হবে না।
রক্তিম বাবাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু তার বাবা বুঝার চেষ্টা করলো না পরিশেষে বাবার কাছে হার মেনে রক্তিম রায়হানের জ্ঞান ফিরে আসার পর রাহির হাতে আংটি পরিয়ে দিলো।আর সামিল হয়ে গেলো এই প্রতারণার খেলায়

,,,,
,,,,,
বর্তমানে রক্তিম বসে আছে রিক্সায় তার নিজেকে ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে।বাবার কথায় সে এতো বড় ভুল করে ফেললো।বুক চিরে কান্না আসছে অধরাকে হারানোর ভয় হচ্ছে কোনো ক্রমেই সে অধরাকে হারাতে পারবে না।রক্তিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ১১টা।সে ডাইরেক্ট চলে গেলো অধরার বাসায় কলিংবেল বাজাতেই আরিফ দরজা খুললো রক্তিমকে দেখে বললো,
~দুলাভাই কোথায় ছিলেন?আপু আপনার অপেক্ষা করছিল একটু আগে রুমে চলে গেলো।
রক্তিম মৃদ্যু হেসে বললো,
~একটু কাজ ছিলো।
আরিফ বললো,
~খাবার খাবেন না?
রক্তিম বললো,
~খেয়ে এসেছি।
বলেই আর অপেক্ষা না করে সে চলে গেলো রুমে।তার এখন অধরাকে প্রয়োজন সোজা রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো অধরা ঘুমিয়ে আছে সে পা টিপে টিপে অধরার কাছে গেলো।
তারপর অধরার চুল গুলো সরিয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে তার পুরো শরীরের ভার অধরার উপর ছেড়ে দিলো।
রক্তিমের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমার ঘুম চলে এসেছিল হঠাৎ আমার ঘাড়ে কারো ছোয়া পেয়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো শরীরের উপর ভারী কিছু অনুভব হতেই আমি চোখ পিটপিট করে খুললাম আর দেখলাম রক্তিম আমার ঘাড়ে মুখ গুজে আমাকে চেপে রেখেছেন।তাকে দেখে আমি বললাম,
~আপনি কখন আসলেন?
রক্তিম কোনো কথা না বলে আমার ঘাড়ে একের পর এক ছোয়া দিতে ব্যস্ত রক্তিম আমার ঘাড় ছেড়ে সারা মুখে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিতে লাগলো আমি তাকে সরানোর চেষ্টা করলাম এতে সে আরো গভীর ভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমার এখন কান্না আসছে রক্তিম এমন করছে কেন? উম্মাদের মতো ব্যবহার কেন করছেন?
আমি কেঁদে দিলাম আমার কান্নার আওয়াজ তার কানে পৌছাতেই রক্তিম মুখ উঠিয়ে বললো,
~অধরা তোমাকে আমার প্রয়োজন।অনেক ভালোবাসি তোমায় কোনোদিন ছেড়ে যেও না আমাকে মরে যাবো।
কথা শেষ করেই সে আমাকে ছেড়ে দিলো আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছি রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো আর বললো,
~আমি তোমার বর তোমাকে ছোয়ার অধিকার আছে।তাই কান্না করে লাভ নাই আমার ছোয়া সহ্য না হলেও সহ্য করতে হবে।
বলেই চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো আর আমি ভাবতে লাগলাম রক্তিম এমন করছে কেন সে তো এমন মানুষ না এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখে ঘুম এসে পরলো।
সকালে ঘুম ভাঙ্গে মোবাইলের আওয়াজে আমি চোখ খুলে দেখি রক্তিমের বাহুডরে আমি বন্ধি।কিছুক্ষন রক্তিমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমার ধ্যান ভাঙ্গলো ফোনের রিংটনে বিছানার কর্নারে চোখ পরতেই দেখি রক্তিমের ফোন বাজছে।নিজেকে রক্তিম থেকে ছাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলাম আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।আমি ভাবছি রিসিভ করাটা কি ঠিক হবে হঠাৎ আমার হাতে টান পরলো যার ফলে রক্তিমের বুকে আমার স্থান হলো।রক্তিম আমার কোমড় জড়িয়ে বললো,
~কার পারমিশনে তুমি আমার বুক থেকে উঠেছো?
রক্তিমের করা প্রশ্নের জবাব যেই না আমি দিতে যাবো আবারো ফোন বেজে উঠলো।আমার হাতে রক্তিম ফোন দেখে বললো,
~কে ফোন দিয়েছে?
আমি নিচুস্বরে বললাম,
~আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
রক্তিম আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে একহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রেখে সেই নাম্বারে ফোন করলো।
ফোন রিসিভ হতেই রক্তিম বললেন,
~হ্যালো,কে বলছেন?
অপরপাশ থেকে কী কথা বললো তা জানি না কিন্তু রক্তিমের মুখ গম্ভীর হয়ে আসছে সে শুধু এতটুকু বললো,
~আজ বাসায় ফাংশন আছে আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ের তারিখ ঠিক হবে।আজ আসতে পারবো না।
এতটুকু বলেই ফোন কেটে দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ছেড়ে আমাকে বললেন,
~অধরা,ব্রেকফাস্ট করেই বাসায় যেতে হবে।
আমি শুধু মাথা উপর নিচ করলাম

চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-০৯

0

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৯
,,,,,,,,
,,,,,,,
তার স্পর্শ পেয়েই আমি বুঝে গেলাম যে কে এই ব্যক্তি আমি সেই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
~বাসায় এসেই আপনার অসভ্যতামি শুরু করে দিলেন।
সেই ব্যক্তিটি বললো,
~সারাদিন বউকে কাছে পায়নি এখন পেয়েছি তাই জড়িয়ে ধরেছি কোনো সমস্যা আছে।
আমি বললাম,
~রক্তিম ফ্রেশ হয়ে আসেন খাবার সার্ভ করছি।
হ্যাঁ এই ব্যক্তিটি আর কেউ নয় রক্তিম।সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~তুমি খাবার রেডি করো আমি আসছি।
বলেই সে রুমে চলে গেলো আর আমি নিচে রান্নাঘরে চলে আসলাম খাবার নিয়ে উপরে রুমে চলে আসলাম টি-টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে রাখলাম। একটুপর রক্তিম ওয়াশরুম থেকে বের হলেন আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
~তুমি খেয়েছো?
আমি বললাম,
~না।
সে বললো,
~আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে
আমি বললাম,
~এতো বকবক না করে খেতে আসেন?
রক্তিম শয়তানি হেসে বললো,
~তোমাকে খেতে আসবো?
আমি এবার রেগে বললাম,
~আপনি আবার ফাজলামো শুরু করেছেন।
রক্তিম হেসে বললো,
~আচ্ছা আর ফাজলামো করবো না।
বলেই সে খেতে বসে পরলো আমিও তার পাশেই বসে পরলাম।খাওয়া শেষ করে আমি সব গুছিয়ে উপরে এসে দেখলাম রক্তিম বিছানায় বসে তার মোবাইলে গেম খেলছে।আমি দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলে বেনুনি বাধতে শুরু করলাম হঠাৎ আয়নায় চোখ পরতে দেখি রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসছে।আমি তার হাসি দেখে ভ্রুকুচকে তার দিকে ঘুরে কোমড়ে হাত দিয়ে বললাম,
~হাসছেন কেন?এখানে কী কমেডি সীন হচ্ছে?
রক্তিমের মুখের হাসি আরো চওরা হলো সে বললো,
~তোমাকে এভাবে জ্বালাতে আমার খুব ভালো লাগে।
আমি তার কথায় অবাক হয়ে বললাম,
~আপনি কী পাগল?
সে মুচকি হেসে বললো,
~হ্যাঁ।আর তোমাকে রাগলে অনেক সুন্দর দেখা যায়
এই মানুষটি আসলেই পাগল রাগলে বলে কাউকে সুন্দর দেখা যায়।আমি তার সাথে কথা না বাড়িয়ে চুল ঠিক করে বিছানার এক পাশে বসে পরলাম। আমি বসতেই রক্তিম আমার কোলে মাথা রেখে বলে,
~তোমার কী কোনো অসুবিধা হয়েছে বাসায় একা থাকতে?
আমি বললাম,
~একা কোথায় ছিলাম?কতো মানুষ ছিল বাসায়।
রক্তিম বিরক্তি নিয়ে বললো,
~এই বাসায় আমি আর দাদী ছাড়া কেউ তোমাকে পছন্দ করে না তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম যে আমার অনুপস্থিতে তোমার কী কোনো সমস্যা হয়েছে?
আমি বললাম,
~না কোনো কিছু হয়নি।আর কিছু হলেও আমি সব কিছু সামলাতে পারবো।
রক্তিম বললো,
~হ্যাঁ জানি,আপনি বড়ো সাহসী নারী।
আমি বললাম,
~রক্তিম একটা প্রশ্ন করি?
রক্তিম বললো,
~করো।
আমি বললাম,
~২ বছর আগে কাউকে কিছু না বলে আপনি দেশান্তর কেন হলেন?
এই প্রশ্নটা শুনার সাথে সাথে রক্তিমের মুখে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সে কিছু বলছেনা শুধু ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে হয়তো নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আমি তার কোনো জবাব না পেয়ে বললাম,
~কী হয়েছে রক্তিম?কথা বলছেন না কেন?আমার প্রশ্নের জবাব কী আপনি দিবেন না।
আমার কথা শেষ হওয়ার পরই রক্তিম আমার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~অধরা,ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
বলেই যেই সে শুয়ে পরতে নিবে তখনই আমি বললাম,
~প্রশ্নটা এড়িয়ে যাচ্ছেন?একটা সামান্য প্রশ্নের কোনো জবাব নেই আপনার কাছে?

,,,,,
,,,,,,
আমার৷ কথায় রক্তিম আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো।তার চোখ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম তার চোখ দুটি অসম্ভব লাল হাত দুটো মুঠ করে সে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে পরলো।আর বললো,
~রক্তিম রায়জাদার রাগ সম্পর্কে তোমার ধারনা নেই অধরা।তাই একই প্রশ্ন বারবার করে আমার রাগ বাড়িয়ে দিয়ো না।তোমার জন্য ভালো হবে না।
তার কথায় আমি বিছানা ছেড়ে নেমে তার মুখোমুখি দাড়ালাম তারপর তাকে বললাম,
~রক্তিম,আমি আপনাকে কোনো ভুল কিছু জিজ্ঞেস করেনি।আপনি চাইলেই জবাব দিতে পারতেন হয়তো কোনো রহস্য আছে যার কারণে আপনি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে না।
আমার এ কথা শুনে রক্তিমের রাগ আরো বেড়ে গেলো।সে আমার দুবাহু অনেক জোড়ে চেপে ধরে বললেন,
~এতো জানতে ইচ্ছে করছে কেন তোমার?আমি ২ বছর আগে কী করেছি আমি তো কোনোদিন জানতে চাইনি ২বছর আগে রাতের সাথে তোমার কী কী হয়েছিল?
তার কথায় আমার বুকটা ছেদ করে উঠলো সে কী বলছে?সে তো সবই জানে আমার আর রাতেই মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল। আমার চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে বললাম,
~রক্তিম রায়জাদা,আমার আর রাতের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল তা আপনি জানতেন তবুও আপনি বলছেন তার সাথে আমার কী কী হয়েছে?আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে দেই আমি সারা নই যে নিজের ভালোবাসার কাছে নিজের আত্মসম্মানকে বিক্রি করে দিবো।
এতটুকু বলে আমি একটু নিশ্বাস নিলাম রক্তিম কিছু বলতে যাবে তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
~আমিতো আপনাকে বলিনি যে আপনি আমাকে বিয়ে করুন উল্টো আপনিই আমার বাসায় গিয়েছিলেন।আরে আমার তো অনেক প্রশ্ন আছে করার কিন্তু আমি করিনা কারণ একটা সম্পর্ক গড়তে সময় লাগে আর আমার নিজেরও সময়ের প্রয়োজন।
আমার কথা শেষ হতেই রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~সরি,আমি এরকম করে বলতে চাইনি।
আমি তাকে বললাম,
~কোনো ব্যাপার না আপনার পুরো পরিবার তো সারাদিন বলতেই থাকে আজ থেকে আপনিও বলা শুরু করলেন।No problem ভুলটা আমারই আমাকে এখন ছাড়েন ঘুম আসছে।
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিলেন আমি ধীর পায়ে বিছানার অপরপাশে মুখ করে শুয়ে পরলাম।চোখের পানি গুলো আমার গাল বেয়ে পরতে লাগলো।
রক্তিম এখন পর্যন্ত সেখানেই দাড়িয়ে আছে।সে অধরাকে এভাবে বলতে চাইনি কিন্তু রাগের মাথায় মুখ থেকে বের হয়ে গেছে।২ বছর আগে তার দেশ ছেড়ে যাওয়ার কারণটা অধরাকে এখন জানানো যাবে না সে জানে অধরা এতে কষ্ট পাবে কিন্তু করার কিছু নেই সুযোগ বুঝে তাকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে।রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অধরার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো তারপর অধরাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো,
~বউ রাগ করেছে কালকেই এই রাগ ভাঙ্গাতে হবে আর আমি জানি এ রাগ কেমন করে ভাঙ্গাতে হবে।
এসব ভেবেই রক্তিম মুচকি হেসে অধরাী গালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

