Monday, July 21, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 129



আমার তুমি ২ পর্ব-৩০+৩১

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩০
#জান্নাত_সুলতানা

-“অলরেডি অনেকটা লেইট্ মিস্টার কবির।
টেন পারসেন্ট আশা।
খুব সাবধানে সতর্কতার সহিত থাকতে হবে।ফুল বেড রেস্ট।একটা পানির জগে এক লিটার পানি ধরে।সেটাও তিন্নি নিজে ক্যারি করতে পারবে না। জগ থেকে পানি টা ওকে ঢেলে দিতে হবে।”

তিন্নি স্তব্ধ হয়ে সামনে বসা ডক্টর তাসলিমার কথা গুলো শুনে যাচ্ছে।
কি থেকে কি হচ্ছে? সবে তো এক মাস চলে।এতেই এতো রিস্ক?একদমই আশা নেই?কি হবে সামনে? থাকবে তো বেবি টা?
কবির ডক্টর এর সাথে কথা বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।খুব ধীরে তিন্নি কে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো।কবির তিন্নি যাওয়া মাত্র ডক্টর তাসলিমা মফিজুর মির্জা কে কল লাগালেন।
পূর্বপরিচিত তারা।মির্জা বাড়ির বাঁধা একজন ডক্টর বলা চলে ডক্টর তাসলিমা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাথে গাইনী ডক্টর। ওয়াজিদ রিধির বিয়েতে গিয়ে তিন্নির সাথে পরিচিত হয়েছিল।পরিবার নেই।এতিম জানতে পেরে তখন থেকে মেয়েটার প্রতি একটু আলাদা মায়া কাজ করে।আর একজন মেয়ের এই অবস্থায় নিজের পরিবার কে সব চেয়ে বেশি মিস করে। সেখানে তিন্নি ভিন্ন। বাচ্চা টা এখনো নিদিষ্ট স্থানে এসে পৌঁছায় নি।টিকতে পারে আবার নাও।এই দোটানায় একটা মেয়ে নিশ্চয়ই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরবে।তাই মনোবল ধীর করার জন্য মানসিক সাপোর্ট ভিষণ প্রয়োজন।
কবির তিন্নি পার্কিং লটে পৌঁছাতেই মির্জা বাড়ির একটা সিলভার রঙের গাড়ি শাঁই শাঁই করে এসে ওদের গাড়ির পাশে থামলো।সেখান থেকে মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা সহ রোজিনা বেগম নামলো।তারা তিন ভাই বোন গিয়েছিল আজ তাদের যে স্কুল টা রয়েছে সেখানে। আর সেখানে সভা শেষ বেরুতেই ডক্টর এর ফোন পেয়ে ছুটে এসছে।রোজিনা বেগম তিন্নি কে আগলে নিলো।হাসি মুখে সব জিগ্যেস করে কবির এর গাড়িতে বসলো।কবির অবাক হয়ে শুধু দেখছে।কি হচ্ছে? ওনারা কোথা থেকে এলো কিছু মাথায় আসছে না।
কবির থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ্জম মির্জা থমথমে কণ্ঠে কবির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“গাড়ি গুলো মির্জা বাড়ি যাবে সোজা।
কোনো রূপ বাক্য শুনতে চাই না আমি।”

——

তিন্নি আসা মাত্র মির্জা বাড়ি যেনো আরো উল্লাসে মেতে উঠলো।রান্না বান্না। পরিবেশ টা কিছু টা রমরমা হয়ে গেলো। শুক্রবার বিধায় কবির একদম ফ্রী।তাকেও জোর জবরদস্তি করে সবাই রেখে দিয়েছে। কালাম খান কে সব জানানো হয়েছে। যদিও তিনি বেশি খুশি হোন নি তিন্নি মির্জা বাড়ি বেশ কিছু দিন থাকবে বলে।কিন্তু তিন্নির কন্ডিশন এর কথা ভেবে কিছু বলতে পারে নি।অবশ্যই খান বাড়ি থাকলেও কোনো সমস্যা হতো না।দুই দুই জন কাজের লোক রয়েছে দরকার পড়লে আরো নিতেন।তবে এমন অবস্থায় একটা মেয়ের সবচেয়ে বেশি যাকে প্রয়োজন সে হচ্ছে এক মাত্র মা। আর মির্জা বাড়িতে তিন্নির দুই দুই টা মা রয়েছে। তারা কখনো যে তিন্নি কে এমন অবস্থায় বাড়ি যেতে দিবে না সেটা দুই বাপ ছেলে ভালোই জানে।তাই তো কালাম খান কিছু বলে না।
তিন্নির সাথে দেখা করে দুপুরে খাবার খেয়ে বাড়ি চলে যায়।তখন সবাই লিভিং রুমে বসে ছিলো।একমাত্র সাদনান আর রাহান বাদে সবাই আজ বাড়িতে। তবে আজ্জম মির্জা ছেলের কথা মতো রেডি হয়ে চলে গেলো সাদনান এর দেওয়া এড্রেস অনুযায়ী একটা রেস্টুরেন্টে।
লিভিং রুমে তখন কবির অসহায় এর মতো বসে আছে। বউ কে সে এই বাড়ি আসার পর একবারও পায় নি।তিন্নি আর কবির কে নিচে লিভিং রুমের পাশে একটা বেডরুমে দিয়েছে। আর সেখানে তিন্নি বিছানায় আধশোয়া করে কেউ না কেউ ওর কাছে গল্প করছে বসে বসে।
তাই কবির রুম হতে বেরিয়ে এসছে।এতো মহিলার ভীড়ে থাকা সম্ভব না-কি!

—–

আধঘন্টা নাগাদ আজ্জম মির্জা সহ সাদনান রাহান একটা টেবিলে বসে আছে। রেস্টুরেন্ট বেশ নামী-দামী।
সোফায় গা এলিয়ে সাদনান ফোনে স্ক্রল করছে।একটা বড়সড় রুমের মতোই কিছু টা। এটার বাহিরে রয়েছে গার্ড সব সাদনানের। আজ্জম মির্জা বারংবারই এখানে প্রবেশ করার সেই স্থানের দিকে তাকাচ্ছে।তিনি ছেলের এমন ভাবভঙ্গি দেখে বড়ই বিরক্ত হলেন।কিছু টা বিরক্তিকর স্বরে বলে উঠলো,

-“কি ব্যাপার তোমার পাত্র এখনো কেনো আসছে না?
আর কতক্ষণ বসে থাকবো!আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেলো।”

-“এখনো তো আমার বাচ্চাকাচ্চা পালা বাকি বাবা।
আর তোমার এক্ষুনি কোমড় ব্যাথা?আজই ডক্টর দেখাতে হবে।”

সাদনানের চিন্তিত কণ্ঠে শুনে আজ্জম মির্জার কপালে বিরক্তির ভাঁজ পরে। ছেলের কথার কোনো যুক্তি তিনি খোঁজে পেলেন না।ভ্রু কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুঁচকে শুধালো,

-“তোমার বাচ্চার সাথে আমার কোমড় ব্যাথার কি সম্পর্ক?”

-“সেকি কথা?বাচ্চাদের সাথে খেলতে হবে না!ওদের রাখতে হবে না। নয়তো আমার বউ আমাকে সময় দিতে পারবে না যে।”

সাদনানের কথার ভাব এমন মনে হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে সে।আজ্জম মির্জার কান গরম হয়ে আসে।ছেলে টা কোনো দিন ঠিক হবে না। সব সময় তাকে লজ্জায় ফেলবে।তিনি কিছু টা দাঁত কটমট করে বলল,

-“চুপ করো বেয়াদব ছেলে।
তোমার এসব কথাবার্তা শোনার জন্য আজ ছুটির দিনেও আমি দৌড়ে উপজেলায় আসি নি।”

-“মিথ্যা কেনো বলছো?
তুমি দৌড়ে কখন এলে?তুমি বিএমডব্লিউ কারে করে এসছো।যেটা এসি সহ বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত।”

সাদনানের কথায় রাহানের পেট মুচড়ে হাসি পেলো। তবে হাসলো না।এখনো হাসলে নিজের কপালে শনি রবি সবই আছে। আজ্জম মির্জা তাজ্জব বনে বসে আছে।সাদনান রাহানের দিকে একবার তাকিয়ে এবার নড়েচড়ে বসলো।
সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল,

-“বাবা সারা আমাদের সবার আদরের। ওর কষ্ট হয়। ও দুঃখ পাবে এমন কিছু আমি তুমি ইভেন আমরা কেউ করবো না।ও যদি অল্পতে খুশি থাকতে পারে আমরা কেনো ওর সেই খুশি ছিনিয়ে নেব?অবশ্যই না।ওর খুশিতে আমরা খুশি।ও ভালো থাকলে আমরা নিশ্চিন্তে থাকবো।আর আমার মনে হয় ও ওর ভালোবাসার মানুষ টার সাথেই খুশি থাকবে।”

হঠাৎ কেনো সাদনান এসব বলছে কিছু মাথায় এলো না আজ্জম মির্জার।তবে লাস্ট কথা টায় তিনি অনেক টাই অবাক হয়েছে।সারা এমন কিছু করেছে?তাহলে তিনি কিছু টের পেলো না কেনো?অবশ্য পাবেই বা কি করে একজন মেয়ে যদি এমন কিছু করে তবে সবার আগে সেটা তার মায়ের কাছে ধরা পরে। সেক্ষেত্রে তিনি তো বাবা।আর যদিও এসব করেই থাকে!তাহলে সালেহা কেনো তাকে কিছু বললো না?না-কি সেও জানে না এসব?না-কি জানে ইচ্ছে করে বলে নি?
আজ্জম মির্জা থমথমে কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি বলতে চাইছো?
সারা?”

-“হ্যাঁ মামা।
আমি সারা কে ভালোবাসি।”

আজ্জম মির্জা মনে মনে এতোক্ষণ প্রশ্নের ঝড় তুললেও এপর্যায়ে তিনি একদম নীরব হয়ে গেলেন।শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো রাহানের দিকে। রাহান নিজে থেকে নিজের ঘাড়ে অপরাধ নিয়ে বলতে লাগলো,

-“মামা ওর কোনো দোষ নেই। প্লিজ ওকে তুমি ভুল বুঝো না।”

-“আমার মেয়ে ব্যাপার টা না হয় আমাকে বুঝতে দাও।
আর দেড়মাস পর আমি এব্যাপারে কথা বলবো।ততদিনে তুমি একটা চাকরির ব্যবস্থা করবে।বিয়ের পর অবশ্য তুমি আমাদের কোম্পানিতে আবার জয়েন করবে।যদি প্রশ্ন আসে তাহলে চাকরি কেনো খুঁজতে হবে? তাহলে আমার উত্তর হবে আমার মেয়ের জন্য আমি যোগ্য পাত্র চাই।এমন টা কখনো যেনো না হয়।আমার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই কে কখনো মির্জা বাড়ির কাছে মাথা নত করে থাকতে না হয়।তাই নিজে কে প্রমাণ করার একটা সুযোগ দিলাম তোমায়।”

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো আজ্জম মির্জা। সাদনান রাহান চুপ করে শুনে গেলো শুধু। কিছু বলার মতো অবশিষ্ট আর নেই।একদম শুরু থেকে শেষ করে দিয়েছে কথার।আজ্জম মির্জা একটু পানি খেলো।বসা ছেড়ে রুম হতে বেরিয়ে আসার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে ফের ফিরে তাকালো সাদনানের দিকে অতঃপর আবারও থমথমে কণ্ঠে সাদনান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“আর হ্যাঁ।
তোমাকে বলছি।চাকরির ব্যাপারের কোনো সাহায্য করবে না তুমি রাহান কে।আমি জানি ওর যোগ্যতা দিয়ে ওর একটা ভালো পোস্টে জব হবেই।”

—-

-“বাবা-র রিয়াকশন কি ছিল?”

-“কোনো রিয়াকশন নেই।
শুনলে তো সব।”

সাদনান মোলায়েম কণ্ঠে জানালো। প্রিয়তা সাদনানের চুলের ভাঁজে ফের আঙ্গুল চালায়।সাদনান বউয়ের পেট জড়িয়ে আরো কিছু টা প্রিয়তার কোমড়ে চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই।
বাহিরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।ব্যালকনির দরজা খোলা।তারউপর রুমে ফ্লোরে বসে আছে ওরা দু’জন। বাইরে থেকে আসা ঠান্ডা বৃষ্টির বাতাস। আর নিচে টাইলস এর ঠান্ডা দু’টো মিলে শরীর হিম হয়ে আসছে। প্রিয়তার পেটে সাদনান বারকয়েক নাক ঘষে। প্রিয়তা সাদনানের চুলে মৃদু টেনে বলল,

-“সব সময় ধান্ধা।”

-“শোনো।
ভার্সিটি থেকে নোটিশ দিয়েছে।
এটা কোনো মার্কস হলো জান?
তোমার সেকশনে তোমার সবচেয়ে নম্বর কম।
এমন হলে আমার সম্মানের বলে কিছু থাকবে না।”

সাদনান শোয়া থেকে ওঠে বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বলল।
প্রিয়তা ভাবলেশহীন। বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বিছানার দিকে এগুতে এগুতে জানালো,

-“এমনি হবে।
পড়তে চাই না আমি।”

-“তো?”

-“কতদিন বলেছি সংসার করবো!
আপনার তো সেসব শোনার প্রয়োজন নেই।”

সাদনান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে।
এগিয়ে এসে প্রিয়তা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে আদুরে কণ্ঠে বলল,

-“এটা কেমন বাচ্চাদের মতো কথা বলছো!
সময় চলে যাচ্ছে না।”

-“নিজে তো বুড়ো হচ্ছেন।
সেদিকে খেয়াল আছে?”

প্রিয়তা নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো।সাদনান ছাড়লো না বউ কে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে জানালো,

-“আমি বুড়ো না জোয়ান সেটা রোজ রাতে প্রমাণ করি।
চলে তোমার যখন বিশ্বাস হচ্ছে না তবে আবার প্রমাণ দেই।”

#চলবে…..

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_৩১
#জান্নাত_সুলতানা

আজ তিন হয় রাহান বাড়ি নেই।চাকরির খোঁজে আছে।অনেক গুলো কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করেছে। আর সেগুলোর সব ইন্টারভিউ এর জন্য সে কোনো এক বন্ধুর বাসায় রয়েছে। আজও একটা ইন্টারভিউ ছিল।সকালে একবার সারা কে ফোন করে জানিয়েছে। সারাদিন আর কোনো খবর পাওয়া যায় নি।বিকেলের দিকে অনেক গুলো ম্যাসেজ কল করেছে সারা কিন্তু কোনো রেসপন্স আসে নি।ফোন বন্ধ। সারা সেইজন্য চিন্তায় আছে। রাতে খাবার খেয়ে একটু আগেই রুমে এসছে। যদিও সারা আজ তিন দিন ধরে খাবার নিয়ে বসছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো গলা দিয়ে নামতে চায় না।কোথায় আছে মানুষ টা?কি খাচ্ছে? কিভাবে থাকছে?
দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে। কিন্তু রাহানের ফোনে নেট নেই।নেট নেই বললে ভুল হবে। রাহানের কাছে নেট নেওয়ার মতো অহরহ টাকা নেই।মির্জা বাড়ি থেকে সে এক পয়সাও নেই নি।নিজের বাইক বিক্রি করে দিয়েছে। যেটা রাহান টিউশন আর একটা কোচিং সেন্টারে যখন জব করতে ভার্সিটিতে পড়াকালীন তক্ষুনি বাইক টা নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে নিয়েছিলো।যদিও রাহানের বাবা এখন যথেষ্ট বিত্তশালী মানুষ।ছোটখাটো একটা ব্যবসা দিয়েছে সেখানে কিছু কর্মচারী রয়েছে।কিন্তু রাহান কারোর সাহায্য নেয় নি।বাবা রফিক আহমেদ এই ব্যাপারে কিছু দিতে চাইলে রাহান বারণ করে দিয়েছে। আজ্জম মির্জা যেমন আদেশ দিয়েছে তারচেয়েও বেশি রাহান পালনের চেষ্টা করছে।
একদম নিজের প্রচেষ্টায় কিছু করার চেষ্টা।
আর সাফল্য অর্জন করার ফার্স্ট স্টেপই হলো চেষ্টা।

—-

সারা চোখে ঘুম নেই। বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে। গোলগাল মুখ টা এই টুকুন হয়েছে। কোমড় সমান সিল্কি চুল গুলো কেমন এলোমেলো। আগের মতো আর ঝরঝরে নয়।রাহান পাইপ বেয়ে সারা’র ছোট মিনি ব্যালকনিটায় এসে ঝুলে আছে।ব্যালকনির দরজা বন্ধ। কিন্তু একটা জানালার পাট খোলা।আর সেই অল্পস্বল্প ফাঁক দিয়ে রাহান সারা কে দেখছে।
রাহান এর মায়া হয়।বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।নিচে একবার গার্ড এর দিকে তাকায়।একজন গার্ড রাহান কে পাইপ বেয়ে উপর উঠতে সাহায্য করেছে।রাহান গার্ড এর দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতে গার্ড লাইট নিয়ে চলে গেলো।
রাহান রেলিঙের ফাঁকে পা দিয়ে উঠার চেষ্টা করতেই পা লেগে একটু ফুলের টব কাত হয়ে পরে গেলো।রাতের নিস্তব্ধতায় ভালোই শব্দ হলো।সারা চমকে উঠলো। ভীতু চোখে ব্যালকনির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই লম্বাটে পুরুষের এক অবয়ব দেখতে পেলো। কিঞ্চিৎ সময় লাগলো মানুষ টা কে বুঝতে।বসা ছেড়ে এল দৌড়ে দরজা খুলে ব্যালকনিতে চলে গেলো।সবার আগে নিচে তাকালো।পরপরই রাহান কে টেনে নিয়ে ভেতরে আসতে আসতে ভীতু স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি বাড়িতে কি করে প্রবেশ করলেন?এতো টা উঁচু কি করে আসলেন?কেউ দেখেনি?”

সারা’র বাচ্চা বাচ্চা প্রশ্নে রাহান ক্লান্তিতে চোখ পিটপিট করে তাকালো সারা’র চিন্তিত মুখপানে।

-“সেসব তোকে জানতে হবে না।
শুনলাম খাওয়াদাওয়া করছিস না ঠিক মতো?
এই কথা কেনো বলছিস না? আমি এতো কিছু কার জন্য করছি?তোর জন্য।আর তুই আমার সব কিছুর এই দাম দিচ্ছি?”

সারা কোনো কথা বলছে না। রাহান সারা’র দুই বাহু ঝাঁকিয়ে জিগ্যেস করে।
সারা চোখ টলমল করে। রাহানের হাত সরিয়ে আলগোছে মাথা রাখে রাহানের শক্ত পোক্ত বুকে।রাহান একদম চুপ হয়ে গেলো। নিজেও এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত সারা’র মাথায় রাখতেই সারা ফুঁপিয়ে শব্দ করে।তবে কাঁদে না। ধরে আসা গলায় বলল,

-“আমার আপনার জন্য কষ্ট হয়।এতো ভালো ভালো খাবার আমার গলা দিয়ে নামে না।আপনি যেখানে এতো কষ্ট করছেন সেখানে আমি এসি রুমে আরাম-আয়েশ দিন পাড় করছি।”

-“চাকরি পেয়ে গেলে তো শেষ। আর কিসের কষ্ট?এটা তো আমায় আজ হোক কাল হোক করতেই হতো।আর সবচেয়ে বেশি খুশির খবর হচ্ছে পরশু যে ইন্টারভিউ টা দিয়েছি সেটা থেকে আমায় আজ ই-মেইল পাঠিয়েছে দেখা করার জন্য।”

রাহানের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের ভালো লাগে।তবে হঠাৎ কিছু মনে হতে মলিন হয় মুখ।মলিন কণ্ঠেই বলে উঠলো,

-“যদি সিলেক্ট না করে?”

-“নেগেটিভ কেনো ভাবছিস?পজিটিভ ভাব।”

সারা আবার দুই হাতে জড়িয়ে ধরে রাহান কে।

—-

-“রাহান ভাইয়ের চাকরি হয়েছে।আমার যে কি খুশি লাগছে।”

সাদনান রুমে প্রবেশ করা মাত্র প্রিয়তা উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠলো।
সাদনান পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি ব্যাপার তোমার কেনো এতো খুশি লাগছে?”

-“আপনি বুঝবেন না।
আমি তো জানি সারা এই পনেরো দিনে কত টা কষ্ট পেয়েছে। আর চাকরি পেয়েছে তাই বাবা আর এখন অমত করতে পারবে না।তাহলে সারা আর কষ্ট পাবে না।”

সাদনান বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। গা হতে পাঞ্জাবি খুলে প্রিয়তার হাতে দিয়ে টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুমের উদ্দেশ্য চলে যেতে যেতে বলল,

-“সোফায় দু’টো প্যাকেট রাখা আছে।
দেখো ওগুলো একটা বিয়ের জন্য আরেকটা হলুদের।”

প্রিয়তা সাদনানের কথা অনুযায়ী প্যাকেট খুলে দেখলো।সব কমপ্লিট।কোনো কিছু বাদ রাখে নি।একদম জুয়েলারি থেকে শুরু করে সবই আছে। প্রিয়তা অবাক হলো।সবে তো চাকরি হয়েছে। তবে কি বিয়ের ডেইটও ফিক্সড করে ফেলেছে?তাহলে ও কিছু শোনেনি কেনো?
প্রিয়তা প্যাকেট গুলো কাবডে তুলে রেখে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে রইলো।রাত তখন একটা ছুঁই ছুঁই করছে।সাদনান বেরিয়ে এলো সাত কি আট মিনিট এর মধ্যে।শাওয়ার নেই নি।শুধু গা মুছে নিয়েছে। সকালে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।তারউপর সারা দিন বৃষ্টি আবহাওয়া ঠান্ডা।সাদনান টাওয়াল সোফায় রেখে বিছানা থাকা সবুজ রঙের গেঞ্জি টা পড়ে নিলো।চপ্পল খুলে বিছানায় পা তুলে গুটিশুটি মেরে বউয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা নড়েচড়ে বসলো। এটা যেনো এই পুরুষের রোজকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রিয়তা সাদনানের চুলে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি এতো আগে কেনো শপিং করে নিয়ে এসছেন?
মাত্র চাকরি হয়েছে বিয়ে এখনো অনেক দূর।”

-“কে বলেছে?
কাল সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ।বাবা-র সাথে আমি রুমে আসার আগে এব্যাপারে কথা বলে এসছি।”

-“দাদু?”

-“দাদু নিজেই সব আয়োজন করছে।”

সাদনান বউয়ের পেটে মুখ গুঁজে সেখানে নাইটি সরিয়ে অধর স্পর্শ করে বলে উঠলো,

-“আমার অস্তিত্ব কবে এখানে আসবে?”

প্রিয়তা লজ্জায় মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।সব সময় মুখে মুখে যা-ই বলে কিন্তু সাদনান নিজে কিছু বললে প্রিয়তার লজ্জায় তখন কান গরম হয়ে আসে।সাদনান বউয়ের লজ্জা মাখা মুখপানে চেয়ে শব্দ করে হেঁসে বউ কে এক ঝটকায় বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“এবার তাহলে সত্যি সত্যি অস্তিত্ব আনার মিশন শুরু করি! বউ লজ্জা পায় এখন।”

——

-“দেখো মাইশা ও তোমার মতো করে হাসে।
কিউট গালে কি সুন্দর টোল পড়ে।মাশা-আল্লাহ।
ঠোঁট গুলো তোমার মতো চিকন গোলাপি।”

আয়ানের কথা শুনে মাইশা হাসলো।আজ পাঁচ মাস নাগাদ এই কথা গুলো আয়ান রোজ বলে।
কিন্তু ছেলে পুরোই বাবা-র মতো দেখতে হয়েছে।যদিও মাইশার মতে।কিন্তু সবাই বলে মিশান মাইশার কার্বন কপি।শুধু হাত পায়ের আঙ্গুল বাবা-র মতো লম্বা লম্বা।মাইশার ভাবনার মাঝেই আয়ান ছেলে কে দোলনা থেকে তুলে কোলে নিয়ে বিছানায় বসাল।ইদানীং ছেলে তার দোলনা বেশি পছন্দ করে না।বিছানায় বসালে বসে এদিকে সেদিকে হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।আবার দাদা,পাপা, মামা ডাকে।আর কাউ কে না।মাইশা তখন কান্না পায়।ছেলে কে নয় মাসের বেশি সময় পেটে ধারণ করলো সে।আর ছেলে?সে গুষ্টি শুদ্ধো লোকে ডাকে।শুধু মা কে ডাকে না।তখন আয়ান দম ফাটা হাসিতে লুটিয়ে পড়ে।বাবা-র সাথে সাথে ছোট মিশানও হাসে।কি বুঝে কে জানে।মাইশার তখন সব মন খারাপ দূর হয় ছেলের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে।

-“ওর মনে হয় ক্ষুধা পেয়েছে।
তুমি ফিডিং করিয়ে দাও।আমি গোসল করিয়ে রেডি করে দেব।বিকেলে তো আবার মির্জা বাড়িতে হলুদ অনুষ্ঠান অ্যাটেন্ড করতে হবে।”

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-২৮+২৯

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমি আমার বোন কে নিয়ে কোনো রকম ব্যবসা আমি করতে দেবো না।”

সাদনানের ধীরে আর গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথা টায় আজ্জম মির্জা রেগে গেলেন।কিছু টা তেতে উঠে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো,

-“সাদনান!
মুখ সামলে কথা বলো।আমার মেয়ে কে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বলবে না।মেয়ে আমার।আর বিয়ের জন্য যোগ্য পাত্র পেয়েছি আমি।”

-“আমার মুখ নয়।আপনার চিন্তা ধারা পরিবর্তন করুন। তাহলে হয়তো এই ব্যবসার কথা টা আপনার কাছে ঠিক জঘন্য মনে হবে।কিন্তু জঘন্য হলেও আপনি এমনটাই করতে যাচ্ছেন।”

সাদনান আর দাঁড়াল না সেখানে। আজ্জম মির্জার রুম হতে বেরিয়ে এলো।সাদনান যখন রেগে থাকে তক্ষুনি আজ্জম মির্জা কে তুমি নয় আপনি সম্মোধন করে। আর এই মূহুর্তে সে আজ্জম মির্জার উপর শুধু রেগে নয়। ভয়ংকর রেগে আছে।মানুষ টা হয়তো সাময়িক লাভের জন্য কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা টের পাচ্ছে না। কিন্তু যখন বুঝতে পারবে সাদনান নিশ্চিত তখন আবার মিনমিন করে সাদনানের কাছে এসে বলবে,আসলে হয়েছে কি আমি বিষয় টা অতো গভীর করে ভেবে দেখি নি।”
কারণ প্রতিবারই তিনি কোনো না কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেটা সাদনান ধরিয়ে দিলে এমনটাই হয়েছে।কিন্তু এখন ব্যাপার টা ভিন্ন। বোনের জীবনের প্রশ্ন।সেখানে সে কি করে বাবা-র এমন অবুঝ একটা আবদার মেনে নিবে!

——

মাইশার প্রেগন্যান্সির নয় মাসের বেশি সময় চলে।ফুলা ভারী পেট।গোলগাল মুখ। ঢিলাঢালা জামা।দারুণ মায়াবী দেখতে লাগে।আয়ানের বউ কে দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করে তেমন পরক্ষণেই মনে ভয় এসে হানা দেয়।কি হবে ভবিষ্যতে? তার অনাগত সন্তান আর প্রেয়সীর কিছু হবে না তো?

-“কি ভাবছেন এতো?
কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি।”

মাইশার ডাকে আয়না ভাবনার ছেদ ঘটে।কিছু টা হকচকিয়ে জবাব দেয়,

-“হ্যাঁ বলো!”

-“আপনি হোটেল কেনো জান নি?একবার গিয়ে সুপারভাইজিং করে আসতেন অন্তত।”

-“বাবা আছে।
আমাকে যেতে হবে না।”

মাইশা ভ্রু কুঁচকায়।ইদানীং মানুষ টা বড্ড অন্যমনস্ক থাকছে। সাথে কিছু নিয়ে প্রায় কিছু বিড়বিড় করে বলছে আবার চিন্তায় কপালে ঘাম জমে।
মাইশা এবার আয়ানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।আয়ান সেটা দেখে বউ কে খুব সাবধানে নিজে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলো।মাইশা আয়ানের পেটে মুখ গুঁজে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি কি কিছু নিয়ে টেনশন করছেন?”

আয়ান মাইশার চুল হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জবাব দিলো,

-“কি নিয়ে টেনশন করবো!
আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি দুধ টা নিয়ে আসি।”

-“বাদাম বা খেজুর কোনো টা দিবেন না।
চকলেট দিয়েন,প্লিজ।”

আয়ান মাইশা কে বসতে সাহায্য করলো।মাইশার করুণ কণ্ঠে বলা কথায় বউয়ের মুখের দিকে তাকালো আয়ান।দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।এটা আজ নতুন নয়।দুধ খেতে এলেই তার সব সময় এমন আবদার। কিন্তু এতে যে কোনো পুষ্টি নেই সেটা কি এই মেয়ে বুঝে?সব সময় সুস্বাদু খাবার পুষ্টিকর হয় না।কিছু খাবার খেতে স্বাদ না হলেই সেটায় পুষ্টি থাকে।আয়ান কিছু না বলে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।মাইশা বসে রইলো।সকাল থেকে শরীর টা ভালো যাচ্ছে না। কেমন অস্থির অস্থির করছে। সাথে পেটেও চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে। আয়ান কে বললে টেনশন করবে ডক্টর এর কাছে যাওয়ার জন্য জোর করবে সেই জন্য কিছু বলে নি।কিন্তু রাত বাড়ার সাথে সাথে চিনচিন ব্যাথা টা যেনো বাড়ছে বৈ কমছে না।
এখন তো দাঁতে দাঁত চেপেও ব্যাথা সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু হঠাৎ এমন কেনো হচ্ছে? ডক্টর এর দেওয়া ডেট অনুযায়ী তো এখনো আরো পনেরো দিন এর মতো সময় রয়েছে।তাহলে?

