Saturday, July 26, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 136



বিয়ে থা পর্ব-২৪

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-২৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ)

‘বউ কথা কও’ এ উৎসব লেগেছে যেনো। ফাহিম মাহবুব ও ফারিন সবকিছুর আয়োজন করেছেন। ধারা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে স্বামী ও সন্তানের কাজকর্ম দেখছেন। তিনি ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন তার ছেলে পালিয়ে যাওয়া বউ নিয়ে বাড়ি ফিরছে। সাদামাটা এই আয়োজনটা বউ বরণ করার জন্যে। কাউকে দাওয়াত করা হয়নি, সবাইকে একেবারে জানানো হবে আনুষ্ঠানিক বিয়ের সময়। আজকের রান্নাটা করেছেন ফাহিম মাহবুব নিজে। তার অত্যন্ত প্রিয় খাবার চিকেন রোস্ট। ধ্রুবের থেকে অবগত হয়েছেন তাহার বউমা-ও চিকেন রোস্ট খেতে অত্যাধিক পছন্দ করেন। সুতরাং বসে থাকতে পারলেন না ফাহিম মাহবুব। স্ত্রীকে আজ রান্নাঘর থেকে ছুটি দিলেন। সবকিছু গুছিয়ে বাবা মেয়ে ফিটফাট হয়ে সোফায় বসলেন। আগে থেকে সোফাতে বসা ধারা আহমেদ আড়চোখে পরক করছেন এদের বাপ মেয়েকে। একজন খুশি ছেলে বউ নিয়ে আসবে বলে, আরেকজন খুশি ভাই সেই নরম তুলার মতো মেয়েটিকে নিয়ে আসবে বলে। ধারা কি জন্য খুশি হবেন? তিনি তো এসবের আদি-অন্ত কিছুর সাথেই জড়িত নন। ছেলে যখন বিয়ে করেছে তখনও তিনি ছিলেন না। ছেলের বউয়ের সাথে শ্বাশুড়ি হিসেবে তার কখনো কথা বা দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। একবার যা-ও হলো তা-ও ঝগড়ার মধ্য দিয়ে। মেয়েটিকে তিনি ভালো করে দেখেননি। তবে তিনি পুরনো সব ভুলে যাবেন। আজ তিনি মেয়েটিকে বৌমা হিসেবেই দেখবেন।

রাত সাড়ে নয়টা। বউ কথা কও এর গেইট দিয়ে ঢুকলো সেনাবাহিনীর জিপ গাড়িটি। ধ্রুব আগে নেমে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে নামিয়ে আনলো নিনীকাকে। হাতে হাত রেখে দাঁড়ালো সদর দরজার সামনে। ডোরবেল বাজাতে হবে না, দরজা আগে থেকেই খুলা। দরজার সামনে একটি বড়পাত্র। তারমধ্যে লাল রঙের আলতাসহ গোলাপের পাপড়ি। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে সব পর্যবেক্ষণ করলো। ফারিন হৈচৈ করতে লাগলো। নিনীকার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

‘ মাম্মা সিরিয়াল দেখে না? সেখানে দেখেছি এরকম করে বধূবরণ করে। সেজন্য আমিও এরকম ব্যবস্থা করেছি। ‘

ফাহিম মাহবুব মিষ্টি ও শরবতের ট্রে নিয়ে এক সাইডে দাড়িয়ে আছেন। তন্মোধ্যে এসে দাঁড়ালেন ধারা। গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করলেন নিজের বউমাকে। নিনীকার পড়োনে সাদা শার্ট ও ডেনিম প্লাজু। গলায় স্কার্ফ। ফারিন ক্যামেরা সেট করে এসে দাড়ালো। ধারা গম্ভীর স্বরে ছেলেকে বললেন,

‘ বউকে নিয়ে প্রবেশ করে ধন্য করো বাবা আমার। ‘

জুতো খুলে এক সাইটে রেখে, ধ্রুবের হাতে হাত রেখে নিনীকা আলতার পাত্রে পা রাখলো। হাটিহাটি পা ফেলে এসে থামলো ফাহিম মাহবুবের কাছে। ফারিন ট্রে থেকে মিষ্টি খাওয়াতে বললো। তারা একে অপরকে খাইয়ে দিলো। ফাহিম মাহবুব শরবত এগিয়ে দিলেন। কিচেনের পাশে দাড়ানো সার্ভেন্টরা মিটিমিটি হাসছে। ধারা গম্ভীর স্বরে বললেন,

‘ আমাকে দাও আমি দিচ্ছি। ‘

ফাহিম মাহবুব ট্রে দিয়ে দিলেন। ধারা নিজের কর্তব্য পালন করছেন। ছেলে ও ছেলে বউকে সোফায় বসালেন। ধ্রুবের মুখে বিরক্তির কোনো চাপ নেই। বরং সে আনন্দ পাচ্ছে। আড়চোখে নিনীকাকেও দেখে নিয়েছে। তার মিসেস যে বেজায় খুশি সেটা ধ্রুব আন্দাজ করতে পারছে।

সবাই সোফায় বসে আছে। নিনীকার মাথায় গলায় জড়ানো সেই স্কার্ফ। ফাহিম মাহবুব কথা বলে উঠলেন,

‘ দুজন অনেক জার্নি করেছো, ফারিন মা তোমার ভাবিকে ভাইয়ের ঘরে নিয়ে যাও। ‘

ফারিন ধীরে ধীরে নিনীকার তুলতুলে হাত ধরলো। তার চোখেমুখে উচ্ছাস। নিনীকা ধ্রুবের ইশারায় উঠে গেলো। সোফাতে কেবল তিনজন। ধারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

‘ বউ নিয়েই তবে এলে। ‘

ধ্রুব মাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।

‘ তোমার তাকে মেনে নিতে আপত্তি আছে মা? ‘

‘ একদম না, আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা ধরে থাকলে তো হবে না। বউ এসেছে বউয়ের মতোই যেনো থাকে। বলে দিও। ‘

ফাহিম মাহবুব ফুঁড়োন কাটলেন,

‘ তোমার কি কোথাও জ্বলছে ধারা? আমার পছন্দের মেয়েকে ধ্রুব বিয়ে করেছে বলে? ‘

ধারা ফুঁসে উঠলেন,

‘ একদম বাজে কথা বলবে না। তোমরা বাপ ছেলে একটা কথা মনে রেখো, পালিয়ে যাওয়া বউ নিয়ে এসেছো। আগেরবার আত্নীয় স্বজন জানতো না। তবে এবার জানবে। আগেরবারের মতো যদি কিছু হয় তো তোমাদের দুজনকে বউমার সাথে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে ঝুলিয়ে রাখবো। ‘

ধ্রুব ঠোঁট চিপে হাসছে।

‘ তাকে তুমি গড়ে নিও মা, একটু বেখেয়ালি তবে তুমি যদি শিক্ষক হও সে ছাত্রী হিসেবে পাশ করবে নিশ্চিত। কি পারবে না? ‘

ধারা ছেলের কান টেনে ধরলেন,

‘ ঠিক বাপের মতো হয়েছিস, কথার মারপেঁচে সব হাসিল করে নিস। ‘

ধ্রুব মিথ্যা ব্যথা পাওয়ার অভিনয় করলো। ধারা ছেলের এলোমেলো চুলে হাত ভুলিয়ে দিলেন।

‘ ঘরে যাও, ফ্রেশ হয়ে একেবারে টেবিলে নিয়ে এসো তাকে। আর হ্যাঁ তোমার ঘরে শাড়ি রাখা আছে। তাকে বলবে ওটা পড়ে নিতে। কেমন? ‘

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে উঠে গেলো। ফাহিম মাহবুব একা বাঘিনীর সামনে বসে থাকলেন। মিনমিন করে বললেন,

‘ আমি কি করবো? ‘

‘ তুমি গিয়ে খাবার টেবিলে রাখো যাও। সার্ভেন্ট সব গরম করে নিয়েছে। ‘

ফাহিম মাহবুব উঠে গেলেন। এটা তার শাস্তি। ছেলের মাকে না বলে ছেলেকে বিয়ে করানোর দ্বায়ে তাকে মাঝেমধ্যেই ধারা এমন শাস্তি দিয়ে থাকেন।

ধ্রুব রুমে এসেছে। তার রুমটা দক্ষিণ দিকে। খোলা বারান্দায় হরেকরকম ফুলের গাছ রয়েছে। ফারিন সেসবই দেখাচ্ছিল নিনীকাকে। ধ্রুবকে দেখে ‘তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসো’ বলে চলে গেলো। নিনীকার পায়ের তলায় এখনো কিছু আলতা লেগে আছে। ধ্রুবের রুমের সাদা মেঝেতে যার চাপ পড়ে গেছে। ধ্রুব শূন্যে তুলে ধরলো, একেবারে ওয়াশরুমে নামিয়ে দিলো।

‘ ফ্রেশ হয়ে একেবারে বের হবে। ওয়েট আমি শাড়ি দিচ্ছি। ‘

বিছানা থেকে শাড়ি দিলো ধ্রুব। নিনীকা শাড়ি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রইলো। ধ্রুবের ভ্রু কুঁচকে গেলো,

‘ দাড়িয়ে আছো কেন? গো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও। আমাকেও ফ্রেশ হতে হবে তো মিসেস। ‘

নিনীকা আমতা আমতা করলো,

‘ আসলে আমি শাড়ি পড়তে জানি না। ‘

ধ্রুব অবাক হয়ে তাকালো। পরক্ষণেই হেঁসে বলল,

‘ সমস্যা নেই, ফ্রেশ হয়ে বের হও, মোবাইলে দেখে পড়ে নিবে। সাহায্য করতে আমি আছি। ‘

নিনীকা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো ধ্রুব ফোন এক কোণে সেট করে রেখেছে। ভিডিও চলছে। নিনীকার পড়োনে ব্লাউজ ও পেটিকোট। নিচে জিন্স পড়তেও ভুলেনি বেচারি। ধ্রুবের সাহায্যে শাড়ি পড়তে সক্ষম হয় সে। যদিও লোকটা তাকে লজ্জা দিতে এক ইঞ্চি ও ছাড় দেয়নি। তাতে কি? তারই তো স্বামী।

ধ্রুব প্রায় ত্রিশ মিনিটে যুদ্ধ জয় করলো। ততোক্ষণে ফারিন দরজায় কয়েকবার টুকা দিয়ে চলে গেছে। বেচারা তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। একটা টাউজার ও টিশার্ট পড়ে বউকে নিয়ে ছুটলো খাবার টেবিলে।

ধারা আহমেদ মুগ্ধ চোখে দেখছেন। লাল শাড়ি পরিহিতা সদ্য গোসল করা রমনীটিকে দেখে তার চোখ জুড়িয়ে গেলো৷ ফারিন ফিসফিস করে বলল,

‘ দেখেছো মা? বলেছিলাম না? কতো তুলতুলে। ‘

ধারা গম্ভীর হলেন,

‘ না ধরেই বুঝবো কিভাবে তুলতুলে নাকি শক্ত? ‘

ফারিন নাক মুখ কুঁচকে বলল,

‘ আরে দেখতে নরম তুলতুলে মোমের পুতুল লাগছে না? আমি সেটা বলেছি। ‘

ধারা গলা কাঁকড়ি দিলেন,

‘ হ্যা সে লাগছে বৈকি। ‘

ফাহিম মাহবুব সযত্নে নিজের পুত্রবধূকে চেয়ার টেনে বসালেন। প্লেটে নিজ হাতে খাবার তুলে দিলেন। নিনীকা মাথা নিচু করে রইলো। এই বাড়িতে সব উল্টো হচ্ছে। কোথায় পুত্রবধূ হিসেবে সে সবাইকে খাবার বেড়ে দিবে তা না তার শ্বশুর তার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন। সবকিছু কেমন অন্যরকম!

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-২৩

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-২৩
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ)

মিথিলা ছলছল চোখে তাকালেন। বুকে মাথা রাখলেন সন্তপর্ণে।

‘ আমি তো তোমাকে ভালোবেসে শেখ বাবু বলেই ডাকবো। সেই পুরনো ডাক। যতোই তুমি ভয় দেখাও, ঘৃণা করতে বাধ্য করো। আমিও দেখবো কে জিতে। আমার ভালোবাসা নাকি তোমার নিজ থেকে তৈরি করা ঘৃণার এই দেয়াল! ‘

রমজান শেখ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। পিঠে এক হাত জড়িয়ে ধরলেন।

‘ কার সাথে কথা বলছিলে বললে না যে? ‘

মিথিলা অকপটে জবাব দিলেন,

‘ নিনীকার সাথে। ‘

রমজান কিঞ্চিৎ চমকালেন। কিন্তু তার প্রভাব মুখশ্রীতে পড়তে দিলেন না। বরং স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,

‘ নিনীকা! কি বললো সে? এতোদিন পর? ‘

‘ বলেছে অনেক কিছুই। আপনি কোনটা শুনতে চাইছেন? আপনাকে নিয়ে কোনো ঘৃণার বাক্য ছুঁড়ে দিয়েছে কি না? ‘

রমজান শেখের বুক মুচড় দিয়ে উঠলো। তিনিই মনে হয় প্রথম বাবা যিনি নিজ ইচ্ছেতে সন্তানের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা বেছে নিয়েছেন।

‘ হু, দেয়নি? ‘

মিথিলা ট্রাই ঢিলে করতে শুরু করেছেন,

‘ দিয়েছে, সাথে এটাও বলেছে সে তার বাবার থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত একজন পুরুষের সাথে সংসার শুরু করতে যাচ্ছে। দোয়া চেয়েছে আমার। ‘

রমজান শেখ এবার চমকে গেলেন।

‘ কি! সে সংসার করবে মানে? সে বিবাহিত মিথি। তার স্বামী আছে। পালিয়ে গেছে বলে সে যাকে তাকে নিয়ে সংসার শুরু করবে তা তো হবে না। আগে প্রথম জনের সাথে সেপারেশন বা ডিভোর্স হতে হবে। তারপর সে দ্বিতীয়বার সংসার করতে পারবে। তার কি বুদ্ধি লোপ পেয়েছে? ‘

মিথিলার চোখ উজ্জ্বল হলো,

‘ তুমি একটা ভালো কাজ করেছো মেয়ের জন্য শেখ বাবু। যদিও নিজের অজান্তে। তুমি চেয়েছিলে খোঁজখবর না নিয়ে বাল্যকালের বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে নিনীকার ঘৃণা বাড়িয়ে দিতে। অথচ দেখো হলো উল্টো। তোমার বাল্যকালের বন্ধুর ছেলেটি এতোই ভালো যে নিনীকা তার সাথে সংসার করার পথে পা বাড়িয়েছে। তুমি নিজের মেয়ের জন্য সঠিক জীবনসঙ্গী এনেছো শেখ বাবু। তোমার মেয়ে এদিক থেকে তোমাকে একটু হলেও ভালো ভাববে। ‘

রমজান শেখ শুধু বিস্মিত হচ্ছেন। যার সাথে বিয়ে দিয়ে তিনি মেয়ের মনে ঘৃণা বাড়াতে চাইলেন, সেই পুরুষকেই কি-না তার মেয়ে পছন্দ করেছে। আবার সংসার ও করবে। রমজান শেখ খোঁজখবর না নিয়ে বিয়ের আয়োজন করেছিলেন শুধুমাত্র নিনীকার মনের ঘৃণাটা বাড়াতে। ঘৃণা বাড়লো, নিনীকা বিয়ে করে ও পালিয়ে গেলো। কিন্তু! এখন সে সংসার করবে মাই গড!