,,,,,,,
,,,,,,,
ফজরের আযান কানে আসতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।আমি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলাম রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।তাকে দেখেই কাল রাতের সব কথা মনে পরে গেলো সব অভিমান আমার মনে এসে জড়ো হতে লাগলো।আমি রক্তিমকে ধাক্কা মারা শুরু করলাম তখনই রক্তিম বিরক্ত হয়ে বললো,
~কী হয়েছে?এমন করছো কেন।
আমি বললাম,
~আমাকে ছাড়ুন নামাজ পরবো।
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিলো আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে একবারে বের হলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি রক্তিম বিছানায় বসে আছে আমাকে দেখে সে মুচকি হাসি দিলো আমি তার থেকে মুখ সরিয়ে জায়নামায নিয়ে নামাজে দাড়ালাম।
রক্তিম অধরার এমন ব্যবহার দেখে অবাক হলো না সে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো। সে নিজেও ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসলো তারপর পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে টুপি মাথায় রুম থেকে বের হয়ে আসলো মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
আমি নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাজ করে ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখলাম রক্তিম রুমের কোথাও নেই হয়তো মসজিদে চলে গেছেন।আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম মাথাটা ব্যাথা করছে।চোখ বন্ধ করতেই ঘুম এসে জড়ো হলো চোখে।
রক্তিম নামাজ শেষ করে বাসায় এসে রুমে চলে আসলো।রুমে এসেই দেখলো অধরা ঘুমিয়ে আছে রক্তিম মনে মনে বললো,
~অধরাতো নামাজের পর বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে আজ শরীর খারাপ করলো নাতো?
রক্তিম চিন্তিত হয়ে অধরার মাথায় হাত রাখলো না জ্বর তো নেই হয়তো এভাবেই শুয়ে আছে।
মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে আমি চোখ খুলে দেখি রক্তিম আমার মাথায় হাত দিয়ে রেখেছে আমাকে চোখ খুলতে দেখেই সে বললো,
~তোমার কী শরীর ভালো না?
আমি বললাম,
~আমার কিছু হয়নি।
রক্তিম বললো,
~রাগ করে আছো?
আমি কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবো তখনই রক্তিম আমাকে বসিয়ে দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে বললো,
~আমি রাগের মাথায় কথাটি বলে দিয়েছি।সরি।
আমি বললাম,
~ছাড়েন।নিচে যাবো
রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~আজ আমার শশুর বাড়ি যাবো।তো রেডি হয়ে থেকো।
আমি বললাম,
~আপনার সাথে কোথাও যাবো না।
রক্তিম বললো,
~তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবো।আমার কোনো প্রবলেম নেই।
আমি বুঝতে পেরেছি এই পাগলের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই আমি বললাম,
~কখন যাবেন?
সে বললো,
~এখনই চলো।
আমি বললাম,
~মজা করবেন না।
রক্তিম বললো,
~১১টায় রেডি থেকো।
সকালে সবাই নাস্তা টেবিলেই করলো কিন্তু রাতকে কোথাও দেখা গেলো না।আমি নাস্তা শেষে সব গুছিয়ে রুমে যাবো তখনই সাহারা রায়জাদা আমাকে বললো,
~রাত আর সারার বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসবে আগামীকাল। তুই কোনো অঘটন ঘটাবি না।
আমি বললাম,
~আপনার ছেলে রাতকে গিয়ে বলেন যে তার কোনো এক্স গার্লফ্রেন্ড দরজার সামনে এসে না দাড়িয়ে পরে।
বলেই রুমে চলে আসলাম রেডি হতে হবে। রক্তিম বাহিরে গেছে তখনই বিছানার দিকে চোখ পরতেই দেখলাম সেখানে একটা শাড়ি রাখা আর একটা ছোট চিরকুট আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে চিরকুটটা নিয়ে পড়তে শুরু করলাম সেখানে লেখা,
~আমার প্রিয় মানুষটির জন্য একটি সুন্দর উপহার।
শাড়িটা হাতে নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে শাড়িটা ঠিক মতো পরে বাহিরে আসলাম।

,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,
ঠিক ১০টায় রক্তিম চলে আসলো আমি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছি।রক্তিম আমাকে দেখে বললো,
~তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।অধরা
আমি তার কথায় লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললাম। সে আমার কাছে হাটু গেড়ে বসে আমার হাত ধরে বললো,
~কাল রাতে আমি ভুল করেছি।ভুল নয় অন্যায় করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও।
তার কথায় আমি বললাম,
~এরপর থেকে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করবেন।রাগের মাথায় মুখ দিয়ে অনেক কথা বের হয়ে যায় যা আমরা বলতে চাই না।
রক্তিম বললো,
~চেষ্টা করবো।আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি একটু পর বের হবো
ঠিক ১১টায় আমরা বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
রক্তিম আজ গাড়ি নেইনি আমরা আজ রিক্সা দিয়ে যাবো।রক্তিমের হাতে অনেক শপিং ব্যাগ আমি রিক্সায় উঠে জিজ্ঞেস করলাম,
~শশুর বাড়ির জন্য এতো কিছু।
রক্তিম হেসে বললো,
~আমার একটা মাত্র শশুর বাড়ি বলে কথা।
তার কথায় আমি হো হো করে হেসে উঠলাম রক্তিম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~তোমার মুখের হাসির শব্দ বড্ড বেশি ভালোবাসি।
রক্তিমের কথায় আমি লজ্জা পেয়ে অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।সে মুচকি হেসে আমার একহাত তার হাতে আবদ্ধ করলো।
কিছুক্ষন পর বাবার বাসায় পৌছে গেলাম। আমি রিক্সা থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে গেলাম মা দরজা খুলে আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে রক্তিম পিছনে এসে দাড়িয়ে মাকে সালাম দিলো।মা সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
~ভিতরে আসো তোমরা।
ভিতরে ঢুকে আমি আরো বেশি খুশি হয়ে গেলাম কারণ

চলবে।।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-০৮

0

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৮
,,,,,
,,,,,
আমি সেখানে গিয়ে দেখি রাত একটা মেয়ের সাথে বসে আছে রাতের হাত সেই মেয়ের কোমড়ে রাখা।এই দৃশ্য দেখে আমার চোখে আপনাআপনি পানি চলে আসে সেই মেয়েটি আর কেউ নয় সারা ছিল।আমি আড়ালে দাড়িয়েই তাদের সব কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করছি রাত সারার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর সারাকে তার কাছে টেনে নিচ্ছে।আমি আর সইতে না পেরে সেখান থেকে চলে আসি বাসায়।বাসায় এসে কাউকে কিছু না বলে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে থাকি তখনই আমার ফোন বেজে উঠে আমি কান্না বন্ধ করে ফোন হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে আমি ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে নারী কন্ঠ কেউ বলে উঠে,
~অধরা,কেমন আছো?
আমি বললাম,
~কে আপনি?
সেই নারী উচ্চস্বরে হেসে বললো,
~আরে তোমার দুঃখের জীবনের শুরুটাতো আমার দ্বারাই হলো আর আমাকে চিনতে পারছো না।
আমি এবার রেগে গিয়ে বললাম,
~কী বলতে চান সরাসরি বলেন।
সেই নারী বললো,
~আমি রাতের মা সাহারা রায়জাদা।
তার নাম শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো রাতের মা এসব করছে আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আন্টি আপনি এগুলো কেন করছেন?
রাতের মা বললো,
~তুমি কী মনে করছো?তোমার মতো নিম্নবংশের মেয়ে হবে আমার ছেলের বউ কখনো না।
তার কথা শুনে রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।আমি বললাম,
~আন্টি এসব কী বলছেন?আমি আর রাত তো দুজন দুজনাকে ভালোবাসি।
রাতের মা তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন,
~তুমি হয়তো ভালোবাসো। আমার ছেলে তোমাকে আর ভালোবাসে না সে এখন সারাকে ভালোবাসে।
রাতের মায়ের কথায় আমি তাকে বললাম,
~এসব আপনি করেছেন তাইতো।
সে একটু হেসে বললো,
~জ্বী।
আমি বললাম,
~রাতকে আমি সব বলে দিবো আপনি যে কতো নিচু মনের মানুষ তা আমি আজ বুঝলাম।
রাতের মা বললো,
~তুমি বলবে আর আমার ছেলে বিশ্বাস করবে। আমার ছেলে সে কখনো তার মায়ের বিরুদ্ধে যাবে না তবুও যদি তুমি বলতে চাও তাহলে আজ রাতে আমাদের বাসায় এসে রাতকে সব বলে দিও।
আমি বললাম,
~অবশ্যই আপনার মতো খারাপ ব্যক্তির কথা তাকে জানাতেই হবে।
বলেই ফোন রেখে দিলাম আমি রাতের বাসায় যাবো আর আজ রাতেই যাবো তার মায়ের সব কথা তাকে বলবো।তারপরও যদি সে বলে তার ভালোবাসা সারা তাহলে আমি সরে যাবো তার জীবন থেকে।একথা ভেবে চোখ মুছে নিলাম সেই রাতটা আমার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার রাত ছিল।

,,,,,,
,,,,,,
সেই রাতে যখন আমি বাসা থেকে বের হতে যাবো তখনই বাবা বললেন,
~তুই এতো রাতে কোথায় যাস?
আমি বাবার প্রশ্নে অনেক কষ্টে কান্না লুকিয়ে বললাম,
~বাবা একটু কাজ আছে।
বাবা বললো,
~আমি তোকে একা কোথাও যেতে দিবো না।
আমি কান্নামাখা কন্ঠে বললাম,
~বাবা প্লিজ যেতে দেও।
বাবা বললো,
~তুই কান্না করছিস কেন?
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলান না ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম।মা আর ভাইয়েরা আমার আওয়াজ শুনে চলে আসে।মা এসেই আমাকে ধরে বলে,
~কী হয়েছে?মা তোর
আমি কান্না থামিয়ে ভাইদের উদ্দেশ্যে বললাম,
~তোরা রুমে যা।
ভাইরা বললো,
~কী হয়েছে আপী তোমার?
আমি বললাম,
~কিছু না।তোরা রুমে যা
ভাইয়েরা চলে গেলো।তারা চলে যেতেই আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম।মা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছে।আমি কান্না থামিয়ে মা-বাবাকে সব বললাম মা-বাবা আমার কথা শুনে বললেন তারাও আমার সাথে যাবে আমি তাদের অনেক বুঝালাম কিন্তু শেষমেষ তাদের জেদের কাছে আমি হার মানলাম।
মা-বাবাকে নিয়ে চলে গেলাম রায়জাদা ভিলায়।সেখানে গিয়ে দেখলাম পুরো বাসা সুন্দর করে সাজানো আর মানুষে গিজগিজ করছে আমি বুঝতে পারলাম এখানে পার্টি চলছে।বাবা-মা আর আমি বাসার ভিতরে ডুকলাম রাতকে খুজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও তাকে দেখতে পেলাম না।তখনই একজন সার্ভেন্টকল জিজ্ঞেস করলাম,
~রাত কোথায়?
সেই সার্ভেন্ট বললো,
~রাত স্যার একটু পর আসবে।আপনি কে?
আমি বললাম,
~কেউ না।
রাতের অপেক্ষা করতে লাগলাম কিছুক্ষন পর রাত চলে আসলে সাথে সারাও আছে।তাকে দেখেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমি তার সামনে দৌড়ে চলে গেলাম। রাত আমাকে দেখেই অবাক হয়ে বললো,
~তুমি এখানে কী করছো?
আমি বললাম,
~রাত আমি তোমাকে কিছুকথা বলে চলে যাবো।
রাত বললো,
~অধরা শুনো আমি আর এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। সারাকে আমি ভালোবাসি আমার মনে হয় এখন আমাদের move on করা উচিত।
রাতের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছিল বুকে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছিল আমি নিজেকে সামলিয়ে বললাম,
~রাত তোমার মা আমাকে কখনো মেনে নিতে চাইনি তাইতো তোমাকে এই মেয়ের সাথে লেলিয়ে দিয়েছে।আমাকে সে সবসময় নিচু ভেবে গেছে প্লিজ রাত বিশ্বাস করো।
কথা শেষ করতেই আমার গালে একটা থাপ্পড় পড়ে।আমি সামনে তাকিয়ে দেখি রাত আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে।আমি অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম মা-বাবা আমাকে পিছন থেকে ধরে ফেলে।আশেপাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে রাত আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বললো,
~বেয়াদব মেয়ে।আমার মায়ের বেপারে তুই এসব কীভাবে বললি?আমার মা একদম ঠিক বলেছিল তুই ব্যাহায়া আর তোর পুরো পরিবার খারাপ।তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
বাবা রাতের কথা শুনে বললো,
~এই ছেলে মুখের জবান ঠিক করে কথা বলো।
রাত বাবার কথার জবাব না দিয়ে গার্ডদের বললো,
~এই মূহুর্তে এই কীট গুলোকে বাসা থেকে বের করো।
আমি চোখের পানি মুছে বললাম,
~থাক রাত রায়জাদা আমরা আমাদের রাস্তা চিনি আপনার এতো কষ্ট করতে হবে না।ভালো থাকবেন
বলেই বাবা-মাকে নিয়ে চলে আসি তাদের বাসার বাহিরে।সেদিন বাবার চোখেও পানি ছিলো আমি সেদিনের কথা ভাবলে এখনও বুকে ব্যাথা করল এজন্য নয় যে রাত আমাকে ধোঁকা দিয়েছে বরং বাবার আর মায়ের অপমান সেদিন সহ্য করতে পারিনি। সাহারা রায়জাদা শুধু এতটুকুতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি আমার বাবার ব্যবসাও সে বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু বাবা ধীরে ধীরে আবার ব্যবসা শুরু করে।

,,,,,,
,,,,,,
বর্তমান
অতীতের কথা ভাবতেই চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরলো।
সেদিনের অপমান আমি কোনোদিন ভুলবো না। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আমি পিটপিট করে চোখ খুললাম আর দেখলাম রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তাকে একদম ছোট বাচ্চার মতো লাগছে ঠোঁট উল্টিয়ে সে ঘুমিয়ে আছে।আমি মুচকি হেসে যখন রক্তিমের কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু কীসের যেন জড়তা কাজ করছে।আমি রক্তিমকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে পেরেছি কিন্তু স্বামী হিসেবে মানতে হয়তো একটু সময় লাগবে।আমার মনে রক্তিমের জন্য হয়তো সেইরকম কোনো অনুভূতি নেই কিন্তু হ্যাঁ তার প্রতি আমার যেসব দায়িত্ব আছে তা অবশ্যই পালন করবো।তাকে আমার মনে ধীরে ধীরে জায়গা দিতে হবে কারণ সে আমার স্বামী।
সকালে রক্তিমের ঘুম ভাঙ্গতেই সে নিজেকে বিছানায় একা আবিষ্কার করলো।আশেপাশে কোথাও অধরাকে খুজে না পেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে চেক করলো সেখানেও অধরা নেই ওয়াশরুম খালি সে মনে মনে বললো,
~এই মেয়েটা গেলো কথায়।
রক্তিম ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায় কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তার শার্ট,প্যান্ট,ঘড়ি ওয়ালেট সব বিছানায় সাজিয়ে রাখা।এগুলো এভাবে সাজিয়ে রাখা দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে রেডি হতে শুরু করলো।
সকালে তাড়াতাড়ি উঠে নামাজ পরে নিচে এসে সবার জন্য নাস্তা রেডি করলাম তারপর দাদীমার রুমে গিয়ে তার সাথে চা খেয়ে আবার উপরে আসি এসে দেখি রক্তিম ওয়াশরুমে তার সব প্রয়োজনীয় জিনিস বিছানায় সাজিয়ে রেখে আবার নিচে এসে সব নাস্তা টেবিলে সাজালাম। সার্ভেন্টরা আমার সাহায্য করলো