-“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
শরীর খারাপ লাগছে? পেটে ব্যাথা হচ্ছে?”

আয়ান দুধের গ্লাস পাশের টেবিলে রেখে দ্রুতে পায়ে এগিয়ে এসে মাইশা কে আগলে নিয়ে অস্থির কণ্ঠে জিগ্যেস করলো। মাইশা এক হাতে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে কিছু টা মূর্ছা যাওয়া কণ্ঠে জানালো,

-“পেটানো সামান্য পেইন হচ্ছে।”

আয়ান আর কিছু শুনলো না। মা কে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।মিতা সওদাগর সহ একজন কাজের লোক ছুটে এলো।মিতা সওদাগর মাইশার কাছে এসে বসলো।মুখের বর্ণ পালটে গিয়েছে মেয়ে টার।মিতা সওদাগর কিছু আন্দাজ করে আয়ান কে বলল,

-“তোর বাবা কে গাড়ি নিয়ে আসতে বল।
ওকে হসপিটাল নিতে হবে।”

—–

-“বহুত তো রংঢং করলা স্বামী লইয়া। পড়ালেখার নাম কইরা বাড়ি থাইক্কা বাইরে যাও।নিজের মন মর্জি মতো চলো।বলি কি বিয়ের বয়স তো আর কম হইলো না দেখতে দেখতে বছর হয়ে এলো।তা এইবার কি বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখবো?”

হঠাৎই আম্বিয়া মির্জার এরূপ কথায় প্রিয়তা কিছু টা হকচকালো।আস্তে করে মাথা ঘুরিয়ে চোখ বুলিয়ে আশেপাশে দেখে নিলো।না তেমন কেউ নেই।হাতের চামটা টা নুডলস এর বাটিতে রেখে দিলো নিঃশব্দে।
এখন বিকেল এখানে আপাতত কেউ নেই। আম্বিয়া মির্জা তখন সেখানে এলো।প্রিয়তা কে একা পেয়ে কথা গুলো বলে দিলো। প্রিয়তা নড়েচড়ে বসলো। মিনমিন করে জানালো,

-“পরীক্ষা গতকাল শেষ হয়েছে দাদি।”

-“হ তা জানি।
পরীক্ষার লাইগা তো এতোদিন বাচ্চা লইছো না।এখন নিয়েও।”

কিছু টা বিদ্রূপ করে কথা গুলো বলল আম্বিয়া মির্জা। প্রিয়তার আঁখি পল্লব ছলছল করে।তার কি দোষ। সাদনান নিজেই তো এতো দ্রুত বাচ্চা নিতে রাজি নয়।সে তো অনেকবার বলেছিল।কিন্তু সাদনান নিজেই প্রতিবার সেটা এড়িয়ে যায়।আম্বিয়া মির্জা চলে গেলে প্রিয়তা পানি খেয়ে রুমে চলে আসার জন্য চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াতে সালেহা বেগম কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।
ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“খাবার ফেলে কোথায় যাচ্ছিস?”

-“পেট ভরে গেছে।
সারা ডাকছে।যাই!”

সালেহা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো প্রিয়তা কে।শাশুড়ী’র দেখা তিনি করিডরে পেয়েছে।খাবার ঘরে যে এসেছিল সেটা তক্ষুনি বুঝতে পেরেছে। আর প্রিয়তা ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে মনে পড়তে তড়িঘড়ি করে এসেছে। যা ঘটবার সে যে ঘটে গিয়েছে ভালোই ঠাহর করতে পারে সালেহা বেগম। তবে কোনো রূপ প্রশ্ন করলো না প্রিয়তা কে।শুধু প্রিয়তার টলমটল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার দিকে তাকিয়ে রইলো।

—-

রাতে প্রিয়তা খাবার খেতে গেলো না।সালেহা বেগম বেশি জোর করলো না।ভাবলো ছেলে এলে ছেলে বউ কে খাইয়ে দিতে বলবে।রাত সাড়ে বারো টা নাগাদ সাদনান বাড়ি ফিরলো।
আসার সময় মাইশা কে দেখে এসছে।মাইশার পুত্র সন্তান হয়েছে। সাদনান ভাগ্নে কে একটা স্বর্ণের চেইন দিয়ে কোলে নিয়েছে। বেশ ভলোই লেগেছে। অনুভূতি দারুণ ভালো লেগেছে।কেমন মনের মধ্যে এখন বাবা হওয়ার আলাদা একটা অদ্ভুত ইচ্ছে জেগেছে। অবশ্যই অদ্ভুত নয়।এটাই তো একটা ছেলে বা মেয়ের মনের সবচেয়ে বড়ো স্বপ্ন সেও একদিন বাবা হবে মা হবে। তাদেরও কেউ আদোও আদোও কণ্ঠে ডাকবে, আবব্বা, মা।এই পাওয়া টা হয়তো পৃথিবীর অন্যতম পাওয়া গুলোর মধ্যে একটা পাওয়া।
সাদনান বাড়ি ফিরে লিভিং রুমে মায়ের সাথে আগে সাক্ষাৎ করলো।সালেহা বেগম কে সাদনান ঘুমিয়ে যেতে বললো।সালেহা বেগম কাজের লোক কে সব গুছিয়ে রাখতে বলে রুমে চলে গেলো। সাদনান খাবার হাতে এক্কেবারে রুমে এলো।খাবার সেন্টার টেবিলে রেখে ঘুমন্ত বউয়ের মুখের দিকে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। মিনিট পনেরো এর মাথায় বেরিয়ে এলো।বউ তখনো ঘুমিয়ে আছে। সাদনান চুল মুছে একটা গেঞ্জি আর ট্রাউজার পড়ে নিয়ে বউয়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। একটু নিচু হয়ে বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতেই প্রিয়তা কেঁপে উঠল। সাদনান সরে এসে মৃদু কণ্ঠে ডাকলো,

-“জান উঠো।
খাবার খেতে হবে। চলে এসছি আমি।”

সাদনানের কণ্ঠ শোনে প্রিয়তা অল্পস্বল্প চোখ খুলে তাকালো সাদনানের দিকে।ক্লান্তিকর মুখের দিকে তাকালো।বিকেলে আম্বিয়া মির্জা কথা গুলো বলেছে পর থেকে সেগুলো মাথায় ঘুরছে।তাই সাদনানের ক্লান্তিকর মুখ দেখে আজ খারাপ লাগে না।বরং রাগ হয়।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,

-“আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
খাব না আমি।”

সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। বউয়ের মতিগতি বুঝতে পারে না সে।তবে আসার সময় মায়ের থেকে সব শুনে এসছে।
বউ রেগে আছে।সাদনান অনেক জোরাজুরি করে বউ কে শোয়া থেকে ওঠা বসালো।খাবার এনে কিছু টা জোর করে খাইয়ে দিলো প্রিয়তা কে।প্রিয়তা খাবার খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো। সাদনান এঁটো প্লেট রেখে হাত ধুয়ে এসে বউয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বিছানায় শুয়ে পাশের দেওয়ালে সুইচ টিপে লাইট অফ করে বউ কে এক ঝটকায় নিজের উপরে নিয়ে এলো।প্রিয়তা আকস্মিক ঘটনায় চমকে ওঠে সাদনানের বুকের গেঞ্জি দু-হাতে শক্ত করে চেপে ধরলো। সাদনান ড্রীম লাইটের মৃদু আলোতে বউয়ের এলোমেলো চুল গুলো এক হাতে সরিয়ে দিয়ে বলল,

-“মিশানের জন্য বউ আনার মিশন তবে শুরু করি!”

-“বাবুর নাম রেখে দিয়েছে?”

প্রিয়তা সরে যেতে চাচ্ছিল।কিন্তু সাদনানের কথা সেটা আর করে না। অবাক হয়ে জানতে চাইলো

-“হ্যাঁ মাইশা রেখেছে।”

প্রিয়তা সাদনানের কথার বিপরীতে হয়তো আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু কিছু বলার আগেই সাদনান বলে উঠলো,

-“আর কোন কথা নয়।
মিশন জলদি শুরু করতে হবে।”

#চলবে…..

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৯
#জান্নাত_সুলতানা

-“শুনলাম তোমার ঠিক করা পাত্র বিদেশিনী বিয়ে করে দেশে ফিরেছে!ওয়াও।”

সাদনানের চোখে মুখে হাসির ঝলক নিয়ে কথা টা জানালো। আজ্জম মির্জা চোরা চোখে ছেলের দিকে একবার আঁড়চোখে তাকালো।বিচ্ছু একটা। এটা এভাবে ঘটা করে সবার সামনে বলার কি আছে? আর সবচেয়ে বড়ো কথা এই বিচ্ছু এই খবর টা পেলো কোথা থেকে? আজ্জম মির্জা খাবার নড়াচড়া করতে করতে কথা গুলো ভাবছিল। তক্ষুনি সাদনান আবার বলে উঠলো,

-“কি ভাবছো?নিশ্চয়ই ভাবছো ইনফরমেশন পেলাম কি করে?ওহ্ কামন বাবা।আমি একজন মন্ত্রী এই ইনফরমেশন টা কালেক্ট করতে জাস্ট আমার সাত মিনিট টাইম লেগেছে।”

আজ্জম মির্জা কথা ঘুরিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“তা তোমার পাত্র কোথায়?
আমার সাথে দেখা করাবে না?”

-“অবশ্যই।
কাল বিকেলে আমি তোমার সাথে মিট করাবো।
বি রেডি।”

সাদনান খাবার শেষ চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। বউয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।

—–

সারা কেঁদেকুটে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছে নিজের চোখ মুখের।বাবা আর ভাই মিলে কি শুরু করে দিয়েছে ভাবলেই বুক ফেটে কান্না আসছে সারা’র। সবাই পাত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে। অথচ সারা কে একবারও কেউ কিছু জিগ্যেস করার প্রয়োজন মনে করলো না!এটা কেমন বিচার? যার জন্য পাত্র দেখছে তাকে একবার জিগ্যেস করলে না ওর পছন্দ আছে কি না?ও কি চায়?প্রিয়তা সারা’র কান্নার কারণ জানে।অনেকক্ষণ হয় সারা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। প্রিয়তা বুঝাচ্ছে।কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।এদিকে রাত বাড়ছে।সাদনান নিশ্চয়ই বসে আছে। প্রিয়তার রাগ হলো সাদনানের উপর। কি অদ্ভুত লোক সব সময় তো ভাব এমন যেনো বোনদের সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তবে এখন কেনো এরূপ আচরণ করছে?কোথায় আয়ান তো এমন করে নি।বরং প্রিয়তার বাবা একটু জোর করেছিল বিয়ের জন্য। কিন্তু আয়ান বোন কে কি সুন্দর করে বুঝিয়েছে তাই তো মনে সাহস পেয়েছিল।কিন্তু এখানে সাদনান তো উলটো করছে।প্রিয়তা সারা কে কোনো রকম বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা শুরু করলো।মনে মনে আসার সময় ঠিক করে নিলো রুমে এসে বজ্জাত লোক টার সাথে কোনো কথা বলবে না আজ।
সাদনান আয়েশ করে সোফায় বসে কুশন কোলে ফোনে স্ক্রল করছিল।রুমে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে ছোট ছোট চোখ করে সেদিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।প্রিয়তা ধুপধাপ পা ফেলে কাবাড থেকে রাতের পোষাক নিলো।
ওয়াশ রুমে গিয়ে ঠাশ করে দরজা লক করলো।সাদনান একটু নড়েচড়ে বসে। বউয়ের হঠাৎ হলো কি?পরক্ষণেই বুঝতে পারে।ভ্রু কুঁচকে ওয়াশ রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।বউয়ের বেরুনোর অপেক্ষা করে।
প্রিয়তা মিনিট পাঁচ এর মধ্যে বেরিয়ে এলো।নাইটির ফিতা বেঁধে এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে শুয়ে পড়লো। সাদনান কিছু টা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।বউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। ভাবা যায়?মন্ত্রী সাদনান শাহরিয়ার কে ইগনোর করছে তার বউ।এটা যদি জণগণ জানতে পারে নিশ্চিত তাকে নিয়ে সবাই হাসি-তামাশা করতে পিছ বা হবে না।নিউজ হবে আর সেখানে হেডলাইন হবে বড় বড় অক্ষর করে লেখা থাকবে, মন্ত্রী বউ মন্ত্রী কে পাত্তা দেয় না।” কি ভয়ানক!সাদনান আবছা আলোয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে বিছানার দিকে তাকিয়ে সেন্ডেল পায়ে দিয়ে এগিয়ে গেলো।ফোন রেখে চপ্পল খুলে বিছানায় বসতেই প্রিয়তা আরো কিছু টা গুটিশুটি মেরে গেলো।সাদনান এবার আশাহত। সত্যি সে আশাহত বউ তাকে ইগনোর করছে তাও আবার যেমন-তেমন ইগনোর নয়।যেনো তার ছায়া মারালেও ভয়ংকর কিছু ঘটে যাবে।
তবে সাদনান কি দমে যাওয়ার পাত্র? উঁহু। একদমই নয়।দানবীয় হাত এগিয়ে বউ কে খাবলে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো। প্রিয়তা বিরক্ত ভ্রু নাক কুঁচকে দৃষ্টিপাত করে সাদনানের দিকে। সাদনান গভীর দৃষ্টিতে বউ কে পর্যবেক্ষণ করলো।আস্তে করে বউয়ের কানের লতিতে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিতেই প্রিয়তা সাদনান কে কিছু টা জোর খাঁটিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো,

-“রাহান ভাইয়া সারা কে ভালোবাসে।
আপনি জানেন।তাহলে পাত্র কেনো দেখছেন?”

-“হোয়াট ইজ দিস!
এমন একটা রোমান্টিক মূহুর্তে তুমি আমার অনুভূতির দফারফা করে দিলে।
ভেরি বেড জান।”

প্রিয়তা অবাকই হলো।কি অদ্ভুত লোক।বোন কেঁদেকুটে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছে নিজের। আর এই লোক?এতো সিরিয়াস একটা বিষয় কে কত টা হেলাফেলা করে নিচ্ছে। রাগ হলো প্রিয়তার কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই সাদনান বলে উঠলো,

-“বিশ্বাস রাখো।ধৈর্য্য ধরো।কখনো হতাশ করবো না জান।
সময় দাও সব ঠিক করে দেব।”

প্রিয়তা জানে সাদনানের কখনো এমন কিছু করবে না যাতে করে সারা কষ্ট পাবে।কিন্তু তাও কেনো জানি রাগ হচ্ছিল। তবে এখন সাদনানের কথা শুনে রাগ সব গলে আগুন থেকে পানি হয়ে গেলো।গলা জড়িয়ে ধরলো সাদনানের।গদগদ কণ্ঠে আহ্লাদী স্বরে আবদার জুড়ে দিলো,

-“প্লিজ এমন কিছু করবেন না যাতে করে ওরা দু’জন কষ্ট পায়।”

-“বাহ্,বাহ্।অন্যের জন্য কত দরদ।কষ্ট পাবে। আর আমি? আমি যে বউয়ের ভালোবাসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছি? বুক চৌচির হয়ে যাচ্ছে।বউ কে এই মূহুর্তে আদর না করতে পারলে সেই কষ্ট সব বেরিয়ে এসে তোমার নামে আন্দোলন করবে।”

প্রিয়তা প্রথমে লজ্জা পেলেও পরক্ষণেই সাদনানের এমন আজগুবি সব কথাবার্তায় পেট মুচড়ে হাসি পেলো। শব্দ করে হাসতে লাগলো। সাদনান বউয়ের নাইটির ফিতা খুলে পেটে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরতেই প্রিয়তার হাসি গায়েব হয়ে গেলো।শক্ত করে সাদনানের চুল খামচে ধরলো। সাদনান বউয়ের পেট থেকে মুখ তুলে বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,

-“বউ কি করে কন্ট্রোল করতে হয়।মির্জা সাদনান শাহরিয়ার ভালো করেই জানে।”

——

রাতের খাবার সব গুছিয়ে তিন্নি রুমে এলো।কবির ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসেছে মাত্র।
তিন্নি কবির কে বলল,

-“চলুন খাবেন।
বাবা বসে আছে।”

কবির মুচকি হাসলো। টাওয়াল তিন্নির হাতে দিয়ে বলল,

-“তুমিও এসো।”

কবির ভাবলো তিন্নি হয়তো টাওয়াল ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে তার পেছন পেছন আসবে।কিন্তু না।কবির খাবার টেবিলে গিয়েও কতক্ষণ বসে রইলো।কালাম খান কবির কে বকাঝকা করতে লাগলো।সে কেনো সাথে করে তিন্নি কে নিয়ে এলো না?
কবির বাবা-র দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলো।রুমে এসে কবির অবাক হলো।তিন্নি বিছানায় মাথা চেপে ধরে বসে আছে।এই প্রথম তিন্নি রাতে খাবার দিয়ে রুমে চলে এসছে। আজ পাঁচ মাসে এর আগে কখনো এমন হয় নি।হঠাৎ হলো কি মেয়ে টার?
কবির এগিয়ে গেলো। তিন্নির কাঁধে আলগোছে হাত রেখে ভ্রু উঁচিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“কি ব্যাপার খাবার কেনো খেতে আসো নি?
চলো খাবে?”

-“খেতে ইচ্ছে করে না।
আপনি আর বাবা খেয়ে আসুন।আমি শুয়ে পড়ছি।ভালো লাগছে না।”

কণ্ঠ কেমন ক্লান্ত। কবির বেশ কিছু দিন হয় তিন্নির কে ডক্টর এর কাছে যাওয়ার জন্য ঘ্যানঘ্যান করছে।কারণ অনেক গুলো তিন্নি খাবার খেতে পারে না।চোখের নিচে কালশিটে দাগ বসেছে। মাঝে মধ্যে তো হঠাৎই রেগে যায়।
কবির ফিরে গেলো।কালাম খান কে খাবার খেতে বলে নিজেও খেলো।কালাম খান আর কোনো কিছু জিগ্যেস করলো না।কবির আসার সময় খাবার নিয়ে রুমে এলো।কাজের লোক কে সব গুছিয়ে রেখে আসার কথা বলে এলো।
বেশ জোর করেই কিছু টা খাবার খাইয়ে দিলো তিন্নিকে কবির।তিন্নি খাবার খেয়ে পানি খেয়ে শুয়ে পড়লো।কিছু সময় ব্যবধানে ঘুমিয়েও পড়লো।কবির ঘুমন্ত তিন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“আমার সুখ তুমি।
তুমি অসুস্থ মানে আমার সুখ নামক অস্তিত্ব দুঃখে পরিণত হয়।কালই ডক্টর এর কাছে যাব তোমায় নিয়ে সোনা।”

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-২৬+২৭

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“রেডি হয়ে নাও জান।
আমাকে বেরুতে হবে।”

মাত্রই সকালের নাস্তা করে রুমে এসছে প্রিয়তা।সাদনান একটু আগে রুমে এসছে।আর প্রিয়তা রুমে আসা মাত্র সাদনান উপরোক্ত আদেশ টা করলো।প্রিয়তা দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরালো।তার আজ থাকতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কথা টা বলার মতো সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছে না। সাদনান প্রিয়তা কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। বিছানা ছেড়ে ওঠে এগিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে প্রিয়তা কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। প্রিয়তা মৃদু কেঁপে ওঠে। গলা জড়িয়ে ধরলো সাদনানের।সাদনান এক হাতের তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে প্রিয়তার কপালে এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

-“আই নো।তোমার থাকতে ইচ্ছে করছে। বাট সরি জান।আমার বউ আমি শ্বশুর বাড়ি রেখে নিজের বাড়ি থাকতে পারবো না।”

-“আপনি চলে আসবেন।”

প্রিয়তা হঠাৎ কথা টা বলে পরপরই মাথা নিচু করে নিলো।সাদনান যে কিছুতেই রাজি হবে না।ভালোই জানা আছে।

-“একজন মন্ত্রী হয়ে রোজ শ্বশুর বাড়ি পরে থাকা টা ভালো দেখায় না।”

সাদনানের থমথমে কণ্ঠস্বর শুনে প্রিয়তা নিজেও থমথমে খেলো। মানুষ টা বড্ড খুঁতখুঁত টাইপ।দু’দিন এর তো ব্যাপার একটু ম্যানেজ করে নিলে কি এমন ক্ষতি হয়!

——-

সারা আর প্রিয়তা লিভিং রুমের পাশে যে বারান্দায় টা রয়েছে সেখানে বসে আছে। এখন বিকেলে। প্রিয়তা আর সাদনান আজ দু’দিন হয় মির্জা বাড়ি থেকে ফিরে এসছে।প্রিয়তা ঘুম থেকে ওঠে এসছে।এতোক্ষণ আয়না ইনিয়া ও বসে ছিল।কিন্তু ইনিয়া বাইরে যাওয়ার জন্য কান্না করছিল তাই আয়না শাশুড়ী কে ইনিয়া কে নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য দিতে গিয়েছে।অতঃপর সে রাতের রান্নার কাজে লেগে পড়বে।যদিও সব কাজের লোক করে দিবে।তারউপর সাথে সুফিয়া বেগম থাকবে।প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সারা হঠাৎ হাই তুলে বলে উঠলো,

-“শরীর টা কেমন করছে।
এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।শোয়াও যাবে না।”

-“চা করে নিয়ে আসি ভালো লাগবে।”

প্রিয়তার কথায় সারা ভাবলো সত্যি এক কাপ চা হলে হয়তো শরীর টা ভালো লাগবে।তাই আর বারণ করে না। প্রিয়তা চলে গেলে সারা আবার একটা হাই তুলে ওঠে দাঁড়াল। এগিয়ে গিয়ে বারান্দার গ্রীল ধরে বাইরে তাকালো।অদূরে বাগানে ইনিয়া কে দেখা যাচ্ছে। দাদির সাথে গল্প করতে করতে সে দাদি কে এদিক ওদিক নিয়ে ছুটোছুটি করছে।হঠাৎ পেছনে কারোর আসার শব্দ পেয়ে সারা ভাবলো প্রিয়তা এসছে। তাই পেছনে না তাকিয়ে বলল,

-“দেখ প্রিয় কি সুন্দর লাগছে দুই দাদি নাতনি কে।
মাশাল্লাহ কারোর নজর না লাগে।
জানিস আমি ভাবছি বিয়ে টা তাড়াতাড়ি করে নেব।অতঃপর বছর বছর একটা করে বাচ্চা নিয়ে শ্বাশুড়ির কাছে দিয়ে রাখব।আর আমি বসে বসে তাদের কাহিনি দেখবো।”

-“আমিন।
তোর মনের ইচ্ছে আল্লাহ তায়ালা অতিশীঘ্র পূর্ণ করুক।”

চমকালো সারা।বুকের ভেতর ধুম ধুম শব্দ করে হৃদপিণ্ড টা অস্বাভাবিক ভাবে লাফঝাপ শুরু করে দিলো।মস্তিষ্ক জানান দিলো এটা সেই অতিপরিচিত পুরুষের কণ্ঠস্বর। কানে যেনো কথা গুলো ঝংকার তুললো।
মাথা ঘুরিয়ে পেছনে ফিরলো তড়িৎ গতিতে।
কোমড়ে দুই হাত রেখে রাহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমথমে খেলো।কি বলবে কোনো শব্দ গলা দিয়ে বেড় করতে পারলো না।
রাহান দু কদম এগিয়ে এলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো সারা কে।পরপরই গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,

-“তোর ডজন খানেক বাচ্চার আবদার অতিদ্রুত পূর্ণ করে দেওয়ার ফার্স্ট মিশন আমি আজ থেকে পুরোদমে শুরু করে দেব।বি রেডি।”

সারা বিস্ময় চোখ বড়ো বড়ো হয়ে এলো।মনের কোণে প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দেয় কি করবে এই মানব?
সারা ভাবনায় ভাটা পড়ে প্রিয়তার কণ্ঠ শোনে,

-“ভাইয়া আপনাকে চা দেব?”

-“আরে মন্ত্রীর বউ কি বলে!মন্ত্রী মশাই জানতে পারলে আমার তেরো টা বাজিয়ে দিবে।আমি অন্য কাউ কে বলে কফি নিচ্ছি।”

রাহান মজার ছলে কথা গুলো বলতে বলতে বারান্দা থেকে চলে গেলো।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে সারা’র হাতে চায়ের কাপ দিলো।সারা ধন্যবাদ দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসায়।

———

তিন্নি ঘুমঘুম চোখে শোয়া থেকে ওঠে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো সদর দরজার দিকে। কলিং বেল বেজেছে দু’বার। কবির আসে এসময়ে।তিন্নি তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে অপরাধী কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“সরি, সরি এত্তো গুলো সরি।
ঘুমিয়ে ছিলামম,,,

কবির এর দিকে তাকিয়ে কথ আর সম্পূর্ণ করতে পারে না তিন্নি। কবির হাতের দু’টো শপিং ব্যাগ আর একটা পলিথিন ব্যাগ এগিয়ে দিলো তিন্নির দিকে। তিন্নি বিস্ময় নিয়ে সেগুলো হাতে নিয়ে কবির এর কাঁধের থেকে কালো ল্যাপটপ এর ব্যাগ টাও খুলে হাতে নিতে নিতে বলল,

-“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আমি কফি নিয়ে আসছি।”

-“না।কফি লাগবে না।
তুমি রুমে এসো।”

কবির কথা শেষ রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো।তিন্নি রান্না ঘরে গিয়ে পলিথিন থাকা আইসক্রিম এর বক্স ফ্রিজে রাখে।কবির রোজ আসার সময় কিছু না কিছু হাতে করে নিয়ে আসে। কালাম খাঁন নিজেও আনে।তিন্নির নিকট এসব প্রথম। কখনো এমন আদর ভালোবাসা পায় নি সে।তবে এখন নিজে কে সুখী মনে হয়। তিন্নি কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ গুলো অল্প ফাঁক করে নেড়েচেড়ে দেখলো।একটা ব্যাগে একটা কালো শাড়ী রয়েছে। আরেকটা ব্যাগে একটা বেলি ফুলের মালা আরো কিছু কসমেটিক। তিন্নি এসব দেখে মনে মনে খুশি হলো। আবার অল্পস্বল্প রাগ হলো।বিয়ের পর থেকে কবির এই তিন মাসের মধ্যে না হলেও পনেরো টার বেশি শাড়ির হবে এনে দিয়েছে।রুমে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“রোজ কেনো এসব আনতে হবে?
আর আনবেন না।”

-“আমার ইচ্ছে।
বাই দ্য ওয়ে যাও এগুলো পড়ে রেডি হয়ে এসো।”

-“কোথায় যাব?”

-“এতো কোশ্চেন কেনো করো তুমি?
যা বলেছি সেটা করো।”

তিন্নি মুখ ভোঁতা করে কিছু বিড়বিড় করে রুম হতে বেরিয়ে যেতে নিলেই কবির বলে উঠলো,

-“কোথায় যাচ্ছো তুমি রুমে পড়ে নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।”

কবির ওয়াশ রুমে চলে গেলে তিন্নি আস্তে ধীরে তাই করে।একদম তিন্নির শাড়ী পড়া শেষ কবির ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসে তিন্নির শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিলো।অতঃপর আলমারি থেকে একটা কালো রঙের পাঞ্জাবি বেড় করে পড়ে নিলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে তিন্নির পাশে দাঁড়িয়ে নিজেও রেডি হয়ে নিলো।তবে রেডি হওয়া শেষ হলেও কবির সেখানে আয়নায় তিন্নির দিকে তাকিয়ে থাকে।তিন্নি বিষয় টা বুঝতে পেরে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“চুরি করে কেনো দেখছেন?আমি কি পাশের বাসার ভাবি?”

-“চুরি করে কেনো দেখবো?আমার বউ আমি যেভাবে খুশি দেখবো।দরকার পড়লে কোলে নিয়ে বসে বসে দেখবো।বউ আমার চুরি করে দেখার প্রয়োজন পড়বে না।”

কবিরের অকপটে জবাবে তিন্নি থমথমে খেলো।

—–

রাতে সাদনান বাড়ি ফিরে দেখলো বউ তার আজ ঘুমিয়ে পড়েছে।একটু অবাক হলো।বউ তার তো এমন করে না খুব একটা। ততই রেগে থাকে অভিমান করে সে না আসা অব্ধি ঘুমায় না।সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে এসে বিছানায় বসতেই নজর পরে বউয়ের চোখ ফুলে আছে।আর পাশেই ব্যথার ঔষধ দেখে হঠাৎ কিছু মনে পড়লো।ফোনের সাইড বাটন চেপে কিছু দেখে বিড়বিড় করে বলল,

-“শীট।
আমি ভুলে গেলাম কি করে!”

রুমে থাকা ফ্লাক্স থেকে হট ব্যগে পানি নিলো।বিছানায় এসে বউয়ের পাশে বসে প্রিয়তা কে সোজা করে শুইয়ে দিলো।প্রিয়তা নড়েচড়ে অল্প চোখ খুলে সাদনানের দিকে নিবুনিবু চোখে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কখন এসছেন?
খাবার খেয়েছেন?”

-“আমাকে বলো নি কেনো?কখন থেকে হচ্ছে এমন?”

