Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 130



আমার তুমি ২ পর্ব-১১+১২

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা

আজ সকাল থেকে তিন্নি ভাবছে।
ভার্সিটি অফ। ভোট কাল।আজ টিউশন করে হোস্টেল ফিরে আসবে এমনটাই চিন্তা ভাবনা ছিল।কিন্তু কাল রাতে কবির খাঁন এর ম্যাসেজ এর পর থেকে ভেবে যাচ্ছে শুধু। যাওয়া উচিৎ? না-কি না?আবার ভাবছে কোনো প্রয়োজন হয়তো। পরক্ষণেই ভাবছে কবির খাঁন বুঝতে পেরে যায় নি তো ও যে স্যার কে ভালোবাসে!আবার ভাবে যাওয়া উচিৎ স্যার মানুষ ডেকেছে না গেলে বেয়াদবি হবে। তিন্নি দু-টানায় ভুগছে।তিন্নির এখন খুব করে নিজের পরিবার না থাকার অভাব টা উপলব্ধি করতে পারছে।পরিবার মা বাবা ভাই বোন কেউ যদি এখন পাশে থাকতো নিশ্চয়ই এব্যাপারে কথা বললে একটা সলিউশন দিতো।কিন্তু তিন্নির তো তেমন কেউ নেই। তিন্নি বিছানা থেকে ফোন হাতে নিলো।যদি এব্যাপারে কারোর সাথে শেয়ার করা যায় সেটা এই মূহুর্তে মাইশা।তিন্নির স্কুল, কলেজ লাইফে তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই।মুলত সময় হয় নি এসবে ধ্যান দেওয়ার।ভার্সিটিতে গিয়ে মাইশার সাথে কেমন অদ্ভুত ভাবে এই সম্পর্ক টা তৈরী হলো তিন্নি এখন বুঝতে পারে না।
মাইশা কে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ হলো।

-“শোন দেখা করতে পারবি?”

তিন্নি জিজ্ঞেস করলো।
মাইশা কিঞ্চিৎ সময় ভেবে বলল,

-“এখন তো বাড়ি থেকে বেরুতে দিবে না।
কাল ভোট বুঝতে পারছি।
তুই একটা কাজ কর না আমাদের বাড়ি চলে আয়।”

তিন্নি কিছু ভেবে বলল,

-“ঠিক আছে।”

তিন্নি কল কেটে রেডি হয়ে মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।

—-

দুপুরে সাদনান বাড়ি ফিরল আজ।প্রিয়তা অবাক। শোয়া থেকে ওঠে বসে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,

-“আপনি?”

সাদনান জবাব দিলো না।
এগিয়ে এসে প্রিয়তার কপালে হাত রাখে।মেয়েটার সকালে জ্বর এসছিল।এক রাতেই বউয়ের অবশ্য করুণ।ভবিষ্যতে কি হবে?বউয়ের দিকে এখন থেকে নজর দিতে হবে। এখন জ্বর নেই।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে বলল,

-“আবার যেতে হবে।
শাওয়ার নিবে?”

-“আপনি আগে যান।
আমি পরে যাচ্ছি।”

প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ওঠে গিয়ে কাবাড থেকে কাপড় নিতে নিতে বলল।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবি খুলে সোফায় রেখে টাওয়াল হাতে প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে ওয়াশ রুমের যেতে যেতে বলল,

-“এক সাথে নিয়ে নেব।
আমাকে আবার যেতে হবে।”

প্রিয়তা কিছু বলল না।
আগে প্রিয়তা শাওয়ার নিলো।ড্রেস চেঞ্জ করে সাদনান বউ কে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
অতঃপর নিজে বউয়ের কাপড় ধুয়ে এক্কেবারে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো।
সাদনান কাপড় ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে এসে দেখলো প্রিয়তা বিছানা বসে আছে। সাদনান একপলক সেদিকে তাকিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে বউয়ের পাশে গিয়ে বসলো।প্রিয়তা টাওয়াল নিজে হাতে নিয়ে সাদনানের চুল মুছে দিলো। সাদনান হাসলো।দারুণ লাগে যখন এই ছোট্ট ছোট্ট হাত দু’টির মালিক তার জন্য কিছু করে।

——-

কালাম খাঁন ভোট প্রচারণায় গিয়েছিল আজ।মফিজুর মির্জা একজন বিজনেসম্যান। রাজনীতি সম্পর্কে খুব কমই ধারণা। মূলত এসবে আজ্জম মির্জা বা মফিজুর মির্জা দু-ভাইয়ের ততটা আগ্রহ নেই।তাই তো বাবা এতো বড় নেতা হওয়ার পরেও দু’ভাই বাবার ব্যবসায় হাত লাগালেও রাজনীতি নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।
তবে এবার সাদনানের জন্য সবাই খাটছে।
এতেও সবাই কমবেশি আশ্চর্য।
আজ সকালে তারা বেশ কিছু এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছে। দুপুর হতেই আবার ফিরে এসছে।
তিন্নি মাইশার সাথে কথা বলে চলে যেতে যাচ্ছিল।কিন্তু সুফিয়া বেগম সালেহা বেগম যেতে দেয় নি।দুপুরে খাবার না খাইয়ে কিছুতেই যেতে দিবে না। তিন্নি বাধ্য হয়ে থেকে গেলো।
দুপুরে সবাই এক সাথে খাবার খেলো।কালাম খাঁন অদ্ভুত ভাবে মেয়ে টাকে বারকয়েক নজরে পড়ে।মনে হচ্ছিল কোথাও দেখেছে। পরক্ষণেই মনে পড়ে মাইশার বিয়েতে দেখা হয়েছে। কিন্তু না আরও কোথাও দেখেছে। তিন্নি কালাম খাঁন এর সাথে একবার কথা বলেছে। স্যার এর বাবা বলে কথা।
খাবার শেষ কালাম খাঁন সবার সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।
তিন্নি অনেক আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।কিন্তু গাড়ি একটাও নেই। সাড়ে তিনটায় বেরিয়েছিল চারটার দিকেও তিন্নি কোনো গাড়ির পেলো না মূলত সব গাড়ি ভর্তি মানুষ কোনো গাড়ি ফাঁকা নেই।কালাম খাঁন নিজের গাড়ি নিয়ে গেইট ওভারটেক করার সময় তিন্নি কে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।মেয়ে টা বাড়ি থেকে অনেক টা সময় হয় বেরিয়ে এসছে।
গাড়ি যে পাচ্ছে না তিনি বুঝতে পারে।
গাড়ি সাইড করে দাঁড় করিয়ে তিন্নি কে ডাকলো।
তিন্নি কাছে এগিয়ে গেলো।
মুচকি হেঁসে বলল,

-“জ্বি আঙ্কেল!”

-“তুমি কোথায় যাচ্ছো?
গাড়ি নেই।”

-“হ্যাঁ আঙ্কেল একটা গাড়ি ফাঁকা নেই।
আমার সামনে একটা টিউশন আছে ওখানে যাব।”

-“তুমি আমার সাথে এসো।
আমি এদিক দিয়ে বাড়ি ফিরছি।”

তিন্নি না করতে ইচ্ছে করল।কিন্তু কোনো গাড়ি নেই তারউপর ভদ্রলোক নিজে থেকে বলেছেন।
তিন্নি বেশি কিছু না ভেবে ওঠে গেলো।কালাম খাঁন গাড়িতে তিন্নি সাথে অনেক কথা বলল।তিন্নির বাবা মা নেই জানতে পেরে ওনি ভীষণ আফসোস করলেন।সাথে এখন থেকে কোনো প্রয়োজন হলে ওনাকে জানাতে বলল।তিন্নি শুধু মুচকি হাসল।কালাম খাঁন যে ভীষণ ভালো লোক সেটাও তিন্নি বুঝতে পারে। আধঘন্টা পর তিন্নি বড় একটা বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামাতে বলল।
এটা ছাঁদে একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। কালাম খাঁন তিন্নি কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতেই আরেক টা গাড়ি গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো। পার্কিং লটে গাড়ি টা পার্ক করে গাড়ির মালিক গাড়ি থেকে বেরুতেই কালাম খাঁন ভ্রু কুঁচকে নিলো।এটা কবির। গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে আজ।কালাম খাঁন গাড়ি স্টার্ট করলো।হয়তো ছেলের কোনো জরুরি কাজ রয়েছে। তবে মনে মনে কিছু একটা খটকা লাগল।
হঠাৎ করেই মনে পড়ল।তিন্নির ছবি তিনি তার ছেলের ফোনের লকস্কিনে দেখেছে। ছবি টা স্পষ্ট ছিল না বিধায় এতোক্ষণ বিষয় টা মনে করতে পারছিল না। তবে বিষয় টা তেমন পাত্তা দিলো না। অফিস থেকে জরুরি ফোনকল আসায় বিষয় টা আরো ভুলে গেলো
কবির গাড়ি পার্কিং করে গেইট এর দিকে তাকাতেই কালাম খাঁন এর গাড়ি নজরে এলো একটু বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “বাবা এখানে?আমাকে দেখেছে?”
কবির এর ভাবনার মাঝেই তিন্নি এগিয়ে এসে কবির খাঁন কে বিনয়ের সাথে সালাম দিলো।
কবির থমথমে কণ্ঠে সালামের উত্তর করলো।
চোখর সানগ্লাস টা ঠিক করতে করতে জানতে চাইলো,

-“টিউশন শেষ?”

-“নাহ।
পাঁচ টায় যাব।”

তিন্নি জানাল।
লিফটে করে ওরা ছাঁদে এলো।একদম কর্নারে একটা টেবিলে গিয়ে বসল।
একদম নামী-দামী একটা রেস্টুরেন্ট।এক-এক টা টেবিলের মধ্যে অনেক দূরত্ব।তারউপর ডেকোরেশন চমৎকার।
ওরা বসার পর একজন ওয়েটার এলো।কবির তিন্নি কে কিছু জিগ্যেস না করেই কয়েকপদ খাবার অর্ডার দিলো।
ওয়েটার জানাল একটু সময় লাগবে।কবির শুধু মাথা দুলিয়ে ওয়েটার কে যেতে বলল।
ওয়েটার যাওয়ার পর কবির মুখ থেকে মাস্ক টা খুলে নিলো।তিন্নির চোখ কবির খাঁন এর মুখে আঁটকে গেলো।
চোখে সানগ্লাস আকাশী রংয়ের শার্ট গায়ে কালো প্যান্ট। চমৎকার দেখতে এই পুরুষ টাকে যেকোনো মেয়ে এক দেখায় প্রেমে পড়বে।

-“আমাকে পর্যবেক্ষণ করা শেষ?”

তিন্নি আকস্মিক কবিরের এরূপ প্রশ্নে হকচাল।লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো।
কবির তিন্নির দিকে তাকিয়ে হাসলো।যেটা তিন্নির নজরে এলো না। কবির মুগ্ধতা নিয়ে তিন্নির দিকে তাকালো। গায়ে খয়েরী রঙের একটা কুর্তি। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ঝুলানো। গায়ের রং টা চাপা হয়তো নিজের যত্ন খুব একটা করে না।অবশ্য করার কথাও নয়।বাবা মা ছাড়া নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে একা একা নিজের জীবন পরিচালনা করা বড্ড কঠিন।যেই যুদ্ধ প্রতিনিয়ত তিন্নি করে আসছে।নিতান্তই বাচ্চা মেয়ে।

,-“স্যার কোনো দরকার!
না মানে এভাবে,,

-“হ্যাঁ তোমাকে।
দেখো আমার ভূমিকা নিয়ে কথা বলা একদম পছন্দ নয়।সোজা উপসংহারে পছন্দ। সোজাসাপ্টা বলতে গেলো আমি তোমায় ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।
আমি চাইলে বাবা কে দিয়ে তোমাকে প্রস্তাব পাঠাতে পারতাম। কিন্তু ওই যে বললাম ভূমিকা আমার একদম পছন্দ নয়।তাই আমার মনে হলো আগে তোমার সাথে কথা বলে তোমার মতামত জানা প্রয়োজন। অযথা জল গোলা না করে আমাদের মধ্যে আগে এটা নিয়ে কথা বলে ক্লিয়ার হওয়া উচিৎ।”

তিন্নি স্তব্ধ। কস্মিনকালেও তিন্নি ভাবতে পারে নি কবির এমন কিছু বলার জন্য ওকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে।
না চাইতেও তিন্নির চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।কবির হকচকাল।
ওঠে এগিয়ে এসে তিন্নির পাশে বসে অস্থির কণ্ঠে বলল,

-“দেখো তোমাকে কেউ জোর করবে না তুমি সময় নাও যতটা লাগে। কিন্তু সময় শেষ উত্তর টা আমি পজিটিভ,,,

কবির খাঁন এর পুরো কথা না শুনেই তিন্নি
মলিন কণ্ঠে বলল,

-“স্যার আমার পরিবার নেই।রূপ গুণ কোনো দিক দিয়ে আহামরি নই।
কিচ্ছু নেই।আমার থেকে ভালো কাউ কে ডিজার্ভ করেন আপনি।
হয়তো আবেগের বশে এসব বলছেন এখন।যখন কোনো সমস্যায় পড়লে আমার দিক থেকে পারিবারিক কোনো সহয়তা পাবেন না তখন আপনার হয়তো মনে হবে আবেগের বশে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল টা আপনি করেছেন।”

তিন্নির কথায় কবির চোয়াল শক্ত করে নিলো।মেয়ে টা কি সব উদ্ভট কথা বার্তা বলছে বুঝতে পারছে?পারিবারিক সহয়তা বলতে যে আর্থিক সাহায্যের কথা বলছে সেটাও বুঝতে পারে কবির। কবির গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“তোমার আমার বয়স টাকে আবেগের মনে হচ্ছে?
আর তোমার পরিবার নেই।এতে তোমার কোনো হাত নেই।সব আল্লাহর ইচ্ছে। আর আমার বাবার বা আমার আল্লাহ কোনো দিক দিয়ে কম দেয় নি যে অর্থ-সম্পত্তির জন্য তোমার পরিবারের প্রয়োজন হবে।
আমি তোমার কি আছে না আছে এসব জানতে চাই না আমি তোমায় ভবিষ্যতে হতে চাই।যার সবটা জুড়ে আমি থাকব।”

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা

মির্জা বাড়ির সবাই ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে।প্রিয়তা এই প্রথম ভোট দিয়েছে।তাও আবার নিজের ব্যাক্তিগত মানুষ টাকে।আল্লাহ দরবারে রাজনীতি নিয়ে এই প্রথম প্রিয়তা আল্লাহর কাছে দো’আ চেয়েছে নিজের ভালোবাসার মানুষ টার জয় নিয়ে। হ্যাঁ প্রিয়তাও ভালবেসে ফেলেছে। এই নেতা সাদনান ভাই কে প্রিয়তা ভালোবাসে।হয়তো পবিত্র বন্ধনের শক্তি এটা।একে-অপরকে প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান যত্ন ভালোবাসা সব কিছু প্রিয়তা সাদনান ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছে।ভোট কেন্দ্র থেকে মির্জা বাড়ির সবাই কে মফিজুর মির্জা আর রাহান তাদের দায়িত্ব নিয়ে ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। আর সেটার সম্পূর্ণ টা সাদনান কড়া নির্দেশ দিয়েছে যাতে একটা ফুলের টোকাও কারোর গায়ে না লাগে।যদিও খারাপ কিছু বা বিরোধী দলের লোকেরা কিছু করবে না।সাদনানের ধারণা। তারপরও সে কোনো রকম রিস্ক নিতে চায় না।
বাড়ি ফিরে সব মহিলা সদস্যদের অস্থিরতা চিন্তা সব শুরু হয়ে।
একটা পুরুষ মানুষ বাড়িতে নেই।দুপুর খাবার সবাই খেলো না।প্রিয়তা রুম থেকে বেড় হচ্ছে না।
শুধু ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে।আম্বিয়া মির্জা কে অনেক কষ্টে খাবার খাইয়ে ঘুমের ঔষধ দিয়ে রুমে পাঠাল।সালেহা বেগম শাশুড়ী সেবা শেষ প্রিয়তার জন্য খাবার হাতে রুমে এলো।প্রিয়তা কে ফ্রেশ করিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দিলো। প্রিয়তা খাবার শেষ সালেহা বেগম এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে ভীতু স্বরে বলল,

-“মা আমার ভয়ে হচ্ছে।
কোনো অঘটন হবে না তো?”