রমজান শেখকে বিস্মিত হতে দেখে মিথিলা মিটিমিটি করে হাসলেন। ট্রাই ধরে টেনে চোখ টিপে বললেন,

‘ খুব আফসোস হচ্ছে শেখ বাবু? নিজ থেকে মেয়েকে ভালো পাত্রের সাথে বিয়ে দেওয়ার কারণে তোমাকে গুনে গুনে দশটা চুমু খাবো। এসো। ‘

রমজান শেখ ছুঁড়ে ফেললেন মিথিলার হাত। রাগে চোখমুখ শক্ত হলো তার। মিথিলার গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

‘ একদম না। আমার মেয়ে কেন সংসার করবে? সে কেনো কোনো পুরুষকে ভালোবাসবে? তুমি জানো না? তুমি জানো না পুরুষেরা ভালো হয়না! জানো না তুমি? তুমি কিভাবে ওকে অনুমতি দিলে? মাথায় কি গিলু নেই তোমার? আমার এই পঁচিশ বছর ধরে করা ঘৃণার অধ্যায়টা এভাবে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিলো ওই ছেলেটা! আমার মেয়ের মনে পুরুষদের নিয়ে ভিন্ন চিন্তা ঢুকিয়ে দিলো। ছাড়বো না ওকে আমি! নিনীকার সামনে আবারও প্রমাণ করবো পুরুষদের সত্তা কখনোই ভালো হয়না। ওরা শুধু পারে জুলুম করতে, নির্যাতন করতে। অত্যাচার করতে! পুরুষেরা কখনোই ভালো স্বামী, ভালো বাবা হতে পারে না। আমি নিনীকাকে আবারও বুঝিয়ে দিবো প্রিয়তমা। তখন তুমি গুনে গুনে একশোটা চুমু দিও কেমন? ‘

রমজান শেখ এক প্রকার ছুঁড়ে ফেললেন তাকে। মিথিলার কপাল গিয়ে লাগলো রেলিংয়ের কোণে। কপাল ফুলে গেলো। কিন্তু তিনি টুঁশব্দ ও করলেন না। বরং এগিয়ে গেলেন রমজান শেখের দিকে। চোখে চোখ রেখে অসহায় কন্ঠে বললেন,

‘ তুমি ভালো স্বামী হতে পারোনি, তবে ভালো প্রেমিক ছিলে শেখ বাবু। তুমি চাইলেই পারতে ভালো স্বামী হতে। পারতে ভালো বাবা হতে। কিন্তু তুমি তা হওনি। বরং নিজের সত্তাকে ঘৃণা করার সাথে সাথে আমাকে আমার মেয়েকে ঘৃণা করাতে বাধ্য করেছো। এসব করে কি পেয়েছো তুমি? ঘৃণা? কি করবে সেটা দিয়ে তুমি? এটা কি জীবন শেখ বাবু? তোমার মেয়ে তোমাকে বাবা ডাকে না শেখ বাবু! তুমি কতোটা ব্যর্থ বুঝতে পারছো? আজ চাইছো মেয়ের জামাইয়ের সাথে লাগতে! মেয়ের জীবনের ভিলেন হতে চাইছো? তুমি তো আমার জীবনে ভিলেন ছিলে, কিন্তু আমার মেয়ের জীবনের হইয়ো না প্লিজ। তাকে ভালো থাকতে দাও। আমার জীবন চলে গেছে, যে’কটা বছর বাঁচবো এভাবেই চলে যাবে। কিন্তু আমার মেয়ের সবে শুরু। তার ভরা সংসার হবে। স্বামী, সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার আমি দু-চোখ ভরে দেখবো। যা তুমি আমাকে দিতে পারোনি তা আমার মেয়েকে তার স্বামী দিবে। হিংসা হচ্ছে বুঝি? হিংসা করো না গো, তোমারই তো মেয়ে। তার সুখ তোমার কেন সহ্য হবে না? তোমার এই ট্রমা থেকে বের হও শেখ বাবু। পৃথিবীতে তাকিয়ে দেখো। আমরা চাইলেই সুখী হতে পারি। চলো আমার সাথে, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখালে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।

মিথিলা আঁকড়ে ধরলেন রমজানের হাত,

‘ চলো শেখ বাবু। আমরা ভালো করে বাকিটা জীবন কাটাবো। যেখানে শুধু ভালোবাসা থাকবে। পৃথিবীর সব পুরুষ এক হয়না শেখ বাবু। তুমি কেন নিজেকে একটি গোলকধাঁধায় আটকে রেখেছো? কেন এমন করছো তুমি? পৃথিবীর সবারই কোনো না কোনো দুঃখ থাকে শেখ বাবু। তাই বলে কি সবাই সুখের মুখ দেখা বন্ধ করে দেয়? চোখ খুলো শেখ বাবু। তুমি চাইলেই পারবে। আমি তোমার পাশে থাকবো। বলো তুমি রাজি? বলো..! ‘

মিথিলা চিৎকার করে কাঁদছেন। রমজান শেখের বুকে কিল-ঘুষি দিচ্ছেন একাধারে। নির্লিপ্ত রমজান শেখ ঢলে পড়লেন আচমকা। মিথিলার কাঁধে গরম জল অনুভব হলো। বুঝলেন মানুষটা অজ্ঞান হয়ে গেছে।

মিথিলার চিৎকারে সার্ভেন্ট ছুটে এলো। ডাক্তার ডাকা হলো। ডাক্তার এলেন আধঘন্টা পর। বললেন,

‘ জরুরি ভিত্তিতে ভালো ডাক্টারের শরণাপন্ন হোন। ব্রেইনে মারাত্মক ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছে যার কারণে সাময়িকভাবে শক খেয়ে অজ্ঞান হয়েছে। তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাবেন। যেভাবেই হোক। ‘

ডাক্তারটি তিনি যিনি মিথিলাকে দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে চিনেন। পারিবারিক ডাক্তার তাদের। মিথিলা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ডাক্তার প্রয়োজনীয় সবকিছু করে চলে গেলেন। অপেক্ষা করতে বললেন জ্ঞান ফিরার। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলো। মানুষটা সবে অফিস থেকে ফিরেছে। তিনি কেন যে উত্তেজিত হলেন। সারাদিন অফিসে কি না কি খেয়েছে। নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুধার্ত ছিলো। তার মধ্যে ব্রেনে চাপ পড়েছে। অজ্ঞান তো হবেই। মিথিলা নিজের গালে চড় মারলেন। আজ যদি বড়সড় কিছু হতো তবে তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেন না। থাক না মানুষটা যেভাবে ইচ্ছে, কাউকে তো কিছু করছে না। মিথিলা এতো বছর সহ্য করেছেন আরও কয়েক বছর সহ্য করলেন না-হয়। ক’দিন ই বা বাঁচবেন আর। মানুষটাকে সারাজীবন সহ্য করে নিজের ভালোবাসার প্রমাণ দিবেন না-হয়। রমজান শেখ অন্তিম অধ্যায় পর্যন্ত দেখবে আর আফসোস করবে তাকে ভালোবেসে ঘৃণা ভরা সংসারেও মিথিলা কিভাবে টিকে ছিলেন পুরো একজীবন। শুধুমাত্র ভালোবেসে! হাহ্ রমজান শেখের ওই আফসোস ভরা মুখটা মিথিলার বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে। দীর্ঘশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উচ্চারণ করলেন,

‘ মৃত্যু আয়, দ্রুত আয়। শেখ বাবুর আফসোস হয়ে আয়! ‘

মিথিলা বেগমকে অবাক করে দিয়ে রমজান শেখের জ্ঞান ফিরলো। এবং তিনি স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের সহিত বললেন,

‘ আমি সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাবো মিথি। তুমি আমাকে সুস্থ করতে যা করতে হয় সব করো। আমি কোনো বাঁধা দিবো না আমার প্রিয়তমা। ‘

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-২২

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-২২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ )

সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। ধ্রুবের হাত এখনো ড্রাইভিং এ ব্যস্ত। মাঝে মধ্যে তারা থেমে দাড়িয়েছে। মাঝে মধ্যে এদিক সেদিক ঘুরেছে। খেয়েছে রেস্টুরেন্টে। তাদের দুজনেরই বাড়ি ফেরার তেমন তাড়া নেই। ঘুরেফিরে যখন তখন ফিরবে। ততোক্ষণে গন্তব্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটু এনজয় তো করাই যায়। নিনীকা মুঠোফোন হাতে নিয়ে দেখলো চার্জ নেই। অগত্যা ধ্রুবের মোবাইল চাইলো। ধ্রুব এগিয়ে দিলো।

‘ কাকে ফোন করবে মিসেস? ‘

‘ মা’কে। ‘

নিনীকা নাম্বার তুলে ডায়াল করলো মিথিলার নাম্বারে। সন্ধ্যা বেলা মিথিলা একলা বারান্দায় বসে থাকেন। সাতটার পর রমজান শেখ অফিস থেকে ফিরবেন, তিনি বারান্দায় দাড়িয়ে সে-ই দৃশ্যই দেখেন মনোযোগ দিয়ে। মানুষটা গাড়ি থেকে যখন এক পা বের করে তখন তার হৃদয় কম্পিত হয়। যখন নেমে দাড়ায় সুদর্শন পুরুষদের মতো, তখন মিথিলা বার-বার প্রেমে পড়েন। এই বয়সে এসেও মানুষটা কতো সুদর্শন, কতো সুন্দর! মিথিলার ভাবনার মাঝে তার হাতের মুঠোফোন বেজে উঠলো। স্কিনে অপরিচিত নাম্বার দেখে রিসিভ করলেন না। কিন্তু দ্বিতীয়বার কল আসতেই রিসিভ করে কানে ধরলেন। ওপাশ থেকে নিনীকার গলা শুনা গেলো।

‘ মা…’

মিথিলা চমকে গেলেন। প্রায় সাড়ে ছয়মাস পর সন্তানের কন্ঠস্বর শুনছেন তিনি। তার বুকের ভেতর অদ্ভুত ভাবে কাঁপতে লাগলো। দু’চোখের কোণে জল জমলো। ঠোঁট চেপে কান্না আটকিয়ে ডাকলেন,

‘ নিনীকা…? ‘

‘ হ্যাঁ মা..। ‘

মিথিলা এক হাতে মুখ চেপে ধরলেন। তার বিশ্বাস হচ্ছে না। তিনি তো ভেবেছিলেন এ জনমে তার মেয়ের সাথে কখনোই কথা হবে না। মেয়েটা যে একরোখা, অভিমানী। যা সিদ্ধান্ত নেয় তার বিরুদ্ধে কখনোই কিছু করবে না। যেমনটা করেনি বিয়ের বেলাতেও। বাবাকে ঘৃণা করে বলে পৃথিবীর সব পুরুষের প্রতি তার ঘৃণা। তার মতে সব পুরুষেরা এক। সেজন্য ছোটবেলায় একবার রমজান শেখের অমানুষিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বলেছিলো,

‘ পৃথিবীর সব পুরুষের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মাক। মেয়েরা পুরুষদের সম্পর্কে প্রথম ধারণা লাভ করে নিজের বাবা থেকে। আমি করলাম। তুমি জেনে রেখো মা, আমি নিনীকা শেখ কখনোই রমজান শেখদের মতো পুরুষদের কাছে নিজেকে সঁপে দিবো না। আমি আজ থেকে জানলাম, মেনে নিলাম বাবা নামক পুরুষেরা সন্তানদের ইচ্ছেকে শুধু মেরে ফেলতেই পারে। আর স্বামী নামক পুরুষেরা শুধু গায়ে হাতই তুলতে পারে। করতে পারে নির্যাতন। যেমনটা তুমি সয়ে এসেছো মা। কিন্তু আমি সইতে পারবো না। সেজন্য আজ থেকে পুরুষদের প্রতি আমার তীব্র ঘৃণা। এই ঘৃণা কখনো কমে না যাক। পৃথিবী জানুক সব বাবারা ভালো হয়না! ‘

মিথিলা শেখের ভাবনার মধ্যে নিনীকা মৃদু জোরে ডাকলো,

‘ মা, মা, মা,..’

মিথিলা চমকে বললেন,

‘ হ্যাঁ মা..?’

নিনীকা অভিমানী কন্ঠে বলল,

‘ আমাকে তুমি ভুলে গেছো? ‘

মিথিলা আবারও চমকালেন, নিনীকার কন্ঠে অভিমান। অবিশ্বাস্য!

‘ নিনীকা, আমার মেয়ে। মা আমার তুই কেমন আছিস?’

নিনীকার কন্ঠে উচ্ছ্বাস ঝরে পড়লো,

‘ আমি ভালো আছি আমি। এখন খুব খুব বেশি ভালো আছি। তোমাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে মা। তুমি কি শুনবে? ‘

‘ কি বলবি মা বল? মা শুনবো তার কথা। ‘

নিনীকা আড়চোখে ধ্রুবকে দেখে নিলো। বলতে শুরু করলো,

‘ আমি বাংলাদেশে আছি মা। এই মুহুর্তে মেজর ধ্রুব মাহবুব অর্থাৎ আমার হাসবেন্ডের সাথে জিপে বসে আছি। সে একমনে ড্রাইভ করছে। যাতে আমাকে নিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে তার বাড়িতে পৌছাতে পারে। তার এই মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভিং করাতেও আমি আমার প্রতি তার গুরুত্ব দেখতে পাচ্ছি মা। ‘

মিথিলা ভয়াবহ রকমভাবে চমকালেন।

‘ কিহ্! কিভাবে তুমি..ধ্রুব..আমি কি ঠিক শুনছি নিনী?’