সাদনান প্রিয়তার প্রশ্ন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজে প্রশ্ন করলো। ততক্ষণে প্রিয়তার জামা সরিয়ে তলপেটে হট ব্যাগ ধরেছে।প্রিয়তা গরম ছোঁয়া পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।পরপরই চোখ খুলে বলল,

-“ততটাও গুরুতর নয় বিষয় টা।সবার হয়। স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিবারই এতো টা কেনো বিচলিত হোন আপনি?”

সাদনান কোনো জবাব দিলো না। বউয়ের পেটে হট ব্যাগ ধরে বসে থাকে অনেক টা সময় নিয়ে।প্রিয়তা এটাসেটা বলছে।সাদনান হু, হ্যাঁ করে শুধু সঙ্গ দিচ্ছে।সারা দিনের ক্লান্তি তার বউয়ের মুখ দেখলে চলে যায়।আর যখন মেয়ে টা সারাদিনের কথা ঝুলি নিয়ে বসে তখন সারাদিনের টেনশন ভুলে যায়।সুখ সুখ লাগে। অদ্ভুত এক প্রশান্তি লাগে মনের মধ্যে।আর এই সবকিছুর কারণ যে সে যদি কষ্ট পায় অসুস্থ থাকে তাহলে সে কি স্থির থাকতে পারে!
অনেক্ক্ষণ পর প্রিয়তা হট ব্যাগ সাদনানের হাত থেকে টেনে নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে দিলো।সাদনান সুইচ টিপে লাইট অফ করে এসে বউ কে বুকে আগলে নিয়ে শুয়ে পড়লো।অনেক সময় সেভাবে থাকার পর প্রিয়তার মাথার তালুতে চুলের ভাঁজে চুমু খেয়ে আওড়াল,

-“আমার তুমি টা আমার পূর্ণতা। আমার মানসিক শান্তি তুমি।তোমার কিছু হলে আমার বুকে তীব্র যন্ত্রণা হয়।সব কিছু এলোমেলো লাগে।এতে আমার কি দোষ!”

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“না যাই প্লিজ।
আপনিও দেশে শিফট করেন।”

রিধির কথায় ওয়াজিদ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। এগিয়ে এসে বিছানায় রিধির পাশে বসে ওর একটা হাত ওয়াজিদ এর হাতের মুঠোয় পুরো নিলো।বোঝানোর স্বরে বলল,

-“রিধু এমন টা কথা ছিল না।
যেতে হবে দু’দিন পর ফ্লাইট।”

-“তো আপনি যান।
তারপর সব সেটেল্ড করে চলে আসুনন,,,

-“মেরে ফেলবো।তুমি ছাড়া এতোদিন অসম্ভব।
যতদিন থাকি তোমাকেও যেতে হবে।”

ওয়াজিদ রিধি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলে উঠলো।রিধি হাসলো।মানুষ টা বড্ড বেশি ভালোবাসে ওকে।বিয়ের পর একটা রাতও গিয়ে মির্জা বাড়ি থাকতে দেয় নি।

—–

তিন্নি আজ ভার্সিটিতে এসছে।খুব সকালে।কবির নিজেও তিন্নির আগে এসেছে।
তবে তিন্নি এতো তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে এসছে কবির জানতো না।তাকে খবর টা বাড়ি থেকে জানিয়েছে কাজের লোক।সাথে এটাও জানিয়েছে তিন্নি সকালে কোনো খাবার খায় নি।তখন থেকে কবির এর মেজাজ তুঙ্গে। শুধু ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে সেজন্য কিছু করতে পারে নি। তবে নিজের ক্লাস ছিল তৃতীয় ঘন্টায়।কিন্তু কবির আজ ক্লাস করাবে না।একজন পিয়ন দিয়ে তিন্নি কে ডেকে পাঠিয়েছে। আর এখন বসে বসে তিন্নির আসার প্রহর গুনছে।এদিকে তিন্নি কবিরের কেবিনের সামনে এসে অনেক সময় হয় দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। সে জানে কবির এতোক্ষণ সব জেনে গিয়েছে আর সেই জন্যই তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। আর মানুষ টা যে ওর উপর রেগে আছে সেটাও ভালোই বুঝতে পারছে।তবে সব ভয় ঠেলে সরিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। কবির ল্যাপটপ স্কিনে তাকিয়ে ছিল।কারোর রুমে প্রবেশ করার শব্দ বুঝতে বাকি থাকে না কে এসছে।একবার চোখ তুলে সামনে তাকলো।পরপরই দৃষ্টি সরিয়ে আদেশের স্বরে বললো,

-“বসো।”

তিন্নি কাঁপা কাঁপা পা জোরা টেনে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো। বসার মতো সাহস কুলাতে পারে না।কবির শান্ত। তিন্নির সেটা দেখে আরো বেশি ভয় লাগছে। তিন্নি কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কবির এবার কিছু টা খেঁকিয়ে ওঠে বলে উঠলো,

-“বসতে বলি নি! বসো।”

তিন্নি চট করে ঘুরে এগিয়ে গিয়ে কবির এর কোলে বসলো।কবির কিছু টা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।পরক্ষণেই বউয়ের কোমড় দুই হাত রাখলো।মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। তিন্নি কবির এর গলা জড়িয়ে ধরে বাচ্চা ফেস করে বলল,

-“জানেন আমি যে এতিমখানায় থাকতাম। সেখানের একজন মহিলা আছে বৃদ্ধা।আমরা সবাই ওনাকে দাদি ডাকি।ওনি অসুস্থ। তাই সকালে আপনি বেরিয়ে আসার পর আমিও,,,

-“না খেয়ে দেখতে চলে গিয়েছিলে।
আমাকে বললে আমি নিয়ে যেতাম না?একা কোথাও যেতে কত বার বারণ করেছি। কেনো শোনো আমার কথা?”

-“আমার অভ্যাস আছে একা একা চলাফেরা করার।”

-“কিন্তু এখন তুমি একা নয়।
তোমার হাসবেন্ড রয়েছে। একটা বাবা রয়েছে।অনেক বড় একটা পরিবার হয়েছে।তারচাইতেও ইম্পরট্যান্ট কথা আমার ভয় হয়।আতংকে থাকি।”

তিন্নি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে অনিমেষে কবিরের চিন্তিত মুখপানে।
এর আগে কখনো ওকে নিয়ে এভাবে কেউ ভাবে নি, হারানোর ভয় পায় নি।এখন এসব নিজের মনে বাঁচার তীব্র ইচ্ছে জায়গায়। এই মানুষ গুলো কে নিয়ে অনেক বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে সুন্দর সুন্দর মূহুর্ত কাটাতে ইচ্ছে করে। আর সেগুলো সৃতি বন্দী করে ভবিষ্যতে সেগুলোর সৃতিচারণ ঘটাতে চায়।
তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির ব্লুটুথ চাপলো দুইবার।বারো পনেরো সেকেন্ড এর মাথায় কাউ কে বলল,

-“হ্যাঁ একটা বিরিয়ানির প্যাকেট, একটা আইসক্রিম, হ্যাঁ,না আর কিছু না।হুম কেবিনে দিয়েন।”

তিন্নি ভ্রু কুঁচকে নিলো।মানুষ টা কি পাগল হলো?এখন সাড়ে বারো টা অলরেডি বেজে গিয়েছে। আর ঘন্টা দুই পর বাড়ি চলে যাব।এখন এমন পাগলামির মানে হয়?
তিন্নি কবিরের কোল থেকে উঠার চেষ্টা করতে করতে বলল,

-“একটু পর বাড়িতে চলে যাব।
আমি যাচ্ছি।”

-“এক পা নাড়াবে না খবরদার।
বসো।”

তিন্নি চুপ করে ওঠে এসে সামনে চেয়ারে বসলো।কবির ফের ল্যাপটপে মনোযোগ দিলো। মিনিট পাঁচ মিনিট এর মাথায় কেবিনের দরজায় টোকা পড়ে।কবির উঠে গিয়ে একটা প্যাকেট হাতে ফিরে এলো।
তিন্নির সামনে রেখে আদেশের স্বরে বলে উঠলো,

-“একটাও যেনো পড়ে না থাকে।নাউ স্টার্ট।”

তিন্নি একপলক তাকালো খাবার এর দিকে। এক প্যাকেট বিরিয়ানি তিন্নি চোখ বড় বড় হয়ে এলো।সে আজ পর্যন্ত কখনো এক প্যাকেট বিরিয়ানি সহিসালামতে খেতে পারে নি।যদিও তিন্নির বিরিয়ানি খুব ফেবারিট। তারপরও কেনো জানি বেশি খেতে পারে না। ঠেলেঠুলে অর্ধেক। তিন্নি কে একই ভাবে বসে থাকতে দেখে কবির কিছু টা ধমকের স্বরে বলল,

-“বসে থাকার জন্য ডাকি নি আমি তোমায়।
খাবার খেয়ে ঝটপট ক্লাসে যাও।”

তিন্নি ওঠে গিয়ে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে প্যাকেট খুলে কবিরের কাছে চেয়ার টা টেনে নিয়ে বসলো।অতঃপর নিজের সাথে কবির কেও খাইয়ে দিলো। কবির প্রথমে ধমক দিলো পরে বউয়ের টলমল চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া হয়।তাই কিছু না বলে খেয়ে নিলো।

—-

সাদনান গাড়িতে বসে আছে।এখন দুপুর মূলত বউ আর বোন কে নিতে ভার্সিটির পাশে অপেক্ষা করছে।পাশে রাহান বসে আছে।সাদনান ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। রাহান তখন বলল,

-“বলছিলাম বাবা-র সাথে কি কথা বলব?”

-“এতো তাড়া কিসের!আস্তে ধীরে হোক না।”

-“যা সালা তুই তাহলে জানিস না।তোর বাপের মতিগতি আমার ঠিক লাগছে না।”

-“কেনো?”

-“আমাদের নেক্সট ডিল টা যেই কোম্পানির সাথে হওয়ার কথা। ওই কোম্পানির মালিকের ছেলে।
বিদেশ রয়েছে। লেখাপড়া শেষ হয়তো খুব তাড়াতাড়ি দেশে চলে আসবে।”

-“এতে তোর কি সমস্যা?”

-“তোর বাপের মনে অন্য কিছু চলছে।
দেখলি না সেদিন ওই ব্যাটা কে বাড়িতে ডেকে কত আদর আপ্যায়ন করলো।”

সাদনান এবার একটু ভাবুক হলো।সত্যি সেদিন একজন বাড়িতে এসছিল।তার বাবা আজ্জম মির্জা সে কি এলাহি আয়োজন করে লোকটা কে আমন্ত্রণ জানালো। তবে সে বিষয় টা তেমন পাত্তা দেয় নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পাত্তা দেওয়া প্রয়োজন।
সাদনান কিছু বলবে তার আগেই সারা আর প্রিয়তা চলে এলো।তাই আর কেউ এব্যাপারে কিচ্ছু বলল না।

——-

মির্জা বাড়ির সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে।আজ সবাই এক সাথে হয়েছে অনেক দিন পর।খাবার শেষ লিভিং রুমে বৈঠক বসলো।অনেক্ক্ষণ গল্পগুজব করলো।রাত বেশি হচ্ছে বিধায় জাফর মির্জা আম্বিয়া মির্জা কক্ষে চলে গেলো। সারা রাহাত আয়না প্রিয়তা ওরাও যে যার রুমে চলে গেলো।
রাহান সাদনান আজ্জম মির্জা সুফিয়া বেগম সালেহা বেগম মফিজুর মির্জা রোজিনা বেগম শুধু বসে রইলো।সাদনান বাবা আর চাচার ব্যবসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে সে-সব শুনছে।এক পর্যায়ে আজ্জম মির্জা ছেলে কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“তোমার সাথে অনেক দিন ধরে একটা বিষয় আলোচনা করব করব করে আর বলা হচ্ছে না।”

-“এখন বলো।
শুনছি।”

সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে বলল।
আজ্জম মির্জা একটু নড়েচড়ে বসলো।সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

-“ইয়ে মানে!বলছিলাম কি বিশিষ্ট শিল্পপতি কাদের শেখ। ওনার সাথে একটা ডিল নিয়ে কথাবার্তা চলছে।ডিল টা আমাদের কোম্পানি পেলে ভীষণ ভালো হবে। না পেলে তেমন কোনো লোকসান হবে না।পেন্ডিং আছে এটা।এখন ওনার সাথে কোনো ভাবে আমাদের সম্পর্ক টা যদি মজবুত করা যায়।তাহলে ডিল কনফার্ম।”

-“এরজন্য কি করতে হবে?”

সাদনান কোনো ভণিতা ছাড়া জিগ্যেস করলো। আজ্জম মির্জা এই পর্যায়ে এসে একটু ভিতু হলেন।আমতা আমতা করে জানালো,

-“সেদিন বাড়ি এলো না।
তখন সারা কে দেখেছে ওনার ছেলে মালদ্বীপ রয়েছে বর্তমানে খুব শীগ্রই দে-শে ফিরবে।বিয়ের ব্যাপারে এগুতে চাইছে।”

-“না করে দাও।
ডিলও করতে হবে না। আমি আমার বোনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি।”

সাদনানের শান্ত কণ্ঠে বিস্ফোরণ ঘটালো সবার মাঝে। রাহান নির্বিকার সাদনানের পাশে বসে আছে। আজ্জম মির্জা কিছু টা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

-“কি সব বলছো?
বিয়ে ঠিক করে রেখেছো মানে কি?ছেলে কি করে?জাতবংশ বাড়ি কোথায়?”

-“কাল কথা বলছি এব্যাপারে তোমার সাথে। এখন আমার বউ নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমাকে যেতে হবে।”

কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো সবার।কেমন একটু বেশরম শোনাল বাক্য গুলো। সাদনান সে-সব উপেক্ষা করে বসা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল।গেঞ্জি টেনেটুনে ঠিক করে উপরে নিজের রুমে চলে এলো।

প্রিয়তা বিছানায় শুয়ে আছে। হাতে ফোন। সাদনানের যা দেখে মেজাজ খারাপ হলো।বউ কেনো রাতে ফোন নিয়ে শুয়ে থাকবে?জামাই আছে জামাই কে সময় দিবে।এগিয়ে গেলো।প্রিয়তার হাত থেকে ফোন টেনে নিয়ে দূরে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে দিলো। প্রিয়তা আকস্মিক ঘটনায় ভড়কে গিয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসে গেলো।সাদনান কে চোখ লাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আস্তে করে একবার ঢুক গিলে নিলো। সাদনান বাড়ি থাকলে প্রিয়তা কখনো ফোন হাতে নিতে পারে। সাদনান পছন্দ করে না।প্রিয়তা নিজেও ধরে না ফোন। কিন্তু এখন ঘুম আসছিল না।আর সাদনান রুমে ছিল না সেইজন্যই ধরে ছিল।কিন্তু কে জানতো এই রাক্ষস গম্ভীর পুরুষের আগমন এখনই ঘটবে!
সাদনান প্রথমে রেগে থাকলে পরবর্তীতে রাগ পড়ে যায়।সামন্য অসুস্থ বউ।এমন ব্যবহার করা মোটেও ঠিক হয় নি।

সাদনান হঠাৎ করে প্রিয়তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা একটু চমকে যায়।তবে নিজে কে ধাতস্থ করে সাদনানের ঘনকালো জঙ্গলের ন্যায় চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালায়।দু-তিন মিনিট এভাবে অতিবাহিত হলো।কেউ কোনো কথা বলল না। হঠাৎ করেই সাদনান বলে উঠলো,

-“ব্যালকনিতে যাবে?
চলো না যাই!”

প্রিয়তা অবাক হলো।আজ মোটেও আকাশে চাঁদ নেই। অন্ধকার আকাশ।মেঘ আকাশে সন্ধ্যের আবার বৃষ্টি হয়েছে।

-“অন্ধকার।”

-“ভয় নেই সুন্দর নারী।
তোমার মন্ত্রী মশাই আছে।”

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-২৪+২৫

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৪
#জান্নাত_সুলতানা

প্রিয়তা ড্যাব ড্যাব করে সাদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।সাদনান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। রোজকার শুভ্র পাঞ্জাবি ছেড়ে আজ কালো একটা পাঞ্জাবি পড়েছে।হাতে দামী একটা ঘড়ি চিকচিক করছে। চাপদাড়ি ভর্তি গাল টানটান ভ্রু জোড়া ছোট ছোট চোখ সরু নাক।অল্প সিগারেটে পোড়া অধর।মাথায় ঘনকালো চুল।উফ।এতো কেনো কিউট মানুষ টা?প্রিয়তার বুকের ভেতর জ্বালা ধরে। মনে মনে হিংসে হয়।এখন এই সুদর্শন পুরুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলেই তো সব মেয়ে হা করে তাকিয়ে থাকবে।প্রিয়তা কি করে সহ্য করবে সেসব?মনঃক্ষুণ্ন হয়।বুক ভারী হয়ে আসে।কষ্ট লাগে।চোখ চিকচিক করে। অধর কাপে।তবে নিজে কে সামলে নেয়।মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকে নিজের ব্যক্তিগত পুরুষের সুন্দর অবয়বের দিকে।লম্বাটে বলিষ্ঠ সুপুরুষ টা নিজে কে সম্পূর্ণ পরিপাটি করে।কিন্তু পাঞ্জাবির বোতাম খোলা।যার ফলস্বরূপ বুকের ঘনকালো কিছু লোম উঁকিঝুঁকি মারছে। প্রিয়তার কয়েক সেকেন্ড এর জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়।ফের নিজে কে সামলে নেয়।সাদনান চুল নিজের হাতের সাহায্যে ঠিক করে এগিয়ে আসে।বউয়ের ঠিক বরাবর দাঁড়িয়ে বউয়ের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করে। সফলও হয়।বউ তারই দিকে তাকিয়ে। মেয়েটার হুঁশ কি আছে?
সাদনান বউ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনে মনে হাসলো।তবে মুখ গম্ভীর আর থমথমে কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“আমাকে দেখা শেষ?”

প্রিয়তা নড়েচড়ে বসলো।অসভ্য লোক।এভাবে কেউ জিগ্যেস করে?
সবাই কে নিজের মতো নির্লজ্জ ভাবে?

-“আমি মোটেও আপনাকে দেখছিলাম না।”

প্রিয়তা আমতা আমতা করে জানায়।সাদনান ভ্রু কুঁচকায়।চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে।দুই হাত এগিয়ে প্রিয়তার বাহু খাবলে ধরে। প্রিয়তা চমকায়।দুই হাতে সাদনানের বুকে ঠেকিয়ে নিজে কে সামলে নেয়।ধীরগতিতে নিজের হাত এগিয়ে আস্তে ধীরে সাদনানের পাঞ্জাবির বোতাম লাগিয়ে দেয়।প্রিয়তা নিজেও রেডি হয়ে গিয়েছে অনেক আগে। তাই অনুমতি চেয়ে জিগ্যেস করলো,

-“এবার যাই?”

সাদনান ছেড়ে দেয় বউ কে।ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা বেলি ফুলের মালা টা হাতে তুলে নেয়।বউয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে সেটা চুলে খোঁপায় পড়িয়ে শাড়ির আঁচল তুলে ঘোমটা টেনে দিয়ে দুই হাতে গালে রাখে।প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে রাখে।সাদনান বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে মোলায়েম কণ্ঠে বলল,

-“জান বাহিরের দিকে একদম যাবা না।ভাবির সাথে সাথে থাকবে।কিছু প্রয়োজন হলে মা, ছোট মা কে জানাবে।শরীর খারাপ লাগলে রুমে চলে আসবা।”

সাদনানের কথায় প্রিয়তা চোখ ছোট্ট ছোট্ট করে বলে উঠলো,

-“আগে যাই!
তাছাড়া আমি বাচ্চা না।আমার ভীষণ ক্ষুধা পাচ্ছে।
যাই?”

-“যাও।
আর হ্যাঁ, আমি ডাকার সাথে সাথে আমার সামনে দেখতে চাই।”

কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়তা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।সাদনান তপ্ত শ্বাস ছাড়ে।
অতঃপর পেছন পেছন নিজেও বেরিয়ে আসে।

—-

বিয়ে বাড়ি চারদিকে মানুষ গিজগিজ করছে। বর উপস্থিত হয়েছে এসে আধঘন্টা হবে। আগে বিয়ে পড়ানো হবে তারপর খাওয়াদাওয়া। সাদনান যেখানে বসে আছে সেখানে কিছু সাংবাদিক রয়েছে।মন্ত্রীর ফুপাতো বোনের বিয়ে কেনো তার বাড়ি থেকে হচ্ছে এমন অহরহ প্রশ্ন আর কৌতূহল মানুষজনের মুখে মুখে।তবে এতে কারোর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।সাদনান আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে সাথে রয়েছে আরো কিছু সুনামধন্য ব্যক্তি। অদূরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু মেয়ে। তাদের মধ্যে কিছু মেয়ে সব মধ্যবয়সী লোকের মধ্যে সুদর্শন পুরুষ কে চোখ সাহায্যে আহার করছে। প্রিয়তা দোতলায় দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।সাদনান অবশ্য একবার উপরে দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। এতে প্রিয়তা বরাবর কেঁপে উঠলেও এবার কোনো প্রতিক্রিয়া তার মাঝে দেখা যায় নি।
বিয়ে পড়ানো শেষ খাবার খাওয়ার পর কনে বিদায়ের পালা এলো।বিদায় মানে বিষাদ।রিধির বিদায় হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।আস্তে আস্তে কোলাহল পূর্ণ থেকে একদম পানির ন্যায় শান্ত হয়ে পরে পুরো মির্জা বাড়ি।শুধু সিকিউরিটি আর কাজের লোক বাদে আর কোনো বাড়ির সদস্য কে নজরে আসে না।
আম্বিয়া মির্জা বেশ অনেক টাই কেঁদেছেন।যার ফলস্বরূপ ওনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সবাই হয়তো ওনার কাছে বসে।

—-

মির্জা বাড়ি যতটা কোলাহলপূর্ণ ছিল তার ঠিক বিপরীতে দেওয়ান ভিলা। কোনো মানুষ নেই।শুধু কাজের লোক আর সিকিউরিটি ছাড়া।রিধি কে একজন কাজের লোক ওয়াজিদ এর রুমে দিয়ে গেলো।ওয়াজিদ রুমে বসে ছিল।কয়েকজন প্রতিবেশী নিচে এতোক্ষণ রিধি কে দেখতে এসছিল।নয়তো ওয়াজিদ সাথে করে বউ কে নিয়ে আসত।মা নেই বোন নেই কোনো নিকটবর্তী আত্মীয় নেই।তাই কোনো ফর্মালিটি করার প্রয়োজন পড়ে না।ওয়াজিদ সোফায় বসে ছিল।রিধি কে রুমে প্রবেশ করতে দেখে পাশে থাকা একটা শপিং ব্যাগ হাতে এগিয়ে এলো।সেটা রিধির হাতে দিয়ে বলে উঠলো,

-“যাও।
ফ্রেশ হয়ে এসো।অনেক টা দখল গিয়েছে এই দু’দিনে।”

রিধির চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলে মুখে রয়েছে মুষ্টি একটা হাসি।প্রাপ্তি। পূর্ণতার।ভালোবাসার মানুষ টাকে সারাজীবন এর জন্য নিজের হালাল ভাবে পাওয়ার।ওয়াজিদ মুগ্ধ। বরাবরই সেই রিধি কে দেখে মুগ্ধ হয়।তবে তৃষ্ণা মেটে না।ক্লান্তির সমাপ্তি ঘটলেও বুকের ভেতর মরুভূমির ন্যায় খা খা করতে থাকে বুকের তৃষ্ণা এই রমণী কে মরার আগপর্যন্ত হয়তো দেখার তৃষ্ণা মিটবে না।

-“যাও দ্রুত।
অপেক্ষা করছি।”

ওয়াজিদ মৃদু কণ্ঠে জানালো। রিধি মাথা নেড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।বিছানা রংবেরঙের ফুল দিয়ে সাজিয়েছে ওয়াজিদ এর কিছু বন্ধ।এরজন্য অবশ্য হারামি বন্ধুমহল মোটা অংকের একটা টাকার অংশ নিয়েছে।
ওয়াজিদ তাকিয়ে রইলো। রিধির ফুলে এলার্জি রয়েছে। যদিও রিধি ফুল অনেক পছন্দ করে। কিন্তু ওয়াজিদ চাইছে না আজ এমন একটা দিনে রিধির কোনো রকম সমস্যার মধ্যে পরে।ঝটপট ফুলের সাথে বিছানার চাদর সহ তুলে বিনে রেখে দিলো।অতঃপর ছাঁদের সাথে বিছানায় লম্বা লম্বা করে টানানো ফুল গুলো খুলে সব বিনে রাখে।রিধি ওয়াশ রুম হতে ফ্রেশ হয়ে এসে ওয়াজিদ কে এসব করতে দেখে বিস্ময় নিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি সব ফুল কেনো তুলে নিয়েছেন?
আল্লাহ!”

-“তোমার এলার্জি আছে।”

ওয়াজিদ এর শান্ত কণ্ঠ। রিধি শাড়ী আর দোপাট্টা হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো।বিছানায় ফেলে মুখে হাত দিয়ে আগের ন্যায় কণ্ঠে বলল,

-“আপনি এলার্জির জন্য,,

-“ফুল ছাড়া বাসর হয় না?
না-কি ভালোবাসা কমতি হয়!”

ওয়াজিদের থমথমে কণ্ঠ শোনে রিধি নিজেও থমথমে খেলো।কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ওয়াজিদ বলল,

-“এসো খাবার খেয়ে নেবে।
ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

ওয়াজিদ গিয়ে সোফায় বসে পড়ে। রিধির খাবার এর দিকে তাকিয়ে পরিবারের কথা মনে পড়ে গেলো।বিশেষ করে নিজের ভাইয়ের কথা।মন খারাপ হয়।তবে পেটে ক্ষুধা থাকায় কিছু বলে না।সেই দুপুরে বড় মামি কয়েক লোকমা খাবার খাইয়ে দিয়ে ছিল।তখন রিধি খেতে পারেনি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ওয়াজিদ এর পাশে বসে। ওয়াজিদ খাবার মেখে রিধি কে খাইয়ে দেয়।সাথে নিজেও খেয়ে নেয়।খাওয়া শেষ ঠিক তক্ষুনি ওয়াজিদ এর ফোন বেজে ওঠে। রাহান কল করেছে। ওয়াজিদ ভালোমন্দ জিগ্যেস করে রিধির কাছে দিয়ে দেয়।
রিধি অনেক সময় নিয়ে সবার সাথে কথা বলে ব্যালকনি হতে রুমে এলো।ওয়াজিদ তখন ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।
রিধি এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। ওয়াজিদ মৃদু হেঁসে জিজ্ঞেস করলো,

-“কথা শেষ?”

রিধি ঘাড় নাড়ে। ওয়াজিদ আবার বলল,

-“লাইট অফ করে শুয়ে পড়ো।
সারা দিন অনেক দখল গিয়েছে।”

-“ঘুমিয়ে পড়ব?”

রিধি সাথে সাথে বলে উঠলো। ওয়াজিদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।রিধি থমথমে খায়।কথার ভাঁজে বেফাঁস কথা মুখ ফসকে চলে এসছে।বুঝতে পেরে মনে মনে জিহ্বা কাটে।তবে মুখে জোর করে হাসি টেনে আমতা আমতা করে বলল,

-“না মানে সারা দিন অনেক দখল গিয়েছে। যাই ঘুমিয়ে পড়ি।”

-“বাট আফসোস সোনা।
সেটা এখন হচ্ছে না।”

ওয়াজিদ ল্যাপটপ পাশের টেবিলের উপর রেখে রিধি কে টেনে দুই হাত রিধির কোমড় পেঁচিয়ে বলে উঠে।রিধি চমকায়।বিস্ফারিত নয়নে তাকায় ওয়াজিদ এর মুখের দিকে।এক অদ্ভুত নেশা চোখে লেগে আছে। রিধি সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নেয়।ওয়াজিদ বা হাতে বেডের সাইডে থাকা সুইচ টিপে লাইট অফ করে রিধির গলায় মুখ গুঁজে দিলো। রিধি কেঁপে উঠল। শক্ত করে ওয়াজিদ এর চুল খামচে ধরতেই ওয়াজিদ নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“এতো ফাস্ট।
ধীরে জান, আমি ফাস্ট হলে তুমি আমাকে সামলাতে পারবে তো!”

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৫
#জান্নাত_সুলতানা

“আমি দ্রুত ফিরে আাসার চেষ্টা করবো।
তুমি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিও।”

ছোট একটা বার্তা। রিধির এতোক্ষণ মন খারাপ ছিল।সকালে ঘুম থেকে ওঠেই ওয়াজিদ এর একটা কল আসায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। দেশে আসার পর একটা হসপিটাল জয়েন করেছে ওয়াজিদ। যদিও সে একেবারেই চলে আসে নি।তবে যতদিন দেশে আছে ততদিনে সেটায় ডিউটি করবে।হসপিটালের মালিক ওয়াজিদ এর এক বন্ধুর বাবা আর সেই ওয়াজিদ কে সময় দেওয়ার জন্য আবদার করেছেন।
রিধি ওয়াজিদ কে ফিরতি কিছু একটা বার্তা পাঠিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়াল।

——

-“বাবা অসুস্থ।
দু’দিন থাকি?”