,,,,,,,
,,,,,,
রক্তিম নিচে এসে দেখে অধরা নাস্তা টেবিলে রাখছে।সে মুচকি হেসে অধরার পিছে দাড়িয়ে পরে অধরা সামনে ঘুরতেই রক্তিমের সাথে ধাক্কা লাগে। রক্তিম তার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে।অধরা চোখ বড় বড় করে ফেলে তা দেখে রক্তিম বললো,
~এমন বড় করছো কেন চোখ? চোখ বের হয়ে যাবে তো।
আমি নাস্তা টেবিলে রেখে যেইনা পিছে ঘুরবো রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে আমি তার দিকে রাগী চোখে বলি,
~কী করছেন আপনি?এখনই সবাই এসে পরবে।
রক্তিম ভাবলেশহীনভাবে বললো,
~তো কী হয়েছে?আমি তোমার বর তোমাকে জড়িয়ে ধরতেই পারি এতে কী সমস্যা।
আমি তার দিকে রাগে কটমট করে তাকালাম আর বললাম,
~আপনি তো বড্ড অসভ্য।
রক্তিম মুখ টিপে হাসলো তারপর আমাকে আরো কাছে টেনে বললো,
~তোমার জন্যই তো আমি অসভ্য।
আমি ভেংচি কেটে বললাম,
~আপনি শুধু অসভ্য না ফাজিলও।
রক্তিম কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠলো,
~ডাইনিং রুমকেও তোমরা বেডরুম বানিয়ে নিয়েছো।
সেই ব্যক্তির কথায় রক্তিম আমাকে ছেড়ে দেয় তারপর আমার সাথে দাড়িয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দাড়িয়ে আছে।তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক রেগে আছে।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~রাত, অধরা আমার বউ ওর সাথে কোথায় কীভাবে থাকতে হবে তা আমাকে না বললেই খুশী হবো।
রাত রেগে বললো,
~ভাইয়া তুমি তো এমন ছিলেনা।
রক্তিম বললো,
~যে যেমন তার সাথে ব্যবহারও তেমন করতে হয়।
এই বলেই রক্তিম চেয়ারে বসে পরলো তারপর আমাকে বললো,
~অধরা, নাস্তা দাও আমার অনেক জরুরি কাজ আছে।
আমি রক্তিমের কথা শুনে তার প্লেটে খাবার তুলে দিলাম।রাতও এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে পরলো প্লেট হাতে নিয়ে নিজের খাবার নিজেই নিলো।রক্তিমের খাবার শেষ করলো হাত ধুয়ে আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে হাত আর মুখ মুছে বললো,
~অধরা, আমার আজকে আসতে একটু দেরি হবে। তুমি টেনশন করো না।
আমি বললাম,
~আজ মায়ের বাসায় যেতে চেয়েছিলাম।আমার অনেক জিনিসপত্র বাসায় রয়ে গেছে।
রক্তিম বললো,
~আমি কাউকে দিয়ে আনিয়ে দিবো।এখন আমি আসি
বলেই আমার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে সে চলে গেলো।

,,,,,,
,,,,,,,
রক্তিমকে বিদায় দিয়ে নিজের রুমে যেতে নিবো তখনই রাত বলে উঠলো,
~ভালোই চলছে বিয়ের জীবন।
আমি তার কথায় মুচকি হেসে বললাম,
~অনেক ভালো।
রাত বললো,
~ভালো তো আমাকে বাসো সংসার আমার বড় ভাইয়ের সাথে করছো।বেশ ভালো।
এবার আর সহ্য করতে পারলাম না রাতের সামনে এগিয়ে গিয়ে তাকে কষিয়ে থাপ্পর মেরে বললাম,
~আমি আপনার ভাবি হই। so give me the respect.
রাত গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।সেইসময় সাহারা রায়জাদা সেখানে উপস্থিত হলো রাতকে এভাবে দেখে সে জিজ্ঞেস করলো,
~কী হয়েছে তোর এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন?
রাত কিছু না বলে সেখান থেকে হনহন করে চলে যায়।
সাহারা রায়জাদা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে বললো,
~তুই কী করেছিস?
আমি বললাম,
~জবাব দিয়েছি।
বলেই চলে আসলাম রুমে সারাদিন এভাবেই কেটে গেলো রান্না করলাম আর দাদীর সাথে কথা বললাম।
রাত ৯.৩০ এখন পর্যন্ত রক্তিম বাসায় আসেনি তাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি হঠাৎ কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমি তার সর্প্শ পেয়ে

চলবে।।।।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-০৭

0

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৭
,,,,,
,,,,,
আমি তাকিয়ে দেখলাম একজন যুবক চোখে সানগ্লাস পরে আমার সামনে বসে আছে।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে।আমি তাদের দেখে আরো ঘাবরে যাই।সেই যুবকটি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
~এখানে কী সিনেমা চলছে যে সবাই তাকিয়ে আছেন?যার যার কাজে চলে যান।
যুবকটির কথায় অনেকে মাথানিচু করে চলে যায় আবার অনেকে বিড়বিড় করতে করতে নিজ নিজ কাজে চলে যায়।সবাই চলে যাওয়ার পর সে যুবকটি আমাকে বললো,
~আপনার কী বেশি লেগেছে?
আমি তাকে বললাম,
~না।
সে বললো,
~আপনাকে আমি হাসপাতাল নিয়ে যাবো। চলেন আমার সাথে
তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি বললাম,
~আমাকে প্লিজ আমার ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিবেন।আমার পরীক্ষা মিস হয়ে যাবে
সে বললো,
~অবশ্যই।আপনার ভার্সিটি কোথায়?
আমি বললাম,
~এখান থেকে মাত্র ২০ মিনিট লাগবে।
সে যুবকটি হাত বাড়িয়ে বললো,
~আমার হাত ধরে উঠে দাড়ান।
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে তার হাত ধরে উঠে দাড়ালাম সে আমাকে খুবই যত্ন সহকারে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।তারপর তিনি গাড়িতে উঠে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলেন।সে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
~আপনার ভার্সিটির নাম কী?
আমি বললাম,
~ ***** ভার্সিটি।
সে একটু হেসে বললো,
~আমিও সেই ভার্সিটিরই student.আমার নাম রাত রায়জাদা।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~আমার নাম অধরা।
রাত বললো,
~কোন ইয়ার?
আমি বললাম,
~ ১ম বর্ষ।
রাত বললো,
~আমি ৩য় বর্ষ।আর হ্যাঁ আমি সিনিয়র দেখে ভাইয়া বলবে না আমার এই ডাকটা ভালো লাগে না।
তার কথায় মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকালাম রাত আবার বললো,
~সরি আমার জন্য তোমার এতো কষ্ট পেতে হলো।
আমি বললাম,
~আপনার জন্য না নিজের অসাবধানতার জন্য।
কিছুক্ষন পর আমরা ভার্সিটি পৌছে গেলাম আমি রাতকে ধন্যবাদ বলেই দৌড়ে ক্লাস রুমে চলে গেলাম।

,,,,,
,,,,,
সেদিনের পরীক্ষাটা মোটামোটি ভালো হয়েছে।আমার হাত থেকে এখনো রক্ত পরছিল হঠাৎ কেউ আমার হাতে রুমাল চেপে ধরে আমি সেই ব্যক্তির মুখের তাকাতেই বললো,
~এখন তো পরীক্ষা শেষ চলো ডাক্তারের কাছে।
আমি রাতের কথা শুনে বললাম,
~ডাক্তারের প্রয়োজন নেই।একটা ব্যান্ডেজ লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে।
রাত বললো,
~তাহলে চলো সামনেই ফার্মেসি আছে।
আমি তার কথায় রাজি হয়ে ফার্মেসিতে চলে গেলাম ব্যান্ডেজ করে সেদিন আমরা যে যার মতো বাসায় ফিরে আসলাম এরপর অনেকদিন চলে গেলো আমার রাতের সাথে কোনো দেখা হয়নি। আমার আর রাতের আবার দেখা হয় ভার্সিটির এক প্রোগ্রামে।সেদিন আমি নীল রঙ্গের শাড়ি পড়েছিলাম আর আমার বান্ধবীদের সাথে অডিটোরিয়ামের এক কর্ণারে বসে কথা বলছিলাম।তখনই একটা ছেলে এসে আমাকক উদ্দেশ্য করে বললো,
~তোমার নাম কী অধরা?
আমি বললাম,
~জ্বী।
সেই ছেলেটি বললো,
~তোমাকে রাত ডেকেছে।
আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম
~আমাকে কেন ডাকছেন তিনি?
সেই ছেলেটি বললো,
~যাওয়ার পরই বুঝতে পারবেন।রাত ৩য় তলার ৩০১ নাম্বার রুমে আছে।
আমি সেই ছেলেটিকে বললাম,
~আমি একা কোথাও যাবো না আমার ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে যাবো।
সেই ছেলেটি বললো,
~কোনো প্রবলেম নেই।
আমি আমার ফ্রেন্ড লিমাকে সেদিন আমার সাথে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম ৩য় তলার ৩০১ নাম্বার রুমে।
আমি রুমে ডুকেই দেখেছিলাম রাত কালো রঙের পান্জবী পরে দাড়িয়ে আছে হাতে একটা বক্স নিয়ে।সে আমাকে দেখেই বললো,
~অধরা তুমি কেমন আছো?
আমি বললাম,
~ভালো।
সে মুচকি হেসে বক্সটা আগে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
~এটি তোমার জন্য আমি যে তোমাকে সেদিন কষ্ট দিয়েছিলাম এই গিফটাই আমার তরফ থেকে সরি হিসেবে গ্রহণ করো।
আমি সাথে সাথে বললাম,
~এটা আমি নিতে পারবো না।
রাত বললো,
~প্লিজ নিয়ে নেও।যদি তুমি এটা না নেও তাহলে ভাববো তুমি আমার সরি গ্রহন করোনি।
সেদিন আমি বাধ্য হয়ে সেই গিফটটা নিয়ে নেই।রাত এতে অনেক খুশি হয়েছিল তারপর আমি আবার অনুষ্ঠানে চলে যাই। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আমি বাসায় এসে ওই বক্স টা খুলে দেখি অনেক গুলো রেশমি চুরি।সেই চুরি গুলো অনেক সুন্দর ছিল এভাবেই প্রতিদিন আমার সাথে রাতের দেখা হতো কথা বলতাম।সে আমার অনেক খেয়াল রাখতো আমাদের বন্ধুত্বটা অনেক গভীর হয়ে উঠে।আমিও রাতের প্রতি অন্যরকম কিছু অনুভব করতে শুরু করলাম কিন্তু নিজের অনুভূতি গুলোকে আমি প্রশয় দিতাম না যদি রাত আমাকে ফিরিয়ে দেয় আর আমাদের বন্ধুত্বটা ভেঙ্গে যায়।

,,,,,
,,,,,
কিন্তু একদিন আমার এই ভুল ভেঙে যায়। সেদিন আমি ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে কথা বলছিলাম হঠাৎ আমাদের ডির্পাটমেন্টের একটা ছেলে এসে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়।আমি যখনই না করতে যাবো তখনই রাত কোথা থেকে এসে সেই ছেলেটির নাক বরাবর ঘুষা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে তাকে বেধরক পিটাতে থাকে।রাতের বন্ধুরা তাকে খুব কষ্টে তাকে থামায় আমি একপাশে দাড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলাম।তখনই রাত আমার দিকে তাকাতেই আমি দুকদম পিছে চলে যাই।রাত হনহন করে আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে যায়। ভার্সিটির একটা খালি রুমে নিয়ে যায় তারপর আমার দুগালে হাত রেখে বললো,
~আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমার সাথে অন্য কাউকে আমি সহ্য করতে পারবো না।বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আমিও মুচকি হেসে সেদিন রাতকে জড়িয়ে ধরি আর নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করি।
আমাদের দিন গুলো ভালোই কাটছিল।আমার পরীক্ষার রেসাল্ট পাবলিশ হলো আমি বাকি সব বিষয় ভালে করলেও একটি বিষয় একটু খারাপ নাম্বার আসে।আমি অনেক মন খারাপ করে ফেলি। রাত আমাকে বললো,
~অধরা তুমি মন খারাপ করো না।আমি তোমাকে একটা কোচিং সেন্টারের ঠিকানা দিচ্ছি আমার ভাইয়ের সেটা। আমি রাতের সাথেই কোচিং সেন্টারে চলে যাই সেখানেই আমার সাথে দেখা হয় রক্তিম রায়জাদার সে আমার সাথে গম্ভীরভাবে সব সময় কথা বলতেন।ক্লাসে তিনি ভীষণ কড়া ছিলেন কিন্তু তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করতেন পড়ার বিষয়ে কিন্তু সে ৪মাস পর আমেরিকা চলে যায় কেন কী জন্য সে চলে যায় এটা কেউ জানে না।আমিও আর এবিষয় নিয়ে ঘাটাইনি ব্যস্ত হয়ে যাই পড়াশুনা নিয়ে এরই মধ্যে বাবার আরেকটা গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়ে যায় বাবার একপা ফ্রেকচার হয়ে যায় বাবার ইনকামে সংসারে চলে কিন্তু এখন বাবার অবস্থা ভালো না তাই আমি কয়েকটা টিউশনি জোগার করি রাতের ব্যাপারে আমার বাসায় সবাই জানতো তাই রাত আমাদের বাসায় এসে বাবাকে দেখে গেলো একদিন।