নিনীকা মুচকি হাসলো,

‘ তুমি ঠিক শুনছো মা। আমার মনে হচ্ছে তোমার কথা লেগে গেছে। তুমি বলতে না? পৃথিবীর সব পুরুষ একরকম হয়না? আমার জন্যে কেউ না কেউ থেকে যাবে? তোমার কথা লেগে গেছে মা। আমার জন্যে সত্যিই কেউ থেকে গেছে। আমাকে পুনরায় ভাবতে বাধ্য করেছে সে। আমার ভেতরের সব জটিল ভাবনার সুতো ছিঁড়ে নিজের জন্য আমার মনে স্থান করে নিয়েছে। এমন জটিল কাজ যে করে ফেলতে পারে তাকে কি আমি সুযোগ না দিয়ে থাকতে পারি মা? সে সবার থেকে আলাদা বলেই তাকে আমি সুযোগ দিচ্ছি। তোমার কি এ বিষয়ে কিছু বলার আছে মা? ‘

মিথিলা চোখে অশ্রু নিয়ে হাসলেন,

‘ একদম না মা আমার। আমার এতো খুশি লাগছে তোমাকে আমি ফোনে বলে বুঝাতে পারবো না। আল্লাহ সেই সন্তানের মা বাবাকে দীর্ঘজীবী করুন। এমন সন্তান জন্ম যারা দিয়েছে তারা কতো ভালো মানুষ জানো? মা বাবা ভালো বলেই সন্তান এতো ভালো। আমি চাইবো তুমি সাংসারিক জীবনে সুখী হও। নিজের ওভারথিংকার ভাবনাটা একপাশে সরিয়ে রেখে ভালোবেসে সবকিছু চিন্তা করবে। দেখবে নেগেটিভ কোনো ভাবনাই মনে আসবে না। মা তোমাকে শুভকামনা জানাচ্ছে নিনীকা। কত বড় হয়ে গেছো তুমি। আমার মা আমার নিনীকা সংসার করবে! ভাবতে পারছো কতোটা খুশি হয়েছি আমি? অনু়ভব করতে পারছো তো? ‘

‘ পারছি মা। আমার মনে হচ্ছে তোমার এই খুশির জন্যে হলেও আমাকে নেগেটিভ সব চিন্তা এক সাইডে রেখে সাংসারিক জীবনে পা রাখা উচিত। তুমি কতোদিন পর এমন খুশি হয়েছো মা? ‘

মিথিলা চুপ থাকলেন। এর থেকে বেশি খুশি ও কষ্ট দু’টো সেদিনই পেয়েছেন। যে-দিন নিজের স্বামীর অতীত জেনেছেন। মেয়েটা ছোট থেকে বাবাকে নিয়ে ভুল ধারণা নিয়ে বড় হয়েছে। এখন কিছু বললে উল্টো প্রভাব ফেলবে। সুতরাং এখন কিছু বলা ঠিক হবে না। বাপ-মেয়ে দুটোকেই তিনি সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাবেন। নিনীকার ওভারথিংকিং মারাত্মক! যখন একবার ধরে সব ছাড় খাঁড় করে তবেই ছাড়বে। মেয়েটা আগে সাংসারিক জীবনে পা রাখুক। দিন যাক, তিনি ধ্রুবের সাথে কথা বলবেন। সাথে বুঝাবেন রমজান শেখ কে। তার মেয়ে সংসার করবে তা জেনে রমজান শেখের অনুভূতি কিরকম হবে? বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে মিথিলার।

তার ভাবনার মধ্যে গেইট দিয়ে ঢুকলো কালো একটি গাড়ি। মিথিলা তৎক্ষনাৎ বললেন,

‘ নিনী মা আমার, এখন রাখছি। তোমার নতুন জীবনের জন্যে অনেক শুভকামনা জেনো সোনা আমার। মা তোমার পাশে সবসময়ই আছি। আমার জামাই রাজাকে তার আরেক মায়ের স্নেহময় ভালোবাসা জানিয়ে দিও, কেমন? ‘

মিথিলা মোবাইল কান থেকে নামালেন। ততোক্ষণে রমজান শেখ বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছেন। গটগট পায়ে হেঁটে এসেছেন মিথিলার কাছে। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বললেন,

‘ তুমি কার সাথে কথা বলছিলে? ‘

মিথিলা চমকালেন,

‘ আমি ফোনে কথা বলছিলাম আপনি জানলেন কিভাবে? ‘

রমজান শেখ ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন,

‘ ডেয়ার মিথি, প্রিয়তমা আমার। তুমি এতো বোকা কেন? আমার রুমের বারান্দা থেকে শুরু করে ওয়াশরুম পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা। তুমি যে ওয়াশরুমে যাও সেটাও আমি দেখতে চাই। বারান্দায় ফোনে কথা বলছো সেটা বুঝতে পারব, না? ‘

মিথিলা ভড়কে গেলেন। নাক-মুখ কুঁচকে গেলো তার।

‘ শেষ পর্যন্ত ওয়াশরুম ও বাদ রাখলেন না? ছিঃ! ‘

‘ তুমি ফোনে কথা বলতে বলতে কাঁদছিলে কেন মিথি? কে ছিল ফোনের ওপাশে? বলো আমায়! ‘

মিথিলা ঢুক গিললেন।

‘ তোমাকে বলা যাবে না, এসেছো ফ্রেশ হও। তারপর রিলাক্স করো গো। ‘

রমজান শেখ ভ্রু কুঁচকে তাকালেন,

‘ আমাকে অর্ডার করছো? সাহস বেড়ে গেছে দেখছি। ‘

মিথিলা মাথা নিচু করে ফেললেন,

‘ এইতো এখন মাথা নিচু রেখে কথা বলছি, খুশি হয়েছেন? ‘

রমজান শেখ পায়ের গতি বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন। হাত রাখলেন কোমড়ে। নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আঙুলের সাহায্যে মুখ উঁচু করলেন।

‘ তুমি যখন আমার সাথে আগের মতো চোখে চোখ রেখে কথা বলো, তখন আমার অনুশোচনা হয় মিথি। আমার মনে হয় আমি না চাইতেও তোমাকে এক আকাশ দুঃখ দিয়ে ফেলেছি। তুমি কখনো আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলবে না মিথি। আমার নিজের প্রতি ঘৃণা বেড়ে যায়! যখন আগের মতো তুমি বলে সম্মোধন করো তখনও ঘৃণা হয়। যখন ভয় পেয়ে আপনি বলে সম্মোধন করো তখনও ঘৃণা হয়। তুমি আমাকে আগের মতো রমজান শেখ বলে ঘৃণা ছুড়ে দিও মিথি। তাহলে আমার অনুশোচনা হবে না। আমি জানবো তুমি আমাকে আগের মতোই ঘৃণা করো! ‘

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-২১

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-২১
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ)

ফারিনকে বলা এক সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া কথা রাখতে চলেছে ধ্রুব। আজ সে নিনীকাকে নিয়ে রওনা হবে ‘বউ কথা কও’ এর উদ্দেশ্যে। ডিউটি তার শেষ। বর্তমানে সে দাড়িয়ে আছে বান্দরবানের উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তায়। জিপ গাড়িতে পিঠ এলিয়ে দিয়েছে। হাতে গগলস নিয়ে নাড়ানাড়ি করে চারদিকে তাকাচ্ছে। অপেক্ষা নিনীকার। ঘড়ির কাটা দশ মিনিট অতিক্রম করলো। নিনীকা ও সুমিত্রা এসে বসলো জিপে। সুমিত্রা চটাস করে কথা বলছে। জোর করে নিনীকাকে বসিয়ে দিয়েছে সামনে। সে ব্যাগপত্র নিয়ে বসেছে পেছনে।

‘ আমাকে সড়কে উঠে গাড়িতে তুলে দিলেই হবে। বাকিপথ চলে যেতে পারবো কোনো চিন্তা করবি না। ‘

ধ্রুব ড্রাইভ করার ফাঁকে নিনীকার দিকে তাকিয়ে দেখছে। বলল,

‘ তবুও আমার দায়িত্ব আছে শালীকা। আপনাকে এক ছাড়া যাবে না। এক কাজ করা যায় আপনিও আমাদের সাথে চলুন। ‘

সুমিত্রা ইতস্তত করে বলল,

‘ যাবো জিজু বাট অন্য কোনো দিন। আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে, বুঝতেই পারছেন এ সময় বাড়ি ফেরাটা কতোটা ইম্পর্ট্যান্ট? তবে আপনার ও নিনীকার আনুষ্ঠানিক বিয়েতে আমি অবশ্যই থাকবো। সাথে বর ও থাকবে। আপনাদের দুজনকে কিন্তু আমার বিয়েতে যেতে হবে। তাছাড়া নিনীকা তো পড়াশোনার জন্য শিলিগুড়িতে যাবেই আবার তাই না? দেখা হওয়ার কতো কারণ আছে দেখেছেন? ‘

‘ ধরুণ আপনার বান্ধবীকে আমি ইন্ডিয়াতে আর পড়তে দিলাম না, তখন কি করবেন? ‘

সুমিত্রা নাক ফুলালো,

‘ একদম আপনি এরকম করবেন না। আমি জানি আপনি ওকে পড়তে দিবেন। এবং শিলিগুড়িতেই দিবেন। ‘

ধ্রুব ঠোঁট উল্টালো,

‘ আপনার বান্ধবীকে যে আমার প্রয়োজন শালীকা। সে যাবে, তবে যে কটা দিন আমি ছুটিতে আছি ততোদিন সে বাংলাদেশেই থাকবে। এবং তারপর আমি তাকে নিজে গিয়ে শিলিগুড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো। পারলে ডিউটি অবস্থায় সময় ফেলে মাঝে মধ্যে চলেও যাবো তার কাছে। ‘

সুমিত্রা হাসলো,

‘ সে তো যাবেনই, তবে জিজু নিনীকা যখন মাস্টার্স কমপ্লিট করে ফেলবে তখন কিন্তু আপনাকে ডিউটি ফেলে দৌড়াতে হবে না। ওকে নিজের সাথে সাথে রাখতে পারবেন। যেখানেই আপনার বদলি হয় সেখানেই ও আপনার সাথে থাকতে পারবে। ‘

ধ্রুব আড়চোখে নিনীকাকে দেখে নিলো।

‘ সে তো ঠিকই, তবে আমার ম্যাডাম যদি চাকরি বাকরি করতে চান তাহলে সে চান্স হয়তো থাকবে না। চাকরিসূত্রে দুজন দু’শহরে অবস্থান করবো হয়তো। ‘

নিনীকা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

‘ আপনারা কি শুরু করেছেন বলুন তো? যখন যেটা আসবে তখন দেখা যাবে। আগে তো শ্বশুরবাড়িতে পা রাখি। জানি না ভাগ্যে কি আছে। আমার জন্যে না জানি কি কি অপেক্ষা করছে। আফটার’অল পালিয়ে যাওয়া বউ বলে কথা। ‘

ধ্রুব ফুস করে শ্বাস ছাড়লো,

‘ তুমি কোনো কারণ বসত সেটা করেছো। আমি এদিকটা দেখে নিবো। কেউ যাতে তোমাকে কোনো রুপ অপমান বা কথা শুনাতে না পারে সেটা দেখার দায়িত্ব আমার। সো চিল থাকো মিসেস। আমি আছি না? ‘

সুমিত্রা হাসছে,

‘ আপনাদের ভালোবাসায় নজর না লাগুক। ‘

উঁচু উঁচু পাহাড় পেরিয়ে তারা সড়কে চলে এসেছে। সুমিত্রাকে ভারত’গামী টেনে তুলে দিবে নিরব। যে বর্তমানে একটি কালো গাড়িতে বসে আছে। সুমিত্রা ধ্রুবের দিকে তাকালো। ধ্রুব ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো,

‘ আপনাকে একা ছাড়াটা ঠিক হবে না, যতোই হোক আমার মিসেসের বান্ধবী হোন। ক্যাপ্টেন নিরব আয়মান আপনাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবে। বাকিটা পথ আপনি একাই সাচ্ছন্দ্যে চলে যেতে পারবেন বলে আমার ধারণা। ‘

সুমিত্রা কৃতজ্ঞতা চোখে তাকালো,

‘ আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না জিজু। বাংলাদেশের অনেক কিছুই আমি চিনিনা। আমি বলা সত্ত্বেও আপনি আমার জন্যে এতোটুকু করেছেন সেজন্য আপনাকে আমি আমার বিয়েতে ডাবল রোস্ট খাওয়াবো বলে কথা দিচ্ছি। নাও এখন আসি? ‘

সুমিত্রার ব্যাগপত্র ধ্রুব গাড়িতে রাখলো। নিনীকা ও সুমিত্রার দীর্ঘ একটি আলিঙ্গন হলো। নিনীকা বিরবির করে বলল,

‘ আবারও দেখা হবে। আমাকে ভুলে যাস না। ‘

সুমিত্রা আবেশিত হলো,

‘ একদম না, আগে পৌঁছাই গিয়ে। তারপর সবদিক দেখে আমরা আবারও শিলিগুড়িতে দৌড়ে বেড়াবো কেমন? একদম বেশি বেশি ভাববি না। যা হবে ভালোর জন্যে হবে। নতুন পরিবারে মানিয়ে নিতে একটু আনইজি লাগবে প্রথম। তবে আমার বিশ্বাস যার একটি ধ্রুব আছে তার এরকম ছোটোখাটো ব্যাপারে কোনো অসুবিধা হতেই পারে না। ‘

ধ্রুব নিরবকে চোখের ইশারায় সব বুঝিয়ে দিলো। সুমিত্রাকে নিয়ে নিরব চলে গেলো ভারত’গামী ট্রেনের উদ্দেশ্যে। সড়কে তারা দুজন। সময়টা সকাল নয়টা। চারিদিকে মৃদু বাতাস বইছে। ধ্রুবের পড়োনে ডেনিম প্যান্টের সাথে কালো টিশার্ট। নিনীকা আড়চোখে নিজের মানুষকে দেখে নিচ্ছে। মানুষটাকে কালোতে দারুণ মানায়। টি-শার্টের উপর দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে বলিষ্ঠ শরীর। নিনীকা ঢুক গিললো, তার নিজেরই না নজর লেগে যায়।

ধ্রুবের চোখে চোখ পড়তেই সে চোখ সরিয়ে নিলো। ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,

‘ দেখতে হয় ভালো করে তাকিয়ে দেখো। আমি তোমারই৷ আমাকে দেখার অধিকার তোমার আছে। নাও লুক এট মি মিসেস। দেখো৷ চোখ ভরে দেখো। ‘

নিনীকা লজ্জা পেলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে চায় না বলে ধ্রুবের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। ধ্রুব আকাশ পাতাল কাপিয়ে হাসলো।

‘ বাবা বলেছিলেন তার বউমা নাকি আমাকে হাসতে না দেখে পালিয়ে গেছে। অথচ দেখো তোমার সঙ্গে থাকলে আমি সবমসময়ই হাসি। কারণে-অকারণে হাসি। তুমি একটা মানুষ নিনীকা, যাকে দেখলে অকারণেই কারো চারিপাশে এক ধরনের আনন্দিত ভাব চলে আসে। যার কারণে আমি সবমসময়ই হাসতে পারি। যার কারণে আমার চারিপাশ সবসময়ই উজ্জ্বল মনে হয়। তুমি আমার জীবনের এক টুকরো হাসি নিনীকা। ‘

নিনীকার পড়োনের সাদা পাতলা শার্টটি বাতাসে উড়ছে। চুলগুলো উপরে তুলে বেঁধে রাখা। তা থেকে একটা দুটো চুল বের হয়ে কপালে জায়গা করে নিয়েছে। ধ্রুব হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো। জিপে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ঠিক করে দিলো কপালের সামনে আসা চুল। কানে গুঁজে দিয়ে বলল,

‘ সেদিন সীমান্তে ঘুমন্ত অবস্থায় যদি তোমাকে স্বপ্নে না দেখতাম, তবে আজ তুমি আমার হতে না। ‘