-“কিচ্ছু হবে না।
তুই ঘুমা।”

সালেহা বেগম প্রিয়তা কে স্বান্তনার বাণী শোনালেও নিজেও ভয়ে পাচ্ছে।
না চাইতেও কতরকম চিন্তা মাথায় এসে ভর করছে।বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা বিপদ আসতে চলছে। সালেহা বেগম প্রিয়তার মুখের দিকে তাকাল।মেয়ে টার মুখ টা চিন্তায় শুঁকিয়ে এটুকুনি হয়ে গিয়েছে।
প্রিয়তা ঘুমিয়ে পড়েছে তাই তিনি প্রিয়তা কে বিছানায় বালিশে শুইয়ে দিয়ে রুমের দরজা টা চাপিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে গেলো।

—-

ভোট গণনায় প্রতি টা কেন্দ্রে সাদনান এগিয়ে আছে। সাদনান নিজেও উপজেলা পরিষদ ভবনে বসে আছে। ঘোষণা খুব শীগগির দেওয়া হবে। টিভি স্কিনে এমন একটা খবরই ভেসে রয়েছে।সুস্থ ভাবে ভোট হয়েছে কোনো দুর্নীতি করতে পারে নি এবার।পাবলিক নিজের ভোট এবার নিজেরা দিয়েছে।
রাত তখন আটটা। সাদনান স্বাভাবিক। তার পাশেই বসে রয়েছে জাফর মির্জা আর সাদনানের বাপ চাচা। অপর পাশে বিরোধী দলের প্রাক্তন এমপি।চোখে মুখে হিংস্রতা। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভোট গণনা শেষ ঘোষণা দেওয়া হলো।বিপরীত প্রার্থীর চেয়ে দিগুণ ভোট বেশি পেয়ে মির্জা সাদনান শাহরিয়ার জয় লাভ করেছে।
খবর টা টিভি স্কিনে দেখা মাত্র মির্জা বাড়িতে মহিলারা সবাই ভীষণ খুশি হয়।প্রিয়তা খুশি আম্বিয়া মির্জা প্রিয়তা কে ডেকে হাসি মুখে বলল,

-“নাতবউ। আমার নাতির জন্য বিশেষ কিছুর আয়োজন কর।”

সবাই অবাক। তবে খুশির মধ্যে এমন ভালো মূহুর্ত খুশিটাকে দিগুণ করে দিলো।প্রিয়তা লজ্জা পেলো। লিভিং রুম থেকে রুমে চলে এলো।তবে ভয় এখনো কাটে নি।
যতক্ষণ না সাদনান ভাই ঠিকঠাক বাড়ি ফিরছে ততক্ষণে প্রিয়তা শান্তি পাচ্ছে না।
তবুও প্রিয়তা কিছু ভেবে সাদনানের ব্যালকনির সব গাঁদাফুল গোলাপ ফুল,কাঠগোলাপ বেলি ফুল সব ফুল ছিঁড়ে নিলো।নিচে কাজের লোকের সাহায্য বাগান থেকে ফুল আনাল।আর রুমে আগে থেকে কিছু সুগন্ধি যুক্ত ক্যান্ডেল ছিল সেগুলো দিয়ে রুমে টা সাজিয়ে নিলো।বিয়ের পর সাদনান প্রিয়তা কে তিন টা শাড়ী দিয়েছে। সেখান থেকে একটা শাড়ী পড়ে সেজেগুজে তৈরী হবে এমনটাই মনস্থির করলো।

রাত সাড়ে নয়টার দিকে সারা’র ফোনে কল এলো।রাহানের নম্বর থেকে। সারা অবাক হলো। এমন সময় রাহানের ফোন অপ্রত্যাশিত। তাই ভাবুক হলো।ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“হ্যাঁ রাহান ভাই!”

-“শোন সাদনানের গুলি লেগেছে।
হসপিটাল নিয়ে এসছি।”

সারা’র পাশেই রাহানের মা বসে ছিল। তিনি তৎক্ষনাৎ এক চিৎকার দিলেন।সারা’র হাত থেকে ফোন টা ঠাশ করে সোফায় পড়ে গেলো।
রান্না ঘর থেকে সুফিয়া বেগম, সালেহা বেগম, কাজের লোক সবাই লিভিং রুমে এসে জড়ো হলো।
রাহান কতক্ষণ হ্যালো হ্যালো বলে।পুরো কথা তো সে বলে নি।ফোনের এপাশ হতে কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু সোরগোল এর আওয়াজ আসছে তাই ফোন কেটে দিলো।
সারা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। রাহানের মা ততক্ষণে কথা খানা সবাই কে বলে দিয়েছে।
সবাই ছুটলো বাড়ির বাহিরে।
সদর দরজার কাছে যাওয়া মাত্র রাহানের বাবা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো।
মূলত তিনি খবর পাওয়া মাত্র চলে এসছে।

-“ভাইজান ভাইজান আমার ছেলে!”

সালেহা বেগম ভীতু স্বরে বলে উঠলো।
সুফিয়া বেগম জা কে আগলে রেখেছে।
রফিক আহমেদ আশ্বাস দিয়ে বলল,

-“ভাবি ভয় পাবেন না।
সাদনান ঠিক আছে।গুলি হাতের বাহুতে লেগেছে। আর সাথে সাথে হসপিটাল নেওয়ার জন্য রক্তক্ষরণ বেশি হয় নি।”

-“আমি যাব!”

সুফিয়া বেগম অনামিকা বেগম সারা মাইশা সবাই যাবে বলে জানাল।রফিক আহমেদ নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,

-“তুমি বাড়িতে থেকে যাও ওদের কে নিয়ে। আম্মা বাড়িতে। আর প্রিয়তা তো জানে না এসব?”

-“কি জানার কথা বলছেন বাবাই?”

অনাকাঙ্খিত ভাবে এখান প্রিয়তার উপস্থিতিতে সবাই ভড়কালো। প্রিয়তা সবাই কে সদর দরজায় দাঁড়ানো দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এসে বিনয়ের সাথে জিগ্যেস করলো,

-“কিছু কি হয়েছে?
সবাই কে চিন্তিত দেখাচ্ছে!”

প্রিয়তার কোনো প্রশ্নের জবাব কেউ দিলো না।কি বলবে?সারা চোখ ফুলে আছে। সালেহা বেগম এর চোখে পানি একে একে প্রিয়তা সবার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠল প্রিয়তা।
সারা কে অস্থির আর ভীতু স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“কি হয়েছে সারা?
সবাই কান্না করছে কেনো?
কি হলো বল!”

সালেহা বেগম ততক্ষণে আরো জোরে কেঁদে দিয়েছে। রফিক আহমেদ বিরক্ত হলো সব মহিলাদের উপর। আবার পরক্ষণেই ভাবে মায়ের মন। সন্তানের কিছু হলে মায়েদের মন অস্থির হয়ে যায়।
প্রিয়তা একে একে সবাই কে জিগ্যেস করতে লাগলো।কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
প্রিয়তার কোনো এক অজানা কারণেই বুকের ভেতর যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখ দিয়ে সমানতালে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। প্রিয়তা শেষ রফিক আহমেদ কে জিগ্যেস করার জন্য উদ্যত হতেই সারা বলে উঠলো,

-“প্রিয় ভাইয়ার গুলি লেগেছে।”

সারা হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলো।ফ্যালফ্যাল করে সারা’র দিকে তাকিয়ে পাগলের ন্যায় বাড়ি থেকে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।পেছনে পেছনে সবাই এলো।সারা গিয়ে প্রিয়তা কে আগলে নিলো।
প্রিয়তা তখনো পাগলের মতো কিছু বলছে আর কান্না করছে। সালেহা বেগম গিয়ে প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে নিজেও কাঁদতে লাগলো।সারা রফিক আহমেদ কে বলল,

-“বাবাই গাড়ি।”

রফিক আহমেদ সম্মতি দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
ফিরে এলো গাড়ি নিয়ে।
প্রিয়তা পেছনের সিটে বসে গেলো।সাথে সালেহা বেগম সুফিয়া বেগম বসলো।
রফিক আহমেদ গাড়ি স্টার্ট করলেন।

——

প্রিয়তারা যখন হসপিটাল পৌঁছাল তখন রাত দশ-টার বেশি সময় বাজে।
প্রিয়তা গাড়ি পার্কিং করার পরপরই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে হসপিটালের ভেতর চলে এলো।লিফট অফ সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সালেহা বেগম এসে হাত টেনে ধরে বলল,

-“পাগলামি করিস না প্রিয়।
তুই পাঁচ তলায় সিঁড়ি বেয়ে আর দাঁড়াতে পারবি?”

প্রিয়তা কিছু বলার আগেই লিফট ওপেন হলো সবাই লিফটে করে পাঁচ তলায় যাওয়া মাত্র সেখানে পুলিশ আর অনেক মানুষ সাথে সাংবাদিক তো আছেই।কিছু কিছু মানুষ গুঞ্জ শোনা যাচ্ছে। এমপি কে এখানে হসপিটাইলেস করা হয়েছে। সেইজন্য এতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
একটু এগিয়ে যেতেই মানুষের ভীড় কমে এলো।
মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা জাফর মির্জা একে একে সবার দেখা মিলে।।আয়ান বোন কে এভাবে দেখে বুকের ভেতর ধক করে উঠল।দুই বোন তার ভীষণ আদুরে। এরমধ্যে ছোট বোন কে আয়ান সব সময় একটু বেশি ভালোবাসে।তাই বোনের এমন অবস্থায় দেখে বুকের ভেতর মুচড় দিলো। এগিয়ে এসে বোন কে আগলে নিলো। সাদনান কে কেবিনে দেওয়া হয় নি এখনো। বিপদমুক্ত রয়েছে। অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।
আয়ান জানাল।তবে খুব দ্রুত দেখা করা যাবে ডক্টর জানিয়েছে। প্রিয়তা ভাইয়ের মুখ থেকে এসব কথায় একটু শান্ত হলো।কান্নার বেগ কমে এলো।তবে সাদনান কে দেখা না পাওয়া পর্যন্ত সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।

—-

সাদনানের জ্ঞান ফিরল সাড়ে এগারো টা নাগাদ। এক-এক করে সবাই দেখা করল।
প্রিয়তা এক কোণায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সবাই যাওয়ার পর সাদনান প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল,

-“দরজা বন্ধ করে এসো।”

প্রিয়তা তাই করলো।
দরজা বন্ধ করে এগিয়ে গেলো।সাদনানের ডান হাতে গুলি লেগেছে। সাদনান বা হাত বাড়িয়ে প্রিয়তা কে টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে দিলো। যার ফলে নিজের ক্ষতস্থানে ব্যথা লাগে। নাক মুখ কুঁচকে নিলো। প্রিয়তা অস্থির হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে করতে বলল,

-“কি করছেন ব্যথা লাগবে।
ছাড়ুন আমি পাশে বসছি।”

-“পোষাবে না।
এভাবে থাকো।”

সাদনান ঘোরলাগা কণ্ঠে জানালো। বউয়ের মুখপানে তাকিয়ে সে বুঝতে পেরেছে এই মেয়ে যে এতোক্ষণে কেঁদে কুদে অস্থির ছিল।
সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় দরজায় কেউ নক করলো।
প্রিয়তা সাদনানের বুকের উপর থেকে ওঠে নিজে কে ঠিকঠাক করে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই রাহান এলো।
রাহান ফোন সাদনানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

-“তোর কথা মতো কাজ হয়ে গিয়েছে।”

সাদনান রহস্যময় হাসি হাসলো।প্রিয়তা ড্যাবড্যাব করে দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি নিয়ে কথা বলছে?ফোনের স্কিনে কি রয়েছে এমন যে সাদনান ভাই এমন অদ্ভুত হাসি হাসলো?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান রাহান কে বলে উঠলো,

-“গুড জব।
আমি এর সাথে সাক্ষাৎ সেরে নেব।”

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-১০

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা

সারা পরপর কয়েকবার হাঁচি দিতেই রাহান ফুঁসে ওঠে।
চায়ের কাপ ঠাশ করে টেবিলের উপর রেখে ধমকের স্বরে বলে উঠলো,

-“কে বলেছিল বৃষ্টিতে ভেজবার?
থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।”

সারা শুধু চুপ করে শুনল।কিছু বলল না।
রয়েসয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসায়। রাত সাড়ে এগারো টা। রাহান সাদনানের সাথে বাড়ি ফিরেছে। খাবার খেয়ে রুমে আসার পরপরই সারা’র আগমন হয়েছিল।
রাহান অবাক হয়েছে। সাথে এতো রাতে একটা ছেলের রুমে আসার জন্য কিছু কড়া কথা শোনাবে চিন্তা করে। বড্ড ছেলেমানুষী করে সারা বড় হয়েছে বুঝতে হবে।কিন্তু রাহান কিছু বলার আগেই সারা মিনমিন করে আবদার স্বরে বলেছিল,-“আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে।
চলুন না দু’জন মিলে চা খেয়ে আসি।”
রাহান কিছু বলতে গিয়েও পারে নি।হয়তো ভালোবাসার মানুষ টার একটু সঙ্গ পাবে সেই লোভে।
তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে। গেইট দিয়ে নয় দেওয়াল টপকে।ইশ সারা কে দেওয়ালের ওপারে আনতে কতটা না কষ্ট হয়েছে।
রাস্তার পাশে ঘাসের উপর পরেছিল বিধায় রাহান ব্যথা পায় নি।নয়তো কি অবশ্য টাই না হতো।ভাবতে গায়ে কাটা দেয়।
সারা কে দুই হাত আগলে নিতেই সারা লাফ দেওয়ার পর রাহান কে নিয়ে ধপাস করে পড়ে ছিল।

-“রাহান ভাই!”

হঠাৎ সারা’র ডাকে রাহানের ভাবনার সুতো ছিঁড়ে।
আকস্মিক এভাবে ডাকায় নিজেও তড়িঘড়ি করে জবাব দিলো,

-“হ হ্যাঁ বল?”

-“বাড়ি যাব না?”

সারা জিজ্ঞেস করলো।
রাহান হাতের চায়ের কাপে শেষবার চুমুক দিয়ে সেটা পাশে ফেলে দিয়ে বলল

-“হ্যাঁ চল।”

দু’জনে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।
জায়গায় টা গ্রাম হলেও সবকিছু কেমন আধুনিকতার ছোঁয়া। রাস্তা পিচঢালা। আবার মাঝেমধ্যে একটু পথ হাঁটার পর আবার লাইট দেওয়া।
পাশের জমি গুলো বেশ কিছু ভরে নিয়েছে হয়তো খুব দ্রুত এগুলোতে বড় বড় দালান হবে।
গ্রামের সাড়ে এগারো টা মানে অনেক রাত।
তবে চায়ের দোকান গুলোতে মাঝবয়সী কয়েকজন মিলে মিলে চায়ের সাথে টিভি দেখতে দেখতে আড্ডা জমিয়েছে।। এমনি একটা দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন ফিসফিস করে বলাবলি করতে লাগলো, -“একই বাড়িতে থাকে।প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে। নিশ্চয়ই কিছু আছে এদের মধ্যে। নয়তো এতো রাতে এভাবে একা একটা মেয়ে নিয়ে কোনো ছেলে বেরিয়ে আসে?
শুধু চেয়ারম্যান এর নাতিনাতনি বলে।নয়তো এদের গ্রাম ছাড়া করতাম।”

কয়েকজন আবার সাথে তাল মিলাল।সারা’র সারা শরীর ঘিনঘিন করতে লাগলো।
রাহান রাগে চোয়াল শক্ত করে সারা’র হাত ধরে সেখান থেকে দ্রুত চলে এলো।
সারা’র চোখে পানি টলমল করছে। হয়তো আঁখি পল্লব ঝাপটালে সেগুলো গাল বেয়ে জমিনে লুটিয়ে পড়বে।
রাহান প্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর ভয়ংকর যন্ত্রণা অনুভব করে।
এক হাতে আগলে নিলো এক বাহুতে। সারা কান্না ভুলে শিউরে ওঠে।
শক্ত হাতে নিজের পরিহিত জামা খামচে ধরে বলল,

-“সরি রাহান ভাই।
আমার জন্য আপনাকে এতোগুলা কথা শুনতে হলো।আমি বায়না না ধরলে এমন টা হতো না।”

-“চাপকে সব দাঁত ফেলে দেব।
এদের কথা কানে তুলতে নেই।আমি এদের কথার জবাব নিরবে দিয়ে দেব।”

শেষের কথা টা বিড়বিড় করে বলল।
সারা শুনতে পেলো না। তাই ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“কিছু বললেন?”

-“নাহ।
বাড়ি চলে এসছি।চল আগে তুই যা আমি পরে উঠছি।”

-“আচ্ছা।”

সারা কে রাহান উপরে উঠতে সাহায্য করে। সারা প্রাচীর টপকে ওপারে চলে গেলো।
সাথে সাথে রাহান নামল।মই বেয়ে আগে সারা নিজের রুমে গেলো।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে সারা রাহান মই একটা গাছের সাথে রেখে নিজে পাইপ বেয়ে ওয়াশরুম দিয়ে নিজের রুমে গেলো।
সারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজেও রুমে চলে গেলো।
আর সবটা বিষয় কেউ অন্ধকারের আবছা আলোয়ের মাঝে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো।

কবির ব্যালকনি থেকে রুমে এলো।আজ অনেক দিন নিজের মন আর মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে মনের কথা শুনে ম্যাসেজ দিয়েই ফেলল।মেয়ে টা বড্ড জ্বালাচ্ছে বেশ কিছু দিন হলো।একটা বিহিত করা প্রয়োজন। নিজের মনের সাথে রোজ যুদ্ধ করা তো সম্ভব নয়।যেখানে এই রমণী মনের মধ্যে গাপটি মেরে বসে রয়েছে।
এখন দেখা যাক কাল কি হয়ে!