,,,,,
,,,,,,
এরইমধ্যে আমি আরো ব্যস্ত হয়ে পরলাম।রাতকে ঠিকমতো টাইম দিতে পারতাম না তাই রাত অনেক অভিযোগ করতো। আমি তাকে বুঝিয়ে বলতাম সে বুঝতে চাইতো না একদিন সে জেদ ধরলো তার বাসায় যেতে হবে আমি সেদিন তার সাথে চলে গেলাম রায়জাদা ভিলায় সাহারা রায়জাদার চেহারা দেখেই বুঝে ছিলাম সে আমায় পছন্দ করেননি। কিন্তু ছেলের জন্য চুপ ছিলেন।দাদীমা আমাকে অনেক আদর করতেন মাঝে মাঝে তাদের বাসায় যাওয়া হতো।
কিছুদিন পর দেখলাম রাত আমাকল আগের মতো কেয়ার করে না কথা বলে না আমি ফোন করলে বিজি বলে যখন জিজ্ঞেস করি তখন সে বলে,
~ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলে তাই বিজি ছিল।আমিও তার কথা বিশ্বাস করে ফেলতাম তার উপরে টুশব্দও করতাম না।কিন্তু একদিন আমার মোবাইলে আননোন নাম্বার থেকে অনেকগুলো ছবি আসে আমি ছবি গুলো দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।রাত একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটা মিথ্যা কিন্তু পরক্ষনে আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসলো সেখানে লেখা,
~তোমার ভালোবাসা অন্যকারো সাথে এটা তোমার অবশ্যই বিশ্বাস হবে না তাই আজ বিকেলে ভার্সিটির পিছনে চলে এসো দেখে নিও তোমার ভালোবাসা কী কী করে বেরাচ্ছে।আমি সেই নাম্বারে অনেকবার ট্রাই করি কিন্তু সেটা বন্ধ আমি রাতকেও কল করি কিন্তু
তাকে ব্যস্ত বলছে।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি ভার্সিটি যাবো।সেদিন বুকে পাথর রেখে আমি বিকেলবেলা ভার্সিটির পিছনে চলে গেলাম আর সেখানে গিয়ে দেখি

চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-০৬

0

#গল্পের_নাম_আমার_শহরে_তুমি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৬
,,,,,
,,,,
এতো আর কেউ না আমার জীবনের সবচেয়ে কলুষিত অধ্যায় মিস্টার রাত রায়জাদা।আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত হাতদুটো বুকে গুজে মুখে শয়তানি হাসি রেখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে আমার রাগ লাগছে মন চাচ্ছে ঠাস করে একটা চড় দেই যেটা ২বছর আগে আমি দিতে পারিনি।আমার পাশে তাকাতেই দেখলাম রক্তিম রাগে কটমট করছে তার চোখ দুটি লাল হয়ে আসছে।সে আমার হাত ছেড়ে একটু এগিয়ে গিয়ে খুবই শান্ত স্বরে বললো,
~জানিস তো কাপুরুষরাই সর্বদা অন্যকে দোষারোপ করে থাকে সে যতই ভুল করুক না কেন তার কাছে অন্যের ভুলটাই চোখে পরে।রক্তিমের কথা শুনে রাত তার দিকে তেড়ে এসে বললো,
~কী বললে তুমি?আমি কাপুরুষ?ভাইয়া মুখ সামলিয়ে কথা বলো।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~সত্য কথা বললেই সবাই মুখ সামলিয়ে কথা বলতে বলে।রাত নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তো নিজের নামের পরে রায়জাদা ট্যাগ লাগিয়ে কেমন লাগছে?আমাকে তো বশ করতে পারলেনা তাই আমার ভাইকে বশ করলে খুব ভালো।আমি মেকি হাসি দিয়ে বললাম,
~রায়জাদা ট্যাগ লাগিয়ে যতো না ভালো লাগছে তার চেয়ে বেশি ভালো লাগছে রক্তিমের মতো একজন ভালো মনের মানুষের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে বলে।আর আমি যদি বশ করতেই জানতাম তাহলে আপনি আমার সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকতেন না বরং আপনার so called gf সারার পিছে যেভাবে ঘুরেন ঠিক সেভাবেই আমার পিছে ঘুরতেন। রাত আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন,
~অনেক কথা শিখে গেছো।আগে তো মুখ দিয়ে টু শব্দ বের হতো না।আমি বললাম,
~কারণ আগে ভালোবাসা ছিল তাই মুখের উপর কোনো কথা বলতাম না এখন ঘৃণার কারণে মুখে কিছু আটকায় না।রাত বিরক্ত হয়ে বললো,
~তোমার এতো লেকচার শুনতে পারবো না। তো ভাইয়া কীভাবে নিজের ভাইয়ের ex কে বিয়ে করলে।রক্তিম বললো,
~এতো তোর কী আসে যায়?রাত বললো,
~আরে আমার use করা জিনিস বিয়ে করেছো তাই জানার অধিকার আমার আছে।রক্তিম রেগে গিয়ে রাতের কলার ধরে বললো,
~মুখ সামলিয়ে কথা বলবি রাত।অধরা তোর ভাবি আর শোন সব মেয়েরা তোর girlfriend এর মতো নির্লজ্জ নয় তাই ভেবে চিন্তে কথা বলবি
বলেই তাকে ছেড়ে দিয়ে আমার হাত ধরে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

,,,,,,
,,,,,,
রক্তিম আর অধরার যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।রক্তিমের বলা প্রতিটা কথা তার রাগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে আর অধরার এই পরিবর্তন তার সহ্য হচ্ছে না এই মেয়ে তো কোনোদিন তার মুখের উপর কথা বলেনি।তাহলে আজ এইভাবে সে কথা কীভাবে বলে গেল।রক্তিমকে বুঝাতে হবে নাহলে এই মেয়ে সব শেষ করে দিবে এগুলো ভাবছে তখনই তার মোবাইল বেজে উঠলো সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলো সারা ফোন করছে সে তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলো আর তখনই অপরপাশ থেকে সারা বলে উঠলো,
~কী ব্যাপার ফোন ধরতে এতো লেইট কেন হয়েছে।রাত শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~কোথায় আমি তো ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করলাম।সারা বললো,
~এভাবে কেন কথা বলছো?ওই অধরা এসেছে বাসায় তাই গলে গেছো তাই তো।রাত বললো,
~কী বলছো এসব কখনো না তুমি আমার ভালোবাসা তোমাকে ছেড়ে কোনো মেয়ের দিকে তাকই পর্যন্ত না।সারা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
~তোমার চরিত্র যে কতোটা ভালো তা আমি জানি।বলেই ফোন রেখে দিলো রাত ফোন কান থেকে নামিয়ে হাতে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
রক্তিম আমাকে রুমে নিয়ে এসে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে সে রুমের মধ্যে পায়চারি করা শুরু করলো তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে এখন অনেক রেগে আছে।রক্তিম আসলেই অনেক ভালো মনের মানুষ আজ সে যেভাবে আমাকে সার্পোট করছে তার কোনো তুলনা হয় না।রক্তিম এখন জানালার সামনে দাড়িয়ে সেই দূর আকাশ দেখতে ব্যস্ত আমি তার পিছে দাড়ালাম তারপর তার কাঁধে হাত রাখলাম।তার কাঁধে হাত রাখতেই সে সামনে ঘুরে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।তার এমন ব্যবহারে আমি অবাক হলাম কিন্তু তাকে বুঝতে না দিয়ে তার পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম,
~কোনো চিন্তা করবেন না আমি সবাইকে সব কথার জবাব দিতে পারবো।সে কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকে আরো নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরলেন।আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সে আমার ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,
~আমি জানি তুমি অনেক সাহসী কিন্তু আমার যে সহ্য হয় না।আমি বললাম,
~লড়াই জিততে হলে সহ্য করতেই হবে।সে আমার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে বললো,
~তুমি পিচ্চি অধরা থেকে বড় অধরা হয়ে গেছো।আমি তাকে বললাম,
~এখন আমাকে ছাড়েন আমি রান্নাঘরে যাবো। রক্তিম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~যাও ছেড়ে দিলাম।আমি আর অপেক্ষা না করে নিচে রান্নাঘরে চলে আসলাম তারপর দুকাপ চা বানিয়ে দাদীমার রুমে চলে আসলাম।দাদীমা আমাকে দেখে খুশি হয়ে উঠে বসলেন তারপর তার সাথে কথা বলতে লাগলাম।

,,,,,
,,,,,
দাদীমার সাথে কথা বলতে বলতে দুপুর হয়ে গেলো হঠাৎ করে একজন সার্ভেন্ট রুমে এসে বললো,
~ম্যাডাম আপনাকে বড়সাহেব ডেকেছে। আমি সার্ভেন্টকে বললাম,
~আমি আসছি।সার্ভেন্ট আমার কথা শুনে চলে গেলো আমি দাদীমাকে বললাম,
~দাদীমা আপনি এখন একটু বিশ্রাম করেন।আমি আসছি। দাদীমা বললেন,
~আমিও যাবো তোর সাথে।আমি বললাম,
~না আপনি রুমে থাকেন আমি চলে আসবো।বলেই দাদীমার রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।তারপর সোজা হলরুমে চলে আসলাম সেখানে গিয়ে দেখলাম রক্তিম রাত আর তাদের মা সোফায় বসে আছে ঠিক সামনের সোফায় মুখ গম্ভীর করে বসে আছে রাহাত রায়জাদা রক্তিমের বাবা।একজন সফল ব্যবসায়ী আমাকে দেখে রক্তিম সোফা থেকে উঠে আমার পাশে দাড়িয়ে বললো,
~বাবা,আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি তুমি যদি চাও আমি এ বাসায় আমার বউ নিয়ে না থাকি তাহলে এই মূহুর্তে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।রক্তিমের বাবা চুপ করে বসে আছেন রক্তিমের মা বললেন,
~তুই এই মেয়ের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে যাবি এতটুকু কদোর নেই আমাদের।রক্তিম বললো,
~বাবা তুমি যা বলবে তাই হবে অন্যকেউ কী ভাবছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।রাত বললো,
~ভাইয়া এই মেয়ে এবাসায় থাকতে পারবে না।বাবা তুমি কিছু বলো
রক্তিমের বাবা নিরবতা ভেঙ্গে বললেন,
~রক্তিম তুমি যা করেছো ভুল করেছো।এভাবে বিয়েটা না করলেই পারতে যেহেতু বিয়ে করছো তো এখন অধরা এই বাসার এই রায়জাদা বংশের বউ।তাই তোমরা কোথাও যাবে না এই বাসায় থাকবে।বলেই সে দাড়িয়ে পরলো রক্তিমের মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাহাত রায়জাদা বললো,
~সাহারা একটা কথা আর বলবেনা।মাথা ধরেছে আর রক্তিম আমার রুমে এসো একটুপর বলেই সে চলে গেলো।আমি মুচকি হেসে রক্তিমের মায়ের আর রাতের দিকে তাকালাম তারা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে আমি তাদের কিছু না বলে রুমে এসে পরলাম।

,,,,,,,,
,,,,,,,
রক্তিম তার বাবার রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে
ভিতর থেকে তার বাবা বললো,
~ভিতরে আসো।রক্তিম নিঃশব্দে ভিতরে প্রবেশ করলো রক্তিমে বাবা বললো,
~বসো।রক্তিম তার বাবার সামনের ডিভানে বসে পরলো।তার বাবা বললো,
~রক্তিম তুমি আমার ছেলে তাই আমি অধরাকে অস্বীকার করতে পারবো না কারণ অধরা এখন তোমার বউ তাই তার এবাসায় অধিকার আছে।তোমরা সুখী হও এটাই আমার দোয়া রক্তিম তার বাবার হাত ধরে বলে,
~ধন্যবাদ বাবা আমাকে বুঝার জন্য। রক্তিমে বাবা কার্বাড খুলে একটা বক্স বের করলেন এবং রক্তিমের হাতে সেই বক্স টা দিয়ে বললো,
~এটি তোমার বউয়ের উপহার আমার তরফ থেকে।এখন যাও আমি রেস্ট করবো রক্তিম মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে আসলো তারপর নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
আমি বারান্দায় দাড়িয়ে আছি রক্তিম রুমে এসেই আমার নাম ধরে ডাকলো আমি বারান্দা থেকে বের হয়ে রুমে যেতেই দেখি রক্তিম হাতে একটা বক্স নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমি তাকে বললাম,
~এটা কী?রক্তিম আমতা আমতা করে বললো,
~তুমি কিছু মনে করো না বাবা তোমাকে উপহার দিয়েছে।আমি বললাম,
~কী আছে এতে?রক্তিম বক্স খুললো বক্সে একজোড়া বালা আছে।আমি রক্তিমকে বললাম,
~এটা আপনার কাছে রেখেদিন আমার এসবের প্রয়োজন নেই।বাবার দোয়াই যথেষ্ট আমার জন্য যথেষ্ট রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে।আমি চলে আসতে নিবো তখনই রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~কোথায় যাও?আমি বললাম,
~দাদীমার কাছে।রক্তিম আমাকে একটানে নিজের কাছে এনে বললেন,
~কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
~তাহলে কী করবো?রক্তিম বললো,
~আমাকে দেখো।আমি মুখ বাকিয়ে বললাম,
~আপনাকে দেখে কী করবো?দাদীমার সাথে কথা আছে।ছাড়েন
রক্তিম আমাকে বললো,
~তাহলে চলো আমিও যাবো।অতপর রক্তিম আর আমি দাদীমার রুমে চলে আসলাম দাদীমার সাথে আমরা দুজন অনেকক্ষন কথা বললাম রক্তিমের ভার্সিটিতে important class থাকায় সে চলে যায় আমি দাদীর রুমেই থেকে গেলাম কিছুক্ষন ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করলাম মাকে ফোন করে বললাম যে আমার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে আমি এসে নিয়ে যাবো কারণ আমার সব নোট বাসায়। এভাবেই আমি পুরো দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটালাম।

,,,,,,,,
,,,,,,,,,
রাত ৮টায় রক্তিম ফিরে এসে দেখে অধরা গালে হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে।রক্তিম অধরাকে এভাবে দেখে বললো,
~কী হয়েছে কী ভাবছো?
বিছানায় বসে বসে ভাবছিলাম যে আমার জীবনে কতোটা পরিবর্তন হয়েছে এই ২দিনে তখনই রক্তিমের কন্ঠ কানে আসে।আমি মুখ তার দিকে করে বললাম,
~কিছু না।আপনার মা সবাইকে একসাথে রাতের খাবার খেতে বলেছেন।রক্তিম বললো,
~তোমাকে নিজে এসে বলেছে?আমি বললাম,
~না সার্ভেন্ট এসে বলে গিয়েছে।রক্তিম বললো,
~অপেক্ষা করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।আমি বললাম,
~আচ্ছা।
কিছুক্ষন পর রক্তিম আর আমি নিচে নেমে দেখি সবাই খাবার টেবিলে বসে পরেছে। রক্তিম চেয়ার টেনে বসে আমাকে ইশারা করলো বসার জন্য আমি বসে পরলাম রক্তিম আমার পাশে বসে পরলো।রক্তিমের বাবা বললো,
~খাওয়া শুরু করো সবাই এসে পরেছে।হঠাৎ রাত বললো,
~নাহ বাবা সারা আসবে একটু অপেক্ষা করো। রাতের কথা শেষ হতেই সারা এসে উপস্থিত রাত সারাকে দেখে তার দিকে এগিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম দুবছর আগে ঠিক এভাবে আমাকেও নাহ এগুলো কী ভাবছি। সারা আর রাত টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো সারা সবাইকে একসাথে কুশলাদি করলো।খাবার টেবিলে রক্তিম আমি আর বাবা কোনো কথা বলিনি রাত সারা আর সাহারা রায়জাদার মুখ চলছিল।খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি রুমে যেতে নিবো তখনই সারা বলে উঠলো,
~অধরা অভিনন্দন রক্তিম আর তোমার বিয়ে হয়েছে।যাক এক ভাইকে পাওনি তো কী হয়েছে আরেক ভাইকে বশ করেছো।আমি তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম,
~আমি তো কারও ভালোবাসা ছিনিয়ে নিয়ে সম্পর্ক গড়ে নি বরং কেউ আমাকে ভালোবাসা দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।আর রক্তিম তোমার বড় আর রাতের সাথে তোমার বিয়ে হলে সে হবে তোমার ভাসুর তাই রক্তিম ভাই বলবে got it.বলেই রুমে চলে আসলাম।