অনেক টা সাহস সঞ্চয় করে আবদার টা করে ফেললো প্রিয়তা।ওপাশে নিশ্চুপ সাদনান।প্রিয়তা চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষারত।অনুমতি কি দিবে মন্ত্রী সাহেব?
প্রিয়তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাদনান গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“তুমি এখন যাও।
এব্যাপারে আমি পরে কথা বলছি।”

আহ্ কি রাশভারী কণ্ঠস্বর। এই কথার পিঠে কি বলবে প্রিয়তা? কোনো শব্দচয়ণ যে তার মস্তিষ্ক তৈরী করতে পারছে না। তাই তো নিঃশব্দে ফোন কেটে দিলো। সাদনান ফোনের ওপাশে কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ফোন কান হতে সড়িয়ে সামনে আনলো।লাইন কেটে দিয়েছে প্রিয়তা।তপ্ত শ্বাস ছাড়ে সাদনান। আজ দু’দিন হয় শফিক সওদাগর একটু অসুস্থ। মূলত বিয়ে বাড়ি থেকে যাওয়ার পর কিছু টা অসুস্থ বোধ করছিল।আয়না দেখতে গেলেও প্রিয়তা কে সাদনান যেতে দেয় নি।বলেছে সময় করে সে নিয়ে যাবে কিন্তু এখনো আজ দু’দিন পেরিয়ে গেলো সাদনান নিয়ে যেতে পারে নি। এরমধ্যে শফিক সওদাগর নিজের আদরের ছোট মেয়ে কে দেখার জন্য বারংবার বলে যাচ্ছে। প্রিয়তা নিজের বাবা-র জন্য মন খারাপ।আর আজ আম্বিয়া মির্জা নিজেও দেখতে যাবে।তাই সবাই একসাথে চলে যাবে।
এমনটাই সালেহা বেগম সাদনান কে ফোন করে জানিয়েছে।সাদনান সেসব ভাবনা সাইডে রেখে সামনে মিটিংয়ে মনোযোগ দিলো।

—-

সকাল এগারোটা নাগাদ সওদাগর বাড়ি এসে পৌঁছাল মির্জা বাড়ির প্রায় অর্ধেক মানুষ।সব মহিলার এসেছেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া আর সারা দিন থেকে বিকেলে নাস্তা করে সবাই আবার চলে গেলো।সাথে করে আয়নাকে নিয়ে গেছে।প্রিয়তা বিকেল টা বাবা-র ঘরে বসে রইলো।আয়ান বোনের জন্য সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এলো।সাথে নিয়ে এলে বোনের পছন্দের হরেকরকমের বাহিরের খাবার।প্রিয়তা ভাইয়ের সঙ্গে আর বাবার গা ঘেঁষে বসে।
আজ অনেক দিন ধরে নিজে কে মুক্ত পাখি মনে হলো।সারা দিন কোনো খবরদার করে নি যে কেউ।বাবা-র শরীরের গন্ধ শুঁকে। ভাইয়ের ভালোবাসা আর যত্ন সব সময় আলাদা।
আয়ান বোন কে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো।সাথে মাইশা কেও। রাতে আড্ডা দিয়ে খাবার প্রিয়তা শফিক সওদাগর এর রুমে বসে খেলো।রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ প্রিয়তা রুমে এলো।ফ্রেশ হয়ে ফোন টা হাতে নিলো।সারাদিন মানুষের ভীড়ে থাকলে কষ্ট একাকিত্ব ঘুচে যায়।কিন্তু রাত?রাত হলেই তো আবার সেই একাকিত্ব।বুকের কষ্ট যে সব উগড়ে বেরিয়ে আসতে চায়।দমবন্ধ লাগে। বুকের ভেতর তীব্র থেকে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হয়।প্রিয়তা কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ফোন টা হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে মন্ত্রী সাদনান শাহরিয়ার একটা সফেদা পাঞ্জাবি গায়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছবি জ্বলজ্বল করছে। প্রিয়তার চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে ঠিক সাদনান এর পিকচার টার উপর পড়লো। প্রিয়তা কাঁপা কাঁপা ডান হাত টা তুলে সাদনানের ছবিটার উপর হতে জলের ফোঁটা টা মুছতে মুছতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“আপনি এতো টা কেনো পাষাণ প্রিয় পুরুষ?
আপনার সাথে থাকা যে দিনদিন বন্দী পাখির ন্যায় হয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসার মানুষ টার সাথে থাকা মানে তো স্বাধীনতা।কিন্তু আপনি তো আমার সব স্বাধীনতা বেড়াজালে বন্দী করে দিয়েছেন।”

প্রিয়তার বকবক করার মাঝেই একটা নোটিফিকেশন এলো। প্রিয়তা হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে নোটিফিকেশন ওপেন করতেই নজরে এলো,

“আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
আয়ান কে বলে দিচ্ছি। চলে এসো।”

প্রিয়তা চোখ বন্ধ নিলো।পরপরই দ্রুত হাতে কিছু একটা টাইপ করে সেন্ট করে দিয়ে নেট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।মিনিট পাঁচ মিনিট এর মধ্যে শরীরে ঠান্ডা হাতের শীতল স্পর্শ পেতে প্রিয়তা চমকাল।
চোখ বড় বড় করে শোয়া থেকে ওঠে বসতেই প্রথমে দরজার দিকে নজর দিলো।দরজা বন্ধ করে নি সে।কিন্তু দরজা এখন বন্ধ আছে। প্রিয়তা এবার সামনে তাকাল।ড্রিম লাইটের কমলা রঙের আবছা আলোয়ে শুভ্র পাঞ্জাবি পরিহিত বলিষ্ঠ পুরুষ সাদনান শাহরিয়ার কে দেখতে দানবের চেয়ে কম কিছু লাগছে না।প্রিয়তা আস্তে করে একবার ফাঁকা ঢোক গিলে পানি। পরপরই নিজের বাহুতে শক্ত হাতের খাবলা অনুভব করলো।সাদনান কিছু টা টেনে দাঁড় করালো বউকে।
চোয়াল শক্ত করে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

-“একটু আগে কি বললে!আর যাবা না তুমি আমার সাথে?”

প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলো। কোনো জবাব দিলো না। সাদনানের রাগ যেনো এবার তরতর করে বেড়ে গেলো।মেয়ে টার সাহস ইদানীং বেড়েছে।কি বলল ও?একটু আগে! সাদনান কথা টা ভেবেই আরো রাগ বাড়ে।দিকবিদিকশুন্য হয়ে পরে।ভুলে গেলো ভালোবাসার মানুষ টার কষ্টের কথা। এক হাতের প্রিয়তার মুখ চেপে ধরে। প্রিয়তা অবাক হয়।ব্যাথায় চোটে চোখের কোঠায় জল চিকচিক করে।কিছু বলার জন্য খোঁজে পেলো না।বিয়ের একবছর হতে চলে।কখনো এমন ব্যবহার করে নিয়ে সাদনান।তাই ব্যথার চেয়ে বিস্ময় টা বেশি।প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,

-“এই,এই উত্তর কেনো দিচ্ছিস না তুই?
আরেকবার বল!কি যেনো বলছিলি!”

প্রিয়তার দুই হাত সাদনানের হাতের উপর রেখে সরানোর বিফল চেষ্টা করতে করতে কাঁপা কাঁপা অধর জোড়া নেড়ে বলল,

-“আমার লাগছে।”

সাদনানের কি হলো?হুঁশ কি এলো?নিজের কলিজায় আঘাত করে কি সে ব্যথা পায় নি?হয়তো পেয়েছে। তাই তড়িৎ গতিতে বউয়ের চোয়াল ছেড়ে দিলো।শক্ত করে বুকে চেপে ধরতেই প্রিয়তার গলা দিয়ে গোঙানোর শব্দ হলো।চোখের জল সাদনানের পাঞ্জাবি বেদ করে বুকে স্পর্শ করতেই সাদনান বউয়ের মাথায় তালুতে চুলের ভাঁজে নিজের অধর বারকয়েক ছোঁয়াল।মুখে কিছু বলল না।প্রিয়তা ছুটাছুটি করল। তবে বিশেষ কোনো লাভ হলো না।সাদনান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই প্রিয়তা কান্না করতে করতে বলতে লাগলো,

-“আমার স্বাভাবিক জীবন চাই।বলেছিলাম আমি।আপনি আপনি জানতেন আমি কেমন।সেদিন এতো এতো মানুষের মধ্যে কতটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম আমি।চারদিকে মানুষ ক্যামেরা,প্রশ্ন। অস্বস্তি হয় এসব আমার। আপনার সাথে কোথাও যাওয়া যায় না।আমি একা যেতে পারি না। সব সময় সাথে মানুষ নিয়ে চলে ফেরা করতে হয়।অসহ্য লাগে আমার এসব।সাধারণ আমি।সাধারণ ভাবে থাকতে কমফোর্টেবল ফিল করি।এতো সবে আমার দমবন্ধ লাগে। আপনার এতো কড়াকড়ি নিয়ম আমার একদম ভালো লাগে না। এদিকে যাবা না,ওটা করবা না,এভাবে থাকবে না,এটা খাবা না,ওটা খাবা না,এটা ধরবে না,ওটা পড়বে না।বিরক্ত লাগে সব কিছু।”

সাদনান যেনো স্তব্ধ। এতো এতো অভিযোগ বউয়ের? সত্যি কি সে ভালোবাসার নাম করে ভালোবাসার মানুষ টার সব স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে নিজের অজান্তেই!
কতটা বয়স?তারউপর থেকেছে তো সব সময় বাবা আর ভাইয়ের ছায়াতলে। এসবের ছোঁয়া যে কোনো ভাবে ছুঁয়ে যায় নি মেয়ে টাকে।

-“আ’ম সো্ সরি জান।”

কি মধুর কণ্ঠ। কি করে রেগে থাকবো প্রিয়তা?মানুষ টাকে না চাইতেও নিজের থেকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।

—-

রাত তখন দেড় টা।সাদনান তখনো বউ কে বুকে আগলে বসে আছে। রাগ না-কি অভিমান কোন টা বউয়ের মনে! সাদনান জানে না। তবে বউ এখন কিছু টা স্বাভাবিক হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। সাদনান বউয়ের হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে জিগ্যেস করলো,

-“ঘুমবে না জান?”

-“হু।
আপনি খাবার খাবেন না?”

প্রিয়তা মিনমিন করে জিগ্যেস করে। তখন হঠাৎ করে কি করে এতো সাহস এসছিল মনে প্রিয়তা জানে না।কত গুলো কথাই না মানুষ টা কে আজ শোনাল।ইশ এখন লজ্জায় মানুষ টার বুকেই মুখ লুকিয়ে বসে আছে। ভাবা যায়!সাদনান বউয়ের মুড যে স্বাভাবিক হয়েছে একদম শিওর হয়ে গেলো।মুখ গম্ভীর কণ্ঠ থমথমে এনে বলল,

-“এখানে এসছি রাত এগারো টায়।
এখন দেড় টা বাজে। তোমার এতো সময় পর আমার খাবার এর কথা মনে পড়লো!বাই দ্য ওয়ে, আমি খাবার খেয়ে এসছি।”

প্রিয়তা মনে মনে নিজে কে ইচ্ছে মতো গালাগাল করলো।সারা দিন মানুষ টা নিশ্চয়ই এক জায়গায় বসে ছিল না।এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করে এতো রাতে এসছে আর ও?এখন নিজের উপর রাগ লাগলো। তবে মুখে বলল,

-“আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

সাদনান তাই করে।গায়ের পাঞ্জাবি খুলে নেয়।উদোম হওয়া মাত্র প্রিয়তার মনে পড়ল।মন্ত্রী মশাই এখন পড়বে টা কি?তড়িঘড়ি করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।বাহিরে বারান্দা থেকে গিয়ে আয়ানের একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট নিলো।ভাগ্য ভালো ছিল আজ আয়ান নিজের প্রায় অর্ধেক কাপড় ধুয়ে দিয়েছিল।আর প্রিয়তার ব্যালকনিতে বিকেলে রোদ পড়ে তাই তো বোনের ব্যালকনিতে এনে কাপড় মেলে দিয়ে গিয়েছিল। প্রিয়তা মনে মনে ভাই কে হাজার টা ধন্যবাদ দিতে ভুলে না।রুমে এসে দেখলো সাদনান ফ্রেশ হয়ে চলে এসছে।প্রিয়তার হাতের দিকে তাকিয়ে সাদনান কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই প্রিয়তা বলে উঠলো,

-“এগুলো পড়ে নিন।
হবে এতে?”

সাদনান কিছু বলে না।শুধু টি-শার্ট টা নিয়ে পড়ে নিলো।গাড়িতে অবশ্য একসেট ড্রেস সব সময় থাকে।সে কি আর জানতো বউ এমন ঠমক ধরবে তবে নাহয় ড্রেস নিয়ে তারপর আসতো।
প্রিয়তা ট্রাউজার আবার নিয়ে ব্যালকনিতে রেখে আসে।
সাদনান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিকঠাক করে। প্রিয়তা বিছানায় বসে পিটপিট করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
মানুষ টা এই আবছা আলোয়ে কি এতো সাজুগুজু করছে!প্রিয়তার বুঝে আসে না।
সাদনান বিছানায় প্রিয়তার পাশে বসতেই প্রিয়তা একটু নড়েচড়ে বসলো।মূলত সাদনানের গা ঘেঁষে বসলো। সাদনানের পেট মুচড়ে হাসি পায়।
তবে হাসে না।বা হাতে বউয়ের কোমড় টেনে নিজের সাথে চেপে ধরে।আস্কারা পেয়ে বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিশুটি মেরে সাদনানের বুকে গাপটি মেরে গেলো প্রিয়তা। সাদনান বউ কে নিজের উপর থেকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।দুই হাত প্রিয়তার দু’দিকে রেখে প্রিয়তার পুরো মুখে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ধীরে কণ্ঠ বলে উঠলো,

-“মুড কি ঠিক আছে?”

প্রিয়তা নিজের মাথা টা উঁচু করে সাদনানের অধর নিজের অধর আলতো ছুঁয়ে দিয়ে জানাল,

-“বেশি না।
তবে আপনার ছোঁয়া তা সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হবে।”

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-২২+২৩

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২২
#জান্নাত_সুলতানা

সকাল থেকে সাদনান প্রিয়তার দেখা পায় নি।রাগে ভেতর ভেতর ফুঁসছে। একবার নিচে তো একবার উপরে নিজের রুমে আসে।প্রিয়তা রান্না ঘর থেকে সবটাই অবলোকন করে।মানুষ টা বাড়িতে খুব বেশি একটা থাকে না।সকালে বাড়ি থেকে বেড় হলে রাত এগারো টার আগে বাড়ি ফিরে না। কখনো তো আবার রাত একটা দেড় টাও বাজে।একটু সময় তো মানুষ টা কে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু আজ সেটা সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। আর এতো কাজের ভীড়ে রুমে গিয়ে বসে থাকা টাও শোভনীয় দেখায় না।

-“আমার একটা কফি!”

সাদনান লিভিং রুম থেকে হাঁক ছেড়ে কফি চায়।রাহানের মা শাড়ীর আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্না ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।আসার আগে অবশ্যই একজন কাজের লোক কে কফি বানাতে বলে এসছে।

-“তুই রুমে যা।
আমি কাউ কে দিয়ে পাঠাচ্ছি।”

রাহানের মা জানালো।
সাদনান ঘাড় দুলিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আবার কিছু মনে পরে বলে উঠলো,

-“ওহ্ হ্যাঁ।
একটু পর কিছু লোক আসবে।নিচের ঘরে নাস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করো মনি।”

রাহানের মা বলল,

-“সে কি কথা আজকের দিনেও তুই কাজ ক,,,

-“আমার দায়িত্ব অনেক বেশি মনি।
আমি হাত পা গুটিয়ে কি করে বসে থাকি!তাছাড়া বাড়িতে তো আছি।ঘন্টাখানেক সময় শুধু ওনাদের দেব। বিকেলে না অনুষ্ঠান শুরু হবে।”

রাহানের মা আর কিছু বলে না এব্যাপারে। তাগাদা দিয়ে রান্না ঘরে ছুটলো।
সাদনান গটগট পায়ে স্থান ত্যাগ করে।
সাদনানের মা রান্না ঘরে ছিল না।তিনি রান্না ঘরে আসা মাত্র কাজের লোক কে কফি হাতে দেখে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো কফি যে নিজের ছেলের জন্য যাচ্ছে। তিনি চট করে কিছু ভাবলো।প্রিয়তা কে ডেকে বলল,

-“কফি টা তুই দিয়ে আয়।
আর তুমি আমার সাথে এসো।”

প্রিয়তার হাতে কফির ছোট ট্রে টা দিয়ে সালেহা বেগম কাজের লোকে নিয়ে আম্বিয়া মির্জার রুমের দিকে চলে গেলো। প্রিয়তা মুখ গম্ভীর করে রাখলেও ভেতরে ভেতরে ভীষণ খুশি হলো।একটু সুযোগ পাওয়া গেলো তবে।প্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে দেখে আয়না ভ্রু কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এসে বলে উঠলো,

-“যাচ্ছিস না কেনো?কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে।জলদি যা।”

প্রিয়তা বোনের কথায় সম্মতি দিয়ে উপরে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
সাদনান সোফায় বসে আছে। মুখ সব সময়ের মতো গম্ভীর। প্রিয়তার শ্বাস যেনো বেরিয়ে আসার জোগাড়। মানুষ টা এমন কেনো?
সব সময় কেনো এমন ভাবে থাকতে হবে?এই লোক টা কি বোঝে না ছোট্ট প্রিয়তা এই মন্ত্রী সাদনান শাহরিয়ার এমন রূপ গম্ভীর মুখ দেখলে ভেতরে ভেতরে ভয় পায়।

-“আপনার কফি।”

সাদনান বউয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে কফি টা হাতে নিলো।পায়ের উপর থেকে পা সরিয়ে সোজা হয়ে বসে কফি টা সেন্টার টেবিলের উপর রাখে।প্রিয়তা তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে।
সাদনান বউয়ের দিকে না তাকিয়ে হাত টেনে নিজের কোলে বসাল।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। তবে ভ্রু কুঁচকে সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে এক হাতে সাদনানের কাঁধ থেকে গেঞ্জি সড়িয়ে নিলো।
কাঙ্খিত জিনিসের দেখে না পেয়ে প্রশ্ন করলো,

-“দাগ টা নেই কেনো?”

-“আছে তো।নিচে।”

-“ব্যথা করে?”

সাদনান গম্ভীর হয়ে গেলো।প্রিয়তা হঠাৎ মনে হলো কি ধরণের প্রশ্ন করলো এটা!এই লোকের আবার ব্যথা?সেটা তো গুলি লাগার পরেও মনে হয় পায় নি।যা শক্ত মানুষ।

-“রুমে কেনো আসো নি?”

-“কত কাজ।
বিয়ে বাড়ি।”

-“কাজ করার জন্য কাজের লোক রয়েছে।”

সাদনানের জবাবে প্রিয়তা চুপ করে গেলো।আগে থেকে বাড়িতে তিনজন কাজের লোক ছিলো।সাদনান এখনো আরও দুজন বাড়িয়েছে।কিন্তু তাও আম্বিয়া মির্জা কাজের লোকের কাজ পছন্দ করে না।তাই তো রান্না আর কোনো অনুষ্ঠানের কাজ বেশিরভাগই বাড়ির মেয়ে বউদের করতে হয়।প্রিয়তা আগেও যখন এ বাড়িতে আসতো তখন বোন কে একটু অবসর পেতো না।এই জন্যেই প্রিয়তা বিশেষ করে এই পরিবারের মানুষ গুলো কে বেশি ভালো লাগত না।কিন্তু ভাগ্য? প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান কফি মগ হাতে আগে বউয়ের দিকে এগিয়ে দিলো।প্রিয়তা একবার চুমুক দিয়ে সেটা ফের সাদনানের হাতে দিয়ে ওঠে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সাদনান প্রিয়তা কে টেনে ধরে। কফি রেখে শক্ত হাতে বউ কে নিজের সাথে চেপে ধরে বলল,

-“ছাড়তে ইচ্ছে করে না।”

-“নিচে যেতে হবে।
আপনার না আবার কি কাজ আছে।”

প্রিয়তার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুমের বাহির থেকে একজন কাজের লোক জানালো নিচে সাদনানের সাথে দেখা করতে লোকজন চলে এসছে।
সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,

-“আপনি যান।আসছি আমি।”

তবে বউ কে ছাড়ে না।

-“কাবাডে একটা ব্যাগ রাখা আছে।
সন্ধ্যায় ওগুলো পড়ে নিবে।”

বলতে বলতে নিজের অধর বউয়ের অধর আলতো ছুঁয়ে দিয়ে ছেড়ে দিলো।প্রিয়তা মাথা নেড়ে বলল,

-“আচ্ছা।”

সাদনান আর কিছু বলে না।কফি হাতে রুম হতে বেরিয়ে
যায়।পেছনে পেছনে প্রিয়তাও আসে।

——–

-“এই এই তুই এদিকে কোথায় যাচ্ছিস!ঠ্যাং ভেঙে দেব আর এক পা ওদিকে বাড়ালে।”

রাহান হঠাৎ কোথা থেকে এসে কথা গুলো বলে উঠলো। সারা আকস্মিক এভাবে রাহান কে সামনে দেখে একটু ভয় পেলো।দু কদম পিছিয়ে গেলো।ভ্রু কুঁচকে নিয়ে জানাল,

-“তিন্নি আপু আছে ওখানে।”

-“তিন্নি চলে এসছে।
দেখিস না ওখানে কত ছেলে!”

রাহান ফুঁসে ওঠে বলল।সারা ফ্যালফ্যাল করে রাহানের দিকে তাকিয়ে আবার বাড়ির ভেতর চলে এলো।অদ্ভুত মানুষ।এভাবে বলার কি আছে? একটু সুন্দর করে বলল কি এমন হতো?
রাহান প্রেয়সীর এভাবে নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করায় বুঝতে অসুবিধা হয় না প্রেয়সী অভিমান করেছে।কিন্তু অভিমান করলেও কিছু করার নেই।
এতো এতো মানুষ জন কার নজর আবার পরে বসে।পরে দেখা যাবে তার প্রেয়সী কে নিয়ে আবার টানাটানি শুরু হয়ে গেলো

——

ওয়াসিফ দেওয়ান বেশ আয়োজন করে পুত্র বধূর জন্য হলুদের জিনিস সব পাঠিয়েছে। যদিও জাফর মির্জা নাতনির হলুদ বিয়ের অনুষ্ঠান কোনোটাই কমতি রাখছে না।কিন্তু এসব কোনো ব্যাপার না। এই সব কিছু স্বাভাবিক হলেও অস্বাভাবিক হচ্ছে হলুদের দিন জামাই নিজেও বউ কে হলুদ দিতে এসছে।কিছু মানুষ আঁড়চোখে তাকাচ্ছে। তো কেউ আবার ফিসফিস করছে।কিন্তু মির্জা বাড়ির কারোর এসবে মাথা ব্যথা নেই।যুগ পাল্টেছে। এটা তেমন কোনো আহামরি কোনো ব্যাপার না।ওয়াজিদ আসাতে আরো খুশি হলো সবাই। রিধির মা বাবা ভীষণ খুশি। মেয়ে জামাই যে মেয়ে কে প্রচুর ভালোবাসে এটা নিঃসন্দেহে মানতে হবে।ওয়াজিব এর জন্য রিধির পাশে বসার জায়গায় করা হয়েছে।ওয়াজিদ বসে আছে। রিধি কে সবাই হলুদ দিচ্ছে।

-“আপনি বুদ্ধি কি সব লজ্জার সাথে সাথে গিলে পানি দিয়ে খেয়ে ফেলেছেন?”

রিধির ফিসফিসি কণ্ঠে এরূপ প্রশ্নে ওয়াজিদ থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলো,

-“একদম না।”

-“আপনি কেনো আসতে গেলেন?”

রিধি ফের জিগ্যেস করে।ওয়াজিদ আগের ন্যায় থমথমে কণ্ঠে বলল,

-“আমার মনে হচ্ছে না কোনো ভুল করেছি।
কোথাও লেখা আছে হলুদ নিয়ে জামাই আসতে পারবে না।”

-“না সেটা নেই।
কিন্তু মানুষ জন,,,

রিধির সম্পূর্ণ কথা না শুনেই ওয়াজিদ বলল,

-“তুমি ভালো করে জানো রিধু।আমি কে কি বললো এসব ভাবি না।জীবন আমার তো মর্জিও আমার।”

—–

লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী।ছোট ছোট এক জোড়া স্বর্নের দুল। গলায় একটা লকেট।ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক। লম্বা চুলের মোটা বিনুনি কাঁধের একপাশে রেখে সেটায় একটা বেলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিলো সাদনান।
বউয়ের প্রতিবিম্বর ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।প্রিয়তার সাথে একবার চোখাচোখি হয়েছে।
প্রিয়তা লজ্জায় মাথা নুইয়ে রাখলো।

-“এতো লজ্জা পেতে নেই জান।
তবে যে এখুনি একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলব।”

সাদনানের কথায় প্রিয়তার লজ্জা দিগুণ হলো।লোক টা ইদানীং একটু বেশি বেহায়া কথাবার্তা বলে।শুনলে কান গরম হয়ে আসে।যেমন টা এখন হচ্ছে।
প্রিয়তা সাদনান কে ঠেলে সরাবার চেষ্টা করে বলল,

-“ছাড়ুন।
অনুষ্ঠান কখন শুরু হয়েছে।”

সাদনান প্রিয়তার কথা শুনলো।কিন্তু চুল পরিমাণও হাতের বাঁধন ঢিলে করে না।বরং আগের তুলনায় শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে।ঘাড়ে নাক ঘষে অধর স্পর্শ করে কাঁধে। প্রিয়তা কেঁপে ওঠে শক্ত করে নিজের শাড়ী খামচে ধরতেই সাদনান বউ কে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিজের অধরে বউয়ের অধর চেপে ধরে। সময় গড়ায়।কিন্তু সাদনান বউ কে ছাড়ার নাম নেই।প্রিয়তা প্রথমে রেসপন্স করলে মিনিট পেরোলেই শ্বাস আঁটকে আসে।ছুটোছুটি করে।সাদনান বউয়ের অবস্থা বেগিত বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়ে বউ কে নিজের বুকে আগলে নিয়ে জানাল,

-“এখন এটুকুই থাক, বাকি টা রাতে হচ্ছে।”

#চলবে……

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাবা-র সাথে কথা হয়েছে?”

কবির ফোন হাতে ব্যালকনি থেকে রুমে প্রবেশ করতেই তিন্নি উপরোক্ত প্রশ্ন টা করে।কবির তিন্নির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।গভীর ভাবে মেয়ে টাকে পর্যবেক্ষণ করলো।শাড়ীতে চমৎকার দেখতে লাগছে রমণী কে।সন্ধ্যায় পড়েছে শাড়ী সেই জন্য কিছু টা অবিন্যস্ত, এলোমেলো।লম্বা চুল গুলো খোঁপা বেঁধেছিল।কিন্তু এখন সেটা পুরো এলোমেলো কিছু চুল খোঁপা হতে মুক্ত পেয়েছে।যার ফলস্বরূপ সৌন্দর্য কয়েকগুণ যেনো বৃদ্ধি পেয়েছে। কবিরের ঘোর লেগে গেলো। কবির ধীরে গতিতে এগিয়ে এসে তিন্নি কে আগলে নিলো। তিন্নির এলোমেলো অবাধ্য ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

-“হুঁ।
কাল সকালে চলে আসবে।আজ না-কি মাত্র অফিস থেকে ফিরছে।”

তিন্নি নিজে কে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলল,

-“ছাড়ুন।
রাত ক’টা বাজে দেখছেন?ফ্রেশ হতে হবে।”

-“যাও।
দ্রুত আসবে।”

কবির তিন্নি কে ছেড়ে দিয়ে আদেশের স্বরে বলল। তিন্নি দ্রুত পায়ে নিজের ড্রেস হাতে ওয়াশরুম চলে গেলো। মানুষ টা ইদানীং বড্ড বেশি তিন্নি কে চোখে হারায়।

—–

-“কমনসেন্সে নেই আপনার?
রাত তিন টা বাজে একটা মেয়ের রুমে চলে এলেন!”

সারা ফিসফিস করে বলে উঠলো।
রাহান দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এলো।শক্ত হাতে খাবলে ধরে সারা’র বাহু।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।তবে কণ্ঠ শান্ত। গম্ভীর স্বরে বলে,

-“থাপ্পড়ে তোর সেন্স আমি এনে দেব।বেয়াদব।
ফাইজলামি করিস আমার সাথে?তোর ঢং আমি বেড় করে দেব।ওয়েট কর।”

সারা’র চোখের কোঠায় জল জমে।লাইট এর আলোয়ে চিকচিক করে সেই জল।রাহানের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।এই মেয়ে এমন কেনো?এটুকুতেই কেনো এতো অভিমান করে?

-“সরি।”

রাহানের রাগ সারা’র মায়াবী মুখপানে তাকিয়ে পানির ন্যায় শান্ত হয়ে যায়।তাই তো মোহনীয় কণ্ঠে সরি বলে।কিন্তু সারা’র অভিমান তীব্র হয় এতে।প্রিয় মানুষ টার আস্কারায় চোখের কোঠায় জল গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।

-“আপনি সব সময় এমন করেন।
কথা নেই আপনার সাথে।”

সারা নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে অভিমানী স্বরে বলে।রাহান জড়িয়ে ধরে সারা কে।দিনদিন মেয়ে টা বড্ড বেশি অবুঝ হচ্ছে।
খুব শীগ্রই কিছু একটা করতে হবে। মায়া দিনদিন বেড়ে চলছে। দূরে রাখা সম্ভব না।

-“তুই কেনো এতো অবুঝ?ভার্সিটিতে পড়িস।
একটু তো আমাকে বুঝতে পারসি!সব সময় আমাকে কিভাবে রাগানো যায় সেই ফন্দি আঁটিস।”

সারা কোনো জবাব দেয় না।চুপ করে রাহানের বুকে মিশে থাকে।

——

ওয়াজিদ কে বাইকে বসে থাকতে দেখে রিধি ভূত দেখার মতো করে চমকে উঠলো। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“আপনি বাইক চালাতে পারেন?”

-“কেনো কোনো সন্দেহ আছে?”