তিন্নি ফেসবুক স্ক্রল করছিল।
খুব বেশি একটা সে ফেসবুক আসে না। শুধু নামেই একটা একাউন্ট রয়েছে। ব্যস্ততার মধ্যে সেটায় খুব বেশি আসার সময় হয় না।
মাঝেমধ্যে রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে একটু আসে।
হঠাৎ মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ করে একটা ম্যাসেজ এলো।তিন্নি চমকাল।অনাঙ্ক্ষিত আইডি থেকে ম্যাসেজ দেখে হাত কাঁপল। তবে ম্যাসেজ টা ওপেন করল।
আর সাথে সাথে তিন্নি আরো কয়েক দফা অবাক হলো।
কবির খাঁন ম্যাসেজ করেছে,-“কাল বিকেলে ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টে আসবা।”
তিন্নি তব্দা খেয়ে বসে রইলো।বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো এটা কবির স্যার। তাই তো বারকয়েক আইডি চক্কর কাটলো।সত্যি এটা কবির স্যার এর আইডি না-কি ফেইক!না এটাই কবির খাঁন এর আইডি।তিন্নি ম্যাসেজ সিন করে নেট বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।আর সারা রাত ভাবতে লাগল কালে যাবে? না যাবে না?

——

ওয়াশ রুমে এসেই সাদনান আগে বউ কে ফ্রেশ হতে সাহায্য করল।প্রিয়তা একদম নেতিয়ে গিয়েছে। মেয়ে টা প্রথমবারের বলিষ্ঠ সুপুরুষ সাদনানের গভীর থেকে গভীর স্পর্শে মূর্ছা যাচ্ছে।
বউয়ের এমন অবস্থায় সাদনানের মায়া হলো।কতবার না করল সাদনান।
কিন্তু বউ তার বেহায়া হয়ে সাদনানের কথা পাত্তা দিলো না। উন্মাদ সাদনান বউয়ের ডাকে সারা না দিয়ে থাকতে পারলো না। এখন মনে হচ্ছে একদম ঠিক হয় নি।সময় দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু আর কত দিন?একই ঘরে একই বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে ভালোবাসার মানুষ টার কাছ থেকে আরো দূরে থাকা যে সম্ভব হচ্ছে না। আর সেটা অসম্ভব করে দিয়েছে বউ নিজে।সাদনান প্রিয়তার গায়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে দিয়ে ওয়াশ রুম থেকে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হতে গেলো।
প্রিয়তা সাদনান যাওয়ার পর নিজে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ পড়ে নিলো।সাদনানের জন্যও কাপড় নামিয়ে রাখে।অতঃপর জায়নামাজ বিছিয়ে সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।
সাদনান খুব দ্রুত বেরিয়ে এলো।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বিছানায় প্রিয়তার পাশ থেকে নিজের ড্রেস হাতে নিলো।
প্রিয়তা লজ্জায় মাথা নিচু করে ওঠে ওয়াশ রুম যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সাদনান এগিয়ে এসেছি ধরলো।
প্রিয়তা মিহি কণ্ঠে বলল,

-“আমি পারব।
আপনিও আসুন ওজু করে নিবেন।”

সাদনান মাথা দুলাল। প্রিয়তা ওজু শেষ সাদনান ওজু করে এলো।
সাদনান আগে দাঁড়াল প্রিয়তা সাদনানের থেকে সামন্য পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ শেষ করল।
প্রিয়তা বারবার লজ্জায় মাথা নুইয়ে রাখছে। সাদনান বিষয় টা বুঝতে পারে।
প্রিয়তা কে টেনে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

-“লজ্জা নারীর ভূষণ।
আমার ব্যাক্তিগত নারী আমার সামনে লজ্জা পাবে স্বাভাবিক। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মাঝে এসব হবেই।”

-“ভালোবাসা না থাকলেও এসব হয়?”

প্রশ্ন টা খুব সহজ। কিন্তু সাদনানের নিকট ছোট বউয়ের এই ছোট একটা প্রশ্ন বড্ড ভারী আর জবাব টা খুব কঠিন মনে হলো।সাদনান সময় নিয়ে বউয়ের মাথার তালুতে চুলের ভাঁজে নিজের অধর স্পর্শ করে জবাব দিলো,

-“অবশ্যই হয়।”

-“আপনি আমায় ভালোবাসেন?”

কৌতুক মনে হলো সাদনানের কাছে প্রিয়তার এই প্রশ্ন টা।
হাসল বোধহয় সাদনান। প্রিয়তা সাদনানের হাতের বাঁধন হতে মুক্তি পেতে ছুটাছুটি করল।
সাদনান সেটা সম্ভব হতে দিলো না। আবার টেনে জড়িয়ে ধরে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নিজেও প্রশ্ন করলো,

-“আমার স্পর্শে বুঝি ভালোবাসা ছিল না?”

প্রিয়তা কেঁপে উঠল।
প্রিয়তার জবাব দিতে ইচ্ছে করল।স্বর্গ সুখ পেয়েছি। ভালোবাসা না থাকলে বুঝি এটা সম্ভব হতো?
কিন্তু কোনো জবাব প্রিয়তা দিলো না। সাদনান নিজেও আর কথা বাড়াল না।বউকে আরো সময় দিলো।সময় তো আর চলে যাচ্ছে না।

#চলবে…..

আমার তুমি ২ পর্ব-০৯

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

বেশ কিছু দিন নাগাদ সাদনানের দেখা খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। দু’দিন বাদে ভোট দেখা না পাওয়ারই কথা।সকাল সকালই আজ সাদনান বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।এরপর আর লোকটার দেখে মিলে নি।যদিও একবার ফোন করেছে। দুপুরে খাবার খাওয়ার কড়া নির্দেশ দিয়ে। এখন বিকেল।প্রিয়তা দুপুরে খাবার খাওয়ার পর ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎই ঘুম ভেঙে যাওয়াতে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল।
আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে বাতাস বইছে।
প্রিয়তা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে।বেশ ভালোই লাগছে। প্রিয়তা নিজের দিকে একবার তাকাল।আজ দুপুরে গোসল করে শাড়ী পড়েছে কালো রঙের। আয়নাও পড়েছে সাথে প্রিয়তা কেও পড়িয়ে দিয়েছে। প্রিয়তা কিছু ভেবে সারা’র রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
দরজায় কড়া নাড়তেই সারা ভেতর থেকে বলল,

-“কে?
দরজা খোলা আছে।”

প্রিয়তা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে।
সারা একটা বই হাতে বসে আছে। হয়তো কোনো উপন্যাসের বই হবে। প্রিয়তা সে দিকে নজর দিলো না।যা মতলব নিয়ে এসছে সেটা উগড়ে দিয়ে বলল,

-“চল বৃষ্টি ভিজি!
অনেক দিন ধরে ইচ্ছে করে।”

সারা অবাক হলো।
বই বন্ধ করে বলল,

-“মা জানতে পারলে দু’জন কে আস্ত রাখবে না।
আর দাদি আছরের আযান এর পর কাউ কে ছাঁদে যেতে বারণ করছে।”

প্রিয়তা যতটা উচ্ছসিত হয়ে কথা টা বলে ছিল সারা’র কথা শুনে ঠিক ততটা মনঃক্ষুণ্ন হলো।
সারা প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হলো।
বই পাশে রেখে ওঠে দাঁড়িয়ে প্রিয়তার হাত ধরে টেনে ছাঁদের উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

-“চল।
কেউ দেখার আগে চলে আসব।”

প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জার কথা মাথায় আসতেই সারা কে থামিয়ে দিয়ে বলল,

-“থাক।
দাদি জানতে পারলে আবার ঝামেলা করবে।”

-“কিচ্ছু হবে না।
আমরা তাড়াতাড়ি চলে আসব।”

প্রিয়তার কথা শুনল না সারা।টেনে নিয়ে ছাঁদে চলে এলো।
মূহুর্তের মাঝে বৃষ্টির পানি দু’জন কে ভিজিয়ে দিলো।
সারা প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে ছাঁদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল।
বৃষ্টির ফোঁটা শরীরে পড়তেই প্রিয়তা সব ভুলে গেলো।বাচ্চাদের মতো দুই বান্ধবী ইচ্ছে মতো ভিজল।
বেশ অনেক টা সময় পর প্রিয়তা কাঁপতে কাঁপতে সারা কে বলল,

-“সারা চল।
আমার ঠান্ডা লাগছে।”

সারা হয়তো আরও কিচ্ছুক্ষণ থাকতে মন চাচ্ছিল।কিন্তু প্রিয়তার ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে ছাঁদ থেকে নেমে এলো।
প্রিয়তা কে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে নিজেও রুমে চলে গেলো।

—–

সন্ধ্যায় সারা প্রিয়তার আর নিজের জন্য চা হাতে রুমে এলো।
প্রিয়তা তখন কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।
সারা চা রেখে প্রিয়তার পাশে বসে প্রিয়তার গালে হাত রেখেই চমকে উঠলো।
শরীর আগুনের ন্যায় গরম।
সারা প্রিয়তা কে বারকয়েক ডাকল।প্রিয়তা নিবুনিবু চোখে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো।
সারা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ফিরে এলো মিনিট দুই মিনিট এর মাথায় সাথে সুফিয়া বেগম সালেহা বেগম।
সালেহা বেগম এসেই প্রিয়তার পাশে বসল।
সুফিয়া বেগম আর সারা মিলে বালতিতে করে পানি আনে।
মাথায় দিয়ে অল্প খাবার খাইয়ে দিয়ে জ্বরে ঔষধ খাইয়ে দিলো।
জ্বর ছাড়ল ঘন্টাখানেক পর।
তখন রাত আটটা। সবাই চলে গেলো। শুধু সারা প্রিয়তার পাশে বসে রইল।

—-

রাত সাড়ে দশ-টা নাগাদ সাদনান রুমে এলো।গায়ের পাঞ্জাবি ঘামে জবজবে। সারা কে নিজের রুমে আর প্রিয়তা কে শুয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো।
চিন্তার ভাঁজ পরে কপালে।
কিঞ্চিৎ পরিমাণ সময় ভ্রু কুঁচকে দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে রুমে প্রবেশ করে।
কাবাড থেকে বাসায় পরিহিত পোশাক নামাতে নামাতে জিজ্ঞেস করলো,

-“এতো রাতে তুই বসে আছি?”

-“ভাইয়া প্রিয়র জ্বর হয়েছে।”

সারা জানাল।
সাদনান তড়িৎ গতিতে কাপড় হাতে সারা’র দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার বিছানায় বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“কি বলছিস?
সকালে ভালো ছিল দুপুরে ফোন করলাম।তখন তো বলে নি?”

-“সন্ধ্যায় হয়েছে।”

-“তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
রাত অনেক টা হয়েছে।”

-“আচ্ছা।”

সারা চলে গেলো।
সাদনান দরজা বন্ধ করে ফ্রেশ হয়ে এলো।
টাওয়াল ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে বউয়ের কাছে এলো।প্রিয়তার গায়ে হাত দিয়ে দেখেল।জ্বর বেশ ভালোই আছে। এরমধ্যে দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।সাদনান দরজা খুলতেই সুফিয়া বেগম রুমে এলো।হাতে খাবারের ট্রে।ওনি প্রিয়তা কে খাবার খাইয়ে দেওয়ার কথা জানালে সাদনান না করে দিলো।রাত অনেক টা হয়েছে নিজে করে নিবে বলে ছোটমা কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিলো।
সাদনান মগে করে পানি আনে।ছোট টাওয়াল দিয়ে প্রিয়তার হাত মুখ মুছিয়ে দিলো।
প্রিয়তা নিবুনিবু চোখে তাকিয়ে শুধু কিছু বিড়বিড় করল।সাদনান সেসব শুনতে পেলো না।
তবে বউ সব নালিশ যে নিজের নামে করছে সেটা ঠিক ঠাহর করতে পারে।
মগ ওয়াশ রুমে রেখে হাত ধুয়ে এলো।
খাবার থালা হাতে প্রিয়তার সামনে বসলো।প্রিয়তা তখনো জ্বরের ঘোরে কিছু বলে যাচ্ছে।
সাদনান প্রিয়তার মুখে এক হাতে চেপে ধরে খাবার দিলো।দু’তিন বার দেওয়ার পর হলো আসল কাহিনি। গরগর করে প্রিয়তা বমি করলো। যার সবটাই সাদনানের উপর পড়ল।নিজের জামাকাপড় সাথে সাদনানের টাও নষ্ট করল।
সাদনান অসহায় চোখে বউয়ের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকালো।প্রিয়তা বাচ্চাদের মতো করে মুখে হাত চেপে বসে আছে।
সাদনান ফোঁস করে দম ছাড়ে।খাবার থালা সেন্টার টেবিলে রেখে প্রিয়তা কে নিয়ে ওয়াশ রুম গেলো।
প্রিয়তার শরীরের গরম উষ্ণতা সাদনানের শরীরে শিহরণ তৈরী হলো।জামার চেইন খুলতে গিয়ে সাদনান বুঝতে পারল যেই কাজ টা করতে যাচ্ছে সেটা তার জন্য সহজ হবে না। কিন্তু করতে হবে। কিচ্ছু করার নেই।ভালোবাসার মানুষ সাথে বউ।পুরুষত্ব ঠিকই জেগে ওঠেছে।নিজের ভেতর উত্তেজনাকে চেপে রেখে এক টানে প্রিয়তার গায়ের জামা খুলে নিলো।
প্রিয়তার অর্ধনগ্ন শরীরের দিকে তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ সাদনান চোখ বন্ধ করে নিলো।
প্রিয়তা নিজেও লজ্জায় স্বামীর ছোঁয়ায় আড়ষ্ট।
তবে শরীরে বিন্দু পরিমাণ শক্তি অনুভব করে না। কাজ টা নিজে একা করা সম্ভব নয়।মাথা নিচু করে রইল।সাদনান পাশ থেকে টাওয়াল নিয়ে প্রিয়তার গায়ে পেঁচিয়ে দিলো।প্রিয়তার জামা টা ধুয়ে নিয়ে প্রিয়তার গা মুছিয়ে দিলো।সব কাজ শেষ সাদনানের যেনো বিশ্ব যুদ্ধ জয় হওয়ার মতো অনুভূতি হলো।তবে ভেতরে ভেতরে ঠিকই বউয়ের এমনতর অবস্থা নিজের পুরুষালী সত্ত্বা বারবার তাকে বউয়ের প্রতি আকৃষ্ট করছে।সাদনান প্রিয়তা কে ওয়াশ রুম থেকে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,

-“তুমি বসো।
আমি চেঞ্জ করে আসছি।”

সাদনান চলে গেলো।
প্রিয়তার শরীর এতোক্ষণে একটু বল এসছে।একটু আগের কথা ভেবে নিজে নিজে লজ্জায় রংধনু হতে লাগলো।
তবে চোখে গুলো জ্বলছে। জ্বর টা আবার আসছে।প্রিয়তা বিছানায় পা তুলে গায়ে কম্বল টেনে চোখ বন্ধ করে নিলো।
সাদনান শরীর উত্তেজনা এবং বুকের ভেতর হওয়া তোলপাড় কমাতে সময় নিয়ে শাওয়ার নিলো।
বেশ অনেক টা সময় পর বেরিয়ে এসে দেখলো প্রিয়তা শুয়ে পড়েছে।
সাদনান কাছে গিয়ে ডাকতেই প্রিয়তা ওঠে বসলো।
সাদনান প্রিয়তার হাতে একটা গেঞ্জি এগিয়ে দিয়ে বলল,

-“এটা পড়ে নাও।”

সাদনান উলটো দিকে ফিরে রইলো।প্রিয়তা গেঞ্জি টা পড়ে টাওয়াল নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

-“অদ্ভুত লোক।
একটু ভালোবাসে না।”

সাদনান প্রিয়তার কথা শুনল।তবে না শোনার মতো করে আবার একটা প্লেটে খাবার নিলো।
প্রিয়তা কে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে নিজেও অল্প খেয়ে নিলো।
বড় লাইট অফ করে ছোট লাইট লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় এলো।সাদনান শোয়া মাত্রই প্রিয়তা একটু গুটিয়ে গেলো।সাদনান সেটা লক্ষ করল। প্রিয়তা কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-“তুমি বললে ভালোবাসি না।অথচ কাছে এলে তোমার কাঁপা কাপি শুরু হয়ে যায়।না জানি গভীর ভাবে ছুঁয়ে,,

-“চুপ।
আগে ছুঁয়ে তো দেখুন।”

ইশ কি লজ্জাজনক কথা।সাদনান শব্দ করে হেঁসে উঠলো। প্রিয়তা এতোক্ষণে বুঝতে পারে মুখ ফসকে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে। এখন এই বেহায়া সাদনান ভাই কি করবে?প্রশ্ন টা মাথায় আসতেই প্রিয়তা চট করে সরে যেতে চাইলো সাদনানের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে।
কিন্তু সাদনান সেটা হতে দিলো না।এক ঝটকায় প্রিয়তা কে নিচে ফেলে নিজে প্রিয়তার উপর বসে আবছা আলোর মাঝে প্রিয়তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“আমাকে উস্কে দিয়ে এখন পালানো হচ্ছে?
কিন্তু সেটা হচ্ছে না সৌ্ সরি আমার জান।
এতোদিন সময় দিচ্ছিলাম।নিজেকে সামলে রেখে ছিলাম এখন তুমি সামলে নাও।”

সাদনান নিজের কথা শেষ প্রিয়তার গলায় মুখ গুঁজে দিলো।
আস্তে আস্তে ঘাড়ে গলায় অধরে অজস্র চুম্বন করতে লাগলো।প্রিয়তা নিজেও সাদনানের প্রতি টা স্পর্শে সঙ্গ দিলো।সাথে পাল্লা দিয়ে নিঃশ্বাসের শব্দ দিগুণ হলো।যা রাতের আঁধারে বড্ড ভারী শোনাল।

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-০৮

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

সারা আর প্রিয়তা ভার্সিটিতে ভর্তি কনফার্ম করেছে। ভাগ্যক্রমে দু’জনে একই ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে।
মাইশা কাল মির্জা বাড়ি এসছে সাপ্তাহ পর যদিও তিন দিনের দিন আসার কথা ছিল কিন্তু আয়ানের কিছু জরুরি কাজ থাকায় আসতে পারে নি।
মাইশা কে অবশ্য আয়ান আসতে বলেছিল মফিজুর মির্জা যখন মাইশা কে দেখতে গিয়েছিল।কিন্তু মাইশা আসে নি।জামাই নিয়ে আসবে সে।তাই কেউ জোর করে নি।
ইলেকশনের প্রচারণা চলছে সেই সাথে চলছে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সমাবেশ বৈঠক। সাদনানের একদম সময় নেই।সকালে বেরিয়ে যায় রাতে ফিরে একটা দু’টোর দিকে।আজ প্রিয়তা,সারা, মাইশার সাথে ভার্সিটি যাবে।
রাহাত ওদের পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে গেলো।
মাইশা ওদের দু’জন কে ক্লাসে দিয়ে নিজের ক্লাসে চলে গেলো।
প্রথমে ক্লাসে একজন মহিলা লেকচারার করাল।প্রথম দিন তাই তেমন একটা ক্লাস হল না।পরিচয় পর্ব কে কোথা থেকে এসছে ভালো করে পড়তে হবে এসব হলো।দ্বিতীয় ঘন্টার সময় প্রায় অনেক মেয়ে বেশ উৎসাহ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করছে।ইয়াং লেকচারর বলে কথা।আবার ভার্সিটির সবচেয়ে হ্যান্ডসাম স্যার। সাথে ভার্সিটির অনেক মেয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এমনটাই শোনা গেলো।প্রিয়তার কোনো ভাবান্তর নেই।সারার সামন্য কৌতূহল ছিল।তবে পরক্ষণেই নিজের মনের মধ্যে থাকা পুরুষের কথা মাথায় আসতেই সব কৌতূহল মূহুর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেলো।
প্রিয়তার হাত টা চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,

-“শোন, স্যার যতই সুদর্শন হোক।
তুই কিন্তু তাকাবি না।
নয়তো ভাইয়া কে বলে দেব।হুঁ!”