নিনীকার এক হাত ধ্রুবের বুকের পাশে। ভ্রু কুঁচকে তাকালো,

‘ স্বপ্ন? কিরকম স্বপ্ন? ‘

ধ্রুব গাল টেনে দিলো,

‘ আমি তোমাকে আবছায়া দেখেছি প্রথম স্টেশনে। পুরো মুখশ্রী দেখিনি। তারপর দেখেছি স্বপ্নে। সেখানেও তুমি আবছায়া হয়ে ছিলে। আমাকে আহবান করছিলে ‘তুমি এসো, একবার এসো।’ আমি সেই অলীক কন্যার আহবানে বসে থাকতে পারিনি। ছুটে গিয়েছি সব ভুলে তার কাছে। দার্জিলিংয়ে পা রাখাটা পরিকল্পনা ছিল। সুমিত্রাকে আমিই বলেছিলাম তোমাকে দার্জিলিং নিয়ে আসতে। ক’জ আমরা প্রথমবার সামনাসামনি নিজেদের মুখ দর্শন করবো। স্মৃতিচারণ করার জন্যেও ভালো একটি জায়গাতে মুখ দর্শন করা উচিত। যাতে ভবিষ্যতে আমার প্রজন্মকে বলতে পারি তাদের মায়ের প্রথম মুখ দর্শন করেছি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটি জায়গা দার্জিলিংয়ে। ‘

নিনীকা পিটপিট করে তাকালো,

‘ এতো অল্প সময়ে এতো কিছু মাথায় আসে কিভাবে আপনার? ‘

ধ্রুব শরীর দুলিয়ে হাসলো,

‘ একবার জড়িয়ে ধরবে? ‘

নিনীকা সম্মোহনকারী মেজরের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারলো না। ধ্রুব দু’হাত মেলে দিলো, নিনীকা ঢলে পড়লো সেথায়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ঢুকে যেতে চাইলো বক্ষে। ধ্রুবের বুকের উঠানামা বাড়লো। নিনীকাকে মিশিয়ে নিলো সর্ব শক্তি দিয়ে। চুলের ভাজে ছুঁইয়ে দিলো ওষ্ঠ। সেথায় ঠোঁটের স্পর্শ রেখেই প্রগাঢ় প্রেম নিয়ে শুধালো,

‘ এই যে এলে,
এই চলে আসাটাই যেনো শেষ হয়।
সারাজীবন ধ্রুবের বুকে’ই
মিসেসের স্থান যেনো রয়। ’

নিনীকা বিরবির করলো,

‘ এই যে এলাম,
এটাই শেষ আসা।
যাবো না কভু আর
ধ্রুবের ওই প্রেমময় বুক ছেড়ে
মেঘেরও ওপারে। ’

আলিঙ্গন দীর্ঘ হলো। একসময় নিনীকা নিজেকে শূন্যে অনুভব করলো। ধ্রুব তাকে পাশের সিটে বসিয়ে দিয়েছে। চোখে গগলস পড়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। তাদের গন্তব্য এবার ঢাকা। যেথায় অবস্থান করছে ‘বউ কথা কও’ এ প্রজন্মের বউয়ের জন্যে!

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-২০

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-২০
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ)

ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। শরীরের শর্টস ভিজে চুপচুপে হয়ে লেপ্টে আছে শরীরে। সাদা শার্ট ভেজার কারণে ভেতরের অন্তর্বাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে গালে, কাঁধে। ক্যাম্প থেকে একটু দূরে অবস্থান করছে সে। হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছে দ্রুতগতিতে। তন্মধ্যে পেছন থেকে টেনে ধরলো একটি হাত। টেনে নিয়ে যেতে লাগলো বিপরীত দিকে। মেয়েটি চেচিয়ে উঠলো।

‘ ছেড়ে দে সুমিত্রা, আমাকে যেতে হবে। ’

সুমিত্রা ছাড়লো না। বরং শক্ত করে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

‘ তুই পাগল হয়ে গেছিস, নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ। মেজর তার বউকে এভাবে সব সৈনিকের সামনে দেখলে খুশি তো হবেই না বরং মুখ ফিরিয়ে নিতে দু’বার ভাববে না। ’

নিনীকা চুপসে গেলো। তিরতির করে কাঁপছে তার ঠোঁট। আকাশ গর্জন করছে মাঝে মধ্যে। সুমিত্রা পেছন ফিরে একবার দেখে নিলো।

‘ চারিদিকের অবস্থা দেখেছিস? জ্বর হবে নিশ্চিত। তোর জন্য আমিও ভিজে গেছি। ‘

‘ অন্ধকারে তেমন কিছুই কেউ দেখতে পাবে না, তুই শুধু শুধু চিন্তা করছিস। ‘

‘ ওদের তাঁবুর পাশে মশাল আছে নিনীকা, এতো অবুঝ হচ্ছিস কেন? ‘

নিনীকা টু শব্দ ও করলো না। তার হাত টেনে নিয়ে সুমিত্রা কটেজে পৌঁছালো। দুজন কাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে কাঁথার তলে ঢুকে উষ্ণতায় তলিয়ে গেলো। মাঝে মধ্যে হাঁচি দিচ্ছে নিনীকা। সাথে ভেসে আসছে সুমিত্রার রাগী স্বর,

‘ দেখেছিস? বলেছিলাম না? লাগলো তো ঠান্ডা! ‘

নিনীকা ঠোঁট উল্টে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। তার ভালো লাগছে না। বালিশের নিচ থেকে বের করলো মুঠোফোন। ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে। আশ্চর্যের বিষয় কল ঢুকলো। এবং রিসিভ ও হলো। নিনীকা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। ওপাশ থেকে ভেসে এসেছে ধ্রুবের গলার স্বর,

‘ এনি প্রব্লেম? ‘

নিনীকা বিস্মিত হলো। ধ্রুব তার নম্বর চিনে। অবশ্য চিনবে না-ই বা কেনো, সুমিত্রা নাম্বার দিবে না তা কি হয়? সে বহু কষ্টে উচ্চারণ করলো,

‘ আপনার নাম্বার একটু আগে বন্ধ দেখাচ্ছিল। ‘

ধ্রুবের নির্লিপ্ত উত্তর,

‘ পার্সোনাল নাম্বার বন্ধই থাকে, জরুরি না হলে অন করা হয় না। ‘

‘ এখন কেন অন করেছিলেন? ‘

‘ বিশেষ কারো খুঁজ নিতে, বাট তার আগেই তুমি ফোন করলে। ‘

নিনীকা শ্বাসরুদ্ধ করে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ সে-ই বিশেষ কেউ-টা কে? ‘

ধ্রুব নিঃশব্দে হাসলো,

‘ আর যাই হোক সে তুমি নও। ‘

নিনীকার কোথাও আঘাত লাগলো কি? হয়তো। সে ফুপিয়ে উঠলো,

‘ সাড়ে তিন মাসও হয়নি, বিশেষ কেউ জুটিয়ে ফেলেছেন? ‘

‘ জুটিয়ে ফেলিনি, সে সবসময়ই ছিল। ‘

নিনীকা রেগে গেলো,

‘ তবে আমার কাছে গিয়েছিলেন কেন? নাটক করতে? দয়া দেখাতে? আপনারা সব পুরুষ এক রকম। আপনাকে আমি ভিন্ন ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি! আপনিও সেরকমই প্রমাণিত হলেন। আই হেইট ইউ মিস্টার ধ্রুব মাহবুব। ‘

সুমিত্রা মোবাইল কেড়ে নিলো। নিজে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ বিশেষ কেউ -টা কে জিজু? কেন আমার বান্ধবীকে কাঁদাচ্ছেন বলুন তো? ‘

ধ্রুব বলল,

‘ বিশেষ কেউ টা আমার বোন শালীকা। আপনার বান্ধবীকে বলবেন, যেদিন সত্যিকারের বিশ্বাস করতে পারবে, ভরসা করতে পারবে সেদিন যেনো আসে। ধ্রুব মাহবুব ফিরিয়ে দিবে না। কিন্তু যদি কয়েক ঘন্টার অস্থায়ী বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসে, এবং তা সামান্য কথাতেই ভেঙে যায় তবে সেরকম কিছু আমার দরকার নেই। হয়তো তাকে পাবো না, তবে কখনো মনে হবে না আমার পার্টনার আমাকে অস্থায়ী বিশ্বাস করে, যার স্থায়িত্ব সর্বোচ্চ এক ঘন্টা বা এক দিন! ‘

ধ্রুব ফোন রেখে দিলো। সুমিত্রা অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে। নিনীকা কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলল,

‘ আবারও ভুল করে ফেললাম। সে হয়তো আমাকে মেনেই নিবে না। ‘

‘ মেনে নিবে কেন? তুই তাকে বিশ্বাস ভরসা কোনোটাই করিস না। আর কতো নিনীকা? কবে তুই তোর ওভারথিংকিং বন্ধ করবি? এটা তোকে শেষ করে দিবে কেন বুঝিস না? ‘

নিনীকা অসহায় কন্ঠে বলল,

‘ আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, ওভারথিংকার মানসিক রোগ। ‘

‘ব্যস, আর নিতে পারছি না আমি। তুই মন থেকে ভাব। দেখ তোর মন কি বলে, যা বলে তাই করবি। না-হয় এখানেই সব শেষ করে ফিরে যাবি। তুই আমার বান্ধবী বলে একজন ভালো মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে খেলবি আর আমি মেনে নিবো সেরকম কখনোই হবে না। হয় একেবারে ছেড়ে দে, নয়তো সারাজীবনের জন্য ধরে রাখ। এবং সেটা এখন থেকেই। গড ইট? ‘

সুমিত্রা পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। নিনীকার দু’চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেলো। সে ভাবলো। অনেকক্ষণ, অনেক ঘন্টা। তখন প্রায় মধ্যরাত। ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে। ওপাশের মানুষটি হয়তো জেগেই ছিলো। তৎক্ষণাৎ রিসিভ করলো। বলল,

‘ সবকিছুতে এতো দেরি করো কেন মিসেস? ‘

নিনীকা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো।

‘ আমার চান্স আছে না? ‘

ধ্রুব হাসলো,

‘ তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না, কখনোই না। তুমি সবসময়ই থেকে যাবে তোমার জন্য বরাদ্দকৃত জায়গাতে। ‘

‘ আমাকে নিয়ে যান। ‘

‘ আজ নয়, আরও কয়েকটা দিন ভেবে নাও। ‘

নিনীকা মুখ ফুলালো,

‘ ভাবাভাবির কিছু নেই, এটাই ফাইনাল। ‘

ধ্রুব লম্বা শ্বাস ছাড়লো। দৃঢ়ভাবে বলল,

‘ তুমি এসো, বার-বার এসো।
যখন মন চাইবে তখনই চলে এসো।
মনে মেঘ জমলে, চোখ থেকে বৃষ্টি ঝড়লে,
কান্না পেলে, কিংবা বিষন্ন মন খারাপে
আমার বুকে মাথা রাখতে, তুমি চলে এসো।
তবে তুমিও জেনে রেখো,
একবার চলে এলে
তোমার ফিরে যাওয়ার পথ নেই। ’
তবে তুমিও মনে রেখো,
মিসেস নিনীকা শেখকে
মেজর ধ্রুব মাহবুবের হয়ে থেকে যেতে হবে আজীবন! ব্যস তুমি শুধু একবার চলে এসো! ’

নিনীকা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। বলল,

‘ কবিতাটি কার আবিষ্কার? ‘

‘ আমার, মাত্রই আবিষ্কার করলাম। ‘

নিনীকা দরজা খুলে বের হলো। অন্ধকার বারান্দায় দাড়িয়ে হেসে বলল,

‘ আসবো, এমন ভাবে আসবো যাতে আর ফিরে যেতে না হয়। ‘

‘ তবে তাই হোক। ‘

কথা বন্ধ। দুজন দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে শুধু। সেই ক্ষণে ধ্রুব আচমকা বলল,

‘ দার্জিলিংয়ে যার সাথে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করেছিলে তিনি তোমার শ্রদ্ধেয় শ্বাশুড়ি মিসেস। ‘

নিনীকার ভেতরে কেউ তীব্রভাবে চিৎকার করে উঠলো। মৃদু জোরে বলল,

‘ মাই গড! ‘

ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হাসলো,

‘ ভালো মানাবে, বউ-শ্বাশুড়ি যুদ্ধ করবে আমরা দেখবো। ‘

নিনীকা মানতে নারাজ।

‘ একদমই না, যুদ্ধ কেন করবো? তিনি যদি আমাকে মেনে নেন আমার মানিয়ে নিতে আপত্তি নেই। তবে আপনাকে একটা কথা জানিয়ে রাখি মেজর। আমার মা বাবা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে বা আমাকে কথা শুনালে আমার ভালো লাগবে না। আমার দূর্বলতায় আঘাত লাগলে আমি সবকিছু ছেড়ে আসতে দ্বিধা করবো না। আপনাকে জানিয়ে রাখলাম জাস্ট! ‘

ধ্রুব চুপ করে থাকলো। নিনীকা আবারও বলল,

‘ আমি সবকিছু মেনে নিতে পারবো, আমার মা বাবাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে মেনে নিতে পারবো না। আপনি বুঝতে পারছেন আমার কথা? ‘

‘ তোমার অতীত, তোমার দূর্বলতা আমাকে কি বলা যায় না মিসেস? ‘

নিনীকার কথা আটকে গেলো,

‘ বলবো অন্য কোনো সময়। ‘

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,

‘ আজ বললে আগামীতে তোমাকে প্রটেক্ট করতে সুবিধা হতো মিসেস। ‘

‘ বললাম তো অন্য কোনো সময়। ‘

ধ্রুব মেনে নিলো। তাদের দীর্ঘ আলাপ চললো ভোর রাত পর্যন্ত।

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-১৯

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-১৯
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ)

বিষন্ন সন্ধ্যা। কটেজের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে নিনীকা। পড়োনে হাটু সমান শর্টস ও শার্ট। নরম তুলতুলে দেহ কেঁপে উঠছে একটু পরপর। মাঝে মধ্যে ফুপিয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে তাকে। সুমিত্রা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছিলো। সন্ধ্যা হলেও রুমে লাইট অন করা হয়নি, তার উপর মশার আক্রমণ। তড়িৎ গতিতে উঠে বসেছে সে। হাত পা জ্বালা করছে। মশারা ইচ্ছে মতো তার রক্ত খেয়ে চলে গেছে। সুমিত্রার নাকের পাটা ফুলে গেলো। ফুসফুস করে নিনীকা বলে চিৎকার করলো। কিন্তু নিনীকার কোনোদিকে খেয়াল নেই। সুমিত্রা বাধ্য হয়ে নামলো। ঘরের লাইট অন করতেই বারান্দা কিঞ্চিৎ আলোকিত হলো। আবছায়া নিনীকাকে দেখে সে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো। ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে পাশে দাড়ালো। নিনীকার মতো করে নিজেও দৃষ্টি ফেললো আকাশের দিকে। বলল,

‘ আফসোস করে কি সময় ফিরে পাওয়া যাবে? সময় ফুরিয়ে গেলে আফসোস করে তো লাভ হবে না নিনীকা। সে ধরা দিবে না। সুতরাং যতোটুকু সময় আছে তা কাজে ব্যয় করো। তুমি নিজেই না-হয় তাকে ধরা দিলে। ক্ষতি কি? ‘

নিনীকা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,

‘ সে আমাকে গ্রহণ করবে? ‘

‘ করবে ইয়ার, তুমি তার স্ত্রী। তার চোখে তোমার জন্যে সত্যিকারের ভালো লাগা, ভালোবাসা দেখেছি আমি। সেদিন দেখেছিলাম পালিয়ে আসা বউয়ের খুঁজ পাওয়ার জন্য তীব্র আকুতি। সেজন্যই তোমাকে না বলে তাকে তোমার খুজ দিয়েছিলাম। ট্যুর এর নাম করে নিয়ে গেছিলাম দার্জিলিংয়ে। ‘

নিনীকা কৌতূহলী হলো,

‘ সে তোমার খুঁজ পেলো কিভাবে? ‘

সুমিত্রা হেসে ফেললো,

‘ সে মেজর ভুলে যাও কেন? কোনো না কোনো ভাবে আমার খুঁজ পেয়েছে। সেটা না-হয় তুমি তার থেকেই জেনে নিও। ‘

নিনীকা চুপ করে রইলো। সুমিত্রা কাঁধ ঝাকিয়ে বলল,

‘ তুমি এতো কি ভাবছো ডেয়ার? তাকে এখনো তোমার অবিশ্বাস হয়? তোমার মনে হয় সে কাপুরুষের মতো? সত্যি কথা বলো তো? ‘

‘কি?’