রিধি ভ্রু কুঁচকে নিলো। এই লোক কোনো দিন কোনো প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দিলো না। সব সময় প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবে।অদ্ভুত লোক।

-“ফাস্ট ওঠে আসো।”

ওয়াজিদ তাগাদা দিয়ে বলে।রিধি হাই তুলে মুখের সামনে হাত রাখে।ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”

-“এসব কি রিধু?তুমি তো বলেছিল ঘুরতে যাবে!তাহলে!”

-“আমি কি জানতাম আমার ঘুম পেয়ে যাবে!”

-“আচ্ছা চলো যাও।
রুমে যাও।”

রিধি ওয়াজিদ এর গালে আলতো করে অধর স্পর্শ করে সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। রিধির একটু খারাপ লাগে।কিন্তু রাত বাজে তিন টা।তারউপর সন্ধ্যার পর থেকে কম দখল যায় নি।রিধি ভেতর প্রবেশ করা মাত্র কাজের লোক দরজা বন্ধ করে দিলো।ওয়াজিদ তপ্ত শ্বাস ফেলে গেইটের কাছে গিয়ে সিকিউরিটির হাতে একটা হাজার টাকার নোট গুঁজে দিতেই সিকিউরিটি মুচকি হেঁসে হাত সরিয়ে বলে উঠলো,

-“লাগবে না স্যার।
আপনি কি মনে করেছেন আমরা আপনার কথায় ম্যাডাম এর সাথে আপনাকে এতো রাতে দেখা করতে দিয়েছি!না স্যার আমাদের স্যার এর অনুমতি ছিল বলে আপনি দেখা করতে পেরেছেন।”

-“সাদনান?”

ওয়াজিদ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো।সিকিউরিটি হেঁসে ঘাড় নাড়ে। ওয়াজিদ তাও হাতের নোট টা গুঁজে দিলো সিকিউরিটির হাতে অতঃপর বাইক ওঠে স্টার্ট করে চলে গেলো।

——-

-“একটু খেয়ে নাও।
বমি চলে যাবে।”

আয়ানের কথা শুনে মাইশা অসহায় চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে কণ্ঠ অসহায় করে বলল,

-“আমি আর খাব না।
প্লিজ আপনি এটা রেখে দিন।”

-“সোনা।এমন করলে হয়।খেতে হবে। প্লিজ একটু।”

মাইশা মুখ খুলে খাবার টা মুখে নিলো।কোনো রকম দু’বার নিয়ে আর নিলো না।আয়ান অনেকবার জোর করেও দিতে পারে না।
বাধ্য হয়ে খাবার রেখে হাত ধুয়ে এলো।মাইশা তখন বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
আয়ান এগিয়ে এসে বউয়ের মুখে ক’টা বাদাম পুরে দিলো। মাইশা ওয়াক করে ফেলে দিতে গিয়েও পারে না। আয়ান নিজের অধর বউয়ের অধর চেপে ধরে রাখে।মাইশা আয়ানের পিঠে কিল-ঘুষি দিয়েও কোনো কিছু করতে না পেরে মুখের খাবার গিলে নেয়।

-“দেখলে চেষ্টা করলে অবশ্যই খেতে পারবে।
তুমি বমি করার ভয়ে খাবার খেতে চাও না।”

কথা টা শেষ করে পরপরই আবার বলে উঠলো,

-“শুধু শুধু আমার মেয়ে কে না খাইয়ে রাখো।”

-“মোটেও আপনার মেয়ে হবে না।
আমার ছেলে হবে।”

মাইশা নাক মুখ কুঁচকে বলে উঠলো।
আয়ান হেঁসে দিয়ে বলল,

-“আল্লাহ যা দেয় তাই আলহামদুলিল্লাহ।”

—-

-“জান উঠো।
ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে।”

সাদনান বউয়ের পাশে বসে ডেকে ওঠে বলল।প্রিয়তা ঘুমঘুম কণ্ঠে অনুরোধ স্বরে বলল,

-“প্লিজ না।
আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি খেয়ে শুয়ে পড়ুন।”

-“একদম না।
উঠো।খেতে হবে।”

প্রিয়তার কোনো কথা শুনলো না সাদনান।কোলে তুলে ওয়াশ রুমে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে রুমে নিয়ে এলো।প্রিয়তা পানির ছোঁয়া পেতেই ঘুম সব উড়ে গেলো। তবে রেশ টা এখনো কাটে নি। ঝিম মেরে বসে থাকে।সাদনান সেন্টার টেবিলের উপর প্লেট দিয়ে ডেকে রাখা খাবার প্লেট হাতে নিয়ে বউয়ের পাশে বসলো।প্রিয়তার মুখে খাবার দিতেই প্রিয়তা চুপচাপ খেয়ে নিলো।সারা দিন অনেক দখল গিয়েছে। খাবার ঠিকঠাক মতো খেতে পারে নি। অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কতক্ষণ আগে। শরীর আর খাবার খাওয়ার জন্য সায় দিচ্ছিল না।তাই তো রুমে এসে শুয়ে পড়েছিল।সাদনান রুমে ছিল না। রুমে এসেই ডাকাডাকি শুরু করে দেয়।আর নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার নিয়ে রুমে এসেও যখন প্রিয়তা কে শুয়ে থাকতে দেখে খাবার রেখে নিজে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে এলো। পেটে ক্ষুধা থাকায় বেশ অনেক টা খাবার খেলো প্রিয়তা।সাদনান নিজেও একই প্লেটে খেয়ে নিলো।এঁটো প্লেট রেখে হাত ধুয়ে লাইট অফ করে বিছানায় বউয়ের পাশে শোয়া মাত্র প্রিয়তা সাদনানের লাল রঙের টি-শার্ট এর বোতাম একটা একটা করে দু’টো বোতাম খোলা মাত্রই সাদনান প্রিয়তা কে বুকের উপর থেকে নিজের নিচে ফেলে দিলো।
ঘাড়ে মুখ গুঁজে গলায় কামড় বসাল। প্রিয়তা আর্তনাদ করতেই সাদনান সরে গেলো প্রিয়তার উপর থেকে।
প্রিয়তা ফের টেনে ধরে সাদনান কে।সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। কিছু টা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“এতোক্ষণ ঘুমিয়ে যাচ্ছিলে।এখন আবার আদর চাই!”

প্রিয়তা জবাব দিলো না। কাচুমাচু ভঙ্গিতে সাদনান বুকে মুখ লুকাল। সাদনান শব্দ করে হেঁসে বউ কে শক্ত করে ধরে আলিঙ্গন করে।

#চলবে….

আমার তুমি পর্ব-২০+২১

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা

তিন্নি আর কবির কে আজ যেতে দেয় নি। কবির ভার্সিটি থেকে যাওয়ার সময় তিন্নি কে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলে কবির কেও আর যেতে দেয় নি সবাই।সবার এতো বার করে বলায় কবির আর বেশি জোর করে নি।থেকে গেলো।রাতে খাবার খেলো এক সাথে সবাই। সাদনান আর প্রিয়তা বাদে।
তিন্নি কাল রাতের পর থেকে লজ্জায় কবিরের দিকে ভালো করে তাকাচ্ছে না।কি কান্ড টাই না কাল করলো।তিন্নির তো সেই ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসছে। আর হঠাৎ হঠাৎ সব মনে পড়লে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
বিছানায় পা গুটিয়ে বসে তিন্নি। কবির ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তিন্নি কে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
টাওয়াল নিয়ে সোফায় রেখে এগিয়ে এলো বউয়ের কাছে।
বসলো।তিন্নি কবিরের অস্তিত্ব টের পেয়ে নড়েচড়ে বসলো। কবির এক হাতে তিন্নি কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিগ্যেস করলো,

-“ঘুমলে না যে?”

-“দেখেছেন আকাশে কত তাঁরা?”

-“হ্যাঁ।”

-“চাঁদ নেই।
অন্ধকার। চলুন না ব্যালকনিতে যাই।”

-“তোমার এখানে এসে কেনো সব বায়না শুরু হলো তিন্নি?
আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমরা রাতের আকাশ দেখব।”

তিন্নি আর কিছু বলল না।
পেট টা আজানা কোনো কারণে ব্যথা করছে।তিন্নি কে চুপচাপ দেখে কবির চিন্তিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কি হয়েছে?
শরীর খারাপ লাগছে?”

-“না।
এমনি।অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ুন।”

-“হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।”

কবির তিন্নির গলায় মুখ গুঁজে বলল।
তিন্নি শিউরে ওঠে।
খামচে ধরে কবিরের হাত।
কবির তিন্নির চুল সরিয়ে গলায় ঘাড়ে আস্তে আস্তে অধর স্পর্শ দিয়ে মাতাল করতে থাকে বউ কে।
তিন্নি হাত ছেড়ে আচমকাই কবির কে জড়িয়ে ধরে।
কবির মুচকি হেঁসে বউ কে বিছানায় শুইয়ে দিলো।

—–

বাড়িতে হুলুস্থুল আয়োজন চলছে। সেই সকাল থেকে।সবার মুখে খুশিখুশি ভাব।
শুধু রিধি চিন্তিত। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না।
বারকয়েক সারা কে জিগ্যেস করেছে।কিন্তু সারা টাও আজ এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে কিচ্ছু জানে না।কিন্তু রিধি জানে এই বাঁদর মেয়ে সব জানে।নিশ্চয়ই কারোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেইজন্য কিছু বলছে না।বারো টা বাজতে না বাজতে সবাই রিধির গোসল করা নিয়ে উঠেপড়ে লাগলো।রিধি যেনো অবাকের অষ্টম পর্যায়ে। কি সব হচ্ছে কিচ্ছু মাথায় ঢুলক না।সবাই কোনো রিধির গোসল নিয়ে পড়লো রিধির বোধগম্য হচ্ছে না।
গোসল শেষ বেরিয়ে আসার পরপরই রিধির মা খাবার হাতে এলো।
মেয়ে কে খাইয়ে দিয়ে শাড়ী পড়িয়ে দিলো।
রিধি কিছু আন্দাজ করতে পারে।
শাড়ী কুঁচি ঠিক করতে ব্যস্ত মায়ের মুখপানে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠ জিগ্যেস করলো,

-“আমাকে কেনো কেউ কিছু বললে না মা?”

-“তোর নানু তো কাল বললই সব!”

-“তুমি কি করে জানলে?
নানিজান কি বলেছে?”

-“আব,আমি ছিলাম সবাই ছিল। তুই দেখিস নি।”

রিধি কথা বাড়ায় না।লিভিং রুমে শোরগোল শুনে রিধির মা হন্তদন্ত পায়ে ছুটে গেলো।তবে যাওয়ার আগে রিধি কে কড়া নির্দেশ দিয়েছে রুম থেকে এক পা না নড়তে।

—-

-“জ্বি মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে।”

পরিচিত কণ্ঠ তড়িৎ একবার ঘাড় তুলে সামনে তাকাল রিধি।অনাকাঙ্খিত মানুষ কে নিজের সামনে উপস্থিতি দেখে একটু না বেশ অনেক টাই অবাক বিস্ময় নিয়ে মাথা ফের নিচু করতেই কানে এলো নানা জাফর মির্জা বলছে,

-“তবে কি বলেন!
ছেলেমেয়ে কথা বলে নিক?”

-“একদম কোনো ভুল নেই।”

ওয়াসিফ দেওয়ান সায় দিয়ে বলল।
সারা কে ডেকে ওয়াজিদ আর রিধি কে ছাঁদে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে জাফর মির্জা।
সারা আগে আগে ওয়াজিদ কে নিয়ে উপর সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।রাহান এসে বোন কে জড়িয়ে ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,

-“তোমার কি খারাপ লাগছে?”

রিধি ভাইয়ের পিঞ্চ মেরে কথায় চোখ কটমট করে তাকাল রাহানের দিকে। রিধি ভালো করেই বুঝতে পারছে। রাহান যে রিধির হঠাৎ করে এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়া নিয়ে এই প্রশ্ন টা জিগ্যেস করছে।

-“ইসটুপিড।
কোথায় যাচ্ছিস তুই?এখানে দাঁড়া।”

সারা সত্যি দাঁড়িয়ে গেলো।রাহান এগিয়ে গিয়ে সারা কে টেনে ধরে বোন কে ছাঁদের দরজার দিকে ঠেলে দিলো।
রিধি হুমড়ি খেয়ে গিয়ে শাড়ী পা বেঁধে পড়তে পড়তে নিজে কে সামলে সোজা হওয়ায়র আগেই শক্ত এক জোড়া হাত রিধির কোমড় টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
রিধি আকস্মিক ঘটনায় ভড়কাল।শরীরে কোনো পুরুষালী ছোঁয়া অনুভব করতেই ছিটকে দূরে সরে যেতে চাইল।কিন্তু এটা সম্ভব হলো না।ওয়াজিদ ঠোঁটের কোণায় অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে বলল,

-“শুধু শুধু নিজের এনার্জি অপচয় করছো।
কোনো লাভ হবে না।”

রিধি ওয়াজিদ এর কথায় ড্যাবড্যাব করে চোখ তুলে কালো শার্ট গায়ে শার্ট এর উপর কালো স্যুট খুঁচা খুঁচা চাপদাড়ির ভর্তি মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

-“এই চোখের নিচে কালশিটে দাগ কি আমাকে ছেড়ে আসার বিরহে, নির্ঘুম রাত কি সেটার সাক্ষী!”

হঠাৎ ওয়াজিদ এর এরূপ বক্তব্যে রিধি ভড়কাল।হকচকিয়ে গেলো।
চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।কি বলে এই পুরুষ? হার্ট সার্জনের সাথে সাথে মনোবিজ্ঞানী হয়ে গেলো না-কি?
নয়তো তাকে ছেড়ে আসার অনলে পুড়ছি সে তা কি করে জানল এই পুরুষ?

-“মাই কুইন।
এতো কিসের ভাবা ভাবি?ইউ নো না আমি সব জানি। ইভেন তোমার মাথায় মনে এখন কি ঘুরছে সেটাও জানি।”

রিধির ভাবনার মাঝেই ওয়াজিদ নিজের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে রিধির এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলে।
রিধির সত্যি সত্যি এবার বিস্ময় খেলো।
নিজে কে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,

-“ছাড়ুন।”

ওয়াজিদ হালকা করে রিধি কে নিজের সাথে চেপে ধরে হঠাৎ।রিধি কেঁপে কেঁপে উঠল।
ওয়াজিদ পরপরই ছেড়ে দিলো।নিজের গায়ের উপর কালো ব্লেজার ঠিক করে নিয়ে রিধির দিকে পিঠ করে ঘুরে দাঁড়ায় চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল,

-“বি রেডি।
খুব শীগ্রই তোমার মনের ঘরে আমার রাজত্ব চলবে।”

কথা শেষ চোখ টিপে ছাঁদ হতে নেমে গেলো ওয়াজিদ। রিধি ড্যাবড্যাব করে ওয়াজিদ এর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে।রাজত্ব চলবে কি?অলরেডি চলছে।সেটা কি বোঝে না এই পুরুষ?
রাহান মাত্রই সারা’র হাত টা ধরে ছিল। আর তক্ষুনি সেখানে উপস্থিত হয় ওয়াজিদ।
দু’জনেই চমকে ওঠে। সারা হয়তো ভেবেছিল ওয়াজিদ কিছু জিগ্যেস করবে।হয়তো দু-এক টা ধমকও দিবে।
কিন্তু না সারা কে অবাক করে দিয়ে ওয়াজিদ মুচকি হেঁসে বলল,

-“চালিয়ে যাও।
সম্পর্কে দু’জনের সম্মতি আর ভালোবাসা থাকা টা জরুরি।”

——

বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। হাতে মাত্র দু’দিন সময়। গোছগাছ শুরু করে দিয়েছে সবাই। বাড়ি ঘর ঝাড়পোঁছ থেকে শুরু করে শপিং।
আজও বাড়িতে দোকানের লোকজন দিয়ে গহনা থেকে শুরু করে শাড়ী আনিয়েছিলেন আম্বিয়া মির্জা।
সাদনান বাড়িতে নেই।প্রিয়তা কি নিবে বুঝতে পারে না। সবাই মোটামুটি নেওয়া শেষ। প্রিয়তা তখন একটা ছাই রঙের শাড়ী হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
আম্বিয়া মির্জা একটা জাম কালার শাড়ী হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে কাছে ডাকলো।প্রিয়তা একটু চিন্তিত হলো।হঠাৎ ডাকার কারণ বুঝতে পারে না।চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। সবাই প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।আয়না ইশারা করে বোন কে আম্বিয়া মির্জার কাছে যাওয়ার জন্য।
প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে আম্বিয়া মির্জার সামনে দাঁড়াতেই তিনি নিজের হাতে থাকা শাড়ী টা প্রিয়তার গায়ে মেলে ধরে বলে উঠলো,

-“বেশ মানিয়েছে।
কি বলো বড় বউ!এটা বিয়েতে পড়বে তুমি।”

সালেহা বেগম ক উদ্দেশ্য করে কথা টা বলেই শাড়ী টা প্রিয়তার হাতে দিয়ে কিছু টা হুকুমজারি করলেন যেনো।
প্রিয়তা বিনাবাক্যে মাথা দুলাল।
মানুষ টা ভালো শুধু একটু কড়া আর গম্ভীর।

—-

-“আপনি কেনো এতোগুলা ড্রেস এনেছেন?
দাদিজান আজ নিজে পছন্দ করে আমায় সব দিয়েছে।”

সাদনান রুমে এসে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ বিছানায় রাখতেই প্রিয়তা সোফায় থেকে ওঠে এগিয়ে এসে সেগুলোর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সাদনানের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উপরোক্ত কথা গুলো বলল।
সাদনান অবাক হয়।দাদি এমন করেছে বিশ্বাস করতে একটু সময় লাগে। তবে পরক্ষণেই মাথায় আসে দাদি তার ভীষণ ভালো শুধু আগেকার দিনের মানুষ তাই এখনকার মানুষের কাজকর্ম পছন্দ করে না। খুঁতখুঁতে টাইপের মানুষ। নিয়মকানুন বেশ মেনে চলে।

-“দাদি জান এর দেওয়া গুলো অবশ্যই অনুষ্ঠানে পড়বে।
আর আমার গুলো শুধু আমার সামনে।বেডরুমে।”

থমথমে কণ্ঠে কথা গুলো বলেই সাদনান ওয়াশ রুমে চলে গেলো।এদিকে প্রিয়তা ভাবুক হলো।
সাদনানের কথার আগাগোড়া কিছুই বোধগম্য হয় না।
তটস্থ ভঙ্গিতে এগিয়ে গিয়ে শপিং ব্যাগ হাতরে কাপড় বেড় করতেই চক্ষুচড়ক গাছ।এক ঝটকায় সেটা ছুঁড়ে ফেলে বিছানার একপাশে। পরপর সব গুলো চেক করে। কিন্তু সব গুলো একইরকম দেখে প্রিয়তার কান গরম হয়ে এলো।মুখে লজ্জায় রক্তিম হয়।দুই হাত কচলাতে কচলাতে বিড়বিড় করে বলে উঠে,

-“অসভ্য পুরুষ।
কি অশ্লীল চয়েস!”

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা

[রোমান্টিক পর্ব,পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

-“হাসবেন্ড আমি তোমার।
তোমাকে নিয়ে অশ্লীল চিন্তা আমার জন্য হালাল।”

হঠাৎ সাদনানের কণ্ঠে প্রিয়তা চোখ বড়ো বড়ো করে পেছনে তাকিয়ে সাদনান কে দেখে অপ্রস্তুত হলো।নড়েচড়ে বসলো।সাদনান একটা হালকা আকাশী রঙের টাওয়াল কোমড় পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। কাবাড থেকে সাদনানের ড্রেস এনে সাদনানের হাতে দিয়ে মিনমিন করে বলল,

-“ওগুলো বেশি পাতলা।
আপনি জানেন আমি এমন শাড়ী পড়ি না।”

-“তাতে কি!আগে পড়তে না এখন পড়বে।তাছাড়া আমি তো বাইরে পড়ার জন্য আনিনি।শুধু আমার সামনে আমি যতক্ষণ থাকব।তখন পড়বে।”

সাদনান কথা বলতে বলতে নিজের কাপড় পড়ে নিলো।প্রিয়তা ততক্ষণে সব শপিং ব্যাগ কাবাডে তুলে রাখতে নিয়েছে।সব গুলো রাখা শেষ লাস্ট একটা ব্যাগ রাখার জন্য উদ্যত হতেই সাদনান এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার হাত টেনে ধরলো।প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সাদনানের দিকে তাকালো।
সাদনান ব্যাগ টা নিজের হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে টেনে বিছানায় বসিয়ে একটা সাদা পাতলা শাড়ী প্রিয়তার হাতে দিলো।প্রিয়তা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই সাদনান আদেশের স্বরে বলে উঠলো,

-“এটা পড়ে এসো। ফাস্ট।”

প্রিয়তা লজ্জা পাচ্ছে। তবে লজ্জা ছাপিয়ে বলল,

-“একটু পর বাহিরে যেতে হবে!”

-“যেতে হবে না।
আমি আছি। তুমি পড়ে এসো।”

সাদনান প্রিয়তা কে ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা করে নিজে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।প্রিয়তা শাড়ী হাতে বসে রইলো।মন চাচ্ছে পড়ে আসার জন্য। কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে ছিঃ এমন শাড়ী পড়া যায় না-কি? শরীরের ভাঁজ সব অনায়েসে নজরে পড়বে।
দোনোমোনো করে প্রিয়তা শাড়ী আলমারিতে তুলে রাখে।নিচে গিয়ে দেখলো সাদনান সোফায় বসে ফোনে স্ক্রল করছে আর কাজের লোক ডাইনিং টেবিলে খাবার দিচ্ছে। প্রিয়তা কে নিচে নামতে দেখে সালেহা বেগম বলে উঠলো,

-“তুই মাথা ব্যথা নিয়ে নিচে আসার কি দরকার ছিল?
আমি সাদনান এর কাছে খাবার দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিতাম।”

সাদনান মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো করে চমকে উঠলো। কারণ সাদনান নিচে এসে জানিয়েছে প্রিয়তার মাথা ব্যথা তাই খাবার রুমে নিয়ে যাবে।তবে ভাবভঙ্গি এমন করল যেনো কিচ্ছু করে নি।গম্ভীর হয়ে বসে কিছু ভাবতে থাকে।প্রিয়তা সাদনানের দিকে আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে সালেহা বেগম এর সাথে কথা বলতে বলতে রান্না ঘরে চলে গেলো।

—-

খাবার শেষ সাদনান আগে রুমে চলে গিয়েছে। প্রিয়তা সবার সাথে আড্ডা দিয়ে রুমে এলো।বিয়ের সময় বেশি নেই।একদিন মাত্র। কাল বিকেলে হলুদ সেই সুবাদে সব মেয়েরা কি করবে কি পড়বে সব ঠিকঠাক করে নিলো।তিন্নি কবিরও কাল চলে যাওয়ার কথা থাকলেও সবাই যেতে দেয় নি।এই সাপ্তাহ পুরোটাই কবির তিন্নি এখানে থাকবে।এমনটাই সবার আবদার।আয়ান মাইশা সওদাগর বাড়ির সবাই কাল আসবে।প্রিয়তা ভীষণ খুশি খুশি লাগছে অনেক দিন হয় মা বাবা ভাই কে দেখে না।এ-তো সবের ভীড়ে ঘন্টাখানিক আগে রুমে হওয়া সব বেমালুম ভুলে গেলো প্রিয়তা।
রুমে এসে প্রিয়তার ভ্রু কুঁচকে এলো।পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার বিরাজ করছে।
পা টিপে টিপে রুমে এসে প্রিয়তা লাইট অন করে।সাদনান চোখের উপর এক হাত ভাঁজ করে শুয়ে আছে। বোঝার উপায় নেই ঘুমিয়েছে না-কি সজাগ।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ডাকলো সাদনান কে।কিন্তু না কোনো নড়চড় নেই মানুষ টার।

-“শুনছেন?”

বারকয়েক ডাকার পর সাদনান চোখ বন্ধরত অবস্থা বলে উঠলো,

-“অনেক রাত হয়েছে।
শুয়ে পড়ো।”

প্রিয়তা মনঃক্ষুণ্ন হলো। এগিয়ে গিয়ে কাবাড থেকে রাতের পোশাক নিতেই হঠাৎ শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে দৃষ্টি পড়তেই থমথমে খেলো। সাদনানের অভিমানের কারণ টা ভালোই বুঝে এলো।আচ্ছা মানুষ টা অভিমান করেছে না-কি রেগে গেলো?
প্রিয়তার বুঝে এলো না।রাতের ড্রেস আগের স্থানে রেখে ব্যাগ হতে ফিনফিনে পাতলা সাদা একটা শাড়ী আর একটা ব্লাউজ নিলো।যার গলা টা অনেটাই বড় সাথে হাত গুলো ছোট। ফ্রেশ হয়ে সুন্দর করে শাড়ী টা পড়ে নিলো।শাড়ী পড়া টা বেশ আয়ত্তে এসেছে এখন।প্রায়শই পড়তে হয়।অন্য কেউ ক’দিন পড়িয়ে দিবে!তাই অনেকটাই কষ্ট করে শাড়ী পড়া টা শিখে নিয়েছে। কিন্তু শাড়ী টা বেশ পাতলা হওয়ার ধরুণে শাড়ী পড়ার পরেও কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কুঁচি ঠিক করে হাতে এক জোড়া চুড়ি তুলে নিলো।হাতের দিকে তাকিয়ে চুড়ি পড়ায় মনোযোগী হতেই এক জোড়া দানবীয় হাত সেটায় বাঁধা হলো।প্রিয়তার হাত থেকে চুড়ি গুলো সাদনান নিজের হাতে নিলো।আলতো হাতে বউ কে চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিলো প্রিয়তা চুপটি করে সাদনানের বুকের সঙ্গে লেপ্টে রইলো।সাদনান চুড়ি পড়া শেষ বউ কে কোলে তুলে নিলো। প্রিয়তা সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-“আপনি রেগে ছিলেন?”

-“একদম না।
আমি জানতাম আমার জান আমার কথা রাখবে।”

সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ব্যালকনিতে এলো।
নিচে বসে বউ কে কোলে বসাল।শক্ত খসখসে হাত প্রিয়তার শাড়ির ভাঁজ গলিয়ে পেটে রাখলো।প্রিয়তা শান্ত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঝড় বইছে। যার সূত্রপাত এই সুদর্শন পুরুষের ছোঁয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে।
সাদনান এক দৃষ্টিতে প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আবছা আলোয়ে শরীরে ফিনফিনে শাড়ী।ব্লাউজের গলা বেশ বড়ো।যার ফলস্বরূপ আবেদনময়ী লাগছে। একবার গভীর হতে গভীর স্পর্শ দেওয়ার ইচ্ছে জাগে মনে।প্রিয়তার শরীর মূদু কম্পন অনুভব করে যা সাদনান কে বউয়ের দিকে আরো আকৃষ্ট করে।কোমড়ে রাখা একটা হাত আস্তে আস্তে পেট হতে গালে চলে আসে। প্রিয়তা সাদনানের ঘাড়ে নিজের হাত দিয়ে খামচে ধরে।
সাদনান বউয়ের অধর কোণে বৃদ্ধা আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে বলে উঠলো

-“আই ওয়ান্ট এ কিস!”

সম্মতির অপেক্ষা করে না সাদনান ।প্রিয়তার অধর আঁকড়ে ধরে।কোলে তুলে ফের রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বিশেষ মূহুর্তে প্রিয়তা অনাকাঙ্খিত এক আবদার জুড়ে বসলো,

-“আমিও মাতৃত্ব স্বাদ গ্রহণ করতে চাই।”

হঠাৎ এরূপ আবদার এমন মূহুর্তে সাদনান থমথমে খেলো। কানে যেনো কথা টা ঝংকার তুলল। সবে তো আঠারো বছর চলে।তারউপর শরীরের যা অবস্থা। কি করে সব সামলে উঠবে তার বউ?যদি কিছু হয়ে যায়?অধর স্পর্শ করে প্রিয়তার ললাটে। জড়িয়ে ধরে বউ কে।শান্ত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,

-“সেটা আল্লাহ চাইলে অবশ্যই।
কিন্তু আ’ম সো সরি জান।আমি তোমায় নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”

প্রিয়তা হয়তো কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু সাদনান সেটার সুযোগ দিলো না। বউয়ের অধর আঁকড়ে ধরে পুরোপুরি নিজের আয়ত্তে নিয়ে হারিয়ে গেলো ভালোবাসার অতল সাগরে।

——

“দু’মিনিট টাইম।
ফাস্ট ব্যালকনিতে এসো।”

এমন একটা ম্যাসেজ রিধির ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে। রিধির ঘুম চোখ খুলতে পারছিল না।কিন্তু ম্যাসেজ দেখার পর ঘুম উড়ে গেলো।বিছানা ছেড়ে নেমে এগিয়ে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়াতেই রাস্তায় বড় একটা গাড়ি দেখা মিলল।গাড়ির ভেতর থেকে এক জোড়া চোখ রিধি কে দেখছে।কিন্তু রিধি কিচ্ছু দেখতে পেলো না। ফোন হাতে টাইপিং করলো,

“কোথায় আপনি?
দেখি না কেনো আমি?”