প্রিয়তা চোখ পিটপিট করে সারা’র দিকে তাকালো।
সারা সামনে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা নিজেও সারা’র দৃষ্টি অনুসরণ করল।
কক্ষে সুদর্শন স্যার কবির খাঁন প্রবেশ করেছে। এতোক্ষণ যতটা কোলাহল পূর্ণ ক্লাস টা ছিল কবির খাঁন ক্লাসে প্রবেশ করার সাথে সাথে ঠিক ততটাই নীরব হয়ে যায়।সারা প্রিয়তা একজন আরেকজন নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি
করে।
সারা প্রিয়তার হাত চেপে ধরে চোখের ইশারায় স্বাভাবিক থাকতে বলে।
কবির নিজেও হয়তো ওদের দু’জন কে এখানে দেখে থমথমে খেলো। বিশেষ করে প্রিয়তা কে দেখে।বিয়ের পর তারউপর মির্জা বাড়ির বউ এতো পথ জার্নির করে গ্রাম থেকে উপজেলায় এসে ভার্সিটিতে পড়ালেখা করতে পারে কবির ভাবতে পারে নি। তার অবশ্য কারণ রয়েছে আম্বিয়া মির্জা সম্পর্কে কবির অবগত তাই এমন টা ভাবা স্বাভাবিক তবে পরক্ষণেই ভাবে একজন এমপির বউ নিশ্চয়ই লেখাপড়া নিয়ে হেলাফেলা করবে না উচ্চশিক্ষিত করবে।
কবির শতশত ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে প্রথমে সবার সাথে পরিচিত হলো।অতঃপর ক্লাস কন্টিনিউ করে।

—-

প্রিয়তা, সারা, মাইশা ক্লাস শেষ এসে গেইটে দাঁড়িয়ে রইলো।রাহাত নিতে আসবে।সাত আট মিনিট অপেক্ষা করার পর সত্যি রাহাত এলো।মাইশা রাহাতের পাশে বসে।সারা প্রিয়তা পেছনে। সবাই টুকটাক কথা বলতে বলতে গাড়ি মির্জা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। সবাই কে নামিয়ে দিয়ে রাহাত আবার অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো
বাড়ির ভেতরে এসে প্রিয়তা সোজা নিজের রুমে চলে এলো।
গোসল করে বিছানায় শোয়া মাত্র রাজ্যের ঘুম এসে চোখে হানা দিলো।
শরীর ক্লান্ত থাকায় খুব দ্রুত ঘুমিয়ে গেলো।
সারা খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেও ডাকে না।
ঘুমিয়েছে থাক।ভার্সিটিতে ওরা সবাই আবার হাল্কা নাস্তা করেছিল তাই আরও আগ্রহ নিয়ে ডাকে না।

—-

প্রিয়তার ঘুম ভাঙ্গে ফোনের রিংটোন এর শব্দে। ভ্রু কুঁচকে কিঞ্চিৎ সময় ভাবে কার ফোন এভাবে কাকের মতো কা কা করছে?
ওর তো ফোন নেই।তবে পরক্ষণেই মস্তিষ্ক সচল হয়।ফোনের রিংটোন খুব চেনাপরিচিত মনে হয়।
হ্যাঁ এটা সাদনান ভাইয়ের ফোনের রিংটোন।
প্রিয়তা ঝটপট চোখ মেলে শোয়া থেকে ওঠে বসে।বিছানা নিজের পাশেই সাদনান ভাইয়ের ফোন রাখা।
ফোন তখন আর কল আসে না।
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে ফোন হাতে নেয়।
সাদনান ভাই চলে এসছে?
এতো তাড়াতাড়ি?
ক’টা বাজে দেখার জন্য সাইট বাটন টিপে স্কিনে আলো জ্বলতে একটা বাচ্চা মেয়ের শাড়ী পড়া হাস্যজ্বল মুখ ভেসে ওঠে। প্রিয়তা অবাক।
এতোটাই অবাক যে নিজের বা হাত টা কখন নিজের অজান্তেই মুখের উপর চেপে ধরেছে সেদিকে ধ্যান নেই।
এটা তো সে।আজ থেকে আর চার বছর আগে।
আয়না কে যেদিন দেখতে গিয়েছিল মির্জা বাড়ির সবাই সেদিন প্রিয়তা নিজেও বোনের মতো সেজেছিল শাড়ী পড়ে।
সে তো কোনো ছবি তুলে নি তবে?
ছবিটায় প্রিয়তা শাড়ীর কুঁচি ধরে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।
হঠাৎ ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে তড়িঘড়ি করে ফোন আবার আগের স্থানে রেখে দিলো।
ছাই রঙের ট্রাউজার পড়নে গলায় একটা টাওয়াল যার একপ্রান্তে দিয়ে মাথার চুল গুলো পানি ছাড়া করছে।
বলিষ্ঠ পেটানো শরীরে পেশিবহুল গুলো দেখতে দারুণ আকর্ষণীয় লাগছে।
প্রিয়তা আস্তে করে একবার ঢোক গিলে মাথা নুইয়ে নিলো।
সাদনান ততক্ষণে বউয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে।
ফোন টার দিকে একপলক তাকিয়ে উলটো ঘুরে বউয়ের কোলে মাথা রেখে আলগোছ শুয়ে পড়লো।
প্রিয়তা চমকে ওঠে। শরীরে শীতল স্রোত বয়ে যায়।
সাদনান বউয়ের হাত জোড়া নিজের চুলে রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো।
সময় গড়াল কতক্ষণ প্রিয়তা জানে না।
সাদনান প্রিয়তার কুর্তি টা পেট থেকে সরিয়ে উন্মুক্ত পেটে অধর স্পর্শ করলো।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। শক্ত হাতে খামচে ধরে সাদনানের চুল।
সাদনান সরে এলো।
বউয়ের গালে হাত রেখে নিজের অধর জোড়া এগিয়ে নিয়ে প্রিয়তার কপালে ঠেকাল।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে নিলো। সাদনান নিজের গাল প্রিয়তার গালে ঘষে দিতেই প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সাদনানের থেকে একটু দূরে সরে বসে গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,

-“ব্যথা পেয়েছি।”

সাদনানের চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো।
বউয়ের এই এক সমস্যা। রাতেও সাদনান প্রিয়তার গলায় মুখ গুঁজে ঘুমুতে পারে না।
প্রিয়তার সুর সুরী লাগে তাই দূরে থাকে।

-“ক্লিন সেভ করে নেব!’

-“নাহ, একদম না।”

-“তাহলে?”

প্রিয়তা চুপ করে গেলো।
সাদনান প্রিয়তা কে টেনে আবার নিজের কাছে আনল।
প্রিয়তার গালে হাত রেখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে প্রিয়তার ঠোঁটের উপর স্পর্শ করে আবদার করল,

-“একটা চুমু খাই?”

-“সেদিন না খেলেন।”

প্রিয়তা লজ্জা পেলো। মাথা নিচু করে বলল।
সাদনান গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“একদিন মাত্র।
আর বউয়ের ঠোঁটে রোজ চুমু খেতে হয়।
শুধু তুমি বাচ্চা বউ বলে ছেড়ে দিচ্ছি।
এখন ঝটপট একটা চুমু খেয়ে ফেলো।এখন থেকে রোজ খেতে হবে বউ বড় হচ্ছে।”

-“ছিঃ কি সব বলছেন!
মুখে কিচ্ছু আঁটকায় না।”

সাদনানের কথা শুনে প্রিয়তার শরীর শিরশির অনুভূতি হলো।
একটু পিছিয়ে গিয়ে নাকমুখ কুঁচকে বলে উঠলো।
সাদনান মহা বিরক্ত হলো বউয়ের কথা শুনে।
প্রিয়তার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
বুকের সাথে সংঘর্ষ হলো প্রিয়তার দেহখানা।
কেঁপে উঠল প্রিয়তা।
সাদনান প্রিয়তার ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

-“আহ, আম ইউর হাসবেন্ড।
আটকানোর কি আছে!
দাও দাও বড় একটা লম্বা চুমু দাও।”

প্রিয়তা ছুটাছুটি করে। ছাড়াতে চায় সাদনানের শক্ত হাতের বাঁধন।
সাদনান এপর্যায়ে এসে বউকে আরও চেপে ধরলো নিজের সাথে।
প্রিয়তা দমবন্ধ হয়ে আসছে।
জোরে বারকয়েক শ্বাস টানে।
ভ্রু কুঁচকে বলল,

-“এমপি সাহেব আপনি দিনদিন বেশি বেহায়া হচ্ছেন।”

-“বেহায়া আমি আগে থেকে সেটা শুধু তোমার জন্য আমার জান।”

সাদনান বিড়বিড় করে বলল।
প্রিয়তা নিজে কে ছাড়িয়ে ওড়না গায়ে জড়াতে জড়াতে ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল,

-“কিছু বলছেন?”

সাদনান জবাব দেয় না।
বউ কে ফের টেনে নিজের কাছে নিলো।
নিজের বেহায়া হাতের স্পর্শ কাবু করে মেয়ে টাকে।প্রিয়তা সাদনানের কাছে হার মানল।
ছুটাছুটি থামিয়ে শক্ত করে সাদনানের চুল খামচে ধরে সাদনান সময় নিলো।
গাঢ় হতে প্রগাঢ় একটা চুম্বন করলো বউয়ের অধর।
ছাড়া পেয়ে প্রিয়তা জোরে জোরে শ্বাস টানে।
সাদনান ডান হাতে নিজের অধর মুছে বা হাত এগিয়ে প্রিয়তার অধর স্পর্শ করে মৃদু কণ্ঠে জানাল,

-“এখন এটুকুই সীমাবদ্ধ থাক।
খুব শীগ্রই সীমালঙ্ঘন করব আমার জান।”

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-০৭

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

প্রিয়তা রেডি হচ্ছে। সাদনান বউয়ের কুঁচি ঠিক করে ওঠে দাঁড়াল।
মাথায় সুন্দর করে ঘোমটা টেনে দিয়ে নিজে প্রিয়তার পেছনে দাঁড়িয়ে প্রিয়তার দুই কাঁধে হাত রেখে নিচু হয়ে মৃদু স্বরে বলল,

-“বউ বউ লাগছে।”

প্রিয়তা লজ্জায় চোখ নিচু করে নিলো।সাদনান প্রিয়তা কে নিজের দিকে ফিরিয়ে বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বলল,

-“লজ্জা পাচ্ছে আমার জান।
বাসর দেখি খুব শীগগির করতে হবে।”

প্রিয়তা সঙ্গে সঙ্গে সাদনান কে ধাক্কা দিলো।সাদনান হেলে-দুলে দুই কদম পিছিয়ে গেলো। প্রিয়তা আঁচল মাথায় টেনে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,

-“ছিঃ কি বেহায়া কথাবার্তা।
মুখে কিচ্ছু আঁটকায় না।”

সাদনান নিজেও পেছনে পেছনে রুম হতে বেরিয়ে পিছু নিলো প্রিয়তার।
সমান হয়ে এক সাথে একদম কাছে ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

-“সব তোমার দোষ।”

-“আমার?
আমি কি করলাম?”

প্রিয়তা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
সাদনান মোহনীয় কণ্ঠে বলল,

-“আমাকে না পুড়িয়ে শান্তি নেই তোমার।
এখন আমি কিছু বললে সব দোষ আমার।”

প্রিয়তা আর কিছু বলবে তার আগেই নজর পড়ে গেস্ট রুম থেকে কবির বেরিয়ে এসছে। গায়ে গাঢ় নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি।
প্রিয়তা দৃষ্টি নুইয়ে নিলো।
কবির প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে নিজেও চোখ সরিয়ে নিলো।সাদনান কবিরের সঙ্গে কথা বলে আগে আগে কবির কে নিয়ে নিচে চলে গেলো।
প্রিয়তা সারা রুমে চলে গেলো।

—-

মাইশা তিন্নি কে একটা নীল জামদানী শাড়ি পড়তে দিয়েছে। তিন্নি শাড়ী পড়তে পারে না।
রাহানের মা ভীষণ ভালো শাড়ী পড়াতে পারে।সারা বলল,

-“আপু তুমি মনির কাছে যাও।
পড়িয়ে দিবে।”

সারা মাইশা কে সাজাচ্ছে। নয়তো সারা নিয়ে যেতো।প্রিয়তাও এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছি। অগত্যা বাধ্য হয়ে তিন্নি নিজেই একা একা নিচে এলো।রাহানের মা নিজে রেডি হবে মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে। তিন্নি তখন শাড়ী হাতে রুমে প্রবেশ করে।
ভদ্রমহিলা দেখেই বুঝতে পারে।
মুচকি হেঁসে তিন্নি কে বলল,

-“তাড়াতাড়ি করো।
আমাকে আবার মাইশা কে খাবার খাইয়ে দিতে হবে।
নয়তো মেয়েটার আজ আর খাওয়া হবে না।
মা একজন সারা দিন কাজ কাজ করে একটা মাত্র মেয়ের বিয়ে কোথায় মেয়ে টাকে একটু সময় দিবে।বড় ভাবি কতবার করে বলল মেয়ের আশেপাশে থাকার কথা।”

তিন্নি মনোযোগ দিয়ে শুনল।শাড়ী পড়া শেষ তিন্নি মুচকি হেঁসে বলল,

-“ফুপি আপনি আস্তে ধীরে রেডি হোন।
আমি গিয়ে মাইশা কে খাবার খাইয়ে দেব।”

রাহানের মা হাসি মুখে বলল,

-“আচ্ছা তুমি যাও।
আমি রেডি হয়ে আসছি।”

তিন্নি রুম হতে বেরিয়ে উপরে আসার সময় আঁড়চোখে একবার লিভিং রুমে তাকিয়ে থমকে গেলো।
কবির বসে আছে।দৃষ্টি তার ফোনের স্কিনে।
তিন্নি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আবার কবিরের দিকে তাকাল।
কবির নজর তখন হঠাৎ তিন্নির উপর পড়ল।কবির থমথমে মুখ করে তিন্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে এলো।
তবে তিন্নির মায়াময় মুখপানে তাকিয়ে হৃদপিণ্ডটা অস্বাভাবিক ভাবে লাফাতে লাগলো।
কবির দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“কি হচ্ছে এসব?
কবির বি কেয়ার ফুল।”

ফোন হাতে ওঠে দাঁড়াতেই সিঁড়ির দিকে নজর পড়তে কবির সেখানে তিন্নি কে দেখতে পেলো না।তপ্ত শ্বাস ফেলে কবির বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
এদিকে তিন্নি সোজা রুমে চলে এসছে। স্যারের দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল। যা তিন্নির ছোট হার্ট নিতে পারছিল না।তাই তো পালিয়ে এলো।

—–

জামাই এসছে। কথা টা দোতলা ঘরে পর্যন্ত পৌঁছাতে দেরী সব মেয়েদের মাইশার ঘর ছেড়ে নিচে যেতে দেরী হলো না। শুধু প্রিয়তা আর তিন্নি বসে রইলো মাইশার কাছে।
মাইশা উশখুশ করছে।তিন্নি মুচকি হেঁসে বলল,

-“যা কেউ আসার আগে একবার বারান্দা থেকে ঘুরে আয়।”

প্রিয়তা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো দু’জনের দিকে। মাইশা প্রিয়তার গাল টেনে দিয়ে ওঠে লেহেঙ্গা উঁচু করে বারান্দায় যেতে যেতে প্রিয়তা কে হুশিয়ারী দিয়ে বলল,

-“খবরদার প্রিয়ু যদি তোর ভাই কে এসব বলেছি।”

-“তুমি ভাই দেখতে গিয়েছো?”