‘ তুমি ভার্জিন রাইট? ‘

নিনীকার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো। সুমিত্রা নিরবতা সম্মতির লক্ষ্মণ ধরে নিলো। বলল,

‘ সে কতোটা সুপুরুষ ভাবতে পারছো? আজকের যুগে হোক বা আদিম যুগ কোনো পুরুষ অধিকার থাকা সত্ত্বেও নিজের বিবাহিত বউকে ভার্জিন রাখবে সেটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। হ্যা গল্প উপন্যাসে অনেক কিছুই লেখা হয়। কিন্তু তুমি উপন্যাসের কোনো চরিত্র নও। তুমি বাস্তব উপন্যাসের একজন ভাঙাচোরা নায়িকা। যাকে একমাত্র এবং শুধুমাত্র মেজর ধ্রুব মাহবুব জোড়া দিতে পারবে! ‘

নিনীকা সুমিত্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

‘ তুমি যাকে বিয়ে করবে সে অনেক লাকি পার্সন সুমিত্রা। তোমার মতো এমন বুঝদার পার্টনার পেয়ে সে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে দেখে নিও। এন্ড আ’ম সো হ্যাপি, ক’জ ইউ আর মাই বেস্টফ্রেন্ড। ‘

সুমিত্রা নিজেও জড়িয়ে ধরলো,

‘ সে সৌভাগ্যবান হবে কি না জানি না, তবে আমি আমার পার্টনারকে সৌভাগ্যবান করবো। যাতে সে গর্ব করে বলতে পারে দিস লেই’ডি, এক্সট্রা অর্ডিনারী কিউট গার্লস মাই ওয়াইফ৷ হা হা হা। ‘

‘ তুমি আলাদা, সবার থেকে আলাদা আমার সুমিত্রা। ‘

‘ দোয়া করো যাতে সে-ও এই কথাটা তোমার মতো উচ্ছাস নিয়ে বলতে পারে। ‘

‘ ও…সে…তার নাম কি হু হু? ‘

সুমিত্রা লজ্জা পেলো,

‘ জানি না ইয়ার, তবে ছবি দেখেছি। সম্ভবত এখান থেকে ফিরে গেলেই আশীর্বাদ হয়ে যাবে। আমি চাই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে তুমি আমার পাশে থাকো। থাকবে তো নিনীকা? ‘

নিনীকা কোমল স্বরে বলল,

‘ থাকবো ডেয়ার, তুমি যেভাবে আমার পাশে থেকেছো, সেভাবে আমিও তোমার পাশে থাকবো। কথা দিচ্ছি। ‘

সুমিত্রা হাসলো,

‘ তুমি কি কিছু করবে না? দেখা গেলো একদিন সুযোগটাই চলে গেলো, সে অন্য কারো হয়ে গেলো। তখন কি করবে? ‘

নিনীকার মুখের খুশি খুশি ভাবটা নিভে গেলো।

‘ সে অন্য কারো হয়ে যাবে? ‘

‘ তুমি কে হও? সে কেনো তোমার জন্যে তার পুরো জীবনটা একলা কাটিয়ে দিবে, বলো? ‘

‘ আমি তার কিছু হই না? ‘

‘ তাকে সুযোগ দিয়েছো? তাকে কখনো অধিকার দেখিয়ে বলেছো তুমি তার কি হও? তবে সে কেনো তোমার জন্যে সেক্রিফাইস করবে বলতে পারো? সবারই তো ভালো থাকার অধিকার আছে নিনীকা! সে তোমার বিরহে বেশি হলে দু’বছর একা থাকবে। তারপর? তার ফ্যামিলি রয়েছে, পুরো জীবন পড়ে রয়েছে। তুমি কল্পনা থেকে বের হও ডেয়ার। বাস্তবতা দিয়ে ভাবো জাস্ট। সে যদি অন্য কাউকে জীবনে জড়াতেও না চায় তবে সমাজ পরিবার জড়িয়ে দিবে। আর তুমি ভালো করেই জানো পবিত্র সম্পর্কের জোর ঠিক কতোটুকু! যেমনটা দেখেছো নিজের বেলায়। তুমি তার চেনা কেউ ছিলে না, সম্পূর্ণ অচেনা তুমিকে শুধুমাত্র পবিত্র সম্পর্কের জোরে সে ভালোবেসে ফেলেছিলো। এবং এটাই পবিত্র সম্পর্কের জোর। মাই ডেয়ার আমি কি তোমাকে বুঝাতে পেরেছি? ‘

নিনীকার আঁখি দ্বয় ছলছল,

‘ আমি বুঝতে পেরেছি ডেয়ার। তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। শুধু বলবো এভাবেই থেকে যেও, আমার জীবনে তুমি নামক বুঝদার মেয়েটার অনেক দরকার। ‘

সুমিত্রা অভয় দিলো,

‘ থাকবো, সারাজীবন থাকবো। ‘

নিনীকা কেঁদে ফেললো,

‘ তুমি জানো না ডেয়ার,, আমাকে এর আগে কখনো কেউ এমন করে বুঝায়নি। আমি সত্যিই অনেক লাকি, তোমার মতো কেউ আমার জন্যে থেকে গেছে! আ’ম সো হ্যাপি। ‘

‘ তাকে ফোন করো এখনই। ‘

নিনীকা অবাক হলো,

‘ এখন কেন? ‘

‘ ধরো আর এক ঘন্টা পর তুমি পৃথিবীতে থাকলে না, কিন্তু তোমার মনে আফসোস থেকে যাবে তুমি কাউকে কিছু একটা বলতে পারো নি। তার থেকে এটা ভালো নয় কি এখনই বলে দিলে? তোমাদের ধর্মে তো আছে মানুষের এক সেকেন্ডেরও ভরসা নেই। এই মুহুর্তে আমি তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি কাল না-ও থাকতে পারি। আমরা কি আগে থেকে ভবিষ্যত জানি বলো? ‘

নিনীকা শর্টস থেকে মুঠোফোন বের করলো। ডায়াল লিস্টে চেক করলো, সেভ লিস্ট চেক করলো। কি আশ্চর্য তার মাত্রই উপলব্ধি হলো প্রায় সাড়ে ছয়মাসের বিবাহিত জীবনে এখনো নিজের বরের নাম্বার তার জানা হয়নি!

সুমিত্রা পরিস্থিতি বুঝে গেলো। নিজের মোবাইল থেকে নাম্বার বের করে দিলো। নিনীকা ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে। এক বার, দু’বার করে দশবার। নাহ্ ওপাশ থেকে ফোন বন্ধ। নিনীকা মন খারাপ করে বলল,

‘ তাকে বুঝি হারিয়ে ফেললাম সুমিত্রা। আমি হয়তো দেরি করে ফেলেছি। ‘

সুমিত্রা চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলো,

‘ তুমি ওভারথিংকার ডেয়ার। এসব ভেবো না। সে ডিউটিতে আছে। সেজন্য হয়তো পার্সোনাল সিম বন্ধ করে রেখেছে। বি পজিটিভ। ‘

‘ এখন তবে কি করবো? আ…পেয়েছি! ‘

সুমিত্রার ভ্রু কুঁচকে গেলো,

‘ কি পেয়েছো? ‘

নিনীকার হাসির সাথে সাথে চোখ বড়বড় হলো।

‘ আমি এখনই ওই কটেজের দিকে যাবো। তাকে নিজের মনের কথা বলে তবেই ফিরবো। তুমি ততোক্ষণ একা থাকতে পারবে না? ‘

সুমিত্রার বিস্ময়ে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো,

‘ একদম না। পাগল তুমি? ওই সৈনিকরা তোমাকে না দেখেই গুলি করবে। কোনো রকম রিস্ক নিবে না। তারা কিভাবে জানবে তুমি মেজরের বউ? ‘

নিনীকা শুনলো না। কটেজের বারান্দা পেরিয়ে মাঠ, মাঠ পেরিয়ে উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ ধরে দৌড়াতে শুরু করেছে৷ পেছনে সুমিত্রা চিৎকার করে ডাকছে,

‘ যেও না ইয়ার, শুনো আমার কথা। পাগলামি করো না। ‘

নিনীকা শুনলো না। ছুটতে লাগলো দিগবিদিক ছাড়িয়ে। কয়েক ঘন্টা আগেও যাকে মনে মনে ভুলতে চেষ্টা করেছে এখন তার জন্যেই ব্যাকুল হলো হৃদয়। মনে প্রবল ঝড়। তাকে বলতেই হবে। এক্ষুনি। এই মুহুর্তে!

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-১৮

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-১৮
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

( কপি নিষিদ্ধ)

আকাশের সাথে যেন পাহাড় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নিনীকা ও সুমিত্রা মুগ্ধ চোখে দেখছে। দুজনের পড়োনে গাউন। মাথায় লতাপাতা দিয়ে বানানো ক্রাউন। সবুজ গাউনে তাদের দেখতে প্রকৃতি কন্যা মনে হচ্ছে। দুজন উঁচু একটা পাহাড়ে উঠে শরীর ছেড়ে দিলো। আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। নিঃশ্বাসের সাথে নিতে লাগলো মাতাল করা প্রকৃতির ঘ্রাণ। সুমিত্রা উচ্ছাস নিয়ে চিৎকার করলো,

‘ নিনীকা ইট’স টু মাচ ওয়া-ও। ’

নিনীকার ঠোঁটের কোণে হাসি।

‘ প্রকৃতির সাথে জড়িত সবকিছুই ওয়া-ও মাই ডেয়ার। ’

সুমিত্রার কিছু একটা মনে পড়তেই মুখ কালো হয়ে গেলো। নিনীকা হাতে ভর দিয়ে মাথা উচু করে সুমিত্রার দিকে তাকালো।

‘ মুখ কালো করলে যে? ’

সুমিত্রার চোখ ছলছল করে উঠলো,

‘ ডেয়ার এইবারই মনে হয় আমাদের একসাথে শেষ ঘুরাফেরা। পরিবার থেকে বিয়ে দিতে চাইছে। তোমার সাথে হয়তো এভাবে আর প্রকৃতির বুকে আছড়ে পড়া হবে না। ‘

নিনীকার মন খারাপ হয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ড পর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল,

‘ কাম অন ইয়ার। তোমাকে কি যে সে কারো সাথে বিয়ে দিবে নাকি? জিজুকে বলে আমরা ট্যুর দিবো একসাথে। নো প্রব্লেম! ‘

সুমিত্রা উজ্জ্বল চোখে তাকালো,

‘ তুমি ও জিজুকে মেনে নাও নিনীকা, তাহলে আমি বিয়ে করার পর টু-কাপল একসাথে ট্যুর দিতে পারবো। ওয়া-ও না? ‘

নিনীকা কথা এড়িয়ে গেলো। বলল,

‘ তুমি একটা বিষয় খেয়াল করেছো? ‘

‘কোন বিষয় টা? ‘

নিনীকা চমৎকার করে হাসলো,

‘ আমরা দুজন দুজনকে মাঝে মধ্যে তুমি বলেও সম্মোধন করি। যেমনটা করছি এখন! ‘

সুমিত্রা চমকাতে গিয়ে ও হেসে ফেললো।

‘ সেই প্রথম পরিচয়ের মতো বলো? এখনো মাঝে মধ্যে তুমি এসে পড়ে। ‘

নিনীকা মাথা নাড়ালো। সূর্যের রশ্মি দুজনের উপর পড়ছে। চোখ তুলে উপরের দিকে তাকানো যাচ্ছে না সহজে। সুমিত্রার নজর পড়লো উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তার দিকে। উচ্ছাসে মৃদু চিৎকার করে উঠলো,

‘ নিনীকা..নিনীকা লুক ডেয়ার, মেজর! ও মাই গড জিজু..নিনীকা! ‘

নিনীকা চমকে উঠে বসলো। সুমিত্রার চোখ বড়বড় করে যেদিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে নিজের দৃষ্টি ফেললো। উঁচুনিচু পাহাড়ি রাস্তায় দাড়িয়ে আছে একটি জিপ গাড়ি। ধ্রবসহ সবার চোখে গগলস। তারা বন্দুক তাক করে আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। নিনীকা ঢুক গিললো। সে শুনেছে একটু গভীর জঙ্গলে বা উঁচু নির্জন পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা লুকিয়ে থাকে। সুমিত্রার হাত চেপে ধরলো সে।

‘ ইয়ার আমরা মনে হয় ভুল জায়গায় চলে এসেছি। এই সৈনিকগুলো বার-বার আমরা যেখানে যাই সেখানেই উপস্থিত হয়ে যায়। ‘

নিনীকার কথার মধ্যে তাদের দিকে লাল গোল চিহ্নের আলো পড়লো। বড় ওই বন্দুক তাদের দিকে তাক করা। সুমিত্রা ও নিনীকা একে অপরকে ধরে কাঁপতে লাগলো। বিরবির করলো,

‘ এবারের মতো বাচিয়ে দাও সৃষ্টিকর্তা। বেঁচে ফিরলে জীবনে আর কখনো নির্জন পাহাড়ে জঙ্গলে আসবো না। ‘

সৈনিকেরা বুটের শব্দ তুলে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। নির্জন পাহাড়ে বুটের শব্দগুলো ঝংকার তুলে বাজতে লাগলো। তাদের ঘিরে ধরলো কয়েকজন মিলে। এতো বন্দুক নিজেদের দিকে দেখে দুজনের অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। একজন সৈনিক ঠোঁট নাড়ালেন,

‘ হু আর..’

নিনীকা ঢুক গিললো,

‘ আমরা ঘুরতে এসেছি। ‘

ততোক্ষণে ক্যাপ্টেন নিরব আয়মান ও মেজর ধ্রুব মাহবুব এসে দাড়িয়েছে। নিরব গগলস খুলে হাতে নিলো। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ আপনারা দুজন কি সবসময়ই বনে জঙ্গলে নির্জনে এভাবে ঘুরে বেড়ান? ‘

সুমিত্রা হাসার চেষ্টা করলো,

‘ আসলে..আমি প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছি। সেজন্য..আরকি। ‘

‘ বুঝলাম। ‘

কথা বলল ধ্রুব,

‘ ওদের ছেড়ে দাও, ঘুরতে এসেছে। ‘

সৈনিকেরা বন্দুক নামিয়ে নিয়েছে। নিনীকা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ধ্রুবের দিকে। এই প্রথম সে ধ্রুবকে আর্মির ইউনিফর্মে দেখছে। কতো সুন্দর! তার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষ টা তাকে একবারও তাকিয়ে দেখছে না কেন? অনেক বেশিই রাগ করে আছে কি?