,,,,,,
,,,,,,,
রুমে এসে দেখি রক্তিম বিছানায় শুয়ে আছে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।আমি দেরি না করে তার পাশাপাশি শুয়ে পরলাম চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ২ বছর আগের সব স্মৃতি চলে আসছে।

২বছর আগে,
ভার্সিটির প্রথম বর্ষের পরীক্ষা মাত্র শুরু হয়েছে।সব গুলো পরীক্ষা আমি ঠিকভাবে দিতে পেরেছিলাম কিন্তু শেষের পরীক্ষার দিন আমি যে বাসে ছিলাম সেটা নষ্ট হয়ে যায়। আমি বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করি অসাবধানতার কারণে আমি একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে।আমি ব্যাথা পেয়ে রাস্তার মাঝখানে পরে যাই ভাগ্য ভালো ছিল যে শুধু হাত-পায়ে ছোট ছোট ক্ষত হয়েছিল।আমাকে এভাবে পরে যেতে দেখে গাড়ির মালিক বের হয়ে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অস্থির গলায় বললেন,
~আপনাকে এখনই হাসপাতালে নিতে হবে।আমি মাথা উঠিয়ে তার দিকে তাকাতেই দেখলাম

চলবে।।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-০৫

0

গল্পের নামঃ#আমার শহরে তুমি
লেখনীতেঃ# Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ৫
,,,,,
,,,,,
বিছানায় বসিয়ে সে একদম আমার কাছে এসে বললো,
~সকালের শর্তের কথা মনে আছে?আমি না জানার ভান করে বললাম,
~কীসের শর্ত?আমার তো কিছু মনে পরছে না।রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,
~এখনো মনে পরছে না?তার ছোয়ায় আমার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে আমি তাকে বললাম,
~আমার সব মনে আছে আপনি আমাকে ছাড়েন।আমার কথায় সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
~এইতো good girl.wait তোমার জন্য একটা surprise আছে।বলেই কাবার্ড খুলে দুটো ব্যাগ বের করে বললেন,
~একটায় তোমার জন্য ফোন আরেকটায় শাড়ি আছে আর কার্বাডে অনেক গুলো চিপস আর চকলেট এনেছি। আমি ফোন টা বের করে বললাম,
~সব সেট করা আছে?আমি কী মায়ের সাথে কথা বলতে পারবো।সে বললো,
~তোমার পুরোনো সীমটাই সেট করা আছে।আমি আর দেরি না করে মাকে ফোন করলাম দুতিনবার রিং হতেই না ফোন ধরলো আমি মাকে সালাম দিয়ে বললাম,
~মা কেমন আছে?বাসায় সবাই কেমন আছে আর ভাইয়েরা কী করছে?মা আমার সালামের জবাব দিয়ে বললো,
~সবাই ভালো আছে আর তোর ভাইয়েরা পড়তে বসেছে।তুই ভালো আছিস?বাসায় সব ঠিক আছে তো?আমি বললাম,
~ভালো আছি।বাসায় সব ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না।মায়ের সাথে অনেকক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলাম মনটা হালকা লাগছে ফোনটা রাখতেই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রক্তিম গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আমি ভ্রুকুচকে বললাম,
~কী হয়েছে?সে অসহায় মুখে বললো,
~ফোন পেয়ে তুমি বর ভুলে গেছো।আমি বললাম,
~ঢং যত্তসব চলেন খাবার খেতে রাত ৯.০০ বাজে খাবার খেয়ে আবার বাহিরে যেতে হবে।রক্তিম বললো,
~রেডি হও ডিনার বাহিরে করবো।আর যে শাড়িটা এনেছি সেটাই পরবে আমি দাদীমাকে দেখে আসছি বলেই রুম থেকে বাহিরে চলে গেলেন আমি শাড়ি হাতে নিয়ে রেডি হতে শুরু করলাম।

,,,,,
,,,,,
৩০মিনিট পর রক্তিম রুমে এসে দেখে অধরা রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে।রক্তিমকে সে খেয়াল করেনি রক্তিম ধীরে ধীরে অধরার কাছে এসে তার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। অধরা রক্তিমের সর্প্শ পেয়ে চোখ বড় বড় করে আয়নার দিকে তাকালো আর দেখলো রক্তিম তার চুলে মুখ গুজে আছে। অধরা তার থেকে সরে এসে বললো,
~রেডি না হয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঢং করছেন কেন?রক্তিম বললো,
~কারণ ঢং করতে ভালো লাগে তাই বলেই কার্বাড থেকে একটা টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রাত রায়জাদা আগামীকাল বাসায় ফিরবে তাই তার মা অনেক খুশি কারণ রাত চলে আসলেই সে অধরাকে জব্দ করতে পারবে। অধরা রাতের সামনে দূর্বল হয়ে পরবে এতে সে তাকে অপমান করে এই বাসা থেকে বের করে দিতে পারবে আর রক্তিমও কিছু বলতে পারবেনা।এসব ভেবেই সাহারা রায়জাদা খুশি হচ্ছে কিন্তু সে এটা জানেনা অধরা আর দূর্বল হবে না কারণ সে গত ২বছরে নিজেকে অনেক কঠিন করে গড়ে তুলেছে সে হারবে না বরং তার সামনে সবাইকে হারমানাবে।
রাত ১০টা আমি আর রক্তিম একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করে গাড়িতে উঠে পরি অজানা জায়গায় যাওয়ার জন্য। আমার জন্য তো অজানা কারণ আমি তো জানিনা রক্তিম আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।

,,,,,,
,,,,,,
কিছুক্ষন পর একটা বড় বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি এসে দাড়ায়।রক্তিম আর আমি দুজনই গাড়ি থেকে নেমে পরি আমি বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে দেখি বড় বড় অক্ষরে সাইনবোর্ডে লেখা রায়জাদা আপ্যার্টমেন্ট।দেখেই মনে হচ্ছে এটা রক্তিমদের আপ্যার্টমেন্ট আমি সেখান থেকে চোখ সরিয়ে রক্তিমের দিকে তাকাতেই সে বললো,
~চলো ভিতরে।আমি বললাম,
~এখানে কে থাকে?রক্তিম বললো,
~থাকে একজন।আর আজ রাতটা আমরা এখানে কাটাবো।বলেই সে হাঁটা শুরু করলো আমি তার পিছে পিছে হাটঁতে শুরু করলাম সে লিফটের সামনে এসে দাড়ালো তারপর লিফটে উঠে পরলো আমিও উঠে পরলান সে ৭তলা বাটন চেপে দিলো।একটুপর লিফটের দরজা খুলে গেলো আমরা ৭তলায় পৌছে গেছি।রক্তিম আমার হাত ধরে একটা ফ্যাল্টের সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর কলিংবেলে টিপ দিলো।সাথে সাথেই দরজা খুলে দাড়ালো একজন মহিলা।সে রক্তিমকে দেখেই বললো,
~তুই এখানে এতো রাতে সব ঠিক আছে বাবা।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~আরে ফুপি সব ঠিক আছে। আমি তো তোমাকে আমার বউ দেখাতে নিয়ে আসলাম।রক্তিমের কথায় বুঝতে পারলাম যে এই মহিলাটি রক্তিমের ফুপি কিন্তু তাকে আমি কোনো দিন দেখেনি।রক্তিমের ফুপি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোর পাশে যে দাড়িয়ে আছে সে কি আমার ছেলের বউ?রক্তিম মাথা উপর নিচ করে সম্মতি জানালো ফুপি সাথে সাথে আমার হাত ধরে বললো,
~ভিতরে আসো।আমরা ভিতরে গিয়ে সোফায় বসলাম ফুপি বললো,
~তোমার নাম অধরা।আমাকে রক্তিম তোমার কথা বলেছে তুমি দেখতে অনেক মিষ্টি।আমি মুচকি হেসে তাকে সালাম দিয়ে বললাম,
~আপনি কেমন আছেন ফুপি?সে বললো,
~ভালো আছি।তোমরা বসো আমি চা করে নিয়ে আসি আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে চলে যায়।

,,,,,,
,,,,,,
সে চলে যেতেই আমি রক্তিমকে বললাম,
~আপনার ফুপিও আছে আমি তো জানতাম না।রক্তিম অল্প হেসে বললো,
~ফুপির সাথে মায়ের সম্পর্ক ভালো না তাই বাবা তাকে এখানে রেখেছে।আমার ফুপি ছোটবেলা থেকে আমাকে অনেক আদর করতো তাই আমি যখনই সময় পাই দাদীদমাকে নিয়ে এখানে চলে আসি।আমি বললাম,
~আপনার ফুপা কোথায়?রক্তিম বললো,
~আমার ফুপি বিয়ে করেনি।আমি অবাক হয়ে বললাম,
~কেন? রক্তিম বললো,
~এই যে ভালোবাসা। তার ভালোবাসা তাকে ছেড়ে ২৪বছর আগেই চলে গেছে পরপারে সে থেকেই ফুপি আর বিয়ে করেনি।রক্তিমের কথায় অবাক হলাম একটা মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে তাকে মনে করেই জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।এসব ভাবছি তখনই ফুপি চা নিয়ে আসলেন রক্তিম বললেন,
~ফুপি আজ আমরা এখানে থাকবো। ফুপি খুশি হয়ে বললেন,
~সত্যি আমি ফুলিকে দিয়ে রুম পরিষ্কার করে দিচ্ছি।আর তোরা কী খাবি?আমি বললাম,
~ফুপি আমরা খেয়ে এসেছি।ফুপি বললো,
~সেকি কথা আচ্ছা আমি ফুলিকে ডেকে রুম পরিষ্কার করে দিচ্ছি।বলেই সে চলে গেলো কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে ঢুলুঢুলু চোখে বের হয়ে রক্তিমকে বললো,
~রক্তিম ভাই যে,এতো রাইতে বউ লয়া আইসেন।ভাবি কিমুন আসেন?আমি মুচকি হেসে বললাম,
~ভালো।তুমি কেমন আছো?সে বললো,
~ভালা আছি।আমি আপনাগো ঘরটা পরিষ্কার কইরাদিসি যান যায়া ঘুমাইয়া পড়েন।বলেই সে চলে গেলো।রক্তিম বললো,
~চলো রুমে যাওয়া যাক।আমি রক্তিমের পিছে পিছে রুমে চলে আসলাম আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি রক্তিম একটা ফ্রেম নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর এতে হাত বুলাচ্ছে।আমি একটু সামনে গিয়ে দেখলাম একটা বাচ্চা মেয়ের ছবি আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
~এটা কার ছবি?রক্তিম আমার কথায় পিছন ফিরে বললেন,
~এটা ফুপির ছোট বেলার ছবি সুন্দর না?আমি বললাম,
~হুমম অনেক সুন্দর।রক্তিম কিছুক্ষন ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন,
~অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যাই।আমি বিছানায় একপাশে শুয়ে পরলাম রক্তিম এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো আজ আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম না।থাক না মানুষটা আজ আমার নিকটে

,,,,,,
,,,,,,
সকালে ঘুমটা রক্তিমের আগে ভাঙ্গলো সে চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলো অধরাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। সে অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে। অধরাকে ছেড়ে উঠে বসলো তখনই ফোনের রিংটন বেজে উঠলো সে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার মা সাহারা রায়জাদার ফোন দিয়েছে। রক্তিম ভ্রুকুচকে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তার মা বলে উঠলো,
~ফুপির কাছে থাকা হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসো তোমার ভাই আর বাবা এসেছে।রক্তিম বললো,
~তো আমি এসে কী করবো?তার মা বললো,
~তোমার বাবা তোমার সাথে কথা বলতে চায় আর তোমার গুনধর বউকে নিয়ে এসো।মাকে আর কিছু বলতে দিলোনা রক্তিম ফোন রেখে একধ্যানে সামনে দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমার ঘুম ভাঙ্গতেই আমি দেখলাম রক্তিম একধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি উঠে বসে তাকে বললাম,
~কী হয়েছে?সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~রেডি হও বাসায় যেতে হবে বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো আমি বললাম,
~শাড়ি আনিনি কী পরবো?সে বললো,
~ফুপির কাছে অনেক শাড়ি আছে তাই ফুপি আগেই কার্বাডে শাড়ি রেখে গেছে। বলেই রুম থেকে চলে গেলো আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।আর ভাবতে থাকলাম কী হলো লোকটার?
,,,,,
,,,,,,
সকাল ১০টা আমরা ফুপিকে বিদায় জানিয়ে
বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।পুরো রাস্তা রক্তিম আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলো।যখনই ছাড়াবার চেষ্টা করেছি সে ততোই শক্ত করে ধরে রেখেছে।বাসায় পৌছে রক্তিম আমার হাত ছেড়ে গাড়ি থেকে নামলো আমিও নেমে দাড়ালাম।সে আবার আমার হাত শক্ত করে ধরে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলেন তখনই কেউ বলে উঠলো,
~বাহ তোমাদের তো খুব মানিয়েছে একসাথে তো বিয়ে করেই একসাথে আছো নাকি বিয়ের আগেই?এই কন্ঠটা শুনে আমার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো।এতো আর কেউ না