মাইশা প্রিয়তার কথা শুনে বুঝতে পারলো।প্রিয়তা বিষয় টা ধরতে পারে নি। শুধু শুধু মেয়ে টাকে ব্যাপার টা জানিয়ে দিলো।
মাইশা হেঁসে বলল,

-“হ্যাঁ।
বলবি না কিন্তু!”

-“আচ্ছা।”

প্রিয়তার ঘাড় নাড়ে।
তিন্নি প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়ে টা একদম সরল প্রকৃতির।কত বয়স! সদ্য তো এইচএসসি দিয়েছে। ওর বয়সী সারা কি চঞ্চল অথচ এই মেয়ে টা কত চুপচাপ।
চেয়ারা টা যেমন দেখতে মায়াবী ঠিক তেমন নরম মন টা।তিন্নি কে কত সম্মান করে।যত্নআত্তি কোনো ত্রুটি রাখছে না।কবির খাঁন দারুণ সুন্দর এই মেয়ে টাকে বিয়ে কেন করতে আসে নি?

তিন্নির ভাবনার মাঝেই সারা ছুটে এলো।পেছন পেছনে রাহাত আয়না সাদনান সবাই এসছে।বিয়ের কাজ শুরু হবে তাই কনে কে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে।
সাদনান আর রাহাত এসে বোন কে আগলে নিয়ে নিচে এলো।সাদনান এরমধ্যে বারকয়েক বউয়ের সঙ্গে চোখেও ইশারায় আলাপ সেরে নিয়েছে। প্রিয়তা এমন কাণ্ডো দেখে সাদনান কে পাগল পুরুষ উপাধি দিলো মনে মনে।
তবে এগুলো প্রিয়তার কাছে না চাইতেও দারুণ লাগলো।হৃদয়ে ভালো লাগার দোলা দিলো।
বিয়ে পড়ানো শেষ খাওয়া দাওয়া শেষ বউ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু হলো।
কেউ নিজের ঘরে নতুন মানুষের আগমনে খুশি মুখে উপচে পড়ছে।তো কারোর বিদায়ের বিষাদে অশ্রু সিক্ত নয়নে বিদায় দিচ্ছে নিজের কলিজার রাজকন্যা।
মাইশা আর আয়ান কে একটা গাড়িতে বসানো হলো।আর বাকি দুইটা দিয়ে বাকিরা সবাই।
আয়ান সুফিয়া বেগম এর সাথে শেষ বার কথা বলে গাড়িতে বসে দরজা লাগিয়ে দিলো।মাইশা তখনো কাঁদতে কাঁদতে বাবা-র হাত ধরে কিছু বলে যাচ্ছে। মফিজুর মির্জা আয়ানের দিকে অসহায় মুখে চেয়ে রইলো।আয়ান এই চাহনির মানে খুব ভালো করে বুঝতে পারলো।চোখ ইশারায় কিছু বলতেই মফিজুর মির্জা মেয়ের হাতে উলটো পিঠে চুমু খেয়ে বলল,

-“আম্মাজান আর কান্না করে না।
বাবা-র বুকে ব্যাথা হয়।
শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।”

মাইশা তবুও কেঁদে চলেছে আয়ান মাইশা কে টেনে নিজের কাছে নিলো।সবাই কে বিদায় দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে ড্রাইভার কে।
মির্জা বাড়ি থেকে সওদাগর বাড়ি গাড়ি দিয়ে গেলে পাঁচ সাত মিনিট লাগে। আর হেঁটে গেলে পনেরো মিনিট এর মতো।
খুব দ্রুতে এসে পৌঁছাল বউয়ের গাড়ি। মিতা সওদাগর বেশ সম্মানের সহিত নিজের ছেলে বউ কে ঘরে তুলে।
প্রতিবেশী প্রায় অনেক লোকজন জড়োসড়ো হয়েছে বউ দেখার জন্য। তাই মাইশা কে লিভিং রুমে বসানো হলো।মাইশা অস্থির। কান্না করার ফলে মাথা ব্যাথা সাথে এতো অচেনা মানুষের ভীড়ে অস্বস্তি হচ্ছে।
অনেক্ক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর আয়ানের দেখা মিলল।কয়েক ঘন্টা আগেই এই লোকটার সাথে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে নিজের স্বামী রূপে হালাল ভাবে পেয়েছে কথা গুলো ভাবতেই মাইশা দেহ জুড়ে ভালোলাগার অনুভূতি খেলে গেলো।
মাইশা আয়ানের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলো মিতা সওদাগর আয়ানের সাথে ইশারায় কিছু বলছে।
আয়ান আবার উপরে চলে গেলো। এর একটু পর মিতা সওদাগর এলো।মুলত আয়ানের ইশারায় বলা কথা ছিল মাইশা কে রুমে পাঠানোর বার্তা। মিতা সওদাগর বুঝতে পারে বউয়ের কথা চিন্তা করেই ছেলে বউ কে ফ্রেশ হওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। মিতা সওদাগর মাইশা কে নিজের রুমে এনে ফ্রেশ করিয়ে একটা জামদানী শাড়ী পড়িয়ে নিজে হাতে খাবার খাইয়ে দিলো।
রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ মাইশা কে কিছু মেয়ে মিলে আয়ানের রুমে দিয়ে গেলো।
আয়ান তখন কিছু ফাইল দেখছিল সোফায় বসে।
মাইশা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এসে আয়ান কে সালাম দিলো।
আয়ান সালামের জবাব দিয়ে মুচকি হেঁসে বলল,

-“আমার বেগম।
আমার মহলে আপনাকে স্বাগতম।”

মাইশা লজ্জা পেয়ে চোখ নিচু করে নিলো।
আয়ান মাইশার হাত টেনে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।মাইশা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে গেলো।
আয়ান মাইশার শরীরে মৃদু কম্পন অনুভব করে মুখশ্রীতে গুরুগম্ভীর ভাব এনে বলল,

-“আগে থেকে ভালোবাসার পরও যদি বাসর ঘরে বউ এমন কাঁপা কাঁপি করে।তাহলে প্রেম টা করে আগে থেকে চিনা জানা হয়ে লাভ টা কি হলো!”

মাইশা লজ্জায় মুখ নতজানু হয়ে রইল।সত্যি বলতে তাদের আগে থেকে চিনা জানা হলেও এতো টা কাছাকাছি কখনো আসা হয় নি।প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের এতো টা নিকটে এসে মাইশা লজ্জায় ভয়ে ভালোবাসার মানুষ টা কে নিজের করে পেয়ে সব অনুভূতি তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
আয়ান মাইশার মুখ টা উঁচু করে মাইশার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো।
মাইশা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
আয়ান সময় নিয়ে বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ঠেকিয়ে ছেড়ে মাইশার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে জানতে চাইলো,

-“সময় চাই?”

মাইশা ফট করে সাথে সাথে জবাব দিলো,

-“না,,

কথার মানে বুঝতে পেরে নিজেই লজ্জায় আয়ানের বুকে মুখ লুকাল।
আয়ান শব্দ করে হেঁসে উঠলো।
পরপরই মাইশা কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে যেতে নেশাতুর কণ্ঠে বলল,

-“অনেক অপেক্ষা করিয়েছো।
আর না জান।”

মাইশা আয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে রইলো।
আয়ান বউ কে বিছানায় শুইয়ে দিলো।সময় গড়ায় গাঢ় হতে প্রগাঢ় হয় বেহায়া হাতের স্পর্শ।নারী তার প্রিয় পুরুষের ছোঁয়ায় দিশেহারা হলো।একে-অপরের মাঝে লেপ্টে গেলো।
নতুন অনুভূতির জোয়ারে দু’জন ভেসে গেলে।ভালোবাসার অনুভূতি আগে হলেও এই অনুভূতি দু’জনের নিকটই সম্পূর্ণ নতুন।গভীর হতে গভীর স্পর্শ কাতর করল আয়ান নিজের প্রেয়সী কে।
মাইশার চোখ গলিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে। আয়ান খুব সাবধানের সহিত বউয়ের চোখের পাতায় চুমু খায়।
মাইশা শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে আয়ান কে।

#চলবে……

আমার তুমি ২ পর্ব-০৬

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা

মাইশা আর আয়ানের বিয়ে টা ঘরোয়া ভাবে দিতে চাইছেন মফিজুর মির্জা। খুব কাছের কিছু মানুষ থাকবে শুধু। কেউ দ্বিধা মত পোষণ করে নি।হোক ঘরোয়া ভাবে এমনিতেই একমাস পর ভোট তারউপর বিপদ যখন তখন যেকোনো দিক দিয়ে আসতে পারে তাই সবাই এটাই বেস্ট মনে করল।শফিক সওদাগর এতেই সায় দিয়েছে। নিজের আত্মীয় বলতে তেমন কেউ নেই শ্বশুর শ্বাশুড়ি কেউ নেই অনেক আগে গত হয়েছে। মিতার দুই ভাই আছে তারা সবাই বিদেশ সেটেল্ড বাড়িতে কেউ নেই।
আর দুই মেয়ে যেকোনো একজন কে নিয়ে যাবেন এমনটাই পরিকল্পনা। তবে বড় মেয়ে কে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে। ছোট মেয়ে নতুন তাকে না আনা শ্রেয়।
এখন আম্বিয়া মির্জার কাছে কথাখানি পাড়তে হবে।

—–

হলুদের দিন বিকেলে তিন্নি এলো মির্জা বাড়ি।তিন্নি কে বেশ আদর করল সবাই।
তিন্নি মাইশার রুমে বসে ছিল।তখন প্রিয়তা এলো হাতে নাস্তার ট্রে।তিন্নি প্রিয়তার সাথে আগে থেকে পরিচিত।তাই চিনতে অসুবিধা হয় না।
তিন্নি প্রিয়তা কে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বেশ আদর করলো। মেয়ে টা সত্যি একটা মায়ার খনি।যেখানে তিন্নি মেয়ে হয়ে প্রিয়তা কে এতো ভালো লাগে সেখানে কবির এর ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিন্নি তো আর জানে না কবির প্রিয়তা কে দেখেই নি।
প্রিয়তা নিজেও অনেক্ক্ষণ আড্ডা দিলো সবার সাথে এরপর চলে গেলো। আম্বিয়া মির্জা প্রিয়তা কে ডাকছে।

—-

-“শোন।
বাইরের দিকটায় একদম যাবি না।
ওদিকে বাইরের লোকজন বেশি।”

সারা শাড়ী পড়ে মাত্রই নিচে এসছে আর তক্ষুনি রাহান কথাা টা বলল।
বাড়ির ভেতরে মানুষ নেই বললেই চলে।
সবাই হলুদের জায়গায়।
সারা নিজেও শাড়ী পড়ে শাড়ী সামলাতে হিমশিম খায়। তাই হলুদ দিয়ে এসেই শাড়ী খুলে নিবে এমনটাই ভেবে রেখেছে। তাই বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে বলল,

-“আচ্ছা।
আপু কে হলুদ দিয়ে চলে আসব।”

-“আর এখন আমার পাঞ্জাবি টা আয়রন করে রেখে আয়।
আমি হাতের কাজ টা শেষ করে রেডি হব।”

সারা মুখ ভেংচি কেটে বলল,

-“পারব না।”

-“আচ্ছা!
বলব তোর বাপ কে তুই কাল আমার শার্ট গায়ে দিয়েছি!”

সারা রাহানের কথা শুনে থমথমে খেলো।চোখ বড় বড় করে রাহানের দিকে একবার তাকিয়ে ফের লজ্জায় মাথা নিচু করে নিয়ে মিনমিন করে বলল,

-“যাচ্ছি।”

রাহান শুধু বাঁকা হাসল।
পাশ কেটে যাওয়ার সময় ফিসফিস করে বলল,

-“ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাবি না।
যদি দেখেছি তো তোর সাথে সাথে তোর ঠোঁটেরও খবর করব। মাইন্ড ইট।”

সারা’র মাথায় কিছু ঢুকলো না শুধু ফ্যালফ্যাল করে রাহানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে।

——

প্রিয়তা রেডি হয়ে রুম থেকে বেরুবে ঠিক তক্ষুনি সাদনান রুমে প্রবেশ করে যার ফলে দু’জন দু’জনের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো।ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে প্রিয়তা পড়ে যাচ্ছিল।
তবে সাদনান সেটা হতে দিলো না। শক্ত হাতে বউয়ের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে।
প্রিয়তা ভয়ে সাদনান এর পাঞ্জাবি খামচে ধরে।
সাদনান থমকাল।বউয়ের দিকে তাকিয়ে হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিক ভাবে ছুটতে লাগল।প্রিয়তা হলুদের মাঝে লাল পাড়ের শাড়ী পড়েছে। চোখে কাজল ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙের লিপস্টিক মাথায় একটা বেলি ফুলের মালা যেটা সাদনান একটু আগেই রুমে রেখে গিয়েছে। প্রিয়তা তখন রুমে ছিল না।
প্রিয়তা নিজেকে কারোর বাহুডোরে বুঝতে পেরে চোখ পিটপিট করে তাকায়।
মানুষ টা যে ওর নিজের ব্যাক্তিগত পুরুষ বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,

-“আপনি রেডি হয়ে নিন।
আমি সব বিছানায় রেখে দিয়েছি।”

-“যাবে না।
বসে থাকবে। আমি শাওয়ার শেষ করে আসছি।”

প্রিয়তা কোনো কিছু বলার আগেই সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে একটা টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তা আর কি করবে সাদনান ভাই যখন বলেছে তখন না বসে উপায় নেই অগত্যা বাধ্য হয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো।
সাদনান শাওয়ার নিয়ে প্রায় আধঘণ্টা পর বেরিয়ে এলো।
প্রিয়তা ড্যাব ড্যাব করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
সাদনান টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুছে পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে রেডি হলো।তবে বউয়ের কান্ড দেখে মনে মনে হেঁসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
এগিয়ে এসে প্রিয়তার মাথার ফুল টা ঠিকঠাক করে দিতে দিতে বলল,

-“এভাবে তাকায় না জান।
কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে।”

প্রিয়তা লজ্জা পেলো। তবে লজ্জা চেপে রেখে বলল,

-“আমি মোটেও আপনার দিকে তাকায় নি।”

সাদনান হেঁসে উঠলো।
প্রিয়তা লজ্জা পেয়ে সাদনান ধাক্কা দিয়ে আগে আগে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।সাদনান নিজেও হাসতে হাসতে পেছনে পেছনে
নিচে এলো।
লিভিং রুমে অনেক মানুষ তবে সব মানুষ ছাপিয়ে প্রিয়তার নজর দু’জন ব্যাক্তির উপর আঁটকে গেলো।সাদনান প্রিয়তা কে পেছনে রেখে নিজে প্রিয়তার সামনে দাঁড়াল। সোফায় বসা কবিরের ভ্রু কুঁচকে এলো।বিরক্ত হলো।শাড়ী পড়া রমণী টা দারুণ দেখতে। কবির ভাবে সাদনান এর বোন হয়তো। কিন্তু পরক্ষণেই কিছু মনে হতে সব পানির মতো স্পষ্ট হলো।
বুঝতে একটু সময় লাগলো।এই সেই রমণী যার জন্য মির্জা সাদনান শাহরিয়ার তাকে মিথ্যা বলে চট্টগ্রাম পাঠিয়েছিল।
সাদনান প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,

-“মায়ের কাছে যাও।”

প্রিয়তা শুনল।রান্না ঘরে চলে গেলো। সাদনান এগিয়ে গিয়ে কালাম খাঁন আর কবির এর সাথে কথা বলে।
কবির খুব স্বাভাবিক তবে দৃষ্টি তার তীক্ষ্ণ।
কথা বলা শেষ সবাই নাস্তা খেয়ে হাল্কা হলুদের জন্য বাগানে চলে গেলো।
তবে কবির সবার পেছনে রইল।আর ঠিক তক্ষুনি তিন্নি মাইশার হাত ধরে দোতলা থেকে নামতে দেখা গেলো।মাইশা কে শাড়ী পড়িয়ে কাঁচা ফুলের গহনা পড়িয়েছে।তিন্নি নিজেও শাড়ী পড়েছে তবে খুব নরমাল। চুল গুলো বিনুনি করে একপাশে এনে রেখেছে। সবার মাঝে কবিরের দৃষ্টি না চাইতেও তিন্নির উপর পড়লো।মেয়ে টা সাধারণ।সব সময় নরমাল চলে ফেরা করে।হয়তো এই জন্যই সবার নজরে পড়ে। তবে ক্লাসেও কবির খেয়াল করেছে মেয়ে টা প্রায় ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।যেমন টা এখন তাকিয়েছে।কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকে না। একটু পরপরই তাকায়।কবির কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানের একটা সাইডে গেলো।
সাদনান ফোনে কথা বলছিল।নিজের পেছনে কারোর অস্তিত্ব টের পেয়ে ফোন রেখে দিলো।

-“হবু এমপি মির্জা সাদনান।
ভীষণ ধূর্ত লোক।”

সাদনান অন্য দিকে তাকিয়ে হাসলো।
কবিরের কথায়।
কবির আবার বলল,

-“আমার সাথে একবার সাক্ষাৎ করতে পারতেন!”