সুমিত্রা প্রায় চিৎকার করলো,

‘ ও মাই গড জিজু…আ’ম সো হ্যাপি। কেমন আছেন আপনি? ‘

সুমিত্রার গায়ে পড়া এই স্বভাবে নিনীকা বিরক্ত হলো। হাত টেনে ধরে আস্তে করে বলল,

‘ চুপ কর বেয়াদব। দেখছিস না ডিউটি অবস্থায় আছে? সবার সামনে দাঁত বের করে জিজু ডাকছিস কেন? ‘

ধ্রুব পিছু ফিরে হাটা ধরলো। পেছন পেছন তার সৈন্যরা। নিনীকার কন্ঠে আফসোস ঝরে পড়লো,

‘ একটাবার তাকিয়ে ও দেখলো না! ‘

সুমিত্রা ঠোঁট বাকালো,

‘ দেখবে কেন? হু আর ইউ? সে ডিউটি অবস্থায় আছে। ‘

সুমিত্রা কথা ফিরিয়ে দিতে পেরে আনন্দিত। নিনীকা মুখ কালো করে পাহাড়ি রাস্তায় নেমে হাঁটা শুরু করলো। ততোক্ষণে জিপটি বহুদূরে চলে গিয়েছে। সুমিত্রা হাত টেনে ধরলো,

‘ আরে আমি তো মজা করেছি ইয়ার। ‘

‘ সে একটা বার তাকাতে পারতো! ‘

নিনীকার কন্ঠে বিষাদ। সুমিত্রা বুঝানোর ভঙ্গিতে বলল,

‘ দেখ তুই তাকে অপমান করেছিস। তোকে কেউ অপমান করলে তুই কি তার সাথে কথা বলতি? ‘

নিনীকা মাথা নাড়িয়ে না করলো।

‘ আমি তো ছায়া ও মারাতাম না। সবার আগে নিজের আত্নসম্মান। ‘

‘ তোর আত্নসম্মান আছে তার কি নেই? সে একজন মেজর! ভুলে যাস কেন? ‘

নিনীকা জিহব কাটলো। সত্যিই তো। সে সেদিন কতো কঠিন কঠিন কথা বলেছে। যা মুখে এসেছে তাই ছুড়ে ধ্রুবকে কথার আঘাতে ব্যথায় জর্জরিত করেছে। যে মানুষ টা তাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতে জোর করতো সে ট্রলি এগিয়ে দিয়ে বলেছিল ‘চলে যাও। ‘ কতোটা আঘাত পেয়ে মানুষটা সেদিন তাকে চলে যেতে বলেছিল সে বুঝতে পারছে। যেখানে সে ধ্রুবের এই সামান্য প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারছে না, সেখানে ধ্রুব তো! মানুষটার মারাত্মক ধৈর্য, নিনীকাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে মানানোর৷ সে নিজেই বেকে বসেছিলো। ইশ কি হতো সেদিন একটু বুঝতে চেষ্টা করলে? সে আজ এতোটুকু বুঝতে পেরেছে ধ্রুব আলাদা। সবার চেয়ে আলাদা। আত্নসম্মানবোধ সম্পন্ন দায়িত্বশীল একজন মানুষ৷ যে আপনজনদের যত্নে রাখতে জানে। যেমনটা যত্ন করেছিল দু’দিনে নিনীকাকে। পৃথিবীতে এমন যত্নশীল মানুষের খুব অভাব। নিনীকার ভাগ্যটা হয়তো একটু হলেও ভালো নাহলে কি এমন মানুষ নিজ থেকে পালিয়ে চলে যাওয়া বউয়ের খুঁজে আসে! অভিযোগ না করে সময় দিয়েছে তাকে। আর সে বিনিময়ে ফিরিয়ে দিয়েছে কথার তীব্র আঘাত! নিনীকার নিজেকে সহ্য হচ্ছে না। পা টলমল করতে লাগলো। সুমিত্রার হাত চেপে ধরলো,

‘ আমাকে ধরে কটেজে নিয়ে চল প্লিজ। আমার মাথা ঘুরছে৷ ‘

সুমিত্রা নিনীকার মনের ভাবনা বুঝলো না। ভেবে নিলো হয়তো প্রখর রোদে মাথা ঘুরছে।

জিপ গাড়িতে বসা ধ্রুবের ঠোঁট কিঞ্চিৎ বেঁকে গেলো। নিরব সেটা খেয়াল করে জিজ্ঞেস করলো,

‘ ম্যাডামকে এভয়েড করেছেন ইচ্ছে করে। ‘

ধ্রুব রিলাক্স মুডে বলল,

‘ তাকে উপলব্ধি করালাম, প্রত্যাখ্যানের আঘাত ঠিক কতোটা যন্ত্রণাদায়ক। ‘

‘ তৃপ্তি পাচ্ছেন? ‘

‘ নাহ্, কম হয়ে গেছে। তাকে আরও বুঝতে হবে। অনুভব করতে হবে তার কথার আঘাতে, প্রত্যাখ্যানে কিভাবে কারো হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছিলো। ‘

নিরব নিশ্চুপে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মেজর তো নিজের অনুভূতি বলতে পেরেছে। না চাইতেও বিবাহে আবদ্ধ হয়ে কাউকে ভালোবেসেছে। কিন্তু সে! সে তো আজও নিজের অনুভূতিটাই জানাতে পারেনি। যার প্রতি তার অনুভূতি তাকে পেতে হাজার বাঁধা। সবথেকে বড় বাঁধা ওই মানুষটা যাকে নিরব নিরবে পছন্দ করে এসেছে এতোদিন!

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-১৭

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-১৭
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

(কপি নিষিদ্ধ)

বেলা নয়টা। বাহিরে রোদের আলোয় চারিদিক ঝলমল করছে। ফারিন আজ স্কুলে যায়নি। সামনে তার এসএসসি পরীক্ষা। বিকেলে পাইভেটে যাবে শুধু। হাতে মুঠোফোন নিয়ে সে অপেক্ষা করছে কাঙ্ক্ষিত ফোনের। ঘড়ির কাটা আরও দশ মিনিট অতিক্রম করলো। তারপরই তার মুঠোফোন শব্দ করে বেজে উঠলো। রিসিভ করে কানে চেপে ধরলো সে।

‘ কেমন আছিস বনু? ‘

ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো,

‘ মাম্মা তোমাকে আবার বিয়ে দিতে চাইছে ব্রো! ‘

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,

‘ সে জানলো কিভাবে? ‘

‘ পাপা বলেছেন। সে তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। তুমি এলে তার পছন্দের পাত্রীর সাথে বিয়ে করিয়ে দিবে বলেছে। ‘

‘ আর কি বলেছে বাবা? ‘

ফারিন নাক টেনে টেনে বলল,

‘ তুমি ভাবিকে ফিরিয়ে আনতে দার্জিলিং গেছিলে, এবং মাম্মামের সাথে ঝগড়া করা মেয়েটিই আমার ভাবি। সেগুলো সব জেনে গেছে মাম্মাম। পাপা সব বলে দিয়েছে ব্রো। ভাবি বর্তমানে বান্দরবান আছে, তোমার ক্যাম্পেও গিয়েছে। সেগুলো ও মাম্মাম জানে। ‘

ধ্রুব নিজের চুল এক হাতে মুঠো করে ধরলো। ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়লো।

‘ বাবার থেকে সব জেনে নিচ্ছে সে? বাট..বাবাকে সব বলছে কে… ও মাই গড নিরব!’

ফারিন ফুসফুস করে উঠলো,

‘ তোমার ওই অফিসার বাবাকে ফোনে না পেয়ে আমাকে ফোন করে বলে বাবাকে সব বলতে। বুঝতে পারছো কতবড় শয়তান সে?’

ধ্রুবের কপাল দপদপ করছে।

‘ স্কুলে যাস নি আজ? ‘

ফারিন ঠোঁট ফুলালো,

‘ মাম্মা বকেছে রাতে। সেজন্য আজ যাইনি৷ ব্রো আমি ভাবিকে দেখবো। ‘

‘ তোর ভাবিকে আমিই দেখিনি। ‘

ফারিনের উত্তরটি পছন্দ হলো না। রেগে বলল,

‘ তুমি মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে নিবে তাই না? আমি একদম করতে দিবো না বিয়ে তোমাকে। তুমি বাড়িতেই আসবে না আর। ‘

ধ্রুব এবার শব্দ করে হাসলো,

‘ তোর কেন মনে হচ্ছে আমি মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে নিবো? আচ্ছা যা বিয়ে করবো না। এবার ছবি পাঠা দেখি মায়ের পছন্দের মেয়েকে। ‘

ফারিন চিৎকার করলো,

‘ তোমাকে আমি ছাড়বো না, তুমি বিয়ে করতে চাইছো! আমি তোমাকে….. ’

ফারিন কাঁদছে। ধ্রুব সিরিয়াস হলো।

‘ আ’ম স্যরি সিস্টার। মজা করছিলাম। তবে আমি আসছি এক সপ্তাহ পর৷ ‘

ফারিন ফুপাতে ফুপাতে বলল,

‘ তাকে সাথে নিয়ে এসো। ’

ধ্রুব ‘ দেখা যাক ‘ বলে ফোন রেখে দিলো। ফারিনের ঠোঁটের কোণে হাসি। এবার সে দেখবে মাম্মা কিভাবে ভাইকে আবার বিয়ে দেয়!’

রমজান শেখ আজ অফিসে যাননি। নিজের ঘরেই বসে আছেন তিনি। এ কয়দিন মিথিলাকে এড়িয়ে গেছেন। তবে মিথিলা ও থামার পাত্রী নন। পঁচিশ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে আজ রমজান শেখকে নিজের কথায় মানাকে পেরেছেন। মূলত সেজন্যই রমজান শেখ আজ বাসায়।

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন মিথিলা। সাথে একজন ডাক্তার। মোটা অংকের টাকা দিয়ে বাসায় নিয়ে এসেছেন এই ডাক্তার কে। রমজান শেখ ডাক্তার দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকালেন মিথিলার দিকে। মিথিলা পাশে বসলেন।

‘ ডাক্তার তোমার সাথে কথা বলবেন। প্লিজ না করো না। ‘

রমজান শেখ গম্ভীর স্বরে বললেন,

‘ কিসের কথা? ‘

ডাক্তার কথা বললেন,

‘ হাই ইয়াংম্যান৷ আমি সাইকিয়াট্রিস্ট জয়নাল আহমেদ। বয়সে তোমার বাবার বয়সী হবো। তুমি কি তোমার সবকিছু আমাকে নির্ধিদ্বায় শেয়ার করবে? ‘

রমজান শেখ অকপটে জবাব দিলেন,

‘ আমি ইয়াং ম্যান নই, চব্বিশ বছর বয়সী আমার একটি সন্তান রয়েছে। আর আমার কোনো কথা শেয়ার করতে আমি ইন্টারেস্টেড নই। আপনি আসতে পারেন ডক্টর৷ ‘

মিথিলা অনুনয় করে বললেন,

‘ একটু কথা বলে দেখো না। প্লিজ? ‘

রমজান শেখ রেগে গেলেন।

‘ তুমি এই ডক্টর নিয়ে বিদায় হবে? নাকি আমি…! ‘

মিথিলা ঢুক গিললেন। মানুষটা ধীরে ধীরে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। সে ডক্টর কে নিয়ে প্রস্থান করলো। রমজান শেখ ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন।

‘ মিথি, বোকা প্রিয়তমা আমার। পঁচিশ বছর ধরে বয়ে বেড়ানো ক্ষত তুমি একদিনে মুছে দিতে পারবে না। এসব ডক্টর আমার বুকের ক্ষত সারিয়ে দিতে পারবে না।’

মিথিলা এলেন আবারও। বসলেন রমজান শেখের পাশে। কাঁধে মাথা রাখলেন সন্তপর্ণে। রমজান শেখ কিছু বললেন না। সব জানার পর মিথিলার পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক। বরং বুকে টেনে নিলেন। এক হাত ডুবিয়ে দিলেন চুলে।

‘ তোমার ঘৃণা হচ্ছে না মিথি? ‘

‘ সব জানার পর তোমার প্রতি যা ঘৃণা ছিল তা নাই হয়ে গেছে। ‘

‘ আমি সেটা বলিনি। আমার কাছে আসতে তোমার ঘেন্না লাগছে না? আমাকে সাতজন সমকামী নির্যাতন করেছিল মিথি। এখন নিশ্চয়ই আমার সাথে ইন্টিমেট হতে তোমার ঘেন্না লাগবে? হা হা হা। ‘

মিথিলা মাথা তুলে তাকালেন। গালে এক হাত ডুবিয়ে চোখে চোখ রাখলেন।

‘ ভালোবাসা মানে কি শরীর ছোঁয়া শেখ বাবু? হ্যাঁ এটাও একটা অংশ। তবে একটা সময় পর যখন আমাদের শারিরীক চাহিদা কমে যাবে তখন একে অপরের সঙ্গী হয়ে থাকাটাই তো ভালোবাসা। শেষ বয়স পর্যন্ত হাতে হাত রেখে পাশে থাকাটাই তো ভালোবাসা। আর আমার কাছে তুমি সবসময়ই পবিত্র। অপবিত্র তো তারা, যাদের জন্য তুমি এরকম হয়ে গেছো। আর যদি প্রশ্ন করো আমার প্রতি তোমার এতোদিনের করা অত্যাচার। তবে বলবো আমি হয়তো তোমার কাছে তেমন কেউ ছিলাম না। তাই তুমি আমাকে নিজ থেকে কিছু বলোনি। একটা বার বলে দেখতে! আমার ভালোবাসা কি এতোটাই ঠুনকো মনে হয়েছিল তোমার? যে তোমার প্রতি হওয়া নির্যাতনের কথা শুনে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো!’ এই বুঝেছিলে তোমার মিথিকে? তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসোনি শেখ বাবু। যদি বাসতে তবে আমাকে এতোদিন কষ্ট দিতে পারতে না।’

রমজান শেখ কিছু বললেন না। মিথিলা চোখের জল মুছে তার শার্ট নষ্ট করে দিলেন। অভিমানী কন্ঠে বললেন,

‘ এই বয়সে এসেও নিজেকে এতো সুদর্শন বানিয়ে রেখেছেন। রাখুন। কিন্তু খবরদার আজকের পর থেকে আমি ছাড়া আর কারো দিকে যেনো তাকাতে না দেখি। নাহলে…

‘ নাহলে? ‘

মিথিলা নাক টানলেন,

‘ তোমাকে মেরে নিজেও মরে যাবো। ‘

রমজান শেখ উঠে দাঁড়ালেন। বের করে আনলেন কিছু চিঠিপত্র। সবকটা মিথিলার সামনে রেখে বললেন,

‘ এ পর্যন্ত পাওয়া সব প্রেমপত্র। ‘

মিথিলা ফুসফুস করতে লাগলেন। রমজান শেখ ঠোঁট কামড়ে হাসলেন।

‘ খুলে দেখো। এরমধ্যে কয়েকটা এডাল্ট চিঠিও আছে। তোমার স্বামী মারাত্মক হট কি না! ‘

মিথিলা রেগে চিঠি পড়তে শুরু করেছেন। সত্যিই কয়েকটা এডাল্ট চিঠি আছে। ঘৃনায় তার চোখমুখ কুঁচকে গেলো।