চলবে।।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-০৪

0

গল্পের নামঃ#আমার শহরে তুমি
লেখনীতেঃ# Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ৪
,,,,,,
,,,,,
বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই সোফার রুমের চারপাশে আমি চোখ বুলিয়ে নেই।অনেক কিছুই পরিবর্তন করা হয়েছে শুধু পরির্বতন হয়নি এ বাড়ির মানুষের চিন্তাধারা সেটি আগেও ছোট ছিল এখন একইরকম রয়ে গেছে।সোফার রুমের ঠিক সামনের দেওয়ালটায় আমার চোখ পরতেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কারণ ছবিতে এমন একজন ব্যক্তি হাসোজ্জল মুখে দাড়িয়ে আছে যে আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে।সেই ব্যক্তি আর কেউ নয় রাত রায়জাদা।আমি ছবি থেকে চোখ সরিয়ে সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম একজন হুইলচেয়ারে বসা বয়স্ক মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এগিয়ে গেলাম আর বললাম,
~দাদিমা,কেমন আছো?হ্যাঁ এই মহিলাটি রক্তিমের দাদী।আমাকে দেখে সে অবাক হয়েছে তার চেহারাই তা প্রমান করছে সে হাতের ইশারায় আমাকে কাছে আসতে বললো আমি হাঁটুগেড়ে তার পাশে বসলাম সে আমার গাল ছুয়ে দিয়ে বললো,
~তুই এখানে? তোকে দেখলে তো আবার অপমান করবে।আমি কিছু বলার আগেই পিছন থেকে রক্তিম বলে উঠলো,
~আমি থাকতে তোমার সতীনকে কেউ অপমান করতে পারবেনা।তার কথায় দাদীমা একবার আমার দিকে তাকালো আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই সে জোড়ে চিল্লিয়ে বললো,
~তোরা সবাই কইরে?দেখ আমার নাতবউ এসেছে আমার সতীন ঘরে এসেছে যে আজ আমি মিষ্টি খাবো কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।আমার অধরা যে ঘরে রহমত নিয়ে এসেছে।তার কন্ঠ শুনে বাড়ির সব সার্ভেন্ট এসে পরলো আর আমাকে দেখে অবাক হলো।দাদী রক্তিমকে সামনে ডেকে বললেন,
~একা বিয়ে করলি এই দাদীকে একবারও মনে করলিনা।রক্তিম বললো,
~পরেরবার তোমাকে নিয়েই বিয়ে করবো।তার কথায় আমি চোখ বড় বড় করে ফেললাম সে বললো,
~আরে আবারও তোমায় বিয়ে করবো চিন্তা করো না।দাদী তার কান ধরে বললো,
~ওরে ফাজিল রে আমার সতীনের সাথে একদম ফাইজলামি করিস না।তাদের এমন মজা দেখে আমি ফিক করে হেসে উঠলাম কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না দরজার দিকে চোখ পরতেই দেখলাম

,,,,
,,,,,
রক্তিমের মা সাহারা রায়জাদা দাড়িয়ে আছে তার হাতে শপিং ব্যাগ। সে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তাকে দেখে আমার কোনো সম্মান কাজ করছে না।সে শপিং ব্যাগ ফেলে আমার দিকে তেড়ে এসে আঙ্গুল তুলে বললেন,
~এই মেয়ে তোর সাহস কীভাবে হলো আমার বাড়িতে পা রাখার?তোর মতো চরিত্রহীন মেয়ে আমার বাড়িতে কেন উঠেছে আমার বাড়িটাকে অপবিত্র করে দিলো।আমি তার কথায় মুচকি হেসে তার আঙ্গুল নিচে নামিয়ে বললাম,
~My sweet mother in law নতুন বউকে কেউ এভাবে welcome করে।আমি তো ভেবেছিলাম এখানে আমার স্বাগতম টা অনেক সুন্দর করে হবে never mind.তো mother in law আপনি কী শপিং থেকে আসছেন? নতুন বউয়ের জন্য অবশ্যই গিফট আনতে গিয়েছেন তো দেখি কী এনেছেন?আমি দরজার সামনে থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে খুলে দেখলাম একটাতে শাড়ি আরেকটাতে ডায়মন্ডের নেকলেস আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে নিজের গায়ে মেলে রক্তিমকে বললাম,
~কেমন দেখাচ্ছে আমাকে? বলতে হবে আমার শাশুড়ির চয়েজ আছে।রক্তিম বললো,
~অবশ্যই অনেক সুন্দর তোমাকে মানিয়েছে।আমি শাড়িটা ভাজ করে শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে সোফার উপরে রেখে বললাম,
~তো শাশুড়ি মা আজকে কী বাসায় পার্টি হবে না?আপনারা তো আবার ছোট ছোট বিষয়ে পার্টি করেন আর আজ তো রায়জাদা বংশের ছেলে বউ নিয়ে এসেছে।আমার কথা শুনে রক্তিমের মা রাগে ফুসছে সে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~তুই এই মেয়েকে এখানে কেন নিয়ে এসেছিস?আমাকে অপমান করতে এনেছিস।রক্তিম বললো,
~আমি আমার বাবার বাসায় এসেছি যদি সে আমাকে বলে এ বাসা থেকে চলে যেতে বলে তাহলে আমি বিনাবাক্যে এখান থেকে চলে যাবো আর এ সিদ্ধান্ত বাবা আসার পরে হবে।বলেই সে আমার হাত ধরে দাদীমা কে বললো,
~দাদী মা আমরা রুমে যাচ্ছি। বলেই আমাকে হাত ধরে উপরে নিয়ে গেলো তার রুমে নিয়ে এসে বললো,
~অধরা আমি এখন ভার্সিটিতে যাবো জরুরি ক্লাস নিতে হবে তাই তাড়াতাড়ি আমাকে বিদায় kiss দেও।তার কথায় আমার মাথা চরক গাছ এ লোক বলে কী এতো কথা হয়ে গেলো নিচে আর সে এখন আমাকে অসভ্য লোক।

,,,,,
,,,,,
রক্তিম আবার বললো,
~কী হলো দেও?আমি তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম,
~এই আপনি কী পাগল?সে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়প বললেন,
~তোমার পাগল আমি। বলেই তার গাল দিয়ে আমার গালে সর্প্শ করলো আমার সারা শরীর হিম হয়ে যাচ্ছে আমি তাকে বললাম,
~কথায় কথায় এভাবে জড়িয়ে ধরেন কেন?ছাড়েন আমায় বলেই তার হাত আমার কোমড় থেকে সরানোর চেষ্টা করলাম সে আমায় নিজ থেকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~যাও তোমাকে ছেড়ে দিলাম কিন্তু একটা শর্ত আছে রাতে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।আমি ভেংচি কেটে বললাম,
~নিকুচি করি আপনার শর্তের। সে আবার আমার কাছে আসতে শুরু করলে আমি চিল্লিয়ে বলি,
~আপনি আমার কাছে আসবেন না। আপনার সব শর্তে আমি রাজি।সে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
~এইতো আমার লক্ষ্মী বউ।বলেই আমার গালে ঠোঁট ছুয়িয়ে চলে গেলো আমি বোকার মতো গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।এই লোক এতো অসভ্য কেনো
অপরদিকে রক্তিমের মা নিজ রুমে বসে ভাবছে অধরাকে কীভাবে জব্দ করা যায় কিন্তু সে ২বছর আগের অধরাকে আর এই অধরাকে মিলাতে পারছে না।এতো পরিবর্তন কীভাবে যে তার সামনে একটা শব্দ করতো না সে এখন এতো কড়া কড়া কথা বলছে।২বছর আগে কতো কাঠখর পুড়িয়ে এই মেয়েকে রাতের জীবন থেকে সরিয়ে ছিল এখন রক্তিমকে বশ করে আমার বাসায় চলে আসলো।রাতকে তো আমি যা বুঝিয়েছি তাই বুঝেছে কিন্তু রক্তিন বরাবরই অনেক আলাদা রাত থেকে।এসব ভাবছে আর রাগে ফুসছে সে যেভাবেই হোক এই মেয়েকে রক্তিমের জীবন থেকে সরিয়েই ছাড়বে।

,,,,,
,,,,,,
রক্তিম ভার্সিটির সব ক্লাস শেষ করে একটা মোবাইলের শো রুমে ডুকলো অধরার জন্য একটা ব্রান্ড নিউ মোবাইল কিনে।সে ডুকলো শাড়ির দোকানে একটা বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি কিনে অনেক চকলেট চিপস কিনে সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।কিছুক্ষন পর বাসায় পৌছে সে সোজা রুমে চলে গেলো কিন্তু কোথাও অধরাকে দেখতে পেলো।সে একটু বিচলিত হলো তারপর সে তার দাদীমার রুমে চলে গেলো আর সেখানে গিয়ে দেখলো দাদীমা আর অধরা বিছানায় বসে গল্প করছে আর খিলখিল করে হাসছে।সে হঠাৎ বলে উঠলো,
~কী দুই সতীনে মিলে কী ফন্দী আটছে।
আমি আর দাদীমা মিলে আড্ডা দিচ্ছি তখনই রক্তিমের কথা কানে আসলো আমি মুখ বাকিয়ে বললাম,
~দাদীমা মেয়েদের কথা শুনে ছেলেরা এতে কীসের মজা পায়।দাদীমা কিছু না বলে মিটমিট করে হাসছে রক্তিম রাগ দেখিয়ে বললো,
~এই শুনো আমি কারো কথা শুনতে আসেনি আর না আমার interest আছে।এখন তুমি চুপচাপ আমার সাথে রুমে চলো কথা আছে।আমি তাকে মুড দেখিয়ে বললাম,
~আমি আজ দাদীমার সাথে ঘুমাবে আপনি রুমে চলে যান।রক্তিম আমার কথা শুনে বললো,
~তুমি আসবে না আমার সাথে?আমি মাথা দুদিক নাড়িয়ে বুঝালাম না সে হঠাৎ এমন একটি কাজ করে বসলেন যার কারণে আমি লজ্জায় মরে যেতে মন চাইচ্ছে সে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে দাদীমাকে বললো,
~আমার বউ আমি নিয়ে যাচ্ছি।দাদীমা তার কান্ডে খিলখিল করে হেসে বললো,
~নাতবউ কপাল গুনে এমন স্বামী পেয়েছো।রক্তিম আমাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে তার রুমে নিয়ে যেয়ে বিছানায় বসিয়ে একদম আমার কাছে এসে বললো,

চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-২+৩

0

গল্পের নামঃ#আমার শহরে তুমি
লেখনীতেঃ# Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ২ + ৩
,,,,
,,,,
কিছুক্ষন পর কাজী সাহবে চলে আসলেন।তিনি বিয়ের কার্যক্রম শুরু করলেন প্রথমে রক্তিমকে কবুল বলতে বললেন সে কোনো সময় ব্যয় না করে কবুল বলে দেয়।তারপর আমাকে বলে কবুল বলতে রক্তিম আমার হাত শক্ত করে ধরে কানে ফিসফিস করে বলে,
~তাড়াতাড়ি কবুলটা বলে দেও আমার আর অপেক্ষা হচ্ছে না।তার কথা শুনে আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কঠিন চোখে তার দিকে তাকালেন
সে বাঁকা হেসে সামনের দিকে তাকালো আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তিনবার কবুল বলে দিলাম।রক্তিম আর আমার বিয়ে সম্পন্ন হলো বাবা-মা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~আমাদের মাফ করে দিস মা।আমি তাদের কিছু না বলে মলিন হেসে বললাম,
~তোমরা নিজেদের খেয়াল রেখো।ভাইদের সামনে গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে বললাম,
~তোরা তোদের খেয়াল রাখিস আর জারিফ তুই আরিফের সাথে বেশি মজা করবিনা।জারিফ কেঁদে কেঁদে বললো,
~আপু তোমাকে মিস করবো।আরিফ বললো,
~আপু তুমি আমাদের সাথে দেখা করতে আসবে।আমি তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম তখনই রক্তিম বলে উঠলো,
~আমাদের লেট হচ্ছে আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে।আমি তার কথায় বললাম,
~বাসায় যাওয়ার এতো তাড়া কেন?রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,
~বুঝোই তো নতুন বিয়ে বউকে পাশে পাওয়ার তড় সহ্য হচ্ছে না।এই মানুষটির সাথে পারা যায় এতো অসভ্য কথা সে এভাবে চিল্লিয়ে বলতে পারলো।আমি তার সাথে আর কোনো কথা না বলে পরিবারের সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসলাম রক্তিম গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।আমাকে দেখেই সে গাড়ির সামনের দরজা খুলে দিলো আমি চুপচাপ বসে পরলাম সে ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো বাসাটাকে আরেকবার দেখে নিলাম। চোখের পানিগুলোকে সযত্নে চোখের ভিতরই রেখে দিলাম আজ আমি একফোঁটা চোখের পানি ফেলবো না।

,,,,,
,,,,
গাড়িতে আমাদের মাঝে কোনো কথা হয়নি আমি বাহিরের দৃশ্য দেখছি হঠাৎ রক্তিম আমার হাত ধরে বললো,
~জামাই রেখে বাহিরে কী দেখো?আমি নাক ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~আপনাকে দেখে কী করবো?আপনি যতোটা সুন্দর ততটাই আপনার মনটা অসুন্দর আর কিছু শুনতে চান আপনি?আমার কথায় সে হো হো করে হেসে বললো,
~একদম ঠিক বলেছো।এখন বলো কী খাবে?আমি জানি তুমি দুপুরে কিছু খাওনি।আমি বললাম,
~আপনি কীভাবে জানলেন?সে বললো,
~আমার lovely mother in law আমাকে বলেছে যে তার সুপুত্রী দুপুরে খায়নি হয়তো সে তার বরের হাতেই খাবার খাবে। বলেই চোখ টিপ মারলেন তার মুখের থেকে এসব বাণী শুনে মন চাচ্ছে তাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই।কিন্তু আমি এটি করতে পারবো না।একটুপর সে গাড়ি থামালো একটি রেস্টুরেন্টের সামনে আমারও অনেক ক্ষুধা লেগেছে। রক্তিম গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির গেইট খুলে বললো,
~বের হও খেয়ে দেয়ে তারপর তোমার শশুর বাসায় যাবো।my sweet wife আমি গাড়ি থেকে নেমে আমার কনুই দিয়ে তার পেটে গুতা মেরে বললাম,
~দেখেছেন আমি কতোটা sweet.সে মুচকি হেসে আমার কানে আছে এসে বললো,
~তোমার মতো শুটকি আমার কিছু করতে পারবেনা।বলেই আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভিতরে নিয়ে গেলো।