-“রাইট।
কিন্তু কি বলুন তো।
প্রেয়সীর রাজনীতি একদম পছন্দ নয়।”

-“কথা বলে দেখতে পারতেন!”

-“সময় টা আমাকে ফাঁকি দিতে চেয়েছিল।
তাছাড়া আমার দাদাজান কখনো মেনে নিতো না।এমন পরিস্থিতি না করলে।

কবির আর কিছু বলতে যাবে তক্ষুনি সাদনান কে জাফর মির্জা ডাকলো।সাদনান চলে গেলো। কবির সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।
ভাগ্য নেই।তাই এসব ভেবে মন খারাপ করলো না।তবে মেয়ে টাকে দেখে প্রথমবারের ন্যায় এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছে। কবির পরক্ষণেই নিজের ভাবনা চিন্তার উপর বিরক্ত হলো।অন্যজনের বউ হয়।ইশ এভাবে ছেঁচড়াদের মতো তাকিয়ে ছিল তখন ভাবতে শরীর শিরশির করে উঠলো।
—-

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ মাইশা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে তিন্নির পাশে শুয়ে ছিল মাত্র।
তখন মাইশার ফোনে টুংটাং শব্দ হলো।মাইশা ফোন হাতে নিয়ে সাইলেন্ট করে।নোটিফিকেশন চেক করতেই দেখলো আয়ান ম্যাসেজ দিয়েছে। মাইশার হলুদের ছবি চাইছে মাইশা কয়েকটা ছবি হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করার মিনিটের মাথায় আয়ান ভিডিও কল এলো।
মাইশা কল ধরে লজ্জায় মাথা নুইয়ে রাখলো।
আয়ান ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“মেরে ফেলবে আমায়!
অপেক্ষা করো কাল তোমার সব কর্মের বিচার হবে।”

#চলবে…..

আমার তুমি পর্ব-০৫

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

সেই রাতে প্রিয়তা আর সাদনানের সাথে নিজের দৃষ্টি মিলাতে পারে না।
রাতে খাবার শেষ নিজে আগে আগে রুমে এসে গুটিশুটি মেরে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ে।সাদনান শ্বশুর আর আয়ানের সাথে বেশ সময় নিয়ে আড্ডা দিয়ে রুমে এলো।সাদনান রুমে এসে দরজা আঁটকে দিয়ে বিছানায় শুয়ে রোজকার ন্যায় বউ কে জড়িয়ে ধরে।
প্রিয়তা তখন ঘমুে বিভোর। সাদনান বউয়ের মায়াময় মুখপানে তাকিয়ে থাকে।
আজ থেকে চার বছর আগে এই ছোট্ট গোলগাল মুখটার মায়া পড়ে ছিল সাদনান।
সে দিন রাহাতের জন্য আয়না কে দেখতে এসছিল মির্জা বাড়ির সবাই।সেদিন সাদনান এর অনার্স ফাইনাল ইয়ারে’র লাস্ট এক্সাম ছিল।
পরীক্ষা শেষ সোজা সওদাগর বাড়ি এসছিল।আর বাড়িতে ঢোকাতে সঙ্গে সঙ্গে সদ্য নাইনে ওঠা কিশোরীর শাড়ী পড়া রূপ সাদনান কে সেদিন ছোট প্রিয়তার মায়ায় পড়তে বাধ্য করেছিল।মির্জা বাড়িতে তাদের যাতায়াত আগে থেকে ছিল।আজ্জম মির্জার সাথে শফিক সওদাগর এর সেই ছোট বেলার বন্ধুত্বের খাতিরে দুই পরিবারে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল।আগে এই বাড়িতে আসা হলেও প্রিয়তার দিকে সাদনান কখনো মনে কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ছোট প্রিয়তার দিকে তাকায় নি। তবে সেই দিনের পর থেকে না চাইতেও সাদনান প্রিয়তার দিকে তাকালে নিজের পুরুষালী সত্ত্বা নাড়িয়ে দিতো।নিজের মনের কোথাও একটু এই রমণী তাকে টানত।নিজের সুন্দর সুশ্রী চেহারা আর শরীর এর ঘটন নিজের পার্সোনালিটির জন্য কমবেশি প্রায় অনেক মেয়ে আশেপাশে ঘুরঘুর করত। তবে সাদনান নিজে কখনো তাদের প্রতি কোনো টান ফিল করতা না বলে পাত্তা দেয় নি। গম্ভীর আর নিজের স্বভাবসুলভ আচরণ থমথমে কণ্ঠে কথা বলা পুরুষ টা সত্যি সেই ছোট প্রিয়তার জন্য মনে কিছু ফিল করত।তবে ব্যাপার টা পাত্তা দেয় নি। অবশ্য দেওয়ার কথাও নয়।বয়সের দিক দিয়ে দেখলে তো একদমই নয়।
সারা আর প্রিয়তা দু’জন একই সমানে পড়ত তারউপর স্কুল যাওয়ার পথে সাদনানদের বাড়ি। প্রিয়তা স্কুল যাওয়ার সময় সারা কে নিয়ে যেতো।বাড়ির ভেতর অবশ্য যেতো না।
সাদনান যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত তবে বারবারই মেয়ে টা ইচ্ছেকৃত বা দূর্ঘটনাবসত কোনো কোনো ভাবে সাদনান প্রিয়তার সামনে পড়ে যেতো।মাঝেমধ্যে সারা আর প্রিয়তা কে স্কুল পৌঁছে দিত।
এভাবে দেখতে দেখতে আর সাদনান নিজের লুকানো অনুভূতির সাথে যুদ্ধ করতে করতে পিচ্চি টা কখন যে বড় হয়ে গেলো সাদনান বুঝতেই পারে নি।আবার বিয়েও দিয়ে দিচ্ছিল মেয়ের কত কষ্ট করেই না বিয়ে টা আটকাল।বিয়ে ঠিক হয়েছে সাদনান জানত না।জানবে কি করে সে তো তখন জরুরি কাজে বাইরে ছিল।ফিরে এলো বিয়ের আগের দিন রাতে। অবশ্য আয়ান সঙ্গে না থাকলে সম্ভব হত না কিছু। ক’দিন পর এই পিচ্চি ভার্সিটির গন্ডিতে পা রাখবে। ভাবা যায়?
সাদনান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রিয়তার কপালে গাঢ় একটা চুমু খেলো।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মুখ টা প্রিয়তার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

-“ভালোবাসি আমার জান।”

———

পরের দিন সকালে সাদনান প্রিয়তা সওদাগর বাড়ি থেকে নাস্তা করে বেরিয়ে আসে।সাদনান সাথে করে প্রিয়তার বইখাতা সব নিয়ে আসে।প্রিয়তা কে কোচিং-এ দিয়ে সাদনান চলে গেলো।
প্রিয়তা অনুভূতিহীন। ক্লাসে যাওয়ার পর সারা ভীষণ খুশি প্রিয়তা কে দেখে।প্রিয়তাও খুশি খুশি মনে ক্লাস করে।
ক্লাস শেষ হলে সারা আর প্রিয়তা দু’জনে বাড়ি চলে এলো।আম্বিয়া মির্জা তখন প্রিয়তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
প্রিয়তা দেখল তবে মাথা নুইয়ে রুমে চলে এলো।
ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে রুমে এসে লম্বা একটা ঘুম দিলো।

—–

মাইশা আর তিন্নি একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর দু’জনের পরিচয় তবে কারোর সাথে কারোর পার্সোনাল বিষয় শেয়ার করার মতো সম্পর্ক এখনে হয় নি।
মাইশা যেদিন জানাল তাদের ডিপার্টমেন্ট এর লেকচারার কবির খাঁন এর সাথে তার এক কাজিনের বিয়ে ঠিক হয়েছে সেদিনের পর আর তিন্নি ভার্সিটিতে আসে নি।মাইশা ব্যাপার টা ঠিক বুঝতে পারে নি। হঠাৎ এভাবে মেয়ে টা হারিয়ে গেলো কেন!
আজ অনেক দিন পর মাইশা তিন্নি কে ক্লাসে দেখতে পেলো।উদাসীন মুখে পেছনের একটা বেঞ্চে গাপটি মেরে বসে আছে।সামনে একটা বই মেলে রাখা।কিন্তু দৃষ্টি তার বইয়ের দিকে নয়।বাইরের দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে বসে আছে।
মাইশা এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো।তিন্নি সামন্য চমকাল।তবে পরক্ষণেই মাইশা কে দেখে হাসলো।ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলো। মাইশা জবাব দিলো।
প্রশ্ন করলো,

-“এতো দিন আসো নি কেন?”

-“অসুস্থ ছিলাম।”

মাইশা বুঝতে পারে তিন্নি সত্যি বলে নি।একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এমন আচরণের একটাই মানে দাঁড়ায়। মাইশা তিন্নির মুখ থেকে সত্যি বের করতে চাইছে। তাই কথার ফাঁকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানাল,

-“তুমি জানো!কবির স্যার ওইদিন বিয়ে করতে আসে নি।
আমার ছোট ভাই সাদনান মির্জার সাথে বিয়ে হয়েছে।”

তিন্নি মাইশার কথা শুনে অবাক হলো।মনের কোথাও একটু আশা দেখা দিলো। মন টা হঠাৎ ভালো হয়ে গেলো।তবে বিস্ময় নিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“ভবিষ্যতে এমপি মির্জা সাদনান?
তোমার ভাই?”

-“হ্যাঁ।”

তিন্নির যেনো আজ অবাক হওয়ার দিন।বারবার চমকপ্রদ তথ্য জানতে পরাছে।
ওদের দু’জনের কথার মাঝেই কবির খাঁন ক্লাসে এলো।ক্লাস শুরু হলো।তিন্নি মুগ্ধতা নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
হোক না একতরফা ভালোবাসা।অনুভূতি তো সুন্দর। ভাবতে ভালো লাগে স্বপ্ন বুনতে ভালো লাগে।ততক্ষণে সব ভালো যতক্ষণ অপরপ্রান্তে মানুষ টা এসবের কিছুটি তার নিকট অজানা।

——

রাত সাড়ে এগারো টার দিকে সাদনান, রাহান,জাফর মির্জা বাড়ি ফিরল।
তখন মাত্র লিভিং রুমে সুফিয়া বেগম, প্রিয়তা বসে ছিল।সবাই ফ্রেশ হয়ে এলেই তাদের খাবার দেওয়া হলো।খাবার খাওয়ার ফাঁকে জাফর মির্জা জানাল এই সাপ্তাহে মার্কা দেওয়া হবে।তার পরই ভোট প্রচার এর কাজ শুরু হবে। যদিও জয়ে নিয়ে কোনো ভয়ের আশংকা নেই।তবে বিরোধী দলের বর্তমান অবস্থানরত এমপি বেজায় খারাপ লোক।তাই যথাসম্ভব সবাই কে সাবধানে থাকতে হবে।
বাড়ি থেকে একা-একা কেউ না বেরুনো টা শ্রেয়।
সুফিয়া বেগম চিন্তিত বিরস মুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাদনান মায়ের দিকে তাকিয়ে আশ্বাস দিলো।কিছু হবে না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে বলল।
খাবার শেষ সাদনান আগে আগে রুমে চলে গেলো প্রিয়তা সুফিয়া বেগম এর সাথে সব গুছিয়ে রুমে এলো প্রায় আধঘণ্টা পর জাফর মির্জার কথা শোনার পর থেকে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে আছে।
রুমে এসে প্রিয়তা ওয়াশ রুম গেলো।ফিরে এলো মিনিট এর মাথায়।
সাদনান ব্যালকনি থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে এলো।প্রিয়তা তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আনমনা হয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে।
সাদনান ফোন কেটে সেটা সোফায় রেখে এগিয়ে এসে প্রিয়তার পেছনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতে চিরুনি নিয়ে নিলো।প্রিয়তা হকচকিয়ে ওঠে। ধন্য ফিরতেই বুঝতে পারে সাদনান চুল বিনুনি করছে।
সাদনান প্রিয়তার চুল গুলো বিনুনি করতে করতে জানতে চাইলো,

-“ক্লাস কেমন হলো আজ?”

প্রিয়তা বলল,

-“ভালো।”

প্রিয়তা জবাবে বলল।পরপরই আবার বলল,

-“আমার রাজনীতি একদম পছন্দ নয়,সাদনান ভাই।”

-“জানি তো।”

প্রিয়তা সাদনানের জবাব শুনে অবাক হলো।

-“তাহলে?
স্বাভাবিক জীবন চাই।
সুন্দর সংসার চাই।আতংক আর ভয়ে নিয়ে কিচ্ছু হয় না।”

প্রিয়তার কথায় সাদনান কিছু একটা ফিল করে।মেয়ে টা তাকে নিয়ে ভাবছে। অবশ্য ভাবারই কথা বউ হয়।প্রিয়তা এতোক্ষণ আয়নায় সাদনান এর দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল।সাদনান প্রিয়তার চুলে রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল আঁটকে দিলো।তারপর প্রিয়তা কে নিজের দিকে ফিরিয়ে প্রিয়তার দুই গালে হাত রাখে।বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বলল,

-“আই প্রমিজ।আমার দেহে প্রাণ থাকা অব্ধি তোমার কিচ্ছু হতে দেব না।”

-“আমি আমার কথা বলছি না।
আপনার জন্য চিন্তা হয় আমার।”

-“কিচ্ছু হবে না আমার।”

-“আপনি জানতে চেয়েছিলেন না আমি কেন আপনাকে বিয়ে করতে চাই নি!আমার একটা স্বাভাবিক জীবন চাইতাম।সেইজন্য বাবার পছন্দের পাত্র কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম।
অথচ ভাগ্য দেখুন ঠিক আমাকে আপনার সাথে বেঁধে দিলো।
কথায় আছে না আমরা যা ভাবি তা কখনো হয় না আর যা কখনো কল্পনাও করি না সেটাই হয়।”

-“তোমার আফসোস হয়?”

-“নাহ।
কখনো না।আমার ভাগ্য যা আছে সেটাই হয়েছে।”

সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তা নিজের দুইহাত সাদনান এর পিঠে রাখলো।
সাদনান মৃদু কণ্ঠে বলল,

-“আমার আমি কে তোমার জন্য ভালো রাখব।”

প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। তবে পরক্ষণেই লজ্জায় সাদনান এর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছুটোছুটি করে।সাদনান ছাড়ে না।
শক্ত করে বউ কে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
প্রিয়তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-“স্বাভাবিক হও।
তখন না হয় আমি তোমায় গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেব।”

——

-“এতো রাতে তুই এখানে কি করছিস?
ঘুমিস নি কেন?”

সারা হকচকাল।
পেছন ফিরে রাহান কে দেখে অবাক হলো।
তবে নিজে কে সামলে নিয়ে পানির গ্লাস দেখিয়ে বলল,

-“পানি খেতে এসছি।”

-“রাতে ঘুমাস না?”

রাহান থমথমে কণ্ঠে জিগ্যেস করলো।
সারা সহজসরল গলায় বলল,

-“হ্যাঁ।
ঘুমব না কেন?”

-“তাহলে আমাকে এতো জ্বালাস কেন।”

রাহানা বিড়বিড় করে বলল।
সারা শুনতে পায় না।তাই জিগ্যেস করে,

-“কিছু বললেন?”

-“না,হ্যাঁ ভূতের মতো এভাবে রাতে আর ঘুরাঘুরি করবি না।
দেখা গেলো তোকে ভূত মনে করে কেউ ভয়ে জ্ঞান হারাবে।এখন যা রুমে যা।”

-“আমি ভূতের মতো কোথায় ঘুরঘুর করলাম?পানি ছিল না রুমে পানি খেতে এসছি।
আর আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?”

সারা রাহানের দিকে চোখ কটমট করে তাকায়।
তবে পরক্ষণেই কিছু মনে হওয়ার মতো করে জিগ্যেস করলো।
রাহান চোরা চোখে একবার সারা’র দিকে তাকিয়ে থমথমে কণ্ঠে বলল,

-“ভূতের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসছি।”.