‘ এদের সাথে কি করেছেন? ‘

‘ এরা সবাই আমার মেয়ের বয়সী ম্যাডাম। কিছু করার চান্স নেই। ‘

মিথিলা মানলেন না। সাহস দেখিয়ে শার্টের কলার চেপে ধরলেন।

‘ সত্যি বলো আমায়! ‘

রমজান শেখের হাত শক্ত করে কোমড় পেচিয়ে ধরেছে। কানে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

‘ আমার জানামতে আমি তুমি ছাড়া আর কাউকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেখিনি মিথি! যাদের নিয়ে দরজা বন্ধ করেছি সবাইকে টাকা দিয়ে অভিনয় করাতে বাধ্য করেছি। ‘

মিথিলা নাক ফুলালেন,

‘ সেই তো আজ সব স্বীকার করেছো। শুধু শুধুু জীবন থেকে পঁচিশ বছরের আনন্দ এভাবে নষ্ট করে দিলে! ‘

রমজান শেখ কিছু বললেন না। তার স্পর্শের হিংস্রতা বাড়লো। মিথিলা চোখের জল ঝরালেন। রমজান শেখ অনুতপ্ত হলেন,

‘ স্যরি, অভ্যাস তো! ‘

মিথিলা কঠিন চোখে তাকালেন,

‘ আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো, যদি তুমি সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে না যাও! ‘

রমজান শেখের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো। গাল চেপে ধরলেন মিথিলার।

‘ তোমাকে আমি…তোমাকে আমি বন্দী করে রাখবো প্রিয়তমা। যেমন করে রেখেছি পঁচিশ বছর ধরে! আর একবার ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে দেখো! মেরে ফেলবো, একদম মেরে ফেলবো! তোমায় আমাকে ভালোবাসতে হবে না। ঘৃণা করো, তবুও থেকে যেও! ‘

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-১৬

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-১৬
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

‘বউ কথা কও’ এ বউ কথা বলছে। তবে তার কথাগুলো দিয়ে ঝরে পড়ছে তীব্র রাগ, অভিমান। ফাহিম মাহবুব চুপচাপ খেয়ে চলেছেন। ফারিন নিজেও চুপচাপ আজ। শুধু চুপচাপ নেই ধারা আহমেদ। ঠাস করে এটা সেটা রাখছেন। সাথে তার মুখ দিয়ে অনবরত কথা চলছে।

‘ আমাকে না জানিয়ে আমার ছেলেকে বিয়ে তো দিয়েছেই সাথে এমন একজনের সাথে দিয়েছে যে কি না বিয়ে করা বর রেখে পালিয়ে গেছে। গেছে তো গেছে আমার ছেলে যখন আনতে গেলো তখন কি না ছেড়ে চলে গেছে। অকর্মা লোক কোথাকার। আমার বাচ্চা টা ছয়মাস ধরে বাড়িতে ফিরেনি শুধুমাত্র তোমার জন্য ফাহিম। দার্জিলিংয়ে এতো কাছে থেকেও আমাকে একটাবার দেখা দেয়নি। দোষ করেছো তুমি আর শাস্তি পেতে হচ্ছে আমাকে। ‘

ধারা চেয়ার টেনে বসলেন। প্লেটে ভাত তুলে নিয়ে খেতে খেতে তাকালেন ফাহিম মাহবুবের দিকে। লোকটা নির্লিপ্তভাবে খেয়ে যাচ্ছে। ধারা তার প্লেট টেনে নিলেন। ফাহিম মাহবুব অসহায় চোখে তাকালেন।

‘খাবো না?’

ধারার মুখশ্রী অভিমানে টইটুম্বুর। ফারিন কথা বলল,

‘ বাবাকে খেতে দাও মা। সে তো জানতো না বলো তার বন্ধুর মেয়ে এভাবে ধোঁকা দিবে। ‘

‘মেয়েটি আবার আমার ছেলের কাছে কেন এসেছে?’

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন ফাহিম।

‘সে তোমার ছেলের কাছে যায় নি। ঘুরতে গেছে। আর তাদের দেখা হয়নি। মেয়েটি যখন ক্যাম্পে গেছে তখন ধ্রুব চট্টগ্রামে ছিল।’

ধারার মুখশ্রী উজ্জ্বল হলো। ফাহিম মাহবুবের প্লেটে ভাত তরকারি দিয়ে বললেন,

‘ খাও।’

ফারিন ও তার বাবার ভ্রু কুঁচকে গেলো। নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে। তাদের ধারণা সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে ধারা হাসি-হাসি মুখ করে বললেন,

‘ শুনো না, ধ্রুবকে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করো। যেভাবেই হোক। আমি ওকে বিয়ে করাবো। দেখবে বউয়ের টানে বাড়িতে ফিরবে। আমার ছেলেটা ওই ধোঁকাবাজ মেয়েটাকে ভুলে যাবে দেখো। ‘

ফারিন প্লেট ঠেলে উঠে দাঁড়ালো।

‘ একদম না মাম্মা। আমি ওই পুতুলের মতো চেহারার মেয়েটি ছাড়া আর কাউকে ভাবি হিসেবে মেনে নিবো না। তুমি জানো কতো সুন্দর সে? কি নিষ্পাপ তার চেহারা। তোমার ছেলে এমনি এমনি কি পালিয়ে যাওয়া বউদের প্রতি দু’দিনে দূর্বল হয়েছিল বলে তোমার মনে হয়? ‘

‘ সুন্দর মেয়ের অভাব নেই দুনিয়ায়। ‘

ফারিন হাসলো। কল্পনায় মুখটি দেখার চেষ্টা করে বলল,

‘ তুমি সেদিন তাকে হয়তো খেয়াল করোনি মাম্মা। ঝগড়া করেই গেছো শুধু। যদি একটু খেয়াল করে দেখতে তবে বুঝতে পারতে তার মধ্যে অন্যরকম কিছু একটা আছে। যেটা প্রথম দেখাতেই তাকে সবার থেকে আলাদা প্রমাণ করে। আমি সুন্দর বলতে গায়ের রঙ বুঝাইনি মাম্মা। সেদিন আমি চিপস দিতে গিয়ে তার হাতে হাত রেখেছিলাম। অমন নরম তুলার মতো হাত আমি কারো দেখিনি। আমার নিজেরও তো হাত নরম, তবুও তুলো তুলো মনে হয়না। তাকে মোম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নাকি? প্রশ্ন টা আমার মাথায় এসেছিল জানো? সে সত্যিই ননীর পুতুল। একটু শক্ত করে ধরলেই হাতে চাপ পড়ে যাবে। তুমি তাকে ছুঁয়ে দেখোনি মাম্মা। তাহলে বুঝতে পাপা তোমার ছেলের জন্য কেমন মেয়ে পছন্দ করেছিলেন। ‘

ধারা শক্ত কন্ঠে বললেন,

‘ সে যতোই ননীর পুতুল হোক, আমার ছেলেকে সে কষ্ট দিয়েছে। আমার ছেলেকে অপমান করে চলে গিয়েছে। একবার নয় দু’বার। এমন মেয়ে দিয়ে কি হবে যদি তার চরিত্রই ঠিক না থাকে? যে মেয়ে বিয়ে করে পালিয়ে যায় আর যাই হোক সে কখনো ভালো চরিত্রের অধিকারী কেউ হতে পারে না। তুমি ছোট আবেগ দিয়ে চিন্তা করছো। বড় হও বুঝতে পারবে। সেদিন যদি আত্নীয় স্বজন ডেকে বিয়ে করানো হতো তবে এই বাড়ির মান সম্মান বলতে কিছু থাকতো না। সবাই জানতো ‘বউ কথা কও’ এর বর্তমান প্রজন্মের বউ বিয়ে করা বরকে রেখে পালিয়ে গেছে! ’

ফারিন দমলো না,

‘ তুমি হয়তো একদিক ভেবে এসব বলছো মাম্মা। তবে কোনো কারণ ছাড়া কেউ নিজের চরিত্রে দাগ লাগায় না। বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটি মেয়েরই শখ থাকে। সে কেন পালিয়ে গিয়ে নিজের চরিত্রে দাগ লাগাবে বলতে পারো? ’

‘ ফাহিম তোমার মেয়েকে উপরে যেতে বলো। তাকে ছোট ছোটর মতো থাকতে বলো। ’

‘ পাপাকে বলতে হবে না, আমিই চলে যাচ্ছি। ‘

ফারিন মন খারাপ করে উপরে চলে গেলো। আর যাই হোক না কেন ওই ননীর পুতুল ছাড়া আর কাউকে সে ভাবি হিসেবে মেনে নিবে না।

‘ আমার মা’টাকে এভাবে না বললেও পারতে। সে ছোট মানুষ, যা পছন্দ তা তাঁর লাগবেই। আমরা তাকে পছন্দের সবকিছুই দিয়েছি। সেজন্য সে ভেবেছে তার এই ইচ্ছে টাও পূরণ করবো। তার তো এখানে কোনো দোষ নেই। সে বাচ্চা মানুষ আবদার করতেই পারে। অভিভাবক হিসেবে আমাদের উচিত ঠিক ভুল বিচার করে তার ইচ্ছে পূরণ করা। যদি সম্ভব না হয় তো ভালোবেসে বুঝিয়ে বলা, যাতে সে মন খারাপ না করে। তার কোমল হৃদয়ে যদি আঘাত লাগে তবে তো আমরাই কষ্ট পাবো বলো? ‘

ধারা টলমলে চোখে তাকালেন,

‘ বেশি ধমকে কথা বলে ফেলেছি? আমার বাচ্চা টা বেশি কষ্ট পেয়েছে তাই না? ‘

ফাহিম মাহবুব হেসে ফেললেন।

‘ নিজে বকা দিয়ে নিজেই কাঁদছো। ‘

ধারা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। প্লেটে ভাত নিয়ে ছুটলেন মেয়ের রুমে। ফাহিম মাহবুব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তার একটা ভুল ছেলে মেয়ে স্ত্রী সবার মন খারাপের কারণ!

ঠান্ডার মধ্যে উষ্ণতা খুঁজছে নিনীকা। কাঁথা টেনে টুনে গায়ে জড়াচ্ছে সে। চোখজোড়া বন্ধ। বাহির থেকে কিচিরমিচির আওয়াজ কানে আসছে। সকাল হয়ে গেছে। নিনীকার ঠান্ডা কপালে কেউ যেন উত্তপ্ত ঠোঁট ছোঁয়ালো। সে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরতে চাইলো। কিন্তু কেউ ধরা দিলো না। চোখ মেলে তাকালো। কেউ নেই। সে একা। নিনীকা উঠে বসলো। ধ্রুবকে নিয়ে কল্পনা করাটা নতুন নয়। এরকম কত-শত কল্পনা করে সে। হোস্টেলের রুমমেটরা একদিন বিরক্ত হয়ে বলেছিল,

‘ তাকে ফোন করছো না কেন? শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো। ‘

নিনীকা পারে না। না চাইতেও ধ্রুব তার সবকিছুতে থাকে। যেমন থাকে তার কল্পনায়। সবসময়ই কপালে উত্তপ্ত ঠোঁট ছোঁয়ালে তার ঘুম ভাঙে। হা হা হা কল্পনায়! নিনীকা এর থেকেও গভীর কল্পনা করে। কখনো ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় কখনো আরও গভীর কোনো অনুভূতিতে তলিয়ে যায়।

কল্পনায় সুখী নিনীকা আজকাল ধ্রুবকে সত্যি সত্যি পেতে চায়। অবশ্য চাওয়াটা আজকালকার নয়। কিন্তু মস্তিষ্ক বাঁধা দিতো। আজ মস্তিষ্ক চাইছে বেহায়া হতে। মনের সাথে পাল্লা দিয়ে বলছে,

‘ যাও নিনীকা, তার কাছে যাও। সে তোমার অপেক্ষায় বসে আছে কত-শত দিন ধরে। তুমি আসবে বলে কারোর আকাশে চাঁদ উঠেনি। তুমি যাও।’

নিনীকা বিছানা থেকে নামলো। পড়োনে সাদা প্লাজু ও সাদা শার্ট। তন্মোধ্যে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো সুমিত্রা।

‘ গুড মর্নিং নিনীকা।’

নিনীকা উত্তর দিলো না। গিয়ে দাঁড়ালো কটেজের বারান্দায়। সুমিত্রা চিৎকার করলো,

‘ ইয়ার গরম কাপড় পড়ে যাও।’

নিনীকা গায়ে মাখলো না। একমনে তাকিয়ে রইলো উঁচুনিচু রাস্তার দিকে। সুমিত্রা নিজেই একটি চাদর এনে গায়ে জড়িয়ে দিলো। নিনীকার পায়েও জুতা নেই। মেয়েটা দিনদুনিয়া ভুলে কি ভাবছে কে জানে। সুমিত্রা হাত দিয়ে কাঁধে ধাক্কা দিলো। নিনীকা তবুও তাকালো না। শুধু বলল,

‘ ডিস্টার্ব করো না, তাকে ভাবতে দাও। ‘

সুমিত্রা ভ্যাবাচেকা খেলো,

‘ তুমি কল্পনায় সংসার করতে করতে কবে যেনো পাগল হয়ে যাও ইয়ার। ‘


সৈন্যরা তাঁবু থেকে বের হয়ে গেছে। কেউ কেউ মর্নিং ওয়ার্ক করছে। ধ্রুব কটেজের বারান্দায় দাড়িয়ে। নিরব দুটো কফির মগ নিয়ে এসে দাড়ালো। একটি ধ্রুবর দিকে বাড়িয়ে দিলো।

‘ আপনাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে মেজর। ‘

ধ্রুব কফিতে চুমুক দিলো। দৃঢ়কণ্ঠে বলল,

‘ একটা স্বপ্ন দেখেছি ক্যাপ্টেন। ‘

নিরব কৌতূহল দেখালো,

‘ কিরকম স্বপ্ন? ‘

‘ একটা বাচ্চা ছেলে মেঝেতে হামাগুড়ি দিয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে ‘ বাবা, বাবা, বাবা… ’

নিরব চমকে গেলো,

‘ মাই গড! স্বপ্নে কেউ আপনাকে বাবা ডেকেছে! বাই এনি চান্স সে আপনার ও নিনীকা ম্যাডামের ছেলে নয়তো? ‘

‘ জানি না, তবে তার থুতনিতে তোমার ম্যাডামের মতো একটি তিল আছে। এবং তার মুখশ্রী আমার মতো। তাকে দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে এটা আমার ছেলে। ‘

নিরব দ্বিগুণ উৎসাহে চিৎকার করলো,

‘ ও মাই গড, ও মাই গড! ‘

(চলবে)

বিয়ে থা পর্ব-১৫

0

#বিয়ে_থা
#পর্ব-১৫
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

(কপি নিষিদ্ধ)

রোদের তাপে চামড়া পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। নিনীকা হাসফাস করছে। তন্মোধ্যে কানে এলো সেই দুটো অফিসারকে আরেক অফিসার বলছে,

‘ একদম এসব ভাবতে চেষ্টা করো না। স্যার জানলে কি হবে বুঝতে পারছো? ‘

অফিসার দুটো ঢুক গিললো,

‘ স্যার জানবেন না। চলো এদের সাথে কাজ সেরে তারপর ছেড়ে দেই। স্যার আসার আগেই কাজ শেষ। সুতরাং জানতে পারবে না।’

অফিসার টি শেষ বারের মতো সতর্ক করলো,

‘একদম না। স্যার যাওয়ার আগে আমাকে সবদিকে খেয়াল রাখতে বলে গেছেন। আমি আমার দায়িত্ব পালন করা থেকে পিছু পা হবো না। তোমরা যদি বাজে কোনো কাজ করো তবে তোমাদের সাসপেন্ডের ব্যবস্থা আমি নিজেই করবো। তোমাদের সাহস কিভাবে হয় একজন ক্যাপ্টেন কে বাজে কাজের প্রস্তাব দেওয়ার!’