,,,,,
,,,,,
রেস্টুরেন্টের ম্যানেজের রক্তিমকে দেখেই বললেন,
~স্যার,আপনার টেবিল রেডি করা আছে। রক্তিম বললেন,
~Good.আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~চলো আমাদের টেবিলে।বলেই হাত ধরে টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো তারপর আমার হাত ছেড়ে চেয়ার টেনে বললো,
~বসো।আমি শাড়ি ঠিক করে চেয়ারে বসে পরলাম সে মেনু কার্ড দেখে ওয়েটারকে ডাক দিলেন তারপর বললেন,
~তোমাদের madam বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করে তাই দুই প্লেট বিরিয়ানি আর ফানটা নিয়ে এসো।ওয়েটার বললো,
~১০ মিনিটে খাবার এসে পরবে স্যার।বলেই চলে গেলো সে রক্তিম আমার দিকে তাকাতেই আমি তাকে বললাম,
~আপনি কীভাবে জানেন যে আমার বিরিয়ানি পছন্দ?সে মুচকি হেসে বললো,
~আমি যাকে মনে জায়গা দেই তার সব খবরও রাখি।তার কথায় অবাক হলাম কিন্তু তাকে বুঝতে না দিয়ে বললাম,
~আমায় কেন বিয়ে করলেন?যেখানে আপনার পরিবারের সকল লোক আমাকে ঘৃনা করে।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~আগে পেট পূজা করো তারপর প্রশ্ন পূজা করো।তখনই ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো রক্তিম বিরিয়ানিতে লেবু চিপরিয়ে এক লোকমা আমার মুখের সামনে ধরে বললো,
~খেয়ে নাও।আমি বললাম,
~আমি নিজে হাতে খেতে পারি।রক্তিম বললো,
~আজকে আমার হাতে খাও আর যদি আমার হাতে না খাও তাহলে তোমাকে আমি এখানেই চুমো খাবো।কী বলো কী করবো আমার হাতে খাবে নাকি তার কথা শেষ করতে না দিয়েই তার হাতের খাবার মুখে নিয়ে নেই।

,,,,,
,,,,,
আমাদের খাওয়া শেষ হলে রক্তিম বিল পে করে।গাড়িরতে গিয়ে বসে পরলাম রক্তিম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে তার হাসি দেখে আমি ভ্রুকুচকে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~কী সমস্যা এভাবে হাসছেন কেন?রক্তিম না জানার ভান করে উত্তর দেয়,
~কোথায় আমি হাসছি?তুমি চোখে বেশি দেখো। তার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই তাই চুপ করে বসে রইলাম কিছুক্ষন রক্তিম একটা হোটেলের সামনে এসে গাড়ি থামায়।আমি তাকে বললাম,
~এখানে কেন?আমরা তো আপনার বাসায় যাবো তাই না?সে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
~এতো তাড়া কীসের? আমাদের মাত্র নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের একান্ত সময় প্রয়োজন তাই আজ রাতটা এখানে কাটাবো।আমি রাগের মাথায় চেচিয়ে বলে উঠি,
~মায়ের ভয়ে এখানে এসে লুকাচ্ছেন তাই তো?তাহলে বিয়ে কেন করছেন?নাটক করতে যত্তসব ন্যাকার দল।আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সে আমার দুহাতের বাহু চেপে ধরে বললো,
~রক্তিন রায়জাদা কাউকে ভয় পায়না বুঝতে পেরেছো।তুমি এখন আমার বউ তাই আমি যদি তোমায় গাছের নিচেও রাখি তুমি থাকতে বাধ্য মিসেস রায়জাদা।তার চোখের দিকে তাকাতে আমার ভয় করছে তার চোখ লাল হয়ে আছে।আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
~আমি ব্যাথা পাচ্ছি।আমার কথায় সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,
~অযথা কথা আমার পছন্দ না।তা তুমি জানো তাই চুপ করে থাকো ভালো হবে তোমার জন্য। বলেই গাড়ির দরজা খুলে বের হলো আমিও তার সাথে বের হলাম সে আগে আগে হাটঁছে আর আমি পিছে পিছে। হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করতেই একজন সুন্দরী নারী আমাদের স্বাগত জানিয়ে বললেন,
~আমি আপনাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি?রক্তিম বললো,
~আমি রুম আগে থেকেই বুক করে রেখেছি মিস্টার এন্ড মিসেস রায়জাদার নামে।সেই নারী কম্পিউটারে চেক করে বললেন,
~স্যার আপনাদের বুকিং আছে এই যে রুমের চাবি।রক্তিম বললো,
~ধন্যবাদ। Madam এর জন্য কিছু শাড়ি অর্ডার করা হয়েছে সেগুলো আসলে আমাদের রুমে পাঠিয়ে দিবেন।সেই সুন্দরী নারী বললো,
~জ্বী স্যার। রক্তিম চাবি নিয়ে আমার হাত ধরে লিফটের ভিতর ঢুকে গেলো

,,,,
,,,,
লিফট এসে থামলো ৮তলায় আমি রুমের সামনে দাড়িয়ে আছি আর রক্তিম চাবি দিয়ে দরজা খুলে বললো,
~তুমি রুমে ওয়েট করো আমি আসছি আর শোন শাড়ি এসে দিয়ে যাবে। আমি কিছু না বলে রুমের ভিতর চলে আসলাম রুমের ভিতরে ডুকতেই চারপাশে চোখ বুলাতেই আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো যেমন বাসর ঘরে সাজানো হয়।এসব দেখে আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কী হিসেবে সে এটা ভাবছে যে আমি তার সাথে বাসর করবো। নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে আমি ওয়াশরুমে চলে আসলাম মুখে পানি ছিটা দিয়ে বের হয়ে রুমে আসলাম তখনই কেউ নক করলো রুমের দরজায় আমি দরজা খুলে দেখলাম সেই সুন্দরী নারী হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
~ম্যাম আপনার পার্সেল চলে এসেছে। বলেই হাতে থাকা ব্যাগ গুলো আমার হাতে দিয়ে দিলো।তারপর সে চলে গেলো আমি দরজা বন্ধ করে হাতে থাকা ব্যাগ গুলো খুলে দেখি শাড়ি আর আমার যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস।আমি একটা গোলাপী রঙ্গের শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।শাড়িটা ঠিকঠাক মতো পরে নিলাম বাহিরে বের হয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিলাম তারপর বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। নিস্তব্ধ রাত দেখতে অনেক সুন্দর কিছুক্ষন পর

হঠাৎ কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমি তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সেই হাতের মালিক বলে উঠলো,

চলবে।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

গল্পের নামঃ#আমার শহরে তুমি
লেখনীতেঃ# Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ৩
,,,,,
,,,,,,
সেই হাত জোড়ার মালিক বলে উঠলো,
~এতো ছটফট কেন করছো?আমি কী তোমায় খেয়ে খেয়ে ফেলবো।তার কন্ঠ শুনেই আমার বুঝতে বাকি রইলনা এই ব্যক্তিটি কে?রক্তিম আমাকে পিছন থেকে এভাবে জড়িয়ে রেখেছেন আমি কনুই দিয়ে তার পেটে গুতা দিয়ে বললাম,
~ছাড়ুন অসভ্য এভাবে সাপের মতো পেচিয়ে আছেন কেন?তিনি আমাকে না ছেড়ে উল্টো আরো নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বললেন,
~তোমাকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে একদম আমার বউ লাগছে।বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে ঘুড়িয়ে তার কপালে আঙ্গুল ঘষে বললেন,
~কী যেন একটা মিসিং আছে?তার এরকম কথায় আমি নিজের চারপাশ দেখে বললাম,
~কী মিসিং আছে আমার আল্লাহ তা আলা আমাকে আপনার মতোই ২টি হাত, ২টি পা একটি নাক এসব দিয়েই তৈরি করেছে।আমার কথায় সে হো হো করে হেসে বললেন,
~তোমার নাক তো আছে কিন্তু নাকফুল নেই wait আমি তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।বলেই দৌড়ে রুমে চলে গেলেন কিছুক্ষন পর তার হাতে একটি বাক্স নিয়ে চলে আসলেন।বাক্সটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,
~নেও এটা খুলে দেখো।আমি বাক্সটা খুলে দেখলাম ডায়মন্ডের নাকফুল তা দেখে আমি তার দিকে তাকালাম সে মুচকি হেসে বললো,
~তোমার নাকে এটা খুব সুন্দর লাগবে।একটু পরে দেখো তো।আমি বাক্সটা বন্ধ করে বললাম,
~আপনার বাবার টাকার কোনো জিনিস আমি নিবো না বেনারসিটা পরেছি শুধুমাত্র আমার পরিবারের জন্য। কিন্তু আপনার বাবার টাকার কোনো জিনিস আমি নিবো না।আর এ শাড়িটাও বাধ্য হয়ে পরেছি কালকেই আমার জিনিসপত্র আমি নিয়ে আসবো। সে অনেকটাই শান্ত কন্ঠে বললেন,
~তুমি হয়তো ভুলে গেছো যে আমি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি আর আমার প্রথম বেতনের টাকাটা দিয়েই আমি এই বেনারসি আর এই নাকফুলটা কিনেছি।তার কথায় আমি বললাম,
~সত্যি আপনার প্রথম বেতন দিয়ে এগুলো কিনেছেন?
সে বললো,
~জ্বী ম্যাডাম। আমি বাক্সটা হাতে নিয়ে রুমের ভিতরে চলে আসলাম তারপর আয়নার সামনে দাড়িয়ে সেই নাকফুলটা আমার নাকে অনেক ঘষামানজার পর পরতে পারলাম।নাকফুলটা পরে আয়নার দিকে তাকালাম পিছনে রক্তিম দাড়িয়ে আছে।

,,,,
,,,,
নাকের দিকে খেয়াল করতেই দেখলাম নাকফুলটা একদম জ্বলজ্বল করছে।আমাকে দেখতে একদম অন্যরকম লাগছে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখি সে একধ্যানে মুগ্ধ নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার লজ্জা লাগলো কিন্তু তা প্রকাশ না করে অকপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
~কী দেখেন এভাবে?রক্তিম এক পা দু পা করে একদম আমার কাছে এসে পরলো তার নিশ্বাসের গরম হাওয়া আমার মুখে আছড়ে পরছে।নিজেকে এক অন্য জগতের প্রাণী মনে হচ্ছে আমার বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে।রক্তিম আমার দিকে ঝুঁকে নাকফুলে ঠোঁট ছুয়িয়ে বললেন,
~তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে একদম আমার স্বপ্নের রানীর মতো লাগছে।আমি তার এসব কথা সহ্য করতে না পেরে তাকে হালকা ধাক্কা মেরে তাকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
~আজকের জন্য যদি নাটক শেষ হয়ে থাকে তাহলে আমি ঘুমাতে গেলাম।বলেই আমি বিছানার দিকে যাবো রক্তিম বললো,
~বাসর রাতে কে ঘুমায়?আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~আমি ঘুমাই।বলেই বিছানায় শুয়ে পরলাম তার এসব নাটক দেখার সময় আমার নেই এভাবেই আগামীকাল শশুর বাড়ি যেতে হবে অনেক এনার্জির প্রয়োজন।কালকে রক্তিমের মা কীভাবে রিয়েক্ট করবে কে জানে কিন্তু আমি তার সামনে দূর্বল হবো না তাকে তার সব পাপের হিসাব দিতে হবে।এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো কারণ দুবছর আগের সব কথা আবার মনে পরছে অতীত বড্ড খারাপ জিনিস যত ভুলতে চান ততই আপনার তাড়া করতে থাকে।

,,,,,
,,,,,
অন্যদিকে রক্তিম রাতের শহর দেখতে ব্যস্ত এই মেয়েটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।অধরাকে সে অনেক ভালোবাসে হয়তো নিজের সব বিলীন করে হলেও সে অধরাকে খুশি রাখতে চায়।আজ সে তাই বাসায় যায়নি কারণ মা অধরাকে অপমান করবে আর বিয়ের রাতটাকে সে কোনো ক্রমেই খারাপ করতে চায়নি।হঠাৎ রক্তিমের ফোন বেজে উঠলো সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো একটা নাম জ্বলজ্বল করছে।এই ব্যক্তিটি তাকে ফোন করেছে এরমানে মা তাকে সব জানিয়ে দিয়েছে নাহলে বড় ভাইয়ের কথা তার কখনো মনে পরেনি।হ্যাঁ রক্তিমের ছোট ভাই রাত রায়জাদা তাকে ফোন করেছে।রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশের যুবকটি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
~ভাইয়া তোমার লজ্জা করলো না একটা চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে।আর কীভাবে তুমি তোমার ছোট ভাইয়ের থাক আমি এসব কথা বলতে চাই না। শুধু এতটুকু বলতে চাই shame on u ভাইয়া।রক্তিমের রাগে মাথায় রক্ত চড়ে গেলো অধরাকে সে চরিত্রহীন বলছে।রক্তিম রাগী গলায় বললো,
~মুখের জবান সামলিয়ে কথা বলবে তুমি?সে তোমার ভাবি হয় আপন মায়ের পেটের ভাইয়ের বউ তোমার সম্মান করতে শিখো।আমি তো আমেরিকা থেকে এসেছি তাই আমি বেয়াদব কিন্তু তুমি কেন বেয়াদবি করছো?after all you are a very well-manner person।কী ঠিক বলেছিনা?বড় ভাইয়ের বিদ্রুপ করা কথায় রাতের মাথায় আগুন উঠে গেলো সে ফোন কেটে দিলো।রক্তিম তার ভাইয়ের কথা না শুনতে পেয়ে ফোন কান থেকে নামিয়ে রেখে মুচকি হেসে বললো,
~হিরে চিনতে ভুল করেছো তাই এখন হিরেকেই নকল বলছো।ফোন হাতে নিয়েই সে রুমের ভিতরে গিয়ে দেখলো