#চলবে……

আমার তুমি ২ পর্ব-০৪

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৪
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
সারা আর প্রিয়তা দু’জনে পরীক্ষা শেষ ভার্সিটির এডমিশন এর জন্য একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে। আজ সারা কোচিং-এ গেলেও প্রিয়তা এব্যাপারে কোনো কথা বলে নি।সুফিয়া বেগম অবশ্য চেয়েছিলেন প্রিয়তা সারার সাথে যায়।কিন্তু শ্বাশুড়ির উপর দিয়ে কোনো কথা বলতে পারে নি। আম্বিয়া মির্জা বেশ আগেকার দিনের মানুষ। মেয়েদের লেখা পড়া নিয়ে ওনার বেশ আপত্তি।আয়নাকে বিয়ের পর আর পড়তে দেয় নি।মাইশা কেও বিয়ে দেওয়ার কথা ছোট ছেলে কে বলছে।কিন্তু মফিজুর মির্জা একমাত্র মেয়ে কে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে রাজি নয়।মেয়ে যখন পড়ছে পড়ুক না।মেয়ে কে তিনি পড়াশোনা করাতে চায় বেশি। প্রিয়তা বোনের কাছে শুনেছে এনিয়ে মফিজুর মির্জা মায়ের সাথে একটু মনকষাকষি চলছে।
আজো সাদনান কে প্রিয়তা ঘুম থেকে ওঠে সকালে দেখে নি।রাতেই তো মানুষ টা তাকে বুকে নিয়ে ঘুমাল অথচ সকালেই উধাও। অবশ্য আজ দুপুরে বাড়িতে খাবার খাবে বলে শুনেছে প্রিয়তা।এর কারণ আজ শফিক সওদাগর সহ মিতা সওদাগর এসছে মির্জা বাড়ি।উদ্দেশ্য জানা নেই।তবে বিয়ে হয়েছে আজ নাইওর যাওয়ার কথা প্রিয়তার হয়তো সেই নিমন্ত্রণ করতে এসছে।আম্বিয়া মির্জা মনে মনে স্থির করে আজ যদিও যায় তো কাল ফিরে আসার কথা জানিয়ে দিবে।
প্রিয়তা বাবা মা কে পেয়ে প্রচুর খুশি সাথে নিজের বাড়ি যাবে। দুপুরে সাদনান আর জাফর মির্জা সহ সব পুরুষরা বাসায় এলো।সাদনান ফিরার সময় সাথে করে অবশ্য আয়ান কেও নিয়ে এসছে।রাহানের মা এতে ভীষণ খুশি এই খুশির কারণ কি মাইশা জানে।ফুপি নিজের মেয়ে রিধির জন্য আয়ান কে বেশ পছন্দ করেছে মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ দে-শে এলে বিয়ের কথাবার্তা এগুবে এমনটাই তিনি দুই বাঈজির সাথে শেয়ার করেছে। মাইশা কিছু বলেনি।তবে সারা তখন ফুসফুস করেছে। মেয়ে তার অন্য কাউ কে ভালোবাসে আর মা এদিকে মেয়ের বিয়ে ঠিক করছে।এমনিতে রাহানের মা ভীষণ ভালো মানুষ। স্বামী শহরে থাকে চাকরি সুত্রে বিয়ের পর থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে বাবা বাড়িতেই রয়েছে। কখনো এসব নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় নি ভাই বা ভাবিদের সাথে।
সারা ফুসফুস করার কারণ ছেলে যে এদিকে দামড়া হয়েছে সে খবর আছে? আর মেয়ে কে বিয়ে দেওয়ার জন্য এক্ষুনি পাত্র নির্ধারণ করে রেখেছে।
দুপুরে সবাই খাবার এক সাথে খেলো।বড়রা সবাই বৈঠক বসলে মেয়েরা সবাই বিদায় নিলো।
শফিক সওদাগর তক্ষুনি জাফর মির্জার সাথে আয়ানের জন্য মাইশা কে চেয়ে কথা খানা পেড়ে নিলো।মফিজুর গম্ভীর।
তবে তিনি কোনো জবাব দিলো না সময় চাইল।মেয়ের মতামত নিয়ে জানাবে।সওদাগর বাড়ির সবাই সায় দিল। বিকেলের দিকে সওদাগর বাড়ির সবাই চলে গেলো। আর সাদনান সন্ধ্যায় প্রিয়তা কে নিয়ে যাবে বলে জানালো।সবাই চলে গেলে প্রিয়তা রুমে এসে নিজের কিছু কাপড় লাগেজে নিলো।সাথে সাদনান এর জন্যও নিলো।সাদনান তখন রুমে এলো।একটু রেস্ট করে আবার বেরুবে।আজ মন্ত্রী ওয়াসিফ দেওয়ান এর সাথে সাক্ষাৎ করবে।তিনি ডেকে পাঠিয়েছে। সাদনান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুমে এসে প্রিয়তা কে নিজের কাপড় ব্যাগে নিতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে জানাল,

-“আমরা কাল সকালেই চলে আসব।
কাপড় নিতে হবে না।”

প্রিয়তার হাসিহাসি মুখ টা ফাটা বেলুনের ন্যায় চুপসে গেলো।কাপড় বের করে আবার সাদনানের গুলো কাবাডে আর নিজের গুলো লাগেজে রেখে দিলো।সাদনান হঠাৎ কি মনে করে এগিয়ে গেলো।কাবাড খুলে নিজের কাপড় একপাল রাখতে রাখতে বিড়বিড় করে বলল,

“শুধু ভালোবাসলে হয়!ভালোবাসার যত্ন নিতে হয় নয়তো ভালোবাসায় ফিকে পড়ে।”

প্রিয়তার কান অব্ধি কথা গুলো পৌঁছাল না। তবে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে এলো।প্রিয়তা বুঝতে পারছে না সাদনান নিজের কাপড় কেন একপাশ করছে।তাই জিগ্যেস করলো,

-“আপনি কাপড় একপাশ কেন করছেন?
আমার গুলো এখানে ঠিক আছে।”

-“জিগ্যেস করেছি?
চুপচাপ কাপড় রাখো।”

প্রিয়তা সাদনানের কথা মুখ গোমড়া করে নিলো।
এই লোক একটু ভালো করে কথা বলতে পারে না?প্রিয়তা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাদনান নিজে এগিয়ে এসে লাগেজ থেকে কাপড় গুলো কাবাডে রাখে।প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গিয়ে লাগেজ টেনে নিজের কাছে নিয়ে বলল,

-“আপনি যান রেস্ট করুন।
আমি রাখছি।”

সাদনান প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,

-“আমার মানে তোমার।
আমার সবকিছুতে যেমন আমার অধিকার রয়েছে তেমন তোমারও।”

সাদনান গায়ের পাঞ্জাবি টা খুলে রেখে একটা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
প্রিয়তা নিজের কাপড় গুলো কাবাডে রেখে এসে নিজেও সাদনান এর পাশে শুয়ে পড়লো।
সাদনান প্রিয়তা কে টেনে নিজের বুকের উপর নিয়ে জড়িয়ে ধরে।
প্রিয়তা লাজুক হাসে।লোকটা এই তিন দিনে একবারও প্রিয়তা কে বুকে না নিয়ে ঘুমায় নি।প্রিয়তার প্রথম দিন অস্বস্তি হলেও আজ দু’দিন ধরে ভালোই লাগে।

——–

বিকেলে সাদনান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রিয়তা কে রেডি হয়ে থাকতে বলে গেলো।
প্রিয়তা তাই করলো।সাদনান এর ফুপিমণির কাছ থেকে শাড়ী পড়ে রেডি হয়ে রইল।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সাদনান বাড়ি এলো।তবে নিজে রুমে এলো না। নিচ থেকে খবর পাঠাল প্রিয়তা কে যাওয়ার জন্য।
প্রিয়তা তাই করল।সাদনান তখন নিজের গাড়িতে বসে রয়েছে। সাথে রাহান যাচ্ছে সে গাড়ি নিয়ে ফিরে আসবে।
ওঁরা পৌঁছাতে মিনিট পাঁচ মিনিট সময়ের মতো লাগল।
প্রিয়তা হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি থেকে নামার আগেই সাদনান প্রিয়তার হাত টেনে ধরে বলল,

-“একদম ছুটাছুটি নয়।
আমার সাথে যাবে।”

প্রিয়তা মাথা নাড়ে।সাদনান গাড়ি থেকে নামার পর রাহান নিজেও নামে ডিঁকি থেকে অনেক গুলো শপিংএর ব্যাগ সহ সাদনান প্রিয়তার হাত ধরে বাড়ির উঠোন পেড়িয়ে আসে এরমধ্যে প্রিয়তার মা বাব দুজনেই ছুটে আসে।আয়ান বাড়িতে নেই।
সাদনান আর রাহান কে নিয়ে শফিক সওদাগর নিজেদের বসার ঘরে বসল।প্রিয়তা নিজের মায়ের সাথে রান্না ঘরে চলে গেলো।
রাহান নাস্তা করে বিদায় নিলো।সাদনান ফ্রেশ হওয়ার জন্য প্রিয়তা কে খুঁজে তবে মেয়ে টা নেই।শফিক সওদাগর তখন স্ত্রী কে ডেকে প্রিয়তাকেও ডাকে।প্রিয়তা এসে বাবার সাথে কথা বলে।শফিক সওদাগর প্রিয়তা কে ফ্রেশ হয়ে রাতে খাবার খাওয়ার জন্য আসতে বলে।প্রিয়তা সাদনান কে নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো। সাদনান ফ্রেশ হতে গেলে প্রিয়তা দরজা আঁটকে নিজের গায়ের শাড়ী খুলে সেলোয়ার-কামিজ পড়ে নিলো।শাড়ী ভাঁজ করে রাখতে গিয়ে ওড়নার কথা বেমালুম ভুলে বসে।
এদিকে সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে বউয়ের দিকে তাকিয়ে থমথমে খেলো। বউয়ের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে। প্রিয়তার নারীঘটিত শরীর এর ভাঁজ স্পষ্ট।
সাদনান নিঃশব্দে এসে বউয়ের পেছনে দাঁড়ায়। সাদনান এর অস্তিত্ব টের পেতেই তৎক্ষনাৎ শিউরে ওঠে লাফিয়ে সরতে চায় প্রিয়তা।
কিন্তু সাদনান তা হতে দেয় না।পেছন থেকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে প্রিয়তার কোমড়।সাদনান প্রিয়তার ঘাড়ে নিজের থুঁতনি ঠেকাতেই প্রিয়তার সারা শরীর শিরশির করে ওঠে।চোখ বন্ধ করে নিজেকে শক্ত রাখার প্রায়শ চালায়।সাদনান নিজের হাত প্রিয়তার কামিজ ভেদ করে প্রিয়তার পেটে বিচরণ ঘটাতেই প্রিয়তা শরীর এর সর্বত্র শক্তি হারিয়ে ফেলে।পা জোরা অবশ হয়ে আসে।নিজে দাঁড়িয়ে থাকার মতো শক্তি পায় না।প্রিয়তা কাঁধে নরম কিছুর সংস্পর্শ পেতেই বুঝতে এক সেকেন্ড সময় লাগে না সাদনান ভাই নিজের অধর জোড়া ছুঁয়ে দিয়েছে।
প্রিয়তা ছিটকে দূরে সরে গেলো।সাদনান প্রিয়তার দিকে তখনো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। প্রিয়তা ওড়না খোঁজে চার দিকে পেয়েও যায় তবে সেটা হাত বাড়িয়ে নেওয়ার আগে সাদনান প্রিয়তা কে আবার নিজেদের কাছে টেনে নিলো।সাদনান নিজের বা হাত টা উঁচিয়ে
প্রিয়তার ঠোঁটে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল ছুঁয়ে দিয়ে অনুমতি চাইলো,

-“ক্যান আই কিস ইউ ফর ওয়ানস্?”

প্রিয়তা সাদনানের কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়।তবে সাদনানের দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে আওড়াল,

-“সব সময় নিজের মনমতো সব করে।আর এখন অনুমতি চাচ্ছে?অদ্ভুত।”

সাদনান প্রিয়তার মুখ টা এক হাতে উঁচু করে আস্তে করে নিজের মুখ টা এগিয়ে নিয়ে প্রিয়তার কপালে গাঢ় একটা চুমু খেল।অনেক্ক্ষণ পর সেখান থেকে সরে এসে প্রিয়তার অধরের ভাঁজে নিজের অধর জোড়ার চেপে ধরে।
প্রিয়তার সর্বাঙ্গে কাঁপন ধরে।
সাদনান প্রিয়তার কোমড় টেনে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে।প্রিয়তা প্রথম বারের মতো সাদনান এর এমন লাগামহীন স্পর্শে হাঁপিয়ে ওঠে।নিজেও পাল্লা দিয়ে সাদনান এর সঙ্গে এক হাত সাদনানের চুল শক্ত করে খামচে ধরে অন্য হাত সাদনান এর পিঠে রাখে।
সাদনান সময় নিয়ে ইচ্ছে মতো নিজের রাজত্ব চালায় বউয়ের অধরে।
সময় গড়ালো এক সময় সাদনানের হাতের বাঁধন হালকা হয় প্রিয়তা সুযোগ বুঝে সাদনান কে ঠেলে সরিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।
সাদনান প্রিয়তার এরূপ ব্যবহারে হেঁসে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

-“আমার জান, খুব দ্রুত তুমি নিজে থেকে আমার কাছে ধরা দিবে।”

#চলবে…..

আমার তুমি ২ পর্ব-০৩

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

সাদনান সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিজের বুকের উপর বউয়ের অস্তিত্ব টের পেলো। এক চিলতে হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে।
নিজের মাথা টা সামন্য উঁচু করে প্রিয়তার মাথায় চুলের ভাঁজে নিজের অধর জোড়া ছুঁয়ে দিলো। নিজের উপর থেকে সরিয়ে প্রিয়তা কে নিজের একটা বাহুর উপর রেখে একপাশ ফিরে শুয়ে প্রিয়তার মুখের উপর থেকে সাবধানের সহিত এলোমেলো হয়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে অপলক তাকিয়ে রইলো বউয়ের মুখপানে। গোলগাল ছোট মুখটা ঘুমন্ত অবস্থায় দারুণ মায়াবী লাগছে দেখতে। সাদনান একবার বউয়ের কপালে আলতো করে নিজের অধর জোড়া ছুঁয়ে দিলো। প্রিয়তা নড়েচড়ে ওঠে।সাদনান চুপ করে তাকিয়ে থাকে।এরমধ্যে হঠাৎ সাদনান এর ফোন টা বেজে উঠল। সাদনান তড়িঘড়ি করে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে সাইড বাটন চাপে।
অতঃপর আলগোছে প্রিয়তা কে বালিশে শুইয়ে নিজে বিছানা ছেড়ে নিঃশব্দে ব্যালকনিতে চলে গেলো। ফোনে অনেকটা সময় কথা বলে সাদনান রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সকাল সাড়ে সাত টা বাজে তখন। সাদনান ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার ললাটে ফের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিলো।নিজের মুখ টা এগিয়ে নিয়ে প্রিয়তার কানের কাছে বিড়বিড় করে বলল,

-“দ্রুত ফিরে আসার চেষ্টা করব।
ভিন্ন কিছু দেখার অপেক্ষা।”

কথা শেষ সাদনান মুচকি হেঁসে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।

—–

সাদনান আর জাফর মির্জা বাড়ি নেই।সেই সকালে দাদা-নাতি কোথাও বেরিয়েছে।হয়তো কোনো জরুরি কাজে।সামনে ইলেকশন।
প্রিয়তা বিকেল টা আয়না, মাইশা আর ইনিয়ার সাথে থেকে কেটে গেলো। বেলা এগারো টা নাগাদ আবার আয়ান বোন কে দেখতে এসছিল।প্রিয়তা তখন ভীষণ খুশি হয়েছিল পরক্ষণেই ভাই চলে যাও মনও খারাপ হয়েছিল।তবে বড় বোন সাথে রয়েছে আর বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি মেয়েদের নিজের বাড়ি।তাই যতদ্রুত সম্ভব সবাই কে আপন ভেবে সংসারে মন দেওয়া শ্রেয়। এমনটাই আম্বিয়া মির্জা উপদেশ দিয়েছে প্রিয়তা কে।প্রিয়তা শুধু চুপচাপ শুনে গিয়েছে। হয়তো সত্যি।রাতে রান্না প্রিয়তা শ্বাশুড়ির হাতে হাতে এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করল।আয়না নিজের মেয়ে কে রেখেছে। প্রিয়তা অবশ্য পরে সালেহা বেগম আর সুফিয়া বেগম ঠেলাঠেলিতে রান্না ঘর থেকে নিজের ঘরে এলো বাধ্য হয়ে।
প্রিয়তা রুমে আসার পর কি মনে করে আলমারি খুলে সেখান থেকে একটা ট্রাউজার আর একটা নীল রঙের গেঞ্জি নামিয়ে বিছানায় রেখে দিয়ে নিজে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইল।বেশ অনেক টা সময় পর একটা গাড়ী এলো বাড়িতে। সাদনান এর ব্যালকনি হতে বাড়ির গেইট একদম বরাবর হওয়ায় প্রিয়তার নজরে এলো।সাদনান গাড়ি থেকে নেমে দারোয়ান এর হাতে চাবি দিয়ে একবার নিজের রুমের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।অতঃপর জাফর মির্জা কে সাথে নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
প্রিয়তা সাদনান কে এদিকে তাকাতে দেখে ভাবুক হলো।মানুষ টা বড্ড রহস্যময়।
প্রিয়তা ব্যালকনি থেকে রুমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাদনান রুমে এসে দরজা আটকে নিজের গায়ের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে কৌতূহল নিয়ে বলল,

-“মনে হচ্ছে আমায় মিস করছিলে!
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে!”