“তুমি দেখতে হবে না।আমি তোমায় দেখছি।”

রিধির ম্যাসেজ সেন্ট হওয়ার সাথে সাথে ওপাশ হতে রিপ্লাই এলো।এর পরপরই আরো একটা ম্যাসেজ এলো,

“বাই দ্য ওয়ে ওড়না কোথায় তোমার? ভাগ্য ভালো কেউ নেই এখন। নেক্সট এমন না হয় যেনো।যাও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো”

গাড়ি টা স্টার্ট হওয়ার সাথে সাথে আবার ঘুমিয়ে পড়ার একটা বার্তা দিলো।রিধি মুচকি হেঁসে রুমে চলে এলো।অনুভূতিরা এখন মুক্ত যখন তখন ডানা ঝাপটায়। বাঁধা ছিল যে এতো বছর। এখন তারা মুক্তি পেয়ে আরো প্রখর হচ্ছে।

——

-“কিছু দেখলেন?”

তিন্নি কবির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো। কবির দৃষ্টি রাস্তায় থাকা গাড়ির দিক হতে ফিরিয়ে তিন্নির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলো,

-“এটা সুন্দর ছিল।”

-“ইশ।
দেখলেন ওয়াজিদ ভাই কত ভালোবাসে রিধি আপুকে।রাত সাড়ে বারো টা বাজে আপু কে দেখতে কত টা পথ জার্নি করে চলে এসছে!আর আপনি আমায় সামন্য ব্যালকনিতে নিয়ে আসেন না।”

কথা গুলো তিন্নি অভিমানী স্বরে বলল।কবির বউয়ের অভিমানের কারণ জানে।তবে বউ কে এক হাতে আগলে নিয়ে জানাল,

-“আজও আনতাম না।
শুধু গার্ড আজ গার্ডেনে নেই সেইজন্য আসতে পেরেছো।আর এতে করে আমি যদি খারাপ হই আমার ভালোবাসা কম হয় তবে তাই হোক।”

তিন্নি কবিরের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।এই পুরুষ এমন কেনো?তিন্নির বুঝে আসে না। না-কি সব পুরুষই এমন নিজের ভালোবাসার মানুষ নিয়ে!একটু বেশি সেনসিটিভ!

#চলবে…..

আমার তুমি ২ পর্ব-১৮+১৯

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“শাড়ী পড়ব?”

কবির বিছানায় বসে ল্যাপটপ কিছু করছিল।হঠাৎ তিন্নির প্রশ্নে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,

-“নাহ।
তবে সাথে করে একটা নিয়ে নাও।”

তিন্নি তাই করলো।একটা শাড়ী ব্যাগে নিয়ে নিলো।আর একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
আজ মির্জা বাড়ি যাবে ওরা।বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিনে মফিজুর মির্জা সহ মির্জা বাড়ির সবাই যাওয়ার জন্য রোজ ফোন করছে।কবির যেতে চায় নি।কিন্তু তিন্নি? মেয়ে টার পরিবার নেই।সেটা যখন মির্জা বাড়ির সবাই বুঝতে দিতে চায় না। তাহলে সে কেনো দিবে?একদিনেরই তো ব্যাপার।

—–

সকালে নাস্তা করেই সাদনান বউ আর বোন কে নিয়ে মির্জা বাড়ি চলে এসছে।আয়ান আসে নি।পরে আসবে।মাইশা কেও দিতে চায় নি।কিন্তু মেয়ে টা সেদিন এয়ারপোর্টেও যেতে দেয় নি।মন খারাপ হতে পারে স্বাভাবিক। তাই আর বারণ করে নি।
সাদনান ওদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নিজের সিকিউরিটি নিয়ে আবার বেরিয়ে যায়।প্রিয়তা আগে ফ্রেশ হয়ে অতঃপর সারা’র রুমে উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।

-“রাহান ভাই আমার হাতে লাগছে ছাড়ুন।”

সারা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল।আর রাহান হঠাৎ কোথা থেকে এসে হুমড়ি খেয়ে বারান্দায় এসে সারা’র কে টেনে এনে ঠাশ করে বারান্দার দরজা সাথে চেপে ধরে একটা হাত শক্ত করে সারা’র হাত টেনে ধরে। সারা আকস্মিক আক্রমণে ভয়ে পেয়ে গেলো।চোখ বন্ধ করে ব্যথাতুর শব্দ করে।সামনে দাঁড়ানো মানুষ টা যে রাহান সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না।তাই তো চোখ বন্ধ রেখেই উপরোক্ত কথা টা বলল।
রাহান ফোঁস ফোঁস করে।
চোয়াল শক্ত করে জানাল,

-“লাগার জন্যই ধরেছি।
আদর করতে নয়।”

-“ছিঃ কি সব বলেন?
ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার বোন।”

-“এই তোর মুখ আমি ভেঙ্গে ফেলবো।
তুই আমার বোন না আর না আমি তোর ভাই।”

-“একদম বেশি বলবেন না।”

-“আমি বেশি বলছি?
আর তুই যা করছিস ঠিক করছিস?কি শুরু করেছিস আজ একমাস নাগাদ?বলেছি না আমায় একটু সময় দেয়?”

হঠাৎ সারা শব্দ করে কেঁদে দিলো। রাহান হকচকাল।ভড়কে গিয়ে তড়িঘড়ি করে সারা’র হাত ছেড়ে সারা কে জড়িয়ে ধরলো।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

-“আই নো আমি তোকে টাইম দিতে পারি না। ঠিকঠাক দেখা হয় না কথা হয় না।অভিমান হবে।কিন্তু অভিমান ভাঙ্গার জন্য তো আমাকে তোর কাছাকাছি আসতে দিতে হবে। কিন্তু তুই?আমাকে ইগনোর করিস।আমি করতাম টা কি?”

সারা কোনো জবাব দিলো না।কান্নাও করছে না।চুপচাপ রাহানের বুকে মাথা রেখে সেভাবেই পড়ে রইলো।
রাহান নিজেও চোখ বন্ধ করে সারা কে জড়িয়ে ধরে রইলো।

-“সারা!”

প্রিয়তার কণ্ঠ শুনে দু’জন দু’দিকে ছিটকে দূরে সরে গেলো। প্রিয়তা চোখের উপর হাত রেখে বলল,

-“আমি কিছু দেখি নি।”

সারা প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে রুমের বাহিরে আসার উদ্দেশ্য হাঁটতে হাঁটতে অনুরোধের স্বরে বলল,

-“কাউ কে বলিস না প্লিজ।
বিশেষ করে আপু কে আর ভাবি কে।জানতে পারলে ইচ্ছে মতো পচাবে।”

প্রিয়তা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সারা’র দিকে। সারা প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে নিচে লিভিং রুমে চলে এলো।সেখানে বাড়ির সবাই আছে মোটামুটি। রিধি বসে ছিল আম্বিয়া মির্জার পাশে সেখান থেকে ওঠে এসে প্রিয়তা কে আগলে নিলো। আদর করলো।কপালে চুমু খেয়ে বলল,

-“এতো কেনো আদুরে তুই?
আগেও দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করতো।”

প্রিয়তা মুচকি হাসলো। সত্যি কে সে ভীষণ আদুরে দেখতে? সবাই কেনো এমন বলে?প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই রিধি প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে সোফায় বসলো।

——

দুপুরে তিন্নি আর কবির এলো।সবাই হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে খাবার শেষ করে আড্ডা দিতে বসে গেলো।কবির তিন্নির দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়ে টা মনে হয় প্রথম বারের ন্যায় কবির ওকে এতো টা হাসিখুশি দেখলো।নিজের কাছের আপন ভালোবাসার মানুষ গুলো ভালো থাকলে নিজেদেরও মন ভালো হয়ে যায়। সুখী মনে হয় নিজদের।

আড্ডা শেষ সবাই যে যার রুমে গেলো।সাদনান বাড়ি ফিরেছে।মির্জা বাড়ি পুরো টা সিকিউরিটি দিয়ে ঘেরাও করা।কাল সকাল অব্ধি সাদনান এখানে থাকবে।তারপর বউ কে সাথে নিয়ে শহরে চলে যাবে।
প্রিয়তার মন খারাপ হলো এই খবর শোনার পর। সবাই কে ফেলে যেতে ইচ্ছে করছে না।
ভাবলো রাতে এব্যাপারে সাদনান এর সাথে কথা বলবে।প্রিয়তা রুমে গিয়ে অদ্ভুত একটা ঘ্রাণ পেলো।চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে বারকয়েক। সাদনান তখন বিছানায় বসে বউ কে নিজের কাছে ডাকল।প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে সাদনানের সামনে দাঁড়াল। বাইরে অন্ধকার। মেঘ জমেছে আকাশে। হয়তো কিছু সময় ব্যবধানে সেগুলো বৃষ্টি হয়ে জমিনে লুটিয়ে পড়বে।প্রিয়তা লাইট অন করতে গেলে সাদনান বাঁধা দিলো।
বউ কে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বালিশের পাশ থেকে একটা বেলি ফুলের মালা বেড় করলো।সামন্য নেতিয়ে গিয়েছে।
হয়তো দুপুরে কড়া রোদে।
প্রিয়তার কৌতূহল জাগে। এই ভরদুপুরে এটা কোথা থেকে আনলো?
সহসাই মনে প্রশ্ন টা আসা মাত্র জিগ্যেস করলো,

-“কোথা থেকে আনলেন এটা?
দেখি নি আমি!”

-“পকেটে করে এনেছি।
তাই দেখো নি।”

সাদনান প্রিয়তার হাতে সেটা বেঁধে দিতে দিতে জানালো।
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

-“কিন্তু পাঞ্জাবি আমি খুলে নিজে হাতে বিছানায় রেখে ছিলাম।”

-“প্যান্ট চেক করে ছিলে?”

আস্তে করে প্রিয়তার হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জিগ্যেস করলো।
প্রিয়তা নাকের কাছে নিজের হাত টা এগিয়ে নিয়ে ঘ্রাণ শুঁকে।
লম্বা শ্বাস টেনে জবাব দিলো,

-“নাহ।”

দূর দূর বাড়ির চারদিকে কালো পোশাক পরিহিত সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে।
দৃষ্টি তাদের উলটো দিকে। বাড়ির দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সবার হাতে বন্দুক সাথে একটা করে ছাতা।হয়তো বৃষ্টির জন্য নিয়েছে।ব্যালকনিতে যাওয়া মাত্র দক্ষিণা শীতল বাতাস এসে গা ছুঁয়ে গেলো।
প্রিয়তা শরীর সব গুলো লোমকূপ শিরশির করে উঠল।শিহরণ দিলো শরীর। সাদনান প্রিয়তা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে। প্রিয়তা এক হাত সাদনানের গালে রেখে আর এক হাত নিজের জামা খামচে ধরে।
সাদনান টুপটাপ বৃষ্টির ন্যায় চুমু খেলো বউয়ের গলায় ঘাড়ে। প্রিয়তা সাদনানের দিকে ফিরে সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে পা জোরা সাদনানের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে সাদনানের লম্বা উঁচু নাকের ডগায় চুমু খেলো।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে তাকাল বউয়ের দিকে।আজ সেধে সেধে এতো আদর দেখাচ্ছে।সাদনান বুঝতে পারলো বউ কিছু আবদার নিশ্চয়ই করবে।
তাই আগে আগে জিগ্যেস করলো,

-“কি ব্যাপার?”

প্রিয়তা সাদনানের টি-শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে আদুরে কণ্ঠে ডাকল,

-“শুনুন?”

-“বলো।”

সাদনান বউয়ের চুল ঠিক করতে করতে বলল।
প্রিয়তা ইনিয়েবিনিয়ে মিনমিন করে বলল,

-“আমার ওখানে যেতে ইচ্ছে করছে না।
না যাই প্লিজ!”

সাদনান ঠিক জানতো বউ তার এই জন্যই এতো আদর দেখাচ্ছে।
সাদনান খানিকক্ষণ সময় নীরব থাকে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু করেছে।সাদনান নিজের হাত সহ বউয়ের হাত টা বাহিরে বৃষ্টির মধ্যে এগিয়ে দিলো।মূহুর্তের মধ্যে দু’টি হাত পানির স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল।বৃষ্টির ঠান্ডা পানি শরীর শিহরণ বয়ে যায়।
সাদনান বউয়ের পেটে শক্ত করে চেপে ধরে বুকের মধ্যে পিষে নেওয়ার মতো করে। ঘাড়ে নাক ঘষে লম্বা শ্বাস টানে। চুলের ভাঁজে মুখ গুঁজে দিয়ে নেশাতুর কণ্ঠে সম্মতি দিয়ে জানাল,

-“আচ্ছা যাব না।”

প্রিয়তা চমকে উঠলো।সাদনান এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে প্রিয়তার ধারণাতীত ছিল।
ভেবেছে গম্ভীর কণ্ঠে বলবে,”এটা সম্ভব নয় জান” কিন্তু এখন তো বিপরীত হলো।
প্রিয়তা এই মূহুর্তে কি বলা উচিৎ মাথায় আসছে না। খুশির জোয়ারে মুখের বুলি হারিয়েছে।
সাদনান বউয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া আশাও করেনি। কারণ শব্দ গুলো সত্যি অপ্রত্যাশিত ছিল। প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে সাদনান ঝট করে কোলে তোলে নিলো।প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে সাদনানের দিকে তাকিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে।
সাদনান রুমের উদ্দেশ্য হাঁটতে হাঁটতে বলল,

-“এমন একটা ওয়েদারে রোমাঞ্চ না করলে, নিজের সাথে ঘোর অন্যায় করা হবে আমার জান।”

#চলবে…..

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা

-“একদম না তিন্নি।
বাহিরে অনেক গার্ডস্ রয়েছে। ছাঁদে এই অবস্থা কিছুতেই না।”

বৃষ্টি নেমেছে পর থেকে তিন্নি ছাঁদে ভিজতে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। থ্রি-পিস চেঞ্জ করে শাড়ী পড়েছে। কবির তখন ব্যালকনিতে ছিল।রুমে এসে তিন্নির অবস্থা থেকে এক সেকেন্ড সময় লাগে না ব্যাপার টা বুঝতে।
এদিকে তিন্নি কবির কে দেখে হাসি হাসি মুখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কবির বারণ কে করে সতর্ক সংকেত দিয়ে দিলো।তিন্নির হাসি হাসি মুখ টা ফাটা বেলুনের ন্যায় চুপসে গেলো। তবে দমে গেলো না তিন্নি। এগিয়ে গিয়ে আহ্লাদী স্বরে বলল,

-“আপনি আসুন না প্লিজ।
তাছাড়া বৃষ্টির সময় সবাই গেইট এর নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছে।”

কবির কোনোরূপ জবাব দিলো না। ফোন বিছানায় রেখে তিন্নি কে টেনে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
ঝর্ণা ছেড়ে তিন্নি কে নিয়ে সেটার নিচে দাঁড়িয়ে পড়ল।কিছু সময় ব্যবধানে উপর থেকে পানি পড়ে দু’জন কে ভিজিয়ে জুবুথুবু করে দিলো।

কবির তিন্নি কে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তিন্নি কাঁপছে ভয়ে না-কি লজ্জায় বুঝতে পারে না।কবির তিন্নির মুখের উপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুল গুলো এক হাতে ঠিক করে দিলো।দুই হাত তিন্নির কোমড়ে রেখে কিছু টা নিজের উপর তুলে নিলো।তিন্নি দুই হাতে কবিরের গলা জড়িয়ে ধরলো।
কবির তিন্নির গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো,

-“আমার সম্পত্তি তুমি। তোমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার শুধু আমার।অন্য কেউ চুল পরিমাণও যদি তোমাকে দেখে আমার একদম সহ্য হবে না।”

——

রিধি সেদিন রাতের পর থেকে চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছে চোখের।মনে হয় এই বুঝি কিছু হয়ে গেলো।নানা জান এসে ঠাশ করে একটা চড় রিধির গালে বসিয়ে দিয়ে বাজখাঁই গলায় বলবে, এইজন্য স্বাধীনতা দিয়েছে?আমাদের আগে কেনো বলো নি এসব? তখন রিধি কি জবাব দিবে?আর সত্যি বললে কি বিশ্বাস করবে সবাই?

-“নানু ভাই?
আসব?”

রিধি তড়িৎ গতিতে দরজার দিকে তাকিয়ে জাফর মির্জা কে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলো।বিছানা ছেড়ে ওঠে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,

-“তুমি কেনো কষ্ট করতে গেলে নানা ভাই?
আমাকে ডাকলে হতো।”

জাফর মির্জা চেয়ারে বসলো।
রিধি দাঁড়িয়ে রইলো।তবে ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে। চিন্তিত হলো।হঠাৎ নানা ভাই আসার কারণ কি?
রিধি কে চিন্তিত দেখে জাফর মির্জা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“তুমি কি কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছো?”

-“হ্? না, না কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করব!”

-“বেশ।
দেখো নানু ভাই আমরা সবাই তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তোমার সব কিছুতেই আমরা সব সময় সায় দিয়েছি।তোমার মতামত কে বরাবরই আমরা প্রাধান্য দিয়েছি।আমার মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় ডিসিশন টাও তুমি নিবে।তোমার মতামত কে আমরা বেশি গুরুত্ব দেবো।”

-“হঠাৎ এসব কেনো বলছো?
হ্যাঁ তোমরা আমার মতামত আমার ইচ্ছে কে গুরুত্ব দাও তার মানে এই নয় যে আমি ভুল কিছু আবদার করলে তোমরা বিরুদ্ধতা করবে না।”

-“তাহলে আমরা কি তোমার বিয়েসাদীর ব্যাপারে আগাতে পারি?আর তোমার কোনো পছন্দ থাকলে বলতে পারো।”

কক্ষে প্রবেশ করতে করতে কথা গুলো বলল আম্বিয়া মির্জা।রিধি চুপ করে গেলো।কি বলবে ভেবে পেলো না।
তবে মন চাইল একবার বলতে মনের মধ্যে থাকা প্রিয় পুরুষের কথা। কিন্তু এটার তো কোনো শুরু নেই।সে করে নি শুরু তাহলে এসব বলার কোনো ভিত্তি নেই।না কোনো যুক্তিতে আসে।দু’জোড়া চোখের প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে রিধির দিকে। রিধি কোনো ভণিতা ছাড়াই স্পষ্ট জবাব দিলো,

-“না নানিজান।
তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করো।”

——-

মাইশা একটা আচার হাতে নিয়ে বসে আছে। তিন মাসে চলে সবে মাত্র।এক্ষুনি মেয়েটার অবস্থা নাজেহাল। খাবার একদমই মুখে নিতে পারে না।
শরীর শুঁকিয়ে গিয়েছে চোখের নিচে কালশিটে দাগ বসেছে।
এসব দেখলে আয়ানের মায়া হয়।বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।রাতের খাবার টাও খেতে পারে নি।খাবার এক লোকমা মুখে নেওয়া মাত্র দৌড়ে বেসিনে গিয়ে ঘরঘর শব্দ করে পেটের ভেতর যা ছিল সব উগড়ে দিয়েছে। আয়ান খাবার ফেলে নিজেও পেছনে পেছনে ছুটে রান্না ঘরে। পানি দিয়ে ফ্রেশ করে নিজে ধরে রুমে নিয়ে এসছে।মাইশা অবশ্য অনেক জোর করেছে খাবার টা খেয়ে আসার জন্য। কিন্তু আয়ান যায় নি।বউ খেতে পারে না। ঘুমুতে পারে না আর সে একবেলা না খেয়ে থাকতে পারবে না কেনো?
আয়ানের ভাবনার মাঝেই মাইশা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

-“এতো দূরে কেনো বসে আছেন?
কাছে আসুন।”

আয়না নড়েচড়ে বসলো। সামন্য এগিয়ে গিয়ে মাইশার গা ঘেঁষে বসে বলল,

-“কাছেই তো বসে আছি।
তোমার দূরে কেনো মনে হচ্ছে!”

মাইশা কোনো প্রতিত্তোর করে না। আচার পাশে রেখে আয়ানের গালে হাত রাখে।আয়ান চট করে সরে বসে।বউয়ের চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে সে।যেটা এই মূহুর্তে করা একদম ঠিক নয়।
আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল,

-“মাইশা একদম না।
তুমি সহ্য করতে পারবে না। ডক্টর কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চার মাস পর্যন্ত এ,,,

মাইশা শুনে না।
আয়ানের ঠোঁটে নিজের তর্জনী আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো আয়ান কে।
আয়ান ঘামছে।প্রেয়সীর এই আহ্বান তাকে ভেতর থেকে উত্তেজিত করে দিলো।অনেক দিন প্রেয়সী কে ভালোবাসে না।লোভ হলো।হেঁচকা টানে বউ কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের শরীর বিছানায় রেখে মাইশার গলায় মুখ গুঁজে দিলো।
মাইশা শক্ত করে আয়ান কে জড়িয়ে ধরলো।

—–

প্রিয়তা ইনিয়া কে নিয়ে বসে আছে।
আয়নার শরীরে জ্বর এসছে।রাহাত বাড়ি নেই।ডক্টর চেক-আপ করে ঔষধ দিয়ে গিয়েছে।এখন ঘুমিয়ে আছে আয়না।রাতের খাবার সুফিয়া বেগম খাইয়ে দিয়েছে। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। জ্বর এখন বেশি নেই।ইনিয়া ঘুমে ঢুলঢুল করছে।প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ইনিয়া কে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
কাজের লোক কে ডেকে ইনিয়ার খাবার চাইলো।খাবার এলে ইনিয়া কে খাইয়ে দিলো।ইনিয়া খাবার খেয়ে প্রিয়তার কোলে ঘুমিয়ে গেলো।প্রিয়তা আয়নার পাশে মেয়ে কে শুইয়ে দিয়ে রুমে এলো। রাত সাড়ে নয় টা বাজতে চলে।সাদনান কোন রাত বাড়ি আসে ঠিক নেই। প্রিয়তা কাবাড থেকে সাদনানের ড্রেস নামিয়ে রাখে।
ঠিক তক্ষুনি বিছানায় থাকা ফোন টা সশব্দে বেজে উঠল।

প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ফোন হাতে নিলো।সাদনান কল করেছে।
প্রিয়তা একটু না অনেকটাই অবাক হলো। বিস্ময় কাটিয়ে ফোন রিসিভ করতেই সাদনানের গুরুগম্ভীর কণ্ঠ স্বর ভেসে এলো,

-“নিচে এসো।
আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।”

-“এতো রাতে?
কোথায় যাব?”

-“আগে এসো।
আর হ্যাঁ যেভাবে আছো সেভাবেই।”

সাদনান কথা শেষ করে কল কেটে দিলো। প্রিয়তা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।
ফোন হাতে বেরিয়ে পড়ে।

সাদনান গাড়িতে বসে ছিল।
প্রিয়তা যাওয়া মাত্র হাত বাড়িয়ে দরজা খুলে দিয়ে প্রিয়তা কে ওঠে আসার জন্য ইশারা করে।প্রিয়তা চুপচাপ ওঠে বসে।সাদনান গাড়ি স্টার্ট করল।

-“কোথায় যাব আমরা?”

প্রিয়তা কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো। কিন্তু সাদনান উত্তর করলো না।শুধু বলল,

-“আগে যাই।”

আধঘন্টা পর সাদনান আর প্রিয়তা উপজেলায় এসে পৌঁছাল।
সাদনান নিজে একটা কালো মাস্ক পড়ে প্রিয়তা কেও একটা পড়িয়ে দিলো।
একটা রেস্টুরেন্টে গেলো দু’জন।সাদনান বউয়ের হাত ধরে একদম কর্নারে একটা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।
সেখানে একজন সুদর্শন যুবক বসে আছে। সেও মাস্ক পড়ে আছে। কিন্তু তাও ব্যক্তি টাকে চিনতে প্রিয়তার অসুবিধা হয় না। অবাক আর বিস্ময় ভ্রু জোড়া টানটান করে বলে উঠলো,

-“ওয়াজিদ ভাই!”

#চলবে…..

আমার তুমি ২ পর্ব-১৬+১৭

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

সাদনান ফোনে কথা বলা শেষ করে বউ কে টেনে নিজের বক্ষদেশ নিলো।প্রিয়তা ঘুম ঘুম চোখ সাদনানের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হেঁসে সাদনানের গালে হাত ছোঁয়া দিলো অতঃপর চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে নিরাপদ স্থানে ঘুমিয়ে গেলো।
সাদনান বউ কে এক হাতে নিজের বুকে আগলে রেখে আরেক হাতে ফোনে একটা ভিডিও ওপেন করে।যেটার শেষ অব্ধি সাদনান শুধু হাসলো।যেনো কোনো ছাড়পোকা ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
ভিডিও দেখা শেষ সাদনান হোয়াটসঅ্যাপ গিয়ে একটা ম্যাসেজ লিখল।

এরপর সাদনান ফোনে স্ক্রল করে আবার।
বাইরের দিকে নজর পড়তেই দেখা মিলে সাদনান এর সাথে আসা গাড়ি গুলো একটা বিশাল বড় বিল্ডিংয়ের গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে।সেখানে সব গুলো গাড়ি পার্কিং করা হলো।মোটামুটি মিডিয়ার লোকের জায়গায় ভীড় জমিয়েছে।প্রশ্ন একের পর এক করেই যাচ্ছে। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য কি?শুধু কি স্ত্রী কে সাথে নিয়ে আলাদা সময় কাটানো ঘুরাঘুরি করা নাকি এর পেছনে ভিন্ন কারণ রয়েছে?
এমন অনেক প্রশ্ন সাদনান উপেক্ষা করে বউ কে এক বাহুতে আগলে এগিয়ে গেলো।সামনে পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।প্রিয়তা শরীর কাঁপছে। এরকম পরিস্থিতিতে সে আর কখনো পড়ে নি।সাথে অস্বস্তি তো আছেই।

——

তিন্নি অনুভূতিহীন।আসলে অনুভূতিহীন বললে ভুল হবে। মেয়ে টা ভাবতে পারে নি এতো টা সহজে নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে নিজের করে পেয়ে যাবে।তাই এই মূহুর্তে কি বলা উচিৎ বা কেমন রিয়্যাকশ দেওয়া দরকার বুঝতে পারছে না।বাড়ি ভর্তি মানুষ।এরমধ্যে বেশির ভাগ মির্জা বাড়ির লোকজন আর যা কয়েকজন তারা পাড়াপ্রতিবেশি। বিয়ে হয় নি একটু পর বিয়ের কাজ শুরু হবে। মাইশার বাবা তিন্নির বাবা হয়ে সাক্ষী হবে। তিন্নির এখানে সবচেয়ে বড় ধাক্কা টা খেয়েছে। মির্জা বাড়ির সবাই তিন্নি কে বুঝতেই দিচ্ছে না মেয়ে টার পরিবার নেই। সাদনান ফোন করে একবার তিন্নির সাথে কথা বলেছে।তিন্নি নিজের কেমন সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। বিয়ে টা তিন্নি একপ্রকার ঘোরের মধ্যে থেকেই কবুল বলেছে।মাইশা এসছে। পাশেই বসে আছে তিন্নির। হঠাৎ করে সব টা এতো তাড়াতাড়ি কি করে হলো। তিন্নির মনে বারবার প্রশ্ন আসছে।বিয়ে পড়ানো শেষ ঘর ফাঁকা হতেই তিন্নি মাইশার হাত চেপে ধরলো।ফিসফিস করে জিগ্যেস করলো,

-“তুই আগে থেকে জানতি সব?”

-“আরে না।
বাবা হঠাৎ ফোন করে জানাল।
হয়তো বড়’রা আগে থেকে সব প্ল্যান করে রেখেছিল।তাই এতো দ্রুত সব আয়োজন হলো।”

তিন্নি আর কিছু বলল না।চুপ করে বসে রইল। রাত হয়তো আটটার বেশি সময় বাজে।
আস্তে আস্তে বাড়ি ফাঁকা হচ্ছে। মাইশা কে নিয়ে আয়ান অনেক আগেই বাড়ি চলে গিয়েছে। এখন শুধু মির্জা বাড়ির সবাই রয়েছে। তারাও একটু পর চলে যাবে।

-“কবির কাল কিন্তু আমার মেয়ে কে নিয়ে চলে আসবে।”

কবির শুধু হাসলো।মফিজুর মির্জা তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,

-“যখন এই বাবা কে মনে পড়বে তখন চলে যাবে।
কখনো দ্বিধা করবে না।মাইশা যেমন এখন থেকে তুমি মির্জা বাড়িতে তেমনি।
মনে থাকবে?”

তিন্নি সুফিয়া বেগম এর হাত মুঠোয় পুরো ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।কি বলা উচিৎ এই মানুষ গুলো কে?কোনো ভাষা খোঁজে পাচ্ছে না তিন্নি। তবে হাসি মুখেই চোখে হতে জল গড়িয়ে পড়ল।খুব সাবধানে সেটা মুছে শুধু মাথা নাড়ল।

—–

রাতে তিন্নি গেস্ট রুমে ফ্রেশ হয়ে বিয়ের শাড়ী চেঞ্জ করে একটা সুতি শাড়ী পড়ে নিলো।শাড়ী টা কবির দিয়েছে এটা কবিরের মায়ের শাড়ী। সাথে শাড়ী প্রয়োজনীয় সব।যার সব শরীরে একদম মাপ মতো হয়েছে।তিন্নি ভাবছে কোনো ভাবে কি এসব কবির স্যার দেখেছে?পরক্ষণেই ভাবে দেখলেই বা কি?স্বামী স্ত্রী এখন ওরা।কিন্তু তারপরেও নারী জাত লজ্জা তাদের ভূষণ। তিন্নি নিজে কে যথাসম্ভব ধাতস্থ করে রুম হতে বেরিয়ে এলো।কাজের লোক আজ রয়েছে। সব মানুষ বিদায় নিয়েছে। তিন্নি রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো।একজন মহিলা খাবার গরম করছে। আরেকটা বাচ্চা আট দশ বছরের হবে প্লেট গুলো গুছিয়ে রাখছে।তিন্নি মহিলা টার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“আপনার মেয়ে?”