অফিসার দুটো এইবার একটু ভয় পেলো।

‘আমরা খুবই দুঃখীত স্যার। প্লিজ আপনি স্যার এলে কিছু বলবেন না। আমরা কোনো বাজে কাজ করবো না।’

অফিসারটি নিজের ক্যাপ হাতে নিলেন। গর্ব করে বললেন,

‘আমি এই পোশাক সগৌরবে পড়ি। তোমরা কি তেমন করে পড়ো?’

দুটো অফিসার মাথা নিচু করে ফেললো।

‘ তোমরা নতুন অফিসার হয়েছো। ধীরে ধীরে সবকিছু আয়ত্তে আনবে। যে পেশায় এসেছো সেটার সম্মান ধরে রাখা তোমাদের দায়িত্ব। তোমাদের মা বাবা নিশ্চয়ই তোমাদের উপর ভরসা করেন?’

অফিসার দুটো মাথা নাড়ালো।

‘আমরা হলাম রক্ষক। আমাদের দায়িত্ব জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া। দেশের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। দেশের জনগণকে হ্যারাস করা নয়। তোমাদের একটা ঘটনা বলি। একজন সৈনিক একবার তার এক আত্মীয়ের বউয়ের সাথে রাত কাটাতে গিয়ে ভোর রাতে ধরা পড়েন। সেই আত্মীয় লোকটা চাকরি তো খেয়েছেই সাথে ওই বউটাকেও ছেড়েছে। সমাজের সবাই জেনেছে রক্ষকের মধ্যেও ভক্ষক থাকে। তোমরা কি ভক্ষক হতে চাও? সেই সৈনিক কিন্তু ডিউটি অবস্থায় কিছু করেনি। তবুও তার সম্মান গেছে সাথে চাকরি। তোমরা ডিউটি অবস্থায় আছো!’

অফিসার দুটো অনুতপ্ত হলো। হাতজোড় করে বলল,

‘আপনি মেজর স্যারকে কিছু বলবেন না প্লিজ। আমরা আজ থেকে ভালো হয়ে যাবো। দেশের ভক্ষক নয় রক্ষক হবো। কথা দিচ্ছি আপনাকে স্যার। এরপর থেকে যদি কখনো আমাদের বাজে কিছু তে পান তো আপনার যা ইচ্ছে তা-ই শাস্তি দিতে পারেন আমাদের। আমরা মাথা পেতে নিবো।’

অফিসারের নাম নিরব আয়মান। চোখের গগলস টা সে খুলে হাতে নিলো। আঁড়চোখে দেখে নিলো কাঠের বারান্দায় হাঁটু গেঁড়ে বসিয়ে রাখা দুজনকে। রোদের তাপে মেয়ে দুটোর মুখশ্রী লাল। হয়তো এলার্জি প্রব্লেম আছে। নিরব গগলস পুনরায় চোখে পড়ে নিলো। বলল,

‘ম্যাডামদের কাছে ক্ষমা চাও, আর তাদের সসম্মানে কটেজে পৌঁছে দিয়ে এসো।’

অফিসার দুটো মাথা নাড়িয়ে এগুলো। নিনীকা ও সুমিত্রার কাছে অনুনয় করে ক্ষমা চাইলো। বাঁধন খুলে দিয়ে বলল,

‘আপনারা জিপে উঠুন, আপনাদের কটেজে পৌঁছে দিবো। ‘

নিনীকা ও সুমিত্রা একে অপরের দিকে তাকালো।

‘আপনাদের ধন্যবাদ। আমরা চলে যেতে পারবো।’

‘আমাদের স্যারের অর্ডার ম্যাডাম।’

সুমিত্রার চেহারা উজ্জ্বল হলো,

‘কোন স্যার আপনাদের? মেজর টাইপ কেউ? ‘

‘মেজর স্যার তো ভোর রাতে চলে গেছেন। এসে পড়বেন কিছুক্ষণের মধ্যে। আপনাদের স-সম্মানে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার অর্ডার আমাদের ক্যাপ্টেন নিরব আয়মান দিয়েছেন।’

নিনীকা এ সুমিত্রা নেমে এলো কটেজের বারান্দা থেকে। সম্মুখ্যে দাড়ানো ক্যাপ্টেন নিরব আয়মান নিজের বলিষ্ঠ শরীর দিয়ে বুক ডাউন দিতে ব্যস্ত। নিনীকা আড়চোখে দেখে নিলো তাকে। তারা জিপে উঠবে তখনই নিরব এলো। নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে বলল,

‘ আপনাদের জন্য দায়িত্ব টা আমার কাছে বেশিই। উঠে পড়ুন।’

নিনীকা কিছু বুঝতে পারলো না। অফিসার দুটোকে নিরব চলে যেতে বললো। জিপটা আঁকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। মাঝপথে নিরব কথা বলল,

‘আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেন নি ম্যাডাম। আমি ক্যাপ্টেন নিরব আয়মান। মেজর ধ্রুব মাহবুবের বউয়ের ব্যাপারে খুঁজ খবর নেওয়ার দায়িত্ব টা অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার ফাহিম মাহবুব দিয়েছিলেন আমায়। বিয়ের দিন আমি উপস্থিত ছিলাম। তবে আপনি আমায় দেখেননি।’

নিনীকা চমকে গেলো। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এলো তার। সুমিত্রা উচ্ছাস নিয়ে তাকালো।

‘ধ্রুব জিজু তো মেজর তাই না? ওই অফিসার গুলো বললো মেজর কিছুক্ষণের মধ্যে আসবেন। এটাই কি তবে..

‘হ্যাঁ মেজর আসবেন।’

সুমিত্রা চিৎকার করে নিনীকার হাত চেপে ধরলো,

‘ ও মাই গড নিনীকা ইয়ার।!’

নিরব লুকিং গ্লাসে নিনীকার থমথমে কঠিন মুখশ্রী দেখে নিলে। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,

‘ আমার মনে হচ্ছে আপনার ইয়ার খুশি নন। হওয়ার কারণও নেই। তিনি বিয়ে করে পালিয়ে এসেছিলেন। ‘

নিনীকা দৃঢ়ভাবে বলল,

‘কটেজের সামনে নামিয়ে দিন এসে গেছি।’

সুমিত্রা ও নিনীকা নেমে গেলো। নিরব মাথা বের করে দৃঢ়কণ্ঠে বলল,

‘ একটু ভেবে দেখবেন ম্যাডাম। মেজর ধ্রুব মাহবুব কোথাও না কোথাও ভালো নেই!’

নিনীকাদের অতিক্রম করে গেলো জিপটি। সুমিত্রা নিনীকার বিধ্বস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার চোখেমুখের অবস্থা ভালো না। যেকোনো সময় কেঁদে ফেলবে। নিনীকা ঢুক গিললো,

‘আমাকে একটু ধরে রুমে নিয়ে যাবি সুমিত্রা?’


দুপুর গড়িয়ে গেলো মেজর ধ্রুব মাহবুব ক্যাম্পে ফিরলেন না। সূর্য যখন নিভু নিভু করছে, বিকেলের গোধুলি পেরিয়ে যখন সন্ধ্যা নামবে ঠিক তখনই আর্মি ক্যাম্পে তার জিপ গাড়িটা এসে থামলো।

দেহের সাথে আটসাট করে জড়ানো আর্মির পোশাক। নেমপ্লেটে সুন্দর করে লিখা ‘মেজর ধ্রুব মাহবুব।’ বুট জুতার শব্দ তুলে কাঠের কটেজে উঠলো সে। পা মাড়িয়ে যখন দরজা দিয়ে ঢুকবে তখনই তার দৃষ্টি আঁটকে যায় কিছুতে। মনে মনে চমকায় ভীষণ। সে তো এখানে আসবার কথা নয়!

মেজর ধীরপায়ে হেঁটে সেটা কুড়িয়ে নিলেন। হাতের সুন্দর একটি ব্রেসলেট। এই ব্রেসলেট টা তার চেনা। খুব কাছের কারো হাতে তিনি দেখেছেন। কিন্তু এটা এখানে আসবে কিভাবে!

মেজর ধ্রুবের সম্মুখে এলো নিরব। ব্রেসলেটের দিকে চোখ পড়তেই বুঝে গেল সব। বলল,

‘সকালে দুটো মেয়ে এসেছিল স্যার। আমাদের অফিসাররা তাদের কুচক্রীদের কেউ ভেবে বেঁধেছিলো। আমি তাদের ছেড়ে দিয়েছি, এবং স-সম্মানে কটেজে পৌঁছে দিয়েছি।’

ধ্রুব ব্রেসলেট টা পকেটে ভরে নিলো। নিরব ঠোঁট কামড়ে হাসছে।

‘আপনি যা ভাবছেন তা-ই মেজর। সে-ই!’

ধ্রুব চমকে গেলেও মুখশ্রীতে তা প্রকাশ পেলো না। শুধু বলল,

‘কোনো অসুবিধা হয়নি তো?’

‘আমি সামলে নিয়েছি।’

‘কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলো?’

‘বললেন ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছেন কৌতুহল নিয়ে।’

ধ্রুব দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে যেতে হয়েছিলো তাকে। যদি না যেতো তবে হয়তো দেখা হয়ে যেতো। কেন এসেছিল সে? ধ্রুবের খুঁজে? অসম্ভব! ধ্রুব তাছ্যিল হাসলো। আর যাই হোক তাকে খুঁজতে কখনোই আসবে না। সে আর সবার মতো নয়। কঠিন সত্তা তার। ধ্রুব কেন মিছে আশা করবে, কেন ভাববে তাঁকেই খুঁজতে এসেছিলো!

পড়োনের ইউনিফর্ম খুলে ফেললো সে। প্রচুর ক্লান্তি শরীরে। ভেবেছিলো ক্যাম্পে পৌঁছে কয়েক ঘন্টা ঘুমাবে। কিন্তু তার ঘুম হারাম হয়ে গেলো। আজ আর ঘুম আসবে না। বেহায়া মন আবারও তাকে ভাববে। ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে যাবে।


তাঁবুর বাহিরে একলা দাড়িয়ে আছে নিরব। চারিদিকে অফিসার রা অবস্থান করছে। সে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে। পকেট থেকে বের করলো পার্সোনাল মুঠোফোন। ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বলল,

‘ সে এসেছিলো ক্যাম্পে।’

ফারিন উত্তর দিলো,

‘কে এসেছিলো? ‘

‘আপনার ভাবি।’

ফারিন চমকালো,

‘ কোথায় সে?’

নিরব হাসলো,

‘ এসেছিল ঘুরতে চলে গেছে। স্যার মাত্রই এলেন। জানালাম তাকে। দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।’

ফারিন চোখমুখ কুঁচকে বলল,

‘ আপনি বড্ড মেপে মেপে কথা বলেন। সবকিছু খোলাসা করে বলুন। কিভাবে কি।’

‘সেটা তো সম্ভব না, আমাকে এখন রাখতে হবে। আমি আপনাকে জানালাম, কারণ আপনি যাতে স্যারকে জানিয়ে দিতে পারেন।’

‘ আমি বাবাকে জানিয়ে দিবো।’

নিরব ঠিক আছে বলে রেখে দিলো। আশেপাশে কোথাও কোনো জন্তু ডাকছে। নিরবের তাতে হেলদোল নেই। সে একমনে তাকিয়ে আছে অন্ধকার উঁচুনিচু রাস্তার দিকে। ধীরে ধীরে উঠে এলো কটেজের বারান্দায়।

কাঠের কটেজ রুমটা অন্ধকার। সেখান থেকে নিরবের কানে ভেসে এলো তার স্যারের বিরহ নিয়ে গাওয়া গান।

‘ তুমি বৃষ্টি চেয়েছো বলে,
কত মেঘের ভেঙেছি মন
আমি নিজের বলতে তোমায় চেয়েছি।

তুমি যাওনি কিছুই বলে
আজও পাল্টে ফেলিনি মন,
শুধু নিজের বলতে তোমায় চেয়েছি…

‘ তুমি জানতেই পারো না তোমায়
কত ভালোবেসেছি…… ’

ধ্রুব খালি গলায় গান গাইতে গাইতে কফি হাতে বারান্দায় চলে এসেছে। গাইছে,

‘ তুমি অন্য ঘরেই থেকো
আমার নামে রাগ জমিয়ে রেখো,
আমি সবটুকু দোষ তোমায় দিয়েছি….
তুমি জানতেই পারো না তোমায়
কত ভালোবেসেছি…… ’

নিরবের ছায়া দেখে ধ্রুব থেমে গেলো। জিজ্ঞেস করলো,

‘কি করছো অন্ধকারে?’

নিরব ধ্রুবের পাশাপাশি দাঁড়ালো। আকাশের দিকে মুখ রেখে বলল,

‘আপনার কন্ঠে বিরহ ঝরে পড়ছে স্যার। একটু চেষ্টা করা যায় না?’

ধ্রুবের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো।

‘ আমি করেছি, সে ফিরিয়ে দিয়েছে। মেজর ধ্রুব মাহবুবের আত্নসম্মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এবার আমি নয় সে আসবে। অন্যথায় ধ্রুব মাহবুব এর জীবনে নিনীকা শেখ নামে কারো অস্তিত্ব থাকলেও ধ্রুব মাহবুব সেটা ভুলে যাবে!’

‘ভুলতে পেরেছেন?’

ধ্রুব শক্ত করে কফির মগ চেপে ধরলো।

‘ সে আমাকে বিশ্বাস করেনি নিরব৷ আমাকে…আমাকে কাপুরুষদের সাথে তুলনা করেছে। আমি নাকি ওইসব পুরুষদের মতো যারা অধিকার দেখিয়ে বিছানায় নিয়ে যায়! সে আমাকে…’

ধ্রুবের কন্ঠ রুদ হয়ে এলো। নিরব নিরবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। হাত রাখলো ধ্রুবের কাঁধে।

ধ্রুব জড়িয়ে ধরলো বাচ্চাদের মতো। এই ছেলেটা তার বন্ধুর মতো। দুজনের বয়সের গ্যাপ দুই বছর। কিন্তু দুজন দুজনের সাথে থাকে সবমসময়। ধ্রুব নিজের সবকথা এই ছেলেটাকেই বলে দেয় অনায়াসে। তাকে বুঝতে পারে ছেলেটা। ঠিক যেমন ধ্রুব বুঝতে পারে নিরব আয়মান গোপনে কাউকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছে তার মতো করেই!

(চলবে)