প্রিয়তা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।
প্রিয়তা যতটুকু জানে বা এতো বছর ধরে যেমন টা দেখে এসছে আর আজ দু’দিন ধরে যে সাদনান ভাই কে দেখছে তার মধ্যে আগের সাদনান ভাই আর এখনকার সাদনান ভাইয়ের একদমই মিল নেই। স্বভাবসুলভ সাদনান গম্ভীর খুব কম কথা বলে।আর ভীষণ রাগী সেখানে এমন মানুষ টার এই স্বাভাবিক আচরণ প্রিয়তার নিকট বরই অবাক আর অস্বাভাবিক লাগছে।।
তবে নিজের স্বভাব আর সাদনান ভাই এর সাথে কোনো স্বাভাবিক কথা বার্তা কখনো না হওয়ায় এবারেও চুপ রইল প্রিয়তা।
সাদনান ততক্ষণে নিজের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে সোফায় রেখে ড্রেস এর জন্য কাবাড এর দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হতেই নজর পরে বিছানায় কাপড় নামিয়ে রাখা দেখে বলল,

-“বাহ্।
এখন থেকে স্বামীর যত্নআত্তি করতে শুরু করে দিয়েছো!
আ’ম ইমপ্রেস।”

সাদনান কথা টা বলে হাসতে হাসতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
এই লোকের হয়েছে কি?প্রিয়তা আপনমনে বিড়বিড় করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

———–

-“সরি জান আমি আর কোনো রিস্ক নিতে পারছি না।
আমি আজ বাবার সাথে কথা বলে সব ফাইনাল করব।”

আয়ানের কথায় ফোনের ওপাশের রমণী বোধহয় হাসল।আয়ান সেটা ফোনের মধ্যেও ঠাহর করতে পারল।
গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

-“তুমি হাসছ?
আশ্চর্য!এটা মোটেও হাসার সময় নয়।
আমি রোজরোজ এতো আতংক আর তোমাকে হারানোর ভয় নিয়ে থাকতে পারছি না।”

মাইশা এবার শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আয়ান অন্য সময় হলে হয়তো এই হাসি নিয়ে একদফা বর্ণনা করত।কবিতা বলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করত।কিন্তু এখন এই হাসি টা তার নিকট নিজের অসহ্য মনে হলো।মেয়ে টা হাসছে এমন একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়েও।ভাবা যায়?

-“শুনুন, বিয়ের উপযোগী মেয়ে ঘরে থাকলে সম্বন্ধ আসবেই।দেখতেই আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।
এটা নিয়ে এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে?”

আয়ান চুপ করে রইল।তবে মনে মনে ঠিক কি করবে সেটাও স্থির করে।
আজ গিয়েছিল আয়ান মির্জা বাড়ি।বোন কে দেখতে। মাইশা বাড়ি ছিল না।বাড়িতে আম্বিয়া মির্জার কিছু আত্মীয় এসছে। মুলত মাইশা কে দেখতে তবে হঠাৎ করেই।
আয়ান তখন থেকে অস্থির।
আয়ান কে কোনো প্রতিত্তোর করতে না শোনে মাইশা ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“কিছু বলছেন না কেনো?”

-“অনেক রাত হয়েছে।
ঘুমিয়ে পড়ো।”

মাইশা ঘড়ি দেখলো সত্যি রাত অনেক হয়েছে। তাই রোজকার মতো ভালোবাসি বলে আয়ান ফিরতি আমিও ভালোবাসি বলে ফোন কাটে।
আয়ান ফোন রেখে বাবা মায়ের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
রাত তখন অনেক টা।শফিক সওদাগর নিজের অভ্যাস মোতাবেক রুমে বসে বই পড়ছিল।মিতা সওদাগর তখন ঘুমিয়ে পড়েছে।
আয়ান গিয়ে দরজায় নক করতে শফিক সওদাগর ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়।আবার মনে মনে একটু চিন্তিত হয়।এতো রাতে ছেলে কেনো এসছে ভেবে।

-“বাবা আমি বিয়ে করব।
কাল মেয়ে দেখতে যাবে।”

আয়ান রুমে প্রবেশ করেই কোনো বনিতা না করেই সোজাসুজি জানি দিলো।
শফিক সওদাগর নড়েচড়ে বসলো।বই বন্ধ করে চোখের চশমা টা একটু ঠেলে দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি সব বলছো?
মাথা ঠিক আছে?
রাত ক’টা বাজে দেখেছো তুমি?”

-“কেনো তুমি আর মা তো এতোদিন বিয়ের জন্য পাগল করে দিচ্ছিলে।আমি তো বনুর বিয়ের পর করব বলেছি।
তাহলে এখন এসব কেনো বলছো?”

শফিক সওদাগর এপর্যায়ে এসে চুপসে গেলো। হ্যাঁ তা ঠিক তবে ছেলে এতো রাতে কেন এ-সব নিয়ে পড়েছে?বিয়ে করবে এটা তো সকালেও বলা যেতো।তারা কি বারণ করছে যে বিয়ে করাবে ন! তাই রাতবিরেত এসে তাদের রাজি করানোর চেষ্টা করছে! ততক্ষণে মিতা সওদাগরও ঘুম থেকে ওঠে গিয়েছে। ছেলে আর স্বামীর কথোপকথন শুনে ব্যাপার টা বোঝার চেষ্টা করল।সফলও হলো।ছেলের পক্ষে নিয়ে বলল,

-“হ্যাঁ ঠিক।
আমরা তো চাই।বাবা তোর মেয়ে পছন্দ আছে?”

-“হ্যাঁ।
তোমার ছেলের বাবা কে বলে দাও।
মফিজুর মির্জার সাথে কথা বলতে।
বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নেব।”

আয়ান কথা গুলো খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে রুম হতে বেড়িয়ে এলো।বুকে একবার থুতু দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে রুমের ভেতর একবার উঁকি দিয়ে দেখলো মিতা সওদাগর হাসিহাসি মুখে শফিক সওদাগর কে কিছু বলছে।আর শফিক সওদাগর অনুভূতিহীন। হয়তো ওনি ভাবতে পারে নি ছেলে তার তলেতলে টেম্পো চাচ্ছে। আয়ান বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটতে হাঁটতে নিজে কে বাহ্ বাহ্ দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

-“সাব্বাশ মাহমুদ আয়ান সওদাগর সাব্বাশ।”

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-০২

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

সাদনান ফোনে কারোর সাথে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে।
এক হাতে গায়ে থাকা পাঞ্জাবি টার বোতাম খুলতে খুলতে পুরো রুমে একবার নজর বুলিয়ে নিলো।
কাঙ্খিত মানুষ টাকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে।
পরপরই ওয়াশ রুম হতে পানি পড়ার শব্দে বুঝতে পারে। প্রিয়তা ওয়াশ রুমে রয়েছে। কিন্তু এতো রাতে মেয়ে টা করছে টা কি?
সাদনান অতশত চিনি বাদ দিয়ে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তি টা কে, “পরে এটা নিয়ে কথা বলছি” বলেই ফোনের লাইন কেটে ফোন সেন্টার টেবিলে রেখে ওয়াশ রুমের দরজায় খটখট শব্দ করে জিজ্ঞেস করলো,

-“এতো রাতে তুমি শাওয়ার নিচ্ছো?”

প্রিয়তার সাদনানের কণ্ঠে শুনে জান বেরিয়ে আসার জোগাড়।
কিছু বলার মতো শব্দ খোঁজে পাচ্ছে না।
একবার নিজের শরীর এর দিকে তাকিয়ে আবার দরজার দিকে তাকালো।
বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে অপরাধী কণ্ঠে জানালো,

-“শাড়ী ভিজে গিয়েছে।”

সাদনান দরজা হতে সরে দাঁড়ায়।
সাদনান প্রিয়তার কথা ঠিক মানে বুঝে না।শাওয়ার নিয়েছে শাড়ী তো বুঝবেই।
এখন শুঁকনো কাপড় পড়লেই তো হয়।
তবে সাদনান মুখে জিগ্যেস করলো,

-“আর কিছু নেই?”

-“একটা নিয়ে এসেছিলাম সেটাই ভিজে গিয়েছে।”

-“তুমি বেরিয়ে এসো।
আমি মায়ের কাছে থেকে শাড়ী নিয়ে আসছি।”

সাদনান কথা গুলো বলে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।
প্রিয়তা ভেজা শাড়ী পড়েই সেভাবেই বেরিয়ে এলো।পুরো রুম পানি দিয়ে ভিজে জবজবে হয়ে যেতে লাগল।
সাদনান একটা ছাই রঙের শাড়ী হাতে রুমে প্রবেশ করতেই।বিরক্তে কপালে ভাঁজ পরে।
ভরাট কন্ঠে গুরুগম্ভীর স্বরে বলল,

-“এটা নিয়ে পড়ে এসো।”

সাদনান কথা শেষ শাড়ী টা নিয়ে এগিয়ে আসে। প্রিয়তা সাদনানের পায়ের দিকে তাকিয়ে ঠাহর করতে পারে। প্রিয়তা একটু পিছিয়ে গেলো। সাদনান প্রিয়তা কে পিছিয়ে যেতে দেখে নিজের পা জোরা স্থির করে।ভ্রু কুঁচকে নেয়।আর প্রিয়তা কি বলবে খোঁজে পেলো না।
সে তো শাড়ী পড়তে পারে না। তাই অসহায় চোখে একবার সাদনান এর দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে মিনমিন করে জানালো,

-“আমি শাড়ী পড়তে পারি না।”

সাদনান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে।তবে পরক্ষণেই কিছু ভেবে শুকনো ঢুক গিলে।
প্রিয়তার ভেজা শাড়ীতে মেয়েলী ভাঁজ গুলো সব স্পষ্ট।তবে সাদনান এর মনে হচ্ছে তাঁর সামনে একটা চকলেট এর প্যাকেট দাঁড়িয়ে। যার চকলেট এরচেয়ে প্যাকেট টা বেশি বড় হয়।প্রিয়তার গায়ের শাড়ী টা ততটা ভারী নয়।তবে চিকন পাতলা দেহখানার জন্য শাড়ী টা ভারী মনে হলো সাদনানের নিকট।
নিজের সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী এমন রূপ যেকোনো পুরুষ কে টানবে।নিজের পুরুষালী সত্ত্বা দমন করে সাদনান পাশের দেওয়ালে থাকা বোর্ডে সুইচ টিপে লাইট অফ করে।
প্রিয়তা চমকে ওঠে।
তড়িঘড়ি করে ভীতু স্বরে বলল,

-“লাইট কেন বন্ধ করলেন, সাদনান ভাই?”

সাদনান প্রিয়তার কথা শুনে বিরবির করে বলল, “ইস্টুপিট”। প্রিয়তার কান অব্ধি কথা টা পৌঁছাল না। পৌঁছবে কি করে মেয়ে তো ভয়ে লজ্জায় অস্বস্তি মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে আছে।
সাদনান প্রিয়তার থেকে গুনে গুনে দুই হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে নিজের হাতে থাকা ব্লাউজ আর আর প্রয়োজনীয় সব প্রিয়তার হাত টা টেনে ধরে প্রিয়তা কে দিলো।শুধু শাড়ী টা নিজের হাতে রাখল।

-” আমি চাই না তুমি আমার সামনে অস্বস্তি বোধ করো।
আমি চাই তুমি আমার সামনে স্ত্রী রূপে লজ্জা পাও।আর যেদিন তুমি আমার সামনে প্রথম লজ্জা পাবে সেদিন আমি নিজে হাতে পড়ানো এই শাড়ী নিজের হাতে খোলে নেব।”

সাদনানের ফিসফিসিয়ে বলা কথা গুলো শুনে প্রিয়তার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরুনোর জোগাড়। অন্ধকারের মাঝে আবছা আলোয়ে সাদনান দেখতে পেলো প্রিয়তার চোখ জোড়া বেশ টান টান করে তাকিয়ে তারই দিকে।
সাদনান প্রিয়তা কে এভাবে তাকাতে দেখে হাসল বোধহয়। যা প্রিয়তার চোখে ধরা পড়ে না।পড়বে কি করে সে তো লজ্জায় আবার দৃষ্টি আগের ন্যায় নত করে নিয়েছে।
সাদনান উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে এক হাত কোমড়ে আরেক হাত মাথার পেছনে রেখে তাগাদা দিয়ে বলল,

-“ফাস্ট ভেজা কাপড় চেঞ্জ করো।”

প্রিয়তা কাঁপা কাঁপা হাতে তাই করে। আর বাইরে থেকে ব্যালকনি দিয়ে আসা অল্প আলোর কারণে সেটা প্রিয়তার উপর পড়ে যার ফলে প্রিয়তার ছায়া টা না চাইতেও সাদনান এর নজরে আসে পাশের পর্দা টায়।
সাদনান ধপ করে চোখ বন্ধ করে নিলো।সে চায় না এখন এমনি কিছু হয়।তাহলে বারবার কেন মেয়ে টা তাকে উস্কে দিচ্ছে। সে তো পুরুষ সেখানে নিজের বিয়ে করা স্ত্রী এমনতর অবস্থায় নিজে কে কন্ট্রোল করা কত টা কষ্ট সাধ্য এই মেয়ে কি সেটা জানে?সাদনানের ভাবনার মাঝেই প্রিয়তার বারকয়েক মিনমিন করে ডাকলো সাদনান কে।শেষমেশ না পেরে সামন্য জোরেই ডাকল,

-“সাদনান ভাই?”

-“হ্ হঁ!”

সাদনান চমকাল।
পেছনে ফিরে বলল।
প্রিয়তা নিজের দুই হাত সামনে দিয়ে রেখেছে। সাদনান ঠোঁট এলিয়ে হাসল।তবে পর মূহুর্তে কি হবে ভেবে হাসি বিলীন হয় ঠোঁটের কার্নিশে হতে।
নিজের হাতের শাড়ী ভাঁজ খুলে এগিয়ে গিয়ে হাতের শাড়ীর আঁচল টা গুঁজে দিলো প্রিয়তার কোমড়ে। সাদনানের হাতের স্পর্শ কেঁপে উঠল প্রিয়তার সর্বাঙ্গ। সাদনান সেটা ঠিক বুঝতে পারল।তবে নিজে কে শক্ত করে প্রিয়তা থেকে যথেষ্ট দূরে দাঁড়িয়ে শাড়ী টা পেঁচিয়ে নিলো প্রিয়তার কোমড়ে।বলিষ্ঠ পুরুষ সাদনানের বুকে প্রিয়তার শরীর টা স্পর্শ পেলো।
সাদনান কুঁচি করে সেগুলো প্রিয়তার হাতে দিলো।প্রিয়তা কাঁপা কাঁপা হাতে সেগুলো কোনো রকম গুঁজে নিলো।
সাদনান নিচে বসে প্রিয়তার কুঁচি গুলো ঠিক করে ওঠে দাঁড়িয়ে চট করে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তা সেভাবে থেকেই এগিয়ে গিয়ে লাইট অন করে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজে কে ঘুরেফিরে দেখতে লাগল।বেশ ভালোই হয়েছে। তবে আঁচল টা বেশ লম্বা রয়েছে।
প্রিয়তা ভেজা কাপড় গুলো ফ্লোরে। প্রিয়তা আশেপাশে কোনো ঝুরি আছে কি-না দেখে নিলো।
নাহ কিছু নেই।
প্রিয়তা ভাবল সাদনান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলে সেগুলো ধুয়ে নিবে।
কিন্তু প্রিয়তার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে হঠাৎ ওয়াশ রুমের দরজা খুলে অর্ধনগ্ন সাদনান বেরিয়ে এলো।কোমড়ে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের টাওয়াল পেঁচিয়ে।
প্রিয়তা সাদনানের দিকে তাকিয়ে রইল।মুলত বেহায়া চোখ জোরা প্রিয়তা কে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে দিল না।উদোম শরীরে বুকের ঘনকালো পশম গুলো মারাত্মক সুন্দর দেখতে লাগছে প্রিয়তার নিকট।
সাদনান প্রিয়তা কে এভাবে তাকাতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“আমাকে দেখা শেষ হলে ব্যালকনি থেকে টাওয়াল এনে চুল গুলো মুছে নাও।”

কথা টা বলতে বলতে সাদনান প্রিয়তার ভেজা কাপড় গুলো হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
প্রিয়তা বোধগম্য হচ্ছে না।ব্যাপার টা বুঝতে প্রিয়তার ঠিক কত সময় লাগল প্রিয়তা জানে না।
তবে সাদনান ভাই তাঁর কাপড় ধুতে নিয়েছে এটা যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কোথায় ভেবেছে বিয়ের পর হয়তো সাদনান ভাই তার সাথে ঠিক করে কথাও বলবে না।সেখানে এতসব যেনো প্রিয়তার স্বপ্ন মনে হচ্ছে।

———

রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার মতো বাজে কবির খাঁন সওদাগর বাড়ি এসে পৌঁছাল। কালাম খাঁনও আজ সওদাগর বাড়ি রয়েছে। তিনি ছেলে কে দেখে রেগে গেলো।
তবে শফিক সওদাগর কালাম খাঁন কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো। আর মিতা সওদাগর আগে কবির কে ফ্রেশ হতে বলল।কবির তাই করল।ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো।এরমধ্যে কবির ঠিক আন্দাজ করতে পারে বিয়ে টা তাহলে সত্যি হয়েছে মির্জা সাদনান শাহরিয়ার সাথে।আর তাকেও যে মিথ্যা খবর দিয়ে এখান থেকে খুব দক্ষতার সঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটাও বুঝতে পারে। তবে সে বিষয় টা কারোর সাথেই শেয়ার করল না।
কবির শফিক সওদাগরের কে অনুতপ্ত স্বরে বলল,

-“আমি সত্যি লজ্জিত।
তবে জরুরি কিছু কাজ থাকায় আমাকে সকালেই চট্টগ্রাম যেতে হয়েছে। আমি অতন্ত্য দুঃখিত আঙ্কেল।”

শফিক সওদাগর কবির এর কথায় জানাল,

-“দেখো বাবা যা হয়েছে ভুলে যাও।
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।”

#চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]