-“হ গো বউ।
বাসায় একা থাকবার চায় না। এর লাইগা লগে লইয়া আই।”

-“আচ্ছা সমস্যা নেই।
কিন্তু কাজ করাবেন না ওকে দিয়ে।”

মহিলা টা পান খেয়ে লাল টকটকে করে রাখা ঠোঁট জোড়া এলিয়ে দিয়ে হাসল।
তিন্নি খাবার ডাইনিং নিতে নিতে কালাম খান আর কবির এসে উপস্থিত হলো।খাবার পর কাজের মহিলা সব গুছিয়ে রাখবেন জানাল।তিন্নি দ্বিধায় ভুগছে। কোন রুমে যাবে? গেস্ট রুম না-কি কবির স্যার এর রুমে?
তিন্নি ভাবতে ভাবতে লিভিং রুমের সোফায় বসে পড়লো।শাড়ীর আঁচল মাথা থেকে অনেক আগেই পড়ে গিয়েছে।চুল গুলো হাতে খোঁপা বাঁধা। বিয়ের সাজে চুল ছাড়া ছিল। তাড়াহুড়ো করে হয়তো আর আঁচড়ানো হয় নি।ফ্রেশ হয়ে এভাবেই চলে এসছে রান্না ঘরে।
কবির এগিয়ে গেলো।ক্লান্তি আর চিন্তায় মগ্ন থাকা তিন্নির একদম নিকটে গিয়ে দাঁড়াল।
তিন্নি হঠাৎ কবির কে নিজের সামনে দেখে একটু চমকাল।লাফিয়ে ওঠে বসা ছেড়ে। কবির তিন্নির দুই বাহুতে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলল,

-“রিলাক্স।হাইপার হওয়ার কিচ্ছু নেই।
আমিই তো।তা তুমি এখানে বসো কি করছো?”

-“না ইয়ে মান,,,

-“হয়েছে।আর ইয়ে মানে করতে হবে না।
এখন থেকে আমার তুমি।আর আমার তুমি মানেই আমার সব তোমার।আই হোপ পরবর্তীতে তুমি আমার কোনো কিছু নিয়ে অস্বস্তি বোধ করবে না।”

-“অস্বস্তি না।
আমার তো লজ্জা লাগছিল।”

তিন্নি মাথা নিচু করে কথা টা বলেই সম্মতি ফিরতেই কি বলেছে বুঝতে পেরে চট করে মাথা টা উঁচু করে কবির এর দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলো।
কবির কেমন এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তিন্নির দিকে তাকিয়ে আছে।
তিন্নি মাথায় আঁচল টানে।কবির লম্বা শ্বাস ছাড়ে। তিন্নির একটা হাত মুঠোয় পুরো নিয়ে নিজে আগে আগে হাঁটা ধরে। তিন্নি অজানা অনুভূতি কবিরের স্পর্শে শরীর শিরশির করে উঠল।কবির তিন্নি কে নিয়ে সোজা উপরে নিজের রুমে এলো।ফুলে সজ্জিত কক্ষে প্রবেশ করা মাত্র নানা রকম ফুলের গন্ধে তিন্নি শরীর শিহরণ হলো।কবির দরজা বন্ধ করে তিন্নি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তিন্নি বরফের অনুরূপ জমে গেলো।শক্ত সটান হয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো।শখের পুরুষ, ভালোবাসার মানুষ টার স্পর্শে দেহ মনজুড়ে ভালো লাগার অনুভূতি সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে গেলো।কবির নিজের ঠোঁট তিন্নির ঘাড়ে ছুঁয়ে দিলো। তিন্নি কেঁপে উঠল। শক্ত করে কবির এর হাতের উল্টো পিঠে নখ ডুবিয়ে দিলো।কবির ভ্রু কুঁচকে নিলো।তবে ভালোবাসার মানুষ টার এই ব্যথা আরো দিগুণ হলো করলো বউ নামক এই সুন্দর রমণী কে নিজের করে পাওয়ার। সর্বাঙ্গে নিজের বেহায় হাতের স্পর্শ দেওয়ার। তাই তো ব্যথা উপেক্ষা করে তিন্নি কে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে নিলো।তিন্নি অধরে কোনো লিপস্টিক দেওয়া নেই।বিয়ের সময় লাল লিপস্টিক দিয়ে ছিল।কিন্তু তিন্নি তা ধুয়ে মুছে ছাফ করে নিয়েছে। ফ্যাকাসে রঙের ঠোঁট জোড়া বড্ড আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে। কাঁপা কাঁপা দুই জোড়া অধর কিঞ্চিৎ পরিমাণ ফাঁকা রয়েছে তিন্নি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। কবির এক পলক বউয়ের অধর পানের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের পুরো ঠোঁট জোড়া দিয়ে বউয়ের ঠোঁটে চেপে ধরে।
আস্তে আস্তে পাগলামি বাড়তে থাকে।এই টা কি হঠাৎ ভালোবাসা না-কি গভীর বহু সময় ধরে জমিয়ে রাখা ভালোবাসা প্রকাশ করছে। তিন্নি বুঝতে পারলো না।

——

-“জান, জান আমার কথা টা শ,,

সাদনানের পুরো কথা না শুনেই প্রিয়তা হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে এক নাগাড়ে বলতে লাগল,

-“প্লিজ না।স্পর্শ করবেন না আমায়।বাড়ি যাব আমি।বাবা-র কাছে যাব।”

সাদনান নিজের বাড়িয়ে রাখা হাত টা গুটিয়ে নিলো।প্রিয়তা বিছানার এক কোণায় গুটিশুটি মেরে বসে কান্না করছে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ বিদ্যমান। সাদনান নিজের উপর রাগ হলো।ইচ্ছে করছে সব ধ্বংস করে দিতে। কোন কুক্ষণে ফোন টা রুমে ফেলে গিয়ে ছিল? যদি না ফোন টা ফেলে যেতো আর না বউ এইসব এর কিচ্ছু দেখতো।আর না ভয় পেতো।সাদনান দুই হাতে শক্ত করে নিজের চুল খামচে ধরে।

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা

আজ তিন হয় প্রিয়তা সওদাগর বাড়িতে রয়েছে।এর মধ্যে একদিনও সাদনান প্রিয়তার সাথে কোনো যোগাযোগ করে নি।সেদিন রাত তিন টা বাজে সাদনান সত্যি প্রিয়তার কথা অনুযায়ী প্রিয়তা কে সওদাগর বাড়ি দিয়ে গিয়েছে। বাড়ির প্রতি টা সদস্যর অবাক হয়ে চোখে মুখে প্রশ্নের ছাপ তখন সাদনান শুধু শফিক সওদাগর কে উদ্দেশ্য করে একটা কথা বলে ছিল,যে আমাকে মারতে চাইবে আমিও অবশ্যই তাকে ছেড়ে দেব না।আর এটা করা যদি দোষের হয় তাহলে আমি সেই দোষে দোষী।”
প্রিয়তা কথার গভীরতা বুঝে নি।তবে কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে।
প্রিয়তা আনমনে নিজের রুমে পড়ার টেবিলে বসে কথা গুলো ভাবছিল।সামনে একটা বই খুলে রাখা কিন্তু দৃষ্টি তার অন্য দিকে। শফিক সওদাগর আলগোছে মেয়ের পাশে বিছানায় বসলো।প্রিয়তা হঠাৎ কারোর অস্তিত্ব টের পেয়ে ভড়কালো। বিছানায় বাবা কে দেখে একটু নড়েচড়ে বসল। বই টা বন্ধ করে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,

-“বাবা।
কখন এলে?”

শফিক সওদাগর ম্লান হেঁসে মেয়ে কে কোলে শোয়ার আহ্বান জানান। প্রিয়তা চেয়ার ছেড়ে বিছানায় বাবা-র গা ঘেঁষে বসলো। শফিক সওদাগর হাসলো।প্রিয়তা বাবার বুকে মাথা রাখলো।আজ ক’টা দিন কোথাও যেনো একটু শান্তি নেই।কেনো এমন লাগে?
তবে এখন একটু ভালো লাগছে।প্রিয়তা শ্বাস টানে লম্বা। বাবা-র গায়ের গন্ধ শুঁকে। শফিক সওদাগর শব্দ করে হাসলো।মেয়ে টা ছোট বেলার অভ্যাস এখন গেলো না।হাসি থামিয়ে মেয়ে কে আদর করলো।চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

-“আব্বা কখনো কখনো আমাদের নিজেদের ভালোর জন্য খারাপ করতে হয়।মানুষ বড্ড স্বার্থপর। তাই এটা বড়ই স্বাভাবিক।”

-“বাবা।বাবা ওনি,,

প্রিয়তার উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে চাইলো তবে প্রিয়তার পুরো কথা না শুনেই শফিক সওদাগর বলে উঠলো,

-“খারাপ মানুষ কখনো ভালো হয় না।
আর প্রাক্তন এমপি রাজিব কখনো ভালো লোক ছিল না।তাই ওনার ভালো হওয়ার কোনো চান্স নেই।আল্লাহ ভালো খারাপ দু’টি দিয়ে মানুষ তৈরী করেছে।তুমি সেদিন রাতের কথা ভুলে গিয়েছো?কত টা জানোয়ার হলে একটা মানুষ একের পর এক ভুল করতেই পারে।আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। তুমি যথেষ্ট ছোট ছিলে।সেবার ইলেকশনের সময় এই এমপি তিনজন কে মার্ডার করেছিল। নিজের ড্রাগস এর ব্যবসা ছিল।পুলিশের কাছে ধরা পড়ে নিজের স্ত্রী কে ফাঁসিয়ে দিয়ে ছিল।তুমি জানো এর কোনো তদন্ত হয় নি।কোনো কেস হয় নি।এবার সাদনানের অবস্থা তেমনি হতো। হয় শত্রু কে এক্কেবারে বিনাশ করো নাহয় নিজে বিনাশ হওয়ার প্রস্তুতি নাও।
এখন এখানে তোমার মতামত কি?”

প্রিয়তা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।একটা মানুষ কতটা জঘন্য হলে নিজের স্ত্রীর সাথেও বেঈমানী করতে পারে প্রিয়তার জানা নেই।কিন্তু মনে হচ্ছে সাদনান খুব কমই শাস্তি দিচ্ছে লোক টাকে।আরো ভয়ংকর শাস্তি প্রাপ্য এই এমপির।
প্রিয়তা এমন নিশ্চুপ দেখে শফিক সওদাগর হাসলো।মেয়ের কপালে আদর দিয়ে বলল,

-“আর সাদনান এর থেকে এর পেছনে বেশি খাটছেন মন্ত্রী ওয়াসিফ দেওয়ান। তাই তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।সাদনান কোনো খারাপ কিছু করছে না।
ভাবো।
সময় নাও।আর কাল একটা সারপ্রাইজ আছে আব্বা।”

প্রিয়তা এবার যেনো অবাক না হয়ে পারলো না। ওয়াসিফ দেওয়ান এসব করেছে! শফিক সওদাগর মেয়ে কে ঘুমুতে বলে লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
প্রিয়তা তখন সেভাবেই বসে থাকে।কাল কি হবে? কিসের কথা বলে গেলো বাবা?ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো প্রিয়তা।

“ওয়াসিফ দেওয়ান মন্ত্রী পদ ত্যাগ করেছে।আর এই মন্ত্রী পদে নতুন এমপি মির্জা সাদনান শাহরিয়ার কে সিলেকশন করা হয়েছে।ছেলে টার প্রতিভা আছে এখন সেটা দেখানোর পালা।এই গ্রামের গর্ব।”

“আর কিছু শুনলাম আজ ভোরে নাকি প্রাক্তন এমপি কে ড্রাগস এর সাথে পুলিশ আটক করেছিল।কিন্তু ওনি এতোটাই মাদকাসক্ত ছিল যে নিজেই নিজে কে কোনো বিষাক্ত কেমিকেল এর ইনজেকশন নিয়ে আত্মহত্যা করেছে।”

প্রিয়তা আর দাঁড়াল না। শুনতে চাইল না ভয়ংকর সেই ঘটনা। সে দেখেছে।এমপি কে এতো পরিমাণ ড্রাগস দেওয়া হয়েছে যে আজ একমাস নাগাদ তাতে একজন মানুষ সুস্থ থাকা দুষ্কর। মস্তিষ্ক অচল হওয়া স্বাভাবিক বিষয় আর এতে করে সে কি করছে না করছে কিচ্ছু ভেবে চিন্তে করবে না আর করার পরও কোনো রকম প্রতিক্রিয়া হবে না।
কিন্তু এটা কি শুনল ও?ওয়াসিফ দেওয়ান মন্ত্রী পদ ত্যাগ করেছে আর সেখানে সাদনান কে সিলেকশন করা হয়েছে!
আজ সারা ভার্সিটিতে যায় নি।অগত্যা বাধ্য হয়ে প্রিয়তা কে একাই যেতে হয়েছে। যদিও আয়ান সকালে দিয়ে এসছিল।আর এসে নিয়ে যাবে সেটাও বলেছিল।কিন্তু প্রিয়তা আসতে বারণ করেছে।উপজেলা থেকে অটো নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু আজ অটোওয়ালা রাস্তার মাথাতেই নামিয়ে দিয়েছে এদিকে আসে নি।যার ফলে রাস্তার পাশে চায়ের দোকান গুলো পেরিয়ে আসার সময় উপরোক্ত কথা গুলো কানে এলো।

—–

বাড়ি ফিরে প্রিয়তা আগে ফ্রেশ হলো।রুম থেকে বেরিয়ে খাবার ঘরে আসতেই বাবা ভাই মাইশা সহ মাকে ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে দেখে বলল,

-“কতবার বললাম খেয়ে নাও।
আমার জন্য বসে থাকতে হয়!আর আপু তুমি? এখন নিজে একা নয়। মনে রাখতে হবে।তাই খাবার টাইম মতো খেয়ে নিবে।”

মাইশা কে উদ্দেশ্য করে বলল।মাইশা হাসলো।অতঃপর প্রিয়তা কে খাবার বেড়ে দিলো।কেউ কোনো কথা না বলে খাবার খেয়ে নিলো।

-“বনু শুনেছি কিছু?”

আয়ানের প্রশ্নে প্রিয়তা নির্লিপ্ত জবাব,

-“হ্যাঁ।”

-“আজ ভয় করে নি?”

প্রিয়তা দৃষ্টি এবার পুরোপুরি আয়ানের দিকে দিলো।কণ্ঠ গম্ভীর করে বলল,

-“নাহ।
অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়। হয়তো সেটা পরকালে কিংবা দুনিয়াতে।”

শফিক সওদাগরের মুখে বিজয়ী হাসি হাসলো।মেয়ে তার বুঝদার।শুধু পরিস্থিতিতে শিকার হয়ে মাঝেমধ্যে সব টা সামলে ওঠতে পারে না।

—–

রাত দেড়টার দিকে প্রিয়তা নিজের মুখের ওপর কারোর উষ্ণ নিঃশ্বাসে আঁচড়ে পড়তেই তন্দ্রা ছুটে গেলো।ধপ করে চোখ খুলতেই ড্রিম লাইট এর কমলা রঙের আবছা আলোয়ে বলিষ্ঠ পুরুষ সাদনান কে দেখে চোখ আরো বড় বড় হয়ে গেলো।শোয়া থেকে উঠতে গেলেই হাতে চাপ অনুভব করলো।সাদনান বিছানার সাথে ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে একবার হাতের দিকে তাকিয়ে ফের সাদনান এর দিকে তাকিয়ে বলল,

-“ছাড়ুন।”

সাদনান ছেড়ে দিলো।
সোজা হয়ে বসলো।প্রিয়তা ছাড়া পাওয়া মাত্র ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে বিছানার পাশ থেকে তড়িঘড়ি করে ওড়না নিলো।সাদনান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

-“এমন ভাব মনে হচ্ছে আজ প্রথম এমন হলো।মনে করে দেখো কতবার এই ওড়না আমি নিজে হাতে খুলে ছুঁড়ে ফেলছি।”

ছিঃ কি অসভ্য কথা। প্রিয়তার কান গরম হয়ে গেলো।সাদনান প্রিয়তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।

-“এতো রাতে আপনি?
বাড়ি যান নি?কখন এসছেন?খাবার খেয়েছেন?”

-“রিলাক্স।
এক সঙ্গে এতো কোশ্চেন!খাবার খেয়ে নিয়েছি।সবাই জানত আমি আসব।তাছাড়া রাতে না আসলে সাথে সিকিউরিটি আনতে হতো।আর এই মূহুর্তে আমি আমার শ্বশুর বাড়ি আছি।এটা এলাকায় জানাজানি হোক আমি চাইছি না।”

সাদনান একটু এগিয়ে বসল।প্রিয়তার মুখ নিজের হাতের আঁজলে নিয়ে বলল।প্রিয়তা সাদনানের মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। সাদনানের গায়ে একটা গাঢ় নীল রঙের শার্ট কালো প্যান্ট মারাত্মক সুন্দর দেখতে লাগছে পুরুষ টাকে।
মুখ ভর্তি ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু চোখে তার ঘোর লাগা চাহনি। প্রিয়তার শরীর শিরশির করে ওঠলো।
সাদনান প্রিয়তা কে হঠাৎ ছেড়ে দিলো।পাশে শুয়ে চোখের উপর হাত ভাঁজ করে রেখে বলল,

-“শুয়ে পড়ো।
কাল সকালে মির্জা বাড়ি যেতে হবে।”

প্রিয়তার কান্না পেলো।বুঝতে পারলো সাদনান এখনো রেগে আছে।অবশ্য রেগে থাকবে না কেনো?
কি কষ্ট টা টাই না দিয়েছে ও।কত গুলো কথা শুনিয়েছে কিছু না জেনেশুনে।
একটু এগিয়ে এসে সাদনানের বুকের উপর মাথা রাখে আলগোছে।
সাদনান নড়ে না।প্রিয়তার এবার সত্যি কান্না চলে এলো।
চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে সাদনানের উন্মুক্ত লোমযুক্ত বুকে স্পর্শ করা মাত্রই সাদনান অস্থির হয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসলো প্রিয়তা কে আগলে নিয়ে।

-“আরে বোকা মেয়ে।
কান্না কেনো করছো?”

-“আ’ম সরি সাদনান ভাই।”

-“আমি তোমার ভাই?”

সাদনান ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো।
প্রিয়তা নড়েচড়ে বসে।
সাদনান শক্ত করে বউ কে জড়িয়ে ধরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“জণগণ যদি জানতে পারে মন্ত্রী সাদনান শাহরিয়ার বউ তাকে ভাই ডাকে তবে আমার সম্মান টা কোথায় যাবে বুঝতে পারছো?”

-“অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
আগে ভাই ডাকতাম।”

-“ছয় মাসের বেশি সময় হতে চলে বিয়ে হয়েছে।এটা কোনো যুক্তি হলো?”

প্রিয়তা জবাব দিলো না।সাদনান বউয়ের মতলব বুঝতে পারে। প্রিয়তা সাদনানের শার্ট এর বোতাম খুলছে।সাদনান বাঁধা দিলো না।নিজেও বউয়ের ঘাড়ে অধর স্পর্শ করে।

——

রাহান বোনের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।বোন কে সে প্রচুর ভালোবাসে। রিধি নিজেও ভাই কে অনেক স্নেহ করে।আদর করে। ঝগড়া কি জিনিস হয়তো এই দুই ভাই বোন জানে না।অনেক মিল তাদের মধ্যে।একে-অপরকে নিজেদের সব কথা শেয়ার করে। এই যে রাহান সারা কে ভালোবাসে এটা রিধি জানে।আবার রিধি কে ওয়াসিফ দেওয়ান এর ছেলে ভালোবাসে এটাও রাহান জানে।কিন্তু রিধি ছেলে টাকে পাত্তা দেয় না।কি ভয়ংকর কথা। মন্ত্রী ছেলে তারউপর ডক্টর এমন ছেলে কে পাত্তা দেয় না।ভাবা যায়!আর এদিকে সে মন্ত্রী বোনের সাথে প্রেম করছে।কি ভয়ংকর ব্যাপার।
রাহান কথার তালে ইনিয়েবিনিয়ে বলে উঠলো,

-“তুমি ডক্টর সাহেব কে বলো আসো নি কেনো?
আজ সন্ধ্যায় আমার সাথে কথা হলো।মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে আছে।”

-“তুই ওনার সাথে কথা বলবি না আর।
আমি আগেও তোকে বারণ করেছি না, তাও কেনো বলিস?”

রিধি একটু থেমে আবার বলল,

-“এসব বড়লোকদের সাথে আমাদের যায় না।কোথায় ওনারা আর কোথায় আমরা দেখেছিস?এটার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে আমি নানাজান এর উপর দিয়ে এব্যাপারে কিচ্ছু করব না।যার খেলাম তাদের উপর দিয়ে আমার কোনো কথা নেই।”

-“আপু তুমি ভালো করে জানো মামারা বা নানাজান কখনো তোমার কষ্ট হয় এমন কিছু করবে না।শুধু শুধু কেনো ভেতরে ভেতরে এসব ভেবে নিজের অনুভূতি দামাচাপা দিতে চাইছো?”

-“খুব বড় হয়ে গিয়েছিস?আমাকে বোঝাতে আসে।ঘুমুতে যা।”

রাহান মুখ ভেংচি কাটলো।রিধি সেটা দেখে হাসি পেলো। তবে হাসলো না।চেপে রাখল।রাহান রুম থেকে যাওয়া মাত্র হো হা করে হাসতে লাগলো।ছোট বেলার অভ্যাস এখনো গেলো ছেলেটার।রিধি হাসতে হাসতে বিছানা ঠিকঠাক করে দরজা বন্ধ করে এসে বিছানায় শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।ঠিক তক্ষুনি পাশে থাকা ফোন টা টুং করে শব্দ হলো।রিধি ভ্রু কুঁচকে নিলো। রাত বাজে দেড় টা এতো রাতে কে ম্যাসেজ দিলো?
রিধি হাত বাড়িয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে সাইড বাটন চাপে। ফোনের স্কিনে দৃষ্টি বোলাতেই দেখা মিলে নোটিফিকেশনে ডক্টর সাহেব দিয়ে সেভ করা একটা বিদেশি নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসছে,

“এটা ঠিক করো নি।একদম না।এর মাশুল দিতে হবে প্রস্তুত হও।”

#চলবে…..

আমার তুমি ২ পর্ব-১৫

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“এমপির বউ তুমি।
এই সাপ্তাহ পনেরো দিনের জন্যও যদি কোথাও ঘুরতে গিয়ে বাড়ি থেকে কাপড় নিতে হয়।তবে যে নিজের পদ কে খুব শীগ্রই ত্যাগ করার সিদ্ধান্তে নিতে হবে।।”

প্রিয়তা লাগেজে কাপড় নিচ্ছিল
সাদনানের হঠাৎ এরূপ কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো।মিনিটখানেক সময় চুপ করে কথা গুলোর মানে বুঝতে চাইলো।বুঝতে পেরে লাগেজ থেকে সব কাপড় ফের কাবাডে রাখতে রাখতে বলল,

-“হয়েছে কি বলুন তো!আমি তো আগে কোনো এমপি মন্ত্রী কন্যা ছিলাম না। কোথাও গেলে আগের দিন নিজের ব্যগ গুছিয়ে রেখে দিতাম। তাই এখনো ব্যাপার টা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ছিল।”

সাদনান প্রিয়তার কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো। ল্যাপটপ স্কিনে দৃষ্টি স্থির রেখেই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“এখন থেকে মাথায় রেখো।
আর মনের মধ্যে আমায়।”

শেষ এর কথা টা বিড়বিড় করে বলল।প্রিয়তা ঠিকঠাক শুনতে পায় না।তাই কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,

-“কিছু বললেন?”

-“নাহ।
তাড়াতাড়ি চলো।তোমায় রেখে আমায় বেরুতে হবে।”

প্রিয়তা কিছু না বলে বোরকা হিজাব পড়ে রেডি হয়ে নিলো।সাদনান বউয়ের কপালে নিজের অধর স্পর্শ করে হাত নিজের মুঠোয় পুরো নিয়ে রুমে হতে বেরিয়ে এলো।বাড়ির সবার কাছে বিদায় নিয়ে যাত্রা শুরু করলো।

——

মির্জা বাড়ি বেশ কিছু টা রমরমা পরিবেশ।বাড়ির প্রতি টা মানুষ কাজে ব্যস্ত।বছর চার পর কাল রাহানের বোন রিধি দেশে ফিরছে।রিধি এই বংশের না হলেও এ বাড়ির সবার প্রিয় অনেক আদরের। বাড়িতে মেয়ে বলতে ওই ছিল প্রথম কন্যা।তাই ভালোবাসা টা রিধির জন্য সবার একটু ভিন্ন রকম।রিধি নিজের লেখাপড়া শেষ করে ইতালি একটা জব নিয়েছে আজ দু’বছর হলো।অবশ্য সবাই চেয়েছিল রিধি শুধু লেখা পড়া শেষ দেশে চলে আসুক।কিন্তু রিধির শখ স্বপ্ন যেটাই হোক সেটা হলো লেখাপড়া শেষ একটা ভালো জব করা।যেটা রিধি করেছে। কিন্তু এখন সবার বেশ জোরাজুরিতে রিধি দেশে আসছে।জাফর মির্জার এবার মনে মনে নাতনির জন্য ভিন্ন কিছু ভেবেছেন।এখন মেয়ে টা মেনে নিলে হয়।
জাফর মির্জা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সেটা আবার সেন্টার টেবিলে রেখে দিয়ে আজ্জম মির্জার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“তা কে যাচ্ছে রিধু কে নিতে?”

-“আমি রাহান,রফিক আর সারা, মাইশা,আর সাদনান প্রিয়তা ফ্ল্যাট থেকে সাথে ফিরে আসবে।”

আজ্জম মির্জার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আয়েশা বেগম জিগ্যেস করলো,

-“আপনি যাবেন আব্বা?”

জাফর মির্জা জানালো,

-“নাহ।
আমার একটা জরুরি সভা রয়েছে। সাদনান বাড়ি নেই।তাই আমার সেখানে উপস্থিত হতে হবে।”

আজ্জম মির্জা আগে থেকে এব্যাপারে অবগত ছিল।জাফর মির্জা যাবেন না।তাই তিনি আর কিছু জিগ্যেস করলো না।এই রাজনীতি ওনার একদম পছন্দ নয়।শুধু বাপ আর নিজের ছেলে এসব করে বলে একটুআধটু এখানে সেখানে যায়।নয়তো এসবের দ্বারপ্রান্তে তিনি যেতো না।
কি সব উটকো ঝামেলা এসব।মনে হয় ইচ্ছে করে জেনে-বুঝে নিজের সঙ্গে বিপদ নিয়ে চলেফিরা করা।যদিও মৃত্যুর স্বাদ একদিন আল্লাহর সৃষ্টি সব জীবকে গ্রহণ করতে হবে।তারপরও এসব ওনার একদম পছন্দ নয়।

—-

কবির ভার্সিটি থেকে ফিরে আসার সময় তিন্নি কে সাথে নিয়ে এসছে। আজ কালাম খাঁন দুপুরে অফিস থেকে চলে এসছে।রান্না মোটামুটি করে রেখেছে সব।কিন্তু কবির যখন তিন্নি কে কালাম খাঁন এর সাথে পরিচয় করিয়ে নিজে রুমে ফ্রেশ হতে গেলো তিন্নি সেই সুযোগে আরো কিছু খাবার এর আইটেম বানিয়ে নিলো।
নিজে গেস্ট রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো।টেবিলে খাবার দেওয়ার পর কবির আসছে না। কালাম খাঁন ছেলের উপর বিরক্ত হলো।
তিন্নি কে বলল,

-“মা দেখো তো ও কি করছে।
আমার পেটে ইদুর ছুটছে।খাবার এর গন্ধে আরো বেশি করছে।কি দারুণ দেখতে হয়েছে। খেতে নিশ্চয়ই আরো সুস্বাদু।”

তিন্নি হাসলো।কবির ওকে সব বলেছে।কালাম খান নিজের রান্না সব সময় নিজে করে খায়।সেইজন্যই তো এসেই রান্না ঘরে চলে গেলো।
তিন্নি প্লেট হাত থেকে টেবিলের উপর রেখে বলল,

-“আঙ্কেল আমি,,,

তিন্নি কে থামিয়ে দিয়ে কালাম খান চোখে ইশারা করে সিঁড়ির দিকে দেখিয়ে বলল,

-“তুমি বসে পড়ো।
ও চলে এসছে।”

কালাম খান এর ইশারা অনুযায়ী তিন্নি দৃষ্টিপাত করতেই দেখা মিলে কবিরের।ট্রাউজার পড়নে একটা গাঢ় সবুজ রঙের টি-শার্ট গায়ে।দেখতে চমৎকার লাগছে। কিন্তু তিন্নি বেশিক্ষণ তাকিয়ে না থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।কবির এসে কালাম খান এর অপজিটে বসলো।তিন্নি দ্বিধায় ভুগে কার সাইডে বসবে।তবে কালাম খান এর পাশের চেয়ারে বসা টা উত্তম মনে হলো।তাই তো সবার প্লেটে খাবার দিয়ে কালাম খান এর পাশে বসলো।কালাম খান ছেলের দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস জয় করা হাসি হাসলো।যার অর্থ টা কবির সুন্দর করে বুঝতে পারে। তিনি তার মেয়ে পেয়ে গিয়েছে।
খাবার শেষ তিন্নি সব গুছিয়ে রাখে।কালাম খান আর কবির তখন লিভিং রুমে বসে আছে।
তিন্নি সব গুছিয়ে রেখে সেখানে এলো।

-“আঙ্কেল আজ আসি আমি।”

-“কোথাও যেতে হবে না।
তুমি বসো।কবির তুমি তিন্নির সাথে কথা বলো আমি একটু পর আসছি।”

শেষে এর কথা টা কবির কে উদ্দেশ্য করে বলে তিনি নিজের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো।

-“বাবা চাইছেন আমাদের বিয়ে টা আজ দিতে।

কবির কোনো ভণিতা ছাড়াই বলে দিলো।
তিন্নি চোখ বড় বড় করে কবির এর দিকে তাকালো।বুক কাঁপছে।এই মূহুর্তে কি বলা উচিৎ সেটা মাথায় আসছে না। তবে মনের ভেতর একটা প্রশ্ন ঘুরছে।আর দেরী না করে কবির কে সেটা করে ফেলল,

-“আপনি চান না?”