,,,,,
,,,,,
অধরা গালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রক্তিম কপাল চাপড়ে মনে মনে বললো,
~কোথায় বউ নিয়ে একটু রাতের আকাশ দেখবো সেখানে আমার বউ ঘুমের দেশ দেখছে।রক্তিম ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় অধরার পাশে শুয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।সে একটু একটু করে অধরার কাছে চলে গেলো তারপর তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তোমার জন্য মনের গহীনে সযত্নে আগলে রেখেছি কিছু নীলপদ্ম।বলেই অধোরার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে সে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি রক্তিম আমাকে জড়িয়ে ধরে আরামের ঘুম দিচ্ছেন আমি তাকে সরানোর অনেক চেষ্টা করলাম সে সরাতো দূর আরো বেশি করে জড়িয়ে ধরছেন। তারপর আমি অনেক কষ্টে হাত ছাড়িয়ে তার পেটে অনেক জোড়ে চিমটি কাটি সে ব্যাথা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চিল্লিয়ে বললেন,
~কী হয়েছে এমন করছো কেন?আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে বিছানা থেকে উঠে চুলগুলো হাত খোপা করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি রক্তিম উপুর হয়ে শুয়ে আছেন।আমাকে দেখে সে বললো,
~নাস্তা করে তোমার বাসায় ফোন করে কথা বলে নিও তারপর রেডি হবে আমরা বাসায় যাবো।তার কথায় আমার বুক ধুকপুক করা শুরু করলো সত্যিই আমি সে বাসায় যাবো যে বাসায় একদিন আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছিল।রক্তিমের কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গলো সে বললো,
~আমি নাস্তার ওর্ডার দিয়েছি।একটু ওয়েট করো চলে আসবে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।বলেই সে চলে গেলো আমি বসে বসে ভাবছি ভাগ্য কী আবার আমায় নিয়ে খেলছে।

,,,,,,
,,,,,
নাস্তা করে আমি মা-বাবার সাথে কথা বলে নিলাম।রক্তিম আমাকে বললো,
~তুমি রেডি থাকলে বের হওয়া যাক।আমার কেমন জানি লাগছে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে একদম ফিটফাট যেমন কিছুই হয়নি।রক্তিম আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
~কী দেখো আমি অনেক handsome তা আমি জানি।তার কথায় মুখ ভেংচি কেটে বললাম,
~চলেন দেরি হচ্ছে।হোটেল থেকে বের হয়ে আমরা গাড়িতে বসে পরলাম গাড়ি যতো আগে বাড়ছে আমার বুকের ধুকপুক করছে কী হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।৩০ মিনিট পর আমরা রায়জাদা ভিলায় পৌছে গেলাম রক্তিম গাড়ি থামিয়ে বললো,
~গাড়ি থেকে নেমে আসো।আমি কাঁপাকাঁপা হাতে গাড়ির গেইট খুলে গাড়ি থেকে নেমে রায়জাদা ভিলায় চোখ বুলিয়ে নিলাম অনেক খারাপ লাগছে।চোখ পানিতে টলমল করছে হঠাৎ রক্তিম বলে উঠলো,
~অধরা তোমার যদি এ বাসায় থাকতে মন না চায় তাহলে চলো আমরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবো।আমি এক আঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছে মুচকি হেসে তার দিকে ফিরে বললাম,
~এতো ভয় পান মাকে তাহলে বিয়ে করলেন কেন?আর আমি আমার শশুর বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না after all my sweet mother in law is waiting for me.বলেই হাঁটা ধরলাম বাড়ির ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আর রক্তিম অধরার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

চলবে।।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আমার শহরে তুমি পর্ব-০১

1

গল্পের নামঃ#আমার শহরে তুমি
লেখনীতেঃ# Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ১

~মিস অধরা,আপনার বাসায় ২দিন আগে আমি একটা প্রস্তাব রেখেছিলাম।কিন্তু আপনার মা আমাকে জানালো আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না। আমি কী কারণটা জানতে পারি?এসির রুমেও আমার কপাল বেয়ে ঘাম জড়ছে আমার৷ সামনে বসা সুপুরুষটার কথা শুনে আমার শিরদাড়া দিয়ে শীতল ঠান্ডা রক্ত প্রবাহিত হলো।আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
~আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।যেখানে আমার অতীত আছে সেখানে আমি কীভাবে আমার বর্তমান সাজাবো।সামনে থাকা ব্যক্তিটা আমার কথায় ফোস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,
~মিস অধরা,আপনিই তো আপনার অতীত নিয়ে বসে আছেন তাহলে কীভাবে আপনি তার থেকে পিছু ছাড়াবেন?তার এই কথায় আমি চোখ বড় করে বললাম,

~আমি কোনো অতীত নিয়ে বসে নেই বরং আপনারা আমাকে নিয়ে মজা করছেন কেন এমন করছেন আপনি?আপনার পরিবারের সদস্যের জন্য আমি এভাবেই ধুকে ধুকে মরছি।আমার সামনে থাকা যুবকটির কোনো ভাবান্তর হলো না সে বিরক্ত নিয়ে বললো,
~দেখেন আপনি আমার বেয়াইন না যে আপনার সাথে আমি মজা করবো।তাই বলছি আপনার বাসায় আমি আবার বিয়ের প্রস্তাব পাঠাচ্ছি যদি রাজি না হন তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না আপনাকে আমি আমার ঘরে বউ হিসেবে চাই। got it?বলেই সে টেবিল থেকে সানগ্লাস নিয়ে চোখে পরে হনহন করে বাহিরে চলে গেলো।আমি এখনও রেস্টুরেন্টের টেবিলে বসে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।

,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,
আমার নাম অধরা জাহান।অর্নাসের ৩য় বর্ষের ছাত্রী আমি। আমার পরিবারে মা-বাবা,আর ছোট দুই ভাই আছে তারা দুজন জমজ এবার কলেজের গন্ডীতে পা রাখলো।আর এতক্ষন যে ব্যক্তির সাথে কথা বললাম সে হলো রক্তিম রায়জাদা সে অনেক উচ্চ বংশের ছেলে পেশায় সে একজন শিক্ষক বাবার অজস্র টাকা থাকা সত্ত্বেও সে এই পেশায় জড়িত। ভার্সিটিতে সে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছেন গত ২মাস আগে শিক্ষকতা করা তার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো।সে আমার পূর্ব-পরিচিত কিন্তু তার সাথে তেমন কথা বলা হতো না আমার সাথে পরিচয়ের ৪মাস পর সে আমেরিকা চলে যায়।২ বছর পর তার সাথে আমার দেখা।আর তার সাথে দেখা করে যে এসব শুনতে হবে তা জানতাম না।
আমি জানি তার পরিবার আমাকে কখনো মেনে নিবে না যদি মেনে নিতোই তাহলে ২বছর আগেই আমাকে মেনে নিতো। থাক এসব আজ ভাববোনা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আমি রিক্সা নিয়ে চলে আসলাম বাসায়। বাসার সামনে এসে নেমে পরলাম রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে আমি বাসার ভিতরে ঢুকে পরলাম কলিংবেল চাপ দিতেই মা দরজা খুলে আমাকে বললো,

~দেখা করেছিস?আমি ক্লান্ত চাহনি দিয়ে বললাম,
~জ্বী মা।মা বললো,
~তুই একবার ভেবে দেখতে পারিস।আমি মায়ের কথায় চিল্লিয়ে বললাম,
~ভুলে গেছো অপমান মা।আমার জন্য তোমরা অনেক সহ্য করেছো আর নয়। আমি অনেক পাগলামী করেছি একজন মানুষের জন্য আমি তোমাদের কথা শুনিয়েছি।তোমাদের বাসা থেকে তারা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলো আমার সব মনে আছে।বলেই হুহু করে কেঁদে উঠলাম মা তার আঁচল দিয়ে চোখ মুছে আমাকে বললো,
~আর কাঁদিস না মা একই বাড়ির ছেলে বলে যে সে খারাপ হবে এমন তো নয়।আমি মাকে বললাম,
~উচ্চ বংশীয় লোক মা বলা যায় না একভাই যেভাবে ঠকিয়েছে আরেক ভাই ও সেভাবেই ঠকাবে।

,,,,,,,
,,,,,,,
রক্তিম বারান্দায় দাড়িয়ে আছে তার পিছে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পিছনে না ঘুরেই বললো,
~কী চাও আমার কাছে?মানুষটি কোনো কথা না বলে সেভাবেই দাড়িয়ে থাকলো রক্তিম আবার বললো,
~কী চাও বলে চলে যাও।এই বার সেই মানুষটির মুখ দিয়ে নারী কন্ঠ বের হয়ে আসলো।সেই নারী আর কেউ নয় রক্তিমের মা সে বলে উঠলো,
~রক্তিম তুই সেই থার্ড ক্লাস পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করবি।২বছর আগে তোর ভাইকে কীভাবে বশ করেছিলো দেখিস নি তুই ওই মেয়েকে বিয়ে করবি শুনে রাখ আমি ওই মেয়েকে এই বাড়ির বউ হিসেবে মানবো না।নিজের মায়ের মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনে যুবকের মাথায় রাগ উঠে গেলো গত ২৮ বছরে সে কখনো তার মায়ের কথার বিরুদ্ধে যায় নি কিন্তু আজ সে বাধ্য তার মনের কাছে তার ভালোবাসার কাছে।তার পরিবার যে পাপ করেছে তা সে তার ভালোবাসা দিয়ে মুছে দিতে চায়।সে তার মায়ের দিকে ফিরে শান্ত চাহনিতে বললো,

~মা আমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছি নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত আমি নিজে নিতে পারি।অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমাতে যাও।তার মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে বললো,
~মা আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।অতপর তার মা রাগে ফোস ফোস করতে করতে সে চলে গেলো তার রুমে।রক্তিম তার দৃষ্টি আকাশে রেখে ভাবছে যদি সে ২বছর আগে না চলে যেতে তাহলে আজ এমন কিছুই হতো না।ভেবেই সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো এই বিশ্বাসে সে চোখের পাতা এক করলো যে সকালটা হয়তো সুন্দর হবে।

,,,,,,
,,,,,,
সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে বাহিরে অনেক সোরগোলের আওয়াজ আমার কানে এসে লাগছে। আমি ওড়না মাথায় পেচিয়ে রুমের দরজা খুলে বের হলাম মাকে অনেক বার ডাকলাম সে কোনো প্রতিউত্তর দিলো না তাই আমি চলে আসলাম সোফার রুমে এসে দেখি রক্তিম রায়জাদা সোফার উপরে পায়ে পা তুলে বসে আছে। আমি তাকে দেখেই বললাম,
~আপনি এখানে কী করছেন?সে বাঁকা হেসে আমার কাছে এসে বললো,

~বিয়ের কনে কী জানেনা আজ তার বিয়ে বলেই আমার বাবার দিকে তাকালো বাবা মাথানিচু করে আমার কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বললো,
~অধরা আমার ব্যবসা রক্তিমের হাতে তুই যদি বিয়েতে রাজি না হস তাহলে সে আমাদের পথে নামিয়ে দিবে।আমি বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখ টলমল করছে।বাবার চোখে আবার পানি আসলো তাও আমার জন্য আমি রক্তিমের কাছে গিয়ে বললাম,
~আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না আজকে আপনার ক্ষমতা আছে তাই আপনি গরীবের উপর জুলুম করছেন। এসব একদিন ঠিক ফুরাবে আমার কথায় রক্তিন বললেন,
~তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বলো অধরা।সেই ২বছর আগের অধরা তুমি নও i am impressed. বলেই সে আমার হাতে বেনারসি শাড়ি দিয়ে বললেন,
~বিকেল ৪টায় রেডি থাকবে তোমার আর আমার বিয়ে।আর শুশুর আব্বা আমার পক্ষ থেকে কেউ আসবে না তাই কোনো আয়োজন করতে হবে না।আমাকে চোখ টিপ মেরে সে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

,,,,,
,,,,,
আমি এখনও হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছি এ লোক কী বলে গেলো।বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
~মা আমাকে মাফ করে দে এই ব্যবসাটা ২বছর ধরে তিলেতিলে আমি গড়েছি তোর ভাইদের কী হবে তাই আমি স্বার্থপর হয়ে গেলাম। আমি বাবার কথায় চোখ মুছে বললাম,
~চিন্তা করোনা বাবা। তোমার মেয়েকে নিয়ে খেলা শেষ হলে সে এসে দিয়ে যাবে।বলেই ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে মুখ চেপে ধরে কান্না করা শুরু করলাম আবার আমার অতীত আমাকে চেপে ধরলো ২বছর আগের সেসব লোকের সম্মুখীন আবার আমার হতে হবে কেন আমার সাথে এগুলো হয়।এগুলো ভাবছিলাম আর চোখের পানি ফেলছিলাম হঠাৎ ফোনের রিংটনে আমার ভাবনায় ছেদ ঘটলো আমি চোখ মুছে ফোন নিয়ে দেখলাম আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।আমি রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে বলে উঠলো,
~২ বছর আগের অপমান ভুলে গেছিস?এই কন্ঠটা শুনে আমার রাগ অনেক বেড়ে গেলো এই মানুষটি আর কেউ নয় রক্তিমের মা।আমি বললাম,
~ভুলে যাওয়ার মতো কিছু আপনি করেননি।রক্তিমের মা বললো,
~ভুলেও আমার ছেলের সাথে তোর যেন বিয়ে না হয়।আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
~আপনার ছেলেই তো আমার জন্য পাগল তাহলে কী করবো?আমি আপনার ছেলের বউ হয়ে শীঘ্রই আসছি বরণ ঢালা রেডি রাখবেন।বলেই ফোন কেটে দিলাম।আজ থেকে আরো এক নতুন অধরার সৃষ্টি হলো।

,,,,
,,,,
রক্তিমের মা অধরার এমন কথা শুনে হতবাক যে মেয়ে তার সামনে টু শব্দ করতো না সে কীভাবে আজ এতো কথা বললো।সে মনে মনে ভাবছে কীভাবে সে এই বিয়ে আটকাবে রক্তিমকে কীভাবে বুঝাবে।ছেলে তার এই মেয়ের জন্য কেন পাগল হলো।রক্তিম মায়ের রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো মায়ের কন্ঠ শুনে সে দাড়িয়ে যায় তারপর সব কথাশুনে অধরা হয়তো কোনো কঠোর কথা বলেছে তাই তার মা এতো ক্ষেপেছে সে মুচকি হেসে সেখান থেকে তার রুমে চলে গেলো।

,,,,
,,,
বিকেলে ঠিক ৪টায় রক্তিম এসে দেখলো অধরা রেডি হয়ে বসে আছে।তাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে রক্তিম এসে অধরার হাত ধরলো।
রক্তিম যখন আমার হাত ধরলো তখন আমি বললাম,
~বিয়ে তো করছেন কিন্তু এই বিয়েতে আপনার সর্বনাশ আছে।রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~তোমার চোখে এভাবেই আমার সর্বনাশ বলেই আমার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো তারপর ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করলো।মা-বাবা আর দুভাই শুধু দাড়িয়ে আছে কিছুক্ষন পর কাজী সাহেব চলে আসলো।

চলবে।।।