কবির সোফা ছেড়ে ওঠে এলো।গেঞ্জি টা টেনেটুনে ঠিক করে দুই হাত ট্রাউজার এর পকেটে রেখে সটান হয়ে ঠিক তিন্নির মুখের বরাবর দাঁড়িয়ে বলল,

-“সেটা তোমার মতামত এর উপর ভিত্তি করবে।
তবে আমি আগেই বলেছি তুমি সময় নাও।কিন্তু উত্তর টা আমি সময় শেষ হ্যাঁ চাই।
আর তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি তোমায় ভালোবাসি এন্ড বিয়ে করার প্রস্তাব টাও আমি দিয়েছি।”

——-

মাইশা কনসিভ করেছে।
কথা টা আয়ান জানা মাত্র এক রকম পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।মাইশা কে কিছুতেই এখন মির্জা বাড়ি যেতে দিবে না। আর এয়ারপোর্টে তো একদমই নয়।আয়ানের এমন পাগলামো দেখে শফিক সওদাগর তৎক্ষনাৎ লজ্জায় লিভিং রুম ত্যাগ করেন।আর মিতা সওদাগর আয়ান কে এটা সেটা বলে বোঝাচ্ছে। মাইশা নিজেও লজ্জায় আড়ষ্ট। কাল রাতেই আয়ান একটা প্রেগন্যান্সির কিট এনে ছিল।মাইশা পরে পরীক্ষা করে দেখবে বলে সেটা তখন রেখে দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু আয়ান যখন কফি নিতে রুম থেকে বেরিয়ে এসছিল তখন মাইশা পরীক্ষা করে পজিটিভ এসছিল।কিন্তু সারপ্রাইজ দিবে ভেবে রেখে দিয়েছে। আর আজ সকালে মির্জা বাড়ি থেকে ফোন আসায় ভাবে রাতে বলবে।কিন্তু জিনিস টা যে আয়ানের হাতে পরে যাবে মাইশা কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি।
মাইশার ভাবনার মাঝেই আয়ান নিজের মা’কে উদ্দেশ্য করে বলল,

-“মা দেখো তুমি ওর হয়ে একদম সাফাই গাইতে আসবে না। তুমি জানো না ও কত বড় বাঁদর।”

-“এই আপনি কি বললেন?
আমি বাঁদর? তাহলে বিয়ে কেনো করেছেন ?তার মানে আপনিও বাঁদর।”

মাইশার কথা শুনে মিতা সওদাগর শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।চোখ ছোট্ট ছোট্ট করে মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“আমি হোটেল যাচ্ছি।
অনেক কাজ।রাতে ফিরে আসব আর।”

আয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
মাইশার সামন্য মন খারাপ হলো।কিন্তু সেটা আয়ানের এতো যত্ন সচেতনতা, নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে হারানোর ভয় সব দেখে মূহুর্তে খারাপ লাগা উবে গেলো।ঠোঁটর কোণে এক চিলতে হাসি টেনে মিতা সওদাগর কে বলে উঠলো,

-“আমি যাব না মা।
ফোন করে জানিয়ে দেব ভাইয়া কে।”

মিতা সওদাগর শুধু মাইশার গালে হাত রেখে মুচকি হেঁসে চলে গেলো।

#চলবে….

আমার তুমি ২ পর্ব-১৩+১৪

0

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“তোমার ফোনের ওয়ালপেপারে কোন মেয়ের পিকচার ওটা?”

কালম খান এর প্রশ্নে চমকাল কবির।তড়িৎ গতিতে মাথা ঘুরিয়ে বাবা-র দিকে তাকালো।
কবির খাবার চিবচ্ছিল। কিন্তু বাবার মুখে অনাকাঙ্খিত প্রশ্নে অপ্রস্তুত হলো।
খাবার মুখের টা না চিবিয়ে গিলে নিলো। পানি খেয়ে নিজে কে স্বাভাবিক করলো।কালাম খান ছেলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে।কবির বাবার দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থমথমে খেলো। বাবা-র কাছ থেকে কিছু আর গোপন করা যে সম্ভব নয় বুঝতে অসুবিধা হয় না। তবে কবির খুব শীগ্রই তিন্নির ব্যাপারে বাবা-র সাথে কথা বলতো।এমনটাই মনস্থির করেছিল।তবে বাবা যে নিজ থেকে ছেলের পেছনে গোয়েন্দা ঘিরে করছে সেটা কে জানত!
কবির নিজে কে ধাতস্থ করে। সময় নিয়ে সোজাসাপটা জবাব দিলো,

-“ওর নাম তিন্নি।
তুমি চিনো।চেয়ারম্যান সাহেবের বড় নাতনির বিয়েতে এসছিল।”

-“হ্যাঁ তুমি সেদিন দেখা করলে।
আর আমি বাবা হয়ে ছেলের গার্লফ্রেন্ড কে ছেলের সাথে দেখার জন্য সাহায্য করলাম।”

অকপটে কথা গুলো বলল কালাম খান। কবির কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি তার বাবা এমন কিছু দেখেছে আর এসব বলবে।
তবে কবির এমন ভাবে বসে মুখে খাবার নিলো যে এসব স্বাভাবিক কোনো সিরিয়াস কথা নয়।
কালাম খান ছেলের এমন নির্বিকার ভঙ্গিতে থাকতে দেখে মনে মনে ছেলে কে নির্লজ্জ উপাধি দিলো। অবশ্য ছেলের কি দোষ ওনি নিজেই তো এমন কথা বলল।তবে দৃষ্টি আগের ন্যায় রেখেই প্রশ্ন করলো,

-“তা কিছু কি আছে?
নাকি আগের মতোই মেয়ে দেখলে দশ হাত ডিস্টেন্স বজায় রাখো?”

-“নাহ।
বিয়ে করব।তোমার সাথে দেখা করাতাম।
আর হ্যাঁ ওর কিন্তু পরিবার,,

-“সব জানি।
তা কবে নিয়ে যাচ্ছো?”

-“আমরা না।ওকে আসতে বলবো।”

-“তোমার ইচ্ছে।
আর হ্যাঁ যতদ্রুত সম্ভব বিয়ে করো।নিজের হাতের রান্না খেতে খেতে খাবারের আর স্বাদ পাচ্ছি না।”

কালাম খান এর কথায় কবির ড্যাবড্যাব করে বাবা-র দিকে তাকিয়ে রইলো।
এর একটাই কারণ আজ রাতের রান্না কবির করেছে। তাহলে বাবা-র এমন কথার অর্থ কি?

-“বাবা রান্না তো মাঝেমধ্যে আমিও করি।
তাছাড়া কাজের খালা তো রান্না করে দিতে বলে তুমি তো রাজি না।”

-“ওসব তুমি বুঝবে না।
শহরে খালার হাতে রান্না আর ঘরে বউদের রান্নার মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ।”

কবির মাথা নাড়ে সত্যি। শহরে কাজের খালাদের রান্না একদম স্বাদ নয়।কেমন তাড়হুড়ো করে রান্না করে ভালো করে কিছু পরিষ্কার করে না। চাল ধুয়ে ভাত রান্না করে না।ডাল রান্না করলে মনে হয় পানিই এরচেয়ে ভালো।
কবির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে হোস্টেল থাকতে ভীষণ কষ্ট হতো এরকম রান্না খেতে কিন্তু এখন সয়ে গেছে সব খেতে পারে তাই মাঝেমধ্যে ভুলে যায় বাবা এসব খেতে পারে না। কবির এর মা এক কঠিন রোগে মারা যাওয়ার পর কালাম খান আর বিয়ে করে নি। কবির তখন নাইনে পড়তো।দু’জন ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করে ছিল বিধায় কোনো আত্মীয় স্বজন পরিবার কেউ কোনো খোঁজ নিতো না।সেই থেকে ছেলে কে নিয়ে একা হাতে সব সামলেছ।

——

সাদনান হসপিটাল থাকবে না।সে বাড়ি চলে যাবে।ডক্টর দু’দিন থেকে যাওয়ার কথা বললে সাদনান সোজাসাপটা জবাব জানিয়ে দিয়েছে সে আজ রাতেই বাড়ি ফিরতে চায়।প্রিয়তা একবার বলেছে। কিন্তু সাদনান তার কথায় অনড়।প্রিয়তার বুঝে আসে না সরকার থেকে এতো সেবাযত্ন নিজের জন্য পার্সোনাল সিকিউরিটি ভিআইপি কেবিন তার পরেও কেন সাদনান ভাই এখান থাকতে চাচ্ছে না?

সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে সাদনান কে আয়ান আর রাহান ধরতে এলেই সে গম্ভীর কণ্ঠে জানাল,

-“সামন্য একটা গুলি লেগেছে। একটা গুলিতে মির্জা সাদনান শাহরিয়ার কাবু করতে যথেষ্ট নয়।”

সাদনানের ডান হাত গলায় ঝুলানো। সাদনান বা হাতে প্রিয়তার হাত টা মুঠোয় পুরো নিয়ে আগে আগে হাঁটতে লাগলো। আর ওদের পেছনে বাকিরা সবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।

—–

-“বাহ দারুণ হয়েছে।
আজ বাড়ি না এলে সব মিস করে যেতাম।”

প্রিয়তা নির্বিকার সে পানি এনে সাদনানের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে বড় টাওয়াল ভিজিয়ে গা মুছতে লাগল।
সাদনান বউ কে এটাসেটা জিগ্যেস করছে,এটা কেনো করেছো? এভাবে কেনো রুম সাজিয়েছো?শাড়ী কেনো বের করছো?আর কত কি!

সাদনানের কথায় প্রিয়তা মুখ ভোঁতা করে নিলো।কি বলবে? লোকটা এমন একটা ভাব করছে মনে হচ্ছে সে সদ্য জন্ম নেওয়া কোনো বাচ্চা। কিছু বুঝে না।
প্রিয়তা কোনো জবাব দিলো না।বালতি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। নিজেও হাল্কা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে ভেজা টাওয়াল ব্যালকনিতে দিয়ে আসে।
প্রিয়তা মুখ ভার করে রেখেছে সেই থেকে। সাদনান বউ কে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রিয়তা ওড়না মাথায় দিয়ে রুম হতে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সালেহা বেগম সহ আয়েশা বেগম খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।প্রিয়তা নিজেও সাদনানের খাবার এর জন্যই নিচে যাচ্ছিল।সালেহা বেগম এর কাছ থেকে খাবার প্লেট হাতে নিতে নিতে বলল,

-“আমি যাচ্ছিলাম মা।
আপনারা আবার এতো রাতে,,,

-“শোন খাবার তোর টাও দিয়ে দিলাম।
খেয়ে নিবি কিন্তু।”

প্রিয়তার সম্পূর্ণ কথা না শুনেই সালেহা বেগম বলল।প্রিয়তা মাথা নাড়ে। সালেহা বেগম আর আয়েশা বেগম সাদনানের হালচাল জিগ্যেস করে খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিতে বলে চলে গেলো।
প্রিয়তা হাত ধুয়ে এসে খাবার প্লেট নিয়ে সাদনানের পাশে বসলো।সাদনান চুপচাপ খাবার খেলো।প্রিয়তা নিজেও খেলো।সাদনান বউয়ের মুখ দেখে ঠিক বুঝতে পারছে বউ রেগে আছে।কিন্তু কি ব্যাপারে?
প্রিয়তা খাওয়া শেষ সব গুছিয়ে রেখে সাদনান কে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বড় লাইট অফ করে ছোট লাইট অন করে বিছানার এক পাশে এসে গুটিশুটি মেরে শুইয়ে পড়লো।আর এদিকে সাদনান ড্যাবড্যাব করে বউয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।
অনেক কষ্ট এগিয়ে এসে বা হাতে প্রিয়তা কে টেনে বুকের বা পাশে নিলো।প্রিয়তা জোর খাটালো সরে যেতে চাইলো।কিন্তু সাদনানের শক্তির কাছে এসে সে পরাজিত।সাদনান শব্দ করে হেঁসে উঠলো। প্রিয়তার যেনো সাদনানের হাসিটা কাটা গায়ে নুনের ছিটা মনে হলো।
ফুঁসে ওঠে।
রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

-“একদম ছুঁতে আসবেন না আমায়।সেদিন কি বলেছিলেন?আপনি আপনার কিচ্ছু হতে দিবেন না! আমার জন্য হলেও নিজে কে ভালো রাখবেন।তাহলে আজ এসব কি?”

-“এটা তো আমি ইচ্ছে করে করি নি। তবে আমি আমায় ভালো রেখেছি।নয়তো এতখনে উপরে চলে,,,

-“প্লিজ এসব বলবেন না।
ছেড়ে দিন না এসব।অফিস যান।
আমরা আর দশ টা সংসারের মতো স্বাভাবিক ভাবে সংসার করব।”

সাদনানের কথা না শুনেই প্রিয়তা বলে উঠলো।

-“ভয় পেলে মানুষ ভয় দেখাবে।নিজে কে শক্ত করে গড়তে হবে।তোমার সংসার হবে।আমার রাজনীতি নিয়ে তোমার সংসারে ভবিষ্যতে আর কোনো প্রভাব পড়বে না।আমার স্থান টা আমি যথাশীঘ্র তেমন ভাবে তৈরী করে নেব।”

সাদনান বউ কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলল।
প্রিয়তা এনিয়ে আর কথা বাড়াল না। কি দরকার অযথা এসব নিয়ে মাতামাতি করে! লাভ হবে না। রাজনীতি করলে এসব হবেই।তবে প্রিয়তার ভরসা আছে।
ভালোবাসার মানুষ টার উপর।

—-

-“এভাবে কোনো সম্পর্ক হতে পারে না রাহান ভাই।
আপনি না এদিকে যাচ্ছেন না ওদিকে যাচ্ছেন।”

সারা’র কথায় রাহান হাসলো।যা অন্ধকারে সারা’র নজরে এলো না।রাহান থমথমে কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“তুই বল কোন দিকে যাব?
আমার তো মনে হচ্ছে আমি ঠিক রাস্তায় হাঁটছি।”

-“হাঁটতেই থাকুন আপনি।
আর কোনো দিকে তাকাতে হবে না।”

সারা ফোঁস ফোঁস করে বলল।
রাহানের পাশ থেকে ওঠে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই রাহান সারা’র হাত টেনে ধরলো।হেঁচকা টানে সারা কে নিজের উরুর উপর বসিয়ে দিলো।সারা চমকে উঠলো ভয়ে পেয়ে রাহানের হাত শক্ত করে খামচে ধরলো।যার ফলে রাহানের হাতের উলটো পিঠে সারা নখের আঁচড় লাগলো।রাহান ভ্রু কুঁচকে নিলো।
দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা হজম করলো।এখন এসব নিয়ে কিছু বলা যাবে না। বললেই এই পাগল ফোঁসে উঠলে কাজের কথা কিচ্ছু বলা হবে না যা এখন না বললেই নয়।
রাহান সারা’র কাঁধে নিজের থুঁতনি ঠেকাল।সারা’র শরীর কাঁপছে। রাহানের মনে হচ্ছে কোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ে সে বসে আছে।যা তাকে খুব বাজে ভাবে ওটার প্রতি টানছে। রাহান অবস্থা বেগিত বুঝতে পেরে সারা কে পাশে বসাল।সারার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরো নিয়ে বলল,

-“যথেষ্ট ম্যাচিউর তুই।আমি এখন যা বলব মন দিয়ে শুনবি। ঠিক আছে?”

সারা মাথা নাড়ে।
রাহান মুচকি হেঁসে বলল,

-“গুড।
জন্ম হয়েছে আমার এবাড়িতে।প্রতি টা মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। আমার দাদা-দাদি নেই।অথচ নানাজান আর নানিজান সেটা কখনো আমাকে উপলব্ধি করতে দেয় নি। আমার বাবা-র কোনো ভাইবোন নেই।সেই সুবাদে আমার কোনো ফুপি বা চাচা নেই। আর এটা আমি কখনো বুঝতেই পারি নি। আমার দুই মামা আমাকে সেটা বুঝতে দেয় নি।মামিরা কখনো আমায় তোদের থেকে ভিন্ন নজরে দেখে নি।বরং তোদের চেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দেয় আমাকে আর আপু কে।বাবার জব টা তেমন আহামরি নয়।তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ছেলেমেয়ে বিদেশে পাঠিয়ে পড়ালেখা করানো বিলাসিতা। আর যেটা আমার আপু খুব সহজেই করছে।আর এটা সম্পূর্ণ সম্ভব হয়েছে মামাদের জন্য।
আমাদের সবকিছুতে মামাদের অবদান বেশি।সেখানে তাদের খেয়ে তাদের পড়ে তাদের বিশ্বাস কি করে ভেঙে দেই?”

-“তবে কি আমার আপনাকে পাওয়া হবে না?”

সারা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো।
রাহান সারা কে এক বাহুতে আগলে নিলো। সারা’র হাতের উলটো পিঠে অধর স্পর্শ করে বলল,

-“ভাগ্য থাকলে অবশ্যই।
আমি আমার সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করবো আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা দেওয়ার।”

হঠাৎ সিঁড়ি কাছে শব্দ হলো।রাহান সারা দু’জনে চমকে ওঠে। রাহান তড়িৎ গতিতে সারা কে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে এলো।সারাও পেছন পেছন এলো।কিন্তু না ওখানে কেউ নেই।
সারা রাহানের বাহু খামচে ধরে ভয়ে। রাহান সারা কে আগলে নিলো।তবে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন ঘুরতে লাগল, “কে ছিল এখানে?”

#চলবে….

#আমার_তুমি[২]
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক,পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

-“বুঝলেন চেয়ারম্যান সাহেব। ছেলে টা দেশে ফিরছে। ভাবছি বিয়ের ব্যাপারে কথা বলব।”

ওয়াসিফ দেওয়ান জানাল।জাফর মির্জা হেঁসে বলে উঠলো,

-“সে তো ভালো কথা।
তবে মেয়ে পছন্দ আছে কি?”

-“না ইয়ে,,

ওয়াসিফ দেওয়ান আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু সাদনান মাঝে ফোঁড়ন কেটে বলল,

-“আঙ্কেল আমার মনে হচ্ছে আপনার একবার আপনার ছেলের সাথে কথা বলা উচিৎ।”

-“কথাখানি মন্দ বলো নি।
আজই জিগ্যেস করব।”

ওয়াসিফ দেওয়ান সাদনানের কথা টা বেশ মনে ধরলো।ছেলে টা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। কোথায় কি ধরণের কথা বলা উচিৎ বা কোন কথা টা বললে ঠিক হবে খুব ভালো করে সেটা বুঝে।যাকে বলে যথেষ্ট বিচক্ষণ পুরুষ। এমন পুরুষ খুব কমই দেখেছেন তিনি তার রাজনীতির জীবনে। তিনি এবার ভিন্ন কিছু ভেবেছেন।সাদনান সেটারই যোগ্য।এখন শুধু সময় করে কাজ টা ভালোই ভালোই করতে পারলে হয়।
সাদনানের দিকে তাকিয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান লম্বা চওড়া হাসে।অতঃপর আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে খাবার খেয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান মির্জা বাড়ি হতে বেরিয়ে গেলো।

সাদনানের হাতের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। ক্ষত শুঁকিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এখন হাত নড়াচড়া করা নিষেধ।আজ পনেরো দিনের বেশি সময় হয় সাদনান বাড়ি থেকে বেরুতে পারে না। বাসায় বসে সব মিটিং আলোচনা সমালোচনা সবাই কে বাড়িতে ডেকে করতে হয়।ডান হাতে গুলি লেগেছে বিধায় খাবার নিজের হাতে খেতে পারে না। প্রিয়তা খাইয়ে দেয়।আবার মাঝে মাঝে সালেহা বেগম আয়েশা বেগম সুফিয়া বেগম সবাই খাইয়ে দেয়।মা চাচি ফুপি সাদনানের ভীষণ ভালো।সবাই বেশ মিলেমিশে সেবা যত্ন করছে।এখন সালেহা বেগম খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। সাথে প্রিয়তা কেও।এখন নয় টা বাজে সাড়ে দশ টায় একটা মিটিং রয়েছে।দলের কিছু লোক আসবে।নিচে সিঁড়ি কোঠার কাছে বড় একটা কক্ষ রয়েছে যেটায় সব সময় এই রাজনীতির যত কাজ আছে সেখানেই হয় সব।সাদনানের খাবার খাওয়া শেষ সালেহা বেগম সব গুছিয়ে নিয়ে চলে গেলো। প্রিয়তা সাদনানের গা থেকে কালো শার্ট টা খুলে নিল।হাতে গুলি লেগেছে পর টি-শার্ট পড়া টা সম্ভব নয়।তাই শার্ট গায়ে দেয় সাদনান। প্রিয়তা কাবাড থেকে পাঞ্জাবি এনে সাদনান কে পড়িয়ে দিলো।হাত কাঁপছে এসি অন থাকা শর্তেও প্রিয়তার গলা ঘাড় নাকের ডগা ঘেমে ন্যায় একাকার অবস্থা।
সাদনান হাসলো।প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সাদনানের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“হাসছেন কেনো?”

সাদনান ওঠে দাঁড়াল। বা হাতে প্রিয়তার কোমড়ে রেখে আচমকাই প্রিয়তা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।প্রিয়তা কেঁপে উঠল। তবে সাদনানের বুকের উপর দুই হাত রাখে।সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে নেয়।
সাদনান প্রিয়তার মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে প্রিয়তার ললাট নিজের অধর স্পর্শ দিলো।
সেখান থেকে সরে এসে থমথমে কণ্ঠে আদেশ করল,

-“মাথা উঁচু করো।”

হঠাৎ সাদনানের থমথমে কণ্ঠে শোনে অবাক হলো।মাথা উঁচু করে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই সাদনান নিজের উদ্দেশ্য সফল করলো।বউয়ের অধর নিজের অধর চেপে ধরলো।প্রিয়তা হঠাৎ অনাঙ্ক্ষিত স্পর্শে একটু অপ্রস্তুত হলো। তবে সামনের পুরুষ টার করা অধর স্পর্শে নিজে কে সামলাতে হিমশিম খেলো।শক্ত হাতে সাদনানের বুকের কাছের পাঞ্জাবি খামচে ধরলো।নিজের মনে ভালোলাগার অনুভূতি হলো।আজ অনেক দিন পর সাদনান বউ কে এতো টা গভীর স্পর্শ দিলো।প্রথম সেদিন রাতের আর আবার আজ।যদিও মাঝেমধ্যে ছোট ছোট চুমু খায় কিন্তু আজ সময় নিয়ে নিজের তৃষ্ণা মেটাল।সাদনানের থেকে ছাড়া পাওয়া মাত্র প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে জোর জোর শ্বাস টানে। সাদনান নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে আবার প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলল,

-“এটা কি করলে জান।
এখন আমি বাহিরে কি করে যাব?পাঞ্জাবির অবস্থা নাজেহাল।”

প্রিয়তা লজ্জা ভুলে অবাক হয়ে সাদনানের বুকের দিকে তাকাল সত্যি পাঞ্জাবি টা বাজেভাবে কুঁচকে গিয়েছে।
প্রিয়তা কিছু বলবে তার আগেই সাদনান পাঞ্জাবি টেনে টুনে ঠিক করে।প্রিয়তা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।সাদনান এগিয়ে গিয়ে পারফিউম হাতে নিলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে পারফিউম স্প্রে করতে করতে বলল,

-“নিচে গেলো সিঁড়ির নিচের রুমে আশেপাশে যাবে না।”

-“সব সময় বলতে হয়?”

-“হুঁ।
বলাতো যায় না কখন কোন দিক দিয়ে কার নজর পড়ে বসে।”

সাদনান গুরুগম্ভীর কণ্ঠে কথা টা বলেই ফোন হাতে নিলো।ঠিক তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সাদনান ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো,

-“কে?”

-“ছোট সাহেব নিচে সব মানুষ আইয়া পড়ছে।”

-“আসছি আমি।”

একটা মহিলার কণ্ঠ স্বর।কাজের লোক চলে গেলে সাদনান বউ কে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

—–

বেশ কিছু দিন ধরে রাহান ঠিকঠাক দুই মামার সঙ্গে অফিস যাচ্ছে। এতে আজ্জম মির্জা আর মফিজুর মির্জা ভীষণ খুশি। বেশ কিছু ডিল কনফার্ম করেছে। যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে।
আজও একটা মিটিং ছিল।সেটা শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাহানের অনেক রাত হলো।আজ অনেক দিন হয় প্রেয়সীর সাথে ঠিকঠাক কথা বলা হয় না।তাই রাহান আগে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো।খাবার সালেহা বেগম পরিবেশন করে দিলো।সবাই অনেক আগেই রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছে।
সালেহা বেগম রাহানের খাবার শেষ সব গুছিয়ে রাখে।রাহান তখনো বসে আছে বড় মামির অপেক্ষায়।সালেহা বেগম সব গুছিয়ে এলেই রাহান বলল,

-“সারা ঘুমিয়ে পড়েছে বড়মনি?”

-“মনে হয় না।
মেয়ে টা আমার দিন দিন উদাসীন হয়ে যাচ্ছে!”

চিন্তিত কণ্ঠে বলল সালেহা বেগম।
রাহান ওনার কথা শোনে বুকের ভেতর মুচড় দিলো।অনেক দিন ধরে মেয়ে টা কে একটু সময় দেওয়া হয় না।তাই এমন টা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ভালোবাসলে তো হবে না।ভালোবাসার মানুষ টাকে সারাজীবন এর জন্য নিজের করে রাখার জন্য নিজের প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি।
আর যেটা রাহান করছে।
রাহান কথা গুলো ভেবেই তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,

-“আমি কি বাবা কে বলব বাবাই’য়ের সঙ্গে কথা বলতে?”

-“নাহ আরো ক’টা দিন যাক।
নয়তো সবাই বুঝে যাবে আমি তোকে অফিস যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।”

-“তাহলে?”

-“আমি তোর বাবাই’য়ের সাথে কথা বলব।”

-“সাদনান কি বলেছে?”

-“বেকার ছেলের সাথে বোন বিয়ে দিতে কোন ভাই চাইবে!তবে আমি জানি সাদনানের মনের কথা এটা নয়।
তুই নিশ্চিন্তে থাক।”

-“হ্যাঁ।
আমি তোমাদের বিশ্বাস করি।”

রাহানের কথায় সালেহা বেগম হাসলো।
অতঃপর রাহান কে ঘুমুতে যেতে বলে নিজেও কক্ষের দিকে চলে গেলো।

—–

সেদিন রাতে ছাঁদের দরজা খোলা ছিল।সালেহা বেগম ভেবেছিল হয়তো কাজের লোক দরজা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে।তাই তিনি ছাঁদের দরজা বন্ধ করতে গিয়েছিল। আর সেখানে গিয়ে দুই মানব-মানবীর কথোপকথন শুনে তিনি থমকে দাঁড়ান। এর আগেও অবশ্য তিনি নিজের মেয়ে কে রাহানের সাথে রাতে সেদিন প্রাচীর টপকে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে দেখেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই সম্পর্ক কি পরিণতি পাবে?
এমন প্রশ্ন মস্তিষ্কে আসার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাহান পড়ালেখা শেষ করেছে।সাদনান আর নানার সাথে থেকে রাজনীতি করে। কিন্তু কোনো পারমানেন্ট জব নেই।আর সালেহা বেগম তাই এব্যাপারে সাদনান এর সাথে কথা বলে আর সাদনানই রাহান কে অফিস যাওয়ার জন্য বলে।রাহান সবদিক বিবেচনা করে তাই করল।

—–

সাদনান ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। প্রিয়তা রুমে বসে সাজুগুজু করছে। সাজুগুজু বলতে শাড়ী পড়ে চোখে কাজল দিয়ে ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়ে চুল ছেড়ে দিয়ে গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে সাদনান কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।সাদনান একটু চমকায় না।তবে নিজের পুরুষালী চিত্ত জেগে ওঠে।হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে লাফালাফি করে।মনের ভেতর ভালোবাসার জোয়ার ওঠে।বউ কে কাছে পাওয়ার নেশা তীব্র থেকে তীব্র মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।প্রিয়তা নিজের শরীর কাঁপছে। হৃদপিণ্ড দ্রুত বেগে ওঠানামা করছে যার ফলস্বরূপ সাদনানের পিঠে প্রিয়তার বুকের সাথে সংঘর্ষ হচ্ছে।
সাদনান চকিতে পেছনে ফিরলো ফোন পাশের দোলনায় রেখে ধীরে ধীরে বউয়ের দিকে এগিয়ে এসে মুখ টা উঁচু করে নিলো।প্রিয়তার চোখ বন্ধ সাদনান প্রিয়তার বন্ধ চোখের পাতায় ফু দিলো।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। সাদনান তৎক্ষনাৎ বউয়ের ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের ভাঁজে নিলো।সময় নিয়ে গভীর চুম্বন করলো। ছেড়ে দিয়ে প্রিয়তার মুখ টা নিজের দুই হাতের আঁজলে নিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,

-“ধন্যবাদ আমার প্রাপ্তি কে প্রাপ্তিময় করে মূহুর্ত টাকে সুন্দর করে স্বরণীয় করে রাখার জন্য। তবে আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি আমার তুমি।”

#চলবে……